Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2433



স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৮

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তানভীর- “সরি,”

তমা- “সরি বলে তো আর কাজ হবে না।বৃষ্টির দিনে গাড়ি পাওয়া এমনেতেই অনেক মুশকিল।আজকেই কি এই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললে হত না।অন্য আরেকদিন বলতা।এখন কি হবে?”

তানভীর- “কিচ্ছু হবে না।আমি তোমাকে সেইফলি বাসায় পৌছায় দিবো।কি ব্যাপার মুড অফ নাকি।”

তমা- “তো কি করবো।তোমার জন্য পুরা ভিজে গেছি।তুমি বেশ ভালোইই করেই জানো আমি বৃষ্টি একদমই পছন্দ করি না।তার উপর বৃষ্টিতে ভেজা একেবারে অসহ্যকর।”

তানভীর – “এই তুমি আমার জ্যাকেটের ভিতরে আসো।”

তমা- “না, থাক লাগবে না।”

তানভীর- “আরে লাগবে,বেশ লাগবে।সরি সত্যিই আমার খেয়াল ছিল না যে তুমি বৃষ্টিতে ভিজে গেছ।সরি। ”

তমা- “সরি মাফ হবে না।”

তানভীর – “আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।আগে চল ওই গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়াই”

তমা- “ওকে। ”

তানভীর – “এই তুমি এখানে একটু দাঁড়াও।আমি এই যাচ্ছি আর আসছি।”

তমা- “আরে….কোথাই যাচ্ছ। আজিব একটা।”

অনেক্ষণ পর ও এল।হাতে কিছু কদম ফুল।

তমা- “কদম ফুল!!ইশ,তুমি কিভাবে জানো আমি কদম ফুল পছন্দ করি।যাই হোক ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে দাও ” এই বলে ওর হাত থেকে কদম ফুল নিতে গেলে…।

তানভীর -“আরে আরে করছটা কি।হাত থেকে এইভাবে ফুলগুলো কেন নিচ্ছ?আমি তোমাকে নিজ থেকে ফুল দিছি?”

তমা- “ও আচ্ছা।ঠিকাছে। লাগবে না।”

এরপর হাটুগেড়ে কদম ফুল দিয়ে ও আমাকে প্রপোজ করে।আমি রীতিমতন অবাক হয়ে যায়।এইরকম দিনে তাও আবার যদি কারোর প্রিয় ফুল নিয়ে এক আবেগময় কণ্ঠে কোন ছেলে প্রপোজ করে তাহলে একটা মেয়ের গলতে বেশি সময় লাগে না।তাছাড়া ও আমার অনেক ভালো বন্ধু।অনেক ভালোও লাগে ওকে।তাই কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে ফেলি।
সাথে সাথে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।জানি না কি ছিল এই পরশে।এক অদ্ভুত অজানা ভাললাগা তখন মনের গহীনে কাজ করছিলো।

তানভীর -“আমি জানতাম তিলোত্তমা তুমি আমাকে না করতেই পারবে না।I love u, I love u so much dear.”

মাঝেমাঝে ও আমাকে তিলোত্তমা বলেই ডাকত।জানি না কি মনে করে আমাকে এই নামে ডাকত।যদিউ মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে করতো কিন্তু কিছু কিছু জিনিস না জানার মাঝেও এক ধরণের ভালালাগা কাজ করে। তাই আর এই নাম ধরে ডাকার কারণ ওকে আর আমি জিজ্ঞাস করে নি।ভালোই লাগত ওর কাছ থেকে এই তিলোত্তমা নামটা শুনে।ফারিদ স্যারও মাঝেমাঝে আমাকে তিলোত্তমা বলে ডাকে।কিন্তু এই তিলোত্তমা নামটা তানভীরের কাছ থেকে শুনতে আমার বেশ লাগত।

তানভীর -“এই তিলোত্তমা আমার সরি একসেপ্ট করছ।”

তমা- “কিসের?”

তানভীর – “এই যে আমার কারণে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে হল।”

তমা- “উম,না।এখনো করি নি।”

তানভীর – “এরজন্য কি করতে হবে শুনি।”

তমা- “বেশি কিছু করতে হবে না।আমাকে আরো অনেকগুলো কদম ফুল গাছ থেকে পেড়ে দিতে হবে।তাহলে তোমার সরি মাফ করে দিবো। ”

তানভীর – “ওরে আমার কদম ফুল পাগলী রে। আচ্ছা এনে দিবো।”

.
.
ফারিদ- “এই তমা, তমা এইভাবে ভিজছো কেন?ঠাণ্ডা লেগে যাবেতো।”

এই মেয়ে কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পারছো না।হায় আল্লাহ কোন ভাবনার দেশে পড়ে আছে।এতক্ষণ পিছন থেকে ওকে ডাকলাম কিন্তু ওর কানে মনে হয় কোন আওয়াজ ঢুকছে না।তাই ওর সামনে আসলাম।সামনে এসে ওর ভিজা চুলগুলো দেখে মনে হল আমার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মায়াবতী মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।ভেজা চুলে কি রুপটায় না ওর ফুটে উঠেছে।

জানি না আমার কি হয়ে গেল।আমার মাঝে আমি ছিলাম না।একটা ঘোরের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম।এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।ওর হাত ধরে একেবারে আমার কাছে এনে কপাল থেকে ওর চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে গেলাম।এরপর একহাতে ওর কোমড় ধরে আরেকহাতটা ওর গালে ধরে অজান্তেই ওকে কিস করে ফেললাম।

কিস করার কিছুক্ষণ পর একটু হালকা হয়ে আসলেই তমা আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল।ও যে এইরকমভাবে আমাকে ধাক্কা দিবে আমি জাস্ট কল্পনা করতে পারি নি।
.
.
“কি করছেনটা কি আপনি?পাগল হয়ে গেছেন নাকি?”
“তমা সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছিল তাই কি করে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না।প্লিজ কেঁদো না তুমি।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে।”

দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখছি।কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না।উনি এইটা কিভাবে করতে পারলেন।এতদিন উনার পাগলামি অনেক সহ্য করেছি আর না।আজকেই মামণিকে গিয়ে বলব উনার সাথে আমার বিয়ে যাতে না দেয়।কিন্তু মামণির শরীরের অবস্থা খুব খারাপ এই কথা কিভাবে বলব।

“এই মেয়ে মুখ থেকে হাতটা সরাও বলছি।আমি বললামতো,, ইচ্ছে করে আমি এই কাজটা করতে চাই নি।প্লিজ তিলোত্তমা আমাকে বুঝার ট্রাই কর।”

“আমাকে একদম ছুঁবেন না।আপনার মনে এতদিন এই ছিল।আর আজ তা প্রকাশ পেল।আপনি একটা নোংরা মনের মানুষ।”

এই কথা শুনে ফারিদের মাথায় রাগটা চটে উঠল।

“এই কি বললে তুমি?আমি নোংরা মনের মানুষ। তমার হাতটা শক্ত করে ধরে,,,আরে আমি যদি এতটাই নোংরা হই তাহলে এই ২ টা বছর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতাম না।যদি তোমার ক্ষতি করার ইচ্ছাই থাকত তাহলে আমি এতদিনে তা করে ফেলতাম। কি পারতাম না আমি ! সে সুযোগ আমার অনেক এসেছিল। কিন্তু আমি তা কাজে লাগাই নি।বলো আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কোন খারাপ আচরণ করেছি।”
“আগে করেন নি।কিন্তু আজ এইটা কি করলেন।এতদিনে আপনার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা ছিল আজকে এক সেকেন্ডই আপনি নিজে তা শেষ করে দিয়েছেন।”

নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে টেনে ফারিদ রাগে কাঁপতে লাগল।এই মেয়েটা কি বলছে এইসব?এইটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিল।ভুলে এই কাজটা ও করে ফেলেছে তাই বলে তমা ওকে এইভাবে কথা শুনাবে।

আরে ও কই?ছাদের চারিদিক চোখ বুলিয়ে দেখি ও নেই।বাসায় চলে গেছে তাহলে।এখন মনে খুব ভয় কাজ করছে এই মেয়েটা আবার কোন তালবাহানা করে না ওদের বিয়েটা বন্ধ করে ফেলে।

তমা- “তাড়াতাড়ি রুমে এসে দরজাটা আটকিয়ে কান্না করতে লাগলাম।আজকেই উনার মাকে গিয়ে বিচার লাগাবো। এরপর উনি নিজেই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবেন। ”

.
.
জুয়েল- “স্যার এখন কেমন লাগছে?”

তন্ময়- “এখন ভালোই আছি।”

জুয়েল- “স্যার খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।হঠাৎ করে আপনার শরীরটা আবারো খারাপ হতে দেখে মাথা কাজ করছিল না।”

তন্ময় – “আরে আর ভয় পেতে হবে না।আমি এখন অনেকটাই ভালো অনুভব করছি।জুয়েল একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসো তো।!

জুয়েল- “জ্বী স্যার”

তন্ময়- “নাও এবার একটা চিঠি লিখ।”

জুয়েল- “স্যার নাম বলেন,,প্রিয় এরপর কি নাম দিবো”

তন্ময়- “আমার মেয়ের নামতো জানোই।”

জুয়েল- “তমাকে নিয়ে আপনি চিঠি লিখবেন।”

তন্ময়- “হ্যা। লিখ প্রিয় মামণি……

জুয়েল- “হঠাৎ চিঠি লিখার কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।”

তন্ময়-“কারণ আর কয়েকদিন পর হয়ত আমি ভালোভাবে কথা বলার মতন অবস্থায় থাকবো না।তাই এখনি চিঠিটা লিখছি।আমার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেলে এই চিঠিটা ওর কাছ পাঠাবে।আর আরেকটা চিঠি লিখবে সেখানে আমি যা লিখতে বলব তাই লিখবে।সেই চিঠি তুমি আমার স্ত্রীর কাছে পাঠাবে। এখন যা যা লিখতে বলছি ঠিক তাই লিখ।”

জুয়েল- “ওকে স্যার”

অবশেষে দুইটা চিঠি লিখা শেষ হয়।

তন্ময়- “তোমার উপর আমি আরেকটা দায়িত্ব দিলাম।চিঠি সেখানে পৌছানোর পর আমার মেয়ে এখানে আসলে ওকে আমার এই ডাইরিটা পড়তে দিও।”

জুয়েল- “স্যার তমা কি এখানে আসতে চাইবে?যদি সে এইখানে না আসে তাহলে আমি কিভাবে ওকে এই ডাইরিটা দিব?”

তন্ময়- “আমি জানি আমার মেয়ে ঠিকই আসবে।আসতে ওকে হবেই। না হলে আমি ওকে যে কথাগুলো বলতে চাই সেগুলো আর বলা হয়ে উঠবে না।আমি যে কথাগুলো বলতে চাই সব এই ডাইরিতে আছে।এই ডাইরি ও পড়ার পর যখন ডাইরিটা ওর মামণিকে দেখাবে তখন হয়ত সে আমাকে মাফ করেও দিতে পারে।”

(Rj ফারিদ ভাইয়া আপনার পারমিশন ছাড়াই গল্পের নেক্সট পার্ট দিয়ে ফেলছি।কিছু মনে করিয়েন না।?????)

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৭

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

২ বছর পর,,,

“উফ এভাবে কে বেল বাজাচ্ছে?আসছি…..।”

দরজা খুলার পর,,

“ম্যাডাম আপনার জন্য একটা চিঠি আসছে।”
“আমার জন্য।কে পাঠিয়েছে?”
“তা তো বলতে পারব না।ম্যাডাম এইখানে একটা সাইন করুন।”
“ও,,দেন।”

এরপর চিঠিটা হাতে নিলাম।আজব কে পাঠাল আমাকে চিঠি। দেখতেই হচ্ছে।প্রেরকের নাম দেখতে গিয়েও আর দেখা হল না। কারণ সেই মূহুর্তে নিপা কল দিয়ে বসল।
.
.

নিপা- “আপু তুমি এখনো আসছ না কেন?তানু খুব কাঁদছে।ওকে সামলাতে পারছি না।তাড়াতাড়ি বাসায় আস।”

তমা- “এইতো আসছি।ওয়েট কর একটু।”

নিপা- “হুম তাড়াতাড়ি আস।”

চিঠিটা রুমে রেখে এসে তাড়াতাড়ি ফারিদ স্যারের বাসায় চলে গেলাম।
.
.
নিপা- “আপু দেখো কেঁদে কি অবস্থা করেছে?মেয়েটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না।নাও এবার ওকে কোলে নাও।”

তমা- “দিপা আপু কই।মেয়েকে ফেলে উনি কোথায় গেলেন?”

নিপা- “আপু শাওয়ার নিতে গেল এখন?ওকে কোলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ও আপুর কাপড়ে ইয়ে করে বারোটা বাজিয়ে দিছে।পাজি মেয়ে একটা।”

তমা- “যা এইভাবে বলবি না।দেখি বাবু আসো তো আমার কোলে।”

কি কিউট বাবুটা।পৃথিবীর সব বাবুরাই হয়ত এইরকম কিউট হয়।দিপা আপুর ৫ মাসের মেয়ে তানু।ওকে নিয়ে এইখানে আসার পর ওকে সারাদিন কোলে নিয়ে রাখা আমার একটা দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।ভালোই লাগে ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে,ওর সাথে গল্প করতে।ওকে দেখলে আমার নিজের বাবুটার কথা খুব মনে পড়ে।ও যদি এই দুনিয়ায় আসত তাহলে ওকেও আমি এইভাবে কোলে নিয়ে হাঁটতাম।

ফারিদ- “তমা কখন আসলে?”

তমা- “এইতো এখন।”

ফারিদ- “তানু তোমার কোলে আসলেই কেমন শান্ত হয়ে যায়। ভালোই চিনে তোমাকে। ”

তমা- “তাইতো মনে হয়।”(লজ্জামুখে)

ফারিদ- “আর তুমি যে তানুকে কত ভালোবাস তা দেখলেই বুঝা যায়।”

তমা- “ছোট বাবুদের খুব ভালো লাগে।ভালো না বেসে পারি কিভাবে?”

ফারিদ- “ইশ আগে বিয়েটা করে ফেললে তুমি এতদিনে আমার ২ বাবুর মা হয়ে যেতে। সমস্যা নাই,চল আজকেই বিয়েটা করে ফেলি।এরপর বছর গড়াতেই তোমাকে আমার বাবুর আম্মু বানাব।”

তমা- “লজ্জায় ইচ্ছে করছে আমি মাটির নিচে ঢুকে যায়।নিপার সামনেই উনি এইসব কি বলছেন।উনার লজ্জাশরম নেই বললেই চলে।কখন কার সামনে কি বলতে হয় এতটুকুও আক্কেলও উনার নেই।”

শাওয়ার শেষ করে দিপা আপু বাইরে আসলেই আমি তাড়াতাড়ি করে আপুর কোলে তানুকে দিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম।

ক্লাস নেওয়ার সময় আমার মুখের দিকে উনি হা করে তাকিয়ে থেকে আমাকে লজ্জা দিবে আর বাসায় আসলে এইরকম উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে আরো লজ্জায় উনি ফেলে দেন।বুড়োর বয়স যত বাড়ছে ততই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।
.
.
কালকের থেকেই প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির পানিতে গাছের পাতা থেকে শুরু করে সবকিছু পরিষ্কার আর সতেজ মনে হচ্ছে।এইরকম মেঘলা ঘন বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি দেখতেই বেশ ভালোই লাগে।অন্য কোন কাজে আর মন বসে না।গরম কফি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখাটা আসলেই মনোমুগ্ধকর।

মেঘ- “তমা, এই তমা আমি যাচ্ছি।”

তমা- “যাও”

মেঘ- “কিরে মা,আজকে ভার্সিটি যাবি না।”

তমা- “না মামণি।আজকে বাসায় থাকবো। যেতে ভালো লাগছে না।”

মেঘ- “তোর না আজকে ম্যাথ ক্লাস আছে।তুই না গেলে ফারিদ অনেক রাগ করবে সেটাতো জানিস।”

তমা- “……”

মেঘ- “তমা ফারিদের রাগ সম্পর্কে তোর ভালোভাবে জানা আছে।কেন শুধু শুধু ওর রাগটা উঠাতে চাস তুই?যা তাড়াতাড়ি রেডি হ গিয়ে।”

তমা- “……..”

মেঘ- “তমা, এই তমা আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না।আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”

তমা- “তোমার কোন কথার উত্তর দিতে আমার ভালো লাগছে না মামণি।মামণি আমি উনার খাইও না পড়িও না।আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে বাইরের কেউ ইন্টারফেয়ার করোক সেটা আমি মোটেও পছন্দ করি না।আমার যখন ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করবে আমি যাব নাহলে যাব না।ওই ব্যাটার ইচ্ছামত চলতে আমি বাধ্য নয়।”

মেঘ- “ছিহ তমা,ও তোর শিক্ষক হয়।শিক্ষকদের নিয়ে এইভাবে কথা বলতে নেই।ফারিদ যা করে বা করছে তোর ভালোর জন্যই করছে।”

তমা- “আর ভালো ভেবে কি হবে।সব শেষ। আমার আর কোনদিন আর ভালো হবে না।এইরকম নিঃস্ব,আর অসহায়ভাবে সারাজীবন কেটে দিতে হবে।”(মনে মনে)

মেঘ- “তমা, কি ভাবছিস।”

তমা- “কিছু না মামণি।আজকে ভালো লাগছে না।একটা দিন নিজের মত করে কাটাতে চাই প্লিজ।তোমার দেরি হচ্ছে না।”

মেঘ- “ও হ্যারে মা,খেয়াল ছিল না।আমি গেলাম।জোর করছি না তোর উপর।ফারিদ রাগ করবে তাই যেতে বলছিলাম।যেতে ভালো না লাগলে বাসায় থাক।”

তমা- “……”

মেঘ- “সাবধানে থাকিস, আসি”

এর ত্রিশ মিনিট পর বৃষ্টির বেগ আরো বৃদ্ধি পেল।বাইরের রাস্তায় এইসময় এক প্রেমিক প্রেমিকাকে দেখলাম।ছাতা হাতে নিয়ে তারা একে অপরের হাত ধরে গল্প করছে আর একটু পর পর লাজুক দৃষ্টিতে একে অপরকে দেখছে।মনে হচ্ছে কি অফুরন্ত প্রেম একে অপরের জন্য।কিন্তু এদেরকে দেখে আমার মনে হচ্ছে এদের মধ্যে আসলে কোন ভালবাসায় নেই যা দেখা যাচ্ছে শুধু এক মিথ্যা ভালবাসা দেখানো অভিনয় করার নাটক।আর যা দেখা যাচ্ছে না তা আমি দেখতে পারছি।আজকে যে ভালবাসায় তারা নিজেদের মাতিয়ে রেখেছে কালকে সে ভালবাসার জন্য তারা আফসোস করবে।বলবে কেন এত বড় ভুল করলাম তোমাকে ভালবেসে।আগের মতন তোমাকে আর ভালবাসতে ইচ্ছে করে না।তোমার থেকেও হাজারগুণ ভালো লাইফ পার্টনার আমি ডিজার্ভ করি।দিনশেষে এই সামান্য কথায় এতদিনের গড়ে তুলা একটু একটু করে জমে উঠা ভালবাসা এমনেতেই শেষ হয়ে যায়। আসলে দুনিয়াতে ভালবাসা বলতে কিচ্ছু নেই।ভালবাসা মানেই একরাশ কষ্ট, বেদনাকে আকড়ে ধরে জীবনটাকে পাড়ি দেওয়া।

উফ মাথা ব্যথা করছে এইসব কথা ভেবে।ইচ্ছে করছে একটু ঘুমাই গিয়ে।এইরকম দিনে বেটাইমে ঘুমাটানো আসলেই মজার।পুরোটা সকাল ইচ্ছেমতন ঘুমালাম।দুপুরে বাসার টুকিটাকি কাজ করতে করতে বিকেল গড়াল।এখনো অঝড় ধারায় বৃষ্টি পড়ছে।ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টির পানিতে গিয়ে ভিজে আসি।হঠাৎ চোখটা গেল কদম গাছটার দিকে।এমন দিনে কদম গাছের ফুলগুলো কি পরিমাণ সুন্দর লাগে।গাছটার দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।

একটু পরেই আমার সেদিনের চিঠিটার কথা মনে হল।চিঠিটা তো পড়েই দেখলাম না।তাড়াতাড়ি করে বইয়ের পৃষ্ঠায় লুকানো চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলাম।

প্রিয় তিলোত্তমা,,
কেমন আছ?আশা করি তুমি তোমার ফারিদ স্যারকে নিয়ে বেশ ভালোই আছ।আর কিছুদিনের মধ্যেই তোমরা বিয়ে করতে যাচ্ছ খবরটা জেনে খুব খুশি হলাম।ফারিদ স্যার তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।তিলোত্তমা জানো তুমি সুখে থাকলেও আমি সুখে নেই।তোমার চোখের সেই ঘৃণা আজও আমার চোখে ভাসে।শান্তিতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না আজ কতটা বছর।আমার একটা ভুলের কারণে তোমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে আর তার সাথে আমি তোমাকে ভালোবাসার অধিকারটা হারিয়ে ফেলেছি।সত্যি বলতে শুধু ভালোবাসলেই হয় না ভালোবাসার মানুষটাকে শক্ত করে আগলে ধরে রাখতে হয়।বিপদের দিনেও তার হাত ছাড়তে হয় না।কিন্তু আমি সেটা পারিনি।বিপদের দিনে তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছি শুধু নিজেকে বাঁচানোর জন্য।কিন্তু ওই ঘটনার পর আমি ডিপ্রেশনে চলে যায়। এরপর মা আমার এই অবস্থা দেখে সুমার সাথে আমার বিয়েটা করে দেয়।মা ভেবেছিল হয়ত আমি এবার আগের মতন হয়ে যাব।কিন্তু জানো সুমা মেয়েটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে।অথচ আমি কারোর ভালোবাসায় ডিজার্ভ করি না।ভয় হয় তোমার সাথে যা হয়েছে সেই একি ঘটনা যদি আমার কারণে ওর সাথে হয় তাহলে আমি আর বাঁচতে পারব না।তাই আস্তে আস্তে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।বিয়ের বাড়িতে তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমার কাছে মাফ চাইলে তুমি আমাকে মাফ করে দিবে।কিন্তু তুমি আমাকে মাফ কর নি।হয়ত কোনদিনও তা পারবে না।আমার মতন পাপীকে আসলে মন থেকে মাফ করা যায় না তাই সেদিন হয়ত আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।এরপর রাজশাহীতে আসার পর আমার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে।তিলোত্তমা আর পারছিলাম না নিজেকে সামলাতে।তাই নিজেকে নিজে শেষ করে দিলাম।জানি ওইপারেও আমার জন্য শান্তিতে থাকা কষ্টকর হবে।কিন্তু কি করব বল খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার।তাই শেষ পর্যন্ত আমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল।পারলে এই পাপীকে মাফ করে দিও।

ইতি
তোমার কষ্টের পাপীদার
.
.
তানভীর এটা তুমি কি করলে?কেন করতে গেল এই পাপ কাজ।আল্লাহ…..বলে চিৎকার করে উঠলাম।ওকে আমি মাফ করতে পারি নি এটা সত্য কথা কিন্তু তাই বলে ও এইরকম পাপ কাজ করবে।ও আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।আর ভালোবাসার মানুষ এইরকম কাজ করলে কি করে নিজেকে ঠিক রাখব।কেন আমি সেইদিন ওকে মাফ করে দিলাম না। ওইদিন যদি ওকে ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে হয়ত আজ ও জীবিত থাকত।চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম।কি হয়ে গেল এইসব!
.
.
ছাদে এসে দুইহাত মিলে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকলাম।এমন বৃষ্টির দিনে তানভীর আমাকে প্রপোজ করেছিল।সেদিনটা খুব স্পষ্টভাবে আমার চোখে এখন ভেসে উঠছে।

তমা- “কি ব্যাপার আমাকে এইখানে নিয়ে এলে কেন?”

তানভীর – “আসলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।”

তমা- “তাহলে বলে ফেল এই বলে খোলা বিশাল মাঠটার দিকে একবার চোখ বুলালাম।”

তানভীর – “…….”

তমা-” কি ব্যাপার অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।তখন থেকেই শুনে আসছি কিছু বলবে।কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেল।আকাশটা মেঘলা লাগছে।মনে হয় এখনি বৃষ্টি নামবে।

তানভীর – “তমা, নার্ভাস লাগছে।”

তমা- “আমার সামনে কথা বলতে তোমার নার্ভাস লাগছে।আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক।আজব।হেয়ালি না করে যা বলতে চাও বলে ফেল।”

তানভীর-“আসলে,আমি..আমি,আসলে..আসলে,আমি..

তমা -” মাথা ফাটিয়ে দিবো একেবারে।কথা আটকিয়ে যাচ্ছে কেন?এই যা বলতে না বলতে বৃষ্টি নেমে গেল।এখন বাসায় যাব কি করে

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৬

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তার মানে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক যাতে শেষ না হয় সেজন্যই আমার অতীত শুনতে চাচ্ছেন না।আপনি তা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন?”

তমার দুই গাল টান দিয়ে ফারিদ বলল,,
“এই পিচ্চি আমি তা বলছি নাকি?তুমি যা ভাবছ আসলে তা নয়।তুমি ৩০ মিনিট ধরে বসে আছ সাথে আমাকেও বসিয়ে রাখছ তোমার অতীতের কাহিনী আমাকে শুনাবে বলে।কিন্তু তুমি নিজেই কিছু বলতে পারছ না।আর কেন পারছ না সেটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।এতটুকু আমি বুঝতে না পারলে কি আর বুঝলাম তোমাকে”

অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বুঝতে পেরেছেন উনি।আজব!

“তুমি আসলে এখন আনইজি ফিল করছ কথাটা বলতে।বিবেক বলছে কথাটা বলতে কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না এখন।তাই এইরকম পরিস্থিতিতে তোমাকে এইসব কথা বলতে আমি জোর করছি না।তোমার অতীতের সব ঘটনা আমি শুনব তবে এখন না আমাদের বিয়ের বাসর রাতে।তখন না হয় পুরোটা রাত তোমার কথা শুনে পাড় করব আর তোমার খারাপ অতীতকে সেদিন মুছে দিয়ে একটা নতুন সকালের সূচনা করব যেখানে তোমার খারাপ অতীতের কোন চিহ্ন থাকবে না।নইতবা যখন এই কষ্টের অতীত নিজের মধ্যে চেপে রাখতে তোমার খুব কষ্ট হবে তখন আমার কাধে মাথা রেখে সেই কষ্টের অতীতের কথাগুলো বলিও।সেইদিন আমিও তোমার কষ্টের ভাগীদার হবে।আমি সেদিনটার অপেক্ষায় থাকব।

আর আরেকটা তোমার মন যা বলবে তাই করিও। ইচ্ছা হলে বলিও নাহলে তা গোপন রেখে দিও।দুইটা করার অধিকার তোমার আছে।তবে তা এখন নয়।বিয়ের পরের দিনগুলোর জন্য জমা রাখিও।”
“………”

“আর এই এংগেজমেন্ট আংটিটা খুলে হাতে রাখছ কেন?মাইর দিব একটা।দাও আংটিটা দাও।এখনি পড়িয়ে দিই।”

অবাকের রেশ কিছুতেই কমছে না।উনি কি সত্যিই এত ভালো নাকি আমার সামনে ভালো হওয়ার অভিনয় করছেন। না, না উনাকে বিশ্বাস করা যাবে না।এত মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি গলব না।সব অভিনয়।সব পুরুষইই এক।হয়ত উনার কোন স্বার্থ লুকিয়ে আছে তাই আমাকে বিয়ে করার জন্য এত মিথ্যা কথা বলছেন।বুঝি বুঝি সব বুঝি।ফারিদ স্যার আপনার চালাকি আমি বুঝি না মনে করছেন।এই বিয়ে তো আমি হতেই দিব না।আপনি কি করতে পারেন সেটা আমিও দেখব।

“মনে মনে কি এত ভাবো। তমা তোমাকে আমি এতটা বছর ধরে চিনি। নিশ্চয় বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে তুমি এখনো অটল আছ ।তা আমি ভালো করেই জানি।আর তুমি আমাকেও ভালো করে জানো ফারিদ যা বলে তাই করে।তোমাকে বিয়ে করে আমার ঘরের বউ বানাবো সেটাই ফাইনাল।

তমার একেবারে কানের কাছে এসে,,, যদি সোজা কথায় ঘি না উঠে তাহলে আঙ্গুলটা বাঁকিয়ে নিব।”

চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,

“সোনা,,এইভাবে তাকিও না।নাহলে নিজেকে সামলাতে পারি না।একটা কথাতো শুনেছ Everything is fair Love and War.”

এইরকম পরিস্থিতিতেও কেউ কাউকে ভয় দেখাতে পারে।আল্লাহ এর সাথে বিয়ে হলে আমার পুরো লাইফটা শেষ হয়ে যাবে।
.
.
বাসায় এসে ওয়ারড্রবের সব কাপড় নামিয়ে সেগুলো এলোমেলো করলাম।ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে রাগটা কমালাম।আহ এবার শান্তি।এবার শান্তিমনে আবার এলোমেলো জিনিসগুলো গুছালাম।রাগ উঠলেই আমি এই কাজটা সবসময় করি।

“মামণি একটা কথা ছিল।”
“হুম বল?”
“আমি বিয়েতে রাজি আছি।তবে আমার একটা শর্ত আছে।”
“বিয়ে করবি আবার এতে শর্ত কিসের?”
“মামণি…..শর্ত মানবে কিনা বল?”
“আচ্ছা আচ্ছা বল কি শর্ত?”
“আমি বিয়েটা ২ বছর পর করব।এখন না।আমার এখন সময় দরকার। তুমি ওদেরকে এই কথা বলে দিও।”
“এত দেরিতে!তমা আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না সেটাতো তুই নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছিস।এখন তোকে বিয়েটা দিতে পারলেই খুব শান্তি লাগত।তাই আমি চাচ্ছিলাম তোর বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিই।”
“……..”

মামণির মুখের উপর আর কিছু বলতে পারলাম না।মুডটাই খারাপ হয়ে গেল।ফারিদ স্যারকে মেসেজ দিয়ে বললাম,, ছাদে আসার জন্য।
.
.
“কি ব্যাপার হঠাৎ করে আমাকে ছাদে আসতে বললে যে?”
“কথা ছিল।”
“তাই!”
“কাছে আসো এত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বললে আমার আনইজি লাগে।”

“উফ….লুচু একটা (মনে মনে)।
স্যার,,এতটুকু দূরত্বই ঠিক আছে।আরো বেশি কাছে আসার দরকার নাই।”

তমার কাছে এসে,, “কিন্তু আমার কাছে ঠিক নেই যে। তমার হাত ধরে টেনে একেবারে আমার কাছে এনে বললাম,,হুম এখন ঠিক আছে।আসলে কথা বলার সময় কারোর চেহেরা ঠিকভাবে না দেখতে পেলে আমার কাছে মনে হয় সে আমাকে ইগনোর করছে।এই তুমি আমাকে ইগনোর করতে চাইছ নাকি?”
“না,,না তেমন কিছু না।আপনাকে ইগনোর করব কেন?দেখেন আপনার কাছে এসে কথা বলছি।”(ভয় পেয়ে)
“হুম ঠিক আছে।”
“আসলে আপনাকে একটা কথা বলার জন্য এইখানে আমি ডেকেছি।প্লিজ কথাটা শুনে আপনি রেগে যাবেন না।আমার দিকটাও বুঝার চেষ্টা করবেন।”
“হুম বল,,”
“আসলে আমি চাচ্ছি আমাদের বিয়েটা ২ বছর পর হোক।”
“কিহ!হঠাৎ এই ডিসিশন।”
“দেখুন রাগবেন না।বিয়ে আপনাকেই করব।কিন্তু সেটা ২ বছর পর।আসলে হঠাৎ করে বিয়ের কথাটা শুনে আমি তা মন থেকে নিতে পারছি না।আমার কিছুটা সময় দরকার।”
“সময় নাও।তাতে আমার সমস্যা নাই।কিন্তু তাই বলে ২বছর!এই ২ টা বছর আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব না।”

এবার কেন জানি আমার খুব কান্না পাচ্ছে।সবাই যার যার স্বার্থে আমাকে শুধু ব্যবহার করছে।আমারো যে একটা মন আছে মন থেকে যে আমি এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছি না সেই খবর কেউ নিতে চাই না।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া যে কত বড় অপরাধ তা আমি একের পর এক ধাক্কা আর কষ্ট পেয়ে বুঝেছি।
.
.
কিছুক্ষণ পর,,,,

“এই তমা,,তুমি কাদঁছ?”
“তাতে আপনার কি?আমার চোখ আমি যখন খুশি তখন কাঁদব।”
“প্লিজ কেঁদ না।দেখ বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেললে সেটা তোমার, আমার আমাদের দুইজনের জন্য ভালো হবে।”

উনি হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছতে গেলে আমি হাতটা সরিয়ে দিই।এরকম কয়েকবার উনার হাতটা সরিয়ে দিতেই উনি রেগে যায়।

“এই মেয়ে সমস্যাটা কি?বারবার আমার হাত সরাচ্ছ কেন?আরেকবার আমার হাত সরালেই তোমার খবর আছে।”
“আর কিছু করলাম না।উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়েই নরম স্বরে বললেন,,আচ্ছা ২টা বছর কি খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে না।আরেকটু কম সময় নেওয়া যায় না।”

চুপ করে থাকলাম। আর কি কথা বলব পাগলের সাথে।জানতাম এত সময় উনি আমাকে দিবেন না।

“আচ্ছা যাও ২বছর পরেই না হয় আমাদের বিয়েটা হল।তবে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।”

এর ওর শর্তের কথা শুনতে শুনতে কানটা ঝালাপালা হয়ে গেল।তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম,,”হুম বলেন কি শর্ত মানতে হবে?”

“ওইদিন তোমার হাতে ব্লেড দেখেই আমার আত্মাটা কেঁপে উঠেছিল।নিজের ক্ষতি করতে যাচ্ছিলে সেটা ভালো করে জানতাম।এইজন্য বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে তোমাকে আমার কাছে রেখে দিতে চেয়েছিলাম।ভার্সিটি ক্লাসে তুমি আমার চোখের সামনে থাকলেও বাকিসময় তুমি আমার চোখের আড়ালে থাকবে।যেহেতু এই ২টা বছরে ভার্সিটির ক্লাসের পর বাকি সময়টা তুমি আমার চোখের আড়ালে থাকবে সেহেতু সে সময় তুমি কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পার।”
“…….”
“বুঝতেই পারছ কি বলতে চাচ্ছি।তুমি এই ২ বছরে ভুলেও নিজের ক্ষতি করতে পারবে না।আর যদি করে ফেলও তাহলে দেখবে এই ফারিদের আসল চেহেরা।তোমাকে বাঁচিয়ে তারপর কোন কথা ছাড়াই ডাইরেক্ট বিয়ে করে ফেলব।”

“সরি।জানি না সেদিন কি হয়েছিল তাই এইরকম বাজে কাজটা করতে গিয়েছিলাম।দ্বিতীয়বার আর এই কাজটা করব না।”

“হুম বুঝলাম।কিন্তু তোমার মুখের কথায় আমি বিশ্বাস করি না।”
“কি করলে বিশ্বাস করবেন?”
“আমার দুইগালে দুইটা কিসি দাও। তাহলেই তোমার কথা বিশ্বাস করব।”
“জীবনেও আমি এই কাজ করব না।ব্ল্যাকমেইল না।”
“তাহলে যাও কালকেই বিয়েটা করে ফেলব।আর এর ২ বছর পর তোমাকে আমার দুই সন্তানের মা বানাব।এই আমি কিন্তু অলরেডি আমাদের মেয়ে বাবুদের নামও ঠিক করে ফেলছি।একজনের নাম হবে ফারিয়া আরেকজনের নাম…..”
“এই স্টপ স্টপ…… বলে হাত দিয়ে উনার মুখটা বন্ধ করে দিলাম।আর কিছু বলার দরকার নেই।যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।”
“তাই!”
“হ্যা।চোখ অফ করেন।”
“কেন?”
“উফ চোখ অফ করতে বলছি।”
“আচ্ছা।”

উনার দুই গালে দুইটা হামি দিয়ে তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেম আসলাম।
.
.
পাগলি তুই কিসের জন্য বিয়েটা করতে চাচ্ছিস না তা কিছুটা প্রায় ৫০% আমি আঁচ করতে পেরেছি বাকি ৫০% রহস্য আমার অজানা।তোর কষ্টের কথা শুনে হয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না কারণ আমার অনুপস্থিতে না জানি কত কষ্ট তুই সয়েছিস।ওই সময় হয়ত তুই খুব করে চাইতি তোর পাশে তোর আপন কেউ থাকুক।কিন্তু সেটা আমি পারিনি।তোকে একা রাজশাহীতে পাঠিয়ে আমরা অনেক বড় ভুল করেছি যার মাশুল তুই পাচ্ছিস।লক্ষ্মীটি এরপর থেকে আর কখনো আমি তোকে একা ছাড়ব না।তোর আশেপাশে সবসময় থাকব।আর তুইও নেগেটিভ টাইপের মানুষদের সাথে থাকতে থাকতে এই ভেবে নিয়েছিস তোর খারাপ অতীতের কথা শুনে আমি তোকে কষ্ট দিব তোকে অপমান করব।আর এই জিনিসটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে।এখনো আমাকে বুঝতে পারলি না।তোকে খুব ভালোবাসি তাই কারণে অকারণে তোর উপর রাগ করা,জোর করা,তোকে শাসন করা, তোর ভালোর জন্য সবকিছু করার অধিকার আমার কাছে।এই অধিকার আমি নিজে তৈরী করে নিয়েছি।আর তুই আমার রাগি ব্যবহার দেখে সবসময় এটাই ভেবে নিয়েছিস তোর অতীত শুনে আমি তোর উপর এবারও রাগ দেখাব,তোকে অনেক বাজেবাজে কথা শুনাব।

তমা আমার কাছে মনের পবিত্রতাটা আসল।আল্লাহ মানুষদের ভালোবাসার জন্য একটা মন দিয়েছেন যেটা বাকি প্রাণীদের দেয় নি।মনের পবিত্রতা থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করে কিছু চাইলে উনি সাথেসাথে তা কবুল করেন।মনের পবিত্রতার এতটাই জোর, এতটাই খাঁটি আল্লাহর কাছে।এতেই বুঝা যায় মনের পবিত্রতার কাছে শরীরের পবিত্রতার কোন মূল্য নেই।আর তোমার মনটাও ঠিক ততটাই পবিত্র।যার কাছে অন্য কোন কিছুরই তুলনা নেই।তাই বাকি পুরুষদের মতন আমি তোমার খারাপ অতীতের কথা শুনে কখনো তোমার শরীরের পবিত্রতা খুঁজব না।এতটুকু ভরসা তোমার হবু স্বামীর উপর রাখতে পার।চোখের কোণা থেকে নেমে আসা পানিগুলো মুছে ফারিদ কথাগুলো মনে মনে বলল।

আর বিয়ের পর তোমাকে মানুষ করব যাতে এই আজেবাজে খেয়ালগুলো আর কখনো তোমার মাথায় না আসে।
.
.

বিয়ে হয় নাই উনি এখনিই আমাকে ব্রিবত অবস্থায় ফেলানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন আর বিয়ে হয়ে গেলে তো….আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।

লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে উনাকে এরপর মেসেজ লিখে পাঠালাম,,২ বছর পর যে আমরা বিয়ে করব সেটা যাতে উনি আমার মামণিকে বলে দেন।

বাছাধন ২ বছর যথেষ্ট সময়।এরমধ্যে কিছু একটা করে বিয়েটা বন্ধ করে দিতে পারব। আর সবচেয়ে বড় কথা কাউকে বিয়ে করার জন্য আমি ডির্জাভ করি না।কারোর দয়া নিয়ে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য কষ্টকর।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৫

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পরেরদিন তমাদের বাসায় গেলাম।আন্টি আগে থেকেই জানত যে তমাকে আমি অনেক আগে থেকে ভালোবাসি।তাই আন্টিকে বিয়ের প্রপোজালটা দিলেই উনি আর অমত করেন নি।

ফারিদের মা – “ভাবী আমরা আজকেই এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছি।যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।”

মেঘ- “না না,, আপত্তি কিসের থাকবে?আমিও চাইছি তমার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে ফেলতে।আমার শরীরটাও বেশি ভালো যাচ্ছে না।আপনাদের মতন ভালো ফ্যামিলির ঘরে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে মরেও শান্তি পাব।”

ফারিদ- “আন্টি এইটা কোন ধরণের কথা হল?আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।”

মেঘ- “মৃত্যুর কথাতো কেউ বলতে পারে না।সত্য কথাতো মেনে নিতেই হবে।তবে মনের মধ্যে একটা খুশি কাজ করছে আমার মেয়েটাকে সুখে রাখার মতন কেউ আছে।একসাথে সে ভালো একটা পরিবার আর ভালো জীবনসঙ্গী পাবে।”

ফারিদ- “আন্টি আমি তমাকে সর্বোচ্চ সুখের রাখার চেষ্টা করব সেটা নিয়ে তুমি নির্ভাবনায় থাকতে পার।কিন্তু প্লিজ মরে যাব মরে যাব এই কথাটা বলবে না।খারাপ লাগে খুব।”

মেঘ- “আচ্ছা বাবা,,আর বলব না।আমি তমার সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে আসছি।”
.
.
মামণির কাছে আমার বিয়ের কথা শুনে মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।বিয়েটাই কি জীবনের সব কিছু নাকি?তাও আবার বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসছে ফারিদ স্যার।এত ভালো মানুষকে আমি ঠকাতে পারব না।বিয়েটা বন্ধ করতে হবে।

তমা- “মামণি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এত উঠেপড়ে লাগলে কেন?আমি আর তুমি মিলে কত্ত হ্যাপী লাইফ কাটাচ্ছি সেটাই তো অনেক।আমাকে বিয়ে দিয়ে কি তুমি তোমার লাইফ থেকে আমাকে সরাতে চাইছ?”

মেঘ- “তমা এটা কেমন কথা হল?”

তমা- “তাহলে এইসব কি করছ?”

মেঘ- “কি করছি তুই কি তা বুঝতে পারছিস না।তোকে আমি সবসময় সুখী দেখতে চাই।তুই একটা পারফেক্ট ফ্যামিলি ,একটা ভালো হাসবেন্ড পা,একটা সুখের লাইফ কাটা আমি সেটা চাই।আর ফারিদের সাথে তোর বিয়ে হলে তুই তার সব পাবি।”

তমা- “তুমিও তো বিয়ে করেছ।কিন্তু কখনো কি সুখী হতে পেরেছ।মামণি বিয়ে করলেই যে মানুষ সুখী হবে তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেনা।আর ফারিদ স্যারকে তোমার এখন ভালো লাগতেও পারে কিন্তু কয়েকদিন পর যদি দেখ তার ভালো মুখোশের আরেকটা খারাপ মুখোশ আছে তখন কি করবে?”

মেঘ- “……..”

তমা- “জানি কিছুই করতে পারবে না তখন।তাই শুধু শুধু আমাকে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নেই।আমরা যেমন আছি তেমন ভাবে লাইফটা কাটিয়ে দিই।”

মেঘ- “এত কথা শুনতে চাই না আমি।যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।ফারিদ বর্তমানে তোমাকে সুখে রাখবে আর ভবিষ্যতেও।এই বিশ্বাসটা আমার ছেলের উপর আছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো।”

এত্ত রাগ উঠছিল বলার মতন না।যে করেই হোক এংগেজমেন্টটা বন্ধ করতেই হবে।উনার সাথে কথা বলতে হবে।

রেডি হয়ে নিচে গেলাম।
স্যার আমার হাতে আন্টি পড়ানোর আগেই উনাকে বললাম,,

“আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“হুম বল।”
“এইখানে!”
“তো কি হয়েছে।এখানে বলতে পার সমস্যা নাই।”
“মাথায় চিট আছে ব্যাটার।(মনে মনে)।এখানে না আমার রুমে আসুন”
“আচ্ছা আসছি।”
.
.
“হুম বল।কি বলার জন্য এইখানে নিয়ে আসছ?”
“আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
“কেন?”
“এত কেন এর উত্তর আমি দেব না।বিয়ে করব না আমি। শুধু এতটুকুই জেনে নিন।”
“কোন কারণ ছাড়াতো আমি শুধু শুধু বিয়ে বন্ধ করব না।যদি বিয়ের ভাঙ্গার কারণ আমার গায়ের রং হয় তাহলে তোমাকে একটা কথা বলে রাখি গায়ের রং দিয়ে আর যাই হোক ভালোবাসা আর সংসারটা হয় না।গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য আজ আছে কাল নেই।তাহলে কাল যদি আমার গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য না থাকে তাহলে তুমি আরেকজনকে ধরবে।এটাই স্বাভাবিক।যেখানে গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেখানে ভালোবাসাটা থাকে না থাকে শুধু লালসা ।”
“দেখুন গায়ের রং আমার কাছে কোন মূল্য রাখে না।আর যাই হোক এই চিপ কারণটা আমি আপনাকে দেখাব না।আপনার আসল সৌন্দর্য গায়ের রঙে না বরং আপনার গুণ,বিবেক,আর বুদ্ধিমত্তায় নিমজ্জিত। অন্য কারণে বিয়েটা ভাঙ্গতে চাচ্ছি।”
“আচ্ছা। কারণটা বল।”
“আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।”

এবার ফারিদ স্যার হো হো হো করে জোরে হেসে উঠল।

“তুমি একটা ছেলেকে ভালোবাস আর এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছ।যে মেয়ে অন্য ছেলের দিকে এমনকি আমার দিকেও ঠিকভাবে তাকায় না সে কিনা অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে।হাসালে বুঝেল বড্ড হাসালে আমাকে।”

“কি আপনার কি মনে হয় আমি আপনারর সাথে মজা করছি?”(রেগে)
“আচ্ছা আচ্ছা সরি সরি।এত রাগ করতে হবে না।যাও কয়েক মিনিটের জন্য আমি মেনেও নিলাম তুমি অন্য কাউকে ভালোবাস।কিন্তু তারপরওও আমি বিয়ে ভাঙ্গব না।”
“কেন?”
“কারণ এরকম একটা বাজে অযুহাতে আমি বিয়ে ভাঙ্গব সেটা তুমি কি করে ভাবলে।আর যদিউ কাউকে তুমি ভালোবাস সেটা হচ্ছে জাস্ট এট্রাকশন।আর অন্য কিছু না।তাছাড়া আমি ভালো করেই জানি তোমার মনে কেউ নেই।আর থাকলেও তাকে নিয়ে ভাবা এখন থেকেই বাদ দিয়ে দাও।কারণ এখন থেকে আমিই তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।”
“………”
“নিচে চল।নাহলে সবাই খারাপ কিছু ভেবে নিবে।”
“…….”

উনাকে কি বলব কিছুই বুঝতে পারলাম না।উনার এমন কথা শুনে কিছু বলার ভাষাও পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত এংগেজমেন্টটা হয়েই গেল।কিছুতেই আমি তা আটকাতে পারলাম না।না এইভাবে হবে না।উনাকে সত্য কথাটা বলেই দিতে হবে।আর উপায় নেই।হয়ত এতে আমার আত্নসম্মানটা চলে যাবে,যাক চলে তাও ভালো। কিন্তু কাউকে আমি ঠকাতে পারব না।
.
.
রাতে,,,
“হ্যালো,,”
“হুম বল।আমাকে মিস করছিলে বুঝি?”
“তেমন কিছু না।আপনার সাথে জরুরি কথা ছিল।”
“হুম বল”
“আপনি জানতে চাইছিলেন না আমি কেন বিয়েটা করতে চাইছি না।কালকে এর উত্তর দিব আমি।দেখা করতে পারবেন আমার সাথে।”
“তমা এবার এই ফাজলামি বন্ধ কর।তুমি কি বিয়ে বন্ধ করার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছ।আর বিয়ে বন্ধের জন্য আমাকে আর মিথ্যা কথা শুনানোর দরকার নেই।”
“মিথ্যা কথা নয়,,আপনাকে আমি সত্য কথা বলব।হয়ত এই সত্য কথা শুনার পর আমাকে বিয়ে করার শখ আপনার চিরতরে মুছে যাবে।”
“তাই নাকি!তাহলে তো শুনতেই হচ্ছে তোমার সেই সত্য কথা যার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করব না।আচ্ছা দেখি তাহলে কালকে কি হয়।আমি রেডি তোমার কথা শুনার জন্য।কোথায় আসতে হবে।”
“নদীর পাড়ে।”
“আচ্ছা।সেখানেই কালকে কথা হবে।ঘুমিয়ে যাও পাখিটা।শুভ রাত্রি বউ।”
“হুম।”

কল কাটার পর,, আরে উনি আমাকে কি বললেন পাখি,বউ…।ধূরর……।
.
.
এরপরের দিন দুইজনে নদীর পাড়ে গেলাম,,
প্রায় ৩০ মিনিট পর,,
“কিছু বল,,”
“…….”
“যার কথা শুনার জন্য এখানে এলাম সেতো কিছুই বলছে না।৩০ মিনিট ধরে এক কথাতেই আটকে আছ যে তুমি কিছু বলতে চাও।আমিও তোমার কথা শুনতে চাই। তাই ভয় না পেয়ে সাহস করে
বলে ফেল।”
“আমার একটা খারাপ অতীত আছে।”
“হুম।তারপর।”
“এই অতীতের কথা শুনার পর আপনার আর আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা হবে না।হয়ত এই কথা শুনার পর আপনার মনে আমার জন্য শুধু ঘৃণা জন্মাবে।”
“তাহলে আর সেই অতীতের কথা আমার শুনার দরকার নেই।”
“আছে।কারণ আমি আপনাকে ঠকাতে পারব না।”
“দেখ তোমার অতীত যেমনি হোক না কেন আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।তোমাকেই আমি বিয়ে করব।”

ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে হেসে,,,”এইরকম কথা প্রায় ছেলেরাই বলে।একজন স্ত্রী সরল মনে যখন তার স্বামীকে তার খারাপ অতীতের কথা বলে তখন কিছু কিছু স্বামী বলে, “তোমার খারাপ অতীতে আমার কিছু যায় না।অতীতের সবকিছু ভুলে চল আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করি “এইরকম সহানুভূতিমূলক কথা বলে তারা একটা মেয়ের মন জয় করে নেয়।হয়ত নিজের লালসাটা মিটানোর জন্য এইরকম উদারমূলক বাণী স্ত্রীকে শোনায়।কিন্তু অনেক মেয়েই হয়ত জানে না একটা ছেলের মুখের কথা,ওর মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।নিজের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর সেই মেয়েটা পুরাতন হয়ে গেলে তাকে আর কোন ছেলেরেই ভালো লাগবে না।হয়ত তখন তার চোখ অন্য কাউকে খুঁজতে পাগল থাকবে।নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য হয়ত পেয়েও যাবে কাউকে।পুরাতন স্ত্রীকে ভালো না লাগার কারণে স্বামী ইচ্ছা করেই ঝগড়া শুরু করবে,,ছোট খাটো ভুলে তার স্ত্রীকে প্রায় খোটা দিবে আর সবশেষে তার স্ত্রীর অতীতটা টেনে তাকে দিনরাত কথা শুনাবে।হয়ত তখন সে ভুলে যায় একদিন সেই তার স্ত্রীর হাত ধরে বলেছিল তার খারাপ অতীত ভুলে যেতে। মেয়েটা তার স্বামীর সাথে নতুনভাবে বাঁচতে চাওয়ার জন্য যখন তার অতীত প্রায় ভুলতে বসল ঠিক তখনি সে তার স্ত্রীকে সেই খারাপ অতীত মনে করিয়ে দিয়ে তার কষ্টটাকে আরো দ্বিগুণ করে দেয়।

তো আপনার কি মনে হয় কোন ছেলেকে বিশ্বাস করে একটা মেয়ে তার খারাপ অতীতের কথা বললে সে তা মেনে নিবে।আর মেনে নিলেও সে যে তা নিয়ে পরবর্তীতে খোটা দিবে না তার কি গ্যারান্টি? আর আমি জেনে শুনে এই ভুল পথে পা ফেলব।কখনো না।কাউকে খারাপ অতীতের কথা জানানোই মানে সেখানে একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া।তাই আমার কথা শুনার পর আমার সাথে আপনার যে ভালো সম্পর্কটা ছিল সেটা আজকের পর থেকে শেষ হয়ে যাবে।আর আমাকে বিয়ে করার শখটাও আপনার পূরণ হয়ে যাবে।”

“পিচ্চি তমা তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে।এখন তার মুখে শুধু বাস্তবতার কথা শুনতে পাচ্ছি।শোন মেয়ে,,,এইটা ঠিক যে একটা খারাপ অতীত একটা ভালো সম্পর্ক নষ্ট করে দিতেই যথেষ্ট।।তাই আমার থেকে তোমার কোন খারাপ অতীতের কথা জানার ইচ্ছে নেই।তাছাড়া বোকা মেয়েরাই অতীত নিয়ে ভাবে, কষ্ট পায় আর বোকা, খারাপ আর বিকৃত মন মানসিকতার পুরুষরাই পারে একটা মেয়ের খারাপ অতীত নিয়ে খোটা দিতে।অতীত নিয়ে ভাবার বা আমার স্ত্রীর অতীতে কি হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই।আমি বর্তমান আর ভবিষ্যতে বিশ্বাসী।

হয়ত তুমি ঠিকি বলছ আমাদের পুরুষ মানুষের মুখের কথা,মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।তাই যদি তোমার মনে হয় কোন ছেলেকে তোমার অতীতের কথা বললেই একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে তখন সেই গোপন কথা কাউকে না জানানোই ভালো। সেটা নিজের কাছে চেপে রাখা উচিত।তবে একটা কথা তমা,, বাকি পুরুষদের কথা আমি জানি না আমি শুধু এটাই জানি তোমার অতীতে যা কিছু হয়েছিল তা আমার জানার দরকার নেই।কেন জানো? কারণ হয়ত তোমার সে অতীতে আমি ছিলাম না।যদি সে অতীতে আমি থাকতাম তাহলে তোমার সাথে আমি কোনদিনও খারাপ কিছু হতে দিতাম না এইটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।কিন্তু যেহেতু এখন থেকে আমি তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যত তাই অতীতের ছায়া তোমার জীবনে আমি আর দ্বিতীয়বার মাড়াতেও দিব না।কারণ আমি সবসময়ের জন্য এখন তোমার কাছে আছি।আর ভবিষ্যতেও থাকব।ফারিদের বুকের বাম পাশে তমার হাতটা রেখে সে বলতে লাগল,,,আর এই কথাগুলো আমি এইখান থেকে আমার মন থেকে বলছি।

আর আরেকটা কথা সবার জীবনেই ভুল হয় ভুল আছে।আমাদের দ্বারা অনেক ভুলই হয় সেটা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে।লাইফে কেউ পারফেক্ট না।আর এইটা আমি ভালোভাবে জানি আমার তিলোত্তমা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ভুল করতে পারে না।ভুল তোমার সাথে হয়েছ।ঠকেছ তুমি তাহলে তুমি আমাকে ঠকালে কি করে। আর তোমার শাস্তি পাওয়ার কোন প্রশ্নইই উঠে না।একটা সুন্দর জীবন,সংসার করার অধিকার তোমারও আছে।আর আমি তোমাকে সে সুন্দর জীবনটা দিতে চাই।সে অধিকারটা দিতে চাই।

সবশেষে একটা কথা বলব আমি এত সুন্দরও না যে মেয়েরা আমার পিছনে ঘুরবে।এইটা নিয়ে তুমি নিশ্চিত থাকতে পার।কালো ছেলে বিয়ে করার এইটাই ফ্যাসালিটি।কেউ তোমার স্বামীর দিকে বাজে চোখ দিবে না।আর মন যেহেতু একটাই তাহলে ভালোবাসার মানুষতো একজনি হবে।আর তাকে আমি পেয়ে গেছি।সে হচ্ছে তুমি।তুমি থাকতে অন্য কারোর দিকে চোখ দেওয়ারও আমার কোন ইচ্ছা নেই।সুতরাং ম্যাডাম, বিয়ে বন্ধ করার কোন প্রশ্নি উঠছে না।বিয়েটা হচ্ছে আর আলবৎ হবে।আর যদি আমি শুনেছি না তুমি বিয়ে বন্ধ করার কোন ফন্দি আটছ তাহলে জানোই তো আমি তোমার কি হাল করব।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৪

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ভেবে পাচ্ছিলাম না ওই মূহুর্তে করা উচিত।

তিথি- “তমা এখন কি করব?”

তমা- “বাচ্চাটাকে জন্ম দিব।”

তিথি- “তমা কি বলছিস তুই? কার না কার বাচ্চা তোর পেটে।এই বাচ্চা দুনিয়ায় আনলে তোর উপরে কি ঝড় আসবে বুঝতে পারছিস।”

তমা- “তিথি আমি কিছু জানি না।শুধু এতটুকুই জানি এই নিষ্পাপ বাচ্চা যে কোন পাপ করে নি তাকে মেরে আমি কিভাবে পাপ কাজটা করব?একটা নিষ্পাপ প্রাণকে আমি কিভাবে মারব?এই পাপ আমি করতে পারব না।”

তিথি- “আমি জানি তমা।বিয়ে ছাড়ায় একটা মেয়ের পেটে বাচ্চা আসার পরিণাম খুব ভয়াবহ। তোর মামণি এমনিতে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এই খবর শুনলে হয়ত সে মরে…..”

তমা- “তিথি চুপ কর।কি বলছিস তুই।আমি আমার মামণির সাথে এইরকম কিছু হতে দিব না।”

তিথি- “তাহলে এবরশনটা করে ফেল।”

তিথির হাত ধরে সেদিন বুকফাটা আর্তনাদভাবে কেঁদেছিলাম।যা কিছুই হোক বাচ্চাটাতো আমারি।সে আমার গর্ভের সন্তান।চাইলেও তো এই সত্যটাকে আমি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব না। কিন্তু এমনিভাবে বাচ্চাটা আমার পেটে আসল যে কেউ ওকে মেনে নিবে না,,ও সহ আমিও অনেক ধিক্কার পাব এই সমাজ থেকে যদিও আমাদের দুইজনের কারোরই কোন অপরাধ ছিল না। ওকে বাঁচানোর মতন কোন পথই পেলাম না।মা হওয়ার সাধটা সাথেসাথে মাটিতে চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে হল।লাইফে কি করতে চাইলাম আর কি হয়ে গেল।কোনকিছুরই হিসাব মিলাতে পারছি না।সেদিন পেটের বাচ্চাটাকে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেছিলাম,,”তোর মাকে মাফ করে মা।তোকে আমি বাঁচাতে পারলাম না।”

তখন বারবার একটা কথায় মনে হচ্ছিল মার থেকে সন্তান দূরে গেলে মার কতটা কষ্ট লাগে।যেমন কষ্টটা আমি আমার মামণিকে দিয়েছি। মামণি অনেকবার বলেছিল তাকে ফেলে রাজশাহী যাতে না যায়।কিন্তু আমি মামণির কান্নায় সেদিন গলেনি।মামণিকে ফেলে এখানে চলে আসছি।আর আজকে আমার বাচ্চাটা পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই বিদায় নিবে।আমার থেকে দূরে চলে যাবে।
.
.
তমা- “তিথি এবরশনের জন্যতো টাকা লাগবে।এত টাকা আমি পাব কোথায়?বাসার কারোর কাছেও আমি এখন টাকা চাইতে পারব না।এক্সট্রা টাকা চাইতে গেলে মামণি অনেক প্রশ্ন করব।মামণিকে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারব না।”

তিথি- “চিন্তা করিস না।আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করছি।একটা না একটা উপায় পেয়ে যাব। আমি থাকতে তোর টেনশন নিতে হবে না দোস্ত।”

ওর হাত দুটো ধরে কেঁদে দিলাম।কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে সেদিন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারলাম না।

এরপর এবরশনটা করেই ফেললাম।মেরে ফেললাম আমার বাচ্চাটাকে।একটা পবিত্র, নিষ্পাপ বাচ্চাকে মেরে ফেলার অপরাধবোধটা আমাকে দিনদিন কুঁড়ে খাচ্ছিল।এই বয়সে এসে এক সাথে দুইটা শোকের ধাক্কা সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।তারপরও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি।এই দুই মাসে তানভীর আমার সাথে একবারো যোগাযোগ করেনি।কি অবস্থায় ছিলাম,, বেঁচে আছি না মরে গেছি সেই খবরও রাখেনি।অবশ্য রাখবে কি করে ওতো একটা স্বার্থপর, পাষন্ড!

সেদিন যদি একটু সাহস করে তানভীর বিপদের সাথে মোকাবেলা করত তাহলে আমার এতবড় ক্ষতি হত না এই বিশ্বাসটা আমি তখনো মনে করতাম আর এখনো করি।কোনদিনও তোমাকে ক্ষমা করবো না,,কোনদিনও না।
.
.
অতীত থেকে যখন কল্পনায় আসলাম তখন আর থাকতে পারছিলাম না।বুকের ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছিল।কি করব না করব দিকদিশা পাচ্ছিলাম না।বিয়ে বাড়ির সবাই বাইরে আনন্দ করছে আর আমি ভিতরে ভিতের কষ্ট পাচ্ছি যেটা সহ্য করার মতন না।ভিতরের জ্বালাটা কমাতে হবে।নিজেকে কষ্ট দিতে হবে।কি করব,, কি করব?সামনেই ব্লেট একটা দেখলাম।ব্লেড দিয়ে হাতের রগটা কেটে দিলেই হয়ত আমার কষ্টের জ্বালাটা কমে যাবে। অনেকক্ষণ ধরে হাতে ব্লেট নিয়ে বসে আছি।কারণ তখন নিজের ভিতরের জ্বালা কমাতে চাইলেও মনের দিক থেকে নিজের ক্ষতি করার সাহসটুকুও আসছিল না।
.
.
অনেকক্ষণ ধরে বাইরে তমার জন্য অপেক্ষা করছিল ফারিদ।শেষে ওর মাথাটায় খারাপ হয়ে গেল।

ফারিদ- “আমাকে টেনশনে রাখতে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না তমা?আজকে তুমি শেষ।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা অনেক নিয়ে ফেলছ তুমি।এই আসব বলে আর আসলে না। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

সব জায়গা খুঁজেও যখন ফারিদ তমাকে পেল না তখন ওর বুকের ভিতরটা অজানা কারণে মোচড় দিয়ে উঠল। মনে মনে তখন একটা কথায় বারবার ওর মনে হচ্ছিল,, “আমার তিলোত্তমা ঠিক আছে তো।ওর কোন বিপদ হয় নিতো?”
.
.
ফারিদ তাড়াতাড়ি তমার রুমে চলে গেল।জানালা দিয়েই দেখতে পেল তমার হাতে ব্লেড।ব্লেডটার দিকে ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

যে বিপদের আশঙ্কা ও করেছিল তাই হচ্ছে।মেয়েটা কি করতে যাচ্ছে।মেয়েটাতো ওকে মেরেই তারপর দম নিবে।কিচ্ছু ভাবতে পারছিল না ফারিদ সে সময়।এখন কাউকে ডেকে ও বিপদ বাড়াতে চায় না। একনাগাড়ে দরজা ধাক্কাতে লাগল আর তমাকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগল।

ফারিদ- “তমা কি করছ তুমি?হাত থেকে ব্লেডটা ফেল?”

কিন্তু তমার কোন হুশই ছিল না।ফারিদের কথার আওয়াজ ওর কানে গেল না।

ফারিদ- “দেখ তমা ব্লেড ফেলতে বলছি।ব্লেডটা হাত থেকে ফেলে দাও।আমি যদি এখন ভিতরে ঢুকে যায় না তাহলে তোমাকে আমি মেরেই ফেলব।”
.
.
দরজা ধাক্কার কিছুক্ষণ পর,,

তমার দু কাধ ঝাকিয়ে,,,

ফারিদ- “এই মেয়ে কি করছিলে তুমি?”

ফারিদের তাকিয়ে ভাবলেশহীনভাবে তমা তাকিয়ে রইল।

ফারিদ- “আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন?কেন এইরকম করতে চাইলে?মরার খুব শখ না তোমার!তুমি জানো না তোমার কিছু একটা হয়ে গেল তোমার মামণির কি হত?আমার কি হত?”

ফারিদ খেয়াল করল তমার চোখ থেকে পানি পড়ছে।কতটা শান্ত হয়ে গেছে ও।চোখ মুখ পুরো ফুলে গেছে।চুলের অবস্থা এলোমেলো।আর গলার লুকানো আচড়টা দেখা যাচ্ছে।

তমার এই অবস্থা দেখে ও আর কিছু বলতে পারল না।সাথে সাথে ওকে জড়িয়ে ধরল।

ফারিদ- “লক্ষ্মীটা কি হয়েছে তোমার?কেউ কিছু বলছে?কি জন্য এই বাজে কাজটা করতে যাচ্ছ।প্লিজ বল আমাকে?আমাকে কিছু না বললে আমি বুঝব কি করে?”

ফারিদের কোন কথাই ওর কানে যাচ্ছে না।এতক্ষণ পর ফারিদের বুকে আশ্রয় পেয়ে ওর মনের জ্বালাটা কমে আসছে।কিন্তু খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছ ওর।তাই ফারিদের পাঞ্জাবী পড়া পিঠে ও হাত দিয়ে অনেক শক্ত করে ধরে ওর পিঠে জোরে জোরে খামছি কাটছে।

এত জোরে খামচি কাটার কারণে ফারিদের পিঠে ছিলে যে জ্বালা করছে তাতে সে বুঝতে পারল এর থেকেও বেশি কষ্টের জ্বালা তমা পাচ্ছে।তাই ফারিদ তমার চুলে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

পুরোটা রাত ওর পাশেই ছিল ফারিদ।বারবার শুধু ভাবতে লাগল এইটুকু মেয়ে কি জন্য এইরকম কাজ করতে গেল?তমার সাথে এই কয়েকদিন মিশে ও অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছিল তমার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে?ওর খারাপ অতীতটা জানলে হয়ত ওকে এই কষ্ট থেকে সে মুক্তি দিতে পারত?কিন্তু তমার অতীতের স্মৃতি
জানতে চেয়ে সে ওকে অতীতের ভাবনায় ডুবিয়ে রাখতে চায় না।তাই সব বুঝতে পেরেও ফারিদ তমাকে দিয়ে ওর অতীত ঘাটাতে চাই না।বরং সে চায় তমা অতীতের খারাপ স্মৃতি ভুলে গিয়ে সবকিছু নতুনভাবে শুরু করুক, ফারিদকে ভালোবাসোক।

আজকে যা হল এরপর থেকে তমাকে চোখের আড়ালে রাখা যাবে না।নাহলে এর থেকেও বড় অঘটন ওর আড়ালে হয়ে যেতে পারে।তাই ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে।একবার ভার্সিটিতে তমা ভর্তি হয়ে গেলে হয়।এরপরের ব্যবস্থা সে নিজে নিবে।যাতে আর তমাকে নিয়ে ভয়ে না থাকতে হয়।
.
.
দিপার বিয়ে হয়ে গেলেই ওরা সবাই আবার চট্টগ্রামে রওনা দেয়। চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফারিদের কাছে তমা কয়েকমাস পড়ে।আর ফারিদ ও তমাকে সবসময় চোখে চোখে রাখে।

অবশেষে ফারিদের ভার্সিটিতেই তমা টিকে যায়।ফারিদ যা চেয়েছিল ঠিক তাই হল।এখন আর তমাকে আপন করে পেতে ওর আর বাধা রইল না।কয়েকদিন পর ফারিদসহ ওর পরিবার তমার মামণির কাছে বিয়ের কথা বলতে যাবে।এরপর দেখবে সে,, কিভাবে তমা ওকে ইগনোর করে।ও যে তমাকে এত ভালোবাসে তা কেন জানি ও বুঝতে চাই না।নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে।
.
.
অনেক হয়েছে আমার লুকোচুরি ভালোবাসা।আর নয়।এবার আমার ভালোবাসার প্রকাশ করব।তবে সেটা বিয়ের পর।বিয়ের পর ওর সাথে জমিয়ে প্রেম করব।যাকে বলে বৈধতার প্রেম।বিয়ের পর প্রেম করলে সে প্রেমটা হয় খাঁটি আর কাউকে ধোকা দেওয়ারও সুযোগ থাকে না।তমাকে সেই কবে থেকে ভালোবাসি।ওকে ধোকা বা ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তাই বিয়ের আগে ওকে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারিনি।কিন্তু একটাবার বিয়েটা হয়ে গেলেই ওকে আমার ভালোবাসার কথা জানাব।উহুম মুখে ভালোবাসি কথাটা বলব না।ওকে অনুভব করাব।ভালোবাসাটাতো অনুভব করার জিনিস।তাই ভালোবাসি কথাটা মুখে বলে আমি আমার ভালোবাসাকে সস্তা করব না।আমার প্রতিটি কাজে,আবেগ আর যত্ন দিয়ে তমা তোমাকে বুঝাব আমি কতটা তোমাকে ভালোবাসি।আমার ভালোবাসার ডাকে তো তোমাকে সাড়া দিতে হবেই পাখিটা।এত এত ভালোবাসব যে আমার ভালোবাসার ডাকে তুমি সাড়া না দিয়ে পাড় পাবে না।মুচকি হেসে ফারিদ মনে মনে কথাটা বলল।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৩

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ও আল্লাহ! ভাবলাম একে অপমান করে আমি প্রতিশোধ নিব কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিপদ আমার ঘাড়ে এসে চেপে বসবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।

ওর সাথে বাইকে করে মার্কেটে আসলাম।

“তমা এবার তুমি পছন্দ করে আমার কাপড় কিনে দাও।আর হ্যা,, আমারো পছন্দ হওয়া চাই কাপড়গুলো।নাহলে…..কিন্ত,,”
“নাহলে কি!!”
“ভার্সিটির সবার সামনে তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকব।তাও পাক্কা ১ ঘন্টা।তুমি যদি তা চাও তাহলে আমি তা করতে পারি।আমি কিছু মনে করব না।”
“এই না না।আমি ভালো কাপড়ই আপনার জন্য পছন্দ করব। আশা করি আপনার পছন্দ হবে।”
“হুম।তুমি এইদিকটায় শপিং কর আমি ওইদিকটায় যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
.
.
কিছুক্ষণ পর,,,

“কি হল?”
“হ্যা হয়েছে।এই নিন”
“হুম গুড।আর এই নাও এই পেকেটগুলোতে তোমার কাপড় আছে।আর এই পেকেট টাতে একটা লেহেঙ্গা আছে।শুধু তোমার জন্য।”
“আচ্ছা তাহলেতো দেখতেই হয়।”
“এই এখন না।বাসায় গিয়ে পেকেটটা খুলবে।আর আজ থেকে এই পেকেটে রাখা কাপড়গুলো পড়েই ভার্সিটি আসবে।আর তোমার টপ জিন্স যেগুলো পড় সব কয়টা কাপড় এই কাচি দিয়ে কাটবে।নাও কাচিটা ধর।”
“কিহ!”
“জ্বী….। আর ম্যাডাম কাপড়গুলো কেটে তা আমার জন্য নিয়ে আসবেন।সেগুলো ঘর মুছার কাজে আমি লাগাব।আমার বাসায় ঘর মুছার কাপড়ের অভাব।তোমার টপ জিন্সগুলো ঘর মুছার কাজে লাগাব।”

রাগে ইচ্ছা করছে এর মুখে টেপ মেরে দেই।শালা আমার কাপড়গুলো দিয়ে এ ঘর মুছার কাজে লাগাবে।(মনে মনে)

“তা যে কথা রইল সেটা করে ফেলবেন কেমন।নাহলে তো জানেনই।”
“আচ্ছা আচ্ছা….আর ভয় দেখাতে হবে না।যা বলছেন তাই করব।”
“হুম গুড গার্ল। ”
.
.
এরপরে আর কি তানভীরের কথামত সেদিন সব কাজ করলাম।এরপর থেকেই ওর জন্যই সালোয়ার কামিজ পড়া শুরু করলাম।আসতে যেতে জোকের মতন সবসময় আমার পিছু লেগে থাকে।এইভাবে কোন মেয়ের পিছনে ঘুরলে তার টেককেয়ার করলে যেকোন মেয়েই ছেলেটার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।আমিও শেষ পর্যন্ত তানভীরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে বাধ্য হলাম।এর কয়েকদিন পর ও আমাকে প্রপোজ করে আর আমিও হ্যা বলে দেই।
ভালোইই যাচ্ছিল সবকিছু।

ওর প্রেমে পড়ে তখন মনে হত সব পুরুষ এক না।এখনো কিছু কিছু পুরুষ ভালো আছে।মামণি সবসময় আমার সামনে বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার মনে যাতে বাবার বিষয় নিয়ে খারাপ কোন প্রভাব কাজ না করে তাই মামণি বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু মামণি হয়ত জানে না আমি সব বুঝতে পারি।বাবা কেন আমাদের সাথে থাকে না তাও বুঝতে পারি।বাবা যে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত আর তাকেই বিয়ে করে সংসার করছে তা জানতাম।আমার চারপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে আমি তা বুঝতে পেরেছি। তা নাহলে আমাদের সাথে বাবার না থাকার কোন প্রশ্নি উঠে না।এরপর থেকে পুরুষদের প্রতি একটা ঘৃণা জন্মাত।নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভেবে কখন দুর্বল করতে চাইনি।তাই ছেলেদের মতন চলাফেরা করতাম।কিন্তু তানভীর আমার জীবনে আসার পর আমাকে পুরো চেঞ্জ করে দিয়েছে।আমি যে একটা মেয়ে,,আমারো যে একটা কোমল হৃদয় আছে, কোন পুরুষকে ভালোবাসার জন্য আমারো যে মন আছে তা তানভীরের সাথে থেকে বুঝেছি।ওর কাছেই ভালোবাসার মানে শিখেছি তাই ওর প্রেমে ডাক না দিয়ে পারিনি।
.
.
এরকিছুদিন পর,,ও আমাকে জানালো যে আর কয়েকদিন পরি ওর ফাইনাল পরিক্ষা।এরপরে ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে।তাই এখান থেকে যাওয়ার আগে ওরা কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসতে চাই।ওর সব ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছে যে ওরা সবাই মিলে কক্সবাজার যাবে। আমাকেও ও ওর সাথে সেখানে নিয়ে যেতে চায়।একা যাওয়াতো আমার পক্ষে সম্ভব না তাই তিথিকে সাথে করে নিয়ে গেলাম।তিথির বাবা মাকে বলে আসলাম পিকনিকে যাচ্ছি।

এরপরের দিন তানভীরের সাথে আমরা কক্সবাজারে রওনা দিলাম।

রাতে,,,

“তমা একটু বাইরে আস।”
“কেন?”
“প্লিজ একটু আস।কাজ আছে।”
“আচ্ছা।”
.
.
“হুম বল,,এত রাতে কেন আসতে বললে?”
“চল বীচ থেকে ঘুরে আসি।”
“কিহ! তানভীর তোমার মাথা খারাপ।এত রাতে বীচে যাব। এখন কোন কাক পক্ষীও পাবে না বীচে।আর তুমি আমাকে নিয়ে বীচ থেকে ঘুরে আসতে চাইছ।আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।”
“এই তিলোত্তমা,,এই সময়টাই বীচে ঘুরতে অনেক মজা।অনেক নিরিবিলি জায়গা।আর তোমার সাথে আমি ভালো করে রোমান্সও করতে পারি না।এই সুযোগটাকে আমি কাজে লাগাতে চাইছি।প্লিজ চল না।”
“না,,আমি পারব না।”
“এই তুমি কি আমার উপর ভরসা করতে পারছ না।দেখ আমরা জাস্ট বীচে হাঁটব, গল্প করব।প্লিজ ট্রাস্ট মি আমি আমার সীমা অতিক্রম করব না।”
“দেখো,,তানভীর আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি।কিন্তু এত রাতে এই সময়ে বাইরে যাওয়াটা আমি ঠিক মনে করছি না।বিপদের তো আর কোন হাত পা নেই।যে কোন সময় যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে।আমি শুধু শুধু স্বেচ্ছায় বিপদে পড়তে চাই না।”
“এই তুমি আমাকে একবার ট্রাস্ট কর।কোন বিপদ হবে না।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।সব বিপদ থেকে তোমাকে রক্ষা করব।তোমার শরীরে বিপদের আচও লাগতে দিব না।”

ওর এই কথায় মনে একধরণের আত্নবিশ্বাস খুঁজে পেলাম।তাই ওর কথা মেনে নিয়েই এত রাতে ওর সাথে বীচে হাঁটতে বের হলাম।
.
.
এই নিরিবিলি পরিবেশে ওর সাথে হেঁটে গল্প করতে বেশ লাগছে।দুইজন দুইজনার হাত ধরে আমাদের বিয়ের গল্প,ভবিষ্যতের গল্প,, একটা সুন্দর সংসারের গল্প একমনে করেই যাচ্ছিলাম আমরা।

হঠাৎ,,,,
কিছু বখাটে ছেলের খবলে পড়লাম।ওরা একজায়গায় বসে মদ, গাজা খাচ্ছে।আমরা ওদের সামনে পড়তেই ওরা যেন খুব খুশি হল।ওদের পৈশাচিক হাসি দেখেই ভয়ে আমার আত্নাটা কেঁপে উঠল। তানভীরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।বিশ্বাস ছিল ও থাকতে আমার কোন ক্ষতি হবে না।

কিন্তু বখাটেদের কাছ থেকে সেদিন অনেক হুমকি শুনে আর ওদের কাছে ধারালো জিনিস দেখে তানভীর অনেকটা ভয় পেয়ে গেল।শেষে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,,

“আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান।আমি মরে গেলে ওরা আর বাঁচবে না।তাই জেনেশুনে আমি নিজের ঘাড়ে নিশ্চিত মৃত্যু নিতে পারবো না।তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা কর।”

এই কথা বলে সে আমাকে বখাটে ছেলেগুলোর কাছে ফেলে চলে গেল।প্রথম প্রথম আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও যখন ও বুঝতে পারল এতজনের সাথে ও একলা পারবে না ওর বাঁচার সম্ভবনা খুবি কম তখনি আমার হাতটা ছেড়ে চলে গেল।ওকে বেশি বিশ্বাস করার মূল্য সেদিন পেলাম।

সেদিন সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার শরীরের উপর অনেক টর্চার চলল।পুরো শরীর কেটে রক্ত বের হচ্ছিল। হিংস্র হয়ে ওরা সেদিন আমার শরীরটা ক্ষত-বিক্ষত করল।আর সেইসাথে তানভীরো আমার মনটা ক্ষত-বিক্ষত করল।
.
.
সকালে আমাকে না পেয়ে তিথি তাড়াতাড়ি বীচে বের হয়ে গেল।অনেক খুঁজার পর ও আমাকে একটা ঝোপের জায়গা থেকে উদ্ধার করল।ওর কান্না সেদিন কান দিয়ে শুনেছিলাম কিন্তু ওর কান্নায় রেসপন্স করার বা উঠার মতন শক্তি শরীরে ছিল না। তারপরো অনেক কষ্টে আমাকে নিয়ে সে রুমে এল।এই অবস্থায় ও কি করবে তা বুঝতে পারছিল না।কাউকে ডেকে যে হেল্প চাইবে সে সাহসটুকুও ওর ছিল না।হঠাৎ করে সে ওর ফুফিকে কল দিল। উনি পেশায় ডাক্তার।উনিও কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন।কালকে উনার সাথে বীচে দেখা হয়েছিল।তাই তিথি কালবিলম্ব না করে ওর ফুপিকে কল দিয়ে আমাদের হোটেলে আসতে বলল।

এরপর কয়েকঘন্টার চিকিৎসার পর আমার হুশ এল।সেদিন তিথির হাত দুটো ধরে অনেক কান্না করেছিলাম।অনেক কষ্টে ওকে বলেছিলাম,, এইখানে থেকে আমাকে নিয়ে যেতে।কেউ যাতে কিছু জানতে না পারে এমনভাবে লুকিয়ে নিয়ে যেতে।

ওর ফুপির বাসায় চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলাম কয়েকদিন।ইচ্ছে করছিল নিজেকে নিজে শেষ করে দিই।কিন্তু তা পারেনি।যেদিন রেপ হয়েছিলাম সেদিন মামণি আর ফারিদ স্যারের অনবরত কল মোবাইলে আসতে লাগল।আর মামণির সে কি কান্না। আমাকে নিয়ে নাকি বাজে স্বপ্ন দেখেছে।তাই আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।আর ফারিদ স্যার বারবার বলছিল,,তিলোত্তমা তুমি ঠিক আছতো?অনেক কষ্টে সেদিন তাদের কথার জবাবে শুধু হ্যা না এই উত্তর দিয়ে ওদের সাথে কথা বলেছিলাম।

আমাকে যারা ভালোবাসে তাদের টানে আত্মহত্যার ডিসিশনটা পরে দিয়ে আর নিলাম না।কিন্তু মনের দিক দিয়ে পুরোই ভেঙ্গে পড়েছিলাম।আমার লাইফটা পুরো শেষ হয়ে গেল এই কথাটা ভাবে দিন দিন আমার শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছিল।
.
.
এর দুইমাস পর,,,শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে গেল।কিছু মুখে দিতে পারতাম না।খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তখন।পরে তিথির জোরাজোরিতে হাসপাতালে গেলাম।গিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে মনে হচ্ছিল আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে।আমি ২ মাসের প্রেগন্যান্ট। আমি নিজেই এখনো ঠিকভাবে নিজেকে সামলাতে পারি না সেখানে আরেকটা বাচ্চা কিভাবে সামলাবো!এই সমাজে বাচ্চাটাকে নিয়ে কিভাবে বাঁচব।বিয়ে ছাড়াই যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট সে মেয়েকে এই সমাজ যে কত ধিক্কার দেয় কত কথা শুনায় তা কিভাবে আমি হজম করব।তার থেকেও বড় কথা মামণির সামনে কিভাবে মুখ দেখাব!

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১২

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে আমার হাতটা ধরে টান দিল।

“কে…কে?”
“আমি,,”
“আরে আপনি!এইখানে কি করেন?”
“এইখানে একা একা দাঁড়িয়ে তুমি কি করছ ?আর বারবার ওইদিকে ফিরে কাকে দেখছ?”
“কিচ্ছু না।কাউকে দেখছি না।”
“ও আচ্ছা। এই খেয়েছ কিছু।”
“হুম”
“মিথ্যা বলিও না।বস এইখানে।”
“কেন?”
“উফ এত কেন কেন করবে না।বসতে বলছি বস।”
“হুম”
“নাও এই প্লেট থেকে এইবার খাইয়ে দাও আমাকে।”
“কিহ!”
“এত অবাক হওয়ার কি আছে।দেখতেই তো পাচ্ছ। আমার হাতে বেন্ডিজ। নিজ হাতে খেতে পারব না।তাই আমাকে খাইয়ে দাও আর নিজেও খাও।”

উফ কি মুসিবতে পরলাম। (মনে মনে)

“কি ব্যাপার!তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।খুব ক্ষিদা লেগেছে।”
“দিচ্ছি।”
মুচকি হেসে,,”হুম”
.
.
খাওয়া তো শেষ হল এরপরও কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আল্লাহই জানে।

“কিছু বলবেন!”
“হুম।”

আমার হাত দুটো আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়ে উনি বললেন,,”তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।তোমার শ্যামলা চেহেরায় সাদা রংটা স্নিগ্ধ লাগছে।”

এরপর কথা ঘুরিয়ে বললেন,,,”আচ্ছা এখানে একা একা থেক না।আমার সাথে থাকবে। চল আমার সাথে।”

“আ…..আপনি যান আমি আসছি।”
“ঠিক তো।”
“হুম যান। আসছি।”
“ওকে।”(মুচকি হেসে)

একটু পর আবার আমার কাছে ফেরত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“তিলোত্তমা,তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আমার চোখের সামনে তুমি না থাকলে খুব ভয় করে।এতটা ভয় নিয়ে থাকা আমার জন্য খুব কষ্টের।তোমাকে কখনো আমি আমার চোখের আড়াল করতে চাই না।”

অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনাকে বুঝতে খুব কষ্ট হয়।কি বলেন না বলেন কিছুই আমার মাথার মধ্যে ঢুকতে চায় না।

কপালে চুমো দিয়ে বললেন,,
“অপেক্ষায় থাকলাম।”
“………”

উনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তানভীর আমার সামনে এল।তানভীরকে দেখেই আমি উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

তানভীর আমার হাত ধরে বলল,,

“তমা,,আমাকে কি মাফ করা যায় না।”
“হাত ছাড়ুন।”
“না, ছাড়ব না।আগে বল আমাকে মাফ করেছ।জানো,, আমার এই অপরাধটা আমাকে আজ কয়েকটা মাস ধরে খুব কষ্ট দিচ্ছে।রাতে এখন ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারি না।বুকের ভিতরটায় খুব যন্ত্রণা হয়।আমি আর এই কষ্টের বোঝা বেয়ে চলতে পারছি না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।নাহলে আমি মরেই যাব।”

এবার আমার সহ্যশক্তি পার হয়ে গেল।জোর করে হাতটা ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।এরপর অনেকটা শান্ত কণ্ঠে ওকে বললাম,,
“ঠিক আছে মাফ করে দিতে পারি,, তবে একটা শর্ত আছে।”
“কি শর্ত!”
“আপনার ভুলের কারণে আমি আমার মূল্যবান যা কিছু হারিয়েছি তা ফেরত দিন।”
“এইসব কি বলছ?তা কিভাবে সম্ভব!”
“আপনার বেলায় যদি সম্ভব না হয় তাহলে আমার বেলায় কিভাবে সম্ভব বলেন।”(জোরে চিল্লিয়ে)
“………..”
“আপনি একটা কাপুরুষ। এই কাপুরুষতা নিয়ে আপনি রাজশাহী থেকে এতদূর আসছেন বিয়ে খেতে। তাও আবার আপনার স্ত্রীকে নিয়ে।যদি রাতের বেলায় কোন পুরুষ আপনার স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি করে,আপনার সামনেই আপনার স্ত্রীর গায়ে অন্য কোন পুরুষ হাত দেয়,তাকে একটা রাতের জন্য কাছে পাওয়ার জন্য হিংস্র হয়ে উঠে তাহলে আপনি শুধু চেয়েই থাকবেন কিছু বলবেন না।আর যদিউবা বিড়ালের বা**র মতন কিছু বলে আপনার স্ত্রীকে রক্ষা করতে চান তাহলে ওরা যদি আপনাকে মেরে ফেলার ভয় দেখায় তাহলে নিজেকে বাঁচাতে আপনি আপনার স্ত্রীকে ওদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসবেন!”
“তমা প্লিজ চুপ কর।”
“কেন চুপ করব। গায়ে লাগছে কথাগুলো।ব্যথা পাচ্ছেন আমার কথায়।আমারো সেদিন লেগেছিল এই যে এই মনটায়।আপনার সেইদিনের সেই কথা আর কাজে আমার মনটায় অনেক ব্যথা করেছিল ইভেন এখনো করছে।আপনার মতন একটা কাপুরুষকে ভালোবেসে আমাকে যে এত খেসারত দিতে হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।আমার সাথে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এখন আপনার স্ত্রীকেও যদি আপনার এই ভুলের জন্য মূল্য দেওয়া লাগে তাহলে ওর সামনে এই মুখ দেখাতে পারবেন তো!মরেই যাওয়া উচিত আপনার।আপনার মতন কাপুরুষদের বাঁচার কোন অধিকার নেই। আপনার মতন কাপুরুষকে আমি জীবনেও মাফ করতে পারব না।”
.
.
তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলাম।নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেলাম।গলার দিকের ওড়নাটা খানিকটা সরিয়ে দিয়ে গলার দিকের আচড়গুলো দেখতে লাগলাম।কি ভয়ানক সেই আচড়গুলো!এই আচড়গুলোর দিকে যতবারই চোখ যায় ততবারি ভয়ে কেঁপে উঠি। অতীতের স্মৃতিগুলো তাজা করতে এই আচড়গুলোই যথেষ্ট।

তানভীরের বাসা থেকে সেদিন আসার পর মনের ভিতরে বারবার সেই খারাপ স্মৃতিগুলো ভাসছিল।বখাটে ছেলেগুলোর হাত থেকে হয়ত সেদিন ওই ২ টা মেয়ে বাঁচতে পারে নি।ভাবতেই কান্না চলে আসল।অনেক কষ্টে এই স্মৃতিটা ভুলে সেদিন ঘুমিয়ে গেলাম।

এরপরের দিন সকালে নিজেকে ভালো করে প্রিপেয়ার করে ভার্সিটি গেলাম।আর তখনি আমার হাতটাই কেউ শক্ত করে ধরল।

“এই কে রে?”
“আমি তানভীর।”

ওকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।ও চোখ দুইটা বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এইভাবে আমার হাত ধরলেন কেন?”
“বেশ করেছি।তুমি কি মনে করেছ তুমি তলে তলে এত কিছু করবে আর আমি টের পাবো না।আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সব কাপড় ইঁদুর কেটে রেখেছে।আমার রুমের একটা কাপড়ো ইঁদুরগুলো আস্ত রাখে নি।সব কাপড় ইঁদুর কুটিকুটি করে খেয়ে নিয়েছে।ভার্সিটিতে কাপড় ছাড়া কিভাবে আসব মাথায় আসছিল না।পরে বন্ধুর কাছ থেকে ১ দিনের জন্য কাপড় ধার নিয়ে ভার্সিটি আসলাম।সময়মত ভার্সিটির অনুষ্ঠানে আসতে না পারায়, আমি গানে পারফরমেন্স না করায় স্যার ম্যাডাম,বন্ধু বান্ধব ইচ্ছামত কথা শুনিয়েছে।আর এইসব কিছু তোমার জন্য হয়েছে।আর আজকে এই কি কাপড় পড়ে আসছ হ্যা।সালোয়ার কামিজ নাই বাসায়।আজকে তোমাকে ইচ্ছামতো টাইট দিব।এত কিছু করে ফেলবে আর আমি কিছু বুঝতে পারব না তা কিভাবে ভাবলে?বাইকে উঠ।কয়েকদিনের মধ্যে তোমাকে ঠিক করে ফেলব।কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছ তা আজ থেকেই বুঝতে পারবে।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১১

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

(দুঃখিত গল্পের নায়কের নামটা চেঞ্জ করে নায়কের নামটা ফারিদ রাখছি।)

রাতের বেলায় উনাদের বাড়িতে আসলাম।উনাদের বাড়ির আসার পর দেখি বাড়িতে ইতিমধ্যে মেহমানদের আনাগোনা পড়ে গেছে।উনাদের বাড়ির আশেপাশে উনার চাচাদের বাড়ি থাকায় তাদের পরিবারের সবাই এসে বাড়িটাকে বেশ জমজমাট বানিয়ে ফেলল।এতদিন পর এত মানুষদের সাথে মিশতে পেরে খুব ভালো লাগছে।বিশেষ করে বাড়ির ছোট বাচ্চাদের সাথে আমি ভালো করে মিশতে পারায় এরা সারাক্ষণ আমার আগে পিছে লেগে আছে।যেইখানে যাই সেইখানেই এসে ওরা উপস্থিত। বুঝতে পারলাম এরা আমাকে খুব পছন্দ করেছে তাই কিছুতেই আমার পিছু ছাড়তে চাইছে না।বিয়ের বাড়ির সব কাজ নিজ হাতে নেওয়ার সাথে সাথে এই এত্তগুলো পিচ্চিকে মেহেদি দেওয়া,এদের সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমার ঘাড়ে পড়েছে।পিচ্চিদের নিজ হাতে আমি সাজিয়ে না দিলে নাকি এরা আমার সাথে আড়ি করবে আর রাগ করে আমার সাথেও মিশবে না।শুরু হল এক্সট্রা প্যারা। এই এক্সট্রা প্যারা আমার ঘাড়ে পড়লেও এই ধরণের প্যারার মধ্যেও এক ধরণের আনন্দ আছে।আর এদের রাগানো আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ বাচ্চাদের প্রতি আমার একধরণেরর দুর্বলতা আছে।আর সেই দুর্বলতা আরো প্রবল হল যখন আমার গ….।

উফ এত আনন্দের মাঝেও আবার সেই কষ্টকর স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল।নিজের জীবনটাতো শেষ হল সাথে আরেকটা জীবন আমি নিজ হাতে শেষ করলাম।খুব কান্না আসছে।কিন্তু এত মানুষের সামনে কান্না করা যাবে না তাই ঘুমানোর অজুহাত দেখিয়ে রুমে চলে গেলাম।
.
.
রাতে মেহেদির অনুষ্ঠানে একটা গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা পড়ে হালকা সাজলাম।সাথে নিজ দায়িত্বে এক এক করে সব পিচ্চিদের সাজিয়ে দিতে হল।এরপর সব কয়টা পিচ্চিকে মেহেদিও দেওয়া লাগল।

দিপা আপু- “এই এত দৌড়াদৌড়ি কেন করছিস?আর কিছু করা লাগবে না।এইদিকে আয়।”

তমা- “আপু এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।”

দিপা আপু- “রাখ তোর কাজ।আর কিছু করা লাগবে না।সবাই মেহেদি দিচ্ছে তুইও বসে মেহেদি দে।এই যে আপু এইখানে আসুন।আমার এই কিউট বোনটাকে একটু মেহেদি লাগিয়ে দেন তো।”

তমা- “আপু এইসবের কিছু লাগবে না।আমি মেহেদি দেওয়া পছন্দ করি না সেটা তো তুমি জানোই।প্লিজ…”

দিপা আপু- “চুপ কোন কথা হবে না।এই যে আপু আপনি মেহেদি দেন।ওর কোন কথা আপনার শুনা লাগবে না।”

তমা- “…..”

ফারিদ- “দিপা কাউকে দিয়ে ওর হাতে মেহেদি দিতে হবে না।তমা আস আমার সাথে।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “কথা না বাড়িয়ে আস।”

তমা- “আচ্ছা।”( ভয় পেয়ে)
.
.
ছাদে আসার পর,,

ফারিদ- “এবার হাত দাও দেখি।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “এত কেন কেন কর কেন বলত?আমি নিজ হাতে তোমার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিব তাই হাত দিতে বলেছি।”

তমা- “এখন আপনিও শুরু করেছেন!”

ফারিদ- “তুমি কাজের থেকে বেশি কথা বল।”

জোর করে আমার হাতটা নিজের কাছে নিয়ে উনি মেহেদি পড়িয়ে দিলেন।

ফারিদ- “দেখতো এখন মেহেদিভরা হাতদুটো কত সুন্দর লাগছে।সব মেয়েরা মেহেদি দেওয়ার জন্য পাগল আর তুমি……!”

তমা- “হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই মেহেদিভরা হাতটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু মেহেদির রংয়ের মতন আমার জীবনটা তো আর রঙ্গিন না।তাই মেহেদি দেওয়াটা আমার মতন মেয়ের শোভা পায় না।”

নিপা- “ভাইয়া তুমি ওইখান থেকে তমা আপুকে এখানে ডেকে এনে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছ!আর আমি তোমাদেরকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ।

হঠাৎ তমার মেহেদি হাতের দিকে তাকিয়ে,,ওয়াও তমা আপু তোমার হাতের মেহেদির ডিজাইনটা অনেক সুন্দর হয়ছে।
উফ ভাইয়া ভুলে গেছি আম্মু ডাকছে তোমাকে।নিচে যাও।”

ফারিদ- “আচ্ছা যাচ্ছি। এই শোন,,”

নিপা- “বল,,”

ফারিদ- “ওর দিকে খেয়াল রাখিস একটু।ওকে একা ছেড়ে আবার যাস না কোথাও।”

নিপা- “টেনশন নট ভাইয়া।ভাবির কাছে আছি আমি।”

ফারিদ- “বেশি দুষ্টু হয়ে গেছিস তুই।যা করতে বলছি তাই করবি।”

নিপা- “ওকে ওকে।যাও এবার।”
.
.
তমা- “এইদিকে আয়।রেগে আছিস না এখনো আমার উপর।”

নিপা- “আরে না।কি যে বল।আমি সব ভুলে গেছি।”

তমা- “সেইদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য সরিরে।”

নিপা- “ইটস ওকে।”

তমা- “শোন তোর পছন্দের একটা কানের দুল আমাকে একবার দেখিয়ে ছিলি না। অনেক খুঁজার পর সেটা আমি মার্কেটে পেয়েছি।”

নিপা- “সত্যি!”

তমা- “হ্যা।সত্যি। খাটে রেখে এসেছি। যা রুমে গিয়ে দেখ গিয়ে।”

নিপা- “তমাকে জড়িয়ে,,থ্যাংক ইউ,,থ্যাংক ইউ,, সো মাচ আপু।”

তমা-” পাগলি একটা।যা এবার।”

নিপা- “যাচ্ছি। তবে এখানে আর একা থাকতে পারবে না।তোমাকে রুমে যেতে হবে।অনেক ধরণের মানুষ আছে এইখানে।তাই ভাইয়া বলছে তোমাকে একা একা ছাড়া যাবে না।”

তমা- “ও…..”

নিপা- “আর শোন আপু দিপা আপুর হাসবেন্ডের ফ্রেন্ডের ছোট ভাই আর তার বউ আসবে রাজশাহী থেকে।শুনেছি দুলাভাইয়ের ফ্রেন্ডের ছোট ভাইয়াটা তোমার ভার্সিটিতে পড়ত।নাম জানি কি…… মনে পড়ছে না।ও হ্যা মনে পড়েছে তানভীর। তানভীর ভাইয়া।তানভীর ভাইয়া আর তার ওয়াইফ কালকে আসছে এখানে।উনাদের ভালো করে যত্নআত্তি করতে হবে বুঝলে।স্পেশাল গেস্ট ওরা।আর ওদের দেখার ভার কিন্ত আমার সাথে তোমাকেও নিতে হবে।অনেক কাজ কালকে। লক্ষ্মী মেয়ের মতন এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে কেমন।আমি আসি।”

তমা- “তানভীর নামটা শুনে প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।ও এখানে আসবে কেমন করে।তানভীর নামের অনেকেই থাকতেই পারে।শুধু শুধু টেনশন নিয়ে লাভ নেই।যাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”
.
.
আজকে দিপার আপুর বিয়ের দিনে সাদা রংয়ের লেহেঙ্গা পড়লাম।লেহেঙ্গাটা উনি দিয়েছেন।এটা পড়ার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু উনার রাগের ভয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তেই হল।

আপুর শুশুড় বাড়ির লোকেরা ইতিমধ্যে এসে গেছে।আমি আর নিপা সেই স্পেশাল গেস্ট কখন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

“এই নিপা ওরা কি এখনো আসে নি।”
“কি জানি আপু।”
“আচ্ছা তুই এখানে একটু দাঁড়া। আমি ওইদিকটা থেকে আসছি মেহমেনরা কি করছে।ওরা আসলে আমি ডাক দিস।আমি চলে আসব।”
“আচ্ছা।”

কিছুক্ষণ পর,,,

“এই কেরে? চোখ কোনখানে থাকে?দেখে চলতে পারেন না।”
“সরি সরি,,,”

গলার কণ্ঠটা পরিচিত মনে হল।তাড়াতাড়ি চোখ উপরে তুললাম।ওকে এখন এই বিয়ে বাড়িতে দেখব তা ভাবতে পারেনি।তানভীর!
.
.
তানভীর – “তমা তুমি এইখানে!”

তমা- “একি প্রশ্ন আমারো। আপনি এইখানে কি করছেন। শেষ পর্যন্ত এইখানেও চলে আসছেন।আমাকে আরো কষ্ট দেওয়ার বাকি আছে নাকি! যে কষ্টটা দিলেন তাতে কি আপনার মন ভরে নি।তাই রাজশাহী থেকে ডাইরেক্ট এইখানে চলে আসছেন।”

তানভীর- “তমা প্রথমত আমি অভি ভাইয়ার বিয়ের দাওয়াতে এসেছি।আমি জানতাম না তুমি এইখানে আছ।আর দ্বিতীয়ত প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দাও।বিশ্বাস কর তোমাকে আজকে এইখানে দেখে অনেক খুশি হয়েছি।অনেক করে চাইছিলাম তোমার সামনে যেয়ে মাফ চেয়ে নিব কিন্তু সেই সাহস আমার হয়ে উঠেনি।আমার ভুলের জন্য প্লিজ প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।”

নিপা- “আরে তমা আপু তুমি এইখানে।যাক তাহলে পেয়ে গেলাম তোমাকে।আরে তানভীর ভাইয়া তুমিও আছ দেখছি।আপু এই যে উনার কথা বলছিলাম।একটু আগে আসছে উনারা।আর আপু এই হচ্ছে তানভীর ভাইয়ার ওয়াইফ সোমা।উনাদের বিয়ের মাত্র ১ মাস হয়েছে।”

তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছি।ও বিয়েও করে ফেলেছে তাহলে।ভালোই দিন কাটাচ্ছে তাহলে স্ত্রীর সাথে!

নিপা- “আচ্ছা তোমরা কথা বল।আমি আসছি।”

তমা- “নিপা আমিও যাব। তুই বরংচ ওদের ভিতরে নিয়ে যা। ওইদিকটা কি হচ্ছে তা আমাকে দেখে আসতে হবে।আর আপনারা নিপার সাথে যান। সবাই ওইখানে আছে।”

তাড়াতাড়ি করে ওদের কাটিয়ে চলে আসলাম।তানভীরকে দেখ কষ্ট আর রাগ দুটোই হচ্ছে।আমার জীবনটা শেষ করে এখন বিয়ে করে সুখে দিন কাটাচ্ছে।না জানি ওর স্ত্রীর কপালে কি আছে।বেচারি এখনো জানে না ও কি রকম মানুষের সাথে সংসার করছে।ওর স্ত্রী হয়ত তানভীরকে অনেক ভালো পুরুষ ভাবে।কিন্তু সেতো আর জানে না তানভীরেরর একটা কাপুরুষ।নিজেকে বাঁচাতে যেইদিন তানভীর আমার মত ওর স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে সেইদিনি হয়ত ওর স্ত্রী তানভীরের আসল মুখোশটা দেখবে।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১০

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এর কিছুক্ষণ পর,,

“তুমি এইখানে!”
“আপনি এখন কেমন আছেন তা দেখতে আসলাম।আপনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন উঠতে গেলেন কেন?”
“না আমি এখন ঠিকাছে।তমা তুমি রাতে ঘুমাওনি?”
“কে বলল আপনাকে?”
“তোমার চোখ বলছে।চোখগুলো এমন লাল হয়ে আছে কেন?”
“…….”
“আপনি খাটে গিয়ে বসুন। আপনাকে দুর্বল লাগছে।আপনার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।”

“আমার হাত ধরে টেনে উনার কাছে নিয়ে গেলেন।

“দাঁড়াও আমার প্রশ্নের উত্তর কই?”
“…..”
“এই মেয়ে জবাব দাও না কেন?”
“কিছু না।”
“মিথ্যা কথা কেন বলছ?কোন কারণতো নিশ্চয় ছিল।তুমি কি কালকে রাতের কথা ভেবে ঘুমাওনি।আমি থাকতে তুমি এত ভয় পাও কেন?আমি থাকতে তোমার শরীরে এতটুকু আচ লাগতে দিব না এতটুকু বিশ্বাস তুমি কি আমার উপর করতে পার না ?”
.
.

এই কথাটায় আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।এই কথায় বিশ্বাস করে আমি নিজের সর্বস্ব হারিয়েছি।তাই এই কথা শুনামাত্র কান্না এসে গেল।

” এই মেয়ে কাঁদছ কেন?আমি কি তোমাকে বকা দিয়েছি নাকি?”
“…….”
“কিছুতো বল?আমার লক্ষ্মীটা কাঁদছে কেন?”
“সরি ” বলে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।জীবনে প্রথম স্ব-ইচ্ছায় উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।

“সরি কেন বলছ পাগলি।”
“আমি আজকের পর থেকে আর আপনার কথার অবাধ্য হব না।আসলে আমি……”ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলাম।কান্নার কারণে কথাও বলতে পারছি না।
“প্লিজ কোন কারণ ছাড়া কাঁদবে না।আমাকে যা বলার পরে বলিও।এখন কিচ্ছু বলতে হবে না “এই বলে উনি আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন।এখন খুব শান্তি লাগছে।যে শান্তিটা আমি ৫টা মাস ধরে খুঁজছিলাম আজ কেন জানি তা উনার বুকের মধ্যে খুঁজে পেলাম।কিন্তু এই মূহুর্তে নিজেকে দুর্বল করা চলবে না।তাই তাড়াতাড়ি উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
“আমি আসছি।”

উনি আমার দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,,”কোথা থেকে আসছ?”
“আপনার জন্য খাবার বানিয়ে আনছি।এতক্ষণে নিশ্চয় আপনার ক্ষুধা লেগে গেছে।”
“হুম।যাও,”

.
.
কিছুই করতে পারি না তেমন।নোডলসটা আমার প্রিয় খাবার তাই নোডলস কিভাবে বানাতে হয় তা শিখে নিয়েছিলাম।সেটা রেঁধেই উনার কাছে গেলাম।

“নিন এটা খেয়ে নিন।”

উনি উনার হাতের বেন্ডিজ দেখিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে উনি হাত দিয়ে খেতে পারবেন না।তাই বাধ্য হয়েই আমি খাইয়ে দিলাম।মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বললাম,,

“শুয়ে থাকুন এখন।”
“এখন চাইলেও আর শুতে পারব না।আজকে যে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে সেটা কি তুমি ভুলে গেছ?”
“আপনার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কিভাবে সেখানে যাবেন।”
“কালকে দিপার মেহেদি অনুষ্ঠান এরপর বিয়ে।অসুস্থ হলেও বিয়ে তো আর বন্ধ করা যাবে না।আমি চাইছি ওর বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।এরপর তাড়াতাড়ি নিজেও বিয়েটা করে ফেলব।”

উনার বিয়ের কথা শুনে কেন জানি একটু লজ্জা লাগল। মাথা নিচু করে বললাম,”কিন্তু এই অবস্থায় সেখানে গিয়ে আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে। কিভাবে তা সামলাবেন!”
“ও আমি পারব।তুমিও তো সাথে থাকবে। আমার কাজের হেল্প করবে তাহলে কাজ কিছুটা কমে যাবে। তাই শুধু শুধু আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।যাও বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
“আচ্ছা।”
“আর শোন,,”
“জ্বী,”
“বাসায় গিয়ে আগে খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিও।”
“আচ্ছা,”
.
.
বাসায় আসার পর মামণিকে বলে দিলাম যে আজকে দিপা আপুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি যেন রেডি হয়ে নেই।

হঠাৎ মোবাইলে একটা মেসেজ আসল।
মেসেজটা দেখে একটু অবাক হলাম।

“মামণি আমাকে চিনবে কিনা জানি না।হয়ত আমাকে ভুলেও গেছ।কিন্তু তোমাকে আমি চাইলেও ভুলতে পারব না কারণ তোমার চেহেরার সাথে আমার মেয়ের চেহেরার অনেক মিল আছে।আমার একটা বড় ভুলের জন্য আমার স্ত্রী আর মেয়েটা আজকে আমার কাছে নেই।হয়ত আমার মেয়েটা আমাকে অনেক ঘৃণাও করে ।আমি যে ভুল করেছি তার জন্য আমার স্ত্রী আমাকে ক্ষমা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়েটা যেদিন আমার ভুলটা সম্পর্কে জানবে হয়ত সেদিনও সে তার মায়ের মতন আমাকেও ক্ষমা করতে পারবে না।নিজের ভুল বুঝতে পেরে যখন ওদের কাছে আমি যেতে চাইছি তখন সেখানে যাওয়ার সব রাস্তা আমার বন্ধ হয়ে গেছে।তাই দূর থেকে তাদের দেখে আমার চোখটা জোড়ায়।খুব ভালবাসি আমি ওদের।মেয়েটাকে কাছ ডেকে আমি প্রাণভরে দেখতে পারিনা কারণ সে তার বাবার থেকে অনেক দূরে।আমার মেয়ের সাথে তোমার চেহেরার অনেক মিল আছে।তাই তোমাকে নিজের মেয়ে মনে করে আমি তোমার জন্মদিনে আমার প্রিয় গিটারটা দিয়েছিলাম।

মামণি তোমাকে নিয়ে কালকে অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখলাম।এরপর থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে।নিজের মেয়ের মতন তোমাকে ভাবি তাই একটা রিকোয়েস্ট করছি,,তুমি নিজেকে কখনো একা ভাববে না।তোমাকে তোমার আপনজনরা অনেক ভালবাসে।যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের জন্য নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করবে। আর আরেকটা কথা কখনো ভুলেও নিজের ক্ষতি করবে না।প্রমিস মি।যদি আমাকে তোমার বাবা ভেবে থাক তাহলে এই প্রমিসটা কর। প্লিজ মামণি।”

লোকটাকে চিনতে পারলাম।উনাকে এত সহজে চাইলেও আমি ভুলতে পারব না।নিজের প্রিয় গিটারটা আমার মতন অপরিচিত একটা মেয়েকে দিয়ে তিনি এইটা প্রমাণ করলেন উনার মেয়ের মতন উনি আমাকেও অনেক ভালবাসেন।আমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখে উনি সত্যিইই অনেক টেনশনে আছেন।তাই তাড়াতাড়ি উনাকে মেসেজ পাঠালাম।

“আংকেল আপনার প্রিয় গিটারের কারণে আমি এখনো আপনাকে ভুলি নি।নিজের মেয়ের মতন আমাকে ভালবাসেন তাই হয়ত আমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখার পর আপনি অনেক চিন্তিত।চিন্তা করবেন না আপনার এই মেয়ে নিজের কোন ক্ষতি করবে না।এই প্রমিস একজন মেয়ে তার বাবাকে করছে।”
.
.
মেসেজের আওয়াজ পেয়ে তন্ময় তাড়াতাড়ি মেসেজটা ওপেন করল।মেসেজটা পড়েই যেন তার সব চিন্তা দূর হয়ে গেল।তার মেয়ে যেহেতু তাকে প্রমিস করেছে তাহলে আর চিন্তার কিসের?
এরপর তন্ময় তার মেয়েকে আবার মেসেজ পাঠাল,,

“অনেক খুশি হলাম মামণি।আমাকে চিন্তামুক্ত করলে।অনেক অনেক দুয়া রইল আমার এই মেয়েটার জন্য।আমার মেয়েটা যেন তার জীবনের সকল সুখ খুঁজে পায়।”

মেসেজটা পাঠিয়ে তন্ময় সাথেসাথে নম্বরটা অফ করে দিল।কারণ মেয়ে যদি কল দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে চায় তাহলে সে নিজের অনুভূতিগুলো লুকাতে পারবে না।
.
.
মেসেজটা পড়েই একচিলতে হাসি ফুটল আমার মুখে।খুব ইচ্ছে করছে এই লোকটার সাথে কথা বলতে।তাই কালবিলম্ব না করে উনার নম্বরে কল দিলাম।কিন্তু নম্বরটা অফ আসছে।মূহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

মেঘ-“তমা কি করছিস রুমে?তাড়াতাড়ি রেডি হ।”

তমা-“হ্যা মামণি হচ্ছি।”

এরপর উনাদের সাথে গাড়িতে করে উনাদের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৯

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পরেরদিন,,,,
ভোরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে আমি তাড়াতাড়ি করে আহদ স্যারের বাসায় গিয়ে বেল টিপলাম

কিছুক্ষণ পর,,

“তমা তুই এখন?সব ঠিকাছে তো?”
“হ্যা,ঠিকাছে।”
“আন্টি,,উনি কেমন আছেন?”
“এখন একটু ঘুমাচ্ছে।রাতে খুব জ্বর আসছিল।সারাটা রাত ঘুমাতে পারেনি জ্বর আর ব্যথার জন্য।”
“আন্টি আমি উনার রুমে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা যা,,”

গিয়ে দেখি উনি শুয়ে আছেন।এই লোকটার জন্য আমার কোন কালেই মায়া কাজ করত না কিন্তু আজকে উনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার মনে মায়া জিনিসটা কাজ করছে।কপালে হাত দিয়ে দেখি উনার জ্বরটা আবারো উঠছে।তাড়াতাড়ি করে কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়ে দিলাম।অনেকক্ষণ পর কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরটা কিছু কমেছে।অজান্তেই উনার মাথার চুলগুলোতে বিলি কেটে দিলাম।
.
.
উনার রুমের বারান্দায় একটা কেদেরা ছিল।সেখানে বসে ভাবতে থাকলাম মানুষের মধ্যে কত পার্থক্য।বিপদের দিনেই একটা মানুষকে পরিপূর্ণভাবে বুঝা যায়।যেমনটা উনাকে আর তানভীরকে দেখে বুঝেছি।উনি সবসময় কড়া শাসনের মধ্যে আমাকে রাখলেও আমার ভালোটা চেয়েছে।আমার উপর যখনি কোন বিপদ আসে তখনি তিনি কোন কিছুর পরোয়া না করে আমাকে বাঁচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়েন।যতদিন উনার সংস্পর্শে ছিলাম আমার উপর বিপদের কোন আঁচ লাগতে দেয়নি।
অন্যদিকে তানভীর যার ভালো ব্যবহার আর মিষ্টি মিষ্টি ভালোবাসার কথা শুনে ওর ভালোবাসায় পড়তে আমি বাধ্য হয়েছি।অনেকটা বিশ্বাস করতাম ওকে।কিন্তু সেদিন ও নিজেকে বাঁচাতে আমাকে বিপদের মুখে ফেলে চলে যায়।
চোখ বন্ধ করে কেদেরাতে মাথা রাখতেই ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের ঘটনা চোখে ভাসতে লাগল।

রাজশাহী ভার্সিটিতে টিকার পর সবাইকে মেনেজ করে সেখানে চলে যাই।আমার পক্ষে হোস্টলে থাকা সম্ভব না তাই আমার পরিচিত বান্ধবী তিথিদের বাসায় উঠি।

ভার্সিটির প্রথম দিনে আমি গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে ভার্সিটির চারপাশটা দেখছিলাম।হঠাৎ একটা কন্ঠে আমার হুশ এল।

“এই মেয়ে এইখানে আয়।”
“বলুন”
“ওই তুই মেয়ে হয়ে ছেলেদের মতন পোশাক কেন পড়িস?”
“তাতে আপনার সমস্যা কি?”
“ওই মেয়ে বড় ভাইদের মুখের উপর তর্ক করস।খুব শখ না মেয়ে হয়ে ছেলের মতন চলা।দাঁড়া।ওই দোকান দেখছস ওইখান থেকে আমার সব ফ্রেন্ডদের পছন্দমতন এক এক খাবার নিয়ে আয়।যা ফুট।”
“এই যে শুনেন আপনি বড় ভাই বা ছোট ভাই হন না কেন তাতে আমার যায় আসেনা।আমি এইসব করতে বাধ্য না।”
“ওই সিফাত দেখ তো মাইয়াতো বেশি টেরং টেরং করে কথা কয়।কি করা যায় কতো?”
.
.
সিফাত-“তানভীর ভাই ওর ব্যাগ দেখতাছেন তো?”

তানভীর-“ভালা বুদ্ধি দিছস।”

জোর করে ব্যাগটা টেনে নিয়ে গেল।এরমধ্যে মোবাইলে কল বেজে উঠল।”

তমা-“দেখেন ব্যাগ রাখেন সমস্যা নাই।কিন্তু মোবাইলটা দেন।আমার মামণি কল দিয়েছে মন হয়।কল না উঠালে টেনশন করবে আমাকে নিয়ে।”

তানভীর -“মামণি কল দিয়েছে।কথা বলতে চাস?

তমা-“ভাইয়া প্লিজ মোবাইলটা দেন?এটা আমার মোবাইল।”

তানভীর-“এইটা তোর মোবাইল এর প্রমাণ এখন চাইলেও দিতে পারবি না।কারণ মোবাইল এখন আমার হাতে।যদি আমার থেকে মোবাইল নিয়ে কথা বলতে চাস তাহলে আমি যা করতে বলছি তা কর?নাহলে এখনি তোর সামনে এইটা ভেঙ্গে ফেলবো।”

তমা-“না, না আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।প্লিজ মোবাইল ভাঙ্গবেন না।”

তানভীর-“তাহলে যা তাড়াতাড়ি করে খাবার কিনে নিয়ে আয়।আমার আবার খিদা সহ্য হয় না।”

তমা-“একসাথে সব খাবার পেকেট করে আনি।আপনারা নাম বলেন লিস্ট বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

তানভীর-“ওই মাইয়া বেশি চোপড় চাপড় মারবি না।এক এক জনের খাবারের জন্য যাবি আর আসবি।”

তমা-“আমার সময় নষ্ট হবে ভাইয়া।মামণির সাথে কথা বলতে হবে এখনি।”

তানভীর-“যাবি এখন নাহলে কিন্তু আরো বেশি দেরি হয়ে যাবে।”

তমা-“না না যাচ্ছি যাচ্ছি।”

এক এক ফ্রেন্ডের জন্য খাবার আনা আর যাওয়ার জন্য প্রায় দুর্বল হয়ে গেছি।দোকানটাও অনেক দূরে।এই নিয়ে ১০ বার গেছি আর আসছি।

তানভীর-“হুম হয়ছে আর যাওয়া লাগবে না। এত কষ্ট করার জন্য এই নে বকশিস।

তমা-“….”

তানভীর-“আরে নে নে। কাজ করছস টাকা নিবি না।নে নে। এত বাহানা করিস না।আর শুনো মেয়ে হয়ে জন্মেছ মেয়ের মতন নম্রভদ্র হয়ে চলার চেষ্টা করবে।তখন তোমার পোষাকের ছিরি দেখে রাগ উঠে গিয়েছিল তাই ওইরকম আচরণ করতে বাধ্য হয়েছি।Next টাইম যাতে এইরকমভাবে চলতে না দেখি।এই নাও মোবাইল।তোমার মামণির সাথে কথা বলে নিও।”

তমা-“তোকে তো আমি উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার মানে বুঝিয়ে দিবো।
.
.
ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি।আর এর মধ্যেই বড়ভাইদের যার্গিং এর মুখে পড়লাম।আজ আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওরা যে কাজটা করল সেটা মোটেও ঠিক করেনি।এর প্রাপ্য শাস্তি তোমাকেই পেতে হবে মিস্টার সিনিয়র।তমার ভালো সাইড দেখেছ এতক্ষণ এবার খারাপ সাইডটাও দেখবে।

এরপরের দিনই সাদা রংয়ের একটা থ্রিপীস পড়ে ভার্সিটি গেলাম।এইরকম মেয়েলি পোশাক পড়ায় সেইদিনের সেই বজ্জাত সিনিয়র ছেলেটা মনে হয় খুব খুশি হল।ওর এই খুশি দেখে আমারো মনের ভিতরে লাড্ডু ফুটল।যাক কাজ হয়েছে।

সে নিজ থেকেই আমার সাথেই কথা বলতে আসল।এই শোন,
“জ্বী ভাইয়া বলেন,”
“হাই আমি তানভীর,”
“আমি তমা।”
এরপর টুকটাক সেদিন কিছু কথা হল।

এরপর থেকেই তানভীর প্রায়ি নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলত।এই কয়েকদিনের মধ্যেই ওর সাথে আমার ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেল যেটা আমি চাচ্ছিলাম।তানভীর ওর মায়ের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।ওর মায়ের সাথে পরিচিত হওয়ার বাহানায় ওর বাড়িটা চিলে নিলাম।

এতদিনে ওর সাথে আমি ভালো মেয়ে হয়ে থাকার অভিনয় করলেও মনে মনে ঠিকি সবসময় ভাবতাম সঠিক সময়ে আমি প্রতিশোধ নিব।কিন্তু কিভাবে নিব তা মাথায় আসছিল না।প্রথম প্রথম ভাবলাম ওর সাথে একটা গেম খেললে কেমন হয়।ওকে প্রথমে ভালবাসব এরপর ছেকা খাইয়ে ছেড়ে দিব।এই প্ল্যান করে আমি সামনের দিকে আগালেও গণ্ডগোলটা মাঝখান দিয়ে বাধে।আমার প্রতি তানভীরের আচরণে বেশ পরিবর্তন দেখতে পারলাম।শেষে আমার এমন অবস্থায় হল যে,, মনে হচ্ছে ওর প্রেমেই আমি নিজেই হাবুডুবু খাচ্ছি।

না এইভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। কিছু একটা করতে হবে।অবশেষে ওকে ছেকা দেওয়ার পুরানো স্টাইল চেঞ্জ করলাম।আর নতুন প্ল্যান আটলাম।
.
.
কিছুদিন পর,,,ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যায় আমি নিজেই তানভীরের বাসায় গেলাম।দেখলাম আন্টি চুপচাপ বসে টিভি দেখছে। বাসায় আমাকে দেখে মনে হল উনি খুব খুশি হলেন।

“তমা,, কিরে এতদিন পর কি মনে করে এলি ,,?”
“আসলে আন্টি তানভীর ভাইয়ার কাছে আমার একটা নোট খাতা ছিল সেটা নেওয়ার জন্য আসছি।”
“প্রয়োজন ছাড়া কি বাসায় আসা যায় না।মাঝেমাঝে তো আসতে পারিস।”
“আচ্ছা,আন্টি সময় পেলে আসব।”
“আন্টি আমার নোট খাতাটা,,”
“ও নোট খাতা মনে হয় তানভীরের রুমে। চল তোকে ওর রুমে দিয়ে আসি।”
“হুম।”
“আচ্ছা শোন এখন বাসায় যাওয়া যাবে না।রাতের ডিনার করে তবেই তোকে ছাড়ছি।তুই নোট খুঁজে নে আমি কিচেনে আছি।”
“আচ্ছা।”

এরপর আমার ব্যাগ থেকে পলিথিনটা বের করলাম।পলিথিনে কয়কটা ইদুঁর ছিল।সেগুলো তানভীরের ওয়ারড্রবে ঢুকিয়ে দিলাম।শয়তানটা এবার বুঝবে ঠেলা।কালকে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে।ও গান গাওয়ায় নাম দিয়েছে।বেশ ভালোইই গান গায়।মূলত ওর গানই হল পুরো অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু।আর সে গান গাওয়া মানুষটা যদি কালকে ঠিক সময়ে পোশাক না পেয়ে ভার্সিটি যেতে না পারে তাহলে ওর ফ্রেন্ড সার্কেল আর টিচারদের বকা খাবেই।হাহাহা…….
.
.
কাজটা শেষ করে পিছনে ফিরতেই দেখি তানভীর,,

“আরে এইটা কে?এই টাইমে আমার রুমে কি কর?!”(ভ্রু কুচকিয়ে)
“কিছু না।নোট খাতা নিতে আসছি।”
“তোমার নোট খাতা আমার কাছে কিভাবে এল?!
“ওইযে ভুলে খাতা এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল।আপনার নোটখাতা আমার কাছে আর আমারটা…..”
“দেখি….।আরে এই খাতাটা কতদিন ধরে খুঁজছিলাম।কিন্তু পায়নি।তোমার কাছেই এটা ছিল।যাক ভালোই হয়ছে শেষ পর্যন্ত তোমার কাছ থেকে পেয়ে গেলাম।এই খাতাটা না পেলে পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেল করতাম।থ্যাংকস”
“হিহিহি…।ওয়েলকাম।”
“তমা…..”
“জ্বী।”
আজব এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?(ভ্রু কুচকিয়ে)

কিছু বুঝার আগেই তানভীর আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“কি হচ্ছে?”
“একটু এইভাবে থাকি।ভালো লাগছে।”
“আরে….আরে….ছাড়েন।আপনার মাথা পুরা গেছে।এইভাবে কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নাকি?ছাড়ুন বলছি।”
“উফফ,,,বোরিং একটা।একটু জড়িয়ে ধরলে কি হয় শুনি।আচ্ছা শোন,,”
“জ্বী কান দুইটা খোলায় আছে।বলেন,,,”

আমার কপালে চুমো দিয়ে বলল,,”থ্যাংকস।”
“For what……!”

মুচকি হেসে,,,,নোট খাতাটা আমাকে দেখিয়ে,,এর জবাব দিল।

ব্যাটা সামান্য নোট খাতার জন্য একটা মেয়েকে চুমো দেয়।কতবড় লুচু একটা।সমস্যা নাই।কালকেই এর সব হিসেব হবে।জাস্ট কালকের দিনটায় অপেক্ষায় আছি আমি।
.
.
রাতের ডিনারটা সেদিন আন্টির জোরাজোরিতে করতেই হল।
“তানভীর তমাকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।”
“আন্টি গাড়ি লাগবে না।এখান থেকে আমাদের বাসায় যেতে মাত্র ৫মিনিট লাগে।”
তানভীর – “ও…..তাহলে একসাথে হেঁটে যায়। কি বল?(মুচকি হেসে)

তমা-“লাগবে না।আমি একা যেতে পারব।”

তানভীর-রাতের বেলায় একা যাওয়া কিন্তু নিরাপদের হবে না।মেয়ে মানুষ তুমি। একা গেলে অনেক ঝামেলা হতে পারে।”

তমা-“উফ,,অসহ্য,,আচ্ছা চলেন তাহলে।”

এরপর দুইজন একসাথে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। হঠাৎ কিছু বুঝার আগেই তানভীর আমাকে নিয়ে এক জায়গায় লুকিয়ে গেল।

“কি হয়েছে?এইভাবে আমাকে নিয়ে লুকিয়ে গেলেন কেন?এই বলেনতো আপনার উদ্দেশ্য কি?”
“এই মেয়ে চুপ থাকতো।আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই বুঝলে।এখন যদি সামনে হাঁটি না তাহলে আমাদের দুইজনের অবস্থায় খারাপ হবে।”
“মানে,”
“সামনে চেয়ে দেখ কয়েকটা গাজাখোর লোক।এদের সামনে দিয়ে এখন গেলে,,এরা আমাদের কিছু একটা করে ফেলতে পারে।ওই দেখ ওদের সামনে দিয়ে এখন যে দুইটা মেয়ে যাচ্ছে ওদের সাথে এই গাজাখোররা কি করছে।”

চোখ দিয়ে সামনে যা দেখলাম তা দেখে আমার আত্নাটায় কেঁপে উঠল।চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।

“তানভীর আমাদের উচিত ওই দুইটা মেয়েকে এখন সাহায্য করা।”
“আরে পাগল নাকি,,ওরা কয়জন দেখছ?এদের হাতে ছুড়ি থেকে শুরু করে অনেক কিছু থাকে।এদের সাথে শক্তিতে আমি একা পেরে উঠব না।এত তাড়াতাড়ি আমার মরার ইচ্ছা নাই।”
“তাই বলে আপনি এইভাবে কাপুরুষের মতন চুপচাপ বসে থাকবেন”
“কিছু করার নেই।এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না।উল্টা রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।চল…..হাত ধরে টেনে আমাকে সেখান থেকে ও নিয়ে গেল। ”

সেইদিন তানভীরের প্রতি মনে মনে খুব ঘৃণা জন্মাল।পরে দিয়ে আবার ভাবলাম,, সত্যিই তো ও এতজনের সাথে কিভাবে পেরে উঠবে।তারপরও মনটা বারবার বলছিল,,একজন পুরুষ হিসেবে ওর সেখানে গিয়ে ওই মেয়ে দুইটার সাহায্য করা উচিত ছিল।
.
.
“আচ্ছা,,তানভীর আজ ওদের জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে আমাকে কি আপনি এইভাবে বিপদের মুখে ফেলে চলে যেতেন?”
“হয়তবা,,জানের মায়া সবার আছে।”

এই কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

“আরে রিলেক্স।মজা করছিলাম।তোমার সাথে এইরকম খারাপ কিছু হবে না।আর হলেও আমি কখনো তোমাকে ফেলে যাব না।”

ওর এই কথায় মনের মধ্যে এক ধরণের শান্তি কাজ করছিল।সেদিন কেন জানি না মনে হল হয়ত ও আমার জন্য সব কিছুর সাথে লড়াই করতে পারবে।ও কোন বিপদে আমাকে পড়তে দিবে না।