Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 324



অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-২৪+২৫

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৪

“প্লিজ দাদু আমাকে ছেড়ে দিন। আমার শরীরে শক্তি নেই। ইন’জেক’শন দিয়েন না। প্লিজ ছেড়ে দিন।”

“আইম সরি দাদুভাই। বিয়ে তো করতে হবে নাকি? তোমাকে প্রিপার করার জন্য এই ইন’জেক’শন দিচ্ছি। যাতে তুমি নিজে সাজুগুজু করতে পারো। আমার প্রিয় দাদুভাই‌। চলো চলো হাত এগিয়ে দাও। এই তোরা কি দেখছিস? আমার দাদুভাই এর হাত ধর। একটুও ব্যথা লাগবে না দাদুভাই‌। এখনি সব ব্যথা দূর হয়ে যাবে।”

কথাটি বলে দাহাব এহসান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভাড়াটে লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন। লোকটি ইঙ্গিত বুঝতে পেরে নাজীবার হাত চেপে ধরে। দাহাব এহসান নাতনীর কোমল হাতের কব্জিতে চুমু দেয়। নাজীবার শরীর ঘৃণায় গলিয়ে এলো। হাত সরাতে নিয়েও পারল না। তার শরীরে মা’রধর এর চিহ্ন। বিধেয় দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নাজীবার শরীরে ইন’জেক’শন চুবিয়ে দেয়। আস্তে ধীরে নাজীবা নেতিয়ে পড়ে। কান্নায় ফুঁপালেও এখন সেই শব্দ অব্দি নেই। দাহাব এহসান তার ভাড়াটে লোকদের বের হতে বললেন। তারা যেতেই কামনার দৃষ্টিতে নাজীবার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তোর জামাই বাজপাখির মত বেশি পাখা ঝাপটা ছিল? সেই পাখা কেটে দেওয়ার জন্যেই এই ব্যবস্থা। তোর সেন্স ফিরলে আমার হাতের পুতুলের মত নাচ নাচবি। তখন মজা আসবে তোর জামাই তোর আর আমার বিয়ের কার্যক্রম দেখে যে কষ্টটা পাবে তাতেই আমি খুশি হবো। খুব বেশি পিছে লাগতে আসছিলো আমার। একদম কলার টেনে পায়ের নিচে না ফেললে আমার নামও দাহাব এহসান না।”

দাহাব এহসান নাজীবার দিকে একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।

অন্যথায়, আফরাজ পরিবার সমেত খাদিজা বেগম এর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টাখানেক আগেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছিল। কুসুমার অবস্থা তো ম’রম’রা। একে তো প্রেগন্যান্ট তার উপর মানসিক আঘাতে বিধ্বস্ত। পরিবারের অতীব প্রিয় মানুষটি চলে গেল। যার রেশ যেনো তাদের মস্তিষ্ক কে অচল করে রেখেছে। আফরাজ দাফনের কাজ করার সময় থেকেই নিশ্চুপ হয়ে আছে‌। আকবর এর মনে নাকিব মুনসিফ কে নিয়ে প্রশ্নের ছড়াছড়ি চলছে। তবুও পরিস্থিতির সাপেক্ষে চুপ করে রইল। আফরাজ এর বাবার অবস্থা কাহিল। ঘুম থেকে জাগলেই মায়ের কবরের কাছে ছুটে আসেন। মিসেস ফেরদৌসী খুব কষ্টে স্বামী-কে সামলাচ্ছেন। সকাল থেকে একবারো চোখজোড়া বন্ধ করতে পারেননি। পারবেনও কেমনে প্রথমে আফরাজ এর চিন্তা, তার পর নাজীবা,শ্বাশুড়ি আর এখন স্বামীর চিন্তায় মশগুল। চোখও বোধহয় ব্যথা করছে। মিসেস ফেরদৌসী তপ্ত বেদনাময় শ্বাস ছেড়ে আরেক মগ কফি খেলেন। কিন্তু চোখজোড়া বন্ধ না করে পারলেন না। স্বামীর পাশে বালিশে মাথা রাখতেই হাজারো ক্লান্তির রেশে ঘুমিয়ে পড়লেন। তিনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরপরই রুমে আফরাজ এলো। বাবার বিধ্বস্ত মুখশ্রীর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে রইলো। চোখজোড়া থেকে দু’ফুটো পানি পড়ল বোধহয়। প্রতিবার তার বাবা শোকাহত অবস্থায় যে পাগলামীপনা করেন তার জন্য সে বাবাকে ঘুমের ইন’জেক’শন দিয়ে দেয়। কি করবে তা ছাড়া অন্য উপায় তো নেই যে শান্তি করতে পারবে! বারংবার থামালে মা’রতে হাত উঠিয়ে নেন জনাব ইসমাইল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা-মায়ের রুমের দরজা ভিড়িয়ে লাইব্রেরী রুমে গেলো। আকবর-কে গার্ডস সমেত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মনে হানা দিল তার প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে। চোখ বুঁজে কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নীরব রইল। হুট করে চোখ খুলে গার্ডস কে বলে,

“গাড়ি নিয়ে দক্ষিণ দিকের বাঁশবাগান এর রাস্তায় যাও। সেখান থেকে সোজা রাস্তায় গিয়ে গলির মুখে পরিত্যক্ত বাড়ি আছে। সেখানে ঘেরাও লাগিয়ে দাও। আমি আসছি। আকবর তুই এদের সঙ্গে যাহ্। দাহাব এর সঙ্গীকে তো ধরে আনতে হবে। যার কারণে আমার দাদি জীবনহারা হলো। তাকেও তো এর মূল্য দিতে হবে।”

আকবর মাথা নেড়ে গার্ডস নিয়ে আফরাজ এর কথামত বেরিয়ে গেল। তারা যেতেই আফরাজ ফোন বের করে এক পরিচিত লোককে কল দেয়। অপরপাশের লোকটি যেন তার ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সেও তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলে। আফরাজ গম্ভীর গলায় বলে,

“আমাদের এক হওয়া উচিৎ। পুলিশ-পুলিশ খেলা অনেক হয়েছে। এবার চোর-ডাকাত-পুলিশের খেলা শুরু হোক। কি মতামত তোর?”

“অফকোর্স আমি রেডি। তুই শুধু বল কোথায় কখন আসতে হবে?”

“মিলনায়তনে পারমহল এর রাস্তা ভেদ করে শহর থেকে বেরুনোর গেইট আছে। সেই গেইটে আটক কর। আমিও আসতেছি।”

“ওকে ইয়াংম্যান।”

(স্থানভিত্তিক নামগুলো কাল্পনিক)কল কেটে বেরিয়ে গেল আফরাজ। গাড়িতে বসে ইঞ্জিন চালু করতেই ফোনে একটি ভিডিও এলো। ভিডিওটি পাঠিয়েছে দাহাব এর লোক। যাকে আফরাজ দাহাবের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পক্ষপাতী করেছে। মেসেজ অপশনে গিয়ে ভিডিওটি চালু করে। সেখানে নাজীবা-র সঙ্গে দাহাব এর অশ্লীল আচরণ করার দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। আফরাজ এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। দাঁত কিড়-মিড়িয়ে দাহাব এহসান এর ফোনে কল লাগাতে গিয়েও লাগায়নি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কারণ আফরাজ এমুহুর্তে কল দিয়ে ভিডিও-র ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথা বললে দাহাব বুঝে যাবে যে, সে তার প্ল্যান সম্বন্ধে জেনে গিয়েছে। এতে পরিকল্পনা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সেই চিন্তা করে কল দিল না। নিজের রা’গ-কে নিয়ন্ত্রন করে আফরাজ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।

_____

নাজীবার হুঁশ আস্তে ধীরে ফিরে আসায় শরীর মোচড়ে বসে পড়ে। আশপাশের পরিস্থিতি খেয়াল করে মাথায় আসে সে দাহাব এহসান এর হাতে বন্দি। যে, ছন্দবেশে যুবকের বেশভূষায় এতদিন যাবত চলাফেরা করছিল। অথচ তিনিই হলো সেই খু’নি যে তার বাবা-মায়ের র’ক্ত চু’ষে , দেহগুলো-কে মাঠিতে পুঁতে দিয়ে ছিল। কিন্তু তার তো দাহাব এর হাতে পড়ার কথা ছিল না। তবে কেমনে কি হলো? হাঁটু ভেঙ্গে বসে থাকল সে। কান্নার দৃষ্টিতে চৌপাশ চোখ বুলায়। কোনোমতে টেবিলের উপর রাখা পানি ভর্তি মগ হাতে নিয়ে পানি পান করে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ভাবতে লাগল থার্টিফার্স্ট নাইট এর কথা।

সেরাত যে তার জীবনে কালোরাত বয়ে আনবে। কল্পনাও করেনি। যদি কল্পিত হতো কভুও সে রাতে আয়োজন করতো না। ভেবে ছিল বছরের নতুন দিন সেই উপলক্ষে স্বামীর সঙ্গে সুখের মুহূর্ত কাটাবে। একনিমিষে সব চুরমার হয়ে গেল। তার স্বামীর বুকে বু’লে’ট লাগায় সেও র’ক্তে মাখামাখি হয়ে যায়। তার স্বামীর দেওয়া শাড়িতে স্বামীর র’ক্ত লেগে তার বুকটা ছন্নছাড়া করে দিল। পুরো ঘর কাঁপিয়ে কান্নার ফলে সবার কানে জানাজানি হয়ে যায়। কান্নার চটে কখন যে গালে চ’ড় খেলো। তারও খেয়াল রইল না। শ্বাশুড়ি নিজের ছেলের করুণ দশা দেখে একমাত্র তাকেই অপরাধী ভাবল। অথচ সত্য তো অন্য কিছু তার স্বামীকে এই দাহাব এহসান খু’ন করতে চেয়ে ছিল। আল্লাহ জানেন তিনি সুস্থও হয়েছেন কিনা। আফরাজ এর কথা ভেবে নাজীবা আবারো কান্নায় ফুঁপাতে থাকে।
আকস্মিক কোমরে কারো হাতের স্পর্শে চমকে দূরে সরে গেল নাজীবা। দাহাব এহসান এর বয়স্ক রুপ দেখে বমি চলে এলো তার। ‘ওয়াক’ করে বমি করে দেয়। দাহাব এহসান বিরক্ত হয়ে নাজীবার গালে ‘ঠাসস’ করে এক চট’কা’নি দিল। অসহায় মেয়েটির শরীর এমনিতে দূর্বল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)এর মধ্যে চট’কা’নি খেয়ে তার বিধ্বস্ত শরীর ঠান্ডা টাইলার্সে নিথর হয়ে পড়ে। দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নিজের পাঞ্জাবি খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললেন। দরজা আঁটসাঁট করে বেঁধে দেন। নাজীবার মুখের পাশে বসে তার পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে নেন। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে মেয়েটা। যা দাহাব এর কামনা-কে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন ক’চি মেয়েই তার যৌবনকালের পছন্দ ছিল। প্রথমত মেয়েটার মা ছিল সুন্দরী বউমা আর তার মেয়ে হলো আগুন সুন্দরী। এমন মেয়ের লালসার মত শরীর দেখতে ফাতেমা কে বিয়ে করেছিল। ছিঃ যার শরীর চাহিদা পূরণের ক্ষমতাই ছিল না। সেসব পুরোনো কথা রেখে দাহাব এহসান নাতনী অর্থাৎ নাজীবার শরীর থেকে শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিলেন। এমুহুর্তে নাজীবার শরীরে একের পর এক মা’ই’রের চিহ্ন দেখে সেখানে হাত বুলাতে লাগলেন তিনি। একসময়ের শ্রদ্ধীয় দাদু রুপে জানা পুরুষটির প্রতি হাজারো ঘৃণা নাজীবার বুকে। তার হাতও শরীরে সহ্য হচ্ছে না। আফরাজের খেয়াল রাখার ফলে নাজীবার মস্তিষ্কে ড্রাগের রেশধারা কমে গিয়ে ছিল সুষ্ঠুভাবে। আজ এই মুহূর্তে যেনো সেই ড্রাগের ক্রিয়া কার্যে দিল। দাহাব এহসান যখন তার বুকে হাত রাখার স্পর্ধা করল তখনি নাজীবা হিংস্র হয়ে উঠে। তার হাত দাঁত দিয়ে চেপে ধরে জোরে কামড়ে দেয়। তিনি চিৎকার করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। নাজীবা কষ্টে অসার শরীরেও হিংস্রতা দেখালো। কামড়ে হাতের চামড়া ছিঁলে দিল। দাহাব এহসান এর হাতজোড়া র’ক্তা’ক্ত করে দেয়। নাজীবার হিংস্র চাহনির মাঝে পৈশাচিক হাসি দেখায়। তার দাঁতে র’ক্ত লেগে আছে। দাহাব এহসান এর দিকে থুতু ছুঁড়ে মে’রে বলে,

“তুই জানিস না নাজীবা কি জিনিস? আমি মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর মেয়ে নাজীবা মুসাররাত। আগের নাজীবা ভেবেছিস তুই? যে তোর পদতলে পড়ে পা চা’টবো? চ**** তোকে তো কু’ত্তার মরণ আমি দেব দেখে নিস। আরেকবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করে দেখিস তোর কলিজা ছিঁড়ে খাবো হা**রা**মজাদা*।”

দাহাব এহসান ক্ষোভ অপমানে রুম থেকে বেরিয়ে যান। তার অচল শরীরে নাজীবার মত তরুণীর প্রতিঘাত সহ্য হলো না। হাতের জ্বালাপোড়ায় তৎক্ষণাৎ তিনজন লোক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। নাজীবার পাহারা দেওয়ার জন্য বাকি লোকদের রেখে যান। গাড়িতে বসে দাহাব এহসান ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তার দেওয়া ইন’জেক’শন কেনো কার্যে এলো না? তিনি তো ঠিকভাবে ইন’জেক’শন প্রিপার করে চুবিয়ে ছিল তবে কি হতে পারে কারণ? হঠাৎ তার মনে হলো কেউ হয়ত তার পিঠপিছে কলকাঠি নেড়েছে। তাৎক্ষণিক সময়ে ফোনের মধ্যে ফুটেজ চালু করে। পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর সিসিক্যামেরা লাগিয়ে ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে ফুটেজে দেখল যে লোক ইন’জেক’শন প্রিপার করার জন্য এসে ছিল সেই ইচ্ছেকৃত ওষুধের বোতল পরিবর্তন করে ভিটামিনের বোতল ব্যবহার করে ছিল। তার হাতে কোনো নেশাধায়ক ইন’জেক’শন নয় বরং স্বাস্থ্যবেদী ইন’জেক’শন দেওয়া হয়েছে। গাড়ির মধ্যে কপাল চাপড়াতে লাগলেন তিনি। পরক্ষণে তার খেয়ালে এলো লোকটি এই কাজ কেনো করল? তিনি তৎক্ষণাৎ তার ভাড়াটে লোক কে আদেশ দেয় সেই লোক কে ধরে আনার। সেই লোক-কে আনার জন্য তাদের মধ্যে দুজন বেরিয়ে পড়ে। নাজীবা আশপাশের যোগাযোগের কোনো মাধ্যম আছে কিনা খোঁজ করছে। কিন্তু রুমের ভেতর তেমন কোনো মাধ্যম নেই। একটা জানালা ছিল তাও লোহা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। না পারতে রুমের মধ্যে থাকা বিছানায় শুয়ে পড়ে। মনেমন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল।

চলবে……

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৫ (ধামাকা পার্ট-
১৮+এলার্ট)

“আপনি যে এক মেয়ের পিতা সে কথা ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আপনি পিতা নন বরং এক ন’র’পশু। সেই ন’র’পশু যার হাতে অজস্র খু’ন অব্দি হয়েছে। কি ঠিক বলেছি না মিস্টার লিয়াকত? আপনি কি ভেবেছেন আপনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত? তাহলে বলে দেয় এই আফরাজ ফাহিম কাঁচা কাজ করে না। সে তার শত্রুর সম্পর্কে এ টু জেট খবরাখবর রাখে। হ্যা বলতে পারেন এর জন্য কম কষ্ট পোহাতে হয়নি। মনে পড়ে মৃতসম মিসেস নিপার নাম?”

মুখ বাঁধা অবস্থায় নড়াচড়া করে নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করছিল জনাব লিয়াকত। কিন্তু সম্ভব না হওয়ায় নীরব হয়ে যান। আফরাজ আর তার সঙ্গী তার গাড়ি-কে ট্রাক ভাড়া করে জোরেসরে প্রতিঘাত করে। যার ফলে তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে তিনিও মারাত্মক আহত হোন। আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আফরাজ পৈশাচিক দৃষ্টিতে তার কাঙ্ক্ষিত শিকারির ঘাতময় অংশ দেখে তার সঙ্গের দিকে তাকায়। তার চোখজোরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। দু’জন তাকে ধরে গাড়ির ব্যাক সাইডে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখল‌। তাদের গাড়ির এমুহুর্তে উপস্থিত আছে দাহাব এহসান এর গুলিস্তানে(কল্পিত)। যেখানে দূর থেকে দাহাব এহসান এর ভাড়াটে লোক দেখা যাচ্ছে। তাদের নজরে এখনো অব্দি পড়ল না আফরাজ আর তার সঙ্গী। ততক্ষণে পিটপিটিয়ে চোখজোড়া খুলে বসেন জনাব লিয়াকত। তার শরীর দড়ি বাঁধা দেখে আতংকে কাঁপছে। আফরাজ কে দেখে যতটা না ভয়ে আছে তার চেয়েও ভয়ানক লাগছে তার সঙ্গীকে। অথচ তিনি চিনেন না তাকে। তিনি না চিনলেও আফরাজ এর সঙ্গী ভালো করে তাকে চেনে। মূলত আফরাজ এর কথাটি শুনে তিনি ভয়ানক বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকান। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“আমার না তোকে সম্মান নয় লা’থি মা’রা উচিৎ। তবুও এই উত্তম কাজ আমি নয় আমার সঙ্গী করবে অবশ্য। তোকে ‘তোকে’ বলাতেই মানায়। তোর জন্য ‘আপনি’ শব্দটাও হা’রা’ম কু’ত্তার বাচ্চা কোথাকার। আচ্ছা! একটা কথা আজ বুঝতে পারলাম, তাবাসসুম তোর অংশ বলেই আমার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি। জানিস কি? যাকে একপলক দেখতে গিয়েও দেখলি না। তার অবস্থা কেমন? তোর শ্বশুর আমার বিবিজান কে অপ’হর’ণ করে রেখেও তোর মেয়ের শরীরের স্বাদ নিয়ে নিজের পোষা কু’ত্তাদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে ছিল। ছিঃ সেই তুই পিতা হয়ে খু’ন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলি। এভাবেই তো নিজের প্রথম স্ত্রী-কেও হারালি। কেমন অনুভূতি ছিল? যখন নিজের স্ত্রী-কে ঐ শ’য়’তানের হাতে সঁপে ছিলি? মিসেস নিপার চরিত্র হাজারে উত্তম ছিল বলেই তার সঙ্গে বা’জে আচরণটা করেছিলি। তোর মনে এই ভাবনা ছিল যে, তুই দাহাব এর মেয়ে-কে বিয়ে করলে আজীবনের মত ধনসম্পদের সাগরে ভাসবি‌। কিন্তু আফসোস তোর সেই ধারণায় জল ঢেলে পুরো এক’বছর এর জন্য বন্দীঘরে ফেলে দিল দাহাব এ। আই এপ্রিসিয়েট দিস। বাট সরি টু সে তোর সাথেও সেই কার্যসম্পন্ন হবে যার হক তোর আছে। ঠিক বললাম না নাকিব?”

নাকিব মুনসিফ এর কপালের রগ ভেসে আছে। সে পারছে না এই মুহূর্তে লিয়াকত এর গলা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিতে। আফরাজ এর কথায় ধর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। কিন্তু তার কথার ধরণে সে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। তার ঠোঁটের কোণায় পৈশাচিক হাসি ফুটল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ তার কাছে গিয়ে লিয়াকত কে দেখিয়ে বলে,

“এই নাকিব মুনসিফ কে চিনেছেন ফুপাজি? এই হলো নাদিম মুসাররাত ওরফে মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর বড় পুত্র। যার বর্তমান পেশার কারণে সাফল্য একজন প্রভাবশালী পুরুষ নাকিব মুনসিফ নামে পরিচিত। মনে আছে তো? সেদিন আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে খু’ন করার সময় নাদিম-কে পেলেন না। আমার শ্বশুর তাকে কষ্টের জীবনে ফেললেও তিনি জানতেন একদিন তার ছেলে তোদেরকে নরক দেখাবেন। সেই থেকে খবরাখবরে আমরা দু’জন একে অপরের বিজনেস পার্টনারও হয়ে গেলাম। আচ্ছা এতকথা রাখি। চলেন তো নাদিম ভাই আপনার কাজ শুরু করেন। আমি গাড়ির উপর বসে ফিল্ম দেখি। অনেকদিন হইল ফিল্ম দেখার সুযোগ পায় না। কোথায় এই কনকনে শীতে বিবিজান-কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে রোমান্টিক হবো তা না ইঁদুরের কাছে নিজের দাম দেখাতে হচ্ছে।”

“এ শা’লা আমার বোনের নামে এসব আমার সামনেই বলছিস লজ্জা লাগে না তোর?”

“চুপ শা’লা আমি নাকি তুই হ্যা? তোরে যে মুরগি জবাই করতে দিছি, সেই শোকরিয়া কর। নাহলে হিরোগিরি থেকে জিরোগিরি নিয়েই থাকতি। আমি তো ছাগলকে শিকার করার খুশিতে বসে আছি।”

নাদিম হাসল। হিংস্র দৃষ্টিতে লিয়াকত এর দিকে তাকিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে। যা দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল জনাব লিয়াকত এর। তিনি ঢোক গিলে মুখ নড়াচড়া করে ‘না’ বোঝাচ্ছে। কিন্তু যার অন্তরে শোধের আগুন জ্বলছে তাকে থামানো দায়। নাদিম লিয়াকতের কলার চেপে মাটিতে টেনে হেঁচড়ে ফেলল। দিকবেদিক বাদ দিয়ে কট করে আলাদা করে ফেলল মাথাটা। নিভে গেল এক জ’ল্লা’দ এর কাহিনী। আফরাজ এর বুকেও প্রশান্তি বইল। তার দাদির কথা স্মরণে আসায় চোখজোড়া পানিতে ভড়ে যায়। নাদিম বিষয়টা খেয়াল করল। আফরাজ এর কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিল। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বলে,

“এবার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এই কু’ত্তার চুল ধরে ছুঁড়ে মা’র গুলিস্তান এ।”

নাদিমও বিনাদ্বন্দ্বে কাজটি করে ফেলল।

____

নাজীবা কবে ঘুমিয়ে পড়ল তার জানা নেই। আকস্মিক শরীরে কারো হাতের স্পর্শে সে ঘাবড়ে জেগে উঠল। দেখতে পেল রুমের মধ্যে দু’জন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এস্থানে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। সে কাকুতিমিনতি করে বলে,

“আপু আমায় যেতে দিন। ঐ শ’য়’তানের বুড়ো আমাকে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ আমাকে যাওয়ার রাস্তা করে দিন।”

মেয়ে দুটো চমকে গেল। তারা আসলে বুঝতে পারেনি কনে তার হবু বর-কে বুড়ো কেনো বলল? তাদের মধ্যে একজন বিরক্তির সুরে বলে,

“দেখুন ম্যাম আপনার তো আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করা উচিৎ ওমন হ্যান্ডসাম ছেলেকে বর হিসেবে পাবেন বলে। আমরা তো দেখে ফিদা হয়ে গেছিলাম। কিন্তু এই আপনাকে বিয়ে করার জন্য তিনি আমাদের এখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আনিয়েছেন। ভাবতে পারছেন কতটা লাকি আপনি হুম? আচ্ছা এসব ছাড়েন এখন। আসেন আপনাকে রেডি করতে হবে।”

নাজীবা তাদের কথায় হতবাক। সে পুরোপুরি রুমটা খেয়াল করে দেখল। সে যে বন্দী রুমে ছিল এই রুম সেই রুম নয়। বরং আলিশান সৌন্দর্যের কারুকাজে রুপিত একটি রুমের বিছানায় সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে যাবত কয়েক ঘণ্টা বোধহয় ঘুমিয়েছে‌। তাকে এই রুমে আনল কে? শরীর শিউরে উঠল। কাঁপা গলায় মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আ আমাকে এখানে এনেছে কে? মানে আমি তো আরেক জায়গায় ছিলাম? আমাকে আনল কে একটু বলবেন?”

“বাহ-রে ম্যাম আপনার হবু বর ছাড়া আর কেই বা আপনাকে এখানে আনার সাহস পাবেন হুম? তিনি সকলের সামনে আপনার কোমরে হাত রেখে কোলে করে এই রুমে এনে রাখছেন।”

এসব বলে তারা মিটমিটে হাসতে লাগল‌। অন্যথায় নাজীবার শরীর ঘৃণায় ঘেমে গেল। ঠান্ডার কোনো অনুভূতিও তার মাঝে হচ্ছে না। কেমনেও বা হবে যাকে ঘৃণা করে সেই লোক কিনা তার শরীরটাকে এই রুম অব্দি এনেছে। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগল সে। মেয়ে দুটো অবাক হলো। তারা গিয়ে মেয়েটার পিঠে মালিশ দেয়। নাজীবার এই নিয়ে দু’বার বমির কারণে শরীর একেবারে দূর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়ে দুটো তৎক্ষণাৎ ভিটামিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। কেননা নাজীবার শরীরের অবস্থা দেখে তাদের মনে খটকা লেগে গেছে। মেয়েটি ভিটামিন রেডি করে নাজীবার মুখে দেয়। সে খেয়ে নিজেকে সামলে নেয়। তবুও হাত-পা যেন অবশ হয়ে গিয়েছে। সে কাতর দৃষ্টিতে পুনরায় বিনতি করল।
কিন্তু মেয়ে দুটো অশুনা করে তাদের কাজ আরম্ভ করে। নাজীবা বুঝতে পারল তার এখন পালানোর রাস্তা বন্ধ। অযথা শরীর নেতিয়ে পড়ছে দেখে পুতুলের মত বসে রইল। মেয়ে দুটোও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

ঘণ্টাখানেক পরে মেয়ে দুটো নাজীবা-কে আগলে বিয়ের মঞ্চে এলো। তার চোখজোড়া জুড়ে আফরাজ কে খোঁজে চলেছে। মানুষটাকে একপলক দেখার জন্য সে কাতরাচ্ছে। তার চোখের দৃষ্টি পড়ল তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কুসুমা ভাবীর উপর। দাদি শ্বাশুড়ি-কে না দেখে ভাবল বোধহয় অসুস্থ। তাদের অবস্থাও করুণ। গু’লি হাতে ঘেরাও করে রেখেছে তাদের। আশপাশে অন্যান্য লোকগণ দেখেও প্রতিবাদ করতে পারছে না নাজীবা। আশ্চর্যের বিষয় লোকগণও হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেনো এখানে কোনো মজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার পরিবারকে আড়ালে খু’ন করার দ্বায়ে হলেও দাহাব এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারল সে। নিজের স্বামীকে না দেখে আজ তিনদিন পাড় করে দিল। সেই যে মানুষটা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের অপারেশন রুমে ছিল তার পর থেকে আর খবর অব্দি পায়নি। করুণ দৃষ্টিতে বরের বেশে বসা পাগড়ি পরা ব্যক্তিকে দেখে নাজীবার ক্ষোভে শরীর কাঁপছে। দাহাব এর পাশে নাজীবা-কে জোরপূর্বক বসানো হলো। সে উঠতে গেলেই এক হাত তার হাতকে মুঠোবদ্ধ করে নেয়। শরীরে অজানা এক শিহরণ বয়ে গেল তার। সে অবাক চোখে তার পাশে বসা ব্যক্তিকে দেখার জন্য হাঁসফাঁস করতে লাগল। কাজি ধীরস্থির ভাবে বিয়ে পড়ানো আরম্ভ করল। এ দেখে নাজীবার হৃদপিন্ড জোরে জোরে লাফাচ্ছিল। একে তো তার পরিবার বন্দিদশায় আছে তার উপর আফরাজ কোথায় সেটাও জানে না। এই বর বেশে পুরুষটাও বা কে সেটাও বুঝতে পারছে না। দ্বিধান্বিত চোখে সে নিজেকে সামলাতে হিমশিম খেতে লাগল। মেয়ে দুটো নাজীবার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে তৎক্ষণাৎ স্যার অর্থাৎ বর-কে জানায়। কানে ফিসফিসিয়ে বলায় নাজীবা শুনতেও পেলো না। বর আড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে কাজিকে ইশারা করল। তিনি কাছে এলে বর ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলল। বরের কথা শুনে তিনি মাথা নেড়ে সায় দিলেন। নাজীবার কাছে এসব সহ্য হচ্ছিল না। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেছে। সে করুণ দশায় নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল না আর। কাজি যখন কবুল বলতে বলল। তখনি সে বিষের শিশি খুলে মুখে নিতে গেলে ঠাস করে চ’ড় খেয়ে যায়। সকলে চমকে গেল। পাগড়ি সরিয়ে নাজীবা-কে চেপে ধরে পাশ ঘেঁষে বসিয়ে বলে,

“আরেকবার যদি গলদ কান্ড করেন তবে আপনার গাল আর গাল রাখবো না মনে রাখিয়েন বিবিজান।”

আফরাজ-কে স্বয়ং বর বেশে দেখে নাজীবার হুঁশ উড়ে গেলো যেনো। ঠোঁট কাঁপছে বেচারীর। কারো পরোয়া না করে আফরাজ-কে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। কাজি জোর গলায় পুনরায় কবুল বলতে বলে। সেও সংকোচহীন বলে ফেলল। স্বামীর বুকে মাথা রেখে বিড়ালছানার মত চেপে রইল। আফরাজ আলতো হেসে কবুল বলে দেয়। কাজি ‘আলহামদুল্লিল্লাহ্’ বলে মিষ্টিমুখ করলেন। একে একে মিসেস ফেরদৌসী, জনাব ইসমাইল এসে দোয়া করে দিলেন। এই ফাঁকে পিতা সমতুল্য শ্বশুর ক্ষমা চাইতে গেলে নাজীবা তৎক্ষণাৎ আগলে কেঁদে দেয়। ‘বাবা বাবা’ বলে ফুঁপায়। মিসেস ফেরদৌসী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দু’জন কে জড়িয়ে সে প্রশান্তি অনুভব করল। পুনরায় তার মনেপ্রান্তে বাবা-মায়ের মুখ বেশে উঠে। কুসুমা এসে কথা বলতে নিলে খেয়াল করল নাজীবার শরীর টলছে। সে গিয়ে হাত ধরে, জাগ্রত হলো নাজীবা। তার ঘুমঘুম পাচ্ছে খালি। আফরাজ মৃদু হেসে বিবিজান-কে কোলে উঠিয়ে নেয়। নাজীবার ঘুমের মাঝে টলছে। বিবিজান এর কপালে চুমু এঁকে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আড়ালে নাদিম তার চোখজোড়া মুছে নেয়। বোনকে এতবছর পর কাছ থেকে দেখেছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)থাক না আজ নাহয় সুযোগ পেল না কাছাকাছি গিয়ে আলতো হাতে বোনকে আগলে নেওয়ার। পরের দিন বউভাতের অনুষ্ঠানে তো সে থাকছে। তখন নাহয় বোনকে জড়িয়ে ধরে এতবছরের সাধনা পূর্ণ করবে। বোনের সবটা আবদার কোলজুড়ে পূরণ করবে। নাজীবা-কে ফ্রেশ করিয়ে গভীরভাবে চুমু খেলো আফরাজ। নাজীবার চোখ-মুখ কান্নার কারণে ফুলে গিয়েছে। স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ বকতে লাগল। তার শরীর হাতড়ে মা’ই’রের দাগ দেখায়, তার কোন কোন স্থানে দাহাব বুড়ো হাত লাগিয়েছে তা দেখিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,

“আপনি আমাকে লুকিয়ে নেন প্লিজ আমার খুব জ্বলছে বুকটা। আপনার জন্য আমি অনেকবছর অপেক্ষা করেছি। জানেন বিয়ের মঞ্চে কবুল বলতে বলছিল যে, আমি তো মরে যেতে নিচ্ছিলাম। আপনাকে খুব ভালোবাসি জামাইজান। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি যা বলবেন তাই করব। আর কখনো আপনার সাথে রা’গ দেখাবো না।”

বাচ্চাদের মত মেয়েটা বকে যাচ্ছে। আফরাজ শান্ত চোখে তার বিবিজান এর মর্মান্তিক অবনতি লক্ষ করছে। সময় ব্যয় করল না। অপেক্ষা সমাপ্তি টেনে ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরে নেশাধায়ক গলায় আওড়ায়,

“হুসসস আর কথা নয়। ভুলে যাও সেসব কথা। যে কষ্টসমূহ ভোগ করেছো তার চেয়ে হাজার গুণ তোমায় সুখের সাগরে ভাসাবো আজ।”

নাজীবা চোখজোড়া বুজে নিল। আফরাজ আর কোনো দিক খেয়াল দিলো না। দু’নর-নারী নিজেদের মাঝে জমাকৃত কষ্ট বণ্টনে লেগে পড়ল। রাত প্রায় তিনটার কাছাকাছি হবে। রুমের মধ্যে মৃদু ঠান্ডা হাওয়ার অনুভূতিতে আফরাজ বিবিজান-কে বুকের মাঝে চেপে রাখল। চোখ খুলে দেখে তার বিবিজান ঠোঁট ফাঁকা করে বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে। কে বলবে এ মেয়েটা যুবতী নারী? এখনো বাচ্চামি গেলো না তার। বিবিজানের শরীরে আফরাজ তার গরম জ্যাকেট পরিয়ে দেয়। কম্বল দিয়ে দু’জনের শরীরকে ভালো করে চাপিয়ে নেয়। যেনো কনকনে ঠান্ডাভাব কমে। ঘুমন্ত পরীর দিকে চেয়ে আনমনে বলে,

“বিবিজান তোমার উপর হওয়া জুলুমের শোধ আমি নেবোই। দাহাব-কে হাজারো হুলের কষ্টে বিদবো।”

বিবিজান কে স্পর্শ করার স্পর্ধা বুঝিয়ে দেবে। তাদের পুনরায় বিয়ে হয়েছে। আগেরবার ধুমধাম করে না হলেও এবারের বিয়ে ছিল জনগণ সমেত অনুষ্ঠিত বিয়ে। যার কারণে সকলেই এখন অবগত আফরাজ বিবাহিত। তার নিজস্ব এক নারী আছে। সে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বিবিজান কে বলেনি। এতে তার বিবিজান এর সেসময় কার কান্ডের কথা ভেবে মুচকি হাসল। তার চোখে যদি বিষের শিশি না পড়ত তবে অঘটন ঘটে যেতো। দিব্য সাধনার পর পেয়েছে তার বিবিজান কে। তাই তো বাসর রাতে নাজীবার কান্নায় বলা কথাগুলোর সাপেক্ষে সেও আদরে ভরিয়ে দিল। দাহাবের স্পর্শিত স্থানগুলোতে আফরাজ স্বামী হিসেবে তার পবিত্র স্পর্শে নিজস্ব নারী-কে পূর্ণ করেছে।

চলবে….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-২২+২৩

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২২

“আহ্ দোস্ত আমি এখানে বিবিজান কোথায়? তাকে কেনো দেখছি না? এই আকবর বল না সবাই এভাবে চুপ করে আছে কেনো? আম্মা আপনি বলুন তো মেয়েটা হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল?”

ছেলের কথায় কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না মিসেস ফেরদৌসী। মাত্রই ছেলেকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরতেই নাজীবার কথা জিজ্ঞেস করে চলেছে। শ্বাশুড়ি-র সাথে যাওয়ার পর মেয়েটার চিহ্নটুকু আর হাসপাতালে নজরে এলো না। জনাব ইসমাইল বিরক্তসূচক গলায় বলেন,

“বাবা এখন শান্ত হও। এতো ভাবছিস কেনো? হবে হয়ত কোথাও। তুই আস্তেধীরে কথা বল এতো হাইপার হলে তোর বুকে ব্যথা লাগবে। এটা তো আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর মেহেরবানী বলে বু’লে’ট তোর বুক ভেদ করেনি। নাহলে তোর জীবন তো হু’ম’কি’র মাঝে ঝুলে যেতো। এই যে এখন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিস না? এটাও সম্ভব হয়েছে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা পর। জানিস তোর মা আর দাদির মধ্যে কি অবস্থা হয়ে ছিল? কান্নায় তাদের চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। সেখানে তুই সামান্য একটা মেয়ের ব্যাপারে কথা বলতে বলতে হাইপার হয়ে যাচ্ছিস। তোর কাছে মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেল? আমাদের কি তোর চোখে পড়ে না? তোর ছোটকালেও ঐ মেয়ের কারণে জীবন সঙ্কটে পড়ে ছিল। আজ দেখ, আজ তো একদম তোকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছাড়ল সে। তোর মায়ের কথাই আমার মান্য করা উচিৎ ছিল। কিন্তু ভেবে ছিলাম তোর বউ হয়েছে আর বিপদ হবে না কোনো। এইতো দেখি মেয়েটা নিজেই বিপদ। তোর জীবনে এসে আবারো জীবন সঙ্কটে ফেলে দিল। এমন মেয়েকে তুই তালাক দিবি। আজ আমি তোর বাবা বলছি তালাক দিবি বুঝতে পেরেছিস?”

বাকরুদ্ধ হয়ে বাবার দিকে চেয়ে রইল আফরাজ। তার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। পরিবারের চোখেমুখে কোথাও তার বউয়ের জন্যে একবিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা পরিলক্ষ হচ্ছে না। যা লক্ষ হচ্ছে তা শুধুমাত্র ঘৃণা, বিরক্তি,ক্ষোভ। আকবর অসহায় চোখে বন্ধুর দিকে তাকালো। আফরাজ সকলের মুখোভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল তারা সত্য না জেনেই মেয়েটা-কে দূরে সরিয়ে দিল। সে বুকের উপর হাত রেখে শুয়ে পড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) এতক্ষণ বসে থেকে সবার কথা শুনে তার শ্বাস আঁটকে আসছে। সে কোনোমতে তার বাঁ হাত দিয়ে আকবর এর হাত চেপে ধরল। বন্ধুর হাত ধরার কারণ ভালোই বুঝতে পারল সে। আকুতিভরা দৃষ্টিতে আকবর এর দিকে তাকায় আফরাজ। তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে ‘সে যেনো নাজীবা-র খোঁজ নিয়ে আসে জলদিই নাহলে সে শ্বাস আটকে মা’রা যাবে।’
আকবর সকলের চোখের আড়ালে আফরাজ কে আশ্বাস দিল। আফরাজ তার মুখ থেকে এমুহুর্তে কড়া কথা বের করতে পারছে না। কেননা নাজীবা যে নেই সেটা বাবার কথার দ্বারা বেশ বুঝতে পেরেছে। চোখ বুজে বুকের উপর হাত রেখে মনেমন বলে,

“বিবিজান প্লিজ প্লিজ ফিরে এসো।”

মিসেস ফেরদৌসীর কান্না থেমে গিয়েছে বহুক্ষণ হবে। তিনি ছেলের নিরর্থক বিরবির করা কথা শুনতে না পেলেও এতটুকু বুঝতে পেরেছেন ছেলে তার বউকে নিয়ে বিলাপ করছে। ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বামীর দিকে তাকান। জনাব ইসমাইল দেখেও অদেখা করলেন। নীরবে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মিসেস ফেরদৌসী ছেলের হাত ছুঁয়ে বলেন,

“বাবা ছাড় না এসব। একটা মেয়ের জন্যে তুই আমাদের মাঝে দেওয়াল তৈরি করছিস। ঐ মেয়ের চেয়েও বেটার একজন কে তোর স্ত্রী হিসেবে হাজির করবো আমি। তুই শুধু….।”

“আম্মু আপনি কি আব্বুকে ছাড়তে পারবেন?”

“আসতাগফিরুল্লাহ্ বাবা এই কথা মুখেও আনিস না। আমি কেন তোর বাবাকে ছাড়বো? সে কি কখনো আমাকে ঠকিয়েছে যে, আমার থেকে তাকে ছাড়তে হবে? তোর বাবাকে বিয়ের পর থেকে ভালোবেসেছি। সেই ভালোবাসা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবধারিত থাকবে।”

কথাটি শুনে তাচ্ছিল্যের হাসল আফরাজ। চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত গলায় বলে,

“আম্মু আপনি জিজ্ঞেস করছেন না কেনো আমি ঐ মেয়েটার জন্য পাগলামী করছি? ভেবে নিন আপনি আব্বুকে যে উদ্দেশ্যে ছাড়তে পারবেন না আমিও একই কারণে তাকে ছাড়তে পারব না। তবে হ্যা এক কথা অবশ্য বলতে পারি, আপনি যদি আমার বিয়ের সময় এদেশে থাকতেন,তখন ছাড়ার কথা বললেই আমি ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এখন সে আমার প্রাণের সাথে মিশে গেছে। তার প্রতিটা পদক্ষেপে আমার কদম আবশ্যক। আপনি জানেন তার ব্যাপারে সব তথ্য আমি বের করে নিয়েছি। সেদিন রুমে আপনাকে অর্ধেক অতীত বলে ছিলাম। এবার শুনেন তার পুরো অতীত….।”

মিসেস ফেরদৌসী-কে অতীতের টানা কথা বলে দেয় আফরাজ। সবটা শুনে তিনি প্রথমেই তিরস্কার জানাল দাহাব এহসান কে। অতঃপর অনুতপ্ত কণ্ঠে ছেলের হাত আঁকড়ে ধরে বলেন,

“বাবা-রে তুই চিন্তা করিস না। সবটা তোর বাবাকে বলব। তিনি বুঝতে পারবেন।”

মায়ের কথার বিপরীতে নীরবে চোখ বুজে নেয় আফরাজ। তার শরীরে একরাশ ক্লান্তি এসে ভর করেছে। মিসেস ফেরদৌসী মুখ মলিন করে ছেলের পাশ থেকে উঠে কেবিনের বাহিরে চলে গেলো। জনাব ইসমাইল করিডোরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য লক্ষ করছেন। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।

“বাবারা কী সন্তানের খারাপ চাই কখনো? আমি কি তোমার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখিনি? হয়ত আমি ছেলের চাওয়াটা অস্বীকার করছি তাই বলে এতটা ঘৃণা নিয়ে বলার তো দরকার ছিল না।”

“শুনেন আপনি মন খারাপ করিয়েন না প্লিজ। আফরাজ এর অবস্থা দেখেছেন তো। মেয়েটা আমাদের ছেলের জীবন কেড়ে নেয়নি। বরং তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। আমি জানি আপনি শুনেছেন আপনার ছেলে কি কি বলেছে! আপনার ছায়া দরজার বাহিরে আড়চোখে দেখতে পেয়ে ছিলাম।”

“বউ নাজীবা-কে নিয়ে আসা উচিৎ। চলো দেখি ও কোথায়?”

স্বামীর কথায় মাথা নাড়লেন মিসেস ফেরদৌসী। তারা দুজনে বের হতে গেলে পথ আটকে দাঁড়ান খাদিজা বেগম। তিনি ঢোক গিলে শক্ত গলায় বলেন,

“কোনো দরকার নেই সেই মেয়ের খোঁজ করার। তাকে আমি চিরজীবনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। সে আর কখনো ফিরবে না। তার কথা ভুলে যাও।”

থমকে গেলেন জনাব ইসমাইল আর তার স্ত্রী। মায়ের কথায় প্রশ্নাতীত গলায় বলেন,

“কি বলছেন আপনি এসব আম্মা? নাজীবা আপনার পছন্দের মেয়ে,নাতবউ না? তবে হঠাৎ কী হলো যে, বলছেন দরকার নেই? বউমা-ও বা কোথায় আপনি না তাকে আপনার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন?”

খাদিজা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,

“তাকে তার আসল জায়গায় পাঠিয়েছি।”

ধপ করে কিছু একটার শব্দে তারা পিছু মোড়ে তাকায়। আফরাজ-কে চোখ বড়বড় করে স্তদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারা ভয় পেয়ে যান। তার চেয়েও বিবশ দৃশ্য হলো আফরাজ এর বুকের দিকে ব্যান্ডেজ লাল হয়ে ভিজে যাচ্ছে। সে মাত্রাতিরিক্ত বিস্ময়ে নীরব হয়ে মাটিতে বসে গিয়েছে।
ছেলের এরূপ দেখে মনেমন আতংকিত বোধ করছেন জনাব ইসমাইল আর তার স্ত্রী। খাদিজা বেগম নাতির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, এই কি সেই ছেলে যে বিয়ে করিয়েছি বলে তার দাদির সাথে কথা অব্দি বলতে চাইনি‌। আর এখন? তিনি নিজে দূরে করতে চাইছেন। তাতে বাঁধা দিচ্ছে সে স্বয়ং তার নাতি।
তিনি নাতির কাছে যেতে গেলে ভাঙচুরের শব্দে এক কোণায় দাঁড়িয়ে যান। আফরাজ এর শরীরে যেনো কোনো অশরীরী ভর করেছে। ছেলেটা উম্মাদের মত আশপাশের জিনিস ভাঙচুর করছে। তার আগুন চোখ দেখে ডক্টর নার্স ভয়ে পিছিয়ে আছে। আকবর বাহিরে গিয়ে ছিল ওষুধপত্র আনতে। কিন্তু আফরাজ এর বরাদ্দকৃত কেবিনের বাহির থেকে ভাঙচুর এর শব্দে সে থমকে যায়। তৎক্ষণাৎ ছুটে বন্ধুর কাছে গেল। ওষুধপত্র নার্স এর হাতে দিয়ে তার কাছ থেকে ঘুমের একটা ইনজেকশন রেডি করে দিতে বলে। নার্স তার কথামত রেডি করে আকবর এর হাতে দিল। আফরাজ চিল্লিয়ে বারংবার বলে যাচ্ছে তার বিবিজান-কে এনে দিতে। কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। জনাব ইসমাইল কে আঁকড়ে ধরে রইলেন মিসেস ফেরদৌসী। তিনি ছেলের পরিণতি দেখে ফুঁপাচ্ছেন। খাদিজা বেগম মাথায় হাত ধরে বসে আছেন সিটের মধ্যে। তিনি বুঝতে পেরেছেন নাতবউ কে দূরে সরানো মোটেও উচিৎ হয়নি। আকবর ইনজেকশন কোনোমতে আফরাজ এর কাঁধে চুবিয়ে দেয়। আফরাজ এর হাত-পা ক্রমশ অচল হয়ে পড়ে। ঢলে পড়ে আকবরের কাঁধে। সে তার বন্ধুর ভার ধরে কেবিনের বেডে শুয়ে দিল। নার্স এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

“কতঘণ্টার জন্য রেস্টে থাকবে?”

“ধরেন তিনঘণ্টা। তারপর হয়ত উনি আবারো হাইপার হয়ে ভাঙচুর করতে পারেন।”

নার্স আফরাজ এর পরিবারের সবার দিকে তাকিয়ে পুনরায় কিছু বলতে নিলেই ডক্টর হাঁপাতে থেকে বলেন,

“দেখুন স্যারের ওয়াইফ কোথায়? প্লিজ তাকে এখানে হাজির করুন। নাহলে দেখবেন স্যারের মেন্টাল কন্ডিশন ক্রিটিক্যাল হয়ে পড়বে। প্লিজ ম্যামকে নিয়ে আসুন।”

মিসেস ফেরদৌসী শ্বাশুড়ি-র হাত ধরে কান্নাময় গলায় বলেন,

“আম্মা মেয়েটা কোথায়? আপনি তাকে কোথায় পাঠিয়েছেন? প্লিজ বলে দিন না। দেখেন আমার ছেলেটার পাগলামী দশা শুরু করে দিয়েছে। প্লিজ আম্মা বলুন না কিছু।”

খাদিজা বেগম চোখে ঝাপসা দেখছেন। জীবনে দুদিক এর প্যাচালে পরে তিনি দিকবেদিক ভুলে বংশধরা রক্ষার স্বার্থে নাতবউকে এমন স্থানে পাঠিয়েছেন। যেখান থেকে তার ফেরা অসম্ভব। নাতবউও টর্চার এর ভুক্তভোগী হবে অথবা হচ্ছেও বোধ হয়। সেই ধারণা খাদিজা বেগম এর মস্তিষ্ককে প্রচন্ড অনুশোচনার অনলে পুড়িয়ে ছাড়ল। বউ-মাকে কিছু বলার পূর্বেই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) আম্মাকে অজ্ঞান হতে দেখে জোরে ‘আম্মা’ বলে ডাক দেয় জনাব ইসমাইল। তৎক্ষণাৎ মা-কে জড়িয়ে ধরে ডক্টর নার্স ডাকলেন। আকবর পুরো পরিবারের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত দশা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কুসুমার অবস্থা কি সেটাও জানার সময় সুযোগ পাচ্ছে না। আফরাজ কে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় কুসুমা উপস্থিত থাকলেও পরিবেশ পরিচিতি বিবেচনায় তাকে কাজের মেয়ের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। ফোন হাতে নিয়ে কুসুমা কে কল দেয়। সে ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল। ভাবছে একবার কল করে জানার চেষ্টা করবে। আশানুরূপ স্বামীর কল পেয়ে খুশি হলো। উত্তরে কিছু বলার সুযোগ পেল না। আকবর সবটা খুলে বলে। শুনে কুসুমাও চিন্তিত হয়ে পড়ল। নাজীবা ভাবী কে কোথায় পাঠাতে পারে তাও তার ধারণাতীত।
আকবর বউকে সাবধানে থাকতে বলে নাজীবা ভাবীর খোঁজ লাগাতে গার্ড’স লাগিয়ে দেয়। আফরাজ এর কাছ থেকে ভাবীর অতীত সম্পর্কে জানলেও ভাবী যে হাসপাতালে ভর্তি ছিল এর নাম অজানা রয়ে গেল। খোঁজতে কষ্ট হলেও সে বন্ধুর সুস্থতার খাতিরে হলেও নাজীবা-কে খোঁজে বের করবে।

অন্যথায়, নাজীবা হাত-পা ছড়িয়ে চিৎকার করে বলছে,
“প্লিজ এই ইনজেকশন আমাকে দিয়েন না। আমি অসুস্থ ,পাগল নয়। প্লিজ আমাকে যেতে দিন প্লিজ! আমার আফরাজ অসুস্থ তার কাছে যেতে দিন। না না প্লিজজজ আহহহহহ।”

চলবে…..

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৩ (স্পেশাল-০২)

আফরাজ কে না দেখে সকলে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাকে ঘুমের মধ্যে রেখেই পরিবারের সদস্যরা নাজীবার খোঁজ করতে ব্যস্ত ছিল। খাদিজা বেগমের আকস্মিক মিনিহার্ট এ্যাটেক হয়েছিল। তিনঘণ্টা পর তিনি সুস্থতা বোধ করায় ঘুম থেকে সজাগ হয়ে উঠেন। তখনি মস্তিষ্কে নাতির কথা হানা দিলে তিনি ছটফট করা শুরু করেন। হাতের থেকে সুঁই খুলে কোনোমতে উঠে বসতে গেলেন তৎক্ষণাৎ কেবিনে কাজরত নার্স দেখে ফেলে। সে খাদিজা বেগম কে থামালে তিনি করুণ গলায় আওড়ান।

“আমার ছেলেকে ডাকুন প্লিজ!”

নার্স তাকে শান্ত করে চিৎকার করে জনাব ইসমাইল কে ডেকে উঠে। জনাব ইসমাইল মায়ের কেবিনের বাহিরে পায়চারী করছিলেন। ছেলে হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল তার খোঁজ চালাতে গার্ড’স কে লাগাতার কল করছেন। কিন্তু একটা গার্ড’স ও কল ধরছে না। আকবর কেও সকাল থেকে চোখে পড়েনি। তারও ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। চিন্তায় প্রেশার যেনো বেড়ে যাবে মত অবস্থা জনাব ইসমাইল এর। এমতাবস্থায় মায়ের কেবিনে থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। মায়ের জাগ্রত অবস্থা দেখে খুশি হোন তিনি। মায়ের হাত ধরে বলেন,

“আম্মা আপনার কি হলো ছটফট করছেন কেনো? কিছু বলবেন?”

খাদিজা বেগম মাথা নেড়ে তড়ফড়িয়ে বলেন,

“ব্যাটা নাতবউ-কে নিয়ে আয়। তারে ছাড়া আমার নাতি মরে যাইবো। শোন নাতবউকে ফার্মহাউস এ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখানে আমায় হু’ম’কিতে ফেলে দিয়ে ছিল দাহাবে। ঐ নাতবউকে তার লগে নিয়া গেছে। আকবর-রে বল ফার্মহাউস এ খোঁজ নিতে।”

মায়ের কথায় থমকে গেলেন জনাব ইসমাইল। তবুও আশ্বাস দিলেন তিনি বিষয়টা দেখছেন। মা’কে রেস্ট করতে বলে তিনি বেরিয়ে যান। তিনি বের হওয়ার পরপরই কেবিনের ভেতর এক লোক ঢুকে পড়ে। নার্সও কেবিনের মধ্যে ছিল না। খাদিজা বেগমের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডক্টরের কাছে গিয়েছে। অথচ কেবিনের ভেতর লোকটি-কে দেখে খাদিজা বেগম আতংকে হাত-পা ছড়াছড়ি করে চিৎকার করতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না‌ তার আগেই লোকটি ইনজেকড করে দিল। যেই ইনজেকডের ফলে খাদিজা বেগম এর চোখজোড়া দিয়ে দু’ফুটো পানি পড়ে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল। লোকটি পৈশাচিক হেসে বেরিয়ে গেলেন। ফোন হাতে নিয়ে কল লাগায়। অপরপাশে কল লাগায় ‘হ্যালো’ বলে।

“হ্যা বলো কাজ হয়েছে?”

“জ্বী শ্বশুর আব্বা। আপনার কথামত খাদিজা বেগমকে অ্যানেস্থেসিয়া-র ইনজেকশন দিয়ে ফেলেছি। এখন তিনি এই সুন্দর পৃথিবীতে আর নেই বললেই চলে।”

দাহাব এহসান শুনে হাসতে লাগলেন। নাজীবা-র রুমের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“গ্রেট জব এবার নাজীবা আর আমার পথের কাঁটায় কেউ রইল না। ওহ হ্যাঁ তোমার মেয়েকে মনে হয় আফরাজ এ ধরে রেখেছিল। তার এক গার্ড কে হাত করে তোমার মেয়ে-কে ছাড়িয়ে এনেছি। রাস্তার মোড়ের পাশে পুরাতন বাড়িতে বোধহয় তাকে সেবাযত্ন করছে আমার পালিত লোকগুলো। তাদের কাছে গিয়ে দেখে নাও।”

শ্বশুরের কথা শুনে মেয়ের জন্য জনাব লিয়াকত এর মনটা কেঁপে উঠল। তিনি এতদিন কৌশলে সবটা জেনে ছিল। তার শ্বশুর খাদিজা বেগমকে মা’রার জন্যে লোক-ভাড়া করতে গিয়েও করলেন না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)বিপরীতে নিজের মেয়ের জামাইকে বেছে নিলেন। ব্যাপারটা তার স্ত্রীর অজানা। সে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। তার হাতে দু’দুটো ঘটনা ঘটে গেলো। এখন পালাতে পারলেই বাঁচেন তিনি। একে তো আফরাজ কে নিহত করার কাজে তবুও আহত হয়েছে ছেলেটা। দ্বিতীয়ত আফরাজ এর দাদি-কে মে’রে ফেলার কাজে। মিসেস ফেরদৌসী সবেই হাসপাতালের ভেতর আসলেন। ছেলের নিখোঁজে তার প্রাণ যেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। তবুও শ্বাশুড়ি-র সুস্থতাও জরুরি। সেই চিন্তাচেতনায় শ্বাশুড়ির জন্য বাসার থেকে খাবার বানিয়ে এনেছেন তিনি। কেবিনের ভেতর ঢুকে আশপাশে নার্স না দেখে অভিভূত হলেন। শ্বাশুড়ি-র কাছে গিয়ে দেখলেন চোখজোড়া বন্ধ। তিনি মৃদু হেসে টিফিন বক্সের ঢাকনা সরাতে থেকে বলেন,

“আম্মা অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছেন এবার উঠুন তো দেখি। আপনার জন্য খাবার এনেছি। কোনো চিন্তা করিয়েন না আফরাজ কে আমরা পেয়ে যাবো। ছেলে আমার সিংহরাজ। তার অগ্নি তান্ডবে তো খারাপ লোকদের প্যান্ট ভিজে যায়। আপনি মোটেও চিন্তা করবেন না। আপনার নাতি…।”

কথাটি শেষ করতে পারলেন না। টিফিন বক্স রেখে যেই না শ্বাশুড়ি-র শরীরে হাত দিলেন চমকে হাত সরিয়ে নিলেন। হাতজোড়া কেঁপে কেঁপে উঠল যেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ঢোক গিলে পুনরায় শ্বাশুড়ি-র শরীরে স্পর্শ করলেন। বোবা হয়ে যান তিনি। বাকরুদ্ধ হয়ে শ্বাশুড়ি-র নিথর শরীরের দিকে চেয়ে রইলেন। দেহটার প্রাণ বুঝি কবেই চলে গেল না ফেরার দেশে। এই শ্বাশুড়ি তো তার অনুপ্রেরণার সর্দারনী ছিলেন। তবে কেমনে এক চটে হারিয়ে গেলেন? চিৎকার করে ‘আম্মা’ বলে শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। খাদিজা বেগম এর কেবিন থেকে কান্নার চিৎকার শুনে সেই কেবিনের আওতায় নিয়োজিত ডক্টর আর নার্স ছুটে আসল। ডক্টর জনাব ইসমাইল এর স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে তৎক্ষণাৎ খাদিজা বেগম এর পার্লস চেক করেন। চমকে নার্সকে জিজ্ঞেস করল।

“একি তোমরা সবাই কি মরে গেছিলে? একটা পেশেন্ট মা’রা গেল তার খবর অব্দি জানাও নাই?”

দু’জন নার্স একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে করুণ গলায় বলে,

“ডক্টর হাতে অন্য পেশেন্টের কাজ থাকায় যেতে হয়ে ছিল। বুঝতে পারছি না কেমনে কি হলো?”

ডক্টরের কথায় মাথা গরম হয়ে গেল মিসেস ফেরদৌসীর। তিনি তার কলার চেপে ধরে বলেন,

“এখনই এর আইডেন্টিফাই করুন কেনো আমার শ্বাশুড়ি মা’রা গেলো? আরে গতরাতেও তো তিনি সুস্থ ছিলেন। সকালে নার্সও বলে ছিল মিনি হার্ট অ্যাটাক তাহলে মা’রা যাওয়ার কথাই নয়। এখনি আইডেন্টিফাই করুন নাহলে আপনার হাসপাতালের নামে আমি থানায় অভিযোগ দেবো।”

ডক্টর ঘাবড়ে গেলেন। তিনি কাকুতিমিনতি করে বলল।

“দেখেন আপনি শান্ত হোন আমি আইডেন্টিফাই করে জানাচ্ছি। আপনি প্লিজ পেশেন্টের পুরো পরিবার-কে খবর দিন।”

মিসেস ফেরদৌসী নিজেকে সামলে পিছু মোড়ে। তখন টেবিলে রাখা বক্সগুলো দেখে কান্নায় চোখ ভরে গেল তার। খাবারগুলো খুব আদরের সহিতে শ্বাশুড়ি-র জন্য এনেছিলেন তিনি। অথচ কি হলো? বক্সগুলো নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে গরীবের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। একটা চেয়ারে বসে নীরবে চোখের পানি জড়াতে লাগলেন। এক-দেড় মাসের ব্যবধানে তার পরিবারটা যেনো উজাড় হয়ে গেল। নিশ্চিহ্ন প্রাণে তিনি ফুঁপাতে লাগলেন। তিনি‌ জানেন না কেমনে একথা তার স্বামীকে শোনাবেন? স্বামী কথাটি শোনার পর কি আদৌও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন? নাকি তিনিও গভীর ভাবে আহত হয়ে পড়বেন? হঠাৎ মসজিদের মধ্যে আযান দেওয়ায় তিনি সময় দেখলেন। যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। তিনি আর সহ্য করতে না পেরে নামাজের জন্য হাসপাতালের লেডিস মসজিদ রুমে ছুটে গেলেন। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পথ দেখানোর নয়।

____

“দোস্ত আমরা ফার্মহাউস এ কি করছি? আর তুইও বা কেনো এ অসুস্থ শরীরে এখানে এসেছিস? ফোনও ধরতে দিচ্ছিস না? হলোটা কি তোর বলবি?”

আকবর এর লাগাতার প্রশ্ন নীরবে শুনে গেল আফরাজ। তার মাঝে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মত লেপটপ ঘেঁটে সিসিটিভি কানেক্ট করার চেষ্টা করছে। আকবর বিরক্তির কণ্ঠে কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। তার নজর গেল লেপটপের স্ক্রিনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আফরাজ এর বেলকনিতে তার শরীরে বু’লে’ট লাগার দৃশ্যটি। সেখানে সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাস্তার বিপরীত পাশে তিনজন লোক তাদের মধ্যে একজনের হাতে অস্ত্র। সেই বু’লে’ট ছুঁড়ে দেয়। বাকি দুজনের চেহারা অস্পষ্ট হলেও বুড়ো বয়সী এক লোকের চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আফরাজ এর শরীরে বু’লে’ট লাগার পরপর তারা বেরিয়ে যায়‌। এই ফুটেজ পরিবর্তন করে ফার্মহাউসের ফুটেজ ওপেন করে। সেখানে নাজীবা-কে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখা গেল। সবটা দেখে একশত ভাগ নিশ্চিত হলো এই কারবার দাহাব এর। সেই লোক ভাড়া করে নাজীবাকে নিয়ে গেল। আফরাজ লেপটপটা অফ করে আকবরের দিকে তাকিয়ে বলে,

“দ্যাটস ইট তাদের টার্গেট ছিলাম আমিই। তাহলে এই কাজ যে,দাহাব এহসান এর তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এবার হবে সামনাসামনি টক্কর। আমার বিবিজান-কে অপ’হর’ণ করার শাস্তি কেমন তা এবার টের পাবেন তিনি? ছোটবেলার আফরাজ ভেবেছেন তো আমায়! যে প্রতিবাদ করতে পারেনা ,যে অচল সেই আফরাজ কি জিনিস সেটা দেখানোর সময় চলে এসেছে।”

স্বেচ্ছায় ফোন বের করে দাহাব এহসান কে কল লাগায়। তিনি আফরাজ এর কল দেখে মনে মনে ভয় পেলেও নাজীবার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে ফোন রিসিভ করলেন। ছেলে কে তাচ্ছিল্যেতা দেখিয়ে বলেন,

“কি গো আমার দাদুভাইয়ের জামাই গো? বেশি কষ্ট হচ্ছে বুঝি? বউয়ের জন্য মরে যাহ নাহহ। বেঁচে থাকতে তো আর তাকে পাবি না। আমি এমন জায়গায় লুকিয়েছি যার সন্ধান অব্দি তুই পাবি না। তুই…..।”

“এই চুপ মুরগি ম’রার আগে ছটফটে হয়ে যায় বলে যে তোর অবস্থাও তেমনি। শোন বিবিজান আমার। আমাকে চিনিস নাই আগে যাহ্ নালায়েক এর বাচ্চা আমার পরিচয় জেনে নেহ্। তারপর ভাবতে থাকিস আমার সাথে কেমনে মুখোমুখি হয়ে লড়াই করবি।”

কট করে কলটা কেটে দিল আফরাজ। দাহাব এহসান ফোনের মধ্যে তৎক্ষণাৎ লিয়াকত কে কল দেয়। তড়জড় গলায় বলেন,

“শোন তুই এই শহর থেকে আপাতত পালিয়ে যাহ্। নাহলে আফরাজ এর হাতে পড়লে কু’ত্তার ম’রা মরবি।”

শ্বশুরের কথায় ঢোক গিলে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যান তিনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) মেয়ে তার শ্বশুরের কাছে সুস্থ থাকবে সেই আশায় শহরের বাহিরে চলে যাওয়ার জন্য গাড়ি ঘুরিয়ে নেন। আফরাজ তার পরণে শার্ট আর জ্যাকেট পরে নেয়। মানিব্যাগে বিবিজান এর ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি চিন্তা করো না বিবিজান। তোমার জামাই তার পুরোনো ফর্মে আসতে চলেছে। তোমার তো জানাই নেই তোমার জামাই ছোট থেকেই জেলাসি প্রকৃতির মানুষ। তোমার সাথে যে যে খারাপ কাজ করতে চাইছে তাদেরকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছেড়েছি। সেখানে তোমার জীবন হু’ম’কি’র মধ্যে ফেলা মানুষ কে তো হাসপাতালের বেডে নয়, কেয়ামত দেখায় ছাড়বো।”

মানিব্যাগ পকেটে রেখে রুম থেকে বের হলো আফরাজ। বাঁকা হেসে বলে, ‘অল অফ ইউ গাইস আর রেডি?’
‘ইয়েস স্যার।’
গার্ডস রেডি দেখে অবাক হলো আকবর। সে প্রশ্নাতীত নজরে তাকায়। আফরাজ হেসে বলে,

“এভাবে কি দেখছিস নাকিব মুনসিফ এর কথা ভুলে গেলি নাকি? এই গার্ডস তার পাঠানো। আমাদের গার্ডস তো আছেই।”

“কি নাকিব স্যার কেন গার্ডস পাঠিয়েছে?”

আফরাজ জবাব দিল না। চোখের ইশারায় যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু যেতে গিয়েও এক ফোন কলে আফরাজ আর আকবর এর হুঁশ উড়ে যাওয়ার মত হলো। তারা তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
জনাব ইসমাইল মায়ের আকস্মিক মৃত্যু সইতে না পেরে জ্ঞানহীন হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে রইলেন। মিসেস ফেরদৌসী কোথার থেকে কি সামলাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একের পর এক শোকবার্তা যেনো পিছে পড়েছে। তিনি মাথায় হাত চেপে বসে রইলেন। কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে তাকান। ছেলেকে দেখে কান্নাময় গলায় বলেন,

“বাবা-রে তোর দাদি আর নেই। তোর বাবাও শোক সামলাতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল। এই বাবা কি অভিশাপ পড়ল আমার পরিবারের উপর? জানিস তোর দাদি কে না কোন লোক নাকি এসে অ্যানেস্থেসিয়ার ইনজেকশন দিয়েছে। এতে তোর দাদি আজীবনের জন্য চোখ বুজে নিলেন। বাবা-রে ঐ লোককে ছাড়িস না। যাবতজীবন কারাদণ্ড দিস।”

মায়ের আহাজারির চেয়েও দাদির মৃত্যু আফরাজ এর রাগের সীমাকে পাড় করে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“আম্মা রেডি হয়ে যান। দাদির দাফন কার্য শুরু করতে হবে।”

মা’কে ছেড়ে করিডোরে এসে দাহাব এহসান কে ফোন দেয়। বেচারা চিন্তায় পায়চারী করছেন। আফরাজ এর শান্ত কণ্ঠ যেনো কোনো তাণ্ডব এর ইশারা করছে। ফোন আসায় দেখলেন আফরাজ এর কল। ঢোক গিলে কল রিসিভ করেন।

“তোর কেয়ামত দেখার খুব শখ তাই না? আমার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার স্পর্ধা করলি। এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হবে। এই আফরাজ ফাহিম তার পুরোনো ফর্মে ফিরে এসেছে। তোর শাস্তি কেমন ভয়াবহ হবে তুই কল্পনাও করতে পারবি না। যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

চলবে…..

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-২০+২১

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২০ (স্পেশাল)

“বিবিজান এখনো সিম্পল কিস থেরাপি নিয়েছি। তাও আবার গালে। রাতে স্পেশাল বডি থেরাপি নেবো। এখন না হয় তোলা রইল। তুমি থাকলে সব রাতই আমার জন্য হানিমুন টাইপ। হয়ছে অনেক আদর করছি, যাও গিয়ে এবার আমার জন্যে খাবার আনো।”

স্বামীজান এর দিকে হা হয়ে তাকায় নাজীবা। প্রথমে আবেগে ভাসিয়ে শেষত ভেঙ্গে দিল। এটা কেমন কথা? আফরাজ এর কলার চেপে ধরে বলে,

“ঐ একে তো আবেগে ভাসিয়ে অপরাধ করলেন। তার উপর আবেগ ভেঙ্গে দূরে সরালেন। এমন এক ঘু’ষি দেবো নাহ্ সাত জম্মেও আর বিছানা থেকে উঠতে পারবেন না হুহ্।”

কৌশলে শাড়ির আঁচল ভেদ করে কোমরে হাত রাখল আফরাজ। পিলে চমকে উঠে নাজীবা। তার কোল থেকে নামতে চেয়েও পারল না। এতটা শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরেছে। বিবিজান এর কাঁপান্বিত ওষ্ঠের দিকে চেয়ে আসক্তির কণ্ঠে বলে,

“বিবিজান বুঝি স্বামীর আদর পাওয়ার জন্যে ছটফট করছো হুম?”

নির্লজ্জ লোকটা যে ইচ্ছেকৃত তাকে ফাঁদে ফেলতে চাইছে বেশ বুঝতে পেরেছে নাজীবা। সেও ভান ধরে। হাতজোড়া আফরাজ এর বোতামে রেখে আস্তে করে খুলতে লাগল। বিবিজান এর এহেন কাজে আফরাজ উম্মাদ হতে লাগল। সুখের জোয়ারে কবে ভাসবে সেই আশায় মগ্ন হতে লাগল‌। কিন্তু তার মগ্নতায় একরাশ জল ঢেলে পালিয়ে যায় মেয়েটা। আফরাজ দেখল তার কোল শূন্য হয়ে আছে। বরং সেই একমাত্র বান্দা যে, রুমে একলা বসে আছে‌। মেয়েটা তাকে এত বড় বোকা বানালো ভাবতেই সে রাগে গজগজিয়ে উঠে। রুম থেকে বেরিয়ে তৎক্ষণাৎ রান্নাঘরে গিয়ে মুখ ফসকে বলতে নিয়েও বলল না। ঢোক গিলল উল্টা। কেননা সামনে তার মা জননী দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই শ’য়’তানি হাসা হাসছে নাজীবা। ছেলে-কে অসময়ে রান্নাঘরের চৌকাঠে দেখে ভ্র বাঁকালেন মিসেস ফেরদৌসী। হাতের থেকে গ্লাভস খুলে ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

“কিরে ব্যাটা কড়া ঠান্ডায় রান্নাঘরে কি করছিস? তোর না খিদে পেয়েছে? তাই আমি আর বউমা মিলে তোর জন্য মজার খিচুড়ি রান্না করছি সাথে তরকারি হিসেবে মুগ ডাল। তুই রুমে যাহ্। খাবার রান্না শেষে ডাকব কেমন ব্যাটা?”

“আম্মু মানে বলছিলাম কি? আমার না শীত লাগছে কম্বল লাগবে।”

নাজীবা শ্বাশুড়ি মায়ের পিছে ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে আছে‌। বিধেয় তার মজার হাসি তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। আফরাজ সেই হাসি দেখে রাগে গজরাতে থাকে। মিসেস ফেরদৌসী নির্লিপ্ত গলায় বলেন,

“ব্যাটা যার যার রুমে তাদের জন্য কম্বল অনেক আগেই দেওয়া আছে।”

“নাহ্ দেওয়া নেই আম্মু। আমার কম্বল লাগবে এখনই মানে এখনই।”

“কিন্তু এখন কেমনে দেবো বাবা? আমি তো হাতে কাজ নিয়ে আছি। ওহ বউমা তুমি নাহয় যাও গিয়ে আলমারির নিচের ড্রয়ার খুলে দেখো। কম্বল পাবে।”

চোখ বড় করে তাকায় নাজীবা। শ্বাশুড়ির কথা তো আর অমান্য করতে পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্বামীর মুখের দিকে তাকায়। তার চোখ-মুখ জুড়ে শ’য়’তানি হাসি বিদ্যমান। ভ্রু নাচিয়ে রুমের দিকে আসতে ইশারা করল। নাজীবা ঠোঁট কামড়ে ঢোক গিলে বলে,

“আম্মা আমারই যেতে হবে? না মানে আমার থেকে তো ডালগুলো ভেজানো পাতিল থেকে নিয়ে অন্য পাতিলে নিতে হবে। না হলে তো….।”

তার কথার সমাপ্তি অব্দি হতে দিল না আফরাজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ঐ কাজটা সহজ সেই কাজটা অবশ্য রহিমা করতে পারবে। আপনি যদি স্বামীর উপর মেহেরবান হোন। তবে রুমে এসে কম্বলটা শরীরে জড়ানোর ব্যবস্থা করে দিন।”

শেষ কথাটি বলে মায়ের চোখের আড়ালে চোখ টিপ মারল বিবিজান-কে। সে তো লাজুকতায় দৌড়ে স্বামীর পাশে কেটে রুমের দিকে ছুটল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) তার যাওয়া দেখে মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হাসলেন। তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন ব্যাপারটা। কিন্তু ছেলে আর ছেলের বউকে লজ্জায় ফেলতে চাননি। বিধেয় না বোঝার ভান ধরেই ছেলের বাচ্চার মত কথায় জবাবের উপর জবাব দিলেন। মায়ের দিকে তাকালে তিনিও তাকান। মায়ের মুচকি হাসি দেখে আফরাজ মাথা চুলকে মা-কে ফ্লাইং কিস ছুঁ’ড়ে দিয়ে চলে যায়। রহিমাও তখন রান্নাঘরে আসায় মিসেস ফেরদৌসীর আর কষ্ট করতে হলো না। মেয়েটা সব সামলে নেবে বলে তাকে পাঠিয়ে দিল।
আফরাজ রুমে এসে বিছানায় কম্বলের ভেতর লুকিয়ে বসে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভাবল তার বিবিজান। ফলে সে এসে জট করে জড়িয়ে ধরে। মুখটা বিবিজান এর মুখ বরাবর এনে বলে,

“এবার কেমনে পালাবে বিবিজান? আপনা-কে ধরা দিতেই হতো। তখন ফিলিং জাগিয়ে উধাও হওয়ার শোধ এখন তুলব।”

কোমরে হাত লাগাতে গেলেই পুরুষালী চিৎকারে আফরাজ ঘাবড়ে যায়। আকবর কম্বল সরিয়ে বলে,

“ভাইরে ভাই তুই তো দেখি শরীরের মধ্যে হাত দেওয়া শুরু করছিস! কোচ তো লিহাস কার দোস্তকা। আজকে না থামালে আমার ইজ্জত হরণ করে ফেলতি। তখন আমি আমার হবু সন্তান কে কি জবাব দিতাম? যে তার পিতা, পিতা হওয়ার আগেই হরণ হয়ে গেল। আমার বউটা অকালে স্বামী হরণের দায়ে কান্না করে জীবন কাটিয়ে দিতো? হে আল্লাহ আমি কোথায় মুখ লুকাবে এখন?”

আফরাজ বোবা হয়ে গেল। বউয়ের জায়গায় বন্ধুকে ফাজলামি করতে দেখে ধুমধাম মা’রা শুরু করে। আকবরও পাল্টা মা’র’ল। কিন্তু পারল না উল্টো দৌড়ে রুম থেকে পালালো। রাগে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আফরাজ এর। চোখ-মুখে পানি দিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। নাজীবা পর্দা সরিয়ে বের হলো। স্বামীর মুখ আয়নার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে সে। অভিমান করল মনে হচ্ছে। হাত কুচলে ভদ্র নম্র হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। যতক্ষণ স্বামীর মুখে হাসি দেখতে পাবে না ততক্ষণ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না নাজীবা। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছ কোমল রূপে বিবিজান কে দেখেও কোনো ক্রিয়ালাপ করল না আফরাজ। তোয়ালে মুখ মুছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করে নেয়। নাজীবা কাঁপা গলায় বলে,

“আপ আপনি কি রাগ করছেন? দেখুন আমি শুধু মজা করছিলাম। ইচ্ছেকৃত কিছু করিনী। আপনি কষ্ট পাবেন যে জানলেন কখনো এমন কাজ করতাম না। কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

নিশ্চুপে শার্ট বদলে রুম থেকে বের হতে গেল, নাজীবা রুখে দাঁড়ায়। আফরাজ ফোনের দিকে চোখ সরিয়ে একপলক বিবিজান এর মুখশ্রীর দিকে তাকায়। শান্ত চেহারায় অশান্তের রেশ। মনে মনে হাসি পেল তার। তবুও নিজের দাপট বজায় রেখে নাজীবা-কে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। নাজীবার ছোট হৃদয় নড়বড়ে কেঁপে উঠল। স্বামীর কাছ থেকে এহেন প্রত্যাখান সহ্য হলো না তার। নিশ্চুপে স্বামীর পিছে পিছে গেল। ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে। জনাব ইসমাইল খিচুড়ির ঘ্রাণ শুঁকে বলেন,

“আহাহা আজ খিচুড়ি খাবো। খিচুড়ি দিয়ে নতুন বছরের আনন্দ শুরু হবে।”

মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হাসলেন। খাদিজা বেগম লাঠি হাতে নিয়ে বসে আছেন। কোমল চোখে চেয়ে আছেন পরিবারের দিকে। কেনো জানি তিনি শরীরে অস্বাভাবিক ব্যাধি লক্ষণ করছেন। আজকাল কোনো ঘ্রাণ শুঁকেও বোঝতে পারেন না, দৃষ্টিদ্বয় ঘোলাটে বোঝা যায়। শ্বাশুড়ি কে নীরব দেখে মিসেস ফেরদৌসী গিয়ে আগলে চেয়ার টেনে বসিয়ে দেন। নিজ হাতে খাবারের প্লেটে খিচুড়ি মগ ডাল মেখে বলেন,

“আম্মাকে আজ থেকে আমিই খাওয়ে দেবো।”

খাদিজা বেগম আহ্লাদী হলেন। মাথা নেড়ে সায় দিলেন। কুসুমার হাত ধরে চেয়ারে বসাল আকবর। মেয়েটার শরীর বমি করার কারণে দূর্বল হয়ে পড়েছে। এখনো এক মাস হয়নি অথচ তার বউ বমি করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। আকবর এর কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে মিসেস ফেরদৌসী বলেন,

“ব্যাটা বসে পড় তুইও খাঁ বউমারেও খাওয়ানোর চেষ্টা কর। বলি কি শোন আচারও রাখছি আচার মেখে খাওয়া দেখবি বমি আসবে না।”

‘জ্বি আম্মা আমার আচার খেতেই মন চাচ্ছিল।’ খুশির চোটে আকবর-কে চটজলদি আচার দিতে ইশারা করে। মিসেস ফেরদৌসী সবার প্লেটে খাবার দিয়ে নিজেও বসে পড়লেন। আফরাজ এসে চুপচাপ হয়ে নিজমনে খাবার বাড়ছে। নাজীবা তার পাশে বসে পড়ে। আফরাজ খাবার বেড়ে মাখতে লাগল। নাজীবার মন খারাপ হয়ে গেল। কেননা মানুষটা সবসময় নিজ হাতে খাওয়ে দিতো‌। একটু মজার কারণে রেগে খাওয়ে দেবে না? সেও খাবে না ভেবে উঠতে গেলে আফরাজ গম্ভীর গলায় বলে,

“দেখছ যখন খাবার বেড়েছি,তবে না খেয়ে উঠছো কেনো ?”

“না মানে আমি ভাবছি।”

“চুপচাপ বসো।”

নিশ্চুপে স্বামীর পাশে বসে যায়। আফরাজ এক লোকমা মুখের কাছে নিলে নাজীবা তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগে। জনাব ইসমাইল দেখে তৃপ্তির হেসে মিসেস ফেরদৌসী কে খোঁচা মারলেন। তিনি ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ‘কি’ ইশারা করলেন। জনাব ইসমাইল লাজুক হেসে এক লোকমা ভাত মিসেস ফেরদৌসীর মুখে পুড়ে দিলেন। পরিবেশটা থমথমে গেল। ড্যাব ড্যাব করা সকলের চোখজোড়া দেখে মিসেস ফেরদৌসী লজ্জায় পড়লেন। স্বামীর দিকে চেয়ে চোখ রাঙানির দিলেন। জনাব ইসমাইল ভড়কে যান। গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,

“ওমন আন্ডার মত তাকিয়ে আছিস কেন তোরা? যার যার খাবার খাহ্। তোরা বাপ-মায়ের সামনে বসে প্রেম করতে পারবি! আর আমরা প্রেম করলেই দোষ তাই না?”

সকলে আচমকা হেসে উঠল। খাদিজা বেগমও মুচকি হাসলেন। তৎক্ষণাৎ গম্ভীর হয়ে যায় আফরাজ। নাজীবা হাসলেও স্বামীকে চুপ হতে দেখে খুব খারাপ লাগল তার। সে ভাবল প্রতিবার তো আফরাজ তাকে সারপ্রাইজ করে। আজ নাহয় সে কিছু করুক। এই ভেবে সে আকবর-কে ইশারা করল। ভাবীর আকস্মিক ইশারা দেখে বুঝতে পারল না সে। তবুও সে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ‘খাওয়ার পর’। নাজীবাও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিক আছে বোঝায়। আফরাজ সরু চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে হিংস্র চাহনি ফেলল। দু’জনেই ঘাবড়ে যার যার মত খেতে থাকে।

____

রাত ১১টা বাজে,
মিসেস হিয়া চিন্তায় পায়চারী করছেন। সকাল থেকে স্বামীকে কল দিয়ে পাচ্ছেন না। এখন রাতের বারোটা বাজতে আর একঘণ্টা সময়। মনেও কু ডাকছে। কোনো এক বিপদ নিশ্চয় ঘটতে চলেছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারছেন। বাবাকেও জিজ্ঞেস করে ছিল কিন্তু ধমকিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি বুঝেন না যে বাবার জন্য তিনি এতো ত্যাগ করেছেন, সে বাবা কেমনে এতো নিষ্ঠুরতা করতে পারেন। তবুও কোনো একদিন শোধরে যাবে বলে নিজের মনকে খামোখা বোঝ দিলেন। জনাব লিয়াকত আফরাজ এর বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে দুজন ভাড়াটে লোক। তাদের কে ছবিটা দিয়ে ইশারা করে বেলকনির দিকে‌। শক্ত কণ্ঠে বলেন,

“আফরাজ এর বেলকনিতে ঢিল ছুঁ’ড়ে মারব। তুই গা’র্ন রেডি কর। বু’লে’ট যেন ঠিক কপাল বরাবর লাগে। অনেক টাকা খরচ করে তোদের কে আনছি। যদি নিশানা ভুল হয় তোদের দুইটারেই শ্বশুরের কাছে ছেড়ে দেবো।”

দুই লোক ভয় পেয়ে গেলো। তিনি একটা পাথর নিয়ে ছুঁড়তে গেলেই থেমে যায় হঠাৎ। আফরাজ এর রুম অন্ধকার হয়ে গেছে। তার মানে শুয়ে পড়ল নাকি? এমন ভাবনা আসায় জনাব লিয়াকত কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নাজীবা আকবর-কে পটিয়ে বলেছে আফরাজ-কে রুমে আসা থেকে থামিয়ে রাখতে। সে সারপ্রাইজ রেডি করতে চাই বলেই দু’জনে হাত মেলাল। আকবর লাইব্রেরী রুমে গেল। চশমা পরে বই ঘাঁটতে দেখে আকবর ঢোক গিলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আফরাজ টু শব্দ করল না। সে গিয়ে হেহে করে হেসে দিল। আফরাজ একপলক তাকিয়ে ব্রত কণ্ঠে শোধায়।

“আমি নিশ্চয় কোনো সার্কাস হলে দাঁড়িয়ে নেই।”

“আরে ভাই জাস্ট মজা করছি ঐ সময়। তুই এটা নিয়ে এখনো রেগে আছিস! দেখ ভাই আইম সরি। এখন আমি কাঁদলে কিন্তু তোর পাপ হবে বলে দিলাম।”

“তবে কি তোর ছবি তুলে ঈদ পালন করব?”
“করলে বলিস। খেতে চলে আসব।”
“তুই মিয়া বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছিস। আর আমি এখনো বাচ্চার ব ও করার প্রস্তুতি নিতে পারিনী। তুই শা’লা সবসময় আমার চুমু খাওয়ার মাঝে বাম ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিস। বলি কি বাপ তুই বাপ হবি এমন মীর জাফরগিরী করা ছেড়ে দেহ্ বাল।”
“বাহ্ ভাই একটু মজা করলাম আর এতেই এত কথা শোনতে হলো। তুই বন্ধু নামেই কলঙ্কিত। সেদিন আমাকে ফাঁসতে বললি আমি জী-জান লাগিয়ে ফাঁসতে গেলাম। অথচ তুই? না তুই আমার দোস্ত হতে পারিস না। তুই আমার বন্ধুত্বে কলঙ্ক লাগিয়ে দিয়েছিস। ছিঃ ছিঃ।”

আফরাজ কোমরে হাত রেখে রাগী দৃষ্টিতে আকবর এর দিকে তাকিয়ে আছে। তার গলা চেপে ধরে বলে,

“আজ তো তু গেয়া শা’লে। অনেকক্ষণ ধরে তোর বকবক শোনতে ছিলাম। এবার কর বকবক।”

কোনো ব্যথা তো পাচ্ছে না উল্টো মজা লুটতে সে আফরাজ এর পেটে কাতুকুতু দিতে থাকে। বেচারা আকবর এর গলার থেকে হাত সরিয়ে হাসতে লাগল। সেও নাছোড়বান্দা ঠাস করে আকবর এর লুঙ্গি টান দিয়ে পালিয়ে যায়। সে বোকা বনে গেল। তার পরণে একটা শর্ট ট্রাউজার দেখা যাচ্ছে। জনাব ইসমাইল লাইব্রেরী রুমের পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আকবর-কে কিংবদন্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলেন,

“ছিঃ আকবর তুই যে ফাজিল আগে থেকে জানতাম তাই বলে একলা রুমে নগ্ন দাঁড়িয়ে থাকার মানে বুঝলাম না। এই বাসায় লেডিস ও আছে রে বাবা। নেহাত আমি বাপ দেখছি বলে বলছি। তোর মা দেখলে এই আঙিনায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো। কি রে দামড়া ব্যাটা যাহ্ জলদি।”

লজ্জায় গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে যায় আকবর। মনেমন আফরাজ-কে কয়েক দফা গা’লি দিয়েই ছাড়ল। নিজের রুমের বাহিরে আসতেই তার সামনে কেউ লুঙ্গি ধরল। চট করে লুঙ্গি নিয়ে নেয় আকবর। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“কি মুন্না নুইনা দেখিয়ে লজ্জা পেতে কেমন লাগিরো রে? আর করবি ফাজলামি? করলে তোর নুইনা কেটে ফুইনা করে দেবো হুহ্।”

লুঙ্গিটা পরে মুখ ভেটকাল আকবর। রুমের বাহিরে কথার শব্দে দরজা খুলল কুসুমা। একলা আকবর-কে বিরবির করতে দেখে ডেকে উঠে। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শুতে যায়। কুসুমাও বিরক্তবোধ করল। আজ থার্টিফার্স্ট নাইট আর এই বান্দা শুয়ে পড়ল। দাঁতে দাঁত চেপে দরজা লাগিয়ে রাগ করে কুসুমাও শুয়ে পড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আফরাজ রুমে এসে অবাক হয়ে যায়। পুরো রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কোনো অঘটন ঘটল ভেবে ভয় পেয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আকস্মিক লাইট জ্বালানোর কারণে নাজীবা নিজেও হকচকিয়ে গেল। আফরাজ তো যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে স্তদ্ধ হয়ে গেল। তার চোখজোড়া বিবিজান এর আপাতমস্তক পরিলক্ষণ করায় ব্যস্ত। কাঁচুমাচু করে আঁচলটা সেফটিপিন মে’রে নেয় নাজীবা। সে ডিমলাইটের আলোতে ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পরছিল,সাজবিহীন সে নিজেকে প্রস্তুত করছিল। আজ সে তার স্বামীর সঙ্গে সুখের জোয়ারে ভাসবে। আফরাজ এর ধ্যান ফিরে সে ঢোক গিলে টেবিলের উপর থেকে একমগ পানি খেয়ে শেষ করে নিল। পুনরায় হৃদয়াঙ্গণের দিকে চোখ দিতে পারল না। চট করে বেলকনির দরজা খুলে রেলিং চেপে ধরে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে আরম্ভ করে। বাহিরের মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঠান্ডা বাতাসেও সে তার শরীরে গরম অনুভব করছে। আকস্মিক বুকের উপর কোমল হাতজোড়া আবদ্ধ হয়ে যায়। আফরাজ নিরুত্তক হয়ে বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নাজীবা স্বামীর নীরবতা আড়চোখে খেয়াল করে ধীরস্থির করে গুটিয়ে স্বামীর বাহু ভেদ করল। তার বুকের কাছে গিয়ে সটান দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ তবুও গোমড়ামুখো হয়ে তাকে সরানোর চেষ্টা করে। নাছোড়বান্দা নাজীবাও সরেনি তার জায়গা থেকে। চাঁদের ঘন আলোতে মানব-মানবীর মনজোয়ারে প্রেমের ছন্দ বইছে। নাজীবার কিশোরী বয়সের পছন্দের হৃদয়পুরুষ। স্বামীর শার্টের পাঁচ বোতাম খুলে বুকটা উম্মুক্ত করে দেয়। ওষ্ঠদ্বয় ছোট হৃদপিন্ডের স্থানে চেপে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আপনি আমার আকাশসম ভালোবাসা,
আপনার সঙ্গে আজম্ম বাঁচার স্বপ্ন আমার,
ছেড়ে যেও না কভু,হয়ে থাকতে চাই আপনার অর্ধাঙ্গিণী।”

আফরাজ ব্যালেন্স রাখতে বিবিজান এর কোমর জড়িয়ে ধরে রাখে। তার চোখে উম্মাদনার আগুন জ্বলছে। বিবিজান এর কণ্ঠে বলা বাক্যদ্বয় তার উষ্ণ মাত্রা-কে বাড়িয়ে দিল। স্বজোরে গাল চেপে ধরে ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ আতশবাজি ফোটানোর শব্দ হলো। দুজনের শরীরে মৃদু কাঁপন ধরে। ওষ্ঠদ্বয় ছাড়া পেয়ে দুজনের নজর গিয়ে পড়ে শহরের আনাচে কানাচে থেকে ফানুস উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য। সেই সঙ্গে আতশবাজির রং আলো পুরো শহর-কে মুখরিত করছে। খুশির আমেজ তবুও খারাপ লাগল দু’জন এর। কেননা এসবের কারণে শত পাখি মৃতবরণ করে। বিবিজান এর নিরস মুখশ্রী দেখে চট করে তার গালে চুমু দিয়ে খানিক দূরে সরে যায় আফরাজ। নাজীবা হাত মেলে ধরে রেলিং এ টেস দিয়ে দাঁড়ায়। জোরালো শব্দে বলে,

“আপনাকে অনেক ভালোবাসি স্বামীজান।”

খুশির বলে মুচকি হেসে বিবিজান এর নিকট এগিয়ে যেতে লাগল আফরাজ। নাজীবা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে স্বামীর আগমনে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় চেয়ে রইল। হঠাৎ উচ্চস্বরে এক গুঞ্জন হলো। যার শব্দে আফরাজ এর হাসিমুখ মিটে গিয়ে স্তদ্ধ-তা ভর করে। গালের দুপাশে র’ক্তের ফুটো ছিটকে লেগে গেল। তার ওষ্ঠজোড়া ক্রমশ কেঁপে উঠে। গলার থেকে শব্দ বুঝি খুব নিম্ন হয়ে গেল। কাঁপান্বিত ঠোঁটে বলে উঠে….’বিবিজান’……।

চলবে……..

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২১

হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নাজীবা। চোখ-মুখে মলিন বিষণ্ণতা। শাড়ির মধ্যে র’ক্ত ছিটিয়ে আছে। তার উপর গরম জ্যাকেট জড়ানো। জনাব ইসমাইল কে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কান্না করচ্ছেন মিসেস ফেরদৌসী। একমাত্র ছেলের সঙ্গে এই কি হলো? আকবর সকলের বিষণ্ণময় চেহারা দেখে কাউকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করল না। সে একলা হাতে হাসপাতালের যত ফর্মালিটিস আছে সব সামলে নিচ্ছে। কিন্তু সেও মনেমন বন্ধুর অসুস্থ দশার জন্য কষ্টে ভোগছে। কষ্ট দেখানোর সাধ্য নেই বলে ফর্মালিটিস পূর্ণ করার পর এককোণায় দাঁড়িয়ে পরিবারের মলিন চিন্তিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। থার্টিফার্স্ট নাইট বুঝি বিপদ নিয়ে হাজির হয়েছে। রাতের বোধহয় দুইটার সময় চলছে। অপারেশন থিয়েটারে আফরাজ কে নেওয়া হলো, দু’ঘণ্টা পাড় হয়ে গিয়েছে। অথচ তার অবস্থা সম্বন্ধে এখনো সকলের অজানা রয়ে গেল। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সকলের দৃষ্টি দরজার দিকে পড়ল। সামনে নার্স কে বের হতে দেখে সকলে আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু নার্স তড়-জড় করে এসেই বলে,

“আপনাদের মধ্যে এ পজেটিভ ব্লাড গ্রুপ কার আছে?”

আকবর সঙ্গে সঙ্গে বলে,’জ্বী সিস আমার ব্লাড গ্রুপ এ পজেটিভ। আমাকে বলুন!’
“দেখুন আপনাদের পেশেন্ট এর কন্ডিশন অনেক ক্রিটিক্যাল। তার দু’ব্যাগ র’ক্ত লাগবে। আসুন আপনি।”

সকলের কৌতুহলী মুখশ্রী পুনরায় মলিন হয়ে গেল। আকবর তাদের দিকে একপলক চেয়ে নার্সের পিছু পিছু গেল। নাজীবা নিঃশব্দে কাঁদছে। যার আওয়াজ কারো কানেও ঠেকছে না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) জনাব ইসমাইল বউমা-র দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে চেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তার বিবেক তাকে বলছে, তার ছেলের এ অবস্থার জন্য একমাত্র এই মেয়েই দায়ী। তাও পুনরায় এই মেয়েই। মিসেস ফেরদৌসী কান্নাময় সুরে বিলাপ করে বলছেন।

“বলছিলাম এই মেয়েটা অপয়া, মুখপুড়ি আমার ছেলে আফরাজ এর সঙ্গে থাকলেই তাকে মে’রে দেবে বলে ছিলাম না আপনাকে? দেখছেন খুশি তো এবার? আমার ছেলেটাকে জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঠেলে দিলেন আপনারা। আর আপনি আম্মা আপনি না আপনার নাতিকে বেশি ভালোবাসেন। তাই বুঝি তার গলায় এই অপয়া মেয়ে-রে ঝুলিয়ে মরণের দিন দেখাচ্ছেন।”

বউমা-র কথায় খাদিজা বেগম শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকান। ছেলের অসুস্থতায় মায়ের আর্তনাদ এতবছর পর দেখে হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করছেন তিনি। গম্ভীর মুখ করে নাতবউয়ের দিকে তাকান। নাজীবাও শান্ত নেই সকলের তুচ্ছতাচ্ছিল্যতা তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। সে যত নিজেকে শক্ত করতে চাইছে তত সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। না পারতে সে দাদি শ্বাশুড়ি-র দিকে তাকায়। অত্যন্ত এ আশায় তার দাদি শ্বাশুড়ি তার প্রতি সদয় হোক। কিন্তু কিছু মুহূর্ত পর তার আশা নিরাশায় পরিণত হলো। খাদিজা বেগম লাঠি ঠকঠক করে নাজীবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যান। নাজীবা মলিন মুখে দাদি শ্বাশুড়ির দিকে চেয়ে ম্লান কণ্ঠে আওড়ায়।

“প্লিজ দাদি আপনিও‌ আমায় তাড়িয়ে দিয়েন না। আপনার নাতি কে ছাড়া আমি বাঁচব না গো দাদি। খুব ভালোবাসি তাকে। প্লিজ দাদি।”

ফুঁপিয়ে উঠে মেয়েটা। খাদিজা বেগম এর চোখ থেকেও পানি পড়তে লাগল। তবুও তিনি এতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না। কোমল ভাবে নাজীবার বাহু চেপে ধরে সিটের বসা থেকে দাঁড় করিয়ে নেন। নাজীবা শরীর কান্নার কারণে মৃদু মৃদু কাঁপছে। খাদিজা বেগম কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নাতবউকে পরখ করলেন। এই মুখশ্রীর মানবী-কে তিনি নিজ ইচ্ছায় একমাত্র নাতির সঙ্গে বিয়ে করিয়ে ছিলেন। আজ এমনও দিন এলো যে, মেয়েটাকে তার নিজ হাতে বের করে দিতে হচ্ছে। নাজীবা-কে অপারেশন থিয়েটারের রুম থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে এনে বলেন,

“দেখো নাতবু তুমি কয়েকদিনের জন্য আমার ফার্মহাউস এ চলে যাও। ফার্মহাউস এর ঠিকানা সম্পর্কে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি কল করে ড্রাইভার কে রেডি করে নেবো। সে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বাহিরেই আছে। তাকে বলব ভালোমত যাতে তোমাকে পৌঁছে দেয়। ওখানে গেলেও অত্যন্ত নিজেকে দূরে রেখে সকলের মনে জায়গা করতে পারবে। আমি জানি স্ত্রী হিসেবে তোমার মনে কি চলছে। কিন্তু এই সময়টা তোমার জন্য খারাপ। তাই কয়েকদিন ফার্মহাউস এ চলে যাও। সব ঠিক হলে তোমাকে নিয়ে আসব।”

দাদি শ্বাশুড়ি-র কথায় নাজীবার হৃদয় থেকে বড় বোঝা নেমে গেল। তৎক্ষণাৎ দাদি-কে জড়িয়ে ধরে বলে,

“দাদি বিশ্বাস করুন আমি নিজেও বুঝিনি ঐসময় আসলে ঘটলটা কি? আমি আর উনি….।”

খাদিজা বেগম তাড়াহুড়ো করে বলেন,

“না নাতবু এখন কিছু বলো না। তোমাকে রাতে ফোন দেবো তখন বলিও। এখন সঠিক টাইম নয়।”

দাদির কথায় নাজীবা বলতে গিয়েও পারল না। সত্যটা জানা যে খুব জরুরী। কিন্তু পরিবেশের প্রতিক্রিয়ায় সেও মানতে বাধ্য। অতএব, দাদির সালাম নিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। পিছু মোড়ে আড়চোখে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকায়। আফরাজ-কে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার। পরিস্থিতি আজ পক্ষে হলে অবশ্য সে আফরাজ এর কাছে থাকতো। অবিচ্ছিন্ন মনকে কোনো মতে বুঝ দিয়ে দাদি শ্বাশুড়ির কথা মেনে ফার্মহাউস যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেল। খাদিজা বেগম ঠোঁট কামড়ে চেয়ে রইলেন। চোখ থেকে এক-দুই ফুটো পানি গাল ভেদ করে ঝরে গেল। চোখ মুছে তিনি নাজীবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আমাকে মাফ করে দিও নাতবু। তোমাকে ভীষণ পছন্দ ছিল আমার। কিন্তু নাতি আমার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তার শূন্যতায় তো জায়গাটা খালি রয়ে যাবে। তার যেনো ক্ষতি নাহয় সে ব্যবস্থা করতেই তোমাকে ফার্মহাউস এ পাঠানো। ওখান থেকে তুমি তোমার আসল গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। এরপর আর কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না।”

____

“শাবাশ মেরে সের। তোর শুট তো একদম বরাবর হয়েছে। কোনো এপড় ওপড় অব্দি হয়নি। এর জন্য তোদের কে পুরষ্কার দেওয়া উচিৎ।”

জনাব দাহাব এহসান গা’র্ন শুটার দু’জন কে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বললেন। তিনি হেঁটে দেওয়ালের কাছে আসলেন। দেওয়ালে টাঙানো ছু’ড়ি থেকে দুটা ছু’ড়ি হাতে লুকিয়ে নেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)যা কারো চোখে না পড়লেও জনাব লিয়াকত এর চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে। মনেমন তিনি আতংক-বোধ করছেন। তার শ্বশুর কি কারণে ছু’ড়ি হাতে নিল তা একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন। ঢোক গিলে রুমের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ান। দাহাব এহসান আয়নার মধ্যে দুজনের প্রতিফলিত রুপের দিকে চেয়ে হিংস্র হয়ে উঠলেন। দ্রুত এসে দু’জনের শরীরে দাঁত বসিয়ে চেপে ধরে বার কয়েক ছু’ড়ি দিয়ে আঘাত করলেন। একেবারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা। তাদের শরীরের র’ক্ত চুষে খেয়ে নেন তিনি‌। জনাব লিয়াকত এরূপ বিবশ দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারলেন না। তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বেরিয়ে যান। পাবলিক ওয়াশরুমে ঢুকে বমি করে ফ্রেশ হয়ে নেন। মিসেস হিয়া বাবার রুমের ধারে কাছেও গেলেন না। কেননা লোক দুটার আওয়াজ তিনি ভালোই শুনতে পেয়েছেন। তিনি জানেন, তার বাবা সত্য প্রকাশ্যে না আসার জন্য তাদের খেয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি আর নিজেকে দরদী সাজালেন না। স্বামী-কে দেখে চিন্তিত মুখোভঙ্গি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে যান। লিয়াকত স্ত্রীর দিকে ভুরু নাচিয়ে বলেন,

“কি এখন কি লেকচার দিতে আসছো?”

“শুনেন না আজকে সকালে আপনি কল ধর ছিলেন না বলে আমি মনে মনে চিন্তায় পড়ে গিয়ে ছিলাম। আর এখন তাবাসসুমকে কলে পাচ্ছি না। আপনার কল না হয় রিং হয়েছিল কিন্তু তাবাসসুম এর কলে তো রিং-ই হচ্ছে না। আমাদের মেয়েটা-র খোঁজ করে দেখুন না। বাবাকেও বলে লাভ নেই। উনি কখনো আমাদের চিন্তা করেননি। সারাক্ষণ সম্পদ আর কামনা লালসার মাঝে ডুবে মরা পুরুষ তিনি।”

“কি বলছো তাবাসসুম ফোন ধরছে না? কথাটা আগে কেনো জানাওনি? ওহ খোদা না জানি মেয়েটা কোথায় আছে!”

জনাব লিয়াকত তৎক্ষণাৎ শার্ট পরে বাসার থেকে বেরিয়ে যান। মিসেস হিয়া পায়চারী করতে থাকেন। তিনিও ক্লান্ত নিজের বাবার এসব কর্মে। কিন্তু তিনিও বা কি করতে পারবেন? সবটা লোভে পড়ে করলেন এখন প্রায়শ্চিত করতে চাইলেও রেহাই পাচ্ছেন না। হঠাৎ ফোনে কল চলে আসায় তিনি কলটি রিসিভ করেন। অপরপাশের লোকটি বলেন,

“ম্যাম আপনি যে নার্স কে বেঁধে রাখতে বলেছিলেন আম… আমরা বেঁধে রেখে ছিলাম। কিন্তু গত পরশু সেই নার্সকে দাহাব স্যার নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন।”

কথাটি শুনে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন মিসেস হিয়া। ‘ঠিক আছে এমাউন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি’ বলেই তিনি কল রেখে দিলেন। অপরপাশের লোকটি আর এসবের খবর রাখল না। সে তার পাওনা পেল মানে তার কাজ শেষ। মিসেস হিয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে বাবার রুমের সামনে আসলেন। ভদ্রতার খাতিরে দরজায় নক করলেন। দাহাব এহসান শব্দ শুনেও অশুনা করলেন। মিসেস হিয়া উত্তর না পেয়ে স্বেচ্ছায় ঢুকে পড়লেন। সামনে দেখে অবাক। তার বাবা ফোনের মধ্যে অস্থির হয়ে কি যেনো টাইপিং করছেন। তিনি স্বচ্ছল পায়ে এগিয়ে সাড়া দেন। দাহাব এহসান টাইপিং শেষে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। তার হাসিতে যেন অমূল্য রত্ন হাসিল করার মত খুশি উপচে পড়ছে। মিসেস হিয়া বাবার পাগলামীপনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলেন,

“আপনার কি হয়েছে বাবা? এভাবে উল্লাস কেন করছেন? এমন ভাব ধরলেন যেনো নাজীবা-কে হাত করতে পেরেছেন।”

শেষ কথায় খুব তাচ্ছিল্যেতা প্রকাশ করলেন তিনি। দাহাব এহসান বুঝতে পারলেন তবুও মুখশ্রী জুড়ে যে হাসি তা বিলীন হতে দিলেন না। তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আজ যাই বল না কেনো মা! আমি ভীষণ খুশি। মুরগি নিজে আমার খামারে আসবে এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে আমার জন্য?”

মিসেস হিয়া তার বাবার কথা বুঝলেন না। পুনরায় প্রশ্ন করতে নিলে দাহাব এহসান চোখ রাঙানি দিলেন। রুমের থেকে বেরিয়ে যেতে হাতে ইশারা করলেন। মিসেস হিয়া অপমানিত বোধ করলেন। ক্ষোভ চেপে রুম থেকে বেরিয়ে যান।

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-১৮+১৯

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৮ (প্রথমাংশ)

“কি হলো তাবাসসুম? তোমার প্রাক্তনকে ডেভিল রূপে দেখে চমকে গেলে হুম? কি মনে করে ছিলে আমার বিবিজান এর সাথে পাঙ্গা নিয়ে আমারই পিঠ-পিছে কলকাঠি নাড়বে আর এর খবর আমি পাবো না?
মাই ডেয়ার স্টেফ শ্যালিকা, ভাবলে কেমনে আমি শোধ না নিয়ে ছেড়ে দেবো। উহ একটা কথা মনে পড়ে গেল, নাজীবার সৎ ফুপাতো বোন রাইট? যার নানা ছন্দবেশ নিয়ে আমার বিবিজান-এর পিছে পড়ে আছে। তুমি তারই আপন নাতনী। যার র’ক্ত শুরুতে গলদ,তার আবার কিসের আপনত্ব। তুমি তো বোন নামেই কলঙ্ক।”

কথার মাঝে আয়েশে চেয়ারে বসল আফরাজ। তার পাশে আকবর মুখ ভেটকাল তাবাসসুম কে। মেয়েটার শরীর মড়মড়ে গিয়েছে। এত’টা চ’ড় সে তার জীবনে খায়নি। আফরাজ এর লেডি গার্ড একের পর এক মে’রে গিয়েছে। আফরাজ থামতে বলায় থেমেছে। লেডি গার্ড কে ইশারা করে বলে,

“আসামি কে এক গ্লাস পানি খেতে দাও। তারপর ইনভেস্টিগেশন শুরু করব।”

‘ইয়েস স্যার’ বলে লেডি গার্ড তাবাসসুম কে পানি খেতে দেয়। বেচারী একচটে পানির গ্লাস শেষ করে দেয়। নাক-মুখে পানি উঠে যাওয়ায় কাশতে লাগে। লেডি গার্ড পিঠ মালিশ করে শান্ত করল তাবাসসুম-কে। আফরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“সত্যি করে বলো তোমার নানা কি কারণে ভার্সিটির লেকচারার পদে যোগ দিয়েছেন? তোমার বাবা-মা যে এই কাজে জড়িত তা ভালোই জানা আছে আমার। বলে দাও নাহলে জীবন মা’রা খাবে।”

তাবাসসুম আতংকে ঢোক গিলছে। কেননা তার মুখ এদিকে না খুললে চ’ড় খাবে, ঐদিকে মুখ খুলার জন্য সরাসরি খু’ন হতে হবে। তার ভাবান্তরে আফরাজ নির্লিপ্ত গলায় বলে,

“তুমি যদি আমাদের হেল্প করো! তবে আমি তোমাকে আর তোমার মা-কে ঝামেলামুক্ত করে দেবো।”

ঠোঁট চেপে আফরাজ এর মুখশ্রীর দিকে চেয়ে রইল তাবাসসুম। জানের ভয়ে সে নিশ্চুপ রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে পড়ে আফরাজ। বন্ধুর দিকে চেয়ে বলে,

“শ্যালিকার মুখে কসটেপ মে’রে দেহ্। তার মুখে কসটেপ বড্ড মানানসই। শেষে রুমটা অন্ধকার করে চলে আয় সবাই।”

গার্ডস নিয়ে বেরিয়ে যায় আফরাজ। আকবর তার কথামত কাজ করে গাড়িতে গিয়ে বসে। দু’জন একে অপরের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে একসাথে ক্লাপ করল। আকবর ফোন বের করে বলে,

“জানিস আজকে ডেঞ্জারাস পা’দ মারলাম। ঐ শাকচুন্নী-রে লিফটে বেহুঁশ করার জন্যে যে, ট্রিকটা ইউজ করলাম না! উফফফ মারডালা রে দোস্ত। বাই দ্যা ওয়ে আমার পা’দের ক্রিয়াকলাপ সিসিটিভির মধ্যে ক্যাপচর হয়ছে। সেগুলো তো ক্রপ করে ফেলতে হবে রাইট?”

“তোর কি মনে হয় ইজ্জতের ফালুদা করার জন্য সেই ফুটেজ রেখে দেবে এই আফরাজ ফাহিম? হাহ্ আমি কোনো কাঁচা কাজ করি না। করার আগেই সব রেডি করে রাখি।”

“মানে?”

“শোন, তাহলে তোকে আজ লাঞ্চে দু’প্লেট ভাত খাওয়ার সুযোগ কেনো দিয়ে ছিলাম জানিস? কারণ তরকারির মধ্যে মুলা ছিল তোর ফেভারিট ডিস। মুলা থাকলে তুই আর দুনিয়ার মায়াজালে আঁটকে থাকিস না। বুদ্ধি করে মুলার তরকারির অর্ধেক বাটি তোকে দিয়ে শেষ করিয়ে নিলাম। তারপর তোকে নিয়ে অফিসে চলে এলাম। তুই লিফটে ঢুকতে চাইছিলি না। সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে পা’দ ছাড়ার ফন্দি আটকে ছিলি। কিন্তু মনেমন আমি ফন্দি আঁটি যে, তোর মুলার পা’দের গন্ধে তাবাসসুম কে অজ্ঞান করাবো। উইড আউট এনি ক্লোরোফর্ম। একেই তো অনেক বাঁশ পা’দ দিস। তার উপর এতটা গুলুমুলু লাড্ডু একখান ছেলে। ভাগ্যও দেখ আমাদের সঙ্গ দিল। তাবাসসুম ব্যতীত অন্য কেউই লিফটের ভেতর আসেনি। কিন্তু মেয়ের সেখানেও ছ্যাচড়ামি শুরু। হাত দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল। যতবার ইগনোর করার চেষ্টা করছিলাম। ততবার সে আমার পিঠে হাত লাগানোর দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছিল। আমিও কম কিসে মুখের মধ্যে মাস্ক পরে নিলাম। তোর এসবে খেয়াল নাই। তোর মন ‘ওয়াশরুম ওয়াশরুম’ করছিল। না পারতে তুই তাবাসসুম এর উম্মুক্ত নাক ডেকে দেওয়ার প্রচেষ্টায় মাস্ক এগিয়ে দিলি। কিন্তু ন্যাকারাণী তো কারো কাছে থেকে টাকা ছাড়া অন্য জিনিস নেই না। নচেৎ তুই ভালো মানব দেখে মাস্ক দিতে চেয়ে ছিলি। সে নেইনি তার দোষ। তুইও মাস্ক পরে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিসনি। পুত*****করে লিফটের ভেতরটা পা’দের হাওয়ায় ভরে দিলি। বেচারী বুঝতে পারেনী তোর মাস্ক দেওয়ার কদর। তড়িৎ গতিতে লিফটের পাশ ঘেঁষে পা’দের গন্ধে শ্বাস হারিয়ে নেতিয়ে পড়ে সে। তারপর তোকে রাখালের গরু বানিয়ে তাবাসসুম-কে কিডনাপ করালাম। তুই তারে নিয়ে গেলি আর আমি সেই ফাঁকে ফুটেজের টান টানা টান করে দিলাম।”

“গ্রেট ব্রাদার। আজ নিজের পা’দের উপর গর্ব হচ্ছে। কি বাঁশ পা’দটাই না দিলাম। এক বারে মেয়ের সেন্স হারিয়ে গেল হাহাহা।”

আকবরের হাসি দেখে আফরাজও হাসল। তাদের অর্ধ-কাজ যে প্রায় সফল সেই কারণে। হাসার ছলে সদ্য এক প্রশ্ন করে উঠল আফরাজ-কে।

“তার মানে তুই নাজীবা ভাবীর সঙ্গে হওয়া ঘটনা এসবের ব্যাপারেও জানিস?”

নিরুত্তর আফরাজ মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। বন্ধুর কথার জবাব এড়িয়ে ড্রাইভার-কে বলে, ‘অফিসের দিকে চলো।’
আকবর দ্বিরুক্তি করল না। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা অফিসে চলে এলো। আফরাজ কেবিনে ঢুকে সর্বপ্রথম বাসার সিসিটিভি ফুটেজ অন করে। সর্বক্ষণ ঠিক আছে দেখার পর তাদের বেডরুমের ফুটেজ চেক করে। নাজীবা-কে দেখা গেল ল্যাপটপ হাতে নিয়ে বসে আছে। সেখানে জুম করল আফরাজ। ল্যাপটপে আইসিটির কোডিং ল্যাবের কাজ করছে নাজীবা। যেহেতু সে সিএসসির স্টুডেন্ট, সেহেতু কোডিং নিয়ে নানান প্রজেক্টের কাজ দক্ষতার সহিতে সম্পন্ন করতে দেওয়া হয়। নাজীবার মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফাইল চেকিং এ দৃষ্টি দিল আফরাজ। হঠাৎ নাজীবার ফোনে কল আসল। আড়চোখে সিসিটিভির দিকে তাকায়। কল আসায় নাজীবা বিরক্তবোধ করে। তবুও আফরাজ কল করছে ভেবে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেল। স্ক্রিনে আননোন নাম্বার শো হচ্ছে। সে ধরবে কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল। কল’টা বারংবার আসছে। জরুরী কল ভেবে কল’টি রিসিভ করতে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে আফরাজ এর কলও স্ক্রিনের মধ্যে ভেসে উঠল। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে আননোন নাম্বারের কল কেটে আফরাজ এর কল রিসিভ করে। সালাম বিনিময় শেষে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“কল কেন দিয়েছেন?”
“বিবিজান আমার, নাম্বার আমার, ফোনের সিমও আমার নামে রেজিস্ট্রার্ড। সো আমি যখন ইচ্ছে তখন কল দিতে পারি।”

নাজীবা ভেংচি কাটে। মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“তাতে আমাকে ফোন কে দিতে বলছিল? আমি তো ফোন টোন ছাড়াই বিন্দাস ঘুরছিলাম। আপনার থেকে এনা মিসিং চুটানোর জন্য ফোন কিনে দিতে হলো।”

নাজীবার ঢংমার্কা চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসল আফরাজ। তবুও কলের মধ্যে গাম্ভীর্য ভরা গলায় বলে,

“বেশি বে’য়া’দপ হয়ে গেছো দেখছি। গালের থেকে দাগ মুছে গেল মনে হচ্ছে। আবারো দাগ বসিয়ে দিতে হবে।”

“এবার দিয়ে দেখেন। ছেড়ে না অনেক দূরেই চলে যাবো। নিজেতো ভুলেও গেছিল এবারো ভুলে যাইয়েন আমাকে হুহ্।”

কল কেটে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলল সে। ফোনটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মে’রে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আফরাজ ফুটেজে নাজীবা-কে অনুসরণ করছে। মেয়েটি অভিমানে গাল ফুলিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে। মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হেসে নাজীবার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন। জনাব ইসমাইল এসময় গ্রামের জমির দেখভালের জন্য গ্রামে যান। তাই নাজীবার সংকোচ হলো না শ্বাশুড়ির রুমের ভেতর ঢুকে পড়তে। আফরাজ একপলক মা আর বিবিজান এর দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নেয়। বাসার মধ্যে সাভেন্টের ছন্দবেশে থাকা তার সিক্রেট পিএ রাফিন-কে কল দেয়। রাফিন এর দায়িত্ব হলো সর্বদা বসের রুমের আশপাশ জুড়ে কাজ করা। এতে সহজে সে ফোন রিসিভ করে ‘ইয়েস স্যার’ বলল। ‘হুম’ শব্দ করে আফরাজ রাফিন-কে বলে,

“আমার রুমে ঢুকে তোর ম্যাডামের ফোনটা নিয়ে অফিসে আয়।”

ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে আকবর-কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সে ভ্রু নাচিয়ে ভেতরে আসতে ইশারা করে। আকবর এর মাথায় সব জটিল প্রশ্ন ঘুরছে। যতক্ষণ এসবের উত্তর পাবে না ততক্ষণ সে শান্তিতে বসতে পারবে না। বন্ধুর উপর চেঁচিয়ে বলে,

“দেখ দোস্ত আজ তুই পুরো কাহিনী আমাকে বলবি না হয় আমি.. আমি।”

“হ্যা বল তুই কি? কি করবি?”

“আমি আমি আইসক্রিম খেয়ে হার্টে বরফ জমিয়ে হার্টবিট নষ্ট করে ফেলব বলে দিলাম।”

“এতটুকু ব্যাপার। কোনো সমস্যা নেই বরফটা নাহয় আমি গিলিয়ে দেয় কি বলিস? আমিই তো তোর পরম বন্ধু।”

“এই দেখ পেটে কিন্তু এখনো মুলার বেগ শেষ হয় নাই। যদি ত্যাড়ামার্কা জবাব দিস। তাহলে তোর কেবিনেও আমার সুন্দর পা’দ মে’রে দেবো তখন…।”

সে তার কথা শেষ করতে পারল না। উল্টো ঢোক গিলে মুখের কথা পাল্টে বলে,

“আরে তোর যখন ইচ্ছে তখন বললেও হবে নো প্রবলেম ম্যান।”

“কি-রে তুই কেন ভয় পাচ্ছিস? গার্নটা ফর সেফটির জন্য রাখছি। কে যেনো বিরাট বড় পা’দ দেওয়ার কথা বলছিল। তারই পা’দ দেওয়ার জায়গায় বু’লে’টের ন্যায় ফুটো করে দেবো আরকি। টেক ইট ইজি ম্যান।”

ফোকলা দাঁতের হাসি দেয় আফরাজ। গা’র্ন দেখেই তার বন্ধুর মুখের রং পাল্টে গিয়ে ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)বিধেয় মুখ ভেটকাল সে। দরজায় নক করার শব্দে আফরাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়। রাফিন এসে মোবাইলটি এগিয়ে দিয়ে পুনরায় তার কর্মস্থলে চলে গেল। আকবর নাজীবা ভাবীর ফোন দেখে কিছু বলতে নিলেই কল চলে আসে ফোনে। আফরাজ বাঁকা হেসে নাজীবার ফোনের কল রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে অস্থির গলায় দাহাব এহসান বলে উঠে।

“নাজীবা তুমি কোথায় থাকো? এতদিন স্টুডেন্ট-টিচার হিসেবে কথা বলছি। তাই বলে এতটা ইগনোর করবা? দেখো আমি জানি তুমি অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্টের টিচার। বাট ইট’স ড্যাজেন্ট ম্যাটার। আই উইল ম্যানেজ। আর দেখতে গেলে আমার তোমাকে ভীষণ পছন্দ নাজীবা। আমিও কয়েকদিনে বিয়ে করতে চাইছি। তাই বলছিলাম কি একসাথে কফি ডেইটে গেলে….।”

“রং ইউ মিস্টার দাহাব এহসান। নাজীবা ইজ অলরেডি ম্যারেড এন্ড সি ইজ দ্যা ওয়াইফ অফ আফরাজ ফাহিম। আই থিংক আপনি ইংরেজি বুঝতে পেরেছেন দাদা….জান। ওপস ভুলে ইয়াংম্যান-কে অল্ডম্যান ডেকে ফেললাম। যতই যুবক বনে যান,আপনার আসল রূপের রহস্য এই আফরাজ ফাহিম এর অজানা নয়।”

একনাগাড়ে কথার মাঝেই হঠাৎ করে থেমে যান দাহাব এহসান। তিনি ভাবতেও পারেননি তার কাজ পুনরায় অসফল হবে। ফোনটা রেখে রেগে ফুঁসে উঠলেন। তার মেয়ের জামাই-কে ডাক দিলেন। জনাব লিয়াকত গম্ভীর মুখোভঙ্গি নিয়ে শ্বশুরের রুমে এলেন। তিনি আফরাজ এর ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য বের করে রেখেছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কেননা নাজীবার ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়ে ছিলেন সেদিন। সেখানে মোবারক আলীর সঙ্গে স্পষ্ট পজিটিভ ম্যাচড দেখানো হয়েছে। রিপোর্ট দেখে তিনি আর সময় ব্যয় করেননি। তৎক্ষণাৎ লোক লাগিয়ে নাজীবার স্বামী আফরাজ এর ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করেন। তাবাসসুম এর কথার জোড়ে বুঝতে পেরে ছিলেন আফরাজ আর নাজীবার সম্পর্ক গভীরে পৌঁছে গেছে। তবুও তিনি নাজীবা-কে চান। সম্পত্তির ভোগ আর লালসা মানুষ কে নিম্নে পৌঁছায়। যার পূর্ণরূপে প্রমাণ হলো দাহাব এহসান। তিনি ক্ষোভে আফরাজ এর ছবি আর ঠিকানা মেয়ের জামাইকে দিয়ে বলেন,

“এই ছেলের লা’শ দেখতে চাই। যত শীঘ্রই পারিস এর লা’শ সামনে হাজির করবি। নাহলে তোকে আবারো গুপ্ত রুমের মধ্যে বন্দি করে রেখে দেবো। মনে রাখিস মোবারক আলীকে মা’রার কাজে তুইও কিন্তু সামিল ছিলি। এই ছেলে বেঁচে থাকলে কোনো না কোনো একদিন আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে ছাড়বে। যাহ্ এখান থেকে কাজে লেগে পড়।”

জনাব লিয়াকত মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়। কারণ তার জীবন তার কাছে প্রিয়।

অন্যথায়, আকবর তালি বাজিয়ে আফরাজ-কে শাবাশী দিয়ে বলে,

“ভাই এবার তো বলে ফেল কাহিনী কি?”

কষ্টময় শ্বাস ফেলে আফরাজ বলতে লাগল।

“তোর তো নাজীবার বলা কথাগুলো মনে আছে। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করার আগে তার প্রতি প্রথম কবে আমার কৌতুহল জেগেছিল জানিস? বিয়ের সাতদিন পরে, তখনো আমি আর নাজীবা এক রুমে থাকতাম না। আলাদা রুমে থেকে সামনাসামনি দেখা হতো। কাজ থেকে রাতে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছি ছিলাম। নাজীবার রুম পেড়িয়ে যেতে গেলে তার রুম থেকে গুঙানোর শব্দ শুনে ঘাবড়ে ছিলাম। কারণ মেয়েটা একলা রুমে থাকছিল। সেই হিসেবে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছে কিনা চেক করতে ভেতরে ঢুকে পড়ি। সে কম্বল জড়িয়ে রেখে ভয়ে কাঁপছিল। তার কণ্ঠস্বরও অল্প করে শোনা যাচ্ছিল। স্পষ্ট শোনতে পাচ্ছিলাম মেয়েটা গুঙিয়ে বলছিল,’দাদু প্লিজ ছেড়ে দাও না আর খেয়ো না আম্মুকে। আম্মুর শরীরে আর র’ক্ত নেই দাদু।’ হঠাৎ মেয়েটা নিজের থেকে কেঁপে,কেঁপে উঠে তার নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে কেমন একটা আচরণ প্রদর্শন করছিল। দেখতে মনে হচ্ছিল নিজের শরীর থেকে কারো থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করছিল। আমার মনোভাব সত্যও হলো। নাজীবা ঘুমের ঘোরে কেঁদে বলছিল,’দাদু আমার কামিজ ছেড়ে দাও প্লিজ। আহ্ দাদু প্লাজু ছেড়ে দাও না দাদু। নিচে হাত কেনো দিচ্ছো দাদু প্লিজ।’ মেয়েটার কান্নায় বুক ভেঙে আসছিল আমার। নিজের কাছে অসহায় লাগছিল। যদি তাকে বুকে না চেপে ধরতাম তখন তার আবারো ড্রাক নিতে হতো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ ক্রিয়ায় আমার চোখে তার অপ্রকৃত আচরণের কারণও চলে এলো। তার ঘুমের ঘোরে করা আচরণে স্পষ্ট অনুভব করলাম মেয়েটা জঘন্য অতীত কে ভুলতে পারেনি। রাতের আঁধারে পাখির বাচ্চার মত আমার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল বিবিজান। এসব দেখে রাফিন-কে কাজে লাগিয়ে দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফেনীতে হানিমুন ট্যুর দিয়ে কাজের সমাপ্তি ঘটানোর। তবে……।”

চলবে…..

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৯ (রহস্যের সমাপ্তি দ্বিতীয়াংশ)

“তবে কুসুমা ভাবীর গর্ভ অবস্থায় যাওয়া রিস্কি মনে হলো আমার। তাও আমি আড়ালে রাফিন-কে দিয়ে খবর নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। রাফিন প্রথমে সেই হাসপাতালে খোঁজ নেয়। যেখানে বিবিজান এডমিট ছিল। সেখানে থেকে যে খবরটা পেলাম। তার প্রতিফলিত রুপ দেখবি?”

আফরাজ আকবরের দিকে তাকিয়ে বলে। সে মাথা নেড়ে সায় দেয়। আফরাজ লেপটপ কাছে টেনে তার মত টাইপিং করল। টাইপিং শেষ করে লেপটপের স্ক্রিন আকবরের মুখোমুখি করে দেয়। সে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

“এই কে বুড়ো ব্যাটা?”

“নাজীবার আপন মামা। হি ইজ এ্যা ড্রাগ ডিলার এন্ড ড্রাগ সেলার। আজ তিনমাস যাবত তাকে আমি আহত অবস্থায় বেঁধে রেখেছি।”

“কি বলিস মামা ভাবীর প্রেমে ভূত হয়ে একদম রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ছিলি বুঝি?”

“হুম বলতে গেলে এমন কিছু। তার মামারে মা’রধর করে জানতে পারলাম। বিবিজানকে তার সৎ দাদা অর্থাৎ দাহাব এহসান তার মামার কাছে শুধু একমাস রাখার জন্য পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু এই বুড়া বেইমানি করে। আপন ভাগ্নির শরীরের প্রতি লোভ জাগে তার। এজন্য রাতের আঁধারে বিবিজান কে নিয়ে ফেনীর অন্য শহরে চলে গেলো। এখন দাহাব এহসান এর সে-সবের খবর অব্দি নেই। সে তো মশগুল ছিল সম্পত্তির ভাগ-ভাটুয়ারা নিয়ে। বলতে গেলে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে মৃত্যুর কবলে ফেলে তাদের মৃত্যু-কে সাময়িক দূঘর্টনা বলে চালিয়ে দেয় তাবাসসুম এর বাবা জনাব লিয়াকত। এই তাবাসসুম হলো নাজীবার সৎ ফুপির মেয়ে। নাজীবার আপন দাদী দু’বার বিয়ে করে ছিল। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর দাদীর এক সন্তান ছিল যার নাম মোবারক আলী আমার শ্বশুর। দাদী একলা হাতে ছেলের লালন-পালনে হিমশিম খাওয়ায় দাদীর পরিবার আরেকবার দাদী-কে বিয়ের পিঁড়িতে বসায়। তখন তার বর হয়ে ছিল দাহাব এহসান। তার পক্ষের সন্তান হলো মিস হিয়া এহসান। যে তাবাসসুম এর বর্তমান জননী আর লিয়াকত সাহেবের স্ত্রী। অথচ এই মহিলা নাজীবার অসুস্থতার দিনে নিজেকে দাহাব এহসান এর মা বলে পরিচয় দিয়ে ছিল। আর দাহাব এহসান তো আরো সিয়ানা। নিজের যৌবন রূপ ধরে রাখতে সার্জারি করে নিজের সর্বনাশ অলরেডি করে রেখেছে। সে কি ভেবে ছিল আমি ছোট বাচ্চা আমাকে যা বুঝাবে, আমি তাই বুঝব? হাহ্ এই বাজপাখির নজর দাহাব এহসান এর চেহারার আদলে ছিল। আমার নজরকে এড়াতে পারল না সে। তার ভুল ছিল স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে কথা বলা। এর কারণেই তো দাহাব এহসান এর মুখের চামড়ায় ছিপছিপে ছিঁড়ে যাওয়া রেশ দেখে ছিলাম। তখন ফরেনসিক ল্যাবে পরিচিত এক ডক্টর-কে বলে তার সমাধান চাই। তিনি সমাধানে এটাই বলেছিল যে, দাহাব এহসান এর বয়স বর্তমানে ষাট্টের কাছাকাছি। তার চুল,শরীর প্রায় বেঁটে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে নিজের মনে নাজীবা-কে ভোগ করার পূর্ণ আশা জমিয়ে রেখে ছিল। যার আশানুরূপ সে নিজের যৌবনের রূপের জন্য র’ক্ত পান করতো,মেডিসিন, ইনজেকশন নানান ভাবে গ্রহণ করতো। এসবে সাহায্য করতো মিসেস হিয়া একজন কেমিস্ট ল্যাব লেকচারার। তার মাথায় কোন কেমিক্যাল কেমনে ব্যবহার করতে তার ধারণা আছে। নিজ মেয়ে-কে কাজে লাগিয়ে প্রতিবার কেমিক্যাল সলিউশন বানিয়ে রাখে সে। এখানেও একটা হাসির ব্যাপার কি জানিস? দাহাব এহসান এতটা সম্পত্তি লোভী ছিল। যার ফলে সে তার মেয়ের ঢাসামার্কা জামাই-কেও সহ্য করেনি। তাকে গুপ্ত রুমে বন্দিদশায় ফেলে রেখেছিল প্রায় একবছর হতে চলেছে। রেহাই দিল কিনা জানা নেই। যদি দিয়েও থাকে ধরতে সমস্যা হবে না আই হোপ। এভাবে সে নিজের রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফেলে। সে ভেবে উকিলের সাথে দেখা করে দলিল বানায়। হাস্যকর দলিলটা কাজেও আসল না। কেননা নাজীবার দাদী দাহাব এহসান এর সত্য পরিচয় জানার পর এমন শক্ত দলিল বানিয়ে রেখেছিল যেটা ভেদ করা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল তার। সেটা হচ্ছে সম্পত্তির মালিক এখন স্বয়ং নাজীবা নিজে‌। তাকে যে বিয়ে করবে এবং তাদের পরবর্তী বংশধরায় যার জন্ম হবে, তার ১৮ বছর বয়স হলেই সম্পত্তির পুনরায় ভাগ-ভাটুয়ারা করা যাবে। পরন্তু কোনো কারণে সেই সন্তানের মৃত্যু হলে সব সম্পত্তি এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হবে। অন্যথায় সম্ভব হবে না বলে সুস্পষ্ট দলিলে লিখে দিয়ে ছিল মৃতসম দাদীজান। নাজীবা যে তার বাবা-মায়ের গড়া সংসারের একমাত্র উত্তরাধিকারী, এসবের খবর অব্দি নেই তার মাঝে। কেমনেও বা থাকবে? তার জীবনে যতগুলো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে অন্য কারো জীবনে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দাহাব এহসান এর মাথায় তখন এক চিন্তা ভর করে। সে যেকোনো ভাবে হোক নাজীবা-কে বিয়ে করে বংশের উত্তরাধিকারী নেবে। তার ঘৃণ্য কাজে সায় দেয় তাবাসসুম এর মা মিসেস হিয়া। মোটামুটি তান্ত্রিক বিদ্যা জানতো। আড়ালে জ্বীন ডেকে কাজ সাধন করার চেষ্টা করতো। আমার স্মৃতিও ততদিনে মনে পড়ে গিয়ে ছিল। আমার স্মৃতি লোপ পেয়েছিল ছাদের উপর থেকে পড়ার কারণে যা সত্য। কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ছিল মিসেস হিয়ার ভাড়াটে জ্বীন। তার শর্ত ছিল আমার জীবন। কিন্তু আল্লাহর মহিমায় আমি বেঁচে যায়। এতে জ্বীন তার কাজে অসফল হওয়ায় মিসেস হিয়ার বাম হাত কেড়ে নেয়। যেহেতু তিনি জ্বীনের সর্দার সেহেতু তার পক্ষে সর্দারের জীবন নেয়া সহজলভ্য নয়। তাই সে বাম হাত কেড়ে নেই। একই কাজ আবারও করে নাজীবার উপর মন্ত্র পাঠ করে জ্বীন-কে পাঠায়। জানতো না যে, আমার বাসা পরিপূর্ণ পবিত্রতায় ঘেরা। আমার দাদীর অশেষ কষ্টে প্রতি রুমে থাকা ফুলের টবগুলো বিশেষ ক্ষমতা বহন করতো। সেগুলো জ্বীন-কে কুপোকাত বানিয়ে ছাড়ে। কিন্তু জ্বীনের শক্তিও কম ছিল না। সে কারণে এক ফুলের মৃত্যু হয়ে যায়। যার প্রতিরুপে বেলকনিতে র’ক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে ছিল নাজীবা। আমি বিষয়টা ধামাচাপা দিতে সাভেন্ট’স ডেকে বেলকনি পরিষ্কার করিয়েনি। সেই সাথে নাজীবার শরীরে মেডিসিনের ডোজ লাগিয়ে দেয়। তার সুটকেস খুলে ড্রাগের ইনজেকশন সরিয়ে লিকুইড মেডিসিনাল ইনজেকশন রাখি। এতে নাজীবা তার অজান্তে ওষুধ সেবন করে ড্রাগ এডাকশন থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ কার্যকরও হচ্ছে। এতেও চুপ করে বসে থাকিনি। ড্রাগটা কেমনে তার শরীরে এলো তারও তথ্য খুঁজতে তৎপরতায় লেগে গেলাম। পেয়েও গেলাম এই ছবির বুড়ো। ভাগ্নির শরীরের চেয়ে টাকা বেশি চিনতো। তাই ভাগ্নিকে নানান ভাবে খাবারে ড্রাগ মিশিয়ে খাওয়ে দিতো। কিন্তু ড্রাগের প্রতিক্রিয়ায় নাজীবার ব্রেন বাচ্চা টাইপ হতে থাকে। সে প্রতিনিয়ত চিৎকার চেঁচামেচি করে বিরক্ত করতো মামা-রে। তার বিরক্তির সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় মামা তাকে সাইকোপ্যাথিক হাসপাতালে এটমিট করিয়ে দেয়। সেখানের ডক্টর,নার্স অন্য পাগলদের বেলায় যতটা কঠোর হয়ে থাকত না কেনো, নাজীবার মায়াভরা চেহারা দেখে তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে লাগল তাকে সুস্থ করার জন্য। সেখানেও বাম হাত ঢুকালো দাহাব এহসান। মামার খবর না পেয়ে নাজীবার মুখ থেকে কৌশলে কথা বের করে। তার মস্তিষ্ক সচল থাকলে জীবনেও বলতো না কিন্তু অচল মস্তিষ্ক নিয়ে সব উগলে দেয়। তাকে পুরোপুরি পাগল বানাতে দাহাব এহসান অন্য এক ডক্টর-কে পাঠায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) যে কিনা র’ক্ত জোগাড় করে দিতো দাহাব এহসান কে। তার র’ক্তপান নেশা স্বাভাবিক। কেন জানিস? কারণ সে যে, এককালীন বাদুড় সেবক ছিল। তাও যেমন তেমন নয়। যে বাদুড়-কে র’ক্তচোষক বলে,সে বাদুড়ের সেবক ছিল। বিয়ের পর থেকে টাকা হাতিয়ে গোপনে বাদুড়ের জোগাড় করে ব্যবসা করত। তাদের সেবার কাজে তাকে হাজারে দু’তিনেক টাকা দেওয়া হতো‌। একদিন সেই বাদুড়ের দাঁত দাহাব এর ঘাড়ে লাগে ছিরে যায়। তাদের দাঁতের মধ্যে ছোঁয়াচে রোগ বিদ্যমান। সেই রোগের কবলে পড়ল স্বয়ং দাহাব এহসান। রোগটা হচ্ছে Clinical vampirism। এর মানে হলো এক ধরনের ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা, যা সাধারণত Renfield’s syndrome নামে পরিচিত। এর তিনটা পর্যায় আছে। তার মধ্যে দাহাব এহসান এর দুটার প্রতি জোঁক বেশি। প্রথমত, মানুষের রক্ত গ্রহণের দিকে ধাবিত হওয়া। রোগী হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত চুরি করে অথবা জীবিত ব্যক্তির রক্তপান করে। এই পর্যায়ে আসার পর ‘রেনফিল্ড সিনড্রোম’ এ আক্রান্ত কিছু লোক হত্যার মতো সহিংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, পর্যায় যাকে ‘Zoophagia’ বলা হয়। এ পর্যায়ে রোগীরা জীবন্ত প্রাণী ভক্ষণ কিংবা তাদের রক্ত পান করে। এই পর্যায়ে অনেকেই রক্ত পানের জন্য কসাইখানা থেকেও রক্ত সংগ্রহ করে। সে রোগের কারণে নাজীবার বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়। তার বাবা-মায়ের মৃত্যু কান্ড ঘটে ছিল খুব ভয়াবহে। নাজীবার মা মেহজাবিন সিরাত কে রেপ করে শরীরের র’ক্ত পান করে ছেড়ে দেয় দাহাব এহসান। তখন মোবারক আলী কাজ থেকে বাসায় ফিরে এমন দৃশ্য দেখে তৎক্ষণাৎ ছেলে নাদিম-কে সরিয়ে ফেলে। তার হাতে প্রমাণস্বরুপ ভিডিও ক্লিপ ছিল। তিনি নাদিম-কে বাহিরে পাঠাতে সক্ষম হলেও নাজীবা-কে পাঠাতে পারল না। তার আগেই নাজীবার চোখের সামনে তার সৎ দাদা বাবার শরীরের র’ক্ত চোষে নেয়। মোবারক আলী অন্য কিছু করতে না পারলেও দাহাব এহসান এর বুকের মধ্যে ছু’ড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে তার তান্ত্রিকতা নষ্ট হয়ে যায়। এ বিদ্যায় পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ হওয়ার আগেই তাকে উ’প্রে ফেলে আমার শ্বশুরে।
তবুও কৈ মাছের প্রাণ বেঁচে গেল। নিজের তান্ত্রিকতা সমাপ্ত বলে মেয়ে-কে কাজে লাগায়। অথচ মেয়ে তো আন্ডামার্কা আরো। হাহাহা।
তন্মধ্যে ছোট প্রাণ হাতে নিয়ে যেন অবশ হয়ে গিয়ে ছিল ছোট নাজীবা। একে তো রুমে থেকে চিৎকার করে ছিল মায়ের অসহনীয় মৃত্যু দেখে , তার পর বাবার মৃত্যু দুটোই তার মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাদের মৃত্যুর ক্লিপ একটা আননোন নাম্বার থেকে আমার কাছে আসে। কে বা কেনো দিছে তাঁর নাম্বার ট্রাকিং করেও পায়নি। পরন্তু তার সেই ভিডিওর জোড়েই দাহাবের এহসান এর ব্যাপারে তথ্য খোঁজে বের করতে পেরেছিলাম। মূলত ঐসময় নাজীবার বাবা-মা-কে খু’ন করে ছিল বলে নাজীবা-কে ছাড় দেয়। তাকে তার মামার কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে হাসপাতালে পৌঁছে। হাসপাতালে নাজীবার জন্য বরাদ্দকৃত ডক্টর কে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে ডক্টর সিফাত কে আনা হয়। সেই ডক্টরের হাবভাব অশ্লীল ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাজীবার সেবায় নিয়োজিত নার্স তাকে সহায়তা করে। তাকে নিয়ে পালিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এই পালানোর খবর তার মামা শুনতে পেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়। কারণ দাহাব এহসান এর হাতে পড়লে তার মৃত্যু নির্ধারিত ছিল। যেমন মৃত্যু ঘটেছিল তার চামচা ডক্টর সিফাত এর। কিন্তু মামা পড়ছে আমার হাতে এখন বন্দীদশা ভুগ করছে। তার শরীরের পচন দেখার অপেক্ষায় আছি আমি। নানান ড্রাগ যে তার শরীরে ভরে দিয়েছি। নিদারুণ কষ্ট দেবো। যে কষ্ট ভোগের অধিকারী নাহয়েও ভোগতে হয়ে ছিল আমার বিবিজান-কে। এবার পাল্লা হবে মিসেস হিয়া ,তার স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে। যদি স্বেচ্ছায় না ছাড়ে তবে জীবন মাঝপথে থেমে যাবে তাদের। সর্বশেষে হবে দাহাব এহসান এর জীবনের খেলা। তবুও কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। সেসময় নাদিম পালালেও বর্তমানে কোথায় আছে তা এখনো বের করতে পারিনি।”

“ভাই তুই একলা এসব জোগাড় করলি। মাশাআল্লাহ ভালোবাসায় পাগলামী হোক তোর মত। সর্বদিক যাচাই করার ক্ষমতা রাখিস তুই। তোর কথার মধ্যে তো এটাও বোঝা যায়। এতদিন যে, তাবাসসুম ছলেবলে অফিসে নাজীবা-কে টিজ করে ছিল?”

“অফকোর্স ইয়ার। বিবিজান এর আপাতমস্তক এ আমার বাজপাখির ন্যায় নজর। সেখানে ত্রুটি থাকলে তাকেই রেহাই দেয় না। সেখানে তাবাসসুম তো তুচ্ছ বিষয় মাত্র। সেদিন ফুটেজে সব দেখেও অদেখা করে ছিলাম। ইচ্ছেকৃত, কারণ তাবাসসুম এর পরিচয় সম্পর্কে যা জেনে ছিলাম তা সত্য কিনা সিউর হতে! বোকা মেয়েটা সত্য প্রমাণ করে ছাড়ল। একে তো আমার সাথে প্রেমের ছল করে তার কোন বেহায়া ক্লাইন্টের সাথে রাত কাটিয়ে নিজের যোগ্যতার সাথে নাজীবার তুলনা করছিল। মন চাচ্ছিল খু’ন করে দেয়। সে তো আমার বিবিজান এর নখের যোগ্যও নয়। কিন্তু তখনো সত্যি জানতাম না। জানছি যখন সে ক্লাবে নেশার বুঁদ হয়ে দাহাব এহসান এর সাথে প্ল্যানিং করছিল। তখন রাফিন-কে তাদের পিছে পাঠিয়ে দেয়। সত্যি জানার জন্যে মূলত তাবাসসুমকে পিএ পদে রাখা। এই দাহাব এহসান কে তো অভিনয় জগতের সেরা অভিনেতার পদক দেওয়া উচিৎ। যৌবনের বেশভূষায় থেকে আপন নাতনী-র সঙ্গেও মাখন খেলা খেলতে দ্বিধাবোধ করেনি। যার মধ্যে কোনো ধরনের নীতি চিন্তা নেই তার আবার কিসের দ্বিধা? মিসেস হিয়া তো জানেন না তার সন্তান অনেক আগেই তার বাবার সঙ্গে রাত কাটিয়ে ফেলেছে। বেহুদা কারণে শুধু শুধু দূরে রেখে কি লাভ?
সব তথ্য জানতে পেরেও মনেমন নিজেকে দমিয়ে রেখে ছিলাম। কারণ রাগ করলেন তো হেরে গেলেন কথা স্মরণে রেখেই নিজের রাগ পোষিয়ে রাখার স্বভাব কৈশোরগত।”

“মানুষ বলে জন্মগত তুই বললি কৈশোরগত। কোন গ্রহের প্রাণী-রে তুই?”

“মানুষ জম্মগত বলে তার অর্থ কি আজও ঠিক তুই বল? তুই যে এত পা’দ মারিস সেটা কি তুই জন্মের পর পরই জানতে পেরেছিলি? পারিসনী কেন? কারণ তুই নিজেই একদিনের বাচ্চা তুই কেমনে জানতে পারবি তুই পা’দ মারিস। এগুলো তো বড় হলেই পরিবার পরিজন বুঝে আন্দাজে বলে দেয় যে, তোর জম্মগত স্বভাব। আমি একথায় অমত বলেই বলি যে, স্বভাব আমরা বুঝি কৈশোর থেকেই। তখন স্বভাব সম্পর্কে জেনে বোঝা যায় আমি কেমন ছিলাম।”

আকবর মাথা নেড়ে দু’কাপ কফি অর্ডার দেয়‌। আফরাজ পানির মগ নিয়ে পানি খেয়ে শুকনো গলা ভিজিয়ে নেয়। সিসিটিভির দিকে চেয়ে মা আর বিবিজান-কে একসাথে ঘুমাতে দেখে শান্তি পেল মনে। তবুও রাতে আদর দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে রাখল গোপনে। কেননা বিবিজান অভিমানে মুখ ফুলিয়েছে। আদর ছাড়া তো আর মজে না মনটা। ঠুং করে ফোনের শব্দে আফরাজ এর ধ্যান ফিরে। আকবর তার সামনের চেয়ারে বসে কুসুমার সঙ্গে বার্তালাপ করছিল। আফরাজ একপলক চেয়ে ফোন কল রিসিভ করে নেয়।

“স্যার দাহাব হয়ত জানতে পেরেছে ম্যাডামই নাজীবা। কারণ ফুটেজ চেক করে দেখলাম। আপনার রুমে অচেনা এক মেয়ে ঢুকে ম্যাডামের চুলগুচ্ছ নিয়ে পালিয়ে ছিল। এখন কি তাকে খোঁজে ধরব?”

“তার দরকার নেই রাফিন। এ ব্যাপারে আমি আগেই অবগত। ইচ্ছেকৃত মেয়েটাকে ধরিনী আমি। যেনো দাহাব বুঝতে পারে আমি তার প্ল্যান বুঝিনি। তুমি খেয়াল রেখো সর্বখানে ওকে?”

“ইয়েস স্যার।”

ফোন কাটতে আকবর বন্ধুকে বলে,

“ইয়ার তুই না একঘণ্টা আগে দাহাবের সঙ্গে কথা বললি। তাহলে বুড়ো জেনে গেছে এবার তোর ক্ষতি করতে চাইবে।”

বুকের মধ্যে হাত গুজে আয়েশে চেয়ারে হেলান দিল আফরাজ। বাঁকা হেসে বলে,

“আই অলসো ওয়ান্ট হিজ রিভেঞ্জ। সে যদি রিভেঞ্জ না নেয়,তবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-র মৃত্যুর খবর-কে ফেইক এক্সিডেন্ট নামে চালিয়ে যাওয়া বুড়ো-কে তো ধরতে পারব না। আর রইল তাবাসসুম কে কিডআপ করার কথা। সে যে পিঠপিছে নাজীবা-কে অপমান অপদস্থ করে ছেড়েছে‌। তার জন্যে আগামী সাতদিন পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া হীন তাকে বাঁচতে হবে‌। এতে মরে গেলে ডোন্ট কেয়ার। রাফিন বিষয়টা সামলে নেবে। আরত্ত এই মেয়ে স্বচক্ষে দাহাবের বুড়ো রুপও দেখেছে। অতঃপর বেচারী ফেঁসে যাবে সে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। তন্মধ্যে সত্যি ফাঁস করলে দাহাবের হাতে খু’ন হবে আর না করলে আমাদের হাতে মা’ই’র খেয়ে খেয়ে বাঁচবে।।”

আকবর নিজের মাথায় বার’কয়েক বা’রি মে’রে’ বলে,

“ভাই তোর প্ল্যান সেরা সুর্পাপ ভাই। পরন্তু আমার দারুণ পা’দ মা’রার মত সেরা নয় হাহ্।”

নিজের শার্টের কলার টান টান করে ভাব নিল আকবর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ চোখ ঘুরিয়ে ফাইল’স দেখার ভান ধরল‌। ভেংচি কেটে টিটকারী মার্কা হাসি দিয়ে বলে,

“পা’দ শব্দ বেশি স্মরণে রাখিস বলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়াশরুমে বসে কাটিয়ে দিস।”

“কি আমি এতক্ষণ বসে থাকি? ওহ তাতে কি আমি ওয়াশরুম সিঙ্গারও বুঝতে হবে।”

আফরাজ-কে চোখ মে’রে ভাব দ্বিগুণ বাড়িয়ে ভ্রু নাড়ল আকবর। বন্ধুর জবাবে গা’র্নটা ধরতে নিলে আকবর কেবিন থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। তার যাওয়া দেখে মুচকি হাসল আফরাজ। ফোন হাতে নিয়ে ফুটেজে ঘুমন্ত বিবিজান-কে জ্বালানোর ফন্দি আঁটে মনে মনে। রাফিন-কে কল করে বলে,

“শোন তোর ম্যাডামের কাছে লেডি সাভেন্ট পাঠিয়ে বলতে বলো আমার ফোন রিসিভ করতে।”

রাফিন ‘ওকে স্যার’ বলে বসের কথামত কাজ করে। আফরাজ সবটা দূরবীনের ন্যায় দেখছিল। লেডি সাভেন্ট গিয়ে ফোনটা নাজীবার হাতে দেয়। নাজীবা দেখে চোখ কুচলে উঠে বসে। পাশে ঘুমন্ত শ্বাশুড়ি-কে দেখে কপালে চুমু দিয়ে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিজস্ব স্বামী-স্ত্রীর বেডরুমে এসে কল দেয় স্বামী-কে। আফরাজ সদ্য জাগ্রত রমণীর ওষ্ঠজোড়ার দিকে নেশাময় দৃষ্টিতে চেয়ে ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ফোন রিসিভ করে বলে,

“বিবিজান আপনার কাছ থেকে চুমু থেরাপি নিতে আসছি। গেট রেডি টু কিস ইউর হাজবেন্ড বিবিজান।”

চলবে…..

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-১৬+১৭

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৬

“আপনি আমাকে কি কারণে চ’ড় মা’রলেন আফরাজ? আমি তো আপনার কোনো কথা অমান্য করিনী। তবুও?”

কথার সমাপ্তির পূর্বেই পুনরায় ‘ঠাসস’ চ’ড়ের শব্দ হলো। এই নিয়ে আরেক বার চ’ড় মা’রল আফরাজ। একেবারে নীরবতা ছেড়ে গেল রুমের মধ্যে। বিবিজানের নিশ্চুপতা যেন আফরাজ এর মেজাজ খারাপ করে দিল। রাগান্বিত গলায় চিৎকার দিয়ে বলে,

“দাহাব এহসান এর সাথে কিসের সম্পর্ক তোমার হ্যা? খেয়াল করলাম আজকাল তোমার মোবাইলের কল-লিস্টে তার কলের আনাগোনা চলছে। আমি তো ব্যস্ত থাকায় তোমায় ফোন অব্দি দিতে করতে পারি না। তাই বলে অন্য পুরুষের সাথে তুমি রংতামাশায় মগ্ন হবে?”

স্বামীর হাতে চ’ড় খেয়ে প্রথমত আশ্চর্য হয়ে যায় নাজীবা। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কথাগুলো শুনে তীব্র রাগ পেয়ে যায় নাজীবার। স্বামীর মুখে অবাঞ্ছিত কথা শোভা পেল কেমনে বুঝার চেষ্টা করল সে। তার চরিত্রের উপর আঙ্গুল তোলার আগেই উপ্রে ফেলল নাজীবা। আফরাজ কে ধাক্কা দিলো। বিবিজান এর আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে কাপের্টের উপর পড়ে যায় সে। তার কারণে মাথায় হালকা আঘাতও পেল। ‘আহ’ করে মাথায় হাত ধরে উঠে বসে। নাজীবার রাগ দমে গেল। স্বামীকে আঘাত করার মোটেও ইচ্ছে ছিল না তার। বরং শুধু চুপ করাতে চেয়ে ছিল। তাই সে আফরাজ-কে ছুঁতে নিলে এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দেয়। নাজীবা অবাক চাহনি নিয়ে বলে,

“দেখুন আইম সরি। আমি ইচ্ছে করে আপনা-কে আঘাত করতে চাইনি। আপনি আমার ব্যাপারে খারাপ কথা বলতে নিচ্ছিলেন। যেটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে দেখান কোথায় বেশি ব্যথা লাগছে? বলুন আমায়।”

নাজীবা-কে ছুঁতে দিল না। বরঞ্চ সে নিজ দায়িত্বে নিজের মাথায় মলম লাগিয়ে নেয়। কথা বিহীন রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নাজীবার চোখজোড়া কান্নায় ভরে গেল। সে দু’হাতে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। খানিকবাদে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ চমকে তাকায়। শ্বাশুড়ি কে দেখে ইতস্তত বোধ করল নাজীবা। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কোনো মতে চোখ মুছে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। মিসেস ফেরদৌসী নাজীবার বাহু ধরে বিছানায় বসিয়ে দেন। নিজ হাতে পানির মগ এগিয়ে দেন। নাজীবা বিব্রত অবস্থায় পানির মগে চুমুক দিয়ে পান করে ফেলে। শ্বাশুড়ি মায়ের সামনে এরূপ অবস্থায় পড়া কতটা লজ্জার তা সে হারে হারে বুঝতে পারছে। মিসেস ফেরদৌসী বউমাকে নিশ্চুপ দেখে স্বেচ্ছায় কথা বলতে আগ্রহ দেখালেন।

“বউমা আফরাজ এর সাথে কোনো কারণে রাগারাগী হয়েছে? আজ প্রায় পাঁচ-ছয় দিন ধরে দেখছি তোমরা এক ছাদের নিচে থেকেও কোনো কারণে যেন দূরত্ব বহন করছো। এমনটা হওয়ার কারণ জানতে পারি কি?”

“আম্মু আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়। আসলে একটু রাগারাগী করেছেন উনি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।”

কৌশলে চ’ড়ের কথাটা চুপিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে জোরপূর্বক হাসল নাজীবা। মিসেস ফেরদৌসী বুঝতে পেরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন,

“তুমি বুঝি আমাকে শিখাচ্ছো বউমা? জানো কি তোমার এসব দিন আমি পার করে এসেছি। তাই শিখিয়ে লাভ নেই। বলো কি হয়েছে? মায়ের সাথে যদি ভাগাভাগি না করো। তবে সুরাহা পাবে কেমনে হুম? আর আমার ঢেড়স-কেও তো একটু মজা বোঝাবে তাই না?”

নাজীবা কষ্ট ভুলে হেসে ফেলল। যা তৃপ্তি সহকারে দেখতে লাগলেন মিসেস ফেরদৌসী। তিনি নাজীবার চিবুক ধরে মুখখানির উপর দোয়া পড়ে ফুঁ দিলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“মা এবার বলো কি হয়েছে? মনে কষ্টের কথা জমিয়ে রাখলে মানসিক কষ্টে তোমার শরীরের অবনতি হবে। তাই নির্দ্বিধায় বলে ফেলো।”

নীরব হয়ে গেল নাজীবা। তবুও বিব্রত বোধক কণ্ঠে বলে উঠে।

“জানি না আম্মা কি হয়েছে উনার? আজ কয়েকদিন উনি আমার ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আমিও এসবে মন দেয়নি। কারণ সামনের মাসে মিড টার্ম এক্সাম। তাই পড়তে হচ্ছে। এখনো প্রথম সেমিস্টারের ছয় মাসের মধ্যে মাত্র একমাস শেষ হবে। হানিমুন ট্যুর’টা তো ক্যান্সেল করতে চেয়ে ছিলাম। কারণ কুসুমা ভাবী প্রেগন্যান্ট। কিন্তু কুসুমা ভাবী নিজ মুখে অস্বীকৃতি দিয়ে আমাকে আর আফরাজ কে যেতে বলে। ভাবীর ঐ অবস্থায় ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। আকবর ভাই আর ভাবী মিলে আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে, মিড টার্মের পর একসপ্তাহ ছুটি দেওয়া হবে। তখন আমরা হানিমুনে যাবো। তিনিও দ্বিমত করেননি। কারণ উনিও বলছিলেন একমাস এর জন্যে ব্যবসাভিত্তিকে বিদেশে যাবেন। মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু যে কয়েকদিন ভার্সিটি যাওয়া আসা শুরু করলাম। উনার স্বভাব বদলে গেল। যেন আমার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা উনি মোটেও পছন্দ করছেন না। তার উপর আজকে উনি আমার ক্লাসের লেকচারার দাহাব এহসান স্যারের সাথে আমার নাম মিলিয়ে অসভ্য কথা বলতে চাইছিলেন। যা আমি সহ্য করতে না পেরে কান চেপে ধরতে নিলে হাতের ধাক্কা লেগে যায় আফরাজ এর সাথে। এতে উনি পড়ে একটু ব্যথাও পায়। আমি দেখতে চাইলেও দেখতে দিলেন না। রাগ করে চলে গেলেন।”

বউমা-র প্রতিটা কথা শুনে তিনি সন্দেহের কণ্ঠে বলেন,

“দাহাব এহসান এর সাথে কেনো তোমার নামে কটু কথা বলল সে? তুমি কি পরপুরুষের সাথে হাঁটাচলা করেছো?”

শ্বাশুড়ি মায়ের গাম্ভীর্য ভরা গলায় নাজীবা থতমত খেলো। তৎক্ষণাৎ মাথা নেড়ে না বোঝিয়ে বলে,

“এমনটা না আম্মা। আমি তো দাহাব স্যার-কে শুধু স্যারই ভাবি। উনিই আমাকে একলা ফেলে যেমনে তেমনে কথা বলতে চাইতেন। এই যে আপনাকে বললাম, কল লিস্টে স্যারের নাম্বার দেখে উনি রাগারাগী করলেন। অথচ আমি স্যারের কোনো কলের ব্যাপারে জানিই না। অবশ্য স্যার জিজ্ঞেস করে ছিলেন। আমি কেনো তার কল রিসিভ করি না? কিন্তু এর জবাব না থাকায় আমি মুখ ফিরিয়ে চলে এসে ছিলাম। এর পর থেকে স্যার উনার গাড়িতে উঠতে বাড়াবাড়ি করতেন। যেন উনি আমাকে পৌঁছে দিতে পারেন। তাই ভয়ে আমি নিজেকে উনার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে থাকি। এসব ব্যাপারেই হয়ত উনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু আম্মা আপনিই বলুন এতে কি আমার দোষ ছিল?”

কথার স্বরে কান্নাভাবটা চলে এসেছে নাজীবার গলায়। মিসেস ফেরদৌসী বুকে আগলে নেন মেয়ে-কে। ছোট বাচ্চার মত মায়ের গন্ধ পেয়ে বুকের সাথে গুটিয়ে গেল নাজীবা। আজ বহু পর সে মায়ের স্পর্শ পেল। কান্নার মাঝেও সুখ অনুভব করল। আড়ালে আফরাজ তৃপ্তির হাসল। সে রেগে লাইব্রেরীর মধ্যে পায়চারী করছিল। সে জানত তার বিবিজান মন খারাপে নিজের শরীরকে কষ্ট দিতো। তাই বুদ্ধি করে সে তার মা’কে ফোন দিয়ে রুমে যেতে বলে। তার মাও বিনা বাক্য ব্যয় করে ছেলের বেডরুমে চলে যান। সেখানে গিয়ে ছেলের ফোন করার কারণ বুঝতে পারলেন। কাপের্টের উপর হাঁটুতে মুখ গুঁজে বউ-মা কে কাঁদতে দেখলেন। আফরাজ ভাবনা ছেড়ে পুনরায় লাইব্রেরীর মধ্যে চলে এলো। সে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। কারণ তার মা রুমে এসেছে কিনা তার একবার পরখ করতে। মা-কে দেখে সে নিশ্চিন্তে লাইব্রেরী রুমে ফিরে গেল। তার ইচ্ছে করছে বিবিজান-কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখের পানি নিজ হাতে মুছে দেওয়ার। কিন্তু অনুতপ্ততায় সে নিজের রকিং চেয়ারে বসে চোখ বুজল। রকিং চেয়ারে দুল খেতে থেকে ভাবনায় ডুব দিল।

পূর্বের ঘটনা……

যখন থেকে আফরাজ তার স্মৃতি সম্পর্কে জানতে পারল। যে, নাজীবা-ই তার ছোটবেলার খেলার সঙ্গী এবং বর্তমানে তার অর্ধাঙ্গিণী। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) তখন থেকে সে নিজের আচরণ স্বয়ংসম্পূর্ণে পরিবর্তন করে নেয়। প্রতিনিয়ত নাজীবার প্রতিটা কাজে খেয়াল রাখা শুরু করে, কোনো ব্যথা পেলে তৎক্ষণাৎ সেই ব্যথা উপশমের জন্য তড়-জড় লাগিয়ে দেয়, কোনো কাজ করলে সেও তার সঙ্গে থাকবে নাহয় কলের মধ্যে তাকে দেখতে থেকে কাজ করবে এই শর্ত জুড়ে দেয়। স্বামীর কান্ডে নাজীবা ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ছিল। তার স্বামীর পাগলামী ওতপ্রোতভাবে নাজীবার হৃদয় রাঙিয়ে দিতে লাগল। কুসুমা ভাবী-কে তো আকবর কাজে হাতে দিতে বারণ করে দিয়ে ছিল। কারণ সে প্রেগন্যান্ট এই নিয়ে তিন সপ্তাহ চলছে। তার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে যে দিন আকবর শুনল , সে দিন খুশিতে যেন পাগলামীপনা ছাড়িয়ে দিয়ে ছিল। সে তার অনাথ জীবনে এত ভালোবাসা কামনাও করেনি। অথচ আল্লাহ তাকে ভরিয়ে দিচ্ছেন। সম্ভবতাও হচ্ছিল আফরাজ এর কারণে। তার বউ প্রেগন্যান্ট শুনে সর্বপ্রথম বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিল হাসিমুখী ছেলেটা। আফরাজ ও ব্যঙ্গ করে নেগপুল করতে থাকে। নাজীবা তো কুসুমা ভাবীর আগপিছ ঘুরতে থেকে প্রেগন্যান্টে কিরূপ অনুভূতি হয় তা নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। কিন্তু নাজীবার বায়ো-ডেটা চেক করার পর আফরাজ সিদ্ধান্ত নিল। সে তার বিবিজান-কে অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিবে। কারণ তার এইচএসসি পরীক্ষার পর এক’বছর পার হয়ে গেল। অথচ নানাবিধ কারণে তার শিক্ষাময় জীবন থেমে গিয়ে ছিল। সেই ভিত্তিতে খুশির মহলে নাজীবার শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও বলে দেয়। যা শুনে নাজীবাও ভীষণ খুশি হয়। অনার্সের প্রথম সেমিস্টারের ফি পে করার তিনদিন পর ফ্রেশার্সের জন্যে ওরিয়েন্টেশন ডে ডিকলার করা হয়। আফরাজ শার্ট-কোর্ট-প্যান্ট পরে নিজেকে স্টাইলিশ লুকিং দেয়। নাজীবা রাগে ফোঁসে উঠে। মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“এত সুন্দর হওয়ার দরকার নেই। আমার নামের সাথে মিসেস এড করা আছে। আপনি যে আমার জামাই সেটা সবাই জেনেই যাবে।”

আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“ভুল বললে বিবিজান। তোমার নাম মিস নাজীবা মুসাররাত দেওয়া। আর ম্যারিটাল স্টেটাসে আনম্যারিড দেওয়া। যেনো কেউ আমাদের সম্পর্কে না জানতে পারে সেই ব্যবস্থাই করে রেখেছি। এখন তো আমি মেয়েদের সঙ্গে ভাব নিতেই পারব রাইট?”

আফরাজ এর কথায় রাগে বালিশ তুলে ছুঁড়ে মা’রল নাজীবা। সেও কম কিসে? ওয়াশরুমে গিয়ে ঢিলাঢালা কটন সিল্কি থ্রিপিচ পরে নেয়, চোখে কাজল-আইলানার টেনে মুখে হালকা পাউডার মেখে নেয়। মাথায় সুন্দর করে হিজাব পরে পিনআপ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।
আফরাজ থ হয়ে গেল। নাজীবা হাতের কবজিতে আতর মেখে ব্ল্যাক মাস্ক পরে স্বামীর দিকে তাকায়। স্বামীর ঘোরলাগা নজর দেখে সন্নিকটে গিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। আফরাজ এর ধ্যান ফিরে বিবিজান এর কান্ডে। তার নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এত সাজার কোনো দরকার ছিল না। যাও গিয়ে মুখ ধুয়ে আসো। তোমার ওরিয়েন্টেশন-ডে-তে গিয়ে বেসিক জিনিসগুলো দেখেই চলে আসব আমরা। তাই এতো রেডি-সেডি হয়ে ছেলেদের ফাঁদে ফেলতে হচ্ছে না। ভার্সিটির কোনো ছেলেও পাগলের প্রেমে পড়ে না।”

নাজীবা মুখ ভেঙিয়ে মুখের পাউডার মুছে নেয়। তবুও তার সৌন্দর্য কমেনি। বরং মনে হচ্ছিলো সৌন্দর্যতা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। আফরাজ মনে মনে বলে,

“আজকের পর প্রতি ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিতে হবে। নাহলে বউ হারানোর সম্ভাবনা ১০০%।”

“নিজের মত করে কি বলছেন হ্যা? যা বলার জোরে বলুন?”

আফরাজ নীরবে নাজীবার হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। ওরিয়েন্টেশন-ডে সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। অতঃপর আফরাজ আর নাজীবা স্বামী-স্ত্রী হওয়ার কারণে একসাথে বসে ছিল। সকল টিচার্স এর পরিচিতি দেওয়া হলো। এতে বেশ বোরিং ফিল করে দুজনে। অতএব, আড়ালে দু’জনে মোবাইলের মধ্যে লুডু খেলতে লাগে। হঠাৎ করেই হোস্টের ভাষণে এমন একটি নাম শুনল। যে নামের মালিক-কে আফরাজ এই ভার্সিটি-তে আশা করেনি।
‘দাহাব এহসান দ্যা নিউ লেকচারার অফ ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট’।
দাহাব এহসান? নামটায় নাজীবাও চমকে সামনে তাকায়। আফরাজ আড়চোখে বিষয়টা খেয়াল করে। দাহাব এহসান কে আপাত-মস্তক চোখ বুলিয়ে নেওয়ার পরপর নাজীবা শান্তির শ্বাস ফেলল। কেননা স্টেজে উক্ত নামের মালিক-কে দেখতে আফরাজ এর বয়সী মনে হচ্ছে। একটুর জন্যে তার মনে হয়ে ছিল তার অতীতের সৎ দাদা বুঝি বর্তমানে ফিরে এলো। বুকের কাঁপনও স্বাভাবিক হয়ে যায়। আফরাজ-কে ইশারা করে আর খেলবে ‘না’ বোঝায়। সেও দ্বিরুক্তি করল না। দাহাব এহসান লেকচারার হিসেবে তার বক্তব্য শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে যায়। তাদের পেছনের সিট থেকে কয়েকজন ছেলে শিস বাজিয়ে নাজীবার কাধে স্পর্শ করার স্পর্ধা করে। বি’শ্রী হেসে নাজীবা-কে উ্যক্ত করতে লাগে।

চলবে……..

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৭ (রহস্যের টুয়িস্ট-০২)

“আফরাজ উঠ ব’দ’মাই’শ। এত বড় কান্ড করে আরামে ঘুমিয়ে আছিস। তুই ভার্সিটির ছেলেপেলে-রে মা’ই’রে বেঁধে রাখলি কেন? ঐ ব্যাটা ঘুম থেকে উঠ।”

বন্ধুর পকপক আফরাজ এর শ্রবণে যেতেই তার চোখজোড়া খুলে গেল। শান্ত দৃষ্টিতে আকবরের দিকে তাকিয়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে বসল। শরীরটা টান টান করে একপলক জানালার বাহিরে দৃষ্টি ফেলল। পরক্ষণে আকবর-কে বলে,

“যা তোর ভাবী-রে বল কফি বানিয়ে আনতে।”

বন্ধুর ভাবলেশহীন স্বভাবে আতংকে ম’রম’রা অবস্থা আকবর এর। একে এই দামড়া ছেলে রাজনীতিবিদের ছেলেপেলে-রে কিডন্যাপ করল। এখন শান্তস্বরুপ প্রদর্শন করছে, যেন সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। আকবর বিরক্তসূচক কণ্ঠে কাজের মেয়ে-কে ডাক দেয়। মেয়েটা এলে তাকে আফরাজ এর বলা কথা পুনরাবৃত্তি করে বলল। মেয়েটি মাথা নেড়ে নাজীবার কাছে চলে যায়। আকবর চোরা-চোখে চৌপাশ দেখে দরজা লাগিয়ে বন্ধুর শিউরে গিয়ে বসে পড়ে। বন্ধুর অস্থিরতায় হাসি পেল আফরাজ এর। কেননা সে তো ভুল কিছু করেনি। অন্যায় হতে দেখল এর প্রতিবাদ করল। কথায় আছে না, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনে সমান দায়ী।’ তার বিবিজান অন্যায় সহ্য করে নেই বলে, জুতো পিটা করে ছিল। অতঃপর আড়ালে আফরাজও স্বামীকর্ম পালন করল। অস্থির-চিত্তে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে আকবর। অথচ আফরাজ এর মাঝে কোনো ভাবাবেগ নেই। চোখ-মুখে পানি ছিটিয়ে মাইন্ড ফ্রেশ করল। তোয়ালে মুখ মুছে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় আকবর। দরজায় টোকা পড়ার শব্দে আফরাজ গিয়ে দরজা খুলল। নাজীবা-কে নীরবে হাতে দু’কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ঢোক গিলল আফরাজ। এ মেয়ে যে, কেনো পূর্ণ হৃদয়ের আঙিনায় জুড়ে বাস করছে? এখন যে তার নিশ্চুপতা আফরাজ এর বক্ষকে পুড়াচ্ছে সেটা কি মেয়েটা বুঝতে পারছে না? গলা ঝেড়ে মুখ থেকে ‘হুম’ শব্দ বের করল আফরাজ। নাজীবা মনে মনে ভেংচি কাটে। সে পণ করে রেখেছে , এই বজ্জাত হিটলারের সাথে সারাদিন কথা বলবে না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) কফির ট্রে সম্মুখে ঠেলে দেয়। তবুও আফরাজ ‘কি’ বলে! নাজীবা দাঁতে দাঁত চেপে গরম চোখে আকবরের দিকে তাকায়। বেচারা এমনিতে অস্থিরতায় মরি মরি অবস্থা। তার উপরে ভাবীর গরম চোখ দেখে তড়িঘড়ি এসে ট্রে-টা হাতে নিয়ে ‘ধন্যবাদ ভাবী। এবার যান।’ বলেই আফরাজ-কে সরিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আফরাজ বোকা বনে গেল। আকবরের পিঠে ধরাম করে এক চা’প’ড় মা’রে। বেচারা ‘উহ উহ উহ’ করে চেঁচালো। আফরাজ মুখ ভেটকিয়ে বলে,

“তোরে এত দরদ দেখাইতে কে বলছিল হুম? বউ আমার, আমার নটাংকি করতে মন চাইলে তো অবশ্য ঢং করবই তাই না? তোর থেকে কেন মাঝে এসে মিডেল ফিঙ্গার দেখাতে হলো? তোর কাজে তো কখনো দেখাইনি।”

“আরে ব্যস কর বাপ। ভাবীর রাগের চেহারা দেখলি না! তুই যদি আরেকটু দেরি করতি। তাহলে তোর চেহারার হাল বেহাল করে দিতেন ভাবী। সঠিক সময়ে যে তোকে বাঁচিয়েছি এর শোকরিয়া আদায় কর ব্যাটা।”

“তোর ভাবী রাগ করলে নাকের ডগা ফুলিয়ে লাল করে ফেলে। দেখতে সেই জাকার্স লাগে।”

“বিয়াত্তা ব্যাটা বউয়ের রুপে পাগল হয়ে আছে।”

নিম্ন স্বরে বিরবিরিয়ে বলল আকবর। আফরাজ কফির মগ নিয়ে জানালার ধারে গিয়ে চুমুক দেয়। আকবরও একইভাবে বন্ধুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আফরাজ কফির মগে চুমুক দিতে থেকে স্বেচ্ছায় বলে উঠে।

“ছেলেগুলো সুস্থ আছে তো?”

“সুস্থ? লাইক ম্যান সিরিয়াসলি? তোর মনে হয় তোর হাতের মা’ই’র খেয়ে সুস্থ থাকবে? কুদরতে কারিশমা বলে বেঁচে গেছে শা’লা’রা। নাহলে জানে ম’রলে তোর জন্যে কেয়ামত হয়ে যেতো‌। এমনিতে ভয়ে আছি তোর সঙ্গে সঙ্গে না আমিও ফেঁসে যায়।”

“হুম গ্রেট আইডিয়া ফেঁসে যাবি। তুই যদি না ফাঁসিস তাহলে বন্ধু নামে কলঙ্কিত হয়ে যাবি। তাই বন্ধুর জন্য জান দেওয়াও সুন্নত বুঝলি।”

“শা’লা আমাকেই কপি মা’রতেছিস।”

“ইয়েস মাই ডেয়ার ব্রো। নাউ লিসেন টু মি কেয়ারফুলি। ছেলেগুলো বেহুঁশ হয়ে আছে। গার্ডস কে বল ওদের জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করতে। আমারও হাত নিশপিশ করছে। সেদিনের মা’রা কম হয়ে গেছে। আজকে আরেকটু আচ্ছামত দিতে হবে। এরপর মেরামতের ব্যবস্থা করব।”

কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে মগটি ট্রে-র উপর রেখে বন্ধু-কে বাহিরে আসতে ইশারা করে। সেও বাধ্যতামূলক কফি শেষ করে বেরিয়ে যায়। নাজীবা ড্রয়িং রুম থেকে বিষয়টা খেয়াল করে। কিন্তু ডাক দেয় না‌। হাতে তেল নিয়ে তার দাদী শ্বাশুড়ির চুলে মেখে দিতে থাকে। সে দৃষ্টিতে না চাইলেও একজোড়া প্রেমিক পুরুষ ঠিকই তার দৃষ্টিদ্বয় নাজীবার মুখশ্রীর দিকে চেয়ে বেরিয়ে যায়। সেটা যে আফরাজ ছাড়া অন্য কেউ নয় তা বলাবাহুল্য। দাদীর চুলে বিলি কাটতে থেকে তেলগুলো আগপিছ ভালোমত মেখে দেয়। এতে খাদিজা বেগমের মাথা ব্যথাও কম হয়ে যায়। মিসেস ফেরদৌসী সন্তুষ্টজনক দৃষ্টিতে শ্বাশুড়ি আর তার বউমা-র হাবভাব দেখছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) জনাব ইসমাইল টুপি খুলে ভাঁজ করে রাখলেন। বউ-কে অন্যমনস্ক দেখে মৃদু ধাক্কা দেন। মিসেস ফেরদৌসী ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকান। চোখের ইশারায় ‘কি’ বোঝান। এতে জনাব ইসমাইল বলেন,

“তোমার কি মাথা ব্যথা করছে? বউমা-কে তেল লাগিয়ে দিতে বলব?”

“না গো আমি শুধু তাকিয়ে আছি। মেহজাবিন সিরাত খুব কপাল করে এ মেয়ে-কে পেয়ে ছিল। আমারও না আমাদের বড় মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। মাত্র সাত বছর বয়সে জন্ডিস রোগের কারণে মারা যায়। তারপর আফরাজ এলো গর্ভে। মেয়ে হারানোর পর একমাত্র ছেলে পেয়ে কলিজার ভেতর লুকিয়ে রাখলাম। যেনো কোনো ধরনের রোগবালাই ছেলে-কে ছুঁ’তে না পারে। আলহামদুলিল্লাহ পারেওনি। আল্লাহর অসীম রহমতে সবাই সুস্থ আছি। কিন্তু তবুও মেয়ে আমার আফরিন-কে ভোলা দায়। বউমা-র চেহারার আদলে নিজের মেয়েকে খুঁজি।”

“তুমি যে তাকে মেনে নিলে এই অনেক বেশি। তাই হয়ত তোমার মনে মেয়ে-কে পুনরায় ফিরে পাবার আশা মনে জম্মেছে। নাজীবা-কে আগলে রাখো, দেখবে মেয়ের শূন্যতা আর অনুভব করবে না।”

মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। জনাব ইসমাইল তার মা আর বউমা-র চক্ষু আড়ালে বউয়ের হাতে হাত রেখে চেপে ধরেন। মিসেস ফেরদৌসী চোখজোড়া বড় করে ছাড়তে ইশারা করেন। কিন্তু তিনি ছাড়েন না। উল্টো হেসে দেন। খাদিজা বেগম আর নাজীবা মিটমিটে হাসতে লাগল। দাদী শ্বাশুড়ি-কে চুল বেঁধে দিয়ে নাজীবা উঠে পড়ে। শ্বশুর শাশুড়ির জন্য চায়ের ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে চলে যায়। ভাবল আজ মজার শীতের ভাপা পিঠা বানাবে। শীতের সময় পিঠা ছাড়া মজে না। বিধেয় কোমড়ে শাড়ির আঁচল গিঁট মে’রে ভাপা পিঠার জন্য চাল গুঁড়ো প্রস্তুত করার জন্য সামগ্রী জোগাড় করে নেয়। প্রথমে চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে দেয়। চাপাতা,দুধ,চিনি চুলোর পাশে রেখে গরম পানিতে দুয়েক চামচ চাপাতা ঢেলে নেয়। তখনি টিভির আওয়াজ শুনতে পেল নাজীবা।
খুব উচ্চ স্বরে টেলিকাস্ট করা হচ্ছে যে, ‘
রাস্তার পাশে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত পাঁচ জন ছেলের আহত দশায় পাওয়া গেল। তাদের আহত দশা ছাড়াতে এগিয়ে আসছেন মিস্টার আফরাজ ফাহিম আর তার সহযোগী বন্ধু আকবর। দু’জনের সহায়তায় ছেলেগুলো কে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার পর জানা যাবে তাদের আ’ঘা’তকারী ব্যক্তির নাম। নাম জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।’

খবর দেখে নাজীবা-কে ঘাবড়ে যায়। কেননা ছেলেগুলো অন্য কেউ নয়। স্বয়ং তার সঙ্গে বা’জে আচরণ করা ছেলেগুলো ছিল। তাদের একেক জনের চেহারা প্রতিস্পষ্ট মনে আছে তার। তবে কি আ’ঘা’তকারী আফরাজ? কথাটা ভাবতেই নাজীবার গলা শুকিয়ে গেল। ছেলেগুলো সত্য কথা প্রকাশ করলে আফরাজ ফেঁসে যাবে এই ভয়ে ভীতিগ্রস্থ হলো। হঠাৎ ‘ছ্যাত’ করে শব্দ হওয়ায় নাজীবার ধ্যান ফেরল। চায়ের পানি গুড়িয়ে পড়ছে। হকচকিয়ে চুলোয় অফ করে দেয়। চুলোর ধারে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। কুসুমা হেঁটে রান্নাঘরে এলো। নাজীবা-কে ভাবান্তর পেয়ে মৃদু গলায় ডেকে উঠে। সে ডাকের শব্দে ফিরে কুসুমা ভাবী-কে দেখল। সে এসে নাজীবার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে প্রশ্ন করে।

“কি হলো ভাবী তোমার মুখ লটকে রইল কেনো? নিউজে দেখলাম ভাইয়া কত বড় সেবকের কাজ করছেন। ভাইয়া এ-কাজে তো তোমার গর্ব করা উচিৎ।”

“আর গর্ব? জানেন ছেলেগুলো কে? আপনা-কে ভার্সিটির ফাস্ট দিনের কথা বলতে চেয়ে ছিলাম মনে আছে? কিন্তু আপনার আফরাজ ভাইয়ের কারণে বলতে পারিনি। তিনি সোজা টেনে রুম নিয়ে গিয়ে ছিল। আর খাওয়ার সময়ে খাবার নিয়ে রুমে চলে এসেছিল। বলতে গেলে গম্ভীরতা বজায় রেখে ছিল?”

কুসুমা ভেবে ‘হ্যা’ বলে উঠে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাজীবা বলতে লাগল।

“ভাবী সেদিন ভার্সিটির ওরিয়েন্ট ক্লাস দেখে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল। তার উপর আমাদের পেছনে পাঁচজন ছেলে প্রচুর টর্চার করছিল। তাই আফরাজ আমাকে নিয়ে হল রুম থেকে বের হয়ে যায়। ভেবে ছিলাম পরিস্থিতি ঘোলা হবে না। কিন্তু দেখলাম ছেলেগুলো ও পিছে পিছে চলে এসেছিল। আমি যেহেতু ভার্সিটির স্টুডেন্ট। তাই তারা ভেবে ছিল রেগিং করতে পারবে। তবে তারা তো জানত না আমার সঙ্গে যে,স্বয়ং আমার স্বামী দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে একজন আমাকে অশ্লীল কথা বলে ফেলে। যা আমি অশুনা করলেও আড়চোখে তোমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার চোখজোড়া ক্রমশ লাল হচ্ছিল। ঢোক গিলে তার হাত চেপে ধরলাম। এতে যে, বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি নিউজ দেখেই তা বুঝেছি।”

“মানে নিউজ দেখে কেমনে বুঝলে? নিউজে তো বলেনি কে তাদের এমন মারাত্মক আহত করেছে। শুধু ছবি দেখিয়ে উল্টো কে মে’রেছে তা জানার অপেক্ষায় আছে বলল।”

“কারণ ভাবী ছবিতে একেকজনের হাত,পা,কপাল,মাথা,ঘাড় ফাটা আর ভাঙ্গা। এগুলো উনি ছাড়া আর কেউ করবে না। ছেলেগুলো তাদের যে যে অঙ্গ দিয়ে আমাকে স্পর্শ করার জন্যে অশ্লীল কথা বলেছিল। আফরাজও সেই অঙ্গগুলোকে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে। ভাগ্যিস নিহত করেনি‌। তাহলে পাপ হয়ে যেতো।”

“ওরা বলে দেবে যে, এই কাজ ভাইয়ার!”

“আফরাজ এর’টা না বললেও আমার’টা অবশ্য বলে দেবে।”

কথাটা অন্যরকম শোনাল কুসুমার কানে। সে প্রশ্নাতীত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“তোমার কোনটা বলে দেবে?”

নাজীবা ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে,

“হিহি আমাকে টিজ করে অশ্লীল কথা কেনো বলছিল এর শাস্তি দিছি। জুতো খুলে নির্জন মাঠে ধুমধাম জুতোর বা’রি মে’রে’ছি। তারাও প্রতিঘাত করতে চেয়ে ছিল। কিন্তু কেনো জানি করতে পারেনি। কি দেখে যেনো তারা চুপটি হয়ে মা’র খেয়ে গেল। পরে ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যায়। আমিও আর বিষয়টা ঘাঁটলাম না। তোমার ভাইয়ার সাথে চলে এলাম। তাতে কি দেখলে না জমানো রাগ ঠিকই ফলিয়ে ছেড়েছে। আফরাজ এমনি সেই কিশোর-কালেও রাগ উঠলে জমতে দেওয়া তার পুরোনো স্বভাব। সর্ব রাগ অন্তিম মুহূর্তে ফলানো তার বদভ্যাস বটে।”

দু’জনে হেসে ফেলল। কুসুমা শেষের কথাগুলো না বুঝলেও, নাজীবার হাসিমাখা চেহারা দেখে আর প্রশ্ন করেনি। কুসুমা তার জন্য বাটিতে আচার নিয়ে বের হতে গেলে নাজীবা যেতে দেয় না। সাভেন্ট কে দিয়ে চেয়ার আনিয়ে নেয়। চেয়ারে বসতে বলে শ্বশুর, শাশুড়ি আর দাদী শ্বাশুড়ি-কে চা ,বিস্কুট দিয়ে আসে। বুদ্ধি করে কথার ছলে চা বানিয়ে ফেলে ছিল। তাই ভাপা পিঠার কাজ শুরু করতে এখন তার কোনো ধরনের ঝামেলা হলো না। আচার খেয়ে খেয়ে নাজীবার চাল গুঁড়ো করা দেখছিল কুসুমা। সে রান্নায় তরকারির কাজ পারলেও পিঠা বানানোর কাজ পারে না। তবে অভিজ্ঞের ন্যায় নাজীবার পিঠা বানানো দেখে সে বিস্মিত প্রায়।

_____

দাহাব এহসান ঘরের আসবাবপত্রের বেহাল দশা বানিয়ে ফেলেছেন। তার ক্রোধ মাত্রাতিরিক্ত সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে। নাজীবা তার ফোন কলের জবাব দেয় না, আফরাজও তার স্ত্রীর রক্ষার্থে গার্ড’স লাগিয়ে রেখেছে। তিনি চেয়ে ছিলেন, নাজীবা-কে হানিমুন ট্যুর এ হাতে নাতে ধরার । কিন্তু তাদের হানিমুন ট্যুর ক্যান্সেল হওয়ায়। একাজ সম্ভব হলো না। বেঁচে গেল বলা চলে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)রুমের মধ্যে ধুপধাপ পা চালিয়ে পায়চারী করছে সে। ভাবনা মতে কালকে তিনি ডিএনএ রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারবেন, আফরাজ এর ওয়াইফ নাজীবা কি মোবারক আলীর মেয়ে কিনা! কারণ খুব কৌশলে তিনি এক মেয়ে-কে ভাড়া করে আফরাজ এর বাসায় সাভেন্ট হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। সেই মেয়েই নাজীবার চুলগুচ্ছ জোগাড় করে দাহাব এহসান এর হাতে দেয়। তার অস্থিরতা কমছিল না। এজন্য তিনি চুলগুলো টাকা খাওয়ে এক ডক্টর-কে হাত করে চুলগুচ্ছ পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেন। কালকে রিপোর্ট পেলে তবেই সে মুখোমুখি হবে নাজীবার।
অন্য রুমে মিসেস হিয়ার পাশে আহত অবস্থায় তার স্বামী শুয়ে আছেন। তাদের দিকে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাবাসসুম। তার বাবার র’ক্তক্ষ’য়ী শরীর দেখে তার নিজের শরীর কাঁপছে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো সে তার চাচা দাহাব এহসান কে প্যাকেটজাত র’ক্ত অনায়াসে পান করতে দেখেছে। এ নিয়ে বার কয়েক তার মা-কে প্রশ্ন করেছে সে। কিন্তু জবাব পেল না। কারণ তার মা নিজেই হিতা-হিত জ্ঞানহীন দৃষ্টিতে তার বাবার মুখপানে চেয়ে আছে। মিসেস হিয়া তার স্বামীর আহত দেহে মৃদু স্পর্শ করে বলেন,

“কেনো তুমি শত্রুতা তৈরি করছো বলোতো? এসবে না জড়িয়ে মেয়ে কে নিয়ে দূরে চলে গেলেই তো পারো। দেখলে না বাবার সঙ্গে লড়াই করতে যাওয়ার ফলাফল। বাবার কাছ থেকে তুমি যে সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চেয়ে ছিলে , সেই সম্পত্তির জন্য কত জনের প্রাণ অকালে হারিয়েছে তা মনে নেই? ভুলে গেলে মোবারক ভাই-কে? কেমনে নিদারুণ মৃত্যু দিয়ে ছিল তাদের-কে বাবা।”

চুপ করে চোখ বুজে রইলেন মিসেস হিয়ার স্বামী জনাব লিয়াকত। জীবনে বিনা উপার্জনে সব হাতের নাগাল পেয়ে ছিলেন তার শ্বশুর দাহাব এহসান এর কারণে। কেননা তার অসৎ কাজে সঙ্গযোগী ছিল তিনি নিজে। আর সেই শ্বশুর কিনা তাকে দেওয়ালের পেছন গুপ্ত রুমে বন্দি করে রেখে ছিল। স্বার্থ হাসিলের লড়াইয়ে তিনিও যুক্ত আছেন। তাবাসসুম বাবা-মায়ের আলাপচারিতা বুঝতে না পেরে বিরক্ত গলায় বলে,

“ড্যাড তুমি চার বছর ধরে কোথায় ছিলে? আইমিন হঠাৎ একমাস ধরে তোমাকে নীরবে পড়ে থাকতে দেখছি। আজ তো সুস্থবোধ করছো। এখন নাহয় বলে ফেলো। কি হয়ে ছিল তোমার সাথে? আর তোমার ভাই র’ক্তখাদক সেটাও কি আগে থেকে জানতে?”

মেয়ের কথায় চরম ক্রো’ধ জেগে উঠে জনাব লিয়াকত এর মনে। তিনি হুংকার দিয়ে বলেন,

“এই মেয়ে কি চাচা চাচা লাগিয়ে রাখছিস হে? কে তোর চাচা? ঐ বুড়ো আমার ভাই লাগবে কেমনে হ্যা? ওই বুড়োর বর্তমান বয়স কত জানিস? প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে যৌবনের রুপ ধরলেই সে যুবক হয়ে যায় না বুঝলি? ঐ বুড়োর রুমে গিয়ে দেখ সব বুঝতে পারবি।”

তাবাসসুম বাবার রূঢ় কথায় ক্রোধান্বিত হলেও দাহাব এহসান এর ব্যাপারে আসল পরিচয় জানার উদ্রেক বেশি ছিল তার মনে। সময় নষ্ট না করে সে তার নামেমাত্র চাচার রুমের বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়। আড়ালে জানালার কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। পর্দা সরিয়ে পায়চারি করতে দেখতে পেল দাহাব এহসান কে। রুমের অবস্থা কাহিল করেছে সে দৃশ্যও দেখে ফেলল তাবাসসুম। হঠাৎ দাহাব এহসান কে তার আসল রুপে দেখতে পেয়ে জোরেসরে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।

চলবে…….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-১৪+১৫

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৪ (টুয়িস্ট)

“ওয়াও বিবিজান তুমি আমাকে আদর করতে ওয়াশরুমের ভেতর অব্দি চলে এলে। কিন্তু না বলে কেনো আসলে? আমারও লজ্জা আছে তো নাকি! তুমি শাড়ি লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছো আর আমি খালি গায়ে শুধু ট্রাউজার পরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি চাইলে শাড়িটা খুলে ফেলতে পারো। এমনিই তোমার জিরো ফিগার দেখিনা অনেকদিন।”

“চ’ড় খেতে চাইছেন আপনি? আবুল তাবুল কথা বন্ধ করুন। এখান থেকে আমি আমার জিনিস নিতে এসেছি।”

“জিনিস? কোন জিনিস?”

আফরাজ আন্দাজ করতে পেরেও চুপ রইল। সে জানে তার বিবিজান কোন জিনিসের কথা বলছে। নাজীবা আমতা আমতা করে বলে,

“আ আ আপনাকে বলব কেনো? বের হোন একটু। আমি জিনিসটা নিয়ে যাওয়ার পর আসিয়েন প্লিজ।”

আফরাজ কথাটা শ্রবণ করেও ধীরপায়ে বিবিজান এর নিকট এগিয়ে যেতে লাগল। স্বামীকে কাছে আসতে দেখে বুক ধরফড়িয়ে উঠে নাজীবার। আজ পাঁচ দিন পর সে তাদের স্বামী-স্ত্রীর রুমের মধ্যে এসেছে। এতদিন খুব সতর্কে এড়িয়ে চলছিল আফরাজ কে। কিন্তু আজ গোসল করার সময় তার খেয়ালে এলো তার একটা গোপন জিনিস আফরাজ এর রুমের ওয়াশরুমে থেকে গিয়েছে। মনে মনে ঢোক গিলে। এতদিন আফরাজ খুব রাগারাগী করেছে একটিবার কথা বলার জন্য। সেই তাকে পাত্তা দেয়নি। আজ জিনিসটা জরুরি না হলে সে মোটেও রুমটির আশপাশেও ঘেঁষত না। কিন্তু সে এক ব্যাপারে আশ্চর্য হলো বটে। আজ তাকে দেখেও কেনো আফরাজ স্বাভাবিক?
বিবিজান এর মুখের সন্নিকটে এসে তাকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে আফরাজ। নাজীবা চোখ বুজে অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। মেয়েটা নিজেকে রোবোটিক ভাবে প্রদর্শন করছে। আফরাজ এর বুক জ্বলছে মেয়েটা তাকে ভালোবেসে পাগলামী করে বেড়ায়। অথচ ভালোবাসার মানুষটির অন্তর অব্দি বুঝতে পারে না। এই নিদারুণ কষ্টের সমীপে নিজেকে শক্ত রেখেই হাসিমাখা মুখে চেয়ে আছে তার বিবিজান এর দিকে। প্রণয়ী গলায় আওড়ায়।

“কিছু দেখা দৃশ্য সত্য হয় আবার কিছু দৃশ্য মিথ্যে হতে কতক্ষণ? সব দেখাই সত্য নয় সেটা তুমিও জানো, আমিও। জানো তুমি নিজে আমাদের মাঝে যে দূরত্ব টেনেছো না? সেটার ইতিও তুমিই টানবে। তফাৎ থাকবে ইতি টানলেও আমাকে নাও পেতে পারো।”

শেষের বাক্যে থমকানো দৃষ্টিতে চেয়ে তাকায় নাজীবা। মুহুর্তেই তার চোখজোড়ায় অশ্রু জমে গেল। কিন্তু সেই অশ্রু মুছল না আফরাজ। কখনো কখনো চোখের অশ্রু মেটাতে নেই, মনের জোরে অশ্রু ঝরিয়ে ফেলা ভালো। এতে যদি স্বস্তি মেলে তবে ক্ষতি কই! নাজীবা মুখ খুলতে নিলে আফরাজ সন্তপর্ণে তার হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দেয়। লজ্জা পেল নাজীবা। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে কাঁচুমাচু করছে। যেনো তার স্বামীর চোখে এ প্যাকেটটি পড়ায় লজ্জার সম্মুখীন হতে হলো। ব্যাপারটা বিরক্তিকর লাগল আফরাজ এর। বিবিজান এর কাছ থেকে দূরে সরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। চিরনী দিয়ে চুল আঁচড়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“শুনো বিবিজান এমনি তো আর তোমার স্বামী হয় নেই? তুমি না হয়, না বুঝলে আমার অন্তরের কথা। আমি তো বুঝি। পাঁচদিন দূরে থেকেছো এর মানে এই নয় যে কোনো কিছুই আমার চোখে পড়েনি। গতকাল রাতে যে তোমার পেটে ব্যথা করছিল একবার জানালে কি তোমাকে পাগলাগরাদে রেখে আসতাম? যতসব ফালতু ভাবনা তোমার। থাক এখন, এখানেই ফ্রেশ হও। এই প্যাডের প্যাকেটটা নতুন। তোমার ব্যাগে থাকা প্যাডের প্যাকেটে কোনো প্যাডই ছিল না। তাই সকালে গিয়ে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে এসেছি।”

কথাটুকু বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায় আফরাজ। নাজীবা নিশ্চুপ রইল। হ্যা, তার পিরিয়ডের কারণেই সে তাদের রুমে এসেছিল। গতরাতে কোনো ভাবে একটা প্যাড কুসুমা ভাবীর থেকে নিয়ে ছিল। এখন আবারো চাওয়া মানে সরু দৃষ্টিতে তাকানো। তাই নিজ দায়িত্বে এসেছিল প্যাডের প্যাকেট নিতে। এসেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়।‌ কেননা সে বেডরুমে আফরাজ কে না দেখতে পেয়ে ভেবেছিল সে অফিস থেকে ফিরেনি‌। খোশমনে ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। যেই না সামনে তাকালো থমকে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ ওয়াশরুমের আয়নার সামনে উদাম শরীরে ট্রাউজার পরে দাঁড়িয়ে ছিল আফরাজ। হাতে তার রেজর মেশিন। যা অফ করা ছিল। বলতে গেলে তখনও সে অন করেনি। আফরাজ এর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে ভীষণ খুশি হলো তাকে দেখে। পরক্ষণে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ভাগ্যিস রেজর মেশিন অন করেনি। নাহলে মহারাণীর লুকোচুরি ধরতেই পারতাম না।’

শাড়ির আঁচল খামচে ধরে নাজীবা দরজার পাশে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। তার যে, প্যাড লাগবে তা মুখ ফুটে বলতেও পারছিল না। অথচ স্বামী তার অবস্থা ঠিকই বোঝে নিল। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে নাজীবার ধ্যান ফিরে। আফরাজ গলা ঝেড়ে বলে,

“এই যে বেগম সাহেবা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এটা-কে বাথরুম বলে। কষ্ট করে ফ্রেশ হয়ে বের হোন।”

নাজীবা বোকা কণ্ঠে ‘জ্বি জ্বি বের হচ্ছি’ বলে তার কাজ সারতে লাগল। আফরাজ জানে তার বিবিজান এর কাজ জলদি শেষ হবে না। তাই সে নাজীবার রুমের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
একজোড়া চোখের মালিক আফরাজ কে যেতে দেখে আস্তে করে তার বেডরুমে ঢুকে পড়ে। সর্বক্ষণে চেয়ে লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ শুনতে পায়। ঢোক গিলে ওয়াশরুমের দরজার পাশে একটি ডাস্টে-র বালতি খেয়াল করে। সেখানে চুলেরগুচ্ছ পড়া দেখতে পায়। চোরা-চোখে তাকিয়ে এক মিনি সাইজের পলিথিনে চুলগুচ্ছ ভরে নেয়। কোনো দিক না তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। নাজীবা দরজা খুলতেই দেখল রুম শুনশান হয়ে আছে। অথচ তার মনে হচ্ছিল কে যেনো রুমের মধ্যে হাঁটাচলা করেছে। আফরাজ করেছে ভেবে, সে আর ঘাঁটল না। ধীর পায়ে চুল শুকিয়ে নেয়। অতএব, দাদীর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। আজ সকালে তার দাদী শ্বাশুড়ি বলে ছিল, দুপুরে গোসল সেরে রেডি হয়ে থাকতে। দাদীর রুমের দরজায় নক করে। খাদিজা বেগম ফোন হাতে নিয়ে অস্থির ভাবে বসে আছেন। কবে গাড়ির শব্দ শুনতে পাবেন এই আশায়। দরজার শব্দ শুনে তিনি ‘ভেতরে আসো’ বলে অনুমতি দেন। নাজীবা শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে সালাম দিয়ে ঢুকে পড়ে। খাদিজা বেগম নাতবউকে দেখে খুশির আহ্লাদে বলেন,

“নাতবু এদিক আয়। এই নেহ্ চাবির গুচ্ছ। ঐ আলমারির দরজা খুলে তিন নাম্বার ড্রয়ারে দেখ সোনার বক্স রাখা। এটা বের করে আমায় দেহ্।”

নাজীবা মৃদু হেসে দাদীর কথামত সোনার বক্স বের করে তার হাতে দিলেন। তিনি নাজীবা-কে ইশারায় পাশে বসতে বলেন। সে বসতেই তিনি সোনার চেইন নাজীবার গলায় পড়িয়ে দেন,হাতে সোনার একজোড়া বালা,কানে সোনার ছোট দুল পড়িয়ে দেন। এতে ভীষণ অবাক হয়ে যান নাজীবা। সে বুঝতে পারল না তার দাদী শ্বাশুড়ি হঠাৎ তড়-জড় করে সোনা কেন পড়িয়ে দিচ্ছেন। খাদিজা বেগম নাতবউয়ের নাকফুটো করা নেই দেখে আফসোস এর সুরে বলেন,

“আহারে নাতবু তোর নাক তো ফুটো করা নেই। আমি ফুটো করে দিলি কি বেশি ব্যথা পাবি?”

নাজীবা তার মা-কে নাকফুল পরতে দেখেছিল। তার মা বলতো নাকফুল সামলাতে কষ্ট হয় বেশি। কেননা নাকের ময়লা পরিষ্কার করা যায় না সহজে। কিন্তু ব্যবহার করতে করতে ঠিক হয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,

“দাদী বেশি ব্যথা করবে না?”

“আরে না নাতবু।”

খাদিজা বেগম আপনমনে সুঁই-সুতো বের করে নাজীবার কাছে বসেন। সুতো সুঁই এর মধ্যে ঢুকিয়ে গিঁট মে’রে নিলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ বিবিজান এর খোঁজে তার দাদীর রুমে এসে দেখল। তার দাদী সুঁই দিয়ে নাজীবার নাকফুটো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দেখে সে দাদীর মন ঘুরাতে চটজলদি বলে উঠে।

“সতীন জলদি রেডি হয়ে নাও। বাবা-মা আসছেন।”

খাদিজা বেগম খুশি হয়ে গেলেন। তিনি নাজীবার আপাতমস্তক দেখে ‘মাশাআল্লাহ’বলেন। নাতবউ এর চিবুক ধরে বলেন,

“নাতবু আমার ছেলে আর ছেলের বউ বহুত বছর পর আইতেছে। তাই তোর নাক ফুটো করতে পারলাম না। কিন্তু পরে করে দিবো নেহ্ চিন্তা করিস না কেমন?”

নাজীবার হেসে দাঁড়িয়ে যায়। খাদিজা বেগম নিজের মত খুশির চোটে বিরবিরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েন। নাজীবা অবাক চাহনি নিয়ে বলে,

“আপনার বাবা-মা আছেন?”

আফরাজ বিবিজান এর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোমরে হাত রেখে গলা উঁচিয়ে বলে,

“কেন তোমার মনের অভিযোগ বুঝি শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কে বোঝাবে? নাকি তাদের অভিযোগ দিয়ে আমাকে ধুলাই করানোর ধান্দা হুম?”

“আপনি কি সঠিক জবাব দিতে পারেন না? আমি জিজ্ঞেস করেছি কারণ আমার শ্বশুর শাশুড়ি তারা। বউ হিসেবে রান্না করার দায়িত্ব আমার।”

“বাবা-রে সাধুসাবিত্রী আমার। আগে না স্বামী কর্ম পালন করা উচিৎ ছিল তোমার। তার পর যেয়ে পরিবার কর্ম। স্বামীর ‘স’ অব্দি পালন করতে দিলে না , আসছে আমার মহারাণী রান্নার ‘র’ করতে।”

“আপনি কিন্তু আমার ইনসাল্ট করতেছেন!”

“যাই হোক বাবা-মায়ের সাথে দেখা করেই আমরা বের হবো। কুসুমা ভাবী-কে বলেছিলাম। তুমি তার সাথে মিলে ব্যাগ গুছিয়ে নাও।”

‘ব্যাগ গুছানোর’ কথা শুনে নাজীবা আহত গলায় বলে,

“আপনি বুঝি আমাকে রেখে আসবেন?”

“হুম একমাস তো শেষ বিয়ের। এবার নাহয় তোমাকে তোমার আসল অস্তিত্বের মাঝে রেখে আসা দরকার। তাই ওখানে নিয়ে যাবো। ওহ জায়গাটা হলো ফেনী।”

বুক কেঁপে উঠে নাজীবার। সে যেখান থেকে পালিয়ে আসার জন্য মৃত্যুর সমান লড়াই করেছে সেই স্থানে পুনরায় যাবে ভাবতেই তার মন-মস্তিষ্ক এ আলোড়ন সৃষ্টি হলো। সময় বিলম্ব না করে আফরাজ এর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় সে। আফরাজ বাঁকা হেসে বিবিজান এর যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। সে জানে তার বিবিজান ড্রা’গ ভেবে মেডিসিন দিবে শরীরে। তাই নিশ্চিন্তে সে তার লাইব্রেরী রুমে চলে যায়। আকবর মাথায় হাত চেপে চোখজোড়া গোল করে পেপার্স এর দিকে তাকিয়ে আছে। আফরাজ লাইব্রেরীর দরজা লাগিয়ে আকবর এর কাছে গিয়ে তার পিঠে মৃদু চা’প’ড় মা’রে। আকবর আশ্চর্যান্বিত গলায় বলে,

“ভাই ইউ গ্রেট ভাই। তুই কেমনে এতকিছু জোগাড় করতে পারলি? আমি হলে তো ডাসামার্কা মুখ নিয়ে বসে থাকতাম। তুই তো সুপারের চেয়েও লিজেন্ড ব্রো।”

আফরাজ হাসল। বন্ধুর হাত থেকে পেপার্স নিয়ে এক ফাইলে রেডি করে রাখে। তার দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমার নয় বছর বয়সে যে, গেমটা শুরু করছিলেন শ্রদ্ধীয় দাদাজান সেই গেমটা শেষ করবে আমার বিবিজান। তার এই লড়াইয়ে আমি থাকব। তার আগে আরো কিছু তথ্য জানা বাকি। আমার নয় বছরের স্মৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। নাহলে কিছু তথ্য অপূর্ণ রয়ে যাবে।”

“এসব বুঝলাম। কিন্তু তোকে একটা কথা জানানোর ছিল। ইউএসএ এর নাকিব মুনসিফ এর নাম শুনেছিস?”

“‘নাকিব মুনসিফ’ নামটা শুনা শুনা মনে হচ্ছে। কিন্তু মনে পড়ছে না ঠিক। কেন কি হয়েছে?”

“আমাদের হানিমুন স্যুট বুকিং যেই রিসোর্টে করা হয়েছে। সেই রিসোর্ট এর মেইন ওনার হলো নাকিব মুনসিফ। তার রিসোর্টেই ইউজ-ফুল কোম্পানির ওনার্স কে এওয়ার্ড দেওয়া হবে। বলতে পারিস এওয়ার্ড ফাংশন হবে। লাকিলী সেই রিসোর্টেই তুই আর আমি ইনভাইটেড। ”

আফরাজ শুনে মুচকি হাসল। ত্যাড়ামি করে বলে,

“তোর শাকচুন্নী’টা কি কাজ করতেছে নাকি সারাদিন খাবার টুসতে থাকে? পিএ হয়ে আমার বালের কাজ করতেছে।এই গাধা মেয়ের কারণে অফিসের কোনো জিনিসই সহজে হাতের কাছে পায় না। আমারে পাগল কু’ত্তা কামড়ে ছিল যে, ঐ গাধীরে পিএ বানিয়েছি। মেয়েটা কাজ সহজ না করে কঠিন করে বসে থাকে। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে নতুন কেবিনে শিফট হয়ে ছিলাম। তাই আমার পুরোনো জিনিস হারানো ভয় নেই। শোন পুরোনো রুমটা লক করেই রাখিস। যখন দরকার হবে তখনই যাবো এখানে। এখন চল আব্বু-আম্মু আসবে এয়ারপোর্টে যায়।”

দেড়ঘণ্টা পর…..

মিসেস ফেরদৌসী বাসার দরজার সামনে শ্বাশুড়ির পাশে শাড়ি পরিহিত শালীন নারী-কে দেখে চমকে গেলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কিন্তু খুশি হয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তখনি তিনি খেয়াল করলেন,মেয়ের গালের উপর থাকা একটি তিলের উপর। যে তিল দেখে তিনি পুরো মুখশ্রীর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। আকস্মিক তার বুকে কাঁপন ধরে যায়। তিনি কাঁপা হাতে মেয়ের বাহু চেপে ধরে বলেন,

“এই মেয়ে তু তু তুই আমার বাড়ির চৌকাঠে কি করছিস হুম? তোকে এখানে কে এনেছে? এই অপয়া, শ’য়’তান কালো ছায়া কোনখান। তুই আমার বাড়ির ভেতর কেমনে?”

কথার দায়ে জট করে ধাক্কা দেয় মেয়েটিকে। মিসেস ফেরদৌসীর কাজে খাদিজা বেগম সহ সবাই অবাক হয়ে গেলেন। আফরাজ এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। হাত মুঠোবদ্ধ করে তৎক্ষণাৎ নাজীবা-কে উঠিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে নেয়। মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“দেখুন কয়েক মাসের জন্য এ দেশে এসেছেন। শান্তিভাবে থেকে চলে যাইয়েন। কিন্তু প্লিজ এর মাঝে আমার বিবিজান-কে কোনো ক্ষতি করবেন না।”

‘বিবিজান’ শুনে মিসেস ফেরদৌসী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জনাব ইসমাইল ফাহিম বউকে আঁকড়ে ধরেন। মা-কে দেখে বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চাইল আফরাজ। ছেলের অসহায় চাহনি দেখে সহ্য হলো না তার। তিনি চোখের ইশারায় আত্মস্থ করেন যে, তিনি সামলে নিবেন বিষয়টা।
খাদিজা বেগম নাজীবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“হয়ত তোমার সাথে কোনো না কোনো সত্য জড়িয়ে আছে। যা দেখে আমার বউ-মা ওভাবে কটুকথা বলে ফেলেছে। তুই সেগুলো মনে নিস না। শ্বাশুড়ি কে মা ভেবেই আপন করে নিস। আর আমি জানি এই কাজ তুই সহজেই করতে পারবি।”

শ্বাশুড়ির আক্রমণে খারাপ-কষ্ট লাগলেও, পরক্ষণে দাদী শ্বাশুড়ির কথায় সেও বুঝতে পারল হয়ত কোনো কারণেই তিনি এরুপ আচরণ করে ছিলেন। খাদিজা বেগম বউমার কাছে চলে যান। আফরাজ চারপাশে কাউকে দাঁড়ানো না দেখে বিবিজান কে চেপে ধরে। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছাড়তে ইশারা করে। আফরাজ ছাড়ার বদলে উল্টো চুমু দিতে ইঙ্গিত করে, নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে আমন্ত্রণ জানায়। নাজীবা ব্যঙ্গ করে হেসে আফরাজ এর গালে চা’প’ড় মা’রে। বিরক্তের চটে গরম চোখে তাকিয়ে ইশারা করে বোঝায় ‘কি?’ নাজীবা কালো পোশাক পরিহিত গার্ড’স এর দিকে ইশারা করে। আফরাজ এর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা তালবাহানা করে চুমুটা নিতে দিচ্ছে না। গরম চোখে গার্ড’স এর দিকে তাকিয়ে বলে,

“কি রে ভাই? তোরা কি গদর্ভ নাকি? দেখতেছিস তোদের বস, তোদের ম্যামকে পটাচ্ছে। লজ্জা কেন দিচ্ছিস আমার বউটারে? এখন কি তোদের চোখ বন্ধ করতে আমন্ত্রণ জানাতে হবে?”

বলতে না বলতে নিজের পকেটের গা’র্নের উপর হাত রাখে আফরাজ। গার্ড’স সব পেছনের দিকে ফেরে যায়। নাজীবা হা করে তাকিয়ে রইল। কি হলো ব্যাপারটা? সেও নাছোড়বান্দা আফরাজ এর গলায় ব্যান্ডেজ দেখে সেই জায়গায় দাঁত বসাতে নেয়। কিন্তু পারল না। কারণ এবার নাজীবার মত করেই আফরাজ তার বিবিজান এর ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে চেপে ধরে। ‘আহহহ’ নাজীবা অস্পষ্ট চিৎকার করতে নিলে, আফরাজ তার মুখ চেপে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। আকবর দেখে শিস বাজিয়ে বলে,

“আজকালের জেনারেশনের লাজ-লজ্জা ক্ষয়ে গেছে। অলিতে-গলিতে চুমাচুমি,কামড়া-কামড়ি চলছে। কবে যে দেশের উন্নতি হবে কে জানে?”

বিবিজান-কে আগলে রেখে নিজ কার্য সাধন করতেই থাকে আফরাজ। বন্ধুর কথায় জট করে পকেটের গা’র্ন বের করে তার দিকে নিশানা করে ট্রিগার নাড়ল। বেচারা আকবর গা’র্ন দেখেই বোকার মত হেসে বলে,

“আ আরে বন্ধু কনটিনিউ, কনটিনিউ। চুমু খেয়ে রাগকে কমাও। এখন থেকে আমি সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরব, বউয়ের চুমু খাও আর রাগের চৌদ্দগোষ্ঠি-কে উড়িয়ে দাও। সুন্দর না?”

আফরাজ গার্নের হ্যান্ডেল বরাবর আঙ্গুল চাপে। আকবর ঢোক গিলে বলে,

“আরে আমার ও তো একগ্লাস চুমুর শরবত খেতে হতো। খেয়ে আসতেছি। ইউ দোস্ত কনটিনিউ।”

পালিয়ে যায় আকবর। অন্যথায় আফরাজ নাজীবা কে কামড়ে ধরে রেখে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে যায়। তন্মধ্যে নাজীবার মুখ চেপে রাখায় বেচারী ‘উম উম উম’ করতে থাকে। কোনো ফায়দা হয় না। নাজীবা-কে নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সাভেন্ট’স, গার্ড’স সব যার যার মত কাজে ধ্যান দেয়।

চলবে…….

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৫ (রহস্যের খোলাসা-০২)

“আফরাজ এই মেয়েটার সঙ্গে কালো ছায়া আছে। এই অপয়া মেয়ে-রে তালাক দিয়ে দেহ্। এর চেয়েও সুন্দরী মেয়ে আমি তোর সামনে এনে হাজির করবো। বাবা-রে তুই আমার একমাত্র নাড়ি-ছেঁড়া ধন। তোকে হারিয়ে পাগলই হয়ে যাবো আমি।”

‘তালাক’ শব্দটি যেন নাজীবার পুরো শরীরে মাত্রাতিরিক্ত আগুন ধরিয়ে দেয়। তার ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। শ্বাশুড়ির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিরবিরিয়ে বলে,’আফরাজ শ…শুধু আমার আর কারো নয়। আমি উনাকে ভীষণ ভালোবাসি।’
আপনমনে সে নিজের সাথে কথা বলতে লাগে। বিবিজান এর মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে তৎক্ষণাৎ নাজীবা-কে আগলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আম্মু যে শব্দটা আপনি মুখ থেকে বের করলেন। সে শব্দটা মন থেকেও মুছে নেন। কারণ মেয়েটা শুধু আমার বউ নয়, আমার শরীরে অর্ধেক অংশ বহনকারী নারী। যে শব্দটা উচ্চারণ করেছেন তা দিয়ে কিন্তু আপনি আমাদের বিবাহ বন্ধনকে অপমানিত করছেন আম্মু। আপনি নাহয় কথাগুলো তাকে বললেন। এর রেশ আমার শরীরেও বাঁধল। মাফ করবেন আম্মু আপনার কথা আমি রাখতে পারছি না। অন্যথায়, আপনি অসুস্থ দেখেই আপনার বউমা আপনার চিন্তায় আমাদের হানিমুন ট্যুর পিছিয়েছে। নাহলে এই মুহূর্তে আমরা এয়ারপোর্টে থাকতাম।”

চোখের জল মুছে নাজীবা স্বামীর বাহু চেপে ধরল। চুপ হয়ে যায় আফরাজ। তার কণ্ঠস্বর শান্ত শুনালেও হৃদয়ের তেজ স্পন্দন বলে দিচ্ছে, সে সইতে পারছে না তার বিবিজানের অপমান। আকবর আর কুসুমা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস ফেরদৌসী ছেলের শান্তবাণী শুনেও না শুনার ভান ধরে নিজের স্বামীকে বলেন,

“ছেলে নিজেকে বেশি লায়েক বানিয়ে ফেলেছে, অথচ সে যে এক নাম্বারের ঢেড়স সেটা সে বুঝতে চাইছে না। আরে আপনি হলেও একটু বোঝান না। এই মেয়েটা কালো ছায়া। এই বাড়িতে থাকলে পুরো বাড়ি কালো ছায়ায় ভরপুর করে দেবে।”

আফরাজ মায়ের কথায় নিজের নামে ‘ঢেড়স’ উপাধি শুনে বাকি সদস্যদের দিকে তাকায়। তারা সকলে আফরাজ এর চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত মুহূর্তেও হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। জনাব ইসমাইল বউয়ের কথায় বিরক্তে মুখ ভেটকিয়ে বলেন,

“তুমি একটু চুপ করলেই সব কালো ছায়া দূর হয়ে যাবে। নাহলে কালো ছায়া না জ্বীন-ভূত সবগুলো এসে হামলে পড়বে।”

স্বামীর কথায় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকান মিসেস ফেরদৌসী। জনাব ইসমাইল হকচক খেয়ে বলেন,

“আফরাজ তোমার মা আসলেই ঠিক বলছে,এ মেয়ে রূপবতী,গুণবতী। তোর জন্য পার্ফেক্ট। এর সাথে আবারো আমাদের সামনে বিয়ে করা উচিৎ। তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের স্বপ্নও পূর্ণ করতে হবে তো?”

মিসেস ফেরদৌসীর মুখ হা হয়ে যায়। তিনি ভাবতে লাগলেন, সে কখন এসব বললো। স্বামীর কথার ইতি টানতে চাইলে জনাব ইসমাইল বউকে একহাতে আগলে নেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
যেন তিনি মোটেও কথা বলতে না পারেন। বউ-কে ফাঁদে ফেলতে বলেন,

“বউমা তুমি তো মাশাআল্লাহ সুস্বাদু চা বানাতে পারো দেখছি। তোমার শ্বাশুড়ির মসলা চা কিন্তু অনেক পছন্দের। জানো? কখনো কখনো তোমার শ্বাশুড়ি কাজু বাদামের চায়ের জন্য ছটফট করে। মাঝরাত হলেও আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে কাজু বাদামের চায়ের আবদার করতো। এই নালায়েক যখন তোমার শ্বাশুড়ির পেটে ছিল, তখন কত যে কাজু বাদাম খেয়েছিল। ভাবছিলাম আমার ছেলেটা সেরা গুণে গুণান্বিত হবে। কিন্তু আম্মার থেকে কাহিনী শুনার পর বুঝছি কাজু বাদাম খেয়েও ঢেড়স পয়দা হলো একটা। কি আর করার? এই ঢেড়সটা-রে একটু দেখে রেখো।”

আকবর না পারতে ‘হাহা’ করে হেসে ফেলে। নাজীবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথায় নিজেকে হাসা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল। কিন্তু আকবর ভাইয়ের হাসি দেখে সেও তাল মিলিয়ে হেসে ফেলে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) আফরাজ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের বাবার দিকে চেয়ে বলে,

“হয়েছে আপনাদের? এবার আমি বউ কে নিয়ে রুমে যেতে পারি?”

জনাব ইসমাইল আগুন-কে আর গোলা করতে চাইলেন না। গলা ঝেড়ে সবাইকে যাওয়ার অনুমতি দেন। খাদিজা বেগম বউমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর কথায় মন না দিলেও তার বুকের ভেতর কেমন বিষাক্ত অনুভূতি হচ্ছে। বউমা-র অশ্রু মাখা দৃষ্টিতে তিনি যে, ঘায়েল নয় তেমনটা মোটেও নয়। বরঞ্চ তিনি নিজেও মেয়েটার চোখের অশ্রু সহ্য করতে পারছেন না। মুখে তিনি যতই সুন্দরী মেয়ে হাজির করার কথা বলুক না কেনো? নাজীবার মত গুণাবলী অন্য মেয়েদের মাঝে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। তিনি আর না ঘেঁটে চুপটি করে শুয়ে রইলেন। নাজীবা-কে ছাড়াই আফরাজ চলে গেল রুমে। সে স্পষ্ট খেয়াল করেছে স্বামীর মুখে রাগের ছাপ। হয়ত তার বাবা সাময়িক হাসিঠাট্টা করেছে। কিন্তু তার মায়ের বলা কথাগুলো সে ভাবনা থেকে সরিয়ে নেয়নি। স্বামীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে শ্বশুরের দিকে তাকায় নাজীবা। তিনি মৃদু হেসে পরিস্থিতি সামাল দিতে আফরাজ এর যাওয়ার দিকে ইশারা করেন। নাজীবাও সময় ব্যয় করল না। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দিকে গেল। মিসেস ফেরদৌসী নাজীবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। পাশে বসা স্বামী-কে ধরে আনমনে বলেন,

“মেয়েটা অবিকল তার মায়ের মতই রুপ,গুণ আর বুদ্ধি পেয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই মেহজাবিন আর তার মেয়ের মধ্যে।”

বউয়ের কথায় জনাব ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে ‘মানে’ বলেন। খাদিজা বেগমও ছেলের প্রশ্নের সুরে বউমার দিকে তাকান। দু’জনের এরূপ চোখের দৃষ্টি দেখে থতমত খেয়ে যান। আমতা আমতা করে বলেন,

“অপয়া মেয়ে কিসের গুণ হে? গুণ শুধু কুসুমার মধ্যেই আছে। ঐ মেয়েটা অযোগ্য মানে অযোগ্য।”

জনাব ইসমাইলও ব্যঙ্গ করার মত ভান ধরে বলেন,

“ঐ মেয়েটা যোগ্য মানে যোগ্য।”

স্বামীর সাথে দ্বিরুক্তি করতে নিলে জনাব ইসমাইল কাজের বাহানায় একপ্রকারে পালিয়ে যায়। খাদিজা বেগম ছেলের বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বউমা-র হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে।

“বউমা দেখো আমার ছেলের থেকে কথা লুকিয়ে রাখতে পারো। কিন্তু এই মায়ের থেকে কিছু লুকিয়ে রেখো না। বলো নাতবু-র সাথে ওমন কটু আচরণ কেনো করলে? নাকি তুমি এখনকার ট্রিপিক্যাল শ্বাশুড়িদের মত আচরণ করতে চাও?”

কথাটি শুনে ছলছল চোখে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায় মিসেস ফেরদৌসী। কান্নাময় সুরে বলেন,

“মা নাজীবা এমন একজনের মেয়ে যাকে দেখতেই তার মা-কে বলে ছিলাম। তার মেয়ে-কে আমি আমার ছেলের বউ করতে চাই। কিন্তু কখনো ভাবিনি ঐ ছোট একটা মেয়ের সঙ্গে বদ জ্বীনও চলাফেরা করতো।”

খাদিজা বেগম চমকে গেলেন। তিনি বলার জন্য তাগিদ দেন। মিসেস ফেরদৌসী মুখ খোলার পূর্বেই ‘আম্মু’ ডাক শুনে থমকানো দৃষ্টিতে সামনে তাকান। আফরাজ কে গম্ভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিললেন। নিবিড়ে দরজাটা লাগিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। খাদিজা বেগম চুপ করে রইলেন। আজ বহুদিন পর যদি মা-ছেলের অভিমানটা ভেঙ্গে যায় সেই আশায়। মিসেস ফেরদৌসী ছেলে-কে সন্নিকটে দেখে আবেগে কেঁদে ফেললেন। মা-কে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে আবারো আদুরীয় গলায় ‘আম্মু’ বলে ডাকল আফরাজ। মিসেস ফেরদৌসী জবাবে বলেন,

“হ্যা-রে বাবা আজ এতদিন পর যেয়ে তোর মায়ের বুকের শূন্যতা পূর্ণতায় ভরে গেল। এই বুড়ি মায়ের জন্য হলেও ছেড়ে যাস না কখনো। তোর সব কথা মানব আর কখনো কিছুটি বলব না।”

“আপনি আমার আম্মু আপনিই যদি শাসন না করেন তাহলে সঠিক পথ পাবো কেমনে? আম্মু আপনিও একটু বুঝেন। ঐ মেয়েটা-কে আপনি পছন্দ করেছেন সেটা আমি বুঝেছি। কেমনে? কারণ আপনার চোখে মেয়েটির প্রতি মমতাবোধ দেখতে পেয়েছি‌। এটাও কম কিসে? ঐ মেয়েটাই আপনার সুস্থতার জন্য আজ বিকালের ফ্লাইট ক্যান্সেল করেছে, এমনকি আপনার পছন্দনীয় খাবার নিজ হাতে তৈরি করেছে, আপনার কাছ থেকে সে মা-মা গন্ধ পাওয়ার লোভে আপনার অজ্ঞানরত অবস্থায় বার’কয়েক হাত-পা মালিশ করেছে। নিজের স্বামীকে সেবা করেই সে দ্রুত আপনার শিউরে এসে বসে ছিল। এমন মেয়েটিকে আপনি কি অর্থে অপয়া বলতে পারলেন? বলার পরও খেয়াল করে ছিলেন? সে আপনার কাছ থেকে সরেনি। আব্বু যেতে বলার পরই চলে গিয়ে ছিল।”

ছেলের কথায় মিসেস ফেরদৌসী ছেলের হাতের উপর হাত রেখে বলেন,

“বাবা-রে আমি ইচ্ছেকৃত এসব করেছি যাতে তোর জীবন রক্ষা পায়। তোর সে-সময়ের ক্ষতির কথা ভাবলেও আমার শরীর কেঁপে উঠে। আমার আর তোর বাবার একমাত্র সন্তান তুই।”

“আম্মু আমার উপর বিশ্বাস রাখো। আপনা-কে এখন যা বলব তা মন দিয়ে শুনিয়েন।”

আফরাজ নাজীবার অতীতের বলা প্রতিটা কথা তুলে ধরে। তারপর তীব্র বেদনার শ্বাস ফেলে বলে,

“আম্মু আমার কী আসলেই কিছু হয়ে ছিল? কেনো নাজীবা আমাকে নিয়ে এসব কথা বলল? আপনার কাছ থেকে অর্ধেক তথ্য পেয়ে গেলে ক্রিমিনাল কে ধরা কোনো বড় ব্যাপার না।”

ছেলের প্রতিটা কথা শুনে মিসেস ফেরদৌসী আফসোস বোধ করলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

“ঠিকাছে বাবা আমি মন থেকেই মানিয়ে নেবো। কিন্তু খেয়াল রাখিস মেয়েটা হিরের টুকরো। হারালে তুই হেরে যাবি। তোর করা প্রশ্নের সত্যতা আছে। বলতে গেলে স্বাভাবিক ভাবে এটাই সত্যি যে, নাজীবার বলা কথা মিথ্যে নয়। বরং তোর জীবনে মেয়েটা ছিল বলেই তুই চঞ্চল হতে শিখেছিলি। জানিস তোর তখন নয় বছর বয়স। তুই খেলার মাঠে একলা খেলতি। কারণ তোর স্বাস্থ্য একটু বেশিই ভালো ছিল। এখনের মত ফিটফাট ছিলি না। তাই খেলার মাঠে ছেলেরা তোকে মোটু বলে তাড়িত করতো। তুই সেই বেদনায় পুকুরপাড়ে গিয়ে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরতি। বাসায় আমি আর তোর বাবা চেষ্টা করতাম যেন তুই সবসময় হাসিখুশি থাকিস। কিন্তু সাময়িক হাসি তুই হাসলেও বাহিরের জগতে গেলে তোর চোখ-মুখে বেদনা স্পষ্ট বুঝতে পারতাম আমরা। কিন্তু একদিন তোকে দেখে আমরা দু’জনেই চমকে গেলাম। কেনো জানিস? কারণ প্রথমবার তুই বাসায় এসেছিল হাঁপাতে হাঁপাতে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)যেন তুই কারো সাথে দারুন ফুটবল খেলে ক্লান্ত হয়েছিস। তোর শার্টের অবস্থাও কাহিল ছিল। আর তোর মুখের সেই উপচে পড়া হাসি দেখে আমাদের মনে শান্তি বইছিল। এরপর থেকে তোকে হাসিখুশি থাকতে দেখে তোর বাবা বলেই ফেলছিলো। যে তোর চেহারায় হাসি ফুটানোর দায়িত্ব নিয়ে ছিল। তাকেই তোর বাবা তোর বউ বানিয়ে নিয়ে আসবেন। সেই কথার সূত্র ধরে তোকে কথার জালে ফেললাম। তুইও বোকার মত নাজীবার সব কথা বলতি। এই এমন,ওমন আমি শুনে মাঝে মাঝে হিংসাও করতাম। কারণ আমার ছেলে তো কখনো এত প্রশংসা আমার করল না। অথচ ছোট ঐ মেয়েটা কেমনে আমার ছেলে-কে পাগল করে দিল। তার কয়েকদিন পর খেয়াল করলাম তুই আবারো গম্ভীরমুখী হয়ে গেলি। তাও তুই ঐ মেয়ের কাছে যাওয়া থামাস নাই। দু’তিন ধরে কেন তোর মন খারাপ থাকছে? চিন্তে করে জানার জন্যে তোর পিছু নিলাম। তোর পিছে গিয়ে দেখলাম তুই একজনের বাসায় ঢুকছিস। আমিও সময় নষ্ট না করে ঢুকে পড়ি। তখন এক মহিলাকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম। এত সুন্দর মহিলাটি। আর ঐ মহিলাটি কে জানিস? তোর শ্বাশুড়ি মেহজাবিন সিরাত। তোর শ্বশুর কে তখনও জানতাম না। তোর শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে খবরাখবর নিলেন। তোর আসা-যাওয়ায় তিনি মোটেও মন্দ নজরে দেখতেন না। তাই তো আমাকে দেখা মাত্র আপ্যয়ন করায় ব্যস্ত হয়ে গিয়ে ছিলেন। তখন তোকে খেয়াল করলাম। তুই অসুস্থ নাজীবার কাছে বসে তার কপালে জলপট্টি দিচ্ছিস। নাজীবার মায়াময় চেহারার দিকে তাকিয়ে তুই মৃদু কাঁদছিলি। তারপর থেকে তোর সাথে আমিও নাজীবার বাসায় যেতাম। হঠাৎ এমন এক সত্যের মুখোমুখি হলাম যা আমার শরীরকেও কাঁপিয়ে দিয়ে ছিল।”

মায়ের শেষের কথায় আফরাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

“কি এমন সত্য আম্মু? যার জন্য আমার স্মৃতি মুছে গেল, নাজীবার সঙ্গে কাটানো খুনসুটি ভুলে গেলাম।”

“তোর রুমের মধ্যে বালিশ এর নিচে কিছু কালো পাথর রাখা ছিল। কে রেখেছিল আমরা কেউ জানতাম না? ঐ পাথরগুলো হুজুর কে দিয়ে জানার চেষ্টা করলাম যে, পাথর কিসের আর কেনো ব্যবহার করা হয়? তখন হুজুর জানায়, তুই এমন কারো সঙ্গে মিশছিলি যে তোর জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই কথা শুনে ভয়ে আমি তোর বাবা কে খোঁজ নিতে বললাম। কিন্তু কোনো সন্ধান পায়নি। তোকে নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। ছলেবলে চেষ্টা করতাম তুই যেন নাজীবার সঙ্গে না মিশছিস। তবে তোকে থামানো যেতো না। এই ভাবে হঠাৎ তোর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনলাম। তোর বাবা-রে অজানা এক লোক কল দিয়ে বলে ছিল তোর কথা। তোর বাবা আর আমি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছায়। তোকে সেই লোকটাই বোধহয় হাসপাতালে এনে ছিল। যে তোর খবর দিয়ে ছিল। কিন্তু তাকে আমরা কোথাও পাইনি।সেই লোক তোর সাথে হওয়া ঘটনা আমাদের-কে কলেই বলে ছিল। নাজীবার সঙ্গে থাকা বদ জ্বীনে তোর উপর আক্রমণ করে ছিল। কোনো সাধারণ আক্রমণও নয়, বরঞ্চ তোকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ছিল। যার কারণে তুই মাথায় গভীর আঘাত পাস। ঐ আঘাতে তোর চারমাসের স্মৃতি হারিয়ে যায়। নাজীবার স্মৃতি তুই ভুলে যাওয়ায় আমরা খুশি হয়ে ছিলাম। কারণ মেয়েটা তোর জীবনে ঐ দূঘর্টনা ঘটিয়ে ছিল। এমনটাই মনে হতো আমাদের। ঘৃণা-ক্ষোভ জম্মেছিল তার প্রতি। তোর বাবাও চিন্তা করল এই অভিশপ্ত শহরে আর থাকবেন না। দেশের বাহিরে ব্যবসা করার সুবিধার্থে তোর দাদি-সহ আমরা বিদেশে চলে যায়। তুই তখন স্বাভাবিক আমাদের সাথে মিশে থাকতি। অতঃপর তোর মনে নাজীবার সাথে হওয়া ঘটনাও আর জানা হলো না। আমরাও চাইনি তার কথা তোর মনে পড়ুক। একটা কথা আছে না, ভালোবাসা সত্য হলে মুখোমুখি হতে হবে। তোদের সাথেও তেমনটা হলো। তোর দাদীর কাছ থেকে শুনার পর মনে হলো, হয়ত আল্লাহই চেয়েছেন বলে, তোরা এতবছর পর একে অপরের অটুট বন্ধনে বেঁধে গেলি। যেখানে জ্বীনের প্রবেশ করাও কঠিনতম। তারপর তোর দাদী বিদেশের কালচারে অনভ্যস্ত হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। দাদীর সঙ্গে আসতে তুইও কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলি। কিন্তু তোর বাবা তখন মানেনি। তাই তোর দাদী একলা দেশে এসে তোর বাবার ব‌্যবসা আর জমিজমার দেখভাল করতেন। অবশ্য তোর বাবাও সব ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিল। তাই তোর দাদীও নিশ্চিন্তে থেকে ছিলেন। তোর দাদীর সঙ্গে আকবর ও ছিল। কিন্তু তুই যখন বিশ বছরে পা দিলি, তখন তুই অদ্ভুত ভাবে দেশের জন্য টান অনুভব করতি। বার বার আমাকে দেশে যাওয়ার কথা বলতি। যা আমি বিপদ আশংকা ভেবে অশুনা করতাম। কে জানতো ঐ ভাবনার রেশ ধরায় ছেলে আমার অভিমান করে চুরিচুপে দেশে চলে আসবে। যাই হোক আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন।”

আফরাজ তার স্মৃতি সম্বন্ধে জানতে পেরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। তৎক্ষণাৎ মায়ের গালে চুমু দিয়ে বিবিজান এর কাছে ছুটে যায়।

চলবে…….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-১১+১৩

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১২

“বউ এই কি হয়ে গেল? ঘরের মধ্যে মায়ের খু’ন হয়ে গেল। বাবাকেও আহত করে দিয়েছে। কে ঢুকে ছিল কিছুই জানতে পারছি না। নাদিম নাজীবা তো দাদী-দাদী ভক্ত ছিল। অসময়ে মায়ের মৃত্যু মেনে নিতেও পারছি না।”

মিসেস মেহজাবিন স্বামীর কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনার গলায় বলেন,

“দেখুন এসব ভেবে লাভ নেই। আমরা বাবার কথাও অমান্য করতে পারছি না। চেয়ে ছিলাম মায়ের পোস্টমর্টেম হোক। কিন্তু বাবা যে ম’রাকান্না জড়িয়ে দিয়েছেন। এ দেখে আমারই কষ্ট লাগছে। তিনি বার বার কান্নার সুরে তাড়াতাড়ি উনার স্ত্রী কে কবর দেওয়ার কথা বলছেন। নাহলে যে মায়ের রুহ্ শান্তি পাবে না। এখন যদি লা’শের পোস্টমর্টেম করা হয়, তবে লা’শকে কাটবে অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে লা’শের সাথে বেধরক আচরণ করতে পারে। এর জন্য ভয়ও হয়। তাই বলছি বাদ দিন। মায়ের রুহের জন্য আমরা কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করি।”

জনাব মোবারক আলী কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই কাজের ছেলের উচ্চস্বরে চিৎকার শুনতে পান তারা। এতক্ষণ যাবত বাড়ির উঠোনে বসে আলাপচারিতায় বসে ছিলেন তারা। চিৎকার শুনে গিয়ে দেখলেন। নাজীবার কোলের উপর দাহাব এহসান শরীর এলিয়ে দিয়ে আছেন। দৃশ্যটি বি’শ্রী বটে। দাদার শরীরের নিচে ছোট নাজীবার শরীরটা রেহাই পাওয়ার আশায় ছটফট করছে। অন্যথায় দাহাব এহসান নিজেকে অজ্ঞান এর ভান ধরে নাতনীর শরীরে মৃদু চাপ দিচ্ছেন। কাজের ছেলে হঠাৎ কোথার থেকে এসে দেখে ফেলায়, অজ্ঞানের নাটক করে শুয়ে রইলেন সেভাবে। নাজীবা তো ঘুমিয়ে ছিল আচমকা এমন কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি‌। সেও সমান তালে জোর গলায় বলছে,
‘দাদু উঠুন প্লিজ কি হয়েছে আপনার? আমি ব্যথা পাচ্ছি দাদু উঠুন না প্লিজ!”
ছোট মেয়ের কণ্ঠ শুনেও তিনি নির্জীব ভাবে পড়ে রইলেন নাজীবার উপরে।
জনাব মোবারক আলী মেয়েকে কষ্টে দেখে আঁতকে উঠলেন। তৎক্ষণাৎ বাবাকে আস্তে ধীরে উঠিয়ে সোফার উপর শুয়ে দিলেন। মিসেস মেহজাবিন মেয়েকে উঠিয়ে হাত-পা শরীরটা মচমচে করতে চাপ দিতে লাগলেন। আড়চোখে বাবার দিকে তাকালেন। আরেকবার মেয়ের অসহায় ব্যথাতুর চেহারার দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি খটকা অনুভব করেন। নাজীবা কে তিনি খাওয়ে ঘুম পাড়িয়ে গিয়ে ছিলেন। তবে এখানে বাবা কেন এসে ছিলেন? ছেলের বউয়ের রুমে না বলে প্রবেশ করাটা বেমানান লাগল তার, তিনি মেয়েকে বুকে চেপে ধরে কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলেন,

“বাবার মুখে পানি ছিটিয়ে দিন তো।”

মোবারক আলী মগভর্তি পানি নিয়ে বাবার উপর ছিটিয়ে দিলেন। জ্ঞান ফেরার ভান করে নিভু নিভু চোখের পাপড়ি মেলে ধরলেন সামনে। দু’কঠোর ব্যক্তির মুখোভঙ্গি দেখে মনে মনে কিছুটা ভয়ও পেলেন তিনি। যদি তারা তার উদ্দেশ্য ধরতে পারেন,তবে তার ফাঁসি নিশ্চিত করে ছাড়বেন তারা। এই ভেবে সে পুনরায় ম’রা’কান্না জুড়ে বলে,

“ও আমার নাতনী গো , তোর দাদী চইলা গেছে রে। এহন যে তোদের আমি ছাড়া আর কেউই নেই। আমাকে কেন একলা করে গেলি ফাতেমা? তোরে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচমু এই পৃথিবীতে। আমার আর কেউ নেই। এই আলী তোর বোনডারে খবর দেয় রে, জলদি আইতে কও । কবর দেওয়ানের আগে একবার মায়ের চেহারাডা দেখে নিক।”

বাবার অপার্থিব কথা শুনে, ভাবলেন হয়ত শোক মেটাতে নাজীবাকে আগলে ধরে ছিলেন। এর মাঝেই জ্ঞান হারায়। মোবারক আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন বের করেন। ‘হিয়া বোন’ নামের নম্বরে ফোন দেন। ফোন রিসিভ হতেই তিনি বোনকে মায়ের ঘটনা বলেন। এতে তার বোনও কাঁদতে লাগলেন। তৎক্ষণাৎ স্বামী-সন্তান নিয়ে আসছেন বলেন।
বেডরুমে মেয়ের শিউরে বসে চিন্তিত মনে ভেবেই যাচ্ছেন মেহজাবিন সিরাত। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে খেয়াল করলেন। মেয়ের গলায় লাল হওয়া জায়গাটি। এমন চিহ্ন এক অবিবাহিত মেয়ের গলায় কেমনে এলো? ঘাবড়ে রুমের বাহিরে যান। মোবারক আলী কে কাজে ব্যস্ত দেখে কিছুটি বলার সাহস পেলেন না। চুপটি করে রুমে এসে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লেন। মায়ের আকস্মিক মৃত্যু তিনিও মানতে পারছেন না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ভাবতে লাগলেন ভোরের ঘটনা।

সাতসকালে উঠা মেহজাবিন সিরাত এর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আজ উঠে খেয়াল করলেন প্রধান গেটের তালা ভাঙা আর গেটের ছিটকিনি খোলা। এ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ দারোয়ান ডেকে চারপাশ নজরদারি চালাতে বললেন। ঘরের প্রতি রুম চেক দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ির রুমে এসে দরজা নক করতেই দরজা আপনাআপনি খুলে যায়। তিনি মৃদু গলায় ডাক দিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠলেন। মোবারক আলীর ঘুম ছুটে গেল। তিনি তড়িঘড়ি দৌড়ে বউয়ের কাছে গেলেন। বউকে বাবা-মায়ের রুমের বাহিরে দেখতে পেয়ে চমকে গেলেন। তিনি ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করতে নিলে বাবা-মায়ের আহত অবস্থা দেখে নিজেই বোবা হয়ে গেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বাবার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেন, মায়ের শরীরে হাত ছুঁয়ে দিয়েই ধপ করে বসে পড়লেন। মেহজাবিন সিরাত স্বামীর অবাক চাহনি দেখে শ্বাশুড়ির শরীর হালকা ছুঁয়ে দিয়ে অনুভব করলেন শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। তিনি আতংকে শিটিয়ে পড়লেন। এদিকে ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে দাহাব এহসান নিজেও কান্নার অভিনয় চালু করে দিলেন। সব তো ঠিকই চলছিল। কিন্তু কেমনে মোবারক আলী আমার সত্য জানতে পেরে আমারই বানানো কালো জাদুর মন্ত্রের তাবিজ আমারই বুকে গেঁথে খন্ডবিখন্ড করে দিল। ইশ! আমার সৎ ছেলেটা যদি আমার মন্ত্র না ভাঙত। তবে আমি কবেই গুরু তান্ত্রিক হয়ে যেতাম। তখন বছরের পর বছর নাজীবার শরীর নিয়ে মেতে থাকতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা নেই নাজীবার কারণেই তার পরিবারকে আমার পেটের ভক্তভোগী হতে হলো ।
অতীতের কথা ভেবে হাসতে থাকে দাহাব এহসান। সে নিজের মত বলতে লাগে।

“তা কি হলো? মেয়ে তান্ত্রিক বিদ্যায় কম যোগ্যতা পেলেও বিজ্ঞান বিষয়ক বিদ্যায় সাফল্যতা পাওয়েছি। বিজ্ঞানের অপব্যবহার করেই কেমিক্যালি নিজের জোয়ান রুপ ধারণ করে রেখেছি। নাজীবা তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য এই যুবক রুপই আমার দরকার ছিল। এখন শুধু তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা।”

হঠাৎ মেয়ের ডাক শুনে দাহাব এহসান গলার স্বর বাড়িয়ে মেয়েকে গোপন রুমে আসতে বলেন। মিসেস হিয়া বাবার গোপন রুমে চিনেন। তিনি কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেঁটে রুমে আসলেন। কিছু র’ক্ত এর নতুন প্যাকেট হাতে করে এনেছেন। বাবার মিনি ফ্রিজে সেগুলো রেখে চলতে যেতে নিলে দাহাব এহসান গম্ভীর গলায় মেয়েকে ডেকে তুললেন।
মিসেস হিয়া জানেন এখন তার বাবা খোটা দিবেন। বিধেয় নিজেকে ধাতস্থ করে বাবার সামনে যেয়ে দাঁড়ান।

“মা বাবার জন্য মেয়েটারে খোঁজতে পেরেছো কি?”

নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন মিসেস হিয়া। দাহাব এহসান নীরবতা পছন্দ করলেন না হুংকার মে’রে দাঁড়িয়ে যান। রাগের বশে মেয়ের কাটা পায়ে জোরে লা’থি দেন। ব্যথায় চিৎকার করে বসে যান তিনি। কাঁটা পায়ে আঘাত লাগায় র’ক্ত ঝরতে লাগল। তিনি বাবার দিকে তাকিয়ে কান্নাময় গলায় শুধান।

“বাবা আপনি এমন কেন করলেন? আমার পা’টা একবারও খেয়াল করেছেন? জ্বীনটা আমার পায়ের অর্ধ মাংস নিয়ে গেল। প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নকল জিনিস লাগিয়েছি। সেই জায়গায় এত বড় আঘাত কেনো করলেন বাবা? আমার তো দোষ ছিল না। আমি সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি মেয়েটিকে খোঁজার। জ্বীন দিয়েও কাজ হলো না। তবে আমি আমার এক খবর পাচারকারী থেকে দারুন খবর জানতে পেরেছিলাম। তাই সেই খবর সত্য কিনা তার যাচাই করতে তাবাসসুম কে পাঠালাম।”

মেয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকান তিনি। চোখের ইশারায় কোন খবর জানতে চাইলেন। মিসেস হিয়া নিজেকে সামলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ান। পায়ের মধ্যে উড়না পেঁচিয়ে নিয়েছেন। এতে র’ক্ত পড়া তাৎক্ষণিক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি মৃদু গলায় বলেন,

“আফরাজ এর কোম্পানিতে বোধ হয় নাজীবার খোঁজ পাওয়া যাবে। কারণ নাজীবার নিখোঁজ এর পর মেন্টাল হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছিলাম। এক বুড়ি মহিলা তাকে রক্ষা করে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে ছিল। তার পর কি হয়ে ছিল এই ব্যাপারে আমার মোটেও ধারণা নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, মেয়েটা নাজীবাই হবে।”

শুনেই দাহাব এহসান উম্মাদের মত দাঁড়িয়ে যান। নিজের ভাড়াটে লোক নিয়ে আফরাজ এর অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। মিসেস হিয়া দেখে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করে গা’লি দিলেন। কোনোমতে কুড়িয়ে হেঁটে গোপন রুমের বাহিরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। নিজ রুমে এসে গলা ফাটিয়ে কাজের মেয়ে-কে ডাক দেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) মেয়ে এসে ম্যামের নাজুক অবস্থা দেখে ডক্টরকে কল দিয়ে থাকেন।

_____

তাবাসসুম এর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল নাজীবা আর কুসুমা। কুসুমা ভাবী ভয়ে তড়তড় করে কাঁপছে। কারণ তিনি কখনো ঝগড়া বিবাদ কি জিনিস চোখে অব্দি দেখেননি। সেখানে আজ নাজীবা ঝগড়া বাঁধানোর জন্য নিজ পায়ে হেঁটে এসেছে। ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল সে। নাজীবা রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল। হাত মুঠো করে সশব্দে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার এমন কান্ডে কিছুটা হকচক খেয়ে যায় তাবাসসুম। সে ফাইল চেকিং শেষে টিকেট বুক করার প্রসেসিং করছিল। আকস্মিক কারো আগমনে সে বিব্রতবোধ করল। সামনে তাকাতেই হা হয়ে যায়। এ কোন সুন্দরী এলো? তার চেয়েও সুন্দর কাউকে দেখে তাবাসসুম দাঁতে দাঁত চেপে সম্মানের কণ্ঠে বলে,

“জ্বি আপনি কে ম্যাম আর আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি বলুন?”

নাজীবা ভাব নিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। তাবাসসুম এর মেকআপ ভর্তি গালের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের কণ্ঠে বলে,

“আপনার হাঁটু খালি রাইট? আইমিন আপনি তো হাঁটুর উপরে কাপড় পরে থাকুন?”

“ইয়েস ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম?”

“নো ইজ এ্যা গুড ফর মি।”

কথাটি বলে নির্দ্বিধায় গিয়ে তাবাসসুম এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নাজীবা পেছন মোড়ে তাবাসসুম এর কোলের উপর বসে যায়। এমন দৃশ্যপটে কুসুমা দু’হাতে গাল চেপে ধরে। নাজীবা আয়েশে তার শাড়ির সসগুলো তাবাসসুম এর নগ্ন হাঁটু তে ঘেঁষে মাখিয়ে দেয়। চট করে দাঁড়িয়ে কুসুমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এ দেখে তাবাসসুম ‘এ্যাআআআ’ চিৎকার করে উঠে। তার হাঁটুতে সস লেগে বি’শ্রী অবস্থা হয়ে গিয়েছে। ক্ষোভ নিয়ে সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,

“ম্যাম আপনি আমার সাথে এমন কেন করলেন? আপনার কারণে এখন বাসায় চলে যেতে হবে। এই অবস্থায় অফিসও করতে পারব না।”

নাজীবা বাঁকা হেসে বলে,

“আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চেয়েছিলে না শাকচুন্নী কোথাকার! অন্যের জামাইয়ের দিকে কুনজর দিস শা’লী বেশরমের বস্তা। তোকে তো জানে মে’রে দিতে মন চাইছে। কিন্তু জামাই আমার আবার শোক সইতে পারবে না ভেবে ছাড় দিচ্ছি। পরের বার যদি আমার শাড়িতে সস লাগানোর চিন্তা করিস। তবে তখন আর তোর নগ্ন হাঁটুতে নয়, তোর এই আটাময়দা মাখা মুখেই মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ভস্ম করে দেব। চিনে রাখ এই মুখের মেয়ে-কে। মিসেস নাজীবা মুসাররাত ওরফে আফরাজ ফাহিম এর ওয়াইফ।”

তাবাসসুম শুনে আর কেবিনের মধ্যে অন্যান্য এমপ্লয়র্স এর আগমনে বিরক্তসূচক মাথা নুয়ে চটজলদি বেরিয়ে চলে যায়। নাজীবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কন্ট্রোলার এর দিকে তাকায়। সে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ নাজীবার সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইল। নাজীবা নম্র গলায় শুধায়।

“দেখুন ক্ষমা চেয়ে লজ্জা দিবেন না। আপনি আমার বাবার বয়সী তাই বলে অচেনা কোনো মেয়ের হাত স্পর্শ করার স্পর্ধা করবেন না। যতই বিরক্ত হোন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখুন। এবার যান সবাই।”

“এভরিওয়ান ওয়েট এ্যা মিনিট! এখনো কিছু কথা বাকি আছে। সবাই হল রুমে আসুন।”

আকবর কেবিনের দরজা খোলে বলল। কুসুমা নাজীবার প্রতিবাদী রুপে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। দেবরের কথায় নাজীবা হেসে কুসুমার সাথে হল রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
হল রুমে এসে নাজীবা কৌতুহলী দৃষ্টিতে আশপাশ পরখ করছে। পুরো হল রুম অন্ধকারে আচ্ছন্ন। বিধেয় তার নজরে আসছে না কিছু। আচমকা হাতে টান পড়ায় মৃদু চিৎকার করে উঠে। পরক্ষণে স্পর্শ-কারী মানবকে অনুভব করতে পেরে মুচকি হাসল। আফরাজ সন্তপর্ণে নাজীবার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলে,

“বিবিজান রুমের ডান পাশে চেঞ্জিং রুম আছে। সেখানে গিয়ে আমার রেডি করা শাড়িটা পড়ে আসো কুইক। আই ক্যান্ট ওয়েট টু সি ইউ বিবিজান।”

স্বামীর আবদার সূচক কথা শুনে নাজীবা মুচকি হেসে চেঞ্জিং রুমের দিকে গেলো। কুসুমা অন্ধকারে এদিক ওদিক দেওয়াল হাতড়ে কিছু ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কেননা সে একটু হলেও আফরাজ এর কণ্ঠ শুনতে পেয়েছে। তাহলে নিশ্চয় নাজীবার সঙ্গে হবে সে। তাদের স্পেস দিয়ে নীরবে সরে যায় কুসুমা। আকবর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চট করে কুসুমা কে আকড়ে ধরে। দেওয়ালের কোণায় ঘেঁষে দাঁড় করায় বউকে সে। কুসুমা কাঁচুমাচু করে নিজেকে সরানোর চেষ্টা করছে। কারণ কিছুক্ষণ পর বাতি জ্বালানো হলে তারা বেকায়দায় পড়বে। বউয়ের মোচড়ানো দেখে আকবর বিরক্তকর গলায় বলে,

“কি বউ এভাবে মোচড়াচ্ছো কেন? একটা চুমু খেতে চাইছি খেতে দাও না প্লিজ! লাইট অন করে দিলে মিষ্টি আর পাবো না। তাই বলে দিলাম, যদি এই মিষ্টি খেতে না পারি। তাহলে আজই সুগার মার্কা মিষ্টি খেয়ে ডায়বেটিস রোগী হয়ে যাবো।”

জামাই এর আবদার রাখতে কুসুমা তার কথামত কাজ করে।

কিছুক্ষণ পর….
একটি লাইট জ্বালানো হলো তার আলো পড়ে নাজীবার উপর। কালো-সাদা জর্জেট শাড়ীতে নাজীবাকে পরিপূর্ণ পরী মনে হচ্ছে। মুখেও হালকা সাজ সেজেছে , তার উপর ডিজাইনিং মাস্ক পরিহিত রুপ। সুশ্রী সৌন্দর্যে রাঙা তার নারী হেঁটে আসছে তার দিকে। আফরাজও নিজেকে রেডি করে ফেলেছিল। তার পরণেও সাদা-কালো সুটসেট। নাজীবার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আফরাজ। লাজুক হেসে স্বামীর হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। সে জানে না এই আয়োজন কিসের জন্য? শুধু জানে তার স্বামী হয়ত কোনো কারণে ভীষণ খুশি। নিশ্চুপে দেখতে লাগল নাজীবা। স্বামীর হাত ধরে স্টেজের উপর উঠে পড়ে। আফরাজ টেবিলে রাখা ফুলের বুকি নাজীবার হাতে দেয়। বুকি নিয়ে সে আফরাজ এর বাহু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। সে কখনো এত মানুষের সামনে এসে দাঁড়ায়নি। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে। তার শরীরও মৃদু কাঁপছে। একসময় এত মানুষের সামনেই সে লাঞ্ছিত হয়ে ছিল। তার চেয়ে বড় কথা ‘পাগলী’ নামক তর্কমা নিয়ে বদ্ধ রুমে গলাফা’টা কান্না করে ছিল। বিবিজান কে ভয় পেতে দেখে ভরসার সহিতে আগলে নেয় আফরাজ। তাকে জড়িয়ে ধরে বিবিজান এর বাঁ-হাতের অনামিকা আঙ্গুলে ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দেয়। নাজীবার ভয় কমলেও হঠাৎ তার নজর পড়লো জানালার বাহিরে গেটের দিকে। সাইকোপ্যাথ এম্বুলেন্স ভ্যান দেখে তার চোখজোড়া বড় হয়ে যায়। স্তদ্ধ দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আপনি এভাবে বেইমানি করতে পারলেন?”

চলবে……

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩

“বিবিজান দরজা খুলো। যদি তুমি দরজা না খুলছো, তবে আজ আমার কাছ থেকে তোমার রেহাই নেই। আবারো বলছি দরজা খুলবে তুমি? নাহলে এখনি দরজা ভাঙব আমি।”

না, নাজীবার রুম থেকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ এলো না। দাঁতে দাঁত চেপে আফরাজ তৎক্ষণাৎ তার কুসুমা ভাবীকে কল দিয়ে নাজীবার রুমের বাহিরে আসতে বলে। আফরাজ ভাইয়ের কথায় ঢোক গিলে কুসুমা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আকবর যেতে চেয়েও গেল না। সে জানে তার বন্ধুর রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। বউয়ের স্পর্শে ঠিকই গলে যাবে। এ ভেবে নিশ্চিন্তে তাবাসসুম কে নক দিয়ে টিকেট বুকিং এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
নাজীবার রুমের থেকে কিছুটা দূরে আফরাজ কে রাগে পায়চারী করতে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল কুসুমা। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে এগিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী-কে দেখে আফরাজ অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে বলে,

“ভাবী নাজীবাকে দরজা খুলতে বলুন। আমি নেই এটাও জানাবেন।”

কুসুমা মাথা নেড়ে তীব্র শ্বাস ফেলে নাজীবার রুমের দরজায় মৃদু বা’রি দেয়। নাজীবা ভয়ে বিছানার উপর বসে আছে। সে ভাবতেও পারেনি তার দ্বারা এত বড় ভুল হয়ে যাবে। সে যাকে মন দিয়ে চেয়ে ছিল, সেই যে তার ক্ষতির কারণ হবে কে জানত? নাজীবার কানে কুসুমার দরজা নকের শব্দ পৌঁছাচ্ছে না। বরং সে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তবুও দরজা খুলল না। কুসুমা অসহায় দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকায়। সে নিজের রাগ সামলাতে না পেরে জোরেসরে দেওয়ালের মধ্যে আ’ঘা’ত করে চলে যায়। কুসুমা মৃদু গলায় দরজার কাছে ঘেঁষে বলে,

“ভাবী সুস্থ লাগলে আমাকে নক দিয়েন। আমি খাবারটা নিয়ে আসব। আপনি বিকাল থেকে না খেয়ে রুমে বসেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যাবত রুমের ভেতর আপনি। দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। প্লিজ আমাকে নক দিয়েন।”

নাজীবা কান্নার কারণে নীরবে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মন-মস্তিষ্ক আজ যেন ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। কোনো অনুভূতি কাজ করছে না তার মনে। কুসুমাও আর না ঘেঁটে আকবরের কাছে চলে যায়।

অফিসের সময়ের ঘটনা……
নাজীবার চোখ এম্বুলেন্স এর উপর পড়তেই সে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। তার শরীরে নিয়মিত ড্রা’গে’র ফলশ্রুতিতে পুনরায় উম্মাদের মত হয়ে উঠল। আফরাজ এর গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে অফিসের এমপ্লয়র্স অবাক হয়ে যায়। আফরাজ শক্ত করে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার গলার ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে। নাজীবার সূচালো দাঁত যেন আফরাজ এর গলায় গেঁথে যাচ্ছে। টপ টপ গলা বেয়ে র’ক্ত ঝরে পড়তে লাগে। এতেও হুঁশ নেই নাজীবার। সে তার মত জোরেসরে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে আফরাজ এর গলা। যার দরুণ সে আকবরকে ইশারা করে। আকবর ইশারা বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ এমপ্লয়র্স কে হলরুম থেকে বের করে যার যার কাজে যেতে বলে। তারাও ভাবল স্যার আর তার ওয়াইফ রোমাঞ্চকর সময় কাটাবে এ কারণে যাওয়ার আদেশ করেছে। অনেকে তো বলেই ফেলল, হ্যা স্যারও বউ পাগলা হয়ে গেছেন বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে এমপ্লয়র্স নিজেদের মত ভাবাভাবি করে কাজে বসে পড়ে। অন্যথায়, আফরাজ এর কাছ থেকে নাজীবাকে সরানোর চেষ্টা করে কুসুমা। কিন্তু লাভ হলো না। অতঃপর আফরাজ পকেট থেকে একটি মেডিসিনাল ইন’জে’ক’শন বের করে বিবিজান কাঁধে বসিয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আস্তে ধীরে হুঁশ ফিরতে লাগল নাজীবার। তার শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হতে লাগল। উম্মাদনা থেকে পুনরায় স্বাভাবিক জ্ঞানে ফেরল। সে খেয়াল করে আফরাজ তার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এমন দৃষ্টির কারণ বুঝল না। সামনে তাকিয়ে দেখল কেউই নেই‌। কিন্তু জানালার বাহিরে তখনও এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগের চোটে বলে ফেলে।

“ছিঃ আপনি এত খারাপ? আমাকে এতটা অপছন্দ করেন যে ,আজকের সুন্দর মুহূর্তে আমার খুশির সময়-কে খু’ন করতে আপনার হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট লাগল না? এতটা ঘৃণা করেন যে, আমাকে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য বাহিরে পাগলদের এম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। বাহ্! মিস্টার আফরাজ আপনাকে ভালোবেসে আমি পাগলামী করেই গিয়েছি। আর আপনি তার বিন্দু পরিমাণও কদর করলেন না। জানেন? বিয়ের দ্বিতীয় দিনে‌ আপনার রুমে হিসাবের খাতা পেয়ে ছিলাম। সেখানে সব কন্টাক্ট নাম্বার্স লেখা ছিল। বিশ্বাস করুন, যখন সেই লিস্টে পাগল হাসপাতালের কন্টাক্ট নাম্বার লেখা ছিল। এক-মুহুর্ত এর জন্যে মন চাচ্ছিল আপনাকে খু’ন করে পালিয়ে যায়। তবুও নিজেকে বুঝ দিয়ে ছিলাম, আপনার মনে ভালোবাসা জিনিসটা বসাতে পারলে আজীবন আপনার মাঝেই আবদ্ধ থাকব। এ যেনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নিয়ে ছিলাম মনের মাঝে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, না আপনি মন থেকে হৃদয়হীন। আপনি কখনো আমার আফাজ হতেই পারেন না।”

শেষের কথায় আর্তনাদে ফেটে পড়ে নাজীবা। উম্মাদনা কমলেও রাগের বশে আফরাজের দেওয়া পরণের শাড়িটা ছিঁড়তে লাগল। আকবর এতক্ষণ যাবত নাজীবা ভাবীর করুণ কথা শোনছিল। কিন্তু এখন যে কান্ড করছে। এতে সে লজ্জায় অন্যদিক ফিরে যায়। আফরাজ হাত মুঠোবদ্ধ করে নিজের কোট খুলে নাজীবার শাড়ির উপর পেঁচিয়ে দেয়। নাজীবা দেখে চিল্লিয়ে নিজেকে সরাতে নিলে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয় তার গালে। নাজীবার মাথা ঘুরে উঠে। এতটা ধকল তার ছোট মস্তিষ্ক সইতে পারল না। শরীর অবশ হয়ে পড়তে নিলে আফরাজ সন্তপর্ণে পাঁজাকোলা করে নেয়। তার নিশ্চুপতায় আকবর অনেকটা অবাক। সে কেন নাজীবা ভাবীর কথার জবাব দিল না। কোনো ঘাপলা অবশ্যই আছে। আফরাজ উচ্চ আওয়াজে তার ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে।
ড্রাইভার চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) গাড়ির পেছনের সিটে নাজীবাকে বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে পড়ে। কারো সাথে কোনোরুপ কথা না বলেই ড্রাইভারকে বাসার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আদেশ করে। ড্রাইভার মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ গাড়ি চালু করে। আকবর ও কুসুমা গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আকবর মনে মনে কিছু একটা ভাবল। কুসুমাকে বলে,

“চলো বউ । বাসায় যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাজীবা ভাবীর সঙ্গে কথা বলিও ।”

কুসুমাও স্বামীর কথায় সায় দেয়। তারা অন্য আরেক গাড়িতে উঠে পড়ে।
বাসার মধ্যে নাজীবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গেল আফরাজ। কিন্তু নাজীবার জ্ঞান ফেরতেই খেয়াল করে , সে তাদের স্বামী-স্ত্রীর রুমে আছে। বিরক্ত আর কষ্টে উঠে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় নাজীবা। তার রুমে এটার্চ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আফরাজ মাথা মুছতে থেকে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আয়নার পাশে স্ট্যান্ডে রাখা পরণের পোশাক পরে নেয়। গলার যে পাশে নাজীবা কামড়ে দিয়ে ছিল, সেপাশে মৃদু স্পর্শ করে হেসে দেয়। বিরবিরিয়ে বলে,’তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ_বিবিজান’। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে ব্যথা উপশমের ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ নেয়। বক্সটি জায়গামতো রেখে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে নাজীবা নেই। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় তার। বুঝতে পারল মেয়েটা তার কথা না শুনেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে বিবিজান এর রুমের দিকে গেল।

নাজীবা তার পরণের ভারী শাড়িটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে ঢিলাঢালা থ্রিপিচ পরে নেয়। মুখ মুছে বিছানায় গা হেলিয়ে দেয়। চোখ বুজতে নিলে আফরাজ এর রাগান্বিত গলা শুনে ভয় পেয়ে যায়। গলা শুকিয়ে গেল তার। তবুও সে দরজা খুলবে না। বিরবিরিয়ে বলে, ‘আপনি বেইমান জামাই আপনি বেইমান। আমাকে ঘৃণা করলে বলে দিতে পারতেন আমিই দূরে সরে যেতাম। এভাবে আয়োজন করে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য এম্বুলেন্স তো ডাকার দরকার ছিল না।’
আফরাজ দরজায় বা’রি দেয়। নাজীবাও চুপ থাকল না। কড়া গলায় বলে,

“চলে যান আপনি প্লিজ! আপনার চেহারা অব্দি দেখতে মন চাইছে না। এত এত পাগলামীপনার এই দাম দিলেন? বাহ! ভালোই আমিও আজ থেকে আপনার ধারে কাছে ঘেঁষব না। প্লিজ! চলে যান। নাহয় আমি আমার ক্ষতি করে ফেলব।”

হাত থেমে যায় আফরাজ এর। মেয়েটা তার মনে এত ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছে। বা’রি দেওয়া থামিয়ে নম্র গলায় শুধায়।

“দেখো বিবিজান, রাগ করলে তো হেরে গেলে। কি হয়েছে, কি দেখলে কিছুই জিজ্ঞেস করব না। শুধু বলছি দরজা খুলো তোমাকে আমাদের রুমে নিয়ে যাবো। জলদি দরজা খুলো।”

“আপনি কি যাবেন নাকি আমি নিজের…..!”

ধমকে উঠে আফরাজ। চিল্লিয়ে বলে,

“এই মেয়ে নিজের জীবনকে সস্তা পেয়েছিস? বারে বারে নিজের জীবন নেওয়ার হু’ম’কি দিচ্ছিস! আয় দরজা খুল এখনই। তোর জীবন আমি নিচ্ছি। আদর করে করে বাঁদর বানিয়েছে দেখে মাথার উপর ছড়ে বসেছিস। ইচ্ছে তো করছে তোর দুই গালে ঠাঁটিয়ে চ’ড় বসিয়ে দেয়, বে’য়া’দপ মেয়ে। তুই এখনই দরজা খুল। আজ তোর রেহাই নেই।”

রাগে গজগজিয়ে পুনরায় দরজায় আঘাত করে আফরাজ। এবার নাজীবা ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদতে লাগে। তার কান্নার শব্দ দরজার বাহিরে অব্দি যাচ্ছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কান্নার শব্দ শুনে আফরাজ কপালে হাত চেপে ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। পুনরায় বলেও নাজীবাকে রাজি করানো গেল না।

____

তাবাসসুম ক্লাবে বসে তার মা’কে লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনো সাড়া না পেয়ে রাগে ফোনটাই সুইচ অফ করে দিল। ওয়াইনের গ্লাস ধরে ড্রিংক করতে থেকে সেই সময়ের কথা ভাবতে থাকে। যখন আফরাজ এর ওয়াইফ তাকে সবার সামনে অপমান করে। সে দাঁতে দাঁত চেপে ফোন বের করে টিকেট বুকিং দেয়। কিন্তু কাপল’স টিকেটের সাথে তাবাসসুম নিজের জন্য সিঙ্গেল টিকেট বুকিং দেয়। ক্ষোভ-মিশ্রিত গলায় বিরবিরিয়ে বলে,

“তোকে আমি শান্তিতে সংসার করতে দেবো না। এবার যা আগুন লাগার লাগবে তোর হানিমুন ট্যুরে। যখন নিজের হাজবেন্ড কে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে দেখবি তখন তোর চোখ-মুখে যে কষ্টটা ভেসে উঠবে। সেই কষ্টের উল্লাস বানাব আমি। জাস্ট ওয়েট বেব।”

টিকেট বুকিং শেষে আকবর-কে ই-মেইল পাঠিয়ে দেয়। ওয়াইনের গ্লাসে পুনরায় চুমুক দেয়। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে দেখে। দাহাব এহসান কে সামনে দেখে কামুক হাসি দিয়ে বলে,

“আরে আমার কি নেশা ধরেছে যে, আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?”

দাহাব এহসান আপাতত কামনার মন-মেজাজে নেই। তাই তিনি নিবিড় গলায় তাবাসসুম এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থেকে জিজ্ঞেস করেন।

“মা তুমি কি নাজীবার খবর পেয়েছো? তোমার মা যে বলেছিল খুঁজে দেখতে! জানতে পেরেছো কোনো কথা?”

চাচার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাবাসসুম এর মধ্যে। বরং সে আয়েশে ড্রিংক করেই যাচ্ছে। দাহাব এহসান এর রাগ লাগছে মেয়েটার উপর। এতো ভাবলেশনহীন হয়ে বসে আছে কেমনে মেয়েটা বুঝতে পারছেন না তিনি! তাবাসসুম ওয়াইনের গ্লাসের শেষ অংশটুকু এক চুমুকে খেয়ে দেয়। নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে চাচার দিকে তাকিয়ে বলে,

“নাজীবা রাইট? হুম আই থিংক আই ফাউন্ড হার। বাট নট সিউর দ্যাট! সি ইজ এ্যা রিয়াল নাজীবা অর নট? বিকজ সি ইজ মিসেস নাজীবা আফরাজ ফাহিম।”

কথাটি দাহাব এহসান এর কানে বজ্রপাতের ন্যায় লাগল। তিনি থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন। ওয়েটার কে একগ্লাস ওয়াইন দিতে বলেন। তার কথামত ওয়াইন সার্ভ করা হলো। এক চুমুকে শেষ করে ফেললেন তিনি। গম্ভীর গলায় তাবাসসুম কে বলেন,

“মেয়ের ছবি দেখাতে পারবি? তাকে দেখতে চাই আমি। তার চেহারার আদল না দেখলে বুঝব না।”

তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে বলে,

“উফ চাচ্চু ক্লাবে দাঁড়িয়েও ঐ কোন না কোন নাজীবার ব্যাপারে জানতে চাইছো! কে এই নাজীবা হুম? মা’কে আস্ক করলেও বলে না। আপনিই না হয় বলে দিন।”

দাহাব এহসান তীক্ষ্ণ নজরে তাবাসসুম এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তোর সৎ মামাতো বোন , আমার সৎ নাতনী।”

ছোট বাক্যের কথাটি শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাবাসসুম এর। গলা দিয়ে কোনো বাক্য বের করতে নিলে হাসতে লাগে দাহাব এহসান। নিজের শার্ট টান টান করে অন্য আরেকটি ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে চুমুক দেন। তাবাসসুম এর গ্লাসের সাথে ‘চিয়াস’ করে নিজের মত ড্রিংক করতে থেকে বলেন,

“আরে বাবা মজাও দেখি বুঝিস না।”

তাবাসসুমও হেসে ফেলল। সে ভেবেই নিয়ে ছিল তার চাচা সত্য বলছে। কিন্তু মজা বলায় সেও আর পাত্তা দিল না। এদিকে দাহাব এহসান ড্রিংক করার মাঝে আড়চোখে তাবাসসুম এর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি নিজের মনে এক বি’শ্রী ফন্দি আঁটেন। ড্রিংক করার মাঝে গলা ঝেড়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন।

“তুই আজ হঠাৎ ক্লাবে কেন? তোর তো এ সময়ে অফিসে থাকার কথা।”

“আর বলিও না চাচ্চু ঐ আফরাজ এর বউয়ের কারণে আজ অফিসের স্টাফর্সের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে। আফরাজও আমার পক্ষ নিল না। অথচ এক টাইমে এই ছেলেই আমি বলতে পাগল ছিলাম। এখন দু’চোখেও দেখতে চাই না। আমিও আমার শোধ উঠাবো চাচ্চু। আফরাজ-এর কাপল’স হানিমুন স্যুটের বুকিং এর জন্য দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। এরই সুবিধা উঠাবো আমি। আমিও তাদের সঙ্গে যাবো একা।”

শেষের কথায় বাঁকা হাসেন দাহাব এহসান। শয়তানি বুদ্ধি এঁটে তাবাসসুম এর হাত ধরে বলেন,

“শোন একা নয়। বরং তোর সিঙ্গেল বুকিং রিমুভ করে আমার সঙ্গে নাম মিলিয়ে কাপল বুকিং দেহ্।”

তাবাসসুম চকিত নজরে চাচার দিকে তাকায়। লোকটা কি পাগল হয়ে গেল কিনা বুঝল না! সে আমতা আমতা করে বলে,

“চাচ্চু এটা কেমনে সম্ভব কোথায় আপনি আর কোথায় আমি! দিজ হানিমুন অনলি ফর ম্যারিড কাপল’স।”

“তাতে কি? তোর আর আমার জন্য ফেইক পেপার্স রেডি করে জমা দেবো। দ্যাটস ইট। কারণ তুই সিঙ্গেল গেলে সেখানকার ম্যানেজার্স সন্দেহ করতে পারে। আমি গেলে বলবি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে এসেছিস।”

চাচার কথাগুলো তাবাসসুম খানিক সময় নিয়ে ভেবে দেখল। আসলেই একা গেলে সে তার প্ল্যানে সফল হতে পারবে না। অতএব, চাচার কথায় রাজি হয়ে যায়। চাচার সাথে হাত মিলিয়ে বলে,

“ঠিকাছে রাজি আমি। কিন্তু আপনিও বিনিময়ে আমার ব্যাংকে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবেন।”

দাহাব এহসান হেসে মাথা নেড়ে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল তাবাসসুম কে। সে বুঝতেও পারেনি এই ব্যাপারটা যে, তার চাচা তাকে শুধু মাত্র গুটি হিসেবে ব্যবহার করবেন।

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-১০+১১

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০ (পারফিউম ভার্সাস পাদ)

“বিবিজান আগের বারের মত কফিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়েছো কি? চাইলে মেশাতেও পারো। আই ডোন্ট হেভ এনি প্রবলেম। ঐসময় আমার কাছে টেস্টের জন্য মিষ্টি ছিল না। এবার তো আমার কাছে মিষ্টির চেয়েও দারুণ মিষ্টির খাবার আছে। একবার মুখে নিলেই ছাড়বো না বলে দিলাম।”

মুখ ভোঁতা হয়ে গেল নাজীবার। সে চাইছিল এতদিন কষ্টের বিনিময়ে আফরাজ কে হলুদ,জিরা গুঁড়া ও নুন মেশানো কফি খাওয়ে মজা বুঝাবে। কিন্তু এখন তো তারই উপর বারি হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ঢোক গিলে হেহে হেসে দিয়ে বলে,

“আসলে বলছিলাম কি আমি না আরেকটা কফি বানিয়ে আনছি। আপনি বসুন,কাজ করুন কেমন?”

চটজলদি পালাতে নিলে আফরাজ গম্ভীর মুখশ্রীর ন্যায় বিবিজান এর হাতের বাহু চেপে ধরে। সন্তপর্ণে বিবিজান এর হাতে থাকা কফিটা উঠিয়ে নেয়। চোখ বড় বড় হয়ে যায় নাজীবার। আফরাজ বাঁকা হেসে যেই না কফির মগে ঠোঁট লাগাবে, তখনই আকবর এসে দরজা নক করে। আফরাজ এর ধ্যান একটুর জন্য সেদিক ঘুরে গেল। ব্যস নাজীবাকে আর পায় কে? তৎক্ষণাৎ স্বামীর হাত থেকে কফিটা নিয়ে পালিয়ে যায়। বিবিজান কে পালাতে দেখে মনে মনে আকবরের নামে বাঁশ দেয়। আকবর বেচারা খিচুড়ি চিবাতে গিয়েও পারল না। জিভ দাঁতের মধ্যে চাপা খেয়ে ব্যথা পেয়ে যায়। কুসুমা দুপুরের খাবারের জন্য প্লেটগুলো রেডি করছিল। আকবরের অসহায় মুখ দেখে সে চিন্তিত গলায় বলে,

“এই কি হলো গো আপনার? ওমনে মুখটা লটকিয়ে রাখলেন কেন? কিছু হয়েছে বলুন?”

“কি বলতাম আর? গেছিলাম ভাইরে ডাকতে। অসময়ে ডাকতে গেয়ে গা’লি খেয়ে জিভে কামড় লাগছে।”

কুসুমা মৃদু হেসে বলে,

“আপনিও কম যান না ভাইয়ের পিছে চব্বিশ ঘণ্টা লেগে থাকেন। কে ,কার ,কেমনে নেগপুল করতে পারবেন সারাক্ষণ যেনো সেই চিন্তা করেন।”

“সব কপালের ফাটা দোষ।”

“আয় তোর কপালটাই ফা’টিয়ে দেয়।”

গম্ভীর গলায় ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে বলল আফরাজ। আকবর দেখে বোকা হাসি দিয়ে বলে,

“আরে দোস্ত আসলি , আয় না দেখ খাবার কত মজা হয়েছে। আজ ভাবী রান্না করেছেন। ওয়াও মাশাআল্লাহ লা-জাবাব।”

নাজীবা খাদিজা বেগম এর কাছে দাঁড়িয়ে খাবার প্লেটে বেড়ে দিয়ে আকবরকে ‘ধন্যবাদ’ জানায়। আফরাজ এর মুখের গম্ভীরতা তবুও যায়নি। স্বামীর এরূপ আচরণে নাজীবা পড়ল বিপাকে। কেমনে রাগ ভাঙানো যায় সে ফন্দি আটকাচ্ছে! আফরাজ নিজের প্লেট নিতে গেলে নাজীবা চট করে তার হাতের উপর মৃদু চা’প’ড় মা’রে। ব্যাপারটা সবার চক্ষু আড়ালেই করল সে। কারণ নজরে এলে সেই লজ্জায় কাঁচুমাচু করতো। আফরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোনো কথা বলল না। নাজীবা লাজ-লজ্জা ভুলে ঢোক গিলে এক লোকমা ভাত আফরাজ এর মুখের সামনে ধরে। সে দেখে বিনা বাক্যে লোকমা মুখে ফুরে নেয়। পুনরায় আরেক লোকমা খাওয়াতে নিলে নিজেরই মুখের সামনে লোকমা দেখে আশ্চর্য হলো নাজীবা‌। আফরাজ নিজ হাতে লোকমাটা নাজীবার মুখের ভেতর ফুরে দেয়। দু’জন দু’জনকে খাওয়ে দিচ্ছে দেখে তিনজন ব্যক্তি মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করে। খাদিজা বেগম খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে যান। তিনি দরজা ভিড়িয়ে ফোন নিয়ে নিজ ছেলের নাম্বারে কল চাপেন। নাম্বারটা বিদেশী, তাই ম্যাসেঞ্জার মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলেন তিনি। কল রিসিভ হতে দশমিনিট সময় লাগল প্রায়। খাদিজা বেগম ফোঁসে বলেন,

“ঐ হ্যাবলা ব্যাটা বানিয়েছিস তো করলার মত ব্যাটা। তোর করলা দেশে আর তুই বিদেশে বসে কোন মুলার ফসল ফলাচ্ছিস হুম? নিজে তো গেছস আমার ঘরের লক্ষ্মীটারেও জোর করে নিয়া গেছস। বলি কি? মহা বলদ ছেলে টা দেশে আসলে খুশি হতাম। আপনাদের গণ্যমান্য ছেলে যে বিয়াত্তা ব্যাটা হয়ে গেছে। তার কোনো ধারণা আছে কি?”

এত বছর পর মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে এলো জনাব ইসমাইল ফাহিম এর। তিনি কল্পনাও করেননি তার মা কোনো দিন তাকে কল করবেন! তিনি খুশির ঠেলায় গলার থেকে আওয়াজ বের করতে পারছেন না। অন্যথায় মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর অবস্থা দেখে ফোনটা স্বামীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। তিনি নিজেই সালাম দেন শ্বাশুড়ি কে। খাদিজা বেগম বউমার কণ্ঠ শুনে বেশ খুশি হলেন। বউমাকে আদেশের সুরে বলেন,

“শোনো বউমা। তোমার বদ জামাইকে একটু বলে দিও। আমি আর কোনো এক্সকিউজ শুনছি না। এবার যদি তোমার জামাই দেশে না আসে, তাহলে যেন সে ভুলে যায় যে, আমি তার মা ছিলাম। এত বছরেও যে ছেলে মায়ের খবর নেয় না। তার থেকেও বা কিসের আশা করবো? ছেলেটা নাহয় তার মাকে ভুলে গেল। তাই বলে নাতি কেও কেড়ে নিয়ে গেল। এখন বুঝতেছে তোমার জামাই? সন্তান দূরে থাকার কষ্টটা কেমন? নিজের মা’কে দেশে একা ফেলে নিজেরা বিলাসবহুল জায়গায় ঠাঁই পেয়েও লাভ নেই। সেই মায়ের কাছেই বাচ্চারা শান্তি সুখ পায়।”

শ্বাশুড়ির কথা শুনে মিসেস ফেরদৌসী কেঁদে দেন। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন,

“মা মা গো আপনি আমার শ্বাশুড়ি নন আমার নিজের মায়ের সমান। এই এতিম মেয়েকে আপনি ভালোবেসে ছিলেন বলেই বেঁচে ছিলাম। মা গো আমার ছেলেটা কোথায়? একবারও ফোন দেয়নি। যতবার ফোন দিয়েছি ততবার কেটে দিয়েছে। বাপের কারণে মায়ের সাথেও রেগে কথা বলছে না ছেলেটা। মা আপনি একটু তারে বোঝান না। আমরা কখনো তার খারাপ চাইনি। একসময়ের দুর্ঘটনায় আমরা ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। সেই ভয়ে আমরা চলে এসে থাকতেই লাগলাম ভীনদেশে। মা আপনি ছেলেটার কাছে সত্য কথা এখন বলিয়েন না। নাহলে আমরা অপরাধী হয়ে যাবো।”

খাদিজা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। তিনি নিজেও সেই ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু কোথাও এক খারাপ লাগা থেকেই যায়। সেই ঘটনার রেশ ধরে আজ কত বছর তার ছেলে ভীনদেশে সংসার গুছিয়ে বসবাস করছে। অথচ নিজের মায়ের কিরূপ হাল তা জানারও আক্ষেপ করেনি। অতঃপর মনটাকে নরম করে তিনি বলেন,

“বাদ দাও বউমা। ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে তোমরা রেডি হয়ে নাও। যখন মন চাই ,তখন চলে এসো। কোনো বারণ নেই। রাখি এখন ভালো থেকো।”

“আপনিও সুস্থ থাকিয়েন মা। ইন শা আল্লাহ আমরা শীঘ্রই আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”

“ইন শা আল্লাহ্। আল্লাহ হাফেজ।”

মায়ের সাথে কথা বলবে ভেবে জনাব ইসমাইল নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিল। এতক্ষণ যাবত মায়ের অভিমানে ভরা কথাগুলো শোনছিলেন তিনি। কিছু বলার পূর্বেই বউ আর মায়ের কথার সমাপ্তি দেখে অসহায় মুখে বউয়ের দিকে তাকান তিনি। করুণ গলায় বলেন,

“বউ কখনো কি মা আমাকে আর মাফ করবেন না? উনি তো জানেন যুবরাজ আমার কত না আদরের। ঐ সময়কার মারাত্মক ঘটনায় আমি হিতা-হিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছিলাম। তাই তো ছেলে কে নিয়ে এই দূর দেশে চলে আসতে হলো। আমি কখনো চাইনি এমনকি ভাবিওনী এতটা বছরে মায়ের সাথে দূরত্ব এতটা বেড়ে যাবে।”

কথাগুলো বলতে জনাব ইসমাইল এর চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর কাঁধে হাত রেখে প্রেরণা দেন। তবুও তিনি একবার চেষ্টা করতে বলেন,

“আমাদের উচিৎ এবার ফিরে যাওয়া। ছেলেকে সত্যও বলতে হবে। নাহলে তার বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।”

“রেডি হয়ে নাও। আজ রাতের ফ্লাইটেই আমরা দেশে ফিরব। অনেক হয়েছে মায়ের অভিমান আর সহ্য হচ্ছে না।”

মিসেস ফেরদৌসী খুশি হলেন খুব। তিনি চটজলদি সাভেন্ট’স কে বেড রুমে আসতে বললেন।

____

আকবর চিন্তিত গলায় বলে,

“তাহলে তোর কথা হচ্ছে ভাবী তোকে চিনে। অথচ তুই ভাবীকে চিনিস না এমনকি আগে যে কখনো ভাবীর সাথে দেখা হয়েছে তেমন কোনো ধারণা ও নেই তোর?”

“হুম। কিন্তু কোথাও একটা প্রশ্ন মনে জাগছে! আসলেই কি আমি মেয়েটাকে চিনি না? যদি নাই চিনতাম তাহলে কেনো মেয়েটাকে প্রথম দেখতেই ‘বিবিজান’ বলে খুশি অনুভব করে ছিলাম। এমতা তো নয় যে, তখন আমি তাকে ভালোবাসতাম। এসময় তাবাসসুম কে ছাড়া কিছু বুঝতাম না‌। আর আজ বিবিজান এর জীবনের রহস্য সম্পর্কে জানতে কৌতুহলে ম*রছি।”

“আরে ব্যাটা তুই সরাসরি ভাবীর মুখ থেকেই জেনে নেহ্।”

“তোর কি মনে হয় আমি চাইলেই ওর মুখ থেকে শুনতে পারতাম না ? অবশ্যই পারতাম। কিন্তু রাতে বিবিজান এর শরীরের কন্ডিশন দেখে, আইম ফুললি শকড। সি ইজ মেন্টালী ডিসপ্রেসড‌। আমাদের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ালেও ভেতরে সে চিৎকার করেই কান্না করে। গতরাতে আমি এমনি এক দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছি। বিবিজান এর অসুস্থ সময়ে তার অতীত জানতে চাইলে সে ফুললি মেন্টাল পেশেন্ট হয়ে যাবে। তাও যতটুকু জানতে পেরেছি, এতে আমি এটুকু বুঝতে পারছি আমার সব প্রশ্নের জবাব এক জায়গায় গিয়েই পাবো।”

আকবর বন্ধুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

“কোন জায়গায়?”

আফরাজ নিজের কেবিনের জানালার নিকট এসে দাঁড়িয়ে যায়। পেন্টের পকেটে হাত গুটিয়ে বলে,

“হাউ এবাউট টেকিং আওয়ার ফাস্ট হানিমুন ট্যুর ইন ফেনী? ইট উডবি ইন্টারেস্টিং রাইট?”

আকবর কথাটা শুনে হা করে তাকায়। পরক্ষণে চিল্লিয়ে বলে,

“ওও ব্রাদার নট অনলি ইন্টারেস্টিং বাট অলসো মিস্ট্রি উইল বি রিভিলড।”

বন্ধুর কথায় আফরাজ বুকের উপর হাত গুজে ঠোঁটের মাঝে বাঁকা হাসি দেয়। জানালার সামনে থেকে সরে কেবিনের থাই গ্লাস দিয়ে কর্মরত এমপ্লয়র্স এর দিকে তাকিয়ে বলে,

“ইয়েস মিস্ট্রি উইল ডিফনেটলি রিভিলড।”

হঠাৎ কেবিনে নক পড়ায় আকবর পেছন ফেরে। তাবাসসুম কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বিরবিরিয়ে বলে,
‘ডাইনির লেজ যেখান সেখানেই চলে আসা।’ সামনে টু শব্দ করল না বরং আফরাজ এর দিকে চেয়ে বলে,

“দোস্ত তোর প্রাক্তন প্রেমিকা এসেছে।”

‘তাবাসসুম’ এর কথা শুনে চোখ ঘুরিয়ে আকবর এর দিকে ত্যাড়া দৃষ্টিতে তাকায়। বেচারা হকচকিয়ে গেল। সিংহের গুহায় দাঁড়িয়ে ভুল কথা বলে ফেলল। কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি উড়নচণ্ডী হলো স্বয়ং নাজীবা। তাবাসসুম কেবিনে এসে বলে,

“স্যার আমাকে ডেকে ছিলেন?”

“ইয়েস মিস পিএ। আপনি দুটো কাপলের জন্য হানিমুন টিকেট বুক করেন। আমার আর আকবরের নামে। আমরা বউ নিয়ে হানিমুনে যেতে চাই ফেনীতে। সো আপনি আপনার কাজ শেষে টিকেট ই-মেইল করে দিয়েন।”

তাবাসসুম এর চোখ বড় হয়ে যায়। তারই সামনে আফরাজ তার হানিমুনের কথা বলছে। ব্যাপারটা অসহ্যকর লাগল তার। সে গলা ঝেড়ে একটুর জন্য আকবরকে স্পেস দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। আকবর চোখ সরু করে তাবাসসুম এর আপাতমস্তক দেখতে থেকে বেরিয়ে যায়। আকবরকে বের হতে দেখে শান্তির শ্বাস নেয় সে। কেননা অর্ধেক ঝামেলার নাট্যমূল তো এই আকবর কেই মনে হয় তার। বাকি অর্ধেক হলো ঐ মেয়েটা। তাবাসসুম নিজেকে অসহায় ভাবে ফুটিয়ে তুলতে আফরাজ এর পায়ের উপর পড়ে যায়। নড়েচড়ে উঠল আফরাজ। পা সরিয়ে পিছিয়ে তাবাসসুম কে ধমকে উঠে। তার ধমকে কেঁপে উঠলেও ঢোক গিলে আবদার করতে লাগল।

“জান আইমিন স্যার সরি এখন তো আমি আর তোমার ভালোবাসা নেই। তাই বলে এত কষ্ট দিও না। আমি সইতে পারব না। কাল যদি তুমি আমাকে জবের এপয়নমেন্ট লেটার না পাঠাতে তাহলে আমার থেকে রাস্তার ভিখারি হয়ে ঘুরতে হতো। তবেই কি তুমি আমাকে কষ্ট দিতে এই জব দিলে? আমি সহ্য করতে পারছি না আফরু।”

‘আফরু’ শব্দটা তাবাসসুম এর মুখে শুনে বিরক্ত বোধ করে। আফরাজ নিশ্চুপ তার মধ্যে যেনো এসব কথার কোনো প্রভাব হলো না। সে নিজের মত নীরবে ফাইল’স চেক করছে। তাবাসসুম এর একেকটা বাণী বা’নো’য়া’ট মনে হচ্ছে তার। সে ফাইল’স সাইন করার মাঝে বলে,

“দেখো তাবাসসুম এসব বাচ্চামি বাদ দাও। তোমার জবের দরকার ছিল। দিয়েছি এর চেয়ে বেশি কিছু আমি করতে পারব না। আর রইল তোমাকে জব দিয়েছি মানবতার খাতিরে। আশা করি যা আদেশ করেছি তাই পালন করবে।”

তাবাসসুম মনে মনে ফোঁসছে। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

“ওকে আমি টিকেট বুক করে জানাচ্ছি।”

আফরাজ হাতের ইশারায় কেবিনের বাহিরে দিকে যেতে ইঙ্গিত করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাবাসসুম ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায়। শাকচুন্নী কে বের হতে দেখেই মুখ ভেটকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আকবর। বন্ধুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“এই ডাইনি মেয়ের হাবভাব আমার মোটেও পছন্দ না। সারাক্ষণ আমার কচি বন্ধুর সাথে চিপকে থাকতে চাই। বলি বিয়াত্তা ব্যাটার সাথে আবার চিপকানোর কি দরকার শুনি? এমনেই তো দুজনেই সেকেন্ড হ্যান্ডেড মা*ল।”

শেষের কথায় আফরাজ কিউব বলটি উঠিয়ে আকবরের দিকে ছুঁ’ড়ে মা’রে। এই দেখে চট করে সরে যায় সে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে,

“কিরে আজ তো আমারে মে’রেই ফেলতি? এটাই তোর ভালোবাসা আমার প্রতি তাই না? এই ভালোবাসলি আমাকে? আজ বুঝছি বন্ধুত্ব বলতে এই যুগে কিছু নেই নেই নেই। ধুমতানানানানা, ধুমতানানানানা।”

আফরাজ ধীরে ধীরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বন্ধুর নিকটে গিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। পাগলের মত বিহেইভ করে বেহুদা টিউন করতে করতে আকস্মিক আফরাজ-কে এতটা কাছে দেখে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে যায় আকবর। বোকার মত হেসে বলে,

“আরে দোস্ত আমি তো মজা করছিলাম। হেহেহহ।”

আফরাজ আকবরকে ছুঁতে নিলেই দু’জনে ধপাস করে পাশে থাকা সোফার পর ছিটকে পড়ে। আফরাজ এর নিচে আকবর ঠাস করে পড়ায়। বেচারা ব্যাকসাইডে হালকা একটু ব্যথাও পেল। আফরাজ বুঝতে পেরে উঠে বসে। আকবরের কোমরে চাপড় মে’রে বলে,

“মনে হচ্ছে এই বয়সেই তুই কিডনী হারাবি। সমস্যা নেই তুই তো আমার দোস্ত। তোর জন্য খাল কেটে কুমির এনে তার কিডনী দিয়ে হলেও তোকে বাঁচাব। হ্যা এতে একটাই সমস্যা। যেখানেই যাবি কুমিরের দলবল তোর পেছনে ঘুরবে‌। এমনি তো কম ফ্লাটিং করিস না। ভাবীকে দেখলেই তো তোর কলিজা ছ্যাত করে উঠে‌। তাই ভাবছি তোর কিডনী বেছে আইফোন ফিফটিন কিনব।”

“আজ ফকির বলে এভাবে অপবাদ দিলা বন্ধু। হ্যা হ্যা মনে থাকবে একদিন আমার কিডনীকে তুই ভীষণ মিস করবি। এই কিডনী না থাকলে তো পা*দও দিতে পারব না। তুই না আমার বন্ধু? আমার পা*দ দেওয়ার জন্যে হলেও আমার কিডনী বিক্রি করবি না বলে দেহ্ দোস্ত!”

“এই বলদ এত পা*দ,পা*দ করিস কেন? তোর পা*দের গন্ধে অফিসেও থাকা যায় না। কোন দিন না আবার তোর পা*দের গন্ধে ফ্রাই হয়ে যায় সেই ভয় লাগতেছে।”

“আরে দোস্ত শোকরিয়া কর আমার। আমি পা*দ দেয় বলেই তোর পারফিউমের কোম্পানি এত উঁচু পর্যায়ে গেছে। নাহলে তো মামা তুমি ব্যবসা চালাতে পারতে না। কেমনে জানিস? পা*দের শব্দে পা আছে, পারফিউম এর শব্দেও পা আছে তার মানে কি? তুই পা*দ মা*র আর পারফিউম মা*র একই কথা। যেই লাউ সেই কদু। হুদাই পারফিউম মে*রে লাভ কি সেই খানা টোসার পর তো পা*দই মা*রবে। বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত তুই কখনো পা*দ দিস নাই কেন? শোন আজ থেকে পা*দ দিবি। তোর বউকেও পা*দ দিতে বলবি। যেখানে থাকিস পা*দ দিবি আর পেট পরিষ্কার করবি। পা*দ মা*রা ইজ সো হেলদি ওয়ার্ক ইউ নো?”

আফরাজ বন্ধুর কথায় বাঁকা হেসে উঠে দাঁড়ায়। আকবর আফরাজ এর হাবভাব দেখে বলে,

“ছিঃ ছিঃ দোস্ত আমার মুখে পা*দ দিস না। ইজ এ্যা ব্যাড ম্যানার ইউ নো?”

“হা*রামী তোর ইউ নো বের করছি। পা*দের উপর পিএইচডি করছিস তো। আসলেই একজন মানুষ কে দিনে ১৪ বার পা*দ দিতে হয়। নেহ্ বাঁশ খা পু*ত ,পু*ত,পু*ত,পু*ত….”
করে আকবরের মতই নেচে নেচে আফরাজ বন্ধুকে জ্বালাচ্ছে। আকবর নাক চেপে বলে,

“ছিঃ বন্ধু আমার নাকে পু*ত মেরে আমার পা*দ মা’রা কিডনীকে অপমান করলি। এর শোধ আমিও নেবো।”

আকবর ও সমান তালে পা*দ দেওয়ার ভান ধরে দুজনে লুঙ্গি ডান্সের মত নাচতে লাগে। কেবিনের ভেতর দুজনের পা*দের দৃশ্য দেখে তব্দা খেয়ে যায় নাজীবা আর কুসুমা।

চলবে…….

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১১ (মুখোশধারী)

“জামাইজান আপনার পেটে কি গ্যাস হয়েছে? না মানে আপনি আর আকবর ভাই যেমন করে কোমর ঝাঁকা ছিলেন ওমন করে তো মানুষে পেটের গ্যাস ছাড়ে। আপনার হলে বলুন পেটের গ্যাস দূর করতে আমি সাহায্য করবো। দিনে দু-তিন বার আপনার পেটে বা’রি মা’র’ব। দেখবেন গ্যাস সব ফুড়ৎ করে বেরিয়ে যাবে।”

নাজীবা ভাবীর কথায় শুনে ফিক করে হেসে দিল আকবর। আফরাজ থমথমে মুখে বিবিজান এর কথা শুনলেও আকবরের হাসি দেখে রাগান্বিত নজরে তাকায়। চুপ হয়ে যায় আকবর। তবুও নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে,

“দেখিয়েন ভাবী গ্যাস বের করতে যেয়ে কোনো আবার সিলেন্ডার ব্লাস্ট করে ফেলিয়েন না। বন্ধু আমার আপনার উপর ব্লাশ হয়ে আছে। খেয়াল রাখিয়েন, গ্যাস বের করতে গিয়ে সুপার গ্লু না চলে আসে।”

আফরাজ শুনে তেড়ে আসতে নিলে আকবর তার বউকে ধরে অন্যপাশে সরে যায়। ঢোক গিলে নিজের পাগলী বিবিজান কে বুঝ দিতে বলে,

“বিবিজান চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যাও। আজ সকালে আকবর ছাইপাশ খেয়ে মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। তারে ঠিক করতে গিয়ে আমারেও বিগড়ে দিল। বলদ একখান।”

মনে মনে গা’লি ছাড়ল আফরাজ। অন্যথায় আকবরও বন্ধুর শেষের কথাটুকু বিপরীতমুখে কুসুমা কে বলে দেয়। অথচ নাজীবা আর কুসুমা ঠিকই তাদের স্বামীর ভন্ডামি ধরে ফেলেছে। বেচারা-দের লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা। নাজীবা আর কুসুমা আড়চোখে নিজেদের মাঝে গোপন ইশারা ইঙ্গিত করে নেয়। নাজীবা কণ্ঠে গাম্ভীর্যতা টেনে বলে,

“আমরা এখন ক্যান্টিনে খেতে যাচ্ছি। হঠাৎ এসে আপনাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নিজেদের খারাপ লাগছে। তাই যায়। আল্লাহ হাফেজ।”

কথার সমাপ্তি টেনে দু’জন মেয়ে যেমনে এসে ছিল ঠিক তেমনি বেরিয়ে যায়। লিফটে ঢুকে দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আকস্মিক হাসতে লাগল। দু’জন ব্যাটার মুখই দেখার মত ছিল। কুসুমা কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,

“যাই বলো ভাবী দু’জনকে মজামাস্তি করতে ভালোই মানায়।”

নাজীবা তবুও হেসে যাচ্ছে। তাকে হাসি থামাতে বলে কুসুমা। কিন্তু সে থামে না। বরং ফোন বের করে একটা ভিডিও কুসুমার চোখের দিকে ধরে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে দেখে হতবাক। নাজীবা লুকিয়ে ফোনে ভিডিও করে ফেলেছে। কুসুমা তার হাত ধরে বলে,

“ভাবী আমারে ওয়াট’স আপে দাও প্লিজ প্লিজ! এই ভিডিও দেখায় আকবর-রে মজা বোঝাব। বিয়ে করেও অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করার মজা চু’টিয়ে দেব একদম।”

কিন্তু নাজীবা আনমনে বিরবিরিয়ে বলে,

“জামাইজান আপনাকে এই ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে শাকচুন্নী কে মা’রা খাওয়াবো। খুব শখ না মেয়ে পিএ রাখার। তাও শুধু শখই না,মানবতার শরীর জনাবের। আপনার মানবতা আচ্ছামত ফলিয়ে বের করবো দেখিয়েন।”

কুসুমা নাজীবা ভাবীকে চুপ থাকতে দেখে মৃদু চা’প’ড় মা’রে। সে নড়েচড়ে বলে,

“হ্যা কি হলো?”

“ক্যান্টিনের ফ্লোরে চলে এসেছি আসো।”

দু’জন মিলে ক্যান্টিনের ভেতর ঢুকে পড়ে। কুসুমা কে প্রায় সবাই চিনে। আকবর নিজেই বলেছিল এই তার বউ। সেজন্য তার ক্যান্টিনে আসা, না আসা একই। এই ক্ষেত্রে নাজীবা একে বারে নতুন। কখনো আফরাজ এর অফিস ঘুরে দেখেনি। আজ এসে ছিল জামাইজান এর সাথে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দু’ব্যাটার পাগলামীপনা দেখে নিজের মত পাল্টে নেয়। ভাবল কুসুমা ভাবীর সাথে আসল, বিধায় সমস্যা নেই অফিসটা ঘুরে দেখা যাবে। সেই ভেবে দুজনে প্রথমে খেতে এসেছে। তাদের অ্যাসিস্ট করবে তাবাসসুম। আকবর ইচ্ছাকৃত বন্ধুর অগোচরে অ্যাসিসটিং এ ফাঁসিয়েছে তাকে। তাবাসসুম ক্যান্টিনে বসা ছিল। খাওয়া শেষ করে যাওয়ার আগেই ঘোমটা পরিহিত মেয়ে-কে দেখে ফেলল। চিনতে তার মোটেও ভুল হয় না যে,মেয়েটা আফরাজ এর সা’ই’কো ওয়াইফ। শ’য়’তানি বুদ্ধি করে ইচ্ছাকৃত নিজের গলায় পেঁচানো স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে নেয় সে। নাজীবা তো বেখেয়ালি মুগ্ধ চোখে ক্যান্টিনের মধ্য ডিজাইন দেখ ছিল। কুসুমা কাউন্টার এ যেয়ে অর্ডার করে দেয়। তারা যে টেবিলের কাছে গিয়ে বসতে যাচ্ছিল। সবার চক্ষু অগোচরে নাজীবার চেয়ারের মধ্যে সস ঢেলে দেয় তাবাসসুম। নাজীবাও সেই চেয়ারের উপর বসে পড়ে। তার খেয়াল নেই সেদিকে। তাবাসসুম বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,

“এবার বুঝবি আমার সাথে টক্কর নেওয়ার মজা।”

কুসুমা কফি শেষ করে নাজীবা কে বলে,

“ভাবী আপনি হালকা করে ঘোমটা সরিয়ে খান। এখানে কেউ তাকাবে না। কড়া সিকিউরিটি আছে এখানে।”

“তাও ভাবী ভয় হয়।”

“ভয় এখানে কিসের ভয়?”

নাজীবা ভুলে যে মুখ ফসকে সত্য বলতে নিচ্ছিল বুঝতে পেরে হকচকিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বলে,

“আব না মানে আমাকে তো চেনো। আমি একটু পর্দাটা মেইনটেইন করার চেষ্টা করি।”

কুসুমাও বুঝতে পেরে মাথা নাড়ল। তাদের খাওয়া শেষ হতে দেখে তাবাসসুম ফোন বের করে। ফোনের ফোকাস আফরাজ এর বউয়ের ব্যাকসাইড বরাবর রাখে। তারা উঠে চলে যায়। নাজীবার শাড়ির ব্যাকসাইডে লাল রং লেগে আছে যা তাবাসসুম ভিডিও করে রাখল। সস হলেও দেখতে লাগছে পিরিয়ডের র’ক্ত। ক্যান্টিনের এমপ্লয়র্স এর নজরে এলো জিনিসটা। নাজীবার শাড়িতে লাগোয়া র’ক্ত খেয়াল করে মিটমিট হাসতে থাকে। অনেকে কানাঘুষা করে বলতে লাগে।

“মেয়েটার মনে হয় ফাস্ট টাইম পিরিয়ড হচ্ছে।”

“ছিঃ এসব শাড়িতে লাগিয়ে বেশরমের মত ঘুরছে কেমনে মেয়েটা।”

“ছিঃ অফিসের মধ্যে বসও আছেন। তিনি যদি দেখতেন তবে নাক সিটকিয়ে বের করে দিতেন এসব আউল ফাউল মেয়ে-কে।”

“আরে তার চেয়ে বড় কথা এই পাগল মেয়ে-রে নিয়ে কুসুমা ভাবী কি করছেন? মনে হয় আকবর স্যার এই পাগল মেয়ে কে সামলাতে কুসুমা ভাবীকে দায়িত্ব দিয়েছে।”

আশপাশের কটু কথায় নাজীবার যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে ‘পাগল’ শব্দটা বেশি উত্তেজিত করছে তাকে। এখনই যদি সে ‘ড্রা’গ’ না নেয়। তবে তার শরীরে পাগলামীপনা জাগ্রত হবে। নিজেকে কোনো মতে সামলানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কিছুতে পারছে না। কুসুমা এমপ্লয়র্স এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার পাশে থাকা থাই গ্লাসের দিকে তাকায়। তাকে ঠিকই লাগছে। কিন্তু যখন খেয়াল করে দেখল তখন দেখে নাজীবার শাড়িতে লাল রঙের কিছু লেগে আছে। সে স্তদ্ধ হয়ে নাজীবার পেছনের গিয়ে শাড়ির আঁচল ধরে ফেলে। নাজীবার ধ্যান ফেরে সে কুসুমার স্তদ্ধ চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করে।

“কি হলো ভাবী আপনি আমার পেছনে কি দেখছেন?”

“ভাবী আপনার শাড়িতে এই লাল রঙ নাকি সস? হ্যা ভাবী আপনার পেছনের দিকে কেউ সস লাগিয়েছে। দেখুন আয়নার সামনে!”

নাজীবা থাই গ্লাসের পাশে এটার্চ আয়নার সামনে গিয়ে পরখ করে দেখে। হ্যা কুসুমা ভাবীর কথা সত্য। সে হালকা করে সসের উপর হাত ছুঁয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। পরক্ষণে তার মাথায় আগুন ধরে যায়। কুসুমা নিজের পার্স থেকে টিস্যু বের করে মুছতে নিলে নাজীবা তার হাত ধরে ফেলে। সে বলে,

“না ভাবী যে আমার সাথে এই কাজটা করেছে তাকেই এর শোধ দিতে হবে। নাহলে আমি শান্তিতে বসতে পারব না। আপনি আমাকে বলুন অফিসের কত নং কেবিনে সিসিটিভি ফুটেজ আছে?”

“এই কেবিন নিচের গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আর আমরা আছি ২নং ফ্লোরে এখন।”

কথাটি শুনে সে কুসুমার হাত ধরে সোজা লিফটে চলে যায়। অন্যথায় তাদের লিফটের মধ্যে যেতে দেখেও কোনো পরোয়া করে না তাবাসসুম। বরং সে নাজীবার অগোচরে যে ভিডিও করেছে, সেটার জন্য একটা ক্যাপশন ভেবে ভেবে নিজের কেবিনে চলে যায়। সে আফরাজ এর পিএ বলে কেবিনটা পেয়েছে। কেবিনে বসে সে তার মা’কে ফোন দেয়। কোনো এক অজানা কারণে তার মা ফোন তুলছে না। সে আজ দুদিন ধরে তার মা’কে ফোনে পাচ্ছে না। যত বারই কল দেয়, নট রিচেবল বলছে। বিধেয় সে আফরাজ এর দেওয়া ফাইল’স চেকিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

এদিকে নাজীবা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। তার পাশেই কুসুমা ভাবী ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাজীবার পাগলামীপনা যেন প্রকাশ্যে না আসে, মনে মনে তারই প্রার্থনা করছে সে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নাজীবা-কে নিজের মত ভিডিও রিভাইন করতে দেখে বিরক্ত বোধ করে সিসিটিভি কন্ট্রোলার। তিনি রূঢ় গলায় নাজীবার উদ্দেশ্যে বলে,

“ম্যাম আপনি কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এখানে অফিসের বসকে ছাড়া আর কাউকে এলাউ করা হয় না। আপনি আকবর স্যারের ওয়াইফ এর সঙ্গে এসেছেন দেখে সম্মানের সহিতে বলছি, প্লিজ! ম্যাম আপনি নিজের লিমিটেশনে থাকুন। আমাকে দিন ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করছি।”

নাজীবার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। বরং সে তার কাজ করেই যাচ্ছে। তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় সাক্ষী , ঐ সময় তার চোখের আড়ালে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে।
ম্যাম এর পাত্তা না পেয়ে কন্ট্রোলার রাগে গজগজিয়ে নাজীবার হাতে স্পর্শ করে। যা দেখে প্রতিবাদ করতে গিয়েও করল না সে। নিজেকে শক্ত রেখেই জ্বলন্ত অগ্নি চোখে তাকায় নাজীবা। তার অগ্নিশর্মা রূপ দেখে আচমকা হাতটা ছেড়ে দেয় কন্ট্রোলার। মাথা নিচু করে নেয়।
নাজীবা তার হাতের উপর আপাতত খেয়াল দিল না। ফুটেজে সে-সময়ের দৃশ্য ভেসে উঠে। বাজপাখির মত ফুটেজের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তাবাসসুম এর কৃতকর্মের দৃশ্যপট দেখানো হচ্ছে। যা দেখে নাজীবা আর এক মুহূর্তও সিসিটিভি ফুটেজ এর কেবিনে দাঁড়াল না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তৎক্ষণাৎ লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। সে এখনো তার পরণের শাড়ি চেঞ্জ করেনি। কুসুমাও তার পেছনে গেলো।

_____

দাহাব এহসান আজ নিজেকে পরিপাটি করে তার মেয়ে মিসেস হিয়া কে ডাক দেন। কিন্তু সাড়া শব্দ না পেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেন। তিনি কটি পড়তে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলেন। গালের একপাশের চামড়া ধসে পড়বে মত লাগছে। একপ্রকার ঘাবড়ে যান তিনি। তাড়াহুড়ো করে আলমারির পেছনের দিকেই এটার্চ করা রুমে ঢুকার জন্য দাঁড়িয়ে যান। দরজায় লকার লাগানো। একটাই কোড দিলেন,’ব্লা’ড এডিকশন’। এই টাইপ করতেই দরজা খুলে যায়। চটজলদি তার টেবিলের কাছে যান। টেবিলের উপর বিভিন্ন রঙের কেমিক্যাল সলিউশন তৈরি করে রাখা। যেনো এগুলো তার জন্যে রেখেছে কেউ। সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ এক কেমিক্যাল সলিউশন এর ভেতর টিস্যু ডুবিয়ে ভিজিয়ে নেন। পরে টিস্যুটি নিজের মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ছিপছিপে করে নেন। টিস্যুটি ডাস্টে ফেলে টেবিল ফ্যানের সামনে বসে সুইচ অন করেন। ফ্যানটি চালু হতেই তিনি শান্তি অনুভব করেন। যে গালের চামড়া ধসে পড়-ছিল। সেই চামড়া পুনরায় লেগে গিয়েছে দেখে শয়তানি হাসি দেন। হাসা থামিয়ে পাশে থাকা মিনি ফ্রিজ থেকে র’ক্ত এর প্যাকেট বের করেন। একটা গ্লাসে র’ক্ত ঢেলে সেই গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলেন। আপনমনে বিরবিরিয়ে বলেন,

“একমাত্র নাজীবার কারণে আমি জমিদারী প্রথার উত্তরাধিকারী হতে পারলাম না। তোর জীবিত অবস্থা আমার জন্য কাল হয়ে আছে। আজও জমিদারী প্রথার ভাগ নিতে গেলে তোর নাম উঠে আসে। তোর একার জীবনের জন্য আমি আটকে আছি। তোকে মুক্ত করতে পারলেই জমিদারী প্রথা পেয়ে যেতাম। কিন্তু তোর ঐ মৃত দাদীর খতিয়ান নামার কারণে তোকে বিয়ে না করা অব্দি প্রথা হাসিল করতে পারব না। তোকে একবার পেয়ে বিয়েটা করতে পারলেই আমার হাতের মুঠোয় পুরো আলী ভিলা ঝুঁকে পড়বে। কত বছর ধরে এই প্রথার অপেক্ষায় আছি। সেটা শুধু আমিই জানি। তোর কাছ থেকে প্রথা ছিনিয়ে নিতে আমার নিজের শরীরের যে কত ক্ষতি করেছি আমি।”

কথাটুকু বলে নিজের গালে হাত রাখে দাহাব এহসান। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেখলেন। অর্ধচুল তার হাতে চলে এসেছে। তার চেয়ে বড় কথা চুলের অর্ধেকই সাদা। এক-দুটোই কালো শুধু। আয়নায় নিজের মুখশ্রী দেখে অতীতে ডুব দেন।

অতীত……

“এই বুড়ি তুই তোর উকিল দিয়ে খতিয়াননামা আমার নামেই কর। নাহলে তোর পরিবারে কে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেব।”

“আপনি এতো খারাপ সেটা আগেই বুঝে ছিলাম। আফসোস আমার বাবা বুঝেননি। তাই প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর পর আপনার ফাঁদে পড়ে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমিও শের কাশেম এর মেয়ে ফাতেমা শেরা। আমি বেঁচে থাকতে কখনো আপনার আশা পূরণ হবে না। আপনি পা’পী, নি’কৃ’ষ্ট এক জা’নো’য়া’র। আপনার অন্তিম মুহূর্ত খুব ভয়ানক হবে মিলিয়ে নিয়েন আমার কথা।”

বুড়ি স্ত্রীর কথায় দাহাব এহসান উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। তার হাতের তাবিজ ছুঁ’ড়ে মে’রে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেন স্ত্রীর গালে। স্ত্রীর গাল চেপে ধরে বলেন,

“এই বুড়ি বয়স তো কম হলো না তোর। এখন ম’রলে কেউ সন্দেহ ও করবে না। ভাববে অসুস্থতায় ভোগচ্ছিলি এর রেশ ধরেই মা’রা গেলি।”

কথার ইতি টেনে জোরে ধাক্কা দেন তিনি। ফাতেমা শেরা ফ্লোরের উপর পড়ে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেন।ঘুমন্ত নাজীবা জেগে উঠল। ভয়ে ঘুমন্ত মা’কে চেপে ধরে। জনাব মোবারক আলীও জেগে গেলেন। স্ত্রী কে ঘুমন্ত দেখে ডাকলেন না। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমিয়েছে তার বউ। বিধেয় ভয়ার্ত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমাতে বলেন তিনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)গায়ের টিশার্ট ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে বাবা-মা’র রুমে যান। দাহাব এহসান দরজা খুলেই ম’রাকান্না জড়িয়ে দিলেন। নিজের কোমর ব্যথার ভান ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। মা-কে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে জনাব মোবারক আলী মা-কে পাঁজাকোলা করে বিছানার উপর শুয়ে দেন। কপালে হালকা আঁচ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন তিনি। তবুও টু শব্দ করলেন না। মায়ের জ্ঞান ফেরাতে পাশে পানি ভর্তি মগ থেকে হালকা পানি বের করে মায়ের মুখে ছিটিয়ে দেন। মিসেস ফাতেমার জ্ঞান ফেরতেই ছেলে-কে কাছে দেখে খুশি হোন। মুখ খুলতে নিলে পেছনে থাকা জা’নো’য়া’র-কে বড়সরো ফুলদানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। শেষ বয়সে এসে ছেলের বংশ কে হারাতে চান না তিনি। অতঃপর মিথ্যা ঘটনা বলে ছেলেকে তার রুমে পাঠিয়ে দেন। মোবারক আলী রুম থেকে বের হওয়ার পর পরই ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেন দাহাব এহসান। বাবার এরূপ আচরণে অবাক হোন তিনি। বাবাকে ছোট কাল থেকে দেখে এসেছেন তিনি। কখনো বিরূপ আচরণ করতে দেখেননি। রাত বেশি হওয়ায় মায়ের কপালে ব্যান্ডেজ করে নিজ রুমে চলে গেলেন।
অন্যথায় দাহাব এহসান নিজের স্ত্রীর শিউরে বসে তার গলার কাছে হাত রেখে মৃদু গলায় বলেন,

“আহারে বউ আমার। ব্যথা লাগছে কপালে? জানিস তোর প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তোকে কেন বিয়ে করে ছিলাম ? যাতে করে তোর রাজমহল আমি পেয়ে যায়। কিন্তু আফসোস কে জানতো আমার শ্বশুর যে এক নাম্বারের চতুর মানব বের হবে। আমার নামে ব্যবসার খতিয়াননামা লিখে জমিদারী প্রথা তার কন্যার নামে লিখে দিলেন। এতে কী? আমিও শ্বশুরের মন জয় করে তোকে বিয়ে করে নিলাম। যদিও জানতাম তুই বিধবা,এক ছেলের মা তবুও আই ডোন্ট কেয়ার। এই বুড়ো বয়সে এসেও আমার লোভ নিয়ন্ত্রণে নেই। কেনো? কারণ আমার তোকে সহ্য হয় না। তুই আমাকে ছেলে সন্তান দিস নাই। ছেলে সন্তান তো আগের জামাই-রে দিয়ে খেয়ে দিলি জামাই-রে। আমার বংশে সব কিছু নিজ ছেলেকে দিতে চেয়েছিলাম তাও হতে দিলি না। তোর আগের পক্ষের সন্তান কে তো আমি পৃথিবী ছাড়া করব দেখে নিস। শুধু সে নয় তার পরিবারও ধ্বংস হবে। কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলব তোকে? আমাদের নাতনী নাজীবা আছে না? ওকে না আমার মা’রতে মন চাইছে না। তাহলে কী করা যায় ভাবছি?

কথাটুকু বলে দাহাব এহসান নিজের সাদা দাড়িতে হাত বুলাতে লাগলেন। মিসেস ফাতেমার কপালে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তিনি বহু কষ্টে উঠে বসেন। দেওয়ালে হেলান দিয়ে তার দ্বিতীয় স্বামীর নি’কৃ’ষ্ট মনের বাণী শুনছেন। যবে নাতনী-র কথা বললেন। পিলে চমকে উঠলেন। স্বামীর দিকে চেয়ে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করেন।

“মা মানে আমার নাতনী কে দিয়ে কী করবেন আপনি ? দেখেন নাতনী আমার মাত্র সাত বছর বয়সী। আমার ছেলের পরিবারের ক্ষতি করিয়েন না। আমি আমার পক্ষের সম্পত্তি আপনার নামে করে দেব। কিন্তু আমার নাতনীর….।”

তাকে চুপ করতে ইশারা করে তিনি হাস্যজ্জ্বল গলায় বলেন,

“তোরে মে’রে ফেলার পর তোর ছেলে আর ছেলের বউকেও মে’রে দেবো। কিন্তু তোর নাতনিকে নিজের দ্বিতীয় বউ বানিয়ে রক্ষিতা করে রাখব। কি করব বউ? নাতনী আমার কচি শরীরে ভরা। ওকে না পেলে জীবনটা বৃথা মনে হবে। জোয়ান বয়সে তোর মত বিধবা-রে বিয়ে করে নিজের পায়ে কুড়াল মে’রে ছিলাম। এর প্রায়শ্চিত তোর নাতনী কে বিয়ে করে করবো। আমার শখ ছিল অবিবাহিত, কচি মেয়ে বিয়ে করার। তুই ম’রার পরই না হয় করব।”

কথার ইতি টেনে হাসতে লাগলেন তিনি। মিসেস ফাতেমা তীক্ষ্ণ কথা বলতে গিয়েও পারলেন না‌। তার গলা কেমন যেন জ্বালা পোড়া করছে। চোখে ঝাঁপসা দেখতে পাচ্ছেন। হঠাৎ গলা দিয়ে র’ক্ত ঝরতে লাগে। দাহাব এহসান রুমের বাহিরে গিয়ে মেইন দরজার ছিটকিনি খুলে দিলেন। দরজার তালা ভেঙে মাটিতে ফেলে রাখলেন। পুনরায় রুমে এসে আয়েশে রকিং চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দেন। ফ্লোরের উপর থেকে বড় সাইজের পাথর হাতে নিলেন। বউ ফাতেমা কে ছটফট করতে দেখে খোশমনে নিজের কপালে জোরেসরে আ’ঘা’ত করে বসেন। ব্যথার চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

চলবে……

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৯

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৯ (রহস্যের উম্মচন-০১)
(১৮+এলার্ট)

“বিবিজান তুমি নিজেই তোমার অমূল্য রুপ স্বামীর কাছে বিলিয়ে দিয়েছো। যদি মানতে কষ্ট হয়, তবে আমার কাছে ভিডিও আছে। আমি আবার প্রমাণ ছাড়া কাজ করি না। যদি আগে জানতাম, ড্রাগের রিয়েকশনে তুমি আমার মতো হ’ট,চ’ক’লে’টি ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে না। তাহলে কবেই আমি নিজ দায়িত্বে তোমার শরীরে ইনজেকশন পুশ করে দিতাম। আজ প্রথম মনে হচ্ছে, বাসর রাতে যদি তোমাকে চ’ড় না মা’রতাম। তবে তোমার আসল রুপ জানতে পারতাম না।
মাতব্বরি করে ড্রাগের ইনজেকশন কে নিতে বলেছিল তোমাকে হুম? বাই দ্যা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো হ’টি বিবিজান। ওয়ান’স মোর এগেইন?”

নাজীবা খুব কষ্টে কথাগুলো হজম করছিল। আফরাজ এর শেষের কথায় বেচারী চটজলদি না’ই’টি পরে নেয়। কোনোমতে চাদর খামচে ধরে আফরাজ এর কাছ থেকে দূরে সরে বসে। মাথা চেপে কেমনে কি হয়ে ছিল তা ভাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার কিছুই মনে পড়ছে না। আফরাজ বিবিজান এর চিন্তিত চেহারা দেখে বাঁকা হেসে বলে,

“আহারে আমার বিবিজান। যাও গিয়ে ফরজ গোসল সেরে আসো। একসাথে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাতে হবে। আজ সকালে অফিসেও যেতে হবে। এখন থেকে তুমিই আমার সব দায়-দায়িত্ব পালন করবে। সকাল সকাল আমার কফি খাওয়ার অভ্যাস। সেই অভ্যাস-কে পর্যাপ্ত মূল্যায়ন তোমারি করতে হবে। সকালে তোমার এই কোমল হাতজোড়া দিয়ে কফি বানিয়ে হাজির হবে বুঝলে বিবিজান?”

নাজীবা না শুনার ভান করে কান চুলকালো। স্বামীর দিকে ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলে,

“এ্যাহ্ মগের মুলুক পেয়েছেন? আপনি বললেন আর হয়ে গেল ভাবলেনও কি করে হুম? আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার অজ্ঞানের ফায়দা তুলছেন। আমি তো বেলকনিতে র’ক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। আমি কেমনে অজ্ঞানে আপনার সাথে ই’ন্টি’মে’ট হতে পারি?”

“আরে তোমার মাথাভরা গোবরের মধ্যে এত চাপ নিচ্ছো কেন সেটাই বুঝতে পারছি না! বলি বয়স তো কম হলো না। এখন বাচ্চাকাচ্চা সামলানোর জন্য কাছে আসা খুব জরুরী। ফর দিস ম্যাটার আইম সো স্ট্রিক্ট ফরওয়ার্ড।”

“ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।”

আফরাজ এর সামনে থেকে পালিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে নাজীবা। তাকে খালি হাতে যেতে দেখে শিস বাজিয়ে উল্টো মোড়ে শুয়ে পড়ে। তার জানা আছে, কিছুক্ষণ পরই ডাক শুনা যাবে। সে ফোন হাতে নিয়ে তার সিক্রেট পিএ রাফিন কে মেসেজ করে।

“ইমিডেটলি নিডেড দিস প্রেসক্রাইপর্ড ইনজেকশন’স।”

মেসেজের সাথে হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবিও সেন্ড করে দেয়। রাফিন এর পক্ষ থেকেও মেসেজ চলে এলো ‘ওকে স্যার’। ফোন রেখে ধীর স্থির মাথায় ভাবতে লাগল বিবিজান এর সাথে হওয়া ঘটনাটি।

তিনঘণ্টা আগের ঘটনা….

নাজীবা পায়ের নিচে র’ক্ত দেখে মাথায় চক্কর খেয়ে যায়। হুট করেই পাশে থাকা সোফায় নেতিয়ে পড়ে। আফরাজ সবেই বাসায় ফিরেছে। আকবর রুমে চলে গেলেও আফরাজ এর জরুরি কল আসে। সে করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলে, তখন নাজীবার রুম থেকে চিৎকার শুনে চট করে রুমের বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় ছুটে রুমে যায়।
বেলকনির সামনে এসে দেখল, এক টবে পচন ধরে গাছটি নেতিয়ে পড়েছে। সেই টবের গা বেয়ে র’ক্ত ঝরছে। টবে পচন ধরলে তা মানা যায় কিন্তু র’ক্ত? আপাতদৃষ্টিতে নজর দিল না। নাজীবা কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়। তার হাত-পা ও শরীরের পোশাক ছিপছিপে হয়ে আছে। বোধহয় গোসল করে ছিল সে। জ্ঞান ফেরানোর জন্য নাজীবার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। চোখজোড়া পিটপিট করে উঠে তার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আফরাজ সমেত চারদিকে চোখ বুলিয়ে আচমকা নিজের ঘোমটা সরিয়ে দেয় নাজীবা। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় আফরাজ। তার বিবিজান বুঝি সেদিন নামাজ পড়ছিল? এতো বিবিজান নয়, বিবিজান এর রুপে আসমানের পরী বসে আছে। তার সৌন্দর্যে বারংবার ঢোক গিলছে সে। কোথায় সে শ্যামরঙা পুরুষ আর কোথায় তার রূপবতী নারী? স্বামীকে কাছে দেখে নাজীবা আহ্লাদী গলায় চিল্লিয়ে বলে,

“এই শা’লা’র ব্যাটা তোর চোখে কি ছানা পড়ছে? আমার মত সুন্দরী বউ রেখে ঐ মেকআপ সুন্দরী তাবাসসুম কে ভালোবাসলি কেন বল? ঐ মেকআপ সুন্দরীর মা’ই’রে বা’প চু’টি’য়ে দেবো। জানিস তুই আমি তোরে বিয়ে করে তোর কত বড় উপকার করছি? আজ যদি আমার জায়গায় ঐ মাইয়া থাকতো। তখন তার রুপের জল খেয়ে পা’য়’খা’না’র রোগ হতো। পায়খানার রোগকে কি জানি বলে?”
গালে এক আঙ্গুল রেখে ভাবছে। পরক্ষণে মনে পড়তেই বলে,

“ওহ হে ডায়রিয়া নিয়ে গু’খানায় বসে থাকতি। তখন তোরে কে বাঁচাতো হে? সেই তুই আমার জামাই হয়ে আমারেই চ’ড় মা’রছিলি।”

শেষ কথায় নাজীবা উচ্চস্বরে কান্না শুরু করে দেয়। আফরাজ বোকার মত বিবিজান কথা হজম করছিল। আকস্মিক বেহুদা কান্নার ঢং দেখে চোখ ঘুরিয়ে হুট করে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে নেয়। এমতাবস্থায় নাজীবার শরীরে অন্যরকম এক উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। এমনিও সে স্বামীর প্রেমে পাগল ছিল। প্রথম রাত্রির সঙ্গ না পাওয়ায় এতদিন ছটফট করছিল। আজ স্বামী স্বেচ্ছায় ঠোঁটজোড়া মিলিয়েছে। এতেই সে পাগলপ্রায়। কামড়ে ধরে আফরাজ এর ঠোঁট। আফরাজ তো বিবিজান এর কামড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একহাতে নাজীবার চুলের মুঠি ধরে আরেক হাতে কামিজের ফিতা খুলে নেয়। সেও বিনা বাক্যে আফরাজের পরণের শার্টটি খুলে নেয়। আফরাজ উত্তেজনায় শার্টটা ফ্লোরের উপর ছুঁ’ড়ে মে’রে নাজীবাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে, একের পর এক চুমু দিয়ে তাকে সুখানুভূতির মাঝে ডুবিয়ে নিতে লাগল।
দু’মানব-মানবী আজ সুখের সাগরে ভেসে যেতে লাগে। এই বিকাল বেলা তাদের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখবে।

আকস্মিক ‘শুনেন জামাই’ এ শব্দ দুটো শুনে ধ্যান ফিরল আফরাজ এর। তবুও সে না শুনার ভান ধরে পা টান টান করে শুয়ে রইল।
সে জানে, এই ডাক কার আর কেনোই বা ডাকছে? অতএব, চুপটি করে শুয়ে রইল। নাজীবা দরজা ফাঁকা করে আফরাজ এর এমন না শোনার ভান দেখে রাগে ফোঁসছে। সে স্পষ্ট আফরাজ কে জাগ্রত দেখছে। অথচ তার ডাক কে প্রাধান্য দিল না দেখে নিজেকে অসহায় বোধ করে। পুনরায় ডাক দেয়। ইচ্ছেকৃত আফরাজ শুনে হাই তুলে উঠে বসে। ওয়াশরুমের দরজার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়। নাজীবার গাল লাল হয়ে গেল। সে কাঁপা গলায় তার পোশাক চাইল। আফরাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

“এমন করে চিল্লিয়ে ডাকছো কেন হুম? ওয়াশরুমেও কি চিল্লানির প্রেকটিস করতে চাইছো? এখনো রুমের ভেতরে তোমার সুখের শব্দ কানে গুঞ্জে যাচ্ছে। সেখানে তুমি ওয়াশরুমেও তোমার শব্দ ছড়িয়ে দিতে চাইছো! নট ব্যাড বিবিজান। আই ডোন্ট হেভ এনি প্রবলেম।”

“এই মিয়া চুপ করেন। আপনার ফালতু কথা অফ করে আমাকে কাপড় এনে দেন। নাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন বলে দিলাম।”

“কি তুমি আফরাজ ফাহিম কে হুমকি দিচ্ছো। এবার তো তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। তোমার শাস্তি হলো আজ তোমার কোনো কাপড় পরারই দরকার নেই। সারাদিন রুমের ভেতরে আমাকে চাদর হিসেবে জড়িয়ে ধরে রাখবে। দিস ইজ ইউর পানিশমেন্ট বিবিজান।”

আফরাজ এর বলা কথায় কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইল নাজীবা। পরক্ষণে স্বামী কি বলছে বুঝতে পেরে ‘নাহহ’ বলে চিৎকার দেয়। আফরাজ কান চেপে ধরে বলে,

“উফফ বিবিজান এমনে চিৎকার দিও না। কলিজায় কুস কুস হতা হেয় না।”

স্বামীর কথায় ইতস্তত গলায় নাজীবা ঢোক গিলে বলে,

“আআআআ জামাইজান সরি। আমার কাপড়গুলো দেন না প্লিজ!”

‘প্লিজ’ শব্দটা একটু টান দিয়ে বলল নাজীবা। এতে আফরাজ মুখ টিপে হেসে দেয়। যা চক্ষুগোচর হয় না নাজীবার। সে উঠে আলমারি থেকে নাজীবার প্রয়োজনীয় কাপড়গুলো বের করে। ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে নক দেয়।
নাজীবা দরজা ফাঁকা করে কাপড়গুলো নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মৃদু হাসে আফরাজ। টিশার্ট আর লুঙ্গি পরে সে বিছানার চাদর উঠিয়ে বালতির মধ্যে রাখে। আলমারি থেকে নতুন বালিশ কভার ও বেডসীট নিয়ে বিছানা গুছিয়ে নেয়। তন্মধ্যে নাজীবা উড়নাহীন চুল মুছতে মুছতে বের হলো। মুগ্ধতার দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আফরাজ। এই নারী যে তার অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে, যাকে ছাড়া তার অস্তিত্ব মূল্যহীন। মুচকি হেসে বিবিজান এর কানের কাছে ঠোঁট এনে বলল।

“আজ থেকে তুমিই আমার কাপড়ের সেট রেডি রাখবা। যেনো প্রতি কাপড়ে তোমার হাতের স্পর্শ পায়।”

শিহরণে নুয়ে গেল মেয়েটি। স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার খুশিতে তার চোখে পানি চলে এলো। হুট করে চোখের এক ফুঁটো পানি তার গাল বেয়ে নিচে পড়ার পূর্বেই আফরাজ সেই পানি নাজীবার চিবুকে ঠোঁট চেপে চুষে নেয়। স্বামীর নেশাময় চুমুতে লজ্জায় ঠোঁট চেপে ওয়াশরুমের দিকে তাকায়। সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে আফরাজ। হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকিয়ে রুম-হিটার অন করল নাজীবা। কিছুক্ষণ শরীরের ঠান্ডা ভাব দূর করে আলমারির থেকে আফরাজ এর কাপড় বের করে বিছানায় রাখে।
রুম থেকে বেরিয়ে সে ভাবল, প্রথমে তার দাদী শ্বাশুড়ির কাছে যাবে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে কুসুমা ভাবীকে সাহায্য করবে। ‘মাশাআল্লাহ’ ঘরের ছোট বউ হলেও সর্ব কাজ, সে আগে-ভাগে করে রাখে। যাতে কারো কষ্ট না হয়। সে মাথার হিজাব ঠিক করে দাদীর রুমের দিকে গেল।

_____

“বাবা এসব কি? আপনার গলা দিয়ে র’ক্ত কেনো বের হলো? আপনি কি কোনো ভাবে সূর্যের রশ্মির সামনে পড়েছেন? কি হলো বাবা কিছু বলছেন না কেনো? আপনার এসব অতিরিক্ত কর্মের ফলে আমিও না কোনো ফেঁসে যায় এই ভয় লাগে।”

দাহাব এহসান র’ক্তা’ক্ত মুখে মিসেস হিয়ার দিকে চেয়ে তার গাল চেপে ধরল। মেয়ের মুখের সামনে মুখ এনে বলে,

“বেশি মুখ চালাবি না বুঝছিস? তুই যে আমার র’ক্তপানে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিস। তারই ক্রিয়ায় আমার গলা দিয়ে অর্ধ পান করা র’ক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। তুই কি ভেবেছিস? তোর মেয়ে কে আমার রাত্রি সঙ্গী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবি? তাহলে বলছি তোর মেয়েকেই আমার থেকে দূরে রাখ। নাহলে তোর উপরে হওয়া ক্ষোভের মাশুল না আবার ওকে দিতে হয়।”

মিসেস হিয়া ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারেননি যে, তার বাবা আন্দাজ করতে পারবেন। তিনি মাথা নেড়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। দাহাব এহসান মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে দেওয়ালে টাঙানো নাজীবার সাত বছরের ফ্রক পরিহিত ছবির দিকে দৃষ্টি দেয়। মেয়েটা দেখতে কেমন হয়েছে সেটাও জানেন না তিনি। নাহলে কবেই নাজীবার র’ক্ত’ খেয়ে মে’রে ফেলতো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মিসেস হিয়া তার বাবার রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নিজেকে ধাতস্থ করে মেয়ে কে কল লাগায়।
তাবাসসুমের বিকাশে দাহাব এহসান টাকা পাঠিয়েছেন। সে টাকাগুলো নিয়ে পার্লারে নিজের রূপচর্চা করছে। তার ফোন আসায় পার্লারের এক কর্মী ফোন নিয়ে তাবাসসুম কে দেয়। সে কানে ধরে বলে, ‘হ্যালো মম’।
মিসেস হিয়া মেয়ের কণ্ঠ শুনে বলে,

“মা শোন , আজ কয়েকদিন তোর চাচা বিজি থাকবে। তাই তুই আছিস না বুঝছিস? তুই টাকা পেয়েছিস তো?”

‘না আসার’ কথা শুনে একপ্রকার খুশিই হলো তাবাসসুম। কেননা তার চাচাকে হ্যান্ডসাম লাগলেও শরীরের আনাচে কানাচে কেমন যেন বয়স্কের ছাপ দেখায়। বিধায় রাত কাটাতে হবে না ভেবে মন খারাপের ভান ধরে বলে,

“ওহ মম টাকা পেয়েছি বলেই আমি আরো চাচার জন্য নিজের ফেসিয়াল করছিলাম। থাক বাদ দাও। ওকে মম থ্যাংকিউ।”

কথা শেষ করে মেয়ে ফোন রেখে দিল দেখে মিসেস হিয়া চিন্তামুক্ত হলো। তিনি কোনো ভাবেও চান না তার বাবার মুখে তাবাসসুম কে ফেলতে। শরীর ভোগ তো নয় , র’ক্ত খেয়ে মে’রে দেবে তার মেয়ে-কে।

____

একসপ্তাহ পর….

আজকাল আফরাজ গম্ভীরতা বজায় রেখে কথা বলছে নাজীবার সঙ্গে। এই যেমন কথা কম বলা,মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, সে খেতে বসলে আফরাজ খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে ইত্যাদি আচরণগুলো ভীষণ কষ্টে হজম করছিল নাজীবা। ঘনিষ্ঠ দিনের পর থেকে স্বামীর ভালোবাসায় পুনরায় আবদ্ধ হতে ছটফট করছিল মেয়েটি। যেভাবেও হোক আজ সে আফরাজ কে নেশায় উন্মাদ বানাবে। বিছানায় বসে ঘড়ির দিকে তাকায়। রাতের বারোটা বাজতে আর দশমিনিট বাকি। তাই সে নিজের পরণে লাল ব্লাউজ, পেটিকোট আর কালো জর্জেট শাড়ি জড়িয়ে নেয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সেজে নেয়। কেননা আফরাজ এর সাজসজ্জা অপছন্দ। প্রকৃত সৌন্দর্যই সে ভালোবাসে। নাজীবা নিজের রুপ ফুটিয়ে বিছানার কাছে গেল। হাঁটু গেড়ে বিছানার নিচ থেকে তার সুটকেস বের করে। পাঁচটি ইনজেকশন এর মধ্যে আরেকটি ইনজেকশন নিয়ে কাঁধে পুশ করে নেয়। নিজেকে শান্ত করে আফরাজ এর অপেক্ষায় শুয়ে পড়ে। ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার ঘুম পেয়ে যায়। যার দরুণ ঘুমিয়ে পড়ে‌। তখনি রুমে এলো আফরাজ। সিসিটিভি ফুটেজে নাজীবার উপর খেয়াল রাখছিল সে। নাজীবার ঘুমন্ত শরীর কে কোলে নিয়ে লাইব্রেরী রুমে নিয়ে এলো।
রকিং চেয়ারে বসিয়ে দেয়। নিজের পরণে একটি কালো কটি জড়িয়ে নেয় আফরাজ। নরম সুরে ‘নাজীবা’ বলে দু’তিনেক ডাক দেয়। ঘুমের তীব্র ঘোরে নাজীবা ‘জ্বী’ বলে। বিবিজান এর কণ্ঠ শুনে স্বস্তি পেল সে। কারণ নাজীবার জ্ঞান ফিরতে না দেখে তার চিন্তা হচ্ছিল।
যদি ডক্টরের প্রেসক্রাইপড ইনজেকশনের কারণে নাজীবার ক্ষতি হতো। তবে সে খু’নই করে ফেলতো ঐ ডক্টরকে। কিন্তু বিবিজান জানে না, তার ইনজেকশন কৌশলে পরিবর্তন করে ফেলেছে আফরাজ। আজকের ইনজেকশন ছিল সুস্থ হওয়ার মেডিসিন। ডক্টর আফরাজ এর কথায় উক্ত মেডিসিনে কড়া ঘুমের মধ্যেও হিপনোটিজম এর মেডিসিন এড করে দিয়ে ছিল। নাজীবার ঘুমন্ত চেহারার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে।

“তুমি কে নাজীবা? আফরাজ ফাহিম মানে তোমার স্বামীকে কেমনে চিনো? আফরাজ এর সাথে তোমার সম্পর্ক কিসের? তুমি কি এতিম? আর এই ড্রাগ’স সেম্পল কেনো নাও? তুমি কি আসলেই পাগল বলো আমাকে?”

“আমার নাম নাজীবা মুসাররাত। আমার বাবার নাম মোবারক আলী , মায়ের নাম মেহজাবিন সিরাত। আমরা দু’ভাইবোন ছিলাম। আমি ছিলাম ছোট, বড় ভাই নাদিম আলী। আমাদের পরিবারে কোনো অভাব ছিল না। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে আমি। ফেনীর আলিশান বাড়িতে বসবাস ছিল আমাদের। আফরাজও ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে। সে কেনো আমায় চিনছে না? কেনো আমায় ভুলে গেলো? কেউ কি তার খেলার সঙ্গীকে ভুলতে পারে? মানছি আমি সে শুধু একমাস এর জন্য এসেছিল দেশে। তাই বলে একমাস এর মধ্যে খেলার সাথী কে ভুলে যাওয়া। আসলেই অবাক-কর বিষয় ছিল। আমি তো ভুলেনি। বরং তাকে হৃদয়ে গেঁথে বড় হচ্ছিলাম। আফরাজ রাগ করবে ভেবে বয়ফ্রেন্ডও বানায়নি। তাকে স্বামী হিসেবে পেয়েও কি লাভ যদি আমাকে নাই বা চিনে!”

চুপ হয়ে গেল নাজীবা। তার বন্ধ চোখজোড়া হতে পানি গালে বেয়ে পড়ল। আফরাজ এর হাত কাঁপছে। কি শুনছে সে এসব? একমাস তার খেলার সঙ্গী এসব কি বলছে মেয়েটা? তার কেনো কিছু মনে নেই? নিজেকে স্থির করে পুনরায় বলে,

“বলো নাজীবা তোমার এমন অবস্থা কেমনে? তোমাকে কে পাগল বানিয়েছে? আফরাজ আর তোমার স্মৃতি খুলে বলো আমায়?”

“আফরাজ আমার আফাজ, আমি তার #হৃদয়াঙ্গণ। এখনো জানি না নয় বছরের ছেলের মুখে #হৃদয়াঙ্গণ এর মানে কি? আমি তো তখন ছয় বছরের মেয়ে। হৃদয়াঙ্গণ কি সেটাই বুঝতাম না! ছোট থেকে ঘোমটা দিয়ে ঘুরতে পছন্দ করতাম। সে-বার পুকুর পাড়ে আফাজ একা বল নিয়ে বসে ছিল। তার কাছে গিয়ে সঙ্গ দিয়ে ছিলাম। নাম জিজ্ঞেস করতেই আফরাজ বলে। কিন্তু নামটা ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারতাম না। তাই শর্টকাট আফাজ বলতাম। সে হেসে দিতো। তখন থেকেই তার সাথে খেলতাম। একদিন তার কপাল কাটা দেখে ভয়ে কেঁদে দিয়ে ছিলাম। সে আমার হাত ধরে বলে ছিল, নাজুসোনা শোন তোর পরিবারে এক কালো ছায়া আছে। সে তোকে আমার থেকে দূর করতে চাই। আমি আজ থেকে আর আসব না। কালই আমার যাওয়ার দিন। তুই আমার জন্য অপেক্ষা করিস। তোকে নিজের অর্ধাঙ্গিণী বানিয়ে নিয়ে যাবো। বুঝছিস? আমার হয়ে থেকো নাজুসোনা। তার সব কথা আমার ছোট হৃদয় বুঝতে পারেনি। কেঁদে ছিলাম খুব। বুঝতে পেরে ছিলাম আমার খেলার সঙ্গী আর আসবে না। এভাবেই দিন যাচ্ছিল। নাদিম ভাই ছিল আফরাজ এর বয়সী। সে যাওয়ার পর ভাইয়া আমাকে সামলে ছিল। অথচ ভাই জানতো না কোন কারণে আমার মন খারাপ থাকতো? সে নিঃস্বার্থে আমাকে আদরে আগলে রাখতো। যখন সাত বছর হলাম তখন প্রথম বার গ্রামে এলাম। গ্রামে আমার সৎ দাদা মানে আমার দাদীর আরেক স্বামী তার মেয়ে কে নিয়ে থাকতেন। মেয়ের বিয়ে হওয়ায় সে অন্যখানে চলে গিয়ে ছিল। আমার বাবার পরিবারে সৎ দাদাই বেঁচে ছিলেন। দাদী মারা যাওয়ার আগে বাবার নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে ছিলেন। আর আমার বাবা জমিদারীর অর্ধ ভাগ আমার নামে গোপনে লিখে রাখে। বাকিটুকু ভাই-কে আর মা’কে দেয়। সৎ দাদা পেয়ে আমি আর ভাই আহ্লাদী হয়ে পড়ে ছিলাম। কারণ শহরে একক পরিবারে বাস করে , দাদা কি জিনিস কখনো জানতে পারিনী। দাদা প্রতি রাতে আমাকে আর ভাইকে কাছে নিয়ে ঘুমানোর বায়না করতেন। বাবা-মা সরল মনে দাদার কাছে দিয়েও দিতেন। আমরাও দাদার আদরে গ্রামে থাকতে লাগলাম। কিন্তু একদিন এমন কিছু দেখলাম। যা দেখে আমার ছোট মস্তিষ্ক নড়বড়ে হয়ে গিয়ে ছিল।”

শেষের কথায় যেন আতঙ্কে বুক কাঁপছিল নাজীবার। সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। বিবিজান এর আকস্মিক কান্নার কারণ বুঝতে পারল না আফরাজ। তবুও নাজীবার ছোট দেহটিকে চট করে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে লাগল। স্বামীর পরম আদুরীয় স্পর্শে নাক টানতে থেকে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় নাজীবা। তাকে আর প্রশ্ন করল না আফরাজ। আপনমনে বিরবিরিয়ে বলে,

“বিবিজান এখন থেকে তুমি একা নয়। এই আফরাজ ফাহিম প্রতি পদে পদে তোমার সঙ্গে থাকবে।”

বিবিজান এর চোখের পানি মুছে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে এনে শুয়ে দেয়। চাদর টেনে তাকে বুকে আগলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে আফরাজ।

চলবে…….

অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৮

0

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৮

“ঐ শাকচুন্নী বয়ফ্রেন্ডের ছ্যাকায় শোকাহত ঢেড়স। শুনতে পাচ্ছেন না? আমার জামাইজান সুখে-আনন্দে চিল্লাচ্ছে। আপনার তো দেখছি সেন্স অফ টাইমিং নেই। জামাই-বউ দু’জনে ওয়াশরুমে চিল্লাচ্ছে আর আপনি কোথাকার কোন থার্ড পার্সন এসে সুখের দরজায় বারি মা’র’ছেন। এখনই চলে যান বলছি। নাহলে যতটা বারি মে’রে জামাই-বউ এর কোয়ালিটি টাইম ওয়েস্ট করছেন। তারই শোধ নেবো আপনাকে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে গট ইট?”

তাবাসসুম নিজেকে সামলে নেয়। দরজায় বারি দেওয়া বন্ধ করে গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মেইন গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে গেস্ট রুমের জানালার দিকে তাকায়। মনে মনে মেয়েটার প্রতি তাবাসসুম এর বেশ ক্ষোভ জম্মেছে। সে কোনো ভাবেও মেয়েটিকে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না। মনে মনে একরাশ রাগ নিয়ে বলে,

“আমার ভাগে হুট করে এসে ভাগ বসিয়েছিস তুই ফালতু মেয়ে। এবার দেখবি তোর জীবন নরকে পরিণত না করলে আমার নামও তাবাসসুম দেয়ান না।”

নিজের চুলজোড়া মুখের থেকে সরিয়ে তার গাড়িতে উঠে বসে। সে তো আজ ইচ্ছেকৃত অসহায় এর ভান ধরে এসেছিল আফরাজ এর কাছে। যেন তাকে আফরাজ নিজেই পিএ এর জবে রাখে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাছাড়া আফরাজ না হলেও অন্যজন তো ঠিকই আছে তার হাতভর্তি টাকায় ভরিয়ে দিতে। ভেবেই গাড়ির ড্রাইভার কে বলে,

“ভাইয়া গাড়ি লিংক এহসান ভিলায় নিয়ে যান।”

ড্রাইভার মাথা নেড়ে গাড়ি মোড়ের দিক দিয়ে মেইন রাস্তায় নামিয়ে যেতে লাগল। তাবাসসুম নিজের ফোন বের করে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল চাপে। কলটা রিসিভ হতেই সে ফিসফিসিয়ে বলে,

“মম তোমার কথামত আফরাজ এর বাসায় গিয়ে ছিলাম । কিন্তু কাজ হয় নাই। আফরাজ এর বউ এটা খুব চালু টাইপ। আমাকে দেখলেই ছ্যাত করে উঠে‌। যেনো আমি তার জামাই কে খেয়েই ফেলবো। যতসব থার্ড ক্লাস পিপল।”

“আহারে মা আমার। রাগ করলে তো যুদ্ধে হেরে যাবি। সো এখন না হয় একটু পিছিয়ে গেলি। বাট ইট’স এ্যা স্টেপ অফ উইনিং মাই বেবি। তুই এসবে ভাবিস না। তোর মা-তো আছেই। তোর থেকে শুধু আফরাজ এর অফিসে গিয়ে নাজীবা নামের কোনো মেয়ে আছে কিনা ভালোমত খোঁজ লাগাতে হবে ! বুঝছিস?”

“তা বুঝলাম মম। কিন্তু কিছু বিষয় আমি এখনো বুঝিনি মম। চাচ্চু্র কেনো নাজীবাকে দরকার? আর এই নাজীবাও বা কে? এই পাগল মেয়ে ফেনীর পাগলাগরাদ থেকে পালিয়ে আফরাজ এর অফিসে কেমনে গেল? কোথায় ফেনী আর কোথায় চট্টগ্রাম!”

“দেখ মা আমি যদি সব বলে দেয়। তবে আমার গর্দান যাবে। যা আমি কোনো ভাবেও হতে দিতে পারব না। তুইও এসবে না জড়িয়ে কাজ করতে থাক। টাকার ব্যবস্থা তোর চাচাই করে দেবে। আর শোন কখনো কারো সামনে আমার আর তোর চাচার নাম নিস না বুঝলি?”

“ওকে মম। ডোন্ট ওয়ারি ফর দিস। আমি হলাম আমার মম মিসেস হিয়া দেয়ান এর মেয়ে। তাই কোনো ধরনের ভুল আমার হতেই পারে না। বাট আই নিড এ ফেভোর ফরম ইউ মম।”

“হ্যা বল না মা?”

“আসলে আজকে যদি চাচ্চু আইমিন মিস্টার দাহাব এহসান ফ্রি থাকে‌ন। তাহলে আমি নাইট আউট করতে আসতাম?”

লাজুক হেসে বলে তাবাসসুম। মিসেস হিয়া শুনে চুপ হয়ে গেলেন। মনে মনে ‘ব’দ’মাইশ’ ডাকলেন দাহাবকে। লোকটা তার মেয়ের মাথা খেয়ে শরীরটাও ভোগ করার পিছে পড়ে আছে। তার মন তো চাইছে, এক ধ্যানে জ্বীন দিয়ে তাবাসসুম এর চাচা নামক মানবকে খু’নই করে ফেলে। তাও সম্ভব না দাহাব নিজেই যে তান্ত্রিক। তার পক্ষে তো যে, কাউকে ফাঁদে ফেলা একসেকেন্ড এর ব্যাপার মাত্র। একরাশ ক্ষোভ জমিয়ে তিনি নিজেকে ধীরস্থির করলেন।

“হেই মম কোথায় হারালে? বলো না আমার হ্যান্ডসাম, বডি ফিট চাচ্চু ফ্রি থাকবে?”

মিসেস হিয়া বিরক্তের দৃষ্টিতে একপলক লোকটির রুমের দিকে তাকান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে করুণ গলায় বলেন,

“হ্যা সে তো ফ্রিই থাকে সবসময়।”

“ওকে মম বাই থ্যাংকিউ।”

কথা শেষ করে কল কেটে দেয় তাবাসসুম।

____

মিসেস হিয়া ফোন রেখে বিরবির করে বলেন,

“মা-রে তুই যাকে হ্যান্ডসাম,বডি ফিট চাচ্চু বলছিস , সে যে আসল রুপে কি-রকম দেখতে? তা যদি জানিস! তবে তোর গা গুলিয়ে বমি পেতো। আসলেই কি হ্যান্ডসাম নাকি কোথারকার সুগার ড্যাডি তখন ভালোই বুঝতি।”

মেয়ের রুমে প্রবেশ করে দাহাব এহসান। সবেই সে তার মেডিসিন ও ইনজেকশন নিয়েছে। মেয়ে অর্থাৎ মিসেস হিয়া তার বাবার পায়ের শব্দ শুনেও মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে। মেয়ের নীরবতা দেখে হাত দিয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে নেন। মেয়ের রুমে কালো জাদুর চক্ররেখা পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলেন,

“কিরে তুই এভাবে বসে আছিস কেন? তোর আজকের ধ্যান করতে হবে না? মেয়েটা-কে এখনো খুঁজে পায়নি। আর তুই স্বাভাবিক ভাবে বসে আছিস। বলি একটু ধ্যানমগ্ন হয়ে জ্বীনদের ডাক। তারা শর্ত দিলে সেটা পূরণও তো করতে হবে?”

“দেখেন বাবা আপনার কথায় ধ্যান করেই যাচ্ছি। বাট প্লিজ আমার মেয়ের সামনে র’ক্তা’ক্ত শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন না। সে র’ক্ত ভয় পায়। আর দেখুন এখনো আপনার শরীরে র’ক্ত লেগে আছে। এত মেডিসিন ইনজেকশন নিয়ে লাভ কি ? যদি আপনি নিজের ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণই করতে না পারেন?
তাই বলছি এগুলো জলদি পরিষ্কার করে নেন। আমার মেয়ের সামনে একটু চাচা টাইপ বিহেইভ করিয়েন। দুনিয়ার সামনে তো আমি মা আর আপনি আমার গণ্যমান্য ছেলের পরিচয় বহন করছেন। অথচ আমার মেয়ের সামনে আপনি তার চাচা। সো প্লিজ ক্লিন ইউর সেল্ফ কাইন্ডলি ড্যাড।”

দাহাব এহসান তার মেয়ের কথা শোনে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগল। মিসেস হিয়া চোখ ঘুরিয়ে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকান। লোকটি হাসা থামিয়ে তার হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসে এক চুমুক দেয়। মিসেস হিয়ার রুমে থাকা টি টেবিলের উপরে গ্লাসটি রেখে রকিং চেয়ারে আরাম করে বসে পড়েন। অন্য একটি গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে গ্লাসটি তার মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,

“তুইও কোথায় আর বুড়ির মত লাগিস বল? তুইও তো কম র’ক্ত’পান করিসনি। আমার মেয়ে তো আমার মতই হবে তাই না? ব্যস তফাৎ একটাই। তুই পশুদের র’ক্ত খেতে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি সুস্বাদু র’ক্তের ঘ্রাণ যার থেকেই পায়। তাকেই হরণ করে বক্ষণ করে ফেলি। হ্যা, এর জন্য কম কষ্ট করতে হয় না। পুরো চৌদ্দ ঘণ্টা শ’য়’তা’নের নামে জপ করার পর যেয়ে আমি সন্ধান পায়, এমন সব র’ক্তের যা আমার ক্ষুদা মেটাতে পারে। মাঝের থেকে নাজীবা পালিয়ে গিয়ে সব ধ্যান বিগড়ে দিল। মেয়েটা-রে ছোট থেকে যত্নে রাখতে তার মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। কি করব আমাদের বংশের আদরের দুলালি বলে কথা! এমনিই তো মে’রে ফেলতেই চাইছিলাম। কিন্তু তার র’ক্ত’পানে যে স্বাদের সাথে শক্তিও পাবো তা তো ভাবিনী। ব্যস তার বড় হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটা পাগলে পরিণত হলো কেমনে সেটাই তো বুঝতে পারলাম না। মা একটা কথা জানিস? নাজীবা যখন পাগল হলো আকস্মিক ভাবে তার মামার গুষ্টিও উধাও হয়ে গিয়ে ছিল। আমি আজও তাদের কারো সন্ধান পায় নাই। একবার শুধু একবার নাজীবা কে পেয়ে যায়। তখন হবে আমার জীবনের আসল গতিধারা হাহাহা।”

মিসেস হিয়া শুনে মৃদু হাসলেন। ভাবলেন তার বাবার শেষ পরিণতি কোনো না আবার মৃত্যু হয়। ‘হিয়া’ মহিলাটির নিজের নাম শুনে তার বাবার দিকে তাকায়। তিনি শ’য়’তানি দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“কি রে হিয়া মা দেওয়ালের দিকে কেন চেয়ে আছিস? ও তোর স্বামীকে খোঁজছিস নিশ্চয়?”

স্বামীর কথা শুনে হিয়ার শরীরে কাঁপন ধরে গেল। ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নেয়। দাহাব এহসান বাঁকা হেসে বলেন,

“মনে রাখিস বেশি ভালো সাজতে যাবি‌। তবে নিজের স্বামী-সন্তান দুটোই হারাবি। তাই বলছি , ভালো সন্তানের মত দুনিয়ার সামনে নিজেকে মিসেস হিয়া দেয়ান হিসেবেই পরিচয় দিস। আর আমি জনাব দাহাব এহসান হিসেবেই পরিচয় বহন করতে থাকব। কিন্তু সত্য পরিচয়ে আমি হয়ে থাকব তোর বাবা দাহাব এহসান আর তুই আমার মেয়ে হিয়া দেয়ান এহসান। ইনশর্ট এহসান নামটা লুকিয়ে থাকবে আরকি!
ওহ হ্যা তোর মেয়ের কাছে তো আমি আবার তার চাচা হয়। তার জন্যে তুই আমাকে দেবর বলেই ডাকতে পারবি। বাকি ক্ষেত্রে মা-ছেলে হয়ে পরিচয় দেবো মনে থাকে যেনো! আর হ্যাঁ তোর মেয়ে কে বলিস আমি আজ রাত ফ্রিই থাকব।”

দাঁত কেলিয়ে হাসতে থেকে বেরিয়ে যায় দাহাব। মিসেস হিয়া এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো সহ্য করছিলেন। সে আঁটকে পড়েছে তার স্বামী-সন্তানের কারণেই। নাহলে এই নরকযোগ্য বান্দাকে কবেই জাহান্নামের ভেতর পাঠিয়ে দিতেন। রাগে দাহাব এর আপ্যয়িত ওয়াইনের গ্লাসটা ছুঁ’ড়ে মা’রে টাইলার্সের উপর। গ্লাসটির ঠুংঠাং শব্দে দেওয়ালের থেকে গুনগুন শব্দ আসতে লাগল। মিসেস হিয়া দেওয়ালের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে করুণ গলায় বলেন,

“আমায় মাফ করে দিয়েন। আমি পারব না এ পথ থেকে বের হতে। তবুও আপনার আর তাবাসসুম এর কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।”

দেওয়ালের হাত ছুঁয়ে দিয়ে সে পুনরায় তার লাল রঙা শাড়ি পরণে জড়িয়ে নেয়। তার রুমের ভেতরে দালান-কাঠি দিয়ে মোড়ানো জায়গার ভেতর সে বসে পড়ে। সামনে কুসুম পানি রাখা। এতে কাটাছেঁড়া একটি পুতুল পানির ভেতর ফেলে দেন। হঠাৎ করেই রুমের আসবাবপত্র নড়চড় হয়ে কাঁপতে লাগল। মিসেস হিয়া নিজের শাড়ি খামচে ধরে রাখল। পরক্ষণে কারো গরম আহাটে বুঝতে পারল, খারাপ জ্বীন রুমে হাজির হয়েছে। ঠোঁট চেপে চোখ বুজে তাকে অনুভব করার চেষ্টা করে।

“বলুন আপনি আমায় কেনো ডেকেছেন?”

মিসেস হিয়া বাচ্চা একটা মেয়ের ছবি জ্বীনটির সামনে ছুঁ’ড়ে দেয়। সে তার গভীর সাদা চোখের দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

“এই মেয়ের খোঁজ করতে সময় লাগবে। কারণ মেয়েটার দৃষ্টিসীমার মাঝে আমি যেতে পারছি না। কারণ এ যে জায়গায় আছে সে জায়গার মানুষগণ ভীষণ পবিত্র মনের অধিকারী। তাদের সাথে টক্কর লাগলে আমার ক্ষতি হবে। এই কাজ যদি করে দেয় বিনিময়ে আমার লাভ কি বলুন?”

মিসেস হিয়া মুচকি হেসে বলেন,

“আপনাকে এক মেয়ের শরীর দান করা হবে।”

জ্বীনটি মাথা নেড়ে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। রুমের মধ্যে আর গরম আভাসটা নেই। সে তার ফোনে এক লোককে কল দেয়। লোকটি কল রিসিভ করতেই তিনি বলেন,

“মেয়েটা কি করছে?”

“আছে ম্যাম। আপনার কথামত জানে মা’রিনী।”

“খবরদার কিছু করার চিন্তাও করবি না। এখন শুন মেয়েটার খাবার-দাবার সব ঠিক রাখবি। একজনের কাছে বলিরপাঠা হিসেবে বিক্রি করতে হবে।”

“ঠিক আছে আপনি নিশ্চিত থাকুন।”

মিসেস হিয়া কল রেখে দেন। তিনি নিশ্চিত এবার নাজীবার খোঁজ পাওয়া গেলেই সে এই পথ থেকে তার স্বামী-সন্তান কে মুক্তি দিতে পারবে। কিন্তু তিনি এখন ভাবনায় পড়ে গেলেন কি করে আজ রাতে তার মেয়ে তাবাসসুম কে বাবার হাত থেকে রক্ষা করবেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

____

নাজীবা দরজা বন্ধ করে বসে আছে। লজ্জায় গাল হয়ে আছে তার। ‘ইশ্’ শব্দটা করে দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল সে। ওয়াশরুমে তর্ক-বিতর্কের পর নাজীবা আফরাজ কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে পালিয়ে যায়। আফরাজ নিজের আঙ্গুল চেক করে দেখে। তার আঙ্গুলটা লালচে দাগ হয়ে গিয়েছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে সেই আঙ্গুলের উপর চুমু দেয়। যা নাজীবা দরজার বাহিরে উঁকি দিয়ে খেয়াল করেছে। এ দৃশ্য যেন তার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে না চাইতেও লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আফরাজ যে তাকে মনে মনে পছন্দ করা শুরু করেছে এরই আরেকটা প্রমাণ পেয়েছে।
আফরাজ গলা ঝেড়ে উচ্চ আওয়াজে আকবর কে ডাক দেয়। আকবর বউয়ের আঁচলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। জ’ল্লা’দ বন্ধু যদি তাকে খেয়ে ফেলে তখন আর বাচ্চার বাপ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না তার। কুসুমা স্বামীকে ভয় পেতে দেখে চোখ ঘুরিয়ে বলে,

“এই যে মহাশয় বাহিরে আপনার বন্ধু ডাকছে। ভয় না পেয়ে তাড়াতাড়ি যান।”

বউয়ের কথা শুনে আকবর নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কুসুমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই আমি কবে ভয় পেলাম হাঁ? আ….আমার শীত লাগছিল। তাই তোমার আঁচলই গরমের জায়গা ভেবে লেপ্টে ছিলাম।”

নিজের ভাব বজায় রেখে সে দরজা খুলে আফরাজ এর সামনে গেল। আকরবকে দেখে সে বলে,

“আমি চিৎকার বের করতে পারি তাই না? আয় আজ দুজন মিলে একসাথে চিৎকার বের করতে মাঠে হা-ডু-ডু খেলবো কি বলিস?”

“দোস্ত গা’র্ন দিয়ে শু’ট কর, তাতেও রাজি কিন্তু তোর সাথে হা-ডু-ডু খেলে হাড্ডিসার হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই সো সরি। আই ক্যান্ট একসেপ্ট ইউর রিকোয়েস্ট।”

আকবরের পিঠে দুম করে এক বা’রি মা’র’ল সে।
‘উহহ উহহ মে’রে দিল রে’ বলে নিজেই পিঠে মালিশ করতে লাগল আকবর। পরক্ষণে দু’জন হেসে বেরিয়ে যায়। শুক্রবারে তাদের কাজ থাকে না। এদিনটায় তারা দুজনে বাইক রাইডিং করতে বের হয়। নাজীবা বেলকনি দিয়ে দৃশ্যটি দেখতে পেল। স্বামী আর দেবরের বের হওয়া দেখে মৃদু হাসল।
আকস্মিক সে নিজের শরীরে কাঁপন অনুভব করে‌। সে লুকিয়ে প্রতিদিন একটা করে ইনজেকশন নিয়ে থাকে। নাহয় সে ভাঙচুর করা আরম্ভ করবে। কাঁপা শরীরে বিছানার কিনারায় গিয়ে বসে পড়ে। বিছানার নিচ থেকে সুটকেস বের করে। তালা খুলতেই সামনে দৃশ্যমান হলো পাঁচ-ছ’য়েক ইনজেকশন। সেখান থেকে একটা নিয়েই নিজের কাঁধে পুশ করে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় সে এই ইনজেকশন নামক অস্ত্র কে ভয় পায়। ইনজেকশন নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শরীরের কাঁপন থেমে গেল। তথাপি ঘেমে জুবুথুবু হয়ে গেল। এখন গোসল না করলে তার শরীর ঘামে গিজগিজ করবে। সে উঠে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তার চলে যেতেই বেলকনিতে থাকা গাছের টবগুলো কাঁপতে লাগে। বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যায়। কোনো এক কারণে গাছের টবগুলোর মধ্যে এক টবে পচন ধরা শুরু করে।
একঘণ্টা পর নাজীবা গোসল সেরে আসরের নামাজ আদায় করে নেয়। চুলের থেকে তোয়ালে সরিয়ে হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকিয়ে, যখন সে তোয়ালটি বেলকনিতে মেলে দিতে গেল। তখনই পায়ে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে। সে চোখজোড়া সেদিকে নিতেই চিৎকার দিয়ে উঠল।

চলবে……
(বিঃদ্রঃ- ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)