Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2421



প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৯

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, জিসান আব্বু আম্মু পাশে বসে কাঁদতেছেন, আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে আম্মু কান্না থামালেন
আম্মু: আজ দুদিন পর তোর জ্ঞান ফিরলো
আব্বু: আত্মহত্যা করার আগে আমাদের কথা একবারও মনে পরে নি
আমি: সাইয়ান এর সাথে পৃথিবীতে মিলন হওয়া যখন সম্ভব না তখন মরে যাওয়াই ভালো, কেন বাঁচিয়েছ আমাকে
আম্মু: আমরা কি জানতাম তুই যে হাতের রগ কেটে ফেলেছিস, আমি রান্না করছিলাম হঠাৎ একটি ছেলে এসে বললো তুই হাতের রগ কেটে মেঝেতে পরে আছিস তারপর তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি
আমি: কোন ছেলে
আব্বু: কে আবার সাইয়ান
আমি: ওকে তোমরা দেখেছ কিভাবে
আম্মু: ও তোর রোমে ঢুকতে পারে না তাই আমাদের দেখা দিয়েছে আর বলেছে তোকে যেন বাঁচাই ও তোর জীবন থেকে চলে যাবে
আমি: ওহ
আব্বু: সাইয়ান চলে যাবে শুনে মন খারাপ করেছিস
আমি:(নিশ্চুপ)
আব্বু: মন খারাপ করতে হবে নারে মা সাইয়ান তোরই হবে
আমি: কিভাবে সম্ভব
আব্বু: ব্ল্যাকম্যাজিক করে আত্মাদের আবার জীবত করা যায়
আমি: কিন্তু কে করবে
আব্বু: আমি এমন তান্ত্রিক খুঁজে বের করবো
আমি: তোমরা তো প্রথমে সাইয়ান কে মেনে নাও নি
আম্মু: আমরা প্রথম ভেবেছিলাম ও খারাপ আত্মা তোর ক্ষতি করবে কিন্তু ও যখন এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো তুই হাতের রগ কেটে ফেলেছিস তোকে যেন বাঁচাই ও তোর জীবন থেকে চলে যাবে তখনি বুঝেছি সাইয়ান তোকে অনেক ভালোবাসে
আব্বু: তুই সুস্থ হলেই আমি তান্ত্রিক এর কাছে যাবো
আমি: আমার যে জ্ঞান ফিরেছে সাইয়ান কে জানিয়েছ
আম্মু: ওকে জানাতে হয় নাকি ও তো এমনিতেই বুঝে যায়
আমি: বাসায় কবে যাবো
আব্বু: কয়েকদিন থাকতে হবে হাতটা একটু ভালো হলেই বাসায় নিয়ে যাবো
আমি: আজকেই চলো বাসায় গেলে এমনিতেই কমে যাবে
জিসান: দুলাভাই কে দেখেই বুঝি কমে যাবে হিহিহিহি
আমি: চুপ ফাজিল অনেক পেকে গেছিস
আব্বু: আজকের দিন থাক আগামীকাল সকালেই চলে যাবো
আমি: ঠিক আছে

পরদিন সকালে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম, হাতটা একদম নাড়াতে পারি না, আম্মু বললো রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে কিন্তু আমার রুমে তো সাইয়ান আসতে পারবে না তাই চিলকোঠোর ঘরে গেলাম

দরজার কাছে যেতেই সাইয়ান আমাকে দেখে একটা হাসি দিল যে হাসি দেখে বার বার প্রেমে পরা যায়, ও এসে আমাকে দরজা থেকেই কোলে তুলে নিল তারপর বিছানায় শুয়ে দিল, কাটা হাতটা আলতো করে ধরে হাতের নিচে একটা বালিশ দিয়ে দিল তারপর আমার মাথার পাশে বসে চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো

সাইয়ান আমাকে এতো ভালবাসে আমি বুঝতেই পারিনি, এমন ভালবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার আর আমার ভাগ্য তো আরো অদ্ভুত যে একটা ভূতের প্রেমে পড়েছি হিহিহি
–এই পাগলী একা একা হাসতেছ কেন
–একা হাসতেছি যখন তুমিও হাসো তাহলে দুকলা হাসা হবে
–খুব ফাজি হয়ে গেছ এভাবে কেউ আত্মহত্যা করতে যায়
–তো কিভাবে করে গলায় ফাঁশি দিয়ে বিষ খেয়ে
–একদম চুপ আর কখনো এসব বলবা না
–এমনটা না করলে কি আম্মু আব্বু তোমাকে মেনে নিতো আর তোমাকে পৃথিবীতে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইতো
–তাই বলে আত্মহত্যা
–বাদ দাও তো আচ্ছা আব্বু কি ব্ল্যাক ম্যাজিক এর কথা সত্যি বলেছে নাকি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিয়েছে
–না সত্যিই
–তার মানে আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য পেয়ে যাবো
–জ্বী ম্যাডাম এখন একটু ঘুমাও
–ওকে

ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম, ওকে আমার করে পাবো আর কোনো চিন্তা নেই তাই শান্তিতে ঘুমালাম

রাতে আব্বু এসে জানালেন এক তান্ত্রিক এর খুঁজ পেয়েছেন যে সাইয়ান কে আবার জীবিত করতে পারবে, তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন আর সদ্য মারা যাওয়া কোনো কাটাছেড়া নেই এমন একটি যুবকের লাশ প্রয়োজন, লাশ, সাইয়ান এর কঙ্কাল আর টাকা নিয়ে অমাবস্যার রাতে তান্ত্রিক এর কাছে যেতে হবে,

আর সাতদিন পর শনিবারেই অমাবস্যা টাকা তো আছে কিন্তু অমাবস্যার দিনই মারা যাবে এমন যুবকের লাশ কোথায় পাবো, যদি অমাবস্যার দিন কোনো যুবক মারা না যায়

আব্বুর কয়েকজন ডক্টর ফ্রেন্ডস আছেন উনাদের আব্বু বলে রেখেছেন শনিবারে কোনো যুবকের লাশ মর্গে আসলে যেন আব্বুকে জানায়

সাতদিন যেন কাটতেই চাচ্ছে না, অপেক্ষার প্রহর সত্যিই খুব কষ্টের, সাইয়ান সবসময় চিন্তিত থাকে যদি এসব কাজে তান্ত্রিক সফল না হয়, আব্বু আম্মু ও অনেক টেনশনে আছেন আর আমি তো পুরো পাগল হয়ে আছি কবে সাইয়ান আমার হবে

অবশেষে অপেক্ষার দিন শেষ হলো, শনিবার আসলো কিন্তু এখনো কোনো লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি, আব্বু বিভিন্ন হাসপাতালে টাকা দিয়ে রেখেছেন লাশ আসলেই যেন খবর দেওয়া হয়

সারা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু কোনো লাশের সন্ধান আসলো না, সাইয়ান কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে গেছে

সন্ধ্যার অনেক পর হঠাৎ আব্বুর এক ফ্রেন্ড জানালেন লাশ পাওয়া গেছে ছেলেটি আজকেই মারা গেছে কিন্তু বড়লোকের ছেলে লাশ আনাটা রিস্ক হয়ে যাবে, আব্বু এসব শুনে ঘাবরালেন না প্রচুর টাকা নিয়ে সেখানে গেলেন, টাকা খরচ করে পুলিশ কে ঘুষ খাইয়ে অনেক জামেলার পর অবশেষে লাশ নিয়ে এলেন……

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৮

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু কি হইছে তোমার
–তুই কার সাথে কথা বলছিলি
–কই কারো সাথে না তো
–আজকে মিথ্যে বলে লাভ নেই আমি স্পষ্ট দেখেছি তোর সামনে একটা সাদা গোলাপ ভাসছে আর তুই কাকে যেন জিজ্ঞাসা করছিলি সাদা গোলাপ পছন্দ নাকি
–আম্মু তুমি ভুল দেখেছ
–চুপ একদম চুপ আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল, বুঝেছি তোর উপর জ্বীন আছর করেছে
–আম্মু কি বলছ এসব
–চল নিচে চল কালকেই তোকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাবো
আম্মু আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলো পিছন ফিরে একবার সাইয়ান এর দিকে থাকিয়েছিলাম পাগলটা কাঁদছে

রাতে খাবার টেবিলে বসে আম্মু আব্বুকে একে একে সব ঘটনা খুলে বললো, আব্বু সব শুনে বললেন সকালে বাসায় হুজুর আনবেন, এই কথা শুনে না খেয়েই রোমে চলে আসলাম, কি করবো এখন সাইয়ান কে আমি হারাতে পারবো না

সকালে আম্মু এসে ড্রয়িংরুমে যেতে বললেন, গিয়ে দেখি আম্মু আব্বু আর একজন হুজুর বসে আছেন, আমি গিয়ে সোফায় বসলাম
হুজুর: তোমার আব্বু আমাকে সব বলেছেন আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই
আমি: হুম বলুন
হুজুর: তোমার উপর দুষ্টু আত্মার নজর পরেছে (কথাটা শুনে ইচ্ছে হলো হুজুর কে আচ্ছা করে বকে দিতে সাইয়ান নাকি দুষ্টু আত্মা ফাজিল হুজুর কোথাকার)
আব্বু: কথা বলছিস না কেন
আমি: কি বলব
হুজুর: দুষ্টু আত্মাটা কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছে
আমি: সাইয়ান দুষ্টু আত্মা না ও অনেক ভালো
হুজুর: সাইয়ান কি আত্মাটার নাম
আমি:হ্যা
হুজুর: তোমার সাথে কি ওর কথা হয়
আমি: হ্যা
হুজুর: বুঝেছি

আমাকে রোমে পাঠিয়ে দিলো, একটু পর আম্মু একটা তাবিজ নিয়ে আসলেন আমার গলায় পরিয়ে দেওয়ার জন্য, আমি তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিলাম আম্মু রাগে হনহন করে চলে গেলেন, একটু পর আবার আসলেন হাতে পানি নিয়ে, এসেই আমার সারা রুমে পানি ছিটিয়ে দিলেন, বুঝলাম এইটা পড়াপানি চুপচাপ বসে রইলাম

সারাদিন রুমে বসেই কাটিয়ে দিলাম কিছু খেলামও না, সাইয়ান এর সাথে আজ একবারো কথা হয়নি তাই ছাদে গেলাম, সাইয়ান দুলনায় বসে আছে
–আজকে আমার রুমে একবারো যাওনি কেন
–কিভাবে যাবো
–মানে
–তোমার রুমে পানিপড়া ছিটানো আছে আমি যেতে পারবো না কখনো
কথাটা শুনে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো আব্বু আম্মু কেন আমাদের আলাদা করতে চাইছে, খুব রাগ হলো আব্বু আম্মুর উপর তাই ছাদ থেকে নেমে সুজা আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটা কথা বলার আছে
–বল
–আমি সাইয়ান কে ভালবাসি
–পাগল হয়ে গেছিস নাকি সাইয়ান মৃত পৃথিবীতে ওর কোনো অস্তিত্ব নেই
–আমি কিছু জানিনা বুঝি না আমি শুধু সাইয়ান কে চাই
–বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, করলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো
–তোমরাও বেশি বাড়াবাড়ি করো না, করলে আমি আত্মহত্যা করবো
–অর্পিতা এসব কেমন পাগলামি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস নাকি
–হ্যা পাগল হয়ে গেছি সাইয়ান এর জন্য পাগল হয়েছি
–ও মারা গেছে তোদের মিলন সম্ভব না
–তাহলে আমিও আত্মহত্যা করে ওর কাছে চলে যাবো
–অর্পিতা শুন

আম্মুর কথা না শুনেই রুমে এসে শুয়ে পরলাম, খুব কষ্ট হচ্ছে সাইয়ান কেন মারা গেল ও বেঁচে থাকলে আমাদের মধ্যে কোনো বাঁধা থাকতো না, এখন কি করবো আমি

একটু পর আব্বু আম্মু দুজন আমার রুমে আসলেন
আব্বু: অর্পিতা এসব কি শুনছি তুই তোর আম্মুকে আত্মহত্যার ভয় দেখাচ্ছিস কেন
আমি: ভয় দেখাই নি তোমরা সাইয়ান আর আমার মাঝে বাধা হলে সত্যিই আত্মহত্যা করবো
আব্বু: আমাদের ভালবাসার চেয়ে একটা আত্মার ভালবাসা তোর কাছে বড় হয়ে গেলো
আমি: এইটা তো আমি বলিনি আমার তোমাদের ভালবাসা যেমন প্রয়োজন সাইয়ান এর ভালবাসাও তেমনি প্রয়োজন
আব্বু: আজকেই আমি সাইয়ান এর ভূত তোর মাথা থেকে নামানোর ব্যবস্থা করছি
আমি: যা খুশি করো

আব্বু আম্মু চলে গেলেন আমি চিলকোঠোর ঘরে গেলাম, গিয়ে দেখি সাইয়ান মেঝেতে বসে কাঁদছে
–এই কাঁদছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–বল বলছি কাদতেছ কেন
–তোমার আব্বু কবিরাজ এর কাছে গেছেন কবিরাজ বলেছে দুদিন পর পূর্ণিমারাত, সেই রাতেই আমার কঙ্কাল দাফন করবে তাহলে আমার আত্মা আর এই পৃথিবীতে থাকবে না
কথাগুলো শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো কি করবো এখন আমি সাইয়ান কে ভুলে যাবো না না এইটা সম্ভব না কিন্তু দুদিন পর তো সাইয়ান কে হারাতে হবে

মেঝেতে বসে আছি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে সাইয়ান এসে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
–অর্পি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না তোমার আব্বুকে আটকাও

আমি কিছু না বলে সাইয়ান কে ছাড়িয়ে আমার রোমে চলে আসলাম, আমি জানি আব্বুকে কোনো ভাবেই আটকানো সম্ভব না তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম

আম্মু রান্না ঘরে আব্বু বাহিরে আমার রুমে সাইয়ান আসতে পারবে না তাই মেঝেতে বসে ফল কাটার চাকু হাতে নিলাম, বাম হাতের রগে চাকু ধরে চোখ বন্ধ করে এক টান দিলাম রগটা কেটে গেলো পিনকী দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো, মেঝে রক্তে লাল হয়ে গেলো আমার চোখ দুইটা বুজে আসলো, আস্তে আস্তে চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে গেলো………

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৭

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতে পড়তে বসলাম তখন সাইয়ান এসে পাশের চেয়ারে বসলো, এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আমার দিকে
–কি দেখ
–আমার পরিটাকে
–এভাবে থাকিয়ে থাকলে আমি পড়ব কিভাবে যাও এখান থেকে
–যাবো না
–পরে এসো এখন যাও
হঠাৎ দরজায় টোকা পরলো
আম্মু: অর্পিতা দরজা খুল
–খুলছি
–কিরে তুই একা একা কথা বলছিলি কেন
–কই না তো
–একদম মিথ্যে বলবি না আমি শুনেছি তুই কার সাথে যেন কথা বলছিলি
–কার সাথে বলবো এখানে তো কেউ নেই
–তাইতো ভাবছি (বলতে বলতে আম্মু চেয়ারে বসতে গেলো ওই চেয়ারে তো সাইয়ান বসে আছে)
–আম্মু চেয়ারে বসো না খাটে বস
–কেন চেয়ারে বসলে কি সমস্যা
–না এমনি বস (ততোক্ষণে সাইয়ান চেয়ার ছেড়ে খাটে গিয়ে বসেছে)
–তোর কি হয়েছে বল তো একা একা কথা বলিস এখন আবার উল্টাপাল্টা কথা বলছিস
–আমার আবার কি হবে কিছু হয়নি তুমি যাও তো আমি পড়বো
–আচ্ছা

যাক বাঁচা গেলো আম্মু চলে গেছে কিন্তু আম্মু তো আমাকে সন্দেহ করছে এভাবে কতোদিন মিথ্যে বলবো
–অর্পি কি ভাবছ
–কিছু না
–আমাদের মিলন সম্ভব না তুমি বরং আমাকে ভুলে যাও
কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো সাইয়ান এর গলা চেপে ধরে জোরে বললাম
–ভালবাসা কি এতই সস্তা যে চাইলেই ভুলে যাবো
–অর্পি ছাড়ো লাগছে তো
–লাগার জন্যই তো ধরেছি ভবিষ্যৎ এ যেন ভুলে যাওয়ার কথা না বল
–আচ্ছা আর বলবো না ছাড়ো
–হুম
–পাগলী একটা এভাবে কেউ গলা চেপে ধরে
–ভুলে যাবার কথা বল কেন
–ভুলতে তো একদিন হবেই
–ভুলবো না প্রয়োজন হলেও আত্মহত্যা করে তোমার কাছে চলে আসবো
–ওই চুপ আর কখনো এসব বলবা না
–আমি আব্বু আম্মু কে তোমার কথা বলে দিব
–বললে ওরা তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে তখন দেখাও হবে না কথাও হবে না
–তাহলে কি করবো বলে দাও
–জানিনা যেভাবে চলছে চলতে দাও
–হুম

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো সাইয়ান এর সাথে আমার দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলছে, আম্মুর ভয়ে খুব সাবধানে কথা বলতে হয় ওর সাথে তাও আম্মু সন্দেহ করে

জানিনা আমাদের এই দুই জগতের দুজনের মিল আদৌ হবে কিনা, যদি মিল না হয় আমি তো মরেই যাবো সাইয়ান কে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না, এই কয়দিনে ওকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি, এখন সব কিছুতেই ওর অস্তিত্ব টের পাই, সাইয়ান কে ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব না, প্রয়োজন হলে মরে যাবো কিন্তু ওকে ভুলতে পারবো না

আজকে সারাদিন একবারও সাইয়ান আমার সাথে দেখা করেনি অনেক বার ডেকেছি আসেনি কোনো সাড়াও দেয়নি, জানিনা কি হয়েছে ওর, আচ্ছা ও আমার সাথে কথা না বলে থাকছে কিভাবে আমার তো অনেক কষ্ট হচ্ছে দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে

সারাদিন অপেক্ষা করে রাতে চিলকোঠোর ঘরে গেলাম, ওকে অনেক বার ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া দিল না, অপেক্ষা করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাসের ছোয়ায় ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি সাইয়ান আমার খুব কাছে বসে আছে, ওর মুখটা একদম আমার মুখের কাছে আর ও এক পলকে আমার দিকে চেয়ে আছে
–কাল সারাদিন কোথায় ছিলে
–কোথায় আবার এই রোমেই
–তাহলে আমার সাথে দেখা করনি কেন এতো বার ডেকেছি সাড়া দাওনি কেন
–একদিন তোমার থেকে দূরে থেকে বুঝেছি আমায় তুমি কতটা ভালবাস
–ওহ তুমি আমার ভালোবাসার পরিক্ষা নিচ্ছ
–এমন ভাবছ কেন
–তো কি ভাবব জানো আমার কতটা কষ্ট হয়েছে
–আমার বুঝি হয়নি
–কচু হইছে কষ্ট হলে এভাবে কথা না বলে থাকতে পারতে না
–কষ্ট হয়েছে বলেই তো এখন তোমার কাছে চলে এসেছি (বলেই আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোট ছুঁয়ে দিল আর কিছু বলতে পারলাম না সব রাগ অভিমান কমে গেলো ওর কোলে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে রইলাম)

হঠাৎ আম্মু এসে রোমে ঢুকলো
–তুই এখানে কেন আমি সারা বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছি
–এমনি
–রাতে কি এখানে ঘুমিয়েছিলি
–না আমার রোমেই তো
–সত্যি
–হুম
আম্মু রোমের চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো হঠাৎ গিটারের দিকে চোখ পরতেই এগিয়ে গিয়ে গিটার হাতে নিলো
–এই গিটার কার
–(এখন কি বলি)
–চুপ হয়ে আছিস কেন
–জানিনা
–তাহলে এইটা এখানে কেন ভেঙ্গে বাইরে ফেলে দিলেই তো হয় (সাইয়ান এর দিকে থাকিয়ে দেখি কাদো কাদো হয়ে আম্মুর দিকে চেয়ে আছে)
–ওহ আম্মু মনে পড়েছে এইটা আমার এক ফ্রেন্ড এর আমিই এনেছিলাম
–ফেরত দিয়ে আসবি
–ঠিক আছে

আম্মু চলে গেলো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এতো সন্দেহের মাঝে কি শান্তিতে প্রেম করা যায়, আম্মু এতো সন্দেহ করে কেন উফফফফফ

সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে দেখি সাইয়ান ফুল গাছে পানি দিচ্ছে, আমাকে দেখে একটি সাদা গোলাপ এনে সামনে ধরলো আমি হাতে না নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সাদা গোলাপ তোমার পছন্দের ফুল বুঝি তখনি কে যেন চিৎকার করে উঠলো, পিছনে থাকিয়ে দেখি আম্মু ভয়ে চিৎকার দিয়েছে, আম্মুর মুখটা ভয়ে একদম চুপসে গেছে তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম…..

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৬

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

আব্বুকে খুন করলো আম্মু আর সবাই জানলো আব্বু স্টোক করে মারা গেছেন, তারপর আব্বুর লাশ বাসায় আনা হয় জানাজা পরে দাফন করা হয় কিন্তু আমার লাশ স্টোর রুমেই পঁচে যায় কেউ খুঁজেনি আমার লাশ আমাকে কেউ জানাজা পড়ে দাফন করেনি কারন সবাই জানতো আমি টাকা নিয়ে ফালিয়েছি

একমাস পর আম্মু উনার বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে এই বাসায় থাকতে শুরু করে, মাঝে মধ্যে আমার আত্মা ছাদে দেখে আম্মু ভয় পেয়ে যায় তারপর এই বাসা ছেড়ে চলে যায়

সেই থেকে চার বছর ধরে আমি এই বাসায় আছি, স্টোররুমে আমার লাশ পচে পচে কঙ্কাল হয়েছে আর আমি চিলকোঠোর ঘরে থাকতে শুরু করেছি, আমার লাশ দাফন করা হয়নি তাই আমার আত্মা এই বাসা থেকে মুক্তি পায়নি তাই আমি এই বাসায় আছি চার বছর যাবত

তোমার আব্বু আম্মুর কাছ থেকেই এই বাসা কিনেছেন তারপর তোমরা এখানে আসলে….

ওর কথাগুলো শুনে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না, কথাগুলো বলে সাইয়ান চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার দিকে থাকালো
–এই পাগলী তুমি কাঁদছ কেন
–আচ্ছা তোমার আম্মু এখন কোথায়
–আছেন উনার নতুন স্বামীর সাথে আব্বুর সম্পত্তি নিয়ে সুখে জীবন কাটাচ্ছেন
–তুমি তো প্রতিশোধ নিতে পারতে
–উনাকে আমি মায়ের আসনে জায়গা দিয়েছি মায়ের উপরে কি প্রতিশোধ নেওয়া যায়
–তুমি উনাকে মা ভাবো আর উনি কিনা
–জানো অর্পি আমার এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার খুব ইচ্ছে ছিল আম্মু যদি একবার বলতো সব সম্পত্তি দিয়ে দিতাম শুধু বিনিময়ে আমার জীবনটা চাইতাম
–প্লিজ কেঁদো না
–খুব কষ্ট হয় অর্পি কিন্তু জানো যখন থেকে তুমি এই বাসায় এসেছ আর আমাকে জ্বালাতন করতে শুরু করেছ তখন থেকে এসব কষ্ট ভুলে গিয়েছি তোমার সবকিছু এখন আমার ভালো লাগে
–ভালোবাস আমাকে
–(নিশ্চুপ হয়ে রইল হয়তো এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না)
–কি হল বল
–আসলে অর্পি
–সত্যি কথা বলতে ভয় পাও কেন
–কারন আমরা যে দুজন দুই জগতের মানুষ আমাদের সম্পর্ক করা সম্ভব না
–কেন সম্ভব না আমরা চাইলে ঠিকি সম্ভব
–তারমানে তুমিও…
–হ্যা সাইয়ান আমিও তোমাকে ভালবাসি
–কিন্তু অর্পি আমাদের মিল যে সম্ভব না
–পরেরটা পরে ভাবা যাবে
–আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো
–ছেড়ে যাওয়ার জন্য তো ভালোবাসি নি
–যখন তোমার আব্বু আম্মু জানতে পারবে তখন তো ঠিকি ছেড়ে যাবা
–যাবো না বিশ্বাস রাখো
–আমি তোমাকে অর্পিতা নামে ডাকতে পারবো না অর্পি বলে ডাকবো
–এতক্ষণ তো অর্পি বলেই ডাকছ
–তুমি খেয়াল করেছ
–হ্যা

রাতে রান্না করে দুজন খেলাম তারপর বারান্দায় গিয়ে সাইয়ান এর কাঁধে মাথা রেখে বসলাম আর ও গান শুরু করলো, গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি

সকালে আমার মাথায় কারো হাতের আলতো ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি সাইয়ান মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আমার দিকে থাকিয়ে হাসছে
–হাসছ কেন
–আমার পরিটা কে দেখে
–ভালই তো তুমি আত্মা আর আমি পরি হিহিহি
–এত্তো কিউট একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে যে একটা ভূতের প্রেমে পরলা আমার মাথায় আসে না
–আর আসতে হবেও না
–আজ তো তোমার আম্মু আব্বু চলে আসবে আমরা কথা বলবো কিভাবে
–লুকিয়ে লুকিয়ে
–আমি কিন্তু এই বাসার বাহিরে যেতে পারিনা কথা বললে এই রোমেই ডেকো
–ঠিক আছে এখন যাও আমি ফ্রেশ হয়ে কলেজে যাবো
–আজ কলেজে না গেলে হয় না
–অনেক দিন ধরে যাই না আম্মু শুনলে বকা দিবে
–ঠিক আছে যাও

ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে গেলাম, দুইটা ক্লাস করেই বাসায় ফিরে আসলাম ক্লাসে একদম মন বসছে না তাই

বাসায় এসে দেখি আম্মু আব্বু চলে এসেছেন, আব্বু আজ অফিসে যাননি তাই দুপুরে আম্মু অনেক কিছু রান্না করলো আর আমি আম্মুকে রান্নায় হেল্প করলাম, রান্না শেষ করে গোসল করে সবাই মিলে খেলাম, খেয়ে সবাই মিলে অনেক সময় আড্ডা দিলাম তারপর রুমে গেলাম, এতক্ষণ ধরে সাইয়ান এর সাথে একটু কথাও হয়নি তাই রোমে এসেই দরজা বন্ধ করে ওকে ডাকলাম, ডাকার সাথে সাথে এসে খাটে বসল কিন্তু মুখটা গোমরা করে
–মুখটা এমন মলিন কেন
–কলেজ থেকে সেই কখন আসছিলা আর এখন আমার সাথে কথা বলছ
–আম্মুকে রান্নায় হেল্প করছিলাম তো
–হুম
–প্লিজ রাগ করে না
–পাপ্পি দাও তাহলে রাগ কমবে
–ওলে আমাল লোমান্তিক ভূতরে
–হ্যা আমি অনেক রোমান্টিক, যখন কলেজে পড়তাম তখন আমার পিছনে মেয়েদের লাইন ছিল
–তাই বুঝি
–হ্যা

হঠাৎ আম্মু দরজায় টোকা দিলো, দরজা খুলে দিয়ে সাইয়ান এর পাশে এসে বসলাম কারন আম্মু সাইয়ান কে দেখতে পাবে না
আম্মু: একা একা কথা বলছিলি কেন
আমি: কই নাতো
–একদম মিথ্যে বলবি না আমি স্পষ্ট শুনেছি
–কি শুনেছ
–তুই কার সাথে যেন কথা বলছিলি
–ফোনে বলছিলাম
–ওহ আচ্ছা যাই

আম্মু চলে গেলো যাক এবারের মতো বেছে গেলাম, সাইয়ান এর দিকে থাকিয়ে দেখি ও হাসছে
–হাসছ কেন
–খুব সুন্দর মিথ্যে বলতে পারো তাই
–তোমার জন্যই তো বললাম
–হুম কিন্তু কতোদিন এভাবে মিথ্যে বলবে
–জানিনা তবে যতোদিন প্রয়োজন বলে যাবো
–ভালোবাসি পরি
–ভালোবাসি লোমান্তিক ভূত

চলবে?

(আপুরা সাইয়ান এর প্রেমে পড়ে আর লাভ নাই?
অর্পির সাথে প্রেম হয়ে গেছে?
এখন যে সাইয়ান এর প্রেমে পড়বা সে অর্পির সতিন হইবা?)

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৫

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাতের কথা মনে পরলো ছাদে চলে গেলাম দোলনায় গিয়ে বসলাম তখনি সাইয়ান এসে হাজির, আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল যে হাসির প্রেমে আমি কাল রাতেই পরে গেছি এখন আবারো পরলাম
–Good Morning ভূত
–ভূত না আত্মা আর এসব না বলে আমার নাম ধরে ডাকলেই খুশি হব
–ওমা রাগ করছ কেন
–আমি তো ইচ্ছে করে মারা যাই নি ইচ্ছে করে আত্মা হইনি তাই ভূত বা আত্মা বললে খুব কষ্ট হয়
–আচ্ছা তুমি কিভাবে মারা গিয়েছিলে
–অন্যদিন বলবো তোমার জ্বর কমেছে
–হ্যা কিছু কমেছে, আচ্ছা তোমাকে কি আম্মুরা দেখতে পারবে
–না তুমি ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারবে না
–না দেখতে পারলে অনেক ভালো
–কেন
–দেখতে পারলে আর আম্মু যদি বুঝতে পারে তুমি মানুষ না তাহলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে
–তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে
–কেন
–কারন আমি তোমাকে….
–কি
–না কিছু না
–বল বলছি
–সব কথা বলতে নেই
–হুম

অনেক সময় দুজন দোলনায় বসে গল্প করলাম তারপর আমি রোমে চলে আসলাম, তখন আম্মু ফোন দিলেন
–হ্যা আম্মু
–কিরে তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো
–না তোমরা কখন আসবা
–আমরা আগামীকাল চলে আসবো
–ঠিক আছে
–সাবধানে থাকিস রাখি
–ওকে

ফোন রেখে ভাবছি আম্মুরা কাল চলে আসবে সাইয়ান এর সাথে বেশি সময় কথা বলা সম্ভব হবে না তাই আজকেই আমাকে জানতে হবে সাইয়ান কিভাবে মারা গেছে আর আত্মা হয়ে ফিরে এসেছে সব কিছু আজকেই জানতে হবে, আচ্ছা ও তখন কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলো কি বলতে চাইছিল, যতোটুকু বুঝতে পেরেছি ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু মানুষ আর আত্মার মধ্যে কি সম্পর্ক হয়, আমার মন বলছে আমিও সাইয়ান কে ভালোবেসে ফেলছি নাহলে ওকে না দেখে থাকতে পারি না কেন ওর গান না শুনলে ভালো লাগে না কেন, কিন্তু আমাদের দুজনের সম্পর্ক কি কখনো সম্ভব

রাতে বারান্দায় বসে সাইয়ান কে ডাকলাম কিন্তু অনেক বার ডাকার পরও আসলো না, আবার কি হলো ছেলেটার, আবার ডাকলাম তখন কানে ফিসফিস করে বললো
–তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না
–আমার সামনে তো আগে আস
–না
–ঠিক আছে আর কখনো কথা বলবো না তোমার সাথে
–এসেছি
–হুম বস
–প্রশ্ন গুলো না করলে ভালো হত
–আমি যে প্রশ্ন করবো তুমি জানো কিভাবে
–মৃদু হাসল
–তারমানে তুমি আমার মনের কথা বুঝতে পার
–বাদ দাও আমি জানি তুমি সব না জেনে ছাড়বা না যে জেদি মেয়ে তুমি বল কি কি জানতে চাও
–কিভাবে তোমার মৃত্যু হয়েছে আর এখানে কিভাবে আছ সব
–এসব অনেক লম্বা কাহিনী
–বল

বলছি…..
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন আমার আম্মু মারা যান আব্বু আবার বিয়ে করেন, আমি ছিলাম একা আর কোনো ভাই বোন ছিল না, নতুন আম্মু প্রথম আমাকে অনেক ভালোবাসত কিন্তু এক বছর যেতেই আম্মু পাল্টে গেলো আমার উপর অত্যাচার শুরু হলো, নীরবে সব সহ্য করতাম, দুই বছর যেতেই আম্মু জানতে পারলো আম্মু কখনো মা হতে পারবে না কাজেই আমার আর কোনো ভাই বোন হবার সম্ভাবনা ছিল না, আব্বুর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিলাম একমাত্র আমি কিন্তু আম্মু এইটা মানতে পারতো না, তাই সবসময় আব্বুর সাথে ঝগড়া করতো সম্পত্তি আম্মুর নামে লিখে দেওয়ার জন্য কিন্তু আব্বু বুঝতে পারছিলেন আম্মুর নামে সম্পত্তি লিখে দিলে উনি আমাকে কিছুই দিবেন না তাই আব্বু দেন নি

এভাবে কেটে যায় তিনটা বছর, আমি যখন ইন্টার পড়ি তখন একদিন আব্বু আম্মুর মধ্যে অনেক ঝগড়া হয় আমি নীরবে রোমে বসে সব কিছু শুনি
আম্মু: সব সম্পত্তি আমার নামে দিতে হবে
আব্বু: সম্পত্তির উত্তরাধিকারী সাইয়ান তোমাকে দিব কেন আর তোমার যতোটুকু পাওনা সেটুকু তো পাবেই
–আমি সব সম্পত্তি আমার নামে চাই
–ঠিক আছে আমি কালই সাইয়ান এর নামে সব কিছু লিখে দিব
–আমি ওকে মেরে সব সম্পত্তি আমার নামে করে নিব
–ছিঃ সম্পত্তির জন্য তুমি নিজের ছেলেকে মারার কথা ভাবছ
–ও আমার সতিনের ছেলে আমার না
–তাই বলে মেরে ফেলতে পারবে
–হ্যা পারবো ভালো চাইলে সম্পত্তি আমার নামে লিখে দাও
–ঠিক আছে দেখছি

আম্মুর আগের বয়ফ্রেন্ড ছিলো আম্মুর শক্তি তাই উনি এসব হুমকি দিয়েছিলেন কিন্তু সেটাই যে আম্মু সত্যি করবেন ভাবতে পারিনি

এর এক সপ্তাহ পরেই আম্মু আমাকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেললেন তারপর আমার দেহবডি স্টোররুমে লুকিয়ে ফেলেন আর আব্বুকে গিয়ে বলেন বাসায় যে ক্যাশ দশ লক্ষ টাকা ছিল তা নিয়ে আমি পালিয়েছি, এই কথা শুনে আব্বু স্টোক করেন আব্বুকে হাসপাতাল ভর্তি করে আম্মু এই সুযোগে সব কাগজ পত্রে আব্বুর সাইন করিয়ে সব সম্পত্তি আম্মুর নামে করে নেন, একদিন পর আব্বুকেও হাসপাতালেই আম্মু মেরে ফেলেন……

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৪

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় দেয়ালে ঘরির দিকে থাকিয়ে দেখলাম রাত ৮টা বাজে, হঠাৎ অনুভব করলাম কপালে জলপট্টি দেওয়া, বাসায় তো কেউ নেই আমি অজ্ঞান হবার পর রোমে কে আনলো আর কপালে জলপট্টি কে দিলো, ভাবলাম আম্মুরা চলে এলো না তো তাই আস্তে আস্তে উঠে নিচে গেলাম কিন্তু মেইন দরজা তো বন্ধ আম্মুরা কেউ নেই, তাহলে আমাকে রোমে কে আনলো এসব ভাবতে ভাবতে আবার রোমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, প্রচন্ড জ্বর এসেছে মাথা ব্যাথা করছে হঠাৎ অনুভব করলাম একটা শীতল হাত আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে খুব আরাম লাগছে কিন্তু মাথায় কে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পাশে তো কাউকে দেখছি না তাহলে কি ভূত, লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলাম ভাবছি ভূত কে আবার ডাকবো ভয় পাবো না কারন ভূত যেহেতু এতো দিন আমার কোনো ক্ষতি করেনি এখনো করবে না, তাই ডাকতে শুরু করলাম
–ভূত আমি জানি তুমি এই রোমেই আছ প্লিজ দেখা দাও
–(নিশ্চুপ)
–তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আর তুমি গান গাও না কেন জানো না তোমার গান না শুনলে আমার ভালো লাগে না
–(নিশ্চুপ)
–ভূত প্লিজ দেখা দাও নাহলে আমি আবার নিজেকে কষ্ট দিবো
হঠাৎ কানের কাছে ঠান্ডা বাতাস লাগলো তারপর কে যেন ফিসফিস করে বললো
–আমাকে দেখলে তুমি ভয় পাবে আমি নাহয় অদৃশ্য হয়েই থাকি
–তুমি তো আমার কোনো ক্ষতি করনি ভয় পাবো কেন প্লিজ দেখা দাও
–যদি ভয় পাও
–পাবো না প্লিজ দেখা দাও
–জিদ করো না প্লিজ
–ঠিক আছে আমি নিজেকে কষ্ট দিবো
–না না আমি দেখা দিবো তুমি নিজেকে কষ্ট দিও না প্লিজ তোমার কষ্টে আমারো অনেক কষ্ট হয়
–ঠিক আছে কষ্ট দিবো না দেখা দাও
–চোখ বন্ধ কর যখন বলি চোখ খুলো
–ঠিক আছে (চোখ বন্ধ করলাম)
–চোখ খুলো

চোখ খুলে তো আমি রীতিমতো ক্রাশ খেয়ে ফেলছি, এইটা তো একটা ছেলে ও ভূত হয় কিভাবে, ফর্সা লম্বা স্লিম চুল গুলো উসকোখুসকো চোখ গুলা কেমন যেন একটু গোলাটে আর খুব শান্ত, আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলাম, আমাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে ও হেসে দিলো, উফফফফফফ কি সুন্দর হাসি ছেলেরা এতো সুন্দর করে হাসে কিভাবে আমি তো ওর হাসির প্রেমে পড়ে গেছি
–এভাবে কি দেখছ
–তোমাকে দেখছি আর ভাবছি এতো সুন্দর ছেলে ভূত হয় কিভাবে আচ্ছা তুমি কি সত্যি ভূত
–ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই
–তাহলে তুমি কি
–আমি একসময় মানুষ ছিলাম এখন একটা আত্মা
–মানুষ থেকে আত্মা হলে কিভাবে
–সে অনেক কথা অন্য দিন বলবো আজ তুমি অসুস্থ ঘুমিয়ে পর এখন
–ছাদ থেকে কি তুমি আমাকে রোমে নিয়ে এসেছ
–হ্যা তুমি এতো জেদি মেয়ে যে আমার উপর রাগ করে বৃষ্টিতে ভিজে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলে তারপর তোমাকে কোলে করে রোমে নিয়ে এসেছি
–তারমানে তুমি আমার ভেজা ড্রেস চেঞ্জ করেছ
–মৃদু হেসে বললো ভয় নেই আমি আত্মা হলেও খারাপ না চোখে কাপর বেধে চেঞ্জ করেছি আর কোনো উপায় ছিল না তো ভেজা কাপড় থাকলে তোমার জ্বর আরো বেড়ে যেতো
–তুমি খুব ভালো ভূত হিহিহি
–ভূত না আত্মা
–আচ্ছা তোমার নাম কি
–মন খারাপ করে বললো আত্মা দের কোনো নাম থাকে না
–যখন মানুষ ছিলে তখন তো নাম ছিল সে নামটাই বলো
–সাইয়ান
–অনেক সুন্দর নাম আমার নাম জিজ্ঞেস করবে না
–আমি জানি তোমার নাম অর্পিতা
–কিভাবে জানো
–তোমার আম্মু এই নামে তোমাকে ডাকতে শুনেছি
–আচ্ছা একটা কথা বলতো তোমার গান গিটারের শব্দ শুধু আমি কেন শুনতে পাই আম্মুরা কেন শুনে না
–আমি ইচ্ছে করেই শুধু তোমাকে শুনাই
–কেন
–আমি সবসময় চাইতাম এই বাসায় শুধু আমি থাকবো কিন্তু তোমরা বাসাটা কিনে নিলে তারপর প্রথম দিনেই তুমি আমার চিলকোঠোর ঘরে গিয়েছ ফুল বাগানের মালি নিজেকে ভেবেছ তাই আমার খুব রাগ হয় তোমার উপর তাই তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য শুধু তোমাকে শুনাতাম, ভেবেছিলাম তুমি ভয় পেয়ে আর ছাদেই যাবে না কিন্তু তুমি তো নাচোরবান্ধা মেয়ে প্রতিদিন আমার রোমে যাওয়া শুরু করেছ একসময় আমার ভয় দেখানো গুলোকে তুমি ভালোবেসে ফেলেছ তাই আর ভয় দেখাইনি, এখন তোমাকে শুনানোর জন্য গান গাই গিটার বাজাই
–আমি যেদিন তোমার রোমে গিয়ে বলেছিলাম গান শুনাতে শুনাও নি কেন
–গিটার নিজে থেকে বাজছে দেখলে তুমি ভয় পেতে তাই তুমি রোমে আসার পর গান গাইছি
–হুম বুঝলাম কিন্তু আমার টেবিলে প্রতিদিন ফুল রাখো কেন
–এইটা বলা যাবে না
–কেন
–সব কথা বলতে নেই
–হুম তিন দিন তোমার কোনো খুঁজ ছিল না কেন
–ইচ্ছে করেই তোমার থেকে লুকিয়ে ছিলাম
–কেন
–তোমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তুমি ঠিকি কাছে নিয়ে আসলে
–দূরে যেতে চাও কেন
–এমনি এখন ঘুমাও তুমি অসুস্থ সকালে সব কথা বলবো
–ঠিক আছে

আমি বিছানায় শুয়ে পরতেই অনুভব করলাম একটা হাত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে বুঝলাম এইটা সাইয়ান এর হাত, চুপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম…..

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর (ভৌতিক গল্প) পার্ট: ৩

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

দোলনা নিজে নিজে দোলতেছে দেখে তো আমার ভয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, তাও কোনো ভাবে দারিয়ে রইলাম কি হচ্ছে দেখার জন্য, একটু পর দেখলাম ফুল গাছ থেকে একটা সাদা গোলাপ নিজে থেকেই ছিড়ে উড়ে উড়ে আমার দিকে আসছে, ফুল আমার কাছে আসার আগেই এক দৌড়ে রোমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম, ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে এক গ্লাস পানি খেয়ে বসে বসে ভাবতে শুরু করলাম এইটা কিভাবে সম্ভব ফুল নিজে থেকে ছিড়ে উড়ে উড়ে আমার দিকে আসছিল কিভাবে তাহলে কি সত্যি এই বাসায় ভূত আছে, থাকলেও আব্বু আম্মু কে বলা যাবে না বললে বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে এই বাসা ছেড়ে আমি যাচ্ছি না থাকুক ভূত আমার কি

সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আছি তখন আবার গিটার বাজতে শুরু করলো সাথে গুনগুন গানও ভালই লাগছে শুনতে কন্ঠটা খুব মিষ্টি তাই আজকে আর ছাদে গেলাম না গেলে তো গান গাওয়া গিটার বাজানো বন্ধ হয়ে যাবে, বারান্দায় বসে বসে গান শুনতে থাকলাম, প্রায় এক ঘন্টা গিটার বাজালো তারপর বন্ধ হয়ে গেলো আমিও গিয়ে পড়তে বসলাম

মাঝ রাতে গুনগুন গানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, শুয়ে শুয়ে গান শুনতে থাকলাম ভূত হলেও কন্ঠটা তো খুব মিষ্টি তো গান শুনে ভয় পাবো কেন, আচ্ছা ভূতরা কি গান গায় গিটার বাজায় গল্পের বই পড়ে হয়তো এইটা অন্য রকম ভূত তাই এসব করে

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখি টেবিলের উপর একটা সাদা গোলাপ রাখা, এখানে কে গোলাপ রাখবে ভাবতেছি হঠাৎ মনে পরলো গতকালের গোলাপটা মনে হয় উড়ে উড়ে টেবিলে এসে পরে গেছে তাই গোলাপটা আর হাতে নিলাম না, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে গেলাম

কলেজে এসে তো ক্লাসে মন বসছে না বার বার গান আর গিটারের কথা মনে পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে বাসায় চলে যাই আর ভূতকে গিয়ে বলি গান শুনাও আমি শুনবো কিন্তু ভূত কি আমার কথা শুনবে ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে আসলাম, আম্মু তো দেখে অভাক অনেক প্রশ্ন করলো কেন চলে এলাম ক্লাস করলাম না কেন আমি কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা চিলকোঠোর ঘরে চলে গেলাম, খাটে বসে শান্ত গলায় আস্তে আস্তে বললাম, ভূত তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো আমি জানি তুমি এই রোমেই থাকো যদি আমার কথা শুনতে পাও তাহলে প্লিজ গিটার বাজাও আর গান শুনাও তোমার গান শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে

অনেক সময় রোমে বসে রইলাম কিন্তু ভূত গান গাইল না তাই রাগ করে রোমে চলে আসলাম, রোমে আসতেই গিটারের টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম, আস্তে আস্তে শব্দ বাড়ছে তারপর গান শুনতে পেলাম তারমানে ভূত আমার কথা শুনেছে কিন্তু আমি ওখানে থাকতে গান গাইল না কেন, ওহ বুঝেছি আমার সামনে গান গাইতে ভূত লজ্জা পাচ্ছিল হিহিহি

এক সপ্তাহ কেটে গেলো এভাবে ভূতের সাথে আমার লুকোচুরি খেলা চলছে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই টেবিলে একটি সাদা গোলাপ পাই, যখন তখন ভূতের গিটারের শব্দ না শুনলে যেন ভালোই লাগে না আর মাঝ রাতে ভূতের মিষ্টি কন্ঠে গান না শুনলেও ভালো লাগে না, আচ্ছা ভূতের গান না শুনলে ভালো লাগে না কেন তাহলে কি আমি ভূতের প্রেমে পড়ে গেছি কিন্তু ভূত কে তো কখনো দেখিনি অদৃশ্য কিছুর প্রেমে পরা কিভাবে সম্ভব, দ্যাত কি ভাবছি এসব পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে আমি ভূতের প্রেমে পড়তে যাবো কেন

সন্ধ্যায় ভূতের গান শুনার জন্য বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছি, অনেক সময় অপেক্ষা করলাম কিন্তু ভূতে গান গাইল না, আচ্ছা ভূত কি আমার উপর রাগ করেছে নাকি ভূত অসুস্থ, সত্যি কি ভূতের অসুখ হয় কি জানি

তিন দিন কেটে গেলো ভূত গান গাইল না, গিটার বাজালো না সকালে আমার টেবিলের উপর সাদা গোলাপও রাখলো না, কি যে হলো ভূতের বুঝতেছি না, ভূত কি বুঝে না যে আমার ভূতের গান না শুনলে ভালো লাগে না

দুপুরে বারান্দায় বসে আছি আম্মু এসে বললো সবাই মিলে মামার বাড়ি যাবে কিন্তু আমি কলেজে প্রয়োজন আছে বলে না করলাম, আসলে তো ভূতের কোনো খুঁজ নেই বলে আমার মন খারাপ

বিকেলে আম্মুরা সবাই চলে গেলো বাসায় এখন আমি একা, সন্ধ্যায় খুব মন খারাপ লাগছে তাই ছাদে দোলনায় গিয়ে বসলাম, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো আমি বৃষ্টিতে ভিজলেই ঠান্ডা লেগে যায় তাই ভাবলাম বৃষ্টিতে ভিজবো আর ভূত কে ডাকবো আমার নিজের ক্ষতি করছি দেখলে অবশ্যই ভূত আসবে কারন এতো দিনে যতোটুকু বুঝেছি এই ভূতটা অনেক ভালো

বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করলাম আর জোরে জোরে ভূত কে বললাম “ভূত আজকে যদি তুমি না আসো আমাকে দেখা না দাও তাহলে আমি নিজেকে অনেক কষ্ট দিবো”

অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজলাম কিন্তু ভূত আসার নামই নেই তাই রাগ করে বৃষ্টির মধ্যেই ছাদে বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর মনে হলো মাথাটা কেমন যেন করছে তারপর আর কিছু মনে নেই…..

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ২

2

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম

নতুন জায়গা কলেজে কাউকেই চিনি না তাই একা একা মাঠের এক কোনে গিয়ে বসে রইলাম, হঠাৎ একটা মেয়ে আসলো
–হাই আমি সুজাতা
–আমি অর্পিতা
–এক মাস হলো ক্লাস শুরু হয়েছে তোমাকে আগে কখনো দেখিনি তো এই এলাকায় নতুন বুঝি
–হ্যা আমরা এখানে নতুন এসেছি
–কোথায় থাকো
–কলেজ থেকে পশ্চিম দিকে ৫-৭মিনিট হেটে গেলে ডান পাশে যে লাল রঙের বাসাটা পরে ওই বাসাতেই
–কি তোমরা ওই বাসায় থাকো
–হ্যা কেন
–বাসাটা কি তোমরা ভাড়া নিয়েছ
–না আব্বু কিনে নিয়েছে অনেক সুন্দর বাসা
–কিন্তু
–কিন্তু কি
–আমি শুনেছি ওই বাসায় নাকি ভূত আছে
–কি ভূত
–হ্যা অনেক মানুষ বলে ওই বাসার ছাদে নাকি একটা ছেলেকে দেখা যায় কোনো সময় ফুল গাছের যত্ন করে, কোনো সময় গিটার বাজায়, আবার কোনো সময় ছাদের রেলিং ধরে দূর আকাশে আনমনে থাকিয়ে থাকে
–ছেলেটা কে ভূত মনে হয় কেন সবার
–কারন চার বছর আগে নাকি ওই পরিবারের সবাই মারা গিয়েছিল আর বাসাটা তো চার বছর পরিত্যক্ত ছিলো ছেলেটা আসবে কোথায় থেকে
–হুম

বাসায় চলে আসলাম মাথা থেকে ছেলেটার কথা একদম সরছেই না, আচ্ছা ছেলেটা যদি ভূত হবেই তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি করে না কেন, তাহলে কি ছেলেটা ভালো ভূত দুর কি ভাবছি ভূত আসবে কোথায় থেকে ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে নাকি

সন্ধ্যায় পড়তে বসলাম আর তখনি শুরু হয়ে গেলো গিটারের শব্দ তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটা জিনিস শুনতে পাইতেছ
–কি
–গিটারের শব্দ
–না তো
–আমি তো শুনতে পাইতেছি
–কই আমি তো শুনছি না
–কিন্তু
–তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তাই এসব আবুল তাবুল কথা বলছিস যা পড়তে বস
–হুম

দুর ছাই কি হচ্ছে এসব আমি শুধু গিটারের শব্দ শুনতে পাই কিন্তু আম্মু পায় না কেন, আচ্ছা জিসান পায় কিনা গিয়ে জিজ্ঞেস করি তো
–ভাই কি করছিস
–পড়ছি
–আচ্ছা তুই কি ছাদে কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পাচ্ছিস
–কই নাতো
–ভালো করে শুনে দেখ তো
–না পাচ্ছি না
–ওহ আচ্ছা পড় তুই আমি যাই

কি যে হচ্ছে বুঝতেছি না নির্ঘাত আমার মাথার তার ছিড়ে গেছে নাহলে আম্মু শুনে না জিসান শুনে না শুধু আমি কেন গিটারের শব্দ শুনতে পাই

রাতে খাবার টেবিলে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন
আব্বু: অর্পিতা বাসা পছন্দ হয়েছে
আমি: হ্যা আব্বু বাসাটা অনেক সুন্দর
আম্মু: জানো অর্পিতা কি যেন বলছিল ও নাকি সন্ধ্যায় ছাদে গিটারের শব্দ শুনতে পায়
আমি: না না আব্বু এমনি বলেছি ফাজলামো করে
জিসান: আপু তুমি কি আমার সাথেও ফাজলামো করেছিলে
আমি: হ্যা হ্যা
আম্মু: আর এমন ফাজলামো করলে খবর আছে
আব্বু: আরে বকা দিচ্ছ কেন একটু ফাজলামো নাহয় করেছে
আম্মু: তোমার জন্য মেয়েটা দিন দিন ফাজিল হচ্ছে একদিন দেখবে ও অনেক বড় কান্ড করে বসেছে
আব্বু: আচ্ছা সে দেখা যাবে
আমি: এই নাহলে আমার আব্বু হিহিহি
আম্মু: হাসি বন্ধ কর
আমি: হুম

আম্মু আব্বু কে সত্যিটা বলিনি বললে হয় আমাকে পাগল বলবে নাহয় বাসা ছেড়ে দিবে কিন্তু এই বাসা তো ছাড়া যাবে না এই রহস্য তো আমাকে বের করতেই হবে

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো এভাবেই আর অদ্ভুত কান্ড গুলাও ঘটলো, ফুল গাছে পানি দিতে গিয়ে দেখি গাছে পানি দেওয়া, দোলনা দোলতেছে মনে হয় যেন কেউ এখনি দোলনা থেকে উঠে চলে গেলো, চিলাকোঠোর ঘর খুব সুন্দর করে পরিপাটি করা মাঝে মাঝে টেবিলে বই পাই মনে হয় কেউ পড়ছিল আমাকে দেখে লুকিয়ে গেছে, আর সন্ধ্যায় গিটারের শব্দ তো আছেই যা শুধু আমি শুনি অবশ্য গিটারের শব্দ শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে খুব সুন্দর করে গিটার বাজায় কিন্তু ছেলেটা কে কখনো দেখতে পাইনি

দুপুরে বারান্দায় বসে আছি আম্মু আসলো
–অর্পিতা চিলকোঠোর ঘরটা কি তুই পরিষ্কার করেছিস
–কেন
–আমি ভাবলাম পরিষ্কার করে রাখি গিয়ে দেখি খুব সুন্দর করে সাঝানো রোমটা
–হ্যা আমিই পরিষ্কার করেছি ভাবলাম মাঝে মধ্যে গিয়ে পড়তে বসবো
–খুব ভালো করেছিস

রাতে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ কারো গুনগুন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, কান পেতে শুনার চেষ্টা করলাম ওমা ছাদ থেকে তো কন্ঠটা ভেসে আসছে তারমানে ওই ভূত ছেলেটা গান গাইতেছে, কন্ঠটা খুব মিষ্টি এমন গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে পারলে মন্দ হয় না, গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নেই

সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেই বুদ্ধি করলাম আজ ভূত ছেলেটা কে যেভাবেই হউক দেখবই, তাই কলেজে গেলাম না, আম্মু জিসান কে নিয়ে চলে যাওয়ার পর সিড়িতে গিয়ে লুকিয়ে রইলাম, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে দারিয়ে আছি ভূতের আসার নামই নেই দারিয়ে থাকতে থাকতে তো আমার পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তাও আজ দারিয়ে থাকবো ভূত আমি দেখবই

প্রায় তিন ঘন্টা পর হঠাৎ দেখলাম দোলনা নিজে নিজে দোলতেছে দেখে তো আমার ভয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে……

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর (ভৌতিক গল্প) পার্ট: ১

0

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর (ভৌতিক গল্প)

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলতেই মনে পরলো আমি তো নতুন বাসায় আছি গতকাল সন্ধ্যায় আমরা এই বাসায় এসেছি, বাসাটা ভালো করে ঘুরে দেখার মতো সময়ও ছিল না কাল এসে অনেক কাজ করতে হয়েছে, তাই উঠে পরলাম নতুন বাসা ঘুরে দেখার লোভ সামলাতে পারছি না

ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি, আমি অর্পিতা ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ছি, আম্মু আব্বুর আদরের বড় মেয়ে আমার একটা ছোট ভাইও আছে, এই চারজন মিলেই আমাদের ছোট্ট পরিবার, আব্বু সরকারি চাকরি করেন বিভিন্ন জায়গায় আব্বুকে ট্রান্সফার করা হয় সেই সুবাদে বিভিন্ন জায়গা আমরাও ঘুরতে পারি, আব্বুকে এখন আবার এখানে ট্রান্সফার করা হয়েছে তাই এই নতুন বাসায় গতকাল আমরা এসেছি, বাসাটা আব্বু কিনে নিয়েছেন এখানে নাকি অনেক বছর থাকতে হবে

উঠে ফ্রেশ হয়ে এক মগ কপি নিয়ে বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম অনেক গুলো রোম, আমার রোমের সাথে বড় একটা বারান্দা আছে, একদম আমার মনের মতো বাসা, সব রোম ঘুরে ঘুরে দেখে ছাদে উঠলাম
ছাদে উঠে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে অনেক গুলো ফুল গাছ শুধু গাছ বললে ভুল হবে পুরো বাগান, সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ, গাঁদাফুল আরো অনেক রকমের ফুলের গাছ লাগানো পুরো বাগান বলা যায়, অনেক বড় ছাদ একপাশে চিলেকোঠার ঘর আর বেশ খানিক ছাদ জুরে ফুলের বাগান, বাগানের পাশে একটা দোলনাও আছে

ফুল গাছ গুলোর কাছে গেলাম অনেক ফুল ফুটেছে দোলনাটাও পরিষ্কার কিন্তু আব্বু তো বললো এই বাসা নাকি চার বছর ধরে পরিত্যক্ত তাহলে এই ফুলের বাগানের পরিচর্যা কে করে এই দোলনাই বা কে পরিষ্কার করে রাখে, আশে পাশে তো তেমন বাসাও নেই

কে এই বাগানের পরিচর্যা করে এসব ভাবতে ভাবতে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম, ঢুকে তো আবার আমার চোখ কপালে উঠলো রোমটা খুব সুন্দর ভাবে পরিপাটি করা মনে হচ্ছে এই রোমে কেউ থাকে কিন্তু কে থাকবে আব্বু তো বলেছে এখানে চার বছর ধরে কেউ থাকে না, কিছুই বুঝতেছি না

চিন্তিত মুখে আম্মুর কাছে গেলাম
আম্মু: কিরে বাসা পছন্দ হয়েছে
–হ্যা আম্মু একদম আমার মনের মতো কিন্তু
–কিন্তু কি
–না কিছু না আমি রোমে যাই

আম্মুকে বললাম না কিনা কি ভেবে যদি বাসা ছেড়ে দেয় তাই, এই বাসা আমার খুব পছন্দ হয়েছে এই বাসা ছেড়ে আমি সহজে যাচ্ছি না

সারা দিন আম্মুর সাথে বাসার জিনিসপত্র গুছগাছ করেই কেটে গেলো, সন্ধ্যায় ছাদে গেলাম ফুল গাছে পানি দিতে গাছ গুলো যেই পরিচর্যা করুক এখন তো মালিক আমি, কিন্তু ছাদে ফুল গাছের কাছে যেতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো গাছে তো পানি দেওয়া কিন্তু কে দিল আম্মু নাহ আম্মু তো সারাদিন আমার সাথেই ছিল তাহলে কি জিসান দুর ও তো সারাদিন খেলা নিয়েই থাকে এসবে মন নেই ও দিবে কেন

আম্মু আম্মু বলে চেঁচিয়ে রান্না ঘরে গেলাম
–কিরে এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন
–আম্মু ছাদে যে ফুল গাছ গুলো সে গুলোতে কি তুমি পানি দিছ
–আমি তো এখনো ছাদে যাইনি
–ওহ
–কেন
–না আমিই মনে হয় পানি দিছিলাম মনে নেই
–কি যে আবুল তাবুল বলিস যা পড়তে বস গিয়ে
–হুম

উফফফ পড়তে মন বসছে না কে গাছ গুলোতে পানি দেয় ভেবে পাচ্ছি না, সারা রাত এই ভাবনায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি নি

সকালে আম্মু এসে ঘুম থেকে জাগালো
–কলেজে যাবি না
–না দুদিন বসে খাই তারপর যাবো
–তুই যে কি আচ্ছা আমি জিসান কে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি টেবিলে নাস্তা রাখা আছে খেয়ে নিস
–জিসান ক্লাস ফাইভে পড়ে ওকে নিয়ে স্কুলে যেতে হবে কেন ও একা যেতে পারে না
–নতুন জায়গা ও একা যাবে কিভাবে
–আচ্ছা যাও

উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম, তারপর একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে চিলেকোঠোর ঘরে গেলাম, টেবিলে বই রাখতে গিয়ে দেখলাম টেবিলের উপর একটি বই রাখা কয়েক পৃষ্ঠা উল্টানো মনে হচ্ছে যেন কেউ বইটা পড়ছিল আমি আসাতে লুকিয়ে গেছে কিন্তু আমি ছাড়া তো বাসায় এখন কেউ নেই কে এই ঘরে এসে বই পড়বে, ভাবতে ভাবতে রোমটার চারদিকে চোখ বুলালাম হঠাৎ রোমের এক কোনে একটা গিটার দেখতে পেলাম, অদ্ভুত ব্যাপার তো যে বাসা চার বছর ধরে পরিত্যক্ত সেই বাসায় গিটার আর গিটারে তো কোনো ময়লা লেগে নেই একদম পরিষ্কার মনে হচ্ছে কেউ এইটা কে অনেক যত্ন করে রাখে কিন্তু কে এই গিটারের মালিক, কে ফুল বাগানের মালিক আর কেই বা এই রোমে থাকে

সারা দিন এই ভাবনা মাথা থেকে একটু সময়ের জন্যেও সরেনি উফফফফ মাথা ব্যাথা করতেছে, মাথা ব্যাথার জন্য এই সন্ধ্যা বেলায় বিছানায় শুয়ে রইলাম, চোখে একটু একটু ঘুম আসলো শুধু ঠিক তখনি শুনতে পেলাম ছাদে গিটার বাজছে কিন্তু ছাদে কে গিটার বাজাবে আচ্ছা সকালে যে গিটার দেখছিলাম ওইটা কেউ বাজাচ্ছে না তো কিন্তু বাজাবে কে, উঠে দৌড়ে ছাদে গেলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না দোলনাটা দুলছে মনে হচ্ছে কেউ বসে ছিল আর এই মাত্র উঠে চলে গেলো, তাড়াতাড়ি চিলেকোঠোর ঘরে গিয়ে ঢুকলাম গিটার তো জায়গা মতোই আছে তাহলে আমি কি ভুল শুনলাম, না না ভুল হবে কেন আমি স্পষ্ট শুনেছি ছাদে গিটার বাজছিল

দৌড়ে আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটু আগে কি তুমি গিটারের শব্দ শুনেছ
–গিটার কে বাজাবে আর আশেপাশে তো কোনো বাসা নেই যেখানে আছে সেখান থেকে গিটারের শব্দ শুনা যাবে না
–তাহলে আমি যে শুনলাম
–মাথা ব্যাথায় উল্টাপাল্টা বকছিস যা গিয়ে শুয়ে থাক
–হুম

দুর কি হচ্ছে এসব আমি গিটারের শব্দ শুনলাম অথচ আম্মু শুনেনি কিভাবে সম্ভব, তারমানে কি আমি ভুল শুনেছি, হতেও পারে……

চলবে?

এক অভিমানীর গল্প পর্ব- ১৩(অন্তিম পর্ব)

0

এক অভিমানীর গল্প
পর্ব- ১৩(অন্তিম পর্ব)
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

কম্বলের নিচ থেকে মাথা তুলে তাকায় মায়া। বাঁধনকে এভাবে দরজা বন্ধ করে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় ওর। জড়োসড়ো হয়ে মায়া বিছানায় উঠে বসে। কোনো কথা না বলে বাঁধনও চুপটি করে পাশে গিয়ে বসে। মুখ খুলে মায়া।
দরজা কেন বন্ধ করছেন? কিছুটা কাঁপা স্বরে প্রশ্নটা করে মায়া বাঁধনকে।
মৃদু হেসে বাঁধনের জবাব, এটাই তো হওয়ার কথা ছিল।
মা মা মা নে…..???
কেন? চিরকুটে পড়নি? আর এভাবে তোতলাচ্ছো কেন? একটা বিকেল’ই তো চেয়েছি। শুধু একটা বিকেল’ই তো! দিয়ে দাও না আজকের বিকেলটা আমার নামের লিখে।
কিকিকিকি করতে হবে?
বাঁধন রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়। তারপর মায়ার অনেকটা কাছে গিয়ে মুখটা উপরের দিকে তুলে প্রশ্ন করে-
” ভয় পাচ্ছো????”
এবারো মায়া কিছুটা কাঁপা স্বরে জবাব দেয়, না….
তবে তোতলাচ্ছ কেন এভাবে? ওকে, ফাইন। বাদ দাও। তোমার বিকেল তোমার কাছেই যত্নে রাখো। আজকে বরং আমি আমার বিকেলটা তোমায় উৎসর্গ করে দিলাম। আসো, এদিকে আসো তো!

মায়া মাথা নিচু ভয়ে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে আছে। সেটা দেখে দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায় বাঁধনের মাথায়। মায়াকে একটানে কাছে টেনে মুখের কাছে মুখ নিয়ে যায়। এদিকে ভয়ে পুরো জমে গেছে মায়া। বাঁধনের কিছু করার আগেই চোখ বন্ধ করে নাকমুখ শক্ত করে আছে। বিষয়টা বাঁধন খুব এনজয় করছে। স্থির দৃষ্টিতে বাঁধন ওর অভিমানীর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে গেল বাঁধনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ মেলে তাকায় মায়া। আর বাঁধন ঠিক তখনি মায়ার কপালে, গালে, নাকে চুমুর পরশ এঁকে দেয়। পরম সুখে চোখ দুটো আলতোভাবে বন্ধ করে মায়া। বাঁধন মায়ার দু’চোখে চুমুর পরশ এঁকে দেয়। চোখ খুলে মায়া। বাঁধন তখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে।
মিনিটখানেক একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর আচমকায় বাঁধন বিছানায় শুয়ে পরে। অবাক মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁধন ওকে একটানে বুকে নেয়। মায়াও কোনো কথা না বলে নিশ্চুপ বালিকার মতো বাঁধনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরে।

ঘন্টাখানেক এভাবে শুয়ে থাকার পর বাঁধন টের পায় ওর শার্ট’টা কেমন যেন ভিঁজা ভিঁজা লাগছে। মাথা তুলে তাকায় বাঁধন। মায়া তখন উপরমুখি হয়ে শুয়ে। আর তার চোখ থেকে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পরছে। বিছানায় উঠে বসে বাঁধন। সাথে মায়াকেও তুলে বসায়। অশ্রু লুকাতে অন্যদিকে তাকায় মায়া। বাঁধন মায়াকে ওর দিকে ফেরায়। হাত দিয়ে চোখের জল মুছে প্রশ্ন করে-
” লক্ষ্মী! কাঁদছ কেন?”
নিশ্চুপ মায়া মাথা নিচু করে আছে। বাঁধন আবারো প্রশ্ন করে, কি হলো? বলো?
কোনো কথা না বলে আচমকা মায়া বাঁধনকে জাপটে ধরে বাচ্চাদের মত হু, হু করে কাঁদতে থাকে।
বাঁধনও পরম আদরে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়। মায়ার এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দেয়।
“ভালোবাসি তো লক্ষ্মী! আর স্যরি, ঐভাবে তোমাকে ইগ্নোর করার জন্য। আমার ভুল হয়ে গেছে। এই তোমায় ছুঁয়ে প্রমিস করছি, আর কখনো এমন হবে না। এবার তো একটু শান্ত হও।”
কান্না থামিয়ে চুপ হয়ে যায় মায়া। কপালে আরো একটা চুমু দিয়ে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বাঁধন।

পরদিন সকালের ঘটনা__
লক্ষ্মী! এই লক্ষ্মী?!!! উঠো…..
পাশ থেকে হিয়া বার বার রিকোয়েস্ট করছে, ভাইয়া প্লিজ! ডাকবেন না ওকে। ওর কাঁচা ঘুম ভাঙলে উল্টাপাল্টা আচরণ করে।
বাঁধন শুনেনি শ্যালিকার কথা। ওর একটাই কথা, সবার সাথে উল্টাপাল্টা আচরণ করলেও ও আমার সাথে কিচ্ছু করবে না। কারণ ও আমায় ভালোবাসে। বুঝাতে ব্যর্থ হিয়া ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ জপছে আর মনে মনে বলছে, হে আল্লাহ! রক্ষা করো….
মিনিট খানেক পর চোখ খুলে মায়া। বাঁধনের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বিছানায় উঠে বসে সে। এদিকে হিয়া আল্লাহ আল্লাহ জপছে। এগিয়ে যায় বাঁধন মায়ার কাছে। হাসি, হাসি মুখ নিয়ে বলে_
এতক্ষণে তাহলে মহারাণীর উঠার সময় হলো! ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট করতে হবে। উঠো, উঠো তাড়াতাড়ি। বাঁধন মায়ার একটা হাত ধরে ওকে বিছানা থেকে নামাচ্ছিল। একঝটকায় মায়া সে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
ফিরে তাকায় বাঁধন। মায়া রাগে ফুসছে। বাঁধন আবারো বলে, কি হলো? চলো! ঢাকায় যেতে হবে না?!!!
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে মায়া। ভয়ংকর চোখে বাঁধনের দিকে তাকিয়ে বলে-
“বিয়ে করেছেন বলে কি আমার মাথাটা কিনে নিয়েছেন? আপনার জন্য আমি কি শান্তিতে ঘুমোতেও পারব না? আপনি এমন কেন? আপনাকে যে আমি বলছি কালকেই চলে যেতে, এখনো কেন পরে আছেন? কোন মোহে এখানে রয়ে গেছেন? আর কি যেন বলছেন? ভালোবাসা?!!! তাও আপনাকে? আপনার কি মনে হয় আদৌ এ বিয়েটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পেরেছি? যদি মনে করেন, সেই বিয়ের আগের মতই আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে, তাহলে ভুল ভাবছেন, ভুল। কান খুলে শুনে রাখুন, আমি আপনাকে ভা লো বাবাসি না……”
কি হলো? এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে! যান, আমার সামনে থেকে বের হয়ে যান।
বাঁধনের চোখের কোণে জমে থাকা জলগুলো কেমন যেন টলটল করে উঠল। কোনো কথা না বলে চুপিসারে বাঁধন মায়ার সামনে থেকে সরে যায়।
মিনিট ত্রিশেক পর ফ্রেশ হয়ে কলেজ ড্রেস পরে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয় মায়া। পিছন থেকে ডাক দেয় বাঁধন।
” কলেজে যাবে?”
পিছন ফিরে তাকিয়ে সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় মায়া। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। বাঁধনও শ্বশুর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে মায়ার পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। ৩০মিনিটের পুরো রাস্তা দু’জন বেশ চুপচাপ নিরবে হেঁটে গেছে। বাসস্টপে গিয়ে সিএনজিতে উঠে যায় মায়া। বাঁধনও চুপচাপ সিএনজিতে উঠে পরে। সিএনজিতেও কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। তবে মায়া সুযোগ পেলেই আড়চোখে আবার কখনো বা সিএনজির সামনের গ্লাস দিয়ে বাঁধনকে দেখে নিয়েছে, সেটা বাঁধনের চোখ এড়ায় না।
সিএনজি থেকে কলেজ গেইট নেমে যায় মায়া। তার সাথে সাথে বাঁধন। আড়চোখে মায়া একবার বাঁধনের দেখে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে ডাক দেয় বাঁধন-
” লক্ষ্মী…….”
এ ডাকে অদ্ভুত এক নেশা আছে, আছে এক জাদু। যে জাদুর তাড়নায় মায়া মুহূর্তের জন্য সব ভুলে যেতে পারে। তাইতো এ ডাক উপেক্ষা করে মায়া আর সামনের দিকে এগুতে পারে নি। ফিরে তাকায় বাঁধনের দিকে। বাঁধন অনেকটা বিনীত ভঙ্গিতে মায়াকে বলে, ” একমিনিট! জাস্ট একমিনিট সময় দাও। আমি ওপাশে যাব আর আসব।”
কথাটা বলেই বাঁধন একদৌঁড়ে রাস্তার ওপাশে চলে যায়। একটা দোকানের সামনে গিয়ে বাঁধন দোকানদারকে হাত ইশারায় চিপস দিতে বলে। দোকানদার বাঁধনের হাতে ৫টা চিপস ধরিয়ে দেয়। মায়া জল ছলছল চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। চিপসের টাকা দিয়ে বাঁধন এপাশে আসার জন্য রাস্তায় পা বাড়াতেই একটা দ্রুতগামী গাড়ি সেদিকে ছুটে আসে। উচ্চস্বরে একটা চিৎকার দিয়ে মায়া ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। গাড়ি চলে যায়। ভীরু চোখে মায়া রাস্তার ওপাশে তাকায়। বাঁধন তখনও স্থির দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপাশে। হাতে থাকা ব্যাগটা ফেলে মায়া ছুটে যায় রাস্তার ঐপাশে। কলেজ গেইটে দাঁড়ানো শত শত মানুষের সামনে জাপটে ধরে বাঁধনকে। চোখ বন্ধ করে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে মায়া।
বাঁধন পরম আদরে, নিবিড় করে একহাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে মায়ার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। মায়ার চোখে যখন জল, বাঁধনের চোখে মুখে তখন হাসি। বিশ্বজয়ের হাসি, ভালোবাসার জয়ের হাসি। এক অভিমানীকে আপন করে পাওয়ার হাসি, যে কখনো একটাবারের জন্যও বলেনি ভালোবাসি, তার ভালোবাসা পাওয়ার হাসি। এ হাসি বহুবছরের, বহু প্রতীক্ষার।
হয়তো সেদিন অভিমানীর সেই লুকায়িত ভালোবাসা দেখার জন্যই থেমে গিয়েছিল বাস, সিএনজি, অটোরিক্সাসহ সমস্ত যানবাহন। থেমে গিয়েছিল পথচারী পথিক। ক্ষণিকের জন্য থেমে গিয়েছিল স্কুল কলেজের স্টুডেন্টদের পথচলা। যদিও তখন এর কিচ্ছুটি টের পায়নি অভিমানী মেয়েটা। মিষ্টি হেসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে দৃঢ় গলায় বাঁধন যখন বলে-
” এত সহজে যাব না তোমাকে ছেড়ে। আর ভালোবাসি তো লক্ষ্মী!”
ঘোর কাটে মায়ার। বাঁধনকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা লজ্জায় অভিমানে মাথা নিচু করে বলে, কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। সাথে সাথে হেসে দেয় বাঁধন। তার সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত অনেকে।

৮বছর পর__
নীলিমা গিয়েছিল ওর কলেজ জীবনের একমাত্র কাছের বান্ধবী মায়াকে দেখতে। আজ অনেকগুলো বছর পর মায়াকে দেখবে। ভাবতেই আনন্দে চোখে জল এসে গেছে নীলিমার। ফোনে কথা বললেও, আজ অনেকগুলো বছর ধরে নীলিমা এবং মায়া একে অপরকে দেখেনি। যদিও লোক মারফত নীলিমা শুনেছে মায়ার একটা মেয়ে আরেকটা ছেলে হয়েছে। মেয়েটার বয়স ৪বছর, ছেলেটার সাড়ে তিনমাস। এদেরকে দেখার জন্যই নীলিমার ছু্টে আসা।
রুমের দরজাটা আধখোলাই ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতে তাই কোনো সমস্যা হয়নি। এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমে ঢুকতেই “থ” হয়ে যায় নীলিমা। একটা ছোট্ট মেয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে তখন ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে। ঠিক যেন অভিমানী মায়ার ডুপ্লিকেট। নীলিমার বুঝতে খুব বেশী অসুবিধে হয়নি এ জুনিয়র অভিমানী। সিনিয়র অভিমানীর মতই রাগ করলে নাক মুখ ফুলে যায়। দৌঁড়ে গিয়ে নীলিমা জুনিয়র অভিমানীকে কোলে তুলে নিয়ে নাকে, মুখে, গালে, চুমু দেয়। তারপর আদরের সঙ্গে জিজ্ঞেস করে-
” মন খারাপ কেন? কি হয়েছে আমার মিষ্টি মামনিটার?”
জুনিয়র অভিমানী নাক ফুলিয়ে নীলিমার কাছে বাবার নামে অভিযোগ করে। ওর ভাষ্যমতে- ওর বাবা ওকে একদম আদর করে না। সব আদর করে ছোট ভাই আলিফকে আর ওর মাকে।
নীলিমা গম্ভীর হয়ে বলে, খুব খারাপ! আজকে এর একটা বিহীত না করলেই নয়। চলো, চলো…..

মায়া-বাঁধনের ছোট্ট অভিমানীকে কোলে নিয়ে কোনো নক ছাড়াই নীলিমা ওদের বেডরুমে প্রবেশ করে। বাঁধন ওর মায়ার কপালে, আর মায়া ছোট্ট আলিফের কপালে চুমু দেয়ায় ব্যস্ত ছিল। নীলিমা তখনই উচ্চস্বরে বলে উঠে- Very bad Maya, Very bad……
নীলিমার এভাবে প্রবেশ ওরা প্রত্যাশা করেনি। অনেকটা লজ্জায় বাঁধন মায়ার থেকে সরে যায়। নীলিমা অনর্গল বলতে থাকে-
” বউ, বাচ্চা সবাইকেই তো দেখি বেশ আদর করতে পারেন। তো এই এতিম মেয়েটা কি অপরাধ করল? একে কেন ড্রয়িংরুমে দাঁড় করিয়ে রাখছেন?”
বাঁধন মায়ার কোলে আলিফকে দিয়ে লাবণ্যকে কোলে তুলে নেয়- ওলে আমার মামণিটা বলেই জুনিয়র অভিমানী লাবণ্যর গালে, নাকে, কপালে চুমু দিতে থাকে। এদিকে মায়ের কোলের ছোট্ট আলিফ ঠোঁট বাকিয়ে কাঁদতে থাকে বাবার কোলে যাবার জন্য। মায়া ঠাস করে আলিফকে খাটের উপর রাখে। যাহ! বাপ নিয়েই থাক….

বাঁধন:- এটা কি হলো?
মায়া:- কি হলো দেখতে পাচ্ছো না? পুরো পাগল হয়ে গেলাম আমি।
বাঁধন:- এত তাড়াতাড়ি পাগল হলে ক্যামনে কি?
মায়া:- ক্যামনে কি মানে?
বাঁধন:- বিয়ের আগে কি প্ল্যান ছিল?
মায়া:- কি?
বাঁধন:- আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিয়া ক্রিকেট টিম বানাবো।
মায়া:- ??
বাঁধন:- রেগে কেন যাচ্ছ? তখন তুমিই তো আগ বাড়িয়ে বলছ ক্রিকেট টিমে নাকি কম যায়, তুমি তোমার বাচ্চাদের নিয়ে স্কাউট টিম বানাতে চাও। তবে তাই হোক। লাবণ্যর খেলার জন্য সাথী হবে। কি বলো মামনি? তোমার কি খেলনা চায় না?

জানি না ছোট লাবণ্য বাপের কথায় সেদিন ঠিক কি বুঝে হাত তালি দিচ্ছিল। আর সেটা দেখে রাগে সোফায় রাখা ঝাড়ু নিয়ে মায়া বাঁধনের দিকে এগুতে থাকে। বাঁধন ভয়ে নীলিমার কোলে ছোট্ট আলিফকে দিয়ে ওমাগো, ও বাবাগো, বাঁচাও বলে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে যায়।
পিছনে লাবণ্য তখনো খিলখিলিয়ে হাসছে, আর হাত তালি দিচ্ছে।
” কি মজা, কি মজা! আব্বু পারে না…!

বেঁচে থাকুক ভালোবাসারা………

♪The End♪