Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 275



যদি তুমি বলো পর্ব-৫০+৫১

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫০
আফনান লারা

ইশান এত বড় ভুল করেছে তা নিজেই বুঝতে পেরে সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।গাছগুলো থেকে সরলেই যুদ্ধ শুরু হবে। তিথি ইশানের গালদুটো টিপে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,’চুল আপনি ছিঁড়বেন নাকি আমি ছিঁড়ে দিতাম?’

‘চুপ কর!পান্না যাও তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে আসো’

তিথির মাথা এখনও ব্যাথা করছে,আসমান আলীর লোক যে জোরে চুল টান দিয়ে ছিঁড়েছিল।ইশান ও তো অপরাধ করেছে,ওকেও তো শাস্তি পেতে হবে।
তিথি ওমনি দাঁত কেলিয়ে চিঁৎকার করে বলতে থাকে,’দাদু দেখে যান,আপনার বিলাতি চারা গাছ নষ্ট করে দিছে’

এটা শুনে দাদুর যেন মাথার রগই ছিঁড়ে গেছে।ইশান কপালে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ালো চারা গাছ থেকে।দাদু এসে তার চারা গাছের এই করুণ দশা দেখে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেললেন।পালোয়ানদের আবার ডাকলেন ইশানকে ধরে চুল ছেঁড়ার জন্য।
ইশান তখন দাদুকে থামিয়ে নিজেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে ওনাকে দিয়ে দিলো।

‘একটা দিছো কেন?৪টা চারাগাছ নষ্ট করেছো তুমি।আরও ৩টা চুল ছিঁড়ো বলছি!’

তিথি মিটমিট করে হেসেই চলেছে।ইশান আরও ৩টা চুল ছিঁড়ে ওনার হাতে দেয়।এরপর নিজের মাথা ঘঁষতে থাকে।

পান্না তৈরি হয়ে এসে ইশানের গাড়ীতে বসে।তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।তানিয়া বারবার কল করে জিজ্ঞেস করছে ওরা আসলে কোথায়।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পরেই।
তিথি ওকে আশ্বাস দেয় তারা দ্রুত ফিরছে।

অনেকটা পথ আসার পর লুকিং গ্লাসে ইশান দেখতে পায় পান্না পেছনের সিটে ঘুমিয়ে আছে।তখন তারা জ্যামে ছিল,ইশান আস্তে করে এগিয়ে এসে তিথির গালে চুমু একটা দিয়ে আবার ঠিক হয়ে বসে পড়ে।তিথি ফোনে তানিয়ার হলুদের ছবি দেখছিল,হঠাৎ এরকম ছোঁয়ায় সে অবাক হয়ে গেলো।গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো সে।

‘কি?ওভাবে তাকানোর কি আছে?টমেটোর মতন গালটাকে ধরে দেখতে মন চাইলো।তাতে দোষ কি?’

‘ধরে তো দেখেননি।একেবারে থুথু লাগিয়ে দিয়েছেন।আর টমেটো মানে?আমি কি ভুটকি যে আমার গাল টমেটোর মতন হতে যাবে?

‘সব ভুটকির গাল টমেটোর মতন হয়না,আবার সব টমেটোর মতন গালের মানুষ ভুটকি হয়না’

‘আমার পারমিশন ছাড়া এরকম আর করবেন না’

জ্যাম ছেড়ে দেয়ায় ওরা মেইন রোড থেকে এলাকার গলিতে নেমে গেছিলো।ওমনি ইশান কারের লাইট নিভিয়ে তিথিকে ঝাপটে ধরে বললো,’পারমিশন যদি না নেই,তবে কি করবি বল?’

তিথি চেঁচিয়ে বললো,’পান্না দেখো!’

ওমনি ইশান তিথিকে ছেড়ে দিয়ে আলো জ্বালায়।পান্না তখনও ওঠেনি, সে ঘুমিয়েই যাচ্ছে।

তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।আর রাগী চোখে ইশানের দিকে চেয়ে থাকলো।ছেলেটা ভারী অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।এতদিন ভালই ছিল!

বাসায় ফিরে তিথি পান্নাকে নিয়ে সোজা তার রুমে যায়।এরপর নিজের ক্লাস সিক্সের একটা শাড়ী বের করে যেটা কমলা রঙের ছিল।

‘এটা পরে নাও।আমার ছোটবেলার শাড়ী।তোমার গায়ে ফিট হবে।’

পান্না শাড়ী দেখে বলে,’আমি তো পরতে জানিনা ‘

‘আমি পরাই দিচ্ছি’

তিথি হাতের ফোন রেখে পান্নাকে সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে সাজিয়ে তোলে।এরপর ওর থুঁতনি টেনে বলে,’নাও!তুমি রেডি।এবার আমি যাই,আমার অনেক কাজ।তুমি বরং ছাদে গিয়ে অনুষ্ঠান দেখো’

তিথি চলে যাবার পর পান্না আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়।আজ বাসায় যত মানুষ এসেছে সবাই ওর অচেনা।তার শুধু ভয় হচ্ছে পিংকিকে নিয়ে।যদি ওর সামনে একবার পড়ে তাহলে শেষ!

চারিদিকে নজর রাখতে রাখতে পান্না হাঁটছিল ওমনি তার ধাক্কা লাগে রিদমের সাথে।রিদম পানির বোতল নিয়ে ফ্রিজের কাছ থেকে এদিকেই আসছিল।শুরুতে শাড়ী পরা পান্নাকে এই প্রথমবার দেখে সে চিনতে পারেনাই।বাসার অন্য আত্নীয় মনে করেছিল,কিন্তু পান্নার মিষ্টি হাসি দেখে সে ঠিকই চিনে ফেলেছে।

‘তুমি?’

‘আমাকে কেমন লাগছে ভাইয়া?তিথি আপু সাজিয়ে দিয়েছে’

‘তুমি এখানে কি করো?তুমি না দাদুর বাড়ি গেছো?’

‘হুম তো।কিন্তু তিথি আপু আর ইশান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে।আপনি চলে যাবেন তাই আপনাকে বিদায় দেয়ার জন্য’

‘শাড়ী এটা কার?’

‘তিথি আপু দিয়েছে।ভাল না?’

‘খুব সুন্দর,তোমাকে খুব মানিয়েছে।আপুকে বলে এটা নিয়ে যেও।পিংকি কোথায়? ‘

পান্না ওমনি রিদমের মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে,’বুবুকে বলিয়েন না আমি যে এখানে’

‘কেন?’

‘সমস্যা আছে।’

‘তোমার হাতের থেকে গাঁদা ফুলেরগন্ধ আসছে কেন?গাঁদা ফুল তো ছাদে!তার মানে তুমি তিথি আপুর রুমে আমি যে গাঁদা ফুলের মালা রেখেছিলাম,ওটা নিয়েছো?’

‘হুম।এই যে চুলে লাগিয়েছি।আচ্ছা আপনি কি করতেন ঐ মালা দিয়ে?’

রিদম হাসি দিয়ে চলে গেলো।আর কিছুই বললোনা।তার এতক্ষণ যে মনমরা চেহারা ছিল,পান্না আসায় সেই চেহারা বদলে সতেজতা ফিরে এসেছে।কাউকেই কাজ করতে দিচ্ছেনা সে,সব নিজেই করে চলেছে।পান্না চুলে গাঁদা ফুলের মালাটা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ছাদে এসেছে। বুবু আর বাবা মা মনে হয় এখনও আসেনি,তাই এই সুযোগে সে তানিয়ার গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়।তানিয়া টিটকারি করে বললো,’দেখো নিজের গায়ে লাগিওনা।অবিবাহিত মেয়েরা গায়ে হলুদ লাগালে বিয়ে হয়না’

পান্না চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।তানিয়া ফিক করে হেসে ফেলে পান্নার বিয়ের প্রতি এতো সিরিয়াসনেস দেখে।

তিথি শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে ছাদে আসছিল,ওমনি চিলেকোঠার কাছাকাছি আসতেই কেউ একজন ওকে টান দিয়ে কোণায় নিয়ে গেলো।তিথি চিৎকার করলোনা কারণ সে হাতের স্পর্শ চিনতে পেরেছে।

‘আপনার কি হলো বলুন তো?নেশাজাতীয় কিছু খেয়েছেন?’

‘তোরে সামনে দেখলে আমার নেশা গ্রহণ করা লাগেনা,তুই নিজেই একটা আস্ত নেশা’

‘তাই নাকি?তো এখন কি করতে চান?’

‘এই নেশা ঢোক গিলে খেয়ে ফেলতে চাই ‘

‘কোন পাশ থেকে শুরু করবেন শুনি?’

ইশান হাসি দিয়ে তিথির হাত কামড়ে ধরে এরপর ওর কপালে চুমু এঁকে দেয়।তিথি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল।ইশান যখন দেখলো তিথি বেশ সুখে আছে তখন সে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তিথির হাতে একটা কামড় দিয়ে চলে যায়।
তিথি ব্যাথায় হাত নাড়তে নাড়তে বলে,’আজ রাতে আমি যদি তানিয়ার সাথে না শুইছি তো আমি মিসেস ইশান আরাফাত না’
——
‘আসসালামু আলাইকুম ভাই’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনি কে ভাই?’

‘আমি গিয়াসউদ্দিন।দি গ্রেট গিয়াস উদ্দিন।ঐ যে পিংক কালারের বাড়িটা আছেনা?ওটা পুরোটাই আমার’

‘বাহ বাহ! ঢাকা শহরে নিজেদের বাড়ি থাকা খুবই বড় বিষয়।তা আপনি তানিয়াদের কি হোন?’

‘আমি তো তানিয়ার আপন প্রতিবেশী।আর আপনি?’

‘আপন প্রতিবেশী!ওহ! বুঝলাম।আমি তো বর পক্ষ।রকিবের মামা হই।ডালা নিয়ে আসলাম’

‘আচ্ছা আপনারা ডালা যে সাজিয়েছেন, ঐ ডালাগুলো কোথা থেকে নিয়েছেন?আসলে আমার মেয়েদের বিয়ে তো।সেম টু সেম ডালাই নিবো ভাবছি।তানিয়াদের চেয়েও আপনাদের ডালাগুলো আমার অতিরিক্ত ভাল লেগেছে’

‘আপনার মেয়ে আছে?কিসে পড়ে তারা?’

‘একজন সিক্সে পড়ে,আরেকজন ফোরে পড়ে’

‘এত ছোট বয়সে বিয়ে দিবেন?’

‘না তো,আমি বিয়ে দিব ওরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে।আগে থেকে ভেবে রাখছি যাতে পরে সময় নষ্ট না হয়’

‘ওহহহ!ভাল খুবই ভাল।কিন্তু যুগের সাথে সাথে ডিজাইন বদলে।এখন আপনার যে ডিজাইন ভাল লাগছে,পরে সেটা নাও লাগতে পারে।ঐ সময়ে দেখা গেলো আরও সুন্দর সুন্দর ডালা বের হবে’

‘আচ্ছা আপনার কি ছেলে আছে?রকিবের মতন’

‘হ্যাঁ,আমার দুটো ছেলে।আদিত্য ও আরিফ।দুজনেই এমবিএ করছে’

‘মাশাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ! মারহাবা!!!’

‘মানে বুঝতেছিনা।আপনার কি হলো ভাই!কোনো সুসংবাদ নাকি?’

‘আমার মেয়ে দুটোর সাথে বিয়ে দিবেন?’

‘এসব কি বলেন ভাই?সঠিক সময়ে বিয়ে দিলে আমার ছেলেদের আপনার মেয়ের বয়সী মেয়ে থাকতো।এত বড় বয়সের গ্যাপে বিয়ে দেয়া উচিত না’

‘নিক জোনাস আর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বয়সের গ্যাপ ১০বছর হলে আপনার ছেলেরা কেন আমার মেয়েদের বিয়ে করতে পারবেনা?’

‘এখানে তো ১০বছর না। বরাবর ১২/১৩বছরের গ্যাপ’

‘আরে বর বউ সাজালে পারফেক্ট জুটি মনে হবে।আপনি এক কাজ করেন,আগামীকাল বিয়ের দিন দু পক্ষকে দেখিয়ে দিবেন।মেয়েরাও ছেলেদের দেখে নিলো আর ছেলেরাও মেয়েদের দেখে নিলো।ভাল হবেনা?’

‘তানু!তানু!’

‘জ্বী মামা?’

‘তোমার চেনা কোনো মানসিক ডাক্তার আছে?’

‘কেন মামা?কার কি হয়েছে?’

‘এই যে এই লোকটা…..একি গেলো কই?আরে ভাইই চলে যাচ্ছেন কেন?মেয়ে বিয়ে দিবেন না?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫১
আফনান লারা

পিংকিকে এক নজর দেখতে পেয়ে পান্না লুকিয়ে তিথির রুমে এসে বসে আছে।সে এখান থেকে আর বের হবেনা বলে ঠিক করেছে।রিদম বিরিয়ানির প্লেট হাতে পান্নাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল,এদিকে পান্না মানা করে দেয়ায় ওকে নাম ধরেও ডাকতে পারছেনা সে।প্লেট হাতে হন্তদন্ত হয়ে সে পান্নাকেই কেবল খুঁজে চলেছে,ঠিক তখনই সে পিংকির সামনে পড়ে।

‘রিদম?খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

‘এটা আসলে..আমি খাব আমার খিধে পেয়েছে তো খুব। তাই। ‘

‘চলো,আমি তোমার পাশে বসে বসে তোমার খাওয়া দেখবো।’

‘না’

‘কেন?’

‘আমি আসলে আগে এই পাঞ্জাবি টা বদলাবো,তারপর খাব।সো এক্সকিউজ মি?’

এটা বলে রিদম তিথির রুমে ঢুকে ভেতর দিয়ে দরজা লক করে দেয়।
এরপর দরজার সাথে লেগে সে শুনার চেষ্টা করে পিংকি চলে গেছে কিনা।
পান্না ওখানেই ছিল,রিদমকে এরকম করতে দেখে সে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে ওর পিঠে আঙ্গুল দিয়ে ওকে ডাকতে শুরু করে।
রিদম এত বেশি ভয় পেয়ে গেলো যে সে পিছিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়ে।পিংকি বাহিরেই ছিল,সে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’কি হয়েছে রিদম?দরজা খোলো’

‘না না,কিছু হয়নি। তুমি যাও,আমি চেঞ্জ করবো’

রিদম এবার পান্নাকে ফিসফিস করে বলে,’আর একটু হলে তো আমার হার্ট এটাক হয়ে যেতো। এভাবে কেউ ডাকে?তোমায় আমি কত খুঁজেছি জানো?’

‘কেন খুঁজেছেন?’

‘বিরিয়ানি খেতে,নাও ধরো।ইশ আমি তো এখন বের হতে পারবোনা।বের হলেই পিংকি দেখে ফেলবে,সাথে তোমাকেও দেখবে।আমি বরং বসে থাকি,তুমি খাও’

পান্না মাথা নাড়িয়ে খেতে বসে,খেতে খেতে সে রিদম খেয়েছিনা কিনা তা জানতে চায়।

‘না,আমার খিধে নেই।আমি প্রথমে যখন বিরিয়ানি রান্না হয়েছিল তখন খেয়ে নিছিলাম একবার তাই এখন আর খিধে নেই’

পান্না ছোট ছোট হাতে খাবার খেতে ব্যস্ত,তার ছোট ছোট ঠোঁটজোড়া,খাবারের ধরন।মাথায় গাঁদা ফুলের মালা,সব একত্রিত হয়ে এক বিশাল সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে।রিদম হা করে তাকিয়ে ছিল।ছেলেদের যৌবন যে কাল থেকে শুরু হয় রিদম সেই কালে সবেমাত্র পদার্পণ করেছে।এ কালে যাকে সবার আগে মনে ধরে তাকেই আজীবন মনে থাকে।রিদমের মনে হয়েছিল তার সেই ভাললাগা হলো পিংকি।কিন্তু নাহ!আজ পান্নার এই অসামান্য রুপ তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ভাললাগা আর ভালবাসার মাঝে আকাশ পাতাল তফাত।
রঙচটা লিপস্টিক হোক কিংবা শীর্ণ ঠোঁটজোড়া হোক,পাউডারে মাখা সাদা মুখ হোক কিংবা সন্ধ্যার ঘুম থেকে ওঠা শুকনো মুখ হোক!ভালবাসার কাছে এসব কি এসে যায়?

রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্না বলে,’কি হয়েছে ভাইয়া?’

‘নাহ কিছুনা।খাও’
——
তিথি তানিয়ার মুখে হলুদ লাগিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় হলুদ ভর্তি করে নিয়ে ইশানকে খুঁজছে। ইশান রকিবের বড় খালাতো ভাই একটার সাথে স্টেজ নিয়ে আলাপ করছিল।তিথি সুযোগের অপেক্ষায় আছে,কখন শরীফ ভাইয়া উঠে যাবে আর সে গিয়ে ইশানের মুখে হলুদ লেপটে দিয়ে আসবে।
সুযোগ খুঁজতে খুঁজতেই সে ঐ মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে যায়,ওমনি আর দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ছুটে এসে ইশানের দুইগালে মনমত হলুদ লেপটে দেয় সে।
কিন্তু শরীফ উঠে যাবার পর পরই ঐ সিটে এসে বসেছিলেন ইশানের মা।তিনি এই অবস্থা দেখে রাগান্বিত হয়ে বলেন,’এইসব কি তিথি?তুমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে?এত লোকের সামনে কি করলে এটা? আজ কি তোমাদের গায়ে হলুদ?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে।
ইশান তখন মাকে থামিয়ে বলে,’আমি ওর গালে এমন করে লাগিয়েছিলাম, তাই সেও এমনটা করেছে’

‘তুই করেছিস সে বিষয়টা নেয়া যায়।কিন্তু ও মেয়ে মানুষ হয়ে এমন কেন করবে?’

‘দাঁড়াও এর প্রতিশোধ আমি ওর থেকে এখনই নিবো’

এটা বলে ইশান তানিয়ার সামনে গিয়ে হলুদের কৌটা এনে তিথির দুই গালে ভাল করে লাগিয়ে দিয়ে বললো,’দেখো মা,ভাল হয়েছে না?’

মিসেস আরাফাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।এমনটা আশা করেন নাই,তিথিও আশা করেনি।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তিথির গাল টিপে বললো,’নাও,এবার গোসল করতে যাও।নাহয় বাবুর্চি হলুদ বাটা মনে করে মাংসের ঝোলে ঢেলে দিবে’
——-
পান্নার খাওয়া শেষ হতেই রিদম ওর হাতে কোকাকোলা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।পান্নার মন খারাপ,বুবু আর বাবার ভয়ে সে চেয়েও অনুষ্ঠানটা দেখতে যেতে পারছেনা।গায়ে হলুদে মানুষ কত মজা করে!গান,নাচ এগুলাই তো এই অনুষ্ঠানকে চমকপ্রদ করে তোলে!অবশ্য মন খারাপ করার কিছু নেই।নরসিংদী দাদুর বাড়িতে থাকলে তো এসব ও দেখতে পারতোনা।তার ভাগ্য ভাল যে এত সুন্দর মনের মানুষেরা মিলেছে।সবাই তাকে কত ভালবাসে!রিদম কত কেয়ার করে!

এইসব ভেবে পান্না মিটমিট করে হাসছিল রুমের এক কোণায় বসে।তিথি গোসল করতে এসে দেখে পান্না লজ্জা পাচ্ছে একা একা।

‘একি!এত লজ্জা কিসের?’

পান্না চোখ মেলে তিথিকে পুরো হলুদে হলুদ দেখে ফিক করে হেসে দেয়।তিথি এবার নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।

‘এরকম কি ইশান ভাইয়া করেছে আপু?’
——–
‘আপা ভাল আছেন?’

মিসেস আরাফাত পাশে তাকিয়ে দেখলেন গিয়াসউদ্দিন সশরীরে দাঁড়িয়ে আছে।উনি যেন চোখের সামনে ভূত দেখেছেন।লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলেন এরপর ঢোক গিলে বললেন,’জ্বী ভাল ছিলাম’

‘বসুন না,উঠলেন কেন?’

গিয়াস উদ্দিন বসে পড়ে ওনাকেও বসতে বললো কিন্তু উনি আর একটা সেকেন্ড ও ওখানে দাঁড়াননি।ছুটে পালালেন।গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে পাশে চেয়ে দেখেন এক ভদ্রমহিলা।

‘আসসালামু আলাইকুম আপা?’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

‘ভাল আছেন?’

‘কেমনে ভাল থাকবো ভাই?বউকে দেখেন!হিন্দি গানে ডেং ডেং করে নাচছে।এসব দেখলে ভাল লাগে?’

‘ঠিক! আজকালকার মেয়েরা সংস্কৃতির ‘স’ ও জানেনা’

‘সব চাইতে বড় বেয়াদব ঐ মেয়েটা ঐ যে হলুদ রঙের থ্রি পিস পরা।কেমন ওড়না খুলে নাচছে!’

গিয়াস উদ্দিন ঐদিকে তাকাতে তাকাতে বললেন ‘হুম!ঐ যে পারিবারিক শিক্ষার অ…..
কথা শেষ করতে না করতেই তিনি দেখলেন তার গুণী মেয়ে পিংকি ওটা।ওমনি ঢোক গিলে তিনি কথাটা পাল্টে বললেন,’আপা আপনার ছেলে-পেলে আছে?মানে বলতে চাইছি বাসায় আপনারা কজন? ‘

‘আমরা চারজন,আমি আমার হাসবেন্ড,আমার ছেলে আর আমার একজন ননাস।’

‘বাহ!অসাধারণ।আমি না একটা ভাল ছেলে খুঁজছি।আমার খুবই গুনবতী,রুপবতী দুটো মেয়ে আছে।তা আপনার ছেলে কি করে?’

‘ব্যবসা করে’

‘বাহ বাহ!ঢাকা শহরে ব্যবসা মানে তুমুল কিছু।তা আপনার ছেলের নাম কি?কিরকম মেয়ে তার পছন্দ যদি একটু বলতেন!!আসলে বিয়ে বাড়িতেই তো মানুষ বিয়ে খেতে এসে আরেকজনের বিয়ে ঠিক করে।তাই না?’

সেই ভদ্র মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,’আমার ছেলের নাম রকিব।তার সাথেই তানিয়ার বিয়ে হচ্ছে’

ওমনি তানিয়ার মামা শ্বশুর এসে বললেন,’আপা তোকেও ধরেছে?এই লোকটাকে পাগল বললেও পাগল লজ্জা পাবে।উনি একটা মেন্টাল!’

‘ভাই মেন্টাল মানেও তো পাগল।বাংলা ভাষার সৎ ব্যবহার করতে শিখুন তারপর পাগল বলতে আসবেন।’

‘রাখেন তো মিয়া!এই লোককে ভেতরে ঢুকতে দিছে কে!আর এক মিনিট থাকলে তো অনুষ্ঠানের সবার চৌদ্দ গুষ্টির সাথে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তারপর ছাড়বে!’

‘ভাই শোনেন!ঠিক আছে মজা টজা বাদ।সিরিয়াসলি নেন!একবার ভেবে দেখিয়েন,বয়স কোনো ফ্যাক্টই না।আমার ওয়াইফ যখন জন্মেছিল তখন আমি জেএসসি পরীক্ষা দিছি।তাহলে ভাবেন কত বড় বয়সের গ্যাপ।আর আপনি কিনা ১২/১৩ বছর নিয়ে ভাবছেন।আমার মেয়ে গুলো কিন্তু খুব সুইট।’

‘আমি তবে একটা কথা বলি আপনাকে? আপনার পাবনার মানসিক হাসপাতাল একবার ঘুরে আসা উচিত’

‘উফ বুঝলাম না!সবাই আমাকে পাবনাতে যেতে বলে কেন’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৪৮+৪৯

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৮
আফনান লারা

পিংকির যে বয়স এ বয়সে মেয়েরা কাছের মানুষকেও হিংসার চোখে দেখে।হিংসার কারণ না থাকলেও হিংসা করে,তাদের মনে হয় ঐ মানুষটা অনেক খারাপ,তার খুশি চায়না।তাই তারা দুচোখে সহ্য করতে পারেনা অপর প্রান্তের মানুষটিকে।
পান্নাকে সেরকমই লাগে পিংকির কাছে।তার হিংসা বেড়ে দাঁড়ালো পাঁচগুণ যখন সে জানতে পারলো রিদম পান্নাকে একটা মালা গিফট করেছে।রিদম তো পারতো তাকেও একটা মালা দিতে।তাহলে সে এমনটা কেন করলোনা?
পান্না গলায় মালাটা পরে আয়নাতে নিজেকে দেখছিল অনেক গুলো খুশি মনের মাঝে জুড়ে রেখে।তার এতটা খুশি লাগছিল যে, সে ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারছিল না।

‘পান্না এদিকে আয় ‘

পান্না খুশি মনে পিংকির কাছে এসে দাঁড়ায়।
‘কি বুবু??’

পান্নার কথাটা শেষ হতে না হতেই পিংকি মালাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো ওর গলা থেকে।এরপর চিৎকার করে বললো,’তুই জানিস রিদম আর আমি একজন আরেকজনকে পছন্দ করি।তার পর কোন সাহসে তুই রিদমের কাছ থেকে মালা চেয়ে নেস?তোর লজ্জা করেনা?’

পান্না ছিঁড়ে যাওয়া মালাটার দিকে চেয়ে আছে।তার যেন বুকটা ফেটে গেছে ঐ মালা ছিঁড়ার সাথে সাথে।চোখে পানি নিয়ে সে মালাটার যত অংশ ছিল সব জোড়া লাগাতে শুরু করে।
পিংকি উঠে চলে যায় তখনই।
—–
তানিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছাদে হবে।রিদম অনেক বেশি ব্যস্ত। তার এই ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিলেন বাবা।রকিবদের বাসা থেকে আসা ডালার ফল তিনি এইবার গিয়াস সাহেবের বাসায় পাঠাতে চান,আগেরবার তিথির বিয়ের ডালার ফল আরাফ আঙ্কেলের বাসায় পাঠিয়েছিলেন।
রিদম সোজা মানা করে দেয় সে গিয়াস সাহেবের বাসায় যাবেনা।কিন্তু বাবা ওর হাতে ডালা দিয়ে আরও পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বললেন তার ভিডিও গেমসের অনলাইন পেমেন্টের টাকা এটা।
রিদম অবাক হয়ে গেছে।বাবা তাকে টাকাটা দিয়েই দিলো শেষমেশ?

কি আর করার!ডালা নিয়ে সে ঐ বাসায় এসে হাজির।আঙ্কেল দরজা খুলবেনা এটা নিয়ে সে নিশ্চিত কারণ উনি তো এখন হুইলচেয়ারে
কিন্তু যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো।দরজা খুলেছেন সয়ং গিয়াসউদ্দিন।তার পা ভাল হয়ে গেছে আজকে ভোরবেলায় ওয়াশরুম থেকে পিছলে পড়ে যাবার সময়।
রিদম ওনাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ডালাটা এগিয়ে ধরে বলে,’বাবা পাঠিয়েছে ‘

তিনি ডালা দেখে খুশি হয়ে গেলেন।ফলফলাদি তার খুব বেশি পছন্দ,খুশির চোটে তিনি দরজা খোলা রেখে ডালাটা নিয়ে চলে গেছেন।সেই সময় পিংকি রিদমকে দেখে এগিয়ে আসে কথা বলার জন্য।

‘দেখলাম পান্নাকে মালা দিছো।আমার জন্য কি কিনেছো?দিলে না যে?’

‘তুমি তো অনেক কিছু কিনলে দেখলাম।তাই তোমার জন্য কিছু কেনা হয়নি।তবে হ্যাঁ এই ব্রেসলেট টা পান্নাকে দিতে ভুলে গেছি।ও কোথায়?ওকে ডেকে দাও’

পিংকি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ব্রেসলেটটা নিয়ে যাও।আর দেয়া হবেনা’

‘কেন?’

‘কারণ পান্না চলে গেছে দাদুর বাড়িতে। এখন থেকে ওখানেই থেকে পড়াশুনা করবে’

‘কিন্তু কেন?আর হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো?গেলোই বা কখন?একবার দেখা করে গেলো না কেন?’

‘তাতে কি রিদম?তোমার তো খুশি হবার কথা যে পান্নার মতন আমিও দাদুর বাড়ি চলে যাইনি’

রিদম চুপ করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে দাদুর বাড়িতে একেবারে চলে গেছে?
——
তিথি হলুদ শাড়ী একটা পরে তানিয়ার সাথে পার্লারে বসে আছে।তানিয়া সাজছে আর তিথি বসে বসে ফোন টিপছে। ইশানের কড়া নিষেধ,তিথি সাজতে পারবেনা।

‘আপু ইশান ভাইয়া আর রকিবের মাঝে আকাশপাতাল তফাৎ’

‘তা তো থাকবেই।রকিব খুবই ভদ্র একটা ছেলে।আর ইশান তো কিছু হলেই ছ্যাঁত করে ওঠে।’

‘না সেটা নয়।ইশান ভাইয়া তুমি না বলতেই সব করে দেয় আর রকিবকে আমার ধরে ধরে করাতে হয়।বিয়ের পর কি হবে আমার!’

‘সব দিক দিয়ে তো পাওয়া যায়না।’

‘তুমি তো পেলে’

‘কোথায়?রকিবের মতন ভদ্র হলে তো হতোই।একেবারে অভদ্র একটা ছেলেকে হাসবেন্ড হিসেবে পেয়েছি আমি।’

‘তাই না?’

ইশানের কথা শুনে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মেয়েদের পার্লারে ওকে ঢুকতে দিয়েছে কিভাবে সেটাই ভাবছে তিথি তখনই পার্লারের আপুটা বললো ইশান নাকি তার ক্লাসমেট ছিল।
তিথি জিভ কামড়ে এক পাশে গিয়ে লুকিয়ে আছে।তার মানে এতক্ষণ যা যা বলেছে সব এই মেয়েটা ইশানকে বলে দিবে নয়ত ইশানই সব শুনেছে আগেই এসে।

‘তানিয়া তুমি সাজো,আমি আমার বোনকে তোমায় নিয়ে বাসায় ফিরতে বলেছি।এখন তোমার আপুকে নিয়ে আমি একটু আমার বাসায় যাব কাজ আছে’

‘কি কাজ?’

‘গেলেই দেখবি,চল চল’

ইশান তিথিকে আর একটা কথাও বলতে দেয়নি।টেনে নিয়ে গেছে।
তিথি বের হয়ে বলে,’কি হলো বলুন না,কেন যাচ্ছি?’

‘আমরা বাসায় যাচ্ছিনা একচুয়ালি’

‘তাহলে কোথায়?’

‘আমি অভদ্র’

‘না না একদমই না’

‘আমি কিছু না কিছু হলেই ছ্যাঁত করে উঠি’

‘না না,এগুলা মিথ্যা কথা।আপনি তো খুব ভাল’

ইশান আর কিছু বললোনা,গাড়ীর ভেতর তিথিকে ঢুকিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজেও এসে বসে।
তিথি ভয়ে শেষ,না জানি আজকে ওর ১২টা বাজায়।
ইশান গাড়ীর সামনের কাঁচের উপর হাত রেখে বলে ‘এই কাঁচ ভেঙ্গেছিলি, মনে আছে?’

‘হুম’

‘ভাঙতে খুব ভালো লেগেছিল তাই না?ভেবেছি তোর থেকে আর প্রতিশোধ নিবোনা।কিন্তু এখন মনে হয় এতদিন যা প্রতিশোধ নিছি ওগুলার একশান কম ছিল।’

তিথি ঢোক গিলে বলে,”আমি সত্যি ফান করে বলেছিলাম।সরি’

‘এখন আর সরি বলে কি লাভ?’

‘আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

‘নরসিংদী ‘

‘এতদূর?কেন?’

‘গেলেই দেখবি ‘
——-
রিদম মন খারাপ করে এক কোণায় বসে আছে,কোনো কাজেই হাত দিচ্ছেনা,তানিয়ার কাজিন যারা আছে তারা রিদমের অনুপস্থিতিতে সব কাজে হেল্প করছে।তানিয়া পার্লার থেকে সেজে আসার পর থেকে খেয়াল করেছে রিদম মনমরা হয়ে বসে বসে টিভি দেখছে।

‘কিরে?তোর আদরের টুকুর গায়ে হলুদ,কাজ না করিস অন্তত কথায় কথায় নাচবি তো!কি হলো তোর?’

‘কিছু হয়নি’

‘বল আমায়।’

‘না তো কিছু হয়নি’
——
তিথিকে নিয়ে ইশান এসেছে পান্নার দাদার বাড়ি।রিদমের মন খারাপ দেখে ইশান জানতে পারে পান্না নাকি কাল রাতেই তার চাচ্চুর সাথে দাদার বাড়ি চলে গেছে।ওর বাবা মা আগেও চাইতে সে যেন দাদুর বাড়িতে থেকে মানুষ হয়,কারণ দাদা দাদি একা থাকেন।পান্না রাজি হতোনা,কিন্তু কাল রাতে হঠাৎ করে সে মত পাল্টায় এবং যাওয়ার জন্য জেদ করে।
তার চাচ্চু ঢাকায় ছিলেন বলেন যাবার সময় ওকে নিয়ে গেছেন।
ইশান তিথিকে নিয়ে এখানে আসার কারণ যে ঘটনা ঘটেছে তাকে ঠিক করা।তার বারবার মনে হচ্ছিল কিছু তো একটা হয়েছে যার জন্য পান্না এতদিন যেটাতে রাজি হয়নি,সেটাই করতে রাজি হয়ে গেলো,রাতারাতি চলেও গেলো!

এসব শুনে তিথি বলে,’রিদম তো পিংকিকে পছন্দ করে জানি’

‘তোর মন্ডু জানিস!’

গাড়ী থেকে বের হয়ে দুজনে আসমান আলীর বাড়ি খুঁজতে লাগলো।দ্রুত কাজ করতে হবে,সন্ধ্যার পর তানিয়ার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।দেরি হলে সে আবার রেগে যাবে।
তিথি হাতে ঠিকানা নিয়ে ছুটতে গেলো ওমনি ইশান ওর হাত টেনে ধরে।

‘একি!মানুষ দেখলে কি বলবে?আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?’

‘আমি অভদ্র তাই না?’

‘না রে ভাই।তুমি অনেক ভদ্র,আমাকে মাফ করে দাও।আর বলবোনা’

‘ভাই??তাই না?’

‘রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছেন?’

‘রাস্তাটা ফাঁকা,আর আমি যতদূর জানি এই রাস্তায় দুই ঘন্টা ওর একটা সাইকেল যায়।সুতরাং আমার যেটা করার সেটা করতে সময় নিতেই পারি’

‘মানে!’

“করেন করেন, কেউ দেখছেনা ভাই’

এ কথা শুনে ইশান আর তিথি দুজনেই দূরে সরে উপরে তাকায়।একটা বন্ধ দোকানের ছাদে বসা এক যুবক কথাটা বললো।ইশান সানগ্লাস ঠিক করে বলে,’আসমান আলীর বাড়ি চিনো?’

‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকে শুনছিলাম।বাড়ির নাম দিয়ে চুমু ঢাকতে এ প্রথম শুনলাম’

‘হোয়াট চুমু!কি বুঝাতে চাইছো তুমি?’

‘ওটাই বুঝাতে চাইছি যেটা এখন করতে চাইছিলেন আপনারা।আমি কিন্তু সব দেখছি’

‘কি দেখছো?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে ইশানের পকেট হাতিয়ে মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকার নোট নিয়ে বলে,’নাও ধরো,চা বিসকিট খেয়ে নিও’

ছেলেটা হাসি দিয়ে নোটটা নিয়ে এক দৌড় দিছে।

‘আপনার জন্য এক হাজার টাকা লস হলো।গাড়ীতে অভদ্রগিরি দেখাতে পারতেন না?’

‘কিসের লস!ছেলেটাকে যে টাকা দিছিস, ওটা নকল টাকা ছিল।তানিয়ার হলুদে টাকা ছিঁটাবো বলে নকল টাকা এক বান্ডেল জোগাড় করেছি’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৯
আফনান লারা

পান্নার দাদুর বাড়িকে স্বাভাবিক মনে করেই এসেছিল ইশান আর তিথি।কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের মতন একটা লোকের পৈতৃক বাড়ি আর কিরকমই আশা করা যায়?উনি যেরকম তার চেয়ে দ্বিগুণ হওয়াই তো স্বাভাবিক।
গিয়াস সাহেবের পছন্দ ভিনদেশী ফলফলাদি,আর তার বাবা আসমান আলীর পছন্দ ফুল গাছ।গেইট দিয়ে ঢোকাই যায়না বাগানবিলাসের লতাপাতার জন্যে।তারা লতাপাতা কাটেনা কারণ আসমান আলী নাকি মনে করেন গাছ কাটা মানে আখিরাতে নিজের মাথার একটা করে চুল ছেঁড়া।
তাই কেউ যদি ভুলবশত গাছ কেটেও ফেলে তাকে এর প্রতিদান হিসেবে একটা চুল ছিঁড়ে ওনাকে দিতে হবে।ওনার নিজস্ব জাদুগর আছে এসব মানুষের চুল দিয়ে।সেখানে কাঁচের বাক্সে চুল থাকে আর অপরাধ করা ব্যাক্তির নাম লেখা থাকে।
এইসব বলছিল আসমান আলীর বাগানের কেয়ারটেকার মন্টি।তার মাথায় একটা চুল ও নাই।ইশান জানতে চাইলো এই বয়সে সে টাক হয়েছে কেন।তখন ছেলেটা লজ্জা পেয়ে বলে,’হে হে!টাক হবো কেন!আসলে আমি বাগানের দেখাশুনি করি তো!মাঝে মাঝে ভুলবশত গাছের ঢাল ভেঙ্গে ফেললে চুল ছিঁড়ে প্রতিদান দিতে হয়।’

‘তার মানে তুমি প্রতিদিন ঢাল ভাঙ্গো?’

‘নাহ তা কেন!নতুন চুল গজালেই ঢাল ভেঙ্গে ফেলি ভুলে তখন আর কি!’

‘সাংগাতিক!’

‘চলুন না আমরা চলে যাই।আমার ভয় করছে।কদিন আগেই চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করেছি।আমার এত স্বাদের চুল।যদি ছিঁড়তে হয়?’

‘আমরা কি গাছ কাটবো নাকি?আমরা গিয়ে শুধু কথা বলবো’

কোনোরকমে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করে।বাড়িটা এত সুন্দর যে বলে বোঝানো দায়।বাগান থাকা বাড়ি যত শ্যাওলা জমেই থাকুক না কেন,দর্শনার্থীর চোখে সে বাড়ি অপরুপ সুন্দর।ইশান আর তিথির কাছে সেরকম সুন্দরই লাগছে বাড়িটা।তারা দেখতে দেখতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা খোলাই ছিল।

ভেতরে এসে তারা তো অবাক,সব কিছু প্লাস্টিকের,একটাও কাঠের ফার্নিচার নেই। কি আজব!

আরেকটু ভেতরে যেতেই তারা একজন ভদ্র লোককে দেখে থেমে যায়।উনার ইয়া বড় বড় চুল।শুরুতে মেয়ে মনে করেছিল তিথি,পরে পোশাক আশাকে ছেলে চিহ্নিত করলো।

‘আপনিই কি আসমান আলী?’

‘কে তোমরা? ‘

‘আমরা পান্নার আত্নীয় হই,ওকে ডেকে দিবেন?’

‘তার আগে বলো তোমরা আমার কোনো গাছের পাতা ছিঁড়ো নাই তো?

‘না,ভুলেও না’

‘ঠিক আছে,বসো।কফি আনার ব্যবস্থা হচ্ছে’

তিথি বললো,’আপনারা চা খান না?’

‘চা গাছের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে বানানো হয়।কোনো গাছপ্রেমী মানুষ এই জঘন্য কাজ করতে পারেনা।আমি কফি খাই।কফি বীজ থেকে তৈরি হয়।বুঝেছো?’

‘জ্বী দাদু’

তিথি ভয়ে ভয়ে ইশানকে দেখছে। ইশান ও চুপচাপ ওর পাশে বসে পড়ে।এরপর হেসে হেসে বলে,’আপনাদের দেখছি সব ফার্নিচার প্লাস্টিকের।ভালো ভালো!।তা শোয়ার খাট ও কি প্লাস্টিকের?’

‘গাছপ্রেমী হতে হলে সর্বদিক দিয়ে হতে হয়।আমার বাড়ির সব খাট সিমেন্ট দিয়ে ঢালায় করে বানানো।বুঝেছো?’

‘হুম বুঝেছি।আচ্ছা আপনার চুল এত লম্বার কারণ জানতে পারি?যদি কিছু মনে না করেন?’

‘কিছু মনে করি কিনা সেটা ভাবলে আর জিজ্ঞেস করেছো কেন?এমনিতেও হুটহাট আসা মেহমান আমার পছন্দ না।পান্নাকেও পছন্দ হয়নি,আসার সময় বলে আসতে পারতো!’

এই শুনে তিথি আর ইশান চোরের মতন বসে থাকলো।ভদ্রলোক এবার ওদের সামনের চেয়ারে বসলেন।এরপর বললেন,’গাছের পাতা অযথা ছিঁড়লে তাদের মাথার চু্ল ছিঁড়াই আমি।কিন্তু আমি কোনোদিন গাছের পাতা ছিঁড়ি না।তাই আমার চুল ভাল এবং সুস্থ এবং লম্বা আছে।বুঝেছো?’

ইশান আর তিথি মাথা নাড়ায়।কফি এসে গেলো। দুজনেই চুপচাপ কফি খাচ্ছে।পান্না নাকি জাদুগর পরিষ্কার করতে গেছে তাই ওর আসতে দেরি হচ্ছে।
এই সুযোগে ইশান বলে সে আর তিথি ওনার বাগানটা ঘুরে দেখতে চান।

‘আপনার কি মাথা গেছে?জেনেশুনে কুয়োতে লাফ দিতে চান কেন?বাই চান্স গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেললে কি অবস্থা হবে জানেন?’

‘আরে সমস্যা নাই।এতদূর যখন এসেছি এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যায়না’

ইশান তিথিকে জোর করে বাগানের দিকে নিয়ে আসে।বাগান দেখে তিথি অবাক হয়ে যায়।এত সুন্দর ফুলের বাগান!
তিথি হাত দুটো পিঠের সাথে লাগিয়ে হাঁটছে যাতে ভুলেও তার হাত দিয়ে কোনো পাতা না ছিঁড়ে,আসমান আলী ওদের পিছু পিছু আসছে।
ইশান তখন বললো,’ এত এত ফুল আপনার গাছে। বিক্রি করলে তো অনেক টাকা পেতেন’

‘ফুল বিক্রি করেই তো আমার বাগানের এত বিস্তর হলো।ফুল ছেঁড়া যায় তবে গাছ না।প্রতিদিন ভোর ৫টায় দুটো ট্রাক আসে।সাদা,হলুদ আর লাল গোলাপ,অর্কিড,গাঁদা এসব নিয়ে চলে যায়।’

‘আপনার তাহলে অনেক টাকা’

‘হুম।আমি বাগান আরেকটা করেছি সেটা নরসিংদী থেকে অনেকদূরে।’

‘তার মানে ফুল ছেঁড়া যাবে?’

এটা বলেই তিথি একটা গোলাপ গাছ থেকে ফুল কতগুলা নিয়ে নিলো।খুশি আর তার ধরেনা।
ইশান তখন ওকে বলে ধীরে সুস্থে করতে,তাড়াহুড়া যেন না করে।
কিন্তু তিথি এতটাই এক্সাইটেড ছিল যে গোলাপ ছিঁড়ার জন্য টান দিতেই গাছটা গোড়া থেকে উঠে ওর হাতে চলে আসলো।এটা দেখে আসমান আলীর যেন মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়েছে।

তিথি ভয়ে ভয়ে গাছটাকে মাটিতে পুঁতে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই আর আগের মতন ঠিক করতে পারেনা।যেমন গাছ তেমনই পড়ে থাকে।

ইশান তখন আসমান আলীকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,’দাদু আমরা গাছটাকে আবার পুঁতে দিবো,আপনি এত প্যানিক হইয়েন না।একটু সময় দিন’

‘খামোশ!!মন্টি চন্টি,খন্টিকে ডাক দে!’

ওমনি দুজন পালোয়ান এসে হাজির হলো।তিথি ভয়ে ইশানের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
আসমান আলীর নির্দেশে ইশান আর তিথিকে একটা বড় গাছের সাথে বাঁধা হলো।তিথি কান্নাকাটি করছে তার চুল নিয়ে।ইশানকে বাঁধা হয়েছে কারণ তার হাত খোলা থাকলে সে তিথিকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে।

‘মন্টি!এই মেয়ের মাথার চুল ছিঁড়ো।লম্বা দেখে একটা ছিঁড়বে’

‘না না!ইশান আপনি কিছু করছেন না কেন!’

ইশান ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তোকে ১০০বার করে বলছি গাছে হাত দিস না,দিস না!তাও শুনলিনা তো!এবার ভোগ!’

‘কেমন স্বামী আপনি?’

মন্টি তিথির মাথার চুল একটা ছিঁড়ে জাদুঘরে রাখতে চলে গেছে। তিথি চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো।কত বড় পাগলের পাল্লায় পড়েছে তার হুশ ওর এখন আসলো।তাই ভয়ে আর শোকে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে তিথি।

এবার তিথির আর ইশানের হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হলো।পান্না এসে এই অবস্থা দেখে নিজেই ট্রমাতে চলে গেছে।দাদুকে সে বকাও দিলো এমনটা করার কারণে।কিন্তু দাদুর কাছে অপরাধ মানে অপরাধই।সে যেই হোক না কেন!গাছের ক্ষতি করলে শাস্তি পেতেই হবে’

ইশান পান্নাকে জানায় সে যেন ওদের সাথে ফিরে ঢাকায়।কিন্তু পান্না সাথে সাথে মানা করে দেয়।

‘কি হয়েছে পান্না?রিদম কিছু বলেছে?’

‘না ভাইয়া।আমার ইচ্ছে আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো ‘

‘কিন্তু কেন?আমাদের বলতে কি সমস্যা? ‘

‘কিছু হয়নি’

‘ঠিক আছে থেকো।কিন্তু বিয়েটাতে তো অন্তত এটেন্ড করবা।চলো!ব্যাগ গোছাও’

‘আমি যাব না ভাইয়া’

তিথি কাছে এসে পান্নার হাত দুটো ধরে বলে,’আমাকেও শেয়ার করবেনা?’

তিথির মায়া জড়িত কথায় পান্না আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলোনা।হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।তিথি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,’আমায় বলো,আমি সব সমাধান করে দিবো’

‘আমি চাই রিদম ভাইয়া আর পিংকি আপু যেন বিয়ে করে।কিন্তু আমি কখনও তাদের খারাপ চাইনা আপু।বিশ্বাস করো!’

তিথি ইশানের দিকে তাকায়।তার মানে গোড়ার ভেজাল পিংকি লাগিয়েছে।
তিথি পান্নাকে বলে,’ঠিক আছে!এখানেই থেকো।কিন্তু তুমি কি জানো?আমরা তানিয়ার বিয়ে শেষ হলে জাপান যাবার সময় রিদমকে সাথে নিয়ে যাবো?’

‘একটু শুনেছি ‘

‘এটাই সত্যি।শেষবার ওকে দেখবেনা?’

‘উনি কি আর আসবেন না কখনও?’

‘বিয়ে করার জন্য আসবে কয়েক বছর পর’

‘ওহ!ঠিক আছে।কিন্তু আমি বাসায় যাব না।বুবু দেখলে রাগ করবে’

‘যেতে হবেনা।তুমি আমাদের বাসায় থাকবে, কেমন?’
—-
‘স্যার?স্যার?’

ইশান বিরক্ত হয়ে পেছনে চেয়ে বললো,’কি?’

মন্টি বললো,’আমাদের দাদার জানের জান,কলিজার কলিজা বিদেশী বুনো ফুলের চারার উপর দাঁড়িয়ে আছেন আপনি।যে চারা দাদাজান নিজে বিদেশ গিয়ে এনেছিল তিনদিন আগে’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৪৬+৪৭

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৬
আফনান লারা

হাতে হাত রেখে পথ চলতে চলতে সেরাতে ইশান,তিথির বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।যখন তারা বাসায় পৌঁছে ততক্ষণে গভীর রাত।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,কিন্তু তানিয়া জেগেছিল কারণ সে জেগে জেগে রকিবের সাথে কথা বলছিল।তাই দরজা সে এসে খুলে দেয়,দরজা খুলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়।
তার হাসিটা রহস্যময় ছিল।
ইশান বুঝতে না পারলেও তিথির কাছে খটকা লাগতে শুরু করে।তানিয়ার হাসির মানে বুঝতে বুঝতে তারা এসে যখন রুমের দরজা খোলে,দেখে ফুল দিয়ে সাজানো রুম।
তিথি দেখেই অবাক,তানিয়া এত কিছু করলো কখন?আর করলোই বা কেন!
ইশানের বেশ ভাল লাগলো,এই উপলক্ষে তানিয়া বিয়েতে ডাবল গিফট পেতে চলেছে।সে রুমে ঢুকেই দরজা লক করে নেয় ভেতর থেকে।
তিথি হা করে সব দেখছিল। ইশান তখন হাই তুলতে তুলতে বলে,’ঘুমা!এত দেখার কিছু নাই’

‘ঘুমাবো?’

‘নয়ত কি?বাসর করবি?’

তিথি থতমত খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ইশান বিছানার উপর থেকে ফুল সরিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।লম্বা একটা জার্নি করে এসেছে, শরীর আর টানছেনা।মন চাইছে চোখ জোড়া বন্ধ করে টাটকা ঘুমটা দিতে। কিন্তু তা সম্ভব নাহ,কারণ এই ফুলের রুমটা সাজিয়েছে তানিয়া এই ভেবে যে আজ রাতটাকে একটু মধুর করে গড়তে।তাই শুধু ঘুমালে তো এর মর্ম বোঝা যাবেনা।
তিথি মুখ ধুয়ে এসে দেখে ইশান চোখ বুজে শুয়ে আছে।তিথিও চুপচাপ ওর পাশে এসে বসে ওকে দেখতে থাকে।তখন ইশানের সেই বাসর করার কথাটা মনে আসতেই সে ফিক করে হেসে দেয়।ওমনি ইশান চোখ মেলে বলে,’কি?’

‘নাহ কিছুনা,ঘুমান’

‘ভাবছি ঘুমাবোনা এই রাতে’

‘তাহলে কি করবেন?’

‘ঐ সে বাসর করবো বললাম’

তিথি পিছিয়ে যায় যতটুকু,তার দ্বিগুণ এগিয়ে আসে ইশান।তিথির আর পালানোর জায়গা নেই কোথাও।সেদিন না পালালেও আজ তার মন পালাই পালাই বলে।
নেশায় মাতাল ইশানকে আজ একটু জ্বালিয়ে দেখার ইচ্ছা হলো।
তিথি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো।ইশান তখন ফুলের পাপড়িতে বসে বসে ওকে দেখছিল।তিথি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে ইশানের দিকে ধরে বলে,’ফুলের সুবাস নিবেন?’

ইশান উঠে চলে আসে।তিথির হাত থেকে রজনীগন্ধাটা কেড়ে ওর গলার কাছে ফুলটাকে লেপটে সরিয়ে নেয়,এরপর সেখানে নাক ডুবিয়ে,ফিসফিস করে বলে,’নিলাম’

অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর বারান্দায় গিয়ে ইশানের শার্টের ভেতর দিয়ে নিজেকে নিয়ে নেয় তিথি।এরপর ওর গায়ের উষ্ণতায় চোখ বুঝে রাখে ওরই বুকের উপর।
আরামে,আবেশে তিথি জানতে চায় আর কোনোদিন ইশান তাকে কষ্ট দেবে কিনা,প্রতিশোধ বলে আদৌ কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা।
ইশান উত্তরে জানায় সব শেষ,প্রতিশোধের খাতা আজ থেকে শূন্য।
——–
রিদমের সাথে বাসে বসে গিয়াস সাহেব রিদমের মাথাটাকে যেন কিনে নিয়েছেন।পুরো জার্নিতে রিদমের চৌদ্দ গুষ্টিকে তিনি উদ্ধার করে ছেড়েছেন।

বাস থেকে যখন ব্রেকে নামানো হলো রিদম একটা ছেলের হাতেপায়ে ধরে সিট বদল করে নিয়েছে সেই সুযোগে।

গিয়াস উদ্দিন তো প্রচণ্ড রেগে গেলেন।রিদমের এত বড় সাহস!সে তার সাথে বসার ভয়ে সিট বদলায়!তাকে তো পরে দেখে নিবেন তিনি।এখন এই ছেলেটার সাথে কথা বলা যাক।

‘এই ছেলে তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’

‘সেভেন’

‘রিদমকে চিনো?’

‘হুম।’

‘পিংকিকে চিনো?’

‘হুম’

‘আমাকে চিনো? ‘

‘হুম’

‘বেয়াদব ছেলে!ফোন হাতে দিছে কে তোমায়?আমি যে প্রশ্ন করছি,শুনতে পারছোনা?বার বার হুম হুম করছো কেন?’

‘পিকনিকে ফোন টিপবোনা তো কি আপনার পরীক্ষার এমসিকিউর আন্সার করবো?’

‘দেখছো কি বেয়াদব ছেলে!অবশ্য বেয়াদব হবেই না কেন!ঐ রিদমের ক্লাসের ছেলে তো বেয়াদবই হবে!এই ছেলে!তোমাকে যে বেয়াদব বলেছি তুমি কিছু বলছো না কেন?’

‘আমাকে আম্মু আব্বু ও বেয়াদব বলে।ইটস ওকে!’

‘বেয়াদব বললেও তোমায় গায়ে লাগেনা?তবে তুমি একটা আস্ত অসভ্য’

‘আমরা জাতিরা সভ্য হলাম কবে আঙ্কেল?’

‘আমি কি জানি?’

‘তবে আপনিও অসভ্য।যে জাতি জানেনা সে সভ্য হলো কবে,সে নিজেই তবে অসভ্য”

‘(ছেলেটার কথায় কারেন্ট আছে তো।)আচ্ছা ছেলে,, তোমার বাবা কি বিদ্যুৎ অফিসার?’

‘জ্বী,আপনি জানলেন কি করে?’

‘বাতাসে জেনে গেছি।সরকারি চাকরি করে!আল্লাহ গো!’
বাবা তোমার নাম কি?’

‘সিয়ামুল কারিম’

‘ডাকনাম কি?’

‘কারিম’

‘বাবা কারিম,তোমার ভাই বোন কয়টা?’

‘আমি একজনই।বাবা মায়ের অতি আদরের লাস্ট প্রোডাক্ট ‘

‘(এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন!)বাবা তোমাদের কি নিজস্ব বাসা ঢাকায়?’

‘জ্বী’

‘(নিজেদের বাসা+এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন+সরকারি চাকরি=সোনায় সোহাগা)
তোমার কেমন মেয়ে ভাল লাগে বাবা?আমি তো আঙ্কেলই,আমাকে বলতে পারো।আমি কাউকে বলবোনা’

ওমনি পিকনিক স্পট এসে গেলো।ছেলেটি নামতে নামতে বললো,’ক্লাস সিক্সে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছিলাম।বিয়েও করেছি হুজুরের মাধ্যমে।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া অবধি মেয়েটা তার বাসায় আর আমি আমার বাসায়।আপনি চাইলে আপনার মেয়েকেও বিয়ে করতে পারি।বিয়ের বেলায় আমার কোনো বাহানা নাই’

‘এই ছেলেটা আসলেই একটা অসভ্য ছেলে! ”
——
‘ভাই তুই এই লোকের মেয়েকে পছন্দ করিস?’

‘মোটেও না।মেয়ের বাবাকে দেখার পর থেকে মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট কমে গেছে’

‘আমাকে বিশ মিনিটে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দশ বছর পুরোনো পাগল বানিয়ে দিয়েছে।’

‘আর আমাকে তো পাগল বলেই ব্যাখ্যা দেন উনি’

‘রিদম!’

‘নে!এসে গেছে তোর কারিনা কাপুর’

এটা বলে কারিম চলে যায়।রিদম চেয়ে দেখে পিংকি দাঁড়িয়ে।সে ওর কাছে এসে আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,’বাবা তোমার কাছে আসতেই দেয়না।কি ঝামেলা!এখন ওয়াশরুমে গেছে কালামের সাথে। তাই তো এলাম।ভাবলাম পিকনিকে কত মজা করবো।তা আর হলো কই!বাবা শুরু থেকে সিসি ক্যামেরার মতন নজর রাখছে’

‘তুমি এখন যাও।তোমাকে আমার সাথে দেখলে আবার ঝামেলা করবে’

গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে একটা পাহাড়ে ওঠার চিন্তাভাবনা করছেন তখন কালাম সহ আর যারা আছেন সবাই তাকে মানা করলেন কিন্তু তিনি শুনছিলেন না,পরে নিজের চোখে একজনকে পাহাড়ে উঠতে দেখে জন্মে পাহাড়ে ওঠার শখ মিটে গেলো তার।
এরপর তিনি দেখলেন একটা লোক কতগুলা গাছ বিক্রি করছে,লোকটা বলছে অরিজিনাল ড্রাগন ফল গাছ।এই ড্রাগন ফলের রঙ নাকি নীল হবে।কমলা উদ্ভোধন করে মানুষ খাওয়াতে পারেন নি কিন্তু নীল ড্রাগন ফল উদ্ভোধন করে নিশ্চয় মানুষ খাওয়াতে পারবেন আর কেক ও কাটতে পারবেন।কেকের উপর লেখা থাকবে”গিয়াস সাহেবের নীল ড্রাগন’
কি সুন্দর!ভাই গাছ যে নীল রঙের,ফল ও কি নীল হবে?নাকি আমাদের দেশের গুলার মতন গোলাপি হবে?’

‘না ভাই,নীলই হবে।আর যদি নীল না হয় তবে কালো হবে তাও গোলাপি হবেনা আমার কথা মিলাইয়া নিয়েন’

‘তাই নাকি!কালো ও ভাল!! নীল বা কালো একটা হলেই হয়।তাও তো অানকমন একটা রঙ পাবো।দাম কত ভাই?’

‘১৭০০টাকা’

‘এত বেশি কেন?’

‘মানুষ সবুজ পেঁপে কম খায় আর কমলা রঙের পেঁপে বেশি খায় কেন বলুন তো?’

‘কমলা পেঁপে মিষ্টি তাই’

‘সেটাই তো বুঝাইলাম।নীল ড্রাগন স্বাদ বেশি’

গিয়াস সাহেব ১৭০০টাকা দিয়ে নীল ড্রাগন ফল গাছ কিনে নিলেন।কোলে ফলটা নিয়ে কিছুদূর হুইলচেয়ার টেনে যাবার পর মনে পড়লো ফল কবে আসবে সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি তাই আবার আসলেন ওখানে।এসে দেখলেন লোকটা নাই।সেখানে আবার একটা লোক মাইকিং করতে করতে যাচ্ছে’কেউ নীল ড্রাগন ফল বলে নীল রঙের গাছ বেচতে আসলে কিনবেন না।ওটা নীল ড্রাগন বা,কলমি শাকের ডাটাতে নীল রঙ করে টবে পুরে বিক্রি করে প্রতারণা করছে এক চক্র!আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গাছ বিক্রি করে চক্রটি উধাও হয়ে যাবে।সহজেই বোকা হবেন না,নিজেকে সংযত রাখুন এবং ভেবে চিনতে ভাল জিনিস কিনুন-প্রচারে জনসেবা কমিটি’

‘আসলেই সবগুলা অসভ্য!আমার ১৭০০টাকা কলমি শাকের মতন পানিতে ডুবে গেলো🙂’

‘স্যার এবার ভাজি করে খান।মনের ড্রাগনই বড় ড্রাগন’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৭
আফনান লারা

ইশান তিথিকে নিয়ে একবার মায়ের কাছে গেছে আজকে।মা বলেছেন আজকের দিনটা তার কাছে থাকার জন্য।তাই আসা।
তিথি তো ভয়ে ভয়ে ছিল।না জানি আবার কি না কি কথা ধরে টান দেয়।
বাসায় এসে তিথি তো অবাক,শুধু তাকেই না।ইশানের অনেক আত্নীয় স্বজনকেও দাওয়াত করেছেন তিনি।তিথি এমন জানলে কাতানের ঐ শাড়ীটা পরে আসতো যেটা বাবা তানিয়ার বিয়েতে পরার জন্য দিয়েছে।ইশান,তিথির বিয়েতে যারা যারা তিথিকে দেখেননি মূলত আজ তারাই দাওয়াত পেয়েছেন।
তিথি হলুদ রঙের একটা শাড়ী পরে এসেছিল।এত এত মানুষ দেখে সে এক কোণায় গিয়ে চুপটি করে বসে আছে।ইশান মায়ের কাছে কি নিয়ে যেন আলাপ করছে।
সবাই তিথিকে দেখে কত কি বলে চলেছেন।সেটা অবশ্য তিথিও শুনছে।তারা বলছেন ইশানের সাথে মানাচ্ছে ওকে।
এটা শুনে তিথির মন আনন্দে ভরে উঠলো।তাকে মিটমিট করে হাসতে দেখে ইশান,সে তখন মায়ের রুম থেকে বেরিয়েছিল সবেমাত্র।ওখানে এসে তিথিকে মায়ের কাছে যেতে বলে ইশান।তিথিও চুপচাপ মায়ের রুমের দিকে যায়।যাবার পথে ইশানের কাছে জানতে চাইলো ব্যাপার কি।ইশান বলে মা নাকি ওকে বকার জন্য ডাকছেন।
তিথির তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো তখন।ঢোক গিলে দরজা হালকা করে খুলে উঁকি দিয়ে সে বলে,’আন্টি আসবো?’

‘এসো’

তিথি পা টিপে টিপে গিয়ে দাঁড়ায় ওখানে।মিসেস আরাফাতের হাতে একটা রুপার নেকপিস।উল্টে পাল্টে দেখছিলেন তিনি।তিথি ওটা দেখে ভাবছে তার তো রুপা পছন্দ না,কিন্তু তানিয়ার ভীষণ পছন্দ রুপা।ওমনি তিনি বললেন,’এটা আমি তোমার বোনের বিয়েতে দেবো ভাবছি।আমাদের পরিচিত এক কারিগর কে দিয়ে রুপার উপর পাথর বসিয়ে সেটটা তৈরি করেছি।তোমার বোনের বিয়েরদিন আমি ঢাকায় থাকবোনা।আমার বড় ভাই ভীষণ অসুস্থ। আমাকে যেতে হবে ওখানে,তুমি আর ইশান বিয়েতে যেও।এটা আমার পক্ষ থেকে তানিয়াকে দিও কেমন?’

‘এসবের কি দরকার ছিল আন্টি?’

‘দরকার ছিল।তানিয়া তোমার বিয়েরদিন আমার পায়ে মুভ মালিশ করেছিল আমার পায়ে ব্যাথা ওঠায়।মেয়েটা অনেক বেশি ভাল,আমার ইশানের আরেকটা ভাই থাকলে আমি তোমার বোনকেই বউ করে আনতাম, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।এটা ওকে দিও ‘

তিথি আচ্ছা বলে চলে যাচ্ছিল ওমনি মিসেস আরাফাত বললেন ‘তোমাকে যেতে বলেছি?’

‘না!সরি’

‘এটা ধরো’

তিথি দেখে তানিয়ারটার মতনই অন্য একটা নেকপিস,কিন্তু এটা স্বর্ণের। তিথি চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।

‘কি?পছন্দ হয়েছে?’

‘হ্যাঁ,কিন্তু আমাকে কেন?’

‘বিয়েতে আমি তোমায় কিছুই দেইনি,সব ইশানই কিনে দিছে। আমার থেকেও তো তোমার হক আছে’

তিথি মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়।কি সুন্দর এটা!নিশ্চয় ইশান বলেছে। কারণ এয়ারপোর্টে তো ইশানকে সে বলেছিল তার ডায়মন্ড পছন্দ না,স্বর্ণ পছন্দ।
——
দুটো বক্স নিয়ে ইশানের রুমে আসে তিথি,সেগুলোকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নিজের নেকপিসটা নিয়ে গলায় পরার চেষ্টা করে,সেসময় ইশান আসে সেখানে।সে এগিয়ে এসে তিথিকে নেকপিসটা পরাতে হেল্প করলো।সম্পূর্ণ পরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে সে।

‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা আপনার কেনা’

‘আমার পছন্দ এত খারাপ?’

‘এটা দেখতে খারাপ বুঝি?’

‘হুম।’

ইশান সোফায় বসে পড়ে।তিথি পেছনে তাকিয়ে বলে,’তবে বলতে হয় আসলেই আপনার পছন্দ খারাপ।আমার না একটুও পছন্দ হয়নি এটা।কেমন যেন পুরোনো পুরোনো!’

‘পুরোনো?একদিন আগে কেনা এটা।অরজিনাল!’

‘তার মানে সিওর হলাম এটা আপনিই কিনেছেন।’

ইশান জিভ কামড়ে ধরে,তিথি কিভাবে যে বুদ্ধি খাটিয়ে কথাটা বের করে নিলো।ইশ!
——
পিকনিক থেকে ফেরার পুরো পথে গিয়াস সাহেব অজ্ঞান ছিলেন।তার অভিযোগ পৃথিবীর সবাই তাকে ঠকায়,আজীবন ঠকেই গেলেন।
এই শোকে তিনি চার ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন।তার জ্ঞান ফিরেছে বাসায় ফিরে।তানিয়া রিদমকে নিয়ে গিয়াস সাহেবকে দেখতে এসেছে,মা জোর করে পাঠিয়েছিল ওদের। নাহয় রিদম আর তানিয়া কারোরই ইচ্ছা নাই এমসিকিউ পরীক্ষা দেয়ার।

গিয়াস সাহেব বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে বলছেন,’জানো তোমরা!নিজেকে কাঁটা ছাড়া মাদার গাছ মনে হয়!মাদার গাছের পরিচয় তার কাঁটা দিয়ে,আর সেই গাছেই যদি কাঁটা না থাকে তবে কেউ মূল্যায়ন করবে?আমার জীবনটা সেরকম হয়ে গেছে।যাই করিনা কেন ডোজ খেতেই হয়।মানসিক অবসাদগ্রস্ত রুগী হই গেছি।ইচ্ছে করছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে একবার ঘুরে আসতে’

কালাম বলে,’স্যার আপনি ওদের সাথে থাকবেন নাকি?এতবড় প্রতিদান দিবেন?’

‘আরেহ না আমি তো যাবো পাগলদের দেখতে।তাদের দেখলে মনটা ভাল হয়ে যাবে।নিজেকে বুঝাতে পারবো আমার চেয়েও পাগল আছে দুনিয়াতে।’

কালাম মাথায় হাত দিয়ে চলে যায়।সে বের হতেই তানিয়া আর রিদম ঢুকলো রুমে।রিদমকে দেখে গিয়াস সাহেব চটে গেলেন।দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলেন,আজ এই রুমে তানিয়া না থাকলে ওর খবর ছিল!ওর কারণেই পিংকিকে পাহারা দিতে এতদূর যেতে হলো হুইল চেয়ার নিয়ে,১৭০০টাকা লস হলো!’

‘আঙ্কেল এখন কেমন আছেন?’

‘দেখতেই তো পারছো মরেও বেঁচে আছি’

‘জ্বী?বুঝলাম না’

‘টুকু,উনি বুঝাতে চাইছে বেঁচেও মরে আছেন’

‘ওহ আচ্ছা।আঙ্কেল আমি আপনার জন্য ড্রাগন ফল এনেছি।শুনলাম বান্দরবনে নাকি আপনার ড্রাগন ফল নিয়ে মন খারাপ হয়েছিল?’

‘তোমাদের বংশ এমন কেন?যেটা দিয়ে এক্সিডেন্ট হয় সেটার নামে ফল আনো!আশ্চর্য! ‘

তানিয়া ও তব্দা খেয়ে গেলো।এ লোক কথায় কথায় এত চটে যায় কেন?সে আর ওখানে থাকলোনা চুপটি করে বেরিয়ে গেলো রিদমকে নিয়ে।
—–
রিদম পিংকিদের বাসা থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল তখন পান্না এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’বাবা বান্দরবন থেকে আসার সময় কিছু আনতে পারেনি। বাবার কাছে টাকা ছিল না।’

এই বলে সে হাত পেতে ধরে।তানিয়া এসে সেও শুনতে পায় পান্নার এ কথা।তখন সে আফসোস করে বলা ধরে রিদমের কাছে টাকা নেই,সে কিনতে পারেনি কিছু।তানিয়া ওকে কিনে দিবে।
কিন্তু তানিয়াকে অবাক করে দিয়ে রিদম পকেটের ভেতর থেকে একটা মালা নিয়ে পান্নার হাতে দেয়।
পান্না তো ভীষণ খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
তানিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল রিদমের দিকে।সে জানতে চাইলো এটা কেনার টাকা রিদম কই পেয়েছে।তখন রিদম জানায় তাকে মা সবজি কিনার জন্য যে টাকা দেয় তার থেকে বাঁচিয়েছে।

‘বাহঃ কি ভালুবাসা’

‘টুকু তুমিও মজা নিচ্ছো?পান্না হচ্ছে আমার সফটকর্ণার’

‘এ্যাহ?সফট কর্ণার?তোদের বয়সে সফট কর্নার জানা চেনা তো দূরের কথা,এই বয়সে আম্মু আমাদের সফট ফুড দিতো।যাকে বলে সেরেলাক’

আর কথা না বাড়িয়ে রিদম তানিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেছে।ওখানে আর এক মূহুর্ত থাকলে গিয়াস সাহেব আবার এমসিকিউ পরীক্ষা শুরু করে দিবে।
——
রাতের খাবার খেয়ে ইশান আর তিথি চলে আসতে চেয়েছিল কারণ পরেরদিন তানিয়ার গায়ে হলুদ।অনেক অনেক কাজ। কিন্তু মা কিছুতেই তাদের আজ রাতে যেতে দিবেন না।জোর করে রেখেই দিলেন।
তিথি ভারী ডিজাইনের শাড়ী পরে এসেছিল।খুবই ভারী।এখন এই শাড়ীটা বদলে সুতির একটা শাড়ী কিংবা সেলোয়ার সুট পরলে আরাম লাগতো,ঘুম ও আসতো।

ইশান মায়ের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে রাত সাড়ে দশটার দিকে রুমে এসে অবাক হয়ে যায়।তিথি ওর একটা শার্ট পরে ওয়ারড্রবের উপর উঠে বসে বসে পেয়ারা খাচ্ছে।

ইশান কোমড়ে হাত রেখে বলে,’আমি কাল গায়ে হলুদে যে শার্ট পরবো বলে ভেবে রেখেছিলাম,ওটাই পরতে হলো?’

‘কি করতাম?আমার শাড়ী জামা সব জাপানে নিয়ে গেছিলাম একটাও নেই এখানে,তামিয়ার কাছে চাইতে গিয়ে দেখি তার রুম ভেতর থেকে লক করা আর সে নাকি ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে বুয়া বললো।’

‘নাম!’

‘উহু!’

ইশান কাছে এসে তিথির পায়ের পাতা মুঠো করে ধরতেই তিথি লাফ দিয়ে নেমে যায়।নামার সময় ইশান ওকে ধরে ফেলে।দুজনেই খিলখিল করে হাসছিল,তিথির পায়ের পাতার সুরসুরি লাগায় তার হাসি আর থামছিলই না।
——
‘হে!কে মরে গেছে?’

‘বললাম খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।খাবেন না কিছু্?’

‘ওহ!ঐ রিদম কোথায়?গেছে নাকি এখনও আছে?সারাদিন আমার বাসাতেই থাকে ঐ ছেলে।আমার বাসায় এত কি তার?’

পিংকির মা গাল ফুলিয়ে বললেন,’বাসায় আসবেনা তো কি করবে?আপনি যে দিনে ১০০বার এক্সিডেন্ট হোন তার জন্যই তো আপনাকে দেখতে আসে’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৪৪+৪৫

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৪
আফনান লারা

মিসেস আরাফাত অনেক বিরক্ত হচ্ছেন।গিয়াস সাহেব বকবক পকপক করে ওনার মাথাটাকে ঝাঁঝরা করে ফেলছেন।ইচ্ছে করছে ধরে হুইল চেয়ার থেকে ফেলে দিতে।

‘কি হলো আপা,কিছু বলছেন না যে?’

‘না ভাবছি!’

‘কি ভাবছেন? ‘

‘ভাবছি আমার বোধহয় বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত।প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে’

‘তা তো হবেই,আপনার শুনলাম দুটো মেয়ে’

‘একটার বিয়ে হয়ে গেছে।আর অন্যটাকে নিয়ে আমার মোটেও চিন্তা নেই।মাথা ধরেছে অন্য কারণে’

‘কি কারণে?’

‘আক্কল মানুষের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। ‘

এটা বলে তিনি চলে যান।গিয়াস সাহেব গালে হাত রেখে ভাবছেন কি হচ্ছে,কি বলছে?আর কি ঘটছে?
ভাবতে ভাবতেই তিনি দেখলেন পিংকি রিদমকে দেখে মিটমিট করে হাসছে।ওমনি তার গায়ে যেন কারখানার আগুন লেগে গেলো।ধমকে পিংকিকে ডাকলেন নিজের কাছে,এরপর ওখানেই বসিয়ে রাখলেন।
পান্না রান্নাঘরে তানিয়ার সাথে গল্প করছিল,তানিয়া তার নতুন বাসা নিয়ে বলছে আর পান্না মনযোগ সহকারে সেসব শুনছে।
তিথিও এসে যোগ দেয়।তানিয়া ওকে দেখে চায়ের কেটলিতে চাপাতা ঢেলে বলে,’কি হলো টুকু?এই গরমে বাসার ভেতর হিজাব পরে আছো কেন?আমাদের কি তোমাদের মতন এসি আছে?’

‘নাহ আসলে একটু ঠাণ্ডা লাগছে’

‘তাহলে চায়ে তুলসি পাতা দেবো?’

‘দিতে পারিস। আচ্ছা পিংকিকে তো চিনলাম।ও কে?’

‘ওকে চিনলেনা?অবশ্য ও তো বেশি বের হয়না।পিংকির ছোট বোন পান্না’

‘ওহ!!এবার চিনলাম।কেমন আছো বাবু?’

‘এই তো ভাল। আপনি খুব কিউট দেখতে,আর আপনার বর ও’

তিথি মুচকি হাসতে গেলো ওমনি তানিয়া দাঁত কেলিয়ে বলে,’কি?কেমন কাটলো বিদেশী জীবনযাপন? এখনও সেই টম এন্ড জেরি ভাব চলছে নাকি রোমিও জুলিয়েট হয়ে গেছে?’

‘তোর যে দুলাভাই! অভ্যাস জানিস তো!আমাকে পনেরো ঘাটের পানি খাইয়ে তারপর ছেড়েছে।’

‘তারপর?এখন ঠিক হয়েছে তো সব?’

‘আপাতত ঠিক।দেখি সামনে কি হয়’
——–
গিয়াস সাহেব রিদমের দিকে গাল ফুলিয়ে রেখে তাকিয়ে আছেন,কোনো কথা বলছেন না। পারছেন না উপর দিয়েই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।
রিদম আর সইতে না পেরে উঠে ওখান থেকে পালানো ধরলো ওমনি ইশান এসে ওকে ধরে আবার বসিয়ে দেয় পাশে।এরপর ফিসফিস করে বলে,’এটাই সেই পিংকি?’

‘হুম,আর ঐ তো রান্নাঘরের কিনারায় হেলানো দোলানো পান্তুয়া ‘

‘পান্তুয়া? আমি শুনলাম ওর নাম পান্না’

‘ঐ তো আদর করে ডাকি,পান্তুয়ার মতন দেখতে তো তাই’

‘আদর করে?সিটের প্যাজেঞ্জার বদলেছে?’

‘ছিলোই বা কবে!আমি এখনও ছোট।ওদের কথা বাদ দেন,আমাকে একাই বিদেশ নিয়ে চলেন এখানে এত ঝামেলা ভাল লাগেনা’

‘কিসের ঝামেলা?শুনি একটু, দেখি বিদেশে না গিয়েই সমাধান করে ফেলতে পারি কিনা’

‘সমস্যা হলো গিয়াস আঙ্কেল মনে করেন আমি তার মেয়ে পিংকিকে পছন্দ করি,এদিকে পিংকিও আমাকে পছন্দ করে।এইটুকুই চলছিল কিন্তু মাঝখানে পান্না এসে যায়।এবার পান্নাও আমাকে পছন্দ করে,কিন্তু গিয়াস আঙ্কেল তার মেয়ে পিংকিকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করেন’

‘ওহ মাই গড!এই দেখি তুলকালাম বাঁধিয়েছো।আচ্ছা আমি বুদ্ধি দিচ্ছি।
যখন অনেকবছর আগে আমি তোমার টুকুকে পছন্দ করতাম সেসময়ে আমাকে কেউ পছন্দ করতোনা,তোমার বোন ও না। কিন্তু আমি যখন প্রতিষ্ঠিত হলাম তখন তোমার বোন সমেত আশেপাশের সব মেয়েরা আমাকে পছন্দ করতে লাগলো।
এমনটা হলো কারণ আমি সেই আগের যুগে রিজেকশান দেখে দমে যাইনি,চেষ্টা করে গেছি বড় কিছু করার।আমি পেরেছি ও।
তোমার কাছে প্লাস পয়েন্ট হলো কেউ তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াই পছন্দ করছে।কিন্তু তোমায় দেখতে হবে জীবনের ঐ সময়টাতে কে তোমার পাশে থাকবে।মানে যখন তুমি একটা পরিপূর্ণ বয়সে পা রাখবে,প্রতিষ্ঠিত হবে, তোমার বিয়ে করা জরুরি হবে,সময় হবে, তখন তোমার জন্য কে থাকছে,রয়েছে তাকেই তুমি বেছে নিবে।তাই এই সুন্দর সমাধানটা পেতে হলে আগে তোমাকে সব ছেড়ে ক্যারিয়ারে মনযোগ দিতে হবে।বুঝেছো?’

‘বুঝেছি,কিন্তু যদি তখন এরা দুজনই থেকে যায়,তবে কাকে বেছে নিবো?’

‘প্রতিষ্ঠিত হওয়া এত সহজ পথ না।এই ধাপ গুলোতে তোমার একটা মানসিক শান্তির জায়গা গড়ে তুলতে হবে।এই দুজনের মাঝে যে তোমায় মানসিক শান্তি দেবে তাকেই তুমি বেছে নাও।’
——-
‘আপা আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’

‘হু,কে!!!’

‘আমি আমি’

মিসেস আরাফাত লাফ দিয়ে উঠে বসলেন।গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে দরজার ফাঁক বরাবর ড্রয়িং রুম থেকে এ কথা বললেন।মিসেস আরাফাত বুকে থুথু দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলেন।
জীবনে এরকম মেয়ের বাপ তিনি চোখে দেখেন নাই।আজ চোখে দেখে নিলেন।এই লোকটাকে একটা শাস্তি দেয়া দরকার।

‘আচ্ছা ভাই,আপনি যে মেয়ে বিয়ে দিবেন।আপনার মেয়েরা শিক্ষিত,মার্জিত না হলে তো ইশানের মতন ছেলে পাবেন না’

‘আরে রাখেন ঐসব।সুন্দর হইলেই হয়,আর কিছু লাগেনা।মাশাল্লাহ আমার মেয়ে দুইটা একেবারে কাশফুলের মতন নরম আর সুন্দর’

‘তিথিও সুন্দর।কিন্তু আমার ছেলে তিথিকে কেন বিয়ে করেছে জানেন?’

‘কেন?’

‘কারণ সে মার্জিত এবং শিক্ষিত’

‘তো আমার মেয়েরাও শিক্ষিত হবে,মার্জিত হবে’

‘সেটার জন্য তো সময় লাগবে,অনেক বছর লাগবে।আপনার কি উচিত না অপেক্ষা করা?’

‘কত বছর?’

‘আমার বোনের ছেলেরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এ বছর।দুজনে জমজ।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলে ওদের ইশান জাপান নিয়ে নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিবে,ভাল পোস্ট।তাদের জন্য রেখে দেন নাহয়!পড়ান,মেয়েদের বিয়ের বয়সটাও হোক।এবার বিয়ের বিষয়টা বন্ধ করলে ভাল হয় না ভাই?’

গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকলেন।অনেকক্ষণ পর বললেন,’কিন্তু আমি শুনেছি তিথি অনার্সের একটা বিষয়ে ফেল করেছে,ইম্প্রুভ দিয়েছে।তাহলে সে শিক্ষিত হয় কি করে?’

‘এটা সেই শিক্ষিত না ভাই।এই শিক্ষিত মানে যে বাচ্চাকাচ্চাকে একটা নূন্যতম জ্ঞান দিতে পারবে যেটা অশিক্ষিত মেয়ে দিতে পারবেনা।’

‘তা অবশ্য ঠিক।এই তো মিলে গেলো!আমার পিংকি অংকতে ৩পাইছে।তার মানে সেও তিথির মতন বর পাবে’

(‘এই লোকটা জঘন্য একটা লোক!’)

‘কিছু বললেন আপা?’

‘না বলেছি ঠিক বলেছেন।’
——-
তানিয়া চায়ের ট্রে নিয়ে চলে গেছে,তার পিছু পিছু পান্নাও গেছে।
তিথি তাকের সাথে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছিল।সেসময় রান্নাঘরে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে সে না দেখেই বলে,’তানু? নে তোর চা খেয়ে নে’

এ কথা শেষ করার আগেই মাথায় ওড়নার বাহিরে দিয়ে কানের কাছে কারোর ঠোঁটের আওয়াজ শুনতে পেলো।সেই ঠোঁটজোড়া বলছে,’প্রতিশোধ শেষ করি?’

তিথি ভয় পেয়ে পেছনে তাকায়।
‘প্রতিশোধ? এখনও বাকি?’

ইশান একটু ঝুঁকে বলে,’শুরুই বা হলো কবে?’

‘আর কি করতে চান?’

‘যদি বলি এই খানেই…..?’

তিথি চোখ বড় করে পিছিয়ে যায়।ইশান ওর হাতটা টেনে ফাউন্ডেশন দিয়ে বলে,’এটা লাগালে দাগ দেখা যাবেনা আই গেস!”

‘আপনাকে কে বলেছে শুনি?’

‘অনলাইনে দেখেছি,এই টুকু বুঝি’

এই বলে ইশান ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে যায়।
তিথি বলতে থাকে সে চা খাবে,তার চা খাওয়া দরকার।
ইশান হাসতে হাসতে চলে গেছে।
এরপর ড্রয়িং রুমে এসে সে তানিয়াকে বলে তার কাপটা তিথিকে দিয়ে আসতে। সে রান্নাঘর থেকে এটা এনেছে।
——
‘আপা আরও একটা কথা ছিল। বলি?’

‘না,আমি চা খেয়ে নিই?’

‘আপা চায়ের আড্ডাতেই তো মানুষ আলাপ আলোচনা করে।বলি?শুনুন না একটু!আপনি আমার মায়ের পেটের বোন নাহলেও আপনাকে দেখে আমার কেমন রগে রগে টান খাচ্ছে, যেন আপনি আমার মায়ের নাড়ি-ছেঁড়া ধন!’

‘কিহ!’

‘মানে আমারই আপন বোন, দেখুন না ডান হাতের রগটা পু পু করেছে’

‘কই দেখছিনা তো’

‘আপনি দেখবেন কিভাবে!রগটা তো আমার। যা বলছিলাম শুনুন,ঐ ছেলে দুটোর ছবি দেখাতে পারবেন?মানে নিজের হবু মেয়ে জামাইদের একটু দেখে নিতাম।চোখের শান্তি বলেও তো একটা ব্যাপার আছেনা?’

মিসেস আরাফাত ইশানকে ডেকে বললেন,’গুলু- চুলুর ছবি আছে তোর কাছে?’

‘কেন?’

‘ওনাকে একটু দেখানোর জন্য’

‘এক মিনিট আপা,গুলু -চুলু কি আমার হবু মেয়ে জামাইদের নাম?’

‘আমার বোনের ছেলেদের নাম।’

‘এটা কেমন নাম?নামের মধ্যেই ফাজলামি মিশে আছে।ছেলেগুলা আর কিরকমই বা হবে।আমি ছবি দেখবোনা’
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৫
আফনান লারা

গিয়াস সাহেবের সাথে পাল্লায় না পেরে মিসেস আরাফাত সেদিনই বাসায় ফিরে গেছেন।কিন্তু গিয়াস সাহেব যাবেন না,তার হাতে এখনও ইশান,তিথি আছে। ওদের কচলিয়ে কচলিয়ে পাত্র খুঁজে পেতেই হবে।মেয়ে বিয়ে দিলে এই বংশেই দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।
ইশান অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে টুকুস করে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেছে, এদিকে তিথি পালাতেই পারছেনা।রুম থেকে বের হলেই গিয়াস সাহেব কথা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরছেন।কি একটা ঝামেলা!

গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েন একটা সময়।তখন তিথি রিদমকে দায়িত্ব দেয় গিয়াস সাহেবকে তুলে বাসায় দিয়ে আসতে,উনি ঘুমাচ্ছেন,কিছু টের পাবেন না।
রিদম হাতেপায়ে ধরে মানা করতে থাকলো,তাকে দিয়ে এই অসাধ্য সাধন হবেনা।কিন্তু তিথি আপু তাকে আশ্বাস দেয়,সে যদি এই অসাধ্য সাধন করতে পারে তাহলে তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য তিথি ইশানের কাছে অনুরোধ করবে।
রিদম আর কি করবে!
গিয়াস সাহেবের হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে লিফটে ঢুকলো।লিফটের দরজা আটকাতে যেতেই পাশে এসে দাঁড়ায় পান্না।রিদম ওকে দেখে যেন আশার আলো খুঁজে পেলো।একা একা যেতে কেমন যেন ভয় ভয় কাজ করছিল,এই বুঝি আঙ্কেল জেগে যায় আর ওকে ধরে মারপিট শুরু করে!
চলতে চলতে রিদম পিংকির কথা জানতে চায় পান্নার কাছে।কারণ তাকে কোথাও দেখেনি আসার সময়।

‘আসলে আপু তো তিথি আপু আর তানিয়া আপুর কাছে।চকলেট ভাগ করছে’

‘তোমার ভাগ লাগবেনা?’

‘বুবু বলেছে আমার ভাগটা নিয়ে আসবে।’

গিয়াস সাহেব ঘুমে থেকে বলে উঠলেন,’পিংকি আমার আদরের মেয়ে রিদম! আমি ওরে কোটিপতি ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।সে তোমার হতে পারেনা না না না না!’

রিদম ওমনি থেমে যায়।ঘুমে থেকেও মানুষ হুমকি দিতে পারে তা ওনাকে না দেখলে রিদম জানতোই না।ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।পিংকিদের বাসার কাছাকাছি আসতেই গিয়াস সাহেব উঠে পড়লেন।ওমনি পান্না রিদমকে সরিয়ে নিজে হুইল চেয়ারটা ধরে বলে,’কি হলো বাবা?’

‘আমাকে বাসায় আনলি কেন?’

‘অনেক রাত হয়ে গেলো তাই’

‘তার মানে পিংকি ঐ বাসাতে একা একা?’

রিদম চুপটি করে লুকিয়ে পড়েছিল,পান্না ওকে বাঁচাতেই এভাবে ওর পাশে পাশে এসেছিল, সে তো শুরুতে বুঝতে পারেনি।গিয়াস সাহেব যদি দেখতেন রিদম ওনাকে নিয়ে আসতেছেন তাহলে রেগে যেতেন।

এদিকে তিনি এখনও রেগে আছেন। কারণ হলো তার ধারণা পিংকি ঐ বাসায় রিদমের কাছাকাছি থাকলে সমস্যা আছে।
তাই পান্নাকে বললেন ওনাকে নিয়ে আবার চলতে।কিন্তু ঐ সময় ওনার স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে এসে বললেন,’এটা কি ব্যাপার বলুন তো!একে তো বিনা দাওয়াতে আজ সারাটাদিন তিথিদের বাসায় থাকলেন,এখন আবার বাসায় ফিরে আবার ঐ বাসায় যেতে চাইছেন?’

‘আহা তুমি বুঝতেছোনা,পিংকি রয়ে গেছে’

‘থাকুক। পান্না গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।পান্না যা তো,দ্রুত গিয়ে পিংকিকে নিয়ে আয়’
——
পান্নার পাশে পাশে রিদম ও আসছে।চলতে চলতে রিদম সেদিনের ঐ ছেলেটার কথা জানতে চাইলো, এরপর আর ডিস্টার্ব করেছে কিনা জানার জন্য।

‘আচ্ছা আপনি নাকি বিদেশ চলে যাবেন,শুনেছি’

‘হুম।জাপান যাবো,ভাল দেশ।ভাল না?’

‘ঐ ছেলেটা যদি আমায় আবার ডিস্টার্ব করে?’

‘তাহলে ফোন…..ওহ হো!ফোন দিয়ে তো লাভ হবেনা।ওখানে থেকে আমি তো আর বাঁচাতে পারবোনা।কি করা যায় বলোতো?’

‘যাইয়েন না’
——–
ইশান তিথিদের বাসার কাছের পার্কটাতে বসেছিল,হঠাৎ মনে হলো তিথিকে দরকার।তাই একটা দোকান থেকে ফোন নিয়ে তানিয়ার নাম্বারে কল দেয় সে,তিথিকে পার্কে আসতে বলে।তিথি মানা করে তাও ইশান জোরাজুরি করায় সে রাজি হয়।
মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে সে পার্কটাতে চলে আসে।দুজনে বেঞ্চের মাঝ বরাবর বসে। তিথি পা দোলাতে দোলাতে বলে,’এই পার্কে আদিলের সাথে বহুবার দেখা করেছে সে’

ইশান চুপ করে একটা ফুলগাছ দেখছিল ল্যাম্প পোস্টের আলোয়।

‘জানিস তিথি?আমি তোকে মাফ করে দিয়েছিলাম সেই একটা দিনে।যেদিন আদিল তোর গলার দিকে তাকানোই তুই ওড়না টেনে দিয়েছিলি।
আদিলের হাত বহুবার ধরতে চেয়েছিলি তাতে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু দেহের কিছু কিছু অংশ আছে যাকে কেবল আমিই ছুঁতে চেয়েছিলাম,আমিই সেই নজরে দেখতে চেয়েছিলাম।
সেদিন আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমার ইচ্ছে হয়েছিল তোকে ঐদিনই বউ করে আনি।কিন্তু তখনও আমার সেই প্রোপার্টি হয়নি যার কারণে দমে থাকতে হয়েছিল।’

‘এতকিছু দেখলেন কি করে?’

‘আমি সেদিন ঐ জায়গাতেই ছিলাম। রেস্টুরেন্টে তোর আর আদিলের সামনের সিটে।দুদিন আগে দেশে ফিরে তোদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমি ফলো করেছি।তোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি’

‘ব্লু শার্ট?’

ইশান চমকে তাকায় তিথির দিকে।তিথি হাসি দিয়ে বলে,’আমার রুমাল ছিল টেবিলে।অন্যমনস্ক হয়ে যখন হুশ আসে তখন আর রুমালটা খুঁজে পায়নি। এরপর দেখলাম একজন ভদ্রলোক চলে যাচ্ছেন তার হাতে আমার রুমাল ঝুলছে।শুরুতে খেয়াল করতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলাম ওটা আমারই রুমাল ছিল তখন আর আপনাকে কোথাও পাইনি।অবাক করার বিষয় হলো আদিল বারবার বলছিল এক রুমাল গেলে আরেক রুমাল আসবে।
আচ্ছা সেসব বাদ,আমার জানতে ইচ্ছা করে,অনেক আগে মাফ করে দিলে এত কষ্ট কেন দিছেন? ‘

‘কারণ মাকে যে কষ্ট দিছিস,তার দেনা রয়ে গেছিলো। ‘

‘এখন কি সেসব শেষ?আন্টি মনে হয় আমাকে এখনও মাফ করেননি’

‘করবে,কোলে নাতিপুতি ধরিয়ে দিলে দেখবি আমাকেও চিনবেনা।শুধু তুই আর তুই!’

‘এখন এই সময় এখানে ডাকলেন কেন?রুমেও তো কথা বলা যেতো’

‘গিয়াস আঙ্কেলের ভয়ে।উনি কি গেছেন নাকি এখনও পটরপটর করছেন?’

‘রিদমকে দিয়ে পাঠিয়েছি’

‘রিদম অনেক স্মার্ট। ওকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে মনে হয় ভাল হতো।কিন্তু ওর তো এসএসসি শেষ হয়নি।এখন নিলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে।আগে এসএসসিটা দিক।আমি নিয়ে আসবো’
——-
পান্না আর পিংকি একা একা বলে তিথির আম্মু রিদমকে বললেন ওদের দুজনকে বাসায় দিয়ে আসতে। রিদম রাজি হয়ে দুজনকে নিয়ে চললো।
পিংকি হাঁটতে হাঁটতে বলে,’কাল স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে।তুমি যাবে তো রিদম?’

‘হুম,সব গুছিয়ে নিয়েছি’

পান্নার মন খারাপ হলো।সে প্রাইমারিতে বলে ওদের সাথে যেতে পারবেনা,আর পান্নার স্কুল ও আলাদা।মন এত খারাপ হলো যে রাস্তায় আর টু শব্দ টুকু ও সে করেনি।
বাসায় পৌঁছে রিদম ওদের বাই বলে পেছনে তাকাতেই দেখে গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে আছেন।তার কাজের একটা লোক তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

‘কি বাছা! বডিগার্ড হইছো নাকি?’

‘না আঙ্কেল,আম্মু বললো ওরা মেয়ে মানুষ,কি না কি হয়ে যায় রাতের বেলা।কত দুষ্টু ছেলে আছে তো এলাকায়’

‘তাদের নিয়ে আমার চিন্তা নাই।আমার একমাত্র চিন্তা তোমায় আর পিংকিকে নিয়ে।তুমি ওর থেকে দূরে থাকবা এ কথা কি দরখাস্ত করে পাঠাতে হবে?’

রিদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।গিয়াস সাহেব আবার বললেন,’যত কিছুই করো না কেন!আমি তোমাদের বিয়ে কিছুতেই মানবোনা।কালাম আমাকে নিয়ে চলো’
——
ইশান তিথিকে নিয়ে ফাঁকা পথে হাঁটছে,তিথির হাতটা ঝুলছিল,ইশান হাঁটতে হাঁটতেই ওর হাতটা শক্ত করে ধরে।তিথি চুপ করেই ছিল তখনও।
চলতে চলতে একটা সময়ে ইশান থেমে যায়।একটা গাছের নিচে দুজনে দাঁড়িয়ে,মৃদু হাওয়ায় গাছের হলুদ রঙের পাতা গুলো ঝরে ঝরে পড়ছিল।
ইশান তিথির মাথার ওড়নাটা টেনে দিয়ে বলে,’যদি তুমি বলো আমি হবো তোমার শেষ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি।যেটাকে তুমি কখনওই ছিঁড়বেনা ,বরং লিখে রাখবে নিজের নাম অথবা হাতে আঁকা কোনো ফুল।যদি তুমি বলো আমি ভুলে যেতে পারি তোমার দেয়া সেই আঘাত যে আঘাতে আজ আমি এই জায়গায়,,,,যদি তুমি একবার বলো “তোমায় আমি ভালবাসি” তবে আমি পৃথিবীর ভালবাসার সব সংজ্ঞাকে সত্যি করে এনে দেবো তোমার হাতে’
——
পরেরদিন ভোর পাঁচটায় পিকনিকের বাস স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকলো,সবাই এক এক করে আসছে। রিদম পিংকির জন্য সিট রেখে বসে ছিল ওমনি বাইরে পিংকিকে দেখে সে সিট থেকে ব্যাগটা সরিয়ে রাখে।কিন্তু রিদমের মন্দ ভাগ্য,আজকে পিংকির সাথে গিয়াস সাহেব ও যাবেন।তিনি হুইল চেয়ার সমেত বাসে উঠেছেন কাজের লোকের হেল্পে এবং রিদমকে সরিয়ে বাসের সেই সিটেও বসেছেন।

‘কি?ভাবছো আমার মেয়ের সাথে বসে বান্দরবন যাবে,বসাচ্ছি।বান্দর কোথাকার!’
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৪২+৪৩

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪২
আফনান লারা

ইশানের ইচ্ছে ছিল আরও কটাদিন তিথিকে কষ্ট দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া সে আসলে কি অন্যায়টা করেছিল অতীতে।কিন্তু তিথির কাছে হেরে বসে আছে।অতীতে হেরে গিয়েছিল আজ আবার হেরে গেলো।
ইশান মনে করেছে তিথি ওকে বাধা দেবে,কারণ তিথি তো ইশানকে ভালোইবাসেনা।
কিন্তু সে এটা না করে নিজের ইচ্ছাতেই ইশানকে কাছে আসতে দিলো।
ইশান ওকে ছুঁতে গিয়ে শুধু একবার বলেছিল,’যদি তুমি বলো তবেই আমি আজ নিজেকে মিলিয়ে নিবো তোমার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে’

তিথি মাথা নাড়িয়েছিল।হুট করে এরকমটা হয়ে যাবে তারা দুজনেই হয়ত ভাবেনি। আচমকা হওয়া ঘটনাগুলো মনে দাগ কাটে বেশি।
ইশান অনুমতি ছাড়া এসব কিছুই করতোনা,আর যাই হোক এই একটা বিষয় যেটা অনুমতি ছাড়া করলে মেয়েরা আজীবন মাথায় রাখে।
(বুঝে নেন ক,খ,গ,ঘ সব হই গেছে।এত বলতে পারবোনা,আমার শরম করে🥱)
—-
তিথি সকাল সকাল উঠে বসে ইশানের ফোনের আওয়াজে।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা লোক পাংপুং ছা কত কি বলে গেলো যার মাথামুণ্ড কিছু বুঝলোনা তিথি।তাইই সে বাধ্য হয়ে ইশানকে উঠাতে থাকলো।চোখ ডলতে ডলতে সে দেখে ইশান উদম শরীরে ঘুমায়, এটা দেখে তিথি একটা মূহুর্তের জন্য চমকে গেলেও কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই ইশানের পিঠ থেকে হাতটা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দশ কদম দূরে চলে যায় সে।হেসে হেসে কাল যে সে অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে এটা মনে করে মাথা ঘুরছিল ওর।আর ইশানই বা কেমন করে সব ভুলে গিয়ে ওকে মাফ করে দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছে!
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বড় করে এসবই ভাবছিল সে ওমনি ইশানের কল আবারও আসায় এবার সে নিজেই উঠে বসে।ফোনটা ধরে সেও জাপানি ভাষায় উত্তর দেয় তারপর ফোন রেখে দেখে তিথি দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে

‘কি?সব ঘোরের মতন লাগছে?’

‘না মানে হ্যাঁ।বিশ্বাস হচ্ছেনা’

‘এদিকে আয় তো’

তিথি ভ্রু কুঁচকে বলে,’কেন?’

‘প্রমাণ দেখাবো’

‘না না থাক।আমার বিশ্বাস হয়েছে’

এটা বলে তিথি দৌড় দিলো।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রেডি হয়ে নে।এয়ারপোর্ট থেকে কল এসেছে।অফিসের সবাই বিদায় দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।এমনিতেও লেট হয়ে গেলো।
——-
পিংকি গোসল করতে অনেক সময় লাগায়,তাই পান্নাই মায়ের কাছ থেকে নাস্তা নিয়ে এসে রিদমের সামনে দিয়েছে।গিয়াস সাহেব নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন।
যখনই রিদম কথা বলার জন্য মুখ খুললো ওমনি তিনি চোখ মেলে বললেন,’কে মরে গেছে?’

‘না আঙ্কেল,আমি বলেছি কমলার টুকরা পড়ে গেছে’

‘ওহ!তাহলে কেউ মরে নাই।না জানি কবে আমি মরে যাই।দুইটা মেয়ে বিয়ে না দেয়া মানে মাথার উপর দুইটা আটার বস্তা, দেখতে হালকা হলেও বয়ে বেড়ানো ওজনের’

‘হুম।আমার ও তো দু বোন’

‘তোমার আর কি!তোমার বড় বোন তো প্রেম না করে করে শেষমেশ এমন একজনকে ধরেছে যে একাই তোমাদের বংশের সবার বিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালে দিতে পারবে।তা বাবা ঐ ছেলের কোনো ভাই টাই আছে নাকি?তাহলে বুক করে রাখতাম আমার পিংকি আর পান্নার জন্য’

‘নেই,তবে ওনাকে বললে বিজন্যাস পার্টনার খুঁজে দিতে পারবে ‘

গিয়াস সাহেব তো মহাখুশি হয়ে গেলেন।নড়েচড়ে বললেন,’তবে তাই হোক।তোমার বোনের বিয়েতে একবার গিয়ে তোমার দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে নিবো’
—–
ইশান এয়ারপোর্টে এসে চলে যাবার সময় কুয়িনার বাবার হাতে একটা নেকলেস বক্স ধরিয়ে বললো কুয়িনার বিয়ের গিফট।সে যেদিনই বিয়ে করুক না কেন,এটা যেন তিনি কুয়িনাকে দেয়,কারণ কুয়িনার বিয়েতে সে আসবেনা,সুযোগ থাকলেও আসবেনা।
তিথি ডায়মন্ডের সেটটা উঁকি দিয়ে দেখছিল,তার ডায়মন্ড খুব একটা পছন্দ না তারপরেও সেটটা দেখতে অসাধারণ ছিল,মনে মনে একটু হিংসা কাজ করছিল।বউ হিসেবে তার ও তো প্রাপ্য ছিল এটা!
এসব ভাবতে ভাবতেই তিথি ইশানের সাথে প্লেনে উঠে যায়।তিথি মোটেও মন খারাপ করে বসে ছিল না কিন্তু সে যখন উঁকি দিয়ে সেটটা দেখছিল ইশান সেটা লক্ষ করেছে।তাই সে বসে বসে গ্যালারিতে ডায়মন্ডের অন্য একটা সেট দেখতেছিলো।তিথির আর বুঝতে বাকি নাই যে তার হাসবেন্ড তাকেও গিফট করবে।কিন্তু এটাই বিপদ।ডায়মন্ড দেখতে শুনতে ভাল হলেও পরে বিপদে পড়লে বিক্রি করা ঝামেলা।আর তিথি তো সংসারী মেয়ে তাকে তো এই টুকু ভাবতেই হতো।

‘আমাকে দিবেন?’

‘না তো,তানিয়াকে দিব ভাবছি।তুই তো ওর বিয়ের গিফট কিনলি,আমার ও তো কিছু দেয়া লাগবে’

‘দিবেনই যখন,,,স্বর্ণের কিছু দিন।পরে কাজে আসবে।তাছাড়া অনেকেই দেখলে শুরুতে বুঝবেনা ডায়মন্ড নাকি এমিটেশন।’

‘তবে তাই হোক’
——
রিদম অনেক কষ্টে বেঁচে ফিরছে।গিয়াস সাহেব যেভাবে কথার প্যাঁচে ওকে পেঁচাচ্ছিলেন,সে ভেবেছে না জানি আরও কত কি বলে আজ ওর বাসায় আসাটাই বাতিল করে দিতো।এ সংসারের মেয়ে জামাই যে হবে তার আর রক্ষে নেই!

বুকে থুথু দিয়ে রিদম চলেই যাচ্ছিল,তখনই বারান্দা থেকে পান্না ওর নাম ধরে ডাকে।
পান্নার ডাক শুনে রিদম পেছনে তাকায়

‘কি পান্তুয়া? ‘

‘বাবা বলেছে কারোর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে চাওয়া,ফুল দেয়া,বিপদে পাশে দাঁড়ানো এসব মানে প্রেম’

রিদম পান্নার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।কি বলবে সে নিজেও জানেনা।পান্না আবার বললো,’আমরা কি প্রেম করি?’

‘না’

‘তাহলে প্রতিদিন দেখা হয় কেন?’

রিদম পান্নার দিকে তাকিয়ে আছে।এর উত্তর কি দিবে তা ভাবতে যেয়েই বলে দিলো সে আর দেখা করবেনা।কথাটা পান্নার খুব খারাপ লাগলো।এতটাই খারাপ লাগলো যে সে ওখানেই কেঁদেই ফেলেছে।
——
রিদম বাসায় ফিরে দেখে তার বিশিষ্ট রুমটা খালি করে ফেলা হয়েছে যেটা আসলে তিথির রুম ছিল।
এর কারণ হলো ইশান আর তিথি বিয়ের এ কটাদিন এই রুমেই থাকবে
রিদম তো মহাখুশি,সে দুলাভাইকে আবার বোঝাবে তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য।দেশের এই জঞ্জাল তার ভাল লাগেনা,এ বয়সে দুটো মেয়ে টানাটানি করছে,আরেকটু বয়স হলে মনে হয় এলাকায় থাকা যাবেনা।
আপাতত রিদম ড্রয়িং রুমের সিঙ্গেল বেডেই থাকবে বলে ঠিক করা হলো।
ঐদিকে তানিয়া আজ সকাল থেকে বাসায় নেই।রকিব নতুন ফ্ল্যাট নিচ্ছে।সেটা দেখতে ওর পুরো পরিবার গেছে কিন্তু তানিয়াকে নিয়ে যাওয়া হলোনা কারণ বিয়ের আগে এত বর কনের সাক্ষাত ভাল দেখায়না বলে।কিন্তু তানিয়া তো তিথিরই বোন।
তাকে আটকায় কে?বিয়ের শপিংয়ে তাকে কেউ আটকাতে পারেনি,আর এত বড় একটা কাজের বেলায় তাকে আটকানো যাবে?
মায়ের পুরোনো শাড়ী আর মুখে কালি মেখে সে হাজির রকিবের নতুন ফ্ল্যাট দেখতে।ধরা খেলে বলবে সে কাজের বুয়া।
সবার আগে ধরা খেলো রকিবের কাছেই।কারণ তারা নিজেদের লোকরা ছাড়া বারতি লোক কেন আসছে। এখন কি কাজের বুয়ার দরকার আছে?

‘আপনি কে?’

‘ইয়ে আমি তো কাজের বুয়া।দেখলাম আপনারা নতুন উঠছেন তাই বলতে এলাম আমি ফিরি আছি।আমাকে কাজে রাখতে পারেন।রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারি।একেবারে একশোতে দুইশ’

‘তানিয়া?বিয়ের চারদিন আগে কেউ মুখে পাতিলের তলার কালি মাখে?ব্রণ উঠলে কি করবা?’

‘চিনে ফেললেন?’

‘বুয়াদের মুখ কালো আর পা সাদা হয়না’

তানিয়া জিভে কামড় দেয়।সে পায়ে কালি দিতে ভুলে গেছে।তখন সে ফিসফিস করে বলে,”চাচুমা যেন টের না পায়।আমি বাসা দেখতে এসেছি।সব রুমই সুন্দর তবে ঐ যে পশ্চিমের রুমটা ভাল লাগেনি’

‘তবে সেটা গেস্ট রুম হবে।এবার কি কনফার্ম করবো ম্যাডাম?’

‘জ্বী স্যার’

ওমনি মা এসে বললেন,’রকিব বাবা?এই মহিলা কে?এত চিপকাই কথা বলছিস কেন?’

‘আরেহ মা।দেখে যাও,নতুন বুয়া পেয়েছি’

‘ওমা তাই!আমি আরও ভাবছিলাম বুয়া কই পাবো বিয়ের সিজনে।উমমম দেখে তো কম বয়সী মনে হচ্ছে।তা কি কি কাজ পারো?’

‘মা সে রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারে’

‘এ কেমন কথা!এগুলাই তো আসল’

‘সে তোমার পা টিপে দিবে।কি বলো রেখে দিবো?’

‘তবে রান্না করবে কে?’

‘সেটা তানিয়া করবে।তাইনা বুয়া?’

তানিয়া দাঁতে দাঁত চেপে মাথা নাড়ায়।মা চলে যেতেই তানিয়া রকিবকে ঝাপটে ধরে ওর গালে চুমু খেয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওখান থেকে।মা যেতে যেতে ভাবছেন মেয়েটাকে চেনাপরিচিত মনে হলো।তাই তিনি আবারও পেছনে মুড়তেই দেখলেন রকিবের মুখে কালি আর সে চোরের মতন দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৩
আফনান লারা

ইশান আর তিথি এয়ারপোর্টে নেমে তাদের বাসার গাড়ীর অপেক্ষা করছিল তখনই তাদের দুজনের নজরে পড়ে একটা ব্যান্ডওয়ালার দল।হাতে লিফলেট লাগানো যাতে লেখা’ওয়েলকাম ব্যাক ইশান,তিথি’

ওরা দুজনে তো বেশ অবাক হলো।এটা কার কাজ হতে পারে!
দুজনে সেখানে দাঁড়াতেই ফুলের মালা পরিয়ে দেয়া হলো তাদের।
ভীড় থেকে বেরিয়ে এলো গিয়াসউদ্দিন,তাও হুইল চেয়ারে করে।

‘ইশান বাবা ভাল আছো?’

‘আপনি কে আঙ্কেল?’

তখন তিথি সালাম দিয়ে বলে এটা গিয়াস আঙ্কেল,ওদের প্রতিবেশী।

‘ওহ হো।কেমন আছেন?আর এসব কি?ঠিক বুঝতে পারছিনা’

‘কি আর বলবো বাবা!আমার অবস্থা তো দেখছোই।সেসব অনেক কাহিনী।সময় করে বলবো নাহয়।এখন আমার এখানে আসার অন্যতম কারণ হলো তোমাদের রিসিভ করা।দেখলে তো কেউ তোমাদের একটু নিতেও আসেনি,কিন্তু নো ওয়ারি হোয়েন গিয়াস উদ্দিন ইজ হিয়ার।’

‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

‘এবার চলো,আমি তোমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে এসেছি’

এই বলে তিনি তার কর্মচারীকে বললেন হুইল চেয়ার ঠেলার জন্য।
ইশান ফিসফিস করে বলে দূর সম্পর্কের আত্নীয়র এত খাতির আসছে কই থেকে।
তিথি ও বুঝতেছেনা আসলে এনার মতলব টা কি।
গাড়ীতে তিনি ইশান আর তিথির মাঝ বরাবর বসেছিলেন।তিথিদের বাসায় যেতে দেড় ঘন্টার মতন সময় লাগবে তাই এই সুযোগ টাকে তিনি কাজে লাগাবেন।

‘বাবা তোমার কি চাচাতো,ফুফাতো, মামাতো,খালাতো,হুদাতো কোনো ভাই নাই?’

‘হুদাতো মানে কি আঙ্কেল?’

‘মানে এমনি ভাই’

‘ওহ।আছে তো,অভাব নেই কিন্তু কেন?’

‘আমার না ফুটফুটে দুইটা মেয়ে আছে বুঝছো?একটার নাম পিংকি আরেকটার নাম পান্না।দুজনকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হয়।এতো আর কটা বছর পর তারা বিবাহযোগ্য হয়ে যাবে।তখন আমি যদি তোমার মতো একটা ছেলে না পাই তাহলে কি হবে বলোতো?যদি খারাপ কেউ জুটে তাহলে তো জীবনটাই গেলো’

তিথি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ছোট ছোট দুইটা মেয়ে যাদের এখনও নাক টিপলে দুধ বের হয়,তাদের নিয়ে এত চিন্তা!

ইশানের ও মাথা ঘুরছে।নিজের বিয়ে করেছে কত তিলিসমাতি করে, এখন আবার পাশের বাসার আঙ্কেলের মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।
আচ্ছা এটাই কি সেই পিংকি যার কথা রিদম বলেছিল? ‘

‘ঠিক আছে আঙ্কেল জানাবো’

‘তুমি কি জানাবে?ছেলে আছে কিনা সেসব কিছু তো বললেনা।’

‘আছে, থাকবেনা কেন?আপনি শুধু বলুন কিরকম লাগবে?’

‘তোমার মত চুল,তোমার মত দেহগঠন, তোমার মতন বাড়িগাড়ী,তোমার মতন ব্যবসা। আমার এত লোভ নেই,কিন্তু ঐ যে মেয়েরা ভাল থাকুক এটাই চাই’

তিথি বলে,’বাহ আঙ্কেল বাহ!একেবারে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির বংশ চাইছেন দেখছি’

ইশানের হাসি আসলো তাও সে নিজেকে অনেক কষ্টে দমিয়েছে।তিথি আবার বলে,’এরকম পারফেক্ট জামাইয়ের আবার কিছু সাইড এফেক্ট থাকে।যেমন উনি আমায় অনেক অত্যাচার করেন’

‘সেকি!কিরকম অত্যাচার?’
——–
রিদম শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিল,হঠাৎ মনে হলো পিংকির গায়ের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ। তারপরেও সেটাকে অদেখা করে সে গেমে মন দেয় কিন্তু এরপরই পান্নার গায়ের মিষ্টি গন্ধ নাকে আসতেই সে উঠে বসে।চেয়ে দেখে দুবোন সেজেগুজে এসে হাজির।রিদম হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে সেই সিঙ্গেল বেড থেকে নেমে খাটের তলায় চলে যায়।পান্না আর পিংকি ঘুরে ঘুরে উপরের ঝাড়বাতি দেখছিল।

‘বুবু,মনে হলো রিদম ভাইয়া ছিল এখানে’

‘আরে না,এখানে সে থাকলে তো কথাই বলতো।চল ভেতরের রুমে যাই’

‘না না,এভাবে কারোর বাসায় ঢুকতেই ভেতরের রুমে যাব কেন?আমরা এই খাটে বসে থাকি। তানিয়া আপু আসলে কথা বলবো’

এই বলে পান্না আর পিংকি এসে খাটের উপর বসে পড়ে।রিদম ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।

‘বুবু রিদম ভাইয়াকে যে দেখছিনা? ‘

‘এই তুই সারাক্ষণ রিদম রিদম করিস কেন?ও আমার বিএফ নাকি তোর?’

‘বিএফ মানে কি বুবু?’

‘আমি নিজেও জানিনা,ক্লাসে সবাইকে দেখলাম এরকমটাই বলে ছেলে বন্ধুকে ‘

পান্না ভাবছে তবে রিদম ও ওর বিএফই হবে।
——
গিয়াস সাহেব তার দুই মেয়েকে বলে গেছিলেন তারা যেন সেজেগুজে রিদমদের বাসায় চলে যায়,কারণ তিনি ইশানকে এনে ওদের দেখাবেন।

তেমনই হলো।ইশান আর তিথি বাসায় ঢুকতেই গিয়াস সাহেব তার মেয়ে দুটোকে ইশারা করলেন যাতে এসে সালাম করে।
দুজনে তাই করে।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রিদম কোথায়?’

তিথি তার মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।মা ইশানের কথা শুনে রিদমকে ডাকা শুরু করে।তখন রিদম খাটের তলা থেকে বেরিয়ে সালাম দিলো।

(‘বেয়াদব ছেলে!দুলাভাই বাসায় এসেছে আর সে খাটের তলায় বসে আছে!’)

কথাটা গিয়াস সাহেব বিড়বিড় করে বললেন।

রিদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আচ্ছা পান্না এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!
ওর কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে।এদিকে এখান থেকে নড়তেও পারবেনা।কি একটা মুছিবত!’
——-
তিথি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ইশানের সাথে ধাক্কা লেগে কপালে ব্যাথা পেলো।তারপর কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’ইচ্ছে করে এমন করেন সবসময়”

‘ইচ্ছে করে করি নাই।যেহেতু অপবাদ দিলি তবে সেটাকে সত্যি করতে হয়’

এই বলে ইশান তিথিকে ধরে কপালে আরেকটা বাড়ি দিয়ে নিলো এরপর হাসতে হাসতে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।
তিথি কপাল মুছে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় ইশানের মায়ের সাথে।
ওনাকে দেখে তার তো ভয়ে গলা টলা শুকিয়ে গেলো মূহুর্তেই।
সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো সে।

‘আমার ছেলে কোথায়?’

‘উনি ওয়াশরুমে’

উনি গাল ফুলিয়ে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে পাউডার নিয়ে তিথির গলায় ঘঁষতে লাগলেন এরপর বললেন,’মান সম্মান তো কিছুই রাখবেনা দেখছি।গলায় এমন দাগ নিয়ে নিশ্চয় সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে এসেছো এতদূর?’

তিথি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে,’না আসলে আমি হিজাব পরে এসেছিলাম।হিজাবটা মাত্রই খুলছি’

‘তবে আবার পরো, বাসায় সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে।তারা কি ভাববে?’

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।’নিজের ছেলের দোষ সব,আর যেভাবে ঝাড়ি দিচ্ছে যেন আমি ওনার ছেলেকে বলছি,”আসো আমাকে কামড়াও।দিছে তো দিছে।আমার জামাই দিছে তাই বলে এত অপমান করার কি আছে!আর ছোট রা কি ভাববে মানে!ওদের কি বলবো যে আমার জামাই কামড়িয়েছিল?ওদের বলবো বল্লা কামড় দিছিলো।ব্যস হয়ে গেলো।’

সেই সময় ইশান বের হয়।মা তো আবেগে আপ্লুত হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।ইশানই তামিয়াকে বলেছিল মাকে নিয়ে সোজা এই বাসায় চলে আসতে।সেও মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে।তিথি ইশানকে দেখিয়ে গলার দাগটা ইশারা করে মনমত গালি দিলো মনে মনে,তারপর হিজাব বাঁধতে থাকলো।ইশান বুঝে গেছে মা নিশ্চয় উত্তম মধ্যম দিয়েছে ওকে এটা নিয়ে।

সে হাসতে লাগলো, ওকে হাসতে দেখে মা বললেন,’তোর বউকে কিছু শেখা।এভাবে খোলামেলা এসব প্রকাশ করতে নাই।ছোটদের কথা বাদ দিলাম,বড়রা কি ভাববে?দেখলাম পাশের বাসার এক ভদ্রলোক ও এসেছেন’

‘হ্যাঁ মা,আমিও বলছি মৌমাচির চাকের নিচে না যাইতে।তাও সে গেছে এখন দেখছো কিরকম লজ্জাকর পরিস্থিতিতে ওকে পড়তে হলো’

‘মৌমাচির চাক?জাপানে?’

‘হ্যাঁ তো।ঘুরতে গেছিলাম পার্কে,সেখানে বিদেশী তেঁতুল গাছে ধরেছিল।তিথিকে তো চিনোই সব কিছুতে ওর নাক গলানোর স্বভাব”

তিথি রেগেমেগে তেড়ে এসে বললো,”মোটেই না।মিথ্যা কেন বলছেন?মা জানেন,উনি আমাকে ঝাপটে ধরে এই যে এই জায়গায় কামড়েছিল।সেটারই দাগ এটা।আমি নাক গলাইনি’

মা লজ্জায় লাল হয়ে রুম থেকে চলে গেছেন একেবাসে।ইশান তখন তিথির কান টেনে ধরে বললো,’গাধী!তোকে বাঁচানোর জন্য মৌমাছির কথা বলছি,আর তুই কিনা বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিলি!’

ইশান ও বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।তিথি ভাবতে থাকলো দোষটা কোন জায়গায় ছিল তার!
—–
‘আপনার কোনো বোনের ছেলে আছে?কম বয়সী বিসিএস ক্যাডার,কিংবা নুডুলস,কোক,চিপসের কোম্পানির মালিক?আমার এই তো দুটো মেয়ে।ওদের জন্য’

ইশানের মা গিয়াস সাহেবের কথা শুনে চোখ বড় করে চেয়ে রইলেন।তাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গিয়াস সাহেব পান্না আর পিংকিকে যেটা শিখিয়ে এসেছিলেন সেটা ইশারা করলেন করার জন্য।
ওমনি দুবোন এসে ইশানের মায়ের দুপাশে বসে খালামণি খালামণি করতে লাগলো
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৪০+৪১

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪০
আফনান লারা

ইশান তার পরিচিত পুলিশ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেছে।ওনারা ইশানের বাসার সামনের সিসি ক্যামেরায় দেখা প্রাইভেট কারের নাম্বার প্লেট থেকে গাড়ীটি ট্রেস করার চেষ্টা করছেন।
ভোর হয়ে যাওয়ায় ইশানের ভয়টা আরও গাঢ় হয়ে গেলো।তিথি কেমন আছে,সেফ আছে কিনা তা নিয়ে ভীষণ ভয় হতে লাগলো ওর।যদি ওর কিছু হয়ে যায়?
পুলিশকে সে তাড়া দিতে থাকে।কিন্তু এভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া অপহরণকারীকে খোঁজা আর অন্ধকারে ঢিল মারা একই।
তাও ওনারা নাম্বার প্লেট দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে সেই গাড়ীটি পেয়েও যায়।কিন্তু অপহরণ কারীরা ছিল অনেক চতুর।তারা গাড়ীটিকে একটা নির্জন জায়গায় এনে ফেলে রেখেছে, পুলিশ কিংবা ইশানের মনযোগ হটানোর জন্য,সময় নষ্ট করার জন্য।
কিন্তু গাড়ীটিকে খুঁজে পাওয়া তাদের বৃথা যায়নি।গাড়ীতে একটা লেটার গ্লু দিয়ে আটকানো ছিল।যাতে লেখা ছিল পুলিশ ইনভলব হলে তারা তিথির ক্ষতি করবে।

এদিকে পুলিশ বলছে তারা ভয় পায়না,ইশান ও যেন ভয় না পায়।তাদেরকে কাজ করতে দেয়া হোক।কিন্তু ইশানের ভয় হলো একমাত্র তিথির জন্য।
ওরা যদি সত্যি তিথির ক্ষতি করে ফেলে?
—-
তিথিকে সই করার জন্য হাত খোলা হয়েছিল সেই হাত এখনও তারা বাঁধেনি।ভুলে বসে আছে।
তিথিও ভুলে আছে তার হাত যে খোলা।সে খিধার চোটে নিজের দুহাতের দিকে চেয়ে এরপর সাদা দড়িটা দেখে ভাবছে গিট্টু টা খুললো কে।
তাই নিজে নিজে হাতে রশিটা ঘুরাতে ঘুরাতে বিড়বিড় করে বলছে তার খিধা পাচ্ছে,ঘুম পাচ্ছে।
হাতে একটা গিট্টু দেয়ার পর তিথির হুশ আসলো যে সে তো চাইলেই পালাতে পারে!
ওমনি গিট্টুটা পুনরায় খুলে সে পা টিপে টিপে চেয়ার থেকে উঠে বসে।
কোমড় ধরে চারিদিকটা দেখতে থাকে।যে লোকটাকে তিথিকে পাহারা দেবার জন্য রাখা হয়েছিল সে লোক মদ খেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
“””এটা কোন ধরনের অপহরণকারী! ঝাঁঝ নাইই!
হাত ধরে টানা টানি করবে,তারপর আমি বলবো,”বাঁচাও!প্লিজ,নাহ নাহ!ছেড়ে দে শয়তান! আমার দেহ পাবি কিন্তু সই পাবিনা শয়তান!
তারপর আমাকে ওরা জোর করতে চাইবে ঠিক সেই সময় ইশান কাঁচ ভেঙ্গে ঢুকবে,সেই লেভেলের একটা এন্ট্রি নিবে।সকলে হা করে চেয়ে থাকবে। আর আমি বলবো,”নে কি করবি কর!আমার নায়ক এসে গেছে!’
ধুর কিছুই তো হলোনা।কেমন নিরামিষ টাইপের কিডন্যাপিং হয়ে গেলো’
—-
পুলিশ সেই গাড়ীর আসল মালিককে খুঁজে বের করে তার কাছ থেকে জানতে পারে দুদিন আগে একটা লোক তার থেকে এই গাড়ীটা ভাড়ায় নিয়েছিল। এবং সে বলেছে এক সপ্তাহ পর ফেরত দিবে।
ঐ মালিকের কাছ থেকে পুলিশ সেই লোকের স্কেচ তৈরি করে নেয় এবং পোস্টার ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে,সকল পুলিশ স্টেশনে ছবিটা পাঠিয়ে দেয়া হয়’
তিথি সেই জায়গা থেকে বের হয়ে দ্রুত হাঁটছে।তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজে।
সে হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের মধ্যে পোস্টার লাগানো দেখে থেমে যায়।এটা সেই লোকটার ছবি যে কাল তিথিকে সই করতে বলেছিল।
তিথি পোস্টারটা তুলে দেখে””” Wanted!!
একে ধরিয়ে দিলে ৫০হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
তিথি দাঁত কেলালো এরপর কাগজটা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলো।ভাগ্য ভাল পোস্টারে ইংরেজীতে ঠিকানা লেখা ছিল।তিথি একটা লোককে সেই ঠিকানা দেখিয়ে কাছাকাছি একটা পুলিশ স্টেশনে চলে আসে।
ইশানের কোনো টাকা খরচ করতে হবেনা,এদিক দিয়ে সে আরও ৫০হাজার টাকা তাকে উপহার হিসেবে দিবে।বাহ তিথি কত জিনিয়াস!
তিথি কাগজটা পুলিশ অফিসারকে দেখিয়ে ইংরেজীতে বললো সে এই লোকটার ঠিকানা জানে।
তখন পুলিশ ইশানের পরিচিত সেই পুলিশের অফিসে কল দিয়ে জানায় তারা এই অপহরণকারীর খোঁজ পেয়েছে।একটি মেয়ে জানিয়েছে সে ঐ লোকের ঠিকানা জানে।
সঙ্গে সঙ্গে ইশান আর সেই পুলিশ অফিসার এই জায়গার ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তিথি লজ্জায় বলতে পারছিল না যে তার টাকাটা কখন দেয়া হবে।
তাই ভাবলো আগে ধরিয়ে দিলে হয়ত তারপর টাকা দিবে।
এদিকে খিধার জ্বালায় সে তো মরেই যাচ্ছে।
——
ইশান আর সেই পুলিশ অফিসারেরা মিলে লোকেশানে পৌঁছে যায়।অপহরণকারীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
তাদের সবাইকে ধরার পরেও তিথিকে কোথাও না পেয়ে ইশান রেগে গিয়ে সেই লোকটাকে মারতে শুরু করে।কিন্তু লোকটা বারবার একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো যে সে কিছু করে নাই,তিথি এখানেই ছিল।ও কিভাবে গায়েব হয়েছে তারা জানেনা।
ইশানের মাথা গরম হয়ে আছে,কি করে সে তিথিকে খুঁজে পাবে।
তিথি সেই পুলিশ স্টেশনে বসে বসে স্যান্ডউইচ খাচ্ছিলো।অফিসার লোকটা ভাল আছে,সে না বলতেই খাবার দিয়ে গেছে।এদিকে ইশান ৫০হাজার টাকার একটা চেকে সই করে দেয় কারণ শর্ত মতে যে মেয়েটা এই অপহরণকারীকে ধরিয়ে দিয়েছে তাকে এই টাকা দিতে হবে।
চেকটা হাতে নিয়ে পুলিশ অফিসার অফিসে ঢুকে তিথিকে সেটা দিয়ে দেয়।
ইশান বাহিরেই ছিল।গাড়ীতে হেলান দিয়ে সে ভাবছিল কি করে তিথিকে খুঁজে পাবে,কই থেকে শুরু করবে।
তিথি চেক নিয়ে লাফাতে লাফাতে অফিস থেকে বের হতেই ইশানের সামনে পড়ে।ইশান ওকে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিল।

‘তুই এখানে?’

তিথি চেকটা ধরে বললো,’দেখুন আমি কিডন্যাপ হয়ে টাকা কামিয়েছি।’

ইশান চেকটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে তিথিকে জড়িয়ে ধরলো।তিথি শুরুতে ইতস্তত হলেও এর পরে নিজেও তাকে জড়িয়ে ধরে।

‘বোকা মেয়ে,এটা আমার সই করা চেক’

‘ওহ তার মানে আপনি এই পোস্টার লাগিয়েছিলেন?’

‘জ্বী’

‘তাহলে টাকাটা কি আমি নিব নাকি আপনি নিবেন?’
—–
পান্না আর পিংকি তাদের বাবার হাত টিপছে,উনার পা ভাঙছে তো কি হয়েছে?আপাতত হাত ব্যাথা করছে।তাই ওরা দু বোন মিলে হাত টিপতে লেগেছে।
পিংকি হঠাৎ উঠে চলে যায় একটা কাজের বাহানা দিয়ে।পান্না একা আছে দেখে গিয়াস সাহেব বললেন,’পান্নু একটা কথা বলবি?’

‘কি বাবা?’

‘তোর বোন কি লাইন মারে?’

‘হ্যাঁ মারেই তো’

‘তাই?কার সাথে?’

‘পানির বিলের অফিসে লাইন মারে,গ্যাস বিলের অফিসে লাইন মারে,আর….’

‘আরে বোকা,আমি বললাম টাংকি মারে কিনা!’

‘হ্যাঁ মারেই তো’

‘কার সাথে?’

‘ছাদের পানির টাংকি আছেনা?ওখানে বুবু পানি দেখতে যায় তো!কিন্তু মারে কিনা তা তো বলতে পারছিনা!’

‘এ মেয়েকে তো বুঝানোই যাচ্ছেনা।আচ্ছা শোন,আমি বলেছি তোর বোন পিংকি,সে কারোর সাথে প্রেম করে?’

‘প্রেম কি বাবা?’

‘প্রেম কি জানিস না?আচ্ছা প্রেম হলো ধর কারোর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে চাওয়া কিংবা দেখা করা,কারোর প্রতি মনযোগী হওয়া,কাউকে চাওয়া,কাউকে দেখার উদগ্রীবতা।বা যাকে চাওয়া সেও একই অনুভূতি প্রকাশ করে,ফুল আনে,বা বিপদে সাহায্য করে,পাশে দাঁড়ায়।
এইসব আছে তোর বোনের মাঝে?’

পান্না গালে হাত রেখে বাবার কথাগুলো ভাবতে থাকে।পিংকির সাথে এসব ঘটে কিনা তার জানা নেই কিন্তু এসব তো তার সাথেই ঘটছে রীতিমত। সে ওমনি বাবাকে চেপে ধরে বললো,’আমার সাথে ঘটছে বাবা’

‘তোকে আমি সন্দেহর কাতারে রাখিনা,তুই ছোট মানুষ।তুই শুধু পিংকির কথা বল’

‘না,বুবু তো এসবে নাই,দেখি ও নাই।কিন্তু আমি প্রেম করছি এটা নিয়ে আমি নিশ্চিত ‘

বাবা পান্নার কথা মাথাতেই নিলেন না।চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন।
———
তিথি সারা রাত ঘুমাতে পারেনি তাই গাড়ীতেই ঘুমাচ্ছে।তিথিকে সেই লোকেরা শহরের বাহিরে নিয়ে এসেছিল।তার থেকে যে সইটা ওরা নিতে চাইছিল তা ছিল ইশানের কোম্পানির যে নমিনী থাকে সেটার ক্ষমতা নেবার দলিল।তারা আন্দাজ করেছিল ইশান তার সব সম্পত্তি তিথিকে নমিনী করে রেখেছে।আর তাই ওরা তিথির সই নেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল।
ইশান তিথির কাছে জানতে চাইলো ও কোনো সই করেছে কিনা।তখন তিথি আধ ঘুম চোখে বলে দেয় সে দলিলে সই বাদে বাকি সব করে এসেছে।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪১
আফনান লারা

তানিয়ার বিয়ের তারিখ সামনে চলে আসায় সে ফোন করে ইশানের হাতে পায়ে ধরছে যেন সে তিথিকে নিয়ে দেশে ফিরে।শুধুমাত্র ১০দিনের ব্যাপার।
ইশান রাজি হচ্ছেনা কারণ তার অনেক কাজ আছে যেগুলো এখনও সম্পূর্ন হয়নি।সে কথা শুনে তানিয়া তো বলেই দিলো সে আসতে না পারলে যেন তিথি একাই চলে আসে।আপন বোন বলে কথা,এটা কিছুতেই ছাড় দেয়া যাবেনা।তিথির ও ইচ্ছা আছে কিন্তু ইশান না বললে তো আর আসা যায়না,টিকেট থেকে শুরু করে সব খরচ ইশানই বহন করবে।
এদিকে ইশানের কাজ এক দিকে আর তিথি এক দিকে।কাজ বন্ধ করে দিবে তাও তিথিকে সে একা কোথাও যেতে দিবেনা।
অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষে ইশান রাজি হয়।তিথির তো আনন্দ আর ধরেনা।এই জাপানিদের মাঝে থেকে সে তার মাতৃ ভাষাটাই ভুলে যাচ্ছিলো।
কি করে যে দেশে ফিরবে,এবার দেশে ফিরলে রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট গুলো জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে যাতে ইশান আর ওকে জাপানে নিয়ে আসতে না পারে।
এসব ভেবে তিথি মিটমিট করে হাসছিল তখন ইশান এসে বলে,’এত হেসে লাভ নেই,আমি ঠিকই আসার সময় তোকে ধরে নিয়ে আসবো ‘

তিথি খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলে,’হুহ!একবার যদি গিয়ে উঠি।তারপর দেখি কি করে আনেন।আমার দম বন্ধ হয়ে আছে এখনও।দেশের হাওয়া লাগবে’

‘ওকে ফাইন।তুই যদি না আসিস তবে আমি জাপানে এসে কুয়িনার সাথে সংসার করবো ‘

এটা শুনে তিথি রেগে গেলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’আমি যাব না দেশে’

‘কেন?বোনের বিয়ে খাবিনা?’

‘নাহ!’

‘তাহলে সংসারের প্রতি মায়া আছে তোর?বিশ্বাস হচ্ছেনা।ভাল কথা মাথায় এসেছে।আমার তো এখনও প্রতিশোধ নেয়া হয়নি’

‘আর কত অত্যাচার করলে আপনার এই প্রতিশোধের ঘড়া পূর্ণ হবে?’
——
রিদম তানিয়ার বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে পিংকিদের বাসায়।শুধু কার্ডের জন্য নাহ,আঙ্কেলকে একবার দেখে আসতেও বলেছে বাবা মা।
রিদমকে যেন এভারেস্ট জয় করার টার্গেট দিয়েছে বাবা।এত কঠিন কাজ কেউ এত কম বয়সী একটা ছেলেকে দেয়?
অনেকক্ষণ ধরে ওদের মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিদম।কি করে কি করবে সেটাই পরিষ্কার হতে পারছেনা।অনেক অংক কষাকষি করে সে কলিংবেলে চাপটা দিয়েই দেয়।
পিংকির মা এসে দরজা খুললেন।তাকে দেখে রিদম হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।এরপর মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে এসে বসে সোফায়।তানিয়ার বিয়ের ব্যাপারে বলে কার্ডটা ধরিয়ে দেয় পিংকির মায়ের হাতে। এরপরই পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল রিদম কিন্তু আন্টি বলে উঠলেন,’পিংকির বাবার সাথে দেখা করবেনা?’

যাঃ হয়ে গেলো!রিদম ঢোক গিলে সাড়া জানায়।এরপর হাঁটতে থাকে করিডোর দিয়ে সোজা পিংকির বাবার রুমের দিকে।

‘আআআআসসসাবো আঙ্কেল?’

‘বেয়াদবের বাচ্চা চোরের বাচ্চা চোর!তুই নিবিই যখন আমার ঘরের অলঙ্কার জাতীয় কিছু নিতি।তুই কেন আমার কলিজার টুকরা,জানের জান,আমার কমলা গাছের কমলাটা নিবি!আমি শুধু একবার পাই!দেখিস তোর কি হাল করি!চামড়া তুলে বিন ব্যাগ বানাবো!’

গিয়াস সাহেব কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিলেন।কথাটা বলে তিনি আসতে বললেন ভেতরে।
রিদমকে রুমে ঢুকতে দেখে তার মেজাজটা গেলো খারাপ হয়ে!
‘কি আশ্চর্য! এই ভর দুপুরে কেউ রোগী দেখতে আসে?’

এ কথা শুনে রিদম ভয়ে ভয়ে বলে সে বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে।

‘বিয়ে?কার বিয়ে?তোমার বাবাও না কেমন ধাঁচের মানুষ।মেয়ে বিয়ে দেয়া শুরু করে দিতেই আছেন,দিতেই আছেন।এত টাকা আসছে কোথা থেকে? আমি তো জানতাম উনি ঘুষ খান না’

‘না আসলে আঙ্কেল,,,বাবা তো জমিয়ে রেখেছিলেন’

‘তাও হতে পারে।আসলে ডাকাতি চুরি সব এই গিয়াসের কলোনীতেই হয়।তোমরা তো নবাবী কলোনীতে বসবাস করো!’

রিদম চুপ করে আছে।তখন গিয়াস সাহেব পান্নার নাম ধরে ডাকলেন। পান্না সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছিল।বাবার গলা শুনে ছুটে আসতেই রিদমের সাথে এক ধাক্কা খেলো।
রিদম কোনোরকমে দু কূল বাঁচিয়েছে।পড়লোনা ছিটকে।

‘পান্না তোর রিদম ভাইয়াকে বিকালের নাস্তা করে যেতে বলবি।আর পিংকি কোথায়?’

‘আমি বের হয়েছি,এবার বুবু গোসলে গেছে’

‘ওর দরজার বাহিরে দিয়ে লক করে দে।আমি চাইনা দুই চুম্বক কাছাকাছি হয়ে আটকে যাক’

রিদম হালকা কেশে বললো,’না থাক আঙ্কেল পরে একদিন এসে নাহয় খেয়ে যাবো।’

‘পরে আবার কেন আসবে?আজকেই শেষ খানা খেয়ে যাও।পান্না যা ওরে নাস্তা দে’

‘বাবা এখন তো দুপুরের ভাত খাওয়ার সময়’

‘ওহ! ভাত খাইবা?’

‘না না,নাস্তাই ঠিক আছে।আমি ভাত খেয়েই এসেছি’

পান্না নাস্তা আনতে চলে গেছে।রিদম ও পিছু পিছু যাচ্ছিল ওমনি গিয়াস সাহেব বললেন,’খামোশ!তুমি কই যাচ্ছো?’

‘ইয়ে ঐ যে নাস্তা করতে’

‘এখানে করবা নাস্তা।ঐদিকে যাও কেন?পিংকিকে দেখতে?’

‘না না।আচ্ছা বসছি’

এই বলে রিদম ওনার সামনে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।কি মহা ঝামেলায় পড়তে হলো এই বিয়ের কার্ড দিতে এসে।

‘তোমার ছোট দুলাভাই কি চাকরি করে?নাকি তোমার মতই বেকার!হাহাহাহাহাহা’

রিদম মনে মনে বলছে,’ক্লাস সেভেনের ছেলের কাছ থেকে কি বিসিএস ক্যাডার হওয়া আশা করে এই লোক!’

‘কি হলো বলছো না যে?’

‘জ্বী,দুলাভাই চাকরি করে’

‘ভালো!তা যৌতুক কিছু চেয়েছে??’
———-
ইশান তিথিকে সব গোঁছগাছ করতে বলে একটু অফিসে গেছে,দেশে ফেরার আগে অফিসের কাজ কমপ্লিট করে তারপর যাবে ভেবে।তিথিকে বারবার করে বলে গেছে যেন বাসা থেকে বের না হয়।
কিন্তু তিথি তো বের হবেই।সে বাসার কাছে একটা শপিংমলে সুন্দর একটা জামা দেখেছে, এটা সে তানিয়াকে কিনে দিবে।তাই সে ইশানের পকেট থেকে টাকা সরিয়ে বেরিয়ে গেছে।পরে বাংলাদেশ গিয়ে টাকাটা ফেরত দিবে।আর বিদেশ থেকে ফেরার সময় কিছু না নিয়ে গেলে কেমন দেখায়!
সেই শপিংমলে এসে তিথির যেটাই দেখছে সেটাই ভাল লাগছে কিন্তু তার কাছে তো এত টাকা নাই।

আজকে ইশান বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো কারণ তার তিথিকে নিয়ে সন্দেহ জাগছিল মনে।বাসায় এসে যে সন্দেহ সে করেছিল তাই হলো।তিথি বাসায় নেই।
মাথাটা গেলো গরম হয়ে।এখন কি করার!

—–
‘আরে ব্যাডা ওয়ানফু!৫০টাকা কমান তো!নাহয় আমি এটা নিতাম না।এটা কি দেখেন!মশারি দিয়ে জামা বানাই নাম দিছে নেটাংপু!
আচ্ছা নিলাম নেটাংপু!তাই বলে দাম এত বেশি চাইবেন?৫০টাকা কমান নাহয় আমি চলে যাচ্ছি বাংলাদেশ’

দোকানদার তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এটা কোন ধরনের ভাষা সে ব্যবহার করছে আর এটা মানে টা কি হতে পারে?

তিথি আবারও কমাতে বলে কিন্তু দোকানদার কিছু না বুঝে আস্তে করে চলে গেলো ওখান থেকে। তিথি রেগেমেগে শেষমেশ যে দাম ওরা বলেছে সে দামেই জামাটা কিনে হাঁটা ধরতেই ইশানের মুখোমুখি পড়লো।
ইশান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

‘আরে আপনি এসেছেন,ভাল করেছেন। এই দোকানদার আমার থেকে টাকা বেশি চেয়েছে।কিছু বলেন’

ইশান তিথির হাত ধরে টানতে টানতে চললো।তিথিকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলোনা।
বাসায় আসার পর ইশান তিথিকে খুব করে বকলো।চিৎকার করলো,কেন সে না বলে বেরিয়েছে।এত মানা করার পরেও কেন একা একা বেরিয়েছে।

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু।

‘আমার চেয়ে বেশি বুঝিস?আমি কি জাপানের মিনিস্টার যে তুই যে কোণায় থাকবি তোকে খুঁজে বের করতে পারবো?যেভাবে বিনা ভয়ে ঘুরছিস ফিরছিস মনে হয় তোর কাছে আমাকে ফিল্মের নায়ক মনে হয়,বারবার গুম হবি আর বারবার আমি রক্ষা করবো’

‘অপহরণকারীরা যেটা করেছে সেটাতে আমার হাত ছিল?আমি যাবার আগে সবার জন্য কিছু কিনতে চেয়েছিলাম।এটাই আমার দোষ।আমি আর কোনোদিন আপনার সাথে জাপানে ফিরবোনা,এটার জন্য আপনি মেরেই ফেলুন যদি তাও ফিরবোনা’

এটা বলে তিথি চলে যাচ্ছিল তখনই ইশান ওকে আটকে ধরে।ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে বলে,’মেরে ফেলার অনুমতি দিলি?’

‘হ্যাঁ,মেরে ফেললে এ জাত যাক’

ইশান তখন তিথির ওড়না মুঠো করে আরও শক্ত করে ধরে বললো,’তবে আজ মেরেই ফেলি।জাতকূল শেষ হয়ে যাক।শেষ হয়ে নতুন কিছুর জন্ম হোক,ঝড় থামুক!’
চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৩৮+৩৯

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৮
আফনান লারা

তিথি যতদূর চোখ যায় হেঁটে চলেছে।আজ সে কিছুতেই ইশানের কাছে ধরা দিবেনা।ইশান কি মনে করে নিজেকে?
অতীতের একটা ভুল নিয়ে কি মাথা কিনে নিবে।এতদিন যা জ্বালিয়েছে ভাল।
‘আর না,আর সহ্য করবোনা আমি।আরে বিয়ের আগে যা করার করেছি,উনিও যা করার করেছেন তাই বলে কি বিয়ের পরেও করতে হবে!
কিন্তু যাচ্ছি যে আমি,কোথায় গিয়ে থামবো?’

তিথি থামলো।আশেপাশের মানুষগুলোর চেহারা,ব্যবহার,ভাষা কিছুই তার জানা নাই।আসার সময় ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে।ফোন এনেও বা কি হবে।সে তো সিম নেয়নি।হোয়াটসএপে গিয়ে তানিয়ার সাথে কথা বলা যেতো কিন্তু তার এমবি শেষ।
ধুর!
‘পালানোর আগে পূর্ব পরিকল্পনা কেন করলাম না!অবশ্য আমি কি জানি এরকম একটা দিন আসবে!
কোথাকার সেই ক্যাবলা ইশান আজ দুটো মেয়েকে নাচাচ্ছে।’

তিথি একটা বেঞ্চিতে বসে পা দুলাতে থাকে।হঠাৎ তার সামনে একটা কার এসে থামে।তিথি ভাবছে ইশান কিনা।পরে দেখে এটা তো নীল রঙের কার।ইশানেরটা ছাই রঙের।কার থেকে দুজন লোক বের হয় এরপর শুদ্ধ
বাংলা ভাষায় বলে,’ম্যাম গাড়ীতে উঠুন’

তবে শুদ্ধ করে বললেও তাদের মুখ থেকে যখন বাক্যটি শোনা গেলো,বোঝাই গেলো যে তারা এটা মুখস্থ করে বলেছে।
তিথি বেঞ্চি শক্ত করে ধররে বলে,’যাব না’

লোকগুলো হাতের ফোন দেখে ‘যাব না” এর মানে বের করে তারাও বাংলায় বলে,’আপনাকে যেতেই হবে’

তিথি তাদের চাল বুঝতে পেরে তখন দুষ্টুমি করে বলে,’তোমরা আমার নাগর লাগো?’

লোকগুলো এবার টেনসনে পড়ে যায়।নাগর মানে কি আবার!
তিথি খিলখিল করে হাসছে।
এদের ইশান পাঠিয়েছে তিথিকে তুলে আনার জন্য।তিথি ও বুঝতে পেরে মজা নিচ্ছে।
——–
রিদমের বাড়ি থাকতেই পিংকি আর পান্না জানতে পারে তাদের বাবা হাসপাতালে ভর্তি।তাই তানিয়া আর রিদমের সাথে ওরা দুজন সোজা হাসপাতালে চলে আসে।
রিদম তো আর এত কিছু জানতোনা তাই সে সাথে করে কমলা চার কেজি কিনে নেয়।তানিয়া টাকা দিছিলো।হাসপাতালে যাবার পর রিদমকে দেখে গিয়াসউদ্দিন এমনিতেও রেগে গেছিলেন,এরপর ওর হাতে কমলা দেখে তার মাথা হয়ে গেলো চড়গ গাছ।
রিদম ভয় পেয়ে লুকিয়ে পড়েছে।গিয়াস সাহেব শুয়ে শুয়ে বলছেন,’দেখ পিংকি!কেন আমি এই বদমাইশটাকে দেখতে পারিনা’

‘বাবা ও তো জানতোনা তুমি যে কমলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছো’

‘চুপ!আবার ও বলা হচ্ছে।পিরিত দেখলে বাঁচিনা!’

তানিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিল কারণ গিয়াস সাহেবের পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।সে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রাখে।রিদম তখন ফিসফিস করে বলে সে এখানে থাকতে চায়না আর।
——
লোকগুলো যখন বুঝতে পারে যে তিথি মজা করে চলেছে তখন তারা ইতিউতি না করে তিথিকে জোরপূর্বক গাড়ীতে বসায়।
তিথি অনেক চিৎকার করে তাও পারেনা।তাকে জোর করে আবারও ইশানের বাসার সামনে এনে রাখে ওরা।
তিথি বিরক্তি নিয়ে দরজার বাহিরেই অপেক্ষা করছিল তখনই ইশান দরজা খুলে।
তিথিকে দেখে সে হাসি দিয়ে বলে,’বড় ব্যবসায়ীর বউ হবার এই এক অসুবিধা।যেখানেই লুকাবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসবো।’

‘আপনার আর কাজ নাই?আমি ঘুরতে গেছিলাম’

‘ ফ্রি হলে আমিই ঘুরিয়ে আনবো।তোর একা ঘুরতে যাবার কোনো দরকার নাই।’

এই বলে ইশান বের হয়ে তিথিকে টানতে থাকে,তিথিও নাছড়বান্দার মতন বাসায় ঢুকতে চায়না। ইশান এবার ওকে ধরে কোলে নিবে ওমনি কুয়িনার গাড়ী দেখে থামে।কুয়িনা গাড়ী থেকে নামলো। নেমে ওখানেই মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।তিথি কুয়িনাকে দেখে আরও রেগে গেলো কিন্তু তার কি যেন একটা বুদ্ধি মাথার ভেতর খেলে গেছে।
সে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ওয়াক ওয়াক!আমার না খুব বমি পাচ্ছে সোয়ামি!’

ইশান চোখ বড় করে তাকায় তিথির দিকে।কুয়িনা ওদের কাছে এসে গাড়ীর দিকে তাকাতেই একটা ছেলে গাড়ীর ভেতর থেকে হাতে বেবিদের জামাকাপড় আর খেলনার একটা সেট এনে ইশানকে দেয়।এরপর সে জাপানি ভাষায় কিসব বলে।তিথি ইশানের মুখের দিকে তাকালো।ইশান তো হাসেও না,কাঁদেও না।কোনো রিয়েকশানই দেখালো না।তবে সে বুঝবে কি করে যে কুয়িনা কি বলেছে?

তার পরেও বাচ্চাদের এসব দেখে সে আন্দাজ করলো কুয়িনা হয়ত গিফট দিয়েছে।
তিথি তখন কুয়িনাকে ধরে বললো’অনেক অনেক থ্যাংকস!’

কুয়িনা হাত ছাড়িয়ে নেয় তখন তিথি বলে,’ভাঙ্গবে তবু মচকাবেনা।ফকিন্নি ‘

কুয়িনা এটা আর বুঝলোনা,ইশান তখন জানতে চায় সে এখানে কেন এসেছে।
কুয়িনা নিজের ভাষায় বলে শেষবারের মতন দেখা করতে এসেছে।সে আমেরিকা যাবে পড়াশুনার জন্য।
তিথি আমেরিকা বুঝলো কান পেতে।তারপর ইশানকে ফিসফিস করে বললো,’আপনাকে নিয়ে আমেরিকা যেতে চায়?’

ইশান বিরক্ত হয়ে তখন ঐ লোকদুটোকে ইশারা করে।তাই ওরা দুজন এসে তিথিকে ধরে বাসার ভেতর নিয়ে যায়।যাবার সময় তিথি বলে,’আপনি একটা খারাপ স্বামী।এই লোকগুলোকে বলতেন কুয়িনাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে,সেটা না করে নিজের বউকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে বললেন’
———
গিয়াসউদ্দিনকে সবাই বাসায় নিয়ে এসেছে।তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলছেন’কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা’

পিংকি বাবাকে আপেলের জুস বানিয়ে দিয়ে নিজে আপেলের রস তুলা দিয়ে চোখের নিচে লাগাচ্ছে বসে বসে।পান্না আজকে আসার পথে একটা নার্সারীতে কমলা গাছ দেখেছিল।খালামণির টাকা দিয়ে সেই গাছ কিনে ছাদে লাগিয়ে দিয়েছে। সবসময় বিদেশী জিনিসের প্রতি আকর্ষণ না রেখে দেশী জিনিস ও ব্যবহার করা উচিত।
দিনশেষে দেশী পাশে থাকে,বিদেশী চলে যায়। ‘

গাছটা লাগিয়ে পান্না সিঁড়ি দিয়ে নামছিল ঠিক সেইসময় ছাদের পাশের কলা গাছটা অনবরত নড়ছে দেখে সে একটু কাছে আসে বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে জানার জন্য।
সেদিনের সেই চোর দুটি উঠছে গাছ বেয়ে।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো।
পান্না দুটো লোককে উপরে উঠতে দেখে নিজে গিয়ে টাংকির পেছনে লুকিয়ে পড়ে।এরপর দেখতে থাকে এখানে কি ঘটছে।

সেই চোর নং ১ হাতে একটা কমলা গাছ নিয়ে উঠলো,এরপর পরের চোরটা হাতে কোদাল নিয়ে উঠেছে।
তারা জানতে পেরেছে গিয়াসউদ্দিনের হার্ট এটাক হয়েছে।তাই চুরির দায়ে মৃত্যুদণ্ড তারা ভাবতেও পারেনা।ঐ গিয়াসের কিছু হয়ে গেলে তখন পুলিশ তো এর তদন্ত করবে।এরপর যদি ওরাই দোষী সাব্যস্ত হয়?

‘ভাল করে গাছটা পুঁতে দে মনির!’

‘ভাইয়ে এখানে যে আরেকটা কমলা গাছ’

‘এ্যাঁ!তার মানে কি আমাদের বাহিরেও আরেকটা চোর আছে? ‘

‘না না!টবে লাগাইছে তার মানে বাসার কেউ এ কাজ করছে।আচ্ছা ভাইয়ে এই গোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল আমি নিই?’

‘তুই গোলাপ ফুল দিয়ে কি করবি?’

‘সারাদিন গাছগাছালি তে থাকি তো তাই গায়ের থেকে কেমন একটা গাইচ্ছা গাইচ্ছা গন্ধ আসে।বউয়ে কইছে গোলাপ জল দিয়া গোসল করলে সব গন্ধ দূর হই যাইবো’

‘এ্যাহ!গিয়াসের বংশের ব্যাপারে তোর কোনো ধারণা আছে?সামান্য কমলা ছিঁড়ে খাওয়ায় ব্যাটার হার্টে সমস্যা দেখা দিছে,আর গোলাপ ছিঁড়লে জানি বংশের কোন বাতি নিভে যায়।না না বাপু!এতবার জেল খাটতে পারমু না।পরে দুই জেলে জেলে কাটাকাটি করে একেবারে ফাঁসিই হই যাইবো’

পান্না সব দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

তখন মনির বললো,’এটা তো চারা গাছ।চারা গাছে কমলা কসটেপ দিয়ে লাগানো কি উচিত হবে?’

‘কমলা দেখলে গিয়াসের প্রাণ ভরে যাবে।সে পুরান কমলার শোক ভুলবে।নে ভাল করে কসটেপ লাগা’

দুজন মিলে কসটেপ দিয়ে কমলা একটা গাছের মধ্যে লাগিয়ে এবার চললো বাড়ির পথে।ছাদ থেকে নামার সময় মনিরের পকেট থেকে সরষে তেলের বোয়াম একটা নিচে পড়ে যায়।তখন পনির বলে,’তুই পকেটে করে সরষে তেল নিয়ে ঘুরোস কেন?’

‘আজ পুকুরে গোসল করবো তো তাই সরষে তেল নিছি’

‘এখন এটা যতবার পকেটে পুরবি ততবার পকেট থেকে পড়ে যাবে।তোর আর সরষে তেল মাখতে হবেনা।তেল ফেলো নেমে পড়’

মনির ও মাথা নাড়িয়ে সরষে তেলের বোয়াম খুলে সব তেল গাছে ঢেলে দিলো।

পনির তখন সেটা দেখে বললো,’ইশ রে এমন করলি কেন!’

‘তুমিই তো বললে তেল ফেলে নামতে’

‘যা বেকুব!তাই বলে গাছেই ফালাবি?আমার মনে পড়ছেনা কলা গাছে তেল দিলে কি যেন একটা হয়!’

মনির আর দেরি না করে গাছ ধরে নামতে গিয়ে হাত-পা পিছলে ধপাস করে নিচে পড়ে গেছে।তখন পনির বললো ‘হুমমম মনে পড়েছে।কলাগাছে তেল দিলে সে গাছে আর উঠা যায়না রে মনির!কিরে তুই কই!এত জলদি নেমে গেছিস🐸?’
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৯
আফনান লারা

কুয়িনার ভালবাসাটুকু বরাবরই এক তরফা ছিল।ইশান কখনওই তাকে ভালবাসেনি।কিন্তু ইশান তাকে যেভাবে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে এসেছিল কুয়িনার মনে হতো সেও হয়ত কুয়িনাকে ভালবাসে ওরই মতন।
তিথির কথা জানলে হয়ত কুয়িনা মনে ভালবাসার বীজ বুনতোনা।
সে সবকিছু সোজা করে কুয়িনা ইশানকে জানায়,এটাও জানায় ইশানের পছন্দ করা ছেলেটিকে সে বিয়ে করতে পারবেনা।পড়ালেখার জন্য চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।শেষবারের জন্যই দেখা করতে এলো।

কিন্তু ইশান একবারও কুয়িনাকে ভেতরে এসে বসতে বলেনি,সে কখনওই কুয়িনাকে সুযোগ দিতো না,,, যে সুযোগে কুয়িনার মনে হয় তার মনে প্রেম আছে ওর জন্য।

তিথি বসে বসে ভাবছে ওখানে এত সময় ধরে কি এমন কথা বলছে তারা,ঠিক সেইসময় ইশান বাসায় ঢোকে। তার কর্মচারীদের চলে যেতে বলে এবার।তিথি ইশানের মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কিছু বোঝা যায় কিনা।নাহ,কিছুই বুঝতে পারলোনা সে।তাই হতবাক হয়ে শুধু চেয়েই থাকলো।
ইশান অফিসের পোশাক পরছে নিরব হয়ে,তিথি তখন দরজার এক পাশ ধরে দাঁড়িয়ে বলে,’কুয়িনার জন্য মন কেমন করছে?’

‘না’

‘তাহলে মন এত খারাপ কেন?’

‘খারাপ কারণ কুয়িনা মিথ্যে জেনে চলে গেছে ‘

তিথি তখন জানতে চাইলো কিসের মিথ্যে?

জবাব দিলো না ইশান।হাতে টাই নিয়ে তিথির সামনে এসে দাঁড়ায় সে,এরপর টাইটা তিথির হাতে দিয়ে ইশারা করে পরিয়ে দেবার জন্য।
তিথি টাইটা উল্টে পাল্টে বলে, ‘আমি তো টাই পরাতে পারিনা।’

ইশান তখন নিজের টাইটা পরতে পরতে বলে,’আর কি পারিস না?’

‘বাকি সব পারি’

‘কি কি?’

তিথি তখন বলে সে শার্ট,প্যান্ট পরাতে পারে।তার এমন আজগুবি কথায় ইশান কোনো রিয়েক্ট করলোনা।অফিসের কিছু কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে আসলো বাহিরে। তিথি ওর পিছু পিছু আসতে আসতে জানতে চাইলো সে কখন ফিরবে।
ইশান থামে এরপর বলে তার আসার সাথে তিথির এ কথা জেনে কি কাজ?
তিথি আমতা আমতা করলো।কিন্তু সঠিক উত্তর টা বললোনা।

ইশান চুপচাপ চলে গেছে।তিথির আজ বলতে ইচ্ছে করছিল এই যে ইশান তাড়াতাড়ি আসলে তারা দুজন গল্প করবে।
কিন্তু বলতে যেয়েও সে পারেনি।মুখ আটকে যায় অর্ধেকেই।
সে যদি ইশানের প্রতি অনুভব করা টানের কথা উল্লেখ ও করে তাও হয়ত ইশানের কাছে নেহাত ফাজলামোই মনে হবে।কারণ টা অনেক বড় কবিতার লাইন।

তিথি সোফায় বসে টিভি অন করে।সব জাপানী চ্যানেল।একটা জাপানী সিনেমা চালু করে সে ওটা দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায়।মেইডরা বাসার সব কাজ করে চলে যাবার সময় দারোয়ানকে জানিয়ে যায়।ইশানের নির্দেশ ছিল তিথি ঘুমে থাকলে যেন তাকে ওঠানো না হয়।

তিথি চোখ খুলে দেখে চারিদিকে অন্ধকার।মেইডরা যখন গেছে তখন বিকাল ছিল বলে তারা আলো জ্বালিয়ে যায়নি,যার কারণে রাতের অন্ধকার নামতেই সব আঁধার হয়ে গেলো।তিথি একা একা অন্ধকারে হাঁটছে একটা লাইট খুঁজে পাবার জন্য,হঠাৎ তার মনে হলো সুইমিং পুলের দিকে কিছু একটা জ্বলছে।
সে আলোর খোঁজে এগিয়ে এসে দেখে সুইমিং পুলের সম্পূর্ণ কিণারায় ছোট ছোট বাতি জ্বালানো।
তিথি ভাবছে হয়ত প্রতি সন্ধাবেলাতেই এই আলো জ্বলে।কিন্তু নাহ,এটা আজকেই জ্বলেছে।
তিথি আর বাসায় গেলোনা,ওখানেই বসে বসে পানিতে হাত বুলাচ্ছিল,সেসময় বাসার ভেতর কিসের একটা আওয়াজ পেয়ে সে ভয় পেয়ে যায়।এখন তো কেউ থাকার কথা না,তবে বাসায় কে?
ভয় পেয়ে তিথি সুইমিংয়ের কোণায় গিয়ে বসে পড়ে আর দোয়াদরুদ পড়তে থাকে।

কালো পোশাকের একজনকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল।তিথি দেহের গড়ন দেখে শুরুতে ইশান ভাবলেও কণ্ঠস্বর অচেনা ঠেকলো।তার ভয়টা আরও বেড়ে যায়।সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।ঐ লোকটার হাতে টর্চ লাইট ছিল।
—–
ইশান বাসায় ফেরে তার থেকে এক ঘন্টা বাদে।সে বাসায় ঢোকার আগে দারোয়ানকে কারের চাবি দেয় পার্ক করার জন্য তাই প্রতিদিনের মতন চাবিটা সে বাড়িয়ে ধরে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল।তার কথা বলা শেষ তাও দারোয়ান ফেদার এখনও তার হাত থেকে চাবিটা তুলে নিলোনা।
ইশান অবাক হয়ে সাইডে চেয়ে দেখে ফেদার এখানে নেই।
ফেদারকে ডাকতে ডাকতে ইশান কলিংবেলে নক করে।
মিনিট পাঁচেক পরেও কারো কোনো সাড়া না পাওয়ায় ইশানের ভয় হলো।সে ইন্টারকমে কল দিতে থাকলো। তাও কারোর কোনো সাড়া না পেয়ে ইশান বাধ্য হয়ে পকেটে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খোলে।
ভেতরে ঢুকেই সে তিথির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে চারপাশে ওকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু আফসোস তিথি কোথাও নেই।ইশান সুইমিং পুলে বিচসিট থেকে একটা লেটার পায়।যেটাতে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল তারা তিথিকে তুলে নিয়ে গেছে।তার বিনিময়ে তাদের ঠিক কি লাগবে তা পরবর্তীতে তিথির কিছু অংশের সাথে প্রেরণ করা হবে।

ইশান পুল সাইডে বসে বসে চিঠিটা দেখছিল।এর আগেও কুয়িনার সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল।কিন্তু কুয়িনা ইশানের কিছু লাগতোনা বলে বিষয়টা বেশি আগায়নি।কিন্তু এখন মামলা সিরিয়াস।
তিথি যে ইশানের স্ত্রী এটা হয়ত ওরা কোনোভাবে জেনে গেছে।ইশান এটাও জানে ওরা আসলে কি চায়।
ওরা ইশানের পুরো কোম্পানির পাওয়ার অফ এটর্ণি নিজেদের নামে করে দিতে বলবে।
ইশান চুপচাপ মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবছে কি করে সে তিথিকে বাঁচাবে।
বিনা কারণে তিথির কোনো ক্ষতি করবেনা এ ব্যাপারে ইশান নিশ্চিত কিন্তু যদি করেও ফেলে!
অবশ্য তিথি তো আর কুয়িনার মতন না।ও মাথা খাটালে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।কিন্তু তাকে তো এভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না।কিছু না কিছু করে তিথিকে বাঁচাতেই হবে।ওর উপর ভরসা নাই।যত মারামারি সব ইশানের সাথেই পারে,বাহিরের কারোর সামনে ভেজা বেড়াল।
——-
তিথিকে সুন্দরমতন চেয়ারে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে সেই দলের লোকজন।তিথি বসে বসে ভাবছে কখন ইশান আসবে,নায়কের মতন এন্ট্রি নিবে আর দুমদাম মারবে।ইশ কি ভাল সিন হবে তখন।তিথির আর তর সইছেনা।
কিন্তু এতক্ষণ কেন লাগছে?
ও হ্যাঁ ইশান তো বাসায় দেরি করে ফেরে।তাই বলে এখনও ফিরলোনা?
তিথির খিধে পেয়েছিল। সে বাংলা,ইংরেজী,হিন্দি,জাপানি যা পেরেছে তাই বলেছে তাও লোকগুলো ওর কোনো কথাই বুঝেনি।একটা লোক এমন ভাব করছিল যেন সে বুঝতেছে কিছু কিছু।
তিথিও খুশি হয়ে যায়।সে লোকটা ইশারা দিয়ে বলে,’খানাপিনা ওয়াংফু,খাবো চাবাই চাবাই কিংফু’

লোকটা মাথা চুলকাচ্ছে। এটা কোন জাতের ভাষা তাই বুঝতেছেনা লোকটা।
তিথি যখন বুঝলো লোকটা তার কথা বুঝতেছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এরই মাঝে একটা লোক একটা দলিল এনে তিথির সামনে ধরে এরপর কিসব বলে ওর হাত খুলে হাতে কলম ধরিয়ে দেয়।
তিথি কাগজটা দেখে বলে,’সম্পত্তি লাগবে আপনাদের?কিন্তু আপনারা কি জানেন?আপনাদের ইশান স্যার তো আমার নামে একটা ল্যাট্রিন ও রেজিস্ট্রি করে দেয়নি,বাড়ি গাড়ি তো দূরেই থাকুক।আমি যে সই করবো এই সইয়ে আপনারা কিছুই পাবেন না’

লোকটা তারপরেও সই করার জন্য তিথিকে বাধ্য করতে থাকে।তিথিও কম না।সে রেগেমেগে কলম দিয়ে পুরো দলিলে ব্যাঙ,ব্যাঙয়ের ছাতা আঁকিবুকি করে রেখে দেয়।
লোকটা তখন একটা চিৎকার করে চলে গেলো।তিথি এতটা ভয় পেয়েছে যে সে ভাবছে তাকে বুঝি ধরে পিটাবে।কিন্তু নাহ,তারা ইশানকে ভয় পায় বলে তিথিকে একটা টোকাও দেয়নি।
তিথি এবার আবারও ঐ লোকটাকে ইশারা করে খাবার আনতে বলে।লোকটা ওমনি ভেতরের রুমে গিয়ে আসার সময় একটা মদের বোতল নিয়ে এসে তিথিকে ধরিয়ে দেয়।
তিথি তো দেখেই বুঝেছে এটা মদের বোতল।তখন সে বললো,’এই গাধার দল!মদ খাবোনা চিয়াংপু!!বুঝোস না কেন!উনপু উনপু ভাত ভাত?ভাত চিনো?ভাত খাবো!মদ খেয়ে পেট ভরবে না তো রে বাপ!জাপানি ভাষায় ভাতকে কি বলে!
এই ব্যাডা!তোমরা ভাতকে কি বলো?রাইস রাইস?রাইসকে কি বলো তোমরা?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৩৬+৩৭

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৬
আফনান লারা

কুয়িনা এখানে এসেছিল ইশানের সাথে দেখা করতে।অনেকদিন পর তাদের দেখা হবার পরেও এয়ারপোর্টে ঠিকমত কথা তারা বলতে পারেনি।এখন সেই সুবাদেই সে ইশানের সাথে দেখা করতে সোজা তার বাসায় চলে আসে।

তিথি ইশানকে বললো,’মেয়েটা কি একাই পাগল নাকি আপনিও তার জন্য এক কালে পাগল ছিলেন?’

‘তোর কি জ্বলে?যদি তাই হয় তবে হ্যাঁ।আমরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলাম’

এটা শুনে তিথি রাগ করে ইশানের বুক থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।যত প্ল্যান তার করা ছিল,ইশানের এই একটা কথায় সব কিছু মাটি হয়ে গেলো।সে রাগ করে রুমে চলে এসে ইশানের শার্টটা গায়ের থেকে খুলে নিজের জামা পরে নেয় এরপর গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।

ইশান মেইডদের বললো কুয়িনাকে নাস্তা দিতে এরপর সে তিথির কাছেই আসতেছিল তখন কুয়িনা তার পথ আটকে দাঁড়ায় এরপর ওর সাথে বসতে বলে।
ইশান তখন তাকে বাধা দিয়ে বলে তার ফ্রেশ হতে হবে আগে।অফিস থেকে তো মাত্রই এসেছে।
এরপর সে রুমে এসে দেখে তিথি রাগ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।
ইশান চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তিথির কাছে এসে ওর পা ধরে দেখলো ক্ষতটা ভাল হয়েছে কিনা।এরপর সে কুয়িনার কাছে আসে।
তিথি চুপিচুপি নেমে দেয়ালে কান পেতে শুনছে আসলেই তারা কি বলে।
কিন্তু তিথির দূর্ভাগ্য ইশান আর কুয়িনা জাপানি ভাষায় কথা বলছিল।সে কান পেতে সব শুনেও কিছুই বুঝতে পারলোনা।

ইশাব কুয়িনাকে চলে যেতে বলে।তার সাথে কুয়িনার কখনওই প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।আসলে কুয়িনা এক তরফাই ইশানকে ভালবেসে এসেছে।শত চেষ্টা করেও সে ইশানের মন গলাতে পারেনি।ইশানের মনে তো কেবল তিথিই বাস করে।তিথি যদি সেটা বুঝতো!

কুয়িনা তাও জেদ করে বসে থাকে।সে যাবেইনা।সে মানতে নারাজ তিথি যে ইশানেরই বউ।সে বিশ্বাসই করছেনা উল্টে জেদ বাড়াচ্ছে।
তিথি এইটুকু বুঝতে পারলো যে কুয়িনা ন্যাকা কান্না করে তার কোনো অনুরোধ ইশানের উপর করছে যেটা ইশান মানতে নারাজ।
ইশান কুয়িনার উপর বিরক্ত হয়ে ডানে মাথা ঘুরাতেই তিথিকে দেখতে পেলো,সে লুকিয়ে লুকিয়ে ওদেরকেই দেখছে।
তখন ইশানের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে চট করে উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা টেস্ট হজমীর প্যাকেট বের করে সেখান থেকে একটা ট্যাবলেট তুলে তিথিকে ধরে খাইয়ে দিলো এরপর ওকে এনে বাহিরে দাঁড় করিয়ে দুই আঙ্গুল ওর মুখে ঢুকিয়ে সে কুয়িনার কাছে ফেরত চলে আসে আবার,যেন কিছুই হয়নি।
এদিকে মুখে আঙ্গুল দেয়ায় তিথি ওয়াক্ ওয়াক্ করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে চলে গেছে।আর ইশান কুয়িনাকে বোঝালো তার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।
কুয়িনা এক মিনিটের জন্য হতবাক হয়ে ছিল।তার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।এটা কি করে হয়!

তিথি বমি করে এসে ইশানের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে মনমত গালি দিলো।কুয়িনা কিছুই বোঝেনি উল্টে ইশান উঠে তিথির কপালে চুমু খেয়ে এরপর পেটে চুমু খেয়ে ওকে যেতে বললো কুয়িনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।

‘এই আপনি আমার পেটে চুমু খেলেন কেন?পেটে কি বাচ্চা আছে নাকি?’

‘ট্রিপল’

‘এই ট্রিপল মানে কি?’
——-
পান্না ক্লাসে বসে দারুণ খোঁশ মেজাজে ছিল।এ প্রথম বার সে সানিমকে ভয় পাচ্ছেনা উল্টে মন চাইছে সানিমকে ইচ্ছেমত পেটাতে।তার পরেও সানিম কিচ্চু করতে পারবেনা কারণ তার ছায়া হিসেবে রিদম আছে।

পিংকি ক্লাস থেকে ফেরার সময় পান্নাকে সাথে নিয়ে ফিরছে আজ।
যেতে যেতে সে বললো আজ তারা রিদমদের বাসায় যাবে আগে।পান্না তো অবাক হলো,তারা রিদমের বাসায় কেনো যাবে?
তখন পিংকি জানায় রিদমের বোন তানিয়া রিদমকে দিয়ে নাকি ওদের যেতে বলেছে।গেলেই শুনবে।
পান্না ভীষণ খুশি হলো।রিদমদের বাসায় যাবার তার অনেকদিনের ইচ্ছা।আজ তা পূরণ হবে।
বাসার কলিংবেল চাপ দিয়ে পিংকি পান্নাকে জিজ্ঞেস করে তার চোখের কাজল ঠিক আছে কিনা।পান্না মাথা নাড়ায়।
দরজা খোলে তানিয়া।
সে পান্না আর পিংকিকে দেখে অনেক খুশি হয়ে যায়,সেবার রাস্তায় তাদের দেখেছিল প্রথম।সে ওদের হাত ধরে ভেতরে এনে সোফায় বসায়।পিংকি তো শুরুতেই কথা জুড়ে দেয় তানিয়ার বিয়ে প্রসঙ্গে।
পান্না এ সুযোগে উঠে রিদমকে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে সে তিথির রুমটা পায় যেটার দরজায় কাগজে লেখা ছিল”Ronaldor রুম এটা।দূরে থাকো! ‘

পান্না মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।সে দেখে রিদম শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে।পান্না ও এসে বসে।পান্না বসতেই রিদম বললো,’টুকু যাও তো।কার্টুন দেখার সময় ডিস্টার্ব করবেনা’

‘আপনি এত বড় ছেলে হয়ে কার্টুন দেখেন?’

এটা শুনে রিদম লাফ দিয়ে ঠিক হয়ে বসে পড়ে আর ল্যাপটপ টা অফ করে দেয়।পান্না ফিক করে হেসে বলে ‘কাউকে বলবোনা,প্রমিস’

‘তুমি এখানে কি করো!’

‘আপনি নাকি আপুকে আসতে বলেছিলেন এখানে’

‘ওহ হ্যাঁ!পিংকি কোথায়?’

‘তানিয়া আপুর সাথে গল্প করে।আপনিও চলুন’

‘নাহ,আমি এখানেই ঠিক আছি।কিছু খাবে?জুস?কোক?’

‘নাহ!ভাত খাবো ‘

রিদম মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উঠে যায় বাহিরে। পান্নাও পিছু পিছু আসে।রিদম একটা প্লেটে ভাত,মুরগীর রোস্ট নিচ্ছে।
পান্না বলে,’আমরা যখন বাসায় ঢুকেছি তখনি আমি রোস্টের ঘ্রাণ পেলাম।তাই ভাত খাবো বলেছি। ঠিক করেছি না?’

রিদম ওকে খাবারের টেবিলে বসিয়ে খাবার দিয়ে পিংকির কাছে আসে।কিন্তু পিংকি তানিয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল।
তাই রিদম আবার পান্নার কাছে চলে আসে।এসে দেখে পান্না খাচ্ছেনা।

‘কি হলো খাও না কেন?’

‘আমি দুপুরে স্কুলের থেকে এসে নিজের হাতে ভাত খাইনা।আম্মু খাইয়ে দেয়।’

‘আমার আম্মু তো বাসায় নেই আচ্ছা দেও আমি খাইয়ে দিই’

এটা বলে রিদম হাত ধুয়ে এসে পান্নাকে এক লোকমা খাইয়ে দিয়ে বললো,’ঐ ছেলেটা তোমায় আর কিছু বলেছে?’

‘নাহ।সে খুব ভয়ে আছে’

‘বেশ হয়েছে।এরপর আবার তোমায় জ্বালাতন করলে আমায় বলবে। আমি ঠিক করে দিবো’
—–
কুয়িনা কেঁদে ফেললো তিথির বাচ্চা হবে শুনে।ইশান পড়ে গেলো মহাঝামেলায়।
মেয়ে মানুষ কাঁদলে ছেলেদের ভাল লাগার কথা না।এখন ইশান কি করলে ও কাঁদবেনা তাই ভেবে চলেছে তখন কুয়িনা ইচ্ছে করে এগিয়ে ইশানকে ঝাপটে ধরলো শক্ত করে।

তিথি লুকিয়ে সব দেখলো।মেয়েটা ইশানকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে তিথির যেন পায়ের তলার মাটিটাই সরে গেছে।
সে হনহনিয়ে আসতে যেতেই পায়ে ব্যাথা পেয়ে নিচে বসে গেলো।ইশান ওকে পড়তে দেখে কুয়িনাকে ছাড়িয়ে ছুটে এসে তিথির পা দেখতে থাকে আর জানতে চায় আবার কিসের সাথে চোট পেয়েছে।
কুয়িনার কাছে এটা খুব খারাপ লাগে।সে কাউকে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো বাসা থেকে।সে যাবার পর তিথি চেঁচিয়ে বলে,’সব মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে হবে?’

‘আর কাকে ধরলাম?আর ওকে আমি ধরিনি,সে আমাকে ধরেছে।তোকে ধরলে তো চেঁচিয়ে ঘর মাথায় তুলোস’

তিথি তখন মুচকি হাসি দিয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’এই নিন ধরলাম’

ইশান হঠাৎ তিথিকে ছাড়িয়ে বলে,’তোর শাস্তি এখনও শেষ হয়নি’

এটা বলে সে তিথিকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় এরপর ওকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বলে,’নে শুয়ে পড়’

‘এত তাড়াতাড়ি?’

‘হুম।আর এটাই আজকের শাস্তি’
——
পান্নাকে রিদম খাইয়ে দিচ্ছে দেখে পিংকি পান্নাকে অনেক বকলো,এভাবে কারোর বাসায় এসে ভাত খাওয়ার জন্য।
তখন রিদম তাকে বুঝায় যে পান্না তো ছোট মানুষ।

‘আচ্ছা রিদম তোমার রুম দেখাবেনা?’

রিদম এবার পিংকিকে নিয়ে তার রুম দেখাতে চলে যায়।পান্না তখন পানি খাচ্ছিল,সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তাদের দিকে।তানিয়া মিষ্টির বাটি ওর সামনে ঠেলে দিয়ে বলে,’পান্তুয়া মিষ্টি খাবে?’

পান্না হাসি দিয়ে চামচ দিয়ে মিষ্টিটা কেটে দুভাগ করে চুপচাপ।তখন তানিয়া ওকে বলে,’তুমিও যাও,রিদমের রুমটা দেখে আসো।সে ইউনিকভাবে সাজিয়েছে।ভাল করে দেখে আসো,বাটিটা সহ নাও, যাও’

পান্না খুশি হয়ে বাটি নিয়ে চলে গেলো ওদের পিছু পিছু।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৭
আফনান লারা

ইশান টায়ার্ড হয়ে ওর পাশেই শুয়ে পড়েছিল।ওর ঘুমন্ত চেহারা দেখে তিথির মনে পড়ে যায় সেই আগেকার দিনের কথা।তখন ও ইশানের মুখটা এরকম নিষ্পাপ ছিল।তখন সে হটিয়ে দিতো আর এখন!
বিছানা থেকে নেমে সোফায় বসার ইচ্ছা হলো তার,কিন্তু ইশান যে তাকে শাস্তি দিয়ে ঘুমাচ্ছে নিশ্চিন্তে।আর শাস্তিটি ছিল তিথি ঘুমাবে।ঘুম না আসলে কার কি করার!

এদিকে ইশান তার হাতে তিথির ওড়না পেঁচিয়ে ঘুমায়।সে কি জানেনা তিথি ওড়না ফেলেই যেতে পারে!
কিন্তু সে জানে তিথি যাবেনা।
আসলেই তিথি গেলোনা,সে বিছানাতেই বসে রইলো।বসে বসে ইশানকে আর কুয়িনাকে নিয়ে ভাবতে থাকলো।তিথির উপর প্রতিশোধ নেয়ার না থাকলে এতদিনে হয়ত কুয়িনাকেই ইশান বিয়ে করে বাচ্চা পয়দাও করে ফেলতো,
কুয়িনাও এরকম কাঁদতো না!
কুয়িনা তো ইশানের অফিসের একজন সাধারণ অফিসারের মেয়ে।তাহলে ইশান ওর সাথে এরকম মিষ্টি ভাষায় কথা কেন বলছে?তার কি কোনো দূর্বলতা আছে?
ইশানের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তিথির চোখেও ঘুম নেমে এলো।
সকাল হতেই ইশানের কড়া সাউন্ডের এলার্ম বাজতে থাকে।
সবেমাত্র ভোর ৫টা বাজে। অবশ্য ইশানের এত ভোরেই ওঠার অভ্যাস। সে উঠেই এলার্মটা দ্রুত বন্ধ করে দেয়।কারণ সে চায়না তিথিও উঠুক।
সে তার কাজের কারণে এলার্ম দিয়েছে।তিথির ওড়না থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ইশান বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় এরপর তৈরি হয়ে বেরিয়ে যাবার সময় মেইডদের ডেকে দিয়ে যায়।মেইডদের বলে নাস্তার ব্যবস্থা করতে।সে এসে তিথির সাথে ব্রেকফাস্ট করবে।
তিথি ওঠেনি তখনও,কারণ ইশান ওর ঘুম ভাঙ্গার মতন কিছুই করেনি।

ইশান নিজের গাড়ী নিয়ে যাচ্ছে সামনের একটা পার্কে।সেখানে তার দেখা হবে কুয়িনার বাবা তাশচুর সাথে।তাশচু হলো ইশানের কর্মচারী।
অফিসারের সাধারণ একটি পদ।
ইশান তাশচুকে আগাম বার্তা দেয়নি সে যে আসবে।ইশান ভাল করেই জানে সে পার্কে আসলে তাশচুর সাথে দেখা হবে।কুয়িনাকে নিয়ে আলাপ করা জরুরি বলেই এত ভোরে তার এখানে আসা।
তাশচু খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক্সারসাইজ করছিল,ইশান ওকে দেখতে পেয়ে ওদিকেই আসছে সেসময় তাশচু ও ইশানকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’গুড মর্নিং স্যার’

তখন ইশান ওনার হাত ধরে বেঞ্চিতে বসায়।এরপর কুয়িনাকে নিয়ে প্রসঙ্গ ওঠায়।
অনেকবছর আগে ইশান যখন প্রথম জাপানে পদার্পণ করে তখন তাশচু ছিল ইশানের ডান হাত।তাশচু ইশানের কোম্পানি দাঁড় করাতে অনেক হেল্প করেছে যার কারণ ইশান তাশচুকে অফিসার পদ দিয়ে রেখেছে। যেখানে তাশচুর যোগ্যতা ছিলনা এত বড় একটি কোম্পানির অফিসার হওয়া।তাশচুর সাথে মিশতে মিশতে ইশানের কাছাকাছি হয়ে ওঠে কুয়িনাও।কারণ তাশচু সব অনুষ্ঠানে,সব ট্যুরে তার একমাত্র মেয়ে কুয়িনাকে সাথে নিয়ে আসতো।ইশান কখনও সে নজরে কুয়িনাকে খেয়াল না করলেও কুয়িনা সর্বদা ইশানকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকতো।একটা সময়ে সে বুঝতে পারে সে ইশানের প্রতি দূর্বল।আর ইশানকে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখে কখনও কোনো মেয়ে গঠিত বিষয় নজরে না আসায় কুয়িনা সিদ্ধান্ত নেয় সে তার অনুভূতির ব্যাপারে ইশানকে জানাবে।কিন্তু নিজের বাবা যে কোম্পানিতে চাকরি করে,সেই কোম্পানির ওনারকে প্রস্তাব দেয়ার মতন সাহস খুঁজে পাচ্ছিল না কুয়িনা।
এর মাঝেই ইশানের গার্লফ্রেন্ড মনে করে দূর্বৃত্তরা একবার কুয়িনাকে অপহরণ করে।
তারা তিন কোটি টাকা দাবি করে ইশানের কাছে।ইশান তিন কোটি টাকা দিয়ে কুয়িনাকে উদ্ধার করলেও পুলিশের সাহায্যে সে টাকাটা ফেরত আনতে পেরেছিল এবং তাদের যথাযথ শাস্তি ও দিতে পেরেছিল।
এদিকে কুয়িনাকে বাঁচিয়েছে বলে কুয়িনা ইশানের প্রতি প্রচণ্ড রকমের দূর্বল হয়ে যায়।সে ইশানকে সরাসরি তার অফিস কেবিনে ঢুকে বলে দেয় তার মনের কথা।
ইশান কুয়িনাকে বেরিয়ে যেতে বলে তখনি,কারণ সেদিন ইশান প্রচণ্ড রেগেছিল তিথি আদিলের হাত ধরতে চেয়ে ছিল এটা জেনে।
কুয়িনা কান্না করতে করতে চলে আসে বাসায় এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে,খাওয়াদাওয়া ঠিক মত করেনা।ইশানের মেজাজ ঠিক হবার পর সে ফল,ফুল নিয়ে কুয়িনাকে দেখতে তাশচুর বাসায় যায়।কুয়িনা ধরে নেয় তার স্বপ্ন বুঝি সত্যি হবে।কিন্তু নাহ!ইশান কোনো ছলনা করেনি তার সাথে।কুয়িনাকে দেখতে গিয়ে সে ঠাণ্ডা মাথায় কুয়িনাকে তিথির কথা বলে।
তিথিকে সে ছোটকাল থেকে ভালবাসে,এইসব ক্লিয়ার করে জানিয়ে দেয়,এবং এটাও বলে যে কুয়িনাকে সে জাপানের নাম করা, শিক্ষিত এবং ধনী,সুদর্শন ছেলের সাথে বিয়ে দিবে যে ইশানের চাইতেও বেস্ট হবে।কিন্তু কুয়িনা রেগে যায়,সে বলে সে বিয়ে করলে ইশানকেই করবে তা নাহলে যত কোটিপতি আনুক সে করবেনা।এরপর আর ইশান কিছুই বলেনা,চলে আসে ওখান থেকে। ওটাই ছিল তার সাথে কুয়িনার শেষ দেখা সেদিন।
এরপরই ইশান বাংলাদেশ চলে যায় কারণ সে জানতো আর কদিন থাকলে কুয়িনা আরও পাগলামি করবে।

এরপর ইশান যে বিয়ে করেছে সে খবর তার পুরো কোম্পানি জানছে সাথে কুয়িনাও।কিন্তু কুয়িনা সেটা মানতে রাজি না।তার কথা হলো এতগুলো বছর সে চোখের সামনে ইশানকে সকালের নাস্তা থেকে শুরু হয়ে রাতের ডিনার অবধি লক্ষ করার পরেও যাকে সিঙ্গেল দেখে এসেছে সে কি করে হুটহাট বিয়ে করে নিতে পারে!হাতে একটা মেয়ে থাকার পরেও কেন সে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করতে যাবে।কুয়িনা ভাবতেও পারেনা ইশান পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করেছে।
এসবকিছু তাশচুকে বলার পর ইশান একটা ছেলের কার্ড দেয় তাশচুকে।ছেলেটার নাম কামপা।সে চিনের অধিবাসী এবং জাপানে তার ইশানের সাথে অন্য একটা ব্যবসার শেয়ার আছে।
ইশান সেই ছেলেটার সাথে কুয়িনার বিয়ে দেবার জন্য কাশচুকে বলে দেয়।এবং এটাও বলে কুয়িনা যেন আর কোনোদিন ইশানের বাসায় না আসে।ইশান চায়না তার স্ত্রীর সাথে কুয়িনাকে নিয়ে মনমালিন্য হোক।

তাশচু ক্ষমা চায় ইশানের কাছে,সে যদি আরও আগে জানতো কুয়িনা এরকম পাগলামি করছে তাহলে আরও আগেই ওকে আয়ত্তে নিয়ে আসতো।

তাশচুর সাথে কথা বলে ইশান তিথির কাছে চলে আসে।তিথি উঠার পর থেকে মেইডদের জিজ্ঞেস করে করে জ্বালাতন করছে যে ইশান গেছে কোথায় তাও এত ভোরে।কিন্তু মেইডরা তো কিছুই জানেনা তারা বলবে কি করে।

এরপর ইশান এসেছে দেখে তিথি ওর উপর চড়াও হয়।সে জানতে চায় এত ভোরে ইশান কোথায় গেছিলো।
ইশান উত্তর দিলোনা,মেইডদের বললো নাস্তা টেবিলে দিতে।তিথি মনে করে ইশান হয়ত কুয়িনার সাথে দেখা করতে গেছিলো তাই সে প্রচণ্ড রেগে যায় এবং কাউকে কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় একা একা।
——-
গিয়াস সাহেব আধুনিক হাসপাতালের পাঁচ তলায় ভর্তি।তার আত্নীয় স্বজন সকলে এক এক করে হাতে তিন/চার কেজি কমলা নিয়ে তাকে দেখতে হাসপাতালে ভীড় জমাচ্ছেন।ওনার অসুস্থতার কারণ হলো আজ দুপুরবেলা ভাত খেয়ে ছাদে যেয়ে তিনি তার একমাত্র কমলাটি দেখলেন না।গাছ ফাঁকা দেখে তার ছোট খাটো একটা হার্ট এটাক হয়েছে।
এখন যারাই তাকে দেখতে আসছে তারাই ওনার জন্য দেশী রঙ টসটসে কমলা রঙের কমলা নিয়ে আসছেন।
সেই কমলা দেখে তিনি আরও শোকে কাতর।তার অসুস্থতা আরও বৃদ্ধি পেলো।তার এমন ভাব দেখে বাকি আত্নীয়রা কমলার পরিবর্তে নাশপাতি আনতে শুরু করলেন যা কিনা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এবার তার শরীর আরও খারাপ হয়ে গেলো নাশপাতি গুলো দেখে,কারণ তিনি ছাদে তার কমলার মতন দেখতে নাশপাতি একটা পেয়েছিল যেটা কিনা দুভাগ করা ছিল।তার আবারও মনে পড়ে গেলো উদ্ভোধন করা হলো না,কেক কাটা হলোনা,বিলাতি কমলাটাও খাওয়া হলোনা।
অবশেষে তার এক আত্নীয় তার জন্য কমলাও আনলেন না,নাশপাতিও আনলেন না।তিনি বুদ্ধি করে কলা নিয়ে এনেছেন।
কিন্তু নিষ্পত্তি ছিল ওখানেই!কমলার শোকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কলার খোসায় পিছলে পড়ে গিয়াস সাহেব হাঁটুতে ব্যাথা পেয়ে পা অবশ করে ফেলেছেন,সে পা এখনও ঠিক হয়নি।ডাক্তার বলেছে দেড় মাস লাগবে।
আত্নীয়দের এমন আদিখ্যেতা দেখে গিয়াস সাহেব কোনোমতে সব ফলের ব্যাগ ধরে পাঁচ তলার জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন রেগে মেগে🐸!’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৩৪+৩৫

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৪
আফনান লারা

তিথি তার মায়ের সাথে কথা বলছে।নালিশ করছে ইশানকে নিয়ে।তার মতে ইশান যত নষ্টের গোড়া।তার কারণেই একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে ওর সাথে। কিন্তু মাকে যেন ইশান বশ করে রেখেছে।
মা এক কান দিয়ে কথা ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে ফেলে।
শেষে বিরক্ত হয়ে তিথি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।ইশান এসে ফোনটা কানে ধরে শুনতে পেলো তিথির মা বলছেন,’ইশান ছেলেটা কোটিতে একটা!’

ইশান কিছু না বলে মুচকি একটা হাসি দিলো।তিথি বুঝতে পারছে মা এখনও প্রশংসা করে যাচ্ছে তাই তো ইশানের এত হাসি!

নিজের পা ধরে তিথি দেখতে নিলো সেই সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে ইশান ফোনে কথা বলতে বলতে ওদিকটায় যায়।রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে এ সময় অতিথি আসার কথা না,তাও কে আসলো!
দরজা খুলে ইশান দেখে মিঃ বারি আর তার ওয়াইফ।
ইশান ওনাদের সোফায় বসতে বলে তিথির মায়ের সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখে।

মিসেস বারি উঠে তিথিকে খুঁজতে গিয়ে দেখলেন তিথি পা ধরে বসে আছে।
মিসেস বারি জাপানি ভাষায় দশ লাইন কথা বললেন।তিথি তার কিছুই বুঝলোনা।ও চুপ করে তাকিয়ে আছে দেখে মিসেস বারি বুঝে গেলেন সে তার কথা বুঝতেছেনা।তাই তিনি হাসি দিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলেন তিথির পায়ে কি হয়েছে।

তিথি বললো,’ইয়ে আসলে আমার পায়ে পেরেক চাংচুংচাং হয়ে গেছিলো।তারপর আপনার ভাইয়া পংপুং করে ব্যান্ডেজ বাংদিং দিছে’

মিসেস বারি যা ইশারায় বুঝতেছিলেন, তিথির জাপানি বাংলা মিক্সারে সব গুলিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলেন।তিথি ও বুঝলো সে পুংপাং দিয়ে কিছুই বোঝাতে পারেনি।তাই সে মাথায় হাত রেখে বসে থাকলো।একটা বছর এই বেডির সাথে কথাবার্তা শেয়ার কিভাবে করবে সে!
——–
পিংকি পড়া বাদ দিয়ে লিপস্টিক লাগাচ্ছিল,সেসময় পান্না পিংকির নতুন ওড়নাটা পরে ঘুরছিল বারান্দায়।আজ সে বউ সেজেছে।বারান্দায় পায়চারি করছে তার বরের অপেক্ষায়।
রিদম কদম ফুলের ডাটা ঠোঁট দিয়ে কামড়ে ধরে পিংকিদের বাসার সামনের সুপারি গাছটা বেয়ে বেয়ে উঠছে।সে পিংকির সাথে দেখা করবে।
প্রেম টেম কিছুনা।পিংকি যে নোট গুলা করেছে ওগুলা নেয়ার জন্যই তার এখান দিয়ে আসা।
এদিকে সদর দরজা দিয়ে ঢোকা নিষেধ,কারণ পিংকির বাবা আছেন।জানতে পারলে কষিয়ে চড় মেরে দিবেন।রিদমকে তার একেবারে অপছন্দ।

‘হুশহুশ!হুশহুশ!’

পান্না পায়চারি বন্ধ করে বারান্দার গ্রিল ধরে বললো,’কে ওখানে?সাপ ভাইয়া?ফুসফুস করছেন কেন?সাপ ভাইয়া তো ফুসফুস করেনা,ফিসফিস করে!’

‘পান্তুয়া! আমি দুলাভাই’

‘এ্যাঁ!টুলাভাই!আপনি হুশপাশ করছেন কেন!এখানেই বা কি করছেন?’

‘তোমার বোনকে বলো ইংরেজী নোটস দিতে।আমি সেটা নিতে এসেছি’

পান্না মাথা নাড়িয়ে পিংকির কাছে গিয়ে রিদমের কথা বললো।পিংকি তখন ঠোঁটে লিপলাইনার দিয়ে আর্ট করছিল।সে ব্যস্ত বলে খাতাটা পান্নাকে ধরিয়ে দেয়।পান্না ছুটে এসে খাতাটা রিদমকে দিলো।রিদম তখন বললো,’অনেক ধন্যবাদ পান্তুয়া! এই নাও ফুল’

‘টুলাভাই একটা কথা বলবো?’

‘হ্যাঁ বলো!’

‘আপনি যে গাছটাকে সুপারি গাছ মনে করে উঠেছেন সেই গাছটা বাবা সকালেই কেটে বিক্রি করে দিছিলো।এক দাম তিনশ টাকা দিয়ে।এখন আপনি যেটা বেয়ে উঠেছেন এক তলায়!সেটা আসলে সুপারি গাছ না,শুকনা বাঁশ!’

‘কিহ!তাই তো বলি এত পিছলা কেন!’

ওমনি বাঁশের মাঝখান ভেঙ্গে বিকট এক আওয়াজ হলো।রিদম ধপাস করে নিচ তলার উঠানে পড়ে গেছে।এরকম আওয়াজ শুনে গিয়াস সাহেব সদর দরজা খুলে দিলেন এক দৌড়।উঠানে এসে লাইট মেরে দেখলেন তার সকালে কেনা বাঁশটা দুভাগ হয়ে পড়ে আছে।এটা দিয়ে পেয়ারা পাড়ার জন্য এনেছিলেন। এভাবে ভাঙ্গলো কেন!

পান্তুয়া দোতলা থেকে চেঁচিয়ে বললো,”আব্বু আমি এটা ধরে দুষ্টামি করছিলাম, আমার হাত থেকে পড়ে দুভাগ হয়ে গেলো। সরি আব্বু’

‘তোর বোন কি করে রে?’

‘আপু পড়ছে! ‘

গিয়াস সাহেব একবার গেট অবধি গিয়ে রোডটা দেখে চলে আসলেন।রিদম ওখানেই ছিল।পেয়ারা গাছে উঠে বসে ছিল।হাঁটুতে কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।নিচে খড়ের গদি থাকায় খুব একটা ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।
পিংকিদের গরু আছে একটা।ওটা ঘুমায় মনে হয়,নাহয় রিদমকে দেখলেই শুধু হাম্বা হাম্বা করে সে।

রিদম যাবার সময় পান্নাকে হাত বাড়িয়ে টাটা দিয়ে চলে গেলো।
———
শপিং করতে না পেরে তানিয়ার মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। সে রকিবের কল রিসিভ করছেনা কিছুতেই।
রকিব বাসায় গিয়ে তানিয়ার জন্য কেনা সব কিছুর পিক একটা একটা করে পাঠিয়ে দেয় তানিয়ার কাছে।
তানিয়া রাগ করে ছিল তাও মেসেজের সাউন্ড শুনে আর থাকতে না পেরে সিন করে দেখে সব কেনা শেষ।
ছবিগুলো ঘেঁটে দেখার পর সে বুঝতে পারলো আসলেই যা যা কেনা হয়েছে তার সবটাই ওর পছন্দের।একটাও মন্দ নাহ।অবশেষে তার রাগ কিছুটা হলেও কমে গেলো।সে একটা ইমুজি রিপ্লাই করে দেয় রকিবকে।
রকিবের ও মনে শান্তি হলো তানিয়ার রাগ ভেঙ্গেছে বলে।

তানিয়া যখন মিটমিট করে হাসছিল তখনই দেখে তার গুনধর ভাই রিদম গরমে,ঘামে চুপসে বাসায় ঢুকছে।যেন ক্ষেতে হালচাষ করে এসেছে।

‘কিরে?কই গেছিলি?এই হাল কেন?’

‘ধান রোপন করা শিখতে গিয়েছিলাম। ভাবছি বড় হয়ে কৃষক হবো’

‘ওহহো!তো আমাদের এইদিকে ক্ষেত আসলো কবে থেকে?পিংকিদের ঐদিকে নাকি?’

রিদম ফ্যানের নিচে বসে বললো,’হুম’

‘পিংকি কেমন আছে?’

‘পান্তুয়া ভাল আছে’

‘জানিস!পান্তুয়া দেখতে খুব কিউট।একেবারে মিষ্টি’

‘হুম’

‘কিন্তু তোর তো ঐ ন্যাকামোটারেই বেশি ভাল লাগে’
——
মিঃ বারি তার বউকে নিয়ে চলে গেলো।এরপর ইশান দরজা লক করে রুমে ফিরতেই দেখে তিথি পা ধরে বসে আছে,ওকে দেখেই বললো,’এখন থেকে আমার পা থেকে দূরে দূরে থাকবেন।বুঝছি তো!আমার পায়ের সাথে আপনার শত্রুতা আছে কোনো।তা নাহলে ঘুরে ফিরে পায়ের পেছনেই কেন লাগা হচ্ছে!’

ইশান কাছে এসে নিচু হয়ে বললো,’ওকে!পা থেকে দূরে থাকছি কটাদিন।’

এটা বলেই সে তিথির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে পাশে শুয়ে পড়ে।তিথি কপালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো এরপর বলে উঠলো,’প্রতিশোধ শেষ?’

তিথির এমন কথায় ইশান ল্যাম্পশেডের পাশ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তিথির মাথায় ঢেলে বললো,’নাহ!কিন্তু শুরু’

তিথি হতভম্ব হয়ে বসে থাকলো।আর ভুলেও কোনোদিন সে প্রতিশোধের নাম নিবেনা।
———
পিংকি শুয়ে শুয়ে পান্নাকে রিদমের কথা বলছে।রিদম ওর জন্য কত পাগল এসব বলছে। পান্নাও বেশ মনযোগ সহকারে শুনছে।
রিদমকে তার খুব ভাল লাগে।এ বয়সে প্রেমের আবেগ না জমলেও এ বয়সে কাউকে ভাল লাগা যায়।
কাউকে পছন্দ করা যায়।এটা কেবলই ছোট বয়সের একটা ভাল লাগা,এটাতে প্রেমের বাতাস নেই।কিন্তু বন্ধুত্বের বাতাস আছে। পান্না আর রিদমের সম্পর্কটাও ঠিক এরকমই। নাহয় আজ পান্না নিজের উপর দোষ চাপিয়ে রিদমকে বাঁচাতো না।

গিয়াস সাহেব উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার আনা বাঁশটা আলো জ্বালিয়ে দেখছেন এই রাতের আড়াইটার সময়।
গিয়াস সাহেবের স্ত্রী সিমু এসে হাই তুলতে তু্লতে বললেন,’আপনি কি ঘুমাবেন না?’

‘সিমু দেখো!বাঁশটা উপর থেকে পড়লে দুভাগ হতো লম্বালম্বি। অথচ এটা মাঝ বরাবর ভেঙ্গেছে।এর মানে দাঁড়ায়,,, এটাতে কেউ উঠার চেষ্টা করেছে,তবে সেটা কে!পিংকির বারান্দায় উঠে তার কাজটাই বা কি!নাকি সে ছাদে উঠতে চেয়েছে।আচ্ছা ছাদে তো আমার বিলাতি কমলার গাছটা।সে কি গাছটার প্রথম কমলাটা চুরি করে নিয়ে গেলো?’

ওমনি তিনি এক দৌড় দিলেন ছাদের দিকে।গাছের মাঝের ঢালে একটা কমলা ধরে আছে।তার এই গাছটায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই প্রথম একটা কমলা ধরেছে। এই কমলা পাকলে গাছ থেকে ছিঁড়ে অনুষ্ঠান করে উদযাপন করবেন তিনি।এসে দেখলেন কমলায় তালা ঝুলছে। মানে কেউ চুরি করে নাই।
তালাটা তিনি কমলায় স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে ঐ দড়িতে লাগিয়েছেন।
চোর নিতেই পারবেনা।
অথচ তিনি জানেন ও না কমলা গাছের ঐ ঢালটা ছিঁড়ে হাতে নিয়ে নিলে তালা-টালা কোনো কাজে আসবেনা🤭।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৫
আফনান লারা

সকাল সকাল ইশানের আজ অফিস যাবার দিন ছিল।ফ্যাক্টরির কি অবস্থা দেখতে হবে।রেডি হবার পরেও যখন সে খেয়াল করে তিথি উঠছেনা তখন সে ওর কাছে এসে হাত ধরে ডাকে।হাত ধরার পর বুঝলো এতবার করে পানি ঢেলে ভেজানোর কারণে মহারানীর জ্বর হয়েছে।এদিকে ফ্যাক্টরিতে যাওয়া খুবই জরুরি।নোটবুকটা বের করে ইশানের বাসার পুরোনো মেইডদের কল করে সে।তারা আসতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে,তাই সে বসে বসে অপেক্ষা করে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসবে,কিন্তু আজকে যাওয়া খুবই জরুরি।তিথিকে একা রেখে যাওয়া উচিত না বলে মেইডদের কল করেছে।তারা বাসার যাবতীয় কাজ করবে প্লাস তিথির খেয়াল ও রাখবে।
ঠিক সময়ে সেই দুজন মেইড চলে আসে।ইশান তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।
তিথি ইশান চলে যাবার ঘন্টাখানেক পর জেগে ওঠে। ইশান কোথাও নেই দেখে বিছানা ছেড়ে নামে।
পায়ের ব্যাথাটা তীব্র সাথে জ্বর তো আছেই।তিথি ২য় কদম দেবার আগেই একজন মেইড এসে তিথিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাতের উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে ওর মুখটা মুছিয়ে দেয়।এরপর ওর হাতে ঔষুধের পাতা আর এক গ্লাস পানি দেয়।
তিথি আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলোনা।ইংরেজীতে প্রশ্ন করলো সে।ভাগ্য ভাল মেইডরা ইংরেজী জানতো।তারা ইংরেজীতে তিথিকে উত্তর দেয় তাদের ইশান পাঠিয়েছে।
তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।সে তো ভেবেছিল আজও ভাত তরকারির আশায় তাকে যুদ্ধ করতে হবে।ঔষুধটা রেখে তিথি আগে কিছু খেতে চাইলো।ওরা কত কি আইটেম তৈরি করে ফেলেছিল অল্প সময়ের মধ্যেই।সেগুলো এনে হাজির করে তিথির সামনে।

তিথি খাবার,ঔষুধ সব খেয়ে শুতে যেতেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায়।কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কে এসেছে।একটা মেয়েলি গলা শুনে তিথি অনেক কষ্টে উঠে দেখতে যায়।উঁকি দিয়ে দেখে সেদিনের কারে বসা মেয়েটা।হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে।
যে মেইড দরজা খুলেছে সে জাপানি ভাষায় কি যেন বললো।তখন মেয়েটা হয়ত বলেছে সে বাসায় অপেক্ষা করবে।এই বলে সে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে।
তিথি ব্রু কুঁচকে মেয়েটার কাছে এসে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা ওকে দেখে হাসলো না,বরং গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো।
তিথির রাগ হলো ভীষণ।সে রুমে ফেরত এসে গায়ের জামা খুলে ইশানের শার্ট একটা পরে আবার ঐ মেয়ের কাছে এসে হাজির হলো।এরপর বললো,’কুয়িনা?’

মেয়েটা মাথা নাড়ায়।তার মানে এই সেই কুয়ারা!
মেয়েটা ইশানের শার্ট তিথির গায়ে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলো। রাগে ফুঁসছে সে।
——–
পরেরদিন সকাল সকাল পিংকি স্কুলে চলে যায়।এদিকে পান্নাও আজ স্কুলে যাবার কথা ছিল কিন্তু বাবা তাকে রিকশাভাড়া দিতে ভুলে গেছিলেন।যার কারণে সে হেঁটে হেঁটে স্কুলের দিকে যাচ্ছে।পিংকি বাবার বাইকে করে চলে গেছে কারণ তার মর্নিং শিফট।

পান্নাদের ক্লাসে একটা ছেলে আছে।নাম সানিম।
সানিম অত্যন্ত বাজে স্বভাবের একটা ছেলে।সাত বছরের একটা ছেলে এতটা বাজে হতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো সানিম।
পরশুদিন ক্লাসে সানিম হোমওয়ার্ক করে আসেনি।যার কারণে তাকে ম্যাম পানিশমেন্ট হিসেবে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।পান্নার সাথে সানিমের ঝগড়া বলে সে মিটমিট করে হাসছিল।যেটা সানিম দেখে ফেলে।আর তাই পান্না একা আসছে এটা দেখে সে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়,হাতে আবির নিয়ে।পান্নাকে সে রঙ দিয়ে চুবাবে।যাতে ও আজ স্কুলে যেতে না পারে।

পান্না তো ভয়ে শেষ।সানিমের হাতের রঙ দেখেই বুঝেছে।সে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে রিদম সাইকেল দিয়ে বাজারে যাচ্ছিল টমেটো আনার জন্য।পান্না বিপদে পড়েছে দেখে সে থামে।এরপর সাইকেল রেখে সে এগিয়ে এসে সানিমের হাত থেকে রঙের পলিথিনটা কেড়ে নিয়ে সব ওর মুখে সব মাখিয়ে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই।

‘কিরে ভাল লাগছে?’

সানিম ভয়ে আর রাগে ছুটে পালালো।পান্না হাসি দিয়ে বলে,’টুলাভাই আপনি এখানে?’

‘টমেটো আনতে যাচ্ছি,তুমি স্কুলে যাচ্ছ?’

‘হু’

‘হেঁটে?চলো আমি তোমায় দিয়ে আসি’

রিদম সাইকেলে উঠে পান্নাকেও উঠতে বলে।পান্নাও রাজি হয়।সে রিদমকে শক্ত করে ধরে বসে।
যেতে যেতে পান্না অনেক কথা বলে।সানিম তাকে যে শুধু বিরক্ত করে এসব ও বলে।রিদম তাকে ভয় পেতে না বলে।সাহস দেখিয়ে লড়তে বলে।
——–
‘হ্যালো ইশান ভাইয়া?’

‘আমি তোর ভাইয়া হলাম কবে থেকে? ‘

‘ভাইয়া আপনার প্রাক্তন+বর্তমান গার্লফ্রেন্ড এসেছে বাসায়।তাকে কি খাইয়ে আপ্যায়ন করবো?’

‘প্রাক্তন+বর্তমান কি আবার?’

‘মানে সে আপনার আগেও ছিল,পরেও আছে।কুয়ারা নাম তার।আপনার জন্য বসে আছে,দেরি করে এসে উদ্ধার করেন আমায়’

‘কুয়িনা?দেখি ওকে ফোনটা দে’

‘ইহহহহ!ঠ্যাকা পড়েনি আমার।নিজের কুয়ারাকে নিজে কল দিয়ে প্রেমালাপ করেন’

এই বলে তিথি কলটা কেটে কুয়িনার কাছে এসে বললো,’আমি ইশানের বউ। আমাদের পঁচিশবার বাসর হয়েছে।
私はイシャーンの妻です。私たちは25回生きました。
Watashi wa ishān no tsumadesu. Watashitachi wa 25-kai ikimashita.”””””

তিথি গুগল দেখে জাপানি ভাষায় কথাটা শুনিয়ে দিলো কুয়িনাকে।কুয়িনা তো রেগে আগুন।তাও কিছু করতে পারছেনা,বলতেও পারছেনা।শুধুমাত্র ইশানের অপেক্ষায় আছে সে।ইশান আসলেই এর একটা বিহিত হবে।
তিথি ইশানের কালো রঙের শার্টটা পরে পায়চারি করছে।কখন ইশান আসবে আর কখন সে ইশানের গলা ধরে ঝুলে যাবে কুয়িনাকে দেখিয়ে।

এক ঘন্টার মধ্যেই ইশান চলে আসে।দরজা খুলে দিতেই তিথি ছুটে এসে ইশানের কোলে উঠে গিয়ে বললো,’ওলে আমার জামাই বাবুটা।অফিসে খুব চাপ ছিল?’

‘তোর কি মাথা গেছে?’

‘মাথা নয়,পুরা দেহটাই গেছে।রুমে নিয়ে চলো না আমায়,আহ পায়ে ব্যাথা!’

‘আমাকে দেখে যে স্পীডে ছুটে এলি।আদৌ তোর পায়ে ব্যাথা আছে?’

কুয়িনা এসে দাঁড়ালো ওখানে।তিথি তখনও ইশানের কোল থেকে নামছিল না।ইশান জোর করেই নামিয়ে দিলো ওকে।এরপর ওর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে তিথির হাতে দিয়ে কুয়িনাকে বসতে বললো।কুয়িনা একবার ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু তিথি কোল থেকে নামার পরপরই ইশানের বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল।যেন সে আগ থেকে জানতো কুয়িনা ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চায়।
——–
‘ভাই,,,,এ ভাই? এদের বাড়িতে তো কোনো অলঙ্কার পাইলাম না।তবে কি আজ রাইতে খালি হাতেই ফিরতে হইবো?’

‘না রে।শুনছি এদের ছাদে নাকি কোটি টাকার জিনিস আছে,বিদাশি কমলা।ঐ কমলা নাকি একটাই আছে আর এইডা নাকি গাছ থেকে নিলে সেদিন গিয়াস উদ্দিন পুরা এলাকারে দাওয়াত দিয়া খাওয়াইবো’

‘তাই নাকি!তাইলে চলো আজ আমরা উদ্বোধন টা সারি ফেলি’

‘চল ছোটো!’

দুইটা চোর এই পরিকল্পনা করে ছাদে ওঠে।রাত তখন ২:৪৫বাজে।
সবাই ঘুমে।পিংকিদের বাসায় কোনো দামী কিছু তারা পায়নি কারণ গিয়াস সাহেব বাসায় এসব রাখেন না।চোর তো আর এসব জানতোনা।তারা দুজনে ছাদে এসে কমলা গাছে তালা দেখে দুজনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

চোর নং ১ বললো,”ভাইয়ে দেখো কি বেকুবের ঘরের বেকুব।ফলের মধ্যে তালা লাগাইয়া রাখছে!হাহাহাহা!’

‘আর হাসিস না।তালাটা খুলমু কেমনে?’

‘ভাই কি যে কন!ঢাল টান দিলেই তো হয়’

‘ঢাল নাহয় ছিঁড়মু।ফলের মধ্যে যে স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে তালা লাগাইছে সেটা ছুটামু কেমনে?’

‘এটা তো ভাববার বিষয়।’

দুজনে ঢাল ছিঁড়ে দড়িটা ছুটানোর জন্য ব্যাগ থেকে করাত বের করে দড়িটায় লাগিয়ে ঘঁষা দেয়ার আগেই দড়িটা গড়িয়ে পড়ে গেলো।এটা দেখে দুজনে আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ছুরি দিয়ে কমলাটাকে দুভাগ করে দুজনে মুখে পুরে কিছুক্ষণ চিবিয়ে সব ফেলে দিলো।

‘ভাইয়ে এইডা তো দেশী নাশপাতি তাও জঘন্য কাঁচা আর সব কষ!’

দুজনে জামা দিয়ে জিভ আর ঠোঁট মুছে নেয় এরপর গিয়াসউদ্দিনকে মনমত গালি দেয়।
চোর নং ২বলে, ‘বিলাতি কমলা আসলে নাশপাতি সেটা মানুষকে দাওয়াত করার পর জানতে পারলে গিয়াসউদ্দিন হার্ট এটাক করে মরেই যেতো তার চেয়ে বরং হার্ট এটাকটা আমরাই পেলাম🐸’

চলবে♥

যদি তুমি বলো পর্ব-৩২+৩৩

0

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩২
আফনান লারা

ইশানকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথি চটজলদি তেলের বাটিটা নিয়ে বলে তার কাজ হয়ে গেছে।
ইশান তখন হেঁটে হেঁটে সবকয়টা কর্ণার বন্ধ করে চলে গেলো নিজের রুমে।তিথি ও পিছু পিছু এসে ওর পাশে বসে ঘাড়ে তেলগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,’আমি আসার আগে এই কাজটা কে করতো?’

‘কেউনা,প্রতি বছরে প্রতি মাসে প্রতি সপ্তাহে যতবার মালিশ করবার প্রয়োজনবোধ মনে করেছি ততবার গুনেছি।বউ আসলে শোধ হবে’

‘এই কাজ আন্টিকে দিয়ে করালেই হতো’

‘মায়ের বয়স হয়েছে।আর তাছাড়া এসব বউরাই করে।’

তিথি মালিশ করে দিতে দিতে দেখে ইশান আবার ঘুমিয়ে গেছে।তাই সে আগেরমতন চিপস খেতে খেতে রুম থেকে বের হয় ওমনি তার হোয়াটসএপে একটা মেসেজ আসে।তানিয়া লিখে রেখেছে তিথির পাঠানো চিঠির ছবিটা দেখে ওর বন্ধু বলেছে এটা একটা প্রেমপত্র। আর যে লিখেছে তার নাম ‘কুয়িনা’

তিথি জানতে চাইলো মেয়েটি কাকে চিঠিটা লিখেছে।তখন তানিয়া বললো এসব লেখা ছিল না।
এরপর তিথি ইশানের রুমে ফেরত এসে অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।আসলেই কি এতগুলা সময়ে ইশান এখানকার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল?
জড়ালেও বা কি!সে নিজেও তো আদিলের সাথে প্রেম করেছে।
তিথি ভাবতে ভাবতেই শুনতে পেলো ইশানের এই বাসার টেলি ফোনের আওয়াজ।সে বাহিরে বেরিয়ে সেই ফোনের কাছে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি গলা শোনা গেলো কিন্তু মেয়েটা কি কি বললো তার কিছুই তিথি বুঝলোনা।
বুঝার জন্য তিথি ইংরেজীতে জানতে চায় মেয়েটি কে,কি তার পরিচয়,ইশানকে কেন ফোন করেছে।
কিন্তু মেয়েটি যখন বুঝলো কলটা ইশান ধরেনি,বরং ধরেছে অন্য কেউ তাই সে সাথে সাথে কলটা কেটে দেয়।

তিথির মাথা ঘুরছে।গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে সে।নতুন নতুন এসব ঝামেলায় পড়তেই হবে তাকে। তানিয়া বলেছিল দ্রুত ওদের ভাষা শেখার প্রেক্টিস করে নিতে।মাথা চুলকে তিথি আবার ইশানের কাছে এসে দেখে সে বিছানায় নেই।পুলের দিকে ওকে দেখা যাচ্ছে।তিথি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সেই চিঠিটা নিয়ে ইশানের পাশে এসে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ খোলে।সে জানতে চায় চিঠিটা কার।
তখন ইশান এক নজর চিঠিটা দেখে বলে,’কুয়িনার’

‘কে এই কুয়ারা?’

‘কুয়ারা নয়,কুয়িনা’

‘একই।বলেন সে কে?আপনাকে প্রেম পত্র পাঠাতো কেন?’

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ওসব কিছুনা।যাই হোক,তুই কি তোর শাস্তির কথা ভুলে গেছিস?’

‘কিসের শাস্তি?’

ইশান আবারও হাসে।এরপর তিথির হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলে,’মনে নেই?’

‘না তো!’

ওমনি ইশান এক ধাক্কায় তিথিকে পুলে ফেলে দিয়ে বলে,’এই তো এই শাস্তি’

তিথি মুখ মুছে মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে বললো,”আপনাকে আমি দেখে নিবো’

ইশান তখন পুলের পাশে বসে বললো,’নে দেখ।প্রাণ ভরে দেখ।আমি এখানেই আছি’

তিথি বিড়বিড় করে হাতের চিঠিটা পানিতে ভাল করে চুবিয়ে সেটাকে ভর্তা বানিয়ে বললো,’সব নষ্ট করে দিব’

‘আলমারিতে আরও আছে।যা খুশি কর’

‘তার আগে আমাকে উঠান,আমি পেট পুরে সাদা গরম ভাত আর ডাল,মাংস খাবো এইসব চিপস টিপসে আমার পেট ভরবেনা’

‘খাবার নিয়ে আসবে আমার সেক্রেটারি।আর হ্যাঁ,আমি কিন্তু উঠাচ্ছিনা।নিজেই উঠ।আমি উঠালে সেটা শাস্তি হলো কি করে?’

তিথি অনেক কষ্টে ঝুলে, ল্যাংড়িয়ে উঠে বসে এখন হাঁপাচ্ছে,সেই সময় পাশের বাসার সেই দম্পতির মধ্যে যিনি ছিলেন মিঃবারি তিনি তার বাসার ছাদ থেকে বললেন,’কি খবর ইশান?কতদিন পরে!’

ইশান হাত নাড়িয়ে হাই দিলো।তখন তিথি হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’উনি বাংলা জানে?’

‘হ্যাঁ’

‘আপনি যে বললেন ওরা জাপানি?’

‘উনার বউ জাপানি’

‘ওহ!ধুর!কোথায় ভাবলাম পাশের বাসার ভাবীর সাথে কুটনামি করবো!তা আর হবেনা মনে হয়!এই বেডার সাথে তো আর কুটনামি করতে পারবোনা!’

ইশান চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে তিথির গায়ে দিয়ে ভেতরে যেতে বললো।তিথি ও উঠে দিলো এক দৌড়।
ইশান পুল সাইডের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে ভাবছে এটাকে কভার করে দিবে,নাহয় মিঃ বারি হুটহাট কথা বলতে ছাদে উঠলে তিথিকে এরকম অবস্থায় দেখে ফেলবে।এরপর তো সে তিথিকে এই পুলে আরও চুবাবে।

তিথি গায়ের জামাটা বদলে অন্য একটা জামা পরে নিয়ে সোফায় বসে আছে।খাবার আসলেই খেয়ে নিবে।
বাংলাদেশে তার চোখের সামনে কত খাবার থাকতো,তখন ইচ্ছাও থাকতোনা কিছু খাওয়ার।আর এখানে খাবার নেই বলে তার এত খিধে পাচ্ছে।
পা দোলাতে দোলাতে তিথি সোফাতেই মাথাটা এলিয়ে দেয়।
মূহুর্তেই তার চোখ লেগে আসে।সন্ধ্যা গিয়ে রাত হয়।ইশান বাহিরে থেকে মিঃ বারির সাথে এত সময় ধরে আড্ডা দিয়েছিল,এরপর সে ভেতরে এসে দেখে তিথি ঘুমায়।ততক্ষণে ওর সেক্রেটারি ও আসে খাবার নিয়ে।ইশান খাবারগুলো রেখে দিলো এরপর তিথির কাছে এসে কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
নিস্পাপ চেহারা!
হাহ!এরকম নিষ্পাপ চেহারা ওর ও ছিল একসময়।অথচ তিথি কোনো তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাই অপমান করে গেছে,তাহলে সে কেন এখন দয়া দেখাবে?
ইশান খাবার গুলো লুকিয়ে রাখতে চাইলো তখনি ওর মনে পড়ে সকাল থেকে ভারী কিছুই খায়নি তিথি,এখন কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
অন্যভাবেও কষ্ট দেয়া যেতে পারে।
এই ভেবে সে আর খাবার লুকালোনা।তিথির কাছে এসে অন্যমনা হয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।যাকে সবচাইতে বেশি ঘৃনা করে সেই আবার ওর মনের মানুষ!
কে বলেছে ঘৃনা আর মনের মানুষ আলাদা হতে হয়?
এই যে ইশানের কাছের মানুষটা একাধারে তার ঘৃনার এবং মনের মানুষ দুটোই।
তিথির কপালে হাত বুলাতে বুলাতে ইশান মাথা নিচু করে ওর কপালে চুমু দিতে যেতেই আবারও তার বাসার সেই নাম্বারে কল আসে।
ইশান তিথিকে রেখে এসে কলটা রিসিভ করতেই শুনতে পায় কুয়িনার গলা।ওমনি সে ফোনটা রেখে দেয় এরপর তিথির দিকে তাকায়।তিথি জেগে যায়নি,তবে কুয়িনার একটা ব্যবস্থা করতে হবে,তা নাহলে তিথিকে ভুল বুঝাতে পারে।
—–
রিদম পিংকিদের ছাদে এসে মোমবাতি সাজাচ্ছে।আজ পিংকির জন্মদিন।
ফেসবুকে দেখেছে এক ছেলে অনেক বছর প্রেম করে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পেরেছে।তার শুরুটা হয়েছিল এভাবেই ছাদে মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিনের উইশ করার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু সব তো আর মন মত হয়না।মোমবাতি একটা জ্বালিয়ে রেখে বাকিগুলো জ্বালাতে গিয়ে বাতাসে জ্বালানো সব মোমবাতি নিভে যাচ্ছে।এমন করে দেড় ঘন্টা সে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মেনে সেই মোমবাতির মধ্যেই চিটপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছে।

এই সব দেখলো পিংকির ছোট বোন পান্না।বেশ নাদুসনুদুস দেখতে,আর তাই রিদম ওর নাম দিয়েছিল পান্তুয়া।তার বয়স সাড়ে সাত বছর।
পান্তুয়া রিদমের এমন অবস্থা দেখে পিংকির কাছে ছুটলো।পিংকি তখন চুলে বিনুনি করছিল,পান্না ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’বুবু!টুলাভাই তো মরে গেছে’

‘তোকে কতদিন বলেছি ওটা টুলাভাই নয়,দুলাভাই’

‘আহা শুনো না!’

‘আচ্ছা মরে গেছে?আমার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত?
না নাহ!সেকি!কিভাবে?এ হতে পারেনা,না না না’

পান্না গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে পড়লো ধপ করে।
পিংকি তার সদ্য কাজল দেয়া চোখ ডলে কাজল লেপটে বললো,’আজ আমি রিধবা হলাম!মরা রিদমের বউ রিধবা!তা কিভাবে মরলো সে!আমি ফাঁসি চাই!আমার নিজের।কারণ আমি তাকে ভালবাসতে পারলাম না!’

‘উফঃ!কি দেখে যে রিদম ভাই তোমাকে গেইট ফুল দিয়ে প্রোপোজ করেছিল!’

‘আমার অভিনয় নিয়ে তোর হিংসা হয়?আগে বল কিভাবে অজ্ঞান হইছে।ঐ বলদটা মরার মতন না!’

‘দেখলাম মোমবাতির মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে’

”মোমবাতি? ওহ হো!আজ তো আমার জন্মদিন। হাহ!আমি ভুলে গেলাম!’

‘আবার শুরু করছো অভিনয়!মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে টুলাভাইকে বলি তোমাকে রেখে আমাকে বিয়ে করে নিতে।অন্তত ওনার জীবনটা এই ন্যাকামি দেখে শেষ করতে হবেনা!’

‘কিছু বললি?’

‘না বললাম কেমন আছো🐸!

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৩
আফনান লারা

পান্নাকে সাথে নিয়ে পিংকি ছাদে এসে দেখে রিদম মোমবাতির মাঝখানে ঘুমাচ্ছে। পিংকি ছুটে এসে বললো,’ও মাই ছাদ!!হাউ সুইট!ওওওওওওউ’

রিদম চোখ খুলে পান্নাকে সবার আগে দেখে বললো,’পান্তুয়া ভাল আছ?’

‘জ্বী টুলাভাই’

পিংকি বললো,’তুমি এসব আমার জন্য করেছো রিদেমন!’

‘হ্যাঁ বউ!’

‘উফ!বউ বলবেনা।আমার ভীষণ ভীষণ ভাল লাগে’

পান্না গাল ফুলিয়ে দূরে চলে গেলো।এবার চলতে থাকবে পূর্ণ দৈর্ঘ্য সিনেমা!’

রিদম উঠে বসে বললো,’বিশ্বাস করো,অনেক চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারলাম না।শুধু নিভে যায়!’

‘নিভে দিয়ে একটা গান মনে পড়লো।কিন্তু লাইনটা মনে করতে পারছিনা!কি যেন ছিল’

পান্না ছাদের রেলিং ধরে বলছে,’তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি অন্ধকারে মইরা যামু ছাদ থেকে পইড়া🐸’

‘ইয়া রাইট!কিন্তু কেমন যেন লাগলো।পান্না তুই কি ভুল বলছিস?লাইনটা কি এমন ছিল?’

‘ঐ পুচকুকে এসব শেখায় কে?তুমি ওর খেয়াল রাখোনা কেন!’

‘আমি এই গানটা শুনছিলাম তখন বোধহয় ও আমার পাশে থেকে মুখস্থ করে নিয়েছে।জানোই তো!বাচ্চারা যা দেখে,যা শুনে তাই মুখস্থ করে ফেলে!’
——
তিথি ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে দেখে ইশান ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে তিথির গায়ে ঢেলে দিতেই ও লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো।গায়ের ভেজা পোশাকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,’ঘুম থেকে ওঠানোর আরও অনেক ওয়ে আছে!’

‘ওকে ফাইন!তবে আজ থেকে গরম পানি ঢালবো’

তিথি রেগে মেগে ভেতরের রুমের দিকে চলে গেছে।ইশানের কি যে মজা লাগে তিথিকে এরকম অত্যাচার করতে!
সে হাসতে হাসতে নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বসে।তিথি ভেতরের রুম থেকে পোশাক বদলে তেড়ে এসেছিল ইশানের সাথে লড়াই করার জন্য।কিন্তু এসে দেখে ইশান কাজে ব্যস্ত।
তিথির হঠাৎ করে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।সে এক বালতি পানি এনে ইশানের পিছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,’এই ল্যাপটপে কি কি আছে?’

‘কি আছে!আমার অফিসের সব ডকুমেন্টস।আর কি!’

‘যদি বাই চান্স ওগুলা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি কোনো ক্ষতি হবে?’

‘নাহ,কিন্তু ওগুলা আবার রেডি করতে আমার এক বছরের বেশি সময় লেগে যাবে’

‘তাই?’

‘আচ্ছা তুই এসব কেন জিজ্ঞেস করছিস?’

এই বলে ইশান পেছনে তাকাতেই তিথি তার হাতের বালতির পানি ইশানের গা সহ ল্যাপটপে ঢেলে দিলো।
ইশান তব্দা হয়ে বসে আছে।এটা কি ঘটে গেলো!

তিথি হাসতে হাসতে বলছে,’সেই কবে কি না কি করেছি তাই বলে রোজ রোজ বালতির পানি দিয়া ঘুম ভাঙ্গাইয়া দাঁত কেলাইয়া হাসবেন!তা তো হয়না!’

ইশান মুখ মুছে ল্যাপটপটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো।তিথি তখন পিছিয়ে গিয়ে বললো,’যদি আমার কিছু করছেন তো জাপানের পুলিশ স্টেশনে চলে যাবো।কাছেই আছে’

ইশান গায়ের টি শার্টটা খুলে তিথির দিকে ছুট লাগালো।
তিথিও দিছে এক দৌড়।পুরো বাসায় ছোটাছুটি করতে গিয়ে এক সময়ে পা পিছলে তিথি ভেসমেন্টের সিড়িতে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেছে।ইশান শুরুতে হাসলেও তিথি নিজ থেকে উঠতে পারছেনা দেখে তার হাসি থামলো।নিজেও নেমে ওর হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারলো তিথির পায়ে একটা পেরেক ঢুকে গেছে।ব্যাথার কারণে তিথি বুঝতে পারেনাই তার পায়ে পেরেক ঢুকেছে।সে শুধু বলছিল তাকে উঠাতে।
ইশান তখন তিথির পা থেকে পেরেকটা ধরার চেষ্টা করতেই তিথি সেটা দেখে ফেলে ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো।

‘থাম!আমি ঠিক করে দিবো’

‘কি ঠিক করবেন!আপনার কারণে এমন হয়েছে।আপনার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই সব আমার পা আর শরীরের উপর দিয়ে দখল যাচ্ছে।একবার সিড়ি থেকে পড়ে এক মাস ল্যাংড়া ছিলাম। এখন আবার এইটা।আপনি সিড়ি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান আমার থেকে?’

‘চুপ!’

তিথিকে ধমকে ইশান এক টান দিয়ে পেরেকটা উঠিয়ে নেয়।এরপর ওকে কোলে তুলে নিলো।তিথি চুপ করে আছে,ধমক খেয়ে আর কিছু বলছেনা সে।
———
রকিব খুবই মা,খালা ভক্ত ছেলে।তার মায়ের কথা হলো বিয়ের সব শপিং তিনি আর তার বোন গিয়ে করবেন।অন্য কাউকে নিবেন না।
এদিকে তানিয়ার অনেক শখ সে নিজের বিয়ের শপিং নিজে দেখে করবে,রকিব ও তা চায় কিন্তু মায়ের এমন সিদ্ধান্তে সে টানাপোড়নে পড়ে গেছে।শেষে তানিয়াকেই সেক্রিফাইস করতে বললো।
তানিয়াও কম না।সে জেদ ধরে বসে আছে সে শপিংয়ে যাবেই!
রকিব ও তাকে মানা করে বসে আছে।
আজ শপিং করার দিন ছিল।কথামতন রকিবের মা এবং খালা এসেছেন শপিংমলে।তারা একটা দোকানেও বসেছেন।শাড়ী বের করা হলো।রকিবের মায়ের ফার্স্ট চয়েস শাড়ী।কিন্তু তানিয়ার প্রিয় হলো লেহেঙ্গা।
ওনারা শাড়ী দেখছিলেন সে সময়ে তাদের পাশে বোরকা পরা একটি মেয়ে এসে বসলো।মেয়েটি চোখে চশমা ঠিক করতে করতে কণ্ঠস্বর মোটা করে বললো,’লেহেঙ্গা দেখান তো।এসব শাড়ী টাড়ী দেখাবেন না!মিডেল ক্লাস রা শাড়ী কিনে কিনে শাড়ী লাটে উঠিয়ে দিয়েছে।লেহেঙ্গা কত সুন্দর দেখতে হয়।রাণী রাণী ফ্লেভার!’

এ কথা শুনে রকিবের মা চোখ বড় করলেন তারপর দোকানদারকে বললেন তাদের ও লেহেঙ্গা দেখাতে।বোরকা পরা মেয়েটা ছিল তানিয়া।তার পছন্দে পানি ঢালা কারোর সাধ্যে নেই।
তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে তার পছন্দের একটা লেহেঙ্গা নিয়ে বললো,’এটা আলিয়া ভাট পরছিল।এটার কপি লেহেঙ্গা তাই না?
আমি নিলে এটাই নিবো।কেউ আটকাতে পারবেনা।যত টাকা লাগে আমি দিব।তারপর দেখিয়ে দিবো বিয়ে কাকে বলে!’

রকিবের মা লেহেঙ্গাটা দেখে বললেন ‘আপা দেখেন তো!কি সুন্দর এটা!’

‘হো ঠিক কইছস।এখন এই মাইয়া তো এই লেহেঙ্গা ছাড়বেনা মনে হয়।কথা বলে দেখ তো’

‘এই যে মেয়ে শুনো’

‘আপনি কি শাহরিয়ার শান্ত?এই যে মেয়ে শুনো বলছেন কেন?’

‘না আমি আহানার ভোলার খালা।শুনো না!লেহেঙ্গা টা কি কোনোভাবে আমাদের দেয়া যায়?’

‘কেনো কেনো!কেনো দিব আমি?আমার এটা লাগবেই’

‘আহা!তুমি আরেকটা দেখো!দিপিকা যেটা পরছে ওটা দেখো ‘

‘রানভীরের বউয়ের লেহেঙ্গা লাগবে আমার,ওর এক্সের না’

‘নাও না।আচ্ছা চা নাস্তার জন্য এই এক হাজার টাকা রাখো’

‘দিলে ভাল দাম দিবেন।এক হাজার টাকায় তো আমি ১০ডজন ডিম ও পাবোনা।’

রকিবের মা বললেন,’আমি আমার ছেলের হবু বউকে খুব ভালবাসি।কিন্তু তাকে আজ শপিংয়ে আনিনি কারণ শুনেছি সে খুব কিপটা।ছেলের টাকা বাঁচানোর জন্য কম দামী সব কিনবে।কিন্তু আমি সেটা চাইনা বলেই তাকে আনিনি।তুমি কত টাকা রাখবে এটা দিয়ে দেয়ার জন্য?আমি ততটাই দিবো।আসলে আমি তো জানিনা আজকালকার মেয়েদের পছন্দ কিরকম!’

তানিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো।সে নিকাব উঠিয়ে রকিবের মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’চাচুমা!আইলাবু!’

‘একি তানিয়া তুমি!’

খালা বললেন,’দেখছস বইন!আমি তোরে কইছিনা গলা চিনা চিনা লাগে!এটাই তানিয়া। আমার কথা মিলছেনি?’

রকিবের মা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো ‘তোমার আসল রুপ বের করতে এই নাটক করলাম।এত করে মানা করছি শপিংয়ে আসিওনা।তাও আসলে!আমাদের বংশের নিয়ম আছে বিয়ের আগে বউ তার শাড়ী,গহনা দেখতে পাবেনা।তাহলে বউয়ের নজর লাগে সব চাইতে বেশি! উফ!তুমি তো খুব ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে!’

তানিয়া জিভে কামড় দিয়ে বললো,’আরে এইসব বাদ দেন।আমার নজর লাগবেনা।লেহেঙ্গায় থুথু দিয়া দিবোনে!’

‘ইহহহহহ।বিয়ের লেহেঙ্গা বউয়ের স্পর্শের বাহিরে থাকতে হয়।নাহয় অমঙ্গল হবে! ‘

তানিয়া বিড়বিড় করে বললো,’তবে বিয়ার দিন এই লেহেঙ্গা রকিবের খালারেই পরাইয়া দিয়েন!’

‘কিছু বলছো তুমি?’

তখন রকিবের খালা বললেন,’আমি শুনছি!ওয়ে কইছে আমি পরতাম এইটা’

তানিয়া তখন দাঁত কেলিয়ে বললো,’মাশাল্লাহ!মাশাল্লাহ!খালার দেখি কানের পর্দাই নাই।তাই পর্দা ফাটার চান্স ও নাই,তাই তো যাই বলি তাই শুনে ফেলে!আসলে আমি বলছি আপনিও একটা শাড়ী নেন।বিয়েতে আপনাকে সবার চাইতে বেশি সুন্দর লাগতে হবে!’

চলবে♥