Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2420



শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৯

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে আর আমি মনের আনন্দে ড্রাইভ করছি….

একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসে গাড়ি থামালাম।
–রিফাত এখানে গাড়ি থামিয়েছ কেন
–খিদে লেগেছে তাই
–বাসায় গিয়ে একেবারে খাবো প্লিজ
–ততোক্ষণে আমার পেটের পোকাগুলো সব মারা যাবে
–ঠিক আছে তুমি খেয়ে এসো আমি গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছি
–তুমি তো কিছু খেয়ে আসোনি তুমিও চলো
–না
–যাবে না তো
–না
–ওকে (ওর ঠোঁটের কাছে আমার ঠোঁট নিতেই তাড়াতাড়ি সরে গেলো)
–রিফাত এসব কি হচ্ছে
–তুমি না গেলে আমি তোমার ঠোট….
–ছিঃ তুমি এতো খারাপ
–যা খুশি ভাবো আমার কিচ্ছু যায় আসেনা কারণ তুমি আমার বউ
–(রাগী চোখে তাকিয়ে আছে)
–তোমার এই রাগী চোখ দেখেই প্রথম দেখায় ভালোবেসেছি, এভাবে আর তাকিয়ো না রাগিণী প্লিজ পাগল হয়ে যাবো
–আবার রাগিণী ডাকছ
–সবসময় ডাকবো, এখন কি নামবে নাকি….
–প্লিজ রিফাত আমার ভালো লাগছে না আমি তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে চাই। (আমার খিদে লেগেছে শুনেও আগে বাসায় যেতে চায়, জানি তো রাতুলের সাথে কথা বলার জন্য এতো পাগল হইছে বলুক আর বাধা দিব না)

রাতুল নামটা শুনলেই রাগ হয়, রাগে খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছি।
–রিফাত আস্তে চালাও আমার ভয় করছে
–(নিশ্চুপ)
–রিফাত প্লিজ আস্তে চালাও আমার খুব ভয় করছে (ওর কোনো কথা না শুনে রাগে গাড়ি চালাচ্ছি)

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামাতেই আলিফা নেমে এসে আমার কলার ধরে রাগে চেঁচামেচি করতে শুরু করলো।
আলিফা: এভাবে কেউ গাড়ি চালায় হ্যাঁ, কি হয়েছিল তোমার এতোবার বারণ করার পরও আমার কথা শুননি কেন
আমি: আলিফা আমার কলার ছাড়ো
আলিফা: কেন ছাড়বো আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তখন কি হতো (ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিলাম)
আমি: কি হতো এক্সিডেন্ট…? তাহলে তো ভালই হতো মরে যেতাম তোমার মুখে অন্তত আর রাতুল নামটা শুনতে হতো না
আলিফা: তুমি আমার উপর রেগে এ….
কি হয়েছেরে আলিফা (হঠাৎ আলিফার আব্বুর কন্ঠ শুনে দুজন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালাম)
আলিফা: আব্বু যেন এসব কিছু জানতে না পারেন (আমার কাছে এসে আস্তে বললো, হুহ বাবার সামনে কি ভদ্র মেয়ে যতো যন্ত্রণা সব আমাকে দেয়)
আলিফা: কিছু হয়নি আব্বু ভিতরে চলো

ভিতরে এসে আমি শশুড় মশাইয়ের সাথে গল্প করছি আর আলিফা এক দৌড়ে ওর রুমে চলে গেলো। হয়তো রাতুলকে ফোন দিবে তাই। আমার ভাগ্য দেখলে আমার নিজেরই হাসি পায়।
আব্বু: রিফাত তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা পরে কথা হবে
আমি: ঠিক আছে

রুমে এসে দেখি আলিফা গোমরা মুখে বসে আছে রাতুল মনে হয় ফোন রিসিভ করেনি আহারে।
–কি হয়েছে রাগিণী মুখটা এমন প্যাঁচির মতো বানিয়ে রেখেছ কেন
–কি বললে আমি প্যাঁচি
–না তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে
–দেখনা এতো তাড়াতাড়ি আসলাম রাতুলের সাথে কথা বলবো বলে কিন্তু এসে দেখি ফোনে চার্জ নেই
–আমি খুশি হয়েছি (আস্তে বললাম)
–কি বললে
–ওয়াশরুমটা কোন দিকে (রাগে গজগজ করতে করতে দেখিয়ে দিলো)

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আলিফা রুমে নেই, ওর ফোনটা চার্জে দেওয়া দেখেই মাথায় দুষ্টুমি ঘুরতে শুরু করলো। ফোনটা চার্জ থেকে খুলে রেখে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু এমনটা করলাম না পরে আবার রাগিণী কান্না করবে। ওর কান্না দেখলে তো আমারই কষ্ট হয়।
আলিফা: এই তুমি আমার ফোনের কাছে কি করছ
আমি: তোমার ফোনের চেহারা দেখছিলাম
আলিফা: সবসময় এতো ঝগড়া করার ধান্দায় থাকো কেন
আমি: রাগিণীর সাথে ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে তাই
আলিফা: উফফফ যাও তো ড্রয়িংরুমে যাও আব্বু তোমার জন্য বসে আছেন
আমি: তোমাকে ছেড়ে আমি কোত্থাও যাবো না (ওকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম)
আলিফা: আসার সময় তো খুব বলেছিলে পেটে খিদে লেগেছে না খেলে পেটের পোকাগুলো সব মারা যাবে তা এখন কি আর খেতে হবে না
আমি: খিদে তো তখনি মিটে গেছে রাতুলের কথা শুনে (আস্তে বললাম)
আলিফা: কিছু বললে
আমি: না তো
আলিফা: হুম যাও
আমি: ওকে

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি শশুড় আব্বু বসে বই পড়ছেন, টেবিলে খাবার রাখা। আমাকে দেখেই বললেন,
আব্বু: খেয়ে নাও বাবা
আমি: আপনি খাবেন না
আব্বু: না এখন খাবো না একটু বাইরে যাবো এসে খাবো তুমি খাও আসছি
আমি: ঠিক আছে।

উনি চলে গেলেন একা একা নতুন জায়গায় খাওয়া যায় নাকি তাও খাবার নিয়ে বসলাম। হঠাৎ মনে পড়লো আলিফা তো সকাল থেকে কিছু খায়নি বিকেল হয়ে গেছে ওর তো খিদে লেগেছে, খাবার রেখে রুমে আসলাম। মহারাণী জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে
আমি: আলিফা খাবে চলো
আলিফা: আমার খিদে নেই
আমি: আমি জানি তোমার খিদে আছে কিন্তু রাতুলের সাথে কথা বলতে পারছ না বলে মন খারাপ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: চলো
আলিফা: বললাম তো খাবো না
আমি: আমাকে জোর করতে বাধ্য করো না
আলিফা: কি করবে তুমি হ্যাঁ কি করবে
আমি: দেখতে চাও কি করবো দাঁড়াও দেখাচ্ছি (আস্তে আস্তে আলিফার কাছে গিয়ে আচমকা ওকে কোলে তুলে নিলাম)
আলিফা: রিফাত কি করছ ছাড়ো
আমি: সরি ছাড়া যাবে না
আলিফা: পরে যাবো তো
আমি: আমি কি এতোই খারাপ নাকি যে নিজের বউ কে ফেলে দিবো
আলিফা: প্লিজ ছাড়ো (ওর কোনো কথা না শুনে কোলে করে একেবারে ডাইনিং এর কাছে নিয়ে আসলাম তারপর ওকে চেয়ারে বসিয়ে দিলাম)
আলিফা: এসব পাগলামির মানে কি রিফাত
আমি: তার আগে বলো তো দিন কয়বার খাও এতো ওজন কেন তোমার।মুটকি কোথাকার
আলিফা: কি বললে আমি মুটকি
আমি: হ্যাঁ
আলিফা: মুটকি বলেছ এখন তো আমি খাবো না
আমি: আজব তো আমি মজা করে বলেছি আর তুমি… ওকে তোমাকে নিজে খেতে হবে না আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আলিফা: না না আমি নিজেই খাবো
আমি: একদম চুপ।
আলিফাকে খাইয়ে দিচ্ছি কেন যেন ও আজ ঝগড়া করছে না চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে। আলিফা কতোদিন আমার থাকবে জানিনা যতোদিন থাকে ততোদিন নাহয় এভাবেই ভালোবেসে যাবো।
আলিফা: রিফাত তুমি কাঁদছ কেন (আলিফার কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, এসব ভাবতে গিয়ে কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতেই পারিনি। আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কাঁদছে)
আমি: রাগিণী তুমি কাঁদছ কেন
আলিফা: আসলে আব্বু ছাড়া কেউ কখনো এতো যত্ন করে খাইয়ে দেয়নি তো তাই….
আমি: এখন তো আমি আছি সারাজীবন তোমাকে এভাবেই ভালবাসবো।
আলিফা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো আর ও এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো। জানি রাতুল ফোন দিয়েছে আর খেতে ইচ্ছে হলো না, রুমে গিয়ে ওকে ডিস্টার্ব করতেও ইচ্ছে হচ্ছে না তাই বাসার বাইরে এসে দাঁড়ালাম। আমার ভাগ্য দেখলে নিজেই অবাক হয়ে যাই, যখন নিলাকে ভালোবাসতাম তখন নিলাও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু নিয়তি আমাদের এক হতে দিলো না, নিলা আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো। আর এখন আলিফাকে যখন ভালোবাসি আমাদের বিয়েও হলো তখন আলিফা অন্য কাউকে ভালোবাসে হাহাহা কি ভাগ্য আমার।
আলিফা: এই পাগলের মতো হাসছ কেন
আমি: বাব্বাহ এতো তাড়াতাড়ি কথা শেষ
আলিফা: হ্যাঁ রাতুল বলেছে রাতে ফোন দিবে
আমি: এজন্যই তোমাকে এতো খুশি দেখাচ্ছে
আলিফা: হুম এখন চলো এতিমখানায় যাবো
আমি: সন্ধ্যা হয়ে আসছে তো এই সময়….
আলিফা: চলো তো।
আলিফা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আমি অবাক হয়ে ওকে দেখছি। এই প্রথম আলিফা খুশি মনে আমার হাত ধরেছে ভাবতেই তো আমার ভালো লাগছে।

এতিমখানায় এসেই আমাকে একা ফেলে বাচ্চাদের সাথে চলে গেলো। আমি পিছন পিছন গেলাম ওরা মাঠে খেলা করছে, আলিফাকে একদম ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে পিচ্ছি আলিফার লাফালাফি দেখছি। কিছুক্ষণ পর আলিফা আমার কাছে আসলো।
আলিফা: সরি তোমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলাম আসলে….
আমি: তুমি জানো এতোক্ষণ তোমাকে ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছিল
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: হ্যাঁ, আচ্ছা তোমার সেই বিড়ালটি কোথায় যার জন্য আমি তোমাকে পেয়েছি
আলিফা: জানিনা আমি তো এখানে ছিলাম না
আমি: ওহ
আলিফা: অন্ধকার হয়ে আসছে চলুন বাসায় ফিরে যাই
আমি: ওকে।

বাসার দিকে হাটতে হাটতে আসছি আর আলিফা এক মনে কথা বলে যাচ্ছে, আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছি। আগে তো ভেবেছিলাম রাতুলের সাথে কথা বলাতে ওকে আর বাধা দিবো না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই মেয়েটিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তাই বাধা দিতেই হবে এতো সহজে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।
আলিফা: রিফাত তুমি রুমে যাও ভুয়া রান্না করছে আমি ভুয়ার সাথে দেখা করে আসছি
আমি: ওকে

রুমে এসে পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখি অনেকগুলো মিসডকল তাও ছোটমার, তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম।
ছোটমা: কিরে শশুড় বাড়ি গিয়ে আমাদের ভুলে গেছিস
আমি: না ছোটমা ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আর যেখানেই যাই মা কে কিভাবে ভুলি বলতো
ছোটমা: পাগল ছেলে, বউমা কোথায়
আমি: রান্না ঘরে
ছোটমা: সত্যি করে একটা কথা বলতো
আমি: কি বলো
ছোটমা: বউমা ওখানে গিয়ে তোর সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি তো
আমি: না তবে রাতুলের কথা একটু বেশি ভাবে, তুমি ভেবো না এসব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
ছোটমা: ভাবনা তো আপনা-আপনিই চলে আসে…
আমি: ছোটমা প্লিজ
ছোটমা: আচ্ছা রাখি এখন
আমি: ঠিক আছে।
ফোন রেখে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি আলিফা দাঁড়িয়ে আছে। ছোটমার সাথে রাতুলকে নিয়ে কথা বললাম আলিফা শুনে ফেলেছে নাকি তাহলে তো ও আমায় অবিশ্বাস করবে।
আলিফা: রিফাত চলো আব্বু ডাকছেন (যাক হেসে হেসে কথা বলছে তারমানে শুনেনি)
আলিফা: কি হল কি ভাবছ চলো (আরে আলিফা কোন ফাকে শাড়ি পাল্টে নিয়েছে আমি তো লক্ষই করিনি, হলুদ রঙের শাড়িতে আলিফাকে বেশ মানিয়েছে)
আলিফা: আবার কোথায় হারিয়ে গেলে চলো
আমি: আলিফা তোমাকে হলুদ শাড়িতে দারুণ লাগছে।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো, আমিও পিছন পিছন ড্রয়িংরুমে আসলাম।

ড্রয়িংরুমে বসে আছি আলিফা তাড়াহুড়ো করে আমাদের চা দিয়ে রুমে চলে গেলো, এতো তাড়া কিসের ওর বুঝতে পারলাম না।
আব্বু: রিফাত আলিফাকে নিয়ে তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল
আমি: বলুন কি কথা
আব্বু: এখন শরীরটা ভালো লাগছে না বুঝতেই পারছ বুড়ো মানুষ কখন কি হয়, তুমি এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নাও সকালে কথা বলবো
আমি: ঠিক আছে।

তাড়াহুড়ো করে রুমে আসলাম, আলিফা এভাবে আসলো কেন বুঝতে পারছি না। রুমের চারপাশে চোখ বুলাতেই দেখলাম আলিফা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। ওহ তারমানে এই ব্যাপার এজন্যই এতো তাড়াহুড়ো কিন্তু আমি তো এখন শান্তিতে কথা বলতে দিবো না। আস্তে আস্তে গিয়ে আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম তারপর ওর পেটে হাত রাখলাম
আলিফা: রিফাত কি করছ ছাড়ো (ফিসফিসিয়ে বললো নাহলে যে রাতুল ফোনে শুনে ফেলবে)
আমি: ফোন রাখো (আমিও ফিসফিসিয়ে বললাম)
আলিফা: না প্লিজ
আমি: ওকে (দুহাত দিয়ে ওর পেটে চাপ দিলাম)
আলিফা: রাখছি রাখছি প্লিজ ছাড়ো
আমি: আগে রাখো।
আলিফা ফোন রেখে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো আমার হাত সরানোর জন্য, আমি ওর পেটে আরো জোরে চাপ দিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম
“ভালোবাসি তোমায় রাগিণী অনেক বেশি”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৮

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছি, ও রাতের আকাশ দেখছে আর আমি ভাবছি এই পাগলীটাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না অনেক ভালবাসবো ওকে অনেক….

–রিফাত ছাড়ো আমাকে
–কেন আমার কাছে থাকতে ভালো লাগছে না তোমার
–তোমাকে কিভাবে বুঝাই আমি রাতুলকে ভালোবাসি আমি ওকে ভুলতে পারবো না, তুমি তো আমার কোনো কথাই শুনছ না উল্টো জিদ করছ
–সত্যি রাতুলকে ভুলতে পারছ না আমার ভালোবাসা কি তোমার কাছে কিছুই না
–আমি তো সেটা বলছি না, কেন তুমি এমন পাগলামি করছ আমি রাতুলকে ভালোবাসি ও দেশে ফিরে আসলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো তখন তো তুমি কষ্ট পাবে (ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম)
–রিফাত বুঝার চেষ্টা করো কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভুলা যায় না তুমি কি নিলাকে ভুলতে পেরেছ, আমি কিভাবে রাতুলকে ভুলে যাবো তুমিই বলো
–(নিশ্চুপ)
–রিফাত তুমি খুব ভালো ছেলে তাই আমি চাই না তুমি এখন আমাকে ভালোবেসে পরে কষ্ট পাও
–তোমার কথা শেষ হলে আমি একটা কথা বলি
–হুম বলো
–ভবিষ্যৎ এ তুমি রাতুলের কাছে চলে যাবে এইটা ভেবে তো আমি তোমাকে এখনি ছেড়ে দিতে পারবো না, এখন আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি তেমনই ভালবাসবো পরে যদি আমার ভাগ্যে কষ্ট লিখা থাকে তাহলে কষ্ট পাবো কিন্তু ভবিষ্যৎ এর ভাবনা ভেবে বর্তমানে নিজেকে কষ্ট দিতে পারবো না আর আমার হাসি কষ্টের সাথে আমার পুরো পরিবারের হাসি কষ্ট জরিয়ে আছে তাই আর কখনো তোমাকে ভুলে যেতে বলোনা
–তারমানে এতোক্ষণ অযতাই বকবক করেছি
–হতে পারে

ওর সাথে অযতা বকবক করতে ইচ্ছে হচ্ছে না খাটে এসে শুয়ে পড়লাম সবসময় রাতুল রাতুল করে ভালো লাগে নাকি নিজের বউয়ের মুখে অন্য ছেলের নাম শুনতে
–এইযে রিফাত সাহেব ভুলে গেছেন নাকি (পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আলিফা কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
–কি ভুলবো
–তোমার তো সোফায় ঘুমানোর কথা
–হুহ সখ কতো বউ রেখে প্রতিদিন গিয়ে সোফায় ঘুমাবো খেয়ে কাজ নেই তো
–তুমি সোফায় যাবে কিনা
–এতো রেগে যাচ্ছ কেন যাচ্ছি তো (এই রাতের বেলা রাগানোর চেয়ে সোফায় ঘুমানোই ভালো তাই ভদ্র ছেলের মতো এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম)
–আমার রাগ কে তাহলে ভয় পাও
–এমন ডাইনীকে সবাই ভয় পাবে
–কি বললে আমি ডাইনী
–একদম না আমি তো বলেছি আগামীকাল থেকে এই সোফা আর আমাদের রুমে থাকবে না
–থাকবে না কেন
–কেউ কি জেনেশুনে সতিন ঘরে রাখতে চায়
–সোফা তোমার সতিন
–অবশ্যই এইটা আছে বলেই তো আমাকে তোমার থেকে এতো দূরে থাকতে হয়
–ছেলেদেরও সতিন হয় জানতাম না
–আসলেই তো সতিন তো হয় মেয়েদের, আচ্ছা তাহলে ছেলেদের কি হয় রাগিণী
–আবার রাগিণী ডাকছ
–বলোনা ছেলেদের কি হয়
–জানিনা ঘুমুতে দাও আর একটাও কথা বলবা না
–ওকে
সোফায় শুয়ে শুয়ে রাগিণীর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে দেখতে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে কে যেন চিৎকার করে ডাকলো আমাকে তাড়াতাড়ি উঠে বসে পাশে তাকিয়ে দেখি ছোটমা
–ছোটমা এভাবে চিৎকার করে কেউ ডাক দেয় আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
–তো কি করবো তোর বউ ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে আর তুই এখানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস
–কি রাগিণী কাঁদছে
–রাগিণী কে
–তোমাদের বউমা, কিন্তু ও কাঁদছে কেন
–নিচে গিয়ে নিজেই শুন কিন্তু তুই সোফায় কেন বলতো
–তোমার কি মনে হয় তোমাদের বউমা অন্য কাউকে ভালোবাসা সত্যেও আমাকে ওর পাশে জায়গা দিবে
–শুন বিয়ের আগে এমন অনেক কিছুই থাকে এখন ও তোর বউ তাই তোর অধিকার তোকে নিজেই বুঝে নিতে হবে
–এসব অধিকার পরে দেখা যাবে আগে নিচে চলো রাগিণী কাঁদছে কেন গিয়ে দেখি
–চল

ড্রয়িংরুমে এসে তো আমি অবাক আলিফা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সবাই কান্না থামানোর চেষ্টা করছে আব্বু মুখ গোমরা করে বসে আছেন
আমি: আব্বু কি হয়েছে
প্রিতি: সেটা তো তুমিই ভালো জানবে
আমি: মানে
আব্বু: তুই বউমার গায়ে হাত তুলেছিস কোন সাহসে
আমি: মানে
আব্বু: তুই বউমাকে থাপ্পড় দিয়েছিস কেন
আমি: কখন আর কে বললো
আলিফা: আমি বলেছি রাতেই তো থাপ্পড় দিলে আমি আব্বুর কাছে যাবো বলাতে
আমি: কি বলছ এসব
ছোটমা: নিয়ম অনুযায়ী তো আজ তোদের যেতেই হবে তাই বলে তুই ওর গায়ে হাত তুলবি দুদিন মাত্র হয়েছে বিয়ের আ….
আমি: ছোটমা তুমি বিশ্বাস করছ এইটা
আব্বু: বউমা বলেছে বিশ্বাস না করার কি আছে
আমি: ওহ তোমাদের বউমাই এখন সব ঠিক আছে, আলিফা রুমে এসো

রুমে এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছি ওকে তো জিজ্ঞেস করতেই হবে কেন মিথ্যে কথা বললো
–কেমন দিলাম রিফাত চৌধুরী (রুমে এসেই হাসতে শুরু করলো, ইচ্ছে হচ্ছে একটা থাপ্পড় দিয়ে ওর মিথ্যে কথাটা সত্যি করে দেই কিন্তু পারবো না ভালোবাসি যে)
–সবার সামনে তোমার মুখটা যা লাগছিল না হিহিহি
–আলিফা কেন বললে এমন মিথ্যে কথা
–তুমি আমাকে আব্বুর কাছে যেতে দিচ্ছ না আর ওখানে না গেলে আমি রাতুলের সাথে কথা বলতে পারবো না তাই মিথ্যে বলেছি যেন আজই যেতে পারি, জানো তো আমি রাতুলের জন্য হাজারটা মিথ্যে কথা বলতে পারি
–আমি তো বলেছিলাম আজ নিয়ে যাবো আর তুমি কিনা… তুমি তো বুঝতে পারছ না তোমার একটা মিথ্যে আমাকে সবার কাছে কতোটা নিচে নামিয়ে দিয়েছে, সবাই ভাববে আমি তোমাকে নিলার থেকে কম ভালোবাসি তাই গায়ে হাত তুলতে পেরেছি কিন্তু আমি তো তোমাকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসি নিলাকে যতোটা ভালোবাসতাম, হ্যাঁ প্রথম আমি তোমাকে নিলার থেকে ছোট করে দেখেছি কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি নিলা তো বেঁচে নেই ও আমার মনের মধ্যেই আছে আ….
–শুনো এসব ভালোবাসার কথা আমাকে বলে লাভ নেই রাতুলের জন্য এমন মিথ্যে আমি হাজারটা বলতে পারবো
–আলিফা চুপ কর আর একবার রাতুল নামটা নিলে কিন্তু
–কি করবে হ্যাঁ আমি ভয় পাই নাকি তোমাকে
–একটা থাপ্পড় দিয়ে তোমার মিথ্যে কথাটা সত্যি করে ফেলবো
–হুহ পারবে না
–ওকে
–কি হলো এভাবে আসছ কেন আমার দিকে
–(কোনো কথা না বলে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর ও ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে, পিছাতে পিছাতে ও গিয়ে বিছানায় পরে গেলো আমি ওর পাশে শুয়ে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য গালে হাত রাখলাম আলিফা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো, ওর মুখটা আমার কাছে এনে ওর ঠোঁট দুইটায় আমার ঠোট ডুবিয়ে দিয়ে অনেক সময় নিয়ে চুষলাম তারপর ছেড়ে দিলাম)
–রিফাত এইটা কি করেছ
–কেন ব্যথা পেয়েছ
–কিস করে জিজ্ঞেস করছ ব্যথা পেয়েছি কিনা
–আসলে তুমি টিকি বলেছ আমি তোমাকে থাপ্পড় দিতে পারবো না তাই তো কিস দিলাম
–রিফাত
–চিৎকার কর না সোনা তুমি এখনো আমার নিচে শুয়ে আছ চিৎকার করলে আবার কিস করবো
–অসভ্য ছেলে কোথাকার
–তুমি আমার বউ তোমাকে আদর করলে অসভ্যতামি হবে না বুঝেছ রাগিণী (হাত দিয়ে ওর কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিতে চাইলাম রাগ দেখিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিলো)
–রিফাত আমার উপর থেকে সরো আমি উঠবো
–হুম সরছি তবে ভবিষ্যৎ এ আমার সামনে রাতুল নামটা নিতে ভেবে নিও
–নিলে কি করবে তুমি
–এখন যা করলাম তাই করবো এর চেয়ে বেশি কিছুও করতে পারি
–রিফাত ভালো হচ্ছে না কিন্তু
–তোমাকে তো মারতে পারবো না ভালোবাসি তাই এমন রোমান্টিক অত্যাচার করছি এইটা তো ভালোই হচ্ছে
–সরো (আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো)
–বাবার বাড়ি যাওয়ার খুব সখ তাই না যাও নাশতা করে এসে রেডি হয়ে নাও
–আমি নাশতা করবো না এখনি যাবো
–ওকে

আলিফা ফ্রেশ হতে চলে গেলো আমি নিচে আসলাম সবাই তো আমাকে খারাপ ভাবছে দেখি আব্বুর রাগটা ভাঙাতে পারি কিনা, নিচে এসে দেখি আব্বু নাশতা না করে এখনো মুখ গোমরা করে বসে আছেন
আমি: আব্বু নাশতা করবে না
আব্বু: না তুই আগে জবাব দে বউমার গায়ে হাত তুলেছিস কেন
আমি: আব্বু আলিফা মিথ্যে বলেছে যেন সবাই ওকে ওখানে যেতে দাও আর ওখানে গেলে ও…
আব্বু: থেমে গেলি কেন বল
আমি: ওর বাবার বাসায় গেলে রাতুলের সাথে কথা বলতে পারবে আর এজন্যই ও মিথ্যেটা বলেছে
আব্বু: কি বলছিস
আমি: আব্বু বিশ্বাস করো আমি আলিফাকে ততোটাই ভালোবাসি যতোটা ভালোবাসতাম নিলাকে তোমরা আমাকে ভুল বুঝছ
আব্বু: ঠিক আছে নাশতা করে বউমাকে নিয়ে চলে যা
আমি: আলিফা রেগে আছে এখন কিছুই খাবে না আমি খাই কিভাবে, ও তো রেডি হচ্ছে বাইরে কোথাও খেয়ে নিবো
আব্বু: ঠিক আছে

রুমে এসে দেখি আলিফা রেডি, বাব্বাহ রাতুলের সাথে কথা বলার জন্য কি টান এতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেছে
–রিফাত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
–প্রথম প্রথম শশুড় বাড়ি যাচ্ছি এতো তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারবো না
–কেন তুমি কি মেয়ে যে সাজুগুজু করতে হবে
–তুমি তো মেয়ে তুমি সাজুগুজু করনি কেন
–তাহলে দেরি হয়ে যাবে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে
–তুমি না সাজলে আমি নিয়ে যাবো না
–রিফাত এখন কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে
–ওকে একটু অপেক্ষা করো আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচ্ছি
–হুম

রেডি হয়ে আলিফাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম, সবাই আমাদের বিদায় দেওয়ার জন্য বসে আছে মনে হচ্ছে আমি সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি, ওরা তো জানেনা আমি আগামীকালই চলে আসবো
ছোটমা: সাবধানে যাস আর দুদিন থেকেই চলে আসিস
আমি: আগামীকাল সকালেই আমি চলে আসবো
আলিফা: মানে
আমি: ভয় নেই তোমাকে রেখে আসবো যতো খুশি রাতুলের সাথে কথা বলে নিও (ওর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললাম)
রিয়ান: ভাইয়া কি ফিসফিস করছ
আমি: কিছুনা
আব্বু: বউমাকে নিয়েই একেবারে ফিরিস
আমি: আগে যাই তারপর নাহয় এসব দেখা যাবে

গাড়ির কাছে আসতেই আলিফা পিছনে গিয়ে বসতে চাইলো কি আজব মেয়েরে বাবা
রিয়ান: ভাবি তুমি পিছনে বসছ কেন
আমি: আমাকে ড্রাইভার বানানোর ধান্দা আর কি
আলিফা: মানে
আমি: আমি ড্রাইভ করবো আর তুমি পিছনে বসবে তাহলে তো লোকে আমাকে ড্রাইভার ভাববে, শুনো বউয়ের ড্রাইভার হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই সামনে এসে বসো (আলিফা আব্বুর দিকে তাকালো আমার কথা শুনে সবাই হাসছে তাই ও আর কিছু বলতে পারলো না চুপচাপ সামনে এসে বসলো)

সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম, একটু দূর এসেই গাড়ি থামিয়ে দিলাম
–রিফাত কি হলো এভাবে হঠাৎ গাড়ি থামিয়েছ কেন
–তুমি এতো দূরে বসে আছ কেন আমার পাশে এসে আমার কাধে মাথা রেখে বস নাহলে গাড়ি আর চলবে না
–আমি আগেই বুঝেছিলাম তুমি এমন কিছু করবে তাই তো পিছনে বসতে গিয়েছিলাম
–তুমি যে আমাকে ভালোবাস প্রমাণ হয়ে গেছে
–মানে
–ভালো না বাসলে কি আর আগে থেকে আমার মনের কথা বুঝে যেতে (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে আমার কাধে মাথা রেখে বসলো)

আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে আর আমি মনের আনন্দে ড্রাইভ করছি…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৭

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

একনজরে আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আস্তে করে ওর কপালে আমার ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম তারপর ওকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরলাম…..

–ছাড়ো আমাকে (আলিফা ধাক্কা মেরে আমাকে সরিয়ে দিল)
–কি হল
–আমাকে জরিয়ে ধরেছ কেন
–এইটা কেমন প্রশ্ন তুমি তো আমার বউ
–কিসের বউ আমি মানি না এই বিয়ে আর আমি কাঁদছি বলেই আমাকে দুর্বল ভেবো না
–কি বলছ এসব বিয়ে মাননা মানে
–কতোবার বলবো আমি রাতুলকে ভালোবাসি
–ঠিক আছে আমিও দেখে নিবো রাতুল তোমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে কিভাবে
–মানে কি করবে তুমি
–জোর করবো তোমাকে এতে কোনো অপরাধ হবে না কারণ তুমি আমার বিয়ে করা বউ
–দেখ আমাকে একদম টাচ করবে না কিন্তু
–ওই আমি কি বলেছি আমি তোমাকে টাচ করে জোর করবো এতো নেগেটিভ ভাবনা কেন তোমার, শুনো তুমি যেদিন নিজে চাইবে সেদিনই আমি তোমাকে টাচ করবো তবে ভালোবাসবো সবসময় বুঝেছ রাগিণী
–আবার রাগিণী ডাকছ
–হ্যাঁ আর সবসময় ডাকবো
–উফফফফ তোমাকে আমি….
–আদর করবে তো নাও করো
–রিফাত
–চিৎকার করছ কেন সোনা আমি তো তোমার পাশেই আছি
–ধ্যাত (রাগ দেখিয়ে রুমে চলে গেলো)
–যতোই যাও আমি তোমাকে ছাড়ছি না রাগিণী আজ থেকে আমার নতুন ভালোবাসা দেখবে যে ভালোবাসায় রাগ, অভিমান, শাসন, জোর করা সবকিছু থাকবে এমনকি অত্যাচারও (জোরে জোরে বললাল যেন শুনতে পায়)
রাতুলের কথা শুনলেই এতো রাগ হয় কেন আমার তাহলে কি আমি আলিফাকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসি যতোটা ভালোবাসতাম নিলাকে, দুজনকে সমান ভালোবাসাই তো উচিত আমার কারণ নিলা আমার কাছে যেমন ছিল তেমন তো সবসময় থাকবে তাই বলে যাকে এখন ভালোবেসেছি তাকে কম ভালোবেসে অবহেলা করবো তাহলে তো আলিফার ভালোবাসাকে ছোট করা হবে, আলিফাকে আমি প্রথম দেখায় ভালোবেসেছি তাকে তো অবহেলা করতে পারিনা সে অন্য কাউকে ভালো বাসলেও না আজ থেকে আলিফা আমার সবকিছু হবে আর নিলা…. নিলার কথা ভাবতেই ওর মৃত্যুর কথা মনে পরে গেলো, আমার তো কিছুতেই মাথায় আসছে না যদি নিলার কোনো রোগ থাকবে আমাকে কেন বলেনি আর আমাকে নিয়ে যার এতো স্বপ্ন ছিল সে কেন বিয়ের দিন বিষ খেয়েছিল, উফফফফ মাথায় কিছুই আসছে না
–ভাইয়া (হঠাৎ প্রিতির ডাকে যেন বাস্তবে ফিরে আসলাম নিলার মৃত্যুটা আমার কাছে কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে তাই যখনি ভাবি কোথায় যেন হারিয়ে যাই)
–এই ভাইয়া কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–কিছু হয়নি
–নিচে চলো ছোটমা ডাকছেন
–হুম চল

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি সবাই বসে আছে
আমি: ছোটমা ডাকছিলে
ছোটমা: হ্যাঁ আমরা তো আগামীকাল চলে যাবো তাই তোকে ডে….
আমি: এতোদিন আমার থেকে দূরে থেকে হয়নি বুঝি এখন আবার চলে যেতে চাচ্ছ
চাচ্চু: যেতে তো হবেই নাহলে গ্রামের সবকিছু দেখাশোনা কে করবে
আমি: এসব আমি বুঝিনা তোমরা এখানেই থাকবে
আব্বু: ঠিক আছে ওরা থাকবে কিন্তু এক সপ্তাহ এর বেশি না
আমি: আব্বু এখনো কি তোমরা ভয় পাচ্ছ
আব্বু: উহু এখন তো আলিফা মা আছে আমার বিশ্বাস ওকে ভালোবেসে তুই ভালো থাকতে পারবি কিন্তু তোকে তো বুঝতে হবে ওদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে তাছাড়া গ্রামে তো নীলিমা একা একা আছে
আমি: হুম ওকে
প্রিতি: ভাইয়া ভাবি তোমাকে ডাকছে (বাব্বাহ্ রাগিণী হঠাৎ আমাকে ডাকছে কেন)
ছোটমা: বউমা ডাকছে যা রুমে যা
আমি: ওকে

রুমে এসে দেখি আলিফা কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে আশ্চর্য তো কোথায় যাবে ও
–আলিফা কোথায় যাবে
–আব্বুর কাছে
–মানে
–বাংলা কথা বুঝনা হিন্দিতে বলতে হবে নাকি
–এতো রেগে আছ কেন
–তো কি করবো
–কি হয়েছে তোমার
–আমি আব্বুর কাছে চলে যাবো আমাকে দিয়ে আসো
–বিকেল হয়ে এসেছে আজ যেতে হবে না আগামীকাল আমি নিয়ে যাবো
–আমি আজকেই যাবো
–ওকে তোমার রাতুলকে ফোন করে বলো তোমাকে যেন এসে নিয়ে যায়
–ইয়ার্কি করছ
–তুমিও তো ইয়ার্কি করছ বিয়ের পরদিনই ব্যাগ গুছিয়ে বলছ বাবার কাছে চলে যাবে
–আমি মুটেও ইয়ার্কি করছি না আমি আব্বুর কাছে চলে যাবো আর আসবো না
–তোমার কথা মতো তো সব হবে না সোনা আমি যা বলি তাই হবে, তুমি আগামীকাল যাবে দুদিন থেকে আবার চলে আসবে (ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম)
–বলেছি যখন আজকে যাবো তাহলে আজকেই যাবো (আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো, আমি কি এতো সহজেই ছেড়ে দিব নাকি ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম)
–রিফাত ছাড়ো আমাকে
–আগে বলো আমার কথা মতো চলবে তাহলে ছেড়ে দিবো
–তোমার কথা মতো আমি চলতে যাবো কেন
–ওকে (আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
–আচ্ছা তোমার কথা শুনবো এবার ছাড়ো আমি ব্যাথা পাচ্ছি (ছেড়ে দিলাম যেহেতু সব কথা শুনবে বলেছে)
–কথা না শুনলে এভাবে রোমান্টিক ভাবে অত্যাচার করবো তোমার উপর বুঝেছ রাগিণী বউ হাহাহাহা
–তুমি কি জানো হাসলে তোমাকে দেখতে একদম….
–সুন্দর লাগে দেখতে তাই তো যাক আমার হাসির উপর তো ক্রাশ খাইছ
–হাসলে তোমাকে একদম বানরের মতো দেখায় আর আমার রুচি এতো খারাপ না যে এমন বানর মার্কা হাসি দেখে ক্রাশ খাবো (হাসতে হাসতে চলে গেলো কিন্তু কি বলে গেলো এসব আমার হাসি বানর মার্কা, দুর বলুক তাতে কি আমারই তো বউ)

রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ আলিফা এসে পাশে দাঁড়ালো হাতে কফির মগ
–রাগিণী কফি কার জন্য
–এখানে দুজন আছি কফিও দুই মগ তাহলে বুঝে নাও কার জন্য হতে পারে
–কি ব্যাপার বলতো, রাগিণী বললাম রাগ করলে না আবার কফিও বানিয়ে খাওয়াচ্ছ মতলব কি ভালোবেসে ফেলছ নাকি
–রিফাত….
–ভালোবাসবে জানতাম কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে বাসবে জানতাম না
–সবকিছুতে এতো বেশি কথা বলো কেন আমার মন ভালো নেই তাই রাগিণী ডাকাতে রাগ করিনি
–কেন কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে তোমার
–না রাতুলের কথা খুব মনে পড়ছে কয়েকদিন ধরে তো কথ….
–ঠাস (যেও কফির মগে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম মোডটাই নষ্ট করে দিল, কফির মগ ছুড়ে ফেলে দিলাম)
–কি হল কফির মগটা এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলে কেন
–বেশ করেছি
হনহন করে হেটে বাসার বাইরে চলে আসলাম, মাথাটাই নষ্ট করে দিল সবসময় শুধু রাতুল রাতুল, বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও পুরনো প্রেমিককে ভুলতে পারেনি

বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তাই রাস্তায় আনমনা হয়ে হাটছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, প্রিতি ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–ভাইয়া কোথায় তুমি
–রাস্তায়
–রাত দশটা বাজে আর তুমি এখনো রাস্তায় তাড়াতাড়ি বাসায় এসো
–রাখ আসছি

ফোন রেখে বাসায় চলে আসলাম, খাবার টেবিলে বসে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সবাই এখানে আছে আলিফা তো নেই
প্রিতি: ভাইয়া কাকে খুঁজছ
আমি: আলিফা কোথায়
প্রিতি: ভাবিকে অনেক বার ডেকেছি কিন্তু আসেনি খিদে নেই বলছে
আব্বু: তোরা কি ঝগড়া করেছিস (এখন কি বলি ওর বানানো কফি ছুড়ে ফেলে দিয়েছি বললে আব্বু তো বকবে)
আব্বু: কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন
ছোটমা: আমি বুঝেছি ওকে আর বলতে হবে না, রিফাত তুই খাবার রুমে নিয়ে যা আলিফাকেও খেতে বলিস
আমি: হুম
খাবার নিয়ে রুমে আসলাম আলিফা বিছানামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে
–খাবার রেখে যাচ্ছি উঠে খেয়ে নাও
–(নিশ্চুপ)
–আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন দেখি খেয়ে নিয়েছ
–আমি খাবো না
–আমি যেমন ভালোবাসতে জানি তেমন শাসনও করতে জানি যদি না খাও আগে কফির মগ যেভাবে আছাড় দিয়েছিলাম তোমাকেও সেভাবে আছাড় দিবো (ভয় দেখিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

ফ্রেশ হয়ে এসে যা দেখলাম আমি হাসবো নাকি অবাক হবো ভেবে পাচ্ছিনা, আলিফা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি খাচ্ছে, ভয়ে এতো তাড়াতাড়ি খাচ্ছে যে বিষম খেতে পারে সে খেয়ালও নেই
–আরে আস্তে খাও এতো ভয় পাচ্ছ কেন আমি তো এমনি তোমাকে ভয় দেখিয়েছিলাম তুমি এতো ভয় পেয়ে যাবে ভাবিনি
–(নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এতো রাগি মেয়ে সামান্য কথায় এতো ভয় পেয়ে গেলো কেন বুঝলাম না)
–আচ্ছা বাবা সরি আমি তো মজা করে বলছি
–(নিশ্চুপ)
কি আর করার বাকি খাবার আমি নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিলাম, আলিফা কোনো রাগ না দেখিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো

আমি খেয়ে এসে দেখি আলিফা মন খারাপ করে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, আমিও গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম
–আলিফা প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না আমি মজা করে বলেছিলাম
–(নিশ্চুপ)
–আচ্ছা তুমি এতো রাগি একটা মেয়ে সামান্য কথায় এমন ভয় পেয়ে গেলে কেন
–কথাটা তো নতুন শুনিনি আরো অনেকবার শুনেছি তাই
–মানে
–খুব ছোটবেলায় আম্মু আব্বুকে হারিয়েছি তো তাই ছোট থেকেই এতিমখানায় বড় হয়েছি, এতিমখানায় তো আর সবাই এক হয় না কেউ ভালোবাসতো আবার কেউ এভাবেই ধমক দিয়ে খেতে বলতো কথা না শুনলে….. (আর বলতে পারছে না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে আমিও কান্না করছি, যাকে এতো ভালোবাসি তাকে নিজের অজান্তেই আজ এতো কষ্ট দিয়ে ফেললাম, সত্যিই তো মেয়েটা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে কারো ভালোবাসা পায়নি আর আমি কিনা…)
–আলিফা আগের সবকিছু ভুলে যাও এখন তো তোমার সব আছে এই পরিবার তো তোমারই
–(নিশ্চুপ)
–এখনো রেগে আছো (ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম আর কানের কাছে আস্তে করে বললাম….)
–আর কখনো এমন হবে না এইযে কান ধরেছি আর কখনো তোমাকে ধমক দিবো না এবার অন্তত একটু হাস (কান তো আমার ধরিনি ধরেছি আলিফার কান তাতেই পাগলীটা ফিক করে হেসে দিলো)
আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছি ও রাতের আকাশ দেখছে আর আমি ভাবছি এই পাগলীটাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না অনেক ভালোবাসবো ওকে অনেক…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৬

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কি এমন লিখা আছে যা আমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বলছেন ছোটমা, তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা খুলে পড়তে বসলাম…..

ডায়েরিটায় অনেক ধুলো পরে আছে আমি তো ভাবতেই পারছি না নিলার ডায়েরি এভাবে স্টোররুমে ধুলোর মধ্যে পরে ছিল, ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু আমার আর নিলার নাম লিখা পাগলীটার পাগলামি দেখে খুব হাসি পাচ্ছে
দ্বিতীয় পৃষ্ঠা:
রিফাত তোমার মনে আছে আমি যখন তোমাদের বাসায় প্রথম গিয়েছিলাম তুমি আমাকে গেয়ো ভূত বলতে সে নিয়ে কতো ঝগড়া করতাম দুজন তারপর আস্তে আস্তে ভালো লাগা আর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা, আজ আমি তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি কিন্তু এই ভালোবাসা নিয়ে আমার বড্ড ভয় হচ্ছে, জানিনা কিসের এক অজানা ভয় কাজ করছে আমার মনে, শুধু মনে হচ্ছে আমরা এক হতে পারবো না, রিফাত সত্যিই কি আমরা এক হতে পারবো না (যতো পড়ছি ততো অবাক হচ্ছি এতোই যখন ভালোবাসত আমাকে তাহলে সেদিন এমন করেছিল কেন নিলা)

তৃতীয় পৃষ্ঠা:
রিফাত তোমার বউ হওয়ার অনেক ইচ্ছে আমার পারবো তো আমি তোমার বউ হতে (চোখ থেকে পানি পড়ছে বুঝতে পারছি না যদি নিলার আমার বউ হবার স্বপ্ন ছিল তাহলে সেদিন বউ সাজেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল কেন)

চতুর্থ পৃষ্ঠা:
আব্বু আর চাচ্চুকে আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে শুনেছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমাদের বিয়েটা হবে না কারণ ততো দিন আমি মনে হয় বাঁচবো না, রিফাত যদি কখনো ডায়েরিটা তুমি পাও তাহলে আমার সব কথা গুলো রেখো, এখন আমি কান্নার জন্য লিখতে পারছি না পরে আবার সবকিছু লিখে রেখে যাবো (কিসের ভয় ছিল ওর মনে আর বাঁচবে না বলছিল কেন তাহলে কি ওর কোনো বড় ধরণের অসুখ ছিল কিন্তু নিলা তো….)
তাড়াতাড়ি পৃষ্ঠা উল্টাতে শুরু করলাম কিন্তু কিছুই তো আর লেখা নেই, একদম শেষের দিকে কিছু লেখা আছে….

শেষ পৃষ্ঠা:
রিফাত আমি যে ভয় পেয়ে ছিলাম তাই হতে চলেছে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে একা রেখে যেতে চাই না আমি তোমার বউ হতে চাই তোমার সাথে আর কিছু দিন সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে চাই।
সব স্বপ্ন সত্যি হয় না রিফাত তাই আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি এবার তোমার সবকিছু মেনে নেওয়ার সময় এসেছে, আমি এই ডায়েরি তোমার হাতে তুলে দিতে পারবো না যদি কখনো তুমি পাও তাহলে আমার শেষ কথাগুলো রেখো।
আমি যখন থাকবো না তুমি একদম ভেঙে পড়বে না তুমি ভালো একটা মেয়ে বিয়ে করে নিবে, আর হ্যাঁ আমাকে যেমন ভালোবাস সেই মেয়েকে ততোটাই ভালোবাসবে কখনো ওকে আমার থেকে ছোট ভাববে না।
সে যদি তোমাকে ভালো না বাসে তাহলে তুমি ভালোবেসে তার থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিবে আর…..
আলিফা: রিফাত (হঠাৎ আলিফার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে নিলাম)
আলিফা: তুমি এখানে এসে বসে আছ আমি তোমাকে কতো খুঁজেছি
আমি: কেন
আলিফা: ওমা তুমি কাঁদছ কেন
আমি: কেন খুঁজেছ বল
আলিফা: আগে বল তুমি কাঁদতেছ কেন
আমি: জানতে হবে না তোমায়
আলিফা: হুম তোমার ফোনটা একটু দিবে আমি ফো….
আমি: কি করবে রাতুলকে ফোন দিবে তাই তো
আলিফা: সামান্য বিষয় নিয়ে এতো রেগে যাচ্ছ কেন
আমি: তো কি করবো তোমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিবো আর তুমি রাতুলের সাথে মন খুলে কথা বলবে
আলিফা: রিফাত তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন
আমি: বেশ করেছি
আলিফা: আমি রাতুলকে না আব্বুকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইলটা চেয়েছিলাম (আলিফা কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো আমি বোকার মতো ভেবেছিলাম ও রাতুলকে ফোন দিবে তাই এতো রেগে গিয়েছিলাম কিন্তু….)
আব্বু: রিফাত (আব্বু, ছোটমা, চাচ্চু সবাই একসাথে এসেছে কেন আমার কাছে)
আমি: হুম আব্বু বল
আব্বু: আসার সময় দেখলাম বৌমা কাঁদতে কাঁদতে রুমের দিকে যাচ্ছে কি হয়েছে
আমি: কিছু না
ছোটমা: কিছু না বললেই হলো কিছু না হলে মেয়েটা এভাবে কাঁদবে কেন
আমি: তোমরা দেখছি এখন আমার থেকে আলিফাকে বেশি ভালোবাস
চাচ্চু: এখানে কম আর বেশি ভালোবাসার প্রশ্ন না আলিফা আমাদের বৌমা আর ওর মধ্যে কিন্তু নিলার কিছু স্বভাব দেখছি তাই আমরা চাই ও আমাদের নিলার মতো….
আমি: হ্যাঁ ওর মধ্যে নিলার কিছু স্বভাব আছে তাই বলে ও নি….
আব্বু: রিফাত তুই তো নিজেই ওকে পছন্দ করেছিস ওর মধ্যে নিলার স্বভাব আছে বলে আর তুই তো আমাকে বলেছিলি ওর মধ্যে নিলাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাস
আমি: ভুল করেছিলাম আব্বু ও আলিফা ও কখনো আমার নিলা হতে পারবে না
ছোটমা: প্রথম দেখায় যাকে ভালোবেসে বিয়ে করে এনেছিস তাকেই এখ….
আমি: ছোটমা আমি ওকে ভালোবেসে ভুল করেছি আর বিয়ে করাটা আরো বড় ভুল হয়ে গেছে
ছোটমা: মানে কি বলছিস এসব ভালোবাসা ভুল হবে কেন
আমি: ছোটমা আমি এবারেও ঠকে গেছি আলিফা অন্য কাউকে ভালোবাসে আমি ওর মনের কথা না জেনে হুট করে বিয়ে করে অনেক বড় ভুল করেছি (কাঁদতে কাঁদতে বলে দিলাম এছাড়া উপায় নেই সবাই আলিফার মধ্যে নিলাকে খুঁজে নিচ্ছে যখন রাতুল চলে আসবে তখন তো আলিফা চলে যাবে সবাই তখন খুব কষ্ট পাবে তারচেয়ে ভালো এখনি বলে দেওয়া)
আব্বু: কি বলছিস এসব (আব্বু দফ করে বসে পড়লেন)
আমি: আব্বু যা হবার তো হয়ে গেছে তুমি এভাবে ভেঙে পরো না
আব্বু: আমার ছেলেটা আবারো একি কষ্ট পেলো ও এখন কি নিয়ে বাঁচবে
চাচ্চু: রিফাত ঠকেনি ভালোবাসা ভুল না
ছোটমা: হ্যাঁ ভালোবাসা ভুল না তুই আলিফাকে ভালোবাসিস তোর ভালোবাসা সত্যি হয়ে থাকলে আলিফা একদিন তোকেই ভালোবাসবে
আমি: কিন্তু ও যে এখন রাতুলকে ভালোবাসে
ছোটমা: তাতে কি হয়েছে তুই ওকে রাতুলের চেয়ে বেশি ভালোবাসবি আর আলিফা তোর স্ত্রী ওকে অন্য কারো হতে দিবি নাকি
আমি: আলিফা যদি আমাকে ভালো না বাসে
ছোটমা: চেষ্টা তো করে দেখ আর এতে তো কোনো দোষ নেই কারণ ও তোর স্ত্রী তাছাড়া নিলাও কিন্তু ডায়েরিতে লিখে গেছে তুই যে….
আব্বু: ডায়েরিতে যা আছে তোর ছোটমা আমাকে বলেছে তাই আমরা চাই নিলার কথা তুই রাখ তাছাড়া তুই তো আলিফাকে ভালোবাসিস
আমি: হুম
চাচ্চু: আলিফাকে নিয়ে যদি তুই সুখী হস আমরা অনেক খুশি হবো আলিফাকেই আমরা নিলা ভেবে নিবো
আমি: আলিফাকে আমি ভালোবাসি আর সবসময় বাসবো তার আগে তোমরা আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও
ছোটমা: কি
আমি: নিলা তো আমাকে ভালোবাসতো আমার বউ হবার স্বপ্ন দেখতো আর এইটা এই ডায়েরিতে আরো বেশি পরিষ্কার তাহলে ওর স্বপ্ন পূরণের দিন আমাদের বিয়ের দিন ও বউ সেজে বিষ খেয়েছিল কেন
চাচ্চু: জানিনা
আমি: এই ডায়েরিতে লিখা ওর কথাগুলো থেকে তো মনে হচ্ছে ওর কোনো বড় রোগ ছিল যা আমাদের কাউকে বলেনি, ও যদি অসুস্থই হবে তাহলে বিষ খেয়েছিল কেন
চাচ্চু: জানিনা এসব নিলা থাকলে হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো কিন্তু আমার মেয়েটাই তো বেচে নেই
আমি: নিলার মৃত্যুতে তো কোনো না কোনো রহস্য আছে
ছোটমা: এসব নিয়ে কথা বললে কি নিলা ফিরে আসবে তারচেয়ে ভালো যে বর্তমানে তোর জীবনে আছে থাকে নিয়ে ভাব তাকে নিলার মতো করে ভালোবাস তাতে তুই সুখে থাকবি আমরা খুশি হবো নিলার আত্মাও….
আমি: ছোটমা মন খারাপ করো না আজ থেকে আলিফা আমাদের নিলা কিন্তু তোমরা রাতুলের কথা যে জানো এইটা ওকে বুঝতে দিও না আমি আলিফার ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করবো
ছোটমা: রুমে যা মেয়েটা হয়তো কাঁদছে
আমি: হুম

রুমে এসে দেখি আলিফা কোথাও নেই কোথায় গেলো মেয়েটা, হঠাৎ বারান্দা থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম তারমানে রাগিণী বারান্দায় আছে, আস্তে আস্তে গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম কিন্তু আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে তাই আমিই কথা বলা শুরু করলাম
–আলিফা
–হুম
–সরি
–লাগবে না
–সরি তো
–হুম
–এমন রাগিনী মেয়েকে কাঁদলে একটুও মানায় না
–আমাকে একদম রাগিণী ডাকবা না
–ঠিক আছে কান্না থামাও
–(নিশ্চুপ)
–আসলে আমি ভেবেছিলাম রাতুলকে ফোন করবে তাই রাগ উঠে গিয়েছিল
–কেন আমি রাতুলকে ফোন করলে তোমার রাগ উঠবে কেন
–ভালোবাসি তো
–কাকে
–তোমাকে
–তো
–হিংসা হয় রাতুলের কথা শুনলে
–হিংসা করে লাভ নেই আমি রাতুলকেই ভালোবাসি আর ও দেশে ফিরলেই আমি ওর কাছে চলে যাবো
–একদম রাতুলের নাম নিবা না আর যেন তোমার মুখে রাতুলের নাম না শুনি (ধমক দিয়ে বললাম যেও কান্না থামিয়েছিল এখন আবার শুরু করেছে)
–আলিফা তুমি বুঝছ না কেন আমি তোমাকে ভালোবাসি রাতুলের কথা শুনলে আমার রাগ উঠে যায়
–(নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে)
–আলিফা প্লিজ কিছু বলো
–আমি আজকেই আব্বুর কাছে চলে যাবো
–মানে
কোনো কথা না বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, এভাবে ধমক দেওয়া ঠিক হয়নি আগেও কষ্ট দিয়েছি কান্না থামাতেই এখন আবার কষ্ট দিয়ে ফেললাম, আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে ওর দুগালে হাত দিলাম সাথে সাথে ও আমার চোখের দিকে তাকালো, একনজরে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি আস্তে করে ওর কপালে আমার ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম তারপর ওকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরলাম…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৫

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

নীল ডিম লাইটের আলোতে আলিফার হাসি খুব সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে কোনো এক নীল পরী হাসছে, আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছি….

সকালে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হলো আমার উপরে পানি পড়ছে ঘুম ঘুম চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছি আব্বু এতো বড় বাড়ি বানালো এতো টাকা দিয়ে আর সেই বাড়ির ছাদ দিয়ে কিনা বৃষ্টির পানি পড়ে
–এই উপরে কি দেখছ (হঠাৎ কারো ধমকে পাশে তাকালাম আলিফা বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার যে এখন গুন্ডি একটা বউ আছে তারমানে এই পানি আলিফা….)
–কি ভাবছ
–তুমি এভাবে আমাকে ভিজিয়ে দিতে পারলে
–তুমি যদি রাতে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাতে পারো সকালে তো এমন কিছু করে প্রতিশোধ নেওয়া আমার প্রধান কাজ (ওর কথা শুনে অবাক হয়ে রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম, রাতে কিভাবে যে চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি ওকে বুকে নিয়েই….)
–এখন কি ভাবছ বলো রাতে আমাকে জরি….
–আচ্ছা আমি নাহয় ঘুমের মধ্যে তোমাকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তুমি কি করছিলে তুমি সরে গেলে না কেন
–আমিও তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সকালে উঠে দেখি আমি তোমার বুকে….
–একদম কান্না করবা না এতে আমার একার দোষ না আর যা হয়েছে ভালোই হয়েছে আসলে কি জানো প্রকৃতিও চায় আমরা একসাথে থাকি তাই তো আমাদের অজান্তেই….
–কি বললে
–সবসময় এতো রেগে যাও কেন আমি তো ফাজলামো করে বলেছি
–রিফাত তুমি কিন্তু বার বার ভুলে যাচ্ছ আমি রাতুলকে ভালোবাসি (সত্যিই তো আমি রাতুল এর কথা ভুলে গিয়েছিলাম এতো দুষ্টুমি করা আমাকে মানায়নি কিন্তু আলিফার সামনে আমাকে দূর্বল হলে চলবেনা)
–রিফাত কি ভাবছ
–ভাবছি তুমি যেহেতু সবসময় এতো রেগে যাও তাই তোমার আলিফা নাম বাদ দিয়ে অন্য একটা নাম দেওয়া প্রয়োজন
–মানে
–আজ থেকে তুমি রাগিণী আমি তোমাকে রাগিণী বলে ডাকবো
–রিফাত (ওরে বাবারে এক চিৎকার দিয়ে হাতের বালতি আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো আমার এখানে থাকা ঠিক হবে না কখন জানি আমাকে আছাড় মেরে দেয়, এক দৌড়ে সোজা নিচে চলে আসলাম)

প্রিতি: ভাইয়া তোমার শরীর এমন ভিজা কেন
আমি: কপালের দোষ
প্রিতি: মানে
আমি: তোর ভাবি এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে
প্রিতি: হিহিহি খুব ভালো করেছে
আমি: তুই হাসছিস
প্রিতি: হ্যাঁ ভাইয়া কারণ তোমাকে অনেক দিন পর এমন ভালো থাকতে দেখছি হাসতে দেখছি আমরা তো চাই তুমি সবসময় এমন হাসিখুশি থাকো আর এখন যেহেতু ভাবি এসেছে আমার বিশ্বাস তোমাকে সবসময় এমন হাসিখুশি রাখবে (যারা আমাকে সবসময় হাসতে দেখতে চায় তাদের কি করে বলি এবারেও আমি ঠকে গেছি আলিফা অন্য কাউকে ভালোবাসে, না না এই কথা কাউকে বলা যাবে না আব্বু শুনলে খুব কষ্ট পাবে আমাকে এখন থেকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে না পারলে অন্তত ভালো থাকার অভিনয় করতে হবে)
প্রিতি: ভাইয়া কি ভাবছ
আমি: হুম কিছুনা
প্রিতি: যাও ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেতে আসো আর ভাবিকে পাঠিয়ে দিও
আমি: ওকে

রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি আলিফার মাথা ঠান্ডা হয়েছে কিনা তখনি আলিফা আমাকে দেখে ডাক দিল
–চোরের মতো উঁকিঝুঁকি মারছিলে কেন
–তোমার যা রাগ ভয় হয় তাই
–হুহু যাও ফ্রেশ হয়ে আসো
–হুম
–আর শুনো প্রিতি বলছিল আজ নাকি বৌভাত এর অনুষ্ঠান হবে
–কোথায় আমি তো জানিনা
–আর জানতে হবেও না আমি এসব চাই না তুমি বলে দিবে এসব অনুষ্ঠান যেন না করে
–আজব তো কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি এখন তো বৌভাত করা প্রয়োজন নাহলে….
–নাহলে কি শরীফ চৌধুরীর বড় ছেলে বিয়ে করে ফেলেছে সেটা কেউ জানতে পারবে না তাই তো জানানোর প্রয়োজন নেই কারণ এই বিয়েটা বেশি দিন টিকবে না রাতুল আসলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব
–এভাবে কথা বলছ কেন আর বিয়ের পরদিনই ডিভোর্স এর কথা বলছ কেন
–রাতেই তো বলেছি আমি রাতুলকে ভালোবাসি এসব অনুষ্ঠান করার কোনো মানে হয় নাকি
–ঠিক আছে আমি না করে দিব
–হুম আর তুমি রাতুল এর কথাটা মাথায় রেখো প্লিজ ও আসলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব মনে রেখো
–হুম নিচে যাও প্রিতি ডাকছে
চোখের পানি আড়াল করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম

নাশতার টেবিলে বসে আছি সবাই আছে এখানে কিভাবে বলি অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই
সুমন: রিফাত তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন কিছু নিয়ে টেনশনে আছিস
আমি: হুম না তো
রিয়ান: ভাইয়া লুকাচ্ছ কেন বল কি হয়েছে
রিয়াদ: হ্যাঁ বল আমাদের থেকে লুকানোর কি আছে
আমি: আব্বু কোনো অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন নেই
আব্বু: কি বলছিস বুঝতে পারছিস তুই
আমি: হুম
আব্বু: বিয়েটা হুট করে হয়ে গেছে কাউকে জানাতে পারিনি এখন বৌভাত না করলে তো….
আমি: লাগবে না বলেছি যেহেতু লাগবেই না এইটা নিয়ে আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন নেই (রাগে একবার আলিফার দিকে তাকালাম সবার মতো আলিফাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, এখন অবাক হওয়ার কি আছে ওর জন্যই তো আব্বুর সাথে আজ রাগ দেখিয়ে কথা বলতে হয়েছে)
আব্বু: ঠিক আছে তুই রাগ করিস না আমি কোনো অনুষ্ঠান করবো না, একবার আমার রুমে আসিস
আব্বু নাশতা না করেই উঠে চলে গেলেন আমি বোবার মতো বসে আছি
প্রিতি: আব্বুর রুমে যেতে বলেছেন যাও
আমি: হুম

আব্বুর রুমে দাঁড়িয়ে আছি আজ আব্বুকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি জানিনা এখন আব্বু কি বলবেন
–রিফাত কি হয়েছে
–কই কিছু না তো আব্বু
–কিছু না হলে তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলতি না
–(নিশ্চুপ)
–দেখ আমি যে শুধু তোদের বাবা তা কিন্তু না আমি তোদের মা বাবা দুটুই আর সন্তানের কিছু হলে মা আগেই বুঝতে পারে তাই আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই বল কি হয়েছে (আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম কিভাবে বলবো আমি এবারেও ঠকে গেছি)
–রিফাত যখন তোর বলতে ইচ্ছে হবে আমাকে এসে বলিস কেমন
–হুম
ভাইয়া ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখ কে এসেছে (রিয়ান এসে হাসতে হাসতে বললো)
আমি: কে এসেছে
আব্বু: একবার গিয়ে দেখ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে
আমি: কি আব্বু
আব্বু: যা গিয়ে দেখ
রিয়ান আমার হাত ধরে টানতে টানতে ড্রয়িংরুমে এনে দাড় করালো, সামনে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম আব্বু আমাকে এতো বড় সারপ্রাইজ দিবে ভাবতেও পারিনি
চাচ্চু: কেমন আছিস বাবা
আমি: (নিশ্চুপ)
ছোটমা: কিরে বললি না কেমন আছিস
আমি: কেন এসেছ তোমরা
ছোটমা: আমাদের ছেলেটাকে দেখতে
আমি: সত্যিই কি তোমাদের ছেলেকে দেখতে আসছ নাকি তোমাদের মেয়েকে ভুলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে আমি কতোটা সুখে আছি সেটা দেখতে এসেছ
ছোটমা: আমরা তো সবসময় চেয়েছি তুই বিয়ে কর
আমি: আর তোমাদের মেয়েকে ভুলে যাই তাই তো
চাচ্চু: নিলাকে কখনো ভুলতে পারবি না জানি তাই বলে তোর জীবনটা একা কাটিয়ে দিবি সেটা তো হয়না তাই আমরা সবসময় চেয়েছি তুই বিয়ে করে নে
আমি: হ্যাঁ আজ বিয়ে করেছি তোমাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে তাই তোমরা তোমাদের বৌমাকে দেখতে এসেছ আর সেদিন যে চলে গিয়েছিলে আর একবারো আসার প্রয়োজন মনে করনি নিলা মারা যাওয়ার পর আমি কিভাবে বেচে ছিলাম সেটা জানার প্রয়োজনবোধ করনি তাই না
আব্বু: এতে ওদের কোনো দোষ নেই আমিই নিষেধ করেছিলাম ওদের আসতে তাই ওরা এই তিনবছর আসেনি
আমি: মানে
আব্বু: ওরা এখানে থাকলে ওদের দেখে তোর নিলার কথা বেশি মনে পড়তো তাই আমি ওদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম
আমি: বাহ্ ভালো তো তা এখন কি আমি নিলাকে ভুলতে পেরেছি
আব্বু: না আমিই ভুল ছিলাম ভেবেছিলাম ভুলতে পারবি
আমি: আব্বু আমার ভালোবাসা এতো ঠুনকো ছিল না যে….
আব্বু: বৌমা আসছে আমি চাইনা ও নিলার কথা জানুক।
আর কোনো কথা না বলে ছাদে চলে আসলাম।

ছাদের এক কোণে বসে আছি খুব কষ্ট হচ্ছে সবাই সবার মতো করে ভেবে নিয়েছিল আমি নিলাকে ভুলে যাবো আর এইটা ভেবে চাচ্চু ছোটমা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল ভাবতেই তো অবাক লাগছে
–রিফাত (হঠাৎ ছোট মার কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
–আমার সাথে কথা বলবি না
–কি বলবো
–ঠিক আছে তোর রাগ কমলেই আমার সাথে কথা বলিস এখন এইটা নে
–কি (তাকিয়ে দেখি ছোটমার হাতে একটি ডায়েরি দেখে মনে হচ্ছে পুরনো)
–এইটা নিলার ডায়েরি
–কি নিলার ডায়েরি (ছোটমার হাত থেকে কেড়ে আনলাম)
–হুম স্টোররুমে পরে ছিল জানতাম না সেদিন পেয়েছি তাই আসার সময় নিয়ে এসেছি
–ছোটমা তুমি এখন যাও আমি ডায়েরিটা পড়বো
–ডায়েরিটা আমি পড়েছি তাই আমি চাইবো ডায়েরিতে লিখা নিলার শেষ কথাগুলো তুই অক্ষরে অক্ষরে পালন কর
ছোটমার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম উনি আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন, কি এমন লিখা আছে যা আমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বলছেন ছোটমা।
তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা খুলে পড়তে বসলাম…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৪

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সেদিন যদি সব ঠিকঠাক হতো তাহলে আজ নিলা আমার পাশে থাকতো কেন সেদিন এমন হলো, আজ নিলাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি ওর শেষ কথা রেখেছি….

রিয়ান: ভাইয়া তুমি ছাদে এসে বসে আছ আর সবাই তোমাকে খুঁজছে
আমি: হুম একটু পর আসছি যা
রিয়ান: এতোক্ষণ ধরে ছাদে থেকেও হয়নি রাত প্রায় একটা বাজে চলো (এতোক্ষণ আকাশের তারাটা দেখতে গিয়ে কখন একটা বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি, বুঝবো কিভাবে নিলার কথা ভাবলে যে আর কিছুই মনে থাকে না আমার আর এতোক্ষণ তো আমি আকাশের নিলাকেই দেখছিলাম)
রিয়ান: ভাইয়া কি হলো চলো
আমি: হুম আসছি
রিয়ান: ভাইয়া এবার অন্তত রাতের আকাশে তারা দেখার অভ্যাস ছাড়ো কেন মিছিমিছি ভাবো ওই তারায় নিলা আপু আছে ভুলে যেও না এখন তোমার বউ আছে
আমি: তাতে কি হয়েছে বউ পেয়েছি বলে নিলাকে ভুলে যাবো শুন আলিফাকে আমি নিলার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারবো না শুধু নিলার পাশে একটুখানি জায়গা দিব ওকে
রিয়ান: ঠিক আছে এতো রেগে যাচ্ছ কেন তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো এবার নিচে চলো
আমি: হুম

নিচে এসে দেখি সবাই আমাকে খুঁজছে
রিয়াদ: কোথায় চলে গেছিলি
আমি: আব্বু কোথায়
প্রিতি: আব্বু রুমে রেস্ট নিচ্ছেন তুমি রুমে যাও ভাবি একা আছে
সাগর: এদিক নিয়ে তোর ভাবতে হবে না তুই রুমে যা
আমি: হুম

রুমের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি আলিফা আমার উপর খুব রেগে আছে এখন তো আমাকে একা পেয়ে সব রাগ জারবে, রুমে এসে চারদিকে চোখ বোলালাম আলিফা তো কোথাও নেই গেলো কোথায় মেয়েটা, হঠাৎ জানালার কাছে চোখ আটকে গেলো জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, আলিফাকে বউ সাজে সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর লাগছে ওকে তবে নিলার চেয়ে বেশি না নিলাকে তো বউ সাজে একদম পরীর মতো লেগেছিল
আলিফা: বিয়ের আগে তো আমার কথা শুনার সময় হয়নি আপনার এখন সময় হবে
আমি: আপনি এখনো কাঁদছেন
–কাঁদবো না তো কি করবো বিয়ের আনন্দে ডান্স করবো
–কি হয়েছে বলুন বিয়ে তো হয়েই গেলো এখনো রেগে আছেন আর এখনো কাঁদছেন কেন
–শুনুন আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি (কথাটা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না, তিনবছর আগে নিলা আমার সাথে বেঈমানি করেছিল কেন করেছিল আজো জানতে পারিনি আর আজ যাকে আঁকড়ে ধরে একটু ভালো ভাবে বাঁচতে চাইলাম সেও কিনা অন্য কাউকে ভালোবাসে, পৃথিবীতে কি আর কেউ নেই আমার সাথেই কেন এমন হয়)
–কি হলো চুপ হয়ে আছেন যে
–আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না
–আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমিও তো অন্য কাউকে ভালোবাসি
–বিয়ের আগে বললেন না কেন বিয়েটা ভেঙ্গে দিতাম
–সময় কোথায় ছিল হুট করে আমার বাসায় গেলেন আব্বুরও আপনাকে পছন্দ হয়ে গেলো আর বিয়েটা আজই হয়ে গেলো তাও আমি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনাকে কেউ না কেউ ডেকে নিয়ে যেতো তাই আর বলা হয়নি
–হুম এখন কি চান
–জানিনা
–জানিনা বললে তো হবে না বিয়ে হয়ে গেছে আগে জানতে পারলে নাহয় বিয়ে ভেঙ্গে দিতাম
–আগে বললেও এই বিয়েটা আমাকে করতে হতো কারণ আব্বু আমার কাছে কখনো কিছু চাননি শুধু এই বিয়েটা…..
–তাহলে তো দোষ আমার একার না আপনারও এই বিয়েতে ইচ্ছে ছিল
–কিসের ইচ্ছে আমি তো পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়েটা করেছি আপনি যদি হুট করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে না যেতেন তাহলে কি এতোসব হতো
–ওকে সব দোষ আমার এবার বলুন আপনি কি চান আমার কি করতে হবে
–আমি জানিনা আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর রাতুল বিয়ের কথা জানেনা জানলে কি করবে বুঝতে পারছি না
–রাতুলটা কে
–আমি রাতুলকেই ভালোবাসি
–ওহ
–কিভাবে কি হয়ে গেলো কি করবো এখন….
–খুব ভালোবাসেন রাতুলকে তাই না (মেয়েটা কিছুক্ষণ কেমন যেন অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো আমার দিকে)
–হুম অনেক ভালোবাসি আমার নিজের থেকেও বেশি (ওর চোখে পানি কি বলবো বুঝতে পারছি না, ওকে কি করে বুঝাই আমিও যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওর মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছি আমি ওকে আঁকড়ে ধরে বেচে থাকতে চাই)
–রাতুলকে জানাননি এখনো আপনার যে বিয়ে হয়ে গেছে
–জানানোর সুযোগ পেলাম কোথায়
–এখন জানিয়ে দিন
–ফোনটা তো বাসায় রেখে এসেছি
–ওহ তাহলে এখন কি করা যায় মানে আমাকে এখন কি করতে হবে
–রাতুল বাহিরে আছে সাতমাস পর দেশে ফিরবে আর ও ফিরে আসলে আমি ওর কাছে চলে যাবো
–হুম
–রাতুল ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা অভিনয় করে যাবো সবার সামনে
–আমি অভিনয় করতে পারবো না
–তাহলে আমি সুইসাইড করবো
–আরে আজব মেয়ে তো আপনি এখানে সুইসাইড এর কথা আসছে কেন
–আমার কথা মতো চলবেন বলুন নাহলে আমি সুইসাইড করবো আর আপনাকে ফাঁসিয়ে যাবো
–ঠিক আছে সুইসাইড করতে হবে না আমি শুনবো আপনার কথা
–আপনি আমাকে ভালোবাসেন
–এসব আর জেনে কি করবেন বাদ দিন না আপনি বরং আপনার আর রাতুল এর প্রেম কাহিনী বলুন
–এখন ভালো লাগছে না এসব বলতে
–ওকে তাহলে আমি শুয়ে পড়ি
–আরে খাটে শুচ্ছেন কেন আমি কোথায় ঘুমাবো
–কেন আমার পাশে
–মাথা খারাপ হয়ে গেছে এতোক্ষণ কি বললাম আপনাকে
–ওহ সরি আপনি সোফায় শুয়ে পড়ুন
–আমি সোফায় ঘুমুতে পারিনা
–তাতে আমার কি
–আপনি গিয়ে সোফায় ঘুমান
–সম্ভব না
–ওকে (আরে এই মেয়ে এমনভাবে আমার দিকে এগুচ্ছে কেন মনে হচ্ছে এখনি মেরে ফেলবে আমাকে)
–আরে কি করছেন এভাবে কিলাচ্ছেন কেন
–আপনি সোফায় ঘুমাবেন বলুন
–ওকে ঠিক আছে এবার থামুন
–হুম যান
–(বাপরে নিলা তো রাগি ছিল আর ও তো দেখছি পুরো গুন্ডি মেয়ে)
–এই মিনমিনিয়ে কি বলছেন
–কই কিছু না

কি আর করার সোফায় এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম নিজের বাড়ি নিজের রুম অথচ আমাকে সোফায় ঘুমাতে হচ্ছে, আলিফা ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো এখান থেকে ওকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ডিম লাইটের নীল আলোতে ওকে অসাধারণ লাগছে
–একটা কথা বলবো (হঠাৎ আলিফার কথায় চমকে উঠে ওর দিক থেকে চোখ ফেরালাম ও হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি যে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম)
–কি হলো বলবো
–হুম বলুন
–আপনি খুব ভালো আমরা বন্ধু হতে পারি
–(বউ থেকে বন্ধু হায়রে কপাল)
–কিছু বললে
–নাতো
–আমরা আজ থেকে বন্ধু এখন থেকে দুজন দুজনকে তুমি করে বলবো ঠিক আছে
–ওকে
–আচ্ছা তুমি কখনো কাউকে ভালোবাসনি
–বেসেছি তো এইযে তোমাকে
–আমার আগে কাউকে ভালোবাসনি (নিলার কথা মনে পড়ে গেলো ওকেই তো আমি ভালোবেসেছিলাম আর এখনো বাসি শুধু আলিফা…..)
–কি হলো বলছ না কেন
–হুম বেসেছিলাম এখনো ওকে ভালোবাসি
–নাম কি ওর
–নিলা
–ওকেই যখন এখনো ভালোবাস তাহলে আমাকে আবার ভালোবাস বলছ কেন আর আমাকে বিয়েই বা কেন করেছ নিলা কোথায়
–(মৃদু হাসলাম)
–কি হলো বল
–সময় হলে সব জানতে পারবে
–ওহ, আচ্ছা ওর সাথে তোমার কিভাবে দেখা হয়েছিল প্লিজ বলোনা
–তুমি যেদিন রাতুল এর সাথে তোমার প্রেম কাহিনী বলবে সেদিন নাহয় আমিও নিলার কথা বলব
–তুমি তো দেখছি আস্ত একটা…. (এইরে আবার রেগে গেছে)
–রেগে যাচ্ছ কেন
–তো কি করবো আমি বলতে বলেছি কিন্তু তুমি বলছই না
–আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম তখন কি তুমি বলেছিলে
–আমি বলিনি তো কি হয়েছে তোমাকে বলতে হবে
–সরি
–উফফফফ
–এই কি হচ্ছে বালিশ ছুড়ে মারছ কেন
–তোমাকে তো এখন আমার….
–কি আদর করতে মন চাইছে আসলে দোষটা তোমার না আজ তো আমাদের বাসররাত তাই আদর করার ইচ্ছে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক (দুষ্টুমি করে বললাম)
–রিফাত আমি কিন্তু তোমাকে খুন করে ফেলবো (যতো দুষ্টুমি করছি আলিফা ততো বেশি রেগে যাচ্ছে তাহলে আর একটু রাগালে দোষ কি)
–কেন ভুল কি বললাম আজ তো আমাদের বাসর রাতই আর সব স্বামীরাই বউয়ের প্রেমে খুন হতে চায় তাই চাইলেই তুমি আমাকে তোমার প্রেমে খুন করতে পারো
–রিফাত আমি কিন্তু খুব রেগে যাচ্ছি
–রাগ থেকে যদি হয় দারুণ কিছু তাহলে তো রাগই ভালো হাহাহা
–ছাড়াচ্ছি তোমার মাথা থেকে বাসর রাতের ভূত (ও দেখছি আমার কাছেই আসছে একটু বেশিই রাগিয়ে ফেললাম নাকি)
আলিফা এসে আমাকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো
–আলিফা কি করছ
–তোমার মাথা থেকে ভূত তাড়াচ্ছি
–আমই মনে হয় একমাত্র পুরুষ যে কিনা বাসররাতে বউয়ের হাতে মাইর খাচ্ছি
–তোমাকে তো মারাই উচিত এতোক্ষণ কি বলেছ এসব
–আমি তো দুষ্টুমি করেছি তোমাকে রাগানোর জন্য
–কেন আমাকে রাগাতে ভালো লাগে (ওর হাত থেকে বালিশটা কেড়ে নিয়ে ওকে আমার বুকের উপর শুয়ে দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম, আলিফা আমার চোখের দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে আছে)
–ইচ্ছে করেই তোমাকে রাগাই কারণ রাগলে তোমাকে খুব বেশি সুন্দর লাগে।
আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, নীল ডিম লাইটের আলোতে আলিফার হাসি খুব সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে কোনো এক নীল পরী হাসছে, আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছি…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৩

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

অনেক ভেবে নিলার চোখের পানি যেভাবে মুছে দিতাম সেভাবেই আলিফার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম….

আলিফার চোখের কাছে আমার হাত নিতেই ও রাগ দেখিয়ে সরে গেলো
–ওই কি করছেন মেয়ে মানুষের দুর্বলতা দেখলেই সুযোগ নিতে ইচ্ছে করে তাই না
–মানে কি
–যেই দেখলেন আমি কাঁদছি এমনি চোখের পানি মুছে দেওয়ার বাহানা নিয়ে আমাকে ছুতে চাইলেন
–আচ্ছা আপনি কি ঝগড়া করা ছাড়া থাকতে পারেন না
–কি বলতে চাইছেন আমি ঝগড়াটে মেয়ে
–না না আপনি খুব ভালো মেয়ে এবার দয়া করে ড্রয়িংরুমে চলুন সবাই অপেক্ষা করছে
–হুম যাবো তার আগে আমার কথা শুনোন আমি শুধু আব্বুকে কষ্ট দিতে পারবো না বলে বিয়ে করছি তা…
–ঠিক আছে আমি বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছি (খুব সহজে তো বলে দিলাম কিন্তু বুকের ভিতরটায় যে খুব কষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটাই যে এখন আমার বেচে থাকার শেষ ভরসা)
–না না আব্বু আপনাকে পছন্দ করেছেন বিয়েটা ভেঙে গেলে আব্বু ভাববেন আমি আপনাকে বলে ভেঙে দিয়েছি তখন উনি খুব কষ্ট পাবেন
–তাহলে বিয়েটা হচ্ছে
–হ্যাঁ কিন্তু
–আবার কি আরো কিছু বলার বাকি আছে
–হ্যাঁ আছে তো
–বিয়ের পরেই নাহয় শুনবো
ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো (রিয়ানের ডাক শুনে আর দাঁড়ালাম না আলিফাকে রেখেই ড্রয়িংরুমের দিকে চলে গেলাম)

সবাই বিয়ে নিয়ে কথা বলছে আমি গিয়ে রিয়ানের পাশে বসলাম, আজই যে বিয়েটা হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি
রিয়ান: ভাইয়া দেখেছ তোমার ভাগ্য কতো ভালো যাকে পছন্দ করেছ তার সাথেই বিয়েটা ঠিক হলো তাও আবার আজকেই
আমি: কিন্তু রিয়ান আমি যে আলিফাকে এভাবে সাদামাটা অবস্থায় নিতে চাই না সেদিনের মতো জাঁকজমক ভাবে নিতে চাই
রিয়ান: ঠিক আছে তুমি চাইলে আমি আব্বুকে বলে বিয়ের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেই দুদিনে সব করে ফেলবো
আমি: হুম ঠিক আছে
রিয়ান আব্বুর সাথে কথা বলতে একটু দূরে চলে গেলো, আমি বাসার বাইরে এসে দাঁড়ালাম নিলাকে খুব মিসস করছি চোখ দুটু বন্ধ করলাম তখনি আলিফা ডাক দিল
–এই যে
–হুম কিছু বলবেন
–বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছেন কেন
–আপনি আমার বাড়িতে এমন সাদামাঠা ভাবে যান তা আমি চাই না
–কিন্তু আমি এভাবেই যেতে চাই
–কেন
–আপনার মনে কি আমি খুশিতে নাচতে নাচতে আপনাকে বিয়ে করছি যে জাঁকজমক ভাবে বিয়ে করবেন
–আস্তে কথা বলুন বাসার ভিতরে সবাই আছে, আচ্ছা আপনি কি চেঁচিয়ে ছাড়া কথা বলতে পারেন না
–না পারিনা শুনুন বিয়ে আজকেই হবে আর এমন সাদামাঠা ভাবেই
–(একবার বলছে বিয়েই করবে না আবার বলছে আজকেই বিয়ে হতে হবে উফফফ কি যে চায় ও)
–ওই মিনমিনিয়ে কি বলছেন
–কই কিছু না তো
–আপনার বিয়ে করার খুব সখ তাই না যান আপনার আব্বুকে গিয়ে বলুন এখনি বিয়ের ব্যবস্থা করতে
–আপনি আমার উপর খুব রেগে আছেন কিন্তু কেন রেগে আছেন বলবেন প্লিজ
–কেন রেগে আছি আপনি বুঝতে পারছেন না হঠাৎ করে কোথা থেকে উড়ে এসে জোরে বসেছেন আমার জীবনে গতকাল একবার দেখা হলো আর আজকেই বিয়ে করতে চলে এসেছেন এসবের কোনো মানে হয় আর আব্বুর মাথাটাও গেছে কিছু বলতেও পারছি না
–দেখুন আপনার যদি এই বিয়েতে আপত্তি থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি জোর করে কারো ভালোবাসা পেতে চাই না
–আমার কথা তো আপনি শুনতেই চাইছেন না আসলে আ….
ভাইয়া আব্বু তোমাকে ডাকছেন (প্রিতির ডাকে আর দাঁড়ালাম না ভিতরে চলে গেলাম)

আব্বু আমার জন্য আলাদা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো জিজ্ঞেস করতে চান বিয়ে পিছিয়েছি কেন, এখন আবার কিভাবে বলবো যে বিয়েটা আজই হতে হবে
–রিফাত কি হয়েছে বিয়ে পিছাতে চাইছিস কেন
–আসলে আব্বু
–তুই তো আলিফাকে পছন্দ করেছিস তাহলে এখন আবার কি হলো
–কিছু হয়নি আব্বু আসলে আমি চেয়েছিলাম আলিফাকে নিলার মতো জাঁকজমক ভাবে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো
–ওহ এই কথা ঠিক আছে আমি বিয়ে পিছ….
–না আব্বু আলিফা চায় আজই বিয়েটা হউক আর ও এসব জাঁকজমক পছন্দ করে না
–রিফাত তোর কোনো কাজে কখনো বাধা দেইনি আজও দিচ্ছি না যা করিস ভেবে চিন্তে কর….
–আব্বু মনে হচ্ছে তুমি অন্যকিছু বলতে চাও
–হ্যাঁ আসলে আলিফাকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব রাগি তুই মানি….
–আব্বু তুমি হয়তো ভুলে গেছ নিলাও এমন রাগি মেয়ে ছিল
–ভুলিনি ঠিক আছে তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর বিয়েটা আজই হবে
–ওকে আব্বু

আলিফার পাশে বসে আছি আর আড়চোখে ওকে দেখছি আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই বিয়ে করতে চলে এসেছে একটা শাড়ী পর্যন্ত পরেনি আর ওরই বা দোষ কিসের মেয়েটা তো বিয়ের জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না আমি নিজেই তো আজ বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, দুই পরিবারের কথা মিলে গেলো আর আজকেই বি….
–মা কবুল বলো (হঠাৎ কাজী সাহেবের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো আলিফা কবুল বলতে চাইছে না কি করবো বুঝতেছি না আমি কি তাহলে ওর অমতে বিয়েটা করে ভুল করছি, আলিফাকে নিজের অজান্তেই কষ্ট দিচ্ছি না তো)
রিয়ান: ভাইয়া বার বার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ এদিকে তো বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলো (রিয়ানের ডাকে আলিফার দিকে তাকালাম কবুল তো বললো কিন্তু ওর চোখে পানি, ওর আব্বুকে ছেড়ে চলে যাবে এজন্য কাঁদছে নাকি অন্য কোনো কারণ, আলিফা তখন কি যেন বলতে চেয়েছিল প্রিতি ডাক দেওয়াতে আর শুনা হয়নি তাহলে কি ও বিয়েতে অন্য কোনো কারণে রাজি না)
প্রিতি: এই ভাইয়া কি হয়েছে
আমি: হুম কিছু না
আব্বু: সন্ধ্যা নেমে আসছে অনেক দূর যেতে হবে এখন বেরিয়ে পড়া উচিত
আলিফার আব্বু: এখনি চলে যাবেন
আব্বু: হ্যাঁ এখনি যেতে হবে নাহলে অনেক রাত হয়ে যাবে
আলিফার আব্বু: ঠিক আছে

আমরা সবাই গাড়িতে বসে আছি কিন্তু আলিফা আসতে চাইছে না ওর আব্বুকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদছে, প্রিতি ওকে আনার চেষ্টা করছে কিন্তু আসছে না ইচ্ছে হচ্ছে আমি গিয়ে নিয়ে আসি, যাক অবশেষে আলিফা গাড়ির কাছে আসলো প্রিতি ওকে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে অন্য পাশে গিয়ে বসলো, রিয়ান ড্রাইভ করছে আমি আড়চোখে আলিফাকে দেখছি এখনো কাঁদছে কাঁদুক এখন আর বাধা দিব না কিন্তু এর পর আর কখনো ওকে কাঁদতেও দিব না নিলাকে যেমন ভালো রাখতে চেয়েছিলাম ওকেও তেমন ভালো রাখবো
প্রিতি: ভাইয়া তোমার ভিতর থেকে কি সব রোমান্স চলে গেছে
আমি: মানে
প্রিতি: দেখছ ভাবি কাঁদছে কোথায় ভাবিকে জরিয়ে ধরে কান্না থামাবে তা না বাইরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছ
রিয়ান: আর বলিস না প্রিতি এই তিন বছরে ভাইয়া একদম পাল্টে গেছে
আমি: চুপ করবি তোরা
আব্বু: তুই বৌমাকে জরিয়ে ধরলেই তো ওরা চুপ হয়ে যায়
আমি: আব্বু তুমিও
আব্বু: হ্যাঁ আমিও কেন বাবা বলে কি মজা করতে পারবো না আর আমি কি শুধু তোদের বাবা বন্ধু না
আমি: তোমার মতো বাবা পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার আমাদের ভাগ্য ভালো যে তোমার মতো বাবা পেয়েছি
আব্বু: হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক হয়েছে এবার বৌমার কান্নাটা থামা (আমাদের কথা শুনে আলিফা সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে এমন বাবা হয়তো ও আর দেখেনি, আমি ওর দিকে তাকাতেই রাগ দেখিয়ে নিচের দিকে তাকালো কি করবো জরিয়ে ধরবো কিনা বুঝতে পারছি না যদি রেগে যায়, অনেক ভেবে আস্তে করে ওকে জরিয়ে ধরে ওর মাথাটা আমার কাধে রাখলাম ও সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে তাই ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম “প্লিজ আব্বুর সামনে এমন করো না তুমি যেমন তোমার আব্বুকে কষ্ট দিতে চাওনা তেমনি আমিও আমার আব্বুকে কষ্ট দিতে চাই না”
যাক এবার থেমেছে আমার কাধে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে

বাসায় ফিরতে রাত প্রায় নয়টা বেজে গেলো, বাসার সামনে এসে তো আমি অবাক পুরো বাসা সাজানো একদম বিয়ে বাড়ির মতো কিন্তু কে করলো এসব
আমি: আব্বু এসব কি
আব্বু: সারপ্রাইজ
প্রিতি: আব্বু কখন করালে এসব
আব্বু: রিফাত যখন বলেছিল এমনভাবে বিয়ে করতে চায় না তখনি ফোন করে সব করতে বলে দিলাম
আমি: আব্বু তুমি….
আব্বু: আগামীকাল আর একটা সারপ্রাইজ আছে
আমি: কি
আব্বু: তখনি নাহয় দেখবি এবার বৌমাকে নিয়ে ভিতরে চল
প্রিতি: আমি ভাবিকে নিয়ে আসছি তোমরা যাও
বাসার সবাই এখন আলিফাকে নিয়ে ব্যস্ত তাই আমি রুমে চলে গেলাম

রমে এসে আবার অবাক হলাম দুই ফাজিল বাসরঘর সাজাচ্ছে
আমি: তোদের কে খবর দিল
রিয়াদ: তোর মনে কি আমরা তোর বিয়ের খবর পাবো না
সাগর: তুই আমাদের তোর বিয়েতে দাওয়াত না দিলে কি হবে আঙ্কেল আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন
আমি: আব্বুই যে বলেছেন বুঝতে পেরেছি
রিয়াদ: বিয়ে করে ফেললি বললিও না
আমি: আসলে সবকিছু কিভা….
সাগর: রিফাত তোর কিছু বলতে হবে না আঙ্কেল আমাদের সব বলেছেন আর তুই দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছিস বিয়ে করেছিস এতেই আমরা খুশি
আমি: হুম
রিয়াদ: তো এখন কি করবি আমাদের সাহায্য কর তোর নিজের বাসরঘর তুইও সাজা হাহাহা
সাগর: ও এখন ভাবিকে ছেড়ে আমাদের সাহায্য করবে
আমি: থাম তোরা আমার ভালো লাগছে না একটু একা থাকতে চাই
রিয়াদ: রিফাত শুন
কারো কোনো কথা না শুনে ছাদে চলে আসলাম

ছাদের এক কোণে বসে চোখের জল ফেলছি আর সিগারেট টানছি, ঠিক তিনবছর আগে তো এমন একটা রাতই চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে বেঈমানি করেছিল, সেদিন যদি সব ঠিকঠাক হতো তাহলে আজ আমার পাশে নিলা থাকতো কেন সেদিন এমন হলো, আজ নিলাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি ওর শেষ কথা রেখেছি…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই চোখ দুটুকে আজ আর বাধা দিলাম না, একের পর এক সিগারেট খাচ্ছি আর চোখ দুটু সেই তারার দিকে তাকিয়ে অবাধ্যের মতো কেঁদে যাচ্ছে…..

–ভাইয়া
–হুম (সকালে প্রিতির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো চারদিকে তাকিয়ে দেখি অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে, রাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি)
–অনেক বেলা হয়েছে তুমি নিচে যাচ্ছ না দেখে রুমে আসলাম এসে দেখি তুমি রুমে নেই, আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না তুমি রাতে বারান্দাতেই যে ঘুমিয়েছ
–(মৃদু হাসলাম)
–ভাইয়া আর কতো তিনটা বছর এভাবে পার করে দিয়েছ প্লিজ এবার অন্তত নিজের কথাটা একবার ভাবো
–নিলা ছাড়া আমি আমার জীবন ভাবতে পারিনা
–এতো যে নিলা নিলা করো কই তুমি তো নিলা আপুর শেষ কথাটা রাখনি
–মানে
–ভুলে গেছ আপু তোমাকে শেষ কথাটি কি বলেছিল
–(নিশ্চুপ)
–বলেছিল তুমি যেন ভালো একটা মেয়ে বিয়ে করে সুখী হও তাতে আপুর আত্মা শান্তি পাবে কই তুমি তো আপুর শেষ কথাটা রাখনি এই তোমার ভালোবাসা
–(নিশ্চুপ)
–আর তুমি তো বলেছ সেই মেয়েটির মধ্যে নিলা আপুকে খুঁজে পেয়েছ তাহলে ওকে নিয়ে কি বাকি জীবনটা কাটাতে পারো না
–(নিশ্চুপ হয়ে ভাবছি সত্যি তো আমি নিলার শেষ কথাটা রাখিনি রাখার চেষ্টাও করিনি কখনো, এখন যেহেতু মেয়েটির মধ্যে আমি নিলার অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছি তাহলে ওকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো না কেন ওকে ভালোবাসতে পারবো না কেন)
–ভাইয়া প্লিজ নিলা আপুর শেষ কথাটা রাখার জন্য হলেও তুমি বিয়ে করো আমরা তোমাকে এভাবে আর দেখতে পারছি না আমাদের যে কষ্ট হয় তুমি বুঝনা
–মেয়েটি যদি আমাকে ভালো না বাসে
–তুমি ভালোবাসা আদায় করে নিবে, কি পারবে না অন্তত আমাদের জন্য প্লিজ
–মেয়েটি….
–ভাইয়া মেয়েটিকে আমরা খুঁজে বের করবো যেভাবে পারি বিয়েতে রাজি করাবো তুমি শুধু কথা দাও আগের মতো হাসি খুশি থাকবে
–হুম কথা দিলাম
–আমার লক্ষী ভাই এবার নাশতা খেতে চলো
–তুই যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
–ওকে

রুমে এসে ঢুকতেই নিলার ছবিটার দিকে চোখ পড়লো পাগলীটা সেই আগের মতোই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, আস্তে আস্তে গিয়ে ওর ছবির কাছে দাঁড়ালাম ওর ছবি দেখছি আর আনমনে হয়ে ভাবছি “আমি তোমার শেষ কথা রাখবো তবে তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিয়ে নয় তোমার পাশে তাকে একটুখানি জায়গা দিয়ে”
–ভাইয়া তাড়াতাড়ি আস (রিয়ানের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

নাশতা খেতে বসেছি তখনি প্রিতি বলে উঠলো
প্রিতি: আব্বু ভাইয়া বিয়ে করতে রাজি হয়েছে
আব্বু: সেই মেয়েটিকেই তো
আমি: আব্বু আমি মেয়েটির মধ্যে নিলাকে খুঁজে পেয়েছি তাই ওকে বিয়ে করে ওর মাঝেই নিলাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই
রিয়ান: হুম সাথে নিলা আপুর শেষ কথাটা রাখা হবে তোমার
আমি: তোর মনে আছে
আব্বু: আমাদের সবার মনে আছে তুই না বুঝে তিনটা বছর নষ্ট করেছিস সাথে নিলার আত্মাকে কষ্ট দিয়েছিস
আমি: হুম
আব্বু: তুই বললে আমরা আজই সেই এতিমখানায় যাবো
আমি: ঠিক আছে
রিয়ান: আব্বু আমরা সবাই যাবো মেয়েটি রাজি হলে একেবারে বিয়ের দিন ঠিক করে আসবো
আব্বু: ঠিক আছে নাশতা করে সবাই রেডি হয়ে নে
রিয়ান: ওকে

সবাই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম, গাড়িতে বসে আছি রিয়ান আর প্রিতি বকবক করছে কিন্তু আমার সেদিকে মন নেই, কেমন যেন এক অজানা ভয় করছে আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি রাজি হবে না, আমি দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসতে চাইছি এখন যদি ঠকে যাই তাহলে….
রিয়ান: ভাইয়া কি হয়েছে তোমার
আমি: কিছু না তো
রিয়ান: তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে, ভয় পেয়ো না ভাইয়া যেভাবে পারি আমরা মেয়েটিকে রাজি করাবো
আমি: হুম

এতিমখানায় এসে গাড়ি থামতেই আমার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গেলো, চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি মেয়েটিকে দেখার জন্য কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না
আব্বু: চল ম্যানেজারের সাথে আগে কথা বলি
রিয়ান: ঠিক আছে
আমি কিছু না বলে আব্বুকে অনুসরণ করে হাটতে লাগলাম

ম্যানেজার: আপনারা কোন মেয়েটির কথা বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না
রিয়ান: আরে খুব সুন্দর একটি মেয়ে আ….
আব্বু: রিয়ান তুই তো মেয়েটিকে দেখিসনি রিফাতকে বলতে দে, রিফাত বলতো মেয়েটি দেখতে কেমন
আমি: শ্যামলা বর্ণের একটি মেয়ে রাগি চোখ আর….
ম্যানেজার: রাগি চোখ…? আচ্ছা মেয়েটির সাথে আপনার কোথায় দেখা হয়েছিল
আমি: এই এতিমখানাতেই গতকাল দেখা হয়েছিল, মেয়েটি একটা ভিজা বিড়ালকে…..
ম্যানেজার: আর বলতে হবে না বুঝেছি আপনারা আলিফার কথা বলছেন
আমি: নাম তো জানিন….
ম্যানেজার: রাগি চোখের মেয়ে আর বিড়ালকে আদর করে এমন মেয়ে একটাই আছে এখানে, আসলে আলিফা উপরে খুব রাগি হলেও ভিতরের মনটা খুব ভালো এখানের পশু পাখিরা সব ওর বন্ধু বলতে পারেন
আব্বু: আলিফাকে কি একবার দেখতে পারি
ম্যানেজার: হ্যাঁ কিন্তু ও তো এখন এতিমখানায় নেই
রিয়ান: কোথায়
ম্যানেজার: একটু দূরেই ওর বাবার বাসা সেখানেই আছে ও
আব্বু: ঠিক আছে আপনি আমাদের ওর বাবার কাছে নিয়ে চলুন আমরা উনার সাথেই কথা বলবো
ম্যানেজার: ঠিক আছে

আলিফার বাসায় বসে আছি খুব ছোট্র একটি বাসা চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কিন্তু ওকে দেখতে পাচ্ছি না, হঠাৎ একজন বৃদ্ধলোক এসে আমাদের সামনে বসলেন উনিই হয়তো আলিফার বাবা
–আপনারা
আব্বু: আমি শরীফ চৌধুরী আসলে আমরা এসেছি আপনার মেয়ের…..
–আলিফার সাথে কি প্রয়োজন
–প্রয়োজন আপনার সাথেই আমি আলিফাকে আমার বড় ছেলের বউ করে আমার ঘরে নিতে চাই
–হঠাৎ করে…
–আলিফা রিফাতকে চিনবে আপনি ওকে ডেকে দিন
–ঠিক আছে
উনি আলিফাকে ডাকতে ভিতরে চলে গেলেন আমি ড্রয়িংরুমে বসে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি
আলিফা: ওই আপনি আমার বাসায় কি করছেন (আলিফা এসেই ধমক দিয়ে বলল আমি কি বলব বুঝতে পারছি না)
আমি: আসলে আআআমি….
আলিফা: তোতলাচ্ছেন কেন এখানে কি হুম
আমি: আরে এতো রেগে যাচ্ছেন কেন আমার কথা শুনোন
রিয়ান: ভাইয়া তুমি থাম আমি বলছি (রিয়ানের কথায় আলিফা চুপ হয়ে চারদিকে তাকালো সবাইকে দেখে নিশ্চুপ হয়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আগে হয়তো আমাকে দেখে আর কাউকে লক্ষ করেনি সোজা আমার সাথে ঝগড়া করতে চলে এসেছিল ঝগড়াটে মেয়ে একটা)
প্রিতি: এইযে আলিফা মেম আপনি আমার পাশে এসে শান্ত হয়ে বসুন (প্রিতির কথায় আলিফা আরো চুপ হয়ে গেলো দেখতে ভালোই লাগছে এতো রাগি মেয়ে একদম চুপসে গেছে)
রিয়ান: ভাবি আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বল….
আলিফা: ভাবি মানে
আব্বু: মা আমি তোমাকে আমার বৌমা করে নিয়ে যেতে এসেছি
আলিফা: আব্বু ওরা এসব কি বলছে
আব্বু: মা আমার ছেলে তোমাকে পছন্দ করেছে আর তোমাকে দেখে আমাদেরও পছন্দ হয়েছে তাই আমি চাইছি তোমাকে আমার ঘরের বৌমা করে নিতে আশা করি তোমার বাবার এতে কোনো আপত্তি নেই
আলিফা: কিন্তু আমার আছে
আলিফার আব্বু: কিসের আপত্তি আমি সবসময় এমন একটা ছেলেই চেয়েছি
আলিফা: আব্বু আমার কথা শু…
আলিফার আব্বু: অনেক শুনেছি তোর কথা আর না এখন আমি তোর বিয়ে দিবই
আলিফা: আব্বু
আলিফার আব্বু: আমি উনাদের সাথে কথা বলছি সবদিক ঠিক হলে এখানেই বিয়ে হবে আর হ্যাঁ ছেলে আমার পছন্দ হয়েছে
আলিফা: আমার তো পছন্দ হতে হবে
আলিফার আব্বু: আমার পছন্দ হয়েছে এটাই শেষ কথা তোর কোনো কথা বলার থাকলে ওকে তোর রুমে নিয়ে যা
রিয়ান: ভাইয়া যাও যাও
আমি: যাবো
আব্বু: হ্যাঁ রিফাত যা আমি বিয়ের তারিখ ঠিক করে নিচ্ছি
যাবো কিনা ভাবছি যে রাগি মেয়ে শুধু রাগি বললে ভুল হবে একদম ধানিলংকা আমাকে না আবার খুন করে ফেলে
আলিফা: কি হলো চলুন
আমি: হুম আসছি (যেভাবে ডাকছে মনে হচ্ছে আজ আমার কপালে দুঃখ আছে)

আলিফার সামনে দাঁড়িয়ে আছি ভয়ে বুক ধুকধুক করছে না জানি এই মেয়ে কি করবে এখন
–আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না
–কেন আমি কানা বলে
–আমি একদম মজা করছি না
–আমিও তো মজা করছি না আপনিই তো গতকাল আমাকে কানা বললেন
–আর একটা কথা বললে আপনাকে আমি গলা টিপে মেরে ফেলবো (সত্যি সত্যি আমার দিকে হাত বাড়ালো কি মেয়েরে বাবা)
–ওকে আমি চুপ করলাম আপনি বলুন
–আমি বিয়েটা করতে পারবো না আবার ভাঙতেও পারবো না তাই আপনাকেই….
–ভাঙতে পারবেন না কেন
–আসলে ছোট বেলা থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছি তো ভালোবাসা কি বুঝতাম না দুবছর আগে একটি বৃদ্ধাশ্রমে আব্বুর সাথে আমার দেখা হয় তারপর থেকে আমি উনাকে নিয়ে এই বাসায় থাকি এখন কিভাবে উনাকে কষ্ট দেই বলুন
–উনি আপনার নিজের বাবা নন
–না, উনি বৃদ্ধ মানুষ দেখেছেন তো কখন কি হয়ে যায় তাই আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করেন আর বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে চান
–আপনি বিয়ে করতে চান না কেন
–আসলে আমি আর এক….
বিয়েটা আজই হবে আমি যখন বলেছি আলিফা মানতে বাধ্য নাহলে…(দরজায় তাকিয়ে দেখি আলিফার আব্বু কথাটা বলেছেন)
–আব্বু কি বলছ এসব আজকেই
–হ্যাঁ শরীফ চৌধুরী খুব ভালো মানুষ তুই উনার বাড়িতে ভালো থাকবি
–কিন্তু আব্বু
–আমি তোর কাছে এই দুবছরে কিছু চাই নি আজ চাইছি বিয়েটা তুই করে নে
–হুম আব্বু করবো তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো
আলিফার আব্বু চলে গেলেন আমি অবাক হয়ে আলিফাকে দেখছি একটু আগে যে মেয়ে বিয়ে করবে না বলছিল সেই মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো
–আপনি ড্রয়িংরুমে যান আমি আসছি
–হ্যাঁ যাচ্ছি কিন্তু আপনি তখন কি যেন বলতে চাইছিলেন (আলিফা নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখে পানি, আশ্চর্যের বিষয় হলো এই কান্নাটাও নিলার মতো, আমি শুনেছি একি চেহারার মানুষ একের অধিক আছে কিন্তু চেহারা আলাদা হলেও দুটি মানুষের স্বভাব হাসি কান্না রাগ সবকিছু এক রকম হয় সেটা জানা ছিল না)
আলিফা এখনো নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে খুব খারাপ লাগছে কি করবো বুঝতে পারছি না, অনেক ভেবে নিলার চোখের পানি যেভাবে মুছে দিতাম সেভাবেই আলিফার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

হসপিটালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি, আমার ভালোবাসার মানুষটা অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে শুধুমাত্র আমার ভুলের জন্য, রক্তের জন্য অপারেশন শুরু করা যাচ্ছে না, কি করবো কোথায় খুঁজবো রক্ত ওর গ্রুপের রক্ত যে সহজে পাওয়া যায় না, কিছু ভেবে পাচ্ছি না শুধু পাগলের মতো কেঁদেই যাচ্ছি….
–রিফাত কি হয়েছে ফোন করে হসপিটালে আসতে বললি আর তোর শার্টে এতো রক্ত কেন
–আব্বু আলিফা…
–হ্যাঁ আলিফা কি হয়েছে ওর কাঁদছিস কেন
–ও এক্সিডেন্ট করেছে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ওর গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না
–কান্না করিস না আমরা রক্তের ব্যবস্থা করবো, রিয়ান কোথায়
–রিয়ান রক্ত খুঁজতে গেছে কিন্তু পাচ্ছেনা ফোন করেছিল
–তুই কান্না বন্ধ কর আমি দেখছি
–আব্বু আমার আলিফা বাঁচবে তো আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না
–তুই থাম ডক্টর আসছে আমাকে কথা বলতে দে
–হুম

আব্বু: ডক্টর আমার বৌমা….
ডক্টর: রক্ত পাওয়া গেছে একজন রক্ত দিতে এসেছেন আমরা এখনি অপারেশন শুরু করবো
আব্বু: কে রক্ত দিল
ডক্টর: উনি বলেছেন পরে আপনাদের সাথে আলাপ করবেন, অপারেশনটা খুব রিস্কি আল্লাহ্‌ কে ডাকুন

–রিফাত কান্না থামা আল্লাহ্‌ কে ডাক
–আব্বু আমার সাথেই কেন বার বার এমন হচ্ছে আর আলিফার এক্সিডেন্ট কি আজকের দিনেই হতে হলো
–ভাগ্য বলে মেনে নে কান্না করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
ভাগ্য ভেবে সবকিছু মেনে নেওয়া কি সম্ভব, ওইদিকে আলিফা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আমি এখানে কিভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকবো, মাথাটা প্রচুর যন্ত্রণা করছে চোখ দুটু বন্ধ করে ভাবছি সেই দিন গুলোর কথা….

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের কথা সেদিনও আমার জন্মদিন ছিল আর প্রতিবারের মতো সেদিনও এতিমখানায় বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল….
রিয়ান: ভাইয়া তোমার হলো এতিমখানায় যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো
আমি: হ্যাঁ এইতো শেষ সব গুছিয়ে নিয়েছিস তো
রিয়ান: হ্যাঁ আব্বু আর ড্রাইভার মিলে সব খাবার গাড়িতে তুলে দিয়েছেন
আমি: আব্বু কোথায়
রিয়ান: গাড়ির পাশেই
আমি: চল
রিয়ান: আব্বু গেলাম
আব্বু: আজ খুব দেরি হয়ে গেল অনেক দূর যেতে হবে….
আমি: আব্বু আমি ওখানে নতুন যাচ্ছি না তুমি অযতা টেনশন করো না
আব্বু: ওকে সাবধানে যাস আর যতো তাড়াতাড়ি পারিস ফিরে আসিস
আমি: ওকে আব্বু টাটা

রিয়ান: ভাইয়া আমি আজ ড্রাইভ করি তুমি পাশে বসে গল্প শুনাও
আমি: কিসের গল্প
রিয়ান: তাই তো কিসের গল্প আমি তো ভুলেই যাই তুমি যে পাল্টে গেছ এসব যে এখন আর পারো না
আমি: কি বলতে চাইছিস
রিয়ান: বলতে চাইছি আর কতো দিন এভাবে কাটাবা এখন অন্তত বিয়ে করো নাহলে অন্য কোনো উপায়ে আমাকে বাঁচাও
আমি: মানে
রিয়ান: আব্বুর নাকি ঘরে বৌমা চাই তুমি তো বিয়ে করবা না তাই আমাকে এখন বিয়ে করতে হবে আমি পারবো না এখন আর তোমার আগে তো একদমই না
–বিয়ে আমার আর এই জীবনে হয়তো করা হবে না তুই রাজি হয়ে যা তাতে যদি আব্বু একটু শান্তি পান
–ভাইয়া তু….
–চুপ কর প্লিজ ভালো লাগছে না
–সরি ভাইয়া তোমাকে বিয়ে শব্দটা বলে কষ্ট দিয়ে ফেললাম
রিয়ান এর কথার আর কোনো উত্তর দিলাম না, রিয়ান ড্রাইভ করছে আর আমি নিশ্চুপ হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি…..
আমি রিফাত, আব্বু ছোট ভাই রিয়ান আর ছোট বোন প্রিতি এই আমাদের ছোট্র সংসার, খুব ছোটবেলায় আম্মুকে হারিয়ে ছিলাম কিন্তু আব্বু আমাদের তিন ভাই বোনকে কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি, আব্বু এক হাতে এতো বড় ব্যবসা সামলিয়েছেন আর এক হাতে আমাদের তিন জনকে বাবা মা দুজনের আদর দিয়ে বড় করেছেন, মাঝে মাঝে আম্মুকে খুব মিসস করি কিন্তু আব্বুর ভালোবাসা আম্মুর অভাবটা আমাদের বুঝতে দেয় না
–ভাইয়া (হঠাৎ রিয়ানের ডাকে চারদিকে তাকালাম আমরা এতিমখানায় চলে এসেছি)
–ভাইয়া তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন শরীর খারাপ নাকি
–না এমনি তুই খাবার গুলো নিয়ে যা আমি আসছি
–আবার কোথায় যাচ্ছ
–আসছি

এতিমখানার চারপাশ ঘুরে দেখতে লাগলাম এই এতিমখানায় আগে আম্মুর সাথে আসতাম, আম্মু এখানেই বড় হয়েছেন, এখনো আসি তবে সবসময় না শুধু আমার প্রতি জন্মদিনে
–ওই অন্ধ নাকি চোখে দেখেন না (হঠাৎ কারো ধমকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, সামনে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে, এই চোখ আমার খুব চেনা কিন্তু দুইটি মানুষের এক রকম চোখ একি রকম রাগ কিভাবে সম্ভ….)
–কি হল কথা বলছেন না কেন
–কি করলাম আমি
–আরে আপনি তো দেখছি সত্যি একটা কানা মানুষ
–মানে
–নিচে তাকিয়ে দেখুন আপনি আমার বিড়ালটা কে লাতি মেরেছেন (নিচে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি একটা ভিজা বিড়াল, আনমনে হয়ে হাটতে গিয়ে ঘাসের উপর বিড়ালটা যে ছিল লক্ষ্য করিনি)
–ভিড়ালটা এমনি ভিজে গেছে আমি ওকে এখানে রেখে তোয়ালে আনতে গেছি আর আপনি….
–আমার কথা শুনোন আমি দেখিনি
–দেখবেন কিভাবে আপনি তো একটা কানা মানুষ
–আরে শু….
যাক বাবা আমার কোনো কথাই শুনলো না চলে গেলো, এই মেয়েরও বিড়ালের জন্য এতো আদর একদম নিল….
–ভাইয়া তুমি এখানে আমি তোমাকে….
–কি হল আমার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন
–ভাইয়া তুমি হাসছ (রিয়ান এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো, আমি বোকার মতো দাড়িয়ে ভাবছি হ্যাঁ আমি তো সত্যি এই মেয়েকে দেখে নিজের অজান্তেই হাসছি)
–ভাইয়া তিনটা বছর ধরে তোমার মুখে হাসি দেখি না আব্বু আমি প্রিতি কতো চেষ্টা করেছি তোমার মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য কিন্তু সবসময় ব্যর্থ হয়েছি
–বাদ দে না রিয়ান
–না ভাইয়া তুমি বল তুমি কাকে দেখে কি দেখে হাসছ আমি তোমাকে সেটাই এনে দিব
–ঠিক আছে আবার তাকে দেখলে তোকে দেখাবো
–হুম চলো এখন

গাড়ির পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি আর মনে মনে মেয়েটিকে খুঁজছি কিন্তু কোথায় চলে গেলো হঠাৎ করে
–ভাইয়া এখানের সব কাজ শেষ চলো বাসায়….
–হুম কিছু বলছিলি
–তুমি কি কাউকে খুঁজছ
–না তো
–একদম মিথ্যে বলবা না তুমি অন্যমনস্ক হয়ে ছিলে তাই আমি বাসায় যাওয়ার কথা যে বলেছি তুমি শুননি বল কাকে খুঁজছিলে
–একটি মেয়ে
–সত্যি
–হুম কিন্তু হঠাৎ করে কোথায় যে হারিয়ে গেলো
–চলো খুঁজে দেখি
–না থাক আব্বু টেনশন করছেন বাসায় যেতে হবে পরে নাহয় আবার আসবো
–ঠিক আছে

চোখ দুইটা বন্ধ করে গাড়িতে বসে আছি বার বার মেয়েটির রাগি চোখ দুটু মনে পড়ছে, কিছুতেই বুঝতে পারছি না দুইটা মানুষের একরকম চোখ একরকম রাগ কথা বলার ধরণ একরকম হয় কিভাবে
–রিয়ান
–হ্যাঁ ভাইয়া বলো
–জানিস এই মেয়েটি একদম নিলার মতো
–মানে
–সেই রাগি চোখ রাগে চেঁচিয়ে কথা বলা সব একরকম
–সবসময় নিলার কথা ভাব তো তাই হয়….
–না তুই যখন দেখবি তখন তুইও বলবি ও নিলার মতো
–হুম আগে বাসায় যাই এসব চিন্তা এখন বাদ দাও
–হুম

বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো, এসে দেখি আব্বু আর প্রিতি খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছেন
রিয়ান: আব্বু তোমরা খেয়ে ঘুমাওনি কেন
আব্বু: তোদের রেখে কখনো খেয়েছি যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়
আমি: ঠিক আছে

খাবার টেবিলে বসেও মেয়েটির কথা শুধু মনে পড়ছে মাথায় ঢুকছে না চেহারা অন্যরকম হলেও রাগ কথা বলা সবকিছু দুটি মানুষের মধ্যে একরকম হয় কিভাবে
আব্বু: কিরে রিফাত খাচ্ছিস না কেন
রিয়ান: আব্বু তোমাদের একটা কথা বলা হয়নি
আব্বু: কি
রিয়ান: জানো আজ ভাইয়াকে তিনবছর পর হাসতে দেখেছি
প্রিতি: ভাইয়া সত্যি
রিয়ান: হ্যাঁ আর ভাইয়া একটি মেয়েকে দেখে….
আমি: রিয়ান থামবি
আব্বু: রিফাত আমার কাছে বলতে অসুবিধা কোথায় বল মেয়েটি কে আমি ওকে এনে দিব
আমি: জানিনা আব্বু তবে মেয়েটির মধ্যে আমি নিলাকে খুঁজে পেয়েছি
প্রিতি: আবার নিলা
আমি: আব্বু যদি সত্যিই আমাকে হাসতে দেখতে চাও তাহলে এই মেয়েটিকে এনে দাও যেভাবে পারো
আব্বু: তুই চিন্তা করিস না আমি কালই এতিমখানায় যাবো
রিয়ান: ভাইয়া না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন
প্রিতি: ঘড়ির কাটায় বারোটা বেজে গেছে
আব্বু: কবে যে ওর এই অভ্যাস পাল্টাবে

কারো কোনো কথার জবাব না দিয়ে সোজা বারান্দায় চলে আসলাম, একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছি আর দূর আকাশের সেই তারাটির দিকে তাকিয়ে আছি, আমি যেমন প্রতিদিন রাত বারোটায় এই তারাটি দেখতে আসি তেমনি এই তারাটিও আমাকে দেখার জন্য রোজ রাতে অপেক্ষা করে, শুধু অমাবস্যার রাতে ও আসে না বড্ড অভিমানী তো তাই সে অমাবস্যা রাতে আমার উপর খুব অভিমান করে, এই তারাটি আর কেউ না আমার নিলা, আমার উপর অভিমান করে ও আকাশের তারা হয়ে গেছে, আজ নিলাকে বড্ড মিসস করছি কারণ আজ যে আমি সেই মেয়েটির মধ্যে নিলাকে খুঁজে পেয়েছি, আর পারছি না খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই আজ আর চোখ দুটু কে বাধা দিলাম না একের পর এক সিগারেট খাচ্ছি আর চোখ দুটু সেই তারার দিকে তাকিয়ে অবাধ্যের মতো কেঁদে যাচ্ছে…..

চলবে?

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ১০/অন্তিম পর্ব

2

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ১০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

তখন রাত বারোটা বেজে গেছে, এতো রাতে তান্ত্রিক এর কাছে যাওয়া ও অনেক রিস্ক তাও আব্বু আমাদের সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন, সাথে সাইয়ান এর কঙ্কাল আর লাশ নিয়ে

তিন ঘন্টা পর আমরা তান্ত্রিক এর আস্থানায় পৌছালাম, তখন রাত তিনটা বাজে

আব্বু তান্ত্রিক এর কাছে লাশ আর কঙ্কাল দিলেন
তান্ত্রিক: অনেক দেরি করে ফেলেছিস বারোটার সময় মন্ত্র পড়া শুরু করা উচিত ছিল
আব্বু: তাহলে এখন
তান্ত্রিক: এখন কাজটা করা অনেক কষ্টের কারন এই সময়টায় সব আত্মারা দেহের জন্য ছুটাছুটি করে
আব্বু: তাহলে কি আজকে কাজটা হবে না
তান্ত্রিক: আজকে না করলে তো লাশ পচে যাবে তাই আজকেই করতে হবে কিন্তু
আব্বু: কিন্তু কি
তান্ত্রিক: এই সময় মন্ত্র পড়া খুব কষ্টের তাও আমি পড়ব কিন্তু ছেলেটির আত্মা যদি যথাসময় দেহে প্রবেশ না করতে পারে তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না
আব্বু: সাইয়ান পারবে
তান্ত্রিক: অনেক আত্মা এই দেহে প্রবেশ করতে চাইবে তার মধ্যে ভালো আত্মা থাকলে আমার একটি মন্ত্র শুনে চলে যাবে কিন্তু দুষ্টু আত্মা থাকলে যাবে না তাই দুষ্টু আত্মাদের সাথে লড়াই করে যদি ছেলেটির আত্মা দেহে প্রবেশ করতে পারে তবেই কাজ হবে
আব্বু: দুষ্টু আত্মাদের আপনি তাড়াতে পারবেন না
তান্ত্রিক: না এই কাজ ছেলেটি কেই করতে হবে আর যদি না পারে তাহলে দুষ্টু আত্মা দেহে প্রবেশ করবে আর ছেলেটি কখনো ফিরে আসতে পারবে না

এই কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম এখন কি হবে যদি সাইয়ান দুষ্টু আত্মাদের সাথে না পারে তাহলে তো সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি ঝরতে শুরু করলো, কাঠের মূর্তির মতো বসে আছি ঠিক তখনি কানের কাছে ঠান্ডা বাতাস লাগলো একটু পর সাইয়ান আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো “ভয় পেয়ো না পরী আমার উপর বিশ্বাস রাখো”

ছোট্ট একটি কথা তবুও কেমন যেন সাহস পেলাম, চোখের পানি মুছে তান্ত্রিক কে বললাম
আমি: আপনি কাজ শুরু করেন যা হবার হবে
আব্বু: কি বলছিস অর্পিতা সাইয়ান যদি দুষ্টু আত্মাদের সাথে না পারে
আমি: এছাড়া তো কোনো উপায় নেই আব্বু
তান্ত্রিক: হ্যা ঠিক বলেছিস এছাড়া কোনো উপায় নেই
আমি: হুম আপনি কাজ শুরু করেন
তান্ত্রিক: ঠিক আছে আর একটি কথা যদি খুব জোরে বাতাস বইতে শুরু করে তখন কেউ জায়গা থেকে নড়বে না
আমি: বাতাস
তান্ত্রিক: হ্যা দুই আত্মার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে জোরে বাতাস বইবে এই সময় তোরা নড়াচড়া করলে দুষ্টু আত্মার কবলে পরে মারা যেতে পারিস

কথটা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, আম্মু জিসান কে কোলে তুলে নিলেন

তান্ত্রিক লাশ আর কঙ্কাল নিয়ে গিয়ে তার কাজ শুরু করে দিল, এক পাশে লাশ অন্য পাশে কঙ্কাল আর মধ্যে আগুন, মন্ত্র পড়তে পড়তে আগুনের মধ্যে কি যেন ছিটিয়ে দিল একটু পরেই সাইয়ান এর আত্মা সেখানে এসে উপস্থিত হলো, আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল যে হাসিতে কোনো ভয়ের চিহ্ন নেই আছে অনেক খানি নির্বরতা

আরো কিছু সময় মন্ত্র পড়ার পর হঠাৎ সাইয়ান এর আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেলো, আগুন দফ করে নিভে গেলো, চারদিকে ঝড়ের গতিতে বাতাস বইতে শুরু করলো মনে হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলবে

তান্ত্রিক জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো কন্ঠ শুনেই বুঝা যাচ্ছে তান্ত্রিক এর খুব কষ্ট হচ্ছে, প্রায় দশ মিনিটের মতো বাতাস বইলো তারপর হঠাৎ সবকিছু নীরব হয়ে গেলো

এক অজানা ভয়ে চোখ দুইটা বন্ধ করে ফেললাম, মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে
সাইয়ান কি হেরে গেলো সব এমন নীরব হয়ে গেলো কেন….?
তাহলে কি আমি সাইয়ান কে হারিয়ে ফেলেছি….?
এতো কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত কি সাইয়ান ফিরে আসতে পারবে না….?
এমন আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনি সাইয়ান আবার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো “এই পরী চোখ খুলো কাঁদছ কেন চোখের পানি মুছ”
তাড়াতাড়ি চোখ মেলে থাকালাম সাইয়ান তান্ত্রিক এর পাশে বসে আছে দেখে যেন প্রাণ ফিরে ফেলাম

আরো অনেক সময় মন্ত্র পড়ার পর সাইয়ান এর আত্মা লাশের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল, তারপর আব্বুকে নিয়ে জানাজা পড়ে সাইয়ান এর কঙ্কাল দাফন করলো

তান্ত্রিক আমার কাছে এসে বললো— এইসব কাজ করা ঠিক না আমি করি না কিন্তু তোর বাবা বললো তুই ছেলেটা কে ভালোবাসিস ছেলেটাও তোকে ভালবাসে তাই তোদের ভালবাসার কথা চিন্তা করে কাজটা করলাম চিন্তা করিস না সব ঠিকঠাক হয়েছে তোর ভালবাসায় জোর আছে বলতে হয় নাহলে এমন পরিস্থিতিতে কোনো আত্মা কে ফিরিয়ে আনা অনেক কষ্টের অনেক সময় তো সম্ভবও হয় না, চিন্তা করিস না কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে

সাইয়ান এর পাশে বসে আছি আর অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে সাইয়ান চোখ খুলবে

প্রায় এক ঘন্টা পর সাইয়ান আস্তে আস্তে চোখ খুলতে শুরু করলো হাত পা নাড়াতে শুরু করলো তারপর উঠে বসলো,
আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল, হাসিটা একদম সাইয়ান এর আগের হাসির মতই, শরীর টা হয়তো অন্য কারো কিন্তু মনটা তো সাইয়ান এর

সাইয়ান উঠে আব্বু আম্মু আর তান্ত্রিক কে সালাম করলো তারপর আমার কাছে এসে দুই হাত দিয়ে আলতো করে আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে থাকিয়ে বললো
–ভালোবাসি পরি?
–ভালোবাসি লোমান্তিক ভূত?

সমাপ্ত?

(পুরো গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?
ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ??)