Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 336



প্রেমের মেলা পর্ব-০১

0

#প্রেমের_মেলা
পর্ব:[ ১ ]
#বর্ষা

”জান তুমি যেখানেই থাকো,তোমাকে যে এই আশিয়ান মির্জার নিকটে ফিরতে হবে।তোমার শুরুতে আমি,তোমার মৃত্যুতে আমি,তোমার সৃষ্টিতে আমি,তোমার ধ্বংসে আমি,তোমার সুখে আমি,তোমার দুঃখে আমি। সবখানেই তুমি আমাকে খুঁজে পাবে।আমার থেকে পালিয়ে যাবে কোথায় তুমি!”

সুউচ্চ বিল্ডিং এর দশতলার কেবিনের থাই গ্লাসে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ঠেকিয়ে বাঁকা হেঁসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আশিয়ান মির্জা।মির্জা গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রিজের একমাত্র উত্তরসূরী।

দরজায় খটখট শব্দে আশিয়ান ফিরে তাকায়।ছ্যাচড়া এলিকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। কামুক ভঙ্গিতে হেঁটে এসে আশিয়ানের পাশে দাঁড়ায় এলি।আপন দেশ থেকে বহুদূরে সিঙ্গাপুরে বসবাস আশিয়ান মির্জার। অবশ্য ব্যবসার খাতিরে এখানে থাকা নয়, বরং জন্মস্থান বলেই এখানে থাকা এবং বেড়ে ওঠা।ছোট্ট বয়সেই পিতা-মাতার ছায়া হারিয়েছে সে।একটা দূর্ঘটনা তার থেকে নিজের প্রতিদ্বন্দীকে কেড়ে নিয়েছে,কেড়ে নিয়েছে প্রাণপ্রিয় মাকে।তারপর থেকেই তো হাস্যোজ্জল ছেলেটা কেমন একরোখা,জেদি হয়ে উঠলো।পিতার বিশাল ব্যবস্থা সামলাতে শুরু করলো সেই ছোট্ট বয়সেই।কত কত লোসের পর গিয়ে শুরু করলো লাভ করতে।তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এখনো অব্দি।উত্থাল-পাত্থাল সামলে নিজের অবস্থান উন্নতির দিকেই রেখেছে সে।

”আশিয়ান বেবি চলো না পার্টিতে একসাথে যাই।”

”এলি দূরে সরে কথা বলে।এতো কাছাকাছি আসা আমার অপছন্দের!”

”তুমি এমন কেন আশিয়ান বেভ। তুমি জানো কতশত ছেলেরা আমার কাছে আসতে চায়!আমি তাদের পাত্তা দেই না।আর তুমি আমায় পাত্তা দিচ্ছো না”

”এলি আমি তোমার দেখা কতশত ছেলের মতো ক্যারেক্টারলেস নই‌। তুমি তোমার আশেপাশে ঘুরঘুর করা ক্যারেক্টারলেস ছেলেগুলোর সাথে পার্টি ইঞ্জয় করো গিয়ে!”

”তুমি আমায় এভাবে বলতে পারলে…”

”হুম বলেছি”

”আশি..”

”জাস্ট গেট আউট ফর্ম মাই অফিস”

এলি রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে আশিয়ান।পি.এ. রুমান কেবিনের বাইরেই ছিলো।এলিকে শুভ সকাল উইশ করতেই ঠাঁটিয়ে এক চড় খেতে হয় তাকে। আশ্চর্য হয়ে সে তাকিয়েই থাকে।কোনো কথা আর সে বলতে পারে না।

জ্যাক পেছন থেকে ঘাড়ে হাত রাখতেই রুমান লাফিয়ে ওঠে।বুকে থুতু দেয়।জ্যাক দাঁত বের করে হেসে বলে,

”আরে ব্রো তোমাকে মেয়েটা মারলো আর তুমি এমন করে তাকিয়ে ছিলে যেন মনে হচ্ছিলো তোমার বউ তোমাকে আদুরে কথা বলছে।হা হা হা”

”জ্যাক ব্রো”

”ওকে সরি ব্রো।আচ্ছা ব্রো মেয়েটাকে তো প্রায়ই দেখি অফিসে আসে।মেয়েটা কে?”

”বড়লোকদের বড়লোকি দেখাদেখি।এলি ম্যাম তো প্রথম দিন নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন স্যারের ফিয়োন্সে হিসেবে।তবে স্যারের আচরণে এমন মনে হয় না। যাইহোক তাদের বিষয়ে গবেষণা করে আমাদের লাভ নেই।অনেক কাজ পরে আছে।যাই কাজগুলো ঠিকঠাক করে স্যারকে দেখিয়ে নেই ”

”আমিও চলি রুমান।আমার তো আজ অফ ডে।তবুও এসেছিলাম অসম্পূর্ণ কয়েকটা কাজ সম্পন্ন করতে।এখন রিলাক্সে পরিবারকে সময় দিতে পারবো। চলি ”

রুমান বরাবরের মতোই অবাক। বাংলাদেশে বছর এক চাকরি করেই বিদেশগামী হয়েছিলো সে। বাংলাদেশে সে দেখেছিলো না অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যেতো এতো সহজে আর না অফিসকর্মীরা ছুটিতে কাজ করতে চাইতো।বসেরা ফোন দিতে দিতে পাগল করে ফেললে পরে দেখা যেতো কয়েকটা কাজ করেছে তাও বিরক্ত নিয়ে।আর এদেশে তা পুরোই উল্টো।ছুটে চাইলে খুব সহজেই পাওয়া যায় জব হিস্ট্রি দেখিয়ে।আবার ছুটির দিনেও নিজ ইচ্ছায় অধিকাংশ বিদেশী বহুকাজ অগ্রিম সমাপ্ত করতে চলে আসে।তারপর রিলাক্সে ছুটে কাটায়।আবার বসদেরও ফোন দিয়ে পাগল করতে হয় না। কর্মীরাই নিজ দায়িত্বে ঠিক সময়ে বসের নিকট সব কাজ সম্পন্ন করে পেশ করে। দায়িত্ববান কর্মীতে ভরপুর যেন এখানকার প্রতিটা অফিস।

স্যারের রুমে আসতেই রুমান অবাক হয়।আশিয়ান থাই গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন নেশা করেছে সে মাত্রই।দৌড়ে ধরতে গেলে অবাক হয় রুমান।না,স্যার নেশা করেনি। বরং সে এভাবে কারো কাজ দেখছিলো।রুমানকে পার্মিশন ছাড়া আসতে দেখে রেগে গেলেও তা প্রকাশ করে না আশিয়ান।

”রুমান বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা কর।”

”আচ্ছা স্যার”

”দুইটা সিট বুক করবা।একটা আমার জন্য আর একটা তোমার জন্য। তুমিও যাচ্ছো আমার সাথে।মাইন্ড ইট।বি প্রিপিয়ার!”

ভার্সিটির মাঠে রিলাক্সে মোবাইল টিপছে ইনায়া।দুইটা ক্লাস ফাঁকি দিয়েছে বলা যায়।একটা ক্লাসে দেরি করে আসায় তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।আর একটা ক্লাস ওর অপছন্দের তাই নিজ থেকেই যায়নি।ইনায়ার পাশে ধুপ করে বসে পড়ে ইশান।ইনায়ার লড়াকু জমজ ভাই বলা যায় একে। সারাদিন দুজন একে অপরের সাথে লড়তে পারবে।তবে একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।আবার চেহারাতেও দু’জনের একদমই মিল নেই। সারাদিন খুনসুটি চলতেই থাকে এদের।

ইশান ইনায়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

”আজকে লেট কেন? তুই না আমার আগে বাসা থেকে বেরিয়েছিস! কোথায় গিয়েছিলি?”

”একে তো গাট্টা মেরেছিস তারওপর শখানেক প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেবো আমি?”

”আমি বড় না তুই বড়।আমাকে ভাই বলে ডাক ইয়ু!”

”আমাকে ভাই বলে ডাক ইয়ু”

ইশানের ব্যঙ্গ করতে ইশান ইয়ানাকে মারতে নিলেই ইয়ানা উঠে দৌড় লাগায়।আর কার সাধ্য আছে এই মেয়েকে এখন ধরার।ছোট বেলা থেকেই যেই মেয়ে দুষ্টামি, দৌড়াদৌড়িতে চ্যাম্পিয়ন তাকে কি ধরা সহজ নাকি!

ভার্সিটিতে আজ ক্লাস না করেই বাড়ি ফেরার ফন্দি করেছিলো ইনায়া তবে তার শয়তান পড়াকু ভাইটার জন্য আর তা সম্ভব হয়নি।শেষ ক্লাসটা জোর জবরদস্তি করে করতে নিয়েই গেছে।ক্লাসে আসতেই ইনায়া ভাইয়ের থেকে সরে বন্ধুদের পাশে গিয়ে বসেছে লাস্ট বেঞ্চে।প্যাচালরানী কি আর চুপচাপ থাকতে পারে!

”দোস্ত স্যার কি পড়া দিছে রে?”

রুমানার কথায় ইনায়া ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,

”তোর কি মনে হয় আমি গত ক্লাসে হাজির ছিলাম?আমার এইসব ক্লাস করার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বুঝছিস!”

”এহহ আসছে গুরুত্বপূর্ণ কাজওয়ালী।তা কি কাজ করিস তা তো আজ পর্যন্ত বললি না।গত দুই’বছর যাবৎ বলেই গেলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু তা কি আদৌ আমাদের তা জানালি না।”

ওদের কথোপকথনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছিলো।স্যার করম ছুঁড়ে মারতেই তা গিয়ে লাগে ইনায়ার মুখে‌।ত্বক শুষ্ক এবং পাতলা হওয়ায় তৎক্ষণাৎ কেটে যায়। রক্ত ঝড়ে না তবে লাল বর্ণ ধারণ করে।স্যার বিষয়টা খেয়াল না করেই ওদের দাড় করিয়ে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে ক্লাসে শব্দ করায়।ইনায়াকে একটু নয় বরং অনেক বেশিই বকে।সব স্যারদেরই ধারণা এই মেয়েটা চোরামী করে সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে। কেননা যে মেয়ে একটা ক্লাসও ঠিকঠাক এটেন্ড করে না সে কি করে ভালো মার্কস আনতে পারে তাই তারা ভেবে পায় না!

স্যার রাগ দেখিয়ে ক্লাস থেকে ওদের বের করে দেয়।ইনায়া কয়েক মুহুর্তবাদেই বিশাল এক শ্বাস ছেড়ে বলে,

”ওই ইশান যদি আজ আমায় ক্লাসে না নিতো তাহলে এতো ঝামেলাই হতো না।”

”আরে এটা বড় কিছুই না বাদ দে। এমনিতেই ক্লাস করতে বোর হচ্ছিলাম আমরা।তাই না আশিক?”

আশিক ফিচলে হেসে বললো,”হ্যা,হ্যা রুমানা ঠিক বলেছে!চল আজ আমরা ফুচকা খাই!”

ইনায়া মুখ ভেংচিয়ে বলে,”চল আমরা ফুচকা খাই!এই আশিক তুই আদৌ ছেলে তো!আমি আজ পর্যন্ত এতো মজা করে ছেলেদের ফুচকা খেতে দেখিনি।সত্যিই মাইরি!”

”আর আমিও আজ অব্দি কোনো মেয়েকে এমন ল্যাঙ্গুইজে কথা বলতে দেখেনি ইয়ু ”

ইশানের কন্ঠে ঘাবড়ে যায় ইনায়া।ইনায়া কাল বিলম্ব না করেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

”আজ চলি।পাপাই চিন্তা করবে নয়তো!”

”আমি এগিয়ে দেই ইয়ু।”

ইশানের কথায় ইনায়া বলে,”প্রয়োজন হবে না। তুই বাসায় নয়তো তোর ফ্যামিলি চিন্তা করবে!”

কি ভাবছেন তো একটু আগেই বললাম ইশান,ইনায়া জমজ ভাইবোন।তবে ওরা আলাদাই থাকে কেন আর কেনই বা পরিবার আলাদা!ওদের বাবা-মায়ের কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে ওদের জন্মের মাসখানেক পরই।বাকি তথ্য ধীরে ধীরে জানতে পারবেন গল্পে থাকুন‌।

চলবে?

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“একদম নড়াচড়া করবে না জান।
আমি নিচে গিয়ে মা কে রুমে পাঠাচ্ছি।”

কথা টা বলে সাহাব আলো’র কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
আলো মুচকি হাসে বিনিময়ে সাহাবও হাসে।
কিন্তু কেন জানি ওর অস্থির অস্থির লাগছে ভিতর টা।
সাহাব বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে।
আলো চোখ বন্ধ করে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে।শরীর টা কয় দিন ধরে ভালো যাচ্ছে না নয় মাস চলে।
খাবার ঠিক ঠাক মতো খেতে পারে না বমি সাথে অরুচি তো আছেই।
আজ সন্ধ্যায় সাফারাত রায়শার বিয়ে।
বাড়ির মানুষ সবাই ব্যস্ত।আলো’র পেটে চিনচিন ব্যথা করছে।তাই রায়শার রুমে আর থাকে নি।
বেরিয়ে এসছে সেখান থেকে যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয় তবে মেয়ে টার আনন্দ টা নষ্ট হবে।যদিও এতে কারোর হাত নেই সব আল্লাহর ইচ্ছে।
তবুও আলো চায় না ওর জন্য এতো সুন্দর একটা দিন নষ্ট করতে।
এই দিন টা সব মেয়ে ছেলের জন্য একটা আনন্দ স্বপ্ন পূরণের দিন আর সেখানে তাদের ভালোবাসার বিয়ে।
এসব ভেবেই আলো আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে চলে আসে।
আর সাহাব তখন আলো কে রুম থেকে খুঁজে বেড় হচ্ছিল।
দরজায় এসে আলো কে পেয়ে ধরে নিয়ে এসে শুতে সাহায্য করে আলো কে।

আলো’র ভাবনার মাঝেই পেটে প্রচুর পরিমাণ ব্যথা অনুভব করলো।
বেডশিট খামচে ধরে আলো।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আলো ব্যথা আর সহ্য করতে না পেরে অনেক কষ্ট ডেকে উঠে

-“সাহাব?”

আর সাহাব তক্ষুনি ফলের থালা হাতে রুমে এসছিল।
আলো’র এমন করুন কণ্ঠে নিজের নাম শোনে সেটা সেন্টার টেবিল রেখে দৌড়ে আলো’র কাছে এসে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো

-“কিছু হবে না একটু ধৈর্য্য ধরো। ”

কথা গুলো বলতে বলতে সাহাব আলো কে কোলে তুলে তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসে।
ততক্ষণে বাড়ির সবাই এসে পড়েছে।
আরিফ গিয়ে গাড়ি বের করে।
আর বাড়িতে থাকা প্রতি টা ব্যক্তি দোয়া করতে থাকে যেনো মা সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকে।

—————

-“আলো তাড়াতাড়ি এসো।
আরাব কাঁদছে।”

-“কেন এখন আমাকে কেন ডাকছেন?
আপনাদের তো আমাকে প্রয়োজন হয় না।”

কথা টা বলতে বলতে আলো রুমে প্রবেশ করে।
কোলে ছয় কি সাত মাসের একটা মেয়ে বাবু।
রুমে ডুকতেই মেয়ে বাবু টা সাহাবের কোলে থাকা আরাব এর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে।
সাথে সাহাবও হাসে।
আলো ভ্রু কুঁচকে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে

-“তোমার সুয়েটার কোথায়?”

আরাব বাবার দিকে অসহায় ফেস করে তাকায়।
সাহাব চোরা চোখে একবার বউয়ের দিকে তাকায় তো একবার ছেলের দিকে।
আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“চকলেট মেখে ফেলেছে ড্রেসে।”

-“আমি খাইয়ে দিলে তো এমন হয় না?”

-“মাম্মা।
পাপা মিথ্যা ব,,,

-“আরাব তুমি তোমার দাদুর কাছে যাও।”

-“কোথাও যাবে না।
ওয়াশরুম যাও।”

কথা টা বলতে বলতে আলো নিজের কোলে থাকা রাফা কে সাহাবের কোলে দিয়ে আরাব কে নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।

————

আলোর আর সাহাবের ছেলে আরাব। চার বছর চলে।
রাফা সাফারাত আর রায়শার মেয়ে।
ছয় মাস চলে।
দেখতে দেখতে চার চারটি বছর কেটে গিয়েছে।
আলো অনার্স শেষ করেছে।
রায়শা এখন পড়া লেখা করে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।
আজ পরীক্ষা আছে তাই রায়শা কে বাড়িতে রেখে গিয়েছে।
সাফারাত অফিস গিয়েছে।
বাড়িতে সাহাব কোনো এক অজানা কারণে রয়ে গিয়েছে।

——-

দুপুরে খাবার খেয়ে আলো বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমিয়েছে এখন পাঁচ টা বাজে।
সাহাব দুপুরে একবার রুমে এসছে তার পর বেরিয়েছে আর রুমে আসে নি না-কি?
ভ্রু কুঁচকে ভাবে আলো।
হয়তো আসে নি।
আর রাফার মাও কি ভার্সিটিতে থেকে আসে নি একবারও এলো না যে।
আলো আর বেশি কিছু ভাবে না।
ওয়াশরুম চলে যায়।
নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে বাচ্চাদের ডেকে তুলবে।
ভেবে ওয়াশরুম চলে যায়।
মিনিট পাঁচ এক পর আলো বেরিয়ে আসে।
তার পর বাচ্চাদের ডেকে তুলে।
ফ্রেশ করিয়ে এনে গরম কাপড় পড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।

পুরো বাড়ি অন্ধকার এমন তো কখনো হয় না।একটু পর আযান দেবে।আর বাড়ির মেইড কেউ লাইট দেয় নি এখন।
আলো রাফা কে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে আরাব কে নিয়ে আবছা আবছা আলোর মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে।
নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ি আলোকিত হয় উঠে।
আর বাড়ির প্রতি টা সদস্য এক সাথে বিবাহ বার্ষিকী উইস করে।
আলো অবাক হয়ে চার দিকে দেখতে লাগলো।
আরাব রাফা দুজেনই হাসছে।
আরাব হাত তালি দিচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে আর রাফা কোলে থেকে খিলখিল করে হাসছে ভাইয়ের কান্ড দেখে।
সারা বাড়ি লাইটিং করা।
ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো। আর মাঝখানে সেন্টার টেবিলে সুন্দর একটা কেক রাখা।
সবাই এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
সাফারাত এসে আরাব কে কোলে তুলে নেয়।
আর সাহাব এগিয়ে এসে আলোর কাছ থেকে রাফা কে নিজের কোলে নিয়ে ডান হাত টা আলোর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে

-“Happy anniversary ”

বিনিময়ে আলো মুচকি হেসে সাহাবের হাত টার উপর নিজের ডান হাত রাখে।
সাহাব শক্ত করে সেই তুলতুলে ছোট হাত টা নিজের শক্ত হাতের মাঝে বন্দী করে এগিয়ে যায় কেক টার কাছে।

——–

রাত নয় টার দিকে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়।
আর অফিসের কিছু কলিগ আর সাহাব, সাফারাতের কয়েক জন ফ্রেন্ড এসছিল সবাই চলে যায়।
সামলা তালুকদার কে অনেক আগেই খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে রায়শা।
তিনি অনেক টাই নরম হয়ে গিয়েছে।
হয়তো ওনার সময় ফুঁড়িয়ে আসছে।
শারমিন তালুকদার আর সেলিম তালুকদারও তারাও খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গিয়েছে।
এখন ডাইনিং টেবিলে শুধু সাহাব রা রয়েছে।
আরাব আর রাফা কে রুমে দিয়ে এসছে।
দুই ভাই বোন খেলছে।
তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই।
সবাই খাবার খেয়ে উঠে সাফারাত এর রুমে চলে আসে।
কিন্তু রুমে এসে কাউ কে আর দেখতে পায় না।
রায়শা দৌড়ে শাশুড়ীর রুমে গিয়ে দেখলো তারা বাচ্চাদের সাথে খেলছে।
রাফার খাবার তো মায়ের কাছে তাই রাফা কে রায়শা নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু আরাব বায়না ধরেছে সে আজ দাদা দাদির কাছে ঘুমুবে তাই অগত্যা আরাব কে ছাড়াই আলো রুমে ফিরে আসে।
আর এসেই আলো অবাক।
পুরো রুম অন্ধকার আর ফুলের গন্ধে সারা রুমে জুড়ে মৌ মৌ করছে।

আলো একটু সামনে এগুতেই দরজা টা কেউ পেছন থেকে লাগিয়ে দিয়ে ধীরে পায়ে এগিয়ে আসছে আলো বুঝতে পারছে।
কিন্তু নড়াচড়া করার মতো শক্ত পাচ্ছে না আলো।
সাহাব দরজা টা আটকে এসে আলোর শরীরে থাকা শীতের চাদরে সরিয়ে আলো’র অনাবৃত কোমরে শাড়ীর সরিয়ে নিজের ঠান্ডা শক্ত হাত টা আলো’র কোমরে রাখে।
আলো ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।

-“এসব কখন করেছেন?”

-“আমি না সাফারাত আর আরিফ সাজিয়েছে।”

-“বয়েস হয়েছে সে দিকে খেয়াল আছে?”

-“সেই জন্যই তো আরাবের একটা বোনের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করতে হবে।”

-“অসভ্য পুরুষ।
আপনি আর কোনো দিন ভালো হবেন না?”

-“সবার কাছে হলেও তোমার কাছে হতো পারবো না।
কারণ প্রতি টা পুরুষ তার ব্যক্তিগত নারীর কাছে অসভ্য।
আর যদি ভালো হয়ে যায় তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম কোথা থেকে আসবে?”

-“চুপ করুন অসভ্য পুরুষ।
ভুল হয়েছে আমার।”

-“তবে বাবার রাজকন্যা আনার মিশন শুরু,,,

সাহাব সব টা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আলো সাহাবের দিকে ফিরে ঝাপটে জড়িত ধরে সাহাব কে।

সাহাব মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় আলো কে।
বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের ভালোবাসার দিয়ে দিশাহারা করে তুলে আলো কে।
স্বামীর ভালোবাসায় দিশেহারা আলো যখন দিক খুঁজতে ব্যস্ত ঠিক তক্ষুনি কানে ভেসে আসে

-“ভালোবাসি বউ।
এভাবে মরণের আগে অব্দি রেখে দেবো তোমায় আমার বক্ষ পিঞ্জিরায়।”

~সমাপ্ত~

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৮

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনি সত্যি বলছেন? ”

সাহাব মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। তোয়ালে টা ব্যালকেনিতে দিয়ে রুমে আসার সাথে সাথে আলো সাহাবের গলা জড়িয়ে ধরে কথা টা বলে উঠে

-“হুম।
যারা যারা আমার দলে কাজ করতো সবাই কে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

সাহাব একটু চুপ থেকে আলো’র কপালে চুমু খেয়ে আবারও বলে উঠে

-“ভালোবাসি বউ ভীষণ ভালোবাসি।”

-“আমরাও ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।”

সাহাব জড়িয়ে ধরে আলো কে।
এভাবে থেকেই বউ কে নিয়ে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ে।
সাহাব দুজনের গায়ে কম্বল টেনে নেয় ভালো করে।

————-

-“ঠান্ডা দরকার ছিল না।
আমি মেইড দিয়ে আনিয়ে নিতাম।”

রায়শার হাত থেকে কফির মগ টা নিতে নিতে কথা গুলো বলে উঠে সাফারাত

-“কেন কফি ভালো হয় নি?
আবার করে আনবো?”

-“আমি বলেছি ভালো হয় নি?
এতো ঠান্ডা তারমধ্যে রাত বাজে এগারো টা।”

-“আমার ভালো লাগছে।
আপনার লাগছে না?”

-“না।
রুমে যাও।
এতো ঠান্ডার মাঝে এখানে থাকা লাগবে না। ”

-“আপনি যাবেন না?”

-“চলো।”

তার পর দুজন লিভিং রুম থেকে যার যার রুমে চলে গেলো।

————

-“তোমার ফাইনাল এক্সাম? ”

সেলিম তালুকদার খাবার টেবিলে বসতে বসতে সাফারাত কে জিজ্ঞেস করে।

-“সামনে মাসে তেরো তারিখ।”

-“আচ্ছা।”

কেউ আর কোনো কথা বলে না।
সাহাব এখনো নিচে আসে নি।সবাই নাস্তা করতে বসে গেছে।
আলো শারমিন তালুকদার পাশে বসে চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে।
না খেয়েও উপায় নেই।
খাবার নিয়ে সবাই বেশ সচেতন। অবশ্য এখন তো আর একজন নয়। যে খেলে খাবে না খেলে নেই।এখন তো আরও একটা প্রাণ তার মধ্যে বেড়ে উঠছে।
কষ্ট করে হলোও খেতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো আলো খেতে চায় কিন্তু সে খেতে পারে না।
এই যে কেমন গা গুলিয়ে আসছে একটু পর পর।কিন্তু তাও সে দাঁতে দাঁত চেপে খাবার টা শেষ করার চেষ্টা করছে।
তবে শেষ রক্ষা আর হয় না।
চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে যায় আলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সাহাব নিচে আসে হাতে ব্লেজার ঝুলানো।
কিন্তু বউ কে হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরে যেতে দেখে সেও হাতে থাকা ব্লেজার সোফায় ছুঁড়ে ফেলে বউয়ের পেছন পেছন রান্না ঘরে চলে যায়।
আলো এভাবে উঠে যাওয়াতে সবাই অস্থির হয়ে পরে।
শারমিন তালুকদার আর রায়শা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে সাহাব কে দেখে কেউ আর যায় না।
যে যার জায়গায় বসে পড়ে সামলা তালুকদার মুচকি হাসে।
ছেলে আছে নয়তো কোনো কথা মুখ ফসকে বলেই ফেলতো হয়তো।

আলো মুখ চেপে ধরে রান্না ঘরে গিয়ে ঘরঘর শব্দ করে পেটের ভেতর থেকে সব ফেলে দিলো।
কাজের লোক গুলো রান্না ঘরে ছিল তারা তড়িঘড়ি করে আলোর দিকে আসতে নেয়।
কিন্তু সাহাব কে রান্না ঘরে প্রবেশ করতে দেখে সবাই চুপ চাপ স্থান ত্যাগ করে।
সাহাব দূত এসে আলোর চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।
মুখে পানি দিতে সাহায্য করে।
আলো একদম নেতিয়ে পড়ে।

চোখ পিটপিট করে তাকায় সাহাবের দিকে।
মলিন হেসে বলে উঠে

-“আপনার দেড়ি হচ্ছে।
খাবার খেয়ে অফিস যান।”

সাহাবের বুকের ভিতর ধুক করে উঠে।
সে কি তবে তার অর্ধাঙ্গিনীর অভিমান এখনো ভেঙে দিতে পারে নি?
পারবে কি করে সে যে এই কয় দিন অনেক টা দূরে ছিল তার প্রেয়সীর থেকে।
আর এক দিন কি সেই অভিমান এক রাতে আর কিছু কথা কি এতো দিনের অভিমান ভেঙে দিতে পারে?আর ভেঙে যাওয়ার কথাও নয়।
সাহাব সেই প্রত্যাশা করেও না।
ভেতরে ভেতরে আলো’র কথায় খারাপ লাগলেও মুখ প্রকাশ করে না।
ঝট করে বউ কে কোলে তুলে নেয়।
আলো কিছু বলে না চুপ চাপ স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে কিন্তু এখন লজ্জা পেলে নিজেরই ক্ষতি।
হেঁটে রুমে যাওয়ার মতো শক্তি বা সাহসও করতে পারছে না।
সাহাব রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠে রুমে চলে আসে।
ডাইনিং টেবিলে বসা কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া করে না।
আর সেলিম তালুকদার অনেক আগেই অফিস চলে গিয়েছে।
তাই লজ্জা পাওয়ার মতো সেখানে কেউ নেই।
সাহাব আলো কে বিছানায় সুয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়।
নিজে অফিসের জন্য রেডি হয়েছিল সেই ড্রেস চেঞ্জ করে ট্রাউজার পড়ে শীতের ড্রেস পড়ে আসে ওয়াশ রুম থেকে।
আলো তখনো চোখ বন্ধ করে সুয়ে ছিল। কিন্তু ও ঠিক সব বুঝতে পারছিল সাহাব অফিস যাবে না।
আলো’র ভাবনার মাঝেই সাহাব ফোনে আরিফ কে জানিয়ে দে সে আজ অফিস যাচ্ছে না।
আজ নয় আগামী সাত মাস সে অফিস যাবে না।
যা শোনে আলো সোয়া থেকে উঠে বসে চোখ বড় বড় করে সাহাবের দিকে তাকায়া।কিন্তু সাহাব তখনো ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত।
সাহাব আরিফ কে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আর সাফারাতও অফিস যাবে আর সেলিম তালুকদারও আছে।
তাই বেশি সমস্যা হবে না আরিফও সাহাবের সব কথা মন দিয়ে শুনে।
সাহাব কথা বলে কল কেটে ফোন পেছনে ফিরে দেখে আলো ওর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।
সাহাব পাত্তা দেয় না।
রুম থেকে থেকে বেড়িয়ে যায়।
আলো তখনো সেভাবেই বসে থাকে।
সাহাব বেশ অনেকক্ষণ পর ফিরে আসে হাতে খাবার থালা।
সেগুলো নিয়ে বিছানায় আলোর পাশে বসে আলো’র মুখের সামনে খাবার তুলে দেয়।
কিন্তু আলো মুখ ফিরে নেয়।
বিরক্ত মুখ করে জিজ্ঞেস করে

-“আপনি অফিস কেন যাবেন না?”

-“আমার ইচ্ছে।”

খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
আলো এবার ভ্রু কুঁচকে তাকায় সাহাবের দিকে।
সাহাব নিজের বাম হাত দিয়ে আলো’র মুখ চেপে ধরে ওর মুখে খাবার পুরে দেয়।
আলো আর কিছু বলে না খাবার খেতে থাকে। কিন্তু দুই তিন বার নেওয়ার পর আবার গা গুলিয়ে আসে।
সাহাব তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে চট করে ড্রয়ার খোলে সেখান থেকে একটা তেঁতুল আচার আনে।
আর সে টা আলো কে খেতে দিয়ে।
নিজে খাবার খায়া। আবার ফাঁকে ফাঁকে আলো’র মুখেও দেয়।
আলো তৃপ্তি নিয়ে খায়।
কেমন সুখ সুখ অনুভব হয় আলো’র। আর ভাবে অভিমান তবে কাজে দিলো।
ভেবেই মুচকি হাসে।

————–

-“মা আমার মনে হয় ওদের বিয়ে টা দিয়ে দিলে ভালো হয়।
তাছাড়া একটা মেয়ে অবিবাহিত লোকজন পাড়াপ্রতিবেশি মানুষ না কথা বলে চলেছে কয় দিন ধরে।”

শারমিন তালুকদার কথা শোনে সামলা তালুকদার কিছু টা ভাবনায় পড়ে যায়।

-“আচ্ছা রাতে এটা নিয়ে কথা বলবো।”

শারমিন তালুকদার আর কিছু বলে না শাশুড়ীর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।

————-

রাতে সবাই খাবার খেয়ে লিভিং রুমে বসে কথা বলে সাফারাত আর রায়শার বিয়ের সব ঠিক ঠাক করে নেয়।
সাফারাতের ফাইনাল এক্সামও শেষ হয়ে যাবে আর একটা বিষয় বাকি।
তাই ঠিক হলো এক্সাম এর পরই বিয়ে টা হবে।
আর রায়শারও এডমিশন টেষ্ট শেষ হয়ে যাবে ততদিনে।

—–

আলোর এখন পেট টা একটু উঁচু হয়েছে। পাঁচ মাস চলে কি না।
বাড়ির সবাই অনেক যত্ন করে। সাহাব তো বউয়ের কাছে কাছে থাকে সব সময়।
কখন কি লাগে সব খেয়াল রাখে যদিও আলো’র এখন আর ততটা বমি-টমি হয় না কিন্তু খাবার খেতে পারে না।
সাহাব আলো কে কিছু করতে দেয় না সব নিজেই করে।
ওরা পনেরো দিন পর পর চেক-আপ করে আসে।
এই মাসেও গিয়েছে। ডক্টর টেস্ট করার পর কি বেবি হবে বলতে চেয়েছে কিন্তু সাহাব শোনে নি।
তার কথা একটাই আল্লাহ যা দেয় তাতেই খুশি।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকা সাহাবের দিকে তাকালো।
সাহাব এক মনে কাজ করছিল।
কিন্তু বউকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে” আলো মাথা নেড়ে জানায় কিছু না।
তার পর একটা হাত পেটে রেখে সোয়া তার উঠার চেষ্টা করে সাহাব ততক্ষণে ল্যাপটপ পাশে রেখে বউ কে এসে উঠে বসতে সাহায্য করে

-“উঠতে পারতাম।
কাজ করেন আপনি।”

সাহাবের গালে এক হাত রেখে বলে উঠে আলো।
সাহাব আলো’র হাত টেনে এনে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় হাতের তালুতে।
তার পর আলো’র মুখের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে

-“আগে আমার অংশ, অস্তিত্ব।
তার পর বাকি সব।
ভালোবাসি বউ।
কিছু হলে যে মরে যাব।”

সাহাবের মুখে মরে যাবে কথা টা শোনে আলোর বুকের ভিতর ধক করে উঠে।

-“কিছু হবে না আমার না আপনার না আপনার অস্তিত্বের।
আল্লাহ আছে না ভরসা রাখুন।”

সাহাব শোনে কিন্তু কিছু বলে না।
সে তো এক দৃষ্টিতে বউয়ের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।

-“অনেক দিন হয় আদর করি না।
একটু করি।
বেশি না জাস্ট একটু জান?”

সাহাব আলো’র ঠোঁটে নিজের হাতের তর্জনী আংগুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে নেশালো কণ্ঠে কথা গুলো বলে উঠে।
আলো সাহাবের স্পর্শে সারা শরীর কেঁপে উঠল।
মুখ দিয়ে কোনো বাক্য বের করতে পারে না।
কাতর হয় সাহাবের হাতের এলোমেলো স্পর্শে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্বাস নিতে থাকে জোরে জোর।
সাহাবও আগলে নেয় বউ কে।
দুই টা ভালোবাসার মানুষ একে অপরের সাথে আরও একটা সুন্দর রাত কাটে।

#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৭

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“কি হয়েছে তোমার?
আজ এক মাসেরও বেশি দিন ধরে এমন কেন করছো?”

আলো রুমে এসছিল মাত্র। রুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাহাব ওকে টেনে এনে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজের দু হাত দ্বারা আলোর হাত বিছানায় চেপে ধরে দাঁত কটমট করে উপরোক্ত কথা গুলো হিসহিসিয়ে বলে উঠে।
আলো হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
কিন্তু সাহাবের এমন রাগী কণ্ঠে শুনে।আস্তে আস্তে চোখ খোলে।
খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজেও উল্টো সাহাব কে প্রশ্ন করে

-“কি করেছি?”

সাহাব এবার আরও রেগে গেলো।
আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্ত করে চেপে ধরে আলোর হাত।
আলো ব্যাথা পায়।চোখে কোঠরায় পানি জমে চোখ চিকচিক করে উঠে।
হাল্কা আর্তনাদ করে উঠে।
সাহাব আলোর অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে হাত ছেড়ে দেয়।
আলোর উপর থেকে উঠে সাইডে বসে।
নিজের হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে।
বিরবির করে কিছু বলে। কিন্তু আলোর কানে তা আসে না সে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়েছে।

আলো নিজেও সুয়া থেকে উঠে বসে।
গায়ের ওড়না টা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।
চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে নেয়।
বিছানা থেকে নেমে গিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে যায়।
সাহাবও আলোর পেছন পেছন এসে আলোর পাশে দাঁড়ায়।
রাত দশটার মতো বাজে হয়তো।
আজ সাহাব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছে।
কারণ একটাই আর সেটা হলো বউ তার আজ অনেক দিন ধরে তার সাথে ঠিক করে কথা বলে না।
রাতে তার জন্য অপেক্ষা করে না।ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে সাহাব ঘুম থেকে উঠার আগে সাফারাতের সঙ্গে ভার্সিটিতে চলে যায়।
সাহাব এসব প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ভাবে নিলেও।
পরে বুঝতে পারে বউ তার উপর কোনো কারণে অভিমান করে আছে।
কিন্তু অভিমান ভাঙ্গানোর মতো সময় সাহাব পায় নি।
নারী প্রচারকারী দলের লোক গুলো ধরা পরেছে। এনিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।
সেই সাথে নিজেদের কোম্পানির অনেক গুলো ডিল ছিল সে গুলো করতে হয়েছে সব মিলিয়ে সময় করে উঠতে পারে নি।
সাহাবের ভাবনার মাঝেই আলো শান্ত চোখে সামনে অন্ধকারে দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“বাবা মায়ের ভালোবাসা পায়নি।বাবা রাজনৈতি করতো মা চাকরি। তারা আমাকে সময় দিতে পারতো না।কাজের লোকের কাছেই আমার ছোট বেলা কাটে।কিন্তু কখনো সে টা নিয়ে ভাবি নি।কিন্তু যখন কিন্ডারগার্টেন ভর্তি হলাম। তখন স্কুলে যখন সবার মা নয়তো বাবা তাদের স্কুল নিয়ে আসতো তখন আমাকে বাড়ি কাজের লোক দিয়ে আসতো নিয়ে আসতো।এভাবেই চলছিল দিন। মন খারাপ হতো।কিন্তু বাবা বা মায়ের কাছে কখনো তা নিয়ে বায়না করি নি।তবে মনে মনে তাদের প্রতি অনেক অভিমান জন্মায়।আর যখন সাত বছর বয়সে বাবা মা দুজনেই আমাকে একা করে সেই অভিমানের পাল্লা টা আরও ভারি করে দু’জন আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলো।যেখান থেকে চাইলেও কেউ ফিরে আসতে পারে না আর না কেউ ফিরিয়ে আনতে পারে।
আর ঠিক তক্ষুনি বাবাই এলো আর আমাকে একটা সুন্দর পরিবার পরিচয় দিলো।এখানে এসে এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি হয়তো তা কোনো দিন সুদ করতে পারবো না।আস্তে আস্তে বড় হলাম আপনি সাফারাত ভাই সবাই ভালোবাসা পেয়ে আমি আমার অতীত ভুলে গেলাম।আর যখন ষোল বছর তখন বুঝতে পারলাম আমি কাউকে ভালোবাসি। কিন্তু সেই চাওয়া আমার জন্য নিষিদ্ধ।কিন্তু মন সে শুনলে তো? মন যে বড় বেহায়া। যে আমাকে পরিবার দিল তার বড় ছেলে কেই আমার মনে অজান্তেই জায়গায় দিয়ে ফেলেছিলাম।লোকে জানলে কি বলবে? ছিঃ ভাই কে কি করে কেউ ভালোবাসতে পারে?লোক চক্ষে মুখ দেখানো দায় হবে যে।এসব ভেবে সব সময় তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতাম। এভাবেই চলছিল দিন। কিন্তু আমার মনে সব সময় সে রাজত্ব করতো।আর আমার জীবনেও তার রাজত্ব বেশি ছিল। আমি বুঝতে পারতাম না সে কি আমায় বোন মনে করে এমন করে নাকি অন্য কারণ? আর যখন ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলো।তখন একদিন জানতে পারলাম সে মাফিয়া। তারও অনেক বড় গ্রুপ আছে আর সে সেখানকার লিডার। সে দিন অনেক কেঁদে ছিলাম। যদিও সেই কান্নার কোনো মানে ছিল না।
চাওয়া গুলো যে নিষিদ্ধ ছিল। আস্তে আস্তে তাকে নিজের মন মাথা দুই টা থেকে বিদায় করতে উঠে পরে লাগলাম। কিন্তু এটা আমার জন্য এতো সহজ ছিল না।তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু মস্তিষ্কের কাছে সফল হলেও মনের কাছে পারলাম না।আর যখন বিয়ের কথা হলো। তখন মা আমায় সব টা জানিয়েছে।প্রথমে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু আপনার প্রফেশন এর কথা মাথার আসতেই সে খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিন্তু আপনার ভালোবাসা আর দাদুনের আবদার এই পরিবারের প্রতি টা মানুষের ভালোবাসা। স্বার্থপর হয়ে গিয়ে ছিলাম কিন্তু আপনার ক্ষমতা র কাছে গিয়ে সে টায় আমি বিজয়ী হতে পারি নি।
কিন্তু আপনি তো আমায় কথা দিয়ে ছিলেন এসব ছেড়ে দিবেন।
তবে এখন কেন তা হচ্ছে না।
প্লিজ আপনি এসব আর করবেন না আমি শান্তিতে সংসার করতে চাই।পরিবারের প্রতি টা মানুষ কে আগলে রাখতে চাই একটা সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চাই।পরিবার নিয়ে ভালো থ,,,,

আলো এক নিশ্বাসে সব গুলো কথা বলে।কিন্তু লাস্ট কথা গুলো বেশ উত্তেজিত হয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলে।
তবে লাস্ট কথা গুলো সম্পূর্ণ করতে পারে না তার আগেই ঢলে পড়ে সাহাবের উপর।
সাহাব আগলে নেয় বউকে।
অস্থির হয়ে কয়েক বার ডাকে কিন্তু আলো কোনো রেসপন্স করে না।
সাহাব হন্তদন্ত হয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় সুয়ে দেয় বউ কে।
মা কে ডাকে।মূহুর্তের মধ্যে বাড়ির মেইড থেকে শুরু করে সামলা তালুকদার হাজির হয় এখানে।
সাহাব আরিফ কে ফোন দিয়ে ডক্টর নিয়ে আসতে বলে।
শারমিন তালুকদার আলোর হাত ঘষছে। রায়শা পায়ের কাছে বসে পায়ের তালু ঘষে। কাজের দুই জন লোক বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রায় আধঘন্টা পর আরিফ সহ ডক্টর নিয়ে রুমে এসছে।
সেলিম তালুকদার ডক্টর কে কিছু বলে বেরিয়ে যায়।
সাহাব তখনো বউয়ের হাত ধরে বসে।
সাফারাত, আরিফ বেরিয়ে যায়। শুধু মহিলার আছে।

———–

-“বলেছি না বেশি লাফালাফি না করতে? ”

আলো সাহাবের কথা পাত্তা দেয় না নিজের মতো করে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বারাতেই সাহাব খপ করে ওর হাত ধরে আটকে দেয়। হাতে থাকা প্যাকেট গুলো পাশে দরজার কাছে থাকা টেবিলে সেগুলো রেখে দিয়ে ঝট করে কোলে তুলে নেয় বউ কে।
বিছানায় সুয়ে দিয়ে নিজেও আলো’র উপর হাল্কা ঝুঁকে পেট থেকে জামা টা সরিয়ে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় পর পর কয়েক বার।
আলো কেঁপে কেঁপে উঠে কিন্তু চুপচাপ বেডশিট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখে।
সাহাব নিজের মতো করে কতক্ষণ নিজের অস্তিত্বের সাথে বকবক করে।হ্যাঁ সে দিন ডক্টর বলেছে আলোর ছয় সাপ্তাহ চলে।
আলো খুশি হয়েছে কি না দেখে বুঝার উপায় নেই। তবে সাহাব ভীষণ খুশি এটা তার কেয়ার যত্ন দ্বিগুণ হয়েছে বউয়ের প্রতি।
সবাই যখন চলে গিয়েছইল সে রাতে আলো আর ঘুম থেকে উঠে নি।
কিন্তু সাহাব সে রাতে আর ঘুমায় নি।সারা রাত বউয়ের পাশে বসে কাটিয়ে দিয়েছে।
আলো সকালে উঠে দেখেছিল সাহাব তার পাশে বসে।
আর রাতের সব ঘটনা রায়শা তাকে বলেছিল।
আলোর ভাবনার মাঝেই সাহাব আলো’র উপর থেকে উঠে বসে সার্ট এর উপর পরিহিত ব্লেজার টা খুলতে খুলতে আলো কে বলে উঠে

-“চুপ চাপ খাবার গুলো ফিনিশ করো।
আর একটা কথা আজ সবাই কে বিদায় করে দিয়েছি।”

কথা টা বলেই সাহাব তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।
আলো হতভম্ব হয়ে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি বলে গেলো সাহাব এটাও সম্ভব?
এটা কি সত্যি?

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৬

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“মেয়েটাকে ড্রাগস দেওয়া হয়েছে।
আজ রাতে এদের প্রাচার করা হতো।
ওরা মোট সতেরো টা মেয়ে।
এর মধ্যে রায়শাও ছিল।”

এইটুকু বলেই থামে সাহাব।আলোকে আরও একটু বুকের সাথে চেপে ধরে।
কম্বল টা দুজনের উপর টেনে নেয় আরও কিছু টা।

-“আমাদের এতিম খানার আটজন। বাকি গুলো বাহিরের।
সবাই কে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর এতিম খানার আটজনের মধ্যে সাতজন কে ওখানে রেখে এসছে আরিফ।
কিন্তু সাফারাত রায়শা কে কিছুতেই ওখানে রেখে আসতে রাজি নয়।
বোঝা গিয়েছে কিছু? ”

-“হুম।
কিন্তু রায়শার আঠারো বছর হয়নি এখনো।”

-“হুম।
দাদুনের সাথে কথা বলে দেখা যাক কি করা যায়।”

সাহাবের কথা আলো আর উত্তর করে না।
চুপ চাপ সাহাবের বুকে মাথা রেখে সুয়ে থাকে।কিন্তু সাহাব কি চুপ চাপ থাকার লোক? উঁহু নিজেও ঘুমুবে না আর বউকে ঘুমুতে দিবে না।

-“কাল ভার্সিটির প্রথম দিন।”

আলো মাথা টা একটু উঁচু করে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে আস্তে করে বলে উঠে।

সাহাব তৎক্ষনাৎ অনেক টাই বউ কে আগলে নিয়েছিল।
কিন্তু আলোর মিনমিন করে করা আবদার শুনে থেমে যায়।দু হাতে বউ কে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেলে বলে উঠে

-“হুম।
সাফারাত দিয়ে আসবে।
আমার একটা কাজ আছে। তবে আমি নিতে যাব।”

আলো ঘুম ঘুম কন্ঠে “আচ্ছা” বলে।হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। তাই সাহাব আর কিছু বলে না। নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

———-

আলো সকালে ঘুম থেকে উঠে সাহাব কে পায় না।ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে আসে।
সাহাব বাদে সবাই নাস্তার টেবিলে আছে।কাল রাতের রায়শা নামের মেয়ে টাও।
শারমিন তালুকদার আলো কে দেখে বসতে বলে। আলো ওনার পাশের চেয়ার টায় বসে পড়ে। তার পর নাস্তা করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাফারাত এর সঙ্গে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলো।
সাফারাত ডাইভিং সিটে বসে আলো ফ্রন্ট সিটে বসে আছে।
সাফারাত কে আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে।যা দেখে আলো ঠোঁট টিপে হাসে।
কিন্তু সাফারাতের চোখে তা পড়ে না।
আলো নিজে কে স্বাভাবিক করে সাফারাত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“একবারও বলে নি আগে ভাইয়া।”

সাফারাতের কথা টা বুঝতে একটু সময় লাগলো। বুঝতে পেরে লাজুক হাসলো।
তার পর আলোর দিকে তাকিয়ে একটু করুন কণ্ঠে বলে উঠে

-“বলতাম।
কিন্তু ভয় করতো যদি ভাইয়া বা বাবা না মানে।”

-“এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয় ভাইয়া।”

ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে আলো।
সাফারাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে জানে।কিন্তু কেন বলতে পারে নি সে জানে না।হয়তো বড় ভাইয়ের মতো হলে ঠিক বলে দিতে।যেমন টা বড় ভাই খুব সহজ সাবলীল ভাবে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে নিয়েছে।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো সে তো সাহাব নয় সাফারাত তাই হয়তো পারে নি।
এখনো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক টা সময় বাকি।
সাফারাত এসব ভেবেই নিজের মনের কিছু কথা আলো কে বলতে শুরু করে

-“তুমি তো জানো।আমরা সবাই মাসে একবার করে এতিম খানায় যাই।এমনি একদিন সবাই আমরা গিয়েছিলাম সে দিন। আমি তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে মাত্র। সব সময় ওখানে গেলেও কখনো কারোর দিকে তেমন নজর দিতাম না। মেয়েদের এতিম খানা কি না তাই।আর তুমি খুব ভালো করে জানো আমি দাদুন,মা,তুমি ছাড়া কারোর সঙ্গে কথা বা মিশতামও না।সে দিন যখন ওখানে গিয়েছিলাম আমরা। তখন তোমারা সবাই যখন বাকি সব মানুষদের সাথে ছিলে তখন আমি ফোন নিয়ে গেমস খেলার জন্য সেখান থেকে সরে বাগানের এক সাইডে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একটা নয়, দশ বছর একটা মেয়ে ওখানে ঘাসের উপর বসে বসে কাঁদছে।
মেয়ে টাকে আমার কাছ থেকে একদম পুরো পুরি দেখা যাচ্ছিল।আর ওর কান্নারত অবস্থায় দেখে আমার হার্ট কিছুক্ষণের জন্য স্টপ হয়ে গিয়েছিল। সে দিন আমি ওকে কান্না করতে না করি নি। কোনো এক অজানা কারণে ভালোই লাগছিল। ওর কাছ থেকে অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে ওর কান্না দেখছিলাম। সে দিনের পর থেকে আমি প্রায় যেতাম ওখানে।
তার পর আস্তে আস্তে ওর সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময় জানতে পারলাম ওর বাবা দু’জনেই কার এক্সিডেন্ট করে মারা গিয়েছে। সেই থেকে ওর প্রতি আমার একটা আলাদা টান তৈরি হলো।আর সেখান থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু ও নিজে কখনো বলে নি আমায় ভালোবাসে কি না।”

কথা গুলো বলেই সাফারাত গাড়ি ব্রেক কষে।
আলো এতক্ষণ মন দিয়ে কথা গুলো শুনছিল।
গাড়ি হটাৎ থেমে যাওয়াতে আলো ধ্যান ফিরে। সাফারাত ততক্ষণে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আলোর কাছে এসে দরজা খুলে নামতে বলে।
আলো মুচকি হেসে নেমে সাফারাত এর সঙ্গে ভার্সিটির ভিতর প্রবেশ করে।
সাফারাত আলো কে ওর এক ফ্রেন্ড এর বোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আলো মেয়ে টার সাথে কথা বলে জানতে পারে সেই মেয়ে টার বিয়ে হয়েছে পনেরো দিন এর মতো হবে। মেয়ে টার নাম রিয়া।
সাফারাত চলে যায় আলো মেয়ে টার সঙ্গে কথা বলে। দুজনেই এই সময়ের মাঝে অনেক টা ভাব হয়ে যায়।
আজ প্রথম দিন তাই ক্লাস হয়নি।পরিচয় পর্ব চলেছে প্রতি ক্লাসে।ছুটি দিয়ে দেয়।
আলো আর রিয়া দুইজনে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আসে।
ওরা বেরিয়ে এসে দেখলো রিয়ার ভাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
রিয়া আলোকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।
আর আলো দাঁড়িয়ে থাকে। সাফারাত আলো কে ভার্সিটিতে রেখে আবার বাড়ি চলে গিয়েছে।
সাহাব আসবে বলেছে নয়তো ও চলে যেতো।
এখান থেকে বাড়ি বেশি দূর নয়।হেঁটে গেলে পনেরো বা বিশ মিনিট এর মতো লাগবে।
আলোর এসব ভাবনায় যখন বিভোর ঠিক তক্ষুনি একটা কালো গাড়ি এসে থামে ওর সামনে।
আর সে টা থেকে সাহাব বেরিয়ে আসে। আলো কাছে দিয়ে এসে গাড়ি দরজা খুলে দিয়ে আলোকে বসতে ইশারা করে।
আলো সাহাবের দিকে তাকিয়ে থেকেই গাড়িতে উঠে বসে।। সাহাব একটা ফর্মাল সাদা সার্ট পড়ে আছে সাথে কালো প্যান্ট বেশ লাগছে দেখতে।
এমনিতেই সুন্দর তারমধ্য এখন আরও আকর্ষণীয় লাগছে।
যার জন্য এখানে অবস্থানরত সব মেয়ে গুলোর দৃষ্টি সাহাবের দিকে।
কিন্তু সাহাবের সে দিকে ধ্যান নেই।
সে নিজের মতো সানগ্লাস চোখে দিয়ে গাড়িতে উঠে।
আলো বসে আছে সিট বেল্ট বাঁধে নি।
সাহাব এগিয়ে গিয়ে সেটা বেঁধে দিয়ে। বউয়ের কপালে এসে পড়া থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে সরে আসে।
আলো হটাৎ বলে উঠে

-“কষ্টে হচ্ছে।
দরকার ছিল না আমি যেতে পারতাম।”

সাহাব কে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কিন্তু বউয়ের এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে। নিজে উল্টো জিজ্ঞেস করে

-“বলেছি?”

আলো কিছু বলে না শুধু দু’দিকে মাথা নাড়ে যার অর্থ না।
সাহাবও গাড়ি স্টাট দেয়।

-“কাল আমরা সব গুলো মেয়ে বাঁচাতে পেরেছি।আর কিছু নারী প্রচারকারী দলের লোক ধরা পড়েছে।
তবে যারা মেইন শয়তান তাদের নাগাল আমরা পায়নি।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
খুব শীগগির তারা-ও ধরা পড়ে যাবে পুলিশ বলেছে।
আর যত দিন তাদের ধরতে না পারছে ততদিনে আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে।
কারণ এবার এটা সবাই যেনে গিয়েছে। এর পেছনে অবদান টা আমার তাই শত্রু পক্ষে আমার ফ্যামেলির উপর নজর টা বেশি হবে।
বুঝতে পেরেছো?”

-“হুম।”

সাহাবের কথা শুনে আলো ছোট করে জবাব দেয়।
কিন্তু ও কিছু একটা ভেবে চলেছে।

#চলবে….

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৫

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা আমাদের এতিম খানায় আজ সকালে থেকে একটা মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।”

-“হুম আমি শুনেছি।
তুমি ভাইয়া কে ডাকো।”

সেলিম তালুকদার কথা শুনে সাফারাত দৌড়ে উপর সাহাবের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
শারমিন তালুকদার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে থমথমে কণ্ঠে স্বামীর উদ্দেশ্য বলে উঠে

-“কি হচ্ছে বলুন তো?
কয়েকদিন আগেও দুই টা বাচ্চা চুরি হয়ে গেলো।
আর আজ আঠারো বছরের একজন যুবতী মেয়ে?”

-“বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা তোমারা এ নিয়ে চিন্তা করো না।
মা কোথায়?”

-“রুমে ঘুমিয়ে আছে।”

তাদের স্বামী স্ত্রীর কথা মধ্যে সাহাব সাফারাত দুই জনে নিচে এলো।
আর ঠিক তক্ষুনি আরিফ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাহাবের কাছে এসে দাঁড়ায়।
সেলিম তালুকদার কথা বলছে সাহাবের সঙ্গে সাফারাত সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই। সে এক মনে কিছু ভেবে চলেছে।
শারমিন তালুকদার একজন মেইড কে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে চলে গেলো।

আরিফ কিছু একটা করছে ফোনে।
আলো নিচে এসে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো। শারমিন তালুকদার আলো কে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে মেইড কে খাবার দিতে বলে।
কিন্তু আলো নিষেধ করে সব সময়ের মতো নিজে খাবার নিয়ে রান্না ঘরে শারমিন তালুকদার পাশে একটা টুলে বসে খাবার খেয়ে নিলো।
শারমিন তালুকদার বেশ খুশি। এটাই চাইতো তিনি একটা মেয়ে যে সব সময় তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করবে।আর এখন থেকে এটা সব সময় হবে।তিনি নিশ্চিত।
এ-সব ভাবতে ভাবতে তিনি কফি গুলো একজন মেইড এর হাতে দিয়ে ড্রয়িং রুমে দিয়ে আসতে বলে।
আর নিজেও সানায়া কে নিয়ে লিভিং রুমে আসে।

-“আচ্ছা আমি দেখছি বাবা।
চিন্তা করো না।”

কথা টা শেষ করে সাহাব কফির কাপে চুমুক বসায়।
এর মধ্যে সামলা তালুকদার এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।
সাহাব দাদু নের ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তার পর হাতে থাকা মগ টা সেন্টার টেবিলে রাখতে রাখতে আলো কে রুমে আসার জন্য ইশারা করে। শারমিন তালুকদার সেটা লক্ষ করে।
আর সাহাব উপরে যাওয়ার সাথে সাথে তিনিও আলোকে রুমে যাওয়ার জন্য বলে।
আলো মুচকি হেসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে। রুমে চলে আসে।
সাহাব রুমে নেই। আলো ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। এখন বেলা এগারোটা মতো বাজে।এখনো সূর্যের দেখা নেই। চারদিকে কুয়াশা আচ্ছন্ন।
আলো গায়ে থাকা চাদর টা আরও একটু শক্ত করে পেঁচিয়ে নেওয়ার জন্য এটা দু দিকে ছড়িয়ে নিলো।কিন্তু সেটা আর পেঁচানো হয় না।
ঠান্ডা দুটি হাত পেছন থেকে চাদর সহ আগলে নিলো আলো কে।
আলো কেঁপে উঠল।
চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারলো।এটা তার ব্যক্তিগত পুরুষ টা।
তাই মুচকি হেসে নিজেও ঘাড় হেলিয়ে দেয় স্বামীর শক্ত চওড়া বুকে।
ততক্ষণে সাহাবের হাত শরীরে থাকা শাড়ী ভেদ করে নিজের দানবীয় হাতের বিচরণ চালায় বউয়ের উন্মুক্ত পেটে।
আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে বুকের সাথে।

-“বেরুতে হবে।
কখন ফিরবো জানি না।”

কথা টা লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে বলে সাহাব।
অতঃপর বউকে পাশের দোলনা সাথে চেপে ধরে নিজের ওষ্ঠে বউয়ের ওষ্ঠ এক করে দেয়।
লম্বা গাঢ় একটা চুম্বন করে বউকে ওষ্ঠ।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে
ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নেয় দুজনে।
সাহাব শান্ত হয়ে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে

-“ভালোবাসি বউ।
রাতে ফিরে আসবো।
অপেক্ষা করবে?”

-“করবো।”

আলো ফটাফট উত্তর দেয়।বাসর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল এতে আলো খারাপ লেগেছিল। আর আজ বিয়ের এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে এলো।রোজ রাতে আলো সাহাবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে তাই আজ সাহাবকে আগে আগে জানিয়ে দিল।
সাহাব বউয়ের এমন উত্তর পেয়ে হাসে। খুব কমই এমন হাসি হাসে এই ব্যক্তি।সব সময় তো সয়তানি হাসি নয়তো ঠোঁট কামড়ে এমন সুন্দর আর প্রশান্তিময় হাসি আলো সাহাবের মুখে কমই দেখেছে।
দুই জনেই দুজনের ভাবনায় বিভোর। আর ঠিক তক্ষুনি আরিফ রুমের দরজায় নক করে।সাহাবকে যেতে হবে।তাদের যে অনেক বড় একটা কাজ আছে আজ রাতে।
সাহাব আরও একবার বউয়ের ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয়। তার পর কপালে চুমু খেয়ে সাবধানে থাকতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
পেছন পেছন আলোও নিচে নেমে আসে।সেলিম তালুকদারও লিভিং রুমে বসে।
ছেলে কে দেখে উঠে এসে ছেলের কাঁধে চাপর মেরে বলে উঠে

-“সাবধানে আর আমি সব রকম ব্যবস্থা করে রাখবো।”

সাহাব মুচকি হাসে মায়ের কাছে বলে সাফারাত, আরিফ কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।

—————

রাত বারোটা একচল্লিশ বাজে।আলো বসে একটা উপন্যাস পড়ছে। একটু আগে এসছে শারমিন তালুকদারের রুম থেকে। সন্ধ্যায় যখন লিভিং রুমে বসে নাস্তা করছিল সবাই আর ঠিক তক্ষুনি একটা কল আসে আর তিনি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
আলোর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে ভালো লাগছে না কিছু।
আলো বই টা পাশে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
একটা রঙ চা খাওয়া দরকার। নয়তো রোজকার নেয় আজও আবারও ঘুমিয়ে পড়তে পারে।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে নিচে এসে রান্না ঘরে চলে আসে।
তার পর চা করে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে আসতেই বাড়ির কলিং বেল টা সশব্দে বেজে উঠে।
কেউ অনবরত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে।
আলোর ভ্রু কুঁচকে আসে। চায়ের কাপ টা সেন্টার টেবিলে রেখে দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে।
সাফারাত দাঁড়িয়ে আছে কোলে একটা মেয়ে। মেয়ে টাকে আলো চিনে।
সাহাবদের এতিম খানার।মেয়েটা সাফারাত এর কোলে থেকে কি সব আবলতাবল বকে যাচ্ছে। আলো অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাহাব সাফারাত এর পেছন থেকে আলো কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“আগে ভিতরে যেতে দেও।
পরে সব বলছি।”

আলো সরে দাঁড়ায়। ততক্ষণে বাড়ির কাজের লোক আর শারমিন তালুকদারও লিভিং রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে।
সাফারাত মেয়ে টাকে সোফায় সুয়ে দিয়ে আলোকে পাশে বসতে ইশারা করে। আলো চট করে মেয়ে টাকে আগলে নিয়ে বসে।
সাহাব ততক্ষণে একজন মেইড কে লেবুর পানি আনতে বলে।
সেলিম তালুকদার স্ত্রীর সাথে কিছু বলছে।
যা শুনে শারমিন তালুকদার কিছু বুঝতে পারছে। এখানে অবস্থানরত আরেক জন মেইড কে গেস্ট রুম টা খোলে দিতে বলে।
মিনিট তিন এর মাথায় মেইড লেবু পানি গ্লাস হাতে এগিয়ে আসে আর সেটা আলোর কাছে দেয়।তখনও মেয়েটা কি সব বিরবির করেই যাচ্ছে।
আলো অনেক কষ্টে শারমিন তালুকদারের সাহায্যে মেয়ে টাকে পানি টা খাওয়াতে সক্ষম হয়।
এর একটু পর মেয়েটা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে।
আর মেইড কে বলে মেয়ে টাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় তাদের সাহায্যে।
ততক্ষণে সাহাব রুমে চলে গিয়েছে ফ্রেশ হতে।
সাফারাতও চলে যায়। শারমিন তালুকদার আলো কে সাহাবের জন্য খাবার দিয়ে আলো কে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
আলোও আস্তে আস্তে রুমে চলে আসে।
পানির শব্দ হচ্ছে ওয়াশ রুম থেকে। আলো রুমে এসে খাবার টা সেন্টার টেবিলে রেখে দরজা টা লক করে। আলমারি খোলে সাহাবের রাতের পোষাক নামিয়ে রাখে সোফায়।অতঃপর বিছানা পা উঠিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে।
সাহাব মিনিট দশের মাথায় বেড়িয়ে আসে।পড়নে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে।
সোফায় তোয়ালে রেখে আলোর দিকে একবার তাকায়।
সোফায় রাখা রাতের পোষাক পড়ে নেয় সোফা হতে।
আলো বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে খাবার থালা হাতে নিয়ে সাহাবে খাইয়ে দেয়।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৪

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

ফুল দিয়ে সাজানো সাহাবের রুমের বিছানার মাঝখানে হালকা মিষ্টি কালার একটা শাড়ী পড়ে বসে আছে আলো।
সাথে অস্থিরতা আর লজ্জা দুই টা মিলে কেমন একটা লাগছে।
সাথে আছে কতরকম চিন্তা।
রাত এখন বারো টার কোঠায় পৌঁছায় নি।সাহাব এখনো আসে নি।শারমিন তালুকদার আলো কে রাত সাড়ে দশ টার দিকে এখানে রেখে গিয়েছে। সাহাব সেই সন্ধ্যা বেরিয়েছে খাবার টেবিলেও ছিল না।এটা নতুন নয় তবুও আজ তো ওদের বিয়ের প্রথম রাত এক সাথে খাবার তো অন্তত খাওয়া যেতো।
আর বাড়ি আসা আজ দেরী নয় সব সময়ই বারো টা একটা কোনো দিন তো রাত তিন টায়ও আসে।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাহাব রুমে এসে দেখলো তার বউ ঘুমিয়ে আছে। বিয়ের সাজ ছেড়েছে অনেক আগেই। সে বিকেলে দেখেছিল একবার।
আলো বাঁকা হয়ে শুয়ে আছে।সাহাব রুমেই ড্রেস চেঞ্জ করে। একটা থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট পড়ে তার উপরে নাইটি পড়ে নেয়।
রাত তখন দেড়টা ছুঁই ছুঁই করছে।
লাইট সব অফ করা সন্ধ্যায় জ্বালানো মোমবাতি গুলো এখনো আছে। তবে আর বেশি হলে মিনিট পাঁচ এক এর মতো সময় জ্বলবে তার পর শেষ হয়ে যাবে।
সাহাব সে সব লক্ষ করে রুমে ড্রিম লাইট অন করে দেয়।
বিছানায় গিয়ে বউ কে সোজা করে শুয়ে দিতে গিয়ে আলোর তন্দ্রা ছুটে।
ধড়ফড়িয়ে কম্বল সমেত উঠে বসে ডান পাশে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে।
আবারও সাহাব কে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।
সাহাব দুষ্ট হাসে।বউ যেহেতু ঘুমে নাই বাসর তো করাই যায়।
সাহাব আস্তে করে আলোর চুল গুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় সেখানে।
কম্বলের নিচ দিয়ে নিজের শক্ত দানবীয় হাত টা আলোর পেটের উপর রাখে।
আলো তৎক্ষনাৎ সাহাবের হাত সরিয়ে উঠে বসে।
চোখে জলে টলমল করছে। সাহাব হকচকিয়ে উঠে। অস্থির হয়ে আলো কে আগলে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে কান্না কেন করছো?”

আলো কিছু বলে না ফোপাঁতে থাকে। সাহাব আলো কে বুকের উপর থেকে আলগা করে আলগোছে গালে হাত রাখে।
নিজের ঠোঁট দ্বারা আলোর চোখ হতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু শুষে নেয়।
আলো সাহাবের স্পর্শে কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে সাহাবের পরিহিত কাপড়ের উপর দিয়ে শক্ত করে খামচে ধরে পিঠ।
সাহাব সেভাবেই ধরে রাখে বউ কে।
এভাবে কাটে অনেকক্ষণ। দুই জনেই চুপ চাপ।অতঃপর হঠাৎ আলো বলে উঠে

-“আপনি বলে ছিলেন সব ছেড়ে দেবেন।”

সাহাব কিছু বলে না সেভাবে আগের নেয় বউকে বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।

-“সময় লাগবে।
আস্তে আস্তে চলে আসবো।”

-“সত্যি? ”

-“হুম।”

-“ঘুমিয়ে পড়ুন।”

আলোর কথা শুনে সাহাব চোখ বড় বড় করে তাকায় আলোর দিকে।
তার পর আলোর ঘাড়ে নিজের বাম হাত টা রেখে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে

-“বাসর করবো না?”

আলো লজ্জা পাচ্ছে। যা এই হালকা ড্রিম লাইট এর আলোর মাঝেও চোখে পরে সাহাবের।
আলো আলগোছে সাহাবের হাত টা নিজের ঘাড় থেকে নামাতে চেষ্টা করতে করতে মিনমিন করে বলে উঠে

-“ওয়াশ রুম যাব।”

সাহাব মাথা নেড়ে সরে বসে। আলো উঠে ওয়াশরুম চলে যায়।
সাহাব সুয়ে পড়ে।মিনিট পাঁচ এক এর মাথায় আলো বেরিয়ে আসে।
সাহাবের পাশে বালিশে শুয়ে পড়ে।কিন্তু সাহাব ওকে টেনে এনে নিজের বুকের উপর রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে

-“একদম নড়াচড়া করবে না।
বাসর তো করতে দিবে না
শান্তিতে একটু ঘুমুতে চাই।”

আলো আর নড়ে না।কিন্তু ওর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। আলোর মাথা টা সাহাবের বুকে থাকার ফলে আলো সাহাবের হার্টবিট খুব গভীর ভাবে অনুভব করতে পারছে।
আলোও কান টা সাহাবের বুকে রেখে হার্টবিট শুনতে শুনতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
সাহাব চোখ জোড়া বন্ধ করে ছিল এতোক্ষণ। কিন্তু ঘুমায় নি।
আলোর ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দে সাহাব চোখ মেলে তাকায়।
আর আলোর মাথাটা প্রথমে নজরে পড়ে।
সাহাব আলোর মাথার তালুতে চুমু আঁকে।
আর বিরবির করে বলে উঠে

-“তুমি আমার মানসিক শান্তি।
তুমি আমার শখের। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।
কিন্তু তোমাকে দেওয়া কথা টা আমি রাখতে পারবো না জান।”

আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে। অতঃপর নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।
কিন্তু সাহাব হয়তো জানতোই না আলো ঘুমায় নি সেও শুনছিল সাহাবের বলা প্রতি টা কথা।
আলো সাহাবের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে আবারও সাহাবের বুকে মাথা রেখে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

——————

সকালে আটটার বেশি সময় বাজে। আলো ঘুমিয়ে আছে আর সাহাব বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাতে সাহাব বউ কে জড়িয়ে ধরে থাকলেও এখন উল্টো। বউ তার এখন নিজ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
যার ফলে সাহাব এখন উঠতে পারছে না। যদি বউয়ের ঘুম ছুটে যায়?তাই নিজেও নড়াচড়া করছে না।
এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ সময় কেটে যায়।কিন্তু সাহাব তার বউয়ের দিকে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। কিন্তু মেইড এর জন্য সেটাও আর হলো না নিচে নাস্তা করতে যাওয়ার ডাক পরেছে। সাহাব আলো কে আস্তে করে নিজের শরীরের উপর থেকে সরিয়ে হাতের বাঁধন গুলো খুলে বালিশে সুয়ে দিয়ে নিজে উঠে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।মিনিট দশের মধ্যে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে সাহাব আলো ততক্ষণে উঠে বসে বিছানার মধ্যে।
চোখ গুলো ফোলা রাতে কান্না করেছে কি না।চুল এলোমেলো সাথে শরীরে কাপড় ঠিক নেই।সাহাব সে দিকে তাকিয়ে যেনো নেশা ধরে এলো। শুধু আলোর মাঝে দৃষ্টি আটকে আছে।আলো সাহাবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়,,,

কিন্তু কথা শেষ করার আগেই একবার নিজের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে সব টা কথা সম্পূর্ণ না করে শাড়ী টেনেটুনে ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু সাহাব পাশের সোফায় তোয়ালে ছুড়ে ফেলে এগিয়ে আসে ঘুম থেকে উঠা সদ্য বউয়ের নিকটে। হাঁটু মুড়ে বিছানায় বসে বউয়ের সামনে আলো ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে সাহাবের মতলব। তাই ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করে।
কিন্তু সাহাব তা হতে দিলে তো। স্বামীর এমন শক্ত পোক্ত শরীর থেকেও যদি বউ এই রোমান্টিক সময় পালিয়ে যায়।
তবে লোকচক্ষু মুখ দেখানো দায় হবে যে।আর সে টা কিন্তু এই সামনে বসা সুদর্শন পুরুষ হতে দেবে?উঁহু। সাহাব আলো কে এক ঝটকায় নিজের কোলে এনে বসালো।
কাঁধ হতে শাড়ীর আঁচল সরিয়ে চুমু আঁকে সেখানে। আলো কেঁপে উঠে শক্ত করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
চোখ বন্ধ করেই কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নেড়ে বলে উঠে

-“ফ্রেশ হবো।”

-“দরকার নেই।”
করছিলাম না কন্টোল?
তুমি তো সব টা আবার এলোমেলো করে দিলে।এখন সহ্য করতে হবে।”

নেশাতুর কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাহাব আলোর মাথা টা ঘুরিয়ে নিজের অধর জোড়া দিয়ে আলোর অধর চেপে ধরে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে।সাথে নিজের হাত জোড়া তো অবাধ্য স্পর্শ করেই যাচ্ছে আলোর সারা শরীরে।

বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাহাব আলোর ঠোঁটের উপর রাজত্ব চালিয়ে ছেড়ে দিয়ে দু গালে হাত রেখে বলে উঠে

-“আমি আর ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না জান।
তোমাকে আমার সম্পূর্ণ চাই।
একদম নিজের করে নিজের অস্তিত্ব বানাতে।”

আলো পিটপিট করে তাকিয়ে সাহাবের দিকে।
যা দেখে সাহাব ঠোঁট এলিয়ে হাসে। আলোর এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে আবারও আবদার কণ্ঠে বলে উঠে

-“জান ভালোবাসি।”

স্বামীর এমন আবেদন কি স্ত্রী হয়ে ফিরে দিতে পারে কোনো নারী? আলোও পারে না।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের ইচ্ছে জানান দেয়।
সাহাবও নিজের উত্তর পেয়ে বউ কে নিয়ে নিজের ভালোবাসার রাজ্যে পাড়ি জমায়।

#চলবে…

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০৩

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনি তখন কি বলতে চাইছিলেন, আরিফ ভাই?
যদি সত্যি আমাকে বোন মনে করেন তবে আশা
করি সত্যি টা বলবেন। ”

আরিফ ওর নিজের বউয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে।
কিন্তু পেছনে থেকে আলোর কণ্ঠে শুনে ফোন কেটে পেন্ট এর পকেটে রেখে দিয়ে পেছন ফিরে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে

-“বলুন কি জানতে চান।”

-“আপনি তখন কি বলতে চাইছিলেন?
আপনার স্যার যারা ড্রাগস বিক্রি করে তার কি?
বলুন না প্লিজ?”

আলো বেশ উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে।
আরিফ চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
তার পর আস্তে আস্তে করে বলতে শুরু করে

-“স্যার’র আজ অনেক বছর ধরে এই কাজ টা করে আসছে।যারা ড্রাগস আর নারী প্রচার করা তাদের কাজে সফল হতে দেয় না। স্যার মাফিয়া কিন্তু শুধু খারাপ মানুষের কাছে।
এটুকুই জেনে রাখুন ম্যাম।”

কথা গুলো শেষ করে আলো কে কিছু বলতে না দিয়ে আরিফ হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো।
আলো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
না জেনে শুনে কি করে বসলে ও।আচ্ছা সাহাব ভাই কি এতো বড় ভুল করার পরেও বিয়ে করবে ওকে?
আলো যখন ভাবনায় বিভোর ঠিক তক্ষুনি সাহাব পেছনে থেকে বলে উঠে

-“এতো রাতে এখানে কি করছো একা একা?”

সাহাবের কথা আলো সম্মতি ফিরে পায়।আর চার দিকে চোখ বোলায়।
তার পর সাহাবের দিকে ফিরে বলে উঠে

-“কই কিছু না।
দাদুন কে কাল সকালে রিলিজ দিবে?”

-“হুম।
ডক্টর এর সঙ্গে কথা বলে এসছি।
মা বলেছে তোমাকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য। ”

আলো আর কথা বাড়ায় না সাহাবের সাথে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে।
রাত দেড় টা বাজে।
মানুষ জন একদম নেই বললেই চলে। শুধু হসপিটালের আশে পাশে দুই তিন টা ঔষধ ফার্মেসি খোলা।
আর বড় বড় গাড়ি গুলো শাঁই শাঁই করে আওয়াজ তুলে আবারও চলে যাচ্ছে।
বাহিরে ঠান্ডা টা একটু বেশি লাগছে আলোর মনে হচ্ছে হসপিটালের ভিতর একটু কম ছিল।
আলো ফ্রন্ট সিটে বসে আছে দুই বাহুতে দু হাত ঠেকিয়ে।
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে আর বেশি সময় লাগবে না হয়তো আধঘন্টা।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে নিজের হাত দুটি ওড়না টা আরও একটু টেনেটুনে গায়ে জড়ালো।কিন্তু হায় আফসোস এই পাতলা ওড়না কি আর এই জানুয়ারি মাসের কনকনে শীত দমন করার মতো পোশাক। তবুও চুপচাপ বসে আছে।
সাহাব দেখছে আঁড়চোখে একটু পর পর প্রেয়সী কে দেখছে।
কিন্তু ওর বেশ মজাই লাগছে কেন জানি।
কিন্তু আলোর মলিন হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে আর ভালো লাগে না।
কিছু ভেবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেয়।
নিজের শরীর থেকে ব্লেজার টা খোলে আলোর গায়ে সামনে থেকে জড়িয়ে দেয়।
আলো হতভম্ব একটু নড়েচড়ে বসে আঁড়চোখে তাকালো সাহাবের দিকে।
বুকের বেশ অনেক টা জায়গায় উন্মুক্ত। সার্ট এর বোতাম বেশ কয় টা খোলা যার ফলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুক টা বেশ মোহনীয় লাগছে।
আলো সে দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে।
যা দেখে সাহাব ঠোঁট টিপে হাসে।
সাহাব মুখে হাসি রেখে আবারও গাড়ি স্টাট করে।

-“আপনার ঠান্ডা লাগবে।”

মিনমিন করে বলে উঠে আলো।

-“না।”

-“কেন?
বাহিরে অনেক ঠান্ডা? ”

-“তুমি আমার আশে পাশে থাকলে আমার এসিতেও গরম লাগে।
সেখানে এই শীত নিছক তুচ্ছ।”

আলোর প্রশ্নে সাহাবের এমন জবাবে আলো শরীর শীর দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
চোখ ঘুরিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো।
লজ্জা পেয়েছে কি না। আর কোনো কথা বলে না পুরো রাস্তা আলো।
সাহাব বলে নি।
গাড়ি এসে তালুকদার বাড়ির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার পর পরই সাহাব গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে আলো নামে।
সাহাব দারোয়ান কে চাবি দিয়ে গাড়ি গ্যারেজ এ রাখতে বলে আলো কে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো।

-“বিয়ে হয় নি বলে বেঁচে গেলে।
নয়তো এই লজ্জা পাওয়া মুখ টা তোমার কাল হয়ে দাঁড়াতো। ”

সাহাব কথা গুলো বলে আগে আগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
আলোর বাক্য গুলোর মানে বুঝতে মিনিটখানেক সময় লাগে।
বুঝতে পেরে আবারও লজ্জা পায়।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে এই লজ্জা পাওয়ার জন্যই তো এসব শুনতে হলো।
আর এসব ভেবে নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো।
এই লোকের সামনেই কেন লজ্জা পেতে হবে।
কিন্তু লজ্জার কি দোষ এই অসভ্য লোকই তো এমন লজ্জা মার্কা কথা বলে।
তাই সব দোষ এই লোকের।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠতে উঠতে বিরবির করে বলে উঠে

-“নিজে যেমন অসভ্য।
কথা গুলো তেমন অসভ্য। ”

————–

-“বাবা বলো নি আজ আসবে?”

-“কাজ শেষ।
ভাবছিলাম ক’দিন পর ফিরবো।
কিন্তু তোমার দাদুন অসুস্থ তাই কাল সন্ধ্যায় ফ্লাইট এ আজ সকালে বাড়ি।”

সাহাবের প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেলিম তালুকদার গিয়ে সোফায় মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে

-“মা এখন কেমন লাগছে?”

-“বিয়ে টা হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব।”

মুখ গুমোট ভাব নিয়ে বলে উঠে সামলা তালুকদার।
মায়ের এমন কথায় সেলিম তালুকদার আর সাফারাত সহ উপস্থিত সবাই হেসে দিল।
সাহাব নির্বিকার।
আলো শারমিন তালুকদার পেছনে দাঁড়িয়ে লজ্জায় রংধনু হচ্ছে।

-“আলো এদিকে এসো।
বসো বাবাই’র পাশে।”

সেলিম তালুকদার ডাকে আলো লজ্জা ভুলে শারমিন তালুকদার পেছনে হতে পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে বসে।
আলোর ঠিক বরাবর অপর পাশের সোফায় সাহাব বসে আর তার পাশে সাফারাত।

-“দেখো তোমাকে না বলে হয়তো আমাদের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে।
দ্বিতীয় বার আমরা কেউ আর সে টা করতে চাই না।এখন তুমি যা বলবে তাই হবে।
আমি তোমার কাছে এখনি উত্তর চাচ্ছি না।তুমি ভাবো সময় ন,,,,

-“সময়ের দরকার নেই বাবাই।
তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।আর আমি জানি আমি ভুল করেছি।
হয়তো তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।আর তোমরা সেটার জন্য কেউ আর প্লিজ কষ্ট পেয়েও না। ”

কথা গুলো বলেই আলো আর এক সেকেন্ডও বসে না দৌড়ে উপরে চলে যায়।
সেলিম তালুকদারও সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে ফ্রেশ হতে যায়।
সাফারাত ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।

শারমিন তালুকদার শাশুড়ী কে নিয়ে ওনাকে রুমে দিয়ে আসতে যায়।
সাহাবও খাবার টেবিলে থাকা ঝুরি থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে উপর চলে এলো।
আলো কম্বল গায়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে আছে একটা
উপন্যাসের বই হাতে। দরজা খোল শব্দে সে দিকে তাকিয়ে দেখলো সাহাব দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাতে আধখাওয়া আপেল।
আলো সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে সাহাব কে জিজ্ঞেস করে উঠে

-“কিছু বলবেন?”

সাহাবের কোনোদিন হেলদুল নেই। আলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যা দেখে আলোর ভ্রু কুঁচকে আসে।
বই পাশে রেখে বিছানা থেকে নেমে সাহাবের সন্নিকটে আসে।

-“সাহাব ভাইইয়া?”

আলো জোরে ডাকে সাহাব ধড়ফড়িয়ে উঠে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
যা দেখে আলো জোরে জোরে হাসতে থাকে।
সাহাব কান হতে হাত সরিয়ে নেয়।
হাতে থাকা আধখাওয়া আপেল গুঁজে দেয় আলোর মুখে।
তার পর নিজেও চোখ টিপে দিয়ে বলে উঠে

-“এটা শেষ করে রেডি হয়ে এসো।
আর তুমি চাইলে এভাবে আসতে পার।
আমার কোনো প্রবলেম নেই।”

বলেই আবারও চোখ টিপ দিয়ে রুম ত্যাগ করে।
আর আলো সে দিক এখনো চোখ বড় বড় তাকিয়ে মুখ থেকে আপেল টা বের করে নিজের শরীরে দৃষ্টি বুলিয়ে নিজেই লজ্জায় পরে যায়।
এই শীতের মৌসুমে আলোর কান
গরম হয়ে আসে।
এক হাতে কান চেপে ধরে বিরবির করে বলে উঠে

-“অসভ্য পুরুষ।”

#চলবে……

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০২

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

-“মাফিয়া আমি?”

আলো ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় এসছে।সন্ধ্যায় এসছে আর এখন রাত দশ টার বেশি সময় বাজে।
এ-র মধ্যে সাহাব খুঁজ নিয়ে এখানেও এসে পরেছে। আলো আজ রাত টা এখানে কাটিয়ে কাল চট্টগ্রাম চলে যেতো এখন যার বাসায় এসছে ওর বোনের বাসায়। সেখানে ভার্সিটিতে এডমিশন নিতো আর দু একটা টিউশন করিয়ে একা একা জীবন কাটাবে বলে ঠিক করেছি
কিন্তু সে টা মনে হয় আর হচ্ছে না।
আলো এসব ভাবতে ভাবছিল। কিন্তু সাহাব আবারও ধমকের সুরে বলে উঠে

-“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?”

সাহাবের ধমকে আলো হালকা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। অতঃপরও মাথা টা তুলে একবার
চোরা চোখে তাকায় সাহাবের দিকে। আবারও মাথা নুইয়ে আমতা আমতা করে প্রশ্নের জবাব দেয় আলো

-“হ,,,,

-“না ম্যাম স্যার তো যারা ড্রাগস বিক্রি করে তাদের,,,,

কিন্তু আরফি আলোর উত্তর না শুনে নিজে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু সাহাব তার আগেই ধমক দিয়ে উঠে

-“আরিফফ।”

ব্যাস আরিফ আর কিছু বলতে পারে না। সাহাবের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে নেয়।
সাহাব আরিফ কে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে বলে উঠে

-“বাহিরে যাও।”

আরিফ মাথা হেলিয়ে জানায়

-“আচ্ছা স্যার। ”

তার পর আরিফ রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো।
সাহাব এবার আরও একটু এগিয়ে গেলো আলোর দিকে।
আলো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় সে টা ওর নজরে আসে না।

-“ছেড়ে দেবো সব।
তবুও পালিয়ে যাবে?”

আলো মাথা নিচু করে ছিল কিন্তু সাহাবের কথায় মাথা উঁচু করে বিস্ফোরিত নয়নে চাইলো সাহবের দিকে। কি করুন কণ্ঠ। এই লোক টা কি বলছে এসব?
সত্যি ভালো হয়ে যাবে?
কিন্তু তার আগে প্রশ্ন হলো আরিফ ভাই তখন কি বলতে চাচ্ছিল?
আলো কে এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাহাব আবারও বলে উঠে

-“সত্যি বলছি।
দাদুন অসুস্থ। প্লিজ রাজি হয়ে যাও।”

তার পর একটু থেমে আবারও বলতে লাগলো


“আমরা দু ভাই, দাদু ভাই, দাদুন, মা, বাবা সুন্দর একটা সুখী পরিবার। দাদুনের আর মায়ের আশা ছিল সাফারাত মেয়ে হবে।কিন্তু তাদের আশায় জল ঢেলে সাফারাত এলো।তবে সে টা নিয়ে কখনো কেউ মন খারাপ করতো না। তবে তাদের শাশুড়ী বউয়ের একটা মেয়ের শখ রয়ে যায়। এরমধ্যে দাদু ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমরা সবাই তখন শোকে ছিলাম।
এভাবে চলছিল দিন।আমি তখন নাইনে পড়ি। ।সাফারাত চতুর্থ শ্রেণী। এক দিন অফিস থেকে আসার সময় বাবা তোমাকে নিয়ে এলো।তখন তোমার সাত বছর বয়স।বাবা বলেছিল তোমার বাবা রাজনীতি করতো।আর কোনো এক জনসভায় গোলাগুলির কারণে অনেক লোক মারা গেলো তাদের মধ্যে তোমার বাবাও ছিল। আর সেই শোক সহ্য করতে না পেরে তোমার মাও মারা যায়।আর তোমার মা আমাদের অফিসে কাজ করতো বিধায় বাবা তখন তোমাদের বাসায় যায়।কিন্তু তোমাদের কোনো কাছের মানুষ ছিল না তখন। কারণ তোমার মা বাবা পালিয়ে বিয়ে করেছিল তাই তাদের না-কি কারোর পরিবার থেকে কেউ মেনে নেয় নি।
বাবা সে দিন পাড়া প্রতিবেশী থেকে এসব শুনে বুঝতে পেরেছিল তোমার এ শহরে আপন বলতে কেউ নেই যার কাছে তোমায় রেখে আসবে তাই তিনি তোমায় সাথে করে আমাদের বাড়ি নিয়ে এলো।মা আর দাদি সে কি খুশি হয়ছিল। তুমি আসাতে যেনো দাদু ভাইয়ের শোক টা কাটিয়ে দাদুন আর মা কিছু টা স্বাভাবিক হলো। তোমায় দু জনে খুব যত্ন করতো ভালোবাসতো।আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করেছিল কি না, তাই। এসব দেখে আমার হিংসে হতো।কারণ মা সাফারাত আর আমাকে যেনো কম ভালোবাসতে এমন মনে হতো আমার।কিন্তু আসলে তেমন টা না। আমাদের আগে যেমন ভালোবাসতো তেমনি ছিল কিন্তু তোমায় বেশি ভালোবাতো বলে আমাদের এমন মনে হতো। আমি দাদুন কে এক দিন রাগ করে বলেছিলাম যাতে তোমায় এতিম খানায় রেখে আসে।
সে দিন দাদুন হেসে বলেছিল তুমি বড় হলে না-কি তোমাকে আমার বউ বানাবে তাই যাতে আর হিংসা করতে না পারি।”

সাহাব কথা টা শেষ করে সেন্টার টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি টা এক নিশ্বাসে শেষ করে। আলো মন দিয়ে সাহাবের প্রতি টা কথা শুছে।চোখে থেকে জল গড়িয়ে পরেছিল বোধহয় তাই গালে দাগ বসেছে।কিন্তু সাহাবের লাস্ট কথা গুলো শুনে কেমন ভ্রু কুঁচকে আছে।সাহাব গ্লাস টা আবার যথাস্থানে রেখে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে আবারও বলতে লাগলো

-“তার পর থেকে অদ্ভুত এক কারণে তোমাকে আমারও আর হিংসা হতো না সব সময় কেমন কেমন একটা ফিলিংস হতো।
এভাবে দিন পেরিয়ে মাস। মাস শেষ বছর। এভাবে সময় কাটতে লাগলো।
আমি সাফারাত তোমাকে ভালোবাসতে লাগলাম। কিন্তু সাফারাত বোন হিসেবে ভালোবাসলেও আমি সে টা পারি নি।
স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে কম মেয়ে ঘুরে নি আমার পেছনে। সব গুলো বড় লোক বাবার সুন্দরী মেয়ে ছিল। কিন্তু আমার কেন জানি একটাকেও ভালো লাগতো না।সব সময় তোমার কথা ভাবতাম।
কিন্তু তুমি তো আমার অনেক ছোট। আর সবাই আমাদের ভাই বোন জানে।যদি কেউ বুঝতে পারে আমি ভাই হয়ে। যদিও আপন নয় তবুও কখনো কারোর সাথে শেয়ার করি নি।মনের ভিতর চেপে রেখে দিয়েছিলাম। নিজের মনের অনুভূতি গুলো,ভালোবাসা। দেখতে দেখতে আমার পড়া লেখা শেষ বাবার সাথে নিজেদের ব্যবসা যোগ দিলাম।আর এভাবে কেটে গেলো কয়েক বছর তুমিও ইন্টার পরীক্ষা দিলে।
আর হঠাৎ দাদুন অসুস্থ হয়ে পরলো। আর সে দিন দাদুন বারো বছর আগের কথা টা আবারও বলে উঠলো। আর এটা ওনার শেষ ইচ্ছে বলে জানালো।
আমিও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সাথে কি পরিমাণ খুশি হয়েছি আমি নিজেও জানি না। বাবা আর মায়ের সাথে কথা হলো এ বিষয়ে। বাবা মা দু-জনে এক পায়ে রাজি।
কিন্তু বাবার অফিসিয়াল কাজে দেশের বাহিরে যেতে হবে তাই বিয়ের ডেট টা এক মাস পরে দেওয়া হলো।দাদুন কে বলেছিলাম তোমার সাথে এক বার কথা বলে নিতে এ ব্যাপারে কিন্তু দাদুন না করলো। তবুও আমি নিজে থেকে তোমার সাথে কথা বললাম কিন্তু তুমি রাজি না কারণ আমি মাফিয়া।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো তুমি এটা ভুল শুনছো।
তাই বিয়েতে রাজি হলে না। যদিও নিজেও আমাকে ভালোবাসো।আর বিয়ের কথা চলছে এটাও তুমি জানতে।
আর এখন সব টা তোমার উপর নির্ভর করছে তুমি কি চাও।
কিন্তু উত্তর টা যেনো পজিটিভ আসে।”

কথা গুলো শেষ করে সাহাব আলো কে নিয়ে ওর ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে আসে।
আরিফ বসে আছে ডাইভিং সিটে।
সাহাব আলো কে নিয়ে পেছনে উঠে বসতেই আরিফ গাড়ি স্টাট করে।

——

-“দাদুন?”

আলো কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকে সামলা কে।তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। কিন্তু আলোর কণ্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকায়।
খুব স্বাভাবিক ভাবে হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে আসতে বলে।
শারমিন তালুকদার বসে ছিল শাশুড়ীর হাত ধরে। তিনি উঠে দাঁড়াল। আলো এগিয়ে এলো।
ঝাপটে জড়িয়ে ধরে সামলা কে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে উঠলো

-“সরি দাদুন আমি বুঝতে পারি নি।
আ’ম সো সরি।”

সামলা তালুকদার আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠে

-“ইট’স ওকে দাদুন।”

আলো ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ওনার গালে একটা টুপ করে চুমে খেয়ে নিলো।এটা কেবিনের বাহির থেকে কেউ দেখে হিংসায় জ্বলে উঠলো।
আলো সামলা তালুকদার ছেড়ে সাহাবের মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো

-“সরি মামনি।
আমি তোমাদের সবাই কে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”

-“হুম।
আর তার বিনিময় আমরা তোমায় শাস্তি দেবো না।
কিন্তু একজন দিলে আমরা কিছু করতে পারবো না।
তুই এটা কেন করেছি।জানি না আর জানতেও চাই না। কিন্তু ভবিষ্যতে আর এমন করিস না মা।”

শারমিন তালুকদার কথায় আলো ওনাকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় বলে উঠে

-“তোমায় ছুঁয়ে কথা দিলাম আর কখনো এমন করবো না আর তোমাদেরও কষ্ট পেতে দেবো না।
শুধু তোমরা দোয়া করো।”

#চলবে….

রেখেছি তারে বক্ষ পিঞ্জিরায় পর্ব-০১

0

#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“ভালোবাসি না আমি আপনাকে কেন আমার পেছনে পরে আছেন?
আপনার পেছনে তো অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ঘুরে ওদের থেকে কাউ কে করে নিন না বিয়ে।
আমাকে ছেড়ে দিন দয়া করে প্লিজ।”

সামনের চেয়ারে বসা সুদর্শন ব্যক্তিটার কোনো ভাবান্তর হলো না উপরোক্ত কথা গুলো শুনে।
খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজের বন্দুকটা টেবিল থেকে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে গুঁজে উঠে এগিয়ে আসে সামনে দাঁড়ানো রমণী টার একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত চোখ তাকিয়ে খুব ধীরে কণ্ঠে বলে উঠলো

-“কিন্তু জান?
তোমার এই চোখ যে অন্য কথা বলছে।”

সাহাবের এমন কথায় আলো চোরা চোখে একবার আঁড়চোখে সাহাবের দিকে তাকিয়ে আবারও সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে
নিজের মুখের উপর এসে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো বাম হাতের সাহায্যে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“দেখুন সাহাব ভা,,,,

-“জান এখনে দেখা দেখির কথা বলছো?
বিয়ের আগে এটা মোটেও ঠিক নয়।
আর তো কিছুক্ষণ মাত্র কষ্ট করে অপেক্ষা করো।
তার পর না হয় সারা দিন রাত দে,,,

-“প্লিজ চুপ করুন আপনি।
অসভ্য কথা গুলো বলা।
লজ্জা করে না আপনার ছোট বোন কে এসব বলতে? ”

-“আপন বোন না।
তাছাড়া একটু পর আমাদের বিয়ে বেবি।
রেডি থাকো।”

-“শুনতে পান না আপনি?
করবো না আপনাকে বি,,,,

-“তুই কি চাস বিয়ের আগে বাসর করি আমি?”

আলো কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বাকা হেসে বলে উঠে সাহাব।
আলো বিস্ময় চোখে তাকায় সাহাবের দিকে। এই লোক টা খারাপ আলো জানে। কিন্তু চরিত্রহীন এটা শুনে নি।
আলো সে সব চিন্তা বাদ দিয়ে সাহাব কে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে

-“মানে?”

-“মানে তুমি চাইলে বিয়ে পরে হবে।
কিন্তু বাসর টা না হয় আজ ক,,

-“চুপ করুন আপনি দয়া করে। ”

-“তুমি তো জিজ্ঞেস করলে।”

-“ভুল হয়েছে।
এখন আপনি আসতে পারেন।”

-“সন্ধ্যায় পার্লার থেকে মেয়ে আসবে।
চুপচাপ রেডি হয়ে নিচে চলে এসো।”

সাহাব কথা শেষ রুম থেকে নিজের গম্ভীর মুখ করে বেরিয়ে যায়।

আর আলো ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
মাথায় চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো

-“মাফিয়া আপনি।
করবো না আমি আপনাকে বিয়ে।
দরকার পড়লে এই বাড়ি ঘর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাব।
আমার বাবা এমন ছিল বলেই আমি আমার পরিবার হারিয়েছি।কিন্তু আর কিছু হারাতে চাই না।
এতে যদি আমি স্বার্থপর হয়ে যাই তবে তাই হবো।
ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন টা নয়।
আমি আপনাকে দূর থেকে সব সময় ভালোবেসে যাব।
কিছু কিছু ভালোবাসা দূর থেকে সুন্দর। কাছে এলে তা ফিকে পড়ে।”

এসব ভাবতে ভাবতে আলো ঘুমিয়ে পড়ে।

—————

-“ভাইয়া তুমি কি সত্যি ঠিক করে নিয়েছো?
আজকেই বিয়ে করবে?”

সাফারাত আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে সাহাব কে।
সাহাব সাফারাতের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ছোট ভাইয়ের দিকে।
অতঃপর নিজেও ত্যারা ভাবে বলে উঠে

-“তো তোর কি মনে হয়?
মজা করছি?”

-“এমা ছিঃছিঃ।
তা কেন মনে হবে।
আসলে বাবা তো দেশে নেই আর দাদু’নের তো শরীর ভালো না তাই বলছিলাম,,,

-“তোকে এসব ভাবতে হবে না আমি বাবা আর দাদু’নের সাথে কথা বলে নিয়েছি।
আচ্ছা,মা কোথায়?”

সাফারাত দাঁত দ্বারা জিহ্বা কেটে বলে উঠে।
কিন্তু সাহাব সব টা শুনে না।
উল্টো নিজে গম্ভীর মুখে বলে উঠে।

-“মনে হয় রান্না ঘরে।
ওয়েট ডাকছি।”

সাফারাত কথা টা শেষ করে গলা ছেড়ে মা কে ডাকতে লাগলো।
সাহাব কানে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো

-“ইস কেন যে ওকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম।
তার থেকে ভালো নিজে খুঁজে নিতাম।”

সাহাব বিরবির করার মাঝেই শারমিন তালুকদার রান্না ঘর থেকে এসে ছোট ছেলের কান টেনে ধরে বলে উঠে

-“তোমার দাদুন অসুস্থ।
সে টা ভুলে গিয়েছো?”

-“আহ, লাগছে মা।
ছাড়ো।”

কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে সাফারাত।
শারমিন তালুকদার ছোট ছেলের কান ছেড়ে দিলো।
বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

-“সব কাজ প্রায় শেষ।
তোমার এসিস্ট্যান্ট আরিফ বলেছে।
কাজি সে সন্ধ্যায় নিয়ে আসবে।”

-“হুম আমাকেও কল করিছিল বলেছে সব।”

অতঃপর তারা তিন জন টুকিটাকি কথা বলে।
সাহাবের একটা ফোন আসায় সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
আর যাওয়ার সময় বলে যায় সন্ধ্যার আগে চলে আসবে।
শারমিন তালুকদার নিজের শ্বাশুড়ি’র রুমে চলে যায়।
আর সাফারাত উপর আলো’র রুমে আসে।

———-

তালুকদার বাড়ি কিছু টা রমরমা পরিবেশ। পাড়া প্রতিবেশি সাথে অফিসের কিছু স্টাফ।
যদিও বিয়ে টা এক মাস পরে হবার কথা ছিল। সাহাবের বাবা সেলিম তালুকদার বিদেশ থেকে আসার পর হওয়ার কথা। তবে কোনো এক অজানা কারণে সাহাব আজ সকালেই তার বাবার সাথে কথা বলে আজ সব ঠিক করেছে।
এখন বিকেল চার টা বাজে।
সাহাব এখনো আসে নি বাড়িতে। সাফারাত ফোন দিয়েছে। সাহাব বলেছে।
আধঘন্টার মধ্যে সে পৌঁছে যাবে।
সাফারাত আর শারমিন তালুকদার সব আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করছে।
আর লিভিং রুমে সোফায় সামলা তালুকদার হাসি হাসি মুখ করে বসে সবার সাথে কথা বলছে। কে বলবে তাকে কাল হসপিটাল থেকে আনা হয়ছে?
এই তো তিনি এখন একদম সুস্থ আছে।
এ-সব ভাবতে ভাবতে শারমিন তালুকদার এগিয়ে এসে শ্বাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করলো তার শরীর খারাপ লাগছে কি না।
তিনি শারমিন তালুকদার’র দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
যার মানে “আমি অসুস্থ না।তোমরা আমাকে সুস্থ থাকলেও অসুস্থ বানিয়ে দেও। কেন?তোমাদের বুঝি আমি সুস্থ থাকলে ভালো লাগে না?”
শ্বাশুড়ির এমন চাহনি শারমিন তালুকদার হেঁসে দিলেন।
হালকা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে

-“এতো রাগ করতে নেই মা।
আমরা তো আপনার ভালোই চাই।”

সামলা তালুকদার নিজেও ছেলের বউ কে এক হাত মাথায় রেখে মুচকি হাসে। এক ছেলে তার আর কোনো সন্তান হয় নি।তবে সামলার খুব শখ ছিল একটা মেয়ের কিন্তু তার স্বামী কখনো সন্তান না হওয়া নিয়ে মন খারাপ করতেন না।কিন্তু ওনার হতো। কিন্তু ওনার স্বামী ওনাকে শান্তনা দিতেন।এভাবে দেখতে দেখতে ছেলে বড় হতে লাগলো।তার পর ছেলে এতিম একটা মেয়ে কে বিয়ে করলেন।ওনি বা ওনার স্বামী হাসি মুখে মেনে নিয়ে ছিল ওনাদের না বলে বিয়ে করার সম্পর্ক। আর শারমিন কে নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসতেন।আর এখনো বাসে।আর শারমিন তালুকদারও নিজের মায়ের অভাব টা সামলা তালুকদার কে দিয়ে মায়ের ভালোবাসার শূন্যস্থান টা পূরণ করে নিলেন। এ-সব ভাবতে ভাবতে সামলা তালুকদার মুচকি হাসে। কিন্তু হঠাৎ
মুখ গম্ভীর করে বলে উঠে

-“সব ঠিক ঠাক নিয়েছিস তো?
কোনো কিছু কমতি যেনো না থাকে। ”

-“মা ভরসা আছে?”

-“না থাকলে বুঝি এতো বড় দায়িত্ব দিয়ে আমি নিশ্চিন্তে বসে থাকতাম।”

-“আমি সব সকালেই ওকে দিয়ে এসছি।
এখন শুধু পার্লার এর মেয়ে আসা বাকি।”

শারমিন তালুকদার কথার মাঝেই দুই টা মেয়ে এলো।
সাফারাত নিয়ে এসছে মেয়ে গুলো কে।

-“মা তুমি ভাবির রুমে ওনাদের দিয়ে এসো।
ভাইয়া পাঠিয়েছে। ”

-“আচ্ছা।
আপনারা আমার সাথে আসুন।”

মেয়ে গুলো কে উদ্দেশ্য করে বলে।
শারমিন তালুকদার বুঝতে পারছে এরা পার্লার থেকে এসছে।
তাই তিনি তাদের নিয়ে উপর আলো’র রুমে দিকে পা বাড়াল।
ওনার পেছনে পেছন মেয়ে গুলো এলো।

কিন্তু আলো’র রুমে প্রবেশ করে শারমিন তালুকদার ভ্রু কুঁচকে আসে ওয়াশ রুমের দরজা খোলা। বারান্দায় দরজা টাও খোলা
রুমে কেউ নেই।
শারমিন তালুকদার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠে।
তিনি বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
এটা কি করে করতে পারলো আলো?
এটা করার আগে একবারও কি মেয়েটার বুক কাঁপলো না?
এতো টা স্বার্থপর কি করে হলো?

-“ম্যাম আমরা কি চলে যাব?”

দুই টা মেয়ের মধ্যে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করে।
মেয়ে টার প্রশ্নে শারমিন তালুকদার সম্মতি ফিরে পায়।
তিনি পেছন ফিরে হালকা হেসে বলে উঠে

-“হুম।
দরকার পড়লে আমরা আবার ডেকে নেবো।”

মেয়ে গুলো থমথমে মুখ করে চলে গেলো।
যাওয়ার সময় দু জনে কিছু কথা বলছিল যা শুনে বাড়ির প্রতি টা মানুষ অবাক হলো সাথে কিছু কিছু প্রতিবেশী মুখ টিপে হেসে টিটকারি করতেও পিছ পা হয় না।
এদিকে সামলা তালুকদার এসব শোনে কেমন করতে লাগলো।
সাফারাত ওনাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
শারমিন তালুকদার ততক্ষণে ডাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে।
আর ঠিক তক্ষুনি সাহাবের গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাহাবের এসিস্ট্যান্ট আরিফ ডাইভিং করছে।
আর সাহাব ফ্রন্ট সিটে বসে।
বাড়ির বাহিরে এতো মানুষ জন ভিড় দেখে সাহাব গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসতেই দেখা মিলে সাফারাত সামলা তালুকদার কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আর ডাইভার গাড়ি বের করছে।
যা দেখে সাহাবের বুঝতে বাকি থাকে না দাদুন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

আর আশে পাশে থেকে আসা কিছু কথা শুনে বুঝতে বাকি থাকে না দাদুন এর অসুস্থ হওয়ার কারণ।
দাদুন কে গাড়িতে তুলে দিয়ে সাফারাত আর শারমিন তালুকদার কে সাথে পাঠিয়ে দেয়।
আর নিজেও নিজেদের পারিবারিক ডক্টর কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।
অতঃপর আবারও কাউকে ফোন করে।
কথা শেষ ফোন কাটে।
তার পর আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“এই এলাকা ছেড়ে যেনো বেরোতে না পারে।”

আরিফ সাহাব কে চিন্তা না করতে বলে নিজেও বেরিয়ে পরে বাড়ি থেকে।
আর সাহাব নিজের মাথার চুল খামচে ধরে দু’হাতে তার পর বিরবির করে বলে উঠে

-“জান একদম ঠিক করো নি এটা।
তুমি হয়তো জানোই না তুমি নিজের অজান্তেই কত বড় একটা ভুল করলে।
আর কতো গুলো মানুষ কে কষ্ট দিলে।
কিন্তু তুমি কি ভেবেছো পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যাবে আমার কাছ থেকে?তবে তুমি ভুল আমার থেকে মুক্তি পাবে না কিছুতেই। আমার বেঁচে থাকতে হলে যে আমার তোমাকে চাই চাই।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]