Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 4



Dark Mystery পর্ব-৪০

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_40
#Sabrina_Summa

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা রুমে। যার চতুর্দিকে আয়না লাগানো। একটা মানুষের থাকার মতো করেই রুমটা গোছানো।
একটা চেয়ারে বসে আছে সে। তার হাত পিছনে চেয়ারের সাথে বাঁধা। মাহির তার সামনের চেয়ারে বসে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিরের হাতে পানির বোতল ৷ বুঝায় যাচ্ছে সুপ্তির জ্ঞান ফিরানোর জন্য এতক্ষণ পানি ছিটিয়েছে।

মাহির স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” এতক্ষণে জ্ঞান ফিরলো তবে। ”

সুপ্তি : আমি এখানে ইচ্ছে করে আছি বলেই আটকিয়ে রাখতে পারছেন। আমি যদি…

মাহির কথার মাঝখানে বলে উঠলো, ” হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। তুমি ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারবে।
এখন নাটক কম করে হাতটা সামনে আনো। আমি দেখেছি তোমার হাত খোলা শেষ। ”

সুপ্তি কোনো ভঙ্গিতা ছাড়ায় হাত সামনে আনলো । মাহিরের মতিগতি বুঝার জন্য বললো, ” মানুষ তো আয়নাঘর নাম রেখে অন্ধকার একটা টর্চার রুম বানায়। তোমার ওই আগের রুমের মতো যেখানে তুমি সুপ্তির শোকে বসে ছিলে!
( উপহাস করে )
কিন্তু এই রুমটা আয়নাঘরের নাম রাখতে পারবে। তুমি এত আয়না লাগিয়েছো আয়নাঘরের নাম রাখার জন্যই মাহির? ”

মাহির : তুমি আমার ওই রুম সম্পর্কে জানলে কিভাবে?
( স্বাভাবিক ভাবেই )

সুপ্তি হেসে বললো, ” আমি সবই জানি। তুমি যে সেখানে মানুষকে এনে টর্চার করো তাও জানি। ”

মাহির : নিজেকে এত সাধু ভেবো না। আমি মানুষকে শুধু টর্চার করি তোমার মতো খুন করি না।

সুপ্তি : নিজেকে সাধু ভাববো না কেন বলো, তোমার সকল কুকীর্তিই তো আমার মাধ্যমে চাপা পড়ে । আই মেইন, আমি না থাকলে তুমি এতদিন জেলে থাকতে!

মাহির : তুমি কোথায় থাকতে? আমার আগে তো তোমার জেলে যাওয়ার কথা! যে পরিমাণ খুন করেছো।

সুপ্তি : মানুষ যতটা ভাবে আমি ততটা খুনও করি না বা করি নি।

মাহির : যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে। আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি ৮৮ টার কথা। অবশ্যই তার থেকে বেশিই হবে !

সুপ্তি ৮৮ টা বলেই হাসা শুরু করলো।

মাহির : তবে কি তারও বেশি?

সুপ্তি : আমি মাত্র ৫ টা খুন করেছি। বাকিগুলো হয়তো আমার টিম বা অন্য কেউ করেছে যা আমার নামে চালিয়েছে। তবে এগুলো আমার নির্দেশে না।

মাহির : আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আরেকটা কথা, বিষয়টা খুবই হাস্যকর যে একটা মানুষ লাশে ভয় পায় না তবে কবরে ভয় পায়!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনার বিশ্বাস দিয়ে আমি কি করবো! যা সত্যি তাই বললাম।
আর আমি ট্রমায় ছিলাম তাই কবরে ভয় পেতাম তবে সব কবরে না যেমন – আপুর কবরটা। প্রথমদিকে লাশেও ভয় পেতাম।
কিন্তু এখন কিছুতেই পাই না। এতে অবশ্য আপনার ক্রেডিট অনেক। সো ধন্যবাদ। ”

মাহির : কাকে কাকে খুন করেছো বলা যাবে?

সুপ্তি অবাক হচ্ছে মাহিরের শান্ত মনোভাবে। সে শান্ত থাকতে পারছে না তবে মাহির এত শান্ত কিভাবে? মাহিরের মাঝে কি কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না!

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” ২০১৮ সালে আমি ঢাকায় আসি। ততদিনে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। আপুর ধর্ষণ হয়ে খুন তারপর আবার আমাকে তুলে নিলে যাওয়া আর দেশের খারাপ অবস্থা সবদিক বিবেচনা করেই বাবা আমাকে ফাইট শিখায়।
আমি তখন মিস সিক্রেট নামে খুবই জনপ্রিয়।
আচ্ছা, আমি কিন্তু আমার মিস সিক্রেট হয়ে খুনের পথে যাওয়ার গল্প শুনাচ্ছি । বলতে গেলে শুরু থেকেই শুরু করছি। কারণ আমি যা যা বলবো সবই একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড। ”

মাহির মাথা কাত করে সম্মতি জানালে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ক্লাস ফাইভে তখন বাবা আমাকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করে। কিছুটা বাধ্য হয়েই। কারণ আমার মেয়েদের মতো পুতুলে না ছেলেদের মতো ডিভাইসে ইন্টারেস্ট বেশি ছিল। আমি কম্পিউটার তো শিখিই নাথে হ্যাকিংও শিখে ফেলেছিলাম।
ক্লাস সিক্সে নিজে নিজেই নতুন নতুন হ্যাকিং আইডিয়া বের করতাম। এক কথায় মাস্টার হয়ে যাচ্ছিলাম এগুলোতে।
ক্লাস সেভেনে আমি জাতীয় পর্যায়ে হাত দেয়। সরকারের জন্য কাজ করা শুরু করি। কেউ অবশ্য আমার পরিচয় জানতো না। এমনকি আপু ব্যতিত আমার ফ্যামিলির কেউ না।
ক্লাস এইটে অনেক বেশি দক্ষ হয়ে গেয়েছিলাম। যে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করতে পারতাম যেকোনো জায়গায় বসে। হোক তা এক কিলোমিটার বা হাজার কিলোমিটার। এগুলোই আমাকে সাহায্য করেছিল মিস সিক্রেট হিসেবে জনপ্রিয় হতে।
এখন আসি খুনের বিষয়ে।
যখন আমার ফাইটিং শেখা পুরোপুরি শেষ। ধীরে ধীরে পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হচ্ছি। এমন সময় তোমার বাবা মাহফুজ চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও পরে আমি তার সাথে যোগাযোগ করি।
সে আমাকে জানায় আপুর খুনিদের খুঁজে দিবে। বিনিময়ে আমাকে তার ফ্যামিলিকে প্রটেক্ট করতে হবে।।
রাজি হয়ে যায়। কারণ আপুর খুনিকে যে আমার দরকার।
তবে আমি যে তার সামনে যাবো এতে আমার সেইফটি কোথায়? উত্তর হলো আমার কোনো সেইটি নেই। তাই মাস্ক পড়ে তার সামনে যায়। সে আমাকে গান চালানোর ট্রেনিং দেয়। তারপর আসে বহু অপেক্ষিত সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
১৬ জুলাই, ২০১৯।
পরপর নিজের হাতে গান দিয়ে দুইটা খুন করি। জানেন, সেদিন আমার হাত না কাঁপলেও বারবার প্রশ্ন আসছিল ওই দুটো লোক আর আমার মাঝে কি পার্থক্য রইলো! তারাও খুনি আমিও খুনি। এরপর স্বাভাবিক হতে ১ বছর সময় নেয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজি, হাজারটা যুক্তি সাজায়। তবুও উত্তরটা আজও মিলে নি।
১ বছর পড়াশোনায় গ্যাপ পড়ায় এসএসসি তে ফেল করি। ”

মাহির আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। মিস সিক্রেটের খুনি হওয়ার পিছে যে তার বাবার এত বড় অবদান তা সে জানতো না।

সুপ্তি একটু রেস্ট নিয়ে আবারও বলা শুরু করলো, ” দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে টেনে টুনে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। ততদিনে আমি হ্যাকিংয়ের পেশায় নেমে পড়েছে। কলেজও শেষ করি টেনে টুনে।
তারপর এডমিশন টেস্ট দেয় প্রথমবারে হয় না প্রিপারেশনের অভাবে। ভাবলাম দ্বিতীয়বারে ভর্তি হবো। অনেক ভালো করে পড়লাম তবে পরীক্ষার আগের দিন এক মাসের জন্য অন্য দেশে যেতে হয়। আমি দেশে আসতে আসতে ততদিনে সকল পরীক্ষাও শেষ।
ভর্তি হয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে। প্রথম তিন বছরে টেস্ট ব্যতিত তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম কিনা সন্দেহ আছে। এখন তো ঠেকায় পড়ে প্রতিদিনই যেতে হয়!
যাইহোক, দীর্ঘ ৯ বছর পর তৃতীয় খুন করি। এরমাঝে আমি কাউকে খুন করি নি। শুধু আহত করেছি।
চতুর্থ খুন করি তৃতীয় খুনের দুইদিন পর। আমার জিনিসে হাত দিলে এমনই হয়। ( রেগে )

মাহির হঠাৎই প্রশ্ন করলো, ” কে এই দুইজন? ”

সুপ্তি : ও, এতক্ষণ আপনি এখানে ছিলেন? আমি তো বুঝতেই পারি নি!

মাহির বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আসল কথায় আসো। ”

সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৮+৩৯

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_38+39
#Sabrina_Summa

মাহিরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট কিছুটা অবাক হলো। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম। তানিশা সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে আর কেউ নেই।
পরিবেশ দেখে মিস সিক্রেটের তেমন সুবিধার লাগছে না। কিছু অঘটন তো ঘটবেই আজ।

মাহির আস্তে আস্তে মিস সিক্রেটকে বললো, ” তোমাকে বাঁচিয়ে দেশে আনার একটাই কারণ সুপ্তিকে তোমার হাত থেকে ছাড়ানো আর ডিভোর্স। ”

মিস সিক্রেট অবাক হয়ে মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকালো। সম্ভবত মাহফুজ চৌধুরী সবই জানে, তবে কেন সে কিছু বলছে না!

মাহির এবার জোরেই বললো, ” চুপচাপ সাইন করে দাও। ”

মিস সিক্রেট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার বড্ড ইচ্ছে করছে কাঁদতে।
সে তো ভেবেছিল এতদিনে মাহির সব ভুলে গেছে কিন্তু হলো তো তার বিপরীত। বেঁচে ফেরার সব আনন্দই যেন একটি বাক্যে ফিকে হয়ে গেল।

যতই হোক সে তো মিস সিক্রেট। সে তো আর সুপ্তি নই যে নিজের ইমোশন প্রকাশ করতে পারে। এতদিন ধরে সে আবেগকে নই বিবেক কে প্রশ্রয় দিয়েছে আজ কি তার ব্যতিক্রম করবে! কখনোই না।
তাই তো ইমোশনকে লুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” তুমি তোমার সিদ্ধান্তে সিউর তো? ”

মাহির : অবশ্যই।

মিস সিক্রেট : ওকে।
বলে টেবিলে রাখা ডিভোর্স পেপারের দিকে আগালো ৷ কোনো কিছু না ভেবেই নাইন করে দিলো।

মাহিরের খুশি দেখে কে! সে বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।

মিস সিক্রেট : ডিভোর্স দিলাম। বিয়েতে তো গিফট দেয় নি ডিভোর্সে দেয় অন্তত।
বলা শেষ করে মাস্কটা খুললো।

এতক্ষণ মাহফুজ চৌধুরী, রাগিনী বেগম, তানিশা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও এবার তারা একসাথে বলে উঠলো, ” সুপ্তি….”

মাহিরও তাকালো। তার বিশ্বজয়ের হাসি একমুহূর্তে চুপসে গেল। সে এতটাই বিস্মিত যে কোনো টু শব্দও করতে পারলো না।

সুপ্তি : হ্যাঁ, মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি।
( কথায় দৃঢ়তা থাকলেও কষ্ট অভিমান স্পষ্ট )
আর হ্যাঁ ভালো কথা। মাহফুজ চৌধুরী আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি আপনার সকল কর্মকান্ডে সাহায্য করা থেকেও বিরত যাচ্ছি। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক। তাই কখনো বাঁচা মরার প্রশ্ন উঠলে আমাকে কষ্ট করে একবার স্মরণ করিয়েন। বেঁচে থাকলে অবশ্যই সাহায্য করতে আসবো।

কথা শেষ করে ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান দ্রুত ভিতরে আসলো।

সুপ্তি : গাড়ি বের করো।

কথার ধরনেই ইরফান বুঝতে পারছে সামনে থাকা ব্যক্তিটি মিস সিক্রেট। তবুও সকলের মতো সেও অবাক হয়েই বললো, ” সুপ্তি!”

সুপ্তি রাগী চোখে তাকাতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, এখনই বের করছি। ”

সুপ্তি : গাড়ি কিন্তু আমি চালাবো।

ইরফান : ম্যাম, আর যাই হয়ে যাক গাড়ি আমি আপনাকে চালাতে দিবো না!

সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” ওকে, তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। ”

ইরফান চলে যেতেই সুপ্তি বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো, ” ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে যাচ্ছি। কপি পাঠিয়ে দিবো। ”
বলা শেষে বের হয়ে গেল।

মাহির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। বিড়বিড় করে বললো, ” তোমার কথায় মিলে যাচ্ছে! ”

মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কারণ এখানে থেকে এখন ছেলের পাগলামি দেখা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই। এমনিতেই তারা অপরাধ বোধে ভোগছেন।
মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তির সাথে আর রাগিনী বেগম মিস সিক্রেটের সাথে কতই না খারাপ আচরণ করেছেন!

গাড়িতে সুপ্তির জোরাজোরিতে ইরফান বাধ্য হচ্ছে গাড়ি স্প্রিডে চালাতে।
জ্যামপূর্ণ রাস্তায়ও ফুল স্প্রিডে চালাচ্ছে। তবে ভাগ্যক্রমে মিস সিক্রেটের গাড়ি বলে সকলে সাইড দিচ্ছে। নাহয় আজ টু ইন ওয়ানের মতো সুপ্তির পাশাপাশি ইরফানও উপরে চলে যেতো। সাথে যে গাড়ির সাথে ক্র্যাস হতো সে গাড়ি তো আছেই!
কিছুক্ষণের মাঝেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে চলে এলো তারা।
ইরফান হাফ ছেড়ে বাঁচলো বোধহয়।।

মিস সিক্রেট খুব সুন্দর একটা কালো রংয়ের থ্রি-পিচ পড়লো। তার ফর্সা গড়নে কালো রংটা বেশ মানাচ্ছে। সাথে মেচিং কালো হুডি অ্যান্ড মাস্ক তো আছেই ৷

জীবনে কোনো লাইভে বসার জন্য তার এত প্রস্তুতি ছিল না। আজই প্রথম হয় তো শেষবারও।।

লাইভ শুরু হলো আর পাঁচ দশটা দিনের মতোই ফরমালিটি দিয়ে। তবে মিস সিক্রেটের গায়ে থ্রি-পিচ টা বোধহয় সকলকেই অবাক করছে। কারণ সে তো কখনো বাঙালি সাজে সাজে না।

কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট আসল কথায় আসলো।

কিছু কাগজ কয়েক সেকেন্ড ক্যামেরার সামনে ধরে তারপর সরিয়ে নিয়ে বললো, ” এগুলো সীমান্তচুক্তি সংক্রান্ত কাগজ। কিছুদিন আগে চুরি হয়েছিল। যারা চুরি করেছিল তারা বড়ই সাধারণ মানুষ আমাকে আটকে রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে…”
বলার পূর্বেই কাগজগুলো ইচ্ছে করে ফেলে দিলো। কাগজগুলো তোলার জন্য ঝুঁকতেই দেখা গেল পিছনে খুব সুন্দর করে টাঙ্গানো আরও কিছু কাগজ। সম্ভবত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা জমিগুলোর তবে তা ভারতের।।

ফেলা কাগজগুলো তুলে ঠিক করে রেখে আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত তারা চুরি করেছে আমি কাগজগুলো নিয়ে শুধু শুধু ফেরত আসবো নাকি! একটা কথা আছে না – ট্রিট ফর ট্রেট। ঠিক তেমনই তারা করেছে মানে আমিও করবো। এটার জন্যই আমাকে তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল কাগজগুলো বোধহয় আমার কাছেই আছে তবে কাগজগুলো তো কবেই আমার টিমের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে এসেছে।
আচ্ছা, এগুলো এখন একটু বাদ দেয়। পার্সোনাল কিছু কথা বলবো! ”

সকলের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য লাইভে তাকালো। সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

আবারো বলা শুরু করলো,
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার কাজ খুবই সহজ। যখন ইচ্ছা খুন করতে পারি, গুম করতে পারি! ফাঁসি বা কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারি! আসলে আমি কিছুই পারি না। শুধু রিকোয়েস্ট করতে পারি।
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার অবস্থানে থাকলে আপনারাও যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন। এই ভুল ধারণা অনেকেরই গেছে এই তিন দিনে। তবুও কিছু প্রমাণ দেখায় আমার উপর দিয়ে কি যায়!

বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুডি খুলে ফেললো।
থ্রি-পিচের হাতাগুলো উপরে তুলতেই দেখা গেল তার কাটা ছিঁড়া দুই হাত।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” প্রশ্ন আসতে পারে এত দাগ কিসের!
আসলে ইন্ডিয়া যাওয়ার পর খুব সম্মানের সাথে সাগ্রতম করে । দুইদিন খুব আদর যত্ন করে। বলে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সো সবার নজরও আমার দিকেই ছিল। এ সুযোগে আমার টিম সকল কাজ করে ফেলে।
তৃতীয় দিন আমাকে আটক করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় জঘন্য এক অন্ধকার ঘরে। তবে আমাকে আঘাত করার কারো সাহস ছিল না ফলে বেধে ঝুলিয়ে রেখেছিল ।
সেখানের খাবার ছিল জঘন্যর উপরে যদি কোনো নিকৃষ্ট শব্দ থাকে তাই। খাবারে ভাত কম পোকামাকড় বেশি। ইয়া, ভাবলেও আমার গা ইর ইর করে ।
এদিকে আমি আমার সিক্রেট টিমকে ইনফর্ম করি। তারা আন্তর্জাতিক পাওয়ার নেয়। আর মাহির চৌধুরী অনেক হেল্প করেছে। এরজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
সব মিলিয়ে যখন তারা বুঝতে পারে আমাকে ছাড়তেই হবে তখন মারা শুরু করে।।

মাহির গাড়িতে ড্রাইভ করতে করতে লাইভ দেখছে। তার বুকের এককোনে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
খুব স্প্রিডে গাড়ি চালানোর পরও আজ রাস্তাটা বেশি মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও তো এ রাস্তা দিয়েই গিয়েছিল মিশন সম্পর্কিত কথা বলতে। যা সে বুঝতে পেরেছে দেয়ালে থাকা পেইন্টিং থেকে।।

কথা শেষ করে মিস সিক্রেট মাস্ক খুলে বললো, ” Introduce with my another version SUPTI. ”
বলে মুচকি হাসলো।

লাইভের একটা কমেন্টের দিকে চোখ পড়লো। যেখানে তাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্মোধন করা হয়েছে।

সুপ্তি চেয়ারে বসতে বসতে বললো, ” আমি এখন আর মিসেস নই।
I am only Miss Secret or Miss Supti. Cause
বলে ডিভোর্স পেপারটা দেখাতে নিলে মাহির এসে লাইভ অফ করে পেপারটা ছিঁড়ে ফেললো।

সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুপ্তি ইরফানকে ডাকা শুরু করলো।

ইরফানসহ আরও কিছু বডিগার্ড ভিতরে এসে বললো, ” সরি ম্যাম। স্যার অনেক জবরদস্তি করে ঢুকেছে। ”

মাহির রাগী স্বরে হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তোমরা যাও এখান থেকে। ”

সকলে একবার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মাহিরের দিকে। ইরফান কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনে করলো। তাই সে সহ বাকিদের নিয়ে বাহিরে চলে গেল।

সকলে চলে যেতেই মাহির দরজা লক করে দিলো।

সুপ্তি : কি হচ্ছে এগুলো? ( রেগে )

মাহির : সেটা আমার থেকে ভালো বোধহয় তুমি জানো। যাইহোক আমার সাথে যাবে চলো।

সুপ্তি : আমি কোথাও যাবো না।

মাহির সুপ্তির হাত শক্ত করে ধরে বললো, ” চলো। ”

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” মাহির, আমার লাগছে। ”

মাহির দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, ” সরি, সবকিছুর জন্যি সরি। আমি এ ডিভোর্স মানি না। তুমি শুধুই…..”
বলতে বলতে সুপ্তির কাঁধে ইনজেকশন পোষ করলো মাহির। কিছুক্ষণের মাঝে জ্ঞান হারালো সুপ্তি।

মাহির সুপ্তিকে কোলে তুলে বললো, ” আমি জানতাম জানেমান তুমি মানবে না। তাই তো আমাকে এ কাজ করতে হলো। দোষ কিন্তু তোমার তবুও আমি সরি বলছি। সরি !”

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৬+৩৭

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_36+37
#Sabrina_Summa

আজকের সকালটা বোধহয় সকলের জন্যই অশুভ। সকলেরই মন খারাপ। কেননা বাড়ির ছেলে বাড়িতে নেই। বাড়ির নতুন বউ মন খারাপ করে বসে আছে।
সকাল থেকে সকলেই মাহিরকে কল দিচ্ছে তবে কল রিসিভ করছে না মাহির।
অবশেষে বাধ্য হয়েই মিস সিক্রেট বের হলো।

__________________

মাহির একটা চেয়ারে বসে বিড়বিড় করছে।
” কত শখ করে ৩০ ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে আর পহেলা জানুয়ারী সুপ্তিকে নিয়ে নিউ ইয়ার ইনজয় করবো ভেবেছিলাম। আর এখন! ”

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো মাহিরের।
মিস সিক্রেটকে দেখে বলে উঠলো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট : কী শুরু করছো! কারো কল ধরছো না কেন? ( রেগে )

অন্ধকার রুমে খুব হালকা আলো থাকায় ভালো করে মাহিরের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মাহির : তুই এখানে আসলি কিভাবে?

মিস সিক্রেট : যে পাতালেই থাকো, তোমাকে খুঁজে পাওয়া মিস সিক্রেটের জাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

মাহির : সুপ্তিকে কোথায় গুম করছিস বল।

মিস সিক্রেট : বাসায় চলো।

মাহির : চুপচাপ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

মিস সিক্রেট : মাহির….

মাহির : একদম মাহির বলবি না। মাহির নামটা শুধু সুপ্তির জন্য।

মিস সিক্রেট : একদম তুই করে বলবে না। ভুলে যেও না আমি তোমার বিয়ে করা বৈধ বউ।

মাহির : ডিভোর্স পেপার রেডি করতেছি। সেখানে সাইন করে সুপ্তিকে সামনে আনবি।

মিস সিক্রেট : এই ব্যবহারের জন্য একদিন খুব পস্তাবে। আর আমার কাছে ক্ষমাও চাইবে।

মাহির : জীবনেও এমন দিন আসবে না।

মিস সিক্রেট : দুইদিন সময় দিলাম। দুইদিনের মাঝে বাসায় ফিরতে বাধ্য হবে!

দরজা দিয়ে বের হতে হতে বললো, ” আর ডিভোর্সের কথা তো ভুইলাই যা। ”

৭ দিন কেটে গেছে।
মাহির সত্যিই বাধ্য হয়েছিল বাসায় ফিরতে।
তবে একদিন মিস সিক্রেট ঘুমন্ত মাহিরকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখায় তানিশা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত মাহিরের উপর ফেলে দেয়।
সেদিন মাহির মিস সিক্রেটকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে আবারও বাসা ছেড়ে চলে যায়। এবার আর মিস সিক্রেট বাঁধা দেয় না বা বাধ্যও করে না বাসায় ফিরার জন্য।

জনগণ যা ভেবেছিল, মিস সিক্রেট যাকে বিয়ে করবে তার ন্যূনতম ক্ষতি বা দুর্নাম হতে দিবে না। তাই হয়েছে। মিস সিক্রেট মাহিরের বিরোধ্যে সামান্যতম কথাও বলতে দেয় না।

এইতো সেদিনের কথা, লাইভে মাহির আর সুপ্তিকে নিয়ে কথা উঠায় মিস সিক্রেট টিভি চ্যানেলটা হ্যাক করে লাইভ নষ্ট করে দিয়েছে।

মাহিরের অবর্তমানে মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর কোম্পানি চালাচ্ছে।
এতকিছুর পরও শাশুড়ির মনে জায়গা করে নিতে পারে নি সে ৷
রাগিনী বেগমের মতে সকল সমস্যার উৎপত্তি মিস সিক্রেট। তাই তো প্রতি পদক্ষেপে ভুল ধরে মিস সিক্রেটের।

এভাবেই কেটেছে সাতটি দিন ৷
আজ অনেকদিন পর মিস সিক্রেটের ডাক পড়েছে নতুন মিশনের জন্য। এমন না যে এতদিন তার কাজ ছিল না! তার কাজ ছিল কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সে কোনো কিছুই করে নি।

তবে এবারেরটা ভিন্ন।
কথায় আছে না, “কান টানলে মাথা আসে। ”
ঠিক তেমনটিই। মিস সিক্রেটকে আনার জন্য এখানে মাহিরকেও ডাকা হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে মিস সিক্রেটও যাচ্ছে তবে ইরফানের সাথে।।

মিস সিক্রেট, ইরফান আর মাহির একটা রুমের বসে আছে। রুমটা খুবই গোছানো। অনেকগুলো এক্সপেনসিভ পেইন্টিং লাগানো।
মাহিরের মাঝে কিছুটা চিন্তার ভাজ বুঝা গেলেও মিস সিক্রেটের কোনো চিন্তা নেই তা তার কথায়ই বুঝা যাচ্ছে। সে তো ইরফানের সাথে পেইন্টিং নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত।

একজন রুমে প্রবেশ করতে করতে নিজের পরিচয় দিলো।
মিস সিক্রেটকে যে এজেন্সি থেকে ডাকা হয়েছে সেই এজেন্সির ওনারের পিএ সে।

লোকটা খুব ফরমাল কথা বলায় বিরক্ত হলো মিস সিক্রেট। মিস সিক্রেট ডিরেক্টলি বললো, ” সোজাসাপটা বলুন কেন ডেকেছেন আমাদের! ”

লোকটা কিছুটা থতমত খেলো।
কিছু সময় নিয়ে বলা শুরু করলো, ” বস অসুস্থ তাই আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডাকা হয়েছে যেখানে সরকারও আপনাদের সাহায্য করবে ৷ ”

লোকটা কিছু সেকেন্ডের জন্য থামলো। হয়তো মিস সিক্রেটের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাচ্ছে।
তবে মিস সিক্রেটের মতি গতি বুঝতে না পেরে আবারও বলা শুরু করলো, ” রিসেন্টলি, আমাদের প্রতিবেশি দেশের কিছু লোক এসে আমাদের দেশের একটা ইমপর্ট্যান্ট ফাইল চুরি করে নিয়ে গেছে। যা দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের দেশের হাতে পড়লে দেশের বিরাট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। ”

মিস সিক্রেট ব্যতিত বাকি দুইজন উঠলো, ” কি বিষয়ের ফাইল? ”

পিএ : সেটা আপনারা পরেই জানতে পারবেন।

মিস সিক্রেট : আপনারা সিওর যে ফাইলগুলো প্রতিবেশি দেশেরই কেউ নিয়েছে।

পিএ : ১০০% সিওর। কিছুদিন আগে সেই দেশের কিছু মানুষ বডার দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিল। তারাই চুরিটা করেছে।

মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” এত সিওর হচ্ছেন কেন! তারা কি ফাইলগুলোর পরিবর্তে কোনো কিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে? ”

পিএ : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেটকে স্বাভাবিক দেখে সবাই অবাক হচ্ছে।

মিস সিক্রেট : এই ঘটনা তাও কতদিন আগের?

পিএ : প্রায় দেড় মাস।

মিস সিক্রেট : কি? আর আপনি আজ আমাকে বলছেন! এ ঘটনা ঘটার সময় আমি কোথায় ছিলাম?

পিএ : সম্ভবত আপনি দেশের বাহিরে ছিলেন। আর আমরা চুরির বিষয়ে জানতে পেরেছি ১২ দিন আগে। এতদিন এটা নিয়ে রিচার্স চলছিল। আসলে আমরা চাই না এটা পাবলিক জানুক। বুঝেনই তো রাজনৈতিক বিষয়!

মিস সিক্রেট : আপনারা কি চাচ্ছেন, এই মিশনটা আমি পরিচালনা কি?

পিএ হ্যাঁ বলতেই মিস সিক্রেট দাঁড়িয়ে বললো, ” সরি, এই মিশনে যাওয়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু। ”

পিএ : আপনি এ কথা বলছেন! আপনি এর থেকেও অনেক হার্ড মিশন করেছেন!

মিস সিক্রেট : আপনি বুঝতে পারছেন না। সেটা আমি একা করেছি কিন্তু এটা একা করা সম্ভব না। আর আমি কারো জীবন নিয়ে খেলবো না।

মিস সিক্রেটের কথার আঁচে বুঝা যাচ্ছে সে কারো মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এ মিশনে! তাই হয় তো যেতে চাচ্ছে না।

পিএ : কিন্তু, এটা তো প্রয়োজন। আর আপনাকে যেতেই হবে।

মিস সিক্রেট : আমাকে এ বিষয়ে আগে জানিয়েছেন! আর আপনি আমাকে অর্ডার করছেন? ( রেগে )

পিএ : একটু শান্ত মাথায় বসুন, প্লিজ।

সকলের অনুরোধে মিস সিক্রেট শান্ত হয়ে বসলো। পিএ তাকে অনেকক্ষণ বুঝানোর পর মিস সিক্রেট রাজি হলো।

তবে তার শর্ত আছে।

এ মিশনে যদি কেউ মারা যায় তবে তার পরিবারকে সরকার দেখবে।

এ মিশন সম্পর্কে কেউ জানবে না এবং

মিস সিক্রেট যা বলবে সকলকে তা মানতে হবে। সে যেই হোক না কেন!

সব শর্তেই রাজি হতে হলো পিএকে। নইতো মিস সিক্রেটকে রাজি করানো যাবে না।

কোনো বিপদ ঘটার পূর্বে মানুষের মন কু ডাকে। আজ মিস সিক্রেটেরও কেমন যেন ডাকছে। এই কাজটা তার মনের বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে। তবুও কাজ শুরু করলো।

মিস সিক্রেট ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটা টিম বানাতে ৩ দিন লাগালো শুধু সদস্য বেছে নিতে।
এই সদস্যরা হলো – মিস সিক্রেট, নাম্বার -১১, নাম্বার- ৩, ইরফান, মাহির, বডারগার্ড ৩ জন, ৭ জন গোয়েন্দা অফিসার, ইয়ার ফোর্সের ২ জন এবং আর্মি ৩ জন।

এরমধ্যে ২ জন গোয়েন্দাকে মিস সিক্রেট আগেই ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে ছদ্মবেশে। বাকিদের টেনিং চলছে।।

৩ জন ঘুরার নাম করে যাবে। বডারগার্ডরা আমাদের পালাতে সাহায্য করবে যদি কোনো কারণে আমাদের ওই দেশে আটকে ফেলা হয় তো। মাহির, ইরফানসহ সিক্রেট টিমের ২ জন এ দেশেই থাকবে।
এগুলোই মিস সিক্রেট বলছিল।

হঠাৎই একজন বলে উঠলো, ” ম্যাম, তাহলে আমরা কি করবো? ”

মিস সিক্রেট : ম্যাম না, মিস সিক্রেট বলো। আমিও তো তোমাদের টিমমেট।
মিস সিক্রেট মলিন হেসে বললো। তবে তার সেই হাসি মাস্কের আড়ালেই রয়ে গেল ৷

কিছুক্ষণ পর বললো, ” বাকিরা আমার সাথে যাবে আমার বডিগার্ড হয়ে। ”

সকলেই এক দফা অবাক হলো।

মাহির : তাহলে এই টিমের মাস্টারমাইন্ড কে? আই মেইন কে দেশে থেকে এই টিম পরিচালনা করবে?

মিস সিক্রেট : তুমি।

মাহির আরেক দফায় অবাক হলো।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” আমি যাবো প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। এখন হয় তো বুঝতে পারছো তোমাদের কি কাজ! ( ইয়ার ফোর্সের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে )
আর বাকিদের কাজ তো আগেই বলেছি। ”

মিস সিক্রেট আরও কিছু কথা বললো।
৭ দিনের টেনিংয়ের পর আসল কাজ শুরু হলো। যেভাবে প্লেনিং করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে।।

__________________

কাজ শেষ করে দীর্ঘ পাঁচ দিন পর দেশে ফিরছে মিস সিক্রেট। মিশনটা সিক্রেট রাখার কথা থাকলেও মিস সিক্রেটকে বাঁচানোর জন্য তা এখন পাবলিকও জানে।

মিস সিক্রেট জেট থেকে নামতেই সাংবাদিকরা তাকে ঘেরাও করলো।

মিস সিক্রেট মাহিরকে দেখে মাস্কের আড়ালে হাসলো। সে শুনেছে তাকে বাঁচানোর জন্য মাহির অনেককিছু করেছে।

মিস সিক্রেট সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললো, ” আমি লাইভে এসে সবকিছু ক্লিয়ার করবো। প্লিজ, এখন ডিস্টার্ব করবেন না। ”

বলা শেষে হাঁটা শুরু করলো। তার দুইপাশে মাহির এবং ইরফান। ইরফান সকলকে সরাতে ব্যস্ত।

সকলে এসে গাড়িতে বসলো। গন্তব্য তাদের মাহিরের বাড়ি।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৫

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_35
#Sabrina_Summa

নিত্যদিনের মতো আজও মাহিরের ফোনে ঘুম ভাঙলো সুপ্তির।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহিরের রাগী স্বর শুনলো।

মাহির : কী সমস্যা তোমার? কল করলে রিসিভ করো না তারপর আবার সারারাত বন্ধ করে রাখছিলা! আর এপার্টমেন্ট চেঞ্জ করতে আমি না করছিলাম না?

মাহির থামতেই সুপ্তি বলে উঠলো, ” হুম, তারপর। ”

মাহির আরও বেশি রেগে বললো, ” তারপর মানে কি? ৫ মিনিট টাইম দিলাম আমার সাথে দেখা করবে। ”

সুপ্তি : পারবো না।

মাহির : পারতে হবে। না হয় আমি কি করতে পারি আশা করি তোমার জানা আছে!

সুপ্তি : না, জানা নেই।

মাহির : চুপচাপ দেখা করো।

সুপ্তি : টাইম বাড়ান।

মাহির : ২০ মিনিট দিলাম। পার্কে আসো।

বলেই কল কেটে দিলো।
সুপ্তির এতক্ষণ রাগ না হলেও এখন হলো মুখের উপর কল কাটার কারণে। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

পার্কে প্রবেশ করতেই মাহির এসে জড়িয়ে ধরতে নিলে সুপ্তি বলে উঠলো, ” দূরে থাকুন। ”

মাহির সরে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”

সুপ্তি : আমার আবার কি হবে?

মাহির : এমন করছো কেন?

সুপ্তি : কেমন করছি?

মাহির : ত্যাড়াইছা উত্তর না দিয়ে সোজা কথা বলো।

সুপ্তি : আমি ত্যাড়াইছা কথা বলছি?

মাহির : আচ্ছা, বাবা মাফ চাই।

সুপ্তি : আমি আপনার বাবা?

মাহির : প্লিজ বলো না কি হইছে?

সুপ্তি : আপনি চুপচাপ আপনার বাসায় যান।

মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখিয়েই বললো, ” মিস সিক্রেট তোমায় কিছু বলেছে? ”

এবার সুপ্তিও রাগ হলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো, ” সব জায়গায় শুধু মিস সিক্রেটের ভুল খোঁজেন কেন? সে আপনার ভালো করলেও খারাপ দেখেন, খারাপ করলে তো দেখবেনই। আমাকে কেউ কিছু বলে নি। পারলে আপনার বাবার সাথে গিয়ে কথা বলুন। ”

কথাগুলো বলা শেষে সুপ্তি দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।
মাহির সেখানেই কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কারণ সুপ্তির কথাও ভুল না আবার সুপ্তি কোনোদিন তার সাথে এভাবে কথাও বলে নি! তাই সে খুব শিহরিত।
কিছুক্ষণ পরই সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।

বাসাতে যেতেই চিৎকার করা শুরু করলো। আজ যেভাবেই হোক তাকে তার বাবাকে সবকিছু বলতেই হবে।

প্রথমদিকে মাহফুজ চৌধুরী রাগ দেখালেও পরবর্তীতে ছেলের পাগলামি তে নিজেও চুপ হয়ে গেছে।

বিকেলের দিকে মিস সিক্রেটকে কল করে আসতে বললেন।

মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো, ” আঙ্কেল, আজকে আবার কি? ”

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কি সুপ্তিকে না করেছিলে?

মিস সিক্রেট : হ্যাঁ। সুপ্তি নিজের অবস্থান থেকে এগোবে না।

মাহফুজ চৌধুরী : কিন্তু মাহির…

মাহফুজ চৌধুরীকে কথা শেষ করতে দিলো না মিস সিক্রেট। নিজে বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, এটা আপনাদের আই মেইন বাপ ছেলের কাহিনী। নিজেরা সমাধান করুন। আমি বললামই তো সুপ্তি আর এগোবে না। ”

মাহফুজ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ” ভাবছি, সুপ্তিদের বাসায় যাবো। ”

মিস সিক্রেট রাগী স্বরে প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো ৷

মিস সিক্রেট মনে খুশি হলেও স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” মেনে নিলেন যে? ”

মাহফুজ চৌধুরী এক ধ্যানে বললেন, ছেলের পাগলামিতে! ছেলে যে আমার বড্ড আদরের। এ সম্পর্কে তো তোমার ভালো ধারণা আছে! ”

মিস সিক্রেট : কবে যাচ্ছেন?

মাহফুজ চৌধুরী : কালকে। তুমিও চলো!

মিস সিক্রেট উঠতে উঠতে বললো, ” না, না। আমার কাজ আছে। ”

মাহফুজ চৌধুরী : চলে যাচ্ছো?

মিস সিক্রেট : হুম। রেস্ট নিন। কালকে অনেক জার্নি করতে হবে!
বলতে বলতে চলে গেলো।

পরের দিন সবাই সুপ্তির বাসায় গিয়ে বিয়ের কথা বলে আসছে। বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে তিনদিন পর। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর।
মাহিরের খুশি দেখে কে!

গায়ে হলুদসহ সকল অনুষ্ঠানে খুব ভালো ভাবেই কাটলো। মাহির সুযোগ পেলেই সুপ্তির কাছে আসে।
শহরের এক নামি-দামি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের কার্যক্রম করা হচ্ছে।।

৩১ ডিসেম্বর.,.

সকাল থেকে বিয়েতে মেতে সকলেই খুব ক্লান্ত।
বিকেলের দিকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তবে এখনো বর কনে নিজেদের দেখে নি।

সন্ধ্যের দিকে কনেকে স্টেজে আনা হচ্ছে।
কনেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মাহির গান বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

হা তামান্না হামে তোমহে দুলহান বানায়ে..
তেরি হাথ পে মেহেন্দী আপনে নামকি সাজায়ে..
( বলতে বলতে কনের হাত ধরে নামালো )
তেরি লে লে বালায়ে, তেরে সাদকে উতারে…
হা তামান্না হামে তোমহে আপনে বানায়ে…
( গাইতে গাইতে কনের দিকে গোল করে ঘুরলো। কনের মাথায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা দেখে মাহির ভ্রু কুচকালো )
নেহি মুশকিল আফা, জারা দেখো এহা
তেরি আখো মে বাসতা হে মেরা জাহান…
কাবি সুন তো জারা…
বলতে বলতে ঘোমটা সরাতেই অবাক হয়ে তাকালো।

সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তবে সুপ্তির বাবা-মায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।
সাংবাদিকরা একে অপরের সাথে কানা ঘুসা করে বলছে মিস সিক্রেটের সাথে বিয়ে হয়েছে!

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে আমিই তো থাকবো! ”

এ কথা শুনতেই মাহির হাতে থাকা মাইকটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হতে নিলে মিস সিক্রেট ফিসফিস করে বলে উঠলো, ” সুপ্তিকে বাঁচাতে চাইলে চুপচাপ এখানে বসে থাকো। ”

মাহির যেতে চেয়েও পারলো না । চুপচাপ সবার সাথে বসে ছবি তুলতে হলো।
বাসায় যাওয়ার সময় মাহির নিজের ভাবনায় মগ্ন রইলো৷

বাসায় পৌঁছাতেই নিজের রুমে গিয়ে সাজানো গোছানো রুমটাকে অগোছালো করে ফেললো। ময়লার স্তুপে পরিণত করলো ।

মিস সিক্রেট বাহিরে দাঁড়িয়ে বললো, ” আঙ্কেল, আমার জন্য অন্য রুম গুছান। ”

মাহফুজ চৌধুরী : একটু কথা বলে দেখো।

মিস সিক্রেট : আঙ্কেল, আমি আগেই নিষেধ করেছিলাম এমনটা না করতে।

মাহফুজ চৌধুরী : কি করবো বলো আমার তো ছেলের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ!

মিস সিক্রেটের গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো।।

মাহফুজ চৌধুরী তাকে ডেকে বলেছিল, ” তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া। তুমি তাশরিফকে বিয়ে করবে। ”

মিস সিক্রেট প্রথমদিকে না মানলেও মাহফুজ চৌধুরীর পরিকল্পনা শুনে রাজি হয়েছে।

মাহফুজ চৌধুরী : তুমি বিয়ে না করলেও আমি সুপ্তিকে গুম করবো।

” ওকে গুম করা হলে মিস সিক্রেটও গুম হয়ে যাবে! ” ( মিস সিক্রেট মনে মনে )

মিস সিক্রেট : না, না আঙ্কেল। ওকে আমি গুম করবো।

মাহফুজ চৌধুরীর কথায় মিস সিক্রেটের ধ্যান ফিরলো।

মাহফুজ চৌধুরী : আমাকে একদম আঙ্কেল বলবে না। বাবা বলবে।

মিস সিক্রেট : ওকে।

বলে রুমে প্রবেশ করতেই মাহির বললো, ” তোর বাসর তুইই কর। ”
বলেই বের হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট কিছুই বললো না। সময় দিলো মাহিরকে বুঝার জন্য।

সারারাত মাহির ও মিস সিক্রেট উভয়েরই নির্ঘুম কাটলো।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩৩+৩৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_33
#Sabrina_Summa

তারা প্রথমে হসপিটালে গেল। তারপর মাহিরের বাসায়।

সুপ্তি মাহিরের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, ” আমরা এখানে কেন আসছি? ”

মাহির ওয়ার্ড্রপ থেকে একটা ড্রেস বের করে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আল্লাদী কন্ঠে বললো, ” কারণ তুমি আমাকে সময় দিবে। নাও এখন চেঞ্জ করে এসো। ”

সুপ্তি চেঞ্জ করে এসে শাড়িটা মাহিরের হাতে দিলো। মাহির শাড়িটা তানিশাকে দিলো।

তানিশা : ক্লিন করে রাখবো?

মাহির : না, যেভাবে আছে সেভাবেই প্যাকেট করে রাখবে।

তানিশা চলে যেতেই সুপ্তি বললো, ” আমরা এখন কি করবো? ”

মাহির : যা তুমি চাবে।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা, মাহির। এইটা তো আপনার মাস্টার বেড তাই না? ”

মাহির মাথা নাড়িয়ো হ্যাঁ বললো। সুপ্তি আবারো বলা শুরু করলো, ” কিন্তু এটা নরমাল মাস্টার বেডের তুলনায় কিছুটা ছোট না? ”

মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”

মাহির শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, ” আসলে আমি আর আমার বউ তো আলাদা থাকরো বাবা মার থেকে। সো, আমার বউ মানে তুমি যেন আমার সাথে রাগ করে বেশি দূরে থাকতে না পারো, তাই বেড ছোট করা ৷ ”

আশেপাশের সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। তানিশা এসে এ কথা শুনে সকলকে বাহিরে যেতে বললো। সবাই চলেও গেল।

সুপ্তি এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। সকলের যাওয়ার পর বললো, ” আসলে আপনার কাছে ভালো কথা আশা করাই আমার ভুল। ”

মাহির মুচকি হাসছে। সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, ” আমি এখন ঘুমাবো। ”
বলতে বলতেই বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

মাহির : তোমার এ বাসায় থেকে যা করার ইচ্ছা হয় তাই করতে পারো।
বলতে বলতে একটা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসলো।

মাহিরকে বসতে দেখে সুপ্তি অন্যদিকে ঘুরতেই যাবে তার আগেই মাহির বললো, ” ভদ্রভাবে চেয়ারে বসে আছি। অন্যদিকে ঘুরলে ভদ্রতা ভুলে বেডে শুতে বেশি সময় লাগবে না! ”

শান্ত হুমকিতে সুপ্তি ভয় পেল কিনা জানি না। তবে চুপচাপ মাহিরের দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো।

মাহির : তুমি এখন ঘুমাবে?

সুপ্তি : না ঘুমালে, আমি শুধু শুধু শুয়ে আছি?

মাহির : দুপুর তো হয়ে গেছে ৷ খেয়ে ঘুমাও?

সুপ্তি : না, আমি অনেক টাইড। ঘুমাবো আগে।

মাহির আর কিছুই বললো না। সুপ্তিও চোখ বন্ধ করে ফেললো।

দুজনে কখন ঘুমের অতল গভীরে হারিয়ে গেল কেউই জানতে পারলো না।।

বিকেল চারটা।
হঠাৎ সুপ্তির ঘড়ি ভাইব্রেট করে উঠলো। সেই শব্দে সুপ্তির ঘুম ভাঙলো।

ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই কল রিসিভ করলো। অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে কয়েক সেকেন্ড বোধয় কথা হলো। তারপর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ওকে, আমি আসছি। ”

কল কেটে দিলো। তার নজর গেল ঘুমন্ত মাহিরের দিকে ৷ মাহির বেডের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । সুপ্তির খুব মায়া হলো।

তাই তো মাহিরের গালে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে যেতে হবে। টাটা জানেমান। ”

তানিশা দরজায় হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সুপ্তির সেদিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকালো। তানিশা নিজের ভ্রু দুইবার নাচালো।

সুপ্তি স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” তুমি কিন্তু কিছু শুননি, আপু । ”

তানিশার ঠোঁট আরও প্রশস্ত হলো। তারপর বললো, ” আচ্ছা, ঠিকাছে। ”

সুপ্তি : ঘুম থেকে উঠলে বলে দিও আমি চলে গেছি।

তানিশা : তা তো যাচ্ছো। তবে গাড়ি নিয়ে যেও নাহয় কিন্তু রাগ করবে!

সুপ্তি বের হয়ে যেতে যেতে বললো, ” ওকে, নিয়ে যাবো। ”

মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি ইরফানকেই বিশ্বাস করে না সেখানে মাহিরকে কিভাবে!
যতই হোক না প্রেমিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেমিককেও ধোঁকা দিতে হয় তার ভালোর জন্য!
সুপ্তিও এই উক্তিটিকেই প্রমাণ করলো। নেমে গেল গাড়ি থেকে শপিং মলের সামনে।।

রাতে মাহিরের সাথে কথা বলে, সকল কাজ শেষ করে প্রায় ২ টার দিকে ঘুমিয়েছে সুপ্তি।
এমনিতেই তার ঘুম ভালো। তারমধ্যে আবার দেরিতে ঘুম, সহজে তা কি ভাঙ্গে!!

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_34
#Sabrina_Summa

সকাল ৮ টা ছুঁই ছুঁই।
সুপ্তির মুখের উপর কারো ভারি নিঃশ্বাস পড়তেই মুচকি হেসে বালিশের নিচে থেকে একটা গান বের করে সেই ব্যক্তির কপালে তাক করলো।
ট্রিগারে চাপতেই যাবে, পরিচিত একটা ঘ্রাণ পেয়ে চোখ খুললো সুপ্তি। চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখে আঁতকে উঠলো।
এতক্ষণে ব্যক্তিটি সুপ্তির উপর থেকে সরে গেছে।

সুপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললো, ” মাহির আপনি? ”

মাহির : তুমি গানও চালাতে পারো?

সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো। তারদিকে সকলে গান তাক করে আছে।

সুপ্তি বেড থেকে উঠে রাগী স্বরে বললো, ” আপনি এখানে কেন? ”

মাহিরের কোনো উত্তর নেই। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” আরেকটু হলে আপনি মরে যেতেন! আমি গুলি প্রায় চালিয়েই দিয়েছিলাম। ”

মাহির : তোমার কাছে গানের লাইসেন্স আছে?

সুপ্তি : না। এমনিতেই চালাই। ( রেগে )
আচ্ছা এগুলো বাদ দেন। আগে বলেন আপনি আমার বাসায় আসলেন কিভাবে?

মাহির : এটা বলা যাবে না সিক্রেট। তবে এসেছি কোনো একভাবে।

” এত সহজ তো না আমার এপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া! কিভাবে এলেন তিনি! ” ( মনে মনে )

মাহির : আমার খিদে পেয়েছে। সকালের নাস্তা নিয়ে এসো।

সুপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, ” কেন এসেছেন আপনি? ”

মাহির : ঘুরতে, খেতে আর দেখতে কি গুপ্তধন লুকাইয়া রাখছো যে কাউকে নিজের এপার্টমেন্টে আসতে দেও না।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো, ” যাও নাস্তা নিয়ে এসো। ”

সুপ্তি : নাস্তা…. আমি তো রান্নাঘরে জীবনে পাও রাখি না।
” ঠেকাই না পড়লে! ” ( বিড়বিড় করে )

মাহির : যাও৷

সুপ্তি গান টেবিলের উপর রেখে আবারো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো সবাই গান তাক করে আছে ৷

সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো, ” গান মানাতে বলুন। আর যদি আমাকে বিশ্বাস না করতে পারেন তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ”

মাহির ইশারা দিতেই সকলে গান নিচে নামালো।

সুপ্তি রান্নাঘরে গেছে দেখে মাহির সম্পূর্ণ এপার্টমেন্ট ঘুরলো। তবে তার চোখে তেমন কিছুই পড়লো না। একটা সাধারণ মেয়ের রুমের মতোই সুপ্তির রুম কিন্তু এত দামী এপার্টমেন্টে থাকে কিভাবে সুপ্তি! আবার ফ্যামিলি থেকেও কোনো টাকা নেই না। এগুলো প্রশ্নই মাহিরের মনে আসছে।
সে আরও খেয়াল করেছে সুপ্তির রুমের সামনে আরও দুইটা রুম আছে তবে সেগুলোতে তালা মারা। সে শুনেছে এখানে নাকি সেলিব্রেটিদের জিনিস আছে তাই তালা দেওয়া! তাই বেশি মাথা ঘামালো না মাহির।
এরই মাঝে সুপ্তি একটা ট্রে এনে মাহিরের সামনে রাখলো।

মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এগুলো কি? ”

সুপ্তি : জ্যাম পাউরুটি, কফি আর কিছু ফল এবং শাকসবজি।

মাহির : এই ঘাস পাতা তুমি খাও?

সুপ্তি : এগুলো ঘাস পাতা না শাকসবজি।
আর হ্যাঁ এগুলো আমি খাই। তাইতো আমি এত সুন্দর দেখেন না!

মাহির : জ্যাম পাউরুটির সাথে কফি কে খাই?

সুপ্তি : কেন আমি! আমি ফুটস এর সাথে কফি খাই অর জ্যাম পাউরুটি দিয়ে কফি খাই। এগুলো খুবই নরমাল।

মাহির অনেক কষ্টে খাবারগুলো গিললো। এরই মাঝে সুপ্তিও খেয়ে নিয়েছে আর বাকিদেরও খাবার দিয়েছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল। তবে মাহির সুপ্তির গল্প শেষ হচ্ছে না।
আজ মাহিরের যাওয়ারও তাড়া নেই আর সুপ্তির বিদায় করাও তাড়া নেই।

বিকেল ৩ টার দিকে মাহির চলে গেছে।
যাওয়ার আগে বলে গেছে, ” সুপ্তি যেন এখান থেকে অন্য কোথাও শিফট করার চিন্তা না করে! ”

কিন্তু সুপ্তি তো শুধু সুপ্তি নই মিস সিক্রেটও। তাকে এ এপার্টমেন্ট ছাড়তেই হবে। সুপ্তি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এটা দেখে সুপ্তি মুচকি হাসি দিলো।
এতক্ষণে তার অনেকটা বোঝা হয়ে গেছে মাহির কিভাবে তার এপার্টমেন্ট চিনেছে!

সুপ্তি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করলো।
কল রিসিভ করতেই সুপ্তি বললো, ” আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। ”

অপর পাশ থেকে, ” ওয়ালাইকুম আসসালাম , মামনি। কেমন আছো? ”

সুপ্তি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

— ” আলহামদুলিল্লাহ। তা হঠাৎ আমাকে কল করলে যে? ”

সুপ্তি : আপনার এপার্টমেন্ট ছেড়ে দিবো, এটা বলার জন্যই কল করলাম।

লোকটা হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তুমি এভাবে এপার্টমেন্ট ছাড়তে পারো না! ”

সুপ্তি : আপনিও এভাবে আমার ইনফরমেশন অন্যকে দিতে পারেন না।

” এত এত সরকারের দেওয়া এপার্টমেন্ট রেখে আমি ভাড়া থাকছি। আমার তথ্য মানুষকে দেওয়ার জন্য! ” ( সুপ্তি রেগে মনে মনে )

লোকটা ঢোক গিলে বললো, ” আমি কাকে……”

সুপ্তি কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো, ” একদম মিথ্যে বলবেন না। আপনি কাকে বলেছেন সেটা খুব ভালো করেই জানেন। আমি এপার্টমেন্ট ছাড়বো মানে ছাড়বোই। ”

— ” মামনি এমন করো না প্লিজ। আচ্ছা আমার এই কলোনিতে আরেকটা নতুন বিল্ডিং আছে সেখানে একটা এপার্টমেন্টে উঠো। ”

সুপ্তি : হ্যাঁ আমি ওখানে উঠি তারপর আপনি আবারও বলে দেন!

— ” না না, মামনি। আমি আর বলবো না। বুঝোই তো এত পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তির কাছে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। তবে নেক্সট টাইম আর বলবো না প্রমিস। ”

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” উঠতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। ”

— ” তোমার সব শর্তে রাজি। ”

সুপ্তি : আমার জিনিসপত্র আপনি শিফট করে দিবেন।

লোকটা রাজি হওয়ায় সুপ্তি আর কিছু না বলে কেটে দিলো। তাকে সবকিছু প্যাকিং করতে হবে।

কিছুক্ষণের মাঝেই সবকিছু শিফট করার কাজ শুরু হলো। সুপ্তি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কাটুনে রেখে ভালো করে কসটিপ দিয়ে দিয়েছে।

আর মাহির এ বিষয়ে জেনেছে, সেলেব্রিটির জিনিসপত্র সরানো হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মাহির একটু তেই তা বিশ্বাস করে নিয়েছে।

সবকিছু শিফট করার পর মিস সিক্রেট ইরফানকে কল করে ৫০ জন বডিগার্ড আনতে বললো। ইরফান প্রথম দিকে অনেক প্রশ্ন করলেও পরে মেনে নিয়েছে।

কিছুক্ষণের মাঝেই বডিগার্ডসহ ইরফান চলে এলো। সাথে ১২ টা গাড়ি।

মিস সিক্রেট ভিআইপিদের মতো এন্ট্রি নিলো। মূলত সে মাহিরের আইডিয়াই কাজে লাগাচ্ছে।

অনেকক্ষণ পুরো কলোনি চক্কর দিয়ে একটা জায়গায় থামলো। সকলকে চলে যেতে বললে সকলে চলে গেলো।

নির্জন জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি তো এখানে মিস সিক্রেট রূপেও ঢুকতে পারবো না আবার সুপ্তি হিসেবেও না। তাহলে আমি যাবো কিভাবে? ”

কিছুক্ষণ ভেবে হুডিটা খুললো। এরপর তাড়াতাড়ি হেঁটে নিজের নতুন এপার্টমেন্টে চলে গেলো।

রাতে মাহিরের কানে খবর গেল সুপ্তি এপার্টমেন্টে নেই। সুপ্তিকে কল করলেও সুপ্তি রিসিভ করে নি।

মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছে।

মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললেন, ” তাশরিফকে ভালো বানানোর জন্য কাকে আনছো, হ্যাঁ? এখন আমার ছেলে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ”

মিস সিক্রেট চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাহফুজ চৌধুরী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” এখন কাজ শেষ। মেয়েটাকে তাশরিফের জীবন থেকে চলে যেতে বলো। ”

মিস সিক্রেটের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে এমন অবস্থা। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” এরজন্যই ডেকেছিলেন? ”

মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেট : আচ্ছা। এখন আমি আসি।

মাহফুজ চৌধুরী : এখনই চলে যাবে! বসলেও তো না!

মিস সিক্রেট : পরে আরেকদিন আসবো। বলে হাঁটা শুরু করলো। নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_32
#Sabrina_Summa

কয়েকদিন কেটে গেছে।
সময়ের চাকা থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্যও। ঘনিয়ে এসেছে বছরের শেষ প্রান্ত, চারপাশে হালকা কুয়াশার আস্তরণ। শীত ধীরে ধীরে শহরের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামছে। এই কয়েকদিনে সুপ্তি আর মাহিরের দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার – অন্য পাঁচ দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে। দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কটা যেন এখন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শব্দের চেয়ে চাহনির গভীরতা অনেক বেশি।।

শীতের এই অনুষ্ঠানমুখোর পরিবেশে আজ মাহির, মাহফুজ চৌধুরী এসেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে । আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আছে। মিস সিক্রেটকে ইনভাইট করা হলেও সে আসবে না বলে জানিয়েছে।
নরমালি প্রতিবছর যে অ্যান্কারিং করে আজও সেই করছে তবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকার কাজটা অন্য একজনকে দেওয়া হলো ৷

মানুষটিকে দেখে মাহির রেগে গেল। কেননা হালকা গোলাপি রঙের গর্জিয়াস গোল্ডেন পাড়ের জর্জেট শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দরভাবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকছে সুপ্তি।
খুবই সুন্দর লাগছে তাকে। গর্জিয়াস সাজ, হাতে ভারি চুরি আর খোলা চুলে ফুল দেওয়া।

মাহিরের সাথে সুপ্তির চোখাচোখি হতেই সুপ্তি মুচকি হাসলো। তবে মাহির রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো। মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললেন, ” এই মেয়েই বুঝি সুপ্তি? ”

মাহির চমকে উঠে বললো, ” হুম। তুমি কিভাবে জানলে? ”

মাহিরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিজের মনে মনে বললো, ” মেয়ে তুমি অনেক সুন্দর। মাহিরের পছন্দ ভালো বলতে হবে। কিন্তু সোন্দর্য্যের চেয়ে ক্ষমতাটা যে বেশি দরকার! ”

কিছুজনকে বক্ততা দেওয়ার জন্য ডাকার পর মাহিরকে ডাকা হলো। সে কোনো মতে কিছু কথা বলে চলে আসলো।

মাহির অনবরত সুপ্তিকে মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সুপ্তি দেখছে না। আর সহ্য করতে না পেরে মাহির কিছুটা পিছনে চলে আসলো। যেখানে কেউ বসে নি। সেখানে দাঁড়িয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা ছুড়ি খুব শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো মাহিরের মতি গতি বুঝার চেষ্টা করলো।। তারপর হঠাৎ করেই স্টেজ থেকে নেমে পড়লো। একজনকে এদিক সামলাতে বলে মাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

সুপ্তিকে আসতে দেখে মাহির উল্টো দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো । তাদের এ কর্মকান্ড কারোরই বোধয় নজরে পড়লো না নিজেদের কাজে ব্যস্ততার জন্য।

মাহির দ্রুত হেঁটে একটা রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে নিলে সুপ্তি দৌড়ে এসে অনেক কষ্টে রুমে প্রবেশ করলো। তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।

সুপ্তি : শাড়ি পড়ে এভাবে দৌড়ানো যায়! ( রেগে )

অন্যদিকে মাহির নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জিনিস ভাংচুর করছে। মাহিরকে থামানোর জন্য সুপ্তি ব্যাথা না পাওয়া স্বত্তেও ‘আহ’ করে চিৎকার করে উঠলো।

মাহিরের কানে শব্দ যেতেই সাথে সাথে পিছে ঘুরলো। দ্রুত সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়ছে? অনেক লাগছে তোমার? ব্যাথা পাইছো? ”

সুপ্তি : না। ছুড়িটা দিন।

মাহির মুখ ঘুরিয়ে শক্তকন্ঠে বললো, ” না।”

সুপ্তি : বুঝেছি। সোজা আঙুলে কাজ হবে না।

বলতে বলতে আঁচলটা কোমড়ে গুজে আশেপাশে খুঁজে নিজেও একটা ছুড়ি নিয়ে আসলো।

মাহির ছুড়িটা দেখেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” ছুড়িটা রাখো অথবা আমাকে দাও। ” ( দাঁত চেপে )

সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আপনি দিয়েছেন? ” কিছুক্ষণ পর আবারও বললো, ” হাত আমিও কাটতে পারি! ”

মাহির : একদম না।

এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে সুপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো, ” দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ছুড়িটা রেখে দিচ্ছি ( বলেই রেখে দিলো ) তুমিও রেখে দাও। ”

বলতে বলতেই সুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। তার হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করে মাহির সুপ্তির হাতের ছুড়িটা টান দিতে নিলে সুপ্তি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। ফলশ্রুতিতে তারও ভালোই গভীরভাবে কেটে গেলো।

সুপ্তি : প্রেমে পড়তে পারি তবে দক্ষতা হারাই নি! ( রেগে )

মাহিরের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে হাত দেখতে দেখতে রেগে বললো, ” এটা কি হলো? ”

সুপ্তি : আমি কিছুই করি নি। আপনি নিতে আসলেন কেন?

মাহির : এখন সব দোষ আমার না? তোমাকে শাড়ি পড়তে বলছিল কে?

সুপ্তি : এটাও আপনার জন্যই!

মাহির ভ্রু কুচকে, ” মানে? ”

সুপ্তি : সবাই আমাকে আপনার খাতিরা লোক ভাবে তাই আমাকে আনছে।

মাহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” কি শাড়ি কিনছো! জর্জেটের। সবই বোঝা যায়!” ( বলেই আঁচল খুলে দিলো) তারপর আবারো ভ্রু কুচকে বললো, “এখন তো আরও বোঝা যায়। ”

এরই মাঝে সুপ্তির ফোনে কল আসলো। ফোনে নামটা দেখে সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকালো।

মাহির : লাউডস্পিকার দেও।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো, ” কি হলো সুপ্তি? কোথায় উধাও হয়ে গেলে? ”

মাহির ফোনটা নিয়ে বললো, ” সুপ্তি কোথাও যাবে না। সুপ্তি আমার সাথে যাবে। ”

বলেই কল কেটে দিয়ে ফোনটা নিজের পকেটে রাখলো।।

সুপ্তির কাছাকাছি এসে বললো, ” আমারই এই অবস্থা। না জানি বাকিদের কি অবস্থা! যদি কোনো নেতা ফেতার ছেলে বা উপস্থিত বড় পদের মানুষের ছেলের বউ বা নিজের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়ে যায় তখন আমার কি হবে? ”

সুপ্তির হঠাৎ যেন কি হলো। মাহিরের গলা জড়িয়ে বললো, ” এগুলো বাদ। এখন আমরা একটু ব্যান্ডেসের দিকে আসি! ”

মাহিরের আবারও সুপ্তির হাতের কথা মনে পড়লো। দ্রুত গিয়ে ব্যান্ডেসের যাবতীয় জিনিস নিয়ে এসে সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেস করে দিলো।

সুপ্তি : আমারটা না হয় গভীর হয় নি কিন্তু আপনারটা তো সেলাই করতে হবে।

মাহির নিজের হাতের দিকে তাকালো। এখনও রক্ত লেগে আছে। রক্তটা সুপ্তির আঁচলে মুছে দিলো।

এতে অবশ্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সুপ্তি। মাহিরের হাত কিছুটা ক্লিন করে দিয়ে বললো, ” চলুন, হসপিটালে যাই। ”

মাহির : দাঁড়াও, তানিশাকে কল করি আগে।

৫ মিনিটের মাঝে তানিশা আবার কল করে বাহিরে যেতে আসতে বললো তাদের।

সুপ্তি বাহিরে যেতেই অনেকটা অবাক হলো। সে হাঁটছে। তার ডান পাশে মাহির আর বাম পাশে তানিশা। সাথে আরও ২০/২৫ জন গার্ড। শুধু তাকেই কভার করছে তাও আবার অন্যদিকে মুখ করে।

মাহিরের কড়া নিষেধ কেউ সুপ্তির দিকে তাকাতে পারবে না।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-৩০+৩১

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_29
#Sabrina_Summa

নিচে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো তানিশা ডাবল সোফায় বসে আছে।
তাই সুপ্তি ও মাহির দুইজনে দুইটা সিঙ্গেল সোফায় বসলো।

তানিশা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো, ” এতক্ষণে আসার সময় হলো দুজনের! তোমাদের জন্য আমি ঘুমাতে পারছি না। ”

তানিশার কথা শেষ হতে না হতেই কলিং বেল বাজলো।

সুপ্তি উঠে যেতে নিলে তানিশা বলে উঠলো, ” আমি যাচ্ছি। ”

বলেই দরজা খুলে দিলো। দরজার বাহিরে থাকা মানুষগুলোকে চিনতে পারলো না তানিশা। তাই বলে বসলো, ” আপনি কে? ”

একজন বললো, ” উনি ঘাটাইলের ইউনো। আর আমি তার পিএ। মাহির স্যার এ বাসাতেই আছেন তাই না? ”

তানিশা দরজা থেকে সরে ভিতরে আসতে বললো।

সামনের মানুষটিকে দেখে মাহির দাঁড়িয়ে বললো, ” আরে আরে, ইউনো যে! ”

ইউনো এসে মাহিরের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।

হ্যান্ডশেক করতে দেখে সুপ্তির সম্ভবত সারা শরীর জ্বলে গেল। যদিও সে জানে এই মহিলা ইউনো বিবাহিত এবং ইউনোর বয়স মাহিরের আন্টির বয়সী। তারপরও কেন যেন তার খুব জেলাসি ফিল হচ্ছে।
তারমধ্যে আবার এই ইউনোর জন্য সুপ্তির নিজের সিট ছাড়তে হয়েছে। তাতে তার রাগ আউট ওফ কন্ট্রোলে যাচ্ছে ৷

তবুও কিছুক্ষণ মাহিরের সোফার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনলো।
মাহিরের হাসি মুখে কথা বলা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো ৷
তাই সুপ্তি রেগে রুমে গিয়ে উচ্চ শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো।

” বাব্বাহ কি রাগ! এটাই তো দেখতে চাচ্ছিলাম এতদিন। ” ( মাহির মনে মনে )

এত শব্দে সুপ্তির মা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে আরেক দফায় শক খেলেন।
তারপর নাস্তা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ৷
তার বাসায় আজ এত ভিআইপি গেস্ট দেখে কেন যেন তার মন বড্ড কু ডাকছে । তারমাঝে কিছুক্ষণ আগের সেই ঘটনা তো আছেই।
আজকের রাতটা যেন শেষ হতেই চাচ্ছে না!

সুপ্তি রুমে গিয়ে পুরো দমে চেষ্টা করছে কিছু খোঁজার।
প্রথমেই সে সুপ্তি থেকে মিস সিক্রেট হওয়ার ফুটেজ ডিলিট করলো। তারপর আশেপাশের যত সিসি টিভি আছে সব হ্যাক করলো।
কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটির পর মৃদু স্বরে চিৎকার করে বললো, ” ইয়েস। ”

এরপর নাম্বার ৩ কে কল করে বললো, ” তুমি ঘাটাইল আছো না? ”

অপর পাশ থেকে হ্যাঁ সূচক বার্তা আসতেই মিস সিক্রেট কিছু বললো।

নাম্বার ৩ : ওকে, ম্যাম। আমি তাড়াতাড়ি করছি ৷

মিস সিক্রেট ওকে বলেই কেটে দিলো।

সুপ্তি ড্রয়িং রুম পার হওয়ার সময় মাহির চিন্তিত নয়নে ঘড়ির দিকে তাকালো। সময় ১০ বেজে ৩৫ মিনিট।
সুপ্তি দ্রুত পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে কালো রংয়ের গাড়ি নিয়ে নিজের হুডি মাস্ক পড়ে বেরিয়ে গেল ৷

সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট একা একটা রুমে বসে আছে। কিছুক্ষণের মাঝে নাম্বার ৩ একটা বস্তা নিয়ে আসলো।

মিস সিক্রেট : চেয়ারে বসাও।

নাম্বার ৩ ও তাই করলো। বস্তা সরাতেই দেখা গেল একটা মানুষ। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি।

মিস সিক্রেট : মুখ খুলে দাও।

নাম্বার ৩ মুখ খুলে দিতেই লোকটা বলা শুরু করলো, ” আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি? কেন এমন করছেন? ”

মিস সিক্রেট : বাসার নকশা দিলে কেন?

লোকটা কিছুটা আঁতকে উঠলো। তবুও না জানার ভান করে বললো, ” আমি দেই নি। ”

মিস সিক্রেট : একদম মিথ্যে বলবে না। এখন সুপ্তির বাবা-মার কি হবে! তুমি নকশা না দিলে এত সহজে কেউ ঢুকতে পারতো না। কারণ নকশাই করা ওভাবে ৷ নকশা ছাড়া বাসায় কেউ ঢুকলে বার বার ফাঁদে পড়বে।

লোকটা আকুতি করে বললো, ” ম্যাম, প্লিজ ক্ষমা করে দিন। দারোয়ানের চাকরি করে আর কতই পাই। তাই টাকার লোভে পড়ে করে ফেলেছি। ”

মিস সিক্রেট : ৫০ হাজার টাকাও কম মনে হয় ! যদি মনেই হয় তাহলে সুপ্তিকে বলতি।

” প্লিজ ম্যাম, মাফ করে দিন। আমার পরিবার আছে। ”

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারই সব। সুপ্তির পরিবার কিছুই না!
নাম্বার ৩ নিরব দর্শক । তবে তার বার বার প্রশ্ন জাগছে তার ম্যাম বার বার কেন সুপ্তিকে টানছে?

লোকটি : প্লিজ, ম্যাম।

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারকে আমি দেখবো।
বলেই পায়ের কাছ থেকে গান বের করলো।

লোকটার চোখ ভয়ে বড় বড় হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট : আর হ্যাঁ, মরার আগে আমায় দেখবে না তা কি হয়!
বলেই এগিয়ে এসে মাস্ক খুললো ৷

হালকা আলোয় লোকটি মিস সিক্রেটের মুখ দেখে যখনই বলা শুরু করলো ‘স’ তখনই মিস সিক্রেট শুট করলো।

মাস্কটা পড়ে নাম্বার ৩ এর দিকে তাকাতেই দেখলো নাম্বার ৩ ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। হয়তো মিস সিক্রেটকে প্রথম খুন করতে দেখায়।

মিস সিক্রেট : প্রফেশনাল কিলার হয়ে অন্যকে খুন করতে দেখে এত ভয় পাওয়াটা তোমায় সাজে না ।

কয়েক সেকেন্ড সময় দিলো নাম্বার ৩ কে স্বাভাবিক হতে। তারপর বললো, ” যাও এটাকে বস্তায় পুরে উপজেলা গেটের সামনে ফেলে এসো। ”

নাম্বার ৩ : কিন্তু ম্যাম…

সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি কোনো এক্সকিওস শুনতে চাই না। ”

নাম্বার ৩ আর কিছু না বলে বস্তায় পুরে যাওয়া শুরু করলো।

নাম্বার ৩ চলে যেতেই মিস সিক্রেট বললো, ” অনেকদিন পর খুন করলাম। ”

১০ মিনিট পর সেও বের হলো। উপজেলার সামনে দিয়ে আসার সময় একটা বাঁকা হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে মিস সিক্রেট সুপ্তির বাসায় প্রবেশ করলো।

এবার কলিং বেল বাজাতে হলো না। দরজা খোলায় ছিল।
ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ গেল ঘড়ির দিকে। ১০ টা ৫৫ বাজে।

” বাহ, খুব তাড়াতাড়ি কাজ করা শিখে গেছি তো। ” ( নিজের মনে মনে নিজেকেই বাহবা দিলো।)

মিস সিক্রেটকে দেখেই ইউনো এবং মাহির দাঁড়িয়ে পড়লো। ইউনো সালাম দিলে তার উত্তর দিতে দিতে মিস সিক্রেট এগিয়ে আসলো।
ইউনো নিজের সিট ছেড়ে দিলো মিস সিক্রেটের বসার জন্য।

এটা দেখে মিস সিক্রেট তৃপ্তির হাসি হেসে মনে মনে বললো, ” এখন বুঝবে, অন্য কেউ নিজের জায়গা দখল করলে কেমন টা লাগে! ”

কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে কুশল বিনিময় করলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ” আপনি তো এখানে বসে আছেন ৷ কিন্তু আমি তো দেখে আসলাম উপজেলার সামনে অনেক ভিড়। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে! ”

ইউনো আতঙ্কিত স্বরে বললো, ” এত রাতে কোনো ঝামেলা! ”

মিস সিক্রেট : নিজে গিয়েই দেখে নিন।

ইউনো বিদায় নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।

মাহির : থ্যাংকস, এতক্ষণে বাঁচলাম।

মিস সিক্রেট কিছু বললো না।

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো, ” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িযেছে এখনও আসলো না। ”

#চলবে

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_30
#Sabrina_Summa

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো,
” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িয়েছে এখনও আসলো না। ”

মিস সিক্রেট চলে যেতে যেতে বললো,
” সুপ্তি অনেক আগেই চলে এসেছে। ”

মাহির অবাক হয়ে বললো,
” কোথায়? মানে কখন? আমি তো দেখলাম না! ”

মিস সিক্রেট পিছনে ঘুরে বললো,
” মন অন্য দিকে থাকলে অনেক কিছুই দেখা যায় না। যাইহোক, ডিস্টার্ব করো না। ঘুমিয়ে পড়েছে। ”

তাই মাহির, তানিশা সবাই রুমে চলে গেল। আর সুপ্তির মা তো কিছুক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।

এ সুযোগে মিস সিক্রেট চুপি চুপি সুপ্তির রুমে প্রবেশ করলো।।

সকালে.,.

সকলে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে এখন বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে । সবাই বসে আছে তবে তানিশা এবং সুপ্তি ব্যতিত ।

মাহির হঠাৎ বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, আন্টি আমি কিছু বলতে চাই । প্লিজ মাইন্ড করবেন না। ”

সকলের উৎসুক দৃষ্টি মাহিরের দিকে। মাহির বলা শুরু করলো, ” আমি সুপ্তিকে পছন্দ করি। শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে তা নয়। বরং তার থেকে অনেক বেশি! ”

কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার বললো, ” মূলত আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আপনাদের সম্মতি থাকলে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই । ”

এতক্ষণ কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেও এখন সুপ্তির বাবা মার রিয়েকশন দেখার জন্য উপর দিকে তাকালো। দেখলো সবাই তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তির হার্ট বিট বেড়ে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তার খুব অস্বস্তি লাগছে। তারপরও সে যেতে পারছে না কারণ তার বাবা মা যদি আবার ভাবে সে লজ্জা পেয়েছে! তাহলে তার মান ইজ্জত চলে যাবে না?

” তোর মনে তাহলে এই ছিল? তুই ঘাটাইল এর জন্য আসছোস? ” ( তানিশা মনে মনে রাগে ফুঁসছে )

সকলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎই মাহির বলে উঠলো, ” ইনফ্যাক্ট, সুপ্তিও আমাকে পছন্দ করে।
যদি পছন্দ নাই করতো তাহলে আমার দেওয়া রিং কি ওর হাতে থাকতো! ”

সুপ্তি অবাক হয়ে একবার মাহিরের দিকে তাকালো আরেকবার আংটি টার দিকে তাকালো।
সুপ্তির বাবা মার সুপ্তির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সেদিকে চোখ পড়তেই আংটি টা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, ” না, না। বিশ্বাস করো আম্মু, ওনি এটা বন্ধুত্বের খাতিরে দিয়েছিলেন। ”

সুপ্তি ভালোই বুঝতে পারছে তার মা তাকে বিশ্বাস করছে না। তাই মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কেন আপনি মিথ্যে বলছেন? ”
” এর পরিমাণ খুব খারাপ হতে পারে যা আপনার বোধগম্য হচ্ছে না! ” এই কথাটুকু বলতে তার খুব ইচ্ছে করলো কিন্তু বলতে না পারায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

সুপ্তির মা আবারো দিকে তাকালো। যদিও তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছেন কিন্তু মাহিরের সুপ্তির মার তাকানো মনে ইচ্ছে তার আত্মা এখনই বের হয়ে যাবে।

সুপ্তির মা : এ বিষয়ে আর কথা তুলো না। তোমার বাবা মাকে আসতে বলো তাদের সাথেই কথা হবে। বলে তিনিও উঠে গেলেন।

মাহিরের এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। সুপ্তির বাবার সাথে তার যেমন ভালো সখ্যতা হয়েছে সুপ্তির মার সাথে তেমনটা হয় নি। তাই তো তাকে দেখে মাহিরের ভয় লাগে।

মাহির : আঙ্কেল, আমি কিছুক্ষণ পর ঢাকায় ব্যাক করবো। সুপ্তিও তো আজই ঢাকা যাবে তাই না?

সুপ্তির বাবা : হ্যাঁ। কালকে থেকে নাকি আবার বার্সিটিতে জয়েন দিবে।

মাহির : তাহলে একসাথেই ব্যাক করি।

সুপ্তির বাবা : ওকে। ( ভাবলেশহীন ভাবে )

বলে চলে গেল। সুপ্তির বাবা চলে যেতেই তানিশা বললো, ” ওই পাগল ওই । তোর কি বিবেগ বুদ্ধি সব লোভ পাইছে? ”

মাহির : কেন? আমি আবার কি করলাম?

তানিশা : নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজে বলে !

মাহির দাঁত কেলিয়ে বললো, ” আমি না বললে কে বলবে। আম্মু আসতে রাজি হতো কিন্তু বাবা জীবনেও না। ”

তানিশা : তাহলে এখন বুঝ। কীভাবে আনবি স্যারকে!

মাহির সিরিয়াস মুখ করার ভান করে নিজের রুম অর্থাৎ গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলো।।

চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-২৭+২৮

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_27
#Sabrina_Summa

মাহিরের আবারও মনে হচ্ছে সুপ্তিই মিস সিক্রেট!
একটু পর মাহির নিজেই নিজেকে ধমক দিয়ে বললো, ” এটা সম্ভবই না। ”

এরপর আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ৷
কোনো এক অজানা কারণে তার বার বার মনে হচ্ছে সুপ্তিই মিস সিক্রেট!

যথারীতি খাওয়া শেষ করে গল্পের আসর বসালো সবাই। তবে এবার আর সুপ্তি তাদের সাথে যোগ দিলো না। সে নিজের রুমে চলে গেল।

সুপ্তির কাছে এ বাসার সবথেকে প্রিয় হলো বেলকনি । তবে সেই বেলকনিতেই আসা হয় না দীর্ঘ দিন ধরে।
এ বাসার সব কিছু যে তাকে বড্ড স্মৃতিকাতর করে তুলে। বার বার অতীতকে নিয়ে ভাবায়।।

তবুও সবকিছু উপেক্ষা করে আজ বহুদিন পরে বেলকনিতে গেল সে।
কৃত্রিম আলোয় সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

আশেপাশে তাকাতে তাকাতে নজর গেল গেটের দিকে ৷ সন্দেহ হলো গেটে কাউকে পাহাড়ায় না দেখে । তাই দ্রুত ছাদে চলে গেলো।
তারপর মিস সিক্রেট রূপে এসে যা দেখলো তাতে তার রক্ত মাথায় উঠলো।

খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিস সিক্রেট, এতজনের সাথে পারবে না সে।
তাই মাহফুজ চৌধুরীর কাছে আর্মি ফোর্স চাইলো। নিজেও কল করলো হেল্পের জন্য।

এরপর ধীরে ধীরে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো। সে প্রবেশ করতেই সকলেই মনোযোগ তার দিকে চলে এলো।
একজন বলে উঠলো, ” তুই এখানে কি করিস? তোর তো ঢাকা থাকার কথা, তোর এসিস্ট্যান্টের বিয়েতে!”

মিস সিক্রেটের রাগ ক্রমশ বাড়ছে তবে সে বিভিন্নভাবে তাদের মনোযোগ অন্যদিকে নিচ্ছে।
সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তাদের উদ্দেশ্য মাহিরকে কিডনাপ করা। কারণ মারার হলে এতক্ষণে মেরেই ফেলতো!

মনোযোগ অন্যদিকে নিতে পেরে মিস সিক্রেট সুপ্তির বাবা মাকে হাতের ইশারায় রুমে যেতে বললো।
ইশারা বুঝতে পেরে তারা খুব সাবধানে রুমে চলে গেল। কিন্তু বিপত্তি ঘটালো সুপ্তির বাবা। তিনি গান নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

ফলশ্রুতিতে সকলেই তার দিকে গান তাক করলো।
সাথে সাথেই মিস সিক্রেট ও তানিশাও গান তাক করলো তাদের দিকে।।

মাহির মিস সিক্রেটের পিছনে এসে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমাকে একটা গান দাও।”

মিস সিক্রেট মাহিরকে একটা গান দিয়ে পায়ের কাছ থেকে আরেকটা গান বের করলো ৷ তার দুই হাতে দুইটা গান।

পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে খুনাখুনি হয়ে যাবে।
তবে পার্ফেক্ট টাইমে এন্ট্রি নিলো আর্মি ৷ দুইজনকে গানের টিগারে চাপ দিতে দেখে শুট করলো।

সাথে সাথে পড়ে গেল ফ্লোরে। আর বাকিরা কোনো মতে জান নিয়ে পালালো ৷ কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সম্পূর্ণ ঘটনাটা ঘটে গেল। সেদিকে মিস সিক্রেটের কোনো হেলদোল নেই।

সে একবার লাশ দুটোকে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো, ” থ্যাংকস টাইম টো টাইম আসার জন্য। বাট এখন এগুলো পরিষ্কার করুন। মারলে আমিও মারতে পারতাম তবে এ বাসায় খুনাখুনি হয় না। সো তাদের লাশ দেখে অভ্যাস নেই। ”
নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” ২০ মিনিট দিলাম পরিষ্কার করুন। আর কিছু বাহিরে গিয়ে পাহাড়া দিন। ”

সকলের অবাক দৃষ্টি মিস সিক্রেটের দিকে।
তার ক্ষমতা আছে ঠিকই তবে এভাবে আর্মিদের উপর অডার করা মানাচ্ছে না বলেই সকলের ধারণা ৷ তাই যে যার মতোই দাঁড়িয়ে রইলো মিস সিক্রেটকে অবজ্ঞা করে।

এতে অবশ্য মিস সিক্রেটের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। সে মাহিরের সামনে গিয়ে হাত পাতলো ৷ মাহির কিছু বুঝতে না পেরে হাই ফাই মনে করে হাত মিলালো ৷

কিন্তু মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” আমি আমার গানটা চাচ্ছি ৷ ”

মাহির একটু ইম্বারেস ফিল করলো। তবে গানটা দিয়ে দিলো।

সুপ্তির মা রুম থেকে বের হয়ে বললেন, ” সুপ্তি কোথায়? ”

মিস সিক্রেট কাউকে কল করতে করতে বললো, ” ছাদে। ”

সুপ্তির মা : আজকে এখানেই থেকে যাও। রাত তো ভালোই হলো।

মিস সিক্রেট চলে যেতে যেতে পিছনে ঘুরে বললো, ” আমি থাকলে আবার কেউ পছন্দ নাও করতে পারে! ”
( মাহিরের দিকে তাকিয়ে )

” আমি এতটাও খারাপ নই। তাছাড়াও আমি আবার কি করলাম! ” ( মাহির মনে মনে )

ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে। তবে তার রাগান্বিত কন্ঠ শুনা গেল, ” আপনাকে আমি খুন করতে বলেছি? আপনার লোক খুন করে বসে আছে। আমি ২০ মিনিট টাইম দিয়েছি তারমধ্যে ৫ মিনিট চলে গেছে। বাকি ১৫ মিনিটে যদি এগুলো পরিষ্কার না হয় তাহলে কি হবে তার জন্য অপেক্ষা করুন। ”

ধীরে ধীরে শব্দ কমে গেল। যার অর্থ হয়তো মিস সিক্রেট চলে গেছে না হয় কল কেটে দিয়েছে।

তখনই কারো ফোন বাজার শব্দ হলো। ফোন রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো তীব্র ধমক আর কিছু আদেশ। যা কিছুক্ষণ পূর্বেই মিস সিক্রেট করেছিল তাই আবার রিপিট করা হলো। সকলেই কমান্ড অনুযায়ী কাজ শুরু করলো।

মাহির সবাইকে বলে ছাদে চলে এলো। সুপ্তিকে দেখতে পেয়েই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। সুপ্তির পাশে দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো, ” দেখি জ্বর এসেছে কিনা!”

সুপ্তি হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, ” না আসে নি। ”

মাহির : একটু আগে কি হয়েছে জানো?

সুপ্তি আনমনেই উত্তর দিলো, ” হুম।”

মাহির অবাক হলো। সুপ্তি জানার পরও নিচে গেল না! এমন মেয়ে তো সুপ্তি নয়।

মাহির : কিভাবে জানো?

সুপ্তি : মিস সিক্রেটের সাথে দেখা হয়েছিল। আর নিচে যেতে নাও করেছিল।

মাহির ” ও” বললো।

কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবারো বললো, ” পুনে দশটায় তুমি ছাদে কি করো? ”

সুপ্তি : অমাবস্যা দেখি।

মাহির : আচ্ছা। তখন যে তুমি বললে উধাও হওয়ার কাহিনি পরে বলবে! এখন কি জানতে পারি?

সুপ্তি কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলা শুরু করলো।।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_28
#Sabrina_Summa

সুপ্তি কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলা শুরু করলো, ” আপু কিভাবে মারা গেছে তা আপনাকে বাবা বলেছে? ”

মাহির : না। তবে আমি জানি। কিছু মানুষের মুখোশ খুলতে গিয়ে।

সুপ্তি : হুম। আপুর মৃত্যুর পর আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। কয়েক মাস সময় নেই তবে কোনো লাভ হয় না। মানিয়ে নিতে পারি নি এ বাড়িটাকে। কিছুদিন স্কুলে যাই তারপর স্বপরিবারে ঢাকা চলে যাই। সেখানে পড়াশোনা শুরু করি। সাথে নিজের সেইফটির জন্য ফাইটিং এর যাবতীয় সবকিছু শেখা শুরু করি।
এরজন্যই সবাই বলছিল উধাও হওয়ার কথা। মূলত কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না + হঠাৎ করে ঢাকা যাওয়া এগুলোই।।

আকাশের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে বলে গেল কথাগুলো। অতীত নিয়ে কথা বললে অধিকাংশ মানুষেরই গুছিয়ে বলার সামর্থ্য থাকে না। সুপ্তিও তাদের মাঝে একজন ৷

মাহির চুপ থেকে কথা বুঝার চেষ্টা করলো। তারপর হঠাৎই প্রশ্ন করে উঠলো, ” আচ্ছা, আমরা তো প্রায় সেইম ইয়ারের। তাহলে আমার গ্রেচুয়েশন শেষ হলো আরো দুই বছর আগে। আর তোমার এখনও শেষই হচ্ছে না! কাহিনী কি? ”

সুপ্তি শব্দ করে হেসে উঠলো। অন্য সময় হলে হয়তো সে এত প্রশ্নের উত্তর দিতো না। তবে আজ কেন যেন উত্তরগুলো দিতে ইচ্ছে করছে তার।

সুপ্তি হাসতে হাসতেই বললো, ” লজ্জা দেওয়ার জন্য প্রশ্নটা করলেন!”

মাহির এমন উত্তরে কিছুটা ভড়কে গেল।

সুপ্তি : আসলে আমি এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে পাস করে তারপর কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে। এইচএসসি টেনে টুনে পাস করি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলাম। অবশ্য পাওয়ারও কথা ছিল না। মানুষ কত কষ্ট করেই পায় না আর আমি তো চেষ্টায় করি নি। ভাবলাম দ্বিতীয়বার চেষ্টা করবো কিন্তু দ্বিতীয় বার তো পরিক্ষায় দিতে পারলাম না!

মাহির : কেন? কেন দিতে পারলে না?

সুপ্তি এতক্ষণ হাসি মুখে কথা বললেও এ প্রশ্নে ভ্রু কুচকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিকভাবে বললো, ” সবকিছু একবারে জেনে গেলে পরে জানার ইচ্ছেটা মরে যাবে। ”

মাহিরের মনে হাজারটা প্রশ্ন বাসা বাধছে। তবে করতে পারছে না ।

অন্ধকার নিরব পরিবেশ ভেঙ্গে সুপ্তি বললো, ” জানেন, আমাকেও গুম করা হয়েছিল! ”

মাহির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

সুপ্তি একধ্যানে বলা শুরু করলো, ” আপুর মৃত্যুর ঘটনাটা খুব ভাইরাল হয়। অনেক সাংবাদিক আসে আমাদের বাসায়। এত মানুষ আমার পছন্দ হচ্ছিল না। তাই পরের দিন স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও স্কুলের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
সকাল আটটা কি নয়টা। রাস্তাঘাটে মানুষ কম। তারমধ্যে আমি আমার চিরচেনা গলি দিয়ে যাওয়া শুরু করি। সেখানে কিছু বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। জীবনে প্রথম সেখানেই ইভটিজিংয়ের স্বীকার হই। অনেক কষ্টে পালিয়ে আসি সেখান থেকে।
আমার ছোট মন পর পর এত বড় বড় ধাক্কা নিতে পারছিলো না ৷ ভেঙে পড়ার পরিবর্তে কিভাবে যে কঠোর হয়ে পড়েছিলাম। ওই যে প্রবাদ আছে না, ‘ একটু শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর! ‘ আমারও ঠিক সেই অবস্থা হয়েছিল।
আপুর মৃত্যুর তৃতীয় দিন আমাকে আমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কারণ হিসেবে বলা হয় আমি নাকি আমার বোনের সাথে জড়িত।
আমার হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ খুললে দেখতে পাই অন্ধকার একটা রুম। আশেপাশে কেউ নেই। ”
এতটুকু বলেই থেমে গেল সুপ্তি।

মাহির বলে উঠলো, ” তারপর? তারপর কি হলো?”

সুপ্তি : আমার আর ভালো লাগছে না। আর বলবো না। অনেক বড় লেকচার দিয়ে ফেলছি। পরে আরেকদিন বলবো ৷

বলা শেষ করে হাঁটা শুরু করলো। মাহির হাত ধরে আটকে বললো, ” না, এখনই বলবে। ”

সুপ্তি মাহিরের দিকে ঘুরে বললো, ” বললাম না পরে বলবো! ”

মাহির : কেন এভাবে খেলছো? বলবেই না যখন তাহলে শুরু করলে কেন?

সুপ্তি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আবারও চলে যেতে নিলে মাহির একটান দিয়ে সুপ্তিকে নিজের সামনে এনে বললো, ” তোমাকে এখনই বলতে হবে। বুঝতে পেরেছো! ” ( রেগে )

সুপ্তির রাগ হলো। রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরমুহূর্তেই হেসে দিয়ে বললো, ” কেন? ”

মাহির: আমার জানা প্রয়োজন তাই!
( সুপ্তির হাসিতে ভড়কে গেলেও স্বাভাবিক হয়ে বললো )

সুপ্তি : কেন প্রয়োজন?

মাহির এবার প্রচুর রেগে গেল। যা প্রকাশ পেল রক্তবর্ণ ধারণ করা একজোড়া চোখে।

সুপ্তি মাহিরের কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আপনার কি মনে হচ্ছে আমারো আপুর মতোই…”

এতটুকু বলতেই মাহিরের কাঁপনি খেয়াল করলো সুপ্তি। এতে অবশ্য তার মজাই লাগছে। তাই আরেকটু জ্বালানোর জন্য বললো, ” ওমন কিছু হয়ে থাকলে কি, আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাবে মাহির? ”

সুপ্তির এমন প্রশ্নে মাহির রাগান্বিত কন্ঠে বললো, ” সুপ্তি শুধু একবার সত্য বলো। ”

সুপ্তি : বললে কি করবেন?

মাহির : শয়তান গুলাকে খুন করবো।

সুপ্তি হাসতে হাসতে বললো, “তার আর প্রয়োজন পড়বে না। ওই দুইটা অলরেডি উপরে আই মেইন কবরে। আর হ্যাঁ আমার সাথে ওমন কিছুই হয় নি। ”

মাহির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আজ সুপ্তির এমন ফাজলামো মাহিরের একদম সহ্য হচ্ছে না।

মাহির : সেখান থেকে ফিরলে কি করে?

মাহিরের এমন সোজাসাপটা প্রশ্নে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আপুর মতো করেই খুন করার জন্য। ( “কিন্তু ভাগ্যের পরিক্রমায় ওরাই খুন হলো! ” মনে মনে।)
কিছুক্ষণের মাঝেই বিষয়টা আমি বুঝতে পারি।
আমকর হাতে অলঅয়েস স্মার্ট ওয়াচ থাকে। সেই ওয়াচ দিয়েই ইনফর্ম করি মিস সিক্রেটের টিমকে। তখন অবশ্য মিস সিক্রেট তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি ।
আমার ওয়াচে থাকা সিম ট্র্যাক করে উদ্ধার করে মিস সিক্রেটের টিম।
এই তিনটে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আমাদের ঢাকা চলে যাওয়া।

” এখন বুঝলাম মিস সিক্রেটের সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে! আমি শুধু শুধুই উল্টা পাল্টা ভাবছিলাম। ”

সুপ্তি : রাত তো ভালোই হলো এখন কী আমরা নিচে যেতে পারি?

সুপ্তির প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মাহির ৷ হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে হাঁটা শুরু করলো। সাথে সুপ্তিও।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-২৫+২৬

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_25+26
#Sabrina_Summa

মাহির ও সুপ্তি পাশাপাশি দুইটি চেয়ারে বসলো।

অনুষ্ঠান অনেক আগেই শুরু হয়েছে। সবাই তাদের পার্সোনাল লাইফ, প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে স্টেজে গিয়ে মাইকে বলছে। মাহিরকেও ডাকা হলো কিছু বলার জন্য।

মাহিরের বলা শেষ হলেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ডাকা হলো সুপ্তিকে। যা আশা করে নি সুপ্তি। মাইকে কথা বলতে তার একদমই ভালো লাগে না। কিন্তু প্রধানশিক্ষক ডাকছে তাই তাকে যেতে হলো। প্রধানশিক্ষক তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিলো মাহিরকে এখানে আনার জন্য।

প্রধানশিক্ষক হাত মিলাতে চাইলে সুপ্তি ‘ধন্যবাদ’ বলে মুচকি হাসলো। যার অর্থ সে হাত মিলাবে না। মাইকের কাছে গেলো।

“এমনিতে তো আমাকে এই স্কুলে কেউ পাত্তাই দিতো না যখন আমি পড়তাম। আর এখন দেখো কত ডং!” ( মনে মনে )

সুপ্তির কথা বলার স্টাইল দেখে মাহির ভাবতে লাগলো।
” মিস সিক্রেটের সাথে সুপ্তির অনেক মিল। কথা বলার ধরণ, হাত না মিলানো, একই ট্রমা, একই রং, একই ব্যবহার…..”
ভাবনার দুনিয়া থেকে বের হয়ে মাহির নিজের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো, কী আজাইরা জিনিস ভাবছিস। মিল যেমন আছে তেমন অমিলও আছে।
একজন কালো সহ্যই করতে পারে না আরেকজন কালো ছাড়া কিছু বুঝেই না।
একজনের গলার স্বর গম্ভীর আরেকজনের স্বাভাবিক।
তবে যাইহোক, সুপ্তি মিস সিক্রেট না হলেও ওর টিম মেম্বার তো হতেও পারে! ”

নিজের সাথেই কথা বলছিল মাহির। তবে হাত তালির শব্দে ধ্যান ভাঙলো তার। সুপ্তি পাশে এসে বসতেই বললো, ” মাইকে কথা বলার অভ্যাস করো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ”

” আমার অভ্যাস আছে তাও আবার আপনার থেকে বেশি। ” মনে মনে বললেও মুখে কিছু বললো না।

অনেকক্ষণ অনুষ্ঠান চললো। তারপর গ্রুপ ফটোশুট করা হলো।

বিকেলের দিকে সবাই ট্রুথ ডেয়ার খেললো। এরপর নাচগান হলো। সুপ্তি আজ মন খুলে সব কাজ করছে। সুপ্তি যে নাচতেও পারে তা মাহিরের জানা ছিল না।
সে তো অবাক হয়ে বলেই ফেলেছিল, ” তুমি নাচতেও পারো! ”

সুপ্তি : শুধু নাচতে না নাচাতেও পারি।

মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝছি। তুমি ডিম ব্যতিত সবই পারো, আমার জিজ্ঞেস করাটাই ভুল। ”

রাত ৮ টার দিকে মাহির ও সুপ্তি রওনা দিলো সুপ্তির বাসার উদ্দেশ্যে । বাকি সবাই আরো রাত পর্যন্ত আড্ডা দিবে।
তাই সুপ্তি, মাহির চলে এসেছে। যদিও মাহির গেস্ট হাউসে থাকার বন্দবস্ত করে এসেছিল কিন্তু সুপ্তির একটা কথা মাহিরের মন ছুঁয়ে গেছে। সে বলেছিল, ” গেস্ট হাউস তো গেস্টদের জন্য। আপনি তো গেস্ট নন আমার পরিচিত মানুষ! ”
এতেই গলে গিয়ে বাধ্য হয়ে সুপ্তির সাথে সুপ্তির বাসায় যাচ্ছে সে।।

বাসায়.,.

সুপ্তির কলিং বেল বাজানোর এক সেকেন্ডের মাঝেই শাহানাজ পারভীন দরজা খুলে দিলো সুপ্তি বলে উঠলো, “আম্মু। ”

শাহানাজ পারভীন একটু হাসলেন। মেয়ের আশেপাশে চোখ পড়তেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
মেয়ের পাশের ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললো, ” তুমি তাশরিফ না? ”

মাহির : জ্বী আন্টি।
বলেই সালাম দিলো।

শাহানাজ পারভীন সালামের উত্তর দিয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার মেয়ের এত বড় বড় মানুষের সাথে উঠা-বসা তা তিনি জানতেন না।

সুপ্তি : আম্মু, তুমি এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা ভিতরে ঢুকবো কিভাবে?

মেয়ের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে শাহানাজ পারভীনের। সাথে সাথেই দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন।

সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। সুপ্তির বাবাও রুম থেকে বের হয়ে শাহানাজ পারভীনের মতোই অবাক হলেন। তবে তা প্রকাশ করলেন না।

শাহানাজ পারভীন সুপ্তির কাছে এসে বললো, ” তাশরিফ আসবে আগে বলবি না। কি খেতে দিবো। রুমও গোছানো হয় নি।” ( চিন্তিত স্বরে )

শাহানাজ পারভীন আস্তে বললেও সুপ্তি উচ্চ স্বরে জবাব দিলো, ” আম্মু, মাহির কোনো স্প্রেশাল গেস্ট টেস্ট না। তাই আমরা যা খাবো তাই খেতে দিবা। আর রুম গোছাও এখন। মাহির মাইন্ড করবে না। ”

সুপ্তির কথায় শাহানাজ পারভীন কিছুটা লজ্জা পেলেন।

মাহির হেসে বললো, ” আস্টি এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই ৷ এখন আপনারা যদি আমাকে নরমাল মানুষের মতো ট্রিট না করেন তাহলে কিন্তু আমি আর কখনো আসবো না। ”

শাহানাজ পারভীন হেসে রান্না ঘরে চলে গেলেন।

মাহির নিজের পরিবারের মানুষের মতো করেই কথা বলছে সুপ্তির বাবার সাথে।
সুপ্তির বাবাও এতক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে গেছে ।

সুপ্তি বসে বসে মাহির ও তার বাবার গল্প শুনছে। মাঝেমধ্যে নিজের মাকে হেল্প করতে যাচ্ছে ।
এই তো এখনো গেছে। তবে যথা সাধ্য মাহির ও তার বাবার কাছেই থাকার চেষ্টা করছে সে। হয়তো এই ভয়ে যে তার বাবা বা মাহির ভুল কোনো তথ্য মুখ ফসকে বলে না ফেলে।!

মাহির বিষয়টা খুব ভালো করেই খেয়াল করেছে তবে সেভাবে ভাবে নি।

সুপ্তি আবারও এসে বসলো।
মাহির এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা ফ্যামিলি ছবি দেখলো।

ছবিটার সামনে গিয়ে বললো, ” এইটা সুমি আপু না? আপু আপনাদের কি হয়? ”

প্রশ্নটা শুনেই সুপ্তি রুমে চলে গেল।

সুপ্তির বাবা বললেন, ” আমাদের প্রথম মেয়ে। ”

মাহির চোখ বড় বড় করে বললো, ” আমরা প্রতিবছরই যাই আপুর কবরে ফুল দিতে! ”

সুপ্তির বাবা মৃদু হেসে বললেন, ” হ্যাঁ জানি। ”

মাহির : সুপ্তি ওভাবে চলে গেলো কেন?

সুপ্তির বাবা আবারও মৃদু হেসে বললেন, ” সুপ্তি ওমনই। সুমির কথা উঠলেই এড়িয়ে যেতে চাই।
আসলে খুব ভালোবাসতো এর জন্য! ”

সুপ্তির বাবাকে ইমোশনাল হতে দেখে মাহির টপিক চেঞ্জ করে ফেললো।

কিছুক্ষণ পরই সবার ডাইনিং রুমে ডাক পড়লো।
সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো।

মাহির ও তানিশা বসতে গিয়েই খুব অবাক হলো এত পদ দেখে।

তারমধ্যে আবার সুপ্তির মা বললেন, ” তোমাদের হইতো খেতে অসুবিধা হবে তাও কষ্ট করে খেয়ে নেও। আসলে সুপ্তি আগে কিছু বলে নি তো তাই বেশি পদ করতে পারি নি। ”

মাহির শুকনো ঢোক গিলে বললো, ” ভাগ্যিস সুপ্তি কিছু বলে নি। না হলে তো আস্তো বিয়ে বাড়ির আয়োজন হয়ে যেতো। ”

মাহিরের কথা শুনে সবাই একটু হাসলেন। এরপর সবাই খেতে বসলো। সুপ্তির মাও সবার প্লেটে খাবার দিলেন।

সুপ্তির প্লেটে সবকিছু না দিতে দেখে মাহির প্রশ্ন করেই ফেললো, ” আন্টি, সুপ্তি কি এগুলো খাই না? ”

সুপ্তির মা হেসে বললেন, ” না, আসলে এলার্জি আছে তো তাই। ”

মাহির ‘ও’ বললো।
মাহিরের মনে পড়লো, ” মিস সিক্রেটও যখন মাঝেমধ্যে থাকতো তখন ইরফান বেছে বেছে মিস সিক্রেটের জন্য খাবার নিয়ে যেতো। ”

#চলবে.,.

(edited)

Dark Mystery পর্ব-২৩+২৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_23
#Sabrina_Summa

চিন্তায় ডুবে আছে মাহির। সময়ের গতিতে সময় যাচ্ছে তবে তার চিন্তা শেষ হচ্ছে না। সারাদিন তার চিন্তায়ই গেলো। শেষে আর না পেরে মিস সিক্রেটকে কল করলো।

মিস সিক্রেট কল রিসিভ করে বললো, ” এতদিন পর আমায় মনে পড়লো! ”

মাহির সে কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো, ” সুপ্তির মিনি ডাইরিটা কোথায়? ”

মিস সিক্রেট : যার ডাইরি তার কাছেই।

মাহির : কেন দিলে? আমাকে দেওয়ার কথা ছিল! এরজন্যই কারো উপকার করতে নেই।
( এক নিশ্বাসে, কিছুটা রেগে )

মিস সিক্রেট : অন্য কিছু কি বলবে নাকি কল কেটে দিবো?

মাহির : না না। একটা হেল্প করবে প্লিজ… ( টেনে )

মিস সিক্রেট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, ” বলে ফেলো। ”

মাহির : আমি ঘাটাইল যাবো….

বাকি কিছু বলার আগেই মিস সিক্রেট বললো, ” সুপ্তির জন্য নিশ্চয়ই ! ভালো একটা উপদেশ দিচ্ছি ওর পিছ ছেড়ে দাও না হয় পরে তোমাকে পস্তাতে হবে। ”

মাহিরের কথাটা পছন্দ হলো না। পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। একতো সে সুপ্তিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
আর দ্বিতীয়তো কেউই ফ্রী ফ্রী উপদেশ পাওয়া বা নেওয়া পছন্দ করে না।

তাই মাহির মিস সিক্রেটের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, ” বাবাকে একটু রাজি করাও না। প্লিজ। ”

মিস সিক্রেট জানতো হয়তো মাহির এমন কিছুই বলবে। কারণ এমনিতেই মাহির তার কথা শুনে না। আর এ বিষয়ে তো প্রশ্নই ওঠে না। তবুও কেন যেন আজ মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।

মিস সিক্রেট : ওকে, একটু পর আঙ্কেলের কাছে যাও।

ঝড়ের গতিতে বলেই কল কেটে দিলো। যাতে বিরক্ত হলো মাহির ৷
বিরক্তিতে বলে উঠলো, ” ধূর। কি অদ্ভুত মানুষ রে বাবা। কতদিন থাকবো সেটাও বলতে দিলো না। ”

মাহির কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে সাহস যুগিয়ে মাহফুজ চৌধুরীর রুমের সামনে গিয়ে বললো, ” বাবা, আসবো? ”

মাহফুজ চৌধুরী : চলে এসো।

মাহির ভিতরে প্রবেশ করতেই বললো, “বসো।”

মাহির বসে বললো, ” বাবা, আমার একটু ঘাটাইল যেতে হবে। ”

মাহফুজ চৌধুরী : কবে যাচ্ছো?

মাহির : কালকে।

মাহফুজ চৌধুরী : সেখানকার বর্তমান ইউনো আমার ক্লাসমেট ছিল। দেখা করে এসো।

মাহির : আচ্ছা বাবা।

মাহির মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, ” তোমার এত ডং না করলেই চলবে আমি জানি বাবা, তুমি কেন এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়েছো। ”

মাহফুজ চৌধুরীও মনে মনে বললো, ” শুধু মিস সিক্রেট বলে ছিলো বলে যেতে পারছো। ”

দুইজনের মনে মনে কথা শেষ হলে মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললো, ” যাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল সকালই তো রওনা দিবে! ”

মাহির : হ্যাঁ বাবা।

বলেই রুম থেকে বের হতে হতে বিড়বিড় করে বললো, ” কত ভালো ব্যবহার! ” ( তিরস্কার করে )

খুব সকালেই রওনা দিলো মাহির। গন্তব্য তার ঘাটাইল নয়, গন্তব্য তার প্রিয়তমার বাড়ি।
এ বিষয়ে সুপ্তিকে কিছু বলে নি সে, সরাসরি সারপ্রাইজ দিতে চাই। তবে তার প্রিয়তমা তো সেই কবেই জেনে গেছে।

জেমে পড়তে হয় নি তার। তবুও পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। পৌঁছে সুপ্তিকে কল করলো।
সুপ্তি এসে মাহিরকে তার পুরোনো স্কুলে নিয়ে গেল। কারণ রিইউনিয়ন পার্টি তো সেখানেই। একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে ৷

স্কুলের সামনে যেতেই প্রধানশিক্ষক এসে মাহিরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়ে গেল। হয়তো সুপ্তি বলেছিল মাহির আসছে!
রিইউনিয়ন পার্টিটা ছোট করার কথা থাকলেও তা এখন বড় করেই করা হচ্ছে।

একটা ক্লাস রুমে বসে আছে সবাই। সেখানে মাহির ও সুপ্তি প্রবেশ করতেই সুপ্তিকে দেখে সবাই বলে উঠলো, ” তুই হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছিলি আপুর মৃত্যুর পর? ”

এমন প্রশ্ন যে আসবে তা সুপ্তির জানায় ছিল তবুও মন খারাপ হলো শেষের কথাটুকু শুনে। সুপ্তি উত্তর দিলো না। একজন কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, ” কেমন আছো, সুপ্তি? ”

সামনের মানুষটিকে দেখে অনেক কষ্টে মুচকি হাসি দিলো। কখন না আবার গন্ডগোল বাধিয়ে দেয় এই ভয়েই আছে সে। তবে উত্তর তো দিতেই হবে তাই বললো, ” এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি? ”

অন্যদিকে মাহিরকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মাহিরের নজর তো সুপ্তির দিকেই। তার এসব সহ্য হচ্ছে না।

— ” আছি মোটামুটি। ”

সুপ্তি : মোটামুটি কেন?

— ” ভালো আর থাকতে দিলে কই! ১০ বছর আগে হঠাৎ ব্রেকাপ করে উধাও হয়ে গেলে। এতটাই কি অযোগ্য ছিলাম আমি! ”

সুপ্তি বুঝতে পারলো সে ভুল পয়েন্টে হাত দিয়ে ফেলেছে। যেহেতু ভুল করেই ফেলেছে সেহেতু আরেকটু বাজানো যাক। এই ভেবেই বললো, ” হঠাৎ এসব কথা বলছো কেন। ”

উত্তর দেওয়ার পূর্বেই মাহির এসে হাজির। তাও আবার প্রশ্ন নিয়ে, ” ও কে সুপ্তি?” ( লোকটিকে দেখিয়ে )

সুপ্তি : সোহম, আমার ফ্রেন্ড।

সোহম : আপনি এখন একটু যান। আমার সুপ্তির সাথে কথা আছে। ( মাহিরকে উদ্দেশ্য করে )

মাহির : ও হ্যালো। শি ইজ মাইন। মেইনটেইন ডিস্টেন, ওকে?

সোহম : তোমার বয়ফ্রেন্ড? ( সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে )

সুপ্তির বলার আগেই মাহির বললো, ” নো। উড বি হাসবেন্ড। ”

সোহম কিছু বলতে নিচ্ছিলো। কিন্তু সোহমকে বলার সুযোগ না দিয়ে মাহির সুপ্তিকে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো।।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_24
#Sabrina_Summa

কিন্তু সোহমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহির সুপ্তিকে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো।

সুপ্তি : থ্যাংকস, পার্ফেক্ট টাইমে আসার জন্য। বাট আপনি একটু বেশিই বলে ফেলেছেন।

মাহির কিছুটা রেগে গেছে সোহমের ব্যাপারটা নিয়ে। তবুও শান্তভাবে প্রশ্ন করলো, ” ছেলেটা কে? কোনো নরমাল ফ্রেন্ড তো মনে হচ্ছে না! ”

সুপ্তি : আমার ওয়ান এ্যান্ড অনলি এক্স।

মাহির : তোমার এক্স? ( রেগে )

সুপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখাতে যাবে তার আগেই সুপ্তির ডাক পড়লো। তাই সুপ্তি চলে গেলো।

এরপর আর সুযোগ হয়ে উঠলো না কথা বলার। শপিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
মূলত শাড়ির সাথে মেচিং করে জুয়েলারি কিনবে।
একরকম শাড়ি, ব্লাউজ, পাঞ্জাবি – পায়জামা আগেই অর্ডার করা ছিল। যা আজকেই রিসিভ করেছে।

মাহিরের রাগ কিছুটা হলেও কমলো প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে পাঞ্জাবি পায়জামা পেয়ে ৷

ছেলেরা অফ হোয়াইট কালারের মাঝে গোল্ডেন কারুকার্যের পাঞ্জাবি পড়েছে । সাথে মেচিং সুজ, ওয়াচ এ্যান্ড সানগ্লাস।
মাহির মোটামুটি এক ঘন্টা ধরে মেয়েদের সাজার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা+পাহাড়া দিচ্ছে। তবে এত প্রতীক্ষা যার জন্য সেই আসছে না।

সুপ্তি গোল্ডেন পাড়ের লাল শাড়ি পড়ে বের হলো।
বাঙালি স্টাইলে পড়া। চুল খোলা তবে পিছনে লাল গোলাপ ফুল দেওয়া। হাতে লাল রেশমি চুড়ি। চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। সাথে কিছু জুয়েলারি তো আছেই। এতেই সুন্দর লাগছে তাকে।
সত্য বলতে ফর্সা মানুষের কম সাজলেও হয় তার প্রমাণ সুপ্তি।।

সুপ্তি মাহিরকে দেখে অবাক হলো। বললো, ” দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ”

মাহির সুপ্তির দিকে না তাকিয়েই বলা শুরু করলো, ” এতক্ষণ লাগে কারো সা…”
সুপ্তির দিকে তাকাতেই কথা বন্ধ হয়ে গেল। শুধু বললো, ” মাশাল্লাহ। ”

এরপর নিজেকে সংযত করে বললো, ” এত সেজেছো কেন? ”

সুপ্তি : কেন খারাপ লাগছে? জানেন, আমি প্রায় ১০ বছর পর সাজলাম।

” এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাই ওকে এতই সুন্দর লাগছে যে কেউ ক্রাশ খাবে! “( মনে মনে )

সুপ্তি : এক মিনিট। আপনি আমাকে এতটুকুতেই এত সাজ বলছেন! আগে তো আমি বউ সাজতাম। সে তুলনায় এটা তো কিছুই না।

মাহির : কার বউ সাজতে?

সুপ্তি : আমার ফিউচার হাসবেন্ডের।

মাহির : ও আচ্ছা, আমার জন্য সাজতে।

সুপ্তির রিয়েকশন দেখে মাহির কথা ঘুরানোর জন্য বললো, ” চলো ওই দিকে যাই। ”

সুপ্তি দ্বিমত করলো না। হাঁটা শুরু করলো।

মাহির হাঁটতে হাঁটতে বললো, ” আমাদের বিয়েতে তোমাকে শাড়ি পড়তে দিবো না। ”

সুপ্তি : আমাদের বিয়ে মানে! আপনাকে কে বিয়ে করবে? আর সেকেন্ড কথা আমি এমনিতেও শাড়ি পড়বো না কারণ এটা সামলানো অনেক কঠিন।

কথা শেষ করতেই তার মাথায় আরেকটা প্রশ্ন আসলো তাই বললো,” যাইহোক, এইটা কথা বলুন শাড়ি পড়লে কি হবে? ”

মাহিরের ঝটপট উত্তর, ” সবাই তোমাকেই দেখবে। আমাকে কেউ পাত্তাও দিবে না। ”

সুপ্তি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর বললো, ” হাইরে প্লে বয় রে! মানুষ পাত্তা পাওয়ার জন্য কত কিই করে।
আপনার সাথে একটা গানের দুই লাইন পার্ফেক্টলি যায়। ”

মাহির : কোন গান? একটু সুর দিয়ে বলো তো।

সুপ্তি : কারো একদিন হবো, কারো এক রাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না।

মাহিরের তো গান শুনে মাথায় হাত।
” তুমি আমায় এমন ভাবো? ”

সুপ্তি : এখন ভাবি না।

মাহির : তাহলে আগে ভাবতা?

সুপ্তি : আরে বাদ দেন তো। এই গান এখন উপন্যাসে খুব ভাইরাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেই এসব গান তাই বললাম।

মাহির : তুমি সোশ্যাল মিডিয়াও চালাও।

সুপ্তি : একদম ডং করবেন না। আপনার জন্যই তো। কখন কোথায় মেনশন দিয়ে দিবেন আর সুশমিতা আমাকে জ্বালাইয়া মারবে।

মাহির হাসলো। এ বিষয়ে কথা বাড়ালে যদি সুপ্তি রেগে যায় তাই কথা ঘুরিয়ে বললো, ” আচ্ছা, তুমি নাকি উধাও হয়ে গেছিলে? ”

সুপ্তি : হুম। পরে বলবো নি সম্পূর্ণ কাহিনি। এখন মুড নেই।

মাহির জোর করলো না। যেহেতু সুপ্তি বলেছে পরে বলবে তার মানে পরেই বলবে ৷ নিরবতা চললো কিছুক্ষণ। এতক্ষণে সম্পূর্ণ স্কুল মাঠে পাঁচ বার রাউন্ড দেওয়া শেষ।।

নিরবতা ভেঙে মাহিরই বললো, ” একটা কাজ করবে! একদম বলবে না তোমার মুড নেই। ”

সুপ্তি : কি কাজ? ( সিরিয়াস হয়ে )
‘কাজ’ শব্দটা শুনলেই কেমন যেন সিরিয়াস ভাব চলে আসে তার মাঝে।

মাহির : আমার সাথে একটু ফ্লাটিং করো তো।

সুপ্তির এক্সপ্রেশন দেখে মাহির দ্রুত বলে উঠলো, ” প্লিজ, প্লিজ, প্লি…”

বলার পূর্বেই সুপ্তি বললো, ” ওকে। ”

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর কিছুক্ষণ হাসলো। তারপর বললো, ” যাই হয়ে যাক। আপনি হাসবেন না কিন্তু! ওকে?”

মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো ৷

সুপ্তি ফিল নিয়ে বলার জন্য মাহিরের চোখের দিকে তাকালো। তারপর বললো, ” জানেমান। ”

মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” আজ আমি শেষ!”

সুপ্তি : আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড হতে চাই না। আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হতে চাই। আপনার বাঁ পাঁজরের হাড়ের অস্তিত্ব হতে চাই! সেই সুযোগটা কি আমাকে দিবেন!

মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি নিজের ইমোশন আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। জোরে হাসা শুরু করলো। সেই অবস্থাতেই মাহির সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো। সুপ্তি তাও হাসতেই রইলো। অনেকদিন পর মন খুলে হাসছে সে ৷

কিছুক্ষণ পর মাহিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” ‘বাঁ পাঁজরের হাড় ‘ কথাটা ইন্টারেস্টিং করার জন্য বললাম। ডোন্ট মাইন্ড। ”

মাহির : তুমি যে কারণেই বলে থাকো না কেন! আমি তোমার প্রেমে আবারো পড়ে গেছি ।

সুপ্তির কেন যেন রাগ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কিছু না শোনার ভান করে বললো, ” চলুন স্টেজের দিকে যায়। ”

দুইজন স্টেজের একদম সামনের দিকটাই বসলো।।

#চলবে.,.