Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 345



বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#শেষপর্ব_১১
#রিয়া_জান্নাত

চৈত্র মাসের সকাল, ঊষা কাটতে না কাটতে ফুরফুরে হয়ে গেছে। ইশমাম দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। কিছুক্ষণ আগে চোখটা লেগে গেছিলো। কিন্তু রাহার চিৎকারে আবার উঠে পড়ে। কিছুতেই রাহাকে সামলাতে পারছেনা ইশমাম। কত চেষ্টা করেও ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াতে পারে নাই। ডায়পার চেঞ্জ, একটুপর পর দুধের জন্য কান্নাকাটি কিছুতেই সামলাতে পারছেনা রাহাকে। আবার রাহার শরীরে ১০২° ডিগ্রি জ্বর উঠে গেছে। ইশমাম এবার কেঁদে ফেলে, কারণ সে রাহার বাবা হতে পারলেও কখনো মা হতে পারবেনা। সার্থপরের মতো ইনিয়াকে ব্যবহার করতেও পারবেনা আর। ইনিয়ার দিকে তাকায়।

“ আর কত ঘুমাবেন আপনি? আপনি ছাড়া আমার রাহা ‘ মা ‘ হীন। ”

এমন সময় ঘড়িতে টাইম দেখে ইশমাম । টাইম দেখে অবাক হয়ে যায়। ডক্টর বলেছিলো ঘুমের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ১০ ঘন্টা পর ইনিয়া একাই উঠবে। তাহলে এখনো উঠছেনা কেনো? ইশমাম রাহাকে ইনিয়ার কাছে শুইয়ে দিয়ে নার্সের কাছে যায়।

“ শুনেন সিস্টার! ইনিয়ার ঘুম ভাঙছে না কেনো? অলরেডি ১০ ঘন্টা হয়ে গেছে। আপনারা তাকে শান্ত করার জন্য এই স্যালাইন দিলেন। কিন্তু ইনিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে কেনো? প্লিজ ইনিয়াকে একটু দেখেন। “

ইশমামের কথা শুনে সিস্টার ইনিয়ার রুমে আসে। এসে দেখতে পায় ইনিয়া বাবুকে দুধ দিচ্ছে। সিস্টারকে দেখা মাত্রই বলে উঠে,,

“ সিস্টার আমি এখানে কেনো? রাহার বাবা কই? রাহার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ডায়পার চেঞ্জ করেনি। একদিনে আমার মেয়েটার শরীরের এমন হাল কেনো? ”
“ মা ছাড়া কি বাচ্চা সুস্থ থাকে? আপনার বাচ্চা গত ১২ ঘন্টা যাবত কোনোকিছু খায়নি। কিছুতেই এই ফিডার মুখে নেয়নি। আর জ্বর মেবি গতকাল ঠান্ডা লেগে বাঁধিয়েছে। মা সুস্থ, ইন শা আল্লাহ বেবি দ্রুত ভালো হবে। আচ্ছা আমি আসছি। ”

রাহাকে আদর করে বলে মা খুব জ্বালিয়েছ বাবাকে। বাবা পঁচা তোমার যত্ন নিতে পারেনি। রাহা দুধ খাচ্ছে আর উহুম উহুম করছে।

ইশমাম এতক্ষণ যাবত সবশুনে কেঁদে ফেলে। ইনিয়ার হাত ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এতোকিছু জানতাম না। আমার সত্যিই শোনা উচিত ছিলো আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া কাহিনী। আমি বড়ই স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম। ইনিয়ার বামহাত দুহাতের তালুতে মুষ্টিবদ্ধ করে ফ্লোরে বসে কাঁদতে থাকে।

ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,
“ আমাকে রাহার কাছ থেকে দূরে পাঠাবেন না। আমি রাহাকে ভালোবেসে ফেলছি। রাহাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। রাহাকে আমি বুকের দুধ পান করিয়েছে। রাহাকে আমি নিজের মেয়ের মতনই রাখবো। একদিন আমি ছিলাম না বলে কত অযত্ন হয়েছে মেয়েটার। আমি চাইনা রাহা অযত্নে বেড়ে উঠুক। রাহার যখন ছয়মাস বয়স হবে তখন আমি দূরে চলে যাব। এখন কোথাও পাঠাবেন না। ”

ইনিয়ার এসব কথা শুনে ইশমাম নিজেকে হালকা করে। জানেন এই কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে আপনাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু পারছিনা, আপনি রাহাকে মেয়ের মতো ভালোবেসেছেন। আমি পারবোনা মেয়ের থেকে তার আম্মাকে সরিয়ে দিতে। আপনি ছাড়া রাহাকে আমি মানুষ ও করতে পারবো না। মনের মধ্যে থেকে একটা ভারী পাথর সরে গেলো। সত্যি আপনি যাবেন নাতো?
“ রাহা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। আমি ইতিম মেয়ে যেভাবে বড় হয়েছি চাইনা রাহা সেভাবে বড় হোক। আমি রাহার মায়ের দায়িত্ব পালন করতে চাই।আর ততদিনে বাঁচার জন্য নতুন পথ খুঁজতে চাই। ”

এইকথাগুলো শুনে ইশমাম নিজেকে শক্ত করে। ভরসা পায় কিছুটা। এরপরে ইনিয়াকে বলে আমিও আপনাকে ভালো রাখতে চাই। জানি কোনোদিন প্রিয়ার জায়গা দিতে পারবো কিনা? তবুও আপনাকে স্বার্থপরের মতো প্রপোজাল দিতে চাই। প্লিজ রাগ করবেন না।

“ হ্যা বলুন ”
“ আমি আপনাকে পারমেনেন্ট রাহার আম্মু বানাতে চাই। থাকতে পারবেন বাকীটা জীবন ইশমাম মির্জার স্ত্রী হয়ে থাকতে। ইশমাম মির্জার মেয়ের জন্য, রাহার আম্মু হয়ে প্লিজ! প্লিজ! ”

এই কথাগুলো শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ইনিয়া। ইনিয়া ইশমামের মুষ্টি থেকে হাত সরিয়ে বলে,,

“ আপনি পাগল হয়েছেন? দ্বিতীয়বার এসব কথা শুনতে চাইনা। ”

“ ইশমাম বুঝতে পারে এই সময়ে আসলেই তার এই কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। কিন্তু ইশমাম মনেমনে বলে যে মহিলা আমার মেয়েকে নিজের আপন মেয়ে ভাবতে পারে। তাকে বাকিটা জীবন আমি সুখী রাখবো। স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না জানি। কিন্তু নিশ্চয়তা দিব। প্রিয়া তুমি আমাকে দুচরিত্রবান ভাবিও না আবার। ”

“ ইনিয়া মনেমনে বলে মি.মির্জা এসব বললেন কেনো? ওনি কি সত্যি মন থেকে এই কথা বললো? কিন্তু আমি জুনায়েদের জায়গা তাকে দিব কি করে? জুনায়েদ পারলেও আমি যে পারবো না। কারণ আমি জুনায়েদকে বড্ড ভালোবাসি। ”

____

অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে বসে আছে জুনায়েদ। টেবিলের সামনে মোমবাতি জ্বলছে। জুনায়েদ ইনিয়ার একখানা ছবি দেখে চোখের জ্বল ফেলছে। অতীতের স্মৃতি চারা দিয়ে যাচ্ছে জুনায়েদের মাথায়। অতীতের দিনগুলি মনে পড়তেই জুনায়েদের চোখে অশ্রুকণা গালবেয়ে টপাটপ পড়ছে। ঘরে কোনো আলো নেই, জুনায়েদকে দেখতে আবছা অবয়ব মনে হচ্ছে। জুনায়েদ ছবিখানাকে জিজ্ঞেস করে,,,

“ হয়তো আর বেশি সময় নেই আমি। তোমাকে খোঁজার কমতি রাখিনি। আজ পয়তাল্লিশ দিন হয়ে গেলো তুমি আমার কাছে নাই। অবশ্য আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু মরার আগে যদি তোমার হাসিমুখ খানা একবার দেখিতে পারতাম। জীবনডা বোধহয় সার্থক হতো। মরেও শান্তি পেতাম। ”

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো, জুনায়েদ রুমের সুইচ অন করলো। আলোর মধ্যে জুনায়েদের চেহেরা দেখে পাঠকগণ কেঁদে ফেলবেন। জুনায়েদের মুখ শুঁকে গিয়েছে। শরীরের গড়ন একদম হালকা,পাতলা। দেখে মনে হবে কতশত বছর মনে কোনো খাবার খায়না। জুনায়েদ আস্তেধীরে নিচে এসে সদর দরজা খুলে দিলো। পাঁচজন লোক কালো কাপড় মুখে বেধে রিভলবার তাক করে জুনায়েদের মাথায়। জুনায়েদ ভয়ে আঁতকে উঠে। জিজ্ঞেস করে,,

“ কি চাই আপনাদের? আপনারা মাথায় রিভলবার ধরেছেন কেনো? ”
“ পাঁচজন লোকের মধ্যে প্রধান একজন লোক সম্পত্তির উইল পেপার বের করে বলে প্রাণের মায়া থাকলে এই পেপারে সাইন করেন। ”

“ এটাতে কি লেখা আছে আমি সাক্ষর করবো ক্যান? ”
“ আপনার যাবতীয় স্থাবর _ অস্থাবর সম্পত্তির মালকিন হবে নিমু রহমান। ”

“ কি? ওর এতোবড় সাহস? আমাকে বন্দুক তাক করে সাইন আদায় করবে। কিন্তু, ও তো জেলখানায়। তাহলে আপনারা তার কাজ করতে আসলেন কেনো? ”
“ আমরা টাকার বিনিময়ে কাজ করি। কে কোথাও থাকলো তা দেখার বিষয় আমাদের না। জীবনের মায়া থাকলে সাইন করে দেন। ”

জুনায়েদ মুচকি হাসি দেয়। কতদিন বা আছি আমি। মৃত্যু লোককে দুদিন আগে মারবেন এটাইতো। তো মারেন। আমার জীবন গেলেও আমি এই উইলপেপারে সাক্ষর করবো না।

গুন্ডা গুলো বলে ভালো কথায় কাজ হবেনা। এই লাঠি আন লাঠিচার্জ করলে একাই সাক্ষর করবে। এই কথা শোনামাত্রই দুইজন লোক মোটা লাঠি নিয়ে ধেয়ে আসে জুনায়েদ কে মারতে। জুনায়েদ তা দেখে শেষ হাসি দেয় চোখবুঁজে। আর অনুভব করে ইনিয়াকে। দ্রুত চোখ খুলে ফেলে জুনায়েদ। এবং আসলেই ইনিয়াকে তাকে এসে হোল্ড করছে। জড়িয়ে ধরে বলছে ওকে মারবেন না। কোথায় সাইন লাগবে বলে দিন আমি সাইন করে দিব।

গুন্ডাগুলো বলে এই হিরোইন কোথায় থেকে আসলো। যাক ভালোই হয়েছে। এই ম্যাডাম আপনার নায়ককে বলুন এখানে সাইন করতে।

জুনায়েদ ইনিয়ার হাগপেয়ে শরীরে অনেক শক্তি পায়। হাত দিয়ে রিভলবার তাক করা লোককে ঘুষি মারে। এরপরে সমস্ত গুন্ডাকে ধরে উত্তম মাধ্যম মার দেওয়া শুরু করে। এসব দৃশ্য দেখে ইশমাম রাহাকে ইনিয়ার কোলে দিয়ে সেও ফাইট করা শুরু করে। এক পর্যায়ে গুন্ডারা আধমরা হয়ে যায়। এরপরে জুনায়েদ জিজ্ঞেস করে নিমু তোদের কত টাকা দিয়েছে।
“ তিন লক্ষ্য টাকা ”
“ যা আমি তোদের পাঁচ লক্ষ্য টাকা দিলাম। এইবলে পকেট থেকে চেক সাইন করে গুন্ডাদের মুখে ছুড়ে মারে। ”
“ গুন্ডারা চেক নিয়ে দৌড় দেয়। ”

জুনায়েদ ক্লান্ত শরীরে যেয়ে ইনিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে কোথায় গিয়েছিলা তুমি? কত খুজেছি তোমাকে আমি পাইনি? অথচ আজ পয়তাল্লিশ দিনপর আমার কাছে আসলে।

ইনিয়া ইশমামের হাতে রাহাকে দিয়ে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরে। ইশমামের এই দৃশ্য দেখে কিছুটা কষ্ট হয়। বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠে। কেনো এমন করে উঠলো ইশমাম বুঝতে পারলো না।

” কি হাল করেছো নিজের? শরীরের একটুও যত্ন নাও নি কেনো? এমন শুকিয়ে যেয়ে মুখ কালো করে ফেলছো ক্যান? আমিতো এরকম জুনায়েদকে রেখে যায়নি। ”
” জুনায়েদ ইনিয়ার গালদুটি দু-হাত দিয়ে ধরে বলে অবশেষে তুমি এলে। আমার ভালোবাসার চিহ্ন কই ইনিয়া। আমাদের বাচ্চা কই? ”

জুনায়েদের এমন প্রশ্নে ইনিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ইশমাম তা দেখে জুনায়েদকে বলে রাহাকে কোলে নিন। রাহাকে কোলে নিতে যায় জুনায়েদ। কিন্তু কোলে আর নিতে পারেনা। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ ফ্লোরে পড়ে যায়। ইনিয়া দ্রুত জুনায়েদের মাথা নিজের দুই উরুতে রাখে।

“ কি হলো জুনায়েদ তোমার? ইশমাম আপনি প্লিজ একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন না? ”
“ হ্যা হ্যা ডাকছি বলে ফোন বের করে করে ইশমাম। ”

জুনায়েদের কথা বলতে কষ্ট হয়। তবুও শেষবারের মতো কথাগুলো গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে।

“ ডক্টর ডেকে লাভ নেই ইনিয়া। আমার হাতে সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমি চলে যাচ্ছি। ইনিয়া ওনাকে ডাকোনা একটু। ”
“ তুমি চুপ থাকো জুনায়েদ। আমি সব জানি, বাবা আমাকে খুজে বের করে, সব বলছে আজ। তাই সব জেনে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি এভাবে চলে যেতে পারোনা। ”

ইশমাম জুনায়েদের কাছে আসে। জুনায়েদের প্রচুর কাশী হতে থাকে তবুও ইশমামকে বলে আমি বুঝতে পেরেছি,ইনিয়া এতদিন আপনার কাছে ছিলো। আমিতো চলে যাচ্ছি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে। আমায় একটা সাহায্য করবেন?
“ কি সাহায্য? বলেন। ”
“ আমার ইনিয়ার দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার ইনিয়া। আপনি প্লিজ! তার জীবনে দ্বিতীয় বসন্ত হয়ে আসিয়েন। ”

ইনিয়া হায় আল্লাহ বলে চিৎকার করে। ইশমাম কে বলে আপনি এখানে বসে থাকবেন না অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন না প্লিজ। আমার ভালোবাসার মানুষ অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি আর কষ্ট দিতে পারবো না। কেনো এতো অভিমানী হলাম। বুঝলাম না কেনো আপনাকে। ইনিয়ার দুচোখ ভর্তি পানি। আর মুখে আজাহারি ভাব।

জুনায়েদ প্রিয়তার এমন মুখ দেখতে পারলো না। দুহাতের তালু উঁচু করে চোখ মুছে দিলো। এরপরে চোখ উল্টিয়ে ফেললো। ইশমাম রাহাকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে দ্রুত এক গ্লাস পানি এনে জুনায়েদ মুখে ধরলো। জুনায়েদ পানিটুকু খেয়ে শুধু লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

ইনিয়া চিৎকারে সারা গ্রামের লোক জড়ো হয়ে গেলো। সবাই এসে শান্তনা দেওয়া শুরু করলো। সবমিলিয়ে কিছুক্ষণ পর জুনায়েদকে দাফন করে বাড়িতে ফিরলো গ্রামের সকল লোক। ইনিয়া পাথরের মতো হয়ে গেছে। রাহাকে কোলে দিলো ইশমাম কিন্তু ইনিয়া আর স্বাভাবিক হতে পারলো না।

____

জুনায়েদ মারা যাওয়ার তিনমাস কেটে গেলো। ইনিয়ার শোক কাটাইতে তিনমাস লেগে যায়। রাহা ততদিনে অনেক বড় হয়ে যায়। ইশমাম প্রতিটা মূহুর্তে ইনিয়াকে সঙ্গ দিয়েছে। অবশেষে আফজাল সাহেবের চেষ্টায় ফাইনালি ইশমাম ও ইনিয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো আজ।

বাসরঘরে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছে ইনিয়া। ইশমাম সন্তপর্ণে রুমে ঢুকলো। কারণ রাহার ঘুম অনেক কাঁচা। কিছুর আওয়াজ পেলেই ভেঙ্গে যায়। ইনিয়া ইশমামকে দেখে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। ইশমাম ইনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,,

“ আমাকে স্বামী হিসাবে মানবেন তো? ”
“ ইনিয়া শুধু ইশমামকে দেখে আর কিছু বলেনা। ”

“ ইশমাম এই প্রথম ইনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে দুটি ভাঙ্গা হৃদয় আজ মিলিত হোক, অতীতের গ্লানি নিপাত যাক। আমি তোমাকে ভালোবাসি ইনিয়া। জীবন আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়, আবার সুযোগ দেয়। প্লিজ অতীত নিয়ে না ভেবে সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। ”
“ ইশমামের কথায় ইনিয়া সায় দেয়না। কারন ইনিয়া জুনায়েদের জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করেনি। কিন্তু নিষ্ঠুর ভাগ্য কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায়। ইনিয়া চুপ থাকে। ”

“ ইশমাম ইনিয়ার চুপ থাকা দেখে বলে, আমিও প্রিয়ার জায়গায় কখনো কাউকে কল্পনা করিনি ইনিয়া। কিন্তু আমাদের এই বাচ্চার জন্য আমাদের তো এক হতেই হতো ইনিয়া। আপনার সঙ্গে কাটানো প্রায় ছয়মাসে অনেক ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। কিন্তু এতো খারাপ সময়ে মাধ্যমে কবে যে আপনার জন্য এতো টান হলো বুঝলাম না। ”

“ ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে দুটি ভাঙ্গা হৃদয় কে জুড়ে দিলো রাহা। আপনাকে আমাকে বিরহ ডোরে বেঁধে রাখলো। ”
“ ইশমাম ইনিয়ার কপালে চুমু দেয়। বিয়ে যেহেতু করেই ফেলছি স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করবো। ইশমাম ইনিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুবে এমন সময় রাহা উঠে পড়ে। কাঁদতে থাকে, ইনিয়া ইশমামকে সরিয়ে দিয়ে বলে ওদিকে যান। বাবুর ক্ষুধা লাগছে। ”

ইশমাম মুখ গোমড়া করে ওদিকে যেয়ে শুয়ে পড়ে। আর ইনিয়া মুচকি মুচকি হাসি দেয় ইশমামের মুখ দেখে।

___ সমাপ্ত ___

বিশেষ নোটঃ-

[ যারা গল্পটা শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়েছেন। তারা আজকে নীরব পাঠক হয়ে থাকবেন না। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। গল্পটা পড়তে পড়তে কারো কি মনে হয়েছে? আমি গল্প পাকিয়ে ফেলেছি! যদি মনে হয় তাহলে বলবেন কোথায় কোথায় খারাপ লাগছে। আর একটা ভালোমন্দ রিভিউ চাই। ভূল থাকলে নিজেকে শোধরাইতে চাই। ]

বাঁধিব তোমায় বিরহে ডোরে পর্ব-১০

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহে_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১০

হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো। চৈত্র মাসে কাঠফাটা রোদ, এতদিন মাটি খা খা করছিলো। হঠাৎ বৃষ্টিতে মাটিগুলো তার প্রাণ ফিরে পেলো। পাতাশূন্য গাছগাছালি গুলো বৃষ্টির ফোঁটা পেয়ে কচি ডগা গুলো মেলে উঠলো। ইনিয়ার দুচোখে বিষাদ নেমে এলো। ফ্লোরে বসে হামাগুড়ি দিতে লাগলো। কারণ তার পায়ের শক্তি একদম নুইয়ে গেছে। কিছুতেই উঠার শক্তি পাচ্ছেনা ইনিয়া। ইনিয়া চিৎকার করা শুরু করলো

“ হে আল্লাহ তুমি এই অভাগীকে কোনোদিন কি সুখ দিবেনা। জন্মের পর থেকে কি পাপ করেছিলাম আমি? কিসের জন্য আমাকে এতো যন্ত্রণা দিতে হয় তোমাকে? আর কত পরীক্ষা নিবে তুমি। জন্মের ছয় বছর বয়সে আম্মুকে হারিয়ে নিষ্টুর পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে। সৎমায়ের জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করেছি ১৪ টি বছর। সৎবোন নিমুর থেকে পেয়েছি লাথি। সবসময় আমার পছন্দের জিনিসগুলো ছিনিয়ে নিতো সে? বাবা থেকেও ছিলো না। অভাগীকে একটু সুখের মুখ দেখাইলেন কুড়ি বছর বয়সে জুনায়েদের মাধ্যমে। তিনবছর পর জুনায়েদের আসল রুপ দেখাইলেন। বরাবর নিমু আমার প্রিয় জিনিস কেড়ে নিতো এবারো ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কথায় আছে এক হাতে তালি বাজেনা, প্রিয় শখের পুরুষ আমার ছিলো না। সে মরীচিকা ন্যায় আমার জীবনে জ্বারা হয়ে এসেছিলো। সবকষ্ট আমি নিমিষেই ভাগ্য হিসাবে মেনে নিয়েছিলাম। কারণ আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ছিলো অনাগত সন্তান। তুমি তাঁকেও কেড়ে নিলে। এতই যদি এই অভাগীকে কষ্ট দিবে বলে ঠিক করেছো। তাহলে এই অভাগীকে তোমার কাছে নিয়ে নিলেনা কেনো? আমি কি এতটাই পাপ করেছিলাম যারজন্য এতো শাস্তি আমাকে দিচ্ছো। এই অন্তর আর কোনোকিছু সহ্য করিতে পারছেনা। কথাগুলো আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে দু-চোখ ভর্তি পানি নিয়ে রাহার দিকে তাকায়। এরপরে ইশমামকে বলে আপনি কেনো সেদিন আমাকে রাতে বাঁচিয়েছিলেন? এই দিন দেখার চেয়ে আমার মরে যাওয়া অনেক আনন্দের হতো। এই ভাঙ্গা হৃদয় এতোবড় ধাক্কা সামলাবে কি করে? আমাকে যেহেতু বাঁচিয়েছিলেন আমার আরেকটা উপকার করবেন? ”

“ কি উপকার? ”

ইনিয়ার ভেতর এতো যন্ত্রণা লুকিয়ে রয়েছে ইশমাম জানতো না। নাহলে এভাবে এই কথা বলে যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিতো না। ইশমামের চোখের কোণে পানি জমে আছে। ইনিয়ার কষ্টের কথা শুনে, আর চোখের পানি দেখে নিজেকে সামলে নিতে পারছেনা ইশমাম। পোস্টারে ইনিয়ার নিখোঁজ তথ্য দেখে ভেবেছিলো অভিমানী ইনিয়া অভিমান করেই বাড়ি ছেড়েছে। কিন্তু এই ধ্রুব সত্যি বলার আগে ইশমামের মনে ছিলো না ইনিয়া ক্যান তার হাসবেন্ডকে ছেড়ে চলে এসেছিলো। সেই কথা ত আগেই জানিয়েছিলো ইনিয়া।

ইনিয়া কাঁদতে থাকে আর যন্ত্রণার প্রলাপ বকতে থাকে। ইনিয়ার যন্ত্রণার কথা শুনে ইশমাম নিজেকে সামলাতে পারছেনা। ইনিয়াকে ধরে শান্তনাও দিতে পারছেনা। কারণ পরপুরুষ পরনারীকে ছুঁতে পারেনা, তাতে যে পাপ লাগে। অথচ ইনিয়ার মাথায় এখন শান্তনার হাত বড্ড দরকার। ইনিয়া কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অজ্ঞান হয়ে যায়, ফ্লোরে ধুপ করে শরীর এলিয়ে দেয়। ইশমাম দ্রুত এসে ইনিয়াকে ধরে কোনোকিছুই চিন্তা না করে। এরপরে চোখেমুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করে কিন্তু জ্ঞান ফিরছেনা কিছুতেই। ইশমাম ঘাবড়ে যায়।

বাইরে প্রচুর ঝড় বৃষ্টি। কি করবে ইশমাম বুঝতে পারছিলো না। ইশমাম ইনিয়ার মুখ দেখে এবার মায়ায় পড়ে যায়। আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বলে,,

“ হে আল্লাহ তুমি আমার কাছ থেকে প্রিয়াকে কেড়ে নিয়েছো, আমি তোমাকে কিছু বলিনি। আজকে যদি তুমি ইনিয়াকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নাও তাহলে তোমার মসজিদে কোনোদিন নামাজ পড়তে ঢুকবো না। হে আল্লাহ আমায় দিয়ে ক্যান ইনিয়াকে কষ্ট দেওয়াইলেন। ইশমাম টুপ করে ফোন বের করে থ্রিপল নাইনে কল করে। এরপরে বলে আমার দেওয়া ঠিকানায় দ্রুত একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠান। ”

ঝড়ের গতি তান্ডব চালাচ্ছে। রাহা একদিকে কান্না করছে। ইনিয়া জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে। ইশমাম ইনিয়াকে অনেক ডাকছে কিন্তু ইনিয়ার সাড়া নেই। ইনিয়াকে বলে দেখো আমাদের রাহা কান্না করছে তুমি এভাবে পড়ে থাকিও না। উঠে প্লিজ দুধ দাও। কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে নতুন জীবন দিবো। আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হবে রাহা। সারাজীবন অনেক কষ্ট করছো ইনিয়া, আমি তোমাকে তোমার হাসবেন্ডের কাছে পাঠিয়ে আর কষ্ট দিতে পারবো না।

ইশমাম দিশেহারা হয়ে উঠে। একদিকে রাহা কান্না করছে। অন্যদিকে ঝড় তার তান্ডব চালাচ্ছে। এমন সময় বজ্রপাতে দুম করে জানালা খুলে যায়। রাহাকে ইশমাম কোলে জড়িয়ে নেয়। অ্যাম্বুলেন্স থেকে ড্রাইভার এসে ইনিয়াকে ধরে ধরে গাড়িতে তুলে। ইশমাম রাহাকে নিয়ে সিটে বসে। ইশমামের দুই উরুর মাঝখানে ইনিয়ার মাথা রাখে। ইশমাম নিষ্ঠুর পৃথিবীর রঙচঙ দেখতে পারছে না। তাই চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাহা আপাতত মায়ের দুধ না পেয়ে বাবার কোলে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। বাইরে ঝুম ঝড় বৃষ্টি চলতেছে। অ্যাম্বুলেন্স চলছে তার গতিতে, প্রকৃতির ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। বজ্রপাত হচ্ছে রাস্তায়। গাছের ডালপালাগুলি বারি খাচ্ছে।

____

জুনায়েদ ইনিয়াকে খোঁজার কমতি রাখেনি। পুলিশও ইনিয়াকে পাচ্ছে না। জুনায়েদ পুলিশকে কল করে বলে আমাদের বাড়িতে একবার আসুন। দুজন ক্রিমিনালকে অ্যারেস্ট করতে হবে।

“ আরিয়ান এই কথা শোনামাত্রই জুনায়েদকে বলে দেখুন আমার সঙ্গে ঠাট্টা করবেন না। আমরা এমনিতে ব্যস্ত, ক্যান যে নিজের গলা কাটতে এই প্রফেশনে এসেছিলাম। ”

“ দেখুন জুনায়েদ ঠাট্টা করতে পছন্দ করেনা। আমাদের বাড়িতে আসলে ঠিকই বুঝবেন। দুজন ক্রিমিনাল অপরাধ করে কিভাবে মুক্ত পৃথিবীতে ঘুড়ে বেরাইতেছে। ”

“ ঠিক আছে। ”

জুনায়েদ ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হঠাৎ করে কাশি শুরু হয়। জুনায়েদ কাশতে কাশতে দ্রুত বেসিনে চলে আসে। বেসিনে পানি ছেড়ে দেয়। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ পিছনের পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে। এরপরে আয়নাতে নিজের স্বরুপ দেখে। এরপরে দুচোখ বন্ধ করে ইনিয়াকে পাশে কল্পনা করে। ইনিয়া এসে জিজ্ঞেস করে,,

“ জুনায়েদ তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে আমার জায়গা নিমুকে কিভাবে দিতে পারলে? তুমি জানতে না আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন ভূমিষ্ট হতে বেশিদিন ছিলো না। তাহলে এই সময় এক দুঃখী মেয়েকে স্বপ্ন দেখিয়ে মন ভেঙ্গে দিলে ক্যানো? মানছি আমি নিমুর থেকে সুন্দর না! কিন্তু সাড়া পৃথিবীর চোখে অসুন্দর হলেও, আমার শখের পুরুষ তো সেই চোখে দেখতো না। তুমি আমাকে বিয়ে করে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে নতুন জীবনের। আর তুমিই ভেঙ্গে দিলে আমার লালিত করা সকল স্বপ্ন। ”

“ আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি ইনিয়া। মৃত্যুর আগ অব্দি তোমাকে ভালোবাসবো! তুমি কোথায় চলে গিয়েছো, শুধু একবার আমার বাবুকে কোলে দাও। তাকে ছুঁয়ে দেখলে মরেও শান্তি পাব। মৃত্যুর আগে শুধু একবার আমার সঙ্গে দেখা করো প্লিজ ইনিয়া। ”

“ দুচরিত্রবান লোকের সঙ্গে ইনিয়া দেখা করতে আসবে না। আর দুচরিত্রবান লোকের স্পর্শ আমার বাচ্চার শরীরে পড়ুক আমি চাইনা। ইনিয়া বাবুকে কোলে নিয়ে চলে যায়। ”

জুনায়েদ ইনিয়া বলে চিৎকার দিয়ে চোখজোড়া খুলে ফেলে। ঘাবড়ে যেয়ে বলে এ আমি কি দেখলাম। আমার ইনিয়া আমাকে এতোটাই ঘৃণা করে? অবশ্য আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। আমার হাতে বেশি সময় নেই ইনিয়া। শুনবে আমার কি হয়েছে? আমি বিরাট বড় রোগে আক্রান্ত ইনিয়া। যেদিন জানলাম আমার এতোবড় রোগ, তখন ঠিক করলাম আমি কি করলে তুমি আমাকে ঘৃণা করে চলে যাবে। তাই প্লানমাফিক নিমুর সঙ্গে বিয়ের নাটক করতে হলো ইনিয়া। আমি ভেবেছিলাম তোমার চোখের সামনে নিমুকে নিয়ে নোংরামি করলে তুমি নিশ্চিত ঘৃণা করে চলে যাবে। কিন্তু আমার প্লান যে প্রথমদিনেই সাকসেসফুলি হবে আমি ভাবতে পারিনাই ইনিয়া। এ জীবনে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো। আর কষ্ট বাড়াতে চাইনাই। তবে মৃত্যুর আগে যদি তোমাকে একবার দেখতে পারতাম, আমাদের বাবুকে একবার দেখতে পারতাম তাহলে মনে হয় মরেও শান্তি পেতাম। কিন্তু এরকম অনুভূতি সত্যিই চাইনা। কারন তুমি ভেঙ্গে পড়বে, কিন্তু মন যে মানেনা। তবে তুমি আর আমাদের বাবু যেখানে থাকোনা কেনো অনেক ভালো যাতে থাকো। আমি জানি তুমি অনেক স্ট্রং মাইন্ডের একটা মেয়ে। তুমি থাকতে আমাদের বাবুর কোনোকিছু হবেনা। সেও সঠিকভাবে মানুষ হবে। ততদিনে তোমার জীবনে এতদিনে যারা দুভোর্গ নেমে নিয়ে এসেছিলো তাদের পথ থেকে সরিয়ে ফেলবো আমি। আমি জানি মরার পরে আমার করা প্রত্যেকটি কাজ জানবে, ততদিনে যেনো তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা মরে যায়।

এমন সময় কলিংবেল বাজছিলো। জুনায়েদ আস্তেধীরে এসে সদর দরজা খুলে দেয়। আরিয়ান ও তার ফোর্স নিয়ে জুনায়েদের বাড়িতে আসে। পুলিশ দেখে চমকে যায় লিমা ও নিমু রহমান। তারচেয়েও বেশি অবাক হয় নিমু ও লিমা, কারণ আফজাল রহমান নিজ পায়ে হেঁটে আসছে পুলিশের কাছে। আফজাল সাহেব পুলিশের কাছে এসে বলে অ্যারেস্ট হার স্যার।

“ আরিয়ান বলে অপরাধ ছাড়া আমরাতো আসামীকে তুলতে পারিনা। ”
“ এই মহিলার অনেক অপরাধ শুনতে গেলে একদিন লেগে যাবে। আপাতত এটাই জানুন এই মহিলা আমার স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগে মারছে। আমাকে পঙ্গু বানানোর চেষ্টা করেছে। শুধুমাত্র আমার জামাই জুনায়েদ ছিলো বলে আজ এই কয়েকদিনের মাথায় আমি অনেকদিন পর নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার মেয়ে নিমু রহমান তার আপার জীবন শেষ করার মতো পাপ করছে তাই তাকেও অ্যারেস্ট করুন। বাকি অপরাধের লিষ্ট কোর্টে জানানো হবে। ”

এইসব কথা শুনে লিমা রহমান বলে ,,

“ ওগো তুমি কি করছো? তোমার নিজ স্ত্রী ও মেয়েকে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছো? ”
“ চুপ কর কাল নাগিনী। তোর জন্য আমাদের সুন্দর জীবন শেষ হওয়ার পথে। তোকে বাইরে রাখলে আমার মেয়ে ও আমাকে শেষ হতে হবে। তোদের জেলখানায় মানায়। আমি এতদিন অনেককিছু সহ্য করেছি আর না। ”

নিমু বলে উঠে বাবা আমিও তোমার মেয়ে তাহলে আমার সঙ্গে এরকম কিছু করতে পারোনা।

তা শুনে আফজাল হেসে বলে তুমি আমার অবৈধ মেয়ে। তোমার মায়ের কাছে জেনে নিও সে কিরকম কালনাগিনী মহিলা। কিভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করছে। অবশ্য এসব শুনলে তোমার লজ্জা করবে। তারচেয়ে বরং জেলখানায় বসে বসে মায়ের সঙ্গে এসব ব্যাপারে তর্ক করিও। তুমি যদি মানুষের মতো মানুষ হতে পারতে তাহলে তোমাকে এইদিন দেখাতাম না।

নিমু তার বাবার কথা শুনে অবাক চোখে তাকায় লিমার দিকে। লিমা মাথা নিচু করে ফেলে। নিমু বুঝতে পারে বাবা যা বলছে সবই সত্যি। তাই নিমু কিছু না বলে জুনায়েদ কে বলে ওগো আমিতো তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে সংসার করতে চাই, জেলখানায় যেতে চাইনা।

জুনায়েদ বলে কিসের সংসার। এই সংসার ইনিয়ার ছিলো, ইনিয়ার থাকবে। আর হাদিস তো জানোনা, তাই এভাবে বলছিস। আমাদের বিয়েটা বৈধ ছিলোনা। তাই অবৈধ সম্পর্কের দাবি করে লাভ নেই। আইন তাতে তোকেই পচাবে।

পুলিশ এসে দুজনের হাতে হাতকড়া পড়ায়। গাড়িতে টেনেটুনে উঠায়। লিমা রহমান চলে যাওয়ার পথে বলে,,

“ এই রহমানের সম্পত্তি আমার ছিলো আমারই থাকবে। জেল থেকেই তোদের ব্যবস্থা করবো। আমিও দেখবো জেলখানা কতদিন আমাদের রাখতে পারে। ”

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৯

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৯

চৈত্র্য মাসের ভোর। পূর্বাকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। সূর্যিমামা উঁকি দিচ্ছে তার গগনে । পাখির কলতান হচ্ছে কিচির মিচির করে। অনেকগুলি পাখি খাবার আহরণের পথে ছুটছে। পথিমধ্যে কুকুরের দলগুলো ঘেউঘেউ শব্দ করছে। কেউবা চৈত্র্যর গরমে তাড়াতাড়ি উঠে সকালের আবহাওয়া উপভোগ করছে। গোয়ালিনী গরুগুলি বের করছে। এমন সময় জুনায়েদ জায়নামাজ নিয়ে, মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছে। পথিমধ্যে ধাক্কা লাগে ইশমাম মির্জার সঙ্গে। জুনায়েদ তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলো, এমন সময় ইশমাম তাকে ধরে নিলো। ইশমাম জুনায়েদ কে স্যরি বলে। আসলে জগিং করতে করতে আজ এতদূর এসেছি,আগে কখনো আসিও নি । আমি আপনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারেনি। আমায় ক্ষমা করবেন।

“ জুনায়েদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে গুড মর্নিং ”
“ গুড মর্নিং! আপনি কিছু মনে করেন নিতো? ”
“ মনে করার কি আছে? আমি নামাজ পড়ে বাড়ির পথে হাঁটছিলাম। ”
“ আমিও নামাজ পড়ে, বাড়ি থেকে বের হয়েছি, সকালের ব্যায়ামে। তো আপনার এতো দেরি ক্যান? ”
“ আসলে মসজিদে কিছু কাজ ছিলো আমার। এরজন্য ইমাম সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এতো লেইট হলো। ”
“ বাই দ্যা ওয়ে আমি ইশমাম মির্জা। থাকি এই কলেনীতে, এইতো এখান মিনিট ১০ হাঁটলেই আমার বাড়ি। ”
“ আমি জুনায়েদ শেখ, এইতো আমার বাড়ি এখান থেকে দেড় ঘন্টা যেতে লাগে । ”
“ এরজন্য আপনাকে এতো অচেনা অচেনা লাগছে? বাট আপনি এখানে কেনো? এতদূরেই বা কিভাবে নামাজ পড়তে আসলেন? ”
“ আমি গতকাল রাত থেকেই ইমাম সাহেবের সঙ্গে মসজিদে রাত কাটিয়েছি। এইতো এখন বাড়ি ফিরবো। ওই রাস্তার মোড়েই গাড়ি রাখা হয়েছে। ”
“ মসজিদে কেনো? ”
“ বললাম কিছুটা দরকারে। ”
“ আচ্ছা আমার বাসায় চলেন। একসঙ্গে জমপেশ চা খাওয়া হবে। ”
” ধন্যবাদ আপনাকে। এখন আমার হাতে সময় একদম কম, বাড়িতে ফিরতে হবে। অনেক কাজ বাকী আমার। বেশিদিন তো আর থাকবো না, তাই অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুতই সমাপ্ত করতে হবে। নাহলে যাইতাম। ”
“ আচ্ছা, তাহলে যান। ”

জুনায়েদ চলে যায়। ইশমাম ভালোভাবে জুনায়েদের শেষ কথাগুলো উপলব্ধি করে। এরপরে মনেমনে ভাবে ওনি ঠিকই তো বলেছেন আমরা ধরিত্রীতে যখন জন্মগ্রহণ করি সময় অনুযায়ী আসি। কিন্তু আমাদের চলে যাওয়ার কোনো সময় নেই। প্রিয়ার কথা মনে পড়ে জুনায়েদের কথায়। কতই না স্বপ্ন দেখেছিলো প্রিয়ার আঙুলে আঙুল রেখে ঘুড়বে এই শহর। কিন্তু প্রিয়া ইশমামকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো অনেক আগেই। স্বপ্ন গুলো শুধু ফিকে রয়ে গেলো রাহার মাধ্যমে। রাহার কথা মনে পড়তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। ইশমামের এই মূহুর্তে উপলব্ধি হলো ইনিয়াকে তার সবটা বলা উচিত। কারণ ইনিয়ার সঙ্গে দিনশেষে প্রতারণা করা যাবেনা। আল্লাহ তালা যেহেতু রাহাকে আমার কোলে দিয়েছে আমার স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে। সেই আল্লাহ তালায় আমার মেয়েকে বড় করবে। কথাগুলো ভেবেই সোজাপথে হাটা শুরু করে দেয় ইশমাম বাড়ির উদ্দেশ্য। গন্তব্য এখন একটাই ইনিয়াকে সত্যিটা জানানো।

____

সারারাত নিমু অপেক্ষায় ছিলো জুনায়েদের। অনেকবার ফোন করেও কোন রেসপন্স পায়নি জুনায়েদের। পোড়াহাত জ্বালা করছে, অন্তর দগ্ধ হচ্ছে জুনায়েদের অনুপস্থিতি। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি জুনায়েদ সেই প্রথম দেখায়। তখন থেকে মনে একটাই বাসনা সুপ্ত রেখেছিলাম। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আপনাকে পাওয়া । কিন্তু আপনি আফাকে বিয়ে করে আমার হৃদয়ে ক্ষতর সৃষ্টি করলেন। এরপরে স্বাভাবিক হয়ে আপনাদের সংসারে ঢুকলাম। নিত্যনতুন সাজগোজ দিয়ে আপনাকে কাবু করতে ব্যর্থ হলাম জেনেও, পোশাক আশাক দিয়ে আপনাকে হর্ণি করে তুলে বিয়ে করলাম। ভেবেছিলাম আমার রুপে আপনি মজেছেন। আমায় আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, কিন্তু আমি ভূল ছিলাম। গতকাল আবারও প্রমাণ করলেন। এভাবে ভাঙ্গা হৃদয়ে কষ্ট না দিলেও পারতেন। এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাত শেষ করেছে নিমু। কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। শুধু স্মৃতিতে জুনায়েদের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসার দিনটি বারবার চারা দিয়ে উঠছে। ভাঙ্গা হৃদয় জীবন্ত হচ্ছে, জুনায়েদের অনুপস্থিতিতে আবার নিভে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে নিমু মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে জুনায়েদের ছবিখানা দেখে বলে উঠে,,

❝ মৃত্যু অনিবার্য জেনেও, জন্ম নিলাম।
আপনাকে পাবোনা জেনেও, আপনাকে চাইলাম! ❞

এমন সময় জুনায়েদ তার রুমে ঢুকে। জুনায়েদকে ক্লান্ত দেখে নিমু জিজ্ঞেস করলো সারারাত কোথায় ছিলে? আপনাকে এরকম ক্লান্ত লাগছে কেনো?
“ জুনায়েদ নিমুকে সোজা ধমক দেয়। এরপরে বলে এতো কৌতূহল কেনো? অন্যর স্বামীর ব্যাপারে! আর তোকে না বলছি আমার বেডরুমে আসবি না। তোকে একদিন এই বেডরুমে জায়গা দিয়েছিলাম এটাই বেশি। তাহলে তুই আজকে এখানে কেনো? জবাব দে। ”
“ জুনায়েদের ধমকে নিমু জড়োসড়ো হয়৷ কারণ বিয়ের আগ অব্দি জুনায়েদের এরকম রুপ দেখেনি। বিয়ের পর থেকেই ইনিয়া আফার অনুপস্থিতিতে তুই তোকারী করা শুরু করছে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে জুনায়েদ কে বললো আমি আপনার স্ত্রী। তাই আমার অধিকার আছে আপনার বেডরুমে থাকা। আপনি যেখানে থাকবেন আমিও ঠিক সেখানেই থাকবো। ”
“ জুনায়েদ চোখ লাল করে বলে তুই আমার স্ত্রী মাই ফুট। ইসলামি নিয়ম কিছুই তো জানিস না। তুই জানিস না ইসলাম ধর্মে নিজ আপন বোন জীবিত থাকা অবস্থায় নিজ দুলাভাইকে বিয়ে করলে দ্বিতীয় বিয়ে, মানে তোর আমার নিকা অবৈধ। আমরা যতই বিয়ে করিনা কেনো ইসলামের দৃষ্টিপাতে এই বিয়ে অটোমেটিক তালাক হয়। ”

“ এতোকিছু জেনে হবে কি? মনেপ্রাণে তোমাকে স্বামীর অধিকার দিয়েছি একদিন। মনেপ্রাণে মানি তুমি আমার স্বামী। ”

“ এটাই তফাত তোর আর ইনিয়ার মাঝে। তুই শুধু নিজের দিকটা ভাবিস। আর ইনিয়া সবার জন্য ভাবে। তোর কথা ভেবেই ইনিয়া সংসার ছেড়ে চলে গেছে। তোর বিয়েটা টিকে রাখার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তোর সুখের জন্য, তোর বিয়েটা যাতে বৈধতা পায়। এরজন্য ইনিয়া চলে গেছে। দিনশেষে ইনিয়া কি পেলো? শুধুই অবহেলা। কখনো তাকে আপার নজরে দেখলে আপার জামাইকে নিজের জামাই বানানোর জন্য স্বপ্ন দেখতি না। ”
“ এতই যদি বুঝেন, তাহলে আমাকে বিয়ে করে একদিনের জন্য কাছে টেনে নিয়েছিলেন কেনো? ”
“ ইনিয়ার চোখে পৃথিবীর খারাপ পুরুষ হয়ে থাকার জন্য। ইনিয়াকে কষ্টার্জিত জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। ইনিয়াকে পরবর্তী স্টেপ দ্রুততার সঙ্গে নেওয়ার জন্য। শক্তিশালী ইনিয়াকে দেখার জন্য। ”
“ কিন্তু এসব করে লাভ কি হলো? দিনশেষে ইনিয়া আফাতো তোমাকে ছেড়ে চলে গেলো। শুধু আমিই তোমার জন্য রয়ে গেছি। ”
“ তুই ইনিয়াকে আপার নজরেও না দেখলেও, ইনিয়া তোকে বোনের নজরে দেখতো বলে ছেড়ে গেছে। মানুষ বলে সৎ কখনো আপন হয়না, যতই তাদের জন্য বলিদান করুক। তার উজ্জ্বল প্রমাণ তুই। ”

নিমু জুনায়েদের এতো ভারী কথা সহ্য করতে না পেরে জড়িয়ে ধরে জুনায়েদ কে। এরপরে বলে ওগো আমার সঙ্গে এরকম করিও না আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার হাত যেহেতু ধরেছি ছাড়তে চাইনা। জুনায়েদ ধাক্কা দিয়ে নিমুকে ফেলে দেয়। এরপরে বলে খবরদার আরেকবার যদি আমাকে ধরতে আসিস তোর ওই দুখানা হাত কেটে ফেলবো। তুই আমাকে না আমার সম্পত্তিকে ভালোবেসেছিা। ইনিয়ার সবকিছু কেড়ে নেওয়ার জন্য এরকম করেছিস। ইনিয়ার প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে এগুলা করেছিস। তোকে খুব ভালো করেই চিনি। তুই আমাকে আফজাল সাহেব পাইস নাই। যে লিমা রহমানের মতো গ্রাস করতে পারবি। তোর আম্মা যেমন আটারোবছর আগে ইনিয়ার মায়ের সংসার ভেঙেছে তুইয়ো তাই করেছিস। কিন্তু জুনায়েদ বোকা না। জুনায়েদ সব জেনেশুনে মাঠে নেমেছে। তোর মা একটা খুনী খুব শ্রীঘই তার স্থান কারাগারে হবে। আর ইনিয়াকে সারাজীবন কষ্ট দেওয়ার জন্য তোর জীবনে আমি নামক মরীচিকার কষ্ট থেকে যাবে। এখন আমার সামনে থেকে চলে যা। সারারাত ঘুম হয়নি আমাকে ঘুমাতে দে।

নিমু কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বাহির হয়ে যায়। জুনায়েদ শেখ পুলিশকে ফোন দেয় ইনিয়ার খোঁজ নেওয়ার জন্য।

____

ইশমাম এতদিন ভালোভাবে লক্ষ্য করেনি বাইরের পৃথিবীটাকে। কিন্তু জুনায়েদের কথায় মলিন বিবস্ত্র পৃথিবীকে ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে। প্রিয়া মারা যাওয়ার পর থেকে পৃথিবীর রঙচঙ ফিকে লাগে ইশমামের চোখে। কথায় আছেনা,,

❝ মনে সুখ না থাকলে বাইরের পৃথিবীর রঙচঙ সবই ফিকে লাগে নিজের কাছে ❞

ইশমাম পৃথিবীকে ভালোভাবে লক্ষ্য করার সময় বেশকয়েকটি ব্যানার দেখতে পায়। ইনিয়া নিখোজের পোস্টার দেখে চোখের পানি ফেলে। ইশমাম বুঝতে পারে ইনিয়ার হাসবেন্ড ইনিয়াকে পাওয়ার জন্য কত আকুলতা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলে এভাবে পুরুষ্কারের বিনিময়ে প্রিয়তাকে কাছে পেতে চায়। ইশমাম ভালোভাবেই বুঝতে পারলো হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই ইনিয়া আর ঘর থেকে বাহির অব্দি যায়নি। তাহলে মানুষ বা পুলিশ তাকে খুঁজে পাবে কি করে? ইশমাম প্রিয়া ও সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক রাহার রাহার জন্য চোখের পানি ফেললো এই পোস্টার দেখে। কিন্তু এভাবে সার্থপর হয়ে ইনিয়াকে তো আর বেঁধে রাখতে পারবে না। তাই ইশমাম ঠিক করলো ইনিয়ার সঙ্গে চরম সত্যির মোকাবিলা করে তাকে নিজ সংসারে পাঠিয়ে দিবে। ইশমাম এই কথাগুলো ভেবেই ইনিয়ার রুমে ঢুকে। ইনিয়া রাহাকে কোলে আদো আদো কথা বলে আদর করছিলো। ইশমাম নার্ভাসনেস কাটিয়ে ইনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,,

“ কি ব্যাপার আপনি উঠে গেছেন? ”
“ বাবু ঘুম থেকে তুলে দিছে। দুধ দিলাম কিছুতেই ঘুমাচ্ছে না এখন। তাই বাবুকে কোলে নিয়ে আছি। কিন্তু আপনাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে? কোথায় থেকে আসলেন? ”
“ ইশমাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, জোড়ে নিঃশ্বাস টেনে নিলো, এরপরে ইনিয়াকে বললো আজ আমি একটা কথা বলতে চাই। ”
“ কি কথা বলুন? ”
“ আপনাকে আপনার হাসবেন্ড খুজছে। দু লক্ষ্য টাকার ঘোষণাও দিয়েছে। একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এরকম করতে পারে বুঝছেন তো? ”

ইশমামের কথা শুনে ইনিয়া অবাক হয়। এরপরে বলে আমি ভালোবেসেছিলাম একজন চরিত্রবান, ঈমানদার লোককে। কিন্তু সে আমার সঙ্গে চিট করেছে। আমি দুচরিত্রবান লোকের কাছে ফিরতে চাইনা। এই কথা শুনে ইশমাম বলে কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিতে চাই আপনাকে।

এই কথা শুনে ইনিয়া রেগে যেয়ে বলে, আপনি সোজাভাবে বলতে পারতেন আমি ও আমার মেয়ে আপনার ঘাড়ের বোঝা। আমরা এমনিতেই চলে যেতাম। এভাবে না বললেও পারতেন। তবে আমি কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি আপনি আমাকে ও আমার বাচ্চাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমরা আজই চলে যাব, আপনি নিশ্চিতে থাকুন।

“ কিন্তু রাহা কোথাও যাবেনা? ”
“ কেনো? ”
“ কারণ রাহা আমার ও প্রিয়ার সন্তান। আপনার বাচ্চা নয়। ”

ইশমামের এই কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলো না ইনিয়া। তাই জিজ্ঞেস করলো তাহলে আমার মেয়ে কোথায়? ইশমামের চোখের কোণে পানি জমে যায়। তবুও ইনিয়াকে বলে আপনার সন্তান মারা গেছে। আমাকে ক্ষমা করবেন আপনার অনুমতি না নিয়েই আপনার সন্তানকে মাটি দেওয়ার জন্য। ইনিয়া হাসতে থাকে আর বলে আপনি পাগল হয়েছেন, নাকি খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন। এভাবে সকালবেলা কিরকম জোকস শুরু করেছেন? ইশমাম কঠোর হয়ে সেই গাইনী ডক্টরকে ফোনকল করে। গাইনী ডক্টর ফোন ধরে।

“ আমাকে ক্ষমা করবেন ম্যাডাম। সকালবেলায় আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য আমাকে চিনেছেন আমি ইশমাম মির্জা। ”
“ জ্বি! জ্বি! চিনেছি বলুন। ডক্টর কখনো ফোনকল পেয়ে ডিস্টার্ব হয়না। ”

এরপরে ইশমাম সেদিনকার সব কথা গাইনী ডক্টরকে বলে। গাইনী ডক্টর ইশমামকে বলে ফোনটা ইনিয়ার কানে দিন। ইশমাম ইনিয়ার কানে ফোন দেয়। ইনিয়া ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলে। গাইনী ডক্টর সেদিনকার রাতের কথা সব বুঝিয়ে বলে ইনিয়াকে। ইনিয়া সত্যিটা জেনেই কান থেকে ফোন ফেলে দেয়। দাড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছিছিলো না ইনিয়া। দুপায়ের শক্তি একদম নুইয়ে যায়। ইনিয়া ফ্লোরে বসে চিৎকার করে ও আল্লাহ।

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৮

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৮

চৈত্র মাসের সূর্যের রোদ ছড়িয়েছে চারদিকে। জানালা ভেদ করে রোদের কিছু অংশ ইনিয়ার চোখে মুখে পড়ে। ইনিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় । চোখের পাতা পিটপিট করছে। রোদের তেজ ছড়িয়ে পড়ার কারণে চোখজোড়া ভালো ভাবে খুলতে পারছেনা। এরজন্য ইনিয়া খুব দ্রুত বিছানা থেকে উঠে পড়ে। উঠে দেখতে পায় পাশে রাহা ঘুমিয়ে আছে। ইনিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বলে সারারাত আম্মুকে জ্বালিয়ে এখন ঘুমানো হচ্ছে। রাহার নাকটা একটু টান দিয়ে বলে পঁচা মেয়ে। বয়সতো বেশি নয় এরপরেও সারারাত শুধু দুষ্টুমি। আম্মুকে একটুও শান্তিতে ঘুমাতে দেয়না। এমন সময় ইশমাম এক কাপ চা এনে বলে গুড মর্নিং বাবুর আম্মু। এই নেন আপনার চা।

ইনিয়া খুবই অবাক হয়। চোখজোড়া বড়বড় করে ইশমামকে দেখে, এরপরে বলে আপনি আমার জন্য চা বানিয়েছেন?
“ হ্যা আপনার জন্যই তো। ক্যান আমার বানানো চা খাবেন না? ”
“ না এটা অপ্রত্যাশিত ছিলো। ”
“ প্রত্যাশা বলে কিছুই হয়না। আর যার কাছে যত প্রত্যাশা রাখবেন ততই ঠকবেন। তাই প্রত্যাশা ছাড়া যা পাওয়া যায়, তা স্বাভাবিকলি গ্রহণ করতে হয়। আমি কিন্তু অনেক ভালো চা বানাই খেয়ে বলুন কিরকম বানাইছি? ”

ইনিয়া চায়ের কাপে চুমুক দেয়। মুখের মধ্যে দিয়েই বলে আপনি কিভাবে জানলেন? আমি চায়ে কম চিনি খাই!
“ ইশমাম মাথা নিচু করে ফেলে, এরপরে বলে প্রিয়াও চায়ে কম চিনি খেতো! ”

ইনিয়া বুঝতে পারে ইশমাম চা বানিয়েছিলো প্রিয়ার জন্য। তাই ইনিয়া আর কিছু না বলে সুন্দরমতো চা খায়। কারণ আরও কিছু প্রশ্ন করলে ইশমাম কষ্ট পাবে। ইশমাম ইনিয়ার চা খাওয়া দেখে কল্পনায় প্রিয়াকে দেখে। কারণ ইনিয়া যেভাবে চা খাচ্ছে প্রিয়াও ঠিক সেইমভাবে চা খেতো। এভাবে ড্যাবড্যাব করে ইশমাম ইনিয়াকে দেখছে দেখে ইনিয়া প্রশ্ন করে এভাবে কি দেখছেন?
“ আপনাকে!”
“ আমাকে এভাবে দেখার কি আছে? ”
“ ইশমাম ইনিয়ার কথায় বিপাকে পড়ে। চোখের কোণে পানি জমে যায়। কথা ঘোড়ানোর জন্য ইশমাম ইনিয়াকে বলে বাবুকে দেখছি।হয়তো আপনি খেয়াল করেছেন আপনাকে দেখছি। আসলে তা নয়। সারারাত কত কান্না করে মেয়েটা আপনাকে আজকে রাতে বড্ড জ্বালিয়েছে। এখন কিভাবে ঘুমাচ্ছে। একদম নিষ্পাপ ফেরেশতা লাগছে। ”
“ বাচ্চারা ফেরেশতায় হয়। ”
“ আচ্ছা আমি যে বাবুর নাম রাহা রেখেছি। আপনি কিছু মনে করেন নিতো? ”
“ না! মনে করার কি আছে? অনেক সুন্দর নামতো। ”

ইশমাম জানালাটা লাগিয়ে দেয়। এরপরে ইনিয়াকে বলে বাইরে প্রচন্ড চৈত্র্যর রোদ। জানালা ভেদ করে রুমে তাপ দিচ্ছে তাই লাগিয়ে দিলাম। কারণ বাবু ঘুমাচ্ছে। আমি চাইনা বাবুর ঘুমটা ভাঙুক। আপনি আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। আমি নাস্তা রেডি করে আপনাকে ডাক দিলে খেতে আসিয়েন।

এই কথা শুনে ইনিয়া বলে আজ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো আমি আপনাদের বাড়িতে। অথচ সব কাজ আপনি একাই করেই যাচ্ছেন আমাকে কিছুই করতে দিচ্ছেন না। এমনিতে আপনি হলেন আমার আশ্রয়দাতা, এভাবে বসে বসে আর খেতে পারছিনা। তার উপর কোনো কাজই করতে দিচ্ছেন না। আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিবেন?

ইশমাম এই কথা শুনে ইনিয়াকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে যতদিন না বাবু বড় হচ্ছে ততদিন আপনার ছুটি নাই। আই মিন ঘরের বাইরে বেড়ানো বন্ধ। এই কথাটা শেষ করে ইশমাম সেখান থেকে চলে যায়।

ইনিয়া ইশমামের ছুটির কথা শুনে ভাবনায় পড়ে গেলো। মনেমনে বললো ওনি এভাবে বললো ক্যান? ওনার কথার কিছুই বুঝলাম নাতো! এরপরে ইনিয়া ভাবলো হয়তো তার বাবুকে সদ্য হারিয়ে যাওয়া মেয়ের মতো পিতৃসেহ্ন করছে রাহাকে। এরজন্য এভাবে বললো। কিছুদিন গেলে ওনি নিজে থেকেই কাজের কথা বলবেন। বসে বসে আর বা কতই খাওয়াবে? হঠাৎ রাহার কান্নার ভাজ পায়। ইনিয়া শুয়ে পড়ে রাহাকে বলে বাবু তোমার ক্ষুধা লাগছে? এইতো আম্মু চলে এসেছে বলে রাহাকে দুধ দেয়। রাহা দুধ খাওয়া শুরু করে। রাহার মুখখানা দেখে জুনায়েদের কথা মনে পড়ে যায়। জুনায়েদের কথা মনে পড়তেই ইনিয়ার চোখ ভিজে যায়। জুনায়েদকে প্রশ্ন করে তোমার যেহেতু নিমুকেই ভালো লাগতো তাহলে আমাকে এতো ক্যানো ভালোবাসলে জুনায়েদ। আমাকে ক্যান মিথ্যা স্বপ্ন দেখাইলা। কি দোষ ছিলো জুনায়েদ আমার? এইযে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। আমি শিউর এখন রাহাকে দেখলে তুমি আমার কাছে আসতে চাইবে। কিন্তু আমি চাইনা তোমার জীবন দুনৌকার মাঝে বহবান থাকুক। তাইতো আমি চলে এসেছি জুনায়েদ। তুমি যে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলছো। ইসলামি বিরোধী কাজ, সেই জায়গায় আমার থাকা শোভা পায়না।

❝ তুমি আজ ভুলেই গেছো,
গাঢ় সবুজ পাতায় বিচ্ছেদের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছো প্রিয়তম !
ইট পাথরের এই শহুরে অলিগলিতে আঙ্গুলে আঙ্গুল রেখে পথ চলাটা,
তুমি কত সহজেই ভুলেই গেছো। অথচ আমার ভুলে থাকা হয়নি !
আমাদের দেয়া অজস্র কথা ছিল, তুমি তা রাখোনি !!
কথা সত্য যে, কেউ কেউ কথা রাখে না, কেউ কেউ ভুলে পড়ে, কেউ ভুলে যায়। কেউ কেউ ভুলে থাকার অভিনয় করে একদিন নক্ষত্রের মতো হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়াটাই নিয়তি।
তীল তীল করে গড়ে উঠা সম্পর্কের সৌধ একদিন হঠাৎ করেই এভাবেই ভেঙ্গে যায়। মায়া মমতায় জড়িয়ে থাকা সম্পর্কে বিচ্ছেদ অবধারিত চলে আসলে আমরা মুষড়ে পড়ি। অনেকের বেঁচে থাকার স্পৃহা চলে যায়। কেউ কেউ ওপারে চলে যায় বিচ্ছেদের কঠিন ধাক্কা সামলে উঠতে না পেরে। অথচ এমন হবার কথা নয়, এমন হবার কথা ছিল না। ❞

কথাগুলো ভাবতেই চোখ দিয়ে অশ্রুকনা গালবেয়ে পড়তে থাকে। রাহা ঘুম যায়। রাহার কপালে চুমু দিয়ে বলে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

____

“ এই তোমার এতবড় সাহস আমার মেয়ের হাত পুড়িয়ে দাও? ”
“ সাহস তো আপনাদের থেকে পাওয়া। মনে নেই অতীতে কি করেছিলেন? ইনিয়ার সঙ্গে। ”

লিমা রহমানের মনে পড়ে যায়। নিমু একদিন ঠিক এভাবেই ইনিয়ার হাত পুড়িয়ে দিয়েছিলো। লিমা রহমান আমতা আমতা করে বলে এই তুমি কি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো? ভালোবেসে নয়।

লিমার কথা শুনে জুনায়েদ অট্টহাসি দেয়। এরপরে বলে বাহ! আমার শাশুমা তো দেখি বেশ ব্রিলিয়ান্ট! হ্যা আপনি যা ভাবছেন তাই সত্যি। আর আপনার মেয়েকে ভালোবাসবো এই কথা ভাবলেন কি করে? আমি শুধুমাত্র ইনিয়াকে ভালোবাসি। আপনাদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যার যেমন কর্মফল তার ভাগ্যতে ঠিক দুদিন পরে সেইম জিনিস ঘটে। শুধুমাত্র ফারাক সময়ের অপেক্ষা।
“ আমি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিব! তোমার এতবড় সাহস হয় কি করে? আমার মেয়ের জীবনের সঙ্গে খেলা? এই খেলা আমি বের করবো। ”

এই কথা শুনে জুনায়েদ ঠোঁটভাজ করে বলে ও তাই বুঝি। তাহলে এই কথাও আমি পুলিশকে বলবো আপনি একজন খুনি মহিলা। ইনিয়ার আম্মুর খুনি। ইনিয়ার বাবার পা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার পিছনে আপনি দায়ী।

এই কথাগুলো শুনে লিমা মুখের থুথু দিয়ে গলা ভেজায়। এরপরে বলে তুমি এসব কথা বলছো এগুলা ভিত্তিহীন। পুলিশ চায় প্রমাণ, আর এসব কথা বলছো যে, তুমি প্রমাণ করতে পারবে?

“ অবশ্যই পারবো। ”
“ কিভাবে? ”
“ মি. সর্কেল এখানে আসুন তো? ”
“ মি. সর্কেল কে দেখে ভয় পায় লিমা। এরপরে ডক্টরকে বলে আপনি এখানে? ”

মি. সর্কেল বলে আমাকে এখানে এনেছে জুনায়েদ শেখ।

“ কি ব্যাপার শাশুমা? চিনেন এনাকে? ”
“ হ্যা! চিনবো না ক্যান? ইনিই তো তোমার শশুড়ের পার্সোনাল ডক্টর। এই ডক্টরের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে। ”
“ জুনায়েদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে ভূল বললেন শাশুমা। এনার পরামর্শে নয়। বরং আপনার পরামর্শে মি. সর্কেল ভূলবাল ঔষধ দেয়। এরজন্য বাবা ঠিক হচ্ছেনা। আর আমি এগুলার এভিডেন্স যত্ন করে রেখেছি। ”
“ কি বলছো তুমি? আমি এসব করতে যাব ক্যান? ”
“ জুনায়েদ মুচকি হাসি দিয়ে রিভলবার পেছন থেকে বের করে মি. সর্কেলকে তাক করে, এরপরে বলে জীবনের মায়া থাকলে সত্যিটা বলেন। ”

“ স্যার! প্লিজ বন্দুক সরান। হ্যা লিমা ম্যাডাম আমাকে বেশি টাকা দিয়ে এরকম কাজ করতে বলেছে। আমি ডক্টর হয়ে এসব করতে রাজি ছিলাম না বলে আমার বউ বাচ্চাকে মারার হুমকি দেয়। পরে এসব করতে আমি বাধ্য হই। ”

জুনায়েদ মুচকি হাসি বলে শাশুমা আপনি যদি চলেন ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। আমি আগে থেকে বুঝতে পারছি, আপনি এরকম কিছু করছেন হয়তো? তাই বাবার প্রেসক্রিপশন নিয়ে অন্য ডক্টরকে দেখাই। ডক্টর বলেছে বাবাকে যেসকল ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে, এই ঔষধ গুলো আস্তে আস্তে বাবার অঙ্গ প্রতঙ্গ বিকল করে দিবে। এরজন্য সেদিন নিমুকে দিয়ে বাবাকে এই বাড়িতে আনি। আর খুব যত্নের সহিত ঔষধগুলো পাল্টেও দিয়েছি। হয়তো আপনি খেয়াল করেন নি। আর আপনি বিষ প্রয়োগে ইনিয়ার মাকে মেরেছেন তার বড় প্রমান ইনিয়ার বাবা। কারণ ওনি যখন সত্যিটা জানতে পারে তখন আপনি ওনাকে আস্তে আস্তে শেষ করার প্রচেষ্টায় নেমেছেন। কিন্তু একটা কথা কি শাশুমা ওনি কিন্তু এখনো কথা বলতে পারে। এখন বলেন, হবেন পুলিশের শরণাপন্ন। হলে হোন বিপদ কিন্তু আপনার দিকেই ধেয়ে আসবে।

লিমা রহমান ঢোক গিলে আবারও। এরপরে বলে তুমি আসলে কি চাও? কিসের জন্য আমার মেয়ে ও আমার সঙ্গে এরকম করছো?

“ অপমানের প্রতিশোধ। আমি যখন নিমুকে বিয়ে না করে ইনিয়াকে বিয়ে করে ঘরে তুলি আপনি বলেছিলেন আমি ছোটলোক। আর শৈশব অব্দি আমার ইনিয়াকে জ্বালানোর প্রতিশোধ নিতে চাই আমি। আমার শাশুড়ীর সংসারে ঢোকার প্রতিশোধ। এক মেয়েকে মা ইতিম করার প্রতিশোধ। এক বাবাকে পঙ্গু করার প্রতিশোধ। ”

” কিন্তু তুমি যারজন্য এসব করছো, সে তো তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। মন বলছে এতদিনে মরেও গেছে। হুদাই মরীচিকার পিছনে না ছুটে আমার নিমুর সঙ্গে সংসার করো। দেখবে তুমিও সুখী আমরাও সুখী। ”

“ জুনায়েদ লিমাকে বলে আপনি ঘর থেকে বের হয়ে যান। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিনা। আমার ক্লান্ত লাগছে এখন। ”

লিমা রহমান ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বের হয়। জুনায়েদের মুখ দিয়ে আবারও রক্ত বের হয়। জুনায়েদ রক্ত দেখে দ্রুত রুমাল দিয়ে মুছে ফেলে।

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৭

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#পর্ব_০৭
#রিয়া_জান্নাত

যতবার ইনিয়ার ডায়েরিটা পড়ে,ততবারই চোখে ভিজে জুনায়েদের। ডায়েরিতে এতো যন্ত্রণার কথা লেখা থাকতে পারে জুনায়েদের ভাবনার বাইরে ছিলো। একটা মেয়ে এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে, ইনিয়ার ডায়েরি না পড়লে জুনায়েদ জানতেই পারতো না। পৃথিবীতে কত রকমের মানুষ, তাদের মধ্যে কত ধরনের চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে। তা শুধু মাত্র সেই জানে। ইনিয়াকে মিস করছে খুব জুনায়েদ। তাই ইনিয়ার ডায়েরি পড়ে ভাবনার জগতে বিলীন হলো। ডায়েরিতে ইনিয়া তার আম্মুকে যেই কথাগুলো লিখেছিলো সেই কথাগুলোর কিছু অংশ পড়লো।

আমার মা,

তুমি নিশ্চিত পরপারে ভালো আছো? আমি তোমার জন্য দোআ করি মা আল্লাহ তালা তোমাকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করুক। মা ছয় বছর বয়সে, তুমি আমাকে পৃথিবীতে একা করে চলে গিয়েছো। তখন পৃথিবীর নির্মম নিয়মগুলোর সঙ্গে পরিচয় হয়নি। বুঝতাম কেবল ভালোবাসা খেলাধূলা, তোমার আদর, বকা, শাসন পৃথিবীতে সব। কিন্তু মা তুমি যেদিন মারা গিয়েছো তার পরেরদিন আমার জীবনে কাল নেমে আসলো। বাবা চল্লিশদিন কি? তোমার মৃত্যুর তিনদিন পার না করেই নিয়ে আসলো আরেক মা। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম জানো, যখন দেখলাম ওই আন্টি মানে বাবার পিয়ে লিমা আন্টিকে আম্মু বলে পরিচয় করে দিলো। জানো মা, সেইদিন আরও কঠিন সত্যির মুখোমুখি হয়েছিলাম। যখন বাবা নিমুকে দেখিয়ে দিয়ে বললো এটা তোমার ছোট বোন নিমু। বয়স তখন তিন বছর হবে নিমুর। অবুঝ বয়স বুঝতাম না কিছুই আমিও তাকে মা হিসাবে আপন করে নেই। আর নিমুকে খেলার সঙ্গী বানিয়ে ফেলি। বেশ খুশিই ছিলাম। কিন্তু দিন যত অতিবাহিত হয় ইনিয়ার কপাল দুভোর্গ নেমে যায়। সৎ মা লিমা রহমান আমাকে মারধর করতো খুব। কথাগুলো বাবাকে বলেছিলাম বাবা লিমাকে বকা দিছে। কিন্তু এর বিনিময়ে পরেরদিন বাবা অফিস গেলে আমার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করতো লিমা রহমান। যতই বাবাকে বলি, তারপরেরদিন কষ্ট ততই দ্বিগুণ হতো। বাবা শুধু লিমাকে বকাই দিত কিছু বলতো না। এরপরে থেকে বাবাকে সব বলা বন্ধ করে দিছি। জানো মা কতরাত একা একা কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি কিন্তু আমার খোঁজ বাবা নিতেও আসতো না। ভাত দিত না লিমা রহমান। সারাদিন সংসারে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের বিনিময়ে রাতের বেলা পোড়া ভাত খেতে দিত আমাকে। বাড়িতে কত ভালো ভালো রান্না হতো কিন্তু আমার ভাতে শুধু ডাল, শাক সবজি থাকতো। বয়স যত বাড়লো কষ্ট ততই বাড়তে থাকে। একদিন নিমুর জামা আয়রন করে পুড়িয়ে ফেলায় নিমু আমাকে বেলেন্ডার মেশিন দিয়ে হাত পুড়িয়ে দেয়। এই যন্ত্রণার দাগ পোড়া হয়ে আছে। লিমা রহমান দিতো না ভালো ভালো কাপড় চোপড়, আমার জন্য যদি বাবা কাপড় আনতো সেই কাপড় পরেরদিন নিমু কেড়ে নিত। আমি পড়ে থাকতাম ছেঁড়া ময়লা কাপড়গুলি। এভাবে দিন পার হতো আমার তোমাকে ছাড়া। কিন্তু একদিন লিমা রহমানকে শুনতে বলি তোমার খু’নি এই মহিলা। এই মহিলা তোমার সংসার নিজের দখলে করার জন্য বাবাকে দিয়ে যে খাবার পাঠাতো সেই খাবারে নাকি বি’ষ থাকতো। একটু একটু করে বি’ষ প্রয়োগে মেরেছিলো তোমাকে। অথচ আমি জানতাম তোমার হার্ট ফেলুয়ার হয়ে মারা গিয়েছো। জানিনা তুমি মরার আগে জেনেছিলা কিনা? তোমার স্বামী আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে অন্যত্র তোমাকে বিয়ের দুই বছর পরে। আমি যখন তোমার কোলজুড়ে আলো করে আসলাম তা দেখেও বাবা কিভাবে পারলো দ্বিতীয় সংসার গড়তে। এই দ্বিতীয় সংসারের জন্য আজ আমি এতো দুঃখী। থাক মা অনেক কথা বলে ফেললাম। আমার জন্য দোআ করবে খুব দ্রুত যেনো তোমার সঙ্গে মিট করতে পারি।

ইতি তোমার মেয়ে
ইনিয়া

জুনায়েদের চোখের পানি গালবেয়ে পড়ছে। জুনায়েদ মনে মনে বলে তোমার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিব আমি। তুমিতো পারবেনা, এরপরে পাতা উল্টাতে উল্টাতে ইনিয়ার সুখের চিঠিখানা দেখলো।

প্রিয় পৃথিবী

বুঝ হওয়ার বয়সে আম্মুকে কেড়ে নিয়েছেন। জীবনে অনেক বছর অপমান লাঞ্ছিত হয়েছি। আমি সিন্ডারেলার গল্প পড়েছি কিন্তু নিজেকে কখনো সিন্ডারেলা ভাবিনি। সত্যিই আমার মতো কুৎসিত মেয়েকে যে কারো ভালো লাগতে পারে ভাবিনি। আমার মন বলছে সেই পুরুষ আমাকে সিন্ডারেলার মতো নতুন জীবন দিবে। কখনো ভাবতে পারেনি নিমুর মতো সুন্দর মেয়েকে রেখে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে পারে সে। জানি আজকে সৎবোন আর লিমার অনেক মার খাবো। কিন্তু এই মার খাওয়ার মধ্যেই শান্তি পাবো। স্বপ্ন দেখিয়েছে সেই পুরুষ সে নাকি আমাকে বিয়ে করবে। আচ্ছা এটা কি সত্যি, সত্যিই কি তিনি আমাকে নতুন জীবন দিবে? চরম কৃতজ্ঞ থাকবে সেই পুরুষের উপর। আল্লাহ হাফেজ।

ইতি কষ্টের শেষ চিঠি।

এই চিঠিখানা পড়েই জুনায়েদের মনে পড়ে গেলো ইনিয়ার সঙ্গে প্রথম মিটের কথা।

চা নিয়ে এসেছে এক মেয়ে। চা গুলি টি টেবিলে রাখলো। এরপরে পান এনে রাখলো। আমি তাকে বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম। শ্যামবরণ একটি মেয়ে রুপচর্চা না করাতেই শরীরে রঙ এভাবে ছিপকে গেছে। বামগালে একটি বড় তিল। চুলগুলো কোকরানো। হয়তো ভালোভাবে যত্ন করে না নিজের। পরনে একটি মলিন কাপড়। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি এই বাড়িতে কি কাজ করেন?
“ মেয়েটি ইষৎ হেসে উত্তর করলো, এটা আমার বাড়ি ভালোবেসে কাজ করি টুকটাক। আমি এই বাড়ির বড় মেয়ে। ”

ইনিয়ার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারলাম না। এই বাড়ির মেয়ে অথচ নিমুর মতো পরিপাটি নয় ক্যান? ব্যবসায়িক সূত্রে নিমুর বাবার সঙ্গে পরিচয়। আস্তে আস্তে বিয়ে অব্দি চলে আছে। কিন্তু এই বাড়িতে বেশ কয়েকবার আসলেও এই মেয়েকে কখনো দেখতে পায়নি আগে।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সেই হৃদয়হরণ করা হাসি আসলেই এই বাড়ির বড় মেয়ে আফজাল রহমানের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ইনিয়া রহমান। তার মুগ্ধ করা হাসি আমার হৃদয় কেঁড়ে নিয়েছিলো। আফজাল রহমানকে প্রস্তাব করে বসি। আমি আপনার ছোট মেয়েকে নয় বড় মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আফজাল সাহেব আমার প্রস্তাব বেশ ভালোভাবেই নেয়। তিনি খুশির ঠ্যালায় কেঁদে ফেলে। জড়িয়ে ধরে আমাকে।

খুব ধুমধামের সহিত আমাদের বিয়ে দেন আফজাল রহমান। আফজাল রহমান ইনিয়াকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলে, বাবা হিসাবে আমি ব্যর্থ। আমার মেয়েকে যত্ন করে মানুষ করতে পারেনি। সবদেখেও না দেখার ভান করে ছিলাম। এইবার এই ইতিম মেয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমার হাতে তুলে দিলাম। ব্যাচ তক্ষুনি অপমান করে বসে লিমা রহমান তিনি বলে ছোটলোকের সবসময় ছোট নজর থাকবে স্বাভাবিক। তিনি এসব বলেছিলেন কারণ নিমুকে রিজেক্ট করে ইনিয়াকে বিয়ে করেছিলাম বলে। এরপরে থেকে নিমুকে স্বাভাবিকলি নিয়ে নেই আমি ও ইনিয়া। কিন্তু বিয়ের তিনবছর হলেও লিমা রহমান যখনি আসে তখনি অপমান করতে আসতো। আর হুমকি দিয়ে যেতো ইনিয়াকে। কিন্তু ইনিয়া সাদাসিধা মেয়ে এতোকিছু জানার পরেও কোনো প্রতিবাদ করতো না এই খু’নি মহিলার ব্যবহারে আড়ালে চোখের পানি ফেলতো।

জুনায়েদ ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেলে। বীরবীর করে বলে ভাগ্যিস তোমার লুকিয়ে রাখা ডায়েরি টা পেয়েছিলাম তাইতো এতকিছু জানতে পারছি। আমি তোমাকে ওই অভিশপ্ত জীবন থেকে নতুন জীবন দিয়েছিলাম। আর আমিই তোমার জীবনের সব কাটা উপড়ে ফেলবো ইনিয়া। তুমি ভাবছো জুনায়েদ খুবই পঁচা লোক? ভাবো ইনিয়া আমি যে তোমার চোখে খুবই খারাপ হতে চাই। এই খারাপ হওয়ার পিছনের কারণটা নাহয় পড়েই জানলে। কিন্তু অভিমান না করে প্লিজ চলে আসো! আমায় কি আমার বাবুকে কোলে দিয়ে বলবেনা এই নাও তোমার ভালোবাসার চিহ্ন। কথাগুলো মনেমনে ভাবতেই জুনায়েদের চোখজোড়া আবার ভিজে যায়। এমন সময় নিমু রুমে আসে। নিমুকে দেখে জুনায়েদ ইনিয়ার ডায়েরিখানা তড়িঘড়ি করে লুকিয়ে ফেলে। রুমাল দিয়ে চোখমুখ মুছে।

“ এই নাও তোমার সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট আয়রন করে আনছি ”
“ ঠিকঠাক মতো ভাজ ফেলতে পারছিস তো? ”
“ জ্বি, তুমিই নাহয় দেখে নাও? ”

জুনায়েদ ভাজ খুলে দেখতে পারে সাদা শার্টের পিঠ বরাবর মাঝ অংশ পুড়িয়ে ফেলছে। জুনায়েদের প্রচন্ড রাগ উঠে। কারণ এই শার্টটা ইনিয়া তার জমানো টাকা দিয়ে ঈদে গিফট করেছিলো। জুনায়েদের মনে পড়লো নিমুর অতীত ইনিয়ার সঙ্গে কি করেছিলো। জুনায়েদ রাগে গিজগিজ করে টেবিল থেকে বেলেন্ডার মেশিন সুইচ অন করে নিমুর হাতে লাগিয়ে দেয়। নিমু চিৎকার করে উঠে

“ কি করছো? আমার হাত যে পুড়ে গেলো! এমন শার্ট আমি কিনে দিতাম। আমি জেনেশুনে পুড়ছি? ”
“ এটা আমার বিশেষ মানুষের দেওয়া উপহার। এরমূল্য টাকা দিয়ে হয়না নিমু। কেমন লাগছে তোর? ”
” জ্বলছে খুব। ”
“ মনে পড়ে অতীতের কর্মকান্ড রিভেঞ্জ নিলাম। যা হাতে বরফ লাগিয়ে নে? ”

নিমু হাত দিয়ে দ্রুত লিমা রহমানের কাছে যায়। নিমু কেঁদে কেঁদে বলে আম্মু আমার হাত জ্বলছে। তোমাদের জামাই আয়রন মেশিন আমার হাত পুড়িয়ে দিছে। এই কথা শোনামাত্রই লিমার মাথায় বাজ পড়ে।

“ এতবড় সাহস ওর আমার মেয়ের হাত পুড়িয়ে দেয়। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন? ”

#চলবে

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৬

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#পর্ব_০৬
#রিয়া_জান্নাত

পরপর সাতদিন হয়ে গেলো কিন্তু জুনায়েদ ইনিয়ার খোঁজ পেলো না। এই শহরের প্রায় প্রত্যেক জায়গাতে ইনিয়ার খোঁজ করেও জুনায়েদ ইনিয়াকে পেলো না। পুলিশকে জানাইছে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা কিন্তু পুলিশ ও খুজে পায়নি ইনিয়াকে। তাই জুনায়েদ আজকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো। জুনায়েদ পুলিশ স্টেশনে আসলো। এসআই আরিয়ানকে এসে জিজ্ঞেস করলো আজ সাতটা দিন পেরিয়ে গেলো আমার অসুস্থ স্ত্রীর কোনো খোঁজ মিললো না। আপনারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন? জুনায়েদের এমন কথায় রেগে যায় আরিয়ান। আরিয়ান জুনায়েদকে বলে আমরা সাধ্যের কমতি রেখেনি গত তিনদিন থেকে। তাছাড়া আপনি ত ভূল করেছেন। আপনার স্ত্রী নিখোঁজ হয়েছে আপনি ত সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইনফর্ম করেন নি? এসেছেন চারদিন পর। আমার মনে হচ্ছে এখন আপনার স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পিছনে আপনার হাত রয়েছে। নাহলে চারদিন পর এসে আমাদের ইনফর্ম করলেন কেনো? আরিয়ানের এমন কথায় জুনায়েদ রেগে যায়। এরপরে আরিয়ানকে বলে বউকে নিখোঁজ করার পিছনে যদি আমার হাত থাকতো, ঘটা করে আপনাদের জানাতে আসতাম না। দিব্যি আনন্দে থাকতাম। আজ সাতটা দিন হয়ে গেলো আমার অসুস্থ বউকে পাচ্ছিনা। আর আপনার সঙ্গে এই ব্যাপারে মিট করতে আসলে আপনি উল্টা পাল্টা মিনিং বের করেন। আপনাকে না বলেছি ইনিয়া শুধু রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে? জুনায়েদের এমন কথায় আরিয়ান বলে শুধু গত তিনদিন থেকে শুনেই যাচ্ছি রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আরে ভাই কিসের জন্য রাগ করছে কারণ টা বলবেন না? জুনায়েদ পুলিশের কথা এড়িয়ে যেয়ে পুলিশের টেবিলে ইনিয়ার একখানা ফটো দেয়। এরপরে পুলিশকে বলে আমার স্ত্রীর ছবি প্রিন্ট করে লাগিয়ে দেন। শহরের প্রত্যেক অলিতে গলিতে আর ছবির নিচে লিখে দেন। ইনি হলো মিসেস ইনিয়া, গত সাতদিন থেকে নিখোঁজ। খোঁজার অনেক চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই যদি কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি এনাকে দেখে থাকেন। তাহলে তাকে নিয়ে থানায় হাজির করলে পুরুষ্কার বাবদ তারজন্য ২ লক্ষ্য টাকা প্রদান করানো হবে। জুনায়েদের এমন বুদ্ধি আরিয়ানের পছন্দ হয়ে যায়। তাই আরিয়ান জুনায়েদকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেনা। আরিয়ান বলে মিস্টার শেখ আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ইন শা আল্লাহ এইবার কাজ হয়ে যাবে থানায় বসে থেকে। টেনশন করিয়েন না, এই নেন ঠান্ডা এক গ্লাস পানি খান। জুনায়েদ ঠান্ডা এক গ্লাস পানি খেয়ে দ্রুত পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসে। আরিয়ান কনস্টেবলদের দায়িত্ব টি বুঝে দেয় সুন্দরমতো। কনস্টেবল ইনিয়ার ছবির পোস্টার ছাপিয়ে শর্তসমূত শহরের প্রত্যেক জায়গাতে লাগাতে থাকে।

জুনায়েদ বাড়িতে ফিরে নিমুর কাছে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত চায়। বাইরে প্রচন্ড গরম। রোদ উঠেছে খুব, চৈত্র মাসের খা খা রোদ জুনায়েদের শরীরে ঘাম ছুটিয়ে ফেলছে। রুমের মধ্য এসির হাওয়া লাগছিলো না জুনায়েদের শরীরে। জুনায়েদ রেগে যেয়ে নিমুকে জিজ্ঞেস করে এই তুমি এসি বন্ধ করেছো ক্যান?

“ নিমু জুনায়েদের হাতে শরবত দিয়ে বলে, আম্মুর এসিতে কষ্ট হচ্ছিলো তাই বন্ধ করে রেখেছি। ”
“ জুনায়েদ রেগে যেয়ে বলে এসি চালু করো। আর তোমার আম্মু আসছে প্রায় সপ্তাহখানেক হলো এখনো যাওয়ার নাম নাই কেনো? আগে তো এইবাড়ির ভাত খাবেনা বলে কতকিছু বলতো? আমি নাকি ছোটলোক এখন এই ছোটলোকের বাড়িতে থাকতে লজ্জা করেনা? ”
“ কি বলছো এগুলা, আগেতো তুমি আফার জামাই ছিলে, তাই মা এসব হিংসায় ভাবতো। এখনতো তুমি আমার জামাই জুনায়েদ। এখন এসব বলবে ক্যান? আম্মু ঘুমাচ্ছে কথাগুলো আস্তেধীরে বলো, মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলে এগুলা শুনলে কষ্ট পাবে। ”
“তো পাক না তোর মা কষ্ট? তোর মায়ের জানা উচিত অন্যকে অপমান করলে সেই অপমান নিজের গায়ে একদিন প্রতিশোধ রুপে লাগে। ”

“ নিমু কথা ঘোড়ানোর জন্য এসি অন করে দেয়। এরপরে জুনায়েদকে বলে তুমি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নাও। আর কাপড়গুলি বাথরুমে রাখিও নাহলে তিলা ধরে নষ্ট হবে সাদা শার্ট। ”
“ জুনায়েদ ঠান্ডা শরবতে মুখে দিয়ে ওয়াক থু করে ফেলে দেয়। এরপরে নিমুকে বলে এটা কি বানিয়েছিস? এক গ্লাস শরবত ও ঠিকমতো বানাতে পারিস না? লবন কই শরবতে? চিনির পরিমাণ এতো ক্যানো? ”
“ নিমু বলে আমিতো চেক করে এনেছিলাম জুনায়েদ। সবইতো ঠিক ছিলো? ”

জুনায়েদ নিমুর এমন কথায় রেগে যেয়ে পুরো শরবতের পানি নিমুর মুখে ছিটিয়ে দেয়। এরপরে নিমুকে বলে, তুই জানিস না আমি মুখে মুখে তর্ক পছন্দ করিনা? এরপরেও তুই মুখে মুখে তর্ক করিস। বিয়ের আগেতো মর্ডান মর্ডান ড্রেস পড়ে ছেলেদের নজর কাড়তি। সংসারের কাজ কিছুই শেখায় নাই তোর মা? আমাকে বিয়ে করেছিস সংসারের কাজ ভালোমতে শিখেক নাহলে তোর জীবন জাহান্নাম করে দিব আমি।
“ নিমু জুনায়েদকে বলে জাহান্নামের আর বাকি রাখছো কই? গত পাচদিন থেকে তোমার কোনোকিছু ভালো লাগেনা আমার। কথায় কথায় তুই তোকারি, জিনিস ছুড়ে ছুঁড়ে গায়ে হাত তুলো। কখনো ভেবেছিলাম নিমুর এইদিন আসবে। যেই নিমু ছেলেদের হর্ণি করে দিত। সেই নিমুর দশা এখন গৃহবধূ। ”
” আবার কথা বলছিস? সামনে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি আরেক গ্লাস শরবত দ্রুত বানিয়ে আনবি? ”

নিমু জুনায়েদের হাতে থাকা গ্লাসটা নিয়ে চলে যেতে লাগে। তখনি জুনায়েদ বলে এই শুন নিমু তোর মা দেখছি আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার নাম গন্ধ নাই। শশুড় মশায় প্যারালাইজড, তোর বাবাকে আর কতদিন মানুষ দেখবে? তোর বাবাকেও আনার ব্যবস্থা কর। নাহলে খুব দ্রুত বাবা হারা হয়ে যাবি। নিমু এতোসব ক্যাচালের মধ্যে বাবার কথা এভাবে ভাবেই নি। এখন নিমুর রাগ হচ্ছে তার মায়ের উপর। নিমু হনহন করে চলে যায়। জুনায়েদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে উপরে চলে আসে। আর মনেমনে বলে তোদের মা মেয়ের জীবন জাহান্নাম করবে এই জুনায়েদ। সবকিছুর রিপিট হয় তোদের বুঝাবে হারে হারে। ইনিয়ার ছবিখানা বের করে বলে সুইটহার্ট মিস করছি। আমি শিউর আমাদের বাবু চলে এসেছে তোমার কোলে। এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না প্রাণপাখি চলে আসো না বাবুকে নিয়ে। বাড়িতে কোন সার্কাস হচ্ছে একটু দেখে যাও না।

____

হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ইনিয়া আজ দুদিন হলো। এখন অনেকটা সুস্থ ফিল করছে ইনিয়া। ইশমামের বাড়িতে এসে অবাক হয়ে গেছিলো ইনিয়া। কারণ ইনিয়া সেই সংসার ত্যাগ করে চলে এসেছে? ইশমামের সংসার টা ঠিক সেভাবেই সাজানো গোছানো। কোনো ঝামেলা নাই। ইনিয়ার খুব কষ্ট হয়েছিলো প্রিয়ার অকালমৃত্যুতে। ইনিয়া সবকিছু ইশমামের মুখে শুনে অবিরত চোখের পানি ফেলছে। একদিকে স্ত্রী হারানোর বেদনা অন্যদিকে তাকে নতুন জীবন দেওয়া। একজন পুরুষ বলেই এতো নিঠুর মনের হতে পারছে। ইশমামের জায়গায় ইনিয়া নিজেকে কল্পনা করলে ইনিয়া নিজেকে বিগ জিরো দিত। কারণ নিজের প্রিয় জিনিসকে হারিয়ে ইনিয়া কখনো অন্যকে নতুন জীবন দিতে পারবো না। ইনিয়া নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছে লাইফে এরকম বন্ধুর দেখা পেয়ে। কিন্তু ইশমামের মুখের দিকে ইনিয়া দৃষ্টি ফেলতে পারেনা। কারণ লোকটার মুখে হাসি নাই, চোখ সবসময় লাল। এসব কষ্ট ইনিয়া কোনোভাবেই দেখতে পারছেনা।

রাহা কান্না করতেছে। ইনিয়া সম্পূর্ণ রুপে ভাবনার জগতে বিলীন হয়ে গেছে। রাহার কান্না ইনিয়ার কান অব্দি আসছে। রাহার কান্নার শব্দ শুনে ছুটে আসে ইশমাম। এসে দেখে মা সামনে অথচ বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছেনা। ইনিয়ার এমন গা ছাড়া ছাড়া ভাব দেখে ইশমাম কিছুটা কষ্ট পায়। মনেমনে আন্দাজ করে নাড়ির টান নেই বলে রাহার কান্নার ভাজ পেয়েও তাকে আদর করে এখনো কোলে নেয়নি।

ইশমাম গলা খাকাড়ি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে। ইশমামের খাকাড়িতে ইনিয়া ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসে। রাহার কান্নার আওয়াজ কানে পড়ে। রাহাকে দ্রুত কোলে তুলে নেয়। এরপরে রাহাকে বলে কাঁদছো ক্যান মা? এইতো কিছুক্ষণ আগেই পেটভরে দুধ দিলাম তোমাকে? এরই মধ্যে তোমার ঘুম হয়ে গেছে। এতো দুষ্টু কেনো তুমি? আম্মুকে একটুও স্বস্তি দেওনা। পঁচা মেয়ে মানুষ আম্মুকে এতো জ্বালায়।

ইশমাম ইনিয়াকে বলে কিছু মনে করবেন না ইনিয়া। আসলে রাহার কান্নার ভাজ পেয়ে হুট করে নক না করে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি। ক্ষমা করবেন, ভেবেছিলাম আপনি হয়তো রাহার কাছে নেই। এরজন্য রাহা কাঁদতেছে । তাই তড়িঘড়ি করে মেয়ের কাছে এসেছিলাম।

“ এভাবে বলবেন না? এটাতো আপনার বাড়ি। তাহলে আমাকে এসব বলে কুন্ঠিতবোধ করবেন না। আপনার কাছে আমি ও আমার মেয়ে চির ঋণি। জানিনা এই ঋণের মূল্য পরিশোধ করবো কিভাবে? ”
“ এভাবে ভাববেন না। মনে মনে ইশমাম বলে আমিও যে আপনার কাছে চিরঋণি। আমার মেয়ে যে আপনার মতো মা পাবে কখনো কল্পনাই করিনি। আমি যে অপরাধ করে ফেলেছি এখনো আপনাকে সত্যিটা না জানিয়ে। যেদিন সত্যিটা জানবেন, সেদিন কি এভাবে ভাববেন আমাকে নিয়ে? ”

ইনিয়া ইশমামকে বলে কি দেখছেন এভাবে। দয়া করে একটুও বাইরে যান। বাবুর ক্ষুধা লেগেছে।
“ হ্যা! হ্যা! যাচ্ছি। এই কথা শেষ করেই ইশমাম দ্রুত বাইরে চলে যায়। ”

“ ইনিয়ার রাহাকে দুধ দিয়ে বলে, তোমার বাবা থাকলে ঠিক এভাবেই তোমার খোঁজ নিতো মামুনি। কিন্তু তোমার বাবা পঁচা মামুনি। আমি চাইনা সেই পঁচা লোকের সঙ্গে তোমার পরিচয় হোক। এতদিন হয়ে গেলো তবুও সেই লোক তোমাকে আমাকে খোঁজার চেষ্টা করলো না। হয়তো সেই লোক নতুন সংসার নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত আছে যে, তোমাকে আর আমাকে মনেই পড়ছেনা। খাও মা দুধ খাও। ”

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৫

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৫

প্রসব সময়ে আপনি রাস্তায় পড়ে থাকলেন কিভাবে? আমি যদি ঠিক সময়ে আপনাকে হসপিটালে না আনতাম। আপনার কি হতো একবারো ভেবেছেন? আচ্ছা আপনার হাসবেন্ড নাই।

“ ইশমামের করা শেষ প্রশ্নটা ইনিয়ার নরম মনে আ’ঘা’ত করে বসে। চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। ইনিয়া পানিটা আড়াল করার জন্য দ্রুত হাত দিয়ে মুছে ফেলে। এরপরে ইশমামকে বলে নিয়তির কাছে অসহায় হয়ে আমি রাস্তায় পড়ে ছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ছোট করলে ভূল হবে, তাই ধন্যবাদ দিতে চাইনা। আপনি যে আমার নতুন জীবনদাতা। এখন বলুন না আমার বাচ্চাটা কই? আপনার কোলে কি এইটা আমার বাচ্চা । ”

“ ইশমাম ইনিয়াকে জানার জন্য আবারো ইনিয়ার প্রশ্ন এড়িয়ে যেয়ে প্লাটা প্রশ্ন করলো, আচ্ছা বলুন না আপনার হাসবেন্ড কোথায়? আপনাকে যখন পেয়েছিলাম প্রচুর ব্লেডিং অবস্থায়। আচ্ছা তিনি কি ভালো লোক নয়? আপনাকে মেরেধরে রাস্তায় ফেলে রাখছিলো নাকি? ”

“ এই কথা শুনে ইনিয়া ঘাবড়ে যায়। প্রশ্নটা আর এড়িয়ে যেতে পারছেনা। ”

“ ইনিয়াকে ঘাবড়ে যাওয়া দেখে ইশমাম জিজ্ঞেস করে আচ্ছা আমি কি কোনো ভূল প্রশ্ন করেছি? পানি খাবেন? ”

“ ইনিয়া পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায় ইশমামের দিকে। মনেমনে বলে সে তো আমার নতুন জীবনদাতা তার ঋণ ভূলবার নয়। তার এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে ইতঃস্তত করছি। না জানি লোকটা কোনো ভূল ভেবে বসে। ”

“ কি হলো ইনিয়া আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছেন কেনো? ”

“ আমি আমার হাসবেন্ড থেকে দূরে চলে এসেছি। কারণ আমার হাসবেন্ড আমার চোখের সামনে আমার আপন বোনকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে। ইসলামে ধর্মে আপন বোনকে সতীন বানিয়ে রাখা অবৈধ । যতদূর জানি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কগুলো হারাম হয়ে যায়। আমার দুধের বাচ্চাকে বুঝ হওয়ার পর কিভাবে বলতাম এসব ঘটেছে। চাইনি দুধের বাচ্চা তার ছত্রছায়ায় মানুষ হোক। একজন মেয়ে যদি ইচ্ছে করে তাহলে তার সন্তানকে বাবা ছাড়াও পৃথিবীর সৎ শিক্ষার আলো দেখাতে পারে। জগৎ কে প্রমাণ করার জন্যই দূরে চলে এসেছি। আর রাস্তায় গুন্ডাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়ে পড়ে গেছিলাম। আঘাত পাওয়াতে হয়তো ব্লেডিং হয়েছে। ”

“ ইশমাম এরকম কিছু শুনবে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মনেমনে বলে এনার স্বামী বড্ড নিঠুর ভালোবাসা থাকতে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানলো না। এরপরে ইনিয়াকে বলে এখন কোথায় যাবেন ঠিক করেছেন? আপনার বাবার বাড়িতে গেলে যেই সমস্যার জন্য দূরে চলে এসেছেন, সেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে বারংবার। ”

“ বাবার বাড়ি যাই কি করে? ছোট্ট থেকে সৎ মায়ের সকল প্রকার যন্ত্রণা সহ্য করেছি। বাবা অফিস গেলেই যন্ত্রণা দ্বিগুন হতো ইনিয়ার জীবনে। মুখ বুঝে সবটা সহ্য করেছিলাম। বাবাকে কিছু বলতে পারতাম না। কারণ কিছু বললে পরেরদিন ওই মহিলা দ্বিগুণ অত্যাচার করতো! এখন তো বাবা প্যারালাইজড হয়ে আছে। আমি ওখানে যাওয়া মানেই বোঝা। আর জুনায়েদের মুখোমুখি হওয়া। যেই জুনায়েদ একদিন আমাকে সবকিছু থেকে উদ্ধার করে বের করছিলো। নতুন করে বাঁচার জন্য পথ দেখিয়েছিলো। সেই জুনায়েদ যে আমার সঙ্গে এরকম কিছু করবে ভাবতেও অবাক লাগছে। ”

“ তাহলে আপনি এখন যাবেন কোথায়? এই শহরে কি আপনার কোনো রিলেটিভ আছে? ”

“ আপনি যেহেতু আমার এত উপকার করলেন আরেকটি উপকার করবেন? ”
“ কি উপকার? ”
“ আমাকে এই শহরে থাকার জন্য একটা জায়গা খুঁজে দিতে পারবেন? যেখানে আমার বাচ্চাসহ নতুন ভাবে বাঁচতে শিখবো? ”
“ আপনার কাছে কি টাকা রয়েছে? ”
“ আমারতো টাকা নেই? ”
“ টাকা ছাড়া এগুলা আদৌও সম্ভব বলেন? ”

ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এরপরে ইশমামকে বলে আমার বাচ্চা কোলে দিন। জন্ম দেওয়ার পর এখনো তাকে ছুঁইয়ে দেখি নাই। ইশমাম কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো কি বলবে ইনিয়াকে? কারণ ইনিয়া তো ভেবেই বসে আছে ইশমামের কোলে ইনিয়ার বাচ্চা। এই মূহুর্তে চরম সত্যিটা বলবে কি করে ইনিয়াকে? তাই ভেবেচিন্তে কিছু না বলেই ইনিয়ার কোলে ইশমামের বাচ্চা দেয়। ইনিয়া বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর করে বলে আমার মেয়ে হয়েছে। আমার মেয়ে নয়তো আমার মা হয়েছে। ইশমামের বুকে পাথর সড়তে থাকে ইনিয়ার এভাবে আদর দেখে। ইশমাম মূহুর্তের মধ্যেই স্বার্থপর হয়ে যায়। নিজের মেয়েকে সুন্দরভাবে মানুষ করার জন্য ইনিয়াকে প্রস্তাব দিয়ে বসে।
“ আপনি আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে যাবেন? ”
“ ইনিয়া ইশমামের এই কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফেলে। এই মূহুর্তে তার যাওয়ার ও জায়গা নেই। লোকটাকে দেখে তো খারাপ মনে হচ্ছে না। আচ্ছা তিনি এরকম অফার করে বসলেন তার বাড়ির লোক কিছু বলবেনা । তার স্ত্রী কিছু বলবেনা। তাই ইনিয়া ভেবেচিন্তে বলে আপনার বাড়ির লোক আপনার বউ এই বিষয়টি কিভাবে নিবে? ”

“ ইশমাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আমার স্ত্রী গতকাল আমাকে ছেড়ে পরলোকগমন করেছে। ”

“ ইনিয়ার ভাঙ্গা হৃদয় এই কথাটি কিছুতেই মানতে পারলো না। দুচোখ দিয়ে টপাটপ পানি ঝড়ছে। ”

____

আচ্ছা জুনায়েদ তুমি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করো নাই? বিয়ের আগে তো কতো কেয়ার দেখাতে। তোমার শরীরে ঢলে পড়লে কিছু বলতে না। বিয়ের প্রথম দিন একটুখানি আফাকে দেখিয়ে বুকে নিয়ে আদর করলে। এরপরে প্রথমরাত আফাকে খুঁজতেই কাটিয়ে দিলে। এখন আবার তাকে খুঁজতে বের হচ্ছো। এসবের মাঝে আমায় একটু খানিও ভালোবাসছো না। আমার কি ইচ্ছে করেনা নতুন নতুন জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে দুখানা ভালোবাসার কথা শুনতে?

নিমুর এমন কথায় জুনায়েদ মুচকি হাসি দেয়। এরপরে নিমুকে বলে আমি ভাবতেই পারিনি ইনিয়া এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে। আসলে ইনিয়ার পেটে আমার অংশ। আমার অংশকে পাওয়ার জন্য এতো খারাপ লাগছে নিমু।

জুনায়েদের এমন কথায় নিমুর ঠোঁটে হাসির ভাজ ফেলে। নিমু মনেমনে বলে জুনায়েদ সত্যিই ইনিয়াকে ভূলে গেছে। তাহলে আমার তো আর চিন্তা নাই।

এমন সময় নিমুর বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। জুনায়েদ নিমুকে বলে দেখো ত কে আসছে? তোমার আফা আসলে সোজা ভিতরে আসতে বলবে। কোনো প্রশ্ন করবে না।

জুনায়েদের এমন কথায় নিমুর বুক কেঁপে উঠে। মনেমনে বলে তাহলে কি সতীন সত্যি সত্যি চলে আসলো? জুনায়েদ এমন কথা ত আর আন্দাজে বলছে না। মন চাচ্ছে এক্ষুনি তার চুলের মুটি ধরে গালে থা’প্প’ড় দেই।

“ কি হলো নিমু? কলিংবেল বাজতেই আছে তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে। কি ভাবছো এভাবে যেতে পারবা, নাকি আমি যাব? ”
“ নিমু ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এসে বললো যাচ্ছি । ”

নিমুর হৃদপিণ্ডের গতি ধরাস ধরাস করে বাড়ছে যতই কলিংবেলের কাছে যাচ্ছে । ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুলে দেয়। খুলেই নিমু সারপ্রাইজ হয়ে যায়। জড়িয়ে ধরে বলে আম্মু তুমি এভাবে না বলে আমার বাড়িতে?
“ বাহ! আমার মেয়ে নতুন নতুন সংসার পেতেছে আমি দেখতে আসবো না? ”
” জুনায়েদ নিমুকে ডাক দিয়ে বলে কে এসেছে নিমু? ”
“ আম্মু এসেছে জুনায়েদ। ”

জুনায়েদ খানিকটা অবাক হয়। এরপরে নিজে উঠে সদর দরজার কাছে যায়। নিমুর আম্মুকে বলে,
“ কি ব্যাপার শাশুমা? সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠছে? ”
“ এসব কি বলছো জামাই? সূর্য তো প্রতিদিন পূর্বদিকেই উঠে। ”
” না মানে, আগেতো এই বাড়িতে আসতেন না। আসলেও অপমান করতে আসতেন ইনিয়াকে। আজ হুট করে এই বাড়িতে আপনার পা দেখে অবাক হচ্ছি। ”
“ আগের কথা ভূলে যাও জামাই। এখন থেকে তুমি নিমুর হাসবেন্ড। মানে আমার ছেলে। ”
“ জুনায়েদ মুচকি হেসে বলে, এসব করে আমার মন কখনোই পাবেন না। আপনি ভালো করে জানেন। অপমান জুনায়েদ ভূলে না। জুনায়েদ নিমুকে এমনি এমনি বিয়ে করেনি? আপনার প্রতিটা অপমানের বদলা নিতেই জুনায়েদ নিমুকে বিয়ে করছে। ”
“ কি ব্যাপার জামাই? তুমি আগের সব কথা মনে রেখেছো? ওইগুলা ভূলে যাও জামাই। ”
“ তা বললে কি করে হয় শাশুমা। নিমু তোমার আম্মুর চা জল খাবারের ব্যবস্থা করো আমি ইনিয়াকে খুঁজতে যাচ্ছি। ”
“ ও কি ব্যাপার জামাই? আমি আসলাম তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে আর তুমি যাচ্ছো একজন আপদকে খুঁজতে । খুঁজেও কি লাভ হবে? আমার তো মনে হয় গতকাল রাতেই ইনিয়াকে শিয়াল কুকুর ভোজন করছে। ”
” জুনায়েদ নিমুকে বলে তোমার আম্মুকে সংযত ভাবে কথা বলতে বলো নিমু। নাহলে আমার আসল রুপ দেখালে দুজনের কারো জন্য ভালো হবেনা। “

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৪

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৪

প্রিয়ার লাশ দাফন করে এইমাত্র বাসায় ফিরলো ইশমাম।রুমে প্রবেশ করা মাত্রই চোখজোড়া আবার ভিজে উঠে। ওয়াল থেকে প্রিয়ার অ্যালবাম হাতে নিয়ে বলে,,
“ এতো পাষাণী হইলা কিভাবে? আমায় ফাঁকি দিয়ে আগেই চলে গেলে। তাহলে কথা কেনো দিয়েছিলে সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলবে। ”

অ্যালবামের উপর দুফোঁটা চোখের পানি পড়ে। ইশমাম প্রিয়ার ছবিকে প্রশ্ন করে আমি বাবা হতে চেয়েছিলাম তারজন্য তুমি আমার ভালোবাসাকে পর করে দিলে? একবার যদি জানতাম আমার একটুখানি আনন্দে তুমি নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করবে তাহলে নিজের পা’প মুখ দিয়ে খুশির কথা বলতাম না । আমি পাপী প্রিয়া। আমি তোমার মৃত্যুর কারণ। ইশমামের চোখের পানি টপাটপ পড়ছে প্রিয়ার অ্যালবামে। ইশমামের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে । এমন সময় ইশমামের ফোনে আননোন নম্বর থেকে কল আসে। ইশমাম ফোনটি রিসিভ করেনা। অনবরত প্রিয়ার ছবি বুকে নিয়ে বিছানায় বসে কাঁদতে থাকে। কিন্তু আননোন নম্বর থেকে বারবার কল আসে। ইশমাম দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কলটি পিক-আপ করে। দুঃখী দুঃখী গলায় ইশমাম হ্যালো বলে

“ হ্যালো স্যার আমি হসপিটাল থেকে গাইনী ডক্টর বলতেছি। ”
“ ইশমাম বুকভারী করা শব্দ করে বলে কি বলবেন আপনি? ”
“ স্যার এই সময়ে আপনাকে কল করে ডিস্টার্ব করা উচিত নয়। কিন্তু আমি যে অনেক বড় ভূল করে বসছি। একজন ডক্টর হয়ে এরকম না জেনে আপনাকে তথ্য দেওয়া উচিত হয়নি। আমি ভেজাল করে ফেলেছি? ”

“ ইশমাম রুট গলায় বলে, মশকরা করছেন এই সময়ে! দেখুন আমার মন ভালো নেই। আপনারা তো আমার বউ, বাচ্চা কাউকে বাঁচাতে পারেন নাই। এখন কি এই সময়ে আপনার কল করা ঠিক হয়েছে? ”
“ স্যার আপনার বাচ্চা বেঁচে রয়েছে। ”
“ মানে? ( অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে )!”
“ স্যার আমি অন্য রুমে আরেকটি কেইস হ্যান্ডেল করতেছিলাম। আর আপনার বউয়ের বাচ্চা ডেলিভারি করছে অন্য ডক্টর! কিছুক্ষণ পরে আমার কলিগ চলে যায়। কারন তার ডে শিফট শেষ হয়েছিলো। কিন্তু আজকে সকাল বেলা সে বললো এই বাচ্চা এখানে কেনো? এনার গার্ডিয়ান কই। আমি বললাম গার্ডিয়ান তো কেউ নাই। এনাকে যে এনেছিলো তার বউ মারা গেছে। সে তো লাশ নিয়ে দাফন করতে গেছে। সে বললো অদ্ভুত বাচ্চা নেয়নি ক্যান? আমি বললাম তাদের বাচ্চা তো মৃত ছিলো সেই বাচ্চাকে নিয়ে গেছে দাফন করতে। তখন সে বললো পাখির বাচ্চা মৃত ছিলো, প্রিয়ার বাচ্চা জীবিত ছিলো। এইতো কিছুক্ষণ আগেই জানতে পারলাম এই বাচ্চা আপনার ছিলো। আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। ”

“ সত্যি বলছেন আমার বাবু বেঁচে আছে? ”
“ হ্যা আপনি যাকে কোলে নিয়ে রাহা বলে ডেকেছেন সে আপনার বাচ্চা। দ্রুত নিয়ে যান। হসপিটালে দেখার মতো কেউ নাই? বাচ্চা অনবরত কেদেই চলেছে মা ছাড়া। ”
“ ঠিক আছে বলে ফোন কেটে দেয় ইশমাম! ”

ইশমামের মাথায় বাজ পড়লো গাইনী ডক্টরের কথা শুনে। প্রিয়ার ছবি হাতে নিয়ে বলে তোমার শেষ কথাটা তবে সত্যি হলো । তুমি চলে গেলে আর আমাকে উপহার দিয়ে গেলে আমাদের বাবুকে। কিন্তু আমি খুশি হতেই পারছিনা প্রিয়া? তোমাকে ছাড়া বাবুকে আমি মানুষ করবো কিভাবে? সন্তান মানুষ করতে মা লাগে। হুট করেই ইশমামের মনে পড়ে মহিলার কথা যাকে ড্রাইভার নাম দিয়েছিলো পাখি। ইশমাম ড্রাইভারকে কল করে।

“ হ্যালো স্যার। বলুন। ”
“ গতকাল তোমার ম্যামকে আনার পর আমি ওই মহিলার সমস্ত দায়িত্ব তোমায় দিয়ে এসেছিলাম? ব্লাড ম্যানেজ হয়েছে! ওই মহিলার অবস্থা এখন কিরকম? ”
“ জ্বি! স্যার। ম্যানেজ হয়েছে,দেওয়াও শেষ হয়েছে। এখনো সেন্স ফেরেনি। আমি এখানেই বসে আছি। ডক্টর বলছে সেন্স ফিরতে ৪ ঘন্টা লাগবে। সেন্স ফিরলে আপনাকে জানাবো মহিলা রাস্তায় পড়ে থাকলো কিভাবে? ”
“ আচ্ছা ওনি কি সুস্থ হবে? ডক্টর কি বলছে?
“ সব সেন্স ফেরার উপর ডিফেন্ড করছে স্যার। ”
“ আচ্ছা তুমি বসে থাকো আমি আসতেছি। ”

____

সারারাত তো আফাকে খুঁজলে কোথাও পেলে না। এতো টেনশন করছো ক্যানো আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে। আমাদের খুশি থাকার কথা তো জুনায়েদ।

“ জুনায়েদ নিমুর গালে ঠা’স করে থা’প্প’ড় দেয়। আপদ বলছো কাকে? এইটা তোমার বোনের সংসার ছিলো, এখনো আছে। আর তোমার বোনের পেটে আমার বাচ্চা আছে। ডেলিভারির ডেট ঘনিয়ে এসেছে। আমার তো চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। টেনশনের মধ্যে আছি। আচ্ছা নিমু তোমার মুখে এমন কথা শোভা পায় কি করে? কিছুদিন আগ পযর্ন্ত তো তাকে চোখে হারাতে। কেয়ার দেখাতে, তবে কাল রাত থেকে আমি তাকে খুঁজে চলেছি। তুমি আমার সঙ্গে বের হলেনা ভূল করেও। ”

“ তুমি আমাকে বিয়ে করছো জুনায়েদ। এই কথাটি কি তোমার মনে আছে? গতকাল আমাকে বিয়ে করে সারারাত প্রাক্তনকে খুজে বাড়ি ফিরলে। বাসররাত ছিলো আমার, তুমিতো জানো বাসররাত নিয়ে একটা মেয়ের কত প্লান থাকে। আমার সব প্লান মাটি হয়েছে যারজন্য তাকে খুঁজা আমার জন্য ন্যাকামি ছাড়া কিছু না ”

” ষিহ নিমু। এক বাপের দুই মেয়ে। শুধুমাত্র মা আলাদা হলে কতটা বৈশিষ্ট্যর পরিবর্তন আসে তোমাকে না দেখলে জানতামই না। আমি তোমাকে বিয়ে করছি ঠিক আছে। কিন্তু কখনো এই সংসারে রাখার জন্য বিয়ে করেনি? ”

“ তাহলে আমি কোথায় থাকবো? তুমি যেখানে থাকবে আমি সেখানেই থাকবো। ”

“ এই কথা যেহেতু বললে তাহলে কাল সারারাত আমার সঙ্গে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু তুমি ছিলেনা। ”

“ এইযে জুনায়েদ কোনো মেয়ে চায়না সংসারে সতীন রাখতে। যেই আপদ নিজে থেকে গেছে তাকে খোঁজা অর্থহীন। পুরনো সব ভূলে আমরা নতুন করে সংসার বাধি জুনায়েদ। ”

“ সংসার বাঁধার জন্যই তো বিয়ে করেছি তোমাকে। কিন্তু ইনিয়ার পেটে আমার বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাকে কখনো অস্বীকার করতে পারবে? সে কিন্তু আমার অংশ। তাই চিন্তাতো হয়। তোমাদের বাড়িতেও যায়নি! এই শহরে অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার তাকে খোঁজা স্বাভাবিক নয় কি? ”

“ হঠাৎ জুনায়েদের মুখে এমন স্বাভাবিক কথা শুনে নিমু কিছুটা হালকা হয়। মাথা নামিয়ে জুনায়েদ কে বলে আমার আম্মাতো কখনো ইনিয়া আফাকে ফেলে দেয়নি। তাহলে তোমার মনে হয় আমি তোমার অংশকে ফেলে দিব? তোমার জন্য সব করতে পারি জুনায়েদ। ”

“ জুনায়েদ গলা খাকারি দিয়ে নিমুকে বলে এক কাপ কপি হবে নিমু? ”
“ জ্বি! তুমি একটুখানি অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি আনছি। ”

নিমু কফি বানাতে কিচেন রুমে যায়। ওখানে যেয়ে তার আম্মাকে ফোন দেয়। লিমা রহমান ফোন তুলে বলে হ্যা নিমু বল।
“ মা শুনছো জুনায়েদ বাড়ি ফেরে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। জুনায়েদ ইনিয়ার জন্য একটুও আপসেট নয়। ”
“ শুন! ছেলে মানুষের বিশ্বাস করতে নেই। ইনিয়া ফেরার আগেই সংসার টা দ্রুত আঁচলে বেঁধে ফেল। দেখিয়ে দে তুই আমার মেয়ে। ঠিক কুড়ি বছর আগে আমি যা করেছি তুইয়ো তাই কর। ”

“ মা ইনিয়ার বাচ্চাকে যাতে জুনায়েদ অস্বীকার করে? এই ব্যবস্থা কি করে করবো? ”
“ তুই দ্রুত বাচ্চা নিয়ে ফেল। দেখবি জুনায়েদ একাই ইনিয়ার বাচ্চাকে ভূলে যাবে। আর শোন জুনায়েদকে চোখে চোখে রাখবি। আমাদের জীবন থেকে ইনিয়া নামক কাটা দূর কর। যতদূর জানি ইনিয়া আত্মসম্মানি মেয়ে এতো সহজে ফিরবে না। আর দোআ কর ওই মেয়ে যেনো মরে যায়। এখানেও আসেনি কোথাও তো আর যাওয়ার জায়গা নেই। ”
“ তাই যেনো হয় মা। আচ্ছা মা ফোনটা রাখি। জুনায়েদ কে কফি দিতে হবে। ”
“ ঠিক আছে। ”

জুনায়েদের কাশী শুরু হয়। জুনায়েদ বেসিনে দৌড়ে যায়। বেসিনের পানি ছেড়ে কফ ফেলে দেয়৷ কফ দিয়ে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ রক্ত আড়াল করে টিস্যু দিয়ে দ্রুত মুখ মুছে ফেলে। পিছন ঘুড়ে ভূত দেখার মতো চমকে যায়।
“ তু তু তুমি নিমু! কখন আসলে? ”
“ বাহ। আমার জামাই কফি চেয়েছে। কফি এনে দেখি তুমি সোফায় নাই? বেসিন থেকে কাশীর শব্দ যাচ্ছিলো তাই এখানে কফি নিয়ে আসলাম। দেখছো কাল রাতে এভাবে বের হয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলছো। ”

জুনায়েদ মনেমনে বলে নিমু তাহলে কিছু দেখতে পায়নি। মুচকি হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে বলে কফি শেষ করে আমি আবার ইনিয়াকে খুজতে বের হবো। কিছু খাবার থাকলে দাও। এই কথা শুনে নিমু মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।

____

ইশমাম বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। ইনিয়ার সেন্স ফিরে। ইনিয়া পিটপিট করে চোখ খুলে। দেখতে পায় তার হাতে স্যালাইন লাগানো। পাশে একজন পুরুষ বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। ইনিয়া অবাক হয়ে যায়, ইনিয়ার কিছু মনে পড়ছে না। কালরাতে গুন্ডাদের আক্রমণের পর তার সঙ্গে ঠিক কি হলো মনে করতে পারছে না। শুধু এতটুকু মনে পড়লো তার প্রসব যন্ত্রণা হচ্ছিলো, আর প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছিলো;গুন্ডাদের আঘাতে। ইনিয়ার বাচ্চার কথা মনে পড়ে। ইনিয়া চিৎকার করে বলে অ্যা,অ্যা, আমার বাচ্চা কই? আমি এখানে কেনো? আমাকে এখানে কে আনছে?

ইনিয়ার কথার ভাজ পেয়ে ইশমাম বাচ্চা নিয়ে বেড থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায়। ইনিয়া হন্তদন্ত করে উঠার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছেনা। ইনিয়া অ্যা বলে চিৎকার করে। ইশমাম ইনিয়াকে বলে আপনার প্রচুর ব্লেডিং হয়েছে। তিন ব্যাগ রক্ত লাগছে । সিজার করানো হয়েছে, হাতে স্যালাইন লাগানো আছে। এভাবে তাড়াহুড়ো করে নিজেকে ব্যাথা দিবেন না।

ইনিয়া ইশমামকে বলে আপনার কোলে কি ওইটা আমার বাবু? প্লিজ বলেন না। আমার বাবু কোথায়।
“ আপনার নাম কি ম্যাডাম? ”
“ আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি। উত্তর চাই প্লিজ। আমার বাবু কোথায় বলেন না। আর আপনি আমার বেডের কাছে এভাবে বসে ছিলেন কেনো? ”
“ বলছি সব আগে বলুন আপনার নাম কি? ”
“ ইনিয়া ”

#চলবে,,,

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৩

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৩

“ ইশমাম আমি মনে হয় মারা যাব। আমি আর এই যন্ত্রণা কুলাইতে পারছিনা। তোমার সঙ্গে পথচলা বোধহয় আজকেই শেষ ইশমাম। সারাজীবন তোমার সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম। কিন্তু আজকে আমার শেষদিন চলে এসেছে। আমাকে ক্ষমা করিও ইশমাম, মনের অজান্তেই কোনো আ’ঘা’ত করে থাকলে। ”

“ প্রিয়া তুমি ছটফট করিও না, এইতো হসপিটালের কাছাকাছি চলে এসেছি। আমাদের বাবু ও তুমি সুস্থ থাকবে। মরার কথা ভূলেও বলবে না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমাদের বাবুর তোমার দরকার প্রিয়া। কথা ছিলো একটা ফুটফুটে মেয়ে আমার কোলে দিবে। মেয়েটির নাম রাখবো রাহা। অযথা এসব ভেবো না, আমার ভয় করছে খুব। ধৈর্য ধরো আরেকটুখানি। ”

“ ইশমাম তুমিতো বাবু চেয়েছিলে, আমি তোমাকে বাবু দিচ্ছি। ইশমাম আমার অনুপস্থিতে আমাদের বাবুর কোনো অবজ্ঞা করবে না। তাকে নতুন মা এনে দিবে! তার অযত্ন করবে না। কথা দাও ইশমাম। ”

প্রিয়ার কথা শুনে ইশমাম কেঁদে ফেলে। প্রিয়াকে এই অবস্থায় দেখতে পারছিলো না। চোখের কোনায় পানি জমে যায়। দুফোঁটা চোখের পানি প্রিয়ার মুখে ফেলে। প্রিয়া হাত উঁচু করে ইশমামের চোখের পানি মুছে দেয়। এরপরে ইশমাম কে বলে প্রসব বেদনা এতো কষ্টের আগে যদি জানিতাম। যতন করা ভালোবাসাগুলো আগে আগেই প্রকাশ করতাম। আমাকে ক্ষমা করো, ক্যানো জানি মনে হচ্ছে আজকে আমি হেরে যাব। ইশমাম নিজের মনকে শক্ত করে আল্লাহকে বলে,,

❝ ভালোবাসিলাম দুজন দুজনে প্রসব যন্ত্রণা দিলেন কেনো প্রিয়াকে। কিছু যন্ত্রণা আমাকে দিন। মরিলে একসঙ্গে মরিবো বাচিলে জয় করবো দুজনে এই যন্ত্রণাকে ❞

ইশমাম ড্রাইভারকে বলে, ড্রাইভার গাড়িটা দ্রুত চালান। প্রিয়ার কষ্ট দেখতে পারছিনা।
“ জ্বি! স্যার টানের উপর রাখছি। ”

এমন সময় ইশমামের কানে ইনিয়ার গোঙানির আওয়াজ আসে। ইশমাম ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে। ড্রাইভার গাড়ি থামায়। তা দেখে প্রিয়া বলে গাড়ি থামাতে বললে ক্যানো?

প্রিয়া আমি কোনো মেয়ের গোঙানির আওয়াজ পেলাম। তুমি একটু স্থির থাকো আমি শুধু বাইরে যাব আর আসবো। প্রিয়া বলে যাও। ড্রাইভারকে সঙ্গে করে নিয়ে গোঙানির আওয়াজের দিকে যায় ইশমাম।দেখতে পায় ইনিয়াকে। রাস্তাজুড়ে রক্ত দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। ইশমাম দ্রুত ইনিয়ার নাকে দুই আঙুল রাখে। দেখতে পায় নিঃশ্বাস চলছে। ইশমামের বুঝতে বাকি রইলো না ইনিয়ার সঙ্গে কি হয়েছে? একদিকে নিজ স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে, অন্যদিকে এই মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় লুটোপুটি খেয়ে পড়ে আছে।

“ ড্রাইভার বললো স্যার ম্যাডাম আর এই ভদ্রমহিলার সেইম কেইস কি করবেন? ”
“ এনার স্বামীর কি কোনো আক্কেল নাই? ”
“স্যার আমার মনে হচ্ছে এই মহিলার স্বামী হয়তো এই মহিলাকে এই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখেছে। আমাদের কেটে পড়া উচিত ”
“ তুমি কি মানুষ? কথা না বলে এই মহিলাকে ধরো। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাই। যা হবার হবে। সবার আগে আমাদের কাছে মানবধর্ম। পরে দেখবো এর পিছনের কাহিনী কি? ”

ড্রাইভার বাধ্য হয়ে ইনিয়ার দুহাত ধরে। ইশমাম দু পা ধরে ঝুলিয়ে নিয়ে গাড়িতে তোলে? যেয়ে দেখতে পায় প্রিয়া সেন্স হারিয়ে ফেলছে। ইশমাম প্রিয়া প্রিয়া বলে ডাকা শুরু করে, কিন্তু প্রিয়ার কোনো সাড়া পায়না। ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটাল আসে। হসপিটালে ঢুকে ডক্টর ডক্টর বলে চিৎকার করে। নার্সরা দৌড়ে এসে বলে কি হয়েছে স্যার? ইশমাম বলে আমার স্ত্রী প্রিয়া প্রসব যন্ত্রণায় সেন্স হারিয়ে ফেলছে? নার্স বলে আপনার দুই বউ স্যার। দুজনের একইদিনে বাচ্চা হবে? ইশমাম রেগে যায় নার্সের উপর। চিৎকার করে বলে আপনাকে কে বলেছে আমার দুইবউ? আপনারা বড্ড কথা বলে সময় নষ্ট করেন। গাইনী ডক্টর কই? স্যার ডেলিভারি চলছে? এতো বড় হসপিটালে ডক্টর কি একজন? না স্যার ব্যবস্থা করছি। ইমারজেন্সিতে পাটাচ্ছি। কথা শেষ করে নার্স ইনিয়া ও প্রিয়াকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়। ইশমাম ফ্লোরে বসে মাথায় হাত দিয়ে প্রিয়া প্রিয়া বলে চিৎকার করে। ইশমামের চিৎকারে একজন নার্স এসে বলে স্যার এখানে চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না। পেসেন্ট কে এডমিট করাবো নামগুলো বলেন?

“ আমার স্ত্রী নাম প্রিয়া মির্জা ”
“ আপনার কি নাম? ”
“ ইশমাম মির্জা! ”
“ আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কি? ”

নার্সের এই কথা শুনে ইশমাম ভ্যাবাচ্যাকা খায়। ইশমাম বলে এক্সকিউজ মি।
“ জ্বি স্যার নামটা দ্রুত বলেন। পরবর্তী কাজ দ্রুত করতে হবে আমাদের। ”

ড্রাইভার হুট করেই পাখি নাম বলে। নাম শুনে নার্স বলে কি দারুণ মিল নাম দুইটার মধ্যে। এই প্রথম এরকম কোনো কেইস পেলাম আমরা। যেখানে দুইবউ একইদিনে ডেলিভারি হচ্ছে। নামের দারুণ মিল। আজকাল কার যুগে সতীন নিয়ে এভাবে সংসার করা সত্যিই প্রসংশনীয়। স্যার আপনি সম্ভবত তাদের অনেক ভালোবাসেন।

নার্সের কথা শুনে ইশমামের মাথায় বাজ পড়ে। মনেমনে বলে কি হচ্ছে এসব। এরা না জেনে অযথাই এসব বলছে। এদের এখন আমার কি বলা উচিত? ড্রাইভারের দিকে তাকায় ইশমাম। ড্রাইভার ইশারা করে হাতজোড় করে চুপ থাকতে।

ইশমাম রাগ করে নার্সকে বলে বড্ড ভাট বকেন আপনারা। আপনাদের কাজ হয়ে গেলে এখান থেকে যেতে পারেন। আমার স্ত্রীর কি অবস্থা দ্রুত জানান।

নার্সটি বলে উঠে দেখলাম পাখি ম্যামের ব্লেডিং হচ্ছে? আচ্ছা ওনি কি পড়ে গেছিলো?
” ইশমাম চোখ বড়বড় করে চিৎকার করে বলে আমি কিভাবে জানবো? ”

এমন সময় ইমারজেন্সি থেকে ডক্টর বের হয়। নার্সকে ডাক দেয়। নার্স ডক্টরের কাছে যায়। ডক্টর নার্সকে জিজ্ঞেস করে এই মূহুর্তে ডেলেভারি রুমে দুজন পেসেন্ট এসেছিলো ওনাদের নাম কি?
“ প্রিয়া মির্জা, পাখি মির্জা! “
“ যেই পেসেন্টের ব্লেডিং হচ্ছিলো না তার নাম কি? ”

ইশমাম এই কথা শুনে দ্রুত ছুটে এসে বলে আমার স্ত্রী নাম প্রিয়া? আমার স্ত্রী সুস্থ আছে ত ম্যাডাম?
“ ডক্টর মুখটা করুণ করে বলে স্যরি স্যার ওনাকে এখানে আনার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। সি ইস ডেড। আপনাদের বাচ্চা টা পেটে মরে গেছিলো। ”

ইশমাম এই কথা শুনে মুখের ভাব সিরিয়াস করে বলে আপনারা ফান করছেন কেনো? আমার স্ত্রী তো গাড়িতেই কথা বলছে আমার সঙ্গে। বলুন না প্রিয়া ও আমার বাচ্চা সুস্থ আছে।
” স্যরি মিস্টার এসব বিষয় নিয়ে ডক্টর কখনো ফান করেনা। একটুপর লাশকে বের করে দিচ্ছি নিয়ে যাইয়েন। এই কথা শেষ করে নার্সকে জিজ্ঞেস করে পাখির বাড়ির কেউ আছো? ”

নার্স বলে এনারাই ত এনেছে ম্যাম। স্যারের দ্বিতীয় স্ত্রী পাখি মির্জা।
” ও আচ্ছা অভিনন্দন স্যার । আপনার একটি মেয়ে বাচ্চা হয়েছে নর্মালে ডেলিভারিতে । কিন্তু পেসেন্টের অবস্থা সিরিয়াস। প্রচুর ব্লেডিং হওয়ার কারণে মিসেস পাখি এখন রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। এই মূহূর্তে ও পজেটিভ রক্ত না পেলে আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যেতে পারে। দ্রুত ও পজেটিভ ব্লাড তিন ব্যাগ ম্যানেজ করেন। ”

ইশমাম চিৎকার করে বলে ও আমার স্ত্রী নয়। আমার তো একটা মাত্র বউ। প্রিয়া শুধু আমার বউ। কোনো পাখি টাকি আমার বউ নয়। বলেন না ডক্টর প্রিয়া বেঁচে আছে! আমার বাচ্চা সুস্থ আছে।
“ আপনার বউ মিসেস মির্জা বাচ্চা নিলে লাইফ রিস্ক ছিলো। কিন্তু ওনি বোধহয় আপনাকে খুশি করার জন্য বাচ্চা নিয়েছিলো। কিন্তু লাইফ রিস্ক তো ঘটে গেলো? আমাদের ক্ষমা করবেন। আমাদের হাতে কিছু ছিলোনা স্যার। আমরা শুধুমাত্র পেসেন্টকে সেবা দিই। সুস্থতা,মৃত্যু, নতুন জীবন সবইতো আল্লাহর হাতে। ”

“ ইশমাম ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে রইলো। এরপরে চিৎকার করে বললো আমি ত তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়া। আমাকে খুশি করার জন্য নিজের সঙ্গে এমন করলে কেনো? আমিতো জানতাম না বাচ্চা নিলে তোমার লাইফ রিস্ক হবে। তুমিতো একাই একাই ডক্টরের কাছে আসতে! আমাকে এরজন্য তুমি সঙ্গে করে নিয়ে আসতা না! বাবা হওয়ার থেকে তুমি যে আমার কাছে কতোটা প্রিয় তুমি জানতে না? এখন আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে? এই নিষ্টুর পৃথিবীতে তুমি আমাকে একা করে চলে গেলে কেনো? ”
“ ড্রাইভার এসে ইশমামের কাঁধে হাত রাখে। স্যার শান্ত হোন। ”

“ ইশমাম ড্রাইভারের কথা কানে না নিয়ে ছুটে যায় ইমার্জেন্সিতে। ইমারজেন্সিতে এসেই এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসে কানে। ইশমাম ছুটে যায় এইতো আমার বাচ্চা। বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নেয়। এরপরে বাচ্চাটিকে বলে ডক্টর মিথ্যা বলছে তাইনা বাবু। এইতো পাপা চলে এসেছে কান্না করিও না বাবু। বাচ্চাটি কোল পেয়ে চুপ করে যায়। ইশমাম ধীরে ধীরে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। মুখের উপর থেকে কাপড়ের ঢাকনা সরিয়ে বামহাত দিয়ে প্রিয়ার মুখ নাড়ে। এরপরে বলে এই প্রিয়া তুমি ঘুমাচ্ছো? তুমি ক্লান্ত তাইনা। ডক্টর মিথ্যা বলছে তাইনা। এইতো আমাদের মেয়ে রাহা। কত মিষ্টি দেখতে হয়েছে তাইনা। ”

এমন সময় ডক্টর ইমারজেন্সিতে প্রবেশ করে চিৎকার করে নার্সদের। নার্সদের একজন ছুটে এসে বলে,,
“ জ্বি ম্যাম বলুন! ”
“ আপনারা ঠিকঠাক মতো ডিউটি করেন না? ইনি এখানে প্রবেশ করলো কিভাবে? এনাকে বের করুন। ”

ইশমাম ডক্টরের চিৎকার শুনে মুখ ঘুড়িয়ে বলে চুপ করুন ম্যাম। আমার প্রিয়া ঘুমাচ্ছে। প্রিয়ার ঘুম খুবই পাতলা। আপনারা এভাবে চিৎকার করলে প্রিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।
“ ডক্টর বলে উঠে, হাজার চিৎকার করলেও আপনার বউ আর ঘুম থেকে উঠবে না। বিকজ্স সি ইস ডেড। ”

“ চুপ! আপনি ডক্টর হয়ে কিভাবে মিথ্যা কথা বলেন? এইতো আমার মেয়েবাবু হয়েছে। আমাদের রাহা আমার কোলে রয়েছে! ”

“ সদ্য স্ত্রী হারানোর শোকে পা’গ’ল হয়ে গেছেন? এইটা প্রিয়ার বাচ্চা নয়, পাখির বাচ্চা। আর পাখি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। দ্রুত তিনব্যাগ রক্ত ডোনেট না করলে আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীও রক্তশূন্যতায় ভূগে মারা যাবে। ”

#চলবে,,,

আসসালামু আলাইকুম। ভূল ত্রুটি মার্জনীয়।

বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০২

0

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০২

❝ নিমুর ঠোঁ’টে চুমু দেয় জুনায়েদ। ঠান্ডা হাতদিয়ে নিমুর তুলতুলে নরম গালে আলতো ভাবে ধরলো জুনায়েদ। এরপরে বললো আমি তোমাকে হৃদয়ের রাণী করে রাখবো নিমু। নিমু তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে কিন্তু ইনিয়া আফার কি হবে? ❞

” ছাড়ো ত ওর কথা। আমি তোমাকে ভালোবাসি নিমু। মানুষ কি দুইবউ নিয়ে সংসার করেনা! আমিও দুইবউ নিয়ে সংসার করবো। ”
” নিমু মুখটা ভারী করে বলে, বিয়ে করার সময় এমন কথা ছিলো না জুনায়েদ। আমাকে আলাদা একটা সংসার দিতে চেয়েছিলে বলেই বিয়েতে রাজি হয়েছি আমি। ”
” এসব নিয়ে ভেবোনা নিমু। জুনায়েদ তার কথা রাখে। নিমু বেডে থাকা জুনায়েদের শার্টটা এনে দিলো। এরপরে জুনায়েদকে পড়তে বললো। জুনায়েদ মৃদু হেসে বললো তাড়িয়ে দিতে চাইছো? আমার কিন্তু এখনো বাসর বাকি রয়েছে। ”
” নিমু বিরক্ত প্রকাশ করে বললো আর কত করবে বাসর? প্রাক্তনের খোঁজ নিতে হবেনা? ”

এমন সময় দরজায় কড়া নারলো আলম দারোয়ান। স্যার আসতে পারি? আলমের গলার শব্দ শুনে জুনায়েদ রুমের বাইরে এসে বললো,,
” কি হয়েছে আলম? আজকে সোজা উপরে চলে এলে যে! ”
” স্যার, আমারতো ডিউটি শেষ। সাঝ নেমে এসেছে। ইনিয়া ম্যাডাম বাইরে বের হওয়ার সময় আমাকে একখানা চিঠি দিয়ে গিয়েছিলো। এই চিঠি দেওয়ার জন্যই উপরে চলে এসেছি। ক্ষমা করবেন নিজের সীমা লঙ্ঘন করে অনুমতি না পেয়েই উপরে আসার জন্য ”

” ইনিয়া বাইরে গিয়েছে! কিন্তু ক্যান গিয়েছে? এই সময়টা বাইরে যাওয়া উচিত নয়, তুমি জানো না। আমাকে তো ডাকতে পারতা আলম। ”
” ক্ষমা করবেন। আমি মনে করেছিলাম আপনি ম্যাডামকে দেখতে না পেয়ে একাই নিচে আসবেন। কিন্তু,আপনি তো নিচে আসলেন না। আর আপনাকে ডাকার দুঃসাহস ও আমার নাই। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি চলে যাও । ”

আলম চলে যায়। নিমু নিজের কাপড় ঠিক করে বাইরে আসে। জুনায়েদ কে বললো আলম ক্যান উপড়ে এসেছিলো জুনায়েদ? আর তোমার হাতে এইটা কিসের কাগজ?

” ইনিয়ার চিঠি। ”
” চিঠি ক্যান? আফা কই গেছে ”
” জানিনা। ”
” চিঠিটা খুলো তো। ”
” জুনায়েদ চিঠিটা খুললো। ”

প্রিয় শখের পুরুষ,

চিঠিটা যখন হাতে পেয়েছো, তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে গেয়েছি । নিজের চোখজোড়াকে আজ বড়ই ন’ষ্ট করতে ইচ্ছে করতেছিলো। যখন দেখলাম তুমি আমার সামনে নিমুকে বিয়ে করে বুকে টেনে নিয়েছো? মানুষ এতো নোংরা কিভাবে হয় জুনায়েদ? কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি ভূলে গেলা আমাদের তিনবছরের সম্পর্ক? কিভাবে পারলা আমার দুধের বাচ্চার সঙ্গে প্রতারণা করতে। অবশ্য আমি সেদিন আভাস পেয়েছিলাম। যেদিন নিমু শর্ট ড্রেস পড়ে তোমার গায়ে ঢলেঢলে পড়তেছিলো। মানা করতে যেয়েও করতে পারিনি । কারণ আমার মনে এতো নোংরা চিন্তা ভাবনা আসছিলো না। ভেবেছিলাম কাজের মাধ্যমে মজার ঢলে বোধহয় এসব হচ্ছে। বোন হয়ে কিভাবে এতো ছোট্ট নজরে তোমাদের দিকে তাকাই বলোতো? কারন হলো আমি ভাবতেই পারিনি নিমু আমার সংসার ভাঙ্গনের কারণ হবে। ইসলামি শরীয়তে বড় বোন জীবিত থাকা অবস্থায়, যদি আমার হাসবেন্ড ;আমার ছোটবোনের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা বা বিয়ে করে তাহলে প্রথম স্ত্রী অটোমেটিক তালাক হয়ে যায়। আমি তোমার তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী এখন। আমার সাজানো সংসার আমার বোনের হাতে তুলে দিলাম। আমার অনাগত দুধের বাচ্চাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে গেলাম। কারণ আমার বাচ্চা যখন বড় হয়ে জানতে পারবে তার বাবা একজন দুঃচরিত্রবান। তখন পারবে সন্তানের কাছে নিজের কুকীর্তি লুকাতে,নিজের মুখ দেখাতে । আমি চাইনা তুমি ছোট্ট হও আমাদের বাচ্চার কাছে। ভালোবেসেছিলাম তোমাকে বুকভরা ঘৃণা নিয়ে চলে গেলাম তোমার সংসার থেকে।

ইতি তোমার
❝ ইনিয়া ❞

চিঠির কথাগুলো পড়ে জুনায়েদ ভেঙ্গে পড়ে। সোফায় বসে নিমুকে বলে ইনিয়া চলে গিয়েছে নিমু।
নিমু মনেমনে বলে এইতো চেয়েছিলাম আমি। অবশেষে এই সংসার পারম্যান্টেলি আমার হবে জুনায়েদ শেখের সমস্ত সম্পত্তির মালকিন এখন নিমু রহমান।

জুনায়েদ মনেমনে বলে ইনিয়া আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ঘৃণা করো। অবশেষে আমি সাকসেসফুল। কিন্তু এতো জ্বলদি যে সবকিছু সাকসেসফুলি হবে ভাবতেও পারেনি। তবে কি আমার বাচ্চাকে আমি ভূমিষ্ট হতে দেখতে পারবো না। কোলে নিতে পারবো না? আদর করতে পারবো না।

____

আমাকে দিয়ে কি করবেন আপনারা ? দেখেন আমি একজন অসহায় গর্ভবতী মহিলা। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমাকে ছেড়ে দিন। আমার দুধের বাচ্চা ও আমাকে নতুন ভাবে বাঁচতে দিন। ইনিয়ার এসব কথা শুনে লোক তিনজন অট্টহাসি দিয়ে উঠে। একজন বলে দেখ ম্যাডাম কি বলছে? ওনাকে ছেড়ে দিতে। বল ওনাকে কি ছেড়ে দেওয়া যায়? তাদের মধ্যে একজন উত্তর দিয়ে ফেললো। বললো, ম্যাডামকে আমাদের লাগবে না। ম্যাডামকে বল ভালোই ভালো যেনো ম্যাডামের সমস্ত শরীরে গহনা আমাদের হাতে তুলে দেয়। গহনা হাতে তুলে দিলে ম্যাডামকে আমরা কিছু করবো না। কারণ এই গর্ভবতী মহিলার সঙ্গে আর বা কি করা যায়।

” ইনিয়া আমতাআমতা স্বরে বলে ভাই আমাকে ছেড়ে দিন। আমার বাচ্চাকে জগতের আলো দেখাতে চাই। এর বিনিময়ে আপনাদের যা লাগে নিয়ে নেন! দয়া করুন আমাকে। ”
” তাহলে আপনার শরীরের সমস্ত গহনা খুলে ভালোই ভালো আমাদের হাতে দিয়ে দেন। ”

ইনিয়া অসহায়ের মতো ছটফট করে নিজের শরীরে যা যা গহনা ছিলো খুলে লোক তিনজনকে দিয়ে দিলো। শুধু অনামিকা আঙুলে একটি স্বর্ণের রিং আর গলায় একটি স্বর্ণের চেইন রেখে দিলো। তা দেখে লোক তিনজন বললো,,

“ ম্যাডাম আংটি আর চেইনটা রাখলেন কেনো? ”
“ দেখুন ভাই এই দুইটা জিনিস আমি দিতে পারবো না ”
” ক্যান দিতে পারবেন না? দেখুন নিজের বাচ্চা ও নিজেকে বাঁচাতে চাইলে ওই জিনিস দুখানা দিয়ে দেন ”
“ দেখুন ভাই চেইনটা আমার মৃত্যু মায়ের শেষ চিহ্ন। মরার সময় মা আমাকে হাতে দিয়ে বলেছিলো যখন আমাকে মনে পড়বে এই চেইন টা হাতে নিয়ে দেখবি, আমি তোর সামনে চলে আসবো। এই চেইনটাতে আমার মায়ের গন্ধ মেখে আছে। ছয়বছর বয়সে আমি আমার আম্মাকে হারিয়েছে। দয়া করুন আমার আম্মার শেষ স্মৃতি আমার থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। ”
“ আর আংটি টা দিতে পারবেন না কেনো? ”
“ এইটা, এই.. এই.. টা হলো আমার ভালোবাসার চিহ্ন। প্রথম যখন জুনায়েদের সঙ্গে আমার বিয়ে হয় তখন এই উপহার টা প্রথমরাতে তার থেকে পেয়েছিলাম। সে তো আমার কাছে নেই এখন। তার শেষ স্মৃতি টা বিচ্ছিন্ন করতে চাইনা ”
“ তা ম্যাডাম আপনার পেটটা তো ফুলিয়ে দিছে আপনার সেই নাগর। ওইটা নিয়ে হ্যাপি থাকেন না। আংটি লাগে ক্যান? ”
“ দেখুন ভাই যা চাইলেন সবতো দিলাম। নিজের বোন মনে করে আমায় নাহয় এই দুটি জিনিস দিয়ে দিলেন। ”
“ এই ভালো কথায় কাজ হবেনা। ধর ম্যাডাম কে। ”

ইনিয়ার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তিনজন মিলে। ইনিয়া হাফিয়ে যায় তিনজনের সঙ্গে না পেরে। চিৎকার করে কেউ আছেন? হেল্প! হেল্প!
লোক তিনজন বলে এই চিৎকার করছে রে তাড়াতাড়ি জিনিস দুটি নে নাহলে লোকজন আসলে ক্যাচাল হয়ে যাবে। ধস্থাধস্তিতে ইনিয়ার পেটে আঘাত লাগে। ইনিয়া পড়ে যায় রাস্তায় ব্লেডিং হতে থাকে। লোক তিনজন ঘাবড়ে যায় ইনিয়াকে এইভাবে দেখে। এরপরে লোক তিনজন বলে চল পালাই। মহিলা মারা গেলে কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটবে। এই বলে লোক তিনজন পালায়।

ইনিয়ার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। ইনিয়া চিৎকার করে আল্লাহ আমাকে বাঁচান। আমার বাচ্চাকে বাঁচান। কেউ আছেন হেল্প! হেল্প! কারো কোনো সাড়া পায়না রাস্তায়। কারণ মেইন রাস্তা থেকে এই রাস্তা অনেক দূরে। তাইতো লোকজনের চলাচল কম এই রাস্তায়। ইনিয়া পেটের ব্যাথায় রাস্তা থেকে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু উঠতে পারেনা রাস্তা থেকে। প্রচুর ব্লেডিং এ রাস্তা ভিজে যাচ্ছে রক্ত দিয়ে। ইনিয়া এই বেদনা সহ্য করতে পারছিলো না। চোখের কোণের পানিগুলো গাল বেয়ে টপাটপ পড়ছিলো। ইনিয়া দুহাত দিয়ে মাটি খোঁজার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কোনো মাটি পাচ্ছে না, কারণ রাস্তাটা পাকা। কিছুতেই ভর করে শক্তি দিতে পারছিলো না। এমতাবস্থায় ইনিয়া মনে করলো আজ বোধহয় এই পৃথিবী থেকে তার শেষ হওয়ার দিন। এসব ভাবছে আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ফেলছে। রাস্তা রক্ত দিয়ে ভেসে যাচ্ছিলো। ইনিয়া আল্লাহকে ডাকতে শুরু করলো, হে আল্লাহ কি পাপ করেছি আমি? কিসের জন্য আমাকে এতো শাস্তি দিচ্ছেন। একটু বুঝ হওয়ার বয়সে আমার থেকে আমার আম্মাকে কেড়ে নিয়েছেন! চৌদ্দটা বছর সৎ মায়ের জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করেছি। যেই আমার কপালে একটু সুখ আসলো আপনি কেড়ে নিলেন। আমার বাচ্চাকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই। এক পযার্য়ে ইনিয়ার শক্তি একদম নুইয়ে যায়। প্রসব বেদনার কষ্ট নিতে পারছিলো না ইনিয়া। ইনিয়া আর শক্তি দিতে পারছিলো না। শুধু মুখ দিয়ে গোঙানির আওয়াজ করতে লাগলো।

ইনিয়ার চোখে পৃথিবীকে নিষ্ঠুর লাগলো। চোখে ভেসে উঠলো ইনিয়া ও জুনায়েদের প্রথম রাতের কথা। জুনায়েদ ইনিয়ার মুখ থেকে ঘোমটা তুলে বললো আমার ঘরে চাঁদ এসেছে। আর এই চাঁদের মালিকটা আজ থেকে আমি। দেখি প্রেয়সী তোমার হাতখানা। ইনিয়া দুহাত এগিয়ে দিলে, জুনায়েদ বামহাতের অনামিকা আঙুলে আংটিখানা পড়িয়ে দিয়ে চুমু দেয় হাতে। ইনিয়া লজ্জা পেয়ে কেঁপে উঠে। জুনায়েদ বুঝতে পেরে ইনিয়ার নরম তুলতুলে দুই গালে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে লজ্জা ক্যান প্রেয়সী? হাসবেন্ড হই তোমার আমি, আমার ভালোবাসার অধিকার আছে। ইনিয়া এই কথা শুনে চোখ নামিয়ে ফেললে। জুনায়েদ ইনিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে বলে, আজকের পর কোনো লজ্জা নয় প্রেয়সী। তোমার সকল অপ্রাপ্তি এই জুনায়েদ প্রাপ্তি দিয়ে ভরিয়ে ফেলবে।

ইনিয়া প্রসব বেদনায় সময়ে এই কথাগুলো ভেবে যন্ত্রণার হাসি দিয়ে চোখমুখ বন্ধ করে ফেলে। আস্তেআস্তে বলে ভালো থেকো নিষ্ঠুর ভালোবাসা। বিরহ ডোরের শেষদিনটা বোধহয় এভাবেই লেখা। ইনিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। মূহুর্তের মধ্যেই ইনিয়ার চোখে পৃথিবীর আধার ঘনিয়ে আসে। তবে কি ইনিয়া মারা যাচ্ছে?

#চলবে