Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 326



হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১৮+১৯

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৮
#ফারিহা_খান_নোরা
‘আমার নাম খালেদ মনোয়ার।আমি আফসানের বাবা।’

ভদ্রলোকের কথাটি মির্জা বাড়ির লিভিং রুমে বা’জ পড়ার মতো প’ড়ে।ভ’য়ে আশা বেগমের শরীর থরথর করে কাঁ’প’ছে।যে কেউ দেখে বলবে মৃ’গী রোগী। সিতারা বেশ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভ স্বাভাবিক ভাবেই খাবার খেয়ে যাচ্ছে।জেনো এসব তার আগে থেকেই জানা।তুর‌ অবাক চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। ইলিয়াস মির্জা ঠাট্টার স্বরে বলে,

‘আপনি কে ভাই কোথায় থেকে এসেছেন? আফসান কি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে যে, নিজেকে তার বাবা বলে দাবি করছেন আশ্চর্য!’

খালেদ মনোয়ার আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে,

‘শুধু আপনার ছেলেকে নিজের ছেলে বলেই দাবি করছি না,বরং আপনার ব‌উকেও নিজের ব‌উ বলে দাবি করছি।’

‘আপনি পাগল নাকি এসব কি বলছেন।আমার ব‌উ আপনার ব‌উ হতে যাবে কেন?’

খালেদ মনোয়ার এবার তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,

‘যেভাবে আফসান আমার ছেলে হয়েছে ঠিক সেই ভাবে। আফসানের জন্মদাতা আমি।’

আশা বেগম এবার আর চুপ থাকলো না। কম্পনরত কন্ঠে বলে,

‘আফসানের বাবা তুমি এই পা’গ’লে’র কথা শুনছো কেনো।কথা শুনেই বুঝা যায় এই লোকটা একটা পা’গ’ল। তুমি দাড়োয়ান ডেকে এই পা’গ’ল’টাকে বাড়ি থেকে বের করে দেও।’

খালেদ মনোয়ার আশা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুমি আমায় চিনো না আশা?’

আশা বেগম ভ’য়ে ঢুক গিলে তারপর কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘আমি আপনার মতো পাগলকে কিভাবে চিনবো?’

খালেদ মনোয়ার এবার বেশ রে’গে যায়।সে চোখের পলকে আশা বেগমের কাছে এসে তাঁর হাত মু’চ’ড়ে ধ’রে বলে,

‘চুপ একদম চুপ! ন’ষ্টা মহিলা, আমার কাছে শু’ই’তে তোর আমাকে পা’গ’ল মনে হয় না।যখন সত্য কথা বলছি তখন পা’গ’ল মনে হয় ? তোকে কয়দিন হলো ফোন দিয়ে বলছি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আয় তুই আমার কথা শুনেছিস?’

এসব দেখে ইলিয়াস মির্জা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাঁর পুরো পৃথিবী অ’ন্ধ’কা’র হয়ে যায়।বু’ড়ো বয়সে এসে স্ত্রীর সম্পর্কে এসব শুনতে কারো ভালো লাগে। জীবনের চব্বিশ বছর ধরে জেনে এসেছে আফসান তার ছেলে অথচো এই লোকটি জোর দিয়ে বলছে তাঁর ছেলে।তিনি দ্রুত আশাকে খালেদের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা আড়াল করে,কিঞ্চিত আশা নিয়ে বলে,

‘আপনার কোথাও ভু’ল হচ্ছে।সে আমার স্ত্রী।’

খালেদ সাহেব জো’রে হাসতে শুরু করেন।হাসি থামিয়ে বলে,

‘যে মানুষ এতো গুলো বছর ভু’ল জেনে একটা ন’ষ্টা মহিলার সাথে সংসার করেছে আবার অন্যের বাচ্চা কে নিজের বাচ্চা মনে করে এতো বড় করেছে সে নাকি আমার ভু’ল ধরছে হাস্যকর!’

ইলিয়াস মির্জা রা’গা’ন্বি’ত অবস্থায় বলে,

‘আপনি এসব বলছেন ওর নামে।আপনার কাছে এসবের কোনো প্রমাণ আছে। আপনার মুখের কথা তো আমি বিশ্বাস করবো না,প্রমাণ লাগবে।কিসের ভিত্তিতে আপনি ওর নামে এসব বলছেন?’

খালেদ মনোয়ার আশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

‘আফসানের জন্মদাতা বাবা আমি।আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও আপনার স্ত্রী আমার বাড়িতে গিয়েছিল। কেন গেছে আমি এসব মুখে বলতে পারবো না,আপনি বুজে নেন।যে মহিলা এই বয়সে এসেও পর পুরুষের টান ছাড়তে পারে নি,সে কখনো ভালো হবে না।’

এসব বলে খালেদ মনোয়ার তাঁর হাতের স্মার্ট ফোনে একটা ভি’ডি’ও অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দিতে নেয়।আশা বেগম বুজতে পারে এটা কিসের ভি’ডি’ও,সে দ্রুত গতিতে এসে মোবাইলটার উপর থা’বা মা’রে।ফলাফল স্বরূপ ফোনটি নিচে প’ড়ে যায়।আশা বেগমের আচারণে ইলিয়াস মির্জার বুজতে দেরি হয় না,আসলে লোকটি সব সত্য বলছে।আশা বেগম ফোনটি তুলেতে নিলে খালেদ মির্জা তাকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ফোনটি অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দেয়। আশা বেগম নিচে পা’ড়া অবস্থায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,

‘খালেদ তুই বড় ভু’ল করছিস।আমি তোকে ছা’ড়’বো না, নিমক হারাম তুই আমার থেকে এ যাবৎ লাখ লাখ টাকা নিয়েছিস বিষয়টা গো’প’ন রাখবি বলে।আজ তুই এসব বলতে পারলি? তুই যখন টাকা চেয়েছিস তখনই দিয়েছি,যখন ডেকেছিস তখনই গিয়েছে।হা’রা’মী’র বাচ্চা,স্বার্থপর তোর জন্য‌ই আজ আমার এই অবস্থা।’

‘এই তো পাখি পথে এসেছো।একটু আগেই না বললে তুমি আমায় চিনো না,আমি নাকি পা’গ’ল।এসব বলতে বলতে খালেদ মনোয়ার আশা বেগমের কাছে যেয়ে বসে তার গালে হাত দিয়ে বলে,

‘এসব কিছু তোর থেকে শিখেছি ময়না পাখি। তুই নিজের স্ব’র্থে’র জন্য বান্ধবীকে কাজে লাগিয়েছিস।তুই টাকা কি এমনি এমনি দিয়েছিস? নিজের এসব অ’প’ক’র্ম লুকাতে দিয়েছিস।আফসানকে তুই খা’রা’প বানিয়েছিস। তোর জন্য‌ই আফসান আজ জেলে। নারী পা’চা’র’কা’রী চ’ক্রে’র আসল মাথা হলো তুই।এসব কিছু জানতাম বলেই আমার মুখ বন্ধ করতে তুই টাকা দিতি।আর কি জেনো বললি,আমি ডাকলেই তুই সাড়া দেস।কেন দেস কারণ ফুর্তি করতে,এই বয়সে এসেও যা শরীর বানিয়েছিস কি আর বলি। যাইহোক আমার মনে হলো আমি এসব কিছু ভুল করেছি, সত্য সবার জানা উচিত সেজন্য আজ সবকিছু খুলে বললাম কারণ তোর পাপের ফল আমার ছেলে ভো’গ করছে।’

‘ইলিয়াস মির্জার হাতে আশা ও খালেদার অ’ন্ত’র’ঙ্গ মুহূর্তের ভি’ডি’ও চলছে। তারমধ্যে এসব জ’ঘ’ন্য কথা ইলিয়াস মির্জা আর নিতে পারলেন না,সে হাতের ফোনটা ফেলে বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে প’ড়ে।’

শশুড়ের সামনে তুরের এসব শুনতে লজ্জা লাগছে।সে উপায় না পেয়ে উপরে যেতে নেয় তখনি ইলিয়াস মির্জার এমন অবস্থা দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় তুর কিন্তু তাঁর আগেই নিষ্প্রভ তুরকে বাঁধা দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলে,

‘তুমি যেও না,উনাকে একা সামলিয়ে উঠতে দেও।’

তুর তবুও যেতে নেই। নিষ্প্রভ তুরের হাত শক্ত করে ধরে রাখে।কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,

‘কথায় আছে না? মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি।এখন দেখছি ছেলের থেকে ছেলের ব‌উয়ের দরদ বেশি।তোমাকে বলছি না,চুপচাপ থাকতে।’

আশা বেগম হাউমাউ করে কা’ন্না করছে।এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য এভাবে সবার সামনে আসবে সে ভাবতেই পারছে না। এতোদিন ধরে সে বাড়িতে ও বাহিরে দু জায়গাতেই সমপরিমাণে রাজত্ব করেছে।তার রাজত্ব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। ইলিয়াস মির্জা কাঁপা কাঁপা হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।পুলিশকে ফোন করে ও গার্ডদের বলে বাড়ির মেইন গেট সব বন্ধ করে দিতে জেনো অ’প’রা’ধী কোনো ভাবে না পা’লা’তে পারে।খালেদ মনোয়ার এর যাওয়ার কোনো তাড়া নেই।বরং সে আরেকটা বো’ম ব্লা’স্ট করার মতো কথা বলল ফেলে। ইলিয়াস মির্জাকে বলে,

‘আপনার ছেলে আর তুরের বিয়ে কোনো কাকতালীয় ঘটনা না।সেই দিন যা হয়েছিল সব এই মহিলা আফসান ও তুরের মায়ের প্ল্যান। তুরের মা এদের হাতের গুটি মাত্র।এই মহিলা তুরের মাকে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করে সব করাতো।ঠিক তেমন সেই দিন আফসানের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এসব প্ল্যান করে ওঁরা তিন জন। কিন্তু ভাগ্য ভালো বলে আফসানের জায়গায় সেদিন অই রুমে কোনো ভাবে নিষ্প্রভ ঢুকে পড়ে যার জন্য বিয়েটা নিষ্প্রভের সাথে হয়।মেয়েটার ভাগ্য ভালো বলা চলে নয়তো এই মহিলা অই মেয়েকে দিয়েও ব্যা’ব’সা করাতো।’

শেষের কথা তুরকে দেখিয়ে দিয়ে বলে।তুরে মাথা ঘুরে,এক দিনে এতো গুলো সত্য সে মেনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।শরীরের ভার সামলাতে না পের পড়তে নেই তার আগেই নিষ্প্রভ ধরে ফেলে।তুর সে অবস্থায় নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনোভাব বুজতে চেষ্টা করছে।

খালেদ মনোয়ার আবারও বলতে শুরু করে,

বরাবরের মতো আপনি নিষ্প্রভকে ভুল বুঝেন।কারণ এই মহিলাটা শুরু থেকেই নিষ্প্রভের নামে আপনার কানে বি’ষ ঢেলেছে আর আপনিও অল্প বয়সী ব‌উয়ের প্রতি অ’ন্ধ হয়ে তার সব কথা সত্য বলে মেনে নেন।আজ তো বুজতে পারছেন এই মহিলা ভালোবেসে আপনার কাছে নেই, শুধু মাত্র টাকার জন্য আছে তা না হলে এই বয়সে এসেও আমার কাছে যায়? কতো মেয়ের জীবণ এই মহিলা ন’ষ্ট করেছে জানেন? আপনি ওকে পুলিশে তুলে দেওয়ার মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ওর মতো মহিলার স্থান জেলে।

‘নিজের করা ভুল অন্যের মুখে শুনে ইলিয়াস মির্জার নিজের প্রতি ঘৃ’ণা হয়।সে আশা বেগমের কাছে যেয়ে তাঁর চুলের মু’ঠি ধরে বলে,

‘দুঃচরিত্রা মহিলা! তুই আমার সাথে এমনটা কিভাবে করলি? তোকে আমি বিশ্বাস করে নিজের ছেলেকে অবধি দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর সেই তুই কিনা আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি? বে’ই’মা’ন, ন’ষ্ট মহিলা।আরে তোর থেকে একজন ব্যা* ও ভালো আছে। তাঁরা জীবিকার তাগিদে এসব করে আর তুই! তোর কিসের অভাব বল? তুই আমার ছেলেকে আমার থেকে সরিয়ে দিয়েছিস কাল নাগিনী।তোকে আমি শেষ করে দিবো।’

আশা বেগম ব্যা’থা’য় চিৎ’কা’র করে উঠে।অই অবস্থাতেই ইলিয়াস মির্জার পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘আফসানের বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে দয়াকরে তুমি আমায় ক্ষমা করে দেও। আমি জেলে যেতে চাই না।আমাকে ধরিয়ে দিও না। আমি আর এসব করবো না।’

ইলিয়াস মির্জা গ’র্জে উঠে আশা বেগমকে থা’প’ড়া’তে থাকে আর বলে,

‘খবরদার আমাকে আফসানের বাবা বলে ডাকবি না।তোর মুখে এই ডাক জেনো আমি আর না শুনি।ন’টি কোথাকার তোর আফসানের বাবা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁকে বল।আর কি করবি না তুই হ্যা? এখনো কিছু করা বাকি রেখেছিস তুই বল? তোকে ছেড়ে দিলে আমি আমার বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।’

এরমধ্যে পুলিশ চলে আসে। ইলিয়াস মির্জা আশা বেগমকে নিয়ে যেতে বললে আশা বেগম হঠাৎ করে দৌড়ে এসে একটা পুলিশের থেকে রি’ভ’ল’বার নিয়ে নিষ্প্রভের দিকে তাক করে বলে,

‘আমাকে যেতে দিন নয়তো এই ছেলেকে গু’লি করে দিবো।যেখানে আমার ছেলে ও আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবো না,সেখানে এই ছেলে রাজত্ব করবে এ আমি কিছুতেই হতে দিবো না।’

ইলিয়াস মির্জা, খালেদ বার বার আশা বেগম কে রি’ভ’ল’বার নামাতে বলে এসব পা’গ’লা’মি থামাতে বলে।তুর নিষ্প্রভের খুব কাছে ছিলো ভ’য়ে কাঁ’প’ছে ,তার কলিজা শুকিয়ে আসছে। নিষ্প্রভ নিজের কাছে থেকে তুরকে ধা’ক্কা দিয়ে দূ’রে ফে’লে দেয়। আশা বেগম এবার নিষ্প্রভকে ভালো ভাবে টার্গেট করে। অন্য পুলিশ তার রি’ভ’ল’বার তাক করে আশার দিকে। আশা লক্ষ করে সেই পুলিশকে রি’ভ’ল’বার রাখতে বলে আর তাকে যেতে দিতে বলে নয়তো নিষ্প্রভকে গু’লি করে দিবে। পুলিশ গুলো কথা না শুনে চারিদিকে থেকে ঘিরে ধরে।এদিকে নিষ্প্রভ নড়তে পারছে না, একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই তার মৃ’ত্যু আজ অবধারিত।নিচে পড়া তুরের বেদনাদায়ক মুখটা বার বার তার চোখে ভাসছে। আচ্ছা আজ এই গু’লি’তে সে মা’রা গেলে তুর কি কান্না করবে, তারজন্য কষ্ট পাবে নাকি অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করে তাঁর সংসার করবে!’

এসব ভাবতে ভাবতে একজন কনস্টেবল আশা বেগমের দিকে এগিয়ে আসতে নেয় ঠিক তখনই আশা বেগম তাঁর টার্গেট অনুযায়ী নিষ্প্রভের মাথা বারাবর গু’লি ছোড়ে।বি’ক’ট শব্দে মির্জা বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।’

চলমান।

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৮
#ফারিহা_খান_নোরা
‘আমার নাম খালেদ মনোয়ার।আমি আফসানের বাবা।’

ভদ্রলোকের কথাটি মির্জা বাড়ির লিভিং রুমে বা’জ পড়ার মতো প’ড়ে।ভ’য়ে আশা বেগমের শরীর থরথর করে কাঁ’প’ছে।যে কেউ দেখে বলবে মৃ’গী রোগী। সিতারা বেশ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভ স্বাভাবিক ভাবেই খাবার খেয়ে যাচ্ছে।জেনো এসব তার আগে থেকেই জানা।তুর‌ অবাক চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। ইলিয়াস মির্জা ঠাট্টার স্বরে বলে,

‘আপনি কে ভাই কোথায় থেকে এসেছেন? আফসান কি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে যে, নিজেকে তার বাবা বলে দাবি করছেন আশ্চর্য!’

খালেদ মনোয়ার আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে,

‘শুধু আপনার ছেলেকে নিজের ছেলে বলেই দাবি করছি না,বরং আপনার ব‌উকেও নিজের ব‌উ বলে দাবি করছি।’

‘আপনি পাগল নাকি এসব কি বলছেন।আমার ব‌উ আপনার ব‌উ হতে যাবে কেন?’

খালেদ মনোয়ার এবার তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,

‘যেভাবে আফসান আমার ছেলে হয়েছে ঠিক সেই ভাবে। আফসানের জন্মদাতা আমি।’

আশা বেগম এবার আর চুপ থাকলো না। কম্পনরত কন্ঠে বলে,

‘আফসানের বাবা তুমি এই পা’গ’লে’র কথা শুনছো কেনো।কথা শুনেই বুঝা যায় এই লোকটা একটা পা’গ’ল। তুমি দাড়োয়ান ডেকে এই পা’গ’ল’টাকে বাড়ি থেকে বের করে দেও।’

খালেদ মনোয়ার আশা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুমি আমায় চিনো না আশা?’

আশা বেগম ভ’য়ে ঢুক গিলে তারপর কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘আমি আপনার মতো পাগলকে কিভাবে চিনবো?’

খালেদ মনোয়ার এবার বেশ রে’গে যায়।সে চোখের পলকে আশা বেগমের কাছে এসে তাঁর হাত মু’চ’ড়ে ধ’রে বলে,

‘চুপ একদম চুপ! ন’ষ্টা মহিলা, আমার কাছে শু’ই’তে তোর আমাকে পা’গ’ল মনে হয় না।যখন সত্য কথা বলছি তখন পা’গ’ল মনে হয় ? তোকে কয়দিন হলো ফোন দিয়ে বলছি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আয় তুই আমার কথা শুনেছিস?’

এসব দেখে ইলিয়াস মির্জা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাঁর পুরো পৃথিবী অ’ন্ধ’কা’র হয়ে যায়।বু’ড়ো বয়সে এসে স্ত্রীর সম্পর্কে এসব শুনতে কারো ভালো লাগে। জীবনের চব্বিশ বছর ধরে জেনে এসেছে আফসান তার ছেলে অথচো এই লোকটি জোর দিয়ে বলছে তাঁর ছেলে।তিনি দ্রুত আশাকে খালেদের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা আড়াল করে,কিঞ্চিত আশা নিয়ে বলে,

‘আপনার কোথাও ভু’ল হচ্ছে।সে আমার স্ত্রী।’

খালেদ সাহেব জো’রে হাসতে শুরু করেন।হাসি থামিয়ে বলে,

‘যে মানুষ এতো গুলো বছর ভু’ল জেনে একটা ন’ষ্টা মহিলার সাথে সংসার করেছে আবার অন্যের বাচ্চা কে নিজের বাচ্চা মনে করে এতো বড় করেছে সে নাকি আমার ভু’ল ধরছে হাস্যকর!’

ইলিয়াস মির্জা রা’গা’ন্বি’ত অবস্থায় বলে,

‘আপনি এসব বলছেন ওর নামে।আপনার কাছে এসবের কোনো প্রমাণ আছে। আপনার মুখের কথা তো আমি বিশ্বাস করবো না,প্রমাণ লাগবে।কিসের ভিত্তিতে আপনি ওর নামে এসব বলছেন?’

খালেদ মনোয়ার আশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

‘আফসানের জন্মদাতা বাবা আমি।আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও আপনার স্ত্রী আমার বাড়িতে গিয়েছিল। কেন গেছে আমি এসব মুখে বলতে পারবো না,আপনি বুজে নেন।যে মহিলা এই বয়সে এসেও পর পুরুষের টান ছাড়তে পারে নি,সে কখনো ভালো হবে না।’

এসব বলে খালেদ মনোয়ার তাঁর হাতের স্মার্ট ফোনে একটা ভি’ডি’ও অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দিতে নেয়।আশা বেগম বুজতে পারে এটা কিসের ভি’ডি’ও,সে দ্রুত গতিতে এসে মোবাইলটার উপর থা’বা মা’রে।ফলাফল স্বরূপ ফোনটি নিচে প’ড়ে যায়।আশা বেগমের আচারণে ইলিয়াস মির্জার বুজতে দেরি হয় না,আসলে লোকটি সব সত্য বলছে।আশা বেগম ফোনটি তুলেতে নিলে খালেদ মির্জা তাকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ফোনটি অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দেয়। আশা বেগম নিচে পা’ড়া অবস্থায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,

‘খালেদ তুই বড় ভু’ল করছিস।আমি তোকে ছা’ড়’বো না, নিমক হারাম তুই আমার থেকে এ যাবৎ লাখ লাখ টাকা নিয়েছিস বিষয়টা গো’প’ন রাখবি বলে।আজ তুই এসব বলতে পারলি? তুই যখন টাকা চেয়েছিস তখনই দিয়েছি,যখন ডেকেছিস তখনই গিয়েছে।হা’রা’মী’র বাচ্চা,স্বার্থপর তোর জন্য‌ই আজ আমার এই অবস্থা।’

‘এই তো পাখি পথে এসেছো।একটু আগেই না বললে তুমি আমায় চিনো না,আমি নাকি পা’গ’ল।এসব বলতে বলতে খালেদ মনোয়ার আশা বেগমের কাছে যেয়ে বসে তার গালে হাত দিয়ে বলে,

‘এসব কিছু তোর থেকে শিখেছি ময়না পাখি। তুই নিজের স্ব’র্থে’র জন্য বান্ধবীকে কাজে লাগিয়েছিস।তুই টাকা কি এমনি এমনি দিয়েছিস? নিজের এসব অ’প’ক’র্ম লুকাতে দিয়েছিস।আফসানকে তুই খা’রা’প বানিয়েছিস। তোর জন্য‌ই আফসান আজ জেলে। নারী পা’চা’র’কা’রী চ’ক্রে’র আসল মাথা হলো তুই।এসব কিছু জানতাম বলেই আমার মুখ বন্ধ করতে তুই টাকা দিতি।আর কি জেনো বললি,আমি ডাকলেই তুই সাড়া দেস।কেন দেস কারণ ফুর্তি করতে,এই বয়সে এসেও যা শরীর বানিয়েছিস কি আর বলি। যাইহোক আমার মনে হলো আমি এসব কিছু ভুল করেছি, সত্য সবার জানা উচিত সেজন্য আজ সবকিছু খুলে বললাম কারণ তোর পাপের ফল আমার ছেলে ভো’গ করছে।’

‘ইলিয়াস মির্জার হাতে আশা ও খালেদার অ’ন্ত’র’ঙ্গ মুহূর্তের ভি’ডি’ও চলছে। তারমধ্যে এসব জ’ঘ’ন্য কথা ইলিয়াস মির্জা আর নিতে পারলেন না,সে হাতের ফোনটা ফেলে বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে প’ড়ে।’

শশুড়ের সামনে তুরের এসব শুনতে লজ্জা লাগছে।সে উপায় না পেয়ে উপরে যেতে নেয় তখনি ইলিয়াস মির্জার এমন অবস্থা দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় তুর কিন্তু তাঁর আগেই নিষ্প্রভ তুরকে বাঁধা দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলে,

‘তুমি যেও না,উনাকে একা সামলিয়ে উঠতে দেও।’

তুর তবুও যেতে নেই। নিষ্প্রভ তুরের হাত শক্ত করে ধরে রাখে।কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,

‘কথায় আছে না? মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি।এখন দেখছি ছেলের থেকে ছেলের ব‌উয়ের দরদ বেশি।তোমাকে বলছি না,চুপচাপ থাকতে।’

আশা বেগম হাউমাউ করে কা’ন্না করছে।এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য এভাবে সবার সামনে আসবে সে ভাবতেই পারছে না। এতোদিন ধরে সে বাড়িতে ও বাহিরে দু জায়গাতেই সমপরিমাণে রাজত্ব করেছে।তার রাজত্ব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। ইলিয়াস মির্জা কাঁপা কাঁপা হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।পুলিশকে ফোন করে ও গার্ডদের বলে বাড়ির মেইন গেট সব বন্ধ করে দিতে জেনো অ’প’রা’ধী কোনো ভাবে না পা’লা’তে পারে।খালেদ মনোয়ার এর যাওয়ার কোনো তাড়া নেই।বরং সে আরেকটা বো’ম ব্লা’স্ট করার মতো কথা বলল ফেলে। ইলিয়াস মির্জাকে বলে,

‘আপনার ছেলে আর তুরের বিয়ে কোনো কাকতালীয় ঘটনা না।সেই দিন যা হয়েছিল সব এই মহিলা আফসান ও তুরের মায়ের প্ল্যান। তুরের মা এদের হাতের গুটি মাত্র।এই মহিলা তুরের মাকে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করে সব করাতো।ঠিক তেমন সেই দিন আফসানের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এসব প্ল্যান করে ওঁরা তিন জন। কিন্তু ভাগ্য ভালো বলে আফসানের জায়গায় সেদিন অই রুমে কোনো ভাবে নিষ্প্রভ ঢুকে পড়ে যার জন্য বিয়েটা নিষ্প্রভের সাথে হয়।মেয়েটার ভাগ্য ভালো বলা চলে নয়তো এই মহিলা অই মেয়েকে দিয়েও ব্যা’ব’সা করাতো।’

শেষের কথা তুরকে দেখিয়ে দিয়ে বলে।তুরে মাথা ঘুরে,এক দিনে এতো গুলো সত্য সে মেনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।শরীরের ভার সামলাতে না পের পড়তে নেই তার আগেই নিষ্প্রভ ধরে ফেলে।তুর সে অবস্থায় নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনোভাব বুজতে চেষ্টা করছে।

খালেদ মনোয়ার আবারও বলতে শুরু করে,

বরাবরের মতো আপনি নিষ্প্রভকে ভুল বুঝেন।কারণ এই মহিলাটা শুরু থেকেই নিষ্প্রভের নামে আপনার কানে বি’ষ ঢেলেছে আর আপনিও অল্প বয়সী ব‌উয়ের প্রতি অ’ন্ধ হয়ে তার সব কথা সত্য বলে মেনে নেন।আজ তো বুজতে পারছেন এই মহিলা ভালোবেসে আপনার কাছে নেই, শুধু মাত্র টাকার জন্য আছে তা না হলে এই বয়সে এসেও আমার কাছে যায়? কতো মেয়ের জীবণ এই মহিলা ন’ষ্ট করেছে জানেন? আপনি ওকে পুলিশে তুলে দেওয়ার মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ওর মতো মহিলার স্থান জেলে।

‘নিজের করা ভুল অন্যের মুখে শুনে ইলিয়াস মির্জার নিজের প্রতি ঘৃ’ণা হয়।সে আশা বেগমের কাছে যেয়ে তাঁর চুলের মু’ঠি ধরে বলে,

‘দুঃচরিত্রা মহিলা! তুই আমার সাথে এমনটা কিভাবে করলি? তোকে আমি বিশ্বাস করে নিজের ছেলেকে অবধি দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর সেই তুই কিনা আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি? বে’ই’মা’ন, ন’ষ্ট মহিলা।আরে তোর থেকে একজন ব্যা* ও ভালো আছে। তাঁরা জীবিকার তাগিদে এসব করে আর তুই! তোর কিসের অভাব বল? তুই আমার ছেলেকে আমার থেকে সরিয়ে দিয়েছিস কাল নাগিনী।তোকে আমি শেষ করে দিবো।’

আশা বেগম ব্যা’থা’য় চিৎ’কা’র করে উঠে।অই অবস্থাতেই ইলিয়াস মির্জার পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘আফসানের বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে দয়াকরে তুমি আমায় ক্ষমা করে দেও। আমি জেলে যেতে চাই না।আমাকে ধরিয়ে দিও না। আমি আর এসব করবো না।’

ইলিয়াস মির্জা গ’র্জে উঠে আশা বেগমকে থা’প’ড়া’তে থাকে আর বলে,

‘খবরদার আমাকে আফসানের বাবা বলে ডাকবি না।তোর মুখে এই ডাক জেনো আমি আর না শুনি।ন’টি কোথাকার তোর আফসানের বাবা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁকে বল।আর কি করবি না তুই হ্যা? এখনো কিছু করা বাকি রেখেছিস তুই বল? তোকে ছেড়ে দিলে আমি আমার বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।’

এরমধ্যে পুলিশ চলে আসে। ইলিয়াস মির্জা আশা বেগমকে নিয়ে যেতে বললে আশা বেগম হঠাৎ করে দৌড়ে এসে একটা পুলিশের থেকে রি’ভ’ল’বার নিয়ে নিষ্প্রভের দিকে তাক করে বলে,

‘আমাকে যেতে দিন নয়তো এই ছেলেকে গু’লি করে দিবো।যেখানে আমার ছেলে ও আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবো না,সেখানে এই ছেলে রাজত্ব করবে এ আমি কিছুতেই হতে দিবো না।’

ইলিয়াস মির্জা, খালেদ বার বার আশা বেগম কে রি’ভ’ল’বার নামাতে বলে এসব পা’গ’লা’মি থামাতে বলে।তুর নিষ্প্রভের খুব কাছে ছিলো ভ’য়ে কাঁ’প’ছে ,তার কলিজা শুকিয়ে আসছে। নিষ্প্রভ নিজের কাছে থেকে তুরকে ধা’ক্কা দিয়ে দূ’রে ফে’লে দেয়। আশা বেগম এবার নিষ্প্রভকে ভালো ভাবে টার্গেট করে। অন্য পুলিশ তার রি’ভ’ল’বার তাক করে আশার দিকে। আশা লক্ষ করে সেই পুলিশকে রি’ভ’ল’বার রাখতে বলে আর তাকে যেতে দিতে বলে নয়তো নিষ্প্রভকে গু’লি করে দিবে। পুলিশ গুলো কথা না শুনে চারিদিকে থেকে ঘিরে ধরে।এদিকে নিষ্প্রভ নড়তে পারছে না, একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই তার মৃ’ত্যু আজ অবধারিত।নিচে পড়া তুরের বেদনাদায়ক মুখটা বার বার তার চোখে ভাসছে। আচ্ছা আজ এই গু’লি’তে সে মা’রা গেলে তুর কি কান্না করবে, তারজন্য কষ্ট পাবে নাকি অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করে তাঁর সংসার করবে!’

এসব ভাবতে ভাবতে একজন কনস্টেবল আশা বেগমের দিকে এগিয়ে আসতে নেয় ঠিক তখনই আশা বেগম তাঁর টার্গেট অনুযায়ী নিষ্প্রভের মাথা বারাবর গু’লি ছোড়ে।বি’ক’ট শব্দে মির্জা বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১৬+১৭

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৬
#ফারিহা_খান_নোরা
একটা পুরুষালি হাত তুরকে পিছনে থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জ’ড়ি’য়ে ধরেছে।একটু আগে নিষ্প্রভ তুরকে গেটের সামনে নামিয়ে দেয়। তখনকার ঘটনার পর থেকে তুর নিষ্প্রভের সাথে লজ্জায় একটা কথাও বলে নি।গেটের ভেতর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই নজর আটকায় তার দিকে তাকিয়ে থাকা আতিয়ার পানে।তার দিকে এগিয়ে যেতে নিবে তাঁর আগেই এমন একটা বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হয় তুর।কলজের সবাই তুরের দিকে তাকিয়ে আছে।তুর এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পেছন ফিরে চেনা পরিচিত এক যুবকের উপর চোখ পড়ে।তুর কিছুতেই এই যুবকটির থেকে এমন ব্যাবহার আশা করে নি।এ আর কেউ না,এ হলো তাদের ভার্সিটির বড় ভাই সিফন।

সিফন তুরের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন অনেকদিন ধরে তুরকে দেখে নি,সে তুরের জন্যই অপেক্ষা করছে।সিফনের চোখে তুরের জন্য হাজার ব্যাকুলতা। মুখে একটু কথা বলার আকুতি।তুর সেসব কিছু গুরুত্ব না দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

‘এসব কি সিফন ভাই? আপনার থেকে আমি এমনটা আশা করি নি।’

সিফন তুরের একটু কাছে যেয়ে তুরের দিয়ে তাকিয়ে চোখে আকুতি নিয়ে বলে,

‘তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে।কতো খুঁজেছি তোমায় জানো। আমি কেন এমন করছি তুমি বুজতে পারছো না?

তুর কাট কাট গলায় বলে,

‘না!’

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই সিফন তার পথ আটকায়।কাতর কন্ঠে বলে,

‘এতোদিন ভার্সিটি আসো নি কেন? রোজ তোমার জন্য এখানে আসতাম।’

তুর বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ঠান্ডা গলায় বলে,

‘আপনিই কি সেই ভাইয়া যে,আমাকে অই পিচ্ছিটার মাধ্যমে ফুল দিয়েছিলো?’

ঠোঁট কামড়ে হাসে সিফন।বলে,

‘উত্তরটা বুঝে নেও।’

‘আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে পথ ছাড়ুন।’

‘সিফন যেই রাস্তা একবার ধরে,সে তার শেষ অবধি দেখে ছাড়ে।’

সিফনের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যা তুরের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।কিছু সময় ভাবনায় মশগুল থাকে। কিছু বলতে যাবে তার আগে সিফন একটি অবাক করা কান্ড ঘটায়।প্যান্টের পকেট থেকে টুকটুকে লাল রঙের একটা গোলাপ বের করে চোখের পলকে তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তুরকে প্রপোজ করে বসে।

‘আই লাভ ইউ তুর।আই লাভ ইউ সো মাচ।এই ভার্সিটিতে যেদিন তুমি প্রথম এসেছিলে তোমাকে দেখার পর তোমার প্রতি আমার মনে ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল।সময়ের পরিবর্তনের যা ভালোবাসা নামক সুন্দর অনুভূতি মনের কোনে রোপন হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোমার অর্নাস শেষ করার পরে আমার মনের কথা খুলে বলবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলে দেওয়াই ভালো।তুমি শুধু আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো কথা দিচ্ছি আমি সারাজীবন তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।

মাঠের সবাই তাঁদের দেখছে।তুরের হাত পা কাঁপছে সেই সাথে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি সে মাথা ঘুরে প’ড়ে যাবে।সিফন এখনো তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। অদূরে আতিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তুর কম্পনরত কন্ঠে স্বরে বলে,

‘আমি বিবাহিত,বিয়ে হয়েছে আমার।আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারছি না।তাই রাস্তা ছেড়ে দেয়াই আপনার জন্য ভালো। আমার রাস্তা ও আপনার রাস্তা পুরোপুরি আলাদা।’

হনহনিয়ে পা ফেলে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় তুর।তার পিছন পিছন আতিয়াও চলে যায়।পেছনে ফেলে যায় একজোড়া বিস্মিত চোখ। পেছন থেকে সবটা লক্ষ্য করে নিষ্প্রভ।মাঝ রাস্তায় নিষ্প্রভ লক্ষ করে তুরের ফোন তার কাছেই রয়ে গেছে। দরকারি জিনিস কখন কোন সময় লাগে সে জন্য সে আবার কলেজে ব্যাক করে।আর এসেই এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হয়।সে তাহলে ঠিক ধরেছিলো তুরের বয়ফ্রেড রয়েছে। নিষ্প্রভ ফোন ফেরত না দিয়েই অফিসে চলে যায় তবে কাজে মন দিতে পারে না।অফিসের বাকিটা সময় বিষময় ঠেকে নিষ্প্রভের নিকট।

স্বন্ধ্যা নাগাদ তুর বাসায় ফেরে।আজ অনেকটা দেরি করেই ফিরেছে সে।কারণ তাঁর মন খুব একটা ভালো নেই সেজন্য নিজেকে সময় দিতে একাই নদীর পাড়ে যায় সে।আতিয়াকেও দেখে মনে হলো সে কোনো কারণে বিষন্ন হয়ে আছে।তুরের পুরো শরীর কেমন জেনো করছে তার ডাস্ট এ্যার্লাজি রয়েছে।তুর ওয়াসরুমে ঢুকে সময় নিয়ে গোসল সারে।লাল রঙের একটা কামিজ পড়ে, চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে সে বেরিয়ে আসে।ব্যালকনিতে গিয়ে চুলগুলো সামনে নিয়ে মুছতে থাকে আর ভাবতে থাকে নিজেকে নিয়ে।

রাত নয়টা! নিষ্প্রভ এখনো বাড়িতে আসে নি। ইলিয়াস মির্জা আফসান কে ছাড়াতে হন্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আ’ই’ন তাকে ছা’ড়’বে না,কারণ কে’স’টা কো’র্টে উঠেছে। আশা বেগম হঠাৎ করেই বেশ চুপচাপ হয়ে আছে।না জানি ভেতরে ভেতরে কি ছক কষছে সে।এই মহিলার বিশ্বাস নাই !

তুর হঠাৎ করেই নিষ্প্রভের দেওয়া একটা লাল রঙের শাড়ি পরিধান করে।মুখে হালকা মেকআপ করে,চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।চুল গুলো ক্ষোপা করে আর্টিফেসিয়াল গাজরা লাগায়।আয়নায় নিজেকে দেখে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়।আজ সে সেজেছে শুধুমাত্র নিষ্প্রভের জন্য। আজ তুর নিষ্প্রকে বলবে এই সম্পর্কটাকে সে এগিয়ে নিতে চায়।তুর অন্যপাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আছে।

নিষ্প্রভ এসেছে তুর তা লক্ষ্য করে নি। নিষ্প্রভ এসেই সম্মুখীন হয় তুরের এমন আগুন সৌন্দর্যের।কি আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে।মেয়েটাকে কি ভীষণ মিষ্টি লাগছে! সাজগোজ করছে মেয়েটা।মেয়েলি সুবাস নিষ্প্রভকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে ফেলছে।নি’ষি’দ্ধ ইচ্ছা জানান দিচ্ছে বারবার।মন বলছে ও তোর বউ।ওর সব কিছুতেই তোর অধিকার আছে। অথচ মস্তিষ্ক বলছে, ও তোর জন্য সাজে নি,ও অন্য কাউকে ভালোবাসে। মন, মস্তিষ্কের মাঝে নিষ্প্রভ মস্তিষ্ককে জয়ী করল।পরক্ষণে তার সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তুরের পাশে গিয়ে সিগারেট ধরালো। নিষ্প্রভকে তুর পাশে দেখে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালো,

‘কখন এলেন?’

‘আমি কখন আসি না আসি তোমাকে বলতে হবে?’

তুর নিষ্প্রভের রাগের কারণ বুঝতে পারে না। সে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

‘সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আগে তো কখনো খেতে দেখিনি!’

‘এই তুমি আমার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ কেন? তোমার ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না। রাস্তায় তো ভালোই ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়। নাকি বাইরে, ঘরে দুজন লাগে তোমার।’

নিষ্প্রভের এমন কথায় রাগে, অপমানে তুরের চোখে পানি চলে আসে। সে উচ্চস্বরে বলে,

‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ নিষ্প্রভ। বিয়ে করেছেন বলেই এসব নোং’রা কথা আমায় বলতে পারেন না।

নিষ্প্রভ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

‘নোং’রা কে নোং’রা ও বলতে পারবো না?বাইরে গিয়ে ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়তে পারবে,আর আমি স্বামী হয়ে কিছু বললেই দোষ। আমি তোমায় ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলাম,কিন্ত তারপর মনে হয়েছিল এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দেই । কিন্তু তুমি কি করলে, রাস্তার দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে এসব করে বেড়াচ্ছো। একদিন বাচ্চা ছেলে এসে ফুল দিচ্ছে আরেকদিন তোমার বয়ফ্রেন্ড এসে ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। তুমি কি মনে করছো আমি কিছু বুজতে পারি না’

‘আপনি আমায় ভুল বুঝলেন নিষ্প্রভ।আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু , আমার চরিত্রে আঙুল তুললে আমি সহ্য করতে পারি না।’

‘তুমি আমায় বাধ্য করলে।’

তুর আকুতি ভরা কন্ঠে নিপ্রভের কাছে যেয়ে হাত জোড় করে বলে,

‘আপনি আমার পুরো কথাটা আগে শুনুন সব সময় চোখের দেখা সত্তি হয় না।’

নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,

‘তোমার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই।তোমাদের মতো মেয়েদের একটা দিয়ে হয় না। আমি এজন্য সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাইছিলাম না।কারণ তাদের এই সুন্দর চেহারার পিছনে কুৎ’সি’ত মন লুকানো থাকে। এজন্য আমি সব সময় চাইতাম যার মন সুন্দর আমি তাঁকে বিয়ে করবো কারণ আমার কাছে এসব রূপ, চেহারা,শরীর ফ্যাক্ট নয় #হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ ই সবকিছু।দুটি হৃদয়ে‌ এর ই যদি মিল না থাকে তাহলে শরীর দিয়ে কি হবে? ভাগ্যক্রমে তোমার সাথে এই সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম কিন্তু তুমি কি করলে! দুঃ’চ’রি’ত্রা মেয়ে মানুষ।’

কথাটি বলার সাথে সাথেই নিষ্প্রভ তার বাম গালে চি’ন’চি’ন ব্যা’থা অনুভব করে।সে গালে হাত দিয়ে হ’ত’বা’ক হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে।

চলমান।

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৭
#ফারিহা_খান_নোরা
তুর নিষ্প্রভকে গায়ের জো’রে সর্বশক্তি দিয়ে থা’প্প’ড় মে’রে’ছে। নিষ্প্রভ গালে হাত দিয়ে তুরের পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সে থমকে যায় শান্তশিষ্ট মেয়ের এমন আচারণ দেখে।তুর নিষ্প্রভের শা’র্টে’র ক’লা’র ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে,

‘অনেক বলে ফেলেছেন আর একটা কথাও নয়। আমি আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট আপনার থেকে নিবো না। আমি কেমন সেইটা আমি নিজেই জানি।আজ আপনি আপনার নিচু মন মানসিকতার সাথে আমার পরিচয় করে দিয়েছেন। আমি ভাবতেও পারিনি আপনি আমার পুরো কথা না শুনে এমন জ’ঘ’ন্য কথা বলে আমাকে অসম্মান করবেন।’

নিষ্প্রভ তুরকে দেখে ক্ষনে ক্ষনে অবাক হয়ে যায়। নিষ্প্রভ তুরের এ কোন রূপ দেখছে।এ তুরের সাথে তো নিষ্প্রভ পরিচিত নয়।তুরের বুকে একরাশ ঘৃ’ণা জমছে।চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।তুর ঘৃ’ণা মিশ্রিত কন্ঠে আবার বলতে শুরু করে,

‘আমার কপালটায় এমন জানেন তো,যখন একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি ঠিক তখনি কোনো ঝ’ড় এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।আমার জীবন এমন না হলেও পারতো।প্রথমে আমার মা আমার জীবণটা নিয়ে জুয়া খেলল ভাগ্যক্রমে আপনার সাথে জরিয়ে পড়লাম।আপনি বাসর রাতেই আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেন।আমিও চুপ ছিলাম কারণ আমি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনার জীবণে এসেছি।তারপর ধীরে ধীরে আপনাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে।একটুর জন্য আমার মনে হয়, আপনি‌ও আমায় পছন্দ করেন। সেজন্য তো আমি আপনাকে নিজের মনের কথা বলবো বলে আপনার জন্য এভাবে সেজেছি।আজ আমি আপনাকে বলতাম আমাদের এই অপ্রত্যাশিত সম্পর্কটাকে স্থায়ী করতে।কিন্তু এটা মনে করা ছিলো আমার জন্য সম্পূর্ণ ভুল। তারপর একটু থেকে তুর আবার বলতে শুরু করে,

‘বুজতে পারছি আমি আপনার কাছে গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছি। আপনি আমায় না পারছেন গিলতে না পারছেন ফিলতে। আমি নিজেই এই সম্পর্ক আর রাখতে চাই না।যে সম্পর্কে ভালোবাসা তো দূর বিশ্বাস, ভরসা, সম্মান কোনোটাই নেই সেই সম্পর্ক রেখেও লাভ নেই।’

নিষ্প্রভ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।সে বুজতে পারছে না তাঁর কি করা বা বলা উচিত।সে আহত দৃষ্টিতে তুরকে আবার‌ও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

‘তোমার ক্লাস শেষ হয় একটায়।আমি বিকালে বাড়িতে এসে দেখি তুমি নেই।তাহলে এতো সময় কোথায় ছিলে?’

তুর নিজেকে ধাতস্থ করে তাচ্ছিল্যপূর্ণ কন্ঠে বলে,

‘সেজন্য বুঝি মনে করছেন। ভেবেছেন আমি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে তাদের বি’ছা’না অবধি গেছি?’

নিষ্প্রভ রে’গে যায়।রা’গে’র ফলে তাঁর কপালের দুই পাশের রগ ফুলে যায়।সে ধ’ম’কে’র স্বরে চিৎকার করে বলে ওঠে,

‘তুর।’

এমন চিৎ’কা’রে তুর কেঁপে উঠে। অবজ্ঞার স্বরে সম্পুর্ন ঘটনা বলে তারসাথে এটাও বলে,

‘আপনার থেকে আফসানকে বিয়ে করায় ভালো ছিল কারণ ও খারাপ সবাই তা জানে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই কিন্তু আপনি? খোলস পড়ে ঘুরে বেড়ান।’

সব শুনে নিষ্প্রভের নিজের প্রতি ভীষণ রা’গ হয়। কিন্তু শেষর কথা শুনে তুরের উপর রে’গে যায় সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘কি বললে তুমি? আফসান আফসান আর আফসান।সে আমার জীবণটা শেষ করে দিলো।’

তারপর গাঁয়ের সর্বশক্তি দিয়ে দেওয়ালে ঘু’ষি মে’রে রা’গ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে নিষ্প্রভ । কিন্তু ফলাফল সফল না হলে, রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তার হাত থেকে র’ক্ত চুয়ে চুয়ে প’ড়’ছে।তুর শাড়ি আঁচলা দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বারান্দায় যেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

_________________________

ভোরের দিকে নিষ্প্রভ বাড়ি ফিরে আসে এতক্ষণ ফুটপাতে বসেছিলো সে।রুমে এসে তার দৃষ্টি যায় ব্যালকনিতে অগোছালো ভাবে বসে থাকা তুরের পানে।মেয়েটাকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে। কাল রাতে নিষ্প্রভে তুরের সাথে বেশি বা’জে ব্যবহার করে ফেলে মনের অজান্তেই।নিষ্প্রভ অনুসুচনা ও দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেল তুরের দিকে।

তুর উপস্থিতি টের পেল নিষ্প্রভের, কারণ সে সারারাত এভাবেই জেগে ছিলো। হাঁটু থেকে মাথা তুলে সামনে চোখ মেলে একবার তাকালো নিষ্প্রভের দিকে। মানুষ মুখ কি স্নিগ্ধ লাগছে।অথচ এই স্নিগ্ধ মুখ দেখলে বোঝাই যায় না এই মুখনিঃসৃত কথাগুলো কাউকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করতে পারে।তুরের চোখে আবার ও পানি আসে।চোখের পানি আড়াল করতে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। নিষ্প্রভ তুরের পাশে হাঁটু ভেঙ্গে ফ্লোরে বসে পড়ে।তুরের মুখ উচু করে ধরে কাতর স্বরে বলে,

‘বেশি আঘাত করে ফেলেছি তাই না?’

তুর মুখ সরিয়ে নিয়ে ঝামটা দিয়ে বলল,

‘আপনি তো কমই বলেছেন।এর থেকে বেশি কিছু আপনার থেকে আশা করি।’

‘তুর!’

‘চেঁ’চি’য়ে ভালো পুরুষ হ‌ওয়া যায় না।আপনাদের মতো কিছু পুরুষ আছে যারা যখন ইচ্ছে হয় ব‌উ এর উপর চেঁ’চা’মে’চি করে আবার যখন ইচ্ছে হয় ব‌উকে কাছে টেনে নেয়।ব‌উকে তারা নিজের হাতের পুতুল মনে করে।আপনিও ঠিক তাদের দলে।’

‘নিজের বউকে মাঠ ভরা মানুষের সামনে অন্য পুরুষকে প্রপোজ করতে দেখে আমি ঠিক থাকব? তাছাড়া তুমি যেতেই ছেলেটা তোমাকে জরিয়ে ধরেছিল।’

‘এখানে আমার দোষটা কোথায়? আমি কি তাকে বলেছিলাম আমাকে জড়িয়ে ধরতে নাকি বলেছিলাম প্রপোজ করতে?’

নিষ্প্রভ অসহায় ভঙ্গিতে বলে,

‘আমি জানি তোমার দোষ নেই।তবে তুমি কেন ওর এসব মুখ বুঝে দেখতে গেলে।হাত ছিলো না তোমার থা’প্প’ড় মে’রে দিতে।’

‘এতো মানুষের সামনে আমি লোকটাকে থা’প্প’র দিবো কেন? এমনটা করলে সে লজ্জা পেতো আমার খা’রা’প লাগতো।’

‘ওহ, লোকটাকে থা’প্প’র মা’র’লে তোমার খা’রা’প লাগতো। আর স্বামী! আমাকে তো থা’প্প’র ঠিক মা’র’লে এতে তোমার খারাপ লাগে নি?’

তুর কাট কাট গলায় বলে,

‘না, খারাপ লাগে নি।মাত্র একটা মে’রে’ছি আমার আরও তিন থেকে চারটা থা’প্প’র মা’রা উচিত ছিলো আপনাকে।আপনি আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেছেন যেখানে দোষটা আমার ছিলোই না।’

তুর বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।তুরের কান্না দেখে নিষ্প্রভের ভিতরটা ভে’ঙে যাচ্ছে এমন হয়।সে আর বেশি সময় না নিয়ে তুরকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।কাতর হয়ে বলে,

‘আমার থেকে নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল হয়েছে ব‌উ।দয়াকরে আমায় মাফ করে দাও।কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না।তবুও তুমি কান্না করো না পাখি।’

নিষ্প্রভের বুকের মধ্যে তুর থাকতে চাইছে না,ছটফট করছে আর বলছে,

‘ছাড়েন আপনি আমায় স্পর্শ করবেন না।আমি খারাপ মেয়ে তাহলে আমার কাছে আসছেন কেন? ভালো মেয়ের কাছে যান।আমি তো আপনার চোখে দুঃ’চ’রি’ত্রা। আমি আপনার কাছে থাকবো না।’

বলেই নিষ্প্রভকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। নিষ্প্রভকে এক চুল ও নড়াতে পারে না। নিষ্প্রভ বলে,

‘তুমি এমন করো না ব‌উ। আমার ভুল আমি স্বীকার করছি। আমি তোমার পা’য়ে পড়ি। তুমি যা বলবে এখন থেকে আমি তাই করবো।আগের সবকিছু ভুলে আমরা নতুন করে সব শুরু করবো।ওসব ডিভোর্স বাদ,তোমাকে তিন কবুল বলে বিয়ে করছি দরকার হলে এবার ছয় কবুল বলে বিয়ে করবো তাও তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি মাফ করে দেও ব‌উ।’

এসব বলে নিষ্প্রভ তুরের পা ধরতে যায়।তুর নিষ্প্রভের সব কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলো শেষের কথা শুনে তুর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।মানুষটা ক্ষমা চাইছে নাকি তারসাথে ম’শ’ক’রা করছে।ছয় কবুল বলে বিয়ে করবে? আদেও কেউ ছয় কবুল বলে এর আগে বিয়ে করেছিলো নাকি!

‘পাগলের বাচ্চা’

এই কথাটা বলেই তুর তাড়াতাড়ি ফ্লোর থেকে উঠে রুমে এসে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দেয়।নিষ্প্রভ বেচারা বারান্দায় বন্দি হয়ে থাকে। নিষ্প্রভ চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘এটা কি হলো?’

‘শাস্তি ,আপনি এভাবেই থাকেন।’

‘ওহ এভাবে কিছুক্ষণ থাকলে তুমি আমায় ক্ষমা করে দিবে।’

নিষ্প্রভ প্রফুল্ল কন্ঠে বলে।তুর একটু কন্ঠ বাড়িয়ে বলে,

‘জি না! এটা আমাকে ছয় কবুল বলে বিয়ে করতে চাওয়ার শাস্তি।বাকি গুলো নিয়ে পড়ে ভাববো’

নিষ্প্রভ অসহায় হয়ে বলে,

‘যাহ্ বাবা এটা কি হলো।তিনের জায়গায় ছয় বললাম যাতে করে অন্য ব‌উয়ের থেকে আমার ব‌উয়ের মনে স্বামীর প্রতি ভালোবাসটাও বেশি হয়, থাক তো ভালোবাসা আমার বউ এর জন্য আমার শাস্তির ব্যাবস্থা করলো।এই শীতে ভোর বেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিষ্প্রভ ঠান্ডায় কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট সে এসব বলল।’

___________________

সকাল দশটা! নিষ্প্রভ এক নাগাড়ে হাঁচি ফেলছে।তুর বেশ মজা পাচ্ছে। লিভিং রুমে ইলিয়াস মির্জা ও আশা বেগম বসেছিলো।আফসানকে কি ভাবে ছাড়ানো যায় সেই বুদ্ধি করছে। ইলিয়াস মির্জা বিশ্বাস করে আফসান নির্দোষ।তুর ও নিষ্প্রভ খাবার টেবিলে বসে। হঠাৎ করেই সদর দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। সিতারা দরজা খুলে দেয়।একটা অচেনা ভদ্রলোক প্রবেশ করে।আশা বেগম বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়ে। ইলিয়াস মির্জা অজ্ঞাত লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আপনি কে আপনাকে তো চিনলাম না!’

লোকটি গমগমে স্বরে বলে,

‘আমি আফসানের বাবা……..’

চলমান।।

*বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১৫

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৫
#ফারিহা_খান_নোরা

মেয়ে পা’চা’র করতে যেয়ে আফসান ধ’রা পড়েছে। পুলিশ তাকে হাতেনাতে গ্রে’ফ’তা’র করে। শুধু তাই নয় পুলিশ খবর পেয়েছে তাঁদের নারী ও শিশু পা’চা’র’কা’রী একটি চ’ক্র আছে যার সাথে বেশ কয়জন যু’ক্ত।এই চ’ক্রে’র প্রধান আ’সা’মি’কে এখনো ধরতে পারে নি। আপাতত আফসান সহ আর‌ও দুইজন পুরুষ ও দুইজন নারীকে ধরতে পেরেছে। নারী দুজনের মধ্যে একজন অল্পবয়সী মেয়ে ও একজন মাঝবয়সী মহিলা ছিলো। জি’জ্ঞা’সাবাদে জানা যায় মহিলার নাম জবা। তাঁর স্বামী এই শহরে রিকশা চালায় নাম করিম। পুলিশ যেহেতু ইলিয়াস মির্জাকে চেনে যার জন্য সে রাতের বেলায় ফোন করে আফসানের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়।তারপর থেকে আশা বেগম লিভিং রুমে এসে চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি কা’ন্না’কা’টি শুরু করেছে। সোফায় ইলিয়াস মির্জা স্ত’ব্ধ হয়ে বসে আছে। তাঁর চোখ মুখ দেখে যে কেউ ই বলে দিতে পারবে, এমন আকস্মিক ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। আশা বেগম ন্যা’কা সুরে কাঁ’দ’ছে আর বলছে,

‘আফসানের বাবা আমার ছেলে পুরোপুরি নি’র্দো’ষ সে এমন কাজ করতে পারে না। তাকে ফাঁ’সা’নো হয়েছে, কেউ ইচ্ছে করে তাকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে।দয়া করে তুমি তাকে ছা’ড়া’নো’র ব্যাবস্থা করো।’

এবার জেনো ইলিয়াস মির্জা চেতনা ফিরে পায়।ফোন হাতে তুলে নিয়ে কাকে কাকে জেনো ফোন দিতে থাকে।উপর থেকে নিষ্প্রভ আসল ঘটনা বুজতে পেরে বাঁকা হাঁসি দিয়ে প্রস্থান করে।তার এসব নাটক দেখার সময় নেই।

সারারাত নিষ্প্রভের ঘুম হয় না।তুর এখনো তার বুকের উপর ঘাপটি মেরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে।নিষ্প্রভ ভাবে সে চাইলেই তুরের সাথে একটা নরমাল লাইক লিড করতে পারে ।মেয়েটা সব সহ্য করার পরেও এখনে পড়ে আছে,সে ছাড়া মেয়েটার যাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু এই পরিবেশে সে তুরকে রাখতে পারবে না।রাতের ঘটনা অবলকন করে বুজতে পারছে বাড়িতে আগুন লেগেছে,এখন সবকিছু ছা’ড়’খা’ড় করে দেওয়ার অপেক্ষা।সারারাত নিষ্প্রভের এসব ভেবে ঘুম হয়না।আর ভাবে কি হতো সবার মতো ওর একটা সুখী পরিবার থাকলে।যবে থেকে তার বাবা আশা বেগমকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে তবে থেকে তার জীবণটা অ’ত্যা’চা’রে জ’র্জ’রি’ত হয়ে গেছে।নিষ্প্রভ ডিসিশন নিয়েছে সে তুরকে নিয়ে সুন্দর একটা সুখী পরিবার গড়বে।যেখানে থাকবে একে অপরের প্রতি অফুরন্ত সুখ,সম্মান ও ভালোবাসা

সকালে তুরের জ্ব’র নেমে যায়। সে উঠে বসে চোখ ডলতে থাকে।অন্য মনস্ক হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে চমকে উঠে।সে ভালো করে খেয়াল করে কাল ও যে থ্রীপিস পড়ে ছিলো সেটার রং ছিলো নীল আর এখন যেটা পড়ে আছে সেটা কালো।তার পোশাক কে চেঞ্জ করে দিলো কিছুতেই মনে করতে পারছে না।নিষ্প্রভ নয় তো, এই কথা ভেবে লজ্জায় তুরের মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে।

এর মধ্যে সিতারা রুমে এসে বলে,

‘নতুন ভাবি উঠে পড়ছেন।বড় ভাইজান পাঠাইলো ক‌ইলো আপনার খেয়াল রাখতে। আপনি এখন কেমন আছেন ভাবী?’

তুরের সামান্য মন খা’রা’প হয় নিষ্প্রভের এমন কাজে। নিষ্প্রভ তো নিজে এসেও খোঁজ নিতে পারতো।মন খা’রা’পে’র রেশ লুকিয়ে রেখে তবুও স্বাভাবিকভাবে বলে,

‘এখন ভালো আছি।রাতে আমার কি হয়েছিল?’

সিতারা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,

‘আপনে জানেন না, জ্বরে আপনি কি সব ক‌ইতাছিলেন।হুনলাম বড় ভাইজানের গায়ে বমিও ক‌ইরা দিছেন।আপনের নাকি হুশ ছিলো না।বড় ভাইজান সারারাত আপনের সেবা যত্ন করছে।’

তুর অবাক হয়ে যায় ইশ সারারাত মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।তুরকে চুপ থাকতে দেখে সিতারা বলে,

‘বড় ভাবি ফ্রেশ হয়ে নিচে আইয়া পড়েন।আমি আপনের খাওন দিমু।’

সিতারা চলে যায় তুর ফ্রেশ হয়ে আসে।নিচে যেতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে কালকের কথা ভেবে।নিষ্প্রভ তার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছে।কি লজ্জ!নিপ্রভের সামনে সে কিভাবে যাবে এখন?

নিচে এসে তুর দেখে আশা বেগম চেঁ’চা’মে’চি করছেন। তিনি বলছেন,

‘আমার সোনার টুকরা ছেলেটার কি হয়ে গেলো রে।সে মার খাচ্ছে আর তোরা বাড়ি বসে বসে গি’ল’বি। আমি মা, আমি কিভাবে এসব সহ্য করবো।ওরে আমাকে কেউ নিয়ে যা আমার ছেলের কাছে।’

তুর সিতারাকে জিজ্ঞাসা করে,

‘এই মহিলার আবার কি হয়েছে?’

সিতার ফিসফিস করে বলে,

‘আপনে জানেন না বড় ভাবি অই ভু’ত ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।হেই নাকি মেলা খা’রা’প কাম করছে। শুধু হেরে না, পাশের বাড়ির করিমের ব‌উরেও নিয়া গেছে।আপনে এখানে না থেকে ঘরে যান। আমি আপনের খাওন ঘরে দিয়া আসি।’

তুর ভ্রু কুঁচকে সিতারাকে প্রশ্ন করে,

‘ভু’ত ভাই?’

সিতারা আগ্রহ নিয়ে বলে,

‘হু ভাবি আফসান ভাইরে ভু’ত ভাই ক‌‌ইছি আমি।হেই একবার পুরা শরীর ব্যান্ডেজ ক‌ইরা বাড়িতে আইয়া আমারে ভয় দেখাইছিলো। আমি অজ্ঞান ও হ‌ইয়া গেছি তারপর থেকে হেই আমার কাছে ভু’ত ভাই।

তুর হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তবুও ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে আসে।খাবার খেয়ে বিছানার উপর বসে থাকে।নিষ্প্রভের এখনো কোনো খবর নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।কেউ বলতে সে সিতারা কে বুজিয়েছে।

নিষ্প্রভ রুমে আসলে তুর কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। নিষ্প্রভ তুরের কপাল ছুঁয়ে দেখে। না, জ্বর নেই,নিষ্প্রভের সামনে থাকতে তুরের বেশ লজ্জা করছে এই লজ্জা নিবারণ করতে সে ভার্সিটিতে যেয়ে চায়।তুর কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে,

‘ভার্সিটি যেতে চাই।’

‘যেতে তো মানা করিনি। তবে জ্বরটা মাত্র ভালো হলো তারমধ্যে বমি করে শরীর বেশ দূর্বল তোমার।’

তুর ডাহা মি’থ্যা কথা বলে,

‘আসলে আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস রয়েছে।’

নিষ্প্রভ কিছু ভেবে বলে,

আচ্ছা, আমি দিয়ে আসবো। রেডি হয়ে নাও।’

তুর রেডি হয়ে নিল। নিষ্প্রভ চোখ মেলে তার বিবাহিতা বউকে দেখে। মুখে বোধহয় হালকা পাউডার মেখেছে। ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক। অসুস্থতার জন্য মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।ইশ! এর পরেও মেয়েটাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। ভেতরটা বেসামাল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রভের।গলা শুকিয়ে আসছে।এই তৃষ্ণার্থ বুক নিয়ে সে বেশি দিন থাকতে পারবে না।তার খুব তাড়াতাড়ি তুরকে নিজের করে চাই।

তুরের হাত থেকে কিছু প’ড়া’র শব্দে নিষ্প্রভের চেতনা ফিরে আসে।তুর ঝুঁ’কে তুলতে নেয়, অসাবধানতাবশত তুরের শরীর থেকে ওড়না টা নিচে খুলে প’ড়ে।জামার গলা বড় হ‌ওয়াই ও নিচু হয়ে ঝুঁকে প’ড়া’র ফলে সামনের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়।যা দেখে নিষ্প্রভের চোখ কোটরে থেকে বেরিয়ে আসে।চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।

নিষ্প্রভ বার বার ঢুক গিলছে।গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,

‘ওড়নাটা ঠিক করে নাও। একটু দেখেশুনে চলবে তো!’

তুর আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে ওড়নাটা গা থেকে প’ড়ে যেয়ে বুকের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়ে আছে।সে তড়িৎবেগে সোজা হয়ে যায়।তাড়াহুড়ায় ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়। লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয় তুর।আজ সকাল থেকে তাকে শুধু লজ্জায় পেতে হচ্ছে।নিষ্প্রভ কি তাকে খা’রা’প মেয়ে ভাবছে? সে কি মনে করছে তুর এমটা ইচ্ছে করে করছে? ভাবনার অন্তরালে নিষ্প্রভ বলে,

‘এতো ভাবতে হবে না, চলো বের হই।

তুর কিছুটা উশখুশ করে।সাহস নিয়ে বলেই ফেলে,

‘শুনন বলছিলাম কি,কাল রাতে আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করে দিয়েছিলো।’

নিষ্প্রভ বের হতে নিয়েছিলো কিন্ত তুরের কথা শুনে পিছনে ফিরে বলে,

‘কেন আমি!’

তুর অস্বস্তিতে প’ড়ে যায় তবুও ইতিউতি করে অসহায় ভঙ্গিতে বলে,

‘এতো কষ্ট করতে হতো না।সিতারাকে ডাকলেই তো পারতেন।’

নিষ্প্রভ তুরের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ব‌উ যখন আমার চেঞ্জ তো আমাকেই করে দিতে হবে।সিতারা কেন আসবে?’

নিষ্প্রভের কথা শুনে তুর লজ্জার সাথে অবাক হয়েও যায়। নিষ্প্রভ তার সাথে স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো ব্যাবহার করছে।এসব ভাবনার মাঝে নিষ্প্রভ তুরের কাছে আসে ,তুরকে অবাক করে দিয়ে তুরের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘তোমার বুকের ডান পাশের একটু নিচে একটা লালচে তিল আছে।আমি কিন্তু কাল দেখি নি একটু আগে দেখেছি।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১৩+১৪

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৩
#ফারিহা_খান_নোরা
আফসানের সাথে পাশের বাড়ির করিমের ব‌উয়ের গ’ভী’র সম্পর্ক রয়েছে যা নিষ্প্রভ কোনো ভাবে জেনে গেছে।যার ফলে করিমের ব‌উকে নিয়ে খোঁ’চা দিলো নিষ্প্রভ।তা নয়তো করিমের ব‌উয়ের কথা বলবে কেন?একেই বুঝি বলে সঠিক সময়ে উচিত জবাব।

আশা বেগম সদর দরজা দিয়ে তুরকে ভিতরে আসতে দেখে ইচ্ছে মতো কথা শুনতে শুরু করে। কিন্তু পিছনে যে নিষ্প্রভ আসে সেদিকে খেয়াল করে নি।ভেবেছে তুর হয়তো একাই এসেছে।তিনি যদি কোনো ভাবে নিষ্প্রভ কে দেখতো তাহলে কিছুতেই এসব বলতো না।কারণ তিনি বুঝে গেছে নিষ্প্রভ আশা বেগমের এতো দিনের লুকিয়ে রাখা রহস্য সম্পর্কে জেনে ফেলেছে।কতোটা জেনে ফেলেছে তা এখনো বুঝতে পারে নি।তাই এখন নিষ্প্রভ কে না চেতিয়ে দেওয়াই তার জন্য ভালো। হয়েছেও তার একটা ছেলে যে তাকে সারাজীবন জ্বা’লি’য়ে খেলো।এই ছেলের জন্য আর কার না,কার কাছে ছোট হতে হয়।এই বজ্জাত ছেলের রুচির কোনো লেভেল নেই।কাজের মেয়ের থেকে শুরু করে রিকশা ওয়ালার ব‌উ কে অবধি ছেড়ে দেয় না।তা না হলে অই করিমের ব‌উয়ের পিছনে কি করে লেগে থাকে।একে নিয়ে যে কি করবে সে!

নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয় না,ভিতরে চলো।’

তুর কোনো কথা না বলে দাড়িয়ে থাকে।এ বাড়িতে এসে তার কম কথা শুনতে হয় নি এই মহিলার মুখ থেকে।তুরকে এমন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিষ্প্রভ নিজ দায়িত্বে তুরের হাত ধরে নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে ধরে। এর মধ্যে আশা বেগম পিছন থেকে চিবিয়ে চিবিয়ে তুরকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,

‘স্বামীকে দেখছি হাতের মুঠোয় করে নিয়েছো।’

নিষ্প্রভ যেতে যেতে বলে,

‘ঠিক যেমন আপনি নিয়েছেন মিসেস মির্জা।’

তুর অপলক দৃষ্টিতে নিষ্প্রভ কে দেখছে।আর কতো রূপে এই মানষটাকে দেখবে সে।এই পুরুষ এক এক সময় এক এক রূপ ধারণ করছে। কখনো তুরকে সবার বিরুদ্ধে যেয়ে প্রটেক্ট করছে।তখন মনে হয় তুর নিষ্প্রভের কাছে বড্ড বেশি আপন।আবার কখনো তুরকে দূরে সরে দিচ্ছে।কোনটা তার আসল রূপ?

_________________________

তানিয়া বেগম চিৎকা’র চেঁ’চা’মে’চি করছে। তাঁর চিৎকা’রে সবাই যে যার রুম নিচে নেমে আসে।এখন রাত নয়টা, এই রাতের বেলা চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি কারো ভালো লাগছে না। সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে সবাই নীড়ে ফিরে আসে একটু বিশ্রামের জন্য কিন্তু এই বাড়ির মানুষ গুলোর বিশ্রাম বুঝি চিরতরের জন্য উঠে গেছে তা না হলে আজ এক সপ্তাহ যাবৎ রোজ রোজ এসব অশান্তি কারো সহ্য করতে হতো না। নুরুল সাহেব এবার বেশ বি’র’ক্ত হলেন। তিনি বি’র’ক্তে’র সহিত তুরফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘এই মহিলাকে এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যা।’

তুরফা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে তানিয়া বেগম অসহায় ভাবে দাড়িয়ে আছে।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ভাই তুষারের ব‌উ দূর্বা মেয়েটা, যার চোখে মুখে ভ’য়ে’র রেশ। তুরফা কোনো কিছু না ভেবে তার মাকে বলে,

‘কি হয়েছে মা,রাতের বেলা এমন চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি করছো কেন।ভাগ্গিস ভাইয়া বাড়িতে নেই থাকলে আরও অ’শা’ন্তি হতো।কি হয়েছে?’

তানিয়া বেগম তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,

‘কি আর হবে সব আমার কপাল।এই বয়সে স্বামী ও আমার পাশে নেই, আমার কোনো কথাই শোনে না। আমি কি সব সময় ভুল কাজ করি,নাকি এমনি এমনি চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি করি?’

‘আহা সব বুজলাম মা এবার আসল ঘটনা বলো।’

তানিয়া বেগম শ’ক্ত কন্ঠে বলে,

‘আছে না তোর ভাই? সারাজীবন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেরিয়ে পাহাড়ে গেল তুষারপাত করতে সেখানে থেকে ধরে নিয়ে এলো এই দূর্বা ঘাস কে। সারাদিন খায় আর ঘুমায়,আজ আমি ওকে সবার জন্য রাতের খাবার রান্না করতে বলেছিলাম সে কি করেছে জানিস?’

নুরুল সাহেব এবার আগ্রহী হোন।তুরফা উসখুশ করে, না জানি মেয়েটা কি করেছে।বলে,

‘কি করেছে ?’

তানিয়া বেগম চি’বি’য়ে চি’বি’য়ে বলে,

‘সে রাতের খাবার হিসাবে চাল,আলু,লাতা পাতা যেখানে যা পেয়েছে এক সাথে সব পানি দিয়ে সিদ্ধ করে রেখেছে।এই খাবার খেয়েছিস কখনো? এখন দেখ আমি কেন চিৎ’কা’র করছি।তোর বাপের তো আমায় নিয়ে সমস্যা, আমার কথা বলা নিয়ে সমস্যা।এক কাজ কর এই মেয়ের এসব ঘাস লতা পাতা রান্না তোর বাপকেই খাইয়ে দে।’

বলেই মুখ ঝা’ম’টা দিয়ে চলে গেল তানিয়া বেগম। নুরুল সাহেব সব কথা আগ্রহ নিয়ে শুনলেও শেষর কথা শুনে তিনি শুকনো ঢুক গিলে।তুরফা অবাক হয়ে দূর্বাকে দেখতে থাকে।দূর্বা বেচারির নিজেকে নিরীহ হরিণীর মতো মনে হচ্ছে,যে কিনা এতো কিছু এক সঙ্গে দিয়ে রান্না করেও শাশুড়ির মন পেলো না।হায় কপাল!
_______________

তুর শুয়ে থেকে রা’গে ফুঁ’স’ছে কারণ প্রাই ত্রিশ মিনিট যাবৎ নিষ্প্রভ বারান্দায় যেয়ে কোনো মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।যার হাসির সাউন্ড তুরের কানে বাজছে।কেন রে ভাই এতো হেসে হেসে কথা বলার কি আছে! ক‌ই কোনোদিন তো তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে না।তাহলে কি নিষ্প্রভের পছন্দ আছে।এসব উল্টা পাল্টা কথা ভাবতেই তুরের মনে এক রাশ খা’রা’প লাগায় ছেয়ে যায়।নিষ্প্রভের কথা বলা শেষ করে তুরের দিকে এগিয়ে এসে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে একটু হেসে বলে,

‘ছোট বেলার ফ্রেন্ড অনেকদিন পর কথা হলো।’

তুর হঠাৎ করেই বেডের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে দুই হাতে নিষ্প্রভের শার্টের কলার ধরে তে’জ নিয়ে বলে,

‘ক‌ই আমার সাথে কোনোদিন এভাবে হেসে হেসে কথা বলেন নি।’

তুরের এমন ব্যাবহার নিষ্প্রভকে বেশ ভাবায় তুর এমন মেয়ে না,সে বেশ নাজুক তাহলে হঠাৎ তার কি এমন হলো যে,এমন বিহেভ করছে।নিষ্প্রভ তুরকে শার্টের ক’লা’র ছাড়তে বলে তুর আরও শক্ত করে ধরে,সে কোন উপায় না পেয়ে তুরের হাতের উপর হাত দেয় নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে যায় ঠিক তখনি খেয়াল করে তুরের শরীর অসম্ভব গরম।এবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তুরের চোখ মুখ অসম্ভ লাল।নিষ্প্রভ তুরের কপালে হাত দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,

‘তোমার তো বেশ জ্বর এসেছে।কখন থেকে এমন হলো! একটু আগেও ঠিক ছিলে।’

তুর নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলে,

‘মনের জ্বর ই বড় জ্বর।’

বলেই জো’রে জো’রে হাসতে থাকে।নিষ্প্রভ বুজতে পারছে তুর জ্বরের ঘোরে এসব আবল তাবল ব’ক’ছে।সে তুরকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,

‘তুমি এখানে থাকো তোমার ওষুধ খেতে হবে।খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। আমি নিচ থেকে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।’

বলেই নিষ্প্রভ চলে যায়। নিচে যেয়ে দেখে সিতারা ড্রয়িং রুমে বসে মনযোগের সহিত বাংলা সিনেমা দেখছে এখনো ঘুমায় নি।নিষ্প্রভ সিতারার কাছে যেয়ে তাকে তিন থেকে চার বার ডাকলে সে তারপর জবাবা দেয়,

‘বড় ভাইজান কিছু লাগবো।’

‘তোর ভাবি অসুস্থ একটু স্যুপ করে দে।’

‘কি ভাবির কি হয়ছে?’

‘তেমন কিছু না একটু জ্বর তুই তাড়াতাড়ি স্যুপ করে দে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে।’

সিতারা রান্না ঘরে যায় তার আগে নিষ্প্রভ কে বলে যায়,

‘ভাইজান আপনি ভাবির কাছে যান আমি রুমে যেয়ে দিয়ে আসুম নি।’

নিষ্প্রভ অন্য সময় হলে যেতো কিন্তু আজ ভয়ে যেতে চাইছে না,কারণ রুমে গেলে তুর জ্বরের ঘোরে তার সাথে আর কি না কি করে।সেটা ভেবে নিষ্প্রভ দুই ঢুক গিলল।দশ মিনিট সময় নিয়ে সিতারা স্যুপ করে বোল নিষ্প্রভের হাতে তুলে দেয়।সে নিয়ে রুমে যেয়ে দেখে তুর বেডে চুপচাপ বসে আছে।নিষ্প্রভ তুরের পাশে বসে তাঁর মুখের কাছে স্পুন ধরে বলে,

‘খেয়ে নেও।’

তুর নিষ্প্রভের আরও কাছে যেয়ে তাঁর দুই হাত নিষ্প্রভের গালে রেখে নেশা মিশানো কন্ঠে বলে,

‘খা’বো তো আপনাকে।’

নিষ্প্রভ চমকে উঠে বলে,

‘হোয়াট!’

তুরের কাছে কি আর এতো কিছুর সময় আছে নাকি? সে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেলে।নিষ্প্রভের ঠোঁ’টে নিজের ঠোঁ’ট বসিয়ে দেয়।

চলমান।

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৪
#ফারিহা_খান_নোরা

তুরের করা অপ্রত্যাশিত কাজে প্রথম দিকে নিষ্প্রভ বাঁধা দিলেও পরবর্তীতে সেও তুরের মত বেসামাল হয়ে প’ড়ে।সে তুরের সাথে তাল মিলিয়ে নে’শা’য় মেতে ওঠে।তুরের ওষ্ঠ জো’ড়া থেকে সমস্ত রস নিংড়ে নিচ্ছে নিষ্প্রভ।জেনো কতো জন্মের খরার পর এক পশলা বৃষ্টি স্নিগ্ধ করে দিচ্ছে তাঁদের।নিষ্প্রভের এক হাত তুরের মাথায় অন্য হাত দিয়ে তুরের পিঠে অগোছালো ভাবে বিচরণ করে।এ এক অন্য রকম অনুভুতি যার সাথে নিষ্প্রভ জীবনের ফার্স্ট টাইম পরিচিত হলো।তুর জ্বরের ঘোরে সে এই অনুভূতি মনে রাখতে পারবে কি না,জানে না।হঠাৎ করেই তুর এক ধা’ক্কা’য় নিষ্প্রভ কে সরিয়ে দেয়।নিজের মুখ দুই হাত দিয়ে ধরে বেড থেকে নিচে নামতে নেয় কিন্তু তাঁর আগেই শরীর কাঁপিয়ে গল গল করে পুরো মেঝে ভাসিয়ে বমি করতে শুরু করে।

নিষ্প্রভ অস্থির হয়ে উঠে বলে,

‘ওহ শীট!’

পিছন থেকে সে তুরের দুই কাঁধ ধরে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।বমি করতে করতে তুর সেন্সলেস হয়ে নিষ্প্রভের উপর ঢলে প’ড়ে।নিষ্প্রভ কোনো উপায় না পেয়ে তুরকে কোলে তুলে আলগোছে বেডে শুইয়ে দেয়।এতো রাতে বাড়িতে কেউ জেগে নেই।এবাড়িতে হেল্প করার মত একমাত্র সিতারা আছে এতো রাতে তাঁকে ডাকতে গেলে বাড়িতে সবাই জেগে যাবে হয়তো একটা সিনক্রিয়েট হবে।নিষ্প্রভ কোনো উপায় না পেয়ে নিজেই ফ্লোর পরিষ্কার করে এক বালতি পানিতে মেডিসিন নিয়ে মুছে দেয়।তখন তুরকে ধরতে নিয়ে তাঁর শরীরেও বমির কিছু অংশ লেগেছে যার ফল স্বরূপ শরীর থেকে কেমন বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে।নিষ্প্রভ টিশার্ট ও ট্রাউজার নিয়ে দশ মিনিট সময় লাগিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।ওয়াশরুম থেকে বাহিরে এসে দেখে ম্যাডাম এখনো অই অবস্থায় আছে।সে তুরের কাছে যেয়ে কপালে হাত দেয় জ্বর চেক করে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক তার মানে জ্বর তেমন নেই।তবে তুর ঠান্ডায় কাঁপছে,এখন নিষ্প্রভের সব চেয়ে বড় কাজ হলো তুরের ড্রেস চেঞ্জ করে দেওয়া নয়তো তুরের ঠান্ডা লেগে যাবে কারণ তাঁর ড্রেস ও নোং’রা হয়ে গেছে।ড্রেস চেঞ্জ করে দেওয়ার কথা ভাবতেই ভ’য়ে তার গলা শুকিয়ে যায়। কিভাবে সম্ভব তাছাড়া তুর যদি তাকে ভুল বুঝে।এই অজ্ঞান রাণীর তো আর এসব কিছু মনে থাকবে না,ম্যাডাম এখন প’ড়ে প’ড়ে সেবা নিবে।নিষ্প্রভ মহা ঝামেলায় প’ড়ে তারপর ভাবে নাহ আগে মানুষের জীবন তারপর বাকি সব।

নিষ্প্রভ আলমারির দিকে এগিয়ে যায় অনেক ভাবনা চিন্তা করে ঢিলে ঢালা একটা কামিজ ও প্লাজু বের করে নিয়ে আসে।তার বেশ অস্বস্তি হয় কি ভাবে কি করবে বুঝতে পারে না।যত‌ই তাঁর বিয়ে করা ব‌উ হোক না কেন তাদের মধ্যে এখনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন হয় নি।আর কিছু না ভেবে নিষ্প্রভ রুমের লাইট অফ করে পুরো রুম অন্ধকার করে দেয় অস্বস্তি নিয়ে এগিয়ে যায় কাঁপা কাঁপা হাত তুরের দিকে বাড়িয়ে দেয়।ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়ে নিষ্প্রভ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। রুমের লাইট অন করে দিয়ে টাওয়াল ভিজে নিয়ে তুরের মুখ মন্ডল মুছিয়ে দেয় চোখে একটু পানির ঝাপটা দেয়।তুরের সেন্স ফিরেছে তবে সে জ্বর ও বমি করে বেশ দূর্বল।যার জন্য চোখের পাতা খুলতে পারছে না চোখ বন্ধ করেই কি জেনো বলছে।নিষ্প্রভ তুরের গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে সেও পাশে শুয়ে পড়ে।নিষ্প্রভ তুরের দিকে একপলক তাকিয়ে বিরবির করে বলে,

‘মানুষ বিয়ে করে ব‌উ এর সাথে বাসর করার পর ব‌উ বমি করে প্রেগন্যান্ট এর সংকেত দেয়।আর আমার ব‌উ! এখনো বাসর‌ই করতেই পারলাম না তার আগেই নিজের ইচ্ছায়,সামান্য কিস করে বমি করে ভাসিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে।’

তারপর ভাবুক কন্ঠ নিষ্প্রভ আবার ও বলে,

‘আমার ব‌উ তাহলে কিসের সংকেত দিচ্ছে?’

_____________________

নুরুল সাহেব কারো সাথে কোনো কথা না বলে রাতের খাবার বাহিরে যেয়ে খেয়ে এসেছে। তানিয়া বেগম সেই যে রুমে যেয়ে দরজা দিয়েছে আর বের হয় নি। তুরফা না খেয়ে শুকনো মুখেই মুখ ভার করে বসে আছে।তার হয়েছে যতো জ্বা’লা এখন রান্না বসিয়ে দিলে তাঁর উপর মায়ের ঘূর্ণিঝড় প’ড়’বে কারণ মা প‌ই প‌ই করে বলে দিয়েছে কোনো মতেই জেনো রান্না না করে কারণ তুষারকে আজ তাঁর নতুন ব‌উয়ের হাতের রান্না খাইয়ে বুঝিয়ে দিবে মা কেন এই দূর্বাকে ব‌উ হিসাবে মেনে নিতে পারছে না।নামটাও কি দূর্বা? তানিয়া বেগম তো দূর্বা ঘাস ছাড়া কথাই বলে না।এতো ফল ফুলের নাম থাকতে ঘস লতা পাতার নাম রাখলে যা হয়। তুরফা বিস্কুট ও চা খেয়ে কিছুটা হলেও খুদা নিবারণ করে।এর মধ্যে তুষার এসে পড়ে ফ্রেশ হয়ে তার ব‌উকে সাথে করে টেবিলে বসে প’ড়ে।তুরফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুরফা খাবার দে।’

তুরফা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। হিসহিসিয়ে বলে,

‘এখন বিয়ে করছে তোমার সব দিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার ব‌উয়ের।ব‌উকে বসিয়ে রেখে বোন কে ডাকছো কেন?’

তুষার চুপ হয়ে যায় দূর্বা উঠে খাবার নিয়ে এসে তুষারের প্লেটে দেয়। তুষার খাবারের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। কিছুটা রে’গে বলে,

‘এসব কি?’

তুরফা একটু হেসে স্বভাবিক কন্ঠে বলে,

‘কেন খাবার তোমার ব‌উ রেঁধেছে।’

তুষার কিছু না বলে দূর্বার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।দরজা জো’রে লাগিয়ে দেয় দূর্বা কেঁপে উঠে বলে,

‘কি হয়েছে স্বামী আমি কি কিছু ভুল করেছি?’

‘তোমার এই স্বামী স্বামী বলা দয়া করে বন্ধ করো।’

‘কেন স্বামী?’

তুষার চটে যেয়ে দূর্বাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।ক’ড়া কন্ঠে বলে,

‘তোমার এই স্বামী স্বামী বলে মুখের ফোনা তোলা বন্ধ করো।আর খ’ব’র’দা’র! বাবা মায়ের সামনে আমাকে স্বামী স্বামী বলে সম্মধন করছো তো তোমার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে।’
____________________

এখন মধ্যে রাত! নিষ্প্রভের বুকের উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তুর। কিছু আগেই নিষ্প্রভ তুরের মাথায় পানি ঢেলেছে কারণ তুরের জ্বর আবার এসেছিলো।ম্যাডাম সারারাত নিষ্প্রভের সেবা নিয়েছে।

‘আমায় একটু জড়িয়ে ধরেন না, খুব শীত করছে।’

তুরের কথা শুনে শুকনো ঢুক গিলে নিষ্প্রভ।তুর নিষ্প্রভকে টাইম না দিয়েই নিজেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিন মিন করে বলে,

‘তখন অই মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলেন কেন? আমার খুব রা’গ লেগে ছিলো।’

‘আমার তার সাথে হেসে হেসে কথা বলায় তোমার কেন রা’গ লেগেছিল?’

তুর নিজের ঠোঁট উল্টে বলে,

‘জানি না।’

নিষ্প্রভ তুরকে তার বুকের উপর থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তুর নিষ্প্রভকে টেনে নিজের উপর ফে’লে যার ফলে নিষ্প্রভের শরীরের আশি পার্সেন্ট ভার তুরের উপর গিয়ে পরে।নিষ্প্রভ উঠতে নিলে তুর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে,

‘আপনি এমন কেন! সব সময় আমায় শুধু ইগনোর করেন।এমন ভাব করেন জেনো আমি অন্যের ব‌উ।আমায় একটু আদর করলে কি হয়?’

নিষ্প্রভের গলা শুকিয়ে যায়।জ্বরের ঘোরে মেয়েটা কি বলছে জানলে নিজের‌ই হুঁশ থাকতো না। নিষ্প্রভ শুকনো ঢুক গিলে তুরের কানের কাছে তার মুখ এগিয়ে এনে বলে,

‘আচ্ছা আচ্ছা তুমি আমার‌ নিজেরই ব‌উ।এখন আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, তুমি এখন ঘুমাও ব‌উ। ভালো ব‌উয়েরা কিন্তু স্বামীর কথা শুনে।’

তুর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে,

‘সব কথা শুনবো তার আগে আমায় একটু আদর করেন।’

নিষ্প্রভ কিছু একটা বলে তুরকে মানতে চাইছিলো তার আগেই এই রাতের বেলা নিচে থেকে চিৎ’কা’র এর আওয়াজ ভেসে আসে।

‘চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১১+১২

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ১১
অন্ধকার হয়ে থাকা এই রাত্রিতে নিষ্প্রভের ছোট্ট হৃদয়টাতেও আঁধার নেমে এসেছে।তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে,তাহলে কি তুর চাইছে নিষ্প্রভ তাঁকে ডিভোর্স দিক! নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘তুমি কি ডির্ভোস চাও?’

তুর এবার একটু জোরেই হেঁসে উঠে।সেই হাসিতে কোনো মুগ্ধতা ছিলো না,ছিলো একরাশ তাচ্ছিল্য।তুর কন্ঠস্বর নিচু রেখে বলল,

‘আমার চাওয়া না চাওয়ার দাম আছে কারো কাছে? আমি তো ফেলনা,যে যেভাবে খুশি সেভাবে আমাকে ব্যাবহার করছে।মায়ের টাকার প্রয়োজন ছিলো আমাকে ইউজ করছে বান্ধবীর ল’ম্প’ট ছেলের সাথে বিয়ে দিতেও পিছুপা হয় নি,ভুলক্রমে আপনার সাথে বিয়েটা হয়েছে আপনার প্রয়োজন পড়লে ডিভোর্স দিবেন এতে আমার মতামত নেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার জীবণ কখনো আমার ইচ্ছায় চলে না।অন্যের স্বার্থে তাদের ইচ্ছা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়।’

তুরের কথায় নিষ্প্রভ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।সে কিছুটা হলেও বুজতে পারছে তুরের কষ্ট।কারণ মাত্র চার বছর বয়সে নিষ্প্রভের মা মারা যার।সেদিন থেকে তার জীবণে কষ্টের সূচনা হয়।তাঁর মা মারা যাবার ৪০ দিন না যেতেই তাঁর বাবা বিয়ে করে আশা বেগম কে নিয়ে আসে। তাঁর বাবার কথা নিষ্প্রভের জন্য এতো তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বিয়ে করছে। কিন্তু আসল কারণ তো সে জানে যদিও বুদ্ধি হবার পর সত্য চোখের সামনে এসেছে যাইহোক বাবা বিয়ে করে বউ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সে মা পায় নি। মূল কথা আশা বেগম তাঁর বাবার ব‌উ কিন্তু তাঁর মা নয়।তার মতে সৎ মা বাবার ব‌উ এর অভাব দূর করতে পারে কিন্তু একটা সন্তানে মায়ের অভাব দূর করতে পারে না।এই আশা বেগমের জন্যই নিষ্প্রভের ছোট বেলা দুর্বিসহ হয়ে যায়।এই মহিলা এসেই তাঁর বাবাকে তাঁর থেকে দূরে সরে দিয়েছে।

অতীতের কষ্ট থেকে বেরিয়ে এসে নিষ্প্রভ শান্ত কন্ঠে তুরকে বলল,

-‘দেখো আমি তোমার দিকটা বুজতে পারছি।আমি এভাবে কথাটা বলতে চাই নি।আমি জানি বাবা মা না থাকার কষ্ট ঠিক কতখানি কারণ আমার মা নেই বাবার কথা আর কি বলি থাক বাদ দেও।আর তোমার মা থেকেও নেই, আমার কথা তোমার খারাপ লাগতে পারে তবুও এসব বলতে বাধ্য হলাম।’

তুর নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাদ দেন এসব। আপনার ডিভোর্স লাগলে আপনি পেপার রেডি করবেন আমি সিগনেচার করে দিবো।আর হ্যা এসব ঝামেলার জন্য কয়দিন হলো আমার ভার্সিটি যাওয়া হয় নি।অনেক ক্লাস মিস গেছে কাল থেকে ভার্সিটি যেতে চাইছি।’

ডিভোর্স মানেই তো দুইজন চিরকালে জন্য আলাদা হয়ে যাওয়া।ভেবেই নিষ্প্রভের বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে এমন হচ্ছে কেন? সে শুকনো মুখে বলল,

‘আমার আগেই তোমার দিকটা ভাবা উচিত ছিলো।সরি সত্যি আমার তোমার লেখাপড়ার দিকটা মনে ছিলো না। তুমি কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে বাকি সব আমি সামলিয়ে নিবো তোমার চিন্তা করতে হবে না।’

তুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,

‘সব থেকে বড় চিন্তা তো আপনি।’

________________

সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখিয়ে নিষ্প্রভের সাথে ভার্সিটিতে এসেছে তুর।নিষ্প্রভ তুরকে গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যাবার আগে তুরের থেকে ক্লাস কয়টায় শেষ হবে তা শুনে যায় যদিও তুর বার বার করে নিষেধ করেছে জেনো না আসে।তুরের হাতে বেশ কিছু টাকাও গুঁজে দেয়, এতে করে তুর কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও না করে নি,কারণ তুরের হাতে এক টাকাও নেই। কলেজের গেট পার হয়ে গাছের নিচে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তুর।তার কাছে ফোন নেই যার জন্য আতিয়ার সাথেও কথা হয় নি।

তুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতিয়া ঝড়ের গতিতে দৌড়ে এসে তুরে পিঠে দু’ঘা ব’সি’য়ে দেয়।তুর ব্যা’থা’য় কঁকিয়ে উঠে।পিঠে হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘পা’গ’ল হয়ছিস। এভাবে কেউ মা’রে?’

আতিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে,

‘তোকে যে এখনো মে’রে ফেলি নি শুকরিয়া কর।হা’রা’মী ছিলি কোথায় এতো দিন।কোনো খোঁজ খবর নাই তোর ফোনে না হলেও অন্তত হাজার বার ফোন দিয়েছি প্রতিবারই অফ দেখায়। কোথায় গেছলি ম’র’তে।জানিস তোকে ছাড়া এ কয় দিন আমার একটুও ভালো লাগে নি।এমনকি আমার ক্রাশ স্যারকেও ভালো লাগে নি এতোদিন।’

আতিয়ার এক নাগাড়ে বলা কথা তুর নিরব শ্রোতা হয়ে শুনে। হঠাৎ করেই আতিয়াকে চমকে দিয়ে তুর তাকে জড়িয়ে ধরে।আতিয়া তুরের পিঠে হাত রেখে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,

‘তুর দোস্ত কি হয়েছে তোর। তুই ঠিক আছিস?’

আতিয়া কাঁধের জামার অংশে পানির আভাস পায় তার বুজতে অসুবিধা হয় না।তুর কাঁদছে এবার সে একটু ভয় পেয়ে যায়।তুরকে ধরে একটা খালি বেঞ্চে বসায় ইতিমধ্যে তুরের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আতিয়া তুরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘কি হয়েছে প্লীজ বল সোনা,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।’

তুরের ঠোঁট দুটো অসম্ভব কাঁপছে সাথে কান্নার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আতিয়ার মুখে এটুকু কথা শুনে মনে হচ্ছে এই তো তার আপনজন আছে।কেউ তো আছে যে,তার জন্য টেনশন করে।নিজের মা খোঁজ খবর অবধি নেয় না।তুর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে একে একে আতিয়াকে শুরু থেকে শেষ অবধি বলে দেয়।

সব শুনে আতিয়া রেগে বো’ম হয়ে যায়।তুরের মায়ের উপর ঘৃ’ণা এসে যায়।ছিঃ কোনো মা কি এমন ও হয়? নিজ স্বার্থের জন্য নিজের মেয়েকে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের হাতে তুলে দিতেও ভাবে না।সে কেমন মা? আফসান কে আতিয়া সেইদিনের পর থেকে চরিত্রহীন ল’ম্প’ট হিসাবেই চেনে। আতিয়া দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে,

‘নিষ্প্রভ ভাইয়া মানুষ হিসেবে কেমন?’

‘ভালো।’

‘বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে আর ভাইয়া‌ও ভালো তুই তাহলে এই সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভেবেছিস?’

‘সে আমায় ডিভোর্স দিবে।’

তুরের অমনোযোগী উত্তর। আতিয়া এবার বেশ জোরেই চেঁ’চি’য়ে উঠে বলে,

‘মানে।’

আতিয়ার এমন চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।সে ওসব পাত্তা না দিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

‘মগের মুল্লুক নাকি! ইচ্ছে হলে বিয়ে করবে আবার ইচ্ছে হলে ডিভোর্স দিবে মানেটা কি! এই তোর বরের জিএফ আছে নাকি।এসব থাকলে একবার শুধু আমায় বল অই মেয়েকে বুড়িগঙ্গার কালা পানিতে চু’বি’য়ে এমন মা’র মা’র’ব আমি যে,অই পেত্নি কে তোর বর চিনতে অবধি পারবে না।আর না চিনলে এসব প্রেম পিরিতি ও হবে না। আমি এর শেষ দেখে নিবো বলে দিলাম। ফাইজলামি পাইছে তাই না?’

তুর আনমনে বলে,

‘ইচ্ছে করে বিয়ে করে নি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করেছে।তখন পরিস্থিতিটাই অন্যরকম ছিলো।’

‘মানলাম ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করেছে তাই বলে ডিভোর্স দিবে।কেন রে ভাই একবার যখন বিয়ে করেইছিস সংসারটা তো করাই যায়।দুই চারমাস একসাথে থাকলে ভালোবাসাটা আপনা আপনি উৎপাদন হবে।’

আতিয়ার কথায় এতো কষ্টের মধ্যেও তুরের হাঁসি পায়।এই মেয়ে টা পারেও বটে কি সব ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছে।তুর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে বলে,

‘আতিয়া আমি চাইলে হয়তো উনি আমায় ডিভোর্স দিবে না। কিন্তু আমি চাইনা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে কারো ঘাড়ে চে’পে বসতে।এতো দিন মায়ের কাছে বোঝা হয়ে ছিলাম।বিয়ের পর একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই সব হয়।সেই আমি কিনা স্বামীর কাছে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোঝা হয়ে থাকবো?’

আতিয়া কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর হঠাৎ করে বো’ম ফা’টা’র মতো একটা প্রশ্ন করে,

‘তুর তোর শাড়িতে জুস ফেলা,তোকে অই ঘরে আটকিয়ে রাখা, কারেন্ট যাওয়া এসব কেউ প্ল্যান করে করে নি তো!তুই ভাব এতকিছু কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে?’

চলমান।‌

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১২
#ফারিহা_খান_নোরা
‘তুষার ভাইয়া হঠাৎ করে কাউকে না বলে পাহাড়ি এলাকার একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।’

তুরফার কথায় চোখ কোটরে থেকে বেরিয়ে আসে তুরের।তখন আতিয়ার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তুরফা এসে তুরকে জরিয়ে ধরে।দুই বোনের সেই কি কান্না।এসবের এক পর্যায়ে তুরফা এমন একটা কথা বলে বসে।তুর অবাক হয়ে বলে,

‘এসব কি বলছো আপু। অসম্ভব!তুষার ভাই নাকি কোনো দিন ও বিয়ে করবে না। সারাজীবন দেবদাস হয়ে বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে।’

‘সব সম্ভব।এই তার দেবদাস হবার নমুনা শুনলিই তো।’

তুর উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,

‘বাড়িতে এখন কি অবস্থা?’

‘তোর কি মনে হয় মা মেনে নেওয়ার মতো মানুষ? বাড়িতে সব সময় অশান্তি লেগেই আছে।মায়ের কথা বিয়ে যখন করবিই পাহাড়ী মেয়েকে কেন বিয়ে করলি। বাংলাদেশে আর কোনো মেয়ে ছিলো না? আর তুষার ভাইয়ার কথা, ভালো লেগেছে বিয়ে করেছি মানিয়ে নেওয়ার হলে মানিয়ে নেও নয়তো বলে দেও ব‌উকে নিয়ে বেরিয়ে যাবো।এসব নিয়ে প্রতিদিন লগে প’ড়’ছে মা ছেলে।’

তুর এবার হেসে বলে,

‘সবাই তো আর তুরের মতো নয়।যার যা ইচ্ছে হয় জো’র করে চাপিয়ে দিবে। তুষার ভাইয়া ঠিক কাজ করেছে।একেই বলে সুযোগে সৎ ব্যাবহার।’

‘হ্যা ঠিক বলেছিস‌,জানিস বাবা এসেছে।’

তুর মন খারাপ করে বলে,

‘বাবা কি আমার উপর রে’গে আছে?’

তুরফা তুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘জানিস বাবা অনেক রে’গে গেছে এমনকি মায়ের গা’য়ে হা’ত অবধি তুলেছে।’

‘কি বলো!’

তুরকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে তুরফা সেদিনের ঘটে যাওয়া সব কিছু বলে দেয়। তার সাথে বলে,

‘বাবা বলেছে তোর আর নিষ্প্রভের ডিভোর্স করিয়ে দিবে। কিন্তু তুষার ভাইয়ার এসব ঝামেলায় তিনি এদিকটা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তবুও বাবা কয়দিন হলো হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে যায়।কাউকে না বলে কোথায় যায় আমার কেন জানি সন্দেহ লাগে বাবাকে।’

তুর তুরফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।সে রে’গে যায় এই ডিভোর্স নিয়ে সবাই কি শুরু করছে। সবাই বিয়ে করে দুটো মানুষ সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য আর তার বিয়ের পর থেকেই সবাই আলাদা করতে ডিভোর্স নিয়ে উঠে প’ড়ে লে’গে’ছে।কেন রে ভাই!বিয়ে যখন একবার হয়ে গেছেই তখন এতো কাহিনী কেন?

তুর তুরফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,

‘সবাই ডিভোর্স নিয়ে কি শুরু করছে।’

তুরফা অবাক হয়ে বলে,

‘সবাই মানে আর কে বলেছে?’

তুর আশা বেগমের কথা বলে দেয় তার সাথে নিষ্প্রভ কে ছা’ড়’তে টাকা স্বর্ণ অফার করার কথাও বলে।সব শুনে তুরফা রে’গে যেয়ে বলে,

‘ এই মা ও মায়ের বান্ধবী ও না,এই দুইজন কিন্তু খুব সাং’ঘা’তি’ক।এরা নিজের ভালো ছাড়া কিছুই বুঝে না। খবরদার তুই ওদের কথা শুনে নিষ্প্রভ কে ছে’ড়ে দেওয়ার কথা ভুলেও চিন্তা করবি না।’

তুর অসহায় কন্ঠে বলে,

‘নিষ্প্রভ ও চায়।’

‘মানে কি?’

তুর সব ঘটনা বলে দেয়। তুরফা মনোযগ দিয়ে শুনে কিছু একটা ভেবে বলে,

‘নিষ্প্রভ ভালো ছেলে আমি ওর খোঁজ নিয়েছি তাঁর প্রেম ভালোবাসার কোনো রে’ক’র্ড নেই।ছেলে হিসাবে খুব ভালো। তুই ওর মন বোঝার চেষ্টা কর আমার মনে হয় সে তোকে মন থেকে এসব বলে নি।হতে পারে সে তোকে এই দুই মহিলার থেকে প্রটেক্ট করতেই এসব বলছে কিন্তু সে তো আর জানে না,তার ডিসিশন পুরাপুরি ভুল।তুই ওর কথা না শুনে নিষ্প্রভ কে আপন করার চেষ্টা কর দেখবি অনেক ভালো থাকবি।’

‘তুই এতো কিছু জানলি কি করে?’

তুরফা কোনো উত্তর দিতে পারে না। তুরফার চুপ থাকা দেখে তুর আগ্রহ নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,

‘আপু জানিস আমাদের বিয়ের দিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা আতিয়ার সাথে শেয়ার করেছি। আতিয়া বলেছে এ সব কিছু কাকতালীয় না।মা,আফসান ও তাঁর মায়ের প্ল্যান হতে পারে।যদি এমন কিছু হয় তাহলে আমি আমার মায়ের মুখ কখনো দেখতে চাই না।এটাও বলেছে নিষ্প্রভ আর আমার বিয়ের পিছনে তৃতীয় কারো হাত আছে।তোর কি মনে হয়?’

তুরের প্রশ্নের জবাবে তুরফা কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে তুরের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘এটা রাখ এই ব্যাগে তোর ফোন আর কিছু দরকারি জিনিস আছে। কিছু টাকাও দিয়েছি তোর প্রয়োজনে লাগতে পারে।আজ আসি রে আমার একটুও সময় নেই টিউশন আছে।দেরি হলে সমস্যা হবে,এমনি এই কয়দিন তোর খোঁজে প্রতিদিন ই কলেজে এসেছি কিন্তু তোকে পাই নি।’

‘আরে আপু…

তুরের পুরো কথা শেষ হবার আগেই তুরফা হন্তদন্ত হয়ে চলে যায়।তুর বিরবির করে বলে এর আবার কি হলো।

_________________________

কলেজের মেইন গেটে নিষ্প্রভের জন্য দাঁড়িয়ে আছে তুর। তুরফার আসার পর পরই আতিয়া চলে গেছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে।যার ফলে কারো আজ ক্লাস করা হয় নি।তুর অন্য মনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে হঠাৎ একটা পিচ্চি এসে বলে,

‘আপু।’

তুর একটু হেঁসে বলে,

‘জি।’

পিচ্চিটা কোনো কথা না বলেই তুরের হাতে একটা লাল গোলাপ গুঁজে দিয়ে দৌড় দেয়।তুর অবাক হয়ে একবার পিচ্চিটার দৌড়ের দিকে দেখে আর একবার নিজের হাতের মুঠোয় গুঁজে থাকে ফুলের দিকে দেখে।তুর চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘এই পিচ্চি শোনো,এই ফুল আমাকে দিলে কেন?’

‘আপনাকে দিতে বলেছে আপু।’

‘কে দিতে বলেছে?’

পিচ্চিটা দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে তাকিয়ে বলে,

‘ভাইয়া।’

বলেই চলে যায়।তুর ফুলের দিকে তাকিয়ে রে’গে যায়।এসব কি ছেলে মানুষি,রা’গে’র বশে ফুলটা ছুঁ’ড়ে ফেলে যা গিয়ে পড়ে নিষ্প্রভের মুখের উপর।তুর এটা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় মনে মনে বলে এটা কি হলো!

‘নিষ্প্রভ মাত্র‌ই এসে বাইকটা ব্রেক করে সেই মুহূর্তে তাঁর মুখের উপর তুরের ছুঁ’ড়ে দেওয়া গোলাপ এসে প’ড়ে।সে অবাক হয়ে তুরের দিকে তাকায়।তুর মনে মনে ঢুক গিলে।নিষ্প্রভ ফুলটা নিয়ে তুরের কাছে যায়। তাঁর দিকে খানিকটা ঝুকে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘আজকাল কি ফুল ছুঁ’ড়ে দিয়ে প্রপোজ করা ট্রেন্ড চলছে নাকি।’

তুর আমতা আমতা করে বলে,

‘না আসলে…’

নিষ্প্রভ হেসে বলে,

‘আসলটাই তো শুনতে চাইছি নকল দিয়ে আমার কাজ নাই।’

তুর ঢুক গিলে বাচ্চাটার কথা বলে দেয় তবে কোন ভাইয়া দিতে বলছে সেইটা স্কিপ করে কারণ পরে যদি নিষ্প্রভ তাকে ভুল বুঝে এমনি তাদের সম্পর্কে ঝামেলার কমতি নেই। নতুন করে ঝামেলা সে চায় না।

নিষ্প্রভ হেঁসে উঠে।হাসতে হাসতে বলে,

‘একটা বাচ্চা ছেলে আমার ব‌উকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করে আর আমি বিয়ে করে এখনও করতে পারলাম না।’

নিষ্প্রভের মুখে ব‌উ ডাক শুনে তুরের পুরো শরীর শিহরিত হয়।সে লজ্জায় নুয়ে পড়ে।

______________________

আশা বেগম তুরকে যা মুখে আসছে সেটা বলেই গা’লি দিচ্ছে,পাশে দাঁড়িয়ে সিতারা বেশ মজা করে মনযোগ দিয়েই শুনছে।গা’লি শুনতে তার বেশ ভালোই লাগছে কিন্তু তুরকে দিচ্ছে এটা সে মানতে পারছে না। সেজন্য সিতারা আগ্রহের সহিত আশা বেগম কে বলে,

‘আম্মা আপনার যদি গা’লি দিতেই হয় তাহলে অন্য কারো নামে দেন। এমনিতেই আপনার গা’লি গুলা শুনতে আমার ভালই লাগছে কিন্তু নতুন ভাবিকে
দিয়েন না। নতুন ভাবি কি সুন্দর আমি তার অনেক ভালা পাই একদম আপনার গা’লির মতো।’

সিতারার কথা শুনে আশা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এই কে রে কোথায় থেকে আসছে।গা’লি শুনতে কারো ভালো লাগে!কেউ কাউকে গা’লির মতো ভালোবাসতে পারে।কি বলছে এই মেয়ে,পাগল নাকি? আশা বেগম রুক্ষ কন্ঠে বলে,

‘আমি কাকে গা’লি দিবো না দিবো তোর থেকে শুনতে হবে।আর কি জেনো বললি তুই তুর কে আমার গা’লির মতো ভালোবাসিস।এই গা’লি’র মতো কাউকে ভালোবাসা যায় ম’শ’ক’রা করিস আমার সাথে?’

সিতারা এবার প্রফুল্ল সহকারে বলে,

‘যায় তো আম্মা শুধু নতুন ভাবিরে না,এখনি আমারে বিয়া দেন আমি আমার জামাইকেও গা’লি’র মতো ভালোবাসুম।’

আশা বেগম এবার রে’গে সিতারার দিকে তে’ড়ে যেয়ে বলে,

‘ফ‌ইন্নির বাচ্চা যা আমার চোখের সামনে থেকে।পাগল কোথাকার সে আবার বিয়ে করবে! তোকে এই বাড়ি থেকে ঘা’ড় ধা’ক্কা দিয়ে বে’র করে দিবো তখন রাস্তায় বসে থেকে মানুষদের গা’লি’র মতো ভালোবাসা শিখাস।’

সিতারা কিছু টা ঘা’ব’ড়ে যায় ।মনে মনে ভাবে সে খা’রা’প কি বলেছে।সে মিনমিন করে বলে,

‘আমি ফ‌ইন্নি হলেও আমার ভালোবাসা খাটি এই তাঁর প্রমাণ।আপনরা বড়লোক মানুষ তয় আপনাদের ভালোবাসায় ভেজাল আছে।’

আশা বেগম ঝা’ড়ু খোঁজে হাতের কাছে পেয়ে সিতারার গায়ে দুই তিনটা মা’র দিয়ে রা’গে গজগজ করতে করতে বলে,

‘ছোটলোকের বাচ্চা আজকেই তোকে বাড়ি থেকে বে’র করে দিবো।’

সিতারা ভয়ে দৌড় দেয়।আশা বেগম ঝা’ড়ু ফেলে দিয়ে বলে,

‘এই বু’ড়ো আমাকে কখনোই শান্তি দিবে না।এইটারে যে কোন জঙ্গল থেকে তুলে এনেছে আল্লাহ ভালো জানেন।এখানে এসে ছে’ড়ে দিয়েছে, আমি তো আছিই গাধা পিটিয়ে মানুষ করতে।’

এসবের মাঝে সদর দরজা দিয়ে তুর ভেতরে প্রবেশ করে।তরকে দেখে আশা বেগমের জ্ব’ল উঠা রা’গ দ্বিগুন হয়ে যায়।তুর উপরে উঠতে নিলে আশা বেগম গজরাতে গজরাতে বলে,

‘সারাদিন বাহিরে থাকলে হবে, তোমার কি কোনো কাজ কাম নাই। তোমার তো লজ্জা নেই তা জানি কিন্তু নিষ্প্রভ তোমাকে বিয়ে করে সেও কি তোমার মতো হলো।সারাদিন ব‌উ নিয়ে চিপকে চিপকে থাকতে লজ্জাও করে না।’

‘নিজের ব‌উ এর সাথে চিপকে থাকলে লজ্জা করতে হয়।পাশের বাড়ির করিমের ব‌উ এর সাথে চিপকে থাকলে বুজি লজ্জা করতে হয় না?’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১০

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১০
#ফারিহা_খান_নোরা

‘তুরকে মেনে নে!’

নিষ্প্রভ অসহায় চোখে অনিকের দিকে তাকায়। মিনমিন করে বলে,

‘তুই তো সব জানিস।’

অনিক এবার কিছুটা রেগে গেল।তবুও শান্ত হয়ে বলল,

‘হ্যা জানি আর তার সাথে এটাও জানি তোর এই নিঃসঙ্গ জীবনে পাশে থাকার মত একটা নিঃস্বার্থ জীবণ সঙ্গী দরকার।যে বিনা স্বর্থেই তোর পাশে থাকবে শুধু খুশির দিন‌ই নয় কষ্টের দিনেও থাকবে। বন্ধু হিসাবে আমি চাই তোর জীবন সব সময় আনন্দে ভরে থাকুক।আর সেই আনন্দ তখনি থাকবে যখন তুরের মত একজন জীবণ সঙ্গী তোর পাশে থাকবে। নিয়তি তুরকে তোর দ্বারে এনে দিয়েছে।তুর মেয়েটা কিন্তু আসলেই ভালো ও অসাধারণ।লাইফে চান্স একবার ই আসে।তুই তুরকে ডিভোর্স না দিয়ে আপন করে নে।তোর ইচ্ছে করে না, তোর কাছের কেউ থাকবে।তোর নিজের একটা ফ্যামিলি হবে।তোর বাড়ির লোকদের নিয়ে চিন্তা ও ভয় করিস না। ভালো একটা জবের চেষ্টা কর তারপর তুরকে নিয়ে অই পরিবেশ থেকে আলাদা হয়ে যা।’

‘ইচ্ছে তো সবার‌ই হয় তাই বলে নিজের ভালো থাকার জন্য তুরের মত একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবণ নষ্ট করবো তুই বল।তার থেকে ভালো হবে তুরকে ছেড়ে দিবো।’

‘যা করবি ভেবে করবি।’

‘তুই জানিস আমার মনে হয় সেদিনের ঘটনা আফসান ও তার মা প্ল্যান করে ঘটিয়েছে।’

অনিক আগ্রহ নিয়ে বলে,

‘আমি আগেই ধারণা করেছিলাম এগুলা কাকতালীয় ঘটনা না।পুরোটাই সাজানো কিন্তু এতো ঝামেলার মধ্যে তোকে বলি নি। কিন্তু তুই কিভাবে বুজতে পারলি?’

নিষ্প্রভ অনেক কে নেশার ঘোরে আফসানের বলা সব কথা খুলে বলল।অনিক শুনে কিছুটা ভেবে বলে,

‘মানুষ নেশার ঘোরে সব সময় সত্য কথায় বলে।তুই শিওর থাক এসব কিছু ওদের প্ল্যান।আমার তো মনে হয় তুরের মা অই মহিলাটাও এর সাথে জড়িত।’

‘কিন্ত ওনারা প্ল্যান করে আফসানের সাথে বিয়ে দিতো কিন্তু আমার সাথে বিয়ে হয়েছে।আমার মনে হয় এই সমস্ত ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের হাত আছে।’

‘তুই ঠিক বলছিস। আমি বলি কি তুই তুরকে ছেড়ে দেস না।তুই ছেড়ে দিলে আফসান মেয়েটাকে ছিঁ*ড়ে খাবে সাথে থাকবে তোর সৎ মা ও তুরের মা।’

কিন্তু আমার তো ও কে ছেড়ে দিতেই হবে।কারণ ওর পছন্দের মানুষ আছে। আমি আফসানের মা কে বলতে শুনেছি তুরের কোন প্রেমিক নাকি আফসান কে মে’রে’ ছে তুরের সাথে অসভ্যতামি করার জন্য।আমি ভাবছি সেই ছেলেটার হাতে নিজ দায়িত্বে তুরকে তুলে দিবো।’

অনিক রেগে নিষ্প্রভের পিঠে দুটো কি*ল বসিয়ে দেয়। নিষ্প্রভ ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে।অনিক গজ গজ করতে করতে বলল,

‘শা*লা মহান সাজতে চাও! জনদরদী তুমি? মাদার তে/রে/সা উপস সরি তুমি তো আবার মেল।তাহলে তুমি হবে স্বামী তে*রে*সা নিজের ব‌উকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আজ থেকে তোমাকে স্বামী তে/রে/সা উপাধিতে ঘোষণা করা হলো।’

‘হুয়াট!’

নিষ্প্রভ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিৎকার করে বলে।অনিক নিজের কানে দুই আঙ্গুল দিয়ে বলে,

‘এতো জোরে চিল্লানি দেস কেন।মনে হচ্ছে আমি তোর ব‌উকে ভেগে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছি।’

নিষ্প্রভ এবার আর‌ও রে*গে যায়।রে*গে যাওয়ার ফলে তাঁর চোখ জোড়া লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।সে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠে,

‘এই তোর সমস্যা কি বল তো।তুই সব সময় সব কিছুর মধ্যে আমার ব‌উকে টেনে আনিস কেন? খবরদার সব কিছুতেই ওকে টেনে আনবি না।’

‘যাহ্ বাবা এই ব‌উ মানিস না ছে/ড়ে দিবি তাও আবার ব‌উয়ের পছন্দের মানুষের হাতে তুলে দিয়ে নিজেকে স্বামী তে/রে/সা/র খেতাব নিবি এখন আবার আমি টানলেই দোষ।বলছি অন্য কারো হাতে তুলে যখন দিবিই তাহলে আমার হাতেই তুলে দে।বিশ্বাস কর আমি তোর ব‌উকে নিজের ব‌উয়ের মতোই আদর যত্ন করবো। অন্যের ব‌উ ভেবে একটুও অবহেলা করবো না।’

অনিক ইনোসেন্ট ফেস করে কথা গুলো বলতে দেরি কিন্তু তার পিঠে দুই তিনটা কি/ল প/ড়/তে দেরি হলো না।অনিক ব্যা’থা’য় কুকিয়ে উঠলো। এরমধ্যে নিষ্প্রভের ফোন এলো সে ফোন ধরার আগে বিরবির করে বলল,

‘শা/লা!’

অনিক নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

‘শা/লা না দোস্ত সতীন বল।যদিও এটা মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু আমরা না হয় ছেলে সতীন হলাম কি বলিস? আমরা আমরাই তো!’

নিষ্প্রভ বিরক্তিকর চোখে একবার অনিকের দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। টেইর্লাস এ দেওয়া তুরের ড্রেস গুলো রেডি হয়েছে ওগুলো নিয়ে আসতে বলছে। নিষ্প্রভ জানে অনিক ফান করছে তাকে রা’গি’য়ে দিতে তবুও ব‌উকে নিয়ে এসব শুনতে ভালো লাগছে না তার। নিষ্প্রভ অনিক কে বলল,

‘থাক আসি!’

অনিক নিষ্প্রভের কাঁধে হাত রেখে অত্যান্ত শীতল কন্ঠে বলল,

‘যাকে নিয়ে বন্ধুর ফান ই সহ্য করতে পারছিস না।তাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিবি বা ছেড়ে দিবি কিভাবে? শোন বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন তুরকে তুই মনে জায়গা দিতে শুরু করেছিস।’

অনিকের কথা শুনে নিষ্প্রভ গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হয়।অনিক বলে,

‘এতো ভাবতে হবে না।বিশ্বাস না হলে তোর ব‌উকে আমার কাছে দিয়ে যা। আমি খুশি মনে বলতে চাই,

“আমার ব‌উ আমার ব‌উ,
বন্ধুর ব‌উ ও আমার ব‌উ।”

‘শা/লা তুই আর ভালো হবি না। চোখ তুলে তোর বিছানার তলায় রেখে আসবো।তখন আমার ব‌উয়ের দিকে নজর কেন,নিজের ব‌উকেও দেখতে পারবি না।’

বলেই নিষ্প্রভ রে’গে গজগজ করতে করতে চলে যায়।অনিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আর জোরে জোরে বলে উঠে,

‘বন্ধু তুমি ভাঙবা তবুও মচকাবে না।’

_____________

রাত দশটা! নিষ্প্রভ শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে তুর শুয়ে আছে।নিষ্প্রভ ব্যাগ গুলো বেডের একপাশে রেখে দেয়। তুর নড়েচড়ে উঠে বসে, নিষ্প্রভের কেন জানি তুরকে অস্বাভাবিক লাগছে। নিষ্প্রভ গলা খাঁকারি দেয় তুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তবুও তুর আগের মতই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকে। নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,

‘তোমার কি বেশি শরীর খারাপ।ব্যাথা কি বেশি করছে চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।?’

তুর এবার নিষ্প্রভের দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘ক‌ই না ত। আমি ঠিক আছি জাস্ট একটু ব্যা’থা আছে রেস্ট করলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

‘আমার কেন জানি মনে হলো তুমি ঠিক নেই। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি এই গুলো দেখো সব ঠিকঠাক আছে কি না।’

নিষ্প্রভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা গুলো বলে চলে যায় ওয়াশরুমে।মেয়েটার শরীরটা এমনি খারাপ, হতে পারে তুরের হয়তো বাড়ির জন্য মন খারাপ নয়তো পার্সোনাল কারণে।তুর তাকে নিজের কেউ ভাবতে পারছে না বলে বলতে চাইছে না হয়তো।থাকুক ও নিজের মত।

তুর নিষ্প্রভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে তাকায়।তার এসব বের করতে একটুও ইচ্ছে করছে না।যেখানে মানুষটাই তার নয় সেখানে এসব জিনিস দিয়ে সে কি করবে।মনটা তার বিষিয়ে রয়েছে রাতের সেই ঘটনার পর থেকে।কিছুই ভালো লাগছে না।তার জীবণটা এমন না হলেও পারতো।আশা বেগমের বলা কথা গুলো তার ছোট্ট হৃদয়ে বিশাল দাগ কেটেছে।হয়তো অপ্রত্যাশিত ভাবে স্বামীর সাথে তার হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ হবার আগেই বিচ্ছেদ হতে চলেছে।

তখন আশা বেগম নিষ্প্রভকে ছেড়ে দিতে তুরকে গহনা টাকা অফার করে।তুর অবাক হয়ে যায় এতোদিন তাঁর মাকে আশা বেগম এসব অফার করেছে তার মা র্নিদ্বিধায় আশা বেগমের সাথে তাল মিলিয়েছে সেজন্য আশা বেগম হয়তো মায়ের মতো মেয়েকেও লোভী ভেবেছে তা না হলে কি এমন অফার দিবে কিন্তু তুর তো লোভী মেয়ে না।হ্যা একদিক থেকে সেও লোভী তবে সেটা ভালোবাসার,টাকার নয়।

আশা বেগমের কথা শুনে তুরের মে’জা’জ ভিতরে ভিতরে দপদপ করে জ্ব’লে উঠে।তবুও শান্ত কন্ঠে বলে,

‘আপনার কথায় আমি নিষ্প্রভকে ছাড়বো কেন?’

আশা বেগম হেসে বলে,

‘তোমার ভালোর জন্য।’

তুর অবাক হয়ে বলে,

‘কেমন ভালো?’

আশা বেগম এবার তুরকে বুঝানোর চেষ্টা করে সেজন্য তুরের পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বলে,

‘দেখো মা তুমি আমার বান্ধবীর মেয়ে আমি তোমার খারাপ চাই না।অতীতে আমি তোমাকে আমার ছেলের ব‌উ হিসাবে চাইতাম কিন্তু এখন তুমি আমার সতীনের ছেলের ব‌উ। তবুও আমার বান্ধবীর মেয়ে তাই বলছি তুমি নিষ্প্রভকে ছেড়ে দেও।এই বাড়ির অর্থ সম্পদ দেখছো না? সব কিছুর মালিক আফসান হবে নিষ্প্রভ কিন্তু কিছুই পাবে না।এ বাড়ি থেকে এখনি বের করে দিলে ওকে রাস্তায় থাকতে হবে।এমন একটা ছেলের সাথে তুমি সারাজীবন কিভাবে কাটাবে এর থেকে ভালো আমার টাকা ও গহণা গুলো নিয়ে তুমি ওকে ছেড়ে দেও আর নিজের জীবণ গুছিয়ে নেও।’

তুর এবার ভীষণ রে’গে যায়।কি’ড়’মি’ড় করে বলে,

‘আপনি আমাকে লোভী মনে করছেন? নিষ্প্রভ আর যাই করুক ও আপনার ছেলের মতো অ’মা’নু’ষ নয়।আর নিষ্প্রভের মত এমন একটা মানুষের সাথে রাস্তায় কেন গাছতলায় থাকতেও রাজি আমি।’

‘শোনো মেয়ে এসব আবেগ দিয়ে জীবণ চলে না। আমি জানি নিষ্প্রভ তোমাকে মেনে নেয় নি। তোমাদের আজ হলেও ডিভোর্স হবে কাল হলেও হবে তাই ভালোই ভালোই আমার কথা মেনে নিয়ে চলেও যাও।এতে করে টাকা গুলো পাবে যা দিয়ে তোমার ভবিষ্যত কিছুটা হলেও ভালো হবে।’

‘এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার।আপনাকে আমার এতো ভালো নিয়ে ভাবতে হবে না।’

তারপর টাকা ও গহনা গুলো আশা বেগমের হাতে তুলে দিয়ে বলে,

‘এগুলো নিয়ে এখনই আমাদের রুম থেকে বেরিয়ে যান।’

আশা বেগম রে/গে গ’র্জে উঠে এইটুকু মেয়ের এতো বড় সাহস তাকে অপমান ভালো বুঝে বুঝাতে এসেছিলো কিন্তু এই মেয়ের এতো দেমাক।রে’গে গিয়ে বলে,

‘দুই দিনের মেয়ে হয়ে এতো তেজ।আরে তোর মা তো লোভী তুই কেমন তাও জানা আছে। ভালো চাইছিলাম বলে বুঝাতে এসেছি এই বাড়ি থেকে চলে যেতে।থাক তুই এখানে আফসান যখন ছিঁ’ড়ে খাবে তখন তোর এই দেমাক কোথায় যাবে দেখবো নি। তখন তোর নিষ্প্রভ ও তোর দিকে তাকাবে না।’

আশা বেগম হন হন করে চলে যায় আর ভাবতে থাকে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল এবার বাঁকাতে হবে।তুর স্তব্ধ হয়ে যায় তার মুখ থেকে কোনো কথায় বের হয় না।এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পড়ে নি।
_______________________________

নিষ্প্রভ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখ তুর মুখ ভার করে বসে আছে আর শপিং ব্যাগ গুলো তার সামনে ওভাবেই পড়ে রয়েছে ঠিক যেভাবে সে রেখে গিয়েছিল।নিষ্প্রভ তুরকে বলল,

‘এখনো এসব বের করো নি।বের করে দেখো।’

তুর না চাইতেও একে একে বের করতে শুরু করে।প্রথমে শাড়ির সাথের জিনিস গুলো বেড়িয়ে আসে তারপর পাঁচটা থ্রিপিস। নতুন তিনটা প্যাকেট দেখে তুর ভ্রু কুঁচকে নিষ্প্রভের দিকে তাকায়। নিষ্প্রভ তুরকে খুলতে ইশারা করে।তুর খুলে অবাক হয়ে যায় ভিতরে গর্জিয়াস তিনটা থ্রিপিস। একটা মেরুন ও ঘিয়ে রঙের মিশ্রণে সুতার সুক্ষ কাজ করা থ্রিপিস যার ওড়নাটা ভীষণ সুন্দর।আরেকটা সি গ্রীন রঙের টিস্যু থ্রীপিস অন্যটা ব্লাক র্জজেট এর উপর গোল্ডেন জরি দিয়ে কাজ করা থ্রীপিস তিনটাই তুরের অসম্ভব সুন্দর লেগেছে।তবুও তার মনে স্বস্থি খুঁজে পাচ্ছে না।তুর জিজ্ঞেস করে,

‘এই গুলো?’

‘আমার পছন্দ হলো তাই তোমাকে না বলে কিনে নিলাম আগের গুলো ত বানাতে দেওয়াই ছিলো সেজন্য ফিটিং এর কোনো সমস্যা হয় নি।এগুলোও তার সাথে দিয়ে দিলাম তোমার পছন্দ হোক বা না, হোক এগুলো একবার হলেও আমার সামনে পড়বে।’

নিষ্প্রভের কথায় তুর অবাক হয়ে বলে,

‘এতো কিছুর কি প্রয়োজন ছিলো দুইদিন পর সেই তো ডির্ভোস‌ই দিবেন।’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৯

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ০৯
‘আপনার প্রেমিকা আছে?’

তুরের এমন কথায় নিষ্প্রভ অবাক হয়ে যায়।এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বা কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না।সে অস্বস্তিবোধ করে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ে। নিষ্প্রভ তখন তুরকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বেডে নামিয়ে দেয়। ততক্ষনে তুর ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে।ফ্লোরে বেকায়দা ভাবে পড়ায় কোমড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।ব্যাথায় ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে যা দেখে নিষ্প্রভের মোটেও সহ্য হয় নি। নিষ্প্রভ মনে মনে গুছিয়ে র্নিলপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

‘আমি আগেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম।আজ দেখো আমি যা নিয়ে ভয় করেছি সেটাই হলো।তোমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দেওয়া হয়েছে কজ তোমার পায়ের নিচের মার্বেল গুলো আফসানের আর এইসব আফসানের প্ল্যান। সেজন্য বলছি তুমি এসবে জড়িও না। আমি তোমাকে যতদ্রুত সম্ভব ডিভোর্স দিবো। তুমি এই বাড়ি ও এই বাড়ির সব মানুষের থেকে দূরে চলে যাবে নয়তো তোমার লাইফ রিক্স আছে।এরা মানুষ না,নিজেদের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।’

নিষ্প্রভের কথা গুলো তুর মনযোগ সহকারে শুনছিলো।তারপর হঠাৎ করেই নিষ্প্রভের উদ্দেশ্যে এমন একটা প্রশ্ন করে উঠে তুর।নিষ্প্রভ থতমত খেয়ে যায়। কোমড়ের ব্যাথায় তুর আবারও কুকিয়ে উঠলে নিষ্প্রভ বর্তমানে ফিরে আসে।তুরকে আলগোছে শুইয়ে দেয়,তুর এখনো তার দিকে উচ্ছুক চোখে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভ তুরকে সুবিধা অনুযায়ী শুয়ে দেয় কোমড়ের শাড়ি নিচের দিকে সরাতে নিলে তুর নিষ্প্রভের হাত খামছি দিয়ে ধরে।নিষ্প্রভ অস্বস্তিতে পড়ে আসলে সে এতো কিছু বুঝে করে নি। নিষ্প্রভের মনে শুধু একটা কথায় ঘুরছিলো যে,কি করে তুরের ব্যাথা লাঘব হবে। কিন্তু এতে করে মেয়েটা বড্ড লজ্জা পাচ্ছে। নিষ্প্রভ অস্বস্তি জড়ানো কন্ঠে বলল,

‘দেখো তোমার দিকটা বুঝতে পারছি।এখন লজ্জায় আমায় দেখতে না দিলে পরবর্তীতে তুমিই ব্যাথায় ছটফট করবে।’

তুরের ভীষণ লজ্জা লাগছে এটা হয়তো অনেকর কাছে ন্যাকামি লাগতে পরে তবে তাদের ব্যাপার আলাদা।যতোই তারা স্বামী-স্ত্রী হোক না কেন আসলে তাদের মধ্যে তো স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়ে উঠে নি। নিষ্প্রভ তুরের কোনো কথা না শুনেই কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়িটা কোমড় থেকে সড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই কোমড়ের ঠিক ডান পাশে কালো তিলক দেখতে পায়। নিষ্প্রভ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তিলকটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা শরীর মাঝারি আকারের কালো তিলকটা জেনো আকৃষ্ট করছে।এর মধ্যেই সিতারা আইস প্যাক নিয়ে আসলে নিষ্প্রভের ঘোর কাটে।আইস প্যাক টা নিয়ে তুরের কোমড়ে আলতো করে লাগিয়ে দেয়।তুরের শরীর শিরশির করে উঠে কিছুটা ঠান্ডা আর কিছুটা লজ্জায়।তুর চোখ বন্ধ করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে এক হাত দিয়ে বেড শিট খামচে ধরে। নিষ্প্রভ নিশ্চুপ হয়েই পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করল।আইস প্যাক দেওয়া হলে ব্যাথা নাশক ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ উঠে যেতে নেয়।

তুর ধীর কষ্ঠে অধীর আগ্রহে বলে,

‘আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পাই নি।’

তুরের প্রশ্নের জবাবে নিষ্প্রভ বলে,

‘কিছু উত্তর অজানা থাকাই সকলের জন্য মঙ্গল জনক।’

‘বুজলাম।তখন যে বললেন, এই বাড়ি ও এই বাড়ির মানুষ গুলোর থেকে দূরে সরে যেতে এতেই নাকি আমার জন্য ভালো।আপনার থেকেও কি দূরে সরে যাবো?’

তুরের কথা শুনে নিষ্প্রভ কিছুটা চুপ থাকে তারপর বলল,

‘আমি নিশ্চ‌য়‌ই এবাড়ির মানুষ গুলোর মধ্যে পড়ি?’

______________

‘তুরের সাথে এমন ফালতু কাজ করলি কেন?’

‘ত কি কাজ করবো, পিরিতের কাজ করব বুঝি?’

বলেই আফসান বি*শ্রি হাসি দেয়। আফসানের এমন কাজে নিষ্প্রভ ভীষণ রেগে যায়।যার ফলস্বরূপ আফসানের কলার চেপে ধরে উঁচু বাক্য ছুঁড়ে,

‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!’

‘হা হা কি করবি তুই! শা*লার ইংরেজি ঝাঁ*ড়ছে ।’

‘আর একবার বললে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব।সে আমার ব‌উ সম্মান দিয়ে কথা বলবি।’

আফসান নিষ্প্রভের হাতের মধ্যে থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁত বের করে বলে,

‘সম্মান কি ভাবে দিব আজ যাকে ব‌উ বলে দাবি করছিস সে আমার ব‌উ হতো একটুর জন্য আমার প্ল্যান এভাবে শেষ হয়ে গেল।তা নয়তো আজকে তোর ব‌উ প্রতি রাতে আমার বুকের নি*চে পিষ্ট হতো।’

আর‌ও কিছু বলতে নেয় আফসান তার আগেই নিষ্প্রভ ঠা*স করে আফসানের গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

‘কি বললি এগুলো তোর প্ল্যান ছিলো?’

‘হ্যা আমার…..’

পুরো কথা শেষ হবার আগেই ঝট করে আশা বেগম এসে আফসানের হাত ধরে ফেলে।আমতা আমতা করে বলে,

‘ও ড্রিংকস করছে ওর মাথা ঠিক নেই।আর সব থেকে বড় কথা আমার ছেলের গায়ে হা*ত তোলার সাহস কি করে হয় তোমার! ভুলে যাচ্ছো বাড়িটা কার আফসানের বাবা জানলে তোমায় এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।’

নিষ্প্রভ তাচ্ছিল্য পূর্ণ হেসে বলল,

‘হাসালেন এই বাড়ি নিয়ে এতো গর্ব আপনার।সত্যি কি এ বাড়ির আপনি ও আপনার ছেলে দাবিদার! সত্য কিন্তু আমি জেনে ফেলেছি।’

আশা বেগম ভয় পেয়ে যায়।পুরো শরীর কেঁপে উঠে। কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘ক ক কি জেনেছ তুমি?’

‘আপনি মনে মনে যা ভাবছেন ঠিক তাই। বাই দা ওয়ে,আপনার ছেলেকে আমার ব‌উয়ের থেকে দূরে থাকতে বলবেন এরপর যদি দেখি ও তুরের আশেপাশে ঘেঁষে তাহলে আমার মুখ খুলতে কেউ আটকাতে পারবে না। আর আমি এক বার মুখ খুললে আপনি ও আপনার ছেলের ধ্বং*স নেমে আসবে।’

বলেই নিষ্প্রভ চলে যায়।পিছন থেকে আফসান বলে,

‘যা সত্য বলে দে গিয়ে আমি তোর ব‌উকে একবারের জন্য হলেও বি*ছা*না*য় নিবো।’

আশা বেগম আফসানের মুখ চেপে ধরে জেনো নিষ্প্রভ অবধি কথা গুলো না পৌঁছায়।এই মাতাল ছেলে ত আর জানে না, সত্য বের হলে তার ও আফসানের জন্য কতো বড় দূর্যোগ নেমে আসবে।তখন বাপের টাকায় ফুর্তি নেশা করা চলবে না।মাথার উপর ছাদ থাকবে না।নাহ! আর ভাবেতে পারছে না আশা বেগম,আগে এই মাতালকে রুমে রেখে আসুক তারপর তুরের একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।এই মেয়েকে যে করেই হোক বাড়ি থেকে বের করতে হবে।তারপর না হয় নিষ্প্রভের একটা ব্যাবস্থা করবে।এই মেয়ে আশার পর থেকে নিষ্প্রভের সাহস বেরে গেছে নয়তো সে আগে আজকের মত এমন ব্যাবহার করতো না।

____________

তুর বিছানায় শুয়ে আছে।সেই যে নিষ্প্রভ বের হলো রাত বেশ হয়েছে এখনো আসে নি।তুরের কান্না পাচ্ছে আকস্মিকভাবে নিষ্প্রভের জীবণে জড়িয়ে পড়তে।নিষ্প্রভের হয়তো অন্য কাউকে পছন্দ আছে।নয়তো নিষ্প্রভ তুরকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবেই বা কেন?

তুরের বাড়ির কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে।কিন্ত মায়ের কথা মনে হলেই হৃদয় জুড়ে একরাশ ঘৃণা এসে জায়গা দখল করে।তার মায়ের কাছে তার থেকে বান্ধবীর গুরুত্ব বেশি।এসব ভাবতে ভাবতে আশা বেগম রুমে ঢুকে।কোনো কথা না বলেই বিছানার উপর গহনা বক্স গুলো ও একটা চেক রাখে।তুর ভ্রু কুঁচকে আশা বেগমে দিকে তাকায়।সে কিছু বুজতে পারছে না।

আশা বেগম বলে,

‘এখানে দশ ভড়ি গহনা ও পাঁচ লাখ টাকার চেক আছে।’

‘এসব আমায় বলেছেন যে।আর এগুলো এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?’

‘কারণ এগুলো তোমার। আমি তোমাকে দিবো।’

তুর অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

‘আপনার গহনা টাকা আমি কেন নিবো?’

আশা বেগম তার মুখে প্রফুল্ল ছড়িয়ে বললে,

‘নিষ্প্রভকে ছেড়ে দেও!’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৮

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৮
‘বড় মেয়ের আগেই ছোট মেয়ের বিয়ে তাও আমার অনুপস্থিতিতে! আমি ওদের বাবা বেঁচে নেই?সেখানে তুমি আমার পারমিশন ছাড়া আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছো কোন হিসাবে তানিয়া?’

নুরুল সাহেবের হুংকারে তানিয়া বেগম কেঁপে উঠে।এই বয়সে এসে সন্তানের সামনে স্বামীর এমন ঝাড়ি খেতে হবে তা ভাবতে পারে নি।তুরফা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো বাবা মায়ের এমন অবস্থা দেখে সে রুমে চলে আসে।তার সেখানে না থাকাই উচিত মা অস্বস্তিতে পড়বে।এই বাবাটাও আসতে না আসতেই ড্রয়িং রুমেই শুরু করে দিয়েছে।আর শুরু করবেই না কেন? বাবাকে না জানিয়ে আজকাল মা যেসব কান্ড করে বেড়ায়।তবে একটা দিক ভালো হয়েছে আফসানের সাথে বিয়ে না হয়ে বিয়েটা নিষ্প্রভের সাথে হয়েছে এটা ভেবে স্বস্থির নিঃশ্বাস পড়ছে।

অপরদিকে তানিয়া বেগম স্বামীর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,

‘আসলে হঠাৎ করেই হয়ে গেছে।’

‘মায়ের কাছে মাসির বাড়ির গল্প শুনাও।বিয়ে কখনো হঠাৎ করে হয়?’

‘সত্য বলছি আমরা কেউ জানতাম না।’

তানিয়া বেগম চমকে যায় আমতা আমতা করে উঠে বলে।তার স্বামী সহজে রেগে যায় না।তবে একবার রেগে গেয়ে গায়ে অবধি হাত তুলার রের্কড আছে।

নুরুল সাহেবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।তিনি চেঁচিয়ে বলেন,

‘এসব তোমাদের দুই বান্ধবীর বুদ্ধি নয়তো? তোমাদের দ্বারা এসব হ‌ওয়া অবিশ্বাসের কিছু নয়। তোমারা আমার মেয়ের সঙে কি করেছ বল?’

তানিয়া বেগম আর কুল না পেয়ে নুরুল সাহেবকে সব সত্য বলে দিলেন তবে আফসান ও তাঁদের ব্যাপারটা চেপে।এমন ভাবে সবকিছু উপস্থাপন করেছেন জেনো সব দোষ নিষ্প্রভের।

সব শুনে নুরুল ইসলাম প্রথমেই যে কাজটি করলেন তা হলো, তানিয়া বেগমের গালে কষে দুইটা থা*প্প*ড় লাগিয়ে দেন।রাগের বশে তার শরীর কাঁপছে। চেঁচিয়ে বলেন,

‘তুই আমার মেয়েকে অই বাড়িতে নিয়ে গেছিস কেন। আমার পারমিশন নিয়েছিলি।আমি নেই বলে সেই সুযোগে যা ইচ্ছে করে বেরিয়েছিস, তা কর কিন্তু তুই আমার মেয়েকে এসবে নিয়ে গেছিস কেন?’

তানিয়া বেগম গালে হাত দিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

‘এখন আমার মেয়ে বলছো!বাপ হয়েছ ছেলে মেয়ের কি কোনো খোঁজ খবর রাখো। শুধু মাস গেলে টাকা পাঠালেই হয় না,ব‌উ বাচ্চাকে সময় দিতে হয়।দিয়েছ কখনো সময়?
সারাদিন রাত বাহিরে থাকো এমন কি মাসের ২৫ দিন ই ত বাড়ির বাহিরে ।ছেলে মেয়ে কে কি করলো না করলো জানবে কিভাবে!এখন বিয়ে হয়েছে বলে সব দোষ আমার তাই না।বিয়ে দিয়েছি বেশ করেছি যা ইচ্ছা করো যাও।’

তানিয়া বেগম এর কথার প্রতিত্তরে নুরুল ইসলাম শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘ব‌উ বাচ্চা ছাড়া মাসের উপর মাস বছরের পর বছর সাধে বাড়ির বাহিরে থেকেছি! তোমাদের মুখে তিন বেলা ভালো খারাপ দিতে মাথার উপর স্থায়ি ছাদ দিতে আমায় থাকতে হয়েছে।এই এখন এতো বিলাসীতায় আছো কার পয়সাই।উহু ভেবো না টাকার খোঁটা দিচ্ছি,তোমায় আমি সত্যটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের ছাড়া থাকতে আমার ভালো লেগেছে?কোনো বেলা খেয়েছি কোনো বেলা খাই নি,এভাবে টাকা রোজগার করে তোমাদের ভরন পোষণ এর দায়িত্ব নিতে হয়েছে।সমাজ শুধু মায়ের সেক্রিফাইস দেখে একজন বাবার সেক্রিফাইস চোখে পড়ে না।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুরুল সাহেব আবার ও বলা শুরু করে তবে এবার বেশ রেগেই বললে,

‘তোমায় আমি পরে দেখে নিবো আগে আমার মেয়েকে এবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। আমি এই বিয়ে টা কিছুতেই মানি না।’

তানিয়া বেগম জেনো বাকরুদ্ধ।স্বামীর কথার পিঠে বলার মতো কিছুই খোঁজ পাচ্ছে না, তবুও অতি কষ্টে বলল,

‘শুনন আপনার দোহাই লাগে আপনি এমনটা করবেন না।নিষ্প্রভ ভালো ছেলে,তুরকে ভালো রাখবে।বিয়ে তো হয়েই গেছে। কিভাবে হয়েছে এটা বড় কথা নয়,বড় কথা হলো তুরের কপালে নিষ্প্রভ ছিলো বলেই বিয়েটা তার সাথেই হয়েছে।মেয়ের জীবণটা এভাবে নষ্ট করবেন না।’

নুরুল সাহেব মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেলেন।পিছনে তানিয়া বেগম ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করল। নুরুল ভাবছে নিষ্প্রভ ছেলে হিসাবে খারাপ তবে তানিয়া বেগম জানেন নিষ্প্রভ একদম খাঁটি সোনা। শুধু মাত্র বান্ধবী আশার ব্লাকমেইলে আফসানের সাথে বিয়ে দিয়ে রাজি হয়েছিল ভাবছে মির্জা বাড়ির সম্পত্তি পাবে তাঁর মেয়ে এই ভেবেই ত মনে বুজ দিয়েছে।তবে আল্লাহ যা করার ভালোই করে।হোক অর্থ কম তবে সঠিক মানুষের হাতেই তার মেয়েটা পড়েছে। আল্লাহ তার চোখ খুলে দিয়েছে নয়তো পার্টিতে এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হবে তানিয়া বেগম কখনো ভাবে নি।তবে তার স্বামীকে ত আসল কথা বলতে পারছে না।এখন কি করবে সে?

_______________

এখন স্বন্ধ্যা! তুর নিজের জামদানি কালো শাড়িটাই পড়েছে। নিষ্প্রভ তখন শপিং এ নিয়ে যেয়ে পাঁচটা থ্রিপিস ও ছয়টার মত শাড়ি কিনে দিয়েছে। তাঁর মধ্যে তিনটে ছিলো কাতান সিল্ক ও তিনটা জামদানি শাড়ি।আর থ্রিপিস গুলোর মধ্যে সব কয়টাই নরলাম যেহেতু সে রেগুলার ইউজ করবে। থ্রীপিস গুলো যেহেতু রেডিমেড না আর ব্লাউজ গুলোও।যার জন্য টেইলার্স এ বানাতে দিয়েছে। অজ্ঞাত নিজের শাড়িই পড়তে হলো।

রাত থেকে তাকেই রান্না করতে হবে যার জন্য তুর নিচে আসলো।আশা বেগম এই অপেক্ষাতেই ছিলেন।মুখ গম্ভীর করে বলল,

‘আমার কথা মাথায় রেখেছ ভালো লাগলো। শোনো তুমি আমার বান্ধবীর মেয়ে, আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে চাই না।তাই আমি যখন যা বলব তুমি সেভাবেই চলবে।এ বাড়িতে আমার কথার উপর কেউ কথা বলে না।এমনকি আফসানের বাবাও না।যাও এখন কাজে লেগে পড়।’

‘আচ্ছা।’

বলেই তুর রান্না ঘরে যায়।এই মহিলাকে সে কিছুতেই বিশ্বাস করে না।নিষ্প্রভ কাল রাতেই সাবধান করে দিয়েছে এমন কিন্ত না,আসলে তার মায়ের বান্ধবী সম্পর্ক তুর আগে থেকেই আগত।ছেলের চরিত্র খারাপ জেনেও তার দোষ ঢাকতে কতো নাটক করে সে মহিলা কেমন হবে তা জানা আছে।নিশ্চয়ই মনে মনে কোনো ফন্দি আঁটছে না হলে এতো ভালো ব্যাবহার করবে কেন?

তুর রান্নাঘরে যেয়ে দেখে সিতারা নেই কারণ আশা বেগম তাকে সরিয়েছে তুরকে জেনো কোনো রকম সাহায্য করতে না পারে।তুর রান্না তেমন জানে না,বাড়ির ছোট মেয়ে যার জন্য সবার আদরের যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।কোনো কিছু খেতে চাইলা মা কিংবা বোন করে দিতো।ফোন ও তার কাছে নেই যে, ইউটিউব দেখবে।কি রান্না করা যায় অনেক ভেবে তার মাথায় আসে। খিচুড়ি রান্না করবে তার সাথে ডিম ভাজা, বেগুন ভাজা ও চাটনি করবে।তুর সেভাবে কাজে লেগে পড়ে। পেঁয়াজ কাটতে যেয়ে তার অবস্থা নাজেহাল।চোখের পানি নাকের পানি এক জায়গায় করেছে।

এরমধ্যে আফসান শিশ বাজাতে বাজাতে ফোন হাতে নিয়ে নামতে থাকে।রান্নাঘরে তুরের দিয়ে চোখ পড়তেই সে লা*ল*সা*র দৃষ্টিতে তাকায়।মনে মনে ভাবে এই খা*সা মা*ল কে তার সৎ ভাই উপভোগ করতেছে।যে কিনা তার পথের একমাত্র শত্রু ।না এমনটা হতে দেওয়া যাবে না।

তুরের রান্না প্রায় শেষ সে সবকিছু ঠিক ভাবে রেখে বেরিয়ে আসে।দেখে আফসান তারদিকে বি*শ্রি ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে অস্বস্তিবোধ করে নিচ দিকে তাকিয়ে চলে আসতে নেয়।ঠিক তখনি আফসান নিজের পকেট থেকে কয়েকটা মার্বেল বের করে তুরের পায়ের দিকে গড়িয়ে দেয়।

হঠাৎ করে পায়ের নিচে কিছু পড়ায় তুর মুখ থু*ব*ড়ে প*ড়ে যায়।আশা বেগম মনোযগ সহকারে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিল। কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখে তুর কোমড়ে হাত দিয়ে প*ড়ে আছে কিছুটা দুরে আফসান দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে।তিনি খেয়াল করল তুরের পায়ের কাছে বেশ কয়টা মার্বেল পড়ে আছে। এবার ভালো ভাবেই বুজতে পারল আফসান এসব করেছে।আশা বেগম তুরকে ধরতে যাবে তার আগেই মনে হলো থাক আর একটু কষ্ট পাক।মায়ের উপর ক্ষোপ মেয়ের উপর পড়ছে।

তুর ব্যাথায় কাতরায়।উঠতে চেষ্টা করছে তবে পারছে না। হঠাৎ করে তাকে পাঁজাকোলে করে কেউ তোলে। ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে আসে।অতি কষ্টে কোলে নেওয়া ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে যায়।

নিষ্প্রভের আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েছে।সময় নষ্ট না করে সে বাড়িতে চলে আসে তার মনে এখন একটাই ভয় না জানি মেয়েটার যদি কোনো ক্ষতি করে মিসেস আশা।নিজ স্বার্থের জন্য তিনি সব করতে পারেন।বাড়ি এসেই দেখে তুরের এই অবস্থা।

তুরকে নিষ্প্রভের কোলে দেখে আফসান জ্বলে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,

‘ভেবেছিলাম একে সারাজীবন আমার বিছানা সঙ্গী করে রাখবো কিন্তু না।এখন ডিসিশন চেঞ্জ একে আমি আমার ব্যাবসায় লাগাব।’

চলমান।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৭

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ৭
#ফারিহা_খান_নোরা

‘আমি কি আফসানের জন্ম পরিচয় সম্পর্কে বলব আশা?’

তানিয়া বেগমের কথা শুনে আশা বেগম স্তব্ধ হয়ে যায়।হাত পা কাঁপছে তার সাথে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।এতো বছর পর হঠাৎ করে তানিয়া বেগম কিভাবে জানলেন তা বুজতে পারছে না।এই রহস্য সে আর একজন ছাড়া ত কেউ জানার কথা নয়,তবে কি তানিয়ার তাঁর সাথে পরিচয় আছে সর্বনাশ! আজ সকাল থেকে আশা বেগমের মন মেজাজ খারাপ এমনিতেই তুরকে ছেলের বউ করতে পারেন নি তার উপর ইলিয়াস মির্জা তুরকে তার প্রথম ব‌উয়ে জিনিস গিফট করেছে যদিও জানে না বক্সটার মধ্যে কি আছে তবে এটা বুজতে পারছে গহনা ত হবেই।সে চাইতো তুর সব পাক তবে আফসানের ব‌উ হয়ে কিন্তু এখন সৎ পুত্র নিষ্প্রভের ব‌উ হয়ে রাজত্ব চালাচ্ছে।যার জন্য রেগে যেয়ে তানিয়াকে ফোন করে দু চারটে কথা শুনাতে নেয় কিন্তু তার আগেই তানিয়া যে এমন একটা রহস্যের কথা বলবে তা তো আগে বুঝতে পারে নি।

‘তুই কি বলতে চাইছিস?’

‘আমি কি বলতে চাইছি তা তুই ভালো করেই বুজতে পারছিস রাখ আর নাটক করতে হবে না।’

‘এই শোন এসব ফালতু কথা বাদ দে তুই কিন্তু আমার থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছিস তা দিয়ে দিবি তোর সত্য ও কিন্তু আমি জানি মনে রাখিস।’

রেগে কথা গুলো বলল আশা বেগম।তার কথায় তানিয়া একটু হাসলেন তারপর বলল,

‘তোর এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা রহস্যের কাছে আমার সত্য কিছুই না।তুই বরং তোর চিন্তা কর আর টাকা? অই বাড়িতে টিকতে পারলে এমন লাখ লাখ টাকা তোর কাছে আর‌ও আসবে।তাই টাকার চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের ব্যাবস্থা কর। আমার অতীত ফাঁস করবি বলে ব্লাকমেইল করতি না?আসলে কি জানিস আমায় তুই নিজেই ফাঁসিয়েছিলি।’

আশা বেগম তুতলিয়ে বলল,

‘তানিয়া তুই আর কি কি জানিস?’

‘তুই যেসব ঘটিয়েছিস।’

‘বল।’

‘সঠিক সময় আসুক।’

‘ভুলে যাস না তোর মেয়ে এখন এ বাড়ির ব‌উ। আমার সাথে লাগতে আসিস না,আমি কিন্তু তোর মেয়েকে শান্তিতে থাকতে দিবো না।এ বাড়ি থেকে রাস্তায় বের করে দিবো।’

এবার তানিয়া বেগম বেশ চিৎকার করেই কথা গুলো বলে।আশা বেগম শক্ত কন্ঠে বলল,

‘ভুলেও সে চেষ্টা করবি না। আমি একবার মুখ খুললে আমার মেয়ের নয়,তোর জায়গা রাস্তায় হবে।তাই নিজেও ভালো থাক আর আমাদেরকেও ভালো থাকতে দে।আর একটা কথা নিষ্প্রভের সাথে বিয়ে হয়ে তুরের সাথে সাথে আমার ভাগ্য‌ও খুলে গেছে।তোর ব্লামেইল এর জন্য আফসানের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম।তবে পার্টিতে যেয়ে আমি কিন্তু আসল সত্য জানতে পেরেছি।’

আশাকে কিছু বলতে না দিয়ে তানিয়া কলটা কেটে দেয়।
আশার মনে একটাই প্রশ্ন পার্টিতে এসে তানিয়া কি করে এতো গুলো রহস্য জানতে পারলো তাহলে কি সে এসে গেছে!

______________

তুর রুমে এসে কৌতুহল বসত বক্সটি খুলে দেখে ভেতরে একজোড়া মোটা বালা, একজোড়া ঝুমকা ও একটি মোটা চেইন আছে ভীষণ সুন্দর।এগুলো নিষ্প্রভের মায়ের জিনিস হিসাবে নিষ্প্রভের ব‌উ পাবে। কিন্তু তাকে ত নিষ্প্রভ ডির্ভোস দিবে বলেছিল তাহলে এগুলো তুরের প্রাপ্য না।নিষ্প্রভ রুমে এসে দেখে তুর গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে কি জেনো ভাবছে।সে গলা একটু উঁচু করে বলল,

‘কি এতো ভাবো তুমি?’

তুর একটু সময় নিয়ে নিষ্প্রভের হাতে বক্সটা দিয়ে দেয়। নিষ্প্রভ আবাক হয়ে বলে,

‘এগুলো আমি কি করব?’

‘এগুলো আপনার মায়ের তা আপনার ব‌উ এর প্রাপ্য।কারণ বসত আমি আপনার ব‌উ হলেও প্রথম রাতেই বলে দিয়েছেন আমায় ডির্ভোস দিবেন তাহলে আমি এগুলো নিবো কেন?’

নিষ্প্রভ চুপ থাকল কিছু বলল না।তুরের বাড়িয়ে দেওয়া বাক্সটি হাতে নি তা আলমারির ভিতরে স্বযত্নে রেখে মৃদু হেসে বলল,

‘রেডি হয়ে নেও শপিং এ যাবো। তোমার ড্রেস কিনতে হবে।’

তুর ভাবছে কি ছেলেরে বাবা বাক্সটা দিয়ে দিলো আর সে হাসি মুখে রেখে দিলো।যদিও এসব স্বর্ন অলংকার এর উপর তুরের লোভ নেই তবুও নিষ্প্রভের এমন কাজে তার একটু মন খারাপ হলো।নিজে সামলিয়ে বলল,

‘আমি তৈরি।’

নিষ্প্রভ তুরের দিকে একটু তাকিয়ে বলল,

‘তাহলে যাওয়া যাক।’

নিচে এসে দেখে নিষ্প্রভ বাইক এর উপর বসে আছে।তুরের ভয় হচ্ছে সে তেমন বাইকে উঠে নি,তার মধ্যে নিষ্প্রভের সাথে যেতে তার অস্বস্তি হচ্ছে।নিষ্প্রভ তুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

‘এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন উঠে পড়। আমার এতো সময় নেই ভাগ্গিস অফিস থেকে এক বেলা ছুটি নিয়েছি।’

তুর ভয়ে ভয়ে মাঝখানে বেশ জায়গা নিয়ে উঠে পড়ে।নিষ্প্রভ ব্যাপারটা খেয়াল করে বলল,

‘এভাবে বসলে পড়ে যেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবে একটু চেপে বস ।’

‘না আমি ঠিক আছি।’

নিষ্প্রভ আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয় তুর ঝুঁক সামলাতে না পেরে নিষ্প্রভের পিঠের দিকে হেলে তাকে জড়িয়ে ধরে।নিষ্প্রভ ঠোঁট কামড়ে ধরে বির বির করে বলে,

‘একেই বুঝি বলে মেয়ে জাতি।বললাম সরে এসে বসতে বসল না, এখন ঠ্যালায় পড়ে গলা ধরে বসেছে।এদের কাজ‌ই ত তাই সুযোগ পেলে গলা ধরে আবার একটু উনিশ বিশ হলেই মাথা উঠে নৃত্য করে। লুকিং গ্লাসে দেখে তুর ভীতু হরিণীর মত তাকে জড়িয়ে আছে।জীবণের প্রথম বার এতো কাছে থেকে কোনো নারীর শরীরের স্পর্শ পেয়ে নিষ্প্রভের মনের ভিতর শত রঙের প্রজাপতি উড়ছে এমন ফিল হয়।’

________

আশা বেগম ড্রয়িং রুমে বসে চা পান করছে।এর মধ্যেই এক গাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে তুরকে ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তাঁর।তুর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে এভাবে তাকানো তে।নিষ্প্রভ যেহেতু অফিস থেকে এক বেলা ছুটি নিয়েছে যার জন্য সে তুরকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়।তুর একাই বাড়িতে ঢুকে,কোনো কিছু না ভেবে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে নেয়।তার আগেই কাঠ কাঠ কন্ঠে আশা বেগম বলে উঠে,

‘শোনো মেয়ে!’

তুর কিছুটা কেঁপে উঠে।তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলে,

‘জি।’

‘তুমি কি ভুলে গিয়েছ যে, তোমার বিয়ে হয়েছে এইটা তোমার শশুড়বাড়ি।কাল বিয়ে হতে না হতেই আজ জামাই নিয়ে ভালোই তো ঢলাঢলি করছো আমোদ ফুর্তি করছ।তা করো কিন্তু তিন বেলা রান্না আমি করে কি তোমায় মুখে তুলে দিবো। আমি কি তোমার দাসী,কোন জমিদারের মেয়ে তুমি? আমি খেটে মরব আর তুমি শপিং করে আমোদ ফুর্তি করবে।আজ থেকে আমি রান্না করতে পারবো না,রান্নার সব দায়িত্ব তোমার।’

আশা বেগমের পাশে কাজের মেয়ে সেতারা দাড়িয়ে ছিলো।আশা বেগমের কথা শুনে সে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,

‘আম্মা আপনি ক‌ই খেটে রান্না করলেন!রান্না ত মুই করি।’

আশা বেগম রেগে যায়।তুরকে বলে উপরে যাও আজ রাত থেকে তুমি রান্না করবে।তুর চলে গেলে আশা বেগম সেতারাকে জোরে ধমক দিয়ে রেগে গজ গজ করতে করতে বলল,

‘চুপ বেয়াদব যার নুন খাস তাঁর বিপক্ষে কথা বলিস।দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।’

ধমক খেয়ে সেতারা চলে যায়।যাওয়ার আগে বির বির করে বলে,

‘ধুর আম্মা ক‌ইলো নুন খাই কিন্তু আমার বড় মাথায় একখান কথা ঘুরে, আমি তো শুধু নুন খাই না ভাত তরকারিও খাই।আম্মা আমারে ভাত তরকারি খাওয়ার কথা না ক‌ইয়া নুন খাওয়ার কথা ক‌ইলো ক্যা! না, আজ থেকে আর নুন খামু না। সত্য কথা ক‌ওয়ার জন্য দরকার পড়লে আমি তরকারিতেও নুন খামু না,তবুও সত্য কথা ক‌ইতে হ‌ইবো আমার।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৬

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ৬
#ফারিহা_খান_নোরা

এখন মধ্যরাত! ঘড়িতে দুইটা বেজে দশ মিনিট।এখনো নিষ্প্রভ বাড়িতে আসে নি।তুরকে নিষ্প্রভের ঘরে দেওয়া হয়েছে।পরনে আগের শাড়িটাই রয়েছে সে নিষ্প্রভের বিছানায় এলোমেলো ভাবে বসে রয়েছে।তার কোনো দিকেই মন নেই।তানিয়া বেগম অনেক আগেই বাড়িতে চলে গেছে।যাওয়ার আগে তুরের হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে কেঁদে গেছে।মায়ের এসব ব্যাবহার তুর কিছুতেই বুজতে পারলো না।সে তানিয়া বেগমের সাথে যাওয়ার জন্য জেদ করে কিন্তু তিনি তুরকে নেন নি।এখন তুর শুধু তার মেয়ে নয়,আজ থেকে তুরের সাথে না চাইতেও নিষ্প্রভের নাম জড়িয়েছে।প্রথম ঘটনায় তুর বাকরুদ্ধ আর দ্বিতীয় ঘটনায় তুর মর্মাহত।মাত্র একদিন দিনের মধ্যে তার জীবণটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।চেনা নেয় জানা নেই একটা অচেনা ছেলের সাথে কিভাবে তার বাকি জীবন পার করবে?

দরজা খোলার শব্দে তুরের বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠে।সে ভয় পাচ্ছে,তার হাত পা অবশ হয়ে যাবে এমন অবস্থা।নিষ্প্রভ রুমে ঢুকে তুরকে দেখে একটু চমকে যায় তবুও নিজেকে সামলিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ে। আধঘণ্টা সময় নিয়ে বের হয়।একদম শাওয়ার নিয়ে,মাথার চুল গুলো টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বারান্দায় যায়।তুর এতোক্ষণ ধরে বসেই ছিলো।সে ভেবে পায় না, ওয়াশরুমে ছেলে মানুষের আবার এতো সময় লাগে কিভাবে?

নিষ্প্রভ বারান্দা থেকে রুমে এসে বিছানায় বসে।তুর নড়ে চড়ে সরে যায়,বেপারটা নিষ্প্রভ খেয়াল করে। নিষ্প্রভ ধীর কন্ঠে বলে,

‘এই নাও।’

তুর মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে নিষ্প্রভ একটি খাম তার দিকে ধরে আছে।তুর বুজতে না পেরে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায়।নিষ্প্রভ তুরের দৃষ্টি বুজতে পেরে ধীর কন্ঠে বলে,

‘এটা দেনমোহর যা স্ত্রী হিসাবে তোমার প্রাপ্য।তুমি মানো আর নাই মানো আমি তোমার প্রাপ্য তোমায় বুঝে দিলাম।যদিও এখানে সামান্য টাকা আছে। আমি এক লক্ষ টাকা নগদে পরিশোধ করতে পারবো বলেই কাবিন নামায় এই টাকা অংক ই দিয়েছি। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও বাবার টাকায় কোনো কিছু করতে আমি ইচ্ছুক না।’

নিষ্প্রভের কথায় তুর মুগ্ধ হয়ে গেল।ছেলেটার চিন্তা চেতনা সত্তিই খুব সুন্দর।নিষ্প্রভ খামটা তুরের কোলের উপর রেখে দেয়।তুর আমতা আমতা করে বলে,

‘আমি কি করবো!’

‘সেইটা তোমার বেপার।আমি জাস্ট তোমার প্রাপ্য তোমায় বুঝিয়ে দিলাম।’

‘হুম।’

‘শোনো তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো যা আমাদের দুজনের জন্যই ইম্পর্ট্যান্ট।’

তুর কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘জি বলুন।’

‘প্রথমেই বলি বয়সে তুমি আমার অনেকটাই ছোট হবে তাই শুরু থেকেই তুমি করে বলেছি কিছু মনে করো না।আমি জানি আজকের এই ঘটনা আমাদের দুজনের উপরেই খারাপ প্রভাব পড়েছে।এই বিয়েটা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে দেওয়া হয়েছে।আমি চেষ্টা করলে সময় নিয়ে হলেও বিয়েটা মানতে পারবো তবে তুমি পারবে না।এমন নয় যে, তুমি আফসানকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছিলে বলে মানতে পরবে না। তুমি আফসানের উপর কোনো কালেই ইন্টারেস্ট ছিলে না আমি জানি। তুমি ত অন্য একজনকে ভালোবাসো সেজন্য বলছি তুমি চাইলে আমার থেকে ডির্ভোস নিতে পারো। তুমি কেন? আমি নিজেই তোমাকে ডির্ভোস দিতে ইচ্ছুক। আমি চাই না, আমার সাথে সংসার করবে আর ভালোবাসবে অন্য কাউকে এর থেকে আমাদের দুজনের আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।’

নিষ্প্রভ কথা গুলো বলেই থেমে গেলো।তুর শকে চলে গেছে।অন্য কাউকে ভালোবাসে অথচ সে নিজেই জানে না।কিছুটা রেগে বলল,

‘আমি কাকে ভালোবাসি?’

নিষ্প্রভ প্রতিত্তর না করে তুরের একদম কাছে চলে আসে।তুর ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলে দেখে নিষ্প্রভ বালিশ ও চাদর নিয়ে নিচে শুয়ে পড়েছে।এমন বোকামিতে নিজের বেশ লজ্জা লাগছে।সে কি ভেবেছিলো।

‘আকাশ কুসুম না ভেবে শুয়ে পড়ো। আমার কাছে ‘হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ’ গুরুত্বপূর্ণ দেহের সন্ধিক্ষণ নয়।ভয় নেই আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না।’

নিষ্প্রভের এমন কথায় তুর লজ্জিত হয়ে কিছুক্ষণ কুচুমুচু করে শুয়ে পড়ল।

_____________

সব আঁধার কাটিয়ে দিনের আলো ফুটেছে।সারা রাত ফ্লোরে থাকার ফলে নিষ্প্রভের পুরো শরীর ব্যাথা করছে।উঠতে নিয়ে বুজতে পারলো।তার ত নিচে থাকার অভ্যাস নাই তবে এখন থেকে অভ্যাস করতে হবে।বেডের উপর তাকিয়ে দেখতে পেল তুর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে।তার এলোমেলো অবস্থা শাড়ির আঁচলা বুক থেকে সড়িয়ে বেশ খানিকটা নিচে পড়ে আছে।যার ফল সরূপ স্পর্শকাতর জায়গায় অনেকটাই দেখা যাচ্ছে।নিষ্প্রভের মাথাটা ঝিমঝিম করছে।না চাইতেও চোখ দুটো চলে যাচ্ছে তবুও নিজেকে সামলিয়ে উঠে পড়ে ফ্রেশ হতে।

ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করার শব্দে তুরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।এক মিনিট সময় নিয়ে সে বুজতে পারে এটা নিজের বাড়ি বা নিজের ঘর নয় সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ নতুন জায়গা।নিজের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে।এভাবে সে একটা পুরুষের সামনে সারারাত ছিলো ছিঃ ছিঃ।যেখানে বিয়েটাই মেনে নিতে পারছে না,সেখানে আর ভাবতে পারছে না।

নিষ্প্রভ বেরিয়ে এসে দেখে তুর গভীর চিন্তায় মগ্ন।সে বলল,

‘কি ভাবছো যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।আর শোনো আমি জানি না আশা বেগম অই মহিলার সাথে পূর্বে তোমার কি সম্পর্ক ছিলো।উনি আমার বাবার ব‌উ কাজেই তোমার সাথে এখন থেকে আগের মত ব্যাবহার করবে না এটা নিশ্চিত থাকো।সো বি কেয়ারফুল।’

‘আচ্ছা।’

বলেই চুপ হয়ে গেল।তুর আমতা আমতা করছে।কিভাবে বলবে বুজতে পারছে না।

‘তুমি কি কিছু বলবে আমায়?’

‘মানে বলছিলাম কি ফ্রেশ হব কিন্তু আমার এখানে কোনো ড্রেস নেই। আমি ফ্রেস হয়ে কি পড়বো।’

নিষ্প্রভ কি জেন ভেবে আলমারির কাছে যায়,আলমারিটা খুলে কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে রাণী গোলাপী রঙের শাড়ি বের করে তুরকে দেয়।তুর হাতে নিয়ে দেখে সুতির গোল্ডেন জরির পারের রাণী গোলাপী রঙের একটি শাড়ি।শাড়ির ভিতরে কালো রঙের ব্লাউজ ও পেটিকোট। কিন্তু কথা হলো মেয়েদের শাড়ি নিষ্প্রভের আলমারিতে কেন।তাহলে কি নিষ্প্রভের জীবণে অন্য মেয়ে ছিলো? না এটা হতে পারে না।যতো বিয়েটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে হোক না কেন তবুও স্বামী ত।

নিষ্প্রভ তুরের মুখে এক্সপ্রেশন দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে বলল,

‘শাড়িটা আমার মায়ের তুমি আবার অন্য কিছু ভেবো না।এমনিতে মহিলা মানুষ একটু বেশি বুঝে।’

নিজের মনের কথা নিষ্প্রভের মুখে শুনে তুর লজ্জায় পড়ে যায়।নিজেকে সামলিয়ে ওয়াসরুমে যায় শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পড়ে বের হয়।সে আগে থেকেই শাড়ি পড়তে জানতো তাই কোনো অসুবিধা হয় নি।ভাগ্গিস জানতো নয়তো এই পরিস্থিতিতে সে কি করতো? এ বাড়িতে ওর চেনা পরিচিত তেমন কেউ নেই।তুর বের হতেই নিষ্প্রভ সে দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্তের জন্য জমে যায়।তুরকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করে ফর্সা শরীরে রাণী গোলাপী শাড়িটা বেশ মানিয়েছে,সাথে কালো ব্লাউজ আরও চোখে লাগছে।ভেজা চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে ব্লাউজের কিছু অংশ ভিজে পিঠের সাথে লেগে আছে যা আর‌ও আর্কষনীয় করে তুলছে। গোলগাল মুখটা বেশ স্নিগ্ধ দেখতে।

নিষ্প্রভের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুরের বেশ অস্বস্তি হয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় নক পড়ে। নিষ্প্রভ ঘোর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে,

‘কে?’

‘বড় ভাইজান আমি সেতারা। খালুজান ডাকে নতুন ভাবিরে নিয়ে নিচে আসেন।’

নিষ্প্রভ তুরকে চল বলেই সে যেতে থাকে।তার পিছন পিছন তুর যায়।যদিও তার ভয় করছে তবুও ত যেতে হবে।নিচে এসে নিষ্প্রভ একটা চেয়ার টেনে তুরকে বসার ইশারা করে সে পাশেরটাই বসে। ইলিয়াস মির্জা তুরকে দেখে নড়েচড়ে বসে আবার খেতে শুরু করে।আশা বেগম দুজনকে এভাবে দেখে রাগে ফুঁসছে।

‘যেভাবেই হোক আমার মান সম্মান ডুবিয়ে বিয়েটা ত করেছ এখন পরিপূর্ণ ভাবে মেয়েটার দায়িত্ব নেও।তুরের জেনো তোমার নামে কোনো অভিযোগ না থাকে এমন ভাবে মেয়েটাকে সব সময় সুখী রাখবে।’

ইলিয়াস মির্জা নিষ্প্রভের উদ্দেশ্য বলল।নিষ্প্রভ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

‘ঠিক আপনি যেমন আপনার স্ত্রীকে রেখেছেন।’

‘চুপ বেয়াদব ছেলে।বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না।’

নিষ্প্রভ আর কিছু বলল না।তুর অবাক চোখে দেখছে এই ছেলে বাবার সাথে কিভাবে কথা বলছে। ইলিয়াস মির্জা তুরের হাতে লাল রঙের একটা বক্স দিয়ে বলল,

‘এটা তোমার মা। নিষ্প্রভের মায়ের ছিলো যা এতোদিন যত্ন করে আমি রেখেছি।এটার উপর শুধু তোমার অধিকার।’

আশা বেগম ভিতরে ভিতরে গর্জে উঠছে।প্রথমে নিষ্প্রভের কথায় তারপর তুরকে এসব দেওয়াতে।তার স্বামী এতো বছর ধরে এসব কোথায় রাখছিলো।সে স্বামীকে এমন ভাবে বস করে নিয়েছে যে,বিয়ের এক সপ্তার মধ্যে‌ই নিষ্প্রভের মায়ের যতো গহণা ছিলো সব নিজের কাছে নিয়েছে।তাহলে এই বাক্স তে কি আছে আর এতো বছর কোথায় রেখেছিল তার স্বামী যা সে জানে না।

আফসান নিচে নেমে এসে তুরের মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়ে।তুরের দিকে তাকিয়ে তাঁর ভেতরের লালসা জেগে উঠে।তুরকে এই রূপে প্রথম দেখলো,আরে গোসল ও করছে।তার পাখিকে কিনা অন্য কেউ উপভোগ করলো। এ হতে পারে না। আফসান বিরবির করে বলল,

‘এক দিনের জন্য হলেও পাখিটাতে তার চাই।’

চলমান।