Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 325



অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৭

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৭

“ডক্টর আমার বিবিজান এর মেন্টাল কন্ডিশন দেখে কি বুঝেছেন? আর তার হঠাৎ কন্ট্রোল হারানোর কারণ কি?”

ডক্টর শফিউল্লাহ চিন্তিত মুখে নাজীবার মেন্টাল কন্ডিশনের ফাইলটি এ দু’তিনেক বার চোখ বুলিয়ে নিয়েছেন। তবুও পেশেন্টের হাজবেন্ড কে কি বোঝাবেন তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। আফরাজ হাঁসফাঁস করছে উত্তর জানার জন্যে। সে গম্ভীর দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে যায়। খাদিজা বেগম নাতিকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে তার হাত চেপে ধরেন। এমতাবস্থায় আফরাজ তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।’
সে বেরিয়ে যায়। ডক্টর মৃদু হাসলেন। তিনি বুঝতে পারলেন , ইয়াংম্যানের এংগি হাই-লেভেলের।
অন্যথায় অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
তিনি গলা ঝেড়ে বলে,

“শুনেন ম্যাম। আপনার নাতবউর কন্ডিশন খুবই নাজুক। তাকে পুরোপুরি পুষ্টিকর খাবারে রাখবেন। আর আপনার নাতিকে বলবেন এই প্রেসক্রাইপড মেডিসিন’স টাইমলি পেশেন্ট কে খাওয়াতে। যদি পেশেন্ট মেডিসিন’স না খেয়ে থাকে। তবে সে তার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে।”

তিনি মাথা নেড়ে ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে আফরাজ এর কাছে গেলেন। সে এতক্ষণ করিডোর এ দাঁড়িয়ে দাদী ও ডক্টরের যাবতীয় কথা শুনছিল। দাদীকে আসতে দেখে হুট করে জিজ্ঞেস করল।

“দাদী তুমি বিয়ের সময় আমাকে জোর গলায় বলে ছিলে মেয়েটা অসুস্থ। তাই আমি যেনো কবুল বলে ফেলি। এটাই তোমার শেষ ইচ্ছে ছিল। যাও তখনও মেনে নিয়ে ছিলাম। তবে তুমি আমাকে ওর অসুস্থতার ব্যাপারে জানাবে বলেও জানাওনি। কেনো? এখন দেখলে তো গর্দভ মেয়েটা কত বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলল ?”

“মাফ করিস দাদুভাই। নাতবুর স্বাভাবিক চালচলন দেখে ভাব ছিলাম সে সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই তোকে জানিয়ে আর চিন্তায় ফেলতে চাইনি। তার উপর তুই নাতবউকে বউ হিসেবেও এতটা মান্য করিস না। যা আমি ভালোই জানি। এসবে তোকে জড়ালে শুধু শুধু বিরক্তবোধ করতি। এই আমি সহ্য করতে পারতাম না। মেয়েটা তো এখানে আমার ভরসায় এসেছে। সেই ভরসার খেয়ানত কেমনে হতে দিতাম বল আমায়?”

দাদীর কথায় আফরাজ মুখ ফিরিয়ে নেয়। হ্যা সে মানে তার কথাটি যে, সে নাজীবাকে বউ মানে না। তার মানে এই নয়, ঐ মেয়েটার প্রতি বউ হিসেবে দায়িত্ব কে দূরে সরিয়ে দেবে। গম্ভীর কণ্ঠে দাদীকে বলে,

“দাদী আমি কিছু মনে করছি না এতে। তবুও মনে রেখো মেয়েটাকে বিয়ে করে বউ না মানলেও অত্যন্ত স্পষ্টভাষী আমি নিজের প্রতি যে, আমি তার প্রতি স্বামী হিসেবে সব দায়িত্ব সুষ্ঠুতার সাথে পালন করতে পারব। আফরাজ ফাহিম তার দায়িত্বে ত্রুটি রাখে না।”

খাদিজা বেগম নাতির চক্ষু আড়ালে মুচকি হাসলেন। তিনি ইচ্ছেকৃত নাতির বলা কথায় নুনের ছিটকা দিয়েছেন। যাতে সে নিজমুখে রায় দেয়। হলোও তাই। এবার তিনি নিশ্চিত, তার নাতি আর নাতবউয়ের মধ্যকার সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পাবে। তিনি আলগোছে কৃতজ্ঞতার সুরে বলেন,

“দাদুভাই আমাকে ভুল বুঝিস না। মেয়েটা-কে তুই দেখিসনি , বুঝিসনি বলেই তার ব্যাপারে জানতে জানিস না। শোন আজ নাতবউয়ের সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার আসল কারণটা বলি।
নাজীবা ফেনীর মেন্টাল হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। তুই তো জানিস আমি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ফেনীতে গিয়ে সময় কাটায়। যেহেতু তোর দাদা জেলা-উপজেলা ঘুরতে পছন্দ করতেন। সেই সুবাদে আমিও তার থেকে ঘুরাঘুরির নেশাটা পেয়ে যায়। তুই যখন তোর অর্নাস থার্ড ইয়ারের স্টাডির মাঝে বাবার ব্যবসা দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লি। তখন আমার খুব একা লাগত। তোকে তো ডিস্টার্ব করতে পারতাম না। কারণ তোর একার উপর পড়াশোনা, আমার দেখভাল, তোর বাবার ব্যবসা । সব’কটা একসাথে ধসে পড়ার মতন অবস্থা। সেই কারণে আকবর কে সাথে নিয়ে ঘুরতাম। ফেনীতে তোর বিয়ের একসপ্তাহ আগে গিয়ে ছিলাম। ফেনী নদীর সৌন্দর্যতা উপভোগ করে চিটাগাং ফিরে আসতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ঝড়-তুফানের কারণে আটকে পড়ি। কি আর করব ভেবে তোমার দাদুর আখিরাত জীবনের উদ্দেশ্য কিছু টাকা গরীব-দুঃখীকে দিয়ে হোটেল ফিরছিলাম। তখন মাঝ পথে রাস্তায় এক নার্স কে পায়। নার্স-কে খুব আতঙ্ক দেখাচ্ছিল। আমি ড্রাইভার কে বলে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ি। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।

“মা কি হলো তোমার মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

নার্সটি যেনো আঁধার গগনে আশার আলো দেখল তেমনি নজরে চেয়ে একপলকে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলে,

“আন্টি আপনাকে আমি বেশি কিছু জানাতে পারব না। নাহলে যে, আমার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তবে আপনার থেকে আমাকে সাহায্য করতে হবে। আমার সাথে একটা রোগী আছে। সে মেন্টাল হাসপাতালের রোগী। তার দায়িত্বে আমিই আছি আন্টি। তার খেয়াল রাখিয়েন। আর এই ওষুধপত্র তারই। এগুলো টাইমমত খাওয়াবেন। মেয়েটা অসুস্থ হলেও সুস্থ। সব বুঝে, আপনি যা বলবেন, দেখবেন সর্ব জ্ঞানে করতে পারবে।”

নার্সটি হঠাৎ তার হাতঘড়ি চেক করে। টাইম লিমিটলেস হওয়ায় ভয়ে সিটিয়ে উঠে সে। আমার বাহুতে নাজীবা-কে রেখে সে পালিয়ে যায়। তার অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তায় আমিও জমে গিয়ে ছিলাম। একটা মেয়ে আমার বাহুতে! আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন ড্রাইভার এর সঙ্গে মিলে নাজীবাকে ধরে হোটেলে চলে আছি। চারদিন যাবত মেয়েটার হুঁশ ছিল না। ডক্টর দেখিয়ে আস্তে ধীরে স্বাভাবিক হয় মেয়েটা। তবে দাদুভাই জানিস? তার চিকিৎসার সময় একটা বিষয় আমার খুব আশ্চর্যজনক লেগেছিল।”

দাদীর কথা মনযোগ সহিত শোনছিল আফরাজ। শেষের বাক্যে তার আগ্রহ দ্বিগুণ হলো। দাদীকে টেনে সিটে বসিয়ে বলে,

“কি সেটা বলো দাদী?”

“মানে ডক্টর চিকিৎসা করে বলছিল মেয়েটার শরীরে রক্ত খুব ক্ষীণ পরিমাণ ছিল। যেনো কেউ বুঝি তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ফেলতো অনেক তেমনি। একথা শুনে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আসলেই কি কারো শরীরে রক্ত ক্ষীণ থাকে? নাকি কেউ ইচ্ছেকৃত রক্ত নিয়ে নিয়েছে? তা নিয়ে আমরা আর ভাবিনী। প্রতিদিন নিয়ম করে নাজীবার হিমোগ্লোবিন লেভেল হাই করতে বিভিন্ন ফলমূল, পুষ্টিকর খাবার খাওয়েছি। এর মাঝে ভাবতে লাগলাম!
আমি চলে গেলে, যদি মেয়েটা আবারো অসহায় হয়ে পড়ে তখন? এই চিন্তা করে একদমে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার অসুস্থতার অজুহাতে হলেও তোর সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেব নাজীবার। আলহামদুলিল্লাহ সেই সিদ্ধান্ত আমি সত্য ও করে ছিলাম। কিন্তু হ্যা, নাজীবার ব্যাপারে একটা বিষয় বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত খেয়াল করে ছিলাম। তার শরীরে র’ক্ত কম থাকায় চোখ-মুখ পুরো শরীরটায় নিস্তেজ-রোগী মনে হতো। যখন সে পরিপূর্ণ খাবার আর মেডিসিন নিচ্ছিল তার স্বাভাবিক রুপ ফিরে পায়। যা দেখে স্বয়ং তোর দাদীই নাতবুর প্রেমে পড়ে গেল। হাহাহা।”

“প্রেম না ছাই। বে’য়া’দপ মেয়ে একখান সে।”

বিরবিরিয়ে আফরাজ বলল। পরক্ষণে নাজীবার এই সত্য শুনে সে দাদীর হাতের উপর হাত রেখে বলে,

“একমাত্র তুমি আমায় দাদুর মতই ভালোবেসেছো দেখে তোমার কথার মান রাখতে বিয়ে করে ফেলেছি। তাই মুখ ফেরাবো না আমার দায়িত্ব থেকে। চেষ্টা করব সব স্বাভাবিক করার। হয়ত সময় লাগবে। কারণ তুমি তো জানতে , আমি তাবাসসুম কে কতই না ভালোবাসতাম। এখনো হৃদয়ের কোনো এক কোণায় তার নামটা উচ্চারিত হয়ে থাকে। তখন নিজেকে অসহায় লাগে ভীষণ। ঐসময় মেয়েটার দিকে দু’চোখেও তাকাতে মন চাই না। আমি নিজের দায়বদ্ধতা মেনেই কাজ করব। আশা করি তুমি নিরাশ হবে না।”

দাদুভাই এর কথায় খাদিজা বেগম মনে মনে ভেটকিয়ে বলে,

“নাতবু ঠিকই বলে তুই একবান্দা কচুর করলা। সুন্দর ডায়মন্ড রেখে পুরোনো মালের জয়গান করছিস। ব্যাটা আমার হ্যাবলা আর বানাইছে করলা‌।”

“কিছু কি বললে দাদী?”

“নাহ আমার মহামান্য দাদুভাই রে কি কিছু বলা যায় ধুর।”

দাদীর এমন ভেটকি টাইপ চেহারা দেখে মনে মনে হাসল আফরাজ। সে বুঝতে পারছে তার কথায় দাদী তিন’চারেক কথা মনেই শুনিয়ে দিয়েছে। বিধায় সে এসবে মন দিল না। ঘন্টা পাঁচেক পর জ্ঞান ফিরল নাজীবার। সচেতন হতেই প্রথমে নিজের ঘোমটা ঠিক আছে কিনা দেখল! অথচ মুখশ্রী কি তার পরণের কাপড়ের বদলে হাসপাতালের কাপড় জড়ানো দেখে চমকে গেল। সে ঢোক গিলে পাশে কাজরত নার্সকে দেখে মৃদু কণ্ঠে ডাক দেয়। নার্স পেশেন্ট এর কণ্ঠ শুনে খোশমনে পেশেন্টের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওহ মিসেস আপনার জ্ঞান ফিরেছে। এখনই সবাইকে ডাকছি।”

নাজীবা তৎক্ষণাৎ নার্স-কে থামিয়ে দেয়। নার্স ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

“জ্বী কিছু বলবেন?”

“সিস আমা..আমাকে কে এনেছে? আর বাহিরে কারা দাঁড়িয়ে আছে একটু বলবেন?”

“জ্বী বাহিরে আপনার হাজবেন্ড আর তার দাদী বসে আছেন। আপনাকে এনে ছিল আপনার দাদী শ্বাশুড়ি। তার পর তো আপনার হাজবেন্ড আপনাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন।”

কথাটি শুনে নাজীবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। তবে এখন তো তার জ্ঞান ফিরল। তার চেহারা যদি দেখে ফেলে তখন? তৎক্ষণাৎ নার্সকে বলে,

“নার্স শুনেন আমার মুখ ঢাকানোর জন্য একটা হিজাব দিন আর না হয় আমার পাতলা শাড়ির আঁচলটাই দিন।”

“কি বলছেন এসব আপনি? আপনার কন্ডিশন দেখছেন? ডক্টর রোগীর ড্রেস ছাড়া অন্য ড্রেস এখন এলাউ করবেন না।”

“প্লিজ একটা হিজাব না হয় দেন।”

“ওকে আমি ব্যবস্থা করছি।”

নার্স নিজের ব্যাগ থেকে ছোট হিজাব বের করে নাজীবাকে দেয়। নাজীবা পাতলা হিজাবটি মুখের উপর দিয়ে নার্সকে বলে,

“আচ্ছা সিস আমার জ্ঞান ফিরেছে বলে, সবাইকে এখন আসতে বলুন।”

“হুম আচ্ছা। ডক্টরকেও ডেকে আনছি।”

সকলে নাজীবার সঙ্গে কথায় মশগুল। কিন্তু তার চোখগুলো আসল মানবকে খোঁজছে। কোথাও তার চিহ্নটুকু নেই দেখে অভিমান হলো তার। কুসুমা ভাবী নাজীবার অভিমানী চেহারা দেখে বুঝল, সে তার স্বামীকে খোঁজছে। তাই সে নাজীবার হাত ধরে সব ঘটনা বলে ফেলল। শুনে লজ্জাও পেল ভীষণ। কিছুক্ষণ পরে মেডিসিন নিয়ে এসে নার্সের হাতে দিল। নার্স মেডিসিনের মধ্যে যেগুলো ইনজেকশন এ দিতে হবে সেগুলো আলাদা করে নিল। ইনজেকশন এ দুটি মেডিসিন পরিমাণমতো ভরে নিল। সেটি নিয়ে নাজীবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে চোখ বুজে নিজেকে স্বাভাবিক করল। তার কাছে এগুলো নরকের অস্ত্র মনে হয়। হঠাৎ হাতের উপর কারো স্পর্শে সে চোখ খুলে তাকায়। আফরাজ তার ডান হাতের মাঝে নিজের হাত ভরে দিয়ে ফোন ঘেঁটে যাচ্ছে। এমন ভান যেন সে অনিচ্ছায় স্পর্শ করেছে। তবুও নাজীবা পরম আদরে সেই হাতটা মুঠোবদ্ধ করে নেয়। কেঁপে উঠে আফরাজ। নিশ্চুপে নাজীবার মেডিসিন দেওয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেভাবে হাত মিলিয়ে রইল।

ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো নাজীবা কে। আফরাজ বাসায় এসে নাজীবা কে তার বরাদ্দকৃত রুমে শুয়ে দেয়। কাজের মহিলাকে খেয়াল রাখতে বলে সে চলে যায়। এতে বেচারী অভিমানে পুড়তে লাগল। মনে মনে তো ছ’খানেক গালিগালাজ দেওয়াও শেষ তার। কুসুমা ভাবী প্রতিনিয়ত এসে খোঁজ খবর নেয়। এভাবে সে খেয়াল করে আফরাজ তার প্রতি অদেখা ভাব দেখায়। যার কারণে সেও এড়িয়ে চলতে লাগল তাকে। দিন গড়িয়ে তিন দিন পার হওয়ার পর পুনরায় তাদের মাঝে খুনসুটির আরম্ভ হয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
____

বর্তমান…..

“আফরু ভাইয়া আমাকে প্রেমিকা হিসেবে না মানো। এটা তো মানো তুমি ছাড়া আমার একুলে-ওকুলে আর কেউ ছিল না। তোমার কাছে হাত-ভিক্ষা করা ছাড়া আমার কাছে রাস্তা নেই। অত্যন্ত একটা জবেব ব্যবস্থা না হয় করে দাও। ওহ হ্যা?
নিউজপেপারে তোমার অফিসে পিএ জবের বিজ্ঞাপন দেখেছি। সেই জবটা কি আমাকে দেওয়া যাবে? প্লিজ!”

নাজীবা গেস্ট রুম এর বাহিরে পায়চারী করছে। সেই যে কখন থেকে দুজনে ভেতরে গেল। বের হওয়ার নামগন্ধ নেই। না, সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। আকস্মিক ভেতরে ঢুকে পড়ায় তাবাসসুম ঘাবড়ে যায়। আফরাজ স্বাভাবিক দৃষ্টি বজায় রাখে। যেন সে জানত মহারাণী জ্বলনের কারণে ভেতরে চলে আসবে। সে প্রথমেই তার বিবিজান এর আহাট বুঝে গিয়ে ছিল। তাবাসসুম আফরাজ এর হাত ধরে আছে দেখে, রাগে মাথা ফেটে যেতে লাগল নাজীবার। কোনো কথা ছাড়াই ছুটে গিয়ে তাবাসসুম কে ঠেলে ধাক্কা মা’র’ল। এক ধাক্কায় সে টাইলার্সের উপর পড়ে ব্যাকসাইডে ব্যথা পায়। নাজীবা তার স্বামীর হাত ধরে টি-টেবিলের উপর রাখা পানির জগে হাত চুবিয়ে দেয়। হতবাক হয়ে গেল আফরাজ। সে তো ভেবেছিল মহারাণী এসে তাবাসসুম এর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেবে। কিন্তু দৃশ্যপট তো উল্টে গেল। নাজীবা জগের পানিতে চুবিয়ে শান্তি পেল না। আফরাজ কে টেনে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে পড়ে। তাবাসসুম এর দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তাবাসসুম দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়। নিজের কাপড় ঝেড়ে ওয়াশরুমের দিকে চেয়ে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করল। মুখ ঝামটা মে’রে বেরিয়ে গেল। আকবর আর তার বউ দেখে মুখ চেপে হাসতে থাকে। খাদিজা বেগম তাবাসসুম কে বেরিয়ে যেতে দেখে ‘আহেম আহেম’ গলা ঝেড়ে দৃষ্টিকার্ষণ করে । তাবাসসুম এর পা থেমে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে আফরাজ এর দাদীর দিকে তাকায়। তিনি তাবাসসুম এর নজরধারা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“আমাদের এখানে মেহমান কে খাবার না খেয়ে যেতে দেওয়া বারণ। তুমি চাইলে বসতে পারো। আর না চাইলে বাহিরের দরজা খোলা আছে।”

খাবারের কথা শুনে তাবাসসুম এর চোখ উৎফুল্ল হয়ে গেল। সে তৎক্ষণাৎ ‘জ্বী জ্বী কেনো নয়’ বলে চট করে ডাইনিং রুমে চলে এলো। চেয়ার টেনে নেয়। সুস্বাদু খাবার দেখে প্লেট ভর্তি করে খাবার বাড়তে লাগল। কুসুমা ভাবী আর কাজের মহিলা তাবাসসুম এর খাবার নেওয়ার ধরণ দেখে চোখ পিটপিট করে তাকায়। কাজের মহিলাটি তো মুখের উপর বলে দেয়।

“আহারে হতো দিন না খাইয়া আছে বেচারী একখানী। খাইয়া লোহ। ওমন খাওন নয়তো আর কপালে জুটব না‌।”

কুসুমা ভাবী ইশারায় চুপ করিয়ে দেয় তাকে। সেও চুপ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, আফরাজ কে বেসিনের সামনে টেনে হাত-জোড়া দু’তিন মিনিট ধরে সাবান দিয়ে ঘষে আর ধুয়ে যাচ্ছে নাজীবা। আফরাজ নিজের হাত সরাতে চাইলে নাজীবা চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,

“ঐ ব’দ’মাই’শ ব্যাটা মেয়ে দেখলেই আপনার হাত ধরতে শরীর নিশপিশ করে তাই না?”

“বিবিজান তুমি। কিন্তু আবারো আমার সাথে বে’য়া’দপের মত কথা বলছো। সাবধান নাহয় চ’ড়ে গাল লাল করে দেব।”

এক আঙ্গুল দেখিয়ে সতর্ক করে আফরাজ। নাজীবা তার কথা শুনলে তো। সে একচটে ঘোমটার ভেতর আঙ্গুলটা মুখে পুরে নেয়। আফরাজ চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
নাজীবা দাঁত দিয়ে চেপে ধরল আঙ্গুলটা। আফরাজ “আহ আহ” করে চেঁচাচ্ছে। গেস্ট রুম ডাইনিং রুমের কাছে হওয়ায়, তাদের চিৎকার শুনে চটজলদি চলে আসে বাকিরা। তাবাসসুম মুখে অর্ধমুঠো বিরিয়ানি নিয়ে চিবাতে গিয়েও পারল না। সে তো আফরাজ এর চিৎকার শুনে চলে আসে। আকবর গেস্ট রুমে থাকা ওয়াশরুম থেকে আফরাজ এর “আহ আহ” চিৎকার শুনে উল্টো অর্থ বুঝে নেয়। সেটারই সুযোগ তুলল।
দরজার কাছে গিয়ে আফরাজ কে সাবধান করতে বলে,

“ঐ ব্যাটা সুখের ঠেলায় আস্তে চিল্লা। তোর সুখের চিল্লানিতে আমার বউ আর তোর দাদীও চলে এসেছে।”

খাদিজা বেগম আকবরের কথা বুঝতে পেরে লাঠি নিজের রুমের দিকে ঘুরিয়ে কথাহীন বেরিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী তো মিটমিট করে হাসছিল। আকবর বউয়ের হাসি দেখে বলে,

“হায় হায় বউ আমার। আমরাও ওদের মত ওয়াশরুমে চিৎকার করবো কেমন?”

কুসুমা ভাবী তার স্বামীর কথা শুনে রুম থেকেই পালিয়ে যায়। তাবাসসুম বেহায়ার মত ওয়াশরুমের দরজার দিকে চেয়ে আছে। তার আফরু-কে খেয়ে দিচ্ছে ভেবে সে তৎক্ষণাৎ দরজায় জোরে জোরে বারি দিতে লাগে। আকবর বিরক্তিকর দৃষ্টি দেয়। কর্কশ গলায় বলে,

“আপু আপনার কি সেন্স অফ হিউম্যান বলতে কিছু আছে? শুনতে পাচ্ছেন না আমার জ’ল্লা’দ বন্ধু কত বছর পরে সুখের চিৎকার দিচ্ছে। বিয়ের পর সুখের চিৎকার দেওয়া হলো মহামান্য কর্ম।”

আফরাজ রাগে না পারতে নিজেও নাজীবার এক হাতের আঙ্গুল দাঁত দিয়ে চেপে ধরল। নাজীবার নাজুক হাতে চাপ পড়ায় সেও চিৎকার দিয়ে উঠে।
তার ঠোঁটের মধ্যেও আফরাজ এর আঙ্গুল। সে আঙ্গুল চেপে ধরেই গোঙাতে লাগল।

“আহ আহ ছাড়েন।”

তাবাসসুম এর চোখ তো আরো বড় হয়ে গেল। আকবর তার নাজীবা ভাবীর চিৎকার শুনে পালাতে নেওয়ার পূর্বেই তাবাসসুম এর কাঁটা ঘায়ে নুন ছিটকে দিয়ে বলে,

“আরে বাহ! আমার জ’ল্লা’দ বন্ধুও দেখি বউয়ের চিৎকার বের করতে পারে। ব্রাভো ম্যান! ব্রাভো ! ক্যারি অন ব্রো। ”

আকবর কে আর পায় কে? সে তো রুম থেকে একপ্রকার ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে…….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৬

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৬

“বিবিজান আস্তে মুচড়া-মুচড়ি করো। সবাই বুঝতে পারলে তুমিই লজ্জা পাবে। আমাকে যে সকালে বোকা বানালে তার শাস্তি এখন মুখ বুজে সহ্য করো। এখন দেখো আমি কি করি?”

নাজীবা মুচড়া-মুচড়ি করায় কথাটি তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে আফরাজ। কিন্তু স্বামীর শেষের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আফরাজ ভাব নিয়ে তার দাদীকে প্রশ্ন করে।

“দাদী স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হাতে খাওয়া সুন্নত তাই না?”

খাদিজা বেগম শুনে ‘হ্যা’ বলে। এতে নাজীবার মুখ পাংশুটে হয়ে যায়। কেমনে নিজেকে আফরাজ এর কাছ থেকে ছুটাবে সেই পরিকল্পনা করেই যাচ্ছে। আফরাজ বাঁকা হেসে নাজীবার কোমড়ে ছোট চিমটি কেটে দেয়। আকস্মিক চিমটি কাটায় চিৎকার করে উঠে সে। আফরাজ ব্যতীত চেয়ারে বসা তিনজন ব্যক্তিই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। কুসুমা ভাবী অকপটে বলে উঠে,

“ভাবী কি হয়েছে? পেটে কি বেশি ব্যথা করছে? হাসপাতালে নেওয়া লাগবে?”

খাদিজা বেগমও চিন্তিত গলায় বলে,

“হ্যা রে নাতবু। তোর কিছু লাগলে বল এখনই আনতে পাঠাচ্ছি।”

“না না দাদী আমার কিছু লাগবে না। আর ভাবী আপনিও খাবার খান। আমি একদম ঠিক আছি। আসলে পায়ের উপর মাছি বসে ছিল। চুলকাতে গিয়ে টেবিলের কোণায় বারি খেয়েছি।”

‘বারি খেয়েছি’ শেষ দু’শব্দ আফরাজ এর দিকে চেয়ে দাঁত চিবিয়ে বলে নাজীবা। তারা চিন্তামুক্ত হয়ে খেতে লাগল। সেও নিজের প্লেটে বিরিয়ানি নিতে গেলে সেই প্লেটটি দূরে সরিয়ে আফরাজ নিজের প্লেট এগিয়ে দেয়। মহা বিরক্ত হয়েছে এমন ভান ধরে আফরাজ কে খাওয়ে দিচ্ছে সে। এখানে আফরাজ তার শোধ তুলতে পারছে ভেবে খুশি হচ্ছে। আর নাজীবা ঘোমটার আড়ালে চোখভরা খুশি নিয়ে স্বামীকে খাওয়ে দিচ্ছে। সে জানে আফরাজ কে বোকা বানানোর জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছে। যদি সামান্য একটু বোকামিও তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে, তবে ক্ষতি কই? লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
হঠাৎ দরজায় খোলার শব্দে সকলে দরজার দিকে তাকায়।

____

নতুন একটি নার্স এসে লোকটি কে মেডিসিন ও ইনজেকশন দিয়ে চলে গেল। তার সামনে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখায়নি লোকটি আর তার সঙ্গে থাকা মহিলাও। তিনি নার্স যেতেই লোকটির কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“বাবা আপনি ঠিকমত ব্লা’ড নিচ্ছেন? মনে রাখবেন তার স্বাদ না পেলেও , অন্যদের থেকে অবশ্যই সাধ্যমত পান করতে হবে। নাহলে আপনার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।”

লোকটি হিংস্র দৃষ্টিতে দেওয়ালে টাঙানো হারানো মেয়েটির ছবির দিকে চেয়ে থেকে বলে,

“এই এক মেয়ের সুস্থতার জন্য কত কি করলাম। তবুও সে পালিয়ে গেল। কিই এমন করতাম? রাত-বিরাতে একটু শরীরটার মধ্যে থেকে র’ক্ত নিতে চাইতাম। তাও হতে দেয়নি।”

“তাও বাবা আপনি র’ক্তপান তো করতে পেরেছেন। সে যদি কোনো ভাবে তার তাবিজ খোঁজে পেতো। তবে আপনাকে মে’রে ফেলতে তার একসেকেন্ড ও লাগতো না।”

কথাগুলো যেন লোকটির কানে গরম সিসা ঢালার মতো লেগেছে। তৎক্ষণাৎ মহিলাটির গলা চেপে হুংকার দিয়ে বলে,

“এই মেয়ে কি বললি তুই? ঐটুকুন মেয়ে আমাকে মা’রতে পারবে? কখনো না ঐ মেয়েকেই আমি জিম্মি বানিয়ে আজীবন রেখে দেবো দেখে নিস।”

বলেই মহিলাটির গলা ছেড়ে দিল। তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। গলায় ছাপটা বেশ জোরেই লেগেছে তার। কাশতে লাগল ক্রমান্বয়ে। লোকটি বিনা শব্দে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। পানি খেয়ে কিছুটা শান্তি লাগল তার। লোকটি রকিং চেয়ারে বসে নিজের মাথায় হাত দিয়ে ব্যান্ডেজ করা জায়গাটি খুব তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করছে। একটানে ব্যান্ডেজ ছিঁড়ে ফেলল। মহিলাও টু শব্দ করল না। কারণ জানে লোকটি সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
ব্যান্ডেজ ছিঁড়তেই দু’জনে অবাক। কারণ কপাল যে ফেটে ছিল। তার কোনো দাগও অবশিষ্ট নেই। মহিলাটি কাঁপা কণ্ঠে বলেন,

“এটা কেমনে সম্ভব হলো বাবা? আপনার কপালে হালকা আঁচ হলেও থাকার কথা। পুরোপুরি মিটলো কেমনে?”

লোকটি রকিং চেয়ারে গা হেলিয়ে দিয়ে বলে,

“জানিনা যাও এখান থেকে। আমি ধ্যান করব।”

মহিলা সায় দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

তিনদিন আগের কাহিনী…

লোকটি তার ছ্যালাদের থেকে কোনো খবর না পেয়েই, নিজের রাগ সামলাতে না পেরে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলে ছিল। মহিলাটি কোনোমতে লোকটি কে ধরে হাসপাতালে নিয়ে আসে। যার খোঁজ পাওয়ার জন্য তারা এত অপেক্ষায় ছিল। ভাগ্যের সহায়তায় তারা মেয়েটিকে সেখানে পেতে গিয়েও পেলো না। কেননা হারানো মেয়েটিও সেই হাসপাতালের রোগী হয়ে ছিল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ৪৫নং কেবিনে নাজীবার চিকিৎসা চলছে। ডক্টর এসে একবার জানিয়েছেন,
মেয়েটির জীবন বাঁচানো আশংকাজনক। তবুও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। খাদিজা বেগম আঁতকে সিটে গা হেলিয়ে বসে পড়েন। নাতবু কে যে তিনি খুব ভালোবাসেন। মেয়েটা শুধু রুপে নয়,গুণেও অতুলনীয়। তার কখন কি দরকার হয় তা হাজির করে দিতে পারে। রাতবিরাতে স্বামীর পরোয়া না করেও চলে আসে, সঙ্গীহীন বিধবা বুড়িকে সঙ্গ দিতে। এমন ব্যবহারী নাতবউ যদি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে তো কথাই নেই। চিন্তায় যেন তিনি প্রেসার ডাউন করে ফেলবেন মত অবস্থা প্রায়।
হঠাৎ তার লাঠিটি নিচে পড়ে যায়। তিনি বৃদ্ধ মানুষ ঝুকে লাঠি নিতে গেলেই কোমড়ে ব্যথা পাবেন। তাই চোখজোড়া দিয়ে আশানুরূপ কাউকে খোঁজছেন। যেনো কেউ এসে লাঠিটা উঠিয়ে দেয়। আশাটা পূরণ ও হলো বটে। এক ছাব্বিশ-সাতাশ বয়সী এক যুবক এসে লাঠিটা খাদিজা বেগমের হাতে দেয়। তিনি কৃতজ্ঞতা জানায়। এতে লোকটি মৃদু হেসে বলে,

“একটু সাবধানে চলবেন।”

“হ্যা-রে বাবা। কিন্তু তোমার কপালে কি হয়েছে গো? এত বড়ো ব্যান্ডেজ কেনো?”

লোকটি নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে খাদিজা বেগমের পাশে বসে পড়ে। নিজের চুলগুলো কে এলোমেলো ভাবে নেড়ে বলে,

“এই ব্যান্ডেজ করার জন্য একটা মেয়ে দায়ী বুঝছেন আন্টি। মেয়েটা আমার জীবনীশক্তি ছিল। কিন্তু একদিন সুযোগ পেয়ে আমার জীবনীর থেকে মুক্ত পেয়ে উড়াল দিয়ে ফেলেছে। তাকে এখনো খোঁজে চলেছি। পায়নি কি করবো বলো? মেয়েটার প্রতি যে আমার তীব্র ভালোবাসা তাই।”

“আহারে ব্যাটা চিন্তা করো না পেয়ে যাবা। এমন ও হতে পারে সে তোমার আশেপাশেই আছে। শুধু একটু মন দিয়ে খোঁজ করো পেয়ে যাবে।”

বৃদ্ধার কথায় লোকটির মনের নেশা বেড়ে গেল। হারানো মেয়েটির প্রতি আসক্তি দ্বিগুণ হলো। সে মাথা নেড়ে কথা বাড়ানোর পূর্বেই কেউ ‘দাহাব’ বলে ডেকে উঠে। দু’জনে সেদিক মুখ ঘুরিয়ে দেখে এক শাড়ি পরিহিত মহিলা। দেখেই বয়স কল্পনা করা দুরূহ। মহিলাটি এগিয়ে এসে দাহাব এর গালে হাত রেখে বলেন,

“সোনা বাবা কোথায় চলে গিয়ে ছিলে হুম? তোর মাথা ফাটানো নিয়ে এমনি চিন্তিত ছিলাম। তার উপর তুই হুটহাট উধাও হয়ে যাস। তোর মায়ের চিন্তা হয়তো নাকি?”

“সরি মা। এই যে এখান থেকেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি কাউকে খোঁজ ছিলেন দেখে , এসে সাহায্য করেছি।”

“ভালো সোনা আমার।”

মা-ছেলে ভালোবাসা দেখে খাদিজা বেগমের চোখে আফরাজ ও তার মায়ের খুনসুটি ভেসে উঠল। চোখ ভিজে গেল তার। তিনি ভেবেই নিলেন নাতবউ সুস্থ হতেই আফরাজ এর বাবা-মাকে সুদূর ভীনদেশ থেকে চলে আসতে আদেশ করবেন। ছেলেটা বিশ বছরে বাবা-মা-কে ছেড়ে খাদিজা বেগম এর কাছে দেশে চলে এলো। শুধু মাত্র তার দাদী আর বাবার বিজনেস এর জন্য। সেখানে তার বাবা-মা দুজনেই ভীনদেশে থাকছে। ছেলের জন্য কি তাদের মন পুড়ছে না ? এবারের সিদ্ধান্ত তিনি মোটেও ব্যর্থ হতে দেবেন না। তার দাদুভাইকে বাবা-মায়ের ভালোবাসা আর নাতবউকে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ভালোবাসায় জড়িত করবেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আকস্মিক ‘দাদীই’ ডাকে তিনি ধ্যান ফিরে পান। সামনে আফরাজ কে দেখে চমকে গেলেন। দাদুভাই তার আতংকে কাঁপছে। এই চেহারা দেখে বেশ শান্তি অনুভব করছেন তিনি। নাতিকে ধরে বসিয়ে বলে,

“দাদুভাই ভেতরে নাতবু’র চিকিৎসা চলছে। তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“ইন শা আল্লাহ তাই যেনো হয় দাদী।”

অল্প কথার পর তার মুখে আর কোনো কথা রইল না। সে নিশ্চুপে বসে থাকে। দাহাব তাদের দেখে বুঝল। কেবিনের মধ্যে তাদের ঘরের বউয়ের চিকিৎসা চলছে। আর এই যুবক মেয়েটার স্বামী। সে উঠে দাঁড়ায় আফরাজ এর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,

“হেই ডুড আইম দাহাব এহসান এ ফার্মাসিস্ট অফ ন্যাশনাল হাসপাতাল এট ফেনী।”

অচেনা যুবক এর নিজ থেকে কথা বলা দেখে আফরাজও বিনা বাক্যে হাত মিলিয়ে ‘হ্যান্ডশ্যাক’ করে বলে,

“আইম আফরাজ ফাহিম দ্যা বিজনেসম্যান অফ পারফিউমেটিক ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু আপনি নিজের চিকিৎসা এখানে কেন করাচ্ছেন? আপনাদের ফেনীতে ও তো করাতে পারতেন।”

“আসলে ফেনী হলো দাদার বাড়ি। আর আমি নানার বাড়ি পছন্দ করি। তাই মায়ের সাথে চিটাগাং থাকছি আজ চার বছর যাবত। দাদার বাড়ি বেশ অপছন্দের জায়গা আমার। বাই দ্যা ওয়ে মিট মাই মম মিসেস হিয়া দেয়ান।”

আফরাজ মহিলাটির দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়। কিন্তু তার চোখ-মুখে অবাকতা ফুটে উঠেছে। দাহাব এর মাকে দেখতে মোটেও বয়স্ক লাগছে না। যদি না দাহাব পরিচয় করিয়ে দেয়, তিনি যে দেখতে এই দামড়া ছেলের বোন লাগে তা যে কেউ এক দেখায় বলে ফেলবে। অথচ আফরাজ এর মা তো ভীনদেশে থাকেন। তার চেহারায় তো বয়স্কের ছাপ বোঝা যায়। হয়ত দাহাব এর মা ফেসিয়াল করেন বেশি। আফরাজ এর মা তো ফেসিয়াল পছন্দ করেন না বটে। মিসেস হিয়া আফরাজ কে তার বউয়ের জন্য শান্ত্বনা দিয়ে একবার বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। আফরাজও বিনম্র আচরণে তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে বিদায় জানায়।

তখনি ডক্টরের ডাকে আফরাজ ও তার দাদী কেবিনের ভেতর প্রবেশ করে। বেডের মধ্যে নিথর শরীরে শুয়ে আছে মেয়েটি। ডক্টর চিন্তিত গলায় আফরাজ কে তাড়া দিয়ে বলে,

“আপনার বাসায় পেশেন্টের মেন্টাল কন্ডিশনের কোনো রিপোর্ট আছে কিনা জলদি খোঁজ লাগান। না হলে আমরা চিকিৎসা আগাতে পারব না।”

“কিন্তু আমার ওয়াইফ এর হয়েছেটা কি? সে কেনো নিজের ক্ষতি করল?”

ডক্টর শুধু বললেন,

“আপনি আগে রিপোর্টটি আনুন। প্রশ্নের সব উত্তর তখনিই দেব।”

কথা শেষ করে তিনি কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আফরাজ ও বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। দ্রুত বাসার রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। তার আর তার বউয়ের রুমের মধ্যে এসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো রিপোর্ট পায়নি আফরাজ। এই নিয়ে হতাশ হয়ে সে গাড়িতে এসে বসে যায়। ফ্রন্ট সিটে চোখ পড়তেই চমকে যায়। তার গাড়িতেই একটি ফাইল রাখা। তৎক্ষণাৎ ফাইলটি নিয়ে দেখল। ফাইলের কভার পেইজের উপর স্পষ্ট লিখা ‘মেন্টাল হাসপাতাল এট ফেনী’। তার মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগে যদি নাজীবা ফেনীতে থেকে থাকে। তবে সে চট্টগ্রামে কেমনে এলো?

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-বোনাস

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#বোনাস_পর্ব

“বিবিজান আপনাকে তো ভেজা শাড়িতে সুপার মডেল লাগছে। একদম জিরো ফিগারের নায়িকা। কিন্তু মাঝে আপনার মুখে ঘোমটা মানাচ্ছে না। কিন্তু বিবিজান আপনি চিন্তে করিয়েন না। আমি স্বামী হয়েছি কি করতে? আমিই সরিয়ে দিচ্ছি।”

স্বাভাবিকভাবে কথাটি বলে আফরাজ নাজীবার ঘোমটায় হাত দেয়। চমকে গেল সে। বাথটাবের সামনে আফরাজ দাঁড়িয়ে আছে। সে চাইলেও তাকে পেরিয়ে পালাতে পারবে না। কিন্তু নাজীবা মোটেও চাইছে না তার চেহারা আফরাজ কে দেখাতে। বিধায় সে ইচ্ছেকৃত নিজের ঘোমটা কে হেঁচকা টান দেয়। যার কারণে ফ্লোরের সাবানের পানিতে আফরাজ এর পা লেগে যায়। পা পিছলে একেবারে নাজীবার বাহু ধরে বাথটাবের ভেতর উপ্রে পড়ে। সে ভাবতেও পারেনি আফরাজ তার শরীরের উপর পড়ে যাবে। আফরাজ একহাতে মুখের পানি মুছে নাজীবার উপর পড়ে থাকা অবস্থায় বলে,

“কি বিবিজান অবাক হলে ফেলতে আমাকে চাইছিলে অথচ ডুব খেলাম দু’জনে একসাথে। জোস না? চলো বিবিজান একটু রোমান্স করা যাক।”

কথাটুকু বলে আকস্মিক নাজীবার দু’বাহু ধরে বাথটাবের পানিতে মুখ ডুবিয়ে চুবাতে লাগল আফরাজ। নাজীবার অবস্থা কাহিল হয়ে গেল। নাক-মুখে পানি ঢুকায় কাশতে লাগে সে। কোনো কথা ছাড়া আফরাজ নিজেই নাজীবাকে কোলে উঠিয়ে নেয়। সেদিন আফরাজ এর মত আজ নাজীবাও ঠকঠক করে শীতে কাঁপছে। তাকে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে আফরাজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলমারি খুলে গরম পোশাক এনে নাজীবার পাশে রেখে দেয়। সেও রাগে কোনোরূপ কথা ছাড়াই আফরাজ কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“টক্কর তো এমন মানুষের সাথেই দেওয়া উচিৎ। যার টক্কর দেওয়ার যোগ্যতা প্রখর। আই লাইক ইউর কম্পিটিশন উইথ মি মিসেস বিবিজান।”

নাজীবা তোয়ালে শরীর ভালোমত মুছে রাগে গজগজ করে চিল্লিয়ে বলে,

“মিস্টার করলা সাদা কাউয়ার বফ আমাকে পানিতে চু’বা’নোর শোধ আমি নেবোই।”

“তার জন্যে বিবিজান আপনাকে দরজা খুলে আমার সামনে মুখোমুখি হতে হবে। পারবেন তো হতে?”

“হ্যা হ্যা একশবার পারব।”

কথাটি বলতেই নাজীবা চমকে গেল সে ভুলে নিজেরই সর্বনাশ করে দিল। আফরাজ ওয়াশরুমের বাহিরে থেকে তালি বাজিয়ে বলে,

“বাহ্ এই না হলো মিসেস বিবিজান এর মত কথা। তো বিবিজান আপনার বরমশাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”

মৃদু হেসে আফরাজ আলমারি খুলে নিজের উইন্টার সুট পরে নেয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকাতে লাগল। অন্যথায় নাজীবার কাছে ঘোমটা দেওয়ার মত কিছু নেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)পরণের শাড়িটাও খচ্চর ব্যাটা ভিজিয়ে দিয়েছে। এখন সে নিজেকে মেলে ধরলে আফরাজ কে গুণের জালে ফাঁসানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই সে দু’তিন মিনিট ভাবতে লাগল। কেমনে আফরাজ এর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালানো যায়। পরক্ষণে তার মাথায় অসাধারণ বুদ্ধি চাপে। সে গলা ঝেড়ে ওয়াশরুমের দরজা হালকা ফাঁকা করে করুণ গলায় বলে,

“কষ্ট করে কুসুমা ভাবীকে ডাক দিন।”

আফরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

“কেনো?”

“আমার একটু সমস্যা হয়েছে। আজেন্ট ভাবীকে লাগবে।”

“ওহ বুঝতে পেরেছি। তুমি অপেক্ষা করো। ডাকতে যাচ্ছি আমি।”

কথাটি বলে তৎক্ষণাৎ আকবর এর রুমের দিকে পা বাড়ায় সে। তাকে বের হতে দেখেই নাজীবা তার ভেজা কাপড়গুলো নিয়ে দৌড়ে তার রুমে গিয়ে দরজা- জানালা ভালোমত লাগিয়ে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। আফরাজ রুমে এসে রাগে পায়চারী করছে। সে বুঝে উঠতে পারছে না কেমনে ঐটুকুন মেয়েটা তাকে বোকা বানালো। এই মেয়েটার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। ভেবেই স্থির হয়ে সোফায় বসে পড়ল। গা হেলিয়ে মাথার পেছনে হাত গুজে আনমনে বলে,

“আমি কেনো তার চিন্তা করছি? এই তিনদিন সামনে আসেনি বলেই কি আমি বেশি মিস করছি? না না, মেয়ে বেশি নিজের ভাব জমিয়েছিল। একদম উপ্রে ফেললাম। আমাকে সেদিন ধাক্কা দিয়ে সমুদ্রে ফেলল। তাও মেয়েটার আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করা উচিৎ। শুধু ভিজিয়ে দিয়েছি। অন্য স্বামী হলে আরো কিছু করতো। কপাল করে আমার মত স্বামী পেয়েছে হাহ্। ধুরো তাতে কি আজও তো আমাকে বোকা বানিয়ে পালিয়েছে মেয়েটা । পাগল মেয়ে একটা।”

আফরাজ নিজের মত বিরবির করে ভাবনার রফাদফা করে দিচ্ছে। অথচ সে যে একটু একটু করে মেয়েটার প্রতি আগ্রহে জড়িয়ে যাচ্ছে তা সে বুঝতেই চাইছে না।

তিনঘণ্টা পরে…..
নাজীবা ঘুম থেকে উঠে দেখল দুপুর ১টা বেজে গিয়েছে। সে চট করে উঠে বসে। মাথায় হাত রেখে আজ ভোর সকালে আফরাজ এর করা কান্ডের কথা ভেবে হেসে দেয়। কেননা ভোরের সূর্য উদয় এর সময়টিতে নাজীবা ভোরের সকাল উপভোগ করছিল। তবে এতে সে প্রশান্তি পেলেও মন খারাপটা তার যায়নি। কারণ আজ তিন দিন ধরে সে আফরাজ এর সামনে যায় না। তার বাবা-মায়ের ব্যাপারে সে-রাতের কথাগুলো সে ভুলতে পারেনি। তাই সে ইচ্ছেকৃত এড়িয়ে চলতে থাকে আফরাজ কে। এতে সে মাঝেমধ্যে খেয়ালও করেছে যে, আফরাজ তার এড়িয়ে চলাটা-কে পাত্তা দেয় না।
বিধেয় তার অভিমান তীব্র হয়ে উঠে। আজ মন ফুরফুরে করতে সে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য সুস্বাদু কফি বানায়। কফির রং ঘন ও ফেনা হওয়ায় বেশ খুশিও হলো বটে। যেই না কফির মগে চুমুক দেওয়ার জন্য ঘোমটা সরাবে তখনই আফরাজ এসে ছুঁ মে’রে কফির মগ ছিনিয়ে নেয়। হকচকিয়ে ঘোমটা টান টান করে ফেলে নিজের। আফরাজ গরম কফির মগে চুমুক দিয়ে নাজীবার দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,

“হুম কফিটা দারুন হয়েছে। আই লাইক ইট। নেক্সট টাইম থেকে আপনি আমার জন্যে কফি বানিয়ে আনবেন বিবিজান। বুঝছেন?”

সরাসরি আদেশ পাওয়ায় নাজীবা তেঁতে উঠল। মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“আপনি না বলেছিলেন নিজের চরকায় তেল দিতে। তো আমি কোন খুশির ঠেলায় আপনার চরকায় তেল মাখতে যাবো হে?”

বিবিজান এর কথা শুনে আফরাজ প্রতিত্তর না করেই অবশিষ্ট কফি খেয়ে মগটা ধুয়ে রেখে দেয়। স্বামীর নিশ্চুপতায় নাজীবা-র অভিমান বাড়লেও পাত্তা দেয় না। সে রান্নাঘর থেকে বেরোনোর আগেই আফরাজ অনাকাঙ্ক্ষিত এক কান্ড করে ফেলল। নাজীবা-কে চেপে ধরে কোলে উঠিয়ে নেয়। চমকে গেল সে। হাত-পা ছড়াছড়ি করতে চাইলে আফরাজ চোখ রাঙিয়ে তাকায়। ঢোক গিলে চুপ হয়ে যায় সে। অতএব ভাবনার ইতি টেনে হেসে দেয় নাজীবা।
আনমনে নিজেকে বলে,

“আপনি ধীরে ধীরে আমায় মিস করা শুরু করেছেন জনাব। আপনি নিজেও জানেন না! আপনি যে আমার পাগলামিপনায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন।”

দরজায় টোকা পড়ার শব্দে সে চোখ ফিরিয়ে বলে,”জ্বী ভাবী বলুন?”

“নাজীবা তুমি আসবে না খেতে? সেই যে সকালে ঘুম গেলে পেটে কোনো খাবার গিয়েছে? ফ্রেশ হয়ে জলদি আসো খেতে।”

“আচ্ছা ভাবী আপনি যান আমি আসছি।”

কথাটুকু বলে চট জলদি ফ্রেশ হতে চলে যায় সে। দশ-এগারো মিনিট পর বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে নেয়। হঠাৎ সে তার হাতের কবজিতে লালাচে দাগ দেখে চমকে যায়। তার মনে পড়ে যায় তিন দিন আগের কথা।

তিনদিন আগে..
নাজীবার হাতের কবজি ছিঁড়ে র’ক্ত গড়িয়ে ফ্লোরে পড়ছে। তার অজ্ঞানরত অবস্থায় বার’কয়েক খাদিজা বেগম এসে দরজায় টোকা দিয়ে ছিল। তিনি চিন্তিত , মেয়েটিকে সেই সকাল থেকে নিচে না দেখে শান্ত মনে চিন্তা এসে ভর করল। কোনো ভাবে তার নাতির সেবা করতে করতে সে নিজেই কোনো অসুস্থ হয়ে পড়ল না তো? এই ভেবে তিনি পুনরায় দরজায় টোকা দেন। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তৎক্ষণাৎ আফরাজ কে কল লাগায়।
আফরাজ অফিসের কন্ট্রোল রুমে ফাইল’স জমা দিয়ে সেগুলোর ফাইনাল ডেলিভারি ডেইট নিয়ে ডিসকাস করছিল। তন্মধ্যে দাদীর কল দেখেছে সে। তবে রেসপন্স করার মত সুযোগ পায় নাহ্। প্রায় একঘণ্টা পর সে ফ্রি হয়ে তার কেবিনে এসে নিজ চেয়ারে বসে পড়ে। দাদীকে কল করার কথা তার আর মনেই রইল না। ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে, নোটিফিকেশন এ দাদীর বিশ’বার কল। বাসায় কারো কিছু হলো না তো? এই ভেবে সে দ্রুত তার দাদীকে কল লাগায়।
কিন্তু এখন আর দাদীকে কলে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থির মনটা যেনো হুট করেই অস্থির হয়ে গেল আফরাজ এর। দাদীকে কলে না পেয়ে তৎক্ষণাৎ বাসার ল্যান্ডফোনে কল লাগায়। তখন উদাসীন মনে কলটা রিসিভ করে কুসুমা ভাবী। তিনি একরাশ মন খারাপী নিয়ে ‘হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম কে বলছেন?’ বলল।
আফরাজ সালামের জবাব দিয়ে বলে,

“ভাবী বাসায় সবাই ঠিক আছে তো? দাদীর এত কল দেখলাম। আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে , রেসপন্স করতে পারিনি। দাদী কি কোনো ভাবে অসুস্থ হয়ে…?”

তার কথায় অপরিপূর্ণতা টেনে কুসুমা ভাবী মন খারাপের সুরে বলে,

“ভাইয়া আপনি হয়ত জানতেন না? নাজীবা ভাবীর পাগলামী যেনো কন্ট্রোলে থাকে। তার জন্য সে প্রতি রাতে ডিনারের পরপর মেডিসিন খেতো। গতরাতে হয়তো মেডিসিন খায়নি। তাই আজ সকাল থেকেই নিজের রুম থেকে বের হয়নি। এর জন্যে দাদী বারবার ভাবী রুমে গিয়ে দরজা ধাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু ভাবী দরজা খুলছে না দেখে আমরা ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। তাড়াতাড়ি গার্ড ডেকে দরজা ভাঙ্গতেই…”

কথাটুকু বলে কুসুমা ভাবী আর কথা বলতে পারছে না‌। সে শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। সে বাকি কথা বলার পূর্বেই কল কাট হয়ে যায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আফরাজ এর হাত-পা জমে গেল মুহুর্তেই। কি শুনলো সে এসব? তার দায়িত্ব থেকে সে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিল। যার দরুণ একটা মেয়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়ল। আফরাজ তৎক্ষণাৎ তার গার্ড কে কল লাগায়। বাকি তথ্য তার থেকে জেনে দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
কুসুমা ভাবীর মুখ থেকে কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায় নাজীবা। তার স্বামী তার অসুস্থতায় ছুটে আসবে এটাই তো সে চেয়ে ছিল। সেই দিন সবাই ভেবে ছিল তার পাগলামীপনার কারণে সে নিজেকে আহত করেছে। আসল সত্য যে কারো জানা নেই।
কোনোমতে নিজের হাতে তুলো লাগিয়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে নেয়। তারপর, লম্বা হাতার থ্রিপিচ পরে প্রথমে যোহরের নামাজ আদায় করে নেয়। আজ থ্রিপিচের ওড়না মাথায় দিয়ে ঘোমটা স্বরুপ পরল। কেননা তার হাতের লালাচে দাগ যদি কারো চক্ষুগোচর হয়। তবে কারো প্রশ্ন থেকে রেহাই পাবে না। বিধায় বুদ্ধিটা কাজে লাগায়।

আজ শুক্রবার হওয়ায় লান্স টাইমে,
খাবার টেবিলে সকলে খেতে বসেছে। নাজীবা আড়চোখে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত আফরাজ কে দেখল, তার হার্টবিট যেন মুহূর্তেই বেড়ে গেল। সকালে তো তাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। বোকা বানানোর জন্য কি আবার প্রতিশোধ নেবে? সেই ভয়ে মনে মনে চুপসে যাচ্ছে নাজীবা। আফরাজ তার বউকে আসতে দেখে বাঁকা হাসল। তার এই হাসি দেখে এক ঢোক গিলে নাজীবা।
সে সন্তপর্ণে তার দাদী শ্বাশুড়ির পাশে বসতে নিলে গম্ভীর কণ্ঠ শুনে থেমে যায়। আফরাজ তার প্লেটে বিরিয়ানি বেড়ে মুরগির রোস্ট নিচ্ছিল। সেই সময় গম্ভীর গলায় বলে,

“বিবিজান আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন। বিয়ের পর বউরা তাদের নিজ হাতে স্বামীকে খাবার খাওয়ে দেয়। তাই বিবিজান কষ্ট করে আপনি ওই চেয়ার ঠিকভাবে রেখে আপনার স্বামীর পাশের চেয়ারে এসে বসুন।”

তার মুখে স্পষ্ট শয়তানি হাসি দেখতে পাচ্ছে নাজীবা। দাঁতে দাঁত চেপে ‘হেহেহে’ হেসে কুসুমা ভাবীর পাশ কেটে আফরাজ এর পাশে গিয়ে বসে। তাদের দেখে বাকিরা মিটমিটিয়ে হেসে খাবার খাওয়ায় মনযোগ দিল। অন্যথায়, আফরাজ সকলের চক্ষু আড়ালে তার বাম হাত নাজীবার কামিজ ভেদ করে কোমড়ে রেখে হালকা চাপ দেয়। কেঁপে উঠে নাজীবা।

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৫

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৫

“এই পঁচা মেয়ে দূরে সরো। ছিঃ ছিঃ তোমার তো চিকন পেট দেখা যাচ্ছে। আমি কিন্তু পাগল হয়ে গেলে তোমার পেটে দাঁত দিয়ে কামড়ে দেব। তখন আমাকে পঁচা বললে আমি রাগ করে বসে থাকব।”

আফরাজ এর কথা শুনে লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে গেল নাজীবা। স্বামীর পাশেই তার দাদী শ্বাশুড়ি বসা। তিনি নাতি ও নাতবউয়ের মধ্যকার কথা শুনতে হবে ভেবে চটজলদি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। আকবর তো রুম থেকে বেরিয়েছে দু’তিনেক সময় পার হবে। কুসুমা ভাবী কাজের কথা বলে চলে গেলো। খাদিজা বেগম নাতবউয়ের কাছে গিয়ে বলেন,

“নাতবু স্বামীর খেয়াল রেখো। দাদুভাই ছোট থেকেই জ্বর আসলে হুঁশ জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। তখন কি করে তার মনেই থাকে না। জ্বরের ঘোরে বেশি পাগলামী করলে আমাকে না হয় তোমার আকবর ভাইকে ডাক দিও।”

নাজীবা দাদীর কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয়। দাদী চলে যেতেই নাজীবা দরজাটা লাগিয়ে আফরাজ এর পাশে ঘোমটা ফেলে বসল। আফরাজ এর মাথায় জলপট্টি দেওয়া। সে তার পাশে সুন্দরী এক মেয়েকে বসতে দেখে থমকে যায়। গলায় কাঁপন লাগে তার। স্বামীর শরীরের কাঁপন দেখে অবুঝ নাজীবা তার হাত স্বামীর বুকের উপর চেপে ধরে। এমতাবস্থায় আফরাজ সেই হাত খামচে ধরে। ব্যথায় চোখে জল চলে আসে নাজীবার। তবুও হাত সরাতে মন চাইল না তার। আফরাজ মোহাবিষ্ট গলায় বলে,

“তুমি কি পরী হুম? না তুমি পরী না তুমি তো টকটকে লাল পরী। আচ্ছা তোমাকে যদি চিমটি দেয় তুমি কি পালিয়ে যাবে?”

আফরাজ এর বাচ্চা বাচ্চা কথায় নাজীবার হাসি পাচ্ছে। সে জানতো জ্বরের ঘোরে মানুষ আবুল তাবুল বকে। তাই নিজের হাসিকে মোটেও আফরাজ এর সামনে প্রকাশ করছে না। আফরাজ কি ভেবে যেন নাজীবার হাত সরিয়ে দেয়। এ দেখে নাজীবা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আফরাজ মুখ ফুলিয়ে বলে,

“এই মেয়ে তাবাসসুম কই হুম? ও তো আমার জ্বরের কথা শুনলে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতো। জানো ও আমাকে এতো এতো ভালোবাসতো। ওর কান্না দেখে আমিও তাকে ভালো…।”

‘ঠাসস’ করে স্বামীর গালে চ’ড় লাগায় নাজীবা। পুরো কথা সম্পূর্ণ হতে দিল না তার। বউয়ের সামনে পরনারীকে ভালোবাসার কথা বলছে কত বড় সাহস তার। চ’ড়ের কড়াঘাতে হুঁশ ফিরল আফরাজ এর। জ্বরের ঘোরে মাতলামি করা তার ছোটবেলার স্বভাব। মুখটা কান্নার মত করে নাজীবার থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে যায় আফরাজ। নাজীবা হা করে দেখে রইল। স্বামীর অভিমানী চেহারা বুঝি এমনই দেখায়। একদম নয়-দশ বছরের বাচ্চার মত লাগছে তার স্বামীকে। আকস্মিক হাঁচির শব্দে নাজীবা চোখ ফিরিয়ে দেখে আফরাজ নাকে টিস্যু চেপে হাঁচি দিচ্ছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে স্বামীর নাক-মুখ মুছিয়ে দিয়ে শার্ট খুলতে নিলে নাজীবার হাত টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। স্বামীর বুকে ঠাঁই পেয়ে প্রশান্তি অনুভব করছে সে। আফরাজ লাজুক গলায় বলে,

“ছিঃ ছিঃ বিবিজান বুঝি আমার ইজ্জত হরণ করতে চাও?”

আফরাজ এর স্বাভাবিক কথায় চমকে গেল সে । মাথা উঠাতেই খেয়াল করল আফরাজ ঘুমিয়ে আছে। তবে ঘুমের ঘোরেই বোধহয় বেখেয়ালি কথাটি বলেছেন ভেবে চুপটি করে কম্বল টেনে নেয় দুজনের শরীরে । চোখ বুজতেই দু’ মানব-মানবীর শরীরের উষ্ণতায় আফরাজ শক্ত করে নাজীবার ছোট দেহটিকে আগলে নেয়। সে তার মনের অজান্তেই জড়িয়ে যাচ্ছে বিয়ে নামক বন্ধনে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ফজরের আযানে নাজীবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ধরফড়িয়ে উঠে আফরাজ এর শরীরের তাপমাত্রা চেক করে। শরীর স্বাভাবিক আর ঘাম দিচ্ছে দেখে তার বুকের উপর থেকে ভারী বোঝা নেমে যায়। ঘুমন্ত স্বামীকে ঠিকভাবে শুয়ে দিয়ে নাজীবা উঠে পড়ে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। ঘুমের ঘোরে আফরাজ এর পানির পিপাসা লেগে যায়। আড়মোড়া হয়ে উঠতে নিলেই তার মাথায় চাপ পড়ে। পরক্ষণে আশপাশ খেয়াল করে দেখে, সে তার রুমের বিছানায় শুয়ে আছে। বেডসাইড টেবিলে জলপট্টি দেখে বুঝতে পারল, সমুদ্রে পড়ার কারণে জ্বর এসেছে তার। কিন্তু জলপট্টি কে দিচ্ছে জানার জন্য সে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পেল। সুন্দর সুশ্রী নামাজরত এক মানবীকে। যে কিনা মনযোগের সহিত নামাজে মোনাজাত করছে। তার সুশ্রী মুখের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেল সে। এই কোন পরী তার ঘরের মধ্যে নামাজ পড়ছে। ভুল করেও কেউ তার রুমে ঢুকতে পারে না। তাহলে এই পরীটি বুঝি সাত আসমান থেকে এসে তার জন্যে দয়া করছে? মনের নানান প্রশ্নের মাঝে তার চোখ অন্যদিকে সরে যায়। সে খেয়ালই করেনি তার চক্ষু আড়ালে নাজীবা ঘোমটা টেনে পূর্বের মত রুপ নিয়ে স্বামীর বিছানার কিনারায় গিয়ে দাঁড়ায়। গলা ঝেড়ে স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। কাশির শব্দে আফরাজ ধ্যান ফেরে দেখে তার চার পাশে নাজীবা মেয়েটি ছাড়া অন্য কেউ নেই। তাহলে কি তার মনের ভ্রম ছিল? ব্যাপারটা ঘেঁটে দেখতে সে নাজীবা কে জিজ্ঞেস করে।

“এখান থেকে পরীটা কোথায় গেল? এখানেই নামাজ পড়ছিল সামনে! হঠাৎ কই গেল তুমি কাউকে দেখছিলে?”

তার ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করছে তা বুঝতে পারল নাজীবা। সে বিয়ের পর বাসর রাত থেকে শুরু করে এখন অব্দি তার মুখমন্ডল আফরাজ এর সামনে প্রকাশ্যে আনেনি। সে চাই তার স্বামীকে রুপের নয়,গুণের জালে ফাঁসাতে। রুপের জ্বালে অনেক মেয়েই ফাঁসাতে পারে। সে না হয় ইউনিক ভাবে চেষ্টা করল তার গুণ দিয়ে স্বামীকে প্রেমে ফেলার। কথাটি ভেবেই ঘোমটার আড়ালে মুচকি হাসল। তবুও মুখে কাঠিন্য বোধ এনে বলে,

“এই যে পন্ডিতমশাই ভোর সকালে কি গাঞ্জা খেয়েছেন? দেখে তো মনে হয় না ভদ্র ঘরের ছেলে। ছাইপাশ গিলে রাতবিরাতে বমি করে ভাসানোর স্বভাবও দেখি আছে। তো এইভাবে কত মেয়ের বুকের জ্বালা মিটিয়েছেন একটু জানতে পারি?”

ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল আফরাজ এর মাথায়। মনে পড়ে গেল বিকালের ঘটনা। তাকে ব্রিজ থেকে সমুদ্রের কিনারায় ফেলেছিল তার বউ। এর প্রতিশোধ সে নিবেই। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“দেখো মাথা ব্যথা করছে আমার। তোমার সাথে আলগা পিরিতি মেরে ভোর সকালে মুড নষ্ট করার কোনোরুপ ইচ্ছেই নেই। তোমার কাজ শেষ হলে যাও বের হও রুম থেকে।”

“বাহ বাহ রাতে কাছে পেয়ে চুমাচুমি করে এখন বের করা হচ্ছে তাই না? দাঁড়ান এখনই আপনার বের হও বলা বের করছি আমি।”

বলেই নাজীবা অসুস্থ আফরাজ এর কোলের উপর চড়ে বসল। হতভম্ব হয়ে গেল সে। চোখ ছোট ছোট করে নাজীবা কে ঠেলে ফেলতে নেওয়ার পূর্বেই তার গলায় সচল হাতে চিমটি দেয় জোরে। ‘আহহহ’ করে চিৎকার করে উঠে আফরাজ। কোল থেকে ফেলে দেয় নাজীবা কে। ভাগ্য সহায় ছিল বলে সে পড়ল শক্ত বালিশের উপর। চমকে তাকিয়ে দেখে আফরাজ এর সঙ্গে হাতাহাতির কারণে বিছানার দু’টো বালিশ ফ্লোরের উপর পরে গিয়ে ছিল। নিজের ব্যাকসাইড ধরে খুশির ঠেলায় বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ জ’ল্লা’দ করলার ধাক্কায় পাছা ভাঙ্গেনি। না হলে ইহকালে আর বিছানার থেকে উঠতে হতো না আমার।”

পরক্ষণে রাগান্বিত চোখে আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই করলা ঐ করলা সাদা কাউয়ার শোকাহত বয়ফ্রেন্ড। গার্লফ্রেন্ড পান নাই বলে কি আমার কিডনি নেওয়ার জন্য পাছা ভে’ঙ্গে দেবেন? আপনাকে কিন্তু বলে রাখতেছি আমি যদি পাগল হয় আপনাকেও পাগল বানিয়ে দেব।”

আফরাজ শেষের কথাটি শুনে বিরবির করে বলে,

“তুমি পাগল তো আগেই ছিলে। এখন মনে হচ্ছে আমার নিজের জন্য পাগলাগরাদে সিট বুকিং দিতে হবে।”

“ঐ করলার বাচ্চা ফিসফিস না করে ঘুমান না‌। ঐ আধমরা শরীর নিয়ে তো কর্মের কিছু করতেই পারবেন না। তার চেয়ে ভালো ঘুমান না! জেগে থেকে কি আন্ডা পারবেন?”

“এই মেয়ে তোমাকে না বলেছি চপাট চপাট মুখ না চালাতে। একদম মুখ ভে’ঙ্গে দেব। বে’য়া’দপ মেয়ে। স্বামীর সাথে কেমনে কথা বলতে হয় সেই ম্যানারটুকু ও জানো না। বাবা-মা-র থেকে দেখছি কোনো শিক্ষাই পাও না। যতসব ম্যানারলেস গাইয়া আমার কপালের উড়ে এসে জুড়ে বসে । আল্লাহ ভালো জানেন কি শিখেছো ছোট থেকে?”

কথাটুকু বলে আফরাজ বিছানার থেকে নেমে ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। নাজীবা স্তদ্ধ চোখে ওয়াশরুমের দিকে তাকায়। তার পুরোনো ক্ষতকে জাগিয়ে তোলার জন্য এই কথাগুলো যথেষ্ট ছিল। বিনা বাক্যে সে তার স্বামীর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। বিছানার নিচ থেকে তার সুটকেস বের করে। যেখানে তার পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর সাক্ষী স্বরুপ এক অ্যালবাম রাখা। ছোট ছোট শার্ট ও রাখা আছে। নিরবে অ্যালবামটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল সে। চার পাশের দেওয়াল ব্যতীত বাহিরের কারো সেই কান্নার শব্দ শুনার উপায় নেই। অ্যালবাম খুলতেই নাজীবা তার মায়ের হাস্যজ্জ্বল ছবি দেখতে পায়। বাবার সাথে তার মা দাঁড়িয়ে আছে। হাতের দু’পাশে ছোট দুটি বাচ্চা একজন বাবাকে আরেক জন তার মা-কে জড়িয়ে রেখেছে। সে তাদের দিকে চেয়ে বলে,

“তোমরা নেই তো কি হয়েছে? আমি আমার মত তাকে খুঁজে শাস্তি দেবোই। তোমরা কোনো চিন্তে করো না। আমি তোমাদের সঙ্গে হওয়া কর্মের শোধ তুলবোই।”

কথাটুকু বলে অ্যালবামটি বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। সারারাত স্বামী সেবার পর হালকা প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়ে ছিল তার বুকে। কিন্তু স্বামীর মুখে তীক্ষ্ণ কথা শুনে মেয়েটির মন খারাপ হয়ে যায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)অভিমানী মন নিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেশ হালকা লাগছে আফরাজ এর শরীর। গিজার অন করা দেখে একেবারে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল সেরেছে। মন মেজাজ ঠান্ডা হওয়ায় সে পরণের কাপড় ঠিকঠাক করে রুমের মধ্যে চোখ বুলিয়ে নেয়। মেয়েটিকে রুমের মধ্যে না পেয়ে পাত্তা দিল না। মাথার চুলগুলো ঝেড়ে ফাইল নিয়ে বসল। যেগুলো তার গতদিন চেক করে শেষ করার কথা ছিল।

____

“স্যার উঠুন। আপনার শরীর থেকে ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্যার?”

বলেই র’ক্তে’র উপর শুয়ে থাকা লোকটির ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় নার্সটি। লোকটি আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোরের উপর চোখ বুলিয়ে দেখল লা’শটির ছিটেফোঁটা ও নেই। বাঁকা হেসে নার্সটির দিকে তাকায়। নার্সটির স্বাভাবিক আচরণ দেখেই বুঝতে পারল মেয়েটি রুমের মধ্যে কোনো লা’শ দেখতে পায়নি। তথাপি রুম যেমন ছিল তেমন থাকায় ভয়হীন কণ্ঠে তার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে। লোকটি সোজা গোসল করতে চলে গেল। কেননা তার র’ক্ত’মাখা হাত কেউ দেখতে পেলে কেলেংকারি হতে পারে। সে জানে তার পরণের শার্টটি মহিলাটি ছাড়া আর কেউ পরায়নি। তাই সে গোসল সেরেই মেডিসিন সমেত ইনজেকশন নেবে। নার্সটি অবাক চোখে লোকটির স্বাভাবিক আচরণ দেখে তৎক্ষণাৎ তার ম্যামের কাছে ছুটে যায়। মহিলাটি তখন তসবিহ হাতে নিয়ে ধ্যান করছিল। মহিলাটির হাবভাব ও কেন জানি খুব ভয়ংকর মনে হয় নার্সের কাছে। কেননা মহিলাটি লাল রং এর শাড়ি পরেই ধ্যান মগ্ন হয়। এখনো সেই রুপে তসবিহ গুনছে। নার্স কিছু বলবে তার আগেই সে তার পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাস এর আভাস পায়। ভয়ে বুক ধরফড়িয়ে উঠে তার। সে কাঁপা নজরে পেছনে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। কিন্তু যেই সামনে তাকালো বিকৃত ভয়ানক র’ক্তা’ক্ত মুখশ্রী দেখে চোখ বুজে চিৎকার দিয়ে উঠে। আকস্মিক কারো স্পর্শে সামনে তাকিয়ে দেখল মহিলাটি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নার্স তার দেখা দৃশ্যপট শুনিয়ে দেয়। মহিলাটি হেসে বলেন,

“মা-রে বুঝছি তোর উপর কাজের চাপ বেশি। চোখে ভুলভাল দেখে তোর মনে ভ্রম জাগছে। এক কাজ কর আজকের মেডিসিন ইনজেকশন দেওয়ার পর বাসায় চলে যাইস। তোকে সাতদিন ছুটি দিলাম। আর এই নেহ্ খাম। এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে। হাফ তোর বেতন বাকি হাফ তোর জন্য টিপ’স।”

নার্সটি নিজেকে সামলে মাথা নেড়ে লোকটির রুমের দিকে চলে যায়। মহিলার হাসিমুখ উধাও হয়ে যায়। সেই চেহারায় ভর করে একরাশ চিন্তা। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করেন।

“মেয়েটি কি কিছু বুঝতে পেরেছে? যদি বুঝে থাকে তাহলে এর পরিণতিও সেই রাতের লা’শটার মত হবে।”

ভেবেই বাঁকা হাসলেন তিনি। লোকটি গোসল সেরে উদাম শরীরে ট্রাউজার পরে রকিং চেয়ারে বসে দুল খাচ্ছে। হাতে তার হারানো মেয়েটির ছবি। নার্স এসে কাঁপা হাতে আগের দিনের মত মেডিসিন ইনজেকশন দিয়ে বেরিয়ে যায়। লোকটি তার রুমের টিভি চালু করে। দেখতে পেল ডা.সিফাত হাসানের আকস্মিক মৃত্যুর খবর টেলিকাস্ট করা হয়েছে। এই দেখে সে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগে। মহিলা নিজের রুম পর্যন্ত হাসির শব্দ শুনতে পেলেন। চিন্তাভাবনা দূরে ঠেলে তিনিও টিভি চালু করেন। হারানো মেয়েটির চিকিৎসাধীন ডা.সিফাত হাসান এর মৃত্যুর কারণ কি হতে পারে এ নিয়ে খবরের ছড়াছড়ি চলছে। তিনি দেখে মৃদু হেসে টিভি অফ করে পুনরায় ধ্যান করতে লাগল।

____

আফরাজ নাস্তার টেবিলে সবাইকে দেখতে পেলেও তার নামেমাত্র বউকে সামনে না দেখে ভ্রু কুঁচকায়। কুসুমা ভাবী আফরাজ এর প্লেটে জেল লাগানো ব্রেড রেখে প্লেটের পাশে স্যালাদ আর কর্ন স্যুপের বাটি এগিয়ে দেয়। ভাবীর কাছ থেকে নাস্তা পেয়ে সে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। কারণ আগের দিন তার নাস্তা নাজীবা দিয়ে ছিল। আজ খাওয়ার টেবিলে মেয়েটি নেই দেখে তার অস্বস্তি লাগছে সবার সঙ্গে খেতে। আকবর বন্ধুর হাবভঙ্গি দেখে শয়তানি হেসে বলে,

“বন্ধু বুঝি তার ফ্রাইড রাইসকে খুব মিস করছে। এত সুস্বাদু নাস্তা রেখে চোরের মত কিচেনের দিকে নজর দিচ্ছো দেখি। বাট মাই ওয়াইফ অলসো কুক বেটার ওকে। দিস অলসো ডেলিসিয়াস ইয়াম্মম।”

স্যুপের বাটি থেকে এক চুমুক খেয়েই শেষ কথাটি বলে আকবর। আফরাজ নড়েচড়ে বসল। খাদিজা বেগম স্যুপ শেষ করে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে থেকে নিজের নাতিকে লক্ষ করছে। তিনি মনেপ্রাণে সন্তুষ্ট বোধ করছেন। গতরাতের পর থেকে আফরাজ একটু হলেও তার নাতবউয়ের শূন্যতা অনুভব করছে। তিনি আকবর এর দিকে মিথ্যে রাগের নজরে চেয়ে বলেন,

“আকবর ব্যাটা এটা কিন্তু ঠিক না। দাদুভাই এর সাথে মজা করলে পেছন থেকে বাঁশ দেবে।”

কুসুমা ভাবী হেসে ফেলল। আফরাজ এর অবস্থা সত্যি নাজেহাল এখন। এরা যে মেয়েটির সাথে তার নাম টেনে টিজ করছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে। তাই বুদ্ধিমানের মত নিশ্চুপে নাস্তা খেতে লাগল। এমনে তার মনে প্রশ্ন জাগে।

“বিয়ের পর থেকেই দেখছি মেয়েটা তো আমার আগপিছ ঘুরে চপাট চপাট মুখ চালাতে পছন্দ করতো। আজ কি এমন হলো যে সামনেও এলো না। যাক বাদ দেয় আমার কি? মেয়েটার পাগলামী থেকে রেহাই পেলেই শান্তি।”

নিজের মনগড়া ভাবনার ইতি টেনে সে নাস্তা শেষ করে ফেলল। আকবর এর কাছে গিয়ে তার কান মলা দেয়। বেচারা বউয়ের লোভনীয় কোমড়ে একটুখানি চিমটি দিতে চেয়ে ছিল। জ’ল্লা’দ বন্ধু তাও হতে দিল না। বেচারা ‘আহ আহ ছাড় ব্যাটা। কান ছিঁড়ে ফেলবি নাকি? ছাড়।’ বলে দুষ্টুমি করছে। কেননা আফরাজ কান ছেড়ে দিয়েছে তখনি যখন আকবর চোখ বন্ধ করে মৃদু চিৎকার দিয়ে ছিল। কোনোরূপ ব্যথা অনুভব না করায় চোখ খুলে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় ‘হেহেহেহ্’ হেসে গাড়ির দিকে ছুট লাগায়। আফরাজ মৃদু হেসে চোখে সানগ্লাস পরে দরজার কাছে গিয়েই থেমে যায়। পিছনে মোড়ে তার রুমের মুখোমুখি রুমটির দিকে তিন-চার মিনিট স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে তাকে। কিন্তু দরজা খুলছে না,দেখে সে ভাবনা সরিয়ে ফেলতে মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়।

জানালার বাহিরে স্বামীর গাড়ি চলে যেতে দেখেই স্বস্তি পেল নাজীবা। পরক্ষণে তার শরীরে কাঁপন শুরু হয়। সে তৎক্ষণাৎ টিভি অফ করে দেয়। নিজেকে গুটিয়ে নিতে আলমারির বাঁদিকে গিয়ে বসে পড়ে। ড্রেসিং টেবিলে পানির গ্লাস রাখা ছিল। সে কাঁপা হাতে গ্লাসটি নিয়ে মুখে নেয়। এক ঢোকে পানি খেয়ে নিজেকে সামলাতে হাতের কবজিতে কামড়ে ধরে। দুরুদুরু বুকে শান্তি পেল। কিন্তু চোখে ঝাঁপসা দেখায় অজ্ঞান হয়ে যায়।
তখনি….

চলবে……..

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৪

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৪

“দেখো আমার বিবি হয়েছো তো বিবির মতই থাকো। চপাট চপাট মুখ চালাইও না প্লিজ। মনে হয় বিবি না কোন না কোন বেবি-কে বিয়ে করছি।”

চোখ-মুখ কুঁচকে নাজীবা কে বলল আফরাজ। মেয়েটা একমুহুর্ত ও যেন শান্তি দিচ্ছে না। এই না বাসার জন্য চলে গিয়ে ছিল। ঠিকই জ্বীনের মত হাজির হয়ে গেল। নাজীবা ঘোমটার মোড়া চেপে ধরে হেলেদুলে বলে,

“ও আল্লাহ বলেন কি গো? আমি একাধারে আপনার সোনা,ময়না,বিবিজান,বেবি,বেইব । যেকোনো একটা ডাকতেই পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড। আচ্ছা শুনেন না, এসব ফাইল টাইল দেখা বাদ দিন! চলেন না আজ বিকাল বিলাস করতে যায়।”

কথাটুকু বলে নাজীবা পরণের শাড়ি নিয়ে হেলেদুলে আফরাজ এর মুখ বরাবর ঝুঁকল। আকবর কে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জাবোধ করায় মিনমিন কণ্ঠে বলে,

“আরে দেবরজী আপনার উনিও বাহিরে সেজেগুজে এসেছেন জলদি ফুটুন এখান থেকে।”

কুসুমা এসেছে শুনে খুশিতে গদগদিয়ে উঠল আকবর। ফাইল টাইল যতটুকু চেকিং করেছে সব এক জায়গায় রেখে কেবিনের বাহিরে ছুট লাগায়। বউ না যেনো হাতের চাঁদ পেয়েছে। আকবর এর যাওয়া দেখে আফরাজ বিরক্ত হলো। অন্যথায় নাজীবার বিষয়টা ভালো লাগলো। অত্যন্ত তিনি তার বউয়ের প্রতি খুব আদরীয় মানব। আর তার স্বামী কোথাকার পাবর্তীর জন্য দেবদাস হয়ে বসে আছে। সে চোখ পাকিয়ে তাকায় তার দিকে। মেয়ের হাবভঙ্গি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কি এদিক ফিরে কি দেখছো? তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমার কথায় আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করব। তবে তুমি ভুল ভাবছো। আ…।”

“আরে ব্যস আমার কানের পোকাগুলো কে মে’রে ফেলবেন দেখতেছি। আপনাকে কি আমি সাধে বলতেছি। নিজের বন্ধুকে জেলখানায় বন্দী করে রাখছেন। নিজে তো জাম খাচ্ছেন না অন্যকেও কেন জাম খাওয়া থেকে থামাচ্ছেন হে? যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা।”

“ইউউ স্টুপিট গার্ল।”

“ওও দাদী শোনছো আপনার নাতিই এক নাম্বারের নাটকবাজ। বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিয়ে ঘুরবে তা না উল্টা অফিসে বসে ফাইল খাচ্ছে থুক্কু ঘাটছে।”

আফরাজ মেয়েটির অভিযোগ দেওয়া দেখে নাজীবার হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেয়। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সে জানতো সে এখন কোনো মতেও আফরাজ কে রাজি করাতে পারবে না। তাইতো নিজের ফোনে দাদী কে কলে রেখেছিল। যাতে কথার ছলে দাদীর সাথে কথা বলিয়ে দেবে। হলোও তাই দাদীর সঙ্গে নাতির তর্ক চলছে। সে অনায়াসে দু’জনের কথা শুনছে। বেচারা তার স্বামীই বেশি বকা খাচ্ছে। অন্যথায় দাদীর সাথে কথায় না পেড়ে হ্যা বলে সায় দিল। কল কেটে মেয়েটির দিকে ফোনটি এগিয়ে দেয়। নাজীবা নড়েচড়ে ফোনটি নিয়ে আমতা আমতা করতে লাগল। আফরাজ দেখে চোখ ঘুরিয়ে বলে,

“বিবি বলে কি এখন আপনাকে যাওয়ার জন্য আলাদা মুখে বলতে হবে?
যাও এখনই। আকবর ও ভাবীকে রেডি হয়ে গাড়ির কাছে থাকতে বলো।”

নাজীবা মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল। আফরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতে গোনা কয়েক ফাইল গুছিয়ে নেয়। রাতে বাসায় বসে চেক করবে বলে ভেবে রাখল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
গাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। নাজীবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিরর গ্লাস দিয়ে কুসুমা ভাবীর হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী লক্ষ করছে। ‘মাশাআল্লাহ’ মেয়েটি তার স্বামীর কাছ থেকে আদর-সোহাগ পেয়েই এতটা খুশি তা বেশ বুঝতে পেরেছে। সেও তো তার স্বামীর নিকট থেকে এইরকম আদর-সোহাগ পাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে। তবুও কেন এত দূরত্ব। কবে মিটবে এই দূরত্ব? আদৌ মিটবে নাকি সেই দূরে চলে যাবে? অখুশি হলেও খুশি হওয়ার ভান করে তাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠে। আফরাজ গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে বসে পড়ে। তার পাশে মেয়েটিকে নিশ্চুপে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। কিন্তু ওতটা পাত্তা দিল না। গাড়ির ইঞ্চিন চালু করে সে ড্রাইভিং এ মন দেয়। আড়চোখে স্বামীর ভ্রু কুঁচকানো খেয়াল করেছে। পরক্ষণে পাত্তা দিল না, দেখে দাঁত কিড়-মিড়িয়ে সে আফরাজ এর হাত চেপে ধরল। গাড়িতে বসা তিনজন ব্যক্তি চমকে গেল। আফরাজ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,

“এই মেয়ে আক্কেল জ্ঞান কি বাজারে বিক্রি করে এসেছো? হাত ছাড়ো আমার। নাহলে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।”

“ওমাহ্ আপনি বুঝি আমার স্পর্শে পাগল হয়ে যান? যদি হতেন তখন না হয় আমি স্পর্শ করতাম না। কিন্তু আপনি সুস্থ স্বাভাবিক আছেন । তাই আমি হাত সরাচ্ছি না। যদি আমাকে হাত সরাতে ফর’স করেন। তবে বুঝে নেবো আপনি হাতুড়ে মার্কা ড্রাইভার।”

“গাড়ি চালানো কে ফাজলামি পাইছো তুমি?”

“কেন কেন গল্পে-সিনেমায় দেখেন না? হিরো তার হিরোইন এর এক হাত বুকে চেপে ধরে ড্রাইভিং করে। আমি তো তাও আপনার উপর মেহেরবানী করে শুধু হাতের উপর হাত রাখলাম। যদি হাতের মুঠোয় হাত ভরিয়ে দিতাম , দেখা যেতো গাড়ির তিন ব‌্যক্তি কে কবরে পাঠিয়ে আপনি হাসপাতালের বেডে তব্দার মত শুয়ে আছেন।”

মেয়েটির কথার উত্তরে প্রতিত্তর করল না আফরাজ। কেননা কথার মাধ্যমে কথা বাড়বে। মেয়েটির এমনেও মাথার স্ক্রু ঢিলাঢালা। কথা বাড়ালে দেখা যাবে সত্যিই কবরে পাঠিয়ে দিয়েছি। মনের কথা মনে রেখে আফরাজ এর শান্ত হয়ে গেল। তার মুখ দেখে মিটমিটিয়ে হেসে নাজীবার জানালার বাহিরে তাকায়। মনে পড়ে গেল হঠাৎ তার অফিসে ছুটে আসার কারণ। বিকাল বিলাস করা তো একটা অজুহাত মাত্র।
নাজীবা রান্নাঘরের মধ্যে টিফিন বক্স গুলো ধুয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসে। টিভি চালু করতে নিলেই তার ফোনে অনাকাঙ্ক্ষিত এক মেসেজ আসে। সেই মেসেজে লিখা ছিল,

‘যদি নিজের অতীত থেকে বাঁচতে চাও। শীঘ্রই নিজের স্বামীর অফিসে যাও আর নিজের অতীতের ফাইল লুকিয়ে নাও।’

মেসেজটা সহজ মাত্রায় এলেও আতংকে বুক ভার হয়ে গেল নাজীবার। চিন্তার রেষানলে না পড়ে , তখনিই বেরিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী পিছু ডাকলেও জানানোর সময় তার হাতে ছিল না। বিধায় সে রিকশায় চেপে বসে তার স্বামীর অফিসের ঠিকানায় যেতে লাগল। তৎপর সময়ে আফরাজ এর ধ্যান অন্যদিক ফেরানোর জন্য ভেবে নিল বিকাল বিলাস করার কথা বলবে। দেরি না করে হাতে থাকা ফোনে কুসুমা ভাবীর নাম্বারে মেসেজ করে দেয় ,’আজ আমরা বিকাল বিলাস করব
দু’কাপলই। রেডি হয়ে চলে আসুন ভাইয়ার অফিসে।’

স্বল্প কথায় যে কাজ হয়ে যাবে তা বেশ ভালোই জানতো নাজীবা। হলোও তাই আফরাজ এর হাতে নাজীবা তার অতীতের ফাইল দেখে স্বামীকে কথার ছলে ধ্যান অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফাইলটা চুরি করে নেয়। ফাইলটি কে আপাতত দৃষ্টিতে গাড়ির সিটের নিচে লুকিয়ে রেখেছে নাজীবা। বাসার সামনে এলে পুনরায় আফরাজ এর ধ্যান অন্যদিকে নিয়ে ফাইলটা নিয়ে ছুট লাগাবে।

“এই মেয়ে চপাট চপাট মুখের সাথে বেশি ভাবনায়ও পড়ও দেখছি। না জানি আর কি কি গুণ দেখাবে?”

আফরাজ এর কণ্ঠে নাজীবা তার ভাবনায় ইতি টেনে খুশ গলায় বলে,

“বিবি বলে কথা । গুণ তো নিজের সোয়ামীরেই দেখাবো।”

লজ্জার ভান নিয়ে নিজের বাহু দিয়ে আফরাজ এর বাহুতে মৃদু ধাক্কা দেয়। আকবর আর তার বউ দৃশ্যটি দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগল। আফরাজ তিন জনের দিকে ভোঁতা মার্কা মুখ করে বেরিয়ে যায়।

_____

“স্যার একটা খবর আছে?”

“কিসের খবর?”

“স্যার আপনার বলা নিউজটি ঐ সিফাত এর মৃত্যুর পর পর টেলিকাস্ট করার কথা ছিল। । কিন্তু আজ ঐ ঘটনা পার হওয়ার পুরো একদিন শেষ। তবে কি টেলিকাস্ট করব না?”

“না কালকে ভোরের নিউজ হবে এটা। কারণ কাল খুবই স্পেশাল ডে।”

কথাটি বলে রহস্যময় হাসি দেয় লোকটি। তার ছ্যালারা কি বুঝল কে জানে। তারা লিডার এর কথা শুনে অজ্ঞাত রইল। কালকের দিনটা কিই বা এমন? লোকটি ফোন রেখে জোরে জোরে হেসে বক্সিং গ্লাভস পরে এক ব্যক্তির লা’শকে ক্রমান্বয়ে আঘাত করতে থাকে। নিথর পচনশীল লা’শকে মা’রতে দেখে মহিলাটির বমি পেয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ওয়াশরুমে গিয়ে বমি সেরে কুলকুলি করে নেন। নিজেকে সামলে লোকটির রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা আস্তে করে ভিড়িয়ে দেয়। কেননা লোকটির মাথা ঠান্ডা হতে এমন এক বিবশ দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হবে। যা দেখার সাধ্য মহিলাটির নেই। তিনি সন্তপর্ণে স্থান ত্যাগ করেন। অন্যথায় লোকটি বক্সিং শেষে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।
লা’শটির অবস্থা বিকৃত হয়ে চুপছে গেছে। ক’ঙ্কাল দেখা যাচ্ছে লা’শটির।
নিশ্চুপে হাঁটু ভেঙ্গে এর সামনে বসে পড়ল সে। লা’শটির চা’রপাশ জুড়ে র’ক্তের ছড়াছড়ি। তবুও কোনো আকর্ষণ অনুভব করছে না সে। কেননা তার মস্তিষ্কজুড়ে হারানো মেয়েটির আনাগোনা। বাধ্য হয়ে লা’শটির র’ক্তের উপর শুয়ে পড়ল সে।

_____

সমুদ্রে নানান খাবারের স্টল বসানো আছে। আকবর ও কুসুমা নিজেদের কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ডের জন্য আলাদা সিটে বসেছে। নাজীবা তাদের স্পেন্ডিং মোমেন্ট দেখে চোখ ছোট ছোট করে আফরাজ এর দিকে তাকায়। শার্ট-প্যান্ট পরিহিত শ্যামপুরুষের মুখে বিকালের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। সৌন্দর্যের চেয়ে লোভনীয় লাগছে বেশি তার কাছে। বাক্যহীন সে তার ফোনে ফটাফট কিছু ছবি তুলে নেয়। আফরাজ মেয়েটির হাবভাব খেয়াল করে বলে,

“এই মেয়ে কি করছো হে? আমাকে না বলে ছবি তুলছো নাকি?”

ফোনটি লুকিয়ে নাজীবা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিল। কথা বিহীন সমুদ্রে থাকা অন্যান্য কাপলদের মত জোরপূর্বক আফরাজ এর বাহুতে নিজের হাত পেঁচিয়ে স্বামীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় নাজীবা। মেয়েটির কাজে আফরাজ বিরক্ত সূচক গলায় বলে,

“এই মেয়ে সাপের মত পেঁচাচ্ছো কেন? দূরে সরে দাঁড়াও।”

কথার প্রেক্ষিতে নিজের হাত সরাতে নিলেই আকস্মিক নাজীবা উদাসীন গলায় বলে,

“দেখেন চুপচাপ এভাবে বসে থাকুন। নাহলে জনগণের সামনে গণধোলাই খাওয়াবো।”

আফরাজ কথাটি শুনে মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“বিবি তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো? হু আই এম? ইউ নো না আইম দ্যা বিজনেসম্যান আফরাজ ফাহিম। এক ক্ষীণ মানবেরও সাহস নেই আমার সামনে টু শব্দ করার।”

“তবে আমার সাথে কেনো বাসর রাতের পর থেকে নরমাল বিহেইভ করছেন? আমাকে কি কোনো ভাবে বউ হিসেবে মেনে নিয়েছেন?”

“হাহ্ একমাত্র আমার দাদীর কথায় আমি আটকে গিয়েছি। নাহলে তোমাকে দু’সেকেন্ড ও চোখের সামনে সহ্য করতাম না।”

কথাগুলো শুনতে নাজীবার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিশোরী বয়সের মনপুরুষ যদি নিজ মুখে অসহ্যের বাণী শোনায়। তবে সে নারী জ্যান্ত থেকেও সম’মৃ’ত কষ্ট পায়। ঘোমটার আড়ালে চোখের পানি আফরাজ এর নজরে আসছে না। যদি নজরে আসতো তবে বুঝত তার কথায় কারো বক্ষ ভেদ করে নিদারুণ কষ্টের অশ্রু নির্গত হচ্ছে। চোখ মুছে নিজেকে সামলে আফরাজ এর হাতের বাহু খানেক শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে,

“জানেন আমার যে আপনি নামক মানুষটির সঙ্গে কখনো বিয়ে হবে কল্পনাও করিনি। যখন সামনে দেখলাম এক-মুহুর্ত এর জন্যে মনে হলো জীবনের সর্বসুখ হয়তো এবার পেতে চলেছি। পরক্ষণে সেই ভাবনা মুছে গেল আপনার প্রাক্তন এর কথা শুনে। আর যাই হোক কারো হৃদয়ে জোরপূর্বক স্থান পাওয়া যায় না এ কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আচ্ছা শুনেন না সব ভুলে আমাকে বউ হিসেবে আপন করে নেওয়া যায় না? আমাকে না দেখেই কি আপনার এত অনীহা আমার প্রতি? যদি কখনো দেখেও যদি হারিয়ে ফেলেন তখন কি করবেন? তখন কি আমার জন্য আপনি চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলবেন? বলুন ?”

মেয়েটির কথায় কেমন এক অসীম গভীরতা লক্ষ করছে আফরাজ। তবুও তার ইগোর কাছে মেয়েটির কথাগুলো নিছক বা’নো’য়া’ট মনে হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের হাত সরিয়ে ধাক্কা দেয় নাজীবা কে। সে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায় আফরাজ এর দিকে। মেয়েটির নিশ্চুপ রুপ দেখে সে বলে,

“জাস্ট সেটআপ গার্ল। তুমি কি ভেবেছো? আমাকে সকাল থেকে ইম্প্রেস করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি দেখাবে আর আমিও গলে যাবো? তা হচ্ছে না বিবিজান। এই ড্রামাটা বন্ধ করো। তুমি এমনি এমনি আমাকে বিয়ে করোনি তা আমার বেশ জানা আছে। বাসর রাতে আমার কপাল ফা’টিয়ে ফাস্টেই তুমি আমার ইগো হার্ট করেছো। সেকেন্ড আমার বাবার অফিসে যে ড্রামা দেখালে কতই না বিব্রতবোধ করেছি জানো? অনেকে তো কানাঘুষা করে বলছে, আমি গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ওয়াইফ ও রেখেছি। যেনো বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি প্রডাক্ট। সো এক কথা কান খুলে শুনে রাখো এই যে ভালো ব্যবহার তোমার সাথে করছি তা শুধুই লোক দেখানো। এতক্ষণ পাশে মানুষ ছিল তোমাকে নিজ থেকে দূরে সরাইনি। আর যখন…।”

“মানুষ যাওয়ার সাথেই আমাকে দূরে সরিয়ে দিলেন এই তো?”

আফরাজ এর বাকি কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই নাজীবা বলে উঠে কথাটি। সে শুনে বাঁকা হেসে সমুদ্রের দিকে একপলক তাকায়। স্বামীর কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলছে নাজীবার।

“খচ্চর করলা কোথাকার। এতক্ষণ আপনার মোহে আটকে প্রেম প্রেম পাচ্ছিল মনে। নিমিষেই স্বাদ মিটিয়ে দিলেন তো এবার এর শাস্তি ভোগ করুন।”

শয়তানি হেসেই নাজীবা ঘোমটা উপরে তুলে চারপাশ ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়। মানুষজন তাদের সাইড থেকে বহু দূরে দাঁড়ানো। এ সময়টি কে কাজে লাগিয়ে জোরালো এক ধাক্কা দেয় আফরাজ কে। আকস্মিক ধাক্কায় চিৎকার করে উঠে সে। ব্রিজের উপর থেকে সমুদ্রের বালির কাছ ঘেঁষে পড়ল। তার স্বামী পানিতে পড়ে গেছে । তাই অসহায় এর ভান ধরে চিৎকার করে বলে,

“ওওও সোয়ামী আপনি চিন্তে করিয়েন না। আমি আপনাকে ম’রতে দেব না না না।”

আকবর ও কুসুমা ভাবী ও চলে এলো। তারা মানুষ জনের হৈচৈ শুনে কাহিনী কি দেখতে এসেই আশ্চর্য হয়ে গেল। কেননা নাজীবা একলা দাঁড়িয়ে কান্না করছে। কুসুমা ভাবী নাজীবা কে আগলে শান্ত্বনা দিচ্ছে। আকবর তাড়াতাড়ি গার্ড’স নিয়ে সমুদ্রের কিনারায় গেল। আফরাজ পানিতে বার কয়েক ডুব খেয়ে আগুনের জ্বলসানো চোখে ব্রিজের উপর নাজীবার দিকে তাকায়। নাজীবা স্বামীর তাকানো দেখে পাত্তাই দিল না। মনে মনে বলে,

“হাহ্ লোক দেখানো ভালোবাসা রাইট? বুঝবেন পাগলামীপনায় লোক দেখানো ভালোবাসা কত প্রকার ও কি কি?”

কুসুমা ভাবীর কাধে মাথা হেলিয়ে অসহায় হওয়ার ভান ধরে গাড়ির কাছে চলে যায় তারা। আকবরও গরম তোয়ালে আফরাজ কে পেঁচিয়ে নেয়। কেননা ঠান্ডার মৌসুমে সমুদ্রের পানি ঠান্ডা বটে। তবুও সূর্যের উষ্ণতায় কিঞ্চিৎ কমই বটে।
ঠকঠক ঠান্ডায় কাঁপতে থেকে গায়ের উপর তোয়াল লেপ্টে পেছনের সিটে বসে যায় আফরাজ। আকবর বন্ধুর নাজুক অবস্থা দেখে স্বেচ্ছায় গাড়ি চালানোর দায় সাড়ে। ঠান্ডার প্রখরতায় ঘুম ঘুম পেয়ে যায় আফরাজ এর। সে সিটের মধ্যে মাথা হেলিয়ে ঘুমাতে গেলেই চঞ্চল হাতে স্বামীর মাথাটি নিজ কোলের উপর নিয়ে নেয় নাজীবা। আফরাজ এর সিল্কি চুল অন্য গরম তোয়াল দিয়ে মুছে নেয় ভালোমত। চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে ঘুমন্ত শ্যামপুরুষের গালে দু’ মানব-মানবীর চক্ষু আড়ালে চুমু দেয়। মনপ্রান্তরে ভাবে,

“আপনার আমাকে ভালো বাসতেই হবে। আপনাকে না পাওয়া অব্দি যে আমার মন শান্তিতে ঠাঁই নিবে না। আপনার আগুনময় উষ্ণতার জন্য আমি সবকিছুই করব। যত কষ্টই হোক পাগলামী করে হলেও আপনার ভালোবাসা আদায় করবই আমি। হক যেহেতু আমার, সেই হকের আশপাশেও কাউকে ঘেঁষতে দেব না।”

শাড়ির আঁচল দিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা আফরাজকে পেঁচিয়ে নেয় নাজীবা। মানবীর শরীরের উষ্ণতা পেয়ে ঘুমে মগ্ন রইল আফরাজ।

চলবে…….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৩

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩

“জান তুমি আমাকে ভালোবাসো অথচ কিস করছো এই ফালতু মেয়েকে। তোমার মনে একটুও কি বাঁধলো না? ছিঃ তাই তো বলি আমার ভালোবাসা বোধহয় ফিকে হয়ে গিয়েছে। নাহয় এই গাইয়া মেয়ের করা অপমানের শোধ নিতে তুমি।”

তাবাসসুম এর কথা শুনে আফরাজ তৎক্ষণাৎ নাজীবাকে নিজ থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু নাজীবাও নাছোড়বান্দা। বাঁকা হেসে ঘোমটা কিঞ্চিৎ উপরে উঠিয়ে আফরাজ এর মুখশ্রী ঘোমটার ভেতর টেনে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আফরাজ এর শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের সঙ্গে তার ঠোঁটজোড়া মিলেছে‌ । চোখ বুজে থাকায় সে কাঁপছে। অথচ স্বামীর কাছ থেকে স্বল্প সময়ের সোহাগ পেতেই নাজীবা আহ্লাদী হয়ে উঠল। স্বামীর এর কোলের উপর আয়েশ করে বসে পড়ল। নিশ্চুপে নিজের ক্রিয়া চালিয়ে যায়। ঘোমটার অন্তরে দুজনের চুম্বন ক্রিয়া মোটেও সহ্য হলো না তাবাসসুম এর। সে ছুটে গিয়ে নাজীবাকে টেনে আফরাজ এর উপর থেকে উঠিয়ে নিল। বাক্যহীন চ’ড় লাগিয়ে দেয়। আফরাজ এরও ধ্যান ভাঙল। কিন্তু দু’রমণীর মাঝে কি বলা উচিৎ বোঝতে পারছে না। তবুও গম্ভীর ভাব নিয়ে নাজীবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“নিজের সম্মান নিজের থেকেই বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আর যে নির্দোষ হয়েও দোষী হতে চাই তাকে বলার মত কোনো শব্দ-চরণ মুখে থাকে না।”

নাজীবা স্বামীর কথা শুনে এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট করল না। তাবাসসুম এর মেকআপ ভরা গালে ‘ঠা’স’স’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয়। নাজীবার চ’ড়ের আক্রমণে এতটা জোড় থাকতে পারে। তা জানাই ছিল না আফরাজ এর। তাবাসসুম এর ঠোঁট ফে’টে র’ক্ত বেরিয়ে এলো। ফকফকা সাদা টাইলার্সের উপর পড়ার কারণে তার হাতের কনুইয়ের মধ্যে ব্যথা পেল। সে ভাবতেও পারেনি মেয়েটির আক্রমণ এতটা প্রভাবিত হবে। অন্যথায় সেও চ’ড় লাগিয়েছে মেয়েটিকে ততটা প্রভাবিত হয়নি যতটা তার ক্ষেত্রে হলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় নাজীবার দিকে। সে এখনো ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘোমটার আড়ালে মিটমিট করে হাসছে। মনে মনে বলে,

“হাহ্ এই নাকি আমার আফরু-র গার্লফ্রেন্ড। ওহ না গার্লফ্রেন্ড না ছাই জোরজবরদস্তি গলায় ঝুলানো ফ্রেন্ড। দেখ এবার কোন পাগলের পাল্লায় পড়লি তুই।”

মনের কথা মনে রেখে , তাবাসসুম এর স্ট্রেট করা চুলের গোড়া চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো নাজীবা। তাবাসসুম আর্তনাদ করে উঠে। নাজীবা তো নিজের মত বলতে লাগল।

“এই শাকচুন্নী সাদা ভূতনী কোথাকার তোর সাহস তো কম না? আমারে চ’ড় মা’রস আবার আমারেই আমার জামাইয়ের কোল থেকে উঠাস। তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব হা’রা’মজা’দী।”

কথার ছলেবলে দু’টা চ’ড় ও লাগিয়ে ফেলেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আফরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বসার থেকে দাঁড়িয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ নাজীবার কাছে গিয়ে তাবাসসুম কে ছাড়িয়ে সোফার উপর বসিয়ে দেয়। স্বামীকে পরনারীর প্রতি সামলানো দৃশ্য দেখে মেজাজ পুরো বিগড়ে গেল নাজীবার।
“আপনিই” বলেই চিৎকার করল। আফরাজ এর নিকট যেতেই তাকে ধমকে উঠে সে। পুরো শরীর কেঁপে উঠল নাজীবার। ভয়ে তার চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগল। তবুও চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। তাবাসসুম এই দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে ন্যাকা কান্না শুরু করে দেয়। আফরাজ তার ভালোবাসার মানুষটিকে কাঁদতে দেখে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে জড়িয়ে নেয়। এক স্ত্রী কখনো তার স্বামীর বক্ষে পরনারীর স্থান সহ্য করতে পারে না। নাজীবা দাঁত কিড়-মিড়িয়ে তাকিয়ে রইল। তার পাগলামীপনায় যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। নিজের অজান্তেই সে আফরাজ এর টেবিলের উপর রাখা ছোট কিউব বলটি হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। চোখজোড়া মেয়েটির কপাল বরাবর স্থীর রেখেই চট করে বলটি ছু’ড়ে মা’র’ল। নিশানা একে বারে তার জায়গা মত লাগল বটে। তাবাসসুম তো এবার গলাফা’টা কান্না করছে। নাজীবা বাঁকা হেসে তাকিয়ে রইল। আফরাজ নাজীবার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু বলার পূর্বেই আকবর চলে এলো কেবিনের মধ্যে। কেবিনের টাইলার্সে র’ক্ত দেখে ঘাবড়ে গেল সে। তার চোখজোড়া তিনজন ব্যক্তির উপরতেই অবাক হয়ে গেল। কেননা আফরাজ এর প্রাক্তনের সঙ্গে তার বর্তমান বউও উপস্থিত। কিন্তু কাহিনী কি হলো বুঝতে পারছে না। আফরাজ তার বন্ধু কে বলদের মত তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাক দেয়। আকবর এর ধ্যান ফিরে। সে তৎক্ষণাৎ আফরাজ এর নিকট গিয়ে বলে,

“এই কি হলো এখানে? তাবাসসুম এর কপাল থেকে র’ক্ত কেন পড়ছে? মনে তো হচ্ছে মেয়েটার কপাল ফা’টিয়ে দিয়েছে কেউ?”

“ওও দেবরজী এই মহৎ কর্ম আমিই করেছি।”

আকবর চট করে তাকিয়ে খুশির ঠেলায় বলে,

“মাশাআল্লাহ চমৎকার ভাবী একদম শাকচুন্নী কে কেয়ামত দেখিয়ে দিলেন।”

“আকবররর।”

ধমক দেয় আফরাজ। আকবর হকচকিয়ে বলে,

“না মানে ভাবী এটা একদম ঠিক করোনি। তোমাকে যদি পুলিশে ধরে তখন কি করবা?”

“কি করব মানে? পুলিশের বাপ-দাদার ও সাহস নেই আমাকে ধরার। ধরতে গেলেই জিজ্ঞেস করব আমার অপরাধ কি? আমি তো পরনারীর মায়া থেকে আমার জামাইকে রক্ষা করছিলাম। তাই স্বাভাবিক কপাল ফা’টাতেই পারি। ইট’স ডাজেন্ট ম্যাটার এট অল। এখন যদি আমার শ্রদ্ধীয় জামাইবাবু আমার কথামত টেবিলের কাছে এসে এই চেয়ারে না বসে তবে….।”

আফরাজ চোখ পিটপিটিয়ে বলে,

“তবে কি?”

“তবে দেবরজী আর আপনার সো কলড শাকচুন্নী মার্কা প্রেমিকের সামনে ফটাফট একশটা চুমু খাবো।”

বলেই নিজেকে লজ্জায় আবৃত করতে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়ার ভান ধরল নাজীবা। আফরাজ চোখ পাকিয়ে বলে,

“সেটআপ ডিসগাস্টিং উইমেন।”

“আইম নট সাউটিং আপ মাই মাউট ডালিং। ইউ জাস্ট কাম টু মি অর আই উইল কিস ইউ।”

বলেই হেহে করে হেসে দিল নাজীবা। আকবর মিটমিট করে হেসে বন্ধুর কাছ থেকে তার প্রাক্তনকে সরাতে বলে,

“দোস্ত শুধু শুধু কেন নিজের ইজ্জত এর ফালুদা বানাতে চাচ্ছিস? এখন যদি ভাবী তোর প্রাক্তনের সামনে চুমু খায়। তাহলে তোর প্রাক্তনের মনে ভীষণ কষ্ট লাগবে। তার উপর দেখ তাবাসসুম এর অবস্থাও বেশ নাজুক হয়ে আছে। আমি ওকে ইমাজেন্সি কেবিনে নিয়ে যাচ্ছি। তুই তোর পাগল বউটারে সামাল দেয়। নাহয় অফিসের এমপ্লয়র্স এসে আমাদের কাহিনী রটাবে।”

বন্ধুর কথায় যুক্তি পেয়ে মুখটা পাংশুটে করে তাবাসসুম কে ছেড়ে দিল। তার ইচ্ছে করছিল না ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়তে। কিন্তু পাগল এক মেয়ের কারণে ছাড়তে বাধ্য হলো। সাবধানে তাবাসসুম এর মাথা সোফার উপর হেলিয়ে দিয়ে আকবরকে ইশারা করে। আকবর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভাবল।

“না-রে এই ডাইনিকে কোলে তুললে ঘরের ডাইনি আমাকে চিবিয়ে খাবে। না থাক বাবা দরকার নাই শুধু শুধু মাথার উপর আপদ ডেকে আনার।”

ঢোক গিলে ফোন বের করে , ইমাজেন্সি কেবিনের ওয়ার্ড বয়কে কল দিয়ে দুজন নার্সকে নিয়ে আসতে বলে। আফরাজ নিজের চেয়ারে বসে শব্দহীন নাজীবার পরিবেশন করা খাবারগুলো খেতে আরম্ভ করে। সে তার হৃদয়ে ঠান্ডাময় প্রশান্তি অনুভব করল। আফরাজ এর খাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগল।

“আজ থেকে আপনার সব কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য প্রস্তুত থাকব। তাই বলে জরুরি কাজে নয়। শুধু মাত্র ঐ শাকচুন্নী কে শায়েস্তা করে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দেব। তারপর আমি আপনার,আপনি আমার হয়ে যাবেন।”

“এ মেয়ে বক্সগুলো ভাঁজ করে নিয়ে যাও। লান্স আওয়ার শেষ।”

নাজীবা ভাবলেশনহীন আফরাজ এর নিকট এগিয়ে গেল। মেয়েটির আগানো মোটেও সুবিধাজনক লাগছে না তার। ফাঁক পেতেই তৎক্ষণাৎ কেবিন থেকে বাহিরে ছুট লাগায়। নাজীবা তার স্বামীর বাচ্চামি দেখে হেসে ফেলল। সেই কি পাগলামীপনার ডোজ দিল আজ। অথচ বাসর রাতে কিনা আমাকে রাগ দেখিয়ে ছিল হাহ্। এখন তিনি নিজেই ভেজা বিড়াল হয়ে গেল হাহা। ভেবেই খুশি খুশি অনুভব করল নাজীবা। বক্সগুলো গুছিয়ে সন্তপর্ণে বেরিয়ে যায় সে। কেননা তার না যাওয়া অব্দি আফরাজ কেবিনের মুখদর্শন করবে না ভালোই জানা আছে তার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

______

“হারানো মেয়েটির কোনো খবর পাওয়া গেছে ?”

“স্যার আমরা গোপনে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ মেন্টাল হাসপাতালে মেয়েটির চেহারা অসুস্থতায় একেবারে বিকৃত হয়ে গিয়ে ছিল। সেই চেহারার সাথে এখনকার কোনো মেয়ের মিল পাওয়া অসম্ভব প্রায়।”

“তোরা আমাকে শিখাচ্ছিস? তোরা যে যার মত আড্ডাবাজি করে আমাকে উল্টা জবাব দিচ্ছিস এর প্রমাণ তোদের মাথার ডান সাইডে দেখ।”

লোকগুলো আতংকে দাঁড়িয়ে গেল। তারা আসলেই জানতো না তাদের পিছনে তাদের লিডার স্পাই লাগিয়ে রেখেছে। তিনি লোকগুলোর আতংকিত চেহারা দেখে মৃদু হেসে বলে,

“কি কেমন লাগল হে? তোরা ভাবছিস আমার একটা কাজ করেই তোরা পাড় পেয়ে যাবি? না ডা.সিফাত কে রাস্তা থেকে ছড়ানোর রেকর্ডিং আমার পকেটের মধ্যে রাখা। তাই কোনো কথা শুনতে চাই না। মেয়েটির খোঁজ লাগা। যদি আবার শুনি তোরা খোঁজে পাস-নি। তবে ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলার ব্যবস্থা করিস সব’কটা। টুট টুট টুট”

ফোন কেটে লোকটি ছ্যালা দের দিক থেকে নজর সরিয়ে ফেলল। বেডসাইড টেবিল থেকে ওয়াইনের বোতলটা হাতে নেয়। ছোট গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে ঢোক ঢোক করে গিলতে লাগল। তিন-চার বার খেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে হারানো পাগল মেয়েটির নাম উচ্চারণ করতে লাগল। তার নেশাগ্রস্ত অবস্থা রুমের বাহিরে থেকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এক মহিলা। তিনি জানেন না এর শেষ পরিণতি কি হবে? কখনো কি লোকটি স্বাভাবিক হবে নাকি একই রকম থাকবে?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মহিলাটি নার্স এর হাতে মেডিসিন এন্ড ইনজেকশন এগিয়ে দেয়। নার্সটি ভয়ে ভয়ে রুমের ভেতরে গেল। লোকটির চিৎকার থেমে যায়। শান্ত হয়ে বিছানায় বসে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে। নার্স কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“স…স্যার আ আপনার মে মে ডিসিন এর টাইম হয়েছে।”

লোকটি লালাক্ত নজরে নার্সের দিকে চেয়ে মাথা নেড়ে সায় জানায়। নার্স খুব কষ্টে ভয়টা গিলে মেডিসিন এগিয়ে দিল। লোকটি মেডিসিন খেয়ে হাত এগিয়ে দেয়। নার্স জোরে এক শ্বাস ফেলে চটজলদি লোকটির হাতের কবজিতে ইনজেকশন পুশ করে কটন দিয়ে মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়। নার্সের কাজ শেষ হতেই একছুটে পালিয়ে যায়। মহিলাটি নার্সের পালানো দেখে বিরক্ত হলো। লোকটার চিৎকার চেঁচামেচিতে তিনি তো ভয় পেলেন না। তাহলে নার্সের কেন এত ভয়ভীতি অবস্থা যতসব! ভ্রু নেড়ে একপলক লোকটির দিকে তাকিয়ে চলে যান তিনি।

_____

তাবাসসুম ইচ্ছেকৃত আফরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আফরাজ এর অস্বস্তি হতে লাগল। তবুও আলতো করে তাবাসসুম এর পিঠের উপর হাত রাখে। ভ্রু কুঁচকে সে আফরাজ এর গলা থেকে হাত সরিয়ে বলে,

“জান আজ তুমিও শেষমেশ আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে? এতটা হেইট করতে লাগলে?
যার কারণে নিজের বউকে দিয়ে চ’ড় পর্যন্ত খাওয়ালে। আজ আমি বাবা-মা হীন মেয়ে বলেই আমার সাথে অন্যায়টা করলে তাই না? প্রথম অন্যায় না চাইতেও মেনে নিলাম। বিয়ে করলে এক গাইয়াকে । দ্বিতীয় তার জায়গায় তোমার ঠোঁটের স্পর্শ আমার পাওয়ার কথা ছিল। সে কেন পেলো বলো?”

তাবাসসুম এর প্রতিটা কথার উত্তরে নির্লিপ্ত রইল আফরাজ। কিই বা বলবে সে? সে না চাইতেও বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
সেখান থেকে পালাতে চাইলেও রাস্তা নেই। কেননা এই বিয়ের সাথে তার দাদির জীবন জড়িত। নিজেকে শক্ত রাখবে বলে ভেবে নিল আফরাজ। সচল দৃষ্টিতে তাবাসসুম এর চোখে চেয়ে তার হাত-জোড়া সরিয়ে নেয়। তাকে নিজ থেকে খানেক দূরে ঠেলে উঠে দাঁড়ায়।
উপদেশ বোধক গলায় বলে,

“শুনো তাবাসসুম আমাদের মধ্যে যা ছিল , তা ভুলে যাও। ভেবে নাও এক স্বপ্ন ছিল আমাদের মাঝে। যা ঘুম থেকে জাগতেই ভেঙ্গে গিয়েছে। এখন থেকে না হয় আমরা ভালো বন্ধু হয়ে রইলাম। খারাপ কি এতে? আর আমি বন্ধুত্বের মান রক্ষা করতে জানি। আশা করি , তুমি আর বিয়ের কথা টেনে আমাকে হয়রানি করবে না। আমি তোমার জন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখছি বাহিরে। সুস্থবোধ করলে চলে যেও। বাই। টেক কেয়ার।”

ইমাজেন্সি ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে শেষ এক পলক তাবাসসুম এর দিকে তাকাল। মেয়েটির গালের তিল ভীষণ পছন্দের ছিল আফরাজ এর। ঐ ঘন কালো তিলের মোহে আটকে প্রেমে পড়ে ছিল সে। আজ সেই প্রেম কে কবর দিয়ে দিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। তাবাসসুম ইচ্ছেকৃত নিজেকে করুণভাবে প্রদর্শন করেছে। যাতে সে আফরাজ কে হাতিয়ে নিতে পারে। তার যাওয়ার পরপরই তাবাসসুম এর ঠোঁটের মধ্যে কুটিল হাসি দৃশ্যমান হলো। কুটিল হেসে বলে,

“হাহাহা বোকা জান আমার। তোমাকে ফাঁসানো আমার বাঁ হাতের ব্যাপার স্যাপার। কেউ কি সাধে তার সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে ছাড়তে চাই? তুমি হলে আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তোমাকে ভাগে না নিতে পারলে আবারো সেই প’তি’তা’বৃত্তি করে ঘুরতে হবে। কখনো না তোমার বউয়ের মনে তোমার প্রতি এত বিষ ঢেলে দেব। যার কারণে সে নিজেই তোমাকে ছাড়তে বাধ্য হবে। সেখানে ও ছাড়লে আমার এন্ট্রি নেওয়া কোনো ব্যাপারই না।”

তাবাসসুম মাথা চেপে উঠে দাঁড়ায়। ল্যাংরা মার্কা হেঁটেদুলে আফরাজ এর ঠিক করা গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। ড্রাইভার পেশেন্ট কে বসতে দেখে দেরি করল না। গাড়ি চালানো শুরু করল। গাড়ির যাওয়ার দিকে সন্দেহাতীত দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইল আকবর। তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় বলছে মেয়েটা নিশ্চয় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। মেয়েটির কাছে থাকলেই আকবর কেমন এক নেগেটিভ ভাইভ ফিল করে। যা অন্য কারো কাছে পায় না। ঠোঁটে হাত বুলিয়ে ভাবনার রফাদফা করে চলে যায় আফরাজ এর সাথে ডিল নিয়ে ডিসকাস করতে।
আফরাজ একগাদা ফাইল নিয়ে চেকিং দিচ্ছে। তাদের ম্যানেজার ছুটিতে থাকায় , সে নিজেই কাজগুলো সম্পন্ন করছে। কেননা তার পিএ পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একলা হাতে সবটা ফাইল শেষ করতে রাতের ১টা বাজবে বুঝতেই পেরেছে। তখনই আকবর চলে এলো। তাকে দেখতেই মুখে হাসি ফুটল তার। হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। মুখে বলে,

“এই হলো শয়তানের তিন নাম্বার নাতি । ইয়াদ কিয়া অর তু হাজির হওগেয়া।”

“সিরিয়াসলি তুই আমাকে মনে করছিলি। সপ্তম আশ্চর্যের ব্যাপার স্যাপার।”

“তোর আশ্চর্য-রে গু’লি মা’র। এদিক এসে আমাকে হেল্প কর। এতো গুলো ফাইল কি আমি চেক করব? তুই কিসের এমপ্লয় যদি কাজই না করস শা’লা?”

ভ্রু কুঁচকে আফরাজ বলল। আকবর মুখটা গোমড়া করে বলে,

“গালিকা কু’ত্তা হুন কেয়া মেহ্?”

“তা ডিএনএ টেস্ট করার পর জানা যাবে। এখন এসব কথা রাখ। আমার কথা ভালো করে শোন। কালকে পিএ সিল্কেশন এর খবর ছড়িয়ে দিস। আর এই বিশ’টা ফাইল নেহ্। চেকিং শেষে কন্ট্রোল রুমে জমা দিয়ে দিস।”

“তোরে কি আর সাধেই জ’ল্লা’দ ডাকি? সারাদিন কাম কাম করে বউয়ের লগে একটু প্রেমপিরিতি করার সুযোগ দিস না। শা’লা সুযোগ আমারও আসবে তখন তোর রোমান্সের টাইমে চৌদ্দটা না বাজালে আমার নামও আকবর মোতাহের নয়।”

“শেষ তোর অভিযোগ দেওয়া।”

হাতে অফিসের ফাইল চেক করতে থেকে আড়চোখে বন্ধুর দিকে চেয়ে বলল আফরাজ। আকবর কে আর পায় কে তড়িঘড়ি ফাইল নিয়ে চেকিং করতে লেগে পড়ে। হুদাই সিংহের মুখে খাবার হওয়ার শখ নেই তার।
আফরাজ হেসে দেয়। আকস্মিক ফাইল চেকিং করতে গিয়ে তার হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ফাইল চলে এলো। যা অন্য ফাইলের সাথে এটার্চ করা ছিল। ফাইলের কভার সরাতে গিয়েই চমকে গেল।

চলবে……….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০২

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০২

“আপনি না আমার বিবিজান? তো আমার জন্য মরিচের গুঁড়া মেশানো কফি’টা অবশ্যই আপনার ও খেতে হবে।”

ডাইনিং টেবিলে ঘোমটা দেওয়া রমণীকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল আফরাজ। খাদিজা বেগম নাতির দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায়। নাতবউর কাচুমাচু ব্যবহার স্পষ্ট বোঝাচ্ছে যে, সে কৌশলে কফিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়েছে। খাদিজা বেগম গলা কেশে নাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। আফরাজ শান্ত চোখে দাদীর দিকে তাকায়। তিনি নাতির হাতের উপর হাত রেখে বলে,

“দাদুভাই যা হয়েছে ভুলে যাহ্ না। নাতবউ আর এমনটা করবে না।”

“নো দাদী। স্বামীর কথার মান্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। সো আই ওয়ান্ট টু সি হার রেসপন্সিবিলিটি ফর মি।”

আকবরও তার বন্ধুর কথার উপর কিছু বলার মত পেল না। তার পাশে ভীতিগ্রস্থ হয়ে বসে রইল তার বউ কুসুমা। সে করুন চোখে মেয়েটির দিকে তাকায়। সে ঘোমটার আড়ালে কীরূপ আচরণ করছে তা বোঝা মুশকিল। অন্যথায় নাজীবা অপলক তার স্বামীর দিকে চেয়ে আছে। সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট,কালো সুট এর মধ্যে শ্যামবান পুরুষ এর সৌন্দর্য যেন দেড়গুণ বেড়ে গিয়েছে। মুখশ্রীর মধ্যে রাগের ছড়ানো লাল আভা যেন সেই সৌন্দর্য কে আঁকড়ে ধরেছে। আপনমনে হেসে স্বামীর এগিয়ে দেওয়া হাতে থাকা কফির মগটি স্পর্শ করে সে। মেয়েটির স্পর্শে আফরাজ এর শরীরে অন্যরকম এক বিদ্যুৎ খেলে গেল। নাজীবা কফির মগটি নেওয়ার সাথেই আফরাজ নিজের হাত গুটিয়ে নেয় পকেটে। যা নাজীবার চক্ষু আড়াল হয় না। স্বামীর চোখদ্বয়ের মাঝে চেয়ে কফির মগে চুমুক দেয়। এক চুমুকে কফির মগ খালি করে ফেলে। ডাইনিং রুমে পিনপতন নীরবতা চলছে। কাজের খালা মিনা আপা তার খালাম্মার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

“খালাম্মার কিছু গড়েন। বড় সাহেব আর বড় বেগম দু’জনে কষ্ট পাইতাছে। দেহেন তাদের গাল দু’টো কেমনে করে লাল হইয়া আছে। বড় সাহেবের ঝাল খাওনের অভ্যাস আছে মানন যায়। বেগমের কি এমন অভ্যাস আছে?”

কাজের খালার কথা শুনে খাদিজা বেগম নাতির উপর চটে গেলেন। টেবিলের উপর জোরে থাবা মে’রে আফরাজ কে বলে,

“দাদুভাই এখনই অফিসে চলে যাহ। নাতবুর শরীর কেমনে ঘামছে দেখছিস? তোর না হয় ঝাল খাবারের অভ্যাস আছে । নাতবুরও এক অভ্যাস থাকবো বলে কথা নেই।”

আফরাজ ভেটকি টাইপ হাসি দিয়ে বাসার থেকে বেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে আকবর বউকে ইশারা করে বন্ধুর সঙ্গে গেল। কুসুমা স্বামীকে যেতে দেখেই চটজলদি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সদ্য নববধুর কাছে গিয়ে ঘোমটা খুলে নেয়। আশ্চর্য হয়ে গেল তারা দু’জনে। তাদের সামনে মনে হচ্ছে লাল টকটকে পরী দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখশ্রী লালাক্ত হয়ে ছিটকে উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। কুসুমা তো বউকে ঘোমটার আড়ালে দেখার সুযোগ পাননি তাই অবাক হয়। কিন্তু খাদিজা বেগম এর অবাকতা আকাশচুম্বী। কেননা তিনি বিয়ের পিঁড়িতে নববধুর রুপে শ্যামা রং লক্ষ করেছেন। তবে এই কোন বধু তাদের বংশে চলে এলো? এই ফুটন্ত গোলাপের স্থান তো মাটিতে নয় হৃদয়ে বিরাজিত। খাদিজা বেগম কুসুমা কে ইশারা করে। সে ইশারা বুঝতে পেরে টেবিল থেকে রসমালাই এর বাটি নিয়ে দু’টা রসমালাই বধুর মুখে পুরে দেয়। নাজীবা মিষ্টি দু’টা চিবিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করল। এতক্ষণে যেন তার ঝালে পেট ফেটে যাচ্ছিল। খাদিজা বেগম নাতবউয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,

“মাশাআল্লাহ আমার নাতবু সেরার সেরা। তার তুলনা হয় না অন্য মেয়ের সামনে। তবুও নাতবু স্বামীর সঙ্গে মজা করতে বারণ করব না। একটু দেখেশুনে মজা করিও।”

কুসুমা মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“কি বলেন দাদী? ঐ দামড়া পোলার লগে এখন ভেবেচিন্তে মজা করতো নাজীবা ভাবী?”

“কি করবো বলো দাদুভাইয়ের যে রাগী। আমার উপর তো রাগ দেখায় না কিন্তু বাহিরের মানুষ কিছু করলেই হলো ধুমধাম মা*রা শুরু করে দেয়।”

নাজীবা দাদী ও তার কুসুমা ভাবীর আলাপ শুনে গলা কেশে দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“দাদী আপনি চিন্তে করিয়েন না। উনার যা গোমড়ামুখো স্বভাব সেটাই আমি বদলাতে চাই। তার চেয়ে বড় ব্যাপার কোন শাকচুন্নী উনার লাইফকে হেল করছে সেটাও তো বের করতে হবে তাই না?”

দু’জনে ‘ওওও রাইট’স’ বলে সম্মতি দেয়। খাদিজা বেগম এর ওয়াশরুমে যেতে হবে। বিধায় তিনি নিজ রুমের দিকে ফিরে যায়। কুসুম নাজীবা-কে আঁকড়ে ধরে বলে,

“ভাবী বাসর রাতের এক্সপেরিয়েন্স বলো প্লিজ!”

নাজীবা চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকায়। কি এক্সপেরিয়েন্স শুনাবে? হে চুমু দিয়েছে সে । তাও তো একপাক্ষিক চুমু। দুই পাক্ষিক হলে এনা লজ্জা টজ্জা পেত সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,

“ভাবী কোথায় আর বাসর! জানোই তো আমার ঐ হিটলার স্বামী , দেবদাস হয়ে আছে তার প্রেমিকাকে না পাওয়ার শোকে। সেখানে আর আমার সঙ্গে সোহাগ করার আদৌ মানসিকতা আছে উনার। কিন্তু…।”

মাঝে থেমে দু’হাত মুখে চেপে লজ্জার ভান ধরল। কুসুমা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাড়া দিয়ে বলে,

“বলো না নাজীবা কি হয়েছিল ? এমনেই লজ্জা পাচ্ছো নিশ্চয় চুমাচুমি হইছে?”

“হ্যা চুমুটুমু খেয়েছে বটে। কিন্তু সেটা ঘুমের ঘোরে থাকায় বুঝেননি তিনি। যদি বুঝতেন আমাকে আস্ত চিবিয়ে খেতো।”

“ধুর দেবর আমার জীবনটাই ধনেপাতা বানাইয়া রাখলেন। আমারো জানো তোমার মত অবস্থা। স্বামী আমার অথচ আচরণে লাগে বউ হই তোমার স্বামীর।”

“কিইই এসব কি বলছো ভাবী?”

“আরে হে কিন্তু তুমি যেটা ভাবছো সেটা নয়। আসলে আমার কথার মানে হলো আকবর মানে তোমার স্বামীর বন্ধু খুবই বন্ধুভুক্ত। একটু ডাক দিলেই উনি যেন স্পাইডার ম্যানের মত উড়াল দিয়ে চলে যাবে। গত রাতের কথাই বলি। একটু স্বামী আমার সোহাগ করতে লুঙ্গির ফিতা খুলতে নিচ্ছিলেন। ওমাহ তোমার স্বামীর ডাক পড়ে যায়। এবার বুঝো সোহাগের উত্তম মুহূর্তে মেজাজ কতই না গরম হয়। ইচ্ছে তো করছিল গ’লা টি’পে ধরতে দু’জনকেই।”

নাজীবা শুনে আতঙ্কিত হলো। এমন দৃষ্টি দেখে কুসুমা বলে,

“আরে সিরিয়াসলি নিও না। ওটা তো শুধু মেজাজ খারাপের টাইমেই করতে ইচ্ছে হতো। এমনি সম্মান দেয় চিন্তে করো না।”

দু’জনে হেসে দিল। লেখিকা_তামান্না(কল রাইয়ান)
হঠাৎ কুসুমা ভাবীর মনে হলো তার স্বামীর টিফিন সময়ের খাবার রেডি করতে হবে। বিধায় সে রান্নাঘরের দিকে ছুট দেয়। আকবর আবার বাহিরের খাবার কম খায়। নাজীবা ও গেল সেও আজ আকবরের সাথে তার স্বামীর অফিসে যাবে। স্বামীকে একটু পাগলামীপনার ডোজ দিতেই হবে। নিজ মনে শয়তানি হেসে সে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে। কুসুমা খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাজীবা নিজ মনে ভেবে নেয় প্রথমে ফ্রাইড রাইস,ডিম পোস্ট,ফ্রাইড চিকেন রেডি করবে। ভেবে কাজে লেগে পড়ে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

_____

অফিসে রুমের মধ্যে রাগে ফোসচ্ছে আফরাজ। তার গলা ঝালে জ্বলছে । তবুও সে কোনো মিষ্টান্ন ছুঁয়ে ও দেখছে না। আকবর গালে হাত দিয়ে তার বন্ধুর মুখ দেখে যাচ্ছে। ছেলেটার মুখমন্ডলে ঝালের আভা ছড়িয়ে আছে। তাও জিদ্দি ছেলে মিষ্টান্ন কিছু খাচ্ছে না। আর না পারতে বলে উঠে,

“ভাই ব্যস হয়ছে তো দই থেকে হালকা করে দই খেয়ে নেহ। নিজের হাল দেখতে পাচ্ছিস? আমার তো মনে হচ্ছে একটা জ্যান্ত মানুষরুপী টমেটো আমার সামনে বসে আছে। আর তোর মাথাও বা কেমনে কাজ করছে হে? এত ঝাল তো খাওয়ার অভ্যাস তোর নাই। তাও খেলে তোর উপর ইফেক্ট হয়। মাথা চক্কর দেয়। তাহলে এখন কেমনে এতো স্বাভাবিক আছিস?”

আকবরের কথায় চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় চোখ খুলে তার দিকে তাকায়। বন্ধুর রাগমিশ্রিত চোখ দেখে বলে,

“ধুর ব্যাটা তোর ঐ সিংহের তাকানো কে ভয় পায় না বুঝছিস? চল তাড়াতাড়ি দই গিলে নেহ্।”

“তুই চুপ থাক ব্যাটা। শুধুমাত্র তোর কারণেই দাদী তার কাজে সফল হয়েছেন। আমারই ভুল ছিল তোর ফোনকল রিসিভ করা। যদি ঐদিন ফোনকল রিসিভ না করতাম । তাহলে ঐ পাগল মেয়ের জায়গায় তাবাসসুম আজ আমার সাথে হতো।”

“আরে বাঁশ আমার উপর দোষটা চাপাচ্ছিস । অথচ নিজে যে পুরো কথা না শুনেই মুখের উপর কল কেটে দিছিলেন তখন? আমি তো কলে তোকে বার বার বলার ট্রাই করছিলাম। পাশে দাদী থাকায় সরাসরি বলতে পারিনি। আর তুই তো জানিস দাদী কেমন! তোকে বিয়ে করাবে একবার যখন ভেবে নিছেন ব্যস । তার উপর আর কারো না বলার সামর্থ্য নেই। যেমনটা তুই নিজে জনাব আফরাজ ফাহিম।”

“চুপ শা’লা। তাবাসসুমের ও না জানি কি হলো? ঐ দু’টাকার কাগজ কলমের মেয়েকে টেনে নানান টুন করছে। অসহ্য লাগতেছে দিন-দুনিয়া। মন চাচ্ছে সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও পালায় যায়।”

“আহারে বেচারা আমার বন্ধু। কষ্ট পাস না। তোকে এক সহি তারিকা বলি শোন মন দিয়ে। তোর বিবাহিত নববধু রে নিয়ে হানিমুনে যাহ্। প্রথম রাতে প্রটেকশন ইউজ করিস না বুঝলি।”

বন্ধুর ফাজলামি কথা শুনে মুখ ফোসকে গ্লাসে থাকা অর্ধ পানি ফেলে দেয়। কাশতে কাশতে চোখ পিটপিটিয়ে আকবর এর দিকে তাকায় আফরাজ। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে বলে,

“তুই কি পাগল ব্যাটা? অফিস আওড়ারে কীসব কথা কস আবাল?”

“আবাল তুই যে গাধা। নিজের বউ ছেড়ে পরকিয়া মা’রাস হাহ্।”

কথাটি শুনে আফরাজ এর মুখশ্রীতে গম্ভীরতা চলে এলো। সে গাম্ভীর্য ভরা গলায় বলে,

“তাবাসসুম কে আমি ভালোবাসি। এতে পরকিয়ার কিছু নেই। বরং ঐ মেয়েটা তো আপদ। কোথার থেকে না কোথার থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল আমার ঘাড়ে। বিয়ে করার কথা ছিল তাবাসসুম কে হয়ে গেল গাইয়া মেয়ের সঙ্গে। সো ডিসগাস্টিং।”

“তাই তো বলছি নতুন বউকে টেস্ট করে দেখ শা’লা। একবার বউয়ের মজা বুঝলে তাবাসসুম পাদকেও ভুলি যাবি।”

দাঁত কিড়-মিড়িয়ে আফরাজ মা’রার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে আকবরও একই কাজ করে।

“দাঁড়া তুই শা’লা হানিমুনের মজা বের করতেছি তোর পেছন থেকে।”

আকবর ছুট লাগায় কেবিনের বাহিরে। যা দেখে আফরাজ মুচকি হেসে নিজ চেয়ারে পুনরায় গা হেলিয়ে দেয়। ঝাল এখন কম লাগছে তার। গ্লাসে থাকা অল্প পানি খেয়ে ছিল। বিধায় ঝালটা সময়ের সাথে চলে গেল। কিন্তু পেটে ক্ষুধা লেগেছে তার। আউটসাইড আনহেলদি ফুড আফরাজ এর পছন্দ নয়। সকালের নাস্তায় তো রাগ-জেদ দেখিয়ে না খেয়েই বেরিয়ে গিয়ে ছিল। যার দরুণ ক্ষুদায় তার পেট ছু’ছু করছে।

সকালে…
সামনে কফির মগ পেয়ে আফরাজ মাথা থেকে মেয়েটার চুমু দেওয়ার বিষয়টা ঝেড়ে ফেলেছিল। কফির মগ নিয়ে যেই মুখে দিল , সেই সঙ্গে জোরে চিৎকার দেয়। ঝালে তার গাল লাল হয়ে যায়। তখনই সে খেয়াল করে দরজার বাহিরে দিয়ে কোনো এক মানবীর ছায়া পালিয়েছে। বোঝতে বাকি নেই যে ,এই কারসাজি কার হতে পারে।
অন্যথায় নাজীবা রান্নাঘরের সামনে এসে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগে‌ । কেননা সিংহকে র’ক্ত এর সাথে মরিচগুড়া মিশিয়ে দিয়েছে। সামনে পেলে তো তুলে আছাড় মারবে। তাই ভুলে ও সে ঐ লোকটার সামনে পড়বে না বলে পণ করে নিল। কিন্তু তার পণ বেশিক্ষণ টিকলো না। আফরাজ রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসেই জোরে জোরে কুসুমা কে ডাক দেয়। কুসুমা সকলের জন্য কফি বানিয়ে যার যার রুমে পাঠিয়ে আকবরের কাছে ফিরে যায়। তাই সে দেবরের চিৎকার শুনা মাত্র ভয়ে স্বামীর হাত খামচে ধরে। আকবর ‘আহ ডাইনি’ বলে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ‘ডাইনি’ বলায় চোখ গরম করে তাকায় কুসুমা। আকবর কি ডেকে ফেলল বুঝতে পেরে তাড়া দিয়ে বউয়ের ধ্যান ফিরিয়ে চলে যায়। খাদিজা বেগম লাঠি ভর দিয়ে এসে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ঘোমটা দিয়ে নাজীবাও এসে দাদীর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ আড়চোখে মেয়েটিকে দেখে বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,

“এবার মজা বুঝাচ্ছি তোমাকে।”
সে তার সঙ্গে নিয়ে আসা কফি’টা কুসুমা কে দেখিয়ে বলে,

“ভাবী এটা কী আপনি বানিয়ে ছিলেন?”

“জ…জ্বী ভাইয়া কে কেনো?”

“না ভাবী আসলে জানতে চেয়ে ছিলাম। আমার কফি আমার কাছে কাকে দিয়ে পাঠিয়েছেন?”

“জ্বী নাজীবা ভাবী নিজ হাতে দেওয়ার আর্জি করছিল তাই তাকেই দিয়ে পাঠিয়ে ছিলাম।”

ব্যস নাজীবা ফেঁসে গেল। আফরাজও তার শোধ তুলে ফেলল।

হঠাৎ আফরাজ এর তাবাসসুম এর কথা মনে এলো। মেয়েটার সাথে রাগ দেখিয়েছে বলে কি আর কলও দেবে না? অভিমান মিশ্রিত মন নিয়ে সে নিজেই তাবাসসুম এর নাম্বারে কল লাগায়।

তাবাসসুম পুরু সকাল তার ক্লাইন্টের সাথে মজা করে দুপুরেই নিজ ফ্লাটে চলে আসে। শরীর দুর্বল লাগায় সে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। ১২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মনে মনে আফরাজ এর মান ভাঙ্গানোর পরিকল্পনা করে। ঠিক সে সময়েই আফরাজ এর কল দেখে খুশি হয়ে যায় সে। কল রিসিভ করে ন্যাকা ফুঁপানি দিতে লাগল। কান্না মিশ্রিত গলায় বলে,

“জান আমাকে মাফ করে দাও। সকাল সকাল তোমার কল দেখে খুশি লাগলেও তুমি ঐ মেয়েটার সাথে এক বেডে থেকেছো ভেবেই আমার মন পুড়ছিল। আইম সরি জান। তুমি তো জানোই তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তোমাকে আগলে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সেখানে এখন একজন এসে ভাগ বসিয়ে নিল।”

তাবাসসুম এর কথা শুনে মন নরম হয়ে গেল আফরাজ এর। সে ক্লান্ত ভরা গলায় বলে,

“যাক বাদ দাও ঐ সময়ে আমারও মেয়েটার ব্যাপারে শুনে মাথা ধরে গিয়ে ছিল।”

তাবাসসুম আফরাজ এর কথায় সন্দেহজনক গলায় জিজ্ঞেস করে।

“জান তুমি এভাবে বলছো তার মানে তোমাদের মাঝে কিছু হয়নি রাইট? না মানে আমি আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস করি। আমি ছাড়া তুমি কাউকেও ভালোবাসতে পারো না তাই না বলো না জান প্লিজ?”

তার কথায় আফরাজ কেমন এক জড়তা অনুভব করল। তবুও জোরপূর্বক মুখ খুলতে নিলেই কে যেন ফোনটা কেড়ে নেয়।

“এই শাকচুন্নী আমার জামাইকে ভুলভাল শুনিয়ে বশ করার চেষ্টা করছিস হে? তাইলে শুনে রাখ , আমি নাজীবা মুসাররাত আমার জামাইকে কালো কাউয়া থেকে কেমনে রক্ষা করতে হয় ভালোভাবেই জানি। আপনার সো কলড ড্রামাবাজি বন্ধ রাখুন কালা কাউয়া হুহ্। টুট টুট টুট।”

ফোনটি শক্ত করে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে লাগে তাবাসসুম। মেয়েটি তাকে অপমান করল আর আফরাজ ও কিছু বলল না। না সেও ছাড়বে না এখনি সে আফরাজ এর অফিস এ যাবে বলে ঠিক করে নিল। তড়িঘড়ি ড্রেস আপ করে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে পড়ে সে।

অন্যথায় আফরাজ অবাক সহিত দৃষ্টিতে কিঞ্চিৎ ভাবনায় পড়ে গেল। পরক্ষণে ঘটনা কি হলো বুঝতে পেরে মেয়েটির হাত থেকে নিজের ফোন কেড়ে নেয়। নাজীবা ফোনের ওয়ালপেপারে অন্য মেয়ের সঙ্গে তার স্বামীর কাপল পিক দেখে মনে কষ্ট পায়। তবুও সেদিক পাত্তা না দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে নেয়।
আফরাজ ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“এই মেয়ে তোমাকে না বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে। তাও কোন সাহসে আমার অফিসে এই গাইয়া সেজে চলে এলে? এখানে আমার একটা রেপুটেশন আছে সে খেয়াল আছে তোমার?”

“ওগো মিস্টার সোয়ামী। আপনার ফ্যাডের ফ্যাডের বন্ধ করুন। গলাবাজি আমিও করতে জানি। কিন্তু আমি আবার শান্তপ্রিয় মানুষ। ওতো প্যাচ ট্যাচ আমার মধ্যে নেই। যতসব আলগা পিরিতি তো আপনার মধ্যে ফাউল ব্যাটা।”

শেষ কথাটি বিরবির করে বলে । যা আফরাজ শুনতে না পাওয়ায় জিজ্ঞেস করে ‘কি বললে?’ নাজীবা হেহে হেসে ‘কিছু না’ বলে তার সঙ্গে আনা গরম গরম দুপুরের খাবার পরিবেশন করে। আফরাজ খাবারের আইটেম দেখে টেস্ট কেমন হবে খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে। সুস্বাদু ঘ্রাণে ক্ষুধার জ্বালা পাঁচগুণ বেড়ে গিয়েছে জ্বীভে যেন লালা চলে এলো তার। ঠোঁটের উপর জ্বীভ বুলিয়ে ঢোক গিলে বলে,

“এসব খাতিরদারি করে কি বোঝাতে চাইছো হে? যে যে আমি পটে যাবো। কখনো না। নিয়ে যাও এসব অখাদ্য।”

নাজীবার তো মাথা গরম হয়ে গেল। ফ্রাইড চিকেন এর রানের পিচ ছিঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে আফরাজ এর মুখে ঢুকিয়ে গাল চেপে ধরে। হতভম্ব হয়ে গেল সে। মেয়েটি কিনা তার সঙ্গে বাজিমাত করছে। সেও পাল্টা জবাব দিতে গেল। নাজীবার হাত ছুটাতে গিয়ে উল্টো নিজের দিকে টান দেয়। এতে দু’জনের দু’জোড়া ঠোঁট প্রায় স্পর্শক হয়ে যায় যআয় অবস্থা। এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে আগুন ধরাতেই কে যেন দরজা খুলে ভেতরে চলে এলো।

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০১

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#সূচনা_পর্ব

“দাদি এই কোন পাগলের সাথে আমার বিয়ে দিল? বউয়ের শাড়ির আঁচলে হাত দিলাম। এতেই ফুলদানি ছু*ড়ে মা’র’ল। যেখানে আজরাফ ফাহিমের সাথে কথা সকলের শরীর কাঁপতে থাকে। সেখানে ঐ পাগল মেয়ের সাহস কত বড় আমার দিকে ফুলদানি ছু*ড়ে দেওয়ার?”

বাসর রাতে সদ্য বউয়ের কাছ থেকে অপমানিত হয়ে মাথা গরম হয়ে গেল হলো আজরাফ ফাহিম এর। ফুলদানির কাঁচের বোতল তার কপালের সাথে বা*রি লাগায় কপালের কিঞ্চিৎ কেটে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধাক্কা দিয়ে বউ কে বিছানায় ফেলে দেয়। রাগের বশে বেডসাইড টেবিলে রাখা সিগারেটের অর্ধাংশ ছাই ছাই হয়ে যাচ্ছে। শেষটুকু ছাই হওয়ার পূর্বেই সেটি নিয়ে বউয়ের মেহেদী রাঙানো হাতে চেপে ধরে। মেয়েটি চিৎকার করতে নিলেই আজরাফ ধমকে উঠে। ঘোমটার আড়ালে মেয়েটি ঠোঁট চেপে নিভৃতে কান্না করতে লাগল। আফরাজ প্রায় তিন’মিনিট সময় পুরে যেতেই সিগারেটটি চেপে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। মেয়েটির দিকে চেয়ে পাত্তাহীন হেসে রুমের বাহিরে গিয়ে চিৎকার করে তার বন্ধু আকবরকে ডাক দেয়। আকবর তো নিজের বউয়ের সঙ্গে একটু সোহাগ করতে নিচ্ছিল। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। জ*ল্লা*দ বন্ধুর চিৎকারে ধরফড়িয়ে বউয়ের শরীরের উপর থেকে উঠে পড়ল। আকবরের বউ মিসেস কুসুমা মুখ কুঁচকে বলে,

“উফফ যখনই জামাইয়ের আদর খেতে যাবো। তখনই তোমার বন্ধু নতুন নতুন তালবাহানা শুরু করবে। এসবের মানে কি? দাদী বউ এনে দিল । তাও তোমার বন্ধুর অভিযোগ এর শেষ নেই?”

আকবর চুপটি করে নিজের লুঙ্গি গিট মে*রে বউয়ের কথার জবাব দিল না। তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেল। মিসেস কুসুমা নিজের বুকের উপর ব্লা’উ’জ জড়িয়ে নিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেন। মনে মনে দু’বন্ধুকে একদফা বকাঝকা করে চোখ বুজে নেয়। আজরাফ তার বাসর রুম থেকে সোজা স্টাডিরুমে গিয়ে ফাস্ট এট বক্স বের করল। মেয়েটিকে মনে মনে শ’খানেক গা’লি দিতে থেকে কপালের কাঁটা অংশের ব্যান্ডেজ করে নিল । তবে এতেও তার মাথা ঠান্ডা হলো না। রুমের মধ্যে এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত পায়চারি করে চলেছে। আকবর কে সামনে জ্যান্ত পেলেই চিবিয়ে খাবে। তখনি স্টাডি রুমে ধরফড়িয়ে চলে এলো তার বন্ধু আকবর। আজরাফ
সিংহের মত গজরিয়ে বলে,

“আকবর সত্যি করে বল ? দাদী যে মেয়েকে আমার জন্য বউ করে আনলেন। সে কি পাগলা গরাদের রোগী ছিল?”

জ*ল্লাদ বন্ধুর কথা শুনে আমতা আমতা করতে লাগল আকবর। আজরাফ দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলার পূর্বেই তার পিঠে ধরাম করে কে যেন মে*রে দিল। দু’জনে চমকে তাকায়। আজরাফ এর দাদী খাদিজা বেগম লাঠি ধরে দাঁড়িয়ে নাতির কর্মকাণ্ড পরখ করছিলেন। দাদীকে দেখে চোখ-মুখ কালো করে অভিমান মিশ্রিত গলায় বলে,

“এই তুমি ঠিক করলে না। নিজের জন্য পাগলী সতীন নিয়ে এলে। এটা কোনো কথা? জানো বাসর ঘরে ঢুকতেই ফুলদানি দিয়ে আঘাত করল। ভাবো ভবিষ্যতে তো আমার জীবন তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বে ঐ মেয়ে।”

“একদম ভালো হবে। ইচ্ছেকৃত তোর জন্য আমি ঐ মেয়েকে ধরে বেঁধে এনেছি। সারাদিন ব্যবসা সামলে বাসায় ফিরে কখনো নিজের দিকে খেয়াল করেছো ? একজন সঙ্গী না থাকলে জীবনটা আধমরা লাগলে-রে নাতি।”

“ব্যস দাদী প্লিজ ! তোমার ঐ সামান্য টাকার নাতবউকে আমার চোখের সামনে থেকে সরাও। আই সোয়্যার আই উইল কিল হার উয়েন আই সি হার এগেইন।”

আজরাফ এর কাঠিন্য মুখশ্রী দেখে দাদী আর আকবর চমকে গেল । আজরাফ এর কপালে ব্যান্ডেজ দেখে দু’জনে অবাক হয়েছে। ব্যাপার কি না বুঝতে পারলেও। এটুকু আন্দাজ করতে পারল রুমের ভেতরে নিশ্চিয় বড় কিছু ঘটেছে । দাদী বিনা বাক্য ব্যয় করে নাতির রুমের দিকে পা বাড়ায়। আকবর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাগে ধুপধাপ পা ফেলে বাহিরে চলে যায় সে। তার পেছনে গার্ড যেতে নিলেই আজরাফ তাদের কে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়। এ দেখে আকবর বিরক্ত চোখে তার পরিচিত গার্ডকে ঠিক দেয়। তার দিকে চেয়ে বলে,

“শোন ভাইয়া এখন রেগে বাহিরে যাচ্ছে। তার পেছনে গার্ড পাঠাও রাইট নাউ।”

“ইয়েস স্যার।”

দাদী খাদিজা বেগম নাতির রুমে এসে নাতবউ কে কোথাও না পেয়ে ভ্রু নেড়ে বারান্দায় গেলেন। দেখতে পেলেন , ছোট বাচ্চার মত নিজেকে চেপে ধরে বির বির করে কি যেনো প্রলেপ করে চলেছে নাতবউ। খানিক চিন্তিত হয়ে তিনি নাতবউ কে আদুরে কণ্ঠে ডাক দিয়ে উঠলেন।
“নাতবু শোনছো?”

দাদীর মোলায়েম কণ্ঠে মেয়েটি ছলছল চোখে তাকায়। নাতবউয়ের চোখে পানি দেখে তিনি ঠান্ডায় এগোতেই “আহহহ” করে মৃদু শব্দ করে উঠলেন। মেয়েটি দেখে কিছু একটা বুঝতে পেরে সে নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে, দাদীকে ধরে বিছানায় বসে নিজেও বসল। দাদী নাতবউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“কি গো নাতবু সোয়ামীর কপাল ফাটিয়ে দিলা কেন? কেউ তার সোহাগকে ওমনে মা*রে নাকি?”

মেয়েটি চিন্তিত ভঙ্গিতে দাদীর কথাগুলো মনে আওড়ায়। পরক্ষণে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে মৃদু চিৎকার করে উঠল। দাদীর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

“দাদী ঐ খচ্চরটা কি আমার সোয়ামী? কিন্তু সোয়ামী হলে এসেই কেন লাজলজ্জা ছাড়া শাড়ির আঁচল ধরে টানছিল? ছিঃ কেমন নাতি আপনার? আবার বলে আমাকে নাকি বউ বলে মানতে পারবে না। তার নাকি কোন না কোন প্রেমিকা
আছে তাই আমাকে ধরেই বিছানার নিচে এই …এই ঠান্ডা টাইলার্সের উপর ঘুমাতে বলছিল। আমি তাও মেনে নিতাম দাদী। কিন্তু পরে দেখি তিনি কোনো কথা ছাড়া আমার আঁচল জোরে টান দিচ্ছিল। তাই রাগে আমি ফুলদানি ছু*ড়ে দেয়। আমাকে মাফ করে দিও দাদী প্লিজ।”

দাদী অভিজ্ঞের ন্যায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। তবুও মনে মনে নাতির রাগ নিয়ে হতাশাবোধ করলেন। খুব কষ্টে বিয়েটা করিয়ে ছিলেন। কেননা নাতবউয়ের কথামত নাতি তার অন্য মেয়ের ফাঁদে পা ফেলেছে। নাহলে তার নাতি কখনো বাসর রাতে নিজ বউকে অপমান করতো না। নাজীবা দাদীকে নির্জীব ভাবে বসে থাকতে দেখে মনে মনে ভাবে।
“দাদীন কে জ্বলসানো হাত দেখানো যাবে না। নাহলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কথা নিয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলবে । তখন মানুষটা আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
মনের ভাবনা মনে রেখে জ্বলসানো হাতটা গুটিয়ে মলিন কণ্ঠে বলে,

“আইম সরি দাদী সোয়ামী আসলে তার কাছে মাফ চেয়ে নেব।”

“নারে নাতবু আমার নাতিটা সরল মনেরই। তবে….।”

বাকি কথা বলার পূর্বেই কারো উচ্চশব্দে দু’জনে চমকে যায়। নাতির গলার শব্দ শুনে বুঝতে পারে। সে রুমের দিকে আসছে। এতে তিনি নাতবউ কে কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। অন্যথায় স্বামীর রাগান্বিত মুখশ্রী দেখে যদি নাজীবা জ্ঞান হারায়। সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি মুখের উপর ঘোমটা আঁটসাঁট ভাবে টেনে নেয়। তার এই ভয়ের কারণ স্বামী যদি এসে তাকে তার রুমের মধ্যে দেখে রেগে যায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তখন তো তার দাদী শ্বাশুড়ির সামনে চ*ড় খেতে হবে। এই ভেবে ভয়ে ঘোমটার আড়ালে ঠোঁট চেপে ধরল।
আজরাফ কে তার গার্লফ্রেন্ড তাবাসসুম কল করে তার কান্নাকাটি শুনাচ্ছে। এতে বেশ বিরক্ত বোধ করলেও শান্ত মনে প্রেয়সীকে সামলানোর প্রচেষ্টা করছে সে। সেসময় দাদী আর তার বন্ধুর সাথে কথা শেষ করেই সে প্রেয়সীর নিকট ছুটে গিয়ে ছিল। কেননা কোনো এক মাধ্যমে তাবাসসুম তার বিয়ের খবর জেনে যায়‌। আর ঐ মাধ্যম কিসের? সেটা পরিপূর্ণ ভাবে বের করার সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আজরাফ। সে চেয়েছিল তার কাগজ-কলমের বউকে তার ভালোবাসার মানুষটির ব্যাপারে জানিয়ে সেপারেশনের ডিল করবে। কিন্তু মেজাজটাই গরম করে দিল পুরো কথা না শুনেই। টাইলার্সের উপর ঘুমাতে বলে মেয়েটার শাড়ির আঁচল বিছানার কোণা লেগে থাকতে দেখেছিল। তাই তো শুধু উপকার করতে আঁচল টান দেওয়ার পরই এই আজরাফ এর দিকে ফুলদানি ছু*ড়ে দিল। এর মজা সে হারে হারে বুঝাবে ঐ পাবনার পাগল মেয়ে-রে । মনের মধ্যে উত্তম পরিকল্পনা নিয়ে শয়তানি হাসল। রুমে ফিরে কাউকে না দেখে শান্তির শ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতেই ‘ঠাস’ করে নাকে বারি খেল। ‘উহহ উফ’ করে উঠল সে। নাক ডলেমলে দরজা খুলতে নিয়ে বুঝল, দরজা ভেতর থেকেই অফ করা। সেই সাথে ভেতর কোন মানবী থাকতে পারে তা নিয়ে নিশ্চিত সে। ধরাম করে দরজায় বিকট শব্দে লা*থি দিয়ে সে আলমারি খুলে তার পরণের ট্রাউজার আর টিশার্ট বের করল। দরজায় শব্দ হওয়ার ভয়ে চুপসে গেল নাজীবা। ঢোক গিলে তার পরণের উড়না দিয়ে ঘোমটা সমান মুখ থেকে নেয়। দরজা খুলে বের হতেই আজরাফ আক্রোশ ভরা গলায় বলে,

“এই মেয়ে শোনে রাখ। তুই আজকের রাতটুকু এখানেই থাকবি। কিন্তু পরেরদিন থেকে তোর জায়গা হবে উপর তলার বদ্ধ রুমে। তোর জন্য ঐ রুম খুলে , পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিতে বলব। তোর লাগেজের একটা কাপড়ও যেন আমার আলমারিতে না দেখি।”

নাজীবা মাথা নুইয়ে নিবিড় কণ্ঠে বলে,
“কেনো? এটা তো আমাদেরই রুম।”

“আমাদের রুম” শব্দ দুটির কারণে শান্ত দৃষ্টিতে আফরাজ ঘোমটা টানা রমণীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“হাতের ক্ষত কি বাড়াতে চাও? চাইলে বলো বাড়িয়ে দেয়।”

নাজীবা নুইয়ে গেল। আফরাজ তাচ্ছিল্যের হেসে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে। শুয়ার পাঁচ ছয়েক মিনিট পরই ক্লান্তির রেশে ঘুমিয়ে পড়ল। অথচ এক কোণায় অবহেলায় চোখের অশ্রু ফেলতে লাগল নাজীবা। জীবনটা বুঝি এরূপই বিভীষিকাময়। বিয়ের পর স্বামীর সোহাগের বিনিময়ে পেল অবহেলা, বোঝার উপাধি। কথাহীন স্বামী যে সাইডে ঘুমিয়ে আছে। তার দিকে ধীরস্থির পায়ে হেঁটে স্বামীর মুখশ্রীর উপর ঝুঁকল। নাজীবা নিজের ঘোমটা সরিয়ে স্বামীর মুখশ্রীর দিকে অপলক চেয়ে রইল। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি টেনে মনে মনে বলে,

“কি ভেবেছেন আপনি আমার শরীরে আঘাত করলে আমি বুঝি দূরে সরে যাবো? না-গো বহু সাধনার পর আপনার বউ হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কেমনে তা ব্যর্থ হতে দেয়? কিশোর বয়সের পাগলামীপনা প্রেম আমার। এমনেই কি তুড়ি বাজালে আপনার সো কলড গার্লফ্রেন্ড আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে? হাহ্ আমিও নাজীবা মুসাররাত। পাগলামীপনা শুরু হবে । সেই পাগলামীপনায় অতিষ্ঠ হয়ে আপনি নিজেই ভালোবেসে ফেলবেন আমায়। আই প্রমিজ ইট টু মাই স্লেফ।”

নাজীবা নিজের ভাবনায় নিজেই সন্তুষ্ট হয়ে আফরাজ এর নাকের উপর লাল রঙে রাঙানো ঠোঁট দিয়ে চুমু খেল। কিন্তু এতে যে তার ভেতরে লোভ জাগবে কে জানত? এক চুমু দিয়ে মন না ভরায় স্বামীর পুরো মুখশ্রীতে চুমু মেখে লেপ্টে দিল। পরক্ষণে কি ভেবে যেন সে চট জলদি হ্যান্ডব্যাগ হতে ফোন বের করে তার সুশ্রী স্বামীর লাল রাঙানো চুমুর ছবি নিয়ে রাখল। মোক্ষম সময়ে ছবিটিকে কাজে লাগাবে বলে ভেবে রাখল সে। গুনগুন করে আফরাজ এর রুম হতে বের হয়ে গেল। রুমের বাহিরে এসে দরজা ভিড়িয়ে এদিক ওদিক চেয়ে চটজলদি তার জন্যে বরাদ্দকৃত রুমে ঢুকে পড়ল। রুমটি আফরাজ এর রুমের বিপরীত দিকে মুখোমুখি রেডি করে রেখেছে তার দাদী শ্বাশুড়ি। সেসময় রুমে দাদীকে সেই অনুরোধ করে ছিল। যেন তার রুমটি স্বামীর রুমের মুখোমুখি রেডি করে রাখা হয়। খাদিজা বেগম মাথা নেড়ে আকবরকে খবরটি দিল।
সেও মনে মনে ভাবীর বুদ্ধিমত্তার তারিফ করল। রুমটি সজ্জিত করতে সাভেন্ট’স পাঠিয়ে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
নাজীবার অন্তর পুড়ছে ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও দূরে সরে থাকার যন্ত্রণায়। তবুও গন্তব্যের দিকে লক্ষ রেখে নিজেকে ধাতস্থ করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যায়।

______

“স্যার একটা ভুল হয়ে গিয়েছে।”

কাঁপা গলায় মেন্টাল হসপিটালের ডা.সিফাত হাসান বলেন। কথাটি শুনে রকিং চেয়ার হেলানো লোকটির মুখশ্রী হতে শান্তির রেশ কেটে গেল। সে রকিং চেয়ার থামিয়ে দিয়ে ধীরস্থির হয়ে বসে। গাম্ভীর্য কণ্ঠে বলে,

“ভনিতা আমি মোটেও পছন্দ করিনা। যা বলার সরাসরি বলুন।”

ডা.সিফাত হাসান ঢোক গিলে বলেন,

“স্যার বিগত এক সপ্তাহ ধরে মেয়েটিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ভেবেছিলাম হাসপাতালের ভেতরেই বোধহয় কোথাও লুকিয়ে ছিল মেয়েটি। কিন্তু পু…পু..পুরো হাসপাতাল খোঁজেও যখন পেলাম না। তখন আমি গোপনে লোক লাগিয়ে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু নিখোঁজই রইল সে।”

রকিং চেয়ারের হ্যান্ডেল শক্ত ধরে রাগে কাঁপতে লাগল লোকটি। হংকার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। ফোন কানে চেপে বি’শ্রী গালি দিয়ে বলে,

“শু*য়োরের বাচ্চা তোকে কত বার বলে ছিলাম মেয়েটিকে দেখে রাখতে। শা*লার নুনভাত খেয়ে এখন খবরটা শুনাচ্ছিস? ফোন রাখ কু*ত্তা*র বাচ্চা।”

ফোন রেখে তৎক্ষণাৎ লোকটি তার পিএ কে কল দিয়ে বলে,

“রিমন মেয়েটি পালিয়ে গেছে। এর শোধ তুল। শুন এত বছর যাবত যে ডা. তার জন্যে নিয়োজিত ছিল। তাকে ধরে পথের কাঁটা হিসেবে সরিয়ে দেয়। আশা করি কি করতে হবে ভালোই জানিস!”

“ইয়েস স্যার কাজটি আজকেই হয়ে যাবে।”

“আর শোন নিউজেও যেন খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। হেডলাইন আমি যা বলছি তাই যেন চাপানো হয়।
‘ডা.সিফাত হাসান যিনি কিনা মেন্টাল হাসপাতালের জনমান্য মানব তার দ্বারা এক পাগল মেয়ের রে*প হওয়ায় । অনুশোচনা বোধে তিনি নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।’
বুঝছিস?”

“অনেক ভালো ভাবেই স্যার।”

লোকটি ফোন রেখে পুনরায় শান্তি মনে রকিং চেয়ারে হেলান দিল। চোখ-মুখে গাম্ভীর্যতা রেখে বলতে লাগে,

“কি মনে করো মেয়ে? পালিয়ে কতদূর যাবে? তোমাকে ত্যাজ্য, কলঙ্কিত কেমনে বানানোর যায়? সেটা ভালোভাবেই আয়ত্তে আছে।”

হাহা করে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগল লোকটি।

_____

সূর্যের আলো রুমে পড়তেই আফরাজ এর ঘুম ফুরিয়ে গেল। আড়মোড়া হয়ে উঠে বসল। তার ফোনের বাটন চেপে দেখে তাবাসসুম পাঁচ-ছয়েক মেসেজ দিয়ে মেসেঞ্জার ভরিয়ে ফেলেছে। সে চিন্তিত মনে মেসেঞ্জারে চাপ দিয়ে দেখতে পেল। তাবাসসুম অহেতুক বিষয় টেনে তার নামে অবাঞ্চিত কথা লিখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে তাবাসসুম এর ফোনে কল লাগায়।
অন্যথায় তাবাসসুম তার ধনাঢ্য ক্লাইন্ট এর রুমে বস্ত্রহীন হওয়ার জন্য শাড়ির আঁচল ফেলে দিল। ব্লা’উ’জ এর বোতামে হাত দেওয়ার পূর্বেই তার ফোনে অসময়ে কল চলে আসায় বিরক্ত হলো। ক্লাইন্ট ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তাবাসসুম। জোরপূর্বক হেসে বলে,

“জাস্ট গিভ মি এ্যা ফাইভ মিনিট’স।”

ক্লাইন্ট মাথা নেড়ে বিরক্তসূচক তাবাসসুম কে ছেড়ে দিল। হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে চুমুক দিতে ব্যস্ত হলো। তাবাসসুম তড়িঘড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আফরাজ এর কল। ভয় পেয়ে গেল সে। যথারীতি নিজেকে সামলে সে ন্যাকা গলায় কান্নার ভান ধরে বলে,

“বাহ! জান বউয়ের জামরস খেয়ে বুঝি আমাকে মনে পড়ল? সারারাত তো ভালোই মজা লুটেছো। এখন কেন কল দিলে হ্যা? বলো কি হলো মুখে কথা নেই না এখন?”

“তাবাসসুম তুমি নিজেও জানো ! তুমি রাগ করায় তোমার রাগ ভাঙাতে হাফ টাইম তোমাকে দিয়ে ছিলাম। বাহিরে খাওয়ে, গিফ্ট কিনে দিয়েছি। তার পর যেয়ে তুমি খুশি হওয়ার পর তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আমি বাসায় ফিরলাম। বাসর রাতের হাফ টাইম আমি বউকেও দেয়নি । তোমাকেই দিয়ে ছিলাম। সেখানে তুমি বলছো আমি আমার ওয়াদা ভেঙ্গে বাসর করে কল দিলাম? সেইম অন ইউ তাবাসসুম। ইন লাভ হেয়ার মাস্ট বি নিডেড বিলিভনেস। দ্যাট আই কান্ট ফাউন্ড অন ইউ।”
টুট টুট টুট।”

ফোন কেটে আফরাজ দাঁড়িয়ে যায়। রাগে ফোন বেডের উপর ছু*ড়ে মে*রে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তার যে একটা বউ আছে। এই নিয়ে তার কোনোরুপ ভ্রুক্ষেপ নেই যেন। ব্রাশ করার সময় আয়নায় নিজের চেহারা দেখেই রাগ বেড়ে গেল তার। কেননা তার মুখশ্রীতে কোনো মেয়ের ঠোঁট বসানোর চিহ্ন স্পষ্ট লক্ষিত হচ্ছে। অসময়ে রাগ করে লাভ নেই ভেবে গোসলের জন্য ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে যায়।
গোসল সেরে ট্রাউজার পরে তোয়ালে গা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। বেডসাইড টেবিলে কফির মগ রাখা দেখে কফির মগটি হাতে নিল। এক হাতে মাথা মুছে আরেক হাতে যেই না কফির মুখে চুমুক দিল। সাথে সাথে রুম কাঁপিয়ে এক চিৎকার দিল আফরাজ।

চলবে……..

হৃদয়ের স্বন্ধিক্ষণ পর্ব-২২ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়ের_স্বন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ২২(অন্তিম পর্ব)
#ফারিহা_খান_নোরা

তানিয়া বেগমের ছোট বেলার বান্ধবী আশা বেগম।দুজনের বাড়ি এক‌ই গ্রামে। আশা বেগমের বিয়ের পর তানিয়া বেগমের সাথে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ থাকে না। পরবর্তীতে তানিয়া বিয়ের পর স্বামী নুরুল সাহেব এর সাথে শহরে আসলে এক সময় তানিয়ার সাথে আশার আগের মতো সম্পর্ক গড়ে উঠে।আশা তানিয়ার বাসায় যাতায়াত করত।তেমনি একদিন দুপুর বেলা আশা বেগম প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর বাড়িতে যায়। মেইন গেট না লাগিয়ে চাপিয়ে দেওয়া ছিলো যার ফলে তিনি খুব সহজেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন।আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে তিনি তানিয়া বেগমের রুমে যান। রুমের দরজা‌ও চাপিয়ে দেওয়া ছিলো।দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সামনে তাকিয়ে দেখে অ’ন্ত’র’ঙ্গ অবস্থায় তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী ও খালেদ মনোয়ার। তাঁরা‌ও তানিয়া বেগম কে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আশা বেগম তানিয়ার বিরুদ্ধে নোং’রা খেলা খেলেন।সেদিন দুজন মিলে তানিয়া কে মানিয়ে তার খাবারের মধ্যে হাই পাওয়ারের ঘুমের মেডিসিন দেন।এক পর্যায়ে চেতনা হারিয়ে ফেললে আশা তানিয়া বেগমের পোশাক অগোছালো করে খালেদ মনোয়ার এর সাথে অত্যন্ত ঘ’নি’ষ্ঠ ভাবে ছবি ও ভি’ডি’ও করেন।যা পরবর্তীতে আশা বেগমের জন্য তানিয়াকে ফাঁ’দে ফেলানোর একমাত্র অ’স্ত্র হয়ে উঠে।

নুরুল সাহেব এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে নিষ্প্রোভের দিকে তাকান। তাঁর চোখে ছিলো স্ত্রীর জন্য এক রাশ ঘৃণা।তিনি মুখ বিকৃতি করে হিসহিসিয়ে বলেন,

‘পৃথিবীতে হাতে গোনা কিছু মা থাকে যারা শুধুমাত্র নিজেদের দিকটা ভাবে আমার স্ত্রী তাঁদের মধ্যে একজন।সে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় ঢাকতে মেয়েকে আ’গু’নে ঠেলে দিতে চেয়েছিলো। একবার‌ও মনে হয় নি, এতে করে মেয়ের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। আমার স্ত্রী যদি এতো কিছু না করে আমায় সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলতো তাহলে আমি স্বামী হিসাবে তাকে অবশ্যই সার্পোট দিতাম।’

নুরুল ইসলামকে থামিয়ে দিয়ে নিষ্প্রভের অবাক সুরে বলে,

‘উনি যদি আপনাকে এসব না বলে থাকে তাহলে কে বলেছে এসব কাহিনী।’

‘খালেদ মনোয়ার! সরাসরি আমায় বলেন নি।বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীকে এসব বলে ক্ষমা চেয়েছেন বার বার। আমার লাক ভালো কি খারাপ তা বলতে পারবো না,তবে সে সময় আমি বাড়িতে আসলে তাঁদের সব কথা শুনে ফেলি।’

নুরুল সাহেব নির্লিপ্ত ভাবে কথা গুলো বলেন।গলার স্বর কিছুটা গম্ভীর করে আবার‌ও বলতে শুরু করেন,

‘তোমার ও তুরের বিয়েটা যেহেতু আমার স্ত্রীর হটকারী সিদ্ধান্তের ফল সেজন্য আমি চাই তুমি তুরকে ডিভোর্স দেও।এসব জানার পর আমি আমার স্ত্রীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারবো না, আর আমার মেয়েকে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারবো না।’

নিষ্প্রোভ হাসতে থাকে নুরুল সাহেব অবাক হয়ে যায়।তিনি তো কোনো জোকস বলছে না,যে সামনের ছেলেটা তার কথায় এভাবে হাসবে। নিষ্প্রোভ হাঁসি থামিয়ে সম্মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। হাস্যকর কন্ঠে বলে,

‘শশুড় বাবা আপনি এই বয়সে ব‌উ ছেড়ে থাকতেই পরবেন কিন্তু আমি এই বয়সে ব‌উ ছেড়ে থাকতে পারবো না। বুঝতেই পারছেন তো সব। সেজন্য বলছি আপনি আপনার ব‌উকে ছেড়ে দিবেন নাকি ধরে রাখবেন একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তবে আমি আমার ব‌উকে কিছুতেই ছাড়ছি না।’

নুরুল সাহেব হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে আছে।তার সামনে বসে থাকে ভদ্র ছেলেকে মুহূর্তের মধ্যেই নির্লজ্জের খেতাব দিয়ে ফেলেন। শশুর হয়ে প্রথম সাক্ষাতেই জামাই এর মুখে এমন কথা শুনে তিনি নিজেই লজ্জায় কথা বলতে পারছেন না।খ্যাক খ্যাক করে গলা পরিষ্কার করে নিলেন। মৃদু আওয়াজে ধ’ম’ক দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

‘ফাইজলামি রাখো আমি যা বলছি তাই করো।’

নিষ্প্রোভ এবার স্বাভাবিক মুখ করে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

‘বিয়ে করেছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য না।বিয়ে যেভাবেই হোক না কেন আমরা এখন স্বামী স্ত্রী।একে অপরের সাথে জড়িত। আমি আমার স্ত্রীকে কোনো মতেই ছাড়তে পারবো না। আপনি আমার স্ত্রীর বাবা হতে পারেন আমি আপনাকে যথেস্ট সম্মান করবো তবে এ ব্যাপারে আমি কাউকে মান্য করবো না।একটা সম্পর্ক ভে’ঙে ফেলা অনেক সহজ কিন্তু গড়া অনেক কঠিন। আমারা একটু একটু করে এই অনিশ্চিত সম্পর্ক গড়ে তুলছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। সর্বোপরি আপনার মেয়েকে ভালো রাখা ও সুখী করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার। আপনি এই দায়িত্ব থেকে আমায় অব্যাহত দিতে পারেন না।’

হঠাৎ করেই নুরুল ইসলাম চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে ও নিষ্প্রোভকে উঠিয়ে তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।এমন ব্যাবহারে নিষ্প্রোভ অবাক হয়ে যায়। তিনি নিষ্প্রোভের পিঠে কয়েক বার হাত দিয়ে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেন,

‘আমার মেয়ে একদম সঠিক মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। হঠাৎ বিয়ের কাহিনী জানার পর আমি এই সম্পর্ক মানতে পারছিলাম না। সেজন্য রে’গে যেয়ে এই সম্পর্ক থেকে মেয়েকে বের করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথায় এলো তুমি মানুষ হিসেবে কেমন একবার জানা উচিত।বেশ কয়দিন হলো আমি সবার অগোচরে তোমাকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছি আজ মনে হচ্ছে তুমি আমার মেয়ের জন্য একদম পারফেক্ট লাইফ পার্টনার।’

এরপর সেদিন নুরুল ইসলাম ও নিষ্প্রোভের মধ্যে বেশ কিছু কথা হয় যা কেউ জানে না।

সব কথা শুনে তুর বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।তার শরীরটা কেমন জেনো করছে।বুকের ভেতরটা ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে এমন হয়। নিষ্প্রোভ তুরের অবস্থা বুজতে পেরে তুরকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয়।তুর অসহায় কন্ঠে বলে,

‘মা আমার সাথে এমন করতে পারলো নিজের স্বার্থের জন্য আমার জীবণটা শেষ করে দিতেও পিছপা হয় নি। আমার নিজের প্রতিই ঘৃ’ণা হচ্ছে।কোন মায়ের গর্ভে আমি জন্ম নিয়েছি যে মা কিনা সব জেনেও আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল।’

নিষ্প্রোভ তুরকে ছেড়ে দিয়ে সে নিজেই তুরের কোলে মাথা গুঁজে দেয়। অকস্মাৎ এমন হ‌ওয়াই তুর কিছু না বুঝে নিষ্প্রোভের দিকে তাকিয়ে থাকে । নিষ্প্রোভ তুরকে শক্ত করে চেপে ধরে। যেন পিষে ফেলবে। বলে,

‘আমাকেই দেখো ছোট থেকে মায়ের আদর পাই নি। কারণ আমার মা ছোট রেখেই মা’রা গেছে।আর বাবা? তিনি তো থেকেও নেই।অতীতে আমাদের দুজনের লাইফে এমন কিছু হয়েছে যা সত্যিই অনেক কষ্টের।আগের এসব বাদ দিয়ে আমারা নিজেরা আমাদের সন্তানদের কাছে ভালো বাবা মা হবো তুর তুমি দেখে নিও।’

তুর আবেগে কেঁদে উঠে। কাঁদার সাথে শরীর কাঁপছে তার।সে ভাবে অল্প বয়সে মায়ের চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনি নিষ্প্রোভ তার উপর বাবার এমন ব্যাবহার।সে নিষ্প্রভের মাথায় হাত দিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,

‘হু আজ থেকে আমরা দুজন সব কিছু পিছনে ফেলে অনেক ভালো থাকবো।’

‘তোমার মাঝে জাদু আছে, তোমার কথায় জাদু আছে।তোমার স্পর্শে আমার এতো ভালো লাগে কেন?’

তুর নতমুখ আর তুলল না। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।নিষ্প্রোভ তুরের মুখ নিজের হাতে নিয়ে নরম স্বরে বলল,

‘বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও।উনি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।তিনি কোনো অন্যায় করেন নি।বাবা মা সম্মানের, আমি বলছি না, তুমি তোমার মাকে ক্ষমা করো তবে একটা কথা মাথায় রেখো তাদের দুজনের সাথে তুমি খারাপ ব্যাবহার করবে না।এতে করে আল্লাহ তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবে। আমি চাই না আমার স্ত্রী এমন করুক।’

সেইদিন তুর বাড়ির সবার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করে।তার বাবার সাথে আলাদা ভাবে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে।

________________

সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।যতো যা কিছু হোক না কেন,নিজ গতিতেই চলে। তেমনি কেটে গেছে আর একটি বছর।এই এক বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আফসান ও তাঁর আশা বেগমের চৌদ্দ বছরের জে’ল হয়েছে।এতেই শেষ নয়, আশা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এখন উল্টো পাল্টা কাজ কর্ম করছে।তুর ও নিষ্প্রোভ এখন চুটিয়ে সংসার করছে। নিষ্প্রোভ ভালো একটা জব পেয়েছে।সে আলাদা বাড়িতে শিফট করতে চেয়েছিলো কিন্তু তুর এই বয়সে তাঁর শশুরকে একা ফেলে যেতে রাজি না।সেজন্য তাদের আর যাওয়া হয় নি। নিষ্প্রোভের সাথে তার বাবার সম্পর্ক এখনো আগের মতো আছে।তবে নিষ্প্রভ তার বাবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না। নুরুল ইসলাম এই বয়সে স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারে নি। তানিয়া বেগম তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত।

আজ তুরের জন্মদিন সবাই একে একে ফোন করে তাকে উইশ করছে শুধু নিষ্প্রোভ‌ ই সবার থেকে পিছিয়ে আছে।তুর মন খা’রা’প করে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।একটু পর নিষ্প্রভ তুরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।তুর কোনো ভ্রূক্ষেপ করে না। নিষ্প্রোভ তুরকে সামনে টেনে নিজের কান ধরে বলে,

‘সরি ব‌উপাখি!’

তুর নিশ্চুপ। নিষ্প্রোভ তুরকে জড়িয়ে ধরে তুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে,

‘উইশ করি নি বলে আমার ব‌উ পাখিটার মন খা’রা’প? সে কি জানে আমার প্রতিটি মোনাজাতে তাঁর জন্য দোয়া সব সময় থাকে। আমি তোমার জন্মদিন উপলক্ষে কিছু পথচারী বাচ্চাদের আহারের ব্যাবস্থা করেছিলাম ব‌উ সেজন্য সময় পাই নি,গ্রামে নেটওয়ার্ক ছিলো না।সরি ব‌উপাখি!’

তুরের মন কিছুটা ভালো হয়ে যায়।সে আড়চোখে নিষ্প্রোভের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আমার গিফট!’

নিষ্প্রোভ পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে।একটা সিম্পেল চেইন বের করে তুরকে পড়িয়ে দিয়ে তুরের গলায় ঘনঘন কিস করতে থাকে।তুরের শরীরের অদ্ভুত শিহরণ জাগে,এই শিহরণের সাথে সে পরিচিত।তুর নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে নিষ্প্রোভকে বলে,

‘আপনি আমায় ডায়মন্ড উপহার দিয়েছেন। নিঃশব্দে ডায়মন্ড দামি তবে আমি আপনাকে সব থেকে দামি উপহার দিতে চাই যা সবকিছুর উর্ধ্বে।’

তুরের কথায় নিষ্প্রোভ ভ্রু কুঁচকে তুরের দিকে তাকায়।তুর একটু হেঁসে নিষ্প্রোভের ডান হাত নিয়ে তাঁর পেটে রেখে নিচু স্বরে বলে,

‘আপনার আর আমার সন্ধিক্ষণে আমাদের মাঝে কেউ আসতে চলেছে সাহেব।’

নিষ্প্রোভ আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। খুশিতে চিৎ’কা’র করে তুরকে কোলে তুলে বলে,

‘এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে #হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ এর জন্য ব‌উপাখি।’

ছোট বোনের সুখ ও ভরা সংসার দেখে তুরফা সবথেকে বেশি খুশি হয়। খুশিতে তার মন ভরে উঠে আর বারে বারে বলে উঠে,

তোদের #হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ এর সূত্রপাত আমার দ্বারা হয়েছে আমি চাই না এটা কেউ জানুক!

___________________সমাপ্ত________________

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-২০+২১

0

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ২০
#ফারিহা_খান_নোরা

আজ সন্ধ্যা থেকে আকাশ গুড়গুড় করছে। মুহূর্তেই আকাশ ভে’ঙে বৃষ্টি নামল।সময়টা শীতকাল,তুর বারান্দায় দাঁড়িয়ে অসময়ি বৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে।ছোটবেলা থেকেই তার বৃষ্টি ভালো লাগে। বৃষ্টি হলে স্কুল কামাই করা যেত খুব সহজেই।স্কুল কামাই দিয়ে সে দিনভর কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে যেত। ছোট বেলাটা কি সুন্দর ছিল,দুই বোন কতো খুনসুটি করতো।তুরফার কথা মনে পড়ে তুরের বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়।ও বাড়ির সবাই তাকে অবহেলা করছে তা না হলে তাঁর বাবা বেশ কয়দিন হলো বাড়িতে ফিরছে তবুও একটি বারের জন্যও তাঁর খোঁজ নেয় নি।সে অই বাড়ির সবার কাছে এতোটাই পর হয়ে গেছে।এসব ভেবে তুর মুখ ভার করে নিচে নেমে এসে দেখে সিতারা টিভি দেখছে।মেয়েটা সারাদিন টিভিতে বাংলা ছবি দেখে। অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে কখন সাকিব খান বের হয়ে ভিলেনদের শায়েস্তা করবে।মেয়েটার পছন্দের নায়ক শাকিব খান। তাঁর একটা ছবিও দেখা মিস করে না।হিরো ফা’ই’ট করলে সিতারা কখনো আগ্রহী হয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকবে আবার কখনো ঠোঁট গোল করে চেঁ’চি’য়ে বলবে,

‘ব্যাটাকে আরও মা’ই’র দেও ডিশুম ডিশুম করে।কতো বড় সাহস নায়িকা তুলে নিয়ে যায়।’

এই কথা গুলো বলার সাথে সাথে সে দুই হাত দিয়ে ঘু’ষি দেওয়ার এক্সপ্রেশন দেখায়। এই ব্যাপার গুলোর জন্য আশা বেগমের তো’পে’র মুখে পড়তো সে সব সময়।

বাড়িতে তুর আর সিতারা ছাড়া কেউ নেই। টিভিতে এখন বিজ্ঞাপন চলছে। সিতারা তুরকে লক্ষ করে মুখে হাঁসি নিয়ে উৎকণ্ঠার সুরে বলে,

‘নতুন ভাবি আমি ছবি দেহি। আপনে আহেন দুই জন এক লগে দেহি। আর মে’শা নায়িকারে তুইলা ল‌ইয়া গেছে পরে যে কি হয় হের লাইগা ব‌ইয়া আছি আর ইকটু হ‌ইলে শেষ হ‌ইবো তহন রাতের রান্না করমু।’

তুর সিতারার মুখের পানে তাকায়।ভাবে মেয়েটা কতো সরল কতো সহজেই খুশি হয়।শ্যামলা মুখটা মায়াই ভরা।সে ঠোঁটে মিষ্টি হাঁসির রেখা টেনে শান্ত কন্ঠে বলে,

‘সবার জন্য আজ আমি রান্না করবো। তুমি পুরোটা সময় টেলিভিশন দেখো সিতারা।’

সিতারা মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে বলে,

‘আচ্ছা ধন্যিবাদ নতুন ভাবি’

তুর রান্নাঘরের দিকে যায়।রাতের জন্য তুর খিচুড়ি রান্না করবে। যেহেতু বৃষ্টির সময় সাধারনত বাঙ্গালীরা এ সময়টা খিচুড়ি খেতে পছন্দ করে।এর আগেও তুর এই বাড়িতে খিচুড়ি রান্না করেছিলো কিন্তু আফসানের করা থার্ড ক্লাস কর্ম কান্ডের জন্য সেই খিচুড়ি আর পেটে পড়ে নি তাঁদের দু জনের।তুর জমপেশ খিচুড়ি রান্না করে যা দেখতে বেশ লোভনীয় লাগছে।খিচুড়ির সাথে বেগুন ভাজা, ইলিশ মাছ ভাজা‌ও করে। ইলিয়াস মির্জা একটু আগেই বাড়িতে ফিরেছে।এসে তুরের সাথে টুকটাক কথা বলে উপরে চলে যায়।তুর ডিনার সার্ভ করতে চাইলে তিনি ইতস্তত সুরে বলেন,

‘ছেলেটা ফিরলে আমায় ডেকে দিও ওর সাথেই খাবো।’

তুর লিভিং রুমে কিছুক্ষণ ওয়েট করে। এরমধ্যে কলিং বেল বেজে ওঠে।তুর দ্রুত পায়ে দরজা খুলে এক পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিষ্প্রভ বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে ফিরেছে।বৃষ্টির পানিতে জবুথবু ভেজা মানুষটাকে দেখে তৎক্ষণাৎ চোখ নামিয়ে সরে নেয় তুর। বৃষ্টির পানি সমস্ত শরীর ভিজে গিয়ে গা চুয়েচুয়ে এখন পানি ঝরছে নিষ্প্রভের ।ডান হাত দিয়ে নিষ্প্রভ নিজের মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে তুরের দিকে আড়চোখে তাকায়।তুরকে বেশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু কুঁচকে নেয়। আশাহত দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকিয়ে ফ্লোরে হাঁটু ঠেকিয়ে জুতার ফিতাগুলো খুলতে থাকে।এই ফাঁকে তুর তোয়ালে নিয়ে হাজির হয়ে।তোয়াল নিষ্প্রভের দিকে বাড়িয়ে বলল,

‘মাথা মুছে নিন।’

তোয়ালে ধরা হাতটায় চোখ বুলিয়ে আবারও জুতা খোলার দিকে মনোযোগ দিল। অভিমানী সুরে বলল,

‘লাগবে না।’

নিষ্প্রভ তুরের সাথে কোনো কথা না বলে, যেতে নিলে তুর ভাবুক কন্ঠে বলে,

‘আজ আপনার কিছু হয়েছে?’

নিষ্প্রভ পায়ের গতি কমিয়ে বলে,

‘কেন বলো তো?’

‘কোন আবার! এই যে কোনো কথা বলছেন না।আশার পরে থেকে কেমন অদ্ভুত ব্যাবহার করছেন।বাবা আপনার সাথে ডিনার করার জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছে। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসুন।’

নিষ্প্রভ এবার তুরের একটু কাছে চলে এসে তাচ্ছিল্য পূর্ণ কন্ঠে বলে,

‘সবার কথায় ভাবো শুধু আমার কথা ছাড়া।’

নিষ্প্রভ প্রস্থান করে তুর তাঁর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ পরে দুষ্টু হাসি দিয়ে বিরবির করে বলে,

‘আমাকে অনেক জ্বালিয়েছেন সাহেব কিছুক্ষণ একটু নিজে জ্বলুন।’

_________________

টেবিলে খাবার সার্ভ করছে তুর।দুই বাবা ছেলে কোনো কথা না বলে রোবটের মতো খেতে শুরু করে। ইলিয়াস মির্জা আদেশের সুরে বললেন,

‘তুমিও আমাদের সাথে খেতে বসে যাও মা।বলেছিলাম না আজ সবাই একসাথে খাবো?’

তুরের আজ একটু তাড়া আছে যার জন্য সেও না করে নি। ইলিয়াস মির্জা তুরের রান্নার বেশ প্রশংসা করলেও নিষ্প্রভ স্থির ভাবে খেতেই আছে তাঁর মুখে কোনো কথা নেই।খাবার পর্ব শেষে ইলিয়াস মির্জা নিষ্প্রভকে অনুরোধ করে,

‘কথা আছে বাবা লিভিং রুমে একটু অপেক্ষা কর।’

এই সুযোগে তুর চট করে সব গুছিয়ে রেখে রুমে চলে আসে। সাহেবের মন খা’রা’পে’র কারণ সে শুরুতেই বুঝতে পেরেছে তবুও না,বোঝার মতো করে ছিলো এতোক্ষণ।নিষ্প্রভের আলমারি থেকে শপিং ব্যাগটা বের করে।ব্যাগ থেকে একটা মেরুন রঙের কাতান শাড়ি বেরিয়ে আসে।শাড়িটা দুই পাশে গোল্ডেন জরি দিয়ে সুক্ষ্ম কাজ করা যা খুব সহজেই মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে।তুর চটপট শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেয়।চুল আঁচড়ে ছেড়ে দেয়,চোখে হালকা কাজল দেয় আর ঠোঁটে মেরুন রঙেরই লিপস্টিক দিয়ে তার চিকন পাতলা ঠোঁট‌ রাঙিয়ে নেয়।আয়নায় নিজের আদল দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায় তুর।এখন শুধু সাহেবের আশার অপেক্ষা।

___________________

‘বাড়িতে গাড়ি আছে বাবা।গাড়ি থাকতে এভাবে কেন ভিজে এসেছিস তুই?’

নিষ্প্রভ সোফায় বসে সামনে সেন্টার টেবিলে রাখা শো পিস এর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যপূর্ণ কন্ঠে বলে,

‘এর আগেও বহুবার এভাবেই এসেছি তখন তো একবারও এমন কথা বলেন নি?’

ইলিয়াস মির্জা অ’প’রা’ধী সুরে নিষ্প্রভকে বলে,

‘আমার মস্ত বড় ভু’ল হয়ে গেছে বাবা।তুই আমায় ক্ষমা করে দে।আমি সত্যি অন্ধ হয়ে ছিলাম।’

নিষ্প্রভ এবার একটু জোরেই হেঁসে ফেলে। ঠোঁটে মৃদু হাঁসির ছটা টেনে বলে,

‘ফিরিয়ে দিতে পারবেন আমার ছোটবেলাটা? মুছিয়ে দিতে পারবে আমার‌ দুর্বিসহ অতীত।ভুলিয়ে দিতে পারবেন আমার প্রতি করা আপনার সুন্দর অল্পবয়সী স্ত্রীর করা সমস্ত অ’ত্যা’চা’র? পারবেন না,তাই এসব কথা আমার সামনে আর কখনো বলতে আসবেন না।’

ইলিয়াস মির্জার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। তবুও আকুতির সুরে বললেন,

‘আমি বড় অন্যায় করে ফেলেছি তোর সাথে।জানি এর কোনো ক্ষমা নেই। তোকে আর কখনো বলবো না, আমায় ক্ষমা করতে। কিন্তু তুই আর অন্যের অধীনে চাকুরী করিস না।এই সমস্ত ব্যাবসা আর আমার যা কিছু আছে সব তোর।এখন ব‌উ হয়েছে তাঁর ওর ভরোণ পোষণের সমস্ত দায়িত্ব তোর উপর।তুই ব্যাবসার হাল ধর বাবা।’

নিষ্প্রভ অবজ্ঞার সুরে বলে,

‘এতো দিন না জানতাম? এই ব্যাবসা এই বাড়ি সব আফসানের তাহলে আজ কেন আমার হচ্ছে? আপনি বরং একটা কাজ করুণ এই সমস্ত কিছু আফসান ও আপনার শখের ব‌উকে লিখিয়ে দিন। লিখিয়ে দেওয়ার আগে বলবেন আমি আমার ব‌উকে নিয়ে এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।’

নিষ্প্রোভ এক নাগাড়ে এসব বলে গটগট পায়ে উপরে যেতে নেয় একটু পিছনে ফিরে সুক্ষ্ম কায়দায় বলল,

‘আমার ব‌উকে আমি এমন বিলাসীতায় রাখব না।যে বিলাসীতা পেলে অন্য পুরুষের কাছে যেতেও দুই দন্ড ভাববে না।’

ইলিয়াস মির্জার কলিজায় খচ করে উঠে কথাটি।নিজেকে কাপুরুষের সমতুল্য মনে হচ্ছে।

______________________

নিষ্প্রোভ রুমে চলে আসে।ভেতরে ভেতরে রে’গে ফেটে প’ড়ে সে।প্রথমতো তুর তাকে আগ্রহ করেছে, দ্বিতীয় ইলিয়াস মির্জার এসব অবান্তর কথা তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।খুব তো ব‌উয়ের আঁচলা ধরে থাকতেন।ব‌উ তো এখন জে’লে, সেখানে গেলেই হয়। এতোদিনে মনে পড়লো তাঁর ছেলের কথা।শা’লার দুনিয়াটার স্বার্থপর এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকিয়ে মোমের আলোয় মায়াবতীকে দেখে থমকে যায় নিষ্প্রভ। নেশাগ্রস্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুরুষালী হরমোন শিরশির করে জানান দিচ্ছে।এই মেয়েটার কাছে এলেই কেন সমস্ত কিছু ভুলতে বসে নিষ্প্রভ?

মোহগ্রস্ত নয়নে বিছানায় তুরের পাশে যেয়ে বসে নিষ্প্রভ।তার মুখে কোনো কথা নেই তবে চোখর দৃষ্টি দিয়ে তুরকে ঘায়েল করে।তুরের মাথা টা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ে নিষ্প্রভ।এতোদিন একসাথে ঘুমালেও আজকের অনুভূতি তীব্র। দুজনের মাঝে তেমন দূরত্ব নেই বললেই চলে। নিষ্প্রোভ তুরের পিঠে এক হাত রাখে অন্য হাত তার মাথা বুলিয়ে দিতে দিতে নরম গলায় বলে,

‘তুমি আমায় ক্ষমা করেছো?’

‘হু।’

‘তুমি আমাকে নিজের করে চাও না?’

কন্ঠনালী রোধ হয়ে আসে তুরের। নিষ্প্রোভ আরও খানিকটা তুরকে জড়িয়ে ধরে। এতোদিনের জমে থাকা দূরত্ব ঘুচতে থাকে।তুর আবেগী হয়ে উত্তর দেয়,

‘আমি আপনাকে নিজের করে চাই নিষ্প্রভ।একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ঠিক যেমন করে পেয়ে থাকে।’

হাসি বিস্তৃত হয় নিষ্প্রভের। সে গায়ের টি-শার্ট খুলে ফেলে। অবাধ্য হাতে ছুঁয়ে দেয় স্বীয় স্ত্রীর শরীরের প্রতিটি জায়গা,এক চিলতেও খালি রাখে না। শরীরের সমস্ত ভার তুরের উপর দিয়ে অজস্র চুমু দিতে থাকে মুখে, গলায়, বুকে বিশেষ করে বুকের একটু নিচে তিলটাই। চুম্বন গুলো ধীরে ধীরে কা’ম’ড়ে পরিণত হয়।রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে যায় পূর্ণতা।বেসামাল মানুষটার স্পর্শ অজানা আনন্দ দেয় তুরকে।আজানা সুখে হারিয়ে যায় সে দুই হাত দিয়ে নিষ্প্রভের পিঠ খামচে ধরে তুর।ক্ষনে ক্ষনে গুঙ্গিয়ে উঠে সে।তার ঠোঁট দুটো নিষ্প্রভের দখলে।তুরের চোখের কার্নিশ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু নির্গত হয়।যা ছিলো সুখের অশ্রু।তবুও প্রথমবার কাছাকাছি আসায় তুরের অবস্থা বেশ নাজুক।এক সময় তুর নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।

চলমান।

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ২১
#ফারিহা_খান_নোরা

নব্য দিনের সূচনা! চারিদিক আজানের সুমধুর ধ্বনি।আকাশে এখনো কিছু তারা ঝিকমিক করছে।আর কিছু সময় পরেই হয়তো পুরো আকাশ জুড়ে সূর্যের একচেটিয়া দাপটে চারিদিকে আলোকিত হয়ে যাবে।আজানের ধ্বনিতে নিষ্প্রভের ঘুম ভেঙে যায়। শরীরের উপরে ভারী কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। নিষ্প্রোভের ঠোঁট জুড়ে হাঁসির রেখা ফুটে উঠে।আজকের ভোরটা তাঁর জন্য স্পেশাল কারণ তাঁর বুকে মাথা রেখে অঘোরে ঘুমাচ্ছে তার‌ই অর্ধাঙ্গিনী। নিষ্প্রোভ তার খসখসে ঠোঁট বাড়িয়ে অর্ধাঙ্গিনীর ললাটে স্পর্শ করে।সেই স্পর্শে তুর একটু নড়েচড়ে উঠে আবার‌ও চুপ হয়ে যায় তবে তার দুই হাত দ্বারা আবদ্ধ নিষ্প্রভ।নিষ্প্রভ তুরের মাথায় হাত দেয়,সময় নষ্ট না করে কন্ঠ একটু নিচু করে বলে,

‘ব‌উ উঠো।’

তুরের কোনো সাড়া শব্দ নেই।এবার কন্ঠটা একটু বাড়িয়ে ডাক দিলে তুর নড়েচড়ে উঠে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,

‘মাত্র‌ই ঘুমালাম এভাবে ডাকছেন কেন ঘুমাতে দেন।’

তুর মি’থ্যে কিছু বলে নি, তাঁরা মাত্র দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে। কিন্তু এখন ঘুমানো চলবে না কারণ নামাজের সময় নামাজ পড়তে হবে। নিষ্প্রোভ তুরের মাথা দুই হাত দিয়ে একটু উঁচু করে। আবছা আলোয় অর্ধাঙ্গিনীর ঘুমে আচ্ছন্ন বন্ধ চোখের দিয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে,

‘এখন উঠতে হবে।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিও বাঁধা দিবো না।’

এই ভোর বেলায় শান্তির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় তুর বিরক্ত হয়ে বিরবির করে কিছু বলে যা নিষ্প্রভের কান অবধি পৌঁছাতে পারে না।তুর দ্রুত গতিতে নিষ্প্রভের উপর থেকে উঠতে নেয় কিন্তু অদ্ভুত এক যন্ত্রনায় থামকে যায়।মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে আসে,

‘উহু!’

নিষ্প্রোভ ঘা’ব’ড়ে যায়।শোয়া থেকে উঠে বসে তুরের দুই কাঁধে হাত দিয়ে হালকা ঝাঁকিয়ে উত্তেজিত সুরে বলে,

‘কি সমস্যা, ঠিক আছো তুমি??’

তুর নিজেকে ধাতস্থ করে প্রসঙ্গ পাল্টে কটমট চোখে নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এই সকাল বেলা উঠাই বড় সমস্যা।এমনি ঘুমাতে পারি নি, তাঁর মধ্যে ডাকা ডাকি শুরু করছেন ভালো লাগে না।’

নিষ্প্রোভ দুষ্টু চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ঘুমাতে পারো নি কেন?’

তুর লজ্জায় পড়ে যায়। ঠোঁট বিরবির করে বলে,

‘নির্লজ্জ লোক ঘুমাতে পারো নি কেন! ঘুমাতে দিয়েছেন আপনি?’

বিরবির করে বলা তুরের এমন কথা শুনে নিষ্প্রভ ঠোঁট কামড়ে হাসে।তুর বিরক্ত হয়ে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই অপরিচিত ব্যা’থা জাগ্রত হয়।তুর আবারও কু’কি’য়ে উঠলে নিষ্প্রভ তুরকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যায়।তুর বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে নিষ্প্রোভ তাঁর চোখ দুটো ছোট করে নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

‘হুস কোনো কথা না।’

____________________

ইলিয়াস মির্জা লিভিং রুমে বসে আছে। উনার সকালের নাস্তা সিতারা বানিয়ে দিয়েছে।তিনি অচেতন মনে কিছু ভাবতে ভাবতে চোখের সামনে ওয়ালে শোভা পাওয়া ঘড়িটার দিকে তাকলে ঘড়ির কাঁটা তাকে বুঝিয়ে দেয় এখন বেলা দশটা।ছেলে ও ছেলের ব‌উকে আজ প্রতিদিনের মতো নিচে দেখতে পেলেন না।তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে,ছেলে মেয়ে দুটোর শরীর ঠিক আছে কিনা।যদিও তাঁর নিজের‌ই শরীর ঠিক নেয়। কয়দিনে তার উপর দিয়ে যেসব যাচ্ছে এতে করে তাঁর শরীর মন কোনোটাই নিতে পারছে না।

ফজর নামায আদায় করে নিষ্প্রোভ ও তুর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। নিষ্প্রোভের ফোনে কল আসালে সে তড়িঘড়ি করে বারান্দায় চলে যায়।তুর আড়চোখে নিষ্প্রোভ কে লক্ষ্য করে উঠে পড়ে।ইশ ঘুম দিয়ে শরীরটা তাঁর বেশ ঝরঝরে লাগছে।কথা বলা হয়ে গেলে নিষ্প্রোভ ফোন রেখে শিথিল ও আদলে উচ্ছুক চোখে তাকিয়ে থাকা স্ত্রীর পানে দৃষ্টি রেখে শীতল কন্ঠে বলে,

‘তোমার শরীর এখন কেমন! কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?’

‘না!’

তুর নরম কন্ঠে জবাব দেয়। নিষ্প্রোভ তুরকে বলে,

‘তাহলে ধীরে সুস্থে রেডি হয়ে নেও।আমরা এক জায়গায় যাবো।’

তুর অবাক চোখে তাকিয়ে নিষ্প্রোভের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

‘এভাবে হঠাৎ করে কোথায় যাবো আমরা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি?’

‘সে না হয় গেলেই বুঝতে পারবে।’

বলেই নিষ্প্রভ তুরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়।তুর বিস্ময়কর দৃষ্টিতে নিষ্প্রোভের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
__________________________

রয়েল ব্লু কাতান শাড়ি পরিহিত তুর বাইকের পিছনে নিষ্প্রোভের কাঁধে হাত দিয়ে বসে রয়েছে। তাঁর শরীরে নিষ্প্রোভের মায়ের স্বর্নের গহনা শোভা পাচ্ছে।আজ সকালে নিষ্প্রোভ এগুলো বের করে নিজ দায়িত্বে তুরকে পরিয়ে দিয়েছে। নিষ্প্রোভ লুকিং গ্লাসে এমন পরমা সুন্দরীকে দেখে ক্ষনে ক্ষনে তার মাথা ঝিমঝিম করছে।হৃদয়ের বাঁক জুড়ে রঙিন প্রজাপতিরা উড়ছে। নিষ্প্রোভ নিজেকে স্বাভাবিক করে গাল ফুলিয়ে উৎসাহের সহিত তাকিয়ে থাকা স্ত্রীর কে শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে,

‘কি ম্যাডাম রাস্তা কি চেনা চেনা লাগছে?’

নিজের জন্মের সূত্রপাত যে জায়গা থেকে শুরু তুর সেইটা চিনবে না,তা কি করে হয়? নিষ্প্রোভ বাইক থামালে তুর নেমে পড়ে।তুরের সুগভীর কণ্ঠটা বেজায় ক্ষি’প্ত হয়ে যথাসম্ভব কাট কাট ভঙ্গিতে বলে,

‘আপনি আমার সাথে এইটা ঠিক করলেন না? আমি আপনার কাছে এতোটাই বেশি হয়ে গেছি যে, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে না জানিয়ে এই বাড়িতে নিয়ে আসলেন।’

নিষ্প্রোভ তুরের কাঁধ তাঁর বাম হাত বাড়িয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে,

‘আমার ব‌উ আমার কাছে বেশি হবে কেন? তুমি আমায় ভুল বুঝছো জান। আমি কারণ ছাড়া নিশ্চয়ই তোমায় এখানে নিয়ে আসি নি।’

তুর রা’গে গজগজ করতে থাকে। নিষ্প্রোভ এক হাতে ফল, মিষ্টি, খাবারে ব্যাগ নেয় ও অন্য হাতে তুরের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে এগিয়ে যায় জীবনের প্রথম বার শশুড় বাড়ি নামক গৃহে।

____________________

তুরদের বাড়িতে সবাই কাজে ব্যাস্ত। রান্না ঘর থেকে খাবারের গন্ধ সারা বাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে।মেয়ে জামাই সহ আসছে বলে কথা। নুরুল সাহেব নিজ হাতে বাজার করেছেন একটুও কার্পন্য করেন নি।রান্নার দিকটা তানিয়া বেগম ও তুরফা দেখছে।দূর্বা মেয়েটা সারাদিন খায় ও বাঁদরের মতো ছুটাছুটি করে।কোনো সময় এক জায়গায় থাকে না।এ নিয়ে নুরুল সাহেব মুখ না খুললেও তানিয়া বেগম বেশ চ’টে যায়।যার ফলে ছেলের সাথে এক সময় ঝ’গ’ড়া হয়।তুররা এই বাড়িতে আসছে তা নিষ্প্রোভ ও নুরুল সাহেব ছাড়া কেউ জানে না।

দরজা দিকে তুর ও নিষ্প্রোভকে ভিতরে আসতে দেখে নুরুল সাহেব বাদে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তুরফার মনে ভরে যায় তুরকে এই অবস্থায় দেখে। তানিয়া বেগম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ছোট মেয়ের পানে। চোখের কোনে জল চিক চিক করছে।এই মেয়েটার সাথে কতো বড় অন্যায় করতে চেয়েছিলেন সে। সেইদিন যদি আফসানের সাথে বিয়েটা হতো তাহলে মেয়ের জীবন পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যেতো। তানিয়া বেগম মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।দূর্বা পাশে থেকে তুষারের হাত ধরে কানের কাছে যেয়ে বলে,

‘স্বামী এইটা কি আপনার ছোট বোন?’

তুষার চোখ মুখ ক’ঠি’ন করে আস্তে ধ’ম’ক দিয়ে বলে,

‘এই তোমায় কতো বার বলছি সবার সামনে এভাবে আমাকে স্বামী স্বামী বলবে না।’

দূর্বা ভাবুক কন্ঠে বলে,

‘আপনি ভুল করছেন স্বামী। আমি সবার সামনে বলি নি।সবার পিছনে আপনাকে বলছি স্বামী।দেখেন সবাই সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমরা‌ই সবার পিছনে।’

তুষার কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে দূর্বার দিকে।দূর্ব ঢুক গিলে উৎসাহ নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নুরুল সাহেব তুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তুরকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

‘কেমন আছিস মা?’

তুর অভিমান সুরে বলে,

‘তোমাদের না জানলেও চলবে। আমি কি তোমাদের নিজের মেয়ে বলো? নিজের মেয়ে হলে আমার সাথে তোমরা এমন করতে পারতে না।একজন তো নাটক করে আমার পুরো জীবণটাই নাট্যশালা করে দিয়েছে আর তুমি সব জেনেও এতোদিন আমার এক বারও খোঁজ নিয়েছো বাবা?’

নুরুল ইসলাম মেয়ের অভিমান বুজতে পেরে তুরের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

‘মা আমার কথা শোন….!’

তুর কিছু বলতে না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে তাঁর রুমে চলে যায়।এতো দিন পর রুমে এসে ফ্লোরে বসে কান্নায় ভেঙে পরে। নুরুল সাহেব বিচলিত হয়ে মেয়ের পিছনে আসতে নিলে নিষ্প্রোভ বাঁধা দিয়ে বলে,

‘বাবা আপনি থাকেন আমি দেখছি।’

নিষ্প্রোভ রুমে এসে দেখে তুরের এই অবস্থা।সে এগিয়ে যেয়ে তুরের কাঁধে হাত দিলে তুর এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে বলে,

‘চলে যান আপনি।আপনারা সবাই এক,কি পেয়েছেন আমার সাথে।আমার ইচ্ছের কি কোনো দাম আছে আপনাদের কাছে? একজন ধরে বেঁধে নাটক করে বিয়ে দের আর বাবা তিনি এতোদিন আমার খোঁজ নিয়েছে একবার ও? আর আপনি আজ আমায় না জানিয়ে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন।’

‘বললে তুমি আসতে না।’

তুর রে’গে বলে,

‘কেন আপনার কাছে কি বেশি হয়ে গেছি যে,এখানে নিয়ে আসলেন একবারের জন্য নাকি?’

নিষ্প্রোভ এবার তুরকে ধ’ম’ক দিয়ে বলে,

‘তুর তুমি কিন্তু কিছু না শুনে যা মুখে আসছে তাই বলছো।বাবার সাথেও ওমন ব্যাবহার করলে।এসব আমি তোমার দ্বারা আশা করি না।’

তুর তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে,

‘এখন আশা করেন।আর কি জেনো বলছিলেন বাবার সাথে? আপনি আপনার বাবার সাথে কি ব্যাবহার করেন তা কিন্তু আমি দেখেছি।’

নিষ্প্রোভ নিজেকে সামলিয়ে বলে,

‘দেখো তুর আমার বাবা আর তোমার বাবার মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। আমার বাবা ছোট থেকে আমার সাথে অন্যায় করেছে।আর তোমার বাবা কি করেছে বল?’

তুর চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘উনি এতোদিনেও আমার খোঁজ নেন নি।’

নিষ্প্রোভ আস্তে করে সম্রন্ত্র সুরে বলল,

‘কে বলল উনি খোঁজ নেয় নি? আজ থেকে এক সপ্তাহ আগে আমার অফিস টাইমে গার্ড এসে বলে আমার সাথে একজন ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছে। আমি অবাক হয়ে যাই আমার সাথে আবার এই অফিসে কে দেখা করবে।আগ্রহ নিয়ে নিচে যেয়ে দেখি মধ্য বয়সী একজন ভদ্রলোক যাকে আমি চিনি না,বা আগে কখনো দেখি নি। ভদ্রলোক আমায় বললেন আমি নিষ্প্রভ কি না। আমি হ্যা সূচক উত্তর দিলে তিনি বলেন,

‘আমি তোমার বাবার বয়সী কিছু মনে না করলে তোমার সাথে পাশের রেস্টুরেন্টে এক মগ কফি খেতে চাই।’

নিষ্প্রোভ অবাক হয়ে যায় পুরো ঘটনা ভালো করে বুজতে রাজিও হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে যেয়ে কফির অর্ডার দিয়ে দুজন বসে পড়ে। লোকটি গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বলে,

‘আমি নুরুল ইসলাম তুরের বাবা।’

‘নিষ্প্রোভ বিচলিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে এভাবে তুরের বাবা তাঁর সামনে কেন?’

নুরুল ইসলাম কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,

‘কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।বসে পড় ইয়াং ম্যান।’

নিষ্প্রোভ কোনো কথা না বলে বসে পড়ে।চুপচাপ অবস্থায় কফিতে চুমুক দেয়। নুরুল সাহেব স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

‘তুরকে আমি আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই।মানে আমি চাই আমার মেয়ে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুক।’

এইটুকু কথা শুনে তুর নিষ্প্রভের কাধ ঝাঁকিয়ে বলে,

‘ওহ আচ্ছা এই জন্য আপনি আমায় এখানে একবারে রেখে যেতে এসেছেন! আমি শুরুতেই বুজতে পেরেছিলাম।’

নিষ্প্রোভ তুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে হাস্যকর ভাবে বলে,

‘এজন্য কি লোকে বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে।আগে পুরো কথাটা তো শুনবে।’

তুর রে’গে বলে,

‘তা আপনার তো বুদ্ধি হাঁটুর উপরে। হাঁটুর উপরে বুদ্ধি নিয়ে এখন দয়াকরে সব খুলে বলুন।’

নিষ্প্রোভ হেঁসে একে একে বলতে শুরু করে।এরপরে নিষ্প্রোভ যা বলে তা শুনে তুর স্তব্ধ হয়ে যায়।

চলমান।