Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 276



যদি তুমি বলো পর্ব-৩০+৩১

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩০
আফনান লারা

ঔষুধটা ছিল তিথির স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য।ছোট থেকেই ওর স্মৃতিতে সমস্যা। নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা,কথা সে ভুলে যায়।একেবারেই ভুলে যায়।ইশান ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে আর তাই সে এই ঔষুধটা আনিয়েছে।
তিথি ভেবেছে অন্য কিছু তাই তো সে ফেলে দিলো।

ইশান ওকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই দুজনে দেখে সোফায় মা আর তামিয়া বসা।তিথি ভাবলো সে এখন ঝাড়ি খাবে কিন্তু মা তাকে ঝাড়ি না দিয়ে চুপ করে ছিলেন।ইশান তখন তিথির পিঠে চিমটি দিয়ে আস্তে করে বললো মায়ের পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ বসতে।
তিথিও তাই করে।কিন্তু বসতে গিয়ে তার অনেক ভয় হচ্ছিলো।
তামিয়া ঘুরে এসে তিথির পাশে বসলো।এখন তিথি মাঝখানে আর দু পাশে মা আর তামিয়া।
কেউ কিছু বলছেনা।ইশান ও তার রুমে চলে গেছে।মা অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর বললেন,’আমাদের সাথে সংয়ের মতন বসে না থেকে নিজের জামাইয়ের কাছে যাও।তার কি লাগবে দেখো।আর হ্যাঁ!বিদেশে গিয়ে আমার ছেলেকে জ্বালাতন করবেনা একদম।ও যা বলবে শুনবে। সে তো আর তোমায় গিলে ফেলবেনা!’

তিথি বিড়বিড় করে বললো,’গিলেই ফেলবে।যে দামড়া ছেলে আপনার!’

‘কিছু বললে?’

‘নাহ তো’

‘বিড়বিড় আমার পছন্দ না,তার পরেও তুমি যেটা বললে তা আমি শুনে ফেলেছি।ছেলেরা তো দামড়াই হয়!সে যাই হোক।ওখানে গিয়ে ঘাউড়ামি করবেনা।তোমার তো আবার ঘাউড়ামি করার স্বভাব!এখন যাও ইশানের কাছে,ওর কিছু কাজ বাকি ছিল।তুমি আসতে দেরি করছো বলে ও তোমায় আনতে গেছে।কতবার করে বলেছি ড্রাইভারকে পাঠা,তোর যেতে হবেনা।
কে শোনে কার কথা!ওনার বউকে তো ড্রাইভার একা পেয়ে চুমু খাবে!কেমন বউ ওনার!মুখের নাই ছিরি!’

তিথি হা করে ইশানের মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সিনেমার শাশুড়িদের মতন কথা বলছে আন্টি।তবে একটা কথা ঠিক বলছে তার মুখের আসলেই কোনো ছিরি নাই।
এরপর তিথি যাবার সময় দাঁত কেলিয়ে বলে গেলো,’মুখের ছিরি নাই দেখেই আপনার ছেলে উন্মাদ আমার প্রেমে,ছিরি থাকলে তো এই বংশ ধংস হয়ে যেতো’

এই বলে তিথি দিলো এক দৌড়। মিসেস আরাফাত তেলেবেগুনে জ্বলছেন।তামিয়া এক পাশে মিটমিট করে হাসছিল।

তিথি দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে ঢোকার সময় ইশানের সাথে এক ধাক্কা খেলো।ইশান প্রায় পড়েই যাচ্ছিল,কোনোমতে সে দেয়ালটা ধরে দুজনকেই পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালো।
তিথি ইশানের দিকে চেয়ে থেকে বললো,’আচ্ছা আমার কি দেখে আপনি এত উন্মাদ হলেন বলবেন?’

‘আমি উন্মাদ? তাও তোর জন্য?’

‘আমি বলিনি, কথাটা শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি মা বলেছেন।ছেলে সম্পর্কে ছেলের মায়েরা কোনোদিন মিথ্যা বলেনা।’

ইশান তখন জানতে চাইলো আর কি বলেছে।
তিথি আয়নার কাছে গিয়ে নিজের মুখটা দেখতে দেখতে বললো,’বলেছে আমি অপরুপা সুন্দরী তাই আপনি এত উন্মাদ ‘

‘আমার মা এ কথা বলতেই পারেনা!মায়ের কাছে তুই সুন্দর না’

‘আর আপনার কাছে?’

ইশান কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো।তিথি ব্যাগগুলো খুলে দেখছে কিছু বাদ গেছে কিনা।খুলতেই একটা সুতা তার হাতে পড়লো।সুতাটা চেনা চেনা লাগলো। হঠাৎ মনে আসলো মামির প্রেগন্যান্সির সময় ওনার হাতে ঠিক এরকমই একটা সুতা ছিল।তাহলে এটা ওর ব্যাগে কেন!

সুতাটা সরিয়ে রেখে তিথি অন্য কাজে চলে যায়।ইশান যখন রুমে ফেরে তখন দেখে ঐ সুতাটা টেবিলের উপর বলপয়েন্ট দিয়ে রাখা।
সে প্রচণ্ড রেগে যায়।সুতাটা তুলে ব্যাগে ভরতে ভরতে তিথিকে ডাকে।
তিথি কাঁথা টেনে শুয়ে পড়েছিল,খুব ভোরে ফ্লাইট কিনা।তাই।

ইশান কাছে এসে ওকে ঘুম থেকে তুলে বসালো।
তিথি চোখ ডলতে ডলতে বললো,’কাল যাবেন না নাকি?’

‘তুই এটা সরিয়েছিস কেন?’

‘তো সরাবোনা?আপনি তো বলছিলেন আমাকে কখনও ছুঁবেন ও না।তাহলে ঐ সুতার কাজ কি?’

‘মানে?’

‘ঐ সুতা তো গর্ভবতী নারীরা পরে।আমি গর্ভবতী নাকি কোনোদিন হবো?’

ইশান তিথির হাত ছেড়ে দিলো।তিথি তো ভাল পেঁচে ফেলেছে!
তিথি আবারও শুয়ে পড়ে।
ইশান নিজেও অনেক ক্লান্ত।আজ তার অনেক দখল গেছে।তাই সে তিথির পাশে শুতেই তিথি আবারও উঠে বসে।ইশান ওকে উঠে বসতে দেখে কিছু বললোনা,কিন্তু তিথি বললো,’আপনি কি করতে চাইছেন?’

‘ঘুমাতে চাইছি’

তিথি বালিশটা নিয়ে উঠে পড়লো।সে সোফায় ঘুমাবে।যাওয়াই ধরছিল তখন ইশান বললো ঐ সোফার কভারে অস্বস্তি লাগে।সে নিজেও ঘুমাতে পারেনা ওখানে,তিথিও পারবেনা।
তার পরেও তিথি চেষ্টা করলো,আসলেই ঐ কভারে কিছু একটা সমস্যা আছে।ঘুম কেড়ে নিয়ে যায়।বাধ্য হয়ে ইশানকে ডান বাম থেকে লক্ষ করে তিথি আবার আগের জায়গায় এসে শুয়ে পড়লো।
ইশানের গায়ের তীব্র পারফিউমের গন্ধ এসে নাকে লাগতেই তিথি নড়েচড়ে ওঠে। এ প্রথম সে ইশানের পাশে একসাথে ঘুমাবে।
ভাবতেই তার আর ঘুম আসছেনা,ভয় কাজ করছে।

ইশান মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে,তিথি ওকেই দেখছিল। আগের ইশানের গায়ের রঙ এত উজ্জ্বল ছিল না।কালো কুচকুচে ছিল।মুখে কি এমন লাগিয়েছে!নাকি কোম্পানির নুডুলস খেয়ে এই অবস্থা!
তা হলে তো শুধু মুখ সাদা হতো।সারা শরীর সাদা করছে কেমনে!
তিথি একটু একটু করে হাত বাড়িয়ে ইশানের হাতে ঘষা দিলো।ক্রিম থাকলে উঠে যায় কিনা।
ওমনি ইশান চোখ বন্ধ রেখে বলে ওঠে,’আগের ইশান রোদেপুড়ে বাবার ক্ষেতে ধান বুনতো বলে সারা রঙ কালো কুচকুচে ছিল।শহরে এসে রোদে পোড়া দাগ উঠানোই জন্মের আসল রঙ চলে এসেছে।ঘষে তুলা যাবেনা’

তিথি জিভ কামড়ে হাতটা সরিয়ে ফেলে।ইশান তাকে ধরে উত্তমমধ্যম দেয়নি এই অনেক।তারপর সে ভাবে একটা প্রশ্ন!ইশান এত টাকার মালিক হলো কি করে!
ওর তো কোনো কোটিপতি মামা,চাচা নাই যে ওকে তুলে ধরবে!
কৌতুহল নিয়ে তিথি ইশানকে প্রশ্নটা করে বসে।
ইশান তখন বললো,’একবার কোনো জেদ ধরলে এবার সেটা দেশে হোক কিংবা বিদেশ।তা পূরণ হবেই’

তিথি একটু এগিয়ে বললো,’না মানে কেউ হেল্প না করলে এতদূর নিজ থেকে যাওয়া তো অসম্ভব ‘

‘আমাদের ভিটার জমি বিক্রি করে সবাইকে ভাঁড়া বাসায় রেখে বিদেশ গিয়েছিলাম।’

তিথি চুপ করে থাকলো। তাকে পাবার জন্য ইশান কত কি সেক্রিফাইস করেছে!
তিথি আবারও কি বলার জন্য মুখ খুললো ওমনি ইশান ওর মুখে হাত দিয়ে বললো চুপ করতে এবং ঘুমাতে।

তিথি সোজা হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশান একটা চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়।ওর কানের লম্বা চিকন স্বর্ণের দুলটা লেপটে আছে।এই দুলটা ইশান তার আয়ের প্রথম টাকা দিয়ে কিনেছিল।তা বোধহয় তিথি কোনোদিন জানবেনা।
“”””যে পুরুষ নারীকে উন্মাদের মতন ভালবাসে,তার সেই উন্মাদনা সেই নারী কখনওই বোঝেনা,কেউ এসে বুঝিয়ে দিলেও বোঝেনা!
আর যে নারী বোঝে তাকে কোনোদিন কোনো পুরুষ উন্মাদের মতন ভালবাসেনা।””””

ইশানের চোখ বলছে তিথি একবার তাকে জড়িয়ে ধরুক নিজ থেকে,সে অতীতের সব আঘাত ভুলে তাকে কাছে টেনে নিবে।
হঠাৎ ইশানের মনে আসলো মাকে করা তিথির অপমান।এটা তো এত সহজে ভোলার নয়!
ওমনি ইশান উঠে বসে বললো,’উঠ!’

‘ওমা কেন!’

‘বলছি উঠ!’

তিথি তাই উঠে বসলো। ইশান ওর দিকে হাতটা বাড়িয়ে ধরে বললো,’নে হাত টিপ’

‘কেনো?আমি ঘুমাবোনা?’

‘নাহ’

এই বলে ইশান শুয়ে পড়ে।তিথি তখন ওর হাত টিপতে টিপতে বলে আপনার মাকে অপমান করেছি সে কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেছে বুঝি?’

ইশান কিছু বলেনা কিন্তু মনে মনে ঠিকই হাসছিল।

তিথি হাত টিপতে টিপতে ওর হাতের উপরই ঘুমিয়ে পড়ে।খুব ভোরে ইশানের ফোনে এলার্ম বাজতেই সে জেগে গেলো। চোখ দুটো মেলে দেখে তিথির মুখ।
সেকালে ইশান চাইতো তার প্রতিটা সকাল যেন এই মুখ দেখেই শুরু হয়।তার ইচ্ছাটা থমকে থাকলেও এখন তা পূর্ণতা পেয়েছে।
তিথির কপালে হাত দিয়ে সেখানে ঠোঁট ছোঁয়াতে যেতেই তিথি হাত নিয়ে ইশানের চুলের মুঠি ধরে ঘুমের ঘোরে বললো,’আম্মু ঝাড়ু ধরছি শক্ত করে,এইবার দেখো কত সুন্দর করে ঘর ঝাড়ু দিয়ে চকচকা বানিয়ে দিবো।’

এই বলে সে ইশানের চুল টানা শুরু করে।ইশান অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।তারপর তিথির চুলের মুঠি ধরে বললো,’এইবার আমি চকচকা করবো”

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩১
আফনান লারা

ইশানের কথায় আর চুলের টান খেয়ে তিথি উঠে বসে।হঠাৎ মনে পড়ে যায় তাদের এখন চলে যাবার সময়।
সে উঠেই তাড়াহুড়ো শুরু করে দেয়।কি থেকে কি করবে এসব নিয়ে পেরেশান হয়ে ওঠে।কিন্তু ইশান তাকে বুঝিয়ে দিলো তাদের দেরি হচ্ছেনা,এত পেরেশানির কিছু নেই।
মা,বোন সবাইকে বিদায় দিয়ে তারা দুজনে এয়ারপোর্টে পৌঁছায় অবশেষে।
তিথিদের বাসার সবাই এসেছে ওকে বিদায় দিতে।রিদম তো প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।টুকু তার খুব আদরের কিনা তাই!
তিথি কান্না করেনি,কারণ সে ইশানকে ফোন কলে বলতে শুনেছে তারা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
এই শুনেই তার জাপান যেতে কোনো ভয় কাজ করছিল না।আনন্দে আনন্দে সে প্লেনে উঠে বসেছে।
তার এত আনন্দর মানে ইশান জানতে চাইলে সে কিছুই বলেনা,কারণ বললেই তো ইশান আবার তারিখ পিছিয়ে আনবে।
তার চেয়ে ওর অজানাই থাকুক।জাপানে ফিরে তিথি ইশানের পাওয়ারের এক অন্য রুপের সাথে পরিচিত হলো।ইশানকে যতটা সম্পদশালী সে ভেবেছিল সে তার চেয়ে দশগুণ বেশি।
এয়ারপোর্টে তার পাঁচজন কর্মচারী রিসিভ করতে দাঁড়িয়ে ছিল।তারা সকলেই জাপানি।
তিথিকে দেখেই তারা ফুলের তোড়া হাতে ধরিয়ে দেয় আর জাপানি ভাষায় কত কি বলে।তিথি কিছুই বুঝেনা তাই ইশানের দিকে তাকায় বুঝার জন্য।
ইশান জানে এর উত্তর কি, তাও সে তিথিকে রাগাতে বললো,’ওরা বলেছে ভাবী ভুটকি’

এটা শুনে তিথি রেগে বললো,’তোমরা ভুটকি!তোমাদের গাল দেখছো?একেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতোন’

কর্মচারীরা কিছুই বুঝলোনা।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তাদের একজনের থেকে তার এখানকার কারের চাবিটা নিয়ে তিথিকে কারে গিয়ে বসতে বলে।তিথি কারে বসতে গিয়ে দেখে কারের মধ্যে ইশানের নুডুলসের লোগো।
সে কারে অনেকক্ষণ বসে থাকে।ইশান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঐ লোকগুলোর সাথে কথা বলছিল।যেন এখানেই সে মিটিং শুরু করে দিয়েছে।
তিথি কারের ফ্রণ্ট মিররে নিজেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সে কি আসলেই এত মোটা!
তিথি ইশানকে ডাকতে যাবে তখনই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে ওদের কারের পেছনে উঠে বসে।সে তিথিকে দেখেই জাপানি ভাষায় কিসব বলে গেলো ফটাফট। তিথি কিছুই বুঝলোনা।কিন্তু মেয়েটাকে তার সুবিধার লাগলোনা,এভাবে না বলে কারোর কারে ওঠা কোন ধরনের অসভ্যতামি!

কিছুক্ষণ পর ইশান কারের সামনে এসে বললো,’আরেহ আমার কার এটা নয় সামনের টা।তুই আরেকজনের কারে উঠে বসে আছিস কেন?’

‘ওহ তাহলে এই মেয়েটার কার এটা।তাই তো বলি চাং চুং বলতেছে কেন!’

তিথি সরি বলে কার থেকে নেমে দিলো এক দৌড়, তার কিছু সময় পর থেমে বললো,”ওটা আপনার কার না হলে তাতে আপনাদের নুডুলসের লোগো কেন?’

‘ওটা আমার কোম্পানির জেনেরাল অফিসারের কার।’

‘তাহলে আপনি কি?’

‘আমি ওনার!বুঝছিস? আমার কারে লোগো নাই,স্টাম্প লাগানো আর গ্লাসের নিচে কোম্পানির নাম’

‘এটা কোম্পানির নাম?আমি ভাবছি সাপ একটা শুয়ে আছে’

ইশান তিথির গাল টিপে ধরে বললো,’এখন থেকে এই সব চাং চুং,সাপের মতন লেখাই তোকে মুখস্থ করতে হবে।বুঝেছিস?এখন চুপচাপ বস।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে’

‘আপনার অফিসারের বউটা খুব সুন্দর’

‘ওটা বউ না,মেয়ে ‘

‘পাগল হয়ে যাবো মনে হয়।আবহাওয়া ভাল না।মাথাটা কেমন করছে। সব ভুলভাল দেখছি আর বলছি’

তিথি গাড়ীর ভেতরে বসে পড়ে একবার পেছনে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো অফিসারের মেয়ে ওর সাথে আলাপ করতে আসেনি কেন।
ইশান এর উত্তর দিলোনা।তিথি আবারও জিজ্ঞেস করে কিন্তু এইবারও ইশান কিছু বলেনা।

ইশানের বাসা Suwa city তেই।মিউজিয়ামের একটু পরে।
তাই খুব একটা দেরি হলোনা তাদের।বাসায় ফিরে তিথি তো অবাক।আসলেই তাদের পাশে শুধু একটাই বাসা এর ধারের কাছেও কোনো বাসা নেই।

বাসার দরজা খুলে দিয়ে ইশান কাকে যেন ফোন করতে করতে পুল সাইডের দিকে চলে গেছে।তিথি ভেতরে এসে অবাক হয়ে গেলো।সিনেমা গুলোর বাসার মতন সাজানো সব।
তিথি দেখতে দেখতে একেবারে সোজা ইশানের রুমে চলে এসেছে।আসার সময় তানিয়া বলেছিল তার এক জাপানি বন্ধু বলেছিল সে তোষকের নিচে অনেক কিছু মূল্যবান লুকিয়ে রাখে। এটা তো তারাও করে।কথাহলো জাপানি মূল্যবান জিনিস খুঁজে পাওয়ার আলাদা আনন্দ।তিথি দাঁত কেলিয়ে তোষকটা উল্টে দেখে তাতে কিছু খাতার পৃষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই নেই।
লেখা গুলাও জাপানি,কিন্তু লাল লাল লাভের ইমুজি আঁকা দেখে ওর মনে ঘটকা লাগলো তাই সে পৃষ্ঠা গুলো গুছিয়ে তার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেই ইশানকে দেখে ওখানে সে দাঁড়িয়ে আছে।তার এই কার্য অবশ্য ইশান দেখেনি।
ইশান ওর কাছে জানতে চাইলো সে ইশানের রুম চিনেছে কি করে।

‘এত বড় রুম আর কার হতে পারে!’

এই বলে তিথি পুলটা দেখতে চলে যায়।ইশান বিছানায় বসে মাথায় হাত দিলো। তার মাথা অনেক বেশি ব্যাথা করছে।ফ্লাইট করে আসলেই এই অবস্থা হয়।

তিথি সব ঘুরে দেখে রুমে এসে দেখলো ইশান শুয়ে আছে।

সে ওর খুব কাছে এসে দেখতে লাগলো ব্যাপারটা কি।হঠাৎ এরকম কাতলা মাছের মতন শুয়ে আছে কেন।
অনেক দেখেও কিছু বুঝতে না পেরে সে নিজের ব্যাগটা টেনে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।এরপর সেই কাগজগুলো বের করে ছবি তুললো তারপর তানিয়াকে হোয়াটসএপে সেগুলো পাঠিয়ে বললো ওর বন্ধুকে দিয়ে ট্রান্সলেট করে পাঠাতে।
এই কাজটা রেখে এবার সে ইশানের রান্নাঘরে এসে হাজির।আগের মতন,নুডুলসের প্যাকেট ছাড়া কিছুই নেই।
তিথির খুব খিধা পেলো কিন্তু নুডুলস খেতে মন চাইছেনা,হঠাৎ তার মনে আসলো পাশের বাসার কথা।ওদের কাছে যাবে?না না!কি ভাববে তারা।আর ওদের ভাষাও তো ওর জানা নেই।
অনেক চিন্তাভাবনা করে ইশানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে তিথি।ওর উঠা অবধি আর কোনো সুযোগ নেই কিছু খাবার।
—–
তিথি সময় কাটানোর জন্য মেসেঞ্জারে মাকে একটা কল দেয়।

মা সবার আগে বললেন,’কিরে কিছু খেয়েছিস? ‘

‘কি খাবো মা!নুডুলস ছাড়া আর কিছু নাই’

‘মানে কি!ওখানে যাবার পর থেকে কিছুই খাসনি?’

‘নাহ’

‘ওখানকার কোনো রেস্টুরেন্টের নাম্বার নোট করে রেখেছে কিনা ইশান।চেক কর তো,থাকলে অর্ডার করে দে।’

‘কিভাবে করবো।ওরা তো জাপানি ভাষায় কথা বলবে’

‘আচ্ছা তুই কি বোকা?ইংরেজীতে তো কথা বলতে পারিস।সেভাবে বলবি’

মায়ের ঝাড়ি খেয়ে তিথি সেই নোটবুক খুঁজে বের করে।এরপর খুঁজতে থাকে রেস্টুরেন্টের নাম্বার।বেশ কিছু সময় পরও সে নাম্বার না পেয়ে নোটবুকটা ছুঁড়ে মারলো কিন্তু ইশান এসে সেটা ধরে ফেললো সঠিক সময়ে।নোটবুকটা গুছিয়ে রেখে সে বললো,’কিসের এত রাগ?’

‘আমায় না খাইয়ে মারতে এনেছেন?জার্নি করে আসলে খিধা লাগেনা মানুষের?’

ইশান তিথির হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে আসে তখন তিথি চেঁচিয়ে বললো,’এখানে নুডুলস ছাড়া কিছু নেই’

তখন ইশান নিচু হয়ে একটা ডেস্ক টান দেয়।সেটাতে চিপস আর বিসকুটের প্যাকেট ছিল।ডেস্কটা হাইড করা ছিল বলে তিথি খুঁজে পায়নি।
চিপস দেখে তিথি ছোঁ মেরে এক প্যাকেট নিয়ে বললো,’চিপসে কি আর পেট ভরে?’

ইশান তখন তিথির দুপাশ দিয়ে দু হাত নিয়ে তাকের উপর রেখে বলে,’তবে কিসে ভরবে?আদরে?’

তিথি ইশানকে সরিয়ে দিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো,’জাপানি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম জমিয়েছিলেন?সারা বাসায় মেয়েলি গন্ধ’

‘মেয়েলি গন্ধ তো থাকবেই।নিজের গায়ের গন্ধ চিনিস না?”

এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে নোটবুকটার কাছে এনে আঙ্গুল দিয়ে বললো,’তরমুজের ইমুজি দেয়া এটা রেস্টুরেন্টের নাম্বার বুঝেছিস?’

‘ওহ তাহলে এই ব্যাপার?তবে এখানে গোলাপের ইমুজি দেয়া নাম্বারটা কার?’

‘রোজ ফাইভ স্টার হোটেলের।সংক্ষেপে রোজ’

তিথি তাও সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ইশান তখন ঘাড় চাপতে চাপতে বলে গেলো চিপস খেয়ে এসে একটু ওর গায়ে গরম তেল মালিশ করে দিয়ে যেতে।ওর খুব খারাপ লাগছে।শরীর টানছেনা।
তিথি এবার রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে সামান্য দেয়াল টেনে ফাস্ট ফুডের কর্ণার বের করা গেলে বাকি দেয়াল টেনে আরও অনেক কিছু বের করা যাবে।
তাই ভেবে সে একটা দেয়ালে হাত দিয়ে এক টান দিতেই বড় একটা কর্ণার খুলে গেলো।এতে সব মসলাপাতি সাজানো ছিল।তেল ছিল না।
তিথি এক এক করে এবার সব কর্ণার খুলে খুলে দেখছে।সর্বশেষে একটা কর্ণার থেকে সে তেল খুঁজে বের করলো।

ইশান গায়ের জামা খুলে অনেকক্ষণ শুয়ে ছিল।তিথি দেরি করছে বলে অনেক কষ্টে উঠে এসে দেখে তার গুণধর বউ রান্নাঘরের বারোটা কর্ণার খুলে বসে আছে।
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-২৮+২৯

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৮
আফনান লারা

তিথিকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ইশান ব্যাগগুলো সরিয়ে রেখে বলে,’যেমন কর্ম তার তেমনই তো ফল হবে তাই না? আর তুই কি আমাকে আদৌ ভয় পাস?যেভাবে না যাওয়ার জন্য বাহানা করছিস!’

তিথি কিছু বলেনা।ওখানে গেলে তার যে তেরোটা বাজবে তার দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে মনে কল্পনা করে চলেছে সে।কাল বাদে পরশু তাদের ফ্লাইট।তিথির খাওয়া দাওয়া উঠে চলে গেছে।ইশান তাকে মেরেও ফেলতে পারে এই চিন্তায় তার নির্ঘুম রাত কেটেছে।ইশান এ রাতে বাসায় ছিলনা।শাওয়ারটা শেষ করে কোথায় যেন গেছে।
তিথি মন খারাপ নিয়ে তানিয়ার সাথে কিছু সময় কথা বললো।তানিয়া তাকে আশস্থ করেছে যাতে ভাল কিছু নিয়ে ভাবে।হতে পারে ইশান তাকে খুব ভালবাসা দেবে।
তানিয়ার কথা আর ইশানের বড় বোন তামিয়ার কথা যেন এক রকম হয়ে গেলো।আসলেই কি ইশান তাকে খুব ভালবাসবে?
নাকি সবই তার মনের ভুল।ইশান হয়ত তাকে অনেক বেশি কষ্ট দেবে যা সহ্য করার মতন হবেনা।
এইসব ভাবতে ভাবতেই সকালটা হয়ে যায়।
তিথি জানে কলা মুড়ি সে পাবেনা।তাই একটা পাউরুটির টুকরো নিয়ে সে চলেই যাচ্ছিল তখন পেটের খিধে বললো আরও কিছু চাই।
তাই সে ঠিক করে একটা কাপ নুডুলস খাবে।নুডুলস কোম্পানির মালিকের বউ হবার সুবিধা হলো ঘরে শুধু নুডুলস আর নুডুলস পাওয়া যাবে।মাঝরাতে কিংবা ভোরবেলা ক্রেভিংস হলে নুডুলসকে হাতের কাছে পাওয়া যাবে।
তিথি খুশি হয়ে নুডুলসে গরম পানি ঢেলে রুমে চলে আসে।নুডুলসটা খাওয়ার সময় তার চোখ গেলো প্যাকেটে লেখা এটার ফ্লেভারের নামের দিকে।
মিন্ট ফ্লেভার।তিথির হঠাৎ মনে পড়ে যায় ইশান যে ফ্লেভারের নুডুলসের উদ্ভোধন করতে জাপান যাচ্ছে সেই নুডুলসই এটা।
উদ্ভোধন হবার আগে এটার সেম্পল আসতেও তো সময় লাগার কথা।আর এটার তো বানানোর ডেট লেখা এক বছর আগের।তার মানে এটা পুরোনো ফ্লেভারের।
তবে ইশান তাকে নিয়ে কেন জাপান যাচ্ছে?পুরোটাই তাহলে নাটক!
তিথির আর খাওয়া হলোনা।মাথায় বড় একটা চিন্তা ঢুকে গেলো।
এখন তার কি করা উচিত?

ঠিক ঐ সময়ে ইশান বাসায় ফেরে।কাল রাতে আদিলের সাথে একটা ক্লায়েন্টের সমস্যার কারণে সারারাত তাকে অফিসে কাটাতে হয়েছে নাইট ডিউটি অফিসারের সাথে।

ওটার সমাধান করেই সে মাত্র ফিরলো।তিথির সামনে নুডুলস দেখে প্রথমে তার কিছু সন্দেহ হলো না।

তিথি ইশানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।ইশান গায়ের শার্টটা খুলছিল তখন তিথি বললো,’কোন ফ্লেভারের নুডুলস উদ্ভোধন করবেন বলেছিলেন যেন?’

‘মিন্ট’

‘তাহলে এটা কি?’

ইশান পেছনে তাকায়।তিথির হাতের নুডুলসটাও মিন্ট ফ্লেভার।ইশান আবারও নিজের কাজে মন দেয়।
তখন তিথি উঠে এসে বলে,’আমি জানতে চাই এত মিথ্যা কথা কেন? আপনি কি জন্য আমাকে জাপান নিয়ে যেতে চাইছেন?’

ইশান কিছু বলেনা।তিথি এবার প্রচণ্ড রেগে যায়।সে চিৎকার করে বলে যত কিছু হয়ে যাক না কেন সে জাপান যাবেনা।এই বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ইশান ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে বলে,’আমার স্ত্রী হিসেবে এটা তোর দায়িত্ব যে আমার কথা শোনা।জাপান হোক কিংবা মহাকাশের কোনো গ্রহ হোক।আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাবো তোকে আমার সাথে সেখানেই যেতে হবে এবং এটা পালন করতে তুই বাধ্য।’

‘না আমি বাধ্য নই’

ইশান তিথির হাত ছাড়লোনা।চুপ করে তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।তিথি ওর কাছে আবারও জানতে চাইছে কেন তারা জাপান যাবে যেখানে এই মূহুর্তে জাপান যাবার কোনো প্রয়োজনই নেই।
এবার ও ইশান জবাবটা দেয়নি।কিন্তু সে আরও কিছু বলতে চাইছিল তখনই মা এসে পড়েন সেখানে।

তিনি নামাজ পড়ে এসেছেন এদিকে।ইশান আর তিথিকে এমন অবস্থায় দেখে তিনি দ্রুত ওদের রুমে ঢোকেন।তারপর জানতে চাইলেন কি হচ্ছে এখানে।
ইশান তিথির হাতটা ছেড়ে দেয় সাথে সাথে।তিথি ওনার দিকে ফিরে সবটা বলে দেয়।সে বলে দেয় যে ইশানের জাপানে কোনো কাজই নেই।সে অন্য উদ্দেশ্যে যাচ্ছে কাজের নাম করে।
মা এ কথা শুনে ইশানের দিকে তাকালেন ওর উত্তরের আশায়।তখন ইশান বললো,’মা তুমি যাও।আমি আসছি’

মা মাথা নাড়িয়ে চলে যেতেই তিথিও তার পিছু পিছু যাওয়া ধরলো কিন্তু ইশান আর তাকে যেতে দিলোনা।সে তিথির আগেই এসে ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।তিথি ভীষণ ভয় পেয়ে যায় ওর এমন কাজে।
ইশান তখন বলে,’তুই যদি আমার সাথে জাপানে না যাস তবে তোকে জোর করে নেয়ার ক্ষমতা আমার কাছে।কিন্তু যদি সেই জোরটা আমার সবার সামনে করতে হয় তবে এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে তিথি।খুব খারাপ!
আমি চাইনা বাহিরের মানুষের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট হোক।চুপচাপ আমার সাথে কাল ভোরবেলা রওনা হবি।যদি এর আগে কোনো হট্টগোল তুই করেছিস তবে ইশানের আর যেসব রুপ তোর দেখা বাকি আছে সেগুলো খুব দ্রুত দেখিয়ে দিবো ‘

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ‘তবে তাই হোক!দেখান আপনার রুপ।দেখি আর কত নিকৃষ্ট হতে পারেন আপনি’

কথা শেষ করার আগেই তিথি গালে একটা কামড় খেলো।আচমকা ঘটে যাওয়ায় সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।কামড়ের ব্যাথার শিহরণে সে গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে ভ্যাবলার মতন শুধু চেয়ে রইলো।ইশান ওর গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বলে,’বত্রিশটা দাঁতের দাগ বসিয়ে দিয়েছি।জাপান না গেলে আরও দাগ বসবে’

তিথি কাঁদবে,না চিৎকার করবে সেটার অংক কষাকষি করছে।এদিকে ইশান তার মায়ের কাছে চলেও গেছে।তিথি কোনো উপায় না পেয়ে তানিয়াকে কল করে।
তানিয়াকে সে এই ঘটনার কথা বলে সাহায্য চায়।
তানিয়া কামড়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

‘টুকু তোমার মনে আছে?সেবার ইশান ভাইয়া তোমায় হাতে কামড়েছিল?তুমি তার একটা কথা শুনো নি বলে?’

‘ভুলে গেছিলাম।এখন মনে পড়লো’

তানিয়া হাসির জন্য কথাই বলতে পারছেনা। তিথি বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে আয়নার সামনে গিয়ে হাতে পাউডার ঢেলে গালে ঘঁষতে লাগলো।তামিয়া দেখলে এবার সেও হাসবে।
‘একটা পাগলের সংসার করছি আমি!’
——-
‘মা বলো কি বলবে’

‘তুই জাপান কেন যাচ্ছিস?’

ইশান মায়ের হাত ধরে ওনার পাশে বসে।এরপর বলে,’হ্যাঁ,আমার একটা ইচ্ছে আছে।কিন্তু সেটা পরে জানবে।এখন না’

‘আমি যেন না শুনি যে তুই এত সহজে ঐ মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস।খবরদার!’

‘আরেহ না।ওসব কিছুনা।সে এত সহজে ক্ষমা পাবেনা’

এই বলে ইশান চলেই যাচ্ছিল হঠাৎ মা ওকে আবারও দাঁড়াতে বললেন।এরপর আলমারি থেকে একটা বক্সের ভেতরের সুতা বের করে বক্সটা সহ ইশানকে দিলেন।এরপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,’হয়ত তোদের আসতে এক বছরের বেশি লাগতে পারে।এত দিন তো আর মেয়েটাকে শাস্তি দিবিনা।একদিন না একদিন ক্ষমা করতেই হবে।আমি আশা করি সু খবর দিবি আমায়।সুতাটা তখন ওর হাতে পরিয়ে দিস। ‘

ইশান অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার অবাক করা চাহনি দেখে মা বললেন তিনি তিথিকে ক্ষমা করেননি এখনও।তার পরেও তার তো স্বামীর থেকে কিছু অধিকার পাওনা আছে এগুলো তো আর অস্বীকার করা যায়না।

ইশান চলে আসে ওখান থেকে।রুমে এসে দেখে তিথি পাউডার মেখে সারা মুখ সাদা বানিয়ে ফেলেছে।কিছুতেই দাগটা কারোর নজরে আসতে দেবেনা।ইশান ব্যাগ খুলে সুতাটা ভেতরে ঢুকিয়ে তিথির দিকে তাকায়।এরপর দুষ্টু করে একটা হাসি দিয়ে বলে,’বাচ্চা কয়টা নেয়ার ইচ্ছা থাকা উচিত নতুন দম্পতির?’

এ কথাশুনে তিথি চমকে তাকায় ওর দিকে।তার মানে তার সন্দেহটাই কি সত্যি হতে যাচ্ছে!

ইশান বসে বসে হাসছিল।তিথি তখন গালে হাত রেখে দূরে সরে গিয়ে বলে,’কি করবেন আপনি?’

‘আমি কি করবো?জাস্ট জানার ইচ্ছে হলো’

‘আআআআপপপপনি না বলছেন ঔসব কোনোদিন করবেন না।তাহলে হঠাৎ জানার ইচ্ছে কেন হচ্ছে?’

‘আমার সেখানে যে একটা বউ আছে তার সাথে প্রেমালাপ করবো।আচ্ছা,তুই নিজেকে কি ভাবছিস?নাহয় তোকে এক কোণায় বসিয়ে রাখবো।তোর তো এত ভাবার দরকার নেই,তুই শুধু আমাকে এটা বল শুরুতে কয়টা বাচ্চা নেয়া ভাল?’

তিথি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।ইশান আবারও বললো,’আহা বললাম তো,জাপানে গেলে আমার সেখানে যে বউ থাকবে তাকে ভালবাসবো।তোর তো ভাবার প্রসঙ্গই আসেনা’

‘প্রসঙ্গ আসে,কারণ জাপানে গেলে সেখানে আমিই আপনার বউ হিসেবে থাকবো।কথা ঘুরিয়ে বললেও উত্তর টা একই দাঁড়ায় মিঃইশতিয়াক!’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৯
আফনান লারা

ইশান মিটমিট করে হাসছে।তিথি ইদানিং খুব চালাক হয়ে গেছে।ঘুরিয়ে বললেও ঠিকই ধরে নেয়।এদিকে তিথি আরও চিন্তায় পড়ে গেলো।তার মানে ইশান তাকে নিয়ে একেবারে জাপান চলে যাচ্ছে না তো?

ভয়ে ভয়ে সে আরও একবার কল দিতে চায় তানিয়াকে কিন্তু পরে ভাবলো তানিয়া তো ঘুরেফিরে একই কথা বলবে।তার চেয়ে বরং শশীকে একটা কল দিলে সে আসল পরামর্শ দিতে পারবে।
সেইসব ভেবেই তিথি কল দিলো শশীকে।শশী চারদিন হলো ফ্যামিলি ট্যুর দিয়ে দেশে ফিরেছে।
ফ্রি ছিল অনেকটাই।তিথির কল তাকে আরও আনন্দিত করে দেয়।সে খুশি হয়ে তিথির সাথে কথা বলতে থাকে।কথা বলার এক সময় গিয়ে তিথি ওর কাছে পরামর্শ চায় ইশানের সাথে বিদেশ যাওয়া নিয়ে।তানিয়া পজিটিভ পরামর্শ দিলেও শশী দিলো নেগেটিভ পরামর্শ। তার নাকি দূর সম্পর্কের এক বোন হাসবেন্ডের সাথে বিদেশ গিয়ে মরা লাশ হয়ে ফিরেছে।তাকে নাকি খুব মারতো,একদিন মারার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে একেবারে মরেই গেলো।
এ কাহিনী শুনে ভয়ে তিথির গলা শুকিয়ে আসলো।এদিকে ইশান খবরের যে চ্যানেলটা দেখছে তাতে দেখাচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন।
তিথি কলটা রেখে চোখ বড় করে ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ভাবে ইশান তো আর তাকে মেরে ফেলবেনা।এই টুকু ভরসা আছে
তা চিন্তা করে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে তারপর বললো,’টিভিটা অফ করুন তো।অসহ্য!’

ইশান আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।তাও টিভিটা অন করে উঠে এসে তিথির থুঁতনি টেনে ধরে বললো,’তুই আমাকে আদেশ করবি নাকি আমি তোকে আদেশ করবো?’

‘আমি’

এটা শুনে ইশান ওর থুঁতনিটা আরও জোরে টেনে দিয়ে বললো,’ইউ আর রঙ।আমি তোকে সবসময় আদেশ করবো।তুই আদেশ করার বয়স পার করে ফেলেছিস।তোর বয়স টা সেকালে থাকাকালীন অনেক আদেশ করেছিস। আর নাহ’

এটা শুনে তিথি দূরে সরে যায়।তারপর কত কি ভাবতে ভাবতে রুম ছেড়ে পালায়।ইশান ভাবে এখন যত পালিয়ে নিক।ওখানে গেলে পালিয়েও দরজা খুঁজে পাবেনা।

কাল ভোরবেলা তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
তিথি তার আগে বাবার বাসায় আসলো সবার সাথে দেখা করে নেয়ার জন্য।
তানিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেছে।পরের মাসে তার কাবিনের তারিখ আর এদিকে তিথি চলে যাচ্ছে।
তখন তিথি তাকে বোঝালো সে আসার চেষ্টা করবে।

ইশান জানতোনা তিথি যে ওর বাসায় গেছে।
সে অফিস থেকে ফিরে তিথিকে কোথাও না দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো। পরে অবশ্য তামিয়া আপু বললেন ওর বাসায় যাওয়ার কথা।
ইশান তখন হাঁপ ছেড়ে বেঁচে চলে যাচ্ছিল তখন তামিয়া ওকে দাঁড়াতে বলে।তার পাশে বসতেও বলে।
ইশান তাই ওর পাশে বসে,তখন তামিয়া বললো,’জানি তুই আর আম্মু তিথির উপর প্রচণ্ড রেগে আছিস।কিন্তু ইশান,একটা কথা বলি শুন।তিথি বড্ড ভাল একটা মেয়ে।আমি জানি সে তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু তখন ওর বয়সটা নিয়ে একটু ভাব।তখন তার মধ্যে ম্যাচিউরিটি ছিল না বিদায় সে অনেক কিছু না জেনে বলে ফেলেছিল।ক্ষমা করে দিয়ে,সব ভুলে ওকে জীবনের সব সুখ দিস যা তুই ওকে সবসময় দিতে চেয়েছিলি। ‘

ইশান চুপ করে সব শুনলো।তামিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আরও একবার ভেবে নেওয়ার কথা বলে।
——-
তিথি বাসায় গিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে।তার বাসায় ফেরার কথা একেবারে মনে ছিল না।
এদিকে রাত এগারোটা বেজে যাবার পরেও তার বিকেলের ঘুমটাই শেষ হচ্ছেনা দেখে ইশান নিজেই ওকে নিতে চলে আসে।ও আসার পর তানিয়া ওকে জানায় সে তিথিকে জাগানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
তিথি ইচ্ছে করেই এত দেরি করছে।ইশান তখন তিথির রুমে এসে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দেয়।

‘কে রে তানু!এত জ্বালাস কেন!চারিদিকে শুধু জ্বালানোর মানুষ সব!’

ঘুমের ঘোরে এসব বলতে বলতে তিথি অন্যদিকে মুড়িয়ে শোয়।
ইশান ওর কাছে এসে কানের কাছে বলে,’ইশান এসে গেছে’

তাতেও তিথি ওঠেনা।এবার ইশান সোজা গিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা এনে জগের ঢাকনা খুলো এক জগ পানি তিথির গায়ে ঢেলে দিলো।
তিথি এক লাফে উঠে বসে।মাথার চুল থেকে পানি চিপে চিপে বের করে বললো,’কার এত বড় সাহস?’

তখন ইশান ড্রিম লাইট নিভিয়ে রুমের মেইন লাইটটা অন করে।
তিথি ইশানকে দেখে হকচকিয়ে কাঁথা জড়িয়ে নেয় সারা শরীরে।তখন ইশান বললো,’নাটক বন্ধ করে শাড়ী চেঞ্জ করে আয়।ফ্লাইটের কথা ভুলে গেলে আবার মনে করিয়ে দিবো’

তিথি মাথায় হাত দিয়ে এলোমেলো হয়ে উঠে শাড়ীটা বদলাতে চলে গেছে দ্রুত।চোখের ঘুম এখনও যায়নি তাও ইশানের ভয় অনেক। যার কারণে ঘুম বাদ দিয়ে আগে ও যা বলেছে তা করে নিতে হবে।
ইশান রুম থেকে বের হতেই রিদম দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলে চিৎকার করে বলে,’দুলাভাই অনেক মিস করবো আপনাদের,এ্যা এ্যা এ্যা!’

‘আরেহ আরেহ!শান্ত হও
আমরা তানিয়ার বিয়েতে আসবো তো আবার’

‘না না।এ হতে পারেনা ভাইয়া ‘

রিদমের এমন ওভার একটিং দেখে ইশান প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও পরে বুঝলো আসল রহস্য।সে আসলে ওদের সাথে জাপান যাবার জন্য এরকম কান্নাকাটি করছে।
ইশান তখন ওকে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,’আচ্ছা তুমি ইন্টার পরীক্ষা টা দিয়ে নাও।এরপর তোমাকেও নিয়ে যাবো’

রিদম মুচকি হাসি দিয়ে চেহারায় লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বললো,’ঐ যে আমাদের বাসায় আসার গলির মোড়ে একটা পিংক কালারের বিল্ডিং আছেনা?চার তলা’

‘হ্যাঁ’

‘ওটার তিন তলায় পিংকি নামের একটা মেয়ে আছে।যদি আমার সাথে ওরেও জাপান যাবার সুযোগটা করে দিতেন!’

ইশাম সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,’আচ্ছা তোমার বয়স কত?’

‘বারো’

‘আর ওর বয়স কত?’

‘সাড়ে এগারো’

‘মারহাবা!সোনায় সোহাগা!আগে তোমরা বড় হয়ে নাও তারপর নাহয় তোমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে একসাথে নিয়ে যাবো’

রিদম তখন আরেকটু কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,”সেটাই তো!বিয়েই তো সমস্যা। পিংকিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে’

‘এ্যা?সাড়ে এগারো বছরের মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে?’

‘আরে ওর বড় বোনকে বিয়ে করাবে।তো এই চাপটা ওর উপর পড়বেনা?ওর বোনের পরে তো ওর বিয়ে হবার কথা।এই জন্য ভাবি কমার্সের স্টুডেন্ট রা কি আর সাইন্স বুঝবে!’

‘তুমি বুঝি সাইন্স নিয়ে পড়ো?তুমি তো সবে ক্লাস সেভেনে পড়ো’

‘ভবিষ্যতে পড়বো তো।ওসব বাদ দিন।তার আগে আমার কাজটা ঠিক কবে হবে সেটা বলতে পারবেন?’

ইশান অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে।তারপর সে বললো খুব শীঘ্রই ওদের নিয়ে যাবে।

তিথি একটা থ্রি পিস পরে এসে ইশানের সামনে দাঁড়াতেই ইশান উঠে দাঁড়ায় চলে যাবার জন্য তখন তিথির বাবা এসে ওর হাতটা ধরে এরপর শক্ত চোখে চেয়ে থেকে বললেন তিথির খেয়াল রাখতে। আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না।মনে অনেক কষ্ট নিয়ে তিনি কথাগুলো শেষ করতে পেরেছেন।ওরা অনেক দিনের জন্য চলে যাচ্ছে বলে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছিল তার।

তিথি ও কান্নাকাটি করছিল আসার সময়।

পথে ইশান ড্রাইভ করতে করতে পকেট থেকে একটা ঔষুধের পাতা বের করে তিথির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো আজকে থেকে এটা খেতে।
তিথি কপাল কুঁচকে অনেকক্ষণ ধরে পাতাটা উল্টেপাল্টে ইশান কে কোনো কিছু না বলেই পাতাটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো।ইশান চুপচাপ গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিল।তিথি মাথা উঁচু করে গর্ববোধ করছে কাজটা সে করতে পেরেছে বলে।
ইশান কিছুক্ষণ পর আরেকটা পাতা ধরে বললো,’আমি জানতাম তুই ওটা ফেলে দিবি।তাই নরমাল একটা ঔষুধের পাতা দিয়েছিলাম।’

‘তো এটাও দিন।এটাও ফেলে দিইই’

ইশান মুচকি হেসে বললো,’এটা আর দিবোনা।জোর করে খাওয়াবো’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-২৬+২৭

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৬
আফনান লারা

নানু ভাবলেন ইশান হয়ত সব বুঝছে।কিন্তু নাহ।ইশান এইবার বেঁকে বসেছে।সে বলে তিথির দোষ যদি কেবল দোষই হতো তবে নিশ্চয় সে মাফ করে দিতো। কিন্তু তিথি তো দোষ করেনি।সে করেছে অন্যায়।
অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।তিথি সেকালে ইশান আর তার মাকে যে অপমান করেছিল এ কথা ইশান আর ওর মা বাদে আর একটা মানুষ ও জানেনা ওর পরিবারের,এমনকি তিথির পরিবারের কেউই জানেনা।
আর তাই নানু ইশানের কাছে সব শুনে অবাক হলেন।সব শুনার পর তিনি বললেন,’তবে তিথি যদি দোষই করে থাকে তাহলে ইশান কেন তাকে বিয়ে করেছে।’

এর জবাবে ইশান কিছু বলেনা।কিছু সত্য সবাইকে বলতে হয়না।সাময়িকের জন্য সে সত্য চাপা রাখলে দুই পক্ষেরই মঙ্গল ঘটবে।
নানু কোনো জবাব না পেয়ে চলে এলেন।তবে তিনি ইশানের না বলা কথাটি ঠিকই বুঝে গেছেন।আর তাই মিটমিট করে হাসছেন।
তিথিকে অনেকক্ষণ না দেখে ইশানের চিন্তা হলো।বিদেশে গেলেও সে সবসময় তিথির উপর নজর রাখতো।যাতে সে কোনো ছেলের ফাঁদে না পড়ে যায়।শেষে বাধ্য হয়ে আদিলকে লাগায় কাজে।আদিল ওর বিশ্বস্ত লোক।সে তিথিকে না ছোঁয়ার শর্তে সই করে কাজটা করেছে। এবং এর জন্য ইশান তাকে ঢাকায় স্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
রুম থেকে বের হয়ে ইশান ঘুরতে ঘুরতে মামির সাথে খেলো এক ধাক্কা।
এই মামি হলেন সানজিদা মামি।উনি তিথির একাধারে মামি হোন আবার বান্ধবীও হোন।তিথির ক্লাসমেট ছিলেন তিনি।
সেই সূত্রে ইশানকে তিনি চিনতেন,দু একবার তিথিকে ডিস্টার্ব করতে দেখেছিলেন।কিন্তু বিয়েতে ইশানকে দেখে চিনতে না পারলেও বারবার মনে হচ্ছিলো ওকে কোথাও একটা দেখেছেন।
এখন আবারও ওর মুখটা সামনে দেখে তিনি আন্দাজ করে বললেন,’আচ্ছা তুমি কি পানপাড়া হাই স্কুল চিনো?’

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’চিনি।আপনাকেও চিনি।’

‘আচ্ছা তুমি কি তিথিকে আগে থেকে চিনতে?’

ইশান হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়।মামি তো অবাক।হা করে তাকিয়ে রইলেন।এত বছর পর আগের ইতিহাস আবার সামনে চলে আসলো!ভাবা যায়!
এই ছেলেটা তিথিকে যখন ডিস্টার্ব করতো তখন মনে মনে তিনি হিংসা করতেন।তার জন্য যদি এমন একটা ছেলে পাগল থাকতো তবে কতই না ভাল হতো!
সেই ছেলে শেষ পর্যন্ত তিথির জন্যই থেকে গেলো!
তিথির কথা মনে পড়ায় মামি বললেন তিথি নানুর রুমে।
এই বলে তিনি কাজে চলে গেছেন।ইশান নানুর রুমে এসে তিথিকে ঘুমাতে দেখে ওর কাছে আসে।অনেকক্ষণ ওকে দেখে সে তিথির হাত ধরে চুড়ি গুলো সব খুলে নেয়।তিথি গভীর ঘুমে থেকে বিড়বিড় করে বলছিল ‘চুড়ি নিলে শাস্তি মাফ!’

ইশান চুড়িগুলো নিয়ে চলে আসে।তিথির ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক দশটায়।সে উঠে বসতেই নানু ওর হাতে পানির মগ দিয়ে বললেন ইশান গাড়ীতে বসে ওর অপেক্ষা করছে।সে যেন দ্রুত তৈরি হয়ে যায়।খাওয়া দাওয়া গাড়ীতেই করে নিতে পারবে,তিনি খাবার প্যাকেট করে দিয়েছেন।তিথি শুরুতে কিছুই বুঝতে পারলোনা।পরে হুশ ফেরায় বললো সে তো যাবেনা।সে এখানেই থাকবে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা।নানু এক প্রকার জোর করেই ওকে তুলে ফেললেন বিছানা থেকে এবং বললেন এইসব ঘাউরামি বাদ দিয়ে সংসারে মন দিতে।সবসময় সব বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে প্রতিযোগিতা করা উচিত নয়।

তিথিকে তিনি ঠেলে গাড়ীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।ইশান সানগ্লাস পরে বসে ছিল।তিথি ওর পাশে বসে বললো,’আমাকে ছাড়া ভাল লাগেনা।আবার আমাকে নাকে দড়ি দিয়েও ঘোরাবে! ‘

ইশান যেন কথাটা শুনলোইনা,একটা ভাব নিয়ে বসে আছে সে।
সে এবার নানু বাড়ি থেকে তিথিকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে।মা,আপু সবাই ততক্ষণে বাসায় ফিরেও গেছেন।
ইশান তিথিকে বাসায় রেখে অফিসের কাছে চলে গেছে।এদিকে তিথিকে একা পেয়ে ইশানের মা ধরলেন ওকে ভাল করে।তিনি জানতে চাইলেন তারা কি কারণে হঠাৎ নানুর বাড়ি গেলো।

‘আমি গিয়েছিলাম,কিন্তু উনি ও এসে পড়লেন।কোনো দাওয়াত ছিল না।আমি এমনিতেই গেছিলাম’

‘তুমি জানোনা? তুমি গেলে আমার ছেলেও যাবে?তুমি যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নও তা জানা আছে আমার।ইচ্ছে করে আমার ছেলেকে ওতদূর নিয়ে গেলে।ও যে তোমার জন্য পাগল এটা তো জানোই।আবার কি প্রমাণ করাতে চাও?’

তিথি চুপ করে আছে।কিছু বললেই আবার আগুন লাগবে।তার চেয়ে বরং চুপ করে থাকাই ভাল।ইশানের মা আরও অনেক কিছু বলে চলে গেছেন।
আগেকার তিথি হলে দু চারটা কথা মুখের উপর বলে দিতো।এখনকার তিথি বলে সে চুপ থেকে গেলো।

ইশানের জাপানে যেতে হবে জরুরি একটা কাজে।তাদের নতুন একটা ফ্লেভারের নুডুলস তৈরি হয়েছে সেটার উদ্ভোধন করবে সে।তিথিকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ইশান সেটা না ভেবে অন্য একটা প্ল্যান করেছে।সে তিথিকে দেশেই রেখে যাবে যাতে করে তিথি ইশানের অনুপস্থিতিটা হারে হারে টের পায়।
যদি ওকে সাথে করে জাপান নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে দেখা গেলো সে টের পাওয়ার বদলে ইশান নিজেই তিথির প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়বে।
আর তাই সে তার প্ল্যানের টিকেট দারোয়ানকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে তিথি সেটা দেখে কি রিয়েকশান দেয় তা জানার জন্য।
দারোয়ান ওর কথামতন টিকেটটা বাসায় দিয়ে আসে।
ভাগ্যক্রমে দরজাটা তিথিই খুলেছিল।সে টিকেটের খাম হাতে নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে যায়।ইশানের চিঠি বলে সেটা পড়ে দেখার কৌতুহল তাকে বাধ্য করে খামটা ছেঁড়ার জন্য।
আর তাই সে রুমে গিয়ে খামটা খুলেও ফেলে।
দেখলো ইশানের জাপান যাওয়ার টিকেট,পরশু ভোর ৬টায়।
ইশান ভেবেছিল তিথি মনখারাপ করবে,কিন্তু সেটা না হয়ে হলো তার উল্টো। তিথি দারুণ খুশি হলো।সে একটু শান্তিতে থাকবে ভেবে আনন্দে আটখানা হয়ে রুমে ঘুরতে লাগলো।
কি শান্তি!ইশান চলে গেলে সে ঐদিনই বাবার বাড়ি চলে যাবে।তানিয়ার বিয়ের আয়োজনে মশগুল থাকবে।কত মজা হবে তার।মাথা থেকে বোঝা নেমে যাবে।কয়েকদিন শাস্তি পেতে হবেনা।
তিথির আর আনন্দ ধরছেই না।
ওদিকে ইশান অফিসে থেকে মিটমিট করে হাসছিল তিথির অবস্থা চিন্তা করে।
——
ইশান সেদিন বাসায় ফিরলো একটু জলদি করেই।কারণ তার দেখার ছিল তিথি কি করে।
কিন্তু তিথির হাবভাব দেখে ইশান আশ্চর্য হয়ে যায়।তিথিকে দেখে মনে হয় সে হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।

আর তাই ইশান গাল ফুলিয়ে নিজের ব্যাগে জামাকাপড় ঢুকাচ্ছিল।তখন তিথি এসে নিজেও তাকে হেল্প করতে থাকে।
ইশানের আরও রাগ বেড়ে গেলো এসব দেখে।সে ব্যাগটা সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে নিজের কাজ করতে থাকে।
আর কাজ করতে করতে বলে,’আমার টিকেট কোথায়? ‘

তিথি এক দৌড়ে সেটা এনে দিতেই ইশান বললো,’এত খুশি হবার কি আছে?আমি কি তোকেও নিচ্ছি?’

‘নিচ্ছেন না বলেই তো আমি এত খুশি’

‘ওহ রিয়েলি?ওকে ফাইন।আমার সাথে এবার তুইও যাচ্ছিস।অনেকবছর আগে তোকে বলেছিলাম একদিন তোকে আমি বিলেত নিবো, এই শুনে তুই খুব হাসছিলি।এবার তোর হাসির চৌদ্দটা আমি বাজাবো’

তিথির মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চাইলো ওখানে ইশানের বাসায় আর কে কে থাকে।

ইশান হাসি দিয়ে বলে,’আমি গোটা একটা ফ্ল্যাটে একা থাকি।পাশের ফ্ল্যাটে একটা কাপল থাকে।এরপর দূর দূরান্তে বাসা বাড়ি নেই,সব বন আর বন।’

তিথি ঢোক গিলে বলে,’তার মানে ওখানে আমি আর আপনি একা?’

‘জ্বী’

তিথি এক দৌড় দিলো।ইশান বুঝলোনা সে দৌড় কেন দিলো,আর দৌড়টা দিয়ে গেলোই বা কোথায়।
তিথি আসলে ইশানের মায়ের রুমে গেছে।উনি যদি শুনেন ইশান তার বউকে সমেত জাপান চলে যাচ্ছে তবে তিনি এই অঘটন কিছুতেই ঘটতে দেবেন না।কারণ ইশানের সাথে তো তার কথা হয়েছে, সে সবসময় তিথিকে শাস্তি দেবে।বিদেশ নিয়ে যাওয়া মানে তো শাস্তি হতে পারে না।
এইসব শুনে তিনি নিশ্চয় তিথির যাওয়া ক্যানসেল করতে পারবেন।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৭
আফনান লারা

ইশানের মা বসে বসে খাতায় কিছু লিস্ট লিখছিলেন।জাপানের কিছু প্রোডাক্ট তার লাগবে।ইশান চলে যাবে শুনে ওগুলোর লিস্ট করছেন তাকে দেবেন বলে।তিথি বেশ অনেকক্ষণ ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওনাকে দেখছিল। কি দিয়ে কথাটা শুরু করবে তাই ভাবছে।ইশানের চেয়ে ইশানের মাকে তার বেশি ভয় হয়।অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করে কথাটা সে তামিয়াকে দিয়ে পেশ করাবে।তাই দরজা থেকে ভেতরে না গিয়েই সে চলে যায় সোজা তামিয়ার রুমে।
তামিয়া শুয়ে শুয়ে তার হবু বর আকাশের সাথে ফোনে কথা বলছিল।তিথি দরজায় নক করে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘আসবো আপু?’

‘কে তিথি?আসো!’

তামিয়া কল কেটে উঠে বসে।তিথি ভেতরে এসে চুপিচুপি দরজাটা লাগিয়ে তামিয়ার পাশে বসে এরপর ওর হাতদুটো ধরে বলে,’একটা হেল্প করবে আপু?’

‘কি?’

‘তোমার আম্মুকে বলবে,, ইশান আমাকেও তার সাথে করে জাপান নিয়ে যাচ্ছে’

‘কি বলো!এটা তো দারুণ ব্যাপার।মা তো জানবেই,এখন জানানোর কি আছে?’

‘এখন জানাও,তাহলে উনি শুনলে আমাকে আর জাপান যেতে হবেনা’

‘এটা কেমন কথা?তুমি জাপান যেতে চাও না কেন?ওহ আচ্ছা বুঝলাম।ভাইকে ভয় পাচ্ছো?তোমার ধারণা ওখানে গেলে ভাই তোমাকে আরও জ্বালাতন করবে?হাহাহাহাহা!!হাসালে!বরং ওখানে গেলে তোমাদের মাঝখানের দূরত্বটা অনেক কমে যাবে।তুমি বুদ্ধি দিয়ে ভাবো।এটা তোমার সংসার জীবনের জন্য অনেক ভাল একটা আইডিয়া।তোমার তো দৌড়ে দৌড়ে যাওয়া উচিত।তা না করে তুমি কিনা ক্যানসেল করার পিছনে ছুটছো?’

তিথি ঢোক গিলে বললো,’তুমি বুঝতেছো না আপু।আমার সত্যিই যেতে ইচ্ছে করছেনা।আমার অনেক ভয় করছে।তুমি তোমার ভাইকে চিনোনা।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যখন চাইতেছো আমি মাকে গিয়ে কথাটা বলি।তবে তাই হবে’

এটা বলে তামিয়া চলে গেলো মাকে বলার জন্য।তিথিও পিছন পিছন গেছে।বাহিরে দাঁড়িয়ে ওনার ভাবগতি দেখবে।
তামিয়া মায়ের কাছে যেতেই তিনি বললেন তার কিছু লাগবে কিনা বলতে,লিস্টে এড করে দিবেন।তামিয়া তখন মায়ের হাত থেকে লিস্ট টা সরিয়ে বলে,’মা তুমি কি জানো ইশান তিথিকেও নিয়ে যাচ্ছে?’

‘মশকরা করছিস?’

‘না তো।সত্যিই এটা।’

মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।এত বড় কথা কিনা সে লুকিয়েছে!ওনার চোখ বড় করা দেখে তিথি আনন্দে নাচতে নাচতে যেই না পিছনে মুড়লো ওমনি জোরেশোরে এক ধাক্কা খেলো ইশানের সাথে।ওর মুখে এত হাসি দেখে ইশান বললো,’আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছিস?’

‘না,তবে সেরকম কিছু ‘

ইশান কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে মায়ের রুমে ঢুকে গেলো।তামিয়াকে দেখে রুম থেকে চলে যেতে বলে সে মায়ের পাশে এসে বসে।তামিয়াও ফোন টিপতে টিপতে চলে যায়।মা তো রেগে আগুন,তিনি তামিয়া চলে যাবার পরই ইশানকে প্রশ্ন করলেন কেন সে তিথিকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথি বাহিরে থেকে সব কথা শুনছে চুপটি করে।

ইশান বললো,’মা তুমি ভাবছো আমি ওকে ভালবেসে নিচ্ছি?মোটেও না।আমি ওকে আরও বেশি শাস্তি দেবার জন্য নিচ্ছি ‘

মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর বললেন,’কিরকম শাস্তি?ওখানে গিয়ে আর কিরকম শাস্তি তুই দিবি?’

‘মা বোঝো,ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।ওরে যে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তা সুন্দর মতন দিতে পারবো।’

মা ভাবলেন কিছুক্ষণ এরপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,’তবে তাই হোক।যেটা ভাল মনে করিস, কর।’

তিথি নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি দিলো।এত জোরে দিলো যে ইশান শুনে ফেললো।সে রুম থেকে বের হয়ে দেখে তিথি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে যাচ্ছে।

‘এই যে তিথি ম্যাডাম!’

তিথি জিভ কামড়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।

‘সবই তো শুনলেন,এবার নিজের জামাকাপড়, পাউডার লোশন সব গুছান দ্রুত’

তিথি পেছনে তাকিয়ে বললো,’কতদিনের জন্য?’

‘দিন বলছিস কি!বছর ও হতে পারে’
———-
ইশান ওকে কষ্ট দিতে দিতে কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে এই ভেবে তিথির হাত চলছেনা।সে জামা একটা নিয়ে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকছে।তার এমন অবস্থা দেখে ইশান নিজেই ওর ব্যাগ প্যাক করে দিচ্ছে।তিথির ভয়ে ইশান আরও মজা পাচ্ছে।ওখানে গেলে ওকে আরও ভয় দেখিয়ে মজা নেওয়া যাবে।
ইশানের মুখে হাসি দেখে তিথির কলিজা শুকিয়ে গেলো।সে সোফায় বসে বসে ভাবছে আজ রাতেই সে পালাবে।কিছুতেই এই ছেলের সাথে বিদেশ পাড়ি দেয়া যাবেনা।

ঠিক তাই একটা পরিকল্পনা করে তিথি।সে আজ রাতে পালাবে।নানু বাড়িও যাবেনা,বাবার বাড়িও যাবেনা,বান্ধবীর বাড়িতেও যাবেনা।সে যাবে হোটেলে।ইশান জাপান চলে যাওয়া পর্যন্ত হোটেলে গাপটি মেরে বসে থাকবে সে।

রাত বারোটা বাজতেই ইশান অফিস থেকে ফেরে।সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে যেতেই তিথি পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়।সকলে নিজ নিজ রুমে।সদর দরজার আশেপাশেও কেউ নাই।তিথি তার পার্সটা নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে দিলো এক ছুট।কিন্তু আফসোস, ইশান মনে হয় আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল।সে দারোয়ানকে বলেছে তিথিকে দেখলে যেন বের হতে না দেয়।দারোয়ান সে জন্য কড়া পাহারা বসিয়ে রেখেছে।
তিথিও কম না।
সে বিল্ডিংয়ের পিছনে গেলো বাউন্ডারি টপকে যাবে বলে।বাউন্ডারি দেখে তিথির ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।
স্কুলের টিফিন টাইমে এভাবে বাউন্ডারি টপকে সে ক্লাস মিস দিতো।
এখনও সেরকমই মনে হচ্ছে।বাউন্ডারি খাঁমছে ধরে সে উপরে ওঠার চেষ্টা করতে যেতেই কেউ একজন ওর আঁচল ধরে এক টান দিয়ে ওকে নিচে ফেলে দেয়।
মাটিতে ধপাস করে পড়ে তিথি মাথা তুলে তাকালো।ইশান খালি গায়ে,গলায় তোয়ালে ঝুলানো।সে কোমড়ে হাত রেখে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে।

‘জাপান যাবার ভয়ে যে কোণায় পালাস না কেন,ইশতিয়াক তোকে বের করে আনবেই।দারোয়ান আমায় ইনফর্ম করে দিয়েছে তুই যে পালাচ্ছিস!’

তিথি মাথা চুলকে বললো,’পালাবো কেন?আমি প্রেক্টিস করছিলাম’

‘জাপানে আমার যে ফ্ল্যাট আছে এক তলার।সেটাতেও চারিদিকে বাউন্ডারি করা।মন মত প্রেক্টিস করে নিস’

এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে টেনে উঠায়।তিথি হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, ‘যাব না’

এই বলে সে বসেও গেলো।ইশান তখন তিথিকে ধরে কোলে তুলে নেয় এরপর হাঁটতে হাঁটতে বলে,’তুই যাবিনা তোর ছায়া যাবে’

তিথি নিরবে ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কোনো হাতাহাতি সে করলোনা।শুধু এক দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকিয়ে রইলো।যেন তার খুব ভাল লাগছে এভাবে করে যেতে।ইশান কিছুদূর যাবার পর টের পেলো তিথি তাকে বাধা দিচ্ছেনা।
তাই সে তিথির দিকে তাকায় তখনই।চোখে চোখ পড়তেই তিথি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে,’নামবো’

‘এতক্ষণ ভাল লাগছিল?এখন লজ্জায় পড়ে নামতে চাইছিস?’

‘মোটেও না’

ইশান দরজার সামনে এসে তিথিকে নামিয়ে দেয়।তিথি তখন বাহিরে গেটের দিকে তাকিয়ে ভাবে তার আর পালানো হলোনা।

ইশান ওকে টেনে বাসায় ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে বললো,’ফের যদি দেখি পালানোর চেষ্টা করেছিস তবে এভাবেই কোলে তুলে এরপর নিচে ফেলে দিবো’

তিথি মুখ গোমড়া করে যেতে যেতে মায়ের রুমের কাছে গিয়ে থেমে যায়।তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলে,”আমাকে দেখতে না পারলে কোলে তুলেছেন কেন?’

এ কথা সে ইচ্ছে করে বললো যাতে মা শুনে।এরপর উল্টো পাল্টা ভাবে।

ইশান তিথির কথা শুনে থামলো।সেও বুঝেছে এত রাতে তিথি এত জোরে কেনোই বা কথাটা বলেছে।তখন সে তিথির কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,’মা রাতে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমায়।তোর এত মিষ্টি গলা তিনি শুনবেন না’

তিথি কপালে হাত দিয়ে ইশানের পিছু পিছু গেলো।মনে হয় তার ভাগ্যে জাপান যাওয়াই লেখা আছে।কি বিপদ!

হঠাৎ তার মনে পড়লো পাসপোর্ট গায়েব করলে তার আর জাপান যেতে হবেনা।তাই সে ফোন নিয়ে তানিয়াকে কল করে তার পাসপোর্ট টা লুকিয়ে ফেলার জন্য।
তানিয়া কল ধরে যেটা বলে সেটা শুনে তিথি বোকা বনে গেছে।
তানিয়া বলে ইশান কয়েকদিন আগেই লোক পাঠিয়ে তিথির পাসপোর্ট নিয়ে গেছে জরুরি দরকারে।
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-২৪+২৫

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৪
আফনান লারা

তিথির এরকম একটা প্রশ্নে ইশান আরও বেশি রেগে যায়।সে চিৎকার করে বলে,’ছেলেটা যদি আমার বোনকে পাগলের মতন ভালবেসে থাকে তবে অবশ্যই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো,কিন্তু সে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত আমার বোন তার জন্য অপেক্ষা করবে তার মানে এই নয় যে আমার বোন তাকে দূরছার করে দূরে ঠেলে দিবে,কিংবা কথা দিয়ে এরপর কথার খেলাপ করবে।আমার বোনকে আমি সেই শিক্ষা দিই নাই।’

তিথি কি আর বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।যাই বলে ইশান তারই একটা না একটা উত্তর গুছিয়ে বলে দেয়।
তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশান ওকে ছেড়ে দিয়ে কিণারায় উঠে বসে পড়ে।তখন তিথিও আর দাঁড়িয়ে থাকেনা।সেও উঠে বসে।

দুজনেই চুপচাপ ছিল যতক্ষণ না বৃষ্টি থামে।ইশানের ফোনের আলোটাও নিভু নিভু করছে।
শেষে আলো থাকতে বাসায় পৌঁছানোর কথা ভেবে সে উঠে হাঁটতে থাকে।তিথিকে একবার আসতেও বলেনা।
তিথি রাগ করলে তারই লস হবে তাই সেও ওর পিছু পিছু আসতে থাকে।দুপাশে সুপারি গাছ আর মাঝ দিয়ে ইটের রাস্তা।তিথি চলতে চলতে বললো,’আপনি কি করে জানলেন এখানে নদী আছে?’

‘আমার থেকে পালানোর জন্য এক মাস ধরে নানুর বাড়িতে ছিলি, আর আমি নানু বাড়ি চিনবোনা?’

‘তার মানে আপনি জানতেন সব?’

‘শুধু তাই নয়।আমি এই এক মাসে অনেকবার এসে তোকে দেখেও গেছি। তুই টেরও পাসনি।জানিস?যে খুব করে ঘৃনা করে সে এক সময় ঐ মানুষটাকে প্রচণ্ড ভালবেসেছিল।
ভাল না বাসলে এত ঘৃনা জন্মায় না।’

তিথি অনেকটা পথ আসার পর হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো,’আচ্ছা এই প্রতিশোধ কতদিন ধরে চলবে??’

তিথির এই কথায় ইশানও থামে। পেছনে ফিরে বলে,’আজীবন’

‘আমি মুক্তি চাই,আপনার সাথে সংসার করতে চাইনা।’

ইশান মুচকি হেসে আবারও হাঁটতে লাগলো।তিথি বিরক্তি নিয়ে ওর সামনে এসে উঁচু গলায় বলে,’বললাম না আমি এই সংসার করবোনা?’

‘করিসনা,যা চলে যা’

ইশান কথাটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেই না।এর কিছুক্ষণ পর নানুর বাড়িতে এসে দুজনে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।নির্ঘাত মামা দরজা খোলা দেখে আটকে দিয়েছেন।রাতের দুইটা বাজে।এখন কি হবে!
ইশান অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কিয়েছে,কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি,নানু,মামার নাম্বার তিথির মুখস্থ নেই।তিথি বললো ওনারা সবাই গভীর ঘুমে।উঠবেনা হয়ত।তিথির এমন কথাশুনে ইশান বললো তবে সারারাত তারা কি এই বৃষ্টির মধ্যেই ভিজবে!

এরপর হঠাৎ ওর খেয়াল হয় তার তো ওপাশে কার থামানো আছে।সেটাতে গিয়ে বসলেই পারে।কিন্তু সমস্যা হলো কারের চাবি সে টেবিলের উপর রেখে এসেছে।
ওমনি তিথি বুদ্ধি দেয় তারা জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে চাবিটা নিতে পারে।
আর তাই দুজনেই সেই জায়গায় এসে উপস্থিত হয়।তিথি হাত বাড়িয়ে চাবিটা নেয়ার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তার হাতটা ওতোদূরে পৌঁছাচ্ছিলই না।
শেষে ইশান ওকে সরিয়ে নিজে হাত ঢুকাতে গিয়ে দেখলো তার হাতটা ঢুকছেই না।
তিথি খিলখিল করে হেসে ওঠে এই দৃশ্য দেখে। তখন ইশান রেগে গিয়ে বললো,’এতই যখন পারো তবে নিজের ঐ লিলিপুট হাত দিয়ে আবার চেষ্টা করে দেখো না”

তিথি কোমড়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে আবারও চেষ্টা করতে থাকে।অনেক কষ্টে সে চাবিটা নেয়।দুজনেই এবার তাড়াহুড়া করে গাড়ীর ভেতরে ঢুকে বসলো,পেছনের সিটে।
তিথি ভিজে একাকার হয়ে আছে।
ইশান ও ভিজে আছে কিন্তু তিথি একটু বেশি কারণ তার বড় চুলের কারণে।তার চুল দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছিলো।
ইশানের ফোনটাও অফ হয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও বারতি।এত অন্ধকার!সব মিলিয়ে বাজে এক অবস্থা।
তিথি এই মূহুর্তে ইশানকেই ভয় পাচ্ছে।আবার কি করে বসবে কে জানে।সব ভয়ে থাকলেও ইশানের ভয় একাই যথেষ্ট তাকে ভীতু করে তোলার জন্য।
তিথি একটু একটু করে গ্লাসের সাথে লেগে বসেছে।যাতে ওর সাথে ইশানের শরীর না লাগে।
অস্বস্তিকর পরিবেশে ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক। দুজনেই জেগে বসে বসে সময় গুনছে। কখন ভোর হবে আর কখন নানু দরজা খুলবেন।

তিথি হাত দিয়ে নিজের চুল থেকে পানি বের করতে করতে বললো,’কি দরকার ছিল এত রাতে এইসব নাটক করার?আমার জ্বর হলে কি করবেন!’

‘নাচবো!বেশি বকবক করলে গাড়ী থেকে বের করে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবো তোকে।’

তিথি আর কিছু বলেনা।বারবার নিজের হাত ঘঁষতে থাকে।হাত ঘঁষলে গরম সৃষ্টি হয়।
ইশান নিজের গাড়ীর ডেস্কে খুঁজে একটা তোয়ালে বের করে।এটা তার পার্সোনাল।দূরে ট্র্যাভেল করলে এটা দিয়ে মুখ মুছে।আপাতত এটা পরিষ্কার বলে সে তিথির দিকে বাড়িয়ে ধরলো আঁধারের মধ্যে।
তিথি কিছুই বুঝলোনা তাই জানতে চাইলো সে হাত বাড়িয়ে কি দিয়েছে এবং কোনদিকে দিয়েছে।সে দেখছেনা।
ইশান বিরক্ত হয়ে কাছে ঘেঁষে তেয়ালেটা ঘুরিয়ে ওকে পরিয়ে দিয়ে বললো,’আপন মানুষের অবয়ব অন্ধকারেও চেনা যায়।অবশ্য আমি তো তোর আপন মানুষ নই’

তিথি চুপ থেকে যায়।মাঝে মাঝে মনে হয় সে যে অন্যায় করেছিল তা হলো আকাশচুম্বী। যার কারণে ইশান আজও সেটা ভুলতে পারছেনা।আবার কখনও মনে হয় ইশান বাড়াবাড়ি করছে।
বাড়াবাড়ি ভেবে মনে পড়লো একটা কথা।ওমনি সে বলে ওঠে,’আমি যদি মাফ চাই,মাফ করবেন?’

‘সরি বললেই সব সমাধান হয়না।তুই যে অপরাধ করেছিস তার হাজার সরিতেও ভোলার মতন না’

তিথির হাতের চুড়িগুলা ওর হাত নাড়ার কারণে এত এত আওয়াজ করছিল যে ইশানের মাথা ব্যাথা আরও দিগুণ বাড়িয়ে তোলে।সে বিরক্ত হয়ে আন্দাজ করে তিথির হাত ধরে চুড়ি গুলো খুলছিল।তখনই তিথি বললো,’আপনি কি করবেন এখন? সব খুলছেন কেন?’

ইশানের হাত থেমে যায় তিথির কথা শুনে।সে বলে,’সব খুলছি মানে?আর কি খুলছি?তোকে না বলছি আমি ঐসব কিছু তোর সাথে করবোনা।তাহলে বারবার ঐসবের দিকে টেনে নেস কেন?অশ্লীল কোথাকার!’

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’তবে চুড়িতে কি সমস্যা আপনার?’

‘মাথা ধরছে আমার।যেভাবে চুড়ি দিয়ে বাজনা বাজাচ্ছিস তাতে এইবার মাথা ফেটে যাবার উপক্রম’

‘আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?আপনার কি জাপানে কারোর সাথে প্রেম হয়েছিল?’

‘হয়েছিল,অনেকগুলো।তাদের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড ও হয়েছিলাম।সবগুলোর পেটে বাচ্চাও হয়েছিল।কিন্তু আফসোস,জাপানি মেয়েদের সব চেহারা এক রকম।বাচ্চা গুলো সব আমার মতন দেখতে হয়েছে শুধু চোখ গুলো ভেতরে ঢুকানো জাপানিদের মতন।সবগুলোর চেহারা এক লাগতো’

‘আপনি সিরিয়াস?’

‘তোর কি মনে হয়?’

তিথি আর কিছু বলেনা।ইশান তাকে ক্ষেঁপানোর জন্য এমন করছে নিশ্চয়।
তিথির চুড়িগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে ইশান।সেইকালে তিথির হাতের চুড়ি ওর বান্ধবীকে দিয়ে চুরি করিয়েছিল সে।তিথির কিছু জিনিস স্মৃতি হেসেবে সে রেখে দিয়েছিল।তা হয়ত কোনোদিনও তিথি জানবেনা।

তিথির হুশ ফেরায় সে তার চুড়িগুলো ইশানের থেকে চাইলো।কিন্তু ইশান তাকে ওগুলা ফেরত না দিয়ে বললো,’তুই যদি আমার হাত থেকে চুড়িগুলো উদ্ধার করতে পারিস তবে তিনদিনের জন্য তোর শাস্তি মাফ’

তিথি তো মহাখুশি হয়ে যায়।সে তোয়ালেটা গা থেকে ফেলো অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতন কাজে লেগে পড়ে।সে ইশানের সাথে হাতাহাতি করছে চুড়িগুলো নেবার জন্য।কিন্তু কিছুতেই পারছিলনা।তখনই তার মনে পড়ে কারে তো লাইট থাকে।
সে এবার চুড়ির পেছনে না ছুটে গাড়ীর আলোটা জ্বালানোর চেষ্টা করে এবং সে পারে ও।

ইশান বুঝে যায় তিথির জন্য কাজটা এবার সহজ হবে।তার এই ভাবনার কালেই তিথি তার চুড়ি জোড়া নেবার জন্য ইশানের দিকে এগিয়ে যায়।ঠিক তখনই ইশান তার হাতটাকে পিঠের পিছনে লুকিয়ে ফেলে।
তিথি ও হার মানার মেয়ে নয়।সে কাছে এসে ওর পিঠের পেছনে হাত নিয়ে চুড়িটা নিতে চাইলো কিন্তু ইশানের বুকে তার মাথাটা লাগতেই তার হাতাহাতি বন্ধ হয়ে যায়।ইশান ও থেমে যায়।
যে জড়িয়ে ধরার জন্য সে এক সময় ভিক্ষা করতো,আজ সেই জড়িয়ে ধরা নিজেই ধরা দিলো।
তিথি ইশানের বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে।হাতাহাতি করতে গেলে আরও কাছে যেতে হবে,যেটা সে আর ইশান, কেউই চায়না
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৫
আফনান লারা

ইশান চুড়িগুলো ফিরিয়ে দেয় তিথিকে।চুড়ি হাতে পেয়ে তিথি জানতে চাইলো আসলেই কি তার তিন দিনের জন্য শাস্তি মাফ?
তার উত্তরে ইশান কড়া জবাব দেয়।সে বলে এ শাস্তি মাফ হবার নয়।কথাটা বলে সে সামনের সিটে গিয়ে বসে এরপর লম্বা লম্বি ভাবে শুয়ে পড়ে।তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।ইশান খুবই শক্ত একটা মানুষ।শক্ত বলার পর তার মনে আসলো একটা কথা।
আগেকার ইশান খুবই নরম ছিল।একেবারে মাটির মতন। মাটি কখনও শক্ত হয়না।যে আকারই থাকুক ঝরে পড়বেই।ইশান ছিল সেরকম।তিথি তাকে কত অপমান,কত ধুরছার করেছিল তার পরেও দিনের পর দিন সে কেবল তিথিকেই চাইতো।তিথির কাছে তার কত আবদার ছিল তখন।
তিথি তার একটি আবদার ও কখনও পূরণ করেনি,বরং তার বদলে দিয়েছে হাজার হাজার দুঃখ যা বলে কয়ে শেষ করা যাবেনা।ইশান তিথিকে ভালবাসে বলে সে দুঃখ গুলো সে মাঝে মাঝে ভুলে গিয়ে তিথিকে আবারও আগের সেই ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে চায় কিন্তু যখনই তার মনে পড়ে এই মেয়েটা তার জন্মদাত্রী মাকে কষ্ট দিয়েছিল,কাঁদিয়েছিল তখন তার বুক ফেটে আসে।ইচ্ছে করে মেয়েটাকে খুন করে প্রতিশোধ নিতে।ভালবাসা,প্রতিশোধ, মায়ের মমতা,অশ্রু সব মিলিয়ে তাকে পাগল করে তুলছে দিনের পর দিন।
মাথার উপর হাত রেখে এইসবই ভাবছিল ইশান।তিথি ও ওর মতন করে পিছনের সিটে লম্বা হয়ে শুয়েছে।কিন্তু চুল ভিজা থাকার কারণে তার ঘুম আসছিল না।সে শুয়ে শুয়ে ভাবছে সংসারটা কি ছেড়ে দেবে নাকি ইশানের কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইবে।ইশান হয়ত ক্ষমা করবেনা।তবে কি সংসারটা ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়?
তিথি সিদ্ধান্ত নেয় সে ইশানের সঙ্গে যাবেনা।বাসায় ফিরে যাবে।অতীতের করা ভুল নিয়ে এত মাশুল সে আর দিতে পারবেনা।তার ও তো জীবন আছে,শখ আছে,সুখ আছে।এভাবে দিনের পর দিন সে কেন কষ্ট করে যাবে?যদি সে জানতো তার সাথে ইশানের বিয়ে হচ্ছে তবে সে কখনওই রাজি হতোনা কারণ যাকে এক সময় কটু কথা বলে সে আঘাত করেছিল,তার সংসারে যে শান্তি মিলবেনা এটা তো জানা কথা।
দুজনার ভাবনার বেড়াজালে ভোর হয়ে গেলো।মামা ফজর নামাজ পরতে টুপি পরে দরজা খুলে চললেন মসজিদের দিকে।দরজাটা মুখোমুখি দেয়া ছিল,আটকানো ছিলনা।কারণ আর বাকিরা সবাই ঘুমে।নানু হয়ত নিজের রুমে নামাজ পড়ছেন।
তিথি শুয়ে থেকে মামাকে যেতে দেখে উঠে বসে।মামা চলে যাবার পরই সে গাড়ীর দরজা খুলে বের হয়ে যায় সোজা নানুর রুমে।
নানু নামাজ পড়ছিলেন।
তিথি চেয়ারে বসে নানুর নামাজ পরা দেখছিল।নানু নামাজ পড়ে জায়নামাজ নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই তিথিকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে চমকে ওঠেন।এরপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’কিরে তিথু!কি হলো তোর?কাল থেকে দেখছি মুখ ভার করে আছিস।কতবার যে জানতে চাইলাম কি হয়েছে,কিছুই তো বলিসনি।আমায় বল!বললে মন হালকা লাগবে।আমি হয়ত কিছু উপদেশ ও দিতে পারি যা তোর কাজে লাগবে’

তিথি তখন বলে,’নানু তোমার মনে আছে? আমি একবার একমাসের জন্য তোমার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছিলাম? তখন তোমাকে বলতাম না যে আমার পড়ার টেবিলের জানালা দিয়ে মনে হয় কেউ আমায় দেখছে? তুমি বলতে মনের ভুল।
আসলে সে ইশতিয়াক ছিল।’

‘কোন ইশতিয়াক? ঐ যে এক কালে তোর পিছু নিছিলো,তোর জন্য পাগল হই গেছিলো,সে?’

‘পাগল হয় নাই।বরং দেখিয়ে দিয়েছে কি করে অসম্ভব কোনো কিছু নিজের করে নিতে হয়।’

‘সে এখন কেমন আছে?দেখা করেছিস নাকি?’

‘সেই তো ইশান’

এ কথা শুনে নানু অবাক হয়ে গেলেন।কিছু সময় চুপ থেকে বললেন,’তুই যখন জন্মেছিলি তখন তোর বাবার হাতের অবস্থা ভাল ছিল না।আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোকে হাসপাতালেই সোনার চামচ দিয়ে মধু খাওয়াবো যাতে তোর ভাগ্য সোনার হালে বাড়তে থাকে।
আমার এ কথা কেউ শোনে নাই।তারপর আমি আমার হাতের একটা চুড়ি বিক্রি করি নিজে নিজে।কাউকে বলিনি।তারপর একটা চামচ ও বানাই।হাসপাতালে তোকে সেই চামচ দিয়ে মধু ও খাইয়েছিলাম।সবাই বকছিল কুসংস্কার বলে।তাও আমি করেছি।তারপর থেকে শুরু হয় তোর বাবার পদন্নোতি। সবাই বলতো তুই তোর বাপের ভাগ্য খুলে দিয়েছিস।তোর গায়ের রঙ তোর বয়সের সাথে সাথে যেন আরও উজ্জ্বল হতে লাগলো।শুধু কি ইশান?আরও কত ছেলে যে তোর জন্য পাগল ছিল।হিসাব নাই সেসকলের।শুধু হিসাব আছে ইশানের।কারণ সে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে।আসলেই এখন বলতে হয় তোর সেদিনের সোনার চামচের মধুর গুণ আছে!
এই বলে নানু হাসতে থাকলেন।হঠাৎ হাসিটা থামিয়ে বললেন,’আচ্ছা তবে যদি সেই ইশানই তোর জামাই হয়ে থাকে,তবে তোর চোখে পানি কেন?’

‘সোনার চামচ কখনও ভাগ্য বদলায় না নানু।বরং যারা সোনার চামচ মুখে নিয়ে বড় হয় তাদের অনেকের সাথেই নিকৃষ্ট কিছু ঘটে!যেমন আমার সাথে হলো।
আমি সেই ছেলেটার এবং তার মায়ের সাথে এত বাজে ব্যবহার করেছি যার মাশুল আমাকে এতগুলো বছর পর দিতে হচ্ছে।তিনি কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন আমি কখনও স্বামীর সোহাগ পাবোনা’

নানু তিথির চোখ মুছে দিয়ে বলেন,’মানুষ অভিশাপ দিলেই যদি ফলে যেতো তবে দুনিয়াতে কেউ টিকতোনা।ওসব ভাবিস না।তোর ভাগ্য ভাল বলেই ইশানের মতন একটা ছেলের বউ হয়েছিস।সে তোকে অতীতে যেমন পাগলের মতন ভালবাসতো,এখনও তাই বাসে।যে একবার প্রেমে পাগল হয় তার বাহ্যিক পরিবর্তন আসলেও পাগলামি কোনোদিন যায়না।বিশ্বাস হয়না তোর, তাই তো?নিজ থেকে একবার ধরা দিয়ে দেখ!তোর পুরো জীবন বদলে যাবে’

এই বলে নানু তার ছেলের বউকে ডাকতে চলে গেলেন।
তিথি চুপচাপ ওখানেই বসেছিল।অনেক ভেবে ইশানের কাছে না গিয়ে সে নানুর বিছানাতেই শুয়ে পড়ে।
——
ইশান গাড়ীতেই ঘুমিয়েছিল।মামা নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরবার সময় ইশানকে গাড়ীর ভেতর দেখে জানালায় ধাক্কা দিয়ে ওকে জাগানোর চেষ্টা করলেন।

‘ইশান বাবা?কি হয়েছে?এখানে ঘুমাও কেন?’

আওয়াজে ইশান জেগে যায়।উঠে বসে দেখে চারিদিকে আলোতে ভরে গেছে।মামা দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন।সে চোখ ডলে গাড়ী থেকে বের হয়ে কিছু বলবে তখনই মামা বললেন সে যেন ভেতরে গিয়ে ঘুমায়।
উনি চলে যাবার পর ইশান তিথিকে ডাকার জন্য পেছনে তাকিয়ে দেখে সে নেই।তার মানে সে আগেই চলে গেছে।
তাই সেও ভেতরে চলে আসে।কিন্তু ভিতরে এসে দেখে তিথি রুমে নেই।
ইশান আর খোঁজেনা ওকে।চুপচাপ বিছানায় মাথাটা এলিয়ে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ মনে পড়ে ফোনে চার্জ লাগবে।অফিসের জরুরি কল মিস হতে পারে।তাই তাড়াহুড়া করে সে ফোন নিয়ে এসে চার্জ দেয়।এরপর আবার শোয় কিন্তু তার আর ঘুম আসেনা।তাই খাটে হেলান দিয়ে বসে হাই তুলতে তুলতে কালকে রাতের কথা ভাবতে থাকে।

‘ইশান নাতি,, সকালে কি খাও? ‘

নানুর কথা শুনে ইশান ঠিকঠাক হয়ে বসে।নানু হাতের এক কাপ চা ওর সামনে রেখে বললেন,’শুনলাম তুমি সকালে রঙ চা খাও।ঘরে মশলাপাতি শেষ তাই দুধ চা দিলাম।’

‘সমস্যা নেই’

‘আচ্ছা একটা কথা বলবে?’

‘কি বলুন?’

‘তিথিকে ভালবাসো?’

ইশান চুপ করে তাকিয়ে থাকে।নানু ওর পাশে বসে বললেন,’জানো?ভালবাসার মানুষের কোনো দোষ থাকেনা।যদি ভালোই বাসো তবে ওর দোষ নিয়ে পড়ে আছো কেন?ভালবাসায় দোষ গুণ জায়গা পায়না।যদি জায়গা পায় তবে সেটা ভালবাসা হতে পারেনা।তুমি তিথিকে সেই কোন বছর থেকে পাগলের মতন ভালবেসে এসেছো!এখন তার চোখে পানি কেন তবে?
যে ভালবাসায় মানুষটা কাঁদে সেটা আবার কিসের ভালবাসা?
জানো,, তোমাদের নানা আমার গুণ যেমন দেখতেন না তেমনই দোষও দেখতেন না।
রাঁধলে মজা করে খেতেন।রান্না মজা হলে আনন্দর সহকারে খেতেন আর খারাপ হলে চুপচাপ খেতেন।কখনও বলতেন না ভাল হয়েছে কিংবা খারাপ।আমার শুরুতে খারাপ লাগতো কিন্তু দিন এগোতেই বুঝতে পারলাম পারুলের রান্না খারাপ হওয়ায় ওর স্বামী ওকে মেরেছিল আর আমার সাহেব নিরব ছিল তখন নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করলাম।সেদিন বুঝলাম কাউকে ভালবাসলে তার দোষগুণ খুঁজা চলবেনা’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-২২+২৩

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২২
আফনান লারা

তিথি কলটা হোল্ডে রেখে বললো,’কি ভেবেছেন?টাকা খাওয়াবেন আমার পরিবারকে তারপর সেই টাকার জোরে আমি সত্যটা চাপা রেখে দিবো?তা হবেনা মিঃইশতিয়াক!আমি বাবাকে সব সত্যিটা জানিয়ে দিবো।এবং সেটা খুব দ্রুতই হবে।আমার বাবা এমন না যে টাকার লোভে আমাকে আপনার কাছে থাকতে বাধ্য করবে’

এই বলে তিথি ফোন আবার কানে ধরে বললো সে আজ বাবার সাথে দেখা করতে আসবে।এটা বলে কলটা কেটে সে ফোন ইশানের হাতে ধরিয়ে বাকি জামাকাপড় গুলো ধুতে থাকলো।
তার এ কথায় ইশানের যেন কিছুই যায় আসলোনা।সে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।যেন সে জানতো তিথি এটাই বলবে।
তিথি সব জামাকাপড় ধুয়ে এসে দেখে ইশান তিথির জামাকাপড় সব ব্যাগে তুলছে।এটা দেখে তিথি প্রথমে বুঝতেই পারছিলনা আসলে হচ্ছে টা কি।
তিথিকে দেখে ইশান বলে ওঠে সে যেন তৈরি হয়ে নেয়।তখন তিথি জানতে চাইলো কেন সে তৈরি হবে।

‘ওমা!বাপের বাড়ি যাবিনা?তুই তো বললি আমার সংসার করবিনা’

‘আর আপনি দিবেন সেটা? ‘

‘কেনো দিবোনা।অবশ্যই দিবো।’

এই বলে ইশান ব্যাগটা নিয়ে দরজার কাছে রেখে আসে।এরপর নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়।তিথি ভাবতে পারেনি ইশান সব এত সিরিয়াস নিয়ে ফেলবে।এখন ব্যাগ নিয়ে বাড়ি গেলে সকলে কি না কি ভাববে।যদি তার কথা কেউ বিশ্বাস না করে?
ঢোক গিলে অনেক চিন্তাভাবনা শেষে তিথি সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবেই,যা হয়ে যাক না কেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।সে ব্যাগ নিয়ে ইশানকে বাই বলে দরজা খুলে চলেও গেছে ।
ইশান তখনও নিজের কাজ করছিল।উঠে একবার দেখতেও আসেনি,কারণ সে জানে এরপর কি হতে চলেছে।
তিথি একটা রিকশা নিয়ে তার বাসায় ফিরে।সে ভেবেছিল সবাই ওকে দেখে অনেক খুশি হবে।কিন্তু হলো তার উল্টো। সবাই ব্যস্ত অন্য কাজে।তানিয়ার কাবিন নিয়ে আলোচনা করছে সবাই।
তিথি গেছে তাতে খুশি হলেও সবাই এখন বেশি ব্যস্ত তানিয়াকে নিয়ে।
এদিকে তিথি মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা সে ইশানকে ছেড়ে এখানে এসেছে।একটা সময়ে বাবাকে একা পেয়ে সে ধরলো কথাগুলো বলার জন্য।

‘হ্যাঁ রে মা বল কি বলবি,তুই না কি বলতে চেয়েছিলি?’

‘বাবা আমি ইশানকে….’

‘ইশান যে কি ছেলেরে মা।তোকে আর কি বলবো।যত বলবো তত কম বলা হবে।সে এত কিছু কেন করছে আমি বুঝতেছিনা।আজীবন মেয়ের বাপেরা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির জন্য করতে করতে শেষ হয়ে যায়,আর তোর বেলায় হচ্ছে উল্টো। ছেলে তোর জন্য সব করছে।খুব ভাগ্য করে পেয়েছিস রে।তোর বিয়েতে আমার অনেক খরচ হয়েছিল,এদিকে রকিবের পরিবার বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো।এই মূহুর্তে আরেকটা বিয়ের খরচ জোগানো আমার জন্য অসম্ভব হয়ে গেছিলো। ঠিক সেসময় ইশান আমায় জানায় তানিয়াকে ছোট বোন হিসেবে ওর জন্য সে কিছু দায়িত্ব পালন করতে চায়।তানিয়া নাকি তার অনেক আদরের।তোর যেমন আদরের তেমনই ওর ও আদরের।
সে জোর করে টাকা দিতে চায়,আমি বারবার মানা করার পরেও শুনলোনা রে।এত ভাল কেন!আচ্ছা তুই ওর মন জুড়িয়ে চলিস তো?ছেলেটাকে একদম কষ্ট দিবিনা।ওর কথা মত চলবি।’

এ কথা শুনে তিথির মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো।যাবার সময় নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।
কোথায় গেলো কেউ জানেনা।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার পর তিথির বাবা ওর কোনো খোঁজ না পেয়ে ইশানকে একটা কল দিলেন।
ইশান মনে করেছিল তিথি হয়ত ওর বাসাতেই আছে,কিন্তু ওর বাবার কাছে এ কথা শুনে সে নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলো। শান্ত মনে কাজ করছিল সে আজ সারাদিন ধরে।তিথি তার বাসায় নিরাপদ আছে ভেবে সে আর কোনো খবর রাখেনি।
এখন তিথির বাবার মুখে তিথির না থাকার কথা শুনে সে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়।দ্রুত তানিয়াকে কল দিয়ে তিথির কোনো বান্ধবীর কাছে আছে কিনা খোঁজ নিতে বললো।শুরুতে তিথির যে বান্ধবীর বাসায় সে গিয়েছিল সে আপাতত বাংলাদেশে নেই।পরিবার নিয়ে সুইডেন গেছে।তাকে বাদ দিয়ে আর বাকিদের খোঁজ নিতে বললো সে তানিয়াকে।এরপর নিজেই বের হয়ে গেলো তিথিকে খুঁজতে।
তিথি আসলে তার নানুর বাড়িতে চলে এসেছিল।ওর নানুর বাড়ি ঢাকার বাহিরে।
এটার কথা ইশান জানতোনা।অনেক খোঁজাখোঁজির পর হঠাৎ তানিয়া তাকে কল দিয়ে জানায় নানু কল দিয়েছিল।তিথি নাকি উনার কাছে।এটাও তিথি কাউকে জানাতে মানা করেছিল কিন্তু তিথির মা চিন্তা করবেন ভেবে তিনি তিথির থেকে লুকিয়ে কথাটা ওদের জানিয়ে দিয়েছেন।
ইশান আর বাসায় ফিরলোনা,সোজা তিথির নানুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।তিথির নানুর বাড়ি ইশান খুব ভাল ভাবে চেনে। কারণ ইশানের কাছ থেকে মুক্তি পেতে প্রায় এক মাসের মতন তিথি তার নানুর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছে,সে ভেবেছিল ইশান ওর নানুর বাড়ির ঠিকানা পাবেনা,কিন্তু ইশান তো ইশানই।সে ঠিকানা বের করে নিয়েছিল, তা অবশ্য তিথিকে বুঝতে দেয়নি।

তিথি নানুর বাড়িতে বসে বসে মুড়ি দিয়ে চিনি মাখিয়ে খাচ্ছিল আর টিভি দেখছিল।ওমনি দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে নানু উঠতে গেলেন,তিথি তাকে উঠতে মানা করে নিজেই গেলো দেখতে।দরজা খুলতেই সে দেখে ইশান দাঁড়িয়ে আছে।এত রাতে আচমকা ইশানকে দেখে তিথি ভয় পেয়ে গেছিলো।হা করে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে।ইশান ওর সাথে কোনো কথা না বলে হাতে থাকা মিষ্টি আর ফল এনে নানুর সামনে রেখে তাকে সালাম করলো।
নানু তো ইশানকে দেখে আত্নহারা হয়ে গেছেন।তিনি কি দিয়ে ওর আপ্যায়ন করবেন সেটাই ভেবে চলেছেন।

তিথি এক কোণায় দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।নানু সোফার রুম থেকে চলে যেতেই ইশান খপ করে তিথির হাতটা ধরে একটা রুমে নিয়ে আসলো,তিথি কিছু বলবে তার আগেই ইশান ওর মুখটা চেপে ধরে বললো,’কি ভাবিস নিজেকে?তুই না বাপের বাড়ি যাস?এটা তোর বাপের বাড়ি?’

‘আপনার কি তাতে?আপনার সংসার তো করছিনা আমি’

‘ডিভোর্স হয় নাই যে আমি এসব পাত্তা দিব না’

‘আমার ইচ্ছে আমি বাবার বাড়ি যাবো নাকি মায়ের বাড়ি যাবো।আপনার জীবন নিয়ে আপনি থাকুন।সেই ছোটকালকার বেহায়াপনা আবারও শুরু করেছেন।পিছু ছাড়তে বলেছি,ছাড়ছেন না কেন?’

‘আমি সেই ছোট ইশতিয়াক নয় যে তুই পিছু ছাড়তে বলবি,আর আমিও পিছু ছেড়ে দিবো।এখন তুই আমার বিয়ে করা বউ’

‘না কেউ না আমি।আপনি আমাকে রাখছেন দিনের পর দিন অত্যাচার করার জন্য।যা আমি কিছুতেই সহ্য করবোনা।আপনি চলে যাবেন এখন… ‘

নানু সোফার রুমে শরবতের গ্লাস এনে বললেন,’ইশান নাতি কই তুমি?কোথায় গেলে!তিথি কই তুই?’

তিথি নানুকে ডাকতে যাবে তখনই ইশান ওর মুখটা আরও জোরে চেপে ধরে বললো,’নানু আমি ওয়াশরুমে’

নানু ইশানের এ কথা শুনে অন্যদিকে তিথিকে খুঁজতে চলে গেছেন।তিথি ইশানের শার্ট খাঁমছাচ্ছে নিজেকে ছুটানোর জন্য,কিন্তু কিছুতেই ইশানের সাথে পেরে উঠছেনা।

নানু চলে যাবার পর ইশান ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,’তখন তোর উপর আমার কোনো অধিকার ছিল না।এখন আছে।তখনও তুই এরকম নাছোড়বান্দা ছিলি আর এখনও আছিস।কিন্তু এখন আর আমি সহ্য করবোনা।আমি যেভাবে বলবো তোকে সেভাবেই চলতে হবে’

‘আর যদি না চলি তখন কি করবেন?আপনি সেইসময় ও আমায় কাবু করতে পারেন নাই।এখন ও পারবেন না।আমি আমার জেদে অটল থাকবো’

ওমনি ইশান ওর হাত ছেড়ে দেয়।ওকে ছেড়ে যাবার সময় চেঁচিয়ে বলে,’নানু খাবার দাও,খেয়ে ভাতঘুম দিবো’

এই বলে একটা হাসি দিয়ে সে নানুর কাছে চলে যায়।তিথি ভাবছে সে কি করার কথা ভাবছে আসলে।তার মাথায় কি চলে যদি একবার সে বুঝতো তাহলে আগে থেকে তৈরি হয়ে নিতো।

রাতে খাবার খেয়ে ইশান ওর জন্য তৈরি করা রুমটাতে গিয়ে আরাম করে বসেছে।তিথি নানুর সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করছিল ঐ সময়ে নানু তাকে ধমকে ইশানের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।কিন্তু তিথি তো জানে,সে এখন ঐ রুমে যাওয়া মানে আজ একটা যুদ্ধ ঘটে যাবে।তাই সে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।
ইশান দেখলো সব রুমের আলো নিভানো।মানে মামা মামি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।নানু ও ঘুমায়।তবে তিথি আসছেনা কেন?
ইশান সে কারণে বিছানা থেকে নামলো দেখার জন্য।
রুম থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে সে সোফার রুমে এসে দেখে তিথি সোফায় শুয়ে শুয়ে মশা মারছে।
ইশান তখন রুমের আলো জ্বালিয়ে বললো,’উঠ’

‘যাব না।আমি এখানেই ঘুমাবো।আমার ইচ্ছে’

ইশান জোর করতে যাবে ওমনি নানু পানির বোতল নিয়ে এসে বললেন,’কি গো তোমরা এখানে কি করো?আমি পানির বোতল এনেছি দেয়ার জন্য।একি তিথি!তুই বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে আছিস কেন?যা ঘরে যা!’

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বোতলটা নিয়ে বললো,’এই তো আমিই নিয়ে যাচ্ছি ওকে’

এই বলে সে তিথির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো রুমে।এরপর দরজাটা ভেতর থেকে লক করে নিলো।
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৩
আফনান লারা

তিথি আঙ্গুল তুলে তাকিয়ে রইলো ইশানের দিকে।ইশান দরজা লাগিয়ে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছে।তার হাসি বলছে সে একটা কিছু করে তারপর ক্ষ্যান্ত হবে।তিথি ঢোক গিলে বললো,’আপনার শাস্তি কি আসলে….’

‘তুই যেটা ভাবছিস সেটা হতেও পারে’

‘কিন্তু আপনি বলছিলেন আমাকে টাচ করা নিয়ে আপনার ইচ্ছা নাই,আমার নাকি সেই যোগ্যতা নাই।আরও কত কি বলছিলেন।তাহলে এখন আবার এসব কেন?আর আপনি….’

ওমনি কারেন্ট চলে যায়।হুরহুর করে জানালা ভেদ করে বাতাস আসতে শুরু করে।বৃষ্টির আগাম বার্তা।হয়ত আকাশে মেঘের গর্জন আগেই পেয়ে বিদ্যুৎ অফিস কারেন্ট নিয়ে চলে গেছে।
তিথি অন্ধকারে আতঙ্কে রোবট হয়েছিল।হঠাৎ কানের কাছে কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই সে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ঐ মানুষটা হয়ত তার চারিদিকটা দখল করেই দাঁড়িয়েছে।তিথি সরতে গিয়ে যেন তার গায়ের সাথে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে গেলো।মানুষটা তার কানে ফিসফিস করে বললো,’কথা শেষ কর’

তিথি কাঁপা কণ্ঠস্বরে জবাব দেয়,’অত্যাচারের মধ্যে ভালবাসাও পড়ে?’

ওমনি তার হাত টান দেয় ইশান।অন্ধকারে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা তিথি।কেবল ইশানের গায়ের শীতলতা তাকে জানান দেয় সে ওর খুব কাছে।ইশান ডান হাত দিয়ে তিথির হাতটা ধরে রেখে বাম হাতটা ওর কোমড়ে নিয়ে চাপ দিয়ে ওকে আরও গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে এরপর বলে,’সবাই চায় আমি তোকে খুব কষ্ট দিই।অনেক অনেক কষ্ট,তাহলে নাকি সবাই খুশি হবে’

‘আর আপনি?’

‘আমি সবার চাইতে বেশি খুশি হবো’

‘তবে দিন।ভালবাসতে চান কেন?এটা তো অত্যাচার না’

‘উমমমম ভাবলাম অন্যভাবে অত্যাচার করা যাক’

‘কোন ভাবে?’

ইশান মুখটা তিথির কানের কাছে এনে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কোমড়ের উপরের হাতটা নিয়ে তিথির চুলগুলোকে শক্ত করে ধরে ঠোঁটটা আরও একবার ছোঁয়ালো সে।তিথি আবেগে হাতটা বাড়িয়ে ইশানকে খাঁমছে ধরতেই ইশান এক ধাক্কা দিয়ে তিথিকে দূরে ঠেলে দেয়।তিথি ধাক্কা খেয়ে বিছানার উপর গিয়ে পড়ে।ইশান তখন বলে,’এটাই তোর শাস্তি।আমার গায়ের গন্ধ পাবি,আমার ছোঁয়া পাবি!কিন্তু সেই ছোঁয়ায় প্রেম খুঁজে পাবিনা’

তিথি বিছানায় পড়ে থেকে বলে ওঠে,’কিন্তু যে একটা ভুল হয়ে গেলো মিঃইশতিয়াক!সে ভুলটা হলো আপনার শাস্তি ভরা ছোঁয়ায় আমি প্রেম খুঁজে পেয়েছি।এই ছোঁয়া আপনি মন থেকে ছুঁয়েছেন।তিথি ছোঁয়ার মানে বোঝে,ওতোটাও অবুঝ না’

ইশানের খুব রাগ হয়।অতীতের সেই দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে।তিথির এ কথা শুনে তার মনে হয় সে তার লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে।এটা হতে দেয়া যায়না।
এইসব ভেবে সে পকেট থেকে ফোন বের করে লাইট জ্বালিয়ে তিথির মুখের দিকে ধরে রাখে। তিথি শুয়ে শুয়ে হাসছে।
ওর হাসিতে ইশানের রাগ হাজারগুণ বৃদ্ধি পেলো।সে এগিয়ে এসে তিথির হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,’আমি তোকে ভালবাসিনা!বাসতাম!আমার ছোঁয়ায় প্রেম পাবার মিথ্যা নাটক করার কোনো মানে হয়না তিথি!’

‘যদি কথাটা মিথ্যাই হয় তবে আপনার এত প্রমাণ দেবার কি দরকার?লোকে তো কত কথাই বলে’

ইশান তিথির চুলগুলো টেনে ধরে এক চিৎকার করে বললো,’এইবার পেলি প্রেম?’

তিথি হাসছে।শুধুই হাসছে।ইশান ওর চুলটা টেনে ধরলেও সে কেন যেন ব্যাথাই পেলোনা।বরং মন চাইলো একবার এই শরীরটাতে মাথা গুজাতে।তার মনে হয় এই শরীর পাথরের গড়া নয় মোটেও।
তিথির চাহনি ইশানের কাছে সুবিধার লাগলোনা।সে আলোটা তিথির চোখের উপর ধরে বললো,’আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই। এটাই সত্যি!’

এই বলে ইশান তিথিকে ছেড়ে বিছানার অন্যদিকে গিয়ে বসে পড়ে।তিথি ও চুপচাপ বসে থাকলো। ইশান আসলে চাইছে টা কি!

ইশান পা দোলাতে দোলাতে মনে করলো সেই আগেকার দিনে তিথিকে একবার হাত জোড় করে ইশান বলেছিল,’আমি বিদেশ চলে যাব তিথি,একটিবার আমার হাতে হাত রেখে নদীর কিনারায় যাবে?পা ডোবাবো ঠাণ্ডা পানিতে’

তার এই ইচ্ছার উত্তরে তিথি বলেছিল,’জাহান্নামে যাও’

এই কথা মনে পড়তেই ইশানের আবারও মাথায় রাগ উঠে গেলো।সে উঠে ঘুরে এসে তিথির দিকে তাকিয়ে থাকলো।তিথি আচমকা ওকে দেখে চেয়েছিল। মনে মনে ভাবছিল ও আসলে করবে টা কি।ইশান হাত বাড়িয়ে তিথির হাত টেনে ধরে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।তিথিকে সে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথি ওর সাথে পাল্লা দিয়ে যেতে যেতে বললো,’আশ্চর্য! এভাবে টেনে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’

ইশান কিছু বলছেনা।বাসা থেকে বেরিয়ে ফোনের আলো সামনে ধরে সে চলছেই।
অনেকদূর আসার পর সে থামে।বাতাসে বোঝা যাচ্ছিলো তারা নদীর পাড়ে।
তিথি জানতে চায় এই বৃষ্টির মধ্যে কেন সে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।তখন বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেশি ছিল।দুজনই ভিজে গেছে।
রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজে,এত বৃষ্টি।ভয়ে তিথির সারা শরীর কাঁপছিল।ইশানের নিরবতা তাকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলো।

অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিথি বললো,’এভাবে নদীর কাছে বৃষ্টির মধ্যে এনে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?’

‘এটাই যে,,, শেষবার দেখা করার দিন তোমায় আমি এই অনুরোধটা করেছিলাম,এবং তুমি সেটার তাচ্ছিল্য করেছিলে ‘

‘তো?কি করতে চান এখন?পানিতে ডুবিয়ে মেরে প্রতিশোধ নিতে চান?’

তিথি কথা শেষ করার আগেই ইশান ওকে ধাক্কা দিয়ে নদীর পানিতে ফেলে দিলো।
তার খুব ভাল করে মনে আছে তিথি সাঁতার জানে।
সে ফোনের আলোটা তিথির দিকে ধরে রাখলো।তিথি নাকানিচুবানি খেয়ে পানির মধ্যেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন।

‘কি?কেমন লাগছে?যোগ্য প্রার্থী হারালে,কাঁদতে হবে আড়ালে।এখন আমি তোকে আমার সামনেই কাঁদাচ্ছি।কেমন লাগছে তোর?’

‘আমি কাল সকালেই বাসায় চলে যাবো,চিরজীবনের জন্য।আপনার সাথে আর একটাদিন থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। ‘

ইশান ফোনটা পাশে থাকা একটা পাথরের সাথে দাঁড় করিয়ে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দিলো।
তিথি সরে যেতে চাইলো কিন্তু তখনই ইশান ওর কাছে এসে বললো,’একবার আমায় না করে কি ভুল করছিস তার মাশুল মাত্রই দিলি।আরও একবার ভুল করার স্বাদ জেগেছে?’

‘আপনার মতন মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যদি ভুল হয়ে থাকে,তবে সেই ভুল আমি হাজারবার করবো’

ইশান তিথিকে টান দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে ধরে বলে,’কোন হাসবেন্ড এত সুন্দর একটা রোমান্টিক মোমেন্ট উপহার দেয়?’

‘আমার কাছে রোমান্টিক লাগছেনা।বরং বিরক্ত লাগছে।হাত ছাড়ুন,আমি উঠবো এখান থেকে’

‘আজও আমার সাথে থেকে নদী দেখতে ইচ্ছে করেনা তোর?’

তিথি মুখ বাঁকিয়ে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইশান শুধুই হাসছে।তিথি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা।আগেকার ইশান ছিল হালকা রোগাপাতলা,তাকে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে তিথি সরিয়ে ফেলতো।কিন্তু এখন আর পারেনা কারণ এখনকার ইশানের সাথে পূর্বের ইশানের আকাশ পাতাল তফাৎ।

তিথি শেষে বাধ্য হয়ে বলে,’আপনি কি চান টা কি?’

ইশান হাসে।বৃষ্টির পানিতে তার সারা মুখ ভিজে আছে।চুলগুলো সব মিহিন হয়ে তার থেকে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নাক দিয়ে ঠোঁট মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।
তিথি ওর হাসি দেখে আবারও ভয় পেয়ে যায়।লোকটাকে বিশ্বাস করতেও তার ভয় হয়।কখন কি করে বসবে!
আসলে এখন কি করবে সেটাই তো অজানা।

ইশান হাত দিয়ে তিথির চুলগুলোকে ঠিক করে দিয়ে ওর গাল ধরে বলে,’বিশ্বাস কর!তোর চেহারার মত যদি তোর মনটাও সুন্দর হতো আজ আমি এই নদী রাঙিয়ে দিতাম প্রেমে!তোকে ডুবাতাম সেই প্রেমে।তুই বাধ্য হয়ে বলতি আজকে আর না!’

কিন্তু দেখ!তুই তোর সব চাইতে খারাপ রুপ আমাকে দেখিয়ে দিলি সেই সময়ে যখন তোর সব চাইতে বেশি দরকার ছিল আমার।জানিস এখন আমার ইচ্ছে করে তোকে আঘাত করতে!অন্তত আমার রাগ কমতো তাতে!’

‘দিন আঘাত,আর বাকি রাখছেন কেন?ডুবান পানিতে।মেরে ফেলুন!অপমানের প্রতিশোধ যদি মৃত্যু হয় তবে মানছি আমি সেটা’

‘তুই আমায় শুধু অপমানই করিসনি।আমার কলিজায় হাত দিছস।আমার মাকে কাঁদিয়েছিস!আমার টা নাহয় ভুলেই গেলাম।আমার মায়ের উপর যে জুলুম করেছিস সেটার প্রতিদান কে দেবে?’

‘আজ যদি একটা কম বয়সী ছেলে এসে বলে আপনার ছোট বোনকে বিয়ে করবে,যদি তার চাকরি না থাকে,ঘরবাড়ি না থাকে। সে যদি বখাটে হয়?দিবেন বিয়ে?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-২০+২১

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২০
আফনান লারা

তিথি আসার পর থেকে খেয়াল করছে কেউ তাকে বকা তো দূরে থাক,একটা কথাও বলছেনা।সবাই ইশানের মায়ের দিকে ফিরে তার শরীর নিয়ে আলাপআলোচনায় ব্যস্ত।
তিথি ভেবেছিল রুমে ঢোকার পরপরই তাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হবে।কিন্তু এই দেখি তার উল্টো।
সে চুপচাপ ইশানের মায়ের পাশে বসে তার দিকে তাকিয়েছিল।কিছু সময়ের মধ্যেই ইশান ডাক্তার আশুতোষকে নিয়ে ভেতরে আসে।
তিনি ইশানের মাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানালেন অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।আহামরি কিছু নেই,তবে তাকে এরপর থেকে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে।কোনো প্রকার ট্রমা দেয়া চলবেনা।
ইশান চুপচাপ সবটা শোনে।ডাক্তার থাকা কালীনই মায়ের জ্ঞান ফেরে।কিন্তু তিনি চোখ খুলেই তিথিকে দেখে ভীষণ রেগে যান।উঠে বসে ওকে ধমকে জানতে চাইলেন সে এখানে কি করে।
তিথি ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।এর বেশি কিছু করেনা।তখন ইশান বলে সে তিথিকে আসতে বলেছিল। এদিকে মা ইশানের উপর ও ক্ষেঁপে আছেন।
মাথা নিচু করে ওদের দুজনকেই রুম থেকে যাবার নির্দেশ দেন তিনি।
তিথি চলে গেলেও ইশান গেলোনা,বরং সে সবাইকে রুম থেকে চলে যেতে বললো।
সবাই যাবার পর ইশান মায়ের পাশে বসে তার হাতদুটো ধরে চুমু খেয়ে বললো,’আমি ওকে শাস্তি নিশ্চয় দেবো”

‘আর কবে?’

‘তুমি কি চাও বলো’

‘আমি চাই তুই ওকে ছেড়ে মুনিয়াকে বিয়ে করে নে।এর চেয়ে বড় শাস্তি ওর জন্য আর কিছু হতে পারেনা’

তখন ইশান মুচকি হাসি দিয়ে মায়ের হাতে ফুলে ওঠা রগগুলো মিহীন করে দিতে দিতে বললো,’তিথিকে ছেড়ে দেয়া বাদে আর অন্য কোনো শাস্তি থাকলে বলো’

মা এবার ভীষণ রেগে গেলেন।হাত দুটো ইশানের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,’আমার রুম থেকে যাঃ।ড্রাইভারকে বল রেডি হতে।আমি মুনিয়াদের বাসায় যাবো।মেয়েটা আজ কয়েকদিন ধরে খুব অসুস্থ। তাকে একবার দেখে আসবো’

ইশান মাথা নাড়িয়ে উঠে বাহিরে আসতেই দেখে তিথি আছে ওখানে।কথাগুলো শুনেছে কিনা তা ওর মুখ দেখে বোঝা গেলোনা।ও এখানে আছে দেখে ইশান একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো,’কথা শুনে তোর কি লাভ হলো?’

‘কিছুই শুনিনি।শুধু শুনেছি আন্টি মুনিয়াদের বাসায় যাবেন’

ইশান এই কথা শুনে কোনো রিয়েকশান না দেখিয়ে চলে গেলো।তিথি সব কথাই শুনেছে। এবং হাসছে।মনে মনে ইশান একদিন ঠিক হয়ে যাবার স্বপ্ন বুনে সে ইশানের পিছু পিছু রুমে আসতেই তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।
ইশান ফোনে মুনিয়ার সাথে কথা বলছে। তিথি একটু এগিয়ে শুনতে পেলো ইশান খুব আবেগের সাথে কথাগুলো বলে যাচ্ছে।যেন মুনিয়া তার বিয়ে করা বউ।

তিথি মনটা আবার খারাপ করে চলে আসে।এসে সোফায় বসে তামিয়ার পাশে। তামিয়া ওর মন খারাপ দেখে বললো,’ভাই বকেছে? ‘

‘না’

‘মা?’

‘উহু’

‘আচ্ছা,আমরা সবাই মুনিয়াদের বাসায় যাবো। তুমি যাবে?’

তিথি খুশি হয়ে বললো সেও যাবে।ঠিক তখনই ইশান এসে বললো তিথি যাবেনা।এটা শুনে তিথি আর কিছুই না বলে উঠে চলে যেতেই,তামিয়া ওর কাছে জানতে চাইলো তিথি কেন যাবেনা।

ইশান হাসি দিয়ে তামিয়ার পাশে বসে ফিসফিস করে বললো কারণ ইশান ও যাবেনা।তামিয়া এবার ইশানের গাল ধরে টান দিয়ে ফিক কররে হেসে বলে,’মা জানলে অনেক রাগ করবে’

‘মাকে বলে দিও, তিথিকে ঘাটের পানি খাইতে রেখে দিচ্ছি’

মা নাস্তা করে তার দুই বোন আর তামিয়াকে নিয়ে মুনিয়াদের বাসায় চলে গেছেন সেই কখন।ইশান পুরোটা সময় আদিলের সাথে অফিসে ছিল।তিথি মনে করেছে ইশান ও চলে গেছে।তাই সে চিন্তা করলো তার বাসায় যাবে।এভাবে একা একা এই বাসায় থাকা অসম্ভব।
এই চিন্তা করে যেইনা সে দরজা খুলতে টান দিলো সে বুঝতে পারলো দরজা বাহিরে দিয়ে লক করা।
এ তো মহা মুশকিল হয়ে গেলো!কে তাকে লক করে গেছে!সবাই তো জানে তিথি বাসায় থাকবে।তাহলে জেনেবুঝে এই ভুল কেন!
এদিকে তিথির কাছে কোনো ফোন নেই।
সে এক দৌড়ে ল্যান্ড লাইনের কাছে এসে কল দেয়ার জন্য ফোন হাতে নেয়ার পর তার মাথায় আসলো সে তো বাসার নাম্বার মুখস্থ পারেনা।একমাত্র নিজের নাম্বারটাই মুখস্থ পারে,আর তাও সেই ফোনটা ইশান ফেলে দিছে।
নিজের মাথায় নিজে বাড়ি দিয়ে তিথি ইশানের রুমের বারান্দায় এসে গেইটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।যদি দারোয়ানকে একবার দেখে তাহলে চিৎকার করে ডাক দিবে।
কিন্তু দারোয়ান তখন ছিল না।রাত আটটা বাজে দারোয়ান চলে যায়।দ্বিতীয় দারোয়ান আসে সাড়ে আটটায়।

তিথি কপালে হাত দিয়ে বসেছিল ওখানে।হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সে ছুটে যায় ওদিকে।গিয়ে দেখে দরজা এবার ভেতর থেকে লক করা।তিথি ঢোক গিলে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওমনি।এত অল্প সময়ের মধ্যে কেউ বাসায় ঢুকলো আবার লক ও করে নিলো,আবার উধাও ও হলো।তিথির বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।
সে এখন কোনোভাবে ইশানের রুমে ঢুকে দরজা লাগাতে পারলেই নিজেকে নিরাপদ মনে করবে।
হাঁপাতে হাঁপাতে সে ওদিকটায় যায় ধীরে ধীরে।তার হঠাৎ মনে হলো পিছনে কেউ একজন আছে। তখনই সামনে টিভির পাশের ফুলদানিটায় চোখ পড়তেই তিথি ওটা হাতে তুলে পিছনে তাকিয়ে দিলো এক বাড়ি।

‘আহঃ!’

ইশানের আর্তনাদে তিথি হাত থেকে ফুলদানিটা রেখে দিলো।ইশান কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে গেছে।
তিথি মুখে হাত দিয়ে বললো,’সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি আপনি থাকবেন!আই এম সরি’

তিথি কাছে বসে ইশানের কপাল থেকে হাতটা সরাতে নিতেই ইশান ওকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’ইচ্ছে করে এমন করিস তুই! ‘

তিথি কি করবে না করবে ভেবে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাসার সব ড্রয়ার খুলে মলমপোটি খুঁজতে লাগলো।
ইশান পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে চেপে ধরে।তিথি কোথা থেকে তুলা আর স্যাভলন এনে বললো,’আমি মুছে দিই?’

‘থাক!’

এই বলে ইশান উঠে চলে গেছে।তিথি মন খারাপ করে ফুলদানিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো।এতই মজবুত যে মানুষের কপাল ফেটেছে কিন্তু ফুলদানিটার কিছুই হয়নি।
তিথি এবার ইশানের কাছে গিয়ে দেখে সে নিজে নিজে কপালের রক্ত মুছছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

তিথি ওর আরও কাছে এসে অসহায়ের মতন চেয়ে থেকে বলে,’আমাকে মাফ করে দিন।আমি ভেবেছিলাম চোর ডাকাত হয়ত।আমার ক্ষতি করতে এসেছে’

‘আমি কি তোর ভাল চাই?আমিও তো ক্ষতিই করতে চাই’

ওমনি তিথি ফুলদানিটা এগিয়ে ধরে বললো ‘নিন,একটা বাড়ি মেরে দিন।তাহলে কাটাকাটি হয়ে যাবে’

‘আমি এত সহজ ক্ষতি চাইনা’

এই বলে ইশান পেছনে ফিরে তাকায় তিথির দিকে।তিথি ফুলদানিটাকে পিঠের সাথে লাগিয়ে চুপ করে আছে।ইশান একটু একটু করে এগিয়ে চলছে আর তিথি পিছিয়ে যাচ্ছে।ইশান যেতে যেতে বললো,’যখন তোকে ভাল লেগেছিল,তখন ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম বিয়ের পর তোকে আমি এত এত সুখ দিবো যে বাসার বাকি মেয়েরা হিংসা করবে।’

তিথি কাঁপা গলায় বললো’আর এখন তাহলে কি চান?’

‘এখন?এখনও একই জিনিস চাই।পার্থক্য হলো সুখের সাথে দুঃখের সংমিশ্রণ। ‘

এই বলে ইশান দেয়ালে হাত রেখে দাঁড়ায়।তিথি ফুলদানিটাকে তার আর ইশানের মাঝে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান হাত বাড়িয়ে তিথির মুখের সামনের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ নিলো।এরপর হালকা আওয়াজে বললো,’এখনও সেই শ্যাম্পু দিস!’

তিথির ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।হাতের ফুলদানিটা কাঁপছে।হঠাৎ লোডশেডিংয়ে রুমের অন্ধকার তার ভয় হাজারগুণে বাড়িয়ে রেখেছে।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় যা একটু ভয় কাটছিল,ইশানের ছায়ায় সে আলোটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ইশান চুলে একটু খিঁচিয়ে টান দিয়ে বললো,’বলতে পারবি আমি এখন তোর সাথে কি করবো?’

তিথি ভয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।ইশান তখন ওর আরেকটু কাছে আসতে নিতেই তিথি ভয় পেয়ে এবার ফুলদানিটাই ছেড়ে দিলো।এটা পড়লে তিথির পা একেবারে থেঁতলে যেতো কিন্তু ইশান কেমন করে যেন ফুলদানিটা ধরে ফেলেছে ঠিক সময়ে।

সে ফুলদানিটা সরিয়ে রেখে বাকি হাতটা তিথির আরেক পাশে দেয়ালে রেখে বললো,’তুই তো আমায় এত ভয় পেতিনা তিথি।বরং পারলে আমাকে মাড়িয়ে চলতি।এখন তিথির সেই তেজ কোথায় গেলো?আমার দেহের বলিষ্ঠ ভাব আর সহায় সম্পদের তোড়েই কি তিথি আজ দূর্বল?নাকি তিথি ইশানকে ভালোবেসে ফেলেছে?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২১
আফনান লারা

তিথি ইশানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’আগেও বাসতাম না,এখনও বাসিনা’

এটা শুনে ইশানের মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়।সে দেয়ালে খুব জোরে আঘাত করে রুম থেকে চলে গেলো।তিথি গাল ফুলিয়ে রেখে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।ইশান সেই যে গেলো তার আর কোনো খোঁজ মিললোনা।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিথি বিরক্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে।পায়ে মশা কামড়াচ্ছিল বলে পা দুটো তুলে বসে সে।বসতে বসতে ওখানেই ঘুমিয়ে যায় তিথি।
পরেরদিন সকাল সাতটার দিকে চোখ মেলে সে বুঝতে পারে কাল সোফাতেই ঘুমিয়েছিল।রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ও ওঠেনি। এরপর হঠাৎ ওর ইশানের কথা মাথায় আসে।
সে সোফা থেকে নেমে বাহিরে বের হয়ে ইশানকে খুঁজতে থাকে।দরজা ভেতর থেকে লক করা দেখে তিথি নিশ্চিত হলো সে বাসাতেই আছে।তাই বাসার বাকি রুম গুলো খুঁজতে থাকে তিথি।
সবার শেষে মায়ের রুমে ইশানের দেখা পায় সে।মায়ের কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে সে।তিথি ওর সামনে এসে ওকে দেখে আবার চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ইশানের গলা শুনে তার পা থেমে যায়।ইশান শুয়ে শুয়ে তাকে বলছে খাবার তৈরি করতে দশ মিনিটের মধ্যে।
কথাটা খুব কঠিন করে বললো সে।তিথি ওর কথা শুনে দ্রুত রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে কি বানাবে।ইশান যে হারে চেঞ্জ হইছে তাতে ওর খাবার দাবারে কেমন চেঞ্জ হইছে কে জানে!
দশ মিনিটে নুডুলস ছাড়া অন্য কিছু বানানো অসম্ভব ভেবে সে নুডুলসই তৈরি করলো।তাও রান্নাঘরে পাওয়া ইশানের কোম্পানির নুডুলস।টেবিলে নুডুলস রেখে তিথি নিজের বাটি নিয়ে একটু দূরে বসলো খাবার জন্য।
ইশান ততক্ষণে মুখ ধুয়ে আসতেছে।তিথি এক চামচ মুখে দিয়ে বুঝতে পারলো প্যাকেটে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল এলাচি ফ্লেভার।
এটা দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।রিসিপশানে খাবার খাওয়ার সময় পাতে এলাচি পড়ায় ইশান অনেক চেঁচামেচি করেছিল।তার নাকি এলাচি অনেক অসহ্য লাগে।
কিন্তু এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস অনেক মানুষের পছন্দ বলে সে নিজের কোম্পানিতেও নিয়ে এসেছে।
তিথি কি আর জানতো এটা এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস!
সে এক দৌড় দিলো বাটিটা সরিয়ে নিতে কিন্তু তার আগেই ইশান বসে পড়ে।

তিথি বাটিটা সরিয়ে বললো,’আমাকে আর পাঁচ মিনিট সময় দিন।আমি অন্য কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।এটাতে সমস্যা আছে’

‘বিষ মিশালি?’

‘না না।তবে এটা ভালনা’

ইশান তো নাছড়বান্দা।সে কিছুতেই এই বাটি সরাতে দেবেনা।টানাটানি করে বাটিটা তিথির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সে এক চামচ নুডুলস মুখে পুরলো।তারপর সোজা তিথির মুখের দিকে তাকালো কপাল কুঁচকে।

তিথি আগেভাগে কানে হাত দিয়ে রেখেছে।কিন্তু তিথিকে অবাক করে দিয়ে ইশান নুডুলসের বাটি শেষ করে উঠে চলে যায়।
তিথি অবাক হয়ে থাকে।রিসিপশানে এলাচি নিয়ে চেঁচামেচি করা ছেলেটা এখন সুযোগ পেয়েও ওকে কিছু বললোনা?অদ্ভুত!’

ইশান মায়ের রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ে।শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতে থাকে।তিথির পেট ভরে নাই নুডুলস খেয়ে।সে রান্নাঘরে অন্য কিছু খুঁজছে বানিয়ে খাওয়ার জন্য।

ইশান এ প্রথমবার তার কোম্পানির এলাচি ফ্লেভারের নুডুলসটা টেস্ট করেছে।এবং তার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছে। কারণ এটা নয় বরং কারণ ছিল অন্যটা।
তিথি এ প্রথম বার ওর জন্য নিজের হাতে কিছু তৈরি করেছে বলেই সে মজা করে খেলো।

ফোন টিপতে টিপতে ইশানের এবার মনে হলো তিথিকে হালকা পাতলা শাস্তি দেয়া যাক।তাই ভেবে সে তিথির নাম ধরে ডাক দেয়।
তিথি তখন রান্নাঘরে বসে বসে চানাচুর খাচ্ছিল।ইশানের ডাক শুনে হাত থেকে প্যাকেট রেখে ছুটে আসে সে।সারা গালে চানাচুর মাখা ছিল ওর।
ইশান তখন ওর চেহারা দেখে মুখ মুছে নিতে বলে।তিথি ও শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে নেয় তাড়াতাড়ি।ইশান তখন দাঁত কেলিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো ‘নে,আমার পা দুটো টিপে দে একটু’

তিথি চোখ বড় করে বলে,’কেন?’

‘কেন?আমি বলছি তাই’

‘পারবোনা’

‘পারবিনা?’

‘নাহ’

ইশান এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তিথি নড়েচড়ে দাঁড়ায় এরপর বলে,’আচ্ছা ঠিক আছে।দিচ্ছি’

ইশান এবার নিজের দুহাত কচলাতে কচলাতে বলে,’নাহ।এখন আর পা ব্যাথা করছেনা। ঘাড়ের পেছনের দিকটা খুব ব্যাথা করছে।গরম তেল নিয় আয়,মালিশ করে দিবি’

তিথি চোখ বড় করে তাকায় আবারও।এরপর মনে মনে ভাবে পা মানা করায় পিঠে উঠেছে।পিঠ মানা করলে আবার কিসে উঠে যায় কে জানে তার চেয়ে বরং পিঠই ভাল।
এই ভেবে সে গরম তেল আনতে চলে গেলো।

তেল গরম করে নিয়ে আসার পর তিথি দেখে ইশান আয়োজন করে বসে আছে।সে একেবারে প্রস্তুত। খাটের নিচে বসে খাটে হেলান দিয়ে সে বললো তিথি খাটে উঠে বসে যেন তেল লাগায়।তাহলে ওর হাতের চাপটা বেশি হবে আর ওর ঘাড় ব্যাথাটাও দ্রুত যাবে।
তিথি আর কি করবে।খাটে উঠে বাটিটা রেখে হাত ডুবিয়ে ঘঁষে ইশানের পিঠের উপর নিয়ে মালিশ করতে থাকলো।ইশান মেঝের দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
তার মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।একটু পরেই সেটা ফাঁস করবে।
তিথি মালিশ করা শেষ দিয়ে আরও একবার হাত দিয়ে চাপ দিতে গেলো ওমনি ইশান সরে যায় আর সেজন্য তিথি খাট থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায় ইশানের সামনে।মেঝেতে পড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সে চোখ বন্ধ করে রাখলো।ইশান তখন তিথির মাথায় হাত দিয়ে বললো,’আহারে,ব্যাথা পেলি?মনে পড়ে ইশতিয়াককে কাদায় ঠিক এমন করেই ফেলে দেয়ার কথা? ‘

তিথি গাল ফুলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।কোমড়ে বড়জোর ব্যাথা পেয়েছে।
ইশান হাসতে হাসতে বললো,’উঠ।আরও অনেক কাজ বাকি আছে’

‘পারবোনা’

এটা বলে তিথি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।ইশান ওর ময়লা জামাকাপড় এনে তিথির সামনে ফেলে বললো,’এগুলো ধুয়ে দে’

‘পারবোনা।আপনার না কতগুলা কাজের লোক আছে?ওদের দিয়ে করান’

‘আজ ওরা আসবেনা।আজ আমি ছুটি নিয়েছি।আমি যেদিন বাসায় ছুটি নিই,সেদিন কাজের লোক আসেনা।কারণ সেদিন আমি নিজের কাজ নিজে করি।’

‘তো নিজের জামাকাপড় নিজেই ধুয়ে নিন’

‘তা হবেনা।তোকে বললাম,তুই ধুবি।আর না শুনলে…..’

তিথি ঘুরে তাকিয়ে বলে,’কি?মারবেন?’

ওমনি গালে চড় খেয়ে তিথির যত দেমাগ সব ধুয়ে মুছে গেলো।ইশান হাত নাড়তে নাড়তে বললো,’তোর জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম বলে হাজারটা চড় মেরেছিলি।আজকে একটা দিয়ে শুভযাত্রা করলাম’

তিথি গাল ঘঁষতে ঘঁষতে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেছে।
কিন্তু তিথিকে এভাবে মারার ইচ্ছা ইশানের ছিল না।তার খারাপ লাগলো।নিজের হাতটাকে শক্ত করে ধরে সে তিথিকে দেখতে গেলো।তিথি চোখ মুছতে মুছতে জামাকাপড় ধুয়ে চলেছে।ইশান একটা মূহুর্তের জন্য গলে গেলেও হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় তিথি ওকে এভাবে কত মার মেরেছিল।তাও বেহায়ার মতন সে তিথির পিছে পড়ে থাকতো।
তিথি তো কোনো দরদ দেখায়নি!পাষাণের মতন ব্যবহার করেছে দিনের পর দিন।এরকম একটা দিন দেখার জন্যই তো সে তিথিকে বিয়ে করে এনেছে।
রাগে ইশান তার আরও কিছু জামাকাপড় এনে তিথির পাশে রেখে দেয়।তিথি ওগুলা দেখে চেঁচিয়ে বললো,’আমি বাবার কাছে সব বলে দিবো। আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনার সংসারে থেকে এত অত্যাচার সহ্য করার।’

এ কথা শুনে ইশান তার ফোন তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’নাও,বলে দাও’

তিথি ও দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা নেয়।কন্টাক্ট থেকে বাবার নাম্বার খুঁজে কল ও দেয়।
বাবা রিসিভ করে শুরুতে তিথির খোঁজ খবর জানতে চাইলেন।

‘বাবা আমি আসলে…..’

‘ মা, একটা দারুণ খবর।ইশান কি করেছে জানিস?আমি যে এতগুলো বছর ধরে ফ্ল্যাটের লোন দিয়ে এসেছি,এখনও দশ বছর সে লোন রয়ে গেছিলো।ইশান সেই লোন পরিশোধ করে দিয়েছে।ছেলেটা কত ভাল ভাবতে পারিস?তার উপর তোর মায়ের লেন্স অপারেশন করার জন্য যে ৫০হাজার টাকা আমার দরকার ছিল সেটাও নাকি ইশান দিবে বলেছে। বিশ্বাস কর,আমি ওর থেকে চাইনি।ও নিজে থেকেই খবর নিয়েছে আমাদের কার কি লাগবে।’
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-১৮+১৯

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৮
আফনান লারা

তিথি তামিয়ার শাড়ীটা পরে রুম থেকে বের হয়।এরপর সবার মাঝে এসে দাঁড়ালেও ইশান কাছে আছে তা জেনেও সে ভুল করেও ওর দিকে তাকায়নি।যেন সব রাগ তার হবার কথা।
ইশান ওর এই জেদে মোটেও পাত্তা দিলোনা।সে চুপচাপ টিভি দেখছিল।কিছু সময় বাদে ভাঁড়া করা প্রাইভেট কার সব আসতেই আত্নীয় স্বজন সবাই গাড়ীতে উঠা ধরেছে এক এক করে।
ইশান আর তিথি আলাদা গাড়ী করে যাবে।তিথি তাই রিদমকে বলেছিল তার সাথে গাড়ীতে উঠতে কিন্তু ইশান তামিয়াকে দিয়ে রিদমকে সরিয়ে ফেলেছে।তার আসলে অন্য প্ল্যান ছিল।
গাড়ীতে ওঠার পরেও তিথি ইশানের দিকে তাকায়নি।সে চুপ করে ফোন টিপছিল আর তানিয়াকে কল দেয়ার চেষ্টা করছিল।কেনো রিদম আসে নাই সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য।

ইশান কমিউনিটি সেন্টারে না গিয়ে অন্য পথে চলেছে।তিথি তো আর এতসব কিছু জানেনা।
গাড়ী চালাতে চালাতে একটা সময়ে ইশান বললো,’আদিলের হাত ধরার খুব ইচ্ছা ছিল তোর তিথি?’

তিথি কিছু বলেনা।
ইশান আবার বলে,’ওরে জড়িয়ে ধরতে মন চাইতো তোর?’

তিথি এবারেও কিছুই বলে নাই।ইশান এবার হঠাৎ গাড়ী থামিয়ে দেয়।তিথি ফোন টিপছিল দেখে রাগে সে ওর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলো দিলো।তখন তিথি চোখ রাঙিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেই গাড়ী থেকে নামতে নিতেই ইশান গাড়ীটা পুনরায় স্টার্ট দিয়ে ফেলে।তিথি তার ফোনটা নিতেই পারলোনা।এবার ওর ভীষণ রাগ হলো।চিৎকার করে বললো,’আপনার সমস্যা টা কি!’

‘সমস্যা?আমার সমস্যার অভাব আছে নাকি।কতবার কত কি জিজ্ঞেস করতেছি উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করছিস না!’

‘আমার ইচ্ছা আমি উত্তর দিব না।এগুলা উত্তর দেয়ার মতন প্রশ্ন না।আমি আদিলের সাথে কি করছি,কি করতে চাইছি এসব জেনে আপনি কি করতেন?ধরুন,ওর সাথে রাত কাটাইছি।তাতে আপনার কি?’

এটা শুনে ইশানের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে, সে গাড়ীটা থামিয়ে দেয় তখনই।
জায়গাটি ছিল হাইওয়ে তে।ইশান গাড়ী থেকে বের হয়ে তিথিকেও টেনে গাড়ী থেকে বের করালো। এরপর বললো,’এখান থেকে যাবার মতন কোনো রিকশা পাবিনা।এটা হাইওয়ে!হেঁটে হেঁটে রিসিপসানে আসবি’

এটা বলে ইশান গাড়ীতে উঠে চলে যায়।
তিথি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে সে একাই হাঁটা ধরে।হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ যাবার পর সে একটা সিএনজির দেখা পায়।এরপর সেটাতে উঠতে নিতেই সিএনজির লুকিং গ্লাসে ইশানের কারের প্রতিচ্ছবি দেখে সে সিনএজি থেকে নেমে বললো,’আপনাকে আরেকজন পাঠিয়েছে তাই না?লাগবেনা আমার দয়া’

এই বলে তিথি নেমে যায়।ইশানই পাঠিয়েছিল এটা সঠিক।এবং সে নিজের চোখে দেখেওছে তিথি যে নেমে পড়লো।
তিথি সোজা হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ থেমে যায়।
আসলে সে রাগ কেন করছে?
ইশান তো তার সাথে এমন ব্যবহার করার কারণ হলো তার অতীতে করা দূর্ব্যবহার।ইশান তো আর এমনি এমনি এসব করেনা।
সে থেমে যাওয়ায় ইশান ও তার কারটা থামিয়ে নেয়।
অনেক ভেবে তিথি সোজা গিয়ে সিএনজিটাতে উঠে পড়লো আবার।কিছু আর বললোনা।

সবাই ওদের দুজনের অপেক্ষাতেই ছিল।
তিথিপরে এসেছে,ইশান আগেই এসে গিয়েছিল।
তিথিকে তার মা বকাবকি করছিলেন দেরি হওয়ার জন্য।কেউ আসলে জানেনা তিথি কিভাবে আসলো।সবার ধারণা তিথি কার থেকে নেমে আসতে দেরি করেছে।
সে স্টেজে উঠে ইশানের পাশে বসতেই ইশান বললো,’তোর বোঝা উচিত দেমাগ আসলো কার দেখানো যুক্তিযুক্ত ‘

এই বলে সে সরে বসে।দূর থেকে তিথির বাবা মা দারুণ হাস্যজ্জ্বল চোখে চেয়ে চেয়ে দুজন দুজনকে বলছেন তাদের মেয়েকে অবশেষে যোগ্য পাত্রের হাতে তারা তুলে দিতে পেরেছেন।
তিথি চুপ করে বসে ছিল।হঠাৎ ভীড়ের মাঝে সে আদিলকে দেখে।আদিল কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে বললো,’স্যার,,, ভাবী কিন্তু সেই!’

এই কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সব কিছু কেমন করে যেন স্বচ্ছ কাঁচের মতন মনে হচ্ছে।আদিল কি তাহলে ইশানেরই লোক!
তিথির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ইশান বলে ফেললো আদিল তার অফিসের একজন কর্মচারী।সে ইশানের কোম্পানিতে বাংলাদেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করতো।
তিথি সবেমাত্র মনে এসে গেলো আদিল ও কোনো একটা নুডুলসের ফ্যাক্টরির কঘা বলেছিল।
সব খোলসা হচ্ছে একের পর এক।
তিথি কিছুই বলেনা।মনে মনে সব হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে।
রিসিপশানের সব কাজ শেষ হবার পর ঠিক হলো ইশান আর তিথি আজ তিথিদের বাসায় যাবে,এটাই নিয়ম।
কিন্তু ইশান বেঁকে বসলো।সে নাকি চায় তিথিকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে।
তিথির বাবা মা এ কথা শুনে তারা আরও মহা খুশি হলেন।

কিন্তু খুশি হতে পারলোনা তিথি।কারণ সে বেশ জানে ইশান মোটেও তাকে ভালবাসায় ঘোরাতে নিচ্ছেনা।বরং নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে নিচ্ছে।
তিথির চাহনি দেখে ইশানের শুধু দুষ্টু হাসিই পাচ্ছে।এর বাহিরে কিছুই না।

তিথি হঠাৎ করে বলেই দিলো তার শরীর খারাপ করছে।সে বাসায় ফিরবে।কিন্তু তার কথায় বাধা দিয়ে ইশান ও বলে দিলো ঘুরতে যাবার আগে হসপিটাল হয়ে তারপর যাবে।
মানে সে কিছুতেই তিথির কথা রাখবেনা।এদিকে পরিবারের বাকিদের চাপে পড়ে তিথি আর কোনো বাহানাই দিতে পারলোনা।অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যে যার মতন চলে যাবার পর ইশান তিথিকে নিয়ে চললো অন্য এক অজানা পথে।তিথি গাল ফুলিয়ে শুধু সামনে তাকিয়ে দেখছে পথটা আসলে কোন দিকে যায়।
অনেকটা পথ পাড়ি দেবার পরেও যখন সে দেখলো ইশানের কার থামছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে বললো,’জেলে নিচ্ছেন আমাকে??’

‘এত শান্তির জায়গায় কেন নিবো বল?’

‘ওহ!তার মানে জেলের চাইতেও নিকৃষ্ট কোনো জায়গা আছে?’

ইশানের ঠোঁটের কোণায় হাসির আভা দেখা গেলো।পাঁচ তারকা হোটেলের গেট দেখে তিথি হাঁপ ছেড়ে বেঁচে যায়।যাক তাহলে আজ আর তাকে টর্চার করা হবেনা।
সে খুশি হয়ে ইশানের পিছু পিছু চললো।ম্যানেজারের কাছে হোটেল রুম নেয়ার সময় ইশান বারতি টাকা আর একটা প্রেস্ক্রিপশান দিয়ে বললো তারা যেন এগুলো এনে রুম সার্ভিসের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।কথাটা খুব ধীরে ধীরে বলেছিল।তাও তিথি একটু একটু শুনেছে যে ওগুলো ফার্মেসীর দোকান থেকে আনার জন্য বলছে ইশান।
তিথি চোখ বড় বড় করে ঢোক গিলে ওখানকার সোফায় বসে পড়ে।সে কিছুতেই ইশানের সাথে একা রুমে যাবেনা।তার স্বামী হলেও, কেমন যেন মনে হয় আজকে ইশান ওকে একা পেয়ে উল্টো পাল্টা কিছু করবে।
ইশান কার্ড দিয়ে টাকাটা পে করে এসে তিথিকে বললো চলতে।তখন তিথি বললো,’আমার খিধে পেয়েছে।আগে খেয়ে নি?’

ইশান তখন বললো সে খাবারের অর্ডার দিয়েছে।খাবার রুমে এনে দিবে।
এটা শুনে তিথির গলাটা আরও শুকিয়ে গেলো।সে সোফাকে আঁকড়ে বসে আছে আর মনে মনে ভাবছে ইশান ওকে কেটে টুকরো টুকরো করবে আর সেগুলোতে স্যাভলন,ব্যান্ডেজ লাগাবে তাই ওসব অর্ডার দিয়েছে।
তিথির হাত পা কাঁপছে দেখে ইশান একটা ধমক দিয়ে বললো নাটক না করে যেন রুমে আসে।মানুষ অন্য কিছু ভাববে এখন।

তিথি বললো ইশানকে চলে যেতে।সে কিছু সময় পর আসবে।ইশান ও আর দাঁড়ালোনা।চলে গেলো।তখন তিথি চুপিচুপি ম্যানেজারের কাছে এসে বললো,’আমার হাসবেন্ড আপনাকে কি এনে দিতে বলেছে?’

ম্যানেজার মুচকি হাসি দিয়ে বললো এগুলা বলা পলিসির মধ্যে নেই।তখন তিথি রেগে বললো,’আশ্চর্য! আমি ওনার ওয়াইফ হই।আমাকে বলতে কি সমস্যা? ‘

‘বলা যাবেনা ম্যাম’

‘আপনাদের কাছে স্প্রে আছে?’

‘কিরকম?’

‘বডি স্প্রে’

‘নেই ম্যাম।তবে হোটেল রুমে আছে’

তিথি ঠিক আছে বলে চলে গেলো ইশানের পিছু পিছু।ইশান ততক্ষণে রুমে ঢুকেও গেছে।তিথি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকতেই ইশান বললো দরজা লক করতে।
এটা শুনে তিথি আরও ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোলে রেখে সে ভিতরে ঢুকে।
ইশান টিভি অন করে শুয়ে আছে,তিথি ওকে আড় চোখে দেখে নিয়ে দূরে একটা চেয়ারে বসলো।এরপর হাতের চুড়ি গুলো ধরে দেখতে যাবে তখন ইশান দুমদাম আওয়াজ করে বিছানা ছেড়ে উঠলো।ওর এমন ব্যবহারে তিথি ভয় পেয়ে হাত লুকিয়ে ফেলেছে।ইশান যেন ওর কারণেই উঠেছে।উঠে সোজা তিথির সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
তিথি তো ভয়ে শেষ,এই বুঝি জ্ঞান হারাবে।
ইশান তখন পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো,’মনে আছে?তোমায় জড়িয়ে ধরে ছিলাম বলে কি করেছিলে?’

তিথি ঢোক গিললো।ইশান ওকে জড়িয়ে ধরায় সে ওকে তিনটা থাপ্পড় মেরেছিল।ওগুলা মনে করে তিথি নিজেই নিজের গাল ধরে রাখলো ভয়ে।এটা দেখে ইশান বললো,’চড় মারবোনা,তোমার শাস্তি এবার কি হতে পারো নিজেই ভেবে নাও’

তিথি গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।এরপর বলে,’এখন কি তবে জড়িয়ে ধরতে হবে?’

ইশান হাতের ঘড়িটা উল্টে দেখে বললো,’উমমমম পাক্কা ষোল মিনিট।তোমার চড়ের জ্বালা ষোল মিনিট ছিল’

তিথি বিরক্তি নিয়ে কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রাখে।ইশান এক মিনিটের জন্য ভুলে গিয়েছিল তিথি তার সঙ্গে কি কি করেছে।সে তিথির গায়ের উষ্ণতায় হারিয়ে তিথিকে আরও মজবুত করে ধরে নিয়েছিল।তিথির ও মনের ভয়টা দূর হয়ে ভাল লাগা কাজ করছিল কিছু সময়ের জন্য।
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৯
আফনান লারা

ষোল মিনিট পার হতেই ইশান এক ঝটকায় তিথিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।তিথি মেঝেতে বসে ওর দিকে বোকার মতন তাকিয়ে আছে।ওর এমন তাকানো দেখে ইশান বললো ‘শাস্তির স্বাদ পেলি?’

তিথি কিছু আর বললোনা।ইশান তখন নিজের ফোন নিয়ে আবার গিয়ে বিছানায় বসেছে।তিথি এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো,’আমার ফোনটা তো ফেলে দিছেন।এখন আমি আম্মুকে কি করে কল দিবো?’

‘বাসায় গিয়ে একটা পেয়ে যাবি।এখন আপাতত তোর ফোনের প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।নব বিবাহিত দম্পতিকে বিরক্ত করেনা সমাজ’

তিথি হনহনিয়ে এসে ইশানের হাত থেকে টান দিয়ে ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে লক খোলার চেষ্টা করলো।কিন্তু কিছুতেই সে লকটা আর খুলতে পারে নাই।
ইশান শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে এবার,সে জানতো তিথি ওর ফোনের লক খুলতে পারবেনা।তিথি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার কি যেন একটা মনে পড়লো।ওমনি সে ফোনে পাসওয়ার্ড টা টাইপ করতেই লক খুলে গেছে।তিথি মুখে হাসি ফুটিয়ে তার মায়ের নাম্বারে কল করে।
ও লক খুলতে পেরেছে দেখে ইশান হাতের রিমোটটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।
এটা অসম্ভব! ইশান তিথিকে সেই কত বছর আগে চামেলী সম্ভোধন করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। তিথি এ কথা কিভাবে জানে!
ইশান চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে দেখে তিথি হাসতে হাসতে তার মাকে বলছে সে আজ দারুণ খুশি।
কোন হোটেলে তারা উঠেছে সেসবও বললো।এরপর ফোন রাখতেই ইশান ওকে প্রশ্ন করে সে কিভাবে জেনেছে পাসওয়ার্ডের কথা।
তখন তিথি ফোনটা ওকে ফেরত দিয়ে বললো,’আমাকে দেয়া সেই প্রিন্ট করা ছবিটার কোণায় লেখা ছিল,’চামেলী’

ইশানের মনে পড়ে যায় সে তিথিকে ওর একটা ছবি প্রিন্ট করিয়ে উপহার দিয়েছিল একবার,তাতে লিখিয়েছিল চামেলী।এ কথা তার মনে পড়লোনা কেন!আচ্ছা তিথির তো স্মৃতি ভুলে যাবার রোগ আছে তবে এটাই বা কি করে মনে রাখলো সে?

তিথি আরও কিছু বলবে তখনই দরজায় নক করে রুম সার্ভিসের একজন লোক।ওমনি ইশান সব ভুলে কেমন করে যেন তিথির দিকে তাকিয়ে গেলো দরজা খুলতে।
তিথির মনে ভয় আবারও সাড়া জাগালো।সে ইশানের আগে ছুটে নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে এরপর লোকটার হাত থেকে সেই ঔষুধের প্যাকেটটা নিয়ে সে ফেরত ও চলে আসলো।
ইশান দরজাটা আবারও লাগিয়ে এসে বললো,’নিয়েই যখন নিছিস।খুলেই দেখ’

তিথি ভয়ে ভয়ে প্যাকেটটা ছিঁড়ছিল।তখন ইশান ওর ভয়ার্ত চোখ দেখে বলে,’তুই যেটা ভাবছিস সেটা নেই এখানে’

তিথি ব্রু কুঁচকে প্যাকেটটা আরও দ্রুত খুলে দেখে ভেতরে মাইগ্রেনের ঔষুধ আর গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ।
তখন সে দাঁত কেলিয়ে ঔষুধ গুলো সরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে ভাল মেয়ের মতন।
ইশান টিভি অন করে বললো,’যারে দু চোখে দেখতে পারিনা তার সাথে কাটাবো সুন্দর মূহুর্ত?নিজেকে কি মনে করিস?তুই মেয়ে বলে তোর সব দোষ মাফ করে আমি তোর সাথে ওগুলা করবো?আমার আত্নসম্মান বোধ আছে।
তোকে আদর সোহাগ করার জন্য বিয়ে করিনি।ওসবের চিন্তা থাকলে এখনই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল’

তিথি গাল ফুলিয়ে রেখেছে কথাগুলো শুনে।ইশান ওকে কথা শুনানোর জন্য ইচ্ছে করে এমন নাটক করছিল তাহলে!
———–
অর্ডার করা খাবার গুলো আসার পর তিথি আর খাচ্ছেনা।কারণ তখন তো সে খুধা পাওয়ার নাটক করেছিল।এখন কি করে খাবে।
ইশান তখন ওর কাছে এসে বসে খাবার চামচে তুলে বললো ‘সত্যি কিংবা মিথ্যা।খাবার যখন এসেছে তখন তোকে খেতেই হবে ‘

এই বলে সে তিথির গাল টিপে ধরে এক চামচ পোলাও খাইয়ে দিয়েছে।তিথি অনেক কষ্টে খাবারটা গিললো।এরপর ইশানের চোখে চোখ রেখে বললো,’আমি কি আপনাকে খাবার দিয়ে এমন কষ্ট দিয়েছিলাম?’

‘এইসব হিসেব করিস না।যদি সমান সমান হিসেব করতেই হয় তবে আজ তুই আমার স্ত্রী হতিনা।যাই হোক,ভাল মেয়ের মতন আবার হা কর দেখি’

তিথি মুখটা চিপে ধরে রেখেছে।আর এক চামচ খাবার খেলে তার বমি এসে যাবে, এদিকে এই ছেলের থেকে রক্ষা পাওয়া মুখের কথা না।

তিথি চামচটার দিকে চেয়ে বললো,’অন্য যেকোনো শাস্তি দিন,এটা বাদে।এটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছেনা?’

ইশান চামচটা সরিয়ে ফেললো।এরপর দুষ্টুমি করে বললো,’ওমা তাই?ওকে তোর কথাই রইলো তবে’

ইশান নিজের পাঞ্জাবির হাতা উঠিয়ে পোলাও মাখতে মাখতে বললো,’নিজের হাতে খাইয়ে দিবো তোকে’

তিথি চোখ বড় করে একটু পিছিয়ে বলে,’না না।আমার সত্যি খুধা নাই’

ইশান খিলখিল করে হাসছিল,সেইসময় ওর ফোনে কল আসে তামিয়ার।ইশান তিথিকে কলটা রিসিভ করতে বলে।তিথি কল রিসিভ করে স্পিকার দিতেই তারা দুজনে শুনতে পায় তামিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলছে মা নাকি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এটা শুনে ইশান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।দ্রুত হাত ধুয়ে এসে তিথিকেও বের হতে বললো।
গাড়ী দিয়ে যাবার সময় তিথি ইশানের দিকে ফিরে হঠাৎ করে বললো,’আন্টি আমায় পছন্দ করেন না জেনেও কেন বিয়ে করেছেন?আমার উপর প্রতিশোধ অন্যভাবেও নেয়া যেতো’

আসলে তিথি কল স্পীকারে দেয়ায় তামিয়ার কথা শুনেছিল।তামিয়া বলেছে ইশান তিথির করা সব ভুল জেনেও তাকে কেনো শাস্তুি না দিয়ে উল্টে ওকে নিয়ে ঘুরতে গেছে এসব বলতে বলতেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তখন তিথির মাথায় আসলো সম্পূর্ণ ব্যাপারটা।

বাসায় ফিরে মায়ের কাছে এসে বসে ইশান জানতে চাইলো ওনার কি হয়েছে।তখন ওর খালা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন যা হয়েছে সব ইশানের দোষেই।ইশান তো তিথিকে এই শর্তে বিয়ে করেছিল যে,,,সে তিথির করা সব কাজের শাস্তি তাকে দিবে, তার মাকে করা সব অপমানের জবাব দিবে।কিন্তু এসব না করে সে তিথিকে নিয়ে ওদের বাসায় না ফিরে একটা হোটেলে ঘুরতে গেলো।এগুলা মায়ের সহ্য হয়নি বলেই!’

তিথি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।ইশান ঘাঁড় বাঁকিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও চলে যায় তখনই।
ইশান এবার খালার দিকে চেয়ে বলে,’হ্যাঁ,শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে আমি দূরে রাখবো।যেহেতু বিয়ে করেছি,সেহেতু সে আমার সাথে থাকাটাই তো স্বাভাবিক।’

খালা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,’আমি কি জানি বাবা!এতদিন তো মেয়েটাকে খুব ভাল মনে করেছিলাম।কিন্তু আপার থেকে সব শুনে আমি তো অবাক।এরকম একটা মেয়েকেই তোর বউ করে আনতে হলো?মুনিয়া কি এতই খারাপ?তুই জানিস? তোর শোকে মুনিয়া আজ কতদিন হলো অসুখে ভুগছে?’

‘না সে খারাপ নয়।সে যথেষ্ট ভাল মেয়ে।কিন্তু আমি তো তিথিকে ভালবাসতাম এবং বাসি ও।মুনিয়াকে ছোট বোনের চোখে দেখেছি শুরু থেকেই।ওর সাথে তুলনা দেয়ার কি আছে?’

‘তুই ভালবাসিস সেই মেয়েকে যে মেয়ে তোর মাকে কাঁদিয়েছে?বাহ!বেশ সাধু ছেলে!’

‘খালা!আমি আমার মাকে অনেক সম্মান করি।আমার মাথায় আছে মাকে করা অপমানের কথা।তার মানে এই নয় যে আমি ওকে….’

ইশান আর কিছু বললোনা।উঠে বাহিরে এসে একজন ডাক্তারকে ফোন করতে লাগলো।
তিথি সেসময় ইশানের রুমে বসেছিল।আর ভাবছিল এতদিন যা খালারা একটু আদর দরদ দেখিয়েছেন,আজকের পর থেকে মনে হয় তারাও দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখবেন তাকে’

তিথির কিছু ভাল লাগছেনা।মন চাইছে উঠে চলে যেতে কোথাও একটা।এ বাসার প্রতিটা মানুষকে দেখে ওর গা গুলাচ্ছে।বারবার মনে হয় এই বুঝি কেউ না কেউ আসবে আর খোঁচা দিবে নয়ত ঝাড়ি দিবে!’

হঠাৎ দরজায় কারোর ঠকঠকানোর আওয়াজ পেয়ে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।ওপারে ইশান।
সে ভেতরে ঢুকে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে একটা টিশার্ট পরতে পরতে বললো,’যা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাক।’

‘আমাকে বকবে সবাই’

‘দোষ করলে অবশ্যই বকা খেতে হয়।যেটা বলছি ওটা কর।শাড়ী এটা বদলে তারপর যা’

ইশান দ্রুত টিশার্ট পরে মায়ের কাছে গিয়ে ঐ রুমে থাকা সবার দিকে লক্ষ্য করে বললো,’তিথি মায়ের কাছে এসে বসবে।কেউ তাকে কিছু বলবেনা।সে আমার ক্ষতি করেছে তার শাস্তি আমি তাকে দিবো।তার মানে এই না যে গোটা গুষ্টি শুদ্ধ তাকে কষ্ট দিবে!’

এই বলে সে চলে গেলো ডাক্তারকে গেট থেকে নিয়ে আসতে।
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-১৬+১৭

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৬
আফনান লারা

এদিকে এত ভোরে ওঠায় তিথির না ঘুম আসছিল আর না কিছুতে মন বসছিল।তাই সে রুমে ফিরে ফোন খুঁজে তানিয়ার নাম্বারে একটা কল করে।কিন্তু গাধীটা তখনও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল।বিরক্ত হয়ে সে বাসার নাম্বারে কল দেয় এবার।
কাল সকলে মিলে দেরি করে ঘুমালেও রিদম ঘুমিয়েছিল জলদি জলদি।যার কারণে এই ভোরবেলা উঠে সে বাসায় হেঁটে হেঁটে অন্নের সন্ধান করছিল।ফ্রিজ খুলে কেক দেখতে পেয়ে সেটাতে হাত দিতেই ধুমধাম রিংটোন বেজে বাসার যে ফোনটা আছে সেটা বেজে উঠলো।রিদম শুরুতে হকচকিয়ে গিয়েছিল।এরপর বুকে থুথু দিয়ে গালের ভেতর এক পিস কেক পুরে ফোনটা কানে ধরে।
‘হ্যালো,রানবীর কাপুর স্পিকিং।হু আর ইউ?’

‘আমি’

‘টুকু?এই ভোরবোলা?আজ কি আদৌ সূর্য উঠবে?’

‘চুপ থাক!তানিয়া কোথায়?’

‘মরা লাশের মতন ঘুমাচ্ছে।উঠাবো লাশটাকে?’

‘না থাক।ও উঠলে বলবি আমায় একটা কল দিতে’

‘তা দুলাভাই কই টুকু?’

তিথি রাগ করে কলটাই কেটে দেয়।এরপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে নরম বিছানায়।
মখমলের বিছানার চাদর।হাত লাগলেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সেটাতে শুয়ে তিথি ছাদ দেখতে দেখতে ভাবছে ইশানের সেই পুরোনো বাড়ির কথা।
মরিচা ধরা টিনের ঘর ছিল তাদের। তিথিদের বাড়ির গলিতেই ইশানদের বাড়ি ছিল।
তিথি টিউশনে যাবার পথে রোজ রোজ ইশানকে সে দেখতো।
তার বান্ধুবীরা সকলেই তার চাইতে অধিক সুন্দরী ছিল বলে তিথি কখনও কল্পনাও করেনি ওদের বাদ দিয়ে এই হ্যাংলা ছেলেটা শেষমেশ ওকে সেই লেভেলের ভালবেসে বসবে।
তার এই ভুলধারণা একদিন ইশান গুছিয়ে দিলো।সেই দিনটা ছিল ভ্যালেন্টাইনস ডে।
তাজা নীল রঙের গোলাপ তিনটা হাতে ইশান তিথিকে প্রোপোজ করতে আসে।
নীল গোলাপ ছিল না মোটেও,লাল গোলাপকে নীল রঙের কৌটায় চুবিয়ে নীল করেছিল সে,এরপর রোদে শুকিয়ে নিয়েছিল।কারণ তিথির নীল রঙ ভীষণ পছন্দের।প্রায় সময় সে নীল জামা পরে টিউশনে আসতো।
ইশান তাই এই কারবার করে।
সকলে যার যার বাড়ির রাস্তায় ঢুকে গেলেও তিথির বাড়ি ছিল সবার পরে।
তিথিকে একা পেয়েই ইশান ওকে প্রোপোজটা করে বসে।
চোখের সামনে রোদে পোড়া,পায়ে কাদা শুকানো।গায়ের পোশাক এবং গন্ধ শুঁকে তিথির মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো।
সে তখন উঠতি বয়সী মেয়ে।চোখে মুখে তার রিত্তিক রওশানের মতন ছেলেদের নিয়ে স্বপ্ন।সেই জায়গায় কিনা এই রকম একটা ছেলে এসে তার কপালে জুটলো!
তিথির ভাবভঙ্গি দেখে ইশান ফুলটা আরেকটু এগিয়ে ধরে।
তিথি এদিক ওদিক তাকিয়ে ফুলটা হাতে নেয়।এরপর উল্টে পাল্টে বলে,’নীল গোলাপ পেলে কই?’

‘এটা লাল গোলাপ।তোর তো নীল পছন্দ তাই নীল রঙ করিয়ে এনেছি’

‘আমাকে তুই করে বলছো কেন?’

‘আমার অনেক ছোট তো তাই’

তিথি কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’কত ছোট?’

‘এই যে তুই ক্লাস এইটে পড়িস।আর আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।’

‘আমাকে তুই বলবানা।আর ধরো তোমার গোলাপ।’

‘তোর ভাল লাগেনি?’

‘ফুল ভাল লেগেছে,কিন্তু তোমাকে ভাল লাগেনি’

সেবার তিথির এই কথাটা শুনে ইশান বলেছিল “আচ্ছা” এর বাহিরে আর কিছুই বলেনি।রোজ সে আগের মতন করে তিথির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো টিউশনের বাহিরে।
তিথির এটা অনেক বিরক্তিকর মনে হতো।

একদিন তো সে ইশানকে!!

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে তার এখন ভয় হয়।ইশান যদি সেই ব্যবহার গুলো ওর সাথে আবারও করে যেগুলো সে অতীতে করেছিল তার সাথে?
কত অত্যাচার সে ইশানকে করেছিল।তাও শেষ পর্যন্ত ইশান তার ভালবাসা পাবার অপেক্ষায় রয়ে যেতো।

চোখের কোণার পানি মুছে তিথি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
সকাল সাতটা বেজে গেছে।বাসার সামনে বিয়ের গেট লাগানোর লোক চলে এসেছে।
তিথি সেটা দেখছিল হঠাৎ তার ডাক পড়ে ইশানের খালার।
খালার ডাক শুনে তিথি শাড়ীর আঁচলের কোণা টেনে কাঁধ ঢেকে তার কাছে চলে আসে।তিথিকে দেখে খালা চমকে উঠলেন প্রথমেই।

‘একি বউ!গোসল করো নাই?’

‘করেছি’

‘তাহলে আগের শাড়ী কেন পরেছো?নতুন একটা পরবে।রিসিপশানের আগে পরার জন্য আমরা একটা কাঞ্জিভরম শাড়ী দিয়েছিলাম তো বেগুনী রঙের।সেটা কোথায়?’

‘আসলে খালামণি ওটা ভুলে বাসায় রেখে এসেছি’

‘সেকি!কাল রাত থেকে এই ভারী শাড়ীটা পরে আছো তুমি?দাঁড়াও আমি তামিয়া থেকে নিয়ে দিচ্ছি’

এই বলে খালা চলে যাওয়া ধরতেই তিথি তাকে বাধা দিয়ে বলে সে তার বাবাকে কল দিয়ে বলেছে।তারা রিদমকে দিয়ে ব্যাগটা পাঠিয়ে দেবে।

খালা তিথির থুুতনি ধরে টেনে বলে,’খিধে পেয়েছে তোমার?কিছু খাবে?’

‘নাহ’

তিথি লজ্জায় বলতে পারছেনা সে আসলে সকালে কি খায়।আপাতত নতুন বউয়ের মতন লাজুক হয়ে মাথা নিচু করে রইলো।

তখনই খালা বলে উঠলেন ইশান এসে গেছে।এ কথা শুনে তিথির বুকের ভেতর ঝড় এসে গেলো।ভয়ে সে পেছনে তাকালোনা।ইশান সামনে দিয়ে তার রুমে চলে গেছে।
ও চলে যাবার পর তিথি পেছনে তাকাতেই
খালা ওকে জোর করে ইশানের পিছন পিছন ওর রুমের দিকে পাঠিয়ে দিলেন।তিথি কতবার করে বললো সে এখন যাবেনা।কিন্তু কে শুনে কার কথা।তাকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়া হলো।
রুমের বাহিরে এসেও তিথি ভয়ে ঢুকছিল না।

ইশান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলছে।
তিথি ধীরে ধীরে রুমে এসে বিছানায় অন্য দিকে মুখ করে বসে থাকলো।ইশান হাতের ঘড়ি আর টাইটা খুলে নিজের আলমারি থেকে পাঞ্জাবি বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে।তিথি ওমনি চুপিচুপি ইশানের মানিব্যাগের কাছে এসে হাজির হয়।
শেষবার ইশানের মানিব্যাগে তিথি তার নিজের ছবি দেখেছিল।এখনও আছে কিনা সেটা পরোক করতে সে আবারও মানিব্যাগটা ধরে।
কিন্তু এবার তিথির কোনো ছবি নেই।তিথি মন খারাপ করে সেটা রেখে দেয়।কিন্তু তিথি জানতোনা ইশানের মানিব্যাগে দুইটা পার্ট।তিথির ছবি অন্য পার্টে ছিল যেটা তিথি খুলেই নাই।
ওটা আগের জায়গায় রেখে তিথি আবার বিছনায় এসে বসে।

ইশান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে হঠাৎ তিথির দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থাকলো।তিথি বসে বসে একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল।ইশান তার দিকে তাকিয়ে আছে খেয়াল করে সেও ওর দিকে তাকায়।কিন্তু ইশান এমনভাবে কেনোই বা তাকিয়ে আছে সে বুঝতে পারেনা।শেষে ও বাধ্য হয়ে বললো,’কি হয়েছে?’

তার উত্তরে ইশান কিছু বলেনা।হনহনিয়ে রুম থেকে চলে যায়।তামিয়ার রুমে গিয়ে ওর নতুন শাড়ীর সেট থেকে একটা সেট নিয়ে এসে তিথির মুখের উপর মারে সে।তিথি এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না।শাড়ী মুখ থেকে সরিয়ে সে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো আগের মতন।ইশান ধমকে বললো,’কাল রাত থেকে এই শাড়ীটা পরে থেকে কি বুঝাতে চাচ্ছিস?আমি তোকে শাড়ী কিনে দেই না?এটাই তো?এক ব্যাগ শাড়ী বাঘে নিছে?’

তিথি তার হাতের শাড়ীটা দেখে চুপ করে থাকলো।কিছু আর বললো না।
এর কিছু সময় বাদেই তার কেন যেন খুব রাগ হলো।সে বিছানা থেকে নেমে শাড়ীটা ইশানের দিকে পাল্টা ছুড়ে ফেলে বললো,’বাঘে নেয়নি।আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই পরিনি।এই শাড়ীটা আজকেও পরে থাকবো।তোমার কোনো সমস্যা আছে?’

ইশান তার পায়ের কাছে শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিচু হয়ে শাড়ীটা তুলে নিলো হাতে।এরপর বললো,’যতক্ষণ না তুই এই শাড়ী পরছিস, ততক্ষণ এই রুমেই থাকবি’

এই বলে ইশান বের হয়ে রুমের দরজা বাহিরে দিয়ে আটকে রেখে চলে যায়।যাবার পথে খালাকে দেখে বলে যায় এ দরজা যেন কেউ না খোলে।
তিথি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।ভেবেছিল তার সেই পুরোনো রুপ থেকে ইশান হয়ত ভয় পাবে।এদিকে ভয় তো পেলোই না পাল্টা ওকে শাস্তি দিয়ে চলে গেলো!
কি হলো এটা!

ইশান সোফার মাঝখানে বসে আছে।তিথিকে রুমে সে আটকে রেখে এসেছে এটার কথা মিসেস আরাফাত তার বোন থেকে শুনেছেন।তাই ছেলের কাছে আসলেন সোজা।
ইশান রাগে বসে বসে টিভির চ্যানেল একটার পর একটা পাল্টাতে লাগলো।
মা তখন ওর হাত থেকে রিমোটটা নিয়ে বললেন,’ওকে কষ্ট দিতে চাইছিস মানছি।কিন্তু এভাবে লোক হাসিয়ে কি লাভ হলো?কাজের লোকেরা এসব জানলে পাঁচ কান করবে মানুষ কি ভাববে?’

‘ভাবুক।তারাও জানবে কেনোই বা আমি এসব করছি!’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৭
আফনান লারা

কিছু সময়ের মাঝেই রিদম এসে হাজির হয় সেই ব্যাগটা নিয়ে।ইশান ওকে তিথির রুমে দিয়ে আসতে বলে ব্যাগটা।
রিদম দরজা খুলতেই দেখে তিথি তেড়ে আসলো কিসব বলতে বলতে।একটা লাইন ও রিদম বোঝেনি।শেষ লাইনটা বুঝতো কিন্তু ইশানের জায়গায় রিদমকে দেখে তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
রিদম ব্যাগটা এগিয়ে ধরে বলে,’আমি কার্তিক আরিয়ান বলছি।এই নিন আপনার ব্যাগ’

তিথির হাসি আসলোনা।মনের ভেতরের চাপা কষ্টটা তাকে হাসতে দিচ্ছেনা।তার পরেও সে জোর করেই মুচকি হাসলো।যাতে রিদম কিছু টের না পায়।
সত্যিই রিদম টের পেলোনা।তিথির কাছ থেকে এসে সে ইশানের পাশে বসে পড়ে।
বিয়ের গেট সাজালেও রিসিপশান হবে কমিউনিটি সেন্টারে।

রিদম ইশানের পাশে বসে নিজেকে কেমন যেন গরীব মনে করছিল।ইশানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো রিদমের ছোটকালের কথা।ইশান যখন তিথিকে প্রথম প্রথম চিনতো তখন রিদম ছিল চার বছরের শিশু।প্রতি বিকেলে ওকে কোলে নিয়ে তিথি ক্ষেতের মাঝ দিয়ে হাঁটতো।সেই সময়টা ইশান নিজের কলিজা ঠাণ্ডা হওয়া অবধি তিথিকে দেখতো।
রিদম ছিল নাদুসনুদুস বাচ্চা।তিথির সাথে ওকে দেখলে ইশানের হাসি পেতো।কারণ রিদমের চেহারাটাই ওরকম ছিল।পুরো তিথির কপি,জাস্ট জেন্ডার আলাদা।
ইশান সোফায় হাত মেলে বসে বললো,’এখন আর তিলের খাঁজা খাও?’

রিদম চোখ বড় করে ইশানের দিকে তাকালো।মা বলতো ছোট থেকেই নাকি সে তিলের খাঁজা খেতে পছন্দ করে।এই বড়বেলায় এসেও সে তিলের খাঁজা খায়।কিন্তু এ কথা ইশান ভাই জানলো কি ভাবে?তিথি বলেছে নাকি?

রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান তার একটা লোককে ডেকে রিদমের জন্য এক বক্স আনিয়ে রাখা তিলের খাঁজা টেবিলের উপর রাখতে বলে।
রিদম তো মহা খুশি।এতই খুশি যে সে ইশানকে ধরে চুমুই দিয়ে দিলো।
তখন ইশান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,’শালাবাবু। এর বিনিময়ে তোমায় যে একটা কাজ করতে হবে’

‘কি বলুন।করে দিবে অবশ্যই’

তখন ইশান একটা নেটের ওড়না রিদমের দিকে ধরে বলে,’তোমার আপুকে সারপ্রাইজ দেবো বলে আর দেয়া হয়নি।দিয়ে আসবে?খবরদার আমার নাম নিবেনা।’

রিদম এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ওড়নাটা নিয়ে তিথির কাছে চলে আসলো।তিথি শাড়ীর কুচিতে সেফটিপিন লাগাচ্ছিল।রিদম দরজায় টোকা দিয়ে বলে,’টুকু আমি।দরজা খুলো।কাজ আছে’

তিথি আঁচলটা পরে,কাছে এসে দরজা খুলতেই রিদম ওর হাতে একটা ওড়না ধরিয়ে দেয়।এরপর বলে,’এই ওড়নাটা আপুরা বাহিরে রেখেছিল,আলাদা প্যাকেট।নাও ধরো,দিতে ভুলে গেছিলাম’

তিথি ওড়নাটা নিয়ে বিছানার উপর রাখে।এরপর শাড়ী সম্পূর্ণ পরা শেষ করে মাথায় সেই ওড়নাটা পরে নেয়।আয়নায় নিজেকে দেখে হাসিমুখ নিয়ে সে রুম থেকে বের হয়।কিছুদূর যাবার পর ওর গলার দিকটায় চুলকানি শুরু হয়।শুরুতে সে ভেবেছিল নতুন শাড়ী পরায় এত অস্বস্তি লাগছে।কিন্তু তার এই অস্বস্তি এখন অসহ্যকর হয়ে উঠেছে।সে রুমে আবার ফেরা ধরতেই ইশানের আত্নীয় যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন তারা তিথিকে চেপে ধরলো।
তিথি হাত দিয়ে বারবার গলার দিকটা চুলকাচ্ছে,পিঠের দিকটা চুলকাচ্ছে।এরই মাঝে সেই দিকগুলো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।
ইশান সোফায় বসে বসে তিথির এমন করুণ দৃশ্য দেখছিল।
ইশানকে খুবই খারাপ লোক মনে হলেও আজ থেকে কত গুলো বছরআগে ইশানের থেকে মুক্তি পাবার জন্য তিথি ঠিক একই কাজ করেছিল।
ইশান সেগুলো মনে করে হাসতে হাসতে টিভি দেখছে।
তিথির রজনীগন্ধা ফুলে এলার্জি আছে।
আর ইশান সেটার পারফিউমই ওড়নাটাতে মাখিয়ে দিয়েছিল।
একটা সময়ে আর থাকতে না পেরে সবার সামনে থেকেই তিথি ছুটলো ইশানের রুমের দিকে কিন্তু ওর পথ আটকে দাঁড়ায় মিসেস আরাফাত।তিনি রাগী চোখে চেয়ে থেকে বললেন,’সবাই তোমায় দেখে গিফট দিবে।এসেই এত পালাই পালাই করছো কেন?যাও ইশানের পাশে বসো’

তিথি আর যেতেই পারলোনা।ইশানের পাশে এসে বসলো তাই।কিন্তু তার গলা পিঠ যেন এলার্জি নিয়ে চলে যাবে।বারবার হাত দিয়ে চুলকাচ্ছিল সে।সবার আগে ইশানের ফুফু রত্না হানিফ এসে তিথির গলায় মোটা স্বর্ণের চেইন একটা পরিয়ে দিতে গিয়ে দেখলেন তিথির গলায় লাল রঙের মোটা দাগ।
দাগটা এলার্জির জন্য হলেও তিনি অন্য কিছু মনে করে মুচকি হেসে চেইনটা পরিয়ে সরে গেলেন।
এরপর আসলেন ইশানের ছোট দুষ্টু একটা ফুফু।তিনি তিথির গলায় একই দাগ দেখে সবার সামনে বলে উঠলেন,’ইশান!তোর কি বিবেক নাই?বৌভাতের দিন বউয়ের গলা প্রতি টা মানুষ দেখে,বিশেষত মহিলা কমিটির সবাই।এমন করে কেউ দাগ রাখে?’

এই শুনে ইশানের চোখ কপালে।সে চট করে তিথির দিকে তাকায়।তিথি তখনও গলা চুলকাচ্ছিল।ইশান ওর গলায় দাগ দেখে চমকে যায়,আর চুপ করে থাকে।ফুফু নিজের কাজটা করে চলে গেছেন।এদিকে তার কথা নিয়ে সবাই খিলখিল করে হাসছে।

তিথি আর থাকতে না পেরে উঠে চলেই গেলো।তখন ইশানের মা রেগে রেগে বললেন,’তুই না ওরে দু চক্ষে দেখতে পারিস না?
তাহলে এইসব কি?তুই বোকা নাকি আমিই আসলে বোকা!’

এই বলো তিনিও চলে গেলেন হনহনিয়ে।ইশান কোনো পাত্তা দিলোনা কারোর কথায়।কারণ সে তো জানে সে তেমন কিছুই করে নাই।এটা যে এলার্জির কারণে হয়েছে তা ইশান বেশ ভালমতন বুঝতে পেরেছে।

তিথি রুমে এসেই তড়িঘড়ি করে শাড়ীটা বদলে নেয়।মাথার ওড়নাটাকেও সরিয়ে ফেলে।এরপর ছুটে শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।তার সারা শরীর চুলকাচ্ছে। রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধ তার নাকে এসেছিল কিন্তু সে ভাবলো সেই ফুল তো ধারের কাছে কোথাও নেই।হয়ত ভু্ল হচ্ছে।

পাগলের মতন ছুটে গোসল করতে আসার পথে কিছুই তো আনা হলোনা।এদিকে দরজাও মনে হয় খোলা।
তিথি পানির নিচে দাঁড়িয়ে এসব নিয়েই ভাবছিল। অনেক ভেবে দরজাটা একটু খুলে সে বাহিরে তাকাতেই দেখে ইশান তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিসের যেন কাগজ নিচ্ছে। তিথি ওকে আচমকা দেখে ভয় পেয়ে আবারও দরজা লাগিয়ে দিলো।কি করে সে এখন বের হবে!

পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হবার পর তিথি আবারও দরজা একটু খুলে।
এবার দেখে ইশান কোথাও নেই।কিন্তু তামিয়ার যে শাড়ীটা ইশান ওকে এনে দিয়েছিল সেটা বিছানার উপর গুছিয়ে রাখা।
তিথি দেখলো দরজাটাও টেনে গেছে ইশান।
সে খুশি হয় তাতে।চটজলদি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে দরজাটা লাগিয়ে সে দ্রুত শাড়ী পরে নেয়।এরপর চুলগুলো মুছে এলার্জির জায়গায় ভেসলিন লাগিয়ে সে রুম ছেড়ে বের হতেই মুখোমুখি হয় মিসেস আরাফাতের।উনি রেগেই ছিলেন কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে তো কিছু বলা যায়না।তার পরেও বললেন,’এইবার আবার মুখ ডুবাইও না।ভাল করে পিঠ কাঁধ ঢেকে যাও।আমার শ্বশুর বাড়ির অনেক লোক এসেছে ।’

তিথি মাথা নাড়িয়ে ওদিকেই যায়।ইশান কোথাও ছিল না।
যেতে যেতে তিথির হঠাৎ সেইদিনের কথা মনে পড়ে যায় যেদিন সে ইশানের এলার্জির একটা ফুল ওকে উপহার দিয়েছিল।সেদিন ইশানের যে হাল হয়েছিল!তিথি খুব খুশি হয়েছিল সেদিন।তার সেই অট্টহাসি আজ তাকে সবার সামনে ছোট করলো।
‘আচ্ছা এটাতে কি ইশানের হাত আছে?
ওড়না তো রিদম দিয়ে গেছিলো।ইশানের হাত থাকবে কি করে!’

তামিয়ার নতুন শাড়ীটাতে তিথিকে অনেক ভাল লাগছিল।সবাই এবার ভাল করে ওর প্রশংসা করছে।
ইশান গালে হাত রেখে টিভিই দেখছে শুধু।তখন তামিয়া এসে ওর পাশে বসে।এরপর বলে,’মাহফুজুর রহমানের গান তুই দেখছিস?নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা।এটা সত্যিই নাকি বউকে দেখে হীতাহীত জ্ঞান হারিয়ে বসে আছিস?’

এ কথা শুনে ইশান বললো,’হাসবেনা।উনি আসলেই সুন্দর গান করেন।জীবনের মায়া চলে গেলে, উনার গান শুনে সে মায়া বাপ বাপ বলে ফিরে আসে।একবার শুনে দেখো’

‘তোর তো জীবনের মায়া ফিরে এসেছেই।তাহলে কেন শুনছিস?’

‘খুশিতে।তুমি যাবে?’

তামিয়া হাসতে হাসতে চলে গেলো।

ইশানদের রান্নাঘরে সেই সব খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার জন্য রিদম প্রতিদিন মাটিতে গড়াগড়ি খায়।
সে আর দেরি না করে সব নিয়ে এক এক করে খেয়ে চলেছে সেজন্য।
তখন একজন কাজের লোক এটা দেখে ওকে বললো,’এইসব হাবিজাবি খেয়ে যেন পেট না ভরায়।কারণ বৌভাতের খাবারে আরও ভারী আয়োজন করা আছে এগুলো খেলে আর দুপুরের খাবার সে খেতে পারবেনা।
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-১৪+১৫

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৪
আফনান লারা

তিথি সিনেমায় বহুবার দেখেছে শাড়ীর গহনা পরতে পরতে নায়িকা শুনছে, বিয়েটা করার আগে তার আরও একবার ভেবে নেয়া উচিত।
আজ তার বিয়ের দিনে তাকেও এইসব শুনতে হচ্ছে।সে ইশানকে ২য় বার দেখেনি বলে তার মনে যে খচখচ করছিল তা শুনেই মা তাকে আরও একবার ভেবে নিতে বলছিলেন ঠিক সেইসময়ে যখন পাত্রপক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে।
তিথি হাসিমুখে লিপস্টিক টা ঠিক করতে করতে বলে,’তোমরা দেখেছো না?আমার আর কোনো অভিযোগ নেই’

মা এ কথা শুনে হাসিমুখে তার কাজ করতে চলে গেছেন।
বর এসেছে বর এসেছে শুনে তিথি তার জানালার দ্বারে এসে দাঁড়ায়।এখান থেকে বরের গাড়ী এবং গেইট দুটোই দেখা যাবে।

গাড়ী থেকে ইশান নেমেছে।তিথির বোনেরা সবাই মিলে গেইট আটকে দাঁড়িয়ে আছে।তিথি ইশানের পিঠ ছাড়া আর কিছুই দেখছেনা।এরই মাঝে আরিয়ানের মুখের এক ঝলক দেখে সে হাসলো তারপর ওখান থেকে চলে আসলো আবার।আর দেখতে হবেনা তাকে।
ইশান ইচ্ছে করে আরিয়ানকে একই রঙের পাঞ্জাবি পরিয়েছে।

সবাই ইশানকে নিয়ে ব্যস্ত। এরই মাঝে রিদম ইশানের কয়েকটা ছবি তুলে নেয় এবং ছুট লাগায় তিথির কাছে।তিথিকে সে দেখাবে তার বর আজ কত সুন্দর দেখতে লাগছে।
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ তার হাত আটকে ধরে ইশানের বোন তামিয়া।

‘আপনি তিথি টুকুর ননাস না?’

‘হ্যাঁ’

‘হাত ধরলেন কেন?আমার সাথে প্রেম করবেন?’

তামিয়া রিদমের হাতটা টেনে আরও কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,’সিনিয়র মেয়েরা একমাত্র জুনিয়র ছেলেকে ভালবাসা দিয়ে বড় করে নিতে পারে।তা জানো তুমি?’

‘আমার আর বড় হতে হবেনা।এমনিতেই একটু বড় হয়েছি বলে আমাকে দিয়ে বাসার সব তরকারি বাজার করায়।হাত ধরেছেন কেন সেটা বলুন’

‘তুমি আমার ছবি তুলবেনা?’

‘আপনার ছবি আমি কেন তুলবো?’

‘আমি তোমার বেয়াইন না?’

রিদম ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে এরপর গাল ফুলিয়ে দুটো ছবি তুলে নেয়।
তামিয়া মুচকি হেসে ফোনটা ওর হাত থেকে নিয়ে নেয় ছবি দেখার জন্য।সেই সুযোগে ইশানের সব কটা ছবি সে ডিলেট করে দেয়।এরপর বলে,’ইশ রে ভুলে তোমার তোলা কয়েকটা ছবি ডিলেট হয়ে গেলো’

‘আমি বুঝলাম না আমার ফোন থেকে বেছে বেছে দুলাভাইয়ের ছবিগুলো কেন ভুলবশতই ডিলেট হবে!ধুর ভাল্লাগেনা!’

রিদম রাগ করে চলে গেলো।তামিয়া মুচকি হাসি দিয়ে ইশানের কাছে এসে বসে এরপর।হুজুর ইশানের সই নিয়ে এবার তিথির রুমে আসলেন তার থেকে সই নেবার জন্য।

সই নিয়ে এবং কবুল শুনে তিনি বের হয়ে আসলেন।তিথি কবুল বলেছে শুনে ইশান জয়ের হাসি হেসে নিলো।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো তার অফিসের একটা কাজে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে।তিথি যেন তার খালা,বোনদের সাথে ওদের বাসায় চলে আসে।ওর ফিরতে রাত হবে।
এই বলে সে চলে যায়,সাথে আরিয়ানকেও নিয়ে আসে।

ওর কথামতই ইশানের খালারা তিথিকে নিয়ে বাসায় ফেরেন।ইশানের মা রাগ করে তিথির মুখ যেন না দেখতে হয় তাই নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে রেখেছেন।
তিথিকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ইশানের রুমে নিয়ে রাখা হলো।ওর রুমেই বাসর ঘর সাজানো।
সবাই চলে যাবার পর তিথি ইশানের সারা রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা ছবি পেলোনা।ছবি পেলে সেটা হাতে নিয়ে কথা বলতো সে।
যাই হোক!ছবি নেই যখন,তখন অন্য কিছু দেখা যাক।
এই ভেবে সে ইশানের বারান্দায় আসে।সেখান থেকে ঘুরে পুরো রুমে দুবার চক্কর কাটে।
সব ডাবল করে রাখা।মনে হয় ইশান চায়না তার জামাকাপড়ের সাথে তিথির জামাকাপড় থাকুক,তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে তিথি দাঁড়াক।এটা কি মহৎ কাজ নাকি হিংসামি কে জানে!
দেখে তো হিংসামিই মনে হচ্ছে!

বেশ অনেকক্ষণ হাঁটা চলা করেও ইশান আসছেনা বলে তিথি রুম থেকে বের হয়।রুম থেকে বেরিয়ে সে আশ্চর্য হয়ে যায়।
তখন রাত আটটা বাজে,বেশি না।অথচ একটা মানুষ ও বাহিরে নেই।বিয়ের দিন এরকম নিরব থাকে বাসা?
একা একা ঘুরেফিরে তিথি সেই আবার ইশানের রুমে ফিরে আসে।
এখন তার কি করা উচিত মনে করে তানিয়াকে একটা কল দেয় সে।
তানিয়া তখন টায়ার্ড হয়ে ঘুমাচ্ছিল।তাও তিথির কলে সে উঠে বসে কলটা রিসিভ করে।

‘শোন তানিয়া!তোর তো এগুলাতে জ্ঞান বেশি।তোর দুলাভাই আসতে দেরি করছে।কি করবো আমি?’

‘নাচো’

‘আরেহ মজা করছিস কেন!এই ভারী শাড়ীটা পরে আমার অসহ্য লাগছে।খুলে ফেলি?’

‘জোস হবে।নাইটি একটা আছে তোমার ব্যাগে।নিয়ে সেটা পরে নাও’

‘ছিঃ!কি বলিস!প্রথম দেখাতে আমাকে উনি নাইটিতে দেখবে?না না এটা হবেনা।লজ্জায় মরে যাব আমি’

‘তাহলে জামা আছে সেটা নিয়ে পরো’

তিথি কলটা কেটে গিয়ে ব্যাগ খোলে।ব্যাগ খুলে সে মাথায় হাত দিয়ে ফেললো।এটা অন্য একটা ব্যাগ।সম্ভবত তাদের বাসায় বেড়াতে আসা ঝুমু আন্টির ব্যাগ এটা।ব্যাগে সব তার জামাকাপড়।
এত মোটা মোটা জামা পরলে কি যে বিশ্রি লাগবে!
ঝুমু আন্টির ছেলের বউয়ের জন্য মা এক সেট নাইটি দিছিলো।সেগুলোও আছে ব্যাগে।
তিথি ঘড়ির দিকে চেয়ে ভাবলো ইশান আসার আগে আবার শাড়ীটা পরে নিবে।আপাতত সে নাইটিটা পরে একটু রেস্ট করবে।এই ভারী শাড়ী পরে বেশিক্ষণ থাকা আর যাবেনা।
তাই নাইটিটা প্যাকেট থেকে খুলে তিথি ওয়াশরুমে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে এসে তিথি যেইনা বের হয়ে দাঁড়ালো রুমে ওমনি বরের পোশাকে একজনকে দেখে সে থমকে দাঁড়ায়।ইশান এত দ্রুত এসে পড়বে তা সে ভাবতেই পারেনি।
এদিকে তার শাড়ীটা বিছানার উপর খুলে রেখেই সে ওয়াশরুমে গেছিলো।
কি করে যে শাড়ীটা নেবে আর আবার গিয়ে চেঞ্জ করবে তাই ভাবছিল সে।ওমনি খুব বিকট একটা আওয়াজ হলো।
আওয়াজটা ইশানের সামনে থেকেই এসেছে।সম্ভবত সে তার হাতে থাকা পারফিউমের কাঁচের বোতলটা ফেলে দিয়েছিল।
তিথি নিচে পড়ে থাকা ভাঙ্গা কাঁচগুলো দেখছে। সে ধরে নিয়েছে এটা ভুলবশত পড়েছে,কিন্তু আসলে ইশান সেটা ইচ্ছে করেই ফেলেছিল।
তিথি ভয়ার্ত গলায় বললো,’আমি চেঞ্জ করে আসি?’

এই বলে সে দ্রুত হেঁটে বিছানার কাছে এসে শাড়ীটা হাতে নেয়। এরপর ওয়াশরুমে যাবার সময় যখন সে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় এক নজর চোখ রাখে তখন ইশানকে দেখে তার পা আপনা আপনি থমকে যায়।
সে আয়নার দিকে আরও একবার তাকায়।
ইশান মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে তার আয়নায় সে নিজেকে দেখছে।
তিথি ইশানকে দেখে ধীর পায়ে কাছে আসে এরপর অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,’ইশতিয়াক! ”

নিজের নামটা তিথির মুখে শুনে ইশান পেছনে ফিরে তাকায়।
ইশানের চাহনি দেখে তিথি শাড়ী দিয়ে গা ঢেকে বলে,’ইশান কোথায়?’

ইশান অগ্নি চাহনি নিয়ে কেবল তাকিয়েই থাকে।
তিথি এক পা এক পা করে পিছিয়ে বলে,’ইশান কোথায়?’

‘এতদিন পর দেখা হলো।কেমন আছি জানতে চাইবেনা?’

তিথি ঢোক গিলে দরজার কাছে এসে ছিটকিনি খুলে বের হতেই দেখে আগেরমতন অবস্থা, কোথাও কেউ নেই।যেন পুরো বাসাটা খালি।তিথি তাও সাহস করে ইশানের খালার রুমের বাহিরে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
অনেকক্ষণ যাবত দরজা ধাক্কানোর পর খালা চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজাটা খুললেন।জানতে চাইলেন ওর কিছু লাগবে নাকি।
তিথি কাঁপা গলায় বলতে লাগলো ইশান কোথায়।
তখন খালা আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বললেন,’ইশান তো তোমার পেছনেই’

তিথি ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকায়।এই ইশতিয়াক ইশান আর তার যে ইশানের সাথে বিয়ে হয়েছে,দুটো মানুষই কি এক!
ইশান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল।তিথি ওভাবে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সে বললো,’বাসায় আমার অনেক কাজিন আছে,স্পেশালি ছেলে কাজিন।নতুন বউকে নাইটিতে দেখা কেউ ভাল নজরে নেবেনা।ভেতরে আসো’

এটা বলে ইশান চলে যায় রুমের ভেতর।তিথির ভয় কাটছেনা।মাথা ঘুলিয়ে আসছে।সে চারিদিকে তাকিয়েও কাউকে পায়না।খালা আবার দরজা লাগিয়ে ফেলেছেন।
বাধ্য হয়ে সে শাড়ীটা পেঁচিয়ে আবারও সেই রুমে আসে,কিন্তু ভেতরে ঢোকেনা।করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকে।

ইশান নিচে বসে কাঁচের টুকরাগুলা একটা বক্সে ভরছে।কোনো কথা বলছেনা।
তিথি নিরবতা ভেঙ্গে বললো,’আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে, তিনি কোথায়?’

‘তিনি কাঁচ কুড়াচ্ছেন’

তিথি এবার রেগে যায়।
চিৎকার করে বলে,’এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি?আমি এখনই আমার বাসায় চলে যাবো’

এই বলে তিথি শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে যায় কিন্তু পারেনা।ইশান এসে আটকায় ওকে।ওর চোখের দিকে যতবার তিথি তাকাচ্ছে ততবার তার গায়ের সব পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ে। এই চোখ সেইই চোখ যাকে সে এতদিন দরে দেখেছিল কিন্তু চিনতে পারে নাই।আর আজ সব স্বচ্ছ হয়ে আসছে।

ইশান ওয়াশরুমের দরজা থেকে হাত সরিয়ে ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে বলে,’মনে আছে?আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগের কথা? হয়ত মনে নেই।মনে থাকবেই বা কি করে!
এক গরীব মুদি দোকানদারের ছেলে কিভাবে এত বড় বিজন্যাসম্যান হলো,কিভাবে তার পুরো জীবন বদলে গেলো!
তুমি কেন বলছি!
এটা মনে আছে যে আমি তোকে ঠিক এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তিথি!মনে আছে তোর?
মনে নেই।যদি থাকতো তবে ডেং ডেং করে প্রেম করতে চলে যেতি না।বিয়ে বসতে চলে যেতি না!তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আমি বড়লোক হয়ে আসলে তুই আমায় বিয়ে করবি।কোথায় গেলো তোর সেই প্রতিশ্রুতি?
আমার মাকে কাঁদিয়েছিলি মনে আছে?তোর খুব রুপের দেমাগ ছিল,তোর খুব টাকার অহংকার ছিল।এখন দেখ!আমি তোর চাইতে শত গুনে বড়লোক হয়ে এসেছি।ইশতিয়াক ইশান ইজ ব্যাক!
তোর থাকার বাসা দশটা কেনার টাকা আমার ব্যাংকে আছে।
আমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে এখন কি করতো জানিস?তোকে কোনোদিন বিয়ে তো দূরে থাক,তোর জীবন যত নিম্ন আকারে নষ্ট করা যেতো সেটা করতো।কারণ তুই একটা ছলনাময়ী!তুই কথা দিয়ে কথা রাখিসনি!তুই লোভী!
তোকে আমি পায়ে ধরে বলেছিলাম আমি তোকে কতটা ভালবাসি,তোর জন্য আমি আকাশের চাঁদ এনে দিতে পারবো!তুই বলছিস তোর চাইতে বড়লোক হয়ে দেখাতে,তোর চাইতে শিক্ষিত হয়ে দেখাইতে।তবেই নাকি তুই আমায় বিয়ে করবি!ততদিন তুই অপেক্ষা করবি!
আমার মা পর্যন্ত তোর কাছে রিকুয়েস্ট করেছিল।তুই সেদিন আমার মায়ের সাথে কতই না খারাপ ব্যবহার করেছিলি!’

তিথি বুঝতে পারলো ইশানের মনে তাকে নিয়ে হাজারটা স্বীকারোক্তি।
এগুলো সে কিভাবে বুঝালে ইশান বুঝবে তা ওর জানা নেইই।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৫
আফনান লারা

ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে তিথির ভীষণ ভয় হচ্ছিলো।অথচ কত গুলো বছর আগে ইশান তার চাহনিতে ভয় পেতো।
বছর কত কতকিছু পাল্টে দিতে পারে।
তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশান এক চিৎকার দিয়ে বললো,’আমাকে যা নয় তা বলে অপমান করেছিলি।তা নাহয় বাদই দিলাম,কিন্তু তুই তাতেও ক্ষান্ত হোসনি সেদিন।আমার মা যখন সেদিন আমার কান্না দেখে তোর কাছে আমার জন্য প্রেম ভিক্ষা চাইতে গিয়েছিলো তুই আমার মাকে এত অপমান করার সাহস কই পেয়েছিলে?সেদিন হয়ত আমার কোনো ক্ষমতা ছিল না আমার মায়ের চোখের পানির প্রতিশোধ নেয়ার।কিন্তু আজ আছে’

এই বলে ইশান তিথির হাতটা শক্ত করে ধরে এরপর টানতে টানতে নিয়ে যায় রুমের বাহিরে।করিডোর দিয়ে শেষ কোণার রুমের কাছে নিয়ে আসে সে তিথিকে।এরপর দরজায় আলতো ভাবে নক করে বলে,’মা। জেগে আছো?’

‘ইশান?কি হয়েছে বাবা?’

মায়ের মৃদু স্বরের আওয়াজ শুনে ইশান দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে।
ইশানকে দেখে মিসেস আরাফাতের মুখে হাসি ফুটলেও, তার পাশে নাইটি পরে দাঁড়িয়ে থাকা তিথিকে দেখে মোটেও মনে শান্তি পাননি তিনি।তার মুখটা গোমড়া হয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ।
ইশান তিথিকে টান দিয়ে মায়ের সামনে ছুড়ে মারলো এরপর বললো,’মায়ের পা ধরে তার কাছে তোর যত কৃতকলাপ ছিল সে বিষয়ে ক্ষমা চা।’

তিথি ছলছল চোখে মিসেস আরাফাতের দিকে চেয়ে ছিল।কোনো কথা বলছিল না বলে ইশান তাকে আবারও ধমক দিয়ে বলে ক্ষমা চাইতে।
তিথি চোখ মুছে উনার পা ধরে বলে,’আন্টি সেদিন আমি ইশানের উপর রাগ টা আপনার উপর ঝেড়ে ছিলাম।আমার সেই কাজটা করা উচিত হয়নি।বড়দের সাথে সেরকম ব্যবহার কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ের কাজ নয়।আমি তো অভদ্র তাই সেদিন এত দূর ব্যবহার করেছিলাম।আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিবেন’

মিসেস আরাফাত সব ভুলে গেলেও অপমান কোনোদিন ভুলেন না।আর তিথির করা অপমানটা না ভুলার মতই ছিল।সে ইশানের উপর ক্ষেপে মিসেস আরাফাতকে সেদিন যা নয় তাই বলে মনে আঘাত করেছিল।সেই আঘাত উনার এখনি কাঁচা আছে।
মা কিছু বলছেনা দেখে ইশান বললো,’আমার মা তোকে ক্ষমা করবেনা।কারণ তুই ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছিস।এর মাশুল তোর থেকে আমি আজীবন ধরে নিবো।মনে রাখিস!’

এই বলে ইশান চলে যায়।তিথি চোখ মুছতে মুছতে আবারও চেপে ধরে মিসেস আরাফাতের পা।এরপর ধীর গলায় বলে,’আমি জানিনা এখন আমার কি করা উচিত।সব কিছু কল্পবা মনে হচ্ছে।আমার মতো মেয়ে আপনার ছেলের বউ হবার যোগ্যতা রাখেনা।আমি আসলে….’

‘থাক!আমার রুম থেকে যাও এখন।রাত বারোটা বেজে গেলো।আমি এত রাত জাগিনা,জাগলে দিনে মাথা ধরে।যাবার সময় দরজা লাগিয়ে যাবে।আর এইসব রঙঢংয়ের পোশাক জামাইর রুমের ভেতরে পরে থাকবে।বাহিরে নয়।আমার বোনের ছেলেপেলে আছে বাসায়।সবাই ইশানের বয়সী।তারা কি চোখে দেখবে?’

তিথি তার হাতের শাড়ীটাকে গায়ে পেঁচিয়ে চলে যায়।ইশানের এমন ব্যবহারে তিথির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে।
একের পর এক অবাক করার মতন পরিস্থিতির সামনে পড়ছে সে।
অবশ্য তার কপালে এটাই ছিল।সে ওদের সাথে যা যা করেছে এটাই তার প্রাপ্য!

তিথি হাঁটতে হাঁটতে ইশানের রুমের কাছে চলে আসে।ইশান তার বারান্দায় ছিল তখন।
তিথি দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে যায়,
ইশানকে বারান্দায় দেখতে পেয়ে সে ওয়াশরুমে গিয়ে নাইটিটা বদলে বিয়ের শাড়ীটা পরে বের হয়।এরপর বিছানায় বসে তানিয়ার নাম্বারে কল করে।
তানিয়া ঘুমে ছিল বলে রিসিভ করেনি।তিথি ওর জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করার জন্য ওকে কল করছিল বারবার।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না আসায় সে রুমের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।শুয়ে তো পড়েছে ঠিক,কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই।
হুট করে তার দুনিয়া এভাবে বদলে যাবে তা সে কল্পনাও করে নি।যাকে ঘৃনা করতো,আজ সেই মানুষটা তার স্বামীর আসনে বসেছিল আর সে বুঝতেও পারেনি।
‘আচ্ছা তানিয়া তো ইশানকে চিনতো।তাহলে সে বিয়েতে ইশানকে দেখে কেন আমাকে একবারও জানায়নি?
নাকি তার মনে নেই!
তখন তানিয়ার বারো বছর ছিল।মনে হয় সে ভুলে গেছে।হতে পারে!নাহয়।তানিয়ার তো এই বিষয় লুকানোর কোনো মানে দাঁড়ায় না।’

এসব ভাবতে ভাবতে তিথি উঠে বসে।কাঁদলে তার মাথা ভীষণ ব্যাথা হয়।এখন মাথাটা ধরে সে বারান্দার দিকে তাকায় একবার।ইশান সেখানে নেই।এই অল্প সময়ে কোথায় গেলো!
তিথি বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় চলে আসে।ওখানে ইশানকে না দেখে সে পেছনে তাকায়।অন্ধকারে ইশানের রুমের সোফায় কাউকে বসতে দেখে তিথি রুমে ঢুকে আলো জ্বালায়।ইশান কপালে হাত রেখে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
তার সামনে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ।
তিথির লোভ হলো!তার ও এক মগ কফি খেতে ইচ্ছে হলো।তাই সে ইশানের সামনে দিয়ে হেঁটে বাহিরে গিয়ে রান্নাঘর খুঁজে বের করে দেখে সবই আছে কিন্তু কফি শেষ।
তিথি মন খারাপ করে রুমে চলে এসে দেখে ইশান রুমে কোথাও নেই।ওয়াশরুমের থেকে শাওয়ারের আওয়াজ পেয়ে তিথি বুঝলো ইশান গোসল করতে গেছে।তিথি টেবিলের কফির মগটা দেখলো তখন।কফিতে মনে হয় ইশান দুইটা চুমুকই দিয়েছিল।এখনও সব কফি পড়ে আছে।
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে কফিটা হাতে নেয়।
আরেকজনের মুখের খাওয়া কিছু ওর পছন্দ না হলেও এখন তার হাতে আর কোনো উপায় নেই।
কফির মগটা নিয়ে সে বিছানায় এসে বসে। এক টানে পুরোটা খেয়ে নেয়।
ইশান গোসল করে বেরিয়ে দেখে তার কফির মগটা আগের জায়গায় ঠিকই কিন্তু সেটা খালি।
আর তিথি বিছানায় অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
কফিটা ইশান ইচ্ছে করেই রেখেছিল,কারণ সে জানে তিথি কাঁদলে অনেক বেশি পরিমাণে চা,কফি খায়।তাই কাজের লোককে ডেকে সে কফি বানিয়েছিল।
চুল মুছতে মুছতে সে তিথির সামনে এসে দাঁড়ায়।
তিথির ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে থেকে ইশান বলে,’আমি কাঁদাবো,আবার আমিই কষ্ট তাড়াবো!’

এরপর সে রুমের আলো নিভিয়ে আবারও সোফায় এসে বসে।তিথি হয়ত ভুলে গেছে ইশান কফি খায়না।
যদি মনে রাখতো তাহলে এখন ওর সব বোঝা হতো।

“যাকে এত কিছু দিয়ে ভালবেসেছিলাম সে কেবল বাহিরেরটাই দেখে গেলো!
না আমায় চিনলো,না আমায় বুঝলো আর না আমায় ভালবাসলো কোনোদিন!
কি পেলাম তাকে ভালবেসে!
কি পেলাম এত পরিশ্রম, এত পরিকল্পনা করে?সেই মানুষটা স্বার্থপর হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো।’
—–
পরদিন ভোর ৫টা ৩মিনিটে তিথির কানের কাছে এলার্ম বেজে ওঠে।
এমনিতে তিথি প্রতিদিন সকাল নয়টায় উঠলেও আজ ভোর পাঁচটার এলার্ম কে দিলো তার জানা নেই।সে লাফিয়ে উঠে বসে ঘুম ঘুম চোখে ঘড়িটা খুঁজতে থাকলো বন্ধ করার জন্য।ঘড়িটা হাতে নিয়ে বন্ধ করে সে চোখ ডলে ডানে বামে তাকায়।
ইশান রুমে নেই।তাহলে এলার্মটা কে দিছে!
এদিকে তিথির ঘুম গায়েব।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায় তিথি।
এলার্মটা ইশান দিয়েছিল।তার আজ ভোরভেলা বিদেশ থেকে একজন ক্লায়েন্ট আসবে তাকে নতুন নুডুলসের প্রোডাক্টের মান চেক করাতে।তাই খুব ভোরে যাবার পথে সে তিথিকেও জাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।তিথির যত পুরান অভ্যাস আছে সব বিপরীত রেখায় জুড়ে দিবে সে।

তিথি চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছে।
এত ভোরে ওঠা তার অভ্যাস নেই।
দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে সে রান্নাঘরে কারোর কাজের আওয়াজ পেয়ে ওদিকে যায়।গিয়ে দেখে দুইজন বুয়া মিলে সকালের নাস্তা তৈরি করছে।তিথিকে দেখে তারা মুচকি হাসি দেয় দুজনে কিন্তু কিছু আর বলেনা।
তিথি ওদের কাছে গিয়ে বলে,’বাসায় দেশি কলা আছে?আসলে আমি সকালে কলা দিয়ে মুড়ি খাই’

‘ছিল ম্যাডাম।কিন্তু স্যার দেখলাম কাল সব কলা আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য বলে দিছিলো।তাই আমরাও নিয়ে গেছিলাম’

তিথি মনে মনে ভাবছে ইশান এইসব ইচ্ছে করেই করেছে নির্ঘাত!
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-১২+১৩

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১২
আফনান লারা

নার্সকে তিথি তার মনের মতন বিরক্ত করে ছেড়েছে।শেষে বাধ্য হয়ে নার্স ইশানকে কল করলো।
ইশান এসব শুনে ভাবছে তিথি তো এরকম মেয়ে নয়।তবে সে কেন করছে এসব।তাই সে নার্সকে বললো তিথিকে ধরে সিট থেকে নামিয়ে ফ্লোরের সিটে বসিয়ে দিতে।
নার্স ও ওর কথামতন দুজন লোক ডেকে ওকে ধরে নিচে সিট বিছিয়ে বসিয়ে দিলো।সেইসময় তানিয়া এসে বলো,’আজব তো!এটা কেমন ব্যবহার আপনাদের?এটা কি সদর হসপিটাল যে সিট বুক হয়ে গেলে রোগী ধরে নিচে নামিয়ে দিবেন?আমি এখনই ডাক্তারকে ইনফর্ম করছি!’

এই বলে তানিয়া চলে গেলো ডাক্তারের চেম্বারে।তিথি গালে হাত দিয়ে ভাবছে এটা নিশ্চয় সেই লোকের অর্ডার ছিল।
এরই মাঝে আরেকটা লোক এসে তিথির খাবারের সব বাটি,গ্লাস নিয়ে চলে গেছে।
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে বালিশটা ধরে বললো,’নিন এটাও নিয়ে যান।খয়রাতি সব! ‘

ইশান কলে থেকে শুনছে সব।কথাটা তার গায়ে লাগলোনা।সে তার পরিকল্পনা মতেই কাজ করছিল,এবং করবেও!

তানিয়া কেবিনে ঢুকে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয় তাও কেউ কোনো রেসপন্স দিলোনা।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। এমন কি সয়ং ডাক্তার ও তার কথায় কোনো জবাব দিচ্ছেন না।
তানিয়া বিরক্ত হয়ে এবার বাবার নাম্বারে কল দেয়।বাবার ফোন সাইলেন্ট ছিল।বিশেষ একটা কাজে এসেছেন,তার মাঝে অফিসের লোকেরা কল দিয়ে দিয়ে জ্বালাচ্ছিল বলে তিনি ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছেন।
এরপর সে কল দিলো মায়ের নাম্বারে।মায়ের ফোন নির্ঘাত রিদমের কাছে।আর রিদম নির্ঘাত গেমস খেলছে।মায়ের ফোনে যখন সে গেমস খেলে তখন বাহিরে থেকে কল আসলে কলটা ঢুকেনা।এখনও হয়েছে তাই।
তানিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে তিথির কাছে ফিরে আসে।

তিথি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে।তানিয়া এসে দেখে ওরা সিট শুদ্ধু নিয়ে চলে গেছে।সে বড়ই অবাক হলো।এরকম ব্যবহারের কারণ কি?

তখন একজন নার্স এসে তানিয়ার হাতে লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন।যাতে সিটের ভাঁড়া সহ আরও অনেক খরচাপাতি লেখা আছে।ওরা এখনও এক টাকাও পরিশোধ করেনি।
তানিয়া গাল ফুলিয়ে নিজের ব্যাগ চেক করে দেখে পাঁচশ টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেই।এদিকে রিসিটে অনেক টাকা লেখা আছে।
তিথি সেইসময় তানিয়াকে বললো সে যেন একটা সিএনজি ডেকে এনে ওকে বাসায় নিয়ে যায়।এখানে থাকলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তানিয়ার কাছে এই বুদ্ধিটা ভাল লাগলো।সে সিএনজি ডেকে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।বাসায় ঢুকতেই বাবার কল আসে।বাবা তানিয়ার এতগুলো কল দেখে চিন্তায় এখন কলব্যাক করেছেন।

‘কিরে মা।কল দিয়েছিলি?তিথির কি অবস্থা?’

‘টুকুকে নিয়ে আমি বাসায় চলে এসেছি।আর বলো না বাবা,এত রিডিকুলাস হসপিটাল।আর জীবনে আমি যাব না ওখানে।তোমরা বাসায় আসো তারপর বলছি!’

তিথি ভাবছে তার খুশি হবার কথা নাকি কান্না করার কথা।এ কেমন ফ্যাসাদে পড়ে গেছে সে!
একটা লোক তার জীবনে ঢুকে একবার তার উপকার করছে তো আরেকবার তার সর্বনাশ!কি তার উদ্দেশ্য? নিশ্চয় মানসিক কোনো রুগী হবে!
—–
ঘন্টা খানেকের মাঝামাঝি সময়ে তিথির পরিবার আবার বাসায় চলে এসেছে।রিদম এসেই ছুটলো তিথিকে ছেলের ছবি দেখাবে বলে।

‘টুকু দেখো, তোমার বরের ছবি তুলে এনেছি।পুরাই রিত্তিক রওশান’

তিথি হাত বাড়ালো ফোনটা নেবার জন্য তখনই তানিয়া ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়।তারপর বলে,’আগে শালি দেখবে’

এটা বলে সে ইশানের তিনটা ছবি পায়,সাথে সাথে ঐ তিনটাই ডিলেট করে দেয় সে।তারপর বলে,’ইশ রে চাপ লেগে সব ডিলেট হয়ে গেলো’

রিদম তখন রাগ করে বলে সে অনেক কষ্টে ছবি গুলো তুলেছিল।তানিয়া এরকম কেন!
তানিয়া কানে হাত দিয়ে সরি বলে।তিথি ও আর কৌতুহল দেখায় না।তার কৌতুহল অন্য কাউকে নিয়ে।সে ঐসবই ভাবছিল।তখন রিদম ওর পাশে বসে বলে,’টুকু জানো?ছেলেরা মস্ত বড়লোক।আমাদের কত কি খাইয়েছিল, জানো?রকিব দুলাভাইয়ারা আসায় ও আমরা এত কিছু খাওয়াই নাই।ওরা প্রথম দিনেই যা খাইয়েছে।সবই ভাল লাগছে কিন্তু তোমার শাশুড়ি কেমন যেন বাংলা সিনেমার রিনা খানের মতন’

‘বাড়িতে ওরকম একটা দুইটা থাকবেই’

এই বলে তানিয়া রিদমকে উঠিয়ে রুম থেকে বের করিয়ে দিলো।এরপর তিথির পাশে বসে বললো ‘ছেলে কিন্তু খুব সুন্দর টুকু।কোনো মতেই মানা করোনা’

‘সুন্দর দিয়ে কি হবে?আদিল ও সুন্দর ছিল’

‘আহা ঐ গাধার সাথে মেলাচ্ছো কেন?সে তো তোমার সাথে বিয়ে বাদে সব করতে চেয়েছিল।কিন্তু এই ছেলেটা সোজা বিয়ে করতে চায়।ইশ কত্ত কিউট!’

তিথি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে ভাবছে লোকটার পরের প্ল্যান কি হতে পারে।
——-
ইশান তার বারান্দার গ্লাস বাহিরে দিয়ে লাগিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুর হিসাব মিলাচ্ছিল সে।
হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে দেখে তামিয়া গ্লাস ধাক্কাচ্ছে।
ওকে দেখে ইশান দরজার লক খুলে।তামিয়া ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,’কিরে?এত চিন্তা কিসের?’

‘কই।কোনো চিন্তা নেই তো’

‘তোকে আমি চিনবোনা?তুই যে কেবল চিন্তা থাকলেই এখানে এসে বারান্দা লক করে দাঁড়িয়ে থাকিস, তা আমি জানি।আচ্ছা যাকে ঘিরে এত চিন্তা তাকে ছেড়ে দিলেই তো পারিস।তোর কি সুন্দর জীবন কাটাতে ইচ্ছা করেনা?জেনেশুনে আবারও একই ভুল করছিস!’

‘আপু আমি ওকে বিয়ে করলেই জীবনটাকে সুন্দর করতে পারবো’

‘তাহলে কেন এত চিন্তা?’

‘তাকে চোখের সামনে শাস্তি পেতে দেখার জন্য আমাকে তৈরি হতে হবে।মনে হচ্ছে আমি তৈরি না।’

‘শাস্তি দিতে না চাইলে দিস না। ক্ষমা করে দিলেই তো হয়’

‘নাহ।শাস্তি তাকে পেতে হবেই।এত কিছু কেন করলাম যদি সে তার ভুলটাই বুঝতে না পারে!’

তামিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।আর কিছুই বললোনা।তার যেভাবে ভাল লাগে সেভাবেই কাজ টা করুক।বাধা দেয়া কিংবা উপদেশ দেয়ার আর প্রয়োজন নেই।
——-
মা বাবা সকলেই পাত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তিথি সব শুনছে আর একটা বই পড়ছে।তিথি এমনিতে বই পড়েনা,কিন্তু যখন সে অতিমাত্রায় বোর হয়ে যায় তখন বই হাতে নিয়ে পড়ে।
বইটা পড়তে পড়তে তার মনে হলো যে তার সাথে গেমস খেলছে তার সাথে ওরও গেমস খেলা উচিত।ওমনি তিথি তার পেছনে বারান্দার দিকে তাকায়।এরপর রিদমকে ডাক দেয়।
আসার সময় ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে আসতে বলে।রিদম আপেল খেতে খেতে ছুরিটা এনে ওকে দিয়ে বললো,’ব্যান্ডেজ কাটবা নাকি টুকু?’

‘নাহ।যা তোর কাজে যা’

রিদম মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।তিথি জানালার কাছের পর্দাটা টান দিয়ে সরিয়ে দেয়।এরপর বাসার সামনের সেই বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছুরিটা উপরে করে তোলে।এরপর ঘুরাতে থাকে।
———
‘গুড ইভেনিং স্যার’

‘ইভেনিং,,বলো শাকিল।’

‘স্যার তিথি ম্যাডাম দশ মিনিট ধরে একটা ছুরি হাতে নিয়ে শুধু ঘুরিয়ে চলেছে।আমি বসে বসে হোমওয়ার্ক করছিলাম।হঠাৎ নজরে আসলো।তাই আপনাকে কল দিয়েছি’

‘ঘুরাচ্ছে?আর কিছু করছেনা?’

‘এবার মনে হয় করবে!স্যার!!!ও মাই গড,মনে হয় করে ফেলছে!’

‘কোপ বসিয়ে দিয়েছে বুঝি?’

‘মনে হয় স্যার।আচ্ছা,ম্যাডাম কি পাগল হয়ে গেছে?’

ইশান হাসলো।হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে বললো,’তোমার ম্যাডাম মনে করছে আমি তাকে কয়েক মাস ধরে চিনি।তাই সে আমার সাথে গেমস খেলতে চাইলে আমিও প্রতিযোগিতায় নেমে যাবো।’

‘স্যার আপনি হাসছেন কেন?আমার কাছে সব কিছু অস্বাভাবিক লাগছে’

‘তুমি রুমের পর্দা টেনে হোমওয়ার্ক করো।তিথি বসে বসে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, সে পরীক্ষা করছে আদৌ তার উপর নজর রাখা হচ্ছে কিনা।তাকে আমরা প্রমাণ করে দিব তার উপর নজর রাখা হচ্ছেনা।বুঝলে?এবার তোমার কাজ করো’

তিথি অনেকক্ষণ যাবত এইসব করেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে ছুরিটা রেখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবছে তার কি কোনো ভুল হয়ে গেলো?

রিদম দরজা ফাঁক করে তিথির এই কার্যকলাপ দেখছিল এতক্ষণ।সব দেখা শেষ করে চুপটি করে সে চলে গেছে বাবার রুমে।বাবা ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বিছানায় শুয়েছিলেন।রিদম লাফ দিয়ে খাটে উঠে বাবার কানের কাছে বললো,’টুকু পা ভাঙ্গার সাথে সাথে মাথাটাও ভেঙ্গে ফেলেছে ড্যাড’

‘তোকে কতদিন বলছি আমাকে ড্যাড বলবিনা।তোর এই ড্যাডকে আমার ডেট মনে হয়।ডেট মানে হলো তারিখ।তারিখ মানে মনে করিয়ে দেয় আমি বুড়ো হচ্ছি।দুটো মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি’

‘ওকে ড্যাডি’

‘আবার বলে ড্যাডি।তোর এই ড্যাডি শুনলেই আমার মনে হয় বেডি।নিজেকে বেডি বেডি লাগে তখন।আমার ঠোঁট গোলাপি বলে তুই আমাকে বেডি বলে মজা নিবি? ‘

‘ওকে বাবা বলবো।এবার তো শুনো’

‘বল’

‘টুকুর মাথা ভেঙ্গে গেছে’

‘মাথা ভাঙ্গে কেমনে?ফোন টিপে টিপে তুই তোর মাথা নষ্ট করছোস এখন দোষ দিচ্ছস আরেকজনের?’

‘ওহ রাইট।মাথা ভাঙ্গে না,নষ্ট হয়। টুকুর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৩
আফনান লারা

তিথি রাগ করে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে গেছে।এমনিতেও তাকে যে ইনজেকশান দেয়া হয়েছে।এই ঘুমে সে কাল সকাল ছাড়া উঠতে পারবেনা।
তিথিকে এভাবে ঘরে বসিয়ে রাখার জন্যই ইশানের এই প্ল্যান ছিল।যাতে করে তাকে পাত্রের সাথে একাধিক বার সাক্ষাৎ করার কথা না ওঠে।
যে একবার দেখা হবে সেটা ইশান ম্যানেজ করে নিতে পারবে।
আপাতত নরমাল একটা অনুষ্ঠান হবে।পরে বড় করে করে করা যাবে,এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় দু পক্ষ।এবার তিথির বাবার একটাই রিকুয়েস্ট তা হলো তিথি ওকে দেখে মতামত দিবে।তিথি যদি হ্যাঁ বলে তবেই বিয়েটা হবে।আর নয়ত বিয়েটা এখানেই শেষ।
তিথির মতামতকে সবসময় গুরুত্ব দেন জনাব সুলতান।এবারও এর নড়চড় হবেনা।
যেহেতু তিথির পায়ের সমস্যা, সে হেঁটে কোথাও যেতে পারবে না তাই ঠিক করা হলো ইশান নিজে আসবে বাসায়।
ইশান রাজি ও হলো।তানিয়া ভাবছে এবার তো ধরা খাবে সে।আপু তো ইশানকে দেখলেই হাঙ্গামা করবেন।
এইসব ভাবতে ভাবতেই তার কটা দিন কাটছিল।এদিকে ইশান বিন্দাস তৈরি হয়ে এসেছে তিথির সাথে দেখা করতে।
সোফায় ইশান এবং তার বন্ধু আরিয়ান সহ বসে আছে।সুলতান সাহেব বললেন ইশান যেন তিথির রুমে যেয়ে ওর সাথে কথা বলে।ইশান রাজি হয়ে উঠে দাঁড়ায়।আরিয়ানকেও ইশারা করে।তানিয়া তখনও জানেনা ইশানের আসলে প্ল্যান টা কি।
সে চুপটি করে সব দেখছে।ইশান তার বন্ধু আরিয়ানকে নিয়ে তিথির রুমে আস্তে আস্তে প্রবেশ করেছিল।তিথির বাবা রান্নাঘরের দিকে যেতেই ইশান থেমে যায়।ভেতরে ঢুকে শুধু আরিয়ান।ইশান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে সেও ভেতরে ঢুকে।আরিয়ানকে দেখে তিথি সালাম দেয়।আরিয়ান সালাম নিয়ে ওর সামনে চেয়ারে বসে।এরপর সে প্রশ্ন করে তিথি বিয়েতে রাজি কিনা।তিথি তখন বলে তার বাবা মা যেটা বলবেন সেটাই হবে।আরিয়ান মাথা নাড়ায় এরপর আবারও বলে তিথির কিছু জানার আছে কিনা।
আরিয়ান ছিল শ্যাম বর্ণের লম্বা চওড়া একটা ছেলে।ইশানের সাথে তার সম্পর্ক এই তো কয়েক বছরের।ইশান তাকে এই কাজে হেল্প করার জন্য অনেক রিকুয়েস্ট করায়।তাই সে রাজি হয়ে আজ এখানে এসেছে।

তিথি কিছুই বলেনা।অপরিচিত একটা ছেলের সামনে বসে তার আর কি বলা উচিত সেসব নিয়ে ভাববার পরিস্থিতিতে সে নেই।
আরিয়ান বলে,’ভেবে নিন।এটাই কিন্তু শেষ দেখা’

‘শেষ দেখা মানে?’

‘মানে ঐ তো বিয়ে ছাড়া আর দেখা হবেনা আমাদের’

‘এত ভাববার কিছু নেই।দু পরিবারের মতামত ও জরুরি’

আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে উঠে চলে যায়।যাবার সময় তিথির সামনে একটা ছোট্ট ঝুড়ি ভর্তি চকলেট রেখে যায়।ইশান এনেছিল এটা।

তিথি বসে বসে আরিয়ানের চলে যাওয়া দেখে চুপচাপ।
আরিয়ান বের হয়ে ইশানকে বলে,’ভাবী কিন্তু দারুণ’

ইশান কিছুই বলেনা। ওকে নিয়ে আবারও সোফায় এসে বসে তারা।বাবা নাস্তার ব্যবস্থা করেছেন।
নাস্তা খেয়ে তারা চলে যাবে।ইশান বলেছে বাসায় গিয়ে বিয়ের তারিখ সম্পর্কে আলোচনা করবে তারা।
তিথির বাবার মত ছিল এঙ্গেজমেন্ট টা আগে হয়ে যেতে।কিন্তু ইশান রাজি হয়নি।সে চায় একেবারে বিয়ে।
তাই তিনিও আর জোরজবরদস্তি করেন নাই।ছেলের ও তো কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকতে পারে।

তিথি আনমনে বসে থাকে সারাদিন।তার কেন যেন বারবার মনে হয় বিয়েটা হওয়া ঠিক হচ্ছেনা।এখনই বিয়ের কি খুব প্রয়োজন ছিল?
আদিলের সাথে রাগ করে সে বিয়েটাতে শুরুতে নেচে নেচে মত দিয়ে দিলেও এখন তার খুব খারাপ লাগে।
আদিলের জন্য নয়,বরং নিজের জন্য।সে একটু একা কটা বছর থাকতে চায়।নিজেকে শক্তপোক্ত করে তারপর নাহয় বিয়ের পিড়িতে বসবে, এত তোড়জোড়ের কি দরকার!
আবার বাবা মায়ের মুখে এত রাশি রাশি হাসি দেখে তার আর বিয়েতে অমত দিতে সাহস হয়না।তারা কত খুশি।এই খুশি সে নষ্ট করবে?

পনেরো দিনের মাথায় তিথির পা একটু একটু ভাল হয়ে উঠলো।এখন সে হাঁটতে পারে। তবে ছুটতে পারেনা।চাপ লাগলেই ব্যাথা আগের মতন।

এদিকে ইশানের রুমটাকে রেনোভেট করা হচ্ছে তার আদেশেই।
নতুন আলমারি,নতুন ওয়ারড্রব।
মুনিয়ার চোখে পানি থাকে সারাক্ষণ ।এ রুমটা তার হবার কথা ছিল,অথচ এখন তার চোখের সামনে অন্য কারোর হবে।

ইশান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে ছিল।তখন ওর পাশে আরিয়ান এসে দাঁড়ায়।সেও বিছানার দিকে চেয়ে বলে,’কি হিরো?বিছানা নিয়ে কি ভাবছো মনে মনে?
আচ্ছা তুই এত অশ্লীল কেন রে ভাই?’

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে।আরিয়ান ওকে আবারও নিজের দিকে ফিরায় এরপর বলে,’আচ্ছা তুই নাকি তিথিকে অনেক আগ থেকে চিনিস?’

‘হ্যাঁ।’

‘ওহ হো।তিথিকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিস?’

‘হ্যাঁ।বিরাট বড় সারপ্রাইজ সে পাবে’

‘তোরা বড়লোকেরা এসব নিয়েও এমন ফাজলামি করিস!আমি ভাই সাধারণ একটা বিয়ে করে নিয়েছি।আমার এত সারপ্রাইজ দেয়ার ইচ্ছে নেই।আমি অনেক লম্বা দেখে আমার বউ এমনিতেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছিলো।’

এটা বলে সে হাসতে হাসতে চলে গেলো আন্টির কাছে।এই সুন্দর পরিপাটি রুমটা দেখে ইশানের মনে এক আক্রমণাত্মক চিন্তা ভাসছিল।কি করে সে এই রুমেই সব প্রতিশোধ নেবে সেটা!
——-
বিয়ের আর দুইদিন বাকি।কথা ছিল ইশান,তার মা এবং তিথি তানিয়াকে সাথে নিয়ে বিয়ের শপিংটা করা হবে।কিন্তু ইশান এবং তার মা নাকি আসবেনা।ইশানের খালা দুইজন মিলে শপিংটা করাবে।
তিথি ভেবেছিল বিয়ের আগে দেখা করার শেষ সুযোত
আরিয়ানের(ইশানের) সাথে আরও কথা বলে নিবে কিন্তু তাও আর হলোনা।

ইশান বলেছে সে আসবেনা,কিন্তু সে ঠিকই এসেছে।সেও তিথিকে অনেকদিন দেখেনা বলে একবার চোখের দেখা দেখার জন্য ছুটে এসেছে এতদূর।

তিথি শাড়ী একটাতে হাত রেখে দেখে তার দাম বিশাল।তাই সে শাড়ীটা সরিয়ে অন্য শাড়ী দেখতে থাকে।তখন ইশান তানিয়াকে কল দেয়।

‘হ্যালো ভাইয়া’

‘বেগুনী রঙের শাড়ীটা বুক কর’

‘কিন্তু কোন?ওটা তো রেখে দিয়েছে’

‘মানুষ পছন্দ নাহলে দাম দেখেনা।সে দাম দেখেই রেখে দিয়েছে।’

তানিয়া তখন শাড়ীটা তুলে বলে,’ভাইয়া আমরা এটাই নিবো’

‘আরে রাখ এটা।দাম দেখেছিস?’

‘ভাইয়া বলছিল দাম নিয়ে ভাবতে না।ওরা তো আরও বেশি বাজেট রেখেছে’

খালা বেগুনী রঙ দেখে বললেন,”বিয়ের শাড়ী হবে টকটকা লাল।বিয়ের শাড়ী কি বেগুনী হয়?না না।এটা বাদ।অন্য রঙ দেখো’

তিথি তখন তানিয়াকে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে শাড়ীটা সরিয়ে দেয়।
এরপর খালার ফোনে একটা কল আসে।

‘হ্যালো ইশান, কিরে বাবা?কি হয়েছে।হঠাৎ কল দিলি?’

‘বেগুনী শাড়ীটা কিনে নাও’

খালা হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন আশেপাশে ইশান আছে কিনা এরপর বললেন ‘মানুষ বিয়েতে বেগুনী পরেনা তো বাবা’

‘এখন থেকে পরবে। আমি চাই আমার বিয়ের সাজ বেগুনী হোক’

খালা আর কি করবেন।শেষমেশ বেগুনীটাই কিনে নিলেন।তানিয়া শাড়ীটা বারবার ধরে ধরে দেখছে।
তারা দোকান থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল সেসময় দোকানদার ছুটতে ছুটতে এসে তানিয়ার হাতের শাড়ীর ব্যাগটা ধরে আটকায়।

‘ম্যাম উই আর রিয়েলি ভেরি সরি।আসলে এই শাড়ীটা অলরেডি বুকড্ ছিল।আমাদের কর্মচারীরা জানতোনা।এটা আপনারা নিতে পারবেন না’

খালা তখন বললেন তাহলে অন্য শাড়ী দেখান।
তিথি মন খারাপ নিয়ে অন্য একটা শাড়ী দেখতে বসে।ইশান মিটমিট করে হাসছে।সে জানে এই শাড়ীটা অলরেডি বুকড্।একটা কাপল এসে শাড়ীটা বুক করে গেছিলো।সে নিজের চোখে দেখেছে তারা এটিএম বুথ থেকে শাড়ীর টাকা তুলতে কাছের একটা রোডে গেছে।ইশান সব জেনে শুনেই শাড়ীটা ওদের দিয়ে কিনিয়েছে।তিথিকে সে খুশি করাবে আবার সব কেড়েও নিবে।

তিথি মন খারাপ করে অন্য একটা লাল শাড়ী কিনে নেয় শেষে।
তার কষ্টটা যাচ্ছেই না।ঐ সুন্দর শাড়ীটার কথা ভেবে মন চাইছে শাড়ী কেনা লোকগুলো থেকে কিনে নিয়ে আসতে,ইশ ওরা যদি দিতো!

সব সুন্দর জিনিস গুলো এক পিসই থাকে দোকানে!আরেক পিস রাখলে কি এমন হতো?’

চলবে♥