Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 281



হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-১৩+১৪

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৩|
#শার্লিন_হাসান

‘কোন আর্জেন্ট আছে ম্যাম?’

‘স্যার শোনলাম সেরিন পাটওয়ারী টিসি নিয়ে চলে যাবে। হয়ত আপনার কাছে আসবে দু একের ভেতর। আমি আগেই খবর পেলাম।’

‘খবর পেয়েছেন। আর ও টিসি নিবে না ওর ফ্যামিলি দিবে না।’

‘সত্যি স্যার। দেখবেন ও আসবে ওর বাবাকে নিয়ে।’

কথাটা বলে লিয়ানা চলে আসে। শুভ্র পাত্তা দিলো না এটাতেই গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার। শুভ্র কার কথাটাই বা পাত্তা দেয়? সে নিজেই নিজের মতে সব করে। কারোর মতের দাম নেই তার কাছে। লিয়ানা ম্যাম যেতে শুভ্র সটান হয়ে বসে পড়ে। আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করছে। সেরিন যাবে না। প্রয়োজনে ব্লাকমেইল করে ওকে রেখে দিবে শুভ্র।

গাছে পাতা নড়ছে। ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে ছাঁদে। শেষ বিকেলের উন্মুক্ত বাতাস চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিচ্ছে সেরিন। আগামী কালকে তার বাবা সহ যাবে টিসি আনতে। শুভ্রর কলেজ সালাম দিয়ে যাবে সেরিন। কয়েকটা মাসে পুরো তেজপাত করে দিলো জীবনটা। এতো,এতো রুলস! পিটি করো। তারউপর এক গাদা পড়া। এসাইনমেন্ট, ক্লাসটেস্ট, প্রাইভেট। তারউপর তার ফুফি এসেছে সকালের দিকে। এসে শুনেছে শশীকে আগামী কালকে দেখতে আসবে। এখন নিশ্চয়ই ভেজালটা সেরিনের উপরই আসবে।

শশী তখন হাসি মুখে ছাঁদে আসে। সেরিন তার দিকে তাকিয়ে বুঝে খুশির কোন খবর আছে। অথবা আজা ইরা কোন নিউজ আছে। সেরিন মেলি হাসি টেনে শুধায়,
‘তোর নেতা চলে আসলো নাকী বিয়ে করতে?’

‘আরে না। আগামী কালকে ওর পরিবার থেকে লোক পাঠাবে আসার জন্য। ভেরি সুন ‘আমরা’ হয়ে যাবো।’

‘কংগ্রেস।’

‘কংগ্রাচুলেশনস বানান জানোস না? সংক্ষিপ্ত করে বলোস কেন?’

‘কংগ্রাচুলেশনস ছাতার মাথা।’

‘ধন্যবাদ। কালকে কলেজ যেতে হবে না তোর। তোর শুভ্র স্যার ও আসবে।’

‘কালকে টিসি আনতে যাবো।’

‘আরে যাওয়া লাগবে না। একবারে বিয়ে করে জামাইয়ের বাড়ী চলে যা। তাহলে টিসি লাগবে না এমনিতে আদর সোহাগ পাবি।’

‘তোর বা’ল।’

সেরিন প্রস্থান করতে শশী হেঁসে দেয়। সেরিনকে আজকাল আনমনা আর চিন্তিত লাগে শশীর কাছে। ও এমনই! আজা ইরা কাজকর্ম করে বাঁশ খাওয়ার ভয়ে থাকে। কে জানে আবার কাকে উল্টাপাল্টা গা’লাগা’লি করেছে।

ত্রস্ত পায়ে ছাঁদ ছেড়ে ভেতরে যায় শশী। তার আম্মু আর
বড় আম্মু কাজে ব্যস্ত। তার বাবা আর মাহি বাজারে গেছে। হুটহাট কথা হয়। শশী বুঝেছে তার বিয়ের ফুল ফুটে গেছে। একটু লজ্জালজ্জা ভাব নিয়ে পুনরায় সেরিনের কাছে গেলো। সেরিনকে দেখে বলে,

‘বনু আমার বিয়ের ফুল ফুটে গেছে।’

‘তোহ? আমার মতো সিঙ্গেলকে এসব বলে না ক্ষেপালে হয়না? আমার প্রেমই হয়না আবার বিয়ের ফুল! দেখ কোথায় আনাচে কানাচে ফুলটা ফুটেছে আর কোন গরু খেয়ে ফেলেছে কে জানে?’

সেরিনের কথায় শশী তাকিয়ে রয় তার দিকে। সেরিনের সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো পুনরায় ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। শশীর তো এক্সাইটমেন্টের শেষ নেই। আগামী দিনটা তার জন্য স্পেশাল। ভীষণ স্পেশাল। কখন রাত পেড়িয়ে ভোর হবে সেই অপেক্ষা। পড়াশোনার দিকে মন নেই শশীর। শুধু আর্থ আর আর্থ এবং আর্থ তার চোখে,মনে।

*****

আর্থ লিভিং রুমে সোফায় বসে আছে। শুভ্রর হাতে ধোঁয়া উঠা গরম কফি। সে চুমুক দিচ্ছে আর বাকীদের কথা কর্ণপাত করছে। তার বাবা আর আর্থর বাবা বসে আছে সামনের সোফায়। যেহেতু আর্থর বিয়ে সামনে সেহেতু সবাই এক,এক করে বাড়ী আসছে। আর্থর বোন আর আয়মান চৌধুরীর মেয়ে তারা বিয়ের ডেট ফিক্সড হলে আসবে।

শুভ্রর মা জান্নাতুল ফেরদৌস আর সুলতানা খানম ও আছে তাঁদের সাথে। কথার শুরুতে আরাফ চৌধুরী বলেন,
‘শুভ্র তোমার পছন্দ থাকলে বলো। আর্থ আর তোমার বিয়েটা একসাথেই দেবো আমরা।’

শুভ্র আর্থকে চোখ দিয়ে ইশারা করছে বলার জন্য। আর্থ ইশারা বুঝেও না বুঝার মতো থাকে। বত্রিশ পাটি বের করে বলে,
‘ভাইয়ার নেই কেউ নেই। তোমরা অন্য জায়গায় মেয়ে দেখ…..

কথাটা শেষ করার আগে পিঠে দুটো পড়ে যায়। শুভ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আর্থর দিকে। আর্থ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আগে বলো আমাদেরকে হানিমুনে মালদ্বীপ যাওয়ার খরচ তুমি দিবা।’

‘বসে,বসে মুড়ি খাও নেতা। শা’লা মিসকিন বিয়ে করবি তুই হানিমুন করবি আমার টাকায়। সেই স্বপ্ন আর কনফিডেন্স নিয়ে বিয়ে করছিস?’

‘কিপ্টা দেখেছি তোর মতো একটাও দেখিনি ভাইয়া। আসলেই টিচাররা কিপ্টা হয়ে যায়।’

আর্থ শুভ্রর কথোপকথন সবাই এক দৃষ্টিতে দেখে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,
‘প্রেম করছো ভালো কথা বলে দিলেই তো হয়। একে,ওকে চোখ দিয়ে ইশারা করা মারামারি করা বিষয়টা দৃষ্টি কটূক দেখায়।’

জান্নাতুল ফেরদৌসের কথায় আর্থর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তখন শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী শুভ বলেন,
‘তোমাকে এতো কথা বলতে বলিনি। এখানে আমরা বড়রা আছি। কোন দরকার হলে তোমায় ডেকে নেবো এখন আসতে পারো।’

আরফিন চৌধুরীর কথায় জান্নাতুল ফেরদৌস রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। গটগট করে চলে যান সেখান থেকে। তখন আর্থ বলে,

‘ওনার সব কিছুতেই সমস্যা। আমরা ভাইয়েরা ভাইয়েরা মজা করবো,মারামারি করবো আমাদের ব্যপার ওনার এতো এলার্জি কেন? সবসময় এমন করে! কথা না পেলেও বাম হাত ঢুকিয়ে এটেশন পেতে চায়। আগে বলে রাখি বিয়েতে ওনার কোন ধরনের নাটক আমি দেখতে পারবো না। উনি মনে হয় ভুলে গেছে আমাদের ফ্যামিলি স্ট্যটাস। অবশ্য যার যা পরিচয় সেটাই সবসময় বহন করার চেষ্টা করে।

থেমে,

শুভ্র ভাইয়ার প্রেম নেই তবে পছন্দ আছে। মেয়েটা শশীর ছেট বোন সেরিন ওর কলেজেরই স্টুডেন্ট। বিষয়টা দৃষ্টি কটূক দেখায় বাট ওদের বিয়েটা আমি চাই গোপনে হোক পাবলিক করার দরকার নেই।’

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘পাবলিক করলেই কী? আমাদের বাড়ীর বউ আমাদের বাড়ীতে থাকবে। এখান থেকে কলেজ যাবে সে তো লোকের নজরে আসবেই। আর সেরিন এই কলেজে না আসলেও তো ভাগ্যক্রেমে শুভ্রর বউই হতো তাই না?’

‘ঠিক আছে তাহলে আগামী কালকে পাটওয়ারী পরিবারে তাঁদের দুই মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আই হোপ তারা রাজী হবে।’

শুভ্রর বাবা কথাটা বলেন। শুভ্র আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ায়নি সেখানে। চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। আর্থ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। আর কেউ কিছু বলেনি। কাজের বুয়া রাতের ডিনার রেডি করতে সবাই এক জোটে টেবিলে আসে। তাদের মাঝে শুভ্রও ছিলো। তবে সে একটা কথাও বলেনি। শুভ্র ছোট বেলা থেকেই এমন গম্ভীর হয়ে থাকে। তবে তেজ কোন অংশ কম নেই।

শুভ্র ডিনার শেষ করে রুমে এসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। মেসেজটা ঠিক এরকম,

‘হেই বাবুর আব্বু।’

বাবুর আম্মু সত্যি হারিয়ে যাচ্ছে। আপনার মন থেকে এমনকি দৃষ্টি থেকে। এই দূরত্ব দূর থেকে বহুদূরের সৃষ্টি হচ্ছে। আমি চলে যাচ্ছি তো! যত্নে রেখে দিননা আমায় আপনার হৃদয় সায়রে। প্রণয়ের ছন্দ এঁকে অদৃশ্য বন্ধনে আঁকড়ে রাখবো।’

ইতি
বাবুর আম্মু

শুভ্র মেসেজটা পড়ে। নিজের রিপ্লাই দেয়,
‘আড়ালে থাকলে কীভাবে আটকাবো আমি? আপনি আমায় দেখা দিন, ধরা দিন তাহলে নাহয় ভেবে দেখবো বাবুর আম্মু বানানো যায় কীনা।’

শুভ্রর এমন মন্তব্য দেখে অপরপাশের ব্যক্তির চোখ ছলছল করে উঠে। নিজেকে চিমটি কাটে। সত্যি এটা শুভ্রর দেওয়া মেসেজ তো? পুনরায় রিপ্লাই করে,

‘সত্যি আসবো? আমায় কিন্তু আপনি দেখেন বাট চেনেন না।’

‘জ্বী আসুন! এই ভূতটাকে আমিও দেখতে চাই। যে আমায় জ্বালিয়ে যাচ্ছে।’

শুভ্র ফোন রেখে পুনরায় কাজে মনোযোগ দেয়। একদিকে বাবুর আম্মু অন্যদিকে শুভ্রর পার্সোনাল গায়িকা। কী করবে,কী ধরবে,কী ছাড়বে এখন আর মাথায় কুলচ্ছে না। শুভ্র ভেবে পায়না কীভাবে সে সামান্য বিষয় নিয়ে এতোটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে? এই একমাত্র সেরিন মেয়েটা তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। এর কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু কী শাস্তি? সে তো ধরে রাখতে চায় তবুও পালিয়ে যাচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে,যাচ্ছে টাইপ। আদৌ সেরিনকে বিয়ে দিবে তো তার সাথে? শুভ্রর মনে ‘না’ শব্দটাই বারবার তোলপাড় করছে। মাঝেমধ্যে ঘেমে ও যাচ্ছে শুভ্র।

চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নেয়। মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন এসে ভীড় জমায়। তার মধ্যে একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে,
‘সেরিনকে পাওয়ার জন্য এতো আগ্রহ কেন? ওর থেকে বেটার কাউকে তো আমি ডিজার্ভ করি। ও হয়ত আমার থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। আমার অনুযায়ী সে তো অনেক বাচ্চা। এ-ই বাচ্চা বিয়ে করে কী হবে? না হবে বাচ্চার মা! উল্টো এই বাচ্চাকে হয়ত খেলনা দিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে।’

কিন্তু সে তো আর্থর মাধ্যমে সবাইকে জানালো। যাই হোক আর্থকে সে বলেছে বিয়ের কথা উঠলে যাতে সেরিনের কথা বলে। আর্থ তার থেকে ঘুষ চেয়েছে। কয়েকটা শর্ত দেয় যার মধ্যে একটা মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার খরচ শুভ্রকে দিতে হবে। শুভ্র খুব একটা কিপ্টা না তবে কিপ্টা কম ও না।

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৪|
#শার্লিন_হাসান

কিন্তু সে তো আর্থর মাধ্যমে সবাইকে জানালো। যাই হোক আর্থকে সে বলেছে বিয়ের কথা উঠলে যাতে সেরিনের কথা বলে। আর্থ তার থেকে ঘুষ চেয়েছে। কয়েকটা শর্ত দেয় যার মধ্যে একটা মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার খরচ শুভ্রকে দিতে হবে। শুভ্র খুব একটা কিপ্টা না তবে কিপ্টা কম ও না।

কাজ শেষে শুভ্র বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে,মনে নিজেকে কয়েকটা গা’লি দেয়।
শুভ্র কী দেখতে খারাপ? নাকী যোগ্যতা নেই তার? অবশ্যই সব কিছু আছ শুভ্রর তাহলে সেরিন রাজী হবে না কেন? শুধু সেরিন না সেরিনে আম্মুও রাজী হবে। শুভ্রর মনে কনফিডেন্স চলে এসেছে।

রাতটা না ঘুমিয়ে কেটে গেলেও সকালের দিকে একটু চোখ লেগে আসে শুভ্রর। এলার্ম-ঘড়ির শব্দে ঘুম ছটে যায়। ফজরের আজান হতে নামাজ আদায় করে বেলকনিতে কোরআন তেলাওয়াত করতে বসে শুভ্র। সকালের হিমশীতল বাতাস শুভ্রর গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। হয়ত একটু পর সূর্যের আলোয় সবকিছু গরম হয়ে উঠবে। তীব্র কাঠখোট্টা গরমে রোদে একমুহূর্ত ও দাঁড়ানোর জো নেই। কিন্তু সে তো তার স্টুডেন্টদের মাঠে রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে আধঘন্টা করে ভাষণ দেয়। কোরআন তেলাওয়াত হতে বুয়া এসে কফি রেখে যায় রুমে। শুভ্র কফির মগ নিয়ে পুনরায় বেলকনিতে যায়। নিচের দিকে চোখ যেতে দেখে তার বাবা আর আর্থর বাবা দু’জন বেড়িয়েছে বাড়ীর গেট দিয়ে। হয়ত কলেজের পেছনের দীঘির পাড়ে হাঁটতে যাবে। যেখানে চৌধুরী পরিবারের সবাই যায় সকাল বেলা হাঁটতে। দীঘির পানির ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস গায়ে লাগলে আলাদা শান্তি পাওয়া যায়। শুভ্র কফিটা রেখে নিচে আসতে আর্থর দেখা পায়। বেচারায় মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে। শুভ্রকে দেখে আর্থ বলে,

‘সেরোয়ানি কিনেছ তো?’

‘কিসের সেরোয়ানি? আমি পান্জাবি পড়ে বিয়ে করবো সাদা পান্জাবি।’

‘এহহ বিয়েটা মনে হয় ঠিক। আমি তো এমনিতে বলেছি। আজকে পাটওয়ারী বাড়ী যাবো। আমার বিয়েী ডেট ফাইনাল হলেও তোমারটা হবে কীনা সন্দেহজনক। ‘

‘তোকে এতো কথা বলতে বলিনি। সবার আগে আমারটা হবে।’

‘যেই দজ্জাল ফুফি শাশুড়ী বসে আছে যেও। তার ছেলের বউকে তোমায় দিবে কত।’

‘শুভ্রর একটা ধমক শোনলে উনি একমাস অজ্ঞান থাকবে। যেহেতু উনি বুড়ো মানুষ সেহেতু এমন দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকার আশংকা করা যায়।’

‘ভাইরে ভাই তোমার যা ধমক। ধমক দিয়ে না জানি বউকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে নেও।”

‘দেখা যাবে।’

‘বিয়েটা তো আগে হোক।’

‘এই তুই বারবার আমায় ভয় দেখাচ্ছিস কেনো? বিয়ে হবে না কেন? একশবার বিয়ে হবে।’

শুভ্র আর্থকে কয়েক গা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসে। আর্থ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তখন আবার আর্থর আম্মু মিরা আসে। আর্থকে নিজে,নিজে হাসতে দেখে বলে,

‘পাগল হয়ে গেলে নাকী?’

আর্থ হাসি থামিয়ে তার আম্মুর দিকে তাকায়। কফির মগ হাতে নিতে,নিতে বলে,
‘হ্যাঁ হলাম তো তোমার বউমার প্রেমে।’

তখন আবার আয়মান চৌধুরী আসেন। আর্থর কথা শোনে তিনি শুধান,
‘এভাবে বলে না। একটু লজ্জা শরম রাখো।’

‘তো কী? তুমি বুঝি প্রেমে পড়োনি কারোর?’

‘পড়েছি তো তোমার ছোট আম্মুর।’

ওদের দু’জনের কথাবার্তা শোনে মিরা ইসলাম সরে আসে। আর্থ একটু এমনই! সবার সাথেই ফ্রেন্ডলি ভাব নিয়ে কথাবার্তা বলে।

*******

পাওয়ারী বাড়ীতে কাজ চলছে এক দফা। সেরিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিভিং রুম আর টেবিল ডেকোরেশন করার। সেই সাথে সবার রুম সাজিয়ে দেওয়ার। সেরিন সকালে নাস্তা করে কাজে নেমে পড়েছে। সে জানে আজকের মতো তার কোমড় আর শরীর দুটোই শহীদ। যেহেতু তাঁদের জয়েন ফ্যামিলি বিল্ডিংটাও সেভাবেই করা। আটটা বেডরুম গোছাতে,গোছাতে বেচারি হাফিয়ে গেছে। লিভিং রুমে এসে শশীকে ডাকে সেরিন। তখন তার আম্মু সাইয়ারা এসে বলে,
‘ও কোন কাজ করবে না।’

‘বিয়েটা তো আর আজকে হচ্ছে না। সবাই শুধু আমাকে দিয়েই সব কাজ করায়। আমার চেহারায় মনে হয় কাজের বুয়া টাইপ ভাব আছে।’

সেরিনকে রাগানোর জন্য তার ভাই মাহি আবার বলে,
‘ফাইনালী বুঝতে পেরেছিস। এইজন্যই তো তোকে দিয়ে আমার শার্ট আয়রন করাই। রুম গুছাতে বলি। তুই হলি আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে সেরিন। চেহারাটা দেখলেই বুঝা যায় তোর জন্মই বিল্ডিং পরিষ্কার করার জন্য।’

‘আম্মুউউ তোমার ছেলেকে কিছু বলবা নাকী আমি ওর মাথায় দুই চারটা বারি মারবো।’

তখন সাইয়ারা বলেন,
‘মাহি ওকে রাগিয়ো না। ও রাগলে আবার এগুলো কে করবে?’

‘তুমি বললে তোমার বউমা এসে করে দিয়ে যাবে।’

‘অ’জাতের বংশ অ’জাত বলে কী? আয় তোরে কয়টা খুন্তি দিয়ে থেরাপী দেই। দুই অ’জাত আমার হয়েছে। একটাও জাতের হয়নি। কাজকর্মের কথা বললে একটা বামে যায় তো ডানে লাফায় আরেকটা শুধু বউ,বউ করে।’

সেরিন,মাহি দু’জনেই তার আম্মুর দিকে হতাশর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আম্মু যেতে সেরিন মাহিকে বলে,
‘আমার বংশ অ’জাতের? লাইক সিরিয়াললি আমাকে দেখে অ’জাতের বংশের মেয়ে মনে হয়?’

‘আমাকে দেখে সত্যি অ’জাতের বংশের ছেলে মনে হয়?’

‘তোর জন্য আম্মু আমায় এতো গুলো কথা শোনালো।’

‘আমাকে মনে হয় আদর করলো কত? তোর জন্য আমার বংশকে অপবাদ দিয়েছে।’

‘তোর আর আমার দুজনের বংশ একটাই।’

সেরিনের কথায় শশী বলে,

‘সেটা হলো অ’জাতের বংশ আবার কখনো পাগলের জাত।’

সেরিন হাতের ঝাড়ুটা শশীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘চলেই তো যাবি। একটু তো কাজকর্ম করে ছোট বোনের থেকে দোয়া নে?’

‘তোর দোয়া লাগবে না। যেই মুখে সারাক্ষণ গালি থাকে সেই মুখে আবার দোয়া আসবে কোথা থেকে?’

‘সর! আমার মতো ভালো মেয়ে একটাও পাবি না।’

‘হ্যাঁ এমনি ভালো যে একজনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে,করতে রাস্তা দিয়ে যায় আবার রাস্তায় বুড়ো মানুষ দেখলে সালাম দিয়ে ভালো সাজে।’

শশীর কথায় মাহি আর সেরিন দু’জনেই হেঁসে দেয়। শশী লিভিং রুমের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেরিন টেবিলে গ্লাস,প্লেট সব সাজিয়ে রাখে।

তাদের কাজ শেষ হতে শশী,সেরিন শাওয়ার নিয়ে নেয়। আজকে সেরিন হোয়াইট আর মেরুন কালারের কারুকাজ করা থ্রি পিস পরিধান করেছে। যেহেতু শশীকে দেখতে আসবে সেহেতু তাকে শাড়ী পড়ানো হবে। সেরিন শাড়ী নামিয়ে চলে যায় লিভিং রুমে।

চৌধুরী বাড়ী থেকে শুভ্র, আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী চলে আসে। শুভ্রকে আচমকা দেখে সেরিন কোন দিকে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। তারউপর বড়রা আছে। হাতের ফোনটা সোফার উপর রেখে তাঁদের সামনে গিয়ে সালাম দেয় সেরিন। আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী সেরিনের সালামের জবাব দেয়। আরাফ চৌধুরী বলেন,

‘তুমি সিহান পাটওয়ারীর মেয়ে না? নাম কী তোমার মা?’

‘জ্বী! আমার নাম সেরিন পাটওয়ারী মিশাত।’

সেরিন নামটা শোনে আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকায়। সবার আগে চোখ যায় শুভ্রর সাদা পান্জাবি আর সেরিনের পরিধান করা সাদা থ্রি পিসের দিকে৷ শুভ্রকে আস্তে করে আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘উহুম! আগে থেকে প্লান করে রেখেছো নাকী হোয়াইট পড়বা?’

‘একদম না চাচ্চু। কীভাবে জেনো মিলে গেলো।’

সেরিন তাঁদেরকে ভেতরে নিয়ে আসে। আরাফ চৌধুরী সামনে তারপর সেরিন তার পেছন দিয়ে শুভ্র হাঁটছে। আয়মান চৌধুরী পেছন থেকে লক্ষ্য করছেন তাদের দু’জনকে কেমন লাগছে।

কিরণ পাটওয়ারী কাজে বাইরে গেছে একটু পর চলো আসবে। মাহি তাঁদের তিনজনকে ওয়েলকাম ড্রিং দেয়। সেরিন নাস্তা নিয়ে আসে। সেরিনকে ডেকে নিজের পাশে বসায় আরাফ চৌধুরী। তার পাশে আবার শুভ্র বসা ছিলো। শুভ্র এবং আরাফ চৌধুরীর মাঝে সেরিন বসে। সেরিনের হার্ট বিট উঠা নামা করছে। বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ্রর পাশে তাকে বসানো হয়েছে। যাকে দেখলে দশহাত দূর থেকে দৌড় দেয় মানুষ। আয়মান চৌধুরী বসে,বসে তাদেরকে দেখছে। সবার আড়ালে শুভ্র আর সেরিনের কয়েকটা পিকচার ও তুলে নেয়। সেরিনকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আরাফ চৌধুরী। শুভ্র নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তবে তার কাছে ভালোই লাগছে ব্যপারটা। কে জানে তাঁদেরকে একসাথে কেমন লাগছে?

সেরিন কোনরকম কথা বলে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। তখন আয়মান চৌধুরী শুভ্রকে ডেকে তার পাশের বসায়। ফোন থেকে তোলা ছবি গুলো শুভ্রকে দেখিয়ে বলে,
‘মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। শুভ্র বিয়েটা হবে তো?’

শুভ্র মাথা চুলকায়। তখন আবার সিহান পাটওয়ারী আসে সাথে তার বোন সাহিনূর পাটওয়ারী। শুভ্র ভদ্র মহিলার দিকে একনজর তাকায়। এনি সেই মহিলা যার জন্য এখন তাদের দুই ভাইকে বিয়ে করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-১১+১২

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১১|
#শার্লিন_হাসান

পিটি শেষ হতে শুভ্র ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে যায়। আকাশ, জুম্মানের খোঁজ করে। জানতে পারে তারা কেউই উপস্থিত নেই। শুভ্র সেসব আর মাথায় নেয়নি। ফিজিক্স ক্লাসটা সেই করায়। সে কিছুটা প্রশ্ন দেয় সেগুলোর উত্তর সবাইকে লিখতে বলে। শুভ্র পুরো ক্লাস ঘুরে,ঘুরে সবার হ্যান্ড রাইটিং চেক করে। সেরিনের কাছে এসে বলে,
‘তোমার হাতে লেখার একটা পৃষ্ঠা আমায় দিও তো।’

‘আমার রাইটিং বা’জে। এটা দিয়ে কী করবেন?’

‘না একটা দরকার ছিলো।’

সেরিন মাথা নাড়িয়ে হ্যান্ড রাইটিংয়ের একটা পেজ শুভ্রকে দেয়। শুভ্র সেটা নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।

তাদের ফাস্ট সেমিস্টার এক্সামের ঘোষণা ও দিয়ে দেয় শুভ্র। ক্লাস টাইম শেষের পথে। হাতে দশমিনিট সময় রেখে শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। আমাদেরকে একটা গান গেয়ে শোনাবে।’

শুভ্রর কথায় সেরিন বোকা বনে যায়। অনেকেই অবাক! যেই শুভ্র ক্লাসে পড়া ব্যতীত অন্য কোন বিষয় এলাউ করে না সেখানে গান। তাও নিজে থেকে! ভাবার বিষয়। নিশাতের ধাক্কাধাক্কি তে সেরিন উঠে সামনে যায়। শুভ্রর ঠোঁটের কোণে হাসি। সেরিন আড়চোখে শুভ্রকে দেখছে। অনেকেই এক্সাইটেড সেরিনের কন্ঠে গান শোনার জন্য। তবে কোন গানটা গাইবে সেরিন কনফিউজড।

‘কী গান গাইবো স্যার?’

‘তোমার যেটা মন চায়।’

‘আোতত গান গাইতে মন চাচ্ছে না।’

শুভ্র চোখ গরম করে তাকায়। সেরিন নজর সরিয়ে নিয়ে বলে,
‘ পল্লিগীতি?’

‘না।’
সেরিন গায়,

‘ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই।
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল,
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা,
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।
ছুঁয়ে দে আঙুল (২)

শুভ্র মনোযোগ সহকারে গান শোনে। সেরিনের ভয়েসটা তার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে অল্প দিনে। সেরিনকে ধন্যবাদ দেয় শুভ্র। অতঃপর বিদায় নিয়ে চলে আসে ক্লাস রুম থেকে। তড়িঘড়ি নিজের রুমে গিয়ে চিঠি আর সেরিনের হ্যান্ড রাইটিং মিলায়। অনেকটা পার্থক্য খুঁজে পায়। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? এই বাবুর আম্মুকে খুঁজে বের না করা অব্দি শুভ্রর শান্তি হবে না। শুভ্র ঠিক করে তার রুমের সামনের করিডোরে সিসি ক্যামেরা লাগাবে। যেই ভাবা সেই কল লাগায়। আগামী কালকের মধ্যে তার সিসিক্যামরা চাই করিডোরে।

*******

সন্ধ্যা বেলায় চৌধুরী পরিবারে বৈঠক বসে। সেই শুভ্রর বিয়ে নিয়েই বৈঠক। শুভ্রকে জিজ্ঞেস করা হয় তার পছন্দের কেউ আছে কীনা। শুভ্র লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে দেয়, ‘আছে কেউ একজন।’ আর্থ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়। আয়মান চৌধুরী নিজেও বাকরুদ্ধ। এই রাগী, বদমেজাজির ও গার্লফ্রেন্ড আছে? অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। যেই মেয়েটা শুভ্রর সাথে প্রেম করে সে নিশ্চয়ই শান্তি শিষ্ট, ভ্দ্র,নম্র হবে। সবাই এটাই ধরে নিয়েছে। তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘মেয়েটা ছবি আছে তোমার কাছে?’

শুভ্র শুধায়,
‘ছবি নেই তবে নাম আছে।’

‘নামটাই বলো?’

‘ওর নাম পিচ্চি।’

শুভ্রর কথায় আর্থ বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি এঞ্জেল সাদিয়া না।’

শুভ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্থর দিকে। হাতে থাকে কুশন দিয়ে পিঠে বারি মেরে বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি জমজ বোন না। আমি আবার শালির সাথে প্রেম করি না। আর না শালি আমায় ইমপ্রেস করে তার বোনকে দেয়।’

শুভ্রর কথার আগামাথা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। তবে শুভ্রর বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে চাচ্ছে সবাই। তখন আর্থ ও লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে ফেলে,
‘আমার অনেক শখ ভাইয়ার সাথে বিয়ে করার। একসাথে বিয়ে করার আরকী।’

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘তোহ এটা আগে বললেই পারতে।’

‘আসলে লজ্জা লাগছিলো।’

‘তোর আবার লজ্জা!’

শুভ্র বলে। আর্থ লজ্জা-লজ্জা ভাব করে মাথা নাড়ায়। শুভ্র তাকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘আচ্ছা শশীর ছোট বোনের এইজ কত হবে?’

‘আমি কীভাবে জানবো? আমি কী ওর জন্মের দিন ওদের বাড়ীতে গিয়ে বসে ছিলাম?’

‘আনুমানিক করে বলনা?’

‘এই পনেরো-ষোলো হবে।’

‘তোর মাথা। ওর বয়স আঠারো।’

‘তো জানলে আমায় জিজ্ঞেস করলি কেন?’

‘তোর তো আবার এসবে ভালো আইডিয়া কারণ সারাদিন মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকা লাগে।’

‘মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকলেও আমি লয়্যাল। তোমার মতো এঞ্জেল সাদিয়া নামের আইডি থেকে মেসেজ আসলে গলে যাই না। একবার কী জেনো? হ্যাঁ এঞ্জেল সাদিয়া ফেইক আইডির প্রেমে পড়ে গেলা।’

‘বা’জে কথা ছাড়বি? আমি এখনো কারোর প্রেমে পড়িনি।’

‘তাহলে তোমার পছন্দ করা মানুষ আসলো কী করে?’

‘না,না সেসব কিছু না।’

আর্থ শুভ্রর মাথা গাট্টি মেরে নিজের রুমে চলে যায়। সাত পাঁচ না ভেবে শশীকে কল দেয়। এখন সে শশীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবে।

*********

দেখতে,দেখতে সেরিনের প্রথম সেমিস্টার এক্সাম শুরু হয়ে যায়। সময়টা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততায় গেলেও নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য সেরিন গান গায়। ভিডিও বানায়! শশীর ও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে সে আর নিয়মিত নাচের ভিডিও আপলোড দেয় না। সন্ধ্যার দিকে সেরিন টেবিলে বসে পড়ছিলো। তখন শশী আসে হাতে কতগুলো কাগজ। সেরিন তা দেখে ব্রু কুঁচকায়। অতঃপর বলে,
‘এগুলো দিয়ে কী করবি?’

‘এগুলো আমি পেয়েছিলাম সেদিন। কোথায় পেয়েছি মনে পড়ছে না। টেবিলের উপর রাখা ছিলো তাই তোকে দিতে এলাম। তোর কাজে লাগতে পারে।’

‘আমার কাজ নেই এসবে। তুমি নিয়ে মাহিকে দাও। ও নিশাতকে প্রেমপত্র দিতে পারবে।’

‘তুই দে না কাউকে?’

‘এসবে আমার ইন্টারেস্ট নেই। কিসের প্রেম হুম? তুমি নিজে করো দেখে আমাকেও করতে হবে? প্রেম করা ভালো না এতে চরিত্র ন’ষ্ট হয়।’

‘এই শোন যতবড় মাথা নেই ততবড় ভাবনা। প্রেম করলে কিসের চরিত্র ন’ষ্ট হয়? তোর মাথায় আস্ত পঁচা আলু ছাড়া আর কিছু নেই। আর ব্রেইন যেটা? সেটা হাঁটুতে আছে।’

‘সেম ডায়লগ! বাহ কী মিল ভাসুরের সাথে।’

‘ভাসুরটা আবার কে?’

‘শুভ্র স্যার! সেম কথা বলে।’

‘ভুল কিছু বলেনা। সে তো মানুষ চেনে এক দেখায় বলে দিতে পারে কে কেমন।’

‘ওর হয়ে গুনগান গাইছিস যে। সবাই আমার শ’ত্রু কেউ ভালোবাসে না আমায়।’

‘একটা খুশির খবর শুনেছিস?’

‘কী?’

‘ফুফির ছেলে বিডি আসবে প্রায় আট বছর পর। অক্ষর ভাইয়া।’

‘তো নাচ? উনি আসলে আমাদের কী? আর বিয়েশাদির কথা উঠলে তোকেই দেখবে ফুফি। সো এতো লাফালাফির কিছু নেই। নেতাকে বলে বিয়েশাদি সেরে নে।’

‘অক্ষর ভাইয়াকে তুই বিয়ে করবি।’

‘প্লিজ যা বইন এখান থেকে। অক্ষর নিরক্ষর বা’লকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।’

শশী আর কথা বাড়ায়নি। সেরিনের কথাটা আসলেই ভাবার বিষয়। সে তো একবছরের জুনিয়র। চাপ আসলে তার উপরই আসবে। কিন্তু আর্থর কথা বললে কেউ কিছু বলবে না। তখন জামেলা যাবে সেরিনের উপর।

শশী যেতে সেরিন রঙিন পেপারের দিকে তাকায়। সেগুলো যত্ন সহকারে ড্রয়ারে রেখে দেয়। এখন অক্ষর নামের ব্যক্তিকে নিয়ে তার চিন্তা। তার ফুফি একটা তো আছেই। সেরিন,শশী। শশী,সেরিন। মনে হয় দুনিয়ায় আর কোন মেয়ে নেই।

শশী তার ফুফির ব্যপার টা আর্থর কাছে শেয়ার করতে আর্থ টু শুভ্রর কনেও পৌঁছে যায় অক্ষর দেশে আসার খবর। শুভ্র শুনেছে অক্ষরের জন্য শশী বা সেরিন একজনকে তার ফুফি ছেলের বউ করেই ছাড়বে। কিন্তু শুভ্র বুঝতে পারছে না কীভাবে কী করবে। একদিকে সেরিনের সামনে কত ভাব নিয়ে চলাফেরা। সেই মেয়ে যদি শোনে শুভ্র তার উপর কাত হয়ে আছে তো এমনিতে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে তখন শুভ্রর বউ,বাচ্চা সহ টেনেটুনে এনে বকতে থাকবে। আরেকদিকে সেরিন তার স্টুডেন্ট। বিষয়টা তার কাছেও লজ্জা,লজ্জা লাগছে। শুভ্র ভেবে পায়না কীভাবে কী করবে। তাই তো সে তার মাথা মোটা ভাই আর্থর কাছে গেলো। দু’জনের ফিউচারের উপর একজন নজর দিয়ে বসে আছে।

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১২|
#শার্লিন_হাসান

আর্থর রুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে শুভ্র। আর্থর সেদিকে খেয়াল নেই। আর যাই হোক শশীকে প্রয়োজনে পালিয়ে নিয়ে আসবে। তবুও অক্ষরের হাতে দিবে না। শুভ্রর তো সেই রাইট নেই। সেরিনের হাত ধরায় একবার দিলো চ’ড় এবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোলে তুলে দৌড় দিতে গেলে গলাটাই চেপে ধরবে। এমনিতে মেয়েটা বেশ ঝগড়ুটে। শুভ্রর আপাতত মাথা কাজ করছে না। তার ভাইয়ের চিন্তা নেই অথচ তার যত চিন্তা। শুভ্র সবসময় মানুষকে চিন্তায় রাখতে পছন্দ করে আর নিজে ফ্রেশ। বাট এই অক্ষরের জন্য পুরো উল্টে গেলো নিয়ম। তারউপর চিঠি দাতাকে ধরতে পারলো না।

আর্থর থেকে আর পরামর্শ নেয়নি শুভ্র। সোজা রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবে। কী জানি কী হয়? আচ্ছা অক্ষর এখন বিডি না আসলে হয়না? শুভ্র ভাবছে তার চাচ্চুকে দিয়ে পাওয়ারী বাড়ীতে প্রস্তাব পাঠাবে। হিতাহিত এটাই মাথা আসলো। শুভ্র চটজলদি তার চাচ্চুর রুমে চলে যায়। শুভ্রকে দেখে আয়মান চৌধুরী হাসেন। ডেকে তার পাশে বসিয়ে বলেন,
‘আজকাল চিন্তিত লাগছে। কী ব্যপার শুভ্র?’

‘ওই চাচ্চু! তুমি আগামী কালকে একটা কাজ করে দিতে পারবে?’

‘কী কাজ?’

‘পাওয়ারী বাড়িতে যাবে। আমার বাবুর আম্মুকে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিতে।’

‘মানে?’

‘সেরিন পাটওয়ারীর বিয়ের জন্য। বলবে শুভ্র তাকে বিয়ে করতে চায় ফ্যামিলিগত ভাবে।’

‘ওনাদের মেয়ে ছোট এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না।’

‘ওর এইজ তো আঠারো। আচ্ছা সমস্যা নেই পড়াশোনা সব কন্টিনিউ করবে বিয়ের পর। আমি কোন চাপ দেবো না।….

‘বাবুর আম্মুকে ও প্রেগন্যান্ট বানাবে না এতো তাড়াতাড়ি। এটা বাদ রাখলে কেন? বলে দাও!’

শুভ্রর কথায় পোড়ন কেটে আর্থ বলে। শুভ্র লজ্জায় দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। আর্থকে মনে,মনে কয়টা গা’লি দান করে। আর্থ হেলেদুলে হেঁটে এসে তাঁদের দু’জনের মাঝখানে বসে পড়ে। দু’জনের কাঁধে দুই হাত রেখে বলে,
‘শুভ্র বাবু এখন বিয়ে করবে। তার বউ বড় হবে,প্রাইমারি পাশ করলে তখন বউ হওয়ার উপযুক্ত হবে। এখন তেমন কোন চাপ কিছুই দিবে না। এই আরকী….’

‘আমাকে না পচালে হয় না তোর? আচ্ছা তুই যেটা বলেছিস এটাও ঠিক আছে। করবো না বাসর! সমস্যা কী?’

‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো তুমি ভাইয়া? চাচ্চুর সামনে এসবে বাসরের কথা বলছো।’

আর্থর কথায় শুভ্র দাঁড়িয়ে মাথায় কয়টা থাপ্পর লাগায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘তোর সবসময় ফান না করলে হয়না? আমি সিরিয়াস! যাহ আমারটা আমি ঠিকই নিয়ে আসবো দেখবি শেষসময়ে তোরটা নিয়ে টানাটানি হবে।’

‘গু’লি মেরে খুলি উড়িয়ে দিলে কী হবে?’

‘চুপ থাক চাপাবাজ।’

শুভ্র প্রস্থান করতে আর্থ আর আয়মান চৌধুরী হেঁসে উঠে। আয়মান চৌধুরী আর্থর দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘না আগামী কালকেই প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।’

‘তাহলে আমার টাও নিয়ে যাও। দুই ভাই একসাথে বিয়ে করবো।’

*********

কলম আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর ঠোঁট কামড়ে ভাবছে সেরিন। শশী বেঁচে গেলেও সে তো বাঁচতে পারবে না তার ফুফির থেকে। নাহ! এমনিতে অনেক ধরা খেয়েছে আর খেতে চায়না সেরিন। টিসি নিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। সেখানে তার আন্টির বাসায় থাকবে অন্য কলেজে এডমিশন নিয়ে নিবে। সেখান থেকে গানের একটা প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হবে। রিহার্সেল হবে গান! বিন্দাস লাইফ কাটবে।

এমনিতেও এখানে থাকতে না সেরিন। শুধু তার ভাই আর চাচ্চুর জন্য। তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এমপির কলেজ। তারউপর শুভ্র!
সেরিন তার বাবা সিহান পাটওয়ারীর কাছে যায়। তার বাবা তখন বই পড়ছিলো। সেরিনকে দেখে বই রেখে দেন সিহান পাটওয়ারী। মৌনতা বজায় রেখে সেরিন বলে,
‘বাবা আমি টিসি নিয়ে নিতে চাই। আন্টির কাছে চলে যাবো। পড়াশোনার পাশাপাশি গান ও কভার করবো। এখানে আমার কিছুই হচ্ছে না।’

‘তোমার যেটা ভালো মনে হয়। আমি চাই আমার সেরিন একদিন অনেক বড় হবে। হাতে মাইক ধরে গান গাইবে। তার অনেক ভক্ত থাকবে। আমি তোমার গান গাওয়াটা সাপোর্ট করি মা। আল্লাহ তোমায় এই গুনটা দান করেছে যেটা সবাইকে দেন না।’

‘ধন্যবাদ বাবাই! লাভিউ, তুমি আমায় এতো সহজে বুঝো।’

সিহান পাটওয়ারী সেরিনের কপালে চুমু আঁকেন। দু গালে হাত রেখে বলেন,
‘আমার সব একদিকে আর আমার মেয়ে একদিকে। আমার মায়ের আবদার আমি পূরণ করবো না?’

সেরিন কিছুক্ষণ তার বাবার বুকে মাথা রেখে বসে থাকে। তার পরম শান্তির স্থান। তার আম্মু সাইয়ারা আসে। বাবা মেয়ের এমন আহ্লাদ দেখপ তিনি বলেন,

‘থাক আমার ছেলে আছে। আমার ছেলে আমায় ভালোবাসে মেয়েরটা লাগবে না।’

সাইয়ারা ইসলামের কথায় সিহান পাটওয়ারী হেঁসে দেয়। তখন সেরিন বলে,

‘বাবার জন্য মেয়ের একটা আলাদা টান থাকে জানো না? কারণ বাবারা তার মেয়েকে ‘মা’ বলে ডাকে। ডাকটায় অন্যরকম ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি এটা সবাই জানে। সো তুমি জেলার্স হলেও আমি আমার বাবাকেই বেশী ভালোবাাবো।’

‘হয়েছে আমার বুঝদার মেয়ে। বাপের দলেই থাকিস। আমার ছেলে আছে আমার জন্য।’

‘যাও তেমার আদরের ছেলের কাছে।’

মা মেয়ের এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া সিহান পাটওয়ারী বেশ উপভোগ করেন।

*******

পরের দিন আরো চার চারটা চিঠি আসে শুভ্রর নামে। চিঠি পেয়ে শুভ্র বেশ খুশি। তার টেবিলের উপরে! সিসি ক্যামেরায় এবার তো আসল চিঠি দাতা ধরা খাবেই খাবে। শুভ্র তড়িঘড়ি চিঠি খোলে। প্রথমটায় লেখা,

‘বাবুর পাপা’ বাবুর মাম্মাম আর বলবে না তাকে বাবুর আম্মু বানাতে। সে অভিমান করেছে বাবুর পাপার উপর। কেন ভাই? আমি কী তোর খারাপ চাই? আচ্ছা আমি কী তোর একটা কিডনি চেয়েছি? চাইনি! শুধু বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করেছি।’

শুভ্র চিঠি পড়ে হাসে। দ্যান দ্বিতীয় চিঠিটা পড়ে,

‘ভালোবাসি বাবুর আব্বু।’

তৃতীয় চিঠিটায় লেখা,
‘বাবুর আব্বু’
‘তুমি জানতে চাওনি বলে কত না বলা কথা আড়ালেই থেকে গেছে। তুমি বুঝতে চাওনি বলে কত অনুভূতিরা মৃ’ত্যুবরণ করেছে। তুমি ‘ভালোবাসোনি’ তাই তো হৃদয় সায়রে একটা আক্ষেপ থেকে গেছে। তাই তো শুধাই, ‘আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়……’
লেখা:#শার্লিন_হাসান

চতুর্থ চিঠিটা,

‘এই মিস্টার চিঠিগুলো কী মজা মনে হয় আপনার? অ্যাম সিরিয়াস! ভালোবাসি আপনায়।’

শুভ্র চিঠিগুলো পড়ে চিন্তায় পড়ে যায়। এটা কী হলো? সে ভালোবাসে একজনকে আর এই বাবুর আম্মু তাকে। কিন্তু এটা তে সম্ভব না। বাবুর আম্মু তুমি আড়ালে রয়েছে আড়ালেই থাকো। দর্শন দিয়েও লাভ হবে না শুভ্র তোমায় গ্রহণ করবে না। অলরেডি শুভ্র একজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

শুভ্র সবগুলো চিঠি ভাজ করে রেখে দেয়। যেই চিঠিগুলো লিখেছে তার লেখা সুন্দর ভালো। গুছিয়ে লেখতে পারে। অভিমানী, চঞ্চল, গোছানো লেখা এই তিনটা কথায় তার কমপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়।

সেরিন টিসি নিয়ে চলে যাবে কথাটা নিশাত শোনতে অবাক হয়। হুটহাট সেরিনের এমন সিদ্ধান্ত নিশাত মানতে পারছে না। মনমরা হয়ে ক্লাসগুলো করছে নিশাত। সেরিন তাকে এটা ওটা বলছে তাতেও কাজ হচ্ছে না। সেরিনের ভালোই লাগছে এই কলেজ ছেড়ে যাবে। সে আজকের ক্লাস বেশ উপভোগ করছে। আছেই বা আর কয়দিন।

সাংস্কৃতিক পরিচালনা করা ম্যামের কানেও খবর গেছে তাদের কলেজের সেরিন চলে যাবে। মেয়েটাকে তার পার্সোনালি পছন্দ ছিলো। সামনে যেহেতু তাদের জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠান আছে সেখানে সেরিন চলে যাবে। ব্যপারটা নিয়ে সোজা প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যান তিনি। শুভ্র তখন কিছু পেপার্স ঘাটাঘাটি করছিলো। সাংস্কৃতিক ম্যাম মিসেস লিয়ানাকে দেখে বলেন,

‘কোন আর্জেন্ট আছে ম্যাম?’

‘স্যার শোনলাম সেরিন পাটওয়ারী টিসি নিয়ে চলে যাবে। হয়ত আপনার কাছে আসবে দু একের ভেতর। আমি আগেই খবর পেলাম।’

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-১০

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১০|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় পনেরোদিন। সেরিনের ও ব্যস্ত লাইফ কাটছে। নিজের প্রাইভেট,পড়াশোনা,গান নিয়ে। এখন আর শুভ্রর সাথে জামেলা হয় না। আর না শুভ্রর আশেপাশে ঘেঁষে সেরিন। সময়টা বিকেল বেলা। সেরিনের মন ভালো নেই। সেরিন বের হবে নিশাত আসবে তারা একটু ঘুরবে। তাঁদের বাড়ীর থেকে অল্পেকটু দূরে একটা লেক আছে। যথাসময়ে রেডি হয়ে সেরিন বেড়িয়ে পড়ে।
লেকের কাছে এসে কিছুটা সময় কাটায় নিশাত আর সেরিন। শসীকে নিয়েই আসতো ওর কলেজ ছুটি হতে লেট হয় আবার প্রাইভেট বাড়ী ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সেজন্য শসী আসেনি। সেরিন,নিশাত দু’জন ঘুরে। ফাস্টফুড খেয়ে বেরুতে,বেরুতে মাগরিবের আজান হয়ে যায়। নিশাতের বাড়ী লেকের কাছাকাছি হলেও সেরিনকে একাই যেতে হবে। কিছুটা দূরে! যদিও এসবে সেরিনের মাথা ব্যথা নেই তবে আজকাল একটু ভয়ে,ভয়ে থাকে। কী জানি কখন কে কী ক্ষতি করে বসে।

নিশাতকে বিদায় দিয়ে সেরিন অটোতে বসে। অটোতে সে একা থাকলেও কিছুটা সামনে যেতে দু’টো ছেলে উঠে। তাঁদের মধ্য একজন আকাশ আরেকজন হয়ত আকাশের সাথের। সেরিনের চিনতে ভুল হয়নি তাঁদের। সেরিনকে একা দেখে আকাশ টিটকারি মেরে বলে,

‘শুভ্র স্যারের গার্লফ্রেন্ড আজকে একা দেখি। মামা আজকে একে কিছু তো করা যায়ই! সেদিনই রাস্তায় ফেলে মেরে দিতাম। শুধু শুভ্র স্যারের জন্য মারিনি।’

‘আমার গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগলে তোর ওই হাত আর হাত রাখবে না আমার পরিবার।’

তেজী স্বরে বলে সেরিন। তখন আকাশের সাথে ছেলেটা বলে,
‘উফফস ভুলে গিয়েছিলাম তোর পরিবারের তো আবার অনেক ক্ষমতা আছে এলাকায়। তার উপর এমপির পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক। উফফ এমপির বড় ছেলের পূত্রবধু বলে কথা। আমাদের ও একটা দল আছে। দলের বড় ভাই ও আছে। তোকে নিয়ে তার হাতে দিলে মন্দ হবে না।’

ছেলেটার কথায় সেরিনের গা গুলিয়ে যায়। চিৎকার করে বলে,
‘অটো থামান আমি যাবো না।’

সাথে,সাথে অটো থামায় ড্রাইভার। জায়গাটা অনেকটা অন্ধকার হলেও সেরিন সাহস করে নেমে যায়। অন্য অটোতে করে যাবে। ভাড়া মিটাতে সেরিনের সাথে আকাশও নেমে পড়ে। তখন সেরিন বলে,
‘মামা আমায় একা নিয়ে যাবেন? বিশ টাকার ভাড়া আপনায় একশ টাকা দেবো।’

সেরিনের কথার মাঝে পোড়ন কেটে আকাশ বলে,
‘মামা পাঁচশ দেবো। আমাদেরকে নিতেই হবে।’

সেরিন আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ায়নি। ফোনের ফ্লাশ অন করে সামনে কয়েক কদম ফেলতে কেউ হাত ধরে টান দেয়। সেরিন ও কোনদিকে না তাকিয়ে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয় হাত ধরে থাকা ব্যক্তির। রাগী স্বরে বলে,
‘তোর হাত আমি না ভে’ঙেছি। সেই কখন থেকে ডিস্টার্ব করছিস। আগামী কালকেই আমি কমপ্লেন করবো প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে। কথা গুলো আমি ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছি।’

‘আমি শুভ্র।’

গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয় শুভ্র। সেরিনের হাত আপনাআপনি নিজের মুখে চলে যায়। শুভ্র নিজের ফোনের ফ্লাশ সেরিনের দিকে তাক করে। সেরিন আমতা আমতা করে বলে,
‘স্যরি আমি ভেবেছিলাম আকাশ আর জুম্মান।’

‘তা তো ভাববেই। আমাকে তো সবার সাথেই গুলিয়ে শরবত করো তুমি। সবসময় তো আমায় বকো তো আজকে ওদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলে না?’

‘আমি একা তো! আর ওদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলে ওরা আমার ক্ষতি করবে। আমি মানুষকে বকি তবে যাকে তাকে না।’

‘তোর একটা মাথা আছে তবে মাথার ব্রেইনটা হাঁটুতে।’

সেরিন মাথা নাড়ায়। তখন শুভ্র বলে,
‘ওদের দুজনকে কালকে একটু আদর সোহাগ করবো। এখন তুমি যেতে পারো। ভয় নেই।’

সেরিন নিজের ফোনের ফ্লাশটা শুভ্রর দিকে তাক করে। তখন শুভ্র বলে,
‘এভাবে দেখো না প্রেমে পড়ে যাবে।’

শুভ্রর কথায় সেরিন কাশতে থাকে। শুভ্র সেসবে পাত্তা না দিয়ে একটা অটো দাঁড় করায়। সেরিন অটোতে বসতে শুভ্র বলে,
‘বকবকানি সাবধানে যেও।’

সেরিন শুধু মাথা নাড়ায়। শুভ্র কিছুটা সামনে এগিয়ে আসে যেখানে আকাশ,জুম্মান আছে। তাঁদের দুজনকে শুভ্র আটকিয়ে রেখেছে আরো তিনজন দিয়ে। শুভ্রকে দেখে আকাশ ভয় পেয়ে যায়। শুভ্র দুটোকে গালে দু’টো চ’ড় মারে। তাতেও ক্ষোভ না কমায় আরো চারটা বসায় চ’ড়। তাঁদের জন্য সেরিনের হাতে একটা খেলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘ইভটিজিং তো ভালোই পারিস! তা তোরা আমার কলেজের স্টুডেন্ট তো? আমার কলেজে এমন বখাটে আছে জানা ছিলো না।’

তখন জুম্মান বলে,
‘আসলে স্যার….’

শুভ্র জুম্মানের লম্বা চুল গুলো টেনে ধরে গালে আরো দু’টো চ’ড় বসিয়ে দেয়। তাতেও জেনো শুভ্রর ক্ষোভ কমছে না। রাস্তায় দেখে বেশী কিছু বলেনি। কলেজে হলে গাড় বরাবর লা’থি তো মারতোই সাথে জায়গা মতো দু চারটা কিক মারতো। এমনিতে এদের জন্য দেশে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এদের ভবিষ্যৎ তো অন্ধকারই যতটুকু আলো ছিলো শুভ্র ও বাকীটা নিভিয়ে দিতো।

আকাশ, জুম্মানকে ছেড়ে শুভ্র বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। ছেলে তিনটাকেও চলে যেতে বলে। ওরা তার বাবারই লোক ছিলো। শুভ্র খবর পেয়েছে সেরিন লেকের কাছে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা আকাশ ওত পেতে আছে সেরিনকে ধরার জন্য। শুভ্র তো কোন প্রকার রিস্ক নিতে রাজী নয়। এমনিতে সে মজে আছে ছোট্ট গায়িকার উপর। তাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বটাও তার উপরই অনেকটা। শুভ্রর ভবিষ্যত বড় গায়িকা। শুভ্রর মনে হয় সেরিন নিজেকে নিয়ে এতো আশা করে কীনা কে জানে! তবে সে আশাবাদী সেরিন একদিন অনেক বড় গায়িকা হবে। কনসার্ট করবে, দেশে বিদেশে যাবে। লোকে তাকে চিনবে! সেদিন সেরিন গর্বের সাথে বলবে, ‘সবটাই শুভ্রর চেষ্টা,চাওয়া।’

নিজের ভাবনায় নিজেই হেঁসে দেয় শুভ্র। সে জানে মেয়েটা অনেকটা ছোট। তাঁদের বয়সের ডিফারেন্স দশবছর তো হবেই। সমস্যা নেই বয়স কমানোর জন্য শুভ্র প্রয়োজনে পার্লারে যাবে।

বাড়ীতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবেশ করে সেরিন। লিভিং রুমে তার বাবা আর চাচ্চু বসে আছে। সেরিনকে দেখে তার চাচ্চু কিরণ পাটওয়ারী বলেন,
‘মাহিকে সাথে নিয়ে গেলে কী হতো? রাস্তায় কেউ ডিস্টার্ব করেনি তো আবার?’

‘না,না কে ডিস্টার্ব করবে? কারোর এতো সাহস নেই পাটওয়ারী বাড়ীর মেয়েকে কিছু বলার।’

কথাটা বলে সেরিন কেটে পড়ে। কিরণ পাটওয়ারীর কথায় সেরিনের বাবা সিহান পাটওয়ারী বলেন,

‘এলাকায় আমাদের নাম ডাক থাকলেও আজকাল একদল এসেছে কাউকেই ভয় পায়না।’

‘যখন জেলের ভাত জুটবে তখন সব সোজা হয়ে যাবে।

*******

আর্থ রাতে শুভ্রর রুমে আসে। তখন শুভ্র ল্যাপটপে কাজ করছিলো। আর্থকে দেখে বলে,
‘আবার কোন নিউজ আছে নাকী?’

‘আরে না৷ একদিন চলো তোমায় আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ‘

‘সেরিন নাকী শসী?’

‘শসী। সেরিন তো শসীর কাজিন।’

‘মেয়েটা বেশ চালাক। তোর মতো ব’লদ কেও বোকা বানিয়েছে।’

শুভ্রর কথায় আর্থ হেসে মজা নেয়। শুভ্রর এসবে মাথা ব্যথা নেই। সে তো জানে তার ভাই কোন লেভেলের গা’ধা। যে বাচ্চা মেয়েদের কাছে গুটি হয়েছে। সুন্দর ভাবেই নাচিয়েছে সেরিন।
আর্থর দিকে তাকিয়ে শুভ্র বলে,
‘যতই লাফাও,ভাষণ দেও,আমায় বাঁশ দেও আসল বাঁ’শ তো তুমি নিজেই খেয়ে বসে আছো। মাথায় ব্রেইন থাকলে তবেই না বুঝতে। ব্রেইন তো হাঁটুতে।’

‘তুমি আমায় অপমান করছো ভাইয়া? আমার ব্রেইন মাথায় আছে। আর আমায় কে বোকা বানিয়েছে শুনি? আমায় বোকা বানাবে এই ব্রেইন এখনো কারোর হয়নি।’

আর্থর কথায় শুভ্র কীবোর্ড থেকে হাত সরিয়ে কফির মগে হাত রাখে।

‘আমার চালাক নেতা। তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নে। আমি আবার মুখ খোললে তোর প্রেম জানালা দিয়ে পালাবে। তার চেয়ে বিয়েশাদী করে নে যাতে কিছু বললেও প্রেম রুমের মধ্যেই আটকে থাকে।’

‘প্রেম তো করে মানুষ রুমে বসেই। পাবলিক প্লেসে নাকী? ‘

‘ভাই প্লিজ যা। তোর প্রেমের কথা শোনার জন্য আমি বসে নেই।’

********

পরের দিন সকালে কলেজ আসতে নিজের রুমের দরজার সামনে একটা বক্স পায় শুভ্র। রঙিন কাগজে মোড়ানো। শুভ্র সেটা নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। বক্স খোলতে অনেকগুলো খাম। শুভ্র একে,একে সবগুলো খাম খুলে। সবগুলোতে বিভিন্ন রঙের কাগজে ভিন্ন,ভিন্ন কলমের কালিতে ফুটিয়ে তোলা চিঠি।

শুভ্র একটা চিঠি হাতে নেয়। তাতে লেখা,
‘বাবুর আব্বু দিনদিন কিন্তু নরম হয়ে যাচ্ছে। আইমিন তার কঠোরতম ভাবটা কমে আসছে। বাবুর আম্মুকে রেখে আবার কার প্রেমে মজে গেলে?’

শুভৃর কনফিউজড হয়ে যায়। বাবুর আম্মুটা কে? অনেকদিন পর তাকে স্মরণ করলো। যদিও চিঠিটা পড়ে শুভ্রর হাসি পাচ্ছে। কে জানি হাসলে যদি আবার খবর পায়। তাহলে পুনরায় চিঠি লিখে বলবে, ‘বাবু আব্বু কী বাবুর আম্মুর চিঠির প্রেমে পড়লো নাকী? আজকাল বেশী, বেশী হাসা হচ্ছে।’

শুভ্র ভেবে পায়না চিঠিগুলো কে রুমে রেখে যায়? আচ্ছা তার রুমে তো সিসি ক্যামরা লাগানো আছে। তাহলে ফুটেজ চেক দিলেই তো লুকিয়ে থাকা বাবুর আম্মুকে খুঁজে পাওয়া যাবে। শুভ্র হাসে! যেই কাজটা করেছে সে হয়ত জানে না সিসি ক্যামরার কথা। শুভ্র আর দেরী না করে ফুটেজ চেক দিতে থাকে। সর্বপ্রথম যেই চিঠিটা এসেছে সেই দিনের ফুটেজ চেক করে। কখন কীভাবে আসলো সেটাও তো জানে না শুভ্র। অনেক ঘাটাঘাটির পর কোন কিছুই ফেলো না। না বাইরেী কারোর আসা যাওয়া। শুধু তার কলেজের দপ্তরি, বা দু একজন টিচারের আনাগোনা। শুভ্রর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা মূহুর্তে মলিন হয়ে যায়।

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৯

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৯|
#শার্লিন_হাসান

পরের দিন সেরিন কলেজে আসতে ডাক পড়ে শুভ্রর রুমে। সাথে নিশাত ও আছে। আজকে কেনো জানি সেরিনে ভয় জড়তা কিছুই কাজ করছে না। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে শুভ্র বেশী সিনক্রিয়েট করলে আর্থর কথা বলে দিবে। শুভ্রর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থমথমে গলায় সেরিন বলে,
‘মে উই কাম ইন স্যার?’

শুভ্র জবাব দেয়,
‘কাম ইন।’

সেরিন নিশাতের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। ভয় জড়তা সরিয়ে নিজেই বলে ফেলে,
‘কিছু বলবেন স্যার?’

‘ইয়েস! গতকালকে কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে কুমিল্লায় ঘুরতে গেলে। শোনলাম বাড়ীতে মিথ্যে বলেছো। তা ডেটে যাওয়ার এতো শখ তো ইউনিফর্ম পড়ে কেনো? আমার কলেজে নিয়ম কানুন ভুলে গেছো?’

‘আসলে স্যার ডেটে যাইনি আমরা। মেয়ে,মেয়ে বুঝি ডেট হয়? আর এতো বকা দেওয়ার শখ তো আপনার ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করুন। আমাদের দোষ কী? ওনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়েই তো গেলাম দেখা করাতে। আপনাদের চৌধুরী বাড়ী ছোট চৌধুরানী।’

‘লজ্জা হওয়া উচিত তোমার। তোমার এতো আস্পর্ধা আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছো? আমি তোমার টিচার হই কোন সমবয়সী ভাই, বেয়াই না।’

‘আসলেই শা’লা তোর মাথায় সমস্যা। সবাই তোকে ভয় পাবে বলে কী আমিও ভয় পাবো? যতই সিংহ সাজো না কেনো তোমার তো দুর্বল দিক কিছু না,কিছু আছে। আর তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় উপরটা পাথর হলেও ভেতরটা পুরো সফট।’

‘নেক্সট টাইম এমন বেয়াদবি দেখলে তোমায় আমি টিসি দিয়ে বের করে দিতে দু’বার ও ভাববো না।’

শুভ্রর কথায় সেরিন ভাবনা থেকে বের হয়। ঠোঁট উল্টে বলে,
‘প্লিজ স্যার এক্ষুনি আমায় টিসি দিয়ে বের করে দিন। আপনার কলেজে আমি পড়তে চাই না।’

‘তাহলে ঠিক আছে। একটু ওয়েট করো টিসি দিচ্ছি আমি।’

সেরিন মাথা নাড়িয়ে নিশাতকে নিয়ে বাইরে আসে। মিশাত সেরিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘আমি আম্মুকে কী বলবো? বলবো আমি কলেজ মিস দিয়ে কুমিল্লা গিয়েছি আর ধরা খেয়েছি। দেখ ভাই আমার আম্মু আমায় মে’রেই ফেলবে। এই কলেজের অনেক নাম ডাক সাথে রেজাল্ট ও ভালো।’

‘আমাকে টিসি দিতে বলেছি তোকে না। আর ওই অপদার্থ স্যার টিসি দিবে না আমায় আমি একশ পার্সেন্ট শিওর।’

‘তুমি কে যে টিসি দিবে না? আমাদের মতো স্টুডেন্ট না থাকলেও কিছু হবে না কলেজে। আমাদের থেকেও ভালো স্টুডেন্ট আছে। ওনাদের কলেজের রেজাল্ট এমনিতে ভালো হয়। আমাদের মতো দু’একটা আগাছা না থাকলেও কিছু যায় আসবে না।’

‘আমরা আগাছা?’

রেগে বলে সেরিন। তখন নিশাত আমতা আমতা করে বলে,
‘আমার কাছে তাই মনে হয়। দেখ আমাদের যতবার প্রিন্সিপাল তার রুমে ডেকেছে এখন অব্দি একটা স্টুডেন্টকেও ডাকেনি। এতো,এতো কমপ্লেন আমাদের নামে।’

‘তোহ ডেকেছে দেখে কী হয়েছে? মেরে ফেলেনি ওকে?’

‘তোর সাথে কথা বলা টাই বেকার।’

‘চলতো।’

সেরিন নিশাতকে নিয়ে চলে যায়।
শুভ্র রেগে টেবিলে থাপ্পড় মারে। সেরিনের এতো বড় আস্পর্ধা! তাকে ভয় পায় না। যেখানে সে একটা কথা বললে সবাই চুপ সেখানে মেয়েটা কীভাবে জবাব দেয়। শুভ্র ঘেটে ঘুঁটে সেরিনের কিছু ডকুমেন্টস বের করে। তাঁদের স্কুল থেকেই এসএসসি দিয়েছে। এখন তাঁদের কলেজেই এডমিশন নিয়েছে। শুভ্রদের স্কুল কলোজ একসাথেই। দু’টো পরিচালনার জন্য যথেষ্ট টিচার আছে। তবে শুভ্র দু’টোরই প্রিন্সিপাল। অনেক খোঁজ খবর চালানোর পর শুভ্র জানতে পারে সেরিন ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। ওর রেজাল্ট ও ভালো। কিন্তু তাতে কী? এতো বড় বেয়া’দবি র জন্য সেরিনকে বের করে দেওয়াই উত্তম।

ছুটে সাংস্কৃতিক পরিচালনা করা ম্যামের কাছে যায় শুভ্র। টান টান গলায় বলে,
‘সেরিন মেয়েটা কী গান ভালো গায়?’

‘জ্বী স্যার। এখনো যদি বলি কলেজ বা স্কুলের স্টুডেন্টদের মধ্যে কমপিটিশন দেব আমার বিশ্বাস সেরিন ফাস্ট হবে। আর আমাদের স্কুল,কলেজে আগে তেমন ভালো কেউ গাইতে পারতো না। যার কারণে জেলার বড়,বড় ইভেন্টে কেউ পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারতো না। প্রাইস যা ছিলো সব অন্যান্য কলেজের স্টুডেন্টরা নিয়ে যেতো। তবে এবার আমাদের কলেজের স্টুডেন্টরা পার্টিসিপ্যান্ট করবে। প্রয়োজনে আমি ওদের কয়েকদিন রিহার্সেলের ব্যবস্থা করে দেবো।’

ম্যামের কথা শুভ্র আর কিছু বলেনা। সোজা নিজপর রুমে এসে মেরুদণ্ড সটান করে দাঁড়ায় জানালার পাশে। এই মূহুর্তে সেরিনকে প্রয়োজন তাঁদের কলেজের জন্য। সে যাই হোক দু’একটা স্টুডেন্ট থাকেই এমন গাড়ের রগ বাঁকা। সেরিন ও তাঁদের একজন। শুভ্র এখন সব ভুলে গেছে৷ সপরিন ভালো গায়! তার গান শোনার জন্য জেনো শুভ্র সবার থেকে বেশী আগ্রহী। আর যাই হোক আজকের ছোট্ট অনুষ্ঠান টা সে মিস দিতে চায় না।

কয়েকটা ক্লাস শেষ হতে পড়ার পাট চুকিয়ে নেওয়া হয়। স্কুল,কলেজের সব স্টুডেন্টদের বিশাল হল রুমে আসার নির্দেশনা দেয়। সেরিন নিশাত ও যায়। যেহেতু সেরিনের আজকে গাইতে হবে।

সব টিচার স্টুডেন্টরা মিলে হল রুমে বসে। দেশাত্মবোধক, পল্লিগীতি গান গাওয়া হবে। সেরিন পল্লিগীতিতে নাম দিয়েছে।

বাকী স্টুডেন্ট রা ও গেয়েছে। সেরিনের নাম আসতে সে সামনে যায়। শুভ্রর জেনো অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। ভয়েস টা তো মিলাতে হবে। শুভ্রর অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফাইনালী সেরিন গায়,

‘সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এ আমারে

বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা

যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে

মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা

মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা

যাও পাখি যারে উড়ে
তারে কইয়ো আমার হয়ে
চোখ জ্বলে যায় দেখব তারে
মন চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে

সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে’

(দ্রঃ পল্লিগীতি নামে যে কোন গান আছে সেটা আমি জানতাম না। এমনকি এই গানটাও আমি আমার ক্লাস ইভেন্টে শুনেছিলাম। কয়েকদিন হলো জেনেছি পল্লিগীতি নামে গান আছে😶🐸)

মাইক্রোফোন রেখে সেরিন নিজের জায়গায় চলে আসে। শুভ্র সেরিনের উপস্থিতি খেয়াল রাখছে। তবে আর কিছু বলেনি।

*****

‘শুনেছেন আর্থ স্যার? আপনাদের নাম করে কারা জানি বাজারে চাদা তুলেছে।’

ইমতিয়াজের থেকে কথাটা শুনে আর্থ চোয়াল শক্ত করে নেয়। সে বাইরে এসেছিলো কিছু কাজে। আর্থ তার চাচ্চু আয়মান চৌধুরীকে কল লাগায়। রিসিভ হতে তেজী স্বরে বলে,
‘চাচ্চু কিছু শুনেছো? আমাদের নাম করে চাঁদাবাজি করছে সাধারণ মানুষের থেকে।’

‘আমি বাড়ী আসছি তুমিও আসো। জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করবো। যারা এসব কাজ করছে সোজা জেল।’

‘আগে ওদের হাত পা বেঁ’ধে জু’তা পে’টা করবো তারপর তোমার আইন আদালত।’

আর্থ কল রেখে রওনা হয় বাড়ীর উদ্দেশ্য। ইমতিয়াজ সাথে তাঁদের দলের কয়েকজন ও আর্থর সাথে চৌধুরী বাড়ীতে আসে। শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী শুভ সে কিছু কাজে ঢাকা গেছে। আয়মান চৌধুরীর ও যাওয়ার কথা ছিলো। আজকে সন্ধ্যায় যাবে সে। আর্থ এদিকটা সামলাবে। সোফায় বসে আছে আর্থ। তার সামনে আয়মান চৌধুরী বসে আছে। তখন আবার শুভ্র আসে। যদিও শুভ্র রাজনীতিতে পুরোপুরি ঢুকেনি তবে কিছু,কিছু জায়গায় জড়িত আছে সে। তার চাকরী,বাবার প্রফেশনের সূত্রে। আর্থকে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করে,
‘কী হয়েছে?’

‘আরে তেমন কিছু না। আমাদের বিরোধী দলের কয়েকজন লোক দিয়ে আমাদের নাম করে চাঁদা তুলেছে।’

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৮

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৮|
#শার্লিন_হাসান

সেরিন, নিশাতের যাওয়ার পাণে শুভ্র পলক ফেলে। অতঃপর নিজেও সিএনজি ধরে কলেজ গেটের সামনে নেমে যায়। সেরিনকে ছোটখাটো একটা বাঁশ না দেওয়া অব্দি শুভ্রর শান্তি নেই। এই মেয়ে কারণে অকারণে তাকে তুলোধোনা করে। যেখানে সেখানে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। সে একজন প্রিন্সিপাল মানুষ কত সন্মান দেয় আর মেয়েটা তাকে ধোয়। কারণে অকারণে ধোয়।সে যে সেরিনের টিচার সেটা সেরিন ভুলে গেছে। কিছু একটা মনে হতে শুভ্র কলেজের পাশে ফাস্টফুডের দোকান গুলোতে যায়।
সেখানে গিয়ে সে তার কলেজের স্টুডেন্ট পায়। তাও ছেলে আর মেয়ে একসাথে বসে আছে। শুভ্রকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে আকাশ। শুভ্র চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। হুংকার ছেড়ে বলে,

‘এটা কলেজ! কলেজ ক্যাম্পাস। একজন এমপির বাড়ী। এটা কোন ডেটে আসার জায়গা না। আমার দেওয়া ওয়ার্নিং ভুলে গেছো তোমরা।’

শুভ্রর কথায় আকাশ এবং প্রিতী দু’জনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র দু’জনকে তার রুমে আসতে বলে। ফাস্টফুডের দোকান ছেড়ে শুভ্র সোজা ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে যায়। লাস্ট পিরিয়ড এটা। তখন ক্লাসে থাকা টিচারকে বলে,
‘আজকে যারা অনুপস্থিত তাদের বাড়ীতে কল দিয়ে জানিয়ে দিবেন কলেজ আসেনি। আর না আসার কারণটাও জেনে নিবেন। সেরিন পাটওয়ারী মিশাত রোল ২৩৫ মেয়েটার বাড়ীতে এই মূহুর্তে কল দিয়ে জানগন কেনো কলেজ আসেনি।’

কথাটা বলে শুভ্র প্রস্থান করে। সবাই তাকিয়ে আছে শুভ্রর যাওয়ার পাণে। ঝড়ের গতিতে আসলো আবার ধমকা ধমকি করে বিদ্যুতের গতিতে চলেও গেলো। আকাশ,প্রিতী দুজন শুভ্রর রুমে যায়। শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আমার দেওয়া রুলসের কথা মনে নেই? আমার কলেজ ক্যাম্পাসে কোন কাপল ডেটে আসতে পারবে না। বেয়া’দব কোথাকার! একদিন আমি কলেজে নেই সাহস জেনো ঝড়ের গতিতে বেড়ে গেছে। তোদের দু’জনকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম নেক্সট টাইম আমার চোখে পড়লে দু’জনকে বিয়ে দিয়ে দেবো নাহয় টিসি দিয়ে বের করে দেবো।

থেমে,
গেট লস্ট!’

ছেলে মেয়ে দু’টো যেতে শুভ্র কপাল স্লাইড করতে থাকে। ফোন হাতে মাহিকে কল দেয় শুভ্র। কয়েকবার রিং হতে কল রিসিভ হয়। ওপর পাশ থেকে মাহি বলে,

‘কিছু হয়েছে শুভ্র?’

‘তোর বোন আজকে কলেজ আসেনি।’

‘ও তো কলেজ ড্রেস পড়েই বের হয়েছে।’

‘কলেজ আসেনি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটে গিয়েছে কুমিল্লা।’

‘হুয়াট?’

‘হ্যাঁ, আজকে আমিও কুমিল্লা গিয়েছি….

‘তোর সাথে ও গিয়েছে?’

‘তোর বোনকে আমার সাথে নিলে তো? পিচ্চি একটা মেয়ে আমার হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে। আর ও আমার গার্লফ্রেন্ড না যে ডেটে যাবো। আমি কাজে গিয়েছি সেখানেই একটা লোকাল বাসে তোর বোনের সাথে দেখা হয়।’

‘তো তুই কী করে জানলি ও ডেটে গেছে?’

‘সাথে তোর গার্লফ্রেন্ড নিশাত ও ছিলো।’

তখন মাহি শুধায়,
‘কই নিশাত তো আমায় কিছু বলেনি। আমার বোন এমন না বুঝলি? ওর বয়ফ্রেন্ড নেই যে ডেটে যাবে। হয়ত কোন কারণে গিয়েছে।’

‘কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে যাবে কেনো?’

‘তো তুই একটা শাড়ী কিনে দিতি শাড়ী পড়ে যেতো।’

‘ইয়ার্কি ছাড় ভাই। তোর এটা বোন? কথা,কথায় উঠতে বসতে আমায় গা’লি দেয়। যার তার সামনে আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। আমার নামটা শোনে না জেনো কী শোনে আল্লাহ ভালো জানে। তোর বেনের দু চোখের বিষ আমি।’

‘আল্লাহ আমার বোনের নামে এতো বদনাম। তুই যে বকা-ঝকা বেশী দেস আবার ধমকা ধমকি করস ওর পছন্দ না সেজন্য ও তোর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। ‘

‘তোহ তোর বোনের জন্য কী আমি আমার রুলস ব্রেক করবো?’

‘না,না এটা তোর দায়িত্ব। ও আস্তে ঠিক করে নিবে সব। আমি বুঝিয়ে দেবো। একটু দেখে রাখিস আমার বোনকে।’

‘সবাই আমার চোখে সমান। তোর বোনের জন্য আমি এক্সট্রা চোখ লাগাতে পারবো না।’

‘আমার বোন ও সেই হিসাবে দেখে রাখবি।’

‘তোর বোন আমায় সহ্য করতে পারেনা।’

‘পারবে,পারবে।’

কিছুক্ষণ কথা বলে শুভ্র কল কেটে দেয়। অফিসে গিয়ে স্যারদের সাথে কিছুক্ষণ রাগারাগি করে শুভ্র। তার অবর্তমানে স্টুডেন্টরা ডেটে যায়। কেউ খোঁজ রাখে না। এই জন্যই কলেজ শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তাঁদের কলেজ ধ্বংসের পেছনে এই হেলাফেলা, কোন বিষয়ে কেউ খেয়াল না রাখা। সাথে আরো কিছু লেকচার দেয় শুভ্র। স্যাররা চুপচাপ শোনে গেছে শুধু। ছাত্রছাত্রীদের থেকে বেশী বিরক্ত তারা। শুভ্রর মনে দয়ামায়া কিছুই নেই। ধমক একটা দিবে পুরো ক্যাম্পাস কাঁপানোর মতো। পিটির রোদে বসিয়ে তার দেওয়া ভাষণ সবচেরে বেশী বিরক্তিকর। তার চেয়ে বেশী বিরক্তকর ছুটি নেওয়ার জন্য তার কাছে আবেদন পত্র দেওয়া। ইত্যাদি,ইত্যাদি রুলস আর রুলস। শুভ্রর মাথায় কী চলে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

******

সেরিন বাড়ীতে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে৷ তার পেছন দিয়ে তার আম্মু সাইয়ারা আসে হাতে তার ঝাড়ু। ঝাড়ু দেখে সেরিন কিছুটা ভয় পায়। এখনো মাঝেমধ্যে ঝাড়ুর বারি কপালে জুটে তার। তার আম্মুকে দেখে সে বলে,

‘আম্মু ঝাড়ু কেনো?’

‘কলেজ গিয়েছিলি আজকে?’

‘হ্যাঁ!কেনো?’

‘তো স্যার কল দিয়ে কেনো বললো আজকে তুই অনুপস্থিত।’

‘আরে আম্মু হাজিরা এতো তাড়াহুড়োয় ডাকে যে প্রেজেন্ট স্যার,ইয়েস স্যার বলতে,বলতে আরেকজনের রোলে গিয়ে ঠেকে। তখন দু’জন একসাথে হয়ে যায়। আর আমি তো লেট লতিফা তুমি জানোই।’

সাইয়ারা আর কিছু বলেনি ঝাড়ু নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। সেরওন জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। জন্মের মতো লেট লতিফা হয়েও সুবিধা আছে। এই যে মিথ্যে কথাটাও বিশ্বাস করানো যায়৷

তখন শশীর আম্মু তুষি আসে সেরিনের কাছে। সেরিন তার কাকীমাকে দেখে বলে,
‘তুমি আবার কী নিউজ নিয়ে এসেছো?’

‘তেমন কিছু না। চলো ফ্যামিলি ট্যুর দেই।’

‘টাকা নাই কাকীমা। তুমি নিলে আমি যেতে পারি।’

‘ফ্যামিলি ট্যুর মানে সবাই মিলে।’

‘তো চলো সমস্যা কোথায়?’

‘চলো তাহলে প্লেস বের করো। আমি আজকে সন্ধ্যায় তোমার চাচ্চু আর বাবাকে বলবো।’

‘শশী আসুক।’

তুষি প্রস্থান করতে সেরিন চুপচাপ শুয়ে পড়ে। এবার থেকে ভালো মেয়ে হয়ে যেতে হবে। না শুভ্রকে বকা যাবে আর না কারোর প্রেম নিয়ে মাথা ঘামাবে। শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা এবং পড়াশোনা।

*******

আর্থ বাড়ী আসে। শুভ্র লিভিং রুমে বসে আছে। আর্থকে দেখে জোরই বলে,

‘বাবুর আম্মুর সাথে ডেটে গেলে নাকী হসপিটালে? তোহ মেয়ে বাবুর জেঠু হবো নাকী ছেলেবাবুর?’

আর্থ দৌড়ে এসে শুভ্রর মুখে চাপা দেয়। না করে বাবুর আম্মু নাম যাতে না উঠায়। কিন্তু শুভ্র আজকে আর্থকে বাঁশ দিবেই দিবে।
কিছুটা জোরে বলে,
‘ছোট আম্মু শুনেছো? মেঝো আম্মুকে খবর দাও তার ছেলের বউকে আমি পেয়েছি আজকে। এতোদিন লুকিয়ে রেখেছে। আজকে তো বাবুর আম্মুর সাথে হসপিটাল এমনকি কুমিল্লা শহর পুরোটা ঘুরে এসেছে।’

‘ওটা তোমার বাবুর আম্মু ছিলো। আমি তো ওকে চিনিও না। শুধু দূর থেকে দেখেছি আর তোমাকে স্মরণ করেছি। আর আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই যে আমি ডেটে যাবো।’

‘শশী কে?’

‘ছ..ছোট বোন।’

‘তার মানে শশীর বড় বোনের সাথে প্রেম! জানতাম এমনটাই হবে। দু’টোর অবস্থাই, চোরা চোরা বাট পুলিশ,পুলিশ ভাব নিয়ে ঘুরাফেরা । ওই সেরিনকে বিয়ে করিস না ভাই। ভালোর জন্য বলছি ও নাহলে তোর লাইফ টাকে বরবাদ করে দিবে। নেতা গিরি এক অপমানে ছুটিয়ে দিবে।’

‘কেনো তোমার প্রিন্সিপাল গিরি ও কী এক অপমানে ছুটিয়ে দিয়েছে?’

‘আমার কাছে ওর পাত্তা আছে নাকী? আর আমাকে সবাই রেসপেক্ট করে।’

‘একমাত্র ওই একরোখা মেয়েটা ছাড়া।’

শুভ্র ‘হ্যাঁ’ বোধকে মাথা নাড়ায়। আর্থ উচ্চস্বরে হেঁসে দেয়। শুভ্রর হাতে চাপড় মেরে বলে,
‘ক্যারি অন।’

আর্থ চলে যেতে শুভ্র ও নিজের রুমে চলে যায়।
সন্ধ্যায় শুভ্র কাবাড থেকে একটা বড় ফটো এলবাম বের করে তার আম্মুর। নজরকারা হাসিতে চোখ ভোলায় শুভ্র। কোন একসময় তার আম্মু ছিলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সুন্দরী রমণী। ভাগ্য সহায় হয়নি তাই তো অল্পতেই মৃ’ত্যুবরণ করলো। শুভ্র জানে তার মায়ের মৃ’ত্যুর পেছনে এই চার দেওয়ালে থাকা কারোর না কারোর হাত আছে। তার মায়ের খু’নিদের খোঁজ পেলে কাউকেই ছাড়বে না শুভ্র।

ছবিটা বুকে জড়িয়ে বেলকনিতে যায় শুভ্র। সেখান থেকে স্পষ্ট তার মায়ের ক’বর দেখা যাচ্ছে। আজকের সন্ধ্যাটা একটু অন্যরকম। আকাশে সুন্দর চাঁদের আলো
জ্বলমল করছে। শুভ্রর তৃষ্ণা পায় খুব বেশী! কাউকে মা’রার তৃষ্ণা।

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৭

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৭|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। শশী আর্থর প্রেম জমে ক্ষীর। শুভ্র আর বলেনি সেরিন যে এতোদিন সবাইকে বোকা বানিয়েছিলো। কেন বলেনি কারণটাও শুভ্রর অজানা। শুধু সেরিনের ইস্টুপিট মার্কা কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে সে। সময়টা ভোর। শুভ্র নামাজ আদায় করে বাইরে হাঁটতে বের হয়। সাথে আর্থ ও আছে। তারা কলেজের পুরো মাঠ চত্বর দিয়ে পেছনের বিশাল দীঘির পাড়ে যায়। দুই ভাই সকালের শীতল বাতাস উপভোগ করে বাড়ী ফিরে।

নাস্তা করে রেডি হয়ে নেয় শুভ্র। আজকে সে কলেজের কিছু কাজে কুমিল্লা যাবে। আর্থ ও নাকী কুমিল্লা যাবে। তবে আর্থ লেট করে যাবে। শুভ্র নিজের সময় মতো বেড়িয়ে পড়ে।

আর্থ কাবাড থেকে নিজের পোষাক নামিয়ে নেয়। আজকে শসীর সাথে মিট করবে। সাথে তার বোন আর দু’জন ফ্রেন্ড আসবে। সেদিন শশীকে বকা দিয়ে কড়া কথা শোনালেও পরে সব ঠিক করে নেয় আর্থ। আর যাই হোক মেয়েটাকে সে ভালোবাসে।

শশী,সেরিন,সিনহা,নিশাত তারা সবাই বাজারে এসে একসাথ হয়। সেরিন,নিশাত তারা শুভ্রর কলেজের ইউনিফর্ম পড়া। শশী তাদের কলেজের। তবে সেরিন ভয়ে আছে একবার কমপ্লেন গেলে জামেলা হবে। শুভ্রর যা কড়া রুলস তার কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়া যাবে না। আর না টিকটক করা যাবে। যদিও সেরিন টিকটক চালায় না। আর্থ ও কিছু বলতে পারবে না কারণ বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে তারই সন্মান যাবে। কী এক রাজনীতিতে ঢুকেছে যে প্রেমটাও শান্তিতে করতে পারে না।

যথা সময়ে তারা কুমিল্লায় ধর্ম সাগর নগর উদ্যান গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তারা একটা জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ায়। সেরিন নিশাতকে নিয়ে অন্য সাইডে যায় পিক তোলার জন্য। আর্থ আসতে শশী সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেরিন পাটওয়ারী নাম শুনতে তার ভাই শুভ্রর কথা মনে পড়ে। শুভ্রর বাবুর আম্মুর সাথে আর্থর দেখা হয়ে গেলো। যদিও কিছু বলছে না আর্থ। বাড়ী গিয়ে তার ভাইকে পচানো যাবে। ধর্মসাগর পাড়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে,পিকচার, ভিডিও করে তারা মেইন শহরে যায়। সেখানের একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। আর্থ প্রবেশ করতে দেখে শুভ্র সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তার সাথে কয়েকজন টিচারের সাথে। শুভ্রকে একদম আশা করেনি সেরিন আর নিশাত। সেরিন দো’আ দুরুদ পড়ার আগে শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে নেয়। নিশাত সেরিনকে টেনে টুনে বাইরে নিয়ে আসে। শশী থাকলে সমস্যা হবে না কারণ তাঁদের কলেজ ভিন্ন সাথে আর্থ আছে। সেরিন আর নিশাত ধরা খেলে সমস্যা আছে।

আর্থ শশীকে ইশারা করে আগে চলে যেতে। শসী সিনহার হাত ধরে আগে চলে যায়। আর্থ কিছুটা ভাব নিয়ে শুভ্রর কাছে যায়। আর্থকে দেখে শুভ্র বলে,

‘তুই এখানে? কী করে জানলি আমিও এখানে আসবো আজকে।’

‘তেমন কিছু না আসলে…

‘আসলে কী?’

‘অন্য রেস্টুরেন্ট নেই? এটাতে কেনো সবসময় আসো?’

আর্থর কথায় শুভ্র অবাক হয়ে তাকায়। সে যতবার কুমিল্লায় আসে ততোবার এই রেস্টুরেন্টে আসে। এমনকি আর্থ ও মাঝেমধ্যে আসে। রিভিউ ও ভালোই দেয়। তখন শুভ্র শুধায়,
‘এটাতে আসলে সমস্যা কোথায়?’

‘একদম বাজে খাবার এই রেস্টুরেন্টের। ভাই হয়ে কীভাবে ভাইকে জেনেশুনে বাজে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারি?’

তখন সেই রেস্টুরেন্টের ম্যানাজার আসে। শুভ্রকে চেনে আর্থকেও মোটামুটি চেনে। তাঁদের রেস্টুরেন্টের নামে বাজে রিভিউ শুনে কিছুটা রেগে যায় ম্যানাজার।

‘শুভ্র স্যার আর্থ স্যার এসব কী বলছে? আমাদের রেস্টুরেন্টের খাবার একদম ফ্রেশ। কোন ভেজাল নেই।’

তখন আর্থ শুধায়,
‘আমি তো বলিনি ভেজাল আছে খাবারে। আমি বলেছি রান্না ভালো না। বাবুর্চি চেন্জ করা উচিত।’

আর্থর কথায় শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তার কাছে আর্থকে চোর, চোর লাগছে। লাইক আর্থর অবস্থা চোরের মনে পুলিশ,পুলিশ। আর্থ আমতাআমতা করে বলে,
‘বাবুর্চি টা চেন্জ করে নিয়েন। ভাইয়া চলো অন্য রেস্টুরেন্টে খাবে আজকে।’

‘আমাদের খাওয়া শেষ এখন কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হবো।’

‘ওহ্, তাহলে যাও।’

শুভ্র আর কথা বাড়ায়না। তার সাথের টিচার দুজনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুভ্র যেতে আর্থ জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।

ওইদিকে শসী আর তার বান্ধবী সিনহা বসে আছে। আর্থ যেভাবে বলছিলো না জানি আজকে রেস্টুরেন্ট বন্ধের ব্যবস্থা করে দেয়। কী জানি কী জামেলায় পড়লো। শশীর মনে হচ্ছে আর্থ সেরিনের দলেরই একজন। যে যেখানেই যাবে ভেজাল আর বাঁশ ফ্রিতে খাবেই খাবে।

সেরিন নিশাতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের থেকে এক মাইল দূরে চলে আসে। তার রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আর মুড নেই। শশী কল দিয়ে যাচ্ছে সেরিন কল তুলছে না। তার তো রাগে মাথা ব্যথাই শুরু হয়ে গেছে।

‘কেন? কেন ভাই সব কিছুতে এই শুভ্রর হাতেই আমি হাতে নাতে ধরা খাইই.. ধরা খেতে যাই। এই লোকটা মোটেও সুবিধার না।’

নিশাতকে বলে সেরিন। তখন নিশাত শুধায়,
‘জানি না ভাই। আমরা যা আজা ইরা কাজকর্ম করি। শুভ্র স্যারের হাতে ধরা খাই বা খাইতে,খাইতে বেচে যাই। না জানি বাকী দেড় বছরে আরো কত হাজার বাঁশ খাই।’

‘বইন আমার মাথা ব্যথা করে। প্লিজ চল চলে যাই।’

‘আমার তো বুক ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আর রিস্ক নিতে চাই না।’

নিশাত, সেরিন বাড়ীর জন্য রওনা হয়। ফোন কভারে বেশী টাকা নেই। তাই তারা লোকাল বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাস স্টেশন থেকে বাসে উঠে দাউদকান্দির। বাসের সীটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে সেরিন। শশীর কল রিসিভ হতে সেরিন বলে,
‘আমি বাসে আছি। বাড়ীতে চলে গেলাম।তুই তাড়াতাড়ি চলে আসিস।’

‘কিন্তু তুই চলে যাচ্ছিস কেন?’

‘শুভ্র স্যার একবার জানতে পারলে খবর করবে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছেলে নিয়ে কুমিল্লা। তারউপর ভাইয়ার কাছে বিচার দিলে সেটা বাবার কানে তুলে দিবে। আর বেডার যা ভয়েস একটা ধমক দিলে আমি সেরিন সেখানে কাত।’

‘তোর অভিযোগের শেষ নাই। আসলে তোর কপালে বাঁশ আর বাঁশ এবং বাঁশ ছাড়া কিছুই নেই।’

শশী কল কেটে দেয়। সেরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বাস ছাড়ার সময় হতে কোথা থেকে শুভ্র বাসে উঠে। শুভ্রকে দেখে নিশাত সেরিনকে ধাক্কা দিয়ে দেখায়। সেরিন এবার পারছে না শুভ্রকে ধাক্কা মেরে বাস থেকে ফেলে দেয়। তাড়াতাড়ি গলায় ঝুলানো হিজাব ওরনা দিয়ে বড় করে গোমটা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। নিশাত ফোনে কথা বলার ভান ধরে মুখ ঢেকে রেখেছে।

শুভ্র সেরিনদের পেছনের সীটে বসে। শুভ্র খুব একটা লোকাল বাসে আসে না। তবে মাঝেমধ্যে আসে। তার কলেজে স্টুডেন্ট আবার কলেজের নাম করে কলেজ ইউনিফর্ম পরিধান করে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কুমিল্লায় ঘুরতে আসে কীনা। যদিও এর আগে দু’চার জন ধরা পড়েছে।

সেরিন তো নিশাতের সাথে বলতে শুরু করে,
‘ভাই আমি কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চলে আসবো। এই শুভ্র স্যার দেখি আঠার মতো পেছনে পড়ে আছে।’

‘বুঝিনা ওনার সাথেই কেন আমাদের দেখা হয়। এনার কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমরা যেখানে যাই সেখানে ওনার ও যাওয়া লাগে?’

‘ভালোয়,ভালোয় বাড়ী যাই। আমাদের জন্য বাইরে বের হওয়া মানে বাঁশ। সেখানে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কখনো ঘুরতে আসার স্বপ্ন তো স্বপ্নই।’

সেরিনের ভয়েস শুনেই শুভ্র চিনে ফেলে। ভাগ্যিস ওদের কথা বলার সময় হুশ থাকে না। নাহলে শুভ্র কখনো ওদের চালাকি ধরতে পারতো না। শুভ্র ভাবছে কীভাবে সেরিনকে ডেকে নিয়ে আচ্ছা মতো ধোলাই দেওয়া যায়। মেয়েটা এতো আজা ইরা কেন? আর সবসময় তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে কেন? শুভ্র কী তার পাকা ধানে মই দিয়েছে? একদম না। তাহলে মেয়েটার তার প্রতি এতো ক্ষোভ কেন?

দাউদকান্দি আসতে কোন রকম বাস থেকে এক প্রকাশ তড়িঘড়িতে নেমে পড়ে সেরিন,নিশাত। তাদের পেছন দিয়ে শুভ্র ও আস্তে ধীরে নামে। বাস থেকে নেমে বাড়ীর জন্য সিএনজি ধরবে দু’জন। তখন আবার শুভ্র ও আসে সিএনজি স্টেশনে। সেরিন তাকে দেখে আমতাআমতা করে বলে,

‘আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি এখানে?’

শুভ্র একবার সেরিনের দিকে তাকায়। অন্য দিকে নজর সরিয়ে নেয়। সেরিনের ঠোঁটের কোণের কৃত্রিম হাসি মূহুর্তে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সেরিন আবারো বলে,

‘স্যার আমরা আমরা আসি তাহলে।’

কথাটা বলে নিশাতের হাত ধরে সিএনজিতে উঠে পড়ে। সেরিনের এমন ভয় আর্থর চমকানো আবার তারা কুমিল্লায় একসাথে!ব্যপারটা শুভ্রকে ভাবাচ্ছে। এমনটা নয়তো সেরিন নিজেই আর্থর সাথে প্রেম করছে শশীর নাম বেচে?

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৬

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৬|
#শার্লিন_হাসান

-আরে বা’ল…..

সেরিন তাকিয়ে দেখে শুভ্র তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। সেরিন চোখ মুখ কচলে পুনরায় তাকায়। না সত্যি এটা জ্বীন না আরজিনই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে আসলো কখন? কীভাবে? নিশাত সেরিনের দিকে চোখ পাকাচ্ছে। তাঁদের আবার কথা বলতে গেলে হুঁশ থাকে না। আশে-পাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে।

তখন শুভ্র বলে,
-দু’জনে দাঁড়াও।

সেরিন নিশাত দু’জনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তখন শুভ্র কন্ঠস্বর উঁচু করে বলে,
‘ক্লাসে আসো প্রেমালাপ করার জন্য? আমি এখানে এসেছি আমায় চোখে পড়ে না? বেয়া’দব দু’টো। পড়ালেখা তো নেই তার উপর ক্লাসে ডিস্টার্ব করে। স্যার যারা এদের দু’জনের মতো ক্লাসে এসে কথা বলবে, ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করবে এঁদেরকে সামনে নিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন।

শুভ্র থেমে বলে,
সীট ডাউন!’

রাগে সেরিনের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। এমনিতে ওইদিকে কী হলো না হলে সেই চিন্তায় শেষ তারউপর এমন অপমান। নিশাত বসতে,বসতে দশবিশটা গা’লি শুভ্রকে দান করেছে। সেই সাথে কঠোর অভিশাপ! সেরিন মনে, মনে একশটা গা’লি দিয়েছে সেই সাথে অভিশাপ।
‘ দোআ দিলাম তোর বাবু হলে যাতে তোর বউ বাবুকে কোলে নিতে না দেয়। তোর বউ আস্ত ঝগড়ুটে হবে। এতো পরিমান বাচাল হবে যে তোর কান জ্বালা ফালা করে ফেলবে। শুধু তাইনা কথায়,কথায় উঠতে বসতে খোঁটা দিবে। শুধু খোটাই না। এতো রাগ করবে যে রাগ ভাঙাতে,ভাঙতে তোর জীবন লুজ হয়ে যাবে। এতো তেজ থাকবে না ভাই।’

শুভ্র তখন তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে বলে। আগামী কাল থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে রিহার্সাল করানো হবে। এবং যারা গান গাইতে পারে তারা জেনো গানের তালিকায় নাম দেয়।

শুভ্রর সাথে দু’জন টিচার এসেছে। তাঁদের নিয়ে শুভ্র কমার্সের রুমে যায়।
সেরিন নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন নিশাত সেরিনকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,
‘এতো তেজ দেখিয়ে লাভ নেই সেই বউয়ের কাছে গেলে বনের সিংহ ও বিড়াল হয়ে যায়।’

‘এই শা’লা জীবনেও বিড়াল হবে না। সিংহ সিংহের মতোই থাকবে।’

সেরিনদের ক্লাস শেষ হতে তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতির টিচার একজন স্যার আর একজন ম্যাম আসে নাম নেওয়ার জন্য। নিশাত সেরিনকে ঠেলছে নাম দেওয়ার জন্য। সেরিনের মুড নেই এসবে। কিন্তু সেরিন খুব ভালো গায়। ফেসবুকে তার ভালো একটা ফ্যানবেজ রয়েছে। নিশাতের জোড়াজুড়িতে সেরিন নাম লেখায়।

*******

আর্থ শসীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা অনেকেরই চোখে পড়েছে। আপাতত মেয়েরা পারছে না শসীকে সরিয়ে নিজেরা শসীর জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে। আর্থ চৌধুরীর ব্যবহার প্লাস এট্টিটিউড সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে। বেশীরভাগ তার সুন্দর হাসির প্রেমে পড়েছে। শসীও তার ব্যতিক্রম নয়। শসীর এতো বেশী আফসোস হচ্ছে যে ক্রাশকে সামনে পেয়েও কথা বলতে পারছে না। ওইদিকে অনেক মেয়েরা ছবি তুলছে অথচ তারা ছবি তুলতে পারছে না। সিনহার হাত খামচে ধরে শসী। আস্তে করে বলে,

‘চল পিকচার তুলবো। আই হোপ না করবে না।’

‘আচ্ছা চল।’

সিনহা,শসী আর্থর দিকে এগিয়ে যায়। আর্থ শসীকে এগিয়ে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হয়ত চিনে এতো মানুষ দেখে কিছুটা আনইজি ফিল করছে। যাই হোক আর্থর জন্য ভালোই হয়েছে। সে কখনো পাবলিক করবে না প্রেমের কথা। শসী সিনহা আর্থর সামনে যায়। শসী সাহস করে বলেই ফেলে,

‘ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন একটা পিকচার তুলবো।’

‘ভাইয়া?’

আর্থর কথায় বাকীরা তাকায়। শসী মনে,মনে বলে,
‘ভাইয়া না সাইয়্যা বানাবো আপনায়।প্লিজ আসুন,আসুন বলুন ‘ শসী ডু ইউ লাভ মি? উইল ইউ ম্যারি মি। সেটা তো আর বলবেন না। আবার মনে, মনে আশাও রাখেন ভাইয়া না সাইয়্যা হওয়ার। জানি শসী সুন্দরী ভালো না লাগার কিছু নেই।’

‘হ্যাঁ পিকচার নিতে পারেন।’

আর্থর কথায় শসী সেলফি নেয়। ক্রাশের সাথে পিকচার শসী আজকে ভীষণ খুশি। সেরিনকে বাড়ী গিয়ে খবরটা দিতে হতে। আর্থ শসীর মুখের দিকে আরেকবার তাকায়। মেয়েটার হাসিটাও সুন্দর। কিন্তু শসী তো আজকে অনেক বেশী বকা খাবে আর্থর থেকে। আর্থ মনে,মনে ঠিক করে নেয় গাড়ীতে বসেই মেসেজ দিবে।

বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনের কাজ শেষ করে তারা ব্যাক করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে। আর্থ গাড়ীতে বসেই মেসেজ দেয় শসীকে।

‘তুমি আমাকে চিনতে পারোনি? এমন রিয়েকশন দেওয়ার কী আছে? আমি কে? তোমার ফিউচার বর! এই আশেপাশে ছেলে দেখে ঢং করেছো? আমাকে আর ভালো লাগে না? ওই ছেলেদের ভালো লেগে গেছে?’

মেসেজ গেলেও সীন হয়নি। আর্থ থামেনি তার রাগ লাগছে। পুনরায় লিখে,
‘ছেলেদের দিকে তাকিয়েছো নাকী আমার দিকে? এরপর এমন দেখলে না ডিরেক্ট বিয়ে করে চশমায় আমার ছবি লাগিয়ে চোখে জুলিয়ে দেবো। যাতে ডানে,বামে,উপরে,নিচে যেদিকে তাকাও আমাকেই দেখতে পাও। ইউ ক্যান ইমাজিন? আমাদের হুট করে দেখা হলো তাও তুমি খুশি হওনি?’

বাড়ীতে এসে আর্থ মুখ একটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। শুভ্র তার কাছে এসবে বসে। আর্থর মুখ দেখে বলে,
‘গার্লফ্রেন্ড ব্রেকআপ করে নিয়েছে নাকী?’

‘না। মেসেজ সীন করছে না।’

‘যদি ফেইক হয় মেয়েটা?’

‘ফেইক হবে কেন? ওর সাথে আজকে দেখাও হয়েছে।’

‘সেটা না! যদি যার সাথে প্রেম করছিস সে জানে না অথচ তার হয়ে আরেকজন কথা বলছে তোর সাথে।’

‘বললেও লাভ হবে না। আমি সেই একজনকে ভালোবাসি। প্রয়োজন সেই একজনকে গিয়ে প্রপোজ দেবো।’

‘নেতা সাহেব প্রেমে পড়ে বাচ্চা ছেলে হয়ে গেলো। তার মেয়ে ফ্যানরা শোনলে ওই সেরিনের খবর আছে।’

‘ভাবীর খবর হবে কেন?’

‘ভাবী কী হ্যাঁ? ও আমার বিয়ে করা বউ নাকী যে তুই ভাবী উপাধি দিচ্ছিস?

‘সে একই! চিঠি তো সেই দিলো আর তুমি আমায় আর আমার বাবুর আম্মুকে দোষ দাও।’

‘নাহ্! ও চিঠি দেয়নি। চিঠি কে দিয়েছে সেটাও জানি না। তবে যে দিয়েছে চালাকি করেই দিয়েছে। কারণ প্রথম চিঠিটা আমার নামে আসলেও পরের চিঠিটা তোর আর আমার নাম মিলিয়ে। এই দাউদকান্দি উপজেলায় এমন কেউ নেই যে আমাদের নাম জানে না। সবাই জানে চৌধুরীদের দুই ছেলে। আরজিন চৌধুরী শুভ্র আর আরফিন চৌধুরী আর্থ। মেয়েটা প্রচুর চালাক।’

‘চালাকি করে দেয়নি। মেয়েটা সত্যি হয়ত জানে না আমাদের নাম।’

‘সে যাই হোক চিঠুর মালিককে পেলে কষিয়ে কয়টা দিয়ে ভুল জায়গায় বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করার মানে বুঝিয়ে দেবো।’

****

আর্থর মেসেজ দেখে সেরিনের মাথায় হাত চলে যায়। সময়টা সন্ধ্যা গড়িয়ে। শসী আসে সেরিনের রুমে। তার হাতে ফোন আর সেই ফোনের স্ক্রিনে আর্থর আর তার ছবিটা জ্বলজ্বল করছে।

সেরিন শসীকে দেখে বলে,

‘বনু বসো একটা কথা বলার ছিলো।’

‘বল?

বসতে,বসতে বলে শসী। তখন সেরিন বলে,
‘আসলে তুমি তো আর্থ স্যারের উপর ক্রাশিত আইমিন প্রেম ভালোবাসা। তো ধরো আর্থ স্যার ও তোমায় লাভ করে।”‘

‘ইম্পসিবল। ও কখনো আমার মতো বাচ্চাকে লাভ করবে না।
‘গাধী আমি তোর থেকে একবছরের জুনিয়র। আমার কাছে কাবু হলে তোর কাছে হবে না?’

‘তার মানে আর্থর সাথে তুই প্রেম করছিস?’

‘না, আর্থ শসীকে ভালোবাসে আর আমি সেরিন যে শসী হয়ে আর্থকে ইমপ্রেস করেছি। এখন প্লিজ আইডি চেন্জ কর। তোর আইডি তুই নে আর আমায় উদ্ধার কর। এমনিতে একজনের কাছে ধরা খেয়ে গেছি।’

‘একদিনে দুই দু’টো খুশির খবর। সত্যি আর্থ আমায় ভালোবাসে?’

‘হ্যাঁ। শোন এবার তোর আইডি থেকে আমার গাওয়া গান ডিলিট করে দিস। আমার আইডিতে আমি পোস্ট দিবো। মানে আগের মতো সব ঠিকঠাক করে নিবো।’

শসী সেরিন যে যার আইডি লগ ইন করে নেয়। তখন সেরিন বলে,
‘রিসেন্ট মেসেজের রিপ্লাই তুই দিস।’

‘হ্যাঁ দিবো।’

শসী প্রস্থান করতে সেরিন হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার গাড় থেকে বোঝা নেমে গেছে। এখন আরকী! বাকী সব ছেড়ে নিজের ব্যস্ত লাইফে ফোকাস করতে হবে।

রাতে নিজের কাজ শেষ করে শুভ্র শসীর আইডি স্টক করে। কোন গানের ভিডিও নে আইডিতে। হয়ত সেরিন হিংসুটে মেয়েটাকে ব্লাকমেইল করে ডিলিট করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেরিন হিংসুটে হবে কেন? সেরিন কী তাকে পছন্দ করে নাকী? যা খুশি হোক শসী তার ছেট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড শুভ্র সেদিকে তাকানোর মতো কিছু নেই। নিজের লাইফ,কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।❤️‍🩹)

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৫

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৫|
#শার্লিন_হাসান

‘ভাইয়া তুমি এমন কেনো? জেঠুর কথা একটু পাত্তা দিলে কী হয়? রাগ করে থেকে লাভ আছে বলো?’

‘দেখো আর্থ এসব নিয়ে আমি কথা বাড়াতে চাই না। উনি আমার বাবা সন্মান করি উনাকে তবে উনার কিছু কাজকর্মের কারণে আমি ওনার প্রতি অসন্তষ্ট।’

‘আরে চলো পুরোনো কথা মনে রেখে কী হবে?’

আর্থ শুভ্রকে নিয়ে নিচে যায়৷ শুভ্র আসতে সবাই ডিনার করে নিজেদের রুমে চলে যায়। শুভ্র বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরে দৃষ্টি স্থির করে। ঠিক বাড়ীর বাউন্ডারির পাশে আরেকটা বাউন্ডারি দেওয়া। যেখানে একটা কব’র দেখা যাচ্ছে। শুভ্রর মায়ের কথা বেশ মনে পড়ছে। কতগুলো বছর কেটে গেলো মায়ের মুখ দেখে না। এই কঠোর মানুষটার ও খুব করে মন খারাপ হচ্ছে। কিছুক্ষণ বেলকনিতে থেকে রুমে চলে আসে শুভ্র। ফোন হাতে ফেসবুক স্ক্রোল করতে,করতে সেই মেয়েটার আইডির খোঁজ করে। হ্যাঁ আইডির নাম সিরাত পাটওয়ারী শসী। তখন আর্থর বলা ওর গার্লফ্রেন্ডের নামটাও মনে পড়ে। তাহলে কী দু’ভাই এক মেয়ের প্রেমেই পড়ে গেলো? শুভ্র তো শসীর ভয়েসের প্রেমে পড়েছে। কিন্তু এই শসী তো তার ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড। শুভ্রর সব তালগোল লাগছে। দেরী না করে শসীর আইডিতে মেনশন করা পেজে চলে যায়। যেটার নাম সেরিন এবং সিরাত দিয়ে খোলা। শুভ্র পেজটা ভালো করে স্ক্রোল করে। বিশেষ করে কমেন্ট আর রিয়েক্ট চোক দিয়ে সেরিন আইডিটা বের করে। এতটুকু শুভ্র ক্যাচ করতে পেরেছে যে, ‘সেরিনের পেজ ওটা। আর শুভ্র সেরিনের চাচাতো বোনে প্রেমে পড়েছে। ওরা দুই বোন গান আর নাচের ভিডিও বানিয়ে আপলোড দেয়।’

শুভ্র সেরিন নামের আইডিটা ভালো করে স্ক্রোল করে। যেটায় সেরিনের পিকচার আছে। সাথে শসীর পিকচার ও আছে। দু’জনকে দেখতে অনেকটা একরকম লাগে। তারউপর ম্যাচিং ড্রেসআপ চেনার উপায় নেই কে সেরিন আর কে শসী।

এখন শুভ্রকে চিঠি দিলো কে? প্রথম চিঠিটা ঠিক হলেও দ্বিতীয়টায় তালগোল পাকানো। আর্থ আর শুভ্র নামে! আচ্ছা চিঠি গুলো সেরিনের বোন শসী দেয়নি তো? না,না! শসী তো শুভ্রকে চেনেই না।

শুভ্র কিছুক্ষণ মাথা খাটায়। সাত পাঁচ না ভেবে শসীর আইডিতে মেসেজ সেন্ড করে। মেসেজটা হলো,
‘মিসেস সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। নিজের নাম থাকতে আরেকজনের নাম দিয়ে আইডি চালিয়ে মানুষকে তো ভালোই বোকা বানাতে পারো।’

আর্থর সাথে মেসেজে কথা বলছিলো সেরিন। মেসেজ রিকুয়েষ্ট দেখে সেটা চেক দিয়ে দেখে ‘আরজিন চৌধুরী শুভ্র’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। সেরিন দেরী না করে মোেজ সীন করে। সাথে,সাথে তার মাথায় হাত চলে যায়। শুভ্র এত,এত চালাক কেনো? সেরিনের রাগ হয়। শুভ্রর মেসেজের রিপ্লাইয়ে বলে,

‘নতুন ভাষণের প্রিপেয়ার না দিয়ে আমার আইডির পরিচয় বের করতে নেমে পড়েছেন?’

‘আমার ভাইকে তো ঠিকই বোকা বানালে। তা আইডি কয়টা তোমার?’

‘আজ্ঞে এই একটাই আইডি আমার।’

‘এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসে তোমার মাথায়? সিরাত পাটওয়ারী শসী আইডি তুমি চালাও। সেরিন পাটওয়ারী মিশাত আইডি তোমার বোন শসী চালায়। এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কীভাবে?’

‘ওটা এক্সট্রা নলেজ। আসলে আইডির নাম অদলবদল করার পেছনে কারণ আছে।’

‘কী কারণ?’

‘আমার বোন নেতার উপর উ’ষ্ঠা খেয়েছে। এখন নেতাকে ইমপ্রেস করে দেওয়ার জন্যই আইডির নাম চেন্জ। এনি ওয়ে আপনার ভাই কাত হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আমার বোনকে সারপ্রাইজ দেওয়া বাকী আমার।’

‘নোবেল পাবা তুমি। এসব ফাল’তু ব্যপারে এতো মনোযোগী না হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হও তাহলে লাইফে কিছু করতে পারবা।’

‘শা’লা সব মিস গেলেি তোর ভাষণ মিস যাবে না। তোরে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এই ব্যপারটা কেমন সেটার ব্যখ্যা দিতে। যত্তসব!’

মনে,মনে কথাগুলো বলে সেরিন। কী রিপ্লাই করবে বেবে পাচ্ছে না সে। শুভ্রর কাছে তো হাতেনাতে ধরা খেলো। এখন সুন্দর ভাবে শসীকে সবটা বুঝিয়ে আইডি হাতে ধরিয়ে দিতে পারলেই হলো। একবার ধরা খেয়েছে তো দ্বিতীয় বার না খেলেই হলো। নাহলে এই লোক তাকে এক তুড়িতে বৃন্দাবন দেখিয়ে দিবে। সেরিন নেট অফ করে সুন্দর ভাবে অফলাইন হয়ে যায়।

শুভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। ধরা খেয়ে সেরিনের মুখটা কেমন হয়েছিলো দেখার শখ জাগে।

*******

‘কুমিল্লা মুরাদনগর বরুড়া দাউদকান্দি উপজেলার এমপি আরফিন চৌধুরী শুভ। তারই উপজেলায় নতুন একটা বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনে যাবে। তার সাথে যাবে তার ছোট ভাই আয়মান চৌধুরী এবং তার ছোট ছেলে আর্থ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সময় মতো বেড়িয়ে পড়ে।

শসীর কলেজের পাশেই বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধন করা হবে আজকে। সেজন্য কিছুটা ডেকোরেশন করা হবে। কলেজের কয়েকজন স্টুডেন্ট সেসব ডেকোরেশনের কাজে অংশগ্রহণ করে। শসীও তার কয়েকজন ব্যাচম্যাটদের সাথে আছে।

যেহেতু এমপি আসবে সেহেতু একটু ভীড় জমেছে সেখানে। আরফিন চৌধুরী, আয়মান চৌধুরী এবং আর্থ তারা গেট দিয়ে প্রবেশ করে। আর্থকে দেখে তো অনেক মেয়েরা বেজায় খুশি। তাঁদের ক্রাশ তাঁদের কলেজে পদার্পণ করেছে। আর্থ এদিক সেদিন চোখ ভোলায়। বৃদ্ধাশ্রমের গেটে দিয়ে প্রবেশ করতে তার চোখ যায় শসীর দিকে। শসী তার মতো ব্যস্ত। আর্থকে খেয়াল করেনি সে। সে জানে আর্থ তার ক্রাশ তাই বলে বাকী মেয়েদের মতো চোখ দিয়ে গিলে কাবে নাকী? আর্থ শসীর দিকে তাকিয়ে রয়। হ্যাঁ আকাশের বুকে শসীর থেকে কোন অংশে কম নয় এই শসী। শসী তার বেস্টফ্রেন্ড সিনহার সাথে কথা বলছে। ভীড়ের থেকে আড়াল হওয়ার জন্য কিছুটা সরে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে উদ্বোধন কাজ সমাপ্ত করে আরফিন চৌধুরী বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধদের সাথে দেখা করার জন্য উপরের ফ্লোরে যায়। বৃদ্ধাশ্রমের কাজ সমাপ্ত হতে বৃদ্ধদের নিয়ে আসা হয়। তবে ব্যস্ততার জন্য উদ্বোধন করতে লেট হয়ে যায়। এমপি স্যারকে নিয়ে অনেকে ব্যস্ত। তবে আর্থ তার জেঠু আী চাচ্চুর সাথে উপরে যায়নি। সে এখানে থাকে্ তার সাথে তাদের বিশ্বাস্ত কয়েকজন আছে। শসী আর্থর দিকে নজর পড়তে দেখে আর্থ তার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘আহারে এভাবে তাকিয়ে থেকে কী লাভ? ইমপ্রেস হইলি না। ইমপ্রেস হলে ঠিকই এখন হাই হ্যালো দিয়ে আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে নতুন করে ইন্ট্রডিউস করুয়ে দিতাম। তাঁদের জিজু হিসাবে।’

আর্থর মাথায় ক্যাচ করছে না শসী তাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলো না কেন? এমন অচেনার মতো থাকছে কেন?

*******

কলেজে এসে নিশাতের থেকে সেরিন জানতে পারে আজকে আর্থরা শসীদের কলেজে যাবে। এটা শোনার পর সেরিনের মনে কালো মেঘে ঢেকে গেছে। তার সব প্লানিং আজকের ঠেলায় শেষ। ক্লাস রুমে বসে চিন্তায় মাথা নুইয়ে পড়েছে ব্যাগের সাথে। না জানি আর্থ তাকে চিট, ফাল’তু বলে অপমান করে। শুভ্র যদি আর্থর কাছে তার নামে এতো বড় লিস্ট দেয়। তাহলে কী হবে?

‘শসী রে তোর ভবিষ্যত আলোকিত করতে গিয়ে মনে হয় আমার ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে।’

সেরিনের অবস্থা দেখে নিশাত ওকে ঠেলে। সেরিন সেভাবে ল্যাটকা মেরে পড়ে আছে। তখন নিশাত বলে,

-আর্থ স্যার সেই কলেজে গেছে শোনার পর তোর অবস্থা এমন কেন? এই তুই আবার টেম্পু চালাচ্ছিস না তো? আর্থ স্যারকে মেয়েরা দেখবে সেজন্য তোর মুড অফ?

-একদম টিক ধরেছিস মাথা মোটা একটা। আমার বয়ে গেছে ওনাকে মেয়েরা দেখবে আর সেজন্য মুড অফ করে রাখতে।’

-তো কী হয়েছে বলবি তো?

-আরে বা’ল…..

সেরিন তাকিয়ে দেখে শুভ্র তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। সেরিন চোখ মুখ কচলে পুনরায় তাকায়। না সত্যি এটা জ্বীন না আরজিনই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে আসলো কখন? কীভাবে? নিশাত সেরিনের দিকে চোখ পাকাচ্ছে। তাঁদের আবার কথা বলতে গেলে হুঁশ থাকে না। আশে-পাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে।

তখন শুভ্র বলে,
-দু’জনে দাঁড়াও।

#চলবে

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-৪

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৪|
#শার্লিন_হাসান

শুভ্র আর্থর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে। পারছে না এখানে কয়েক গা লাগিয়ে দেয়। আর্থকে বাঁশ দিতে এসে সে নিজেই কীভাবে বাঁশ খেয়ে গেলো? আরজিন চৌধুরী শুভ্রকে সবাই ভয় পায় আর এখানে তার ভাই তার সন্মান নিয়ে ফুটবল খেলে। একটুও ভয় পায়না তাকে। শুভ্রর লাজুক আর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রথমে তৃপ্তি হাসে আর্থ। পরক্ষণে রাগের কথা ভেবে একটা ঢোক গিলে। শুভ্রর রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তার। এক সপ্তাহের জন্য শুভ্রর থেকে গা ঢাকা দিতে হবে তাকে।

তখন সুলতানা খানম একজন সার্ভেন্ট কে বলে মিষ্টি নিয়ে আসতে। শুভ্র, আর্থ দু’জনেই তাকিয়ে আছে। আর্থ তখন আমতা,আমতা করে বলে,

‘মিষ্টি খাওয়ার কী আছে এখন? ও ওই টা তো বলেছি দেখে হ হয়ে গেলো নাকী?’

তখন আয়মান চৌধুরী শুধায়,
‘কেন এখন আবার কী হলো? তুমি মিনমিন করে কী বলছো? তুমি খুশি হওনি চাচ্চু হবা?’

‘না একদমই হইনি। আসলে শুভ্রর বউ প্রেগন্যান্ট হলে তো খুশি হতাম চাচা হবো। ধুর! শুভ্র ভাই মাফ করে দে। কথাটা বলার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি।’

মনে,মনে কথা গুলো বলে আর্থ। তখন সার্ভেন্ট মিস্টি আনতে সুলতানা খানম শুভ্রকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। আর্থকে খাওয়াতে যাবে তখন আর্থ বলে,

‘এখন আমি মিষ্টি খাবো না। বমি আসবে….’

আর্থর কথার মাঝে শুভ্র পোড়ন কেটে বলে,

‘তুই আবার প্রেগন্যান্ট নাকী আর্থ? বমি আসবে কেন?’

‘বমি আসবে কারণ আমার পেটে দানাপানি কিছুই নেই৷ মিষ্টি খেলে সুগার বেড়ে যাবে। এখনো বিয়েশাদি কিছুই করিনি।’

‘রুমে আসো আমি তোমায় বিয়ের জন্য প্রিপায়ার করছি।’

কথাটা বলে শুভ্র কাটা চামচ রেখে চলে যায় ভেতরে। আর্থ ও নয়ছয় করে কেটে পড়ে সেখান থেকে। মাঝখানে আয়মান চৌধুরী আর সুলতানা খানম তাঁদের যাওয়া দেখছে। পুরো কথাটা ক্লিয়ার করেনি তারা কেউই। তখন সুলতানা খানম বলেন,

‘ শুভ্রর বউকে তো নিয়ে আসতে হবে তাই না?’

‘সেরিন পাটওয়ারী আবার কে? তাকেই তো চিনি না।’

‘আর্থ মনে হয় না আর কিছু বলবে। আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে সেরিন পাটওয়ারীকে।’

‘ওদের আমি বিশ্বাস করি না এই ব্যপারে। যদি মিথ্য হয় তো?’

‘বাচ্চার কথা কেউ মিথ্যে বলে তোমার মনে হয়? ধুর! তুমি আজীবন সবকিছুতেই সন্দেহ করো। দুই চার লাইন সন্দেহ যোগ করো।’

কথাটা বলে সুলতানা খানম চলে যায়। আয়মান চৌধুরী সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়।

শুভ্র আর্থর রুমে যায়। হাতে তার কুশন। আর্থ শুভ্রকে দেখে বলে,

‘স্যরি ভাইয়া,স্যরি। ভেরি স্যরি!’

আর্থর কথার প্রতিত্তোরে শুভ্র বলে,

‘প্রেম তো করো দশটা। নিজের দোষ আমার গাড়ে চাপাও কেন? তোমার নামে চিঠি আসে তোমার বাবুর আম্মু দেয়। আর বাবুর আব্বু বানাও আমায়?’

‘আমার বাবুর আম্মু চিঠি দেয়না। তার সাথে তো ডেইলি কথা হয়।

‘সেরিন কে হুম? তুমি ওকে চেনো কী করে?’

‘তুমিও সেরিনকে চেনো ব্রো?’

‘না কোন সেরিনকে আমি চিনি না। তুমি কী করে জানলে চিঠি আমার কাছে আসে?’

‘আন্দাজি ঢিল ছুঁড়েছি। তবে খবর পেয়েছি সেরিন নামের একটা মেয়েকে তুমি বকাঝকা করেছো চিঠির জন্য।’

‘তো করবো না? আস্ত বে’য়াদব মেয়ে। বেয়া’দবের মতো চিঠি দেয় ‘শুভ্র স্যার তোমার বাবুর আম্মু হতে চাই।’ কেন আমি তাকে বাবুর আম্মু বানাবো কেন? আমি আমার বউকে বাবুর আম্মু বানাবো।’

‘মেয়েটাও দেখো! একনাম্বারের ঠোঁট কাটা।’

‘হ্যাঁ আসলেই।’

‘একে তো কলেজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত। তুমি ধমক দিয়ল বুঝাওনি তুমি একটা সিংহ। আমি বুঝিনা তোমার মতো এতো এট্টিটিউড, রাগী মানুষের ধারে কাছে এসব প্রস্তাব নিয়ে ঘেঁষার সাহস কী করে পায়?’

আর্থর কথায় শুভ্র জবাব দেয়না। আর্থ শুভ্রর সাথে তাল মিলিয়ে তার বকাঝকা,মা’রামারি র কথা ভুলিয়ে নিচ্ছে শুভ্রর মন থেকে। শুভ্র তখন বলে,

‘তোমার বাবুর আম্মুর নাম কী?’

‘সিরাত পাটওয়ারী শসী।’

শুভ্র প্রস্থান করে। শসী নামটা চেনা,চেনা লাগছে। কোথাও দেখেছে নাকী পড়েছে নামটা। মনে আসছে না তার। রুমে এসে শাওয়ারে ঢুকে যায় শুভ্র। মাথায় একটা নামই ঘুরঘুর করছে সেটা হলো, ‘আর্থর গার্লফ্রেন্ড সিরাত পাটওয়ারী শসী।’

আর্থ শসীর একটা পিকের দিকে তাকায়। এটা আকাশের শসী না জমিনে থাকা শসী। আকাশের শসীকেও জেনো হার মানাবে এই শসী। আসলেই যে যাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে তার কাছে সে মানুষটা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম মানুষ। ব্যস্ততার জন্য শসীর সাথে মিট করতে পারে না আর্থ।

******

সন্ধ্যায় আর্থর সাথে মেসেজে কথা বলছে সেরিন। তখন শসী আসে তার কাছে। তার মুড অফ। সেরিন জানে নেতার পেচনে লাইন লাগাতে,লাগাতে বেচারির অবস্থা খারাপ। তাও পাত্তা পাচ্ছে না। পাবে কী করে? নেতা তো ব্যস্ত মানুষ। শসীকে দেখে সেরিত বলে,

‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে জান।’

‘কী সারপ্রাইজ বনু?’

‘উহুম, সময় হলেই দেবো।’

‘আমার ক্রাশকে তো আর ইমপ্রেস করে দিতে পারলি না। কিসের আবার সারপ্রাইজ?’

‘ভাই আমাকে দেখে তোদের কোন এঙ্গেলে মনে হয় ছেলেদের ইমপ্রেস করার মতো টয়ালেন্ট আমার আছে? প্রেম করবি তুই,বিয়ে করবি তুই, বাবুর আম্মু হবি তুই আর ইমপ্রেস করবো আমি?’

‘এমন করিস না বোন প্লিজ! একটু তো হেল্প কর। কোনো কিছুই কাজে আসছে না। আমার সব প্লানিং বারবার ফ্লপ খাচ্ছে।’

‘এই মেয়ে! কিসের প্রেম হুম? পড়াশোনায় ফোকাস করো।’

‘ধুর পড়াশোনা তো করিই। তাই বলে পছন্দের মানুষকে
নিজের করবো না? আচ্ছা বনু আমি কী অসুন্দর?’

‘কী বলো এসব? আমার বনু একটা চাঁদ। আকাশের চাঁদটা মাটিতে এসেছে।’

‘তাহলে নেতা আমার জন্য ইমপ্রেস হচ্ছে না কেন?’

‘যা তো যা! এই নেতার কথা আর বলিস না। দুই মাস ধরে ঘ্যানঘ্যান শুনছি। বেডায় গিয়ে দেখ কোন মেয়ের পেছনে দৌড়াচ্ছে।’

‘এভাবে বলিস না প্লিজ।’

সেরিন আর কথা বাড়ায়না। শসীকে রেখেই মাহির রুমে চলে যায়। মাহি তখন ল্যাপটপে ব্যস্ত। সেরিনকে দেখে বলে,
‘শসীর কর হয়েছে রে?’

‘কিছু হয়নি।’

‘শুভ্র তোকে কিছু বলেছে?’

‘না কী বলবে? যা অপমান করার তো সেদিনই করে দিয়েছে। রসকষহীন মানুষ একটা।’

******

সন্ধ্যায় চৌধুরী পরিবারের সবাই লিভিং রুমে বসেছে। আর্থ, শুভ্র দুজনেই আছে। আয়মান চৌধুরীকে আর্থ বলে দিয়েছে ‘বাবুর আম্মুর’ ব্যপারটা মজা করে বলা। এখন শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী, শুভ্রর বিয়ে নিয়ে প্রসঙ্গ তুলতে চাচ্ছে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না। শুভ্র কী না কী বলে বসে।

‘আমাদের ছেলে মেয়েরা তো বড় হয়েছে, হচ্ছে। বয়স তো অনেক হলো এবার বিয়ে-শাদির ব্যপারে কিছু ভাবো?’

শুভ্রর দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আরফিন চৌধুরী। তখন আর্থ বলে,

‘হ্যাঁ অনেকদিন হলো বাড়ীতে বিয়ে-শাদির আমেজ নেই। ভাইয়ার বিয়েটা হলে মন্দ হয়না।’

মূহুর্তে শুভ্রর মুখ কঠিন রুপ ধারন করে। আরফিন চৌধুরী যেনো এই কথাটাই বলতে চাচ্ছেন। কী সুন্দর ভাবে আর্থ বুঝে গেলো তার মনের কথা এমনকি বলেও দিলো। এই জন্যই আরফিন চৌধুরী আর্থকে একটু বেশী আদর স্নেহ করেন। তখন শুভ্র কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়,

‘এখন বিয়ে নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না। আমি একটা প্রফেসনে ঢুকেছি কয়েকমাস হলো। এখন কেউ বলবে না টাকা পয়সার অভাব নেই। থাকুক টাকা! আমি এখন বউ পালতে পারবো না।’

তখন আর্থ শুধায়,
‘বউ পালতে হয়না ভাইয়া। আমরা কী ছোট শিশুর সাথে তোমায় বিয়ে দেবো? যে তোমায় বউ পালতে হবে। টাকা পয়সা নিয়ে এতো ভাবছো কেন? প্লিজ ভাইয়া বিয়েটা করো,প্লিজ,প্লিজ।’

‘আর্থর বিয়ে করার শখ বেশী। তাই আমি বলি তোমরা আর্থকে বিয়েটা করিয়ে দাও। শুধু,শুধু আমার বিয়ের আশায় বসে থেকে তো লাভ নেই। আমি এই ব্যপারে আর কোন কথা বলতে চাই না।’

কথাটা বলে শুভ্র আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি নিজের রুমে চলে যায়। এখন কেউ কিছু বললে হট্টগোল বাঁধবে। শুভ্রর যা গলা আর তেজ চিৎকার একটা দিলে হার্টের রোগীদের ডক্টর দেখানো লাগবে। এমনিতে আরফিন চৌধুরীর হার্টে একটু প্রবলেম আছে সেজন্য বেশী জোর দেননি তিনি।

বুয়া রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখে। আর্থ যায় শুভ্রকে আনার জন্য। জান্নাতুল ফেরদৌস আর সুলতানা খানম খাবার বাড়ছে। আরফিন চৌধুরী আর আয়মান চৌধুরী। তারা শুভ্র এবং আর্থর জন্য বসে অপেক্ষা করছে।

আর্থ শুভ্রর রুমে প্রবেশ করতে,করতে বলে,

‘বিয়েটা করে নেও না।তোমার তো আর গার্লফ্রেন্ড নেই। তোমার জন্য আমার বিয়েটাও হচ্ছে না গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও।’

‘বলেছি তো তোমায় বিয়ে করিয়ে দিতে। আমার জন্য বসে থেকে লাভ নেই।’

‘ভাইয়া তুমি এমন কেনো? জেঠুর কথা একটু পাত্তা দিলে কী হয়? রাগ করে থেকে লাভ আছে বলো?’

‘দেখো আর্থ এসব নিয়ে আমি কথা বাড়াতে চাই না। উনি আমার বাবা সন্মান করি উনাকে তবে উনার কিছু কাজকর্মের কারণে আমি ওনার প্রতি অসন্তষ্ট।’

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৩

0

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩|
#শার্লিন_হাসান

ঠাস করে দু’টো চ’ড় পরে যায় ছেলেটার গালে। শুভ্র কলার ধরে টেবিল থেকে বের করে এনে ছেলেটার গাড় বরাবর একটা লা’থি মারে।
চিৎকার করে বলে,

-আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কলেজে না চলবে র‍্যাগিং না চলবে গুন্ডামি, না চলবে রাজনীতি, না চলবে নেতাগিরি। এই কলেজে কোন রাজনীতি চলবে না। তোর নাম কী?

ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে। তখন একজন বলে,
-আকাশ।

বেশীরভাগ ছেলে সেরিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুভ্র আকাশকে ক্লাসের বাইরে বের করে দিয়ে বলে,

-একটু পর আমার পেছন দিয়ে আমার রুমে আসবি।

অল্প কিছু লেকচার দিয়ে শুভ্র প্রস্থান করে। ত্রস্ত পায়ে তিনতালা ছেড়ে পরের ভবনের সেকন্ড ফ্লোরে নিজের রুমে যায় শুভ্র। আকাশ তার পেছন দিয়ে আসছে। শুভ্রর সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র ভণিতা ছেড়ে বলে,
-শোনলাম মেয়েদেরকে র‍্যাগিং করিস।

আকাশ চুপ। তখন শুভ্র পুনরায় বলে,
-নেক্সট টাইম ক্যাম্পাসে,ক্লাসে ফোন নিয়ে আসবি না। আর না কোন মেয়েকে র‍্যাগ দিবি। ফাস্ট টাইম দেখে ছেড়ে দিলাম। সেকন্ড টাইম হলে ছেড়ে দেবো না কিন্তু। এখন ক্লাসে যা।

আকাশ মাথা নিচু করে ক্লাসে আসে। শুভ্র বসে,বসে কিছু পেপার্স দেখছে। পেপার্সের ভেতরে একটা চিরকুট পায়। তাতে লেখা,

“শুভ্র স্যার! সারাদিন তো রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকেন। এই যে বাবুর আম্মু আপনার উত্তরের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে খেয়াল রেখেছেন? কে বলেছে আপনি ম্যারিড হুম? আমি তো শুনেছি এমপি স্যারের ছোট ছেলে আরফান চৌধুরী শুভ্র আনম্যারিড। একদম মিথ্যে বলবেন না। বাবু হলে কোলে নিতে দেবো না কিন্তু।হুম!”

শুভ্র চিঠি পড়ে ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে চিঠিটা ভুলে তার কাছে আসছে না তো? হয়ত চিঠিটা তার ছোট ভাই আর্থর জন্য। মেয়েটা হয়ত আর্থর পুরো নাম জানে না। দুই ভাইয়ের নাম গুলিয়ে ফেলেছে। চিঠির ভাষা তো বলছে আর্থর জন্য এই চিঠি।

‘শুধু,শুধু সেরিনকে উল্টাপাল্টা বললাম। আহ্!কপাল ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়েরা পাগ’ল। পাগ’ল হয়ে চিঠি দেয় আর সেই চিঠি ভুলে বড় ভাইয়ের কাছে আসে। মনে হচ্ছে শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে ঢুকতে হবে। যদি একটা বউ কপালে জুটে।’

শুভ্র আগের দিনের চিরকুট আর আজকের চিরকুটটা পড়ে পুনরায়। কেনো জানি বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।

বাড়ীতে গিয়ে আর্থকে পেলে নিউজটা দিতে হবেই। শুভ্রর তর সইছে না।

*****

নিশাত, সেরিন ক্লাস শেষে বেড়িয়ে পড়ে বাড়ীর উদ্দেশ্য। গেটের সামনে থেকে রিকশায় উঠে দু’জন। চৌধুরী বাড়ীর সামনে লোকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। তখন নিশাত বলে,

-দেখ তোর ফিউচার শশুর বাড়ীতে কী ভীড়।

-যেভাবে বলছিস বিয়েটা মনে হয় ঠিক।

-শুভ্র স্যার কিন্তু সত্যিই অনেক হ্যান্ডসাম। তার এট্টিটিউড ভাই ফিদা হওয়ার মতো। যেই ধমক দেয় পুরো কলেজ ঠান্ডা। উনার থোতমাটাও সুন্দর। ঠিক তোর ফিউচার বাবুর আব্বুর মতো।

-ওনার এসব ধমকা ধমকি আমার পছন্দ হয়না।

-বেডায় ধমক না দিলে কলেজটা এতে সুন্দর চলতো না। দেখ ওনার চৌদ্দপুরুষ রাজনীতি করে। ওনাদের কলেজ, ওনার বাবা এমপি অথচ উনি ছাত্রলীগ,রাজনীতি কলেজে ঢুকতে দেয় না।

-সেটা তাঁদের ব্যপার।

-তোর কাছে কিছু বলেও দাম পাওয়া যায় না।

-পাবি কীভাবে? চিঠি দেয় একজন আর বকা খাই আমি। চিঠিটা কে দিয়েছিলো?

-থাক আর বলিস না। যে দিয়েছে নিশ্চিত স্যারকে পছন্দ করে আর স্যারের বুঝার ভুল।

-হয়ত। যাই হোক প্রেমপত্র না দিয়েও বেডার বকাঝকা খাই। বুঝতে হবে! অনেক কিছু তালগোল পাকানোর মতো।

-ভাই নিউটন, আইনস্টাইনের সূত্র বুঝা সহজ তোদের এসব প্যাচ বুঝার থেকে।

-মাঝেমধ্যে ভাবি আমার মাথার তাড় কয়টা ছিঁড়া? আগে ভাবতাম দু একটা এখন মনে হয় দুএকটা তাড় ঠিক আছে বাকী সবই ছেঁড়া।

নিশাত তাকায় সেরিনের দিকে। সেরিন তার বাড়ীর গেটের সামনে গাড়ী থামতে নেমে পড়ে। নিশাতকে বায় দিয়ে বাড়ীতে ঢুকতে তার ছোট আম্মু তুষি শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেয়। সেরিন শরবতের গ্লাস নিয়ে সোফায় বসতে,বসতে বলে,

-গতকাল সিরাতের সাথে চৌধুরী পরিবারের কারোর দেখা হয়নি?

-না ও আসতে,আসতে লেইট হয়ে গেছে তো তাই।

-সিরাতকে এই কলেজে দিলে কী এমন হতো? ওই কলেজে সারাদিন ধরে ক্লাস হয়।

-তখন তো এই কলেজের অবস্থা শোচনীয় ছিলো। প্রিন্সিপাল ছিলো না। একবছর হলো শুভ্র এসেছে।

-ওহ।

-হ্যাঁ যাও শাওয়ার নিয়ে আসো খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

সেরিন খালি গ্লাসটা রেখে নিজের রুমে চলে যায়।

*******

আর্থ বাড়ীতে ফিরে তার ছোট চাচ্চু আয়মান চৌধুরীর সাথে। আজকেও তারা কিছু কাজে গিয়েছিলো। তখন আয়মান চৌধুরীর ওয়াইফ সুলতানা খানম আসে শরবতের গ্লাস নিয়ে। আর্থ এবং আয়মান চৌধুরীকে দেয় শরবত। তাঁদের আসার পেছন দিয়ে শুভ্র আসে বাড়ীতে। আর্থকে দেখে শুভ্র বলে,

-ব্রো তাড়াতাড়ি রুমে আসো গুড নিউজ আছে।

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
-কী এমন গুড নিউজ শুভ্র?

-আর্থর বাবুর আম্মুকে পাওয়া গেছে।

শুভ্রর কথায় আর্থর কাশি উঠে যায়। আয়মান চৌধুরী শরবতে চুমুক দিতে গিয়েও দেয়নি। তখন একজন সার্ভেন্ট শুভ্রর শরবতের গ্লাস নিয়ে আসে। শুভ্র সেটা নিয় সোফায় বসে পড়ে। তখন আর্থ বলে,

-ওটা তোমার বাবুর আম্মু। শুধু,শুধু আমার গাড়ে দোষ চাপাও কেন? কী জেনো নাম ভাবীর? গতকালকে বকা দিলা! উমম সেরিন পাটওয়ারী।

আর্থর কথায় শুভ্র নিজেই শরবতের গ্লাস রেখে তার চাচ্চু আর কাকীমার দিকে তাকায়। তারা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। তখন সুলতানা খানম বলেন,

-কার মুখোশ কে উন্মোচন করছে?

তখন আর্থ বলে,
-ভাইয়া অনেকদিন ধরে ভেবেছে বাবুর আম্মুর কথা বলে দিবে তোমাদের। সাহস পাচ্ছে না তেমন। তো আজকে আমার কথা বলে বুঝাতে চেয়েছে তার কথা। কারণ বড় ভাইয়ার আগে তো ছোট ভাই বিয়ে করবে না।

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
– শুভ্র, তোমার বাবু কী দুনিয়ায় চলে এসেছে নাকী আসবে?

-আসবে মনে হয়। বাবুর আম্মুর আবার জেদ বেশী। বলেছে বাবুর আম্মুর কথা আর বাবু আসার কথা তোমাদের না বললে এভরশান করিয়ে ফেলবে।

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,

-এটা আগে বলে দিলেই হতো। আমরা কী কিছু বলতাম নাকী? শুধু,শুধু আমাদের বংশের বাতি নেভানোর কী আছে?

তখন আর্থ শুধায়,
– এখন চাচ্চু বলো,
‘মার্কা কী?
বাবুর বাবা।
ভোট দিয়েছে কে?
সেরিন পাটওয়ারী।
বাবা হবে কে?
শুভ্র চৌধুরী।
জিতেছে কে?
শুভ্র চৌধুরীই।’

এবার শুভ্র নিজেই কাশতে থাকে। শুভ্রকে কাশতে দেখে আর্থ বলে,

-ভাইয়া বাবুর আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করায় কী শরবত গলায় আটকে গেছে?

-শরবত গলায় আটকায় না আর্থ। আর কীসব বাবুর আম্মু আসবে কোথা থেকে?

-অস্বীকার করো কেন তুমি?

আয়মান চৌধুরী এবং সুলতানা খানম শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে। ঠোঁটে লাজুক হাসি। আয়মান চৌধুরী বিশ্বাস করে নেয় ব্যপারটা। সুলতাবা খানম খুশিতে শুভ্রর পাশে বসে শুভ্রর কপালে চুমু খায়৷

-বিয়ে করেছো বললেই হতো। বাবুর আম্মুকে আমরা দোয়া দিয়ে আসতাম গিফ্ট নিয়ে গিয়ে।

শুভ্র অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তার চাচা, চাচীর সামনে এসব বিষয় তার জন্য লজ্জার। কিন্তু আর্থর জন্য কিছুই না কারণ তার আয়মান চৌধুরীর সাথে চাচা ভাতিজার আগে বন্ধুর মতো সম্পর্ক। যার সম্পূর্ণ বিপরীত শুভ্র। সে বাবা,চাচাদের বন্ধু হিসাবে না গুরুজন হিসাবেই দেখে। আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলেন,

-বাবুর আম্মু সেরিনকে তাড়াতাড়ি চৌধুরী বাড়ীতে নিয়ে আসবো। আর্থ বাবুর নাম কী?

-এখনো বাবু আসেনি তো চাচ্চু। ফ্লাশব্যাক ভালোভাবে পড়ো। বাবু আসবে আর সেরিন পাটওয়ারী ভাইয়ার বাবুর আম্মু।

শুভ্র আর্থর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে। পারছে না এখানে কয়েক গা লাগিয়ে দেয়। আর্থকে বাঁশ দিতে এসে সে নিজেই কীভাবে বাঁশ খেয়ে গেলো? আরজিন চৌধুরী শুভ্রকে সবাই ভয় পায় আর এখানে তার ভাই তার সন্মান নিয়ে ফুটবল খেলে। একটুও ভয় পায়না তাকে। শুভ্রর লাজুক আর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রথমে তৃপ্তি হাসে আর্থ। পরক্ষণে রাগের কথা ভেবে একটা ঢোক গিলে। শুভ্রর রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তার। এক সপ্তাহের জন্য শুভ্রর থেকে গা ঢাকা দিতে হবে তাকে।

#চলবে