Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2434



স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৮

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তমার রুম থেকে বাইরে আসার পর দেখি আন্টি আর আমার পরিবার সবাই সোফায় বসে টেনশন করছে।

আহাদ:- “সরি,, আসলে বুঝতে পারছি আমাদের দুইজনকে নিয়ে তোমরা অনেক টেনশনে আছ।তোমাদেরকে কিছু না বলে আমি এইভাবে তমার রুমে ঢুকে যাওয়াতে তোমাদের টেনশন আরো বেশি বেড়ে গেছে।কিন্তু সবার আগে আমার যে কাজটা করার ছিল আমি সেটাই করেছি।”

মেঘ:- “হুম বুঝতে পারলাম।এখন আসল ঘটনাটা বল,,তোদের এই অবস্থা কি করে হল।”

এরপর আহাদ সবাইকে আসল ঘটনাটা খুলে বলল।বাড়ির সকল সদস্যের টেনশন যেন আরো বেড়ে গেল।

আহাদের মা:- “আহাদ মেয়েটা এখন কেমন আছে?না জানি কি ভয়টা না আজকে পেয়েছে।আমি এখনি তমার কাছে যাচ্ছি।”

আহাদ:- “মা এখন না একটু পরে যাও। আন্টি আপনি আগে যান। ওর হাতটা ড্রেসিং করে দেন।”

তমাকে ড্রেসিং করানোর পর এরপর এক এক করে সবাই ওকে দেখতে গেল আর ওকে শান্তনা দিলো।
.
.
“মেঘ কি ব্যাপার,, তোমার কি মন খারাপ?”
“না,,”
“তাহলে,আজকে তোমার সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলে এমন লাগল কেন যে কোন কারণে তোমার মনটা খারাপ!!
“আরে না,,তেমন কিছু না।”
“কিছুতো একটা হয়েছে।কিন্তু তুমি বলতে চাচ্ছ না।এই আমি তোমাকে এখনি কল দিচ্ছি।”
“আবির,,প্লিজ।”
“কোন কথা শুনছি না তোমার।কলটা রিসিভ কর।
হ্যালো মেঘ,,এখন বল কি হয়েছে।”
“……..”
“কি হয়েছে বল?”(কিছুটা রেগে)

এবার মেঘ নিজেকে সামলাতে পারল না।কেঁদেই দিল প্রায়।মেঘের কান্না শুনে আবিরের ভয় যেন আরো বেড়ে গেল।না জানি কেন মেঘ এভাবে কাঁদছে?

“মেঘ প্লিজ কিছুতো বল?আমাকে সব ক্লিয়ার করে না বললে আমি বুঝব কি করে?”

এরপর মেঘ আজকে যা যা ঘটল সব আবিরকে বলল।মেঘের কথা শুনে আবির পুরো স্তব্দ হয়ে গেল।কোন কথা না বলে ও কলটা কেটে দিল।
.
.
আমার মেয়েটার সাথে আজকে এই কি হল?না জানি আমার কলিজার টুকরাটা ভিতরে ভিতরে কত কষ্ট পাচ্ছে।খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটার পাশে বসে ওকে শান্তনা দিই।ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে বলি,, তমা মা, তোর বাবা থাকতে তোর কোন ভয় নেই।সে সবসময় তোর পাশে আছে। আজকে আমার মেয়েটার সবচেয়ে বেশি কাছে প্রয়োজন আমাকে।কিন্তু আজকে ওর পাশে আমি নেই।আমি নিজেই সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।নিজের খানিকের সুখের কথা স্বার্থের মত ভেবে আমি আমার পুরো জীবনের সুখকে আমার থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছি।এই বিপদের দিনে আমার স্ত্রী, আমার মেয়েটার এখন আমাকে সবচেয়ে প্রয়োজন।কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। খুব অসহায় লাগছে আজকে নিজেকে। আমার একমাত্র আদরের মেয়ে আমার কলিজার টুকরা আমাকে মাফ করে দে মা।তোর বাবাটা খুব খারাপ।আমার কারণেই তুই এতদিন তোর বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত ছিলি,আমি থাকলে তুই আর তোর মা খুব নিরাপদে দিন কাটাতে পারতি।আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি সব কিছু স্বাভাবিক হত তাহলে তোর এই বাবা ছায়া হয়ে সবসময় তোর পাশে থাকত।বিপদে পড়লে তুই তোর বাবাকে সবার আগে পেতি।কিন্তু এর কিছুই আমি করতে পারছি না।শুধু দূর থেকে তোদের খবর নিচ্ছি।তোদের কাছে যাওয়ার সাহসটুকুও আমার নেই।জানি তোরা দুইজনেই আমাকে অনেক ঘৃণা করিস।আমি কাজটায় এমন করেছি যে আমার মতন অমানুষকে শুধু ঘৃণায় করা যায়।
একজন স্বামী, একজন বাবা হিসেবে আমি সত্যিই ব্যর্থ।কোন দায়িত্বও আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারে নি।তোরা মা,মেয়ে দুইজনে আমাকে মাফ করে দিস।
.
.
আবির এইভাবে কলটা কেন কেটে দিল তা মেঘের মাথায় ঢুকল না।মেঘ এখনো মোবাইল ধরে বসে আছে এই বুঝি আবির কল দিল বলে।আজ ৩টা বছর ধরে আবিরের সাথে মেঘের মেসেঞ্জারে কথা হয়।বলতে গেলে আবিরের সাথে মেঘের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা অনেক ভালো। অনেক কিছুই সে আবিরের সাথে শেয়ার করে।মেঘের যখনি মন খারাপ থাকে আবির কেমন করে জানি তা বুঝে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই আবির মেঘের মনটা ভালো করে দিতে পারে।এই বয়সে এইরকম একটা ভালো বন্ধু যে মেঘ খুঁজে পাবে ও কখনো তা ভাবতে পারেনি।কোন স্বার্থ ছাড়াই আবির মেঘের অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।বলতে গেলে আবির মেঘের কাছে এখন একটা ঔষুধের মতন।ওর মনের মানসিক শান্তির জন্য আবির নামক ঔষুধটা আজকাল বড্ড প্রয়োজন। এই ঔষুধটা ছাড়া ও কোন শান্তি খুঁজে পায় না।
.
.
এর কিছুক্ষণ পর মেঘের মোবাইলে কল আসল,
“আবির সাহেব আপনি হঠাৎ করে কল কেন কেটে দিলেন?”
“ও নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল, কথা বুঝা যাচ্ছিল না তাই আর কি……”
“ও আচ্ছা।”
“মেঘ একটা প্রশ্ন করি?”
“জ্বী করেন…..”
“মেঘ আমি মানুষটা খুব খারাপ না!?!
“এমনভাবে কেন বলছেন?আজকে ৩বছর যাবত আমি আপনার সাথে কথা বলছি।আমি আপনার মধ্যে খারাপ কিছু এখনো খুঁজে পায়নি।একজন বন্ধু হিসেবে বলছি আপনার মতন মানুষ হয় না।”
“মেঘ যদি বলি তোমার স্বামী তোমার সাথে যে অন্যায়টা করেছে ঠিক তেমন ভাবে আমিও যদি আমার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করি তাহলে তোমার জায়গা থেকে বল সে কি আমাকে মাফ করে দিবে!?”
“আবির সাহেব,,যদি আপনি আমার স্বামী তন্ময়ের মতন এমন খারাপ কাজ করে থাকেন তাহলে আমি আমার জায়গা থেকে বলছি,, সে কখনো আপনাকে মাফ করবে না।”
“………”
“সে আপনাকে কেন মাফ করবেন সেটা বলেনতো?একজন স্ত্রী তার জীবিত অবস্থায় যদি দেখে তার স্বামী অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে দিন নাই রাত নাই উল্টাপাল্টা চলাফেরা করে,নিজের স্ত্রীর থেকে বাইরের আরেকটা মেয়েকে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে সে কিভাবে তা সহ্য করবে।”
“……..”
“যে স্ত্রীর পুরো দুনিয়াটায় জুড়ে তার স্বামী থাকে যাকে কেন্দ্র করেই সে নতুন একটা সকালের স্বপ্ন দেখে সেই যদি তার স্ত্রীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পুরো দুনিয়াটা উল্টে দেয়, স্বপ্নে দেখা নতুন সকালকে সে অন্ধকারে পরিণত করে তাহলে,,তাহলে সে কি করবে বলতে পারবেন?”
“……..”
“বাইরের মেয়ের জন্য যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তাহলে সেই অফুরন্ত ভালবাসাটা আর কোথায় থাকে?আর দিনশেষে সেই স্বামীই যদি তার স্ত্রীর কাছে এসে বলে যার সাথে এতদিন সে অবৈধভাবে চলে এসেছে তারই গর্ভে ওর সন্তান তাহলে সে কিভাবে বাঁচবে বলতে পারবেন?”
“…….”
“একটা মেয়ে তার ভালবাসার ভাগ অন্য আরেকটা মেয়েকে কখনোই দিতে পারে না সে যতই মহান হোক না কেন।যে আমার ভালোবাসা,আমার পুরো দুনিয়াটায় অন্য আরেকটা মেয়েকে জায়গা দিয়ে আমার এতদিনের ভালোবাসাকে অমর্যাদা করেছে তাকে আমি কিভাবে মাফ করব?ওর জায়গায় যদি আমি নিজে এই কাজটা করতাম সে কি আমাকে কখনো মাফ করত?জীবনেও করত না।পারলে কুকুরের মতন আমাকে ধূরধূর করে তাড়িয়ে দিত এরপর নিজে আরেকটা বিয়ে করে সংসার করত।সে আমার ভালোবাসাকে অপমান করে যখন আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তখন আমি কি পারতাম না ওকে ভুলে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সবকিছু শুরু করতে?কিন্তু আমি তা করেনি। মেয়েদের মন একটাই থাকে।তা যদি একবার ভেঙ্গে যায় না তাহলে তা হাজারো জোড়াতালি দিয়ে তা ঠিক করা যায় না।”
“……….”
“এরপর ও কি বলবেন ও এতকিছু করার পর আমি ওকে মাফ করে দিব।ও আমাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিয়েছে।ওকে কখনো আমি মাফ করব না।আর একি কাজটা যদি আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে করে থাকেন তাহলে আমি বলবো সেও আপনাকে মাফ করবে না।মাফ করা উচিতও না।”
“……..”
“আবির সাহেব আপনি কি সত্যি এমন কিছু আপনার স্ত্রীর সাথে করেছেন?!
“আরে না,,শুধু তোমাকে গেস করতে বললাম এই যা ”
“ও….তাই বলেন।আমি আরো ভাবলাম……”
“মেঘ!”
“হুম বলেন,”
“পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”
“হঠাৎ এইভাবে বলার কারণটা কি?”
“যদি কখনো জানতে পার আমি তোমার কাছে একটা সত্য কথা লুকিয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছি তাহলে পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”
“কি অন্যায় করেছেন?”
“সময় আসলে সব জানতে পারবে।”
“………”
“তমা কি ঘুমিয়েছে?”
“হ্যা মেয়েটা এইতো কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে।”
“ওর যত্ন নিও।আর যে ছেলেটা তমাকে সাহায্য করেছে নাম জানি কি ওর….”
“আহাদ,,তমার শিক্ষক।”
“হ্যা সেই। ওকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।যদি তমার বিয়ে দাও তাহলে আহাদের সাথেই দিও।তোমার কথা শুনে বুঝলাম আহাদ আমাদের মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে। সে তমাকে অনেক সুখী রাখবে।”
“তা আমি জানি।কিন্তু আমাদের মেয়ে মানে…..বুঝলাম না।”
“আমাদের বলেছি?”
“তাই তো শুনলাম।”
“আরে আমাদের বলিনি, বলেছি তোমাদের মেয়ে মানে তোমার আর তোমার স্বামীর….”
“তমা শুধু আমার মেয়ে, ওকে এতদিন আমিই পেলে বড় করেছি।এক্ষেত্রে আমার স্বামীর কোন অবদান নেই।ও শুধু আমার মেয়ে।তন্ময়ের না……”
“ও হ্যা তাইতো।”
“আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার আর কথা হবে না মেঘ।”
“কেন?কি হয়েছে?”
“কারণটাও সঠিক সময় আসলে পেয়ে যাবে। শুধু এতটুকু বলব আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না।”
“ঔষুধ ঠিকভাবে খান।”
“আর ঔষুধ।ঔষুধে আমার এই রোগ সারবে না।এটা মনের অসুখ।আজকাল মনের থেকে বাঁচার কোন জোর পাচ্ছি না।আস্তে আস্তে শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।”
“কি বলছেন এইসব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“বললাম তো সব উত্তর সময়ে পেয়ে যাবে।পারলে আমাকে মাফ করে দিও মেঘ।”
“…….”
“মেঘ,,,”
“শুনছি,,,”
“I……Love…… U…….as a friend.ভালো থাকিও। নিজের আর আমার মানে তোমার মেয়ের যত্ন নিও।সুখী হও।”
“আপনি কি সত্যিই আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন না।”
“যতদিন বেঁচে আছি যোগাযোগ রাখব। কিন্তু আজকের পর থেকে আর তোমার সাথে কথা বলব না।এতে তোমার আর আমার জন্যই মঙ্গল হবে।রাখছি।”
.
.
আজকে কেন জানি মেঘের মনটা আগের থেকে আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল।কিছুক্ষণ আগে ওর মেয়ের সাথে যা ঘটল তাতে ওর মনের যে অবস্থা হয়েছে তা কেবল ওই জানে।আবিরের সাথে কথাটা শেয়ার করার পর কেন জানি মেঘের মনে হল আজকে মেঘ ওর মেয়েকে নিয়ে যতটা টেনশনে ছিল আবিরও ঠিক ততটাই টেনশনে ছিল।মানুষটার সাথে কথা বলে মনে হয় অনেকদিনের পরিচিত সে।

আবির যে আগন্তুকের মতন ওর জীবনে আসল,,ওর দুঃখের সময়ে যে মানুষটাকে মেঘ এই ৩ বছরের জন্য পেয়েছে আজ সেই নিজ থেকে মেঘের জীবন থেকে ছুটি নিল।আর সাথে নিয়ে গেল মেঘের মনের শান্তির ঔষুধটা।

আজকে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি।আর সেইসাথে সামনে খারাপ কিছু ঘটার পূর্বাবাস পাচ্ছি।সত্যিইই কি আবির আর আমার সাথে কথা বলবে না।ও কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? কিন্তু সেটা কি?খুব আনচান করছে মনটা।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৭

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এরপর ওদের দলের লিডার তমার হাত ধরতেই গেল আহাদ প্রায় চিল্লিয়ে উঠল।
“খবরদার আমার বউয়ের গায়ে হাত দিবে না।নাহলে তোদের অবস্থা খারাপ করে ফেলবো।”

আহাদকে এত মারার পরও যখন ও তমাকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো তখন ওদের পৈশাচিক হাসি যেন আগের থেকে আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল।আর এদিকে তমা চোখ বন্ধ করে বারবার আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলো। আজকে ওর কারণে আহাদের কোন ক্ষতি হলে ও নিজেকে মাফ করতে পারবে না।
.
.
“এই এইদিকে কি হচ্ছে?”

চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে তমা চোখ খুলে দেখে ২টা ছেলে আরেকটা মেয়ে ওদের দিকে দৌড়িয়ে আসছে।আহাদকে যে বখাটে ছেলেগুলো মারছিল তারা তাড়াতাড়ি ভয়ে দৌড় দিল।আর তমাকে ছেড়ে ওই বখাটে ছেলেদের লিডারটা পালিয়ে যেতে চাইলেই ওর দিকে দৌড়িয়ে আসা ছেলে ২টা লিডারকে আটকিয়ে ফেলে।

“রাত বিরাতে মেয়ে মানুষ দেখলেই কু* হয়ে যাস? আজকে দাঁড়া তর খবর নিচ্ছি।রাস্তার কু*কে মানুষ যেভাবে মারে আজকে তোরেও সেইরকম করে মারবো। ” এই কথা বলে সাহায্য করতে আসা ছেলে ২টার পাশে যে মেয়ে ছিল সে লিডারকে ইচ্ছামত মারতে লাগল।মেয়েটার সাথে থাকা ছেলে ২টাও মারে যোগ দিল।

আর এদিকে তমা তাড়াতাড়ি করে আহাদের কাছে গেল।ওরা আহাদকে কি মারটাই না মারলো!কপাল,মুখ,হাত পা থেকে অবিরত রক্ত পড়ছে।যে মেয়ের রক্ত দেখলেই মাথা ঘুরাই এখন সেই আহাদের শরীর থেকে রক্ত বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।এই মূহুর্তে রক্ত দেখে ওর খারাপ লাগলে চলবে না। আহাদের কাটা যে জায়গাগুলো থেকে রক্ত ঝড়ছে তাড়াতাড়ি করে সেই জায়গাগুলো তমা ওর ওড়না দিয়ে বেধে দেয়।অবশ্য নিজের হাত থেকে যে রক্ত পড়ছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।
.
.
“আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আপনারা এখানে আসতে একটু দেরি করলেই……..”
“আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেন।হয়ত আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করার জন্য আমাদেরকে পাঠিয়েছেন।”
তমা মেয়েটার পাশে থাকা ছেলে ২টার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে সে মেয়েটি বলে,, “আপু এরা আমার ভাই। ভাইদের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে দোকানে গিয়েছিলাম।আপনাদের মতন আমরাও কোন খালি গাড়ি না পেয়ে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করি।আসার সময় দেখতে পাই একটা ছেলে আপনার হাত ধরে টানাটানা করছে। তাই তাড়াতাড়ি দৌঁড়ে চলে আসলাম।আপু আপনি ঠিক আছেন তো?”
“হ্যা আমি ঠিকাছি।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আর আপনার ভাইদের।”
“এতে আপু ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নাই।আরে উনার অবস্থাতো খুব খারাপ।মনে হচ্ছে মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে।”
.
.
আহাদ-“না আপু তেমন কিছু হয় নি।সামান্য ব্যথা পেয়েছি।এরজন্য মেডিকেলে যেতে হবে না।আজকে আপনারা আমার অনেক বড় উপকার করলেন সে জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।”

মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,,”ভাইয়া এভাবে বলবেন না।একে অন্যের বিপদে এগিয়ে না আসলে তাহলে আমাদের মনুষ্যত্ববোধটা আর কোথায় রইল বলুন?আচ্ছা এই অবস্থায় আপনারা বাসায় যেতে পারবেনতো?যদি বলেন তাহলে আমরা আপনাদের বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে পারি।”

আহাদ-“না, তা আর লাগবে না।এইতো আরেকটু হাঁটলে বাসায় পৌঁছে যাব। আপনাদেরও মনে হয় অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।তাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান।”

“আচ্ছা তাহলে সাবধানে বাসায় যান।আচ্ছা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা প্রশ্ন করি উনি আপনার কি হন?”

আহাদ-“আমার স্ত্রী”

“ও আচ্ছা।ভালো থাকবেন।আসি তাহলে।”
.
.
“কি ব্যাপার এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?আমাকে হেল্প কর?”
“ও সরি…..”

উনাকে ধরে অনেক কষ্টে বাসায় আসলাম।বাসার গেইটের কাছে আসতে দেখি মামণি,আর উনার পরিবার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আমাদেরকে দেখেই ওরা ভয়ে চিল্লিয়ে উঠল।

“তোদের শরীরে এত রক্ত কেন!? কি হয়েছে তোদের।”
“সব বলবো।আগে বাসায় চল।আমি তমাকে বাসায় দিয়ে আসছি।”
“লাগবে না,,, আমি একা যেতে পারব। আপনার অবস্থা খুব খারাপ।বাসায় যান।আমি ডাক্তার আংকেলকে কল করে আপনাদের বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আমার কথাটা শুনে উনি রাগি দৃষ্টিতে এখন আমার দিকে তাকালেন। এত মার খাওয়ার পরও উনার রাগ কি করে আসে আমি সেটাই বুঝলাম না।আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে আসল।আর আমাদের পিছনে মামণি,উনার পরিবার দৌঁড়িয়ে আসল।এই অবস্থায় উনার রাগটা কেন উঠল তা আমি বুঝতে পারলাম না।শুধু আমি কেন বাড়ির কেউও তা বুঝতে পারল না।

উনি আমার রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।এদিকে সবাই ভয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। সবাই দরজা খুলার জন্য বারবার উনাকে ডাকছিলেন।উনি অনেক রাগ নিয়ে দরজা খুলে বললেন,,

“ভয় পাওয়ার দরকার নেই।তমাকে আমি কিছু করব না।শুধু ওর মাথার ব্রেনটা ওয়াশ করব আজকে।দয়া করে আমাকে আমার কাজটা করতে দাও।এখানে ভিড় না করে তোমরা বাসায় যাও আর আন্টি আমার উপর ভরসা রাখ। তোমার ছেলে যা করছে তোমার আর তোমার মেয়ের ভালোর জন্যই করছে এই বলে খুব জোরে দরজাটা আটকিয়ে দিল।
.
.
এমনিতে আজকে যা ঘটল, এরপর সাদা জামায় রক্ত লাগায় তমার মাথাটা ঘুরছে। এরউপর উনার এত রাগ দেখে তমার এখন জান যায় যায় অবস্থা?

“তমা,,দাঁড়িয়ে না থেকে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আস?”

আহাদের এতটা শান্ত কণ্ঠ শুনে ওর হাত পা রীতিমতন কাঁপতে লাগল।এটা যে ঝড়ের আগের পূর্বাবাস ও তা ভালোভাবে বুঝতে পারছে।তাড়াতাড়ি করে ও ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসল।
আহাদ তমাকে বিছানায় বসার ইঙ্গিত করল।ও চুপচাপ আহাদের ইঙ্গিত পালন করে বিছানায় বসল।
আহাদ ওর হাতটা তমার দিকে এগিয়ে দিল।তমা বুঝতে পারল ওকে এখন কি করতে হবে।

“তমা!”
“জ্বী….. “কাঁপা গলায়।
“আজকে যে ছেলেটা তোমার হাত ধরে টানাটানি করছিল তোমার কি খুব ভালো লেগেছিল?”
“মানে,,আপনি পাগলের মতন কি বলছেন এসব?” আহাদের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে তমা কথাটা বলে ওর হাতের কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগল।

“কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল তোমার থেকে খুব ভালো লেগেছিল তাইতো ও যখন তোমার হাত ধরে টানাটানি করছিল তুমি কিছু করলে না?”
“আমি কি করতাম ওই মূহুর্তে। ওই শয়তানটার শক্তির সাথে পেরে উঠা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব? ”
“তাই নাকি?অসম্ভবও তো কিছু ছিল না।তোমার বিপদে যে মেয়েটা তোমাকে সাহায্য করতে এসেছিল সে কিভাবে ওই বখাটে ছেলেটাকে মেরেছ দেখেছ একবারো?”
“…….”
“ওই মেয়েটা তোমার সমবয়সী। তোমার বিপদ দেখে ও কিভাবে এগিয়ে এসে ওই ছেলেটাকে মারল।ওর সাহস ছিল বলে কাজটা করতে পেরেছে। বিপদে পড়লে প্রথমে নিজেকে নিজে সাহায্য করতে হয়।একটা ছেলে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তোমার হাত ধরে টানাটানি করবে আর তুমি কিছু না করে বেক্কলের মতন কান্নাকাটি করবে কেন? অন্যায় করছে ও আর কান্নাকাটি করবে তুমি!?ওই শয়তানটা যখনি তোমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছিল তখন ওর মেইন জায়গায় জোরে একটা লাথি মারতে পারলা না?এতটুকু কাজ তুমি নিজেকে সাহায্য করার জন্য করতে পারলা না।”

চুপচাপ বসে উনার কথা শুনছি আর উনার কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি ইতিমধ্যে। ভয়ে উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।বুঝতে পারলাম এইজন্য উনি এত রেগে ছিলেন।

আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লাম।

“আমি আসলে বুঝতে পারি নি তখন কি করতে হবে?নিজেকে তখন খুব অসহায় লাগছিল তাই কিছু ভাবতে না পেরে……….. “জোরে জোরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।

এর কিছু মূহুর্তের পর উনি আমাকে টান দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলেন।আমার দুই হাত উনার হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,,,
“এই সাহস নিয়ে তুমি তোমার মামণিকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে রাজশাহীতে গিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলে?এই সাহস নিয়ে!তুমি ৫ টা মাস মাস ওইখানে ছিল।তোমার মামণি,আমি, আমরা সবাই এই টেনশন করতাম তোমাকে নিয়ে। তুমি একা একলা একটা মেয়ে ওতদূর বান্ধবীর বাসায় থেকে কিভাবে পড়াশুনা করবে?কত রকমের বিপদ যে কোন সময় হয়ে যেতে পারে।তাই আমরা তোমাকে সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য নিষেধ করেছিলাম। এই আজকে এখানে যা কিছু হল না তা যদি ওইখানে হয়ে যেত তখন…..তখন কি করতে?কিভাবে নিজেকে তুমি বাঁচাতে।আজ আমি ছিলাম বলে হয়ত তোমাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনটাকে তুচ্ছ করতে আমার হাত পা কাঁপে নি ওইখানে তোমার সাথে এমন কিছু হয়ে গেলে কে তোমাকে বাঁচাতে আসতো।

আজ আন্টির এই যে অসুস্থ অবস্থা দেখছ না সব তোমার কারণে হয়েছে।বেচারি অনেক টেনশনে থাকত তোমাকে নিয়ে।মায়ের মন বলে কথা….কত কিছুই না চিন্তা না করত আর তুমি…….”
“………”
“আজকের পর থেকে যদি তুমি আমার অনুমতি ব্যতিত কোন কাজ কর তাহলে তোমার কি অবস্থা করব আমি নিজেও জানি না।এখন থেকে আমি যা যা বলব, যা যা করতে বলব ঠিক তাই করবে।”

তমা মাথাটা নাড়িয়ে আহাদের কথায় সম্মতি জানালো।
“আর আজকের পর থেকে বাইরে গেলে বোরকা পড়ে যাবা, মুখে নেকাব বাঁধবা।”
তমা আবারো মাথাটা নাড়ালো।

এবার আহাদের হুশ হল।ও দেখল তমার চোখ থেকে পানি পড়ছে।তমারও যে হাত কেটেছে তা আহাদ এতক্ষণে খেয়াল করেনি।বুঝতে পারলো ওর কাটা জায়গায় আহাদ আরো জোরে চাপ দিয়ে ধরায় তমার ব্যথা করছে।

তমাকে ছেড়ে আহাদ তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়ল।
“সরি,,, বুঝতে পারে নি এতটা ব্যথা পেয়েছ।আমি আন্টিকে ডেকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।”

আবার ফিরে এসে আহাদ তমাকে জড়িয়ে ধরল।
আজকে যা হয়েছে সব ভুলে যাও। মনে কর ওইটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।ওই বাজে স্মৃতি আর মনে করবে না।আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমাকে সবসময় পাবে। কখনো তোমাকে আমি একা ছাড়বো না।কিন্তু যদি কখনো আমি তোমার সঙ্গ দিতে না পারি তাহলে তুমি নিজেকে নিজে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবে।মরার আগ পর্যন্ত হার মানবে না।আর আল্লাহর কাছে এই দুয়া করি আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময় তোমার হাত দুটি ধরে যাতে একসাথে চলতে পারি সেই তওফিক উনি আমাকে দান করুক।
……
এরপর তমার কপাল আর চোখ দুটোয় চুমো দিয়ে আহাদ চলে গেল।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৬

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“………”
“এইরকম লুকে আপ…প..প….”বাকিটা কথা বেচারি আর বলতে পারলো না।কথাটা যেন ওর গলায় আটকে রইল।আহাদের ওই সময়কার রাগি চেহেরা, আর চোখ দুটি দেখলে তখন যে কেউ ভয় পাবে কারণ ওকে দেখতে এতই ভয়ংকর লাগছিল যে দেখবে সেই ভাববে এই বুঝি ওকে খুন করে ফেলবে।

তমা ভয়ে তাড়াতাড়ি করে চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলল।
আহাদ তমার শ্যামলা মায়াভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে বাকি গালটায় আরো জোরে কামড় বসাল।
“উফ্ফ……”
“এবার বলো পারবো না।কি হল বল?”

তমার বন্ধ চোখ দুটি থেকে নেমে আসা অশ্রু ওর গাল দুটি ভিজিয়ে দেওয়ার আগেই আহাদ ওর ঠোট দিয়ে অশ্রুগুলো চুষে নেয়।তমার গাল দুটি ধরে বলল,,,
“এখন থেকে তোমাকে সবসময় টাইট দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে।আগে দিপার বিয়েটা হয়ে যাক এরপর তোমার ব্যবস্থা আমি নিজে করব।”

আহাদের এইরকম অদ্ভূত কথার মানে তমা বুঝতে পারলো না।চোখ দুটি তাড়াতাড়ি খুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এই অদ্ভূত কথার মানে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল।
.
.
আহাদ ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রংয়ের গাউন বের করে তমাকে দিল।
“নাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।একটু পর মার্কেটে যাব।”
……
“কি হল?যাও…….”

আহাদের গলার কঠিন আওয়াজ শুনেইই তমা তাড়াতাড়ি গাউনটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

কিছুক্ষণ পর,,,,
তমার মায়াবী মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আহাদের রাগটা হঠাৎ করে আবার উঠে যায়।তড়িঘড়ি করে তমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তমা শুধু আহাদের এই পাগলামিগুলো মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে।কতটা পাগল হলে একটা মানুষ এভাবে আরেকজনকে মানুসিকভাবে অত্যাচার করতে পারে।সে কিছু বলতেও পারছে না কিছু করতেও পারছে না।কারণ আহাদ তমার উপরে রাগ দেখালে তার মা,আর আহাদের পরিবার কেন জানি কিছু না বলে, চুপচাপ থাকে।আর আহাদের সামনে ও যতই রাগ দেখানোর নাটক দেখাক না কেন ও যে আহাদকে ভিতরে ভিতরে কতটা ভয় পায় সেটা শুধুই ও জানে। ওর লাইফে যদি সবচেয়ে ভয়ের কিছু থাকে তাহলে তা হল আহাদ।কারণ ওর কারণে যদি একবার আহাদের রাগ উঠে যায় তাহলে ও যে কি থেকে কি করে ফেলতে পারে সে আন্দাজ তমার ভালোভাবে জানা আছে।সব রাগ তমার উপর দিয়ে ঝাড়বে তাও আবার তমার হাত আর গাল কামড়িয়ে।যেটা ওর কাছে সবচেয়ে ভয়ানক লাগে।তাছাড়া কালো চেহেরায় চরম রাগটা যখন আহাদের মুখে ফুটে উঠে তখন ওকে খুব ভয়ংকর লাগে।তাই মুখ বুঝে ওর অত্যাচার সহ্য করতে হয়।

শুধুমাত্র এই ব্যাটার কারণে ও রাজশাহী গিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল কারণ সে ২৪টা ঘন্টা গোয়েন্দার মতন তমার খোঁজখবর নিতে থাকে যেটা ওর কাছে অসহ্যের মতন লাগত।কিন্তু রাজশাহী থেকে এখানে আসার কারণে ওকে আবারো আহাদের অত্যাচারগুলো সহ্য করা লাগছে।তমা আদৌও জানে না আহাদের এই পাগলামো থেকে ও কবে মুক্তি পাবে।

.
.
আহাদ তমার রুম থেকে বেরিয়েই সোজা তমার সামনে এসে দাঁড়ালো।তমা তাড়াতাড়ি করে ওর গাল দুইটা দুই হাত দিয়ে ঢেকে রাখলো। এই বুঝি ওর অবুঝ গালে আহাদ আবারো কামড়িয়ে দিল সেই ভয়ে ।কিন্তু না,আহাদ সেটা না করে একটা কাটা দিয়ে ওর চুলগুলো বেঁধে দিল।

“চুল ছেড়ে আর বাইরে যাবে না কেমন?”
মাথা নাড়িয়ে ও আহাদের কথায় সম্মতি জানালো।

আহাদ ওর গাল থেকে হাত দুটি সরিয়েই বলল,”এইতো গুড গার্ল।আর শোন তোমার ভালোর জন্যই আমি তোমাকে এত বকি বুঝতে পারছ?যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার সব দায়িত্ব আমার।বিপদের কোন আঁচও তোমার শরীরে আমি লাগতে দিবো না।আর হ্যা আমি এতোও খারাপ না যে তোমার স্বাধীনতা কেড়ে নিবো।বিকালে ছাদে ঘুরবে ভালো কথা কিন্তু একা না।নিপাকে সাথে নিয়ে যাবে।”
আবারো মাথা নাড়িয়ে তমা আহাদের কথায় ওর সম্মতি জানায়।

আহাদের কথা শুনে তমার পুরানো কথাগুলো আবার মনে পড়ল।”যতদিন বেঁচে আছি তোমার সব দায়িত্ব আমার। বিপদের কোন আঁচও তোমার শরীরে লাগতে দিবো না।” …….ঠিক এরকম কথা ওকেও একদিন তানভীর বলেছিল!কিন্তু…….

“তমা এত কি ভাবছ?”
“কিছু না,”
“আচ্ছা চল তাহলে,, নাহলে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে।মেয়ে মানুষ নিয়ে এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকাটা অনেক বিপদজনক। তাই তাড়াতাড়ি রওনা দিতে হবে।”
“হুম, আমি তা ভালোভাবেই জানি।চলুন।”
.
.
“আন্টি আসি তাহলে,,”
“হুম যা,, আহাদ বেশি রাত করিস না।বুঝিসই তো সবি।”
“হুম আন্টি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। চিন্তা কর না।”
মুখে হাসি এনে,,”সাবধানে যা তাহলে,,”

“তমা গাড়িতে না,,আমরা রিক্সায় করে যাব।”
“কেন?”
“গাড়িতে এতজনের জায়গা হবে না।মা,দিপা,নিপা আর কাজিনরা গাড়িতে উঠেছে। ওরাও মার্কেটে যাচ্ছে।তাই আমরা দুইজন রিক্সা করে যাব।”

আহাদের কথাটা শুনেই তমার রাগ উঠলেও তা ওকে বুঝতে দিল না।ও এখন বেশ ভালোই বুঝতে পারছে আহাদের এইধরণের চালাকি করার কারণটা কি?মেয়ে মানুষ দেখলেই মাথা ঠিক থাকে না।শুধু বাহানা খুঁজে সুযোগ নেওয়ার,ঢলাঢলি করার।হয়ত পুরুষ জাতিটাই এমন……

রিক্সায় ও খুব সাবধানতার সাথে বসল।যাতে আহাদের গায়ের সাথে ওর গা না লাগে।
“আরে এত দূরে বসছ কেন?পড়ে যাবা তো?”
“সেটা আপনার না দেখলেও চলবে।”
“তোমাকে আমি নিজের দায়িত্ব মনে করে এখানে নিয়ে আসছি।এইভাবে বসলে এখন নিশ্চিত একটা এক্সিডেন্ট হবে।তারপর মেডিকেলে তোমাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।মার্কেটে যেতে গিয়ে যদি এখন তোমাকে নিয়ে মেডিকেলে দৌড়াতে হয় তাহলে মার্কেট করাটায় আজকে হবে না।কোন সিন ক্রিয়েট না করে আরেকটু কাছে এসে বস।”

তমা তখনো চুপ করে নিজের জায়গায় বসে ছিল।
ওর মাথায় তখনো শুধু একটা কথায় ঘুরছিল…..সব পুরুষই এক।

তমাকে এরকম নিশ্চুপভাবে বসে থাকতে দেখে আহাদ তমার কোমড়টা ধরে ওর কাছে নিয়ে আসলো।আহাদ এইরকমটা করবে ও ভাবতেও পারে নি। তমা তখন ঘৃণাভরা চোখে আহাদের দিকে তাকালো। আর আহাদ ও এমন ভান করে অন্যদিকে তাকাল যেন ও কিছুই জানে না।
.
.
অলরেডি আহাদের পরিবার থেকে যারা এসেছিল তাদের মার্কেট করা হয়ে গেছে।কিন্তু তমা আর আহাদের আরো কিছু কিনার বাকি ছিল।তাই আহাদ ওর মাকে কল করে জানিয়ে দিলো যে,,ওদের আসতে একটু দেরি হবে।সবাইকে টেনশন করতে নিষেধ করে দিল।

এরপর ওরা মার্কেট করা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল অনেক দেরি হয়ে গেছে।বাসায় যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে তাই রেস্টুরেন্ট থেকে আগে খেয়ে নিল।এরপর যে গাড়ি করে ওরা আসছিল তা পথের মধ্যে হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল।রাস্তায় অনেক গাড়ি-ঘোড়া থাকলেও সেখানে যাত্রী থাকার কারণে কোন খালি গাড়ি তারা পাচ্ছিল না।তাই বাধ্য হয়েই ওরা হাঁটা ধরল।

বাসায় যাওয়ার জন্য ওরা রাস্তার গলি ধরে হাঁটছিল।সেখানটা প্রায় অন্ধকার।এরকম অন্ধকার নির্জন জায়গায় হাঁটতে গিয়ে তমা বেশ ভয় পেল।এই বুঝি কিছু একটা অঘটন ঘটে গেল।তমার চেহেরার এক্সপ্রেশন দেখে আহাদ বুঝতে পারল,,এইরকম নির্জন অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে ও খুব ভয় পাচ্ছে।তাই ওকে স্বাভাবিক করার জন্য আহাদ বলল,,
“কি ব্যাপার তমা ভয় পাচ্ছ?”
“না,….কাঁপা গলায়।”
“ভয় নেই।আমি আছি।হাত ধর আমার। তাহলে আর ভয় লাগবে না।”
“না, আমি ঠিকাছি।”
.
.
রাস্তায় কিছু বখাটে ছেলে হঠাৎ ওদের সামনে পড়ল।ওরা রাতের অন্ধকারের রাস্তায় মদ আর জুয়া খেলায় ব্যস্ত।তমাকে দেখে ওদের কয়েকজন শিস বাজানো শুরু করল।এরপর বেশ জোরে জোরে খাঁটি বাংলা গান ধরল।

বখাটে ছেলেদের এইরকম ব্যবহার দেখেই তমা ভয়ে আহাদের হাত খুব জোরে খামচে ধরল।

“তমা তাড়াতাড়ি হাঁট।”
আহাদের কথামতো তমা আহাদের হাত শক্ত করে ধরে হাঁটা শুরু করল।
তমা আর আহাদের জোরে হাঁটা দেখেই ওরা যেন খুব মজা পেল।তাড়াতাড়ি করে ওরা তমা আর আহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

“কি ব্যাপার,, এই মা* নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
“সাবধানে কথা বলুন।”
“ওরে দেখ দেখ,, ব্যাটার কি রাগ?এই অন্ধকার নির্জন জায়গায় এসে এত সুন্দর একটা মা* নিয়ে অপকর্ম করতে আসে আবার রাগও দেখায়।ওই এই ব্যাটারে আগে ধর তারপর ওই মাইয়াটার খবর নিতাছি।রাতবিরাতে হাত ধরাধরি করে রাস্তায় ফষ্টিনষ্টি করতে আসে তাতে দোষ নাই আর আমরা কিছুই কইলেই দোষ।এখনোতো কিছুই করি নাই এরপর তোর সামনেই যখন এরে নিয়ে…….”

কথাটা আহাদ আর শেষ করতে দিল না।কারণ ততক্ষণে আহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।ও রাগে হাত মুঠো করে এদের দলের লিডারের মুখে একটা ঘুষি দিল।

“আমার বউকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলস।আমার বউকে নিয়ে আমি যা খুশি করব তাতে তোদের কি?রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলেই তোদের মাথা খারাপ হয়ে যায় না?আজকে তোকে মেরেই ফেলবো।”
ততক্ষণে আহাদের হাত আরো দুইজন ধরে ফেলেছে।এতজনের সাথে মারামারিতে আহাদ পেরে উঠল না।ওদের হাত থেকে প্রচুর মার খেতে লাগল।

এত নোংরা কথা আর আহাদকে এত মার খেতে দেখে তমা প্রায় চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদতে লাগলো। কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।প্রথম প্রথম যখন এই বখাটে ছেলেগুলো ওদের রাস্তা আটকায় তখন ও ধরেই নিয়েছিল আজকে হয়ত ওকে এই বখাটেরা ছিঁড়ে খাবে।হয়ত আহাদ এদের ভয়ে তমাকে ফেলে চলে যাবে।আর এরা তখন তমাকে দিয়ে ওদের শরীরের ক্ষুধা মেটাবে। এই কথা ভেবে ও নিজেকে নিয়ে প্রথমে কাঁদতে লাগলেও পরে ওকে অবাক করে দিয়ে যখন আহাদ ওর পাশে দাঁড়ালো, তমার জন্য দলের লিডারের সাথে মারামারি করতে লাগলো তখন ও পাগলের মতন চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আহাদের জন্য কান্না করতে লাগলো

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৫

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

মেয়ের কথার আওয়াজ শুনতে না পেয়ে অনেকটা ভয় গেল মেঘ।তাড়াতাড়ি করে লাইটটা জ্বালাতে গেলে তমা ওর মায়ের হাতটা ধরে ফেলে।

“মামণি লাইটা জ্বালানোর দরকার নেই।এমনে ভালো লাগছিল না তাই লাইট অফ করে রেখেছি।এত ভয় পেতে হবে না।”
“ও আচ্ছা।কি হয়েছে তোর যে ভালো লাগছে না।শরীর খারাপ নাকি?”
“না,”
“তাহলে,,”
“মামণি তুমি এত প্রশ্ন কর কেন?রাতের খাবার খেয়েছ?”
“খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই তো খাস নাই তাই তোকে ডাক দিতে এসেছি।চল,টেবিলে ভাত বেড়ে দিই।”
“না, মামণি খাবো না।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।খিদে নেই।তুমি বরংচ খেয়ে নাও।নাহলে আবার অসুখে পড়বে।এমনেতেই অসুখে পড়লে তোমার অসুখ আর ছাড়তে চায় না।”

“আচ্ছা না খেলে চুপচাপ করে শুয়ে যা। আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না”এই বলে মেঘ ওর রুমে চলে গেল।

কিন্তু মা আর মেয়ের এই দুইজনের বুকে যে গোপন কষ্ট ছিল তা ওরা একে অপরের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল।কেবল তাদের চোখের গোপন অশ্রু এই কষ্টের সাক্ষী হিসেবে রইল।
.
.
এর কয়েকদিন পর,,

“আন্টি,, তমা কোথায়?”
“ছাদে গেছে মনে হয়।”
“ও আচ্ছা শোন তুমিতো জানো দিপার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।ওর বিয়ের অনুষ্ঠান আমাদের গ্রামে বাড়িতে করছি।আমরা কালকে পরিবারের সবাই মিলে বাড়িতে যাচ্ছি। তাই তুমি আর তোমার মেয়ে ও কালকে আমাদের সাথে সকালে রওনা দিবে বুঝলে…..।কোন ধরণের Excuse কিন্তু চলবে না সেটা আমি আগেই বলে দিলাম।আর এখন তোমার মেয়েকে নিয়ে আমি মার্কেটে যাব।পারমিশন দাও।”
“আচ্ছা নিয়ে যাস।”
“মুচকি হেসে,এইতো লক্ষ্মী আন্টি।”
“আচ্ছা আমি ওকে ছাদ থেকে ডেকে নিয়ে আসছি।”

ছাদে গিয়ে দেখি ওর হাতে গিটার।লম্বা খোলা চুলগুলো বারবার বাতাসের কারণে ওর চোখে মুখে এসে উপচে পড়ছে।কিন্তু ওর মধ্যে অবাধ্য চুলগুলোকে সরানোর কোন লক্ষণই দেখছি না।এইরকম দৃশ্যের একটা ছবি মোবাইলে তুলে রাখলে মন্দ হয় না।চটপট এই দৃশ্যের একটা ছবি তুলে ফেললাম।

.
.
ও গিটারে একধ্যানে গানের সুর তুলছে।আন্টির কাছে শুনেছিলাম তমার বাবাও নাকি অনেক ভালো গিটার বাজায়।তমা হয়ত সেই গুণটাও পেয়েছে।দাঁড়িয়ে থেকে চুপচাপ ওর গিটার বাজানো শুনছি।হঠাৎ ও একটা গান ধরল:-

খোদায়া ভে হায়……ইশকেহে কেসা ইয়ে আজিবরে(||)

দিলকি কারিব লায়া দিল্কা নাসিবরে(||)

খোদায়া ভে হায়……ইশকেহে কেসা ইয়ে আজিবরে(||)

আখোসে খাব রুঠে
আপনোকে সাথ জুঠে
তাকতি হো ইয়ে রাহুমে
পেরোকি ছালে বুঠে(||)
পায়েসে তারাপ রাহে
সাহিল কারিব রে(||)

খোদায়া ভে হায়……ইশকেহে কেসা ইয়ে আজিবরে(||)

.
.
“কি ব্যাপার গান বন্ধ করলে যে।ভালোই তো গাচ্ছিলে।”
“আরে আপনি?কখন এলেন?”
“যখন তুমি গিটারে গানের সুর তুলছিলে ঠিক তখন এলাম।আরে,,,এইটা ওই গিটারটা না।”
“হ্যা।ওই গিটারটা।”
“এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছ দেখছি।”
“মুচকি হেসে।হ্যা রেখেছি।কোন বয়স্ক লোক ভালবেসে এই গিটারটা আমাকে আমার জন্মদিনে গিফট করল।উনার নিজের মেয়ে এখন কাছে নেই তাই আমাকে তার নিজের মেয়ে মনে করে তার সবচেয়ে প্রিয় গিটারটা আমাকে দিয়ে দিল তাহলে এই গিটারের অযত্ন কিভাবে করি?”
“হুম, কিন্তু লোকটার নামটা ঠিকভাবে জানতে পারলাম না।”
“হ্যা, সেটাই।ভাগ্যিস গিটারে উনার নামটা লিখা ছিল তাই পরে দিয়ে নামটা জানতে পেরেছি নাহলে নামটাও অজানা রয়ে যেত।”

তমা গিটারের গায়ে লিখা তন্ময় নামটা আলতো করে ছুঁয়ে দেখল। ওর কাছে বারবার মনে হচ্ছে নিজের ওর আপন মানুষের হাতের ছোঁয়া এই গিটারে লেগে আছে।
.
.
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তমার সাথে কথা বলার সময় উপর থেকে খেয়াল করলাম রাস্তায় একটা ছেলে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।একে রোজ একি টাইমে একি জায়গায় দেখতে পাই।প্রথমে বিষয়টা না বুঝলেও এখন আমার কাছে সব ক্লিয়ার।ব্যাপারটার সমাধান আজকেই করতে হবে।

“তমা বাসায় যাও। ”
“কেন?এখানে তো বেশ লাগছে।”

রাগী চোখে ওর দিকে তাকালাম।ওর অনেক কাছে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে জোরে একটা কামড় দিলাম।

“উফ,কি করলেন এইটা?এত জোরে রাক্ষসের মতন কামড় দিলেন কেন?রাক্ষস একটা…… “সেও অনেকটা রাগ নিয়ে কথাটা বলল।
“বেশি কথা বললে আরেকটা গাল বাকি আছে ওইখানেও কিন্তু কামড় দিয়ে দিবো। তোমাকে বাসায় যেতে বলছি সুতরাং বাসায় চলে যাবা এত প্রশ্ন কর কেন?”
“আজব লোকতো একটা।আপনার কথামত চলতে হবে কেন ?”

ওর চুলির মুঠি এবার শক্ত করে ধরলাম।
“এই মেয়ে শোন কোন কারণ ছাড়াতো আর এমনি এমনি বাসায় যেতে বলছি না।কারণ একটা অবশ্যই আছে। চোখ কানতো কিছুই খোলা রাখ না তাই কিসের জন্য এই কথা বলছি বুঝতে পারছ না।ভালোভাবে আমার কথা এখন না শুনলে আমি কিন্তু উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবো।তখন কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।”

এই কথা শুনে ওর চোখ-মুখের চাহনি অনেকটা ভয়ার্ত হয়ে গেল তা বেশ বুঝতে পারছি।আমার অন্য কথার মানে ওর মাথার গিল্লুতে না ঢুকলেও এই কথার মানে ও বেশ বুঝতে পেরেছে তাই চুপচাপ আমার কথা মেনে নিয়ে বাসায় চলে গেল।
.
.
রাস্তায় গিয়ে ওই ছেলেটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
দেখলাম ছাদের দিকে বারবার উঁকিঝুকি মারছে।রাগটা আরো বেড়ে গেল।তারপরও অনেক কষ্টে নিজের রাগকে কন্ট্রোলে আনলাম।

“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ?!

কারোর গলার আওয়াজ শুনে ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেল।এরপর আহাদকে দেখেই বলল,

“আমাকে কিছু বলছেন?”

আহাদ চারিদিকটা চোখ দিয়ে ভালোভাবে বুলিয়ে নিয়ে চোখ দুটি বড় বড় করে এবার বলল,”এখানে আমি আর তুমি ছাড়াতো তৃতীয় কাউকে দেখছি না।তাহলে বুঝতেই পারছ প্রশ্নটা কাকে করেছি।”
“ও আচ্ছা।আসলে এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আসছি।এখানের সবকিছুই বেশ সুন্দর।”কথাটা বলে লজ্জামুখে ছেলেটা একটা হাসি দিল।
“তাই নাকি?ভ্রু কুচকে আহাদ প্রশ্নটা করল?তা এখানে কি এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে যে রোজই একি জায়গায় এসে তোমার দাঁড়িয়ে থাকতে হয়?” প্রশ্নটা এবার ও বেশ কঠিন গলায় করল।
“মানে এখানের দোকান,, গাছ, বাড়ি, ছাদ….বলে জিহবায় কামড় মারলো,মানে…… বাড়ি,গাড়ি এইগুলা আর কি…..”বলে হাত দিয়ে গলা চুলকাতে লাগলো।
“আর ছাদের উপরে দাঁড়ানো মেয়েটা…. ওকে কেমন লাগে?”
“বেশ সুন্দর….”আস্তে করে কথাটা বলে ছেলেটা মুচকি হাসলো।

এবার ছেলেটার কলার খুব শক্ত করে ধরে আহাদ বলল,,”আমি বয়রা না যে আস্তে করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে আমি তা শুনতে পাবো না।কি উদ্দেশ্য এখানে আসা হয় মনে হয় আমি তা বুঝি না।”
“ভাইয়া,,, আমি মেয়েটাকে ভালবাসি।”এবার খুব সাহস করেই ছেলেটা কথাটা বলল।
.
.
এবার ছেলেটার কলার ছেড়ে দিয়ে আহাদ খুব শান্ত গলায় বলল,,”হুম বুঝলাম।কিন্তু কাউকে ভালোবাসতে হলে প্রথমে তাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় এই কথাটা মনে হয় তুমি জানো না।আমার মনে হয় তুমি অনার্স লেবেলের স্টুডেন্ট। এখনো কোন চাকরি কর না।ভালোবাসা দিয়েতো আর সারাজীবন পেট ভরবে না।সেজন্য কাউকে ভালোবাসার আগে প্রথমে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।একটা কথা নিশ্চয় তোমার জানা আছে,”অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।” ”
“ভাইয়া আমি অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ি।কয়েক বছর পর আমি ঠিকইই ভালো একটা চাকরি পাবো তাতে কোন সন্দেহ নাই।এই যোগ্যতা আছে বলে আমি আশা করি।যাকে ভালবাসি তাকে অনেক হ্যাপী রাখতে পারবো।”
.
.
ছেলেটার কথাটা শুনে আহাদের এবার মনে মনে খুব হাসি পেল। কোন রকমে ও হাসিটা অফ করে রেখেছে।

“তুমি মনে হয় শফিক আংকেলের ছেলে রাফী তাই না?”
“হ্যা”
“হুম।শোন পড়াশুনা কর ভালো কথা।কিন্তু আজকালকার বাজারে পড়াশুনা করলেই ভালো চাকরি পেয়ে যাবা…কথাটা অনেকটা মামার বাড়ির আবদারের মতন হয়ে গেল তাই না?এটা কোন টিভি সিরিয়ালের নাটক বা সিনেমা না যে পড়াশুনা কর বলেই তুমি অবশ্যই ভালো একটা চাকরি পেয়ে যাবে। তোমার মত অনেক ভালো স্টুডেন্টই পড়াশুনা করে কই সবাই কি ভালো পোস্টে চাকরি করছে।ভালো চাকরি পেতে হলে অনেক পরিশ্রম,আর সেখানেই ফোকাস করতে হয়।এটা অনেকটা সময়ের ব্যাপার।আল্লাহ সহায় থাকলে ভালো চাকরি পেয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে সবসময় সুখী রাখতে হলে আগে যোগ্যতাটা অর্জন কর,ভালো মানুষ হও তারপর যাকে খুশি তাকে ভালোবাসো আমার কোন আপত্তি নেই এই উপদেশটা আমি একজন শিক্ষক হিসেবে একজন ছাত্রকে দিলাম।যদি আমার উপদেশ তোমার ভালো না লাগে তাহলে you can avoid it.তোমার পার্সোনাল লাইফ তুমি যা খুশি করতে পারো যাকে খুশি তাকে ভালোবাসতে পারো তাতে আমি বাধা দিবো না। কিন্তু ওই মেয়েটা বাদে।”
“কেন?”
“কারণ She is my wife.”
“কিহ!?আপনি কবে বিয়ে করেছেন?আমরাতো কিছুই জানি না।”
“ঘরোয়াভাবে বিয়ে হয়েছে।এখনো অনুষ্ঠান করে তোমার ভাবিকে ঘরে তুলে আনেনি।অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলে সবার আগে আমি তোমাকে আমাদের বিয়ের কার্ডটা পার্সোনালভাবে দিয়ে আসবো কেমন?
আর হ্যা এতক্ষণ আমি তোমাকে ভালোভাবে কথাগুলো বুঝালাম কারণ প্রথমত আমি কারোর সাথে প্রথমে খারাপ ব্যবহার করিনা।এটা আমার একটা ভালো গুণ।এরপর থেকে আর কোনদিনও যদি আমি দেখি এখানে দাঁড়িয়ে আছ তাহলে আমার খারাপ রুপটা দেখতেও তোমার বেশি সময় লাগবে না।এই এলাকায় এতদিন ধরে আছ, তাহলে নিশ্চয় জানা হয়ে গেছে আমি যেমন খুব ভালো তেমনি খুব খারাপও।”
জ্বী, ভাইয়া,বুঝি গেছি।আর বুঝাতে হবে না।আসি তাহলে,,আসসালামু আলাইকুম।
.
.
“আরে,,, করছেনটা কি?দরজাটা বন্ধ করছেন কেন?”ভীত কন্ঠে তমা কথাটা বলল।

আহাদ ওর কোন কথার উত্তর না দিয়েই তমাকে একটানে নিজের কাছে এনে খুব শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরল।

তমা বেশ ভালোই বুঝতে পারল,, কোন একটা কারণে উনার রাগ উঠেছে তাই এখন ওর উপর দিয়েই উনি সব রাগ ঝাড়বে।

তমার ঘাড়ে হালকা একটা কামড় দিয়েই সেখানেই মুখটা রেখে আহাদ বলতে শুরু করল,,”আজকের পর থেকে আর বিকালে ছাদে যাবে না।”
“কেন?কি হয়েছে?”(ভীত কন্ঠে)
“কারণ আমি বলছি তাই।এখন থেকে আমি যা বলব ঠিক তাই শুনবে।তোমার কাছে খারাপ লাগলেও শুনতে হবে।”
“পারবো না”
পারবো না কথাটা শুনেই আহাদ এবার তমার ঘাড় থেকে মুখটা সরিয়ে ওর চোখে রাগিভাবে তাকালো।আহাদের রাগি চেহেরাটা দেখেই তমার মুখটা ভয়ে শুকিয়ে গেল।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৪

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তন্ময়ের ছবিটা বুকের মধ্যে রেখে মেঘ শুয়ে রইল।
ওর সাথে কাটানো রঙ্গিন মূহুর্তগুলো এখন চোখে ভাসছে।

“আমার বাবুর আম্মু কি করছে?”
“বাবুর আব্বু কি চোখে কিছু দেখে না।গাছে পানি দিচ্ছি। এখন ছাড়ো তো কাজ করছি।”
“উহুম এখন ছাড়া যাবে না।আমার এখন বাবুর আম্মুর সাথে রোমান্স করার ইচ্ছা করছে।এই বলে আরো শক্ত করে ও জড়িয়ে ধরল।”
“এই ছাড়ো তো সময় অসময় নাই উনার রোমান্স করতে ইচ্ছা করছে তাই বলে এখানে চলে এল।সবসময় এইসবের মুড থাকে না।”
“আচ্ছা।তাই না?আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়েছ না?দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

কিছুক্ষণ পর,,

পানির পাইপ নিজের কাছে এনে,,”আশ্চর্য পানি আসছে না কেন?”
“তন্ময় তুমি পানির পাইপের ওপর কেন দাঁড়িয়ে আছো?সরে আসো ওইখান থেকে।”
“আমার ইচ্ছা।তাতে তোমার কি?”
“আরে তুমি এইভাবে এভারেস্ট পাহাড়ের মতন পাইপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকলে গাছে পানি দিবো কি করে?ছোট বাচ্চাদের মতন এই রকম দুষ্টুমি না করে সরে আসো।”
“আচ্ছা। যেমন তোমার ইচ্ছা।”এই বলে ও সরে আসলেই হঠাৎ করে পানির পাইপ হতে পানি বের হয়ে আসে আর আমি পুরো ভিজে গোসল করে ফেলি।এই দৃশ্য দেখে তন্ময়ের কি হাসি!
“এখন গাছে বেশি করে দাও বলে আরো জোরে জোরে শয়তানি ভাবে হেসে উঠল।
“এই তুমি এটা কি করছ?”
“কি করছি।”(না জানার ভান করে)
“কিছুই জানো না তাই না।দাঁড়াও” বলে ওকেও ভিজিয়ে গোসল করিয়ে দিলাম।

“মেঘ আমাকে এইভাবে ভিজালে কেন?”
“বেশ করেছি।তুমি পারলে আমি কেন পারবো না।
আমি ফাজলামি করলে যত দোষ আর তুমি করলে কিছুই না।”

“হিহিহি করে শয়তানিমার্কা হাসিটা আবার দিল।”
“এই তুমি এত কাছে আসছ কেন?দেখো আমি পুরো ভিজে গেছি। এখন কোন দুষ্টুমি হবে না।”
“এই কথা বললে তো আমি আর মানবো না সুন্দরি।আমিতো কাছে আসবেই।”
“ওই ভালো হবে না কিন্তু। আমি,,আমি তোমাকে……”বলে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম।
“হুম হুম আমিও দেখতে চাই কি করতে পারো তুমি…..হাহাহা……এই বলে ওর ঠোটের অনেক কাছে আসলাম।
.
.
“তন্ময় করছেনটা কি?”

তন্ময়”-ওহ আমাদের এই রোমান্টিক মূর্হুতে কাবাবের হাড্ডি হতে কে আসছে?(বিড়বিড় করে) পুষ্প তুমি!”
“হ্যা আমি। কি করছিলেন আপনারা।” (হাঁপাতে হাঁপাতে)
মেঘ- “পুষ্প তুমি হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে এখানে আসলে যে।”
“না কিছু না।তন্ময় আপনার কাছে কি সময় হবে?আসলে বাসায় একাএকা ভালো লাগছে না।আমার সাথে ঘুরতে যাবেন। ”
“ওকে নো প্রবলেম।চল।মেঘ আমি ওকে নিয়ে হেঁটে আসছি।তাড়াতাড়ি চলে আসবো “এই বলে আমার গাল ছুঁতে গেলে পুষ্প ওর হাত ধরে টেনে আমার কাছ থেকে সরিয়ে আনে।
“কি করছেনটা কি?চলেন নাহলে দেরি হয়ে যাবে।”

পুষ্পের এইধরণের ব্যবহারে খুব খারাপ লাগতো তখন। মনে হত ও আমাদের মাঝে সবসময় দেয়াল তৈরি করছে চাইছে।যখনি আমি আর তন্ময় রোমান্সের মুডে একে অপরের কাছে চলে আসি ঠিক তখনি জানি না ও কোথা থেকে এসে পড়ে।ও অনেকটা মানুষিক টাইপের রোগী ছিল যার কারণে কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারতাম না।মনের ভিতরে সব কথা রেখে দিতাম।
.
.
“বৌমা এত রাত হয়ে গেল তন্ময় এখনো আসেনি।”
“না আম্মু,”
“মেঘ, এত রাত পর্যন্ত একটা অবিবাহিত মেয়ের সাথে এভাবে তন্ময়ের বেড়ানোটা আমি ঠিক চোখে দেখছি না।প্রায়ই এই মেয়ে তন্ময়কে নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।এই জিনিসটা কিন্তু মোটেও ভালো নয়।পুরুষ মানুষ যদি ঘরে বউ রেখে অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে এত রাত বিরাত করে ঘুরে বেড়ায় তাহলে কি অঘটনটা ঘটতে পারে বুঝতে পারছ ব্যাপারটা?”
“আম্মু আমি তন্ময়কে বিশ্বাস করি।ও এমন কিছু করবে না যাতে আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা হয়।”
“মারে,বিশ্বাস ভালো, কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস সেটা অনেক ভয়ানক।পুরুষ মানুষকে অন্ধ বিশ্বাস করতে নেই।এরা যদি একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আর অন্য মেয়ের দ্বারা মোহিত হয়ে পড়ে তাহলে সোনার সংসারটা ভাঙ্গতে এক সেকেন্ডও লাগবে না।তোমার শুশুড়কে সবসময় আমি নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি তাই ওর ভালাবাসাটা শুধু আমাকে ঘিরেই ছিল কিন্তু তুমি তন্ময়কে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না রেখে ও যা করছে তাই করতে দিচ্ছ,কোন বাজে বাধা দিচ্ছ না এটা একজন স্ত্রী হিসেবে তুমি মোটেও ঠিক করছ না।ওকে নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা কর আর ওই মেয়েটাকে বলবা ওর থেকে যাতে দূরে থাকে।”
“জ্বী আম্মু।”
.
.
শাশুড়ি মার কথাগুলো সেদিন আমাকে অনেক ভাবালো।পুষ্পের সাথে তন্ময়ের চলাফেরাটা আমার এমনিতেই অনেক আগে থেকে ভালো লাগত না আর এখন এইসব কথা শুনে মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিলো। তন্ময়কে হারনোর ভয়।

জানালার ধারে অনেকক্ষণ ধরে চেয়ে আছি তন্ময় কখন আসবে?এরপর জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম পুষ্প তন্ময়ের হাত আটকিয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে কিস করেছে।এই দৃশ্য দেখেই মাথাটা দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেল।

অনেক রাত করে তন্ময় বাসায় আসলে ওর গাল আর শার্টে লাল লিপিস্টকের দাগ দেখে সেদিন আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি আমি।মনের ভিতরে যা ছিল তাই সরাসরি বলে ফেললাম।
.
.
“আজ এত দেরি হল যে বাসায় আসতে?”
“আরে বলনা, পুষ্প মেয়েটা আস্ত পাগলী।ওর সাথে না মিশলে বুঝতাম না।আজ অনেক জায়গায় ঘুরেছি ওকে নিয়ে।অনেকদিন পর এত ঘুরাঘুরির পর মোডটা ভালো হয়ে গেল।”
“হ্যা, সেটাতো নিজের চোখে দেখতে পারছি।”
“মানে,,”
“মানে এ কয়েকদিন ধরেই দেখতে পারছি মেয়েটার সাথে তোমার ঘুরাফেরা অনেক ভালো লাগছে।এজন্যিতো এত রাত করে বাসায় এসে পড়ার পরও এত জোরে জোরে হাসাহাসি হচ্ছিল।আর আজকে বাসার সামনে এসে ও তোমাকে কিস করল মোডতো বেশ ভালোইই হবার কথা। এত যদিই ওর সাথে ঢলাঢলি করতে ভালো লাগে তাহলে এখানে কেন আসছ?ওর বাসায় গিয়ে একরুমে ওর সাথে রাতটা কাটিয়েই আসতে পারে?”
.
.
এ কথাটা শুনা মাত্র তন্ময় সেদিন অনেক জোরে আমাকে থাপ্পড় দিলো।টেবিলে মাথাটা ঠেকায় কপালটা অনেক ফুলে গিয়েছিল।কিন্তু তন্ময়ের সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না।

“কি বলছ এইসব। Mind your language, Megh.”

“ও এখন আমার উচিত কথা শুনতেও খারাপ লাগছে।আমি জানি আমাদের সাংসারিক জীবনের এই কয়েকবছরে আমি তোমাকে কোন সন্তান দিতে পারেনি।এইজন্য প্রায় তুমি আপসেট থাকো।এই বিষয় নিয়ে আমি নিজে অনেক দুঃখ পেলেও সবসময় তোমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে আসছি।প্রথম প্রথম পুষ্পের সাথে মিশতে দেখে তোমাকে একটু একটু হাসতে দেখতাম তাই পুষ্পের সাথে তোমার মিলামিশাকে আমি কখনো খারাপ নজরে দেখি নি।কিন্তু এখন ওর সাথে তোমার মিলামিশাটা আমার কাছে একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ মনে হচ্ছে।”
“মেঘ চুপ থাকো।নাহলে আমি কি করে ফেলবো আমি নিজেও জানি না।”
“নিজের স্ত্রীকে বাসায় রেখে অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে মিশতে, কথা বলতে, ঘুরতে এত ভালোইই লাগে তোমার!কয় আমার সাথে তুমি যখন মিশো তখন তোমাকে তো এতটা খুশি দেখায় না।এই বলতো তোমাদের সম্পর্কটা শুধু কিস পর্যন্ত নাকি আরো অনেক গভীরে?”
“মেঘ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।আমার সহ্যক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।আরেকটা আজেবাজে কথা বললে আমি,,,”
“শার্টের কলার ধরে এই কি করবে তুমি,হ্যা….কি করবে।আমার গায়ে হাত তুলবে তুমি।তোল হাত তোল দেখি। সেটাইতো পারবে এখন।সত্যি কথা বললে এমনিতেই পুরুষদের সহ্যক্ষমতা হারিয়ে যায়।তখন মেয়েদের গায়ে নির্লজ্জের মতন হাত তুলতেও তোমাদের দ্বিধাবোধ জাগে না।আমি জানি না আমি আর কোনদিনও মা হতে পারবো কিনা?এই দুঃখটা আমার সবসময়ের জন্য থাকলেও আমি শুধু একটা বিষয় ভেবে খুশি হতাম আর তা হচ্ছে আমার কাছে আমার তন্ময়ের ভালোবাসা আছে।আমার দুঃখ ভুলার জন্য তোমার ভালবাসাটাই আমার কাছে যথেষ্ট।এমন অনেক মানুষ আছে যাদের অনেক দেরিতে সন্তান হয় বা সারাজীবনটা পাড় হয়ে গেলেও সন্তান হয় না।কিন্তু সেই দম্পতিদের ভালোবাসা সত্যিকারের হলে তাদের সন্তান না থাকলেও ভালোবাসাটা অটুট থাকে।কিন্তু আমাদের বিবাহিত জীবনের সম্পর্কটা মাত্র সাড়ে চার বছরের।সন্তান দিতে না পারায়,আগের থেকে চেহেরাটা অনেক খারাপ হয়ে যাওয়ায় এখন আর আমাকে ভালো লাগে না তাই না?ওই মেয়েটাকে ভালো লাগে। এই বললা নাতো তোমাদের সম্পর্কটা কতটা গভীরে।সব হয়ে গেছে না তোমাদের মধ্যে।ওহ শিট আমি বেক্কলের মত কি প্রশ্ন করছি, আমার প্রশ্নের সত্য উত্তর দেওয়ার সাহস আছে তোমার? ওই মেয়েটা আমাদের বাসায় এসে আমার সামনেই তোমাকে জড়িয়ে ধরে,কিস করে তার মানে আড়ালেও অনেককিছু হয়ে গেছে তোমাদের মধ্যে। ইউ…. ক্যারেকটারলেস একটা।”
.
.
চিৎকার দিয়ে উঠলাম।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা শুরু করল।পুরো শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।আবার এই স্বপ্নটা দেখলাম!

জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমে এসে পড়ছে।মেঘ জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর অতীতের স্মৃতিগুলো আওড়াচ্ছে।সেদিন ভুলটা আসলে কার ছিল আমার নাকি তন্ময়ের!?যে তন্ময়কে আমি কোনদিনও ভুল করতে দেখি নি,সবসময় আমার করা ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে তা সংশোধন করে দিয়েছে, যার বিবেক-বুদ্ধি এত ভালো সে কিভাবে এতবড় ভুল করে?নিজের মনটাকে একটু শান্তনা দেওয়ার জন্য অতীতের সুখের স্মৃতিগুলো খুঁজে বেড়াতে যায় তখনি তার সাথের দুঃখের স্মৃতিগুলোও এসে ভিড় জমায়।
.
.
ক্যারেক্টারলেস একটা…. এ কথা বলার সাথে সাথে জানিনা সেদিন তন্ময়ের কি হয়েছিল আমার মাথার চুলগুলো খুব জোরে মুঠি করে ধরে প্যান্টের বেল্ট খুলে জানোয়ারের মতন ইচ্ছেমত মারা শুরু করল।সেদিন ওর চেহেরার আরেকটা রুপ দেখতে পেয়েছিলাম।কি হিংস্র সে রুপ!ওর রাগ যতক্ষণ না পর্যন্ত কমছিল ততক্ষণ পর্যন্ত জানোয়ারের মতন আমাকে মেরেই চলেছিল।শাশুড়ি মা সেদিন ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল তাই আমার কান্নার আওয়াজ সেদিন ওনি শুনতে পারেননি।এরপর থেকে ওর সাথে আমার দূরত্বটা বেড়ে চলল।
.
.
মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৮টা বাজছে।মেয়েটা মনে হয় অনেক আগেই বাসায় চলে এসেছে। এখনো ও রাতের খাবারটা খায়নি। তমাকে ডাক দেওয়ার জন্য মেঘ ওর রুমের দিকে গেল।

“তমা ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছিস কেন মা?”
…..
“তমা,,কিরে কথার জবাব দিচ্ছিস না কেন?”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৩

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তমা তোমাকে কি রাজশাহী থাকাকালীন কোন ছেলে প্রপোজ করছে।”
“হ্যা প্রপোজতো করছে।”
“হুম(গম্ভীর কণ্ঠে)।এরপর,”
“এরপর… কি?”
“এরপর কি তুমি প্রপোজাল একসেপ্ট করছ?”
“হ্যা,”……বলে উনার মুখের দিকে তাকালাম।একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে আমার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে আছে।আমার তো জ্ঞান যায় যায় অবস্থা।
“না,মানে ভেবেছিলাম একসেপ্ট করব।পরে দিয়ে আর করি নাই।”(ভয়ে মিনমিনে কণ্ঠে)
“গুড।কেউ করলেও একসেপ্ট করবা না।বুঝতে পারছ।এইসব ভালো না।পড়ালেখা করছ পড়ালেখায়ই মনোযোগটা বসাও।আগে দূরে ছিলে তাই তোমার উপর নজর রাখতে পারিনি কিন্তু এখন তোমাকে সবসময় চোখের নজরে রাখব।যেহেতু আমার চোখের নজরে এখন তুমি সবসময় থাকবে তাই কোনকিছু হলে তার সব খবর আমি পাব।”
“প্লিজ হাতটা ছাড়েন।ব্যথা করছে।…..কথাটা বলেই কেঁদে দিলাম।”
হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন,”বুঝতে পারেনি এতটা লাগবে।আচ্ছা শুনো আজকে বিকালে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। রেডি থাকিও।”
“পারবো না।”
“কেন?”
“কোথাও ঘুরতে যেতে আর ভালো লাগে না।”
“এটা কি তুমি বলছ?যে কিনা বাইরে ঘুরার জন্য পুরাই পাগল আজ সে কিনা বলছে বাইরে ঘুরতে যাবে না।তমা তুমি আগের থেকে অনেক বদলে গেছ। ”
“কি জানি!তাচ্ছিল্য সুরে কথাটা বলল।”

“কিছুক্ষণ ভেবে,এতশত বুঝি না রেডি থাকিও।বিকালে তোমাকে নিতে আসবো।”

আড়ালে মুখটা ভেংচিয়ে দিলাম।উনি বললেন আর আমাকে উনার কথা মানতে হবে অসহ্য।
.
.
বাসায় এসে,চিটপতাং হয়ে বিছানায় শুয়ে গেলাম।খুব ক্লান্ত লাগছিল।কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না।
বিকালের দিকে,,
লাকেজটা নজরে পড়ল।এখনো কাপড়গুলো বের করে রাখে নি।কাপড়গুলো লাকেজ থেকে বের করে ওয়ারড্রবে একটা একটা করে রাখছি।

“কিরে তমা,,ঘুম থেকে উঠেছিস।”
“হ্যা মামণি মুচকি হেসে।”
“আচ্ছা তমা মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার খচখচ করছে।প্রশ্ন না করেই পারছি না।”
“কি প্রশ্ন মামণি?”
“তুই যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন তোর গলায় অনেক বড় একটা আচড় দেখলাম।আচড়টা দেখেই আমার আত্মাটা কেঁপে উঠেছিল।মনে খুব আজেবাজে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। এতবড় একটা আচড়ের দাগ তোর গলায় কিভাবে এল?”

মামণি,বলে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।মামণিকে কোনদিনও মিথ্যা বলে নি।এর উত্তর কি দিব ভাবতেই পারছিলাম না।
.
.
“আরে তমা আপু এখনো রেডি হও নি।আর এই যে আন্টি তোমাকে বললাম না তমা আপুকে এই শাড়িটা পড়িয়ে দিতে।কিচ্ছুইতো করলা না এখনো” কোমড়ে হাত দিয়ে রেগে নিপা কথাটা বলল।
“ও সরি,, একদম ভুলে গেছি আমি। তমা আয় শাড়িটা পড়িয়ে দিই।”

“কি হচ্ছে এইসব? এই অবেলায় শাড়ি কেন পড়তে যাব। আর শাড়িটা কে আনলো?”
“আপু তোমার এত ভুলা মন কেন?ভাইয়া না তোমাকে বলল,বিকালে রেডি হয়ে থাকতে।এই শাড়িটা ভাইয়া পাঠিয়েছে।বলেছে এই শাড়িটা পড়তে।নাও তাড়াতাড়ি কর।আমি তোমাকে পড়িয়ে দিচ্ছি। আন্টি তুমি বাইরে যাও।আপুর সাথে অনেক কথা আছে।”

“মুচকি হেসে,,আচ্ছা তাহলে ওকে রেডি করিয়ে দে।”
.
.
“এই পুচকি, তোর ভাইকে গিয়ে বলে আয় আমি কোথাও যাচ্ছি না।এই শাড়িটাও নিয়ে যা।”
“হুম বললেই হল।এখন এইসব কথা বললে,,ভাইয়া অনেক রেগে যাবে। তুমি বুঝি জানো না ভাইয়ার রাগ কেমন।শুধু শুধু ভাইয়াকে রাগাতে তোমার ভালো লাগে না?”

তমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিপা আবারো বলল,”আপু রিলেক্স।আমিও তোমাদের সাথে যাচ্ছি। এত ভয় পেতে হবে না।”
“তুইও সাথে যাবি।”
“হুম যাবতো।ভাইয়া হঠাৎ কি জানি মনে করে আমাকে দুপুরের দিকে বলল,তোমরা বেড়াতে যাচ্ছ।আমিও যেন তোমাদের সাথে যায়। তোমার সাথে যাব বলে কথা…. তাই রাজি হয়ে গেলাম।”

প্যাকেটে শাড়িটা ছিল।প্যাকেট খুলে দেখি কলাপাতা রংয়ের একটা সুতি শাড়ি।অনেক সুন্দর শাড়িটা।ব্যাটার পছন্দ আছে দেখি তাহলে।নিপা সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিল।

“শুনো আপু শাড়ি পড়াটা তাড়াতাড়ি শিখে ফেল বুঝলে।দরকারে শাড়ি পড়ার সময় আমাকেতো আর সবসময় পাবে না।তবে হ্যা তুমি যদি আমার ভাইটাকে বিয়ে কর তাহলে ছোট ননদ হিসেবে তোমাকে সবসময় আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতে রাজি আছি কথাটা বলে নিপা একটা শয়তানি হাসি দিল।”
“দিবো একটা। সবসময় খালি ফাজলামি।”
“আচ্ছা শুনো তোমার লম্বা চুলটা খোলা রাখবা,চোখে কাজল,আর নাকে একটা ছোট সাদা পাথরের নাকফুল পড়বা।আর কিছু করতে হবে না।গালে আটা ময়দা , ঠোটে লিপিস্টক দেওয়ার দরকার নাই।একদম ন্যাচারালভাবে সাজবা।”
“ওই এইসব করতে কে বলছে?”
“ভাইয়া বলছে।যা বলছি তাই করবা।একটু কম বেশি হলে জানোতোই…… “বলে আবার শয়তানিমার্কা হাসিটা দিলো।

উফ অসহ্য একটা।কি শুরু করলটা উনি?সবসময় উনি যাই বলবেন তাই করা লাগবে। অসহ্য একটা।কথাগুলো বিড়বিড় করে চুলগুলো আচড়াতে লাগলাম।
“এই তমা আপু, তোমার লাগেজের এই লেহেঙ্গাটাতো খুব সুন্দর।কে দিয়েছে এটা?”
“কোনটা?”
“এই যে…. এইটা। ”

তাকিয়ে সাদা রংয়ের লেহেঙ্গা।”এটা এইখানে কিভাবে এল?(মনে মনে)।এই এইটা এখানে দে?”
“আরে একটু দেখতো দাও না।খুব সুন্দর লেহেঙ্গাটা। কে দিয়েছে এটা বল না?”
“জোর করে ওর কাছ থেকে লেহেঙ্গাটা নিয়ে ফেললাম।আর দেখতে হবে না।তুই বাইরে যা। আমি এখুনি আসছি।”

নিপা মন খারাপ করে চলে গেল।আর আমি লেহেঙ্গাটার দিকে তাকিয়ে আছি।মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেল।বাইরে থেকে এসে এই কাপড়টা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবো। যার জন্য আমার সব স্বপ্ন,আশা,বেঁচে থাকাটা কষ্টসসাধ্য হয়ে গেছে তার দেওয়া কোন জিনিস রেখে দেওয়ার মানেই হয় না।শুধু এই কাপড়টা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে ভুলতে গেছি।আজ সেটাও পুড়িয়ে মনের আগুন নিভাবো।
.
.
“এতক্ষণ লাগে!বাব্বাহ!”
…….
“কি ব্যাপার মন খারাপ নাকি?কথার জবাব দিচ্ছ না যে?নিপাও আমার কাছে এসে কোন কথা বলল না।তোমাদের দুইজনের হয়েছেটা কি!?”
“কিছু না। কোথায় যাবেন?”
“আজকে একটা মেলা বসেছে।চল সেখানে যায়।”
“হুম।”

আমি আর উনি মানে আহাদ একসাথে হাঁটছি।আর নিপা পিছনে মন খারাপ করে হাঁটছে।বুঝতে পারছি নিপাকে ধমক দেওয়াতে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে।

“এই তমা দেখতো আমাকে কেমন লাগছে।”

উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।সাদা পাঞ্জাবী পড়েছেন।ভালোই লাগছে দেখতে।(মনে মনে)
“হুম ভালোই লাগছে।” আমার কথাটা শুনেই উনি মুচকি হাসি দিলেন।উনি কালো হলেও হাসিটা অনেক সুন্দর।হয়ত উনার গায়ের এই কালো রংয়ের জন্য কেউ হয়ত উনাকে ভালবাসতে নাও পারেন কিন্তু কোন মেয়ে যদি একবার উনার মুখের হাসিটা দেখে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত উনার এই হাসির প্রেমে অনেক মেয়েই পড়ে যাবে।
“এইভাবে তাকিও না।”
“মা…মানে।”
“ছেলেমানুষের দিকে এভাবে তাকাতে নেই।যদি তোমার বিএফ বা হাসবেন্ড হতাম তাহলে আমার দিকে এইভাবে তাকালে আমার কোন প্রবলেম হত না।কিন্তু এখন নাতো আমি তোমার হাসবেন্ড আর নাতো বিএফ।সো এইভাবে একটা ছেলের দিকে তাকানোটা আমি উচিত মনে করি না “কথাটা বলেই মুচকি হাসলেন।

আজব পাগল একটা।উনি একটু পর পর আমার দিকে আড়চোখে তাকাবেন তাতে কোন প্রবলেম হয় না আর আমি এমনে একটু তাকালেইই প্রবলেম হয়ে যায়। আর কি বলল উনি যদি আমার হাসবেন্ড বা বিএফ হতো…….। ছিহ উনার মতন কালুকে আমার হাসবেন্ড বা বিএফ বানানোর কোন ইচ্ছে নেই।আমি মরে যাব তবুও উনাকে বিয়ে করে আমার হাসবেন্ড বানাবো না।করলে কোন সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে বিয়ে করব।সুন্দর, হ্যান্ডসাম…….কথাটা মনে পড়তে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠল। কোন একসময়তো এইরকম সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলে আমার জীবনে এসেছিল কিন্তু আমাকে দেওয়া সে ওয়াদার মর্যাদা সে রাখতে পারেনি।আর বিয়ে….?বিয়ে করার কথাটা আমার মাথায় কিভাবে আসলো।এত কিছু হয়ে গেল আমার সাথে তারপরও কোন আক্কেলে এতবড় স্পর্ধা আমার হয়।চোখ থেকে অজান্তে পানি চলে এল।
.
.
“তমা কাঁদছ কেন?ইশ ব্যথা পেয়েছ।আসলে তোমার হাতে চুড়ি পড়াচ্ছিলাম, হাতে লেগে যাবে ভাবতে পারে নি।”

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিচ্ছেন।

“আরে,,হাতে চুড়ি পড়াচ্ছেন কেন?”
“চুড়িগুলো ভালো লাগল তাই পড়িয়ে দিচ্ছি।হাতে কি খুব লেগেছে?”
“না”
“তাহলে কাঁদছ যে?”
“চোখে জানি কি পড়ছে তাই চোখ থেকে পানি পড়ছে।ও কিছু না।”
“আমাকে কি তুমি বোকা ভাব।যা বুঝাবা তাই বুঝব।”

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।আসলেই কি উনি আমাকে বুঝেন?নাকি……
“তমা চল ওইখানটায় যায়। ফুচকা বিক্রি করছে।আর এই নিপা তুই এত পিছে কেন? আয় আমাদের সাথে।”
.
.
সারাদিন তিনজন মিলে ঘুরলাম। বেশ ভালোই লাগল।বাসায় এসে আগে ওই লেহেঙ্গাটা পুড়িয়ে ফেললাম।এ কয়েকদিনে কোনরকমভাবে নিজেকে সামলিয়ে নিলেও এই লেহেঙ্গাটা দেখার পর আর নিজের কষ্টগুলো চাপিয়ে রাখতে পারছি না।কান্নার সাথে সাথে খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর সাথে কাটানো মূর্হুতগুলো,ওর দেওয়া আঘাত আর বিশ্বাসঘাতকতা আজকে আমার স্মৃতিতে আরো প্রখর হচ্ছে।বিশেষ করে ওর সেই আওয়াজটা বারবার কানে বেজে উঠছিল,,
“আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান।আমি মরে গেলে ওরা আর বাঁচবে না।তাই জেনেশুনে আমি নিজের ঘাড়ে নিশ্চিত মৃত্যু নিতে পারবো না।তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা কর।”

কেন তুমি সেদিন এমন করলে তানভীর।কতটায় না তোমাকে বিশ্বাস করতাম।তোমার কথার ভরসায় সেদিন এতটা আস্পর্ধা করেছিলাম।কিন্তু সেইতো তুমি তোমার কথার খেলাপ করে শুধু নিজেকে বাঁচাতে আমাকে সেদিন বিপদের মুখে ফেলে চলে গেলে।যদি একটু সাহস করে সেদিন বিপদের সাথে মোকাবেলা করতে তাহলে আমার এতবড় ক্ষতি হত না এই বিশ্বাসটা আমি তখনো মনে করতাম আর এখনো করি।কোনদিনও তোমাকে ক্ষমা করবো না,,কোনদিনও না।
.
.
ঘরের কাজ সেরে মেঘ নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।বালিশের নিচ থেকে তার স্বামী তন্ময়ের ছবিটা বের করল।জীবন্ত তন্ময়ের সাথেতো আর কথা বলতে পারে না তাই তার স্বামীর ছবি দেখে অব্যক্ত গোপন কথাগুলো বলে।কত স্বপ্ন দেখেছিল সে তন্ময়কে নিয়ে। ওকে নিয়ে বাকিটা জীবন সুখের সাগরে পাড়ি দিবে।কিন্তু তা আর হল না।মেঘের স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন রয়ে গেল।নাতো সে পেল তার স্বামীর ভালোবাসা,আর নাতো তার মেয়ে তমা পেল বাবার ভালবাসা।তন্ময়ের হয়তো ওদের দুইজনের কাউকে প্রয়োজন নেই।তাই এতটা বছর পাড় হয়ে গেল সে নিজ থেকে কোন খোঁজ-খবর নিল না।মেঘও আর সাহস করে ওর স্বামীর খোঁজ নেয়নি।কারণ সে জানে তন্ময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছে।তাই হয়ত মেঘ আর তার মেয়ের খোঁজ নেওয়ার কোন ইচ্ছায় তার হয়নি।

(বি.দ্র.স্যারযখনস্বামীসিজন_২ টা আগের সিজনকে কেন্দ্র করেই লিখছি।আগের সিজনে শুধু মেঘ আর তন্ময়ের ভালবাসার কাহিনী ছিল।কিন্তু বিয়ের পরবর্তী জীবনে ওদের ভালবাসার পরিণতি কি হয়েছিল সেটা আমি লিখি নি।ওদের ভালবাসার পরিণতি সিজন ২ তে প্রকাশ করব।মেঘ আর তন্ময়ের মেয়ে হচ্ছে তমা।গল্পের নায়িকা এবার যেহেতু তমা তাই ওর মাধ্যমে ওর মা বাবার ভালবাসার পরিণতি উল্লেখ করব সেইসাথে তমা আর গল্পের নায়কের লাভস্টোরিতো থাকবেই।মেঘ আর তন্ময়ের ভালবাসার পরিণতি সুখ নাকি দুঃখের ছিল তা জানার জন্য আমার গল্পের সাথে থাকবেন এই আশা করছি আপনাদের কাছে।

স্যার যখন  স্বাম সিজন২ পার্ট_০২

0

স্যার যখন  স্বাম সিজন২
পার্ট_০২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তমার এক হাত নিজের এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলাম আরেকটা হাত ওর গালে রেখে বললাম,”জানো তিলোত্তমা,একটা মানুষ কখন পরিপূর্ণ হয়?”
“না,”
“যখন তার কাছে আপন মানুুষের অমায়িক ভালোবাসা থাকে আর নিজের সন্তান থাকে।অর্থাৎ ভালোবাসা আর সন্তান থাকলে একটা মানুষ পরিপূর্ণ হয়।”
……
“তোমার কাছে এখন তোমার আপন মানুষদের ভালোবাসা আছে আর এর কয়েকবছর পর তোমার বিয়ে হলে যখন শুশুড়বাড়ির লোকদের ভালোবাসা আর এরপর তোমার সন্তান হবে তখন তোমার মনে হবে জীবনটা আসলেই অনেক মধুর।নিজেকে তখন পরিপূর্ণ হবে।লাইফের এখনো অনেক ভালো কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তিলোত্তমা।তাই প্লিজ পাস্টে যা কিছু খারাপ হয়েছে তা ভুলে নতুন করে বাঁচ।তোমার মা আছে,আমি, আমার পরিবার তোমার সাথে সবসময় আছি আর থাকবো তাই নিজেকে কখনো একা মনে করবে না।সবসময় হাসিখুশি থাকবে।তোমার হাসিভরা মুখটা অনেক মিষ্টি লাগে।”
হালকা হেসে মাথাটা নাড়ালাম।
.
.
“আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি,”
“হ্যা কর।”
“না,থাক।আমি এখন বাসায় যাব।”

অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।এতটা শান্ত আর নরম গলা আজকে প্রথম ওর কণ্ঠ থেকে শুনলাম।
“হ্যা চল।আমিও এখন উঠবো।”
.
.
মামণির রুমে গেলাম।দেখি শুয়ে আছে।কেন জানি চোখের পানিগুলোকে আর সামাল দিতে পারছিলাম না।মামণির পা দুটো ধরে কান্না করে দিলাম।কান্নার শব্দ শুনে উনি জেগে উঠলেন।

“তমা, মা কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?”
“মামণি আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হবো না।এবারের মতন ক্ষমা করে দাও।”চোখের পানিগুলো অবিরত পড়েই চলছে।
“এইরকম ভাবে বলছিস কেন তুই?কিছু হয়েছে?বলনা?ক্ষমার কথা এখানে আসছে কেন?”
“আমি তোমার কথার অবাধ্য হয়ে তোমাকে কষ্ট দিয়ে রাজশাহীতে গিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।জানিনা মাথার মধ্যে তখন কি ভূত চেপেছিলো।এখন বুঝতে পারছি মায়ের কাছ থেকে সন্তান দূরে গেলে কতটা কষ্ট কতটা ব্যথা লাগে।এখন থেকে তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো। আর তোমার কথার অবাধ্য হবো না দেখে নিও তুমি।তুমি চেয়েছিলে না আমি এইখান থেকে পড়াশুনা করি তাহলে তাই হবে।খুব ভালো করে এইবছর পড়বো যাতে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে যেতে পারি।”
“তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস সেটাই অনেক।আর কান্নাকাটি করিস না।কালকে থেকে আহাদের কাছে পড়া শুরু করবি কেমন।এখন চল মা মেয়ে মিলে কালের নাস্তাটা করি গিয়ে।”
.
.
কয়েকদিন পর,,নিজেকে আস্তে আস্তে সামলিয়ে নিয়েছে।কিন্তু রাতের বেলায় বেশি কষ্টটা হয়।কেন জানি অতিত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না।বার বার অতীতের স্মৃতিগুলো ভয়ানক স্বপ্ন হয়ে আমাকে তাড়া করে।
.
.
“দিপা আপু আমি কিন্তু সব দেখেছে।”
“কি…কি….দেখেছিস….?”
“এত তোতলাতে হবে না।আগে বল ছেলেটা কে ছিল?”
“তার মানে দেখেই ফেলেছিস।”
“হুম তোমাদের ছাদে উঠার সময় দেখি তুমি এক ভাইয়ার সাথে কথা বলছ লুকিয়ে লুকিয়ে। ব্যাপারটা কি?”

কিছুটা লজ্জার ভঙ্গিতে দিপা আপু বলল,”তুইতো এখানে ছিলে না তাই হয়ত কিছুই জানতি না।আসলে বাসা থেকে ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।তোকে সারপ্রাইজ দেব ভেবেছিলাম কিন্তু দিতে পারলাম না তার আগেই সব পন্ড হয়ে গেল।”
“সত্যি তুমি বিয়ে করছ?কবে?”
“এইতো আর কয়েকদিন পর।আচ্ছা বাসায় আয়।তোর সাথে অনেক কথা আছে।”
“হুম আসবোইতো।আচ্ছা আগে এটা বল তোমাদের বিয়েটা লাভ নাকি এরেঞ্জ?”
“অবশ্যই এরেঞ্জ ম্যারেজ।লাভ ম্যারেজে আমি বিশ্বাস করি না।কারণ যে যুগ পড়েছে কে ভালো আর কে খারাপ তা বুঝার কোন উপায় নেই।ছেলে হলে লাভ টাভে প্রবলেম ছিল না কিন্তু আমিতো মেয়েমানুষ যদি কাউকে লাভ করতে গিয়ে ওর কাছে প্রতারণার শিকার হয় বা ও বিয়ের আগেই আমার বড় ক্ষতি করে আমার বিশ্বাসটা ভেঙ্গে ফেলে তখন আমার কি হবে?বুঝলি,, সবাইকে দেখে খুব ইচ্ছা করত একটা লাভ করেই ফেলি। পরে এইসব খারাপ চিন্তা যখন মাথায় আসে তখন লাভের প্রতি ইন্টারেস্টটা হারিয়ে ফেলি।তাই ভাবলাম পরিবার থেকে আমার জন্য যাকে ঠিক করা হবে তাকেই বিয়ে করেই ফেলবো। ব্যস পরিবার থেকে অভির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করল আর আমিও রাজি হয়ে গেলাম।”
“হ্যা আপু খুব ভালো করেছ।আসলেই ঠিক বলেছ এই যুগে কাউকে বিশ্বাস করাটাই টাফ আবার যদি সে ছেলে হয়।”
“নারে, সব ছেলেরা খারাপ না।এখনো কিছু ভালোমানুষ আছে।ভালো মানুষের জন্য এখনো পৃথিবী টিকে আছে।নাহলেতো কবেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত।”
.
.
কিছুটা বিরাশ আর হতাশার ভঙ্গিতে হেসে,,”তা জিজুর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলছিলে কেন?বিয়ের আগে এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলাতো মোটেও ভালো না।”
“আরে,,ও কল করে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।সামনাসামনি আমার সাথে নাকি কথা বলতে চাই।বাইরে যাওয়াও বারণ।তাই ওকে বললাম ছাদে এসে দেখা করতে।”
“ও এইজন্য বুঝি জিজু চোরের মতন লুকিয়ে লুকিয়ে আসছে তার হবু বউকে দেখবে বলে।আর তার সাথে হাতে এই ব্রেসলেট পড়িয়ে দিয়েছে”
“হ্যা, “বলে লজ্জায় মাথাটা নিচু করে করল।”এই শোন,,এই কথাটা যেন কেউ না জানে”
“আচ্ছা।কেউ জানবে না”

তমার দিকে এতক্ষণ পর ভালো করে খেয়াল করল দিপা।

“তমা এটা কি তুই!”
“কেন?সন্দেহ আছে।”
“না, মানে ঢোক গিলে,আসলে বিশ্বাস করতে পারছি না।আজকে প্রথম তোকে থ্রিপীস পড়তে দেখলাম।অন্যান্য সময় টপ জিন্স কি পড়ে থাকস।আজকে এই গোলাপি রংয়ের থ্রিপিসে, You are looking so pretty, dear.”
একটু মুচকি হাসলো তমা।

“উফফো দেখ না কি গাধীটায় না আমি। এতদিন পর তোর সাথে কথা হল, তোর রাজশাহীতে থাকার গল্প আমাকে বলবি না।আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাদের বাসায় চলতো।তোর কাছে কত কি শুনার বাকি আছে?”
“আপু…উ এখন না পরে।বাসায় যাব।”
“আরে সেতো যাবি। তা কি বলতে হবে নাকি?চল চল, মা,নিপা আছে।ওদের সাথে দেখ করে কথা বলবি।আজকে অনেকদিন পর আবার আড্ডা দিব।বেশ জমবে।”বলতে গেলে একেবারে জোর করে টেনে বাসায় নিয়ে গেল দিপা আপু।
.
.
দিপা আপুদের বাসায় গেলাম।অনেকদিন পর আন্টি আর নিপাকে দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল।
নিপা যে এত কথা বলতে পারে তা এর সাথে না মিশলে বুঝা যাবে না।দিপা আপুর বিয়ের জন্য কি কি শপিং করল সেগুলো দেখাচ্ছে।এমন সময়,,

“আরে তমা কখন আসলে?”
“এইতো এখন।ইশ উনি এই টাইমে বাসায় কি করে?উনার না ভার্সিটিতে থাকার কথা এখন?”(মনে মনে)
“এমনভাবে আমার দিকে চেয়ে আছ কেন?”
“আপনার কি আজকে ভার্সিটি নেই।”
“ম্যাম আপনি কোন দুনিয়ায় আছেন?”
“মানে,,”
“আজকে যে শুক্রবার সে কথা কি আপনার মনে নেই।”
“ও শিট,, আমার তো খেয়াল নেই। যদি জানতাম আজকে শুক্রবার আর উনি বাসায় থাকবেন তাহলে এর বাসায় জীবনেও আসতাম না।”
.
.
এদিকে নিপা আমাকে ধরেই রেখেছে।কিছুতেই আসতে দিচ্ছে না।তাই বাধ্য হয়ে ওর আর দিপা আপুর শাড়িগুলো দেখেই যাচ্ছি।

আহাদ: “মা,চটপটি খাবো। চটবাটির বাটিটা এখানে নিয়ে আসো না।”
“আরে টেবিলে আছে।যা ওইখান থেকে নিয়ে আয়।”
“উহুম উঠতে পারবো না এখন।এইজন্যতো তোমাকে বললাম নিয়ে আসতে।”
“উফ,তুই পারিসও বটে আহাদ।”

কিছুক্ষণ পর আন্টির এনে দেওয়া চটপটি উনি খেয়ে যাচ্ছেন আর আড়চোখে যে আমাকে দেখছেন তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।আস্ত লুচু একটা।উনি আমার থেকে কম করে হলেও ১২ বছরের বড়।গায়ের রং দুনিয়ার কালো। এইরকম বুড়া একটা ছেলে যার গায়ের রং কুচকুচে কালো সে যদি হ্যাবলার মতন চটপটি খেতে থাকে আর আড়চোখে একটু পর পর একটা মেয়েকে দেখতেই থাকে তাহলে আমি কেন দুনিয়ার সব মেয়েই বলবে লুচু একটা।আমার ও ঠিক তেমন হচ্ছে।খুব অস্বস্থি লাগছে।
.
.
“তমা আপু আচ্ছা বলতো ওইখানে কোন হ্যান্ডসাম ছেলে তোমাকে প্রপোজ করছে?আসলে কি জানতো অনেকেই আছে যারা কোন মেয়েকে অনেক ভালবাসলেও সে কথা নিজের মধ্যে আটকে রাখে।ভালবাসার কথা সেই মেয়েকে ঠিকভাবে বলতে পারে না।পরে যদি সে মেয়েকে অন্য ছেলে প্রপোজ করে আর তাদের মধ্যে রিলেশন হয়ে যায় আহা….সেই ছেলেটার না জানি তখন ভিতরে ভিতরে কত কষ্ট হয়?”
“what?”
“না, মানে আপু বলছিলাম যে ধর এইখানে কোন একটা ভালো মনের ছেলে তোমাকে ভালবাসে কিন্তু সেই ছেলেটা তার মনের কথা তার মনের মানুষটাকে বলতে পারেনি পরে দিয়ে আরেক ছেলে এসে যদি তোমাকে প্রপোজ এরপর তোমাদের মধ্যে রিলেশন হয় তাহলে আগের সেই ছেলেটার কি অবস্থা না হবে?….কথাটা বলে মুচকি হেসে নিপা ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো।

আবার ওর ভাইয়ের থেকে চোখ দুটি ফিরিয়ে নিপা বলতে লাগল,,”রাজশাহী থাকাকালীন তোমাকে কেউ প্রপোজ করছে নাকি আগে সেটা বল।দেখি সেই ছেলের ভালবাসার হৃদয় এখনো ঠিক আছে নাকি ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে “এই বলে নিপা ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবারো মুচকিভাবে হাসতে লাগল।

নিপার এই কথা শুনে আহাদের গলায় খাবার উঠে গেল।
.
.
“আরে ভাইয়া, নে নে পানি খা।ঠিক আছিস তো।”
“হ্যা ঠিক আছি।আর এইসব কি গল্প করছিস তুই হ্যা।ছোট, ছোটদের মতন থাকতে পারিস না।”
নিপা ওর ভাইয়ের কানেকানে বলল,”আরে ভাইয়া এইসব কথা তমা আপুর কাছ থেকে এখন না জানলে কিভাবে হবে?যদি ওর অন্য কারোর সাথে রিলেশন থাকে।এখন তো দিপা আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন পর যদি তমা আপুর লাভারের সাথে আন্টি বিয়ে ঠিক করে ফেলে তখন কি হবে? বুঝতে পারছতো ব্যাপারটা।”
“ওই সব বুঝতে পারছি।আর কিচ্ছুটা আমাকে বুঝাতে হবে না।দূর হো।এইসব ফালতো গল্প বাদ দিয়ে পড়তে বস গিয়ে।যতসব আজাইরা গল্প করে বড়দের সামনে।”
“আজকাল কারোর ভালো করতে নেই।আচ্ছা তাহলে যাই গিয়ে।বিষয়টা ভাইয়া ভাবিয়া দেখিও” মুচকি করে হেসে বলল নিপা।”

“তমা আপু আমি পড়তে যাচ্ছি। তুমি ভাইয়ার সাথে গল্প কর।”
“না, না আমি বাসায় যাব।আচ্ছা নিপা,দিপা আপু আসি তাহলে।আন্টিকেও বলিও আমি চলে যাচ্ছি।”
“হ্যা আসো, তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“লাগবে না।”

গরম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যেটা আমি সবচেয়ে ভয় পাই।তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়তে চাইলে উনি আমার হাত ধরে বাইরের বাগানে নিয়ে আসলেন।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০১

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০১
##লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তমা!তুই!”
“মামণি……”
“কেমন আছিস মা।আমাকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে চলে এলি।তমা তোর শরীরের এই কি হাল!চোখের নীচটা এত কালো!মা তুই ঠিক আছিসতো!কিছু হয়েছে তোর।চুপ করে থাকিস না।আমাকে কিছু খুলে না বললে আমি কি করে বুঝবো তোর কি হয়েছে।”

হঠাৎ করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হল।
“তমা!!”
.
.
“আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর গায়ে জ্বর আসছে।তাই হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছে।প্লিজ অযথা চিন্তা করবেন না।”
“আহাদ!কি বলছ তুমি।তুমি এই কথা কিভাবে বলছ!?তুমি কি চোখে কিছু দেখতে পাও না নাকি জেনেশুনে অন্ধ হওয়ার অভিনয় করছ?দেখেছ আমার মেয়েটার শরীরের কি হয়েছে।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে কতটা রাত ও ঠিকভাবে ঘুমায় না।জানি না কি হয়েছে ওর।কিসের এত চিন্তা ওর।”
“আন্টি আপনার নিজের শরীরের অবস্থাও বেশি ভালো না।তাই বলছি উত্তেজিত হবেন না।আমি আছি তো।আমি সব ঠিক করে দিবো। প্লিজ ভরশা রাখুন আমার উপর।এখন যান রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।আমি আছি ওর পাশে।”
“না বাবা,আমি ঠিক আছি।তুমি বরং বাসায় যাও।”
“দেখো আন্টি।আমার রাগ উঠিও না।চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতন রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো।অসুস্থ মানুষের যত্ন আমিও নিতে পারি।”
“আচ্ছা বাবা,যাচ্ছি। এত রাগ দেখাস কেন?”
.
.
তমার কপালে জলপট্টি দিচ্ছি।হঠাৎ ওর গলার দিকে চোখ পড়ল।গলায় অনেক বড় একটা দাগ।গলার দাগটা হাত দিয়ে ছুয়ে দিতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।বুঝায় যাচ্ছে কেউ খুব হিংস্রভাবে ওর গলায় আচড় টেনেছে।অজান্তে চোখের পানি চলে আসলো।ওর গলার সে দাগে চুমু দিয়ে দিলাম।কি হয়েছে ওর!ওর সাথে কি খারাপ কিছু হয়েছে যার জন্য ওর আজকে এই অবস্থা।কি ছিল আগে আর এখন কি হয়ে গেছে।ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছি।
.
.
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।ছেড়ে দাও।আমি আর ভুলেও কাউকে বিশ্বাস করে এখানে আসবো না।আমার ভুল হয়ে গেছে।প্লিজ ছেড়ে দাও।তিথি…. আমি এটা করতে পারবো নারে।ওকে মারতে পারবো না।মারতে পারবো না বলে ছটফট করতে লাগলো।ওর কথার আওয়াজ শুনে চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম।হঠাৎ ও জোরে চিৎকার করে উঠল।
“তমা কি হয়েছে?”
ও পাগলের মত নিজের সাথে নিজে কথা বলে যাচ্ছে। কোন হুশ নেই মেয়েটার।ওর কাছে এসে ওকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে আটকে রাখলাম।
“তমা রিলেক্স।কিচ্ছু হয়নি।তুমি শান্ত হও।”
“ওরা খুব খারাপ।অনেক ভয়ানক……”
“কারা?”
“ওরা….ওরা অনেক খারাপ লোক।খুব খারাপ।বলে কেঁদে উঠল।”

বুঝতে পারছি ওর সাথে খারাপ কিছু হয়েছে।কিন্তু কি হয়েছে তা বুঝতে পারছিলাম না।

“তিলোত্তমা কিচ্ছু হবে না।আমি জানি না তোমার সাথে কি হয়েছে? কেন তুমি এমন করছ।কিন্তু বিশ্বাস কর এরপর থেকে তোমার সাথে আমি আর খারাপ কিছু হতে দিবো না।আমি সব ঠিক করে দিবি।সবসময়ের জন্য আমি তোমার সাথে থাকবো। শান্ত হও।প্লিজ।” ওর চুলে আলতো করে বিলি কেটে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম।এছাড়া এই মূর্হুতে আমার আর কিছুই করার ছিল না।আস্তে আস্তে ও শান্ত হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর বুঝলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।ওকে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।
.
.

একঘণ্টা পর,,
“হ্যা দিপা বল?আচ্ছা আচ্ছা আমি আধাঘন্টা পর আসছি।”

রান্নাঘরে গিয়ে তমার প্রিয় খাবার নোডলস বানিয়ে আনলাম।তমা… তমা, মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ডাকছি।কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলে তাকাল।
“আপনি এখানে!?”
“হ্যা আন্টি কল দিয়ে জানালো তুমি নাকি অনেক অসুস্থ তাই তোমাকে দেখতে আসলাম।”
“ও…..”
“তমা কিছু খেয়ে নাও,ঔষুধ খেতে হবেনা?”
“কিছু লাগবে না।”
“তুমি অনেক অসুস্থ।না খেলে অসুখ সারবে কি করে।উঠ।”
“আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?”ওর কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তা বুঝতে পারছিলাম।
“একটা না অনেক প্রশ্ন করিও।কিন্তু এখন না।কারণ তুমি কথা বলার মতন অবস্থায় এখন নেই।এই নাও পানিটুকু আগে খাও।”

নিজ হাতে ওকে পানি খাইয়ে দিলাম।এরপর ওকে অনেকক্ষণ লাগিয়ে খাইয়ে দেওয়ার পর মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বললাম,”এবার রেস্ট নাও।আমি কালকে আবার আসবো।”

চলে আসতে গিয়ে হাতে টান অনুভব করলাম।তমা আমার হাত ধরে আছে।
“কিছু বলবে?”
“আমার প্রশ্নটা কিন্তু এখনো করা হয়নি।”
“তমা কালকে,এখন না।এখন রেস্ট নাও।”
আমি কি খুব খারাপ?”
.
.
ওর এই অদ্ভুত প্রশ্নে অনেকটা অবাক হলাম।হঠাৎ করে ও আমাকে এই প্রশ্ন করে বসবে আমি ভাবতেও পারে নি।চুপচাপ খাটে বসে পড়লাম।ওর হাত দুটি নিজের হাত দুটোর মুঠোয় আবদ্ধ করলাম।
“আচ্ছা তার আগে তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও।তুমি আজ পর্যন্ত কারোর ক্ষতি করেছ বা চেয়েছ?!
“না”
“কারোর মনে কষ্ট বা কেউ তোমার দ্বারা কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হোক এমন কিছু তুমি ইচ্ছে করে করেছ?”
“না”
“তাহলে?তাহলে তুমি খারাপ কি করে হলে?তুমি খারাপ না।তোমাকে এতটা বছর ধরে আমি দেখে আসছি কখনো আমি বা আমার পরিবার এই কথাটা ভুলেও ভাবি নেই যে তুমি খারাপ।হে যদিউউ আগে রাগটা একটু বেশি ছিল,অনেকটা বদমেজাজি আর রাগচটা ছিলে কিন্তু তুমি সবসময় সবার ভালো চেয়ে এসেছ।ওইসব বদঅভ্যাসগুলো বাদ দিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার চোখে তুমি এখনো আমার সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে আপনজন মনে হয়।তুমি কখনো খারাপ হতে পারো না তিলোত্তমা বুঝতে পেরেছ।এখন এইসব কথা বাদ দাও আর রেস্ট নাও। আসছি।”
.
.
সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।এখন কিছুটা ভালো লাগছে।একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি।বাগানে আসলাম।সকালের শিশিরভেজা ভেজার উপর হাঁটতে বেশ লাগছে।
“আরে তমা তুমি এত সকালে?”
“হ্যা একটু হাঁটতে আসলাম “এই বলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে উনি আমার হাত ধরে ফেললেন।
“আরে যাচ্ছ কোথায়?”
“বাসায়।”
“এখন থেকে সকাল সকাল হাঁটার অভ্যাস করে ফেলবে।এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বাসায় যেতে হবে না।আমার সাথে হাঁট।ভালো লাগবে।”
.
.
“আচ্ছা একটা কথা বলতো হঠাৎ রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে চলে আসলে।সব কিছু ঠিক আছেতো।”
বিরাশভরা কণ্ঠে জবাব দিলাম,” হ্যা সব ঠিক আছে।”
“Are u allright toma?”
“হ্যা”
“দেখো কেন জানি মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঠিক নেই।কোথাও কোন সমস্যা অবশ্যই আছে।আমি বলে কি তোমার আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নেই।তুমি এই বছর এইখানে ভর্তি পরীক্ষা দাও।মনোযোগ দিয়ে এইবছর আমার কাছে ভালোভাবে পড়।গতবছর এখানে টিকোনি বলে এইবছরও টিকবে না তেমনতো নয়।এইবছর ইনশাআল্লাহ অবশ্যই টিকে যাবে।এখানে তোমার আপনজনরা আছে।ওইখানে তো তাও নেই।তোমার ওইখানে থাকা নিয়ে আন্টি সারাদিন কি পরিমাণ চিন্তা করে তা বলে বুঝাতে পারবো না।এইখান থেকে সবকিছু নতুন করে আবার শুরু কর।”
“হ্যা নতুন করে আবার সব কিছু শুরু করব।আবার নতুন করে বাঁচবো।ওইখানের সব পুরাতন স্মৃতিগুলো একেবারের জন্য মুছে ফেলে এখানে চলে এসেছি।ওইখানে আর পড়ালেখা করবো না।আমার সব আপনজন এখানে।তাই এইবছর ভালো করে পড়বো যাতে এখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি টিকে যেতে পারি।এখান থেকে আর ভুলেও কোথাও যাব না।”

ওর কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে যাচ্ছি।এতসহজে আমার কথায় রাজি হয়ে যাওয়ার মতন মেয়ে তমা নয়। ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকার পর সেখানে পড়ার জন্য ও আগে রীতিমতন ওর মা আর আমার পরিবারের সাথে অনেক ঝগড়া করে অনেকদিন ধরে অভিমান করে ছিল।ঠিক মতন খেত না,কারোর সাথে ঠিকভাবে কথা বলতো না।পরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আন্টি পারমিশন দিয়েছিল ওত দূরে পড়তে দেওয়ার জন্য।ওর চোখে কি আনন্দটা নাই ছিল সেদিন।ওর বান্ধবীর বাসায় থেকে ও পড়াশুনা করতো। আন্টি, আমি মোবাইল করে ওকে এরপর কতই না বুঝাতাম ওইখান থেকে চলে আসার জন্য।কিন্তু ও তখনো ওর মতামতেই বদ্ধপরিকর ছিল।কিছুতেই সেখান থেকে সে আসবে না।সেখানে থেকেই ও পড়বে। আর সে তমাই আজকে বলছে সেখানে আর পড়বে না।এখানে থেকে পড়বে।তাও আবার আমার এক কথায় রাজী। বুঝতে পারলাম আসলেই কিছু ঠিক নেই।ও কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে।

চলবে,,,,

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৯ Last part

4

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৯ Last part
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
এরমধ্যে আমি ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকতা পদে ঢুকলাম।মেয়েটাকে আমি তখনো ভুলতে পারেনি।আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা বলে কথা।এত সহজে কি করে ভুলে যাব।ওর কথা সবসময় মনে পড়ত।ওইদিনের সেই শেষ দুষ্টুমির জন্য ওকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ৫টা বছর ধরে শাস্তি নিজেই পেলাম।
আমি অনার্স ১ম বর্ষে নিউ ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ করে সেই মেয়েটাকে আমার ক্লাসে দেখি।৫টা বছর পর ওকে আমি আবার দেখি।ওকে দেখে মনে হল আকাশে চাঁদ পেয়ে গিয়েছি।এত খুশি লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না।অবশ্য এভাবে ওকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে পাওয়া অনেকটা মিরাক্কালের মতনই ছিল তা নাহলে কিভাবে এই গাধী স্টুডেন্ট এখানে গণিতও করছে যে কিনা গণিতে একেবারে কাঁচা।
এই বলে মেঘের দিকে তাকালাম।এবার ওর সেই ভয় পাওয়া ফেইসটায় রাগ আর লজ্জার মিশ্রণ দেখতে পাচ্ছি।
.
.
এরপর ভাবলাম ৫টা বছর ওর জন্য অনেক ওয়েট করেছি,নিজেও অনেক শাস্তি পেয়েছি আর না।ও তো আগের সেই পিচ্চি নেই ছেলেমানুষিটাও আগের মতন নেই যদিউ পিচ্চি পিচ্চি ভাবটা এখনো ঠিক আগের মতন আছে।এখনতো আর প্রেম করার বয়স নেই ভাবলাম ওর বাবা মায়ের কাছে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিব।ওকে একেবারে সারাজীবনের মতন আপন করে তারপর বউয়ের সাথে প্রেম করব।কারণ ওকে আমি এক ভুলে ১ম বার হারিয়েছি ২য় বার একি ভুল করে ওকে হারাতে চায় না।
কিন্তু এইসবের আগে ওর কি পছন্দ না পছন্দ ওর সম্পর্কে সব ইনফরমেশন নিতে হবে।এজন্য ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি হাত করলাম।ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বন্ধুত্ব করলাম।জানতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটার নাকি আরেকজনের সাথে রিলেশন আছে।মনে হচ্ছিল আমার পুরো দুনিয়াটা উল্টে গেছে।কয়েকদিন আগে ওকে আমি মাত্র পেলাম ভাবলাম আমার কষ্টের দিন শেষ।কিন্তু না এতো দেখি আমার কষ্টের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।তখন ওর উপর এত্ত রাগ হচ্ছিল ইচ্ছা করছিল ওর গলাটা টিপে মেরে ফেলি।আবার আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সে এখানে এসেছে।৫টা বছর আমাকে শাস্তি দিয়ে কি ওর শান্তি হল না যে নতুন করে আবার আমার জীবনে দেখা দিয়ে আমাকে আগের থেকেও বড় শাস্তি দিয়ে তিল তিল করে শেষ করে দিতে চাচ্ছে।অনেক কষ্ট হচ্ছিল তখন।কি করব না করব বুঝতে পারছিলাম না।পরে অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝালাম ভালবাসা মানে যে ভালবাসার মানুষটাকে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই।ভালাবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটানো একজনের সত্যিকার প্রেমিকের রুপ।তাই ভাবলাম ও যাকে নিয়ে খুশি আছে তাকে নিয়েই ও খুশি থাকুক।আমার আর কিছু চাই না।কিন্তু মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ছিল আমি ওকে যতটা ভালবাসি ঠিক ততটাই কি ওর ভালবাসার মানুষ ওকে ভালবাসে!?তা আমার জানা ছিল না।তাই সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওর প্রেমিকের সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিলাম।খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার ভালবাসার মানুষটার প্রেমিক একটা প্রতারক।শেষ পর্যন্ত একটা প্রতারকের সাথে ওর প্রেম হল।একবার ভাবলাম ওকে সব সত্যি কথা বলে দিবো আবার ভাবলাম ওতো এখন ভালবাসায় অন্ধ বুঝাতে গেলে উল্টো আমাকে ভুল বুঝবে।তাই ওকে আর কিছু বলতে পারলাম না।ভাবলাম আগে প্রমাণ যোগার করব আর তারপরিই সব সত্যি কথা বলে দিবো।প্রমাণ যোগার করার পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে সব সত্যি কথা বলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম এই সত্যি কথা ওর কাছে ফাঁস হলে ও উল্টো কি করে বসে,ওর মনের অবস্থা কি হবে এইসব ভেবে আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না।
.
.
এরপরে শুনি ও নাকি বিয়ে করবে।কিন্তু ফাজিল মেয়েটা চুপচাপ বিয়ে করে ফেলার প্ল্যান করল আমাকে দাওয়াতও দিলো না।ওর বান্ধবীকে বিয়ের কার্ড দেওয়ার আগের দিনেই ওকে মোবাইলে ওর বিয়ের কথা বলে।আর ওর বান্ধবী এই খুশিতে আমাকে মোবাইল করে বলে দিল ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নাকি বিয়ে করছে।এই কথা শুনার পর সারাটারাত ঘুমাতে পারলাম না।পরেরদিন ওকে দেখা মাত্র ওর মুখ থেকে শুনে নিলাম সত্যিই সে ওই ফ্রড,প্রতারক ছেলেটাকে বিয়ে করছে।
.
.
ওকে বিয়ের বউ সাজে দেখার খুব শখ ছিলো।আমি জানতাম ও আমাকে বিয়ের দাওয়াত ভুলেও দিবে না তাই নির্লজ্জের মতন আমিই ওর কাছ থেকে বিয়ের দাওয়াত চেয়ে নিলাম।
ওর বিয়ের দিন ওদের বাড়িতে গেলাম।যেখানে ওর সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে।সেগুলো না চাইতেইও মনে পড়ে গেল।ওকে বউয়ের সাজে দেখে মনটা ভরে গেল।ইশ যদি এই বিয়ের সাজ ও আমার জন্য সাজত।ও আমার বউ হত তাহলে কতই না ভালো হত।
বিয়ের দিনে বর নাকি পালিয়ে গেছে।আরো অনেক এমন কান্ড হল যে বিয়ে বন্ধ হওয়ার মতন অবস্থায় পরিণত হল।অবশেষে অনেক কিছুর পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে আমি নিজেই বিয়ে করে নিলাম।একদিকে ওর জন্য দুঃখ লাগলেও আরেকদিকে নিজের জন্য খুশি লাগছে।ওকে আমি বউ করে নিলাম সারাজীবনের জন্য।
.
.
“মেঘ, কাঁদছ কেন?আমার গল্পটা সুন্দর হয় নি?”
“আমি জানি তোমার সেই ভালবাসার মানুষটা কে?”
“হ্যা জানবেই তো।আমাকে এত কষ্ট যে দিয়েছে সে না জানলে আর কে জানবে।”
“সে মেয়েটা…বলে ওর কথা আটকে গেল।”
“হ্যা সেই মেয়েটা তুমি মেঘ।যে এখন আমার সাথে বসে আমার লাইফের ভালবাসার গল্প শুনছে আর বর্তমানে সে আমার স্ত্রী।আমার ভালবাসার মানুষ। আর আমার বোকা বউটা যখন আমার বাসায় প্রথম এসে আমাদের বেডরুমের সাজ,আলমারি ভর্তি শাড়ি, থ্রিপীচ, বারান্দার ফুল, দোলনা বলতে গেলে ওর পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু সাজানো দেখে অবাক হয়েছিল।এর পরেই সে ভেবে নিয়েছিলো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।বিয়ের দিন রাতে আমাকে জিজ্ঞাস করে বসল আমি নাকি অন্য কাউকে ভালবাসি।বোকা পিচ্চি মেয়েটার কাছে এই কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না।”
“সরিতো আমি তখন বুঝতে পারেনি।আমার এই ভুলের জন্য আমি নিজেসহ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।সেজন্য extremely sorry.এইভুল আর ২য় বার কখনো করব না।তোমাকে আর কখনোই ভুল বুঝবো না।আর তুমি যদি আমার জীবনে আরো আগে আসতে তাহলে এত ঝামেলা হত না। তোমাকে এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হত না।অতীতে তুমি আমার জন্য যে কষ্ট পেয়েছ তা আমি আমার ভালবাসা দিয়ে পূরণ করে দিব তাহলে হবে তো মিস্টার।”
“ম্যাডামকে আর ভুল বুঝার সুযোগ দিলেই না।সেই ভুল আমি আর করছি না।আমি পুরোটা জীবনে তোমাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে চাই।আর হ্যা আমাকে একটু বেশি ভালবাসা দিতে হবে তাহলে তোমার সব ভুল ক্ষেমা করে দিবো ম্যাডাম।”
.
.
“এই নেন পেপার”
“কিসের পেপার।”
“ডির্ভোস পেপার ভেবে আপনি যেটাতে সাইন করেছেন ম্যাডাম সেই পেপার।”
“এটা আমাকে দিচ্ছ কেন?”
“দেখোই না আগে।”
“কিহ!ফাজিল ছেলে।এটাতো ডির্ভোস পেপার না।এটা হচ্ছে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার।যেখানে আমার সাইন আছে।ইউ…. তুমি আমাকে আগে মিথ্যা বলছ যে এইটা ডির্ভোস পেপার।আর আমি সেটা ভেবে সাইন করছি।”
“যাকে এত ভালবাসি তাকে এত সহজে নিজের জীবন থেকে কিভাবে সরিয়ে দিবো বলত?তখন তোমার মাথায় পাগলামির ভূত ঢুকছিল তাই ভাবলাম এই সুযোগ।এই সুযোগ ২য় বার পাবো না।তাড়াতাড়ি করে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার বানিয়ে ফেললাম যেখানে লিখা আছে আমার জন্য তোমাকে কি করতে হবে না হবে।কথার নড়চড় হলেই এবার তোমার খবর আছে।আমাকে ছেড়ে এবার কেমনে যাও সেটা আমিও দেখবো।ছেড়ে যেতে চাইলেই দেখছতো এই পেপার। এই পেপারের পাওয়ার কিন্তু এখন অনেক।”
ফাজিল ছেলে,বিচ্ছু ছেলে বলে লাগালাম কয়েকটা ধুমতাড়াকা মার।এই ছিল তোমার মনে মনে।
“এই এই স্বামীকে কেউ এভাবে মারে।গুনাহ হবে তো।”
“আচ্ছা আর এই ফাইজলামি যে করছ তার বেলায় কিছুই না।আমার সাথে ফাজলামি করতে আসলে এইরকম মার সহ্য করতে হবে।”
“এতো দেখি আগের মতন বান্দরনী হয়ে গেছে।সবসময় এরকমই থাকবে।তোমার এই বান্দরনী রুপ দেখেই তো আমি তোমার প্রেমে পড়ছি।”
“তাই না।আমি বান্দরনী।আরো কয়েকটা মার খাও।”সাথে সাথে ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

.
.
“আচ্ছা তন্ময় আমাকে বললে না যে তুমি পেনড্রাইভটা কোথা থেকে পেলে?”
“যে তোমার আমার মঙ্গল চায় সেই এই পেনড্রাইভ পাঠিয়েছে।মনে কর সে আমাদের well wisher.”
“সে well wisher এর নাম কি?”
“সে তোমাকে নাম জানাতে নিষেধ করেছে তাই নাম বলা যাবে না।কিন্তু বন্ধুর মতন সে সবসময় তোমার আমার পাশে থাকবে।”
“আল্লাহ তার ভালো করুক।”
“হুম ”
.
.
“এই আমাকে কোন গিফট দিবে না।”
“আইচ্ছা আমাকে এতদিন কষ্ট দিয়ে গিফট চাও।কোন গিফট নাই।”
“প্লিজ পুরানো কথা টেনে আনছো কেন?sorry তো বলেই দিলাম।”
“ওরে আমার পিচ্চি বউরে আমি just মজা করছিলাম।দেখি তোমার পা টা দাও ।”
“কেন?”
“এত প্রশ্ন কেন কর।যেটা করতে বলছি সেটা কর।”
“ওকে ওকে।”
এরপর ও আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিল।
“হুম এখন আমাকে গিফট দাও।”
“ও মা তোমাকে আবার কিসের গিফট দিবো।”
“এই this is cheating.নিজের বেলায় ভালো বুঝ আর আমার বেলায়।”
“আচ্ছা আমি না সিরিয়াসলি ভুলে গেছি।আমার কাছে আপাতত এখন কিছু নাই।”
“কিন্তু আমিতো এইসব কথা শুনবো না।আমার গিফট চাই মানে চাইইইই….”
“আচ্ছা কি চাই তোমার,”
“তোমার মতন একটা ছোট পরী চাই।”এই বলে আমার কপালে চুমো দিল।সেদিন লজ্জাই ওর বুকে মুখ লুকালাম।
“মেঘ এতদিনতো গণিত ক্লাস করলাম এখন চল কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি ক্লাস করি।”
“মা..মা..মানে।এই তুমি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?ওর চোখে তখন একধরণের নেশা দেখছিলাম।ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি আস্তে আস্তে পিছাতে লাগলাম।”
“ওমা এখন ক্লাস নিবোনা।”
“কি ক্লাস? কিসের ক্লাস?”আমি এখন…কথাটা শেষ করার আগেই ও আমার মুখটা বন্ধ করে দিল।

ওকে নিয়ে আমার বিবাহিত জীবনের একটা বছর আল্লাহর রহমতে সুখের কাটল।আমি এখন আমার বিবাহিত জীবনে আমার স্বামীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি।আর কয়েকবছর পরেই আমি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করব।ভাবছি চাকরী করলেই ওর ওইখানে শিক্ষকতা পদে চাকরী করব।যাতে ওকে সবসময় নিজের চোখের কাছে রাখতে পারি।সবাই আমাদের জন্য দুয়া করবেন।

আর হ্যা সবাই আবার এটা ভাবিয়েন না এটা কোন বাস্তব গল্প।এই গল্প সম্পূর্ণ আমার কল্পনা থেকে।তন্ময়ের যে চরিত্র এখানে প্রকাশ পেয়েছে সেটা আমার কল্পনা থেকে।বাস্তবে আর এই আধুনিক যুগে তন্ময়ের মতন স্বামী পাওয়া অনেকটা কল্পনার মতন।সব মেয়েদের ভাগ্যে এইরকম স্বামী জুটে না।শতে বা হাজারে এইরকম চরিত্র কয়েকজনের ক্ষেত্রে মিললে মিলতে পারে।
সর্বোপরি ভালবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস রাখুন কারণ ভালবাসা বিশ্বাসের উপর গড়ে উঠে। ভালবাসার মানুষটাকে ভালবেসে সবসময় আগলিয়ে রাখুন।আর ভালবাসার মানুষকে মর্যাদা দিতে শিখুন।
নতুন লেখিকা হিসেবে এই গল্পে আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক অনেক ভালবাসা পেয়েছি।সেজন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।Thanks everyone.এই গল্পের সিজন ২ আমার অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার রেজাল্ট আর পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।যদি সব কিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে ইনশাল্লাহ সিজন ২ লিখতে পারব।সবাই আমার জন্য বেশি বেশি দুয়া করবেন আর এইরকমভাবেই আমার গল্পের সার্পোট করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

সমাপ্ত

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৮

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এর কিছুদিন পর মেয়েটাকে দেখার জন্য ওদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম ওই মেয়েটা ওর বান্ধবীদের নিয়ে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।রহস্যটা কি দেখার জন্য আমি লুকিয়ে ওদের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।ওর বান্ধবীরা জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলছে এই আসছে আসছে মার মার।বলতে দেরি নেই সেই মেয়েটা খুব জোরে ইট দিয়ে সেই গাছে ঢিল মারে।এরপর তাড়াতাড়ি করে সব বান্ধবীরা মিলে দিলো দৌড়।আমি এদের দৌড়ানোর রহস্যটা তখনো বুঝলাম না।হঠাৎ দেখি একঝাক মৌমাছি বিদ্যুৎগতিতে আমার দিকে তেড়ে আসছে।আর এদিকে আমি রহস্য উদঘাটন করলাম যে সেই গাছে মৌমাছির মৌচাক ছিলো যা আমার মতন গর্দভের চোখে তা পড়ে নি।আর তখন পড়লেও আমার করার কিছু ছিল না ততক্ষণে মৌমাছি আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল।রাগে যে আমার কি করতে ইচ্ছা করছিলো,তখন তা বলে বুঝাতে পারবো না।
.
.
এর কিছুক্ষণ পর ওই মেয়েটাকে অনেক কষ্টে খুঁজে পেলাম।ও তো আমাকে দেখে রীতিমতন চিল্লিয়ে উঠলো।আসলে মৌমাছির কামড় খেয়ে আমার চেহেরা তখন সেরকম দেখার মতন হয়েছিলো যেই দেখবে সেই ভয়ে দৌড় দিবে।

আমি কোন কথা না বলে মেয়েটার দুই গাল আর হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।মেয়েটাতো এবারও আগের মতন করে ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়িয়ে দিলো।

“ভাইয়া আপনি আমাকে কামড় দিলেন কেন?”
“ন্যাকা মনে হয় যেন জানো না।আমার মুখের এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। তাই হিসাব বরাবর করলাম।আজকে এই কান্ডটা কেন করলে?”
“ওই ছেলেটাকে ওইদিন শায়েস্তা করতে পারেনি।ও আজকে ক্লাসে আমাকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করছে।আপনি আমাকে ধরে কালকে যে কথা শুনিয়েছেন ও সব শুনছে।এরপর ক্লাসের সবাইকে তা বলে বেড়িয়েছে।তাই আজকে ওর জন্য এত সুন্দর একটা প্ল্যান করলাম।আর আজকেও আপনি সেদিনের মতন আমার ফাঁদ দেওয়া গর্তে পা দিলেন।”
“কি!আজকেও ওই নির্দোষ ছেলের জন্য ফাঁদ পেতেছিলে?”
“কি নির্দোষ না ছাই।হুহ।ও আমার এত সুন্দর চুলের দুই বেনী নিয়ে সারাদিন টানাটানি করে,ফাজলামি করে,আমাকে বোকা বানাই,গণিতের জন্য স্যারের হাতে মার খাওয়াই আর ওরে আমি ছাইড়া দিমু।Never ওরে তো আমি পরে দেকখা নিমু।তার আগে আপনি কন তো আপনার কি অন্যের সব ব্যাপারে মাঝখান দিয়ে ঢুকখা যাওয়ার অভ্যাস আছে নি।আপনি আজকেও কেন ওই ছেলেটার মাঝখান দিয়ে ঢুকখা গেলেন।আর দেখেন আমার গাল আর হাতের অবস্থা কি করছেন।কামড় দিয়ে লাল বানিয়ে দিছেন।আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ।আপনারে আমি দেখখা নিমু”
“তো দেখো না কে নিষেধ করছে তোমাকে।তোমার সামনেই আছি। ভালো করে দেখো নাও।আর ভাষার কি ছিরি।শুদ্ধ করে কথা বলতে পারো না।কালকে তো কি সুন্দর করে কথা বলছ।”
“এএএ….আমার প্ল্যানের ১২ টা বাজাইয়া,আমারে কামড় দিয়া আবার কন শুদ্ধ করে কথা কইতে।কইতাম না।আপ্নারে আমি দেখখাই নিমু।”
“তো দেখো না।প্লিজ দেখো দেখো।”
“হুহ।”(মুখ ভেংচিয়ে) দৌড় দিয়ে চলে গেল। পাগলি একটা।

ইতিমধ্যে আমি মেয়েটাকে নিজের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছি।আসলে মা যা বা যাকে পছন্দ করে আমিও তাকে পছন্দ করি।মায়ের মুখে মেয়েটার প্রশংসা শুনেই মেয়েটার প্রতি আমার প্রথমে ভাললাগা কাজ করে।এরপর ওকে দেখে,ওর এই ছেলেমানুষিগুলো দেখে আস্তে আস্তে এই পিচ্চিকে আমি ভালবেসে ফেলি।অবশ্য ওর এই ছেলেমানুষীর জন্য আমাকেও অনেক পস্তাতে হয়।তারপরও ওকে আমি ভালবাসি।ওর ভালো-মন্দ সবকিছুকে আমি ভালবাসি।(মুচকি হেসে)
.
.
এরপরের ঘটনায় আসি,
ভাবলাম ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটাকে একটু দেখে আসি।বিকালে ও বান্ধবী আর বাচ্চাদের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেলছিল।দূর থেকে ওর ব্যাট করা দেখছিলাম।ভালোই ব্যাটিং করে।ভালো ব্যাটিং করে বলে এত জোরে ছক্কা মারার কি দরকার ছিল।ওর এই এত জোরে ছক্কা মারার কারণে বলটা একেবারে আমার মুখে এসে পড়ল।বল আর কাউকে দেখলো না, দেখেশুনে একেবারে আমার কাছে এসে আমার এই অতিসুন্দর মুখখানার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল।আমার সুন্দর চেহেরায় কারোর হয়ত বদনজর পড়ছে এই জন্য বারবার আমার মুখের উপরই শুধু অত্যাচার হচ্ছিল।এবার আর রাগ কন্ট্রোল হল না।মেয়েটার হাত ধরে জোর করে ওকে টেনে নিয়ে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসলাম।
.
.
“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?এত জোরে ছক্কা মেরে দেখো আমার মুখের অবস্থা কি করছ?ফাজিল মেয়ে।”
“ওমা এতে আমার দোষটা কোথায়?(অবাক হয়ে)বল ছুটে আপনার মুখে পড়লে আমি কি করতে পারি?”
“বেয়াদব মেয়ে।বড়দের মুখে মুখে তর্ক কর।এভাবে ছক্কা মারলে মানুুষের মুখে বল এসে পড়তে পারে সেই বুদ্ধিটুকুও নাই।চোখ কোথায় নিয়ে রাখ?সামনে যে মানুষ আছে তা কি দেখো না।বুঝেশুনে ব্যাট করা উচিত।আর এই মেয়ে সারাদিন টইটই করে যে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াও দেখো তো মুখের অবস্থা কি হয়েছে।এইরকম পেত্নী,পাগলির মতন সারাদিন না ঘুরে ভালোকরে সেজেগুজে চলতে তো পারো।এইরকম পাগলির মতন থাকলে এই বদঅভ্যাস কোনদিনও পরিবর্তন হবে না।পরে বড় হলে কেউ তোমাকে ভয়েও বিয়ে করবে না।”
“কিহ আমি পেত্নী,পাগলি।”
“হুম তাইতো বললাম। কেন কানে কম শুনো নাকি।”
“হুম আমি কানে কম শুনি।আমি কম শুনলে কি হয়ছে কিন্তু আশেপাশের মানুষতো বেশি শুনবে।”
“মানে।”
“বুঝাচ্ছি।এই পাগল,পাগল।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।আমাকে এই পাগল হাত ধরে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।সবাই দেখে যাও। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি লাঠি নিয়ে আসো।”
.
.
ওর এই কথা শুনে আমি তো পুরা তাজ্জব। এত তাড়াতাড়ি এই ঘটনা ঘটেছে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।মেয়েটা আমাকে পাগল বলে ডাকল।তাও আবার জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলছে আমি নাকি ওকে ধরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি। দেখলাম এলাকার ছেলেমেয়ে বড়রা সবাই এই মেয়ের চিৎকার শুনে লাঠি নিয়ে হাজির।মেয়েটাকে আর শায়েস্তা করতে পারলাম না।একে শায়েস্তা করতে গিয়ে এখন নিজের জান যায় যায় অবস্থা।তাড়াতাড়ি করে ওকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এলাম।আল্লাহ সেবারের যাত্রায় বাঁচিয়েছিলো নাহলে গ্রামবাসীর লাঠির বাড়ি সেদিন আমার গায়ে পড়লে আমি নিশ্চিত এক্কেবারে পটল তুলতাম।
.
.
এতকিছুর পরও কেন জানি ওকে ভাল লাগত।ভালবাসতে ইচ্ছে করত।কিন্তু এই মেয়ে তো অনেক পিচ্চি।এই ভালবাসা অনুভব করার অনুভূতি এখনো ওকে স্পর্শ করে নি।তাই ওকে আমার ভালবাসার কথা না জানানোই ভালো। মেয়েটা আরেকটু বড় আর বোঝদার হোক আর আমিও ততদিনে ভালো একটা চাকরি যোগার করি।দেখতে দেখতে সময় পাড় হয়ে যাবে।আর এরপরেই ওকে আমি আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিবো। ও আমার মায়ের জন্য যা করেছে, যেভাবে আমার মনকে ছুঁয়েছে সেভাবে আমার এই মনটাকে কেউ ভালবাসার রং এ কেউ রাঙ্গাতে পারবে না।তাই এই পিচ্চির জন্য নিজের অনুভূতিটুকু লুকিয়ে রাখতে হবে।আর ওকে একটু মানুষ করতে হবে তাহলেই হবে।ইশ এই মেয়েটাকে যদি নিজে পড়াতে পাড়তাম তাহলে পড়াশুনায় ও আর অমনোযোগী হতে পারতো না,যদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিতাম তাহলে আমার মার আর ধমকে একদম মানুষ হয়ে যেত।আমার এই স্বপ্ন কি পূরণ হতে পারেনা?যদি পূরণ হত ওকে আমি আমার নিজের মতন করে গড়ে নিতাম।

মেয়েটাকে শুধু সকালে দেখে মনটা ভরে না,তাই তার বাড়ির দিকে আবার রওনা দিলাম।আর সেদিনি কলার খোসার সাথে পা পিছলিয়ে আমি পড়ে গেলাম।
.
.
“আরে মেঘ কয় যাও এই বলে ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে আনলাম।”
“আমি তোমার গল্প শুনবো না।”
“তাই বলে চুপি চুপি আমাকে একা ফেলে চলে যাবে।আমি এখন গল্প করার মুডে আছি। চলে গেলে কেমনে হবে।এই বলে ওকে আমার কাছে টেনে এনে বসালাম।”
“হ্যা কি জানি বলছিলাম, ও মনে পড়েছে এরপর শুনো,”

এরপরে ওকে আমি এই কান্ডের জন্য কান ধরে উঠ বস করিয়েছি।বেচারির মুখের অবস্থা দেখার মতন ছিলো।
এরপরের দিন বিকালে মেয়েটা যে আমাদের বাসায় এসেছিলো সেটা আমি জানতাম না।বিকালে পুকুরে গোসল করছিলাম।মেয়েটা হঠাৎ করে আমার সামনে হাজির হয়ে ফিক করে হেসে দিল।সে হাসি দেখেই আমি ফিদা।আর এই সুযোগে ফাজিল মেয়েটা আমার কাপড় চোপড় নিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে চলে আসছে।ভাবলাম আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।

.
.
কিন্তু সেই প্রতিশোধ আর নেওয়া হল না।পর দিন সকালে ও আমাদের বাসায় আসলো না।ব্যাপারটা কেমন জানি লাগলো।মার কাছে জিজ্ঞাস করতেও লজ্জা লাগছিলো।তাই মাকে কিছু বললাম না।কিন্তু দুপুর পর্যন্ত আর থাকতে পারলাম না।ওর কথা বলা,দুষ্টুমি খুব মিস করছিলাম।আর থাকতে না পেরে ওর বাড়ির দিকে রওনা দেয়।ওকে দেখলাম না।ওর বাসায় গিয়ে দেখি ওদের ঘর তালামারা।এটা দেখে মনে হচ্ছিল আমি আর নেই।আমার মূল্যবান জিনিস আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওরা ঢাকায় চলে গেছে।এত কষ্ট হচ্ছিল আমার বলে বুঝাতে পারবো না।একটাবারও কি আমাকে বলে যেতে পারতো না।কিন্তু পরে মনে হল ও তো আমাকে চিনেই না।শুধু আমার মাকে চিনে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।বাসায় এসে দেখি আমার মা টা আর আগের মতন তেমন প্রাণবন্ত নেই।আগে যে হাসিটা মুখে লেগে থাকত সেই হাসিটা আর নেই।হয়ত উনার গল্প করার সখী এখন উনার কাছে নেই তাই।আমার পক্ষেও আর বাসায় থাকা সম্ভব হলো না।এখানে থাকলে ওর দুষ্টুমির স্মৃতিগুলো ভেবে আরও কষ্ট পাবো।তাই ঢাকায় চলে আসলাম।আর আমার সেই ভালবাসার মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
.
.
এরপর প্রায় ৫টা বছর কেটে গেল।এই ৫ বছরে আমি অনেকের সাথে মিশিছি। পড়ালেখার জন্য ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও আমার ফ্রেন্ড ছিল।এদের মধ্যে অনেকের কাছে প্রপোজালও পেয়েছিলাম।ভেবেছিলাম এদের মধ্যে যে কারোর প্রপোজাল একসেপ্ট করে আমি নতুন করে লাইফটাকে সাজাবো।ওর চিন্তা করে আর নিজেকে কষ্ট দিবো না।ওর সাথে আমার একদিন দেখা হবে সে আত্মবিশ্বাস আমার মনে ছিল কিন্ত সেই ৫ বছরে ওকে না পেয়ে আমার ভিতরে যে একাকীত্ব ঘিরে ধরল তা খুব কষ্টকর ছিল।কিন্ত ফ্রেন্ডলি অবস্থায় এদের কারো মাঝে আমি ওকে অনুভব করে নি।কিছু একটা ওদের মাঝে ছিল না যার জন্য আমার মন ব্যাকুল ছিল।পড়ে বুঝলাম এই ভাবে হবে না মন থেকে একবার যাকে ভালবাসা হয় তাকে ছাড়া অন্য কারোর কাছে ভালবাসার মানুষের সেই তীব্র অনুভূতি খুঁজে নেওয়া চরম বোকামি।৫বছর ধরে যেহেতু ওর জন্য অপেক্ষা করেছি আল্লাহ চাইলে সারাজীবনও ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারবো।শুধু নিজের ইমোশন,আবেগটা কন্ট্রোলে রাখতে হবে।নাহলে এই অপেক্ষা করার বাধ ভেঙ্গে যাব