Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2432



বাস্তবতা পর্ব- ০২(অন্তিম পর্ব)

0

বাস্তবতা
পর্ব- ০২(অন্তিম পর্ব)

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ও কল না দিলেও আমি কল দিতাম। খুঁজ খবর নিতাম। কি খেয়েছে? কি করতেছে? শরীর ভালো কি না? কখন ঘুমোবে? এসব, শুধু এসব বিষয়েই ওর সাথে আমার কথা হতো। মাঝে মাঝে একটু আধটু বেশী কথা হতো। যখন বেশী কথা হতো তখন কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যেতাম এই ভেবে যদি চিরতরে হারিয়ে যায় আমাদের বন্ধুত্ব। মনের কথাগুলো তাই অব্যক্ত হয়েই রয়ে গেল আমার মনের গহীনে।
অতিবাহিত হয়ে যায় আরো ১টি বছর। আমি তখনো সোহেলকে আমার অব্যক্ত কথাটা জানাতে পারিনি। সোহেলও আমায় ভালোবাসার ব্যাপারে কিছু বলতো না। কিন্তু মুখে না বললেও সোহেল ওর কর্মকান্ড দ্বারা ও আমায় অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিত।

সেবার প্রচন্ড জ্বরে সোহেল যখন শয্যাশায়ী, তখন আমি ছুটে গিয়েছিলাম ওর কাছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি জন্মায় ওর। চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। দোকান থেকে রেজার এনে সেভ করে দিলাম। নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে দিলাম। গরম পানি গোসল, পরনের ওড়না দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া। সব, সব করে দিলাম। ওর অসুস্থতায় আমি যেন ওর কাছে চলে গেলাম। একেই বলে হয়তো ভালোবাসার গভীরতা। ও সুস্থ হয়ে উঠল।
কিন্তু আমি আমার মনের কথাটা ওকে জানাতে পারলাম না।

“হৃদয় যতই ব্যথিত হোক, কর্মচক্র আপন গতিতে চলিতে থাকে।”
আমাদেরও দিন চলতে থাকল। আমি বোধ হয় আর পারলাম’ই না ওকে মনের না বলা কথাটা বলতে! গুমড়ে কেঁদে উঠলাম।
দিনটি ছিল শুক্রবার। ২০১৪সালের উক্ত দিনে সকাল ১০টায় আমি তাকে ডাকলাম। ও আসলে আমি আমার কথাটা জানালাম সাদামাটা ভাবে। হয়তো তখন তার কাছে আমার হৃদয়ের সবটুকু অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারিনি। আমি চাইনি সে আমার না বলা ভালোবাসা হোক। জানি, যখন কেউ কাউকে বেশি ভালোবাসে তখন সে তাকে দুরে ঠেলে দেয়। যে দুরে ঠেলে দেয়, তাকে আরো বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কারন মানুষ কষ্ট পেতে ভালোবাসে। মনে হয় আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
সোহেল আমার যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। একটানা ৩মাস ওর সাথে আমার কথা হয়নি। ৩মাস পর একবিকেলে সোহেল আমায় কল করে। ও আমাকে একটা কথা বলতে চায়। তাই ওর বাসায় যেতে বলে। একটা বছর ধরে যে কথাটা শুনার জন্য চাতকের মতো অধির আগ্রহে বসে ছিলাম আজ তার’ই অবসান ঘটতে চলেছে। আজ আমার সোহেল নিজ থেকে আমায় ডেকেছে। এতদিনে সেই বহুল প্রত্যাশিত শব্দ ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনতে পারব।
এ যে কি আনন্দের ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। আমি ছুঁটে গেলাম সোহেলের কাছে। সোহেল তখন রুমে বসে ছিল। আমাকে দেখে ও কেমন যেন ঘামছিল। বুঝতে পারলাম জীবনের প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি তো তাই ওর এরকম অবস্থা হচ্ছে। ওকে বললাম, বলো কি বলবে? ও দরজার দিকে এগিয়ে যায়। বন্ধ করে দেয় দরজাটা। আমার খুশিতে উজ্জল মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের ন্যায় হয়ে যায়। ওর দৃষ্টি’টা কেমন যেন অন্যরকম লাগছিল। অন্যান্য দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার বুকের ভেতরটা আশঙ্কায় কেঁপে উঠে। সোহেল একটু একটু করে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম কিন্তু থেমে গেলাম না। এক পা দু’পা করে আমিও পিছু হটতে লাগলাম। আচমকা সোহেল আমার সর্বাঙ্গের আঁচল ধরে টান মারে। বুকটা ধুরু ধুরু করে কাঁপছিল। কাপা গলায় সোহেলকে প্রশ্ন করলাম- কি করছ? সোহেল কোনো কথা না বলে আমার দিকে হিংস্র বাঘের মতো এগুতো থাকে। একটা সময় বিছানায় ফেলে ও আমার উপর ঝাপিয়ে পরে। আমি দু’হাত দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছি ওর মুঠু থেকে মুক্ত করতে। কান্না করে করে বলতেছি-
” না, সোহেল! তুমি এটা করতে পারো না। তুমি এটা কখনো করতে পারো না। তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাই তুমি এটা করতে পারো না। সোহেল তবুও কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে বলে উঠলাম,
আমার পিরিয়ড হয়েছে। আমায় আজকের মত ছেড়ে দাও।”

সোহেল আচমকা আমায় ছেড়ে দিল। হাফ ছেড়ে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি। আসবার কালে সোহেলকে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমায় বিশ্বাস করাটা কি আমার অপরাধ ছিল? ও ভয়ার্ত হাসি দিয়ে বলেছিল সেদিন, বিশ্বাস নয়। স্বপ্ন। তোর স্বপ্ন দেখা অপরাধ ছিল। তোর মত কালো, কুৎসিত একটা মেয়ে যাকে নিয়ে কিনা বিছানায় শুইতে গেলেও রুচিতে বাঁধবে, সেই মেয়ে কি না স্বপ্ন দেখে আমায় নিয়ে। আরে তোর মত হাজারো মেয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমার এক রাত্রের সঙ্গী হওয়ার জন্য, বেড পার্টনার হওয়ার জন্য। আর সেখানে কি না আমি তোকে ভালোবাসব???
ঐ তুই কি ভেবেছিস? তোকে আমি ভালোবাসার কথা বলব????
হা, হা, হা, হা, হা, হা….
হাসালি….
যা, এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যা।
সেদিন দু’চোখের নোনাজল সঙ্গী করে বের হয়ে এসেছিলাম সোহেলের ওখান থেকে। এরপর কতবার যে মরার জন্য পা বাড়িয়েছিলাম তার কোনো হিসেব নেই। আবার ফিরেও এসেছি অসহায় মায়ের কথা চিন্তা করে। যাকে কিনা রোজ রাত্রে কাঁদতে দেখেছি আমার জন্য। আমার মত একটা কালো মেয়ের জন্য। পৃথিবীর কারো কাছে আমার মূল্য না থাকলেও আমার মায়ের কাছে ছিল। তাইতো প্রচন্ড জ্বরে যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিলাম তখন আমার জনমদুখিনী মা ছুটে আসে আমার কাছে, আমাকে দেখতে। এই কয়দিনে অনেক শুকিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মা আমায় বুকে নিয়ে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে। আমার নাকে, মুখে, কপালে চুমুর পর চুমু দিতে থাকে। মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি আমার মা আমার মাথার পাশে বসে ঝিমুচ্ছে। আমায় চোখ মেলতে দেখে ওনি আমার দিকে জল ছলছল চোখে তাকান। খাটে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। প্রশ্ন করলাম মাকে,
” মা! আমি কালো বলেই কি তুমি আমার নাম শিমুল রেখেছিলে? সেই শিমুল যে শিমুলের কোনো মূল্য নেই। যে রাস্তায় পথিকের পদতলে পিষ্ট হয়।”

কথাগুলো বলে মায়ের দিকে তাঁকালাম। লক্ষ্য করলাম আমার মা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। কালো মেয়ের মায়েরা বুঝি এভাবেই কাঁদে, এভাবেই দুঃখগুলো ঢেকে রাখে আঁচলের অন্তঃরালে…..

সমাপ্ত…..

[লেখিকার কথা:- নাহ! গল্প ওখানেই শেষ হয়নি। শিমুলের জীবনে আসে আমার কাজিন রুবেল। রুবেল ভাইয়া শিমুলকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। রুবেল ভাইয়া কাতার থাকে। পরিবারের সম্মতিক্রমে আগামী শুক্রবার দিন ওদের বিয়ে হবে ফোনে। রুবেল ভাইয়া ৩মাস পর দেশে আসবে।
শিমুল জানে না এরপর কি হবে? রুবেলও শিমুলকে ব্যবহার করবে? নাকি স্বাভাবিক জীবন দিবে]

বাস্তবতা পর্ব- ০১

0

বাস্তবতা
পর্ব- ০১

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

আমি শিমুল। তাসনুভা তাবাসসুম ‘শিমুল’। তাসনুভা নামটা যে খুব বেশী খারাপ তা কিন্তু নয়। অথচ আশ্চর্য জনক হলেও এটাই সত্যি, শেষ কখন এই নামে কে বা কারা আমায় ডেকেছে সেটা আমার মনে নেই। আর ক’জন মানুষ’ই বা আমার নামটা জানে সেটা বলাও দুষ্কর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি অসংখ্য ডাক। আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আমার রিলেটিভ, ফ্রেন্ডস সার্কেল সর্বোপরি দূর দূরান্তের অসংখ্য মানুষ আমায় বিভিন্ন নামে ডাকে।
আমার আপন জ্যাঠাতো বোন যার যাদের সাথে আমাদের একই বাড়িতে বসবাস তিনি আমাকে ‘কালি’ বলে ডাকেন। আমার এলাকার মানুষ আমায় ‘কাইল্লাবি’ বলে ডাকে। এলাকার মানুষজনের কাছে আমি এই নামেই পরিচিত। আমার ফ্রেন্ডসরা আমায় ‘কালিতারা’ বলে ডাকে। ওদের সাথে কোথাও গেলে কিংবা কেউ যদি আমায় নাম জিজ্ঞেস করে তাহলে আমার বলার আগেই ওদের ডাক-
“এই কালিতারা, এদিকে আয়!”
আমি যখন স্কুল থেকে কোনো সাফল্যের সংবাদ নিয়ে বাসায় আসতাম তখন রাস্তা থেকেই উৎফুল্লের স্বরে চেঁচিয়ে আসতাম,
মা, মা! আমি প্রথম হয়েছি….
এলাকাবাসী খবরটা শুনত। শুনে তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলত, কালির আবার লেখাপড়া….
আমি ওদের প্রতিবাদের স্বরে বলতাম,
দেখুন! আমার নাম কালি নয়। আপনারা আমায় এ নামে ডাকবেন না। আমার একটা নাম আছে, সেই নামে ডাকবেন আমাকে।
আমার কথা শুনে ওদের হাসি হাসি দ্বিগুন পরিমাণে বেড়ে যেত।
সে হাসি অবজ্ঞার,
সে হাসি অবহেলার,
সে হাসি আমার কালো হয়ে জন্মানোর….
প্রচন্ড কষ্ট বুকে চেপে বাসায় এসে যখন মুখ থুবড়ে পরে ছিলাম, তখন’ই আমার বাবার ডাক। ” কাইল্লা’মা! কইরে তুই?”
বাবার ডাক শুনে মন আকাশে জমে থাকা মেঘগুলো বাষ্প হয়ে ঝরে পরে। চোখের’ই জল মুছে নিতাম আঁচলে। মনকে শান্ত্বনা দিতাম এই বলে, যেখানে নিজের বাবা এমন নামে ডাকে সেখানে ওরা তো ডাকবেই।
এভাবে অসংখ্য মানুষের অসংখ্য ডাকের ভীড়ে চাপা পড়ে যায় আমার সত্যিকারের নামটি। অন্তরালে চলে যায় আমার তাসনুভা তাবাসসুম ‘শিমুল’ নামটি।

নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। আমার বড় আরো দুই ভাই আছে। আমি সবেমাত্র সেভেনে উঠেছি। অথচ এখনি আমার পরিবার বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে। একে তো গরিব ঘরে জন্ম, তারউপর গাঁয়ের রং কালো। বয়স হয়ে গেলে কে করবে বিয়ে? এই মনোভাব সামনে রেখে’ই ওরা আমার জন্য পাত্র দেখতে শুরু করে। নির্দিষ্ট দিনে ওরা আমায় দেখতে হাজির হয় আমাদের বাড়িতে। উঠোনে চেয়ার টেবিল গোল করে পেতে দেওয়া হয়। আমার এক ভাবি আমায় এনে দাঁড় করায় ওদের সামনে। সবসময় ক্লাসের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করা এই আমার দু’চোখ ভরা অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়া। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল। গায়ের রং কালো+ গরীব ঘরে জন্ম হওয়ায় আমি পারিনি কোনো প্রতিবাদ করতে। ওরা আমার মাথার ঘোমটা ফেলে, চুল খুলে, হেঁটে হাটিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আমায় দেখতে লাগল। আমায় নামাজ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, তারপর হেঁটে রুমে যেতে বলল। রুমে গিয়ে চৌকির উপর উঠে জানালার ছিদ্র দিয়ে আমি ওদের দেখছিলাম আর কথাবার্তা শুনছিলাম। কথা শুনে মনে হলো এবারে বিয়েটা হয়ে যাবে। কারণ, আমার বাবা ভাইয়ের তখন এরকম হাসি ছিল যে হাসি মানুষ তখন’ই দেয় যখন তাদের কাঁধ থেকে বোজা নামে। সেদিন পুরোটা বিকেল পুকুরপাড়ের টঙের উপর উদাসীন দৃষ্টিতে বসে কাঁটিয়েছি।
মনটা ভিষণ খারাপ;
আমার জন্য পংখীরাজ ঘোড়ায় চড়ে কোনো রাজপুত্র আসেনি,
পড়ন্ত বিকেলে কারো হাতে হাত ধরে হাঁটতে পারিনি,
বৃষ্টিস্নাৎ সন্ধ্যায় প্রিয় কারো সাথে ভিঁজতে পারিনি,
কিংবা কোনো জোৎস্না রাতে কাছের মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে পাশাপাশি বসে জোৎস্নাবিলাসও করতে পারিনি;
নাহ, এসব কোনো কারনেই আমার মন খারাপ না। আমার মন খারাপ কারন আমি কালো। সৃষ্টিকর্তা আমায় কালো করে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
সেদিন ঘটকের সাথে বাবা গিয়েছিল ঐ পাত্রের বাড়িতে। বাড়ি দেখে এসে খুশি খুশি ভাব নিয়ে জ্যাঠিমাকে বলতে লাগল_
” ভাবি! কইছিলাম যে বাড়ি তো দেইখ্যাইছি। বিরাট বড় বাড়ি। অনেক সম্পত্তি আছে। তয় ছেলে একটা বিয়ে করছিল, বউ গেছেগ্যা।”

ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে জ্যাঠিমার জবাব, ” পোলা মাইনষ্যের আবার খুইত আছে নাকি? বিয়া অইছে কি অইছে? দিয়া দেন বিয়া। এত ভালা ঘর আর পাইবেন না।”

আমার বাবা জেনেশুনে এক বিবাহিত পুরুষের সাথে তার অবিবাহিত, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেয়। বিয়ের কয়দিন যেতে না যেতে’ই আমার উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। শ্বশুর বাড়ির সবাই বিভিন্ন কৌশলে আমার উপর নির্যাতন করত। কখনো শারীরিক, কখনো বা মানসিক। আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম না। প্রতিবাদ করতে গেলেই আমায় বলত, বাপের বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনতে। যা কিনা আমার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। আমি নিরবে সয়ে যেতে লাগলাম। আমার স্বামী (মিলন) দিনদুপুরে মদ খেয়ে এসে মাতলামি করত। আমায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। কখনো বা আমার বাবা মা তুলে গালি দিত। আমি সয়ে যেতাম। সেসব কিছু মুখ বোজে সহ্য করে যেতাম।
কারণ- আমি কালো। সৃষ্টিকর্তা আমায় কালো করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ। কতদিন যে মেরে রক্তাক্ত করে টেনে হিঁচড়ে আমায় বাড়ির বাইরে ফেলে দিয়ে এসেছে তার কোনো হিসেব নেই। ঐ বাড়ির সবাই মনে প্রাণে চাইতো আমি যেন ঐ বাড়ি থেকে চিরবিদায় হয়ে যায়। কিন্তু আমি যেতাম না। আমার স্বামী আমায় বাড়ির পিছনে ফেলে আমায় অজস্র লাঠি, উষ্টা দিয়েছে। আমি চিৎকার করিনি। দাঁতে দাঁত চেঁপে কখনো গরুর খোয়ার, কখনো বা সামনে থাকা গাছকে জাপটে ধরে থাকতাম। ওরা আমায় মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে যখন বাড়িতে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিত, তখন আমি গরুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। অজস্র রাত আমি আমার শ্বশুর বাড়ির গরুর ঘরে কাটিয়েছি।
চাইলেই পারতাম চলে যেতে। একেবারে বিদায় নিয়ে চলে যেতে। কিন্তু যায়নি। কারণ ছোট থেকে একটি কথা শুনেই বড় হয়েছি-
” বাঙ্গালি মেয়েদের বিয়ে নাকি জীবনে একবার’ই হয়…..”
তাই সবসময় মনকে এই বলে শান্ত্বনা দিতাম, দেখিনা আরেকটু সহ্য করে। সব ঠিকঠাক হয় কিনা….???
দিন অতিবাহিত হতে থাকে। কিন্তু ওরা কেউ আমাকে আমার অবস্থান থেকে নড়াতে পারিনি। তাই একদিন বাধ্য হয়ে আমার স্বামী আমায় নিয়ে আমার বাপের বাড়িতে যায়। বিয়ের পর প্রথম বাপের বাড়িতে যাওয়া। আমাকে দেখে খুশি হওয়ার পরিবর্তে সবার চোখে পানি ছিল সেদিন। জন্ম থেকে নাদুসনুদুস এই আমি মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে শুকিয়ে কঙ্কাল প্রায়। সে রাত্রে কাউকে কিচ্ছু না বলে আমার স্বামী চুরের মত পালিয়ে যায়। তারপর একদিন, দু’দিন করে অতিবাহিত হয়ে যায় ১৫টি দিন। আমার স্বামী আর আমার খুঁজ নেয় না দেখে আমার বাবা কল করে। কল রিসিভ করে আমার শ্বশুর স্পষ্ট গলায় বলে-
” এমন কালো মেয়েকে নিয়ে আমরা চলতে পারব না।”

ওরা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তিনমাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও ওরা ডিভোর্স লেটার পাঠায় না। আমার পরিবারের লোকজন আমায় নিয়ে কোর্টে যায়। মামলা দায়ের করে আমার শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে। নারী নির্যাতনের মামলা করে ওদের নামে।
বাংলায় একটা প্রচলিত বাক্য আছে-
” টাকা কথা বলে।”
আইন বিক্রি হয়ে যায় টাকার কাছে। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ওদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় আইনের মুখ। ওরা উল্টো আমাদের শাসাতো। বাধ্য করল ডিভোর্স লেটার পাঠাতে। শুধুমাত্র গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়ার কারনে আমি আমরা পাইনি সুষ্ঠু বিচার।

একে তো কালো মেয়ে তারউপর ডিভোর্সি। গার্মেন্টস, মিল, ফ্যাক্টরিতে যাওয়া ছাড়া কোনো জায়গা ছিল না। বাড়িতে ভাবিদের জ্বালাময়ী কথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। খালার সহযোগীতায় প্রাণ কোম্পানিতে চাকরী নিলাম। ভাড়া বাসায় থেকে আসা করতাম ওখানে।

পরিচয় হয় সোহেলের সাথে। আমার বিষণ্নতার সাথী হয় সে। অতীতের সমস্ত কিছু ও শুনে। আমার কষ্ট ওকে ভিষণ যন্ত্রণা দিত। আমার মন খারাপ, আমার বিষণ্নতা ও সহ্য করতে পারত না। আমায় বিভিন্ন ভাবে হাসানোর চেষ্টা করত। ও আমার খুব ভালো একজন বন্ধু হয়ে যায়।
২বছরের ব্যবধানে সে বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নেয়। ভালোবেসে ফেলি সোহেলকে। প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেলি।

চলবে…..

স্যার যখন স্বামী সিজন২ শেষ_পার্ট

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
শেষ_পার্ট
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ফারিদ- ছাদ থেকে এসে দেখি তমা ঘুমিয়ে গেছে।ওর কাছে আর ক্ষমা চাইতে পারালাম না।ভাবলাম কাল সকালে ঠিকইই ক্ষমা চেয়ে নিব।নাহলে আমার বউটা একরাশ রাগ আর অভিমান নিয়ে বসে থাকবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেইই দেরি হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে আমিসহ তমাকে খাইয়ে দিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।সারাদিনের ক্লাস শেষ করে বিকালে ঘামের শরীর নিয়ে বাসায় আসলাম।বাসায় এসে সোজা খাটে এসে শুয়ে গেলাম।সারাটাদিন এত পরিশ্রম করার সত্ত্বেও বাসায় এসে আমার বউটার মায়াবি মুখটা দেখলেই আমার সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।আশ্চর্য এতক্ষণ হল বাসায় এসেছি মেয়েটা কোথায়?এইসময় তো ওর রুমে থাকার কথা।পুরো বাড়ি খুঁজেও ওকে পেলাম না।এই অবস্থায় ও কোথায় গেল আমাকে কিছু না বলে।টেনশনে পড়ে গেলাম।হঠাৎ টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলাম।কাগজ খুলে দেখি তমা আমার জন্য একটা চিঠি লিখে গেছে।

প্রিয় ফারিদ,
আপনাকে না জানিয়ে আমি আপনার সংসার থেকে চলে যাচ্ছি। আমার পক্ষে এই সংসার করা সম্ভব না।এত টেনশন এত চিন্তা আর প্রিয়জনদের হারাতে হারাতে আমি বেঁচে থাকার আশাটা হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আপনার কাছ থেকে যেদিন জানতে পারলাম আমি মা হতে যাচ্ছি বিশ্বাস করেন নিমিষেই আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেল।মা হওয়ার খুশিতে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। কিন্তু তা শুধু ক্ষণিকের জন্য।এই মা হওয়া বিষয়টার সাথে আমার অতীতের ভয়ানক স্মৃতি লুকিয়ে আছে।যা আমি আপনাকে প্রথমে বলতে চাইলেও পরে তা লুকিয়ে রাখি।কেন জানেন শুধু আপনার জন্য।আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়ে আমি এই কাজটা করতে বাধ্য হই।ভেবেছিলাম অতীত অতীতের মাঝে রেখে দিব তা কখনো আপনার সামনে আসতে দিব না।কিন্তু আমি মন থেকে এই কষ্টের বোঝার পাল্লা আর বয়ে বেড়াতে পারছি না। তাই আপনাকে আজকে সব খুলে বলব।আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলা উচিত ছিল কিন্তু আপনার সামনে এই ভয়ানক কথাগুলো বলার দুর্সাহস আমার কোনকালেই ছিল না আর আজো নেই।তাছাড়া আমার নিজের আত্মসম্মানের একটা ভয় আছে।যার কারণে আজকে এই চিঠির সাহায্য নিচ্ছি।সব জানার পর আমাকে আর মেনে নিতে পারবেন না তা আমি জানি।আর আপনার ভালো মানুষিকতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে সারাজীবন কষ্টের মধ্যে রাখার কোন মানেই হয় না।তাই আমি নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাচ্ছি। পারলে ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন যে ঘরের সব কাজ করতে পারবে, আপনার সংসার সামলাতে পারবে আর তার পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে আপনার জীবনকে সুখের কানায় কানায় ভরিয়ে দিবে।ভালো থাকবেন আর নিজের যত্ন নিবেন।

ইতি
আপনার তিলোত্তমা
.
.

চিঠিতে তমার জীবনের অতীতের ঘটনা জানতে পেরে বুঝতে পারলাম মেয়েটা কেন এই সংসার আর ভালোবাসা থেকে নিজেকে সবসময় গুটিয়ে নিত।ওর কষ্টগুলো দূর করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতাম ভাবতাম আমি ওর কষ্টগুলো দূর করতে সফল হয়েছি কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। আমি সত্যিই ওর কষ্টগুলো এখনো মুছে ফেলতে পারিনি
ব্যর্থ হয়েছি আমি।এতদিন আমার সাথে সংসার করেও ও এখনো বাকি সব পুরুষদের সাথে আমার তুলনা করছে।যেটা ওর মন থেকে আমাকে দূর করতেই হবে।

দেখি কতদিন ও আমার থেকে নিজেকে দূরে রাখে।আমিও বসে থাকার পাত্র নয় ওর মনের ভিতরে নিজের জায়গা আরো ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে আর কখনো ও আমাকে ভুল বুঝে এই ফালতু কাজটা করার পদক্ষেপ আর দ্বিতীয়বার না তুলে।ওকে কিভাবে নিজের বশে আনতে হবে তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে।এখন থেকে ওকে আগের থেকেও আরো অনেক বেশি বেশি ভালোবাসব যে ও আমার ভালোবাসার মায়াবন্ধন থেকে কিছুতেই ছুটে পালাতে না পারে।বাবুর আম্মু….. এত সহজে আমার থেকে তুমি পালাতে পারবে না।তোমার অতীত জানার আগে তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসাটা ছিল সেটা অতীত জানার পরেও থাকবে।এত সহজে তোমাকে আমি ছাড়ছি না বাবুর আম্মু।
.
.
তাড়াতাড়ি করে রেলস্টেশনের রওনা দিলাম।বাসে করে ও কোথাও যাবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি।তাই রেল স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম।আর আমার বোকা বউটাকেও অনেক খোঁজার পরে পেয়ে গেলাম।

ফারিদ- কি ব্যাপার এখানে কেন?আমাকে ছেড়ে আমার সংসারকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এত শখ কেন?

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার এমন কথা শুনে ও অনেক বড় একটা শকড খেল। বিষণ্ন চোখ দিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার মাথাটা নিচু করল।

তমা- আপনি এমনভাবে কথা বলছেন মনে হয় যেন কিছু জানেন না।কেন এখানে আসলেন?প্লিজ চলে যান এখান থেকে।

ফারিদ- হ্যা যাবতো এখান থেকে।এখানে থাকার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।এখানে থেকে বউয়ের সাথে রোমান্স করা যায় নাকি?চল বাসায় চল।বাসায় গিয়ে রোমান্সের কাজটা শুরু করব।

ও আবারো বিস্ময় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে আমি ওর অতীতের কথা শুনে অতিরিক্ত শকড খেয়ে পাগল টাগল হয়ে গেলাম নাকি!

আরে….. আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন? এই আমি কিন্তু এখনো আমি সুস্থ আছি।পাগল হয়নি।কিন্তু মাই ডিয়ার বাবুর আম্মু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে হয়ত সত্যিইই আমি পাগল হয়ে যাব। আমাকে ছেড়ে চলে যাবা এতবড় ডিসিশনটা তুমি একা নিতে পার না।আমি কি কখনো তোমাকে এই অনুমতি দিছি যে নিজের যখন ইচ্ছা হল তখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবা।যেখানেই যাও আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবে নাহলে তুমি যেখানে যাবে আমিও ভূতের মতন তোমার পিছু পিছু যাব। কিছুতেই তোমার পিছু ছাড়ছি না।
.
.

ও মাথা নিচু করে কাঁদছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।

ফারিদ- এই কাঁদছ কেন বোকার মতন?

তমা- আপনি এখানে এসে আমার সাথে কি মশকরা করছেন?

ফারিদ- আজব এখানে মশকরা করার কি হল?

তমা- প্লিজ অবুঝের মতন কথা একদম বলবেন না।আমার সাথে যা হয়েছে সে পাপজনক কথাগুলো আমার মুখ দিয়ে আসবে না বলে আমি আমার অতীতের কথাগুলো চিঠিতে লিখে রেখে এসেছি।আমি জানি আপনি সবকিছু জেনে গেছেন তারপরও কেন আমার মুখ দিয়ে সে কথাগুলো খুলাতে চাচ্ছেন।আপনি আসলে কি চাচ্ছেন?

ফারিদ- আমার তোমাকে চাই আর বাবুকে চাই।কি সুন্দর করে চিঠি লিখে বলেছেন আপনি আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন। যাচ্ছ তো যাচ্ছ সাথে আমার বাবুকে নিয়েও যাচ্ছ। এই বাবুটা কি শুধু তোমার একার আমার কিছু হয়না না?তুমি যেমন ওর মা তেমনি আমি ওর বাবাও। বাবার ভালোবাসা থেকে আমার বাবুকে কেন বঞ্চিত করছ?

তমা-………….

ফারিদ- তোমাদের দুইজনকে ছাড়া এই লাইফে একা চলা আমার জন্য অনেক কষ্টকর।আর হ্যা আমি চাচ্ছি তুমি মুখ দিয়ে তোমার অতীত বল।তাতে সমস্যাটা কি?

তমা- …………

ফারিদ- তোমার কাছে এই সমস্যা মনে হচ্ছে না তুমি খারাপ, অপবিত্র একটা মেয়ে।তুমি এমন ভাব করছ মনে হয় যেন তোমার নিজ ইচ্ছাতে সবকিছু হয়েছে।

তমা- …………

ফারিদ- তোমার সাথে খারাপ হয়েছে, দোষ ওরা করেছে আর তার মাশুল তুমি দিয়েছ। এখানে আমি তোমার কোন ভুল,দোষ দেখছি না।আমার নিজেরও দুই বোন আছে।সেটা থেকে আমি ভালো করেই বুঝি একটা মেয়ের সাথে এইসব হলে কতটা কষ্ট লাগে। আরেকটা কথা তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি অপবিত্র না।যেদিন আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাকে স্পর্শ করেছি,পবিত্র ভালোবাসায় আমরা সিক্ত হয়েছি সেদিনি তুমি আমার কাছে পবিত্র হয়ে গিয়েছিলে।আমার ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে আমি তোমাকে অপবিত্র অপবাদ থেকে পবিত্র করেছি।আমার কাছে সবসময় তুমি যেমন ছিলে আজো ঠিক তেমনটাই আছ।

আর আমি কাউকে দয়া করছি না।ভালোবাসার মানুষকে দয়া, করুণা কোনটাই করা যায় না।ভালোবাসি বলেই তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে।তোমার মা বাবা আমার উপর ভরসা করে তোমাকে আমার হাতে দিয়ে গিয়েছে আর তুমি…….!তুমি আর বাবু এখন আমার দায়িত্ব।তোমাদের উপর আমার সব দায়িত্ব আমি ঠিকভাবে পালন করতে চাই।যাই হোক এখন চল বাসায় চল।

ওর হাত ধরাতে ও আমার মুখের দিকে দ্বিধানিত্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি করা উচিত এই মূহুর্তে ও ভেবে উঠতে পারছে না।

ফারিদ- বাবুর আম্মু তুমি একটাবার আমার উপর বিশ্বাস করে দেখ।শুধু একটাবার।আমাদের লাইফের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তোমার একটাই ভয় না যদি কখনো আমি ভুল করে এইসব অতীতের কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তোমাকে সেই আঘাতটা আবারো দিয়ে ফেলি।

বিশ্বাস কর এমন কিচ্ছু হবে না।এই মূহুর্তে আমি তোমার অতীত আমার মন থেকে মুছে ফেলছি সাথে তুমিও মুছে ফেল।এগুলো তোমার মন বা আমার মনে আজকে আর এখনের পর থেকে আসতে দিব না।এখন থেকে আমি তুমি আর আমাদের বাবু নিয়ে আমাদের পরিবার হবে।তুমি শুধু আমাদের নিয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে ভাববে আমাদের ভালোবাসবে বাকি সব আলতুফালতু কথা বাদ।প্লিজ একটাবার বিশ্বাস করে আমার হাতে হাত রাখ।শুধু একটাবার।
.
.
তমা- আর কোনকিছু না ভেবেই ওর হাতে হাত রেখে দিলাম।

ফারিদ- থ্যাংকস বাবুর আম্মু।তোমার কাছে আমি এই আশাটাই করেছিলাম।

তমাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলাম।

তমা- এই কি করছেন?এইভাবে পাব্লিক প্লেসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেন?মানুষ কি ভাববে!

ফারিদ- হায়রে তুমি মানুষের টেনশনে আছ।আর আমি আমার বাবু আর বাবুর আম্মুর টেনশনে আছি।মানুষের কথা ভাবা তুমি বাদ দাও আর আমাকে নিয়ে ভাব।

তমা- ………..

ফারিদ- বাবুর আম্মু একটা কথা বলার ছিল……

তমা- হ্যা বলেন….

ফারিদ- আসলে কালকে তোমার সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।তোমার মনখারাপ চেহেরাটা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই রাগের মাথায় তোমাকে অনেককিছু বলে ফেলেছি।প্লিজ এই বিষয় নিয়ে তুমি আর মন খারাপ কর না।

তমা- আমি মন খারাপ করেনি।

ফারিদ- সত্যি…..

তমা- হুম সত্যি……

ফারিদ- যাক বাবা বাঁচা গেল।আচ্ছা শোন কালকে ইউটিউব থেকে রান্নার একটা নতুন আইটেম শিখেছি আজকে নিজ হাতে আমি সেই মজার আইটেমটা রান্না করে তোমাকে খাওয়াব।ঘরের সব কাজ আমি আগের মতনই করব তোমাকে কিচ্ছু করতে হবেনা তুমি শুধু নিজের আর আমাদের বাবুর খেয়াল রাখবে।

তমা- হুম

ফারিদ- ইশ দেখ মুখটার কি হাল বানিয়েছে।দুপুরে কিছু খাওনি না?কেন খাওনি?এতক্ষণ ধরে না খেয়ে ছিলে?আগে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাই তারপর তোমার খবর আছে।এতক্ষণ ধরে না খেয়ে থেকে নিজেও কষ্ট পেলে আমাদের বাবুটাকেও না খাইয়ে কষ্ট দিলে।

.
.

তমা- বেচারা রেল স্টেশন থেকে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে আর বকরবকর করে আমাকে আর আমাদের বাবুকে নিয়ে কথা বলছে আর একটুপর পর বকা দিচ্ছে,শাসন করছে, উপদেশ দিচ্ছে।আমার পাগল স্বামী আর পাগল স্যার।উনাকে নিয়ে বাকিটা জীবন সুন্দর করে পাড়ি দিতে চাই।বিশ্বাস করে উনার হাতে হাত রেখে সংসার জীবনে আবারো নতুন করে পা রাখলাম।দেখি না একবার বিশ্বাস করে।হয়ত সব দুঃখের পর আমার সাথে ভালো কিছু হবে। আমার বাবার ভুলের কারণে আমার মা বাবাকে যে কষ্ট পেতে হয়েছে সে একি ভুল ফারিদ করবে না এই বিশ্বাস রেখে ওর হাত ধরেছি।ফারিদ আমার এই বিশ্বাসটা যাতে সারাজীবন অটুট রাখে আল্লাহর কাছে সে প্রার্থনা করি।

মূলকথা- বিশ্বাসের উপর সবকিছু টিকে থাকে।একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে হাজার চেষ্টা করেও ভালোবাসার মানুষের মন জয় করা যায় না।এক্ষেত্রে সম্পর্কে শুধু ফাটল ধরে।আর পর মানুষের থেকে ঘরের মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।তৃতীয় কোন ব্যক্তির কারণে যদি সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তৃতীয় ব্যক্তিকে তার আসল জায়গা দেখিয়ে দেয়া উচিত।সে যেমন তার সাথে তেমন ব্যবহার করা উচিত।

বি.দ্র.- গল্পটা তোমাদের কাছে কেমন লাগল তা জানি না।কিন্তু সত্যি বলতে এই গল্পে কিছু বাস্তব দিক তুলে ধরে গল্প লিখতে পারায় আমি নিজের উপর অনেক সন্তুষ্ট। বাস্তবধর্মী গল্পগুলোই লিখতে আমার বেশি ভালো লাগে।তারপরও সিজন ২ তোমাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবে।

তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই।আগে আমার গল্প কপি করায় আমাকে কপিবাজ বলায় ভিষণ খারাপ লাগত সেকারণে আমি বারবার গ্রুপে পোস্ট দিতাম আমি আর গল্প লিখব না।আমি গল্প লিখায় একেবারে নতুন তাই এইরকম বিষয় যে প্রায় ঘটবে আর কপিবাজরা এইরকম কাজ প্রায় করে সেটা আমার জানা ছিল না।পরে বুঝতে পারলাম এইরকম কারণে গল্প লিখা ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।তাই গল্প লিখাটা পরে চালু করলাম। কিন্তু এই গল্পের সিজন ১ এ গল্প লিখার মাঝখানে আমি অনেক বড় একটা প্রবলেমে পড়ি।তাই আমাকে আইডিটা ডিএক্টিভ করতে হয়।আইডি ডিএক্টিভ করার কারণ আমার কাছের কয়েকটা ফ্রেন্ড জানে।কিছু ভাবতে না পেরে আমি আর গল্প লিখছি না এই পোস্ট আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম।আমার এই গল্পের পাঠক অনেক ছিল তাই পরে অনেক কিছু ভেবে অনেক কষ্টে একজনকে ঠিক করলাম আর তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে বলছি তিনি যাতে আমার গল্প পোস্ট করেন।কিন্তু আমি ঠিক টাইমে আমি তাকে গল্পের পার্টগুলো দিতে পারিনি।যেটা আমার আরেকটা ব্যর্থতা ছিল।গল্পের পার্টগুলো তাকে না দেওয়ার কারণ হচ্ছে আমার অসুখটা আগের থেকে আরো বেড়ে যায়।।আমার কাশির প্রবলেম ছিল। সেটা গল্প লিখার আগ থেকেই ছিল।হাই পাওয়ারি ঔষুধ খেয়েও অসুখ সারছিল না।পরে কাশির আওয়াজ আর ব্যথাটা আস্তে আস্তে অনেক বাড়তে থাকে। এই কাশিটা উঠলেই গলা বুক প্রচন্ড ব্যথা করত আর একনাগাড়ে কাশতে থাকতাম।খাওয়া দাওয়াও প্রায় অফ হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা।এইরকম কাশি যাদের হয় একমাত্র তারা জানে এইরকম অসুখ হলে কত কষ্ট হয়।পরে ফৌজদারহাট হসপিটালে গিয়ে ডাক্তার দেখালাম।বাসায় পুরা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঔষুধের উপর ছিলাম।খাওয়া দাওয়ার কথাতো বাদ দিলাম।এর সাথে ঠাণ্ডা, জ্বর প্রায় উঠত।এই হল আমার গোপন অসুখের বিবরণ।ইভেন এখনো এই অসুখের কিছু কিছু লক্ষণ আমার এখনো আছে।আমার অসুখ ছিল সেটা সবাইকে বলছি কিন্তু অসুখটা কি ছিল সেটা না বলায় অনেকে বলছেন আমি নাটক করছি।যেটা শুনে সিরিয়াসলি খুব খারাপ লেগেছিল।অসুখটা কি ছিল তা কাউকে না বলায় এইরকম কথা আমাকে শুনতে হয়েছে।কাউকে এইরকম অসুখের কথা বলতে চাই নি তাই কথাটা চেপে গেছি সবসময়।যদি কারোর কাছে মনে হয় আমি অসুস্থতা নিয়ে নাটক করছি তাহলে আমার আর কিছু বলার নাই।সবাইকে আমার সরি বলা উচিত ছিল।যেটা আমি বলি নি।কিছুটা সঙ্কোচ ছিল তাই।আজকে যেহেতু সিজন ২ টা শেষ করে দিলাম তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমার ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেলে আমি সত্যিই আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আর ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য।
ধন্যবাদ সবাইকে।

সমাপ্ত

স্যারযখনস্বামীসিজন২ পার্ট_২৫

0

স্যারযখনস্বামীসিজন২
পার্ট_২৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তমা- তাড়াতাড়ি করে বাবার রুমে ঢুকে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখি বাবাকে ঘিরে সবাই কান্না করছে।দরজার নিচে হেলান দিয়ে বসে গেলাম।কি হয়ে গেল এটা!

বাবাকে আমার মনের কথা বলতে পারলাম না।আমার মামণির কি হবে?বাবা যে আর আমাদের মাঝে এই খবর জানার পর আমার মামণির কি হবে?এইসব কথা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছিল।

.
.

ফারিদ- কয়েকঘন্টার জার্নিতে তমার বাবার বাসায় আসলাম।আর বাসায় আসা মাত্র কান্নাকাটির আওয়াজ শুনলাম।এখানে আসার আগে যে ভয়ের আশঙ্কা করছিলাম সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্য হয়ে দাঁড়াল।যে রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল সেখানে দৌড়িয়ে গেলাম।আর দেখালাম তমা দরজার নিচে হেলান দিয়ে বসে আছে আর নিরবে অশ্রু ফেলছে।মেয়েটার কি কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারছি। ওকে মনের দিক দিয়ে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ওর কাছে কাছে গেলাম।ওকে অনেক কিছু বুঝাচ্ছি আমি কিন্তু ও আমার কথা না শুনে ওর বাবার মৃত লাশটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর হুশ আনার জন্য ওকে কাঁধ ঝাকিয়ে কয়েকবার নাড়ালাম।এরপর ও আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।

.
.
ফারিদ- এখন কেমন লাগছে তোমার?

তমা- বাবা……!

ফারিদ- তমা প্লিজ শান্ত হও। এই অবস্থায় তোমার উত্তেজিত হওয়া চলবে না।প্লিজ লক্ষ্মীটা বুঝার চেষ্টা কর।

তমা- আপনি কথা কেন ঘুরাচ্ছেন?আগে বলুন আমার বাবা কোথায়?

ফারিদ- তোমার বাবাকে মাটি দিয়ে আসছি।

তমা- ……..

ফারিদ- আমি জানি তোমাকে না জানিয়ে কাজটা করা মোটেও উচিত হয় নাই।কিন্তু এতক্ষণ ধরে একটা মৃত লাশকে এইভাবে রাখা সম্ভবও না।তাই তাড়াতাড়ি করে কাজটা শেষ করতে হল।সেই ৭ ঘন্টা ধরে তুমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিল।এমনিতেই তোমার এই অবস্থা, তার উপর আবার সারাদিন না খেয়ে অনেক টেনশন আর কষ্টের মধ্যে ছিলে তাই তোমার শরীরটা দুর্বল হয়ে যায়।দেখো তোমার হাতে স্যালাইন। ডাক্তার এসে স্যালাইন লাগিয়ে গেছে।প্লিজ আর কোন কিছু ভেবে নিজেকে কষ্ট দিও না।নাহলে তোমার বাবাও যে সেখানে শান্তি পাবে না।
.
.

তমা- ফারিদের বুকে মাথা রেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।নিজের মনের কষ্টগুলো ফারিদকে বলতে পারছি না।বাকি সবাই যেমন কষ্ট পেলে নিজের ভিতরের অনুভূতিগুলো খোলা বইয়ের মত মেলে ধরে তার আপন মানুষকে বুঝায় যে তার কত কষ্ট হচ্ছে ঠিক তেমন ভাবে আমি নিজের মনের অনুভূতি, কথাগুলো বলতে পারছি না।মনের কথাগুলো মুখের মধ্যে আটকে আছে।এটাও আরেক কষ্ট আর জ্বালা।এই জীবনে হয়ত আর শান্তি নামক জিনিসটার আমার দেখা মিলবে না।হায়রে জীবন! এই ছোট জীবনে কত কি না দেখে আসলাম।আর এখনও হয়ত অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।এখানেই কষ্ট দেখার শেষ হয়ত আমার কপালে নেই।না জানি আরো কত কি দেখে জীবনটা পাড়ি করতে হবে।

.
.
তমা- আপনি মামণিকে বাবার মৃত্যুর কথা জানিয়েছন?

ফারিদ- না এখনো জানায়নি।কিভাবে কথাটা বলব বুঝতে পারছি না।

তমা- ভালোই করেছন কিছু না বলে।আপনাকে কিছু বলতে হবে না।মামণিকে যা বলার আমি বলব।

ফারিদ- হুম।এটাই ঠিক হবে।



বাসায় এসে মামণিকে বাবার মৃত্যুর খবর জানালাম।কিন্ত এ খবর শুনার পর মামণিকে কাঁদতে দেখলাম না।

তমা- মামণি বাবা এই ডাইরিটা তোমাকে পড়তে বলেছে আর এইও বলেছে তুমি যাতে তাকে ক্ষমা করে দাও।

মেঘ- ……..

তমা- মামণি আমি বাবাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি।তুমি কি পার না বাবার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিতে?জানি তোমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু তারপরও যে এখন এই দুনিয়ায় নেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

মেঘ- তোর বাবাকে আমি সেদিনি মাফ করে দিয়েছি যেদিন জানতে পেরেছি সে অসুস্থ।অসুস্থ শরীর নিয়ে সে আমার কাছে মাফ চেয়েছে তাই তাকে মাফ করে দিয়েছি।তমা জানিস,, তোর বাবা খুব ভালো মানুষ। তার কাছ থেকে আমি যে ভালোবাসা,যে শিক্ষা পেয়েছি তা আমার কাছে অনেক মূল্যবান।আমার জানামতে সে কখনো কোন ভুল কাজ করেনি।কিন্তু সংসার জীবনে চলমান অবস্থায় সে অনেক বড় একটা ভুল করে বসে।সেটা আসলে ভুল বললে ভুল হবে সে আমার সাথে অন্যায় আর অপরাধ করেছে। যার ক্ষমা কখনো হয় না।কিন্তু তার জন্য সে অনেকবছর ধরে কষ্ট পেয়েছে তার প্রায়শ্চিত্তও করেছে।আর এই প্রায়শ্চিত্তের আগুনে পুড়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।মন থেকে বাঁচার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলার কারণে সে অসুস্থতার দুহায় দিয়ে আমার আগেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।

তমা- ………

মেঘ- ওকে আমি মন থেকেই মাফ করে দিয়েছি।শুধু একটাই আফসোস আর কষ্ট রয়ে গেল ওকে শেষ দেখাটা দেখতে পারিনি।আজ কতটা বছর হয়ে গেল ওর মুখটা দেখি না।এতটাবছর পর এসে সেই প্রিয় মুখটা না দেখার যন্ত্রণাটা না আমি নিতে পারছি না।

তমা- মামণি প্লিজ তুমি কষ্ট পেয় না।জানই তো কেন বাবা তোমাকে দেখতে চাইনি।

মেঘ- হ্যা জানি।কিন্তু মনটা যে বড় অবুঝ।তমা সারাদিন তোর উপর দিয়ে অনেক ধখল গেছে যা রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।আর আমার এখন এই সময়ে একা থাকতে ইচ্ছা করছে কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।

তমা- মামণিকে এখন একা ছেড়ে দেওয়া উচিত এই কথাটা মনে করে সেখান থেকে আমি চলে আসলাম।
.
.

বাবার মৃত্যুর পর মামণিকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম।কিন্তু মামণির মনের দিক দিয়ে কোন শান্তি আর সুখ ছিল না তাই বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন পরই মামণি আমাদের ফেলে চলে যায় আরেক দুনিয়ায়।

একটার পর একটা কষ্ট পাওয়ার পর আমি অনেক ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। দিন দিন শরীরের অবস্থা আমার খারাপ হতে থাকে।আমাকে নিয়ে ফারিদ অনেক দুশিন্তায় থাকে।ওকে এই দুশ্চিন্তায় আর রাখতে ইচ্ছা করছিল না।কিন্তু এই অবস্থা থেকে আমি বেরিয়েও আসতে পারছিলাম না। সংসার করার ইচ্ছাটাও আস্তে আস্তে দমে যাচ্ছে। ঘরের বউ হিসেবে যে কাজগুলো আমার করার কথা সেগুলো ফারিদ করে যাচ্ছে।
.
.
ফারিদ- এই মেয়ে শরীরের কি অবস্থা করেছ একটাবার দেখেছ?কেন তুমি বারবার ভুলে যাও তোমার এই অবস্থায় টেনশন নেওয়া একদম চলবে না।তুমি এখন একা না তোমার সাথে আমাদের সন্তানও আছে।তুমি নিজে কষ্ট পাচ্ছ আর আমাদের বাবুটাকে কষ্ট দিচ্ছ।প্লিজ নিজেকে সামলাতে শিখ তিলোত্তমা।এই দুনিয়ায় কেউ অমর নয়।

তমা- ……….

ফারিদ- একদিন না একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে আমাদের সবাইকে যেতে হবে।আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের যত ভালোবাসি না কেন তাদের আটকে রাখার শক্তি বা ক্ষমতা আমাদের কারোর নেই।আমাদের মর্জিতে কোন কিছুই হয় না।

তমা- ………

ফারিদ- প্রত্যেকটাদিন এইরকম মুখ ভার করা চেহেরা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।ভার্সিটি থেকে এসে তোমার যত্ন নেওয়া,ছোটবাচ্চাদের মতন বুঝিয়ে শুনিয়ে তোমাকে খাওয়ানো, ঘর গুছগাছ রাখা এইসব করা কত কষ্ট লাগে সেটা কি তুমি বুঝ না।এক কথা তোমাকে বুঝাতে আমি ক্লান্ত।আর পারছি না আমি এই অসহ্য প্যারা নিতে।প্রত্যেকটাদিন তোমার এই খামখেয়ালিপনা,একই বিষয় বুঝাতে বুঝাতে আমি সত্যিই অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। ধুত্তুরি আর ভালো লাগে না।এটা সংসার না ছাই……..।
.
.

ফারিদ- তমা ওর বাবাকে দেখার পর যেদিন ঢাকায় যায় সেদিনি আমি জানতে পারি আমার বউটা প্রেগন্যান্ট। একদিকে বাবা হওয়ার খুশি আর আরেকদিকে তমার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।আর এইও বুঝে গিয়েছিলাম তমার বাবার দিনটা আজকে শেষ দিন।আমার বউটা এই অবস্থায় নিজেকে কিভাবে সামলাবে তা ভাবতেই মাথায় চিন্তা ভর করছিল। তাই দেরি না করেই ঢাকায় রওনা দিই।এরপর তমার বাবার মৃত্যু, কয়েকদিন পর তমার মার মৃত্যুতে মেয়েটা পুরো ভেঙ্গে পড়ে।ওকে সামলানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্য।এত কিছু হওয়ার কারণে ওকে আমাদের বাবু আসার খুশির খবরটা দিতে পারিনি।তাই সময় করে একদিন এই খবরটা ওকে জানাই যে ও মা আর আমি বাবা হতে যাচ্ছি। এই খবরটা শুনে প্রথমদিকে ও খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে এরপর হঠাৎ জানি না কি কারণে ওর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতিদিন ওকে খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিবারই আমি ব্যর্থ হচ্ছি।দিনদিন ওর শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওর সাথে ও আমাদের বাবুটাকেও কষ্ট দিচ্ছে যেটা সহ্য করার মতন না।আর আজকে ভার্সিটি থেকে এসে ঘরের সব কাজ শেষ করে দেখি ও মুখভার করে বসে আছে।ওকে আজকেও এত বুঝানোর পরে যখন দেখি ও মনমরা হয়ে আছে রাগটা তখন মাথায় উঠে যায়। ওর এই কষ্টটা দেখতে পারছিলাম না সাথে আমার বাবুরও তাই রাগে ওকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি।যেটা করা সত্যিই অন্যায় হয়ে গেছে।এই অবস্থায় ওকে খুশি রাখা আমার কর্তব্য।কিন্তু সেটা না করে ওকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছি।তাই ওর কাছে মাফ চেয়ে নিব।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২৪

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পুষ্প নামের মানুষিক রোগীটা আমার থেকে আমার মেঘকে বিচ্ছিন্ন করেছে।পুষ্পকে নিয়ে আমার মনের ভিতর যে রাগ ছিল ওর সাথে ঝগড়া করে তা এক এক করে বের করে দিলাম।রাগের মাথায় ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও একটা মানুষিক রোগী,ওর মতন মানুষিক রোগী আমার জীবনে এসে আমার সুন্দর গুছানো সংসারটা নষ্ট করে দিয়েছে।ওর কারণে আমি আমার মেঘকে হারিয়েছি।আর এখনো যে আমি মেঘকে ভালবাসি তা ওকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি।আর এইও বলেছি আমি বাইরে থেকে আসার পর ওকে যাতে আমার বাসায় আর না দেখি।ওর এই বিষভরা মুখটা আমি আর দ্বিতীয়বার দেখতে চাই না।

এইরকম আরো অনেক কথা ওকে শুনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাইরে আসার পরও রাগটা কিছুটা কমাতে পারিনি।পুষ্প মেঘকে হিংসা করে সেটা আমি আজ বুঝতে পারলাম।আর তাইতো ও আমার আর মেঘের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে।আমার সংসার থেকে মেঘ চলে যাওয়ার আগে ও আমার হাতে যে চিঠিটা দিয়েছিল সেটা পুষ্প চুরি করে পড়েছিল।আর সেই চিঠিটা পড়েই সে জানতে পেরেছে যে মেঘ প্রেগন্যান্ট। আর এই খবরটা যাতে আমি জানতে না পারি সেজন্য ও সেই চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল।এত্ত বিষ এই মেয়েটার মধ্যে।আর আমিই কিনা এইরকম একটা শয়তান মেয়ের রুপের মোহে পড়ে ওর সাথে একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।আর তার ফল এখন ওর গর্ভে।এইসব ভাবতে ভাবতে পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। সেইদিন আর বাসায় যায় নি।রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি আর মেঘের সাথে কাটানো দিনগুলো ভেবে কষ্টের আগুনে পুড়ছিলাম।

.
.

সকালে বাসায় এসে দেখি পুরো বাড়িতে মানুষ।এত মানুষ এত সাতসকালে এখানে কি করছে বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর যা দেখলাম তাতে আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল।

কালকে আমাদের মাঝে ঝগড়া হওয়ার পর যখন আমি রাগ করে বাসা থেকে বাইরে চলে আসি ঠিক তার কিছুক্ষণ পর পুষ্প ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।ওর এই আত্মহত্যা করার পিছনে শুধুমাত্র আমিই দায়ি ছিলাম।পুষ্পকে যে এত কথা শুনিয়েছিলাম তাতে ও বুঝে গিয়েছিল ওর জন্য আমার মনে কোন ভালোবাসা নেই।আর তা ও মেনে নিতে না পারায় এত বড় পাপ কাজটা করে ফেলেছিল।

আমি আবারো সেই একি ভুল করলাম।যে বাচ্চার জন্য আমি পুষ্পকে আমার জীবনে এনে মেঘকে সরিয়ে দিয়েছিলাম সেই বাচ্চাটাই দুনিয়ায় আসার আগে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিল।আমি আবারো সব হারালাম।পুরো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।মনের ডিপ্রেশনটা আগের থেকে আরো অনেকগুণ বেড়ে গেল।
.
.

এর কিছুদিন পর মেঘকে খুঁজার অনেক চেষ্টা করি।কিন্তু ওর কোন খোঁজ পাইনি।তারপরও ওকে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা আমি দিনের পর দিন চালাতে লাগলাম।আর শেষ পর্যন্ত আমার লোকের দ্বারা ওর খোঁজ পেয়েও গেলাম। কয়েকটা বছর পর ওকে খোঁজে পাওয়ার খুশিতে আর আমার মেয়েটাকে দেখার জন্য চট্টগ্রামে রওনা দিলাম।আমার মেয়েটার বয়স তখন মাত্র ছয় বছরে পড়েছে।কিন্তু মেঘ আর আমার মেয়েটার কাছে যাওয়ার সাহসটুকুও আমি পেলাম না।কিভাবে আমি ওদের চোখের নজরে গিয়ে দাঁড়াব সেই দুশ্চিন্তা থেকে ওদের কাছে যেতে গিয়েও আর যেতে পারলাম না।ওদের কাছে যেতে না পারলেও আমি সবসময় ওদের খোঁজ রাখতাম।ভুল যেহেতু করেছি ভুলের মাশুলও আমাকে দিতে হবে।আর এতটা বছর ধরে আমি সেই ভুলের মাশুল দিয়ে আসছি।

.
.

বিয়ের আগে আর পরে মেঘের জন্য আমার অনুভূত ভালোবাসা,আমাদের ভালোবাসার কাহিনী এই ডাইরিতে লিখে তার স্মৃতিটুকু আমি টাটকা রেখেছি।এরপর জীবন সংসারের প্রতিকূলতায় পা রাখার পর অনুতপ্তের আগুনে পুড়ে আমার আর ডাইরি লিখার সময় হয়ে উঠে নি।কি লিখতাম ডাইরিতে!আমি মেঘের সাথে যে বাজে কাজগুলো করেছি সেগুলো লিখতাম!সেগুলো লিখার সাহসটা আমার মন থেকে আসেনি।

কেন জানি না বুঝতে পেরেছিলাম মেঘকে আর কখনো সামনে থেকে দেখতে পাব না, ওর কাছে আমি আমার ভুল করা কাজের জন্য ক্ষমাও চেতে পারব না।কিন্তু মনে মনে এই বিশ্বাস ছিল তোকে একদিন না একদিন আমি সামনে থেকে দেখতে পারব আর তোর সাথে আমি যে ভুল কাজগুলো করেছি তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিতে পারব। আর তার জন্য আমাদের ব্যাপারে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তোর জানা দরকার।তাই এই ডাইরিতে আবারো কলমের কালি দিয়ে লিখা শুরু করলাম।কিন্তু এইবারে ডাইরিতে আমাদের ভালোবাসার কাহিনী না বরং আমাদের জীবনের দুঃখ আর কষ্টের কাহিনী লিখলাম।আর এখন আমার জীবনে সব কাহিনী শুনে তুই এটা বুঝতে পেরেছিস সব দোষ আমারি ছিল। আমারি কারণে আজ এতকিছু ঘটেছে।আমি নিজের সব ভুল, দোষ স্বীকার করছি।আর এই ভুল স্বীকার করে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।পারলে এই বুড়ো বাপটাকে মাফ করে দিস।সাথে তোর মাকেও বলিস যাতে সে আমাকে ক্ষমা করে দেয়।

.
.

তমা- ডাইরিটা অফ করে নিজের এক হাতের আঙ্গুলের নখ দিয়ে আরেক হাতকে খামচি দিচ্ছি।খুব কষ্ট হচ্ছিল।বন্ধ রুমে চুপচাপ কান্না করছি।এই লোকটাকে আমি সবসময় খারাপ ভেবে এসেছি।কিন্তু এখন জানলাম আর বুঝলাম উনি মোটেও খারাপ নয়, অনেক ভালো মানুষ।কিন্তু উনার….. আমার বাবার এই একটা ভুল আমাদেরকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে আসছে।এই ভুলটা না হলে হয়ত আজ এই পরিস্থিতিতে আমাদের কাউকে পড়তে হত না।বাবাকে মাফ করে দেওয়াটা এত সহজ না কিন্তু মাফ না করেও থাকতে পারছি না।বাবার এই অসুস্থতা দেখে উনাকে আর মাফ না করে পারলাম না।উনার সব অপরাধ মাফ করে দিলাম।
.
.
অনেকক্ষণ ধরেই কান্না করে চলেছি।কান্না থামার কোন নামই নেই।তারপরও অনেক কষ্টে নিজের কান্নাগুলোকে লুকিয়ে বাবার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।একটাবার বাবাকে দেখে আসি।এই রুমে আসছি অনেকক্ষণ হয়।এতক্ষণে একবারের জন্য বাবাকে দেখা হয়ে উঠে নাই।বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে বলব উনি যাতে আর চিন্তা না করে।বাবাকে আমি মন থেকে মাফ করে দিয়েছি এই কথাটা শুনলে বাবা মনে স্বস্থি ফিরে পাবে।যাই তাড়াতাড়ি বাবার কাছে গিয়ে কথাটা তাকে জানিয়ে আসি।

.
.

দরজা খুলে বাইরে আসলাম।হঠাৎ করে বাবার রুম থেকে অনেক জোরে চিল্লানোর আওয়াজ আসলো। কি এমন হল যে হঠাৎ করে এত জোরে চিল্লানোর আওয়াজ শুনলাম।চিল্লানোর সাথেসাথে কান্নার আওয়াজও শুনা যাচ্ছে।এইরকম কান্নার আওয়াজ শুনে মনে মনে এই দুয়া করতে লাগলাম সব যাতে ঠিক থাকে।আবার যাতে কোন খারাপ খবর আমাকে শুনতে না হয়।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২৩

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এরপরের দিন আমি আমার এই জঘন্যতম কাজের জন্য ওর কাছে গিয়ে একটাবারও সরি বলে নি।আসলে ওর কাছে কোন ভুল করলে আমি কখনোই ওকে সরি বলতাম না।আর সেদিনের এত বড় ভুলের পরও যদিউ সরি বলাটা আমার উচিত ছিল কিন্তু আমি তা পারিনি।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি মেঘের কাছে সরি বলে মাফ না চেয়ে পুষ্পের কাছে চলে যাই। কারণ আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না এখন আমার কি করা উচিত।

পুষ্প- আচ্ছা তন্ময় আমি দেখতে কি বেশি খারাপ?

তন্ময়- না।

পুষ্প- আচ্ছা তুমি মেঘকে কেন বিয়ে করেছ বলতে পার?ওর গায়ের রঙয়ের সাথে আমার গায়ের রংয়ের তুলনা করলে দেখা যাবে আমিই ওর থেকে বেশি সুন্দর।শ্যামলা বর্ণের মেয়েকে পেলে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করার জন্য।ইশ ওর আগে যদি তোমার সাথে আমার দেখা হত তাহলে ওর জায়গায় হয়ত আমিই তোমার বউ হতাম। তাছাড়া তোমাদের বিয়ের এতবছর হয়ে গেছে মেঘ এখনো কোন বাচ্চা তোমাকে দিতে পারেনি আর ভবিষ্যতে পারবেও না মনে হয়।বাচ্চা হলে অনেক আগেই হয়ে যেত।এর চেয়ে বরং আমাকে বিয়ে করে নিতে।সুন্দরী বউ সাথে বাচ্চা তুমি পেয়ে যেতে ।

.
.

পুষ্পের এই কথাগুলো কোন নতুন কথা নয়।সবসময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে এই কথাগুলো বলে ও আমাকে বুঝাতে চাইত যে আমাকে ভালোবাসে।মেঘের চাইতে ও আমার জন্য বেশি উপযুক্ত।প্রথমদিকে ওর কথাগুলো সহ্য হত না কিন্তু অনেক কষ্টে সেগুলো সহ্য করে নিতাম।একদিন এই কথাগুলো শুনে অনেক রেগে ওকে অনেক কিছু বলি যার ফলে ও সুইসাইড করার চেষ্টা করে।তাই এরপর থেকে ভয়েও ওর সাথে আর রাগ করে কথা বলিনি।ওর প্রতি দুর্বলতাকে এড়ানোর জন্য ওর সাথে আমি চলাফেরা বন্ধ করে দিলেই ও আবার আগের মতন পাগলামি শুরু করে দেয়।এদিকে ওর মা বাবাও ওদের একমাত্র মেয়ে পুষ্পের পাগলামি দেখে আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে।কিন্তু ওদের মেয়ের কারণে পুষ্পের প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়ার সাথেসাথে আমার সংসারটা ভাঙ্গুক তা আমি চাইনি।আবার পুষ্পের মা বাবাকেও না করতে পারছিলাম না তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ওর সাথে আমাকে থাকতে হত ওকে সময় দিতে হত।

.
.

মেঘকে নিয়ে পুষ্পের প্রতিদিনের এই কথাগুলো শুনার পর এই বিষয় নিয়ে আমি অনেক টেনশনে পড়ে যাই। সত্যিইই কি মেঘ কোনদিন মা হতে পারবে না। তাহলে আমার বাবা হওয়ার ইচ্ছাটাও সারাজীবন অপূর্ণ থাকবে।পুষ্পের সাথে এতদিন চলাফেরা করাতে এতদিনে ও আমার মাথার ব্রেইন ভালোই ভাবে ওয়াশ করে ফেলেছে।আমি তন্ময় যে কিনা সবসময় কারো থেকে উপদেশ না নিয়ে বরং অন্যকে উপদেশ দিতাম আজ সে কিনাই অন্য কারোর উপদেশ মন দিয়ে শুনত।কারণ একটা বাচ্চার জন্য মেঘের সাথে সাথে আমিও অনেক ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। আর ডিপ্রেশনের রোগীরা যাদের সাথে বেশি মিশে তাদের কথা অনুয়ায়ী চলে।কারণ তাদের কথা ডিপ্রেশন রোগীদের মগজে ভালোভাবে ঢুকে যায় যে এই কাজটা করলে তার জন্য ভালো হবে।
.
.

পুষ্পের সৌন্দর্য,ওর সাথে চলাফেরা করার কারণে আমার দুর্বলতা,আমার প্রতি ওর নির্ভরশীলতা আর ওর প্রতিদিনের একি রকম কথায় জানি না আমার কি হয়ে গিয়েছিল।আমি পাল্টে যেতে থাকি।আর এর ফলেই হঠাৎ করে পুষ্পের সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে।এর কয়েকমাস পর পুষ্পের মা বাবা বাস এক্সিডেন্টে মারা যায়।এই দুঃসংবাদের কিছুদিন পরেই আমি পুষ্পের কাছ থেকে ভালো খবর পাই।আমি জানতে পারি পুষ্প প্রেগন্যান্ট।এই অবস্থায় ওকে একা ফেলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। একদিকে ও আমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে সেই আনন্দের কথা আরেকদিকে আমাদের এই অবৈধ সম্পর্কের কথা মেঘকে কিভাবে বলব তা ভাবতে পারছিলাম না।পরে দিয়ে পুষ্পের জোরাজুরিতে মেঘকে সবকিছু বলতে আমি বাধ্য হই।আর এইও বলে দিই ও যাতে আমার আর পুষ্পের জীবন থেকে একেবারে চলে যায়।সেদিন শুধু নিজের সুখের কথা ভেবে আমি এই নির্দয় কথাগুলো মেঘকে কিভাবে বলেছিলাম আমি নিজেও জানি না।সেদিন মেঘের মনের ভিতর দিয়ে কি ঝড় যাচ্ছিল তা বুঝার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও আমি করেনি। খুব স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।আমার এই কথা শুনার পর মেঘ শুধু শেষ একটাই কথা বলেছিল তন্ময় তুমি এখন কাকে ভালোবাস?সেদিনের উত্তরে আমি এটাই বলেছিলাম আমি আমার বাচ্চার মা পুষ্পকে ভালোবাসি।এই কথা শুনার পর ও নিজের রুমে চলে যায়।

.
.

এরকিছুক্ষণ পর ও আমার কাছে এসে বলে, পারলে সময় করে এই চিঠিটা পরে নিও।জানি না তুমি বর্তমান সুখের মোহে পড়ার কারণে আমার এই চিঠি পড়ার সময় তোমার হয়ে উঠবে কিনা কিন্তু তাও যদি কখনো সময় হয়ে উঠে পড়ে নিও। ভেবেছিলাম আজকে তোমাকে আমি অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিব।কিন্তু আমি সারপ্রাইজ দেওয়ার আগেই তুমিই আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিলে।সেদিনের সেই ঝগড়ার পর ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর থাকব না।কিন্তু মেয়েরা বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে একবার পা রাখলে সেই বাড়ি তার জন্য আসল ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়।অন্য কোথাও মেয়েদের যাওয়ার জায়গা থাকেনা।বলতে গেলে তাদের আশ্রিতের মতন জীবন কাটাতে হয়।তাই তোমার দেওয়া সব অপমান সহ্য করেও আমি এখানে পড়ে ছিলাম।কিন্তু আজ যখন শুনতে পারলাম তুমি আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে অন্য আরেকটা মেয়েকে আমার জায়গা দিয়ে দিয়েছ আর সেই মেয়েই তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছে তখন তোমার সাথে একবাড়িতে থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না।আমাকে যেতে না বললেও আমি নিজ থেকেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম। কারণ আজকের পর থেকে আমি জেনে গেছি আমার জন্য তোমার হৃদয়ে কিছুই নেই।এই মেয়ের মোহে পড়ে তুমি আমার ভালোবাসাকে আজকে যে পরিমাণ অপমান করেছে তার ফল তুমি পাবেই তন্ময় ।আর পুষ্প….. তোমার নজর অনেক আগে থেকেই খারাপ ছিল সেটা আমি পরে বুঝতে পেরেছি।আমার দামি জিনিসটার উপর তুমি বদনজর দিয়েছিলে।আমার প্রতি তন্ময়ের ভালোবাসা,কেয়ারিং আর আমাদের ভালোবাসার গল্প শুনে মনে মনে তুমি ঠিক করে নিয়েছিলে তন্ময় যদি তোমার হয়ে যায় তাহলে তুমিও ঠিক একিরকম ভালোবাসা আমার স্বামীর কাছ থেকে পাবে তাইতো জেনেশুনে সারাদিন নির্লজ্জের মতন আমার বাসায় এসে আমার স্বামীর সাথে বেশি সময় কাটাতে।আমার স্বামীর আজকের এই অবনতি হওয়ার পিছনে শুধু ওর একার হাত নেই তোমারও অনেক বড় হাত ছিল।কারণ এক হাতে কখনো তালি বাজে না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।

.
.

তুমি তোমার রুপ,কথার ছলচাতুরী, আর আমার নামে অনেক নেগেটিভ কথা ওর মনে ঢুকিয়ে তুমি তন্ময়কে নিজের বশীভূত করেছ।তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙ্গার জন্য এমনভাবে উঠে পড়ে লেগেছিলে যে তন্ময়কে আমি এত বুঝানোর পরেও আমার ভালো কথা আমার স্বামীর মগজে ঢুকত না কিন্তু তোমার কুবুদ্ধিগুলো ওর মন আর মগজে বেশ ভালো করেই তা ঢুকেছে।তুমি শুধু আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নাও নি তুমি আমার সাজানো সংসারটাও কেড়ে নিয়েছ।তোমরা দুইজনেই আমার কষ্টের অপরাধী। শাস্তিতো তোমরা পাবেই সেটা আজ কিংবা কাল।আমিও দেখতে চাই এই মোহ,সৌন্দর্য আর অবৈধ সম্পর্কের বাচ্চাটাকে নিয়ে তোমরা কতদিন সুখে থাকতে পার।

.
.

আমার সংসার থেকে মেঘ চলে যাওয়ার পর আমি বুঝলাম ও আমার কি ছিল।আমার সবসময়ের সব প্রয়োজনে ওকে আমি কাছে পেয়েছি, আমি কিছু বলার আগেই ও আমার সব প্রয়োজনের অভাব মিটিয়েছে। ওর এই অধিক ভালোবাসাটা আমাকে কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি।কিন্তু ও যাওয়ার পর সেটা আমি পাইপাই করে বুঝতে পারলাম যে ও আমার কি ছিল।আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার পর থেকে ওকে খুব মনে পড়ত।ওর রেখে যাওয়া চিঠিটার কথা মনে পড়ল।পুরো বাড়ির সব জিনিস ঘেটেও আমি সেই চিঠি পাইনি।পরে ময়লার ঝুড়িতে গিয়ে দেখি সেখানে কিছু কাগজের টুকরা পড়ে আছে।এক এক করে সব কাগজের টুকরা একত্র করে দেখি এটা মেঘের সেই চিঠি। আমার রুম থেকে চিঠিটা এখানে কিভাবে এল তা বুঝতে পারলাম না।কাগজের টুকরাগুলো অনেক কষ্টে এক এক করে জোড়া লাগিয়ে চিঠিটা পড়লাম।

.
.

চিঠিটা পড়ে জানতে পারলাম মেঘ সাড়ে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল।নিজের হাত দিয়ে আমি এই পর্যন্ত কি কি করে ফেললাম সেটা ভাবতেই পুরো পাগল পাগল লাগছিল।একটা বাচ্চার ডিপ্রেশনে ওর থেকে আমার দূরত্ব বাড়লেও ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা কখনো কমেনি সেটা ও এখান থেকে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম।আসলে ওই সময় আমার শক্ত হাতে সবকিছু সামাল দেওয়ার দরকার ছিল।সব কিছু লিমিটের ভিতরে রাখা দরকার ছিল।পুষ্পের কারণে আমার সংসারটা যে ভাঙ্গবে সেটা মাথায় রেখে ওর অসুস্থতার চিন্তাটা বাদ দিয়ে আমাদের সংসারের ভালোটা সবার আগে আমার বুঝা উচিত ছিল ।যার কোনটাই আমি করতে পারিনি।পুষ্পকে অধিক প্রশয় দেয়াতে ও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কোঁপটা মেরে আমাকে ওর ফাঁদে ফেলল।আর আমিও ওর রুপের মোহে পড়ে, একটা বাচ্চার জন্য ওর সব কথা মেনে চলার কারণে আজ এই অবস্থায় আমাকে আর মেঘকে এসে দাঁড়াতে হল।

.
.

মেঘের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কি না কি করেছিলাম আমি। ৫টা বছর অপেক্ষার পর ওকে আমি পেয়েছিলাম এরপর ওকে বিয়ে করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ওকে আপন করে নিয়েছি। আর সেই আমি সংসারের কয়েকটা বছরে বাচ্চা না হওয়ার কারণে এতটাই অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম কোনটা ভুল কোনটা সঠিক তা বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।এর সব কিছুর মূলে পুষ্প ছিল।ওর মতন মানুষিক রোগীর খারাপ সঙ্গে পড়ে আমি কোথা থেকে কি করে ফেললাম তা বুঝে উঠতে পারিনি।আমার প্রতিটা কাজই বলে দিচ্ছে পুষ্পের সাথে থেকে থেকে আমি নিজেও মানুষিক রোগী হয়ে পড়েছি।এরপর ওর প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ হল।ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিই।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২২

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

জুয়েল- তমা!

তমা- আপনি আমাকে চিনেন?

জুয়েল- হ্যা, তোমাকে না চিনি কিভাবে?স্যারের মেয়ে তুমি

তমা- উনি কোথায়?আমাকে উনার কাছে নিয়ে চলুল।

জুয়েল- উনি কে?তন্ময় স্যার!

তমা- হ্যা

জুয়েল- দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,আসো আমার সাথে।

রুমে গিয়ে দেখি একজন লোক বিছানায় শুয়ে আছে।শরীরটা পুরো কঙ্কাল হয়ে গেছে।মুখে ক্লান্তির ছাপ।বুঝতে পারলাম উনিই আমার বাবা।দেওয়ালে টাঙ্গানো বাবার অনেক আগের ছবিটার সাথে বর্তমান অসুস্থ চেহেরার কোন মিল নেই। নিজের বাবাকে এই অবস্থায় এতদিন পর দেখে কান্না করে দিলাম।

জুয়েল- স্যার আপনার মেয়ে তমা আসছে

তন্ময় চোখ খুলে দেখে সত্যি সত্যি ওর মেয়ে ওর কাছে এসেছে।মেয়েকে দেখে খুশিতে মনটা ভরে উঠল।হাতের ইশারা দিয়ে মেয়েকে ওর কাছে এসে বসতে বলল

তন্ময়- কেমন আছিস মা

তমা- কাঁপা গলায়,, ভালো।

তন্ময়- শুনলাম তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?

তমা- হ্যা

তন্ময় – নতুন সংসার জীবনে ভালো থাক সেই দুয়া করি।

তমা- …….

তন্ময়- আজকে তোকে সামনে থেকে দেখতে পেরে খুব শান্তি লাগছে।জানিস তোর মাকেও এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু ওর চোখের সাথে চোখ মিলানোর সাহসটুকুও আমার নেই।তাই শুধু তোকে আসতে বলেছি।

মারে আমার ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দিস।আর তোর মাকেও বলিস আমাকে যাতে মাফ করে দেয়।নাহলে মরেও যে আমি শান্তি পাব না।অনেক কষ্টে জড় গলায় তন্ময় কথাগুলো বলল।

তমা- কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।আজকে বাবাকে এই অবস্থায় দেখে শুধু মায়া হচ্ছে।

তন্ময়- জুয়েল তমাকে আমার সেই ডাইরিটা এখন দাও।

তমা- বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।কিসের ডাইরি!

তন্ময়- তোকে যে কথাগুলো বলতে চাই তা আমি ডাইরিতে লিখে রেখেছি। তোর সব কিছু জানার অধিকার আছে।তাই আজকে তোকে ডাইরিটা পড়ার জন্য দিয়ে দিলাম।এটা পড়ার পর যদি মনে হয় তুই আমাকে ক্ষমা করতে পারবি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।

.
.
ফারিদ- তমাকে বাসায় না পেয়ে তমার মায়ের বাসায় আসলাম।আন্টিকে এতবার ডাকার পরও যখন উনি সাড়া দিচ্ছেলেন না তখন খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।তমার রুমে ঢুকার সময় দেখি ফ্লোরে একটা কাগজ পড়ে আছে।কাগজটা উঠিয়ে দেখি কিছু লিখা আছে সেখানে।পড়তে গিয়েই মাথায় বাজ পড়ল।
তার মানে তমা ওর বাবার কাছে গেছে। ও এখান থেকে জার্নি করে ঢাকায় গেছে!তাও আবার এই অবস্থায়!আমি জানি এরপরে কি হবে।আর সেটা বুঝতেই পেরে আমার বউটার জন্য টেনশন হচ্ছে।ওর এই অবস্থায় এতবড় ধাক্কাটা ও সামলাবে কি করে!যে করেই হোক আমাকে সেখানে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে।এই সময় ওর এখন আমাকে খুব প্রয়োজন।

তমার বাবার এড্রেস এখনি নিতে হবে।আন্টিকে এখন দরকার।হয়ত উনার কাছেই এড্রেসটা পাওয়া যাবে। আন্টির রুমে গিয়ে দেখি উনি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন।

ফারিদ- আন্টি,, আমার এখনি আংকেলের এড্রেসটা প্রয়োজন।আমার বউকে এই অবস্থায় আমি এখন একা ছাড়তে পারবনা।

মেঘ – প্রথমে ফারিদের কথাগুলো মাথায় না ঢুকলেও পরে দিয়ে ঢুকল।ফারিদের কথা কিছু বুঝলাম আর বাকিটা বুঝার মতন অবস্থায় এখন নেই তাই ওর কথায় কোন আগ্রহ দেখালাম না।
পরে ড্র‍য়ার থেকে একটা কার্ড বের করে ফারিদকে দিল।

ফারিদ- থ্যাংকস আন্টি।আমি এখনি আমার বউয়ের কাছে যাচ্ছি। আন্টি প্লিজ নিজের খেয়াল রাখবেন।আল্লাহ সহায় আছেন।

এরপর তাড়াতাড়ি করে মাকে কল দিয়ে তমার মায়ের বাসায় আসতে বললাম।উনাকেও এখন একা ছাড়া যাবে না।উনাকে সার্পোট দেওয়ার জন্য এখন কাউকে খুব প্রয়োজন।

.
.

বাবার লোক জুয়েল আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল।সেখানের টেবিলে ডাইরিটা ছিল।ডাইরিটার পৃষ্ঠা তুলে পড়া শুরু করলাম।

বাবা আর মায়ের প্রেমের কাহিনী পড়ে বুঝতে পারলাম তাদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা ছিল।তাহলে কিভাবে এই ভালোবাসায় দূরত্ব বাড়ল।তা জানার জন্য ডাইরিটা পড়তে লাগলাম।
বিয়ের ৩ বছরেও আমাদের ভালোবাসায় কোন ফাটল ধরেনি।ঠিক আগের মতই ভালোবাসাটা ছিল।কিন্তু এর পরে আমাদের অনেক চেষ্টার পরেও যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তখন আমি আর মেঘ দুইজনে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। অনেক কষ্টে মেঘকে এই ডিপ্রেশন থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলেও নিজের ডিপ্রেশনটা কিছুতেই দূর করতে পারছিলাম।একটা বাচ্চার জন্য মনে মনে খুব মরিয়া হয়ে উঠছিলাম।আর তার কারণেই হয়ত আমাদের আগের ভালোবাসাটা আগের থেকে অনেকখানি কমে যায়।এরসাথে ভালোবাসাটা কমার ক্ষেত্রে আরেকটা কারণ ছিল পুষ্পের প্রতি আমার দুর্বলতা।আমাদের ফ্ল্যাট এ নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে পুষ্পরা আসে।প্রথম প্রথম ওদের বাসা থেকে পুষ্পের চিৎকারের শব্দ আসত।প্রথম দিকে ব্যাপারটা না বুঝতে পারলেও পরে ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা বুঝতে পারি।পুষ্প একজন মানুষিক রোগী।জীবনের প্রথম প্রেমিকের ভালোবাসার কাছে ধোকা খাওয়ার পর ও অনেকটা মানুষিক রোগীর মতন আচরণ করতে থাকে।পুষ্পের এই চিৎকার, জিনিসপত্র ভাঙ্গচোরের আওয়াজ, ফ্ল্যাটের মানুষদের সাথে খারাপ আচরণ দেখে ওকে অনেকেই অনেক কটু কথা শুনাত।যেটা আমার খুব খারাপ লাগত।তাই এই ছোট মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য আমি নিজেই এগিয়ে আসি।প্রথমদিকে ও নিজেও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করত এরপর ও আস্তে আস্তে অনেকটা উন্নতির পথে আসে।ধীরেধীরে আমাদের বাসায় পুষ্পের যাতায়াত চলতে থাকে।ও প্রায়ই মেঘের কাছ থেকে আমার আর মেঘের ভালোবাসার কাহিনী জানতে চাইত।স্বামী- স্ত্রীর ভালোবাসার প্রাইভেসির মধ্যে যতটুকু কথা বলা যায় ততটুকু গল্প মেঘ ওকে শুনাত।হয়ত এইসব শুনার পর পুষ্পের আমার প্রতি দুর্বলতা বাড়তে থাকে।এরপর প্রায়ি যে টাইমে আমি বাসায় থাকতাম ও সেই টাইমে আমার বাসায় এসে উপস্থিত হয়।মেঘের উপস্থিতেই ও মেঘকে ইগনোর করে আমার সাথে গল্প জুড়িয়ে দিত।প্রথম প্রথম তা লিমিটের মধ্যে থাকলেও এরপর তা লিমিট ক্রস করে।বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারতাম না।কারণ এই রকম টাইপের রোগীর কাছে অনেক হিসাবনিকাশ করে কথা বলতে হয়।ফলে নিজের স্ত্রীকেও তেমন সময় দিতে পারতাম না।এতে যে মেঘ মন খারাপ করত তা বুঝতে পারতাম তাই পুষ্পের অবস্থার ব্যাপারে মেঘকে বুঝাতাম।এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

.
.

ধীরে ধীরে ওর সাথে অধিক সময় কাটানোর ফলে আমি নিজেও ওর প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ি।নিজের পরিবার, স্ত্রীকে গুরুত্ব না দিয়ে বাইরের একটা মেয়েকে বেশি গুরুত্ব দিলে, তার সাথে বেশি সময় কাটালে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাব এটাই স্বাভাবিক।যেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কাজ ছিল।পুষ্পকে নিয়ে মেঘের সন্দেহ দিনদিন বাড়তে থাকে।একদিন এই বিষয় নিয়ে মেঘ অনেক রাতে আমার সাথে ঝগড়া করে।আমি পুষ্পের প্রতি দুর্বল ছিলাম সেটা আমি নিজে জানতাম, কিন্তু মেঘকে সেটা বুঝতে দিতাম না এইটা আমার কাছে অনেক বড় একটা অপরাধের মতন মনে হত।সেই অপরাধবোধটা কেমন করে জানি আমাকে হিংস্র বানিয়ে দিল।মেঘ আমাকে আর পুষ্পকে নিয়ে অনেক খারাপ কিছু বলছিল যেটা শুনে আমি অনেক রেগে যাই যদিউ ওর রাগটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু এরপর ও আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলাতে আমার মনের সেই অপরাধবোধটা থেকে হঠাৎ করে তখন অনেক রাগ জন্মায়।নিজের অপরাধ ঢাকতে আর ও আমাকে ক্যারেকটারলেস বলাতে আমি একটা পশু হয়ে যাই।আর তাই সেদিন মেঘকে জানোয়ারের মতন মারতে থাকি।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২১

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

প্রিয় তমা মামণি,,
কেমন আছিস?আশা করি তোর মামণিকে নিয়ে ভালোই আছিস।হয়ত এই ভালো থাকাটা আরো ভালো হত যদি তোর মামণি,আমি আর তুই মিলে একটা সুন্দর ফ্যামিলির মতন থাকতাম।কিন্তু আমার একটা বড় ভুলের কারণে তা হয়ে ওঠেনি।সেজন্য তোরা দুইজন আজ আমার থেকে এত দূরে।এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছিস আমি কে?হুম ঠিকইই ধরেছিস আমি তোর সেই বাবা যার আদর,ভালোবাসা ছাড়াই তুই এতটা বছর কাটয়েছিস।বাবা হয়ে আমি তোর প্রতি কোন দায়িত্বই ঠিকমতন পালন করতে পারিনি।বাবা হিসেবে সত্যিই আমি ব্যর্থ।জানিস মা,,তোকে সামনে থেকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আমি জানি তুই আমাকে মনে মনে অনেক ঘৃণা করিস কিন্তু তোকে দেখার লোভটা কিছুতেই সরাতে পারিনা তাইতো বারবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসি দূর থেকে শুধু তোকে একপলক দেখার জন্য।তোর আর তোর মামণির সামনে যেতে পারব না বলে দূর থেকেই তোদের খোঁজ নিতাম।কিন্তু ইদানীং নিজ থেকে তোদের কোন খোঁজখবর নিতে পারিনা আমার লোকের কাছ থেকে সব খবর নিই তোদের।কয়েকবছর ধরেই শরীরটা বড্ড অকেজো হয়ে গেছে।সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।নিজ হাতে কিচ্ছু করতে পারিনা।অন্যের সেবার উপর এখন আমি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।এতটাই অসহায় অবস্থায় এখন আমি জীবন কাটাচ্ছি।
আজকের সকালটা কেন জানি আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে আজকের দিনটাই আমার জন্য শেষ দিন।পুরো শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা লাগছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থায় তোকে আর তোর মামণিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তোর মামণির সামনে মুখ দেখানোর মতন সাহস আমার নেই।তাই খুব করে চাইছি তুই আমার কাছে আজকে চলে আয়।তোকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।মামণি তোর কাছে এই মৃত্যু পথযাত্রীর এইটাই শেষ ইচ্ছা।আমার কাছে তাড়াতাড়ি চলে আয় মা।বেশি দেরি করিস না।কারণ বেশি করলে তোকে হয়ত আর সামনে থেকে দেখা হবে না আর আমি আমার অব্যক্ত কথাগুলোও তোকে বলতে পারব না।

ইতি
তোর বাবা

চিঠিটা হাত থেকে পড়ে গেল।যে ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হচ্ছে।হয়ত আজকে আরেকটা মৃ…….।আর পারছি না নিজেকে সামলাতে।

.
.
তমার রুমে এসে,,

মেঘ- “তমা,,তোর বাবার লোক বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে যা”

তমা- “মামণি তুমি এই কথা বলছ!”( অবাক হয়ে)

মেঘ- “হ্যা,, একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এই শেষ ইচ্ছাটা তোর পূরণ করা উচিত।”

তমা- “ঠিক আছে তাহলে তুমিও চল সেখানে।”

মেঘ- “না, আমি যেতে পারব না।কারণ তোর বাবা আমাকে যেতে বলেনি,শুধু তোকে যেতে বলেছে।সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি যা।”

মামণির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।সেখানে অনেক ভয় আর হতাশার চিহ্ন দেখতে পারছি।বুঝতে পারছি কিসের মধ্যে দিয়ে আমার মামণিকে কাটাতে হচ্ছে।মামণিকে একা ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবেনা তাই আমার শাশুড়িমাকে কল দিতে গেলেই মামণি বলল,,কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই।আমার এখন একা থাকতে ইচ্ছ করেছে।একটু একা থাকতে চাই আমি।

তমা- “কিন্তু এই অবস্থায় তুমি…..”

মেঘ- “আমি ঠিক আছি।”

তমা- “আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে।মামণির হাত দুটো ধরে,, নিজের খেয়াল রেখ মামণি।”

এরপর তাড়াতাড়ি করে বাবার পাঠিয়ে দেওয়া গাড়িতে করে ঢাকায় রওনা দিলাম।
.
.
মেঘ- “মেয়েটা যাওয়ার সাথে সাথে অনেক কষ্টে আটকে রাখা চোখের পানিগুলো গাল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

তন্ময় এতদিন আবির সেজে আমার সাথে কথা বলেছে অথচ আমি তা বুঝতেই পারিনি।ও এই কয়েক বছরে আমার সাথে যোগাযোগ রেখে আমার কষ্টগুলো দূর করার চেষ্টা করেছিল সেটাও আমি বুঝতে পারিনি।ও যে আমার সাথে ভুল করেছে সেটা ও মেনে নিয়েছে যে কিনা সামান্য কিংবা বড় ভুল করলেও তা সহজে মানতে চায় না।ওর ভুল কাজের জন্য সেদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার কাছেই ক্ষমা চাইছিল আর আমি!আমি সেটা বুঝতে পারিনি। কি কপাল আমার।আমার স্বামী আজ জীবনের শেষ মূহুর্তের কাটগড়ায় এসে পৌছে দাঁড়াল অথচ তাকে আমি একটাবারো সামনে থেকে দেখতে পাব না।ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব না কারণ আমি ওকে এই অবস্থায় লজ্জায় ফেলতে চাই না।আল্লাহ আর কত তুমি আমার কষ্টের পরীক্ষা নিবে।আর পারছি না আমি।এই কষ্ট থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দাও।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২০

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছি।রাতের বেলায় এইরকম সুন্দর দৃশ্য দেখলে চোখ সেখানেই আটকে যায়।আর সেই সাথে উনার কথা ভাবছি।আমার রাগি বরটা আমাদের বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই আমার হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছে।ও একটু না অনেকটাই রাগি আর জেদি হলেও ওর মনটা অনেক পরিষ্কার।ওর দেওয়া একটু একটু ভালোবাসা আর যত্ন আমাকে তা ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়েছি।ওর এই ভালোবাসা নিয়ে বাকিটা জীবন ভালোভাবে পাড়ি দিতে চাই।আর তাই এখন মনে মনে এইও ঠিক করে ফেলেছি ওকে আমার অতীতের কথা জানাবো না।আমার সংসারে আর নতুন করে আমি ঝামেলা চাই না।তাছাড়া ওর সামনে ওই কথা বলার পর হয়ত আমার প্রতি ওর ভালোবাসার অস্তিত্ব আর থাকবে না আর সেইসাথে ওর সামনে আর মাথা উঁচু করে আমি দাঁড়াতে পারব না।আর এটাই সবচেয়ে চরম সত্য কথা।তাই কষ্ট হলেও অতীতের কথা ওর কাছে গোপন রাখব।

আর এইদিকে ফারিদ যে আমার কাছে এসে আমাকে দেখছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল ই ছিল না।

“বাহ ম্যাডামের তো কোন হুশই নেই দেখছি।” পিছনের দিক থেকে ও আমাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

“আপনি?”

আমার চুলেই মুখটা ডুবিয়ে ফারিদ জবাব দিল,, “হুম আমি। বুঝলে কি করে এইটা আমি?”
না বুঝার কি আছে।আপনার স্পর্শ আমি খুব ভালো করেই চিনি।তাছাড়া আপনি ছাড়া আমাকে এইভাবে ধরার সাহস আর কারোর আছে নাকি?”
“হুম ঠিক বলছ।আর যেই ব্যাটা এই সাহস করবে তার হাত পা ভেঙ্গে কুকুরদের কাছে দিয়ে আসব।আমি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আর কারোর নেই।”
“তা এত রাতে এইখানে আসার কারণটা কি?”
“আমার বউ মনে হয় যেন কিছুই জানে না।বউ যে তার স্বামীকে না জানিয়েই শশুড় বাড়ি ছেড়ে নিজের মায়ের বাসায় একদিন থাকার জন্য চলে আসছে সেটা কি সে ঠিক করেছে?”
“আরে শুশুড় বাড়ি থেকে আমার মায়ের বাড়িতে আসতে জাস্ট ৫ মিনিট সময় লাগে। যখন আপনার মন চাইবে তখন এখানে চলে আসবেন।তা এই খবরটা কি আপনাকে জানিয়ে এরপর এখানে আসা লাগবে?”
“একশবার লাগবে।তোমাকে রুমে না পেয়ে খুব টেনশন হচ্ছিল।পরে মা বলল তুমি তোমার মায়ের কাছে আসছ।সেই যাই হোক আমাকে জানিয়েই তারপর এখানে আসবে।নাহলে কিন্তু পরে দিয়ে শাস্তি দিব।”
“আচ্ছা তাই?তা কি শাস্তি দিবেন শুনি?”
“হুম তাই।আর শাস্তিটা হবে…… আমার কানের কাছে কিছু বলল…..”

লজ্জায় মাথা নিচু করে,,”মনে মনে তাহলে এইগুলো ঘুরে না?”
“হুম এইগুলো ঘুরে” বলে দুষ্টুমি একটা হাসি দিল।
শুনো,,মায়ের বাসায় এসে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু রাতের বেলায় এখানে থাকা চলবেনা।রাতের বেলায় তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না।”

আমি এবার পিছন থেকে ফিরে ফারিদের সামনে আসলাম। ফারিদ অনেক লম্বা হওয়ায় ওর সাথে কথা বলার সময় আমার মাথাটা ফারিদের বুক পর্যন্ত আটকে থাকে।ফলে আমি ফারিদের চোখের দিকে তাকিয়ে মন ভরে কথা বলতে পারি না।আর বিষয়টাও ফারিদ বুঝতে পেরে আমাকে বলেছিল ওর পায়ের উপর পা রেখে যাতে কথা বলি।তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।এখন ফারিদ আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছে আমি যাতে ওর পায়ের উপর পা রাখি।বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি আর একটুও দেরি করলাম না।তাড়াতাড়ি করে ফারিদের পায়ের উপর পা রাখলাম।ওর এই ইশারার জন্য এতক্ষণ ধরে আমি অপেক্ষা করছিলাম।এরপর ফারিদের গলাটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে একটু দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বললাম,,,

“আচ্ছা তাহলে বিয়ের আগে বউকে ছেড়ে কিভাবে ঘুমাতেন ?”
“তখনো খুব কষ্ট হত।কিন্তু এখন বিয়ে করে সে কষ্টটা আর সহ্য করতে পারি না।তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছ।তোমাকে পেয়ে সে অভ্যাসটা ত্যাগ করা খুব কষ্ট জান।”

“এই ছিহ আমাকে জান বলবেন না। স্যার আপনি জানেন না এইভাবে কোন মানুষকে জান বলতে হয় না।জান মানে হচ্ছে জীবন।তার মানে আপনি কাউকে জান বলে ডাকলে তার অর্থ হবে তুমি আমার জীবন।কিন্তু এই জীবনটা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।তাহলে অন্য কেউ আপনার জীবন কি করে হয়?আর এক্ষেত্রে আপনিও বা কেমন করে একজন মানুষকে জান বলে ডাকেন!এইভাবে কাউকে জান বলে ডাকলে আল্লাহ রাগ করবেন।আর কখনো এই ফালতু নামে আমাকে ডাকবেন না।আকীকা করে মামণি আমার এত সুন্দর একটা নাম রাখছে। আর সেই নামে আমাকে না ডেকে…….. ”

আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে,,, আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘষে ফারিদ বলল,,,”আমার বউটা তো দেখি অনেক কিছু জানে।সরি আর কখনো এই কথা বলব না।আসলে সবাইকে দেখি ওরা ওদের ভালোবাসার মানুষকে আদর করে জান,বাবু বলে বেড়ায়।আমিও ভাবলাম তোমাকে আদর করে জান ডাকি।কিন্তু এইভাবে ভালোবাসার মানুষ বা অন্য কাউকে কে যে জান বলে ডাকতে হয় না সেটা আমার মাথায় আসেনি।সরি।”

“ইটস ওকে।আর এই ভুল করবেন না।”
“হুম,, বাবুর আম্মু।”

ফারিদের বুকে মাথা রেখে বললাম,,, “শুনেন,”
“জ্বী বলেন,,”
“আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন তাই না?”

আমার মাথাটা ওর বুক থেকে উঠিয়ে,, “ম্যাডাম আপনার কি মনে হয়?যদি মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বলি তাহলে তা বিশ্বাসও করে ফেলতে পারেন।সেজন্য আমার ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে এটা আপনাকে অনুভব করতে হবে যে আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি কিনা তাহলেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন।”

মুচকি হেসে,,”হুম।শুনেন শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন অন্য কাউকে না।আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরে অনেক কষ্ট করে নিজের মনকে বুঝিয়েছি যে আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন অন্য কাউকে না।প্লিজ আমার এই বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে দিবেন না।”

“আমি কখনো এই জঘণ্য কাজটা করব না।”
“কিন্তু আপনি এই জঘন্য কাজটা কিন্তু আমার সাথে করেছেন?”
“কখন?”
“আমাকে কিডন্যাপ করে এরপর ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিয়ে করে।”
“সেইদিনের সেই কাজটার জন্য আমি খুব দুঃখিত।আসলে সেইদিন নিজের রাগটাকে সামলাতে পারিনি।তুমি আমাদের বাসায় গিয়ে আমার সম্পর্কে আমার মাকে যা যা বলো এসেছ তাতে উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।বাসায় আসার পর মায়ের কাছে এইসব কথা শুনে নিজের রাগটা সামলাতে পারিনি। ।আবার তোমাকে হারানোর ভয়টাও ছিল তাই এইরকম একটা বাজে কাজ আমি তোমার সাথে করে ফেলছি।”
“আচ্ছা আমি যদি বিয়েতে রাজী না হতাম আপনি কি সত্যি সত্যি আমার ক্ষতি করতেন?!
“কি মনে হয় তোমার?”
“তখন মনে হয়েছিল আপনি যে পাগল সত্যি সত্যি এই কাজটা করে ফেলতেও পারেন।”
“আর এখন?”
“এখন মনে হয় আপনি আমাকে ভয় দেখানোর জন্যই এই কথাটা বলছিলেন।কিন্তু কখনো এই খারাপ কাজটা আর যাই হোক করতেন না।”

আমার কপালে চুমো দিয়ে,, “থ্যাংকস তিলোত্তমা আমাকে বুঝার জন্য।যা করেছিলাম দুইজনের ভালোর জন্যই করেছিলাম যদিউ তোমাকে বিয়ে করার পদ্ধতিটা ছিল অন্যায়।”
“অন্যায় আমিও করেছিলাম।আমারো দোষ ছিল।আপনার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করা আমার মোটেও ঠিক হয় নাই।যাই হোক আপনার আর আমার অন্যায়টা কাটাকাটি করে ফেলি।তাহলেই হল।এখন আর কারোর অন্যায় নেই।”
“হুম,,বাবুর আম্মু।”
.
.
এর কয়েকদিন পর,,,,

মামণির বাসায় গিয়ে দেখি মামণি পড়ার টেবিলে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে।মামণিকে এইরকম শান্তভাবে বসে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছিল।জীবনে কত কষ্টটাই না পেল আমার মামণিটা।

“মামণি,,,হঠাৎ করে বাসায় আসতে বললে যে?”
“তোর রুমে একটা চিঠি আছে।রুমে গিয়ে সেটা দেখ গিয়ে।”
“মামণি তুমি কি কাঁদছিলে? তোমার চোখ দুইটা ফুলা কেন?”
“ও কিছু না।”
“কিছুতো একটা হয়েছে?বলো কাঁদছিলে কেন?কে আমার মামণিকে কষ্ট দিয়েছে একটাবার তার নাম বল,দেখবা ওর অবস্থা আমি একদম খারাপ করে দিব।”
“আরে কিচ্ছু হয়নি।তুই একটু বেশি ভাবছিস।
যা রুমে যা।চিঠিটা পড়া শেষ হয়ে গেলে আমার কাছে আসিস।জরুরি কথা আছে।তাড়াতাড়ি যা।”

খুব অবাক হয়ে গেলাম। চিঠি! তাও আবার আমার রুমে! কে পাঠাল চিঠি?চিঠির কথা শুনে মনে ভয় লাগা শুরু হয়ে গেল।এইরকম চিঠি একবার আমার কাছে এসেছিল কিন্তু চিঠির কাগজটা পড়েই যখন জানতে পারলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা আত্মহত্যা করেছে তখন খুব খুব কষ্ট হচ্ছিল।আর সেই কষ্টটা এখন আবার হচ্ছে।আবারো কিছু হারানোর ভয়ে।তখন একটা কথাই শুধু মনে হচ্ছিল আমার কাছে চিঠি আসা মানে আমার কাছের মানুষের মৃত্যুর খবর আসা।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৯

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

হঠাৎ করে মোবাইলের মেসেজে তমার ধ্যান ভাঙ্গল।এত রাতে আবার কে মেসেজ পাঠালো।
“আজকে আমার বাসায় গিয়ে মাকে যে কথাগুলো শুনিয়ে এসেছ সেজন্য তোমাকে অনেক পস্তাতে হবে তমা।Mind it.”

হুম কি করবে হাদারাম।যা করছি ভালো করছি।কালকে আমাদের বাসার ছাদে এসে আমার সাথে যে বাজে কাজটা করল তার বেলায় উনার মনে ছিল না যে একটা অবিবাহিত মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া কিস করা কতটা অন্যায়।উনি আমার বেলায় যা করেছেন তা মেনে নেওয়াটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।এইজন্য তখন আমার কাছে যা সঠিক মনে হয়েছে তাই করেছি।বেশ করেছি।দেখি উনিও কি করতে পারেন।Stupid একটা।উনি যদি আমার শিক্ষক না হতেন তাহলে না এতক্ষণে মেরে উনাকে আলুর ভর্তা বানিয়ে ফেলতাম।তমার সাথে ফাজলামিগিরি করলে কি অবস্থা হয় তা উনাকে প্রেক্টিক্যাল করিয়ে দেখিয়ে দিতাম।লুচু একটা।
.
.
যাই দেখি গিয়ে মামণি কি করছে। ঘরে গিয়ে দেখি সেখানে মামণি নেই।কোথায় গেল?ও বুঝতে পারছি।

“মামণি তুমি এতরাতে ছাদে কি কর?”
“কিছু নারে।”
“মামণি তুমি কি কাঁদছ?”
“কই না তো।”
“এমন কেন তুমি মামণি?কার জন্য কেঁদে চোখের জল ফেলছ?যার কাছে তোমার কোন মূল্য নেই,যে তোমাকে ছেড়ে অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে ফূর্তি করে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে তাহলে কেন তুমি ওই অমানুষটার জন্য নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ।”
“তমা….., চুপ কর।”
“কেন চুপ করব।তুমি ওই জানোয়ারের জন্য কেঁদে কেঁদে নিজেকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিচ্ছ তা কি তুমি বুঝতে পারো না।আরে আমাকে যত বুঝাও তুমি ভালো আছো,দুনিয়াকে যত বুঝাও তুমি সুখে আছো কিন্তু আমি তোমার মেয়ে বুঝতে পারি এই মিথ্যা অভিনয় আমার সাথে করে লাভ নেই।মামণি আগে ছোট ছিলাম যা বুঝিয়েছ তাই বুঝেছি আমার চোখে যা দেখাতে চেয়েছ তাই দেখেছি কারণ আমি আমার মামণিকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন আমি আর আগের সেই ছোট তমা নেই যা আমাকে দিয়ে বুঝাবে,দেখাবে আমি তাই বুঝব দেখব।মামণি আমার চোখের দৃষ্টি আগের সেই ছোট তমার মধ্যে নেই।এখন আমি ২২শে পা রেখেছি।এতটা বছর আমার চোখের দৃষ্টি অনেক ভালো খারাপ কিছু দেখেছে। অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েছি এই চোখ দিয়ে।যতই ওই লোকটাকে আমার চোখে ভালো করার চেষ্টা কর না কেন আমার চোখে সে আজীবন খারাপি থাকবে।শালার পুরুষ জাতটাই এমন।এদের টেস্ট এক জায়গাতে থাকে না।এদের ভাললাগা, ভালবাসার টেস্ট বদলাতে বেশি সময় নেয় না।”

এরপর তমা কিছু বুঝার আগেই মেঘ ওর মেয়ের গালে একটা জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

“আমার স্বামীকে নিয়ে আরেকটাও বাজে কথা বলবি না।ও কি করেছে না করেছে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের স্বামী- স্ত্রীর ব্যাপার ছিল।আর এটাও তুই ভুলে যাস না ও তোর বাবা হয়।যাকে তুই এত অপমান করে কথা বলছিস আজ আমি তার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।ও আমাকে একটা সুন্দর জীবন দিয়েছে যার জন্য আমাকে অন্য কারোর কাছে হাত পাততে হয় না।নিজের হাতে টাকা ইনকাম করতে পারি।আর হ্যা ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল। কেন হয়েছিল সেটা বলতে আমি তোকে বাধ্য নই।ওর সাথে সংসার করলে হয়ত তার খারাপ প্রভাব তোর উপর পড়ত তাই তোকে নিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসছি।আজ একটা কথা জেনে রাখ ও আমাকে যে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়েছে তা অন্য কোন স্বামী তার স্ত্রীকে দেয় না।সংসারের চলন্ত পথে ও একটা ভুল কাজ করেছে আর তাই আমরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি।ওকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা যেন আমি কখনো তোর মুখ থেকে আর না শুনি।কথাটা মনে রাখিস।”
.
.
মেঘ- মেয়েটা আমার সাথে রাগ করে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়। আর সকাল হলেই আমার সাথে কোন কথা না বলে না খেয়ে ভার্সিটি চলে যায়।এরপর সকাল গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা নামতেই যখন দেখি ও বাসায় আসে নি তখনি মনের মধ্যে ভয়টা কাজ করে।

ও তো বিকেল হলেই বাসায় চলে আসে কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ ওর আসার নাম কোন নাম নেই।এদিকে ফারিদও বাসায় নেই।নাহলে ও এতক্ষণে কিছু একটার ব্যবস্থা নিত।এরপর রাত হতে থাকলে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। ফারিদের মাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।
.
.
রাত ১০:৩০ টায় তমা আসছে আর তার সাথেও ফারিদ।ওদের গায়ে বর বউয়ের পোশাক দেখে আমি সহ ফারিদের পরিবার অবাক হয়ে গেল।মাথায় কিছু আসছিল না তখন।পরে দিয়ে ফারিদ নিজেই সব ক্লিয়ার করে বলল যে,ওরা আজকে বিয়ে করে ফেলেছে।

ওর কথাটা শুনেই প্রথমে খুব রাগ হল।কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই হুট করে বিয়ে করার কারণটা কি ছিল?আমরা কি ওদের বিয়েটা আটকে রেখে ছিলাম।নিজেরা নিজেই বিয়ে করে বাসায় চলে আসল।

আমাদের সবার রাগ দেখেই ফারিদ অনেকটা শান্তভাবে আমাকে বুঝাল।দেখো আন্টি তোমার যে মেয়ে ওকে আমি ভরসা করতে পারি না।যদি বিয়ের আগের দিন পাগলের মতন বলে উঠে ও বিয়ে করবে না তাহলে আমার কি হবে বুঝতে পারছ।তাই তাড়াতাড়ি করে ওকে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ের কাজটা শেষ করে আসলাম।এখন থেকে ও আমার বউ।এখন চাইলেও ও আর কোন ঝামেলা করতে পারবে না।তোমরা আর কয়েকদিন পর নাহয় বিয়ের অনুষ্ঠানটা কর।
.
.
তমা- ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার সময় কয়েকজন লোক আমাকে জোর করে একটা গাড়িতে উঠায়।অনেক কান্নাকাটি করছিলাম তখন কিন্তু আমাকে কেউ ছাড়ে নি।বুঝতে পারলাম আমি কিডন্যাপ হয়েছি।আর পরে দিয়ে জানতে পারলাম এই কিডন্যাপটা ফারিদ স্যার লোকজন দিয়ে করিয়েছে।উনার কালকের হুমকিটা পড়ে মনে পড়ল।মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম যাতে উনি আমার কোন ক্ষতি না করে।

কিন্তু উনি আমাকে অনেক ভয় দেখান।বলেন আমি যদি এই মূহুর্তে উনাকে বিয়ে না করি তাহলে উনি সত্যিই আমার ক্ষতি করে বসবেন।ছাদের বাকি কাজটা আজকেই সেরে ফেলবেন।ভয়ে সেদিন উনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই।বিয়ের পর উনি আমাকে বাসায় নিয়ে আসেন।আর এমনভাবে আমার মামণিকে সহ ওর পরিবারকে আমাদের বিয়ের কাহিনী শুনাচ্ছেন যেন আমার ইচ্ছায় বিয়েটা হয়েছে।উনার প্রতি রাগ আর ঘৃণা আরো বেড়ে গেল।
.
.
এরপর অনুষ্ঠান করেই আমাদের বিয়েটা আবার হয়।আস্তে আস্তে উনি উনার নিজের গুণ আর ভালোবাসা দিয়ে আমার মনটা জয় করে নেয়।রাগ আর ঘৃণার বদলে এখন উনাকে ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করি।কিন্তু কখনো এই কথাটা উনাকে বলতে পারিনি।মুখের মধ্যেই কথাটা আটকে রইল।আর আমার অতীতের কথাটা উনাকে জানিয়ে নিজের কষ্টটা মাঝেমাঝে হালকা করতে খুব ইচ্ছে করে।কিন্তু এইসব কথা মনে মনে ভাবলেও পরে দিয়ে তা করার আর সাহস পাই নি।কারণ উনাকে হারানোর ভয়টা কাজ করে।যদি উনি এইসব কথা শুনে আমাকে ফেলে চলে যান তাহলে আমি আবার কি নিয়ে বাঁচব তা জানি না।তাই অতীতের কষ্টটা মনের ভিতরে ধামাচাপা দিয়ে রাখলাম।