Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 301



লুকোচুরি গল্প পর্ব-০৪

0

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
নীরা নাচতে নাচতে ঘরে এসে কেয়াকে কল দেয়।কেয়া কল রিসিভ করলে বলে,”দোস্ত কাল থেকে কলেজ যাব না।আপাতত কলেজ যেতে না করে দিয়েছে আম্মু।”

“দোস্ত তাহলে আমিও যাব না কলেজে।তুই না গেলে আমি কেনো যাব?”

“আচ্ছা তাহলে আয় আমাদের বাসায়।একসাথে মজা করব।”

“কালকে না দোস্ত। কাল বিকালে একটু বাইরে যাব আমি।পরশুদিন থেকে থাকব তোর সাথে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।এমনিতেও কাল ওই খচ্চর পড়াতে আসবে আমাকে।”

“দোস্ত বিয়ের আগে বরের কাছে পড়তে বসবি। আহ কি রোমান্টিক মোমেন্ট না বল?”

“ধুর,তুই ওই লোকের সাথে রোমান্টিক দেখছিস!কিভাবে বিয়ে ভাঙবো সেটা বল।”

“খুবই সিম্পল। কালকে পড়াতে আসলে পড়াশোনা না করে জ্বালাতে থাক।দেখবি রেগে যাবে। স্যার তো মুডি প্লাস পড়াশোনার প্রতি বেশি সচেতন।তোর মত ডাব্বা খাওয়া আবার যদি দেখে বিয়ের আগেই মাথায় চড়ে বসেছিস তখন নিজে থেকেই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।”

“হ্যা,ঠিক বলেছিস। কাল খুব জ্বালাবো আমি ওই ক্যাডার সাহেবকে।যখন দেখবে আমি বউ হলে তার জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে।নিজে থেকে রাস্তা কেটে চলে যাবে।”

“আচ্ছা দোস্ত বেস্ট অফ লাক।মা ডাকছে খেতে যেতে হবে,বাই।”

“বাই।”

সকালে~~~~~
নীরা কলেজে যায়নি বলে ছাদে উঠেছিলো।দীপান্বিতা এসেছে ঠিক সেই সময়। দীপান্বিতাদের ছাদ থেকে নীরাদের ছাদের দূরত্ব নেই বললেই চলে।ডিগবাজি দিয়ে ওপর ছাদে চলে যাওয়া সম্ভব। দীপান্বিতা নীরাকে দেখে বলে,”হবু ভাবী যে!এত সকালে ছাদে।আমাদের ভাগ্য কতটা ভালো তাইনা বল?পাশাপাশি বাসা থেকে বিয়ে হবে।”

মুখ ফুলিয়ে নীরা বলে,”আপু তুমিও?”

“আমিও কি?”

“ওই ক্যাডার সাহেব আমার শিক্ষক তাকে বিয়ে করা মানায়?”

“কেনো মানাবে না?”

“কেমন দেখা যায়? স্যার আর ছাত্রীর বিয়ে!”

জোরে হেসে দেয় দীপান্বিতা।বলে,”আমার ভাই নাহয় একজন শিক্ষক।তাই বলে কি এখন কাউকে বিয়ে করতে পারবে না?ভাইয়ের জন্য যে পাত্রী দেখতে যাব সে তো কোনো না কোনো কলেজের ছাত্রী হবে।বিউটি দেখে নিশ্চয়ই ভাইকে বিয়ে দিবো না?”

“হুম,বুঝলাম।তুমিও লেগে আছো আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য।”(মনে মনে বলে নীরা)।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীপান্বিতা বলে,”তোমার সেই খাদ্য বিশেষজ্ঞ ভাইয়ের কি খবর?বিয়েতে আসবে কি?”

“ভাই তো তেমন কথা বলার সময় পায় না।আজ পাঁচ বছর হলো বাইরে।মাসে দুই একবার ছাড়া কথা বলে না।ভাইকে তো তুমি জানো খুব ভালো করে।পরীক্ষার আগে কারো সাথে কোনো কথা বলে না।বিয়েতে আসবে না ভাই। আর কয়দিন পর ওর পরীক্ষা।”

“ওহ আচ্ছা,তাহলে আজ আমি আসি।রেডি থেকো কাল সকালে আমরা শপিং করতে যাবো।”বলেই চলে গেলো দীপান্বিতা।

নীরা বুঝতে পেরেছে দীপান্বিতা কষ্ট পেয়েছে।নীরব ও দীপান্বিতা একে অপরকে ভালোবাসতো।নীরব জার্মান যাওয়ার পরও খোঁজ নিয়েছিলো দীপান্বিতার।কিন্তু এক বছর পর থেকে আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না।কেনো এমন করছে নীরব এটা নীরা জানে না।

সন্ধায় দ্বীপ আসার আগে নীরা গান গায়,
“বিয়ের আগে জামাই আসবে আমায় পড়াইতে। আহা কি জীবন আমি পেলাম,তাতেই যায় আমার সময় ভাবিতে ভাবিতে।”

এমন সময় দ্বীপ এসেছে নীরাকে পড়াতে।নীরা ভদ্র মেয়ের মত করে কিছুক্ষণ চুপ ছিলো।হঠাৎ করে নীরা বলে ওঠে,”স্যার।”

“হুম,বল?”
“আপনাকে না এখন আমার স্যার মনে হচ্ছে না।”
“তাহলে কি মনে হচ্ছে?”
“আমার হবু বর।”
“মানে?”

“বুঝতে পারছে না? কাল তো আমাদের মানে আপনার আর আমার বিয়ের কেনাকাটা আছে।তারপর আমাদের মেহেদি রাত।আপনার নামে আমি আমার এই বাম হাতে মেহেদি দিবো।তারপর হবে আমাদের হলুদের অনুষ্ঠান।আপনাকে আর আমাকে জনে জনে এসে হলুদ লাগিয়ে দিবে। আর তার পরের দিন আমি আর আপনি তিন কবুল বলে হয়ে যাবো একে অপরের।”

খুক খুক করে কাশতে থাকে দ্বীপ।নীরা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।বলে,”এই নিন পানি খান।”

দ্বীপ পানি খেয়ে বলে,”বিয়ের সময় হলে বিয়ে হবে এখন পড়তে বস।”

“আচ্ছা এখন আপনাকে আমি ঠিক কি নজরে দেখবো বলুনতো?আমার কলেজের স্যার নাকি প্রাইভেট স্যার নাকি আমার হবু বর?”

দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।দেখতে পায় নীরা না পড়ার বাহানা করছে।তাই বলে,”আপাতত স্যার ভেবে রেসপেক্ট করো। কাল থেকে নাহয় আমাকে হবু বর ভেবে নিও।”

“কিন্তু স্যার মন তো আমার পড়ার ভিতরে নেই।মন তো আমার এখন বিয়ে নিয়ে পরে আছে।বিয়েতে কি কি কিনবো,কি কি পরবো আর কি কি করবো এসব নিয়ে।”

আর বলতে পারে না নীরা।ঠাস করে ডান গালে খায় এক থাপ্পড়।দ্বীপ এবার রেগে বলে,”সেই ধরে দেখছি বিয়ে বিয়ে করেই যাচ্ছো।তুমি কি মনে কর?আমি জানি না যে তুমি বিয়ে করবে না।শুধু শুধু পড়াশোনা থেকে মনোযোগ সরানোর ধান্দা তাই না?চুপচাপ এখন পড়তে বসো।”

এক থাপ্পড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ এসে যায় নীরার।এটা আজ থেকে না সেই সাত মাস থেকে হয়ে আসছে।সাত মাস হতে চললো দ্বীপ তাকে পড়ায়। আর এই সাত মাসে কয়বার যে নীরার গাল লাল হয়েছে তা নীরার কাছে অগণিত।

দ্বীপ নীরাকে পড়ানো শেষ করে চলে গেলো।নীরা বিড়বিড় করে বলে,”খচ্চর বেডা।আমার গাল করে লাল।আবার করবে আমায় বিয়ে।তোকে আমি করাবো কলিজা ভরে বিয়ে।তানাহলে আমার নামও নীরা নয়।”

~~~~~~
আজ নীরা ও দ্বীপ সপরিবারে একসাথে গেছে শপিংমলে।সবাই মিলে শপিং করতে থাকে। কেয়াও আছে নীরার সাথে।

নীরা কেয়ার কানে ফিসফিস করে বলে,”দোস্ত দেখতে দেখতে তো সময় এগিয়ে আসছে।বিয়ে ভাঙার তো কোনো নাম গন্ধ নেই।আজ আবার কেনাকাটা করতে এসেছি।”

“আরে দোস্ত পেরা নিবি না।শুধু চিল কর।এই সুযোগে কিছু ড্রেস তো পাবি।তাছাড়া শপিং করলেই তো আর বিয়ে হয় না।”

“আসলেই ঠিক বলেছিস তুই।এই সুযোগে অনেক কেনাকাটা করতে পারবো।খুব ভালো আইডিয়া।”বলেই নীরা বিয়ের জামাকাপড় বাদ দিয়ে রেগুলার জামা কাপড় চয়েস করতে থাকে।

নীরার এই খামখেয়ালী গুলো সবাই দেখতে থাকে।কিন্তু কেউ কিছু বলে না।সবাই জানে নীরার মত ঘাড় তেরা আর দুটো নেই।দ্বীপের মা নীরাকে কাপড়গুলো কিনে দিতে সাহায্য করে।নীরার মা চেয়ে চেয়ে তামাশা দেখে।শেষে না পেরে নিজেই মেয়ের জন্য বেনারসি কিনে নেয়।

চলবে…?

লুকোচুরি গল্প পর্ব-০৩

0

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কেয়া বাসায় যাচ্ছে।কলেজ ড্রেস পরে আসবে।কেয়া সিড়ি দিয়ে নামার সময় রিকের সঙ্গে ধাক্কা খায়।সিনেমাতে ধাক্কা খেলে নায়ক নায়িকা বিরক্ত হলেও রিক আর কেয়ার যেনো মনের ভিতর ভালোবাসার ঘণ্টা বাজতে থাকে।রিক কেয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগে কেয়া সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। আপাতত কথা বলবে না কেয়া।নিজের পিছনে কিছুদিন লাটাইয়ের মত ঘুরাবে।রিক জানতো না কেয়া রাতে এখানে ছিলো।জানলে সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে নীরাদের ফ্ল্যাটে আসতো।এখন আফসোস করতে করতে বলে,”যার জন্য কাল সারারাত নিজের বাসায় না থেকে অন্যের বাসায় পাহারা দিয়েছিলাম সে কি না আমার বাসাতেই ছিলো।ভালোবাসার খোজে গিয়েছিলাম আর ভালোবাসা ছিলো আমার নিকটে।বেটার লাক নেক্সট টাইম।”বলেই নিজেকে শান্তনা দিলো।

কলেজে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে নীরা ও কেয়া।দ্বীপ কলেজ গেট দিয়ে মাত্র ঢুকছে।ছাত্র ছাত্রীরা তাকে সালাম করে মানবতার সাথে কথা বলে।অনেকে তো আবার দ্বীপের দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়েই আছে।কেয়া নীরাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”দোস্ত তোর হবু বর গেলো ফিলিংস টা কেমন?”
নীরা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো কেয়ার দিকে।কেয়া অন্য দিকে ফিরে মিটমিট হাসতে থাকে।সবাই যে যার ক্লাসে এসে নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসে।

দ্বীপ এসেছে ক্লাসে সকল ছাত্র ছাত্রীরা দাড়িয়ে সম্মান দিলো তাকে।তারপর ক্লাস শুরু করা হলো।ক্লাসের ভিতরে নীরার কোনো মনোযোগ নেই।সে তো কোরিয়ান ড্রামা গুলো নিয়ে ভাবছে। হঠাৎ করে কেয়া নীরাকে খোঁচা দিয়ে বলে,”দোস্ত নিজের হবু বরের সঙ্গে ক্লাস করছিস,ফিলিংসটা কেমন?”

“ওই ছেরি ওই,কিসের হবু বর ও?আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।তাই সে আমার হবু বর না।”

নীরা ও কেয়ার কথা বলা দেখতে পায় দ্বীপ।ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি খেয়াল করে।তাই দ্বীপ নীরা ও কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”স্ট্যান্ড আপ।”

নীরা ও কেয়া উঠে দাড়ালো।দ্বীপ আবার বলে ওঠে,”এটা ক্লাস,তোমাদের মামার বাসা না যে ছুটি কাটাতে এখানে গল্প করবে।বই বের করো।”

“এই যা বই তো আনিনি।এখন তো এই খারূচ আমাদের কান ধরিয়ে রাখবে।কোন দুঃখে যে কেয়ার বাচ্চা কথা বলতে গেলো?”মনে মনে বলে নীরা।

নীরা বই বের করছে না দেখে দ্বীপ বুঝে যায় এরা আজও বই আনেনি।সাথে সাথে দ্বীপ বলে,”বই নিয়ে আসো নাই তাইতো?”

“জী, মানে স্যার ভু”

বাকি কথা বলার আগে দ্বীপ বলে ওঠে,”এখানে আসো।কান ধরে সবার সামনে দাড়িয়ে থাকবে।”

নীরাকে যেতে হয় সবার সামনে।কান ধরে দাড়িয়ে থাকে নীরা।এবার দ্বীপ কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হেয় ইউ,তোমাকে কি ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে? তুমি ও ওর মত বই তো নিয়ে আসলে না আবার ক্লাসে গল্প করতে থাকো।তুমিও এখানে এসে কান ধরে দাড়াও।”

কেয়াও কান ধরে দাড়ালো নীরার পাশে।টানা দশ মিনিট কান ধরে দাড়ানোর পর নীরার হাত ব্যাথা অনুভব করে।কানে হাত দেয়া অবস্থায় বলে,”খারুচ কোথাকার।ক্লাসে সবার সামনে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে।এ নাকি আবার আমার হবু বর?”

“তুই না বললি বিয়ে করবি না।ইনি তোর হবু বর না।এখন আবার হবু বর বানিয়ে দিলি।”

“বিয়ে করবো না এটা যেমন ঠিক।এখনও বিয়ে ভাঙ্গিনি সে দিক থেকে উনি আমার হবু বর এটাও ঠিক।”বলেই দ্বীপের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো নীরা।দ্বীপ চশমার আড়াল থেকে দেখেছে।কিন্তু কিছু বলেনি।না দেখার ভান করে ক্লাস শেষ করে।

কলেজে শেষ করে বাসায় এসে নীরা।মিসেস নাজনীন টিভি দেখছেন।নীরা সেখানে যেয়ে বলে,”আমি ওই খারুচ প্রতিবেশীকে বিয়ে করবো না।”

“রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো নীরা।উনি তোমার হবু স্বামী।তোমার সাথে ছয়দিন পর বিয়ে।”

“কিসের স্বামী হ্যা?পুরো ক্লাসে সবার সামনে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে।সে কি না আবার হবু স্বামী?”

“তুমি ছাত্রী হিসেবে যেমন কাজ করবে তেমনি ফল পাবে।তর্ক না করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেও।সন্ধায় দ্বীপ পড়াতে আসবে।”

“বিয়ের আগে কি না হবু বউকে পড়াবে! এ কেমন বিবাহ?”

“এটা আমি আর দ্বীপ বুঝে নিবো।তুমি তোমার মত পড়াশোনা চালিয়ে যাও।”

মায়ের সাথে কথায় পারবে না দেখে নীরা চলে গেলো ঘরে।গোছল করে খেয়ে দেয়ে একটু মিনির সাথে খেলাধুলা করলো।সন্ধার দিকে দ্বীপ এসেছে পড়াতে।দ্বীপ ও নীরা পড়ার টেবিলে বসে আছে।দ্বীপ বলে,”তোমার তো ম্যাথ এ সমস্যা আছে।বের করো বই।”

নীরা বই এর পৃষ্ঠা বের করতে করতে বলে,”স্যার জীবনে অনেক ম্যাথে সমস্যা দেখেছি।কোনো না কোনো ভাবে সমাধান পেয়ে যাচ্ছি।এই ম্যাথ টি একটু বুঝিয়ে দিবেন?”

“কোন ম্যাথ?”

নীরা বত্রিশ পাটি বের করে বলে,”একটি লোক যখন বিয়ের ছয়দিন আগে তার ছাত্রী ওরফে হবু বউকে পড়াতে আসে।তাহলে ঐ লোক আর তার ছাত্রী বিয়ের প্রস্তুতি কয়দিন আগে থেকে নিবে?

দ্বীপ চোখের চশমা ঠিক করে নেয়।তারপর বলে,”একটি ছাত্রী যদি বিয়ের ছয়দিন আগে তার শিক্ষক ওরফে হবু বরের কাছে কষিয়ে এক থাপ্পর খায়।তাহলে ঐ ছাত্রী কবে থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে?”

শুকনো ঢোক গিলে বই বের করলো নীরা।বিয়ে হবে আর ছয়দিন পর।তার আগে তো আবার কেনা কাটা করবে,মেহেন্দি আর গায়ে হলুদ আছে।এদিকে কি না হবু বর হয়ে হবু বউকে পড়াশোনার জন্য শাসন করছে।থাপ্পড়ের হুমকিও দিচ্ছে।মনে মনে নীরা বলে,”এমন বিয়ে করবো না আমি।”

নীরাকে পড়ানো শেষ করে দ্বীপ চলে যায়।নীরা প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে বিয়ে ভাঙবে।বাবাকে বলে দেখবে একবার।দৌড় দিয়ে চলে গেলো নীরা মিস্টার রবিনের কাছে।মিস্টার রবিন একটু আগে শোরুম থেকে এসেছেন।নাস্তা করে টিভি দেখছে।নীরা আশেপাশে তাকালো।মিসেস নাজনীন নেই।এই সুযোগে বাবাকে বস করতে হবে।সাথে সাথে বাবার পাশে বসে বাবাকে জড়িয়ে বলে,”ও বাবা,আমি না তোমার আদরের একমাত্র মেয়ে।আমাকে ওই সুগার ড্যাডির সাথে বিয়ে দিতে পারো তুমি?”

“ছিঃ মা এভাবে কাউকে বলতে নেই।দ্বীপ যথেষ্ট ইয়ং এবং হ্যান্ডসাম পারসন।সুগার ড্যাডি তো বলা হয় বাবার বয়সীদের।দ্বীপ তো তোমার বাবার বয়সী না।”

“বাবার বয়সী না হলেও বাবার মত। শিক্ষক হলো পিতা মাতার সমতুল্য।ম্যাম হলে মাতা স্যার হলে পিতা।এদের বিয়ে করলে বলতে হবে নাউযুবিল্লাহ।”

মেয়ের কথায় হেসে দেন মিস্টার রবিন।বলে,”দ্বীপকে তোমার পছন্দ না কেনো?”

“কিভাবে পছন্দ হবে?আজকের দিন বাদ দিলে আর দুইদিন পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান।উনি কি না আমাকে এখনও পড়াতে আসছে।আবার কলেজেও শাসন করে।এমন লোককে কে বিয়ে করতে চাইবে?”

“তুমি যেমন বাঁদরের মত লাফালাফি করো তাতে ও ঠিকই কাজ করে।”রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বলে মিসেস নাজনীন।

“থাক না মেয়েটাকে আর বোকো না।কয়দিন পর তো বিয়ে।আপাতত কলেজে যাওয়ার দরকার নেই।”

“তুমি আর নীরব আদর দিয়ে বাঁদর বানিয়েছো।ঠিক আছে কলেজে যেতে হবে না।কালকের দিন টুকু শুধু দ্বীপ এসে পড়িয়ে যাবে।এমনিতেও বিয়ের পরে দুই তিনদিন পড়াশোনা করবে না।”

নীরা খুশিতে নেচে উঠলো।আপাতত কলেজে যাবে না।কি মজা তার।

চলবে…?

লুকোচুরি গল্প পর্ব-০২

0

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২
#ইশরাত_জাহান
🦋
নীরা ঘরে এসে কিছুক্ষণ শোক পালন করে।ঠিক সেই সময় মিনি আসে তার কোলে।মিনিকে আদর করতে করতে নীরা বলে,”ক্যাডার সাহেব আমাকে খালি মারে।কথায় কথায় পড়তে বলে।তুই বল জীবনে কি খালি পড়াশোনা সব?আমাদের কি একটু কম পড়াশোনা করলে সমস্যা আছে?উল্টো আমরা কত মহান কাজ করি।আমরা কম পড়াশোনা করে খারাপ রেজাল্ট করে উল্টো অন্যদের টপ রেজাল্ট করতে সাহায্য করি।আমাদের জন্য কত কত ছাত্র ছাত্রী আজ টপ লেভেলে যাবে।কারণ আমরা লো লেভেলে থাকবো।সেখানে উনি আমাকে পড়ার জন্য খালি শাসন করে।এক আমার আম্মু আরেক হলো ওই ক্যাডার সাহেব।তাকে কি না আবার করতে হবে বিয়ে।”
নীরা একা একা বকতে থাকে।এদিকে তার মিনি মিয়াও মিয়াও করতে থাকে।

এর কিছুক্ষণ পর নীরার ফোনে ভিডিও কল আসে।নীরব দিয়েছে কল।ভাইয়ের কল দেখে বিয়ের কথা ভুলে যায় নীরা।নীরা কল রিসিভ করে।ওপাশ থেকে ভিডিও কলে নীরব বলে,”কেমন আছিস বোন?”

“আমি ভালো আছি,তুমি?”

“তোদের ছাড়া ভালো নেই।সারাদিন ব্যাস্ত থাকতে হয়।ফ্রী সময়ে তোদের মিস করি।”

ইমোশন হয়ে গেলো নীরা।বলে,”তুমি চলে এসো তাড়াতাড়ি ভাই।”

নীরব বোনের সেন্টি খাওয়া দেখে বলে,”এইতো কয়দিন পরেই এক্সাম তারপর নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট এর সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারলে বিডিতে নিজের অবস্থান করে ফেলবো।বাংলাদেশে খাদ্য তালিকার যে অবস্থা এতে ওখানে একদিনে লাখ লাখ টাকা কামাতে পারবো।”বলেই হেসে দেয়।

নীরাও ভাইয়ের কথায় তাল মিলিয়ে হাসে।নীরা যাই করুক নীরব সবসময় তার বোনকে সাপোর্ট করে।মিসেস নাজনীন তো নীরবকে এর জন্য অনেক বকা দেন।কিন্তু লাভের লাভ শূন্য।

রাতে খাবার টেবিলে নীরা তার মত খেয়ে কতগুলো কাটা মিনিকে খাইয়ে দেয়।মিসেস নাজনীন মিনিকে পছন্দ করে না।বিড়ালের লোম তার বিরক্ত লাগে।কিন্তু মেয়ে ভালোবাসে এই মিনিকে।তাই আর কিছু বলে না।এর আগেও একটি বিড়াল ছিলো নীরার।অনেক কষ্টে তাড়িয়ে দেয় তিনি।সেই সময় নীরার খুব কান্না কাটি শুরু হয়।কান্না করতে করতে প্রায় জ্বর চলে আসে।তারপর একদিন হঠাৎ এই মিনি আসে তার দুয়ারে।মিসেস নাজনীন যতই বলুক বিড়াল সহ্য হয় না নীরার বার বার মনে হয় তার মা এই মিনিকে এনেছে।কারণ মিনির লোমগুলো খুব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার ছিলো।মিনির নখও কাটা যাতে আছর না লাগে।এছাড়াও মিনির গলায় একটি ঘণ্টা আকারে চেনের চিহ্ন আছে।

মিসেস নাজনীন সন্তানদের প্রতি খুব যত্নশীল।সন্তানের জন্য কোনটা বেস্ট হবে তাই ভাবেন।এই যে দ্বীপের মা বাবা খুবই ভালো মনের মানুষ।দ্বীপের মা মিসেস সাবিনা তো সহজ সরল।তাই তো যখনই নীরার জন্য তার কাছে আবদার করলেন তিনি রাজি হলেন।কথাগুলো ভাবছে আর মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে মিসেস নাজনীন। চাইল্ডিশ মন মানসিকতা নীরার।মা যে তার সুখ দেখতে চায় এটা নীরা বুঝে না।উড়তে থাকা বয়স যে এখন তার।ভেবেই চোখের কোনা থেকে পানি মুছলেন।

মিনিকে নিয়ে নীরা ঘরে এসে ঘুমিয়ে গেলো।নীরা ঘুমানোর পর মিসেস নাজনীন এসে নীরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিলেন।দরজা দিয়ে সব কিছুই দেখছিলেন মিস্টার রবিন।

মিসেস নাজনীন ঘরে আসার পর মিস্টার রবিন বলে ,”মেয়েকে নিজের চোখের বাইরে রাখতে পারো না আবার শাসন কর।”

মিসেস নাজনীন হালকা হেসে বলে,”শুধু কি মেয়ে?তোমরা সবাই আমার জীবন।নীরব আছে সেই দূর দেশে ভিডিও কলে দেখি তাকে।মেয়েই তো এখন আমার কাছে থাকে।”

“এত তাড়াতাড়ি নীরার বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?”

“ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।আমিও চাইনি ওকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে।দ্বীপের মায়ের প্রপোজাল পেয়ে প্রথমে রাজি হতে চাইনি। পরে ভাবলাম মেয়ে আমার একদিন বিয়ে দিতেই হবে।দ্বীপ কাছে থাকে ছোট থেকে ওকে চিনে।দ্বীপ অনেক কর্মঠ আবার ধৈর্যশীল।আমাদের মেয়েকে ওই সোজা করতে পারবে।মিসেস সাবিনা আমাদের নীরাকে আগলে রাখবে খুব সুন্দর করে।এদিকে মেয়ে আমার দূরে কোথাও না যেয়ে পাশের বাসায় থাকবে।দ্বীপের সাথে এখন বিয়ে দিলে অন্তত মেয়েকে দেখতে তো পাবো।”
বলেই স্বামীর বক্ষে মাথা রাখলেন মিসেস নাজনীন।মিস্টার রবিন জানেন এখন তার বিবিজান মুখ লুকিয়ে কান্না করবে।প্রকাশ্যে ভালোবাসা ও কান্না কোনোটাই দেখতে পারেন না তিনি।মিসেস নাজনীনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মিস্টার রবিন।

সকালে~~~
নীরাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে ডাকছে কেয়া।নীরা বিরক্ত হয়ে উঠে বসে।ঘুমের ভাব এখনও কাটেনি তার।ঝিমুতে ঝিমুতে বলে,”কি হয়েছে কি?আজ শনিবার কলেজ বন্ধ।বিরক্ত করছিস কেনো?”

কেয়া নীরার হাত ধরে টানতে টানতে বলে,”দোস্ত ওঠ সকাল এগারোটা বাজে আর তোর ঘুম শেষ হয় না।আজ আমরা পার্লারে যাবো।পার্লারের নতুন অফার এসেছে আজ।হেয়ার কেয়ার সহ ফেস ক্লিঞ্জিং।তাড়াতাড়ি রেডি হো।”

পার্লারের কথা শুনে নীরার ঘুম হাওয়া।নীরা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।তারপর মিসেস নাজনীনকে বলে পার্লারে যায়।নীরা সাজগোজ করতে খুব ভালোবাসে।মিসেস নাজনীন এদিকে মেয়েকে বাধা দেয় না।মেয়ে তার পরীর মত থাকবে তবেই তো তার ভালো লাগা।

পার্লার থেকে ফ্রেশিয়াল ও হেয়ার কেয়ার করে বাসায় এসে নীরা ও কেয়া।আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়।নীরা সোফায় বসে কেয়াকে জিজ্ঞাসা করে,”দোস্ত তুই তো পার্লারে যেতে পছন্দ করিস না।তোর নাকি নেচারাল স্কিন ভালো লাগে।তাহলে আজ কেনো পার্লারে গেলি?”

কেয়া দুষ্টু হেসে বলে,”আণ্টি বলল আজ তোকে দ্বীপ স্যার পুরো পরিবারসহ দেখতে আসবে।তাই তোকে নিয়ে একটু পার্লার থেকে মন ভালো করে নিয়ে আসি।”

নীরা হা হয়ে গেলো যেনো।ধোঁকা দিলো তাকে।শেষমেশ বান্ধবীও এমন হয়ে গেলো।রাগ উঠলো তার।চিল্লিয়ে বলে,”তুই এক্ষনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবি।বান্ধবী নামে কলঙ্ক তুই।”

“আণ্টি আমাকে ডেকেছে তুই যেতে বলার কে?আমি আন্টির কথাতে এসেছি।”
নীরা চুপ করে বসে আছে।কেয়া নীরার কাছে এসে নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”দোস্ত দেখতে আসবে শুধু আজকে।দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয় না।এত রিয়েক্ট করিস না একদম নরমাল থাক।দ্বীপ স্যার আছে না তোর জন্য।উনি দেখিস নিজেই বিয়ে করতে চাইবে না।”

“তুই শিওর উনি না করে দিব?”

“তোর কি মনে হয় এই বাংলাদেশে সুন্দরী মেয়ে আমরা একা আছি?আমাদের থেকেও সুন্দরী প্লাস ভালো মেধাবী অনেক মেয়ে আছে।দ্বীপ স্যার যেখানে একজন বিসিএস ক্যাডার উচ্চ শিক্ষিত একজন মানুষ আমার মনে হয় না এই বিয়ে উনি করতে চাইবে। আর তুই ওনার সাথে কথা বলার সুযোগ পাবি তো।”

নীরা আশার আলো পেলো কেয়ার কথায়।তাই বেল,”হ্যা ঠিক বলেছিস তুই।উনি নিজেই আমাকে পছন্দ করে না।কেমন রাগ রাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।দেখলেই বোঝা যায় আমাকে তিনি পছন্দ করে না।”

কেয়া মিটিমিটি হাসে আর বলে,”এই তো দোস্ত জাস্ট চিল কর।আয় তোকে শাড়ি পড়িয়ে দেই।”

“আবার শাড়ি কেনো?”

“আণ্টি বলেছে তাই।তুই না করিস না প্লিজ।শাড়ি পড়লেই তো আর বিয়ে হয় না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে দে শাড়ি পরিয়ে।”

নীরাকে শাড়ি পরিয়ে দেয় কেয়া।শাড়ি পরানোর ভিতর কেয়া বলে,”দোস্ত তোদের বাসার ওই সাদা বিল্লি টা কোথায়?”
নীরা মিনিকে দেখিয়ে বলে,”চোখে দেখস না নাকি?ওই যে আমার মিনি।”

‘চ’ শব্দ করে কেয়া বলে,”আরে এটা না।আমি তোদের দোতলার ওই বিলেতি ছেলের কথা বলছি।”
নীরা বুঝতে পারলো কার কথা বলছে কেয়া।

পিঞ্চ মেরে কেয়াকে বলে,”ওও আচ্ছা তুইও ওর খোঁজ নিচ্ছিস তাহলে?”

“আমিও খোঁজ নিচ্ছি মানে।ওই সাদা বিল্লিও কি আমার খোঁজ নেয়?”

“হ্যা,কাল আমাকে বলেছিলো তোর ব্যাপারে।তোর নাম্বার চেয়েছে অবশ্য।আমি দেই নি তখন বলে তোর সাথে আলাদা কথা বলিয়ে দিতে।”

খুশি হয় কেয়া।জিজ্ঞাসা করে,”তুই কি বলেছিস তাকে?”

“আমি হ্যা বুঝিয়েছি।”মন ভাঙ্গার কথা আর বলেনা কেয়াকে। রিককে তো আর ভালো বাসেনি।রিক আর কেয়া যেহেতু দুজন দুজনের উপর লাড্ডু খেয়ে বসে আছে।সে কেনো বাধা হতে যাবে?

দ্বীপ ও তার পুরো পরিবার এসেছে নীরাদের বাসায়।নীরার মা সবকিছু রেডি করেছে সাথে অবশ্য রিকের মাও ছিলেন।

দ্বীপ সোফায় বসে আছে। গায়ে কালো রঙের সুট চোখে চশমা মুখে চাপদারি আর মাথার চুলগুলো স্পাইক করা।দ্বীপ সবসময় এভাবেই পরিপাটি যেনো তাকে দেখতে জেন্টেলম্যান লাগে।কলেজের অনেক মেয়ে ক্রাস খেয়ে বসে আছে তার উপর।নীরার কাছেও ভালো লাগে তাই তো সে দ্বীপকে ক্যাডার সাহেব বলে।কিন্তু ওই যে পড়াশোনা ওটা এসে দেয়াল হয়েছে নীরার মনে।

নীরাকে ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে আনে কেয়া।নীরার হাতে শরবতের ট্রে দেওয়া হয়। শাড়ির আচল দিয়ে নীরার মাথায় বধূবেশে রাখে কেয়া।নীরা বেচারি টাল সামলাতে পারে না।ট্রেতে গুনে গুনে দশটি গ্লাস।আবার মাথায় কাপড় দেওয়া আছে।নীরা ফিসফিস করে কেয়াকে বলে,”ওই ছেমরি তুই আমার মাথায় কাপড় দিয়ে দিবি ভালো কথা। ঘরের ভিতর থেকে সেফটিপিন দিয়ে নিয়ে আসতে পারলি না?”
কেয়া বলে,”দোস্ত আমি কি জানতাম মাথায় কাপড় দিতে হবে।আণ্টি এই মাত্র বলে গেলো তাও তোকে ড্রয়িং রুমে আনার পর।”
বলেই নীরাকে নিয়ে গেলো দ্বীপের পরিবারের সামনে।

দ্বীপের পাশে মিস্টার সমুদ্র ও মিসেস সাবিনা বসে আছেন।মিস্টার সমুদ্রের কোলে অভ্র বসে আছে।দীপান্বিতা নীরার কাছে বসেছে।নীরা এসে সবাইকে সালাম দেয়।কিন্তু বিয়ের কথাবার্তা চললে মেয়েরা যে লজ্জা পায় তার ছিটেফোটাও নেই নীরার ভিতর। দ্বীপ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনও তাকায়নি নীরার দিকে।দীপান্বিতা খেয়াল করলো বিষয়টি।তাই দীপান্বিতা বলে,”ভাই একটু তাকাও তোমার হবু বউয়ের দিকে।”

দীপান্বিতার কথায় দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে।দেখতে পায় কমলা রঙের তাতের শাড়ি পরিহিতা নারীকে।মুখে মেকআপ এর সৌন্দর্য। বেশ সাভাবিক আছে সে।তাকে যে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে তাও আবার তারই শিক্ষক এতে যেনো তার কোনো রিয়েকশন নেই।দীপান্বিতা দেখলো দ্বীপ নীরাকে পর্যবেক্ষণ করছে।দীপান্বিতা বলে ওঠে,”কেমন লাগছে আমাদের নীরাকে?”

গলা খাকারি দেয় দ্বীপ।এটা কোনো জায়গা হলো প্রশ্ন করার?কিভাবে উত্তর দিবে সে?লজ্জা তো নীরার না তারই লাগছে এবার।শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে চায় দ্বীপ ।অভ্র মামুর গলা খাকারি দেখে ঠান্ডা লেগেছে ভেবে নেয়।তাই বলে,”মামু এই শীতে তুমি শরবত নিও না।তোমার ঠান্ডা লেগেছে তো।”
ভাগ্নের কথায় আর খেতে পারলো না।রেখে দিলো গ্লাস।

দেখাদেখির মাঝে মিস্টার রবিন বলে ওঠে,”আমরা তো এমনিতেও অনেক কথাবার্তা বলেছি।এবার একটু ছেলেমেয়েদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।”
মিসেস নাজনীন চোখ বড়বড় করে তাকালেন মিস্টার রবিনের দিকে।ফিসফিস করে বলে,”তুমি জানোনা তোমার মেয়ে কেমন?ও তো সুযোগ পেলে আজই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।”
শুষ্ক ঢোক গিলে মিস্টার রবিন বলে,”এমনিতেও তো বিয়ে না হওয়া অব্দি দ্বীপ নীরাকে পড়াতে আসবে।তাহলে আজ কি সমস্যা?”
মিসেস নাজনীন কিছু বলতে যাবে তার আগে মিস্টার সমুদ্র বলে ওঠে,”হ্যা হ্যা ওদেরকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হোক।”

সবার সম্মতিতে দ্বীপ ও নীরাকে নেওয়া হলো নীরার ঘরে।বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে দ্বীপ ও নীরা।কারোর মুখে কোনো কথা নেই।দ্বীপ তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে। আর নীরা সে তো শুনতে চায় দ্বীপ কি বলে।কিন্তু দ্বীপ তো স্ট্যাচু হয়েই আছে তো আছে।

না পেরে বেলকুনিতে বর্ডার দেওয়া ছোট দেওয়ালে হালকা ঝুঁকে কোমর বাঁকিয়ে দ্বীপের দিকে তাকায় নীরা। যাতে করে দ্বীপের নজর এবার তার দিকে আসে ওই চাঁদের দিকে না। হয়েছেও ঠিক তাই মুখের সামনে আসাতে দ্বীপ তাকায় নীরার দিকে কিন্তু কিছু বলে না।নীরা এবারও দ্বীপকে চুপ থাকতে দেখে বলে,”আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি স্যার?আমি তো ফেলটুশ।আমার মত মেয়ে আপনার বউ হলে লোকে বলবে ওই দেখো ফেলটুশ এর বর।ভালো লাগবে শুনতে!পারবেন কি এটা মেনে নিতে?”

নীরার কথার পিঠে দ্বীপ বলে ওঠে,”প্ল্যান কি তোমার?”

কিছু বুঝে ওঠে না নীরা।তাই বলে,”বুঝিনি আমি।”

হাত দুটো পকেট থেকে বের করে বুকের উপর ভাজ করে দ্বীপ বলে,”যেহেতু আমরা দুজনেই মনের মত সঙ্গী পাচ্ছি না তাই জিজ্ঞাসা করলাম।বিয়ে ভাঙ্গার জন্য কোনো প্ল্যান কি আছে?”

চোখ ছোট ছোট করে নীরা বলে,”আমি কেনো বিয়ে ভাঙ্গার প্ল্যান করবো? বিয়ে তো ভাঙবেন আপনি।”

“সম্ভব না আমার দ্বারা।এখন কিছু বলতে গেলেই বয়স নিয়ে খোটা দিচ্ছে।বাসার সবার ভোট এখন তোমার দিকে।মা বাবাকে বলেও লাভ হচ্ছে না।তোমার মত ইচড়ে পাকা মেয়েই পারবে বিয়ে ভাঙতে। যা করার করতে হয় কর এই বিয়ে টা ভাঙ্গার জন্য।বেস্ট অফ লাক,আসছি আমি।”
বলেই চলে গেলো দ্বীপ।হা হয়ে তাকিয়ে আছে নীরা।বিয়ে ভাঙবে না তাহলে!এখন কি করবে?

নীরাকে আবার ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসা হয়।এবার দ্বীপের মা মিসেস সাবিনার পাশে বসানো হয়েছে নীরাকে।মিসেস সাবিনা নীরাকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন। আংটি পরানোর পর সবাই চলে যায়।বিয়ে এক সপ্তাহ পরে হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।

নীরার সাথে আজ কেয়া থাকবে।রাত তো অনেক হয়েছে তাই আর বাসায় গেলো না কেয়া।রিককে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু রিক তো এখানে আসেনি।নীরার দিকে তাকিয়ে দেখে মন খারাপ করে আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে নীরা।কেয়া শান্তনা দিয়ে বলে,”আরে ইয়ার জাস্ট চিল।আংটি পরালেই তো আর বিয়ে হয় না।”

থুতনিতে হাত দিয়ে নীরা বলে,”আর কি কি করলেই বিয়ে হয় না দোস্ত?দুপুর ধরেই তো খালি শুনছি এটা করলে বিয়ে হয় না ওটা করলে বিয়ে হয় না।”

চলবে…?

লুকোচুরি গল্প পর্ব-০১

0

#লুকোচুরি_গল্প
#সূচনা_পর্ব
#ইশরাত_জাহান

“আমার মতো এত কিউট গুলুমূলু একটি মেয়েকে তুমি ওই সুগার ড্যাডির সাথে বিয়ে দিতে পারো না আম্মু।”

মেয়ের কথা শুনে আড় চোখে তাকালেন মিসেস নাজনীন।মেয়ে তার বয়সের তুলনায় একটু বেশি পাকা।একজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারারকে সে সুগার ড্যাডি বলছে।প্রতিবাদ করে মিসেস নাজনীন বলে,”দ্বীপকে তোমার কোন দিক থেকে সুগার ড্যাডি মনে হয় বলবে নীরা?ওর বয়স মাত্র বত্রিশ।”

নীরা অবাক হয়ে বলে,”বত্রিশ এটা তোমার কাছে মাত্র মনে হলো আম্মু!আমার বয়স আর তার বয়স দেখো।”
“এই বয়স কোনো ফ্যাক্ট না।তোমার বাবার সাথে আমার বয়সের অনেক ফারাক।তাই না বলুন?”নীরার বাবাকে উদ্দেশ্য করে।
নীরার বাবা মিস্টার রবিন স্ত্রীকে কিছুটা ভয় পান।তাই তিনি বলে,”হ্যা হ্যা ঠিকই তো।বিয়েতে বয়স কোনো ফ্যাক্ট না।এজন্যই তো তোমার আম্মু আর আমি হলাম লাভ বার্ডস।”মেয়েকে চোখ টিপুনি দিয়ে।

নীরা জানে তার আব্বু তার আম্মুর কথার নড়চড় করবে না।যমের মতো ভয় পায় তিনি।নীরা মন খারাপ করে চলে গেলো ঘরে।

(নীরার পুরো নাম মুনজেরিন নীরা।এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে,বয়স আঠারো।ক্লাস টেনে একবার ফেইল করেছে তাই তার এই অবস্থা।বাবা স্বর্ণের ব্যাবসা করেন,মা গৃহিণী।নীরার বড় ভাই আছে।নাম নির্বাণ আহমেদ নীরব।এখন জার্মানিতে পড়াশোনা করছে ফুড নিউট্রিশন নিয়ে। আর মাত্র কয়েকমাস সময় আছে।তারপর দেশে চলে আসবে।)

ঘরে এসে নীরা তার মিনিকে(বিড়াল) কোলে নেয়।মিনিকে আদর করতে করতে কল দেয় তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী কেয়াকে।
(কেয়াও নীরার সাথে পড়াশোনা করে।সেও নীরার মত ক্লাস টেনে ডাব্বা প্রাপ্ত।পড়াশোনায় কেউই ভালো না। নীরাদের এলাকায় কয়েক বাসা পড়েই কেয়াদের বাসা।কেয়ার পুরো নাম কুহেলিকা কেয়া।কেয়ার বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন,মা গৃহিণী।কেয়ার কোনো ভাই বোন নেই।)

নীরার কল দেখে সাথে সাথে রিসিভ করে কেয়া।বলে,”হ্যা দোস্ত বল।”
কান্না কান্না ভাব করে নীরা বলে,”আর তোর দোস্ত।জানিস আব্বু আম্মু মিলে কি করেছে?”
“তুই না বললে জানবো কিভাবে?”
“আব্বু আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।তাও কি না ওই সুগার ড্যাডির সাথে।”

বুঝে উঠলো না কেয়া।সুগার ড্যাডি আবার কে?সাথে সাথে বলে ওঠে,”এই সুগার ড্যাডি আবার কে দোস্ত?আংকেল আন্টি কি না শেষ পর্যন্ত তোকে ফিফটি প্লাস কারোর সাথে বিয়ে দিবে!এটা আশা করা যায় না।”

তেতে ওঠে নীরা।সে কোথায় বত্রিশ বছরের লোককে সুগার ড্যাডি বলছে আর তার বান্ধবী ভাবছে ফিফটি প্লাস কাউকে।নীরা নিচের ঠোঁট উচু করে বলে,”আমি ওই প্রতিবেশী খারুচ স্যারের কথা বলছি।যে কি না আমাকে ক্লাসে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো।”

কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে কেয়া বলে,”দোস্ত আমাদের ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্টের আদনান কবির দ্বীপ স্যারের কথা বলছিস?”
“হ্যা”
“তুই না ওনাকে ক্যাডার সাহেব বলতিস! হঠাৎ সুগার ড্যাডি উপাধি দিলি কেনো?”

“ওই ছেরি বুঝোস না কেন বলি?আমার বয়স সবে আঠারো। আর উনি কি না বত্রিশ।হিসাব করে দেখ চৌদ্দ বছরের ডিফারেন্ট।ওনাকে আমি বিয়ে করবো না।”

নীরার নেকী কান্না বুঝতে পারে কেয়া।তারপরও শান্তনা দিতে বলে,”আচ্ছা দোস্ত শান্ত হ।তুই কিভাবে জানলি যে ওনার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

নীরা একটু আগের ঘটনা কেয়াকে বলে,”আমি ছাদে গিয়েছিলাম।ওই পুচকু অভ্র ছিলো সেখানে।বয়স মাত্র চার কিন্তু মুখে পাকা পাকা কথা।আমাকে ওদের ছাদ থেকে দেখে বলে,’ মামী।’
আমিতো অবাক কাকে ডাকছে না ডাকছে। পরে দেখি আমাকে ডাকছে।আমিও জিজ্ঞাসা করেছি,’ আমাকে কেনো মামী বলছো?’
অভ্র বলে,’ নানু বলেছে তুমি আমার মামী হবে।মামার সাথে তোমার বিয়ে দিবে।তোমার মা বাবাও এসেছিলো আমাদের বাসায়।’
অভ্রর কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ে।সাথে সাথে আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি।আম্মু স্বীকার করেছে সবকিছু।”

নীরার কথা শুনে কেয়া মিটিমিটি হাসে। জোরে হাসলে নীরা রাগ করবে। নীরাকে সান্তনা দিতে বলে,”আরে দোস্ত চিল কর।দ্বীপ স্যার যে রাগী আর বদমেজাজি উনি তোকে বিয়ে করবে না।”

সাথে সাথে খুশি হয় নীরা।বলে,”হ্যা রে,তুইতো ঠিক কথাই বলেছিস।উনি তো মেধাবী ছাত্র ছাত্রী বেশি ভালোবাসে।আমার মত ফেলটুশ উনি বিয়ে করতে চাইবে না।”
“বাহ,নিজের সুনাম নিজে কি সুন্দর ঝরঝর করে বলছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে।জানি এটা গর্বের বিষয় না।তাও আমার কাছে পড়াশোনা ভালো লাগে না।রাখছি এখন বাই।”বলেই কল কেটে দিলো।
এখন শান্তি পাচ্ছে নীরা।ওই ক্যাডার সাহেব তাকে নিজে থেকেই রিজেক্ট করবে।তাকে আর কষ্ট করা লাগবে না।ভেবেই লুঙ্গি ড্যান্স দিতে থাকে।

(আদনান কবির দ্বীপ পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার দিয়ে সফল হয়েছে।তাই তার বয়স একটু বেশি।ঢাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস এর লেকচারার।নীরার ডিপার্টমেন্টের স্যার অবসর প্রাপ্ত হওয়ায় দ্বীপ এই ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নিয়েছে।এছাড়া দ্বীপ ও নীরা দুজন প্রতিবেশী।পাশাপাশি বাসা দ্বীপ ও নীরার।শুধু তাই না নীরার প্রাইভেট টিচার এই দ্বীপ।দ্বীপের বাবা মিস্টার সমুদ্র একজন ব্যাবসায়ী সাথে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক।মা মিসেস সাবিনা একজন গৃহিণী।দ্বীপের বোনের নাম দীপান্বিতা দীপা।ঘরে বসে অনলাইনে জামা কাপড়ের ব্যাবসা করে।দ্বীপের একমাত্র আদরের ভাগ্নে অভ্র বয়স চার।)

নীরা ড্যান্স করছে আর নীরার মিনি এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।ড্যান্সের তালে তালে নীরা গাইতে থাকে,”ক্যাডার আমায় করবে রিজেক্ট,শান্তি আমার তাতে।কে কি বলল ভাবিনা আমি, ঠেকা পড়েনি আমার শুনতে।ক্যাডার তুমি সুগার ড্যাডি।তোমায় ভালো বাসিনা আমি।”
গান গাইতে গাইতে আর নাচতে নাচতে পিছনে ফিরে দেখে মিসেস নাজনীন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

মাকে দেখে নীরা নাচ বন্ধ করে দেয়।শুকনো ঢোক গিলে বলে,”কি হয়েছে আম্মু?”
বাম ভ্রু উচু করে মিসেস নাজনীন বলে,”খুব মজা না দ্বীপ তোমাকে রিজেক্ট করবে বলে?”
মুখের বত্রিশ পাটি বের করে নীরা বলে,”না মানে ওই আরকি।”
মেয়েকে ওয়ার্নিং দিতে মিসেস নাজনীন বলে,”শুনো নীরা দ্বীপ কি করবে না করবে তা দেখার জন্য আমি আর তার বাবা মা আছি।তোমাকে যেনো আমি নাকোচ হতে না দেখি।পড়াশোনার অবস্থা তো খুবই খারাপ।কে বিয়ে করবে তোমাকে?মিসেস সাবিনা ভদ্রতার সাথে ভালোবেসে তোমাকে আপন করে নিচ্ছে।চুপচাপ বিয়ে করবে।তানাহলে রিক্সা চালক দেখে বিয়ে দিবো।”বলেই চলে গেলেন মিসেস নাজনীন।

মায়ের কথায় মুখ চুপসে এলো নীরার।তার মা কি ভালো পাত্র দেখে না? বেছে বেছে এই ক্যাডার সাহেব আবার এখন রিক্সা চালক।আচ্ছা রিক্সা চালক হ্যান্ডসাম দেখে কেউ কি আছে?থাকলে সে প্রেম করে বিয়ে করে নিবে।তার মা যে লেভেলের পিছে লেগেছে তাতে বোঝা যায় স্যার আর ছাত্রীর বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। ভাবা যায় বিষয়টি!স্যার বিয়ে করেছে তার ছাত্রীকে।তাও কি না সেই ছাত্রী যাকে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখে।মাঝে মাঝে তো ঠাস করে গালেও কয়েকবার থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে।তবে ওটা প্রাইভেট পড়ানোর সময়। কারো সামনে না।

আজকে শুক্রবার নীরার ছুটি।দ্বীপ পড়াতে আসবে না।বিকাল বেলা নীরা ছাদে যায় তার প্রিয় হলুদ গোলাপ ফুলগাছ গুলোর যত্ন করতে।নীরার গোলাপ গাছে কয়েকটি ফুল ফুটেছে।যেগুলো নীরার খুব ভালো লাগে।নীরা ফুল গাছে পানি দিতে থাকে।তখন তার পাশে আসে রিক।
(রিক নীরাদের বাসায় ভাড়া থাকে।রিকের বাবা লন্ডন থাকেন।রিকের বাবা ও মা বিয়ের পর লন্ডনে সেটেল হয়।ওখানেই রিকের জন্ম হয়।রিক ওখানেই বড় হয় কিন্তু রিকের নানু অসুস্থ হওয়ায় বাংলাদেশ আসতে হয়।তখন থেকেই রিক ও তার মা এই ঢাকা শহরে ভাড়া থাকে।রিকের বাবা যখন পার্মানেন্ট আসবে তখন ঢাকায় বাড়ি করবে তারা।রিক এবার মাস্টার্স ভর্তি হয়েছে।)

রিক নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হাই কিউটি।”
“হাই”(ইশ এই রিককে কি আমার মায়ের চোখে পড়ে না?)মনে মনে বলে নীরা।
রিক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”আমি তোমাকে সাহায্য করি?”
নীরা ঘাড় কাত করে হ্যা বোঝায়।মনে মনে বলে,”মেরে দিলমে লাড্ডু ফুটা দিয়া।”
রিক কাজ করে দেয়।টবের মাতিগুলো ঝুরঝুরে করে তাতে প্যাকেট থেকে জৈব সার মিশিয়ে বলে ওঠে,”কিউটি,একটি কথা বলবো তোমাকে?”
নীরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হ্যা বোধক মাথা নাড়ালো।
রিক দেখলো নীরার সম্মতি।তাই বলে,”তোমার বান্ধবী কেয়া আছে না?ওকে আমার খুব ভালো লাগে।কয়েকমাস ধরে ওকে আমি ফলো করি।যদি কিছু মনে না করো ওর নাম্বার দিতে পারবে?”
নীরার মনের মধ্যে এবার বিরহের গান বাজতে লাগলো,”লাড্ডু ফাট গায়া। খাতাম বাই বাই টাটা।”

রিক নীরার কোনো উত্তর না পেয়ে ভেবে নেয় নীরা কেয়ার নাম্বার দিবে না।অবশ্য বান্ধবীর অনুমতি ছাড়া কিভাবে দিবে?তাই রিক নিজে বলে ওঠে,”ওকে ফাইন, দেওয়া লাগবে না নাম্বার।শুধু এবার কেয়া তোমাদের বাসায় আসলে আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিও প্লিজ।আমার জীবনে ফার্স্ট লাভ এটা।যদি ওর আলাদা কোনো ভালোবাসার মানুষ না থাকে আমি ওকে পেতে চাই।”

নীরা আহত দৃষ্টিতে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।রিক নীরার মুখের দুই পাশের গাল টেনে বলে,”থ্যাঙ্ক ইউ কিউটি। সো সুইট ইউ আর।”
হালকা ব্যাথা পায় নীরা।বাচ্চা নাকি যে এভাবে গাল টানবে।পেয়েছে কি এরা।এই গালে একজন থাপ্পড় দেয় তো আরেকজন গাল টেনে দেয়।সরকারি পেয়েছে তাকে?

চলবে…?

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#সর্বশেষ_পর্ব
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোঁপায় গাজরাটা বেঁধে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে শাড়ি পরিহিত সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সানাত। এতবড় পেট নিয়ে সে শাড়ি পরেছে। নিজের কাছেই নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে। হাজার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও অন্তিমের জোরাজুরির কাছে হার মেনে শাড়ি পড়েছে। আজকে ছোঁয়ার বৌভাত। সবকিছু ভুলে ছোঁয়া নিজেকে শুধরে নিয়ে নতুন করে একটা চাকরিতে জয়েন করেছিলো। সেখানেই তার কলিগ ফাহাদের সাথে আলাপ এবং যা অবশেষে বিয়েতে পরিণত হয়েছে। সানাত বেজার মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। এমন মুহূর্তেই ঘরে প্রবেশ করলো অন্তিম। আয়নার সামনে এসে সানাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

বাহ্ আমার শ্যামবতীকে তো খুব সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানোই যাচ্ছেনা।

থামুন আপনি। একদম বাড়িয়ে বলবেন না। দেখুন আমাকে পুরো ঢোলের মতো লাগছে।

কে বলেছে তোমাকে বলেছে তোমাকে ঢোলের মতো লাগছে?

কারো বলতে কেনো হবে? আমার চোখ আছে। আমি নিজেই তো দেখতে পাচ্ছি।

হ্যাঁ চোখ তো আমারও আছে। কিন্তু আমার চোখে তোমাকে মোটেও ঢোলের মতো লাগছে না বরং মিষ্টি আলুর মতো লাগছে।

ব্যাস সানাত সঙ্গে সঙ্গে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। তারপর রাগে গজগজ করে বললো,

কীইই আপনার আমাকে আলু মনে হচ্ছে?

অন্তিম ঢোক গিলে বললো,

হ্যাঁ, মিষ্টি আলু।

একদম চুপ। অসভ্য লোক কোথাকার! সরুন বলছি!

একি সানাত ডার্লিং তুমি ক্ষেপে কেনো যাচ্ছো? মিষ্টি আলু কি খারাপ নাকি? ওটা তো সুইট একদম তোমার মতো।

একটাও কথা বলবেন না আপনি। আপনার জন্যই হয়েছে সব। নিজে তো একদম হিরো সেজে যাচ্ছেন। মেয়েরা তো হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আর আমাকে আলু বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

উফফও সানাত মেয়েরা আমার উপর হুমড়ি খেলো কি খেলো না তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমার শুধু তুমি হুমড়ি খেলেই হলো। আর আমার সানাতকে মোটেও আলু লাগছে না। গলুমোলু লাগছে। ইচ্ছে করছে কি যে করিইইই!!

সানাত লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তবুও রাগ দেখিয়ে বললো,

থামুন নির্লজ্জ লোক!

তুমি যাই বলো সানাত আমি নির্লজ্জ না হলে তুমি প্রেগনেন্ট হতে না! তোমাকে এতো গলুমলু কিউট লাগছে দেখে আমার তো ইচ্ছা করছে বারো মাসই তোমাকে প্রেগনেন্ট বানিয়ে রাখি। আমার ফ্যামিলি প্ল্যানিং বন্ধ করা যাবেনা।

ছিঃ ছিঃ থামুন। ঠোঁটকাটা লোক! মুখে কিচ্ছু বাঁধেনা। অসভ্য!

অন্তিম হো হো করে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো।
.
.

🌻
ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে অন্তিম। তার পাশেই বসে আছে সানাত। সানাত বাইরের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,

আচ্ছা আর কতক্ষন লাগবে পৌঁছাতে?

অন্তিম ড্রাইভ করতে করতেই বললো,

বেশিক্ষণ না। বিশ মিনিটের মতো লাগবে।

ওহ্।

কিছুক্ষণ পর সানাত আচমকা জানালা দিয়ে বমির জন্য মুখ বাড়িয়ে দিলো। অন্তিম সঙ্গে সঙ্গে ফিরে তাকালো। তারপর একহাতে সানাতকে ধরে বললো,

সানাত খারাপ লাগছে? আমাকে বলো।

সানাত বমির কারণে কিছুই বলতে পারছেনা। এদিকে অন্তিম অস্থির হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সামনে তাকাতেই দেখলো একটা চলন্ত ট্রাকের মুখোমুখি তারা। অন্তিম কোনো রকমে গাড়ি কন্ট্রোল করে কাটিয়ে নিলেও শেষ রক্ষা হলোনা। মুহূর্তেই তারা একটা খাম্বার সাথে সংঘর্ষ হলো। কিছুক্ষণ পর অন্তিম কোনরকমে চোখ খুলে তাকিয়ে সানাতের দিকে তাকাতেই তার শ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। সানাত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। একটা হাত জানালার বাইরে। হাত থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে। অন্তিম শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। তারপর পাগলের মতো সানাতকে ধরে বললো,

সানাত! এই সানাত চোখ খোলো। জান প্লীজ এমন করে না। সানাত! কলিজা আমার কষ্ট হচ্ছে দেখো। কথা বলোনা সানাত। আমি পাগল হয়ে যাবো সানাত তোমার কিছু হলে। মরেই যাবো। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো অন্তিম।
.
.

🌻
হসপিটালে ওটির সামনে করিডোরে ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে বসে আছে অন্তিম। তার থেকে একটু দূরেই চেয়ারে বসে সেই কখন থেকে কাঁদছে ওহী। সানাতের এই খবর শোনার পর নিজেকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছেনা ওহী। রাদিফ বারবার বোঝাচ্ছে। কিন্তু ওহী মানতেই পারছেনা।
অন্তিমের মা অর্পিতা আঞ্জুম উঠে এসে ছেলের সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

অন্তিম! বাবা এখানে এমন করে বসে থাকিস না। ঠিক হয়ে যাবে সানাত।

অন্তিম ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালো। তারপর মুহূর্তেই গলার ভেতরে এতক্ষণ ধরে দলা পাকানো কান্নাগুলো বেরিয়ে আসলো। মাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠলো,

মা! আ..আমার সানাত! আমার সানাতকে এনে দেও মা। আমি আর কিচ্ছু চাইনা। শুধু সানাতকে চাই। মা আমি বাঁচবো না ওর কিছু হলে। আমি কেনো একটু সচেতন হলাম না মা। আমার জন্য আমার সানাতের আজ এই হাল।

অন্তিম বাবা শান্ত হ। কিচ্ছু হবে না দেখিস।

আমি কিভাবে শান্ত হবো মা। আজ সকালেও সানাত একদম ঠিক ছিলো। আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছিল। আর সেই সানাত আমার চোখের সামনে রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিল। আমি কি করে নিজেকে বুঝ দেবো মা?

অন্তিমের কান্নার মাঝেই একজন নার্স বেরিয়ে এসে বললো,

পেশেন্টের দুই ব্যাগ ব্লাড লাগবে। প্লিজ ইমিডিয়েটলি জোগাড় করুন।

অন্তিম তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো,

আমার ওয়াইফের অবস্থা কেমন?

এখনি কিছু বলা যাচ্ছেনা। প্রচুর ব্লাড গেছে। আর উনি প্রেগনেন্ট ইনজুরিও হয়েছে। আপনারা ব্লাডের ব্যবস্থা করুন। বলেই নার্স চলে গেলো।
.
.

করিডোরে এখনো ঠায় বসে আছে অন্তিম, ওহী, রাদিফ, অর্পিতা আঞ্জুম, ওয়ালিদ আহসান। কিছুক্ষণ হলো ছোঁয়ারাও এসেছে। সকলেই অপেক্ষায় আছে একটা ভালো খবরের। সানাতের সিজার অপারেশন চলছে। কিছুক্ষণ পরেই ভেতর থেকে একটা নতুন প্রাণ চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। তার কান্নার মাধ্যমে সে জানান দিচ্ছে যে সে এসে গেছে। অন্তিম সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার ভেতর। তারপর কিছুক্ষন পরেই একজন নার্স একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে এলো। অন্তিম কোলে দিয়ে বললো,

আলহামুলিল্লাহ আপনার মেয়ে হয়েছে।

অন্তিম সেসবে কান না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

আগে বলুন আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ মা আর বেবি দুজনেই রিস্ক থেকে মুক্ত, ভালো আছে।

অন্তিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর নিষ্প্রভ চোখে তাকালো সদ্য তাঁর কোলে দেওয়া নবজাতকের মুখের দিকে। চেহারা কার মত ঠিক বোঝা যাচ্ছে না তবে গায়ের রঙ যে মায়ের মতো পেয়েছে তা একদম স্পষ্ট। বাচ্চাটা ড্যাবড্যাব চোখে তাঁর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তিমের চোখের কোটর বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা নোনা জল। তারপর আলতো করে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,

আমার শ্যামবতীর শ্যামকন্যা। আমার আরেকটা আম্মু। পাপা তোমার জন্য কতো এক্সাইটেড ছিলো তুমি জানো!

শুধু তুমি একা এক্সাইটেড ছিলে না আমরাও ছিলাম। পেছন থেকে বললো ওহী।

আমি বেশি ছিলাম তোর থেকে বুঝলি।

বললেই হলো নাকি। দেও বাবুকে আমার কোলে দেও তো। আমার সানাতের সন্তান। আমি ওকে নেব না ? ও আমার কত্তো আদরের হবে জানো তুমি। মাথায় করে রাখবো ওকে আমি।

অন্তিম হাসলো। তারপর বাচ্চাকে ওহীর কোলে দিলো। ওহী নিয়েই বললো,

ভাইয়া, আম্মু, আব্বু দেখো একদম সানাতের মতো মিষ্টি হয়েছে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবেই যে ও আমার সানাতের অংশ। মাশাআল্লাহ।

এই ওহী আমার নাতনিকে আমার কোলে দে বলছি। তুই যেভাবে নাচানাচি করছিস আমার নাতনি ভয় পাবে। বললেন অর্পিতা আঞ্জুম।

আম্মু আমি তো মাত্রই নিয়েছি।

চুপ কর। দে আমার কাছে।

না না আমি নেবো আমার নাতনিকে। আমার নাতনি ওর দাদাভাইয়ের কাছে আসতে চাচ্ছে। সরো তোমরা। বললেন অন্তিমের বাবা ওয়ালিদ আহসান।

না আমার নাতনি ওর দাদুর কাছে যাবে।

আরেহ না মা বাবু এখন ওর ফুফা আংকেলের কাছে যাবে। বললো রাদিফ।

ওহীও দেবেনা আরি দিয়ে বসলো।
অন্তিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে এদের বাচ্চামো কাণ্ড কারখানা দেখছে। তারপর সে ওহীর কোল থেকে মেয়েকে নিয়ে বলে উঠলো,

আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। এখন সে তার পাপার সাথে মাম্মাকে দেখতে যাবে। বলেই বাবুকে নিয়ে সানাতের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো। এদিকে উপস্থিত সকলেই হেসে ফেললো এমন কাণ্ড দেখে।
.
.

অন্তিম দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো ধবধবে সাদা বেডে সানাত ঘুমিয়ে আছে। অন্তিম মেয়েকে নিয়ে আস্তে করে সানাতের সামনে দাঁড়ালো। তারপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সানাতের কপালে। সানাত চোখ পিটপিট করে তাকালো। অন্তিম সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

কেমন আছো?

সানাত দুর্বল কণ্ঠে বললো,

ভালো। আমার বেবি?

অন্তিম নিজের কোলের দিকে ইশারা করে বললো,

এইযে। আমি আর আমার মেয়ে তোমাকে দেখতে এসেছি।

সানাত ক্যানেলা লাগানো হাতটা বাচ্চার গায়ে আলতো করে রেখে বললো,

কার মতো হয়েছে?

আমার শ্যামবতীর মতো।

আমার মতো কেনো হলো আপনার মত সুন্দর হলেই তো পারতো।

অন্তিম সানাতের ঠোঁটে এক আঙ্গুল রেখে বললো,

চুপ। আমার মেয়ে আমার ঘরের পূর্নিমার চাঁদের মতো হয়েছে।

সানাত হাসলো। তারপর বললো,

বাবাহ মেয়ে তো দেখছি আসতে না আসতেই বাবার ভক্ত হয়ে গেছে। একদম বাবার বুকের সাথে চুপটি করে লেগে আছে।

অন্তিম হাসলো। তারপর বললো,

হ্যাঁ ও ওর পাপার হার্টবিট শুনছে। ওর পাপা ওকে আর ওর মাম্মাকে কতোটা ভালোবাসে সেটাই দেখছে।

বাকিরা কোথায়?

বাইরে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে।

কেনো?

কে আগে কোলে নেবে এই নিয়ে! আমার মেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো তাই আমি পালিয়ে এসেছি মেয়েকে নিয়ে।

সানাত খিলখিল করে হেসে উঠলো। অন্তিম বুকে হাত চেপে ধরে বললো,

ইসস্ আমি আবারও মরলাম সানাত তোমার ঘায়েল করা হাসিতে।

সানাত হাসলো। অন্তিম বলে উঠলো,

কে কে জানতো যেই মেয়েটাকে একসময় জেদের বশে, সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় এনেছিলাম সে একদিন আমার সন্তানের মা হবে! তাকে কখনো নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবো!

সানাত হাসলো। অন্তিম বলে উঠলো,

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার ছিলো!

~সমাপ্ত~

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২৩

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২৩
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

আজ সকাল থেকেই সানাত মহা ব্যস্ত। আজ ওহীর বিয়ে। মানে ঘরোয়া ভাবেই ছোটো খাটো করে আয়োজন। কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনে গোটা বাড়ি ভরপুর। সানাত শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ওহীর ঘরের দিকে পা বাড়ালো কিন্তু অমনি পেছন থেকে কেউ হেচকা টান দিয়ে অন্য ঘরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো। সানাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে। তারপর বলে উঠলো,

একি আপনি হঠাৎ এভাবে এখানে টেনে আনলেন কেনো?

ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে। বললো অন্তিম।

সানাত যেনো ঝটকা খেলো এমন কথা শুনে। মুহূর্তেই ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো,

কিইই আপনি এখন এই সময় আমাকে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে এখানে নিয়ে এসেছেন!

হ্যাঁ। কি করবো তুমি এতো ব্যস্ত যে আমাকে তো এখন তোমার নাগাল পেতে গেলে এপয়েনমেন্ট নিতে হবে। তাই এভাবে চোরের মতো টেনে নিয়ে এসেছি।

দেখুন আপনার এসব ফালতু কথা শোনার মতো সময় আমার নেই। এমনিতেই আমি কাজের যন্ত্রণায় শান্তিতে দম নিতে পারছি না আর আপনি আমার সাথে এখন এসব ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করছেন! সরুন তো!

এভাবে ইগনোর করছো? ছি ছি সানাত আহত হলাম।

আপনার নাটক বন্ধ করুন। আমার অনেক কাজ আছে। ছাড়ুন।

এখন না হয় ছাড়লাম কিন্তু রাতে তোমার খবর আছে।

সানাতের কান গরম হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। হালকা রাগ দেখিয়ে বললো,

ছিঃ অসভ্য লোক! এতো নির্লজ্জ কেনো আপনি ?কোনো কথা মুখে আটকায়না। ঠোঁটকাটা!

অন্তিম বাঁকা হেসে বললো,

এখনো তো আসল কাজই করিনি তার আগেই আমি অসভ্য? আর হাসবেন্ড ওয়াইফ দুজনেই লজ্জাবতী হলে তো মহা সমস্যা। তুমি এমনিতেই যে লজ্জাবতী তোমার সাথে যদি আমিও তোমার মতো লজ্জাবতী হই তাহলে আমার আর বংশের বাতি জ্বলবে বলে মনে হয়না। তাই আমার বংশ রক্ষা করতে হলে আমাকে একটু নির্লজ্জ হতেই হবে।

সানাত লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে অব্দি পারছেনা। অন্তিম হো হো হেসে ফেললো সানাতের এই হাল দেখে। সানাত ঈষৎ রাগ দেখিয়ে বললো,

দিন দিন চরম অসভ্য হয়ে গেছেন আপনি। পথ ছাড়ুন আমার।

বেশ যাচ্ছো যাও। আলমারিতে গিয়ে দেখো একটা লাল শাড়ি আছে। ওটা পরো আজ।

সানাত মিষ্টি করে হাসলো । তারপর চলে গেলো। এদিকে অন্তিম জানেনা ওই শ্যামবতীর হাসিতে কি ছিলো কিন্তু সে বুঝলো এই মুহূর্তে সে আবার আটকে গেলো ওই মারাত্মক ভুবনভুলানো হাসিতে।
.
.

ওহী সেজে গুজে বসে আছে। সানাত রেডি হয়ে সবে মাত্র ওহীর কাছে এসেছে। ওহী সানাতকে দেখা মাত্রই রেগে বললো,

কিরে হারামজাদি তুই এতক্ষনে এসেছিস!

বিয়ের দিনেও তুই আমাকে গালিগালাজ করছিস বেয়াদব!

তো করবনা? তুই কেমন বেস্টফ্রেন্ড একটা বারও আমার খোজ নিতে আসলি না!

আমি তোর বিয়েতে খেটে মরছি আর তুই আমাকে বলছিস আমি খোঁজ নেইনা?

আমার কাছে তো আর আসিস নি।

নাটক কম কর ফাজিল। খাবার এনেছি নে খেয়ে নে।

দোস্ত তুই আমার সত্যিকারের বান্ধুবি একদম আপন। আমি খিদার জ্বালায় মরে যাচ্ছিলাম। মানে আমার বিয়েতে আমি অভুক্ত এটা কোনো কথা? আমি বাদে সবাই পেট পুরে খেয়ে নিয়েছে।
.
.

ঠিক তিনবার কবুল আর একটা স্বাক্ষর করতেই ওহীও আজ কারো বিবাহিতা স্ত্রী হয়ে উঠলো। এই কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে পড়ানো শেষ হয়েছে ওহী আর রাদিফের। ওহী নতুন বউ হয়ে ঘোমটা টেনে বসে আছে। আর পাশে বসেই সানাত ওর মজা নিচ্ছে। সব শেষে কাজীকে বিদায় দিতে গেলেই অন্তিম আটকে বললো,

দাঁড়ান কাজী সাহেব। যাচ্ছেন কোথায়?

কেনো বাবা আমার কাজ তো শেষ।

কে বললো আপনার কাজ শেষ। এখনো আরেকটা বিয়ে পড়ানো বাকি। অন্তিমের বলা এই একটা কথা যেনো বজ্রপাতের মত পড়লো ঘরের ভেতর। উপস্থিত সকলেই অবাক। কাজী নিজেও অবাক হয়ে বললো,

বিয়ে তো হয়ে গেছে বাবা। তুমি আবার কার বিয়ের কথা বলছো? বলেই তিনি পেছনে খুঁজতে লাগলেন। অন্তিম বলে উঠলো

আপনি ওদিকে কি খুঁজছেন? পাত্র তো আমি। আমি আমার বিয়ের কথা বলছি।

এবার যেনো উপস্থিত সকলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কাজী যেনো হোঁচট খেলেন। তারপর ঢোক গিলে বললো,

তা কি করে সম্ভব বাবা? তুমি তো বিবাহিত! বউ আছে তোমার।

তাতে কি হয়েছে দ্বিতীয়বার কি বিয়ে করা যায়না?

সানাত যেনো এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মুহূর্তেই চিল্লিয়ে উঠে বললো,

এই আপনি কিসব বলছেন? আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন মানে?

অন্তিম সানাতের দিকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

আহ থামো তুমি।

তারপর আবার কাজীর দিকে তাকিয়ে বললো,

আপনি শুরু করুন কাজী সাহেব। আমি আবার দ্বিতীয় বিয়ে করবো। প্রথম বিয়েটা আমার মন মতো হয়নি পরিস্থিতি আলাদা ছিল তাই এবার দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো।

কাজী মিন মিন করে বললো,

কিন্তু বিয়েটা কাকে করবে বাবা? পাত্রী কই?

কেনো আপনি চোখে দেখছেন না? তারপর সানাতের দিকে ইশারা করে বললো,

ঐ যে পাত্রী।

কিন্তু ওটা তো তোমার বউ।

তো আমি কখন বললাম আমি অন্য কোনো মেয়ে বিয়ে করবো?

কিন্তু তুমিই তো বললে তুমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করবে !

তো আমি শুধু বলেছি আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো। কাকে করবো সেটা তো বলেনি। আর বিয়ে করা বউকে কি দ্বিতীয়বার বিয়ে করা যায় না? কোনো সমস্যা আছে?

হ্যাঁ করা যায় কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ব্যাপারটা একটু কেমন না?

যেমনি হোক আমি করবো। আমার শখ আমার বউ। আমি আমার মনের মত করে বিয়ে করবো। বিয়ে নিয়ে সবাইরি কম বেশি অনেক স্বপ্ন থাকে। কিন্তু প্রথম বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেলো। তাই আবার করবো। আপনি শুরু করুন। আমার বউ একদম লাল বেনারসিতেই আছে আর আমিও পাঞ্জাবিতে। বলেই সানাতের দিকে তাকালো অন্তিম। সানাত মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসছে। অন্তিমও হেসে ফেললো।
তারপর দুজনেই মুখোমুখি বসলো। তারপর আরো একবার নতুন করে শুরু করলো সবটা। পুরোনো সব অপূর্ণতা আজ পূর্ণতা পেলো অন্তিমের হাত ধরে। পুরো ঘর ভর্তি আত্মীয় স্বজন। সানাত লজ্জায় তাকাতে অব্দি পারছেনা। না জানি তারা এই পাগলামিকে কি ভেবেছে? সানাত মাথা নিচু করে বসে আছে। তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনা জল। সানাতের আজও মনে আছে সেই বারও সে কবুল বলতে গিয়ে কেঁদেছিল এবারও কাঁদছে। তবে তফাৎ একটাই গতবারের কান্নাটা অসহায়ত্বের ছিলো আর এবারের কান্নাটা সুখের, প্রাপ্তির। সানাত বিশ্বাস করতে বাধ্য অপেক্ষা আর ধৈর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়। আর অন্তিম বিশ্বাস করতে বাধ্য উপরওয়ালা যা কেড়ে নেয় তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ফিরিয়ে দেয়।
.
.

ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২:৩০। সানাত সবে মাত্র ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে। আজকের রাতটা রাদিফকে কে এখানেই রেখে দেওয়া হয়েছে। ওহীর বাসর ঘর সাজিয়ে সানাত নিজের ঘরে পা রাখলো। তবে তার ঘরে ঢুকে সে যা দেখতে পেলো তাতে সে পুরোপুরি স্তব্ধ। তার সামনে অন্তিম পুরো খাট ফুল দিয়ে সাজিয়ে খাটের মাঝে বসে আছে। সানাতকে দেখা মাত্রই অন্তিম বলে উঠলো,

সারাজীবন শুনে আসলাম বাসর রাতে নাকি বউরা বরের জন্য অপেক্ষা করে আর আমার ক্ষেত্রে তো পুরো উল্টো। আমি তোমার জন্য বসে আছি আর তোমার কোনো পাত্তাই নেই! মান ইজ্জত আর রইলো না।

সানাত দরজা লক করে এসে বললো,

এসব কি? কি করেছেন আপনি এসব? পুরো খাট এভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন কেনো?

কি করবো বলো আমার তো আর বাসর ঘরের খাট সাজিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই তাই নিজেরটা নিজেই সাজালাম। তুমি।ভাবতে পারছো সানাত আমার ছোটো বোনও বাসর করে ফেললো আর আমি বিয়ের এতমাস হয়ে গেলো অথচ আমি করতে পারলাম না।

সানাত লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তবুও মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো,

ছিঃ! অসভ্য লোক। নিজের বোনের বাসরের কথা বলছে! এই আপনার একটুও লজ্জা করে না?এতো নির্লজ্জ কেনো আপনি?

অন্তিম কিছু না বলেই খাট থেকে নেমে সানাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ওই মুহূর্তেই লোডশেডিং হয়ে গেলো। সানাত সামনে দাড়িয়ে থাকা অন্তিমকেই আকড়ে ধরে বললো,

একি অন্ধকার হয়ে গেলো কেনো?

ভালোই হয়েছে। এবার আমি আমার কাজ শান্তিতে করতে পারবো।

মানে?

আপনার নির্লজ্জ মানুষটা আজ নির্লজ্জের সর্বশেষ অব্দি যাবে। চলুন খাটে গিয়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করি।
বলেই এক টানে কোলে তুলে নিলো সানাতকে। সানাত লজ্জায় মুখ লুকালো অন্তিমের বুকে। অন্তিম হাসলো। ভাগ্যিস আজ লোডশেডিং হয়েছিল নয়তো সানাত আজ আবারও কঠিন প্রেমে পড়ত অন্তিমের সেই নজরকাড়া হাসির প্রেমে।
অতঃপর আজ বহু বাঁধা আর দূরত্বের পরে অবশেষে একত্রিত হলো দুটি দেহ আর মিলন হলো আত্মার সাথে আত্মার। আজকের এই পূর্নিমার চাঁদও সাক্ষী হলো একটি মধুচন্দ্রিমা রাতের। চাঁদ হাসলো কি হাসলো না বোঝা গেলোনা তবে আজ অবশেষে পূর্ণতা মিললো অন্তিম আহসান আর সানাত নামের দম্পতির।
#চলবে

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২২

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২২
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

ড্রয়িং রুমে বসে নিজের খুব পছন্দের একটা সিরিয়াল দেখছিল কাজল আর তার পাশে বসে আছে রাবেয়া বেগম। এমন সময় হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠায় কাজল বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলতে চলে গেলো। কিন্তু দরজা খুলতেই সে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে চরম অবাক। সামনে অন্তিম দাড়িয়ে আছে। আজ হঠাৎ এই সময় অন্তিমের আগমন বেশ অবাককরা একটা বিষয়। ভেতর থেকে রাবেয়া বেগম বলে উঠলেন,

কিরে কাজল, কে এসেছে?

খালাম্মা ভাইজান আইছে।

কে?

আর কিছু বলার আগেই অন্তিম ঢুকে পড়লো। তারপর সোজা ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালো। রাবেয়া বেগম এই সময় হঠাৎ অন্তিমকে দেখে বেশ চমকে উঠলেন। এই মুহূর্তে সে অন্তিমকে দুঃস্বপ্নেও এখানে আশা করেননি। তবে তারসাথে বেশ আনন্দও হচ্ছে তাঁর এই ভেবে যে যাক সানাত তারমানে অন্তিমকে মানিয়ে নিয়েছে ছোঁয়াকে বিয়ে করার জন্য। তাই অন্তিম এসেছে। রাবেয়া বেগম নিজের ভাবনা ফেলে অন্তিমের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

একি অন্তিম তুমি হঠাৎ এই সময়ে? কোনো দরকার ছিলো?

জ্বি, একটা অত্যন্ত দরকারি কাজেই এসেছি।

ওহ্। তা দাড়িয়ে আছো কেনো বসো।

আমি বসতে আসিনি। আঙ্কেল বাসায় আছেন?

হ্যাঁ। আছেন। ঘরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

ওহ্। একটু ডেকে দিন ওনাকে। কিছু জরুরী কথা আছে।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ডাকছি। আর ছোঁয়াকেও ডেকে দিচ্ছি তুমি বসো। কতদিন পর এলে! এই কাজল অন্তিমের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।

না না এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এখানে খেতে আসিনি।

তা বললে হয় নাকি? তুমি কতদিন পর এলে আমাদের বাসায়। তুমি বসো আমি ডেকে আনছি। বলেই তিনি চলে গেলেন।
.
.

ড্রয়িং রুমে সোফায় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে অন্তিম, আরহাম মির্জা, রাবেয়া বেগম আর ছোঁয়া। পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে কাজল। তার মন বলছে আজ একটা কোনো বড়সড় ধামাকা হবে। আর সে ধামাকা মিস করার পাত্রী নয়। আরহাম মির্জা বলে উঠলেন,

একি অন্তিম তুমি কিছু খাচ্ছো না যে! নেও।

আমি তো বললাম আমি এখানে নাস্তা পানি খেতে আসিনি। কিছু জরুরী জরুরী কথা ছিল।

আহা ডিভোর্সের কথা পরেও বলা যাবে তুমি আগে কিছু মুখে তোলো।

ডিভোর্সের কথা মানে?

হ্যাঁ, তুমি তোমার আর সানাতের ডিভোর্সের কথা বলতেই তো এসেছো সে আমি জানি। আমি শুধু বলবো যতো দ্রুত সম্ভব ডিভোর্সের ঝামেলাটা সেরে ফেলো। যতদ্রুত এই ঝামেলা মিটবে ততো তাড়াতাড়ি তোমার আর ছোঁয়ার বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলতে পারবো।

পর্দার আড়াল থেকে কাজল আস্তে করে সানাতের নম্বরে কল করলো। তারপর সানাতকে পুরো কাহিনী বলে হোল্ডে রেখে বাকি কাহিনী দেখায় মনোযোগ দিলো। অন্তিম তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,

সানাত আর আমার ডিভোর্স মানে? আমি সানাত আর আমার ডিভোর্সের কথা বলতে এখানে এসেছি এটা আপনাকে কে বললো? আর আমি আপনার মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে যাবো?

মানে তুমি তোমাদের ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে আসনি! তাহলে কেনো এসেছো তুমি?

এসেছি আপনার সাথে কিছু বোঝাপড়া করতে আরহাম মির্জা।

ছোঁয়ার বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। তারপর বলে উঠলেন,

এসব কোন ধরনের বেয়াদবি করছো তুমি?

বেয়াদবি তো এখনও শুরুই করিনি তার আগেই বেয়াদব বলছেন! আমি বেয়াদবি শুরু করলে কিন্তু বেয়াদবির শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাবো আপনাকে।

আমার বাসায় এসে তুমি আমাকে শ্বাসাচ্ছ! এতো বড়ো স্পর্ধা!

আপনার ভাগ্য ভালো এটা আপনার বাসা তা নাহলে এতক্ষণে ঠিক কি করতাম আপনার কোনো ধারণাও নেই। সোজা পুঁতে ফেলতাম আরহাম মির্জা!

আরহাম মির্জা মুহূর্তেই গর্জে উঠে বললেন,

অন্তিম! মুখ সামলে কথা বলো।

গলার আওয়াজ নিচে। আমার সাথে একদম গলাবাজি করবেন না। আর আমি এতক্ষণ ধরে নিজেকে সামলিয়েই এসেছি। তবে আর পারছিনা। আপনার আর আপনার স্ত্রীর সাহস কি করে হয় সানাতকে ডেকে এনে যা নয় তাই বলার? এতো সাহস আপনাদের কে দিয়েছে বলুন? আমার স্ত্রীকে বাড়ি বয়ে ডেকে এনে তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তাকে ডিভোর্স চাইতে বলেন!আর আমি ভাবতে পারছিনা আমি সানাতকে ডিভোর্স দেবো কি দেবো না সেটা বলার আপনারা কারা? আপনাদের কথায় আমি আমার বউ ছাড়বো! আর সাহস তো কম না আপনাদের আবার নিজেদের চরিত্রহীন, বেহায়া মেয়েকে আবার আমার ঘাড়ে চাপাতে চান!

মুখ সামলে কথা বলো অন্তিম। আমার মেয়ের নামে একটাও বাজে কথা বলবেনা বলে দিলাম।

খুব গায়ে লাগলো নাকি। আসলে সত্যি কথা একটু বেশিই গায়ে লাগে। আর একটাও বাজে কথা বলিনি আমি আপনার মেয়ের নামে। আপনার মেয়ে ঠিক যা তাই বলেছি। যে মেয়ে সাড়ে তিন বছর প্রেম করে তারপর বিয়ের দিন হবু স্বামীকে ছেড়ে পুরাতন প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় শুধুমাত্র টাকার লোভে তাকে চরিত্রহীন ছাড়া আর কি বলে! আর আমার হাসি পায় ভাবতেই যে আপনারা সানাতকে সরিয়ে আমাকে আপনার বেহায়া মেয়েকে বিয়ে করতে বলছেন। মানে মাথা গেছে আপনাদের? আমার বিয়ে করা বউকে ডিভোর্স দিয়ে আপনার এই চরিত্রহীন, ঠকবাজ মেয়েকে আমি বিয়ে করবো ঠিক কি কারণে আমাকে একটু বলুন তো! আপনার মেয়ে একটা লম্পট ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিলো তারপর যখন সেই ছেলের চাহিদা মিটে গেছে আপনার মেয়েকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আর অমনি আপনার মেয়ে তার ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ছুটে এসেছে। আর আপনারাও কেমন বাবা মা? কোথায় মেয়েকে শাসন করবেন তা না উল্টে আরো মেয়েকে লেলিয়ে দিচ্ছেন।

চুপ করো অন্তিম। লেলিয়ে দিচ্ছি মানে? ছোঁয়া আর তুমি ভালো থাকবে তাই বলছি।

জাস্ট শাট আপ। আমার ভালো আপনাদের ভাবতে হবেনা। আমার ভালো আমি নিজেই ভাবতে পারি। আর আপনার এই অসভ্য মেয়েকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবেন। ওর ছায়াতেও আমার ঘেন্না পায়! আর আপনারাও শুধরে যান। আমার জীবনে যদি আপনাদের কারণে কোনো প্রবলেম তৈরি হয় তাহলে আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো বলে দিলাম। অবশ্য দোষটা ঠিক আপনাদের একার নয়। আমার বলদ বউয়েরও দোষ আছে। ওই গাধা আপনাদের কানপট্টিতে তাল মিলিয়ে চলে। নিজের ব্রেইন না খাটিয়ে গাধার মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে কেটে চলে গেছে। কোথায় আপনার অসভ্য মেয়েটার গালে দু চারটে চর লাগাবে তা না উল্টে নিজের স্বামীকে এই অসভ্য মেয়ের সাথে গছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অনেক সহ্য করে নিয়েছি কিন্তু এখন আপনারা যা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তাতে আমার গাধা বউকে আর একা ছাড়া যাবেনা। এবার সংসারে বাঁধতে হবে তবে যদি ঐ গাধার আক্কেল হয়। আমি আজকে গিয়েই ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু করবো। আর বউ নিয়ে রিস্ক নেওয়া যাবেনা। আর আপনি আপনার মেয়েকে সামলে রাখুন। নাহলে দ্বিতীয়বার যদি আপনার মেয়েকে আমি আমার জীবনে রিএন্ট্রি করতে দেখেছি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। আর আপনারাও এসব মূর্খ চিন্তা ভাবনা বাদ দিন। এক জনের স্বামী আবার অন্যজনকে দেয় কি করে? আমি কি কোনো খেলনা জিনিস নাকি?

অন্তিম তুমি আজ বড্ডো বাড়াবাড়ি করলে! তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম! পাশ থেকে বললেন রাবেয়া বেগম। অন্তিম ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,

আপনাকেও আমি অনেক ভালো মহিলা ভেবেছিলাম এক্স আন্টি। কিন্তু আপনি যা রূপ দেখিয়েছেন তাতে বাংলা সিরিয়ালের তথাকথিত সৎ মায়েদেরও হার মানিয়েছেন। আচ্ছা আপনি না সানাতের খালা! খালার এমন হয়! ছিঃ! খালার মায়ের আরেক প্রতিচ্ছবি হয়। কিন্তু আপনি কি করেছেন। আপনি তো পুরো খালাজাতিকে অপমান করেছেন। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার! যাই হোক আমি শুধু এইটুকুই বলতে এসেছি আমার আর সানাতের জীবন থেকে দূরে থাকুন। আর নিজের মেয়েকে সামলে নিন কারণ আমি যদি একবার কোনো স্টেপ নেই তাহলে কিন্তু খুব ভয়ংকর কিছু হবে। বলেই অন্তিম বেরিয়ে গেলো। আর ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে থাকা ছোঁয়ার বাবা, মা, ছোঁয়া সকলেই স্তন্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া ভাবতে অব্দি পারছেনা অন্তিম তাকে আজ এতো বড়ো অপমান করে চলে গেল! এটা কি সেই অন্তিম যে একটা সময় তার পেছনে পাগলা কুকুরের মতো ঘুরতো! এতোটা অচেনা হয়ে গেল!
আর এদিকে ফোনের ওপাশে লাইনে থাকা সানাত এতক্ষণ অন্তিমের সব কথা শুনে সেও চরম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। ভাবতে অব্দি পারছেনা অন্তিম তার হয়ে কথা বলেছে। মনটা আনন্দে নেচে উঠলো মুহুর্তেই। তার পরের মুহূর্তেই অন্তিমের বলা ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা মনে পড়তেই লজ্জায় নুইয়ে গেলো সানাত।
.
.

অন্তিম বাড়ি ফিরেছে সবেমাত্র। তার হাতে আইসবক্স । ঘরে ঢুকেই দেখলো সানাত চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। অন্তিম কোনো কথা না বললে সানাতের মুখোমুখি বসে সানাতের গালে যেখানে পাঁচ আঙ্গুলের স্পষ্ট ছাপ ভেসে আছে সেখানে এক টুকরো বরফ ছুঁইয়ে দিয়ে আলতো করে হাত রাখলো। তারপর আচমকাই টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসলো সানাতের গালে। সানাত কিছু বুঝে উঠবে তার আগেই তার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরলো অন্তিম। তারপর বলে উঠলো,

সরি। রাগের মাথায় খুব জোরে মেরে ফেলেছি। আর কক্ষনো করবো না। প্রমিস।

সানাত কাপাকাপা হাতটা নিয়ে অন্তিমের পিঠে রাখলো। তারপর বলে উঠলো,

আমি কিছুই মনে করিনি। কারণ ভুল আমার ছিলো। অন্যায় আমি করেছিলাম। কিন্তু আপনি ওই বাড়ি কি করেছেন?

তোমার খালা খালু আর অসভ্য খালাতো বোনকে ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে এসেছি।
#চলবে

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২১

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২১
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। সানাত বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ হলো। সে সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে এরই মধ্যে ঘরে অন্তিম প্রবেশ করলো। সানাত অন্তিমের দিকে এক পলক তাকিয়ে তারপর দৃষ্টি সরিয়ে খাটে উপরে একটা বই নিয়ে বসলো। অন্তিম চোয়াল শক্ত করে সানাতের কার্যকলাপ দেখছে। সে গিয়ে সোজা সানাতের সামনে দাঁড়ালো। কিন্তু সানাতের কোনো ভাবান্তর দেখা গেলোনা। যেনো সে দেখেও না দেখান ভান করলো। অন্তিম এবার ডাক দিলো,

সানাত!

আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি।

ব্যস্ততা আমাকে দেখাবে না। আমার তোমার সাথে কথা আছে।

আমি তো বললাম আমি এখন ব্যস্ত আছি।

অন্তিম আর নিজের মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারলো না। সঙ্গে সঙ্গে সানাতের হাত থেকে এক থাবায় বইটা কেড়ে নিলো। সানাত বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,

আপনার সমস্যা কি? বইটা নিলেন কেনো?

আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেও। সারাদিন কোথায় ছিলে?

বাইরে ছিলাম।

আমাকে বা বাড়ির কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করোনি যে তুমি কোথায় আছো কেমন আছো। আর প্রয়োজন না হয় বোধ করনি কিন্তু এটলিস্ট ফোনটা তো অন রাখতে পারতে। তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমি ক্লাস বাদ দিয়ে তোমার চিন্তায় মরেছি। পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করেছি। অথচ তুমি কতোটা ইরেস্পন্সিবল!

কেনো খুঁজেছেন আমায়? আমি তো বলিনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করুন। তো কেনো করছেন?

মুহুর্তেই অন্তিম চেঁচিয়ে উঠলো। তারপর সানাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,

একদম চুপ। একে তো অন্যায় করেছো তারওপর আবার রাগ দেখাচ্ছ। আমি থানা অব্দি যাবো ভেবেছিলাম এর মধ্যেই মা ফোন করে জানালো তুমি বাসায় পৌঁছেছ। কোথায় ছিলে সারাদিন?

আমার লাগছে!

লাগুক। লাগাটা উচিত। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেও।

কেনো করছেন এমন ছাড়ুন।

ছাড়বোনা। যতক্ষণ অব্দি না আমার প্রশ্নের জবাব পাবো আমি ছাড়বোনা।

কিসের জবাব! কোথাও যাইনি আমি।

মিথ্যে বলবেনা সানাত। বলো কোথায় গিয়েছিলে?

ছাড়ুন আমাকে। আমার ওপর একদম জোর খাটাতে আসবেন না অন্তিম আহসান। কি ভেবেছেন আপনি আপনার হাতের পুতুল আমি যেভাবে খুশি সেভাবে আমাকে নাচাবেন! কিসের এতো অধিকারবোধ আপনার? কে হই আমি আপনার? আপনি তো বাধ্য হয়ে প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছেন। এই বিয়েটা তো একটা বোঝা আপনার কাছে। তাহলে কেনো এই বোঝা শুধু শুধু বয়ে বেড়াচ্ছেন? প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন আপনি নিয়েছেন তো! এবার ছেড়ে দিন আমাকে। মুক্তি দিয়ে দিন আমাকে। ডিভোর্স চাই আমি।

অন্তিম আজ এমন একটা কাজ করে ফেললো যা যে কোনোদিন আজ অব্দি করেনি। সে মুহূর্তেই সানাতের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পর মারলো। সানাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়! অন্তিম সানাতের হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে বললো,

কি বললি তুই মুক্তি চাস? ডিভোর্স চাস তুই? বেশি আস্কারা দিয়ে ফেলেছি তাইনা? তোর সাহস কি করে হলো তুই ডিভোর্স চাস? পুরাতন প্রেমিককে আবার মনে ধরেছে তোর? তাই তুই আমার থেকে ডিভোর্স চাইছিস তাইনা? খুব পয়সাওয়ালা বুঝি তোর পুরাতন প্রেমিক?

অন্তিম! একটাও নোংরা কথা বলবেন না।

খুব গায়ে লাগছে বুঝি। কই আমাকে নিয়ে তো মোটেও গায়ে লাগেনা অথচ প্রেমিককে নিয়ে বলেছি বলে একদম ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। এতো প্রেম! আজকে কান খুলে শুনে রাখো আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার কোনো মুক্তি নেই পাখি। তুমি চাও আর না চাও সংসার আমার সাথেই করতে হবে তোমাকে কলিজা। তাই মুক্তির চিন্তা দুঃস্বপ্নেও করো না। আর যদি কখনো ডিভোর্সের নামও মুখে এনেছ তাহলে কসম খুন করে ফেলবো জান।

সানাত কেঁদে ফেললো। তারপর বলে উঠলো,

কেনো থাকবো আমি আপনার সাথে? আমি তো কারো প্রয়োজন হতে চাইনি আমি তো প্রিয়জন হতে চেয়েছি। কিন্তু আমি পারিনি। আমি তো আপনার ভালোবাসা না। আমি তো শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব। যেখানে ভালোবাসাই নেই সেখানে আমি থেকে কি করবো?
সানাত থামলো। তারপর অশ্রুসিক্ত চোখে অন্তিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

আমাকে কেনো একটু ভালোবাসলেন না অন্তিম? কেনো বাসলেন না? আমি কি খুব বেশি কুৎসিত? একটুখানি ভালোবাসা কি আমাকে দেওয়া যেতনা?

অন্তিম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানাতের দিকে। তারপর সানাতের গালে দুই হাত রেখে বলে উঠলো,

আমি কি ভালোবাসিনি সানাত? তুমি কি অনুভব করো নি আমার ভালোবাসা সানাত?

কই আপনি তো কখনো বলেননি আপনি ভালোবাসেন?

সবসময় কি মুখে বলাটা খুব জরুরী সানাত?
আমি এখন আর ভালোবাসায় ঠিক বিশ্বাস করিনা সানাত। কারণ ভালোবাসায় বিচ্ছেদ থাকে। আর আমি তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ চাইনা। কোনো মতেই চাইনা। আমি শুধু জানি আমার তোমাকে প্রয়োজন, ভীষন ভাবে প্রয়োজন। আমার অভ্যাস হয়ে গেছো তুমি সানাত। আর কিছু অভ্যাস কখনো ছাড়া যায়না যেমন তুমি। তোমাকে ছাড়ার সাধ্য আমার নেই। কারণ তোমাকে ছাড়লে আমি নিজেই নিঃস্ব হয়ে যাবো। একবার ভালোবাসায় ধাক্কা খেয়ে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি সানাত কিন্তু তোমার বেলায় আমি আর সামলে উঠতে পারবনা। সেই সাহস আমার নেই। আর তুমি বললে না সানাত তুমি প্রিয়জন হতে চাও। প্রিয়জনতো সেই হয় সানাত যে প্রয়োজনীয়, যার প্রয়োজন থাকে জীবনে। আর আমার তোমাকে প্রয়োজন। ভালোভাবে বাঁচতে আমার তোমাকে প্রয়োজন। তুমি এখন আমার কাছে অক্সিজেনের মত হয়ে দাঁড়িয়েছো। তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেওয়াও অসম্ভব। এরপরও কি বলতে হবে ভালোবাসি?

সানাত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অন্তিমের দিকে। তার ভেতরে বোধয় এতো ভালোলাগা কখনোই কাজ করেনি যতোটা আজ হচ্ছে অন্তিম তাকে ভালোবাসে শুনে। সানাত বলে উঠলো,

কিন্তু ছোঁয়া?

ছোঁয়ার কথা বলে কি লাভ? আমি তো আর সেখানেই আটকে নেই সানাত আমি এগিয়ে এসেছি। ছোঁয়ার প্রতি আমার যেই অনুভূতিটা ছিলো সেটা কেটে গেছে। তাই এখন ও ফিরলো কি ফিরলো না তাতে কিছুই আসে যায়না আমার। আর যে একবার ঠকাতে পারে সে বারবার ঠকাতে পারে। তাই ছোঁয়ার কথা আমি আর ভাবতেও চাইনা। ওর কথা ভাবা মানে তোমাকে অসম্মান করা, তোমার সাথে অন্যায় করা যেটা আমি কখনোই করতে পারবনা। আর ছোঁয়া নিজের ইচ্ছায় অন্য ছেলের সাথে চলে গেছিলো আর এখন আবার ফিরে এসেছে। জীবনটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে যখন যা খুশি তাই হবে।

আমি সবটা বুঝতে পেরেছি।

এবার তুমি বলোতো কোথায় গেছিলে?

আসলে আমি মামণির বাড়িতে গেছিলাম।

কিইই? ছোঁয়াদের বাড়িতে কেনো গেছিলে?

মামণি কল করেছিলো। কল করে আসতে বলেছিল কিন্তু ওখানে…

সানাত কিন্তু ফিন্তু শুনতে চাইনা পুরো ঘটনা খুলে বলো। কিচ্ছু স্কিপ করবেনা এ টু জেড বলো।

সানাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো ঘটনা খুলে বলতে শুরু করলো। পুরো ঘটনা শোনার পর অন্তিম নিজেকে সর্বোচ্চ দিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

সানাত তুমি বসো। আমি একটু আসছি। গালে অনেক জোরে লেগেছে তাইনা আসলে প্রচুর রেগে গেছিলাম। রাগের মাথায় খেয়াল ছিলোনা। আমি এসে মলম লাগিয়ে দেবো। বলেই উঠে দাঁড়ালো অন্তিম। সানাত বলে উঠলো,

আপনি এখন এই সময় কোথায় যাবেন?

অন্তিম সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

এক্সের বাড়ি যাবো।

কিইই? কিন্তু কেনো?

এক্সের বাবা মায়ের সাথে অনেক বোঝাপড়া আছে। আজ জনমের শিক্ষা দিয়ে আসবো। বলেই বেড়িয়ে গেলো অন্তিম। আর সানাত হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২০

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২০
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই পাশ বালিশটা শূন্য পেলো সানাত। মুহূর্তেই মনটা গাঢ় অভিমানে ছেয়ে গেল। সানাত উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই ডাইনিং টেবিলে অন্তিমকে দেখতে পেলো। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বসে গল্প করছিল সে ওহী আর তার এক কাজিনের সাথে। সানাতকে দেখা মাত্রই অন্তিম কথা বলতে বলতেই তার পাশের চেয়ারটা টেনে বসার জন্য ইঙ্গিত করলো। তারপর প্লেট এগিয়ে দিলো সানাতের সামনে। তারপর একেক করে খাবার উঠিয়ে দিলো সানাতের প্লেটে। সানাত চুপচাপ বসে অন্তিমের কর্মকাণ্ড দেখছে। অন্তিম সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

আমাকে পরে দেখো। এখন খাও। আমাকে দেখলে পেট ভরবে না।

সানাত চোখ নামিয়ে ফেললো। তারপর খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। হঠাৎ করে অন্তিম সানাতের কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

জ্বর নেই গায়ে। কাল রাতে অত জ্বর এসেছিল কি করে? ইচ্ছে করে বাঁধিয়েছিলে?

সানাতের খাওয়া থেমে গেছে ততক্ষনে। তার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে অন্তিম কি করে জানলো গতকাল রাতে তার জ্বর এসেছিলো? তবে কি সে রাতে ফিরে তার কাছে এসেছিলো? তাকে ছুঁয়ে দেখেছিল?

কি হলো তাড়াতাড়ি খাও ভার্সিটিতে যেতে হবে।

অন্তিমের কথায় সানাতের ঘোর কাটলো। সে সোজা খাওয়ায় মনোযোগী হলো।
.
.

ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে সানাত। তার কিছুই ভালো লাগছে না। তাই ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে এসে বসে আছে। ওহী ক্লাসে। সানাতের সাথেই বসে আছে তার এক ফ্রেন্ড রাহি। সে নানান কথা বলে চলেছে কিন্তু সানাতের তাতে মোটেও মনোযোগ নেই। এমন মুহূর্তেই সানাতের ফোনটা বেজে উঠলো। সাইড ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই ফোনের স্ক্রিনে ভাসা নম্বরটা দেখতেই সানাত থমকে গেলো। আজ এতো মাস পর মামনির নম্বর থেকে কল এসেছে ভাবতেই সানাত অবাক হয়ে যাচ্ছে। সানাত রিসিভ করে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

হ্যালো, মামণি!

কিরে কেমন আছিস? ভুলেই তো গেছিস দেখছি!

সানাত কি বলবে আনন্দে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। মামণি তার সাথে আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। সানাত আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো,

ভালো আছি মামণি। তুমি কেমন আছো?

তোকে ছাড়া আর কেমন থাকতে পারি বল! সানাত এখন একটু বাসায় আসবি। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। কতদিন হলো তোকে দেখিনা!

সানাত কেঁদে ফেললো। তারপর বলে উঠলো,

আমি আসছি মামণি।

আয়। আমি অপেক্ষা করছি তোর জন্য। তারপর কল কেটে দিলো। আর সানাত উঠে দাঁড়ালো।
.
.

এই জ্যামের মধ্যে গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে একরকম হন্যে হয়ে ছুটে এসেছে সানাত। এতমাস পরে নিজের মায়ের মতো খালাকে কাছে পেয়ে সানাত সব ভুলে আকড়ে ধরলো। তারপর মুহূর্তেই হু হু করে কেঁদে ফেললো। রাবেয়া বেগম সানাতকে ধরে বললেন,

এভাবে কি কেঁদেই যাবি নাকি? বোকা মেয়ে চল ভেতরে। এতো দৌঁড় ঝাঁপ করে এসেছিস চল ভেতরে গিয়ে বসবি।
তারপর সানাতকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসালো।
টেবিলে এতো আইটেম সাজানো দেখে সানাত বলে উঠলো,

তুমি কি করেছো মামণি! এতো খাবার কে খাবে?

কেনো তুই খাবি। তোর জন্য করেছি। এতদিন পর এলি ভালো মন্দ আয়োজন করব না!

কিন্তু তাই বলে এতো কিছু করার কি দরকার ছিল! আর আমার অতো খিদেও নেই।

চুপ কর তুই। চুপচাপ খেতে বস।

সানাত বেশ অস্বস্তি নিয়েই জিজ্ঞেস করে,

মামণি ছোঁয়া কোথায়? দেখছিনা যে।

ওর রুমে ঘুমাচ্ছে।

ওহ।
.
.

🌻
ড্রয়িং রুমে সোফায় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে সানাত ও ছোঁয়ার বাবা আরহাম মির্জা। তার পাশেই দাড়িয়ে আছে ছোঁয়ার মা রাবেয়া বেগম। নীরবতা ভেঙ্গে আরহাম মির্জা নিজেই বলে উঠলেন,

তো কেমন আছো?

জ্বি, ভালোই আছি খালু।

ভালো তো থাকারই কথা। শোনো তোমাকে আজ এমনি এমনি এখানে ডাকিনি।

সানাত তাকালো। তারপর বললো,

মানে? কোনো দরকার ছিল?

দরকার তো অবশ্যই আছে তা নাহলে তোমাকে এতো ঘটা করে ডাকতাম না।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না খালু আপনার কথা।

ধৈর্য্য ধরো তারপর সব বুঝতে পারবে।
তারপর তিনি তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের দিকে কিছু একটা ইশারা করতেই রাবেয়া বেগম উঠে ভেতর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে আসলেন। তারপর প্যাকেটটা সানাতের সামনে রেখে বললেন,

নে এটা তোর।

সানাত প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বললো,

এতে কি আছে মামণি?

খুলে দেখ।

সানাত প্যাকেটটা খুলতেই থমকে গেলো। প্যাকেটের ভেতরে টাকার বান্ডিল রাখা। সানাত কিছু বলবে তার আগেই ছোঁয়ার বাবা বলে উঠলেন,

দেখো এতে চলবে কিনা তোমার? কম হয়ে গেলে আরো দেবো।

সানাত অবাক হয়ে বললো,

এসবের মানে কি?

মানে একটাই আমার মেয়ের সুখের পথ থেকে সরে যাও। অন্তিমকে ছেড়ে দেও।

সানাত অবাক হয়ে বললো,

এসব আপনি কি বলছেন?

পাশ থেকে রাবেয়া বেগম বলে উঠলেন,

একদম ঠিক বলেছে। তুই আমার মেয়ের সুখে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিস। তোর জন্য আজ আমার মেয়েটার চোখের পানি ঝড়ছে। তাই বলছি সরে যা। তোর তো টাকা হলেই হলো তাইনা? কতো লাগবে তোর তুই শুধু বল কিন্তু তার বিনিময়ে তুই শুধু অন্তিমকে ছেড়ে দে।

সানাত পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার খালা তাকে ভালোবেসে নয় এভাবে অপমান করার জন্য ডেকেছে! সানাত কাপাকাপা গলায় বললো,

মা..মামণি তুমি এসব ক..কি বলছো?

একদম ঠিক বলছি। তোর জন্য কি করিনি আমি? সবসময় নিজের মেয়ের মতো দেখেছি। ছোঁয়া আর তোর মাঝে কখনো কোনো ভেদাভেদ করিনি। ভালো জামাকাপড় পড়িয়েছি, ভালো খাইয়েছি, থাকতে দিয়েছি, আদর যত্ন করেছি। জীবনে এতো কিছু জুটতো তোর কপালে যদি আমরা না দিতাম? তোর বাপেরই বা কি ছিলো? আর তুই কিনা বেঈমান মেয়ে আমার খেয়ে আবার আমারই ক্ষতি করিস! শোন সানাত শত হোক নিজের সন্তান নিজেরই। পর কখনো নিজের হয়না। তুই হলি আরেক গাছের ছাল। তোর জন্য আমার মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে যাবে আর তুই সুখে থাকবি সেটা আমি মোটেও সহ্য করবো না। তাই বলছি চলে যা আমাদের জীবন থেকে। কেনো বুঝিসনা তুই একটা আপদ, একটা বোঝা তুই। অন্তিমের জীবনেও তুই একটা বোঝা। ওই ছেলে তোকে না পারছে বলতে আর না পারছে সইতে।

সানাত নিঃশব্দে দাড়িয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছে। রাবেয়া বেগম আবারও বলে উঠলেন,

আরেহ তুই কি অন্ধ নাকি নিজেকে কখনো আয়নায় দেখিসনি! কোথায় তুই আর কোথায় আমার মেয়ে! অন্তিম কেনো তোর মত একটা কালো চালচুলোহীন মেয়েকে নিয়ে ঘর করবে। মেলে তোর সাথে ওর! টাকা-পয়সা, নাম যশ সবকিছু থেকে আমাদের সাথে মেলে। তোর আছে কি যে তোকে নেবে? একটা মানান সই বিষয় তো আছে নাকি? মাটি আর চাঁদ তো কখনো এক হতে পারেনা। আর তুই বুঝিসনা লোকে হাসে অন্তিমের পাশে তোকে দেখলে। নেহাৎ ওরা যথেষ্ট ভদ্র তাই তোকে বুঝতে দেয়নি নাহলে কবে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতো! আর সবথেকে বড়ো কথা সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক ওদের এটা কি এই কয় মাসে ভোলা সম্ভব! তাই বলছি তোর ভেতরে যদি সামান্যতম লজ্জাবোধ থাকে তাহলে মুক্তি দিয়ে দে অন্তিমকে। গলার কাঁটা হয়ে আটকে থাকিস না।

সানাত কান্নারত অবস্থাতেই মলিন হাসলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

তুমি ভেবোনা মামণি আমি মুক্তি দিয়ে দেবো। ছোঁয়াকে আমি অন্তিমের সাথে সংসার করার রাস্তা করে দেবো। কাঁটা হয়ে আমি থাকবো না। এখন আসি।

আরহাম মির্জা বলে উঠলেন,

টাকাগুলো নিয়ে যাও।

সানাত একবার চোখ তুলে তাকালো তারপর বলে উঠলো,

টাকার বদলে আমি সম্পর্ক কেনা বেচা করিনা। এই টাকা গুলো নেওয়ার অর্থ হচ্ছে আমি কিছু টাকার জন্য অন্তিমকে বিক্রি করে দিয়েছি ছোঁয়ার কাছে। কিন্তু আমি অন্তিমকে বিক্রি করছি না। আমি তার ভালোবাসার মানুষের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। বলেই সানাত বেরিয়ে গেলো। তখন পেছন পেছন কাজের মেয়ে কাজল দৌঁড়ে এসে বললো,

আফা আপনের মোবাইল।

ধন্যবাদ কাজল। বলেই গেইট খুলে বেরিয়ে গেলো। আর কাজল মেয়েটা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো।
.
.

🌻
সানাত বাড়ি ফেরেনি তুই আমাকে বলিসনি কেনো ওহী?

ভাইয়া আসলে আমি ভেবেছি ও বাড়ি চলে গেছে। আর আমিও ভার্সিটি থেকে একটু দরকারে বেড়িয়েছিলাম কিন্তু বিকালে বাসায় ফেরার পর আম্মু আমার সাথে সানাতকে না দেখে জিজ্ঞাসা করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভেবেছি ও চলে গেছে বাড়িতে। কিন্তু ও যে আসলে বাড়ি যায়নি সেটা তো বুঝতে পারিনি।

জাস্ট শাট আপ ওহী। সানাত সেই এগারোটার পর বেরিয়েছে তারপর এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ ও কোথায় আছে কোনো খবর নেই।

ভাইয়া সানাত তো এমন কক্ষনো করে না। আজ হঠাৎ কি হলো? আমার খুব ভয় করছে।

আমিও বুঝতে পারছিনা ওহী ও ঠিক কোথায় যেতে পারে। আর বেয়াদবটা ফোনটাও অফ করে রেখেছে। কল করে যে একটা খোঁজ নেবো সেই উপায়ও নেই।

আচ্ছা ভাইয়া সানাতকে কি তুমি কিছু বলেছো? মানে কোনো ঝগড়া হয়েছে?

না ঝগড়া কেনো হতে যাবে।

তাহলে কি হলো?

কম তো খুঁজলাম না ওহী। এবার মনে হচ্ছে থানায় যেতে হবে।

ওহী ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

থানায়?

হুম।
#চলবে

অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-১৯

0

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-১৯
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

সানাত দরজাটা খোল প্লীজ। সানাত প্লীজ এভাবে দরজা বন্ধ করে রাখিস না।

ভেতর থেকে সানাত বলে উঠলো,

আমি একটু একা থাকতে চাই ওহী। তুই প্লীজ এখান থেকে যা।

সানাত পাগলামি করিসনা। দরজা খোল বলছি।

কেনো বিরক্ত করছিস। চলে যা।

সানাত এমন করিসনা। কেউ না বুঝলেও তোর অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। তাই বলছি প্লীজ দরজাটা খোল।

আমি ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি আমার। তুই এখন যা। আমি একটু একা থাকতে চাই। আমাকে একটু একা থাকতে দে। প্লীজ।

বেশ আমি যাচ্ছি। কিন্তু প্লিজ তুই উল্টোপালটা কিচ্ছু করিসনা।

তুই যা ওহী।

যাচ্ছি। বলেই ওহী চলে গেলো। আর সানাত সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। আর তারপর মুহূর্তেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ভেতরের কঠিন যন্ত্রণাগুলো কান্না হয়ে উপচে পড়লো। তারপর চিৎকার করে বলে উঠলো,

কেন? কেনো সবসময় আমার সাথে? আমিই কেন? কেন আমায় একটু ভালোবাসলে না অন্তিম? আমি তো তোমায় ভালোবাসতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি তবুও তো ভালোবাসায় কমতি রাখিনি। বন্ধ করিনি তোমায় ভালোবাসা। তাহলে তুমি কেনো পারলে না আমাকে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা দিতে? আমি কি এতটাই অযোগ্য তোমার ভালোবাসা পাওয়ার? যদিই ভালোই না বাসো তবে এতদিন কেনো কাছে এসেছিলে, যত্ন দেখিয়েছিলে, কেনো এমন অনুভব করিয়েছিলে যেন তুমিও ভালোবাসো আমায়? কেনো করলে? আর আজ সব ভুলে গিয়ে আমাকে ফেলে কি করে ছোঁয়ার কাছে ফিরে গেলে? আমার এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে? কেনো পারছিনা মানতে? তবে কি আমি বড্ডো স্বার্থপর হয়ে গেলাম অন্তিম আহসান? হয়তো। আমার লোভ জন্মে গেছে তোমার প্রতি, তোমার সান্নিধ্যের প্রতি, এই সংসারটার প্রতি। আমি পারবোনা আমার সুখের সাম্রাজ্যটা ছাড়তে। পারবো না। বলতে বলতেই অঝোরে কাঁদতে লাগলো সানাত।
.
.

🌻
একটা ক্যাফেতে সামনাসামনি বসে আছে অন্তিম ছোঁয়া। নীরবতা ভেঙ্গে অন্তিমই প্রথম বললো,

তোমার যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার তাড়া আছে।

তুমি আমাকে আজ তাড়া দেখাচ্ছ অন্তিম! কই এর আগে তো কখনোই আমাকে সময় দিতে গিয়ে তুমি তাড়া দেখাওনি। তাহলে আজ কেনো দেখাচ্ছ?

অন্তিমের সোজাসাপ্টা জবাব,

তখন আর এখনকার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। আর তোমাকে এখন সময় দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা। কারণ সেই সময়টা আমার স্ত্রীর। শুধুমাত্র সানাতের।

অন্তিমের মুখে এমন কথা শুনতেই অবাক হয়ে গেলো ছোঁয়া। তৎক্ষণাৎ সে বলে উঠলো,

আমার সময়টা তুমি সানাতকে দেবে? এইটুকু সময়ের মধ্যে এতো আপন হয়ে গেলো সানাত!

তোমার সময় তো অনেক দূর তোমার কোনো ভ্যালুই আমার লাইফে নেই। আমার কাছে এখন তুমি জাস্ট একটা পাস্ট, একটা মিস্টেক। আমার প্রেজেন্ট, ফিউচার সবটা এখন শুধুমাত্র একজনই আর সে হলো সানাত। এখানে তোমার কোনো জায়গা নেই।

আজি জাস্ট ভাবতে পারছিনা অন্তিম, সানাত তোমার ব্রেইন এভাবে ওয়াশ করে ফেলেছে! কি এমন জাদু করেছে সানাত তোমাকে যে তুমি ওই সানাতের জন্য আমার সাথে এরকম বিহেভ করছো! হাও পসিবল? এই ক’দিনের মধ্যে তুমি আমাকে, আমার প্রতি সব ফিলিংস, আমাদের সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসা সব ভুলে গিয়ে সানাতকে নিজের প্রেজেন্ট, ফিউচার করে নিয়েছো? এই তোমার ভালোবাসা অন্তিম!

ছোঁয়ার কথায় কি হলো ঠিক বোঝা গেলোনা তার আগেই অন্তিম হো হো করে হেসে উঠলো। ছোঁয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অন্তিমের দিকে। অন্তিম যেনো গড়াগড়ি খাচ্ছে। যেনো মনে হচ্ছে ছোঁয়া খুব বাজে একটা জোকস বলেছে। তারপর কোনো রকমে হাসি থামিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,

এসব কথা আর যাই হোক তোমার মুখে একদম শোভা পায় না ছোঁয়া। তোমার মুখে এসব কথা শুনলে জাস্ট হাসি পায় তাছাড়া আর কিছুইনা। আর কি যেনো বললে তুমি ভালোবাসা? সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসা আমি কি করে ভুলে গেলাম? তাহলে আমাকে একটু বলো তো আমি না হয় ভালোবাসতে পারিনি কিন্তু তুমি কি করলে? সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে নিজের বড়লোক এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেলে! তখন কোথায় ছিলো তোমার এই সো কল্ড ভালোবাসা? বলো কোথায় ছিলো? তখন একবারও আমার কথা, আমার ফ্যামিলির মান-সম্মানের কথা ভেবেছিলে তুমি? অবশ্য ভাববে কি করে তুমি তোমার মত মেয়েরা তো শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। স্বার্থপর,বেঈমান! তোমার প্রতি আমার একসময় প্রচুর ফিলিংস কাজ করতো কিন্তু এখন তোমার প্রতি জাস্ট ঘেন্না হয়। আর তারসাথে আফসোসও হয় যে আমি কতোটা ভুল মানুষের প্রতি নিজের ফিলিংস অপচয় করেছিলাম! আর হ্যাঁ সানাতকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেনা। নিজের সাথে তো ওর তুলনা একদম দেবেনা। কারণ তোমার সাথে ওর তুলনা তো দূর তুমি ওর তালিকার কতারেও পড়ো না। সানাত আর যাই হোক তোমার মতন স্বার্থপর নয়।ওর ভেতরটা তোমার মতন নোংরা নয় ও পবিত্র। ওর সাথে আমার জীবনটা না জড়ালে হয়তো আমি কোনো দিনও মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য্যটা চিনতেই পারতামনা। আমি উপরওয়ালার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো যে উনি আমার জীবনে সানাতকে পাঠিয়েছে।

ছোঁয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,

তুমি বলছো এসব অন্তিম! আমি মানছি আমি একটা বড়ো ভুল করেছি। আমি ক্ষমাও চাচ্ছি তার জন্য। আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?

তুমি ভুল করছো। তুমি কিসের সুযোগ চাইছো? ফিরে আসার? কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয় কারণ আমি আর সেখানেই আটকে নেই। আমি সানাতকে ঘিরে নিয়ে এগিয়ে গেছি।

অন্তিম!!

তুমি প্লিজ আমার আর সানাতের থেকে দূরে থাকো ছোঁয়া। তোমার জন্য সানাতকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়েছে। তাই আমি চাইনা তোমার জন্য আবার সানাত কোনো নতুন সমস্যার সম্মুখীন হোক। তাই প্লিজ দূরে থাকো। সানাতের এক তিল পরিমাণ ক্ষতি আমি সহ্য করবো না। আমি সানাতকে নিয়ে ভালো আছি। তুমিও নিজের মতো থাকো।বলেই উঠে দাঁড়ালো অন্তিম।

ছোঁয়া বলে উঠলো,

এতো যে বড় বড় কথা বলছো তুমি জানো সানাত বিয়ের আগে অন্য কাউকে ভালোবাসতো হয়তো এখনো বাসে।

অন্তিম ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

আগে কি ছিলো না ছিলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। সানাতের বর্তমান ভবিষ্যৎ সবটাই এখন শুধুমাত্র অন্তিম আহসান। এইটুকু বলেই আর কোনো কথা না বলে সোজা বেরিয়ে গেলো অন্তিম। আর এদিকে ছোঁয়া অন্তিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবতে অব্দি পারছেনা এই কথাগুলো অন্তিম বলেছে তাকে। অন্তিমের এতোটা পরিবর্তন সে কল্পনাতেও আশা করেনি। সে ভাবতে অব্দি পারছেনা তার পেছনে পাগল হয়ে পড়ে থাকা ছেলেটা আজ শুধুমাত্র সানাতের জন্য তাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো। ভেতরের চাপা রাগ, হিংসাটা মুহূর্তেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সে কিছুতেই এতো সহজে ছাড়বেনা। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে।
.
.
🌻
অন্তিমের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। বাড়িতে ঢুকেই ড্রয়িং রুমে চোখ বুলাতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে চোখে পড়লো না। তারপর নিজের রুমের দরজা খুলে ঢুকতেই ঘর অন্ধকার দেখেই ভ্রু কুঁচকে গেল অন্তিমের। তারপর হাতড়ে লাইট জ্বালাতেই চোখ গেলো বিছানায়। বিছনার এক কিনারে সানাত কম্ফর্টার গায়ে টেনে ঘুমিয়ে আছে। অন্তিম বেশ অবাক হলো সানতকে এই সময়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে। কারণ সচরাচর সানাত কখনোই এইসময় ঘুমায়না। অন্তিম পকেট থেকে মোবাইল আর ওয়ালেট বের করে সাইড টেবিলের ওপর রেখে সানাতের কাছে গিয়ে বসলো। তারপর ডেকে উঠলো,

সানাত!

সানাতের কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা। অন্তিম আস্তে করে সানাতের শরীরে হাত রাখতেই শিউরে উঠলো। সানাতের সারা শরীর আগুনের মতো গরম। বোঝাই যাচ্ছে জ্বর ভালো মতোই কাবু করে ফেলেছে। অন্তিমের নজর আচমকা সানাতের চোখের দিকে গেলো। সানাতের চোখের কোনায় পানি। চোখের পাপড়িও ভেজা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে। মুহূর্তেই অন্তিমের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আর মনে মনে বলে উঠলো,

একি আমার শ্যামবতী কেঁদেছে নাকি?

অন্তিম সাথে সাথে সানাতের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে নিজেও লাইট অফ করে গায়ে কম্ফর্টার টেনে সানাতকে বুকে আগলে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর ঘুমন্ত সানাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,

পাগলী দেখো আমি তোমার কাছেই আছি।কোথাও যাইনি। দিনশেষে তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে এভাবে কেঁদে একাকার করা লাগে?
বলেই ঘুমন্ত সানাতের সুযোগ নিয়ে তার কপালে একটা উষ্ণ পরশ এঁকে দিলো।
অথচ জ্বরের ঘোরে থাকা বোকা, ঘুমন্ত সানাত জানতেই পারলোনা সে এই মুহূর্তে ঠিক কতটা যত্নশীল পুরুষের বুকে লেপ্টে আছে। আর কতোটা মায়ার সাথে তাকে আগলে রেখেছে তার সেই যত্নশীল পুরুষটি।
#চলবে