Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 335



প্রেমের মেলা পর্ব-১২+১৩

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১২ ]
#বর্ষা
ইনায়া প্রশস্ত হেসে তাকিয়ে আছে রান্নার ঘরের দিকে।ইসরাক খান এবং মিসেস ফাবিহা সারওয়ার খুনসুটি করতে করতেই রান্না করছেন। অবশ্য ইসরাক খান সাহায্য করছেন তার স্ত্রীকে।আজ সপ্তাহ পেরতে চললো একসাথে আছেন ইসরাক খান, ফাবিহা সারওয়ার,ইশান আর ইনায়া।ইসরাক খান আর ফাবিহা সারওয়ারের ভুলবোঝাবুঝিও‌ বাতাসে মিলিয়ে গেছে।ইনায়ার আফসোস ইশ,এই সপ্তাহটা যদি আগে আসতো।তাহলে বুঝি তারা আরো আগেই খুশি/একত্রিত পরিবার হতো।ইনায়া, ইশানের জন্য আবারো রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ করেছেন ওনারা।ইনায়া যে নাছোড়বান্দা বিয়ে করো নয়তো আমি তোমাদের কারো সাথে কথা বলবো না এরকম কথা বলে দিয়েছে। তাইতো বিয়ে করতে হলো।

ইনায়া হাসছে।ইশান মোবাইলে গেম খেলছিলো। হঠাৎ ইনায়ার দিকে দৃষ্টি ফেলে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করে,

”আচ্ছা,ইয়ু তুই জানলি কিভাবে আমি,মম কোথায় আছি?আর তুই এটাই জানলি কিভাবে যে আমি কোন ভার্সিটিতে?”

ইনায়া রহস্যময়ী হাসে। ইশানের মনে হয় এই মেয়ে যেন অদৃশ্য দেয়ালে ঘেরা রহস্যময়ী এক নারী।ইনায়া সোফা থেকে উঠে নিজ রুমে ফিরে আসে। চারপাশে এই সাতদিনই অজস্র স্মৃতিরা বাসা বেঁধেছে।ইনায়া ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে।নীল রঙা ডাইরিটা হাতে নেয়। কতগুলো কথা বিশ্লেষিত। প্রথম পৃষ্ঠায়,,,,

”আমি ভালো নেই, অবশ্য আমার ভালো থাকতে নেই।আমি অপরাধী,আমি খুনি”

দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়,,,

”আমি ঘৃণা করি আমার জন্মদাত্রীকে,আমি ঘৃণা করি নিজেকে কেননা আমি সেই প্রতারকের সন্তান ”

এমনি করে অজস্র অভিযোগ লেখা প্রতিটা পৃষ্ঠায়।তবে অভিযোগের মাঝে কনফেস করা হয়েছে অজস্র অপরাধের কথা।যেন এক অপ্রকাশিত বই এটা।পঞ্চাশ পৃষ্ঠায় লেখা ভয়ংকর এক ঘটনা,,,

”আমি তাকে খুন করতে চাইনি।আমার করা প্রথম খুন।লোকটা আমায় বিশ্রীভাবে ছুঁতে চেষ্টা করেছে।আমাকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছে।নোভাকে সেই লোকটা মেরে ফেলেছে। নিজের মেয়েকে যেই লোক হত্যা করতে পারে এবং মেয়ের বয়সী এক মেয়েকে অপবিত্র করার চেষ্টা করতে পারে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।কোনো অধিকার নেই।আমি তার অস্তিত্ব ধ্বংস করেছি।তার হাত আর জিহ্বা কেটে ফেলেছি।সে যেখানেই থাকুক না কেন যেই জিহ্বা দিয়ে খারাপ,নোংরা কথা বলেছে তা দিয়ে আর সে কথা বলতে পারবে না।আর না পারবে সেই নোংরা হাত দিয়ে কাউকে স্পর্শ করতে!”

সাতাশি পৃষ্ঠায়,,,,

”আজ তৃতীয় খুন করেছি আমি।এ খুনগুলো বেঁচে থাকা না থাকা প্রশ্ন সৃষ্টিময় খুন।আমি কাউকেই একদম মেরে ফেলেনি। বাঁচিয়ে রেখেছি তাদের অনৈতিকতার,মানবিকহীনতার শাস্তি দিতে।নারী ধর্ষণ! এদেশে নাকি ধর্ষণ হয়না!এদেশেও হয় তবে তা টাকার বিনিময়ে প্রাপ্যতা বলে‌‌।তবে এবারের ধর্ষণ ছিল মেয়েটার অনিচ্ছায়। জোরজবরদস্তির।মেয়েটা আমার নিকট ভিক্ষা চাইছিলো তাকে সাহায্য করতে আমি পারিনি।আমাকে বাঁচাতে পারলেও পুলিশ অফিসাররা ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে পারিনি।আমার স্টেটমেন্ট গ্রায্য হয়নি কেননা আমার শরীরে হ্যালুসলিউশনের ড্রাগ ইনজেক্ট করার রিপোর্ট দেখিয়ে আদালতে প্রমাণ করা হয়েছিলো ওই জানো***** নির্দোষ।আমি ছাড়িনি।আমি মেরে ফেলেছি!ভালো করেনি?”

ইনায়ার কি এ সত্যিই কোনো রুঢ় অতীত নাকি সে কোনো সাহিত্যিক রচনায় ব্যস্ত। তাছাড়া কেউ কি ডাইরিতে নিজের ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করলে পৃষ্ঠা নাম্বার দেয় নাকি!হয়তো সাহিত্যিক রচনা নয়তো…!

ইনায়া ডাইরিটা নিজের রুমের মাঝেকার সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দেয়।তারপর বিছানায় এসে শুতে নিবে তখনই দরজায় করাঘাত হয়।দরজা খুলে ইনায়া কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে দেখে মুচকি হাসে।আশিয়ান দাঁড়িয়ে। ইনায়া খবরীর কাছ থেকে আগেই জেনেছে আশিয়ান বাংলাদেশে আসছে। তাইতো আর আশ্চর্য হয়নি ইনায়া।

আশিয়ান মুড অফ করে ঘরে এসে বসে।ইনায়া দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে,

”তোমাকে এই আল্লাহর বান্দা হয়তো সারপ্রাইজ দিতে পারবে না আদৌ কখনো! আচ্ছা তুমি পুচকি মেয়ে তোমার খবরী আসে কোথা থেকে?”

সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় আশিয়ান।ইনায়া হঠাৎ শীতল কন্ঠে বলে,

”মিষ্টার আশিয়ান মির্জা শুনো সঠিক সময় আসলে সব জানতে পারবে।আর মাত্র কয়েকদিন অপেক্ষা করো।তারপর অবশ্য তোমার ভালোবাসার একটা পরীক্ষাও যে তোমায় দিতে হবে ”

”মানে?”

”মানে টানে পরে শুনো।আমি এখনো লাঞ্চ করিনি।ফ্রেশ হয়ে খেতে চলো দ্রুত ”

ইনায়া কিঞ্চিত সময়ের ব্যবধানে কথা ঘোরাতে উস্তাদ।আর একবার যদি সে কথা ঘোরায় তবে আর আগের প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়া যাবেনা তা বেশ প্রকাশিত।আশিয়ান ইনায়ার কানের লতিতে চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে,

”তুমি একটা সাইকো তা কি তুমি জানো?”

ইনায়ার শীতল দৃষ্টির এখনো পরিবর্তন হয়নি।আশিয়ান ইনায়ার কোমড় ধরে টান মেরে নিজের কাছে এনে দাঁড় করায়।তারপর ধীম কন্ঠে বলে,

”তুমি আমাকে বারবার যেমন করে তোমার প্রেমে, আসক্তিতে,মায়াতে,কথাতে আহত করে তা কি সাইকোগিরি নয়!”

আশিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায় ইনায়া।একটু পর মিসেস ফাবিহা সারওয়ার খেতে ডেকে যান ওদের।দুপুরে খাওয়ার সময় ইনায়ার খাবার তালুতে ওঠে। আশিয়ানসহ উপস্থিত সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইসরাক খান সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব হয়ে ওঠেন মেয়ের জন্য। তাইতো নিজ হাতে ইনায়াকে খাইয়ে দেন।ইশান ছলছল চোখে তার ডেডের দিকে তাকিয়ে।ইনায়া লক্ষ্য করে।তাইতো পাপাইয়ের কানে কানে সকলের অগোচরে বলে,

”পাপাই ইটস্ নট ফেয়ার। তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছো একবারও ভেবেছো ইশান এতে কষ্ট পেতে পারে।ওকে তো তুমি কখনো খাইয়ে দেও নাই!”

ইনায়ার কথায় জিহ্বায় কামড় দেয় ইসরাক খান।ছেলের মুখের সামনেও খাবার ধরেন।তারপর একে একে স্ত্রী,সন্তান,হবু জামাই সবাইকেই খাইয়ে দেন।

আশিয়ান যেন এতোদিন বাদে এক পরিবার পেয়েছে। পরিবারের অভাবটা সে সারাজীবনই উপলব্ধি করেছে।তবে ইনায়ার কারণে তার ভাগ্যে একটা পরিবারও জুটেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ গল্পগুজব হৈ হুল্লোড় চলে। রিনিও যোগ দিবে বিকালে ওদের সাথে।কোথাও একটা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করা হয়েছে।ইনায়া অনবগত।

”স্যার,মাফিয়া ইশাকে কি আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে?আমরা তো গোপন সূত্রে এতোটুকুই জেনেছি যে ইশা বাংলাদেশে।আর কিছুই না।প্রবাসী তো কতশত আছেন যারা বাংলাদেশে আসছেন,যাচ্ছেন।কিভাবে বুঝবো কে ইশা?”

গাজীপুর জেলার এসপি কৌতুহল এবং চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন‌।স্পেশাল ফোর্স গঠন করা হয়েছে ওদের। উদ্দেশ্য ইশাকে ধরা‌।তবে এমনও তো হতে পারে যে ওদের এই স্পেশাল ফোর্সের স্পেশাল পার্সনই ইশা!তবে এখানের অধিকাংশের ধারণা ইশা কোনো মেয়ে নয় বরং ছেলে। কেননা বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের নাম নবি-রাসুলদের নামে রাখে।সেক্ষেত্রে ইশা যে কোনো ছেলে তা ধরাই যায়।

স্পেশাল ফোর্সের টিম লিডার ঢাকা সিটির এসপি মোস্তফা জালাল। মাঝবয়সী হয়েও বুদ্ধিমত্তার প্রদর্শন সে করেই চলেছে। বিয়ে সাদীতে নিজেকে আর জড়াইনি।আর বলার কারণ এক রমনীকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছিলেন তিনি তরুণ বয়সে।তাকে যে আর বের করতে পারেননি‌।তাইতো রমনীর অন্য স্থানে বিয়ের পরও তাকেই হৃদয়ে নিয়ে আছেন।হায়রে প্রেম, ভালোবাসা!কেউ পায় পূর্ণতা আর কেউ সারাজীবন অপূর্ণতা নিয়েই কাটায়!

মোস্তফা জালাল নিজের সবচেয়ে প্রিয় অফিসারকে ফোন দেন। অবশ্য সে একজন মেয়ে।যাকে তিনি পিতৃস্নেহ প্রদানে একদমই পিছু পা হন না। কেননা প্রত্যেক পুরুষেরই স্বপ্ন থাকে পিতৃত্ব উপভোগের। তাইতো সন্তান না হলেও সন্তানের মতোই স্নেহ করেন।ফোন দেন ”বাচ্চা” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটায়! বাঙালিরাই আবেগ প্রবণ। তাইতো অধিকাংশের মাঝে কিছুসংখ্যক রক্তের সম্পর্কের বাইরে এতো গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে যা বলার বাইরে।

”আসসালামু আলাইকুম,স্যার।আমি কালকে জয়েন করছি”

”ওয়ালাইকুমুস সালাম।আমি কি প্রফেশনাল কথা বলতে ফোন দিয়েছি নাকি।আমি তো আমার মেয়েকে ফোন দিয়েছি।তাই নো স্যার ফ্যার জাস্ট বাবাই। ওকে?”

”ইয়েস বাবাই”

”তা আমার মামনির মাস্টার প্ল্যানের কি খবর?”

”ফলাফল পজেটিভ। আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত সশরীরে সকলের সামনে থেকেই কার্য চালিয়ে যাবো মিশন ইশার ”

চলবে?

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১৩ ]
#বর্ষা
ইসরাক খান রাতদুপুরে মেয়ের সাথে এই শীতের মাঝে রাত্রিবিলাস করছেন ছাদে বসে।ইসরাক খানের বুকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে ইনায়া।ইসরাক খান আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ইনায়া মুখ তুলে পিতার দিকে একবার তাকায়।আজকে যখন ইনায়া বাসা থেকে হঠাৎ উধাও হলো কি দুশ্চিন্তায় না তিনি পড়লেন।আরেকটু হলেই হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে বসতেন।ইনায়ার আম্মু একটু বকাঝকা করলেও ইসরাক খান জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে। চোখের মণি হারালে যে দুনিয়া অন্ধকার!

ইনায়া ইসরাক খানের কপোলে আলতো করে চুম্বন করে বলে,

”পাপাই তুমি আমাকে বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছো..ইশান এতে কষ্ট পাবে”

ইসরাক খান ইনায়ার কথা মুচকি হাসেন।খকখক করে বার কয়েক কেশে গলা পরিষ্কার করেন। তারপর মধ্যম আওয়াজে বলেন,

”আচ্ছা বেটা তোমার মাম্মা যখন খাবার টেবিলে তোমার আগে ইশানের দিকটা দেখে তখন তোমার কেমন লাগে?আমি জানি কষ্ট হয়।তাহলে এখন যদি আমিও তোমার মাম্মামের মতো ইশানকেই তোমার মতো স্নেহ করি,তবে যে তোমার কষ্টটা দ্বিগুণ হবে।হ্যা আমি জানি আমার বেটা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী।সে নিজেকে বোঝাতে সক্ষম।তবে আমি চাইনি আমার বেটার মনে তার পাপাইকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক।আমি তো এতটুকুই চাই আমার রাজ্যের রাজকন্যা হেসেখেলে আমার পাশে থাকুক সারাজীবন”

ইসরাক খান শেষের কথা সমাপ্তি করতেই তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুকণা।ইনায়া বুঝে ফেলে এর কারণ কি।ব্রেন টিউমারের ঘটনাই এর কারণ।ইনায়া ভুলেই গিয়েছিলো সত্য প্রকাশের কথা।তাইতো এখন তার মাথায় চাপটা একটু গভীর হয়ে পড়লো।

ইনায়া কিছু একটা ভেবে অনুরোধের স্বরে বললো,

”পাপাই আমাকে কখনো অবিশ্বাস করো না প্লিজ ”

ইসরাক খান চমকান।তবে ওতোটা না।মেয়ের অনুরোধে তিনি মেয়েকে চিল পাখি বানিয়েছেন।যেই পাখি বৃষ্টির প্রবল ঝড়ের মাঝেও আকাশে মেঘদের পেরিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।তিনি ইনায়া চিল বানিয়েছেন যেই পাখি মেঘের কাছে হার মেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে না গিয়ে লম্বা উড়াল দেয় মেঘদের উপর দিয়ে। ইসরাক খান ভরসার হাত রাখেন মেয়ের মাথায়।তারপর ঘড়ি দেখে বলেন,

”বেটা এখন ঘরে যাও।ঘুমোও গিয়ে।রাত একটা পঁয়তাল্লিশ।গুড নাইট।লাভ ইউ ”

”গুড নাইট এন্ড লাভ ইউ টু পাপাই”

ইনায়া নিচে চলে আসে।আশিয়ান দুইদিন থেকেই আবারো সিঙ্গাপুর ব্যাক করেছে।ছেলেটা শান্তিতে একসপ্তাহ কাটাতেও পারেনি। কেননা ইনায়ার সাথে একটা বিষয়ে ঝগড়া হয়েছে তার।আশিয়ান দুষ্টামি করে বলেছিলো যে সে ইনায়াকে বিয়ে করতে পারবে না কেননা সে ইনায়াকে বিয়ে করলে তার ব্যবসার ক্ষতি হবে।ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে বলেছিলো,

”কারো জীবনে এসো না যদি না সেই ব্যক্তির শেষ অব্দি থাকতে পারো।কারো জীবনে এসো না সময় অতিক্রম করতে কেননা সে ব্যক্তি তোমার সাথে কাটানো সময়েই বন্দি হয়ে যেতে পারে।কারো জীবনে এসো না যদি নিজের বাহ্যিক ক্ষতির চিন্তায় সামনের ব্যক্তির অন্তরালে রক্ত ক্ষরণ করতে হয়।”

তারপর আশিয়ান ইনায়ার এতো সিরিয়াসপনা এবং অন্যান্য মেয়েদের মতো ন্যাকামো করতে না দেখে তেতে ওঠে।রাগে এবং ক্ষোভের বশে নিজের অজান্তেই দাগ লাগিয়ে দেয় ইনায়ার হৃদয়ে। বলে ওঠে,

”তোমার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে হলে কেঁদে কেটে একাকার করতো।আর তুমি সেখানে আমায় জ্ঞান দিচ্ছো! আচ্ছা তুমি কি সত্যিই মেয়ে নাকি…!”

আশিয়ান পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনি।ইনায়ার চড়টা সইসই লেগেছে তার গালে। আশিয়ানের গাল যেন পচে গেছে এমন অনুভব করে সে।লাগে ক্ষোভে ব্লেজার হাতে বেরিয়ে যায়।তবে আবারো ফিরে এসে লাগেজ নিয়ে যায়। ইনায়া দরজা আটকে মেঝেতে বসে পড়ে।

মেয়েদের হৃদয় অত্যন্ত কোমল।যতদিন পুরুষ তুমি আগলে রাখবে তাকে,ততদিন তার কোমলতাই পড়বে চোখে তোমার।যখন দেখবে সে কঠোর হতে শুরু করেছে।তখন বুঝে নেবে তোমার ভালোবাসায় গাফিলতি আর অপমানের পরিমাণ কয়েকশগুণ বেড়েছে। অধিকাংশ মেয়েরা ভালোবাসা, সম্মান আর আমার সময় চায়।যদিওবা অধিকাংশ পুরুষ এগুলোকে ন্যাকামো ভেবে উড়িয়ে দেয়। তবে কিছু সংখ্যক দুষ্টামির বশে বলা কথা থেকে কখন ঝগড়া লাগিয়ে দেয় তখন আর তা বোঝা হয়ে ওঠে না।নারী সব সহ্য করতে পারে।তবে আত্মসম্মানে আঘাত ঘটলে এখনকার যুগে অধিকাংশ নারীই সম্মানহীনা বাঁচতে চায় না।এমনকি প্রিয় মানুষ আত্ম-সম্মানে আঘাত করলে তাকে ছেড়ে দিতেও বিন্দু মাত্র সঙ্কোচ নারী জাতির মাঝে নেই। ইনায়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আশিয়ান চলে যাওয়ার পর সারারাত ঢুকরে কেঁদেছে।তবে পরদিন সকাল থেকে আজ তৃতীয় তম তারিখে সে চোখের জল বিসর্জন করেনি আর। কার জন্য করবে যে দুঃখিত না বলে আরো অপমান করেছে তার জন্য!

বারে বসে ড্রিংকস করছে আশিয়ান। সিঙ্গাপুরের রয়েল বার এটা।ক্যাসিনোও আছে এর বিপরীত পার্শে তবে তা আড়ালে।উপরি ব্যবসা বারের।বার টেন্ডাররা বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী দেখাচ্ছে।কেউ বিয়ারের বোতলে আগুন লাগিয়ে তিনটা আগুনাক্ত বোতল নিয়ে প্রদর্শনী করছে।আবার কেউ মুখে নিকটে আগুন জ্বালিয়ে প্রদর্শনী দেখাচ্ছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। এদের কি প্রাণের ভয় নেই!সবারই আছে‌। পেটের দায়েই এই বিপজ্জনক কাজকে আপন করা।

আশিয়ানের দৃষ্টি ঘোলা।একটু অতিরিক্ত চড়ে গেছে।ভদকার মতো ড্রিংকস যার ষাট শতাংশই অ্যালকোহল।তা খেলে বুঝি চড়বে না!আশিয়ান উঠে দাঁড়াতে চায় তবে ঘোলাটে দৃষ্টির কারণে বুঝে উঠতে পারে না আদৌ পা ফেলেছে আর কোথায় পা ফেলেছে তা।তাইতো ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। একজন সার্ভেন্ট উঠাতে আসলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। কেননা এক নয় যেন চার।হুবুহু এক‌। আশিয়ান নিজেই নিজেকে প্রশ্নোক্ত করে এবং বলে,

”আশিয়ান বেবি তুই এতো খেলি যে এক থেকে চার,না মানে একজনকে চারজন দেখাচ্ছে!ওয়াহ ”

আশিয়ান চারপাশে তাকালো।আশাহত হলো।সে ভেবেছিল আজও ইনায়ার ধরাবাঁধা সে লোকটা আসবে।আশিয়ানকে ধরে বাসা অব্দি পৌঁছে দিবে। কিন্তু আসেনি সে লোকটা।হয়তো ইনায়ার আদেশ নেই।আশিয়ান হয়তো ভুলে বসেছে,মেয়েরা সব ভুলতে পারলেও আত্মসম্মানে আঘাত করলে তা কখনো ভুলতে পারে না।

আশিয়ান আপ্রান চেষ্টায় উঠে দাঁড়ালো।ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে আজকে রাতের জন্য রুম নিয়ে ওয়েটারের সহযোগিতায় রুমে গিয়ে ভালো করে লক করে সুয়ে পড়লো। আশিয়ান জুতা অব্দি খোলেনি।ঘুমে তলিয়ে গেলো।

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই মাথা প্রচন্ড ধরে আসে তার। শরীরটা ম্যাচম্যাচ করছে।পাশে তাকিয়ে অবাক হয়। পাশপাশি আশ্চর্য হয়। একজন ছেলে সুয়ে আছে ওর পাশে। কিন্তু কিভাবে।ও তো দরজাটা লাগিয়েই শুয়েছিলো।তবে ছেলেটার চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে সে। বিছানায় তো সে নিজেই শুয়ে আছে।তবে..!

আশিয়ান এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে,কাঁদে। কোনো প্রয়াস চালিয়ে লাভ হচ্ছে।দরজার হাতল সে স্পর্শ করতে পারছে।দরজার এপাড় ওপার খুব সহজেই যেতে পারছে।তবে এ অলৌকিক ক্ষমতা যে তার চাইনি।সে তো নিজ শরীরটা চায়।তার তো এরকম ভৌতিক কোনো ঘটনায় জড়ানোর ইচ্ছে নেই।

আশিয়ান ছুটে বেরিয়ে আসে বারের ওই প্লেস থেকে।রাস্তায় অগোছালো ভাবে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ দেখতে পায় ইনায়া রাস্তার মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে।আর তার দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল এক ট্রাক।আশিয়ান ইনায়াকে বাঁচাতে সর্বশক্তি ব্যয়ে ছুটে যায়।তবে স্পর্শ না করতে পারায় ইনায়ার এক্সিডেন্ট হয়।ছিটকে রাস্তায় পড়ে ইনায়া।

আশিয়ান ‘না’ বলে চিৎকার করে জেগে ওঠে বিছানায়।ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তার।দ্রুত ওই রুম ত্যাগ করে বিল পে করে বেরিয়ে আসে সে।গাড়ি নিয়ে স্বপ্নে দেখা রাস্তায় পৌঁছায়।তবে ইনায়াকে দেখতে না পেলেও ওইরকম দেখতে ট্রাক সে দেখতে পায়।ব্যাকুল হয়ে চারপাশে খুঁজতে থাকে ইনায়াকে সে।

আশিয়ান একটু পর নিজেকে বোঝায় তা কোনো ভবিষ্যৎ এর সচেতনতা নয় বরং একটা সামান্য স্বপ্ন ছিলো। হঠাৎ আশিয়ানের মনে হয় যে ইনায়া তো বাংলাদেশে।সেখানে যদি ওর কোনো বিপদ হয় তখন!আর আশিয়ান তো সুদূর সিঙ্গাপুর এখান থেকে কিভাবেই বাঁচাবে সে তার প্রিয় নারীকে!আশিয়ান আঁতকে ওঠে।সব ঝগড়া ভুলে ফোন দেয়। সিঙ্গাপুরের নিউইয়র্ক শহরে এখন সাতটা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট। অর্থাৎ বাংলাদেশে একঘন্টা কম। সেক্ষেত্রে ইনায়া জাগ্রতই হবে হয়তো!

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-১০+১১

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১০ ]
#বর্ষা

হসপিটালে এসেছে ইনায়া।ডক্টর জাহিদের‌ সাথে মিটিং। তাসকিন নামের ওই বদলোকটাও এই হসপিটালেই কর্মরত তা ইনায়া আজই জেনেছে। হঠাৎ ইনায়ার চোখ পড়লো তাসকিন আর স্নিদ্ধার দিকে।স্নিদ্ধা হয়তো প্রেগন্যান্ট। তাসকিন কি সুন্দর আদর্শ স্বামী হওয়ার চেষ্টা করছে।স্নিদ্ধাও খুশি এতে।তবে মেয়েটা যদি স্বামীর মাস দুয়েক আগের কুকৃত্তির কথা জানতে পারে তবে কি আদৌ এই ভালোবাসা টিকবে!

স্নিদ্ধা দূর থেকে ইনায়া দেখেই চিনে নেয়। তাসকিনকে রেখে একপ্রকার ছুটে চলে আসে ইনায়ার দিকে।ইনায়া অনেকটাই অবাক হয়। কেননা সে তো ভেবেছিল স্নিদ্ধা ওকে চিনবে না।স্নিদ্ধা চুমুতে মুখ ভরিয়ে দেয়। তাসকিন ইনায়ার সাথে স্নিদ্ধা এতো সুশীল ব্যবহারে রীতিমত অবাক এবং ভীত।স্নিদ্ধা তাসকিনকে ডেকে বলে,

”তাসকিন তোমাকে বলেছিলাম না, ছোটবেলায় যখন সিঙ্গাপুর ছিলাম বাবার কাজের সূত্রে তখন একটা পুচকি আমায় খুব ভালোবাসতো।এই যে দেখো সেই পুচকিটা।আমার পুচকি বোনটা দেখেছো কত বড় হয়েছে?”

স্নিদ্ধার কথায় তাসকিন তড়তড় করে কাঁপতে থাকে। তাহসিন ফালতু এক বাহানায় কেটে পড়ে।স্নিদ্ধা আর ইনায়া ওয়েটিং এর জায়গায় বসে গল্প করতে শুরু করে।

”আমি কিন্তু অভিমান করেছি ইনায়া তুই আমাকে কি করে ভুলে গেলি? তুই বাংলাদেশে এসেও আমার সাথে কেন মিট করলি না?”

ইনায়া বাচ্চাদের মতো ফেস করে কিছুক্ষণ ভাবুক ভঙ্গিমায় থাকে।স্নিদ্ধা ইনায়ার ভাবুক ভঙ্গিমা দেখে হেসে ফেলে। জিজ্ঞেস করে,

”কিরে কি এতো ভাবছিস?”

”ভাবছি তুমি কি আমায় তোমার নাম্বার দিয়েছিলে নাকি এড্রেস দিয়েছিলে যে আমি যাব ”

স্নিদ্ধা কপাল চাপড়িয়ে বলে,”একদমই ভুলে গেছিলাম।চল তবে আজ আমাদের বাসায় ”

ইনায়ার মুখ শুকিয়ে আসে।মুচকি হাসে।বলে,

”আজ নয় তবে অন্য একদিন সারপ্রাইজ দিতে যাবো। তুমি আমায় ঠিকানা আর তোমার নাম্বার দিয়ে দেও বুঝলে?”

স্নিদ্ধা তাই করে।সে তো ছোট্ট থেকে দেখছে এই মেয়েকে কথার বাইরে এক কাজও করার যায় না।যেখানে না বলে সেখানে নাই থাকে।আর যেখানে হ্যা বলে সেখানে যদি উত্থাল পাত্থাল করা ঝড়ও থাকে সেখানেও তার হ্যা এর নড়চড় হবে না যদি আল্লাহ না চায়।স্নিদ্ধা ইনায়ার দিকে একটা চকলেট বাড়িয়ে দেয়।তাসকিন তাকে কিনে দিয়েছিলো আসার সময় কয়েকটা চকলেট।তা থেকেই স্নিদ্ধা একটা চকলেট বাড়িয়ে দেয় ইনায়ার দিকে।ইনায়া চকলেটটি নেয়।

ইনায়ার সিরিয়াল চলে আসায় ইনায়া উঠে দাঁড়ায়।বিদায় জানিয়ে ডক্টর জাহিদের কেবিনে যায়। স্নিদ্ধাকে নিয়ে তাসকিন বেরিয়ে যায়।দূর থেকে সে স্নিদ্ধা আর ইনায়ার ওপর নজর রেখেছিলো যাতে ইনায়া মুখ ফসকে কিছু বলে ফেললে সে যেন তৎক্ষণাৎ সব সামাল দিতে পারে তাই।তবে ইনায়াকে উঠতে দেখে তাসকিন চাইনি আর সময় স্নিদ্ধা হসপিটালে থাকুক কেননা সমস্যা হতে পারে।তাসকিনের সাথে ইনায়ার পরিচয় কিছুদিন আগেই।তবে খুবই ওড পরিস্থিতিতে।তাসকিন মাতাল হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।তার পাশে ছিল অচেনা এক রমনী।যার সাথে সে অবৈধ কাজও করতে চেয়েছিলো গাড়ি রাস্তার কিনারায় পার্ক করে।মেয়েটাও সায় দিচ্ছিলো।তবে ইনায়া চলে আসায় আর সম্ভব হয়নি।

ফ্লাসব্যাক,,,,,

ইনায়া কার ড্রাইভ করে মাঝরাতে কোথাও থেকে আসছিলো।ঠান্ডা বেশ পড়েছে তবে গ্লাস লাগানো থাকায় ভেতরে বসে এতোটা শীত সে উপলব্ধি করতে পারেনি। হঠাৎ তার পাশ দিয়ে বেসামাল এক গাড়ি সামনে গিয়ে থামে। বেসামাল গাড়ি দেখে ইনায়া তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে ফেলেছিলো।বেশ জোরে ঝাঁকির স্বীকারও হয়েছে।তবে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মোবাইলে ফ্লাশ জ্বালিয়ে বাইরে বের হয় ইনায়া।এলাকাটা নির্জন। অবশ্য সুন্দরও বটে। চারপাশের পরিবেশ যেন শহরের বুকে ছোট্ট এক গ্রামের সৃষ্টি করেছে।

সামনের গাড়ির কাছে যেতেই ইনায়া বুঝে যায় অবৈধ কোনো সম্পর্ক হয়তো হচ্ছে এখানে।ইনায়া বুদ্ধি করে মোবাইলে পুলিশের গাড়ির সাউন্ড বাজায়।গাড়ির মাঝে যেন কিছু একটা হয়। শব্দ থেমে যায়।ইনায়া গাড়িতে নক করতেই মাতাল অবস্থায় দুলতে দুলতে অর্ধবস্ত্রহীন লোকটা নিজেকে ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসে।ইনায়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। তাসকিনের চোখে তখন ছিল কামুকতা।সে ইনায়াকে স্পর্শ করার জন্য এগিয়ে আসতেই ইনা গলার বামপাশে জোরে প্রহার করে।তাসকিন জ্ঞান হারায়।ভেতরে থাকা মেয়েটা হিল হাতে নিয়ে ছুটে পালিয়েছিলো।ইনায়া এই নোংরা মানুষটিকে নিজের সাথে নিবে না বলে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করে এড্রেস দিয়ে দেয়।এমনকি ওয়াইফের পরিবর্তে সিস্টার লেখা নাম্বারে কল করে তাসকিনের কথা জানিয়ে দেয়। কেননা কোনো স্ত্রীর সামনে তার স্বামীর নোংরা চরিত্র যদি চলে আসে তবে সে স্ত্রীও খারাপ পথে কিংবা খারাপ সঙ্গে জড়াবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কিছুদিন আগে আবারো দেখা হয়েছিলো ইনায়ার সাথে তৃষ্ণার।সঙ্গে ছিল তাসকিন।তখনই তাসকিন জানতে পারে তৃষ্ণার মুখে যে সেদিনের মেয়েটা আর কেউ নয় বরং ইনায়া ছিলো। তাসকিন লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল,ক্ষমা চেয়েছিলো!

(ফ্লাসব্যাক শেষ)

ডক্টর জাহিদের কেবিনে গিয়ে ইনায়া জিজ্ঞেস করে,”ফাইল রেডি আছে?”

জাহিদ অবাক হয়।চোখ তুলে ইনায়াকে দেখে অবাকতা হারিয়ে যায়। বহুদিনের পরিচয়।এই মেয়ে একেক সময় একেক চরিত্র পালন করে।তাই জাহিদ জিজ্ঞেস করলো,

”কোন চরিত্রে এখন?”

”প্রফেশনাল”

জাহিদ মুচকি হাসে।কাউকে ফোন করে ফাইলগুলো পাঠিয়ে দিতে বলে।তারপর ইনায়াকে বলে,

”একটু বসুন ম্যাম। আপনার ফাইলগুলো আসছে”

”হঠাৎ ম্যাম বলছেন?”

”প্রফেশনাল ক্ষেত্রে আমি যদি ম্যাম না বলে যদি অসম্মান করি,তবে তো জেলেও পাঠাতে পারেন”

”জাহিদ ভাই সেটা দুই বছর আগের ঘটনা। তুমি এখনো মনে রেখেছো!”

”ভুলবো কিভাবে? যেভাবে বলেছিলি ”

ফ্লাসব্যাক,,,,,

”এক কদমও লড়বেন না?সামনে আগাতে নিলেই আই উইল বি সুট ইউ ”

মেয়েলী কন্ঠে রুখে দাঁড়ায় জাহিদ।ভয়ে ভয়ে হাত উঁচু করে পেছনে ফেরে।চমকে ওঠে।বয়স কতই বা হবে বছর বিশেক বা তার একটু বেশি।এই মেয়ের হাতে বন্দুক ভাবা যায়?জাহিদ পোড়া বাড়ীটার সামনের বাড়িটাতেই বেড়াতে এসেছে।তবে এই পোড়া বাড়ীটা নাকি রহস্যময়ী তা শুনেই এখানে আসা।তবে এভাবে ভাসবে বোঝেনি তখন সে।

”আরে আরে কি করছো?বন্দুক নামাও।এটা খেলার জিনিস না।বাসায় গিয়ে ঘুমাও।রাত বিরাতে মেয়েদের বাইরে থাকতে নেই ”

”এখন আপনার থেকে শিখতে হবে কি করবো আর কি করবো না।আর আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে তুমি করে বলার”

ইনায়া গুলি চালায়‌ হাওয়ায়।জাহিদ ভয়ে লাভ দেয়।ইনায়ার সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎকার এভাবেই। তারপরের সাক্ষাৎ ছিলো ভদ্র মোতায়েন।ইনায়া তার আচরণের জন্য সরি বলেছিলো।আর তারপর ইনায়া ভাই বানিয়েছিলো জাহিদকে।আর জাহিদও বোনের চোখেই দেখে।তাইতো এতো রিস্ক নিয়ে এতো বড় একটা কাজ করছে সে। অবশ্য এই মিশন সফল হলে দেশের অনেক চোরাই চক্রের সন্ধান মিলবে। এবং দেশে অনৈতিক ভাবে মেডিসিন বিক্রির ব্যবসাটাও থমকে যাবে।

ইনায়ার ফোন আসায় ইনায়া জাহিদের দিকে তাকিয়ে এক্সকিউস মি বলে একটু সাইডে দাঁড়ায়। সিঙ্গাপুরের এক খবরীটা কল দিয়েছে।কয়েকদিন আশিয়ানের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না।আশিয়ানকে অনলাইনে একদমই পাওয়া যাচ্ছে না। তাইতো আবারো খবরীদের এক্টিভ করা।

”ম্যাম স্যারকে থ্রেট করে এলি নামক এক মেয়ের সাথে স্যারকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হচ্ছে!”

”হোয়াট”

ইনায়া চেঁচিয়ে ওঠে।জাহিদ চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করে,”কিছু হয়েছে ইনায়া?”

ইনায়া মাথা নেড়ে না বোঝায়।তারপর লোকটাকে ধিমা স্বরে বলে,”আশিয়ান কি রাজি?”

”স্যারের ওপর মামলা করা হবে স্যার যদি বিয়েটা না করে তবে।আর তাছাড়া স্যার যখন কোমায় ছিলেন তখন এনারাই স্যারের বিজনেস টেক-কেয়ার করেছে। অবশ্য স্যার এনাদের পূর্বে অনেক বড় ফেবার করেছিলো।তবে এই লোকেরা তা ভুলে স্যারকে থ্রেট করছে!”

”আমি কি জিজ্ঞেস করছি আর তুমি কি বলছো?”

”সরি ম্যাম।তবে স্যার রাজি। শুধু মাত্র জেলে যাওয়ার জন্য নয় বরং আপনার সিকিউর লাইভের জন্যও”

”আমার লাইভের জন্য মানে?”

”ওনারা আপনাকে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়েছে”

ইনায়ার সামনে যেন বেষ্ট অফ দ্যা ফালতু জোক বলা হয়েছে পৃথিবীর।ইনায়া হাসতে হাসতে বলে,

”বনে থেকে বাঘের সাথে আর নদীতে থেকে কুমিরের সাথে লাগতে নেই-উক্তিটা হয়তো এরা ভুলে বসেছে। এদের মনে করিয়ে দেও।আমার কি আরও বলতে হবে যে কি করতে হবে?”

”নো,ম্যাম।আমি বুঝেছি”

ইনায়া ফোন রেখে হাসতে হাসতে পেছনে তাকাতেই দেখে জাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে।ইনায়া তা দেখে মুচকি হাসে।তবে কিছু বলে না।শুধু মাথায় একটু ম্যাসাজ করে কেননা ব্যথা করছে।জাহিদ চিন্তিত হয়ে বলে,

”কিরে মাথা ব্যথা করছে নাকি?”

”হুম, আচ্ছা ফাইলগুলো আসতে হয়তো দেরি হবে আমি উঠি।তোমার তো আরো রোগী আছে হয়তো”

”আরে কোথায় যাচ্ছিস?মা তোকে সাথে নিয়ে যেতে বলেছে।আর শোন আজ আর রোগী নেই।আমি আজ বেশি রোগী দেখবো না বলে আগেই অথোরিটিকে জানিয়ে রেখেছিলাম।”

চলবে?

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১১ ]
#বর্ষা

ফাবিহা সারওয়ার অফিসে ফাইল দেখছিলেন। হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত এক নাম্বার থেকে কল পেয়ে তার হাত কাঁপতে থাকে।চোখে অশ্রুরা বাসা বাঁধে।তবে কল কেটে দেয় সে। ঠোঁট কামড়ে বড় বড় শ্বাস নেয়।আবারো কল আসে।কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বৃথা তবুও সবোর্চ্চ চেষ্টা কান্না থামিয়ে ফোন রিসিভ করে।নাম্বারটা এখনো সেভ করাই যে আছে।তবে এতোগুলো বছর পর হঠাৎ কল আসলো!

দুই পাশেই নিরবতা। নিরবতা ভেঙে ওপাশ থেকে কান্নাভেজা কন্ঠ শোনা গেল।ইসরাক খান বলে উঠলেন,

”আমার মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাইছি দেবে আমায়?”

ফাবিহা সারওয়ারের অন্তর যেন কেঁদে উঠলো।ভয়েরা জেঁকে বসলো। ফাবিহা সারওয়ার ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন,

”কি হয়েছে ইনায়ার?”

ইসরাক খান যেন চমকালেন।তবুও স্বাভাবিক থেকে বললেন,

”আ..আমার মেয়েটা আর কয়েকদিনের অতিথি ”

”আরে যেভাবে বলেছিলে ভয় পেয়ে গেছিলাম।ইনায়া বলেছিলো ওর বিয়ে ঠিক করেছো”

ইসরাক খান এবার আর নিজেকে কান্নাভেজা কন্ঠে আটকে রাখতে পারেন না। হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠেন। ফাবিহা সারওয়ার এবার সত্যিই অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।যেন আত্মা বেরিয়ে আসবে এবার। ফাবিহা সারওয়ার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেন,

”ইসরাক বলো আমার মেয়ের কি হয়েছে?”

ইসরাক খান কাঁদতে থাকেন।জবাব দেন না।ইসরাক খানের কান্না দেখে এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না ফাবিহা সারওয়ার। কেঁদে দেন।বলেন,

”ইসরাক প্লিজ”

”ইনায়া ব্রেন টিউমারের লাস্ট স্টেজ।আমাকে আজই সে যে হসপিটালে টেস্ট করেছিলো সেখান থেকে ফাইলগুলো মেইল করেছে।”

ইসরাক খানের কথা শোনামাত্রই ফাবিহা সারওয়ার ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে চেয়ার থেকে পড়ে না।নিচে বসেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন।মা বেঁচে থাকাকালীন মেয়ে থেকে দূরে থেকে বাঁচতে পারে,তবে মেয়ে যখন কাছে থাকে এবং মেয়ের অসুস্থতার খবর যখন মায়ের হৃদয়ে আঘাত হানে,সেই আঘাত কি করে একজন মা সহ্য করবেন!নারীরা যে কোমলমতী হৃদয়ের অধিকারীনি,বাইরে তারা যত শক্ত খোলসেই আবৃত্ত থাকুক না কেন!

”ইসরাক আমার মেয়ে কি মা..”

”খবরদার ফাবিহা ভুলেও একথা বলবে না।আমার ইনায়ার কিছু হবে না।”

ইসরাক খান ধমকে বলে ওঠেন।যদিও সে জানেন যে এখন তার সাধ্য নেই ইনায়াকে বাঁচানোর কেননা লাস্ট স্টেজ।ডক্টররা একমাসের মতো সময় দিয়েছেন।এর আগেও হারিয়ে যেতে পারে ইনায়া।ইসরাক খান নিজেকে শক্ত করে বলেন,

”ফাবিহা আমি তোমার কিংবা আমার জন্য ফোন করিনি।আমি ফোন করেছি আমার মেয়ের ইচ্ছে পূর্তিতে।আমার মেয়ে চায় একটি সুন্দর,মিষ্টি পরিবার।আমি অসম্পূর্ণ তুমিহীন আর ইশানকে ছাড়া এই পরিবার তাকে দিতে।প্লিজ আমার মেয়ের জন্য ফিরে আসো।প্লিজ”

”তুমি ইশানকে কিভাবে চেনো ”

”শুধু জেনে রাখো ইনায়াই আমাকে আমার ছেলের পরিচয় দিয়েছে! শুধু তোমার কাছে একটাই চাওয়া আমার মেয়েটার ইচ্ছে পূরণ করো”

ফাবিহা সারওয়ার আর কিছুই বলেন না।বলার আর কিছুই নেই তার নিকট।কল কেটে উঠে দাঁড়ান। বিধ্বস্ত হয়ে আছেন তিনি। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন তিনি।সকাল এগারোটা বাজে।দ্রুত অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে গন্তব্যের দিকে ছোটেন।

ভার্সিটিতে আজকেও সেই আগের মতোই দেরি করে এসেছে ইনায়া।শরীরটা হয়তো তার দূর্বল।কেমন ফোলা ফোলা চোখ মুখ, হঠাৎ হিজাব করা শুরু!মেয়েটা ছটফট ছটফট করছে।যেন কারো আসার অপেক্ষায় সে!ইনায়া এক ক্লাস করে বের হয়ে ক্যান্টিনে যাওয়ার পথেই দেখা হয় ফাবিহা সারওয়ারের সাথে। এতো জন শিক্ষার্থীর সামনেই ইনায়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন।

ইশান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মা কিভাবে? কিভাবে ইনায়ার সাথে ভালো ব্যবহার করছে,জড়িয়ে ধরছে তা ভেবে পায় না।ইশান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়।

ফাবিহা সারওয়ার ইনায়ার গালে হাত দিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলেন,

”ইনায়া কি শুনছি আমি এগুলো ”

”কি শুনছেন”

”তো..তোমার নাকি ব্রেন টিউমার?”

”হুম।লাস্ট স্টেজ ”

ইনায়া প্রশস্ত হেসে উত্তর দেন। ফাবিহা সারওয়ার আবারো জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে।ইনায়ার চোখে তখন অন্যরকম কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে।ইশান অবাক হয়ে গেছে মায়ের কথা শুনে।ছুটে এসে মা’কে ইনায়ার থেকে ছাড়িয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

”মম তুমি তুমি কি বললে…ইনায়ার ইনায়ার কি হয়েছে?এই ইয়ু বল”

ইশান মা’কে ছেড়ে ইনায়া ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে। ইনায়া মুচকি হাসে।এই হাসি যেন সাধারণ হাসি নয় বরং রহস্যঘেরা হাসি‌।ইনায়া ইশানকে ছাড়িয়ে অনেকটা পিছিয়ে যায়।বলে,

”জ্বি,তোর মম ঠিকই বলেছে।আমি আর কয়েকদিনের অতিথি তোদের কাছে”

ইশান যেই ছেলেটা ইনায়াকে কয়েকদিন যাবৎ বড্ড অবহেলা করেছে সেই ছেলেটাই আজ বোনের এদশা শুনে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। কাঁদতে শুরু করে।অভিমান কি শুধু মেয়েরা করতে পারে!ছেলেরাও পারে।ইশান অভিমানের বসে নিজের রাগকে প্রকাশ করেছিলো এতদিন।তাই ইশান রাগের বসে নিজের চুল টেনে ধরে।ইনায়া ইশানকে দাড় করিয়ে চোখ মারে।ইশান অবাক হয়ে যায়।ইনায়া ইশানকে একটু উঁচু হয়ে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু বলে।তবে এতক্ষণে এখানে একটা মেলোড্রামা হচ্ছে আর সেখানে দর্শক থাকবে না তা হয়! হয় না।

”অনেক ড্রআমআ হয়েছে এখানে এখন চলো এখান থেকে”

ইনায়ার কথায় ইশান ইনায়াকে ধরতে নিলে রিনি করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। ফাবিহা সারওয়ার তা দেখে মুচকি হেসে রিনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

”আরে পাগলি ননদীর সাথে হিংসে করো না। ইশানের বোন ইনায়া।বুঝলে”

রিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।যখন বুঝতে পারে সে কি বুঝে কি করে ফেলেছে তখন আফসোস করে নিজের বুদ্ধিহীনতার কারণে। অবশ্য যেকোনো মেয়েই তার পুরুষের জন্য জেলাস হবেই।তা সেই পুরুষটা ওনাকে ভালোবাসে কিংবা না বাসে।নারী জাতি তার শখের পুরুষের জন্য ছ্যাচড়া পদবীটা গ্রহণেও কখনো পিছপা হয়না।

আশিয়ান এয়ারপোর্টে এসে ঝামেলা করছে।চোখ তার ছলছল করছে।যেন এখনই বাচ্চার মতো কান্না করা শুরু করবে। আশিয়ান আগেই টিকেট বুক করেছিলো।তবে এনারা নাকি ইমার্জেন্সিতে টিকেট অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছেন। কালকের ফ্লাইট ছাড়া আজ আর ফ্লাইট নাই। আশিয়ানের নিকট যেন এখন এক একটি মুহূর্ত এক যুগের সমান।আশিয়ান এয়ারপোর্টেই বসে পড়ে।চোখ মুখ মুছতে থাকে।তখনই হঠাৎ একটা ফোন এগিয়ে দেয় কেউ তার দিকে।

”স্যার,প্লিজ ম্যামের সাথে একবার কথা বলুন”

আশিয়ান লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয় আবার পুরোপুরি অবাক হয় না বললেও চলে কেননা লোকটা তাকে বহুদিন ফলো করে।আশিয়ান ফোন কানে দেয়।

”এইযে পাগল প্রেমিক,ফোন ফেলে কোথায় ছুটেছেন?একবার ফোন করবেন তো”

ইনায়ার কন্ঠস্বর কানে ভাসতেই আশিয়ান যেন আরো ভেঙে পড়ে।যেই মেয়ে ওকে এতবড় সমস্যা থেকে উদ্ধার করেছে। সেই মেয়ের নিকট নাকি আর কয়েকদিনের সময় আছে মাত্র। কিছুক্ষণ আগেই তার কাছে কয়েকটা ছবি পাঠানো হয়েছে।ইনায়ার রিপোর্ট আর কি হয়েছে তা ডক্টর আশিয়ানকে জানায়।আশিয়ান স্তব্ধ হয়ে যায়। কেননা কাল যে মেয়ে থ্রেটের ওপর থ্রেট দিয়ে আশিয়ানকে বাঁচিয়েছে,ঠিক সেই মেয়েই নাকি এখন এতো দূর্বল হয়ে পড়েছে যে কয়েকদিনের ব্যবধানে পৃথিবী ছাড়বে!

”জান আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,তুমি আমায় কেন জানাওনি এতবড় সত্য?জান আমার কষ্ট হচ্ছে।জান আমি তোমায় ছাড়া মরে যাবো ”

”এই যে পাগল শুনুন,আমাকে ভরসা করেন?”

”হুম”

”তাহলে শুনুন আমি যা বলছি।মন দিয়ে শুনবেন কিন্তু”

”বলো”

”আমি…..”

আশিয়ান কাঁদতে কাঁদতেও হেঁসে দেয়।আশিয়ান কল কেটে লোকটার হাতে ফোন ফেরত দেয়।আশিয়ান কান্নার মাঝেই হাসতে হাসতে চুলগুলো এলোমেলো করে আঁকাবাঁকা হেঁটে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে।গাড়িতে উঠে ফোনটা হাতে নেয়।এলির ম্যাসেজ,,,,
”প্লিজ সে হার টু ফরগিভ মি”

আশিয়ানের কালকের কথা মনে পড়ে যায়।আশিয়ান বারে ড্রিংক করছিলো।তখন এলি এসে আশিয়ানের ব্যবহার করার চেষ্টা করে কেননা আশিয়ান মাতাল হয়েছিল।তখনই ইনায়ার কয়েকজন লোক এসে ইচ্ছে মতো মারধর করে এলিকে।আর ভয়ংকর এক থ্রেট দেয়।যাতে এলি এবং এলির বাবা ভয়ংকর রকম ভয় পেয়ে যায়। অবশ্য এলি এখন হসপিটালাইজড কেননা মারের পরিমাণ অনেক বেশিই ছিল।আশিয়ান বাড়ি গিয়ে নিজের কক্ষে গিয়ে চারপাশে তাকায়। ইনায়ার ছবিতে ভরপুর কক্ষটা। হাস্যোজ্জল ছবিগুলো দেখে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলতে থাকে,

”তুমি আমার সেই ভালোবাসা যার শুরুতে আমি নই,তবে যার সাথে জীবনের শেষটা অব্দি থাকতে চাই।তোমার স্মৃতিগুলো আমার তখনকার,যখন তুমি আদৌ ছিলে না আমার।তুমি আমার আসক্তিময় ভালোবাসা,যেই ভালোবাসায় তোমার এই ভয়াবহ প্ল্যানগুলো বারবার আমায় আঘাত করে তোমার অজান্তেই।তবে তোমার দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসা বারবার আমায় আমার মাঝেই গুলিয়ে দেয়।”

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৯

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৯ ]
#বর্ষা

ইনায়া গাড়িতে বসে ভাবছে সে ইশানদের বাড়ি যাবে নাকি যাবে না!মন বলছে যা ইনায়া মায়ের সাথে গল্প করার সুযোগ হাতছাড়া করিস না।অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলছে কিসের মা সে যে মা সন্তানকে ফেলে চলে আসতে পারে তার সাথে কথা বলার চেয়ে নিশ্চুপ থাকা সুন্দর!

ইনায়ার মতো আমাদের মন-মস্তিষ্ক ভিন্ন কথা বলে।কেউ ইগনোর করলে দু-একদিন তাকে মানানোর জন্য কতই না সময় ব্যয় করি।তবে তৃতীয় দিন থেকে নিজেদের ইগোর কাছে আর মস্তিষ্কের কাছে মন অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়ে।তবে এই দূর্বলতা কাটিয়ে সেই ব্যক্তিটা কিঞ্চিত সময়ের জন্য ফিরে এসে বিশাল এক ধাক্কা দিয়ে আবারো কয়েকদিনের জন্য হারিয়ে যায়।কোন বিষয়ে বলছি হয়তো বুঝেছেন!

ইনায়া বহু কষ্টে নিজের মনের কথা শুনবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।গাড়ি ঘুরিয়ে আধাঘণ্টার মাঝে পৌঁছায় ইশানদের কলোনিতে।তবে বাসা না চেনায় ইশানকে কল দেয়।তবে ইশান আর কল রিসিভ করে না।বার কয়েক কেটে দেয়।তারপর যখন রিসিভ করে তখন ধমক দিয়ে কথা বলে,

”এতো ডিস্ট্রাব করছিস কেন?দেখছিস না আমি বারবার কল কেটে দিচ্ছি!স্টুপিড ”

ইনায়া কষ্ট পায়।কল কেটে দেয়। ইশানদের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছেটা ওর মরে যায়।গাড়িতে বসেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।প্রচলিত আছে,”যে মেয়ে বাইরে যতটা স্ট্রং,সেই মেয়ের ভেতরটা ততটা ফাঁপা ”

ইনায়ার ফোনে ইসরাক খানের কল আসে।ইনায়া চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে। তারপর হাসি মুখে পাপাইয়ের ভিডিও কল রিসিভ করে।ইসরাক খান মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করেন,

”বেটা কি হয়েছে তুমি কাঁদছিলে কেন?”

ইনায়া একদমই অবাক হয় না। পৃথিবীর সব বাবারা মেয়েদের মনের অবস্থা বুঝতে পারে কিনা তা ইনায়া জানে না।তবে তার পাপাই তার মুখ দেখে,কন্ঠ শুনে বলে দিতে পারে মেয়ের মন খারাপ।

”তেমন কিছুই না পাপাই। একটু আগে ফুটপাতে হাঁটছিলাম।চোখে কিছু একটা পড়েছিলো।তাই চুলকানোর কারণে চোখে পানি এসেছে”

”মাস্ক আর গ্লাস পড়োনি?”

”মনে ছিল না”

”বেটা তুমি তো জানো তোমার হাই লেভেলে এলার্জি।তাহলে কেন ফুটপাতে হাঁটছিলে মাস্ক আর গ্লাস ছাড়া”

”সরি পাপাই”

”দেখছো এই জন্যই আমি আসতে চাইনি। তুমি নিজের খেয়াল একটুও রাখো না বেটা। আচ্ছা এখন তো বাংলাদেশে লাঞ্চের সময়।খেয়েছো তুমি?”

”না,খাবো।”

”আচ্ছা,বেটা।তাহলে দ্রুত লাঞ্চ করতে যাও।রাখছি আমি। লাভ ইউ এন্ড টেক কেয়ার ”

”ইউ ঠু পাপাই”

ইনায়া কল কেটে ফোনের গ্লেলারিতে গিয়ে পাপাইয়ের সাথে তার হাস্যোজ্জল ছবিগুলো দেখতে থাকে। দৃষ্টি বাইরে গেলে দেখতে পায় ইশানের গাড়ি তার সামনে দিয়েই যাচ্ছে।কি মনে করে ইশানের পিছু নেয় ইনায়া।বিশাল আট তলা বাসায় ঢোকে ইশানের গাড়ি।ইনায়া মিনিট কয়েক অপেক্ষা করে বাসার কাছে যায়।দাড়োয়ান এসে জিজ্ঞেস করে,

”কোথায় যাবেন?”

”এখানে শিল্পপতি ফাবিহা সারওয়ার থাকেন?”

”হ্যা,তবে আপনি কে?”

”অনুগ্রহ করে তাকে ফোন করে বলবেন যে ইনায়া সেহরিশ খান এসেছে!”

”আপনি কে?”

”তাকে ফোন করলেই জানতে পারবেন ”

ইনায়ার কথায় দাড়োয়ান আংকেল ভেতরে চলে যান। মিনিট কয়েক পর ফাবিহা সারওয়ার নিজেই আসেন ইনায়াকে নিতে।ইনায়া গাড়ির বাইরে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কোলাহল নেই এপাশটায় বেশি।গাড়ি চললেও হর্ণের শব্দ স্বল্প। ফাবিহা সারওয়ার ছুটে এসে ইনায়ার গালে হাত দিয়ে বলেন,

”ইশ, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম তাই না!চলো ওপরে যাবে।ইশান,রিনিও এসেছে”

”ওহ”

তিনতলার বা’পাশের ফ্লাটে ঢুকলো ফাবিহা সারওয়ার।সঙ্গ নিলো ইনায়া।ড্রয়িংরুমে বসেই ইশান আর রিনি খোশগল্প করছে।ইনায়ার হিংসে হয় তবে খুশিও হয় অনেক কেননা ভাই-ভাবির মিলন তাকে আনন্দ দিয়েছে।এটাই তো চাইতো।

ফাবিহা সারওয়ার বাসায় প্রবেশ করেই ইশান আর রিনির উদ্দেশ্যে বলে,

”দেখো কে এসেছে আমাদের বাসায়?”

ইশান,রিনি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। অবশ্য রিনি দাঁড়িয়ে গেছে। ইশানের মুখশ্রীতে ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। রেগে তেড়ে এসে ইনায়ার হাত মুচড়ে ধরে ইশান। রাগান্বিত স্বরে বলে,

”ইনায়া মমের সাথে তর্ক করে বাসা অব্দি চলে এসেছিস।বের হ এখনি আমাদের বাসা থেকে।”

ইনায়া ইশানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ফাবিহা সারওয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলে,

”ছেলের দ্বারা অপমান করতে ডেকেছেন মিসেস ফাবিহা সারওয়ার?”

ফাবিহা সারওয়ার ইনায়াকে ডেকেছেন শুনে ইশান অবাক হয়। কয়েক পা পিছিয়ে যায়। ফাবিহা সারওয়ার অগ্নিদৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকানোয় ইশান ক্ষমা চায় ইনায়ার কাছে।আবারো আগের জায়গায় গিয়ে বসে।রিনি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে।কান্না পাচ্ছে তার এখন।ইনায়া কেন এসেছে এখানে এই তার প্রশ্ন।

ইনায়াকে নিজের রুমে নিয়ে যান ফাবিহা সারওয়ার।ইনায়া ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে থাকে‌। ফাবিহা সারওয়ার কিছুক্ষণ পর ইনায়ার জন্য খাবার নিয়ে আর ওনার জন্য কফি নিয়ে ঘরে আসেন।ইনায়া প্রথমে ইতস্তত করলেও খেয়ে নেয়।পাপাই চলে যাওয়ার পর প্রথম পোলাও,কোরমা, গোশত খেল সে। অবশ্য এগুলো রাঁধার ঝামেলা সে কখনোই করবে না।ইনায়া এই প্রথম মায়ের হাতের রান্না খেলো।চোখ তার ছলছল করছে।

ফাবিহা সারওয়ার ইনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

”আমি খাইয়ে দিবো?”

ইনায়া নিঃশব্দে একাকী খেয়ে নেয়।একবার সাধে ফাবিহা সারওয়ারকে খেতে।তবে তিনি খান না।আর ইনায়াও মায়া বাড়াতে চায় না।তাইতো নিজ হাতেই খেলো। খাওয়া শেষে হাত-মুখ ধুয়ে আসতেই ফাবিহা সারওয়ার একটা অ্যালবাম বের করে সামনে রাখেন ইনায়ার।পরিচয় করান কে ইনায়ার কি হয় তার বাবার বাড়ির!ইনায়া অবাক হয়, প্রচন্ড অবাক হয় যখন সে জানতে পারে ইশানের ভিডিও কলে দেখা ডেড আর কেউ নয় বরং ফাবিহা সারওয়ারের বড় ভাই।আর মামা-চাচা দের আমরা বাঙালিরা বড় আব্বু,বাবা বলে ডেকেই থাকি। সেক্ষেত্রে নিজের বাবাকে পাপাই ডাকলে, মামা-চাচাদের ডেড বলা অন্যায় কিছুই না।

আশিয়ান নিজ কেবিনে বসে ফাইল চেক করছে।কয়েকটা ফাইল আটকে ছিল তার সাইন বিহীন।তাইতো এখন ঝামেলার মাঝে ইনায়াকে কল দেওয়া হয়ে উঠছে না।যখন আশিয়ানের কাজ শেষ হয় তখন হয়তো বাংলাদেশে মাঝরাত নয়তো ইনায়া ব্যস্ত।তাইতো ম্যাসেজেই দু প্রেমিক-প্রেমিকার কথপোকথন হয়।ব্যস্ততা কমলেই ম্যাসেজ দিয়ে রাখা কিংবা সিন করা।এর মাঝেও আলাদা এক অনুভূতি আছে।

আশিয়ান কাজের মাঝে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইনায়ার ম্যাসেজ।মুচকি হাসে।

”এই শোনো আমি মিসেস ফাবিহা সারওয়ারের বাসায় যাচ্ছি!”

”জানো আজ সকালে মিসেস ফাবিহার অফিসে গিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছি”

”জানো আজ না ইশান আমার সাথে মিসবিহেভ করেছে।কি করবো বলো?ভাই তো তাই কল দিয়েছিলাম বাসার এড্রেস জানতে”

ইনায়ার তিনটা ম্যাসেজই আশিয়ান পড়ে।তবে ইশান ওর সাথে আবারো মিসবিহেভ করেছে শুনে রেগে যায়।তবে ওর যে কিছু করার নেই এখানে কেননা ইশান যেমনই আচরণ করুক সে তো ইনায়ারই ভাই হয়।আশিয়ান চায় না ইনায়া ভাই হারা হোক।

আশিয়ান ম্যাসেজ দেয়,

”জান যে তোমার সাথে যেমনই করুক।সবসময় একটা কথা মনে রাখবে সবাই সবার মূল্য জানে না,তাই অভ্রতা করে।তবে আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসি না কিন্তু….তবে তোমাতে আমি আসক্ত ”

ম্যাসেজ সেন্ট করার সাথে সাথেই ইনায়া ম্যাসেজ দেয়,

”আমিও তোমাকে ভালোবাসি না।জাস্ট তোমাকে স্বামী স্বরূপ দেখতে চাই।এই যা আর কিছু না”

আশিয়ান হাসে। কিছুক্ষণ দুজনে ম্যাসেজ করে।তবে একটু পর ইনায়ার রিপ্লাই না পেয়ে বোঝে হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইনায়া।তাই আশিয়ান আবারো কাজে মনোযোগ দেয় কেননা এই ফাইলগুলো আজকের মাঝেই কমপ্লিট করতে হবে।

কেবিনে কেউ নক করায় সেদিকে তাকায় আশিয়ান।এলি এবং তার বাবা এসেছে।এলি বাঁকা হাসে।এলির বাবা এসে আশিয়ানের সামনে একটি কাগজ ধরে। আশিয়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।সে কবে সাইন করলো তাই তো তার স্মরণে নেই।এলির বাবা আশিয়ানকে হুমকি দিয়ে বলে,

”তুমি নিজে স্বাক্ষর করেছো যে তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে।এখন যদি তুমি অস্বীকার কর তবে আমি তোমার নামে মামলা করবো”

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৮

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৮ ]
#বর্ষা

ইনায়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রক্ত যেন চোখে উঠেছে।এতো পরিমাণ লাল তার চোখজোড়া যা অন্তরে ভয় ঢোকাতে যথেষ্ট।ইনায়া ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে ফাবিহা সারওয়ারের দিকে। ফাবিহা সারওয়ার চেঁচিয়ে বলেন,

”তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলার?কতটুকু জানো তুমি আমার সমন্ধে?”

ইয়ানা গাল থেকে হাত সরিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

”আপনার ব্যাপারে যতটুকু আগে জানতাম সব ভুল জানতাম!আমি তো শুনেছিলাম মায়েরা নাকি সন্তানদের গন্ধে তাদের চিনতে পারে!কই আপনি তো চিনলেন না?”

ফাবিহা সারওয়ার আরচোখে তাকিয়ে বলে,

”কি বলতে চাইছো তুমি?কে তুমি?”

”আমি ইনায়া সেহরিশ খান ডটার অফ ইসরাক খান ”

ফাবিহা সারওয়ারের চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে।হাত আগে বাড়িয়ে দিতে গিয়েও বাড়ায় না।ঢোক গিলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।ইনায়ার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

”তা তোমাকে আমার সমন্ধে এগুলো তোমার বাবা বলেছে!ভালোই বলেছে ওর থেকে আর কি আশা করা যায়!প্রতারক”

ইনায়া এতক্ষণ নিজের জন্য করা প্রত্যেকটা অপমান মুখ বুজে সহ্য করেছে কেননা সে চায় না নিজের হাতেই আবারো সব শেষ করতে।তবে প্রাণপ্রিয় পিতার অপমান কখনোই সহ্য করা যায় না।

”স্টপ ইট মিসেস ফাবিহা সারওয়ার,জাস্ট স্টপ ইট।আমার পাপাইকে প্রতারক বলার সাহস হয় কি করে আপনার?নিজেই তো অন্য পুরুষের হাত ধরে ইশানকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন!আবার আমার পাপাইকে বলছেন প্রতারক!তা আমার পাপাইয়ের থেকে কি বেশি দিয়েছে ওই লোকটা?”

ইনায়ার গালে আবারো চড় লাগায় ফাবিহা সারওয়ার। তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

”বাহ,তোমার বাবা তো তোমাকে অনেক সুন্দর শিক্ষা দিয়েছে?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও তো শেখাতে পারেনি ”

”ইনায়া সেহরিশ খান মানুষ বুঝে কথা বলে।যে যেমন আচরণ করে,সে ঠিক তেমন আচরণই ফেরত পায় ইনায়ার থেকে।মাইন্ড ইট”

”ইনায়া…”

”চিৎকার করবেন না মিসেস ফাবিহা সারওয়ার ”

”মা’কে নাম ধরে বলতে লজ্জা করছে না”

”যে নারী তার তিনমাসের বাচ্চা ফেলে চলে আসতে পারে তাকে অন্তত ইনায়া মা বলে মানে না।আপনি ইশানকে নিয়ে আসতে পারলেন,তবে ইনায়াকে আনতে পারলেন। অসাধারণ ”

”ইনায়া তুমি আমাকে ভুল বুঝছো”

”তাহলে আমাকে সঠিক ভাবান ”

”আমি চাই না তোমার নিকট তোমার পাপাই ছোট হোক!”

ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে এদিক ওদিক কয়েকবার তাকায়।তারপর ঠোট কামড়ে হাসে।মাথা দু’দিকে ঝাঁকিয়ে বলে,

”আপনি তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন পাপাইকে।সেই ভালোবাসার মূল্যায়নেই অন্তত পক্ষে পি.এ. জেনির কথা মেনে না নিয়ে পাপাইয়ের কথা মেনে নিতে পারতেন।অন্তত পক্ষে তাহলে আমার আর ইশানের জীবনটা এমন হতো না।একটা হাসিখুশি মিষ্টি পরিবার থাকতো”

ফাবিহা সারওয়ার অবাক নয়নে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

”তুমি এগুলোও জানো?”

”সবই জানি।তবে একটা বিষয় বুঝলাম না আপনার চিন্তা অনুযায়ী পাপাই প্রতারক হলে আপনিও তো তাই। আপনি তো সত্যিকারই কোনো এক পুরুষের হাত ধরে চলে এসেছিলেন, ইশানের ডেড বলে পরিচয় করিয়েছেন।আমার পাপাই তো এমন কিছু করেনি।”

”ইনায়া আমি ফ্রড নই। একজন ভাইয়ের হাত ধরে বোন হিসেবে আমি বেরিয়েছিলাম।”

ফাবিহা সারওয়ারের কন্ঠে তীব্র ব্যথা ইনায়া অপলব্ধি করে। ইনায়ারও প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।সে তো এতো আগে কিছু এক্সপোস করতে চায়নি।সে তো সব প্রশ্নের উত্তর আগে জানতে চেয়েছিলো।তবে বাধ্য হলো।ইশান যে যোগাযোগ বন্ধ করেছে তার সাথে।ভাইয়ের রুক্ষ ব্যবহার তাকে পড়াচ্ছে। তাইতো আজ ফাবিহা সারওয়ারের অফিসে এসেছে ইনায়া।কেবিনে বসেই মা-মেয়ে কথাগুলো বললো।সাউন্ড প্রুফ রুম হওয়ার সুবিধার্থে কথোপকথনগুলো ঘরের মাঝেই সীমাবদ্ধ।প্রথমের চড়টা ইনায়া খেয়েছিলো ফাবিহা সারওয়ারের অফিসে আসার জন্য।আর দ্বিতীয় চড়টার কারণ আমরা সকলেই জানি।

”আজ চলি”

”ইনায়া আজ বাসায় আসবে”

”কেন?”

”মেয়ের সাথে গল্প করার আছে।মায়ের কথা মেয়ে রাখবে?”

”মেয়ে মনে করলে ফেলে এসেছিলেন কেনো সেদিন?”

”বাসায় এসো তোমাকে অনেক কিছুই দেখানোর আছে”

ইনায়া বেরিয়ে আসে। পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে অনেক কাঁদে।জীবনটা সে সিরিয়াস কখনো নেয়নি কেননা জীবনের বাস্তবতা কাদায়।তাইতো সবার সহিত এতো প্রাণবন্ত ইনায়া থাকলেও একান্তে জীবনটা বারবার কাদে।সবাই তো চায় একটি হাসি খুশি মিষ্টি পরিবার।তবে ইনায়ার ভাগ্যে পিতার ভালোবাসা থাকলেও মাতার ভালোবাসা জোটে নি।আবার ইশানের কপালে মায়ের ভালোবাসা থাকলেও বাবার ভালোবাসা জোটে নি। সে সবই বোঝে কিন্তু এখনো যে সত্যি সব তার সামনের আসেনি।প্রমাণগুলো এখনো অগোছালো।আগে যে সব কালেক্ট করতে হবে তারপর না…

আশিয়ান সিঙ্গাপুর নেমেছে অনেকক্ষণ।শরীরটা ওর ম্যাজম্যাজ করছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসতে চাইছে।রুমান কিছুই বুঝতে পারছে না যে কি হচ্ছে।দ্রুত এয়ারপোর্ট ডক্টরের সরণাপন্ন হয় ওরা।ডক্টর একটু চেক করেই বলে দেয় কেউ কিছু ইনজেক্ট করেছে আশিয়ানের শরীরে।হাত ছোট্ট একটি ছিদ্র।এতো ছোট ছিদ্র সুচ দিয়েই সম্ভব।ডক্টরের পরামর্শ এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছোটে ওরা।

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে মাস্ক দাঁড়া আবৃত মুখের কেউ একজন হাসছে। অট্টহাসি। কয়েকজন ফিরে তাকিয়েছে।তবে মানুষটা আর লক্ষ্য করতে পারেনি।আকা বাঁকা কদম ফেলে বেরিয়ে গেছে এয়ারপোর্ট থেকে। বিড়বিড় করে বলছে,

”যাকে আমি ভালোবাসি,তাকে আমি না পেলে আর কেউ তাকে পাওয়ার ক্ষমতা রাখে না ”

আশিয়ানের পিছুপিছু নিজেই সেই রাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।সে চলে যেতেই এয়ারপোর্টে আড়ালে লুকিয়ে থাকা কেউ ফোন দেয় কাউকে।খুব ধীমে গলায় বলে,

”ম্যাম স্যারকে একটা মেয়ে ইনজেকশন পুশ করেছে যার ফলে স্যারের অবস্থার অবনতি হতো”

”তুমি কি করছিলে তখন…এক সেকেন্ড হতো মানে?”

”ম্যাম আমি মেয়েটার মতিগতি হালকা বুঝতে পেরেছিলাম তাই ওই মেডিসিন রিমুভ করে তাতে পানি দিয়েছিলাম।আর পানি পুশের কারণেই হয়তো এখন তার একটু খারাপ লাগছে।”

”দোয়া কর তাই যেন হয় নয়তো তোমার খবর আছে।আর আমার ভয়ে যদি ফোন অফ করো সমস্যা নেই।আমার আসল রাজস্ব কিন্তু সিঙ্গাপুর ভুলে যেও না”

লোকটা ভয়ে ঢোক গেলে।খবর দিতে গিয়েও বিপদ সংকেত পেলো।খবরির কাজটা করে বেশ টাকা নয়তো কি আর এনার হয়ে কেউ খবরির কাজ করে। মানুষের শখ অব্দিই আছে এনার হয়ে কাজ করার। কিন্তু যারা কাজ করে তারা রেহাই খোঁজে।

আশিয়ানকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই স্বাভাবিক অনুভব হয় তার।বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় কিছু টেস্ট করে।বাড়ি ফিরে ইনায়াকে কল দেয়।তবে প্রেয়সীর নিকট খুব সুক্ষ্ণ ভাবে গোপন করে তার অসুস্থতার কথাগুলো।

”জান আমি বাড়িতে পৌঁছে গেছি।”

”আমি জানি”

”কিভাবে?”

”সিক্রেট,তবে শুনুন এখন রেস্ট করুন।আমি পরে কল দিবনি ”

”আমার রেস্টের প্রয়োজন নাই। তুমি কি আমায় ইগনোর করছো”

”ধুর পাগল।আমি তো আপনার কথা ভেবেই বললাম।শুনুন একটা কথা বলি”

”বলো জান”

”ভালোবাসি”

”কাকে?”

”বুঝেও যে অবুঝ তাকে ”

ইনায়া কল কেটে দেয়।মোবাইলটা জড়িয়ে রাখে।কিছু একটা ভেবে তার মুখের হাসিটা দীর্ঘ স্থায়ী আর হয়না।ইনায়ার কাছে হসপিটাল থেকে কল আসে।আড়ালে দাঁড়ায়।ফোন রিসিভ করে,

”রিপোর্টে অবস্থা বেশি ভালো না,দ্রুত অপারেশন করতে হবে।তাও বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র দশ পার্সেন্ট ”

”অপারেশন না করালে কতদিন সময় আছে”

”একমাস অথবা পনেরো দিন”

”ওহ,ঠিক আছে”

”পরিবারকে জানালে হয় না?ব্রেন টিউমারের লাস্ট পর্যায় এটা।আরো আগে জানলে হয়তো বাঁচার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকতো!প্লিজ পরিবারকে জানাও”

”আমাকে বলতে হবে না।আপনি আর কোনো চিকিৎসায় বাঁচানো সম্ভব কিনা!তা খোঁজেন”

ইনায়া ফোন রেখে দেয়। চোখজোড়া ছলছল করছে।সামনে তাকাতেই দেখতে পায় ইশান রিনির সাথে কোথাও একটা যাচ্ছে।কি হাসিখুশি দুজন! থাকুক না নিজেদের মতো ইনায়াও পারবে ভাইকে ছাড়া একলা চলতে।আর তো কয়েকটা দিন তারপর তো আর ফিরবে না সে এদেশে।না ফেরার দেশ হবে এটা!

ইনায়া ক্লাসে গিয়ে আশিক,রুমানার পাশে বসে।আশিক ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে। কেননা এই মেয়ে ভার্সিটিতে আসলেও তাকে সহজে ক্লাসে টানা কয়েকদিন দেখা ভারী মুসকিল।তবে আজ চারদিন যাবৎ সে গোছালো হয়েছে।ক্লাস করছে।

”কিরে তোর শরীর খারাপ নাকি আজ চারদিন টানা ক্লাস করছিস?”

”আর কয়েকটা দিনই তো,তারপর তো সারাজীবনের জন্য চলে যাবো।তাই এখান থেকেই নিজেকে একটু গোছানোর চেষ্টা ”

রুমানা উত্তর পেয়ে কেন যেন খুশি হতে পারে না। কেননা বন্ধুকে ছাড়া তারা থাকবে কিভাবে! বন্ধু যদি বিদেশ গিয়ে ভুলে বসে তাদের তখন কি হবে! রুমানার পাশপাশি পূর্ব থেকেই ইনায়ার মন খারাপ দেখে আশিক হাস্যকর অনেক কথা বলে।হেসে দেয় দুজনকেই।স্যার প্রবেশ করায় থেমে যায় ওরা সহ ক্লাসের বাকি সবাই।

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৭

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৭ ]
#বর্ষা

ইশান রাগান্বিত দৃষ্টিতে ইনায়ার সামনে বসে আছে।এতো ‘কেন’ এর জবাব ওর চাই।কেন ইশান চাইলেও ওর মা’কে জানাতে পারছে না যে ও ওর বোনকে ফিরে পেয়েছে।কেন ওকে অচেনা এক ব্যক্তিকে ডেড বলতে হবে।কেন ইনায়া ভার্সিটিতেও কাউকে জানাচ্ছে না যে ইশান ওর ভাই।তবে যদি এতো কেন এত উত্তর ইনায়া না দেয় তবে সে কেন ইশানের জীবনে এসেছিলো!কেন সে ইশানকে বিশ্বাস করাতে দুজনের ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলো!এতো ‘কেন’ কেন শুধুই শব্দে আঁটকে থাকবে। ইশানের আজ জবাব চাই যে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা ইনায়া চাইলেও কাউকে জানাতে পারে না।কি এমন ক্ষতি হবে তা জানালে।আজ সব কেন এর উত্তর চায় ইশান।

ভার্সিটির পেছন দিকে ইনায়া বসেছিলো।এদিকটা অনেক নিরিবিলি।ইশানই অবশ্য ডেকেছে।ইনায়া আসার মিনিট দুয়েক পরই ইশান আসে। ইনায়ার পাশে বসে বলে,

”আজ আমার উত্তর চাই ইনায়া ”

ইনায়া ইশানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

”সঠিক সময় হলে আমি নিজ থেকেই সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।”

ইশান রেগে যায়।রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,

”কবে আসবে তোর সঠিক সময়?আমার আজই সব প্রশ্নের উত্তর চাই”

ইনায়া উঠে চলে যেতে নিলেই ইশান টান মারে।ইনায়া হাতে প্রচন্ড ব্যথা পায়।আজ অব্দি ইনায়ার কাছের মানুষেরা তার সাথে এমন অপ্রতিভ আচরণ করেনি কখনো।হৃদয়ে প্রচন্ড আঘাত পায় সে।না হয় রক্তক্ষরত,না হয়তো কার্ডিও অ্যাটাক।এ কষ্টে অনুভূতিগুলো অভিমানের সৃষ্টি করে।সেরোটোনিন হরমোন হয়তো অধিক মাত্রায় নিঃসৃত হচ্ছে তাইতো অনুভূতিগুলো পাথরের ন্যায় শক্ত হচ্ছে।

ইশান রাগের বসে কি করেছে তা মনে হতেই ইনায়ার হাতটা ছেড়ে দেয়।ইনায়া বসা থেকে উঠে দ্রুত ওখান থেকে চলে আসে।ইশান নিজের চুলগুলো টেনে ধরে বসে আছে। হসপিটাল থেকে ফোন আসে।রিনিকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।কল্যাণীই ওকে বাসায় ছেড়ে দিবে।

ইশানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কলটা কেটে ভাবতে থাকে কি এমন কারণ থাকতে পারে যে ইনায়া তাকে কিছু জানাচ্ছে না।গত বছর দুয়েক আগে ঘটমান অতীতের প্রশ্নগুলো যেন আজ হঠাৎ করেই সব উদয়ন করছে ইশানের জীবনে।

দুই বছর আগে:

ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে ইশান নতুন নতুন। কয়েকদিন ক্লাস করেও কারো সাথে তেমন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।ওই যে ছোট্ট থেকেই মায়ের বিধি-নিষেধের মাঝে ঘেরা ছিলো সে!ক্লাসে বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে বসে ছিলো সে সেদিনও। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে থাপ করে পাশে বসলো।হাত বাড়িয়ে বললো,

”হাই,আমি ইনায়া সেহরিশ খান।”

ইশানের ভালো লাগেনি মেয়েটাকে।কেমন চঞ্চলমনা! অচেনা ছেলের পাশে বসে আবার পরিচয় দিচ্ছে!তবুও ভদ্রতার খাতিরে ইশান ইনায়ার সাথে হ্যান্ডশেক করে।পরিচিত হয়।রিনি যে সেদিন তার ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার নিয়ে এই ভার্সিটিতে এসেছিলো।এসেই ঠাসিয়ে এক চড় লাগিয়েছিলো ইনায়াকে।কেন সে ইশানের নিকটে বসেছে তাই।জেলাসিতে সেদিন রিনি পুড়েছিলো।

দেখতে দেখতে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ইশান ইনায়ার।বেশ গভীর বন্ধুত্ব। বন্ধু হিসেবে যুক্ত হয় রুমানা,আশিক।তবে রিনির সাথে আর সখ্যতা গড়ে উঠেনি ইনায়ার। হঠাৎ একদিন এসে ইশানকে সাইডে ডেকে নিয়ে ইনায়া বলে,

”ইশান তুই আমার জমজ ভাই”

”ফাজলামো করছিস। এগুলো ফাজলামোর কোনো বিষয় হলো পাগলি ”

”আমি সত্যি বলছি।আমি সিরিয়াস ইশান”

”তোর মাথা খারাপ হয়েছে ইনায়া!আর ইউ মেড?”

ইশানকে রেগে যেতে দেখে ইনায়া যুক্তি দিতে শুরু করে।বলে,

”দেখ ইশান আমি জানি মাম্মামের সাথে তুই একাই থাকিস।কখনো তোর মনে হয়নি তোর পাপাই কোথায়?তোর ফ্যামিলি কোথায়?আমি পাপাইয়ের কাছে ছিলাম।পিপিই আমায় তোর আর মাম্মামের কথা গল্প শুনিয়েছে। দাদুভাইয়ের থেকেই আমি মাম্মামের চলে আসার কথা শুনেছিলাম।আর..”

”এনাফ ইজ এনাফ ইনায়া..আমি তোর উল্টা পাল্টা কথা আর শুনতে চাই না”

”আচ্ছা তুই ডিএনএ টেস্ট এ বিলিভ করিস?”

”হুম”

”চল ডিএনএ টেস্ট করবো।এর রেজাল্টই প্রমাণ করবে যে আমি তোর বোন নাকি না!”

সেদিন ইশানের নিয়ে যাওয়া হসপিটালেই গিয়েছিলো ইনায়াও।ডিএনএ টেস্ট করতে দিয়ে চলে এসেছিলো। রেজাল্ট দেখে ইশান বাধ্য হয়েছিলো ইনায়াকে বোন মানতে।সে ইনায়াকে জড়িয়ে কেঁদে ছিলো। পাপাইয়ের কাছে যেতে চেয়েছিলো।তবে ইনায়া নেয়নি।ছবি দেখিয়েছিলো মাত্র।এমনকি ইশান ইনায়ার কথা ওর মমকে জানাতে চাইলেও ইনায়া নিষেধ করেছিলো।কারণ বলেনি তবে ওয়াদা নিয়েছিলো ইশানের।যার কারণে সবশেষে বাধ্য হয়েছিলো ইশান তার মমকে ইনায়ার কথা না জানাতে। ভার্সিটিতে কেউ জানলে বাসায় পৌঁছাতে খবর পৌঁছাতে দেরি হবে না কেননা রিনি তার গোয়েন্দা বললেই চলে।তাই ইনায়া ইশানকে ভার্সিটিতে জানাতে নিষেধ করেছে বলেই ধরে নিয়েছে ইশান।তারপর ওদের সম্পর্ক বন্ধুত্বে আর সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং ভাই-বোনের খুনসুটিতে মেতে ছিলো দুইজন।

ভার্সিটির বাইরে আসতেই ইনায়ার দেখা হয় আশিয়ানের সাথে।আশিয়ানের আজ রাতে ফ্লাইট।যা সকালেই জানিয়েছে সে।এখন দুপুর চলছে।ইনায়া আশিয়ানের সাথে চলে যায়।ছেলেটা কি করে যে ওর পাপাইকে মানিয়েছে তা শুনে প্রচন্ড হেসেছিল ইনায়া।ওর পাপাই সেম এক্সপ্রেশনে এক্সপ্লেন করেছিলো ঘটনাটা।

আশিয়ান পার্শে থাকলে যেন ইনায়া সব দুঃখই ভুলে বসে। হয়তো ভালোবাসার শক্তি এটা।ইনায়া আশিয়ানের ঘটনাগুলো মনে করে মিটিমিটি হাসতে থাকে।গাড়ি ড্রাইভিং এর মাঝেই ইনায়ার দিকে আরচোখে তাকায় আশিয়ান।

”জান তুমি মিটিমিটি হাসছো কেন?”

ইনায়া কিছুই বলে না।আশিয়ান কার পার্ক করে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। সুন্দর জায়গাটা। পছন্দ হয়েছে ইনায়ার। রেস্টুরেন্টে ঢুকে অবাক হয় সে।পুরো রেস্টুরেন্টে সজ্জিত।তবে ফাঁকা।আশিয়ান পেছন থেকে চোখ ধরে ইনায়াকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারা বসায়।চোখ ছাড়ে।

”হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জান।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”

ইনায়া অবাক হয়।তবে অনেক বেশিই খুশি হয়।পাপাইকে দেওয়া ওয়াদার পাশাপাশি পছন্দের মানুষটিকে জীবনে পেলে কার না খুশি লাগে।বছর তিনেক আগে ইনায়া যখন ইন্টারের শিক্ষার্থী।তখন তার একজনকে বেশ লেগেছিলো।সেই একজনটা অন্য কেউ নয় বরং আশিয়ান।তবে বাবাকে প্রমিজ করেছিল সে যে বিয়ে করলে পাপাইয়ের পছন্দেই করবে।তাইতো আশিয়ানের এতো এতো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখেও সবসময় যৌক্তিকতা দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে।চলে এসেছিলো বাংলাদেশে।তবে হয়তো সে ভুলে গিয়েছিলো ”ভালোবাসায় যৌক্তিকতা খাটে না”

কেক কেটে সেলিব্রিট করে দু’জনে।আশিয়ান প্রেয়সীর হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তাকে যে ফিরে যেতে হবে কেননা খুব গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ পড়েছে।ব্যবসাটাকে তো আর ছেড়ে দিতে পারে না।তবে অনলাইনে সারতে চেয়েছিলো ঝামেলা।তবে ইনায়ার কথা,”আপনি উপস্থিত থেকে যতটা ভালো মতো করতে পারবেন, দূরে থেকে ততটা ভালো প্রেজেন্টেশন নাও হতে পারে।তাই বলছি সেখানে গিয়েই কাজটা সম্পন্ন করুন।”তাইতো আজ রাতেই যাওয়া লাগবে আশিয়ানের।

ইনায়া কেকের এক বাইট আশিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়।আশিয়ান নিজে আগে না খেয়ে ইনায়াকে খাইয়ে দেয়।তবে গালে লাগায় না। কেননা সে আগের থেকেই খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে ইনায়ার বেশ এলার্জি প্রবলেম আছে।যা প্রায়ই ইনায়াকে ভোগান্তিতে ফেলে।

”আচ্ছা আপনি তো আমার জন্মদিন জানতেন তাহলে আগে উইশ করলেন না কেন?”

”আমি তোমার শুরু হইতো ছিলাম না,আজও নিজেকে তোমার শুরু হিসেবে দাবি করতে চাই না।তবে তোমার শেষ যেন আমিতেই থাকে তা আমি সর্বক্ষণ দেখবো বুঝলে জান”

ইনায়া প্রসঙ্গ বদলাতে বলে,”ফ্লাইট কয়টায় আপনার?”

আশিয়ান আফসোসের সুরে বলে,”তোমার সাথে আমি প্রেম করার চেষ্টা করছি আর তুমি প্রসঙ্গ বদলাচ্ছো! আমাকে যে তাহলে সবকিছুই তোমাকে শেখাতে হবে”

ইনায়া লজ্জা পায় আশিয়ানের কথায়।তবে আশিয়ান থেমে যায় কেননা রুমান কল দিয়েছে।আশিয়ান কপট রাগ দেখায় তবে কাজের কথা হওয়ায় বেশি কিছু বলে না।ইনায়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে আশিয়ান।

সন্ধ্যার দিকে ইনায়া আশিয়ানকে ড্রপ করতে এয়ারপোর্টে আসে।আশিয়ান গভীর আলিঙ্গন করে।রুমান পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও চোখ নিচের দিকে দিয়ে রাখে। কেননা আজ হঠাৎ চলে যাওয়াই ওর বোন আর মা বেশ রাগ করেছে ওর সাথে।আর গালফ্রেন্ড সে তো পারলে জুতা মারে।তবে এগোতে সে আসতে চেয়েছিলো আশিয়ানের ভয়েই সে তাকে আসতে নিষেধ করেছে।

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৬

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৬ ]
#বর্ষা

কয়েকদিন গ্যাপে ইনায়া ভার্সিটিতে এসেছে। জরুরী কাজে কয়েকদিনের জন্য ব্যস্ত ছিলো।বন্ধুমহল অজ্ঞ ইনায়ার ব্যস্ততার কারণ সম্পর্ক।অর্ধেক কথোপকথনের মাঝেই কথা যেন ফুরিয়ে যায় ইনায়ার।কার ড্রাইডিং করার সময় ফোন ব্যবহারে ইসরাক খানের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইনায়া এখন ঠিকই সিগন্যালে আটকে ফোনে কথা বলছে পাপাইয়ের সাথে।

”কি গিফট চাও বলো বেটা আমি তা পাঠিয়ে দিবো”

আজ ইনায়ার জন্মদিন। পাপাইয়ের কাছে যেন এই দিনটা অনেক স্পেশাল।প্রতি বছরই খুব বড় করে আয়োজন না করলেও বাবা-মেয়ে মিলে দিনটা উৎযাপন করতো।তবে এবার আর হলো কই!ইসরাক খানের মনে এই বিষয় নিয়ে অনেকটাই দুঃখ।

সিগন্যাল ছুটতেই ইনায়া ওর পাপাইকে বলে কল রেখে দেয়।গাড়ি চালিয়ে ভার্সিটিতে পৌঁছায়।লাক কি জানতে চাও তবে শোনে! ইশান-ইনায়া জমজ হলেও দুজনের জন্মদিবস কিন্তু আলাদা।এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।দশই জানুয়ারি আজ।আর নয়ই জানুয়ারি রাত এগারোটা বেজে সাতান্ন মিনিটে ইশানের জন্ম হলেও ইনায়া ভূমিষ্ঠ হয়েছে বারোটা বেজে একমিনিটে অর্থাৎ দশই জানুয়ারি।তাইতো জমজ হয়েও ভাই -বোনের জন্মতারিখ আলাদা।

ভার্সিটিতে পৌঁছাতেই হাতে রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্সটা নিয়ে এগিয়ে যায় ইনায়া।ইশান, রুমানা,আশিক সবাই একত্রে বসে।রিনিও আশপাশে ঘুরঘুর করছে ওর সঙ্গীদের নিয়ে। ইশানের কড়া কথা রিনি যেন তার বন্ধুদের সাথে থাকাকালীন তাকে ডিস্ট্রাব না করে।তাইতো আশপাশে ঘুরঘুর করলেও ঘাড়ে উঠে বসে নেই। অবশ্য যেহেতু কমিটমেন্টে আছে সেহেতু অন্য কোনো মেয়েকে ইশানের পাশে যদি রিনি সহ্য করতো তবেই তা অস্বাভাবিক হতো কেননা মেয়েরা তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে একটু নয় বরং অনেক বেশিই জেলাস ফিল করে।

ইনায়াকে দেখে ইশান মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কেননা কালকে ইনায়া ম্যাসেজ জাস্ট উইশ করেই অফলাইন চলে গিয়েছিলো।মোবাইলও বন্ধ ছিলো তার। বন্ধুমহলকে শুধু বলেছিলো যে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই সে ভার্সিটিতে আসতে পারবে না এই যা।

ইনায়া ওদের সামনে গিফটের প্যাকেটটা ধরে বলে,

”কালকে হয়তো কারো জন্মদিন ছিল যে আমার সাথে রাগ করেছে।তার জন্য এই গিফটটা‌।রুমানা,আশিক এটা দিয়ে দিস তাকে”

ইশান অভিমান নিয়ে বলে ওঠে,

”গিফট দিলেই হয় না।গিফট তো জাস্ট ফর্মালিটি।প্রিয় মানুষদের সঙ্গই ভালো লাগে এই দিনে”

ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্লেজারের পকেট থেকে ছোট একটা প্যাকেট বের করে এগিয়ে দেয় ইনায়ার দিকে।বলে,

”শুভ জন্মদিন ইয়ু ”

ইনায়া তাকিয়ে থাকে তবে কিছু বলে না।আশিক,রুমানাও তাকে উইশ করে।ইনায়া নিজের জন্মদিন নিয়ে না ভেবে ইশানের রাগ ভাঙাতে ওর সাথে দুষ্টুমি করতে থাকে। ইশানের রাগ ভাঙলেও রিনি যে রেগে আগুন তা তার চোখ দেখলেই বোঝা যাবে।রিনিও তো ইশানের এমন আচরণ চায়।তবে ইশান যে তার সাথে সবসময় গম্ভীর হয়েই বসে থাকে।না বেশি হাসে,আর না কথা বলে!রিনি কান্না লুকাতে ওখান থেকে চলে যায়।শেষের ঘটনাটুকু নজরে আসে ইনায়ার। দূরত্ব রেখে বসে ইশানের থেকে।তবে ভাই কি আর তা বোঝে।সে তো ইনায়ার কাঁধে হাত রেখেই বসেছে।ভার্সিটির অধিকাংশই বলে ইনায়া-ইশানের মাঝে কিছু চলছে তবে একেকজনের মতবাদ একেক রকম।তবে যাইহোক ইনায়া কিন্তু সিনিয়র ভাই-বোনদের প্রিয়।সবকাজের কাজীকে কে না চিনবে!

”শুভ জন্মদিন ইনায়া”

ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র নুহাশ ভাই এগিয়ে এসে রেপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স এগিয়ে দেয় ইনায়ার দিকে। সাথে উইশ তো আছেই।ইনায়া হাত বাড়িয়ে নিতেই হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করে নুহাশ ভাই।অত্যন্ত মাধুরী মিশিয়ে রাঙিয়ে তুলেছে সে নিজের মনের আজ অব্দি অব্যক্ত কথাগুলোকে।

”তোমাকে যেদিন প্রথম ভার্সিটি চত্বরে দেখি সেদিনই প্রেমে পড়েছিলাম তবে।আমি প্রেম নয় বরং ভালোবাসার সন্ধানী। তাইতো বিগত দুইবছর তোমার থেকে অনুভূতিগুলো ছিল চিরায়ত লুকায়িত।তবে তোমায় হারানোর ভয় জেঁকেছে হৃদয়ে। তাইতো অব্যক্ত কথাগুলো ব্যক্ত হলো আজ তোমার সরণে। তুমি কি আমার প্রিয়তমা হবে?”

ইশানের প্রচন্ড রাগ হলেও সে ইনায়ার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায়।ইনায়া মুচকি হেসে ভালো করেই শান্ত দৃষ্টিতে বললো,

”নুহাশ ভাই আমি দুঃখিত।আমার বিয়ে এক্সামের পরপরই। আপনাদেরও দাওয়াত দেবো ইনশাআল্লাহ ”

নুহাশ অবাক চোখে তাকিয়ে চলে যায়।কিই বা বলার আছে আর।যেখানে বিয়ে ঠিক,মেয়েও রাজি সেখানে তার একপাক্ষিক ভালোবাসার তো কোনো মূল্যই নেই। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে -একপাক্ষিক ভালোবাসা।এই ভালোবাসা মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।

আশিয়ান গাড়ি পার্ক করে এদিকেই আসছিলো। ইনায়ার কথা শুনে দ্রুত কাউকে ফোন দেয়। জিজ্ঞেস করে,

”তাকে কি তুমি বলেছিলে?”

অপর পাশের জবাব শোনা যায় না। আশিয়ানের চোখে অশ্রু টলমল করছে।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সে ইনায়াকে।কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে থাকে।ইনায়া অবাক হয় আশিয়ানকে দেখে তবে ওর পাগলামি কর্মে হেসে দেয়।তবে ইশান রেগে যায়।কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই কল্যাণী (রিনির বন্ধু) এসে জানায় রিনি জ্ঞান হারিয়েছে।তাইতো ইশানকে সেদিকেই ছুটতে হলো।

আশিয়ান ইনায়াকে নামিয়ে বলে,

”আমি সত্যিই অবাক হয়েছি যে তুমি বিয়েতে রাজি ”

”আপনি যে আমার পাপাইয়ের বন্ধুর ছেলে তা তো বলেননি আগে”

”আংকেলের ফ্রেন্ডের ছেলে বলেই বিয়েতে রাজি হয়েছো?”

”একদমই না।আমি তো আমার পাপাইয়ের খুশির জন্য রাজি হয়েছি।আচ্ছা বলুন তো আজ কি?

ইনায়ার কথায় দুষ্টুমি ছিল।আশিয়ান অবাক হয় আজ এতদিন পর ওর খবর পেয়ে ও ছুটে এসেছে।আর আজই ইনায়ার মাঝে এতো পরিবর্তন।তবে আশিয়ানও কম না।সে উত্তর না দিয়ে ভাবতে থাকে কিছু কি ঘটেছে নাকি এই কয়েকদিনে!আর কোথাই বা গিয়েছিলো ইনায়া!

”জান একটা প্রশ্ন করবো…বলবা?”

”বলার মতো হলে বলবো”

”তুমি এই কয়দিন কোথায় ছিলে?”

ইনায়া আশিয়ানের দিকে মুখমন্ডল এগিয়ে এনে আশিয়ানের কানের কানে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

”সিক্রেট”

ইনায়ার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা আশিয়ানের মাঝে ঝড় তোলে।আশিয়ান পিছিয়ে গিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নেয়।ইনায়া আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে বলে ওঠে,

”এখন বুঝেছেন কেমন লাগে হঠাৎ হঠাৎ কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাছে আসলে?”

ইনায়া কথার মাঝেই লক্ষ্য করে ইশান রিনিকে কোলে নিয়ে পার্কিং এর দিকে ছুটেছে। ইনায়াও সেদিকে ছুটে যায়।তবে ইশান ওকে পাত্তা না দিয়েই রিনিকে নিয়ে চলে যায়।এতে কিছু মৌনখুন্ন হলেও ইনায়া স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করে কেননা প্রেয়সী হোক বা না হোক মেয়েটা তো ওর দায়িত্বের কাতারেই পড়ে।

ইশান ড্রাইভিং করে দ্রুত হসপিটালের দিকে যাচ্ছে।ফোনে রিনির মম,ডেডকে রিনি অবস্থা সম্পর্কে জানাতে বলেছে কল্যাণীকে।রিনির মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে কল্যাণী।মেয়েটা স্ট্রেস নিয়েছে অনেক।তাইতো এই অঘটনটা ঘটলো।মনে মনে ইনায়াকে বেশ করে বকলো কল্যাণী!

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৫

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৫ ]
#বর্ষা

উত্তরা লেক পার্কের কাছেই রাস্তার পাশে বসে আছে।ফুলের দোকানটার কাছাকাছিতে।ঝুড়িগুলো তার বেশ লেগেছে। এদিকটায় নাকি লেক আছে তা দেখতেই এসেছিলো সে।তবে ভুলে গিয়েছিলো শীতকালের শুষ্ক পরিবেশে নদ-নদী শুকিয়ে যায়।আর এ তো সামান্য লেক। অবশ্য দেখতে মাঠের মতোই লাগছে এখন।ইনায়া নার্সারি বা ফুলের দোকান যাই বলি সেখান থেকে একটা ঝুড়ি কিনলো।আর কিছুটা দূরে বালতিতে করে গোলাপ নিয়ে বসা থাকা পিচ্চির থেকে সবকটা ফুল কিনে নিলো।পুচকির হাসিটা যেন নিউ ইয়ারের বেষ্ট গিফট ওর কাছে!

দুইটা ফুল পুচকির হাতে ফেরত দিয়ে ইনায়া বললো,

”এই যে সোনা বলতো আজ কি?”

”হ্যাপি নিউ ইয়ার ”

”সেই উপলক্ষেই আমি তোমায় এই দুটো ফুল দিলাম।বুঝলে?”

”হুম। ধন্যবাদ ”

ইনায়া অবাক হয় এতোটুকু বাচ্চা কি সুন্দর ফর্মালিটি ম্যান্টেন করে কথা বলছে।অনেক বড় ঘরের বাচ্চারাও এতোটা ফর্মালিটি দেখে পড়াতে না। অবশ্য ওদের সবার মন থেকে ফর্মালিটি করাটা আসে না।তবে পরিস্থিতি মানুষকে সহায়তা করে নিজেকে গড়তে।

পিচ্চিটা চলে যায়।ইনায়া ঝুড়িতে ফুলগুলো রেখে গাড়ির কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ একটা বাইক অতিক্রম করে তাকে।ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে ইনায়ার। ইনায়া বাইকের নাম্বারটা নোট করে।ছেলে তিনটার মাঝে একটা পেছনে ফিরে বিশ্রি হাসি দেয়।ইনায়ার ইচ্ছে হয় ওই ছেলেটাকে খুন করে ফেলার।

ইনায়া কাউকে ফোন দেয়।বলে,

”ইমিডিয়েটলি আমি এই বাইকের লোকেশন চাই।এট এনি কস্ট।”

কল কেটেই কারে উঠে চোখ বন্ধ করতেই নোংরা ওই দৃশ্যটা ভেসে ওঠে। বাইকের ছেলেটা ইনায়ার গালে স্পর্শ করেছে নোংরা ভাবে।আমার মুখভঙ্গিতেও ছিল খারাপ লক্ষণ যা ইনায়ার মাঝে ঝড় তুলেছে।

মিনিট দশের মাঝেই ইনায়া আটকে ফেলে ওই বাইকটাকে। রাস্তা ব্লক করায় আর এগিয়ে যেতে পারে না। পেছনের দিকে যাওয়ার পূর্বেই ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে ইচ্ছে মতো থাপ্পর,লাথি মারতে থাকে শেষের ছেলেটাকে।এই ছেলেটাই স্পর্শ করেছিলো তাকে।বাকি দুজন পালাতে পারেনি।ইনায়া ওদেরকেও মারছে। কেননা ওরা যদি তৎক্ষণাৎ বাইক থামাতো তাহলে ইনায়াকে এতো দূর ছুটে আসতে হতো না।

ইনায়াকে রাস্তার মাঝে তিনটে ছেলেকে নাস্তানাবুদ করতে দেখে রাস্তার লোকেরা তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেছে।ইনায়া রাগে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।একটা লোকের ফোন নিয়ে জোরে আছার মারতে নিয়েও মারে না।ফেরত দিয়ে দেয়।পাশ থেকেই একলোক কাউকে ফোন দিয়ে বলে,

”স্যার ম্যাম তো প্রচন্ড রেগে আছেন।আজ সবাইকে শেষ করে দিবেন মনে হচ্ছে।আপনি দ্রুত আসুন”

ইনায়া ক্ষেপে ওই লোকটার দিকে গিয়ে বলে,

”কাকে আসতে বলছেন আপনি?এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই তামাশা দেখেছেন আর এখন পরিচিত লোকেরা এই হারামীগুলোর পরিবারকে ডাকছেন!ডাকুন আমি দেখতেই চাই এদের পরিবারকে”

লোকটা বার বার দুইদিকে মাথা ঝাঁকিয়ে কিছু একটা বলার ট্রাই করছে।তবে ইনায়া নিজের মতো সবাইকে বলেই চলেছে।এতোক্ষণ মজা দেখেছে আর এখন সব ঢং করতে শুরু করেছে। তখনই কয়েকটা পুলিশের গাড়ি এসে থামে। বেরিয়ে আসে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।সব ঘটনা জেনে ছেলেগুলো নিজে যায়। আর ইনায়া থানায় এসে কেস করতে বলে যদি সে জরুরি মনে করে তবেই।ইনায়া এককথায় রাজি হয়ে যায়।

ইনায়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরপরই আশিয়ান এসে পৌঁছায়।ইনফর্ম করা লোকটাকে ইনায়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে চলে গেছে সে।আশিয়ান রেগে যায় তবে লোকটা পরের কথাটা শুনে শান্ত থেকে জিজ্ঞেস করে থানাটা কোথায়!থানার ঠিকানা পেতেই সেখানের উদ্দেশ্যে যায়।

ইনায়া থানায় জিডি করে বেরতেই আশিয়ানকে দেখতে পায়।তবে সেদিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে না। কেননা তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।চোখ বন্ধ করে সেখানেই এক বেঞ্চে বসে।

”জান আর ইউ ওকে?”

”হুম”

”কে তোমার সাথে মিসবিহেভ করেছিলো জান তার নাম বলো শুধু জীবন বের করে নিবো”

ইনায়া এবার চোখ মেলে তাকায়।স্পষ্ট রাগ তার চোখে। চেঁচাতে পারলে হয়তো রাগ কমবে।তবে এখানে চেঁচামেচি করাটা শোভা পায় না। ইনায়া খুব শান্ত গলায় বললো,

”আমার সাথে কে কি করলো আপনার তা সম্পর্কে না জানলেও হবে?ইনায়া সেহরিশ খান নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে।আপনি আপনার ফিয়োন্সের দায়িত্ব নিন”

”আর ইউ জেলাস ”

”আমি আর জেলাস…হাউ ফানি!”

”হৃদয়হীন হচ্ছো কেন এতো জান ”

”বিয়ে করবেন আমায়?প্রেম করবেন, ভালোবাসা শেখাবেন…তারপর ঠিক ফিয়োন্সের সাথেই বিয়ে করবেন। তাই বলছি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।ইনায়া সব সহ্য করে তবে প্রতারণা সহ্য করে না।”

”চলো আজই বিয়ে করবো। এখনই বিয়ে করবো ”

”আমি এখন করতে পারবো না।আর না আমি আপনাকে ভালোবাসি।আর নাই বা আমার পাপাই আপনাকে আমার হাজব্যান্ড হিসেবে দেখতে চায়! যেহেতু সবগুলোর উত্তরও না তাই বলছি আমার থেকে দূরে থাকুন!”

”অনেক তোমার পেছনে ঘুরেছি।এবার বুঝতে পেরেছে কার পেছনে ঘুরলে আমি তোমাকে পাবো!আজ থেকে তোমার পিছনে নয়,আমার শশুরের পেছনে ঘুরবো।চলি”

আশিয়ান চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসে। ইনায়া এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে। কি বললো এই ছেলে শশুর!এর আবার বিয়ে হলো কবে!আর বিয়ে না হলে শশুর আসলো কোথা থেকে।একটু গভীর ভাবে ভাবতেই সব বুঝে ফেললো ইনায়া।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো যতদূর অব্দি আশিয়ানের গাড়ি দেখা যায় ততদূর অব্দি।

ইনায়ার ফোনটা বেজে ওঠে। ইসরাক খানের ফোন।ইনায়া এখানে হওয়া ঘটনাগুলো আর তাকে জানায় না‌। গাড়িতে গিয়ে ভিডিও কলে কথা বলে নেয়।একটা ওটি থেকে বেরিয়েই তিনি ইনায়াকে কল করেছেন। কেননা তারপর আরও একটা ওটি আছে যা অত্যন্ত সিরিয়াস এবং সময়সাপেক্ষ।

”পাপাই আই মিস ইউ লট”

”আই মিস ইউ মাই ঠু এঞ্জেল”

”পাপাই এক্সামিনেশন কমপ্লিট হলেই আমি কয়েকদিনের জন্য সিঙ্গাপুর ব্যাক করবো”

”দ্যাটস অ্যা গুড নিউজ ”

”মেবি”

”নো বেটা ইটস রিয়েলি অ্যা গুড নিউজ ”

”পাপাই তুমি একটু বিশ্রাম নেও। নয়তো পরের ওটি করতে গেলে খারাপ লাগবে তোমার ”

”দায়িত্ব কখনো খারাপ লাগে না।তবে তোমার কথাটা ঠিক।আমার একটু রেস্ট করা সত্যিই প্রয়োজন।লাভ ইউ,টেক কেয়ার এন্ড আল্লাহ হাফেজ বেটা!”

”লাভ ইউ ঠু ডেড,টেক কেয়ার, আল্লাহ হাফেজ ”

ইনায়া ফোন রাখতে ইশান ফোন দেয়।দেখতে পায় ভিডিও কলে ওপাশের এক লোককে দেখাচ্ছে ইশান। আস্তে করে বলছে,

”ইয়ু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তুই নিষেধ করায় তোর কথাটাও মমকে বলতে পারলাম না।আর এখন মম বলছে ইনি নাকি আমার ডেড।ইজ ইট ট্রু?”

”ইশান আমাকে একটু মমকে দেখাবি..আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি বারবার ”

ইনায়ার কথায় ইশান ওর মমকে দেখায়।না,কোনো ভুল নিউজ তো ছিল না।অ্যালবামে তো এই নারীরই ছবি ছিল।তাহলে তো ইনিই ওদের মা।তাহলে মিথ্যে বলছেন কেন তিনি। ইনায়ার ভাবনার মাঝেই ইনায়া অস্পষ্ট কথা শুনতে পায় ওদের মায়ের সাথে একটা লোকের।লোকটাকে ও কোথাও দেখেছে।তবে কোথায় তা ওর স্মরণে আসছে না এখনই।তবে স্মরণে আসলেও ইশান কল কেটে দেয়। কেননা ফাবিহা সারওয়ার ইশানকে ডাকছে।আর বাঘিনীর সামনে শিকার হয়ে যাওয়ার মানে হয় না। তাই তো তার জন্য শিকার হতে হতে পারে তাকে বিচ্ছিন্ন করলো!

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৪

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৪ ]
#বর্ষা

নদীর পাড়েই আশিয়ান ইনায়ার কপালে আলতো চুম্বন করে হাঁটু গেড়ে বসে গাড়ি থেকে নিয়ে আসা ক্যামেলিয়া ফুল হাতে বলে উঠে,

”জান আমার আসক্তিতে আমি একান্তই আমার করে পেতে চাই তোমাকে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই জান!উইল ইউ বি মাই লাইফ?উইল ইউ বি মাই ওয়াইফ?উইল ইউ বি মাই চিলড্রেনস মাদার?উইল ইউ বি মাই সোলমেট?”

ইনায়া পিছিয়ে যায়।আশিয়ান আবারো বলে,

”আমি বলছি না তোমাকে এখনই জবাব দিতে। তুমি সময় নেও।তারপর বলো”

ইনায়া আশিয়ানকে উঠে দাঁড়াতে বলে।তারপর বলে,

”আমি কখনো আমার পরিবারের বাইরে আমার বন্ধুবান্ধব ছাড়া কাউকে ভালোবাসিনি।আমি ভালোবাসার মানে একদমই জানি না।তবে এতটুকু জানি যে ভালোবাসা রং বদলায়।আপনি আমাকে এখন আপনার যতটা ভালোবাসা দেখাচ্ছেন, ঠিক ততটা ভালোবাসা এই দুই’বছর কোথায় ছিলো আপনার?”

আশিয়ান নিজেকে এক্সপ্লেন করতে চায়।তবে ইনায়া কিছুই শুনতে নারাজ।সে চলে যেতে চায়।আশিয়ান আর ইনায়াকে ঘাটায় না।সে তো জানে সে কেমন ছিলো তার প্রিয়তমাকে ছাড়া।ওই সময়টা হয়তো আর ফিরে আসবে না‌।তবে পূর্বের চেয়ে যে ভালোবাসাটা বাড়বে বয়ে কমবে না তা এই দুই বছর পর উপলব্ধি করেছে আশিয়ান।

আশিয়ান ইনায়াকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়েছে।ইনায়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিতে চাইলেও সে রাজি হয়নি। পাশাপাশি বাহানা হিসেবে দেখিয়েছিলো ওর গাড়ি ভার্সিটিতে তা নিতে হবে।

গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আশিয়ানকে বিদায় জানায় ইনায়া।আজকে দিনের শুরুটা খারাপ হলেও শেষটা সুন্দর হয়েছে।কালকে তো নিউ ইয়ার।প্রতিবার কোনো না কোনো প্লান থাকলেও এবার আর নেই।

কয়েকটা রাস্তা ঘুরে তারপর বাড়ি ফিরেছে সে কেননা লক্ষ্য করেছিলো যে আশিয়ানও পিছুপিছু আসছে।যখন দেখলো ওর গাড়ি আর পেছনে নেই তখন রাস্তা বদলে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটলো।

ফ্রেশ হয়ে একটু বসলো। অনলাইন থেকেই কিছু খাবার ওর্ডার করে শুয়ে রইলো।যখন মনে পড়লো যে ইশানকে তো জানানো হয়নি তার বাড়ি ফেরার ঘটনা তৎক্ষণাৎ ফোন করলো।

অন্যদিকে ইনায়াকে খুঁজে ক্লান্ত ইশান বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পর ফাবিহা সারওয়ার বাড়ি পৌঁছান।ছেলের রুমে উঁকি দিলে ইশানকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখেন।তবুও এর কারণ জিজ্ঞাসা না করেই ফ্রেশ হতে চলে যান।ইশান মাথা চেপে বসে ছিলো।কি করবে,কোথায় খুঁজবে কিছুই জানে না। ভার্সিটির আশপাশ অনেক জায়গায় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে।কেউ দেখেনি।এখন মাথা কাজ করা একদমই বন্ধ করে দিয়েছে ইশানের।

ফাবিহা সারওয়ার ফ্রেশ হয়ে গম্ভীরভাব বজায় রেখে ইশানের ঘরে প্রবেশ করেন।ইশান মা’কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।সব কাঠিন্য যেন এই রমনীর মাঝেই সীমাবদ্ধ।স্কুল পর্যন্ত ওকে বয়েস স্কুলে পড়িয়েছে।আর কলেজে ওঠার পরপরই রিনি নামক মেয়েটার সাথে বিয়ে ঠিক করে দিলো।ইশানও এক রিনিতেই আসক্ত হতে চাইলো। কেননা সে যে আর কোনো মেয়েকে এর আগে প্রেয়সী বা নিজের করতে চাইনি।

ফাবিহা সারওয়ার ইশানের পাশ থেকে ওর ফোনটা তুলে নিলেন। ইয়ু দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা ওকে দেখিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

”ইয়ু নামক এই মেয়েটিই কি সেই মেয়ে যার জন্য তুমি রিনির সাথে মিসবিহেভ করেছো?”

ইশানের রাগ উঠে।চরম পর্যায়ে রাগ ওঠে।কিছু হলেই ওই রিনি নামক মেয়েটা ওর মা’কে জানিয়ে দেয়।বা** জীবন আর ওর রাখতে মন চায় না।এদিকে ইনায়ার চিন্তা অপর দিকে রিনি আর মায়ের প্যারা। ফাবিহা সারওয়ারের হাতে ফোন থাকা অবস্থাতেই ফোনটা বেজে ওঠে।ইনায়ার কল। ফাবিহা সারওয়ার কল রিসিভ করে ওপাশের কোনো কথা না শুনেই যাচ্ছে তাই বলে ঝাড়তে শুরু করেন তিনি।ইশান প্রথমবারের মতো মায়ের সাথে বেয়াদবি করে ফোনটা কেড়ে নেয়।বলে,

”তোকে আমি পরে ফোন দিচ্ছি। অপেক্ষায় থাক”

ফাবিহা সারওয়ার ইশানের গালে চড় লাগান।রেগে বলেন,

”বড় হচ্ছো আর বেয়াদব হচ্ছো।আগে তো এমন ছিলে না।ওই ওই মেয়েটার কারণেই এমন হচ্ছো তাই না!আমি খোঁজ পেয়েছি তো মেয়েটা কতটা উশৃঙ্খল..”

”স্টপ ইট মম।ইনায়া চঞ্চল তবে উশৃঙ্খল নয়।আর কোনো মেয়ে সম্পর্কে এমন বলতে তোমার খারাপ লাগছে না?এমনও তো হতো পারতো সে তোমার মেয়ে!”

”প্রথমত ইনায়া আমার মেয়ে নয় আর দ্বিতীয়ত তুমি ওই মেয়ের থেকে দূরে থাকবে।তোমার ডেড আসবে কাল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো”

ইশান অবাক হয়।ডেড আসছে কাল মানে কি!ইনায়া না বললো ডেড সিঙ্গাপুর ব্যাক করেছে।তবে ইনায়া মিথ্যে বলছে নাকি ওর মম তা ইশান বুঝতে পারলো না।ইশানের মম ইশানের ফোনে কিছু একটা করে ওর হাতে ফোন দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ইশান ফোন রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

এদিকে ইনায়া তব্দা খেয়ে বসে আছে ফাবিহা সারওয়ারের কথায়।শরীরটা ঘিনঘিন করে উঠে তার।কোনো নারী কি অন্য নারীকে এভাবে বলতে পারে! অসম্ভব।ইনায়ার সন্দেহ হয় আদৌ এই নারী ওর মা তো নাকি ওর সন্ধানে কোনো ত্রুটি ছিলো!

রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে শান্তি পায়নি ইনায়া। আতশবাজির শব্দ আর ফানুশের আলোতে চোখ বুজিয়ে আর ঘুমটা ভালো হয়নি। ভোরবেলা ঘুমিয়ে ছিলো তবে রুমানার কলে উঠতে হলো।ম্যাসেঞ্জারে ঢুকেই দেখলো অনেকজন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।সবাইকে রিপ্লাই দেওয়া সম্ভব না বলে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্ট করে দেয়।ফোন দেয় জ্যাক, ক্যালিস,নোয়াকে। কনফারেন্স কল।

”হ্যাপি নিউ ইয়ার গায়েস ”

”হ্যাপি নিউ ইয়ার ইউ ”

পুরনো বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা দেয় সে। অবশ্য ওরা এখনো ঘুমায়ইনি। সারারাত সেলিব্রিট করেছে নিউ ইয়ারের তবে তা আতশবাজি এবং ফানুশের ব্যবহার না করে। অবশ্য যেখানে এগুলোর ব্যবহার হয়েছে তারাও সতর্কতার সাথেই নিউ ইয়ার উৎযাপন করেছে।

ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।কালো রঙের থ্রিপিস পড়ে।শখ করেই কিনেছিলো এটা সে। কেননা আজ অব্দি সে কখনোই থ্রিপিস পড়েনি। জাস্ট শখের বশে আজকে সুন্দর করে নিজেকে তৈরি করে সে। গন্তব্য কোথায় তাও জানে না। শুধু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মস্তিষ্কে।

পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বেরতেই তার চক্ষু চড়কগাছ।আশিয়ান আসেনি তবে রুমান নামক ওই ছেলেটা আর এলি এসে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়ার বেড়ে ওঠা সিঙ্গাপুরে হলেও এত ছোট আকৃতির পোশাক সে আদৌ পড়েনি।ইনায়া ওদের সামনে গিয়ে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে প্রশ্ন করে।

”কাউকে খুঁজছেন নাকি আপনারা?”

এলি সানগ্লাসটা খুলে বিরক্তি প্রকাশ করার লুক দিয়ে বলে,

”তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছি?চায়নি তো তাহলে ফুটো ”

এলির কথাবার্তার এমন বেগ থেকে তৎক্ষণাৎ মাথা গরম হয়ে যায় ইনায়ার।রুমান এলিকে বারবার বলছে যে মিস বিহেভ দয়া করে করবেন না ওনার সাথে।তবে এলি তা শুনলে তো!আশিয়ান গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথেই ঝামেলা দেখতে পায়। অবশ্য রুমানকে এখানে দেখেই গাড়ি থামানো কেননা সে ইনায়াকে এখনো অব্দি খেয়াল করেনি।আশিয়ানকে দেখেই এলির নটাংকি শুরু হয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

”বেভ দেখো না এই মেয়েটা আমাকে যা-নয় তাই বলে অপমান করছে!”

আশিয়ান রেগে যায়।এলিকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। রুমানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই গরগর করে সব সত্যি বলে দেয় সে।বলে দেয় যে এলি ইনায়ার সাথে ঝামেলা ক্রিয়েট করতেই এখানে আসতে চেয়েছে।আর রুমান যদি তাকে না আনে তবে নাকি তার চাকরি খেয়ে দিবে সে কেননা সে তো আশিয়ানের ফিয়োন্সে হয়!ইনায়া ফিয়োন্সে কথাটা শুনে আশিয়ানের দিকে তাকায়।আশিয়ানও ওর দিকে তাকিয়ে।ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আশিয়ান পিছু ডাকে তবে ইনায়া চলে যায়।আশিয়ান এলির সামনে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,

”আজ তুমি যদি মেয়ে না হতে তোমার নিঃশ্বাস আজ আমি বন্ধ করে দিতাম।তোমার পাপার কাছে আমি ঋণী।সে আমার দুঃসময়ে আমার পাশে ছিলো যা সে আমার ঋণ পরিশোধেই করেছিলো।তাই বলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো এমনটা ভেবো না।আর কখনো যদি শুনি যে তুমি আমাকে তোমার ফিয়োন্সে বলেছো তাহলে সেখানেই তোমাকে শেষ করে দিবো।তোমার পাপাইকে সম্মান করি বলেই বলছি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাও।”

কথাগুলো বলেই গটগট করে চলে যায় আশিয়ান।এলি কাঁদতে থাকে।দুইবছর কি কম সময়!এই দুই বছরে যে সে আশিয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে।আশিয়ান কেন এটা বোঝে না!তবে আশিয়ানের ভালোবাসা ও কাউকে পেতে দিবে না।ও না পেলে কেউ পাবে না।এমনই মনস্থির করে এলি।রুমানকে কষিয়ে এক চড় লাগিয়ে বলে,

”মিথ্যে বললে কি এমন ক্ষতি হতো তোর?যা গাড়ি বের কর আমি হোটেলে ফিরবো।তারপর তুই জাহান্নামে গেলেও আমার কোনো সমস্যা নেই”

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০৩

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৩ ]
#বর্ষা

দিনটা ভয়ে ভয়ে কাটায় ইনায়া।জানালার ধার থেকে একবারের জন্যও সরেনি সে।ইশান,রুমানা,আশিক বহুবার কল করেছে।রিসিভ করেনি ইনায়া।মনে যে ভয় জেঁকেছে তখন কি আর কথা বলার অবস্থা থাকে! রাত্রিবেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পাপাইয়ের সাথে কথা বলে নেয় সে।সকালবেলা ড্রপ করলেও কোনো এক কারণে ফ্লাইট লেইট করেছিলো।তাইতো পৌঁছাতেও দেরি হওয়া!

নিজেকে ধাতস্থ করে ডিনার সেরে মোবাইল হাতে নেয় ইনায়া।প্রথমে ইশানকে কল দেয়।প্রথম দুইবার মিস হয়ে যায় কল।তাই রাগে আর ওকে কল না দিয়ে রুমানা আর আশিককে কল দিয়ে কথা বলে নেয়।আজকে ভার্সিটিতে না যাওয়ায় ওরা অনেক প্রশ্নই করে।তবে ইনায়া তা এড়িয়ে যায়।পাপাই ছাড়া কারো সাথেই কোনো গোপন কথা শেয়ার করার অভ্যাস তার নেই।

রাত এগারোটার দিকে ইনায়া আবারো ইশানকে কল দেয়।এবার কল ধরতেই ইনায়া নিজের ধমকানি শুরু করে।তবে ওপাশের মেয়েলী ধমকে থতমত খেয়ে যায় ইনায়া।

”এই মেয়ে এতো রাতে ফোন দিয়ে আমার ছেলেকে ধমকাচ্ছো কে তুমি?”

ইনায়ার ধমকে যতটা না খারাপ লেগেছিলো তার চেয়েও বেশি খারাপ লেগেছে ‘আমার ছেলে ‘বলা শব্দটায়। কেননা আমরা যে জিনিসটা পাইনা সেই জিনিসটা অন্য কেউ পাচ্ছে তা আমরা সহ্যও করতে পারি না।ইনায়ারও তেমনি হচ্ছে। তবুও নিজেকে স্থির রেখে বললো,

”সরি,ইশান আমার ফ্রেন্ড তো তাই এভাবে কথা বলেছি।ও আমাকে অনেকবার কল দিয়েছিলো তবে ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারিনি।তাই কল করেছিলাম ”

”ইশান‌ ঘুমিয়ে পড়েছে।আর ওর ফোন আমার কাছে।কেউ যদি দুইবার কল দেওয়ার পরও রিসিভ না করে এর মানে সে ব্যস্ত নয়তো কল ধরার অবস্থায় নেই।তাই দ্বিতীয়বার ফোন দিয়ে ডিস্ট্রাব করো না।”

ইনায়া ফোন কেটে দেয়।কান্নায় ভেঙে পড়ে।সে তো পিপির কাছে শুনেছিলো তার মা অনেক কিউট।তবে কেন তার মায়ের ব্যবহার অপরিচিতদের সাথে এতো রুক্ষ।ফোন কেটে মায়ের ভালোবাসার পূর্ণতার জন্য ”এমেলি মির্জা ”দিয়ে সেভ করা নাম্বারে কল দেয় ইনায়া।

”আসসালামু আলাইকুম পিপি,কেমন আছো?”

”আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস পুচকি?”

”আলহামদুল্লিলাহ।পিপি ওই একটা প্রশ্ন করি?”

”পুচকি তোর জ্বর হয়েছে কি নাকি তুই অসুস্থ!”

”আমি তো সুস্থ!এমন কেন‌ জিজ্ঞেস করছো পিপি?”

”না মানে আমার পুচকি আদৌ কখনো কারো কথা মেনে কিছু করেছে নাকি আপনদের সাথে ফর্মালিটি করেছে তা তো আমার মনে পড়ছে না!তবে আজ কেন?”

”সরি পিপি। আচ্ছা পিপি তুমি তো বলেছিলে মাম্মাম অনেক কিউট তাই না?”

”হুম ভাবিপু তো অনেক কিউট।কেন?”

”আমাকে মায়ের গল্প শোনাবে।”

”তোর পাপাইকে তুই যদি না জানাস তবে বলবো!”

”আচ্ছা বলবো না”

”তাই”

”আমি জানিয়ে দিবো”

”প্রথমে না বললি জানাবি না”

”তাহলে আবারো জিজ্ঞেস করছো কেন?একবার তো বলেছি জানাবো না”

”ভাবিপুকে আমি আগে থেকেই চিনতাম।ভাইয়ের সাথেই তো পড়তো।অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষেই ভাবিপু দেশে গেল।সেখানে নাকি তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।ভাই তো পাগল প্রায়।ভাবিপুও‌ ভাইকে ছাড়া বাঁচবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।ভাই গেল,আমরা সবাই গেলাম।এমনও হয়েছে যে তোর নানা ভাইয়ের কাছে ভাই জেদ ধরে বসেছিলো।তোর মা দরজায় খিল দিয়ে সে কি কান্ড ঘটিয়েছিলো বলার বাইরে।সবাই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলো উল্টা পাল্টা কিছু না করে বসে।যখন তোর নানাভাই রাজি হলো তোর বাবার সাথে তোর মায়ের বিয়ে দিতে।তোর মা দরজা খুললো।ভাই যখন ধমকে বলেছিলো যে এভাবে কেউ দরজায় খিল দেয়।তখন ভাবিপু মুখটা চোখা করে কিউট ফেসে বলেছিলো যে আমি বোকা নই তাইতো খিল দিয়েছিলাম যাতে বাবা তাড়াতাড়ি রাজি হয়!হাহাহা”

ইনায়াও হাসতে থাকলে ওর পিপির সাথে।কার না হাসি পাবে এ ঘটনায়।তবে বলতেই হয় ইনায়ার মা বেশ বুদ্ধিমতী নারী ছিলেন।ইনায়ার কিঞ্চিত পূর্বের ঘটনা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।কল রেখে শুয়ে পড়ে।

ভোরবেলা সূর্যের কিরণ চোখে লাগতেই ইনায়া উঠে বসে। আলসেমি না করে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।বাসে যাবে ভাবলেও পরক্ষণে মনে পড়ে যায় আশিয়ান দেশে এসেছে।যখন তখন পালানো লাগতে পারে।তাই গাড়ি নিয়েই বেড়িয়ে পড়ে।

ভার্সিটিতে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে কোনো মতে ছুটে গিয়ে ছাপিয়ে পড়ে ইশানের ওপর ইনায়া। ভার্সিটির অধিকাংশই ওদের গফ/বফ মনে করে কেননা দুইজনের পদবী যে আলাদা। আফসোস পিতা-মাতা এক হয়েও তাদের পদবী ভিন্ন হয়েছে।

ইনায়া ভার্সিটির বাইরে আসার সময় কি জানি দেখেছে।তা দেখাতেই ইশানকে সেদিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। ওদের সামনে হঠাৎ করে ডার্ক ব্লাক কালারের কার ফুল স্পিডে থামে।ইনায়া ইশানকে ঠেলে আগেই পেছনে পাঠিয়ে দিলেও নিজে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয় তবে তার পূর্বেই কেউ দ্রুততার সাথে আগলে নেয় ইনায়া।চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলে সামনের ব্যক্তিটির শরীর থেকে আসা মিষ্টি গন্ধে ইনায়া বুঝে ফেলে কে এই ব্যক্তি!বড় বড় করে তাকায়।আশিয়ান চোখ মারে।

ইনায়া ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে নেয় আশিয়ানকে তবে আশিয়ান ইনায়া কোমড় জড়িয়ে আরে কাছে টেনে আনে ওকে। ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা হা হয়ে সব দেখছে।এতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে অধিকাংশ মেয়েদের অবস্থা তো টাইট। নিজেদের দিকে এটরাক্ট করার জন্য চুল ঠিক করছে,বারবার হাসছে।তবে আশিয়ানের নজর তার প্রেয়সীতেই নিবদ্ধ।

ইশান ক্ষেপে যায়। কোনো ভাই তার বোনের সাথে এরকম সহ্য করতে পারে না কেননা মানুষ হিসেবে একটা ছেলে যেমনই হোক ভাই হিসেবে সব সময়ই সেরা।ইশান তেতে এগিয়ে যেতে নিলেই আশিয়ান বডিগার্ডদের ইশারা করে।ইশানকে ধরে ফেলে বডিগার্ডরা।ইশান চেঁচিয়ে হুমকি দিতে থাকে তবে কারোই কিছু যেন যায় আসে না তাতে।ইনায়ার সহ্য হয় না ভাইয়ের সাথে করা এরূপ রুদ্র আচরণ।

”মিষ্টার আশিয়ান মির্জা দয়া করে ওদেরকে বলুন ইশানকে ছেড়ে দিতে।প্লিজ।ইশান কষ্ট পাচ্ছে ”

ইনায়ার সামান্য এক কথায় যেন আগুন ধরে যায় আশিয়ানের মস্তিষ্কে।আশিয়ান ইনায়াকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির মধ্যে ছুঁড়ে মেরে ইনায়ার গাল চেপে ধরে নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলে,

”আমার যে এখানে কষ্ট হয় তোমার থেকে দূরে থাকতে তা তুমি বোঝো না?আর ওই ওই ছেলেটার কষ্টে তোমার এতো কষ্ট হয়”

আশিয়ানের কন্ঠে ঘোর লাগা কিছু ছিলো।যা ইনায়ার মাঝেও শীতল বাতাস বইয়ে দেয়।ইনায়া গভীর থেকেও গভীরতর শ্বাস নেয়।আশিয়ান গার্ডদের কিছু ইশারা করে ইনায়াকে নিয়ে গাড়ি করে চলে যায়।ইনায়া মুক্ত হয়েও পালিয়ে যেতে হলুস্থ করে না।শান্ত হয়ে বসে থাকে।

ইনায়াকে নিয়ে চলে যেতেই ইশানকে ছেড়ে দেয় ওরা।ইশান মুক্ত হয়ে ওদের দিকে তেড়ে আসে।তবে ওরা তা পাত্তা না দিয়েই গাড়ি করে চলে যায়। ইশান নিজ ব্যর্থতায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। রিনি এসে ইশানকে ধরতে নেয়।তবে ইশান তেজ দেখিয়ে হাত ছিটকে সরিয়ে দেয়।রিনি পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। চেঁচিয়ে বলে,

”আমি তোমার গালফ্রেন্ড হই ইশান।আর তুমি আমার সাথে এমন করছো এই কয়েকদিনের মেয়েটার জন্য ”

”হ্যা হ্যা করছি।কারণ আমি নিজের থেকেও বেশি ওকে ভালোবাসি।আই লাভ হার সো মাচ”

ইশান বাইকে করে চলে যেতে নিলেই আশিক,রুমানা পথ আটকায়।আশিক,রুমানাকে চোখ গড়ানো দিয়ে বলে,

”যখন দেখলি ওরা ইয়ুকে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় ছিলি তোরা? নামমাত্রিক বন্ধুতে দেখাতে আসিস!সর তোরা আমার সামনে থেকে ”

রুমানা,আশিক কিছু বলতে চাইলেও ইশান কিছু না বলেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায়।রিনি ঠাঁই দাঁড়িয়ে। কলেজ লাইফ থেকে ওদের সম্পর্ক। পারিবারিক ভাবেও বিয়ের কথা ঠিকঠাক হয়ে আছে।আর এখন নাকি ইশান বলছে সে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে!অতি শোকে পাথর হওয়ার মতে হয়ে আছে সে।

”নেমে আসো”

”কোথায় এই জায়গাটা ”

”তুমি চেনো না বিধায় এনেছি।তাই বলবো না জায়গাটা কোথায়।বুঝলে জান”

আশিয়ানের কথায় ইনায়া চুপ হয়ে যায়।এখন নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে বলে মনে হচ্ছে ওর।ইনায়া ভেবে পাচ্ছে না তখন ওর কি হয়েছিলো যে ও আশিয়ানের সাথে চলে আসলো।

আশিয়ান ইনায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে নদীর কিনার দিয়ে।ইনায়ার আজ ভয় করছে না একদমই।মনে হচ্ছে কোনো দায়িত্বশীল হাত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরেছে।ইনায়ার মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে আর আহত করতে পারবে না কেননা তার পাশে যে এমন কেউ আছে যে ইনায়াকে ছাড়া আর কাউকেই বুঝতে চায় না। ইনায়ার মাঝেই নিজেকে খোঁজে!

”ফুচকা খাবা?”

”আনহাইজেনিক ফুড ইনায়া সেহরিশ খান খায় না”

”ও.এম.জি আমি তো জানতাম মেয়েরা আর কিছু না খেলেও ফুচকা দেখলে লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। সেখানে তুমি উলটো কথা বলছো”

”ইনায়া সেহরিশ খান সব মেয়েদের মতো না”

”তাইতো আমি তোমাতেই এতো আসক্ত জান”

ইনায়া থেমে যায়।শান্ত দৃষ্টিতে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

”আপনি আমায় ভালোবাসেন কেন?”

”কে বললো আমি তোমায় ভালোবাসি?”

”ভালো যদি নাই বাসেন তাহলে আমার পিছু নিচ্ছেন কেন?”

”আমি তোমায় একদমই ভালোবাসি না।আমি তো তোমার মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে।আমি এককথায় আসক্ত তোমাতে!”

আশিয়ান শেষ কথাটা ইনায়ার একদম কাছাকাছি এসে বলে। আশিয়ানের গরম নিঃশ্বাস ইনায়ার মুখশ্রীতে পড়ে।ইনায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।কেমন যেন এক অচেনা, অদৃশ্য অনুভূতি তাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে!

চলবে?

প্রেমের মেলা পর্ব-০২

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব:[ ২ ]
#বর্ষা

ইনায়া বাড়ি ফিরতেই শুনতে পায় কালই তাদের ফ্লাইট। সিঙ্গাপুর ফিরে যেতে হবে তাদের। ইনায়ার গলা শুকিয়ে আসে।যেই অতীতকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছে,সেই অতীতের নিকট ফিরে যেতে যে সে চায় না।ইসরাক খান দ্যা গ্রেট কার্ডিওলজিস্ট ইনায়ার পাপাই।ইসরাক খান মেয়ের অনুরোধ রাখতেই সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছিলেন বছর দুয়েক আগে। পাশাপাশি প্রাইভেট মেডিকেলে কয়েকটা সিরিয়াস হার্ট অপারেশনেও এটেন্ড করতেই আসা কেননা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারাই একজন চিকিৎসকের ধর্ম বলে ইসরাক খান মনে করেন।

”পাপাই আমি সিঙ্গাপুর ফিরে যেতে চাই না।আমার দ্বিতীয় বর্ষের এক্সামও কাছাকাছি।এসময় সিঙ্গাপুর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়!”

ইসরাক খান কফি খাচ্ছিলেন।মেয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেলেন।এই মেয়ে কবে থেকে পড়াশোনার প্রতি এতটা দায়িত্ববান হলো তা তার স্মরণে এলো না। অবশ্য তিনি মেয়ে পড়াশোনার প্রতি এমন অগোছালোপনা কখনো পিড়া দেইনি কেননা অগোছালো এই মেয়েটা রেজাল্ট মোটামুটি করার পাশাপাশি অন্যদেরকেও গোছালো করতে ব্যস্ত।

”ইয়ু বেটা,কিছু কি হয়েছে?কেউ কিছু বলেছে তোমায় তোমার পড়াশোনার স্ট্রেটিজি নিয়ে?”

”নো পাপাই।তবে তুমি কেন জিজ্ঞেস করছো এগুলো?”

”আমার অগোছালো মেয়েটা হঠাৎ পড়াশোনার তাগিদে নিজ জন্মভূমিতে ফিরতে চাইছে না কেন তাই তো স্বাভাবিক লাগছে না!”

”পাপাই সত্যিই কি সিঙ্গাপুর আমার জন্মভূমি!”

ইসরাক খানের মুখ চুপসে গেলেও পরক্ষণে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

”হ্যা,অবশ্যই। তুমি তোমার বার্থ সার্টিফিকেট দেখোনি!”

ইনায়া আর কিছুই বলে না।ক্লান্ততার অযুহাতে রুমে চলে আসে।ব্যাগটা স্টাডি টেবিলে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।ইনায়ার অনেক কষ্ট হয় মা’কে ছাড়া থাকতে। দাদুভাই তো ওকে মিথ্যা বলেনি কখনো তবে বলেছে ওর মা পালিয়ে গিয়েছিলো।তাও তো সত্যিই ছিলো।তবে ওর মা ওকে রেখে কেনই বা পালিয়ে গেল তা আজও জানতে পারলো না। ইসরাক খানের সাথে প্রেমের বিবাহ ছিল ইনায়ার মায়ের।তবে ওর জন্মের পরেই কি এক অজানা কারণে পালিয়ে গেলেন তিনি।সাইন করে রেখে গেলেন ডিভোর্স পেপার। সঙ্গে নিলেন ছেলেকে।মেয়ে হয়তো তার নিকট এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না!তবে ইনায়া কেন মন খারাপ করবে পাপাই কি তাকে কম ভালোবাসে!

ফ্রেশ হয়ে যোহরের নামাজ আদায় করে নিচে নামতে ইনায়া দেখে ওর পাপা কোথাও বের হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে, হসপিটালে একটা ইমার্জেন্সি এসেছে। সেখানেই যাচ্ছেন তিনি। ইনায়ার মাথায় চুম্বন করে খেয়ে নিতে বলে বেরিয়ে যান তিনি।ইনায়া মুচকি হেসে খেতে বসে বুঝতে পারে তার পাপাই আজও না খেয়েই বেরিয়ে গেছেন।ইনায়ারও আর খাওয়া হয় না।

রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরে ইসরাক খান একদমই অবাক হন না টেবিলে খাবার ঢেকে রাখা দেখে।তিনি কি করে ভুলে গেলেন মেয়েটা তিনি না খেলে খায় না। অবশ্য ইনায়া চাইলেই খাবার নিয়ে হসপিটালে যেতে পারতো তবে সে তার পিতার দায়িত্বস্থলে গিয়ে পিতাকে ডিস্ট্রাব করতে চাইনি। অবশ্য ইসরাক খানই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

”পাপাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসো।খিদেই পেট চুইচুই করছে। ইঁদুরগুলো বারবার বলছে জলদি খেয়েনে!”

”পাপাই এই যাবো,আর এই আসবো।তুমি খাবার বাড়তে থাকো”

ইসরাক খান ফ্রেশ হয়ে এসে নিজ হাতে মেয়েকে খাইয়ে দেন।অবসর সময়ে মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে আলাদা এক শান্তি পান তিনি।তার মাও তো তার মেয়েটার মতোই অবিকল চেহারার ছিলেন।তিনি যে তার মা’কে ফিরে পেয়েছেন। তবে দাদির মতো মুখায়ব পেলেও চুলগুলো ঘন কালো তার।দাদির মতো গোল্ডেন কালার না। সম্পূর্ণ বিদেশি রমনী নয় ইনায়া! পাঁচ ফুট দুই তিন উচ্চতার অধিকারী ইনায়ার দুষ্টুমিতে বন্ধুমহল মেতে থাকে সর্বদাই। বিদেশী দাদির অসম্পন্ন বিদেশী নাতিন সে!

ইনায়া ভাবতেও পারেনি ইসরাক খানকে এগিয়ে দিতে এসে এই ক্যাচালে পড়তে হবে তাকে।বহু কষ্টে পাপাইকে মানিয়ে একাই পাঠিয়ে দেয় সিঙ্গাপুরে সে। ইনায়া চায়না তার পাপাই নিজ বাবা,মা,ভাই-বোনদের থেকে দূরে বাংলাদেশে থাকুক শুধু মাত্র তার জন্যে। অবশ্য এছাড়াও সেদেশে ইসরাক খানের নিজস্ব হসপিটাল আছে, দায়িত্ব আছে। সেগুলো চাইলেও তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে যেতে নিলেই পথ রোধ করে দাঁড়ায় কেউ।ইনায়া ক্ষেপে যেই না কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই সেই ব্যক্তিটি ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে।ইনায়া বিষ্মিত হয়।

”ও মাই জান তুমি কিভাবে জানলে আমি তোমার কাছে আসছি?ইউ আর সো সুইট জান। তুমি আমার থেকে পালাতে চেয়েও আমাকে ড্রপ করতে এয়ারপোর্টে এসেছে!আই লাভ ইউ টু মাচ জান”

ইনায়া অবাক হয়ে বাক্যহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এয়ারপোর্টের মানুষেরাও ওদের দেখে মজা লুটছে।ইনায়া ধাক্কা মারে সামনের ব্যক্তিটিকে।আশিয়ান পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। বাঁকা হেঁসে রুমানের কাঁধে একহাত দিয়ে ভর দিয়ে বেঁকে দাঁড়িয়ে বলে,

”রুমান তুমি কি আমাকে এই সারপ্রাইজের কথাই বলেছিলে নাকি!আমি তো তোমার সারপ্রাইজে অনেক প্রশন্ন হয়েছি বলতেই হবে”

রুমান ভয়ে কাঁপছে।সে তো তাহলে উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেলেছে আশিয়ানকে।ইনায়া ভয়ে কাঁপছে।যেই অতীত থেকে বাঁচতে এখান থেকে না যাওয়া সেই অতীতই এখানে!ইনায়ার ভাবনার মাঝেই একটা বিদেশী মেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে আশিয়ানকে।

”সারপ্রাইজ আশিয়ান বেভ”

আশিয়ান মুখশোক্ত করে রুমানের দিকে তাকায়। রুমান হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে তার গালতি ছে মিস্টেক হোগেয়া হে!আশিয়ান এলিকে ছাড়িয়ে কঠিন কন্ঠে বলে,

”এলি এটা বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর নয় যে তুমি যেখানে সেখানে এরকম আচরণ করবে যার তার সাথে!সো আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখো”

ইনায়া কেটে পড়ার ধান্ধায় ছিল।কেটেই পড়তো আরেকটু হলে তবে বলে না বেশি পরিচিতি ভালো না ঠিক তেমনি ইনায়ার পরিচিতিই ওকে বিপদে ফেলেছে। সিনিয়র ভাই রিজভী আহমেদ কানাডা যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণে।আর তিনি ইনায়াকে দেখেই দিলেন ডাক।আর যা হওয়ার তা হয়ে গেলো।আশিয়ানের নজরেও পড়লো ইনায়ার পালিয়ে যাওয়ার দিকটি‌।ইনায়া এবার আর আস্তে আস্তে বরং জোরে দিলো এক দৌড়।বাবার রেখে যাওয়া গাড়ি নিয়েই পালালো।আশিয়ানও ছুটেছিলো ওর পেছনে তবে ধরার আগেই পালিয়ে গেল।

রিজভী আহমেদ অবাক দৃষ্টিতে ইনায়ার পালিয়ে যাওয়ার হিসেব মেলাতে ব্যস্ত ছিলো।তবে স্ত্রী ফাতেমা চলে আসায় আর হিসেব মেলানোর সময় পাননি।ফাতেমার তাড়ায় এয়ারপোর্টের ভেতরে চলে যেতে হয়েছে তাকে।আর ইচ্ছে থাকলেও আশিয়ান তার প্রিয়শীর ঠিকানা বের করে নিতে পারলো না।

এলি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো আশিয়ানের ছুটে যাওয়ার দিকে।তাইতো অবাকতা এবং কৌতুহল মেটাতে প্রশ্ন করেই ফেললো রুমানকে।

”এই পি.এ. ওই মেয়েটা কে যার পেছনে আমার আশিয়ান ছুটে গেলো?”

রুমান নাক মুখ কুঁচকে মনে মনে বললো,”এহহ,বলতে আসছে তার আশিয়ান।আরে সাতচুন্নি তুই এখনো বুঝছোস নাই যে ওই ম্যামটা স্যারের ইয়ে মানে প্রিয় কেউ।আর তুই পুরাই বিরক্তিকর ”

মনে মনে এগুলো বললেও রুমান মুচকি হেসে বললো,

”ম্যাম আপনি যেখানে আমিও সেখানে। আমি কিভাবে বলবো?”

”তাহলে তুমি এখানে কি করছো যাও গিয়ে দেখো”

রুমান দ্রুত নিজের আর আশিয়ান মির্জার লাগেজ নিয়ে কেটে পড়ে। একপাশে আশিয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

”স্যার দ্রুত চলেন।ওই সাতচুন্নি ম্যাডাম আসার আগে কেটে পড়ি!”

”হোয়াট, সাতচুন্নি?হা হা হা”

রুমান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আশিয়ানের দিকে।অনেক আপেক্ষিক তত্ত্ব বলা যায় আশিয়ানের হাসিকে।সহজে হাসতে দেখা যায় না এই বান্দাকে।হয়তো আজ প্রিয় মানুষটিকে দেখেই খুশ মেজাজ তাই অল্পতেই হেসে ফেলা।হতেই পারে!

আশিয়ান হাসি থামিয়ে প্রশস্ত সেই রাস্তার দিকে তাকিয়েই বাঁকা হেসে মনেমনে বলে,

”পালিয়ে আর কোথায় যাবে জান?যেহেতু এদেশে এসে প্রথমেই তোমার দেখা পেয়েছি, সেহেতু ভাগ্যও যে ইঙ্গিত দিয়ে দিলো আমার গন্তব্য তুমি আর তোমার হাজারো গন্তব্যের শেষ আমি!”

চলবে?