Friday, August 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2



আগন্তুক পর্ব-০২

0

#আগন্তুক
#দ্বিতীয়_পর্ব
#মৌসুমী_হাজরা

দুপুরের পর থেকে জ্বরটা আর নেই আর্যর। তবে মনটা কেমন যেন বি ষ ণ্ণ। সারাদিনের বৃষ্টির পর বিকেলে মেঘের গুমোট ভাব এখনও রয়ে গেছে। হয়তো আরও বৃষ্টি হবে। এইভাবে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না আর। তাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আর্য। কিছুক্ষণ পর ঝমঝম করে আবার বৃষ্টি নামলো। গাড়ির ভিতর থেকে ঝাপসা অথচ অন্তরাকে দেখেই চিনতে পারলো আর্য। এই মেয়েটাকেই তো গত একমাস ধরে খুঁজছিল সে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গাইনোকোলজিস্ট অরুন্ধতীর কাছে গিয়ে খবর নিয়েছিল আর্য, অন্তরা আর চেক আপে এসেছিল কিনা। কিন্তু অরুন্ধতীর কাছে অন্তরা আর আসেনি।
আর একটুও দেরি করলো না আর্য। অন্তরার কাছে গিয়ে আর্য বললো, এই ভাবে ভিজছেন কেন? গাড়িতে উঠে আসুন। অন্তরা হঠাৎ করে আর্যকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়েছিল, হয়তো প্রথমে চিনতে অসুবিধা হয়েছিল, তারপর চিনতে পেরেই বললো, ও ডক্টর যে, আপনি এখানে কী করছেন?
আর্য বললো, সব কথা গাড়িতে বলাও যাবে, আপনি উঠে আসুন। অন্তরা সাথে সাথে বললো, আর আপনি ব্যস্ত হবেন না, এখনই আমি কোনো গাড়ি পেয়ে যাব। আর্য এবার কিছুটা রা গ দেখিয়ে বললো, আপনি আসবেন, নাকি আমি গাড়ি থেকে নামবো?
অন্তরা আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে এসে চাপলো।
তারপর আর্য গাড়ি স্টার্ট করে এগিয়ে গেল।
অন্তরা বললো, উফ দেখলেন তো, আপনার গাড়ির সিট কেমন ভিজে গেল আমার জন্য। আমি বললাম তো তখন, আমি কোনো না কোনো গাড়ি পেয়ে যেতাম।
আর্য অন্তরার কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে বললো, শরীর কেমন আছে এখন?
অন্তরা বললো, ঠিক আছে, তবে মাঝেমধ্যে মাথাটা খুব ঘোরায়। আর পুষ্টিকর খাবার দেখলে বমি আসে। তবে ফাস্টফুড দেখলে সেটা হয় না। এখন তো ছয় মাস চলছে। একটু একটু করে ওর নড়াচড়া অনুভব করতে পারি। কথাটা বলেই অন্তরা পেটে হাত দিয়ে মনে মনে হাসলো। সেটা খেয়াল করলো আর্য। এখনই অন্তরার সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। আগে ওর হাজব্যান্ডের সাথে কথা বলতে হবে। কিছুক্ষণ থেমে আর্য বললো, বাড়ির ঠিকানাটা দিন, আপনাকে পৌঁছে দেবো। অন্তরা সাথে সাথে বললো, না না এখনই বাড়ি যাবো না, আমার এখনও ফটোশুটের কাজ আছে। বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাবে। সামনেই শপিংমল আছে, তার অপজিট সাইডে দাঁড়িয়ে যাবেন। আর্য অন্তরার কথা না শুনে, সোজা গিয়ে শপিংমলের কাছে এসে দাঁড়ালো। অন্তরা অবাক হয়ে বললো, এখানে দাঁড়ালেন কেন?
আর্য কোনো কথা না বলে, গাড়ি থেকে নেমে, অন্তরার কাছে এসে, গাড়ির দরজা খুলে নামতে বললো। অন্তরা অবাক হলো ঠিকই, কিন্তু আর্যর কথা মতো নেমে গেল। তারপর আর্য বললো, যেমন বলবো, তেমন করবেন, কোনো প্রশ্ন করবেন না। শপিংমলে ঢুকে আর্য একটা ঢিলেঢালা পোশাক খুঁজছিল, যা অন্তরার পরতে সাচ্ছন্দ্য হবে। সে রকমই একটা পেয়ে অন্তরাকে বললো, যাও চেঞ্জ করে এসো। অন্তরা আর কোনো কথা না বলে আর্যর কথা মতো ড্রেস চেঞ্জ করে এল। তখন আর্যর বিল পেমেন্ট করা হয়ে গেছে। দুটো কফি নিয়ে বসেছে দুজনে। আর্য বললো, আপনার হাজব্যান্ডের নাম্বারটা একবার দিন। এমনি একটু পরিচয় করবো। অন্তরা সাথে সাথে বললো, আসলে ও একটু ব্যস্ত আছে। এক কাজ করুন, কাল এইসময় এখানে আসুন, আমিও আমার হাজব্যান্ডকে নিয়ে আসবো। পরিচয়টা হয়ে যাবে। আর্য মুখে বললো, ঠিক আছে। কিন্তু অন্তরার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেন আর্যর কাছে কেমন যেন লাগলো। কিছু একটা লুকাচ্ছে মেয়েটা। কিন্তু অরুন্ধতীর কথা মতো, এই বাচ্চাটা নিতে গেলে অন্তরার জীবনের ঝুঁকি আছে। ছয়মাস হয়ে গেছে, এখন কিছুই করা যাবে না। তবে হাজব্যান্ডের সাথে কথা বলে দেখতে হবে, নিশ্চয় কিছু একটা পথ বেরোবে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, অন্তরা রিপোর্টের ব্যাপারে সব জানে, তাও বিন্দুমাত্র ওর মধ্যে কোনো টেনশন বা ভ য় নেই। সুন্দর কাজ করে যাচ্ছে। আরও কয়েকবার অন্তরার হাজব্যান্ডের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করলো আর্য, কিন্তু প্রতিবার অন্তরা খুব স্মার্টলি কথা ঘুরিয়ে দিল।

অন্তরার কথা মতো সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আর্য অনেক আগেই ফিরে গেছে বাড়িতে। বারবার মনে হচ্ছে, অন্তরা কিছু লুকাচ্ছে। যা জানতেই হবে আর্যকে। এমনিতেও কাল তো দেখা হচ্ছেই ওর হাজব্যান্ডের সাথে।

হসপিটালে গিয়ে আগে অরুন্ধতীর সাথে দেখা করলো আর্য। অরুন্ধতীকে জানালো অন্তরার ব্যাপারে। অরুন্ধতী সাথে সাথে বললেন, গ্রেট জব ডক্টর আর্য। অন্তরার হাজব্যান্ডের সাথে দেখা করাটা খুবই জরুরি। অন্তরার প্রেগন্যান্সির জটিলতার মাঝে আরও একটা সমস্যা হলো ওর Rh নেগেটিভ, যার জন্য ওর হাজব্যান্ডের ব্লাড টেস্ট খুব জরুরি। যদি ওরা অন্য কোথাও টেস্ট করিয়ে নিয়েছে বা অন্তরাকে অন্য কোথাও দেখিয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু নেই। তবে যদি না করিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই করতে হবে। আর্য বললো, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, অন্তরা কিছু লুকাচ্ছে আমাদের কাছে। আমি ওর হাজব্যান্ডের কথা জানতে চাইলাম, আর ও বারবার সেটা এড়িয়ে গেল। অরুন্ধতী বললেন, সেদিন আমিও চেষ্টা করেছিলাম, আমার সাথেও তাই করেছে। আপনি প্লিজ ব্যাপারটা একটু দেখুন।
আর্য মাথা নাড়লো।

নির্দিষ্ট সময় মতো আর্য চলে এসেছে। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও অন্তরা এল না। প্রায় ২ ঘন্টা থাকার পরও এল না। পরের দিনও আর্য এল, সেদিনও অন্তরা এল না। আর্যর এবার ধৈর্যর বাঁধ যেন ভা ঙ লো। খুব রা গ হলো অন্তরার উপর। যেখানে অন্তরাকে নামিয়েছিল, সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়েও কিছু জানতে পারলো না। রা গ, হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে এল আর্য। কে টে গেল আরও কয়েকটা দিন। এর মাঝে একদিন ডক্টর অরুন্ধতী আর্যর কাছে এসে সবটা শুনে বললো, আমাদের তাহলে করার কিছু নেই। হতে পারে ওরা অন্য কোথাও দেখিয়েছে। এই অবস্থায় তো ফেলে রাখা যাবে না। হয়তো আমরা এই কেসটা নিয়ে একটু বেশি ভাবছি। আসলে এমন জটিলতা আমি আর কোনো পেশেন্টের মধ্যে পাই নি। তাই মনটা যেন কেমন লাগছে।
আর্য কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললো, কয়েক মাস আগে, ওর এক বন্ধু এখানে এডমিট হয়েছিল। রিসেপশনিস্টকে বলে যদি তার ঠিকানাটা বের করতে পারি, তাহলে কিন্তু অন্তরার খোঁজ পাওয়া যাবে।
অরুন্ধতী বললেন, চলুন তাহলে, একবার দেখা যাক।
অনেক খোঁজার পর বিশ্বজিৎ কুমারের ঠিকানাটা পেল আর্য।
অরুন্ধতী বললেন, আর দেরি না করে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমিও যাব দরকার হলে আপনার সাথে।

বিকেলে একটু ফ্রি হতেই দুজনে বেরিয়ে গেল বিশ্বজিৎ কুমারের ঠিকানায়।
দরজার কলিং বেলের আওয়াজ শুনে বিশ্বজিৎ এসে দরজা খুললো। আর্য বললো, আপনি আমাকে চিনবেন না, আমরা আপনার কাছে অন্তরার খোঁজে এসেছি। বিশ্বজিৎ শান্ত গলায় বললো, ভিতরে আসুন।
আর্য আর অরুন্ধতী দুজনে ভিতরে গিয়ে বসলো। বিশ্বজিৎ বললো, বলুন কী জানার আছে অন্তরার ব্যাপারে?
আর্য বললো, আপনি যে হসপিটালে এডমিট হয়েছিলেন অ্যা ক্সি ডে ন্টের পর, আমরা সেই হসপিটালের ডক্টর। তখনই পরিচয় হয়েছিল অন্তরার সাথে। মনে আছে আপনার? অন্তরা আপনাকে দেখতে গিয়েছিল?
বিশ্বজিৎ বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে তো। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা আমাকে বলুন তো।
এবার অরুন্ধতী বললেন, অন্তরা প্রেগন্যান্ট। সেজন্য পরে আবার হসপিটালে গিয়েছিল। আমি কয়েকটা টেস্ট করাতে দিয়েছিলাম, রিপোর্টে অনেক সমস্যা আছে, যার জন্য ওর বাড়ির কারোর সাথে কথা বলাটা খুব জরুরী। ওকে বলেছিলাম, কিন্তু ও পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে।
বিশ্বজিৎ উদাস সুরে বললো, বাড়ির কেউ থাকলে তো, ও যোগাযোগ করাবে। খুব ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়েছে। চার্চের ফাদারের কাছে বড়ো হয়েছে। ওখানে থেকেই পড়াশোনা। কলেজে আমাদের পরিচয় হয়, তখন থেকে আমরা বন্ধু। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকা চঞ্চল মেয়ে একটা। কিন্তু ওর জীবনেই এমন ঘটে যাবে, কেউ বুঝতে পারি নি।
আর্য বললো, তাহলে ওর হাজব্যান্ডের সাথে আমরা দেখা করবো, ওনার সাথে কথা বলবো।
বিশ্বজিৎ কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো, ওর বিয়ে হয়নি। কয়েকবছর আগে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিয়েছিল অন্তরা। ফটোগ্রাফি নেশা ছেড়ে প্রফেশন হয়ে দাঁড়ালো। বেশ নামও হয়েছিল ওর। সেই সময় ওর জীবনে আসে সুমন। বেশ ভালোই চলছিল ওদের জীবন। কিন্তু কয়েকমাস আগে, সুমন যখন জানতে পারলো অন্তরা প্রেগন্যান্ট, তখন ওর কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেল। বারবার এই বাচ্চা ন ষ্ট করার কথা বলতো। অন্তরা রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত ব্রেক আপ হয়ে যায় ওদের। আমরা বন্ধুরা মিলে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। সুমন বুঝলো না। নিজের সন্তানকেই মে রে ফেলার কথা বলতে লাগলো। শেষে অন্তরা যেন কঠোর হয়ে বললো, এই সন্তানের উপর অধিকার শুধু অন্তরার। কোনোদিন সুমনের কাছে কোনো অধিকার দাবি করবে না। এই বাচ্চাকে অন্তরা একা মানুষ করবে। আমরা সবাই ওর সাথে ছিলাম। যে মেয়েটা বন্ধুর বি’পদে সবার আগে ঝাঁ’পিয়ে পড়তো, তার এই কঠিন সময়ে কী করে একা ছাড়ি বলুন? তবে ওর প্রেগন্যান্সির জটিলতার ব্যাপারে আমরা সবাই পরে জেনেছি। আগে জানলে কিছু একটা ব্যবস্থা করা যেত। ওর কিছু হয়ে গেলে, ফাদার ওর সন্তানের দায়িত্ব নেবেন। আর আমরা বন্ধুরা তো আছিই। এখন একটাই প্রার্থনা, মেয়েটার জীবনে সবকিছু ভালো হোক। খা’রাপ কিছু যেন না হয়, তবে সবদিকটা আমাদের ভাবতে হচ্ছে। এমন জেদি মেয়ে যে একটা কথা শোনে না। এই অবস্থাতেও কাজ করে যাচ্ছে।
অরুন্ধতী আর আর্য অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আর্য এবার বিশ্বজিৎ এর কাছে অন্তরার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার নিল।

বাইরে বেরিয়ে আসার পর অরুন্ধতী জিজ্ঞাসা করলেন, এবার কী করবেন ডক্টর আর্য?
আর্য আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, জানি না। তবে মেয়েটাকে একা ছাড়া যাবে না। যেভাবেই হোক আমি ওর সাথে যোগাযোগ করবো।

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয় 🙏

আগন্তুক পর্ব-০১

0

#আগন্তুক
#প্রথম_পর্ব
#মৌসুমী_হাজরা

…মানে আপনার কথা শুনে যা দাঁড়ালো, তা হলো, ৬ মাসের মধ্যে আপনার একজনের সাথে পরিচয় হলো, বিয়ে হলো, আবার সন্তানও হয়ে গেল। খুব অবাক লাগছে শুনে। কিছু মনে করবেন না ডক্টর আর্য, আপনি একজন ডক্টর, আপনার মুখে এই অবিশ্বাস্য কথা ঠিক মানায় না।

মেঘার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো আর্য। তারপর হাসি থামিয়ে বললো, ডক্টর মেঘা, এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। আমার জীবনে এমনি ঘটেছে৷ ভালোই আছি আমরা। আমার একটি কন্যা সন্তানও আছে। একদিন আলাপ করিয়ে দেবো সবার সাথে।

আর্য উঠে দাঁড়াতেই মেঘা বললো, বাড়ি যাওয়ার যদি তাড়া না থাকে, তাহলে পুরো গল্পটা আমি শুনতে চাই, আসলে এই পুরো গল্পটা না জানলে, আমার ঘুম আসবে না রাতে।

আর্য আবার হেসে বললো, এমনিতেও আজ রাতে আপনার ঘুম আসবে না, আপনার আজ নাইটে ডিউটি। আর সাথে আমারও।

মেঘা বললো, তাহলে তো ভালোই, যদি একটু ফ্রি থাকি তাহলে রাতেই তো শোনাতে পারেন আপনার প্রেম কাহিনী?
আর্য বললো, ঠিক আছে তাহলে তাই হবে, এখন একটা বাড়িতে ফোন করে আসি।

আর্য এই হসপিটালে আছে গত ৪ বছর ধরে। মেঘা এই নতুন এসেছে। একটু আধটু পরিচয় হয়েছে কর্ম সূত্রের প্রয়োজনে। কিন্তু যেদিন থেকে মেঘা শুনেছে আর্য ৬ মাসের মধ্যে একজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে, এবং ৬ মাসেই এক সন্তানের বাবা হয়েছে, সেদিন থেকেই তার কৌতূহলী মন বারবার জানতে চেয়েছে, আর্যর জীবনের কাহিনী। কিন্তু সেইভাবে সময় হয়ে উঠছিল না। আজ নিজেই আর্যকে একা দেখে ভাব জমিয়েছে কাহিনী শোনার জন্য।

রাত্রি প্রায় ১২ টা…
মেঘা একবার রাউন্ড দিয়ে এসে বসেছে নিজের চেয়ারে। আর মনে মনে আর্যর জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে যাবার পর, আর্যকে দূর থেকে দেখতে পেল, হাসতে হাসতে আসছে।
আর্য বেশ সুদর্শন পুরুষ। একজন ভালো ডাক্তারও। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকে। রোগীদের ব্যাপারে একদম ধৈর্য হারায় না। ব্যবহারের জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। তবে এক নার্সের কাছে শুনেছে আর্য আগে এমন ছিল না। চুপচাপ, কম কথা বলতো, গম্ভীর ছিল।
বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলো না মেঘা। এমন সুদর্শন বিবাহিত পুরুষ দেখে তার মনটা ভে ঙে গেছে আগেই। তবুও আর কি করার। বিবাহিত শুনেই সে বেশি আর ঘেঁষে নি আর্যর কাছে। কিন্তু আর্যর ব্যাপারে একটু-আধটু জেনে কৌতূহলবশত একটু ভাব জমাতেই হলো মেঘাকে।

… মেঘা, আপনি খেয়েছেন।
… হ্যাঁ ডক্টর আর্য। আপনি খেয়েছেন?
… হ্যাঁ। ডিনারটা রাত্রি ৮ টার মধ্যেই করে ফেলি। তারপর তো সারারাত এখন চলতেই থাকবে, এই পেশেন্টকে দেখুন ওই পেশেন্টকে দেখুন।
কথাটা বলেই আবার হেসে উঠলো আর্য। মেঘা চোখটা নামিয়ে নিল। এমন সুন্দর হাসি দেখলে যে কেউ ক্রাশ খেয়ে যেতে পারে। মেঘা তারপর বললো, এখন আপনার সময় হবে, কাহিনী শোনানোর জন্য?
আর্য হাতের ঘড়িটা দেখে বললো, হ্যাঁ একবার তো রাউন্ড দিয়ে এসেছি, ডাক না পড়লে এখন আর যেতে হবে না। সেই আবার সকালে।
তবে আপনার ধৈর্য হবে তো? আসলে কাহিনী কিন্তু অনেক বড়।
মেঘা সাথে সাথে বললো, হবে হবে। বলুন।

আর্য মুচকি হাসলো। তারপর শুরু করলো তার প্রেম কাহিনী। বলতে বলতে হারিয়ে গেল অতীতের পাতায়…

… দেখুন আমি এখানে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। নাম বুম্বা। বাইক অ্যা ক্সি ডে ন্ট হয়েছে। তবে যমে নেয় নি। বেঁ চে আছে এখনও। আমার বন্ধু হয়, তার সাথেই দেখা করবো।
… দেখুন ম্যাম এই নামে এই হসপিটালে কেউ এডমিট হয় নি।
… আরে দেখুন না ভালো করে। এখানেই এডমিট হয়েছে। গায়ের রঙ শ্যামলা। জিরাফের মতো লম্বা। দেখলেই মনে হবে নে শাখো র।
… সরি ম্যাম, এইভাবে বর্ননা দিলেও আমি কোনো হেল্প করতে পারবো না।

পাশ থেকে পুরোটা শুনছে আর্য। এই সদ্য এই হসপিটালে এসেছে। এমনিতেই কাজের প্রেশার নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছে। একটু ফ্রি হতেই নীচে নেমে এসেছিল। পাশে এমন উত্তেজিত ভাবে একজনকে দেখে হেল্প করার জন্য এগিয়ে এল। কিন্তু যে ভাবে উনি বর্ননা দিচ্ছেন তাতে হাসিই পেল আর্যর। নিজের হাসি কন্ট্রোল করে সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো, দেখুন ম্যাম আপনি যে ভাবে বলছেন, তাতে পেশেন্টকে খোঁজা মুশকিল এত বড় হসপিটালে। আর আমার মনে হয় পেশেন্টের কোনো ভালো নাম আছে, সেটা আপনি বলুন।
অন্তরা মাথা চুলকিয়ে বললো, বুম্বা নামেই তো ডেকে এসেছি, ভালো নামটা মনে নেই।
আর্য এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
… আচ্ছা কবে অ্যা ক্সি ডে ন্ট হয়েছে।
… আজ সকালে।
… আপনি শিওর তো এই হসপিটালেই এডমিট আছেন উনি?
… হ্যাঁ হ্যাঁ দেখুন, আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে এখানেরই ঠিকানা দিয়েছে। কিন্তু এখন ওর ফোনটা বন্ধ। নয়তো ওকে ফোন করে জেনে নিতাম।
আর্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তাতে নাম সেভ করা আছে বুম্বা মাঙ্কি বলে।
আর্য এবার অন্তরার দিকে তাকালো, মেয়েটাকে স্বাভাবিক বলে মনে হলো না তার, মাথায় কিছু সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, রিসেপশনিস্টকে বললো, আজ সকালের কোনো অ্যা ক্সি ডে ন্ট কেস ছিল?
তিনি কম্পিউটারে দেখে বললেন, হ্যাঁ ডক্টর আছে। নাম বিশ্বজিৎ কুমার। ৭ নম্বর বেডে আছেন উনি।
সবটা শুনে অন্তরা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এল আর্যর কাছে।
ও ডক্টর আপনি একবার চলুন না আমার সাথে। আমি তো কিছুই চিনি না।
আর্য নিরুপায়, এই যা মেয়ে, কিছুতেই মনে হয় ছাড়বে না। একবার পেশেন্টের সাথে দেখা করিয়ে দিলে, আর কোনো ঝামেলা থাকবে না। তাই বাধ্য হয়ে বললো, চলুন।
যেতে যেতে অন্তরা বললো, আপনি গাইনোকোলজিস্ট?
আর্য বললো, না আমি জেনারেল ফিজিশিয়ান।
অন্তরা তখন বললো, ও আচ্ছা।
আর্য তখন বললো, কেন বলুন তো? আমাকে দেখে এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
অন্তরা হেসে বললো, না এমন হ্যান্ডসাম মেয়েদের ডক্টর হলে তো কথায় নেই।
আর্য মনে মনে ভাবলো, এই মেয়ের সত্যিই মাথায় সমস্যা আছে।
অন্তরা বললো, আমি অন্তরা। আমি একজন ফটোগ্রাফার। আপনার নাম কী?
আর্য গাম্ভীর্য নিয়ে বললো, আমার নাম আর্য চৌধুরী। নিন চলে এসেছি আপনার পেশেন্টের কাছে। দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলো অন্তরা। এই তো গাধাটা। ওখান থেকে চিৎকার করে বললো, ওই বুম্বার বাচ্চা, বেঁ চে আছিস, চল ট্রিট দে।
আর্য বললো, আস্তে আস্তে, এটা হসপিটাল। অন্তরা জিভ কে টে বললো, ও সরি সরি। আসলে বন্ধু ভালো আছে দেখে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। সরি সরি। আর অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কথাটা বলেই অন্তরা এগিয়ে গেল। পেছন থেকে আর্য ডেকে বললো, আপনার বন্ধুর নাম বিশ্বজিৎ। নামটা আশা করি এবার মনে থাকবে৷ অন্তরা পেছন ফিরে বললো, হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম, গাধাটার নাম বিশ্বজিৎ।
আর্য আবার বললো, গাধা হলে, হোয়াটসঅ্যাপে নামের পাশে মাঙ্কি সেভ করা কেন? আর তখন রিসেপশনিস্টকে বলছিলেন আপনার বন্ধু জিরাফের মতো লম্বা। একটা মানুষের মধ্যে এত গুলো প্রাণী থাকে কিভাবে?
কথাটা বলেই আর্য হেসে চলে গেল। কিছুটা যেয়ে খেয়াল হলো, ওর মতো গম্ভীর ছেলেকেও মেয়েটা হাসিয়ে দিল। মেয়েটার মধ্যে নিশ্চয় কোনো জাদু আছে।

কয়েকদিন পর….

আর্য ডিউটি টাইমে একটু ফ্রি হতেই নীচে নেমে এল। দূর থেকে অন্তরাকে দেখেই চিনতে পারলো। এই মেয়ের মুখ সহজে ভোলার নয়। কথাবার্তায় ছেলেমানুষী ভাব থাকলেও, মুখখানা খুব মায়াবী। যে কোনো মানুষকে হাসানোর ক্ষমতা আছে মেয়েটার। আসলে এখানকার যুগে এমন মানুষ খুবই বিরল। আর্য, অন্তরার কাছে গিয়ে বললো, কী ব্যাপার ম্যাডাম? বন্ধুর তো সেদিনই ছুটি হয়ে গেছে। আজ আবার এখানে কেন?
অন্তরা মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে, ধীরে ধীরে বললো, আজ আমি নিজে এসেছিলাম। গাইনোকোলজিস্টকে দেখানোর জন্য। কয়েকটা টেস্টের রিপোর্ট দেখানোর ছিল।
আর্য বললো, হয়ে গেছে দেখানো?
অন্তরা বললো, হ্যাঁ হয়ে গেছে। আসলে মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিল, তাই একটু এখানে বসলাম।
আর্য বললো, সে কি আপনি ঠিক আছেন তো? বিপি চেক করিয়েছেন?
অন্তরা বললো, হ্যাঁ করিয়েছি। আসলে এই সময় এমন হয়। আমি প্রেগন্যান্ট।
আর্য বললো, ওহ আচ্ছা। তা আপনার সাথে কেউ আসেনি?
অন্তরা আবার ধীরে ধীরে বললো, না। এবার যাই আমি, কাজ আছে আমার। কয়েকটা ফটো তুলতে হবে।
আর্য সাথে সাথে বললো, কিন্তু এখন এই অবস্থায় একটু রেস্ট নিলেই তো পারতেন।
অন্তরা বললো, এখন রেস্ট নিলে হবে না। কাজ করতে হবে, এই তো চার মাস। ধীরে ধীরে কাজ করলে সমস্যা হবে না। আসি আর্য বাবু।

অন্তরা চলে যেতেই। গাইনোকোলজিস্ট অরুন্ধতী, আর্যকে ডেকে বললো, ডক্টর আর্য একবার শুনবেন?
আর্য কাছে গিয়ে বললো,
…হ্যাঁ বলুন।
… আপনি চেনেন মেয়েটিকে? যার সাথে কথা বলছিলেন?
… না না সেভাবে পরিচিত নই আমরা। কেন কী হয়েছে বলুন তো?
… ওনার শরীরের যা কন্ডিশন, তাতে বেবি নেওয়ার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। বাড়ির কাউকে নিয়ে আসেন নি উনি। কার সাথে কথা বলবো বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় বাড়ির ব্যাপারে উনি কিছু লুকাচ্ছেন। হাজব্যান্ডের ফোন নাম্বার চাইলাম, কিছুতেই দিল না।
… আপনি এই কথাগুলো আগে বললেন না কেন, যখন উনি ছিলেন?
… আপনারা কথা বলছিলেন, তাই ডিস্টার্ব করি নি।

আর্য ছুটে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দেখলো, সেখানে অন্তরা নেই। মনটা কেমন যেন করে উঠলো। কতই বা বয়স হবে মেয়েটির, বড় জোর ২৪/২৫। মনে মনে ভাবলো, যে ভাবেই হোক, মেয়েটিকে খুঁজে বের করতেই হবে।

চলবে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৬০

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬০

সকালে ঘুম থেকে উঠে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেজার টেক্সটের দিকে।
“গুড মর্নিং, হানি।
আচ্ছা, বলো তো, বিলাল আব্বাস খান না সাদাত হোসাইন—তোমার জীবনে এদের মধ্যে কে আসলে আমাকে ছেড়ে যাবে? ডার্লিং, সত্যি বলবে কিন্তু। আমি তোমার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় থাকবো, সোনাবউ।”
নয়না হাসছে। “আচ্ছা, প্রেমে পড়লে ছেলেরা কি আসলেই বোকা হয়ে যায়? এমন উদ্ভট প্রশ্ন কেউ করে?”
নয়না রিপ্লাই করলো, “সুপ্রভাত।
দুজনের কারও জন্যই আপনাকে ছেড়ে যাব না। কল্পনার জগত আর বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের কেউ আপনার জায়গা কখনো নিতে পারবে না, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। আপনি আমার চিরস্থায়ী ব্যক্তিগত প্রিয় পুরুষ।”
জিয়ান সাথে সাথে রিপ্লাই করলো, “তাহলে কার জন্য আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে?”
“মৃত্যুর জন্য। যদি মৃত্যু আসে, তবে বলবো আমাকে কেড়ে নিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে।”
“ভিডিও কল করি, ওয়েট।”
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দুজন মানুষ দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নয়নার আধখোলা বেণী, ফোলা চেহারা, টি-শার্ট আর প্লাজো পরা।রেজা নয়নার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, “তোমাকে মোহনীয় লাগছে, বেব। ইচ্ছে করছে এলোমেলো চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে কপালে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে।”
“তারপর?”
“তারপর? তারপর বললে তো কল কেটে দিবে। সামনাসামনি থাকলে বুঝতে পারতে তারপর কী।”
“বদলোক! সব সময় মাথায় উল্টোপাল্টা চিন্তা।”
“উল্টোপাল্টা চিন্তা কেন হবে? তোমাকে দেখলেই তো ভালোবাসা উথলে ওঠে, এতে দোষটা তো তোমার।”
“আহা, নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাও!”
“ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে?”
“সামনের সপ্তাহ থেকে। শোনো, আমি বাসায় গিয়ে কয়েকটা দিন থেকে আসি?”
“যাও, থেকে আসো। তবে আমাকে কিন্তু পুরো মনোযোগ দিতে হবে, জানো।”
“তোমাকে ছাড়া আমার আর কে আছে?”
“আহা, আদুরী বউ আমার। যাও, উঠো, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো।”
“এই, শোনো।”
“এভাবে না।”
“তো কীভাবে?”
“বলো, ওগো, শুনছো?”
“শুনতে হবে না, টেক্সট পড়ুন, ডিয়ার হ্যাসবেন্ড। আমি এসে আপনাকে নক দিবো। টাটা।”

নয়না ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে নাস্তা করতে আসলো। প্রিয় মানুষ ম্যাজিকের মতো মন ভালো করে দিতে পারে। নয়না নাস্তার টেবিলে এসে তার নিত্যদিনের প্রিয় নাস্তা—পরোটা আর চা—নিয়ে আয়েশ করে খেতে লাগলো। আজ যেন সবকিছুই নয়নার কাছে রঙিন লাগছে!

হঠাৎ জাহিন চেয়ার টেনে নয়নার সামনে সোজাসুজি বসে বলল, “গুড মর্নিং।”
নয়না আড়চোখে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এই মানুষটাকে নয়না একদম সহ্য করতে পারে না। দেখলেই রাগ লাগে। নয়না নিজের মতো চায়ের মধ্যে পরোটা ডুবিয়ে খেতে লাগলো।জাহিন বলল, “এটা কি খুব টেস্টি?”
নয়না উত্তর দিলো না।

সার্ভেন্ট এসে জাহিনের সামনে ফ্রুট সালাদ দিয়ে বলল, “স্যার, অ্যাভোকাডো টোস্ট দিবো?”
“না, আমার জন্য পরোটা আর চা নিয়ে আসো।”
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন সার্ভেন্ট সবাই অবাক হলো জাহিনের কথা শুনে! যে সারাজীবন সকালে টক দই, চিয়া সিড, বিভিন্ন ফল দিয়ে সালাদ আর চিনি ছাড়া গ্রিন টি, আর অ্যাভোকাডো টোস্ট খায়, সে খাবে হেভি লিকারের দুধ চা দিয়ে পরোটা!
নয়না এক গ্লাস ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
মেহনুর সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। নয়নাকে দেখে বলল, “বাহ, আগে বড়টার মাথা খেয়েছো, এখন ছোটটার মাথা খাওয়ার প্ল্যান করছো!”

নয়না ভ্রু কুঁচকে মেহনুরের দিকে তাকালো। কিছু বলতে যেয়েও চুপ হয়ে গেলো। রেজা যাওয়ার সময় বলেছিল, “যে যা বলুক, চুপ থাকতে। কোনো কথার উত্তর দিতে না। কোনো কথা খারাপ লাগলে আমাকে শোনাতে, আমি বুঝে নেবো।”
নয়না রুমে এসে বেডের ওপর ওড়নাটা রেখে চুলগুলো খুলে বসলো। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে রেজাকে কল করলো।
“হেই, সুইটহার্ট, এত দেরি কেন?”
নয়না চুপ করে রইলো।
জিয়ান খানিকক্ষণ নয়নার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “কে কী বলল তোমাকে? হঠাৎ করে চাঁদে গ্রহণ লাগলো কেন?”
নয়না তবুও চুপ করে রইলো।
“দেখো, জান, আমি তো বলেছি, তুমি সবকিছু আমাকে বলবে। আমি তোমাকে জাজ করবো না। খুলে বলো, কী হয়েছে।”
নয়না সবটা খুলে বলল। জিয়ান বলল, “শোনো, জাহিন তো সব সময় ওইসব রুক্ষ খাবার খায়। আজ হয়তো তোমাকে মজা করে চা দিয়ে পরোটা খেতে দেখে ওর খেতে ইচ্ছে করলো। আর মেহনুরের ব্যাপারে আমি দেখে নিচ্ছি। এবার তো হাসো।”
“কিন্তু আমার তোমার ভাইকে একদম সহ্য হয় না।”
“সহ্য হয় না বলেই তো ওর কোনো কাজ তোমার ভালো লাগে না। তুমি সহজভাবে নাও। মনে করো জাহিন তোমার বড় ভাই।”
“ধুর, বাদ দাও। এমন ভাই আমার লাগবে না।”
“আচ্ছা, বাদ দিবো। তবে আমি না, তুমি। এখন আম্মুর কাছে যাও। গিয়ে বলো, আজ তুমি তার সাথে রান্না করবে।”
“আমি তো রান্না পারি।”
“হ্যাঁ, তুমি রান্না পারো, তাই তো রান্নার কাজে সাহায্য করবে। তাহলে তোমার বোরিং সময় কাটবে না।”
“ওখে, ডিয়ার। তোমার ফ্লাইট কবে?”
“আজ রেস্ট, কাল ব্যস্ত থাকবো।”
“আচ্ছা, রেস্ট করো।”
“আবার কথা হবে, খুব তাড়াতাড়ি।”

নয়না কল কেটে তুষিকে কল করলো।
“কিরে, আবার স্মরণ করলি যে?”
“তোর মনে আছে, আমি যে একবার বলেছিলাম, যমুনা ফিউচার পার্কে একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল? ওই যে ঘড়ি আটকে গেলো?”
“হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু হঠাৎ এই কথা?”
“ওই ছেলেটা জাহিন।”
“জাহিন আবার কে?”
“তোর দুলাভাইয়ের জমজ ভাই।”
“এখন কী কোনো সমস্যা?”
“আরে, সমস্যা বলতে, মাঝখানে আমি ভুল বুঝে ওকে তোর দুলাভাই ভেবে রাগ-অভিমান দেখিয়েছিলাম। এখন ওকে দেখলেই আমার সহ্য হয় না।”
“সবই বুঝলাম, কিন্তু সহ্য না হওয়ার থিওরি বুঝলাম না।”
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫৯

“জিয়ান চলে গেছে ঘন্টা খানেক হবে৷ আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে নয়না৷ আজকাল আকাশে প্লেন দেখলেই নয়নার মন কেমন করে উঠে! মনে হয় তার আপন মানুষটা জুড়ে আছে এই দূর আকাশে উড়তে থাকা প্লেনে।আচ্ছা তোমার মনে আমার কথা কি এমন করেই জাগে? এমন করেই কি মন পোড়ে তোমার? নাকি তুমি ব্যস্তার ভারে ভুলে যাও আমাকে? নয়নার চোখের কোনে চিক চিক করছে নোনাপানি।বুকটাভার হয়ে আছে। মনে হচ্ছে বুকের উপর কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। শ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে নয়নার৷ মনে মনে বলে,এই যে আমার বুকভার, এ ভার কি তোমার হৃদয়ে ও পরে?নয়না জিয়ানের সাথে এয়ারপোর্টে যায় নি৷ হাতে সময় খুব কম ছিলো দ্রুত পৌঁছাতে হবে। তাই নয়নাও বায়না করেনি৷ যাওয়ায় সময় যখন নয়নাকে আলিঙ্গন করলো নয়নার ভেতরটা কেমন হাহাকারে ছেঁয়ে গেছে৷ মানুষটার চোখেও ছিলো রাজ্যের কষ্ট। কি নিদারুণ দৃশ্য। মেয়ে মানুষ তাও কাঁদতে পারে ছেলে মানুষ তো চাপা কান্না হৃদয় আটকে রেখে দিব্যি চলে। রোজ কত মানুষ এমন করেই প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে কে রাখছে সে-সবের খবর? জীবিকার তাগিদে বা একটু ভালো থাকার আশায় রোজ বেদনা লুকায় দুই প্রান্তে থাকা দু’টি মানুষ। অথচ সুখ সে তো সোনার ডিম সহজে তো ধরা ছোঁয়া যায় না৷ তবুও মানুষ একটু সুখের আশায় তেপান্তরে পারি জমায়।
“হাতের উল্টো পিটে চোখের কোনে জমে থাকা জলটুকু মুছে নিলো নয়না৷ মোবাইল হাতে নিতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো মৃদু হাসি। এই যে প্রিয় মানুষের ছোট একটা টেক্সট নিমিষেই মনের মেঘ কাটিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারে এক চিলতে রোদ। এই ক্ষমতা তো পৃথিবীতে এই মানুষটার ছাড়া কারো কাছে নেই। ছোট একটা টেক্সট অথচ নয়নার মনজুড়ে ছেঁয়ে গেছে প্রশান্তি।….আমি আছি। যত দূরেই থাকি তোমার হৃদয়ে আমি আছি প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।
” নয়না রিপ্লাই করলো না। এখন রিপ্লাই করলেও টেক্সট সেন্ট হবে না। সকালের তোলা পিকগুলো দেখতে লাগলো। মনে মনে বলে,আপনি তো ছিলেন চির অচেনা অথচ আজ আপনি ছাড়া অচল হয়ে পরে হৃদয়ের গতিপথ!
🌿নয়নার দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে দাঁড়িয়ে আছে তুষি৷ বিশাল বড় আলিশান বাড়ি। গেঠের সামনে বড় করে লেখা চৌধুরী ম্যানশন। নয়না দারোয়ানকে নিজের পরিচয় দিলো৷ দারোয়ান তুষির জন্য গেট খুলে দিলো৷ সুন্দর এক গার্ডেন এরিয়া৷ দুইপাশে পানির ফোয়ারাও আছে৷ ছোট ছোট দু’টো চেয়ার টেবিল আছে দুই পাশেই৷ তুষি ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো ঘরের প্রবেশ দ্বারে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে ব্যালেন্স হারিয়ে পরতে নিলে কারো হাতে বন্দি হয় তুষির হাত।
“তুষি সামনে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,আপনি!
” অন্তর তুষির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,এখানে কেন এসেছেন মতলব কি? চুরিটুরি করার ধান্দা নাকি?
“মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার। এটা আমার জিজুর বাড়ি। সাইডে সরুন।
” অন্তরের মন ভালো নেই তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো বের হয়ে। এসেছিলো জাহিনের সাথে রিতুর কেসের বিষয়ে কথা বলতে। জাহিন জিয়ানের সাথে এয়ারপোর্টে গেছে তাই দেখা হয়নি৷
“তুষি বাসায় ঢুকে সার্ভেন্টের সাথে নয়নার রুমের দিকে গেলো৷ নয়না তখন বিরহবিলাস করতে ব্যস্ত। তুষি সার্ভেন্টকে হাতের ইশারায় সরিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে নয়নার কাছে এসে পেছন থেকে নয়নার চোখে হাত রাখলো।
” নয়না চমকে উঠে বলে কে? পর মূহুর্তে তুষির কথা মনে পরতেই বলে,ভুষি তুই চলে এসেছিস?
“তুষি চোখ ছেড়ে দিয়ে বলে,না এসে উপায় আছে৷ নয়না তুই তো একদম রাজ্যসহ রাজপুত্র পেয়েছিস। আগে ছিলে মাম্মাস প্রিন্সেস এখন হয়েছিস মহা রাজার, মাহা রানী।
” হু। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে আমার কল্পনার চেয়েও বেশি দিয়েছেন৷ সব ঠিক আছে। এখন এসব বাদ দিয়ে তুই এবার তোর কথা বল৷ ফোন-টোন বন্ধ করে কই গা ঢাকা দিয়েছিলি আর দিয়েছিলি কেন সেটা বল? হঠাৎ করে গায়েব হওয়ার ভূত মাথায় চাপলো কেনো?
“নিজেকে একটু সময় দিতে। আসলে আমরা যত যত্ন করে ভালোবাসি অপর মানুষটা ঠিক ততটা যত্নে আমাদের ঠকায়।
” রাফিন ভাই তোকে ঠকিয়েছে? এটা ইম্পসিবল!
“আমিও প্রথমে এটাই ভাবতাম৷ অথচ কত নিখুঁত ভাবেই না আমাকে সে ঠকিয়ে গেছে। জানিস আমি দম বন্ধ হওয়া অনূভুতি নিয়ে কেঁদেছি এই ঠকবাজের জন্য। এখন এসব ভাবলেও হাসি পায়। আমি মৃত্যু যন্ত্রণা দেখিনি অথচ তাকে হারানো শোক আমাকে সে অনুভূতির সাক্ষাৎ করিয়েছে৷
” এটা কিভাবে সম্ভব?
“রাফিনের যে কাজিনটাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া ঝামেলা হতো। ও যে বারবার বলতো আমরা যাস্ট কাজিন এ-র বেশী কিছু না। সামনের শুক্রবার তার সাথেই ওর বিয়ে।
” কি বলছিস! তোকে বিয়ে করার জন্য তো রাফিন ভাই পাগল ছিলো৷ তো ভালোবাসা না থাকলে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়?
“শোন কিছু পুরুষ মানুষের মুখ আর মুখোশ চেনা বড়ই কষ্টসাধ্য। বিয়ে করতে চাইলেই সে সত্যি কারের ভালোসতো এটা তো নয়।ভালোবাসা আর চাহিদা দু’টোই ভিন্ন। আমি থাকতেও যার অন্য নারীর সঙ্গ প্রয়োজন ছিলো আমি কিনা তার জন্য এমন পাগলের মত কেঁদেছি! যাক বাদ দে এসব মানুষের কথা মুখে আনতেও ঘৃণা হয়। তাকে ঘৃনা করবো সেই যোগ্য ও সে না। আমার ঘৃণাও সে ডিজার্ভ করে না৷ অথচ তাকে আমি সর্বস্ব উজার করে ভালোবেসেছিলাম!
” আচ্ছা মন খারাপ করিস না৷ কথায় আছে যে যেমন তার সাথে তেমনটাই মেলে৷ কামারের দোকানে কি হিরে জহরত থাকে! তোর মত ভালো মেয়ে ওর কপালে নেই।মনে রাখিস যে যেমন তার সাথে তেমটাই মেলে৷ এসব ছাড় চল আমার সাথে।
“কই?
” আম্মুর সাথে দেখা করিয়ে আনি।
“আন্টি এই বাসায়?
” আরেহহহ নাহহ আমার শ্বাশুড়ি আম্মু।
🌿জিয়ান বিমানে উঠে বসেছে।এবার তার মনটা খারাপ। নয়না সাথে আসলে হয়ত একটু ভালো লাগতো৷ কিন্তু এতো সর্ট সময়! এরমধ্যে নয়নাকে আনা সম্ভব হলো না৷ মোবাইল বের করে নিজের ওয়ালপেপারে নয়নার হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,এরপরের বার তোমাকে ছাড়া এই পাইলট বিমানে উঠবে না৷ তোমাকে নিয়ে তবেই উঠবো৷ নিজের খেয়াল রেখো প্রেয়সী প্রিয়তমা৷ দশ দিনের ছুটির বদলে পনেরোদিনের ছুটি কাটিয়েছে জিয়ান৷ এবার হয়ত ছুটি পাবে না সহজে৷ এই দীর্ঘ সময় কি করে কাটাবো তোমাকে ছাড়া! এই যে আমি যাচ্ছি আমার সাথে কেবল আমার দেহ আছে। মন মস্তিষ্ক, চিন্তা, ভালোবাসা সবটা ফেলে রেখে যাচ্ছি তোমার কাছে। ফেরার পথ দীর্ঘ হলেও অপেক্ষায় ভালোবাসা সুমিষ্ট স্বাদে ভরপুর হয়ে উঠে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তোমার স্পর্শে আবার সতেজ হবে আমার দেহ-মন। ততদিন জলহীন মাছের মতই ঝটফট করবে ভেতরটা।
🌿জিয়ানকে ড্রপ করে জাহিন নিজের প্রাইভেট এপার্টমেন্টে চলে আসলো৷ আসতে আসতে চার পাঁচটা সিগারেট খাওয়া শেষ! আজকাল সিগারেট ছাড়া যেনো জাহিনের চলেই না৷ শার্ট খুলে রেখে আয়নার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বলে,ঠোঁটটা তোমার ঠোঁটের উষ্ণ পরশের অভাবে কেমন শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। তুমি তো কোনদিন আমায় ভালোবাসবে না। উন্মুক্ত বডির দিকে তাকিয়ে বলে,বডি বানিয়ে কি হবে যদি ভালোবাসার মানুষই পাশে না থাকে!হঠাৎ জাহিনের চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করলো রাগে কপালের রগ ফুটে উঠছে। স্বজোড়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আঘাত করলো৷ সাথে সাথে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরলো কাঁচের টুকরোগুলো৷ হাতের উল্টো পিঠ গেঁধে গিয়ে সেখান থেকে ঝড়তে লাগলো র’ক্ত৷
“বেডে বসে চিৎকার করে বলে,আই হেইড ইউ বাবা। সেই ছোট থেকে পদে পদে আমাকে বুঝিয়েছো আমি লুজার৷ তোমার সব ভালোবাসা কেবল জিয়ানের জন্য। আমি কেউ না! লাগবে না আমার তোমার মত বাবা৷ রাখবো না আমি জিয়ানকে এই পৃথিবীতে ও মরলেই তুমি আমার কদর বুঝতে শিখবে। তোমার আর আম্মুর সব ভালোবাসা, সব কেয়ার, সব প্রায়োরিটি রেজা পেয়েছে। আমি কে সেটা আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবো৷ আমার কাউকে দরকার নেই কাউকে না। হাত থেকে র’ক্ত ঝড়ে সাদা বেডসিট রঙিন হয়ে যাচ্ছে। তার শরীরের ব্যথা যেনো তার মনের ব্যথার কাছে তুচ্ছ।
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫৮

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫৮
রাতে জিয়ান সোফায় শুয়েছে নয়না বেডে৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে নয়না জিয়ানের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে৷ হটাৎ তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে জিয়ানের পায়ের উপর পরে৷ নয়নার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে৷ ছোট একটা কথার জন্য এতো অভিমান কেন হলো তাদের মাঝে? কেনো শেষ রাতটা নিজের মানুষটার বুকে মাথা রেখে শুতে পারলো না?নয়নার ভেতরে দগ্ধ দগ্ধ করছে রাতের ক্ষত। কেন জেদ করলো সে নিজের উপর মহা রাগ হচ্ছে তার।
“জিয়ান চোখ মেলেই দেখে নয়না দাঁড়িয়ে কাঁদছে৷ রাতের সব মান অভিমান ভুলে নয়নাকে জড়িয়ে নিলো বুকের মাঝে।
” জিয়ানের স্পর্শে নয়নার কান্না যেনো আরো বেড়ে গেলে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো৷
“প্লিজ কেঁদো না। স্যরি জান৷ সব দোষ আমার। প্লিজ কেঁদো না।
” জিয়ানের কথা যেনো আগুনে ঘী ঢালার মতই নয়নার কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
“জিয়ান নয়নাকে বুক থেকে সরিয়ে নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে,জান এই কানে ধরলাম আর কখনো এমন আবদার করবো না যা তুমি অপছন্দ করো। কেঁদো না প্লিজ। এতো সুন্দর সকাল তোমার কান্না দেখে বিষাদে ছেয়ে গেছে৷ দেখে ঝলমলে রোদটাও কেমন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে।
” নয়না নাক টেনে বলল,স্যরি। আমি জানি ভুলটা আমার৷ কিন্তু তাই বলে,আমাকে রেখে ঘুমাবা! আমার কি কষ্ট হয়নি তোমার সঙ্গ ছাড়া। কাল রাতে তো থাকবে না তখন আমি কি করে এই দুঃখ ঘুচাবো?
“জিয়ানের খুব মায়া হচ্ছে এবার সাথে অনুশোচনাও৷ তার বোঝা উচিৎ ছিলো নয়নার বয়সটা কম। তার সাথে সে কেন অভিমান ধরলো!
” জিয়ান নয়নার গালে চুমু দিয়ে বলে, আমি স্যরি জান৷ দোষটা আমার৷ আমার তোমাকে বোঝা উচিৎ ছিলো৷
“নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমাকে অনেক ভালোবাসা দাও জান৷ আমি এতোদিন কি করে থাকবো তোমাকে ছেড়ে! আমার যে তোমার স্পর্শের অভ্যাস হয়ে গেছে।
” জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। চুলে চুমু দিয়ে বলে,বাহহহ রাতের অপূর্ণতা এখন ভোরের আলোয় পূরণ করতে চাও। বৌটা একটু অবুঝ হলেও ভীষণ সরল আর স্নিগ্ধ। ঠিক ভোরের শিশিরের মত।
“নয়না জিয়ানকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,আদর করো জান৷ গভীর ভাবে ভালোবাসো আমাকে৷
” জিয়ান নয়নার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,এ মাতাল করা আবদার উপেক্ষা করার সাধ্য জগতে কারো নেই। তুমি আমার শিশিরস্নাত ভোরের ভেজা বকুলফুল আমি শুষে নেবো তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা সমস্ত ঘ্রাণ। আমার শরীর জুড়ে লেপ্টে রবে তোমার স্পর্শের মাতাল করা সৌরভ৷
ঘন্টা দুয়েক জড়িয়ে রইলো একে অপরের চাদর হয়ে৷
“ফ্রেশ হয়ে দু’জনে একসাথে নাস্তা করতে নিচে আসলো৷
” নয়না ব্ল্যাক আর রেড কালারের কম্বিনেশনে একটা ড্রেস পরেছে। রেজার গায়ে জড়িয়ে আছে ব্ল্যাক টিশার্ট ব্ল্যাক প্যান্ট।
“নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত।
” নাজিম চৌধুরী বলল,রেজা আজ ক’টা বাজে তোমার ফ্লাইট?
“বাবা দুপুর তিনটে বাজে৷
” আজ রাতে আমারও সিঙ্গাপুর যাওয়ার টিকেট বুক করা৷ এই বয়সে আর ভালো লাগে না এসব৷
“জিয়ান জাহিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুই তো ফ্রী আছিস ব্যবসাটা সামলা৷ বাবা আর কত টানবে একার ঘাড়ে?
” ভাই এসব প্যারা আমাকে দিয়ে হবে না৷ তারচেয়ে বরং পাইলটের জবটা ছেড়ে অফিস জয়েন করো তাহলেই তো হয়।
“নাজিম চৌধুরী রেগে গেলেও রাগটা সংযাত করে ফেললো৷ শান্ত স্বরে বলল,তোরা দুজন একি সাথে পৃথিবীতে এসেও দু’জন দুই মেরুর৷ জাহিনকে দেখলে মনে হয় আমি অতীতে নিশ্চিত কোন পাপ করেছি এই কারণে ও মানুষ হতে পারেনি৷ নয়ত এতো ভালো পরিবার এতো সুন্দর পরিবেশে থেকেও এতো অভদ্রতা কি করে শিখলো! জিয়ানের হওয়ার কথা ছিলো সিঙ্গার৷ এতো ভালো গান গাইতো ছেলেটা। ক্লাস টেনে যখন পড়িস তোরা সেদিন জিয়ানকে বললাম,জানিস আমার অনেক শখ আমার ছেলে পাইলট হবে৷ আকাশে প্লেন চালাবে৷
” জিয়ান তখন কি বুঝলো জানিনা৷ জড়িয়ে ধরে বলল,অবশ্যই তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে বাবা৷
“জাহিন খাবার অর্ধেক প্লেটে রেখে উঠে চলে গেলো৷
” জিয়ান নাজিম চৌধুরীর কাঁধে হাত রেখে বলে,বাবা নাহিদকে আমি আমাদের অফিস জয়েন করতে বলবো৷ ওর সাথে জোড়াজুড়ি করে তো কোন লাভ হবে না জানোই। কোন খারাপ কাজ তো করেনা। চলুক ওর মনমতো যতদিন চলতে চায়। একদিন ঠিক নিজের দ্বায়িত্ব বুঝে নেবে।
“সকালের নাস্তা শেষ করে জিয়ান নয়নাকে বলল,চলো তো আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
” আপনি ওয়েট করেন আমি রেডি হয়ে আসছি।
“আর কি রেডি হবা! তোমাকে মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। চুলটা শক্ত করে হাত খোপা করে নিয়ে মাথায় ওড়না টেনে চলে আসোতো।
” নয়না জিয়ানের কথা মতো চলে আসলো৷ বাড়ির সামনের গার্ডেনে এসে জিয়ান নয়নার সাথে সেল্ফি নিলো৷
“জিয়ান নিজের বাইক নিয়ে এসে বলে,আসো জান৷
” নয়না জিয়ানের পাশে বসে জিয়ানের কাঁধে হাত রাখলো।
“শুনো বৌ হ্যাসবেন্ডের সাথে বাইকে বসলে মাঝখানে কোন ফাঁকা রাখতে নেই। একদম লেপ্টে বসো আমার শরীরের সাথে। তবেই না ফিল হবে বৌকে নিয়ে বাইক চালানোর।
” নয়না চুপচাপ জিয়ানের শরীরের সাথে মিশে বসলো। জিয়ান মুচকে হেসে বলে,তোমার আমাকে ভয় পেতে হবে না প্রিয়তমা। তোমার যা ইচ্ছে মানা করতে পারো। আমি তোমারই।
“নয়না দু’হাতে জিয়ানের বুক জড়িয়ে ধরে বলে,শোন আমি হ্যাসবেন্ডের সাথে বাইকে বসেছি সো এভাবে চিপকে না বসলে ফিল করবো কি করে। চুপচাপ ড্রাইভ করুন তো আই ফিল বেটার।
” জিয়ান ড্রাইভা করছে। ইশশ এই অনুভূতি ব্যখ্যা করার মত না। মনের মধ্যে যেনো শত ডানার প্রজাপতি উড়ছে।
“নয়না জিয়ানে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে একটা গান ধরুন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। থুরি বাইক ড্রাইভার।
” এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?

“গাড়ি এসে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থামলো।
জিয়ান বাইক পার্ক করে নয়নাকে নিয়ে শপিংমলে ঢুকলো। নিজের জন্য নয়নার পছন্দের, শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট, টাউজার কিনে নিলো।
” নয়না বলল,আমার না আপনাকে লুঙ্গী পরা দেখার শখ।
“লুঙ্গী!এই না আমি কোনদিন লুঙ্গী পরিনি। এসব না।
” আরেহহহ জান আমিই তো। প্লিজ প্লিজ।
” জিয়ান চোখ ছোট করে বলে তাহলে তোমাকেও বিকিনি পরে দেখাতে হবে।
“ছিহহহ আপনাকে কি আমি জাঙ্গিয়া পরতে বলছি!
” আরেহহ ঠিক আছে আমি লুঙ্গী পরবো এবার না পরেরবার।
“শপিং শেষ করে দ্রুত বাসায় এসে সব গুছিয়ে নিচ্ছে।
” নয়নাও হেল্প করে জিয়ানকে৷
“হুট করে জিয়ান প্যাকিং ছেড়ে নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো।
” নয়না বললো,কি হলো?
“জানিনা আমার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকবো পাখি!
” নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,মোবাইল আছে তো মিস্টার পাইলট মহাশয়। ফোনে প্রেম জমে ক্ষীর হবে।
“তবুও ইচ্ছে করছে তোমাকে একদম নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে।
” এতো উতলা হতে নেই। আমি আপনার সারাজীবনের জন্য পাশে আছি ফুরিয়ে যাচ্ছি না৷ আপনার অর্ধাঙ্গিনী শুধু আপনার৷
“জিয়ান নয়নার উষ্ণ ঠোঁট দুটি দখল করে নিলো নিজের ঠোঁট দিয়ে।
আচ্ছা ভালোবাসার সময় এতো দ্রুত ফুরিয়ে যায় কেন! এইযে জিয়ানের মনে রাজ্যের শূন্যতা এসে ভর করেছে। এই আকুলতা কেই বুঝি ভালোবাসা বলে?চেনা নেই জানা নেই তবুও কবুল বলার মাধ্যমে দুটি প্রাণ আজ যেনো মিলেমিশে একাকার। একজন অপরজনকে ছাড়া যেনো শূন্য। লাভ ম্যারেজ ইট’স ওকে বাট এরেঞ্জ ম্যারেজ হিট ডিফারেন্ট।
” নয়না আজকাল অনুভব করে তার নিজের একটা মানুষ আছে। বাবা মায়ের বাইরে তার একান্ত ব্যাক্তিগত মানুষ। ইশশ মানুষটা শুধু তার নিজের। তার শরীর থেকে মন সব জায়গায় শুধু তার রাজত্ব। সিংহাসন বিহীন এক রাজ্যের রানী সে৷ যা সে দখল করেছে হৃদয়ের বিনিময়ে। হৃদয়ের লেনাদেনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে এক কঠিন যুবকের হৃদয়ের রানী।
#চলবে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫৭

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫৭
“নয়না রাস্তায় বসে পরে৷ আমি কোথাও যাবো না বাসায় যাবো৷
“পাগলামি করছো কেন! তাড়াতাড়ি ওঠো। রাস্তায় কেউ বসে? নিব্বি বৌ জুটেছে আমার কপালে৷
” একদম নিব্বি বলবেন না৷ আমি সুনয়না চৌধুরী হু।
“মিসেস চৌধুরী এভাবে রাস্তায় বসে থাকতে নেই। দয়া করে উঠুন। আপনি যা বলবেন তাই হবে মিসেস চৌধুরী।
” নয়না দু”হাত প্রসারিত করে বলে,তাহলে কোলে নিন আমাকে।
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো৷
” নয়না জিয়ানে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,শুনুন আমাকে আম্মুর কোল থেকে নিয়ে এসেছেন এখন আপনার কোলে তুলে রাখবেন৷
“আহাগো বৌয়ের কত আদুরে আহ্লাদ। চলো না যাই।
” নাহহ বাসায় যাবো।
“জিয়ান নয়নাকে বলল,এভাবে মানা করে দিচ্ছো নিষ্ঠুর বৌ।
” বাসায় যাবো তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন৷
জিয়ান নয়নাকে গাড়িতে বসালো নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,রাগ করেছেন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার? নয়না জিয়ানর হাতের উপর হাত রেখে বলে,ছেলে মানুষের অভিমানী চেহারা এতো আকর্ষণীয় লাগে তোমাকে না দেখলে জানতাম না। তোমাকে এখন ঘুমন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে জানো সখা।
“জিয়ানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির ঝলক ফুটে উঠলো। তার পিচ্চি বৌটা জানে কিভাবে তার বরকে মানাতে হবে৷ তবুও তা প্রকাশ করলো না৷
” এই শুনছো। ওগো শুনছো রাগ করে না প্রাণের স্বামী রাগলে তোমায় লাগে পঁচা আলু।
“জিয়ান গাল ফুলিয়ে বলে,পঁচা আলু!
“তো রাগ করলে কাউকে ভালো লাগে নাকি জানো না?
” জিয়ান নয়নার দিকে ঘুরে বলে,কে বলেছে রাগলে কাউকে ভালো লাগে না৷ এক হাঁটুর বয়সী পিচ্চি আছে যে রাগলে তাকে স্টবেরী লাগে। মনে হয় টুপ করে খেয়ে ফেলি।
“নয়না জিয়ানের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,তোমার চুলগুলো এলোমেলো থাকলে বেশী হ্যান্ডসাম লাগে। মানে মেসি হেয়ার এ মানায় তোমাকে।
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,এই প্রথম কেউ পাইলট রেজা চৌধুরীর হেয়ার টাচ করার সাহস করেছে৷
“আহা মিস্টার প্লেন ড্রাইভার এটা তৃতীয়বার আমি তোমার মাথায় হাত বোলাচ্ছি৷ বলতে পারো এটা আমার ফেবারিট কাজ।
” তো মিসেস চৌধুরী তুমি কেনো আমার সাথে রিসোর্টে যেতে রাজি হচ্ছো না?
“আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে বাসায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে। ইচ্ছে করছে তোমার বাহুতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।
” জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,বুঝেছি মিসেস চৌধুরীর আদর আদর ফিল হচ্ছে। ইশশ বাসায় ঢুকে সোজা কোলে তুলে বেড রুমে নিয়ে যাবো৷
“নয়না লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
” জিয়ান নয়নার চোখের উপর ফু দিয়ে বলে,লাজে রাঙা বৌ আমার।
“গাড়ি এসে থামলো চৌধুরী ম্যানশনের সামনে।
” নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে,হাত বাড়িয়ে ম্যারিনোকে ধরে কোলে তুলে নিলো। ম্যারিনোর কথা মনে পরে মন মলিন হয়ে গেলো জাহিনের। ম্যারিনো মারা গেছে তার ছোট একটা ভুলে ম্যারিনো নেই। এই যে ম্যারিনোে মত দেখতে যে বেড়ালটা তার কাছে আছে তাকে কেনো অতোটা আপন লাগে না! আচ্ছা মানুষ তবে কেন বলে,চেহারার দেখে ভালোবাসা হয়। এই যে একি চেহারা তবুও তো মন পোড়ে সেই আমার পুরনো ম্যারিনোে জন্য।
জাহিন হটাৎ খেয়াল করলো জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়েছে৷ জিয়ানের হাত নয়নার কোমড়ে৷ শাড়ি কিছুটা সরে যেয়ে কোমড়ের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।
জাহিন হুট করে বেড়ালটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
“দ্বিতীয় তলা থেকে বেড়ালটা পরে ম্যাও ম্যাঁও করে উঠে।
” নয়না ভয়ে চিৎকার দিয়ে জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“জিয়ান নয়নাকে কোল থেকে নামিয়ে ম্যারিনো ভেবে নতুন বেড়ালটাকে কোলে তুলে নেয়৷ কিন্তু বেড়ালটা কেমন অপরিচিত লাগছে!
” নয়না জিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বলে,আমি বেড়াল ভয় পাই ছাড়ুন ওকে।
“ওর নাম ম্যারিনো। জাহিনের আত্মা।
” সে যা হোক নামান।
“জিয়ান একজন সার্ভেন্ট ডাক দিয়ে ম্যারিনোকে তার কাছে দিয়ে বলে, ম্যারিনোকে ওর সঙ্গীর কাছে দিয়ে আসুন।
” জাহিন রুমে এসে একসাথে দুটো সিগারট ধরায়। সিগারেটের ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দেয় তার উদ্ভট সব ভাবনা চিন্তা। সে জানেনা তার কি চাই সে জানে তার জিনিস তার ফেরত চাই। জাহিন দু’টো সিগারেটের ধোয়া টেনে নিয়ে বলে,যা আমার তা হয়ত আমার থাকবে নয়ত আর কারো হতে পারবে না৷
“জিয়ান বসায় এসে সোজা মিতা বেগমের রুমে ঢুকলো৷ মিতা বেগম তখন নামাজ শেষ করে সবে তাজবিহ নিয়ে বসছে।
” জিয়ান ডাকলো আম্মু আসবো?
“মিতা বেগম ঘাড় বাকিয়ে বলে,অনুমতি নিতে হবে না আয়৷
” জিয়ান এসেই মিতা বেগমের কোলে শুয়ে পরলো৷
“মিতা বেগম জিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,কিরে খোকা কিছু বলবি?
” কিছু না বললে,তোমার কাছে আসা যাবে না?
“মায়ের কাছে আসতে সন্তানের কোন কারণ লাগে না। তবুও আমি জানি তুই কিছু বলবি।
” আম্মু আমি তো কাল চলে যাবো। নয়নাকে দেখে রেখো ও খুব সেনসিটিভ মেন্টালিটির। বাসায় যেতে চাইলে যেতে দিও বাবা যাতে বাঁধ না সাধে৷
“তোর বাবা রাগী স্বাভাবের যদিও এটা তোদের বংশগত তবে মনটা একদম কোমল। সে নয়নাকে খুব স্নেহ করে।
” নয়না দরজায় এসে বলে,আম্মু আমাকে আদর দিবে না?
“জিয়ান নয়নার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ নয়নার পরণে তার টিশার্ট যদিও গায়ে ওড়না জড়ানো।
” আয় এদিকে আয় তোকেই তো আদর বেশী করবো। ছেলেটাতো চলেই যাবে তার পর দুই মা মেয়ে মিলে সারাক্ষণ একসাথে ঘুরবো ফিরবো।
“জিয়ান চট করে উঠে বলে,আম্মু তাহলে এখন রুমে যাই।
” নয়না বলল,আজ আম্মুর সাথে ঘুমাবো৷
“জিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে৷
” মিতা বেগম নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,নিশ্চিত অভিমান হয়েছে আমার ছেলেটার উপর? আজ অভিমান ছেড়ে দে ফের যখন আসবে তখন করিস৷ যাহহ তোর বৌকে নিয়ে যা।
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে রুম থেকে বের করে সাথে সাথে কোলে তুলে নিয়ে বলে, লজ্জা করে না বরের আদর না চেয়ে শ্বাশুড়ি আদর চাও?শুধু শুধু হাঁটুর বয়সী বলি?
” ছিহহহ কিসব কথা৷ থাকবো না আপনার সাথে চরম অসভ্য আপনি৷
“একবার রুমে চলো তারপর দেখাচ্ছি অসভ্যতা কাকে বলে৷
” মেহনুর মুখে হাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পরলো,চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরতো লাগলো নোনাজল৷ তার কপালে কেন ভালোবাসা নেই?আচ্ছা নয়নার জায়গায় সে থাকলে তার জীবনটা নিশ্চিত রঙিন হতো।
“জিয়ান রুমে এসে নয়নাকে বেডে চেপে ধরে বলে,এবার বলো, আদর দাও জান৷
” ইশশ শখ কত জীবনেও বলবো না৷
“না বললে কিন্তু খবর আছে।
” বলবো না, না না৷
🌿নীলাঞ্জনা হসপিটালে থেকে চেকআপ করে বের হয়ে রিকশা নিলো। গাড়িতে তার দম বন্ধ লাগে তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। রিকশা কিছুদূর এগোতেই লাবিব লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে পরে৷
“রিকশা থেকো নামো।
” তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তবে ফিরিয়ে দিচ্ছো কেন?
“ভালোবাসতাম। তবে আমি থাকতেও যার অন্য নারীর সঙ্গ প্রয়োজন হয়। তাকে ভালোবাসা তো দূর ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার। নীলাঞ্জনা একদলা থুতু ফেলে বলে,ফেলে দেয়া থুতু আর তোমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই আমার কাছে৷ লক্ষ কোটিবার পায়ে ধরলেও ফেরত নেবো না৷
” গাড়ি থেকে না নামলে ওইযে সামনে পুলিশ বক্স সেখানে যেয়ে চিৎকার করবো৷
“লাবিব নেমে গেলো রিকশা থেকে৷
” নীলাঞ্জনা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,পুরুষ মানুষ জানেনা নারী যত যত্ন করে ভালোবাসতে পারে তারচেয়ে দ্বিগুণ ভাবে উপেক্ষাও করতে পারে৷ প্রিয়তম মানুষ ও একসময় তাদের কাছে মৃত হয়ে থেকে যায়। তাদের ধোঁকা জানার পর তাদের অস্তিত্ব থাকা না থাকা সমান। তারা চোখের সামনে থেকেও যেনো না থাকার মত এক্সজিস্ট করে।
#চলবে।

বিঃদ্র-ব্যস্তার কারণে রিচেক করা হয়নি৷ ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷

মরীচিকার সংসার পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0

#মরীচিকার_সংসার (শেষ)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

আমার মরীচিকার সংসার তার নিজ গতিতে চলছে। সেই একই নিয়ম। ঘরের সমস্ত কাজ করো। রাতে সবার অভিযোগ শোনো। স্বামীর মাঝে মাঝে গায়ে হাত তোলা সহ্য করো। সব মিলিয়ে মানিয়ে নিয়ে, আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কোনরকম টিকে আছি। আমি জানি এভাবে শত শত মেয়েরা মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। যাদের সন্তান আছে তারা তো ভুলেও সামনে পা বাড়ায় না। বাড়াতে চায় না।

অতঃপর এই মরীচিকার সংসারে আমার সাথে এমন একটি ঘটনা ঘটলো যে আমি বাধ্য হলাম নিজের কথা ভাবতে। সারাজীবন সংসার, পরিবার, সমাজ নিয়ে তো অনেক ভাবলাম। এবার আমাকে আমার কথা ভাবতে হবে। সেটা আমি বুঝে গেলাম। গত সাতদিন হলো আমার ননদ এই বাড়িতে এলো। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে কথা শোনানো, সমস্ত কাজে হুকুম করা। সব মিলিয়ে আমার জীবন যেমন ছিলো তেমনই। তবে একদিন বিকালবেলা ননদের কান্নার শব্দ পেয়ে অবাক হলাম। ঘটনাচক্রে সেদিন পলাশও বাড়িতে ছিলো। ননদের কান্না দেখে সবাই তার কাছে গেলাম। পলাশ বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,“তোর কি হয়েছে? কান্না করছিস কেন?”

“আর বলিস না বাবা। ওর কানের দুল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
শাশুড়ী মা ননদের হয়ে জবাব দিলো। পলাশ কিছুটা হতবাক হলো। বিরক্তি নিয়ে বললো,“এই বাড়ি থেকে আর কত কানের দুল হারাবে।”

“এবার হারাইছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় তোর বউ কিছু একটা করেছে।”
শাশুড়ীর এই কথায় পলাশ তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমি বোকার মতো সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ননদ তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,“আগেরবার বলছিলো ওটা তার কানের দুল। আমার নয়। আমি নিশ্চিত তখনই তার আমার কানের দুলের উপর নজর পড়েছে। সেই সরিয়েছে।”

“তোমরা আমাকে চোর বলছো?”
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম। সেই মূহুর্তে শাশুড়ী তেলেবেগুনে জ্ব লে উঠলো। পলাশ থামিয়ে বলে,“রিমি তুমি যদি নিয়ে থাকো তাহলে দিয়ে দাও।”

পলাশের কথায় এবার আর আঘাত পেলাম না। এখন এসব সয়ে গেছে। এই মানুষটার একের পর এক ব্যবহার, বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে এই মানুষটি আমার আপন কেউ নয়। যাই হোক, কানের দুল নিয়ে ঘরে বিশাল হট্টগোল বেধে যায়। অতঃপর সেই কানের দুল আমার ঘরেই পাওয়া যায়। আমি বুঝতে পারলাম, এটা ননদের কাজ। আমাকে ছোট করার। কানের দুল আমাদের ঘরে পাওয়ার পর পলাশ আমাকে জিজ্ঞেস করে,“এসব কি রিমি? তুমি?”

“আমি এটা এখানে রাখিনি। আর আমি এটাও জানি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কাজটা যে তোমাদের।”
আমার কথাটি মাটিতে পড়তে পারলো না, তার মাঝে শাশুড়ী তেলেবেগুনে জ্ব লে উঠে। সে বলে,“মুখ সামলে কথা বল ছোটলোক। চো রের বাচ্চা চোর। সেদিন নিজের প্রমাণ করে দুলটা নিতে চাইছিলো আর আজ চুরি করে ফেললো।”

“খবরদার আম্মা। ভুলেও আমাকে চোরের বাচ্চা বলবেন না। আমার বাবা, মা যথেষ্ট সৎ মানুষ।”
আমি কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে পলাশ গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আমার অপরাধ আমি চুরি করে আবার বড় গলায় কথা বলেছি। পুরো বিকাল জুড়ে তাদের আমার উপর অকথ্য গালা গালি, অপবাদ চললো। আবার আমার বাবাকে ডেকে বিচার বসাতে চাইলো। এবার আর আমি সহ্য করলাম না। কানের দুলগুলো কেড়ে নিয়ে বললাম,“আমার বাবাকে ডেকে পাঠাতে হবে না। আমি চলে যাচ্ছি। তোমাদের মতো নোংরা মানুষের সাথে যতই মানিয়ে নেই না কেন? কখনো একসঙ্গে থাকা হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি।”

“কি বললে তুমি?”
পলাশ রাগান্বিত গলায় বললো। এবার আমিও দুইটা গা লি দিয়ে বললাম,“যা শুনছিস তাই। ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। এভাবে প্রতিদিন কু কুরের মতো ব্যবহার করা। একটার পর একটা অপবাদ দেওয়া। সব মিলিয়ে তোমরা আমার জীবন নরক বানিয়ে ফেলেছো। এখন আমার বাবাকেও ছাড়ছো না। এভাবে চললে আমার বাবার এই বাড়িতে এসে আমার বিচার করতে করতে ম রতে হবে। আর আমাকে তো জীবিত অবস্থায় নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। অনেক হয়েছে আর নয়। সবকিছুর একটা সীমা থাকে। তোমরা আমাকে পুরোপুরি ছাড়তেও চাও না আবার ভালোভাবে বাঁচতেও দাও না। এতদিন তোমার মা তোমার হাতে মা র খাইয়ে মজা নিতো। আজ বোনের শখ হয়েছে তাই চুরির অপবাদ দিলো। এখন আমার বাবাকে ডেকে এনে যা নয় তাই বলে অপমান করবে তাই তো?”
একটু থেমে আবারও বললাম,“না। সেটা আর হচ্ছে না। অনেক হয়েছে। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে অনেক কাটিয়েছি তোমার বাড়ি। আর নয় তো। এবার আমার মুক্তি প্রয়োজন। এই নরক থেকে।”
এই পর্যায়ে কান্না করে দিয়ে বললাম,“যেদিন এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি সেদিন চোখে অনেক স্বপ্ন ছিলো। মা নেই, শাশুড়ীর মাঝে মাকে খুঁজে নিবো। ননদকে বোনের মতো ভালোবাসবো। কিন্তু পরিশেষে কি হলো? আসলে একপাক্ষিক কোনকিছু হয় না। তাছাড়া যদি এই বাড়ির একজন অন্তত আমার হয়ে লড়াই যদি করতো। তেমন কেউ নেই। যার হাত ধরে আমি এই বাড়িতে এসেছি, সেই তো আমাকে ভালোবাসে না, বিশ্বাস করে না। তার চোখে আমি অপরাধী, আমি শুধু তার প্রয়োজন। এমন এক অপ্রয়োজনীয় ঘরে কেন থাকবো? একটা যন্ত্রণাময় সংসারে।”

আমার কথার জবাবে পলাশ এবং তার মা চ্যাতে যায়। তারা অকথ্য ভাষায় আমার সাহস নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। আমিও তাদের জবাব দিয়ে দেই। সেই সাথে বলি,“এই কানের দুল আমার মায়ের। সেটা তোমরা চুরি করেছো। আজ আবার সেটা দিয়ে আমাকে চোর বানাতে চাচ্ছো। সমস্যা নাই। আমাকে চোর বানানোর প্রয়োজন নেই। এটা আমি তোমাদের চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এখন। এটা আমার মায়ের। এটা আমার। তোমাদের কারো না। তাই আমাকে বাধা দিও না। উল্টা চুরির দ্বায়ে জে লে যাবে। অনেকদিন সহ্য করেছি। আর নয়। আমার মায়ের জিনিস অনেক ভোগ করেছো। এবার বাদ দাও। মানুষের যখন সহ্যের সীমা পার হয়ে যায় তখন সে কি করতে পারে সেটাও তোমরাও দেখে নাও।”
এখানে অনেক তর্ক বিতর্ক চলে। অবশেষে তাদের সবাইকে সুন্দরমতো জবাব দিয়ে আমি ঘর থেকে বের হলাম। আমি বুঝে গিয়েছি, এই সংসারে আমি টিকতে পারবো না।আমি যতই চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছি ততই তাদের অত্যাচারের পরিমান বাড়ছে। শারীরিক মানসিক সব অত্যাচার তারা করছে। এই অসুস্থ পরিবেশে আমি সারাজীবন কাটাতে চাই না। তাই আজ নিজেকে শক্ত করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
__
বাড়ির দরজায় আমাকে দেখে ভাবী মুখটা কালো করে ফেললো। তাকে পাত্তা না দিয়ে আমি ভেতরে আসলাম। বাবা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। ইতিমধ্যে পলাশ তাকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আমার নামে বদনাম করে দিয়েছে। তাই বাবা সব জানে।এজন্যই ভাবী আমাকে দেখে খুশি হতে পারলো না। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে অসহয় গলায় বললাম,“বাবা আমি আমার সব দিয়ে ওখানে টিকে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ আর পারছি না বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ঐ বাড়িতে আর মানিয়ে নিয়ে, মেনে নিয়ে থাকতে পারছি না বাবা।”

কথাগুলো বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। দিনের পর দিন কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে ওখানে টিকে ছিলাম সেটা বললাম বাবাকে। এসব শুনে ভাবী বলে,“সংসার করবা না তো কি আমাদের ঘাড়ের উপর বসে খাবা? হায়রে আমার পোড়া কপাল, এক বুড়ার জন্য বাঁচি না এখন আবার মেয়ে এসে ঝুটছে।”

একটু থেমে পুনরায় বললেন,“আমার সংসারে এসব চলবে না। আসছো ভালো। একবেলা খেয়ে বিদায় হও।”
এবার প্রথমবারের মতো আমার বাবাও জবাব দিলেন। সে বললেন,“এটা তোমার বাড়ি নয় যে আমার মেয়েকে তাড়িয়ে দিবে। এখন অব্দি এই বাড়িটা আমার নামে। তাই তোমাদের অসুবিধা হলে তোমরা বাড়ি ছাড়তে পারো।”

“কি? বাবা এই কথা আপনি বললেন? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? আপনি বললেন এটা? আচ্ছা তা এটা নাহয় আপনার বাড়ি কিন্তু গিলেন কার টাকায়? সেটা তো আমার স্বামীরই।”
এই কথা বলে ভাবী একের পর এক আমার বাবার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতে লাগলো। যা মেয়ে হিসাবে আমার শোনা কষ্টকর। আমিও বলে দিয়েছি, আর খাবে না। আমরা বাবা, মেয়ে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করবো। তাদের টাকায় কেনা খাবার খাবো না। আমরা আমাদেরটা ম্যানেজ করে নিতে পারবো। ভাবী এরপর আর কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে নিজের ঘরে গেলেন।

পরিশেষে, আমি নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ছোট একটি কাজ যোগাঢ় করে নিয়েছি। সেই সাথে আবার মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে নিয়েছি। আমার বাবা এবং আমি আমার টাকায় মোটামুটি ভাবে জীবন কাটাচ্ছি। ভাবী আমাদের সাথে তর্ক করে আলাদা হয়ে গেছেন৷ আমরাও তাদের আর বাধা দেইনি। অন্যদিকে পলাশ কয়েকবার নিতে আসছিলো কিন্তু যাইনি। আমি জানি পলাশের মতো মানুষ কখনো শুধরাবে না। তার পরিবারও ঠিক হবে না। এদের মতো পরিবারে যারা পড়ে সেই মেয়েরাই জানে জীবন কত কষ্টের। এদের কপালে সারাজীবনে কখনো সুখ জোটে না। তবে শেষ বয়সে যখন বিছানায় পড়ে তখন শাশুড়ীরা মা মা বলে কেঁদে ম রে। তখন যে অপমান, অপদস্ত করা বউরাই কাজে লাগে। পলাশরাও সেই যুগে শুধরে যায়। যখন একটা মেয়ের জীবনের সব রঙঢঙ করার সময় শেষ হয়ে যায়। তবে যুগের সাথে সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হবে এই আশা নিয়েই আমি সমাজের মানুষের কটুক্তিগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জীবনের রঙঢঙ উপভোগ করতে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের পথে।

(সমাপ্ত)

মরীচিকার সংসার পর্ব-০৩

0

#মরীচিকার_সংসার (৩)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

গতরাতের পলাশের কর্মকান্ড আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। গত আট মাসের সংসার জীবনে শাশুড়ীর সব বিষয়ে দোষ ধরা। কটু কথা সবকিছুকে মানিয়ে নিয়ে সংসারটাকে আপন করেছিলাম। কখনো পলাশকে কোন কথা বলেনি। শাশুড়ীকে নিজের মায়ের মতো ভেবেছিলাম। কিন্তু কানের দুলটা আমার অনেক প্রিয় ছিলো। মায়ের শেষ স্মৃতি বলে কথা। সেজন্য পলাশকে না পেরে বললাম। পরিশেষে কপালে দূর্ভোগ ছাড়া কিছুই ঘটলো না। গতকালের ঘটনায় স্পষ্টভাবে আমি বুঝে গেলাম, পলাশকে তার মায়ের কটু কথা, বোনের ন্যাকামি নিয়ে বললে লাভ হতো না। দিনশেষে সে আমাকেই দোষ দিতো। যদিও মাঝে মাঝে আকারে ইঙ্গিতে পলাশকে তার খারাপ লাগা বোঝাতো। পলাশ সেসবে পাত্তা দিতো না। আমার মন খারাপ আছে জেনেও কাছে আসতো। সেটাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও গতকালের ঘটনা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। তার উপর বাবার শুকনো মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম তার জীবনটা সুখের নয়। সব মিলিয়ে মনমরা হয়ে বসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আনমনে জীবন নিয়ে ভাবছিলাম যার ফলস্বরূপ দুধ উতলে পড়ে যায়। এটা দেখে হন্তদন্ত হয়ে বারান্দা থেকে ছুটে আসে শাশুড়ী মা। সে বলে,“এই নবাবের ঝি কোন দিকে তাকিয়ে দুধে ঝাল করছিস?”

শাশুড়ীর কর্কশ কন্ঠে হুঁশ ফিরে আমার। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। শাশুড়ী এসে দুধ উনুন থেকে নামিয়ে নিলো। সেই সাথে তার মুখও চলতাছে। কথায় কথায় এক কথা,“চোরের জাত আমাকে বলে চোর। এখন মন দিয়ে কার না কার কথা ভাবছিলো। আমার সংসারে আ গুন লাগানোর প্লান করছে। সংসারে অলক্ষী এনে ঘরে তুললে তো এটাই হবে।”
শাশুড়ী একা একা বলে যাচ্ছে। আমি কথা বললাম না। শাশুড়ীর চেঁচামেচি শুনে ননদ আসলো। সেও মায়ের কথায় সঙ্গ দিচ্ছে। আমি কথা না বাড়িয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। শাশুড়ী মা অবশিষ্ট দুধ দিয়ে চা বানিয়ে নিলেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,“এখানে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে থালা-বাসন গুলো ধুঁয়ে আসো।”
আমি মাথা নাড়িয়ে সেই কাজে চলে গেলাম।
___
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দরজা খুলে দেয় ভাবী। এতক্ষণ অব্দি দরজার বাহিরে বসে ঝিমুচ্ছিলো বাবা। ভাবী দরজা খুলে বাবাকে এমনভাবে দেখে অবাক হয় না। মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে,“মেয়ের বাড়িতে রাতটুকু জায়গা হয় নাই?”

বাবা জবাব দিলো না। ভাবী আবারও বলে উঠলো,“তা আপনার মেয়ে কি কান্ড ঘটিয়েছে? নিশ্চয় শ্বশুড়বাড়িতে আমাদের মান-সম্মান ডুবিয়েছে? আমি জানতাম, রাতের বেলা আপনাকে জরুরিভাবে ডেকেছে মানেই কোন অঘটন ঘটিয়েছে। তাই তো আপনার ছেলেকে আপনার সাথে যেতে দেইনি।”
বাবা কোন কথার জবাব না দিয়ে আস্তে করে ভেতরে যায়। ভাবী এটা দেখে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,“যান যান। মেয়ে অপকর্ম ঘটিয়েছে না। এখন তো চুপচাপ যাবেনই। এগুলো আমি করলে ঠিকই সারা পাড়া করতেন।”
এই কথা শুনে বাবা চুপ করে থাকতে পারলেন না। সে শান্ত গলায় বলেন,“তুমি যা করো বৌমা সেসব নিয়ে কথা বললে প্রতি ঘন্টায় বিচারে বসতে হতো। আর হ্যাঁ আমার মেয়ে কিছু করেনি। তবুও তার আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়ে আমি আমার মেয়েকে ঐ বাড়িতে দাঁত কামড়ে যে পড়ে থাকতে বলেছি সেটাও তোমার জন্য বৌমা। নয়তো যে সামান্য কারণে তারা আমার মেয়েকে নিয়ে বিচার বসিয়েছে তাতে আমার বিবেক, আমার আত্মসম্মান আমাকে বারবার বলছিলো আমার মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে আসি। কিন্তু পারিনি।”
বাবার এই কথায় ভাবী তেলেবেগুনে জ্ব লে উঠে। সে অহংকারের সাথে নিজেকে এই সেই দাবি করে, শ্বশুরবাড়ির সবাইকে তুচ্ছ করে কথা বলে। এসব দেখে বাবা নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মাঝরাতে বাড়ি ফিরে দরজা ধাক্কালে নিজের গুনবতী বউয়ের মুখ দিয়ে কত যে বাজে কথা শুনতে হবে সেই ভয়ে বাহিরে ছিলো। এসব কারণেই বাবা নিজের মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে মাথানত করতে বাধ্য হয়েছেন। নয়তো মেয়েকে নিয়ে চলে আসতেন। কিন্তু এই বাড়িতে এখন আসলে যে জীবন আরও জাহান্নাম হয়ে উঠবে। সেজন্যই নিয়ে আসেননি। অনেকে বলে শাশুড়ী, ননদ খারাপ হয়। এরা জীবনে ভালো হয় না। কিন্তু বাস্তবতা এটা নয়। বাস্তব হলো যে মানুষ খারাপ সে সব সম্পর্কে খারাপ। কিন্তু সম্পর্কে ধরে মানুষ খারাপ হয় বিষয়টি ভুল। বাবা এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নেয়। বাহির থেকে ভাবীর মুখের কটুক্তির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

____
সকালের ঘটনাকে ভিন্নরূপে শাশুড়ী বাড়িয়ে পলাশের কাছে তুলে ধরে। এতদিন এসব করে বেড়ায়নি। কিন্তু গতকাল থেকে বুঝতে পেরেছে পলাশ কখনো বউয়ের হয়ে তর্ক করবে না। পলাশকে দিয়ে বউকে অকারণে শায়েস্তা করা যাবে। সেজন্য এখন এই কাজটিও করতে শুরু করেছে। আমি বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। হলোও তাই। পলাশ বিচার বিবেচনা ছাড়া আমাকে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,“এই ঘরে শান্তিতে থাকতে চাস না? যদি থাকতে চাস। তাহলে আমার মা যেভাবে বলে সেভাবে থাক। পরবর্তীতে জানো আমি এই বিষয়ে আর কোন কথা না শুনি।”
পলাশের মুখে এই কথা শুনে রাগে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এই মানুষকে এখন আর কেন জানি সহ্য হচ্ছে না।

এটা তো সবে শুরু হলো। এতদিন কথার আঘাতে শাশুড়ী, ননদ জীবনটা তেজপাতা করে দিয়েছিলো। এখন শুরু করেছে নতুন নাটক। পলাশ তাদের দলের বুঝতে পেরে পলাশ আসার আগে ভারী কাজ নিয়ে বসে শাশুড়ী। পলাশকে দেখেই বলবে,“ও মা গো। কোমরের ব্যথায় টিকলাম না। এই দিন ছিলো আমার কপালে।”
শাশুড়ীর এই ন্যাকামি দেখে পলাশ কোন কথা ছাড়া এসে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তার কথা হলো,“তুই থাকতে আমার মাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হয় কেন?”

“বাড়ির কাজ সব আমিই করেছি। লোক দেখানো কাজ শেষ করছে। এখানে আমার কি করার?”
এই কথা বলতে দেরি পলাশের আমার পেটে লাথি মা রতে দেরি হয় না। কয়েকটা লাগিয়ে দিয়ে সে আমার উদ্দেশ্য বলে,“ভুল করে আবার মুখে মুখে তর্ক। উল্টাপাল্টা কথা বলিস। তোকে আমি…।”

“থাক বাবা ছাড়। ওর তো মা নেই। এসব শেখাবে কে? হয়তো বা ওর মায়ও এমন অজাতের ছিলো। তাকে দেখে শিখেছে।”
নিজের মাকে নিয়ে এমন কথা কোন সন্তান মে নে নিতে পারে। আমিও পারিনি। কড়া গলায় বললাম,“আমার মায়ের সম্পর্কে কোন বাজে কথা বলবেন না। একদম না। আমার মা আপনাদের মতো খারাপ ছিলো না।”

“তারমানে আমরা খারাপ?”
শুরু হলো শাশুড়ীর ন্যাকা কান্না। আহাজারি। তার ন্যাকা কান্নার শব্দের সাথে পলাশের গায়ে হাত তোলাও শুরু হলো। ইচ্ছামতো মে রে মুখ চেপে ধরে বলে,“তোর এই মুখ দিয়ে এমন কোন শব্দ বের করবি না যেটা আমার মাকে অসম্মান করে।”
আমি মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারলাম না। এতসব কান্ড সন্ধ্যাবেলা করে সেই পলাশ রাতে যখন কাছে আসে তখন নিজেকে মন চায় শেষ করে দেই। তার প্রতি কোন আগ্রহ জন্মায় না। না ভালোবাসা। শুধুমাত্র কোনমতে মরীচিকার এই সংসার করে যাই। এমন করেই পার হচ্ছে জীবন। দিনের পর দিন পলাশ এবং তার পরিবারের অত্যাচারও বাড়ছে। এমন এক পরিস্থিতির মাঝে পলাশ আবার চাচ্ছে বাচ্চা। সেদিন রাতে যখন পলাশ বললো,“চলো না বউ আমরা একটা বাচ্চা নেই।”

তৎক্ষনাৎ আমি মুখের উপর বলে ফেললাম,“না। এমন এক সংসারে বাচ্চা নিয়ে কি তাকে শেখাবো দেখ, তোর মাকে তোর বাবা কত অসম্মান করে? কত নিচু চোখে দেখে? এসব? তাকে এমন অসুস্থ পরিবেশে রাখবো।”
আমি কথাটি বলে পলাশের দিকে তাকালাম। পলাশ কিছু বলতে নেয় তখন আমি বললাম,“জানি এখন তুমি গায়ে হাত তুলবে। অকথ্য ভাষায় কথা বলবে। সত্যি বলতে ঠিক এই কারণেই বাচ্চার কথা ভাবতে ভয় হয়।”
প্রথমবার খুব শান্ত গলায় পলাশকে বোঝালাম। নারীরা বিয়ের পর একটা সংসারে আসে নিজেকে নতুনভাবে গড়তে। নিজের একটা সংসার সুন্দরভাবে সাজাতে। যেই সংসারে তার ছোট ছোট অনেক ইচ্ছের মূল্য দেওয়া হবে। অনেক স্বপ্নের মূল্য দেওয়া হবে। তার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তার শক্ত খুঁটি তার স্বামী রুখে দাঁড়াবে। কিন্তু আমার জীবনে এসবের কিছুই হয়নি। শুধু কি তাই? এখানে তো আমার স্বামীই আমার বিপক্ষে একটা কিছুর সুযোগ খুঁজে। যাতে সে আমার গায়ে হাত তুলতে পারে। এমন এক পরিবেশে নিষ্পাপ এক বাচ্চা নিয়ে এসে কি তার জীবন জাহান্নাম করে দিবো? এই কথার পরিপেক্ষীতে পলাশ কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি শুনলাম না। আমি পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। পলাশ বোধহয় কিছুটা আহত হলো।


চলবে,

মরীচিকার সংসার পর্ব-০২

0

#মরীচিকার_সংসার (২)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বাবা আমার শ্বশুড়বাড়িতে পা দিতে তাকে বসিয়ে আমার শ্বশুড়, শাশুড়ী, ননদ একের পর এক আমার দোষের গল্প বলতে শুরু করেছে। আমার শাশুড়ী মা বলছে,“আপনার মেয়েকে আমি কি দিয়ে জ্বা লাই? ভাতে জ্বা লাই নাকি কাপড়ে? সেই মেয়ে আমাকে আজ চোর অপবাদ দিচ্ছে। কাল তো আমাকে মে রে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিবে।”

এই কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্বশুড় বলল,“আপনার মেয়ে আজ এই ঘটনা ঘটালো। কাল তো বড় কিছু ঘটাবে। বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগে আমি চাই আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে চলে যান।”
এসবের মাঝে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বাবা। সে মাথানত করে সবার কথা শুনে যাচ্ছে। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। এক ঘন্টা যাবত বাবাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সবাই আমার দোষগুলো বললো।অতঃপর বাবা বলার সুযোগ পেয়ে নরম গলায় বললো,“আমার মেয়ের নাহয় একটা ভুল হয়ে গেছে। এই কারণে আপনারা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। দেখুন ও ছোট মানুষ। ওর ভুল হয়ে গেছে। আপনারা ক্ষমা করে দিন।”

“সেই ক্ষমা ভাবী চেয়েছে? সে তো তখন থেকে আমাদের চোর বলে যাচ্ছে।”
আমার ননদের কর্কশ কন্ঠে বলা মিথ্যা কথাটি শুনে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমি বললাম,“আমি ক্ষমা চেয়েছি। বিনা কারণে ক্ষমা চাওয়ার পরও তোমরা আমার বাবাকে এই মাঝরাতে ডেকে পাঠালে। আবার মিথ্যা কথা বলছো। একের পর এক মিথ্যা দোষারোপ তো দিয়ে যাচ্ছো।”

“দেখেছেন আপনার মেয়ের স্বভাব। মুখে মুখে তর্ক করা অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনার বউ ম রার আগে তাকে কিছু শিখিয়ে যায়নি।”
আমার শাশুড়ী কথাটি বলে উঠলো। সেই সঙ্গে আমার স্বামী মহাশয় তাল মিলিয়ে বলে,“বড় ছোট কাউকে মানে না। আমার মায়ের মুখে মুখে অব্দি তর্ক করে বেড়ায় আপনার মেয়ে।”

পলাশ আজ আমাকে বারবার হতাশই করছে। আমার ভালোবাসা যে ভুল সেটা প্রমান করে দিচ্ছে। আচ্ছা স্বামী কি এমন হয়? কই। আমার বাবাকে তো দেখেছি সবসময় আমার মায়ের কথায় গুরুত্ব দিয়েছে। আমার মায়ের কোন ক্রুটি থাকলে সেটা সকলের সামনে গোপন করেছে। সংসার জীবনে আমার মায়ের শক্ত এক অবলম্বন হয়েছে। তাহলে পলাশ এমন কেন? এসব কথাবার্তা আমার বাবা বন্ধ করলেন। সে নরম গলায় বললেন,“আপনারা এবারের মতো রিমিকে মাফ করে দেন। সে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবে। সেই সাথে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, রিমির থেকে এমন কিছু আর হবে না।”

বাবার এই কথায় অবশ্য প্রথমে কেউ রাজি হতে চায়নি। তারা পারলে এখনই আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়ায়। তবুও বাবা অনেক অনুনয় বিনয় করে তাদের রাজি করালো। বাবার এই অসহায়ত্ব দেখে আমি খুব কষ্ট পেলাম। বাবাকে বাধা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু বাবা তার আর হতে দিলো না। আমাকে অনুরোধ করে বললো,“দয়া করে তুই এখানে আর কোন কথা বলিস না। যা বলছি তাই কর। সবার কাছে ক্ষমা চা। প্লীজ…।”

বাবার এই নরমস্বরে করা অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। বাবার কথামতো সবার কাছে ক্ষমা চাইলাম। সবাই অবশ্য এবার মেনে নিলো। সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে, এই বাড়িতে তারা আমাকে দয়া করে থাকতে দিয়েছে। নয়তো আমার স্থান এখানে হওয়ার কথা ছিলো না।
__
বাবা চলে যাবার আগে আমার সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলেন। আমিও ঘরে আসলাম। বাবাকে আলাদা পেয়ে আমি বললাম,“বাবা এভাবে তুমি মাথানত করে তাদের সব অভিযোগ শুনলে? সত্যি মিথ্যা নিয়ে একটা কথা তুললে না? তাছাড়া আমাকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বললে অথচ একবারও ঘটনা সত্যি কি-না তা জানতে চাইলে না? কেন বাবা?”

আমার এই কথার জবাবে বাবা অসহয় গলায় বলে,“ মা রে সংসার জীবন বড় কষ্টের। এখানে মানিয়ে নিতে না পারলে সব শেষ। সংসারে একসাথে থাকতে হলে এরকম সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। তাছাড়া মেয়ে মানুষের জন্য স্বামীর ঘরই সব। এখানে টিকে থাকতে না পারলে দিনশেষে সব দোষ মেয়েটারও হবে।”
বাবা একটু থেমে পুনরায় বলেন,“আমি জানি তুই সঠিক। তোর ননদের কানে আমি তোর মায়ের সেই চিরচেনা কানের দুল দেখেছি। কিন্তু এখানে আমার কিছু করার নেই মা। তোকে যদি আজ আমি ঝামেলা করে বাড়ি নিয়ে যাই তাহলে তোর কি হবে? আমি আজ আছি কাল নেই। তোর ভাই, ভাবী তোকে কতদিন দেখবে? এক মাস দুই মাস। তারপর যখন অতিষ্ট হয়ে পড়বে তখন তাদের তিক্ত কথাগুলো শুনে তোর মনে হবে এই সংসারটাই তোর জন্য ঠিক। অন্তত এখানে তোর নিজের সংসার। কেউ তোকে এটা বলতে পারবে না, অন্যের সংসারে বোঝা হয়ে আছিস। তাছাড়া এসব টুকটাক বিষয় এড়িয়ে যেতে হয়।”

“টুকটাক? আমার মায়ের কানের দুল?”
এই কথার জবাবে বাবা অসহয় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দেয়। নরম গলায় বলে,“সংসারে থাকতে হলে বোবা এবং অন্ধ হয়ে চলতে হয়। এভাবে মানিয়ে নিয়ে, এড়িয়ে গিয়ে সংসার করে যা। তোর জন্য আমার এই পরামর্শই। আমি এখন আসি।”

“এই রাতের বেলা চলে যাবে? তাও শুকনো মুখে?”
এই কথার জবাবে বাবা মুচকি হাসলো। যে হাসির আড়ালে কষ্টগুলো লুকানো ছিলো। যেখানে বাবা হয়তো বলছে, তোর বাড়িতে আজ এত এত কথা গিলেছি যে পেটে জায়গার বড্ড অভাব। এই বাড়িতে রাতটা কাটালে যদি তোর তাতে দোষ হয়ে যায়, সেই ভয়ে রাত কাটালাম না। বাবার মনের এই কথাগুলো আমি বুঝতে পারলাম। তাই বাবাকে বাধা দিলাম না। তাকে যেতে দিলাম। শুধু আস্তে করে বললাম,“সাবধানে যেও বাবা।”


বাবাকে বিদায় দিয়ে শোবার ঘরে এসে বসলাম। পাশেই পলাশ শুয়ে আছে। আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমার দিকে ফিরে শুইলো। আমি তার দিকে তাকালাম না। যেই মানুষটা আমার নয় তার দিকে তাকিয়ে মায়া বাড়িয়ে লাভ আছে। পলাশ বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,“তোমার বাবা দেখলে ঠিক বুঝলো। শেফার কানের দুলের সাথে তোমার কানের দুলের ডিজাইনটা কিছুটা মিলে তাই তুমি ভুল বুঝলে।”

আমি জবাব দিলাম না। পলাশ আবারও বলে উঠলে,“এটা তুমি আগে বুঝলেই হতো। তাহলে এত ঝামেলা হতো না।”
এই কথা শুনে আমি ম্লান হেসে বললাম,“তুমি এই কথাগুলো এই ঘরের বাহিরে না নিলেই হতো। তাহলে এতকিছু হতো না। এখানে দোষটা কার দিবো? কারোর না। দোষটা আমার কপালের।”
আমার এই কথায় পলাশ চুপ করে গেল। সে বিরক্ত হলো বোধহয়। তবে আমি কথা বাড়ালাম না। উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। এতক্ষণ অব্দি নিজেকে সামলাতে পারলেও এবার পারলাম না। এবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকলো। আমি চেয়েও নিজের কান্না থামাতে পারছি না। এই সংসারে কাকে আপন ভাববো?ননদকে দোষ দিবো? শাশুড়ীকে দিবো? লাভ কি? যদি স্বামীই ঠিক না থাকে। এখানে তো আামর মহা শত্রু পলাশ। সে যদি আমার ভালোবাসা বুঝতো, আমাকে ভালোবাসতো তাহলে এসব কিছু হতোই না।

পলাশ আজ যা করলো তাতে আমার মনে তার জন্য থাকা ভালোবাসায় ভাঙন ধরে গিয়েছে। সেই ভাঙন আরও বেড়ে গেল তখন যখন আমি কান্না করছি বুঝতে পেরেও পলাশ আমার কাছাকাছি এলো। আমি বাধা দিতে চাইলে পলাশ বলে,“স্বামীকে না করতে নেই। এখন আমার ইচ্ছা করছে। আমাকে কষ্ট দিও না।”
যার জন্য আমি কষ্টে জর্জরিত। সেই মানুষটি আমাকে বলে তাকে জানো কষ্ট না দেই। নিজের বুকের কষ্টে বুকের ভেতর রেখে, নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পলাশের ইচ্ছে পূরণ করতে হলো। পলাশ জোর করে করলো। আমি যখন বললাম,“এখন না পলাশ।”

“চুপ। স্বামী হই তোর। যখন প্রয়োজন তখনই দিবি। বউ থাকতে আমি কি রাত পার করবো কষ্টে?”
এই কথা বলে কোন বাধা না শুনে পলাশ আমার সাথে মিলিত হলো। এটা তো শুরু ছিলো। এখান থেকেই সাংসারিক ঝামেলা, পলাশের গায়ে হাত তোলা, সব মিলিয়ে একটা ঝগড়া শেষে আবার সেই মানুষটিই রাতে কাছাকাছি চলে আসে। এমন এক জীবনের শুরু হয় আমার। বিবাহিত জীবনের আট মাসের মাঝেই এই তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম আমি। শুরু হলো সংসার নামক মরীচিকার খেলা। যাকে আমি আপন করতে চেয়েছিলাম। খুব আপন।

চলবে,

মরীচিকার সংসার পর্ব-০১

0

#মরীচিকার_সংসার (১)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

আমার হারিয়ে যাওয়া কানের দুল ননদের কানে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দুই মাসের আগে শাশুড়ী মা আমার কানের দুল পড়ে এক অনুষ্ঠানে যায়। তারপর থেকে কানের দুল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সেই কানের দুল ননদের কানে দেখে ভীষণ অবাক হলাম। রাতে স্বামী বাড়ি ফিরলে। তার বুকে মুখ গুজে কান্না করে দিলাম। আমার কান্নার শব্দ পেয়ে আমার স্বামী নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,“কী হয়েছে? কান্না করছো কেন?”

“তুমি তো জানতে আমার কানের দুলগুলো আমার কত শখের ছিলো। আমার মায়ের শেষ স্মৃতি।”
এই কথা বলে আরও কান্নায় ভেঙে পড়লাম। স্বামী আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,“এখনো ঐ কানের দুলের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো। দেখো যা হারিয়ে যায় তা যদি কান্না করলে ফেরত পাওয়া যাবে? মন খারাপ করো না।”

“তুমি জানো আজ আমি সেই কানের দুল তোমার বোনের কানে দেখেছি। হারিয়ে গেলে নাহয় মন খারাপ করতাম না। কিন্তু….।”
আমি কান্নায় কথাটি সমাপ্ত করতে পারলাম না। আমার স্বামী আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলতে বললো। অতঃপর আমি তাকে ভরসা করে সব বললাম। আমি নিশ্চিত আমার শাশুড়ী মা কানের দুল হারায়নি বরং সেটা তার মেয়েকে দিয়েছে। দুই মাসে আমি সব ভুলে গেছি ভেবে আজ ননদ সেটা পড়ে আমার সামনে অনায়েসে ঘুরলো। আমি কথাগুলো স্বামীকে খুব বিশ্বাস, ভরসা করে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম স্বামী আমার পাশে থাকবে। কিন্তু না। আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আমার স্বামী আমাকে তার বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগান্বিত গলায় বলে,“তুই কি বলতে চাস? আমার মা, বোন চোর? তারা তোর ঐ দুই পয়সার কানের দুল চুরি করেছে?”

নিজের স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার স্বামী আবারও কঠিন গলায় বললো,“আমার মা, বোনকে তোর কি মনে হয়? তারা জীবনে সোনার জিনিস চোখে দেখেনি? যে তোর মনে হয় তারা তোর সোনার জিনিস চুরি করছে?”

“আমি সেটা বলতে চাইনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি….।”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমার স্বামী অর্থাৎ পলাশ বলে,“আমি বেশ ভালোভাবে বুঝেছি তুই কি বলতে চাইছোস। দাঁড়া আমি আমার মা, বোনকে ডাকি। যা ফয়সালা হওয়ার তাদের সামনেই হোক।”
আমি পলাশকে থামাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পারেনি। সে এতজোরে চিৎকার, চেঁচামেচি করছিলো যে বাড়ির সবাই দরজার সামনে এসে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলো। পলাশ দরজা খুলতে সামনে আমার শাশুড়ী এবং ননদ পড়লো। পিছনে শ্বশুড়ও দাঁড়ানো ছিলো। পলাশ সবার সামনে কোন ভণিতা ছাড়া জিজ্ঞেস করলো,“মা তুমি নাকি রিমির কানের দুল চুরি করে শেফাকে দিয়েছো?”

“কি?”
আমার শাশুড়ী মনে হলো আকাশ থেকে পড়লো। ননদ আরও এক ধাপ উপরে। সে সঙ্গে সঙ্গে কান্না করে দিলো। তারপর বলছে,“এমনিতে বাপের বাড়ি কম আসি। যাতে ভাবীর চোখের বিঁষ না হতে হয়। এখন দেখছি আসাই যাবে না। একেবারে সোজা চোর বানিয়ে দিলো আমাদের।”
ননদের সাথে তাল মিলিয়ে শাশুড়ী বললো,“এই দিন দেখার জন্য শখ করে ছেলের বউ নিয়ে আসছিলাম। আজ আমি কি-না চোর। শুনছো ওগো। আমি নাকি বৌমার কানের দুল চুরি করে শেফাকে দিয়েছি।”

শাশুড়ী এবং ননদ তাদের অভিনয় শুরু করে দিয়েছে। তারা নিজেদের ন্যাকা কান্না দিয়ে মূহুর্তে পরিবেশ অনেক জটিল করে তুলেছে। শাশুড়ী মা আমার কাছে এসে বলে,“বৌমা তোমার যদি শেফার কানের দুল পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমার দুল হারিয়েছি তার বিনিময় নাহয় শেফার দুলটা তোমায় দিতাম। তাই বলে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিবা। আমাকে চোর বানিয়ে দিলে।”

“হ্যাঁ ভাবী। এই দুল যদি তোমার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তুমি রেখে দাও। তবুও আমাদের এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিও না।”
এই কথা শুনে পলাশ আমার দিকে রাগীচোখে তাকিয়ে বলে,“দেখলি তুই? এটা আমার মা, বোন। যাদের বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ দিচ্ছিলো তারা তোকে এক কথায় দুল দিয়ে দিতে রাজি। আর তুই কি-না…।”
পলাশের এই কথার জবাব দেওয়ার মতো কোন শব্দ আমার কাছে ছিলো। থাকবে কিভাবে? যে মানুষটির হাত ধরে এই বাড়িতে এসেছি। সেই মানুষটির কাছেই আমার কথার গুরুত্ব নেই। আমি মিথ্যা বলছি মনে হচ্ছে। তখন তাকে কোন শব্দ বা বাক্য দিয়ে বললেও যে সে বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি বুঝতে পেরে চুপ করে গেলাম। এটা দেখে শাশুড়ী মা বলে,“কি বৌমা এখন মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে কেন? মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার সময় তো চুপ ছিলে না। তা এখন চুপ কেন? কানের দুল পছন্দ হলে নিয়ে যাও। তাও দয়া করে চোর অপবাদ দিও না। আমরা চোর নই।”

“আম্মা আমার স্বামীই আমার কথা বিশ্বাস করছে না। সেখানে আমার কোন কথাই এখানে গুরুত্ব পাবে না। তবে আমিও জানি আপনিও জানেন ঐ কানের দুল আমার। আমার মাকে সারাজীবন আমি এই কানের দুল পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার বিয়ের পর থেকে আমি পড়েছি। এই কানের দুল আমি চিনবো না সেটা হতেই পারে না।”
আমার এই কথা ঘরের মধ্যে বিস্ফোরকের মতো পড়লো। সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। এই কথা শুনে আমার শাশুড়ী মা শ্বশুড়কে উদ্দেশ্য করে বলে,“শুনলে বৌমার কথা? বৌমা আমাকে সরাসরি চোর বললো। আমি চোর?”

”বৌমা তুমি চাও কি? সংসারে কেন অশান্তি করছো? তোমার কানের দুল কেন শেফাকে দিবে তোমার শাশুড়ী? শেফার কি কম আছে?”
শ্বশুড় এই কথার বলার সঙ্গে সঙ্গে শাশুড়ী ফোঁড়ন কেটে বলে,“না তো। আমার মেয়েকে তো ভিখারি বাড়ি বিয়ে দিয়েছি। আমরা ভিখারি। একমাত্র তোমার বৌমা কোটিপতি। বাপের বাড়ি থেকে কোটি টাকার জিনিস নিয়ে আসছে। আমরা সেটা চুরি করেছি।”

“না আম্মা। আমার বাবার বাড়ি থেকে কোটি টাকার জিনিস হয়তো নিয়ে আসিনি। তবে অনেক মূল্যবান আমার মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে আসছিলাম। যেটা এখন শেফার কানে রয়েছে।”
এই কথা শুনে তৎক্ষনাৎ পলাশ একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আমার গালে। সবার সামনে পলাশ এভাবে আমার গায়ে হাত তোলায় কিছুটা হতভম্বই হলাম। পলাশ রাগান্বিত গলায় বলে,“তোর সমস্যা কি? আমার মা, বোন এই বাড়িতে না থাকুক সেটা চাস? সেজন্য তখন থেকে উল্টাপাল্টা কথা বলে যাচ্ছিস। তুই আমার মা, বোনকে চোর বলছিস?”

“তোর বউ তো এটাই চায়। আমি আমার মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। তোর বউ একা রাজত্ব করুক। তাই বলে এভাবে চোর বললো। আমি কি চোরের জাত? তোর বউয়ের মতো চোরের জন্মা না আমি। যে চুরি করবো।”
আমি আর জবাব দিতে পারলাম না। শাশুড়ী এবং ননদের ন্যাকা কান্নার মাঝে আমার চোখের পানি সবার আড়ালেই রইলো। বিষয়টা এখানেই থামতে পারতো। তাদের ন্যাকা কান্না দেখে, পলাশের অবিশ্বাস দেখে আমিই বললাম,“আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিন আপনারা। আমি হয়তো ভুল দেখেছি। হয়তো বা আমার মায়ের কানের দুলটা আজ আর আমি চিনতে পারছি না।”
এই কথার পর সব থামতে পারতো। কিন্তু থামলো না। আমার শাশুড়ী এবং ননদ বিষয়টিকে আরও বড় করলো। শাশুড়ী মা তো আমার জাত, পাত, বাবা, মা তুলে কথা বলতে শুরু করেছে। পলাশ নিরব দর্শকের মতো সব শুনছে। এক পর্যায়ে শ্বশুড় বললো,“বৌমার বাবাকে ফোন দাও পলাশ। সে এসে মেয়েকে নিয়ে যাক৷ নয়তো আজ চুরির অপবাদ কাল তো নির্যাতনের মামলা দিয়ে বাড়িতে পুলিশ ডাকবে। এই মেয়ের সাথে আমাদের একসাথে থাকা সম্ভব হবে না।”
আমার শ্বশুড়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে যখন পলাশ আমার বাবাকে ফোন দিলো আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে তখনই আমি বুঝে গেছি, এই সংসারে আমার আপন বলতে কেউ নেই। আমার এই সংসারে আমার আমির অস্তিত্বই নেই। আমি বিষয়টিকে জটিল করতে না চেয়ে পলাশকে অনুরোধ করে বলেছিলাম,“না পলাশ। আমার বাবাকে ফোন দিও না। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

“না। আজ তোমাকে ক্ষমা করে দিলে তুমি লাই পেয়ে যাবে। আজ চোর বানাচ্ছো কাল হয়তো বড়সড় কিছু করবে। তাই আজই এর বিচার হওয়া উচিত।”
সংসারে যে মানুষটির হওয়া উচিত ছিলো আমার শক্ত একটি খুঁটি। সেই মানুষটিই আমাকে নিয়ে বিচার বসাতে উঠে পড়ে লেগেছে। একটা মরীচিকার সংসারকে আপন করে, একজন ভুল মানুষকে ভালোবেসে এই সংসারে নিজের সবটুকু দিয়েছে আমি সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না আমার। আমার চোখের সামনে পলাশ আমার বাবাকে খুব কড়া ভাবে এই বাড়িতে আসতে বলে। এসে তার মেয়ের দোষগুলো শুনে যেতে বলছে।



চলবে,