Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2419



শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৯

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের মৃদু বাতাস উপভোগ করছি। আলিফা দুমগ কফি নিয়ে এসে পাশে দাঁড়ালো, হাসি মুখে এক মগ কফি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
আলিফা: কিছু কথা ছিল
আমি: হাজার হাজার কথা বলো আমি তোমার কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনবো
আলিফা: কথাগুলো শুনার পর এই মুগ্ধতা হয়তো আর থাকবে না
আমি: মানে, কি কথা বলো তো
আলিফা: রাতে তুমি অনেক বার বলেছ তোমাকে ভালোবাসি কিনা অন্তত একবার যেন বলি
আমি: হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু তুমি তো না বলে উল্টো আমার জায়গাটা আবার সোফাতেই করে দিলে
আলিফা: হুম একদিন বলবো সেদিনটা কবে জানো…?
আমি: কবে
আলিফা: যেদিন রাতুল আমার সামনে দাঁড়ানো থাকবে
আমি: মানে
আলিফা: এখন আমরা যেভাবে বন্ধুর মতো আছি সেভাবেই থাকবো, রাতুল ফিরে আসলে পর তোমাদের দুজনকে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে আমি বলবো কাকে ভালোবাসি কার কাছে থাকতে চাই (ওর কথা শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে, কি বলছে এসব)
আমি: তারমানে তুমি সেদিন আমাকে ভালোবাস বলবে না, সেদিন তুমি সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভালোবাস কার কাছে থাকতে চাও
আলিফা: হুম
আমি: তারমানে আমি যে ভাবতাম তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছ এসব কিছু মিথ্যে
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: কথা বলছ না কেন…? উত্তর দাও আমার সব ভাবনা গুলো কি মিথ্যে ছিল।
কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে চলে যেতে চাইলো। ওর হাত ধরে টেনে আমার সামনে এনে দাঁড় করালাম।
আমি: চলে যাচ্ছ কেন, এতোক্ষণ কি বলেছ বুঝতে পেরেছ
আলিফা: হ্যাঁ আপাতত এই সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আমার কোনো রাস্তা নেই
আমি: ওহ তারমানে রাতুল ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি….
আলিফা: হ্যাঁ আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
আমি: ওকে আমার কথাও শুনে যাও, রাতুলকে আমি খুঁজে আনবোই
আলিফা: অযতা খুঁজতে যেও না ও হয়তো এখনো বাহিরে আছে
আমি: তুমি তো সেদিন একবার দেখেছিলে তাই চেষ্টা করে দেখবো, আমাকে তো জানতেই হবে তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা আমার এতো ভালোবাসার তিল পরিমাণ মূল্য তোমার কাছে আছে কিনা
আলিফা: যে ফিরে আসার সে এমনিতেই ফিরে আসবে পাগলামি করো না।
আমি: আর যদি কখনোই ফিরে না আসে
আলিফা: আসবে আজ হউক কাল হউক কিংবা কয়েক বছর পর হলেও ফিরে আসবেই।
আলিফা চলে গেলো কিন্তু ও শেষ কথাটা কি বলে গেলো, কথাটা কি রাতুল ফিরে আসার জন্য বলেছে নাকি ও আমার কাছে ফিরে আসার কথা বলেছে। আচ্ছা রাতুল যদি আদৌ ফিরে না আসে তাহলে কি আলিফাও আমাকে ভালোবাসবে না….?

নাশতাটা কোনো রকমে করে তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম, তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি সেই শপিংমলে যাবো আমি। আমাকে তো জানতেই হবে আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিনা।
আলিফা: রিফাত এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছ অফিসে নাকি
আমি: না
আলিফা: তো কোথায়
আমি: রাতুলকে খুঁজতে
আলিফা: কেন পাগলামি করছ বলতো, রাতুল যদি দেশে না এসে থাকে তাহলে তুমি পাবে কোথায়
আমি: তাও একবার চেষ্টা করে দেখি
আলিফা: না লাগবে না চেষ্টা করা চুপটি করে এখানে বস কোথাও যেতে হবে না
আমি: সরি আমাকে যেতে হবেই
আলিফা: রিফাত শুনো।
আলিফার কোনো কথা না শুনে বেড়িয়ে পড়লাম।

নাহ পেলাম না রাতুলকে। সারা শপিংমল খুঁজলাম, অবশ্য না পাওয়াটাই স্বাভাবিক রাতুল যদি দেশে না এসে থাকে আবার দেশে এসে থাকলেও যে রোজ একি শপিংমলে আসবে এমন তো না। কিন্তু আমাকে যে রাতুলকে খুঁজে পেতেই হবে। উফফফ কোথায় গেলে, কোথায় খুঁজলে পাবো রাতুলকে, আমি যে আর পারছি না।

বাসায় ফিরে আসলাম। আমি মনে হয় রাতুলকে খুঁজে পাবো না আর ওকে খুঁজে না পেলে তো….
আলিফা: এই তোমার বাসায় ফেরার সময় হয়েছে (আলিফা চিন্তিত হয়ে খাটে বসে আছে। কখন যে রুমে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। আসলে এসব যন্ত্রণায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি)
আলিফা: কথা বলছ না কেন সারাদিন কোথায় ছিলে
আমি: রাতুলকে খুঁজছিলাম
আলিফা: রিফাত কেন পাগলামি করছ
আমি: আমার এগুলো যখন তোমার পাগলামি মনে হচ্ছে তাহলে বলে দিচ্ছ না কেন তুমি আমাকে ভালোবাস
আলিফা: রিফাত আস্তে, চিৎকার করছ কেন
আমি: তো কি করবো। আমি আর পারছি না আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি
আলিফা: রিফাত।

আলিফার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তাই সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।
আলিফা: এই সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে পড়েছ কেন
আমি: যাও তো আমাকে একা থাকতে দাও
আলিফা: পারবো না
আমি: উফফফ যাবা তুমি
আলিফা: বললাম তো যাবো না (আমার পাশে এসে বসে পড়লো)
আমি: ওকে তুমি বসে থাকো আমি ঘুমাই।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। মনে হচ্ছে আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ মেলে তাকালাম। যা ভেবেছিলাম তাই, আলিফা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি দেখছ
আলিফা: কিছু না।
আলিফা তাড়াতাড়ি চলে গেলো। হয়তো লজ্জা পেয়েছে নয়তো ভালোবাসে যে এইটা বুঝতে দিতে চাইছে না।

এখন প্রতিদিন একবার হলেও রাতুলকে খুঁজতে যাওয়া আমার রুটিন হয়ে গেছে। জানিনা কিসের জন্য এভাবে ওকে খুঁজি। অনেক সময় ভাবি আর খুঁজবো না কিন্তু আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিনা জানার জন্য আবার পাগলের মতো খুঁজতে যাই। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়, ওর মুখে একবার ভালোবাসে কিনা শোনার জন্য পাগলের মতো রোজ রাতুলকে খুঁজতে যাই। রাতুলকে কি আদৌ খুঁজে পাবো আমি…? যদি রাতুলকে খুঁজে পাই তাহলে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসে বলবে নাকি ওর রাতুলের কাছে ফিরে যাবে….?

কয়েক মাস পর….

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে হয়ে ভাবছি, এতোগুলো মাস এতোগুলো দিন এতো সময় পার হয়ে গেলো কিন্তু আলিফা আজো আমাকে এতটুকু ভালোবাসতে পারলো না। আর আমি কিনা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি। আলিফা একদিন বলেছিল রাতুলকে সামনে রেখে ও বলবে কাকে ভালোবাসে, সেই থেকে প্রতিটা দিন আমি রাতুলকে খুঁজেছি। কিন্তু এতোগুলো মাস কেটে গেলো আমি রাতুলকে খুঁজে পাই নি। আর আলিফা ও তো যেমন ছিল তেমনি আছে, একবার ভাবেও না আমি যে কষ্ট পাচ্ছি। অবশ্য আমার কষ্টতে ওর কি আসে যায়, ও তো আর আমাকে ভালোবাসে না। তবে হ্যাঁ অনেক দিন আলিফার ইচ্ছেতে চলেছি আর না, এবার আমার কথায় সব হবে আমার কথায় আলিফা চলবে। অনেক হয়েছে আর না এভাবে তো চলতে পারে না। আলিফা নিজেও দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে অন্যদিকে আমাকেও দুটানায় পিষে মারছে। আমি জাস্ট এসব আর নিতে পারছি না, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আলিফা: রিফাত এই সন্ধ্যা বেলায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ কেন
আমি: এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে তাই
আলিফা: রিফাত তুমি কাঁদছ কেন
আমি: আমার কান্না তোমার চোখে পড়ে (ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ও নিশ্চুপ হয়ে আছে)
আমি: আলিফা একটা সুস্থ মানুষকে কখনো পাগল হতে দেখেছ
আলিফা: না কেন
আমি: দেখেছ কিন্তু বুঝতে পারছ না, তোমার চোখের সামনে আমি একটু একটু করে পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি সেটা দেখতে পারছ না
আলিফা: কি বলছ এসব
আমি: আলিফা এসব আর আমি নিতে পারছি না আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও এসব থেকে
আলিফা: মুক্তি
আমি: হ্যাঁ আমি তোমার মতামত না নিয়ে বিয়ে করে ভুল করেছি মানছি তাই বলে একটা ভুলের শাস্তি এভাবে পেতে হবে। প্রায় একটা বছর কেটে গেছে তুমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না। কেন আলিফা কেন বলতে পারো আমাকে মেনে নিতে তোমার আপত্তি কোথায়
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি চুপ হয়েই থাকো, তোমাকে আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। এবার আমি সিদ্ধান্ত নিবো আর তুমি আমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নিবে
আলিফা: মানে
আমি: প্রথম আমি তোমাকে সাত মাস সময় দিয়েছিলাম তুমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারোনি। তারপর তোমার আব্বু মারা গেলেন সাথে রাতুলের ফোন বন্ধ। দুজন প্রিয় মানুষকে হারিয়ে তুমি ভেঙে পড়েছিলে তাই আমি তোমাকে জোর করিনি। মাঝে তুমি বলেছিলে রাতুল ফিরে আসলে দুজনকে তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে বলবে তুমি কাকে ভালোবাস কার কাছে থাকতে চাও। আমি মেনে নিয়েছিলাম, মেনে নিয়ে আমি এই কয়টা মাস রাতুলকে পাগলের মতো খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। যার ফোন আজ প্রায় চার পাঁচ মাস ধরে বন্ধ সে আদৌ ফিরে আসবে কিনা বলতে পারো।
আলিফা: আমার কথা শু….
আমি: কি বলবে জানি, রাতুল ফিরে আসবে তাই তো। কিন্তু কখন আসবে বলতে পারো
আলিফা: আমাকে বলতে তো দাও
আমি: তোমার আর কিছু বলতে হবে না। এখন থেকে আমি যা বলব তাই হবে
আলিফা: যা বলবে তাই হবে মানে
আমি: আলিফা অবহেলা কি জানো
আলিফা: হঠাৎ এই প্রশ্ন
আমি: আমি কাকে কি প্রশ্ন করি, যে আমাকে প্রায় একটা বছর ধরে অবহেলা করে আসছে তাকে আমি জিজ্ঞেস করি অবহেলা কি চিনে কিনা। সত্যি আমি একটা বোকা।
আলিফা: আমি কখন তোমাকে অবহেলা করলাম
আমি: করেছ আলিফা করেছ, তুমি আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছ আর আমি সহ্য করে গেছি, কেন জানো…? শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে তুমি একদিন আমাকে ভালোবাসবে এই আশায়। কিন্তু এবার থেকে তুমি নয় আমি তোমাকে অবহেলা করবো
আলিফা: মানে কি
আমি: হ্যাঁ আমি তোমাকে অবহেলা করবো
আলিফা: পারবে অবহেলা করতে
আমি: একটা কথা মনে রেখো, যে ভালোবাসতে জানে সে প্রয়োজন হলে ঘৃণাও করতে পারে আর আমি তো প্রয়োজন হলে তোমাকে ডিভোর্সও দিবো
আলিফা: রিফাত
আমি: এভাবে তো চলতে পারে না তাই না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো। তাতে তুমি তোমার মতো থাকতে পারবে আর আমি আমার মতো।
আলিফা: পারবে
আমি: পারতে তো আমাকে হবেই। তুমি শুধু ভেবে নাও এক সপ্তাহ পর কোথায় যাবে
আলিফা: এক সপ্তাহ পর মানে
আমি: এক সপ্তাহ পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো। আর এই এক সপ্তাহ আমি দেখবো বুঝতে চেষ্টা করবো তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা
আলিফা: ঠিক যখন করেই নিয়েছ এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স দিবে তাহলে আজই চলে যাওয়া ভালো। আমি চলে যাচ্ছি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো ভয় নেই।
আলিফা রুমে চলে গেলো।

রাতের আকাশ দেখছি আর ভাবছি ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন। যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না আর যে আমাকে ভালোবাসত সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। হঠাৎ আলিফার কথা মনে পড়লো সত্যিই চলে যাবে নাকি ও। তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম।
এসে দেখি আলিফা কাপড় গুচাচ্ছে। ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার দিকে ফিরালাম।
আলিফা: রিফাত হাত ছাড়ো লাগছে আমার
আমি: কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: সেটা তো জানিনা তবে যে আমাকে এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স দিয়ে দিবে ভেবে নিয়েছে তার বাসায় আর থাকবো না
আমি: আমার বাসায় তো তোমাকে থাকতে হবেই
আলিফা: কেন থাকবো, এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স পেপার সহ যেন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারো সেজন্য (ওকে ঠেলে দেয়ালের কাছে নিলাম, দেয়ালে হেলান দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর একদম কাছে গিয়ে বললাম)
“আমার বাড়িতে তোমাকে থাকতে হবে কারণ তুমি আমাকে এতোদিন যতো অবহেলা করেছ সব তোমাকে ফেরত দিবো, কষ্ট দিবো তোমাকে আমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছ। আজ থেকে অবহেলা শুরু এইটা ভালো করে তোমার মাথায় ঢুকিয়ে নাও”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৮

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….

তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে জাপটে ধরলাম।
আমি: আলিফা কি করছ পাগল হয়ে গেছ নাকি, বলেছি তো রাতুলকে খুঁজে এনে দিবো
আলিফা: ওহ বাবারে আর একটু হলেই তো পড়ে যাচ্ছিলাম এভাবে কেউ জাপটে ধরে
আমি: এভাবে জাপটে না ধরলে তো তুমি নিজেই লাফ দিতে
আলিফা: মানে কি আমি কেন লাফ দিতে যাবো
আমি: তুমি এখানে সুইসাইড করতে আসোনি
আলিফা: পাগল হয়েছ আমি সুইসাইড করতে যাবো কেন
আমি: তাহলে আমাকে কিছু না বলে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ কেন তাও আবার এমন কিনারায়
আলিফা: আমার কিছু ভালো লাগছে না তাই একা থাকার জন্য এখানে এসেছিলাম কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে তুমিও চলে আসলে একা থাকা আর হলো না
আমি: (ঠাস)
আলিফা: রিফাত তুমি আমাকে মারলে
আমি: তো কি করবো এমন একটা কান্ড করার পর আদর করবো, তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম। সারা বাসা তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি যখন এসে দেখলাম তুমি এভাবে ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছ তখন তো আমি….. দূর কাকে কি বলি তুমি তো সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটাই বুঝনা, যদি এতটুকু বুঝতে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তাহলে আজ আমাকে এমন টেনশন দিতে পারতে না। তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম একটা ভেজা বিড়ালকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিলে তখন ভেবেছিলাম তুমি অন্য মেয়েদের মতো না কিন্তু এখন দেখছি তুমি অন্যদের মতোই।
আলিফা: কি বলতে চাইছ
আমি: বলতে চাইছি এটাই যে তুমি সেইসব মেয়েদের মতো যাদের এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পরে আছ কাউকেই ছাড়ছ না
আলিফা: ছিঃ রিফাত এসব তুমি কি বলছ
আমি: কেন ভুল কিছু বলেছি নাকি তুমি তো তাদের মতোই যারা….
আলিফা: ব্যস রিফাত অনেক বলেছ এবার একটু থামো। কি বলেছ আমার এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পড়ে আছি কাউকেই ছাড়ছি না, শুনো ছোটবেলা থেকে এতিমখানায় থেকেছি তো মা বাবা ছিল না সঠিক শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য, নিজে থেকে যেটুকু শিখেছি সেটার মধ্যে এটাও পরে যে কাউকে ঠকানো ঠিক না। আর এজন্যই আমি দুদিকে পরে আছি বুঝতে পারছি না কাকে ঠকাবো। তুমি বলতে পারো আমি কাকে ঠকাবো…?
আমি: (সত্যিই তো ও কাকে ঠকাবে)
আলিফা: জানি চুপ হয়েই থাকবে কারণ তুমিও জানোনা আমার কাকে ঠকানো উচিত। রাতুল যাকে আমি তিনবছর ধরে ভালোবাসি, যে কিনা আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনেও আশা নিয়ে বসে আছে ও দেশে ফিরে আসলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো বলতে পারো ওকে আমি কিভাবে ঠকাই। তুমি যে কিনা নিলা নামের মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো, নিলাকে হারিয়ে আমার মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছে, প্রতিটা মুহূর্তে স্বপ্ন দেখে আমি একদিন নিলা হয়ে নিলার মতো ওকে ভালোবাসবো, যার পরিবারের প্রতিটা মানুষ আমাকে নিলা ভাবে, যার কাছে আমার আব্বু আমাকে তুলে দিয়েছেন বলতে পারো তাকে আমি কি ভাবে ঠকাবো।
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো
আলিফা: তুমি ঠিক বলেছ আমি খারাপ মেয়ে তাহলে বলতে পারো তুমি কি…? তুমি তো একটা অকৃতজ্ঞ, হুট করে বিয়ে করে ফেলছ মেয়েটা অন্য কাউকে ভালোবাসা সত্যেও তোমার কাছে পরে আছে শুধুমাত্র এইটা ভেবে যে তুমি নিলাকে হারিয়ে একবার কষ্ট পেয়েছ এখন যদি আবার ভালোবাসা হারিয়ে পেলো তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। আর তুমি কিনা মেয়েটা কে এতো খারাপ ভাবো
আমি: আলিফা আমি এভাবে বলতে চাইনি
আলিফা: তোমার জন্য না আমার মনে একটু একটু করে মায়া জন্মাতে শুরু করেছিল, হয়তো আমার অজান্তে আমার মনের মধ্যে তোমার জন্য ভালোবাসাও সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেটা বাড়বে না….
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো প্লিজ
আলিফা: আমার সম্পর্কে যার এমন খারাপ ধারণা তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই
আমি: আলিফা আ….
আলিফা: আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না তুমিও কথা বলার চেষ্টা করো না।
আমি: আলিফা।
আমার কোনো কথা না শুনে চলে গেলো। কি বলে ফেললাম এসব, এই কথাগুলো তো আমি বলতে চাইনি। এসব তো কখনো আমার ভাবনাতেও আসেনি আর আজ কিনা পাগলীটার মনে এভাবে আঘাত দিলাম।

জানিনা আলিফা এখন কি করছে হয়তো কাঁদছে। আস্তে আস্তে রুমের দিকে আসলাম, দরজার কাছে আসতেই দেখি আলিফা কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে, আরে এই রাতের বেলা কোথায় যাবে ও।
আমি: আলিফা কোথায় যাবে এসব গুচাচ্ছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: প্লিজ পাগলামি করো না আমার কথা শুনো
আলিফা: তোমাকে তো নিষেধ করেছি আমার সাথে কথা বলবে না
আমি: তুমি নিষেধ করলেই আমি শুনবো নাকি, বলোনা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো তাও তোমার কাছে থাকবো না (এখন কি করি পাগলি তো খেপে গেছে)

তাড়াতাড়ি গিয়ে আব্বুকে আনলাম, আমার কথা না শুনলেও আব্বুর কথা তো শুনবে।
আব্বু: আলিফা মা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পেরেছে আমি না পেরে যে আব্বুকে নিয়ে এসেছি)
আব্বু: ওহ বুঝেছি রিফাতের সাথে ঝগড়া করেছ, আচ্ছা তুমি এখন যাবে কোথায়
আলিফা: জানিনা
আব্বু: মেয়েরা স্বামীর সাথে ঝগড়া করলে কোথায় যায় জানো তো
আলিফা: বাবার বাড়ি
আব্বু: হ্যাঁ বাবার বাড়ি যায়। তো তুমি কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: পাগলী মেয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে কি নিজের বাবা কে ছেড়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে
আলিফা: (অবাক হয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে)
আব্বু: এখন তো আমিই তোমার বাবা আর আমার বাড়িই তো আমার মেয়ের বাড়ি তাহলে নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ (আলিফা কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরলো)
আব্বু: শুনো মা তুমি যাবে কেন যেতে হলে যে তোমার সাথে ঝগড়া করেছে সে যাবে
আমি: আব্বু কি বলছ এসব
আব্বু: তুই আমার আলিফা মার সাথে ঝগড়া করেছিস এক্ষণি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা
আমি: আব্বু কি বলছ (আমি তো প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলাম তখনি আব্বু আমাকে চোখ মারলেন, বুঝলাম এসব বলছেন আলিফার রাগ কমানোর জন্য)
আমি: রাগিণী থাকো তুমি একা একা তোমার বাবার কাছে আমি চলে যাচ্ছি।

ভালোই হয়েছে বিয়ে করার পর একদিনও শান্তিতে আড্ডা দিতে পারিনি আজ ঝগড়া করে অন্তত শান্তিতে আড্ডা দিতে পারবো। কিন্তু আজ যা বলেছি আলিফা আমাকে ক্ষমা করবে তো। কেন যে এতো রেগে গিয়ে এসব বলতে গেলাম। আমারই বা দোষ কিসের ওকে ছাদের কিনারায় দেখে এতো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে মুখে যা এসেছে তাই বলেছি। আলিফার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতাম কি নিয়ে।

রিয়াদ আর সাগরের সাথে আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরলাম। বাব্বাহ্ সবাই আমার জন্য ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে, সাথে রাগিণীও আছে।
আব্বু: কোথায় ছিলি
আমি: এইতো রিয়াদের বাসায়
আব্বু: এখন তোর ফিরার সময় হলো আমরা কতো চিন্তা করছিলাম, আর তোর ফোন কোথায় ফোন রিসিভ করছিলি না কেন
আমি: ফোন মনে হয় সাইলেন্ট করা
আব্বু: বৌমা আজকে ওকে খাবার দিও না শাস্তি হউক সবাইকে চিন্তায় রাখার
আলিফা: ওকে আব্বু।
যে যার রুমে চলে যাচ্ছে, এইটা কি হলো খিদে তো লেগেছে অনেক। আলিফার পিছন পিছন রুমে আসলাম।

আলিফা রুমে এসেই শুয়ে পড়লো কি জেদি মেয়েরে বাবা এখনো কথা বলছে না।
আমি: আব্বুর কথা শুনে আমাকে সত্যিই খাবার দিলে না
আলিফা: আব্বু যা বলেন তাই হবে
আমি: তাহলে এতোক্ষণ আমার জন্য চিন্তা করছিলে কেন
আলিফা: আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য চিন্তা করতে, আমি তো শুধু আব্বুকে দেখানোর জন্য এতোক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসেছিলাম
আমি: তোমার রাগ এখনো কমেনি
আলিফা: কখনো কমবেও না আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম আর তুমি কিনা আমাকে নিয়ে এসব বাজে চিন্তাধারা করো
আমি: ভুল হয়ে গেছে সরি, আসলে তোমাকে ওখানে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই মুখে যা এসেছে তাই বলেছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও
আলিফা: তুমি কথা গুলো ভয় পেয়ে না রেগে গিয়ে বলেছ আর মানুষ রাগের মাথায় সত্যি কথা গুলো বলে
আমি: কি বলো এসব আমার বউ কি খারাপ মেয়ে হতে পারে
আলিফা: হয়তো আমি খারাপ না কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে খারাপ ভাবতে তাই রাগের মাথায় মনের কথা গুলো বলে দিয়েছ
আমি: বিশ্বাস করো আমি এসব কখনো আমার ভাবনাতেও আনিনি। আমার বউ কতো লক্ষী তাকে আমি খারাপ বলতে পারি
আলিফা: অনেক পাম দেওয়া হয়েছে এবার যাও আমি ঘুমাবো
আমি: ঠিক আছে আমি কানে ধরে উঠবস করছি তাহলে তো খুশি হবে (অন্যায় করেছি যখন কান তো ধরতেই হবে তাই কানে ধরে উঠবস করছি। আলিফা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে)
আমি: তোমার মন পাথরের মতো যে জানতাম না, তোমার জামাই এতোক্ষণ ধরে কান ধরছে তাও তোমার মায়া লাগছে না
আলিফা: না লাগছে না, যাও তো আমি ঘুমাবো
আমি: ছাড়াচ্ছি তোমার ঘুম
আলিফা: এখানে আসছ কেন
আমি: ঘুমাবো।
সোফা থেকে বালিশটা এনে খাটে আলিফার পাশে শুয়ে পড়লাম। আজ রাগিণী যাই বলুক আমি ওর পাশেই ঘুমাবো।
আলিফা: রিফাত কি হচ্ছে কি
আমি: ঘুমাবো এতো বকবক করো না তো
আলিফা: ওকে ঘুমাও আমি সোফায় চলে যাচ্ছি
আমি: যেতে হবে না যাওয়ার চেষ্টা করলেই জরিয়ে ধরবো
আলিফা: আমি তো যাবোই
আমি: যেতে চাইলেই আমি ধরে নিবো যে তুমি মন থেকে চাইছ আমি তোমাকে জরিয়ে ধরি
আলিফা: রিফাত ভালো হচ্ছে না কিন্তু
আমি: খারাপ কিছুই হচ্ছে না
আলিফা: ওকে দাঁড়াও।
আলিফা মধ্যে কোলবালিশ এনে দিয়ে দিলো এইটা কিছু হলো।

আলিফা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমি আস্তে কোলবালিশটা সরিয়ে দিয়ে আলিফার কাছে গিয়ে ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম। হঠাৎ আলিফা চোখ খুলে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
আলিফা: কি
আমি: ভালোই যখন বাসো এতো লুকাও কেন
আলিফা: আমি কাউকে ভালোবাসি না
আমি: তাহলে আমি খাটে আসার পরও রাগ দেখালে না কেন
আলিফা: রাগ দেখালেও দোষ না দেখালেও দোষ
আমি: হুম সবকিছুতে দোষ শুধু আমাকে ভালোবাসায় দোষ নেই। প্লিজ শুধু একবার বলো আমাকে ভালোবাস। (আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আমি: আলিফা প্লিজ শুধু একটা বার বলো।
আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছি, ও কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে চোখ দুটু বন্ধ করে শুয়ে আছে, ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৭

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আলিফা আজ কোনো রাগ দেখাচ্ছে না বাধাও দিচ্ছে না, চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। উফফফ ফোনটা আসার আর সময় পেলো না। ফোন হাতে নিয়ে দেখি ছোটমা, অন্য কেউ হলে এখন….
আমি: হ্যালো ছোটমা
ছোটমা: হ্যাঁ কেমন আছিস
আমি: এইতো ভালো
ছোটমা: আমার আলিফা মা কেমন আছে
আমি: আচ্ছা ছোটমা একটা সত্যি কথা বলতো
ছোটমা: কি
আমি: তোমার কি তিনটা মেয়ে ছিল আর ছোটবেলায় একটা হারিয়ে গিয়েছিল, না মানে সিনেমায় তো এমনটা হয়
ছোটমা: ফাজি ছেলে কি বলছিস এসব আমার তো দুটুই মেয়ে
আমি: তাহলে নিলার সাথে আলিফার সবকিছু মিলে যায় কিভাবে, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় নিলা আর আলিফা দুবোন
ছোটমা: এইটা হয়তো প্রকৃতিরই খেলা, তোর থেকে এক নিলাকে কেড়ে নিয়ে আরেক নিলাকে দিয়েছে (আলিফার দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে কি)
ছোটমা: কিরে কি হলো
আমি: ছোটমা এইটা যদি প্রকৃতিরই খেলা হবে তাহলে বলতে পারো আলিফা আমাকে মেনে নিতে পারছে না কেন
ছোটমা: আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস, আসলে বিয়েটা হুট করে হয়েছে তো মেয়েটা মেনে নিতে পারছে না আর অন্য কাউকে ভালোবাসে যেহেতু একটু তো সময় লাগবেই
আমি: আর কতো সময় লাগবে সাতটা মাস পেরিয়ে গেলো আলিফার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই
ছোটমা: পরিবর্তন হয়েছে তো সেটা তুই নিজেও বুঝতে পারছিস কিন্তু মানতে চাইছিস না কারণ তুই চাইছিস আলিফা পুরোপুরি তোর হয়ে যাক। বুঝার চেষ্টা কর ভালোবাসা ভুলা এতো সহজ না মেয়েটার সময় প্রয়োজন। যতোটুক সময় লাগে তুই দে ধৈর্য হারা হবি না
আমি: হুম
ছোটমা: আলিফার কাছে ফোনটা দেতো
আমি: হুম

আলিফা ছোটমার সাথে কথা বলে এসে আমার পাশে বসলো, ফোনটা হাতে নিয়ে চটপট করছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: রাতুলকে আবার ফোন করে দেখি
আমি: ওকে।
আলিফা যেন আমার মুখ থেকে ওকে শব্দটাই শুনতে চাইছিল, খুশি হয়ে সাথে সাথে ফোন দিলো। আমি মানা করবো কেন দোষ তো আমারি এভাবে হুট করে বিয়ে করে মেয়েটার জীবন উলটপালট করে দিলাম। আজ মেয়েটা দুটানায় ভোগছে শুধুমাত্র আমার জন্য।
আলিফা: ফোনটা এখনো বন্ধ (আলিফার কথায় ওর দিকে তাকালাম মন খারাপ করে বসে আছে)
আমি: মন খারাপ করো না বার বার ট্রাই করে দেখো একবার নিশ্চয় ওকে পাবে
আলিফা: হুম

আলিফা মন খারাপ করে রুমে বসে আছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আলিফার সামনে থেকে ওর মন খারাপ দেখতে পারবো না তাই দূরে চলে এসেছি। আমি তো বুঝতে পারছি আলিফা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু রাতুলের প্রতি ওর যে ভালোবাসা ছিল মায়া ছিল ও এসব ভুলতে পারছে না। কিন্তু আমি রাতুলকে ভুলাবো কিভাবে আমি তো ওকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় কিনা আমার জানা নেই, তারপরও যদি আলিফা রাতুলকে না ভুলতে পারে আমার কি করার আছে। আচ্ছা রাতুলকে না ভুলাতে পারি অন্তত ওর মন তো ভালো করে দিতে পারি কিন্তু কিভাবে ভালো করবো। একটা রাস্তা আছে আলিফা রাজি হয় কিনা দেখি।

আলিফার সামনে এসে পায়চারী করছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।
আলিফা: কিছু বলবে
আমি: আমি যে কিছু বলতে চাই তুমি বুঝলে কি করে
আলিফা: মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম
আমি: দেখেছ তুমি আমাকে ভালোবাস তাই তো সবসময় আমি বলার আগেই তুমি আমার মনের কথা বুঝে যাও
আলিফা: কচু ভালোবাসি
আমি: তোমার তো ঘুরতে ভালো লাগে চলো শপিং করতে যাই
আলিফা: হঠাৎ শপিং
আমি: না মানে তোমার জন্য ফোন কিনা হয়ে যাবে সাথে তোমার মনও ভালো হবে
আলিফা: (আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন, প্লিজ চলো না তোমার জ্বরও তো কমেছে
আলিফা: ওকে যাবো
আমি: সত্যি
আলিফা: না মিথ্যা
আমি: তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
আলিফা: ওকে।

ড্রয়িংরুমে বসে আলিফার জন্য অপেক্ষা করছি, রাগিণী আসার নামই নেই আজ মনে হয় সাজতে সাজতে ও রাগিণী থেকে পরী হয়ে যাচ্ছে হিহিহি।
আলিফা: এই ভূতের মতো একা একা হাসছ কেন (আলিফার দিকে তাকিয়ে আছি এতোক্ষণ ও কি করলো এটাই ভেবে পাচ্ছি না, একদম সাজেনি শুধু শাড়িটা চেঞ্জ করেছে আর চুলগুলো খোপা করেছে কিন্তু তাতেই রাগিণীকে অনেক সুন্দর লাগছে)
আলিফা: হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি যাবে
আমি: চলো।

গাড়িতে উঠতে যাবো আলিফা চেঁচিয়ে বললো
আলিফা: আমি তো গাড়িতে যাবো না
আমি: আরে বাবা আস্তে বলো
আলিফা: হুম আমি গাড়িতে যাবো না
আমি: কেন
আলিফা: আমি রিকশা করে যাবো
আমি: রিকশা
আলিফা: হ্যাঁ অবাক হচ্ছ কেন
আমি: এমনি দাঁড়াও রিকশা পাই কিনা দেখি
আলিফা: ওকে।

রিকশাতে বসে আছি আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে আমার হাত ধরে রেখেছে। এখন বুঝেছি এজন্যই আলিফা রিকশাতে আসতে চেয়েছিল।
আলিফা: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
আমি: আমি না তোমার মন একদম বুঝতে পারিনা, হঠাৎ আমাকে ভালোবাস হঠাৎ আবার….
আলিফা: রিফাত এখন এসব বাদ দাও না
আমি: সবসময় তো বাদ দিয়েই যাচ্ছি আর কতো
আলিফা: আমি কিন্তু রিকশা থেকে নেমে যাবো
আমি: এই না না কান ধরেছি আর বলবো না।
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আলিফাকে জরিয়ে ধরলাম তারপর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
আলিফা: এই রাস্তার মধ্যে
আমি: প্লিজ এবার অন্তত হাসো। (আলিফা ফিক করে হেসে দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো)

আলিফার জন্য ফোন দেখছি ও মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: আমার ফোন লাগবে না
আমি: কেন
আলিফা: রাতুলের ফোন তো সবসময় বন্ধ পাই আমি আর ফোন কিনে কি করবো (রাগটা এখন আর কন্ট্রোল করতে পারছি না, রাতুলের ফোন বন্ধ থাকে তাই ফোন কিনবে না। ওর কথায় মনে হচ্ছে রাতুলকে ফোন দেওয়া ছাড়া দুনিয়ায় আর কাউকে ফোন দেওয়ার নেই, আরে আমি যখন অফিসে থাকি তখনো তো ফোন দিতে পারে)
আমি: লাগবে না যেহেতু চলো (ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম)
আলিফা: রিফাত কি করছ লাগছে আমার ছাড়ো
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রিফাত আমার হাতে লাগছে প্লিজ ছাড়ো
আমি: হুম ফোন যেহেতু লাগবে না শাড়ি কিনো
আলিফা: আমার শাড়িও লাগবে না
আমি: কেন রাতুল নেই বলে নতুন শাড়িও লাগবে না, ওহ বুঝেছি নতুন শাড়ি পরে কাকে দেখাবে রাতুল ছাড়া তো তোমাকে দেখার আর কেউ নেই
আলিফা: রিফাত
আমি: যা যা পছন্দ হয় কিনো আমি আসছি
আলিফা: আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছ।
আলিফার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম। ওয়াশরুমে এসে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলাম, যা রাগ হয়েছিল আলিফা যদি আজ বাসায় এমন করতো তাহলে হয়তো থাপ্পড় কয়েকটা দিয়ে দিতাম।

আলিফার কাছে এসে দেখি অনেক কিছু কিনেছে, আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো।
আমি: কিনা শেষ
আলিফা: হুম টাকা দিয়ে আসো বাসায় যাবো
আমি: হুম।

ইচ্ছে ছিল আজ সারাদিন ঘুরবো কিন্তু আলিফা বাসায় চলে যেতে চাইছে তাই আর কিছু বললাম না। শপিংমল থেকে বেরিয়ে পড়বো এমন সময় আলিফা দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি: কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন
আলিফা: রিফাত আমি রাতুলকে দেখেছি
আমি: মানে কোথায়
আলিফা: এইতো ভিতরে ঢুকলো
আমি: তুমি এখানে দাঁড়াও আমি দেখে আসছি
আলিফা: তুমি ওকে ছিনো নাকি আমিও সাথে যাই
আমি: তোমার ফোনে রাতুলের পিক দেখেছিলাম দেখলে ছিনতে পারবো, তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি আসছি।

সারা শপিংমল খুঁজলাম কিন্তু রাতুলকে তো পেলাম না তাহলে কি আলিফা ভুল দেখেছে। আলিফাকে গিয়ে কি জবাব দিবো ও তো মানিতেই চাইবে না ও যে ভুল দেখেছে।

আলিফার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আলিফা: পেয়েছ
আমি: না আমি তো অনেক খুঁজলাম কোথাও পাইনি তুমি মনে হয় ভুল দেখেছ
আলিফা: ভুল
আমি: প্লিজ কেঁদো না বাসায় চলো
আলিফা: হুম

বাসায় এসে আলিফা কারো সাথে কোনো কথা বললো না সারাটা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। আলিফা কি সত্যি রাতুলকে দেখেছে, তাহলে কি রাতুল ফিরে এসেছে…?

রুমে এসে দেখি শপিং এর ব্যাগ গুলো এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি এখন কি করবো কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আলিফা এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: আলিফা প্লিজ আর কেঁদো না আমি কাল আবার রাতুলকে খুঁজতে যাবো
আলিফা: শপিং এর ব্যাগ গুলো খুলে যার যেটা তাকে সেটা দিয়ে আসো
আমি: যার যেটা মানে
আলিফা: দেখো গিয়ে তাহলেই বুঝতে পারবে, আর কালো পাঞ্জাবীটা তোমার
আলিফা: তুমি কি সবার জন্য শপিং করেছ
আলিফা: হুম
আমি: তাহলে তুমি নিজের হাতে দিয়ে আসো
আলিফা: ভালো লাগছে না তুমি যাও
আমি: হুম।

ব্যাগ গুলো নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম। প্রিতি সবকিছু খুলে দেখছে। আব্বুর জন্য পাঞ্জাবী, রিয়ানের জন্য টিশার্ট, প্রিতির জন্য লেহেঙ্গা অথচ আলিফার জন্য কিছুই না।
প্রিতি: ভাবি তো নিজের জন্য কিছুই কিনে নি
আমি: আমারই ভুল ওখানে দেখতাম কি কি কিনেছে
প্রিতি: মন খারাপ করো না আবার ভাবিকে নিয়ে যাবে সমস্যা কি
আমি: হুম।

রুমে আসলাম আলিফাকে জিজ্ঞেস করতে নিজের জন্য কিছু কিনে নি কেন, কিন্তু ও তো রুমে বা বারান্দায় কোথাও নেই। গেলো কোথায় নিচে নয়তো, প্রিতি আর আমি তো ড্রয়িংরুমে ছিলাম নিচে গেলে তো আমরা দেখতাম। তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
আমি: প্রিতি প্রিতি
প্রিতি: কি হয়েছে ভাইয়া
আমি: তোর ভাবিকে দেখেছিস
প্রিতি: নাতো আমি তো এতোক্ষণ তোমার কাছেই ছিলাম।
দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম আব্বুর রুমেও নেই, এই সন্ধ্যা বেলায় যাবে কোথায় ও। আচ্ছা ছাদে যায়নি তো।

তাড়াতাড়ি ছাদে আসলাম। ছাদের চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছি কোথাও তো নেই, হঠাৎ ছাদের এক কোণায় চোখ পড়লো আলিফা ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আজব মেয়ে তো বাসর রাতে সুইসাইড এর ভয় দেখিয়েছিল আর আজ সত্যি সত্যি সুইসাইড করতে চলে এলো। আরে রাতুলকে একবার দেখেছে মাত্র খুঁজে এনে দিবো বলেছি তারপরও সুইসাইড করতে চলে এলো। দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৬

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তোমাকে কখনো হারাতে দিবো না রাগিণী, অনেক ভালবাসবো তোমায়”

হঠাৎ আলিফার গোঙানিতে ঘুম ভেঙে গেলো। কখন যে আলিফার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন যেন করছে, তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে কপালে হাত দিলাম, জ্বরে তো ওর শরীর পুরে যাচ্ছে। রাত প্রায় তিনটা বাজে এতো রাতে আব্বুকে ডাকা ঠিক হবে না এখন আমি কি করি। মনে পড়েছে সেদিন আমার জ্বর হওয়াতে আলিফা আমার কপালে জলপট্টি দিয়েছিল।

বসে বসে আলিফার কপালে জলপট্টি দিচ্ছি, এখন কিছুটা কমেছে। ওর পাশে গিয়ে চুলে হাত বুলাতে লাগলাম, আলিফা পাশ ফিরে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
আলিফা: রিফাত আমি না আর পারছি না আমি দুটানায় পড়ে গেছি। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। (আরে এসব কি বলছে ও, চোখ বন্ধ রেখেই আমাকে জরিয়ে ধরে একমনে এসব বলে যাচ্ছে)
আলিফা: রাতুল আমাকে ভালোবাসে আমিও বাসতাম কিন্তু এখন আমি কাকে ভালোবাসি নিজেই বুঝতেছি না, রাতুলকে ছেড়ে দিলে ও অনেক কষ্ট পাবে আমাকে খারাপ ভাববে। এদিকে রিফাত আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ওকে কি করে আমি কষ্ট দেই। রিফাতকে ছেড়ে যেতেও পারবো না আমি ওর প্রতি আমার মায়া জমে গেছে, এই মায়া কাটিয়ে আমি যেতে পারবো না। আমি এখন কি করবো সত্যি বুঝতে পারছি না, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না….
বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো তারমানে এতোক্ষণ ও জ্বরের ঘোরে এসব বলেছে। এতো জ্বর ওকে এখানে রেখে সোফায় গিয়ে ঘুমানো ঠিক হবে না তাই ওর পাশে শুয়ে পড়লাম, সাথে সাথে আলিফা এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। জ্বরের ঘোরে জরিয়ে ধরেছে বুকে মাথা রেখেছে সকালে যখন এই অবস্থা দেখবে তখন তো রেগে যাবে, আলিফাকে সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু ও আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। কি আর করার সকালে যা হবার হবে আমিও আলিফাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙতেই তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার মাথার পাশে বসে আছে আর একমনে আমাকে দেখছে।
আমি: কি দেখছ এভাবে
আলিফা: একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে কিভাবে
আমি: হঠাৎ এমন কথা
আলিফা: রাতে আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম তাই না
আমি: না মানে তোমার খুব বেশি জ্বর ছিল তাই জ্বরের ঘোরে আমাকে জরিয়ে ধরেছিলে, আমি সরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ছাড়ো নি। আর তোমাকে এই অবস্থায় একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না তাই আর কি… সরি
আলিফা: এমন আমতা আমতা করছ কেন আমি কি তোমায় বকা দিয়েছি (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আজব তো ও রাগ করলো না কেন)
আলিফা: কি দেখছ
আমি: জ্বর কমেছে
আলিফা: হ্যাঁ অনেকটা কমেছে
আমি: ওকে।

আলিফার জন্য নাশতা রুমে নিয়ে আসলাম আবার রাগ করবে কিনা কে জানে, এই রাগিণীকে খুব ভয় লাগে।
আলিফা: এসব কি
আমি: নাশতা
আলিফা: তাতো দেখতেই পারছি কিন্তু রুমে নিয়ে এসেছ কেন
আমি: এই শরীর নিয়ে আবার নিচে যাবে তাই রুমে নিয়ে আসলাম। এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও তো ওষুধ খেতে হবে
আলিফা: কষ্ট করে এনেছ যখন আর একটু কষ্ট করে খাইয়ে দাও (খাইয়ে দিতে বললো আমি তো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না)
আমি: তুমি বললে তো আমি সারাজীবন তোমাকে খাইয়ে দিতে রাজি আছি (আস্তে বললাম)
আলিফা: কিছু বললে
আমি: নাতো
আলিফা: বলেছ তো, আস্তে বলেছ আমি শুনতে পাইনি
আমি: খেয়ে নাও।

আলিফাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম। আলিফাকে শুয়ে দিয়ে নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালাম তখন আবার আলিফা ডাক দিলো।
আলিফা: রিফাত
আমি: কি আর কিছু লাগবে
আলিফা: আমার ফোনটা দিয়ে যাও তো
আমি: তোমার ফোন আমার কাছে নাতো কোথায় রেখেছিলে
আলিফা: ফোন ফোন….
আমি: কি হয়েছে এমন করছ কেন
আলিফা: ফোনটা বোধহয় হারিয়ে ফেলেছি
আমি: মানে
আলিফা: কাল যখন গাড়ির জানালার কাছে গিয়েছিলাম কথা বলতে তখন হঠাৎ করে মাথা ঘুরায় আর কিছু মনে নেই….
আমি: হ্যাঁ তখন তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে
আলিফা: তখনি হয়তো ফোনটা হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল
আমি: আচ্ছা আমি দেখে আসছি গাড়িতে পড়েছে কিনা
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: আমি দেখে আসছি দাঁড়াও।

গাড়িতে অনেক খুঁজলাম কিন্তু গাড়ির কোথাও তো ফোন পেলাম না তাহলে কি….
আলিফা: পেয়েছ
আমি: না গাড়িতে অনেক খুঁজলাম নেই, মনে হয় জানালা দিয়ে বাইরে পরে গিয়েছিল
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: আরে এই পাগলী কাঁদছ কেন একটা ফোনই তো আমি আজকেই তোমাকে নতুন ফোন কিনে দিবো
আলিফা: তুমি বুঝতে পারছ না রিফাত এই ফোনে রাতুল ফোন দিবে, ও বন্ধ ফেলে ভাববে আমি ইচ্ছে করে ওর সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আর এইটা ভাবা মানে ও আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববে, রিফাত আমি এতোটা খারাপ মেয়ে নই। হ্যাঁ আমি হয়তো রাতুলকে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছি কিন্তু সেটা ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলে মিটিয়ে নিতাম এভাবে হুট করে যোগাযোগ বন্ধ….
আমি: এক মিনিট তুমি একটু আগে কি বললে, রাতুলকে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছ
আলিফা: না মানে (তারমানে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে)
আলিফা: রিফাত তোমার ফোনটা দিবে
আমি: হুম।

আলিফা বার বার ফোন করে যাচ্ছে কাকে জানিনা হয়তো রাতুল।
আলিফা: দূর ওর ফোনটা কেন বন্ধ
আমি: কে রাতুল
আলিফা: হুম
আমি: হয়তো ফোনে চার্জ নেই বা অন্য কোনো সমস্যা একটু পর আবার দিয়ে দেখো
আলিফা: হুম।

নাশতা করে ড্রয়িংরুমে বসে আছি রুমে যেতে ইচ্ছে করছেনা, আলিফা হয়তো রাতুলের সাথে কথা বলছে মাঝখানে গিয়ে আমার ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। তাছাড়া আজকাল আলিফার রাতুলের সাথে কথা বলাটা সহ্য করতে পারি না, বুকের কোথাও যেন চাপা কষ্ট অনুভব হয়।
রিয়ান: ভাইয়া একা একা বসে কি ভাবছ
আমি: কিছু নাতো
রিয়ান: তোমার মুখ দেখলেই বুঝা যায়
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবি রুমে একা আর তুমি এখানে বসে আছ
আমি: ও মনে হয় রাতুলের সাথে কথা বলছে তাই ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করছে না
রিয়ান: ভাইয়া এখন কি করবে
আমি: জানিনা মাথায় কিছু আসছে না, আগে তো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু এখন সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আলিফা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না আর এখন ওর মনের যা অবস্থা তাই চাপ দিচ্ছি না কিন্তু এভাবে আর কতোদিন। আমি আর পারছি না।
রিয়ান: ভাইয়া আমি বলি কি ভাবিকে তুমি স্বাভাবিক হতে আর কিছুদিন সময় দাও। হঠাৎ করে ভাবির বাবা মারা গেছেন বুঝতেই তো পারছ মনের অবস্থা ঠিক নেই, আর কিছুদিন সময় দিলে হয়তো ভাবি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে
আমি: সাত মাসে যখন পারেনি ও আর পারবেও না
রিয়ান: বলছে তোমাকে, সবকিছুতে তাড়াহুড়া করলে হয় না ভাইয়া। তুমি যে হুটহাট রেগে যাচ্ছ একবার ভেবে দেখতো তুমি আজো নিলা আপুকে ভুলতে পারোনি তাহলে ভাবি এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা ভুলে যাবে কিভাবে। ভাবির কি ভালোবাসা ভুলার কথা ছিল তুমি হুট করে বিয়ে করাতেই তো ভাবি এখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
আমি: কিন্তু আমিও তো একটা মানুষ আমারো কষ্ট হয় এসব আর নিতে পারছি না, আমি ওকে সময় দেইনি এমন তো না অনেক সময় দিয়েছি….
রিয়ান: হ্যাঁ আর কিছুদিন সময় দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া ভালোবাসা ভুলা এতো সহজ না।
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবির কাছে যাও উনি অসুস্থ
আমি: ওকে

রুমে এসে দেখি আলিফা বসে বসে কাঁদছে।
আমি: এই কি হয়েছে কাঁদছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: রাতুলের ফোন কি এখনো বন্ধ
আলিফা: হুম
আমি: তাই বলে কাঁদবে, কিছুক্ষণ পর আবার ট্রাই করে দেখবে। এখন কেঁদো না প্লিজ এমনি অসুস্থ তুমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আলিফা: আমি বলেছি তোমাকে এজন্য কাঁদছি আর আমি অসুস্থ হলে কার কি
আমি: মানে আর এতো রেগে যাচ্ছ কেন
আলিফা: কিছুনা (গাল ফুলিয়ে বসে আছে এখন ওকে দেখতে একদম বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে)
আমি: আপনি অসুস্থ হওয়াতে কারো কিছু না হলে কেউ রাত জেগে আপনার কপালে জলপট্টি দিতো না বুঝেছেন
আলিফা: হুহ জলপট্টি দিলেই রোগীর সেবা করা হয়ে যায় নাকি
আমি: তো আর কি করতে হবে বলে দাও আমি তো জানিনা
আলিফা: জানতে হবেও না, আমি অসুস্থ জেনেও তো এতোক্ষণ বাইরে ছিলে
আমি: হুম এতোক্ষণে বুঝলাম রাগিণী রাগ করেছে কেন
আলিফা: রাগ কি
আমি: হাহাহা রাগিণী নাকি জানেনা রাগ কি
আলিফা: জানিই না তো
আমি: শিখাতে হবে নাকি (ওর একদম কাছে গিয়ে বললাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
ভাইয়া একটু নিচে আসতো (হঠাৎ রিয়ানের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি সরে গেলাম)
আলিফা: রিয়ান ডাকছে যাও
আমি: ওকে।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি রিয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: রিয়ান কিছু বলবি
রিয়ান: অফিসে যাবা কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছি
আমি: কিভাবে যাবো একটু সময় তোর কাছে বসে ছিলাম তাতেই আলিফা রেগে আছে অফিসে গেলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে
রিয়ান: তাহলে থাকুক ভাবি সুস্থ হলে পরেই যেও
আমি: ওকে সাবধানে যাস
রিয়ান: ভাইয়া তুমি যাই বলো ভাবি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে
আমি: তোর কথাটা সত্যি হলে তো ভালোই হতো
রিয়ান: সত্যি তো আস্তে আস্তে হয়েই যাচ্ছে। ভাইয়া একটা কথা বলবো
আমি: বল
রিয়ান: আমার না চাচ্চু ডাক শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: দাঁড়া ফাজিল।
রিয়ান হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো, যে মেয়ে আমাকে সোফায় ঘুমুতে দেয় আবার বাচ্চা।

রুমে আসতেই দেখি আলিফা নিলার ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর কি যেন ভাবছে।
আমি: আলিফা
আলিফা: হুম
আমি: ছবির দিকে তাকিয়ে কি ভাবছ
আলিফা: ভাবছি মেয়েটা খুব ভাগ্যবতী
আমি: কিভাবে
আলিফা: এইযে তোমার মতো একজনের ভালোবাসা পেয়েছে
আমি: এদিক থেকে ভাবলে তো তুমিও ভাগ্যবতী কারণ আমি নিলাকে যতোটুকু ভালোবাসতাম তোমাকেও ততোটুকু ভালোবাসি
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: সন্দেহ আছে বুঝি
আলিফা: একটু আছে
আমি: দাঁড়াও তোমার সন্দেহ দুর করছি
আলিফা: এই কি করছ এভাবে এগুচ্ছ কেন।
কোনো কথা না বলে আস্তে আস্তে আলিফার দিকে এগুতে থাকলাম আলিফা পিছাতে পিছাতে গিয়ে দেয়ালে ঠেকলো। ওর একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমি: এখন কোথায় যাবে
আলিফা: কি করছ
আমি: তোমার সন্দেহ দুর করছি
আলিফা: রিফা….
আলিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আলিফা আজ কোনো রাগ দেখাচ্ছে না বাধাও দিচ্ছে না চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৫

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সাত মাস পর….

সকালে মুখে রোদের আলো পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আলিফা জানালা খুলে দিয়েছে, আমার মুখে রোদ পড়েছে দেখে হাসছে। আমি পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। আজ আমাদের বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হলো। আজকে আলিফার উপর সবকিছু নির্ভর করছে ও যা চাইবে তাই হবে। আচ্ছা আলিফা যদি আজ ডিভোর্স চায়…?
আড়চোখে আলিফার দিকে তাকালাম, রুমে পায়চারী করছে আর কি যেন ভাবছে।
আলিফা: আবার ঘুমিয়ে পড়ছ যে অফিসে যাবে না
আমি: না
আলিফা: কেন
আমি: আলিফা আজ আমাদের বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হয়েছে তোমার মনে আছে তো….
আলিফা: হুম
আমি: কি সিদ্ধান্ত নিয়েছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আলিফা আজ নিশ্চুপ হয়ে থাকলে হবে না, সাত মাস অনেক সময় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য
আলিফা: আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না
আমি: তা বললে তো হবে না। সাত মাস হয়ে গেছে রাতুল দেশে ফিরে আসবে, তোমাকে তো এখন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। (বলতে বলতে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

এসে দেখি আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আলিফা: রিফাত সত্যি করে একটা কথা বলবে
আমি: কি
আলিফা: এই সাত মাসে তোমার কি মনে হয়েছে আমার মন কাকে ভালোবাসে
আমি: আমি এখনো তোমার মন বুঝতে পারিনি। তুমি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করো আবার রাতুলের সাথেও কথা বলে যাচ্ছ কি বুঝবো বলো
আলিফা: আমি না দুটানায় পড়ে গেছি আমি তোমাদের কাউকেই কষ্ট দিতে চাই না
আমি: তুমি যা চাইবে আমি তাই মেনে নিবো
আলিফা: যদি ডিভোর্স চাই (ওর এমন কথায় কেমন যেন বোবা হয়ে গেলাম, এখন কি বলবো)
আলিফা: কি হলো
আমি: কিছুনাহ, ডিভোর্স চাইলে আমি দিবো কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি যেভাবে ভালো থাকবে তাতেই আমি খুশি
আলিফা: আর যদি তোমার কাছে থেকে যেতে চাই
আমি: সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ভালবাসবো সবসময় আগলে রাখবো তোমাকে, কোনো কষ্ট পেতে দিবো না
আলিফা: প্রশ্নগুলো রাতুল কে করলে সেও এমন উত্তর দিবে এখন তুমি বলো আমি কাকে বেছে নেই
আমি: তোমার মন যা চায় তাই করো
আলিফা: মন কি চায় আমি নিজেই বুঝতেছি না
আমি: তোমার মন একবার আমাকে চায় একবার রাতুলকে চায় বুঝেছ এজন্যই তুমি দুটানায় পরে গেছ। কিন্তু আলিফা বুঝার চেষ্টা করো এভাবে সম্ভব না।
আলিফা: হুম
আমি: রাতুল কি বলেছে দেশে কবে আসবে
আলিফা: আর দুদিন আছে
আমি: রাতুল এসে যখন তোমার সামনে দাঁড়াবে তখন কি করবে তারচেয়ে ভালো আজই সিদ্ধান্ত নাও
আলিফা: রিফাত আমাকে একটু একা থাকতে দাও তো
আমি: ওকে।

আলিফা কি সিদ্ধান্ত নিবে আমি জানিনা কিন্তু আমি আজ একটা সিদ্ধান্ত নিবোই এভাবে তো চলতে পারে না। আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য আব্বুর রুমে আসলাম।
আমি: আব্বু আসবো
আব্বু: আয়
আমি: আব্বু
আব্বু: কিছু বলবি
আমি: হুম
আব্বু: বল
আমি: আব্বু আমি আলিফাকে সাত মাস সময় দিয়েছিলাম ভালোভাবে বুঝে যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু ও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। রাতুল দেশে চলে আসবে আব্বু আমি আর পারছি না আমি এই দুটানা থেকে মুক্তি চাই
আব্বু: কি করতে চাইছিস
আমি: আলিফা যদি এভাবে থাকতে চায় তাহলে আমার পক্ষে সম্ভব না আমি ওকে ডিভোর্স দিবো
আব্বু: এইটা কি ঠিক হবে
আমি: তো আমি কি করবো আব্বু, আলিফা প্রতিনিয়ত রাতুলের সাথে কথা বলে যাচ্ছে আমি তো একটা মানুষ আব্বু আমারো তো কষ্ট হয় আর কতো সহ্য করবো
আব্বু: ঠিক আছে তুই আলিফার সাথে আবার কথা বলে দেখ আমি ভেবে দেখছি
আমি: হুম।

রুমে চলে আসলাম, আলিফা ফোনে কথা বলছে। এই মেয়েকে তো থাপড়াইতে মন চাইতেছে, দুদিকেই ঠিক রাখছে এইটা তো ঠিক না। রাতুল আমি দুজনেই কষ্ট পাচ্ছি।
আলিফা: রিফাত এসেছ শুনো আমার সিদ্ধান্ত
আমি: হুম বলো (বুকের বাম পাশে ধুকধুক করছে, ভয় হচ্ছে আলিফা যদি ডিভোর্স চায় তখন কি করবো আমি, পারবো আলিফাকে ডিভোর্স দিতে…?)
আলিফা: রিফাত কি হয়েছে তোমার এভাবে ঘামছ কেন
আমি: কই কিছু নাতো
আলিফা: কিছু না বললেই হলো।
এক গ্লাস পানি এনে আমার হাতে দিলো। পানি খেতে খেতে ওর দিকে তাকালাম, এসব তো এখন স্মৃতি হয়ে যাবে আর আমাকে তাড়া করে বেড়াবে।
আলিফা: রিফাত আমি কাউকেই কষ্ট দিতে চাই না। তোমার কাছে থাকলে রাতুল কষ্ট পাবে রাতুলের কাছে চলে গেলে তুমি কষ্ট পাবে। কিন্তু তোমাদের এই কষ্ট দেওয়া ছাড়া আমার সামনে কোনো রাস্তা নেই। আমি অনেক ভেবে দেখেছি কষ্ট দিলে দুজনকেই দেওয়া উচিত।
আমি: দুজনকে মানে বুঝলাম না
আলিফা: আমি তোমাদের দুজনকেই মুক্তি দিতে চাই
আমি: মানে কি
আলিফা: রাতুলকে বলবো তোমাকে আগে বলছি তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও, রাতুলের সাথেও আমি সব সম্পর্ক বাদ দিয়ে দিবো।
আমি: মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার পাগলের মতো এসব কি বলছ, একবার ভেবে দেখেছ তোমার কি হবে কোথায় যাবে তুমি
আলিফা: কেন আব্বুর কাছে
আমি: তোমার আব্বু আমার উপর ভরসা করে বলেছিলেন তোমাকে যেন আগলে রাখি, আমি হয়তো পারবো না কিন্তু রাতুল তো পারবে তুমি যেকোনো একজনের কাছে থাকো প্লিজ
আলিফা: একজন হাসবে অন্যজন কাঁদবে তা তো হতে পারে না
আমি: এসব বলেছ রাতুলকে
আলিফা: না রাতে ও ফোন করবে তখন বলে দিবো
আমি: তাহলে আর বলার প্রয়োজন নেই তুমি রাতুলের কাছে চলে যাও আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছি। তুমি যার সাথেই থাকো তোমাকে সুখী দেখলেই আমি শান্তি পাবো
আলিফা: রিফাত শু….
আলিফার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বললো শুনিনি কিন্তু আলিফা একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি ওকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলাম। হঠাৎ করে কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। পানি ছিটিয়ে দিলাম ওর চোখে মুখে কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না।
আব্বু: রিফাত কি হয়েছে আলিফা এভাবে চিৎকার করলো কেন
প্রিতি: ভাবির চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে এসেছি, কি হয়েছে
আমি: জানিনা কে যেন ফোন করলো ও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বলেছে যেন সাথে সাথে আলিফা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো
আব্বু: রিয়ান আলিফার মোবাইল এনে দেখতো কে ফোন দিয়েছিল
রিয়ান: দেখছি আব্বু।
আলিফার চোখেমুখে পানি ছিটাতে ছিটাতে হঠাৎ ওর জ্ঞান ফিরলো।
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আলিফা: রিফাত আব্বু আআআব্বু… (আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো)
রিয়ান: আব্বু এতিমখানার ম্যানেজার ফোন করেছিল ভাবির আব্বু মারা গেছেন
আব্বু: এজন্যই মেয়েটা এতো কষ্ট পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে কারো আদর ভালোবাসা পায়নি, বড় হয়ে একজনের পেলো তো আজ উনি মেয়েটাকে একা রেখে চলে গেলেন
রিয়ান: আব্বু ভাবির তো জ্ঞান ফিরছে না আমি ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলছি
আব্বু: হুম।

আলিফার মাথাটা আমার কোলে নিয়ে বসে আছি, এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। যে মেয়েটা একটু আগে বলছিল আমাকে রাতুলকে মুক্তি দিয়ে বাবার কাছে চলে যাবে সে মেয়েটাই কিনা এখন একা হয়ে গেলো।
আলিফা: রিফাত আমি আব্বুর কাছে যাবো (হঠাৎ আলিফার জ্ঞান ফিরে আসলো)
আমি: আব্বু আলিফার জ্ঞান ফিরেছে
আব্বু: মা এখন কেমন লাগছে
আলিফা: আমি আব্বুর কাছে যাবো
আব্বু: হ্যাঁ আমরা সবাই যাবো, ডক্টর আসছে তোমাকে দেখিয়ে তারপর যাবো
আলিফা: আমি ঠিক আছি ডক্টর লাগবে না, আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চলো
আমি: আব্বু বাসায় এসে ডক্টর দেখানো যাবে ওকে এখন নিয়ে যাওয়াই ভালো
আব্বু: ঠিক আছে, রিয়ান গাড়ি বের কর আমরা সবাই যাবো।

গাড়িতে আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না, সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সকালে ভেবেছিলাম আলিফা কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে আমিই সিদ্ধান্ত নিবো, ওকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু ওকে একা করে দেই কিভাবে, আমি ওর পাশে না থাকলে কে থাকবে রাতুল তো দেশের বাইরে।
রিয়ান: ভাইয়া ভাবির ফোন এসেছে মোবাইল আমার কাছে ছিল
আমি: প্রিতি ফোনটা এনে তুই রিসিভ কর তো (প্রিতি ফোন হাতে এনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো রিসিভ কর
প্রিতি: ভাইয়া রাতুল ফোন দিয়েছে (আমাদের তো রিসিভ করা ঠিক হবে না, পরে যদি আলিফাকে ভুল বুঝে)
আমি: আলিফা তোমার ফোন এসেছে।
আলিফা ফোন রিসিভ করে গাড়ির জানালার কাছে গেলো কথা বলতে। হঠাৎ গোঙিয়ে উঠলো তাড়াতাড়ি ওর পাশে গেলাম, গিয়ে দেখি আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমি: আব্বু আলিফা তো আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে
আব্বু: বেশি কষ্ট পেয়েছে তো চিন্তা করিস না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: হুম। (আলিফাকে কাছে এনে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, এই একটু সময়ে মেয়েটা কেমন যেন নীরব হয়ে গেছে)
আব্বু: রিফাত সকালে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলি তা ভুলে যা, এখন তুই আলিফার সবকিছু
আমি: কিন্তু আব্বু রাতুল যদি ফিরে আসে
আব্বু: ফিরে আসলে আলিফা যদি নিজের ইচ্ছায় রাতুলের কাছে যেতে চায় তখন বাধা দিবি না কিন্তু এখন মেয়েটার কেউ নেই তাই আমি চাইবো তুই অতীতের সব কষ্ট ভুলে মেয়েটাকে আপন করে নে
আমি: হুম আব্বু।

আলিফার আব্বুর লাশ জরিয়ে ধরে ও খুব কান্না করছে। কাঁদুক আজ আর বাধা দিবো না।
ম্যানেজার: মেয়েটা খুব একা হয়ে গেলো
আব্বু: কে বললো আমার বৌমা একা হয়ে গেছে, ওর এক আব্বু মারা গেছে আর এক আব্বু তো বেঁচে আছে। আমি সবসময় আলিফাকে আগলে রাখবো।
ম্যানেজার: আপনার কথা শুনে স্বস্তি পেলাম, আসলে মেয়েটা ছোট থেকেই একা তো তা….
আব্বু: এখন আর ও একা না, ওর পুরো একটা পরিবার আছে স্বামী আছে।
ম্যানেজার: মেয়েটা খুব ভালো ছোট থেকে চিনি তো ওকে কখনো কষ্ট দিও না বাবা (আমাকে কথা গুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন)

আলিফার আব্বুর দাফন কাজ শেষ করে ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

আলিফা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে, রাত হয়ে গেলো সকাল থেকে মেয়েটা সমানে কেঁদে যাচ্ছে এভাবে কাঁদলে তো মেয়েটা….
রিয়ান: ভাইয়া ডক্টর এসেছেন
আমি: হুম ভিতরে নিয়ে আয়।

ডক্টর আলিফাকে দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে ওকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলেন। আলিফা আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
আমি: কি হয়েছে এতো ভেঙে পড়ছ কেন
আলিফা: আমি যে আবারো খুব একা হয়ে গেলাম, আব্বু আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলেন
আমি: কেঁদো না প্লিজ কে বলেছে তুমি একা আমরা আছি তো, এখানে তো তোমার আরেকজন আব্বু আছেন তাহলে এতো ভেঙে পড়ছ কেন
আলিফা: রিফাত (আমার হাত ধরে কান্না করে দিলো)
আলিফা এখন আমাকে ছাড়বে নাকি রাতুলকে ছাড়বে ভেবে পাচ্ছে না, দুজনকে ছেড়ে দিলে যাবে কার কাছে এজন্যই এতো ভেঙে পড়ছে আমি তা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো ওকে আর কাঁদতে দিবো না, ও আমাকে ভালোবাসুক বা না বাসুক আমি ওকে সবসময় ভালবাসবো, ওকে সবসময় আগলে রাখবো।
আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তোমাকে কখনো হারাতে দিবো না রাগিণী, অনেক ভালবাসবো তোমায়”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৪

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে কপালে কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছুয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো, তাকিয়ে দেখি আলিফা। আমি সজাগ হয়ে গেছি দেখে আলিফা কেমন যেন হকচকিয়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাইলো। আমি ওকে টান দিয়ে জরিয়ে ধরলাম কেমন যেন অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে, চোখে পানি ছলছল করছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: কিছু নাতো
আমি: লুকাচ্ছ কেন তোমার চোখের পানিই তো বলে দিচ্ছে কিছু হয়েছে তোমার
আলিফা: কিছু হয়নি উঠো
আমি: ভালোই যখন বাস লুকাচ্ছ কেন, ভালোবাসা কি লুকানো যায়
আলিফা: রিফাত ছাড়ো ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো
আমি: আগে বলো ভালোবাস কিনা
আলিফা: জানিনা (আমার বুকে মাথা রেখে কান্না করছে, কি হয়েছে ওর কিছুই বুঝতে পারছি না)
আমি: আলিফা কান্না না করে বলো আমাকে কি হয়েছে
আলিফা: কিছু নাতো।
আমার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিলো তারপর চলে যাওয়ার জন্য উঠতে চাইলো। ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এনে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিলাম। আলিফা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেলো।

সবাই একসাথে বসে নাশতা করছি হঠাৎ আলিফার ফোন বেজে উঠলো, আশ্চর্য ফোন সাথে নিয়ে নাশতা করতে এসেছে। আলিফা তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো, মনে হচ্ছে ও কারো ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল।
রিয়ান: ভাইয়া হানিমোনে যাওয়ার প্ল্যান কি করেছ প্লিজ তাড়াতাড়ি গিয়ে ফিরে এসো আমি ব্যবসা সামলাতে পারছি না
আব্বু: যাওয়ার আগেই বলছিস তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে, তাড়াতাড়ি আসতে হবে না আমি কয়েক দিন নাহয় অফিসে যাবো
আমি: না আব্বু তোমার আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই দুভাই সব সামলে নিতে পারবো। আর আমি এক্ষণি আলিফার সাথে কথা বলে দেখছি
রিয়ান: ভাইয়া প্লিজ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যাও
আমি: ওকে।

নাশতা করে সবার সাথে অনেক্ষণ গল্প করে রুমে আসলাম। আলিফা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, এতো সময় ধরে আলিফা কার সাথে কথা বলছে রাতুল নয় তো….?
আমি: আলিফা কার সাথে কথা বলছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আলিফা আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করেছি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
এতোক্ষণ ধরে ডাকছি কথা বলছে না তাই ওর কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখলাম ও পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেলো, আলিফা ফোনে কথা বলছে আর কাঁদছে। কিন্তু কার সাথে কথা বলছে আর কাঁদছেই বা কেন…?

বারান্দায় এসে আলিফার পাশে দাঁড়ালাম ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আর ভালো লাগছে না ওর কান্না দেখতে।
আমি: আলিফা কি হয়েছে কাঁদছ কেন
আলিফা: এমনি
আমি: কে ফোন করেছে
আলিফা: বিরক্ত করোনা তো যাও এখান থেকে
আমি: আগে বলো তুমি কাঁদছ কেন
আলিফা: বললাম তো এমনি (চেঁচিয়ে উঠলো)
আমি: আশ্চর্য তো কাঁদছ কেন জিজ্ঞেস করাতে এতো রেগে যাচ্ছ কেন
আলিফা: তো কি করবো কি উত্তর দিবো তোমাকে, আমার কান্নার কারণ তো তুমিই
আমি: মানে
আলিফা: একদিনে সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছ এখন আমি কি সিদ্ধান্ত নিবো নিজেই বুঝতে পারছি না, রাতুল সমানে আমাকে ভুল বুঝে যাচ্ছে। এতো যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই (ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম ওকে কতো বড় কথা বলে ফেলছে নিজেকে নাকি শেষ করে দিবে)
আমি: অন্যায় করলে আমি করেছি শাস্তি দিতে হলে আমাকে দাও নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ হয়ে গালে হাত দিয়ে কাঁদছে)
আমি: মানছি আমি তোমার মনের কথা না জেনে বিয়ে করে অন্যায় করেছি তাই বলে….
আলিফা: তোমার একটা অন্যায় যে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে সেটা কি বুঝতে পারছ
আমি: প্রথম বুঝেছিলাম কিন্তু তোমার গতকালের ব্যবহারে ধারনাটা পাল্টে গিয়েছিল কিন্তু আজ দেখছি তুমি রাতুলকেই ভালোবাস
আলিফা: হ্যাঁ আমি রাতুলকেই ভালোবাসি শুনতে পেয়েছ তুমি।
আমার সব ভাবনা তাহলে মিথ্যে ছিল আলিফা এসব কি বলছে। আর ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।

সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় কাটিয়েছি ফোনটাও সাথে আনা হয়নি আব্বু হয়তো টেনশন করছেন। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় গেলেই তো আলিফার সামনে যেতে হবে, ওকে দেখলেই এখন রাগ উঠবে শুধু রাতুল রাতুল করে আর আমি যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি তার কোনো দাম নেই।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে রাস্তার পাশে বসে বসে ভাবছি, রাগের মাথায় কতো জোরে থাপ্পড় মেরে দিলাম পাগলীটা অনেক কষ্ট পেয়েছে গালে মনে হয় দাগ পরে গেছে।
সাগর: রিফাত তুই রাস্তার পাশে বসে কি করছিস (হঠাৎ সাগরের ডাকে ওর দিকে ফিরে তাকালাম)
সাগর: কিরে কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন
আমি: এমনি
সাগর: বাসায় চল কিছু তো একটা হয়েছে
আমি: বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না
সাগর: আমার বাসায় চল
আমি: হুম

সাগরের বাসায় বসে আছি ইচ্ছে হচ্ছে না বাসায় ফিরে যেতে।
সাগর: রিফাত সব তো শুনলাম এখন কি করবি
আমি: জানিনা
সাগর: আমার কি মনে হয় জানিস ভাবি দুটানায় পরে গেছে তাই আজ তোর সাথে এমন ব্যবহার করেছে
আমি: হুম আর ও এইটা সারাজীবন করবেও আর আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না
সাগর: আমার মনে হয় তোর ভাবিকে সময় দেওয়া উচিত, ভাবির মন কি চায় সেটা উনাকে বুঝতে দে দেখবি উনি নিজেই সব ঠিক করে নিয়েছেন
আমি: সময়
সাগর: হ্যাঁ তুই ভাবিকে ভাবির মতো থাকতে দে তুই তোর মতো থাক, তবে যেমন ভালোবাসিস তেমন ভাবেই ভালোবেসে যা। ভাবি সময় পেলে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে কি করলে ভালো হবে বা উনার মন কি চায়
আমি: হুম
সাগর: এখন বাসায় যা অনেক রাত হয়েছে
আমি: ইচ্ছে করছে না
সাগর: আঙ্কেল কে কষ্ট দিবি নাকি
আমি: নাহ যাচ্ছি

আনমনে হয়ে রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি সত্যি আলিফাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। হঠাৎ করে এতোকিছু হয়ে গেলো মেয়েটা কি করবে, সময় না পেলে ও নিজের মনের কথা বুঝবে কিভাবে। বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই প্রিতি দরজা খুলে দিলো।
আমি: ঘুমাস নি
প্রিতি: সারাদিন কোথায় ছিলে
আমি: সুমনের বাসায়
আব্বু: তোর থেকে এইটা আশা করিনি রিফাত, কাউকে কিছু না বলে সারাদিন বাসার বাইরে ছিলি এসব কি রিফাত
আমি: আব্বু….
আব্বু: রিফাত আমি বলছি নিজে সময় নে বউমা কে সময় দে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে
আমি: হুম
আব্বু: রুমে যা বউমা আজ একবারো নিচে আসেনি
আমি: হুম

রুমে এসে দেখি আলিফা ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। ফ্লোরে বসে কাঁদতে কাঁদতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কোলে তুলে ওকে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলাম। ওর শরীরে বিছানাচাদর টেনে দিতেই ঘুমের ঘোরে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আলিফার ঠোঁটের একদম কাছে আমার ঠোঁট, ওর গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। আলিফার গালে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পরে আছে হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে গিয়ে দেখি গালে আঙ্গুলের দাগ বসে আছে। নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে কেউ এভাবে আঘাত করে। কিন্তু আমারই বা কি করার ছিল, আলিফা নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছিল ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো কিভাবে। গালের দাগ গুলোর উপর একটা চুমু দিয়ে আলিফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম তারপর সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আলিফা এখনো ঘুমাচ্ছে, গালের দাগ গুলো এখনো দেখা যাচ্ছে। ওকে আর না ডেকে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

নাশতা করতে এসে দেখি আলিফাও চলে এসেছে।
আমি: আব্বু আজ থেকে আমি অফিসে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: কিন্তু হানি….
আমি: আব্বু প্লিজ এসব বাদ দাও আমি ভালই আছি
আব্বু: হুম
আমি: রিয়ান খেয়ে রেডি হয়ে নে এক সাথেই যাবো
রিয়ান: হুম।
একদিকে চাকু দিয়ে আপেল কাটছি আরেক দিকে আলিফাকে দেখছি হঠাৎ চাকু হাতে লেগে গেলো।
আব্বু: কিযে হয়েছে তোর হুশ রেখে কাজ করবি তো, প্রিতি যা তো ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দে
আলিফা: আব্বু আমি করে দিচ্ছি, রিফাত রুমে চলো।

রুমে এসে চুপচাপ বসে আছি আলিফা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে, এখন দেখে বুঝার উপায় নেই ও যে আমাকে নয় রাতুলকে ভালোবাসে।

অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি কিন্তু শার্টের বোতাম লাগাতে পারছি না হাত ব্যথায়। আলিফা এসে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেই বোতাম লাগিয়ে দিলো। নাহ আর মায়া বাড়াতে চাই না।
আমি: আলিফা এসব সহানুভূতি দেখানো ছাড়ো
আলিফা: মানে
আমি: সকালে আমায় ভালোবাসবে আর বিকেলে বলবে রাতুলকে ভালোবাস আবার বিকেলে আমায় ভালোবাসবে আর সকালে বলবে রাতুলকে ভালোবাস সেটা তো হতে পারে না। আলিফা দু নৌকায় পা দিয়ে সাগর পারি দেওয়া যায় না তাই তোমাকে যে কোনো একজন কে বেছে নিতে হবে। আর এজন্য আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি তুমি ভাবো সময় নাও তোমার মন কি চায় বুঝ তারপর সিদ্ধান্ত নাও
আলিফা: সময়
আমি: হ্যাঁ, তুমি তো বলেছিলে রাতুল সাত মাস পর দেশে আসবে তাই তোমাকে আমি সাত মাস সময় দিচ্ছি এই সাত মাসে তুমি বুঝার চেষ্টা করো তুমি কার কাছে থাকতে চাও
আলিফা: রিফাত আমার কথা শুনো আগে
আমি: যা শুনার সাত মাস পর শুনবো, তখন যদি ভালোবাস বল তাও মেনে নিবো যদি ডিভোর্স চাও তাও দিবো
আলিফা: রিফাত আ….
আলিফার কোনো কথা না শুনে বেরিয়ে আসলাম।

সারাদিন অফিসের কাজে মন দিতে পারিনি বার বার শুধু আলিফার কথা মনে পড়েছে। আচ্ছা সাত মাস পর আলিফা আমাকে মেনে নিবে তো নাকি….
এখন ছোটমার কথাই মনে রাখতে হবে নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস হারালে চলবে না। আলিফাকে আমি সবসময় ভালোবেসে যাবো কিন্তু ও কি চায় সেটা সাত মাস পর ওর মুখ থেকে শুনবো।

রাতে বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো, রুমে এসে দেখি আলিফা শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে। ওকে কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আলিফা রুমে নেই হয়তো বারান্দায় গিয়ে কথা বলতেছে, আমি নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে তো আমি অবাক আলিফা রিয়ানকে ভাত দিচ্ছে।
আমি: রিয়ান প্রিতি কোথায়
রিয়ান: ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর ডাকিনি আমি নিজেই নিয়ে খাচ্ছিলাম তখন দেখি ভাবি…
আমি: আলিফা আমরা দুভাই নিজেই নিয়ে খেতে পারি তুমি রুমে চলে যাও
রিয়ান: ভাইয়া কি বলছ এসব
আমি: একটু আগে ও রাতুলের সাথে কথা বলছিল আর এখন আসছে আমাকে ভাত দিতে, ও তো দুদিকেই ঠিক রাখতেছে এভাবে তো চলা যায় না ওকে যে কোনো একজন কে বেছে নিতে হবে
আলিফা: এর জন্য তো তুমি আমাকে সাত মাস সময় দিয়েছ তো আজই এতো রাগ দেখাচ্ছ কেন। তাছাড়া আমি নিজেও খাইনি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আমার খিদে লেগেছে
রিয়ান: ভাইয়া প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: খিদে চলে গেছে।

রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, রাগ দেখিয়ে চলে আসলাম কিন্তু খিদে তো লেগেছে খুব।
আলিফা: খাবার এনেছি খেয়ে নাও
আমি: এই মেয়ে তুমি চাওটা কি দুদিকেই ঠিক রাখতেছ, যেকোনো এক রাস্তা বেছে নাও না
আলিফা: একদম চুপ, হাত তো কাটা আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আমি: লাগবে না
আলিফ: আগে আমার হাতে খাওয়ার জন্য বাহানা করতে আর এখন না করো ভালোবাসা কমে গেছে নাকি।
এই মেয়ের সাথে কথায় পারবো না তাই চুপচাপ খেয়ে নিলাম। আমাকে খাইয়ে দিয়েই আলিফা আবার ফোনে কথা বলতে চলে গেলো, কি আজব মেয়েরে বাবা। ওর এসবে তো আমি বার বার কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি আসলে ও চায়টা কি।

রাত প্রায় দুটু বাজে ঘুম আসছে না আলিফা এখনো ফোনে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর রুমে আসলো।
আলিফা: রিফাত আমি একটা কথা ভেবেছি
আমি: যা ভেবেছ সাত মাস পরে বলো, এখন তোমার যা খুশি করো কিছু বলবো না কিন্তু সাত মাস পরে যদি তুমি কোনো সিদ্ধান্ত না নাও তাহলে আমি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো
আলিফা: হুম
আমি: মনে রেখো সাত মাস।

দিনগুলো খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারিনি আলিফা আসলে কাকে ভালোবাসে কার কাছে থাকতে চায়। সকালে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলে বিকেলে খারাপ ব্যবহার করে আবার রাতুলের সাথেও সমানে কথা বলে যাচ্ছে, ও চাইছেটা কি আমি বুঝতেই পারছি না আমি কি আদৌ আলিফার মনের কথা বুঝতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, সাত মাসের অপেক্ষা….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৩

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার হাত বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, মনে হচ্ছে ওর হাত ছাড়লেই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আলিফা ওর আচল দিয়ে আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো তারপর আমাকে জরিয়ে ধরলো…

রিফাত তাড়াতাড়ি আয় বাবা (হঠাৎ ছোটমার ডাকে আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইসস ছোটমা আসার আর সময় পেলো না)
ছোটমা: কিরে তুই শুয়ে আছিস যাবি না
আমি: হ্যাঁ যাবো তো তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ছোটমা: তাড়াতাড়ি আয়।
ছোটমা চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হতে যাবো আলিফার দিকে তাকাতেই ওর চোখে আমার চোখ পড়লো। কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ আলিফা জোরে হেসে উঠলো।
আমি: হাসছ কেন
আলিফা: যেভাবে তাকিয়েছ আজ আর ছোটমাদের নিয়ে যাওয়া হবে না হিহিহি।
আমি: তোমার হাসিটা খুব সুন্দর (আলিফার কানের কাছে আস্তে বললাম)
আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে তো আমি অবাক। আলিফা আয়নার সামনে বসে বসে সাজছে, এইটুকু সময়ের মধ্যে শাড়িও চেঞ্জ করে নিয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আলিফা সাজছে কেন বুঝতে পারছি না। আস্তে আস্তে গিয়ে আলিফার পিছনে দাঁড়ালাম, ও আয়নায় আমাকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি: বাব্বাহ্ লজ্জা পেলে তো আমার বউটাকে অনেক সুন্দর লাগে
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: জ্বী
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: হঠাৎ করে সাজছ যে কোথায় যাবে
আলিফা: তোমার সাথে ছোটমাদের দিয়ে আসতে, যেমন করে নিলা যেতো আজ আমি যাবো (আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, নিলার কথা বলাতে মনে পড়েছে নিলা এভাবে সাজলেই ওকে জরিয়ে ধরতাম আলিফাকে জরিয়ে ধরার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি রেগে যায়)
আলিফা: কি ভাবছ (যা হবার হবে ওকে টান দিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, চোখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিলাম)
আমি: এটাই ভাবছিলাম যে তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে (আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
আলিফা: একটু ছাড়ো তো
আমি: কেন
আলিফা: ছাড়ো না।
আমি ওকে ছাড়তেই আলিফা আমার বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, পাগলী একটা।

রেডি হয়ে নিচে এসে দেখি আলিফা সবার কাছে বসে আছে আর সবাই ওর কতো প্রশংসা করছে।
প্রিতি: ভাবি তোমাকে আজ একদম পরীর মতো লাগছে
আব্বু: হ্যাঁ আমার বউমাকে দেখতে একদম লক্ষী মেয়ের মতো লাগছে অবশ্য আমার বউমা তো লক্ষীই
আমি: তোমরা যার এতো প্রশংসা করছ আমার চোখে তো তাকে দেখতে একদম পেত্নীর মতো লাগছে
আলিফা: কি আমি পেত্নী
আমি: একদম
আলিফা: আব্বু দেখেছ তোমার ছেলে কেমন মিথ্যেবাদী, রুমে বলে এসেছে আমাকে সুন্দর লাগছে তাও আমাকে জরিয়ে ধরে আর এখানে এসে পেত্নী বলছে (কেমন বোকা মেয়েরে বাবা এসব কেউ শশুড়কে বলে)
রিয়ান: ভাবি দিলে তো ভাইয়ার মান ইজ্জত নষ্ট করে
ছোটমা: মান ইজ্জত নষ্ট হবার কি আছে বউমা সত্যি কথা বলেছে আমিও তো…
আমি: ছোটমা যাবে তোমরা
ছোটমা: হাহাহা ছেলে লজ্জা পাইছে।
এখানে থাকলে আরো লজ্জা পেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে এসে বসলাম।

আলিফা এসে আমার পাশে বসলো, বাব্বাহ আজ বলতেও হলো না। ছোটমা আর চাচ্চু পিছনে বসলেন।
ছোটমা: সাবধানে চালাস
আমি: অসাবধানে চালাবো
চাচ্চু: এই ছেলেটা সবসময় উল্টো কথা বলে
আমি: চাচ্চু আবার কবে আসবে
চাচ্চু: খুব তাড়াতাড়ি আসবো
আমি: সত্যি তো
ছোটমা: হ্যাঁ কিন্তু তোর জন্য আসবো না
আমি: মানে কার জন্য আসবে তাহলে
চাচ্চু: আমাদের বউমার জন্য
আমি: দুদিনেই আমি পর হয়ে গেলাম আর ও আপন হয়ে গেলো
ছোটমা: নারে পাগল ছেলে তোরা দুইটাই তো আমাদের সন্তান।
হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফার আব্বু ফোন দিয়েছেন।
আমি: আলিফা তোমার ফোন কোথায়
আলিফা: বাসায় রেখে এসেছি
আমি: হুম নাও তোমার আব্বু ফোন দিয়েছেন।

আলিফা কথা বলে ফোন নিজেই আমার পকেটে রাখলো, এই মেয়ে যে আজ আমাকে আর কতোবার অবাক করাবে আল্লাহ্‌ জানেন। ড্রাইভ করছি আর আড়চোখে আলিফাকে দেখছি, আলিফাও আমাকে আড়চোখে দেখছে হঠাৎ দুজন দুজনের দিকে একসাথে তাকালাম আলিফা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ওকে ইশারা দিয়ে আমার কাধে মাথা রাখতে বললাম, ও লক্ষী মেয়ের মতো তাই করলো। আলিফা কাধে মাথা রাখতেই ফিসফিস করে বললাম…
আমি: এই পাগলী রুমে কি করেছি না করেছি এসব কি সবার সামনে বলতে হয়
আলিফা: সরি (লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো)
আলিফাকে কখনো এভাবে কাছে পাবো ভাবতেই পারিনি। আজ তো মনে হচ্ছে আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু রাতুল…? মাথায় কিছুই ঢুকছে না আলিফাকে সব জিজ্ঞেস করতে হবে।

আলিফাকে গাড়ির কাছে রেখে চাচ্চু আর ছোটমাকে ট্রেনে তুলে দিতে আসলাম।
ছোটমা: রিফাত আমার মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিক হতে চলেছে তাই আর কান্নাকাটি করিস না
আমি: আলিফার ব্যবহারে তো তাই মনে হচ্ছে কিন্তু ছোটমা রাতুল
চাচ্চু: হয়তো আলিফা তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে
আমি: বুঝলাম কিন্তু রাতুলের দোষটা কোথায় ও যখন দেশে ফিরে আসবে তখন কি হবে
ছোটমা: মানুষের মন বড়ই অদ্ভুদ কখন কিভাবে কাকে ভালোবেসে পেলে মানুষ তা নিজেও বুঝতে পারে না তাই রাতুলের বিষয়টা আলিফার উপর ছেড়ে দে
আমি: আলিফা তো পরে কষ্ট পাবে
চাচ্চু: ভালোবাসার জন্য কিছু কষ্ট পাওয়া প্রয়োজন নাহলে ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না
আমি: কিন্তু আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই না
ছোটমা: জানি কিন্তু কিছু তো করার নেই এখন তুই কি করবি যা করার আলিফাকে করতে হবে, ওর মন যা চাইবে ওকে সেটাই করতে দে
আমি: আলিফা পারবে তো সবটা সামাল দিতে
ছোটমা: সিদ্ধান্ত এখন আলিফার ও যাকে ভালোবাসে তার কাছেই যাবে এতে তোর কোনো হাত নেই। আর হ্যাঁ আলিফা যদি রাতুলের কাছে যেতে চায় তুই বাধা দিবি না
আমি: কিন্তু
ছোটমা: যেভাবে ভালোবাসছিস সেভাবেই ভালোবেসে যা নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ
চাচ্চু: ভালোবেসে যা কিন্তু ভালোবাসার মানুষের উপর অন্যায় কোনো জোর কাটাবি না এতে তোর ভালোবাসা ছোট হবে
আমি: হুম
ছোটমা: সবশেষ কথা নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস কখনো হারাবি না
আমি: হুম
চাচ্চু: সাবধানে বাসায় ফিরিস আসছি।

চাচ্চু আর ছোটমাকে বিদায় দিয়ে আলিফার কাছে আসলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না, আলিফা আমাকে ভালোবাসলে রাতুল কষ্ট পাবে কিন্তু আমি তো চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক। ছোটমা ঠিকি বলেছে এখন সব সিদ্ধান্ত আলিফার, ও যা চাইবে তাই হবে।
আলিফা: কি ভাবছ
আমি: কিছুনা
আলিফা: তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছ
আমি: আলিফা তুমি কি আমায় ভালোবাস (কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো)
আলিফা: রিফাত আজ প্রথম তোমার সাথে ঘুরতে এসেছি তুমি কি এখন এসব নিয়ে কথা বলবে এসব তো বাসাতেই জিজ্ঞেস করতে পারো
আমি: হুম
আলিফা: প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না
আমি: আমার রাগিণীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি আমি কি মন খারাপ করে থাকতে পারি
আলিফা: একদম না
আমি: রাগিণী ডাকলাম রাগ করছ না যে
আলিফা: জানিনা।
আলিফার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম বিনিময়ে পাগলীটাও হাসলো।

আলিফাকে নিয়ে পার্কের মধ্যে হাটছি হঠাৎ ও ফুচকা ফুচকা বলে লাফাতে শুরু করলো। সামনে তাকিয়ে দেখি ফুচকাওয়ালা, পার্কের সবাই ওর লাফানো দেখে তাকিয়ে আছে। ওর বাচ্চামি দেখে আর ধমক দিতে ইচ্ছে হলো না, ওর কাছে গিয়ে আস্তে বললাম
আমি: যেভাবে ফুচকা দেখে লাফাচ্ছ সবাই তো ভাববে আমি আমার বউকে ফুচকা খাওয়াতে কিপটামি করি
আলিফা: যার যা খুশি ভাবুক আগে ফুচকা খাবো
আমি: ওকে
আলিফা: বেশি করে জ্বাল দিয়েন (ফুচকাওয়ালাকে বললো, আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও কি সত্যি আলিফা নাকি আমার নিলা ফিরে এসেছে সবকিছু মিলে যাচ্ছে কিভাবে)
আলিফা: রিফাত তুমি খাবে না
আমি: আমি তো জ্বাল কম খাই
আলিফা: দূর তুমি পিচ্ছি নাকি বেশি জ্বাল খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।
কি আর করার ওর কথা রাখতে গিয়ে খেলাম।
আলিফা: রিফাত তুমি তো কান্না করে দিয়েছ।(অসহায়ের মতো ওর দিকে তাকালাম, ও আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক নিলার মতো আমার চোখের পানি মুছে দিলো)
আলিফা: চলো বাসায় যাই আর ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে না
আমি: ওকে।

গাড়িতে এসে বসেই আলিফা আমার একদম কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। এই মেয়ে এসব কি করছে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

বাসায় এসেও আলিফার ব্যবহার দেখে আমি বার বার অবাক হচ্ছি, ওর প্রতিটা কাজে মনে হচ্ছে ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু ভালো বাসলে নিজের মুখে বলছে না কেন।
আলিফা: এইযে বসে বসে কি ভাবছ খাবে না
আমি: আলিফা একটা কথা বলবো
আলিফা: বলো
আমি: যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো প্লিজ বলে দাও আমি না আর পারছি না আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি তোমার ব্যবহারে
আলিফা: সবাই বসে আছে একসাথে লাঞ্চ করার জন্য চলো তো।
আলিফা আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো। বুঝতে পারছি না কিছুই ও ব্যবহারে বুঝাচ্ছে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যাচ্ছে।

খাবার খেতে বসেও আলিফা বার বার আমাকে আড়চোখে দেখছে, আমি খাবার খাবো কি ওর এমন আচরণে হা করে বসে আছি।
রিয়ান: ভাইয়া খাবারটা খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
প্রিতি: হিহিহি
আমি: পেত্নীর মতো হাসছিস কেন
প্রিতি: যেভাবে ভাবির দিকে তাকিয়ে ছিলে খাওয়া বাদ দিয়ে….
আব্বু: প্রিতি চুপ কর তো, রিফাত তোরা হানিমোনে যাওয়া নিয়ে কিছু ভেবেছিস
আমি: না আব্বু
আব্বু: যাওয়ার কি ইচ্ছে নেই নাকি (আমার তো অনেক ইচ্ছে আলিফার সাথে একা সময় কাটানোর কিন্তু আলিফা চায় তো…? ওর দিকে তাকালাম খাবার না খেয়ে প্লেটে আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে আর কি যেন ভাবছে)
আমি: আব্বু আলিফার সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো
আব্বু: ঠিক আছে
রিয়ান: ভাইয়া একটু অফিসে যেতে হবে তোমাকে
আমি: কেন
রিয়ান: একটু কাজ আছে আমি একা পারছি না, আব্বু তো এখন অফিসে যান না আর এখন আব্বুর না যাওয়াই ভালো
আমি: এখন যেতে হবে
রিয়ান: হ্যাঁ বেশি সময় লাগবে না
আমি: ওকে।

রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, আলিফা এসে পিছনে দাঁড়ালো।
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: তাড়াতাড়ি এসো
আমি: ওকে রাগিণী।
আলিফার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, আশ্চর্যের বিষয় রাগিণী আজ কোনো রাগ দেখালো না।

অফিসের জামেলা শেষ করে একেবারে ডিনার করে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম। রুমে এসে দেখি আলিফা নেই বারান্দার দরজা খুলা, বারান্দায় এসে আলিফার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। ভালোই রাগ করেছে দেখছি, ওকে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।
আমি: আমার রাগিণীটা রাগ করেছে বুঝি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: অনেক জামেলা ছিল অফিসে বুঝই তো রিয়ান একা এসব পারবে কিভাবে আর ও ব্যবসা তেমন বুঝে না তাই আ….
আলিফা: হইছে আর বলতে হবে না
আমি: আর কখনো এতো দেরি হবে না এবার হাসো
আলিফা: কান ধরো
আমি: হুম ধরলাম
আলিফা: আর যেন এমন না হয়
আমি: ওকে, ঘুমাবে না
আলিফা: না আজ তোমার সাথে এখানে বসে সারারাত চাঁদ দেখে কাটাবো
আমি: তাই
আলিফা: হুম।
আলিফা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি ওর শাড়ির নিচ দিয়ে ওর পেটে হাত রাখলাম, আলিফা কেঁপে উঠে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো। আমি ওর কানের কাছে আস্তে করে বললাম “ভালোবাসি” তারপর ওর কানে একটা কামর বসিয়ে দিলাম….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১২

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিলাকে ফিরে পেয়ে যেন আমি সব কষ্ট ভুলে গেছি, আমি আমার নিলাকে ফিরে পেয়েছি….

হঠাৎ কপালে কারো হাতের উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করে ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম, আলিফা আমার পাশে বসে কপালে হাত দিয়েছে। কিন্তু এখানে তো নিলা ছিল আমি ওকে জরিয়ে ধরেছিলাম, নিলা কোথায় গেলো। চারপাশে তাকালাম নিলা নেই, আমি যেন কেমন এক ঘোরের মধ্যে আছি।
আলিফা: কি খুঁজছ
আমি: এখানে তো নিলা ছিল তুমি কখন এলে
আলিফা: তুমি বোধহয় স্বপ্ন দেখছিলে
আমি: স্বপ্ন
আলিফা: হ্যাঁ, তুমি ঘুমের মধ্যে নিলা নিলা বলে গোঙাচ্ছিলে, আমার ঘুম ভেঙে যায়। এসে দেখি তুমি এই চেয়ারে ঘুমিয়ে আছ আর ঘুমের মধ্যে কিসব বলছ
আমি: আমার গায়ে চাদর আসলো কোথা থেকে
আলিফা: সারারাত এখানেই ঘুমিয়েছ তো তোমার শরীর ঠান্ডা হয়েছিল তাই এই চাদরটা এনে তোমার গায়ে দিয়েছি
আমি: আর কতো মায়া বাড়াবে
আলিফা: বলেছিলাম না আমরা দুজন বন্ধু তাহলে মায়া ভাবছ কেন
আমি: তুমিও তো রাতে বললে আমি মায়া বাড়াচ্ছি
আলিফা: জানিনা চলো তো নাশতা করবে
আমি: হুম
আলিফা: ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো
আমি: হুম

নিলার ছবিটা আবার দেয়ালে রেখে দিলাম, পাগলিটা দূরে গিয়েও আমার স্বপ্নে আসে।

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। আলিফা সবাইকে খুশি মনে নাশতা বেরে দিচ্ছে। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই এই মেয়ে যে দুদিন পর এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে, ওকে দেখলে মনে হয় যেন ও এ বাড়িরই মেয়ে।
আব্বু: কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস
আমি: আমাকে রেখেই তো সবাই নাশতা করে নিচ্ছ
ছোটমা: একজন কিন্তু করেনি
আমি: কে
ছোটমা: আলিফা (নামটা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম)
রিয়ান: ভাইয়া এতো অবাক হচ্ছ কেন ভাবি তোমাকে ভালোবাসে তাই তোমাকে রেখে খায়নি সিম্পল (আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, সত্যিই কি ও আমাকে ভালোবাসে)
প্রিতি: ভাইয়া এভাবে কি দেখছ ভাবিকে তো নজর লাগিয়ে দিবে (প্রিতির কথায় লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি আলিফার থেকে চোখ সরালাম)
রিয়ান: ভাইয়া আমি ভাবছিলাম এবার তোমরা হানিমোনে গেলে কেমন হয় (খাবার মুখে দিতেই রিয়ানের এমন কথায় বিষম খেলাম। আলিফা তাড়াতাড়ি এসে আমাকে পানি দিলো)
প্রিতি: ইসরে কি ভালোপাশা
আব্বু: রিফাত রিয়ান কিন্তু কথাটা মন্দ বলেনি এবার তোদের হানিমোনে যাওয়া উচিত, একা সময় কাটানোর জন্য
আমি: আব্বু…
আব্বু: লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমি তো তোর মাকে নিয়ে কতোবার হানিমোনে গিয়েছি তার কোনো হিসেব নেই হাহাহা।
হঠাৎ করে সবকিছু কেমন যেন নীরব হয়ে গেলো। আম্মুকে নিয়ে কোনো কথা হলে আমরা তিন ভাই-বোন যেন কিছু সময়ের জন্য বোবা হয়ে যাই। মা না থাকার কষ্ট সত্যি অনেক যন্ত্রণাদায়ক।
ছোটমা: বাদ দাও তো এসব কথা, রিফাত শুন নীলিমা ফোন করেছিল আজ আমাদের যেভাবেই হউক যেতে হবে তুই আমাদের ষ্টেশনে দিতে যাবি তো
রিয়ান: কি যে বলো ছোটমা ভাইয়া ছাড়া কখনো কেউ তোমাদের ষ্টেশনে দিতে গিয়েছে
প্রিতি: হ্যাঁ সবসময় তো ভাইয়া আর নিলা আপুই দিতে যায় (নিলার কথা উঠতেই সবাই কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো)
চাচ্চু: কেন যে তোরা এতো কথা বলিস
আমি: ছোটমা রেডি হয়ে আমাকে ডেকে নিও
ছোটমা: চলে যাচ্ছিস কেন নাশতাটা করে যা।
ছোটমার কথার উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম।

নিলার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি আর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে। আজ সব স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। ছোটমা চাচ্চু গ্রামে যাওয়ার সময় নিলা আর আমি ওদের ছাড়তে ষ্টেশনে যেতাম আর আসার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোচকা খেতাম। পাগলিটা অনেক জ্বাল খেতো সাথে আমাকেও খেতে হতো, আমি তো জ্বালে কান্না করে দিতাম।
আলিফা: রিফাত (হঠাৎ আলিফার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: কি
আলিফা: রাগ করবে নাতো
আমি: না বলো
আলিফা: নিলা কোথায় ওর কি হয়েছিল
আমি: আমার উপর অভিমান করে না ফেরার দেশে চলে গেছে
আলিফা: প্লিজ কান্না করো না
আমি: তিনটা বছর ধরে কাঁদছি তাতে নিলার কি ও তো ভালোই আছে উপারে
আলিফা: বলেছিলে না নিলার কথা আমাকে সব বলবে আজ বলোনা প্লিজ জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: নিলা ছোট চাচ্চুর মেয়ে। চাচ্চুরা সবসময় গ্রামে থাকেন গ্রামের সবকিছু দেখাশুনা করার জন্য। নিলা কলেজে পড়ার জন্য আমাদের বাসায় এসেছিল, এখান থেকেই পড়তো। আজ তোমার সামনে যে রিফাত দাঁড়িয়ে আছে আমি তখন এই রিফাত ছিলাম না, সারাদিন সিগারেট আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতাম। পড়ালেখায় অমনোযোগী সারাদিন ঘুরাফেরা, আমার কাছে মনে হতো জীবন মানেই এনজয় করা। কিন্তু নিলা এসে আমার এসব ধারনা পাল্টে দেয়। আমি যদিও ওকে গ্রাম থেকে আসার জন্য অনেক অপমান করতাম গেয়ো ভূত ডাকতাম। তারপর আস্তে আস্তে কিভাবে যে দুজন বন্ধু হয়ে গেছিলাম বুঝতেই পারিনি। একসাথে কলেজে যাওয়া, ঘুরাফেরা আর আড্ডা তারপর বাড়িতে এসে এইটা সেইটা নিয়ে খুনসুটি। আস্তে আস্তে ভালো লাগা তারপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। একটা সময় আসে আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতাম না তারপর….
আলিফা: তারপর কি
আমি: তারপর আব্বু আর চাচ্চু আমাদের বিয়ের কথা ভাবেন বিয়ের তারিখও ঠিক করেন
আলিফা: বিয়েটা হয়নি
আমি: নাহ
আলিফা: কেন
আমি: কি করে হবে নিলা যে লাল বেনারসি পড়ার বদলে সাদা কাপড় পরে নিয়েছিল
আলিফা: মারা গেলো কিভাবে
আমি: বিয়ের দিন সকাল বেলা নিলা আমাকে ছাদে ডেকে পাঠায়, আমি যাওয়ার পর আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদে। জানতাম না কেন কাঁদছে আমি ভেবেছিলাম দুজন এক হচ্ছি এই খুশিতে কাঁদছে। ওকে লাল বেনারসিতে একবার আলাদাভাবে দেখতে চাই বলে চলে আসি।
আলিফা: তারপর
আমি: তারপর বিয়ের অনুষ্টান শুরু হয় সবাই একদিকে নিলাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অন্যদিকে আমাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ নিলা আমার ফোনে মেসেজ করে ওর রুমে যাওয়ার জন্য। আমি সবার চোখের আড়ালে ওর রুমে যাই।
আলিফা: কেঁদো না প্লিজ
আমি: আমি ওকে বলেছিলাম না বউ সাজে আলাদাভাবে দেখতে চাই তাই ও বউ সেজে আমাকে রুমে ডেকে পাঠিয়েছিল। জানো আলিফা ওকে লাল বেনারসিতে একদম পরীর মতো লাগছিল আমি তো হা করে তাকিয়ে ছিলাম, নিলা এসে আমাকে জরিয়ে ধরে তারপর আমার হুশ ফিরে। জানিনা সেদিন ও বার বার কেন বলছিল ওকে অনেক আদর করতে, আমি অনেক বুঝিয়েছিলাম যে বিয়ে তো হয়েই যাচ্ছে ও সেদিন আমার কথা শুনেনি। তাই ওকে জরিয়ে ধরে একের পর এক চুমু দিয়ে আপন করে নিচ্ছিলাম। দরজা খুলা ছিল হঠাৎ নীলিমা এসে বলে বিয়ের আগে এসব ঠিক না। শালী হলেও তো একদিকে ছোট বোন লজ্জা পেয়ে চলে আসি। কিন্তু….
আলিফা: বলোনা
আমি: আমার রুম অবধিও আসতে পারিনি নিলা আমার নাম ধরে একটা চিৎকার দেয়। সবাই ওর রুমে যাই, গিয়ে যা দেখেছিলাম তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। নিলা ফ্লোরে পড়ে আছে মুখ থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে পাশে পানির গ্লাস ভাঙ্গা। ওর এই অবস্থা দেখে আমি ফ্লোরে দফ করে বসে পড়ি, ওর মাথাটা আমার কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। নিলা আমার মুখে হাত দিয়ে শেষ কথাটা বলেছিল “আমার মতো কাউকে বিয়ে করে নিও, তোমাকে সুখী দেখলে আমার আত্মা শান্তি পাবে”
তারপর আস্তে আস্তে ও আমাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যায়। আমি ওকে পাগলি বলে অনেক ডাকি কিন্তু ও কোনো সাড়া দেয়নি, ছোটমা তখন চিৎকার করে বলেছিল নিলা মারা গেছে সাথে সাথে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। একমাস হসপিটালে ছিলাম একদম মরার মতো, সবাই তো বলেছিল আমি নাকি আর বাঁচবো না।
আলিফা: বলোনা প্লিজ
আমি: হসপিটাল থেকে বাসায় এসে সারাদিন নিলার রুমে পরে থাকতাম, ওর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইতাম। কিন্তু মৃত মানুষের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে কি বাঁচা যায়। সবাই বললো নীলিমাকে বিয়ে করে নিতে যদি ওর মাঝে নিলাকে খুঁজে পাই কিন্তু আমি বিয়ে শব্দটা শুনলেই ভয় পেতাম কষ্ট হতো কাঁদতাম। তারপর আস্তে আস্তে সবাই বিয়ের কথা বলা ছেড়ে দেয় আমিও এভাবেই কাটিয়ে দেই তিনটা বছর। নিলার স্মৃতি আর মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে নিলার কবর আঁকড়ে ধরে কান্না এভাবেই কেটে যায় তিন বছর।
আলিফা: (নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে)
আমি: আর পারছি না আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে।
বিছানায় এসে বসে পড়লাম, আলিফা পানি এনে নিজেই খাইয়ে দিলো।
আলিফা: রিফাত তোমার অসস্থি লাগছে তুমি শুয়ে পড়ো
আমি: হুম

বিছানায় শুয়ে আছি আলিফা আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, খুব ইচ্ছে হচ্ছে আলিফাকে বলি আমি ওর মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছি আমি ওকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
আলিফা: আচ্ছা রিফাত নিলা বিষ খেয়েছিল কেন
আমি: এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজো পাইনি
আলিফা: যেদিন তোমাদের দুজনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছিল সেদিনই নিলা বিষ খেলো ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না, আচ্ছা তুমি নিলার হাতে বিষের বোতল পেয়েছিলে
আমি: না শুধু একটা পানির গ্লাস ভাঙ্গা দেখেছিলাম
আলিফা: তারমানে বিষ পানিতে ছিল
আমি: হ্যাঁ
আলিফা: নিলার যদি বিষ খাওয়ার ইচ্ছে থাকতো ও তো বোতল থেকেই খেতে পারে পানিতে মিশিয়ে খেতে যাবে কেন
আমি: কিচ্ছু জানিনা আমি
আলিফা: রিফাত বিষয়টা এতো সহজভাবে নিও না ভেবে দেখো নিলা চাইলেই কিন্তু বোতল থেকে বিষ খেতে পারতো ও অযতা পানিতে মিশাতে যাবে কেন তারমানে পানিতে আগেই বিষ মিশানো ছিল আর নিলা সেই পানিটা খায়
আমি: কি বলতে চাইছ
আলিফা: বলতে চাইছি এটাই নিলা বিষ খায়নি ওকে বিষটা খাওয়ানো হয়েছিল
আমি: মানে
আলিফা: প্লিজ তুমি উঠো না তোমার শরীর খারাপ
আমি: নিলাকে বিষ খাওয়াবে কে
আলিফা: সেটা তো আমি বলতে পারবো না কিন্তু একটা বিষয় ভেবে দেখো নিলার যদি বিষ খাওয়ার ইচ্ছে থাকতো তাহলে ও বিয়ের দিনই খেলো কেন এর আগে খেতে পারলো না, ওর যদি সুইসাইড করার ইচ্ছে থাকতো তাহলে ও বিয়েতে রাজি হয়েছিল কেন, আর সবচেয়ে বড় বিষয় তো নিলা তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও সুইসাইড করতে যাবে কেন
আমি: তাহলে নিলাকে বিষ খাওয়াবে কে নিলার তো কোনো শত্রু ছিল না ও খুব ভালো মেয়ে ছিল
আলিফা: এইটা পরে ভেবো এখন একটা কথা বলতো
আমি: কি
আলিফা: যেখানে তুমি বিয়ের কথা শুনলেই ভয় পেতে আমাকে ভালোবাসলে কিভাবে আর এভাবে হুট করে বিয়েও করে নিলে। (আলিফার হাতটা আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: প্রথম যখন তোমাকে দেখেছিলাম তুমি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। ঠিক এভাবেই রাগি চোখে তাকাতো নিলা এই রাগি চোখ দিয়ে আমাকে শাসন করতো। তুমি বিড়ালের যত্ন করছিলে নিলাও এমন ছিল কখনো কোনো কিছুকে কষ্ট দিতো না। কয়টা বলবো বলো, তোমার মাঝে যে নিলার অনেক স্বভাব আমি খুঁজে পেয়েছি শুধু আমি না বিয়ের পর আমার পরিবারের সবাই তোমার মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছে। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল আমি আবার নিলাকে খুঁজে পেয়েছি তাই কোনো কিছু না ভেবে হুট করে বিয়ে করে ফেলি কারণ আমার ভয় হয়েছিল নিলার মতো যদি তোমাকেও হারিয়ে ফেলি। বিশ্বাস করো আলিফা আমি তোমাকে ততোটাই ভালোবাসি নিলাকে যতোটা বাসতাম আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি তো নিজের জীবনের কথা ভাবা ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি হঠাৎ আমার জীবনে আসলে, তোমাকে পেয়ে মনে হয়েছিল আমি আবার নতুন করে বাঁচতে পারবো, তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে পারবো। আলিফা তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো, নিলার মতো যদি তুমিও আমাকে একা করে চলে যাও আমি সত্যি মরে যাবো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আলিফা: কাঁদছ কেন পাগল
আমি: তুমিও তো কাঁদছ। আচ্ছা আমি কাঁদলে তুমি কাঁদো কেন, আমি কষ্ট পেলে তুমি কষ্ট পাও কেন।
আলিফা: জানিনা।
আলিফার হাত বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, মনে হচ্ছে ওর হাত ছাড়লেই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আলিফা ওর আচল দিয়ে আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো তারপর আমাকে জরিয়ে ধরলো…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১১

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা কিছু না বলে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিলো….

বাসায় আসতেই সবাই নানা রকম প্রশ্ন করতে শুরু করলো কিন্তু আমার কান দিয়ে এসব কিছু ঢুকছে না। আমার শুধু মনে পড়ছে আলিফার খাইয়ে দেওয়ার কথা, চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার কথা, চোখের পানি মুছে দেওয়ার কথা।

বিছানায় শুয়ে আছি ছোটমা এসে পাশে বসলেন।
ছোটমা: রিফাত কি হয়েছে
আমি: কিছুনা (ছোটমার কোলে মাথা রাখলাম)
ছোটমা: আমার কাছে লুকাস না বল কি হয়েছে
আমি: ছোটমা আমি আলিফাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি না আস্তে আস্তে ওর মায়ায় জরিয়ে যাচ্ছি।
ছোটমা: কাঁদিস না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: সেই দিনের অপেক্ষায় তো বসে আছি কিন্তু আদৌ কি কিছু ঠিক হবে
ছোটমা: নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ, মনে রাখিস বিশ্বাস এমন এক জিনিস যা অনেক অসম্ভব কে সম্ভব করে দেয়।
ছোটমা ভিতরে আসবো (দরজায় তাকিয়ে দেখি রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে)
ছোটমা: আয় অনুমতি লাগে নাকি
রিয়ান: তোমার বড় ছেলের সাথে কি কথা বলছ তা তো আর জানিনা
ছোটমা: হয়েছে পাকনামি করতে হবে না
আমি: কিছু বলবি
রিয়ান: হুম ছোটমাও এখানে আছেন তোমার থেকে একটা কথা জানতে চাই
আমি: কি
রিয়ান: গাড়িতে ভাবিকে এসব কি বলছিলে। ছেড়ে চলে যাবে যখন মায়া বাড়াচ্ছে কেন। এসব কথা কেন বলেছ ভাইয়া কিছু হয়েছে (ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম উনি নিরবে কাঁদছেন)
ছোটমা: রিয়ান আমার সাথে চল রিফাতকে একটু একা থাকতে দে, আমি তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
রিয়ান ছোটমার সাথে চলে গেলো। আমি নিরবে কাঁদছি আর ভাবছি নিলা থাকলে আজ এতো কিছু হতো না, কেন যে পাগলীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আচ্ছা নিলার মৃত্যুর রহস্য কি আমি কখনো জানতে পারবো না…?

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার মাথার কাছে বসে আছে। নিলার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। কিন্তু আলিফা হঠাৎ….
আলিফা: রিফাত সরি
আমি: কেন
আলিফা: আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হলো
আমি: তোমার আবার কিসের দোষ
আলিফা: আমি যদি ফ্লোরে না ঘুমাতাম তাহলে তো এমন হতো না
আমি: ঠিক আছে এখন তোমার ভুলটা শুধরিয়ে নাও
আলিফা: কিভাবে
আমি: এই রুমের সোফা স্টোররুমে রেখে আসবো তাহলে দুজনেই খাটে ঘুমাতে পারবো, কারণ ফ্লোরে তো আর ঘুমাতে দিবে না নিজেও ঘুমাবে না
আলিফা: রিফাত প্লিজ পাগলামি করো না
আমি: আলিফা আ…
রিফাত আসবো (আব্বুর কন্ঠ শুনে আলিফা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো)
আমি: হ্যাঁ আব্বু এসো
আব্বু: তুই যেতে পারবি না তাই ডক্টর কে ফোন করে বাসায় এনেছি
আমি: আব্বু আমি সুস্থ হয়ে গেছি ডক্টর লাগবে না
আব্বু: একদম চুপ।
আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই তাই চুপচাপ শুয়ে রইলাম। ডক্টর জ্বর মেপে ওষুধ দিয়ে চলে গেলো।
আব্বু: বৌমা রিফাত কে কিছু খাবার খাইয়ে ওষুধ গুলো খাইয়ে দাও তো
আলিফা: ঠিক আছে আব্বু।
আলিফা আর আব্বু চলে গেলেন।

একটু পর আলিফা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো। ভাবছি খাবো না বলে বায়না ধরলে তো আলিফা নিজের হাতে খাইয়ে দিবে বায়না কি ধরবো…? কিন্তু যদি না খাইয়ে দেয়, আমার তো খিদে লেগেছে।
আলিফা: রিফাত উঠো খেয়ে নাও
আমি: আমার তো হাত ব্যথা করছে
আলিফা: কেন হাতে কি হয়েছে আবার
আমি: হাহাতে হাতে (এখন কি বলি)
আলিফা: তোতলাচ্ছ কেন
আমি: না মানে
আলিফা: সোজা বললেই পারো আমার হাতে খেতে চাও
আমি: তুমি আমার মনের সব কথা বুঝ শুধু ভালোবাসি যে এইটা বুঝ না
আলিফা: তোমার মন খারাপ হউক আমি তা চাই না চুপচাপ খেয়ে নাও
আমি: হুম

আলিফা আমাকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো।
আমি: আলিফা
আলিফা: হুম আর কিছু লাগবে
আমি: লাগবে তো
আলিফা: কি
আমি: তোমার ভালোবাসা
আলিফা: ফাজলামো বাদ দিয়ে একটু ঘুমাও
আমি: ঘুম আসছে না।
আলিফা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবলো তারপর আমার মাথার কাছে এসে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো, যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
আমি: এসব শুধু দায়িত্ববোধ থেকে করছ তাই না
আলিফা: মানে
আমি: আব্বু বলে গেছেন তাই আমাকে খাইয়ে দিলে, এখন আমার ঘুম আসছে না তাই চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছ। সবকিছু শুধু দায়িত্ববোধ থেকে করছ কারণ তুমি এই বাড়ির বউ তাই না
আলিফা: এইটা না হয়ে তো অন্যকিছু হতে পারে
আমি: হ্যাঁ পারে তবে ভালোবাসা না আমি অসুস্থ
তাই সহানুভূতি দেখাচ্ছ
আলিফা: দূর থাকো তুমি একা।
রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। ভালোবাসে এইটা বললেও সমস্যা আবার ভালোবাসে না এইটা বললেও সমস্যা। কোন পথে যে যাই আমি।

হঠাৎ কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত এগারোটা বাজে। সেই বিকেলে ঘুমিয়েছিলাম কখন যে এতো রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি কেউ ডাকেওনি। কিন্তু আলিফা কোথায় আমার পাশেও নেই সোফায়ও নেই, আর এতোরাতে হাসছে কে। আবার হাসির শব্দ শুনতে পেলাম, বারান্দা থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। আর কারো হাসি না আলিফার হাসি। কিন্তু এতো রাতে আলিফা বারান্দায় কি করছে। আস্তে আস্তে উঠে বারান্দায় গেলাম, আলিফা ফোনে কথা বলছে আর হাসছে নিশ্চয় রাতুল হবে। ওকে কি ডাকবো আবার যদি রেগে যায় কিন্তু ও যেভাবে হাসছে সবাই তো শুনতে পাবে তখন তো আব্বু রেগে যাবেন। এসব ভাবতে ভাবতে ওর কাধে হাত রাখলাম সাথে সাথে ও চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো।
আলিফা: রিফাত তুমি
আমি: কার সাথে কথা বলছ (ফোনে আস্তে কি যেন বলে ফোন রেখে দিল)
আলিফা: রিফাত সবকিছুতে এতো বাড়াবাড়ি ভালো না, আমি কার সাথে কথা বলছি সেটা জেনে তুমি কি করবে আর তুমি তো জানই আমি কাকে ভালোবাসি
আমি: হুম জানি বুঝতেও পেরেছি
আলিফা: তাহলে ডিস্টার্ব করছ কেন
আমি: তোমার হাসির শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেছে অন্যদেরও ঘুম ভেঙে যেতে পারে আর আব্বুর ঘুম ভাঙলে রেগে যাবেন। তাই বলতে এসেছি আস্তে কথা বলো আর যত খুশি মন খুলে হাসো
আলিফা: এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: এতোক্ষণ তুমি যেভাবে কথা বলেছ তারপরে এরচেয়ে ভালো ভাবে কথা বলা যায় না (মাথা খুব যন্ত্রণা করছে তাই ফ্লোরেই দফ করে বসে পড়লাম)
আলিফা: রিফাত
আমি: আমাকে তোমার ধরতে হবে না আমি ঠিক আছি। অনেক সহানুভূতি দেখিয়েছ আর চাই না
আলিফা: এসব কি বলছ
আমি: প্লিজ এখান থেকে চলে যাও আমাকে একা থাকতে দাও একটু।
আলিফা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।

বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেট খাচ্ছি আর আকাশের তারা দেখছি, যে তারায় আমার নিলা আছে। ভেবেছিলাম আলিফাকে ভালোবেসে এই রাত জেগে তারা দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারবো কিন্তু আলিফাই তো অন্য কারো।

মাথা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে এলোমেলো পায়ে হেটে রুমে আসলাম। দেয়াল থেকে নিলার ছবিটা এনে বুকে জরিয়ে বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। হঠাৎ চোখ পড়লো আলিফা বালিশ ছাড়া ঘুমিয়ে আছে। কাছে গিয়ে ওর মাথার নিচে বালিশ দিলাম, গায়ে বিছানা চাদরটা টেনে দিয়ে চলে আসতে চাইলাম আলিফা আমার হাত ধরে ফেললো।
আমি: ঘুমাও নি
আলিফা: ঘুমিয়েছিলাম ভেঙে গেছে
আমি: হুম ঘুমিয়ে পড়ো
আলিফা: তুমি ঘুমাবে না অনেক রাত হয়েছে তো
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আলিফা: হাসছ যে
আমি: এমনি, আমার হাতটা ছাড়ো
আলিফা: হুম (হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো)
আমি: ঘুমিয়ে পড়ো গুডনাইট
আলিফা: রিফাত
আমি: কি কিছু বলবে
আলিফা: আসার সময় তো তুমি জিজ্ঞেস করছিলে মায়া বাড়াচ্ছি কেন। এখন যদি আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আমি: উত্তরটা খুব সহজ আমি তোমাকে ভালোবাসি
আলিফা: কিন্তু….
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস না তাই তো…? সমস্যা নেই আমি নাহয় এভাবেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো সবসময়
আলিফা: রিফাত তোমার হাতে কি
আমি: নিলার ছবি
আলিফা: এতো রাতে নিলার ছবি দিয়ে কি করবে
আমি: নিলা সবসময় তো আমার সঙ্গী ছিল এখনো আছে, ও কখনো আমার ভালোবাসার অমর্যাদা করেনি
আলিফা: আমি কখনো কাউকে কষ্ট দিতে চাই না কিন্তু দেখো কিভাবে যে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেলো, নিজের অজান্তেই আমি তোমার মন ভেঙে দিলাম
আমি: মন তো আগেরই ভাঙা নতুন করে আর কি ভাঙবে (চলে আসতে চাইলাম আলিফা আবার পিছু ডাকলো)
আলিফা: রিফাত
আমি: হুম
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আলিফাকে নিশ্চুপ দেখে ওর দিকে তাকালাম, আলিফার চোখে পানি। কাছে গিয়ে আলতো করে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বারান্দায় আসতে আসতে ভাবলাম, আলিফা তো আমাকে ভালোবাসে না তাহলে আমি কষ্ট পেলে ও কষ্ট পায় কেন…? আমি কাঁদলে আলিফাও কাঁদে কেন…? তাহলে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসে নাকি এসব শুধুই মায়া….? প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই কখনো জানতে পারবো কিনা তাও জানিনা।

বারান্দার চেয়ারে বসে বসে নিলার ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে আকাশের তারাটার দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম। পিছন ফিরে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আমার সামনে নিলা দাঁড়ানো।
আমি: নিলা তুমি
নিলা: হ্যাঁ আমি, কি হয়েছে এতো কষ্ট পাচ্ছ কেন
আমি: নিলা তোমার মতো কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আলিফা, যার মধ্যে তোমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম সেতো অন্য কারো।
নিলা: (মৃদু হাসল)
আমি: তুমি হাসছ নিলা। জানো তোমাকে হারিয়ে আমি কতো কষ্ট পেয়েছিলাম, হঠাৎ করে যখন আলিফা আমার জীবনে আসলো তখন আমি ওকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সবকিছু ভুল হয়ে গেলো। আমি কি নিয়ে বাঁচবো বল বার বার একি আঘাত সহ্য করা যায় নাকি…?
নিলা: তোমার পাশে কেউ নেই তো কি হয়েছে আমি তো আছি, আগে যেমন ছিলাম এখনো আছি আর সবসময় থাকবো। দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিলা এসে আমার পাশে বসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমিও নিলাকে জরিয়ে ধরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। নিলাকে ফিরে পেয়ে যেন সব কষ্ট ভুলে গেছি, আমি আবার আমার নিলাকে ফিরে পেয়েছি…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১০

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার পেটে দুহাত দিয়ে চাপ দিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম “ভালোবাসি তোমায় রাগিণী অনেক বেশি”

আলিফা: রিফাত কি হচ্ছে কি ছাড়ো বলছি (আমাকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে আমার গালে থাপ্পড় মারলো। আমি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, বউকে ভালোবাসার শাস্তি বুঝি এভাবেই পেতে হয়।)
আলিফা: অনেক বার বারণ করেছি শুননি উল্টো তুমি তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: শুনো তুমি যদি আবার এমন করো তাহলে কিন্তু….
ওর পুরো কথা না শুনে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম।

রাত দশটা বাজে এখনো বাসার বাইরে আছি, এখানের কিছুই ছিনি না তাই রাস্তার পাশে বসে আছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অচেনা নাম্বার রিসিভ না করে রেখে দিলাম। কিন্তু ফোনটা বারবার বেজেই চলছে তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–কোথায় তুমি এতো রাত হয়েছে বাসায় আসছ না কেন (ভাবতেই পারিনি আমার খুঁজে আলিফা ফোন করবে)
–রিফাত আমার কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন
–এমনি
–আব্বু চিন্তা করছেন তাড়াতাড়ি বাসায় এসো
–আব্বু চিন্তা করছেন তুমি তো আর করছ না
–তুমি আসবে কিনা
–রাখো আসছি।

ফোন রেখে বাসায় চলে আসলাম, আলিফা ড্রয়িংরুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, দেখেই তো আমার অবাক লাগছে।
আলিফা: কোথায় গিয়েছিলে
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রুমে চলে যাচ্ছ যে খাবে না।
ওর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। একটু পর আলিফা খাবার নিয়ে রুমে আসলো
আলিফা: রিফাত প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: আমার সাথে কথা বলবে না
আমি: কি কথা বলবো
আলিফা: সরি আসলে আগে এভাবে…
আমি: হুম আর বলতে হবে না
আলিফা: এইযে কান ধরছি আর হবে না (ভাবছিলাম রাগ করে থাকবো কিন্তু ওর কান ধরা দেখে সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়)
আলিফা: রিফাত প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: ওকে (আলিফার হাত থেকে খাবারের প্লেট আনতে গিয়ে সামনে নজর পড়লো, সারা রুমে চোখ বুলালাম। এই রুমে যে সোফা নেই এইটা তো আগে লক্ষ করিনি)
আলিফা: কি দেখছ এভাবে মনে হচ্ছে সারাদিন এই রুম দেখনি
আমি: দেখেছিলাম তবে আমার সতিন যে নেই এইটা লক্ষ করিনি
আলিফা: মানে
আমি: এই রুমে কিন্তু সোফা নেই আজ কোথায় ঘুমাবে
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আজ তোমার জায়গা আমার বুকে বুঝেছ রাগিণী হাহাহা (আলিফা কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, তারপর চলে যেতে লাগলো)
আমি: আলিফা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: তুমি খাবারটা খেয়ে নাও এখনি আসছি।
যাহ চলে গেলো।

খাবার খেয়ে এসে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি হঠাৎ আলিফা এসে রুমে ঢুকলো হাতে বিছানা আর বালিশ।
আমি: এসব কি
আলিফা: আগে জিজ্ঞেস করছিলে না কোথায় ঘুমাবো
আমি: হ্যাঁ তো
আলিফা: ফ্লোরে ঘুমাবো
আমি: পাগল হয়েছ
আলিফা: এছাড়া তো উপায় নেই অন্য রুমে ঘুমালে আব্বু সন্দেহ করবে
আমি: আলিফা প্লিজ কেন এমন করছ, দেখো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আর আমি তোমাকে ভালোবাসি প্লিজ তুমি মেনে নাও।
কিছু না বলে মৃদু হেসে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। আমিও আর কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসছে না।

কিছুক্ষণ পর আলিফার দিকে তাকালাম, পাগলিটা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছি ডিম লাইটের আবছা আলোতে ওকে দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে। হঠাৎ মনে হলো আলিফা নিচে শুয়েছে যে ওর তো ঠান্ডা লেগে যাবে যদি জ্বর হয় তখন কি হবে। ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না, আমিই নাহয় ফ্লোরে ঘুমাবো।
নেমে গিয়ে আলিফাকে কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলাম, এই প্রথম ওকে এতো কাছ থেকে এভাবে দেখছি কেমন যেন এক অনুভূতি কাজ করছে। আলিফার চোখে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পরে আছে, হাত দিয়ে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম তারপর ঘুমন্ত রাগিণীর কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্লোরে এসে শুয়ে পড়লাম।

হঠাৎ কারো উষ্ণ ছুঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো, তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার বুকের কাছে শুয়ে আছে। মাথা কেমন যেন ভারী লাগছে কপালে হাত দিয়ে দেখি জলপট্টি। আমিও খাটে শুয়ে আছি, আমি তাকিয়েছি দেখে আলিফা উঠে বসলো
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আলিফা: কে বলেছিল আমার জন্য দরদ দেখাতে
আমি: মানে
আলিফা: রাতে আমাকে খাটে শুয়ে দিয়ে নিচে ঘুমিয়েছ কেন। এখন যে জ্বর এসেছে কে সেবা করবে আর আমি তোমার পরিবারের সবাইকে কি জবাব দিবো
আমি: ফ্লোরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তো তাই, চিন্তা করো না কমে যাবে
আলিফা: সারা রাত ধরে তোমার জ্বর, কমার কোনো নামই নেই এখন ভোরবেলায় একটু কমলো। উফফফ আব্বু আমাকে যা বকা দিয়েছে
আমি: সরি আমার জন্য তোমার আব্বু সব জেনে গেছেন
আলিফা: হুম হয়েছে
আমি: রাগিণী আজ আমার এতো কাছে ছিলে যে ব্যাপার কি (দুষ্টুমি করে বললাম)
আলিফা: অসুস্থ হয়েও এসব বলা ছাড়োনি, তুমি জ্বরের ঘোরে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলে আমার তো কিছু করার ছিল না তাই আ….
আলিফা রিফাত কি উঠেছে (হঠাৎ আলিফার আব্বুর কন্ঠ শুনে আলিফা দূরে গিয়ে বসলো)
আলিফা: হ্যাঁ আব্বু, জ্বরটাও অনেক কমেছে (আব্বু এসে আমার পাশে বসলেন, আলিফা তো ভয়ে একদম চুপসে গেছে)
আব্বু: আলিফা যা তো ডক্টর কে ফোন করে আসতে বল আর কিছু খাবার নিয়ে আয়
আলিফা: হুম।
আলিফা চলে যেতেই উনি আমার একটা হাত মুঠো করে ধরে কেঁদে দিলেন।
আমি: আব্বু কি হয়েছে
আব্বু: আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি না জেনে তোমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দিলাম
আমি: মানে
আব্বু: রাতে যখন তুমি জ্বরে গোঙাচ্ছিলে তখন আলিফা ভয় পেয়ে আমাকে ডেকে আনে, আমি এসে তোমাকে ফ্লোরে দেখে ওকে অনেক প্রশ্ন করি। তারপর আলিফা আমাকে সব বলেছে। আমি আগে রাতুলের কথা জানতাম না বাবা জানলে এমন হতো না
আমি: আব্বু আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে এতে কারো দোষ নেই
আব্বু: তবে একটা কথা বলি বাবা বিয়েটা যখন হয়েই গেছে আমি চাই আলিফা তোমারই থাক। আমার বিশ্বাস আলিফা একদিন তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারবে
আমি: গতকাল আপনি কি যেন বলতে চেয়েছিলেন
আব্বু: আমার অবস্থা বেশি ভালো না তাই বলতে চেয়েছিলাম আমার কিছু হয়ে গেলে আলিফাকে তুমি আগলে রেখো কিন্তু এখন তো সব উলটপালট হয়ে গেলো
আমি: কিচ্ছু হয়নি আব্বু সব ঠিক হয়ে যাবে
আব্বু: এতো কষ্ট লুকিয়ে কি করে পারছ এই কথা বলতে
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: আলিফা আমার নিজের মেয়ে না কিন্তু আমি ওকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি, আমি যখন থাকবো না আমার মেয়েটা কে আগলে রেখো তুমি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
উনি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। সত্যিই কি কখনো সব ঠিক হয়ে যাবে…?
আলিফা: রিফাত ডক্টর আসছেন, তুমি কিছু খেয়ে নাও (আলিফা এসেছে খাবার নিয়ে, ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আদৌ কি আলিফা আমার হবে)
আলিফা: এইযে কোথায় হারিয়ে গেলে খেয়ে নাও
আমি: ইচ্ছে করছে না
আলিফা: আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা করো (আর কিছু বলতে পারলাম না চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছি)
আলিফা: চিন্তা করো না তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে
আমি: একটা কথা বলবো
আলিফা: বলো
আমি: এইযে আমার সেবা করছ ভালোবেসে করছ নাকি আমি অসুস্থ বলে সহানুভূতি….
আলিফা: কাঁদছ কেন
আমি: জানিনা।
আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি নিরবে কেঁদে যাচ্ছি। যখন ও থাকবে না তখন তো এসব স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়াবে যেমন করে নিলার স্মৃতি আজো আমায় তাড়া করে। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, আলিফা ফোন এনে নিজেই রিসিভ করলো।
আলিফা: হ্যালো আব্বু (এইরে আব্বু ফোন দিয়েছেন ও যদি বলে দেয় আমি অসুস্থ তাহলে তো বাসায় সবাই চিন্তা করবে)
আলিফা: না আব্বু রিফাত একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমরা দুদিন পর আসবো।
আমি: এই ফোন দাও তো (ওর থেকে ফোন কেড়ে আনলাম)
আমি: হ্যাঁ আব্বু
আব্বু: তুই নাকি অসুস্থ
আমি: তেমন কিছু না সামান্য জ্বর এসেছে
আব্বু: রিয়ানকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আলিফাকে নিয়ে বাসায় চলে আয়
আমি: আব্বু আমার কথা শুনো
আব্বু: কিচ্ছু শুনতে চাই না রেডি হয়ে থেকো রিয়ান যাচ্ছে।

আব্বু ফোন রেখে দিলেন। আলিফার দিকে রাগি চোখে তাকালাম।
আলিফা: কি হলো
আমি: যাও রেডি হয়ে নাও রিয়ান আসছে আমাদের নিতে
আলিফা: মানে কি আজই চলে যাবো
আমি: আমি যে অসুস্থ আব্বুকে বলতে গেলে কেন
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: ডক্টরকে ফোন করে বলে দাও আসতে হবে না আর তুমি রেডি হয়ে নাও
আলিফা: সত্যি চলে যেতে হবে
আমি: আব্বু বলেছেন যেহেতু যেতেই হবে।
আলিফা মন খারাপ করে চলে গেলো।

বিছানায় শুয়ে আছি হঠাৎ আলিফা আর রিয়ান রুমে এসে ঢুকলো। আলিফার মুখটা গোমড়া হয়ে আছে হয়তো যেতে চায় না।
রিয়ান: ভাইয়া কি হইছে তোমার
আমি: এতো অস্থির হচ্ছিস কেন সামান্য জ্বর
রিয়ান: কিন্তু এসেই জ্বর বাধালে কিভাবে (আলিফার দিকে তাকালাম ভয়ে চুপসে গেছে যদি বলে দেই ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলাম এই ভয়ে হয়তো)
আমি: গতকাল সন্ধ্যার পর একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই একটু ঠান্ডা লেগে গেছে। তুই চিন্তা করিস না কমে যাবে
রিয়ান: ঠিক আছে এখন চলো ডক্টর দেখিয়ে একেবারে বাসায় যাবো
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবি তুমি রেডি তো
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: ও মনে হয় যেতে চাচ্ছে না
রিয়ান: না গেলে হবে না আব্বু বলে দিয়ছেন যেহেতু যেতেই হবে। কি ভাবি যাবে না
আলিফা: হুম যাবো

আলিফার আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। রিয়ান ড্রাইভ করছে আলিফা আর আমি পিছনে বসেছি। আলিফা মুখ গোমড়া করে বাইরে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মাথা ঘুরতে শুরু করলো, ঠান্ডাটা ভালই লেগেছে। আমার অসস্থি দেখে আলিফা ঘাবড়ে গিয়ে আমার পাশে এসে বসলো।
আলিফা: রিফাত কি হয়েছে
আমি: একটু অসস্থি লাগছে
রিয়ান: ভাইয়া গাড়ি থামাবো
আমি: না তাড়াতাড়ি বাসায় চল এখন ডক্টর এর কাছে যাবো না
রিয়ান: ঠিক আছে।
কেমন যেন এক অসস্থি হচ্ছে নিশ্চুপ হয়ে বসতে পারছি না। আমার এই অবস্থা দেখে আলিফা আমাকে ইশারা দিয়ে বললো ওর কোলে মাথা রেখে শুতে। আমি তো অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আলিফা নিজেই আমাকে ওর কোলে শুয়ে দিলো তারপর আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলিফার হাতটা আমার দুহাতের মুঠোয় এনে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আলিফা: কি
আমি: চলেই যখন যাবে এতো মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আলিফা: অসুস্থ হয়েও এতো কথা কিভাবে বলো
আমি: কথা ঘুরিয়ে নিচ্ছ কেন, বলো এতো মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: যখন চলে যাবে তখন তো এসব স্মৃতি হয়ে যাবে আর এই স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। তখন আমি কিভাবে বাঁচবো, এই স্মৃতির তাড়া যে আমি বড্ড ভয় পাই।
আলিফা কিছু না বলে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিলো….

চলবে?