যদি তুমি বলো পর্ব-২০+২১

0
180

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২০
আফনান লারা

তিথি আসার পর থেকে খেয়াল করছে কেউ তাকে বকা তো দূরে থাক,একটা কথাও বলছেনা।সবাই ইশানের মায়ের দিকে ফিরে তার শরীর নিয়ে আলাপআলোচনায় ব্যস্ত।
তিথি ভেবেছিল রুমে ঢোকার পরপরই তাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হবে।কিন্তু এই দেখি তার উল্টো।
সে চুপচাপ ইশানের মায়ের পাশে বসে তার দিকে তাকিয়েছিল।কিছু সময়ের মধ্যেই ইশান ডাক্তার আশুতোষকে নিয়ে ভেতরে আসে।
তিনি ইশানের মাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানালেন অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।আহামরি কিছু নেই,তবে তাকে এরপর থেকে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে।কোনো প্রকার ট্রমা দেয়া চলবেনা।
ইশান চুপচাপ সবটা শোনে।ডাক্তার থাকা কালীনই মায়ের জ্ঞান ফেরে।কিন্তু তিনি চোখ খুলেই তিথিকে দেখে ভীষণ রেগে যান।উঠে বসে ওকে ধমকে জানতে চাইলেন সে এখানে কি করে।
তিথি ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।এর বেশি কিছু করেনা।তখন ইশান বলে সে তিথিকে আসতে বলেছিল। এদিকে মা ইশানের উপর ও ক্ষেঁপে আছেন।
মাথা নিচু করে ওদের দুজনকেই রুম থেকে যাবার নির্দেশ দেন তিনি।
তিথি চলে গেলেও ইশান গেলোনা,বরং সে সবাইকে রুম থেকে চলে যেতে বললো।
সবাই যাবার পর ইশান মায়ের পাশে বসে তার হাতদুটো ধরে চুমু খেয়ে বললো,’আমি ওকে শাস্তি নিশ্চয় দেবো”

‘আর কবে?’

‘তুমি কি চাও বলো’

‘আমি চাই তুই ওকে ছেড়ে মুনিয়াকে বিয়ে করে নে।এর চেয়ে বড় শাস্তি ওর জন্য আর কিছু হতে পারেনা’

তখন ইশান মুচকি হাসি দিয়ে মায়ের হাতে ফুলে ওঠা রগগুলো মিহীন করে দিতে দিতে বললো,’তিথিকে ছেড়ে দেয়া বাদে আর অন্য কোনো শাস্তি থাকলে বলো’

মা এবার ভীষণ রেগে গেলেন।হাত দুটো ইশানের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,’আমার রুম থেকে যাঃ।ড্রাইভারকে বল রেডি হতে।আমি মুনিয়াদের বাসায় যাবো।মেয়েটা আজ কয়েকদিন ধরে খুব অসুস্থ। তাকে একবার দেখে আসবো’

ইশান মাথা নাড়িয়ে উঠে বাহিরে আসতেই দেখে তিথি আছে ওখানে।কথাগুলো শুনেছে কিনা তা ওর মুখ দেখে বোঝা গেলোনা।ও এখানে আছে দেখে ইশান একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো,’কথা শুনে তোর কি লাভ হলো?’

‘কিছুই শুনিনি।শুধু শুনেছি আন্টি মুনিয়াদের বাসায় যাবেন’

ইশান এই কথা শুনে কোনো রিয়েকশান না দেখিয়ে চলে গেলো।তিথি সব কথাই শুনেছে। এবং হাসছে।মনে মনে ইশান একদিন ঠিক হয়ে যাবার স্বপ্ন বুনে সে ইশানের পিছু পিছু রুমে আসতেই তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।
ইশান ফোনে মুনিয়ার সাথে কথা বলছে। তিথি একটু এগিয়ে শুনতে পেলো ইশান খুব আবেগের সাথে কথাগুলো বলে যাচ্ছে।যেন মুনিয়া তার বিয়ে করা বউ।

তিথি মনটা আবার খারাপ করে চলে আসে।এসে সোফায় বসে তামিয়ার পাশে। তামিয়া ওর মন খারাপ দেখে বললো,’ভাই বকেছে? ‘

‘না’

‘মা?’

‘উহু’

‘আচ্ছা,আমরা সবাই মুনিয়াদের বাসায় যাবো। তুমি যাবে?’

তিথি খুশি হয়ে বললো সেও যাবে।ঠিক তখনই ইশান এসে বললো তিথি যাবেনা।এটা শুনে তিথি আর কিছুই না বলে উঠে চলে যেতেই,তামিয়া ওর কাছে জানতে চাইলো তিথি কেন যাবেনা।

ইশান হাসি দিয়ে তামিয়ার পাশে বসে ফিসফিস করে বললো কারণ ইশান ও যাবেনা।তামিয়া এবার ইশানের গাল ধরে টান দিয়ে ফিক কররে হেসে বলে,’মা জানলে অনেক রাগ করবে’

‘মাকে বলে দিও, তিথিকে ঘাটের পানি খাইতে রেখে দিচ্ছি’

মা নাস্তা করে তার দুই বোন আর তামিয়াকে নিয়ে মুনিয়াদের বাসায় চলে গেছেন সেই কখন।ইশান পুরোটা সময় আদিলের সাথে অফিসে ছিল।তিথি মনে করেছে ইশান ও চলে গেছে।তাই সে চিন্তা করলো তার বাসায় যাবে।এভাবে একা একা এই বাসায় থাকা অসম্ভব।
এই চিন্তা করে যেইনা সে দরজা খুলতে টান দিলো সে বুঝতে পারলো দরজা বাহিরে দিয়ে লক করা।
এ তো মহা মুশকিল হয়ে গেলো!কে তাকে লক করে গেছে!সবাই তো জানে তিথি বাসায় থাকবে।তাহলে জেনেবুঝে এই ভুল কেন!
এদিকে তিথির কাছে কোনো ফোন নেই।
সে এক দৌড়ে ল্যান্ড লাইনের কাছে এসে কল দেয়ার জন্য ফোন হাতে নেয়ার পর তার মাথায় আসলো সে তো বাসার নাম্বার মুখস্থ পারেনা।একমাত্র নিজের নাম্বারটাই মুখস্থ পারে,আর তাও সেই ফোনটা ইশান ফেলে দিছে।
নিজের মাথায় নিজে বাড়ি দিয়ে তিথি ইশানের রুমের বারান্দায় এসে গেইটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।যদি দারোয়ানকে একবার দেখে তাহলে চিৎকার করে ডাক দিবে।
কিন্তু দারোয়ান তখন ছিল না।রাত আটটা বাজে দারোয়ান চলে যায়।দ্বিতীয় দারোয়ান আসে সাড়ে আটটায়।

তিথি কপালে হাত দিয়ে বসেছিল ওখানে।হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সে ছুটে যায় ওদিকে।গিয়ে দেখে দরজা এবার ভেতর থেকে লক করা।তিথি ঢোক গিলে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওমনি।এত অল্প সময়ের মধ্যে কেউ বাসায় ঢুকলো আবার লক ও করে নিলো,আবার উধাও ও হলো।তিথির বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।
সে এখন কোনোভাবে ইশানের রুমে ঢুকে দরজা লাগাতে পারলেই নিজেকে নিরাপদ মনে করবে।
হাঁপাতে হাঁপাতে সে ওদিকটায় যায় ধীরে ধীরে।তার হঠাৎ মনে হলো পিছনে কেউ একজন আছে। তখনই সামনে টিভির পাশের ফুলদানিটায় চোখ পড়তেই তিথি ওটা হাতে তুলে পিছনে তাকিয়ে দিলো এক বাড়ি।

‘আহঃ!’

ইশানের আর্তনাদে তিথি হাত থেকে ফুলদানিটা রেখে দিলো।ইশান কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে গেছে।
তিথি মুখে হাত দিয়ে বললো,’সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি আপনি থাকবেন!আই এম সরি’

তিথি কাছে বসে ইশানের কপাল থেকে হাতটা সরাতে নিতেই ইশান ওকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’ইচ্ছে করে এমন করিস তুই! ‘

তিথি কি করবে না করবে ভেবে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাসার সব ড্রয়ার খুলে মলমপোটি খুঁজতে লাগলো।
ইশান পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে চেপে ধরে।তিথি কোথা থেকে তুলা আর স্যাভলন এনে বললো,’আমি মুছে দিই?’

‘থাক!’

এই বলে ইশান উঠে চলে গেছে।তিথি মন খারাপ করে ফুলদানিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো।এতই মজবুত যে মানুষের কপাল ফেটেছে কিন্তু ফুলদানিটার কিছুই হয়নি।
তিথি এবার ইশানের কাছে গিয়ে দেখে সে নিজে নিজে কপালের রক্ত মুছছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

তিথি ওর আরও কাছে এসে অসহায়ের মতন চেয়ে থেকে বলে,’আমাকে মাফ করে দিন।আমি ভেবেছিলাম চোর ডাকাত হয়ত।আমার ক্ষতি করতে এসেছে’

‘আমি কি তোর ভাল চাই?আমিও তো ক্ষতিই করতে চাই’

ওমনি তিথি ফুলদানিটা এগিয়ে ধরে বললো ‘নিন,একটা বাড়ি মেরে দিন।তাহলে কাটাকাটি হয়ে যাবে’

‘আমি এত সহজ ক্ষতি চাইনা’

এই বলে ইশান পেছনে ফিরে তাকায় তিথির দিকে।তিথি ফুলদানিটাকে পিঠের সাথে লাগিয়ে চুপ করে আছে।ইশান একটু একটু করে এগিয়ে চলছে আর তিথি পিছিয়ে যাচ্ছে।ইশান যেতে যেতে বললো,’যখন তোকে ভাল লেগেছিল,তখন ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম বিয়ের পর তোকে আমি এত এত সুখ দিবো যে বাসার বাকি মেয়েরা হিংসা করবে।’

তিথি কাঁপা গলায় বললো’আর এখন তাহলে কি চান?’

‘এখন?এখনও একই জিনিস চাই।পার্থক্য হলো সুখের সাথে দুঃখের সংমিশ্রণ। ‘

এই বলে ইশান দেয়ালে হাত রেখে দাঁড়ায়।তিথি ফুলদানিটাকে তার আর ইশানের মাঝে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান হাত বাড়িয়ে তিথির মুখের সামনের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ নিলো।এরপর হালকা আওয়াজে বললো,’এখনও সেই শ্যাম্পু দিস!’

তিথির ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।হাতের ফুলদানিটা কাঁপছে।হঠাৎ লোডশেডিংয়ে রুমের অন্ধকার তার ভয় হাজারগুণে বাড়িয়ে রেখেছে।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় যা একটু ভয় কাটছিল,ইশানের ছায়ায় সে আলোটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ইশান চুলে একটু খিঁচিয়ে টান দিয়ে বললো,’বলতে পারবি আমি এখন তোর সাথে কি করবো?’

তিথি ভয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।ইশান তখন ওর আরেকটু কাছে আসতে নিতেই তিথি ভয় পেয়ে এবার ফুলদানিটাই ছেড়ে দিলো।এটা পড়লে তিথির পা একেবারে থেঁতলে যেতো কিন্তু ইশান কেমন করে যেন ফুলদানিটা ধরে ফেলেছে ঠিক সময়ে।

সে ফুলদানিটা সরিয়ে রেখে বাকি হাতটা তিথির আরেক পাশে দেয়ালে রেখে বললো,’তুই তো আমায় এত ভয় পেতিনা তিথি।বরং পারলে আমাকে মাড়িয়ে চলতি।এখন তিথির সেই তেজ কোথায় গেলো?আমার দেহের বলিষ্ঠ ভাব আর সহায় সম্পদের তোড়েই কি তিথি আজ দূর্বল?নাকি তিথি ইশানকে ভালোবেসে ফেলেছে?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২১
আফনান লারা

তিথি ইশানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’আগেও বাসতাম না,এখনও বাসিনা’

এটা শুনে ইশানের মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়।সে দেয়ালে খুব জোরে আঘাত করে রুম থেকে চলে গেলো।তিথি গাল ফুলিয়ে রেখে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।ইশান সেই যে গেলো তার আর কোনো খোঁজ মিললোনা।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিথি বিরক্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে।পায়ে মশা কামড়াচ্ছিল বলে পা দুটো তুলে বসে সে।বসতে বসতে ওখানেই ঘুমিয়ে যায় তিথি।
পরেরদিন সকাল সাতটার দিকে চোখ মেলে সে বুঝতে পারে কাল সোফাতেই ঘুমিয়েছিল।রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ও ওঠেনি। এরপর হঠাৎ ওর ইশানের কথা মাথায় আসে।
সে সোফা থেকে নেমে বাহিরে বের হয়ে ইশানকে খুঁজতে থাকে।দরজা ভেতর থেকে লক করা দেখে তিথি নিশ্চিত হলো সে বাসাতেই আছে।তাই বাসার বাকি রুম গুলো খুঁজতে থাকে তিথি।
সবার শেষে মায়ের রুমে ইশানের দেখা পায় সে।মায়ের কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে সে।তিথি ওর সামনে এসে ওকে দেখে আবার চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ইশানের গলা শুনে তার পা থেমে যায়।ইশান শুয়ে শুয়ে তাকে বলছে খাবার তৈরি করতে দশ মিনিটের মধ্যে।
কথাটা খুব কঠিন করে বললো সে।তিথি ওর কথা শুনে দ্রুত রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে কি বানাবে।ইশান যে হারে চেঞ্জ হইছে তাতে ওর খাবার দাবারে কেমন চেঞ্জ হইছে কে জানে!
দশ মিনিটে নুডুলস ছাড়া অন্য কিছু বানানো অসম্ভব ভেবে সে নুডুলসই তৈরি করলো।তাও রান্নাঘরে পাওয়া ইশানের কোম্পানির নুডুলস।টেবিলে নুডুলস রেখে তিথি নিজের বাটি নিয়ে একটু দূরে বসলো খাবার জন্য।
ইশান ততক্ষণে মুখ ধুয়ে আসতেছে।তিথি এক চামচ মুখে দিয়ে বুঝতে পারলো প্যাকেটে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল এলাচি ফ্লেভার।
এটা দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।রিসিপশানে খাবার খাওয়ার সময় পাতে এলাচি পড়ায় ইশান অনেক চেঁচামেচি করেছিল।তার নাকি এলাচি অনেক অসহ্য লাগে।
কিন্তু এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস অনেক মানুষের পছন্দ বলে সে নিজের কোম্পানিতেও নিয়ে এসেছে।
তিথি কি আর জানতো এটা এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস!
সে এক দৌড় দিলো বাটিটা সরিয়ে নিতে কিন্তু তার আগেই ইশান বসে পড়ে।

তিথি বাটিটা সরিয়ে বললো,’আমাকে আর পাঁচ মিনিট সময় দিন।আমি অন্য কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।এটাতে সমস্যা আছে’

‘বিষ মিশালি?’

‘না না।তবে এটা ভালনা’

ইশান তো নাছড়বান্দা।সে কিছুতেই এই বাটি সরাতে দেবেনা।টানাটানি করে বাটিটা তিথির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সে এক চামচ নুডুলস মুখে পুরলো।তারপর সোজা তিথির মুখের দিকে তাকালো কপাল কুঁচকে।

তিথি আগেভাগে কানে হাত দিয়ে রেখেছে।কিন্তু তিথিকে অবাক করে দিয়ে ইশান নুডুলসের বাটি শেষ করে উঠে চলে যায়।
তিথি অবাক হয়ে থাকে।রিসিপশানে এলাচি নিয়ে চেঁচামেচি করা ছেলেটা এখন সুযোগ পেয়েও ওকে কিছু বললোনা?অদ্ভুত!’

ইশান মায়ের রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ে।শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতে থাকে।তিথির পেট ভরে নাই নুডুলস খেয়ে।সে রান্নাঘরে অন্য কিছু খুঁজছে বানিয়ে খাওয়ার জন্য।

ইশান এ প্রথমবার তার কোম্পানির এলাচি ফ্লেভারের নুডুলসটা টেস্ট করেছে।এবং তার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছে। কারণ এটা নয় বরং কারণ ছিল অন্যটা।
তিথি এ প্রথম বার ওর জন্য নিজের হাতে কিছু তৈরি করেছে বলেই সে মজা করে খেলো।

ফোন টিপতে টিপতে ইশানের এবার মনে হলো তিথিকে হালকা পাতলা শাস্তি দেয়া যাক।তাই ভেবে সে তিথির নাম ধরে ডাক দেয়।
তিথি তখন রান্নাঘরে বসে বসে চানাচুর খাচ্ছিল।ইশানের ডাক শুনে হাত থেকে প্যাকেট রেখে ছুটে আসে সে।সারা গালে চানাচুর মাখা ছিল ওর।
ইশান তখন ওর চেহারা দেখে মুখ মুছে নিতে বলে।তিথি ও শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে নেয় তাড়াতাড়ি।ইশান তখন দাঁত কেলিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো ‘নে,আমার পা দুটো টিপে দে একটু’

তিথি চোখ বড় করে বলে,’কেন?’

‘কেন?আমি বলছি তাই’

‘পারবোনা’

‘পারবিনা?’

‘নাহ’

ইশান এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তিথি নড়েচড়ে দাঁড়ায় এরপর বলে,’আচ্ছা ঠিক আছে।দিচ্ছি’

ইশান এবার নিজের দুহাত কচলাতে কচলাতে বলে,’নাহ।এখন আর পা ব্যাথা করছেনা। ঘাড়ের পেছনের দিকটা খুব ব্যাথা করছে।গরম তেল নিয় আয়,মালিশ করে দিবি’

তিথি চোখ বড় করে তাকায় আবারও।এরপর মনে মনে ভাবে পা মানা করায় পিঠে উঠেছে।পিঠ মানা করলে আবার কিসে উঠে যায় কে জানে তার চেয়ে বরং পিঠই ভাল।
এই ভেবে সে গরম তেল আনতে চলে গেলো।

তেল গরম করে নিয়ে আসার পর তিথি দেখে ইশান আয়োজন করে বসে আছে।সে একেবারে প্রস্তুত। খাটের নিচে বসে খাটে হেলান দিয়ে সে বললো তিথি খাটে উঠে বসে যেন তেল লাগায়।তাহলে ওর হাতের চাপটা বেশি হবে আর ওর ঘাড় ব্যাথাটাও দ্রুত যাবে।
তিথি আর কি করবে।খাটে উঠে বাটিটা রেখে হাত ডুবিয়ে ঘঁষে ইশানের পিঠের উপর নিয়ে মালিশ করতে থাকলো।ইশান মেঝের দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
তার মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।একটু পরেই সেটা ফাঁস করবে।
তিথি মালিশ করা শেষ দিয়ে আরও একবার হাত দিয়ে চাপ দিতে গেলো ওমনি ইশান সরে যায় আর সেজন্য তিথি খাট থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায় ইশানের সামনে।মেঝেতে পড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সে চোখ বন্ধ করে রাখলো।ইশান তখন তিথির মাথায় হাত দিয়ে বললো,’আহারে,ব্যাথা পেলি?মনে পড়ে ইশতিয়াককে কাদায় ঠিক এমন করেই ফেলে দেয়ার কথা? ‘

তিথি গাল ফুলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।কোমড়ে বড়জোর ব্যাথা পেয়েছে।
ইশান হাসতে হাসতে বললো,’উঠ।আরও অনেক কাজ বাকি আছে’

‘পারবোনা’

এটা বলে তিথি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।ইশান ওর ময়লা জামাকাপড় এনে তিথির সামনে ফেলে বললো,’এগুলো ধুয়ে দে’

‘পারবোনা।আপনার না কতগুলা কাজের লোক আছে?ওদের দিয়ে করান’

‘আজ ওরা আসবেনা।আজ আমি ছুটি নিয়েছি।আমি যেদিন বাসায় ছুটি নিই,সেদিন কাজের লোক আসেনা।কারণ সেদিন আমি নিজের কাজ নিজে করি।’

‘তো নিজের জামাকাপড় নিজেই ধুয়ে নিন’

‘তা হবেনা।তোকে বললাম,তুই ধুবি।আর না শুনলে…..’

তিথি ঘুরে তাকিয়ে বলে,’কি?মারবেন?’

ওমনি গালে চড় খেয়ে তিথির যত দেমাগ সব ধুয়ে মুছে গেলো।ইশান হাত নাড়তে নাড়তে বললো,’তোর জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম বলে হাজারটা চড় মেরেছিলি।আজকে একটা দিয়ে শুভযাত্রা করলাম’

তিথি গাল ঘঁষতে ঘঁষতে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেছে।
কিন্তু তিথিকে এভাবে মারার ইচ্ছা ইশানের ছিল না।তার খারাপ লাগলো।নিজের হাতটাকে শক্ত করে ধরে সে তিথিকে দেখতে গেলো।তিথি চোখ মুছতে মুছতে জামাকাপড় ধুয়ে চলেছে।ইশান একটা মূহুর্তের জন্য গলে গেলেও হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় তিথি ওকে এভাবে কত মার মেরেছিল।তাও বেহায়ার মতন সে তিথির পিছে পড়ে থাকতো।
তিথি তো কোনো দরদ দেখায়নি!পাষাণের মতন ব্যবহার করেছে দিনের পর দিন।এরকম একটা দিন দেখার জন্যই তো সে তিথিকে বিয়ে করে এনেছে।
রাগে ইশান তার আরও কিছু জামাকাপড় এনে তিথির পাশে রেখে দেয়।তিথি ওগুলা দেখে চেঁচিয়ে বললো,’আমি বাবার কাছে সব বলে দিবো। আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনার সংসারে থেকে এত অত্যাচার সহ্য করার।’

এ কথা শুনে ইশান তার ফোন তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’নাও,বলে দাও’

তিথি ও দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা নেয়।কন্টাক্ট থেকে বাবার নাম্বার খুঁজে কল ও দেয়।
বাবা রিসিভ করে শুরুতে তিথির খোঁজ খবর জানতে চাইলেন।

‘বাবা আমি আসলে…..’

‘ মা, একটা দারুণ খবর।ইশান কি করেছে জানিস?আমি যে এতগুলো বছর ধরে ফ্ল্যাটের লোন দিয়ে এসেছি,এখনও দশ বছর সে লোন রয়ে গেছিলো।ইশান সেই লোন পরিশোধ করে দিয়েছে।ছেলেটা কত ভাল ভাবতে পারিস?তার উপর তোর মায়ের লেন্স অপারেশন করার জন্য যে ৫০হাজার টাকা আমার দরকার ছিল সেটাও নাকি ইশান দিবে বলেছে। বিশ্বাস কর,আমি ওর থেকে চাইনি।ও নিজে থেকেই খবর নিয়েছে আমাদের কার কি লাগবে।’
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে