Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2435



স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৭

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“এই মেয়ে দেখেশুনে চলতে পারো না।”
“সরি আসলে এইভাবে পড়ে যাব বুঝতে পারেনি ভাইয়া।” এই বলে ভ্যা ভ্যা করে মেয়েটা কেঁদে দিলো।
“আরে এখানে কান্নার কি হলো।”
“আমার মাটির পুতুলটা।”
“চেয়ে দেখি বর বউয়ের মাটির পুতুলটা ভেঙ্গে গেছে। আর সেইজন্য বেচারি কাঁদছে।”
“সামান্য মাটির পুতুলিতো। এতে কাঁদার কি হলো।”
“অনেক খুঁজে এইরকম পুতুল পেয়েছি।আর আপনি এইটা সামান্য বললেন এই বলে মেয়েটা কেঁদে কোনরকমে শাড়িটা উঁচু করে ধরে অনেক কষ্টে হেঁটে চলে গেল।”
এরপর কি জানি মনে করে মাটির পুতুলটা মাটি থেকে নিয়ে নিলাম।বাসায় গিয়ে সেটা অনেক কষ্টে জোড়া লাগিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম।
.
.
এর কিছুদিন পর ভার্সিটি থেকে বন্ধ পায়।১৫ দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি আসি। বাসায় আসা মাত্রই মা একটা মেয়েকে নিয়ে আমার সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলো।এরপরে মা প্রায় সেই মেয়ের নাম করে বলছে মেয়েটা খুব ভালো।এরকম মেয়ে আজকাল দেখা যায় না।খুব মিষ্টি মেয়ে।মায়ের কাছে মেয়েটার প্রশংসা শুনে ওর সম্পর্কে জানার খুব খুব কৌতুহল সৃষ্টি হল।

“মা মেয়েটার সাথে তোমার পরিচয় কি করে হয়েছে?”
মা তো প্রায় হাসিমুখে জবাব দিলো জানিস তন্ময় আমি একদিন বাজারে বাজার করা অবস্থায় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। পরে একটা মেয়ে এসে অনেকক্ষণ যাবত আমার মাথায় পানি ঢালে।এরপর কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে রিক্সা করে আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।বাসায় এসে আমার অনেক সেবাযত্ন করে।সেদিনের পর মেয়েটা বাসায় এসে মাঝে মাঝে আমার খোঁজখবর নিয়ে যায়।মেয়েটার স্কুল আমাদের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের।তাই প্রতিদিন সকালে বাসায় এসে আমার সাথে গল্প করে।অনেক ভালো মেয়েটা।

.
.
ও ঘটনা তাহলে এই।এইজন্য মা মেয়েটার এত প্রশংসা করছে।তাহলে তো মেয়েটাকে দেখতে হয়।এরপরের দিন সকালে মেয়েটা বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়।আমি বাইরে থেকে এসে দরজা খুলার সময় দেখি আমার মা আর মেয়েটা হেসেহেসে গল্প করছে।লুকিয়ে এই দৃশ্য দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। মেয়েটার জন্য মাকে আবার অনেকদিন পর হাসতে দেখছি।ভালো করে মেয়েটার চেহেরায় লক্ষ করে দেখি এই মেয়ে আর কেউ নয় মেলার সেই মেয়েটি যে শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন করে ধরে হাঁটা ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটি।প্রতিদিন সকালে মেয়েটা বাসায় আসার আগে বেরিয়ে যেতাম আর মেয়েটা বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের গল্প শুনতাম।লুকিয়ে তাদের গল্প শুনতে বেশ ভালোই লাগতো।
.
.
এরকিছুদিন পর মেয়েটার বাড়ির দিকে একটা কাজে যাচ্ছিলাম ।সাদা শার্ট পড়ে সেদিন রওনা দিয়েছিলাম।হঠাৎ করে আমার সাদা শার্টে সেদিন বালতিভরা গোবর কে জানি ঢেলে দিলো। রাগে আমার শরীর প্রায় কিড়মিড় করছিল।ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম কতগুলো বান্দর ছেলেমেয়ে গাছ থেকে নেমে দৌড়।আমি এরমধ্যে একজনের হাত ধরে ফেললাম।হাত ধরে নিজের কাছে ওর মুখ ঘুরিয়ে দেখি আমার গায়ে বালতিভরা গোবরঢালার মাস্টার আর কেউ নয় সেই মেয়েটি।যে এতদিনে আমার মায়ের গল্প করার সখী হয়েছিলো।
.
.
“মেঘ এত ঘামছো কেন?পানি খাবে।”
“না না, আমি এই গল্প শুনবো না।ঘুমাবো।”(ভয়ে ভয়ে)
“আরে কি জোশ একটা গল্প বলছি।আর তুমি বলছ ঘুমাবে।সেটা কি করে হয়।কি কথা ছিলো আজকে সারারাত আমরা গল্প করবো।গল্পই তো করছি।এখনো আরও ইন্টারেস্টিং মজার কথা বাকি আছে।সেগুলোও শুনতে হবে।”

এরপর মেয়েটাকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম “এই মেয়ে আমার সাদা শার্টটার কি অবস্থা করেছ?”
“মেয়েটা প্রায় কেঁদে কেঁদে জবাব দিলো ভাইয়া সরি।আমি ইচ্ছা করেনি।”
“তাহলে এইসব কি করে হল?”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ কান্না বন্ধ কর।আমি তোমাকে কাঁদতে বলছি।আমার প্রশ্নের জবাব চাইছি।শুধু উত্তর দিবে।কান্নাকাটি করবা না।”
মেয়েটা চোখ নাকের পানি হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে বলল, “ভাইয়া আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে আমাকে নিয়ে অনেক ফাজলামি করছিলো। তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এই ব্যবস্থা করছি।ছেলেটা এই রাস্তা দিয়ে আসছিলো। আমিও গাছে উঠে গোবর ওর গায়ে ফেলার জন্য তৈরী হলাম। হঠাৎ করেই ওই ছেলের জায়গায় আপনি আসবেন আমি কি করে তা জানতাম।আপনি কেন ঘোড়ার মতন লম্বা লম্বা পা ফেলে ছেলেটার আগে চলে আসছেন।দেখেন দেখেন ওই ফাজিল ছেলেটা এখন জোরে জোরে হেসে চলে যাচ্ছে।”
“এই মেয়ে পেটে পেটে এত শয়তানি।ওই ছেলেকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আমাকে দিনের মধ্যে চাঁদ দেখায়া দিলা।ফাজিল মেয়ে একটা।”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ একদম কাঁদবে না।”(ধমক দিয়ে)

এই বলে মেয়েটার হাত ছেড়ে নিজের শার্টের দিকে তাকালাম।আর এই সুযোগে মেয়েটা ভোদৌড়।আমার রাগ তখন আকাশের সপ্তম চৌড়ায় উঠে গেল।মনে মনে তখন প্রতিজ্ঞা করলাম এই মেয়েকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।

এই বলে আমি মেঘের দিকে তাকালাম।মেয়েটা কি রকম করুণ চাহনীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর এদিকে ওর এই করুণ দৃষ্টি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।

এরপর প্রতিদিন সকালে আমার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা কখন বাসায় আসবে, কখন আমার মায়ের সাথে গল্প করবে। আর কখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের গল্প শুনবো।ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি আরো বেশি ভাললাগাটা কাজ করলো।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৬

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তাই নাকি?আমি সরি বলবো।”
“হ্যা,”
“জীবনেও না।দোষটা তোমার ছিলো তাই নিজ থেকে সরি বলেছ আমার যেহেতু কোন দোষ নেই তাই সরি বলার প্রশ্নই উঠে না।”
“কিহ!”
“বিশ্বাস করুন যা করেছিলাম আপনার ভালোর জন্যি করেছিলাম।”
“ওয়েট বিয়ে করার আগে তুমি বলেছিলে না তুমি আমাকে ভালবাসো। তাহলে আমাকে আবারও আপনি করে কেন ডাকছ।তুমি করে বলো নাহলে কিন্তু আমি প্রিয়ার কাছে চলে যাব।”
“কিহ!”
“মেরে ফেলবো তোমাকে।বউকে ছেড়ে অন্য আরেকটা মেয়ের দিকে নজর দাও।”
“তাই নাকি।যদি এখন থেকে আপনি করে বলো তাহলে কিন্ত”
“আর বলবো না।তুমি করেই বলবো।”
“হুম। আর আগে জানি কি বলছিলে এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে।”
“তোমার ভালোর জন্য…”
“মেঘ আমার ভালোর জন্য আর কখনো নেগেটিভ ডিসিশন নিবে না।তোমার এই ভুলের জন্য আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি সেটাতো দেখো নি।তুমি চলে গেলে আমার কি কষ্ট হবে সেটাতো একবারের জন্যও বোঝার চেষ্টা করোনি।স্বার্থপরের মতো নিজের এই ঢিলা মাথায় যা আসছে তাই করে গেছ।এতদিন হল আমার সাথে ছিলে একাবারের জন্য কি মনে হয় নি তোমার স্বামী অন্যকোন মেয়ের সাথে নিজেকে জড়াতে পারেনা।ভালবাসার জন্য বিশ্বাস জিনিসটা সবচেয়ে বড়।এত ভালবাসো আমাকে আর আমার উপর এই বিশ্বাসটা রাখতে পারলে না।”
“আসলে পরিস্থিতি তখন এমন ছিলো আমার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানটুকুও ছিলোনা।সাগরের সেই ভিডিও আর তোমার ওইদিনের সেই কথা,তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে গোপন কিছু কথা বলতে চাও তাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম….”
“এই বিষয় নিয়ে একটাবার আমার সাথে কথা বলে দেখতে।ওইদিন এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে আর প্রিয়াকে দেখে সন্দেহ করিওনা।প্রিয়ার সাথে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কারণটা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।আশা করি প্রিয়া তোমার সব ভুল ধরিয়ে দিয়েছে।আর একমাস পর ওদের বিয়ে হবে।প্রিয়ার কথা ওর বিয়ের কথা সারপ্রাইজ হিসেবে তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম আর এইটাও চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী ওর নিজ চোখে যা দেখছে সে বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলুক।কারণ তোমার মনে কি চলছিলো সেটা বুঝার জন্য,নিজের অধিকারটা আমার সামনে তুলে ধরো সেজন্য, আমাকে তুমি ভালবাসো সেটা আমার সামনে প্রকাশ করো সেইজন্য আমি কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারেনি।এটাই ছিলো আমার গোপন কথা।”
“সরি বললামতো আর কখনো এরকম ভুল করবোনা।”
“তাই তাহলে কান ধরে সরি বলো।”
“কিহ!”
“আমি কান ধরে তোমাকে সরি বলবো।”
“হুম” (মুচকি হেসে)

ওর বুকের মধ্যে কয়েকটা কিল ঘুষি লাগিয়ে দিলাম।এই নাও কান ধরে সরি বললাম

“এটা কিন্তু ভারী অন্যায় হল। যেটা করতে বলছি সেটা না করে…..। মেঘ আজকে কিন্তু আমাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী।”
“হ্যা জানিতো।”
“তোমাকে যখন প্রথম বিয়ে করি তখন তুমি বিয়েটা মেনে নাওনি।তাই আমাদের বিয়ের কথা কাউকে জানাইনি।চেয়েছিলাম আমাকে যেদিন মন থেকে ভালবাসবে সেদিনি সবাইকে জানিয়ে তোমাকে আবার বিয়ে করব।পরিবারের সবাই,তোমার বন্ধুবান্ধব সবার উপস্থিতিতে আমরা ২য় বার আমাদের প্রথম বিয়ের তারিখে বিয়ে করে ১ম বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম। আর এইবার তোমার সাথে আমার ২য় বার হওয়া বিয়েটা মেনে নিয়েছ তো। ”
“হুম (লজ্জা মুখে)।”
“তাহলে তো আমি আমার স্বামীর অধিকারটা ফলাতে পারি কি বলো।আজকে তাহলে তোমার আদর….”
“ওই স্টপ স্টপ আজকে ওইসবের কিছু হবেনা।আজকে সারারাত জেগে অনেক গল্প করবো।এই দিনটা আমি স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে চায়।”
“ওকে।As u wish.(মুচকি হেসে)।By the way এই যে আজকে এই সারপ্রাইজটা দিলাম সেটা কেমন লাগলো।”
“একদিকে ভালো আরেকদিকে খারাপ।”
“কেন?”
“২য় বার আমাদের বিয়ে হয়েছে এইটা ভেবে খুব খুশি লাগছে।কিন্তু তোমাকে ছাড়া এই ৪টা মাস একা একা দিন কাটিয়েছি।খুব দুর্বিষহ কেটেছে আমার সেই দিনগুলো।মনে হচ্ছিল আমার সারা গায়ে কাটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাথার তীব্র যন্ত্রণায় আমার পুরো শরীর নীল হয়ে গেছে।তাহলে বুঝতেই পারছো আমার দিনগুলো কেমন কেটেছিলো।”
“মেঘ আমিও তোমাকে ছাড়া যে খুব ভালো ছিলাম তা কিন্তু নয়।তোমার মতন আমিও এই ৪টা মাস তোমাকে না দেখে ছিলাম।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেও অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি।কিন্তু আমার ভিতরে কি যন্ত্রণা চলছিলো সেটা শুধু আমিই জানি।আজকে এইসব কথা বাদ দাও।আমাদের দুঃখের দিন শেষ।এখন থেকে যা হবে ভালোই হবে। একটা কাজ করো আগে ফ্রেস হয়ে আসো।এই ভারী কাপড় চেঞ্জ করে এই থ্রিপীচটা পরে নাও।”
“ওকে”
“এই চল এখন বারান্দায় যায়।”
“হুম”
.
.
“আজকে তোমাকে আমার জীবনের কিছু গল্প শুনাবো।গল্প শেষ করার আগ পর্যন্ত কোন কথা বলবে না।”
“ওকে। As u wish.”
“তাহলে শুনো।৭ বছর আগের কথা।আমি ঢাকাতে তখন অনার্স পড়ছিলাম।বন্ধুরা মিলে প্রতিবছর মেলাটা গ্রামের বাড়িতে করি।সেইবারও আমি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। মেলায় হাঁটছিলাম।তখন দেখি একটা ছোট্ট মেয়ে বয়স কত হবে ১৩ কি ১৪। মেয়েটা শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন উঁচু করে ধরে হাঁটছিলো আর এদিক ওদিক আচাড় খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতন অবস্থা। শাড়ি পড়া মেয়েটার হাঁটার নমুনা দেখে আমরা বন্ধুরা হাসাহাসি করে শেষ। আর এইদিকে মেয়েটা হেঁটে আমাদের দিকে আসছিলো সেটা আমাদের কারোরই খেয়াল ছিলো না।মেয়েটা শাড়ি পড়ে হাঁটার সময় টাল সামলাতে না পেরে আমার গায়ের উপর দিয়ে পড়ল।”

এতটুকু বলে মেঘের মুখের মুখের দিকে তাকালাম।ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আমার হাসি আসছিলো।কিন্তু অনেক কষ্টে সেটা সংযত রাখলাম।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৫

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

কাজি যখন বিয়েতে আমার নাম নিলো তখন মনে হল এই বুঝি সব গেল।কিন্তু না তেমন কিছু হয়নি।তারমানে উনি সব সামলে নিয়েছেন আগে থেকে।যাক বাঁচা গেল।অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেল উনার সাথে।অনেক খুশি লাগছে।যাকে চেয়েছি তাকেই সারাজীবনের জন্য আপন করে নিলাম।

“এইযে এইবার বড় করে রাখা ঘোমটা খুলতে পারেন।”
আরে এটাতো তাসপিয়ার গলা।
“তু….তু…..তুই……”
“হ্যা আমি।”
“আরে এখানে তো সবাইকে দেখছি।আমার মা বাবা, আমার ডিপার্টমেন্টের ক্লাসমেটরা সবাই এখানে।প্রিয়া ম্যাডামও এসেছেন।উনাকে দেখেতো আমার চোখ দুটি ছানাপোড়া হওয়ার মত কারণ ওনি বউয়ের বেশে নয় মেহমান হিসেবে এসেছেন।কিন্তু উনার চোখে কোন রাগ নেই।বিয়ের কনেতো উনার হওয়ার কথা ছিলো উনার জায়গা বদলে আমি বিয়ে করেছি।কিন্ত উনি আমাকে দেখে রাগলেন না উল্টো মুচকি মুচকি হাসছেন।যেন কিছুই হয়নি মনে হল তন্ময় স্যারের সাথেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কি হচ্ছে এইসব।”
.
.
“কিরে কেমন দিলাম।”
“মানে…….”
“গাধী এখনো বুঝিস নি,,”
“সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।কি হচ্ছে এইসব।
মা,বাবাতো দেখি শাশুড়িমার সাথে কথায় ব্যস্ত।ওরা এখানে কিভাবে?”
“তাসপিয়া তুমি যাও,মেঘের সাথে আমার কিছু কথা আছে।”(প্রিয়া)
“কি হচ্ছে এগুলো।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আমি বলছি।আমি তন্ময়ের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড সেটাতো এতক্ষণে ওর কাছ থেকে শুনে নিয়েছে।আমি ওকে আগে অনেক পছন্দ করতাম।পছন্দ থেকে ভালবাসা।আর এরপরেই ওকে প্রপোজ করে বসি।কিন্তু ও তা রিজেক্ট করে দেয়।এর কারণ জানতে চাইলে ও প্রায়ি বলত ও অন্য আরেকটা মেয়েকে ভালবাসে।তাই অন্য কাউকে ভালবাসা ওর পক্ষে সম্ভব না।আমি অনেকবার ওর কাছ থেকে সেই মেয়েটার নাম জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওর কাছ থেকে কোনদিন সেই মেয়েটার নাম জানতে পারেনি।এর কিছুদিন পরেই জানতে পারি তন্ময়ের ক্লোজ ফ্রেন্ড আমাকে ভালবাসে।একবার একজনকে ভালবেসে ঢের শিক্ষা হয়েছে তাই এই ভালবাসায় আর মন দেয়নি।এরপরেই তন্ময় ঢাকা ভার্সিটিতে শিক্ষকতা পদে ঢুকে আর এরপর আমি।একি ডিপার্টমেন্টে আমরা জয়েন্ট করি।পুরানো ফ্রেন্ডকে খুঁজে পেয়ে ভালোইই কাটত দিন।এরপর ওর থেকে আমি শুনতে পারি আমার সেই ফ্রেন্ড আমাকে এখনও ভালবাসে।ও আচ্ছা ওর নামটাতো তোমাকে বলিনি।ওর নাম রাফি।এরপর প্রায়ি তন্ময় আমাকে বিভিন্ন বাহানায় ঘুরতে নিয়ে যেত আর সেখানে রাফি এসে উপস্থিত হত।বুঝতাম ওর আসল উদ্দেশ্য রাফির সাথে আমাকে দেখা করানো। এরপর বিভিন্নভাবে রাফির সাথে আমার প্রায় দেখা হত তন্ময়ের মাধ্যমে।রাফির সাথে মিশতে মিশতে বুঝতাম ও আমাকে আসলেই ভালবাসে।এর মধ্যে আমিও ওকে একটু একটু ভালবেসে ফেলেছি।ভার্সিটিতে রাফিকে নিয়ে আমরা কথা বলতাম।রাফির কি পছন্দ না পছন্দ ওর সম্পর্কে সব খোঁজখবর আমি তন্ময়ের থেকে নিতাম।আর এইজন্যই তন্ময়ের সাথে আমার কথাবার্তাটা বেশি হত।এর মাঝে যে তন্ময় তোমাকে বিয়ে করেছে সেটা আমাকে জানায়নি।এর কিছুদিন পর আমার একটা জরুরি কাজ থাকে।কোন রিক্সাও খুঁজে পাচ্ছিলাম।তাই সেদিন তন্ময়ের গাড়িতে লিফট নিই আমি।এরপর রাফির সাথে আমার সামান্য একটা বিষয় নিয়ে খুব ঝগড়া হয়।অবশ্য এতে আমারও কিছু দোষ ছিল।রাফি আমার উপর অনেক রাগ করার কারণে কয়েকদিন ধরে আমার সাথে দেখা বা কথা বলে নি।এ কয়েকটা দিন যে আমার কিভাবে কেটেছে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা।কিভাবে ওর রাগ ভাঙ্গাবো তা বুঝতে পারছিলাম না।তাই তন্ময়ের কাছে যাই। ও আমার মনটা ভালো করার জন্য আমাকে পার্কে নিয়ে যায়।কিন্তু মনটা ভালো ছিলো না তাই অনবরত কান্না করেই যাচ্ছিলাম। তাই আমার হাত ধরে ও আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল যে কিছুই হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।সেদিন যে সাগর আমাদের পিছু নিয়েছিল তা আমরা জানতাম না।এ সামান্য ঘটনার ছবি তুলে সাগর তোমাকে সেই ছবি পাঠিয়ে তোমাকে উল্টাপাল্টা কথা বুঝিয়ে তোমার মনে আমাদের সম্পর্কে খারাপ কথা ঢুকিয়েছে।আর সেই ছবি দেখে তুমি তা বিশ্বাস করে নিলে তন্ময় আর আমার মধ্যে কিছু চলছে।আর সেদিন রেস্টুরেন্টের সেই ঘটনা দেখে বুঝলাম তোমরা দুইজন স্বামী-স্ত্রী।আর তন্ময়ের সেই পছন্দের মেয়েটাই তুমি।তুমি কোন কিছু ভালোভাবে না জেনেশুনে যে পদক্ষেপ নিয়েছ তার জন্য তন্ময়কে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।তন্ময় তোমার সাজানো নাটকটা পরে বুঝতে পেরে তোমাকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলো।কিন্তু তোমার অতিরিক্ত জিদ আর ওকে কষ্ট দেওয়ার কারণে সেও মনে মনে ঠিক করে তোমাকেও এর থেকেও বেশি কষ্ট দিবে।তাই ও আর আমি মিলে মিথ্যা নাটক করে তোমাকে ইমোশনালভাবে কষ্ট দেওয়ার প্ল্যান করি।আর এরপরের কথাতো তুমিই জানো। ”
“I am extremely sorry না জানি আপনার সম্পর্কে কি না কি ভেবেছি আমি।প্লিজ ম্যাডাম পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন।”
“না না Its ok. তোমার জায়গায় আমি থাকলে আমি নিজেও অনেক খারাপ কিছু ভাবতাম।যাই হোক তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হোক সেই দুয়া করি আমি।God bless u.”
.
.
এরপর একে একে সবার থেকে জানতে পারলাম আজকে তন্ময়ের সাথে যে আমার বিয়ে সেটা আমি বাদে বাকি সবাই জানে।মা বাবা,আমার শাশুড়ি মাও জানে।এই কাজটা উনি মোটেও ঠিক করেননি।আমি আমার এই ভুলের জন্য কতনা কষ্ট পেয়েছি এরপর এই বিয়ে নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারিনি অসহ্য যন্ত্রণা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।কিন্তু উনি……। আমাকেই যদি বিয়ে করবেন তাহলে কেন এই মিথ্যা অভিনয় করলেন।মানছি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য উনি এইসব করেছেন তাই বলে এত্ত কষ্ট দিবেন তা ভাবতে পারে নি।
উনার সাথে বিয়ে হওয়াতে মনে মনে খুশি হলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে।আজ রাতে উনাকে মজা দেখাবো।
.
.
“সাব্বির দাঁড়াও।”
“স্যার, আপনার বিবাহিত জীবন সুখের হোক।”
“ধন্যবাদ।আর সেইদিনের সেই সাহায্যের জন্যও তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।তুমি যদি সেদিন পেনড্রাইভটা না পাঠাতে তাহলে ওকে আমার লাইফ থেকে হারিয়ে ফেলতাম।Many many thanks.”
“স্যার কিসের পেনড্রাইভ!আমি কোন….”
“Oh plz, সাব্বির মিথ্যা বলা লাগবে না।আমি সব জানি।”
……
“ভাবছো কিভাবে জেনে গেলাম।তাহলে শুনো পেনড্রাইভের সাথে একটা চিঠিও দিয়েছিলে তুমি।তোমার লেখার সাইজ দেখে বুঝে গেছি এই চিঠির মালিক কে?এত সুন্দর লেখা তুমি ছাড়া আর কে লিখবে?হ্যান্ডরাইটিং দেখেই বুঝি গেছি এই কারবার কে করেছে?”
“বুঝে গেলেন তাহলে।অনেক চেষ্টা করেছিলাম লিখা সুন্দর করার জন্য কিন্তু কিছুতেই হয় না।কয়েকটা ফ্রেন্ডকেও বলছিলাম সুন্দর করে চিঠিটা লিখে দিতে।কিন্তু আমার সব ফ্রেন্ডেরই হাতের লিখা একি রকম মানে বাজে…।ওদেরও ইগো বলে একটা কথা আছে।তাই নিজেদের এই সুন্দর হাতের লিখা দিয়ে চিঠি লিখতে অপারগতা জানাই।তাছাড়া আমার হাতে সময়ও বেশি ছিলো না তাই নিজের হাতে লিখা চিঠি আর পেনড্রাইভটা লোক দিয়ে সকালে আপনার বাসায় পাঠিয়ে দিই।”
“হুম বুঝলাম।আচ্ছা একটা কথা বলোতো তুমি এইসব কেন করতে গেলে?সত্য কথায় বলবে এই আশাই রাখছি।”
“স্যার কথাটা শুনতে আপনার থেকে খারাপ লাগলেও বলছি একসময় আমি মেঘকে অনেক ভালবাসতাম।প্রায় ২মাসের মতন ও ক্লাসে আসে নি।এই নিয়ে আমার মনে কি পরিমাণ অশান্তি হচ্ছিল আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।বিশ্বাস করুন আমি তখন জানতাম না যে এর মধ্যে ওর বিয়েও হয়ে গেছে।এরকিছুদিন পর মেঘ আর তাসপিয়ার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়।একদিন মেঘ আমাকে পার্কে এনে জানায় তাসপিয়া নাকি আমাকে ভালবাসে।এই কথা শুনে আমি আর নিজের ভালবাসার কথা ওকে জানাতে পারেনি। ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি আপনার সাথে মেঘের কোন সম্পর্ক আছে।পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি আপনারা দুইজন স্বামী -স্ত্রী। মেঘ সুখে থাকুক সেটাই সবসময় চেয়ে এসেছি।তাই নিজের ভালবাসার কথা নিজের মনে চেপে রেখেছি।তাসপিয়ার কথাটাও ভেবে দেখলাম।ও আসলেই একটা ভালো মেয়ে।ওর সাথে মিশে বুঝলাম আমি লাইফ পার্টনার হিসেবে যেমন মেয়ে চাই তাসপিয়াও ঠিক তেমন মেয়ে।পরে ওকে আমি ভালবাসতে শুরু করি।মেঘের কারণেই আমি তাসপিয়াকে আমার লাইফে পেয়েছি।এইজন্য আমি সারাজীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। কিছুদিন পর আমি মেঘের মাঝে একটা পরিবর্তন লক্ষ করি।বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঠিক নেই।মনের মধ্যে সন্দেহ তৈরী হল।একদিন ওকে আর তাসপিয়াকে আমি লুকিয়ে কথা বলতে দেখি।মেঘ সেদিন খুব কান্না করছিলো।আমার সন্দেহ তখন আরো গাঢ় হয়।তাই তখনি ঠিক করলাম আমাকে কিছু একটা করতে হবে।পরে আমি ওদের কথোপকথন ভিডিও করি। এরপর মেঘের পিছু নেই।সেখানে ওকে আমি একজনের সাথে কথা বলতে দেখি।তারও ভিডিও করলাম।এরপরের দিন সকালে আমি সেই ভিডিওর পেনড্রাইভ আর চিঠি আপনার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।”
“মেঘের বন্ধু হিসেবে যা করলে তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।”
“বন্ধু হিসেবে এইটা আমার কর্তব্য ছিল।”(মুচকি হেসে)
.
.
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। আর উনার আসার নাম নাই।রাগ ক্রমশই বাড়ছে।
“উহুম উহুম”
“আপনি,,এত দেরি করে আসছেন কেন?জানেন কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
“আচ্ছা তাই নাকি?তা ম্যাডাম আপনার বুঝি তশ সইছিলো না কখন আপনার কাছে আসবো কখন আপনাকে আদর…..”
“ওয়েট ওয়েট,, আপনিতো দেখি অনেক ফাস্ট।এইসব ফালতো চিন্তা মাথায়ও আনবেন না।আর বলুনতো এইসব নাটকের মানে কি?আমাকেই যদি বিয়ে করবেন তাহলে এতদিন ধরে আমাকে এত কষ্ট দিলেন কেন?জানেন কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার।”
“জানিতো।আর জেনেশুনেই আমি তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছি।আমাকে যে এত কষ্ট দিলে তার বেলায়।”
“আমি আমার ভুলের জন্য আপনাকে সরি বলছি।কিন্তু আপনিও এইরকম কাজ করে ঠিক করেননি। আমাকেও সরি বলুন।”

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৪

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“আপনি এই ভিডিও কোথা থেকে পেলেন?”
“সেটা পরে বলবো। আগে বলো এইসবের মানে কি?”
“আমি কিছু জানি না।এইটা ফেইক ভিডিও।”
“ওহ রেয়িলি।এই ভিডিও ফেইক।তাহলে তুমি কি?”
…………
“তাসপিয়াকে, সাগরকে বলে বেড়াচ্ছ তুমি আমাকে ভালবাসো,বাইরের সবাই এই কথা জানে একমাত্র আমি ছাড়া।যাকে এই কথা বলার দরকার তাকেই কিছু না বললে না।কেন এই মিথ্যা অভিনয়।”
………
“এখন কেন চুপ আছো। যখন কিছু বলার দরকার কিছুই বলোনা।চুপ মেরে থাকো। আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলি।ওর সাথে আমার ছবি দেখে ভেবে নিয়েছো ওর সাথে আমার রিলেশন চলছে।ওই আমার পছন্দের সেই মেয়ে।যাকে আমি ভালবাসি তাই না?নিজে নিজে এতকিছু বুঝে গেছো। Very good.৮টা মাস তুমি আমার সংসারে ছিলে।এতদিনে আমাকে এই বুঝলে।আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসটা কোনদিনও ছিলো না।”
“না বিশ্বাস ছিলো।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।বিয়ের দিন যখন আপনার বাসায় আসি তখন দেখলাম আলমারি ভর্তি শাড়ি,ফুলের টব,আরও অনেককিছু।ভাবলাম এইসব ভালবাসার মানুষের জন্য করেছেন।আর এইও মনে হল আমি আপনাদের ভালবাসার মাঝে এসে পড়েছি। অনেক জানার চেষ্টা করেছি আপনার ভালবাসার মানুষটা কে?কোন উত্তর নাতো আমি আপনার কাছে পেয়েছি নাতো অন্য কারোর কাছে।এরপর প্রিয়া ম্যাডামের সাথে আপনাকে সবসময় কথা বলা,ঘুরতে যাওয়া দেখে বুঝলাম আপনার ভালবাসার মানুষটা আর অন্য কেউ না বরং প্রিয়া ম্যাডাম।আমি জানি আপনি মুখ ফুটে আমাকে কিছু বলবেন না আর আমিও কোন অপরাধবোধের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটতে পারবোনা তাই আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছি।এরপর আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি নাকি আমাকে কিছু গোপন কথা বলতে চান সেদিন বুঝতে পেরেছি কি বলতে চান।কিন্তু সেই কথা শুনার শক্তিটুকু আমার ছিলো না তাই আপনাকে এড়িয়ে গেছি।আর তারপরেই আপনার আর প্রিয়া ম্যাডামের হাত ধরে থাকা ছবি দেখে আমি একশ ভাগ নিশ্চিত হলাম যে আমার এই ধারণায় কোন ভুল নেই।আপনি সত্যি সত্যিইই প্রিয়া ম্যাডামকে……..।আপনাকে বিব্রত করতে বা অপমান করতে কখনো চাই নি।জানি আপনার ভালো লাগার কথা ভালবাসার কথা আপনি চাইলেও আমাকে বলতে পারবেন না তাই নিজ থেকেই সব কিছু করেছি।আর রইল সাগরের কথা,ওর কথাতে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার কারণে তোমার ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই চাইবো না তাই আমি এইসব করতে বাধ্য হয়েছি।”
“Great.ভালোই ডিসিশন নিয়েছো।নিজেই নিজে কত কি ভাবো, নিজেই নিজেই সব ডিসিশন নাও।কোন সমস্যায় পড়লে নিজের স্বামীকে জানাও না।একবার, দুইবার না বহুবার বলেছি তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো আমি সব ঠিক করে দিবো কিন্তু আমাকে কোন কিছু বলোনি।তোমার ফ্রেন্ড তাসপিয়া সব জানে অথচ আমি কিছুই জানি না।আমি আমার স্ত্রীর একজন ভালো স্বামী একজন ভালো ফ্রেন্ড হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার কোন চাওয়াকে এতদিন পর্যন্ত মূল্য দেও নি।”
“আপনাকে আমি সব বলতাম কিন্তু মনের ভয় আর আপনি অন্যজনকে ভালবাসেন, আমাকে না এটা জানার পরও কেন আপনাকে এইসব বলতে যাব। আমি যা করেছি আপনার ভালোরর জন্য করেছি,আপনার খুশির জন্যই করেছি।”
“আচ্ছা।এই বেশি বুঝার কারণটা আজ আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর তোমাকে ভালবাসি এই কথাটা কি মুখে বলা এতটা জরুরি। তোমার জন্য এতদিন এতকিছু যা করে এসেছি তার কাছে এই মুখে বলা শুধু একটা কথা “ভালবাসি” শব্দটা এত মূল্যবান হয়ে গেছে।মেঘ,অনেকেই তো এই কথা মুখে মুখে বলে বেড়ায় আমি তোমাকে ভালবাসি।এই মুখে বলা”ভালবাসা”কথাটার দাম কয়জনে রাখতে পারে।এই দেখো না উদাহরণ হিসেবে সাগরের কথায় বলি ও তো দিনের মধ্যে কম করে হলেও একশ বার বলেছে মেঘ আমি তোমাকে ভালবাসি।কি বলে নি।”
………
“তারপরও কেন সে তোমাকে বিপদের মুখে ফেলে চলে গেছে।”
………
“কারণ ভালবাসার জন্য ভালবাসি কথাটা বলা শুধু মুখ্য নয়।ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু করে দেখানো, নিষ্ঠার সাথে ভালবাসার মানুষটার জন্য কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করাও জরুরি হয়ে পড়ে। যা সবাই পারে না।এখন অনেকেই “ভালবাসি” কথাটা প্রচার করতে করতে এই শব্দটাকে অতি সস্তা করে ফেলেছে।আমি সেই দলে নিজেকে জড়িত করতে চাই নি।আমি তোমার জন্য এতদিন এত কিছু করেছি এগুলো কি ভালবাসার মধ্যে কখনো পড়ে না।মেঘ তোমার চোখ থাকা সত্ত্বেও তুমি তা দেখো নি।তুমি শুধু তোমার বিবেকের কথা শুনেছ মনের কথা শুন নি। তাই তোমাকে আমি এতদিন ধরে যা দেখাতে চেয়েছি তুমি তা দেখতে পারোনি।যদি মনের কথা শুনতে ভালোভাবে আমাকে বুঝার চেষ্টা করতে তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে অনেক আগে পেয়ে যেতে আর এইরকম ফালতো সিদ্ধান্ত নিতে না।”
“আমি…….”
“চুপ আমার বলা শেষ হয় নি।প্রিয়া আর ‘আমার মধ্যে কোন রিলেশন ছিলো না।ও শুধু আমার ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড ছিলো।ভার্সিটি থাকতে আমাকে প্রপোজও করেছিলো কিন্তু আমি তা একসেপ্ট করে নি।কেন করেনি সে কারণটাও আমি ওকে জানিয়েছি।এরপরে আমরা দুইজনে ঢাকা ভার্সিটিতে একি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা পদে ঢুকি।ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতাম সেটা স্বাভাবিক।এর মধ্যে আরও অনেককিছু ঘটনা আছে যা তোমাকে আমি পরে বলতাম কারণ সেসব কথা বলার সময় তখনো আসে নি।কিন্তু তার আগেই তুমি……।এখন তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছ।অনেকটা জেদের বশে এখন আমি প্রিয়াকে বিয়ে করছি।আমার জীবনে প্রিয়াকে দ্বিতীয় বার ঢুকানোর সুযোগ তুমিই করে দিয়েছো।আজ তুমি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছ।”
.
.
সারা রাত আর ঘুমাতে পারলাম না।এ আমি কি করলাম। কেন নিজে বেশি বুঝতে গিয়ে এত বড় সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।উনিতো প্রিয়া ম্যাডামকে ভালোবাসেন না তাহলে এতকিছু করে কি হল?না আমি এই বিয়ে কিছুতে হতে দিবো না।কিছুতেই না।উনাকে আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে দিবো না।

সারারাত ঘুমাতে পারেনি।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছি।উনাকে আমার অনেক কিছু বলার বাকি আছে।কিন্তু সকাল থেকেই উনাকে একবারের জন্য কাছে পায় নি।এদিকে আমি উল্টাপাল্টা চিন্তা করেই অস্থির।আর কয়েক ঘন্টা পর বিয়ে।কিছুই ভাবতে পারছি না।আমি উনার রুমে বসে আছি।

“মেঘ তুমি এইখানে?”
উনাকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরলাম।
“মেঘ কি করছ।একটু পর আমার বিয়ে।এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরছ কেন?আমার বউ এখন যদি এই রুমে এসে এইসব দেখে ও অনেক রেগে যাবে।”
“যাক রেগে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না।”(কেঁদে)
“মেঘ এইভাবে কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?”
“আপনি এই বিয়ে করবেন না প্লিজ,”
“কেন?তুমিতো নিজে সব কিছুর ব্যবস্থা করলে আর এখন বলছ এই বিয়ে না করতে। তুমি আসলে একসেক্টলি কি চাও বলোতো?”
…….
“দেখো তোমার কান্না দেখার সময় আমার নেই।যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
“আমি আপনাকে ভালবাসি।”
“কিহ!”
উনার টি-শার্টে নাক আর চোখের পানি মুছে,”আমি সত্যি বলছি।”
“মেঘ এখন এইসব কথা আমাকে বলে লাভ নেই।আমি এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। এই কথা বলার অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছ।”
“কিচ্ছু হারায়নি।তবে আপনি কিছু না করলে সত্যি সত্যি আমাকে সব হারাতে হবে।আপনিইতো একদিন বলেছেন সময় থাকতে নিজের প্রিয় জিনিসের উপর অধিকার প্রয়োগ করে তা নিজের করে নিতে যাতে অন্য কেউ আমার প্রিয় জিনিসের উপর হাত বাড়াতে না পারে।সেই কথার অর্থ আজ বুঝেছি।আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হলো আমার ভালবাসার মানুষটা যাকে আমি খুব ভালবাসি।কিছু হওয়ার আগে আমি আমার ভালবাসার মানুষের উপর অধিকার প্রয়োগ করছি যাতে অন্য কেউ তাকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।আজ সঠিক সময়ে আমি এই কথা বলেছি। আপনিই আমাকে একদিন জিজ্ঞাস করেছিলেন আমার কাছে ভালবাসা শব্দটার মানে কি?আজ আমি বলছি আমার কাছে ভালবাসার শব্দটির আরেকটা অর্থ হল মায়া।ভালবাসা মানেই মায়া। আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন যাকে ছাড়া আপনি অচল।যাকে ছাড়া আমি পথ চলার সঠিক রাস্তা খুঁজে পায় না।প্রতিটি নতুন সকালে নতুন করে বাঁচার জন্য আমার আপনাকে চায়। আমার সবটাতে জুড়ে আপনি।আর আপানার সবকিছুতে আমার মায়া কাজ করে।আর এইজন্য আপনাকে আমি এত ভালবাসি।”
“আচ্ছা।আমার সব কথা তাহলে তোমার মনে আছে দেখছি।আরও একটা কথা বলেছিলাম সেটা কি ভুলে গেছ?”
“কোন কথা”
“মনে করে দেখো”
“ও মনে পড়েছে”
“হুম গুড।সে কথা যদি মনে পড়ে তাহলে সেইভাবে কথাটা বললে আমি ভেবে দেখবো কি করা যায়”
“আচ্ছা প্লিজ ১মিনিট।”
“এত টাইম হবে না।
“আচ্ছা আচ্ছা বলছি,তন্ময় আমি তোমাকে ভালবাসি।”
“মুচকি হেসে,কি বললে আমি শুনে নি,আরেকবার বলো,”
“আমি তোমাকে ভালবাসি তন্ময়। প্লিজ আমাকে বিয়ে করে নাও।আমি তোমার বউ হতে চাই।আমি আমার জায়গা আর অন্য কাউকে দিতে চায় না।একবার ভুল করেছি। আর করতে চাই না প্লিজ”
“সত্যি তো”
“হ্যা”
“আচ্ছা যাও তাহলে দেখি কি করা যায়।একটা কাজ করো মায়ের রুমে যাও। সেখানে বিয়ের শাড়ি,গয়নাগাটি রাখা আছে।সেগুলো পড়ে বউয়ের মতন করে সাজো গিয়ে।”
“আর প্রিয়া,ওর কি হবে,”
“দেখো মাথা খারাপ করবে না।একটু আগে কি বলেছ? আমাকে ভালবাসো তাই না? তাহলে অন্য আরেকজনকে কেন মাঝখানে টেনে আনছো।তুমি কি আবারও ঝামেলা পাকাতে চাও।যদি মনে এরকম ভাবনা থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করার চিন্তা বাদ দাও।আমি প্রিয়াকে বিয়ে করে নিবো।”
“না, না আমি আর কারোর কথা ভাববো না।”
“হুম রেডি থাকো।আমি আমার পরিচিত কয়েকজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওরা সব সামলে নিবে।তোমাকে গাড়িতে করে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাবে।আর আমিও রেডি হয়ে যাচ্ছি। “

স্যারযখনস্বামী পার্ট_২৩

0

স্যারযখনস্বামী
পার্ট_২৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

বাবার বাসায় চলে আসলাম।মনটা ভালো নেই।
না জানি বাবা মার সাথে কি কথা বলে বেড়াচ্ছে। যদি ওদেরকে বলে দেয় উনার আর আমার ডির্ভোস হয়ে গেছে তাহলে……।আল্লাহ সত্যি সত্যি কি উনি ওদেরকে সব বলে দিয়েছেন।ভয়ে ঘাম ঝড়ছে আমার।
“কি ম্যাডাম এত কি ভাবছেন?”
“আপনি কি মা বাবাকে আমাদের ডির্ভোসের কথা…..”
“মেঘ just relaxed.এইসব নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে। তোমার মা বাবাকে এখনি কিছু বলতে হবে না।যা বলার আমি বলবো। সেটা সময় আসলে।বুঝতে পারছ।”
উনার সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।কিছু বুঝলাম না।
.
.
১ মাস পর আমি নিজেই মা বাবাকে আমাদের ডির্ভোসের কথা বলে দিলাম।ওদেরকে বলেছি উনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।এই বিষয় নিয়ে উনারা আমাকে অনেক গালমন্দ করেছেন প্রথম প্রথম।আমি জানি এই কথা শুনে উনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি কারোর সুখে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না।আমার জন্য এতদিন যা করেছেন সে তুলনায় আমার ভালবাসার এই ত্যাগ খুবই তুচ্ছ। কিন্তু এর পরে আশ্চর্যজনক ভাবে আমাকে এই বিষয় নিয়ে তারা আর কিছু বলেন নি।তবে আমার সাথে রাগ করে যে কথা বলতো না সেটা ভালোই বুঝতাম।এর ২ মাস, ৩ মাসের শেষের দিকে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো।এইরকম ভালো রেজাল্ট আমি করবো তা কখনো আশা করিনি।সব উনার কর্তৃত্ব।উনার জন্যই আজকে এত ভালো রেজাল্ট করলাম।আজকের দিনে উনাকে খুব মিস করছি।উনার দেওয়া লকেটটা খুলে উনার আর আমার ছবি দেখছি।আচ্ছা উনি কি আমার রেজাল্টের খবর নেওয়ার জন্য একবার হলেও এখানে আসবেন।নাকি আমার কথায় ভুলে গেছেন যে মেঘ নামে উনার জীবনে কেউ একজন ছিলো।কতদিন ধরে উনাকে দেখি না।উনাকেখুব দেখতে ইচ্ছে করছে।উনাকে ছাড়া ৩টা মাস থাকতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি।
রেজাল্ট দেওয়ার পরেরদিন সকালে আমার রুমে উনি আসলেন।উনি একা আসেননি প্রিয়া ম্যাডামকে সহ নিয়ে আসছেন।
.
.
“আপনি?”
“কেন আসতে পারিনা নাকি?”
“না এইভাবে হঠাৎ আসবেন ভাবতে পারেনি।ভিতরে আসুন।”
“মেঘ কেমন আছো “(প্রিয়া)
“(আর ভালো থাকা।আপনার জন্যইই এখন আমাকে তন্ময়কে ছাড়া থাকতে হচ্ছে।উনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই।) হ্যা খুব ভালো আছি।”
“তাই নাকি এত ভালো আছো। সেটা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়। শরীরের যা হাল করেছো” (তন্ময় স্যার)
“তা কি খবর আপনাদের।”
“এইতো ভালো খবর।আমাদের ভালোর জন্য এতকিছু করলে ভালো না থেকে কি থাকতে পারি।”(তন্ময় স্যার)
“অনেক ভালো আছি আমরা।আমরা দুজন বিয়ে করতে চলেছি।আর এই আনন্দে তোমাকেও শরিক হতে হবে।”(প্রিয়া)
“বি…বি…বিয়ে….”
“হ্যা, বিয়ে। তোমাকে কিন্ত বিয়ের কয়েকদিন আগে উপস্থিত থাকতে হবে।তোমাকে ছাড়া আনন্দটা জমবে না।”(প্রিয়া)
“আমি থাকতে পারবোনা।”
“কেন?”(প্রিয়া)
“আমি একটু ব্যস্ত আছি।”
“কি ব্যস্ততা শুনি?”(তন্ময় স্যার)
…….
“দেখো আমি জানি তোমার কোন ব্যস্ততা নেই।মিথ্যা বলে লাভ নেই।আমি জানতাম তুমি এইরকম বাহানা করবে তাই আজকেই তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।”(তন্ময় স্যার)
.
.
“হায়রে কপাল,, এইদিনও কপালে ছিলো।”(মনে মনে)
“হুম এইদিনও তোমার কপালে লিখা ছিলো।”

উনি কেমনে জানেন আমি এই কথা ভাবছি।

এত ভেবে কাজ নেই।আমার বিয়েতে তোমার অনেক কাজ। কারণ তোমার জন্যই এই বিয়েটা হতে যাচ্ছে।আমাদের এই বিয়ের শুভ কাজে তোমাকে সব দায়িত্ব নিতে হবে।আমি তোমার মা বাবাকে বলে রেখেছি।তারা রাজী হয়েছে।
“আমাকে এইসব ঝামেলায় না জড়ালে হচ্ছে না।”
“না হচ্ছে না,মেঘ তোমার জন্য আমি তন্ময়কে পাচ্ছি তাই আমরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে এই বিয়ের সব দায়িত্ব দিবো প্লিজ না করোনা।আমাদের জন্য এত কিছু করলে প্লিজ আরেকটু হেল্প করো।প্লিজ……”(প্রিয়া)
“কিন্তু আমাকে মা বাবা সেখানে যেতে দিবেন না।সব সম্পর্ক তো শেষ করে দিয়ে আসছি আমি।কিসের ভিত্তিতে সেখানে যাব।”
“আমার ফ্রেন্ড হিসেবে যাবে। তোমার মা বাবাকে বুঝিয়ে বলেছি আমরা।তারা রাজী হয়েছে।তাদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে তোমার কেন এইসব আপত্তি।”(প্রিয়া)
“সেটা আপনি বুঝবেন না।বুঝলে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এখানে আসতেন না।আচ্ছা, দেখি,”
“কোন দেখাদেখি নাই।না গেলে জোর করে সেখানে নিয়ে যাব। “(তন্ময় স্যার)
“………..এখনো দেখি উনি আগের মতনই আছেন।যেটা চান সেটা করেই দেখান।”
“ঠিক বলেছ তন্ময়। দরকার হলে তাই করব।ওকে ছাড়া আমি বিয়ের পিড়িতে বসবোই না।”(প্রিয়া)
“দেখছো মেঘ আমাদের জন্য তুমি এতকিছু করেছ বলে এখন প্রিয়া তোমাকে আমাদের বিয়ে উপলক্ষে নিয়ে যেতে চাইছে।ওর মতন ভালো মেয়ে হয়ই না।সব কিছু ঠিকভাবে চলছিলো এখন শুধু তোমার জন্য আমাদের এই বিয়ে করাটা ভেস্তে যাবে।শেষ মূহুর্তে এসে যদি কিছুই না হয় তাহলে এতকিছু করে কি লাভ হলো।প্রিয়া আর আমার আমাদের এত দিনের রিলেশনের কোন নামই দিতে পারলাম না।”
“প্লিজ আর কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে না।আমি বুঝতে পেরেছি।ওকে আমি যাব।”
“ধন্যবাদ।”(প্রিয়া)

আমার তন্ময়কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে হয় নাই আবার আমাকে ওদের বিয়ের দায়িত্ব দিয়ে আমার কষ্টটাকে আরো বাড়াচ্ছে।আবার ধন্যবাদও বলে।(মনে মনে)
.
.
“প্রিয়া তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।আমরা এখনি আসছি।”
“প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।তোমাকে ছাড়া এখন একমূহুর্তও ভালো লাগে না।”(প্রিয়া)
“মুচকি হেসে,তাড়াতাড়িই আসছি।যাও”(তন্ময় স্যার)
হুহ, মুখ ভেঙ্গিয়ে এদের প্রেমের ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়। তোম্মাকে ছাড়া আমার একমূহুলত ভালো লাগে না……আজাইরা ফালতো কথা বলতে আসে।কেন আগে ওরে ছাড়া ভালো ছিলি না। ন্যাকা…….(মনে মনে)
.
.
“কেউ মনে হয় ভিতরে ভিতরে জ্বলছে।”
“কি…..”
“জ্বী……”
“হুহ……”
“এই যে ম্যাডাম আমার প্রিয় কালো শার্টটা কোথায়?”
“মানে কি?আমি কি করে বলবো। আপনার শার্ট দিয়ে আমি কি করবো।”
“সেটা আমার থেকে ভালোতো তুমি জানো। জানো ওই শার্টটা আমার কত প্রিয় ছিলো।তুমি যেদিন বাসা থেকে চলে গেছো সেদিন থেকেই আমার প্রিয় শার্টটা গায়েব।নিশ্চয় চোর যাওয়ার আগে দিয়ে আমার প্রিয় শার্টটা চুরি করে নিয়ে গেছে।”
“কি বলতে চাইছেন আমি চোর।আপনার শার্ট আমি চুরি করছি।আমাকে আপনার চোর মনে হয়।”
“হুম……”
“কি…………। একটা সামান্য শার্টের জন্য তুমি আমাকে চোর বলছো।লাগবে না তোমার শার্ট।দাঁড়াও এখনি তোমার শার্টটা আমি বের করে তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।একটা সামান্য শার্টের জন্য তুমি আমাকে এত্তবড় কথা বলছো।”(কেঁদে)
“আরে…. আরে…..লাগবে না আমার শার্ট।ওইটা তোমার কাছে রেখে দাও।কারণ পরে দিয়ে সেটা তোমার কাজে লাগবে।আর হ্যা ম্যাডাম এবার চলুন।”
“কোথায়,”
“এখনি ভুলে গেলেন।আমাদের সাথে যাবেন। আমার বাসায় থাকবে।ভয় নেই আমার মাও আছে বাসায়।তোমাকে দেখতে চাইছিলো।”
“আপনার মা কি সব জানেন?”
“হ্যা সব জানেন।মাকে সব খুলে বলেছি।আমার সাথে তুমি থাকতে চাও না আমিই আর কি করতে পারি।জোর করেতো আর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।”
“আপনি……”
“ওয়েট বলা শেষ করেনি আমি।”
“এরপর মাকে আমার আর প্রিয়ার ব্যাপারে সব খুলে বলেছি আর তাতে তিনি রাজী হয়ে গেছেন।”
“ও…..ভালোই বুঝিয়েছেন আপনার মাকে।”
“হ্যা তুমিও তোমার মা বাবাকে আমাদের ডির্ভোসের কথাটা ভালোভাবে বুঝিয়েছ।আমি আরো ভাবলাম তোমার মা বাবাকে কিভাবে এই কথাগুলো বলবো।আমার আর প্রিয়ার সম্পর্কের কথা না বলে আমার মান সম্মান তুমি বাঁচিয়েছ।সব কিছু এতসুন্দর ভাবে সমাধান করবে আমি ভাবতেই পারিনি।কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো। ”
“ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই।এটা আমার কর্তব্য ছিলো।”
“আসলেই তোমার এই কর্তব্য দেখে আমি মুগ্ধ সিরিয়াসলি।কয়জনেই বা এইরকম কর্তব্য পালন করে।প্লিজ নেক্সট টাইম এইভাবে আমার জন্য কোন কর্তব্য পালন করবে না।তোমার এই দায়িত্ব আর কর্তব্যের গুণে আমাকে আর ঋণী করিও না।”
“……..”
.
.
“কি ব্যাপার তন্ময় এত দেরি লাগল যে?”(প্রিয়া)
“সরি প্রিয়া।মুচকি হেসে।”(তন্ময়)
“আমাকে তো জীবনেও সরি বলে না।আর উনাকে….. ”
“আচ্ছা বিয়ের তারিখ কবে?”
“কার্ডটা তো দিয়েছি। নিজের চোখে দেখে নিও।”(তন্ময়)
“আর দেখা!দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।পাশের সিটে কার্ডটা রেখে দিলাম।”
“মেঘ ৫ তারিখে বিয়ে।” (প্রিয়া)
“উনি এমন কাজটা করতে পারলো!? যে তারিখে আমাদের বিয়ের একবছর পূর্ণ হতে চলেছে সেই একি তারিখে উনি আর প্রিয়া ম্যাডাম বিয়ে করতে চলেছেন?আর কত কষ্ট সহ্য করলে এই কষ্টের জ্বালা থেকে আমি রেহাই পাবো।”

অবশেষে বাসায় আসলাম।আমার পরিচিত বাসাটা যেখানে ৮টা মাস উনার সাথে থেকেছি। অনেক সুন্দর মুহূর্তগুলো আমি কাটিয়েছি।রাতে শাশুড়ি মায়ের সাথে ঘুমালাম।আমাকে দেখে অনেক কান্নাকাটি করলেন।আমি কেন এইরকম সিদ্ধান্ত নিলাম তা বারবার জানতে চেয়েছিলেন।কিন্তু এর উত্তর দিতে পারেনি।রাগে উনি আমার সাথে কথায় বলেননি।আর তন্ময় উনিতো আমার সাথে কথায় বলেন না।যখনি কোন বাহানায় উনার রুমে যায় উনি আমাকে ইগ্নোর করেন।

আর ৩দিন পর উনার বিয়ে।খুব কষ্ট লাগছে।জানিনা কিভাবে আমি এই দায়িত্ব নিবো।তারপরও আমাকে পারতে হবে।প্রিয় মানুষের খুশির জন্য যদি আরেকটু কষ্ট করা লাগে তাহলে আমি তা করবো।
.
.
গায়ের হলুদের দিনে উনাকে দেখলাম খুবি হাসিখুশি।যাক মানুষটা তাহলে প্রিয়া ম্যাডামকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে চলেছেন বলে অনেক খুশি।উনার গালে সবার প্রথমে আমিই হলুদ লাগিয়ে দিলাম।আর উনিও আমার গালে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।কাউকে আর সে গালে হলুদ লাগাতে দেয় নি।

রাতে,,
“হ্যালো মেঘ,”
“জ্বী,”
“আমার রুমে একটু আসবে।কাজ আছে।”
“জ্বী আসছি।”
“বসো মেঘ একটা জিনিস দেখাবো।”
একটা পেনড্রাইভ বের করে সেটা ল্যাপটপে দিলেন।এটা কি দেখছি আমি।
“কি ব্যাপার মেঘ,এত ঘামছো কেন? “

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২২

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

৬ মাস পর আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।আর ভালো হবে বাই না কেন আমাকে উনি তেমনভাবেই পড়িয়েছেন।
রাতে,,
তন্ময়ের মোবাইলে একটা কল আসলো।অনেক্ষণ ধরে কল আসছিলো।জরুরি কল মনে করে তা রিসিভ করলাম
“হ্যালো,”
“হ্যালো মেঘ বলছ।”
“সাগর!”
“ভয় পেয় না।খারাপ খবর শুনানোর জন্য কল করেনি।ভালোইই হয়েছে কলটা তুমি ধরেছ। আসলে মেঘ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তোমার সাথে আমি যে ভুল করেছি,হঠাৎ করে তোমার জীবনে আবার এসে তোমার সংসারে আগুন লাগিয়ে আমি যে অন্যায় করেছি জানি তা ক্ষমার যোগ্য না।তারপরও প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দিও।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তন্ময় আমার ভুলটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।তুমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান তন্ময়ের মতন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।তোমার সংসার জীবনে সুখে থাকো সেই দুয়া করছি।ভালো থেকো।”
এটা কি হল?উনার মোবাইলে সাগর কল দিয়েছে।তার মানে এতদিন ধরে সাগরের সাথে উনার যোগাযোগ ছিল।
.
.
“একটু আগে আপনার মোবাইলে কল এসেছিলো।”
“তাই নাকি?রিসিভ করেছিলে?”
“হ্যা।”
“কে কল দিয়েছিলো।”
“সাগর ”
“সাগর কল দিয়েছিলো।কেন কল দিয়েছিলো সেটা কি জানতে পারি।”
“ও নাকি ওর ভুল বুঝতে পেরেছ আর সেটা আপনার জন্যই নাকি হয়েছে।আপনি কি করে এতসব করলেন।”
“জানতে চাও।”
“হ্যা।”
“তাহলে শুনো।সাগরের ছোট বোনকেতো চিনোই।”
“হ্যা চিনি তো।”
“হুম নূপুরের সাথে একটা ছেলের রিলেশন ছিলো প্রায় একবছরের মতন। এক বছরের সম্পর্কের পর নূপুর জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।এই কথাটা তার প্রেমিককে বলে আর এও বলে যে তাকে যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে। সে নূপুরকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে দিয়ে তাদের রিলেশনটা ব্রেকআপ করে দেয়।এর কিছুদিন পর সাগর জানতে পারে তার বোনের সাথে একটা ছেলের রিলেশন চলছে।সাগর তার দলবল নিয়ে ওই ছেলেকে ইচ্ছেমতন পিটায়।এরপর নূপুরের প্রেমিক ঠিক সাগরের মতন সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এদিকে নূপুরের মা বাবা নূপুরের বিয়ে ঠিক করে।নূপুর কিছু ভেবে পাচ্ছিলো না সে এই অবস্থায় কি করবে।তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে।ওকে সেদিন আমি রেললাইনে দেখেছিলাম।বুঝতে পারছিলাম ও কিছু একটা ভুল করতে যাচ্ছে তাই তাকে আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসি।নুপূরের বিয়ের দিন আমি আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে সেখানে যায়।কারণ আমি জানতাম নূপুরের সে প্রেমিক সেদিন সাগরের হাতে মার খাওয়ার পর চুপ করে থাকবে না।সে ঠিকই একটা অঘটন ঘটাবে।আমার এই ধারণা সত্যি হল। সেই ছেলে বিয়ের দিনে বরকে জানায় নূপুরের অনেক ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো আর সে প্রেগন্যান্ট।এই খবর শুনার পর পাত্রপক্ষ এই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।যেই ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমি বিয়ের বাড়িতে যায় তাকে নূপরের সম্পর্কে আমি অনেক আগে সব কিছু বলে রেখেছি।সে সব জেনে শুনে নূপুরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো।কারণ সে জানে এতে মেয়েটার কোন দোষ ছিলোনা। তাছাড়া সে নিজেও নূপুরকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছিলো সেজন্য নূপুরকে বিয়ে করার কথাটা আমাকে অনেক আগে বলেছিলো।নূপুরের মা বাবা আর সাগর যখন পাগলের মতো প্রলাপ বকছিলো সেদিন আমি আর আমার ফ্রেন্ড তাদেকে সান্ত্বনা দিই আর আমার ফ্রেন্ডের সাথে নুপূরের বিয়ের প্রস্তাব দিই।সেদিনই সাগর আমার হাত পা ধরে মাফ চাই।আর সে নিজের ভুল বুঝতে পারে।কারণ আরেকটা মেয়ের জীবন আর ভালবাসা নিয়ে সে যে খেলা খেলেছিলো আর সেই খেলার এইরকম প্রতিউত্তর সে এইভাবে পাবে কোনদিন ভাবে নেই।নিজের বোনের চোখের কান্না আর কষ্ট দেখে সে সেদিন তোমার কান্না,কষ্ট অনুভব করেছিলো।আর এইও বুঝতে পেরেছে আমাদের সংসারে আগুন লাগিয়ে সে কতটা জঘণ্য কাজ করেছে।সাগর তোমার সাথে যে অন্যায় করেছিলো সে ভুলের মাশুল তার বোনকে পেতে হয়েছে।সে ভেবেছিলো ওর এই ভুলের জন্য ওকে কোনদিন শাস্তি পেতে হবে না।কিন্তু ও হয়ত একটা কথা ভুলে গেছে উপরে একজন আছেন ওনি সবকিছু দেখছেন।সাগরের পাপের বিচার তিনি করেছেন।”
………
“তোমার সামনে আসার সাহস এখন ওর নেই।তাই আমার মোবাইলে আজকে কল করে তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।
আমি চেয়েছিলাম ওকে অন্যভাবে শাস্তিটা দিতে কিন্তু পরে ভাবলাম আমি যদি ওর মতন আচরণ করি তাহলে ওর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়।আমি ওর বিপদের দিনে ওকে সাহায্য করে ওর ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছি।আর এটাই হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে ওর শাস্তি।সেদিনের সে সাহায্য পেয়ে সে লজ্জিত হয়েছিল ওর বিবেক আর মনের কাছে। ও অনেক অপমানিত হয়েছিল সেদিন । এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে।”
“এতকিছু হয়ে গেল আর আমি আজকে এইসব জানছি।”
“জ্বী ম্যাডাম।আপনার জন্য এই গুড নিউজটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম।তোমার জন্য একের পর এক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।সঠিক সময়ে সেগুলো দেখতে পারবে।”
“সারপ্রাইজ…..”(ঘামতে ঘামতে)
“হুম সারপ্রাইজ। এখন আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।এই নাও পেপার।এখানে সাইন করে দাও।”
“কিসের পেপার।”
“ওমা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?ডির্ভোস পেপার।”
“ডি…ডির্ভোস পেপার…….”
“আজ্ঞে হ্যা….শর্ত অনুযায়ী ৬মাস শেষ। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।নাও তাড়াতাড়ি সাইন করো এতে।এরপর তো তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে।আর তারপর আমার প্রিয়াকে বিয়ে করে ঘরের বউ করে আনবো।”
…….
“আরে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আচ্ছা বাবা আচ্ছা তোমাকেও দাওয়াত দিবে।খুশিতো।নাও তাড়াতাড়ি শুভ কাজটা শেষ করো।”

ডির্ভোসটা আগে হলে কি এমন হতো।এই ৬ টা মাস উনার সাথে থেকেছি।আগের থেকেও উনাকে বেশি ভালবেসেছে।উনাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।উনি কি এটা আদৌও বুঝেন না।তখন যা বলার বলেছি তাই বলে তখনকার কথা মেনে আমাকে এখন ডির্ভোস দেওয়ার মানে হয়।
“আরে কি হল?হাত কাঁপছে কেন?আমি সাহায্য করবো।”
“না, লাগবে না আমি পারবো।সাইন করার আগে একটা কথাই শুধু জিজ্ঞাস করবো আপনি কি প্রিয়া ম্যাডামকে সত্যিই ভালবাসেন।”
“হ্যা অনেক ভালবাসি।আর অনেক আগে থেকেই ভালবাসি।অনেক আগে এই কথা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারেনি।”
“আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।এই নিন সাইন করে দিলাম।আপনার বিবাহিত জীবন শুভ হোক।ভালো থাকবেন।”
“আরে কোথায় যাচ্ছ।”
“আপনার সাথে একসাথে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলছি।তাই চলে যাচ্ছি।”
“আরে সেটাতো বুঝেছি। কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছ।”
“মা বাবার কাছে,”
“তোমাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসি।”(মুচকি হেসে)
“না থাক লাগবে না, আমি একা যেতে পারবো”
“লাগবে,বেশ লাগবে।এত বেশি বুঝ কেন।চলো বলছি।”
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন।খুব কান্না পাচ্ছে। উনার সব কিছুর উপর অধিকার আজকে থেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।আমার এত্ত কষ্ট হচ্ছে আর উনি মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছেন।ইচ্ছে করছে উনার গলাটা টিপে ধরি।রাক্ষস একটা।
“আহারে এতো দেখি কেঁদে নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে ফেলছে।এইভাবে তোমাকে কাঁদতে দেখলে তোমার মা বাবা খারাপ কিছু ভাববেন।চোখের পানি মুছে ফেলো।এই নাও টিস্যু।”
………
“দেখো তুমি যা চেয়েছো আমি তাই করেছি। সুতরাং এত কান্নাকাটি করার কি আছে বুঝতে পারছি না।”
“সুখে,খুশীতে কাঁদছি। ও আপনি বুঝবেন না।”
“আমি না বুঝলে দুনিয়ার আর কেউ তোমাকে বুঝবে না।বুঝলেন ম্যাডাম।”

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২১

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“আপনি” (জোরে চিল্লিয়ে)”
“মুচকি হেসে, good morning মেঘ”
“আপনি এখানে কি করে?”
“তুমিতো চিঠিতেই লিখে আসলে তুমি বাড়িতে।তাই তোমার পিছে পিছে চলে আসলাম।”
“দেখুন আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি যাতে আপনাকে না বলে কোথাও না যায়। কোথাও গেলে আপনাকে যাতে জানিয়ে যাই।তাই……।আর তাছাড়া আপনাকে বলেছিলাম না আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।”
“কালকের কথা বাদ দাও।আমি সব ভুলে গেছি।চলো বাসায় চলো।”
“এইসব কথার মানে কি?ওইদিন আমাকে অনেক বাজে কথা শুনিয়েছেন। তাছাড়া আমি গেলে আপনার প্রিয়ার কি হবে।”
“মানে কি?আবারও কালকের মতন আজগুবি কথা বলছো।”
“আজগুবি না।তাহলে এই ছবিতে এগুলো কি?এখনো বলবেন আমি আজগুবি কথা বলছি।”
“এই ছবি তুমি কোথা থেকে পেলে?”
“সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না।”
.
.
“দিতে তুমি বাধ্য।কারণ সে অধিকার আমার আছে।”
“আপনি কালকেই সে অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন।আর কোন কথা না।আমি আপনার সাথে থাকতে পারবো না,ব্যস।যে অবিশ্বাস আমার জন্য আপনার তৈরী হয়েছে তা কখনো দূর হবে না।আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।”
“তাহলে কি চাও তুমি?”
“ডির্ভোস”
এই কথা শুনে উনি আমার গলা চেপে ধরলেন।মনে হচ্ছিল আমাকে এখনি মেরে ফেলবেন।এরপর কি মনে করে আমাকে ছেড়ে দিলেন।

সারাদিন গেলো উনার কোন খোঁজখবর পেলাম না।মোবাইলটাও অফ রাখলেন।কোথায় গেছেন তা জানা ছিলোনা।খুব টেনশনের ভিতর দিয়ে দিন কাটলো।রাতে উনি বাসায় এলেন।আজব উনি এখনো এখানে আছেন।ঢাকায় যান নি।
বাসায় এসে মা বাবার সাথে হেসে কথা বলছেন।এমন ভাব যেন কিছুই হয় নি।উনার এই আচরণ দেখে আমার টেনশন আরও বেড়ে গেল।
আমি রুমে গেলাম।খুব টেনশন লাগছে।
“আরে মেঘ তুমি এখানে।শুনো কালকে রেডি থাকিও বাসায় যাব।”
“মানে?কার বাসা?”
“কেন আমাদের বাসা।”
“আপনি কি সকালের কথা ভুলে গেছেন।”
“সকালের কথা…ও আচ্ছা…..।ভুলে নি আচ্ছা ডির্ভোসের কথাই তো।সে দিয়ে দিবো।এই বিষয় নিয়ে তোমাকেকে চিন্তা করতে হবে না।তবে আমারও কিছু শর্ত আছে।”
“কি…..”
“দেখো শর্ত হচ্ছে এই যে,ডির্ভোস পেতে হলে আমাদের ৬মাস স্বামী-স্ত্রীর মতন একসাথে থাকতে হবে।এর মধ্যে ডির্ভোস পেপার তৈরি হয়ে যাবে।ডির্ভোস মুখে বললেই তো আর হলো না।এর অনেক নিয়ম আছে।এত সহজে ডির্ভোস হচ্ছে না।”
“তোমার সাথে আমি থাকব এটা তুমি ভাবলে কি করে।আমি তোমার এই শর্ত মানতে পারবোনা। ”
“তাহলে এই ডির্ভোসের চিন্তা বাদ দাও।যদি সত্যিই ডির্ভোস চাও তাহলে এই শর্ত মানতেই হবে।”
…..
.
.
উফ এত টেনশন আমি কোথায় রাখি।ভাবলাম আমার প্ল্যানমতন সব হবে কিন্তু এখন!এত ঝামেলা আমাকে পোহাতে হবে আমি ভাবতে পারি নি।
আচ্ছা কালকে ওইখান থেকে আসার পর সাগরতো একবারের জন্যও কল দিলোনা।আর আমার উনি উনার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে বুঝতে পারছি না।উনার সুবিধার জন্য আমি কত কি করলাম আর উনি আমার সব কাজ পন্ড করে দিলো।
.
.
মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাখছি।আর বারবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছি। সাগর কল বা মেসেজ দিলো কিনা।ওর মনে এখন কি চলছে সেটা জানা দরকার।কারণ আমি চাই না ও রাগের বশে তন্ময়ের কোন ক্ষতি করুক।
“যার কল বা মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছ সে আর কল দিবে না।”
“মানে……”
“তোমার সিমটা আজকে সকালে আমি নিয়ে নিয়েছি।আর সাগর আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।ওর কি ব্যবস্থা করতে হবে তা আমার জানা আছে।ওইসব নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।”
“আপ…পনি…..!”
“আপনি না তুমি,সকালে আমাকে তুমি করে ডেকেছ শুনেই ভালো লাগল।”
“আমি কখন…..”
“মুচকি হেসে…..পিচ্চি মেয়ে আমাকে “তুমি”কখন ডেকেছ সেটা বড় কথা নয় এখন থেকে আমাকে তুমি করে ডাকবে সেটাই বড় কথা।”
“কি……”
“হুম,নিজেকে যত চালাক মনে করো ততটা চালাক তুমি না।আমার কাছে তুমি আগে যেই বোকাটা ছিলে এখনো সেই বোকাটাই রয়ে গেছো। চাইলেও আমার সাথে চালাকি করে নিজের কাজটা সারতে পারবে না।”

কি বলছেন এইগুলো উনি…..উনি কি তাহলে সব বুঝে গেলেন।কেমন করে…. আমিতো অনেক দক্ষতার সাথে কাজটা করেছি তাহলে উনি কিভাবে টের পেলেন।না… না এত সহজে উনার টের পাওয়ার কথা না।নিশ্চয় আমাকে উনার কথার ফাঁদে ফেলে বোকা বানাচ্ছেন।সেটাই হবে।
এইসব নিয়ে চিন্তা করে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
“মেঘ রেডি হও তাড়াতাড়ি,আজকে বাসায় যাব”
“কি?”
“হুম, শাশুড়ি মাকে জানিয়ে দিয়েছি আজকে আমরা চলে যাচ্ছি।”
“মানেটা কি?আমাদের ডির্ভোস”
“কালকে কি বললাম ডির্ভোস পেয়ে যাবে।কিন্তু তার আগে আমার শর্তটা মানতে হবে।”
“কোন শর্ত মানবো না।”
“দেখো ডির্ভোসটা তোমার জন্য যেমন জরুরি ঠিক তেমনি আমার জন্য জরুরি। কারণ এই ডির্ভোসের পর আমি প্রিয়াকে বিয়ে করব।”
“প্রিয়াকে বিয়ে…..”
“আরে হ্যা বিয়ে,তুমিই না সেদিন বললে।অবশ্য তুমি আগেভাগে ব্যাপারটা বুঝে গেছো ভালোই হয়েছে।যতটা বোকা তোমাকে ভেবেছিলাম ততটা বোকা তুমি না।”
উনি তো দেখি আমাকে অনেক কনফিউজডে ফেলে দিচ্ছেন।কালকে আমাকে বোকা বললেন আর আজকে। উফ……। আর আজকে এইসব এগুলো কি বলছেন প্রিয়া ম্যাডামকে বিয়ে….।আমার কথাটা একবারো ভাবলেন না।এই কথা শুনে আমার যে কত কষ্ট হবে সেটা একবারো ভাবলো না।পরে দিয়ে আবার মনে হল আমি যেটা চাচ্ছি সেটাই তো হচ্ছে তাহলে আমি এইসব কি ভাবছি?উনি প্রিয়াকে বিয়ে করবে নাকি সীমাকে তাতে আমার কি?যাকে খুশি তাকে বিয়ে করুক।
.
.
“কি হয়ছে?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
…….
“মুচকি হেসে কিছু না।রাগলে তুমি যে কি সুন্দর করে কপাল কুচকাও সেটাই দেখছি।”
“হুহ।”
“চলো এবার যাওয়া যাক।”
“না,যাবোনা।”
“সত্যিতো।”
“বুঝছি তুমি চাওনা আমি প্রিয়াকে বিয়ে করি
কিন্তু তোমার এই প্ল্যান আমি ভঙ্গ করে দিবো। আমি যেভাবেই হোক প্রিয়াকে বিয়ে করবো।আর সেজন্য তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।আর হ্যা এটা ভাবিও না আমি প্রিয়াকে বিয়ে করার সাথে তোমার আমার একসাথে থাকার সম্পর্ক কি?আসলে তোমার মা বাবাকে আমি এবার কথা দিয়েছি নিজেকে নিজে কথা দিয়েছি যে করেই হোক আমার এই অকর্মণ্য ছাত্রীকে দিয়ে ভালো রেজাল্ট করাবো। সেজন্য ভালো করে পড়তে হবে।ভালো করে পড়তে হলে ভালো একজন টিচার প্রয়োজন।আর একজন ভালো টিচারের গাইডে সবসময় থাকলেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব।আমি একজন ভালো টিচার।সেজন্য আমার গাইডে এই ৬মাস তুমি থাকবে।আমার কাছ থেকে ভালো করে পড়া শিখে ৬মাস পর পরীক্ষা দিয়ে একটা ভালো রেজাল্ট করবে।আর এরপরেই তোমার মুক্তি।”

“আমাকে কেউ ধরো। মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে।” “উফ….মাথা ঘুরে যাচ্ছে।”
“আরে….আরে…..কি হলো এখনি যদি মাথা ঘুরায় তাহলে সামনের দিকে আগাবে কি করে।খেলা সবে মাত্র না শুরু। আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া।”
……..মাথা ধরে বসে আছি।জানিনা আর কি কি দেখতে হবে।
আমাকে কোলে করে উঠালেন।
“বললাম না আমি যাব না পড়ালেখাও করবো না পরীক্ষাও দিবো না।তারপরও জোর করে কেন নিয়ে যাচ্ছেন।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছি।কিন্তু উনার কোন পাত্তাই নেই।”
“কোন কথা শুনতে চাই না।”এই বলে গাড়িতে উঠিয়ে আমার মুখ হাত পা বেঁধে দিলেন।রাক্ষস একটা।
.
.
বাসায় এসে একটাও কথা বলি নি উনার সাথে।রাগ করে ছিলাম।কিন্তু উনার কারণে রাগ করে থাকারও উপায়ও নেই।আমার রাগ ভাঙ্গিয়েই ছাড়লেন।
দিন দিন উনার প্রেমেই পড়ে যাচ্ছি। ইশ শুধু ৬ মাসের জন্য না হয়ে সারাজীবনের জন্য উনার সাথে থাকতে পারতাম কতই না ভালো হত।
দেখতে দেখতে ৬মাস কেটে গেল।এই ৬ মাসে সাগরও কল দেয় নি আর আমার উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথেও কথা বলেননি।ভার্সিটিতেও উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলেন তবে সেটা কমই।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_২০

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

সকালেই উনি আমাকে বলে রেখেছেন আমি আজকে যাতে তাসপিয়ার সাথে বাসায় চলে যায়। এখন সকালের কথাটা উনি আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন।সাবধানে বাসায় যেও উনার কথা শুনে মনে হল উনি আমার অনেক কেয়ার করেন।হ্যা কেয়ারতো অনেক করেন সেটা সত্যি কিন্তু কোনদিনও আমাকে ভালবাসেন নি।আমাকে যদি কোনদিনও ভালবাসতো তাহলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রায়ি দেখা করতেন না। হাত ধরাধরি করে কথা বলতেন না।কালকে উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলেছিলেন।আজকে প্রিয়া ম্যাডাম আর উনার একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা ছিলো।সেটা আমি জানতাম।তাই কালকে রাতে আমিও সাগরকে কল করে জানিয়ে দিয়েছি সেই রেস্টুরেন্টে চলে আসতে।
.
.
উনাদের আসার আগেই আমি আর সাগর সেই রেস্টুরেন্টে উপস্থিত।আমাকে দেখা মাত্রাই সাগর আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“সাগর প্লিজ ছাড়ো আমাকে।আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন আমি এখন অন্য কারোর স্ত্রী।”
“দেখো মেঘ আমার একটা ভুলের কারণে তুমি তোমার স্যারকে বিয়ে করেছো তার মানে এই নয় যে তুমি উনাকে ভালবাসো।তুমি তো আমাকে আগে ভালবাসতে আর এখনো আমাকে ভালবাসো।আমি সেটা জানি।”
“আপনাকে এইসব কথা কে বলেছে।কি আজগুবি কথা বলছেন।আমি আপনাকে আর ভালবাসি না।আমি এখন আমার স্বামী তন্ময়কে ভালবাসি।
“বাহ আগে তুমি করে ডাকতে আর এখন আপনি!”
“কারণ “তুমি” করে ডাকার অধিকার অনেক আগে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন”
“মেঘ প্লিজ আমি আর কোন কষ্ট নিতে পারছিনা।তোমার থেকে আপনি ডাকটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে।আমি তোমাকে ভালবাসি মেঘ। কেন সেটা বুঝতে পারছো না তুমি।”
“কিসের ভালবাসা!ভালবাসা কথাটা তোমার মুখে শোভা পায়না।তোমাকে আমি আগে ভালবাসতাম। শুধু আমি ভালবাসতাম…… তুমি না।তুমি আমাকে না কাল ভালবেসেছ না আজকে।শুধু নিজের ইগো, স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমাকে ব্যবহার করেছ আর এখনি ঠিক একি কাজ করছ।তোমার নিজ স্বার্থের জন্য আমাকে ভালবাসার মিথ্যা বাণী শুনাচ্ছ।তোমার মতন ছেলেরা কখনো কোন মেয়েকে ভালবাসতে জানো না শুধু একটা মেয়ের মন আর স্বপ্নকে নিয়ে খেলতে ভালবাসে।”
.
.
“মেঘ আমি আর আগের মতন নেই।আমি এখন ভাল হয়ে গেছি।মেঘ তোমাকে কষ্ট দেওয়ার পর আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলাম।কারণ আমি যা করতে চেয়েছিলাম তা পেরেছি।অবশ্য এর জন্য আমাকে বিয়ের আগেই পালিয়ে যেতে হয়েছিলো।কিন্তু আমার কাছে সেটা বড় ব্যাপার ছিলোনা।তোমাকে কষ্ট আর যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে ফেলা আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।এরপর আমি যে এলাকায় যাই সেখানের এক অপরুপ সুন্দরি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাই। ওকে ভালবেসেও ফেলি।নিজের সব ইগোকে পিছনে ফেলে ওকে প্রপোজ করি।ও নিজেও তা একসেপ্ট করে।দিন দিন ওর প্রতি আমার ভালবাসা বাড়তে থাকে।কিন্তু একদিন আমার ভালবাসার মানুষটা আমাকে জানাই সে আমাকে ভালবাসে না। আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস করেছে।ও অন্য আরেকজনকে ভালবাসে।ওর কথা শুনে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলাম তা তোমাকে বুঝাতে পারবোনা।কত রাত যে কেঁদেছি তোমাকে বলতে পারবোনা।তখন তোমার সেই কথাগুলো বারবার মনে পড়ল। সত্যিইই কাউকে সত্যি ভালবাসলে যদি এর বিনিময়ে কষ্ট যন্ত্রণা পেতে হয় তা যে কতটা যন্ত্রণার তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝে।এরপর মনে হলো তোমার মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।আমি তোমাকে ভালবাসেনি সেটা সত্যি কিন্তু তুমিতো ভালবেসেছিলে।তাই আমি আবার তোমার কাছে ছুটে এসেছি।যে ভুল আমি একবার করেছি দ্বিতীয়বার তা করতে চাই না।আমাকে যে মেয়েটা অনেক ভালবাসতো তার কাছে আজকে আমি ছুটে এসেছি শুধু একটুকু ভালবাসার পরশ পাওয়ার জন্য।মেঘ আমার কাছে ফিরে আসো।বিশ্বাস করো তোমার ভালবাসার প্রকৃত মর্যাদা দিবো আমি।আর কষ্ট দিবো না তোমাকে আমি।সব ফেলে ফিরে আসো আমার কাছে প্লিজ।আমার এখন তোমাকে বড্ড প্রয়োজন।প্লিজ মেঘ, প্লিজ।”
আমার হাত ধরে কথাগুলো বলছিলো আর কাঁদছিলো।
.
.
“বাহ্ মেঘ বাহ্ এতদিন ধরে তাহলে এইসব চলছে।আজ নিজের চোখে এইসব না দেখলে জানতাম না।এইজন্য তো বলি তুমি আর আগের মতন নেই কেন?কেন আর আমার সাথে আগের মতন মিশোনা,কথা বলোনা।পুরানা প্রেমিক এসে গেছে এইজন্য না।এখন আর আমাকে দরকার নেই।”(তন্ময় স্যার)
…….
“এই ছেলেটা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে কষ্ট দিয়েছিলো, পুরো গ্রামের মানুষের সামনে তোমাকে আর তোমার পরিবারকে অপমান করিয়েছে আর আজকে তুমি আবার সেই ছেলেটার সাথে দেখা করতে আসছো।”(তন্ময় স্যার)
“দেখুন তন্ময় সাহেব আমি মানছি আমি যা করেছি….”(সাগর)
“you….just shut up.আমি আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলছি, আপনার সাথে না।আমাদের মাঝে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে।”(তন্ময় স্যার)
“কারণ আমি ওকে ভালবাসি।”(সাগর)
“ইউ……. আর একবার এই মুখ দিয়ে আমার মেঘকে ভালবাসি কথাটা বললে আমি তোকে মেরেই ফেলবো।কোথায় ছিলো তোর এই ভালবাসা যখন তোকে মেঘের পাশে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল,কোথায় ছিলো তোর সেই ভালবাসা যখন ওকে মরার জন্য বিশেষ গিফট বিষের বোতল দিয়েছিস।এতদিন ওকে কাঁদিয়ে এখন ভালবাসা দেখাতে এসেছিস।আমার সংসারে আগুন লাগাতে এসেছিস তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।”(তন্ময় স্যার)
“ওকে ছাড়ুন বলছি।মরে যাবে ও…..”
“ও এখন ওর প্রতি মায়া উতলে পড়ছে।অবশ্য পড়বে না কেন পুরানো প্রেমিক বলে কথা।আজকে আমি এর শেষ দেখেই নিবো। চলো আমার সাথে বাসায়……”(তন্ময় স্যার)
.
.
“কি করছিলে তুমি ওর সাথে।মেঘ বলো কি করছিলে ওইখানে…..”
…….
উনি এবার আমার গালে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারলেন।
“এতদিন তোমার জন্য যা যা করে এসেছি আজ তার এই মূল্য দিলে তুমি।ছিহ…..।সেদিন তুমি বলেছিলে তাসপিয়ার সাথে বাসায় যাবে।আমি তোমাকে যেতে দিয়েছি। আমাকে মিথ্যা কথা বলে তুমি সাব্বিরের সাথে পার্কে যাও।শুধু এই নয় মধ্য রাতে বারান্দায় গিয়ে কথা বলো।তুমি কি মনে করো এইসবের কিছুই আমি জানি না।এতদিন শুধু তোমার কাহিনী দেখছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম আর কতদূর তোমার এই নোংরামি চলে।আর আজকে সাগরকে রেস্টুরেন্টে দেখে বুঝতে পারলাম রাতে লুকিয়ে তুমি সাগরের সাথে কথা বলতে।কেন মেঘ তুমি কি আমাকে নিয়ে হ্যাপী থাকতে পারছো না।তোমাকে হ্যাপী করার জন্য কোন জিনিসের কমতি রেখেছিলাম আমি বলো….।তোমাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছি,পড়ালেখা করে ভালো কিছু করতে পারো, আমার বউও জীবনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে সেজন্য আমি নিজে তোমাকে পড়ালেখা করাচ্ছি।সবসময় তোমার বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার চেষ্টা করেছি।কোনদিনও তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে নি।তোমার ইচ্ছাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি।তোমার মা বাবা তোমাকে এতটা বছর আগলে ধরে তোমাকে নিরাপদে রেখেছে আমিও সে চেষ্টা করেছি।তাহলে!তাহলে কেন এমন করলে আমার সাথে।একজন না দুইজনের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছ। আমি এতটা বছর ধরে যে মেঘকে চিনে এসেছি তুমি সে মেঘ নও।আমার চিনা সে মেঘের সাথে আজ তোমার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না।তোমাকে বড্ড অচেনা লাগছে।অনেক বদলে গেছো তুমি… অনেক বদলে গেছো।”
“হ্যা আপনি ঠিক ধরেছেন আমি অনেক বদলে গেছি।পরিস্থিতি আমাকে বদলাতে সাহায্য করেছে।থ্যাংকস আপনি নিজ থেকে সব বুঝে গেছেন।আমার মতন মেয়েদের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।তাই এক কাজ করুন আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিন।” আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে দিলেন উনি।
“ডির্ভোসতো আমি তোমাকে কখনো দিবো না।বিয়ে করেছি তোমাকে, সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো বলে। তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি বিয়ে করেনি।এত সহজে আমার থেকে ডির্ভোস পাবে না।এত সহজে তোমাকে আমি মুক্তি দিবোনা।তোমার এই ধরণের অপরাধের জন্য আমি তোমাকে তিল তিল করে কষ্ট দিবো।তোমাকে কিভাবে ঠিক করতে হবে তা আমার জানা আছে।”
.
.
“দেখুন এইসব বাজে কথা রাখুন।যে আমাকে বিশ্বাস করে না,কোনকিছু না বুঝে শুনে অবিশ্বাস করে আমাকে অনেক বাজে কথা শুনাই তার সাথে আমি একমুহূর্তের জন্যও থাকতে রাজি না।আর আমিও জানি আপনি মনে মনে এই চান আমি এখান থেকে চলে যায় কারণ আমি না গেলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রেম কেমন করে করবেন তাকে বিয়ে কেমন করে করবেন।আমি চলেই গেলেই তো আপনার জন্য ভালো হয়।সুতরাং ভালোই ভালোই আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন।এতে আমার আপনার আমাদের জন্যই মঙ্গল হবে।”
.
.
“আর আরেকটা বাজে কথা বললে তোমাকে মেরেই ফেলবো। একতো নিজে অপরাধ করো আবার আমার নামে কিসব আজে বাজে কথা বলছো।প্রিয়ার সাথে আমার কিসের রিলেশন। এইসব বাজে কথা তোমাকে কে বলছে।আর ডির্ভোসের কথা আরেকবার বললে নিজের হাতে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।”
……….
“তোমাকে আজকে এই ঘরে আটকে রাখবো। একদিন এইভাবে আটকে রাখলে তারপর তোমার মাথার তার কাজ করবে।আর ডির্ভোসের পাগলামিও মাথা থেকে সরে যাবে।”
.
.
এরপর সেদিন রাতে ওনি আমাকে একটা রুমে আটকে রাখলেন।খুব ভয় করছিলো।আর এরপরি কারেন্ট চলে গেলো।অন্ধকারে তো এমনিতেই ভয় পাই,তারউপর আবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ভূত এসে গেল। মনে মনে এইসব ভাবার কারণে আর ভয় পাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

এরপরে রাতে দেখি উনি আমার মাথার পাশে বসে আছেন।চোখ দুটি লাল হয়ে আছে।
“মেঘ কি হয়েছিলো তোমার?কত ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাকে!”
“আপনার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা নাই।কিভাবে আপনি ওই রুমে আমাকে আটকে রাখলেন।আপনার জন্যই আমার এই অবস্থা।”
“আমার জন্য…”
“হ্যা আপনার জন্য। আর প্লিজ এখন আর কোন প্রশ্ন করবেন না আমার মাথা ব্যাথা করছে ঘুমাবো।”
উনার সাথে এইভাবে কথা বলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।কিন্তু কিছুই করার নেই।উনি এতদিন আমার উপকার করেছেন তাই উনার ভালোর জন্য যা যা করা লাগবে আমি করবো।
সকালে উনার জন্য একটা চিঠি রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।মা বাবা এখন সেখানেই থাকেন।বাড়িতে এসে পা রাখতে না রাখতেই মা বাবা কতবার যে উনার নাম নিলো তা বলে বুঝাতে পারবো না।এখন ওদেরকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।সময় হলে সব বলে দিবো।সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত ছিলাম।কিছু খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।সকালের দিকে ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিল আমি উনার বুকেই শুয়ে আছি।চোখ খুলে দেখি উনি…..! এটা কি করে সম্ভব। উনি এখানে কেন?

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৯

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“মেঘ,ঘুম থেকে উঠ,”
“না,”
“কেন?আজকে ভার্সিটি যাবে না।”
“না,আজকে যাব না।ঘুমাতে দেন।”
“তুমি যাবে সাথে তোমার ঘাড়ও যাবে।উঠো বলছি।”
…..
“দাঁড়াও বলে আমার কান আর গালে কামড় বসিয়ে দিলেন।”
“উহ্ এটা কি হল?এভাবে কেউ ঘুম থেকে উঠায়।”
“আমি উঠায়।তাড়াতাড়ি উঠ নাহলে আরেকটা কামড় খাবে।”
“না, না উঠছি,উঠছি।”
“হুম গুড গার্ল।”
.
.
ভার্সিটি শেষ করে গেইটের বাইরে আসলাম।উনার জন্য অপেক্ষা করছি।
“কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলে।”
“৩০ মিনিট ধরে,”
“ওহ,আসলে আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে।নেক্সট টাইম এরকম আর হবে না।উঠ গাড়িতে উঠ।”
“হুম”
“মেঘ তোমার কি বেশি মন খারাপ।”
“না”
“না বললে কি হবে। আমি কি চোখে কিছু দেখতে পারি না।”
“আরে কোথায় নিয়ে আসছেন।”
“কেন চোখে দেখতে পারো না নাকি?পার্কে আসছি।”
“এখানে কেন নিয়ে আসছেন আমি বাসায় যাব।”
“চুপ থাকো আর এখনি গাড়ি থেকে নাম।”
.
.
পার্কের বেঞ্চে বসে আসি।মনটা আসলেই ভালো নেই।কি করা উচিত।উনাকে সব সত্যি কথা বলতে চাই।কিন্তু খুব ভয় হয় পরে আবার আমাকে না অপমান করে বসেন।ভালবাসার মানুষের থেকে সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করা গেলেও তার থেকে পাওয়া অপমান কখনো সহ্য করা যায় না।উনাকে যদি বলি স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি।তখন যদি উনি আমাকে অপমান করে বলেন, তোমার জন্য এতদিন এত কিছু করে আজকে আমার এত কষ্ট আর শ্রমের এই মূল্য দিলে।আমি তোমাকে না প্রিয়াকে ভালবাসি।আমাদের ভালবাসার মাঝখানে তুমি ভুল করে এসে গেছ।যদি এভাবে আমাকে কথাগুলো শুনায়। নাহ আর যাই কিছু হোক এগুলো আমি সইতে পারবোনা।এর থেকে চুপচাপ থাকায় ভালো।
“মেঘ আমি অনেক্ষণ ধরে তোমাকে দেখছি।তুমি কেমন যেন আনমনা হয়ে আছো। সত্যি করে বলতো কি হয়েছে তোমার।”
…….
আমার দুহাত ধরে,”দেখো মেঘ তুমি আমার স্ত্রী হও।তোমার সাথে খারাপ কিছু হলে সেটা আমাকে বলতে পারো।একটা মেয়ের কাছে প্রথমে তার পরিবার এরপর ওই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার স্বামীই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়।কাছের মানুষকেই তো সবকিছু শেয়ার করা উচিত।নাহলে সে কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে কেমন করে।আমি শুধু তোমার সুখের দিনের সঙ্গী নয়,তোমার দুঃখের দিনের সঙ্গী।তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড হতে চাই।তাই তুমি নির্ভয়ে আমাকে সব বলতে পারো।কথা দিচ্ছি আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সব কিছু ঠিক করে দিবো।”
খুব ইচ্ছে করছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন।খুব কান্না পাচ্ছে।এত কষ্ট হচ্ছে ইচ্ছে করছে উনাকে একটু জড়িয়ে ধরে মন খুলে কাঁদি।কেঁদে মনের সব দুঃখ ভিতর থেকে মুছে ফেলি।
হঠাৎ উনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।খুব কাঁদছি উনাকে জড়িয়ে।
“মেঘ জোর করবো না তোমাকে।তবে যখন তোমার মন চাইবে তখন আমাকে সব খুলে বলিও।প্লিজ আর কেঁদো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হ্যা সব যাতে ঠিক হয়ে যায়।”
.
.
আজকেও সাগর রাতে আমাকে কল দিয়ে অনেক কিছু বললো।শুধু ভাবছি কি করা যায়।কি করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হঠাৎ স্যার এসে বললেন,
“মেঘ তোমাকে কিছু বলতে চাই,”
“হ্যা বলেন,”
“আসলে তুমি ব্যাপারটা কেমন করে নিবে বুঝতে পারছি না।অনেক আগেই এই কথাটা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু অনেক হয়েছে। আর পারছি না।আমি তোমাকে আমার কিছু গোপন কথা বলতে চাই।”
তার মানে উনি বলতে চান উনি প্রিয়া ম্যাডামকে ভালবাসেন।এই কথাটা এখন উনার কাছ থেকে শুনতে হবে!
“মেঘ বলছিলাম যে,….”
উনার মোবাইলে কল আসলো।হ্যালো প্রিয়া বলো,
মেঘ আমি একটু আসছি।প্রিয়া কল দিয়েছে।
আমি জানতাম আমার সুখের দিন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে আসবে।আসলে এই কপালে এত সুখ নেই।যখন উনাকে ভালবাসতাম না তখন উনার মূল্য বুঝি নি।আর এখন উনাকে ভালবেসে উনার মূল্য বুঝছি।বুঝতে পারছি উনাকে পাওয়া এত সহজ না।উনি এখন অন্য কারোর।আর এটা ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
“মেঘ তোমাকে বলছিলাম যে….”
“থাক আজকে আর বলার দরকার নেই।অন্য আরেকদিন বলিয়েন।অনেক রাত হয়ে গেছে।ঘুমাবো এখন।”

আসলে উনার কাছ থেকে সেই গোপন কথা শুনতে চাই না। জানি উনি কি বলবেন।আরও কয়েকটা দিন উনার সাথে থাকতে চাই। থাক না মিথ্যা সুখের অভিনয় করে হলেও উনার সাথে আমার দিনগুলো কাটাতে পারলে ক্ষতি কি?এখন উনি যদি সব সত্য কথা বলে দেন তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবোনা।আরও কয়েকটা দিন উনার সাথে থেকে কিছু স্মরণীয় স্মৃতি মনের ভিতর গেঁথে রাখতে চাই।যাতে এই স্মৃতিগুলো দিয়ে বাকি জীবনটা আমি পাড় করতে পারি।
.
.
গাছের নিচে বসে আছি। দিন যত আগাচ্ছে মনের ভিতরের কষ্টগুলো দিন দিন জমে বড় হচ্ছে।আর আমার কষ্টের মাত্রাকে আরো বাড়াচ্ছে।
“মেঘ তোর কি কিছু হয়েছে।”
…..
“মেঘঘঘ……”
“হুম”
“কি হয়েছে বলতো তোর। এত ডাকছি কথা কানে যাচ্ছে না।”
“কিছু হয় নি।”
“দেখ একদম মিথ্যা বলবি না।সত্য কথা বল।আমি সব সত্যি জানতে যায়।”
“বললাম না কিছু না,”
“ঠিকাছে তাহলে সাগর ভাইকে এখনি কল করে এখানে ডাকছি।উনাকেই আমি জিজ্ঞাস করবো?”
“পাগল হয়ে গেছিস”
“কেন পাগলের কি দেখলি তুই? তোর হাসবেন্ডকেই না কল দিয়ে এখানে আসতে বলছি।দাঁড়া এখনি কল দিচ্ছি।”
.
.
“তাসপিয়া দোস্ত এরকম করিস না।সাগরকে কল দিস না”
“কেন দিবো না।একশবার দিবো। তোর কোন কথা শুনছি না।তুই যেহেতু আমাকে কিছু বলবি না তাহলে তোর হাসবেন্ডের থেকেই সব সত্যি কথা জেনে নিবো।”
“তুই তখন থেকেই সাগরকে আমার হাসবেন্ড বলে বেড়াচ্ছিস। আমার হাসবেন্ড সাগর না তন্ময়….. তন্ময় স্যার।”
“মানে….”
তাসপিয়াকে সব সত্যি কথা বলে দিলাম।আর পারছি এই সত্য কথা লুকিয়ে রাখতে।এতদিন কাউকে বলতে পারে নি আমার হাসবেন্ড কে? কিন্তু আজকে তাসপিয়ার সামনে নিজেকে উনার স্ত্রী হিসেবে বলতে পেরে খুব শান্তি লাগছে।আজকে সব সত্যি কথা বলতে পেরে এক কষ্টের বোঝা থেকে মুক্তি পেলাম।
.
.
ইদানীং প্রায়ি দেখি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে উনার সখ্যতা বেশি।আর সাগরের জ্বালাতন বেড়েই চলেছে। মোবাইলে আমার স্বামী আর প্রিয়া ম্যাডামের ছবি প্রায়ি পাঠাত।আমার স্বামী আর ম্যাডাম হাত ধরে বসে আছে এমন কয়েকটা ছবি দেখে নিজের থেকে খারাপ লাগা শুরু করত।কিছু একটা তাড়াতাড়ি করা উচিত।এর একটা শেষ হওয়াই উচিত।
তার আগে তাসপিয়ার কাজটা শেষ করে নিই।আজকে উনার সাথে বাসায় যায় নি।বলেছি তাসপিয়ার সাথে যাব। উনাকে বাসায় চলে যেতে বলছি।
“সাব্বির আজকে আমার সাথে পার্কে যেতে পারবে।”
“কেন না, অবশ্যই।তুমি যেখানে যেতে বলবে আমি সেখানে যেতে রাজি আছি।”
ওকে নিয়ে পার্কে গেলাম।যে কাজের জন্য গেলাম সে কাজটা হয়ে গেছে।সাব্বিরকে সব বুঝিয়ে দিলাম।এখন ওকে যে কাজটা দিয়েছি সেটা আজকে বিকালে করবে।এখন আরও কিছু কাজ বাকি আছে সেটা কালকে আমাকে করতে হবে।
.
.
“তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছানোতো মেঘ।”
“মানে, আমি আবার কি লুকাবো।”
উনার চোখের দৃষ্টি জানি আজকে কেমন। মনে হচ্ছে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
উনি কিছুই আর বললেন না।এরপর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেলেন।ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে আমার মনের জমানো সব কথা,স্বপ্ন উনাকে বলবো কিন্তু উনার কোন পাত্তা নেই।কেন জানি উনি বারবার আমাকে ইগ্নোর করছেন।
সে রাতে উনি কোন কথা বললেন না আমার সাথে। এরপরের আর কয়েকটা দিন এভাবেই চলতে লাগল।কোন কথা বলতেন না আমার সাথে।মনে হচ্ছিল উনি আমার থেকে একটু করে করে অনেক দূর সরে যাচ্ছেন।
সাগর আমাকে আর সময় দিতে পারছে না।কালকে ওর সাথে দেখা করতেই হবে।নাহলে ও কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।আর এবার সে হুমকি দিয়েছে কালকে আমার সাথে দেখা না করলে ও আমার স্বামীর ক্ষতি করবে।যা আমি কিছুতেই হতে দিবো না।

আজকেই তন্ময়ের সাথে আমার শেষ রাত। এরপর উনি নিজেই স্বেচ্ছায় আমাকে ছেড়ে দিবেন।খুব ইচ্ছে করছে আজকে রাতটা উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।কয়েকদিন ধরে উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমায় না।এই কয়েকটা দিন ধরে আমার চোখের ঘুম যেন হারিয়ে গেছে।ঘুমাতে গিয়ে এইসব ভাবছিলাম।এরপর দেখি উনি বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। আজকে সারারাত উনার এই চেহারা দেখে কাটিয়ে দিবো। হয়ত পরে উনাকে আর প্রাণভরে দেখতে পারবোনা।
.
.
আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছি আমাকে কি করতে হবে।সকালে ভার্সিটি এসে সবার সাথে হেসে কথা বলছি,ক্লাস করছি।স্যার,তাসপিয়া কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না আমার মনে কি চলছে।আর এই জিনিসটা হয়ত তাসপিয়া সন্দেহের চোখে দেখে ফেলেছে।অনেক জেরা করে শেষ পর্যন্ত আমার প্ল্যানটা জেনেই নিলো।
“মেঘ প্লিজ এইরকম ভুল করিস না।”
“আমার আর কিছুই করার নেই।”
“তারপরও একবার ভেবে দেখ।মেঘ তুই স্যারকে সব সত্যি কথা বলে দে।দেখবি উনি সব ঠিক করে দিবেন।আর তুই ১০০% ধরেই নিয়েছিস যে ওইদিন স্যার তোকে উনার আর প্রিয়া ম্যাডামের রিলেশনের কথা বলতে চেয়েছে তোর এই ভাবনা, সাগরের মোবাইলে পাঠানো ছবি সব মিথ্যাও হতে পারে।হয়ত সত্যটা অন্য কিছু।যেটা তুই জানিস না।আমি স্যারকে চিনি এত বছর ধরে দেখছি ঘরে বউ রেখে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন এটা কিছুতেই হতে পারে না।তুই প্লিজ কিছু করার আগে আরেকটাবার ভেবে নে।”
“আর ভাবার সময় নেই।ভাবার সময় শেষ। আগে থেকে যা ভেবে রেখেছি এখন সেটা শুধু করে দেখাতে হবে।”

ক্লাস শেষ করে উনি আজকে আমাকে কল দিলেন।
“মেঘ, তাসপিয়ার সাথে সাবধানে বাসায় যাও।আমার আজকে একটা জরুরি কাজ আছে। সেটা শেষ করে আসছি।”
“আচ্ছা।”

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৮

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটলাম।রিক্সাও পাচ্ছি না।হঠাৎ কোথা থেকে সাব্বির এসে হাজির।
অনেকবার ওর বাইকে উঠার জন্য বলছিলো।কিন্তু আমি মানা করে দিই। এদিকে আমার ক্লাস একটু পরে শুরু হয়ে যাবে। ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত না হলে উনি আবার রেগে যাবেন। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পরে উনি চেক করে যান আমি ঠিকভাবে ক্লাস করছি কিনা।অযথা উনার রাগ বাড়াতে চাই না।এদিকে সাব্বির ও অনেক জেদ করছে।ভাবলাম ক্লাসে উঠার জন্য ফ্রেন্ডের থেকে লিফট নিতেই পারি।তাই এরপরে আর না করলাম না।ওর বাইকে করে ভার্সিটি পৌঁছলাম।থ্যাংক গড ঠিক টাইমের অনেক আগেই পৌঁছে গেছি।
.
.
ক্লাসের ভিতর যখন ঢুকতে যাব তখন দেখি উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।মনে হল আমাকে কিছু বলার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
“কি ব্যাপার মেঘ এখানে দাঁড়িয়ে গেলে যে?ক্লাসে যাবে না।”(সাব্বির)
“তুমি ক্লাসে যাও আমি এখনি আসছি।”
“তাড়াতাড়ি আসো।তোমাকে ছাড়া ক্লাসে মন বসে না “(আস্তে করে)…..(সাব্বির)
“কিছু বললা তুমি?”
“কয় না,কিছু বলি নাই।বলছি তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলে আসিও।”(সাব্বির)

আমি উনার কাছে গেলেই উনি আমার হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে গেলেন।
“আরে আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসছেন?৫ মিনিট পর আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
“আমার বউয়ের সাথে প্রেম করবো তাই এখানে নিয়ে আসছি।কোন সমস্যা।”
“কিহ!”(জোরে চিল্লিয়ে)
উনার হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে, এই আস্তে।
“এত জোরে চিল্লানোর কি হলো?”
“সরি।আপনার ক্লাস নেই এখন।”
“না এখন আমার অফ টাইম চলছে। আচ্ছা মেঘ এত দেরি করলে যে?কতক্ষণ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।বাসা থেকে এখানে আসতে এত টাইম লাগে।তোমাকে আর সাব্বিরকে একসাথে আসতে দেখলাম।তুমি কি ওর বাইকে করে আসছ?”
“আসলে আজকে বাসা থেকে রওনা দিতে দেরি হয়ে গেছে।তাই…”
“আর…..”
“আর কি?”
“সাব্বিরের সাথে আসলে যে?তুমি কি ওর বাইকে করে….?”
“না, ওর বাইকে কেন উঠতে যাব। গেইটে এসে দেখি সেও আসছে। দুইজনে একসাথে এসে পৌঁছছি।তার মানে এই নয় যে ওর বাইকে করে আসছি।”(মিথ্যা বললাম কারণ আমি এখন কিছু বুঝাতে চাইলে উল্টা আমার উপর রাগ করে বসবে।)
“ও আচ্ছা….।মেঘ ওই ছেলের সাথে তোমাকে যাতে আর মিশতে না দেখি।ওকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় না।তোমার দিকে ওর চোখের দৃষ্টি জানি কেমন।”
“মানে!?”
“তুমি বুঝবে না।ওর সাথে মিশতে বারণ করে দিয়েছি তার মানে ওর সাথে আর মিশবে না।বুঝতে পারছ?”
“হ্যা….”(মাথা নিচু করে)

হঠাৎ ই উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
“আরে করছেনটা কি?”
“কিছু না আমার বউটাকে জড়িয়ে ধরছি। কোন সমস্যা তোমার?”
“হুহ ঢং!মুখ ভেঙ্গিয়ে। আলগা পিরিত।এখন প্রিয়া ম্যাডাম নাই তাই আমার সাথে আলগা পিরিত দেখাতে আসছে।বুঝি বুঝি সব বুঝি…….”
“মেঘ, ক্লাসে যাবে না”
“এরকম করে ধরে রাখলে কেমন করে যাব।”
“ও আচ্ছা, (মুচকি হেসে)।যাও ক্লাসে যাও।”
“হুম”
“মেঘ শুনো।”
“(আবার কেন ডাকে)।জ্বী”
আমার কাছে এসে কপালে ভালবাসার স্পর্শ দিলেন।
“সকালে এটা দিতে ভুলে গেছি।এখন দিয়ে দিলাম।যাও”
.
.
অফ টাইমে ক্লাসের বাইরে এসে দেখি উনি আর প্রিয়া ম্যাডাম গল্প করছেন।আমি বুঝতে পারি না ম্যাডামের সাথে উনার এত কথা কিসের?খুব রাগ উঠে যায় মাঝেমাঝে এইসব সীন দেখলে।না পারি কাউকে এই দূঃখের কথা বলতে না পারি সইতে।

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।ভালো লাগছে না কিছু। আবার এদিকে সাগরের টেনশন মনের ভিতর কাজ করছে।ও আমার মোবাইল নম্বর কি করে পেল? ওকে আমার নম্বরটা কে দিলো?

“কি রে মেঘ এত কি ভাবছিস?”
“কিছু না।”
“শুন না ২দিন আগে না সাগর ভাইয়া আমাকে কল দিয়েছিলো।”
“কি!”
“হ্যা উনি আমাকে বলল,জরুরী কাজে তোকে কল দিতে হবে।তোর নতুন নম্বরটা নাকি উনি মোবাইলে সেইভ করতে ভুলে গেছেন।আর নম্বরটাও ভুলে গেছেন।তাই আমার থেকে তোর নম্বরটা চাইলো। কেমন বর রে তোর মোবাইল নম্বর সেইভ করতে মনে থাকে না, নম্বর ভুলে যায়।”
“কি!ও চাইলেই তোকে নম্বর দিতে হবে নাকি?”
“এরকম রিয়েক্ট কেন করছিস।তোর বরকেই না নম্বর দিয়েছি অপরিচিত কাউকে তো দেয় নি।”এই বলে রাগ করে ও চলে গেল।

কি করে যে বলি সাগর আমার কেউ না।আর আমার স্বামী তাসপিয়াকেও বলেনি যে আমরা দুজন সম্পর্কের দিক দিয়ে এখন স্বামী-স্ত্রী। কি করে এখন তাসপিয়াকে এই কথাটা বলি তন্ময় স্যার আমার কি হয়? অবশ্য এই কথা বলবো কি করে? উনি নিজেও তো কাউকে কিছু বলেননি।তাহলে এত বড় সত্য কথা বলার দুঃসাহস আমি কি করে দেখায়।চুপচাপ থাকা ছাড়া আমার যে আর কিছু করার নেই।
.
.
“মেঘ, are u ok?”
“yap.”
“তাহলে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কিছু হয়েছে?আর তাসপিয়াকে দেখলাম রেগে চলে গেল?”
“না তেমন কিছু না।ওই আরকি একটু রাগ করেছে।”
“আসো তো দেখি কেন রাগ করল?ওর রাগ কমানোর ঔষুধও আমার জানা আছে।চলো ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে আসি।”

শেষে অনেক কষ্টে ওর রাগ ভাঙ্গাতে পারলাম।অবশ্য আমি না সাব্বিরি এই কাজটা ভালো করে করেছে।আজকে তাসপিয়া,আমি আর সাব্বির ঘুরতে যাব ক্লাস শেষে।মহারানী এই খুশিতে রাগ ভেঙ্গে ফেলেছ।যেহেতু ওর লাভারের সাথে ঘুরতে যাবে। তাই ওর মনে লাড্ডু ফুটেছে।
.
.
“হ্যালো,”
“হুম বলো মেঘ,”
“বলছিলাম যে,আজকে আমি আপনার সাথে যাচ্ছি না।তাসপিয়ার সাথে বাসায় যাব।ওর মনটা খারাপ।তাই ওকে নিয়ে আজকে ঘুরতে যাব। এরপরে বাসায় চলে আসবো। আপনি বাসায় চলে যান।”
“আচ্ছা, এই ব্যাপার।আমিও তোমার সাথে যাই।”
“হুহ “(আপনি আমার সাথে আসলে তাসপিয়ার মনে অনেক প্রশ্ন আসবে।মনে মনে অনেক কিছু ভাববে।আপনি যদি সবাইকে বলতেন আমি আপনার স্ত্রী তাহলে আজকে আমাদের সাথে ঘুরতে পারতেন।শুধু শুধু আপনাকে ঝামেলায় ফেলতে চায় না)।না আপনার আসা লাগবে না।আপনি এখন অনেক ক্লান্ত, বাসায় চলে যান। ”
“আচ্ছা।সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসবে।দেরি যাতে না হয়।নাহলে আমি খুব টেনশনে থাকবো।”
“জ্বী”
.
.
“জানিস মেঘ একটু আগে দেখে আসলাম তন্ময় স্যারের গাড়িতে করে স্যার আর প্রিয়া ম্যাডাম যাচ্ছে। তোকে বললাম না উনাদের মধ্যে রিলেশন চলছে।এবার বিশ্বাস করলিতো আমার কথা।নাহলে স্যারের গাড়িতে করে ম্যাডাম কেন যাবেন।”
“কিহ!”
“হুম,দুইজনের জুড়ি ভালো জমবে রে…।”

“আরে,মেঘ কি ব্যাপার কি ভাবছ।চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। নাহলে বাসায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে তোমার।”(সাব্বির)
“হ্যা চলো,,”
রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে ৩জনে পার্কে ঘুরতে গেলাম।কেন জানি মনে হচ্ছে সাব্বির আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে।ওর তাকানোর ধরণটা আমাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলছে।আর আমার পাগলি বান্ধবী তাসপিয়া একমনে ওর জীবনের গল্পগুলো শুনিয়ে সাব্বিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।বেচারী বান্ধবী আমার কত কি না করছে এই ছেলেটার মন পাওয়ার জন্য।কিন্তু দেখো এই ছেলেটার কোন পাত্তাই নেই।শুধু আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অনেক ঘুরাঘুরির পর তাসপিয়া আর আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম।বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
.
.
বাসায় এসে দেখি উনি অনেক রেগে আগুন হয়ে আছেন।সারছে আজকেও মনে হয় উনাকে রাগিয়ে দিলাম।

“কি ব্যাপার মেঘ, এত লেট কেন?তোমাকে বলেছিলাম না সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসতে।”
“আসলে,,রাস্তায় জ্যাম ছিলো, তাই,,”
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি রাগ এখনো কমে নি।
“মেঘ তুমি যে আমার বউ সেটা কি বারবার ভুলে যাও। বাড়ির বউ সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থাকবে সেটা কি ভালো দেখায়।আজকাল রাস্তাঘাটে কত কি ঘটে। মেয়েমানুষ হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরাফেরা করলে কত কি বিপদ হতে পারে সে খবর তোমার জানা আছে।এত বড় মেয়ে হয়ে গেছ এগুলো কি এখনো বুঝ না।”
“সরি আসলে বুঝতে পারি নি এত দেরি হয়ে যাবে। আর কখনো এরকম দেরি করে বাসায় আসবো না।”
“হুম মনে থাকে যেন কথাটা।”
“জ্বী মনে থাকবে।”
.
.
অনেক রাত করে আমার মোবাইলে unknown নাম্বার থেকে কল আসলো। এত রাতে আবার কে কল দিলো
“হ্যালো,”
“হ্যালো মেঘ”
“আপনি!এত রাতে অন্য ঘরের বউকে কল দিতে আপনার লজ্জা লাগে না।”
“না, করে না। কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি।”
“আমার সাথে এত অন্যায় করার পরও এইসব কথা বলেন।আপনার লজ্জা থাকা উচিত এই বলে কল কেটে দিলাম।”
.
.
ঘুম আসছে না কিছুতে। বারান্দায় চলে আসলাম।কি হচ্ছে এইসব আমার সাথে।এতদিন পর সাগর কেন আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করছে।কি চায় ও আমার কাছে?
হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
আমি ভয়ে যখনি চিৎকার দিতে যাব তখনি আমার মুখ চেপে কেউ ধরল।
“এই আমি আমি।
……(অবাক হয়ে)
“উফ এত ভয় পাও কেন?”
“আপনি!এত রাতে এখানে কি?”
“একি প্রশ্নতো আমারও।তুমি এখানে এত রাতে কি করছ?”
“ঘুম আসছে না তাই।আপনি ঘুমাতে যান।”এই বলে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি।
উনি আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে চুমো দিলেন।এক অজানা শিহরণে কেঁপে উঠলাম।
“মেঘ তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত।এমন কোন বিষয় কি আমার থেকে লুকাচ্ছ যা তোমাকে মনে মনে কষ্ট দিচ্ছে।দেখো যদি এরকম কিছু হয় আমাকে বলতে পারো।আমি তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”
“না, তেমন কিছু না।”
“জানতাম আমাকে বলবে না।”
“আচ্ছা চলো আর রাত জাগতে হবে না,নাহলে শরীর খারাপ করবে।”
“আমার ঘুম আসবে না।”
“আচ্ছা আমিও দেখি কেমন করে তোমার ঘুম আসে না “এই বলে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমাকে উনার বুকে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন অনেক্ষণ ধরে।
এরপরে এমনিতেই চোখে ঘুম চলে আসলো।

(বি.দ্র=১৮ পার্ট আজকে দিয়ে দিলাম।আজকে ফ্যামিলির সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু সকাল থেকেই বাইরে বৃষ্টি পড়ার কারণে যেতে পারেনি।তাই কালকে যাব।সেজন্য কালকে নেক্সট পার্ট দিতে পারবো না।রবিবারে নেক্সট পার্ট দিবো।)