Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2436



স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৭

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
ওদের সাথে ঘুরাঘুরি করার পর ভার্সিটির গেইটে চলে আসলাম।এখনি উনি বের হবেন।
“এই তো মেঘ কোথায় ছিলে?ক্লাসে তো তোমাকে দেখলাম না।”
“আমাদের তো আজকে তিনটা ক্লাস ছিলো।তাই ক্লাস শেষ করে ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গেলাম।”
“ও…তাই নাকি?ভালো।চলো বাসায় যাওয়া যাক”
হুম”

রাতে,,
উফ ম্যাথগুলো কি কঠিন। মাথা ব্যথা করছে খুব।মাথার চুল ধরে অনেকক্ষণ বসে আছি।
“কি ব্যাপার মেঘ,কি হয়েছে?”
“মাথা ব্যথা করছে”
“আসো মাথায় তেল দিয়ে দিই।মাথা ব্যথা সেরে যাবে।”
“না লাগবে না।”
“লাগবে, বেশ লাগবে।চলো বলছি,,”

উনি কি সুন্দর করে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন।সাথে দুইটা বেনিও করে দিলেন।নাও দুই বেনি করে দিলাম এই বলে আমার এক বেণী ধরে টান দিলেন আর বললেন গুলোমুলো মিষ্টি লাগছে।
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
“জানেন আপনার এই কথা শুনে আমার একটা ছেলের কথা মনে পড়ে গেল।”
“কি! কোন ছেলে আবার?”
“আমি যখন ক্লাসে এইটে পড়তাম তখন তো গ্রামের বাড়িতে থাকতাম।তখন একটা ছেলে আমাকে ঠিক একিভাবে আমার এক বেণী ধরে টেনে আমাকে গুলোমুলো মিষ্টি বলেছিলো”
“তাই নাকি?তা ছেলেটা কে?তোমাকে এই কথা কেন বলেছিলো”
“ওকে তো আমি চিনি না।তবে কোন না কোনভাবে কিভাবে জানি ওর সাথে দেখা হয়ে যেত। আসলে ওইদিন আমাকে শাস্তি দেওয়া…ইশ কি বলে ফেললাম,”
“শাস্তি!কিসের শাস্তি!”
“না কিছু না,”
“দেখো আমাকে পুরো ঘটনা জানতে হবে।নাহলে খুব অস্বস্তি লাগবে।তোমাকে কেন শাস্তি দিয়েছিলো।নিশ্চয় তুমি কিছু করেছ”
“না, আমি তেমন কিছু করে নি তো।আসলে…আমি কলা খেয়ে কলার ছোলকা রাস্তায় ফেলে দিয়ে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছিলাম।আর তখনি ওই ছেলেটা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কলার ছোলকার সাথে পিচলিয়ে পড়ে যায় ।আর এটা দেখে আমরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ। এরপর খেয়াল করি ওই ছেলেটা রেগে আমার দিকে আসছে।আমি ভয়ে দৌড় দিয়ে পালাতে গেলে সে আমাকে ধরে ফেলে। এরপর সে রাগে আমাকে ৫০বার কান…”
“কান উঠ বস করিয়েছে”
“হ্যা(মাথা নিচু করে)।আর এরপরেই সে আমার বেণী ধরে টেনে এই কথাগুলো বলেছিলো।কিন্তু আমিও কম যায় না হুম। একদিন ওই ছেলেটার দেখা আমি পেয়েছিলাম।আমাদের বাড়ি থেকে ওর বাড়ির রাস্তা ৩০ মিনিটের।বান্ধবীর বাসায় এসেছিলাম কাজে।পুকুর পাড়ে ঘুরতে গিয়ে দেখি সে ছেলেটা পুকুরে গোসল করছে।আর আমিও সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওর সব কাপড় গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে চলে আসছি হিহিহি”
“কি পাজি মেয়ে?ছেলেটা তোমাকে দেখি নি।”
“হ্যা দেখেছিলোতো। কত অনুরোধ করেছে ওর কাপড়গুলো দেওয়ার জন্য।আমি দেই নি।আমাকে কান ধরিয়েছে না আমিও ওকে শাস্তি দিয়ে চলে আসছি।হিসাব বরাবর”
.
.
“হুম, আচ্ছা ছেলেটার নাম জানো না।”
“না, তো”
“ধরো কখনো যদি ওই ছেলেটার সাথে তোমার দেখা হয় আর ওইদিনের সেই দুষ্টু কান্ডের জন্য আবার তোমাকে শাস্তি দেয়?”
“এরকম হবেই না।আমি তো ঢাকায় চলে আসছি।অনেক আগের ঘটনা। তাই ওই বজ্জাতটার চেহারা আমার মনেও নেই।ওর ও মনে থাকবে না।”
“আর যদি মনে থাকে?ওই দিনের ঘটনার জন্য তোমাকে আবার শাস্তি দেয়।”
“মনে থাকলে আর কি করার কিন্তু এবার যদি ও আমাকে শাস্তি দিতে আসেও পারবে না।কারণ আপনি আছেন না।আমি আমাকে প্রোটেক্ট করবেন।”
“তা আমি কেন তোমাকে প্রোটেক্ট করতে যাব শুনি।”
“কারণ আমি আমার স্ত্রী তাই।”এই কথা বলতে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো।
“কি জানি বললে শুনতে পাইনি?”
“আমি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছি।”
“কথা ঘুরাচ্ছো কেন।আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এটা না।”
আমি তাড়াতাড়ি করে লজ্জায় বাইরে চলে আসলাম।
.
.
কয়েকদিন পরের কথা,
উনি লুকিয়ে লুকিয়ে কি জানি দেখছিলেন।আমি সেটা দেখার জন্য একটু আগালাম।আর তখনি তিনি সেই জিনিসটা লুকিয়ে ফেললেন।
“লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছিলেন হ্যা”
“কিছ..ছু…না,”
“কিছু না মানে, নিশ্চয় কিছু দেখছিলেন।দেখান কি দেখছিলেন।”
“বললাম না কিছু না” (রেগে)
উনি এরকম কেন?দেখালে কি এমন হত?আমি কি উনার জিনিস কেড়ে নিয়ে যেতাম। ছোটবাচ্চাদের মতন একদম।দূর ভালো লাগে না।

কি করি কি করি আমার তো দেখতেই হবে।কি লুকিয়ে রেখেছেন উনি।কিন্তু দেখবো কি করে উনি তো বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।এক কাজ করি এক বালতি কাপড় ধুয়ে রেখে দিয়েছিলাম।এই কাপড়গুলো উনাকে দিয়ে আসি।বলবো কাপড়গুলো ছাদে দিয়ে আসতে।বাহ কি আইডিয়া তোর মেঘ,বাব্বাহ।
উনি জিনিসটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন সেটা আমি লুকিয়ে দেখেছি।উনি ছাদে চলে যাওয়ার পর আমি তাড়াতাড়ি করে লুকানো জিনিসটা বের করলাম।
এটা কি মাটির পুতুল!বর বউয়ের পুতুল।এই জিনিস আবার লুকিয়ে দেখার কি হল।পুতুলটা মনে হয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।কোনরকম করে সেটা আবার জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
“মেঘঘঘঘঘঘঘ……..(রেগে)।বলেছিলাম না আমার জিনিসে হাত না দেওয়ার জন্য।কেন হাত দিলে?”
“আম..মি…,মা..মা.. মা.. মানে,”
“এটাই শেষ ওয়ার্নিং আমাকে না বলে আমার কোন কিছুতে হাত দিবে না।”
“আচ..চছা…।”
.
.
“মুড অফ,”
…………
“কথা বলবে না,”
………….
“আচ্ছা গান শুনবে,”
“আপনার কাকের কণ্ঠের গান না শুনাই ভালো,”
“তাই নাকি,তুমি এত্ত শিউর কেমন করে হলে আমার গানের কণ্ঠ কাকের মতন,”
“হুহ মুখ ভেঙ্গিয়ে,শাওয়ারে গিয়ে যে গান গায়লেন তাতেই বুঝে গেছি।”
“আচ্ছা তাহলে কষ্ট করে এই গানটা শুনে বিচার করিও আমার গানের কণ্ঠ কেমন।দাঁড়াও গিটার টা নিয়ে আসি।”
পেয়ার হুয়া হে জাব তুজসে,
রাঙ্গোনে বলা মসামসে……..
ইস পেয়ারকি বাহারমে
হাম ভি বিখার জায়ে……….
দিলনে তোজে জাব আপনা মানা
বোলি হাওয়া তো হে দিওয়ানা
জিসকে পেয়ার মে হো উমরেভার
তোজসা তুজে চাহে……

আচ্ছা লাগতাহে তেরা নাজদিক রেহনা…..
তেরা এহসাস বারা লুভাতাহে……
ইন জাগোয়ি লামহোমে কারিশমাহে……
জো কাহে তো বহত মুজকো চাহতাহে……

“আপনি এত্ত ভালো গান গান!?আমাকে তো কখনো বলেননি”
“তোমাকে বললে তো তোমার কাছ থেকে আমি গান শুনতে পারতাম না। আমার তো তোমার গান শুনতেই ভালো লাগে।তাই বলে নি”
“আচ্ছা,আপনি কি পরিমাণ চালাক!নিজে গান শুনবেন বলে আমাকে এই সত্য কথাটা কোনদিন বলেন নি”
“হুম”
“আজকে রাতে আপনার খাওয়া বন্ধ যান….।আমার সাথে আর চালাকি করতে আসবেন হুম”
“সত্যি তো।হুম ঠিকাছে, যাও খাবো না”
এরেরে…আমি তো আরও ভাবছি উনি বলবেন প্লিজ এরকম করোনা,না খেলে আমার রাতে ঘুম আসবে না। উনি তো দেখি পুরাই উল্টা।
“আর..রে…খাবেন না মানে।চলেন খেতে চলেন”
“না আমি খাবো না।আজকে নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না”
“কি!নিজ হাতে না খেলে আপনাকে কে খাইয়ে দিবে শুনি”
“কেন আমার বউ”
“কিহ!!(চোখ বড় বড় করে)।আমি পারবো না।খিদে লাগলে এমনেই খেয়ে নিবেন।”
“ওকে তাহলে আজকে আর খাচ্ছি না।ঘুমিয়ে পড়লাম”
এতো দেখি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কেন যে ওই সময় নিজের চালাকিটা দেখাতে গেলাম,
“আচ্ছা না খেয়ে ঘুমাবেন না,শরীর খারাপ করবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।আপনাকে খাইয়ে দিবো”
“হুম”(মুচকি হেসে)
নিজ হাতে উনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।আর উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।মনে হয় যেন আমাকে আমার কথার ফাঁদে ফেলতে পেরে উনি রাজ্য জয় করে ফেলেছেন।উনার এই মুচকি মুচকি হাসি দেখে আগে ফিদা হয়ে যেতাম আর এখন এই হাসি দেখে অসহ্য লাগছে।
.
.
দিনকাল ভালোই চলছিলো।কিন্তু ভালো দিনকাল বেশিদিন থাকে না।কষ্ট যে কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে।উনাকে নিয়ে আমার ভালো লাগার অনুভূতি এখনো প্রকাশ করতে পারি নি।যাকে এখন ভালবেসে ফেলেছি এখন সেই আমাকে মনে মনে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।এখন ক্লাসে আসলে বান্ধবীদের মুখ থেকে প্রায়ই শুনি উনি আর প্রিয়া ম্যাডামের মধ্যে নাকি রিলেশন চলছে।উনার সাথে প্রিয়া ম্যাডামকে এখন প্রায়ি দেখা যায়।প্রিয়া ম্যাডামের সাথে উনাকে দেখি কিন্তু ওদের মধ্যে রিলেশন চলছে সে কথা মেনে নিতে পারছি না।এই কথা ভাবতেই এখন কষ্ট হচ্ছে।এই বিষয় নিয়ে উনাকেও কিছু বলেনি।কারণ ভালো তো আমি উনাকে বেসেছি উনি তো কখনো আমাকে এই কথা বলেননি মেঘ আমিও তোমাকে ভালবাসি।এখন কেন জানি মনে হয় প্রিয়া ম্যাডামি উনার পছন্দের সেই মেয়ে।হয়ত আমিই ভুল করে ওদের মাঝে চলে এসেছি।
.
.
বাসায় আসার পর মাথা ব্যথা করছে খুব।কোন কিছুতেই ভালো লাগছে না।মনে হচ্ছে উনাকে বুঝি আমি হারিয়ে ফেলবো।

এই সময় আবার মোবাইলে কল দিচ্ছে কে? “হ্যালো,”
“হ্যালো,মেঘ,”
“কে বলছেন?”
“মেঘ আমাকে চিনতে পারছো না।আমার কণ্ঠ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?”
“হ্যালো আমি সত্যিইই আপনাকে চিনতে পারছি না।দয়া করে পরিচয়টা দিন। নাহলে আমি কল কেটে দিচ্ছি।”
“না না,এইরকম করিও না। প্লিজ কল কেটো না।মেঘ আমি সাগর।”
“সাগর!কোন সাগর আমি কোনও সাগরকে চিনি না।”
“মেঘ প্লিজ তোমার এই কথা বিশ্বাস করার মতন নয় যে তুমি আমাকে চিনো না।৩ বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের।এত তাড়াতাড়ি নিশ্চয় আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা নয়।”
“হ্যা আপনার দেওয়া কষ্ট এত সহজে কি করে ভুলি। আপনার সাথে আমার রিলেশন ছিলো সেটা অতীতের কথা। অতীতের কথা মনে রাখা উচিত নয়।আপনাকে ভুলে গেলেও আপনার দেওয়া কষ্টগুলো এখনো ভুলতে পারিনি।যাই হোক আমি কোন অপরিচিত মানুষের সাথে মোবাইলে কথা বলি না,রাখছি।”
.
.
এতদিন পর কি মনে করে ও আমাকে কল দিলো। আমার নম্বর কোথা থেকে পেল আজব!
সারারাত টেনশনে ঘুমাতে পারেনি।একদিকে প্রিয়া ম্যাডাম আর আমার স্বামীকে নিয়ে টেনশনে আছি আর আরেকদিকে সাগর।জানি না এখন আমার জীবনটা কোন দিকে মোড় নিবে।

সকালে,,
“আচ্ছা মেঘ তোমার কি কিছু হয়েছে?”
“কয় না তো।আমার আবার কি হবে?কিছু হয় নি আমার।”
“সত্যি বলছ তো।”
“হ্যা মিথ্যা কেন বলব?”
“কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে মিথ্যা বলছ।মনে হচ্ছে কোন একটা বিষয় নিয়ে তুমি অনেক চিন্তিত।”
“না আমার আবার চিন্তার কিসের?এইতো ভালো আছি।সারাদিন ভার্সিটি, পড়ালেখা আর রান্নাবান্না নিয়ে আছি।আলতো ফালতো চিন্তা করার সময় কোথায়।”
“ও,, আচ্ছা রেডি হয়ে নাও।একসাথে যাব।”
“আপনি আজকে আগে চলে যান। আমার ক্লাস তো ১১:০০ টা থেকে।আপনার সাথে এত সকালে গিয়ে কি করবো।”
“ও…আজকে ১১:০০টায় ক্লাস। আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। সাবধানে যেও।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৬

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“কতটা বছর অপেক্ষা করেছেন!মানে?”
“কিছু না,তুমি বুঝবে না।”
“(আজব না বুঝালে কি করে বুঝবো)”
“সময় আসলে বুঝবে,এখন না বুঝলেও চলবে।”

রাতে,
বাসায় এসে উনার কথাগুলো ভাবলাম।উনার কথাগুলো শুনে মনে হল উনিও আমাকে ভালবাসেন।কিন্তু কই কখনো তো এই কথাটা উনি নিজের মুখে বলেননি যে,উনিও আমাকে ভালবাসেন।যদি একটাবার আমার কাছে এসে এই কথাটা বলতেন তাহলে…. হয়ত উনাকেও আমি আমার মনের কথাটা বলতে পারতাম।

“এটা তোমার জন্য,”
“কি এটা”
“বক্স খুলে দেখ”
“মোবাইল!”
“হুম এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আমাকে কল দিতে পারবে”
“থ্যাংকস আপনাকে”
.
.
ইশ এখনি কারেন্ট চলে গেল।খুব গরম লাগছে।
“মেঘ একটা কাজ করি চল আজকে ছাদে গিয়ে গল্প করি।তুমি দুইটা বালিশ,আর চাদর নিয়ে আসো।আজকে ছাদে গিয়ে আকাশের চাঁদ তারা দেখে দেখে গল্প করবো।”
“হুম ভালো আইডিয়া।”
তারপর ছাদে গিয়ে সেখানে বালিশ আর চাদর বিছিয়ে দুইজনে সেখানে শুয়ে গেলাম।বাহ কি সুন্দর বাতাস বইছে আর তার সাথেতো আছে আকাশের চাঁদ তারা।
“মেঘ আকাশের এই তারাগুলো দেখে তোমার কি মনে হয়?”
“কিছুই মনে হয় না।আপনার কি কিছু মনে হয়।”
“হুম অনেককিছু।খুব অল্পবয়সে যখন বাবা আর আমার ছোট বোনটাকে হারায় তখন আমার সমবয়সীরা,আমার মা প্রায় বলত ওরা নাকি আকাশের তারা হয়ে গেছে।এত তারাদের মধ্যে কোন তারাটা যে আমার বাবা আর বোন সেটা খুঁজে বেড়ায়।জানি এইসব কথা আমাকে তখন শুধু সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলত।কিন্তু এখন কেন জানি মনে হয় আমার বাবা,বোন এত তারাদের ভীড়ে কোন এক তারা হয়ে আছেন।আর হয়ত আমাকে সেখান থেকে দেখছেন।মাঝে মাঝে খুব চেষ্টা করি তাদেরকে এই তারাদের ভিতর থেকে বের করতে।”
“আপনার বোনও ছিল!?”
“হ্যা,”
“আপনার বাবা আর বোনকে খুব ভালবাসতেন তাই না?”
.
.
“হুম খুব ভালবাসতাম।জানো আজকে তোমাকে কিছু গোপন কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

আমার মা বাবা একে অপরকে খুব ভালবাসতেন।আমার মা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলো তাই মায়ের পরিবার আমার বাবা আর মায়ের সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।মায়ের পরিবার অন্য আরেক জায়গায় তার বিয়ে ঠিক করে।কিন্তু আমার মা বাবা একে অপরকে খুব ভালবাসতেন।এই বিয়ে মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া যেমন সম্ভব ছিলো না ঠিক তেমনি আমার বাবারো।তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে।বিয়ের পর বাবা যখন মাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যায় বাবার পরিবারো এই বিয়েটা মেনে নেয়নি।বরং বাবাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দেয় কারণ তারা জানিয়ে দিয়েছিলো হয় এই মেয়েকে ছাড়তে হবে আর নাহয় তাকে ত্যাজ্যপুত্র করা হবে।বাবা এই অবস্থায় মাকে ছাড়তে পারেনি তাই মাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

এরপর তারা তাদের স্বপ্নের সংসারটা চালাতে থাকে।এর ২বছর পর আমি হয়।আর বাবা আস্তে আস্তে এর কয়েকবছর পর নিজের কষ্টের অর্থ দিয়ে একটু একটু করে বাড়ি বানায়।ভালোই চলছিলো সব কিছু।এর কয়েকবছর পর আমার ছোট বোন আসে।ছোট্ট একটা পুতুল লাগতো ওকে।এই ছোট পুতুলকে নিয়ে খেলতাম সারাদিন।কিন্তু আমাদের কপালে এই সুখ বেশিদিন টিকলো না।কারণ কয়েকবছর পর আমার বাবা আর এর পরপরি আমার ছোট বোনটা আমাদের ফেলে চলে যায়। খুব ভালবাসতাম ওদের।এইভাবে আমার ভালবাসার আপন মানুষগুলো আমাকে ছেড়ে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। বর্তমানে আমার আপনজন বলতে শুধু আমার মা আর তুমি।”
.
.
এরপর হঠাৎ করে উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলেন।
“মেঘ বিশ্বাস করো ওইদিন আমি তোমাকে ইচ্ছা করে থাপ্পড় মারতে চায় নি।আমি তোমাকে বলে গিয়েছিলাম গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে আর তুমি ও হ্যা বলেছো।তাই ক্লাস শেষ করে সেখানে তোমার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টার পর অপেক্ষা করার পরও যখন তোমার আসার কোন হদিস পেলাম না খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।মনে হল এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।জানো কি পরিমাণ ভয়,দুশ্চিন্তা আর খারাপ ভাবনা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছিল তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা। তোমার কাছে যে মোবাইল নেই সেটা পরে মনে পড়ল। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তখন।আর তোমার বান্ধবী তাসপিয়ার নম্বরও আমার কাছে নেই।হঠাৎ মনে হল তুমি বাসায় যাও নিতো।তাই তড়িঘড়ি করে বাসায় এসে পৌঁছলাম।বাসায় এসে তোমাকে দেখে অনেক শান্তি পেলাম যে তোমাকে আমি হারায়নি।তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে গেলাম আর পরক্ষণেই তোমার ওই ভুল কাজের কথা মনে পড়ে আমার রাগ উঠে গেল।রাগ সামলাতে না পেরে সেদিন তোমাকে আমি থাপ্পড় দিয়ে দিলাম।তোমাকে থাপ্পড় মারাতে যতটা না তুমি ব্যথা আর আঘাত পেয়েছ তার থেকেও অনেক বেশি ব্যথা আমার বুকে এসে লেগেছে।ভিতরে ভিতরে কি পরিমাণ কষ্ট পাচ্ছিলাম তা তোমাকে দেখাতে পারছিলাম না।”
.
.
বউ আমি জানি আমার রাগ যখন নিজের কন্ট্রোলে থাকে না তখন কি করে ফেলি আমি নিজেও জানি না।শুধু যাদেরকে আপন ভাবি তাদেরকে আঘাত করে ফেলি।মাঝেমাঝে আমার খুব ভয় হয় জানো?শুধু মনে হয় আমার এই রাগ আর কড়া কথা শুনে তুমি কোনদিন না আমাকে ভুল বুঝে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।বউ আমি যেমনি হই না কেন প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যেও না।
.
.
বুঝতে পারছি কথাগুলো বলার সময় উনার গলা ধরে আসছিলো।কান্নাও করছেন সেটা বুঝতে পারছি কারণ উনার চোখের পানিতে আমার গলা ভিজে যাচ্ছে।
অনেক চাপাস্বভাবের মানুষ উনি এতদিন উনার সাথে থেকে তা বুঝে গেছি। “সরি” সামান্য একটা শব্দ বলতে যে মানুষটার ইগোতে অনেক লাগে আজ সেই মানুষটা নিজের গোপন কথাগুলো এইভাবে আমার সামনে প্রকাশ করবে,আর সেই ভুলের জন্য গোপনে কাঁদবে আমি তা ভাবতেই পারিনি।
.
.
মুখটা উপরে তুলে উনি বলতে শুরু করলেন বউ প্রমিস করো আমাকে না বলে আর কোথাও যাবে না।এই ভুল আর দ্বিতীয়বার করবে না।কোথাও গেলে আমাকে অবশ্যই জানাবে।

মাকে অনেক বলেছিলাম এখানে থাকতে কিন্তু উনি থাকেননি।বাবার বাড়িতে উনার প্রাণ পড়ে আছে তাই সেখানে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।এই বাসায় এখন আমার সাথে একমাত্র তুমি আছো। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে অনেক স্মরণীয়।বাসার বারান্দায় তোমার আর আমার আমাদের অনেক স্মৃতি জমে আছে।আচ্ছা তুমি চাইলে কি সে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে পারবে?আমি কোনদিনও সে স্মৃতিগুলো ভুলতে পারবো না।ওইদিনগুলো যখনি মনে পড়ে নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়।মনে হয় আমার সবকিছুতে তুমি জুড়ে আছো।নিজেকে তখন আর একা লাগে না।
এরপর উনি আমার ডান গালের কাছে এসে সেখানে চুমো দিলেন।আমাকে ভুল বুঝে কখনো ছেড়ে চলে যেও না প্লিজ।তাহলে বড্ড একা হয়ে যাবো আমি।
.
.
“হ্যা আপনাকে ছেড়ে কখনো যাবো না।এবার ঘুমিয়ে যান।”আমার এই কথায় মনে হল যেন তিনি তার প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।
“হুম,আমার লক্ষ্মী বউ “বলে আমার কপালে ভালাবাসার স্পর্শ দিলেন।
আজকে নিজের থেকেও অনেক হাল্কা লাগছে।দিন দিন উনাকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।এই লোকটার ভিতরের মনটা যে এত কোমল উনার সাথে না থাকলে না মিশলে বুঝতে পারতাম না।
.
.
সকালে,,
প্রতিদিনকার মতন আজকেও ভার্সিটি গেলাম।আজকে তেমন ক্লাস নেই।মাত্র ৩টা ক্লাস ছিলো।তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি আর তাসপিয়া গল্প করতে করতে গেইটের বাইরে চলে আসলাম।
“এই মেঘ কি খবর,”(সাব্বির)
“এইতো ভালো,”
“চলো না আজকে কোথাও থেকে ঘুরে আসি,তাসপিয়া তুমিও চলো। ২জনকে আজকে আমি খাওয়াবো,”(সাব্বির)
“না, না তা লাগবে না,আমি এখন বাসায় চলে যাব।”
“মেঘ তুই এমন করছিস কেন?চল না একটু ঘুরে আসি।দোস্ত আমার দিকটাও বুঝার চেষ্টা কর।”(তাসপিয়া)
আমি তাসপিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।বেচারি, সাব্বিরের সাথে থাকার জন্য এখন ও আমাকে টানছে।সাব্বিরের প্রেমে পুরা দিওয়ানা।
“আচ্ছা চল,”
“থ্যাংকস দোস্ত,,”(তাসপিয়া)
“তাহলে চলো,”(সাব্বির)

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৫

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
ক্লাস শেষ করে একমুহূর্তও এদিক ওদিক না তাকিয়ে হাঁটা দিলাম।
“মেঘ গাড়িতে উঠ”
….
“কথা কানে যাচ্ছে না”
….
“মেঘ শেষবারের মতন বলছি গাড়িতে উঠ।নাহলে কিন্তু এই পাব্লিক প্লেসে তোমাকে কোলে করে গাড়িতে উঠাবো”

বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠলাম।নাহলে আজকে ক্লাসে যে অপমান করল তাতে গাড়িতে উঠার কোন ইচ্ছায় নেই।একটাও কথা বলেনি উনার সাথে।রাগ কি উনার একার আছে আমার নেই।

বাসায় এসে অনেক্ষণ কাঁদলাম।কেঁদে মনটা হালকা করলাম।আজকে সামান্য একটা সংজ্ঞা পারেনি বলে এত অপমান।আজকে থেকে ভালো করে ম্যাথ করবো।আগেও উনি এমন করত কিন্তু আমার গায়ে উনার এই কড়া কথাগুলো ততটা লাগতোনা।কিন্তু এখনতো আমি উনার স্ত্রী হই।আপন মানুষকে ক্লাসের সবার সামনে এত অপমান।এইবার ম্যাথে ভালো রেজাল্ট করে উনাকে দেখিয়ে দিবো। কারোর সাহায্য আমার দরকার নেই হুম।আমি একাই একশ।
.
.
রাতে রাগ করে খায়নি।আর উনিও খাবারের প্লেট নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন অনেক্ষণ ধরে।আগে না খেলে জোর করে খাইয়ে দিতেন কিন্তু আজকে তেমন কিছু করছেন না।হয়ত বুঝেছেন উনারও কোথাও না কোথাও ভুল ছিল।
অনেক্ষণ খাবারের প্লেট নিয়ে ঘুরাঘুরির পর আমার সামনে আসলেন।
“মেঘ খেয়ে নাও”
“আমি খাবো না”
“আমার কথায় রাগ করেছ”
“না,আমি কারোর কথায় রাগ করিনা।আমি একমাত্র আমার আপন মানুষগুলোর উপর রাগ করি”
“তার মানে আমি তোমার আপন কেউ না?”
“হ্যা”
“বললেই হলো,তুমি আমার কেউ না হুম।এত টাকা দেনমোহর দিয়ে তোমাকে বিয়ে করছি এই ফালতু কথা শুনার জন্য।আচ্ছা আর রাগ করে থাকা লাগবেনা।আমি খাইয়ে দিচ্ছি”
“না”
“খাবারের উপর রাগ করে লাভ নেই।উল্টো নিজেরেই ক্ষতি হয়।আর তোমাকে কি আমি ইচ্ছা করে বকা দিয়েছি।ক্লাসে আমাকে স্যার বলছ কেন?আর বললাম না ক্লাস থেকে পড়া নিয়ে নিতে। পড়া নাও নি কেন?”
“আপনাকে ক্লাসে স্যার বলে ডাকবো নাতো কি বলে ডাকব।আর ওইদিন আমি ১ম ক্লাস ভালোভাবে না করে চলে আসছি।আপনাকে ওইদিন এই কথা বলে চলে আসতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনাকে ব্যস্ত দেখলাম(হুহ প্রিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলছিলো তাই রাগে কিছু না বলে চলে আসছি এই কথাটা আর বলিনি)।আমার কাছে কোন মোবাইলও নেই যে এই কথাটা আপনাকে জানাবো।কিন্তু আপনি আমার কোন কথা না শুনে ওইদিন কত কথা শুনালেন আর আজকে কত্তগুলো বকা দিলেন”
.
.
“ও এই ব্যাপার।ওই সময় অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল তাই এত বকা দিয়েছি।কিন্তু তোমারও দোষ আছে”
“আবারও আমার দোষ ধরে”
“আমার রাগ ঠাণ্ডা হওয়ার পর আমাকে এই কথাগুলো কেন বলোনি।ওইদিন যদি আমাকে এই কথাগুলো বলে ফেলতে তাহলে আজকে এতকিছু হত না।নাও এখন খেয়ে নাও।এখন খেলে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো”
“সত্যি”
“হুম”
“খেলাম এবার আমার সারপ্রাইজটা দেন”
“চোখ অফ করো।এই নাও তোমার সারপ্রাইজ”
“লাভ লকেট”
“হুম অনেক আগে এনেছিলাম কিন্তু তোমাকে দিতে পারেনি।আজকে দিলাম।এখানে তোমার আর আমার ছবি আছে।যখনি মন খারাপ থাকবে এই লকেট খুলে আমাদের ছবি দেখে নিতে পারবে।তোমার পছন্দ হয়েছে”
“হুম খুব খুব পছন্দ হয়েছে”
.
.
বউ দেখি তোমার গালটা,খুব লেগেছে না!এই বলে আমার ডান গালটা ছুঁয়ে দিলেন।
আসলে ওইদিন উনার রাগ এতই ছিল যে রাগের বশে খুব জোরে ডানগালে থাপ্পড়টা মেরেছিলেন।আয়নাতে গিয়ে দেখি পুরো পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে।হ্যা ব্যথাতো গালে বেশি পেয়েছিলাম কিন্তু তার চেয়ে বেশি ব্যথা পেয়েছিলাম উনার সেদিনের কড়া কথায়।উনার বকাতে আমি অভ্যস্ত কিন্তু এইরকম কড়া বকা আর রাগ সেদিন প্রথম দেখলাম।খুব কষ্টও পেয়েছিলাম উনার কথায়।সকালে থাপ্পড় মারা গালটা চুল দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম যাতে আঙ্গুলের ছাপগুলো উনার নজরে না পড়ে।

উনি আমার আরও কাছে এসে আমার সে গালে অজস্র চুমো দিলেন।জানি না এটা কি এমন মলম ছিল মূহুর্তের মধ্যে আমার সব কষ্ট,ব্যথা দূর হয়ে গেল।তারপর ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে আমার গালে লাগিয়ে দিলেন।
.
.
সকালে উনার সাথে ভার্সিটিতে গেলাম।ক্লাসে গিয়ে শুনি তন্ময় স্যার আমাদের ক্লাস আর নিচ্ছেন না।আমাদের ডিপার্টমেন্টে অন্য ক্লাসে ক্লাস করাবেন কিন্তু আমাদের ক্লাস নিবেন না।উনার বদলে আরেকজন টিচার আমাদের ম্যাথ ক্লাস নিবেন।মেয়েরাতো সবাই হতাশ,আর আমাদের ক্লাসে আরেকটা ঢঙী আছে এতো না পারে পুরা কেঁদে দিতে।মেয়েরা সবাই বলাবলি করছে স্যার এমনটা কেন করলেন।আমারও একি প্রশ্ন উনি এই কাজটা কেন করলেন?আমার জন্য কি উনি এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।যদি এরকম হয় তাহলে তা নিজের থেকেও খারাপ লাগবে।
.
.
“কিরে তাসপিয়া তোর মন কোনদিকে?এত উদাসীন লাগছে কেন?”
“আমি মনে হয় পড়ে গেছি”
“কি?মানে”(অবাক হয়ে)
“আমি মনে হয় প্রেমে পড়ে গেছি”
“কি তুই!তা সে ভাগ্যবান ছেলেটা কে?”
“(লজ্জিত হয়ে)আমাদের ক্লাসের ছেলে”
“নাম কি?”
“সাব্বির”
“কি তুই সাব্বিরের প্রেমে?কখন,কেমন করে হল?”
“তোর বিয়ের জন্য যখন থেকে তুই ক্লাসে আসা অফ করে দিয়েছিস এর কয়েকদিন পর ও নিজেই আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে আসে।ও তোর সম্পর্কে আমাকে অনেককিছু জিজ্ঞাস করত।তুই আসিস না কেন,কোন সমস্যা হয়েছে কিনা।আমাকে তুই তোর বিয়ে হওয়ার কথাটা ক্লাসের কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলি তাই ওকে সত্যি কথাটা বলেনি।বলেছি কয়েকদিনের মধ্যে তুই চলে আসবি।ওর সাথে আস্তে আস্তে মিশতে মিশতে ওকে আমার ভালো লেগে যায়।আর এরপর মায়া।আর এই মায়া থেকেই ধীরে ধীরে ওর জন্য আমার ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে”
“কি বললি?মায়া!মায়া থেকে ভালবাসা জন্মায়”
“হুম গাধী।কেন তুই সাগর ভাইয়াকে যখন ভালবাসতি তখন তোর উনার সবকিছুর প্রতি মায়া জন্মায়নি”
“না ওর প্রতিতো আমার কখনো মায়া জন্মায়নি।শুধু ক্ষণিকের মায়া কাজ করেছিলো ওর প্রতি।ওকে ভালবাসি এই কথাটা শুধু আমার মুখের কথায় সীমাবদ্ধ ছিলো।”ভালবাসি”শুধু মুখের এই কথাটা একে অপরকে বলতাম।স্যারের জন্য আমার যে মায়া জন্মেছে তার থেকে সাগরের প্রতি আমার এই মায়া অনেক দুর্বল।তাইতো সাগরকে এত সহজে ভুলতে পেরেছি।সাগরকে ভালবাসি এই কথাটা মুখ দিয়ে বলতে বলতে তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।কিন্তু ওকে যে ভালবাসতাম সেই ভালবাসার অনুভূতিটা ততটা অনুভব করতাম না।ক্ষণিকের যে মায়া ছিল সেটাও আস্তে আস্তে লোপ পেয়েছে।এখন সাগর নামটা আমার কাছে অপরিচিত লাগে।এই নামের মানুষকে কোন একসময় মুখে বলা “ভালবাসি”কথাটা বলে ভালবেসেছিলাম তা এখন আর মনে পড়ে না।ওর জন্য এখন আমার মনে কোন অনুভূতিই কাজ করে না।কিন্তু উনার জন্য,উনার জন্য খুব প্রখাঢ় এক অনুভূতি আমার মনে কাজ করে।উনার কথা,উনার স্পর্শ,উনার সবকিছুতে মায়া কাজ করে।তারমানে আমি উনাকে…।
না চাইতেও ওনাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।মনকে কত বুঝালাম আর কাউকে ভালবাসবো না কিন্তু এই মন কোন কথা শুনলোনা।না না করা সত্ত্বেও এই মন ঠিকই আমার অজান্তে একজনকে ভালবেসে ফেলেছে।শেষ পর্যন্ত উনার প্রেমে পড়ে গেলাম।
.
.
ক্লাস শেষে,ভার্সিটি গেইটে,

“কি ব্যাপার অনেক্ষণ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।কোথায় ছিলে এতক্ষণ ধরে?”
“তাসপিয়ার সাথে ছিলাম”
“ও, আচ্ছা,কি ব্যাপার মেঘ আমার দিকে ওমন করে কি দেখছ!”
“কিছু না”
উনার মুখ দেখে বুঝার চেষ্টা করছি আমি উনার প্রতি যা অনুভব করি উনিও কি আমাকে ঠিক একিভাবে অনুভব করেন।
“আচ্ছা আপনি নাকি আমাদের ক্লাস আর নিচ্ছেন না?”
“হ্যা”
“কারণটা কি জানতে পারি?”
“সত্য বলবো নাকি মিথ্যা”
“অবশ্যই সত্যিটাই বলবেন”
সাথে সাথে উনি জোরে গাড়ির ব্রেক কষলেন
“মেঘ তুমি কি আসলেই বুঝনা নাকি বুঝতে চাওনা”
“মা মা..মানে”
অনেকক্ষণ ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।কি মায়া এই চোখে।বেশিক্ষণ উনার চোখে তাকিয়ে থাকলে উনি আবার খারাপ মনে করবেন তাই তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।

মেঘ তোমার জন্য এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।আর তোমাদের ক্লাস নিবো না।কারণ তোমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাস করার জন্য দাঁড় করালে তুমি স্যার নামে আমাকে সম্বোধন কর।আর এই জিনিসটা আমার খুব খারাপ লাগে।আগে বাসায় ডাকতে। তোমাকে অনেক বুঝানোর পর তুমি আর আমাকে স্যার বলো না।বাসায় আপনি করে ডাক।কিন্তু ভার্সিটিতে এসে যদি তোমাদের ক্লাস নিতে গিয়ে আমাকে তোমার কাছ থেকে আবার স্যার ডাক শুনতে হয় সেটা আমার নিজের থেকেই খারাপ লাগবে।তোমার থেকে যখন স্যার ডাকটা শুনি তখন মনে হয় আমি তোমার আপন কেউ না।
.
.
দেখো ইচ্ছে করলে আমি বিয়ের পর তোমার উপর আমার অধিকারটা দেখাতে পারতাম।পারতাম নয় কি?ইচ্ছা করলে নিজের অধিকারটা আদায় করে নিতে পারতাম।কিন্তু আমি তা করেনি।কেন করনি জানো?কারণ আমি সবসময়ই চাইতাম আমার স্ত্রী আমাকে আগে মন থেকে ভালবাসোক।আমার কাছে তোমার মনটাই সবচেয়ে মূল্যবান।জোর করে একটা নারীর শরীর পাওয়া গেলেও মনটা পাওয়া যায় না।শরীরের চাহিদা,সুখতো স্বল্পকালীন।সময়ের সাথে সাথে তা নিস্তেজ হয়ে যায়।কিন্তু মনের সম্পর্ক এর সুখের চাহিদা দিনকি দিন বাড়তে থাকে।যদি মনের কোন টান না থাকে,আত্মার কোন সম্পর্ক আমার জীবনসঙ্গীর সাথে তৈরী করতে না পারলাম তাহলে সত্যিই আমার পুরোজীবনটাই বৃথা।এখনকার জন্য,বুড়ো বয়সের জন্য সবসময়ের জন্য আমি একটা নির্ভরশীল হাত চাই যে হাতকে কেন্দ্র করে আমরা একে অপরের জন্য স্বপ্ন দেখব,একজন আরেকজনের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসব।সোনালী দিনগুলো একসাথে দেখার জন্য একে অপরের সাথে থাকব।বিপদের দিনে একে অপরের ছাউনি হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো।একে অপরকে সাহস যুগাবো।একাকীত্ব দিনগুলো দূর করার জন্য,মনের কথাগুলো কাউকে বলার জন্য,আমার প্রিয়জন,ভালবাসার মানুষের সঙ্গ প্রয়োজন।আর এইসবের জন্য মনের সম্পর্কটা অনেক জোরালো হওয়া লাগে।সুন্দরভাবে সারাটাজীবন যদি এইভাবে কাটাতে চাই এক্ষেত্রে যদি আত্মার আর মনের সম্পর্কটা মূলকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়,একে অবলম্বন করে আমাদের বাকিটা পথ বাঁচতে হয় তাহলে শুধু শরীরের চাহিদাটা কি করে বড় হয়?আমি চাইবো তুমি আমাকে মন থেকে মেনে নিয়ে আমাকে ভালবাসো।শুধু এই দিনটার জন্য আমি এতটা বছর অপেক্ষা করে আছি।আমাকে মন থেকে মানতে হলে আমার নাম ধরে না ডাক অন্তত আমাকে তুমি বলে ডাক।দেখবে আস্তে আস্তে আমাকে তোমার নিজের একটাই অংশই মনে হবে।এই কাজটা করতে পারলে ভাববো তুমি আমাকে পুরোপুরি মেনে নিতে না পারলেও কিছুটা হলেও মেনে নিয়েছ।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৪

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
খুব খারাপ লাগছে আমার।উনি আমাকে বিয়ে করলেন অথচ কাউকে বলেননি উনি বিবাহিত। এখনো সবাই জানে উনি অবিবাহিত।আর তাসপিয়া সে এখন জানে সাগরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তাসপিয়ার সাথেতো উনার অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।উনি তাসপিয়াকেও এই কথাটা বলেননি যে উনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।আমি সাগরের স্ত্রী না আমি উনার স্ত্রী।তাছাড়া প্রিয়া ম্যাডামের সাথে এত হেসেহেসে কথা বললেন কয় আমার সাথেতো কখনো হেসেহেসে কথা বলেননা।
আর সাগর এই অমানুষটার কথাতো আমি ভুলেই গেছি।বিয়ের পর থেকে স্যার আমাকে নানা কাজে ব্যস্ত রাখত।প্রথম প্রথম উনার বকা খেয়ে আমার দিন যেত।উনার বকা আর আমার কান্নাকাটির কারণে সাগরের কথা ভাববার সময় পাইনি।এরপর উনার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হতে থাকে।তাই এখন সাগরের কথা আমার মাথায় আসে না।আজকে ম্যাডামের সাথে উনাকে দেখে খুব খারাপ লাগছে।উনার পাশে অন্য কোন মেয়েকে দেখে কেন জানি আমার সহ্য হচ্ছে না।উনাকে ভালবাসি বলে অন্য কোন মেয়ে উনার পাশে থাকলে আমার সহ্য হয়না তা কিন্তু নয়।উনার প্রতি আমার ভালবাসা না মায়া কাজ করে।আসলে এতদিন হল মানুষটার সাথে আছি তাই একটুখানি মায়া,না একটুখানি না অনেকখানি মায়া জন্মে গেছে।এই মায়া ভালবাসা কিনা জানি না আর বুঝতে পারছিনা।ধূর কি আবোলতাবোল বলছি উনাকে কেন আমি ভালবাসতে যাব। একবার ভালবেসে কি তোর শিক্ষা হয়নি মেঘ আবার ভালবাসার ফাঁদে নিজেকে জড়াচ্ছিস তুই।আচ্ছা উনি কি আমাকে ভালবাসেন।না তা কেমন করে হয়!কেউ তোকে দয়া করে বিয়ে করলে,তোর দেখাশুনা,তোর পড়াশুনোয় সাহায্য করছে তারমানে এই নয় যে সেও তোকে ভালবাসে।
.
.
বিকালে,
উনি বাসায় এসে আমাকে দেখামাত্র একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলেন।এখানে এসেছি অনেকদিন হয়, অনেক ভুল করেছি আমি কিন্তু সেজন্য উনি কখনো আমাকে থাপ্পড় দেননি।কিন্তু আজ!

তোমাকে আমি বলেছিলাম না ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে।তুমি সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে আসছ কেন?এই মেয়ে তোমার কি মনে হয় তোমার পিছনে আমি সারাদিন পাগলের মতন ঘুরে বেড়াবো।তোমাকে বিয়ে করে আমি তোমার দায়িত্ব নিয়েছি বলে আমাকে চরকার মতন ঘুরাবে?আমাকে তোমার মানুষ মনে হয়না।তুমি জানো কতক্ষণ ধরে তোমার জন্য আমি সেখানে অপেক্ষা করেছিলাম।তোমাকে সেখানে না পেয়ে আমার মনে কত দুশ্চিন্তা কত আজেবাজে ভাবনা এসে ঘুরপাক খাচ্ছিল।আমার সাথে যদি আসার ইচ্ছা না হয় অন্তত আমাকে একটা মেসেজ দিয়ে দিতে বা আমাকে বলে আসতে পারতে।তাহলে আমাকে এত দুশ্চিন্তায়ও থাকতে হতনা।
.
.
দেখো কথায় কথায় একদম কাঁদবেনা।দোষ করবে অথচ বকা দিতে পারবনা তাই না!এত ফ্যাসালিটি আমার কাছে পাবেনা।তোমার কারণে আজকে আমার নিশ্চিত হার্ট এ্যাটাক এসে যেত।আর এই ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।একতো আমাকে না বলে বাসায় এসে আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলো আর এখন আমি যখন বাসায় আসছি তোমার অপরাধের জন্য তোমাকে কয়েকটা কথা শুনালাম শুরু হয়ে গেল ন্যাকা কান্না।তোমার জ্বালাই না বাইরে না বাসায় শান্তি পাবো,অসহ্য।
.
.
কত কিনা বলে ফেললেন অথচ আমাকে কিছু বলতে দিলেন না।আমারও যে কিছু বলার থাকতে পারে তা বুঝতে চাইলেন না।আসলে উনাকে অনেক জ্বালাচ্ছি।কত কিনা করলেন আমার জন্য।অথচ আমি উনাকে শুধু কষ্ট আর দুশ্চিন্তায় ফেলছি।উনার জন্যও কিছু করা উচিত আমার।উনাকে মুক্তি দিয়ে দিলে হয়ত উনি শান্তি পাবেন।কিছুদিন আগে তাই করতে চেয়েছিলাম।কিন্ত উনার এখানে থেকে আমার শাশুড়িমা, সানজামণি,আর উনার বকা,না বকা না এগুলো উনার শাসন ছিলো সেগুলোকে ভালবেসে ফেলেছি।উনাকে যদি মুক্ত করে দেই তাহলে সবকিছু আমি হারিয়ে ফেলবো।আমি এইসব হারাতে চাইনা।আরও কয়েকটাদিন দেখি যদি মনে হয় সত্যিই উনার আমার সাথে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাহলে উনাকে মুক্ত করে দিবো।জোর করে তো আর সবকিছু হয় না।
.
.
রাতে উনাকে ডাক দিলাম।কিন্তু খেলেন না।আমিও আর রাগ করে খায়নি।উনার এইরকম রেগে যাওয়া,বকা দেওয়াতো আজকে নতুন নয়।এর আগে অনেকবার এরকম হয়েছে।প্রথমে রেগে আমাকে বকা দিবেন এরপর খাবারের সময় হলে বলবেন খাবো না।কিন্তু পরে নিজে খাবারের প্লেট এনে আমাকে খাওয়াবেন আর নিজেও খাবেন।কিন্তু আজকে কি এমনটা হবে।আজকে যা হল তাতে মনে হচ্ছে উনি খুব রেগে আছেন।নিজের থেকেও খুব কষ্ট হচ্ছে।আগে রেগে গেলে বকা দিতেন কিন্তু আমার গায়ে কোনদিনও হাত তুলেননি।আর আজকে!কাঁদলে উনি নিজ হাতে আমার চোখের জল মুছে দিতেন কিন্তু আজকে তা করেননি।সবকিছু অস্বাভাবিক লাগছে।
.
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু মনে হচ্ছে উনার রাগ ভাঙ্গেনি।চুপচাপ করে শুয়ে আছেন।ঘড়ির সময় আস্তে আস্তে বাড়ছে কিন্তু উনি…।এত্ত রাগ আমার উপর।ঘুমও আজকে আসছে না।শুধু এইপাশ ওইপাশ করছি।প্রতিদিন উনি আমাকে তার বুকে টেনে নিয়ে ঘুমাতেন কিন্তু আজকে…।কত সহজে আমার উল্টোপাশ ঘুরে ঘুমাচ্ছে।অনেকক্ষণ ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল।মনে হচ্ছে শক্ত কিছুর উপর ঘুমিয়ে আছি আমি।চোখ খুলে দেখি উনার বুকে শুয়ে আছি।কি করে সম্ভব এটা।আমি জানি আমি যেভাবে ঘুমায় ঠিক সেইভাবে ঘুমিয়ে থাকি।এদিক ওদিক এত নড়চড় করিনা।তাহলে কি করে উনার বুকে চলে আসলাম।তাহলে কি উনি!না তা কি করে হয় উনিতো আমার উপরে অনেক রাগ করে আছেন।হিসাব মিলাতে পারছি না।কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছেন উনি।আগে কখনো উনাকে এইভাবে লুকিয়ে দেখি নি।কেন জানি আজ তার এই ঘুমমাখা মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।আচ্ছা ঘুম থেকে উঠে যদি উনি আমার নাম ধরে ডাক না দেন।প্রতিদিনতো সবার প্রথমে উনি আমার নাম ধরে ডেকে কথা বলা শুরু করেন।আজ যদি তা না হয়।কিছু একটা করতে হবে যাতে উনি আমার নাম ধরে ডাকেন।উনার রাগ যে করেই হোক ভাঙ্গাতে হবে।
.
.
কিছুক্ষণ পর,
“মেঘ,এই মেঘ”
এইতো আমার প্ল্যান কাজ দিয়েছে।দৌঁড়ে উনার কাছে গেলাম
“জ্বী,আমাকে ডাকছেন”
“মেঘ আমার চশমাটা কই?”
“কেন আপনার বালিশের পাশে নাই চশমা।আপনি সবসময়তো ম্যাথ বই পড়া শেষ করে ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে চশমা রাখেন”
“হ্যা রাখি।অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছি পাচ্ছি না।একটু দেখতো কোথায়”
“এই যে আপনার চশমা,টেবিলে রেখে এখন আপনি বালিশের পাশে চশমা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।আপনি পারেনও বটে”
“কিন্তু আমিতো টেবিলে চশমা রাখিনা,সবসময় বালিশের পাশে রাখি।তাহলে কেমন করে সেখানে গেল এই বলে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন”
“আপনি এইভাবে কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আপনার কি মনে হয় আমি চশমাটা টেবিলে রেখেছি”
“এই বাসায় আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে শুনি।আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কালকে চশমাটা কোথায় রাখছি।চশমা কি হাঁটতে পারে যে বালিশ ছেড়ে টেবিলে চলে গেছে।নিশ্চয় তুমি এই…”
“আপনি কি এখন এই বিষয় নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবেন(শান্ত কণ্ঠে)”
“আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই না তোমার সাথে ঝগড়া করব।আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই আমার পারসোনাল জিনিসে আমাকে না বলে হাত দিবে না আর যেখানে সেখানে রাখবে না।আমি এইসব পছন্দ করিনা।”
“আচ্ছা,সরি”
.
.
উনার রাগ এখনো যায় নি।আমি জানি উনি চশমা ছাড়া বইয়ের লেখা ভালো করে দেখতে পারেন না তাই ম্যাথ বই পড়ার সময় চশমা ব্যবহার করেন।আর ঘুমানোর সময় তা বালিশের পাশে রেখে ঘুমান।সকালে ম্যাথ বই পড়ার সময় উনার চশমা লাগবে জানতাম আর সে সুযোগটা আমি কাজে লাগিয়েছি।আর কিইবা এমন করলাম চশমাটার জায়গা না শুধু বদল করছি।ইচ্ছে করে তো আর এইসব করিনি।এই চশমার অযুহাতে সকালে উনার মুখ থেকে যেন আমার নামটা শুনি সেইজন্যই না এই কাজটা করলাম।আচ্ছা এক কাজ করি উনাকে একটা চিরকুট দেই।
.
.
চিরকুটে সরি লিখে সেখানে সরির ইমুজি দিয়ে চিরকুটটা টেবিলে রেখে আসলাম।যদিও জানি আমি কোন দোষ করিনি কিন্তু তারপরও এই কাজ করলাম।আসলে মাঝেমাঝে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে তখন যদি নিজের দোষ নাও থাকে তবুও সরি কথাটা বলতে হয়।নিজের আর আপনজনের মঙ্গলের জন্য মাঝেমাঝে এই কাজটা করতে হয়। দেখি উনি কি করেন।উঁকি দিয়ে দেখছি উনার রিয়েকশন কি হয়।উনি চিরকুট হাতে পেলেন কিন্তু উনার ভিতরে কি চলছে তা বুঝতে পারছি না।নাস্তা করার পর আমাকে নিয়ে পড়তেও বসলেন না।এখনো রাগ পুষে রেখেছেন।ঠিকাছে দেখি কতক্ষণ পর্যন্ত উনার এই রাগ থাকে।
.
.
কেউ যদি আমার সাথে ভার্সিটি যেতে চায় তাহলে সে যেতে পারে।আমি ১০মিনিট পর রওনা দিবো। ১০মিনিটের বেশি দেরি হলে আর কারোর জন্য অপেক্ষা করবো না।এই আমি বলে দিলাম।

কথাটা যে আমাকে বললেন তা বুঝতে পেরেছি।গেইটের বাইরে এসে দেখি উনি গাড়িতে বসে আছেন।সকালে যে শার্টটা পছন্দ করে রেখে দিয়েছিলাম সেটাই পড়লেন।এটা দেখে খুশি লাগছে।এখন ইচ্ছে করেই ৫মিনিটের মত বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।চাইছিলাম আমার সাথে কথা বলুক।কিন্তু কথাতো বললোই না উল্টো জোরে জোরে গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে আমার কান ঝালাফালা করে ফেলছে।মনে হচ্ছে গাড়িতে না উঠে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকায় উনি ক্ষেপে উঠেছেন।আমি আর উনার এক্সট্রা রাগ বাড়াতে চাই না তাই গাড়ির পিছনের সিটে বসে গেলাম।
আমি এই গাড়ির ড্রাইভার না,আমার গাড়ির পিছনের সিটে বসে কেউ যদি ভার্সিটিতে যায় আর তা আমার স্টুডেন্টরা দেখে ফেললে আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে,আমার মান-সম্মান যাবে। যদি আমার সাথে ভার্সিটি যেতেই হয় তাকে আমার সামনের সিটে এসে বসতে হবে।
চুপচাপ সামনের সিটে এসে পড়লাম।একবার উনার মুখের দিকে তাকালাম।কিন্তু উনার কোন পাত্তাই নেই।
.
.
আজকে ১ম ক্লাসটা তন্ময় স্যারের।সেটা আমার মনে ছিল না।ক্লাসে এসে বসামাত্র উনি ক্লাসে এসে উপস্থিত।হায় আল্লাহ আমিতো পড়া নোট করে নেয় নি।আমি জানি ক্লাসে এসে সবার প্রথমে আমাকেই দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাস করবে।
“মেঘ,stand up”
…..
“অন্তরক সমীকরণ কি?”
“স্যার,….”
“পড়া শিখো নি”
“মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি”
“তুমি এমন কেন?কতদিন হয়ে যাচ্ছে এই চ্যাপ্টার ক্লাসে পড়াচ্ছি,এতদিন সবাইকে সময় দিয়েছি যাতে ভালোভাবে এই চ্যাপ্টার বুঝতে আর শিখতে পারে।কালকে তো ক্লাসে এসেছিলে কারোর কাছ থেকে পড়া নোট করে নিতে পারোনি।অবশ্য পারবে কেমন করে এক নাম্বারের ফাঁকিবাজ একটা।বাসায় তো মনে হয় বই খুলে একটু দেখোও না বইয়ে কি আছে না আছে।বই খুললে না পড়া পারবে”

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১৩

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আজকে সকালে শাওয়ারে গিয়ে উনি সেখানে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গান গাওয়া শুরু করে দিলেন।

মে ফির ভি তুমকো চাহোঙ্গা
মে ফির ভি তুৃমকো চাহোঙ্গা
ইস চাহাত মে মার যাওয়োঙ্গা
মে ফির ভি তুমকো চাহোঙ্গা।

আর এদিকে উনার গান শুনে আমার কান ফেটে যাচ্ছে।গান গাইতে না পারলে এরকমভাবে চিল্লিয়ে গান গেয়ে মানুষের কান খারাপ করার কি দরকার।দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।
কিছুক্ষণ পর উনি বের হয়ে এলেন।
“মেঘ তুমি এখানে (অবাক আর লজ্জা মুখে)।তুমি না রান্নাঘরে ছিলে?”
“হ্যা…হ্যা…ছিলামতো ঘর গুছানোর জন্য এখানে এসেছি”
“আচ্ছা,তুমি কিছু শুনো নি তো”
“না কিছু শুনি নি,”
“ও,থ্যাংক গড,”
“তবে হ্যা বাথরুম থেকে কে যেন কাকের কণ্ঠে কা কা করে গান গাচ্ছিল সেটা শুনেছি”
“উহুম উহুম”(লজ্জিত হয়ে)।
উনার লজ্জা মাখা মুখ দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।আহারে কি লজ্জা এই বলে আমার মুখ দুইহাত দিয়ে চেপে ধরলাম।মেঘ এই কথাটা মনে মনে বলতে পারতি,জোরে বলার কি দরকার ছিল।তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়ি।না হলে কপালে দুঃখ আছে।
চলে যাওয়ার জন্য পাটা বাড়ালাম আর ওমনি উনি আমার হাত ধরে টেনে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।
.
.
“কি বলছিলে জানি?”
“কিছ..ছু.. না…”
“কিছু না,তাই না?শুনো পিচ্চি, ছেলেদের লজ্জা থাকতে নেই।ছেলেদের মধ্যে লজ্জা কাজ করলে অনেক কিছু তাকে মিস করতে হয়।আর আমার গানকে কাকের সাথে তুলনা করলে?ছেলেদের গানের কণ্ঠ এরকম একটু হয়ই।এতে লজ্জার কিছু নায়।তোমার গানের কণ্ঠ মনে হয় যেন কোকিলের।আজকে বাসায় এসে নি এরপর তোমার কোকিল কণ্ঠের গান শুনব,
…..
“এরপর আমার কপালে,চোখে ভালবাসার পরশ দিয়ে দিলে আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি।এর কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখি উনি কেমন যেন নেশাকর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার চোখ দুটি কি গভীর।এই চোখের দিকে তাকালে মনে হয় উনার এই চোখে কারোর জন্য গভীর প্রেম জমা আছে।
“মেঘ এই যে আমার লক্ষ্মী বউ আমার চোখে ওমন করে কি দেখছ?”(আমার কানে খুব নরম কণ্ঠে কথাটা বললেন)
“আপনার চোখ দুইটা এত গভীর কেন?”
“কারোর জন্য জমাট প্রেম এই চোখে বেধে রেখেছি তাই হয়ত।কেন আমার এই চোখের প্রেমে পড়ে গেলে নাকি বলে কানের লতিতে একটা কামড় মারলেন।”
“উহ,এত জোরে কেউ কামড় মারে।”
“বউ এখন তুমি আমার চোখের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি ভার্সিটিতে যাব কেমন করে?”
“এই যে আমি আপনাকে আটকিয়ে রাখছি নাকি?”
“তো আটকিয়ে রেখেছ তোই।এভাবে তাকালে আমার তোমার সাথে রোমান্স করতে ইচ্ছে করে” এই বলে উনার মাথার চুলগুলো ঝাড়লেন। আর এতে আমার মুখে পানির ছিটা এসে লাগল।
“এটা কি করলেন!”
“ভালবাসার রং মাখিয়ে দিলাম।”(মুচকি হেসে)
.
.
“আচ্ছা একটা কাজ কর এখন আমার এই নীল শার্টটা আয়রন করো।আজকে এটাই পড়ে যাব”
“কালকে না এই শার্ট পড়ে গেলেন”
“হ্যা পড়েছি, কিন্তু এই শার্টের কালারটা প্রিয়ার অনেক প্রিয় তাই আজকেও পড়ে যাব”
“তাই না। দাঁড়ান এই শার্ট পড়া আমি বের করছি”
“মেঘ কি হল,এখনো আয়রন হয় নি আমার শার্টটা।”
এই যে নেন”
“ওমা এই শার্ট পুড়লো কি করে। এত কেয়ারলেস কেমন করে হও তুমি।এটা প্রিয়ার প্রিয় শার্ট ছিল।এখন আমি কি পড়ে যাব”
“(আহারে,প্রিয়ার প্রিয় শার্ট যত্তসব,ন্যাকা।)হায় হায় এখন আপনি কি করবেন(হেসে)।একটা কাজ করুন আজকে এই কালো শার্টটা পড়ে যান। এই রং আপনাকে খুব মানায়।আর হ্যা আজকে থেকে আমি নিজে আপনার জন্য শার্ট বের করে রাখবো। আপনার পছন্দমতন কোন শার্ট পড়তে পারবেন না এখন থেকে।ইটস মাই অর্ডার বুঝতে পারছেন।”
“হ্যা করতে পারি একটা শর্তে”
“কি শর্ত!”
“প্রতিদিন আমার টাইটা বেঁধে দিতে হবে।”
“আচ্ছা”
“মেঘ তুমি কি এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?”
“কেন কি হয়েছে”
“আমি এখন চেঞ্জ করব।অবশ্য তুমি চাইলে তোমার সামনে চেঞ্জ করতে পারি আমার কোন সমস্যা নেই”
“এই না,আমি যাচ্ছি,”
.
.
“মেঘ এই মেঘ,”(চিল্লিয়ে)
“এই তো আসছি।কি হয়েছে আবার”
“আরে ভুলে গেলে আমার টাই”
“এখনি লাগবে”
“হ্যা….কারণ আজকে তোমার দেওয়া শার্টটা পড়েছি তাই আজকেই টাই পড়িয়ে দিতে হবে”
“কিন্তু….”
“বাটি মেয়েদের এই এক সমস্যা,”
“কি বললেন” (রেগে)
“কয় কিছু না,বলছি এমনেতো পারবে না, তাই আমার পায়ের উপর উঠে আমাকে টাই পড়িয়ে দিতে পারো”
…….
“দেখো আমার আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি টাই বেঁধে দাও”
উনার পায়ের উপর পা দিয়ে টাই পড়িয়ে দিচ্ছি।আর উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
“নেন হয়ে গেছে।এবার আমাকে ছাড়েন”
“এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে”
“জ্বী,”
“আচ্ছা মেঘ আসি।”
“জ্বী।”
“মেঘ,শুনো তোমাকে না আজকে সুন্দর লাগছে, আচ্ছা আসি।”
….
“মেঘ আপনি এখনো যান নি।”
“না,মেঘ বলছিলাম যে, আজকে আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো”
“আচ্ছা,”
“আবারো আপনি,এবার কি বলবেন”
“আমার কানে এসে,আমার বউটাকে আজকে সত্যিকারের বউ বউ লাগছে।”এই বলে আমার কপাল,চোখ আর গালে ভালবাসার স্পর্শ দিয়ে দিলেন।
.
.
রাতে,,
“আরে আপনি গিটার বাজাতে পারেন।”
“হুম, কলেজ লাইফে অনেক বাজিয়েছি।এতদিন এটা লুকিয়ে রেখেছিলাম।আজকে আবার বের করলাম।সকালের কথা মনে আছে নিশ্চয়।”
“মানে,,”
“ওমা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে,সকালে বলেছিলাম না তোমার কোকিল কণ্ঠের গান আজকে শুনব।তাই এই গিটারটা আজকে বের করেছি।আজকে আমি গিটার বাজাবো আর তুমি গান গাবে।”
“আমি গান পারি না।”
“সে কথা বললে তো হবে না।গান তো আজকে তোমাকে গেতেই হবে।আর তোমার প্রিয় গানটায় গাবে। নাহলে,,”
“নাহলে কি,”
“কালকে সকালে ঘরের সব কাজ তোমাকে দিয়ে করাবো।আম্মু কোন কাজ করবে না আর তোমাকে সাহায্যও করবে না।রাজী আছো,,”
“না, না,আমি গান শুনাচ্ছি।”
“হুম তোমার প্রিয় গানটা শুনাও।”
“আমার প্রিয় গানটা বাদে আরেকটা গাই।”
“হবে না,যেটা শুনতে চেয়েছি সেটাই শুনাও।”

বহত পেয়ার কারতিহো তুমকো সানাম(||)
কাসাম চাহে লেলো,কাসাম চাহে লেলো,
খোদাকি কাসাম।
বহত পেয়ার কারতিহে তুমকো সানাম(||)
সাগারকি বাহুমে মোজিহে জিতনি
হামকোভি তোমসে মুহাব্বাত হে উতনি
কেয়ে বেকারারিনা,কেয়ে বেকারারিনা
আব হোকি কাম,
বহত পেয়ার কারতিহে তুমকো সানাম(||)

“এখন কাকে ভালবাসো মেঘ,”
“মানে!?”
“আমি বলছি এখন কাকে ভালবাস।তুমি তো এখন বিবাহিত।আর বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকেই ভালবাসে।তাহলে তুমি কি আমাকে…..?আমার জন্য তোমার মনে কিছু অনুভূত হয়।”
“না,একবার ভালবেসেছি ঠকেছি আর না।ভালবাসা মানে কারও বিশ্বাস নিয়ে খেলা তা চুরমার করে ভেঙ্গে ফেলা।একবার এই ভুল করে অনেক কেঁদেছি, দ্বিতীয়বার এই ভুল করার সাহস নেই।”
“মেঘ তুমি আগে যাকে ভালবেসেছিলে তার ভালবাসা মিথ্যা ছিল এ কথা আমি আগেও বলেছি এর এখনো বলছি।কিন্তু তাই বলে তোমার জীবনে সত্যিকারের ভালবাসা যখন তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে তখন তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয় না।যখন তোমার মনে হবে কেউ তোমাকে সত্যিই চায় তাকে ফিরিয়ে দিও না কারণ সত্যিকারের ভালবাসা সবার কপালে জোটে না।আর আজ নাহয় কাল তুমি এই কথাটা মেনে নিতে বাধ্য হবে যে তুমিও আমাকে ভালবাসো আর এই কথাটা খুব শীঘ্রই তুমি নিজের মুখ আমাকে বলবে।আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকব।”
.
.
শুক্রবার বিকালে,,
“মেঘ এখনো রেডি হওনি?”
“এইতো হব।”
“মেঘ তুমি কি এই থ্রিপীচ পড়ে বের হবে।”
“হ্যা”
“আজকে বরং শাড়ি পড়।নতুন বউ তুমি সবসময় না পারো মাঝেমাঝে তো শাড়ি পড়তে পার।”এই বলে আলমারি থেকে নীল রঙয়ের শাড়ি বের করলেন।আজকে এই শাড়িটা পড়।
“শুনুন”
“হ্যা বল”,
“আমি শাড়ি পড়তে পারি না।”
“আচ্ছা আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”
“না না চিৎকার করে খাটে উঠে গেলাম।”
ওমা কি হল?”(অবাক হয়ে)
“আমাকে শাড়ি পড়াতে হবে না”
“দেখ একতো শাড়ি পড়তে পারনা।তারউপর আবার না না করছ।তুমি কি চাও আজকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে সবাই বলে বেড়াক আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।টিচার মানুষকে নিয়ে যদি সবাই এরকমভাবে বলে বেড়ায় আমার মান সম্মান সব যাবে। তুমি শাড়ি পড়লে তোমাকে বউ বউ লাগবে।তখন আর কেউ বলবে না আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।এমনেতেই সবাই বুঝবে তুমি আমার বউ।”
“এটা কোন কথা হল।শাড়ি না পড়লে আমাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড আর পড়লে আমাকে আপনার বউ লাগবে।”
“হ্যা এটা কথা হল।নাও শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি”
“না আমাকে শাড়ি পড়ানোর দরকার নাই আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ারও দরকার নাই।”
“কালকে যে আমাকে প্রমিস করছ সেটা মনে আছে”
“ও আচ্ছা তাইতো বলি এত প্রমিস প্রমিস করার কথা কেন বলছেন।হায় আল্লাহ প্রমিস করতে যে কেন গেলাম।এইভাবে যে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবেন ভাবতেও পারিনি।”
“কি হল কি ভাবছ।”
“না কিছু না।”
“এত ভেবে লাভ নাই।প্রমিস করছ এর মর্যাদা রাখতেই হবে।”
একবার ভাবলাম শাশুড়িমার কাছে যাব কিন্তু উনি কেমন করে জানি আমার মনের কথা ধরে ফেললেন।
“আমার মা এর কাছে গেলে যেতে পারো। কিন্তু তিনি ভাববেন উনার এই অকর্মণ্য মেয়ে রান্না জানে না আবার শাড়িও পড়তে পারেনা।তখন উনি তোমাকে নিয়ে কি ভাববেন।”
আসলেইতো স্যার ঠিক বলছেন।ভেবে দেখলাম শাশুড়ি মার কাছে গেলে আমার মান সম্মান যাবে। উনাকে এই ব্যাপার বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রমিসটা রাখতে হল আর শাড়ি পড়তে হল। উনি আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।নিজ হাতে আমাকে সাজিয়ে দিলেন।
“এইতো এখন না তোমাকে আমার বউ বউ লাগছে।এখন থেকে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করবে।”
.
.
পুরোটা বিকাল উনার সাথে ঘুরলাম।একমুহূর্তের জন্যও উনি আমার হাতটা ছাড়েননি।আমার হাত ধরে উনি গল্প করে যাচ্ছেন আর আমি বাধ্য ছাত্রীর মতন চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।
“আচ্ছা মেঘ তোমার কাছে ভালবাসা মানে কি?”
…..
“থাক আর ভাবতে হবে না।যেদিন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজে পাবে সেদিন আমার প্রশ্নের উত্তর দিও।”

আস্তে আস্তে উনার আর আমার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।এখন আর উনাকে আমার সেই রাক্ষস আর শয়তান মনে হয় না।আগেতো অনেক বকা দিত কিন্তু এখন আমার উপর এখন তেমন রাগ দেখায় না আর বকাও দেয় না।কিন্তু খুব মিস করি বকাগুলো এখন।শাশুড়ি মা যতদিন এখানে ছিলেন ততদিন আমাকে রান্নার কাজটা একটু একটু শিখাত।কিন্ত আমি রান্নায় এতটা জোর দিতাম না।আমাদের বাসায় প্রতিদিন ছোট্ট সানজা মণির আনাগোনা লেগে থাকত আর এটা খাব ঔটা খাব বলে বায়না ধরত।আমিও এই ছোট্ট মেয়েটার জন্য রান্না করতাম। নিজ হাতে রান্না করে ওকে খাওয়াতে ভালো লাগত।আস্তে আস্তে ওর কারণে আমি এখন মোটামুটি ভালো রান্না পারি।ইদানীং স্যারের কাছ থেকে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনার জন্য রান্না করি।এখন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি।সকালে নাস্তা বানানো,উনার শার্ট আয়রন করে দেওয়া,নিজ হাতে উনার জন্য শার্ট পছন্দ করে দেওয়া,টাই বেঁধে দেওয়া এইসব করি।অবসর সময়ে উনি আমাকে গিটার বাজানো শিখান,কখনো বা উনি গিটার বাজান আর আমি গান গাই।আর প্রতিদিন রাতে আমরা বারান্দায় ঝোলানো দুলনায় বসে ধোয়া উঠা গরম কফি খেতে খেতে গল্প করি।গল্পে তিনি হচ্ছেন কথার ঝুড়ি।উনার ছোটবেলার গল্প, বন্ধুবান্ধবদের গল্প সব বলেন।উনি একবার কথা বলা শুরু করলে আমি আর নিজের কথাগুলো বলতে পারিনা।চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনতে হয়।অবশ্য উনার গল্পগুলো শুনতে ভালোই লাগে।
.
.
কয়েকদিন পর,,,
আজকে ভার্সিটিতে যাব।সকালে উঠে উনি আমাকে নিয়ে নাস্তা করিয়ে ম্যাথ করাতে বসলেন।উনার কথামত এখন সবকথা শুনা আর মানার চেষ্টা করি।শুধুমাত্র ম্যাথ বাদে।এই ম্যাথে আমার একটুও মনোযোগ নাই।আমাকে নিয়ে পুরো ১ ঘন্টা ম্যাথ করলেন।১ ঘন্টা পর,,
“মেঘ তোমার হল”
“হ্যা এইতো রেডি।”
“হুম চল।”
উনার সাথে গাড়িতে করে ভার্সিটিতে গেলাম।
“মেঘ ক্লাস শেষ হলে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।তোমাকে নিয়ে একসাথে বাসায় যাব।”
“আচ্ছা।”
“মন দিয়ে ক্লাস করবে।”
“জ্বী”
“আচ্ছা তাহলে ক্লাসে যাও। আর শুনো আজকে তোমার ডিপার্টমেন্টে আমার ক্লাস নেই। তাসপিয়া বা অন্য কারো থেকে আমার পড়াগুলো নোট করে নিও।”
“জ্বী”
“শুধু জ্বী,জ্বী এই শব্দ ছাড়া কি আর কিছু বলতে পারো না।”
…..
“আচ্ছা তাহলে ক্লাসে যাও।”
অনেকদিন পর এখানে আসছি।ক্লাসে এসে বসামাত্র তাসপিয়া এসে ধরল।
“কিরে বিয়ে করে তোর বান্ধবীকে ভুলে গেছিস একেবারে।একটাবারও তো খুঁজ নিলিনা।”
“সরি দোস্ত আসলে সময় হয়ে উঠেনি।তাছাড়া বিয়ের পর ভুলে মোবাইলটাও বাবার বাড়ি রেখে আসছি তাই।”
“ও…, তুই আর দুলাভাই কেমন আছিস?”
“ভালো’
“হুম জানতাম সাগর ভাইয়া তোকে সুখে রাখবে।”
“সাগর!”
“হুম, সাগর ভাইয়াতো। ভালবেসে বিয়ে করেছিস সুখেতো থাকার কথা”
“তাসপিয়া তোর সাথে পড়ে কথা বলছি। আমি আজকে ক্লাস করব না।বাসায় চলে যাব।”
“কিরে মাত্র ১ টা না ক্লাস করলি?অনেকদিন পর আসছস একটু থেকে যা না।অনেক কথা আছে তোর সাথে,”
“পরে না হয় তোর কথা শুনবো। খুব খারাপ লাগছে। বাসায় যাব। ”
.
.
ক্লাস থেকে বেড়িয়ে আসার সময় দেখি স্যার আর প্রিয়া ম্যাডাম হেসেহেসে কথা বলছে।আজব এত হেসেহেসে কথা বলছে কেন?উনারা ক্লাস করাতে আসছেন নাকি গল্প করতে!অসহ্য।
হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। কোন রিক্সাও পাচ্ছি না।এমনিতেই তাসপিয়ার কথা শুনে এবং স্যার আর প্রিয়া ম্যাডামের হেসেহেসে গল্প করা দেখে অনেক রাগ উঠে গেছে।আর এখন রিক্সা পাচ্ছি না।
“আরে মেঘ বাসায় যাচ্ছ নাকি?”
“হ্যা”
“ক্লাস না করে বাসায় চলে যাচ্ছ। কিন্তু এইসময়তো কোন রিক্সা পাবে না।আমিও আজকে ক্লাস করব না।আমার বাইকে উঠ।আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।”
“সাব্বির আমার হেল্পের জন্য এগিয়ে আসছ ধন্যবাদ।সরি তোমার বাইকে যেতে পারবো না।
কিছুক্ষণ দাঁড়ালে একটা রিক্সা পেয়ে যাব।”
“তুমি এমন কেন বলত?কোনদিনও আমার হেল্প নিতে চাও না।আচ্ছা আরেকটা কথা তুমি এতদিন ধরে ভার্সিটিতে আসোনি কেন?জানো তোমাকে কতদিন ধরে দেখি নি।খুব মিস করেছি তোমাকে,”
“আ…সাব্বির ওইতো রিক্সা পেয়ে গেছি।আসি তাহলে।”
“আচ্ছা।এতকিছু বললাম কোনকিছুর জবাব না দিয়ে ও চলে গেল।”(সাব্বির)

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১২

1

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“ও বুঝছি চকলেটের বিনিময়ে ফ্রেন্ডশিপ,”
“হুম।”(মাথায় আক্কেল আছে)
“আচ্ছা ঠিকাছে।”
“সত্যি কালকে আর প্রতিদিন আমার জন্য চকলেট আনবেন।’
“হুম,”
“খুশিতে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।”
“এমা এতো দেখি পুরা পিচ্চি।এই বলে আমার দুইগাল টিপে দিলেন।”
মেঘ এটা তুই কি করলি?খুশিতে পাগল হয়ে শেষ পর্যন্ত তুই উনাকে জড়িয়ে ধরলি।হায় আল্লাহ এটা আমি কি করলাম।
উনিও দেখি আজকে মুচকি মুচকি হাসছেন।এদিকে আমি লজ্জাই শেষ।আমি যে এরকম কান্ড করে ফেলব ভাবতে পারিনি।আজকের পর থেকে নিজের খুশিকে কন্ট্রোল করতে হবে।নাহলে….??
.
.
সকালে উনি ভার্সিটি চলে গেলেন। ঘর গুছাতে গিয়ে টেবিলে রাখা একটি বক্সের উপর চোখ পড়ল।।বক্সের পেকেট খুলতে গিয়ে দেখি অনেকগুলো চকলেট।বুঝেছি উনি চকলেট এনে রাখছেন।খুব খুশি লাগছে।তারমানে উনি সিরিয়াসলি আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চাচ্ছেন।হিহিহি,,,স্যার হয়ে ছাত্রীর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাচ্ছেন।Not bad.
আমার শাশুড়িমা রান্নাঘরে কাজ করছে।আর আমি বসে বসে টিভি দেখছি আর চকলেট খাচ্ছি ।কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম হঠাৎ।দরজা খুলে দেখি পিচ্চি সানজা মণি।
“ওমা সানজা মণি তুমি “(খুশি হয়ে)
“টুমার বাষায়… এছ..ছি”
“খুব ভালো করেছো। এই বলে ওকে কোলে তুলে নিলাম।”
“বল কি খাবে সানজা মণি,”
“মেঘ আমি..আমি..ক্ষীল খাব।”
“ওমা তাই! ক্ষীর খুব পছন্দ কর তুমি।”
“হুম অনেক পছন্ড কলি।”
“আচ্ছা আমি তোমার জন্য আজকে নিজের হাতে ক্ষীর রেঁধে খাওয়াবো কেমন।রাতে তোমাকে আমি ডেকে নিয়ে আসবো।”
“টুমি খুব ভাল্লো। ”
“তুমিও খুব ভালো সানজা মণি।”
.
.
“মেঘ কে এসেছে রে মা।”
“আম্মু আমাদের ঘরে ছোট্ট মেহমান সানজা মণি এসেছে।”
“ও আচ্ছা। সানজা মণি। তাহলে ওকে নিয়ে খেল, কথা বল।এদিকে আমি রান্নার কাজটা শেষ করে নেই।”
“আচ্ছা আম্মু।এই যে, সানজা মণি তুমি একটু বস আমি এখনি আসছি ।”
“এই নাও কিটকাট চকলেট।”
“আম্মার জনন্য,”
“হুম,”
খুশি হয়ে চকলেট নিয়ে খাওয়া শুরু করল।
“আলছা মেঘ টুমি লান্না কল না।”
“না সানজা মণি আমার রান্না করতে ভালো লাগে না।”
“কেন্ন?”
“দেখ আমার আম্মু আর তোমার আংকেল খুব ভালো রান্না করে।এখন আমি যদি রান্না করি তাহলে ওদের হাতের রান্না করা মজার মজার খাবার মিস করব। আমি ওদের হাতের রান্না প্রতিদিন খেতে চাই।আর ওদের হাতের রান্না করা খাবার খেতে ভালবাসি তাই ইচ্ছে করে রান্না করি না।”
“ও… টাই।”
“হুম,তাই।”
.
.
আজকে নিজের হাতে ক্ষীর রান্না করেছি।পাশে শাশুড়িমা ছিলেন।উনার সাহায্যে আমি ক্ষীর বানালাম।শাশুড়িমার কাছ থেকে শুনলাম স্যারও নাকি ক্ষীর অনেক পছন্দ করে।রাতে সানজামণিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম।ওকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এর কিছুক্ষণ পর স্যার টেবিলে আসলেন।ক্ষীর দেখে অনেক খুশি হলেন।ক্ষীর খাচ্ছেন আর প্রশংসা করছেন।
“মা খুব ভালো হয়েছে ক্ষীরটা।”
“আমি আজকে রাধিনি।বউমা রেঁধেছে।”
এরপর আর কিছু বললেন না।চুপচাপ খাচ্ছেন আর মা আর সানজামণির সাথে কথা বলছেন।বড় আজব লোকটা। আমি রান্না করেছি শুনে আর প্রশংসা করলেন না।একটুখানি প্রশংসা করলে কি এমন হত।থাক ওনার প্রশংসা লাগবে না যার জন্য রেঁধেছি সে অনেক প্রশংসা করেছে সেটাই অনেক।
.
.
“মেঘ,”
“জ্বী,”
“আমার বউটা আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছে তাতে আমি অনেক খুশি হয়েছি।ভালো হয়েছে ক্ষীরটা।মাঝেমাঝে এরকমভাবে আমার পছন্দের কিছু খাবার নিজ হাতে রান্না করলে আরও বেশি খুশি হব।”
“আচ্ছা। (যাক সবার সামনে প্রশংসা না করলে কি হয়েছে গোপনে আমার সামনে তো আমার রান্নার প্রশংসা করলেন।)”
এরপর আমাকে নিয়ে ম্যাথ করতে বসলেন।ম্যাথ করানোর সময় হঠাৎ একটা আজব প্রশ্ন করে ফেললেন।
“আচ্ছা মেঘ আমাকে তোমার কেমন লাগে?”
আমি হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কালকে ফ্রেন্ডশিপের কথা আর আজকে উনাকে আমার কেমন লাগে!
“কি ব্যাপার বললে না যে,”
(উনাকে আমার শয়তান আর রাক্ষসের মতন লাগে।সত্য বলা যাবে না পরে দিয়ে ক্ষেপে যাবে তাই মিথ্যা বললাম)”… ভালোই।”
“শুধু ভালোই।”
(এমা উনার আজকে কি হল!ছাত্রী হয়ে যা বলার দরকার তাইতো বললাম।আচ্ছা ব্যাটা মনে হয় চাচ্ছে আমি উনার আরও প্রশংসা করি। তাহলে আর কি আরও একটু বেশি করে মিথ্যা প্রশংসা করি।) কিছু বলতে গেলে উনি আবার বলা শুরু করলেন,
“তোমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রিয়া ম্যাডাম কেতো চিনো।”
“হ্যা,চিনি।”
“আজকে তোমাদের প্রিয়া ম্যাডাম আমার খুব প্রশংসা করল।তাই আর কি তোমাকে জিজ্ঞাস করলাম আমাকে তোমার কেমন লাগে?’
“কিহ!আজকে এত প্রশংসার করার মানেটা কি?”
“না,মানে তেমন কিছু না।আজকে না সবসময়ই আমার প্রশংসা করে।তবে আজকের প্রশংসাটা আমার মন কাড়ার মন ছিল।”
“আচ্ছা তো কি কি প্রশংসা করল?”
“এই যে আমি নাকি হ্যান্ডসাম ছেলে।আজকে যে নীল শার্টটা পড়ে গেলাম সে শার্টটা নাকি প্রিয়ার অনেক পছন্দের। সেটাতে নাকি আজকে আমাকে অনেক ভালো লাগছিল।আমার মতন ছেলেকে ও বিয়ে করতে এক পায়ে রাজি।আমাকে নাকি তোমার ম্যাডামের অনেক অনেক ভালো লাগে। এতই ভালো লাগে যে…. থাক বাকিটা তোমার না জানলেও চলবে।”
(কিহ!এত্ত বড় সাহস ম্যাডামের!আমার স্বামীকে এইসব কথা বলে।আমার স্বামীর দিকে উনার খারাপ নজর।আর আমার স্বামীও তো কম না। ম্যাডাম একটু প্রশংসা করল আর ওমনিতেই উনাকে নিয়ে ভাবা শুরু করল আর এখন বাসায় এসে আমাকে এই প্রশ্ন করে আমাকে উনার কেমন লাগে।আমার স্বামীর মুখ দেখে বুঝতে পারছি উনি এখন প্রিয়া ম্যাডামের সেই কথাতেই বিভোর হয়ে আছে।ছিঃ ছিঃ ছিঃ পাশে নিজের স্ত্রীকে রেখে আমার স্বামী অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে ভাবছে।) “এই যে,এই যে, ভালোই তো এত ডাকছি উনার কোন খেয়াল নেই।হাতে জোরে চিমটি দিয়ে,”
“আরে,মেঘ(চিৎকার দিয়ে)এত জোরে কেউ চিমটি মারে।দেখছোনা আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে ভাবছি।”
“হ্যা কি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাবছেন তাতো আমি নিজ চোখে দেখতে পারছি।”
“এইতো গুড গার্ল বুঝতে পেরেছ এই বলে আমার দুই হাত ধরে বললেন যতটা বোকা তোমাকে ভাবি ততটা বোকা তুমি নও।অনেক কিছুই বুঝে দেখি আমার বউটা।একটা কথা মনে রাখবে নিজের প্রিয় জিনিসের দিকে সবসময় কড়া নজর রাখবে যাতে অন্য কেউ তোমার প্রিয় জিনিস কেড়ে নিতে না পারে।আর আরেকটা কথা প্রিয় জিনিসের উপর অধিকার খাটানোটা শিখ। যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে না পারো তাহলে সারাজীবন পস্তাতে হবে।বুঝতে পারছ আমি তোমাকে কি বলতে চাচ্ছি।আমার কথাটা ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করবে দেখিও এই কথা বুঝতে আবার বেশি দেরি করিও না নাহলে সত্যিই অনেক দেরি হয়ে যাবে।আর হ্যা ঘুমাতে যাও এখন আমার আবার একজনকে কল দিতে হবে।”
.
.
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি উনার জন্য।এতক্ষণ ধরে কার সাথে মোবাইলে কথা বলছেন উনি।প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও কথা শেষ হচ্ছে না।আজব।
“হ্যালো প্রিয়া আজকে রাখি। কালকে ভার্সিটিতে আসছি।সেখানে নাহয় কথা হবে।বায়।
আরে মেঘ এখনো ঘুমাওনি তুমি।”
“না ঘুম আসছিলো না।”
“বুঝছি আমার বউয়ের তো আবার আমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না।সরি বউ আসলে কি হয়ছে প্রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেছে।বেশিক্ষণ তো আর কথা বলেনি।”
“আচ্ছা ৩০মিনিট ধরে কথা বললেন তারপরও বলছেন বেশি কথা বলেননি।”
“ও দেখছ তুমি, ওর সাথে কথা বললে আমার কোনদিকে আর খেয়াল থাকেনা।৩০মিনিট হয়ে গেছে আর আমার কাছে মনে হল মাত্র ৫মিনিট কথা বলছি।”
(এতদূর….)
“থাক তুমি ছোট মানুষ তোমার এত কথা না জানলেও চলবে।এত রাত জেগে লাভ নেই বাবা, কালকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।দেরি হয়ে গেলে আবার প্রিয়া রাগ করবে।”
“প্রিয়া রাগ করবে।আপনি কি প্রিয়া ম্যাডামের কথা বলছেন।”
“হ্যা, ”
(ওমা উনি দেখি আবার লজ্জাও পাচ্ছেন।শয়তান, বান্দর একটা।আবার ম্যাডামের নাম ধরে ডাকে।)”হ্যা হ্যা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান। দেরি হয়ে গেলে আপনার প্রিয়া আবার রাগ করবে।”
“হ্যা ঠিক বলছ।”
.
.
জানিনা কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।উনার প্রিয়া…বাব্বাহ ভালোই তো।ঘরে বউ আর বাইরে প্রিয়া।রাগ করে উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে রইলাম।
আর বান্দর শয়তানটা পিছন থেকে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
“কি ব্যাপার… আপনার না কালকে ভার্সিটি আছে।ঘুমান না। আর আমাকে ছাড়েন।”
“কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসে না।”
“আমাকে আপনার কোলবালিশ মনে হয়।”
“তো কি,এখন থেকেই তো তুমি আমার কোলবালিশ,”
এত কিছুর পরও এইসব বলেন।আর রাগ কন্ট্রোল হচ্ছে না।ইচ্ছামতন কয়েকটা কিল,ঘুষি দিয়ে দিলাম।
“আরে আরে,তোমার জামাইকে মেরে ফেলবা নাকি এই বলে আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন।”
“হ্যা মেরেই ফেলব একেবারে।আমার কাছে কেন আসছেন কেন যান না আপনার প্রিয়ার কাছে যান না।”
“যাব তো প্রিয়ার কাছে কালকে যাব। ”
“আবারও প্রিয়া।আরো কয়েকটা কিল,ঘুষি লাগিয়ে দিলাম ।”
“এই মেয়েতো দেখি আজকে আমাকে সত্যিই মেরে ফেলবে। মেঘ তুমি না আমার লক্ষ্মী বউ। জামাইকে কেউ এইভাবে মারে।আচ্ছা আচ্ছা আর প্রিয়া প্রিয়া করব না।এবার তো থাম বউ।”
“হুম আর যেন আপনার মুখে প্রিয়ার নাম না শুনি।”
“কেন, গায়ে লাগছে।তাহলে আমি কি ভাবব, তুমি আমাকে………….,”
“কি ভাববেন হ্যা,কোন কিছু ভাবাভাবি নাই।ঘুমাবো এখন।”
“আচ্ছা আচ্ছা আর ভাববো না। আরও শক্ত করে উনার বুকে আমাকে জড়িয়ে রাখলেন।মেঘ বলছিলাম যে, তুমিতো সারাদিন বাসায় থাক।পরশুতো শুক্রবার। চল পরশুদিন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।তাহলে তোমার ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা।(আমার ভালো লাগা নিয়েও দেখি ভাবছে। কবে থেকে আমার ভালো লাগা নিয়ে ভাবতে শুরু করল। যাই হোক আমার ভালো লাগা নিয়ে উনি ভাবছেন।তাই এখন খুব খুশি লাগছে।)আচ্ছা, আপনি আমার ভালো লাগার জন্য আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।”
“হুম।আসলে আজকাল মুডটা খুব ভালো যাচ্ছে তাই।তাহলে এই কথা ফাইনাল রইল তোমাকে নিয়ে পরশু ঘুরতে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
“আচ্ছা বললে হবে না প্রমিস কর আমার সাথে কালকে ঘুরতে যাবে।”
“এতে প্রমিসের কি হল।আচ্ছা প্রমিস।”
“প্রমিস করছ আমাকে।দেখিও পরে দিয়ে আবার বলিও না যে আমি যাব না।”
“এই মেঘ প্রমিস করলে সে প্রমিসের মর্যাদা রাখে।”
“ওকে দেখা যাবে কালকে।”

(কয়েকদিন কাজের কারণে ব্যস্ত থাকব তাই নেক্সট পার্ট কবে দিবো বলতে পারিনা।)

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১১

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“মা কিছু বলবে।”
“হ্যা তন্ময়, তোকে কিছু বলতে চায়।”
“হ্যা বল।”
“দেখ, মেঘ এখন তোর বউ। স্বামী হিসেবে ওকে শাসন করবি ভালো কথা।তাই বলে কথায় কথায় ওকে ধমক দিয়ে কথা বলা এটা ঠিক নয়।তুই কি মনে করিস আমি কিছু বুঝি না। তোর রাগের কারণে সেদিন মেঘের হাত কেটেছে। আজকে রান্না করতে গিয়ে কি ভাবতে গিয়ে ওর ডান হাত কাটল। হাত কেটেছে তাই বলে ওর উপর রাগ দেখিয়ে ওকে কালকে অনেক কথা শুনালি।জানি তোর মাথাটা তখন ঠিক ছিল না।কিন্তু সেটা একটু ভালোভাবে বুঝালে হত ।মেঘের সাথে ওর মা বাবাও এত জোরে ধমক দিয়ে কথা বলে না।তোর বউ বলে ওকে কথায় কথায় ধমকের ওপর রাখবি সেটা মানার মতন নয়।আর তোর কারণেই মেয়েটার গায়ে আজকে জ্বর উঠল। ”
….
“দেখ আমি তোকে যতটুকু জানি তুই কারো উপর এত রেগে কথা বলিস না।মেঘ তোর বউ বলে ওকে তোর নিয়ন্রণের মধ্যে রাখার জন্য এইসব করিস তা আমি জানি।কিন্তু বউকে তুই তোর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করছিস তা আদৌ কি সঠিক? দেখ যখন ও ভুল করবে ওকে বুঝাবি যে এই কাজটা ভুল কিন্তু গুরুত্বতর অপরাধ করলে ওকে বকা দেওয়া ওর উপর রাগ দেখানোর অধিকার তোর আছে। কিন্তু তাই বলে সবসময় এই ধারা চলবে তা ঠিক নয়।এতে হিতের থেকে বিপরীত হবে।পরে দিয়ে দেখা যাবে ওকে তুই তোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিস না,ওকে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনাটাই বেশি থাকবে। এত ধমক আর বকাঝকা না করে ওর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে দেখবি তোদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও ভালো থাকবে।আর মেঘও তোর কথা শুনবে। কাউকে নিজের বশে আনতে হলে প্রথমে তার সাথে বন্ধুত্বকরতে হয়।এটাই সবচেয়ে শ্রেয় পদ্ধতি।বন্ধুত্ব করে শত্রুকেও বশে আনা যায় আর তুই মেঘকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবি না তা কেমন করে হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ আর ভালো সম্পর্ক থাকলে তা মনের মধ্যে একধরণের অনুভূতি, ভালো লাগা আর মায়া জিনিসটা কাজ করে।আর তা থেকেই মানুষের ওকে অপরের প্রতি ভালবাসাটা জন্মে।তুই যদি মেঘের মধ্যে সে বন্ধুত্বপূর্ণ আর মায়ার বাঁধন তৈরী করতে পারিস দেখবি ও কোনদিনও তোর কথার অবাধ্য হবে না আর ওকে হারানোর ভয়টাও তোর থাকবে না।”
“জ্বী মা। আমি বুঝতে পেরেছি।”
“হুম আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।এখন মেঘের কাছে যা।”
“হুম,”
“শুন তন্ময়,”
“হ্যা মা বল,”
“তুই কি মেঘকে আরও আগে থেকে চিনতি।”
“না…না,আমাদের ভার্সিটিতে যেদিন থেকে ওর ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নিচ্ছি সেদিন থেকেই চিনি।হঠাৎ এই প্রশ্ন,”
“না, আমি ভাবলাম আরও অনেক আগে থেকে ওকে চিনিস তুই।তাই এই প্রশ্ন করলাম।”
“আরে না মা, কি যে বলনা আরও আগে থেকে কেমন করে…”
“ও, আচ্ছা”
.
.
জ্বর কমানোর জন্য আমার কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়ে আমার সেবা করতে লাগলেন।আস্তে আস্তে জ্বর কমতে লাগল।কিন্তু শেষ রাত্রে খুব খারাপ লাগছিলো। কেমন যেন ছটফট করছিলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম ভাঙ্গল আমার। এখন মোটামুটি ভালো লাগছে।কিন্তু শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে।চোখ খুলে দেখি উনি একটা চেয়ারে ঘুমাচ্ছেন।পানির তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। আমার পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা হাত দিয়ে ধরতে গিয়ে গ্লাসটা শব্দ করে ফ্লোরে পড়ে গেল। আর তখনি স্যার জেগে উঠলেন।
“মেঘ আমাকে ডাক দিতে?”
“না,আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ভাবলাম আপনাকে ডেকে কষ্ট দেওয়ার দরকার নেই।”এই কথা বলে উনার চোখের দিকে তাকালাম।চোখ দুটি লাল হয়ে ফুলে আছে।তারমানে উনি সারারাত ঘুমান নি?
“নাও পানি নাও।”
“জ্বী।”
এই ২দিন উনি আমার খুব সেবাযত্ন করলেন।এই রাগী লোকটা আমার এত যত্ন নিবে আমি তা ভাবতে পারিনি।এখন জানি না কেন উনার প্রতি একটু মায়া জন্মাচ্ছে।
.
.
মেঘ তোমার আম্মু কল দিয়েছে।নাও কথা বল।
“হ্যালো আম্মু,”
“হ্যারে মা ভালো আছিস।”
“হ্যা আম্মু ভালো তুমি?বাবা কেমন আছে?”
“আমি তোর বাবা দুইজনেই ভালো আছি।আচ্ছা শুন জামাইকে নিয়ে বাড়িতে আয়।”
“না মা এখন পসিবল না।স্যারের কোন ছুটি নেই।”
“কি তুই জামাইকে এখনো স্যার বলে ডাকস?”
“হেহেহে,কই নাতো আমি স্যার বলিনি বলছি জামাই।না মানে তোমাদের জামাইয়ের ছুটি নাই।”
এরপর আরও কথা বলে জানতে পারলাম স্যার সবসময় উনাদের খোঁজখবর নেন। বিয়ের পর আমার মোবাইলটা সাথে করে আনি নি তাই এতদিন নিজ থেকে ওদের খোঁজখবর নিতে পারেনি।স্যারের মোবাইল থেকে মাঝেমাঝে আমি খোঁজ খবর নেই।মোবাইলে অনেক্ষণ ধরে মা স্যারের প্রশংসা করলেন। এইরকম ভালো ছেলে আজকালকার যুগে পাওয়া নাকি খুব কষ্ট।আরও কত কি।
.
.
কথা বলা শেষ করে দেখি স্যার আমার পাশে বসে আছে।রাগী মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওমা এটা কি?একটু আগেতো দেখলাম হেসে হেসে আম্মুর সাথে কথা বলছে হঠাৎ কি এমন হল যে এত রাগীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আপনি ঠিক আছেন তো?”(ভয়ে)
“না ঠিক নেই।তোমার কারণে কোনদিনও ঠিক থাকতে পারবো না।”
“মানে।আমার কারণে। আমি আবার কি করলাম।”এরপরে মনে পড়ল ইশ এটা কি করলাম।আমি মা এর সাথে কথা বলার সময় স্যার শব্দটি বলেছিলাম।আর সেটা তিনি শুনে ফেলছেন।সেজন্য এত রাগ।রাগে চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।উনার এই লাল চোখ দেখে মনে হচ্ছে এই লাল চোখের আগুন দিয়ে আমাকে ভস্ম করে দিবে।এবার আমি জানি কতগুলো বকা খাব।তাই চোখ বন্ধ করে বকা খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম।কিন্তু কয় এখনো তিনি বকা দিচ্ছেন না।উনারতো এরকম ঠাণ্ডা থাকার কথা না। চোখ খুলে দেখি উনি আমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তারপর কিছু না বলে চলে গেল।কি ব্যাপার এটা কি করে সম্ভব। উনি আমাকে বকা না দিয়ে চলে গেলেন!কি করে সম্ভব এটা।
.
.
আজকে বিকালে ছাদে আসলাম।এর আগে কখনো ছাদে উঠিনি।অনেক বড় ছাদ।একা একা বসে বসে গান গাচ্ছি।হঠাৎ আমার কাঁধে কারো স্পর্শ পেলাম।দেখি একটা ছোট্ট মেয়ে।
“এল যে টুমি কে?”
“আমি?”
“হুম,”
“আমি মেঘ, তুমি?”
“আমি সানজা মণি।”
“ও…তাই, তুমিতো খুব মিষ্টি মেয়ে।”এই বলে ওকে আমার কোলে তুলে নিলাম।অনেক কথা বললাম ওর সাথে।কি সুন্দর করে মেয়েটা কথা বলে।শুনতে খুব ভালো লাগে।কথায় কথায় ও বলল, “টুমি কোল টলায় টাক?”
“৩ তলায়। তুমি?”
“টিল টলায়।ওলখানে এক আক্কেল টাকে।টুমি জানো ওনি আমাকে কট্ট আডর কলে।আম্মাকে প্লতি…প্লতি…ডিন চক্কেট দেয়।”
“ও মা তাই নাকি?(সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে পিচ্চিদের চকলেট কিনে দেয়। কিন্তু আমার বেলায় শুধু বকা আর চকলেটতো কোনদিনও কিনে দেয় না।)আচ্ছা তাহলে আমিও তোমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দিবো।”
“ছত্তি।”
“হুম,সত্যি,এই বলে ওর গুলোমুলো গাল দুইটা টিপে দিলাম।”
“টুমি খুব ভালো।”
“তুমিও খুব ভালো সানজা মণি, ”
.
.
“মেঘ,”
“জ্বী,”
“তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।”
“হ্যা বলেন,”
“আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?”
“(ও মা শয়তানের মুখ থেকে এত ভালো কথা।নিশ্চয় কোন গণ্ডগোল আছে।দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।)হঠাৎ এই কথা।”
“না, মানে আমি চাইছি আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।”
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।এত্ত ভালো কেমন করে!!
“এরকম হা করে তাকিয়ে আছো কেন?দেখ আমি এত ভনিতা করতে পারিনা।তোমাকে স্পষ্ট করে এটাই বলতে চাই যে,আমার মনে হয় এইভাবে আমাদের সম্পর্কটা বেশিদূর আগানো সম্ভব নয়।যদি আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায় তাহলে দেখবে আমার সাথে মিশতে তোমার সহজ হবে,আমাকে আরও ভালো করে জানবে বুঝবে তাহলে আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা আরও ভালো আর মজবুত হবে।হবে আমার ফ্রেন্ড?”
(হুম এর মধ্যে এত কিছু ভেবে ফেলছে।ভালো)”আচ্ছা হতে পারি একশর্তে,”
“শর্ত!!”
“হুম শর্ত,”
“কি শর্ত, ”
“আমার জন্য কালকে অনেকগুলো চকলেট আনতে হবে।আর শুধু কালকের জন্য নয়।প্রতিদিন আমাকে চকলেট এনে দিতে হবে।”
“ও মা তুমি পিচ্চি বাচ্চা নাকি?৪ তলার পিচ্চি মেয়ে সানজা মণি চকলেটের কথা বললে মানা যায়।”
“দেখুন এতকিছু বুঝি না।চকলেটের বেলায় no বড় no ছোট।এর বেলায় সবাই সমান।আমার ফ্রেন্ড হতে চাইলে এই শর্ত মানতে হবে।আর নাহলে নাই।”

(এইগল্পে পিচ্চি মেয়ের যে নামটা ব্যবহার করা হয়েছে সে নামটা আমার অনেক পছন্দের।সে সাথে সে নামের মেয়েটাকেও।আজকে ওর নাম গল্পে ব্যবহার করতে গিয়ে ওকে খুব মিস করছি।ওর পরিবার ঢাকায় পোস্টিং হয়ে যাওয়ায় ওকে অনেকদিন ধরে দেখিনা।তোকে খুব মিস করছি সানজামণি ??)

স্যার যখন স্বামী পার্ট_১০

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“কিরে মা এখনো পড়ছিস”
“জ্বী আম্মু আপনার ছেলে কতগুলো ম্যাথ দিয়ে গেল সেগুলো দেখছি”
“আচ্ছা সেগুলো পড়ে দেখিস।চল দুইজনে মিলে টিভি দেখি গিয়ে,”
“আচ্ছা,”
“মেঘ তোর জন্য পপকর্ণ বানিয়ে আনি।পপকর্ণ খেতে খেতে দুইজন টিভি দেখব আর জমিয়ে গল্প করব, ”
“আম্মু আপনার করার দরকার নেই।আমি করে আনছি,”
“ওই চুপ করে বস।তোর কিচ্ছু করা লাগবে না।আমি আছি কি করতে। চুপ করে বসে টিভি দেখ।”
কিছুক্ষণ পর উনি পপকর্ণ বানিয়ে আনলেন।পপকর্ণ নিয়ে যেই খাওয়া শুরু করলাম হঠাৎ করে আমার শাশুড়িমা আমার বাম হাতের ব্যান্ডেজটা দেখে অস্থির হয়ে গেলেন।
“মেঘ তোর হাতে কি হয়েছে মা?”
“আম্মু কিছুনা কালকে হঠাৎ করে পড়ে যেতে গিয়ে আমার হাতের সাথে কাচের জগটা লেগে ভেঙ্গে পড়ে যায় আর আমি ফ্লোরে পড়ে যাওয়ায় কাচের টুকরা আমার হাতে লেগে আমার হাত…”
“মেঘ,একটু খেয়াল করে হাটাচলা করতে পারিসনা।দেখতো কি কান্ডটা না বাঁধালি।ব্যথা করছে খুব।”
“আরে,ব্যথা টেথা কিছু করছে না।এই ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। টেনশেন নিওনা তো।চল পপকর্ণ খেতে খেতে টিভি দেখি।”
আমার শাশুড়িমা আর আমি পপকর্ণ খেতে খেতে টিভি দেখছি আর তারসাথে আমাদের বান্ধবীসুলভ গল্পতো লেগেই আছে।
২ ঘন্টা পর….
“আচ্ছা তুই বস আমি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার কাজটা শেষ করে গিয়ে।”
“আম্মু আমিও আসি।”
“না তোর লাগবে না তুই টিভি দেখনা।”
“আম্মু,আপনার ছেলে বলে গেছে আপনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে।”
“তন্ময় এ কথা বলে গেছে।কিন্তু তোর তো হাতে ব্যান্ডেজ বাধা। দেখলি আমার ছেলের আক্কেলজ্ঞান কেমন।শুধু ভার্সিটির টিচার হলেই হয় না কিছুটা বুদ্ধিশুদ্ধিও থাকা লাগে।”
“আম্মু আমার বাম হাতে ব্যান্ডেজ ডান হাতে তো না।তাছাড়া আমি ঠিক করে নিতে পারব।”
“আচ্ছা তাহলে আয়।তুই এই সবজিটা কাট আমি এইদিকটা দেখছি।”
“আচ্ছা।”
সবজি কাটতে গিয়ে শয়তানটার কথা আর বকাগুলোর কথা মনে পড়ল।সেগুলো ভাবতে গিয়ে এবার আমার ডান হাতের তালুতে ছুড়ি লেগে হাত কেটে ফেললাম।
.
.
“কি ব্যাপার ডিনার করতে যাবে না।”
“আমি আজকে খাবো না, আপনি খেয়ে নিন।”
“কেন?খাবে না কেন?শরীর খারাপ নাকি?”
“না এমনিতেই,খেতে ভালো লাগছে না,”
“আজব,খেতে ভালো লাগবে না কেন?শরীর খারাপ না,খেতে ভালো লাগছে না এটা কেমন ধরণের কথা।চল খেতে চল। ”
একেবারে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
“আহ,হাতে ব্যাথা লাগছে।”
“কি ব্যাপার মেঘ তোমার ডান হাতে কি হয়েছে।তোমার ডান হাতের তালুতে ব্যান্ডেজ কেন?বলো তোমার হাতে কি হয়েছে।”
….
“জবাব দিচ্ছো না কেন?এবার কি সত্যি সত্যি গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিব।”
“সবজি কাটতে গিয়ে হা..তত..কে..টে..গেছে”
(কেঁদে)
“তো এখানে কান্না করার কি হল।”
“আপ..নি বকা দিলেন কেন?”
“তো করবটা কি শুনি ?প্রশ্ন করলে জবাব দাও না।বাসায় হাত কেটে বসে থাক।আমার সংসারে ২দিন হল না এসেছ এতেই হাত পা কেটে বসে আছো। এগুলো সহ্য করার মতন।কালকে এত্তগুলো বকা দিলাম কিন্তু কি লাভ হল।এককান দিয়ে কথা ঢুকাও আরেক কান দিয়ে আমার কথা বের করে দাও।এবার বল এখন আমি কি করব।রাগে আমি তোমাকে এত্তগুলো বকা দেই।বুঝতে পারছ।”
.
.
নিজের হাতে রাতেও খাইয়ে দিলেন।সাথে ফ্রি বকাতো আছে।রাতে ঘুমানোর সময় উনার বুকে জোর করে শুইয়ে দিলেন।ঘুমাতে গিয়েও তিনি শুয়ে শুয়ে লেকচার দিতে থাকলেন।মেঘ এটা করবা, ওইটা করবা না।সাবধানে চলবা,কোন কাজ করার সময় তাড়াহুড়ো করবা না।দেখ আমার কথা না শুনলে দেখা যাবে কালকে আবার পা কেটে বসে আছো।এইসব লেকচার তিনি এক এক করে আমাকে শুনিয়ে যাচ্ছেন। কান পুরো ব্যথা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনার কথা বলায় কোন ব্যথা বা কষ্টের লক্ষণ দেখছি না।ঘুমাতে আসছি নাকি উনার ক্লাস করতে আসছি আমি নিজেই কনফিউজডে পড়ে গেলাম।এদিকে ঘুমে আমার চোখ নেমে আসছে।কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম তা আর বলতে পারবো না।
.
.
সকালে উনি উঠে আমাকে কয়েকবার ডাকলেন।কিন্তু আমি চোখ মেলতে পারছি না।জানিনা কেন শরীররটা খুব খারাপ লাগছে।
“মেঘ কি হয়েছে তোমার। কতক্ষণ ধরে ডাকছি উঠছ না যে।শরীর খারাপ নাকি?”
এই বলে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি করে উনি আমার কপালে ভেজা কাপড়ের পট্টি দিয়ে অনেক্ষণ ধরে আমার সেবা করলেন।
তারপর আমার শাশুড়িমা কে ডেকে আনলেন।
“মা মেঘের জ্বর হয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি ওকে কিছু খাইয়ে দাও।আমি এখুনি ভার্সিটিতে কল করে আজকে ছুটি নিয়ে নিচ্ছি।আজকে আর ভার্সিটি যাব না।”
শাশুড়ি মা অনেক্ষণ ধরে আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন।কিন্তু জ্বরের কারণে কিছু মুখে নিতে পারছি না।
.
.
“মা তোমার বৌমা খেয়েছে?”
“নারে কিছুই মুখে নিচ্ছে না মেয়েটা।”
“আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।”
“হ্যারে আমিও থাকি।”
“না তোমার থাকা লাগবে না।আমি ওকে দেখে নিতে পারবো। তুমি বরং রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।”
“তন্ময় ওকে খাইয়ে আর মেডিসিন দিয়ে আমার রুমে একটু আয়।কিছু কথা ছিল।”
“আচ্ছা। ”
“মেঘ কিছু খেয়ে নাও।নাহলে মেডিসিন খাবে কেমন করে?”
“খেতে পারছি না। খেতে খারাপ লাগছে।”
“খারাপ লাগলেও খেতে হবে।প্লিজ একটু খেয়ে নাও।”
অনেকক্ষণ লাগিয়ে আমাকে খাওয়ালেন।এরপর মেডিসিন দিয়ে আমাকে বললেন তুমি এখন রেস্ট নাও।আমি একটুপরে আসছি।

স্যার যখন স্বামী পার্ট_৯

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“পাখির মতন একদম নড়াচড়া করবে না।লক্ষ্মী মেয়ের মতন আমার বুকে শুয়ে থাক।মেঘ হাত ব্যথা করছে এখনো?”
“না,”
“তাড়াতাড়ি সেরে যাবে,ঠিকাছে।চিন্তা করিও না।মেঘ তোমাকে কিছু বলতে চাই,দেখ আমি তোমার থেকে বয়সে বড় তাই তোমার থেকে আমার বুঝ আর অভিজ্ঞতাটাও বেশি।সেই সময় তোমার হাতে সাগরের ছবিটা দেখে খুব রাগ উঠে গিয়েছিল আমার,তাই রেগে তোমাকে আঘাত করেছি। দেখ মেঘ এখন থেকে তুমি আমার স্ত্রী। তাই আমার স্ত্রীর মনে অন্যপুরুষ থাকুক তা আমি চাইনা।সাগরকে মন থেকে যত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতে পারবে ততই তোমার আমার আমাদের সবার জন্য মঙ্গল হবে।সেজন্য আমি তোমাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চায় ওকে মন থেকে তাড়াতাড়ি মুছে ফেল।আর আরেকটা কথা এই বিষয় নিয়ে আমি প্রথমে তোমার সাথে রাগ করে থাকতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পরক্ষণেই নিজের মনকে বুঝালাম আমি যদি ছোট বাচ্চার মতন আচরণ করি তাহলে কেমন করে হবে।তাই নিজের রাগকে একপাশে ফেলে দিয়ে তোমার সাথে আগের মতন করে সবকিছু ঠিক করে নিয়েছি।আজকে আমাদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে তা এখন তুমি মন থেকে মুছে ফেলবে সাথে আমিও।যতই ঝগড়া, মান অভিমান আমাদের মধ্যে হোক না কেন রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় আমাদের সব রাগ ঝগড়া ঝেড়ে ফেলে দিব একপাশে।ভোরের আলোতে যেমন সব অন্ধকার মুছে যায় ঠিকতেমন করে আমরাও কালকের ভোরের আলোতে আমাদের সব রাগ,অভিমান আক্রোশ ভুলে গিয়ে নতুনভাবে বাঁচব।তুমি,আমি যদি রাগ,মান অভিমান করে সারাক্ষণ বসে থাকি আর এই আশায় থাকি ও আমার রাগ ভাঙ্গাবে তাহলে দেখবে সে সম্পর্কে ফাটল তাড়াতাড়ি ধরবে।কারণ তখন একটাই কথা সামনে দাঁড়াবে তখন তোমার উচিত ছিল আমার রাগ ভাঙ্গানোর। কেন আমার রাগ ভাঙ্গাও নি?এই বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি,আর সন্দেহের সৃষ্টি হবে।আর এজন্যই খুব ভালো সম্পর্কগুলোও তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যায়। আর আমাদের সম্পর্কে তা হোক আমি কিছুতেই সেটা চাইনা।মানুষ যেহেতু তাই এরকম ঝগড়াঝাটি,রাগ অভিমান থাকবেই স্বাভাবিক তবে সেসব যাতে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব না ফেলে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।তাই কোন অঘটন ঘটার আগে নিজেদের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক করে ফেলা উচিত।আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তা বুঝেছ মেঘ?”
“হুম, বুঝেছি,”
“এইতো আমার লক্ষ্মী বউ এই বলে আমার কপালে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিলেন।তোমার থেকে আমি ঠিক এই আশায় করি।আমাদের সম্পর্কটা যাতে সুস্থ আর স্বাভাবিক থাকে সে খেয়াল রাখবে আর এত অভিমান নিয়ে বসে থাকবে না ঠিকাছে।এখন লক্ষ্মী মেয়ের মত ঘুমিয়ে যাও। সকালে তাড়াতাড়ি উঠা লাগবে।”
আসলেই উনি ঠিক বলেছেন এত রাগ অভিমান আর আক্রোশ মনের ভিতর পুষে রাখলে সবকিছু অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে।সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হলে এতটুকু সেক্রিফাইস করা উচিত।আর ভেবে কাজ নেই ঘুমিয়ে যাই।হে আল্লাহ উনি সকালে উঠে আমাকে ম্যাথ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস না করলেই হয়।
.
.
“এই মেঘ,”
“হুম,”
“লক্ষ্মী বউ আমার উঠ,সকাল হয়ে গেছে”
“এত তাড়াতাড়ি কেন আরেকটু ঘুমায়”
“রাতে কি করেছ হুম কোন কথা শুনতে চায় নি উঠ বলছি এই কথা বলে আমাকে টেনে উঠালেন।”
“আহহারে,আমার এত সুন্দর ঘুমটাও কি উনার সহ্য হয় না।শেষ পর্যন্ত জোর করে আমাকে উঠিয়েই ছাড়ল”
“যাও,ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে আস,hurry up.”
“আচ্ছা”
.
.
নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার শাশুড়িমাও ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছেন।
“আরে মেঘ আয় আয় বস।বল কি খাবি আমি নিজ হাতে তোর পছন্দের সব খাবার বানিয়েছি”
“মা,ওর জন্য পছন্দের খাবার বানিয়েছ ভালো কথা। কিন্তু ওকে বল তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করতে”
“কেন রে,আস্তে ধীরে খাক না মেয়েটা এইরকম কেন করছিস?”
“করছি কারণ তোমার মেয়েটা পড়ালেখায় একনম্বর ফাঁকিবাজ।কালকে ম্যাথ দেখতে বলে গিয়েছিলাম। আমি জানি আপনার এই গুণধর মেয়ে বই একটু খুলেও দেখিনি।মেঘ আমাদের কথা না শুনে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ কর”
“শয়তানটার ম্যাথের কথা এখনো মনে আছে।মেঘ তুই শেষ”
“হয়েছে টাইম ওভার।আর নাস্তা করা লাগবে না।যা খেয়েছ তাই যথেষ্ট। চল রুমে চল,তোমাকে আজকে ম্যাথ করাব”
.
.
“আপনার না আজকে ভার্সিটি যেতে হবে।”
অনেক দেরি আছে আমার সেখানে যেতে।তোমাকে পড়িয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাব।চল বলছি,এই বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রুমে আর এইদিকে আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ম্যাথে আমি একদম কাঁচা কি করে যে এই শয়তান আর রাক্ষসটাকে ম্যাথ করে দিব তা বুঝতে পারছি না। আমাকে সারাদিন ম্যাথ বুঝালোও স্যারের সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়।এখনকার মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া পড়া আর লেকচার আমি এখনি ভুলে যায়। ভয় লাগছে শেষে স্যার রেগে গিয়ে আমাকে আবার লাঠি দিয়ে না মারা শুরু করে দেয়।এইসব ভাবতেই অটোমেটিক আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। যার ভয় আমি শুধু ক্লাসে পেতাম এখন সে ক্লাস +বাসা!! দুইজায়গায় আমাকে ম্যাথ করে শেষ করে দিবে”
“মেঘ এমা কাঁদছ কেন?কি হয়েছে দেখি আমার লক্ষ্মী বউটা কাঁদছে কেন?আমাকে বল কি হয়েছে”
…..
“ও বুঝেছি এইজন্য কাঁদতে হয়।কাছে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন।আমাকে তার বুকে টেনে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন আর বলছেন মেঘ ম্যাথকে এত ভয় পাও কেন বলত?কিচ্ছু হবে না, দেখ আমি জানি তুমি ম্যাথে দুর্বল তার মানে এই নয় যে তোমাকে দিয়ে ম্যাথ হবে না।তুমি একটু চেষ্টা করবে দেখবে ম্যাথ করতে কত সোজা লাগে।তখন দেখবে তুমি ম্যাথকে ভয় পাচ্ছো না,ম্যাথ তোমাকে উল্টো ভয় পাচ্ছে।আর আমিতো আছি।আমি থাকতে ম্যাথকে ভয় একদম পাবে না।তুমি যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার পড়া বুঝতে পারছ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে ম্যাথ বুঝাতে থাকব।ম্যাথ না পারার জন্য তোমাকে কখনো বকব না কিন্তু ফাঁকিবাজি করলে বকাতো খেতে হবেই।তোমাকে সারাদিনও ম্যাথ বুঝাতে আমার একটু ক্লান্তি লাগবে না।নিজের আপনজনের জন্য করছি এইসব তাই একটু কষ্ট করার দরকার হলে করে নিব।আমি আমার দিক দিয়ে চেষ্টা করব আর তুমি তোমার দিক দিয়ে।দেখবে ম্যাথ করার কৌশল তোমার মাথায় একটু একটু করে ঢুকছে।আর কাঁদে না লক্ষ্মীটি।আস ম্যাথ করতে বসি”
.
.
স্যারের কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল।তার কথামতো পড়তে বসলাম।অনেকগুলো সূত্র দিয়ে আমাকে ম্যাথ বুঝালেন আর খাতায় করিয়ে দিলেন কিন্তু ফাটাপোড়া কপাল সব আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।
“মেঘ তোমার হাতটা দেখি।ব্যান্ডেজ খুলে আমার বাম হাতের ক্ষতটা দেখলেন।এইতো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে। ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এড বক্স এনে নতুন করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।মেঘ তোমার হাতের ব্যান্ডেজ তো মায়ের চোখে পড়ার কথা!”
“আমি কাপড় দিয়ে হাত ঢেকে রেখেছিলাম তাই খেয়াল করেননি”
“ও,আচ্ছা”
“মেঘ তুমি আমার করিয়ে দেওয়া ম্যাথগুলো দেখতে থাক আমি এখনি আসছি”
“আচ্ছা”
.
.
কিছুক্ষণ পরে তিনি নাস্তা নিয়ে এলেন।কি ব্যাপার ম্যাথগুলো দেখছ,
“হুম দেখছি”(আর বুঝার চেষ্টা করছি মাথা ফেটে যাচ্ছে তারপরেও কিছু মাথায় ঢুকছে না)
“এইতো লক্ষ্মী বউটা আমার।একটু চেষ্টা কর দেখবে আস্তে আস্তে মাথায় ঢুকবে।না বুঝলে আমাকে বারবার জিজ্ঞাস করবে ঠিকাছে।”
“আচ্ছা”
“আচ্ছা হা কর সকালে তেমন কিছু খাওনি,এখন খেয়ে নাও”
“আপনি আমাকে দেন আমি হাত দিয়ে খেয়ে নিব
“দেখ আমি যখন তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে চাইব তখন এই কথা আর বলবে না যে তুমি নিজ হাতে খেতে পারবে বা খেয়ে নিবে।আমি খাইয়ে দিতে চাইলে চুপচাপ কোন উল্টাপাল্টা কথা না বলে খেয়ে নিবে এটা আমার শেষ কথা। আমাকে বারবার যাতে এই কথাটা তোমার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে না হয়, বুঝতে পেরেছে”
“হুম”
“এই তো লক্ষ্মী মেয়ে।নাও হা কর”
চুপচাপ উনার কথা বাধ্য হয়ে পূরণ করলাম।এরপর উনি মেডিসিন খাইয়ে দিলেন।
.
.
“মেঘ আমার আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে।এখন তুমি এই ঘরের বউ তোমার হাতে অনেক দায়িত্ব।তাই বাসায় মাকে টাইম দিবে,মাকে তো তুমি আগে থেকে চিন ওনি তোমাকে নিজের মেয়ের মতন দেখেন। তাই তোমাকে দিয়ে উনি কোন কাজ করাবেন না কিন্তু তারপরেও মা যে কয়দিন এখানে আছে একটু একটু করে রান্নার কাজটা ওনার কাছ থেকে শিখে নিও।আর হ্যা পড়ার কথা খবরদার ভুলবেনা,আজকে যা পড়িয়েছি আর দেখিয়েছি তা বাসায় আবারও দেখবে আর করবে।মা এখান থেকে চলে গেলে আবার তোমাকে ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস শুরু করতে হবে।আমার কথা মাথায় ঢুকেছে”
“জ্বী,স্যার ঢুকেছে”
“কি!What স্যার”(রেগে গিয়ে)
“সরি সরি আমার মনে ছিলনা যে আমি এখন বাসায় আছি।কিছুক্ষণের জন্য মনে হল আমি ক্লাসরুমে আছি আর আপনি আমার ক্লাস নিচ্ছেন তাই মুখ ফুসকে এই কথা…”
“প্লিজ মেঘ একটু চেষ্টা কর এই স্যার বলে ডাকাটা বন্ধ কর।তুমি বারবার কেন এই কথাটা ভুলে যাও যে আমি তোমার হাজবেন্ড”
…..
“আশা করি তোমার এই ধরণের ভুল তাড়াতাড়ি সংশোধন হয়ে যাবে। আমাকে মন থেকে তোমার স্বামী হিসেবে মানলে আর আমাকে স্বামীর চোখে দেখার চেষ্টা করলে দেখবে তখন তোমার মুখ দিয়ে স্যার শব্দটা আর আসবে না।”
…….(এত সহজ এমনভাবে কাউকে বিয়ে করে তাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া।এই বিষয়টা স্যার যতটা সহজ করে দেখছেন ততটা সহজ না।উনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার কাছে ম্যাথের মতনি অনেক কঠিন।উনাকে তো ভালবাসিই না তাহলে কেমন করে!?উনি ম্যাথের মতন কঠিন বিষয় সহজে বুঝে গেলেও কিন্তু একটা নারীর মন কি চাই এত সহজে তা বুঝতে পারবেন না।আমার মন কি চায়,এই মনের অবস্থা এখন কেমন সেটা বুঝলে হয়ত এই কথাটা তিনি কখনো….)
“যা ভাবছ ভাব।তোমার ভাবনা নিয়ে আজকে কিছু বলব না।কিন্তু এই বিষয় নিয়ে তোমার ভাবনার উত্তর যাতে পজিটিভ হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে।হুম,আচ্ছা আমার লক্ষ্মী বউ আসি তাহলে। মার আর নিজের খেয়াল রেখো ঠিকাছে এই বলে আমার কপালে কালকের মতন করে ভালবাসার পরশ দিয়ে দিলেন”
“আচ্ছা,”

স্যার যখন স্বামী পার্ট_৮

0

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“মেঘ!!”
“আন্টি আপনি?”
“মেঘ তুই?”
সত্যিই অনেক অবাক হয়ে গেছি।কত বছর হয়ে গেল উনাকে দেখি না।এভাবে আবারও যে উনার সাথে দেখা হবে সেটা আমি ভাবতেই পারি নি।উনাকে দেখে খুব খুশি লাগছে।দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
“আন্টি কেমন আছেন?আপনাকে আমি আবার পেয়ে যাব তা ভাবতেই পারি নি।”
“এইরে দেখ মেয়েতো দেখি কান্না করে দিচ্ছে।এতো কাদিস কেন তুই হ্যা?আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,মেঘ আমি ভালো আছিরে মা।তুই কেমন আছিস,,”
“ভালো,,”
“কিন্তু মেঘ তুই এখানে কিভাবে?”
কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি বলব,আন্টির পিছনে স্যার দাঁড়িয়ে ছিল আমি সেটা এতক্ষণ খেয়াল করি নি।তিনিই নিজ থেকে বললেন,মা ওই হচ্ছে তোমার বৌমা যাকে দেখার জন্য তুমি গ্রাম থেকে শহরে এসেছ।
আমি আর আন্টি স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি।
“কি বললি তুই,মেঘ আমার বৌমা?”
“হ্যা মা”
আর আমিও মনে মনে ভাবছি তন্ময় স্যার আন্টির ছেলে। আন্টির দিকে তাকিয়ে আছি এবার,আর ভাবছি ওনি কি আমাকে মেনে নিবেন?
“তন্ময় তোকে আমি মেঘের কথা প্রায় বলতাম না দেখ এই সে মেঘ।আর মেঘ তোর মনে আছে আমি তোকে প্রায়ই বলতাম যদি আল্লাহ চাই আমি তোকে আমার ছেলের বউ বানাবো।দেখেছিস মা,আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।শেষ পর্যন্ত তুই আমার ছেলের বউ হয়েছিস।আমি তন্ময়ের থেকে সব শুনেছি,ও আমাকে সব বলেছে।আল্লাহ যা করে মানুষের মঙ্গলের জন্য করে।ওই শয়তানটার সাথে তোর বিয়ে হয়ে গেলে ও তোর জীবনটা একেবারে শেষ করে দিতো।ভালোই হয়েছে ওর সাথে তোর বিয়ে হয়নি।মা,আমার ছেলেটা বাইরের দিকে রাগি কিন্তু ভিতরের দিকে খুব নরম।দেখবি ও তোকে খুব সুখে রাখবে।”
.
.
“আরে বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা বলবে নাকি?এতদূর থেকে এসেছ একটু রেস্ট নাও।”
“রেস্ট অনেক নেওয়া যাবে।অনেকদিন পর আমার মেয়েটাকে পেয়েছি।কতদিন হল ওর সাথে গল্প করি না এখন ওর সাথে গল্প করব।”
“হ্যা কর ওর সাথে গল্প তাহলে আজকে না খেয়ে থাকা লাগবে,”
“কেন?”
“কারণ আপনার এই মেয়ের হাতের রান্না কাঁচা। আপনার মেয়েকে বলেছি আজকে ওকে সারপ্রাইজ দিবো আর সেই সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্য আপনাকে নিয়ে এসেছি যাতে আপনার বৌমা মানে আপনার মেয়েকে দেখতে পারেন আর মেঘও আমার সারপ্রাইজটা দেখতে পারে।আর ওকে একটু রান্নাবান্না শিখিয়ে দিবেন যাতে ওর হাতের রান্না খাওয়ার একটু উপযোগী হয়।বউ থাকতে নিজে রান্না করে কেন খাব?ওকে ভালো করে রান্না শিখাবে মা,যাতে ওর হাত থেকে প্রতিদিন ভালো ভালো আইটেমের রান্না খেতে পারি।”
(ইসসিরে,,দিলোতো আন্টির সামনে আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করে)…
“আচ্ছা আচ্ছা শিখিয়ে দিবোনে,মেঘ চলতো মা রান্নাঘরে চল।কিছু রেঁধে নি আজকে আমি রাঁধব আর তুই দেখবি।”
“আন্টি এখন!আপনি আগে রেস্ট নেন পরেও শিখিয়ে দিতে পারবেন,”
“ওই আন্টি কি হুম আগে ডাকতি মানা যেত এখন আর আন্টি ডাকবি না।তোর মাকে কি বলে ডাকস তুই?”
“আম্মু।”
“তো তাহলে আমাকেও তুই আম্মু বলে ডাকবি।তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।আমারতো মেয়ে নেই তোকে দিয়ে আমার মেয়ের আশা পূরণ করব।আমার রেস্ট নেওয়া লাগবেনা তোকে দেখে আমার মন এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।চল চল তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার কাজটা শেষ করে আসি,”
.
.
রান্না শেষ করে আমার রুমে গিয়ে দেখি স্যারের হাতে সাগরের ছবি,ও শিট এই ছবিটা এখানে রেখে চলে গেছি।জানিনা এখন উনি কি রিয়েক্ট করবেন?
“মেঘ,,এই ছবিটা এখানে কেন?”
…..
“মেঘ কিছু জিজ্ঞাস করছি,”
“এইটটা আম্মার লাক্কেজ থেক্কে,,”
“একদম তোতলাবে না যা বলার ক্লিয়ার করে বল,তুমি লাকেজ থেকে ছবিটা বের করেছ,”
“হ্যা,”
“মেঘ এতকিছুর পরও তুমি কি এখনো সাগরকে ভালবাস,”
(তার উত্তর আমি নিজেও জানি না।জানি ওকে আমার ঘৃণা করা উচিত কিন্তু প্রথম ভালবাসা বলে কথা,কিছুটা মায়া এখনো ওর জন্য আছে।এর উত্তর আমি কি দিব জানি না)…
তোমার চুপচাপ থাকাটা আমি কি ধরে নিবো,
তার মানে এতকিছুর পরেও তুমি..এই বলে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন,মেঘ কেমন করে ওকে তুমি এখনো ভালবাসতে পার? ও একটা প্রতারক,ও তোমাকে আর তোমার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে সবাইকে কষ্ট দিয়েছে তারপরও তুমি।তুমি যেই বোকা সেই বোকাই রয়ে গেল,যে তোমাকে ভালবাসে তাকে তুমি বুঝনা আর যে তোমাকে ভালবাসার মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে তোমার সাথে প্রতারণা করেছে তাকে তুমি..এই বলে তিনি আমাকে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন।আমার হাতটা টেবিলে রাখা কাঁচের জগের সাথে লাগায় কাঁচের জগটা ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর সেই কাচের টুকরো আমার হাতে লেগে হাত কেটে যায়,
রাতে তিনি খুব সামান্য খেলেন।মায়ের সাথে হাসিমুখে কথা বললেন কিন্তু আমার সাথে একটাও কথা বললেন না।জানি উনার সেই প্রশ্নের জবাবে আমার চুপ থাকাটা তাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু আমারি বা কি করার সাগরকে ভুলতে আমার সময় লাগবে।ওর মায়া কাটাতে হলে একটু সময় আমার দরকার।
.
.
“আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন,”
….
“দেখুন আমি চাইনি,”
“মেঘ আমি কোন কিছু শুনতে চাচ্ছি না,যা বুঝার আমি বুঝে গেছি আমাকে আর বুঝ দিতে এসো না,,”
খুব রেগে আছেন উনি জানি না কি কথা বলে উনাকে মানাতে হবে।এখন যতই বুঝানোর চেষ্টা করি সব বৃথা যাবে,,
“কিছুক্ষণ পর,,মেঘ,,”
“জ্বী,,”
“এদিকে তাকাও”
“এরকম কেন তুমি?এত কেয়ারলেস কেন নিজের প্রতি।হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে তারপরও তুমি হাতে বেন্ডেজ করে নিতে পারোনি,”(চিল্লিয়ে কথাটা বললেন) তোমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে যখন রুম থেকে বের হলাম তখন কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।একটু আগে এখানে হাটতে গিয়ে আমার পায়ে কাচের টুকরা ফুটল।আর তাতে মনে হল তোমাকে যেভাবে ধাক্কা দিয়েছি তাতে নিশ্চয় তোমার হাত পায়ে কাচের টুকরা লেগে তোমার হাত পা নিশ্চয় কেটে গেছে।দেখ এখন হাত দিয়ে ফিনকি রক্ত পড়ছে আর তুমি এখনো হাত চেপে ধরে আছো?
(কেঁদে)”আসলে”
“আসলে নকলে আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না।তুমি কি চাও বলত?তোমার কারণে আমি কষ্ট পায় সেটাই চাও?খুব ভালো লাগে আমাকে কষ্ট দিতে,চুপ একদম চুপ তোমার কাঁন্নার একটা শব্দও যাতে আমি কানে না আসে,”
স্যারের বকা খেয়ে আমি আগের থেকেও আরও বেশি করে কান্না করে দিলাম।কত্তগুলো বকা দিল।এত বকা খেয়ে কেমন করে চুপ থাকা যায়? খুব খারাপ উনি,আমার পুরো কথা না শুনে কত্তগুলো বকা দিলো,(কেঁদে)
উনি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দিলেন। আরেকদিকে আমার কান্না চলছেই।তিনি বিরক্ত হয়ে আবার বললেন মেঘ কান্না বন্ধ কর।
.
.
কান্না কিছুতেই থামতেই চাইছে না।খুব চেষ্টা করছি থামাবার কিন্তু তারপরও অনবরত চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে আর কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
“লক্ষ্মীটি প্লিজ কান্না বন্ধ কর এই বলে আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন। মেঘ যেই কাজ আমার পছন্দের না তারপরও তুমি সেই কাজ কেন কর বলত?হাত দিয়ে কত্তগুলো রক্ত বের হল অথচ তুমি হাতে ব্যান্ডেজটাও পর্যন্ত বাধো নি।তোমার এইরকম কাজে কার না রাগ উঠবে বল?”
“আ..মি আ..মি ফুঁপিয়ে,আমি হাতে ব্যান্ডেজ করতে চেয়েছি..লাম।কিন্তু আমি এই বাসায় মাত্র ১দিন হল এসেছি কোথায় কি আছে তা কেমন করে জানব।ফাস্ট এইড বক্স কত খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পায়নি।আপনি আম..মার কোন কথা না শুনে কিছু না জেনে আম..মাকে কত্তগুলো বকা দিয়েছেন।”(কান্নার কারণে কথাগুলো এইরকম শুনাচ্ছিল,কত বকা দিলেন এই পর্যন্ত উনি আমাকে। এত বকা আমার বাবার বাড়িতে থাকতেও আমি কখনো খায়নি যতগুলো এখানে আসার পর ওনার কাছ থেকে খেয়েছি)
“ও,,এই কথা আমাকে আগে বলোনি কেন?যাই হোক তারপরও দোষ তোমারি।আমাকে আগে এই কথাগুলো বললে আমার থেকে এত কথা তোমাকে শুনতেও হত না আর তোমাকে কাঁদতেও হত না।”
“কি!!??কতটা খারাপ উনি।নিজে এত দোষ করেও ভুলটা স্বীকার করছেন না আর আমাকে সরিটাও পর্যন্ত বললেন না।আবার বলছেন আমার দোষে এইসব হয়েছে।এখনো আমার দোষ দেখছেন।”
.
.
“চল,ঘুমাবে,”
“না,আমি আপনার সাথে ঘুমাবোনা,”
“আজকে এত দোষ করেও না বলছ।তোমার কোন কথা আমি শুনতে চাইনি,,শুধু বলেছি ঘুমাতে আসো।না আসলেই তো জানো কি করব আমি,,”
“কি করবেন আবার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিবেন।কি!কোলে!উনার কোলে উঠব কাভি নেহি।আজকে উনার উপরে খুব রাগ করেছি। স্যার হয়েছেন বলে কি আমার মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি।যখন তখন শুধু বকা আর ধমক দিবেন।আজকে উনার কোলে কিছুতেই উঠব না।এত বোকা আমি না(মুখ বেকিয়ে)।মনে হয় যেন কিছুই বুঝিনা আমি,তাই না?এই মেঘ সব না বুঝলেও একটু হলেও বুঝে আমাকে কোলে নেওয়ার ধান্দা সেই সুযোগ আজ দিচ্ছি না,হিহিহি।দৌড়ে বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে গেলাম,এইবার বুঝো ঠেলা স্যার, হিহিহি।”
“ওমা এটা কি আমার লক্ষ্মীমন্ত্র বউ নাকি?একেবারে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেছে।যাক ভালোই হয়েছে আজকে আর আমাকে এত কষ্ট পোহাতে হল না।তোমাকে কোলে নিতে আমার যে কষ্ট হয়,আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছি তাই একমাত্র আমিই ভালো জানি এত ভারি ওজনের একটা হাতিকে কোলে তুলে নেওয়ার কি কষ্ট।”
“কি আমি হাতি!আমার ওজন বেশি?” (কাঁদুনে মুখে)
“এমা তুমি না ঘুমিয়ে গেছ,জেগে উঠলে কেমন করে?”
“আমি ঘুমায় নি,সবেমাত্র চোখ বন্ধ করেছি।এখন চোখ বন্ধ করলেই কি সাথেসাথে ঘুম এসে যাবে।”
“ও তাই বল?আর আমিতো ভাবলাম আমার বউটা ঘুমিয়ে গেছে তাই মনের কথাগুলো খুলে বললাম।”
“তাই না?তার মানে আমি ঘুমিয়ে গেলে আমার গোপনে এইসব কথা বলে বেড়াবেন।আমি হাতি, আমার ওজন বেশি।আপনি জানেন আমার ওজন কত?”
“ওমা জানবো না কেন?কমপক্ষে ৫৫ তো হবে।”
“কি!!”
“আমার ওজন ৫৫ কেজি না,মাত্র ৪৮ কেজি।আর তাতেই আপনি আমাকে হাতি বলে ফেললেন।”
“এরে এই মেয়ে তো দেখি কান্না করে দিচ্ছে। কান্না ছাড়া কি কিছুই পারো না।আমি জাস্ট মজা করলাম।এই মেয়েতো মজাও বুঝে না।এ কেমন বউ জুটল আমার কপালে।আচ্ছা আচ্ছা কাঁদে না লক্ষ্মীটি এখানে আস।”
“না,”
“উফ সারাক্ষণ শুধু না,না,তোমার আসা লাগবে না আমিই আসছি।এই বলে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন।”
(আমার গল্প এখন অনেকে কপি করে তা নিজের গল্প বলে চালাচ্ছে।আশা করি আপনারা আপনাদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করবেন গল্পের আসল রাইটার কে?আর দয়া করে গল্প পড়ার আগে ভালো করে গল্পের রাইটার কে তা জেনে নিয়ে গল্প পড়বেন)