বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 3



মরীচিকার সংসার পর্ব-০২

0

#মরীচিকার_সংসার (২)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বাবা আমার শ্বশুড়বাড়িতে পা দিতে তাকে বসিয়ে আমার শ্বশুড়, শাশুড়ী, ননদ একের পর এক আমার দোষের গল্প বলতে শুরু করেছে। আমার শাশুড়ী মা বলছে,“আপনার মেয়েকে আমি কি দিয়ে জ্বা লাই? ভাতে জ্বা লাই নাকি কাপড়ে? সেই মেয়ে আমাকে আজ চোর অপবাদ দিচ্ছে। কাল তো আমাকে মে রে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিবে।”

এই কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্বশুড় বলল,“আপনার মেয়ে আজ এই ঘটনা ঘটালো। কাল তো বড় কিছু ঘটাবে। বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগে আমি চাই আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে চলে যান।”
এসবের মাঝে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বাবা। সে মাথানত করে সবার কথা শুনে যাচ্ছে। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। এক ঘন্টা যাবত বাবাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সবাই আমার দোষগুলো বললো।অতঃপর বাবা বলার সুযোগ পেয়ে নরম গলায় বললো,“আমার মেয়ের নাহয় একটা ভুল হয়ে গেছে। এই কারণে আপনারা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। দেখুন ও ছোট মানুষ। ওর ভুল হয়ে গেছে। আপনারা ক্ষমা করে দিন।”

“সেই ক্ষমা ভাবী চেয়েছে? সে তো তখন থেকে আমাদের চোর বলে যাচ্ছে।”
আমার ননদের কর্কশ কন্ঠে বলা মিথ্যা কথাটি শুনে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমি বললাম,“আমি ক্ষমা চেয়েছি। বিনা কারণে ক্ষমা চাওয়ার পরও তোমরা আমার বাবাকে এই মাঝরাতে ডেকে পাঠালে। আবার মিথ্যা কথা বলছো। একের পর এক মিথ্যা দোষারোপ তো দিয়ে যাচ্ছো।”

“দেখেছেন আপনার মেয়ের স্বভাব। মুখে মুখে তর্ক করা অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনার বউ ম রার আগে তাকে কিছু শিখিয়ে যায়নি।”
আমার শাশুড়ী কথাটি বলে উঠলো। সেই সঙ্গে আমার স্বামী মহাশয় তাল মিলিয়ে বলে,“বড় ছোট কাউকে মানে না। আমার মায়ের মুখে মুখে অব্দি তর্ক করে বেড়ায় আপনার মেয়ে।”

পলাশ আজ আমাকে বারবার হতাশই করছে। আমার ভালোবাসা যে ভুল সেটা প্রমান করে দিচ্ছে। আচ্ছা স্বামী কি এমন হয়? কই। আমার বাবাকে তো দেখেছি সবসময় আমার মায়ের কথায় গুরুত্ব দিয়েছে। আমার মায়ের কোন ক্রুটি থাকলে সেটা সকলের সামনে গোপন করেছে। সংসার জীবনে আমার মায়ের শক্ত এক অবলম্বন হয়েছে। তাহলে পলাশ এমন কেন? এসব কথাবার্তা আমার বাবা বন্ধ করলেন। সে নরম গলায় বললেন,“আপনারা এবারের মতো রিমিকে মাফ করে দেন। সে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবে। সেই সাথে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, রিমির থেকে এমন কিছু আর হবে না।”

বাবার এই কথায় অবশ্য প্রথমে কেউ রাজি হতে চায়নি। তারা পারলে এখনই আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়ায়। তবুও বাবা অনেক অনুনয় বিনয় করে তাদের রাজি করালো। বাবার এই অসহায়ত্ব দেখে আমি খুব কষ্ট পেলাম। বাবাকে বাধা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু বাবা তার আর হতে দিলো না। আমাকে অনুরোধ করে বললো,“দয়া করে তুই এখানে আর কোন কথা বলিস না। যা বলছি তাই কর। সবার কাছে ক্ষমা চা। প্লীজ…।”

বাবার এই নরমস্বরে করা অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। বাবার কথামতো সবার কাছে ক্ষমা চাইলাম। সবাই অবশ্য এবার মেনে নিলো। সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে, এই বাড়িতে তারা আমাকে দয়া করে থাকতে দিয়েছে। নয়তো আমার স্থান এখানে হওয়ার কথা ছিলো না।
__
বাবা চলে যাবার আগে আমার সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলেন। আমিও ঘরে আসলাম। বাবাকে আলাদা পেয়ে আমি বললাম,“বাবা এভাবে তুমি মাথানত করে তাদের সব অভিযোগ শুনলে? সত্যি মিথ্যা নিয়ে একটা কথা তুললে না? তাছাড়া আমাকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বললে অথচ একবারও ঘটনা সত্যি কি-না তা জানতে চাইলে না? কেন বাবা?”

আমার এই কথার জবাবে বাবা অসহয় গলায় বলে,“ মা রে সংসার জীবন বড় কষ্টের। এখানে মানিয়ে নিতে না পারলে সব শেষ। সংসারে একসাথে থাকতে হলে এরকম সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। তাছাড়া মেয়ে মানুষের জন্য স্বামীর ঘরই সব। এখানে টিকে থাকতে না পারলে দিনশেষে সব দোষ মেয়েটারও হবে।”
বাবা একটু থেমে পুনরায় বলেন,“আমি জানি তুই সঠিক। তোর ননদের কানে আমি তোর মায়ের সেই চিরচেনা কানের দুল দেখেছি। কিন্তু এখানে আমার কিছু করার নেই মা। তোকে যদি আজ আমি ঝামেলা করে বাড়ি নিয়ে যাই তাহলে তোর কি হবে? আমি আজ আছি কাল নেই। তোর ভাই, ভাবী তোকে কতদিন দেখবে? এক মাস দুই মাস। তারপর যখন অতিষ্ট হয়ে পড়বে তখন তাদের তিক্ত কথাগুলো শুনে তোর মনে হবে এই সংসারটাই তোর জন্য ঠিক। অন্তত এখানে তোর নিজের সংসার। কেউ তোকে এটা বলতে পারবে না, অন্যের সংসারে বোঝা হয়ে আছিস। তাছাড়া এসব টুকটাক বিষয় এড়িয়ে যেতে হয়।”

“টুকটাক? আমার মায়ের কানের দুল?”
এই কথার জবাবে বাবা অসহয় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দেয়। নরম গলায় বলে,“সংসারে থাকতে হলে বোবা এবং অন্ধ হয়ে চলতে হয়। এভাবে মানিয়ে নিয়ে, এড়িয়ে গিয়ে সংসার করে যা। তোর জন্য আমার এই পরামর্শই। আমি এখন আসি।”

“এই রাতের বেলা চলে যাবে? তাও শুকনো মুখে?”
এই কথার জবাবে বাবা মুচকি হাসলো। যে হাসির আড়ালে কষ্টগুলো লুকানো ছিলো। যেখানে বাবা হয়তো বলছে, তোর বাড়িতে আজ এত এত কথা গিলেছি যে পেটে জায়গার বড্ড অভাব। এই বাড়িতে রাতটা কাটালে যদি তোর তাতে দোষ হয়ে যায়, সেই ভয়ে রাত কাটালাম না। বাবার মনের এই কথাগুলো আমি বুঝতে পারলাম। তাই বাবাকে বাধা দিলাম না। তাকে যেতে দিলাম। শুধু আস্তে করে বললাম,“সাবধানে যেও বাবা।”


বাবাকে বিদায় দিয়ে শোবার ঘরে এসে বসলাম। পাশেই পলাশ শুয়ে আছে। আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমার দিকে ফিরে শুইলো। আমি তার দিকে তাকালাম না। যেই মানুষটা আমার নয় তার দিকে তাকিয়ে মায়া বাড়িয়ে লাভ আছে। পলাশ বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,“তোমার বাবা দেখলে ঠিক বুঝলো। শেফার কানের দুলের সাথে তোমার কানের দুলের ডিজাইনটা কিছুটা মিলে তাই তুমি ভুল বুঝলে।”

আমি জবাব দিলাম না। পলাশ আবারও বলে উঠলে,“এটা তুমি আগে বুঝলেই হতো। তাহলে এত ঝামেলা হতো না।”
এই কথা শুনে আমি ম্লান হেসে বললাম,“তুমি এই কথাগুলো এই ঘরের বাহিরে না নিলেই হতো। তাহলে এতকিছু হতো না। এখানে দোষটা কার দিবো? কারোর না। দোষটা আমার কপালের।”
আমার এই কথায় পলাশ চুপ করে গেল। সে বিরক্ত হলো বোধহয়। তবে আমি কথা বাড়ালাম না। উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। এতক্ষণ অব্দি নিজেকে সামলাতে পারলেও এবার পারলাম না। এবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকলো। আমি চেয়েও নিজের কান্না থামাতে পারছি না। এই সংসারে কাকে আপন ভাববো?ননদকে দোষ দিবো? শাশুড়ীকে দিবো? লাভ কি? যদি স্বামীই ঠিক না থাকে। এখানে তো আামর মহা শত্রু পলাশ। সে যদি আমার ভালোবাসা বুঝতো, আমাকে ভালোবাসতো তাহলে এসব কিছু হতোই না।

পলাশ আজ যা করলো তাতে আমার মনে তার জন্য থাকা ভালোবাসায় ভাঙন ধরে গিয়েছে। সেই ভাঙন আরও বেড়ে গেল তখন যখন আমি কান্না করছি বুঝতে পেরেও পলাশ আমার কাছাকাছি এলো। আমি বাধা দিতে চাইলে পলাশ বলে,“স্বামীকে না করতে নেই। এখন আমার ইচ্ছা করছে। আমাকে কষ্ট দিও না।”
যার জন্য আমি কষ্টে জর্জরিত। সেই মানুষটি আমাকে বলে তাকে জানো কষ্ট না দেই। নিজের বুকের কষ্টে বুকের ভেতর রেখে, নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পলাশের ইচ্ছে পূরণ করতে হলো। পলাশ জোর করে করলো। আমি যখন বললাম,“এখন না পলাশ।”

“চুপ। স্বামী হই তোর। যখন প্রয়োজন তখনই দিবি। বউ থাকতে আমি কি রাত পার করবো কষ্টে?”
এই কথা বলে কোন বাধা না শুনে পলাশ আমার সাথে মিলিত হলো। এটা তো শুরু ছিলো। এখান থেকেই সাংসারিক ঝামেলা, পলাশের গায়ে হাত তোলা, সব মিলিয়ে একটা ঝগড়া শেষে আবার সেই মানুষটিই রাতে কাছাকাছি চলে আসে। এমন এক জীবনের শুরু হয় আমার। বিবাহিত জীবনের আট মাসের মাঝেই এই তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম আমি। শুরু হলো সংসার নামক মরীচিকার খেলা। যাকে আমি আপন করতে চেয়েছিলাম। খুব আপন।

চলবে,

মরীচিকার সংসার পর্ব-০১

0

#মরীচিকার_সংসার (১)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

আমার হারিয়ে যাওয়া কানের দুল ননদের কানে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দুই মাসের আগে শাশুড়ী মা আমার কানের দুল পড়ে এক অনুষ্ঠানে যায়। তারপর থেকে কানের দুল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সেই কানের দুল ননদের কানে দেখে ভীষণ অবাক হলাম। রাতে স্বামী বাড়ি ফিরলে। তার বুকে মুখ গুজে কান্না করে দিলাম। আমার কান্নার শব্দ পেয়ে আমার স্বামী নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,“কী হয়েছে? কান্না করছো কেন?”

“তুমি তো জানতে আমার কানের দুলগুলো আমার কত শখের ছিলো। আমার মায়ের শেষ স্মৃতি।”
এই কথা বলে আরও কান্নায় ভেঙে পড়লাম। স্বামী আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,“এখনো ঐ কানের দুলের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো। দেখো যা হারিয়ে যায় তা যদি কান্না করলে ফেরত পাওয়া যাবে? মন খারাপ করো না।”

“তুমি জানো আজ আমি সেই কানের দুল তোমার বোনের কানে দেখেছি। হারিয়ে গেলে নাহয় মন খারাপ করতাম না। কিন্তু….।”
আমি কান্নায় কথাটি সমাপ্ত করতে পারলাম না। আমার স্বামী আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলতে বললো। অতঃপর আমি তাকে ভরসা করে সব বললাম। আমি নিশ্চিত আমার শাশুড়ী মা কানের দুল হারায়নি বরং সেটা তার মেয়েকে দিয়েছে। দুই মাসে আমি সব ভুলে গেছি ভেবে আজ ননদ সেটা পড়ে আমার সামনে অনায়েসে ঘুরলো। আমি কথাগুলো স্বামীকে খুব বিশ্বাস, ভরসা করে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম স্বামী আমার পাশে থাকবে। কিন্তু না। আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আমার স্বামী আমাকে তার বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগান্বিত গলায় বলে,“তুই কি বলতে চাস? আমার মা, বোন চোর? তারা তোর ঐ দুই পয়সার কানের দুল চুরি করেছে?”

নিজের স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার স্বামী আবারও কঠিন গলায় বললো,“আমার মা, বোনকে তোর কি মনে হয়? তারা জীবনে সোনার জিনিস চোখে দেখেনি? যে তোর মনে হয় তারা তোর সোনার জিনিস চুরি করছে?”

“আমি সেটা বলতে চাইনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি….।”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমার স্বামী অর্থাৎ পলাশ বলে,“আমি বেশ ভালোভাবে বুঝেছি তুই কি বলতে চাইছোস। দাঁড়া আমি আমার মা, বোনকে ডাকি। যা ফয়সালা হওয়ার তাদের সামনেই হোক।”
আমি পলাশকে থামাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পারেনি। সে এতজোরে চিৎকার, চেঁচামেচি করছিলো যে বাড়ির সবাই দরজার সামনে এসে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলো। পলাশ দরজা খুলতে সামনে আমার শাশুড়ী এবং ননদ পড়লো। পিছনে শ্বশুড়ও দাঁড়ানো ছিলো। পলাশ সবার সামনে কোন ভণিতা ছাড়া জিজ্ঞেস করলো,“মা তুমি নাকি রিমির কানের দুল চুরি করে শেফাকে দিয়েছো?”

“কি?”
আমার শাশুড়ী মনে হলো আকাশ থেকে পড়লো। ননদ আরও এক ধাপ উপরে। সে সঙ্গে সঙ্গে কান্না করে দিলো। তারপর বলছে,“এমনিতে বাপের বাড়ি কম আসি। যাতে ভাবীর চোখের বিঁষ না হতে হয়। এখন দেখছি আসাই যাবে না। একেবারে সোজা চোর বানিয়ে দিলো আমাদের।”
ননদের সাথে তাল মিলিয়ে শাশুড়ী বললো,“এই দিন দেখার জন্য শখ করে ছেলের বউ নিয়ে আসছিলাম। আজ আমি কি-না চোর। শুনছো ওগো। আমি নাকি বৌমার কানের দুল চুরি করে শেফাকে দিয়েছি।”

শাশুড়ী এবং ননদ তাদের অভিনয় শুরু করে দিয়েছে। তারা নিজেদের ন্যাকা কান্না দিয়ে মূহুর্তে পরিবেশ অনেক জটিল করে তুলেছে। শাশুড়ী মা আমার কাছে এসে বলে,“বৌমা তোমার যদি শেফার কানের দুল পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমার দুল হারিয়েছি তার বিনিময় নাহয় শেফার দুলটা তোমায় দিতাম। তাই বলে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিবা। আমাকে চোর বানিয়ে দিলে।”

“হ্যাঁ ভাবী। এই দুল যদি তোমার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তুমি রেখে দাও। তবুও আমাদের এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিও না।”
এই কথা শুনে পলাশ আমার দিকে রাগীচোখে তাকিয়ে বলে,“দেখলি তুই? এটা আমার মা, বোন। যাদের বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ দিচ্ছিলো তারা তোকে এক কথায় দুল দিয়ে দিতে রাজি। আর তুই কি-না…।”
পলাশের এই কথার জবাব দেওয়ার মতো কোন শব্দ আমার কাছে ছিলো। থাকবে কিভাবে? যে মানুষটির হাত ধরে এই বাড়িতে এসেছি। সেই মানুষটির কাছেই আমার কথার গুরুত্ব নেই। আমি মিথ্যা বলছি মনে হচ্ছে। তখন তাকে কোন শব্দ বা বাক্য দিয়ে বললেও যে সে বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি বুঝতে পেরে চুপ করে গেলাম। এটা দেখে শাশুড়ী মা বলে,“কি বৌমা এখন মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে কেন? মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার সময় তো চুপ ছিলে না। তা এখন চুপ কেন? কানের দুল পছন্দ হলে নিয়ে যাও। তাও দয়া করে চোর অপবাদ দিও না। আমরা চোর নই।”

“আম্মা আমার স্বামীই আমার কথা বিশ্বাস করছে না। সেখানে আমার কোন কথাই এখানে গুরুত্ব পাবে না। তবে আমিও জানি আপনিও জানেন ঐ কানের দুল আমার। আমার মাকে সারাজীবন আমি এই কানের দুল পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার বিয়ের পর থেকে আমি পড়েছি। এই কানের দুল আমি চিনবো না সেটা হতেই পারে না।”
আমার এই কথা ঘরের মধ্যে বিস্ফোরকের মতো পড়লো। সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। এই কথা শুনে আমার শাশুড়ী মা শ্বশুড়কে উদ্দেশ্য করে বলে,“শুনলে বৌমার কথা? বৌমা আমাকে সরাসরি চোর বললো। আমি চোর?”

”বৌমা তুমি চাও কি? সংসারে কেন অশান্তি করছো? তোমার কানের দুল কেন শেফাকে দিবে তোমার শাশুড়ী? শেফার কি কম আছে?”
শ্বশুড় এই কথার বলার সঙ্গে সঙ্গে শাশুড়ী ফোঁড়ন কেটে বলে,“না তো। আমার মেয়েকে তো ভিখারি বাড়ি বিয়ে দিয়েছি। আমরা ভিখারি। একমাত্র তোমার বৌমা কোটিপতি। বাপের বাড়ি থেকে কোটি টাকার জিনিস নিয়ে আসছে। আমরা সেটা চুরি করেছি।”

“না আম্মা। আমার বাবার বাড়ি থেকে কোটি টাকার জিনিস হয়তো নিয়ে আসিনি। তবে অনেক মূল্যবান আমার মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে আসছিলাম। যেটা এখন শেফার কানে রয়েছে।”
এই কথা শুনে তৎক্ষনাৎ পলাশ একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আমার গালে। সবার সামনে পলাশ এভাবে আমার গায়ে হাত তোলায় কিছুটা হতভম্বই হলাম। পলাশ রাগান্বিত গলায় বলে,“তোর সমস্যা কি? আমার মা, বোন এই বাড়িতে না থাকুক সেটা চাস? সেজন্য তখন থেকে উল্টাপাল্টা কথা বলে যাচ্ছিস। তুই আমার মা, বোনকে চোর বলছিস?”

“তোর বউ তো এটাই চায়। আমি আমার মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। তোর বউ একা রাজত্ব করুক। তাই বলে এভাবে চোর বললো। আমি কি চোরের জাত? তোর বউয়ের মতো চোরের জন্মা না আমি। যে চুরি করবো।”
আমি আর জবাব দিতে পারলাম না। শাশুড়ী এবং ননদের ন্যাকা কান্নার মাঝে আমার চোখের পানি সবার আড়ালেই রইলো। বিষয়টা এখানেই থামতে পারতো। তাদের ন্যাকা কান্না দেখে, পলাশের অবিশ্বাস দেখে আমিই বললাম,“আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিন আপনারা। আমি হয়তো ভুল দেখেছি। হয়তো বা আমার মায়ের কানের দুলটা আজ আর আমি চিনতে পারছি না।”
এই কথার পর সব থামতে পারতো। কিন্তু থামলো না। আমার শাশুড়ী এবং ননদ বিষয়টিকে আরও বড় করলো। শাশুড়ী মা তো আমার জাত, পাত, বাবা, মা তুলে কথা বলতে শুরু করেছে। পলাশ নিরব দর্শকের মতো সব শুনছে। এক পর্যায়ে শ্বশুড় বললো,“বৌমার বাবাকে ফোন দাও পলাশ। সে এসে মেয়েকে নিয়ে যাক৷ নয়তো আজ চুরির অপবাদ কাল তো নির্যাতনের মামলা দিয়ে বাড়িতে পুলিশ ডাকবে। এই মেয়ের সাথে আমাদের একসাথে থাকা সম্ভব হবে না।”
আমার শ্বশুড়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে যখন পলাশ আমার বাবাকে ফোন দিলো আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে তখনই আমি বুঝে গেছি, এই সংসারে আমার আপন বলতে কেউ নেই। আমার এই সংসারে আমার আমির অস্তিত্বই নেই। আমি বিষয়টিকে জটিল করতে না চেয়ে পলাশকে অনুরোধ করে বলেছিলাম,“না পলাশ। আমার বাবাকে ফোন দিও না। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

“না। আজ তোমাকে ক্ষমা করে দিলে তুমি লাই পেয়ে যাবে। আজ চোর বানাচ্ছো কাল হয়তো বড়সড় কিছু করবে। তাই আজই এর বিচার হওয়া উচিত।”
সংসারে যে মানুষটির হওয়া উচিত ছিলো আমার শক্ত একটি খুঁটি। সেই মানুষটিই আমাকে নিয়ে বিচার বসাতে উঠে পড়ে লেগেছে। একটা মরীচিকার সংসারকে আপন করে, একজন ভুল মানুষকে ভালোবেসে এই সংসারে নিজের সবটুকু দিয়েছে আমি সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না আমার। আমার চোখের সামনে পলাশ আমার বাবাকে খুব কড়া ভাবে এই বাড়িতে আসতে বলে। এসে তার মেয়ের দোষগুলো শুনে যেতে বলছে।



চলবে,

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_১০
#সমৃদ্ধি_রিধী

জুলাইয়ের দিনটা ছিলো শুক্রবার। বাইরে প্রচন্ড ঝড়। ঘর থেকে বাইরের দিকে তাকালে বুঝা যাবে না এখন দুপুর বারোটা। অহমি রান্নাঘরে মাত্র হাঁড়িতে ধুয়ে রাখা চাল-ডাল দিয়ে দিলো। খিচুড়ি রান্না করবে। অন্য চুলায় সামান্য তেল গরম করে ফিরোজা বেগমের রুমে গেল। বেশ কয়েকদিন যাবত ওনার পায়ে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা। ঔষধপত্র খেলেও লাভ হয় না। তেল মালিশ করে দিলে একটু স্বস্তি অনুভব করেন।

ফিরোজা বেগম ঘুমিয়েছিলেন। আগের মতো দাপট নেই। একা হাতেও সব কাজ সেরে ফেলতে পারেন না এখন। বিশেষ করে মাহিদের বাবা মারা যাওয়ার পর ভেঙে পেরেছিলো। মাহমুদ হুসাইন ছেড়ে গেলেও উনি তো ঠিকই ভালোবাসতেন। অহমি ওনার পায়ে হাত দিয়ে মালিশ করে দিতেই ফিরোজা বেগমের ঘুম ভেঙে গেলো।

“তোমার রান্না শেষ?”

“না, খিচুড়িটা করলেই শেষ। ”

ফিরোজা বেগম এমন মেয়ে পেয়ে মনে মনে খুবই সন্তুষ্ট। মেয়েটা শুরুতে কাজ-বাজ করতে না পারলেও এখন বেশ চটপটে হয়েছে।

“আম্মি আপনাকে ঘরেই খাবার দিয়ে দিবো?”

“নাহ, সপ্তাহে একটা দিন দুই ছেলের সাথে দুপুরের খাবার খেতে পারি। তুমি রেডি করে আমাকে ডাক দিয়ো, আমি তখন যাবো।”

“আচ্ছা।”

“মাহাব কোথায়?”

“আপনার ছেলের সাথে। চেপে ধরে হোমওয়ার্ক করতে বসিয়েছে।”

“পরে করালেই তো পারে। এই দুপুরে পড়াতে হবে না। আমার কাছে একটু পাঠাও তো। ”

অহমি ততক্ষণে পায়ে মালিশ করে দিয়েছে। ও ফিরোজা বেগমের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখে সেখানকার চিত্র ভিন্ন। মাহিদ বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে। মাহাব মাহিদের পিঠের উপর উপুর শুয়ে দুইজন একসাথে কি যেন দেখছে।

“এই আপনাদের এই অবস্থা কেনো?”

মাহিদ মাহাবকে হাত দিয়ে ধরে সামনে এনে সোজা হয়ে বসে। মাহাব দৌঁড়ে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ঝাঁপটে ধরে। অহমি মাহাবের দু গালে চুমু খায়।

“কি বাবা? এতোক্ষণ আমার সাথে থেকে মাকে পেয়েই আমাকে ভুলে গেলে যে?”

“কারণ মা আমার ভীষণ প্রিয়।”

অহমি চমকে মাহিদের দিকে তাকায়। মাহিদও অহমির দিকে তাকিয়ে থাকে। অহমি মাহিদের তাকিয়ে বলে, “কি করছিলেন?”

“আমরা একসাথে কার্টুন দেখছিলাম।”

মাহাবও মাহিদকে নকল করে বলে, “আমরা একসাথে কার্টুন দেখছিলাম।”

অহমি মাহিদের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “ওর হোমওয়ার্কগুলো করিয়ে দিতে বলেছিলাম। ”

মাহাবও অহমিকে নকল করে বলে, “হোমওয়ার্ক করিয়ে দিতে বলেছিলাম।”

অহমি মাহাবের দিকে কড়া চোখে তাকাতেই ছেলেটা ভদ্র বাচ্চা হয়ে যায়। ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

মাহিদ হাসি হাসি মুখ করে বলে, “করবে আরকি। এই ‘ক’, ‘খ’ শিখতে এতো প্রেশার দেওয়ার কি আছে?”

মাহাব আবারও নকল করে বলে, “কি আছে?”

মাহিদ জোরে জোরে হেসে বলে, “তোমার ছেলের আমার বলা পুরো কথা মনে ছিলো না। তাই শেষের দুইটা কথা বলেছে খালি।”

এমন সময় মুগ্ধ ওদের রুমে আসে। এসেই মাহাবকে চিৎপটাং করে কোলে নিয়ে বলে, “এই আমার স্টেথোস্কোপ দে!”

মাহাব আর মুগ্ধ সবসময় ঝগড়া করে। মাহাব মুগ্ধর চুল টেনে বলে, “দিবো নাআআ। ওটা আমার। আমি ডাক্তার না?”

“তুই কিসের ডাক্তার?”

“আমি… আমি.. বাবা আমি কিসের ডাক্তার?”

অহমি হেসে উঠে ছেলের এমন কান্ডে। মাহিদ হাসতে হাসতে বলে, “ফাঁকিবাজির ডাক্তার।”

অহমি মুগ্ধ আবারও হেসে উঠে। এতে পাঁচবছরের মাহাবের খুব গায়ে লাগে। ও মুগ্ধর কোল থেকে জোর করে নেমে ফিরোজা বেগমের ঘরের দিকে দৌঁড়ে চলে যায়। মুগ্ধও পিছন থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়ে।

অহমিও রুম থেকে বের হবে এমন সময় মাহিদ ওর হাত ধরে আটকে দেয়। নিজের পাশে বসায়।

“তোমার ভাইয়া কল করেছিলো।”

অহমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কেনো?”

“তোমাকে যেতে বলেছে।”

“ওওহ! এখন কিভাবে যাবো? মাহাবের সামনেই পরীক্ষা। ”

“অহমিকা! তোমার কথা ঘুরানো আমি বুঝি।”

“আমার ভালো লাগে না ওই বাসায়। আমার স্বস্তি অনুভব হয় না। আমি কেনো যেখানে যাবো?”

“আম্মুর শরীর ভালো না।”

“ওনার ছেলে আছে না? আমাকে কি দরকার?” অহমি অভিমানী কণ্ঠে বলে।

“মাহাব যদি তোমার সাথে কথা না বলে তোমার কেমন লাগবে?”

“আমার আর মাহাবের বিষয় এক না।”

“আচ্ছা থাকতে হবে না। দেখা করে এসো। ”

“সময় পেলে যাবো।”

অহমি শক্ত মুখ করে বেরিয়ে যায়। মাহিদের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

__________________________________________

খাবার টেবিলে আরেক কাহিনি। মাহাবকে ফিরোজা বেগম খাইয়ে দিচ্ছেন। বাবা আর দাদুমণির কাছে খাবার খাওয়ার সময় মাহাব একদম শান্ত বাচ্চার মতো খায়। মায়ের কাছে খাবার খাওয়ার সময় ওর যত বাহানা।

মাহাবের মুখে এক টুকরা মাংস তুলে দিতেই মাহাব মাহিদের উদ্দেশ্যে বলে, “বাবা আপনাকে পানি দিবো?”

মাহিদ অতটা খেয়াল করেনি। স্বভাবতই না বলে।

ফিরোজা বেগম মাহাবের মুখে খিচুড়ি তুলে দিতে গেলে মাহাব বলে, “দাদুমণি আমাকে আবার মাংস দিন তো।”

উনি তাই করলো। মাহাব একটু পর মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে, “চাচ্চু আমাকে বেগুন ভাজাটা দেন তো।”

“এই তুই এমন আপনি আপনি করছেন কেনো?”

“মাম্মাও তো বাবাকে আপনি বলে, দাদুমণিকে আপনি বলে। ফুপ্পিকে আপনি বলে। তাই আমিও বলবো।”

অহমি থতমত খেয়ে যায়। মাহিদ আড়চোখে অহমির দিকে তাকায়। অহমিও একবার মাহিদ আবার ফিরোজা বেগনের দিকে তাকায়। ফিরোজা বেগম হালকা হেসে যেন শাসিয়ে বললেন, “আমি আমার নাতির মুখে আপনি-আজ্ঞে শুনতে পারবো না। আমাকে আর মাহিদকে আর আপনি ডাকা যাবে না। ঠিক আছে?”

মাহাব মাথায় হাত দিয়ে বলে, “আয়হায় তাহলে কি আমি খালি ফুপ্পিকে মাম্মার মতো আপনি বলবো?”

সবাই আবারও হেসে উঠে। অহমি মাহিদের তিকে তাকিয়ে দেখে মাহিদ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। অহমি মাথা নিচু করে ফেলে। ঠোঁটের কিনারায় হাসি ফুটে উঠে।

__________________________________

অহমি নিজের একটা গল্প প্রকাশ করেছে। “অমাবস্যার ক্রিনিকোলাস।” মাহিদ ওকে গল্প লিখার জন্য একটা ছোট্ট টেবিল জানালার পাশে সেট করে দিয়েছে। অহমি রাত হলেই ওখানে বসে গল্প লিখে। অহমি কলম দিয়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে বিছানার দিকে তাকালো। মাহিদ চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে। মাহাব বাবার বুকের উপর মুখ হা করে ঘুমিয়ে আছে। অহমি উঠে মাহাবকে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে বাবা ছেলের গায়ে কাঁথা টেনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। খুব ঠান্ডা বাতাস বইছে।

চোখ বন্ধ করে বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে ওর বাম পাশে মাহিদ। অহমি মাহিদের ডান হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে।

“ঘুম আসছে না?”

“উহু।”

“কি করতে চাচ্ছো?”

“সারাজীবন এভাবে থাকতে চাই আতহার।”

“তোমাকে সেভাবে সময় দিতে পারছি না আগের মতো।”

“যেভাবে আছি ভালো আছি। এই একান্ত সময়টা খুব স্পেশাল।”

“আমরা এমন সময় কাটাতে পারছি কয়দিনই বা?”

অহমি উত্তর দেয় না। মাহিদ অহমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাথার উপর মাথা রাখে। চুলের বাঁধন খুলে দিয়ে বলে, “মাহাবটা বড় হয়ে যাচ্ছে।”

“আমরাও বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।”

“হুম।”

“আপনার চুল..”

“অহমিকা!”

“ওওহ! তোমার চুল পেকে গেছে আতহার।”

“তুমিও খুব একটা ইয়াং নও আর। পাঁচ বছরের ছেলে আছে। সাইত্রিশ বছরের স্বামী আছে।”

” আমি আম্মির বয়সেও আপনার কাঁধে মাথা রাখতে চাই আতহার।”

“বেঁচে থাকলে অবশ্যই পারবে।”

অহমি মাহিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাহিদ বলে, “তুমি তো মাহাবের ভীষণ প্রিয়।”

“কারণ আমি তার বাবারও ভীষণ প্রিয়।”

“ভাগ্যিস একদিন আম্মিকে তোমার ভাইয়ের ফ্যামিলি ফটো দেখিয়েছিলাম।”

“ভাগ্যিস ভাইয়ার স্টুডেন্টকে বিয়ে করতে দ্বিমত করিনি।”

“তোমার সাথে থাকলে সময়টা ভালো কাটে। ”

“তোমার সাথে থাকলে দ্বিধা কাজ করে না। স্বস্তি অনুভব হয়।”

আরো কথা বলতে বলতে অহমি ও মাহিদ হেসে উঠে। অহমির কেনো কে জানে চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে! ওর খুব সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে।
_________________________________________

রাত তিনটা। পুরো রুম অন্ধকার। কেবল একটা টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। রুম জুড়ে কেবল কলমের খসখস শব্দ। এই ডায়েরিতে কেবল অনেক কষ্টের, খারাপ লাগার দিনগুলোতে হাত দেওয়া হতো। তবে কেনো যেন আবার হাত দিতে ইচ্ছে হলো।

“আমি অহমিকা তাজরীন। মিসেস অহমিকা আতহার হুসাইন। জন্মের এক সপ্তাহ আগে বাবা মারা যাওয়ায় আমার তেইশ বছর পর্যন্ত তার মৃত্যুর দায়ভার আমার কাঁধে ছিলো। যার থেকে বিয়ের পর আমি মুক্তি পেয়েছিলাম। আমি ডায়েরিতে আমার মনের কথা লিখতাম। তখন শুনবার মতো কেউ ছিলো না। এখন আমার কাছে দুজন আছেন যারা আমার সব। ছেলেটা পুরোই বাবার মতো হয়েছে। আমি এতে খুব খুশি। আমি তাদের দুজনের ভীষণ প্রিয় একজন। আমাকে আর এখন গল্প ছাড়া অন্যকিছু ডায়েরিতে লিখতে হয় না। খারাপ লাগলেও একটা বুক থাকে আমাকে আগলে নেওয়ার জন্য। আরেকজন আছে যে আমাকে কাঁদতে দেখলে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেও ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে। আমি হাসলে ওরাও হাসে।

ভাইয়া, আম্মু আমাকে খালি ওই বাসায় যেতে বলে। আমার যেতে ইচ্ছে হয় না। কেমন যেন লাগে। ওদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও মন থেকে ক্ষমা করতে পারিমি বলেই হয়তো। আমি জন্মদাত্রী মা থেকেও আমার শ্বাশুড়ির সাথে বেশি ক্লোজ বলেই তাকে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না।
মাহিদও আমার মা-ভাইকে পছন্দ করে না। আম্মুকে আম্মু ডাকলেও ভাইয়াকে এখন স্যার বা ভাইয়া কখনোই ডাকে না। ওর নাকি কিছু সম্মোধন করতে রুচিতে বাঁধে। তবে সরাসরি অসম্মানও করে না। ওর যে ভাইয়ার প্রতি ভীষণ রাগ। কারণ তারা পারতো আমার শৈশবকে রঙিন করতে, তারা পারতো একটা সুস্থ জীবন দিতে।

এই ডায়েরিতে কেবল অনেক কষ্টের, খারাপ লাগার দিনগুলোতে হাত দেওয়া হতো। তবে কেনো যেন আবার হাত দিতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে হলো খালি দুঃখের কথাই না লিখে এখানে কিছু সুখের কথা লিখি। এরপর আর এই ডায়েরিতে হাত দিবো না।

এখন আর ভুল করার প্রবণতা মনের মধ্যে কাজ করে না। অ্যাটেলোফোবিয়া মাহিদ সারিয়ে দিয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা শুনতে হয় না। আম্মি আমাকে সব শিখিয়ে দিয়েছে। রুমও অগোছালো থাকে না। মাহিদ আমাকে রুম ফিটফাট রাখনো শিখিয়ে দিয়েছে। আমিও নিজ থেকে কৌতুক বলতে পারি। এটা মুগ্ধ শিখিয়ে দিয়েছে। বড় কাউকে দেখে মিথ্যে সম্মান দিতে হয় না। মুনতাহা আপু শিখিয়ে দিয়েছে কি করে ভালোবেসে ছোটদের থেকে সম্মান পাওয়া যায়। আরেকজন ছোট সদস্য আছে যিনি আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে মন খারাপ থাকলে ছোট ছোট হাত থেকে আদর পেয়ে মন ভালো করতে হয়।

আমি অহমিকা তাজরীন খুব ভালো আছি। আমার এই ডায়েরির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বিভিন্ন সময়ের খারাপ-কষ্ট-দুঃখ থাকার মুহুর্তের কথা লিখা থাকলেও ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় কোনো দুঃখের কথা লিখা নেই। আমি অনেক খুশি। অনেক সুখী। অহমিকার ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা তার আনন্দে ভরপুর।”

ডায়েরিটা বন্ধ হলো। ডেট লিখা হলো। সব পৃষ্ঠায় চোখের জল থাকলেও ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় ছিলো না। এই ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা অহমিকা তাজরীনের জীবনের অনেক অপ্রাপ্তির পরেও বৃহৎ প্রাপ্তির এক সামান্যতম অংশ মাত্র। যা তাকে এনে দিয়েছে তার অর্ধাঙ্গ, তার জীবনসঙ্গী।

_____________সমাপ্ত _____________

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৯

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৯
#সমৃদ্ধি_রিধী

আহির আর সাইফার বিয়ে, রিসেপশনের সব পার্ট গতকালের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অহমি আগামীকালই মাহিদের বাসায় চলে যাবে। আপাতত আফরোজা বেগমের বাসায়ই আছে। মাহিদ, ফিরোজা বেগম আর মুগ্ধ গায়ে হলুদের দিন বিকলে এসেছিলেন। ফিরোজা বেগম, মুগ্ধ গতকালই রিসেপশনের অনুষ্ঠান শেষেই ফিরে গেছেন। কেবল অহমি আর মাহিদ আফরোজা বেগমের অনেক জোরাজোরি করায় থেকে যায়।

তখন সময় রাত এগারোটার মতো। অহমি ও মাহিদ মাত্রই ডিনার করে রুমে এসেছে। অহমির বাসায় তিনটা রুম। অনেক আত্মীয় স্বজন থাকার কারণে আহির আর সাইফাকে একটা রুম দিয়ে মহিলারা একরুমে ছিল, আর পুরুষরা আরেক রুমে ছিল। আজকে সকালেই ওদের সকল আত্মীয়রা নিজেদের বাসায় চলে যায়। এতে অহমি আবারও নিজের রুমটা ফিরে পায়। মাহিদ সকলে চলে যাওয়ার পর থেকেই বলছিল ‘রুমটা নিট এন্ড ক্লিন করে রাখো। এমনিতেও অনেকের সাথে একসাথে থাকার কারণে ঘুম হয়নি।’ অহমিও করবে করবে করে আর করেনি।

রুম দেখেই মাহিদের ভ্রু কুচকে যায়। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অহমির দিকে তাকায়। অহমি আমতাআমতা করে বলে, “আচ্ছা গুছিয়ে নিচ্ছি রুম। এভাবে তাকানোর কি আছে?”

“তোমার এই রুম কি কখনোই আমি ভালো অবস্থায় দেখবো না?”

অহমি বিছানার চাদর চেঞ্জ করতে করতে বলে, “এইবারই দেখছেন অগোছালো। এর আগে ছিলো না এমন।”

মাহিদ দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দরজার সাথেই হেলান দিয়ে বলে, “শুরু থেকেই এমন। যখন পড়তে আসতাম তখন মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখতাম তো রুমের অবস্থা। ”

“এই আপনি একটা মেয়ের রুমের দিকে আড়চোখে দেখতেন? ছিহঃ।”

“যাস্ট সাট আপ। তোমার ভাইয়ের রুমে ঢুকতেই তোমার রুম সামনে পড়ে৷ চোখ তো একবার দুইবার পড়তেই পারে না?”

” আমি তো রুমের দরজা লাগিয়ে রাখতাম।”

“হুম, তুমি যে কেয়ালফুল, সবসময় দরজা লাগিয়েই রাখতে।” ব্যঙ্গ করে বলে।

অহমি মাহিদের দিকে একবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফটাফট রুমটা গুছিয়ে ফেললো। মাহিদ বিছানায় বসে অহমির উদ্দেশ্যে বলে, “যাও, ঔষধের বক্সটা নিয়ে আসো।”

অহমির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। শিট! ও তো ঠিকঠাক ঔষধ খায়নি। এবার!

“কি হলো নিয়ে আসো?”

“আমি খেয়ে নিবো তো।”

“আমাকে বক্সটা এনে দিতে সমস্যা?”

“আরেহ সমস্যা কেনো হবে? আমি খেয়ে নিচ্ছি।”

মাহিদের খটকা লাগে। মেয়েটাকে আগাগোড়া চিনে গেছে ও।

“অহমিকা। শুনবে না আমার কথা?” অত্যন্ত কড়া কণ্ঠে বলে।

মাহিদ সেই থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অহমির দিকে তাকিয়েই আছে। আর অহমি কাচুমাচু করে একবার মাহিদের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে ফেলছে। অহমির ভয়ই হয় মাহিদের এহেন তাকানো দেখলে। এমন একবার দেখেছিল গাজীপুরের রিসোর্ট’টায়। এরপর সৌভাগ্যবশত দেখা হয়নি। আজ আবার এই রোষানল দৃষ্টির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে।

মাহিদ অহমির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার ঔষধের পাতাগুলোর দিকে তাকায়। মাহিদ একসাথে বারোদিনের ঔষধ অহমির সাথে করে দিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে ও মাত্র পাঁচদিনের ঔষধ খেয়েছে। এই ঔষধগুলোর ব্যাপারে সর্তক থাকতে হতো। কিন্তু মেয়েটার এই বিষয়ে অবহেলা ওর সহ্য হচ্ছে না। নেহাৎ-ই মেয়েটা মাহিদের ভীষণ প্রিয়, তাই কড়াভাবে কিছু বলতে পারছে না।

“যা ইচ্ছে তাই করো।”

মাহিদ জেদের বশে হাতে থাকা ঔষধগুলো দূরে সরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অহমি কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে রুমে লাইটটা নিভিয়ে দিলো। মাহিদ ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে ছিলো। অহমি পিছন থেকে মাহিদের টি-শার্ট টানতে টানতে বলে, ” ঐ আর করবো না তো!”

মাহিদ অহমির হাত সরিয়ে দিলো। অহমি আরো কয়েকবার এমন হাত ধরে টানলো। নিজের দিকে ফিরানোর প্রয়াশ করলো। কিন্তু পুরুষের শক্তির কাছে কি পারা যায়? এবার অহমি মাহিদকে পিছন থেকে ঝাঁপটে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলে, “এই আতহার! আর করবো না! প্লিজ। এবার থেকে যা যা বলতে তাই তাই করবো।”

মাহিদ শক্ত কণ্ঠে বলে, “ছাড়ো, ঘুমাতে দাও।”

অহমির কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। কম্পিত কণ্ঠে বলে, “প্লিজ আতহার! এভাবের মতো! লাস্ট!এরপর থেকে সব মেনে চলবো।”

“তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো অহমিকা।”

আসলেই অহমি ওকে মিথ্যা বলেছে। প্রতিদিন রাতে মাহিদ ওকে ঔষধ খাওয়ানোর কথা মনে করিয়ে দিতো। প্রথম এক-দুইদিন নিয়মিত খেতোও। এমন হয়েছে যখন একেবারে ডিনার সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ছে, তখন মাহিদ ওকে মনে করালেও আলসেমিতে খেতো না। এভাবেই অহমি ফাঁকিবাজিটা করতো।

“ওইটা তো যাতে বকা না শুনতে হয় তাই বলেছি।”

মাহিদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসে না। অহমি মিনমিন করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে “আলসি লাগাতেই তো খেতাম না। আর মিস দিবো না। পাক্কা। ”

“তুমি হচ্ছো যে ‘যে কদু, সেই লাউ’ টাইপের মেয়ে।”

“না না! আমি সত্যি বলছি আর কখনোই আপনার কথার অবাধ্য হবো না। ”

“আচ্ছা, ঘুমাও এখন।”

“আপনি আমার দিকে ফিরুন আগে।”

মাহিদ এই মেয়ের সাথে বেশিক্ষণ রেগে থাকতেই পারে না। অহমির দিকে ফিরলেো। অহমি মাহিদকে জড়িয়ে ধরলেও মাহিদ ধরেনি। অহমি মাহিদের হাতটা নিজের পিঠে রেখে বলে, ” সরি বললাম না! আর করবো না।”

“আচ্ছা।”

“আপনার রাগ কমেনি না?”

“নাহ।”

এভাবে মুখের উপর কে বলে? বেশি বেশি সবসময়।

“আজব এমন মেয়েদের মতো রাগ করেন কেনো?”

এটা বলায় মাহিদ যেন আরো চটে গেল। অহমিকে ছেড়ে অন্যদিকে ফিরতে গেলে অহমি আবারও শক্ত করে ঝাঁপটে ধরে। নিচু কণ্ঠে বলে, “কি করতে হবে বলুন রাগ কমাতে?”

“যা বলবো তাই করবে?”

অন্যরকম স্বর। অহমি বুঝে এই টোনে কথা বলার অর্থ। পুরো রুম অন্ধকার থাকলেও অহমি মাহিদের গভীর চাহুনিও বুঝলো। ধীর কণ্ঠে কেবল বললো, “হুম।”

__________________________

সময় যেন এক অদৃশ্য চিত্রকর। মানুষের হাসি, কান্না, ভালোলাগা, বিচ্ছেদ সকলকিছুকে একত্রে ধারণ করে বয়ে চলে। বাস্তবতা, স্বপনের মিশেলে গল্প বুনতে থাকে। অহমির জীবন থেকেও এভাবে বছর দুয়েক কেটে গেছে। অহমির অর্নাস, মাসটার্স শেষ। সংসার জীবনেও পরিপক্বতা লাভ করেছে। প্রানোজ্জ্বল ভাবে দিন কাটাতে পারছে। এখন অহমি সবসময় ও সবকিছু ভুল করে এমন প্রবণতা থেকেও বেরিয়ে আসছে। ফিরোজা বেগমের সাথে থাকতে থাকতে অনেক কিছু শিখেছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শিখেছে। মাহিদের রুমও এখন সবসময় গুছানো থাকে। মোদ্দা কথা অহমির প্রতি কারো অভিযোগ করার সুযোগ থাকে না।

অহমি গতকালকে ও আজকে ভার্সিটির কাগজপত্র তুলতে হবে এমন মিথ্যে অযুহাত দিয়ে বাইরে একটা কাজে গিয়েছিল। সেই যে আটটায় বের হয়েছিল বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে বারোটা বেজে যায়। মাহিদের বোন মুনতাহা ও ওনার পাঁচ বছরের মেয়ে মেহাও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছে এই দেড় মাস হবে। ওনার হাসবেন্ড এসেছিলেন, তিনি একমাসের মতো থেকে আবার অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। এবার মুনতাহা চলে যাওয়ার সময় ফিরোজা বেগমকেও সাথে নিয়ে যাবে। ফিরোজা বেগম টুরিস্ট ভিসায় ঘুরে আসবেন। মেয়ের সাথে লম্বা একটা সময় থাকা হবে।

এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাসায় ঢুকেই মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো। কিছুদিন পরই ওর মেডিকেল এডমিশন। এখন তো আসার কথা ছিল না! আগে থেকে বলা থাকলে তো জানতে পারতো। মেহা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। অহমি মুগ্ধর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, “মুগ্ধ তুমি এখন বাসায়?”

মুগ্ধর চোখ-মুখ বসে গেছে। গ্লাসে পানি ঢেলে খেলো। অহমির আবারও প্রশ্ন করলো, “তোমার কি শরীর খারাপ? কি হয়েছে?”

মুগ্ধ মাথা নিচু করে রুমের দিকে যেতে যেতে বলে, “তুমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে নিও।”

অহমি অনেকটাই অবাক হলো। মুগ্ধ ওকে কখনোই ইগনোর করে না। তাহলে আজ এমন করলো কেনো? এতক্ষণে মেহা অহমির গলা পেয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। অহমি মেহার দিকে তাকাতেই মেহা অহমিকে জড়িয়ে ধরে। বলে, “মামিমণি খিদে পেয়েছে।”

বিদেশী বাচ্চাগুলোর কথা শুনতেও কিউট লাগে। কিভাবে যেন ভুলভাল আধভাঙ্গা উচ্চারণে বাংলা বলে। তবে অবাক হলো মেহার তো এতোক্ষণ না খেয়ে থাকার কথা না।

“মাম্মা খাইয়ে দেয়নি?”

“নাহ। নানুমণি আর মাম্মা শুধু কান্না করে।”

অহমির ভ্রু কুচকে গেলো। মুগ্ধর চোখ মুখের এমন অবস্থা। আম্মি আর মুনতাহা আপুই বা কাঁদে কেনো? মেহাকে এই বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।

মেহার গালে হাত দিয়ে বলে, “মেহা তাহলে এখন কি খাবে?”

মেহা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গিতে কি কি যেনো চিন্তা করে। তারপর এক গাল হেসে বলে, “ইন্সটেন্ট নুডলস।”

অহমি মুচকি হাসি দিয়ে আর রুমে না গিয়ে ড্রয়িংরুমের সাথে লাগোয়া কমন ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুঁয়ে আসে। বাইরের পরিধেয় পোশাক পড়েই মেহাকে নুডলস রান্না করে দেয়। মেহাও টিভি দেখতে দেখতে নুডলস খেতে থাকে।

মুনতাহারা আসার পর থেকে ফিরোজা বেগমের সাথেই থাকেন। তাই অহমি ফিরোজা বেগমের রুমের দিকে গেলো। সেখানকার চিত্রও বড় অদ্ভুত। ফিরোজা বেগম নিরবে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছেন। মুনতাহা ফিরোজা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর শরীরটা কেঁপে উঠলো। বুঝাই যাচ্ছে কাঁদছে।

“আম্মি আসবো?”

অহমির কণ্ঠস্বর শুনে মুনতাহা উঠে বসে। ফিরোজা বেগম অনুমতি দিতেই অহমি রুমে ঢুকে বলে, “কোনো সমস্যা আম্মি? আপনি, আপু, মুগ্ধ সকলের অবস্থা এমন কেনো? কিছু হয়েছে?”

ফিরোজা বেগম কাঁদেননি, তবে উনি যেন অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। অহমি এবার মুনতাহার উদ্দেশ্যে বলে, “আপু ভাইয়া ঠিক আছে?”

মুনতাহা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে, “হুম। তুমি মাহিদের কাছে যাও।”

অহমির খারাপ লাগে। ওকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না কেনো? বিস্ময়ের সুরে বলে, “উনি বাসায়?”

“হুম যাও রুমে আছে।”

অহমি কিছু না বলে রুমে আসে। মাহিদের শরীর খারাপ করলো কিনা! রুমে আসার পর অবাকই হয়েছে। মাহিদ ফ্লোরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে হাঁটুর উপর রাখা দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে। অহমি আঁতকে উঠে। সকলের এই অবস্থা কেনো?

অহমি মাহিদের সামনে গিয়ে ওর মুখটা উঁচু করে ধরে। চুলটা এলোমেলো হয়ে আছে।

“এই আতহার! কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো সকলে?”

মাহিদ অহমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ওর কাঁধে মুখ গুজে রাখে। অহমির বড্ড ভয় হয়। চাকরিক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে? বলছে না কেনো? ওর তো সবাইকে একটা খবর দেওয়ার আছে।

“এই বলেন না কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো?”

মাহিদের গলা কাঁপে। অহমি মাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” প্লিজ আতহার কিছু বলুন না! আমার সত্যিই খুব ভয় লাগছে।”

” আজকে আমরা চারজন আমাদের জীবনের এমন একজনকে হারিয়েছি যাকে আমরা খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু তিনি আমাদের মূল্য দেননি। তাকে মনে মনে প্রচন্ড ঘৃণা করলেও আজ আমি ঘৃণা করতে পারছি না! পারছি না! আমার খুব খারাপ লাগছে অহমিকা। এমন আমার কখনো মনে হয়নি। ওনার জানাজায়ও আমরা যেতে পারিনি। অথচ ওখানে আমার আর মুগ্ধর অধিকার ছিলো সবচেয়ে বেশি।”

অহমি কয়েক মুহুর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যায়। ধীর কণ্ঠে বলে, “আপনার বাবা?”

মাহিদ ওকে আরো শক্ত করে ধরে। অহমি কিছুক্ষণ মাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কিভাবে মারা গেলেন?”

মাহিদ সেসবের উত্তর দিলো না। নিজের মতো প্রলাপ বকতে লাগলো।

“আমি স্বীকার না করলেও তাকে খুব ভালোবাসতাম। আজকে যখন হসপিটালে রক্তমাখা লাশটা দেখলাম বিশ্বাস করো দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহায় লাগছিলো নিজেকে। ওনার সেকেন্ড ওয়াইফ, অবৈধ বাচ্চা সবাই ছিলো শুধু আমার, মুগ্ধর সামনে যাওয়ার অধিকার ছিল না।”

অহমি অস্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “মুগ্ধ? ”

“উনার অবৈধ ছেলে মুগ্ধর সাথেই পড়ে। ওই ছেলের থেকেই মুগ্ধ প্রথমে খবর পায়। তারপর মুগ্ধ আমাকে কল করে জানায়। এবং কাকতালীয়ভাবে আমার হসপিটালের সামনেই এক্সিডেন্টটা হয় এবং কয়েকজন ওনাকে নিয়ে আসে। প্রায় আধা ঘন্টার মতো নাকি বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পড়ে ছিলো। আমার বায়োলজিকাল ফাদার নাকি বেওয়ারিশ লাশ! হাহ।”

মাহিদ আর কথা বলতে পারে না। সকালে হসপিটালের করিডরে এমন অবস্থা দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি। এক্সিডেন্টে স্পটেই মারা গেছেন। অহমি কখনো বাবাকে অনুভব করতে পারেনি। হয়তো দেখলে, তার সান্নিধ্য পেলে কিছুটা অনুভব করতো। তাই বাবাকে মিস করে কিনা ও বলতে পারে না। কিন্তু মাহিদের যে বাবার প্রতি অনেক ভালোবাসা ছিল তা বোঝাই যাচ্ছে।

“মাহমুদ হুসাইন ওয়াজ আ কাওয়ার্ড। হি লেফ্ট আস। বাবা হওয়ার মতো কেনো যোগ্যতাই উনার ছিলো না। উনি জীবিত অবস্থায়ও আমাদেয় শান্তি দেননি, মরে গিয়েও দিচ্ছেন না।”

অহমি মাহিদের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে, “মৃত মানুষকে নিয়ে এইসব বলতে নেই। বাদ দিন।”

অহমি কেবল মাহিদের মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে। মাহিদ অহমিকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। দু’হাতে মুখ ভালোভাবে মুছে। বলে, “আম্মি আপুর কাছে যাওয়া উচিত। ওনার জন্য কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। ওনার মতো বাবা করো না হউক। কারো অবস্থাও আমাদের মতো যেন না হয়।”

অহমি মাহিদের হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে, “উনার মতো কেউ হবে না। আপনিও খুব শিঘ্রই একজন চমৎকার বাবা হবেন। আমাদের সন্তানের অবস্থা আপনাদের মতো হবে না।”

“হুম,,, কি বললে?”

অহমি মাথা উঁচু নিচু করে হ্যাঁ বোঝালো। মাহিদ নিজের হাতটা অহমির পেটে ছুঁইয়ে বলে, “তুমি সিউর?”

“হুম টেস্ট করিয়ে এসেছি। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, তাই বলিনি।”

মাহিদ অহমির দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে, “আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না।”

অহমি মাহিদকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলে, “অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে না। এমনভাবে ভালোবাসলেই হবে।”

“আমি তোমায় ভালোবাসি না। বাবাও নাকি আম্মিকে ভালোবাসতো। যে ভালোবাসায় ছাড়ার ক্ষমতা থাকে আমি তা করি না।

আমি তোমায় ভালোবাসি না। তবে অনুভব করি। তুমি আমার ভীষণ যত্নের একজন। তুমি আমার ভীষণ প্রিয় একজন।”

একটু থেমে বলে, “তুমি, তোমরা আমার ভীষণ প্রিয়।”

চলমান……

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৮

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৮
#সমৃদ্ধি_রিধী

অহমির ইচ্ছে হলো মাহিদের মাথায় একটা বাড়ি মারতে। তাও শান্ত দৃষ্টিতে মাহিদের দিকে তাকিয়ে ওদের গ্রুপটার পিপল ওপশানে গিয়ে সাতজনের গ্রুপটার সকলের নাম বের করলো। তারপর মাহিদের দিকে মোবাইল তাক করে বলে, “এইযে এখানে আমার নাম অহমিকা তাজরীন, আর আমার আরেকটা ফ্রেন্ডের নাম তাজরীন আহমেদ। সাবিহা সেই তাজরীনকে ট্যাগ দিয়েছে। আমাকে ওরা অহম বলেই ডাকে।”

মাহিদ হা করে রয়। হুদাই চোটপাট করলো নাকি? ছোট করে বলে, “সরি!”

অহমি একবার ভাবলো এমন মাতব্বরির জন্য আর খাবারের অফার দিবে না। তাও শান্ত স্বরে বললো, “টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ভদ্র ছেলের মতো খেতে আসেন।”

মাহিদও অহমির পিছন পিছন ডাইনিং টেবিলে গেলো। অহমি দুটো প্লেটে খাবার বাড়ছে। মাহিদ হাত ধুঁয়ে নিজের জায়গায় বসতে বসতে বলে, “নয়টা বা দশটা বাজলে খেয়ে ফেলতে পারো না? আমার জন্য লেট করার মানে হয় না।”

সব হচ্ছে কথা বলার অযুহাত। বিয়ের নবম দিনের মাথায় মাহিদ বলেছিলো- লাঞ্চ তো একসাথে করা হয় না তবে অহমি যে ওর জন্য বসে থাকে, তারপর একসাথে ডিনার করে মাহিদের ওইটা খুবই ভালো লাগে। অহমি মুখে খাবার তুলতে তুলতে ধীমে কণ্ঠে বলে, “আচ্ছা কালকে থেকে আম্মির সাথে খেয়ে ফেলবো।”

ফিরোজা বেগম সবসময় নয়টা থেকে দশটার ভিতর ডিনার সেরে ফেলেন। আগে মাহিদের জন্য ঘুমে ঝুঁড়তে ঝুঁড়তে এগারোটা বা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ওয়েট করে তারপর ঘুমাতে যেতেন। এখন আর ঘুমে ঝুঁড়তে হয় না ওনাকে। উনি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। অহমিই এখন রাতের রান্নাঘরের বিষয়ে সবটা সমলায়।

মাহিদ মাত্রই মুখে খাবার তুলতে যাচ্ছিলো। অহমির এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়।

“সত্যিই খেয়ে ফেলবে?”

“হুম।”

“আমি কি তাহলে একা ডিনার করবো?”

“তা তো করতেই হবে। আম্মির সাথে খেয়ে ফেললে আমি তো আবার আপনার সাথে ডিনার করতে পারি না।”

“আমি একা খেতে পছন্দ করি না, জানো না?”

“ওমাহ আপনিই না বললেন লেট করার দরকার নেই?”

“ওইটা তো কথা বলার জন্য বলেছিলাম।”

অহমির হাসি এলেও টুপ করে তা গিলে ফেলে। মাহিদ বাম হাতে মাথা চুলকে বলে, “আচ্ছা সরি আর ভুলভাল বকবো না।”

অহমি চুপচাপ খেতে থাকে। মাহিদ কাচুমাচু করে বলে, “কিছু তো বলো?”

“চুপচাপ খাবার খান। অহেতুক ঝামেলা করা লোকদের আমার ভালো লাগে না।”

“আচ্ছা তাহলে পরেরবার ঝামেলা করার সময় তোমার থেকে খোঁজখবর নিয়ে ঝামেলা করবো।”

কিসব কথাবার্তা! অহমির সব হাসি যেন মুখে একসাথে আসছে। অনেক বর মুচকি হাসি দিয়েও তা গিলে ফেলে। তবে এখন আর থাকতে না পেরে খুব জোরেই হেসে ফেলে। মাহিদ ছোট ছোট চোখ করে বলে, “মজা করছিলে?”

অহমি মাথা উপর নিচে করে হ্যাঁ বুঝায়। বলে, “প্রথমে ভেবেছিলাম রাগ করবো।পরে ভাবলাম আমার জন্য কেউ জেলাসিতে কয়লা হয়ে গেলে খারাপ কি? ভালেবাসার বহিঃপ্রকাশই তো।”

অহমি একটু থেমে বলে, “ওহ ভালো কথা। আপনি কখনো ভালোবাসার কথা বলেননি।”

“এইসব কথা বলতে হয় না। অনুভব করাই যথেষ্ট।”

“বললে সম্পর্ক মজবুত থাকে।”

“উহু বললে নজর লাগে। একে অপরের যত্ন নিলেই তো হয়। এতো বলতে হবে কেনো? যা মুখে মুখে বেশি ভালোবাসি-ভালোবাসি করে তারাদের ভিতর ফাঁপা থাকে।”

“বাবাহ! ভালোবাসার উপর পিএইচডি করেছেন মনে হচ্ছে।”

“অবশ্যই। যে ভালোবাসাকে ভালোবেসে আগলে রাখে, সেই ভালোবেসে তার ভালোবাসাকে সরাসরি প্রকাশ করে না। অনুভব করাতে সাহায্য করে।”

“এইসব কি ভালোবাসা আর ভালোবাসা!!”

মাহিদ হেসে আবারো বলে, ” ভালোবাসা ভালোবেসে তাকে ভালোবাসায় ভালোবাসাকে বেঁধে রাখে যে।”

“আমি আর ভালোবাসার কথা শুনতে চাইবো না। প্লিজ থামুন।”

মাহিদ হেসে আবারও বলে, “ভালোবাসা ভালোবাসাকে ভালোবাসতে ভালোবাসে।”

অহমি হাসতে হাসতে বলে, “আর নিতে পারছি না। প্লিজ। কিন্তু পয়েন্ট হচ্ছে সাইক্রিয়াটিস্ট এমন কবি হলো কি করে?”

মাহিদও হালকা হাসে তবে তার ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়। রাতের খাবার খেতে খেতে টুকটাক কথাবার্তা বলে। সময়টা ওদের ভালোই কাটে।

_______________________________________

তার পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার সকালে মুগ্ধ না বলে হুট করে বাসায় আসে।ওর নাকি বাসার খাবার খেতে মন চাচ্ছিলো। ছেলেটা মাত্রই দুই মাসের মতো হোস্টেলে থাকছে। খাবারের সাথে এডজাস্ট হতে পারছে না। তাই অহমি, ফিরোজা বেগম বিভিন্ন ধরনের ইটেম রান্না করেছে। আবার বিকালের দিকে অহমি রান্নাঘরে পিজ্জার ডে তৈরি করছিলো। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। মাহিদ, মুগ্ধ টিভি দেখছিলো। মুগ্ধ দিয়ে দরজা খুলে। আফরোজা বেগম আর আহির এসেছে। মুগ্ধ চেঁচিয়ে ভাবিকে ডেকে পাঠায়। অহমি হাত ধুঁয়ে জামার ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বের হয়। মা- ভাইকে দেখেই অবাক হয়।

ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে। ফিরানিতে গিয়েছিল। মাত্র একদিন থেকে চলে এসেছে। মাঝের বারো-তেরো দিন পর মা ভাইকে দেখে মনে হলো কতদিন পর এসেছে। আহিরের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে। পরের শুক্রবারে। ওনারা মাহিদদের দাওয়াত দিতে এসেছেন। একই সাথে একটা আর্জি নিয়ে হাজির হয়েছেন। ওনারা আজকে সাথে করে অহমিকে বাসায় নিয়ে যেতে চান। আফরোজা বেগম ফিরোজা বেগমের থেকে অনুমতির আাশায় চেয়ে আছেন। ফিরোজা বেগম একবার মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সমস্যা নেই। ভাইয়ের বিয়েতে বোনের থাকাটা উচিত। মাহিদ তোমার কি মতামত?”

মাহিদ আড়চোখে একবার অহমির দিকে তাকায়। মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমার সমস্যা নেই। অহমিকা যেতে চাইলে অবশ্যই যাবে।”

আহির অহমির দিকে তাকিয়ে বলে, “যাবি আজকে আমাদের সাথে বাসায়? কোনো সমস্যা হবে?”

অহমি মাথা নিচু করে মাথা ডানে-বামে নাড়ে। অর্থাৎ, সমস্যা নেই। মাহিদ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে। ভেবেছিলো ওর দিকে তাকালে ইশারা দিয়ে বোঝাবে এতো তাড়াতাড়ি যওয়ার দরকার নেই। কিন্তু মেয়েটা তো তাকালোই না।

ফিরোজা বেগম অহমির দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে গোছগাছ করে ফেলো। ঘুরেও এসো, আনন্দ করো। ভালো লাগবে।”

আফরোজা বেগম ফিরোজা বেগনের উদ্দেশ্যে বলেন, “ভাবি আপনারা যাবেন না? মুগ্ধ আর আপনিও..”

অহমি আর ওখানে দাঁড়ালো না। মাথা নিচু করে রুমে এসে আলমারি থেকে কয়েকটা নতুন শাড়ি আর জামা বের করে। ওই বাসায় তো ওর সব জামা কাপড় আছেই। খুব বেশি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।একটু পরই মাহিদ রুমে আসে। দরজাটা বন্ধ করে না, তবে হালকা করে চাপিয়ে রাখে। অহমি মাত্র ব্যাগ গুছিয়ে চেন মারছিলো। মাহিদ ওর হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নেয়।

“চলে যাচ্ছো যে?”

“আপনি বললেন না কেনো কিছু? তাহলেই তো যেতে হতো না।”

“আমি কি বলতাম গুরুজনের সামনে? আমি আমার বউ ছাড়া থাকতে পারবো না? তাও বিয়ের সতেরোদিনের মাথায়?”

অহমি মাহিদের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নেয়। বলতে মন চাইলো, “কেনো বিয়ের সতেরোদিনের মাথায়ই বউ ছাড়া থাকতে পারবেন না এটা মানতে খারাপ লাগবে?”

কিন্তু দায়সারাভাবে বললো, “আমি কি জানি?”

“আমি এতটা নিলজ্জ নাহ। তাছাড়া বড়দের সামনে বেফাঁস কথাবর্তা বলা আমার পছন্দ না। এইসব থাকাথাকির কথা বলা বড্ড বেমানান।”

“হুম,, যেতে হবে আমাকে।”

” তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার কি দরকার?”

“ভাইয়াকে নিষেধ করতাম?”

মাহিদ উত্তর দেয় না। ভাইয়ের বিয়েতে বোনের এক সপ্তাহ আগে যাওয়াটা অযৌক্তিক না। অহমির গালে হাত দিয়ে বলে,

“সাবধানে থাকবে। কেউ কিছু বললে গায়ে মাখবার দরকার নেই।”

অহমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। মাহিদ সময় নিয়ে একটা বড় বক্সের মধ্যে অহমির যাবতীয় ঔষধগুলো গুছিয়ে রাখে। তারপর ঔষধের বক্সটা অহমির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

” ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখো। প্রতিদিন সকালে আর রাতে মনে করে খাবে। তুমি তো জানোই কোনটা কখন খেতে হয়। ওহহো তোমার তো আবার ঔষধ খাওয়ার কথা মনে থাকে না।”

অহমি ঔষধের বক্সটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। গাদা গাদা ঔষধ খেতে ভালো লাগে না ওর। তারচেয়ে বড় কথা ঔষধ খাওয়ার কথা মনে থাকে না। তাই ঔষধের প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,

“আপনি কবে যাবেন?”

” বুধবারে নাহলে বৃহস্পতিবারে চেম্বার থেকে একেবারে যাবো।”

“এতো দেরীতে?”

“শ্বশুরবাড়িতে ছেলেদের এতোদিন থাকতে নেই।”

“বলেছে আপনাকে!” অহমি ব্যঙ্গ করে বলে।

“তোমার ভাইয়া তো আম্মি আর মুগ্ধকেও দাওয়াত দিয়েছেন। আমি আম্মি আর মুগ্ধকে নিয়ে একেবারে বুধবার রাতেই আসবো। ঠিক আছে?”

অহমি মাহিদকে জড়িয়ে ধরে। “মিস করবো।”

“রাতে কল দিলে রিসিভ করো। একবার রিং হতেই যেন রিসিভ করা হয়। তোমার তো আবার কেউ কল দিলে কাকে কি বলবে তা ভাবতে ভাবতেই সময় পার হয়ে যায়।”

একটু থেকে বলে, “তবে পিজ্জাটা খাইয়ে প্লিজ যেও।”

______________________________________

অহমি বাড়ি এসেছে আজ তিনদিন। বাসায় আবার বিয়ের আগেকার সময়ের মতো ছিল। রুম গুছানোর কোনো ঝামেলা ছিল না। যখন ইচ্ছে খেয়েছে, ঘুমিয়েছে। মাহিদ হাসবেন্ড হিসেবে চমৎকার, তবে সিঙ্গেল লাইফটাই দারুণ। নিজের মতো খাও-দাও, ঘুমাও। কেউ অসময়ে ঘুমানোর জন্য চেঁচামেচি করে না। মেডিসিন নিলে নাও, না নিলে নেই। রাতে দেরীতে ঘুমাও, সকালে বারোটায় ঘুম থেকে উঠো, হু কেয়াস!
যদিও মাহিদ ফ্রি হলেই কল করে। আবার রাতে অনেকক্ষণ কথা তো বলেই।

অহমি বিছানায় আধশোয়া হয়ে একটা বই পড়েছিল।
এমন সময় দরজায় আহির নক করে। অহমি উঠে বসে। আহির ধীর পায়ে এসে বিছানায় অহমির পাশে বসে। চোখ-মুখে দারুণ হতাশা, আত্মগ্লানি। আফরোজা বেগমও গত পরশু মেয়ের কাছে অনেক কান্নাকাটি করেন। অহমি প্রতিবারের মতোই নির্বিকার ছিলো। মাকে শান্ত মুখে কেবল সাত্ত্বনা দিয়ে গেছে। তা ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে। যাক গে সেসব কথা।

“কিছু বলবে ভাইয়া?”

“ভালো আছিস?”

অহমি অবাক হয়। কি ধরনের প্রশ্ন এগুলো? ক্ষীণ কণ্ঠে বলে, “হুম ভালো আছি।”

আহির হঠাৎ ফ্লোরে বসে অহমির হাত দুটো আগলে ধরে, “তোর সাথে খুব অন্যায় করেছি না?”

অহমি কিছু বলতে পারে না। নিরবে তাকিয়ে থাকে।

“আম সরি অহম। সরি ফর এভরিথিং। তোর ছোটবেলাটা এভাবে নষ্ট না করলেও পারতাম৷ আমি জানি না কেন, আমার মাথায় তখন কাজ করেনি তোর সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত নয়। ভাবতাম দাদি যা বলতো তাই ঠিক। কখনো মাথায় আসেনি এতটুকু মেয়েও একটা সুস্থ পরিবেশ ডিজার্ভ করে।”

আহির থেমে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসতাম। সবার স্কুলে বাবা যেতো, সেইসব দেখে আমার সত্যি কষ্ট হতো।দাদি যখন বলতো তোর জন্য বাবাকে হারিয়েছি, তোর জন্য সবার মতো আমারও বাবা নেই। তখন আমার খুব কষ্ট হতো। আমার মধ্যে একধরনের জেদ কাজ করতো তোকে কিভাবে কষ্ট দেওয়া যায়।”

অহমির চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কণ্ঠস্বর আটকে যায়। তবুও যেন অনেক কষ্টে বলে, “বাবা তো আমারও ছিল না। মাকে থেকেও পায়নি।”

আহির এবার অহমির হাতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদেই ফেলে। “আমার কোনো অধিকার ছিলো না তোর লাইফটা নষ্ট করার। আমাকে মাফ করে দে। আমি এই দুইদিন কি করে ছিলাম কেবল আমিই জানি। আমার..”

অহমি ভাইয়ের মুখটা উপর তুলে চোখ মুছে দেয়। “তোমাকে এভাবে মানায় না ভাইয়া।”

অহমি আহিরের এইসব কথাতে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। আহির আর অহমির মধ্যে অনেক দূরত্ব। আহির এতোদিন না বুঝলেও এখন বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। কম্পিত কণ্ঠে বলে, “তুই আমাকে মাফ করবি না?”

“এইসব ভুলে যাও ভাইয়া। আমিও মনে রাখবো না। তবে ক্ষমা করতে পারবো কিনা জানি না। আমাকে এগুলো আর মনে করিয়ো না। আমার অস্বস্তি হয়।”

আহির আরো কিছুক্ষণ ওইভাবে থেকে চলে যায়। খুব আফসোস হচ্ছে। অন্যান্য ভাই-বোনের মতো কেনো নয় তারা! অহমি দরজাটা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে। বিড়বিড় করতে থাকে, ” সরি সবকিছুর সমাধান হয় না ভাই। যদি হতো সরি দিয়েই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো তাহলে সমস্যা, অভিযোগ নামে কোনো ওয়ার্ডই থাকতো না। কি হবে তোমার সরি দিয়ে?তোমার সরিতে আমি আমার শৈশব আবার ফিরে পাবো?”

অহমির ফোনে একবার কল এসে কেটে যায়। তবুও ও এভাবেই দরজার সাথে লেগে থাকলো। কেনো ওকে বারবার ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়? ও যে এইসব ভালো লাগে না!

চলমান…..

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৭

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৭
#সমৃদ্ধি_রিধী

মাহিদ তার কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই অহমি মাহিদের শার্টের কলার খামছে ধরে। একই সাথে মাহিদের গলার কাছটার চামড়ার ছিলে যায়। অহমি মাহিদের কলার ঝাঁকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আপনি কোন সাহসে আমার ডায়েরিতে হাত দিয়েছেন? আপনাকে আমি কোনো অধিকার দেয়নি আমার ডায়েরিতে হাত দেওয়ার। কেনো করেছেন?”

মাহিদের গলার বাম সাইডটা পুরো জ্বলে গেল। সে ওইসব পাত্তা দিলো না। অহমির হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে দুটো হাত ধরে বলে, “আমি তোমার হাসবেন্ড। আমার রাইট আছে তোমার বিষয়ে সবকিছু জানার।”

অহমি ছটফট করতে থাকে। মাহিদ অহমির গাল দু হাতে আগলে ধরে বলে, “দেখো আমার কাছে লুকানোর মতো কিছু নেই। তুমি মন দিয়ে আমার কথা শুনো তারপর….”

মাহিদ তার কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। অহমি ওর বুকে অনবরত কিল-ঘুষি দিতে দিতে হবে, “আপনি আমার অনুমতি ছাড়া কেনো আমার ডায়েরিতে হাত দিবেন? আমি আপনার কোনো কথাই শুনবো না।”

মাহিদ অহমিকে আগলে ধরে বলে, ” শান্ত হও। আমার পুরো কথা শুনো। আমাকে বলতে দাও।”

অহমি আরো ছটফট করে। মাহিদ এক কাজ করে বসলো। দৃঢ়ভাবে অধরে অধর ছুঁইয়ে দিলো। অহমির ছটফটানিও কমে গেল। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ফ্লোরে বসেই মাহিদের বুকের সাথে মিশে রইলো। সংকীর্ণ কণ্ঠে বলে, “আপনার আগে আমার থেকে পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।”

মাহিদ চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলে, “হাসবেন্ডদের পারমিশন নিতে হয় না।”

তারপর মাহিদ অহমির চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলে, “অহমিকা কেউই কখনো পারফেক্ট হয় না। যদি পারফেক্ট হতোই তাহলে ‘মানুষ মাত্রই ভুল’ প্রবাদটা কিন্তু আসতো না।”

একটু থেমে অহমির দিকে তাকায়। অহমিকে এতো দ্রুত শান্ত করা যেতো না। আহির যেহেতু বিয়ের দিন অহমির অ্যাটেলোফোবিয়া থাকার আশঙ্কা মাহিদকে জানিয়েছিল, মাহিদ তাই শুরু থেকেই একটু একটু করে অহমির বিশ্বাস, ভরসা, স্বস্তির জায়গা হওয়ার প্রচেষ্টা করেছে। এমনকি ও হতেও পেরেছে। একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে এই কাজ খুব একটা কঠিন ছিল না মাহিদের জন্য।

মাহিদ অহমির মাথার উপর মাথা রেখে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে, “তুমিও পারফেক্ট হবে না, আমিও হবো না ৷ ভয় পেয়ো না। তুমি মানুষ, যন্ত্র না। আমরা ভুলগুলো ঠিক করে নেবো।”

অ্যাটেলোফোবিয়ার রোগীকে একটু সান্ত্বনা দেওয়াই যথেষ্ট। অহমি স্থির হয়ে রয়। মাহিদকে ওর শুরু থেকেই ভালো লাগে। ওর সাথে থাকলেই অহমির কেমন শান্তি শান্তি লাগে। কিন্ত এবার অহমি ফুঁপিয়ে উঠে। বলে,” আমি কিছু পারি না বলে আম্মু কথা শুনাতো। ভাইয়া কথা শুনাতো। এখন আম্মিও আমাকে বলে। আপনিও কথা শুনান। কালকেও কথা শুনিয়েছেন। ”

মাহিদ কপালে অধর ছুঁইয়ে বলে, “আর বলবো না। সরি বউ।”

“আপনারা সব কথার কথা বলেন। ঠিকই পরে আমাকে কথা শুনাবেন। আমি জানি।”

“কেনো তোমাকে কথা শুনাবো?”

“আমি ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে থাকতে পারি না। ভালো রাঁধতে পারি না। আরো কতকি! যা করি তা-ই তো ভুল।”

“নাহ, তুমি অনেক ভালো রাঁধো। আম্মির পরে তোমার রান্না আমার প্রিয়। আপু তো নিজের বিয়ের সময় কিছুই করতে পারতো না। সেই হিসেবে তুমি ভালোই বাঁধো। আর তোমার সব ভুল নয়। তুমি সুন্দর করে গল্পও লিখতে পারো। এগুলো এক্সট্রা অডিনারি কোয়ালিটি অহমিকা। তাছাড়া মানুষ ভুল করে কিন্তু যা করে তা-ই ভুল হয় না।”

“তারপরেও আপনি কথা শুনাবেন।”

“কেউ শুনাবে না।”

“শুনাবেন আমি জানি। আপনি আমার ডায়েরি পড়ে ফেলেছেন। আপনি আমাকে এখন ক্রিন্জ ভাববেন। আমি পুরোই ওয়েটলেস হয়ে গেলাম।”

“কিছুই হয়নি। হাসবেন্ড ওয়াইফের একজন আরেকজনের সম্পর্কে সবকিছু বা কোনো পাস্ট জানলে কিছুই হয় না।”

“হয়, আপনি মনে মনে ঠিকই একদিন ভাববেন কেমন পাগল ছাগল বিয়ে করেছেন। আমাকে মনে মনে ঠিকই ছোট চোখে দেখবেন।”

“তারমানে তুমিও আমার বাবার ইন্সিডেন্টটার জন্য আমাকে ছোট চোখে দেখো? তুমিও তাহলে ভাবো এর বাবা এমন
ক্যারেক্টারলেস,তাহলে ছেলেও এমনই হবে।”

” না, না আমি তেমন কিছুই ভাবি না।” অহমি তড়িঘড়ি করে
বলে।

“আমিও তেমন তোমাকে নিয়ে তেমন কিছু ভাবিও না, ভাববোও না। ”

“আপনি আমাকে এখনই সরি বলবেন। আমার অনুমতি না নিয়ে কেনো ডায়েরি পড়েছেন?”

“কোনো সরি ফরি বলবো না। আমার হকের জিনিস নিয়ে এতো কিসের অনুমতি? তাছাড়া কাব্যিক কথা আছে না কিছু! ‘যাহা তোমার তাহাই আমার’। তুমি আমার ব্যাপারে সবকিছু জানতে পারো, তবে আমিও পারবো।”

অহমি শান্ত হয়ে কিছুক্ষণ ওইভাবেই থাকে। মা, ভাই কেনো ওকে ওইভাবে বুঝাতো না, বুঝতো না! অহমি হঠাৎই মাহিদকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যায়। বলে, “যতই সান্তনা দেন না কেনো, আমি ভুলবো না আপনি আমার অনুমতি না নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়েছেন।”

অহমি চোখ-মুখ মুছে রাগে গজগজ করতে করতে বাথরুমে চলে যায়৷ মাহিদ অহমির এই কান্ড দেখে মাথা চুলকে নিরবে হেসে ফেলে। নিজেও উঠে বেলকনিতে চলে যায়। যদি বাইপোলার ডিসওর্ডার থাকতো তাহলে অহমি এত দ্রুত শান্ত হয়ে যেতো না। যেহেতু হাইপার হয়ে গেছিলো সো ওইটা ম্যানিক এপিসোড। আর ম্যানিক এপিসোডে রোগীকে এত দ্রুত শান্ত করা যায় না। মাহিদ মন প্রাণে চাইলো অহমির যেন বাইপোলার ডিসওর্ডার না থাকে।
________________________________________

খাবার খেতে বসে অহমি মাহিদকে পুরোপুরি ইগনোর করে গেলো। তবে সর্বোচ্চ খাতিরযত্ন করে খাইয়েছে। মাহিদ অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে, কিন্তু অহমি কেবল হু-হা করেই গেছে। অহমি রান্নাঘর থেকে বাসনপত্র ধুয়েমুছে রুমে এসে আড়চোখে একবার মাহিদের দিকে তাকালো। লোকটা আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে। অহমি সত্যি সত্যি রাগ করেনি, তবে রাগ করার ভান করে আছে। লাভ কি হলো? মাহিদ তো একবার সরি টরি বলে মানাতেও এলো না!

রাগে গজগজ করতে করতে একেবারে ফ্রেশ হয়ে লাইট নিভিয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ড্রিম লাইট অবশ্য জ্বালালো। মাহিদের এই ড্রিম লাইট খুবই অপছন্দের । তারউপর ও বই পড়ছিলো। লাইটটা নিভালো কেনো? তাও কিছু বললো না। চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজেও শুয়ে পড়ে।

অহমি মাহিদের দিকে পিঠ করে শুয়েছিল। মানে ছেলেটা অনুমতি না নিয়ে ডায়েরি পড়েছে, এখন অহমি সে বিষয়ে রাগ করেছে কিন্তু মাহিদ কি করলো! ও এখনও মানাতেও এলো না? ঘুমিয়ে গেছে নাকি? ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মাহিদের দিকে তাকালো। ওমাহ ছেলে ওর দিকেই তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল। অহমি চট করে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। মাহিদ চট করে ওকে পিছন থেকে ঝাঁপটে ধরলো। কানের পিছনে অধর ছুঁইয়ে ধীমে কণ্ঠে বলে, “রাগ তো করোনি, তাও কেনো এমন করছো?”

অহমি কণ্ঠে কৃত্রিম তেজ এনে বলে, “কে বলেছে রাগ করিনি?”

“আমি জানি আমার অহমিকা আমার সাথে রাগ করতেই পারে না।” আরো জোরে আঁকড়ে ধরলো।

অহমি দমে গেল। মাহিদ ওকে এতো ভালো করে বুঝে কি করে? মাহিদের সাথে মিশে রইলো। হঠাৎ মনে আসতেই বলে,
“আমার ডায়েরিগুলো আমাকে দিবেন না?”

“নাহ।”

“ওমাহ কেনো?” অহমি জোরালো কন্ঠে বলে উঠলো।

“ওই ডায়েরিতে লিখতে হবে না আর। এখন থেকে যা যা মনে আসবে, সব আমাকে বলবে। কোনো দু:খের কাহিনি লিখতে হবে না। সুখ-দুঃখ যে কথাই থাকুক না কেনো, আমাকে বোলো।”

অহমির মুখ কুচকে গেল।
“সব বলা যায় নাকি?”

“চাইলেই বলা যায়। আমি তোমার তালতো ভাই না যে বলা যাবে না।”

“আমার গল্পের ডায়েরি?”

“সেটা দিয়ে দিবো। কিন্তু একটা কথা দিতে হবে। কালকে আমার সাথে একবার আমার চেম্বারে যেতে হবে।”

অহমি মিনমিন করে বলে, “আচ্ছা সেটা করবো, কিন্তু প্লিজ ডায়েরিগুলো ফিরিয়ে দিয়েন৷”

“কিছুতেই না।”

“আপনি খুব খুব খারাপ।”

“হুম, সেটা প্রায় রাতেই শুনি। নতুন কিছু বলো।”

অহমি বেশ লজ্জা পেলো। মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারলো না। মাহিদও আর শব্দ করলো না। একটার মতো বাজে। এখন আর বেশি কথা বাড়ানের মানে হয় না। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
__________________________________________

তার পরদিন অহমি মাহিদের সাথে গিয়ে বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল টেস্ট, ব্লাড টেস্ট করে এসেছিল। এবং মাহিদের পরবর্তী সন্দেহ সঠিক হয়। অহমির সিমটোমসগুলোকে ও বাইপোলার ডিসওর্ডার এর সাথে তুলনা করেছিল অতিরিক্ত মুড চেঞ্জ হয় বলে। অহমির বাইপোলার ডিসওর্ডার নেই, তবে ভিটামিন বি-টুয়েলভ এবং ভিটামিন ডি এর একত্রে ঘাটতি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত মুড সুইং এর প্রবলেম হচ্ছনিয়মিত মেডিসিন নিলে এটা ঠিক করা যাবে। আর মাহিদ ডিসিশন নিয়েছে অহমিকে “টক থেরাপি বা সাইকোথেরাপি ” দিয়ে নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করবে।

মাহিদ মাত্রই ওর চেম্বার থেকে ফিরেছে। রুমে ঢুকেই দেখতে পেলো অহমি বই পড়ছে। ওর অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তাই নিয়মিত সংসারের পাশাপাশি টুকটাক পড়াশোনাও করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । অহমি বই এর মাঝে এতটাই মনোযোগী অবস্থায় ছিল, মাহিদের উপস্থিতি টের পায়নি। মাহিদ ওয়ারড্রব থেকে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে ধাম করে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। অহমি প্রায় লাফিয়ে উঠলো।

ডিভানের উপর রাখা কালো ব্যাগটা দেখে বুঝতে পারে মাহিদ
এসেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে এগারোটার মতো বাজে। সাধারণত মাহিদ বৃহস্পতিবার এতো দেরীতে তাড়াতাড়ি বাসায় আসে না। আজকে কেনো এলো? পেশেন্টের চাপ নেই নাকি? তারউপর ভদ্রলোক এমন রেগে আছে কেনো? মাহিদ বাথরুম থেকে বের হতেই অহমি মাহিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহিদ অহমিকে পাশ কাটিয়ে বেলকনি থেকে টাওয়ালটা নিয়ে আসে। অহমির ভ্রু কুচকে যায়। এমন করছে কেনো?

অহমি বলে, “আপনি কি রেগে আছেন? ”

“নাহ!”

মানে রেগে আছে। অহমি মনে করার চেষ্টা করে সে তো কিছু করেনি। তাহলে এমন রেগে আছে কেনো? মাহিদ গিয়ে বিছানার উপর আধশোয়া হয় মাথার চুল মুছতে থাকে। অহমি মাহিদের টি-শার্টের হাতাটা টেনে বলে, “আচ্ছা, ডিনার করতে আসেন।”

মাহিদ অহমির হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয়। রাগে ফোসফোস করতে করতে বলে, “তোমার সিফাতকে খাওয়াও।”

অহমি হতভম্ব হয়ে যায়। মাহিদ ওর দিকে রোষানল দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।

“এই সিফাত আবার কে?” অবাক সুরে প্রশ্ন করে। মাহিদ আবারও রোষানল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়।

“আরেহ আমি আসলেই চিনি না।”

মাহিদ উত্তর দেয় না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চুল মুছতে থাকে। অহমি হাত থেকে টাওয়ালটা কেড়ে দেয়। মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,

“এই,, সিফাত কে? আমি চিনিও না।”

“মিথ্যা বলছো কেনো?”

“সত্যি! মিথ্যা বলবো কেনো?”

“অহমিকা ভুলে যেও না, তোমার আইডি আমার মোবাইলেও লগ ইন করা।”

“হ্যাঁ তো!”

মাহিদ খাটের পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটার উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে অহমির দিকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে বলে, “তোমার পুরা নাম কি?”

অহমি অবাক। আজ মৃধা ওর জায়গায় থাকলে সিউর প্রশ্ন করতো, “আপনি কি ম*দ খাইছেন?না গা*জা?” তবে অহমি সোজাসাপ্টাই উত্তর দিলো, “অহমিকা তাজরীন।”

মাহিদ গ্রুপের মেসেজ কনভারসেশনে গিয়ে কি যেন সার্চ দিয়ে অহমির দিকে মোবাইল তাক করে বললো, “এখানে সাবিহা কেনো তাজরীনকে ট্যাগ দিয়ে বলবে’আজকে তোর ক্রাশ সিফাতকে দেখলাম’? এটা তো তুমিই না?”

অহমির ইচ্ছে হলো মাহিদের মাথায় একটা বাড়ি মারতে। তাও শান্ত দৃষ্টিতে মাহিদের দিকে তাকিয়ে ওদের গ্রুপটার পিপল ওপশানে গিয়ে সাতজনের গ্রুপটার সকলের নাম বের করলো। তারপর মাহিদের দিকে মোবাইল তাক করে বলে, “এইযে এখানে আমার নাম অহমিকা তাজরীন, আর আমার আরেকটা ফ্রেন্ডের নাম তাজরীন আহমেদ। সাবিহা সেই তাজরীনকে ট্যাগ দিয়েছে। আমাকে ওরা অহম বলেই ডাকে।”

চলমান…..

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৬

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৬
#সমৃদ্ধি_রিধী

ছয়টা ডায়েরি তো একসাথে পড়া সম্ভব নয় তাই মাহিদ একটা ডায়েরি নিয়ে পড়া শুরু করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত মাহিদ গল্প লিখার ডায়েরিটা পড়ে। মাহিদ অহমির লিখা গল্পগুলো পড়ে অবাকই হয়েছিল। মেয়েটার এমন সুপ্ত প্রতিভাও থাকতে পারে মাহিদ তা কল্পনাও করেনি। মাহিদ জীবনে একাডেমিক বই ছাড়া অন্য কিছু পড়েনি। এখনও কেবল নিজের পড়াশোনা, কাজ আর পেসেন্ট রিলেটেড জিনিসপত্রই পড়ে। আর এই মেয়ের লেখা সবকিছুই হাই কেয়ালিটির। এইজন্য অবশ্যই বেশ রিসার্চও করতে হয়েছে। প্রায় ওর দু’ঘন্টা মতো লেগেছে পুরো গল্পের ডায়েরিটা শেষ করতে। ডিনারের সময় হয়ে যাওয়ায় অন্য ডায়েরিগুলো পড়ার সময় পায়নি।

ডিনার শেষ হওয়ার পর মাহিদ রুমে এসে প্রথমে আলমারির কিছু অংশের জামাকাপড় এলেমেলো করে ফেললো। অহমির প্যান্টিং এর জিনিসপত্র থেকে রং একটু নিয়ে খাটের পায়ার কাছের ফ্লোরটায় মেখে নিলো। অহমির চুল ঝড়ে রুমের ফ্লোরে পড়ে থাকে বলে মাহিদ ওকে চুল আঁচড়ে ঝরে যাওয়া চুল একটা পলিথিনে ভরে রাখতে বলেছিল। অহমিও তাই করে কথা মতো। মাহিদ সেই পলিথিন থেকে কয়েকটা চুল নিয়ে বাথরুমের দেয়ালে, সাবানে রেখে দিলো। আহির ওকে অ্যাটেলোফোবিয়ার কথা বললেও মাহিদ নিজে তা পরীক্ষা করে দেখতে চায়। বাকিটা অহমির রুমে আসার পর দেখা যাবে। কিন্তু সাড়ে এগারোটা বাজার পরও যখন অহমি রুমে আসে না। মাহিদ এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করতে থাকে। রুমের এই অবস্থা দেখে ওর গা খিটখিট করছে যেন। মাহিদ তাই কিচেন থেকে ধরে-বেঁধে অহমিকে আনতে গেল।

আর বাইপোলার ডিসওর্ডার আছে কিনা সেটা মাহিদ অহমির আচার-আচরণ দেখে পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও বাকিটা একদিন নিজের চেম্বারে নিয়ে ডিএসএম-ফাইভ, স্ক্রীনিং টুলস ব্যবহার করে সিউর হয়ে নিবে। আর যদি অহমির বাইপোলার ডিসওর্ডার না থাকে তবে ব্রেন টিউমার, ভিটামিন বি-টুয়েলভ এবং ডি এর ঘাটতির ফলে মুড চেঞ্জের প্রবলেম হতে পারো। অথবা হাই-থাইরয়েডের প্রবলেমও হতে পারে। টেস্ট করতে হবে। এইসবের লক্ষণও যেহেতু বাইপোলার ডিসওর্ডারের সাথে মিলে, তাই মাহিদ সিউরলি বলতে পারছে না অহমির এটা আছে নাকি নিছক ওর সন্দেহ।

__________________________________________________

অহমি ব্যবহৃত থালাবাসনগুলো ধুয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে চোখ বুজে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। আজকেও মাথাটা চিনচিন করে ব্যাথা করেই যাচ্ছে। ঔষধ খেতেই হবে এমন অবস্থা।

“তুমি এখনও রুমে যাওনি যে?”

অহমি চোখ খুলে দেখতে পায় মুগ্ধ পানির বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অহমি তো বলতে পারে না তোমার ভাই এর পল্টিবজির জন্য যাবো না।

“এইতো যাচ্ছি।”

মুগ্ধ ওর পাশে সোফায় বসে বলে, “তোমার কি শরীর খারাপ?”

“তেমন কিছু না, মাথা ব্যাথা করছে। ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”

“আরেহ ঔষধ খেতে হয় না। তুমি আইসক্রিম খেয়ে দেখো মাথা ব্যাথা পুরো গায়েব হয়ে যাবে। নিয়ে আসবো? ফ্রিজে আছে এক বক্স।”

অহমি স্মিত হেঁসে বলে, “লাগবে না। তাছাড়া কালকে হোস্টেলে চলে যাবে। এখন এতকিছু করতে হবে বা। গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।”

মুগ্ধ চোখ-মুখ কুঁচকে বলে, “উফ তুমি খেলে আমিও খেতাম।”

“এই না। হোস্টেলে গিয়ে ঠান্ডা-কাশি বাঁধানোর দরকার নেই। ঘুমচাপ গিয়ে ঘুমাও।”

“মুগ্ধ ঘুমাতে যা।”

হঠাৎ মাহিদের কণ্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ আর অহমি দুইজনই চমকে উঠে। মাহিদের কণ্ঠে অত্যন্ত গাম্ভীর্যের ছোঁয়া ছিল। সচারাচর মাহিদ এতোটা ক্ষুব্ধ থাকে না। মুগ্ধ তাই কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। হাসি-ঠাট্টার সম্পর্ক হলেও মুগ্ধ ভাইকে ভালোই ভয় পায়।

“অহমিকা তুমিও রুমে এসো।” অহমিও দিরুত্তর না করে মাহিদের পিছন পিছন রুমে প্রবেশ করলো। মাহিদ দরজা লাগিয়ে মুখটা যথাসম্ভব কঠিন করে বলে, “তোমাকে আমি কতোবার বলেছি রুম সবসময় গুছিয়ে রাখতে? তাও এমন অগোছালো হয়ে থাকো কেনো?”

প্রথমত মাহিদ এমন কড়া সুরে সেই গাজীপুরের ঘটনার পর একবারও কথা বলেনি। দ্বিতীয়ত, ও তো রুম গুছিয়েই রাখার চেষ্টা করে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে সুধায়, “রুম তো গুছানোই। জায়গার জিনিস জায়গা মতোই রাখা।”

মাহিদ এবারও বেশ কড়া সুরে অহমির হাত টেনে আলমারির কাছে নিয়ে অগোছালো হয়ে থাকা জামাকাপড় দেখিয়ে বলে, “তাহলে এগুলোর এই অবস্থা কেনো?কাপড়চোপড় এভাবে রাখা আমার পছন্দ নয় জানো না?”

অহমি অবাক হয়ে বলে, “আমি এগুলো সত্যিই করিনি। তাছাড়া কালকেই তো সবকিছু গুছালাম।”

“তাহলে আমি করেছি? তোমাকে ইচ্ছা করে দোষ দিচ্ছি? ”

অহমির মুখটা কালো হয়ে গেল। ধীমে কণ্ঠে বলে, “আচ্ছা আমি গুছিয়ে রাখবো।”

“সে নাহয় গুছাবে, ফ্লোরের রং এর দাগ, সবান, দেওয়ালে যে চুল লাগানো সেগুলো কে করবে?”

অহমি আনমনে বলে ফেললো, “আচ্ছা আমি এখনই সব ঠিক করে দিচ্ছি।”

তবে অহমির পুরোটা সময় মনে হচ্ছিলো ও তো সবকিছু ঠিকঠাক করেই রেখেছিল। কিন্তু কনফিডেন্সের সাথে বলতে পারেনি। অহমি পুরোটা সময় ভ্রু কুচকে কাজ করতে লাগলো। সাবানে চুল লাগার বিষয়টাতে ওর বেশি সন্দেহ হচ্ছিলো। আবার ভাবলো ভুলে কোনো কারণে মনে হয় করে ফেলেছিল। কিন্তু প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করার কারণে আর বেশি একটা ঘাটলো না বিষয়টা।

মাহিদ তখন বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে। ও অহমির সব আচরণ, গতিবিধি বেশ সুক্ষ্ম চোখে পর্যবেক্ষণ করছিলো। অহমি কাজগুলো শেষ করে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে রুমে এসে বিছানায় বসতেই মাহিদ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠে,” তুমি একটা কাজও ঠিকঠাক করতে পারো না। পারফেকশন নামে কোনো ওয়ার্ডই তোমার কাছে নেই। এইযে বিছানায় ভিজা টাওয়ালটা রাখলে চাদরটা ভিজে গেলো না?”

অহমির গলা মনে হয় চেপে ধরলো। হাত-পা গুলো ঠান্ডা হয়ে গেলো। একেই তো প্রচন্ড মাইগ্রেনের ব্যাথা। তারউপর মাহিদের এমন কথা। গা কাঁপতে কাঁপতে বিছানার কিনারা থেকে ফ্লোরে পড়ে গেলো। মাহিদ নিজের বিস্ময় প্রকাশ করার অবকাশটুকুই পায়নি। “ওওহ শিট!” বলে দৌড়ে অহমিকে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে। অহমির চোখ দুটো শান্ত, নিষ্প্রাণ। কেবল চোখের কিনারায় পানি চিকচিক করছে।

__________________________________

দুপুর ২টা। লাঞ্চ আওয়ার। মাহিদ আজ লাঞ্চের জন্য খাবার আনেওনি আর ক্যান্টিনেও যাচ্ছে না। হসপিটালের ক্যাবিনের ডেক্সের উপর রাখা পেপারওয়েট’টার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশেই স্তুপ আকারে অহমির ডায়েরিগুলো রাখা। মাহিদ ওগুলো সবগুলো পড়েছে। এবং ওর অনেক বেশি রিগ্রেট হচ্ছে অহমির ব্যাপারে পুরো সবটা না জেনে গতকালকের স্টেপটা নেওয়া। সাধারণত ওরা পেসেন্টের ফ্যামিলি মেম্বার বা খোদ পেসেন্ট থেকেই তাদের সম্পর্কে আগে জেনে তারপর ট্রিটমেন্ট করে। কিন্তু অহমির ব্যাপারে নিজে থেকে পরীক্ষা করতে গিয়ে এই কাজটা করলো।

অহমিকে কালকে রাতে মেডিসিন দিয়ে কেনো রকম ঠিক করে মাহিদ ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা সকাল থেকে একবারও তার সাথে কথা বলেনি। অনেকবার চেষ্টা করেও অহমির মুখ থেকে একটাও শব্দ বের করতে পারেনি। এমন অ্যাটাকের কারণ প্রথমে না বুঝতে পারলেও ‘অহমিকার ডায়েরির বিভিন্ন পৃষ্ঠা’ নামক শিরোনাম দেওয়া ডায়েরিটা পড়ার পর মাহিদের নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছিলো। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল ধামছে ধরলো। এমন সময় কেউ ক্যাবিনের দরজায় দুবার নক করলো। মাহিদ ডেক্সের উপর থেকে মাথা না তুলেই বলে, “কাম।”

“অহমের কি অবস্থা? ” আহির মাহিদের মুখোমুখি চেয়ারে বসতে বসতে প্রশ্ন করলো।

মাহিদের দৃষ্টি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলো। তেছড়া কণ্ঠে প্রশ্ন করলো, “আপনার ভাই হিসেবে লজ্জা হয় না?”

“মানে?”

“আপনি, আপনার সো ক্লড দাদি, ফুফু কিভাবে ভাবতেন আপনার বাবা মারা যাওয়ার জন্য অহমিকা দায়ী? আমার ধারনা যদি সঠিক হয় তবে আপনাদের জন্য অহমিকা এখন কমরবিডিটির মতো প্রবলেমে ভুগছে।”

“কমরবিডিটি?” আহিরের কণ্ঠে বিস্ময়। “দুটো প্রবলেম একসাথে?”

“ইয়েস। একটা অ্যাটেলোফোবিয়া আরেকটা আমি সন্দেহ করছি বাইপোলার ডিসওর্ডার। যদিও কেনো যেন বাইপোলার ডিসওর্ডার না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মনে হচ্ছে, তাও আমি চেক করবো। ”

“বাইপোলার ডিসওর্ডার?”

“সিউর না, সন্দেহর বশে কিছু বলতেও পারছি না।”

আহিরের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। অ্যাটেলোফোবিয়ার কথা আন্দাজ করেছিল। কিন্তু ও সাইক্রিয়াটিস্ট না, সার্জন হওয়ায় এইসব খুব গভীরভাবে বুঝতে পারেনি।

“আপনার দাদি, ফুফু ওরা সেকেলে, আপনিও কিভাবে অহমিকার সাথে এমন আচরণ করতেন? অযথাই মারতেন, নিজে বই খাতা ছিড়ে ওর নাম দিয়ে মায়ের হাতে মার খাওয়াতেন? সকালে খেতে দিতেন না? দুপুরে খাবারে পানি ঢেলে দিতেন? মে মাসের তীব্র গরমে স্কুলে আসা-যাওয়া করার ভাড়া দিতেন না? ওর ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত এমন করেছেন?”

“আমি তখন ছোট ছিলাম মাহিদ। আর দাদি আমাকে যা করতে বলতো তাই করতাম আমি। ”

“প্লিজ আর নিজের দোষ ঢাকতে যাবেন না। অহমিকার ক্লাস ফাইভ মানে আপনি এসএসসি পরীক্ষার্থী। এতোটাও ছোট না যে ছোট বোনের সাথে কেমন বিহেব করতে হবে বুঝতেন না।”

“তুমি আমাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে না জেনে কথা বলতে পারো না।”

“আপনার থেকেও ডিফিকাল্টি আমি ফেস করেছি। আমার এডমিশানের মতো এতো বড় একটা টাইমে আমার বাবা সেকেন্ড ওয়াইফ নিয়ে বাসায় আসে। তখন মুগ্ধর মাত্র দশ কি এগারো বছর। বাবা-আম্মির সেপারেশন হয়। আপুর গ্রেডুয়েশান কমপ্লিট হয়নি। আমাদের খুব ভালো অবস্থা ছিল না। তাও আমরা পরিবারের কাউকে পরিস্থিতির অযুহাত দিয়ে ফেলে যায়নি। ” “হাহ অহমিকার ডায়েরি না পড়লে এমনও পরিবার, ভাই হয় তা জানতেও পারতাম না।”

মাহিদ নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আজকে অনেক
অয়েন্টমেন্ট আছে। আবার আজকেই অহমির এমন অবস্থা। অন্যদিকে আহির সন্দিহীন আসলেই কি ওর দোষ আছে? ওর দাদি ওকে অনেক স্নেহ করতো, তাই যা বলতো তাই তাই করতো। এতোকিছু ভাবেনি কখনো। বোনের প্রতি অনেক বেশি অন্যায় করে ফেললো না? কিন্তু পরে তে অহমির সাথে স্বাভাবিক হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। অহমির পছন্দের অনেক কিছু করে দিতে চেয়েছে। সর্বোচ্চ খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছে। ভাই হিসেবে পরবর্তীতে করা অন্যায়ের শাসন করাও কি ভুল ছিল।
_______________________________

মাহিদ সচারাচর বাসায় ফিরে রাত সাড়ে দশটার মধ্যে। কিন্তু আজকে ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। জ্যামে বসে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাসায় ঢুকেই আবহাওয়া খুব শান্ত দেখলো। ফিরোজা বেগম ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওনার রুমের লাইট অফ। এমনকি মাহিদের রুমের লাইটও অফ। অহমি তো এতো তাড়াতাড়ি ঘুমায় না।

মাহিদ রুমে গিয়ে আগে লাইট জ্বালালো। রুমে চোখ বুলাতেই দেখে ওয়াড্রবের সামনে হাঁটুতে মুখ গুঁজে অহমি বসে আছে। মাহিদের পিলে চমকে উঠলো। ও দৌড়ে অহমির কাছে গিয়ে অহমির মাথাটা তুলে মুখটা আগলে ধরলো। চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। মাহিদের প্রচন্ড খারাপ লাগে। কিছু কথা বলতে চায়।

“অহমিকা লু……”

শেষ করতে পারে না। তার আগেই অহমি মাহিদের শার্টের কলার খামছে ধরে। একই সাথে মাহিদের গলার কাছটার চামড়ার ছিলে যায়। অহমি মাহিদের কলার ঝাঁকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আপনি কোন সাহসে আমার ডায়েরিতে হাত দিয়েছেন? আপনাকে আমি কোনো অধিকার দেয়নি আমার ডায়েরিতে হাত দেওয়ার। কেনো করেছেন?”

চলমান….

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৫

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৫
#সমৃদ্ধি_রিধী

মাহিদের আচমকা কি হলো কে জানে! অহমির হাতে টান মেরে নিজের খুব সন্নিকটে আনে। অহমি মাহিদের বুকে আঁচড়ে পরে। ভারসাম্য রক্ষার্থে অহমি মাহিদের বুকে হাত রাখে। মাহিদ অহমির চোখে চোখ রেখে বলে , “যে মানুষটা এখন থেকে সম্পুর্ন আমার, যার জীবনের সাথে আমার নাম ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে গেছে তার হাতে শুধু শুধু নাম খুঁজে পাওয়া বা না পাওয়ায় কি লাভ অথবা ক্ষতি হবে অহমিকা আতহার হুসাইন?”

মাহিদের চোখে-মুখে অন্য আভাস। অহমি আর তাকাতে পারলো না ওই চোখের দিকে। সন্তপর্ণে চোখ বুজে নিলো।
______________________________________________

মাহিদ ভীষণ ফিটফাট মানুষ। ও সবসময় সবকিছু গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করে। মেঝেতে সামান্য একটু দাগ লেগে থাকলেও বিরক্তিতে ওর চোখ-মুখ কুচকে যায়। আলমারিতে সারি সারিভাবে তার শার্ট, টি-শার্ট গুছানো থাকে। একটাও আগুপিছু অবস্থায় থাকে না। বিছানার চাদর সবসময় টানটান অবস্থায় থাকে।

অহমি ভেবেছিলো মাহিদের সাথে ওর পরবর্তী দিনগুলো খুব ভালো যাবে। কিন্তু শুধুমাত্র রুম অগোছালো অবস্থায় ফেলে রাখার জন্য ও দু-তিনবার মাহিদের কাছে ঝাড় খেয়েছে। অহমি বুঝতে পেরেছে মাহিদ মানুষটা খারাপ না,ওর সবকিছু ঠিকঠাক। শুধু একটু অগোছালো অবস্থায় থাকলেই ওকে ঝাড় খেতে হয়। অহমি নিরানব্বই পয়েন্ট নাই নাই পার্সেন্ট সিউর মাহিদের ওসিডি আছে।

এই বাসায় অহমি মাহিদ ছাড়াও মাহিদের মা আর ওর ছোট ভাই মুগ্ধ রয়েছে। প্রথমেই আসি মাহিদের মায়ের ব্যাপারে। উনি সবসময় সবকিছু পারফেক্টলি করতে চান। মাহিদ যেন পুরোপুরি তার মায়ের স্বভাবই পেয়েছে। উনি চটপট কিভাবে যেন সব কাজ একা হাতে করে ফেলেন। এই কয়দিন অহমিও চেষ্টা করছে ওর শ্বাশুড়িকে টুকটাক সাহায্য করতে। কিন্তু ওর কাজ যে মাহিদের মা ফিরোজা বেগমের খুব একটা পছন্দ হয় না ও তা ভালো ভাবেই বুঝতে পারে। তবে তিনি অহমির কাজগুলোকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করে। অহমিও শ্বাশুড়ির কথা মতো কাজ করার চেষ্টা করে। পাছে ওকে যাতে কথা না শুনতে হয়। আর মুগ্ধ, ও অবশ্য হোস্টেলেই থাকে। কলেজ থেকে ওদের বাসার দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে এই অবস্থা। এইযে ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিল, কালকেই আবার হোস্টেলে ফিরে যাবে। আর মাহিদের বড় বোন বিয়ে করে স্বামীর সাথে ‘কেএসএ’তে স্যাটেল। দুইবার ভিডিওকলে কথা বলেছিল ওনার সাথে অহমির।

বাসার সকল কিছু বুঝতে অহমির সময় লেগেছে ১৫ দিন। হ্যাঁ আজকে ওদের বিয়ের পঞ্চদশতম দিন। তবে বর্তমানের সমস্যা হচ্ছে মাহিদের সামনে থাকা চটপটে অহমি আবারো গুমরে যাচ্ছে। সবসময় আবারো নিজেকে পারফেক্টশনের খোলসে আবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করছে। যদি এমন হতো এখানে আসর পর ও কারো কাছে কোনো প্রকার অভিযোগ শুনতো না, তবে হয়তো প্রফুল্লভাবে থাকতে পারতো। ফিরোজা বেগমের মাঝেমধ্যের বিরক্তিকর চাহুনি, মাহিদের ঝাড় খেয়ে ও আবারো বিষন্নতায় ভুগছে। কিন্তু যেটা প্রকাশ করছে না।

____________________________________________________

মাহিদ একজন সাইক্রিয়েটিস্ট। বিয়ের আগে অহমির সাথে কথা বলার সময় ওর কিছু অদ্ভুত না লাগলেও ওকে যত সামনে থেকে দেখছে মাহিদ নিরানব্বই শতাংশ সিউর অহমির ‘বাইপোলার ডিসওর্ডার’ বা ‘দ্বিমেরু বিকার’ রয়েছে। অর্থাৎ, এতে একজন মানুষ কখনো অত্যন্ত উৎফুল্ল থাকে, আবার কখনো গভীর বিষণ্নতায় চলে যায়। তারা কিছু কিছু মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলে আবার কিছু মানুষের সাথে ফ্রি হতেই পারে না। বিয়ের প্রথম দুই তিন দিন অহমি হাসি-খুশি থাকলেও লাস্ট তিন-চার দিন এই গুমরে থাকছে, তো কিছুক্ষণ পর নরমাল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাহিদকে তো আহির অহমির অ্যাটেলোফোবিয়ার কথা আগেই বলেছিল।তাও ও একবার চেক করে দেখবে। সেই হিসেবে ওর দুইটা ডিসওর্ডার একইসাথে আছে। দ্যাসট মিন “কমরবিডিটি।”

মাহিদ পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায়। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে অহমির ব্যাপারেই ভাবছিলো। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। এই শুক্রবার দুপুরে কি রোদ টাই না ছিল।সন্ধ্যা হওশার সাথে সাথপ আবহাওয়াটা একটু শীতল হলো মনে হচ্ছে। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুমন্ত অহমির দিকে তাকালো। মেয়েটা যে দুপুরে ভাতঘুম দিয়েছিল এখনো উঠার নাম গন্ধ নেই। তারউপর অহমি খুবই এলোমেলো ভাবে ঘুমায়। গায়ে কাঁথা থাকে না অথচ ঠান্ডায় কুঁকড়ে থাকে। মাহিদ অহমির মাথায় হাত বুলিয়ে পরপর দুইবার ডাকে।

“হুম উঠবো,” ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।

মাহিদ গায়ের জোড় খাটিয়ে অহমিকে আধশোয়া করে বসায়। অহমি হকচকিয়ে উঠে ।

“রিল্যাক্স! তোমার দুপুরে ঘুমুলে ঘুম ভাঙ্গে না, কিন্তু রাত ঘুম কেনো হয় না? হ্যাঁ?

অহমির চোখ থেকে তখনোও পুরোপুরিভাবে ঘুম কাটেনি।ঘুমে তখনো ঢুলছে।চোখ পিটপিট করছে। মাহিদ বাম হাত বাড়িয়ে অহমিকে ডাকে,”এদিকে এসো।”

অহমি মাহিদের বুকের উপর মাথা রেখে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে। মেয়েটার ঘুম কাটেনি এখনো। মাহিদ হাত বাড়িয়ে অহমির চুলগুলো গুছিয়ে দিতে থাকে। আস্তে ধীরে বলে, “যাও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নাও।”

“একটু পরে। প্লিজ।” মাহিদকে ঝাপটে ধরে বলে।

মাহিদ অহমির হাত ছড়িয়ে নিতে নিতে বলে,” অহমিকা আর একটুও পরে না। তুমি অনেকক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছো। তোমার সাথে ঘুমিয়েও আমি আরো ঘন্টাখানেক আগে ঘুম থেকে উঠেছি। যাও। আমি কিন্তু সব কাজ টাইম টু টাইম করা পছন্দ করি।”

“আর পাঁচমিনিট প্লিজ”

মাহিদ এবার যথাসম্ভব কড়া গলায় বলে, “আহমিকা! তুমি আমার কথা শুনবে না, না?”

অহমির আর সাধ্য কোথায় প্রস্তাব নাকচ করবার?

“দূররর!” অহমি উঠে বাথরুমে চলে যায়। মাহিদ পিছন থেকে চিল্লিয়ে বলে, “প্লিজ অহমিকা বাথরুমের সাবানে যাতে চুল লেগে না থাকে। আমার ওইটা সহ্য হয় না। ”

________________________________________

মুগ্ধ ভাবির কাছে আবদার করেছিল মোমো খাবে। যেহেতু মুগ্ধ কালকেই চলে যাবে তাই অহমিও বানিয়ে দিতে রাজি হয়। কিন্তু অহমি মোমো বানাতে পারে না বলে ফিরোজা বেগম ওকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হয় না করতে হয়। ফিরোজা বেগম মোমোর ডো তৈরি করছিলেন আর অহমি মাংসটা রান্না করছিল। মাহিদ এমন সময় রান্নাঘরে এসে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, “আম্মি এক কাপ চা দিও তো।”

আড়চোখে একবার অহমির কালো হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মুগ্ধ ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো। মাহিদও মুগ্ধর পাশে বসে মুগ্ধর হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নেয়। মুগ্ধ তেতিয়ে উঠে।

“কি সমস্যা ভাই? আজকে টিভি দেখতে দাও। কালকে হোস্টেলে গেলে তো আর দেখতে পাবো না।”

মাহিদ সে কথায় পাত্তা না দিয়ে রান্নাঘরের দিকে ইশারা দিয়ে বলে, ” তোর ভাবির মুখ এমন কালো হয়ে আছে কেনো?”

ড্রয়িংরুমের সে জায়াগাটা থেকে রান্নাঘর পুরোপুরিভাবেই দেখা যায়।

“ভাবি ফ্রিজ থেকে মুরগি যে পলিথিনে রাখা ছিল , সেই পলিথিনটা বের করে আম্মি থালাবাসন ধুয়ে যেপাশে রাখে সেইপাশে রেখেছিল। এরপর আম্মি ভাবিকে বকেছে। সেই থেকেই ভাবির মুড অফ।”

এরপর মাকে ব্যাঙ্গ করে বলে, “অহমি তোমাকে কতবার বলেছি থালাবাসনের জায়গায় অন্য কিচ্ছু রাখবে না? এতদিন বলার পরও ভুল হয় কি করে?”

মাহিদ ভ্রু কুচকে বলে, “আম্মির শুচিবায়ুর স্বভাবটা তো দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে।”

মুগ্ধ মাহিদের গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রিমোটটা কেড়ে নেয়। বলে, “লুক হুউস টকিং।”

মাহিদ চেঁচিয়ে উঠে “ইয়ু বারিশ!! গায়ে কি গন্ধ!! গোসল করিস নি? ছিহ!”

__________________________________________________

মাহিদ রুমে এসে গায়ে আচ্ছা মতো বডি স্প্রে মারে। এমন সময় অহমি রুমে এক কাপ চা নিয়ে প্রবেশ করে। মেয়েটার চোখ-মুখ অসম্ভব আঁধার হয়ে আছে। চা টা ওয়াড্রবের উপর রেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই মাহিদ ওর হাত ধরে আকটায়। দরজাটা ভিতর থেকে চাপিয়ে দিয়ে অহমিকে আকড়ে ধরে। অহমির পিঠ গিয়ে ঠেকে মাহিদের বুকের সাথে। মাহিদ অহমির কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে প্রশ্ন করে, ” মন খারাপ?”

অহমি উত্তর দেয় না। মাহিদ ওর সকল আচরণ লক্ষ্য করে। মাহিদের সন্দেহের সাথে অহমির সব আচরণ মিলে যাচ্ছে। মাহিদ আবারও প্রশ্ন করে, “মন খারাপ বউ?”

অহমি মাথা নেড়ে ‘না’ বুঝায়। মাহিদ অহমির ডান গালে অধর ছুঁয়ে বলে, “এখনোও মন খারাপ?”

অহমি মাহিদের চোখে চোখ রেখে আবার মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। মাহিদ এবার অহমির বাম গালে পরপর কয়েকবার অধর ছুঁইয়ে আবারও প্রশ্ন করে, “এখনো মন খারাপ বউ?

অহমির অধর কোণে হাসি ফুটে উঠে। চোখ বন্ধ করলেই যেন অহমির সামনে হাজারো প্রজাপ্রতি উড়াউড়ি করছে। কথা ঘুরাতে বলে, “আপনি এই অসময়ে গায়ে এভাবে পারফিউম দিয়েছেন কেনো?”

মাহিদ অহমির কথা ঘুরানো বুঝেও অহমিকে ছেড়ে চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে কাপের দিকে ইশারা দিয়ে বলে, ” খাবে?”

অহমি মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।

“তাহলে স্বামীর সাথে ভর সন্ধ্যাবেলা রুমের দরজা আটকে যে থাকছো লজ্জা করছে না? যাও গিয়ে রান্নাঘরে শ্বাশুড়ির সাথে হাতে হাতে কাজ করো।”

অহমি হা করে থাকে । এভাবে কে পাল্টি খায় ভাই? নিজেই তো ধরে বেঁধে আটকে রেখেছিল।অহমি গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আসবেই না আজ রুমে। অহমি রুম থেকে বের হতেই মাহিদ তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে ফেলে।ঘুমের ভান করে মাহিদ এই নিয়ে চারবার অহমিকে রাতে রাতে ডায়েরি লিখতে দেখেছে। কাল রাতে সুযোগ বুঝে ডায়েরিগুলো কোথায় রাখে সেটাও দেখে নিয়েছে। আলমারি খুলে অহমির কাপড়ের ভাজ থেকে ডায়েরিগুলো বের করে। হিসেবে মোট ছয়টা ডায়েরি।হয়তো আরো আছে। আগের বাসায়। সেগুলোও কালেক্ট করতে হবে। এইসব থেকে যদি ওর সিমটোমস আরো ভালো বুঝতে পারে। ট্রিটমেন্টটাও যে দ্রুত করতে হবে।

চলমান…….

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৪

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৪
#সমৃদ্ধি_রিধী

‘আমার জন্ম হয় ২১ই এপ্রিল। এর ঠিক ৭ দিন আগে ১৪ই এপ্রিল আমার বাবা মারা যায়। ওই ১৪ই এপ্রিল আবার ভাইয়ার জন্মদিন। আমার দাদি কখনোই মেয়ে পছন্দ করতেন না। অথচ ওনারই কিন্তু দুই মেয়ে ছিল। তাও মেয়ে ওনার সহ্য হতো না। বর্তমানে নাকি আল্ট্রা করলেও ফিটাসের লিঙ্গ বলা হয় না। কিন্তু আমার জন্মের সময়টায় বলা হতো। আমার আম্মু যখন পাঁচ মাসের প্রেগনেন্ট তখনই জানতে পারেন তাদের পরবর্তী সন্তান হবেন মেয়ে। সেই থেকেই আমার দাদি উঠতে বসতে এই সন্তানকে মেরে ফেলতে বলতেন। কিন্তু আমার বাবা চান নি। ভাইয়ার জন্মদিনের দিন কোনো এক কারণে বাবা বাসা থেকে বের হন। কিন্তু আর জীবিত অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারেননি। আমার জন্যই নাকি আমার বাবা মারা যান। হাহ জন্মের সাতদিন আগে থেকেই আমি ভুল করে আসছি। এখনও করছি। কখনোই আমি ঠিক করিনি। দাদি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভাইয়া তো আমাকে দেখতেই পারতো না। আম্মু না থাকলে আমাকে অযথাই মারতো। চুল টেনে ধরতো। দুপুরে খেতে বসলে খাবারে পানি ঢেলে দিতো।আবার আম্মুর সামনে স্বাভাবিক চলতো।অবশ্য ভাইয়াও তো ছোট ছিল। দাদির শিখিয়ে দেওয়া কাজগুলোই করতো। এইসবের কারণে তখন থেকেই ভাইয়াকে ভয় পাই। ওকে দেখলেই আমার ছোটবেলার কথাগুলো মনে পরে। ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। ভাইয়া হয়তো মনে করে বাবার মৃত্যুর জন্য জন্ম না হওয়া মেয়েটিই দায়ী।

আম্মু কিন্তু আমাকে ছোটবেলা থেকে খুব স্নেহ করতো। কিন্তু আমাকে সেইভাবে সময় দিতে পারেনি। সকাল আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত স্কুল সামলিয়ে বাসায় আসতো। তারপর দুপুর দুইটা থেকে আবার টিউশানি পড়াত। দাদির খেদমতও করতে হতো। আবার এক্সট্রা টাকা ইনকাম করতে মাঝে মাঝে রাত জেগে সেলাইও করতো। তারমধ্যে যতটুকু সময় পেতো আমাকে বা ভাইয়াকে দেওয়ার ট্রাই করতো। তবে একটা জিনিস, কখনোই আম্মু ভাইয়াকে সেভাবে ধমক দেয়নি, যেভাবে আমাকে দেয়। সবসময় আমাকে চুপ করিয়ে রাখে।
আমার ফুফুরা ইদে ভাইয়াকে গিফট, সালামি দিলেও কখনো আমাকে দিতো না৷ সবসময় কুকুর বিড়ালের মতো দূরছাই করতো। খুব খারাপ লাগতো। তবে এখন আর লাগে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।

আজকে আমাকে রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার পরও ভাইয়া অনেকক্ষণ চেঁচামেচি করেছে। আমার মধ্যে ভদ্র মেয়ের কোনো লক্ষণ নেই। আমার জন্য একদিন নাকি আম্মুর সম্মান নষ্ট হবে। আম্মু ওকে শান্ত করতেও থাকলো। একবারও ভাবেনি ‘নাহ আমার মেয়ের কাছে যাওয়া উচিত’। হুহ, আমি কারো ভাবনাতেই নেই। কি এক দূর্বিষহ জীবন।

আরেকটা কাজ করেছি, মাহিদ কল করার পরে কেঁদেছি। কেঁদে ছ্যাছড়ার মতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে বলেছি। ছিহ: এতে আমার ওয়েট কতখানি কমে গেল! লোকটা নিশ্চয়ই আমাকে ছ্যাছড়া মেয়ে মনে করছে। আবারও একটা ভুল করলাম। কি দরকার ছিল এমনটা করার! আমার জীবনের নতুন একটা মানুষ হতো, ওর সামনেও আমি পুরা কালার হয়ে গেছি। ছিহ’

কলমের খসখস শব্দ থেমে গেল। অহমির চোখে পানি চিকচিক করছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সে লিখাগুলোর নিচে লিখলো ‘অহমিকার ডায়েরির নবম পৃষ্ঠা।’ ডেট দিলো ২৬ই মে (ঘটনা ২৫ই মে)। কারণ ডায়েরিটা রাত ১২ টার পরে লিখেছে। অহমির ডায়েরির কিছু শ্রেণীভাগ আছে। কিছু কিছু ডয়েরি শেষও হয়ে গেছে । এদের মধ্যে সে দৈনন্দিন জীবনের কিছু কথা একটা ডায়েরিতে লিখে। আবার যখন খুব মন খারাপ হয়, নিরবে কাঁদে তখন এই ডায়েরিতে হাত দেয়। আরেকট ডায়েরিতে আছে অহমিকার বিভিন্ন সৃষ্টি।এখন সেই ডায়েরিটা খুললো। আবারও কলমের খসখস শব্দ শুনা গেল। এবারের গল্প – ‘অমাবস্যার ক্রিনিকোলাস’- অধ্যায় তেরো।

______________________________________________

মাথায় কারো হাতের স্পর্শে অহমির ঘুম ছুটে গেল। ওর ঘুম এমনিতেই খুব পাতলা। তাছাড়া রাতে ওর তেমন ঘুমও হয় না। সকালেও আবার তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙে যায়। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো আফরোজা বেগম বসে আছেন। রেডি হয়ে এসেছেন। মানে এখন মা ভাই একসাথে নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়বেন। উঠে বসে চুলগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুটি করে ফেললো। ও জানে মা কেনো এসেছে।
আফরোজা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বলেন, “অহমি ভাই তোমার ভালোর জন্যই বকে। সবসময় এমন রাগ করলে চলে না৷”

অহমি কোনো জবাব দেয় না। আফরোজা বেগম আবারও বলেন, “তুমি তো জানো তোমার ভাই একটু ওল্ড মাইন্ডের, ও এভাবে চলাফেরা পছন্দ করে না। তুমি এতো লেটে বাড়ি ফিরেছো বলেই ভাই কাল রেগে গিয়েছিল। সাইফাকেও তো এভাবে চলাফেরার জন্য বকাবকি করে।”

সাইফা, আহিরের বউ। ওদের আক্দ হয়ে আছে। অহমির বিয়ের পরপরই ওকে উঠিয়ে আনা হবে। আফরোজা বেগম
একটু থেমে বলে, “তাছাড়া তুমি কাল ওর মুখে মুখে কথা বলে অন্যায় করেছো। এটা উচিত হয়নি।”

অহমি মলিন হেসে বলে, “বুঝেছি আম্মু।”

“ভাই এখন বেরিয়ে পড়বে। ওকে সরি বলে এসো।”

যা প্রতিবার হয়৷ আজকে মুখে মুখে কথা বলার জন্য সরি বললেও অন্যবার তো অহমি মুখে মুখে কথা বলে না। তাও ওকেই সরি বলতে হয়। ছোট হতেই বলতে হয়। যদি না বললে আম্মুর খারাপ লাগে! ভাইয়ের রুমের সামনে গিয়ে দুইবার নক করে। আহির রেডি হতে হতে ভিতর থেকে বলে, “আয়।”

আহিরও জানে মা অহমিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছেন। আর অহমি তো তোতাপাখি। যে যা শিখিয়ে দিবে তাই বলবে। মায়ের শেখানো বুলি গড়গড়িয়ে বললো, “কালকে ওইভাবে কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। সরি।”

আহির মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আাশা করবো পরের বার এমনকিছু করবি না। এতোক্ষণ বাইরে থাকলে ভাইয়ার চিন্তা হয়। এখনকার পরিস্থিতি ভালো না।”

অহমি কেবল মাথা উপর নিচে করলো। আর কিছু বললো না। আহির আরো একবার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। অভিমানে টইটুম্বুর অহমি একবারও ভাইয়ের এহেন দু:চিন্তা বুঝলো না। ওর কেবল মাথায় ছিল কালরাতে ভাইয়া ওকে বকাঝকা করেছে। ওকে মারতে চেয়েছে। এইসবের পিছনের ভয়ের কারণ বুঝলো না।

__________________

ক্যালান্ডারের পাতাগুলো একটার পর একটা নি:শব্দে উল্টে গেল। পূর্ণিমা খুব সন্নিকটে। রাত এখন সাড়ে এগারোটা। অহমি বারান্দায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়া লম্বা আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি করছে। দৃষ্টি হালকাভাবে জ্বল জ্বল করতে থাকা চাঁদের দিকে। মাঝে মাঝে একটু-আধটু শীতল হাওয়া বইছে। বারান্দার পর্দাগুলো নড়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। অহমির বারান্দা থেকে বাইরের কিছুই দেখা যায় না দেওয়াল ছাড়া। পাশের লাগোয়া বিল্ডিংটার জন্য এই অবস্থা। অথচ এই ঘরের বারান্দা থেকে বাইরের পরিবেশ দেখা যায়। আলো-বাতাস পাওয়া যায়। কিন্তু এতো প্রশান্তির মাঝেও ওর মাথাটা প্রচন্ড ঝিমঝিম করছে।

“অহমিকা!”

অহমি মাহিদের দিকে তাকালো। স্মিত হাসালো। এইতো আজ তিন কবুল বলে মানুষটার সাথে আজীবনের মতো জড়িয়ে গেলো। মাহিদ অহমির দিকে এগিয়ে এলো। হাতে দু কাপ কফি। অহমির দিকে এক কাপ বাড়িয়ে দিলো। অহমির এখন কফিটার খুব দরকার ছিলো। মাহিদ ওর পাশেই দাঁড়ালো। মাহিদের ডান হাতের বাহুর সাথে অহমির বাম হাতের বাহু লেগে আছে। মাহিদ ওকে একদিন কথায় কথায় বলেছিল বিয়েতে মেহেদী দিলে অবশ্যই যেন ওর নাম লিখে। ও বিয়ের রাতে বউ এর হাতে নিজের নাম দেখতে চায়। অহমি অবশ্য কথা রেখেছে।

“আপনার নাম খুঁজতে পারবেন?” অহমি কফি মগটা রেলিং এর উপর রেখে নিজের দুইহাত মাহিদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

“বড় বড় করে লিখোনি? অহমিকা + মাহিদ এভাবে লিখো নি?”

অহমি লজ্জা পেল। বলে, “তা করিনি, তবে আপনার নামটা ঠিকই লিখেছি। ”

মাহিদ নিজেও কফি মগটা রেলিং এর উপর রেখে অহমির দুই হাত আঁকড়ে ধরলো। বেশ কিছুক্ষণ খুঁজার পরও যেন পেলো না তখন এক অযুহাত দিয়ে বলে, “আমার চশমা নেই তুমি দেখছো না? আমি এখন নাম কি করে খুঁজে পাবো?”

মাহিদ যে খুঁজে পায়নি অহমি বেশ ভালো করেই বুঝেছে। দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, “তবে রুমে গিয়ে চশমা পরে ভালো করে খুঁজুন? ”

মাহিদ ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে খুঁটে খুঁটে দেখেও নাম খুঁজে পায়নি।

“আরেকটা লাইট জ্বালাবো?”

মাহিদ চশমা পরেও যখন নাম খুঁজে পাচ্ছিলো না তখন বলেছিল লাইট কম হওয়ায় খুঁজে পাচ্ছে না। তাই অহমি নিজের মেবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে হাতের উপর ধরেছিল। মাহিদ এখন অহমির এমন কথা শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠে। বলে, “তুমি তখন থেকে কথা বলছো দেখেই পাচ্ছি না। চুপ থাকো।”

একটু পরই বলে,”দুর পাচ্ছিই না।”

অহমি তা শুনে হেসে উঠে। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের মিডেলে একদম ছোট করে আঁকা ফুলের পাপড়ির দিকে নিদের্শ করে বলে, “এই দেখেন প্রতিটি পাপড়ির মধ্যে আপনার নামের একেকটি অক্ষর লিখা। ভালো করে দেখুন।”

মাহিদ নিদেশর্না মতো খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলে, “এখানে তো মাহিদ লিখা নেই, আতহার লিখা। আমি তো মাহিদ খুজছিলাম।”

“ওমাহ আতহার আমার স্বামীর নাম, লিখবো না? খামোখা মাহিদ কেনো লিখতে যাবো বাপু?”

মাহিদ হেঁসে ফেলে। অহমিও হেঁসে রসিকতা করে বলে, “ছিহ ছিহ আপনি আমার হাতে আপনার নাম খুঁজে পাননি।”

মাহিদের আচমকা কি হলো কে জানে! অহমির হাতে টান মেরে নিজের খুব সন্নিকটে আনে। অহমি মাহিদের বুকে আঁচড়ে পরে। ভারসাম্য রক্ষার্থে অহমি মাহিদের বুকে হাত রাখে। মাহিদ অহমির চোখে চোখ রেখে বলে , “যে মানুষটা এখন থেকে সম্পুর্ন আমার, যার জীবনের সাথে আমার নাম ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে গেছে তার হাতে শুধু শুধু নাম খুঁজে পাওয়া বা না পাওয়ায় কি লাভ অথবা ক্ষতি হবে অহমিকা আতহার হুসাইন?”

চলমান…………

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-২+৩

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_২_৩
#সমৃদ্ধি_রিধী

অহমি বেশ অবাক হলো। অগোছালো সে ঠিক আছে! কিন্তু তা মাহিদ কি করে জানলো? ও তো বেশ পরিপাটি হয়েই বাইরে বের হয়। তবে অহমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলো পরের কারণটা শুনে।

-“তোমার নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই নেই।”

অহমির চোখের পাতা যেন কেঁপে উঠলো। মাথা নিচু করে ফেললো। অহমি বুঝতে পারলো ওর ভাইয়া আর আম্মুর কথায় বিয়ে করতে চাওয়ার কথার পরিপেক্ষিতে লোকটা এই কথা বলেছেন। ও মনে মনে কিছু কথা সাজিয়ে ফেললো। ধীমে কন্ঠে বললো – “আব..আসলে বিষয়টা তেমন নয়, আমি
ভাইয়া আর আম্মুর কথার অবাধ্য হতে চাইনা। ওরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমি চাইছি না ওনাদের কথার অবাধ্য হয়ে ওনাদেরকে আরো কষ্ট দিতে। এর বাইরে কিছুই না। ”

মাহিদ এই প্রসঙ্গে আর কিছু বললো না। তবে ওর বিচক্ষণ চোখ যেন ধারনা করতে পারলো অহমিকা নামক মেয়েটির মধ্যে কেমন একটা চোরা চোরা হাবভাব রয়েছে। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা। যখন ও আহিরের কাছে পড়তে যেতো তখনও দেখতো মেয়েটা ভীষণ গুমরে থাকে।

তখনই ওয়েটার স্যান্ডউইচ, কফি নিয়ে আসে। অহমি কিছুক্ষণ নিজের স্যান্ডউইচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে আচ্ছা মতো গালিগালাজ করতে থাকে ক্যাফের মালিককে। এই এগারোটা বারোটা নাগাদ এটা ক্যাফেতে রাখতেই হলো!!

-“খাচ্ছো না যে?”

অহমি অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলে- “এই যে খাচ্ছি,” সাথে সাথেই স্যান্ডউইচে একটা বাইট দেয়। মাহিদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে। অহমির মুখটা যেন বিষিয়ে গেছে। ছিহ! কি বাজে স্বাদ। মাহিদ এহেন ব্যবহারের কিছুই বুঝলো না। একপর্যায়ে নিজের মতো খেতে খেতে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে-“অহমিকা! আমি তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“হ্যাঁ বলুন।”

-“তুমি সিউর বিয়েতে তোমার কেনো আপত্তি নেই? কেউ জোর করছে না তো?”

-“নাহ, আমি মন থেকেই চাইছি। ”

-“তবে ঠিক আছে। মন থেকেই যখন চাইছো তাহলে আশা করি নিজেকে সেইভাবেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত করবে। কারণ আমি একবার এই সম্পর্কে এগিয়ে গেলে সেখান থেকে পিছানোর আর কোনো সুযোগ নেই। ইভেন তুমি চাইলেও না।”

অহমি সেই মূহুর্তে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মাহিদের কথায় কোথাও একটা প্রবল অধিকারবোধ ছিলো। তাছাড়া ও এতটুকু সময়ে খুব ভালোভাবেই একটা জিনিস বুজতে পেরেছে তা হলো মাহিদ খুবই দৃঢ়তার সাথে নি:সংকোচে কথাবার্তা বলেন। অন্যদিকে অহমি এই পর্যন্ত নিজের ব্যক্তিগত সময় ছাড়া বাকি সময়টা বড্ড ভয়, আত্মগ্লানিতে কাটতো। ইতিমধ্যে তাদের খাওয়া-দাওয়াও শেষ। অহমি মাত্রই মাহিদকে একটা প্রশ্ন করতেই যাবে সেই মুহুর্তে মাহিদের ফোন বেজে উঠলো। মাহিদ একবার অহমির দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করে। ওকে ইমারজেন্সি থাকায় তখনই হসপিটালে যেতে হবে। অবশ্য যাওয়ার আগে ওকে রিক্সায় তুলে দিয়েও গেছে। এবং বাসায় পৌঁছে মাহিদকে টেক্সট করে জানিয়ে দিতে বলে। এইসবের মাঝে অহমির আর প্রশ্নটা করা হয়ে উঠলো না।

___________

অহমি বৈশাখের কাঠঠোকরা রোদ মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরলেও মনের মধ্যে এক অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করছিলো। আজকের কথাবার্তায় যা বুঝলো মাহিদ বেশ কেয়ারিং একটা ছেলে। আফরোজা বেগমও তখন মাত্রই স্কুল থেকে ফিরেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে উনি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তবুও এতে কি সংসার চলে? অহমির ফুফু, মামা, চাচারাও কিছুটা দিয়ে সাহায্য করতেন। কিন্তু এখন আহির মোটামুটি স্টেবল হওয়ায় আর কারো সাহায্য নিতে হয় না।

মেয়ে ঘরে ফিরার পর থেকে আফরোজা বেগম এই নিয়ে পাঁচবার মেয়েকে মাহিদের ব্যবহার-আচার-আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তিনি মেয়েকে এই বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অহমির যদি কোনো কারণে মাহিদের কোনো আচরণ ভালো না লাগে, মাহিদের কথাবার্তা যদি ভালো না হয় তাহলে তিনি এমন ছেলের কাছে মেয়েকে পাত্রস্থ করবেন না। অহমি মায়ের এমন কথা শুনে নিরবে হাসে। মাহিদকে বিয়ে করতে কোনো প্রকার আপত্তি নেই তাও বলে।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে অহমি ভাতঘুম দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। ফ্রেশ হয়ে বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে দিলো৷ নাহলে এখন মশার উপদ্রবে রক্ষা পাওয়া যাবে না। রং-তুলি নিয়ে আবারও মেঝেতে বসলো। পরীক্ষার জন্য অনেদিন আঁকাআঁকি করা হয়ে উঠেনি। রেফারেন্সের জন্য পিন্টারেস্টে ঢুকার জন্য মোবাইলটা হাতে নিয়েই চমকে উঠলো। মাহিদের চারটা মিস কল। মনে মনে ভাবে, “আল্লাহ আমি তো বাসায় পৌঁছে জানাতেই ভুলে গেছি।”

অহমি ভয়ে ভয়ে মাহিদকে কল করলো। কালরাতে আহিরই নাম্বারটা সেভ করে দিয়েছে। অহমি ভাবলো কল করবে। পরে কল না করে মেসেজ দিয়ে রাখে, “আমি আসলে বাসায় আসার পর আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
মেসেজ পাঠানোর পরক্ষণেই ভাবে – ‘মেসেজ পাঠানো কি ঠিক হয়েছে? কল করেই তো বলা যেতো! আচ্ছা থাক বলবো মোবাইলে টাকা নেই।’

অহমি আর কিছু না বলে রং-তুলি নিয়ে ওর কারুকাজ শুরু করে। একটা টি-শার্টে অনেকদিন যাবত স্ট্রেরি নাইট আঁকার প্লেন করেছিলো। আজ সময় সুযোগ বুঝে তা নিয়েই বসলো। ওর আর্ট প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় আফরোজা বেগম হাতে তেলের বাতি নিয়ে প্রবেশ করে। উনি প্রায়ই মেয়ের চুলে তেল দিয়ে দেন। অহমির চুল বেশি বড় না হলেও তুলনামূলক ভাবে ঘন। মেয়ের পিছনে বসে এলোমেলো করে রাখা খোঁপাটা খুলে মাথায় তেল ম্যাসাজ করে দেয়। অহমিও রং তুলি সাইডে রেখে শান্তিতে মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দেয়।

আজরোজা বেগম মাথা আঁচড়ে দিতে দিতে বলে, “মাহিদ আমাকে বিকেলে কল করেছিল।”

অহমি চমকে উঠে। বলে, “তোমাকে? কেনো?”

“তোমাকে কল করে পাচ্ছিলো না, তাই আমাকে কল করেছে। তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে, সেটা ওকে বলতেই বললো তোমার সাথে পরে কথা বলে নিবে। ”

“ওহ, আসলে আমাকে বলেছিলেন বাসায় ফিরে ওনাকে জানাতে। তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। তাই হয়তো তোমাকে কল করেছ। আমি মেসেজ দিয়ে রেখেছি সমস্যা নেই।”

আফরোজা বেগম মেয়ের চুলে বেণী করে দিতে দিতে বলেন, “শুনো এখন তোমার বিয়ে হবে। অনেক দায়িত্ব। এমন ভুলো মনের হলে হবে না। মাহিদ ডাক্তার মানুষ, ব্যস্ত থাকবেই। ভাইকে তো দেখছোই। তোমার তো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না ওদের ব্যস্ততা নিয়ে। তারপরও ও তোমার খোঁজ-খবর নিচ্ছে এইসবের মর্যাদা রেখো। বিয়ের পর মাহিদ, মাহিদের মা ওদের সাথে ভালো করে কথাবার্তা বলবে। তুমি এমনিতেই কম কথা বলো। আশা করবো উল্টোপাল্টা কিছু বলবে না। তাও খেয়াল রেখো। বিয়ের পর থেকে ওরাই তোমার পরিবার কিন্তু।”

অহমি নিরবে মায়ের কথা শুনেই গেল। সে সবটা খেয়াল রাখবে। মনে মনে আরো অনেক কিছু ভেবে রাখলো। আফরোজা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসেন। মেয়ে সুখী হলেই ওনার আর কি চাওয়ার! উনি রুম থেকে যাওয়ার সাথে সাথে মাহিদ কল করলো। অহমি প্রথমে সরি বলেই শান্তভাবে মাহিদের সাথে কথা বলে। আধা ঘন্টার টুকটাক কথাবার্তায় অহমির ঠোঁটের কোণে সর্বদাই মুচকি হাসি বিরাজমান ছিলো।
____________________

অহমি ওর বন্ধু-বান্ধবের সাথে গাজীপুর রিসোর্টে এসেছে। এটা আবার টুরিস্ট স্পটও। মা,ভাইকে না জানিয়ে এসেছে মিথ্যে ক্লাসের অজুহাত দিয়ে। মোট ৫ জনের গ্রুপ ওদের। অহমি, মৃধা, ইতি, সাবিহা, তানহা। এটা সাবিহার মামার রিসোর্ট। আক্দ উপলক্ষে ট্রিট দিতে আজ ওদের এই রিসোর্টে এনেছে। এখানে আসার প্লেন হয়েছিল রাত ২ টায়। সেজন্য অহমিকে আবার ২:৩০ টায় আবার শ্যাম্পু করতে হয়েছে। মা, ভাইকে না জানিয়ে এই প্রথম অহমি এতো দূরে একা এসেছে। কিছুটা এক্সাইটম্যান্ট, কিছুটা ভয় একসাথে কাজ করছে।

ওরা এখানে এসেছে সকাল দশটায়। প্রায় দু-তিন ঘন্টা ঘুরাঘরি করে ওরা মাত্রই খেতে বসেছে। তাড়াতাড়ি ফিরতেও হবে তাই। অহমি ওদের সাথে থাকলেই সবসময় হাসি-খুশি থাকে। এখানে ওকে গুমরে থাকতে হয় না। সেলফি তুলেছে, একজন আরেকজনকে রোস্ট করেছে। রোস্ট করার বিষয়ও আজকে অহমি।কারণ মাহিদ। নতুন নতুন বিয়ের কথা উঠলে বন্ধুরা যেভাবে রোস্ট করে ঠিকভাবেই। লাঞ্চে সকলে কাচ্চি বিরিয়ানি খেলেও অহমি চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করে। কারণ ও খাসির মাংস খুব একটা পছন্দ করে না। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে অহমির চোখ সামনের টেবিলে আটকে যায়। মানুষটাকে চিনতে অহমির একটুও ভুল হয় না। মাহিদ!! আরো কয়েকজন আছেন সাথে। মাহিদ এখানে কি করছে??

অহমি দ্রুত টেবিলের নিচে বসে পড়ে। মা, ভাইকে বলে আসলে সমস্যা ছিলো না। না জানিয়ে আসাতেই এত ভয়। মাহিদ ওকে দেখেছে কিনা কে জানে? অহমি ওর বন্ধুদের টেবিলের নিচ থেকেই মাহিদের এই রিসোর্টে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে বলে। দ্রুত ফিরে যেতেও বলে। সাবিহা যেহেতু রিসোর্টের সব জায়গাই চিনে তাই ওকে নিয়ে দ্রুত ওই জায়গা থেকে পুলের সাইডে চলে যায়। এখন ওরা রিসোর্ট থেকে বেরও হতে পারবে না। কেননা মাহিদরা যেই জায়গায় আছে সেখানটাতেই রিসোর্টের বাইরে যাওয়ার পথ। বাকি তিনজনও পুল সাইডে চলে আসে। ঠিক তখনই মাহিদ অহমিকে কল করে। প্রথম দুইবার ভয়ে অহমি রিসিভ করে না।

তখন ইতি ওকে ধমকে বলে, ” অহম কলটা রিসিভ কর। এমনও হতে পারে নরমাললি কথা বলার জন্য তোকে কল করেছে। এইভাবে কল রিসিভ না করলে আরো সন্দেহ করবে।”

তানহাও ওকে সমর্থন করে। অহমি ভয়ে ভয়ে তৃতীয়বারের কলটা রিসিভ করে সালাম দেয়। মাহিদও সালমের উত্তর দেয়। পরপরই ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করে, “অহমিকা তুমি কোথায়?”

অহমির কথা বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসও যেন বন্ধ হয়ে আসে। ধীর কন্ঠে বলে -” এইতো, এই..মানে এই..”

মাহিদ মৃদু স্বরে ধমকে বলে, “কোথায় জানতে চেয়েছি, এই বা এইতো নামের কোথাও তেমার থাকার জায়গা নেই।”

অহমি উত্তর দেয় না। নি:শ্বাসও ফেলতে পারছে না মেয়েটা।

“অহমিকা? তুমি কি বাসায়?”

মোবাইল লাউডে দেওয়া থাকায় বাকিরাও শুনতে পেলো। মৃধা ইশারায় হ্যাঁ বলতে বুঝালো। অহমি ধীর কন্ঠে হুম বলতেই মাহিদ আবারো ধমকে বললো “গাজীপুর রিসোর্টে তোমার বাসা? হুম? পুল সাইডে তোমার রুম?”

অহমি ওখানেই জমে গেল। কণ্ঠ থেকে শব্দ বের হতে চায় না আর। ওরা দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর হাত ভয়ে জমে গেল। কোনোমতে সাবিহার হাত চেপে বলে, “মাহিদ কি পিছনে?”

সাবিহাও পিছনে একবার তাকিয়ে আবারো নিজের বন্ধুদের দিকে তাকায়। সাবিহা ছাড়া সকলেই না বলে এসেছে। এখন অহমি ছোটখাটো বাঁশ খেলে বাকি তিনজনও খাবে। সাবিহাও ধীর কণ্ঠে ভয়ে ভয়ে বলে, “হুম, মাহিদ ভাইয়া ঠিক তুমি বরাবর পিছনে।”

চলমান…….

[হ্যাপি রিডিং]

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৩
#সমৃদ্ধি_রিধী

মাহিদ একদৃষ্টিতে অহমির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ঘুরিয়ে বাকি চারজনকেও দেখে নিলো। বাকি চারজন মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও অহমি যেন একদম স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে। একদৃষ্টিতে পায়ের দিকে তাকিয়েই আছে। ক্রমশ ওর হাত-পা ঘেমে যাচ্ছে। মেয়েটা এসির মধ্যে থেকেও বারবার ঘেমে যাচ্ছে। মাহিদ টিস্যু বক্স থেকে একদলা টিস্যু নিয়ে অহমির দিকে এগিয়ে দিলো। বলে, “টেক ইট।”

অহমি মুখ তুলে একবার ওকে দেখে আবারও মাথা নিচু করে ফেললো। ওর অনেক রিপেন্ট হচ্ছে কেনো এখানে আসতে গেলো!! না আসলে তো এতো সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতো না। মাহিদ যদি এখন আহিরকে বলে দেয়? আম্মু যদি কথা শোনায়! অহমি বারবার একটা না একটা ভুলভাল কাজ করবেই। কে জানতো সাবিহার হাসবেন্ড মাহিদের কলিগ হাসান? মাহিদের কলিগকেও আজই ট্রিট দিতে হলো? তাও মামাশ্বশুরের রিসোর্টে? ওহ সরি! এই রিসোর্ট তো হাসানের বাবার।

“টিস্যুগুলো নিতে বলেছি না? এসির মধ্যেও ঘামছো। আর কিছুক্ষণ পরই প্যানিক এট্যাক করবে বুঝা যাচ্ছে। নাও।”

অহমি কম্পিত হাতে টিস্যুগুলো দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে নিলো। মাহিদের অন্যান্য কলিগরা নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গিয়েছে। কেবল মাহিদ, হাসান আর ওরা পাঁচজন রয়ে গিয়েছে। হাসান সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমরা এখানে আসবে ভালো কথা, আমাকে একবার বলে আসলে কি হতো?’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” যাই হোক এখন ফিরে যাও, বিকাল তো হয়েই এলো। এখন রওনা না দিলে দেরী হয়ে যাবে।”

মাহিদ আড়চোখে অহমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে “কিভাবে ফিরবে তোমরা? গাড়ি এনেছো কেউ?”

মৃধা উত্তর দেয় সে সাথে গাড়ি নিয়ে এসেছে। ড্রাইভারও আছে। মাহিদ তখন বলে, “অহমিকা আমার সাথে ফিরবে। আশা করি কারো কোনো সমস্যা হবে না?”

মাহিদের কণ্ঠে গাম্ভীর্যের ছোঁয়া। অহমি একবার মাহিদের দিকে তাকিয়ে নিজের যাবতীয় জিনিস নিয়ে আসতে গেল। ওর কিছুক্ষণ পরপর গলা, ঠোঁট কেঁপে উঠছে। কিন্তু কাঁদল না। ওর পিছন পিছন মৃধা, ইতি, তানহাও ছুটলো। সাবিহা ওখানেই বসে মাহিদ আর হাসানকে বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকলো বাকিদের কোনো দোষ নেই। সাবিহাই কনভিন্স করে ওদের নিয়ে এসেছে।

_______________________________________________

হাইরোডের উপর গাড়িটা খুবই ধীর গতিতে চলছে। সামনেই আবারও বিশাল একটা জ্যাম। অহমি পুরাই জানালার সাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে। মাহিদ ওকে একটা প্রশ্নও করেনি। অহমিরও ওকে কিছু আগ বাড়িয়ে বলা উচিত কিনা বুঝতে পারছে না। ভাবনার মাঝে ঠিক তখনই অহমির মোবাইলটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভাইয়া নামটা দেখে চোখে-মুখে আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। এইবারো অহমি কলটা রিসিভ করতে পারে না। ওর ভয় হচ্ছে ভাইয়াকে কি বলবে? জ্যাম থাকবার কারণে তিনটায় রওনা দিয়েও পাঁচটা বাজালেও ওরা পৌঁছাতে পারে না৷

“পিক আপ দ্যা ফোন অহমিকা। তুমি কি একবার রিং বাজলে কখনোই ফোন উঠাতে পারো না?” মাহিদের কণ্ঠে বিরক্তির ছাপ। কিন্তু ততক্ষণে কলটা কেটে গিয়েছে।

অহমি চমকে উঠে। খাপছাড়া কণ্ঠে মাহিদকে প্রশ্ন করে, “ভাইয়াকে কি বলবো?”

মাহিদ অত্যন্ত কাঠঠোকরা কণ্ঠে বলে, “সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। না বলে আসার আগে মনে ছিল না যে জ্যাম পড়লে আমার লেট হতে পারে পরে ভাইয়াকে কি জবাব দিবো?”

অহমিকার এহেন কণ্ঠস্বর শুনে কান্না আসে। সবাই ওর সাথে এভাবেই কথা বলে। এমনকি মাহিদও এখন এইভাবে কথা বলছে।অহমির ভীষণ কান্না পেল। কিন্তু ও তো সকলের সামনে কাঁদে না। ওর নাকের পাটা কেঁপে উঠল। কেউ যেন গলাটা চিপে রেখেছে।

” আহির স্যার কল করলে বলবে তুমি আমার সাথে ছিলে। তোমার ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি তোমাকে নিয়ে তোমার ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরতি পথেই আমরা জ্যামে বসে আছি।”

অহমিও ভাবলো এটাই বলবে। গাজীপুর যাওয়ার কথা শুনলে ভাইয়া আর আম্মু অনেক কথা শুনাবে। তার চাইতে ভালো যদি মিথ্যে বলে বেঁচে যায়। ভাবনার মাঝে আহির আবারও কল করে। অহমিও তোতাপাখির মতো মাহিদের বলা কথাই আহিরকে রিপিট করে।

আহির ছোট একটা শ্বাস ফেলে। বলে,”আচ্ছা,মাহিদকে দে।”

অহমির ফোন থেকে আহির আর মাহিদ কি কথা বললো কে জানে! অহমি কেবল অপর প্রান্ত থেকে মাহিদের ‘জি’, ‘আচ্ছা’, ‘ঠিক আছে’ শুনতে পেলো। মোবাইলটা রাখতেই মাহিদ অহমিকে প্রশ্ন করে, “তুমি এর আগেও এমন না বলে দূরে কোথাও গিয়েছ?”

অহমি দ্রুত মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে না বোধক বুঝালো। তড়িঘড়ি করে বলে, “এই প্রথম বিশ্বাস করুন। সাবিহা অনেক জোর করায় আসতে রাজি হয়েছি। ভাইয়াকে বললে মোস্ট প্রোবাবলি আসতে দিতো না। তাই না জানিয়েই এসেছি। ”

মাহিদ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে কেনো বিশ্বাস করতে যাবো? যে একবার এমন করার সাহস করতে পারে, সে যে আগেও এমন করেনি তার কি গ্যারান্টি?”

অহমি দমে গেল। মাহিদ ওকে কি সত্যিই বিশ্বাস করেনি? একটা সম্পর্ক শুরুই হতে পারিনি তার আগেই কি মাহিদের মনে কি অবিশ্বাসের বীজ বুনে ফেললো? অহমি নিজের পক্ষ থেকে শেষ একটা সাফাই গাইলো, “আপনি বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না, তা আপনার ব্যক্তিগত কারণ। তবে আমার পক্ষ থেকে আমি সম্পুর্ন ক্লিয়ার। তাছাড়া আমি এর আগে এমনটা করিনি দেখেই এভাবে ভয় পাচ্ছি। ”

মাহিদ পুরাটা রাস্তায় আর কথা বললো না। অহমিও চুপচাপ ছিলো সবসময়ের মতো। নিজের প্রতি কেমন একটা বিতৃষ্ণা জমে। ওর ভুলটা কোথায়? ও কি একটুও মজা-ঠাট্টা, বিনোদন নিতে পারে না? সূর্য প্রায় ডুবেই গেছে। তখন মাহিদ অহমির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দিল। অহমি একবার নিজের পাঁচতলা বাড়ির দিকে তাকিয়ে মাহিদের উদ্দেশ্যে বলে, “প্লিজ আমি যে গাজীপুর গিয়েছি ভইয়াকে বলবেন না।”

মাহিদ ওর এই কথার উত্তর দেয় না। গাড়ি থেকে নেমে অহমির পাশের দরজা খুলে দিলো। গলায় খাদ নামিয়ে বলে, “আমি রাতে ফোন করবো। প্রথম কলেই যেন ফোনটা ধরা হয়। দ্বিতীয়বার যাতে কল না দিতে হয়। এন্ড ঘুমাচ্ছিলে এমন অযুহাতও যেন না দেওয়া হয়, তুমি যে রাত জাগো আমি খুব ভালো করেই জানি।”

________________________________________________

বাড়ি ফিরেই অহমি মায়ের কাছে একগাদা বকা শুনেছে। সন্ধ্যার পর থেকে অহমি রুম থেকেই বের হয়নি। কেঁদেকেটে চোখগুলো ফুলিয়ে ফেলেছে। এখন ডিনার করার টাইমে আফরোজা বেগম ডাকতে আসলেও অহমি দরজা না খুলেই বলে সে খাবে না। আহির এমনিতেই ওর উপর রেগে ছিল। অনমির রুমের সামনে গিয়ে দুইবার জোরে দরজায় বারি মারতেই অহমি দরজা খুলে।

“টেবিলে যা।”

আহির কখন বাসায় এসেছে অহমি জানে না। তবে ভাইয়ের গলার স্বর শুনেই অহমি বুঝতে পারে আহির প্রচন্ড পরিমাণ রেগে আছে। মাহিদ কি তবে গাজীপুর যাওয়ার ব্যাপারে বলে দিয়েছে? অহমি আর ভাবতে পারলো না, এমনিতেই ওর প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। আফরোজা বেগমও সন্ধ্যার বকাবকির পর অহমিকে আর কিছু বলেননি। তিনি তো মা, জানেন মেয়ে নাজুক স্বভাবের। টেবিলে তিনজন চুপচাপ খাওয়া শেষ করে। অহমি উঠতেই যাবে এমন সময় আহির মায়ের উদ্দেশ্য বলে, “তোমার মেয়ে আম্মু ভালোই বড় হয়েছে। আজকাল বাইরে থাকে কিন্তু মা ভাই থেকে পারমিশন নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না।”

আফরোজা বেগম বিরক্তির সুরে বলে, “আহির থামো। অহমি তো বলেছেই এখন থেকে আমাদের কোথাও যাওয়ার আগে বলে যাবে। আর গেলেও তো মাহিদের সাথে দেখা করতেই গেছে। ”

আহির ছোট থেকেই বদমেজাজি। নিজে যা বুঝবে তাই। হুঙ্কার দিয়ে বলে, “মাহিদের সাথে দেখা করতে হবে কেনো? কালকে কথা হয়নি? তাহলে প্রতিদিন কিসের এত দেখা করা?”

অহমির দিকে তাকিয়ে, “তোকে তো ওর ফোন নম্বর দিয়েছিই, তাহলে রোজ রোজ কেনো দেখা করতে হবে? কাল সব কথা বলে বুঝে আসতে পারিস নি?”

অহমি কোনো উত্তর দেয় না। আহির আবারও গর্জে উঠে জিজ্ঞেস করে, “কেথায় গিয়েছিস ওর সাথে?”

অহমি বুঝলো এখন উত্তর না দিলে আহির আরো রেগে যাবে। ধীর কণ্ঠে বলে, “কুঁড়েঘরে।”

“কোথায়?” চেঁচিয়ে উঠে।

“আমাদের ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে।”

“রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়? শিখাস তুই আমাকে?”

আসলেই তো! এভাবে ভেবে দেখেনি তো। অহমি কেনো রকম করে বলে,” রেস্টুরেন্ট থেকে চন্দ্রিমা উদ্দ্যানে হাঁটতে গিয়েছিলাম।”

“এই তোর সাথে ওর বিয়ে হইছে? না আক্দ হইছে? কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ের আগে এতো মেলামেশা করে?”

অহমির কোনো যেনো কথাটায় খুব খারাপ লাগলো। হ্যাঁ ও যায়নি মাহিদের সাথে, কিন্তু গেলেও বা এমন রিয়েক্ট করার কি আছে? মাহিদের সাথে তো ওর বিয়ে হবেই। অহমির মতে ওর ভাই এখন বেশি বেশিই করছে।

নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে না পেরে বলেই ফেলে, “তুমি এবার অতিরিক্ত করছো, খাবার খেতেই তো গিয়েছি, হাঁটতে গিয়েছি, অন্যকিছু করেছি? অন্যায় তো করিনি। তুমি সবসময়ই এমন বাড়াবাড়ি করো।”

“থাপ্পর দিয়ে গালের দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব। মুখে মুখে তর্ক করার সাহস হয় কিভাবে?” আহির অহমিকে থাপ্পড় মারতে তেড়ে আসে। আফরোজা বেগম ছেলেকে কোনোমতে হাত ধরে আটকায়।

অহমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফরোজা বেগম ধমক দিয়ে উঠেন। বলেন,”অহমি চুপ করো, রুমে যাও। আর আহির সমস্যা কি? মাহিদকে তো তুমি চিনোই। আর রাগারাগি কোরো না। বোন বড় হচ্ছে তোমার।”

অহমি জিদ দেখিয়ে রুমে চলে আসে। ও রুম থেকেই শুনতে পাচ্ছে ‘সন্ধ্যা ছয়টার পরে কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তান বাসায় ঢুকে না। দিনকেদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। জন্মের আগে থেকেই আমাদের অশান্তিতে রেখেছে।’ আর আফরোজা বেগম ছেলকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। অহমির মনে হয়-মা তো পারতো আজ ভাইয়াকে শাসন করতে। সবসময় তিনি অহমিকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেন। আহিরকে কিছু বলেন না। এখনও ছেলেকেই লাই দিচ্ছেন। অহমি আসলেই সকলের কাছে ঝামেলা। অবহেলার।

বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ভাই এখনও ওকে বকেই চলেছে। আরেকটা বালিশ দিয়ে নিজের কানও চেপে রাখলো। এর কিছুক্ষণ পর মাহিদ কল করলো। অহমি একবার রিং হতেই রিসিভ করলো। সবসময় ও কলের শুরুতে সালাম দেয়। কিন্তু এখন দিলো না। একটা ছ্যাবলামি করেই ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, “আমাকে বিয়ে করবেন মাহিদ, খুব তাড়াতাড়ি করবেন? আমি আর এই বাসায় থাকবো না। কিছুতেই থাকবো না।”

চলমান…..

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০১

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#সূচনা_পর্ব
#সমৃদ্ধি_রিধী

-“মাহিদের মা আজকে আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছে আম্মু। ওনি অহমিকে ওনার ছেলের বউ হিসেবে ঘরে তুলতে চান।”

অহমি মাত্রই চিকেন ফ্রাইয়ে বাইট দিতে যাচ্ছিল এমন সময় আহিরের কথা শুনে ও বড় বড় চোখ করে মায়ের দিকে তাকায়। আফরোজা বেগমও বেশ অবাকই হয়েছেন।

-“তোমার স্টুডেন্ট মাহিদ? যে এডমিশন টাইমে তোমার কাছে পড়ে তোমার মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলো? তুমি কি বলেছ তােদের? ”

-” হুম। আজকে আমার দুপুরে ওদের বাসায় দাওয়াত ছিলো না? তখনই আমার কাছে ওর মা প্রস্তাবটা রাখে। তোমার সাথে কথা বলা ছাড়া তো আমি কোনো মতামত তাদের দিতে পারি না। তাছাড়া অহমেরও যদি অন্য কাউকে পছন্দ থাকে? আমি ওনাদের পরে জানাবো বলেছি।”

-” যদি ছেলে ভালো হয় তাহলে তো অসুবিধা নেই, অহমিরও বিয়ের বয়স হচ্ছে। এখন তুমি তোমাদের বাবার অবতর্মানে ওর অভিভাবক। তোমার যদি মনে হয় তোমার বোনের জন্য ছেলে হিসেবে মাহিদ পারফেক্ট তবে তুমি কথা আগাতেই পারো। আমার কোনো অসুবিধা নেই।”

আহির আর আফরোজা বেগমের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা চললো। অহমি পুরো সময় নির্বিকার ছিলো। অহমি যখন টেস্ট শেষ করে পুরোদমে এসএসসি প্রিপারেশন নিচ্ছিল তখন আতহার হুসাইন মাহিদ নামে একজনকে তার বড় ভাই মেডিকেলের জন্য টিউশানি পড়াত। মাহিদকে ও বেশ কয়েকবার দেখেছে। মাথা নিচু করে ওদের বাসায় ঢুকতো, মাথা নিচু করে বের হতো। নিতান্তই ভদ্রলোক। মাহিদই আহিরের প্রথম ছাত্র। আহির মেডিকেল থার্ড ইয়ারে থাকতেই মাহিদকে পড়ায়। আহির অবশ্য তার শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অহমির মতামতকেও গুরুত্ব দিয়েছে। বাবা ছাড়া পরিবারে মা-ভাইকে অনেক কষ্টই করতে হয়েছে। কিন্তু অহমিকে তারা কখনোই কষ্ট করতে দেয়নি। তারা সবসময়ই অহমিরর ভালো চান। তারা যখন অহমির বিয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেখানে অহমির দ্বিমত করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

অহমি নিজের চিকেন ফ্রাইটা শেষ করে রুমে চলে আসে। বড্ড অগোছালো রুম তার। টেবিলের বইগুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। মেঝেতে রং তুলি রেখেই ভাইয়ের আনা চিকেন ফ্রাই খেতে গিয়েছিল। ছাদ থেকে আনা জামাকাপড় গুলো এখনো গুছানো হয়নি। অহমি রুমের দরজা বন্ধ করে স্পটিফাই এ প্রথমে গান ছাড়লো। একেএকে রং-তুলি, জামা কাপড়, বিছানা, সবশেষে পড়ার টেবিল নিমিষেই গুছিয়ে ফেললো। এই রং-তুলি, টেবিলের কিছু অংশ নিয়েই তার জীবন। রুমের লাইট নিভিয়ে টেবলিল্যাম্প জ্বালিয়ে তার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা বের করলো। ডায়েরির পাতার উপর কলমের খচখচ শব্দ হতে থাকলো।

“মাহিদ! আমি লোকটা ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে দেখেছিলাম এক দুইবার৷ ভাইয়ার কাছে পড়তে আসত। ছেলে মেবি ইন্ট্রোবার্ট। ওকে কখনো আমার দিকে সেইভাবে তাকাতে দেখিনি। আচ্ছা ও কি আমাকে পছন্দ করে?আমাকে ভালোলাগায় ভাইয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে? নাকি একজন বিবাহযেগ্য পাত্র যেমন বিবাহযোগ্যা পাত্রীকে প্রস্তাব দেয় ঠিক সেইভাবে? জানি না! আমার তো কেনো গুণই নেই কারো ভালোবাসার মানুষ হওয়ার। তাহলে কেনোই বা পছন্দ করবে? হয়তো, হয়তো..হয়তো কেবল প্রস্তাবই দিয়েছে! প্রস্তাব দিলেই তো বিয়ে হয়ে যাবে না?

তবে ভাইয়া যদি ওনার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা আসলোই এগোয় তাহলে অবশ্যই তা আমার জন্য ভালোই হবে। এরপরও যদি আমার সাথে ভালো কিছু না হয় তাহলে বুঝবো ভাগ্য খারাপ। কিন্তু আমি ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা করবো। আমার মা সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছে। আমি চাই না আমার জন্য তাকে আরো কিছু সহ্য করতে হোক। আমি নিজের কষ্ট হলেও কখনো কাউকে কিছু বুঝতে দিবো না। আমি চাই না আমার জন্য ওদের আর কোনো অসুবিধা হোক।”

অহমির সবসময় নিজেকে অপর্যাপ্ত মনে হয়। সবসময় ইনসিকিউরিটিতে ভুগে। মনে হয় কারো জীবনেই ও সুখের কারণ হতে পারবে না। অহমির জন্মের এক সপ্তাহ আগে ওর বাবা মারা যায়। সেই থেকে ওর দাদীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে কথা শোনাতো। একই সাথে দুই ফুফু তো ছিলোই। এই কথা অবশ্য আহির বা আফরোজা বেগম জানেন না। ছোট্ট অহমির তাই ছোট থেকেই মনে হতো ও সবসময় ভুলই করে। ওর যে অ্যাটেলোফোবিয়া হয়ে গেছে তা কেউই বুঝতে পারে না। আসলে অহমি বুঝতেই দেয়না।

অহমি ডায়েরিটা বন্ধ করে দিলো। ডায়েরিটা টেবিলের এক কোণায় রেখে আরেকটা ডাইরি বের করলো- পৃষ্টার শুরুতেই লিখলো ‘অমবস্যা ক্রিনিকোলাস’ -ডেট ২৩/০৫/২০২৫। খুব ছোট থেকেই গল্প লিখতে খুব পছন্দ করে, তবে কখনো সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। ভয় হয়!যদি কেউ উপহাস করে? সেই নাইন থেকে কত গল্প যে লিখেছে! কখনো প্রকাশ করা হয়নি। আজ অমব্যাসার ক্রিনিকোলাসের একদাশ অধ্যায় লিখবে। আজকের টপিক নিয়ে একটু রিসার্চ করতে হবে। তাই ল্যাপটপটা ওন করলো। ওর অনেক ইচ্ছে একজন রাইটার হওয়ার। তবে সে নাম প্রকাশ করবে না। গল্প লিখার এক পর্যায়ে সে বেমালুম ভুলে গেল কালকে ফার্মাকোলজি সাবজেক্টটার পরীক্ষা।
_________________________

মাহিদের সাথে অহমির বিয়ের ব্যাপারে পারিবারিক ভাবে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনো অহমি আর মাহিদের সরাসরি কথা হয়নি। কারনটা অহমির অর্নাস থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা। আজ অহমির পরীক্ষা শেষ। তাই আহির ওকে আগামীকাল মাহিদের সাথে দেখা করতে বলে। অহমিও আপত্তি করে না। রাতে ডিনার শেষ করে রুমে এসে ড্রেস চুজ করে। খুব সিম্পল অ্যাশ কালারের একটা থ্রিপিস চুজ করে পড়ার জন্য। ও খুব একটা জুয়েলারি পছন্দ করে না। কানে পাথরের কানের দুল আর দৈনন্দিন যে ঘড়ি পরে তা দিয়েই রেডি হয়ে ও মাহিদের সাথে দেখা করতে যাবে। ভাইয়া মাহিদের নাম্বার, যে জায়গায় দেখা করবে তার ঠিকানা ওকে বলে দিয়েছে। বলেছে এগারোটায় ওকে সেই ক্যাফেতে উপস্থিত থাকতে। অহমিও সম্মতি জানিয়েছে প্রতিবারের মতো। ভয় যদি অবাধ্য হলে ভাইয়ার খারাপ লাগে?

সেইদিন রাতে অহমি তার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা নিয়ে আবারও বসলো। পুরো রুমে আবারও কলমের খচখচ শব্দ। “একটা ছেলেকে ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারে ভালো লাগত। কিন্তু বলা হয়নি। যদি রিজেক্ট করে? তাছাড়া ওটা এমনিতেই একদিন দেখে ভালো লেগেছিল এমন ধরনের। খুব সিরিয়াস না। পরে জানতে পারি ছেলেটার ওর ক্লাসমেটের সাথে রিলেশন ছিলো। ভাগ্যিস জানায়নি। নইলে যে বাজেভাবেই না রিজেকশনের স্বীকার হতাম!”

এমন করে রাত ২:৩০ টা পর্যন্ত অহমি নানান বিষয়ে লিখতেই থাকলো। ওর রাত যেন আজ ফুরায় না।

_________

মাহিদের সাথে ১১ টায় দেখা করার কথা থাকলেও অহমির ক্যাফেতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১১:৩০ হয়ে যায়। অহমি মাহিদকে তার এসএসসির সময় শেষ দেখলেও এখন ওর পিছনের অংশ দেখে খুব সহজেই চিনে ফেলে। ও ধীর পায়ে বরাদ্দকৃত টেবিলের সামনে গিয়ে মাহিদকে সালাম দেয়।

-“আসসালামু ওয়ালাইকুম।”

মাহিদ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে ওকে দেখে সালামের জবাব দেয়।

-“প্লিজ সিট।” অহমি ধীরে-সুস্থে বসতেই মাহিদ বলে-“তুমি আধা ঘন্টা লেটে এসেছ। ”

অহমির বলতে ইচ্ছে হলো ‘ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ায় লেট হয়েছে।সাথে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে জ্যাম তো আছেই।” কিন্তু অহমি ক্ষীণ আওয়াজে বললো-“সরি।”

-“বাই দ্যা ওয়ে কি খাবে?”

-“আপনি অর্ডার দেন, আমার সমস্যা নেই।” কিন্তু ও বলতে পারলো না প্লিজ স্যান্ডউইচ ছাড়া যা ইচ্ছে অর্ডার দেন। আমার স্যান্ডউইচ ভালো লাগে না। মাহিদও তখন নিজের খেয়াল খুশি মতো কিছু না বলে কফি, স্যান্ডউইচ অর্ডার দিল।অহমি অপ্রকাশিতভাবে ভীষণ মন খারাপ করলো। অহমি ও মাহিদ বেশ কিছুক্ষণ অহমির পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বললো। একপর্যায়ে মাহিদ বলে-“তোমার আগে রিলেশন ছিল? আমি সব মানলেও এই একটা জিনিস আমার বউ এর জন্য মানবো না।”

-“না, আমার সেরকম কিছু নেই, একচুয়েলি আই নেভার ডেটেট এনি গাই।”

মাহিদ মনে মনে বেশ খুশিই হলো। অবশ্য অহমির ব্যাপারে আগেও বেশ কিছু জায়গায় খোঁচখবর তো অবশ্যই নিয়েছিল।

-“তোমার আমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে?”

-“না সেরকম নেই, ভাইয়া আম্মু যা ভালো বুঝে তাই করবে। কিন্তু আপনার?”

-” হুম, অবশ্যই আপত্তি আছে। অন্যতম কারণ তুমি খুব অগোছালো, কারণ আমি সবসময় জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখতেই পছন্দ করি। কিন্ত তুমি তার বিপরীত।”

অহমি বেশ অবাক হলো। অগোছালো সে ঠিক আছে! কিন্তু তা মাহিদ কি করে জানলো? ও তো বেশ পরিপাটি হয়েই বাইরে বের হয়। তবে অহমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলো পরের কারণটা শুনে।

-” তোমার নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই নেই।”

চলমান…

Dark Mystery পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_শেষ পর্ব
#Sabrina_Summa

সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?

মাহির : বলছো যখন তাহলে সব বলেই ফেলো। আর হ্যাঁ একবার তুমি আরেকবার আপনি বলাও অফ করো।

সুপ্তি : আমার এটা ভালো লাগছে। আর একবার সুপ্তি কথা বলছে আরেকবার মিস সিক্রেট। সো ইট’স নরমাল।

মাহির বিরক্ত হলো তবে কিছু বললো না।

একটুপর সুপ্তি নিজেই বলা শুরু করলো, ” তৃতীয় খুন করি আমার বাসার দারোয়ানকে। কারণ ওর জন্যই আমার ফ্যামিলির উপর অ্যাটাক হয়েছে। আর চতুর্থ খুন করি যে তোমার উপর অ্যাটাক করেছিল তাকে।

মাহির অধোর্য্যের মতো বললো, ” আর ৫ম খুন? ”

সুপ্তি : আরে বাবা বলতেছি তো!

দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আবারও বলা শুরু করলো,
” আমি যখন আটক ছিলাম তখন আমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য অনেকগুলো ফোর্স ছিল। সেখানকারই একজন আমাকে শান্তশিষ্ট অবলা নারী ভেবে গাঁয়ে হাত দিতে নিচ্ছিলো। আমার গান আগেই নিয়েছিল কিন্তু আমি কি এতটাই ইনোসেন্ট নাকি! ছুরি দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিছি। এরপরই বাইধা রাখা হইছিল। আর ওই লাশটাকে ওখানেই রাখা হইছিল। এমনিতেই খারাপ পরিবেশ তারমধ্যে লাশ পচে আরও খারাপ অবস্থা হয়েছিল। ”

মাহির : সবই বুঝলাম। কিন্তু তুমি তোমাদের বাসার ছাদে যা বলেছিলে সবই কি মিথ্যা?

এবার সুপ্তি রেগে গেল। চেয়ার থেকে উঠে বললো, ” কি মিথ্যে বলছি বল? ”

মাহির : বসে কথা বলো। আমি বলছিলাম যে তুমিই তো মিস সিক্রেট তাহলে তোমাকে উদ্ধার করলো কে?
( স্বাভাবিক ভাবে )

সুপ্তি : কেন বলছিলাম না মিস সিক্রেটের টিম! ওরাই উদ্ধার করেছে। তবে যেহেতু কেউ আমার ফেস দেখেনি সেহেতু ওরা আমাকে সুপ্তি অর সুমির বোন মনে করেছে।

মাহির : আমার লাস্ট প্রশ্ন।

সুপ্তি : আমি আর কিচ্ছু বলবো না। আমি খুবই টাইড। আমি বের হবো।

মাহির : তুমি এখানে নিজ ইচ্ছায় আসো নি। সো নিজ ইচ্ছায় বের হতেও পারবে না।

সুপ্তি : থ্রেড দিচ্ছো আমায়?

মাহির : না। চুপচাপ বলো তোমার ফ্যামিলি কী জানতো তুমিই মিস সিক্রেট?

সুপ্তির বোধহয় প্রশ্নটা ভালো লাগলো। তাই বলা শুরু করলো, ” প্রথমে জানতো না। কিন্তু পরে যখন তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যায়। তখন মিস সিক্রেট রূপে সুপ্তির রুমে ঢুকতে যেয়ে ধরা পড়ি।
জানেন সেদিন আমি ভিজা বিড়ালের মতো গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেদিন যা ভয় পাইছিলাম জীবনে এত ভয় পাই নাই। অনেক বড় একটা ক্লাস নিছিলো আম্মু। ”

মাহির : তাই তো বলি বিয়ের দিন তোমার মা-বাবা কোনো রিয়েক্ট কেন করলো না। নিজের মেয়ের জায়গায় মিস সিক্রেটকে দেখে তোমার মা বলেছিল মিস সিক্রেটও নাকি তার মেয়ে! আজ বুঝতে পারছি তিনি ঠিকই বলেছিলেন।
একটা মজার কথা জানো। ”

কথার মাঝখানে সুপ্তি বলে উঠলো, ” না।”

মাহির : দিলে তো কথা বলার ধরণটা নষ্ট কইরা। না বললে জানবে কিভাবে!

সুপ্তি আবারও কথার মাঝে বলে উঠলো, ” জানেনি যখন জানি না তাহলে সোজাসুজি বললেই হয়। ”

মাহির : চুপ থাকো তো। বলতে দেও।

সুপ্তি চুপ করলে মাহির বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ফ্যামিলি নিয়ে তোমার বাসায় যাই তখন তোমার মায়ের আপত্তি ছিল এ বিয়েতে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন মাহির বেকার।
কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি বলবেন আমার সাথে থাকলে তার মেয়ের সেইফটি থাকবে না। কিন্তু তিনি বললেন পুরো ভিন্ন কথা। তখন বাবা বলেছিল আমি বাবার ব্যবসা দেখি। তারপর তোমার মা রাজি হয়েছে।
আমার ভাবনা তোমার মাকে জানালে তিনি বললেন সুপ্তির সাথে থাকলে নাকি আমারই সেইফটি থাকবে না।
তোমরা মা মেয়ে পারোও বটে মানুষকে কনফিউজড করতে। বলো সত্য কথায় তবে কারো বোধগম্য হয় না। ”

সুপ্তি : ও আচ্ছা। এখন আমি বাসায় গিয়ে ঘুমাবো।

মাহির : এখানে ঘুমাও।

সুপ্তি : যেখানে মানুষকে আটকে রাখা হয় সেখানে আমি ঘুমাই না।

মাহির : এখানে কখনোই কাউকে আটকে রাখা হয় নি। সম্পূর্ণ ক্লিন রুম। স্প্রেশালি তোমার জন্য আবারও ক্লিন করা হয়েছে কিছু ঘন্টা আগে।

তারপরও সুপ্তি দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলে মাহির আর নিজের ইমোশন ধরে রাখতে পারলো না। সুপ্তিকে হারানোর ভয় আবারও তাকে ঘিরে ধরলো।

তাইতো সুপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো, ” I’m sorry supti.. I’m extremely sorry. আমি কতবার ভেবেছি তুমিই মিস সিক্রেট। কিন্তু ততবারই তোমার কর্মকান্ড আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।
আমি জানি, আমি মিস সিক্রেটের সাথে খুব খারাপ করেছি, অনেক hurt করেছি কিন্তু সেটা তো তোমাকে অর্থাৎ সুপ্তিকে ভালোবেসেই করেছি। Please, try to understand. ”

সুপ্তি অকস্মাৎ ঘটনায় খুবই অবাক হলো। মাহিরের হঠাৎ পরিবর্তন তাকে খুবই ভাবাচ্ছে। তারপরও মাহিরকে ছাড়িয়ে বললো, ” অনেক দেরি হয়ে গেছে মাহির। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি চেয়েছিলাম বিয়ের প্রথম রাতে সব বলতে কিন্তু তুমি তো তার সুযোগই দিলে না। ”

মাহির : তুমি যদি চাও আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাবো।
( বলেই বসে পড়লো )

সুপ্তি সরে গেলে মাহির বললো, ” I am sorry, তুমি আমাকে যত শাস্তি দেওয়ার দেও তবে ছেড়ে যেও না প্লিজ। ”

সুপ্তি : মাহির আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর তাছাড়াও পুরো দেশ জানে আমাদের ডিভোর্সের কথা। এখন আর কিছু হওয়া সম্ভব না।

মাহির : তোমার কথায় যদি সত্যি হয়।
আমি তোমাকে বাঁচতে দিবো না। আর নিজেও বাঁচবো না।

সুপ্তি : আমাকে মারার থ্রেড দিচ্ছো তুমি?

মাহির : থ্রেড না সত্য বলছি। তুমি আমার হবে না মানে তুমি কারোর হতে পারবেও না।

সুপ্তি : ওকে মারো আমায়।
বলতে বলতে চেয়ারে বসলো।

মাহির : সুপ্তি আমি মজা করছি না। আমি পারমিশন না দিলে ৭২ ঘন্টার মাঝে এই রুম কেউ খুলবে না। ভেতর থেকে এই রুম খোলা যায় না। আর এই যে ( ড্রয়ার থেকে রিমোট বের করে ) এটা দিয়ে আমি রুম ব্রাস্ট করতে পারি।

সুপ্তি : ভাই এত ইন্ট্রো না দিয়া যা করতে চাস তাড়াতাড়ি কর। এমনিতেও এ পৃথিবী আমার ভালো লাগে না। যদি বিশ্বাস না হয় পৃথিবীকে জিজ্ঞাসা করতে পারো ও সাক্ষী।

এতক্ষণ মাহির চিল মুড নিয়ে ছিল আর সুপ্তি ইমোশন দেখাচ্ছিল। এখন উল্টো সুপ্তি চিল মুডে আর মাহির ইমোশনে।

এভাবে সুপ্তি রাজী হবে না বুঝতে পেরে মাহির নিজের মাথায় গান পয়েন্ট করে বললো, ” থাক তোমার মরতে হবে না। আমার মরার পর ৭২ ঘন্টা শোক পালন করার জন্য কাউকে দরকার পড়বে। তুমি শোক পালন করো আমি নাহয় উপর থেকে দেখবো।”

সুপ্তি কিছুক্ষণ মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” কী চাও আমার কাছে? ”

মাহির : এই পেপারগুলোতে সাইন চাই। আর যেহেতু তোমার জন্যই পুরো দেশ জেনেছে ডিভোর্স সম্পর্কে সেহেতু ১ ঘন্টার মাঝে এই নিউজ মিথ্যে প্রমাণিত হওয়া চাই না হলে বাকিটা বললাম না বুঝতেই পারছো!

সুপ্তি ওকে বলে পেপারগুলোতে সাইন করে দিলো।
আর নিজের টিমকে জানিয়ে দিলো এই নিউজ ডিলেট করতে।

সুপ্তি : মাহির ল্যাপটপ আছে?

মাহিরের উত্তর না বোধক আসতেই সুপ্তি ফোন দিয়েই কাজ শুরু করলো।
৩৫ মিনিট পর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ডান। ”

মাহির খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো, ” চলো, রুম সাজাতে হবে। ”

সুপ্তি : কেন?

মাহির অবাক হওয়ার মতো করে বললো, ” কেন মানে? দ্বিতীয় বিয়েতে রুম সাজাতে হবে না? ”

সুপ্তির বুঝতে দেরি হলো না মাহির সুপ্তির সাথে দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছে।

সুপ্তি : মাহির আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।

মাহির : হ্যাঁ জানি। আমাদের একটু আগে দ্বিতীয় বিয়েও হয়েছে। প্রথম পেপারে বিয়ে। দ্বিতীয় পেপারে চুক্তি যে তুমি আমাকে কখনো ছাড়তে পারবে না! তুমি তো কানা ফকিরের মতো সাইন করে দিছো।

সুপ্তি : ফাজলামো বন্ধ করো মাহির। সাইন করানোর আগে তোমার বলা উচিত ছিল।

মাহির : রেগে যাচ্ছো কেন? বাদ দেও এগুলো। বাসায় চলো।

সুপ্তি : মাহির আমি তোমার বাবার বাসায় যাবো না।

মাহির : কেন?

সুপ্তি : কেন যাবো সেটা আগে বলো? তোমার বাবা-মা দুইজন আমার দুই ক্যারেক্টারকে পছন্দ করে। আমি দুইজনের সাথে দুই আচরণ করবো?

মাহির : তুমি চাইলে আমরা এ বাসায় থাকতে পারি।

সুপ্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ” এতেও কারো সমস্যা হতে পারে। ”

মাহির : দেখো সুপ্তি। আম্মু মিস সিক্রেট আর সুপ্তি দুইজনকেই পছন্দ করতো কিন্তু আমার জন্য আম্মু মিস সিক্রেটের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আর বাবার কথা বাদ দেও। তারপরও দুইজনের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

সুপ্তিকে কারো কিছুক্ষণ বুঝানোর পর সুপ্তি রাজি হলো বাড়ি ফিরতে।।

আজ সুপ্তিকে নতুন বউয়ের মতো করে বাড়িতে প্রবেশ করানো হলো। এখানে সুপ্তির মা বাবাকেও ডাকা হয়েছে।
সুপ্তিকে কেউ বুঝতেই দিচ্ছে না এতদিন কি হয়েছে। এমনভাবে তাকে ট্রিট করা হচ্ছে যে আজই প্রথম সে বউ হিসেবে এ বাড়িতে এসেছে।

সকলে আড্ডা দিচ্ছে সোফায় বসে।
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” এভাবেই যেন বাকি জীবনটা কাটে।। ”

বাইরে আকাশটা ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে। নতুন আলোয় একটা পুরোনো গল্প আবার শুরু হচ্ছে ।
বাস্তবতা সবসময় পরীর গল্প নয়। ভুলের পর ক্ষমা আসে, কিন্তু দাগটা থেকে যায়।
সুপ্তি জানে, সে সবটুকু মাফ করে দিতে পারবে না —শুধু ভুলে থাকবে।।
কোনো যুদ্ধই একদিনে শেষ হয় না। কিন্তু কিছু যুদ্ধ, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে থেমে যায়।
আর বাকিটা?
তাদের গল্প নয়, সময় বলবে…

🔚 সমাপ্ত.,.!

( আসসালামু আলাইকুম। এতক্ষণ আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে গল্পটা পড়েছেন। আরও ১ মিনিট একটু নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত পড়িয়েন।
প্রথমেই দুঃখিত শেষটা সুন্দর করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য। আরেকটু লেখার ইচ্ছে ছিল তবে সামনে পরীক্ষা থাকায় হয়ে উঠলো না।
আমি অনেক কিছুই না বুঝে লিখেছি যেমন ভার্সিটির বিষয়টা। যে এখনো স্কুলের গন্ডিটায় পার হয় নি সে ভার্সিটি সম্পর্কে আর কতটুকুই জানে! তবুও চেষ্টা করেছি লেখার। আর রাজনৈতিক বিষয়টাও। আমি তো রাজনীতির ‘র’ ও বুঝি না।
অনেক কিছুই লেখেছি মজার ছলে তবে হয়তো সেগুলো সেনসিটিভ কিছু। দয়া করে সেনসিটিভ ভাবে না নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েন।
আবারও দুঃখিত কথা গুছিয়ে বলতে পারছি না।
আমি পনেরো বছরের তরুণী। উপন্যাস পড়ে সারাদিন ভাবনার দুনিয়ায় ডুবে থাকি। আর স্বপ্ন দেখি। মূলত স্বপ্নই আমার অনুপ্রেরণা। এই গল্পটার অধিকাংশই আমার স্বপ্নে দেখা বাকিটা আশেপাশের ছোটো ছোটো ঘটনা থেকে নেওয়া।
তবুও আমার বোন আমার ফ্রেন্ডরা আমায় অনেক হেল্প করেছে। ২০২৬ এ আমরা এসএসসি দিবো একটু দোয়া করিয়েন।
আমার ছোট একটি গ্রুপ আছে নাম – গল্পের ঝুড়ি ( গল্প লিখি, গল্প পড়ি )
আর একটু ছোট পেইজ আছে নাম ” ক্ষুদে লেখিকা.,.”
সামনে ঈদ। ঈদ সালামি হিসেবে একটু ফলো দিয়ে আসবেন প্লিজ।
দোয়া করিয়েন আমার জন্য। হয়তো আবারও দেখা হবে কখনো নতুন গল্প নিয়ে।
ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এতটুকু পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। )

Dark Mystery পর্ব-৪০

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_40
#Sabrina_Summa

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা রুমে। যার চতুর্দিকে আয়না লাগানো। একটা মানুষের থাকার মতো করেই রুমটা গোছানো।
একটা চেয়ারে বসে আছে সে। তার হাত পিছনে চেয়ারের সাথে বাঁধা। মাহির তার সামনের চেয়ারে বসে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিরের হাতে পানির বোতল ৷ বুঝায় যাচ্ছে সুপ্তির জ্ঞান ফিরানোর জন্য এতক্ষণ পানি ছিটিয়েছে।

মাহির স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” এতক্ষণে জ্ঞান ফিরলো তবে। ”

সুপ্তি : আমি এখানে ইচ্ছে করে আছি বলেই আটকিয়ে রাখতে পারছেন। আমি যদি…

মাহির কথার মাঝখানে বলে উঠলো, ” হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। তুমি ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারবে।
এখন নাটক কম করে হাতটা সামনে আনো। আমি দেখেছি তোমার হাত খোলা শেষ। ”

সুপ্তি কোনো ভঙ্গিতা ছাড়ায় হাত সামনে আনলো । মাহিরের মতিগতি বুঝার জন্য বললো, ” মানুষ তো আয়নাঘর নাম রেখে অন্ধকার একটা টর্চার রুম বানায়। তোমার ওই আগের রুমের মতো যেখানে তুমি সুপ্তির শোকে বসে ছিলে!
( উপহাস করে )
কিন্তু এই রুমটা আয়নাঘরের নাম রাখতে পারবে। তুমি এত আয়না লাগিয়েছো আয়নাঘরের নাম রাখার জন্যই মাহির? ”

মাহির : তুমি আমার ওই রুম সম্পর্কে জানলে কিভাবে?
( স্বাভাবিক ভাবেই )

সুপ্তি হেসে বললো, ” আমি সবই জানি। তুমি যে সেখানে মানুষকে এনে টর্চার করো তাও জানি। ”

মাহির : নিজেকে এত সাধু ভেবো না। আমি মানুষকে শুধু টর্চার করি তোমার মতো খুন করি না।

সুপ্তি : নিজেকে সাধু ভাববো না কেন বলো, তোমার সকল কুকীর্তিই তো আমার মাধ্যমে চাপা পড়ে । আই মেইন, আমি না থাকলে তুমি এতদিন জেলে থাকতে!

মাহির : তুমি কোথায় থাকতে? আমার আগে তো তোমার জেলে যাওয়ার কথা! যে পরিমাণ খুন করেছো।

সুপ্তি : মানুষ যতটা ভাবে আমি ততটা খুনও করি না বা করি নি।

মাহির : যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে। আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি ৮৮ টার কথা। অবশ্যই তার থেকে বেশিই হবে !

সুপ্তি ৮৮ টা বলেই হাসা শুরু করলো।

মাহির : তবে কি তারও বেশি?

সুপ্তি : আমি মাত্র ৫ টা খুন করেছি। বাকিগুলো হয়তো আমার টিম বা অন্য কেউ করেছে যা আমার নামে চালিয়েছে। তবে এগুলো আমার নির্দেশে না।

মাহির : আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আরেকটা কথা, বিষয়টা খুবই হাস্যকর যে একটা মানুষ লাশে ভয় পায় না তবে কবরে ভয় পায়!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনার বিশ্বাস দিয়ে আমি কি করবো! যা সত্যি তাই বললাম।
আর আমি ট্রমায় ছিলাম তাই কবরে ভয় পেতাম তবে সব কবরে না যেমন – আপুর কবরটা। প্রথমদিকে লাশেও ভয় পেতাম।
কিন্তু এখন কিছুতেই পাই না। এতে অবশ্য আপনার ক্রেডিট অনেক। সো ধন্যবাদ। ”

মাহির : কাকে কাকে খুন করেছো বলা যাবে?

সুপ্তি অবাক হচ্ছে মাহিরের শান্ত মনোভাবে। সে শান্ত থাকতে পারছে না তবে মাহির এত শান্ত কিভাবে? মাহিরের মাঝে কি কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না!

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” ২০১৮ সালে আমি ঢাকায় আসি। ততদিনে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। আপুর ধর্ষণ হয়ে খুন তারপর আবার আমাকে তুলে নিলে যাওয়া আর দেশের খারাপ অবস্থা সবদিক বিবেচনা করেই বাবা আমাকে ফাইট শিখায়।
আমি তখন মিস সিক্রেট নামে খুবই জনপ্রিয়।
আচ্ছা, আমি কিন্তু আমার মিস সিক্রেট হয়ে খুনের পথে যাওয়ার গল্প শুনাচ্ছি । বলতে গেলে শুরু থেকেই শুরু করছি। কারণ আমি যা যা বলবো সবই একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড। ”

মাহির মাথা কাত করে সম্মতি জানালে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ক্লাস ফাইভে তখন বাবা আমাকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করে। কিছুটা বাধ্য হয়েই। কারণ আমার মেয়েদের মতো পুতুলে না ছেলেদের মতো ডিভাইসে ইন্টারেস্ট বেশি ছিল। আমি কম্পিউটার তো শিখিই নাথে হ্যাকিংও শিখে ফেলেছিলাম।
ক্লাস সিক্সে নিজে নিজেই নতুন নতুন হ্যাকিং আইডিয়া বের করতাম। এক কথায় মাস্টার হয়ে যাচ্ছিলাম এগুলোতে।
ক্লাস সেভেনে আমি জাতীয় পর্যায়ে হাত দেয়। সরকারের জন্য কাজ করা শুরু করি। কেউ অবশ্য আমার পরিচয় জানতো না। এমনকি আপু ব্যতিত আমার ফ্যামিলির কেউ না।
ক্লাস এইটে অনেক বেশি দক্ষ হয়ে গেয়েছিলাম। যে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করতে পারতাম যেকোনো জায়গায় বসে। হোক তা এক কিলোমিটার বা হাজার কিলোমিটার। এগুলোই আমাকে সাহায্য করেছিল মিস সিক্রেট হিসেবে জনপ্রিয় হতে।
এখন আসি খুনের বিষয়ে।
যখন আমার ফাইটিং শেখা পুরোপুরি শেষ। ধীরে ধীরে পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হচ্ছি। এমন সময় তোমার বাবা মাহফুজ চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও পরে আমি তার সাথে যোগাযোগ করি।
সে আমাকে জানায় আপুর খুনিদের খুঁজে দিবে। বিনিময়ে আমাকে তার ফ্যামিলিকে প্রটেক্ট করতে হবে।।
রাজি হয়ে যায়। কারণ আপুর খুনিকে যে আমার দরকার।
তবে আমি যে তার সামনে যাবো এতে আমার সেইফটি কোথায়? উত্তর হলো আমার কোনো সেইটি নেই। তাই মাস্ক পড়ে তার সামনে যায়। সে আমাকে গান চালানোর ট্রেনিং দেয়। তারপর আসে বহু অপেক্ষিত সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
১৬ জুলাই, ২০১৯।
পরপর নিজের হাতে গান দিয়ে দুইটা খুন করি। জানেন, সেদিন আমার হাত না কাঁপলেও বারবার প্রশ্ন আসছিল ওই দুটো লোক আর আমার মাঝে কি পার্থক্য রইলো! তারাও খুনি আমিও খুনি। এরপর স্বাভাবিক হতে ১ বছর সময় নেয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজি, হাজারটা যুক্তি সাজায়। তবুও উত্তরটা আজও মিলে নি।
১ বছর পড়াশোনায় গ্যাপ পড়ায় এসএসসি তে ফেল করি। ”

মাহির আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। মিস সিক্রেটের খুনি হওয়ার পিছে যে তার বাবার এত বড় অবদান তা সে জানতো না।

সুপ্তি একটু রেস্ট নিয়ে আবারও বলা শুরু করলো, ” দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে টেনে টুনে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। ততদিনে আমি হ্যাকিংয়ের পেশায় নেমে পড়েছে। কলেজও শেষ করি টেনে টুনে।
তারপর এডমিশন টেস্ট দেয় প্রথমবারে হয় না প্রিপারেশনের অভাবে। ভাবলাম দ্বিতীয়বারে ভর্তি হবো। অনেক ভালো করে পড়লাম তবে পরীক্ষার আগের দিন এক মাসের জন্য অন্য দেশে যেতে হয়। আমি দেশে আসতে আসতে ততদিনে সকল পরীক্ষাও শেষ।
ভর্তি হয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে। প্রথম তিন বছরে টেস্ট ব্যতিত তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম কিনা সন্দেহ আছে। এখন তো ঠেকায় পড়ে প্রতিদিনই যেতে হয়!
যাইহোক, দীর্ঘ ৯ বছর পর তৃতীয় খুন করি। এরমাঝে আমি কাউকে খুন করি নি। শুধু আহত করেছি।
চতুর্থ খুন করি তৃতীয় খুনের দুইদিন পর। আমার জিনিসে হাত দিলে এমনই হয়। ( রেগে )

মাহির হঠাৎই প্রশ্ন করলো, ” কে এই দুইজন? ”

সুপ্তি : ও, এতক্ষণ আপনি এখানে ছিলেন? আমি তো বুঝতেই পারি নি!

মাহির বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আসল কথায় আসো। ”

সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৮+৩৯

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_38+39
#Sabrina_Summa

মাহিরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট কিছুটা অবাক হলো। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম। তানিশা সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে আর কেউ নেই।
পরিবেশ দেখে মিস সিক্রেটের তেমন সুবিধার লাগছে না। কিছু অঘটন তো ঘটবেই আজ।

মাহির আস্তে আস্তে মিস সিক্রেটকে বললো, ” তোমাকে বাঁচিয়ে দেশে আনার একটাই কারণ সুপ্তিকে তোমার হাত থেকে ছাড়ানো আর ডিভোর্স। ”

মিস সিক্রেট অবাক হয়ে মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকালো। সম্ভবত মাহফুজ চৌধুরী সবই জানে, তবে কেন সে কিছু বলছে না!

মাহির এবার জোরেই বললো, ” চুপচাপ সাইন করে দাও। ”

মিস সিক্রেট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার বড্ড ইচ্ছে করছে কাঁদতে।
সে তো ভেবেছিল এতদিনে মাহির সব ভুলে গেছে কিন্তু হলো তো তার বিপরীত। বেঁচে ফেরার সব আনন্দই যেন একটি বাক্যে ফিকে হয়ে গেল।

যতই হোক সে তো মিস সিক্রেট। সে তো আর সুপ্তি নই যে নিজের ইমোশন প্রকাশ করতে পারে। এতদিন ধরে সে আবেগকে নই বিবেক কে প্রশ্রয় দিয়েছে আজ কি তার ব্যতিক্রম করবে! কখনোই না।
তাই তো ইমোশনকে লুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” তুমি তোমার সিদ্ধান্তে সিউর তো? ”

মাহির : অবশ্যই।

মিস সিক্রেট : ওকে।
বলে টেবিলে রাখা ডিভোর্স পেপারের দিকে আগালো ৷ কোনো কিছু না ভেবেই নাইন করে দিলো।

মাহিরের খুশি দেখে কে! সে বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।

মিস সিক্রেট : ডিভোর্স দিলাম। বিয়েতে তো গিফট দেয় নি ডিভোর্সে দেয় অন্তত।
বলা শেষ করে মাস্কটা খুললো।

এতক্ষণ মাহফুজ চৌধুরী, রাগিনী বেগম, তানিশা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও এবার তারা একসাথে বলে উঠলো, ” সুপ্তি….”

মাহিরও তাকালো। তার বিশ্বজয়ের হাসি একমুহূর্তে চুপসে গেল। সে এতটাই বিস্মিত যে কোনো টু শব্দও করতে পারলো না।

সুপ্তি : হ্যাঁ, মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি।
( কথায় দৃঢ়তা থাকলেও কষ্ট অভিমান স্পষ্ট )
আর হ্যাঁ ভালো কথা। মাহফুজ চৌধুরী আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি আপনার সকল কর্মকান্ডে সাহায্য করা থেকেও বিরত যাচ্ছি। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক। তাই কখনো বাঁচা মরার প্রশ্ন উঠলে আমাকে কষ্ট করে একবার স্মরণ করিয়েন। বেঁচে থাকলে অবশ্যই সাহায্য করতে আসবো।

কথা শেষ করে ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান দ্রুত ভিতরে আসলো।

সুপ্তি : গাড়ি বের করো।

কথার ধরনেই ইরফান বুঝতে পারছে সামনে থাকা ব্যক্তিটি মিস সিক্রেট। তবুও সকলের মতো সেও অবাক হয়েই বললো, ” সুপ্তি!”

সুপ্তি রাগী চোখে তাকাতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, এখনই বের করছি। ”

সুপ্তি : গাড়ি কিন্তু আমি চালাবো।

ইরফান : ম্যাম, আর যাই হয়ে যাক গাড়ি আমি আপনাকে চালাতে দিবো না!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” ওকে, তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। ”

ইরফান চলে যেতেই সুপ্তি বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো, ” ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে যাচ্ছি। কপি পাঠিয়ে দিবো। ”
বলা শেষে বের হয়ে গেল।

মাহির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। বিড়বিড় করে বললো, ” তোমার কথায় মিলে যাচ্ছে! ”

মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কারণ এখানে থেকে এখন ছেলের পাগলামি দেখা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই। এমনিতেই তারা অপরাধ বোধে ভোগছেন।
মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তির সাথে আর রাগিনী বেগম মিস সিক্রেটের সাথে কতই না খারাপ আচরণ করেছেন!

গাড়িতে সুপ্তির জোরাজোরিতে ইরফান বাধ্য হচ্ছে গাড়ি স্প্রিডে চালাতে।
জ্যামপূর্ণ রাস্তায়ও ফুল স্প্রিডে চালাচ্ছে। তবে ভাগ্যক্রমে মিস সিক্রেটের গাড়ি বলে সকলে সাইড দিচ্ছে। নাহয় আজ টু ইন ওয়ানের মতো সুপ্তির পাশাপাশি ইরফানও উপরে চলে যেতো। সাথে যে গাড়ির সাথে ক্র্যাস হতো সে গাড়ি তো আছেই!
কিছুক্ষণের মাঝেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে চলে এলো তারা।
ইরফান হাফ ছেড়ে বাঁচলো বোধহয়।।

মিস সিক্রেট খুব সুন্দর একটা কালো রংয়ের থ্রি-পিচ পড়লো। তার ফর্সা গড়নে কালো রংটা বেশ মানাচ্ছে। সাথে মেচিং কালো হুডি অ্যান্ড মাস্ক তো আছেই ৷

জীবনে কোনো লাইভে বসার জন্য তার এত প্রস্তুতি ছিল না। আজই প্রথম হয় তো শেষবারও।।

লাইভ শুরু হলো আর পাঁচ দশটা দিনের মতোই ফরমালিটি দিয়ে। তবে মিস সিক্রেটের গায়ে থ্রি-পিচ টা বোধহয় সকলকেই অবাক করছে। কারণ সে তো কখনো বাঙালি সাজে সাজে না।

কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট আসল কথায় আসলো।

কিছু কাগজ কয়েক সেকেন্ড ক্যামেরার সামনে ধরে তারপর সরিয়ে নিয়ে বললো, ” এগুলো সীমান্তচুক্তি সংক্রান্ত কাগজ। কিছুদিন আগে চুরি হয়েছিল। যারা চুরি করেছিল তারা বড়ই সাধারণ মানুষ আমাকে আটকে রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে…”
বলার পূর্বেই কাগজগুলো ইচ্ছে করে ফেলে দিলো। কাগজগুলো তোলার জন্য ঝুঁকতেই দেখা গেল পিছনে খুব সুন্দর করে টাঙ্গানো আরও কিছু কাগজ। সম্ভবত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা জমিগুলোর তবে তা ভারতের।।

ফেলা কাগজগুলো তুলে ঠিক করে রেখে আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত তারা চুরি করেছে আমি কাগজগুলো নিয়ে শুধু শুধু ফেরত আসবো নাকি! একটা কথা আছে না – ট্রিট ফর ট্রেট। ঠিক তেমনই তারা করেছে মানে আমিও করবো। এটার জন্যই আমাকে তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল কাগজগুলো বোধহয় আমার কাছেই আছে তবে কাগজগুলো তো কবেই আমার টিমের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে এসেছে।
আচ্ছা, এগুলো এখন একটু বাদ দেয়। পার্সোনাল কিছু কথা বলবো! ”

সকলের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য লাইভে তাকালো। সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

আবারো বলা শুরু করলো,
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার কাজ খুবই সহজ। যখন ইচ্ছা খুন করতে পারি, গুম করতে পারি! ফাঁসি বা কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারি! আসলে আমি কিছুই পারি না। শুধু রিকোয়েস্ট করতে পারি।
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার অবস্থানে থাকলে আপনারাও যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন। এই ভুল ধারণা অনেকেরই গেছে এই তিন দিনে। তবুও কিছু প্রমাণ দেখায় আমার উপর দিয়ে কি যায়!

বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুডি খুলে ফেললো।
থ্রি-পিচের হাতাগুলো উপরে তুলতেই দেখা গেল তার কাটা ছিঁড়া দুই হাত।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” প্রশ্ন আসতে পারে এত দাগ কিসের!
আসলে ইন্ডিয়া যাওয়ার পর খুব সম্মানের সাথে সাগ্রতম করে । দুইদিন খুব আদর যত্ন করে। বলে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সো সবার নজরও আমার দিকেই ছিল। এ সুযোগে আমার টিম সকল কাজ করে ফেলে।
তৃতীয় দিন আমাকে আটক করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় জঘন্য এক অন্ধকার ঘরে। তবে আমাকে আঘাত করার কারো সাহস ছিল না ফলে বেধে ঝুলিয়ে রেখেছিল ।
সেখানের খাবার ছিল জঘন্যর উপরে যদি কোনো নিকৃষ্ট শব্দ থাকে তাই। খাবারে ভাত কম পোকামাকড় বেশি। ইয়া, ভাবলেও আমার গা ইর ইর করে ।
এদিকে আমি আমার সিক্রেট টিমকে ইনফর্ম করি। তারা আন্তর্জাতিক পাওয়ার নেয়। আর মাহির চৌধুরী অনেক হেল্প করেছে। এরজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
সব মিলিয়ে যখন তারা বুঝতে পারে আমাকে ছাড়তেই হবে তখন মারা শুরু করে।।

মাহির গাড়িতে ড্রাইভ করতে করতে লাইভ দেখছে। তার বুকের এককোনে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
খুব স্প্রিডে গাড়ি চালানোর পরও আজ রাস্তাটা বেশি মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও তো এ রাস্তা দিয়েই গিয়েছিল মিশন সম্পর্কিত কথা বলতে। যা সে বুঝতে পেরেছে দেয়ালে থাকা পেইন্টিং থেকে।।

কথা শেষ করে মিস সিক্রেট মাস্ক খুলে বললো, ” Introduce with my another version SUPTI. ”
বলে মুচকি হাসলো।

লাইভের একটা কমেন্টের দিকে চোখ পড়লো। যেখানে তাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্মোধন করা হয়েছে।

সুপ্তি চেয়ারে বসতে বসতে বললো, ” আমি এখন আর মিসেস নই।
I am only Miss Secret or Miss Supti. Cause
বলে ডিভোর্স পেপারটা দেখাতে নিলে মাহির এসে লাইভ অফ করে পেপারটা ছিঁড়ে ফেললো।

সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুপ্তি ইরফানকে ডাকা শুরু করলো।

ইরফানসহ আরও কিছু বডিগার্ড ভিতরে এসে বললো, ” সরি ম্যাম। স্যার অনেক জবরদস্তি করে ঢুকেছে। ”

মাহির রাগী স্বরে হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তোমরা যাও এখান থেকে। ”

সকলে একবার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মাহিরের দিকে। ইরফান কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনে করলো। তাই সে সহ বাকিদের নিয়ে বাহিরে চলে গেল।

সকলে চলে যেতেই মাহির দরজা লক করে দিলো।

সুপ্তি : কি হচ্ছে এগুলো? ( রেগে )

মাহির : সেটা আমার থেকে ভালো বোধহয় তুমি জানো। যাইহোক আমার সাথে যাবে চলো।

সুপ্তি : আমি কোথাও যাবো না।

মাহির সুপ্তির হাত শক্ত করে ধরে বললো, ” চলো। ”

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” মাহির, আমার লাগছে। ”

মাহির দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, ” সরি, সবকিছুর জন্যি সরি। আমি এ ডিভোর্স মানি না। তুমি শুধুই…..”
বলতে বলতে সুপ্তির কাঁধে ইনজেকশন পোষ করলো মাহির। কিছুক্ষণের মাঝে জ্ঞান হারালো সুপ্তি।

মাহির সুপ্তিকে কোলে তুলে বললো, ” আমি জানতাম জানেমান তুমি মানবে না। তাই তো আমাকে এ কাজ করতে হলো। দোষ কিন্তু তোমার তবুও আমি সরি বলছি। সরি !”

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৬+৩৭

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_36+37
#Sabrina_Summa

আজকের সকালটা বোধহয় সকলের জন্যই অশুভ। সকলেরই মন খারাপ। কেননা বাড়ির ছেলে বাড়িতে নেই। বাড়ির নতুন বউ মন খারাপ করে বসে আছে।
সকাল থেকে সকলেই মাহিরকে কল দিচ্ছে তবে কল রিসিভ করছে না মাহির।
অবশেষে বাধ্য হয়েই মিস সিক্রেট বের হলো।

__________________

মাহির একটা চেয়ারে বসে বিড়বিড় করছে।
” কত শখ করে ৩০ ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে আর পহেলা জানুয়ারী সুপ্তিকে নিয়ে নিউ ইয়ার ইনজয় করবো ভেবেছিলাম। আর এখন! ”

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো মাহিরের।
মিস সিক্রেটকে দেখে বলে উঠলো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট : কী শুরু করছো! কারো কল ধরছো না কেন? ( রেগে )

অন্ধকার রুমে খুব হালকা আলো থাকায় ভালো করে মাহিরের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মাহির : তুই এখানে আসলি কিভাবে?

মিস সিক্রেট : যে পাতালেই থাকো, তোমাকে খুঁজে পাওয়া মিস সিক্রেটের জাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

মাহির : সুপ্তিকে কোথায় গুম করছিস বল।

মিস সিক্রেট : বাসায় চলো।

মাহির : চুপচাপ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

মিস সিক্রেট : মাহির….

মাহির : একদম মাহির বলবি না। মাহির নামটা শুধু সুপ্তির জন্য।

মিস সিক্রেট : একদম তুই করে বলবে না। ভুলে যেও না আমি তোমার বিয়ে করা বৈধ বউ।

মাহির : ডিভোর্স পেপার রেডি করতেছি। সেখানে সাইন করে সুপ্তিকে সামনে আনবি।

মিস সিক্রেট : এই ব্যবহারের জন্য একদিন খুব পস্তাবে। আর আমার কাছে ক্ষমাও চাইবে।

মাহির : জীবনেও এমন দিন আসবে না।

মিস সিক্রেট : দুইদিন সময় দিলাম। দুইদিনের মাঝে বাসায় ফিরতে বাধ্য হবে!

দরজা দিয়ে বের হতে হতে বললো, ” আর ডিভোর্সের কথা তো ভুইলাই যা। ”

৭ দিন কেটে গেছে।
মাহির সত্যিই বাধ্য হয়েছিল বাসায় ফিরতে।
তবে একদিন মিস সিক্রেট ঘুমন্ত মাহিরকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখায় তানিশা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত মাহিরের উপর ফেলে দেয়।
সেদিন মাহির মিস সিক্রেটকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে আবারও বাসা ছেড়ে চলে যায়। এবার আর মিস সিক্রেট বাঁধা দেয় না বা বাধ্যও করে না বাসায় ফিরার জন্য।

জনগণ যা ভেবেছিল, মিস সিক্রেট যাকে বিয়ে করবে তার ন্যূনতম ক্ষতি বা দুর্নাম হতে দিবে না। তাই হয়েছে। মিস সিক্রেট মাহিরের বিরোধ্যে সামান্যতম কথাও বলতে দেয় না।

এইতো সেদিনের কথা, লাইভে মাহির আর সুপ্তিকে নিয়ে কথা উঠায় মিস সিক্রেট টিভি চ্যানেলটা হ্যাক করে লাইভ নষ্ট করে দিয়েছে।

মাহিরের অবর্তমানে মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর কোম্পানি চালাচ্ছে।
এতকিছুর পরও শাশুড়ির মনে জায়গা করে নিতে পারে নি সে ৷
রাগিনী বেগমের মতে সকল সমস্যার উৎপত্তি মিস সিক্রেট। তাই তো প্রতি পদক্ষেপে ভুল ধরে মিস সিক্রেটের।

এভাবেই কেটেছে সাতটি দিন ৷
আজ অনেকদিন পর মিস সিক্রেটের ডাক পড়েছে নতুন মিশনের জন্য। এমন না যে এতদিন তার কাজ ছিল না! তার কাজ ছিল কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সে কোনো কিছুই করে নি।

তবে এবারেরটা ভিন্ন।
কথায় আছে না, “কান টানলে মাথা আসে। ”
ঠিক তেমনটিই। মিস সিক্রেটকে আনার জন্য এখানে মাহিরকেও ডাকা হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে মিস সিক্রেটও যাচ্ছে তবে ইরফানের সাথে।।

মিস সিক্রেট, ইরফান আর মাহির একটা রুমের বসে আছে। রুমটা খুবই গোছানো। অনেকগুলো এক্সপেনসিভ পেইন্টিং লাগানো।
মাহিরের মাঝে কিছুটা চিন্তার ভাজ বুঝা গেলেও মিস সিক্রেটের কোনো চিন্তা নেই তা তার কথায়ই বুঝা যাচ্ছে। সে তো ইরফানের সাথে পেইন্টিং নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত।

একজন রুমে প্রবেশ করতে করতে নিজের পরিচয় দিলো।
মিস সিক্রেটকে যে এজেন্সি থেকে ডাকা হয়েছে সেই এজেন্সির ওনারের পিএ সে।

লোকটা খুব ফরমাল কথা বলায় বিরক্ত হলো মিস সিক্রেট। মিস সিক্রেট ডিরেক্টলি বললো, ” সোজাসাপটা বলুন কেন ডেকেছেন আমাদের! ”

লোকটা কিছুটা থতমত খেলো।
কিছু সময় নিয়ে বলা শুরু করলো, ” বস অসুস্থ তাই আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডাকা হয়েছে যেখানে সরকারও আপনাদের সাহায্য করবে ৷ ”

লোকটা কিছু সেকেন্ডের জন্য থামলো। হয়তো মিস সিক্রেটের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাচ্ছে।
তবে মিস সিক্রেটের মতি গতি বুঝতে না পেরে আবারও বলা শুরু করলো, ” রিসেন্টলি, আমাদের প্রতিবেশি দেশের কিছু লোক এসে আমাদের দেশের একটা ইমপর্ট্যান্ট ফাইল চুরি করে নিয়ে গেছে। যা দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের দেশের হাতে পড়লে দেশের বিরাট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। ”

মিস সিক্রেট ব্যতিত বাকি দুইজন উঠলো, ” কি বিষয়ের ফাইল? ”

পিএ : সেটা আপনারা পরেই জানতে পারবেন।

মিস সিক্রেট : আপনারা সিওর যে ফাইলগুলো প্রতিবেশি দেশেরই কেউ নিয়েছে।

পিএ : ১০০% সিওর। কিছুদিন আগে সেই দেশের কিছু মানুষ বডার দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিল। তারাই চুরিটা করেছে।

মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” এত সিওর হচ্ছেন কেন! তারা কি ফাইলগুলোর পরিবর্তে কোনো কিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে? ”

পিএ : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেটকে স্বাভাবিক দেখে সবাই অবাক হচ্ছে।

মিস সিক্রেট : এই ঘটনা তাও কতদিন আগের?

পিএ : প্রায় দেড় মাস।

মিস সিক্রেট : কি? আর আপনি আজ আমাকে বলছেন! এ ঘটনা ঘটার সময় আমি কোথায় ছিলাম?

পিএ : সম্ভবত আপনি দেশের বাহিরে ছিলেন। আর আমরা চুরির বিষয়ে জানতে পেরেছি ১২ দিন আগে। এতদিন এটা নিয়ে রিচার্স চলছিল। আসলে আমরা চাই না এটা পাবলিক জানুক। বুঝেনই তো রাজনৈতিক বিষয়!

মিস সিক্রেট : আপনারা কি চাচ্ছেন, এই মিশনটা আমি পরিচালনা কি?

পিএ হ্যাঁ বলতেই মিস সিক্রেট দাঁড়িয়ে বললো, ” সরি, এই মিশনে যাওয়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু। ”

পিএ : আপনি এ কথা বলছেন! আপনি এর থেকেও অনেক হার্ড মিশন করেছেন!

মিস সিক্রেট : আপনি বুঝতে পারছেন না। সেটা আমি একা করেছি কিন্তু এটা একা করা সম্ভব না। আর আমি কারো জীবন নিয়ে খেলবো না।

মিস সিক্রেটের কথার আঁচে বুঝা যাচ্ছে সে কারো মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এ মিশনে! তাই হয় তো যেতে চাচ্ছে না।

পিএ : কিন্তু, এটা তো প্রয়োজন। আর আপনাকে যেতেই হবে।

মিস সিক্রেট : আমাকে এ বিষয়ে আগে জানিয়েছেন! আর আপনি আমাকে অর্ডার করছেন? ( রেগে )

পিএ : একটু শান্ত মাথায় বসুন, প্লিজ।

সকলের অনুরোধে মিস সিক্রেট শান্ত হয়ে বসলো। পিএ তাকে অনেকক্ষণ বুঝানোর পর মিস সিক্রেট রাজি হলো।

তবে তার শর্ত আছে।

এ মিশনে যদি কেউ মারা যায় তবে তার পরিবারকে সরকার দেখবে।

এ মিশন সম্পর্কে কেউ জানবে না এবং

মিস সিক্রেট যা বলবে সকলকে তা মানতে হবে। সে যেই হোক না কেন!

সব শর্তেই রাজি হতে হলো পিএকে। নইতো মিস সিক্রেটকে রাজি করানো যাবে না।

কোনো বিপদ ঘটার পূর্বে মানুষের মন কু ডাকে। আজ মিস সিক্রেটেরও কেমন যেন ডাকছে। এই কাজটা তার মনের বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে। তবুও কাজ শুরু করলো।

মিস সিক্রেট ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটা টিম বানাতে ৩ দিন লাগালো শুধু সদস্য বেছে নিতে।
এই সদস্যরা হলো – মিস সিক্রেট, নাম্বার -১১, নাম্বার- ৩, ইরফান, মাহির, বডারগার্ড ৩ জন, ৭ জন গোয়েন্দা অফিসার, ইয়ার ফোর্সের ২ জন এবং আর্মি ৩ জন।

এরমধ্যে ২ জন গোয়েন্দাকে মিস সিক্রেট আগেই ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে ছদ্মবেশে। বাকিদের টেনিং চলছে।।

৩ জন ঘুরার নাম করে যাবে। বডারগার্ডরা আমাদের পালাতে সাহায্য করবে যদি কোনো কারণে আমাদের ওই দেশে আটকে ফেলা হয় তো। মাহির, ইরফানসহ সিক্রেট টিমের ২ জন এ দেশেই থাকবে।
এগুলোই মিস সিক্রেট বলছিল।

হঠাৎই একজন বলে উঠলো, ” ম্যাম, তাহলে আমরা কি করবো? ”

মিস সিক্রেট : ম্যাম না, মিস সিক্রেট বলো। আমিও তো তোমাদের টিমমেট।
মিস সিক্রেট মলিন হেসে বললো। তবে তার সেই হাসি মাস্কের আড়ালেই রয়ে গেল ৷

কিছুক্ষণ পর বললো, ” বাকিরা আমার সাথে যাবে আমার বডিগার্ড হয়ে। ”

সকলেই এক দফা অবাক হলো।

মাহির : তাহলে এই টিমের মাস্টারমাইন্ড কে? আই মেইন কে দেশে থেকে এই টিম পরিচালনা করবে?

মিস সিক্রেট : তুমি।

মাহির আরেক দফায় অবাক হলো।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” আমি যাবো প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। এখন হয় তো বুঝতে পারছো তোমাদের কি কাজ! ( ইয়ার ফোর্সের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে )
আর বাকিদের কাজ তো আগেই বলেছি। ”

মিস সিক্রেট আরও কিছু কথা বললো।
৭ দিনের টেনিংয়ের পর আসল কাজ শুরু হলো। যেভাবে প্লেনিং করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে।।

__________________

কাজ শেষ করে দীর্ঘ পাঁচ দিন পর দেশে ফিরছে মিস সিক্রেট। মিশনটা সিক্রেট রাখার কথা থাকলেও মিস সিক্রেটকে বাঁচানোর জন্য তা এখন পাবলিকও জানে।

মিস সিক্রেট জেট থেকে নামতেই সাংবাদিকরা তাকে ঘেরাও করলো।

মিস সিক্রেট মাহিরকে দেখে মাস্কের আড়ালে হাসলো। সে শুনেছে তাকে বাঁচানোর জন্য মাহির অনেককিছু করেছে।

মিস সিক্রেট সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললো, ” আমি লাইভে এসে সবকিছু ক্লিয়ার করবো। প্লিজ, এখন ডিস্টার্ব করবেন না। ”

বলা শেষে হাঁটা শুরু করলো। তার দুইপাশে মাহির এবং ইরফান। ইরফান সকলকে সরাতে ব্যস্ত।

সকলে এসে গাড়িতে বসলো। গন্তব্য তাদের মাহিরের বাড়ি।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৫

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_35
#Sabrina_Summa

নিত্যদিনের মতো আজও মাহিরের ফোনে ঘুম ভাঙলো সুপ্তির।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহিরের রাগী স্বর শুনলো।

মাহির : কী সমস্যা তোমার? কল করলে রিসিভ করো না তারপর আবার সারারাত বন্ধ করে রাখছিলা! আর এপার্টমেন্ট চেঞ্জ করতে আমি না করছিলাম না?

মাহির থামতেই সুপ্তি বলে উঠলো, ” হুম, তারপর। ”

মাহির আরও বেশি রেগে বললো, ” তারপর মানে কি? ৫ মিনিট টাইম দিলাম আমার সাথে দেখা করবে। ”

সুপ্তি : পারবো না।

মাহির : পারতে হবে। না হয় আমি কি করতে পারি আশা করি তোমার জানা আছে!

সুপ্তি : না, জানা নেই।

মাহির : চুপচাপ দেখা করো।

সুপ্তি : টাইম বাড়ান।

মাহির : ২০ মিনিট দিলাম। পার্কে আসো।

বলেই কল কেটে দিলো।
সুপ্তির এতক্ষণ রাগ না হলেও এখন হলো মুখের উপর কল কাটার কারণে। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

পার্কে প্রবেশ করতেই মাহির এসে জড়িয়ে ধরতে নিলে সুপ্তি বলে উঠলো, ” দূরে থাকুন। ”

মাহির সরে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”

সুপ্তি : আমার আবার কি হবে?

মাহির : এমন করছো কেন?

সুপ্তি : কেমন করছি?

মাহির : ত্যাড়াইছা উত্তর না দিয়ে সোজা কথা বলো।

সুপ্তি : আমি ত্যাড়াইছা কথা বলছি?

মাহির : আচ্ছা, বাবা মাফ চাই।

সুপ্তি : আমি আপনার বাবা?

মাহির : প্লিজ বলো না কি হইছে?

সুপ্তি : আপনি চুপচাপ আপনার বাসায় যান।

মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখিয়েই বললো, ” মিস সিক্রেট তোমায় কিছু বলেছে? ”

এবার সুপ্তিও রাগ হলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো, ” সব জায়গায় শুধু মিস সিক্রেটের ভুল খোঁজেন কেন? সে আপনার ভালো করলেও খারাপ দেখেন, খারাপ করলে তো দেখবেনই। আমাকে কেউ কিছু বলে নি। পারলে আপনার বাবার সাথে গিয়ে কথা বলুন। ”

কথাগুলো বলা শেষে সুপ্তি দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।
মাহির সেখানেই কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কারণ সুপ্তির কথাও ভুল না আবার সুপ্তি কোনোদিন তার সাথে এভাবে কথাও বলে নি! তাই সে খুব শিহরিত।
কিছুক্ষণ পরই সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।

বাসাতে যেতেই চিৎকার করা শুরু করলো। আজ যেভাবেই হোক তাকে তার বাবাকে সবকিছু বলতেই হবে।

প্রথমদিকে মাহফুজ চৌধুরী রাগ দেখালেও পরবর্তীতে ছেলের পাগলামি তে নিজেও চুপ হয়ে গেছে।

বিকেলের দিকে মিস সিক্রেটকে কল করে আসতে বললেন।

মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো, ” আঙ্কেল, আজকে আবার কি? ”

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কি সুপ্তিকে না করেছিলে?

মিস সিক্রেট : হ্যাঁ। সুপ্তি নিজের অবস্থান থেকে এগোবে না।

মাহফুজ চৌধুরী : কিন্তু মাহির…

মাহফুজ চৌধুরীকে কথা শেষ করতে দিলো না মিস সিক্রেট। নিজে বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, এটা আপনাদের আই মেইন বাপ ছেলের কাহিনী। নিজেরা সমাধান করুন। আমি বললামই তো সুপ্তি আর এগোবে না। ”

মাহফুজ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ” ভাবছি, সুপ্তিদের বাসায় যাবো। ”

মিস সিক্রেট রাগী স্বরে প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো ৷

মিস সিক্রেট মনে খুশি হলেও স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” মেনে নিলেন যে? ”

মাহফুজ চৌধুরী এক ধ্যানে বললেন, ছেলের পাগলামিতে! ছেলে যে আমার বড্ড আদরের। এ সম্পর্কে তো তোমার ভালো ধারণা আছে! ”

মিস সিক্রেট : কবে যাচ্ছেন?

মাহফুজ চৌধুরী : কালকে। তুমিও চলো!

মিস সিক্রেট উঠতে উঠতে বললো, ” না, না। আমার কাজ আছে। ”

মাহফুজ চৌধুরী : চলে যাচ্ছো?

মিস সিক্রেট : হুম। রেস্ট নিন। কালকে অনেক জার্নি করতে হবে!
বলতে বলতে চলে গেলো।

পরের দিন সবাই সুপ্তির বাসায় গিয়ে বিয়ের কথা বলে আসছে। বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে তিনদিন পর। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর।
মাহিরের খুশি দেখে কে!

গায়ে হলুদসহ সকল অনুষ্ঠানে খুব ভালো ভাবেই কাটলো। মাহির সুযোগ পেলেই সুপ্তির কাছে আসে।
শহরের এক নামি-দামি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের কার্যক্রম করা হচ্ছে।।

৩১ ডিসেম্বর.,.

সকাল থেকে বিয়েতে মেতে সকলেই খুব ক্লান্ত।
বিকেলের দিকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তবে এখনো বর কনে নিজেদের দেখে নি।

সন্ধ্যের দিকে কনেকে স্টেজে আনা হচ্ছে।
কনেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মাহির গান বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

হা তামান্না হামে তোমহে দুলহান বানায়ে..
তেরি হাথ পে মেহেন্দী আপনে নামকি সাজায়ে..
( বলতে বলতে কনের হাত ধরে নামালো )
তেরি লে লে বালায়ে, তেরে সাদকে উতারে…
হা তামান্না হামে তোমহে আপনে বানায়ে…
( গাইতে গাইতে কনের দিকে গোল করে ঘুরলো। কনের মাথায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা দেখে মাহির ভ্রু কুচকালো )
নেহি মুশকিল আফা, জারা দেখো এহা
তেরি আখো মে বাসতা হে মেরা জাহান…
কাবি সুন তো জারা…
বলতে বলতে ঘোমটা সরাতেই অবাক হয়ে তাকালো।

সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তবে সুপ্তির বাবা-মায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।
সাংবাদিকরা একে অপরের সাথে কানা ঘুসা করে বলছে মিস সিক্রেটের সাথে বিয়ে হয়েছে!

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে আমিই তো থাকবো! ”

এ কথা শুনতেই মাহির হাতে থাকা মাইকটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হতে নিলে মিস সিক্রেট ফিসফিস করে বলে উঠলো, ” সুপ্তিকে বাঁচাতে চাইলে চুপচাপ এখানে বসে থাকো। ”

মাহির যেতে চেয়েও পারলো না । চুপচাপ সবার সাথে বসে ছবি তুলতে হলো।
বাসায় যাওয়ার সময় মাহির নিজের ভাবনায় মগ্ন রইলো৷

বাসায় পৌঁছাতেই নিজের রুমে গিয়ে সাজানো গোছানো রুমটাকে অগোছালো করে ফেললো। ময়লার স্তুপে পরিণত করলো ।

মিস সিক্রেট বাহিরে দাঁড়িয়ে বললো, ” আঙ্কেল, আমার জন্য অন্য রুম গুছান। ”

মাহফুজ চৌধুরী : একটু কথা বলে দেখো।

মিস সিক্রেট : আঙ্কেল, আমি আগেই নিষেধ করেছিলাম এমনটা না করতে।

মাহফুজ চৌধুরী : কি করবো বলো আমার তো ছেলের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ!

মিস সিক্রেটের গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো।।

মাহফুজ চৌধুরী তাকে ডেকে বলেছিল, ” তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া। তুমি তাশরিফকে বিয়ে করবে। ”

মিস সিক্রেট প্রথমদিকে না মানলেও মাহফুজ চৌধুরীর পরিকল্পনা শুনে রাজি হয়েছে।

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি বিয়ে না করলেও আমি সুপ্তিকে গুম করবো।

” ওকে গুম করা হলে মিস সিক্রেটও গুম হয়ে যাবে! ” ( মিস সিক্রেট মনে মনে )

মিস সিক্রেট : না, না আঙ্কেল। ওকে আমি গুম করবো।

মাহফুজ চৌধুরীর কথায় মিস সিক্রেটের ধ্যান ফিরলো।

মাহফুজ চৌধুরী : আমাকে একদম আঙ্কেল বলবে না। বাবা বলবে।

মিস সিক্রেট : ওকে।

বলে রুমে প্রবেশ করতেই মাহির বললো, ” তোর বাসর তুইই কর। ”
বলেই বের হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট কিছুই বললো না। সময় দিলো মাহিরকে বুঝার জন্য।

সারারাত মাহির ও মিস সিক্রেট উভয়েরই নির্ঘুম কাটলো।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৩+৩৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_33
#Sabrina_Summa

তারা প্রথমে হসপিটালে গেল। তারপর মাহিরের বাসায়।

সুপ্তি মাহিরের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, ” আমরা এখানে কেন আসছি? ”

মাহির ওয়ার্ড্রপ থেকে একটা ড্রেস বের করে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আল্লাদী কন্ঠে বললো, ” কারণ তুমি আমাকে সময় দিবে। নাও এখন চেঞ্জ করে এসো। ”

সুপ্তি চেঞ্জ করে এসে শাড়িটা মাহিরের হাতে দিলো। মাহির শাড়িটা তানিশাকে দিলো।

তানিশা : ক্লিন করে রাখবো?

মাহির : না, যেভাবে আছে সেভাবেই প্যাকেট করে রাখবে।

তানিশা চলে যেতেই সুপ্তি বললো, ” আমরা এখন কি করবো? ”

মাহির : যা তুমি চাবে।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা, মাহির। এইটা তো আপনার মাস্টার বেড তাই না? ”

মাহির মাথা নাড়িয়ো হ্যাঁ বললো। সুপ্তি আবারো বলা শুরু করলো, ” কিন্তু এটা নরমাল মাস্টার বেডের তুলনায় কিছুটা ছোট না? ”

মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহির শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, ” আসলে আমি আর আমার বউ তো আলাদা থাকরো বাবা মার থেকে। সো, আমার বউ মানে তুমি যেন আমার সাথে রাগ করে বেশি দূরে থাকতে না পারো, তাই বেড ছোট করা ৷ ”

আশেপাশের সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। তানিশা এসে এ কথা শুনে সকলকে বাহিরে যেতে বললো। সবাই চলেও গেল।

সুপ্তি এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। সকলের যাওয়ার পর বললো, ” আসলে আপনার কাছে ভালো কথা আশা করাই আমার ভুল। ”

মাহির মুচকি হাসছে। সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, ” আমি এখন ঘুমাবো। ”
বলতে বলতেই বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

মাহির : তোমার এ বাসায় থেকে যা করার ইচ্ছা হয় তাই করতে পারো।
বলতে বলতে একটা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসলো।

মাহিরকে বসতে দেখে সুপ্তি অন্যদিকে ঘুরতেই যাবে তার আগেই মাহির বললো, ” ভদ্রভাবে চেয়ারে বসে আছি। অন্যদিকে ঘুরলে ভদ্রতা ভুলে বেডে শুতে বেশি সময় লাগবে না! ”

শান্ত হুমকিতে সুপ্তি ভয় পেল কিনা জানি না। তবে চুপচাপ মাহিরের দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো।

মাহির : তুমি এখন ঘুমাবে?

সুপ্তি : না ঘুমালে, আমি শুধু শুধু শুয়ে আছি?

মাহির : দুপুর তো হয়ে গেছে ৷ খেয়ে ঘুমাও?

সুপ্তি : না, আমি অনেক টাইড। ঘুমাবো আগে।

মাহির আর কিছুই বললো না। সুপ্তিও চোখ বন্ধ করে ফেললো।

দুজনে কখন ঘুমের অতল গভীরে হারিয়ে গেল কেউই জানতে পারলো না।।

বিকেল চারটা।
হঠাৎ সুপ্তির ঘড়ি ভাইব্রেট করে উঠলো। সেই শব্দে সুপ্তির ঘুম ভাঙলো।

ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই কল রিসিভ করলো। অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে কয়েক সেকেন্ড বোধয় কথা হলো। তারপর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ওকে, আমি আসছি। ”

কল কেটে দিলো। তার নজর গেল ঘুমন্ত মাহিরের দিকে ৷ মাহির বেডের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । সুপ্তির খুব মায়া হলো।

তাই তো মাহিরের গালে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে যেতে হবে। টাটা জানেমান। ”

তানিশা দরজায় হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সুপ্তির সেদিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকালো। তানিশা নিজের ভ্রু দুইবার নাচালো।

সুপ্তি স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” তুমি কিন্তু কিছু শুননি, আপু । ”

তানিশার ঠোঁট আরও প্রশস্ত হলো। তারপর বললো, ” আচ্ছা, ঠিকাছে। ”

সুপ্তি : ঘুম থেকে উঠলে বলে দিও আমি চলে গেছি।

তানিশা : তা তো যাচ্ছো। তবে গাড়ি নিয়ে যেও নাহয় কিন্তু রাগ করবে!

সুপ্তি বের হয়ে যেতে যেতে বললো, ” ওকে, নিয়ে যাবো। ”

মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি ইরফানকেই বিশ্বাস করে না সেখানে মাহিরকে কিভাবে!
যতই হোক না প্রেমিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেমিককেও ধোঁকা দিতে হয় তার ভালোর জন্য!
সুপ্তিও এই উক্তিটিকেই প্রমাণ করলো। নেমে গেল গাড়ি থেকে শপিং মলের সামনে।।

রাতে মাহিরের সাথে কথা বলে, সকল কাজ শেষ করে প্রায় ২ টার দিকে ঘুমিয়েছে সুপ্তি।
এমনিতেই তার ঘুম ভালো। তারমধ্যে আবার দেরিতে ঘুম, সহজে তা কি ভাঙ্গে!!

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_34
#Sabrina_Summa

সকাল ৮ টা ছুঁই ছুঁই।
সুপ্তির মুখের উপর কারো ভারি নিঃশ্বাস পড়তেই মুচকি হেসে বালিশের নিচে থেকে একটা গান বের করে সেই ব্যক্তির কপালে তাক করলো।
ট্রিগারে চাপতেই যাবে, পরিচিত একটা ঘ্রাণ পেয়ে চোখ খুললো সুপ্তি। চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখে আঁতকে উঠলো।
এতক্ষণে ব্যক্তিটি সুপ্তির উপর থেকে সরে গেছে।

সুপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললো, ” মাহির আপনি? ”

মাহির : তুমি গানও চালাতে পারো?

সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো। তারদিকে সকলে গান তাক করে আছে।

সুপ্তি বেড থেকে উঠে রাগী স্বরে বললো, ” আপনি এখানে কেন? ”

মাহিরের কোনো উত্তর নেই। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” আরেকটু হলে আপনি মরে যেতেন! আমি গুলি প্রায় চালিয়েই দিয়েছিলাম। ”

মাহির : তোমার কাছে গানের লাইসেন্স আছে?

সুপ্তি : না। এমনিতেই চালাই। ( রেগে )
আচ্ছা এগুলো বাদ দেন। আগে বলেন আপনি আমার বাসায় আসলেন কিভাবে?

মাহির : এটা বলা যাবে না সিক্রেট। তবে এসেছি কোনো একভাবে।

” এত সহজ তো না আমার এপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া! কিভাবে এলেন তিনি! ” ( মনে মনে )

মাহির : আমার খিদে পেয়েছে। সকালের নাস্তা নিয়ে এসো।

সুপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, ” কেন এসেছেন আপনি? ”

মাহির : ঘুরতে, খেতে আর দেখতে কি গুপ্তধন লুকাইয়া রাখছো যে কাউকে নিজের এপার্টমেন্টে আসতে দেও না।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো, ” যাও নাস্তা নিয়ে এসো। ”

সুপ্তি : নাস্তা…. আমি তো রান্নাঘরে জীবনে পাও রাখি না।
” ঠেকাই না পড়লে! ” ( বিড়বিড় করে )

মাহির : যাও৷

সুপ্তি গান টেবিলের উপর রেখে আবারো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো সবাই গান তাক করে আছে ৷

সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো, ” গান মানাতে বলুন। আর যদি আমাকে বিশ্বাস না করতে পারেন তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ”

মাহির ইশারা দিতেই সকলে গান নিচে নামালো।

সুপ্তি রান্নাঘরে গেছে দেখে মাহির সম্পূর্ণ এপার্টমেন্ট ঘুরলো। তবে তার চোখে তেমন কিছুই পড়লো না। একটা সাধারণ মেয়ের রুমের মতোই সুপ্তির রুম কিন্তু এত দামী এপার্টমেন্টে থাকে কিভাবে সুপ্তি! আবার ফ্যামিলি থেকেও কোনো টাকা নেই না। এগুলো প্রশ্নই মাহিরের মনে আসছে।
সে আরও খেয়াল করেছে সুপ্তির রুমের সামনে আরও দুইটা রুম আছে তবে সেগুলোতে তালা মারা। সে শুনেছে এখানে নাকি সেলিব্রেটিদের জিনিস আছে তাই তালা দেওয়া! তাই বেশি মাথা ঘামালো না মাহির।
এরই মাঝে সুপ্তি একটা ট্রে এনে মাহিরের সামনে রাখলো।

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এগুলো কি? ”

সুপ্তি : জ্যাম পাউরুটি, কফি আর কিছু ফল এবং শাকসবজি।

মাহির : এই ঘাস পাতা তুমি খাও?

সুপ্তি : এগুলো ঘাস পাতা না শাকসবজি।
আর হ্যাঁ এগুলো আমি খাই। তাইতো আমি এত সুন্দর দেখেন না!

মাহির : জ্যাম পাউরুটির সাথে কফি কে খাই?

সুপ্তি : কেন আমি! আমি ফুটস এর সাথে কফি খাই অর জ্যাম পাউরুটি দিয়ে কফি খাই। এগুলো খুবই নরমাল।

মাহির অনেক কষ্টে খাবারগুলো গিললো। এরই মাঝে সুপ্তিও খেয়ে নিয়েছে আর বাকিদেরও খাবার দিয়েছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল। তবে মাহির সুপ্তির গল্প শেষ হচ্ছে না।
আজ মাহিরের যাওয়ারও তাড়া নেই আর সুপ্তির বিদায় করাও তাড়া নেই।

বিকেল ৩ টার দিকে মাহির চলে গেছে।
যাওয়ার আগে বলে গেছে, ” সুপ্তি যেন এখান থেকে অন্য কোথাও শিফট করার চিন্তা না করে! ”

কিন্তু সুপ্তি তো শুধু সুপ্তি নই মিস সিক্রেটও। তাকে এ এপার্টমেন্ট ছাড়তেই হবে। সুপ্তি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এটা দেখে সুপ্তি মুচকি হাসি দিলো।
এতক্ষণে তার অনেকটা বোঝা হয়ে গেছে মাহির কিভাবে তার এপার্টমেন্ট চিনেছে!

সুপ্তি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করলো।
কল রিসিভ করতেই সুপ্তি বললো, ” আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। ”

অপর পাশ থেকে, ” ওয়ালাইকুম আসসালাম , মামনি। কেমন আছো? ”

সুপ্তি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

— ” আলহামদুলিল্লাহ। তা হঠাৎ আমাকে কল করলে যে? ”

সুপ্তি : আপনার এপার্টমেন্ট ছেড়ে দিবো, এটা বলার জন্যই কল করলাম।

লোকটা হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তুমি এভাবে এপার্টমেন্ট ছাড়তে পারো না! ”

সুপ্তি : আপনিও এভাবে আমার ইনফরমেশন অন্যকে দিতে পারেন না।

” এত এত সরকারের দেওয়া এপার্টমেন্ট রেখে আমি ভাড়া থাকছি। আমার তথ্য মানুষকে দেওয়ার জন্য! ” ( সুপ্তি রেগে মনে মনে )

লোকটা ঢোক গিলে বললো, ” আমি কাকে……”

সুপ্তি কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো, ” একদম মিথ্যে বলবেন না। আপনি কাকে বলেছেন সেটা খুব ভালো করেই জানেন। আমি এপার্টমেন্ট ছাড়বো মানে ছাড়বোই। ”

— ” মামনি এমন করো না প্লিজ। আচ্ছা আমার এই কলোনিতে আরেকটা নতুন বিল্ডিং আছে সেখানে একটা এপার্টমেন্টে উঠো। ”

সুপ্তি : হ্যাঁ আমি ওখানে উঠি তারপর আপনি আবারও বলে দেন!

— ” না না, মামনি। আমি আর বলবো না। বুঝোই তো এত পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তির কাছে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। তবে নেক্সট টাইম আর বলবো না প্রমিস। ”

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” উঠতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। ”

— ” তোমার সব শর্তে রাজি। ”

সুপ্তি : আমার জিনিসপত্র আপনি শিফট করে দিবেন।

লোকটা রাজি হওয়ায় সুপ্তি আর কিছু না বলে কেটে দিলো। তাকে সবকিছু প্যাকিং করতে হবে।

কিছুক্ষণের মাঝেই সবকিছু শিফট করার কাজ শুরু হলো। সুপ্তি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কাটুনে রেখে ভালো করে কসটিপ দিয়ে দিয়েছে।

আর মাহির এ বিষয়ে জেনেছে, সেলেব্রিটির জিনিসপত্র সরানো হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মাহির একটু তেই তা বিশ্বাস করে নিয়েছে।

সবকিছু শিফট করার পর মিস সিক্রেট ইরফানকে কল করে ৫০ জন বডিগার্ড আনতে বললো। ইরফান প্রথম দিকে অনেক প্রশ্ন করলেও পরে মেনে নিয়েছে।

কিছুক্ষণের মাঝেই বডিগার্ডসহ ইরফান চলে এলো। সাথে ১২ টা গাড়ি।

মিস সিক্রেট ভিআইপিদের মতো এন্ট্রি নিলো। মূলত সে মাহিরের আইডিয়াই কাজে লাগাচ্ছে।

অনেকক্ষণ পুরো কলোনি চক্কর দিয়ে একটা জায়গায় থামলো। সকলকে চলে যেতে বললে সকলে চলে গেলো।

নির্জন জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি তো এখানে মিস সিক্রেট রূপেও ঢুকতে পারবো না আবার সুপ্তি হিসেবেও না। তাহলে আমি যাবো কিভাবে? ”

কিছুক্ষণ ভেবে হুডিটা খুললো। এরপর তাড়াতাড়ি হেঁটে নিজের নতুন এপার্টমেন্টে চলে গেলো।

রাতে মাহিরের কানে খবর গেল সুপ্তি এপার্টমেন্টে নেই। সুপ্তিকে কল করলেও সুপ্তি রিসিভ করে নি।

মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছে।

মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললেন, ” তাশরিফকে ভালো বানানোর জন্য কাকে আনছো, হ্যাঁ? এখন আমার ছেলে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ”

মিস সিক্রেট চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাহফুজ চৌধুরী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” এখন কাজ শেষ। মেয়েটাকে তাশরিফের জীবন থেকে চলে যেতে বলো। ”

মিস সিক্রেটের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে এমন অবস্থা। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” এরজন্যই ডেকেছিলেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেট : আচ্ছা। এখন আমি আসি।

মাহফুজ চৌধুরী : এখনই চলে যাবে! বসলেও তো না!

মিস সিক্রেট : পরে আরেকদিন আসবো। বলে হাঁটা শুরু করলো। নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_32
#Sabrina_Summa

কয়েকদিন কেটে গেছে।
সময়ের চাকা থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্যও। ঘনিয়ে এসেছে বছরের শেষ প্রান্ত, চারপাশে হালকা কুয়াশার আস্তরণ। শীত ধীরে ধীরে শহরের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামছে। এই কয়েকদিনে সুপ্তি আর মাহিরের দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার – অন্য পাঁচ দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে। দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কটা যেন এখন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শব্দের চেয়ে চাহনির গভীরতা অনেক বেশি।।

শীতের এই অনুষ্ঠানমুখোর পরিবেশে আজ মাহির, মাহফুজ চৌধুরী এসেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে । আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আছে। মিস সিক্রেটকে ইনভাইট করা হলেও সে আসবে না বলে জানিয়েছে।
নরমালি প্রতিবছর যে অ্যান্কারিং করে আজও সেই করছে তবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকার কাজটা অন্য একজনকে দেওয়া হলো ৷

মানুষটিকে দেখে মাহির রেগে গেল। কেননা হালকা গোলাপি রঙের গর্জিয়াস গোল্ডেন পাড়ের জর্জেট শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দরভাবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকছে সুপ্তি।
খুবই সুন্দর লাগছে তাকে। গর্জিয়াস সাজ, হাতে ভারি চুরি আর খোলা চুলে ফুল দেওয়া।

মাহিরের সাথে সুপ্তির চোখাচোখি হতেই সুপ্তি মুচকি হাসলো। তবে মাহির রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো। মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললেন, ” এই মেয়েই বুঝি সুপ্তি? ”

মাহির চমকে উঠে বললো, ” হুম। তুমি কিভাবে জানলে? ”

মাহিরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিজের মনে মনে বললো, ” মেয়ে তুমি অনেক সুন্দর। মাহিরের পছন্দ ভালো বলতে হবে। কিন্তু সোন্দর্য্যের চেয়ে ক্ষমতাটা যে বেশি দরকার! ”

কিছুজনকে বক্ততা দেওয়ার জন্য ডাকার পর মাহিরকে ডাকা হলো। সে কোনো মতে কিছু কথা বলে চলে আসলো।

মাহির অনবরত সুপ্তিকে মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সুপ্তি দেখছে না। আর সহ্য করতে না পেরে মাহির কিছুটা পিছনে চলে আসলো। যেখানে কেউ বসে নি। সেখানে দাঁড়িয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা ছুড়ি খুব শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো মাহিরের মতি গতি বুঝার চেষ্টা করলো।। তারপর হঠাৎ করেই স্টেজ থেকে নেমে পড়লো। একজনকে এদিক সামলাতে বলে মাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

সুপ্তিকে আসতে দেখে মাহির উল্টো দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো । তাদের এ কর্মকান্ড কারোরই বোধয় নজরে পড়লো না নিজেদের কাজে ব্যস্ততার জন্য।

মাহির দ্রুত হেঁটে একটা রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে নিলে সুপ্তি দৌড়ে এসে অনেক কষ্টে রুমে প্রবেশ করলো। তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।

সুপ্তি : শাড়ি পড়ে এভাবে দৌড়ানো যায়! ( রেগে )

অন্যদিকে মাহির নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জিনিস ভাংচুর করছে। মাহিরকে থামানোর জন্য সুপ্তি ব্যাথা না পাওয়া স্বত্তেও ‘আহ’ করে চিৎকার করে উঠলো।

মাহিরের কানে শব্দ যেতেই সাথে সাথে পিছে ঘুরলো। দ্রুত সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়ছে? অনেক লাগছে তোমার? ব্যাথা পাইছো? ”

সুপ্তি : না। ছুড়িটা দিন।

মাহির মুখ ঘুরিয়ে শক্তকন্ঠে বললো, ” না।”

সুপ্তি : বুঝেছি। সোজা আঙুলে কাজ হবে না।

বলতে বলতে আঁচলটা কোমড়ে গুজে আশেপাশে খুঁজে নিজেও একটা ছুড়ি নিয়ে আসলো।

মাহির ছুড়িটা দেখেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” ছুড়িটা রাখো অথবা আমাকে দাও। ” ( দাঁত চেপে )

সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আপনি দিয়েছেন? ” কিছুক্ষণ পর আবারও বললো, ” হাত আমিও কাটতে পারি! ”

মাহির : একদম না।

এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে সুপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো, ” দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ছুড়িটা রেখে দিচ্ছি ( বলেই রেখে দিলো ) তুমিও রেখে দাও। ”

বলতে বলতেই সুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। তার হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করে মাহির সুপ্তির হাতের ছুড়িটা টান দিতে নিলে সুপ্তি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। ফলশ্রুতিতে তারও ভালোই গভীরভাবে কেটে গেলো।

সুপ্তি : প্রেমে পড়তে পারি তবে দক্ষতা হারাই নি! ( রেগে )

মাহিরের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে হাত দেখতে দেখতে রেগে বললো, ” এটা কি হলো? ”

সুপ্তি : আমি কিছুই করি নি। আপনি নিতে আসলেন কেন?

মাহির : এখন সব দোষ আমার না? তোমাকে শাড়ি পড়তে বলছিল কে?

সুপ্তি : এটাও আপনার জন্যই!

মাহির ভ্রু কুচকে, ” মানে? ”

সুপ্তি : সবাই আমাকে আপনার খাতিরা লোক ভাবে তাই আমাকে আনছে।

মাহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” কি শাড়ি কিনছো! জর্জেটের। সবই বোঝা যায়!” ( বলেই আঁচল খুলে দিলো) তারপর আবারো ভ্রু কুচকে বললো, “এখন তো আরও বোঝা যায়। ”

এরই মাঝে সুপ্তির ফোনে কল আসলো। ফোনে নামটা দেখে সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকালো।

মাহির : লাউডস্পিকার দেও।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো, ” কি হলো সুপ্তি? কোথায় উধাও হয়ে গেলে? ”

মাহির ফোনটা নিয়ে বললো, ” সুপ্তি কোথাও যাবে না। সুপ্তি আমার সাথে যাবে। ”

বলেই কল কেটে দিয়ে ফোনটা নিজের পকেটে রাখলো।।

সুপ্তির কাছাকাছি এসে বললো, ” আমারই এই অবস্থা। না জানি বাকিদের কি অবস্থা! যদি কোনো নেতা ফেতার ছেলে বা উপস্থিত বড় পদের মানুষের ছেলের বউ বা নিজের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়ে যায় তখন আমার কি হবে? ”

সুপ্তির হঠাৎ যেন কি হলো। মাহিরের গলা জড়িয়ে বললো, ” এগুলো বাদ। এখন আমরা একটু ব্যান্ডেসের দিকে আসি! ”

মাহিরের আবারও সুপ্তির হাতের কথা মনে পড়লো। দ্রুত গিয়ে ব্যান্ডেসের যাবতীয় জিনিস নিয়ে এসে সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেস করে দিলো।

সুপ্তি : আমারটা না হয় গভীর হয় নি কিন্তু আপনারটা তো সেলাই করতে হবে।

মাহির নিজের হাতের দিকে তাকালো। এখনও রক্ত লেগে আছে। রক্তটা সুপ্তির আঁচলে মুছে দিলো।

এতে অবশ্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সুপ্তি। মাহিরের হাত কিছুটা ক্লিন করে দিয়ে বললো, ” চলুন, হসপিটালে যাই। ”

মাহির : দাঁড়াও, তানিশাকে কল করি আগে।

৫ মিনিটের মাঝে তানিশা আবার কল করে বাহিরে যেতে আসতে বললো তাদের।

সুপ্তি বাহিরে যেতেই অনেকটা অবাক হলো। সে হাঁটছে। তার ডান পাশে মাহির আর বাম পাশে তানিশা। সাথে আরও ২০/২৫ জন গার্ড। শুধু তাকেই কভার করছে তাও আবার অন্যদিকে মুখ করে।

মাহিরের কড়া নিষেধ কেউ সুপ্তির দিকে তাকাতে পারবে না।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩০+৩১

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_29
#Sabrina_Summa

নিচে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো তানিশা ডাবল সোফায় বসে আছে।
তাই সুপ্তি ও মাহির দুইজনে দুইটা সিঙ্গেল সোফায় বসলো।

তানিশা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো, ” এতক্ষণে আসার সময় হলো দুজনের! তোমাদের জন্য আমি ঘুমাতে পারছি না। ”

তানিশার কথা শেষ হতে না হতেই কলিং বেল বাজলো।

সুপ্তি উঠে যেতে নিলে তানিশা বলে উঠলো, ” আমি যাচ্ছি। ”

বলেই দরজা খুলে দিলো। দরজার বাহিরে থাকা মানুষগুলোকে চিনতে পারলো না তানিশা। তাই বলে বসলো, ” আপনি কে? ”

একজন বললো, ” উনি ঘাটাইলের ইউনো। আর আমি তার পিএ। মাহির স্যার এ বাসাতেই আছেন তাই না? ”

তানিশা দরজা থেকে সরে ভিতরে আসতে বললো।

সামনের মানুষটিকে দেখে মাহির দাঁড়িয়ে বললো, ” আরে আরে, ইউনো যে! ”

ইউনো এসে মাহিরের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।

হ্যান্ডশেক করতে দেখে সুপ্তির সম্ভবত সারা শরীর জ্বলে গেল। যদিও সে জানে এই মহিলা ইউনো বিবাহিত এবং ইউনোর বয়স মাহিরের আন্টির বয়সী। তারপরও কেন যেন তার খুব জেলাসি ফিল হচ্ছে।
তারমধ্যে আবার এই ইউনোর জন্য সুপ্তির নিজের সিট ছাড়তে হয়েছে। তাতে তার রাগ আউট ওফ কন্ট্রোলে যাচ্ছে ৷

তবুও কিছুক্ষণ মাহিরের সোফার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনলো।
মাহিরের হাসি মুখে কথা বলা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো ৷
তাই সুপ্তি রেগে রুমে গিয়ে উচ্চ শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো।

” বাব্বাহ কি রাগ! এটাই তো দেখতে চাচ্ছিলাম এতদিন। ” ( মাহির মনে মনে )

এত শব্দে সুপ্তির মা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে আরেক দফায় শক খেলেন।
তারপর নাস্তা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ৷
তার বাসায় আজ এত ভিআইপি গেস্ট দেখে কেন যেন তার মন বড্ড কু ডাকছে । তারমাঝে কিছুক্ষণ আগের সেই ঘটনা তো আছেই।
আজকের রাতটা যেন শেষ হতেই চাচ্ছে না!

সুপ্তি রুমে গিয়ে পুরো দমে চেষ্টা করছে কিছু খোঁজার।
প্রথমেই সে সুপ্তি থেকে মিস সিক্রেট হওয়ার ফুটেজ ডিলিট করলো। তারপর আশেপাশের যত সিসি টিভি আছে সব হ্যাক করলো।
কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটির পর মৃদু স্বরে চিৎকার করে বললো, ” ইয়েস। ”

এরপর নাম্বার ৩ কে কল করে বললো, ” তুমি ঘাটাইল আছো না? ”

অপর পাশ থেকে হ্যাঁ সূচক বার্তা আসতেই মিস সিক্রেট কিছু বললো।

নাম্বার ৩ : ওকে, ম্যাম। আমি তাড়াতাড়ি করছি ৷

মিস সিক্রেট ওকে বলেই কেটে দিলো।

সুপ্তি ড্রয়িং রুম পার হওয়ার সময় মাহির চিন্তিত নয়নে ঘড়ির দিকে তাকালো। সময় ১০ বেজে ৩৫ মিনিট।
সুপ্তি দ্রুত পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে কালো রংয়ের গাড়ি নিয়ে নিজের হুডি মাস্ক পড়ে বেরিয়ে গেল ৷

সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট একা একটা রুমে বসে আছে। কিছুক্ষণের মাঝে নাম্বার ৩ একটা বস্তা নিয়ে আসলো।

মিস সিক্রেট : চেয়ারে বসাও।

নাম্বার ৩ ও তাই করলো। বস্তা সরাতেই দেখা গেল একটা মানুষ। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি।

মিস সিক্রেট : মুখ খুলে দাও।

নাম্বার ৩ মুখ খুলে দিতেই লোকটা বলা শুরু করলো, ” আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি? কেন এমন করছেন? ”

মিস সিক্রেট : বাসার নকশা দিলে কেন?

লোকটা কিছুটা আঁতকে উঠলো। তবুও না জানার ভান করে বললো, ” আমি দেই নি। ”

মিস সিক্রেট : একদম মিথ্যে বলবে না। এখন সুপ্তির বাবা-মার কি হবে! তুমি নকশা না দিলে এত সহজে কেউ ঢুকতে পারতো না। কারণ নকশাই করা ওভাবে ৷ নকশা ছাড়া বাসায় কেউ ঢুকলে বার বার ফাঁদে পড়বে।

লোকটা আকুতি করে বললো, ” ম্যাম, প্লিজ ক্ষমা করে দিন। দারোয়ানের চাকরি করে আর কতই পাই। তাই টাকার লোভে পড়ে করে ফেলেছি। ”

মিস সিক্রেট : ৫০ হাজার টাকাও কম মনে হয় ! যদি মনেই হয় তাহলে সুপ্তিকে বলতি।

” প্লিজ ম্যাম, মাফ করে দিন। আমার পরিবার আছে। ”

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারই সব। সুপ্তির পরিবার কিছুই না!
নাম্বার ৩ নিরব দর্শক । তবে তার বার বার প্রশ্ন জাগছে তার ম্যাম বার বার কেন সুপ্তিকে টানছে?

লোকটি : প্লিজ, ম্যাম।

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারকে আমি দেখবো।
বলেই পায়ের কাছ থেকে গান বের করলো।

লোকটার চোখ ভয়ে বড় বড় হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট : আর হ্যাঁ, মরার আগে আমায় দেখবে না তা কি হয়!
বলেই এগিয়ে এসে মাস্ক খুললো ৷

হালকা আলোয় লোকটি মিস সিক্রেটের মুখ দেখে যখনই বলা শুরু করলো ‘স’ তখনই মিস সিক্রেট শুট করলো।

মাস্কটা পড়ে নাম্বার ৩ এর দিকে তাকাতেই দেখলো নাম্বার ৩ ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। হয়তো মিস সিক্রেটকে প্রথম খুন করতে দেখায়।

মিস সিক্রেট : প্রফেশনাল কিলার হয়ে অন্যকে খুন করতে দেখে এত ভয় পাওয়াটা তোমায় সাজে না ।

কয়েক সেকেন্ড সময় দিলো নাম্বার ৩ কে স্বাভাবিক হতে। তারপর বললো, ” যাও এটাকে বস্তায় পুরে উপজেলা গেটের সামনে ফেলে এসো। ”

নাম্বার ৩ : কিন্তু ম্যাম…

সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি কোনো এক্সকিওস শুনতে চাই না। ”

নাম্বার ৩ আর কিছু না বলে বস্তায় পুরে যাওয়া শুরু করলো।

নাম্বার ৩ চলে যেতেই মিস সিক্রেট বললো, ” অনেকদিন পর খুন করলাম। ”

১০ মিনিট পর সেও বের হলো। উপজেলার সামনে দিয়ে আসার সময় একটা বাঁকা হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে মিস সিক্রেট সুপ্তির বাসায় প্রবেশ করলো।

এবার কলিং বেল বাজাতে হলো না। দরজা খোলায় ছিল।
ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ গেল ঘড়ির দিকে। ১০ টা ৫৫ বাজে।

” বাহ, খুব তাড়াতাড়ি কাজ করা শিখে গেছি তো। ” ( নিজের মনে মনে নিজেকেই বাহবা দিলো।)

মিস সিক্রেটকে দেখেই ইউনো এবং মাহির দাঁড়িয়ে পড়লো। ইউনো সালাম দিলে তার উত্তর দিতে দিতে মিস সিক্রেট এগিয়ে আসলো।
ইউনো নিজের সিট ছেড়ে দিলো মিস সিক্রেটের বসার জন্য।

এটা দেখে মিস সিক্রেট তৃপ্তির হাসি হেসে মনে মনে বললো, ” এখন বুঝবে, অন্য কেউ নিজের জায়গা দখল করলে কেমন টা লাগে! ”

কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে কুশল বিনিময় করলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ” আপনি তো এখানে বসে আছেন ৷ কিন্তু আমি তো দেখে আসলাম উপজেলার সামনে অনেক ভিড়। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে! ”

ইউনো আতঙ্কিত স্বরে বললো, ” এত রাতে কোনো ঝামেলা! ”

মিস সিক্রেট : নিজে গিয়েই দেখে নিন।

ইউনো বিদায় নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।

মাহির : থ্যাংকস, এতক্ষণে বাঁচলাম।

মিস সিক্রেট কিছু বললো না।

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো, ” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িযেছে এখনও আসলো না। ”

#চলবে

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_30
#Sabrina_Summa

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো,
” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িয়েছে এখনও আসলো না। ”

মিস সিক্রেট চলে যেতে যেতে বললো,
” সুপ্তি অনেক আগেই চলে এসেছে। ”

মাহির অবাক হয়ে বললো,
” কোথায়? মানে কখন? আমি তো দেখলাম না! ”

মিস সিক্রেট পিছনে ঘুরে বললো,
” মন অন্য দিকে থাকলে অনেক কিছুই দেখা যায় না। যাইহোক, ডিস্টার্ব করো না। ঘুমিয়ে পড়েছে। ”

তাই মাহির, তানিশা সবাই রুমে চলে গেল। আর সুপ্তির মা তো কিছুক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।

এ সুযোগে মিস সিক্রেট চুপি চুপি সুপ্তির রুমে প্রবেশ করলো।।

সকালে.,.

সকলে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে এখন বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে । সবাই বসে আছে তবে তানিশা এবং সুপ্তি ব্যতিত ।

মাহির হঠাৎ বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, আন্টি আমি কিছু বলতে চাই । প্লিজ মাইন্ড করবেন না। ”

সকলের উৎসুক দৃষ্টি মাহিরের দিকে। মাহির বলা শুরু করলো, ” আমি সুপ্তিকে পছন্দ করি। শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে তা নয়। বরং তার থেকে অনেক বেশি! ”

কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার বললো, ” মূলত আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আপনাদের সম্মতি থাকলে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই । ”

এতক্ষণ কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেও এখন সুপ্তির বাবা মার রিয়েকশন দেখার জন্য উপর দিকে তাকালো। দেখলো সবাই তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তির হার্ট বিট বেড়ে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তার খুব অস্বস্তি লাগছে। তারপরও সে যেতে পারছে না কারণ তার বাবা মা যদি আবার ভাবে সে লজ্জা পেয়েছে! তাহলে তার মান ইজ্জত চলে যাবে না?

” তোর মনে তাহলে এই ছিল? তুই ঘাটাইল এর জন্য আসছোস? ” ( তানিশা মনে মনে রাগে ফুঁসছে )

সকলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎই মাহির বলে উঠলো, ” ইনফ্যাক্ট, সুপ্তিও আমাকে পছন্দ করে।
যদি পছন্দ নাই করতো তাহলে আমার দেওয়া রিং কি ওর হাতে থাকতো! ”

সুপ্তি অবাক হয়ে একবার মাহিরের দিকে তাকালো আরেকবার আংটি টার দিকে তাকালো।
সুপ্তির বাবা মার সুপ্তির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সেদিকে চোখ পড়তেই আংটি টা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, ” না, না। বিশ্বাস করো আম্মু, ওনি এটা বন্ধুত্বের খাতিরে দিয়েছিলেন। ”

সুপ্তি ভালোই বুঝতে পারছে তার মা তাকে বিশ্বাস করছে না। তাই মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কেন আপনি মিথ্যে বলছেন? ”
” এর পরিমাণ খুব খারাপ হতে পারে যা আপনার বোধগম্য হচ্ছে না! ” এই কথাটুকু বলতে তার খুব ইচ্ছে করলো কিন্তু বলতে না পারায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

সুপ্তির মা আবারো দিকে তাকালো। যদিও তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছেন কিন্তু মাহিরের সুপ্তির মার তাকানো মনে ইচ্ছে তার আত্মা এখনই বের হয়ে যাবে।

সুপ্তির মা : এ বিষয়ে আর কথা তুলো না। তোমার বাবা মাকে আসতে বলো তাদের সাথেই কথা হবে। বলে তিনিও উঠে গেলেন।

মাহিরের এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। সুপ্তির বাবার সাথে তার যেমন ভালো সখ্যতা হয়েছে সুপ্তির মার সাথে তেমনটা হয় নি। তাই তো তাকে দেখে মাহিরের ভয় লাগে।

মাহির : আঙ্কেল, আমি কিছুক্ষণ পর ঢাকায় ব্যাক করবো। সুপ্তিও তো আজই ঢাকা যাবে তাই না?

সুপ্তির বাবা : হ্যাঁ। কালকে থেকে নাকি আবার বার্সিটিতে জয়েন দিবে।

মাহির : তাহলে একসাথেই ব্যাক করি।

সুপ্তির বাবা : ওকে। ( ভাবলেশহীন ভাবে )

বলে চলে গেল। সুপ্তির বাবা চলে যেতেই তানিশা বললো, ” ওই পাগল ওই । তোর কি বিবেগ বুদ্ধি সব লোভ পাইছে? ”

মাহির : কেন? আমি আবার কি করলাম?

তানিশা : নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজে বলে !

মাহির দাঁত কেলিয়ে বললো, ” আমি না বললে কে বলবে। আম্মু আসতে রাজি হতো কিন্তু বাবা জীবনেও না। ”

তানিশা : তাহলে এখন বুঝ। কীভাবে আনবি স্যারকে!

মাহির সিরিয়াস মুখ করার ভান করে নিজের রুম অর্থাৎ গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলো।।

চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-২৭+২৮

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_27
#Sabrina_Summa

মাহিরের আবারও মনে হচ্ছে সুপ্তিই মিস সিক্রেট!
একটু পর মাহির নিজেই নিজেকে ধমক দিয়ে বললো, ” এটা সম্ভবই না। ”

এরপর আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ৷
কোনো এক অজানা কারণে তার বার বার মনে হচ্ছে সুপ্তিই মিস সিক্রেট!

যথারীতি খাওয়া শেষ করে গল্পের আসর বসালো সবাই। তবে এবার আর সুপ্তি তাদের সাথে যোগ দিলো না। সে নিজের রুমে চলে গেল।

সুপ্তির কাছে এ বাসার সবথেকে প্রিয় হলো বেলকনি । তবে সেই বেলকনিতেই আসা হয় না দীর্ঘ দিন ধরে।
এ বাসার সব কিছু যে তাকে বড্ড স্মৃতিকাতর করে তুলে। বার বার অতীতকে নিয়ে ভাবায়।।

তবুও সবকিছু উপেক্ষা করে আজ বহুদিন পরে বেলকনিতে গেল সে।
কৃত্রিম আলোয় সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

আশেপাশে তাকাতে তাকাতে নজর গেল গেটের দিকে ৷ সন্দেহ হলো গেটে কাউকে পাহাড়ায় না দেখে । তাই দ্রুত ছাদে চলে গেলো।
তারপর মিস সিক্রেট রূপে এসে যা দেখলো তাতে তার রক্ত মাথায় উঠলো।

খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিস সিক্রেট, এতজনের সাথে পারবে না সে।
তাই মাহফুজ চৌধুরীর কাছে আর্মি ফোর্স চাইলো। নিজেও কল করলো হেল্পের জন্য।

এরপর ধীরে ধীরে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো। সে প্রবেশ করতেই সকলেই মনোযোগ তার দিকে চলে এলো।
একজন বলে উঠলো, ” তুই এখানে কি করিস? তোর তো ঢাকা থাকার কথা, তোর এসিস্ট্যান্টের বিয়েতে!”

মিস সিক্রেটের রাগ ক্রমশ বাড়ছে তবে সে বিভিন্নভাবে তাদের মনোযোগ অন্যদিকে নিচ্ছে।
সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তাদের উদ্দেশ্য মাহিরকে কিডনাপ করা। কারণ মারার হলে এতক্ষণে মেরেই ফেলতো!

মনোযোগ অন্যদিকে নিতে পেরে মিস সিক্রেট সুপ্তির বাবা মাকে হাতের ইশারায় রুমে যেতে বললো।
ইশারা বুঝতে পেরে তারা খুব সাবধানে রুমে চলে গেল। কিন্তু বিপত্তি ঘটালো সুপ্তির বাবা। তিনি গান নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

ফলশ্রুতিতে সকলেই তার দিকে গান তাক করলো।
সাথে সাথেই মিস সিক্রেট ও তানিশাও গান তাক করলো তাদের দিকে।।

মাহির মিস সিক্রেটের পিছনে এসে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমাকে একটা গান দাও।”

মিস সিক্রেট মাহিরকে একটা গান দিয়ে পায়ের কাছ থেকে আরেকটা গান বের করলো ৷ তার দুই হাতে দুইটা গান।

পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে খুনাখুনি হয়ে যাবে।
তবে পার্ফেক্ট টাইমে এন্ট্রি নিলো আর্মি ৷ দুইজনকে গানের টিগারে চাপ দিতে দেখে শুট করলো।

সাথে সাথে পড়ে গেল ফ্লোরে। আর বাকিরা কোনো মতে জান নিয়ে পালালো ৷ কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সম্পূর্ণ ঘটনাটা ঘটে গেল। সেদিকে মিস সিক্রেটের কোনো হেলদোল নেই।

সে একবার লাশ দুটোকে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো, ” থ্যাংকস টাইম টো টাইম আসার জন্য। বাট এখন এগুলো পরিষ্কার করুন। মারলে আমিও মারতে পারতাম তবে এ বাসায় খুনাখুনি হয় না। সো তাদের লাশ দেখে অভ্যাস নেই। ”
নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” ২০ মিনিট দিলাম পরিষ্কার করুন। আর কিছু বাহিরে গিয়ে পাহাড়া দিন। ”

সকলের অবাক দৃষ্টি মিস সিক্রেটের দিকে।
তার ক্ষমতা আছে ঠিকই তবে এভাবে আর্মিদের উপর অডার করা মানাচ্ছে না বলেই সকলের ধারণা ৷ তাই যে যার মতোই দাঁড়িয়ে রইলো মিস সিক্রেটকে অবজ্ঞা করে।

এতে অবশ্য মিস সিক্রেটের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। সে মাহিরের সামনে গিয়ে হাত পাতলো ৷ মাহির কিছু বুঝতে না পেরে হাই ফাই মনে করে হাত মিলালো ৷

কিন্তু মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” আমি আমার গানটা চাচ্ছি ৷ ”

মাহির একটু ইম্বারেস ফিল করলো। তবে গানটা দিয়ে দিলো।

সুপ্তির মা রুম থেকে বের হয়ে বললেন, ” সুপ্তি কোথায়? ”

মিস সিক্রেট কাউকে কল করতে করতে বললো, ” ছাদে। ”

সুপ্তির মা : আজকে এখানেই থেকে যাও। রাত তো ভালোই হলো।

মিস সিক্রেট চলে যেতে যেতে পিছনে ঘুরে বললো, ” আমি থাকলে আবার কেউ পছন্দ নাও করতে পারে! ”
( মাহিরের দিকে তাকিয়ে )

” আমি এতটাও খারাপ নই। তাছাড়াও আমি আবার কি করলাম! ” ( মাহির মনে মনে )

ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে। তবে তার রাগান্বিত কন্ঠ শুনা গেল, ” আপনাকে আমি খুন করতে বলেছি? আপনার লোক খুন করে বসে আছে। আমি ২০ মিনিট টাইম দিয়েছি তারমধ্যে ৫ মিনিট চলে গেছে। বাকি ১৫ মিনিটে যদি এগুলো পরিষ্কার না হয় তাহলে কি হবে তার জন্য অপেক্ষা করুন। ”

ধীরে ধীরে শব্দ কমে গেল। যার অর্থ হয়তো মিস সিক্রেট চলে গেছে না হয় কল কেটে দিয়েছে।

তখনই কারো ফোন বাজার শব্দ হলো। ফোন রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো তীব্র ধমক আর কিছু আদেশ। যা কিছুক্ষণ পূর্বেই মিস সিক্রেট করেছিল তাই আবার রিপিট করা হলো। সকলেই কমান্ড অনুযায়ী কাজ শুরু করলো।

মাহির সবাইকে বলে ছাদে চলে এলো। সুপ্তিকে দেখতে পেয়েই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। সুপ্তির পাশে দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো, ” দেখি জ্বর এসেছে কিনা!”

সুপ্তি হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, ” না আসে নি। ”

মাহির : একটু আগে কি হয়েছে জানো?

সুপ্তি আনমনেই উত্তর দিলো, ” হুম।”

মাহির অবাক হলো। সুপ্তি জানার পরও নিচে গেল না! এমন মেয়ে তো সুপ্তি নয়।

মাহির : কিভাবে জানো?

সুপ্তি : মিস সিক্রেটের সাথে দেখা হয়েছিল। আর নিচে যেতে নাও করেছিল।

মাহির ” ও” বললো।

কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবারো বললো, ” পুনে দশটায় তুমি ছাদে কি করো? ”

সুপ্তি : অমাবস্যা দেখি।

মাহির : আচ্ছা। তখন যে তুমি বললে উধাও হওয়ার কাহিনি পরে বলবে! এখন কি জানতে পারি?

সুপ্তি কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলা শুরু করলো।।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_28
#Sabrina_Summa

সুপ্তি কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলা শুরু করলো, ” আপু কিভাবে মারা গেছে তা আপনাকে বাবা বলেছে? ”

মাহির : না। তবে আমি জানি। কিছু মানুষের মুখোশ খুলতে গিয়ে।

সুপ্তি : হুম। আপুর মৃত্যুর পর আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। কয়েক মাস সময় নেই তবে কোনো লাভ হয় না। মানিয়ে নিতে পারি নি এ বাড়িটাকে। কিছুদিন স্কুলে যাই তারপর স্বপরিবারে ঢাকা চলে যাই। সেখানে পড়াশোনা শুরু করি। সাথে নিজের সেইফটির জন্য ফাইটিং এর যাবতীয় সবকিছু শেখা শুরু করি।
এরজন্যই সবাই বলছিল উধাও হওয়ার কথা। মূলত কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না + হঠাৎ করে ঢাকা যাওয়া এগুলোই।।

আকাশের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে বলে গেল কথাগুলো। অতীত নিয়ে কথা বললে অধিকাংশ মানুষেরই গুছিয়ে বলার সামর্থ্য থাকে না। সুপ্তিও তাদের মাঝে একজন ৷

মাহির চুপ থেকে কথা বুঝার চেষ্টা করলো। তারপর হঠাৎই প্রশ্ন করে উঠলো, ” আচ্ছা, আমরা তো প্রায় সেইম ইয়ারের। তাহলে আমার গ্রেচুয়েশন শেষ হলো আরো দুই বছর আগে। আর তোমার এখনও শেষই হচ্ছে না! কাহিনী কি? ”

সুপ্তি শব্দ করে হেসে উঠলো। অন্য সময় হলে হয়তো সে এত প্রশ্নের উত্তর দিতো না। তবে আজ কেন যেন উত্তরগুলো দিতে ইচ্ছে করছে তার।

সুপ্তি হাসতে হাসতেই বললো, ” লজ্জা দেওয়ার জন্য প্রশ্নটা করলেন!”

মাহির এমন উত্তরে কিছুটা ভড়কে গেল।

সুপ্তি : আসলে আমি এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে পাস করে তারপর কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে। এইচএসসি টেনে টুনে পাস করি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলাম। অবশ্য পাওয়ারও কথা ছিল না। মানুষ কত কষ্ট করেই পায় না আর আমি তো চেষ্টায় করি নি। ভাবলাম দ্বিতীয়বার চেষ্টা করবো কিন্তু দ্বিতীয় বার তো পরিক্ষায় দিতে পারলাম না!

মাহির : কেন? কেন দিতে পারলে না?

সুপ্তি এতক্ষণ হাসি মুখে কথা বললেও এ প্রশ্নে ভ্রু কুচকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিকভাবে বললো, ” সবকিছু একবারে জেনে গেলে পরে জানার ইচ্ছেটা মরে যাবে। ”

মাহিরের মনে হাজারটা প্রশ্ন বাসা বাধছে। তবে করতে পারছে না ।

অন্ধকার নিরব পরিবেশ ভেঙ্গে সুপ্তি বললো, ” জানেন, আমাকেও গুম করা হয়েছিল! ”

মাহির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

সুপ্তি একধ্যানে বলা শুরু করলো, ” আপুর মৃত্যুর ঘটনাটা খুব ভাইরাল হয়। অনেক সাংবাদিক আসে আমাদের বাসায়। এত মানুষ আমার পছন্দ হচ্ছিল না। তাই পরের দিন স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও স্কুলের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
সকাল আটটা কি নয়টা। রাস্তাঘাটে মানুষ কম। তারমধ্যে আমি আমার চিরচেনা গলি দিয়ে যাওয়া শুরু করি। সেখানে কিছু বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। জীবনে প্রথম সেখানেই ইভটিজিংয়ের স্বীকার হই। অনেক কষ্টে পালিয়ে আসি সেখান থেকে।
আমার ছোট মন পর পর এত বড় বড় ধাক্কা নিতে পারছিলো না ৷ ভেঙে পড়ার পরিবর্তে কিভাবে যে কঠোর হয়ে পড়েছিলাম। ওই যে প্রবাদ আছে না, ‘ একটু শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর! ‘ আমারও ঠিক সেই অবস্থা হয়েছিল।
আপুর মৃত্যুর তৃতীয় দিন আমাকে আমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কারণ হিসেবে বলা হয় আমি নাকি আমার বোনের সাথে জড়িত।
আমার হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ খুললে দেখতে পাই অন্ধকার একটা রুম। আশেপাশে কেউ নেই। ”
এতটুকু বলেই থেমে গেল সুপ্তি।

মাহির বলে উঠলো, ” তারপর? তারপর কি হলো?”

সুপ্তি : আমার আর ভালো লাগছে না। আর বলবো না। অনেক বড় লেকচার দিয়ে ফেলছি। পরে আরেকদিন বলবো ৷

বলা শেষ করে হাঁটা শুরু করলো। মাহির হাত ধরে আটকে বললো, ” না, এখনই বলবে। ”

সুপ্তি মাহিরের দিকে ঘুরে বললো, ” বললাম না পরে বলবো! ”

মাহির : কেন এভাবে খেলছো? বলবেই না যখন তাহলে শুরু করলে কেন?

সুপ্তি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আবারও চলে যেতে নিলে মাহির একটান দিয়ে সুপ্তিকে নিজের সামনে এনে বললো, ” তোমাকে এখনই বলতে হবে। বুঝতে পেরেছো! ” ( রেগে )

সুপ্তির রাগ হলো। রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরমুহূর্তেই হেসে দিয়ে বললো, ” কেন? ”

মাহির: আমার জানা প্রয়োজন তাই!
( সুপ্তির হাসিতে ভড়কে গেলেও স্বাভাবিক হয়ে বললো )

সুপ্তি : কেন প্রয়োজন?

মাহির এবার প্রচুর রেগে গেল। যা প্রকাশ পেল রক্তবর্ণ ধারণ করা একজোড়া চোখে।

সুপ্তি মাহিরের কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আপনার কি মনে হচ্ছে আমারো আপুর মতোই…”

এতটুকু বলতেই মাহিরের কাঁপনি খেয়াল করলো সুপ্তি। এতে অবশ্য তার মজাই লাগছে। তাই আরেকটু জ্বালানোর জন্য বললো, ” ওমন কিছু হয়ে থাকলে কি, আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাবে মাহির? ”

সুপ্তির এমন প্রশ্নে মাহির রাগান্বিত কন্ঠে বললো, ” সুপ্তি শুধু একবার সত্য বলো। ”

সুপ্তি : বললে কি করবেন?

মাহির : শয়তান গুলাকে খুন করবো।

সুপ্তি হাসতে হাসতে বললো, “তার আর প্রয়োজন পড়বে না। ওই দুইটা অলরেডি উপরে আই মেইন কবরে। আর হ্যাঁ আমার সাথে ওমন কিছুই হয় নি। ”

মাহির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আজ সুপ্তির এমন ফাজলামো মাহিরের একদম সহ্য হচ্ছে না।

মাহির : সেখান থেকে ফিরলে কি করে?

মাহিরের এমন সোজাসাপটা প্রশ্নে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আপুর মতো করেই খুন করার জন্য। ( “কিন্তু ভাগ্যের পরিক্রমায় ওরাই খুন হলো! ” মনে মনে।)
কিছুক্ষণের মাঝেই বিষয়টা আমি বুঝতে পারি।
আমকর হাতে অলঅয়েস স্মার্ট ওয়াচ থাকে। সেই ওয়াচ দিয়েই ইনফর্ম করি মিস সিক্রেটের টিমকে। তখন অবশ্য মিস সিক্রেট তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি ।
আমার ওয়াচে থাকা সিম ট্র্যাক করে উদ্ধার করে মিস সিক্রেটের টিম।
এই তিনটে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আমাদের ঢাকা চলে যাওয়া।

” এখন বুঝলাম মিস সিক্রেটের সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে! আমি শুধু শুধুই উল্টা পাল্টা ভাবছিলাম। ”

সুপ্তি : রাত তো ভালোই হলো এখন কী আমরা নিচে যেতে পারি?

সুপ্তির প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মাহির ৷ হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে হাঁটা শুরু করলো। সাথে সুপ্তিও।

#চলবে.,.