Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2



ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৪

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৪
#সমৃদ্ধি_রিধী

‘আমার জন্ম হয় ২১ই এপ্রিল। এর ঠিক ৭ দিন আগে ১৪ই এপ্রিল আমার বাবা মারা যায়। ওই ১৪ই এপ্রিল আবার ভাইয়ার জন্মদিন। আমার দাদি কখনোই মেয়ে পছন্দ করতেন না। অথচ ওনারই কিন্তু দুই মেয়ে ছিল। তাও মেয়ে ওনার সহ্য হতো না। বর্তমানে নাকি আল্ট্রা করলেও ফিটাসের লিঙ্গ বলা হয় না। কিন্তু আমার জন্মের সময়টায় বলা হতো। আমার আম্মু যখন পাঁচ মাসের প্রেগনেন্ট তখনই জানতে পারেন তাদের পরবর্তী সন্তান হবেন মেয়ে। সেই থেকেই আমার দাদি উঠতে বসতে এই সন্তানকে মেরে ফেলতে বলতেন। কিন্তু আমার বাবা চান নি। ভাইয়ার জন্মদিনের দিন কোনো এক কারণে বাবা বাসা থেকে বের হন। কিন্তু আর জীবিত অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারেননি। আমার জন্যই নাকি আমার বাবা মারা যান। হাহ জন্মের সাতদিন আগে থেকেই আমি ভুল করে আসছি। এখনও করছি। কখনোই আমি ঠিক করিনি। দাদি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভাইয়া তো আমাকে দেখতেই পারতো না। আম্মু না থাকলে আমাকে অযথাই মারতো। চুল টেনে ধরতো। দুপুরে খেতে বসলে খাবারে পানি ঢেলে দিতো।আবার আম্মুর সামনে স্বাভাবিক চলতো।অবশ্য ভাইয়াও তো ছোট ছিল। দাদির শিখিয়ে দেওয়া কাজগুলোই করতো। এইসবের কারণে তখন থেকেই ভাইয়াকে ভয় পাই। ওকে দেখলেই আমার ছোটবেলার কথাগুলো মনে পরে। ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। ভাইয়া হয়তো মনে করে বাবার মৃত্যুর জন্য জন্ম না হওয়া মেয়েটিই দায়ী।

আম্মু কিন্তু আমাকে ছোটবেলা থেকে খুব স্নেহ করতো। কিন্তু আমাকে সেইভাবে সময় দিতে পারেনি। সকাল আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত স্কুল সামলিয়ে বাসায় আসতো। তারপর দুপুর দুইটা থেকে আবার টিউশানি পড়াত। দাদির খেদমতও করতে হতো। আবার এক্সট্রা টাকা ইনকাম করতে মাঝে মাঝে রাত জেগে সেলাইও করতো। তারমধ্যে যতটুকু সময় পেতো আমাকে বা ভাইয়াকে দেওয়ার ট্রাই করতো। তবে একটা জিনিস, কখনোই আম্মু ভাইয়াকে সেভাবে ধমক দেয়নি, যেভাবে আমাকে দেয়। সবসময় আমাকে চুপ করিয়ে রাখে।
আমার ফুফুরা ইদে ভাইয়াকে গিফট, সালামি দিলেও কখনো আমাকে দিতো না৷ সবসময় কুকুর বিড়ালের মতো দূরছাই করতো। খুব খারাপ লাগতো। তবে এখন আর লাগে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।

আজকে আমাকে রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার পরও ভাইয়া অনেকক্ষণ চেঁচামেচি করেছে। আমার মধ্যে ভদ্র মেয়ের কোনো লক্ষণ নেই। আমার জন্য একদিন নাকি আম্মুর সম্মান নষ্ট হবে। আম্মু ওকে শান্ত করতেও থাকলো। একবারও ভাবেনি ‘নাহ আমার মেয়ের কাছে যাওয়া উচিত’। হুহ, আমি কারো ভাবনাতেই নেই। কি এক দূর্বিষহ জীবন।

আরেকটা কাজ করেছি, মাহিদ কল করার পরে কেঁদেছি। কেঁদে ছ্যাছড়ার মতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে বলেছি। ছিহ: এতে আমার ওয়েট কতখানি কমে গেল! লোকটা নিশ্চয়ই আমাকে ছ্যাছড়া মেয়ে মনে করছে। আবারও একটা ভুল করলাম। কি দরকার ছিল এমনটা করার! আমার জীবনের নতুন একটা মানুষ হতো, ওর সামনেও আমি পুরা কালার হয়ে গেছি। ছিহ’

কলমের খসখস শব্দ থেমে গেল। অহমির চোখে পানি চিকচিক করছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সে লিখাগুলোর নিচে লিখলো ‘অহমিকার ডায়েরির নবম পৃষ্ঠা।’ ডেট দিলো ২৬ই মে (ঘটনা ২৫ই মে)। কারণ ডায়েরিটা রাত ১২ টার পরে লিখেছে। অহমির ডায়েরির কিছু শ্রেণীভাগ আছে। কিছু কিছু ডয়েরি শেষও হয়ে গেছে । এদের মধ্যে সে দৈনন্দিন জীবনের কিছু কথা একটা ডায়েরিতে লিখে। আবার যখন খুব মন খারাপ হয়, নিরবে কাঁদে তখন এই ডায়েরিতে হাত দেয়। আরেকট ডায়েরিতে আছে অহমিকার বিভিন্ন সৃষ্টি।এখন সেই ডায়েরিটা খুললো। আবারও কলমের খসখস শব্দ শুনা গেল। এবারের গল্প – ‘অমাবস্যার ক্রিনিকোলাস’- অধ্যায় তেরো।

______________________________________________

মাথায় কারো হাতের স্পর্শে অহমির ঘুম ছুটে গেল। ওর ঘুম এমনিতেই খুব পাতলা। তাছাড়া রাতে ওর তেমন ঘুমও হয় না। সকালেও আবার তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙে যায়। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো আফরোজা বেগম বসে আছেন। রেডি হয়ে এসেছেন। মানে এখন মা ভাই একসাথে নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়বেন। উঠে বসে চুলগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুটি করে ফেললো। ও জানে মা কেনো এসেছে।
আফরোজা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বলেন, “অহমি ভাই তোমার ভালোর জন্যই বকে। সবসময় এমন রাগ করলে চলে না৷”

অহমি কোনো জবাব দেয় না। আফরোজা বেগম আবারও বলেন, “তুমি তো জানো তোমার ভাই একটু ওল্ড মাইন্ডের, ও এভাবে চলাফেরা পছন্দ করে না। তুমি এতো লেটে বাড়ি ফিরেছো বলেই ভাই কাল রেগে গিয়েছিল। সাইফাকেও তো এভাবে চলাফেরার জন্য বকাবকি করে।”

সাইফা, আহিরের বউ। ওদের আক্দ হয়ে আছে। অহমির বিয়ের পরপরই ওকে উঠিয়ে আনা হবে। আফরোজা বেগম
একটু থেমে বলে, “তাছাড়া তুমি কাল ওর মুখে মুখে কথা বলে অন্যায় করেছো। এটা উচিত হয়নি।”

অহমি মলিন হেসে বলে, “বুঝেছি আম্মু।”

“ভাই এখন বেরিয়ে পড়বে। ওকে সরি বলে এসো।”

যা প্রতিবার হয়৷ আজকে মুখে মুখে কথা বলার জন্য সরি বললেও অন্যবার তো অহমি মুখে মুখে কথা বলে না। তাও ওকেই সরি বলতে হয়। ছোট হতেই বলতে হয়। যদি না বললে আম্মুর খারাপ লাগে! ভাইয়ের রুমের সামনে গিয়ে দুইবার নক করে। আহির রেডি হতে হতে ভিতর থেকে বলে, “আয়।”

আহিরও জানে মা অহমিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছেন। আর অহমি তো তোতাপাখি। যে যা শিখিয়ে দিবে তাই বলবে। মায়ের শেখানো বুলি গড়গড়িয়ে বললো, “কালকে ওইভাবে কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। সরি।”

আহির মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আাশা করবো পরের বার এমনকিছু করবি না। এতোক্ষণ বাইরে থাকলে ভাইয়ার চিন্তা হয়। এখনকার পরিস্থিতি ভালো না।”

অহমি কেবল মাথা উপর নিচে করলো। আর কিছু বললো না। আহির আরো একবার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। অভিমানে টইটুম্বুর অহমি একবারও ভাইয়ের এহেন দু:চিন্তা বুঝলো না। ওর কেবল মাথায় ছিল কালরাতে ভাইয়া ওকে বকাঝকা করেছে। ওকে মারতে চেয়েছে। এইসবের পিছনের ভয়ের কারণ বুঝলো না।

__________________

ক্যালান্ডারের পাতাগুলো একটার পর একটা নি:শব্দে উল্টে গেল। পূর্ণিমা খুব সন্নিকটে। রাত এখন সাড়ে এগারোটা। অহমি বারান্দায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়া লম্বা আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি করছে। দৃষ্টি হালকাভাবে জ্বল জ্বল করতে থাকা চাঁদের দিকে। মাঝে মাঝে একটু-আধটু শীতল হাওয়া বইছে। বারান্দার পর্দাগুলো নড়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। অহমির বারান্দা থেকে বাইরের কিছুই দেখা যায় না দেওয়াল ছাড়া। পাশের লাগোয়া বিল্ডিংটার জন্য এই অবস্থা। অথচ এই ঘরের বারান্দা থেকে বাইরের পরিবেশ দেখা যায়। আলো-বাতাস পাওয়া যায়। কিন্তু এতো প্রশান্তির মাঝেও ওর মাথাটা প্রচন্ড ঝিমঝিম করছে।

“অহমিকা!”

অহমি মাহিদের দিকে তাকালো। স্মিত হাসালো। এইতো আজ তিন কবুল বলে মানুষটার সাথে আজীবনের মতো জড়িয়ে গেলো। মাহিদ অহমির দিকে এগিয়ে এলো। হাতে দু কাপ কফি। অহমির দিকে এক কাপ বাড়িয়ে দিলো। অহমির এখন কফিটার খুব দরকার ছিলো। মাহিদ ওর পাশেই দাঁড়ালো। মাহিদের ডান হাতের বাহুর সাথে অহমির বাম হাতের বাহু লেগে আছে। মাহিদ ওকে একদিন কথায় কথায় বলেছিল বিয়েতে মেহেদী দিলে অবশ্যই যেন ওর নাম লিখে। ও বিয়ের রাতে বউ এর হাতে নিজের নাম দেখতে চায়। অহমি অবশ্য কথা রেখেছে।

“আপনার নাম খুঁজতে পারবেন?” অহমি কফি মগটা রেলিং এর উপর রেখে নিজের দুইহাত মাহিদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

“বড় বড় করে লিখোনি? অহমিকা + মাহিদ এভাবে লিখো নি?”

অহমি লজ্জা পেল। বলে, “তা করিনি, তবে আপনার নামটা ঠিকই লিখেছি। ”

মাহিদ নিজেও কফি মগটা রেলিং এর উপর রেখে অহমির দুই হাত আঁকড়ে ধরলো। বেশ কিছুক্ষণ খুঁজার পরও যেন পেলো না তখন এক অযুহাত দিয়ে বলে, “আমার চশমা নেই তুমি দেখছো না? আমি এখন নাম কি করে খুঁজে পাবো?”

মাহিদ যে খুঁজে পায়নি অহমি বেশ ভালো করেই বুঝেছে। দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, “তবে রুমে গিয়ে চশমা পরে ভালো করে খুঁজুন? ”

মাহিদ ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে খুঁটে খুঁটে দেখেও নাম খুঁজে পায়নি।

“আরেকটা লাইট জ্বালাবো?”

মাহিদ চশমা পরেও যখন নাম খুঁজে পাচ্ছিলো না তখন বলেছিল লাইট কম হওয়ায় খুঁজে পাচ্ছে না। তাই অহমি নিজের মেবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে হাতের উপর ধরেছিল। মাহিদ এখন অহমির এমন কথা শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠে। বলে, “তুমি তখন থেকে কথা বলছো দেখেই পাচ্ছি না। চুপ থাকো।”

একটু পরই বলে,”দুর পাচ্ছিই না।”

অহমি তা শুনে হেসে উঠে। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের মিডেলে একদম ছোট করে আঁকা ফুলের পাপড়ির দিকে নিদের্শ করে বলে, “এই দেখেন প্রতিটি পাপড়ির মধ্যে আপনার নামের একেকটি অক্ষর লিখা। ভালো করে দেখুন।”

মাহিদ নিদেশর্না মতো খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলে, “এখানে তো মাহিদ লিখা নেই, আতহার লিখা। আমি তো মাহিদ খুজছিলাম।”

“ওমাহ আতহার আমার স্বামীর নাম, লিখবো না? খামোখা মাহিদ কেনো লিখতে যাবো বাপু?”

মাহিদ হেঁসে ফেলে। অহমিও হেঁসে রসিকতা করে বলে, “ছিহ ছিহ আপনি আমার হাতে আপনার নাম খুঁজে পাননি।”

মাহিদের আচমকা কি হলো কে জানে! অহমির হাতে টান মেরে নিজের খুব সন্নিকটে আনে। অহমি মাহিদের বুকে আঁচড়ে পরে। ভারসাম্য রক্ষার্থে অহমি মাহিদের বুকে হাত রাখে। মাহিদ অহমির চোখে চোখ রেখে বলে , “যে মানুষটা এখন থেকে সম্পুর্ন আমার, যার জীবনের সাথে আমার নাম ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে গেছে তার হাতে শুধু শুধু নাম খুঁজে পাওয়া বা না পাওয়ায় কি লাভ অথবা ক্ষতি হবে অহমিকা আতহার হুসাইন?”

চলমান…………

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-২+৩

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_২_৩
#সমৃদ্ধি_রিধী

অহমি বেশ অবাক হলো। অগোছালো সে ঠিক আছে! কিন্তু তা মাহিদ কি করে জানলো? ও তো বেশ পরিপাটি হয়েই বাইরে বের হয়। তবে অহমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলো পরের কারণটা শুনে।

-“তোমার নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই নেই।”

অহমির চোখের পাতা যেন কেঁপে উঠলো। মাথা নিচু করে ফেললো। অহমি বুঝতে পারলো ওর ভাইয়া আর আম্মুর কথায় বিয়ে করতে চাওয়ার কথার পরিপেক্ষিতে লোকটা এই কথা বলেছেন। ও মনে মনে কিছু কথা সাজিয়ে ফেললো। ধীমে কন্ঠে বললো – “আব..আসলে বিষয়টা তেমন নয়, আমি
ভাইয়া আর আম্মুর কথার অবাধ্য হতে চাইনা। ওরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমি চাইছি না ওনাদের কথার অবাধ্য হয়ে ওনাদেরকে আরো কষ্ট দিতে। এর বাইরে কিছুই না। ”

মাহিদ এই প্রসঙ্গে আর কিছু বললো না। তবে ওর বিচক্ষণ চোখ যেন ধারনা করতে পারলো অহমিকা নামক মেয়েটির মধ্যে কেমন একটা চোরা চোরা হাবভাব রয়েছে। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা। যখন ও আহিরের কাছে পড়তে যেতো তখনও দেখতো মেয়েটা ভীষণ গুমরে থাকে।

তখনই ওয়েটার স্যান্ডউইচ, কফি নিয়ে আসে। অহমি কিছুক্ষণ নিজের স্যান্ডউইচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে আচ্ছা মতো গালিগালাজ করতে থাকে ক্যাফের মালিককে। এই এগারোটা বারোটা নাগাদ এটা ক্যাফেতে রাখতেই হলো!!

-“খাচ্ছো না যে?”

অহমি অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলে- “এই যে খাচ্ছি,” সাথে সাথেই স্যান্ডউইচে একটা বাইট দেয়। মাহিদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে। অহমির মুখটা যেন বিষিয়ে গেছে। ছিহ! কি বাজে স্বাদ। মাহিদ এহেন ব্যবহারের কিছুই বুঝলো না। একপর্যায়ে নিজের মতো খেতে খেতে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে-“অহমিকা! আমি তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“হ্যাঁ বলুন।”

-“তুমি সিউর বিয়েতে তোমার কেনো আপত্তি নেই? কেউ জোর করছে না তো?”

-“নাহ, আমি মন থেকেই চাইছি। ”

-“তবে ঠিক আছে। মন থেকেই যখন চাইছো তাহলে আশা করি নিজেকে সেইভাবেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত করবে। কারণ আমি একবার এই সম্পর্কে এগিয়ে গেলে সেখান থেকে পিছানোর আর কোনো সুযোগ নেই। ইভেন তুমি চাইলেও না।”

অহমি সেই মূহুর্তে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মাহিদের কথায় কোথাও একটা প্রবল অধিকারবোধ ছিলো। তাছাড়া ও এতটুকু সময়ে খুব ভালোভাবেই একটা জিনিস বুজতে পেরেছে তা হলো মাহিদ খুবই দৃঢ়তার সাথে নি:সংকোচে কথাবার্তা বলেন। অন্যদিকে অহমি এই পর্যন্ত নিজের ব্যক্তিগত সময় ছাড়া বাকি সময়টা বড্ড ভয়, আত্মগ্লানিতে কাটতো। ইতিমধ্যে তাদের খাওয়া-দাওয়াও শেষ। অহমি মাত্রই মাহিদকে একটা প্রশ্ন করতেই যাবে সেই মুহুর্তে মাহিদের ফোন বেজে উঠলো। মাহিদ একবার অহমির দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করে। ওকে ইমারজেন্সি থাকায় তখনই হসপিটালে যেতে হবে। অবশ্য যাওয়ার আগে ওকে রিক্সায় তুলে দিয়েও গেছে। এবং বাসায় পৌঁছে মাহিদকে টেক্সট করে জানিয়ে দিতে বলে। এইসবের মাঝে অহমির আর প্রশ্নটা করা হয়ে উঠলো না।

___________

অহমি বৈশাখের কাঠঠোকরা রোদ মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরলেও মনের মধ্যে এক অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করছিলো। আজকের কথাবার্তায় যা বুঝলো মাহিদ বেশ কেয়ারিং একটা ছেলে। আফরোজা বেগমও তখন মাত্রই স্কুল থেকে ফিরেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে উনি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তবুও এতে কি সংসার চলে? অহমির ফুফু, মামা, চাচারাও কিছুটা দিয়ে সাহায্য করতেন। কিন্তু এখন আহির মোটামুটি স্টেবল হওয়ায় আর কারো সাহায্য নিতে হয় না।

মেয়ে ঘরে ফিরার পর থেকে আফরোজা বেগম এই নিয়ে পাঁচবার মেয়েকে মাহিদের ব্যবহার-আচার-আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তিনি মেয়েকে এই বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অহমির যদি কোনো কারণে মাহিদের কোনো আচরণ ভালো না লাগে, মাহিদের কথাবার্তা যদি ভালো না হয় তাহলে তিনি এমন ছেলের কাছে মেয়েকে পাত্রস্থ করবেন না। অহমি মায়ের এমন কথা শুনে নিরবে হাসে। মাহিদকে বিয়ে করতে কোনো প্রকার আপত্তি নেই তাও বলে।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে অহমি ভাতঘুম দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। ফ্রেশ হয়ে বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে দিলো৷ নাহলে এখন মশার উপদ্রবে রক্ষা পাওয়া যাবে না। রং-তুলি নিয়ে আবারও মেঝেতে বসলো। পরীক্ষার জন্য অনেদিন আঁকাআঁকি করা হয়ে উঠেনি। রেফারেন্সের জন্য পিন্টারেস্টে ঢুকার জন্য মোবাইলটা হাতে নিয়েই চমকে উঠলো। মাহিদের চারটা মিস কল। মনে মনে ভাবে, “আল্লাহ আমি তো বাসায় পৌঁছে জানাতেই ভুলে গেছি।”

অহমি ভয়ে ভয়ে মাহিদকে কল করলো। কালরাতে আহিরই নাম্বারটা সেভ করে দিয়েছে। অহমি ভাবলো কল করবে। পরে কল না করে মেসেজ দিয়ে রাখে, “আমি আসলে বাসায় আসার পর আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
মেসেজ পাঠানোর পরক্ষণেই ভাবে – ‘মেসেজ পাঠানো কি ঠিক হয়েছে? কল করেই তো বলা যেতো! আচ্ছা থাক বলবো মোবাইলে টাকা নেই।’

অহমি আর কিছু না বলে রং-তুলি নিয়ে ওর কারুকাজ শুরু করে। একটা টি-শার্টে অনেকদিন যাবত স্ট্রেরি নাইট আঁকার প্লেন করেছিলো। আজ সময় সুযোগ বুঝে তা নিয়েই বসলো। ওর আর্ট প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় আফরোজা বেগম হাতে তেলের বাতি নিয়ে প্রবেশ করে। উনি প্রায়ই মেয়ের চুলে তেল দিয়ে দেন। অহমির চুল বেশি বড় না হলেও তুলনামূলক ভাবে ঘন। মেয়ের পিছনে বসে এলোমেলো করে রাখা খোঁপাটা খুলে মাথায় তেল ম্যাসাজ করে দেয়। অহমিও রং তুলি সাইডে রেখে শান্তিতে মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দেয়।

আজরোজা বেগম মাথা আঁচড়ে দিতে দিতে বলে, “মাহিদ আমাকে বিকেলে কল করেছিল।”

অহমি চমকে উঠে। বলে, “তোমাকে? কেনো?”

“তোমাকে কল করে পাচ্ছিলো না, তাই আমাকে কল করেছে। তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে, সেটা ওকে বলতেই বললো তোমার সাথে পরে কথা বলে নিবে। ”

“ওহ, আসলে আমাকে বলেছিলেন বাসায় ফিরে ওনাকে জানাতে। তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। তাই হয়তো তোমাকে কল করেছ। আমি মেসেজ দিয়ে রেখেছি সমস্যা নেই।”

আফরোজা বেগম মেয়ের চুলে বেণী করে দিতে দিতে বলেন, “শুনো এখন তোমার বিয়ে হবে। অনেক দায়িত্ব। এমন ভুলো মনের হলে হবে না। মাহিদ ডাক্তার মানুষ, ব্যস্ত থাকবেই। ভাইকে তো দেখছোই। তোমার তো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না ওদের ব্যস্ততা নিয়ে। তারপরও ও তোমার খোঁজ-খবর নিচ্ছে এইসবের মর্যাদা রেখো। বিয়ের পর মাহিদ, মাহিদের মা ওদের সাথে ভালো করে কথাবার্তা বলবে। তুমি এমনিতেই কম কথা বলো। আশা করবো উল্টোপাল্টা কিছু বলবে না। তাও খেয়াল রেখো। বিয়ের পর থেকে ওরাই তোমার পরিবার কিন্তু।”

অহমি নিরবে মায়ের কথা শুনেই গেল। সে সবটা খেয়াল রাখবে। মনে মনে আরো অনেক কিছু ভেবে রাখলো। আফরোজা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসেন। মেয়ে সুখী হলেই ওনার আর কি চাওয়ার! উনি রুম থেকে যাওয়ার সাথে সাথে মাহিদ কল করলো। অহমি প্রথমে সরি বলেই শান্তভাবে মাহিদের সাথে কথা বলে। আধা ঘন্টার টুকটাক কথাবার্তায় অহমির ঠোঁটের কোণে সর্বদাই মুচকি হাসি বিরাজমান ছিলো।
____________________

অহমি ওর বন্ধু-বান্ধবের সাথে গাজীপুর রিসোর্টে এসেছে। এটা আবার টুরিস্ট স্পটও। মা,ভাইকে না জানিয়ে এসেছে মিথ্যে ক্লাসের অজুহাত দিয়ে। মোট ৫ জনের গ্রুপ ওদের। অহমি, মৃধা, ইতি, সাবিহা, তানহা। এটা সাবিহার মামার রিসোর্ট। আক্দ উপলক্ষে ট্রিট দিতে আজ ওদের এই রিসোর্টে এনেছে। এখানে আসার প্লেন হয়েছিল রাত ২ টায়। সেজন্য অহমিকে আবার ২:৩০ টায় আবার শ্যাম্পু করতে হয়েছে। মা, ভাইকে না জানিয়ে এই প্রথম অহমি এতো দূরে একা এসেছে। কিছুটা এক্সাইটম্যান্ট, কিছুটা ভয় একসাথে কাজ করছে।

ওরা এখানে এসেছে সকাল দশটায়। প্রায় দু-তিন ঘন্টা ঘুরাঘরি করে ওরা মাত্রই খেতে বসেছে। তাড়াতাড়ি ফিরতেও হবে তাই। অহমি ওদের সাথে থাকলেই সবসময় হাসি-খুশি থাকে। এখানে ওকে গুমরে থাকতে হয় না। সেলফি তুলেছে, একজন আরেকজনকে রোস্ট করেছে। রোস্ট করার বিষয়ও আজকে অহমি।কারণ মাহিদ। নতুন নতুন বিয়ের কথা উঠলে বন্ধুরা যেভাবে রোস্ট করে ঠিকভাবেই। লাঞ্চে সকলে কাচ্চি বিরিয়ানি খেলেও অহমি চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করে। কারণ ও খাসির মাংস খুব একটা পছন্দ করে না। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে অহমির চোখ সামনের টেবিলে আটকে যায়। মানুষটাকে চিনতে অহমির একটুও ভুল হয় না। মাহিদ!! আরো কয়েকজন আছেন সাথে। মাহিদ এখানে কি করছে??

অহমি দ্রুত টেবিলের নিচে বসে পড়ে। মা, ভাইকে বলে আসলে সমস্যা ছিলো না। না জানিয়ে আসাতেই এত ভয়। মাহিদ ওকে দেখেছে কিনা কে জানে? অহমি ওর বন্ধুদের টেবিলের নিচ থেকেই মাহিদের এই রিসোর্টে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে বলে। দ্রুত ফিরে যেতেও বলে। সাবিহা যেহেতু রিসোর্টের সব জায়গাই চিনে তাই ওকে নিয়ে দ্রুত ওই জায়গা থেকে পুলের সাইডে চলে যায়। এখন ওরা রিসোর্ট থেকে বেরও হতে পারবে না। কেননা মাহিদরা যেই জায়গায় আছে সেখানটাতেই রিসোর্টের বাইরে যাওয়ার পথ। বাকি তিনজনও পুল সাইডে চলে আসে। ঠিক তখনই মাহিদ অহমিকে কল করে। প্রথম দুইবার ভয়ে অহমি রিসিভ করে না।

তখন ইতি ওকে ধমকে বলে, ” অহম কলটা রিসিভ কর। এমনও হতে পারে নরমাললি কথা বলার জন্য তোকে কল করেছে। এইভাবে কল রিসিভ না করলে আরো সন্দেহ করবে।”

তানহাও ওকে সমর্থন করে। অহমি ভয়ে ভয়ে তৃতীয়বারের কলটা রিসিভ করে সালাম দেয়। মাহিদও সালমের উত্তর দেয়। পরপরই ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করে, “অহমিকা তুমি কোথায়?”

অহমির কথা বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসও যেন বন্ধ হয়ে আসে। ধীর কন্ঠে বলে -” এইতো, এই..মানে এই..”

মাহিদ মৃদু স্বরে ধমকে বলে, “কোথায় জানতে চেয়েছি, এই বা এইতো নামের কোথাও তেমার থাকার জায়গা নেই।”

অহমি উত্তর দেয় না। নি:শ্বাসও ফেলতে পারছে না মেয়েটা।

“অহমিকা? তুমি কি বাসায়?”

মোবাইল লাউডে দেওয়া থাকায় বাকিরাও শুনতে পেলো। মৃধা ইশারায় হ্যাঁ বলতে বুঝালো। অহমি ধীর কন্ঠে হুম বলতেই মাহিদ আবারো ধমকে বললো “গাজীপুর রিসোর্টে তোমার বাসা? হুম? পুল সাইডে তোমার রুম?”

অহমি ওখানেই জমে গেল। কণ্ঠ থেকে শব্দ বের হতে চায় না আর। ওরা দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর হাত ভয়ে জমে গেল। কোনোমতে সাবিহার হাত চেপে বলে, “মাহিদ কি পিছনে?”

সাবিহাও পিছনে একবার তাকিয়ে আবারো নিজের বন্ধুদের দিকে তাকায়। সাবিহা ছাড়া সকলেই না বলে এসেছে। এখন অহমি ছোটখাটো বাঁশ খেলে বাকি তিনজনও খাবে। সাবিহাও ধীর কণ্ঠে ভয়ে ভয়ে বলে, “হুম, মাহিদ ভাইয়া ঠিক তুমি বরাবর পিছনে।”

চলমান…….

[হ্যাপি রিডিং]

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৩
#সমৃদ্ধি_রিধী

মাহিদ একদৃষ্টিতে অহমির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ঘুরিয়ে বাকি চারজনকেও দেখে নিলো। বাকি চারজন মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও অহমি যেন একদম স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে। একদৃষ্টিতে পায়ের দিকে তাকিয়েই আছে। ক্রমশ ওর হাত-পা ঘেমে যাচ্ছে। মেয়েটা এসির মধ্যে থেকেও বারবার ঘেমে যাচ্ছে। মাহিদ টিস্যু বক্স থেকে একদলা টিস্যু নিয়ে অহমির দিকে এগিয়ে দিলো। বলে, “টেক ইট।”

অহমি মুখ তুলে একবার ওকে দেখে আবারও মাথা নিচু করে ফেললো। ওর অনেক রিপেন্ট হচ্ছে কেনো এখানে আসতে গেলো!! না আসলে তো এতো সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতো না। মাহিদ যদি এখন আহিরকে বলে দেয়? আম্মু যদি কথা শোনায়! অহমি বারবার একটা না একটা ভুলভাল কাজ করবেই। কে জানতো সাবিহার হাসবেন্ড মাহিদের কলিগ হাসান? মাহিদের কলিগকেও আজই ট্রিট দিতে হলো? তাও মামাশ্বশুরের রিসোর্টে? ওহ সরি! এই রিসোর্ট তো হাসানের বাবার।

“টিস্যুগুলো নিতে বলেছি না? এসির মধ্যেও ঘামছো। আর কিছুক্ষণ পরই প্যানিক এট্যাক করবে বুঝা যাচ্ছে। নাও।”

অহমি কম্পিত হাতে টিস্যুগুলো দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে নিলো। মাহিদের অন্যান্য কলিগরা নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গিয়েছে। কেবল মাহিদ, হাসান আর ওরা পাঁচজন রয়ে গিয়েছে। হাসান সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমরা এখানে আসবে ভালো কথা, আমাকে একবার বলে আসলে কি হতো?’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” যাই হোক এখন ফিরে যাও, বিকাল তো হয়েই এলো। এখন রওনা না দিলে দেরী হয়ে যাবে।”

মাহিদ আড়চোখে অহমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে “কিভাবে ফিরবে তোমরা? গাড়ি এনেছো কেউ?”

মৃধা উত্তর দেয় সে সাথে গাড়ি নিয়ে এসেছে। ড্রাইভারও আছে। মাহিদ তখন বলে, “অহমিকা আমার সাথে ফিরবে। আশা করি কারো কোনো সমস্যা হবে না?”

মাহিদের কণ্ঠে গাম্ভীর্যের ছোঁয়া। অহমি একবার মাহিদের দিকে তাকিয়ে নিজের যাবতীয় জিনিস নিয়ে আসতে গেল। ওর কিছুক্ষণ পরপর গলা, ঠোঁট কেঁপে উঠছে। কিন্তু কাঁদল না। ওর পিছন পিছন মৃধা, ইতি, তানহাও ছুটলো। সাবিহা ওখানেই বসে মাহিদ আর হাসানকে বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকলো বাকিদের কোনো দোষ নেই। সাবিহাই কনভিন্স করে ওদের নিয়ে এসেছে।

_______________________________________________

হাইরোডের উপর গাড়িটা খুবই ধীর গতিতে চলছে। সামনেই আবারও বিশাল একটা জ্যাম। অহমি পুরাই জানালার সাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে। মাহিদ ওকে একটা প্রশ্নও করেনি। অহমিরও ওকে কিছু আগ বাড়িয়ে বলা উচিত কিনা বুঝতে পারছে না। ভাবনার মাঝে ঠিক তখনই অহমির মোবাইলটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভাইয়া নামটা দেখে চোখে-মুখে আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। এইবারো অহমি কলটা রিসিভ করতে পারে না। ওর ভয় হচ্ছে ভাইয়াকে কি বলবে? জ্যাম থাকবার কারণে তিনটায় রওনা দিয়েও পাঁচটা বাজালেও ওরা পৌঁছাতে পারে না৷

“পিক আপ দ্যা ফোন অহমিকা। তুমি কি একবার রিং বাজলে কখনোই ফোন উঠাতে পারো না?” মাহিদের কণ্ঠে বিরক্তির ছাপ। কিন্তু ততক্ষণে কলটা কেটে গিয়েছে।

অহমি চমকে উঠে। খাপছাড়া কণ্ঠে মাহিদকে প্রশ্ন করে, “ভাইয়াকে কি বলবো?”

মাহিদ অত্যন্ত কাঠঠোকরা কণ্ঠে বলে, “সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। না বলে আসার আগে মনে ছিল না যে জ্যাম পড়লে আমার লেট হতে পারে পরে ভাইয়াকে কি জবাব দিবো?”

অহমিকার এহেন কণ্ঠস্বর শুনে কান্না আসে। সবাই ওর সাথে এভাবেই কথা বলে। এমনকি মাহিদও এখন এইভাবে কথা বলছে।অহমির ভীষণ কান্না পেল। কিন্তু ও তো সকলের সামনে কাঁদে না। ওর নাকের পাটা কেঁপে উঠল। কেউ যেন গলাটা চিপে রেখেছে।

” আহির স্যার কল করলে বলবে তুমি আমার সাথে ছিলে। তোমার ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি তোমাকে নিয়ে তোমার ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরতি পথেই আমরা জ্যামে বসে আছি।”

অহমিও ভাবলো এটাই বলবে। গাজীপুর যাওয়ার কথা শুনলে ভাইয়া আর আম্মু অনেক কথা শুনাবে। তার চাইতে ভালো যদি মিথ্যে বলে বেঁচে যায়। ভাবনার মাঝে আহির আবারও কল করে। অহমিও তোতাপাখির মতো মাহিদের বলা কথাই আহিরকে রিপিট করে।

আহির ছোট একটা শ্বাস ফেলে। বলে,”আচ্ছা,মাহিদকে দে।”

অহমির ফোন থেকে আহির আর মাহিদ কি কথা বললো কে জানে! অহমি কেবল অপর প্রান্ত থেকে মাহিদের ‘জি’, ‘আচ্ছা’, ‘ঠিক আছে’ শুনতে পেলো। মোবাইলটা রাখতেই মাহিদ অহমিকে প্রশ্ন করে, “তুমি এর আগেও এমন না বলে দূরে কোথাও গিয়েছ?”

অহমি দ্রুত মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে না বোধক বুঝালো। তড়িঘড়ি করে বলে, “এই প্রথম বিশ্বাস করুন। সাবিহা অনেক জোর করায় আসতে রাজি হয়েছি। ভাইয়াকে বললে মোস্ট প্রোবাবলি আসতে দিতো না। তাই না জানিয়েই এসেছি। ”

মাহিদ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে কেনো বিশ্বাস করতে যাবো? যে একবার এমন করার সাহস করতে পারে, সে যে আগেও এমন করেনি তার কি গ্যারান্টি?”

অহমি দমে গেল। মাহিদ ওকে কি সত্যিই বিশ্বাস করেনি? একটা সম্পর্ক শুরুই হতে পারিনি তার আগেই কি মাহিদের মনে কি অবিশ্বাসের বীজ বুনে ফেললো? অহমি নিজের পক্ষ থেকে শেষ একটা সাফাই গাইলো, “আপনি বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না, তা আপনার ব্যক্তিগত কারণ। তবে আমার পক্ষ থেকে আমি সম্পুর্ন ক্লিয়ার। তাছাড়া আমি এর আগে এমনটা করিনি দেখেই এভাবে ভয় পাচ্ছি। ”

মাহিদ পুরাটা রাস্তায় আর কথা বললো না। অহমিও চুপচাপ ছিলো সবসময়ের মতো। নিজের প্রতি কেমন একটা বিতৃষ্ণা জমে। ওর ভুলটা কোথায়? ও কি একটুও মজা-ঠাট্টা, বিনোদন নিতে পারে না? সূর্য প্রায় ডুবেই গেছে। তখন মাহিদ অহমির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দিল। অহমি একবার নিজের পাঁচতলা বাড়ির দিকে তাকিয়ে মাহিদের উদ্দেশ্যে বলে, “প্লিজ আমি যে গাজীপুর গিয়েছি ভইয়াকে বলবেন না।”

মাহিদ ওর এই কথার উত্তর দেয় না। গাড়ি থেকে নেমে অহমির পাশের দরজা খুলে দিলো। গলায় খাদ নামিয়ে বলে, “আমি রাতে ফোন করবো। প্রথম কলেই যেন ফোনটা ধরা হয়। দ্বিতীয়বার যাতে কল না দিতে হয়। এন্ড ঘুমাচ্ছিলে এমন অযুহাতও যেন না দেওয়া হয়, তুমি যে রাত জাগো আমি খুব ভালো করেই জানি।”

________________________________________________

বাড়ি ফিরেই অহমি মায়ের কাছে একগাদা বকা শুনেছে। সন্ধ্যার পর থেকে অহমি রুম থেকেই বের হয়নি। কেঁদেকেটে চোখগুলো ফুলিয়ে ফেলেছে। এখন ডিনার করার টাইমে আফরোজা বেগম ডাকতে আসলেও অহমি দরজা না খুলেই বলে সে খাবে না। আহির এমনিতেই ওর উপর রেগে ছিল। অনমির রুমের সামনে গিয়ে দুইবার জোরে দরজায় বারি মারতেই অহমি দরজা খুলে।

“টেবিলে যা।”

আহির কখন বাসায় এসেছে অহমি জানে না। তবে ভাইয়ের গলার স্বর শুনেই অহমি বুঝতে পারে আহির প্রচন্ড পরিমাণ রেগে আছে। মাহিদ কি তবে গাজীপুর যাওয়ার ব্যাপারে বলে দিয়েছে? অহমি আর ভাবতে পারলো না, এমনিতেই ওর প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। আফরোজা বেগমও সন্ধ্যার বকাবকির পর অহমিকে আর কিছু বলেননি। তিনি তো মা, জানেন মেয়ে নাজুক স্বভাবের। টেবিলে তিনজন চুপচাপ খাওয়া শেষ করে। অহমি উঠতেই যাবে এমন সময় আহির মায়ের উদ্দেশ্য বলে, “তোমার মেয়ে আম্মু ভালোই বড় হয়েছে। আজকাল বাইরে থাকে কিন্তু মা ভাই থেকে পারমিশন নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না।”

আফরোজা বেগম বিরক্তির সুরে বলে, “আহির থামো। অহমি তো বলেছেই এখন থেকে আমাদের কোথাও যাওয়ার আগে বলে যাবে। আর গেলেও তো মাহিদের সাথে দেখা করতেই গেছে। ”

আহির ছোট থেকেই বদমেজাজি। নিজে যা বুঝবে তাই। হুঙ্কার দিয়ে বলে, “মাহিদের সাথে দেখা করতে হবে কেনো? কালকে কথা হয়নি? তাহলে প্রতিদিন কিসের এত দেখা করা?”

অহমির দিকে তাকিয়ে, “তোকে তো ওর ফোন নম্বর দিয়েছিই, তাহলে রোজ রোজ কেনো দেখা করতে হবে? কাল সব কথা বলে বুঝে আসতে পারিস নি?”

অহমি কোনো উত্তর দেয় না। আহির আবারও গর্জে উঠে জিজ্ঞেস করে, “কেথায় গিয়েছিস ওর সাথে?”

অহমি বুঝলো এখন উত্তর না দিলে আহির আরো রেগে যাবে। ধীর কণ্ঠে বলে, “কুঁড়েঘরে।”

“কোথায়?” চেঁচিয়ে উঠে।

“আমাদের ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে।”

“রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়? শিখাস তুই আমাকে?”

আসলেই তো! এভাবে ভেবে দেখেনি তো। অহমি কেনো রকম করে বলে,” রেস্টুরেন্ট থেকে চন্দ্রিমা উদ্দ্যানে হাঁটতে গিয়েছিলাম।”

“এই তোর সাথে ওর বিয়ে হইছে? না আক্দ হইছে? কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ের আগে এতো মেলামেশা করে?”

অহমির কোনো যেনো কথাটায় খুব খারাপ লাগলো। হ্যাঁ ও যায়নি মাহিদের সাথে, কিন্তু গেলেও বা এমন রিয়েক্ট করার কি আছে? মাহিদের সাথে তো ওর বিয়ে হবেই। অহমির মতে ওর ভাই এখন বেশি বেশিই করছে।

নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে না পেরে বলেই ফেলে, “তুমি এবার অতিরিক্ত করছো, খাবার খেতেই তো গিয়েছি, হাঁটতে গিয়েছি, অন্যকিছু করেছি? অন্যায় তো করিনি। তুমি সবসময়ই এমন বাড়াবাড়ি করো।”

“থাপ্পর দিয়ে গালের দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব। মুখে মুখে তর্ক করার সাহস হয় কিভাবে?” আহির অহমিকে থাপ্পড় মারতে তেড়ে আসে। আফরোজা বেগম ছেলেকে কোনোমতে হাত ধরে আটকায়।

অহমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফরোজা বেগম ধমক দিয়ে উঠেন। বলেন,”অহমি চুপ করো, রুমে যাও। আর আহির সমস্যা কি? মাহিদকে তো তুমি চিনোই। আর রাগারাগি কোরো না। বোন বড় হচ্ছে তোমার।”

অহমি জিদ দেখিয়ে রুমে চলে আসে। ও রুম থেকেই শুনতে পাচ্ছে ‘সন্ধ্যা ছয়টার পরে কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তান বাসায় ঢুকে না। দিনকেদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। জন্মের আগে থেকেই আমাদের অশান্তিতে রেখেছে।’ আর আফরোজা বেগম ছেলকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। অহমির মনে হয়-মা তো পারতো আজ ভাইয়াকে শাসন করতে। সবসময় তিনি অহমিকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেন। আহিরকে কিছু বলেন না। এখনও ছেলেকেই লাই দিচ্ছেন। অহমি আসলেই সকলের কাছে ঝামেলা। অবহেলার।

বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ভাই এখনও ওকে বকেই চলেছে। আরেকটা বালিশ দিয়ে নিজের কানও চেপে রাখলো। এর কিছুক্ষণ পর মাহিদ কল করলো। অহমি একবার রিং হতেই রিসিভ করলো। সবসময় ও কলের শুরুতে সালাম দেয়। কিন্তু এখন দিলো না। একটা ছ্যাবলামি করেই ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, “আমাকে বিয়ে করবেন মাহিদ, খুব তাড়াতাড়ি করবেন? আমি আর এই বাসায় থাকবো না। কিছুতেই থাকবো না।”

চলমান…..

ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০১

0

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#সূচনা_পর্ব
#সমৃদ্ধি_রিধী

-“মাহিদের মা আজকে আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছে আম্মু। ওনি অহমিকে ওনার ছেলের বউ হিসেবে ঘরে তুলতে চান।”

অহমি মাত্রই চিকেন ফ্রাইয়ে বাইট দিতে যাচ্ছিল এমন সময় আহিরের কথা শুনে ও বড় বড় চোখ করে মায়ের দিকে তাকায়। আফরোজা বেগমও বেশ অবাকই হয়েছেন।

-“তোমার স্টুডেন্ট মাহিদ? যে এডমিশন টাইমে তোমার কাছে পড়ে তোমার মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলো? তুমি কি বলেছ তােদের? ”

-” হুম। আজকে আমার দুপুরে ওদের বাসায় দাওয়াত ছিলো না? তখনই আমার কাছে ওর মা প্রস্তাবটা রাখে। তোমার সাথে কথা বলা ছাড়া তো আমি কোনো মতামত তাদের দিতে পারি না। তাছাড়া অহমেরও যদি অন্য কাউকে পছন্দ থাকে? আমি ওনাদের পরে জানাবো বলেছি।”

-” যদি ছেলে ভালো হয় তাহলে তো অসুবিধা নেই, অহমিরও বিয়ের বয়স হচ্ছে। এখন তুমি তোমাদের বাবার অবতর্মানে ওর অভিভাবক। তোমার যদি মনে হয় তোমার বোনের জন্য ছেলে হিসেবে মাহিদ পারফেক্ট তবে তুমি কথা আগাতেই পারো। আমার কোনো অসুবিধা নেই।”

আহির আর আফরোজা বেগমের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা চললো। অহমি পুরো সময় নির্বিকার ছিলো। অহমি যখন টেস্ট শেষ করে পুরোদমে এসএসসি প্রিপারেশন নিচ্ছিল তখন আতহার হুসাইন মাহিদ নামে একজনকে তার বড় ভাই মেডিকেলের জন্য টিউশানি পড়াত। মাহিদকে ও বেশ কয়েকবার দেখেছে। মাথা নিচু করে ওদের বাসায় ঢুকতো, মাথা নিচু করে বের হতো। নিতান্তই ভদ্রলোক। মাহিদই আহিরের প্রথম ছাত্র। আহির মেডিকেল থার্ড ইয়ারে থাকতেই মাহিদকে পড়ায়। আহির অবশ্য তার শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অহমির মতামতকেও গুরুত্ব দিয়েছে। বাবা ছাড়া পরিবারে মা-ভাইকে অনেক কষ্টই করতে হয়েছে। কিন্তু অহমিকে তারা কখনোই কষ্ট করতে দেয়নি। তারা সবসময়ই অহমিরর ভালো চান। তারা যখন অহমির বিয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেখানে অহমির দ্বিমত করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

অহমি নিজের চিকেন ফ্রাইটা শেষ করে রুমে চলে আসে। বড্ড অগোছালো রুম তার। টেবিলের বইগুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। মেঝেতে রং তুলি রেখেই ভাইয়ের আনা চিকেন ফ্রাই খেতে গিয়েছিল। ছাদ থেকে আনা জামাকাপড় গুলো এখনো গুছানো হয়নি। অহমি রুমের দরজা বন্ধ করে স্পটিফাই এ প্রথমে গান ছাড়লো। একেএকে রং-তুলি, জামা কাপড়, বিছানা, সবশেষে পড়ার টেবিল নিমিষেই গুছিয়ে ফেললো। এই রং-তুলি, টেবিলের কিছু অংশ নিয়েই তার জীবন। রুমের লাইট নিভিয়ে টেবলিল্যাম্প জ্বালিয়ে তার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা বের করলো। ডায়েরির পাতার উপর কলমের খচখচ শব্দ হতে থাকলো।

“মাহিদ! আমি লোকটা ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে দেখেছিলাম এক দুইবার৷ ভাইয়ার কাছে পড়তে আসত। ছেলে মেবি ইন্ট্রোবার্ট। ওকে কখনো আমার দিকে সেইভাবে তাকাতে দেখিনি। আচ্ছা ও কি আমাকে পছন্দ করে?আমাকে ভালোলাগায় ভাইয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে? নাকি একজন বিবাহযেগ্য পাত্র যেমন বিবাহযোগ্যা পাত্রীকে প্রস্তাব দেয় ঠিক সেইভাবে? জানি না! আমার তো কেনো গুণই নেই কারো ভালোবাসার মানুষ হওয়ার। তাহলে কেনোই বা পছন্দ করবে? হয়তো, হয়তো..হয়তো কেবল প্রস্তাবই দিয়েছে! প্রস্তাব দিলেই তো বিয়ে হয়ে যাবে না?

তবে ভাইয়া যদি ওনার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা আসলোই এগোয় তাহলে অবশ্যই তা আমার জন্য ভালোই হবে। এরপরও যদি আমার সাথে ভালো কিছু না হয় তাহলে বুঝবো ভাগ্য খারাপ। কিন্তু আমি ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা করবো। আমার মা সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছে। আমি চাই না আমার জন্য তাকে আরো কিছু সহ্য করতে হোক। আমি নিজের কষ্ট হলেও কখনো কাউকে কিছু বুঝতে দিবো না। আমি চাই না আমার জন্য ওদের আর কোনো অসুবিধা হোক।”

অহমির সবসময় নিজেকে অপর্যাপ্ত মনে হয়। সবসময় ইনসিকিউরিটিতে ভুগে। মনে হয় কারো জীবনেই ও সুখের কারণ হতে পারবে না। অহমির জন্মের এক সপ্তাহ আগে ওর বাবা মারা যায়। সেই থেকে ওর দাদীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে কথা শোনাতো। একই সাথে দুই ফুফু তো ছিলোই। এই কথা অবশ্য আহির বা আফরোজা বেগম জানেন না। ছোট্ট অহমির তাই ছোট থেকেই মনে হতো ও সবসময় ভুলই করে। ওর যে অ্যাটেলোফোবিয়া হয়ে গেছে তা কেউই বুঝতে পারে না। আসলে অহমি বুঝতেই দেয়না।

অহমি ডায়েরিটা বন্ধ করে দিলো। ডায়েরিটা টেবিলের এক কোণায় রেখে আরেকটা ডাইরি বের করলো- পৃষ্টার শুরুতেই লিখলো ‘অমবস্যা ক্রিনিকোলাস’ -ডেট ২৩/০৫/২০২৫। খুব ছোট থেকেই গল্প লিখতে খুব পছন্দ করে, তবে কখনো সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। ভয় হয়!যদি কেউ উপহাস করে? সেই নাইন থেকে কত গল্প যে লিখেছে! কখনো প্রকাশ করা হয়নি। আজ অমব্যাসার ক্রিনিকোলাসের একদাশ অধ্যায় লিখবে। আজকের টপিক নিয়ে একটু রিসার্চ করতে হবে। তাই ল্যাপটপটা ওন করলো। ওর অনেক ইচ্ছে একজন রাইটার হওয়ার। তবে সে নাম প্রকাশ করবে না। গল্প লিখার এক পর্যায়ে সে বেমালুম ভুলে গেল কালকে ফার্মাকোলজি সাবজেক্টটার পরীক্ষা।
_________________________

মাহিদের সাথে অহমির বিয়ের ব্যাপারে পারিবারিক ভাবে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনো অহমি আর মাহিদের সরাসরি কথা হয়নি। কারনটা অহমির অর্নাস থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা। আজ অহমির পরীক্ষা শেষ। তাই আহির ওকে আগামীকাল মাহিদের সাথে দেখা করতে বলে। অহমিও আপত্তি করে না। রাতে ডিনার শেষ করে রুমে এসে ড্রেস চুজ করে। খুব সিম্পল অ্যাশ কালারের একটা থ্রিপিস চুজ করে পড়ার জন্য। ও খুব একটা জুয়েলারি পছন্দ করে না। কানে পাথরের কানের দুল আর দৈনন্দিন যে ঘড়ি পরে তা দিয়েই রেডি হয়ে ও মাহিদের সাথে দেখা করতে যাবে। ভাইয়া মাহিদের নাম্বার, যে জায়গায় দেখা করবে তার ঠিকানা ওকে বলে দিয়েছে। বলেছে এগারোটায় ওকে সেই ক্যাফেতে উপস্থিত থাকতে। অহমিও সম্মতি জানিয়েছে প্রতিবারের মতো। ভয় যদি অবাধ্য হলে ভাইয়ার খারাপ লাগে?

সেইদিন রাতে অহমি তার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা নিয়ে আবারও বসলো। পুরো রুমে আবারও কলমের খচখচ শব্দ। “একটা ছেলেকে ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারে ভালো লাগত। কিন্তু বলা হয়নি। যদি রিজেক্ট করে? তাছাড়া ওটা এমনিতেই একদিন দেখে ভালো লেগেছিল এমন ধরনের। খুব সিরিয়াস না। পরে জানতে পারি ছেলেটার ওর ক্লাসমেটের সাথে রিলেশন ছিলো। ভাগ্যিস জানায়নি। নইলে যে বাজেভাবেই না রিজেকশনের স্বীকার হতাম!”

এমন করে রাত ২:৩০ টা পর্যন্ত অহমি নানান বিষয়ে লিখতেই থাকলো। ওর রাত যেন আজ ফুরায় না।

_________

মাহিদের সাথে ১১ টায় দেখা করার কথা থাকলেও অহমির ক্যাফেতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১১:৩০ হয়ে যায়। অহমি মাহিদকে তার এসএসসির সময় শেষ দেখলেও এখন ওর পিছনের অংশ দেখে খুব সহজেই চিনে ফেলে। ও ধীর পায়ে বরাদ্দকৃত টেবিলের সামনে গিয়ে মাহিদকে সালাম দেয়।

-“আসসালামু ওয়ালাইকুম।”

মাহিদ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে ওকে দেখে সালামের জবাব দেয়।

-“প্লিজ সিট।” অহমি ধীরে-সুস্থে বসতেই মাহিদ বলে-“তুমি আধা ঘন্টা লেটে এসেছ। ”

অহমির বলতে ইচ্ছে হলো ‘ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ায় লেট হয়েছে।সাথে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে জ্যাম তো আছেই।” কিন্তু অহমি ক্ষীণ আওয়াজে বললো-“সরি।”

-“বাই দ্যা ওয়ে কি খাবে?”

-“আপনি অর্ডার দেন, আমার সমস্যা নেই।” কিন্তু ও বলতে পারলো না প্লিজ স্যান্ডউইচ ছাড়া যা ইচ্ছে অর্ডার দেন। আমার স্যান্ডউইচ ভালো লাগে না। মাহিদও তখন নিজের খেয়াল খুশি মতো কিছু না বলে কফি, স্যান্ডউইচ অর্ডার দিল।অহমি অপ্রকাশিতভাবে ভীষণ মন খারাপ করলো। অহমি ও মাহিদ বেশ কিছুক্ষণ অহমির পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বললো। একপর্যায়ে মাহিদ বলে-“তোমার আগে রিলেশন ছিল? আমি সব মানলেও এই একটা জিনিস আমার বউ এর জন্য মানবো না।”

-“না, আমার সেরকম কিছু নেই, একচুয়েলি আই নেভার ডেটেট এনি গাই।”

মাহিদ মনে মনে বেশ খুশিই হলো। অবশ্য অহমির ব্যাপারে আগেও বেশ কিছু জায়গায় খোঁচখবর তো অবশ্যই নিয়েছিল।

-“তোমার আমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে?”

-“না সেরকম নেই, ভাইয়া আম্মু যা ভালো বুঝে তাই করবে। কিন্তু আপনার?”

-” হুম, অবশ্যই আপত্তি আছে। অন্যতম কারণ তুমি খুব অগোছালো, কারণ আমি সবসময় জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখতেই পছন্দ করি। কিন্ত তুমি তার বিপরীত।”

অহমি বেশ অবাক হলো। অগোছালো সে ঠিক আছে! কিন্তু তা মাহিদ কি করে জানলো? ও তো বেশ পরিপাটি হয়েই বাইরে বের হয়। তবে অহমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলো পরের কারণটা শুনে।

-” তোমার নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই নেই।”

চলমান…

Dark Mystery পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_শেষ পর্ব
#Sabrina_Summa

সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?

মাহির : বলছো যখন তাহলে সব বলেই ফেলো। আর হ্যাঁ একবার তুমি আরেকবার আপনি বলাও অফ করো।

সুপ্তি : আমার এটা ভালো লাগছে। আর একবার সুপ্তি কথা বলছে আরেকবার মিস সিক্রেট। সো ইট’স নরমাল।

মাহির বিরক্ত হলো তবে কিছু বললো না।

একটুপর সুপ্তি নিজেই বলা শুরু করলো, ” তৃতীয় খুন করি আমার বাসার দারোয়ানকে। কারণ ওর জন্যই আমার ফ্যামিলির উপর অ্যাটাক হয়েছে। আর চতুর্থ খুন করি যে তোমার উপর অ্যাটাক করেছিল তাকে।

মাহির অধোর্য্যের মতো বললো, ” আর ৫ম খুন? ”

সুপ্তি : আরে বাবা বলতেছি তো!

দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আবারও বলা শুরু করলো,
” আমি যখন আটক ছিলাম তখন আমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য অনেকগুলো ফোর্স ছিল। সেখানকারই একজন আমাকে শান্তশিষ্ট অবলা নারী ভেবে গাঁয়ে হাত দিতে নিচ্ছিলো। আমার গান আগেই নিয়েছিল কিন্তু আমি কি এতটাই ইনোসেন্ট নাকি! ছুরি দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিছি। এরপরই বাইধা রাখা হইছিল। আর ওই লাশটাকে ওখানেই রাখা হইছিল। এমনিতেই খারাপ পরিবেশ তারমধ্যে লাশ পচে আরও খারাপ অবস্থা হয়েছিল। ”

মাহির : সবই বুঝলাম। কিন্তু তুমি তোমাদের বাসার ছাদে যা বলেছিলে সবই কি মিথ্যা?

এবার সুপ্তি রেগে গেল। চেয়ার থেকে উঠে বললো, ” কি মিথ্যে বলছি বল? ”

মাহির : বসে কথা বলো। আমি বলছিলাম যে তুমিই তো মিস সিক্রেট তাহলে তোমাকে উদ্ধার করলো কে?
( স্বাভাবিক ভাবে )

সুপ্তি : কেন বলছিলাম না মিস সিক্রেটের টিম! ওরাই উদ্ধার করেছে। তবে যেহেতু কেউ আমার ফেস দেখেনি সেহেতু ওরা আমাকে সুপ্তি অর সুমির বোন মনে করেছে।

মাহির : আমার লাস্ট প্রশ্ন।

সুপ্তি : আমি আর কিচ্ছু বলবো না। আমি খুবই টাইড। আমি বের হবো।

মাহির : তুমি এখানে নিজ ইচ্ছায় আসো নি। সো নিজ ইচ্ছায় বের হতেও পারবে না।

সুপ্তি : থ্রেড দিচ্ছো আমায়?

মাহির : না। চুপচাপ বলো তোমার ফ্যামিলি কী জানতো তুমিই মিস সিক্রেট?

সুপ্তির বোধহয় প্রশ্নটা ভালো লাগলো। তাই বলা শুরু করলো, ” প্রথমে জানতো না। কিন্তু পরে যখন তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যায়। তখন মিস সিক্রেট রূপে সুপ্তির রুমে ঢুকতে যেয়ে ধরা পড়ি।
জানেন সেদিন আমি ভিজা বিড়ালের মতো গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেদিন যা ভয় পাইছিলাম জীবনে এত ভয় পাই নাই। অনেক বড় একটা ক্লাস নিছিলো আম্মু। ”

মাহির : তাই তো বলি বিয়ের দিন তোমার মা-বাবা কোনো রিয়েক্ট কেন করলো না। নিজের মেয়ের জায়গায় মিস সিক্রেটকে দেখে তোমার মা বলেছিল মিস সিক্রেটও নাকি তার মেয়ে! আজ বুঝতে পারছি তিনি ঠিকই বলেছিলেন।
একটা মজার কথা জানো। ”

কথার মাঝখানে সুপ্তি বলে উঠলো, ” না।”

মাহির : দিলে তো কথা বলার ধরণটা নষ্ট কইরা। না বললে জানবে কিভাবে!

সুপ্তি আবারও কথার মাঝে বলে উঠলো, ” জানেনি যখন জানি না তাহলে সোজাসুজি বললেই হয়। ”

মাহির : চুপ থাকো তো। বলতে দেও।

সুপ্তি চুপ করলে মাহির বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ফ্যামিলি নিয়ে তোমার বাসায় যাই তখন তোমার মায়ের আপত্তি ছিল এ বিয়েতে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন মাহির বেকার।
কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি বলবেন আমার সাথে থাকলে তার মেয়ের সেইফটি থাকবে না। কিন্তু তিনি বললেন পুরো ভিন্ন কথা। তখন বাবা বলেছিল আমি বাবার ব্যবসা দেখি। তারপর তোমার মা রাজি হয়েছে।
আমার ভাবনা তোমার মাকে জানালে তিনি বললেন সুপ্তির সাথে থাকলে নাকি আমারই সেইফটি থাকবে না।
তোমরা মা মেয়ে পারোও বটে মানুষকে কনফিউজড করতে। বলো সত্য কথায় তবে কারো বোধগম্য হয় না। ”

সুপ্তি : ও আচ্ছা। এখন আমি বাসায় গিয়ে ঘুমাবো।

মাহির : এখানে ঘুমাও।

সুপ্তি : যেখানে মানুষকে আটকে রাখা হয় সেখানে আমি ঘুমাই না।

মাহির : এখানে কখনোই কাউকে আটকে রাখা হয় নি। সম্পূর্ণ ক্লিন রুম। স্প্রেশালি তোমার জন্য আবারও ক্লিন করা হয়েছে কিছু ঘন্টা আগে।

তারপরও সুপ্তি দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলে মাহির আর নিজের ইমোশন ধরে রাখতে পারলো না। সুপ্তিকে হারানোর ভয় আবারও তাকে ঘিরে ধরলো।

তাইতো সুপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো, ” I’m sorry supti.. I’m extremely sorry. আমি কতবার ভেবেছি তুমিই মিস সিক্রেট। কিন্তু ততবারই তোমার কর্মকান্ড আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।
আমি জানি, আমি মিস সিক্রেটের সাথে খুব খারাপ করেছি, অনেক hurt করেছি কিন্তু সেটা তো তোমাকে অর্থাৎ সুপ্তিকে ভালোবেসেই করেছি। Please, try to understand. ”

সুপ্তি অকস্মাৎ ঘটনায় খুবই অবাক হলো। মাহিরের হঠাৎ পরিবর্তন তাকে খুবই ভাবাচ্ছে। তারপরও মাহিরকে ছাড়িয়ে বললো, ” অনেক দেরি হয়ে গেছে মাহির। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি চেয়েছিলাম বিয়ের প্রথম রাতে সব বলতে কিন্তু তুমি তো তার সুযোগই দিলে না। ”

মাহির : তুমি যদি চাও আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাবো।
( বলেই বসে পড়লো )

সুপ্তি সরে গেলে মাহির বললো, ” I am sorry, তুমি আমাকে যত শাস্তি দেওয়ার দেও তবে ছেড়ে যেও না প্লিজ। ”

সুপ্তি : মাহির আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর তাছাড়াও পুরো দেশ জানে আমাদের ডিভোর্সের কথা। এখন আর কিছু হওয়া সম্ভব না।

মাহির : তোমার কথায় যদি সত্যি হয়।
আমি তোমাকে বাঁচতে দিবো না। আর নিজেও বাঁচবো না।

সুপ্তি : আমাকে মারার থ্রেড দিচ্ছো তুমি?

মাহির : থ্রেড না সত্য বলছি। তুমি আমার হবে না মানে তুমি কারোর হতে পারবেও না।

সুপ্তি : ওকে মারো আমায়।
বলতে বলতে চেয়ারে বসলো।

মাহির : সুপ্তি আমি মজা করছি না। আমি পারমিশন না দিলে ৭২ ঘন্টার মাঝে এই রুম কেউ খুলবে না। ভেতর থেকে এই রুম খোলা যায় না। আর এই যে ( ড্রয়ার থেকে রিমোট বের করে ) এটা দিয়ে আমি রুম ব্রাস্ট করতে পারি।

সুপ্তি : ভাই এত ইন্ট্রো না দিয়া যা করতে চাস তাড়াতাড়ি কর। এমনিতেও এ পৃথিবী আমার ভালো লাগে না। যদি বিশ্বাস না হয় পৃথিবীকে জিজ্ঞাসা করতে পারো ও সাক্ষী।

এতক্ষণ মাহির চিল মুড নিয়ে ছিল আর সুপ্তি ইমোশন দেখাচ্ছিল। এখন উল্টো সুপ্তি চিল মুডে আর মাহির ইমোশনে।

এভাবে সুপ্তি রাজী হবে না বুঝতে পেরে মাহির নিজের মাথায় গান পয়েন্ট করে বললো, ” থাক তোমার মরতে হবে না। আমার মরার পর ৭২ ঘন্টা শোক পালন করার জন্য কাউকে দরকার পড়বে। তুমি শোক পালন করো আমি নাহয় উপর থেকে দেখবো।”

সুপ্তি কিছুক্ষণ মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” কী চাও আমার কাছে? ”

মাহির : এই পেপারগুলোতে সাইন চাই। আর যেহেতু তোমার জন্যই পুরো দেশ জেনেছে ডিভোর্স সম্পর্কে সেহেতু ১ ঘন্টার মাঝে এই নিউজ মিথ্যে প্রমাণিত হওয়া চাই না হলে বাকিটা বললাম না বুঝতেই পারছো!

সুপ্তি ওকে বলে পেপারগুলোতে সাইন করে দিলো।
আর নিজের টিমকে জানিয়ে দিলো এই নিউজ ডিলেট করতে।

সুপ্তি : মাহির ল্যাপটপ আছে?

মাহিরের উত্তর না বোধক আসতেই সুপ্তি ফোন দিয়েই কাজ শুরু করলো।
৩৫ মিনিট পর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ডান। ”

মাহির খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো, ” চলো, রুম সাজাতে হবে। ”

সুপ্তি : কেন?

মাহির অবাক হওয়ার মতো করে বললো, ” কেন মানে? দ্বিতীয় বিয়েতে রুম সাজাতে হবে না? ”

সুপ্তির বুঝতে দেরি হলো না মাহির সুপ্তির সাথে দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছে।

সুপ্তি : মাহির আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।

মাহির : হ্যাঁ জানি। আমাদের একটু আগে দ্বিতীয় বিয়েও হয়েছে। প্রথম পেপারে বিয়ে। দ্বিতীয় পেপারে চুক্তি যে তুমি আমাকে কখনো ছাড়তে পারবে না! তুমি তো কানা ফকিরের মতো সাইন করে দিছো।

সুপ্তি : ফাজলামো বন্ধ করো মাহির। সাইন করানোর আগে তোমার বলা উচিত ছিল।

মাহির : রেগে যাচ্ছো কেন? বাদ দেও এগুলো। বাসায় চলো।

সুপ্তি : মাহির আমি তোমার বাবার বাসায় যাবো না।

মাহির : কেন?

সুপ্তি : কেন যাবো সেটা আগে বলো? তোমার বাবা-মা দুইজন আমার দুই ক্যারেক্টারকে পছন্দ করে। আমি দুইজনের সাথে দুই আচরণ করবো?

মাহির : তুমি চাইলে আমরা এ বাসায় থাকতে পারি।

সুপ্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ” এতেও কারো সমস্যা হতে পারে। ”

মাহির : দেখো সুপ্তি। আম্মু মিস সিক্রেট আর সুপ্তি দুইজনকেই পছন্দ করতো কিন্তু আমার জন্য আম্মু মিস সিক্রেটের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আর বাবার কথা বাদ দেও। তারপরও দুইজনের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

সুপ্তিকে কারো কিছুক্ষণ বুঝানোর পর সুপ্তি রাজি হলো বাড়ি ফিরতে।।

আজ সুপ্তিকে নতুন বউয়ের মতো করে বাড়িতে প্রবেশ করানো হলো। এখানে সুপ্তির মা বাবাকেও ডাকা হয়েছে।
সুপ্তিকে কেউ বুঝতেই দিচ্ছে না এতদিন কি হয়েছে। এমনভাবে তাকে ট্রিট করা হচ্ছে যে আজই প্রথম সে বউ হিসেবে এ বাড়িতে এসেছে।

সকলে আড্ডা দিচ্ছে সোফায় বসে।
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” এভাবেই যেন বাকি জীবনটা কাটে।। ”

বাইরে আকাশটা ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে। নতুন আলোয় একটা পুরোনো গল্প আবার শুরু হচ্ছে ।
বাস্তবতা সবসময় পরীর গল্প নয়। ভুলের পর ক্ষমা আসে, কিন্তু দাগটা থেকে যায়।
সুপ্তি জানে, সে সবটুকু মাফ করে দিতে পারবে না —শুধু ভুলে থাকবে।।
কোনো যুদ্ধই একদিনে শেষ হয় না। কিন্তু কিছু যুদ্ধ, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে থেমে যায়।
আর বাকিটা?
তাদের গল্প নয়, সময় বলবে…

🔚 সমাপ্ত.,.!

( আসসালামু আলাইকুম। এতক্ষণ আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে গল্পটা পড়েছেন। আরও ১ মিনিট একটু নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত পড়িয়েন।
প্রথমেই দুঃখিত শেষটা সুন্দর করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য। আরেকটু লেখার ইচ্ছে ছিল তবে সামনে পরীক্ষা থাকায় হয়ে উঠলো না।
আমি অনেক কিছুই না বুঝে লিখেছি যেমন ভার্সিটির বিষয়টা। যে এখনো স্কুলের গন্ডিটায় পার হয় নি সে ভার্সিটি সম্পর্কে আর কতটুকুই জানে! তবুও চেষ্টা করেছি লেখার। আর রাজনৈতিক বিষয়টাও। আমি তো রাজনীতির ‘র’ ও বুঝি না।
অনেক কিছুই লেখেছি মজার ছলে তবে হয়তো সেগুলো সেনসিটিভ কিছু। দয়া করে সেনসিটিভ ভাবে না নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েন।
আবারও দুঃখিত কথা গুছিয়ে বলতে পারছি না।
আমি পনেরো বছরের তরুণী। উপন্যাস পড়ে সারাদিন ভাবনার দুনিয়ায় ডুবে থাকি। আর স্বপ্ন দেখি। মূলত স্বপ্নই আমার অনুপ্রেরণা। এই গল্পটার অধিকাংশই আমার স্বপ্নে দেখা বাকিটা আশেপাশের ছোটো ছোটো ঘটনা থেকে নেওয়া।
তবুও আমার বোন আমার ফ্রেন্ডরা আমায় অনেক হেল্প করেছে। ২০২৬ এ আমরা এসএসসি দিবো একটু দোয়া করিয়েন।
আমার ছোট একটি গ্রুপ আছে নাম – গল্পের ঝুড়ি ( গল্প লিখি, গল্প পড়ি )
আর একটু ছোট পেইজ আছে নাম ” ক্ষুদে লেখিকা.,.”
সামনে ঈদ। ঈদ সালামি হিসেবে একটু ফলো দিয়ে আসবেন প্লিজ।
দোয়া করিয়েন আমার জন্য। হয়তো আবারও দেখা হবে কখনো নতুন গল্প নিয়ে।
ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এতটুকু পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। )

Dark Mystery পর্ব-৪০

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_40
#Sabrina_Summa

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা রুমে। যার চতুর্দিকে আয়না লাগানো। একটা মানুষের থাকার মতো করেই রুমটা গোছানো।
একটা চেয়ারে বসে আছে সে। তার হাত পিছনে চেয়ারের সাথে বাঁধা। মাহির তার সামনের চেয়ারে বসে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিরের হাতে পানির বোতল ৷ বুঝায় যাচ্ছে সুপ্তির জ্ঞান ফিরানোর জন্য এতক্ষণ পানি ছিটিয়েছে।

মাহির স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” এতক্ষণে জ্ঞান ফিরলো তবে। ”

সুপ্তি : আমি এখানে ইচ্ছে করে আছি বলেই আটকিয়ে রাখতে পারছেন। আমি যদি…

মাহির কথার মাঝখানে বলে উঠলো, ” হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। তুমি ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারবে।
এখন নাটক কম করে হাতটা সামনে আনো। আমি দেখেছি তোমার হাত খোলা শেষ। ”

সুপ্তি কোনো ভঙ্গিতা ছাড়ায় হাত সামনে আনলো । মাহিরের মতিগতি বুঝার জন্য বললো, ” মানুষ তো আয়নাঘর নাম রেখে অন্ধকার একটা টর্চার রুম বানায়। তোমার ওই আগের রুমের মতো যেখানে তুমি সুপ্তির শোকে বসে ছিলে!
( উপহাস করে )
কিন্তু এই রুমটা আয়নাঘরের নাম রাখতে পারবে। তুমি এত আয়না লাগিয়েছো আয়নাঘরের নাম রাখার জন্যই মাহির? ”

মাহির : তুমি আমার ওই রুম সম্পর্কে জানলে কিভাবে?
( স্বাভাবিক ভাবেই )

সুপ্তি হেসে বললো, ” আমি সবই জানি। তুমি যে সেখানে মানুষকে এনে টর্চার করো তাও জানি। ”

মাহির : নিজেকে এত সাধু ভেবো না। আমি মানুষকে শুধু টর্চার করি তোমার মতো খুন করি না।

সুপ্তি : নিজেকে সাধু ভাববো না কেন বলো, তোমার সকল কুকীর্তিই তো আমার মাধ্যমে চাপা পড়ে । আই মেইন, আমি না থাকলে তুমি এতদিন জেলে থাকতে!

মাহির : তুমি কোথায় থাকতে? আমার আগে তো তোমার জেলে যাওয়ার কথা! যে পরিমাণ খুন করেছো।

সুপ্তি : মানুষ যতটা ভাবে আমি ততটা খুনও করি না বা করি নি।

মাহির : যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে। আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি ৮৮ টার কথা। অবশ্যই তার থেকে বেশিই হবে !

সুপ্তি ৮৮ টা বলেই হাসা শুরু করলো।

মাহির : তবে কি তারও বেশি?

সুপ্তি : আমি মাত্র ৫ টা খুন করেছি। বাকিগুলো হয়তো আমার টিম বা অন্য কেউ করেছে যা আমার নামে চালিয়েছে। তবে এগুলো আমার নির্দেশে না।

মাহির : আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আরেকটা কথা, বিষয়টা খুবই হাস্যকর যে একটা মানুষ লাশে ভয় পায় না তবে কবরে ভয় পায়!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনার বিশ্বাস দিয়ে আমি কি করবো! যা সত্যি তাই বললাম।
আর আমি ট্রমায় ছিলাম তাই কবরে ভয় পেতাম তবে সব কবরে না যেমন – আপুর কবরটা। প্রথমদিকে লাশেও ভয় পেতাম।
কিন্তু এখন কিছুতেই পাই না। এতে অবশ্য আপনার ক্রেডিট অনেক। সো ধন্যবাদ। ”

মাহির : কাকে কাকে খুন করেছো বলা যাবে?

সুপ্তি অবাক হচ্ছে মাহিরের শান্ত মনোভাবে। সে শান্ত থাকতে পারছে না তবে মাহির এত শান্ত কিভাবে? মাহিরের মাঝে কি কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না!

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” ২০১৮ সালে আমি ঢাকায় আসি। ততদিনে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। আপুর ধর্ষণ হয়ে খুন তারপর আবার আমাকে তুলে নিলে যাওয়া আর দেশের খারাপ অবস্থা সবদিক বিবেচনা করেই বাবা আমাকে ফাইট শিখায়।
আমি তখন মিস সিক্রেট নামে খুবই জনপ্রিয়।
আচ্ছা, আমি কিন্তু আমার মিস সিক্রেট হয়ে খুনের পথে যাওয়ার গল্প শুনাচ্ছি । বলতে গেলে শুরু থেকেই শুরু করছি। কারণ আমি যা যা বলবো সবই একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড। ”

মাহির মাথা কাত করে সম্মতি জানালে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ক্লাস ফাইভে তখন বাবা আমাকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করে। কিছুটা বাধ্য হয়েই। কারণ আমার মেয়েদের মতো পুতুলে না ছেলেদের মতো ডিভাইসে ইন্টারেস্ট বেশি ছিল। আমি কম্পিউটার তো শিখিই নাথে হ্যাকিংও শিখে ফেলেছিলাম।
ক্লাস সিক্সে নিজে নিজেই নতুন নতুন হ্যাকিং আইডিয়া বের করতাম। এক কথায় মাস্টার হয়ে যাচ্ছিলাম এগুলোতে।
ক্লাস সেভেনে আমি জাতীয় পর্যায়ে হাত দেয়। সরকারের জন্য কাজ করা শুরু করি। কেউ অবশ্য আমার পরিচয় জানতো না। এমনকি আপু ব্যতিত আমার ফ্যামিলির কেউ না।
ক্লাস এইটে অনেক বেশি দক্ষ হয়ে গেয়েছিলাম। যে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করতে পারতাম যেকোনো জায়গায় বসে। হোক তা এক কিলোমিটার বা হাজার কিলোমিটার। এগুলোই আমাকে সাহায্য করেছিল মিস সিক্রেট হিসেবে জনপ্রিয় হতে।
এখন আসি খুনের বিষয়ে।
যখন আমার ফাইটিং শেখা পুরোপুরি শেষ। ধীরে ধীরে পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হচ্ছি। এমন সময় তোমার বাবা মাহফুজ চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও পরে আমি তার সাথে যোগাযোগ করি।
সে আমাকে জানায় আপুর খুনিদের খুঁজে দিবে। বিনিময়ে আমাকে তার ফ্যামিলিকে প্রটেক্ট করতে হবে।।
রাজি হয়ে যায়। কারণ আপুর খুনিকে যে আমার দরকার।
তবে আমি যে তার সামনে যাবো এতে আমার সেইফটি কোথায়? উত্তর হলো আমার কোনো সেইটি নেই। তাই মাস্ক পড়ে তার সামনে যায়। সে আমাকে গান চালানোর ট্রেনিং দেয়। তারপর আসে বহু অপেক্ষিত সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
১৬ জুলাই, ২০১৯।
পরপর নিজের হাতে গান দিয়ে দুইটা খুন করি। জানেন, সেদিন আমার হাত না কাঁপলেও বারবার প্রশ্ন আসছিল ওই দুটো লোক আর আমার মাঝে কি পার্থক্য রইলো! তারাও খুনি আমিও খুনি। এরপর স্বাভাবিক হতে ১ বছর সময় নেয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজি, হাজারটা যুক্তি সাজায়। তবুও উত্তরটা আজও মিলে নি।
১ বছর পড়াশোনায় গ্যাপ পড়ায় এসএসসি তে ফেল করি। ”

মাহির আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। মিস সিক্রেটের খুনি হওয়ার পিছে যে তার বাবার এত বড় অবদান তা সে জানতো না।

সুপ্তি একটু রেস্ট নিয়ে আবারও বলা শুরু করলো, ” দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে টেনে টুনে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। ততদিনে আমি হ্যাকিংয়ের পেশায় নেমে পড়েছে। কলেজও শেষ করি টেনে টুনে।
তারপর এডমিশন টেস্ট দেয় প্রথমবারে হয় না প্রিপারেশনের অভাবে। ভাবলাম দ্বিতীয়বারে ভর্তি হবো। অনেক ভালো করে পড়লাম তবে পরীক্ষার আগের দিন এক মাসের জন্য অন্য দেশে যেতে হয়। আমি দেশে আসতে আসতে ততদিনে সকল পরীক্ষাও শেষ।
ভর্তি হয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে। প্রথম তিন বছরে টেস্ট ব্যতিত তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম কিনা সন্দেহ আছে। এখন তো ঠেকায় পড়ে প্রতিদিনই যেতে হয়!
যাইহোক, দীর্ঘ ৯ বছর পর তৃতীয় খুন করি। এরমাঝে আমি কাউকে খুন করি নি। শুধু আহত করেছি।
চতুর্থ খুন করি তৃতীয় খুনের দুইদিন পর। আমার জিনিসে হাত দিলে এমনই হয়। ( রেগে )

মাহির হঠাৎই প্রশ্ন করলো, ” কে এই দুইজন? ”

সুপ্তি : ও, এতক্ষণ আপনি এখানে ছিলেন? আমি তো বুঝতেই পারি নি!

মাহির বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আসল কথায় আসো। ”

সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৮+৩৯

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_38+39
#Sabrina_Summa

মাহিরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট কিছুটা অবাক হলো। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম। তানিশা সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে আর কেউ নেই।
পরিবেশ দেখে মিস সিক্রেটের তেমন সুবিধার লাগছে না। কিছু অঘটন তো ঘটবেই আজ।

মাহির আস্তে আস্তে মিস সিক্রেটকে বললো, ” তোমাকে বাঁচিয়ে দেশে আনার একটাই কারণ সুপ্তিকে তোমার হাত থেকে ছাড়ানো আর ডিভোর্স। ”

মিস সিক্রেট অবাক হয়ে মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকালো। সম্ভবত মাহফুজ চৌধুরী সবই জানে, তবে কেন সে কিছু বলছে না!

মাহির এবার জোরেই বললো, ” চুপচাপ সাইন করে দাও। ”

মিস সিক্রেট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার বড্ড ইচ্ছে করছে কাঁদতে।
সে তো ভেবেছিল এতদিনে মাহির সব ভুলে গেছে কিন্তু হলো তো তার বিপরীত। বেঁচে ফেরার সব আনন্দই যেন একটি বাক্যে ফিকে হয়ে গেল।

যতই হোক সে তো মিস সিক্রেট। সে তো আর সুপ্তি নই যে নিজের ইমোশন প্রকাশ করতে পারে। এতদিন ধরে সে আবেগকে নই বিবেক কে প্রশ্রয় দিয়েছে আজ কি তার ব্যতিক্রম করবে! কখনোই না।
তাই তো ইমোশনকে লুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” তুমি তোমার সিদ্ধান্তে সিউর তো? ”

মাহির : অবশ্যই।

মিস সিক্রেট : ওকে।
বলে টেবিলে রাখা ডিভোর্স পেপারের দিকে আগালো ৷ কোনো কিছু না ভেবেই নাইন করে দিলো।

মাহিরের খুশি দেখে কে! সে বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।

মিস সিক্রেট : ডিভোর্স দিলাম। বিয়েতে তো গিফট দেয় নি ডিভোর্সে দেয় অন্তত।
বলা শেষ করে মাস্কটা খুললো।

এতক্ষণ মাহফুজ চৌধুরী, রাগিনী বেগম, তানিশা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও এবার তারা একসাথে বলে উঠলো, ” সুপ্তি….”

মাহিরও তাকালো। তার বিশ্বজয়ের হাসি একমুহূর্তে চুপসে গেল। সে এতটাই বিস্মিত যে কোনো টু শব্দও করতে পারলো না।

সুপ্তি : হ্যাঁ, মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি।
( কথায় দৃঢ়তা থাকলেও কষ্ট অভিমান স্পষ্ট )
আর হ্যাঁ ভালো কথা। মাহফুজ চৌধুরী আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি আপনার সকল কর্মকান্ডে সাহায্য করা থেকেও বিরত যাচ্ছি। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক। তাই কখনো বাঁচা মরার প্রশ্ন উঠলে আমাকে কষ্ট করে একবার স্মরণ করিয়েন। বেঁচে থাকলে অবশ্যই সাহায্য করতে আসবো।

কথা শেষ করে ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান দ্রুত ভিতরে আসলো।

সুপ্তি : গাড়ি বের করো।

কথার ধরনেই ইরফান বুঝতে পারছে সামনে থাকা ব্যক্তিটি মিস সিক্রেট। তবুও সকলের মতো সেও অবাক হয়েই বললো, ” সুপ্তি!”

সুপ্তি রাগী চোখে তাকাতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, এখনই বের করছি। ”

সুপ্তি : গাড়ি কিন্তু আমি চালাবো।

ইরফান : ম্যাম, আর যাই হয়ে যাক গাড়ি আমি আপনাকে চালাতে দিবো না!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” ওকে, তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। ”

ইরফান চলে যেতেই সুপ্তি বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো, ” ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে যাচ্ছি। কপি পাঠিয়ে দিবো। ”
বলা শেষে বের হয়ে গেল।

মাহির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। বিড়বিড় করে বললো, ” তোমার কথায় মিলে যাচ্ছে! ”

মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কারণ এখানে থেকে এখন ছেলের পাগলামি দেখা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই। এমনিতেই তারা অপরাধ বোধে ভোগছেন।
মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তির সাথে আর রাগিনী বেগম মিস সিক্রেটের সাথে কতই না খারাপ আচরণ করেছেন!

গাড়িতে সুপ্তির জোরাজোরিতে ইরফান বাধ্য হচ্ছে গাড়ি স্প্রিডে চালাতে।
জ্যামপূর্ণ রাস্তায়ও ফুল স্প্রিডে চালাচ্ছে। তবে ভাগ্যক্রমে মিস সিক্রেটের গাড়ি বলে সকলে সাইড দিচ্ছে। নাহয় আজ টু ইন ওয়ানের মতো সুপ্তির পাশাপাশি ইরফানও উপরে চলে যেতো। সাথে যে গাড়ির সাথে ক্র্যাস হতো সে গাড়ি তো আছেই!
কিছুক্ষণের মাঝেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে চলে এলো তারা।
ইরফান হাফ ছেড়ে বাঁচলো বোধহয়।।

মিস সিক্রেট খুব সুন্দর একটা কালো রংয়ের থ্রি-পিচ পড়লো। তার ফর্সা গড়নে কালো রংটা বেশ মানাচ্ছে। সাথে মেচিং কালো হুডি অ্যান্ড মাস্ক তো আছেই ৷

জীবনে কোনো লাইভে বসার জন্য তার এত প্রস্তুতি ছিল না। আজই প্রথম হয় তো শেষবারও।।

লাইভ শুরু হলো আর পাঁচ দশটা দিনের মতোই ফরমালিটি দিয়ে। তবে মিস সিক্রেটের গায়ে থ্রি-পিচ টা বোধহয় সকলকেই অবাক করছে। কারণ সে তো কখনো বাঙালি সাজে সাজে না।

কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট আসল কথায় আসলো।

কিছু কাগজ কয়েক সেকেন্ড ক্যামেরার সামনে ধরে তারপর সরিয়ে নিয়ে বললো, ” এগুলো সীমান্তচুক্তি সংক্রান্ত কাগজ। কিছুদিন আগে চুরি হয়েছিল। যারা চুরি করেছিল তারা বড়ই সাধারণ মানুষ আমাকে আটকে রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে…”
বলার পূর্বেই কাগজগুলো ইচ্ছে করে ফেলে দিলো। কাগজগুলো তোলার জন্য ঝুঁকতেই দেখা গেল পিছনে খুব সুন্দর করে টাঙ্গানো আরও কিছু কাগজ। সম্ভবত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা জমিগুলোর তবে তা ভারতের।।

ফেলা কাগজগুলো তুলে ঠিক করে রেখে আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত তারা চুরি করেছে আমি কাগজগুলো নিয়ে শুধু শুধু ফেরত আসবো নাকি! একটা কথা আছে না – ট্রিট ফর ট্রেট। ঠিক তেমনই তারা করেছে মানে আমিও করবো। এটার জন্যই আমাকে তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল কাগজগুলো বোধহয় আমার কাছেই আছে তবে কাগজগুলো তো কবেই আমার টিমের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে এসেছে।
আচ্ছা, এগুলো এখন একটু বাদ দেয়। পার্সোনাল কিছু কথা বলবো! ”

সকলের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য লাইভে তাকালো। সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

আবারো বলা শুরু করলো,
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার কাজ খুবই সহজ। যখন ইচ্ছা খুন করতে পারি, গুম করতে পারি! ফাঁসি বা কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারি! আসলে আমি কিছুই পারি না। শুধু রিকোয়েস্ট করতে পারি।
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার অবস্থানে থাকলে আপনারাও যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন। এই ভুল ধারণা অনেকেরই গেছে এই তিন দিনে। তবুও কিছু প্রমাণ দেখায় আমার উপর দিয়ে কি যায়!

বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুডি খুলে ফেললো।
থ্রি-পিচের হাতাগুলো উপরে তুলতেই দেখা গেল তার কাটা ছিঁড়া দুই হাত।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” প্রশ্ন আসতে পারে এত দাগ কিসের!
আসলে ইন্ডিয়া যাওয়ার পর খুব সম্মানের সাথে সাগ্রতম করে । দুইদিন খুব আদর যত্ন করে। বলে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সো সবার নজরও আমার দিকেই ছিল। এ সুযোগে আমার টিম সকল কাজ করে ফেলে।
তৃতীয় দিন আমাকে আটক করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় জঘন্য এক অন্ধকার ঘরে। তবে আমাকে আঘাত করার কারো সাহস ছিল না ফলে বেধে ঝুলিয়ে রেখেছিল ।
সেখানের খাবার ছিল জঘন্যর উপরে যদি কোনো নিকৃষ্ট শব্দ থাকে তাই। খাবারে ভাত কম পোকামাকড় বেশি। ইয়া, ভাবলেও আমার গা ইর ইর করে ।
এদিকে আমি আমার সিক্রেট টিমকে ইনফর্ম করি। তারা আন্তর্জাতিক পাওয়ার নেয়। আর মাহির চৌধুরী অনেক হেল্প করেছে। এরজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
সব মিলিয়ে যখন তারা বুঝতে পারে আমাকে ছাড়তেই হবে তখন মারা শুরু করে।।

মাহির গাড়িতে ড্রাইভ করতে করতে লাইভ দেখছে। তার বুকের এককোনে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
খুব স্প্রিডে গাড়ি চালানোর পরও আজ রাস্তাটা বেশি মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও তো এ রাস্তা দিয়েই গিয়েছিল মিশন সম্পর্কিত কথা বলতে। যা সে বুঝতে পেরেছে দেয়ালে থাকা পেইন্টিং থেকে।।

কথা শেষ করে মিস সিক্রেট মাস্ক খুলে বললো, ” Introduce with my another version SUPTI. ”
বলে মুচকি হাসলো।

লাইভের একটা কমেন্টের দিকে চোখ পড়লো। যেখানে তাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্মোধন করা হয়েছে।

সুপ্তি চেয়ারে বসতে বসতে বললো, ” আমি এখন আর মিসেস নই।
I am only Miss Secret or Miss Supti. Cause
বলে ডিভোর্স পেপারটা দেখাতে নিলে মাহির এসে লাইভ অফ করে পেপারটা ছিঁড়ে ফেললো।

সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুপ্তি ইরফানকে ডাকা শুরু করলো।

ইরফানসহ আরও কিছু বডিগার্ড ভিতরে এসে বললো, ” সরি ম্যাম। স্যার অনেক জবরদস্তি করে ঢুকেছে। ”

মাহির রাগী স্বরে হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তোমরা যাও এখান থেকে। ”

সকলে একবার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মাহিরের দিকে। ইরফান কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনে করলো। তাই সে সহ বাকিদের নিয়ে বাহিরে চলে গেল।

সকলে চলে যেতেই মাহির দরজা লক করে দিলো।

সুপ্তি : কি হচ্ছে এগুলো? ( রেগে )

মাহির : সেটা আমার থেকে ভালো বোধহয় তুমি জানো। যাইহোক আমার সাথে যাবে চলো।

সুপ্তি : আমি কোথাও যাবো না।

মাহির সুপ্তির হাত শক্ত করে ধরে বললো, ” চলো। ”

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” মাহির, আমার লাগছে। ”

মাহির দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, ” সরি, সবকিছুর জন্যি সরি। আমি এ ডিভোর্স মানি না। তুমি শুধুই…..”
বলতে বলতে সুপ্তির কাঁধে ইনজেকশন পোষ করলো মাহির। কিছুক্ষণের মাঝে জ্ঞান হারালো সুপ্তি।

মাহির সুপ্তিকে কোলে তুলে বললো, ” আমি জানতাম জানেমান তুমি মানবে না। তাই তো আমাকে এ কাজ করতে হলো। দোষ কিন্তু তোমার তবুও আমি সরি বলছি। সরি !”

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৬+৩৭

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_36+37
#Sabrina_Summa

আজকের সকালটা বোধহয় সকলের জন্যই অশুভ। সকলেরই মন খারাপ। কেননা বাড়ির ছেলে বাড়িতে নেই। বাড়ির নতুন বউ মন খারাপ করে বসে আছে।
সকাল থেকে সকলেই মাহিরকে কল দিচ্ছে তবে কল রিসিভ করছে না মাহির।
অবশেষে বাধ্য হয়েই মিস সিক্রেট বের হলো।

__________________

মাহির একটা চেয়ারে বসে বিড়বিড় করছে।
” কত শখ করে ৩০ ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে আর পহেলা জানুয়ারী সুপ্তিকে নিয়ে নিউ ইয়ার ইনজয় করবো ভেবেছিলাম। আর এখন! ”

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো মাহিরের।
মিস সিক্রেটকে দেখে বলে উঠলো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট : কী শুরু করছো! কারো কল ধরছো না কেন? ( রেগে )

অন্ধকার রুমে খুব হালকা আলো থাকায় ভালো করে মাহিরের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মাহির : তুই এখানে আসলি কিভাবে?

মিস সিক্রেট : যে পাতালেই থাকো, তোমাকে খুঁজে পাওয়া মিস সিক্রেটের জাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

মাহির : সুপ্তিকে কোথায় গুম করছিস বল।

মিস সিক্রেট : বাসায় চলো।

মাহির : চুপচাপ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

মিস সিক্রেট : মাহির….

মাহির : একদম মাহির বলবি না। মাহির নামটা শুধু সুপ্তির জন্য।

মিস সিক্রেট : একদম তুই করে বলবে না। ভুলে যেও না আমি তোমার বিয়ে করা বৈধ বউ।

মাহির : ডিভোর্স পেপার রেডি করতেছি। সেখানে সাইন করে সুপ্তিকে সামনে আনবি।

মিস সিক্রেট : এই ব্যবহারের জন্য একদিন খুব পস্তাবে। আর আমার কাছে ক্ষমাও চাইবে।

মাহির : জীবনেও এমন দিন আসবে না।

মিস সিক্রেট : দুইদিন সময় দিলাম। দুইদিনের মাঝে বাসায় ফিরতে বাধ্য হবে!

দরজা দিয়ে বের হতে হতে বললো, ” আর ডিভোর্সের কথা তো ভুইলাই যা। ”

৭ দিন কেটে গেছে।
মাহির সত্যিই বাধ্য হয়েছিল বাসায় ফিরতে।
তবে একদিন মিস সিক্রেট ঘুমন্ত মাহিরকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখায় তানিশা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত মাহিরের উপর ফেলে দেয়।
সেদিন মাহির মিস সিক্রেটকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে আবারও বাসা ছেড়ে চলে যায়। এবার আর মিস সিক্রেট বাঁধা দেয় না বা বাধ্যও করে না বাসায় ফিরার জন্য।

জনগণ যা ভেবেছিল, মিস সিক্রেট যাকে বিয়ে করবে তার ন্যূনতম ক্ষতি বা দুর্নাম হতে দিবে না। তাই হয়েছে। মিস সিক্রেট মাহিরের বিরোধ্যে সামান্যতম কথাও বলতে দেয় না।

এইতো সেদিনের কথা, লাইভে মাহির আর সুপ্তিকে নিয়ে কথা উঠায় মিস সিক্রেট টিভি চ্যানেলটা হ্যাক করে লাইভ নষ্ট করে দিয়েছে।

মাহিরের অবর্তমানে মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর কোম্পানি চালাচ্ছে।
এতকিছুর পরও শাশুড়ির মনে জায়গা করে নিতে পারে নি সে ৷
রাগিনী বেগমের মতে সকল সমস্যার উৎপত্তি মিস সিক্রেট। তাই তো প্রতি পদক্ষেপে ভুল ধরে মিস সিক্রেটের।

এভাবেই কেটেছে সাতটি দিন ৷
আজ অনেকদিন পর মিস সিক্রেটের ডাক পড়েছে নতুন মিশনের জন্য। এমন না যে এতদিন তার কাজ ছিল না! তার কাজ ছিল কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সে কোনো কিছুই করে নি।

তবে এবারেরটা ভিন্ন।
কথায় আছে না, “কান টানলে মাথা আসে। ”
ঠিক তেমনটিই। মিস সিক্রেটকে আনার জন্য এখানে মাহিরকেও ডাকা হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে মিস সিক্রেটও যাচ্ছে তবে ইরফানের সাথে।।

মিস সিক্রেট, ইরফান আর মাহির একটা রুমের বসে আছে। রুমটা খুবই গোছানো। অনেকগুলো এক্সপেনসিভ পেইন্টিং লাগানো।
মাহিরের মাঝে কিছুটা চিন্তার ভাজ বুঝা গেলেও মিস সিক্রেটের কোনো চিন্তা নেই তা তার কথায়ই বুঝা যাচ্ছে। সে তো ইরফানের সাথে পেইন্টিং নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত।

একজন রুমে প্রবেশ করতে করতে নিজের পরিচয় দিলো।
মিস সিক্রেটকে যে এজেন্সি থেকে ডাকা হয়েছে সেই এজেন্সির ওনারের পিএ সে।

লোকটা খুব ফরমাল কথা বলায় বিরক্ত হলো মিস সিক্রেট। মিস সিক্রেট ডিরেক্টলি বললো, ” সোজাসাপটা বলুন কেন ডেকেছেন আমাদের! ”

লোকটা কিছুটা থতমত খেলো।
কিছু সময় নিয়ে বলা শুরু করলো, ” বস অসুস্থ তাই আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডাকা হয়েছে যেখানে সরকারও আপনাদের সাহায্য করবে ৷ ”

লোকটা কিছু সেকেন্ডের জন্য থামলো। হয়তো মিস সিক্রেটের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাচ্ছে।
তবে মিস সিক্রেটের মতি গতি বুঝতে না পেরে আবারও বলা শুরু করলো, ” রিসেন্টলি, আমাদের প্রতিবেশি দেশের কিছু লোক এসে আমাদের দেশের একটা ইমপর্ট্যান্ট ফাইল চুরি করে নিয়ে গেছে। যা দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের দেশের হাতে পড়লে দেশের বিরাট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। ”

মিস সিক্রেট ব্যতিত বাকি দুইজন উঠলো, ” কি বিষয়ের ফাইল? ”

পিএ : সেটা আপনারা পরেই জানতে পারবেন।

মিস সিক্রেট : আপনারা সিওর যে ফাইলগুলো প্রতিবেশি দেশেরই কেউ নিয়েছে।

পিএ : ১০০% সিওর। কিছুদিন আগে সেই দেশের কিছু মানুষ বডার দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিল। তারাই চুরিটা করেছে।

মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” এত সিওর হচ্ছেন কেন! তারা কি ফাইলগুলোর পরিবর্তে কোনো কিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে? ”

পিএ : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেটকে স্বাভাবিক দেখে সবাই অবাক হচ্ছে।

মিস সিক্রেট : এই ঘটনা তাও কতদিন আগের?

পিএ : প্রায় দেড় মাস।

মিস সিক্রেট : কি? আর আপনি আজ আমাকে বলছেন! এ ঘটনা ঘটার সময় আমি কোথায় ছিলাম?

পিএ : সম্ভবত আপনি দেশের বাহিরে ছিলেন। আর আমরা চুরির বিষয়ে জানতে পেরেছি ১২ দিন আগে। এতদিন এটা নিয়ে রিচার্স চলছিল। আসলে আমরা চাই না এটা পাবলিক জানুক। বুঝেনই তো রাজনৈতিক বিষয়!

মিস সিক্রেট : আপনারা কি চাচ্ছেন, এই মিশনটা আমি পরিচালনা কি?

পিএ হ্যাঁ বলতেই মিস সিক্রেট দাঁড়িয়ে বললো, ” সরি, এই মিশনে যাওয়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু। ”

পিএ : আপনি এ কথা বলছেন! আপনি এর থেকেও অনেক হার্ড মিশন করেছেন!

মিস সিক্রেট : আপনি বুঝতে পারছেন না। সেটা আমি একা করেছি কিন্তু এটা একা করা সম্ভব না। আর আমি কারো জীবন নিয়ে খেলবো না।

মিস সিক্রেটের কথার আঁচে বুঝা যাচ্ছে সে কারো মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এ মিশনে! তাই হয় তো যেতে চাচ্ছে না।

পিএ : কিন্তু, এটা তো প্রয়োজন। আর আপনাকে যেতেই হবে।

মিস সিক্রেট : আমাকে এ বিষয়ে আগে জানিয়েছেন! আর আপনি আমাকে অর্ডার করছেন? ( রেগে )

পিএ : একটু শান্ত মাথায় বসুন, প্লিজ।

সকলের অনুরোধে মিস সিক্রেট শান্ত হয়ে বসলো। পিএ তাকে অনেকক্ষণ বুঝানোর পর মিস সিক্রেট রাজি হলো।

তবে তার শর্ত আছে।

এ মিশনে যদি কেউ মারা যায় তবে তার পরিবারকে সরকার দেখবে।

এ মিশন সম্পর্কে কেউ জানবে না এবং

মিস সিক্রেট যা বলবে সকলকে তা মানতে হবে। সে যেই হোক না কেন!

সব শর্তেই রাজি হতে হলো পিএকে। নইতো মিস সিক্রেটকে রাজি করানো যাবে না।

কোনো বিপদ ঘটার পূর্বে মানুষের মন কু ডাকে। আজ মিস সিক্রেটেরও কেমন যেন ডাকছে। এই কাজটা তার মনের বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে। তবুও কাজ শুরু করলো।

মিস সিক্রেট ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটা টিম বানাতে ৩ দিন লাগালো শুধু সদস্য বেছে নিতে।
এই সদস্যরা হলো – মিস সিক্রেট, নাম্বার -১১, নাম্বার- ৩, ইরফান, মাহির, বডারগার্ড ৩ জন, ৭ জন গোয়েন্দা অফিসার, ইয়ার ফোর্সের ২ জন এবং আর্মি ৩ জন।

এরমধ্যে ২ জন গোয়েন্দাকে মিস সিক্রেট আগেই ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে ছদ্মবেশে। বাকিদের টেনিং চলছে।।

৩ জন ঘুরার নাম করে যাবে। বডারগার্ডরা আমাদের পালাতে সাহায্য করবে যদি কোনো কারণে আমাদের ওই দেশে আটকে ফেলা হয় তো। মাহির, ইরফানসহ সিক্রেট টিমের ২ জন এ দেশেই থাকবে।
এগুলোই মিস সিক্রেট বলছিল।

হঠাৎই একজন বলে উঠলো, ” ম্যাম, তাহলে আমরা কি করবো? ”

মিস সিক্রেট : ম্যাম না, মিস সিক্রেট বলো। আমিও তো তোমাদের টিমমেট।
মিস সিক্রেট মলিন হেসে বললো। তবে তার সেই হাসি মাস্কের আড়ালেই রয়ে গেল ৷

কিছুক্ষণ পর বললো, ” বাকিরা আমার সাথে যাবে আমার বডিগার্ড হয়ে। ”

সকলেই এক দফা অবাক হলো।

মাহির : তাহলে এই টিমের মাস্টারমাইন্ড কে? আই মেইন কে দেশে থেকে এই টিম পরিচালনা করবে?

মিস সিক্রেট : তুমি।

মাহির আরেক দফায় অবাক হলো।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” আমি যাবো প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। এখন হয় তো বুঝতে পারছো তোমাদের কি কাজ! ( ইয়ার ফোর্সের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে )
আর বাকিদের কাজ তো আগেই বলেছি। ”

মিস সিক্রেট আরও কিছু কথা বললো।
৭ দিনের টেনিংয়ের পর আসল কাজ শুরু হলো। যেভাবে প্লেনিং করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে।।

__________________

কাজ শেষ করে দীর্ঘ পাঁচ দিন পর দেশে ফিরছে মিস সিক্রেট। মিশনটা সিক্রেট রাখার কথা থাকলেও মিস সিক্রেটকে বাঁচানোর জন্য তা এখন পাবলিকও জানে।

মিস সিক্রেট জেট থেকে নামতেই সাংবাদিকরা তাকে ঘেরাও করলো।

মিস সিক্রেট মাহিরকে দেখে মাস্কের আড়ালে হাসলো। সে শুনেছে তাকে বাঁচানোর জন্য মাহির অনেককিছু করেছে।

মিস সিক্রেট সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললো, ” আমি লাইভে এসে সবকিছু ক্লিয়ার করবো। প্লিজ, এখন ডিস্টার্ব করবেন না। ”

বলা শেষে হাঁটা শুরু করলো। তার দুইপাশে মাহির এবং ইরফান। ইরফান সকলকে সরাতে ব্যস্ত।

সকলে এসে গাড়িতে বসলো। গন্তব্য তাদের মাহিরের বাড়ি।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৫

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_35
#Sabrina_Summa

নিত্যদিনের মতো আজও মাহিরের ফোনে ঘুম ভাঙলো সুপ্তির।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহিরের রাগী স্বর শুনলো।

মাহির : কী সমস্যা তোমার? কল করলে রিসিভ করো না তারপর আবার সারারাত বন্ধ করে রাখছিলা! আর এপার্টমেন্ট চেঞ্জ করতে আমি না করছিলাম না?

মাহির থামতেই সুপ্তি বলে উঠলো, ” হুম, তারপর। ”

মাহির আরও বেশি রেগে বললো, ” তারপর মানে কি? ৫ মিনিট টাইম দিলাম আমার সাথে দেখা করবে। ”

সুপ্তি : পারবো না।

মাহির : পারতে হবে। না হয় আমি কি করতে পারি আশা করি তোমার জানা আছে!

সুপ্তি : না, জানা নেই।

মাহির : চুপচাপ দেখা করো।

সুপ্তি : টাইম বাড়ান।

মাহির : ২০ মিনিট দিলাম। পার্কে আসো।

বলেই কল কেটে দিলো।
সুপ্তির এতক্ষণ রাগ না হলেও এখন হলো মুখের উপর কল কাটার কারণে। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

পার্কে প্রবেশ করতেই মাহির এসে জড়িয়ে ধরতে নিলে সুপ্তি বলে উঠলো, ” দূরে থাকুন। ”

মাহির সরে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”

সুপ্তি : আমার আবার কি হবে?

মাহির : এমন করছো কেন?

সুপ্তি : কেমন করছি?

মাহির : ত্যাড়াইছা উত্তর না দিয়ে সোজা কথা বলো।

সুপ্তি : আমি ত্যাড়াইছা কথা বলছি?

মাহির : আচ্ছা, বাবা মাফ চাই।

সুপ্তি : আমি আপনার বাবা?

মাহির : প্লিজ বলো না কি হইছে?

সুপ্তি : আপনি চুপচাপ আপনার বাসায় যান।

মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখিয়েই বললো, ” মিস সিক্রেট তোমায় কিছু বলেছে? ”

এবার সুপ্তিও রাগ হলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো, ” সব জায়গায় শুধু মিস সিক্রেটের ভুল খোঁজেন কেন? সে আপনার ভালো করলেও খারাপ দেখেন, খারাপ করলে তো দেখবেনই। আমাকে কেউ কিছু বলে নি। পারলে আপনার বাবার সাথে গিয়ে কথা বলুন। ”

কথাগুলো বলা শেষে সুপ্তি দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।
মাহির সেখানেই কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কারণ সুপ্তির কথাও ভুল না আবার সুপ্তি কোনোদিন তার সাথে এভাবে কথাও বলে নি! তাই সে খুব শিহরিত।
কিছুক্ষণ পরই সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।

বাসাতে যেতেই চিৎকার করা শুরু করলো। আজ যেভাবেই হোক তাকে তার বাবাকে সবকিছু বলতেই হবে।

প্রথমদিকে মাহফুজ চৌধুরী রাগ দেখালেও পরবর্তীতে ছেলের পাগলামি তে নিজেও চুপ হয়ে গেছে।

বিকেলের দিকে মিস সিক্রেটকে কল করে আসতে বললেন।

মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো, ” আঙ্কেল, আজকে আবার কি? ”

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কি সুপ্তিকে না করেছিলে?

মিস সিক্রেট : হ্যাঁ। সুপ্তি নিজের অবস্থান থেকে এগোবে না।

মাহফুজ চৌধুরী : কিন্তু মাহির…

মাহফুজ চৌধুরীকে কথা শেষ করতে দিলো না মিস সিক্রেট। নিজে বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, এটা আপনাদের আই মেইন বাপ ছেলের কাহিনী। নিজেরা সমাধান করুন। আমি বললামই তো সুপ্তি আর এগোবে না। ”

মাহফুজ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ” ভাবছি, সুপ্তিদের বাসায় যাবো। ”

মিস সিক্রেট রাগী স্বরে প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো ৷

মিস সিক্রেট মনে খুশি হলেও স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” মেনে নিলেন যে? ”

মাহফুজ চৌধুরী এক ধ্যানে বললেন, ছেলের পাগলামিতে! ছেলে যে আমার বড্ড আদরের। এ সম্পর্কে তো তোমার ভালো ধারণা আছে! ”

মিস সিক্রেট : কবে যাচ্ছেন?

মাহফুজ চৌধুরী : কালকে। তুমিও চলো!

মিস সিক্রেট উঠতে উঠতে বললো, ” না, না। আমার কাজ আছে। ”

মাহফুজ চৌধুরী : চলে যাচ্ছো?

মিস সিক্রেট : হুম। রেস্ট নিন। কালকে অনেক জার্নি করতে হবে!
বলতে বলতে চলে গেলো।

পরের দিন সবাই সুপ্তির বাসায় গিয়ে বিয়ের কথা বলে আসছে। বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে তিনদিন পর। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর।
মাহিরের খুশি দেখে কে!

গায়ে হলুদসহ সকল অনুষ্ঠানে খুব ভালো ভাবেই কাটলো। মাহির সুযোগ পেলেই সুপ্তির কাছে আসে।
শহরের এক নামি-দামি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের কার্যক্রম করা হচ্ছে।।

৩১ ডিসেম্বর.,.

সকাল থেকে বিয়েতে মেতে সকলেই খুব ক্লান্ত।
বিকেলের দিকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তবে এখনো বর কনে নিজেদের দেখে নি।

সন্ধ্যের দিকে কনেকে স্টেজে আনা হচ্ছে।
কনেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মাহির গান বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

হা তামান্না হামে তোমহে দুলহান বানায়ে..
তেরি হাথ পে মেহেন্দী আপনে নামকি সাজায়ে..
( বলতে বলতে কনের হাত ধরে নামালো )
তেরি লে লে বালায়ে, তেরে সাদকে উতারে…
হা তামান্না হামে তোমহে আপনে বানায়ে…
( গাইতে গাইতে কনের দিকে গোল করে ঘুরলো। কনের মাথায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা দেখে মাহির ভ্রু কুচকালো )
নেহি মুশকিল আফা, জারা দেখো এহা
তেরি আখো মে বাসতা হে মেরা জাহান…
কাবি সুন তো জারা…
বলতে বলতে ঘোমটা সরাতেই অবাক হয়ে তাকালো।

সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তবে সুপ্তির বাবা-মায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।
সাংবাদিকরা একে অপরের সাথে কানা ঘুসা করে বলছে মিস সিক্রেটের সাথে বিয়ে হয়েছে!

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে আমিই তো থাকবো! ”

এ কথা শুনতেই মাহির হাতে থাকা মাইকটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হতে নিলে মিস সিক্রেট ফিসফিস করে বলে উঠলো, ” সুপ্তিকে বাঁচাতে চাইলে চুপচাপ এখানে বসে থাকো। ”

মাহির যেতে চেয়েও পারলো না । চুপচাপ সবার সাথে বসে ছবি তুলতে হলো।
বাসায় যাওয়ার সময় মাহির নিজের ভাবনায় মগ্ন রইলো৷

বাসায় পৌঁছাতেই নিজের রুমে গিয়ে সাজানো গোছানো রুমটাকে অগোছালো করে ফেললো। ময়লার স্তুপে পরিণত করলো ।

মিস সিক্রেট বাহিরে দাঁড়িয়ে বললো, ” আঙ্কেল, আমার জন্য অন্য রুম গুছান। ”

মাহফুজ চৌধুরী : একটু কথা বলে দেখো।

মিস সিক্রেট : আঙ্কেল, আমি আগেই নিষেধ করেছিলাম এমনটা না করতে।

মাহফুজ চৌধুরী : কি করবো বলো আমার তো ছেলের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ!

মিস সিক্রেটের গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো।।

মাহফুজ চৌধুরী তাকে ডেকে বলেছিল, ” তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া। তুমি তাশরিফকে বিয়ে করবে। ”

মিস সিক্রেট প্রথমদিকে না মানলেও মাহফুজ চৌধুরীর পরিকল্পনা শুনে রাজি হয়েছে।

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি বিয়ে না করলেও আমি সুপ্তিকে গুম করবো।

” ওকে গুম করা হলে মিস সিক্রেটও গুম হয়ে যাবে! ” ( মিস সিক্রেট মনে মনে )

মিস সিক্রেট : না, না আঙ্কেল। ওকে আমি গুম করবো।

মাহফুজ চৌধুরীর কথায় মিস সিক্রেটের ধ্যান ফিরলো।

মাহফুজ চৌধুরী : আমাকে একদম আঙ্কেল বলবে না। বাবা বলবে।

মিস সিক্রেট : ওকে।

বলে রুমে প্রবেশ করতেই মাহির বললো, ” তোর বাসর তুইই কর। ”
বলেই বের হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট কিছুই বললো না। সময় দিলো মাহিরকে বুঝার জন্য।

সারারাত মাহির ও মিস সিক্রেট উভয়েরই নির্ঘুম কাটলো।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৩+৩৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_33
#Sabrina_Summa

তারা প্রথমে হসপিটালে গেল। তারপর মাহিরের বাসায়।

সুপ্তি মাহিরের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, ” আমরা এখানে কেন আসছি? ”

মাহির ওয়ার্ড্রপ থেকে একটা ড্রেস বের করে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আল্লাদী কন্ঠে বললো, ” কারণ তুমি আমাকে সময় দিবে। নাও এখন চেঞ্জ করে এসো। ”

সুপ্তি চেঞ্জ করে এসে শাড়িটা মাহিরের হাতে দিলো। মাহির শাড়িটা তানিশাকে দিলো।

তানিশা : ক্লিন করে রাখবো?

মাহির : না, যেভাবে আছে সেভাবেই প্যাকেট করে রাখবে।

তানিশা চলে যেতেই সুপ্তি বললো, ” আমরা এখন কি করবো? ”

মাহির : যা তুমি চাবে।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা, মাহির। এইটা তো আপনার মাস্টার বেড তাই না? ”

মাহির মাথা নাড়িয়ো হ্যাঁ বললো। সুপ্তি আবারো বলা শুরু করলো, ” কিন্তু এটা নরমাল মাস্টার বেডের তুলনায় কিছুটা ছোট না? ”

মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহির শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, ” আসলে আমি আর আমার বউ তো আলাদা থাকরো বাবা মার থেকে। সো, আমার বউ মানে তুমি যেন আমার সাথে রাগ করে বেশি দূরে থাকতে না পারো, তাই বেড ছোট করা ৷ ”

আশেপাশের সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। তানিশা এসে এ কথা শুনে সকলকে বাহিরে যেতে বললো। সবাই চলেও গেল।

সুপ্তি এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। সকলের যাওয়ার পর বললো, ” আসলে আপনার কাছে ভালো কথা আশা করাই আমার ভুল। ”

মাহির মুচকি হাসছে। সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, ” আমি এখন ঘুমাবো। ”
বলতে বলতেই বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

মাহির : তোমার এ বাসায় থেকে যা করার ইচ্ছা হয় তাই করতে পারো।
বলতে বলতে একটা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসলো।

মাহিরকে বসতে দেখে সুপ্তি অন্যদিকে ঘুরতেই যাবে তার আগেই মাহির বললো, ” ভদ্রভাবে চেয়ারে বসে আছি। অন্যদিকে ঘুরলে ভদ্রতা ভুলে বেডে শুতে বেশি সময় লাগবে না! ”

শান্ত হুমকিতে সুপ্তি ভয় পেল কিনা জানি না। তবে চুপচাপ মাহিরের দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো।

মাহির : তুমি এখন ঘুমাবে?

সুপ্তি : না ঘুমালে, আমি শুধু শুধু শুয়ে আছি?

মাহির : দুপুর তো হয়ে গেছে ৷ খেয়ে ঘুমাও?

সুপ্তি : না, আমি অনেক টাইড। ঘুমাবো আগে।

মাহির আর কিছুই বললো না। সুপ্তিও চোখ বন্ধ করে ফেললো।

দুজনে কখন ঘুমের অতল গভীরে হারিয়ে গেল কেউই জানতে পারলো না।।

বিকেল চারটা।
হঠাৎ সুপ্তির ঘড়ি ভাইব্রেট করে উঠলো। সেই শব্দে সুপ্তির ঘুম ভাঙলো।

ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই কল রিসিভ করলো। অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে কয়েক সেকেন্ড বোধয় কথা হলো। তারপর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ওকে, আমি আসছি। ”

কল কেটে দিলো। তার নজর গেল ঘুমন্ত মাহিরের দিকে ৷ মাহির বেডের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । সুপ্তির খুব মায়া হলো।

তাই তো মাহিরের গালে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে যেতে হবে। টাটা জানেমান। ”

তানিশা দরজায় হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সুপ্তির সেদিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকালো। তানিশা নিজের ভ্রু দুইবার নাচালো।

সুপ্তি স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” তুমি কিন্তু কিছু শুননি, আপু । ”

তানিশার ঠোঁট আরও প্রশস্ত হলো। তারপর বললো, ” আচ্ছা, ঠিকাছে। ”

সুপ্তি : ঘুম থেকে উঠলে বলে দিও আমি চলে গেছি।

তানিশা : তা তো যাচ্ছো। তবে গাড়ি নিয়ে যেও নাহয় কিন্তু রাগ করবে!

সুপ্তি বের হয়ে যেতে যেতে বললো, ” ওকে, নিয়ে যাবো। ”

মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি ইরফানকেই বিশ্বাস করে না সেখানে মাহিরকে কিভাবে!
যতই হোক না প্রেমিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেমিককেও ধোঁকা দিতে হয় তার ভালোর জন্য!
সুপ্তিও এই উক্তিটিকেই প্রমাণ করলো। নেমে গেল গাড়ি থেকে শপিং মলের সামনে।।

রাতে মাহিরের সাথে কথা বলে, সকল কাজ শেষ করে প্রায় ২ টার দিকে ঘুমিয়েছে সুপ্তি।
এমনিতেই তার ঘুম ভালো। তারমধ্যে আবার দেরিতে ঘুম, সহজে তা কি ভাঙ্গে!!

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_34
#Sabrina_Summa

সকাল ৮ টা ছুঁই ছুঁই।
সুপ্তির মুখের উপর কারো ভারি নিঃশ্বাস পড়তেই মুচকি হেসে বালিশের নিচে থেকে একটা গান বের করে সেই ব্যক্তির কপালে তাক করলো।
ট্রিগারে চাপতেই যাবে, পরিচিত একটা ঘ্রাণ পেয়ে চোখ খুললো সুপ্তি। চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখে আঁতকে উঠলো।
এতক্ষণে ব্যক্তিটি সুপ্তির উপর থেকে সরে গেছে।

সুপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললো, ” মাহির আপনি? ”

মাহির : তুমি গানও চালাতে পারো?

সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো। তারদিকে সকলে গান তাক করে আছে।

সুপ্তি বেড থেকে উঠে রাগী স্বরে বললো, ” আপনি এখানে কেন? ”

মাহিরের কোনো উত্তর নেই। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” আরেকটু হলে আপনি মরে যেতেন! আমি গুলি প্রায় চালিয়েই দিয়েছিলাম। ”

মাহির : তোমার কাছে গানের লাইসেন্স আছে?

সুপ্তি : না। এমনিতেই চালাই। ( রেগে )
আচ্ছা এগুলো বাদ দেন। আগে বলেন আপনি আমার বাসায় আসলেন কিভাবে?

মাহির : এটা বলা যাবে না সিক্রেট। তবে এসেছি কোনো একভাবে।

” এত সহজ তো না আমার এপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া! কিভাবে এলেন তিনি! ” ( মনে মনে )

মাহির : আমার খিদে পেয়েছে। সকালের নাস্তা নিয়ে এসো।

সুপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, ” কেন এসেছেন আপনি? ”

মাহির : ঘুরতে, খেতে আর দেখতে কি গুপ্তধন লুকাইয়া রাখছো যে কাউকে নিজের এপার্টমেন্টে আসতে দেও না।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো, ” যাও নাস্তা নিয়ে এসো। ”

সুপ্তি : নাস্তা…. আমি তো রান্নাঘরে জীবনে পাও রাখি না।
” ঠেকাই না পড়লে! ” ( বিড়বিড় করে )

মাহির : যাও৷

সুপ্তি গান টেবিলের উপর রেখে আবারো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো সবাই গান তাক করে আছে ৷

সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো, ” গান মানাতে বলুন। আর যদি আমাকে বিশ্বাস না করতে পারেন তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ”

মাহির ইশারা দিতেই সকলে গান নিচে নামালো।

সুপ্তি রান্নাঘরে গেছে দেখে মাহির সম্পূর্ণ এপার্টমেন্ট ঘুরলো। তবে তার চোখে তেমন কিছুই পড়লো না। একটা সাধারণ মেয়ের রুমের মতোই সুপ্তির রুম কিন্তু এত দামী এপার্টমেন্টে থাকে কিভাবে সুপ্তি! আবার ফ্যামিলি থেকেও কোনো টাকা নেই না। এগুলো প্রশ্নই মাহিরের মনে আসছে।
সে আরও খেয়াল করেছে সুপ্তির রুমের সামনে আরও দুইটা রুম আছে তবে সেগুলোতে তালা মারা। সে শুনেছে এখানে নাকি সেলিব্রেটিদের জিনিস আছে তাই তালা দেওয়া! তাই বেশি মাথা ঘামালো না মাহির।
এরই মাঝে সুপ্তি একটা ট্রে এনে মাহিরের সামনে রাখলো।

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এগুলো কি? ”

সুপ্তি : জ্যাম পাউরুটি, কফি আর কিছু ফল এবং শাকসবজি।

মাহির : এই ঘাস পাতা তুমি খাও?

সুপ্তি : এগুলো ঘাস পাতা না শাকসবজি।
আর হ্যাঁ এগুলো আমি খাই। তাইতো আমি এত সুন্দর দেখেন না!

মাহির : জ্যাম পাউরুটির সাথে কফি কে খাই?

সুপ্তি : কেন আমি! আমি ফুটস এর সাথে কফি খাই অর জ্যাম পাউরুটি দিয়ে কফি খাই। এগুলো খুবই নরমাল।

মাহির অনেক কষ্টে খাবারগুলো গিললো। এরই মাঝে সুপ্তিও খেয়ে নিয়েছে আর বাকিদেরও খাবার দিয়েছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল। তবে মাহির সুপ্তির গল্প শেষ হচ্ছে না।
আজ মাহিরের যাওয়ারও তাড়া নেই আর সুপ্তির বিদায় করাও তাড়া নেই।

বিকেল ৩ টার দিকে মাহির চলে গেছে।
যাওয়ার আগে বলে গেছে, ” সুপ্তি যেন এখান থেকে অন্য কোথাও শিফট করার চিন্তা না করে! ”

কিন্তু সুপ্তি তো শুধু সুপ্তি নই মিস সিক্রেটও। তাকে এ এপার্টমেন্ট ছাড়তেই হবে। সুপ্তি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এটা দেখে সুপ্তি মুচকি হাসি দিলো।
এতক্ষণে তার অনেকটা বোঝা হয়ে গেছে মাহির কিভাবে তার এপার্টমেন্ট চিনেছে!

সুপ্তি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করলো।
কল রিসিভ করতেই সুপ্তি বললো, ” আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। ”

অপর পাশ থেকে, ” ওয়ালাইকুম আসসালাম , মামনি। কেমন আছো? ”

সুপ্তি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

— ” আলহামদুলিল্লাহ। তা হঠাৎ আমাকে কল করলে যে? ”

সুপ্তি : আপনার এপার্টমেন্ট ছেড়ে দিবো, এটা বলার জন্যই কল করলাম।

লোকটা হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তুমি এভাবে এপার্টমেন্ট ছাড়তে পারো না! ”

সুপ্তি : আপনিও এভাবে আমার ইনফরমেশন অন্যকে দিতে পারেন না।

” এত এত সরকারের দেওয়া এপার্টমেন্ট রেখে আমি ভাড়া থাকছি। আমার তথ্য মানুষকে দেওয়ার জন্য! ” ( সুপ্তি রেগে মনে মনে )

লোকটা ঢোক গিলে বললো, ” আমি কাকে……”

সুপ্তি কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো, ” একদম মিথ্যে বলবেন না। আপনি কাকে বলেছেন সেটা খুব ভালো করেই জানেন। আমি এপার্টমেন্ট ছাড়বো মানে ছাড়বোই। ”

— ” মামনি এমন করো না প্লিজ। আচ্ছা আমার এই কলোনিতে আরেকটা নতুন বিল্ডিং আছে সেখানে একটা এপার্টমেন্টে উঠো। ”

সুপ্তি : হ্যাঁ আমি ওখানে উঠি তারপর আপনি আবারও বলে দেন!

— ” না না, মামনি। আমি আর বলবো না। বুঝোই তো এত পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তির কাছে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। তবে নেক্সট টাইম আর বলবো না প্রমিস। ”

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” উঠতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। ”

— ” তোমার সব শর্তে রাজি। ”

সুপ্তি : আমার জিনিসপত্র আপনি শিফট করে দিবেন।

লোকটা রাজি হওয়ায় সুপ্তি আর কিছু না বলে কেটে দিলো। তাকে সবকিছু প্যাকিং করতে হবে।

কিছুক্ষণের মাঝেই সবকিছু শিফট করার কাজ শুরু হলো। সুপ্তি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কাটুনে রেখে ভালো করে কসটিপ দিয়ে দিয়েছে।

আর মাহির এ বিষয়ে জেনেছে, সেলেব্রিটির জিনিসপত্র সরানো হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মাহির একটু তেই তা বিশ্বাস করে নিয়েছে।

সবকিছু শিফট করার পর মিস সিক্রেট ইরফানকে কল করে ৫০ জন বডিগার্ড আনতে বললো। ইরফান প্রথম দিকে অনেক প্রশ্ন করলেও পরে মেনে নিয়েছে।

কিছুক্ষণের মাঝেই বডিগার্ডসহ ইরফান চলে এলো। সাথে ১২ টা গাড়ি।

মিস সিক্রেট ভিআইপিদের মতো এন্ট্রি নিলো। মূলত সে মাহিরের আইডিয়াই কাজে লাগাচ্ছে।

অনেকক্ষণ পুরো কলোনি চক্কর দিয়ে একটা জায়গায় থামলো। সকলকে চলে যেতে বললে সকলে চলে গেলো।

নির্জন জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি তো এখানে মিস সিক্রেট রূপেও ঢুকতে পারবো না আবার সুপ্তি হিসেবেও না। তাহলে আমি যাবো কিভাবে? ”

কিছুক্ষণ ভেবে হুডিটা খুললো। এরপর তাড়াতাড়ি হেঁটে নিজের নতুন এপার্টমেন্টে চলে গেলো।

রাতে মাহিরের কানে খবর গেল সুপ্তি এপার্টমেন্টে নেই। সুপ্তিকে কল করলেও সুপ্তি রিসিভ করে নি।

মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছে।

মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললেন, ” তাশরিফকে ভালো বানানোর জন্য কাকে আনছো, হ্যাঁ? এখন আমার ছেলে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ”

মিস সিক্রেট চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাহফুজ চৌধুরী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” এখন কাজ শেষ। মেয়েটাকে তাশরিফের জীবন থেকে চলে যেতে বলো। ”

মিস সিক্রেটের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে এমন অবস্থা। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” এরজন্যই ডেকেছিলেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেট : আচ্ছা। এখন আমি আসি।

মাহফুজ চৌধুরী : এখনই চলে যাবে! বসলেও তো না!

মিস সিক্রেট : পরে আরেকদিন আসবো। বলে হাঁটা শুরু করলো। নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_32
#Sabrina_Summa

কয়েকদিন কেটে গেছে।
সময়ের চাকা থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্যও। ঘনিয়ে এসেছে বছরের শেষ প্রান্ত, চারপাশে হালকা কুয়াশার আস্তরণ। শীত ধীরে ধীরে শহরের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামছে। এই কয়েকদিনে সুপ্তি আর মাহিরের দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার – অন্য পাঁচ দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে। দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কটা যেন এখন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শব্দের চেয়ে চাহনির গভীরতা অনেক বেশি।।

শীতের এই অনুষ্ঠানমুখোর পরিবেশে আজ মাহির, মাহফুজ চৌধুরী এসেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে । আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আছে। মিস সিক্রেটকে ইনভাইট করা হলেও সে আসবে না বলে জানিয়েছে।
নরমালি প্রতিবছর যে অ্যান্কারিং করে আজও সেই করছে তবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকার কাজটা অন্য একজনকে দেওয়া হলো ৷

মানুষটিকে দেখে মাহির রেগে গেল। কেননা হালকা গোলাপি রঙের গর্জিয়াস গোল্ডেন পাড়ের জর্জেট শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দরভাবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকছে সুপ্তি।
খুবই সুন্দর লাগছে তাকে। গর্জিয়াস সাজ, হাতে ভারি চুরি আর খোলা চুলে ফুল দেওয়া।

মাহিরের সাথে সুপ্তির চোখাচোখি হতেই সুপ্তি মুচকি হাসলো। তবে মাহির রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো। মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললেন, ” এই মেয়েই বুঝি সুপ্তি? ”

মাহির চমকে উঠে বললো, ” হুম। তুমি কিভাবে জানলে? ”

মাহিরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিজের মনে মনে বললো, ” মেয়ে তুমি অনেক সুন্দর। মাহিরের পছন্দ ভালো বলতে হবে। কিন্তু সোন্দর্য্যের চেয়ে ক্ষমতাটা যে বেশি দরকার! ”

কিছুজনকে বক্ততা দেওয়ার জন্য ডাকার পর মাহিরকে ডাকা হলো। সে কোনো মতে কিছু কথা বলে চলে আসলো।

মাহির অনবরত সুপ্তিকে মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সুপ্তি দেখছে না। আর সহ্য করতে না পেরে মাহির কিছুটা পিছনে চলে আসলো। যেখানে কেউ বসে নি। সেখানে দাঁড়িয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা ছুড়ি খুব শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো মাহিরের মতি গতি বুঝার চেষ্টা করলো।। তারপর হঠাৎ করেই স্টেজ থেকে নেমে পড়লো। একজনকে এদিক সামলাতে বলে মাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

সুপ্তিকে আসতে দেখে মাহির উল্টো দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো । তাদের এ কর্মকান্ড কারোরই বোধয় নজরে পড়লো না নিজেদের কাজে ব্যস্ততার জন্য।

মাহির দ্রুত হেঁটে একটা রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে নিলে সুপ্তি দৌড়ে এসে অনেক কষ্টে রুমে প্রবেশ করলো। তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।

সুপ্তি : শাড়ি পড়ে এভাবে দৌড়ানো যায়! ( রেগে )

অন্যদিকে মাহির নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জিনিস ভাংচুর করছে। মাহিরকে থামানোর জন্য সুপ্তি ব্যাথা না পাওয়া স্বত্তেও ‘আহ’ করে চিৎকার করে উঠলো।

মাহিরের কানে শব্দ যেতেই সাথে সাথে পিছে ঘুরলো। দ্রুত সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়ছে? অনেক লাগছে তোমার? ব্যাথা পাইছো? ”

সুপ্তি : না। ছুড়িটা দিন।

মাহির মুখ ঘুরিয়ে শক্তকন্ঠে বললো, ” না।”

সুপ্তি : বুঝেছি। সোজা আঙুলে কাজ হবে না।

বলতে বলতে আঁচলটা কোমড়ে গুজে আশেপাশে খুঁজে নিজেও একটা ছুড়ি নিয়ে আসলো।

মাহির ছুড়িটা দেখেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” ছুড়িটা রাখো অথবা আমাকে দাও। ” ( দাঁত চেপে )

সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আপনি দিয়েছেন? ” কিছুক্ষণ পর আবারও বললো, ” হাত আমিও কাটতে পারি! ”

মাহির : একদম না।

এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে সুপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো, ” দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ছুড়িটা রেখে দিচ্ছি ( বলেই রেখে দিলো ) তুমিও রেখে দাও। ”

বলতে বলতেই সুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। তার হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করে মাহির সুপ্তির হাতের ছুড়িটা টান দিতে নিলে সুপ্তি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। ফলশ্রুতিতে তারও ভালোই গভীরভাবে কেটে গেলো।

সুপ্তি : প্রেমে পড়তে পারি তবে দক্ষতা হারাই নি! ( রেগে )

মাহিরের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে হাত দেখতে দেখতে রেগে বললো, ” এটা কি হলো? ”

সুপ্তি : আমি কিছুই করি নি। আপনি নিতে আসলেন কেন?

মাহির : এখন সব দোষ আমার না? তোমাকে শাড়ি পড়তে বলছিল কে?

সুপ্তি : এটাও আপনার জন্যই!

মাহির ভ্রু কুচকে, ” মানে? ”

সুপ্তি : সবাই আমাকে আপনার খাতিরা লোক ভাবে তাই আমাকে আনছে।

মাহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” কি শাড়ি কিনছো! জর্জেটের। সবই বোঝা যায়!” ( বলেই আঁচল খুলে দিলো) তারপর আবারো ভ্রু কুচকে বললো, “এখন তো আরও বোঝা যায়। ”

এরই মাঝে সুপ্তির ফোনে কল আসলো। ফোনে নামটা দেখে সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকালো।

মাহির : লাউডস্পিকার দেও।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো, ” কি হলো সুপ্তি? কোথায় উধাও হয়ে গেলে? ”

মাহির ফোনটা নিয়ে বললো, ” সুপ্তি কোথাও যাবে না। সুপ্তি আমার সাথে যাবে। ”

বলেই কল কেটে দিয়ে ফোনটা নিজের পকেটে রাখলো।।

সুপ্তির কাছাকাছি এসে বললো, ” আমারই এই অবস্থা। না জানি বাকিদের কি অবস্থা! যদি কোনো নেতা ফেতার ছেলে বা উপস্থিত বড় পদের মানুষের ছেলের বউ বা নিজের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়ে যায় তখন আমার কি হবে? ”

সুপ্তির হঠাৎ যেন কি হলো। মাহিরের গলা জড়িয়ে বললো, ” এগুলো বাদ। এখন আমরা একটু ব্যান্ডেসের দিকে আসি! ”

মাহিরের আবারও সুপ্তির হাতের কথা মনে পড়লো। দ্রুত গিয়ে ব্যান্ডেসের যাবতীয় জিনিস নিয়ে এসে সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেস করে দিলো।

সুপ্তি : আমারটা না হয় গভীর হয় নি কিন্তু আপনারটা তো সেলাই করতে হবে।

মাহির নিজের হাতের দিকে তাকালো। এখনও রক্ত লেগে আছে। রক্তটা সুপ্তির আঁচলে মুছে দিলো।

এতে অবশ্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সুপ্তি। মাহিরের হাত কিছুটা ক্লিন করে দিয়ে বললো, ” চলুন, হসপিটালে যাই। ”

মাহির : দাঁড়াও, তানিশাকে কল করি আগে।

৫ মিনিটের মাঝে তানিশা আবার কল করে বাহিরে যেতে আসতে বললো তাদের।

সুপ্তি বাহিরে যেতেই অনেকটা অবাক হলো। সে হাঁটছে। তার ডান পাশে মাহির আর বাম পাশে তানিশা। সাথে আরও ২০/২৫ জন গার্ড। শুধু তাকেই কভার করছে তাও আবার অন্যদিকে মুখ করে।

মাহিরের কড়া নিষেধ কেউ সুপ্তির দিকে তাকাতে পারবে না।।

#চলবে.,.