Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 327



হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৫

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৫
রাত আনুমানিক দশটা! কারেন্ট চলে এসেছে, আঁধার কাটিয়ে চারিদিকে আলোকিত হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই উপর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনা যায়।তানিয়া বেগমের হাত পা কাঁপছে শত হোক নিজের মেয়ে ত। নিজের অতীত ঢাকতে কতো বড় রিক্স নিতে হচ্ছে তাঁকে।আশা বেগম জানেই কাজ হয়ে গেছে তবুও নাটক করে বলল,

‘হয়েছে কি উপরে,এতো চিৎকার চেঁচামেচি কেন?’

ইতিমধ্যে আফসানের বন্ধু ভিকি উপর থেকে দৌড়ে আসে। উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘আন্টি সর্বনাশ হয়ে গেছে।উপরে অই রুমটায় একটা মেয়ে ও ছেলেকে একসাথে ঢুকতে দেখেছি।মেয়েটা কালো শাড়ি পরিহিতা ছিলো আর ছেলেটাকে ভালো ভাবে দেখতে পারি নি, হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়াই।তবে আমি বাহিরে থেকে লক করে দিয়েছি।ভিতরে ওরা আটকে পড়েছে আপনারা আসুন।হাতে নাতে ধরবো।’

ভিকির এমন কথায় সবাই উপরে চলে যায় আসল ঘটনা জানার জন্য।তানিয়া বেগম মনে মনে ভাবছে কি পরিস্থিতিতে যে,পড়তে হবে তাকে।নিজের সম্মান বাঁচাতে মেয়ের সম্মান কোথায় যাবে? সবার আগে ইলিয়াস মির্জা যায়।আশার জেনো আর দেরি স‌ইছে না। সেজন্য সবাইকে সড়িয়ে দিয়ে নিজেই দরজাটার লক খুলে।ভিতরের দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠে বলে,

‘এ্যা কি!’

ইলিয়াস মির্জা আশা বেগমকে বলে,

‘দেখি সাইট দেও।’

আশা বেগমকে সড়িয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে যায়।ভেতরের দুজনকে দেখার পরে সেও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এদিকে উপস্থিত আত্মীয়রা গুঞ্জন শুরু করে দেয়।সবাই ছিঃ ছিঃ করতে শুরু করে। রাতের বেলা এভাবে একা এক রুমে যুবতী মেয়ের সাথে পুরুষ মানুষ ভালো কোনো উদ্দেশ্য হতেই পারে না। কেউ বলছে ছেলের চরিত্র খারাপ আবার কেউ বলছে মেয়েটাই খারাপ তা না হলে গেস্ট কেন এই বাড়ির ছেলের রুমে এভাবে। ইলিয়াস মির্জা নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে এগিয়ে যায়।গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে নিষ্প্রভের গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।নিষ্প্রভ তুর কে নিয়েই দুই কদম পিছিয়ে যায়।কারণ তুর সেন্সলেস ,শরীরের সাথে তাঁর শাড়ি ও ঠিক নেই। ইলিয়াস মির্জা চেঁচিয়ে বলে উঠে,

‘আগে জানতাম তুমি অভদ্র,বেয়াদব।আজ দেখছি তুমি চরিত্রহীন। আমার ছেলে এমন হতেই পারে না,নিজের ছোট ভাইয়ের হবু ব‌উয়ের সাথে এভাবে ছিঃ।’

বলেই ইলিয়াস মির্জা মাথা নিচু করে নেয়।নিষ্প্রভ ও বুজতে পারছে না, কোথায় থেকে কি হলো।সে ত এই রুমে এসেছিলো আফসান কে খুঁজতে।নিচে বিজনেস এর কিছু ক্লাইন্ট আফসানের খোঁজ করছে বলে কিন্তু রুমের ভেতর এসে এতো কিছু হয়ে যাবে জানলে সে কখনোই আসতো না।সব থেকে বড় প্রশ্ন এই মেয়েটাই বা এখানে এ অবস্থায় কেন?

নিষ্প্রভ নিজেকে সামলিয়ে বলল,

‘বাবা আমার কথা শোনো।’

‘আমি তোমার মতো লম্পট দুঃচরিত্র ছেলের কোনো কথাই শুনবো না।’

বলেই হনহন করে বেরিয়ে যান তিনি। তানিয়া বেগম অগ্নী দৃষ্টি দিয়ে বান্ধবী আশার দিকে তাকান।আশা অসহায় কন্ঠে বলে,

‘তোর মেয়ের আগে সেন্স ফেরা।’

আশা ও তানিয়া বেগম মিলে নিষ্প্রভের থেকে তুরকে নিয়ে অই রুমেই বিছানায় শুইয়ে দেয়।নিষ্প্রভ বেরিয়ে যায়! কিছুক্ষণ পরে হন্তদন্ত হয়ে আফসান রুমে ঢুকে বলে,

‘সরি সরি আমার লেট হয়ে গেলো।’

এই কথা শুনার সাথে সাথেই আশা বেগম আফসানের গালে স্বজোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।নিচে থেকে অথিতিদের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ এখনো শুনা যাচ্ছেই। কেউ কেউ বলছে হবু ভাশুরের সাথে মেয়েটার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। আবার কেউ কেউ বলছে ছেলেটাই টোপ ফেলে মেয়েটার পেছনে ঘুরছে।এখন এই মেয়ের কি হবে? আশা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইলিয়াস মির্জা বলল,

‘আজ এখন,এই মুহূর্তে নিষ্প্রভ ও তুরের বিয়ে দিতে চাই।’

আশা বেগম না করলে,তিনি আশা বেগমকে একটা থাপ্পড় দেয়।এতো গুলো লোকের সামনে স্বামীর হাতে থাপ্পর খেয়ে আশা লজ্জায় চলে যায়।তুরের জ্ঞান ফিরেছে,সে বাকরুদ্ধ।এদিকে নিষ্প্রভকে বললে,সে বিয়েতে রাজি হয় না।এতে করে ইলিয়াস মির্জা আর‌ও রেগে যায়।বলে,

‘অন্ধকার একটা রুমের ভেতর এক সাথে থাকতে না করো নি।এখন বিয়ের কথা হচ্ছে তখনি না হয়ে গেলো? এই বিয়েটা তোমার করতেই হবে নয়তো আমার মরা মুখ দেখবে।এমনিতেও তুমি আমার মান সম্মান নষ্ট করতে কিছুই বাকি রাখো নি।এখনি এই বিয়ে হবে এটাই আমার শেষ কথা’

নিষ্প্রভ বাবার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

‘আজকেও আমায় বিশ্বাস করলে না বাবা!’

অবশেষে কাজি ডাকিয়ে রাত এগারোটায় নিষ্প্রভ ও তুরের বিয়ে সমর্পূণ হয়।নিষ্প্রভ অভিমান হয়ে কবুলটা বলেই দিয়েছে আর তুর? সে তো পুরোই বাকরুদ্ধ হয়ে ঘোরের মাঝে বলে দিয়েছে।কি হবে এই বিয়ের ভবিষ্যৎ? যেখানে কেউ কাউকে চিনেই না, শুধু মাত্র একটা জঘন্য অপবাদ মাথায় নিয়ে দুজন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

____________

আফসান কিছুতেই এই বিয়ে মানতে পারছে না।বিয়ের আগে সে রাগের মাথা ইলিয়াস মির্জার সামনে সব কিছু বলতে নিয়েছিলো,আশা বেগম বুদ্ধি করে আফসান কে নিয়ে এসে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে দেয়।সব কাজ শেষ হবার পর সুযোগ বুঝে সে ঘরের মধ্যে এসে, এমন অঘটন ঘটলো কিভাবে তা আফসানের থেকে শুনবে তার আগেই তানিয়া বেগম এসে আশার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করে,

‘তুই এটা কি ভাবে করলি আশা! তোর উপর বিশ্বাস করে আমি আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছি আর তুই আমার ও আমার মেয়ের সাথে এটা কি করে করতে পরলি।তোর বিবেকে বাঁধল না।তুই তোর নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার নাম করে আমাকে এখানে নিয়ে এসে সৎ ছেলের সাথে বিয়ে দিলি?’

‘আরে তুই চুপ কর তো।আগে আফসানের থেকে পুরো ঘটনা শুনতে দে।আমার প্লান এভাবে ফ্লপ হতেই পারে না। আফসান সব ঠিক মতোই চলছিলো তাহলে ঘরে তার জায়গায় নিষ্প্রভ কি করছে?’

আফসান একটু নিজেকে গুছিয়ে নিলো।তারপর বলতে শুরু করলো,

‘মম তোমার কথা অনুযায়ী সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছি।ভিকি তুরের উপর জুস ফেলে দিয়ে ওকে আমার রুমে নিয়ে এসেছে।দেন আমার আরেকটা বন্ধু কারেন্টের সুইচ অফ করেছে। আমি ভিকিকে মেসেজ দিয়ে বলেছিলাম রুমে যাবো,সে জেনো বাহির থেকে লক দেয়,যে মুহূর্তে ঘরে ঢুকবো ঠিক সে মুহূর্তে হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে আমায় টানতে টানতে গার্ডেনে নিয়ে যায়।অন্ধকারে তার মুখটাও দেখতে পারি নি। কিছু বলার আগেই সে উধাও,তারপরের ঘটনা তুমি জানোই।’

আশা বেগম রাগের বসে আফসানকে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।রেগে গজ গজ করে করতে বলে,

‘জা*নো*য়া*র সামান্য মেয়ে মানুষের সাথে পারিস না।তোকে টেনে নিয়ে গেলো আর তুই ও গেলি।তোর সামান্য ভুলের জন্য আমার কতো বড় প্লান নষ্ট হয়ে গেলো। কাপুরুষ একটা! কোনো কাজের ই না তুই।এখন তুরকে অই নিষ্প্রভের সাথে দেখ সকাল স্বন্ধ্যা।’

বলেই তানিয়ার হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে গেলো আশা বেগম। তানিয়া বাকরুদ্ধ! তার কি বলা উচিত বা কি করা উচিত এই মুহূর্তে সে বুজতে পারছে না।

আফসান পিছন থেকে বার দুয়েক ডাকলো আশা বেগমকে।তবে তিনি ছেলের দিকে ফিরেও তাকায় নি।কেন তাকাবে? দোষ ত পুরোপুরি আফসানের।

আফসান মেঝেতে ডান পা দিয়ে জোড়ে আঘাত করে বিরবির করে বলল,

‘আমি কিছুতেই অই নিষ্প্রভের সাথে তুরকে দেখতে পারবো না।যে করেই হোক ওদের আলাদা করতেই হবে।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাই ছোট্ট করে হলেও মন্তব্য করে যাবেন অনুরোধ।আপনাদের ছোট্ট মন্তব্য আমার লেখার আগ্রহ বাড়াবে।তা না হলে কিন্তু নিয়মিত গল্প দিবো না বলে দিলাম।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৪

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৪
‘দুই দিনের ব্যাবধানে এ্যার্বশন করিয়ে রুমিকে গ্রামে পাঠিয়ে দিলো পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে। তুমি কি মানুষ নাকি তোমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী ও ওনার ছেলের মত অ*মানুষ হয়ে গেছ?’

তুরের এমন কথায় তানিয়া বেগম রেগে যায়।জোড়ে থা*প্প*র মে*রে দেয়।তুরের ফর্সা গালটা সাথে সাথেই লাল বর্ণ ধারণ করে। পরীক্ষা শেষ হ‌ওয়াই তুরফা গিয়েছিল তার বান্ধবীর বাসাই।আজ বাড়িতে আসতে না আসতেই ছোট বোনের গায়ে মায়ের এমন হা*ত তুলতে দেখে এগিয়ে আসে।তুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।মাকে প্রশ্ন করে,

‘তুর কে মা*র*ছো কেন কি করছে?’

‘এসেছিস ভালো করছিস তোর বোন কে বুঝা হাতে সময় খুব কম যতো দ্রুত সম্ভব আফসানের সাথে বিয়েটা দিয়ে দিবো।’

তুরফা বলল,

‘জোর করছো কেন? যদি বিয়েতে রাজি না থাকে তাহলে জোর করে বিয়ে দিবে নাকি?’

‘দরকার পরলে তাই দিবো।’

বলেই গটগট করে পা ফেলে চলে গেল তানিয়া বেগম।তুর বড় বোন তুরফাকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।তুরফা তুরের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

‘কাদিঁস না।মা যে কেন এমন করছে বুজতে পারছি না।’

‘আপু অনেক কিছু ঘটে গেছে এই কয়দিনে।তুই নাই সেজন্য বুজতে পারছিস না।’

‘আগে ঘরে আয় সব শুনবো।’

তুরফা তুরকে নিয়ে ঘরে যায়।তুর শুরু থেকে সবকিছু বোনকে খুলে বলে।তুরফা সব শুনে রেগে যায় মায়ের উপর।তার মা এমন জঘন্য মন মানসিকতার অধিকারী কবে থেকে হলো।এতো কিছুর পরেও কোন মা নিজের মেয়েকে জোর করে এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে
পারবে।তুরফা চিন্তিত কন্ঠে বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘তুই চিন্তা করিস না।একটা বুদ্ধি বের হবেই,প্রথমে আমাদের এই বিয়েটা যেভাবেই হোক আটকাতে হবে।’

_____________

সকালে খাবার টেবিলে নিষ্প্রভ এর মুখ থেকে এতো বড় একটা নিউজ লিক হবার পর ইলিয়াস মির্জা আশা ও আফসানকে বেশ কয়বার জেরা করেছে।আশা বেগম বেশ কৌশলে সামলিয়ে নিয়েছে ব্যাবারটা। এই বুড়োকে নিয়ে বেশি চিন্তা নেই,নিজের বুদ্ধি ও রূপ দিয়ে সব সামলিয়ে নেয় ঠিক যেমন ২৪ বছর আগে নিজের রূপ দিয়ে ফাঁসিয়েছে।তবে যতো চিন্তা নিষ্প্রভকে নিয়ে।ছেলেটা গভীর জলের মাছ।তা না হলে গোপন কথা কিভাবে লিক করলো? এখন এসব কিছু বাদ দিয়ে আফসানের বিয়ের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। নিষ্প্রভকে পড়ে দেখে নিবে।

আশা বেগম দ্রুত তানিয়া কে ফোন করে কোনো সুযোগ না দিয়েই বলল,

‘তোর মেয়ে কে রাজি করাতে পারলি?’

‘না।’

তানিয়া বেগমের এমন নির্বিকার উত্তর আশার একদম পছন্দ হয় নি।একটাও কাজের না, শুধু সে ছাড়া।সে বলল,

‘শোন একটা প্লান করেছি।’

‘কি?’

তানিয়া বেগম বিরক্তিকর ভাবে বলল।আশা বেগম তার প্লান খুলে বলল। তানিয়া শুনেই রাজি হলো না।যতো যাই হোক মেয়েটা ত তার।মান সম্মানের প্রশ্ন,আশা বলল,

‘শোন তোর মেয়ের সম্মানের দায়িত্ব আমার। তুই শুধু তুরকে কিছু একটা বুঝিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আয়।বাকি সব দায়িত্ব আমার। আফসান আর তুরের জন্য কাল স্বন্ধ্যা বেলা একটা পার্টি থ্রো করেছি যেখানে আমাদের শুধু কাছের রিলেটিভরাই থাকবে বাহিরের কেউ নয়।’

‘ঠিক আছে আমি দেখছি।’

____________

নিষ্প্রভ আজকাল বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ভালো ভালো জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছে।যদিও তার সরকারি চাকুরির বয়সসীমা আরও দুই বছর রয়েছে তবুও জান প্রান ছেড়ে দিয়ে দিন রাত খেটে যাচ্ছে বেচারা।কোনো চাকুরী ক্ষেত্রে মেধা ত অবশ্যই প্রয়োজন তবে লাকটাও থাকা দরকার।এর মধ্যে আজ সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করেই ইলিয়াস মির্জা বলেন কাল স্বন্ধ্যা বেলা বাড়িতে পার্টি এ্যারেঞ্জ করেছে তাকে এ্যাটেন্ড থাকতে।বলার সময় আশা বেগম ও ছিলো।ভদ্র মহিলার মুখের এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিষ্প্রভ ইলিয়াস মির্জা কে না করে দিলো তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন কিন্তু তার সরল বাবা ত আর জানেন না।মহিলাটা একদম তার বাবাকে বশ করে নিয়েছে।বাবাও উনার কথা উঠে আর বসে, হবেই না কেন বুড়ো বয়সে অল্পবয়সী ব‌উ বলে কথা।

____________

আজ মির্জা বাড়ির পার্টি। বান্ধবী আশার কথা অনুযায়ী তানিয়া বেগম তুরকে অই বাড়িতে নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছে।তুরের এক কথা সে কিছুতেই যাবে না,আর না করবে অই আফসান নামক চরিত্রহীন ছেলেকে বিয়ে। অবশেষে তানিয়া বেগম মেয়ের কাছে হার মেনে বললেন,

‘দেখ মা আমি ওদের কথা দিয়েছি। তবুও তুই বিয়ে করতে না চাইলে আমি জোর করবো না।তবে তুই আজকে পার্টিতে চল।তুই তো একা যাবি না,আমিও যাবো।তুরফাও যেতো কিন্তু বাড়িতে একজনকে থাকতে হবে আজ তোর বাবা আসছে। আমার এই কথাটা রাখ।’

মায়ের কথায় তুরের মনে গলে যায়।সে যেতে রাজি হয় তবে শর্ত দেয় বেশিক্ষণ থাকবে না।তানিয়া বেগম ও সায় দেয় কারণ ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়াটা তার কাজ আর বাকি সব কাজ তো আশার।

তানিয়া বেগম তুরের একটা কালো রঙের জামদানি শাড়ি পড়ে দিলেন।মুখে হালকা মেকআপ,চোখে কাজল, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক আর কোমড় অবধি চুল গুলো ছড়িয়ে দেওয়া। মাশাআল্লাহ এতেই কি সুন্দর লাগছে তুরকে।ফর্সা গায়ে কালো রঙের শাড়িটাও বেশ মানিয়েছে।তুর শুধু বিরক্ত বোধ করছে কারণ সে শাড়ি টাড়ি পড়তে চায় নি।মা তাকে জোড় করে পড়ে দিয়েছে।যেখানে যেতেই চায় না,ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেখানে এতো রঙ চঙ মেখে ঢঙ করতে যাওয়াটা তারজন্য এক প্রকার জুলুম।

___________

স্বন্ধ্যায় পর্টিতে সবাই উপস্থিত। অপেক্ষায় ছিলো পার্টির আসল আর্কষণ তুরের জন্য। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তুর তানিয়া বেগমের সাথে উপস্থিত হয়। ইলিয়াস মির্জা ও আশা বেগমনের সাথে কুশল বিনিময় করেন।এক পলক তির্যক চোখে আফসানের দিকে তাকায় কিন্তু আফসান নির্বিকার ভাবে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে যা তুরের সব চেয়ে বড় সন্দেহর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আফসান কিছু একটা কারণ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রুমে আগে থেকে তার ইশারায় কয়জন কাছের বন্ধু উপস্থিত ছিলো।আফসানের উপস্থিত বুজতে পেরেই একজন বলে উঠলো,

‘শালা মা*লটা ত দেখার মতো।’

‘আরে দেখার মতো না হলে কি আমাদের আফসান বিয়ে করতে মত দেয়।’

আফসান বন্ধুর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

‘ঠিক বলছিস! যেমন রূপের তেজ ঠিক তেমনি শরীরের ও তেজ।এর সাথে খেলতে মজা পাবো।ইচ্ছায় কোনো জিনিস পাওয়ার থেকে জোর করে পাওয়ার মজাই আলাদা।এর এতো তেজ বলেই আমার পছন্দ নয়তো কোন দিন বেডে তুলে ছুড়ে ফেলতাম কিন্তু না একে আমার চাই যতক্ষণ অবধি তেজ না কমাতে পারি।’

‘চালিয়ে যা বন্ধু।’

‘সেটাই হোক শোন তোদের কাজ বুজিয়ে দেই।’

আফসান বলতে শুরু করল।তার বন্ধুরা সব মনযোগ সহকারে শুনে বলল কাজ হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।তুই শুধু সঠিক সময়ে চলে আসিস।

আফসান বলল,

‘আসার আগে আমি ফোনে মেসেজ দিবো চেক করিস বুজলি।’

‘ওকে।’

__________

তুর একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। তানিয়া বেগম বান্ধবী আশার সাথে গল্পে মশগুল। হঠাৎ করে একটা লোকে তুরের পাশে দিয়ে যাবার সময় ধাক্কা লাগে। ফলস্বরূপ লোকটার হাতে রাখা জুসের গ্লাস তুরে উপর পড়ে যায়।বুকের উপর আঁচলার কাছে বেশ খানিকটা জায়গা ভিজে যায়।লোকটি সরি বলে,তবে এতোক্ষণে যা হবার তা তো হয়েই গেছে।লোকটি বলে,

‘সরি ম্যাম! আমি বুজতে পারি নি।আপনি বরং আমার সাথে আসুন আমি আপনাকে রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।আপনি হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেন।’

তুর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেজা আঁচলটা কুঁচকে গেছে।লোকটা ঠিক বলেছে,এ অবস্থায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।তুর ইতস্তত হয়ে বলল,

‘চলুন।’

লোকটি তুরকে একটা রুমে নিয়ে আসে।ড্রেসিং টেবিল দেখিয়ে দিয়ে বলে,

‘প্রয়োজনীয় জিনিস সব ওখানেই আছে।’

বলেই লোকটি চলে যায়। কিছুক্ষণ পরেই পুরো বাড়িটা অন্ধকার হয়ে যায়। তুর এভাবে অচেনা জায়গায় একা একটা রুমে বেশ ভয় পায়। সে খেয়াল করে অন্ধকার এই রুমে সে ব্যাতিত আর‌ও একজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ বুঝা যাচ্ছে।এদিকে তুরের শাড়ির আঁচলটা হাতে,তুলতেও জেনো ভুলে গেছে।ঠিক তখনি রুমের দরজাটা বাহিরে থেকে লক করার শব্দ কানে আসে।এবার জেনো তুর পুরো পুরি স্তব্ধ হয়ে যায়।হাত পা কাঁপতে শুরু করে সাথে শরীর ও ঘামতে শুরু করছে।পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে এই বুঝি সেন্সলেস হয়ে যাবে।শরীর ছেড়ে দেওয়ার আগেই নিজের কোমড়ে পুরুষালী হাতের স্পর্শ পায়।

‘এবার কি হবে তার?’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৩

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৩
‘ফকিন্নীর বাচ্চার এতো স্পর্ধা হয় কি করে?’

বান্ধবী আশার মুখে এমন কথা শুনে তানিয়া অবাক হয়ে যায়।এই সকালে ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে আশা এসব উল্টা পাল্টা গালি দিচ্ছে কেন বুজতেছে না তানিয়া বেগম।সে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

‘এসব কি বলছিস? রাতে *ম*দ খাইছিলি নাকি?’

এই কথা শুনে লতা জেনো আরও রেগে যায়। চিৎকার করে বলে,

‘ম*দ খাবি তুই ফকিরের বা*চ্চা,আমি কেন খাবো? আমি ড্রিংক*স করি, আমি কি তোর মতো ফকির।নিজের অবস্থান ভুলে গেছিস?’

ল্যাও ঠ্যালা এই পাগল কে এখন ম*দ আর ড্রিংক*স এর পার্থক্য কে বুঝাবে।তবে আশার কথায় এবার তানিয়া বেগম বেশ চ*টে গেল।তিনিও উচ্চস্বরে বললেন,

‘এসব তুই আমায় বলতে পারিস না।তুই নিজেও সাধু না,আগে নিজের দিকে তাকা তারপর অন্যের দিকে আঙ্গুল দেস বদমাইশ মহিলা।’

‘তোর এতো বড় সাহস তুই আমায় বদমাইশ মহিলা বললি।’

‘তা নয়তো কি বলব শুনি।সাত সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়ে তোর গা*লি”গা*লাজ শুনতে হচ্ছে।করছি টা কি আমি বলবি?’

‘তুই শুনবি না ত কে শুনবে।তোর মেয়ে কাল ভার্সিটির সামনে তার না*গ*রকে দিয়ে আমার ছেলেকে মা*র খাওয়াইছে।ভালো মনে করছিলাম তোর মেয়েকে কিন্তু আমি তো জানতাম না,যেমন মা তার তেমন মেয়েই হবে।মেয়েকে নিয়ে ব্যা*ব*সা*ই নামাইছিস নাকি?’

এসব শুনে তানিয়া বেগমের মাথা গরম হয়ে যায়।আশাকে বলে,

‘ঠিক বলছি তুই আমার কথাও শোন,যেমন মা তার তেমন ছেলে।তোর ছেলে যেমন আমার বাড়িতে এসে কাজের মেয়ের সাথে আকাম কুকাম করে বেচারি এখন প্রেগন্যান্ট।তেমনি তুই ও ত বিয়ের আগেই… থাক আর বললাম না।এতো কিছু জানার পরেও যে তোর এই ছেলের সাথে আমার ভালো মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছিলাম তোর ছেলের ভাগ্য ভালো ছিলো বলে।’

আশা ভয় পেয়ে যায়।তবুও নিজেকে ঠিক রেখে এবার সুর একটু খাদে নামিয়ে বলে,

‘রাখ তোর ফালতু কথা। ভাগ্য আমার ছেলের নয় তোর মেয়ের ভালো। বড়লোক বাড়িতে ব‌উ হয়ে আসলে রাজরাণী হয়ে থাকবে।এই টাকার লোভেই ত তুই তোর মেয়েকে আফসানের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিস।এতো কিছু জানি না আমি সাত দিনের মধ্যে তোর মেয়েকে আমার ছেলের ব‌উ হিসেবে এই বাড়িতে চাই।নয়তো আমার থেকে ধার নেওয়া দশ লাক্ষ টাকা তুই আজকেই ফেরত দিবি।নেহাত তোর মেয়ের রূপের তেজ আছে বলে ছেলের ব‌উ করতে চাইছি নয়তো তোর মতো ফক্কিনীর ঘরে যাইতাম না।কথা গুলো মাথায় রাখিস আর কাজে লেগে পর টাইম খুব কম।’

বলেই আশা ফোনটা কেটে দেয়।সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছে এখন সে চুপচাপ বসে থেকে দেখবে যা করার তানিয়া নিজেই করবে।নিষ্প্রভ এতোক্ষণ সব কথাই শুনছিলো কারণ বাড়িতে কেউ না থাকায় আশা বেগম ড্রয়িং রুমে বসেই উচ্চস্বরে কথা বলছিলো। নিষ্প্রভ কাল রাত দুটাই বাড়িতে ফিরছে যার জন্য আশা বেগম জানে না।জানার কথাও না,তিনি ত নিজের স্বার্থে ডুবে থাকে আশে পাশের মানুষ সম্পর্কে তার চিন্তা ভাবনা নেই।

________________

তানিয়া বেগম হন্তদন্ত হয়ে মেয়ের ঘরের দিকে এগিয়ে আসে।তুর ঘুমে ছিলো তিনি এই অবস্থায় এক ঝটকায় তুরকে তুলে ঠা*স করে গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয়।এমন আকস্মিক থা*প্প*ড়ে ঘুমের ঘোর থেকে তুর বাস্তবে ফিরে আসে।গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘মারছো কেন কি করেছি আমি?’

‘কি করিস নি তুই সেইটা বল!’

‘তুমি বলবে কি করেছি আমি যে, এই সকাল বেলাই তুমি আমায় ঘুমের মধ্যে এভাবে মারছো?’

তানিয়া বেগম রেগে যেয়ে তুরের হাত মুচড়ে ধরে বলল,

‘কলেজে পড়তে দিয়েছি তোকে আর তুই প্রেমলীলা করে বেড়াস।এর মধ্যে কোন নাগর জুটিয়ে ফেলছিস তাকে দিয়ে আফসান কে মা*র খাওয়াইছিস।’

এবার তুর আসল ব্যাপার খানা বুঝতে পারল।তারমানে আশা আন্টি তার মায়ের কানে ভার্সিটির ব্যাপারটা রসিয়ে বলছে।সে নিজেকে শান্ত করে বলল,

‘মা আফসান আমার সাথে অভদ্রতা করছে।’

‘অভদ্রতার কি হলো শুনি আজ বাদে কাল যার সাথে বিয়ে হবে সে তোর সাথে কথা বলবেই তুই শুনবি।’

‘মা কথা বলা আর অভদ্রতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আফসান রাস্তায় আমার সাথে বাজে কথা ও খারাপ ব্যাবহার করেছে।যার জন্য ও মা*র খেয়েছে আসলে কি বলো ত দুনিয়াতে এখনো ভালো মানুষ আছে কিনা। যাইহোক আমি আফসানকে বিয়ে করতে পারবো না।’

তানিয়া বেগম আর‌ও রেগে গেলেন।রাগী কন্ঠে বললেন,

‘কেন তোর অই না*গ*রকে বিয়ে করবি বুঝি। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আফসানকেই তোর বিয়ে করতে হবে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।’

‘মা তুমি কি শুরু করেছ বলো তো। তুমি জেনে বুঝে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের সাথে আমায় বিয়ে দিতে চাইছো কেন। তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো,আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বড় ভাই আছে,বড় বোন আছে তাদের আগে বিয়ে দেও তা না করে আমায় নিয়ে পড়ছ কেন।নিজের ভালো ত পাগলেও বুঝে।’

‘তুরফার কথা তোর চিন্তা করতে হবে না। আমি যা বলবো ও তাই শুনবে।’

বলেই তানিয়া বেগম দ্রুত প্রস্থান করলো।তবে যাওয়ার আগে বিরবির করে বলল,

‘আমি নিজের ভালোটাই বুজতেছি।’

___________

দুই দিন পর, আজ রবিবার!

এ দুই দিন আশা বেগম আফসান কে তাদের পুরনো রেস্ট হাউস এ রেখে এসেছেন।ওখান থেকেই চিকিৎসা হয়েছে তার।এ বাড়িতে থাকলে ইলিয়াস মির্জার কাছে ধরা পড়ত।তিনি জানেন আফসানের মতো ছেলেই হয় না।আর তার চোখে খারাপ হলো নিষ্প্রভ।

খাবার টেবিলে সবাই বসে সকালের নাস্তা খাচ্ছে।নিষ্প্রভ সচারাচর সবার সঙ্গে বসে না।ইলিয়াস মির্জা কি জেনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে বলে ডেকেছে।তাই বাধ্য হয়ে বসতে হয়ছে নয়তো কোনো ইচ্ছা ছিলো না। সম্পর্কটা বাবা ছেলের হলেও এখন আগের মত বিরাজমান করছে না।তার মা মারা যাবার পর থেকে বাবা ও পর হয়ে গেছে।জবে থেকে দ্বিতীয় বিয়ে করছে সেদিন থেকে।হবেই না কেন বুড়ো বয়সে কেউ অল্প বয়সী মেয়ে পেলে ঠিক থাকে?

ইলিয়াস মির্জা গলা খাঁকারি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেন।আশা বেগম উচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়ছে। আফসান ও তাকিয়ে আছে শুধু নিষ্প্রভ নির্বিকারে খেয়েই যাচ্ছে। ইলিয়াস মির্জা বললেন,

‘ভবিষৎ নিয়ে ভাবছো কিছু?’

‘কোন বিষয়ে?’

‘এভাবে আর কতোদিন চলবে।নিজেদের ব্যাবসা ছেড়ে পরের অধীনে সামান্য টাকার জব করছো।’

‘টাকা সামান্য হলেও সম্মান ও স্বস্থি আছে।যা ব্যাবসাতে আমি পাই না।’

‘তা পাবে কেন ব্যাবসার ব টাও বুঝো না। কতো গুলো টাকার লস করলে আমার।তাও ভাবলাম ছেলে শিখুক কিন্তু তুমি আমার ইচ্ছাকে দাম দিলে না।’

বাবার কথায় নিষ্প্রভ মাথা তুলে আফসানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘সত্তিই কি টাকা গুলো লস হয়ছে নাকি আত্মসাত?’

আফসান ঢুক গিলে ভয় পেয়ে যায়। ইলিয়াস মির্জা রেগে বলে,

‘বেয়াদব ছেলে।’

নিষ্প্রভ ঠান্ডা গলায় বলে,

‘আগে থেকেই।’

‘চুপ করো তুমি। আফসান কে দেখো নিজের চেয়ে চার বছরের ছোট ভাই হয়ে ব্যাবসা সামলাচ্ছে দুই দিন পর বিয়ে করবে আর তুমি বড় হয়ে কি করছো।ঘুরে বেড়াচ্ছ কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নাই।’

নিষ্প্রভ এবার বোমা ফাটার মতো কথা বলে।যার তেজ যেয়ে লাগে আশা বেগম ও আফসানের গাঁয়ে।

‘শুনলাম আপনার আদরের ছেলে ভার্সিটির রাস্তার সামনে অসভ্যতামি করার জন্য তার হবু ব‌উ তাকে প্রেমিক দিয়ে পিটিয়ে নিয়েছে।’

‘মানে!’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০২

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ২
‘সুন্দরী তোমার এই রূপে ত ঝলসে যাই এতো তেজ দেখিও না।এতো তেজে না জানি পু*ড়ে যাবো।’

বলেই বিশ্রি হাসি দিলো আফসান।লালসার চোখে তুরকে আপাদমস্তক কে দেখছে। ঘৃণায় তুরের ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।আজ কলেজের গেটের সামনে বের হতেই কোথায় থেকে আফসান এসে রাস্তায় এতো গুলো মানুষের সামনে এই উক্তিটি করে।ছিঃ মা হয়ে তার জন্য এমন একটা ছেলে পছন্দ করলো যার কাছে মেয়েদের কোনো সম্মান ই নাই।তা না হলে একটা মেয়েকে রাস্তায় এতো গুলো মানুষের সামনে এমন নোংরা কথা বলতে পারে।

‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মি. আফসান।’

‘আরে সুন্দরী রেগে যাচ্ছো কেন! দুই দিন পরে যার সাথে বিছানায় যাবে তার সাথে এমন কঠোর কন্ঠে কথা বললে কি করে হবে।মিষ্টি কন্ঠে কথা বলবে,কোকিল চিনো কোকিল? কোকিল কন্ঠে কথা বলবে এমনিও তুমি দেখতে পরীর থেকেও কম ন‌ও কন্ঠ কোকিলের মত করো।আই লাইক ইট!’

এবার জেনো তুরের তর তর করে রাগ বেড়ে যায়।একটা মানুষ এতোটা জঘন্য হয় কি করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তুরের বন্ধু আতিয়া বলল,

‘কি রে তুই এই বখাটে ছেলে কে।তোকে এসব বলছে তুই চুপ করে আছিস।লোক ডেকে একে ধরে দে।’

‘এই শালী তুমি চুপ থাকো।শালী আধা ঘর ওয়ালী। চাইলে আমার অর্ধেক বিছানার মালিকানা তুমিও হতে পারো।

তুর আতিয়াকে থামিয়ে দিলো।কারণ এখন এসব করলে একটা ত সিনক্রিয়েট হবেই আবার বাড়িতে মায়ের কানেও কথা যাবে যা এই মুহূর্তে তুর চাইছে না। ঠান্ডা রাখতে হবে এখন।ধীর কন্ঠে বলল,

‘দেখুন আফসান আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি আপনার মতো ছেলেকে লাইফ পার্টনার হিসাবে চাই না। আপনার চরিত্রের ঠিক নাই।আপনি আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটাকে‌‌ও ছাড় দেন নি। এইটুকু বয়সে ও প্রেগন্যান্ট।যাক গে সে সব ছেড়ে দেই কারণ এই বিষয়টা আপনি রুমি ও আমার মা ভালো বুঝবেন। আমি আপনাকে ঘৃনা করি সো আমার পথ থেকে সড়ে দাঁড়ান।’

আফসান এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।তুরের কাছে এসে হাত ধরে,হাতে স্লাইট করতে করতে বলল,

‘ওসব আগে কি হয়ছে বাদ দেও।এখন তুমি আছো, তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে আমি আর রুমির কাছে যাবে না।যাবো কেন বল ত?যেখানে রুমির কাজ তোমায় দিয়েই হবে।ও প্রেগন্যান্ট এ্যার্বশন করে নিবে ঝামেলা শেষ।তবে এ বিষয়ে শিওর থাকো আমি আসল পুরুষ।এখন শুধু তুমি আর আমি।’

আফসান হাসতে শুরু করে।আতিয়ার রাগ হচ্ছে তার বন্ধু তুর এই নোংরা পুরুষের পাল্লায় কিভাবে পড়লো তা ভেবে।তুর হাত মুচড়ায় তবুও আফসান ছেড়ে দিচ্ছে না। তুই উচ্চস্বরে বলে,

‘আফসান আমার হাত ছেড়ে দে।’

‘পাখি দেখি আপনি থেকে তুই তে নামছে।জানেমান হ‌ও কিছু বললাম না।ছাড়বো না,ছেড়ে না দিলে কি করবে?’

কথা শেষ হতে না হতেই নাকের উপর পুরুষালী হাতের শক্ত ঘু*ষি পড়ে। আফসান ছিটকে পড়ে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে একটা অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এগিয়ে এসে আবার মা*র*তে শুরু করে।তুর দেখলো তাদের ভার্সিটির বড় ভাই শাফিন।শাফিন ভালো ছেলে ভার্সিটির টপার।তুরদের সাথে টুকটাক কথা হয়।তুর ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়।শাফিন লাত্থি মারতে শুরু করে।রাগি কন্ঠে বলে,

‘মেয়ে দেখলে জিভ লকলক করে? তাদের শরীর ছুঁতে ইচ্ছে করে।এই হাত দিয়ে ছুঁয়েছিস তুই।’

বলেই আফসানের হাতের উপর পা তুলে দিয়ে পি*ষ*তে শুরু করে। আফসান চিল্লাতে থাকে মানুষ জড়ো হয়। এতোক্ষণ যারা দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল।আতিয়া অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে যায় শাফিনের হাত ধরে আটকাতে চায় কিন্তু একটা পুরুষ মানুষের শক্তির কাছে কি অবলা নারী পারে।না পেরে শাফিনের বন্ধুদের নিয়ে আসে।তারা থামায়,শাফিন ছটফট করতে করতে বলে,

‘ছাড় অই কুত্তার বাচ্চাকে দেখে দিবো কোন দিকে চোখ দিয়েছে।’

‘ছাড় ভাই,দেখ কি করছিস এবার ম*রে যাবে।’

শাফিন দেখলো তুর ভীতু ভাবে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।হাত পা কাঁপছে তার।আতিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তোমার বান্ধবীকে সামলাও, ও মনে হয় ভয় পেয়েছে।আর চলো তোমাদের বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসি।’

শাফিনের কথা শুনে আতিয়া তুরের দিকে খেয়াল করে। বেচারি এমনি নরম মনের।আজকের ঘোটনা তার মনে বাজে ভাবে প্রভাব ফেলেছে।

_________________

এখন রাত্রি বেলা! চারিদিকে অন্ধকার বিরাজমান করছে।তুরের হৃদয় আজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে কারণ কলেজের ঘটনা।ভয় কাজ করছে এখনো হয়তো মায়ের কানে কথাটা যায়নি তা না হলে মা এতোক্ষণ চুপ থাকতো না।তবে শিফনের ব্যাপারটা তুরকে ভাবাচ্ছে।ছেলেটা কিভাবে মারপিট করলো শুধুমাত্র তার জন্য।তুরের মনের এক কোণে শিপনের জন্য ভালো লাগে তৈরি হয়েছে কিন্তু এই ভালো লাগা, ভালোলাগা অবধিই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে তার মা কিছুতেই তুরের বিয়ে তুরের পছন্দ অনুযায়ী দিবে না।আর বাবা? তিনি ত সব সময় মায়ের কথাই উঠে আর বসে তার নিজের কোনো মতামত নেই।

তুরের বাবা নুরুল আলম ব্যাবসায়ী বেশীর ভাগ সময়‌ই বিভিন্ন জায়গায় থাকে।মাসে দু এক বার বাড়িতে এসে দুই বা তিন দিন থেকে চলে যায়।যে দুই এক দিন থাকে বাড়ির ঝামেলা কাঁধে নেয় না।তুরেরা দুই বোন এক ভাই।তুর সবার ছোট।বয়স ২০ অর্নাস ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত সে।বড় বোন তুরফার বয়স ২২ সে অর্নাস থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা দিয়েছে।আর সবার বড় ভাই হলো তুষার।যে এই ২৭ বছর বয়সেই সংসার ধর্ম ত্যাগ করে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।

তুরের এই মুহূর্তে একটা চিন্তা কি ভাবে মায়ের আদরের আফসান নামক নোংরা লোকের থেকে নিজেকে মুক্ত করবে।তুর এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস দিলো।

_________

আশা বেগম তার রুমের বেডে বসে রূপ চর্চা করছে। সিল্ক কাপড়ের হাফ হাতা গাউন পরিধান করেছে তিনি।মুখে ফেস প্যাক আর চোখে দুটো শশার স্লাইড।কানে ইয়ার ফোন,গান শুনতে শুনতে পা ঝুঁকছে।এর মধ্যে বাহিরে থেকে কাজের মেয়ে সিতারা চিল্লানি শুনে বিরক্ত হয়ে যায়।ভাবে এমনি থেমে যাবে তবে না,তার ভাবনা ভুল করে সিতারা আরও উচ্চস্বরে চিল্লিয়ে উঠে।এবার চিৎকার করে আশা বেগম কে ডাকছে। এ অবস্থায় ত আর বাহিরে যাওয়া যাবে না তাই আশা বেগম শশা সরিয়ে একটা সাদা চাদর নিয়ে নিজের শরীর ঢেকে উঠে পড়ে গন্তব্য সেতারকে আজ একটা উচিত শিক্ষা দিবে।

এদিকে সিতার কাজ করছিলো হঠাৎ ডোর বেল অনবরত বেজে উঠলে সে বিরক্তের সহিত দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে।কারণ তাঁর সামনে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ এ আবৃত করা ভূত দাঁড়িয়ে আছে যার দুটো চোখ ছাড়া শরীরের আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে ভুত ভুত বলে দরজায় দাঁড়িয়ে চিল্লাতে থাকে।এর মধ্যে আশা এসে সামনে না তাকিয়েই বলে,

‘এমন চিৎকার করছিস কেন কি হয়ছে।বাড়িটা কি মাছের বাজার করবি। কোথায় ভুত পেলি পাগল।’

সেতারা আশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আরও চমকে যায়। এ ত আরেকটা ভূত।পুরো শরীর সাদা চাদরে মুড়ানো মুখে কালো কি সব। সেতারা একবার আশা বেগম কে দেখছে ত একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ব্যান্ডেজ এ মুড়ানো ব্যাক্তিকে দেখছে।এবার সে তুতলাতে তুতলাতে বলে,

‘ডানে ভুত বামে ভুত, সামনে ভুত পিছে ভুত সবখানেই ভুত……’

বলেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আফসান কোনো মতে বলে,

‘মা!’

আশা বেগম ও চমকে যায়। আফসান আবার বলে,

‘মা আমি আফসান।’

‘বাবা তোর এই অবস্থা কেন?’

‘সব বলছি আগে ভিতরে যেতে দেও।আর এই জোকার কে সামনে থেকে সরানোর ব্যাবস্থা কর।’

আশা বেগম ছেলের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে যায়। আফসান কে ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসিয়ে দেয়। আফসান মাকে একে একে সব ঘটনা খুলে বলে।আশা বেগম রেগে যেয়ে বলে,

‘অই তানিয়ার মেয়ের এতো বড় সাহস।ও কে ত আমি দেখে নিবো।দুই দিনের মেয়ে হয়ে আমার ছেলেকে নাগর দিয়ে পিটিয়ে নেয়। চরিত্রহীন মেয়ে কোথাকার। ভেবেছিলাম সরল এ ত দেখি মায়ের মতই।’

আফসান থামিয়ে দিয়ে আশা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আমি কিছু শুনতে চাই না।সাত দিনের মধ্যেই তুরকে আমার বিছানায় চাই।’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০১

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ১

‘আমার হবু বরের অবৈধ সন্তানের মা হতে চলেছে আমাদের বাড়ির ১৫ বছর বয়সী কিশোরী কাজের মেয়ে রুমি।’

তানিয়া রহমানের বিশ্বাস‌ই হচ্ছে না,আফসানের মতো এতো ভালো ছেলে এই জঘন্য কাজ করবে।কতো সাধ করে ছোট বেলার বান্ধবী আশার ছেলের সাথে নিজের ছোট মেয়ে তুরের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি।আশার স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভালো।তারা উচ্চবিত্ত নিজেদের নিজস্ব ব্যাবসা,বড় বাড়ি আছে। তাদের মত মধ্যেবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে আর কি লাগে? এজন্যই তো এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে তুরকে রাজি করিয়েছে। কিন্তু এখন কি হবে,কি জবাব দিবে মেয়েকে?

তানিয়া রহমান তুরের দিকে চেয়ে আছে।তুর সোফায় বসে আছে।তার পাশেই রুমি দাড়িয়ে।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তুরের মনে কি চলছে।মিন মিন করে বলল,

‘দেখ মা আমি বুজতে পারিনি ছেলেটা এমন হবে।’

তুর চোখ স্থির করে তাকিয়ে বলল,

‘এখন বুজতে পেরেছ তোমার আদরের আফসান কেমন? তোমার শান্তশিষ্ট ভদ্র আফসানের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে রুমির বিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করো।’

তুর বসা থেকে উঠে পড়ে নিজের ঘরে দিকে যায়।যাওয়ার আগে রুমির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘নিজের ভালো পাগলেও বোঝে।’

__________

তানিয়া রহমান রুমির দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘কবে থেকে চলছে এসব রঙলীলা?’

রুমি কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘খালাম্মা আপনি তো সব জানতেন?’

‘তোর যে চরিত্রের সমস্যা আছে আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু এইটুকু বয়সে এতো দূর যাবি তা জানতাম না।ফক্কিনির বাচ্চা এসব আকাম কুকাম করছিস ভালো কথা তুরের বিয়ের আগে অবধি লুকিয়ে রাখতি।এখন আম ছালা ত আমার গেলো।কতো কষ্ট করে রাজি করেছিলাম জানিস?’

তানিয়া রহমান রুমির মাথার চুলের মু*ঠি ধরে এক নাগাড়ে এসব বলেই প্রস্থান করল।পিছে যদি এসব কেউ শুনে ফেলে।এখন সবদিকেই তাকে ম্যানেজ করতে হবে।

____________

ড্রয়িং রুমে ইলিয়াস মির্জা বসে পত্রিকা পড়ছে।একটু পর পাশে এসে স্বামীর কাধে মাথা দিয়ে বসলো আশা বেগম।তার পড়নে জর্জেট পাতলা ফিনফিনে শাড়ি।মুখে দামি প্রসাধনীর ছোঁয়া।শরীরে মুড়ানো স্বর্না অলংকার।ধবধবে ফর্সা শরীর যা ইলিয়াস মির্জার উইক পয়েন্ট।এমন রূপ দিয়েই তো সে ইলিয়াস মির্জাকে বসে এনেছে।

‘কি ব্যাপার আজ এতো খুশি লাগছে তোমায়?’

‘খুশি হবো না বলছো।ছেলে বিয়ে করাবো মনের মতো সুন্দরী মেয়ে আনবো।জেনো একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।যেমন চেহারা ঠিক তেমন নামটাও বেশ সুন্দর ‘তুর’।’

‘তা তোমার গুনধর ছেলে কোথায় সে?’

স্বামীর কথায় মুখ কালো হয়ে গেলো আশা বেগমের।তিনি পুনরায় মুখে হাঁসি এনে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,

‘এভাবে বলছ কেন, ও কি তোমার ছেলের মতো কাজ না করে সারাদিন বাহিরে বন্ধু ও মেয়ে নিয়ে ঘুরে? আমার ছেলে লাখে একটা, দেখছ না তোমার ব্যাবসা ঠিক কেমন সামলাচ্ছে।’

‘ভালো হলেই ভালো!’

বলেই ইলিয়াস মির্জা প্রস্থান করলেন সেখান থেকে।আশা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস দিলেন।তিনি তার নিজ পুত্রে আফসানেরর নামে সবকিছু চায়।ইলিয়াসের সৎ পুত্র নিষ্প্রভ জেনো কোনো কিছু না পায় সেজন্য‌ই ত নিষ্প্রভের নামে স্বামীর কাছে উল্টাপাল্টা বলে কান ভাঙ্গায়।

_____________

আজ একটু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি‌ই বের হয়েছে নিষ্প্রভ।কারণ আজ তার বন্ধু অনিকের ছেলের প্রথম জন্মদিন।সে উপলক্ষে বন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত হতে হবে।তাদের সকল বন্ধুকেই ইনভাইট করা হয়েছে। এখন স্বন্ধ্যা!সবাই মনে হয় এতোক্ষণে উপস্থিত হয়েছে অনুষ্ঠানে।নিষ্প্রভের যাবার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না কিন্তু অনিক প‌ই প‌ই করে বলে দিয়েছে ,সে না গেলে কেক কাটাই হবে না।না পারতে যেতে হচ্ছে ছোট বাচ্চাটার বড় আনন্দের দিন আজ।অনিকের বাড়িতে যাবার আগে একটা শপে ঢুকলো বেবীর জন্য গিফট কিনতে হবে।সব কাজ শেষ করে অনিকের বাড়ি পৌঁছাতেই সব ফ্রেন্ড সার্কেল নিষ্প্রভ কে জড়িয়ে ধরলো।এদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে যাদের সাথে অনেকদিন পর দেখা।আসলে ব্যাস্ততার কারণে সব কিছু সামলিয়ে আগের মত কারো তেমন সময় হয় না।রিয়াদ এগিয়ে এসে বলল,

‘কি হিরো অবশেষে আসলি?’

অনিক ফোড়ন কেটে বলল,

‘না এসে যাবে কোথায়? তুই জানিস ব্লা*ক*মেইল করে এই বেটা কে আনতে হয়েছে!’

রিয়াদ হাসতে হাসতে বলল,

‘কি রে শা*লা তুই এখনো আগের মতোই আছিস।সব অনুষ্ঠানে ব্লা*ক*মে*ই*ল করে তোকে নিয়ে আসতে হয় আগের মতোই।তবে একটা কথা মানতেই হবে এই সব কিছুর চাপ যায় বেচারা অনিকের উপর।’

অনিক অসহায় হয়ে বলল,

‘শা*লা এসব কিছুই না।তবে আমি চিন্তায় আছি,এই বেটা নিষ্প্রভকে সব অনুষ্ঠানে যে ভাবে আমায় ব্লা*ক*মেইল করে নিয়ে আসতে হয়, না জানি বিয়ে করাতেও আমায় ব্লা*ক*মেইল করতে হবে।’

অনিকের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। এতোক্ষণ নিষ্প্রভ চুপ করে ছিলো কারণ তাকে কথা বলার সুযোগ কেউ দেয় নি।এখন আর সহ্য না করে বলল,

‘থামবি তোরা।এসব ফালতু জোকস আমার সাথে করবি না।’

রিয়াদ একটু ভান করে নিষ্প্রভের থুতনি ধরে বলল,

‘ওলে বাবা লে কচি খোকা । তা খোকা তুমি বিয়ে করবে কবে?’

‘আবার!’

রিয়াদের কথা শুনে নিষ্প্রভ রেগে যেয়ে বলল।অনিক একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে নিষ্প্রভ এর কাধে হাত দিয়ে বলল,

‘নিষ্প্রভ রিয়াদ কিন্তু ঠিক বলেছে।আমরা সবাই বিয়ে করে একটা বা দুটো বাচ্চার বাবা হয়ে গেলাম আর তুই এখনো বিয়েই করলি না।বয়স তো আর কম হলো না।২৮ বছর পার হবে এখনো বিয়ে করলি না। তুই শুধু এক বার বিয়ে তে মত দে, আমরা তোর জন্য শহরেই সব চেয়ে সুন্দরী মেয়ে নিয়ে আসবো।’

নিষ্প্রভ একটু চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বলল,

‘প্রথমত আমি সুন্দরী মেয়ে চাই না।চেহারা আমার কাছে ফ্যাক্ট না, মন সুন্দর ও তাকে মায়াবী হতে হবে।যার পানে চেয়ে থাকলে আমি এক জীবণের সকল কষ্ট ভুলে যাবো।এমন মেয়ে এখনো পাই নি।যার সাথে আমার হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ হবে।আর দ্বিতীয়ত, আমি আগে নিজে ভালো কিছু করতে চাই জেনো আমার জীবণ সঙ্গীনির সঠিক ভাবে দায়িত্ব নিতে পারি। শুধু বিয়ে করলেই হবে না,তাকে একটা সুস্থ পরিবেশ দিতে হবে, যা অই বাড়িতে থেকে দেওয়া সম্ভব না। তুই তো আমার সব কিছুই জানিস।’

নিষ্প্রভ এক নাগাড়ে কথা বলে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

‘কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো তোরা।মনে হয় উজবুক দেখছিস!’

অনিক হঠাৎ করে ঝড়ের বেগে নিষ্প্রভকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘আই এ্যাম প্রাউড অফ ইউ দোস্ত।’

নিষ্প্রভ অনিকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

‘এভাবে কথায় কথায় জড়িয়ে ধরিস কেন বল তো?রিয়া কি জানে তোর এই সমস্যার কথা।’

‘চুপ শালা।’

রিয়াদ বলল,

‘অনেক হয়েছে তোদের বাঁদরামি। এখন সবাই আয় বেচারা চাচ্চু আমাদের এইটুকু বয়সে তোদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ডাইপার ভিজাইলো।’

সবাই একসাথে হেসে উঠে।

________

তানিয়া বেগম বান্ধবী আশা কে ফোন করলেন।তানিয়ার ফোন পেয়ে আশা ভীষণ খুশি হয়ে যায়।ফোন রিসিভ করে বলে,

‘ কি রে তানিয়া তোর আর দেরি সহ্য হচ্ছে না নাকি। একেবারে বিয়ে পাকা করতে ফোন দিলি?’

তানিমা বেগম কিছুটা বিরক্তের সহিত বলল,

‘বিয়ে পাকা নয় বরং ভা/ঙ্গ/তে ফোন দিয়েছি।’

‘মানে! তুই এসব কি বলছি?’

অনেকটা উচ্চস্বরে বিস্ময়কর কন্ঠে বলল আশা। তানিয়া বেগম কন্ঠে একটু জোর নিয়ে বলল,

‘যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি। তোর ছেলে আফসান আমার বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে লটরপটর করছে।সে এখন প্রেগন্যান্ট।’

‘শোন তানিয়া আফসান ছেলে মানুষ বয়স কম এই বয়সে এমন টুকটাক হয়,বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে আমি কথা দিচ্ছি।তুর এ বাড়িতে আসলে আফসান কি আর পদ্ম রেখে গোবরে মুখ দিবে বল? তুই বরং এ্যার্বশন করে ব্যাপারটা ধামা চাপা দে।’

তানিয়া ধীর কন্ঠে বলল,

‘ব্যাপারটা এমন হলে ত হতোই। তুরের কাছে ধরা পরেছে,ও সব জেনে গেছে।তোর ছেলে এসব আকাম কুকাম করবে আর ধামা চাপা দিবো আমি?কতো কষ্ট করে মেয়েকে রাজি করিয়েছিলাম তোর ছেলের জন্য সব মাটি হয়ে গেলো।এখন যা করার তুই কর আমি এসবের মধ্যে নেই।’

আশা বেগম এবার একটু রেগে যায়। উচ্চস্বরে বলে,

‘এটা বললে তো এখন হবে না। ভুলে যাস না আমার থেকে তুই দশ লাখ টাকা নিয়েছিস এখনো ফেরত দেস নি।আর আমি চাইলে কিন্তু অতীত ফাঁ*স করতে পারি ভেবে দেখ তখন তুই তোর ছেলে মেয়ে ও স্বামীর কাছে মুখ দেখাতে পারবি তো?’

আশার কথা শুনে তানিয়া বেগম এর হাত পা কাঁপতে শুরু করে।মনে হয় এখন দেহ থেকে আত্মা বের হয় যাবে।সে কম্পনরত কন্ঠে বলল,

‘না তুই এটা কিছুতেই করতে পারিস না। আমি তোর ছোট বেলার বান্ধবী।’

আশা হাসতে হাসতে বলে,

‘আমি ঠিক ততোক্ষণ পর্যন্ত চুপ থাকবো যতোক্ষণ পর্যন্ত তুই আমার কথা শুনবি।’

তানিয়া চুপ হয়ে যায়।যতো কিছু হয়ে যাক না কেন ফেলে আসা দিন কিছুতেই সামনে নিয়ে আসা যাবে না।নয়তো বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে।

চলমান।।

তোমায় প্রয়োজন পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0

#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#শেষ_পর্ব
আমরা তিন জনই চুপচাপ গাড়ীতে বসে আছি।কারো মুখে কোন কথা নেই।
আমি মনে মনে ভাবছি,এখন কি হবে।
আর হঠাৎ করেই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের গাড়ীটা একটা খাদে পড়ে যায়।

আর সেই এক্সিডেন্টে আমার হাত পায়ে আঘাত পাবার সাথে সাথে মাথায় ও আঘাত পাই।
এক্সিডেন্টের তিন দিন পর আমার যখন জ্ঞান ফিরে,তখন আমি নিজেকে হসপিটালে দেখতে পাই।
জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে আমি আমার পাশে থাকা নার্সকে জিজ্ঞেস করি,
আমার সাথে যে আর দুজন ছিলো তারা কেমন আছে?
তারা কোথায়?

নার্স আমাকে বলে,

আপনি উত্তেজিত হবেন না।কথা বলিয়েন না কোন।
সবাই ঠিক আছে।
আপনার আত্মীয় স্বজন বাহিরে আছেন।
আমি তাদের ডেকে নিয়ে আসছি।

নার্স বাইরে গিয়ে আমার আম্মু আব্বু এবং ডাক্তারকে ডেকে আনেন আমার কাছে।
আমার আম্মু আব্বু আমাকে দেখে কান্না করতে থাকেন।

নার্স আম্মু আব্বুকে কান্না করতে না করেন।
ডাক্তার আমাকে দেখে নার্সকে বলেন,আপনি থাকুন আমি ডাক্তার রাহমান কে ডেকে নিয়ে আসছি।
এই বলে তিনি চলে যান ডাক্তার রাহমানকে ডাকতে।
আর বলেন আমি যেন বেশি কথাবার্তা না বলি।

আম্মু আমাকে বলেন,
কোন কথা বলিস না।
আর চিন্তা করিস না,প্রত্যয় আর অর্পন দুজনই ভালো আছে।
প্রত্যয় সারারাত ই হসপিটাল ছিলো।তোর জ্ঞান ফিরে নাকি সেই অপেক্ষায়।
আমিই একটু আগে বাসায় পাঠিয়েছি।
বলেছি বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে দুপুরে আসতে।
আমি ফোন দিচ্ছি একটু পর,ও চলে আসবেনে।

একটু পরে দুজন ডাক্তার এসে আমাকে আবার দেখেন।
আম্মু আব্বুকে বলেন আপনারা বাইরে চলে যান এখন।
পরে আসবেন।
পেসেন্টের সামনে কান্নাকাটি করবেন না।
বেশি কথা বলবেন না।
পেসেন্ট এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।

আমি আম্মুকে বলি,
রাফাকে আসতে বলো।

এরপর দুপুরে আমার শাশুড়ী মা আর বাবা আসেন আমাকে দেখতে।

তারা এসে দেখে চলে গেলে বিকেলে রাফা আর অর্পন আসে আমাকে দেখতে।

আমি মনে মনে ভাবতে থাকি,
প্রত্যয় কেন এখনো আমাকে দেখতে আসলোনা।

আমি রাফা আর অর্পনকে দেখে জিজ্ঞেস করি,
_প্রত্যয় এলোনা যে?
অর্পন উত্তর দেয়,
_ওকে এখনো জানানো হয়নি তোমার যে জ্ঞান ফিরেছে।
_ও বাসায় গিয়েছে,ঘুমিয়েছে একটু।
তিন দিন এখানেই ছিলো।
তোমার অপেক্ষায় ছিলো,কখন তোমার জ্ঞান ফিরবে।
নিজের গায়ে যে ক্ষত,সেদিকে ওর খেয়ালও ছিলোনা।পাগলের মত কান্না করছিলো তোমার জন্য।যা দেখে আমি সত্যি অবাক হয়েছি।
আজ তোমার আম্মু আব্বু বলে বলে বাসায় পাঠিয়েছেন।

আমি নিজেও অর্পনের কথা শুনে অবাক হচ্ছিলাম।
যেই মানুষ টার মনে আমার জন্য কোন জায়গাই নেই।
সেই মানুষ টা তিন টা দিন আমার জন্য হসপিটালে ছিলো।
এমন কি কান্নাও করেছে আমার জন্য।

এসব ভাবতে না ভাবতেই প্রত্যয় এসে হাজির।

আমার বেডের কাছে এসেই দৌড়ে আমার হাত টা ধরে কান্না করে দেয়।
আর বলতে থাকে,
মন টা খুব টানছিলো জানো?
তাইতো চলে এলাম।
কেউ একটু জানায়নি আমায়।
ঠিক আছো তো তুমি?
অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার না?
খুব দ্রুত তুমি সুস্থ হয়ে যাবে দেখে নিও।
কিচ্ছু হবেনা তোমার।

আমি প্রত্যয়কে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,
কিছু হয়নি আমার।আমি ঠিক আছি।
এইতো মাথায় একটু আঘাত পেয়েছি তো?সেরে যাবে।

_জারা আই লাভ ইউ।
আই লাভ ইউ সো মাচ।
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি জারা। অনেক ভালবাসি তোমাকে আমি।
_আর তমাকে?
_ওহ তমা?
আজ তোমাকে আমি সব বলবো জারা,তমা আমার ফ্রেন্ড।ও আমার প্রেমিকা না।
ওইদিন ও যা করেছে আমার কথায় ই করেছে।
_ঠিক বুঝলাম না।
_আজ তোমায় আমি সব কিছু বলে দিতে চাই জারা।
তোমাকে হারানোর কষ্ট আমি আজ বুঝে গেছি।
আমি তোমাকে কোন ভাবেই হারাতে পারবোনা।
এমন কি অর্পনের জন্যও না।

প্রত্যয়ের কথা শুনে আর কান্না দেখে আমি,অর্পন রাফা তিন জনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি প্রত্যয়ের দিকে।

আজ তাহলে শুনে নাও আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা কথা গুলো।
যা আমি এত গুলো দিন যাবত বুকের মধ্যে পুষে রেখে অভিনয় করে যাচ্ছি।

জারা তুমি জানোনা,
আমি তোমাকে কতটা পছন্দ করি।
তোমাদের এলাকায় ঘুরতে গিয়ে একদিন তোমাকে দেখে আমার ভালো লেগে যায়।
মনে মনে তোমাকে আমি পছন্দ করে ফেলি।
কিন্তু না জানি তোমার নাম,আর না জানি তোমার সম্পর্কে কিছু।
সিদ্ধান্ত নেই পরে আবার গিয়ে তোমাকে খুঁজে বের করবো।

কিন্তু হঠাৎ একদিন বাবা বাসায় এসে মাকে ডেকে বলেন আমার জন্য তিনি তার এক বন্ধুর মেয়েকে পছন্দ করেছেন।
এবং তিনি চান তার বন্ধুর মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে হোক।
তাই আমি আর মা যেন পরের দিন রেডি থাকি।
বাবা আমাদের তার বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাবেন মেয়ে দেখতে।
যদি আমাদের পছন্দ হয় মেয়েকে তাহলে সেইদিনই বিয়ের কথা বলে আসবেন তিনি।

আর তুমি তো জানোই বাবা রাগী মানুষ, তার কথার উপর মা আর আমি কোন কথা বলতে পারিনা।

মাকে আমি তোমার কথা বললাম,মা বললেন মেয়েকে চিনিস না জানিস না কিভাবে কি হবে।
তাছাড়া তুইতো জানিস তোর বাবা কেমন।
তার সাথে কাল না গেলে উপায় নেই।
আর মেয়ে দেখতে গেলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন তো না।
চল যাই,গিয়ে পছন্দ না হলে দুজন মিলে বলবো পছন্দ হয়নি।
তাহলেই তো হলো।
মায়ের কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
চলে গেলাম তোমাদের বাসায়।
আর যখন তোমাকে নিয়ে আসলো আমাদের সামনে,আমি তো তখন যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলাম।
আমার খুশি আর দেখে কে

মাকে বললাম,মেয়ে পছন্দ হয়ে গেছে আমার।
এই মেয়েই সেই মেয়ে।

মাও খুশিতে বাবাকে বললেন,বিয়ের তারিখ পাকা করে ফেলতে।
যদি মেয়ের বাড়ীর কারো আপত্তি না থাকে।

তোমার বাড়ীর সবাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন।আমাদের বিয়েও ঠিক হয়ে গেলো।

জারা জানো,আমার বিয়ে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিলো কত প্ল্যান ছিলো।
ভেবেছিলাম বিয়ের দুদিন পরই তোমাকে নিয়ে হানিমুনে চলে যাবো।
কতই না খুশি ছিলাম আমি আমার বিয়ে নিয়ে।

দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বিয়ের দিন আসলাম তোমাদের বাসায়।
কবুলও পড়লাম।হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে।
কিন্তু তখনই আমার সব স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো যখন আফ্রিদি,আমার মামাতো ভাই তোমাকে দেখে বল্লো, প্রত্যয় রে এটা কি করলি।
আমি ওকে বললাম,কি আবার করলাম,বিয়ে করলাম।
আরে ভাই বিয়ে তো করলি,কিন্তু তোর বউ কে জানিস?
জানবোনা কেন?
আমার বউর নাম জারা।
আরে তোর বউ তো অর্পনের গার্লফ্রেন্ড রে।

_কি বলিস?
পাগল হয়েছিস নাকি তুই?
অর্পনের গার্লফ্রেন্ড এর নাম মণি।
জারা না।
আমাকে ও বলেছে ওর গার্লফ্রেন্ডের কথা।
কিন্তু কখনো দেখিনি।

_আরে ভাই,ও কাউকে ওর প্রেমিকাকে দেখাতোনা।
বলতো বিয়ের সময় একবারে দেখাবো।কিন্তু একদিন ওরা আমাদের এলাকায় ঘুরতে যায়। ঘুরার সময় আমি ওদের দেখে ফেলি।
সেদিনই আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।

_তুই কি সিওর জারাই মণি?
_হ্যাঁ আমি সিওর,.
কারণ ও জারাকে ভালবেসে মণি বলে ডাকতো।
সেদিনই পরিচয়ের সময় আমাকে বলেছে।

তুমি জানো,ওর কথা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

তুমি তো জানোই আমাদের বিয়েটা কত তাড়াতাড়ি হয়।
তোমাকে দেখে আসার তিন দিনের মাথায় আমাদের বিয়ে হয়।
খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করা হয় বলে অর্পন বিয়েতে আসতে পারেনি।
তাছাড়া বিয়েতে অনেক কাজের চাপ থাকায় ওর সাথে তখন তেমন কথাও হয়নি।
ও জানতো বাবার বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।
কিন্তু নাম টাও ও জিজ্ঞেস করেনি,আর আমি নিজে থেকে বলিওনি।

আমাদের বিয়ে হয়ে যাবার পর আমরা যখন আমাদের বাসায় চলে আসি তোমাকে নিয়ে।
তখনই ভাবি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো অর্পনের কথা।
কিন্তু সবাই তোমাকে এমন ভাবে ঘিরে বসে ছিলো যে আমি সুযোগ টাই পাইনি।

আর ওই দিকে তো আমার বুকের ভেতর তুফান হচ্ছিলো।এ আমি কি করলাম।
এরপর হঠাৎ মনে হলো,অর্পনের ডায়েরির কথা।
আমি দ্রুত আমার আলমারি খুলে অর্পনের ডায়েরি বের করলাম।
যেই ডায়েরিতে অর্পন ওর জীবন কাহিনী লিখে রাখতো।
ও সব কিছুই লিখে রাখতো ওর সেই ডায়েরিতে।
আর আমাকে বলতো,কখনো কিন্তু এই ডায়েরি পড়বিনা।
কারো পারসোনাল ডায়েরি বিনা অনুমতিতে পড়তে নেই।

ও যেদিন দেশের বাইরে যাবে সেদিন ভুল করে ওর ডায়েরিটা এয়ারপোর্টে ফেলে রেখে যায়।
কিছু লিখার পর ব্যাগে রাখতে হয়তোবা খেয়াল ছিলোনা ওর।

ভাগ্যের কি খেলা।
সেই ডায়েরি পেয়ে আমিই আবার বাসায় নিয়ে আসি।
ডায়েরির উপরে বিরাট আকারে সুন্দর করে লিখা,অর্পন।

ওর ডায়েরি আমি বাসায় নিয়ে আসি ঠিকই কিন্তু কখনো খুলে দেখা হয়নি ভেতরের জীবন কাহিনী।
কারণ আমি যখনই ওর ডায়েরি দেখতে চাইতাম,ও বলতো কারো অনুমতি ছাড়া তার ডায়েরি পড়া অপরাধ।

তবে হ্যাঁ আমাদের বিয়ের দিন আমি ওর অনুমতি ছাড়াই ওর ডায়েরি খুলি,এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলোনা।
আর ডায়েরি খোলার আগে মনে মনে বলতে থাকি,
এখানে এমন কিছু যেন না পাই যাতে আমার মন ভেঙে যায়।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এক মুহূর্তের মধ্যে যেন একটা পাথরের মুর্তি হয়ে যাই।
যখন ডায়েরি খুলে কিছু পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখতে পাই স্টিকার দিয়ে লাগানো তোমার একটা ছবি।
আর তার নিচেই লিখা।
জারামণি ভালবাসি।

সেদিন আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়।
কি করবো আমি এখন,
কিভাবে আমি আমার ভাইয়ের ভালবাসার মানুষ টাকে বিয়ে করে ফেললাম।

আমি তখনই অর্পন কে ফোন দেই।
আর ফোন দিয়ে বলি,

_আমি তো বউ নিয়ে বাসায় ফিরলাম রে।
এবার তোর পালা।
তখন ও বল্লো,
_আরে বাদ দে এখন আমার কথা।
আজ তোদের দিন তোরা ইনজয় কর।
_আরে সবাই আমার বউকে ঘিরে বসে আছে।
_আমি ফ্রি আছি তুই বল।
আচ্ছা তোর মণির কি খবর?
_আর বলিস না আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিরে।
তুই তো জানিস আমি মণিকে ভালবাসতাম।

কিন্তু পরে আমি কিভাবে যেন
ঝর্ণার সৌন্দর্যের মোহে পড়ে যাই।ঝর্ণার সাথে রিলেশনে চলে যাই।
_ঝর্ণা।ওইযে তোদের পাশের বাড়ীর মেয়েটা?
_হ্যাঁ,
আর ঝর্ণা আর মণি একই সাথে পড়াশোনা করতো।একদিন মণি সব জেনে যায়।
তাই মণির সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যায়।
বেচারিকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।
ও আমাকে পাগলের মত ভালবাসতো।
কিন্তু পরে বুঝলাম,
আমি শুধু মাত্র ঝর্ণার রুপে পাগল হয়েছিলাম।
আমার সত্যিকারের ভালবাসা ঝর্ণা না।
মণিই ছিলো।যা আমি পরে বুঝতে পারি।
অনুভব করি।

আমি মণিকেই ভালবাসিরে।
আমি ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা রে ভাই।
আমি দেশে এসেই ওকে বিয়ে করবো।
ওর বাসায় প্রস্তাব দিবো।
আমি ওর জন্যই দেশের বাইরে এসেছি জানিস।
যাতে ওর পরিবার রাজি হয়।
ও আমার সাথে অভিমান করে আছে জানি।
কিন্তু ওর পরিবার কে মানিয়ে ওকেও রাজি করিয়ে ফেলবো দেখিস।ও আমাকে ঠিকই ক্ষমা করে দিবে।
আমি ওকে ছাড়া ভালো থাকবোনারে ভাই।ভালো থাকবোনা।

আমি ওকে চাই।
ওকে বিয়ে করতে না পারলে,একবারে বিদেশের মাটিতে চলে আসবো।
দেশেই যাবোনা আর।

_আর দেশে এসে যদি দেখিস ওর বিয়ে হয়ে গেছে?
_হলেও ওকে নিয়ে আসবো।
_ওর বর তোকে আনতে দিবে?
_দরকার হলে ওর বরকে খু*ন করে নিয়ে আসবো।আর যদি না আসতে চায় তাহলে ওর সামনে নিজেই ম রে যাবো।
ও শুধু আমার।
আর কারোনা ভাই আর কারোনা।

এ কথা বলে অর্পন কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আমি আর ওকে কিছুই বলতে পারিনা।
তাই আমি তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই,তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবো।
আর তোমাকে বোঝাবো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।
বাবার চাপে তোমাকে আমার বিয়ে করতে হয়েছে।

আর আমি সফলও হয়ে ছিলাম আমার পরিকল্পনায়।
তুমি সব কিছু বিশ্বাস ও করে নিয়েছিলে।
আর এক্সিডেন্টের দিন তো আমার প্ল্যান মত সব হয়েই যাচ্ছিলো।
আমি তোমাদের সব কথা শুনে ফেলার ভান করে,রাগ দেখিয়ে
ভেবেছিলাম তোমাদের এই সুযোগে মিলিয়ে দিবো।
আর তুমি জানবে,আমি তমার জন্য তোমাকে ছাড়লাম।
আমি সব সময় চেয়েছি তুমি আমাকে ভুল বুঝো।
আর অর্পনকে মেনে নাও।
তোমরা এক হয়ে যাও।

_তাহলে বিয়ের পরের দিন রাতে আমাদের বাসায় থাকাকালীন কে ফোন করেছিলো আপনাকে?
আর ফোন পাওয়া মাত্রই যে আপনি চলে গেলেন?
_সেদিন তমা ফোন দিয়েছিলো আমাকে।
আমিই শিখিয়ে রেখেছিলাম ও যেন আমাকে ফোন দেয়।
আমি সেদিন কোথাও যাইনি।
তোমাদের বাসার বাইরে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার ভেতরে চলে আসি।

_খুব ভালো অভিনয় জানেন আপনি।
খুব ভালো অভিনয় জানেন।
খেলার পুতুল মনে করেছেন আপনারা দুই ভাই আমাকে না?
কি চান এখন আপনি?
ডিভোর্স চান?
ডিভোর্স দিয়ে দিবো?

_জারা আমার আর কিছু চাইনা।
আমার শুধু #তোমায়_প্রয়োজন
আমার তোমায় প্রয়োজন।
প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিয়ে তোমার করে নাও।

অর্পন এসে প্রত্যয়কে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

_তোর মন টা অনেক বড় রে ভাই।
অনেক বড়।

আর আমি এই তিন দিনে বুঝে গেছি তুই জারাকে কতটা ভালবাসিস।
তোর মত ভালো ওকে কেউ বাসতে পারবেনা।
ওকে কখনো কষ্ট দিস না।
আজ থেকে জারা শুধু তোর,শুধুই তোর।

জারা,
আমাকে মাফ করে দিও।সুখী হও তোমরা।
আসছি।

এই কথা বলে অর্পন বেরিয়ে যায়।
রাফাও চলে যায়।

_জারা,
কিছু বলবেনা?
চুপ করেই থাকবে?
কিছুতো বলো।

_যাও দিলাম এবারের মত ক্ষমা করে।আমার সারাজীবনের জন্য #তোমায়_প্রয়োজন।
থাকবে আমার হয়ে সারাজীবন?
প্রত্যয় আমার দু হাত ধরে বলে,
_থাকবো।
_কোন দিন ছেড়ে যাবেনাতো?
_উঁহু কোন দিন না।
আমি আমার বউকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।কোত্থাও না।

(সমাপ্ত)

তোমায় প্রয়োজন পর্ব-০৪

0

#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৪
আর তখনই হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে,
_অর্পন ছাড়ো বলছি,ছাড়ো আমায়।এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,
পেছনে তাকাতেই আমার বুক কেঁপে উঠে।
_আমি অর্পন না জারা,আমি প্রত্যয়।
_না আসলে,
_তোমার কেন মনে হলো আমি অর্পন?
ঠিক বুঝলাম না আমি।
আর এভাবে ছাদের দিকে আগাচ্ছিলে আর একটু হলেই তো পড়ে যেতে।
খেয়াল নেই নাকি,ছাদে যে রেলিং নেই?
_না আসলে হয়েছে কি,
_কি হয়েছে?
_কিরে তোরা এখানে?প্রত্যয়,তোকেই তো খুঁজছিলাম আমি।
আর জারা তুমি এখনো এখানেই আছো?
তখন না বলে গেলাম,রাত করে ছাদে থাকতে হয়না।ভূত আসে ভূত।

_ওহ এই কথা তাহলে,কিছু ক্ষণ আগে তুই আমার বউকে ভূতের ভয় দেখিয়ে গিয়েছিস,আর এখন আমি আসায় ও ভেবেছে তুই এসেছিস।
তাই তো বলি,ও তোর নাম ধরে ধমকের সুরে কথা কেন বলছে।

_চল এবার নিচে যাই।
_চলো জারা।

এবারের মত অর্পন আমাকে বাঁচিয়ে নেয়।
কিন্তু আবার এমন হলে..
আমি চাইনা আমার আর অর্পনের বিষয় টা এ বাসার কেউ জানুক।
আমাকে যে করেই হোক আমাদের বাসায় চলে যেতে হবে।

সকাল হলে মাকে বলি আমি কয়েক দিনের জন্য বাবার বাড়ী গিয়ে ঘুরে আসতে চাই।
মন টা খারাপ লাগছে সবার জন্য।
মা বলেন,

_অর্পন আসলো,আর তুমি চলে যাবে?
ও মন খারাপ করবেতো।
তাছাড়া প্রত্যয় তো সারাদিন ই ওর বিজনেসের কাজেই ব্যস্ত থাকে।
ও একা একা কি করবে,ওর কি ভালো লাগবে?
তুমি থাকলে তবুও একটু কথা বার্তা বলতে পারে।

_কোন সমস্যা নেই খালামণি,আমিও জারাদের বাসায় বেড়াতে চলে যাই।প্রত্যয় ও চলে যাবেনে রাতে ওর কাজ শেষ করে।
আমারো বেড়ানো হলো,আর জারারও ওর বাবা মাকে দেখে আসা হলো।

কি জারা নিবেনা আমাকে তোমাদের বাসায়?

_যার জন্য পালাতে চাচ্ছি,সেই তো সাথে যেতে চাচ্ছে।
কি করবো আমি এখন?(মনে মনে)

_নিবেনা কেন?বউমা অর্পন তোমার সাথে বেড়াতে গেলে কোন সমস্যা আছে?
_কিসের সমস্যা চল আমরা সবাই মিলে ঘুরে আসি।(প্রত্যয়)

_না না সমস্যা কিসের।চলুন সবাই যাই।
মা আপনি আর বাবাও তাহলে চলুন।
_না মা তোমরা ঘুরে আসো।
তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু।
_আচ্ছা মা,আপনারাও সাবধানে থাকবেন।
বাবার খেয়াল রাখবেন।

এরপর প্রত্যয় আমি আর অর্পন আমাদের বাসায় চলে আসি।

আম্মু,বোন,আমার কাজিনরা সবাই খুশি আমাদের দেখে।

আমার ছোট বোন রাফা তো সবার সামনে অর্পনকে দেখে আমাকে ইশারায় বলা শুরু করে,আপু, অর্পন?

আমি ওর মুখ চেপে ধরি।
আর বলি,চুপ চুপ।

_আসসালামু আলাইকুম আমি অর্পন,প্রত্যয়ের কাজিন।
না বলেই চলে আসলাম বেড়াতে।

_খুব ভালো করেছো বাবা।
আমরা খুব খুশি হয়েছি।
_আসসালামু আলাইকুম ভালো আছেন আম্মু?
_ভালো আছি বাবা,তুমি কেমন আছো?
_এইতো ভালো।
আব্বু কোথায়?হাই রাফা মণি কি অবস্থা?
_তোমার আব্বু একটু বাজারে গেছেন।
_এইতো দুলাভাই ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
_আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
_জারা যা মা ওদেরকে ভেতরে নিয়ে যা।

রাফা তোর আব্বুকে ফোন দিয়ে বল জারা এসেছে।
আর আয় আমার সাথে নাস্তা দিবি ওদের।

আমি প্রত্যয় আর অর্পনকে নিয়ে ভেতরে যাই।
কিছু ক্ষণ পর রাফা সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে।
আব্বুও রাফার ফোন পেয়ে আমাদের জন্য বাজার সদাই করে আনেন।
আমাদের দেখে আব্বু খুশি হন।
আর বলেন এক সপ্তাহের আগে আমাদের কোথাও যাওয়া চলবেনা।
কম পক্ষে এক সপ্তাহ যেন আমরা থেকে যাই।

দুপুরে খাওদা দাওয়া শেষে অর্পন আমাকে বলে,চলো তোমাদের গ্রাম ঘুরে দেখাবা আমায়।
_যাও জারা তুমি একটু ঘুরিয়ে দেখিয়ে আসো।
আমি একটু রেস্ট নেই।
ঘুমাই একটু।

_আমারো শরীর টা তেমন ভালো লাগছেনা।

রাফা এই রাফা এদিকে আয় তো,
_হ্যাঁ আপু বলো।
_তোর অর্পন ভাইয়াকে আমাদের এলাকা টা একটু ঘুরে দেখিয়ে নিয়ে আয়।
_আচ্ছা আপু যাচ্ছি।
অর্পন প্রত্যয়ের সামনে আর কিছু বলতে পারেনা।

রাফা অর্পনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।

এদিকে প্রত্যয় আমাকে বলে,

_তুমিও যেতে।
একটু ঘুরে আসতে ওদের সাথে।ভালো লাগতো তোমার।
_আমার কি ভালো লাগতো আর কি ভালো লাগতোনা তা নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।
আর আপনি এমন ভাব কেন সবার সামনে ধরে থাকেন হুম?
বুঝান যে খুব ভালো স্বামী আপনি।
খুব ভালো রেখেছেন আমায়।
এত অভিনয় কেন চালিয়ে যাচ্ছেন সবার সামনে?

আমার বাবা মা বোন চাচা চাচি সবাই ভাবেন আপনি খুব ভালো রেখেছেন তাদের মেয়েকে।
আপনার তাদের সাথে করা এমন সহজ সরল আন্তরিক ব্যবহারের আড়ালে যে লুকিয়ে আছে অন্য কিছু।
তা কে জানে বলুন?

কি নিখুঁত অভিনয় আপনার,মেয়ের জামাই, দুলাভাই এর অভিনয়ে খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি।

আপনাকে দেখে কে বুঝবে বলুন?
আপনি এসব অভিনয় করছেন।
আসলে সত্যি তো এটাই,আমাদের মাঝে সম্পর্ক টা আছেই মাত্র ক”দিনের জন্য।আর এটাকে আদৌ কোন সম্পর্ক বলা যায় কিনা তা আমার জানাও নেই।
এরপর তো আপনি আর তমা, আপনাদের সুখী পরিবার।

_চুপ করে আছেন যে?
আজ এত গুলো কথা বললাম,একটা কথারও যে জবাব দিলেন না?
_সময় হলেই পেয়ে যাবে আমার জবাব।
অপেক্ষা করো।

এই বলে প্রত্যয় ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ে।

অপর দিকে অর্পন আর রাফা ঘুরতে ঘুরতে আমাদের বাড়ী থেকে একটু দূরে একটা বাগান আছে সেখানে যায়।
যেখানে আমি আর অর্পন প্রায় ই যেতাম।
বসে বসে গল্প করতাম।

_আপনাকে আর কি ঘুরে দেখাবো আমি?
আপনি তো সব ই চিনেন আমাদের এলাকার।
বরং আমার চেয়ে বেশিই চিনেন।
যাইহোক,একটা কথা জানার ছিলো,
_হ্যাঁ বলো।
_কেন করলেন আমার আপুর সাথে এমন প্রতারণা?

অর্পন চুপ করে আছে।

_কি হলো উত্তর দিন?
_আমার আপুতো আপনাকে সত্যিকারের ভালবেসেছিলো।
আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিলো।
আর আপনি কিনা আমার আপুর সাথে এমন বিশ্বাস ঘাতকতা করলেন?

আপনি জানেন আমার আপু দুই টা মাস কারো সাথে কথা বলেনি।
দিন রাত একা ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখতো।
শুধু মাত্র আপনার বেঈমানীর কারণে।

আপনার নতুন প্রেমিকা কি এমন দিয়েছিলো যা আমার আপু আপনাকে দিতে পারেনি?
আমার আপু কি আপনার সেই নতুন প্রেমিকার চেয়ে কম ভালবাসতো আপনাকে?

কিভাবে আপনি আমার আপুর হাত মাঝ রাস্তায় ছেড়ে অন্যের হাত ধরেছেন?

আমার আপু দিন রাত পাগলের মত চিল্লায় কান্না করেছে জানেন?
আমার আম্মু আমার আপুর কান্না দেখে নিজে কেঁদেছেন।

আমার বাসার সবাই জেনেছে আমার আপু একটা ছেলেকে ভালবাসে।
কিন্তু কেউ জানেনা সেই বেঈমান টা আপনি।

আসলে কি জানেন,আপনি আমার আপুর ভালবাসার যোগ্যই ছিলেন না কোন দিন।
যাইহোক অনেক কথা বললাম,

জীবনে আমার আপুর অনেক ক্ষতি তো করেছেন।
এখন দয়া করে একটা উপকার করুন।

আপনি কখনো প্রত্যয় ভাইয়ার পরিবারের কাউকে জানতে দিয়েন না যে আপনি আপুর পূর্ব পরিচিত।
আর আপুর থেকে দূরে দূরে থাকবেন।

_আর আমি যদি বলি,আমি তোমার আপুকে খুব শীঘ্রই আমার করে নিবো।
তখন কি বলবে?

_আপনি কি মজা করছেন?
হা হা হা।
আমার আপু এখন প্রত্যয় ভাইয়ার স্ত্রী।
পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই আপুকে প্রত্যয় ভাইয়ার থেকে কেড়ে নেয়ার।

_আর যদি তোমার প্রত্যয় ভাইয়াই আমাকে দিয়ে দেয়।তখন?

_আপনার মাথায় কি কোন সমস্যা হয়েছে?
আপনাকে কি পাগলা গারদে দিয়ে আসতে হবে?

_না মিস রাফা।
আমাকে পাগলা গারদে দিতে হবেনা।
বরং তুমিই আমার থেকে আজ একটা সত্যি জেনে নাও।
যা শুনে তুমিই পাগলাগারদে চলে যেতে পারো।
বোনের দুঃখে দুঃখী হয়ে।

এই যে এত প্রত্যয় ভাইয়া ভাইয়া করছোনা,ওহ না তোমার দুলাভাই।
তোমার এই দুলাভাইও অন্য এক মেয়েকে ভালবাসে।
আর তাই সে তোমার বোনের সাথে এক বিছানায় অব্দি থাকেনা।
আমি তাদের কথা নিজে কানে শুনেছি আর নিজে চোখে দেখেছি।
ক্লিয়ার?
বিশ্বাস না হলে তোমার বোন কে জিজ্ঞেস করে দেখো।

_কি বলছেন এসব?
_জ্বী। যা শুনেছো ঠিক শুনেছো।
সো আমাকে দুলাভাই ডাকার প্রস্তুতি নাও।

_না রাফা কোন দিনও না।(আমি সেখানে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে)
মিঃঅর্পন আমি যদি ঘরের কোণে একজন ডিভোর্সি হয়ে বসেও থাকি।
তবুও আপনাকে আমি কোন দিনও বিয়ে করবোনা।
কথাটা আপনি মাথায় রাখবেন।

আমি এখানে এসেছি আপনাকে বলতে যে,আপনি দয়াকরে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করবেন না।
আমি চাইনা আপনার আর আমার কথা আমার শশুড়বাড়ীর কেউ জানুক।

_কিসের শশুড়বাড়ী জারা?
যেখানে প্রত্যয়ই তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি?

আমি মানছি আমি ভুল করেছি,তাই বলে এখনো কি আমাকে ক্ষমা করা যায়না?
আমিতো চেয়েছিলাম আমি দেশে ফিরে তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবো।
বাসার সবাইকে রাজি করাবো।
আর সাথে তোমাকেও।
আমি তোমার জন্যই দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছি।
যাতে তোমার বাসার মানুষ বলতে না পারে ছেলে বেকার।

কিন্তু আমি আসার আগেই তুমি…

কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।
একটা বছরে এত কিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে আমার জানা ছিলোনা।

যাইহোক,আমি আমার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছি।
এখন সব ভুলে আমাকে একটা সুযোগ দাও।
আমি আর কোন দিন তোমায় কষ্ট দিবোনা।

আমি সেদিন আড়াল থেকে তোমার আর প্রত্যয়ের কথা শুনে ফেলেছি।
ও যে অন্য কাউকে ভালবাসে,তাই তোমাকে যে স্ত্রীর স্বীকৃতি কখনোই দিবেনা।

তাই সব ভুলে চলো আমরা নতুন করে আমাদের জীবন শুরু করি।
আমি খালামণি খালুকে সব বুঝিয়ে বলবো।
আমার পরিবারকে বুঝানোর দায়িত্ব ও আমার।
প্লিজ না করোনা।

_কেন?
কই আজ তোমার সেই প্রেমিকা?
যার জন্য তুমি আমাকে ছেড়েছিলে?
তাকে কেন বিয়ে করছোনা?
_দেখো জারা,
আমি দেশের বাইরে যাবার আগেই আমি অনুভব করি,আসলে আমি ওকে না তোমাকেই ভালবাসি।
ওর সৌন্দর্য্যের মোহে পড়ে গিয়েছিলাম আমি।
কয়েক মাসের জন্য ওর মোহে ডুবে ছিলাম আমি ঠিকই।
কিন্তু সত্যিকারের ভাল আমি তোমাকেই বেসেছি।
তা আমি ওর সাথে সম্পর্কে যাবার কয়েক মাস পরই বুঝতে পারি।
তাছাড়া ওর সাথে আমার মনের কিছুই মিলতোনা।
আর না ও আমাকে বুঝতো।
আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছিলো।

আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু তুমিতো আমার কোন কথাই শোনোনি তখন।

তাই বাইরে চলে গিয়েছিলাম।
আর ভেবেছিলাম দেশে এসেই তোমাকে সব খুলে বলবো।
আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবো একবারে।
যেহেতু তোমার বাবা সব সময় চেয়েছেন তোমার পড়াশোনা শেষ হলে তোমাকে বিয়ে দিবেন।তার আগে না।

তাই আমি কখনো চিন্তাও করিনি তোমার এর মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে।
যেহেতু তোমার পড়াশোনা শেষ হতে এখনো বাকি।

যাকগে ওসব।
যা হবার হয়ে গেছে।
এখন আমার কথা শোনো,
চলো আমরা আমাদের জীবন নতুন করে সাজাই।
যেখানে থাকবেনা কোন দুঃখ,থাকবেনা কোন কান্না।

ফিরিয়ে দিওনা আমায়।
আমি চাই তোমাকে সুখী করতে।
সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে।

অর্পনের কথা শেষ হতে না হতেই প্রত্যয় সেখানে এসে উপস্থিত হন।
আর আমাকে ডেকে বলেন,

_জারা,
চলো বাসায় যাবো।
_প্রত্যয় আমার কথা শোন ভাই,ভুল বুঝিস না আমায় তুই।
আমি তোকে সব খুলে বলছি,তুই শোন আমার কথা।
_বাসায় গিয়ে সব কথা হবে।
এখানে না,আর না জারাদের বাসায়।
আমাদের বাসায় গিয়ে সব কথা হবে।

জারা চলো এখন রেডি হতে হবে।
বাসায় যাচ্ছি আমরা এখনই।

_কিন্তু দুলাভাই,
_রাফা আজ না,অন্য দিন এসে থাকবো হুম।
বাসায় কাউকে কিছু বলোনা।
_হুম।

এরপর বাসায় গিয়ে আম্মু আব্বুর কাছ থেকে আমরা বিদায় নিয়ে রওনা দেই প্রত্যয়ের বাসার উদ্দেশ্যে।
তারা তো কোন মতেই যেতে দিবেন না আমাদের।
তবুও তাদের বুঝিয়ে আমরা রওনা দেই।
প্রত্যয় সবাইকে বলে আসেন মা হঠাৎ অসুস্থবোধ করছেন।
তাই আমাদের এখনই যেতে হচ্ছে।
অন্য সময় আসবো আবার সময় নিয়ে।

অর্পন গাড়ীতে বসে প্রত্যয়কে কিছু বলতে চাইলে প্রত্যয় বলেন,
বাসায় গিয়ে সব শুনবো।
চুপচাপ বাসায় চল।

আমরা তিন জনই চুপচাপ গাড়ীতে বসে আছি।কারো মুখে কোন কথা নেই।
আমি মনে মনে ভাবছি,এখন কি হবে।

আর হঠাৎ করেই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের গাড়ীটা একটা খাদে পড়ে যায়।

চলবে..

তোমায় প্রয়োজন পর্ব-০৩

0

#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৩

আমি প্রত্যয়ের জন্য জুস আনতে চলে যাই।
জুস নিয়ে প্রত্যয়ের কাছে আসতেই
আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।
হাত থেকে জুসের গ্লাস টা পরে যায়।
আর অস্পষ্ট কন্ঠে আমি বলে উঠি,
_অর্পন…

_জারা,কি হয়েছে তোমার?ঠিক আছো তো তুমি?
_সরি!কিভাবে যেন হাত থেকে পড়ে গেলো গ্লাস টা।
_আচ্ছা সমস্যা নেই,
এই দেখো কে এসেছে,
আরে তাড়াতাড়ি এসো।
এই দেখো,ও হচ্ছে অর্পন।আমার এক মাত্র ভাই।
আমার খালাতো ভাই।
যে কিনা আমার বন্ধু, ভাই সব কিছু।
ও আমাদের বিয়েতে আসতে পারেনি বলে ওকে দেখোনি তুমি।
আজই দেশে এসেছে ও।তাও শুধু মাত্র আমার জন্মদিন বলে।
কত্ত বড় সারপ্রাইজ দিলো আজ ও আমাকে।

_তোকে আর আমি কি সারপ্রাইজ দিলাম।
তুই তো আমাকে তার চেয়েও বড় সারপ্রাইজ দিলি।
_আমি সারপ্রাইজ দিলাম?
কি সারপ্রাইজ দিলাম তোকে আমি আবার?
_না মানে।
এই যে কত সুন্দর একটা বউ এনে সারপ্রাইজ দিলি।

যাইহোক পরিচিত হই আমরা তাহলে,
হাই আমি অর্পন,
প্রত্যয়ের ভাই।
(হাত বাড়িয়ে)

_আসসালামু আলাইকুম আমি জারা।
প্রত্যয়ের স্ত্রী।( হাত না মিলিয়ে)

_তোমাকে আমি তুমি করেই বলবো জারা।
আর নাম ধরেই ডাকবো।
কারণ প্রত্যয় আর আমি সম বয়সী।

কিরে প্রত্যয় তোর কোন আপত্তি আছে নাকি রে?
_আরে নাহ কি বলিস।
তাছাড়া জারা তো আমাদের থেকে অনেক ছোট।
তুই নাম ধরেই ডাকিস।
এত ফরমালিটির দরকার নেই।

এমন সময় শাশুড়ী মা এসে অর্পনকে দেখে জড়িয়ে ধরেন।

_বাবা তুই,
কখন এসেছিস।
কবে এসেছিস দেশে?
জানালিও না একটু।
তোর মাও বল্লোনা কিছু।
তোর মাকে কত করে বললাম,আসলোনা।বলে ওর নাকি কোমড়ের ব্যথাটা বেড়েছে।
_কি যে বলোনা খালামণি,যদি জানিয়ে আসতাম তাহলে কি সারপ্রাইজ দিতে পারতাম?
আজই দেশে এসেছি আমি।
আর এসেই তোমাদের এখানে।
মাকে তোমাদের জানাতে না করেছি।
আর মার ব্যথাটা খুব বেড়েছে।
আমিও বলেছিলাম আসতে।
বল্লো তুই চলে যা।

প্রত্যয়ের বিয়েতে আসতে পারিনি।
জন্মদিনে তো আসাই লাগবে বলো।
তাইতো চলে এলাম।

তবে খালামণি,প্রত্যয়ের বউকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
_শুধু তোর না আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে।মিষ্টি বউমা আমার।

_মা আমি একটু ভেতরে যাচ্ছি।
মাথা টা যেন কেমন করছে।
এই কথা বলে আমি চলে আসি ওখান থেকে।

রুমে গিয়ে বসে থাকি।
কিছুক্ষণ পর প্রত্যয় গিয়ে আমার নাম ধরে ডাকতেই আমি আঁতকে উঠি।

_জারা,কি হয়েছে তোমার?
_না কিছু নাতো।
_তাহলে ওখান থেকে চলে আসলে যে?
আর এখন আবার আমি ডাকতেই কেমন কেঁপে উঠলে।
_না এমনি শরীর টা কেমন যেন লাগছে।
_চলো সবাই অপেক্ষা করছে কেক কাটবো।

তারপর সবাই মিলে কেক কেটে আনন্দ করে পার্টি সমাপ্ত হয়।

অতিথিরা সবাই চলে যায়।

অর্পনের আড় চোখে আমার দিকে তাকানো টা আমার একদমই ভালো লাগছেনা।
অসহ্য লাগছে।
কখন ও যাবে আমি সেই অপেক্ষায় আছি।

পার্টি শেষে অর্পন বলে,আমি আজ তাহলে আসি।
ওহ হো! এই যে তোদের জন্য গিফট।
কাপল রিং এনেছিলাম দুজনের জন্য।

দে দে আমি পরিয়ে দেই।

এই বলে অর্পন প্রত্যয়ের আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দেয়।
ওকে পরিয়েই আমার কাছে আসে আমার আঙুলে অপর আংটিটি পরিয়ে দিতে।

_দেখি জারা এদিকে এসো তো,
_আমার জন্য গিফট এনেছেন,নিতে তো হবেই।না নিলে মা আর আপনার ভাই আবার মন খারাপ করবে।
আমার হাতে দিন।
আমি নিজেই পরে নিবোনে।

অর্পন চেয়েছিলো ও আমাকে আংটিটা পরিয়ে দিবে।
কিন্তু আমি সেই সুযোগ না দিয়ে আংটিটা হাতে নিয়ে নেই।

অর্পনের মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

_আচ্ছা খালামণি আমি আজ তাহলে আসি।
খালু আবার কোথায় গেলো,ডাকো খালুকে দেখা করে যাই।

_তুই এসেছিস আর আজ তোকে আমি যেতে দিবো?
আজ তো তোকে থেকেই যেতে হবে।

_না খালামণি,মা অপেক্ষা করছে।
আজ আসি।
দুদিন পর কাপড় চোপর গুছিয়ে চলে আসবো লম্বা ছুটিতে কেমন?
_সত্যি তো?
_হুম একদম সত্যি।
_আচ্ছা তাহলে।

এরপর অর্পন সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

আমি রুমে গিয়ে আমার কানের দুল,গলার নেকলেস খুলে ছুড়ে ছুড়ে খাটে ফেলতে থাকি।
তখনই প্রত্যয় রুমে আসে।
ওকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে টিকলিটা খুলে রাখি।

_জারা
_জ্বী বলুন।
_থ্যাংক ইউ।
_কিসের জন্য?
আমার জন্য এত সুন্দর করে সব আয়োজন করার জন্য।
_এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।
ধন্যবাদ লাগবেনা।
_আচ্ছা বলো,কেমন দেখলে তমাকে?
দারুণ না দেখতে?
কত স্মার্ট বলো?
_হুম সুন্দর।
_আর কিছু বলবেনা?
_কি বলবো,অনেক সুন্দর।
_আমি তা বলিনি,আমি বললাম রাগছোনা যে?

একটু আগেও তো বললে আমি যেন ওর সাথে কোন রকম যোগাযোগ না রাখি।
আর এখন নিজের মুখে সুন্দর ও বলছো।

_কারো মনের উপর তো আর জোর করা যায়না তাইনা?
আপনি নিজে থেকে যোগাযোগ বন্ধ না করলে কি আমি জোর করে বন্ধ করাতে পারবো?

_তাও ঠিক।
_আচ্ছা আপনারা দুজন দুজনকে এতই যখন ভালবাসেন,তাহলে বিয়ে করলেন না কেন?
আমাকে কেন বিয়ে করলেন?
আমার জীবন টা কেন নষ্ট করলেন?
এখন তো ঠিকই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে নিজেরা এক হবেন।
আমার কি হবে ভেবে দেখেছেন একবার?

আমি ভেবেছি এত দিনে আপনার আমার প্র‍তি মায়া জন্মে গেছে।
আপনি আপনার অতীত পেছনে ফেলে আমাকে নিয়ে ভাবছেন।
কিন্তু আমার ধারণা ভুল।
সম্পূর্ণ ভুল।

আজকের পর আমি আর আপনাদের মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবোনা।
আপনি মুক্ত।
কবে ডিভোর্স দিতে চান জানাবেন।
আমি পেপারে সাইন করে দিবো।

কিন্তু আমার এই প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে যান,
আপনার যদি বিয়েতে মত ই না থেকে থাকে,তাহলে কেন করলেন আমাকে বিয়ে?

প্রত্যয় কোন উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আমি খাটের উপর শুয়ে পড়ে কাঁদতে থাকি।

দুদিন কেটে যায়।
প্রত্যয় আজ দুপুরে খিচুড়ি খেতে চেয়েছেন বলে আমি একমনে খিচুড়ি রান্না করছি।

হঠাৎ করে কিচেন রুমে কেউ একজন এসে আমাকে বলে,

_বাহ খিচুড়ি রান্না হচ্ছে।
কত দিন হয় এই মজার খিচুড়ি খাইনা।
আচ্ছা চ্যাপা শুটকির ভর্তাটা বানাবেনা?
_অর্পন,আপনি কেন এখানে এসেছেন?
চলে যান এখান থেকে।
_কেন?আমি থাকলে কি সমস্যা?
_অর্পন আপনি কি যাবেন নাকি আমি চলে যাবো?
_গিয়ে দেখাও পারলে।

এই কথা বলা মাত্র আমি চলে যেতে থাকি।
আর তখনই অর্পন আমার হাত টেনে ধরে কিচেন রুমের দেয়ালের সাথে আমাকে শক্ত করে এটে ধরে।

_কি করছেন আপনি?
_খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
আমি কিন্তু সবাইকে ডাকবো।
_ডাকো তো দেখি,চিল্লাও।
জোরে জোরে চিল্লাও।
বাঁচাও বাঁচাও কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও।
বলো বলো।
_অর্পন তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছো।
_আমি কোথায় ছাড়ালাম?
ছাড়িয়েছো তো তুমি।
দুনিয়ায় আর কোন ছেলে পাওনি?
আমার ভাইকেই কেন বিয়ে করতে হলো?
হুয়াই?

_তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করো,কেন তোমার ভাই আমাকে বিয়ে করেছেন।

অর্পন হাত ছাড়ো আমার।
কেউ দেখে ফেলবে।

_বউমা এই বউমা
_জ্বী মা,
_মা আসছেন,ছাড়ো আমাকে।

_খিচুড়ি হয়েছে বউমা?প্রত্যয় এসে গেছে।
_হ্যাঁ মা এই তো হয়ে গেছে।

_কিরে তুই এখানে কেন?
_খালামণি, খিচুড়ির ঘ্রাণে রান্নাঘরেই চলে এসেছি।
কি সুন্দর ঘ্রাণ বের হয়েছে দেখো দেখো।
_জারার হাতের খিচুড়ি অনেক মজা। খেয়ে দেখিস আজ।
_হ্যাঁ খালামণি অনেক মজা।
_তুই কিভাবে জানলি?
_ইয়ে মানে, এইতো খিচুড়ির ঘ্রাণেই তো বোঝা যাচ্ছে।

_মা আপনারা যান,গিয়ে বসুন।
আমি খিচুড়ি নিয়ে আসছি।

সবাই মিলে দুপুরে এক সাথে খাওয়াদাওয়া হয়।

সেদিন অর্পন থেকে যায় প্রত্যয়দের বাসায়।
কিছু দিন নাকি থাকবে এখানে।

রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি আর ভাবছি।
আগামীকাল আমাকে আমাদের বাসায় যেতে হবে
কিছু একটা বলে।
যেভাবেই হোক।
অর্পন এখানে থাকা মানে প্রতিনিয়ত আমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় থাকা।

ও যেদিন চলে যাবে এখান থেকে, সেদিন আসবো।

আর আমি আসলেই কি না আসলেই কি।
যার জন্য আমার এই বাড়ীতে থাকা তার কাছেই তো আমার কোন দাম নেই।
শুধু পড়ে আছি,আমার পরিবার আর প্রত্যয়ের বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।

যাইহোক,সকালে মাকে বলে চলে যাবো।
নয়তো অর্পন কখন কি কান্ড করে বসে তার ঠিক নেই।
.
.
_ওয়াও খিচুড়ি।জারামণি আমার জন্য আজ খিচুড়ি রান্না করেছে.
তাইতো বলি আজ আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন।খিচুড়ি রান্না করার জন্যই দেরি হয়েছে না?
_জ্বী জনাব জ্বী।

_উফফ তোমার হাতের খিচুড়ি আর চ্যাপা শুটকি ভর্তা কি যে দারুণ লাগে আমার।
_তাই না?
_হুম তাই।
কোন দিন তোমাকে ভুলে গেলেও তোমার খিচুড়ির আর চ্যাপা শুটকির ভর্তার কথা কোন দিন ভুলবোনা আমি।
_অর্পন (রেগে গিয়ে)
_জ্বীই।
আরে আরে মুখ গোমড়া করে ফেললে যে?
আমি ফান করেছি গাধী।ফান ও বোঝোনা?
তোমাকে ভুলবো কি করে আমি?
জারামণিকে কি ভোলা যায়?
এখন তাড়াতাড়ি লক্ষী মেয়ের মত খাইয়ে দাও তো আমায়।

_নাও হা করো।
_হায়ায়া

হঠাৎ করেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভাবনায় আমি আমার অতীতে চলে গিয়েছিলাম।

আর তখনই হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে,

_অর্পন ছাড়ো বলছি,ছাড়ো আমায়।এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,

পেছনে তাকাতেই আমার বুক কেঁপে উঠে।

_আমি অর্পন না জারা,আমি প্রত্যয়।

চলবে…

তোমায় প্রয়োজন পর্ব-০২

0

#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব
তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো কয়দিন পর।
এটাই আমার শেষ কথা।
_আর আমারো শেষ কথা শুনে রাখুন আমার আর আপনার মাঝে যে আসবে তাকে আমি…
_কি?
_পরের টা পরেই দেখতে পাবেন।
সেই মুহূর্তে প্রত্যয়ের ফোনে একটা কল চলে আসে,
ফোন টা রিসিভ করেই প্রত্যয় বলে,
_হ্যাঁ আমি এক্ষুনি আসছি।

আর তখনই আমি প্রত্যয়ের ফোন টা ওর হাত থেকে নিয়ে নেই।
আর বলি,কোথাও যাবেন না আপনি।
আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা।
প্রত্যয় রেগে গিয়ে বলেন ফোন টা দাও আমায়।
আমি ফোন টা ওর হাতে দেইনা বলে ও আমার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে চলে যায়।

আমি ভাবতে থাকি কি করবো আমি এখন।
আমার পরিবারে যদি জানাই তাহলে তারা কষ্ট পাবেন।
আর তার পরিবারে জানাতে তিনি নিষেধ করলেন।
আমি নিজেও তো তাকে আটকাতে পারলাম না।
কি করবো এখন আমি।

ঘন্টা খানেক পর প্রত্যয় আবার চলে আসেন।

_ফিরে আসলেন যে?
_আমার কোন বিষয়ে কথা বলবেনা কখনো তুমি।
_কে বলবোনা?আমি আপনার স্ত্রী।আমার অধিকার আছে।
_আমি তোমায় সেই অধিকার দেইনি।
তাই আমার কোন ব্যাপারে কোন রকম নাক গলাবেনা।

প্রত্যয় এই কথা বলেই খাটের এক পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমিও শুয়ে পরলাম অন্য পাশে।

সকাল হলো,
আমি উঠে ফ্রেশ হবার আগেই দেখি প্রত্যয় আম্মুর সাথে গিয়ে গল্প করছে।
আমি বুঝতেই পারিনা এই প্রত্যয়কে।
আমার সাথে কুস্তি,আমার পরিবারের সাথে কি সুন্দর দোস্তি।

আমার পরিবারের সবাই তো প্রত্যয়ের ব্যবহারে মুগ্ধ।
ফ্রেশ হয়ে আমরা সবাই সকালের নাস্তা করে নেই।

নাস্তা করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াই আমি।
পেছন থেকে প্রত্যয় এসে বলে,

_জানো,তুমি অনেক লাকী।
এমন একটা পরিবার পেয়েছো।
এমন পরিবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তোমার বাবা মা কত্ত মিশুক।তোমার মায়ের সাথে তোমার বাবা কি সুন্দর আচরণ করেন।

দুজনের কি সুন্দর ভাব।
আর অন্য দিকে আমার বাবা মা।
তাদের এক সাথে হাসতেও দেখিনি কোন দিন আমি।
কত লাকী তুমি।

আজ আপনি যা বলছেন,কোন একদিন আমাদের সন্তানও ঠিক একই কথা কাউকে বললে আপনি খুশি হবেন?

প্রত্যয় কোন কথা না বলে চলে যায়।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে প্রত্যয় আমাকে রেডি হতে বলে ওদের বাসায় যাবার জন্য।

_কি হলো এখনো রেডি হওনি তুমি?
_আমি যাবোনা।
_মানে কি?
_মানে আপনি বুঝেন না?
যেখানে আপনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদাই দিবেন না।
সেখানে গিয়ে আমি কি করবো?
_তোমাকে তো বলেছি এখন না।
কয়েক দিন পর এক বারে চলে এসো।
এখন কোন রকম ঝামেলা করোনা।
নইলে বাবা কি যে করবেন তা তোমার ধারণার বাইরে।

_আপনি চান আমি আপনার বাড়ীর বউ হবার অভিনয় করে যাই নাহ?
_হ্যাঁ অল্প কিছু দিন।
তারপর আমিই তোমায় মুক্তি দিয়ে দিবো।
_আমি যদি আজ আপনার বাসায় প্রবেশ করি,তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার জীবন থেকে সরবোনা।
মাথায় রাখবেন কথা টা।

এই বলে আমি রেডি হয়ে নিলাম।
আর সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম প্রত্যয়ের বাসায়।

পরের দিন থেকে শাশুড়ী মা সংসার আমার হাতে তুলে দিলেন।
আর বললেন,আজ থেকে এ পরিবার এবং সংসারের দায়িত্ব তোমার।

বাবাও আমাকে বেশ ভালবাসেন।
বাইরে গেলেই কিছু না কিছু নিয়ে আসেন আমার জন্য।

কিন্তু তিনি যে খুব রাগী তা প্রত্যয় আর মাকে দেখলেই বোঝা যায়।
তাকে দেখলেই তারা দুজন যেন ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে যান।

প্রত্যয় বাসায় থাকাকালীন প্রায়ই ফোনে কথা বলেন আমার আড়ালে গিয়ে।
আমি না করলেও আমার কোন কথা শুনেন না তিনি।

এর মধ্যে আমি তাকে ইম্প্রেস করার জন্য মায়ের কাছ থেকে জেনে তার পছন্দের খাবার রান্না করি প্রতিদিন।

তার জন্য সাজগোজ করে বসে থাকি।
কিন্তু তিনি আমার দিকে ফিরেও তাকান না।

দেখতে দেখতে প্রায় এক মাস কেটে যায়।
আমি আমার চেষ্টায় বিফল হই।
তাই সিদ্ধান্ত নেই আমি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাবো।
প্রত্যয় তাকে নিয়েই ভালো থাকুক যাকে সে ভালবাসে।

তাই একদিন সকালে আমি বেডের পাশে এক টুকরো কাগজে কয়েক টা লাইন লিখে বাড়ী ছেড়ে চলে যাই।

কিন্তু রাস্তায় যেতেই আমার এক্সিডেন্ট হয়।
আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
আর আমার মোবাইল থেকে কেউ একজন প্রত্যয়ের কাছে ফোন দেয়।
প্রত্যয় তখনই চলে আসেন হসপিটালে যেই হসপিটালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এক্সিডেন্টে আমার তেমন কোন ক্ষতি না হলেও ডান পা টা মচকে যায়।
কিছু টা সুস্থ অনুভব করলে ডাক্তার আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
আর বেড রেস্ট দিয়ে দেন।বলেন কিছু দিন রেস্টে থাকতে হবে।
পায়ে ভর দেয়া যাবেনা।

প্রত্যয় আর প্রত্যয়ের পরিবার তাদের বাসায় নিয়ে যান আমায়।
আমার পরিবার সেবা যত্ন করার জন্য আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেও প্রত্যয় আমাকে নিতে দেন না।

প্রত্যয় নিজেই আমার খেয়াল রাখতে শুরু করেন।
আমাকে ধরে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে।
আমার চুল বেধে দেয়া,আমাকে খাইয়ে দেয়া,সময় মত ওষুধ খাওয়ানো।সব ই করেন তিনি।

আর সব শেষে প্রতি রাতেই এই বলে ঘুমান,
এগুলো কিন্তু আমি মানবতার খাতিরে করছি।
অন্য কিছু ভেবোনা যেন।

আর আমি তাকে বলি,
আমি সুস্থ হলেই চলে যাবো চিন্তার কোন কারণ নেই।

কয়েক দিনের মধ্যেই আমি সুস্থ হয়ে যাই।
কেন যেন মনে হচ্ছে প্রত্যয়ের মনে এ কয়দিনে আমার জন্য মায়া জন্মে গেছে।
তার চোখে মুখে আমি আমার জন্য মায়া দেখতে পাই।

এর মধ্যেই প্রত্যয়ের জন্মদিন।
মা আর আমি মিলে সব কিছু প্ল্যান করে তার জন্মদিনের আয়োজন করি।

তার পছন্দের কেক আনি।
তার পছন্দ মত সব কিছু সাজাই।
রান্না করি।
ছোট খাটো একটা পার্টির আয়োজন করা হয়।

তিনি তার কয়েক জন বন্ধু বান্ধবীকেও দাওয়াত করেন।
এর মধ্যে একজন হচ্ছে তমা।
যে কিনা খুব বেশিই স্মার্ট।

জন্মদিনের প্রোগ্রামে এই মেয়েই খুব কাছে কাছে থাকছে প্রত্যয়ের।
তার মানে এই মেয়েই হচ্ছে তার প্রেমিকা।
যখনই এই দুজন একত্র হয় আমি গিয়ে তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পরি।
কাছাকাছি এসে কথা বলার সুযোগ দেইনা।
আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে এদের পাশাপাশি দেখে।

একটা পর্যায়ে তো এই মেয়ে আমাকে বলেই ফেল্লো,এই মেয়ে তুমি আমার আর প্রত্যয়ের মাঝখানে এসে দাঁড়াচ্ছো কেন বার বার?

আমি তো রেগেমেগে আগুন,

_আমার বরের কাছে আমি আসবোনা তো কে আসবে?
_সবাই ওখানে এক সাথে মজা করছে।
আর আপনি আমার বরের সাথে এখানে
ওকে নিয়ে এসে চিপকে আছেন।
কেমন মেয়ে আপনি?অন্যের স্বামীর গা ঘেসাঘেসি করতে লজ্জা করেনা?

_তুমি জানো আমি কে?
_না জানিনা,আর জানার ইচ্ছেও নেই।
শুধু জানি এই মুহূর্তে আপনি আমার বরের থেকে চার হাত দূরে দূরে থাকবেন।
আর খাওয়াদাওয়া করে চুপচাপ করে চলে যাবেন।
_তোমার সাহস তো কম না।
আমি তমা,প্রত্যয়ের ভালবাসার মানুষ।
তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন ব্যবহার করার?
প্রত্যয় তুমি কিছু বলবেনা?

_জারা,তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো।
যাও এখন এখান থেকে।
_দাঁড়ান আমি বাবাকে ডেকে আনি।
আর বলি আপনার এই কর্মের কথা।
আর আজ আমি সব কিছু বলে দিবো তাদের।
যাচ্ছি।

_এই শোনো শোনো,
আমার আজকের এই দিন টা নষ্ট করে দিবে?
আমি তমার থেকে দূরে সরতেছি।
তুমি যাও আমার জন্য এক গ্লাস জুস নিয়ে এসো।
আমি তমার সাথে একটু কথা বলে আসছি।
প্লিজ আমার আজকের দিন টা মাটি করে দিও না।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
শুধু আজ আপনার জন্মদিন বলে আমি কাউকে কিছু জানালাম না।
কিন্তু ওকে আপনার থেকে দূরে যেতে বলুন।
আর আপনিও ওর সাথে কোন রকম আর যোগাযোগ করবেন না।
নইলে আমি বাসায় সবাইকে সব জানিয়ে দিবো।

এই বলে আমি প্রত্যয়ের জন্য জুস আনতে চলে যাই।
জুস নিয়ে প্রত্যয়ের কাছে আসতেই
আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।
হাত থেকে জুসের গ্লাস টা পরে যায়।
আর অস্পষ্ট কন্ঠে আমি বলে উঠি,
_অর্পন…

চলবে…

তোমায় প্রয়োজন পর্ব-০১

0

#তোমায়_প্রয়োজন।
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#প্রথম_পর্ব

বিয়ের রাতে হঠাৎ করেই আমার বর এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।এক ধাক্কায় আমি গিয়ে পড়ি বেলকনির গ্রিলে।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাই আমি।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে এসব।
এমনিতেই মন খারাপ।পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এসেছি।তার উপর তার এমন ব্যবহার তো আমি কল্পনায় মেনে নিতে পারছিনা।
সারারাত কেটে যায় আমার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে।
তবুও তিনি দরজা খুলেন নি।এত ক্ষণে কপাল ফুলেও উঠেছে আমার।
সকাল বেলা বাসার লোকজন ডাকাডাকি করায় প্রত্যয় এসে দরজা খুলে দেয়।
আর আমাকে ডেকে বলে,রাতের ঘটনা যেন বাসার কেউ জানতে না পারে।সবাই যেন ভাবে আমাদের মধ্যে সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো।

আমি তার দিকে মাথা তুলে তাকাতেই সে বলে উঠে,

ইশ!কপালে কি হয়েছে?
ওহ হো!
গ্রিলে ব্যথা পেয়েছো?
আই এম সো সরি।
আমি আসলে বুঝে উঠতে পারিনি।তুমি যে এইভাবে আঘাত পাবে।

আমি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে যাই।ফ্রেশ হয়ে অন্য একটা শাড়ী পরে চলে যাই নিচ তলায়।

বাসার সবাই এসে ভীর জমায় আমাকে দেখে।
আজ আমাদের বউভাতের প্রোগ্রাম।
আমার শাশুড়ী মা এসে বললেন,
বউমা!
তোমার কপালে কি হয়েছে?
কিভাবে মাথায় আঘাত পেলে?
আমি চুপ করে আছি দেখে,প্রত্যয় হাসতে হাসতে এসে বলে,
মা ও কাল খাট থেকে ঘুমের মধ্যে পড়ে গিয়ে কপাল ফুলিয়েছে।

শাশুড়ী মা প্রত্যয়কে ধমক দিয়ে বলেন,
এটা কি কোন হাসির কথা?
আজ থেকে বউমাকে ওই পাশে শুতে দিবি।
আর তুই এ পাশে শুবি।

প্রত্যয়ের মিথ্যে কথা সহজসরল শাশুড়ী মা বিশ্বাস করে নেন।

আমাকে তাড়াতাড়ি নাস্তা এনে দিয়ে বলেন,
এই নাও মা।
তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
একটু পরেই পার্লারের লোকজন তোমাকে সাজাতে চলে আসবে।

আমি কোন রকম অল্প একটু খেয়ে নিলাম।
একটু পরেই পার্লারের দুই আপু চলে আসেন আমাকে সাজাতে।
আমার সাজ যখন পুরোপুরি কমপ্লিট তখন প্রত্যয় ওর ড্রেস নেয়ার জন্য রুমে আসে।

প্রত্যয় আমার দিকে কিছু ক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছু ক্ষণ পরে বলে উঠে,

এত সেজে কি হবে?
আমার তো এতে কিছু যায় আসেনা।
তুমি সাজলেও যা,না সাজলেও তা ই আমার কাছে।

এ কথা বলেই প্রত্যয় রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আমি শুধু অবাক হয়ে ভাবতে থাকি,তিনি কেন করছেন এরকম আমার সাথে।

প্রত্যয়ের আত্মীয় স্বজন সবাই খাওয়া দাওয়া করে এসে এসে আমাকে দেখে যাচ্ছেন আর প্রশংসা করে আমার শাশুড়ী মাকে বলে যাচ্ছেন,বউ তো অনেক সুন্দর এনেছো।

এত বড় বাড়ীটা আজ আলোকিত লাগছে।পরিপূর্ণ লাগছে।
আমার শাশুড়ীও অনেক খুশি তাদের প্রশংসায়।

আমার শশুড় এসে হঠাৎ করেই বলে উঠলেন আমার বউ মাকে যে এভাবে বসিয়ে রেখেছো,আমার বউ মা কি খেয়েছে?
শাশুড়ী মা ধীর কন্ঠে বললেন,ইশ ভুল হয়ে গেছে।
পার্লারের সাজের চক্করে তো ওকে খাওয়ানোই হয়নি।

বাবা এবার রেগে গিয়ে বললেন,
প্রত্যয় এই প্রত্যয়,

এবার প্রত্যয় যেন ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসলেন।
_জ্বী বাবা।
_তোমার বিয়ে করা স্ত্রী এখনো খায়নি এই খেয়াল আছে?
স্ত্রীর খবর রাখা শিখো।
এখন থেকে ওর খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব।
মনে থাকে যেন।

প্রত্যয় মাথা নিচু করে উত্তর দিলেন,
_জ্বী বাবা।

এত ক্ষণে এই টুকু বুঝতে পারলাম,প্রত্যয় এবং শাশুড়ী মা বাবাকে অনেক ভয় পান।

শাশুড়ী মা খাবার এনে আমাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলেন।

প্রত্যয় আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলেন যেন না জানি কত দিনের শত্রুতা তার সাথে আমার।

সন্ধ্যা প্রায়,আমার বাসার লোকজনও খাওয়াদাওয়া করে নিয়েছেন।
এখন আমাকে আর প্রত্যয়কে নিয়ে যাবেন তাদের সাথে করে আমাদের বাসায়।

শাশুড়ী মা এসে প্রত্যকে তৈরি হতে বলায় প্রত্যয় রেগে বলে উঠেন,

_আমি যাবোনা ওই বাসায়।
যার বাসা তাকে যেতে বলো।
সে যাক।
আমি গিয়ে কি করবো ওখানে?

আর তখনই বাবা এসে বলেন,

_প্রত্যয়,তুমি কি কিছু বললে?
_না বাবা,আমি রেডি হচ্ছি ওই বাসায় নাকি যেতে হবে।
_হ্যাঁ তাড়াতাড়ি রেডি হও তারা অপেক্ষা করছেন।
আর ওখানে গিয়ে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করবে।
মনে থাকবে?
_জ্বী আচ্ছা।

এরপর আমরা বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

আজ আমাদের বাসায় ও আমার রুম টা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সবাই।
খাট টাও সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।

আমরা বাসায় যেতেই আশেপাশে থেকে অনেকেই আমাদের দেখতে আসেন।
আমার কাজিনরা এসে প্রত্যয়ের সাথে দুষ্টুমি করে।

প্রত্যয় আমাদের বাড়ীর সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন।
এমনকি আমার বাবা মায়ের সাথেও।

শুধু মাত্র আমার সাথে ছাড়া।
আমি এটাই বুঝলাম না,আমি কি করলাম।

রাতে সবার সাথে খাওয়াদাওয়া করে আমরা আমাদের রুমে যাবো।
সেই মুহূর্তে আমার ছোট ভাই বোনেরা প্রত্যয়ের কাছে ৫০০০ টাকা দাবি করে বসে।
তাহলে নাকি রুমে ঢুকতে দিবেনা।
ওরা খুব কষ্ট করে নাকি রুম সাজিয়েছে।

প্রত্যয় ভদ্র ছেলের মত কোন ঝামেলা ছাড়াই হাসতে হাসতে ওদের ৫০০০ টাকা দিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন।

আমিতো অবাক।
আমিতো ভেবেছি এই ছেলে এখনই রাগ করে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন কিনা।

নাহ উনাকে তো বুঝতেই পারছিনা আমি।

আমরা দুজন রুমে ঢুকি আর সবাই চলে যায়।
আমি খাটে গিয়ে বসতেই প্রত্যয় আমাকে বলে,

_এই উঠো খাট থেকে।
আজ এই খাট আমার।
তুমি কেন এই খাটে বসছো?
_মানে?
_মানে আবার কি?
আজ এই খাট আমার।
_এহ বললেই হলো,সারাজীবন থাকলাম আমি।
উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছে এখন আরেকজন।
রুম আমার খাট আমার সব আমার।
আমি বসবো শুবো যা খুশি তাই করবো।

এই বলে আমি খাটে উঠে বসে পড়লাম।

_তাহলে আমি কই থাকবো?
_আপনি খাটের এক পাশে থাকতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই।
_কিন্তু আমার সমস্যা আছে।
_কি সমস্যা?
_আমি শুবো না তোমার সাথে।
_আমি আপনার বিয়ে করা বউ।ভুলে গেলেন নাকি?
_কিসের বউ?
আমি তো তোমায় বউ বলে মানিনা।
আর না কোন দিন মানবো।
_কি বলছেন এ সব?
_যা শুনেছো ঠিক ই শুনেছো।
আমি তোমায় কোন দিন আমার বউ বলে স্বীকৃতি দিতে পারবোনা।
_আমার অপরাধ?
_তোমার কোন অপরাধ নেই।
_তাহলে?
_এত প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।
কয়েক টা দিন যাক আমি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
কয়টা দিন সময় দাও আমায়।
_আপনার মাথা ঠিক আছে?
কি বলছেন এসব আপনি?
_আমি চাইনা এই বাসায় কোন রকম সিনক্রিয়েট করতে প্লিজ চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আর কয়েক টা দিন একটু আমার বউ এর অভিনয় করে যাও।
আমার বাবা মা যেন বুঝতে না পারেন।
তারপর আমি তোমায় সময় মত মুক্ত করে দিবো।
আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করোনা।
আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে,এখন তুমি খাটে শুয়ে মুখ ফিরেয়ে কান্না করবে।
যাও করো,মন টা একটু হালকা হবে।
আসলে তোমার কোন দোষ নেই।
দোষ আমারই।

_এখন আপনি বলবেন, আপনি আরেকটা মেয়েকে ভালবাসেন তাইতো?

আর তাই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওই মেয়েকে আপনি বিয়ে করবেন তাইনা?
আর আমিও কাঁদতে কাঁদতে তার হাতে আমার স্বামীকে তুলে দিবো।

এই যে মিঃকান খুলে শুনুন।
আমি ওই সব মেয়ের মত না ঠিক আছে?
যে ন্যাকা কান্না কেঁদে নিজের স্বামীকে অন্যের হাতে তুলে দিবো।

আমি আমিই।
আমি আমার কোন কিছুর ভাগ অন্য কাউকে দেইনা।
আর স্বামীর ভাগ দিবো?
অসম্ভব।

প্রেম ভালবাসা যা ছিলো,সব বিয়ের আগে ছিলো।
এখন থেকে আমি আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।
খবরদার আর যদি ওই মেয়ের সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখেন।
আমার চেয়ে ভয়ংকর আর কেউ হবেনা।

_কি করবে তুমি?
ভয় দেখাও আমাকে?
আমার এক কথা।
তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো কয়দিন পর।
এটাই আমার শেষ কথা।
_আর আমারো শেষ কথা শুনে রাখুন আমার আর আপনার মাঝে যে আসবে তাকে আমি…
_কি?
_পরের টা পরেই দেখতে পাবেন।

সেই মুহূর্তে প্রত্যয়ের ফোনে একটা কল চলে আসে,

ফোন টা রিসিভ করেই প্রত্যয় বলে,
_হ্যাঁ আমি এক্ষুনি আসছি।

আর তখনই…

চলবে..