Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 242



কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-২৭+২৮

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহরব চৌধুরীর পার্টিটে অনেক রাজনীতিবিদ ও বড় বড় বিজনেসম্যানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে তার নিকট আত্মীয় স্বজন। সন্ধ্যার দিকে মাহফুজ শাহরিয়ার তার পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। মুখর এসে থেকেই মেহবিন কে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। কারন ও নিজের রুম থেকে এখনো বের হয় নি আর ও কোন রুমে আছে সেটাও কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। সে আজ সাদা শার্টের ওপর ক্রীম কালারের ব্লেজার আর প্যান্ট পরেছে ফর্সা গায়ে রঙটা বেশ মানিয়েছে।ও এদিক ওদিক তাকাচ্ছে দেখে নাফিয়া বলল,,

“কি ব্যাপার ভাইয়া কি খুঁজছো?

মুখর বলল,,

“বিহঙ্গিনীর কাব্য আর কাকে খুঁজবে এই অচেনা পরিবেশে এসে? তার বিহঙ্গিনীকেই খুঁজছে।”

মুখরের কথা শুনে নাফিয়া হাসলো। ভাইয়ের ভালোবাসা সবসময়ই তাকে মুগ্ধ করে। এখন এই মানুষটা যাকে খুঁজছে সে যদিও এখানে আসে সে তার সাথে কথা বলবে কিনা সন্দেহ। তবুও অপেক্ষা করতে ক্ষতি কি! দেখতে তো পারবে। অতঃপর আগমন ঘটলো কাব্যের বিহঙ্গিনীর সেও আজ ক্রীম কালারের লেহেঙ্গা পরেছে সাথে শুভ্র রঙের হিজাব নিকাব। আদরের হাত ধরে সিড়ি দিয়ে নামছে মেয়েটার নিকাব থাকলে কি হবে মুখরের চিনতে ভুল হয় নি। দুজন যে কাপল তা ওদের ড্রেস দেখে যে কেউ বলে দেবে। মেহবিন আদরের হাত ধরে নামছে দেখে সবার দৃষ্টি সেদিকেই গেল। মন্ত্রীর নাতি বলে কথা। মন্ত্রী সাহেবের কাছে থাকা সবাই জিজ্ঞেস করল সে কে? তিনি হাঁসি মুখে জানালেন তার ভাগ্নি। সিঁড়ি থেকে নামতেই মেহবিনের নজর গেল মুখরের দিকে। মেহবিনের নজর সেদিকে পরতেই মুখর বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে হেঁসে উঠলো। তা দেখে মেহবিন মাথা নাড়িয়ে হাসলো। ওর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মুখর বলে উঠলো,,

“আসসালামু আলাইকুম বিয়াইনসাহেবা।”

মেহবিন মুচকি হেসে মুখরের দিকে তাকালো। তার মুখটা না দেখা গেলেও মুখর মেহবিনের চোখের হাসি দেখতে পেল। মেহবিন বলল,,

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

জবাব দিয়েই সে তার মামার কাছে চলে গেল। ওখানে গিয়ে কথা বলতে লাগলো। এখানে পার্টি শুরু হবে সাড়ে সাতটায়। তাই এখনো কেউ আসেনি। তাই এখনো শুরু হয় নি। মেহবিনের ফোন আসতেই দেখলো আরবাজ ভিডিও কল দিচ্ছে ও একটু অবাক হলেও কি মনে করে একটু দূরে গিয়ে ফোনটা উঠালো। ফোন উঠাতেই দেখলো মিশুকে। একটা পিংক কালারের গাউন পরেছে সে সেই সাথে সাদা হিজাব ও করেছে। হয়তো কেউ করে দিয়েছে। মিশু ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল একটা হিজাব নিকাব পড়া মেয়েকে।তা দেখে বলল,,

‘এই তুমি কে? আমার ফুলের ফোন ধরেছো কেন?”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“ফুল, আমিই তোমার ফুল।”

“তুমি কোথায় ফুল? তোমার আওয়াজ তো শুনতে পাচ্ছি কিন্তু তোমাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। এই তোমার ফোন কে ধরে রেখেছে?”

মেহবিন বুঝতে পারলো নিকাব দেখে হয়তো বুঝতে পারছে না। তাই ও বলল,,

“ফোনের মানুষটার চোখের দিকে তাকাও ফুল। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমার ফুল কোথায়?”

মিশু সত্যি সত্যি মেহবিনের চোখের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর হেঁসে বলল,,

‘ও তারমানে তুমিই ফুল মুখটা ঢাকা দেখে চিনতে পারি নি।”

‘হুম! কখনো যদি তোমার পরিচিত মানুষকে না চিনতে পারো। তাহলে তার চোখের দিকে তাকাবে। তাহলেই তার চোখ দেখে চিনতে পারবে। মনে থাকবে?

“হুম মনে থাকবে। এখন বলো না আমাকে কেমন লাগছে ফুল?’

‘মাশাআল্লাহ আমার ফুলকে ফুলের মতোই সুন্দর লাগছে।”

মিশু এক হাত দিয়ে চোখে হাত দিয়ে হেঁসে উঠলো। মানে ও লজ্জা পেয়েছে। মিশু হেঁসে বলল,,

“তুমি জানো আজকে ঐ বাজপাখি আমাকে হিজাব করে দিয়েছে। সুন্দর হয়েছে তাই না।”

‘হুম অনেক সুন্দর হয়েছে।”

‘আমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা জানতেই তো বাজপাখি কে বললাম তোমাকে ভিডিও কল দিতে। আর তো কেউ বলবে না তাই।”

মেহবিন কিছু বললো না শুধু হাসলো। হুট করেই মিশু বলল,,

‘ফুল তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। কিন্তু তোমার মুখটা কোথায় একটু দেখি।”

‘আমি তো নিকাব বেঁধেছি তাই দেখতে পারছো না।”

‘আমি তোমায় দেখবো ফুল।”

‘এখন তো আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি ফুল।”

‘তুমি কি নিকাব টা খুলতে পারবে না? একটু খুলো না আমি দেখবো তোমায় কতটা সুন্দর লাগছে।”

মেহবিন মিশুর জোরাজুরিতে আর না করতে পারলো না। ও বলল,,

‘আমি রুমে গিয়ে দেখাচ্ছি।”

‘ফোন কাটবে না কিন্তু।”

‘আচ্ছা!”

মেহবিন ফোনটা ধরে যেতে লাগল সবাই ওকে ওপরে যেতে দেখে। তখন মেহরব চৌধুরী মেহবিনকে বললেন,,

“এই মেহু কোথায় যাস?”

‘মামা আসছি একটু রুম থেকে।”

‘এখনি তো পার্টি শুরু হবে।”

“এখনো তো তেমন কেউ আসে নি আমি আসছি।”

বলেই মেহবিন উপরে চলে গেল। মেহবিন রুমে গিয়ে ফোনটা উঁচু করতেই মিশু বলল,,

“তুমি তোমার মামাবাড়ি গিয়েছো ফুল?”

‘হুম!”

মেহবিন ফোনটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে নিকাব খুলল। তা দেখে মিশু বলল,,

‘হুম এখন ভালো লাগছে আমি আমার ফুলকে দেখতে পাচ্ছি।”

মেহবিন ফোন ধরে বলল,,

“তোমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে?”

‘হুম হবে আর বাজপাখি ফোন দিয়ে চলে গেছে। আর আমাকে তোমার সাথে কথা বলে নিচে যেতে বলেছে। চলো তোমাকে দেখাই জিনিয়ার জামাইকে আর আমাদের বাড়ি কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।”

মেহবিনের পার্টি তেমন ভালো লাগে না তাছাড়া এখনো তেমনভাবে মামার পার্টি শুরু হয়নি তাই ও আর না করলো না। মিশু নিচে চলে এলো সিড়ি দিয়ে নামার সময় সবার নজর ওর দিকেই ছিল কারন ওকে ভিশন সুন্দর লাগছে তারওপর ওর হাসিটা। মেহবিনের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আবার নিচের দিকেও তাকিয়ে দেখে দেখে আসছে। মিশু শানকে দেখানোর আগে বাড়িটাকে দেখাচ্ছে। মেহবিন ও দেখছে আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ মিশুর দিকে এগিয়ে এসেছিল কিন্তু মেহবিন কে কলে দেখে আবার চলে গেছে। সাতটা বেজে গেছে শান আর জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট হবে এখন। জিনিয়ার বাবা মাইক নিয়ে বলতে লাগলেন নিজের মেয়ে ও হবু জামাইয়ের ব্যাপারে মিশু একদম কর্নারে চলে এসে মেহবিন এখনো কলে আছে । কথা বলতে বলতে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেল আর মেয়েটার হাতের জুসটা মেয়েটার ড্রেসেই পরে গেল। মিশু কিছু বলবে তার আগেই মেয়েটা বলল,,

‘পাগল নাকি অনুষ্ঠানের মধ্য বাদরের মতো লাফালাফি করছো কেন? তোমার জন্য আমার কতো দামি ড্রেসে জুস পরে গেল।”

মিশুর জন্য ঐ একটা কথাই যথেষ্ট পাগল। বাকিটা ও শুনেও নি। তবুও আজ যেহেতু সে কিছু বলবে না বলে মেহবিনের কাছে ওয়াদা করেছে তাই ও নিজেকে শান্ত করলো। ও হাত দিয়ে নিচু হয়ে মেয়েটার ড্রেস থেকে হাত দিয়ে ঝাড়তে লাগলো ঝাড়তে গিয়ে একটা পাথর পরে গেল তা দেখে মেয়েটা বলল,,

‘এই পাগল নাকি তুমি? কি করছো হাত দিয়ে কেউ জুস পরিস্কার করে। আমার পাথরটাও ফেলে দিলে।”

মিশু এবার মেয়েটার কথা শুনে কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠলো ও বলল,,

‘আমি পাগল নই আমাকে পাগল বলবে না।”

তখন পাশ থেকে আরেকজন মেয়ে বলল,,

‘পাগলকে পাগল বলবে না তো কি বলবে শুনি।”

“আমি পাগল নই!”

“তুমি পাগল না হলে কেউ অনুষ্ঠানে এসে এতো লাফালাফি করে তোমার থেকে আমাদের বাচ্চাগুলোও শান্ত হয়ে আছে। তুমি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারছো না। তোমার মতো পাগলকে এই বাড়িতে কে রেখেছে বলো তো। পাগলকে পাগলা গারদে রাখতে হয় বাড়িতে নয়। পাগল একটা!

“আমি পাগল নই একদম আমি পাগল নই”
বলতে বলতেই মিশু মেয়েটাকে ধাক্কা মারলো। মেয়েটা একটা বড় ফুলদানির ওপর পরে গেল সঙ্গে সঙ্গে ফুলদানিটা পরে একটা বিকট আওয়াজ হলো। মিশু হায়পার হয়ে গেছে ও হাতের ফোনটা ফেলে দিয়ে ওখানে থাকা একটা একটা করে সব ভাঙতে লাগলো আর বলতে লাগল,,

‘আমি পাগল নই আমাকে পাগল বলবে না।”

আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ দৌড়ে মিশুকে ধরার চেষ্টা করলেন কিন্তু মিশু বেশি হায়পার হয়ে উঠেছে বলে ওকে সামলানো যাচ্ছে না। সবার দৃষ্টি মিশুর দিকে। তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“এহন হইলো তো শাহ তোর মাইয়া সব শেষ দিলো তো! কো হেই ডাক্তার কো ওরে ফোন লাগা বড় বড় কথা কইতেছিল না এহন কি হইলো।”

এমনিতেই শেখ শাহনাওয়াজ মেয়েকে সামলাতে পারছেন না তারওপর বাবার কথাগুলো একদম গায়ে লাগলো তবুও সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

‘ডাক্তার তার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আছে এখন তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। তাছাড়া মিশু আমাদের বাড়ির মেয়ে তাই ওকে সামলানো আমাদের দায়িত্ব।”

‘না আজ আমাগো কোন দায় নাই। আজ সব দায় ঐ মাইয়ার। কল লাগাও ওরে।”

শেখ শাহেনশাহর জোরাজুরিতে শেখ শাহনাওয়াজ কল করলো মেহবিন ফোন ধরে শেখ শাহনাওয়াজ কে বললেন,,

“কিছুই বলতে হবে না। আমি বেরিয়ে পরেছি আসছি আমি।”

বলেই মেহবিন ফোন কেটে দিল। মেহবিন ফোনে সবকিছুই সে দেখছিল সে এমনিতেও মিশুকে অস্বাভাবিক দেখেছে তাই ভাঙচুর শুরু করার সময়ই দৌড়ে নিচে এসেছে আর ওকে দৌড়াতে দেখে সবাই অবাক হয়েছে মেহবিন সোজা মেহরব চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলেছে গাড়ির চাবি দিতে এখনি ওকে যেতে হবে। কারন জানতে চাইলে ও মিশুর কথা জানিয়েছে তারা আর কিছু বলেনি বরং মিহিরকে সাথে পাঠিয়েছে। মেহবিন না করেছিল কিন্তু তারা শুনেনি। মেহবিন ও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। মিহির গাড়ি চালাতে চাইলে ও বলেছে নিজেই ড্রাইভ করবে।সে খুব জোরে গাড়ি চালাতে পারে তাই গাড়ির যতো স্পিড ছিল ফুল স্পিডে গাড়ি চালানো শুরু করে দিয়েছে দেড় ঘন্টার ভেতরে চলে আসবে মিশুর বাড়ি।

এদিকে সব কিছু দেখে শানের পরিবার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। জিনিয়ার বাবা তাদের কাছে গিয়ে মিশুর ব্যাপারে বললেন আর সবকিছুর জন্য মাফ চাইলেন। হাতের কাছে যা ছিল মিশু তা ভেঙে মেঝেতে বসলো আরবাজ গিয়ে বোনকে ধরলো এখন এতোক্ষণ ধরতে পারছিল না এখন তার বোনটা শান্ত হয়ে গেছে। শেখ শাহনাওয়াজ মিশুকে ওপরে নিয়ে যেতে বলল আরবাজ ওকে ওপরে নিতে চাইলে মিশু গেলো না। আর জোর করতে গেলেই ও চিৎকার করে উঠলো। আরবাজ আর চেষ্টা করেনি বোনের হাত ধরে বোনের সাথেই বসে রইল। মিশুর অবস্থা দেখে আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ বেশ অবাক হলেন আজ মিশুকে ওনাদের অস্বাভাবিক লাগছে। এরকম অবাধ্য মিশু কখনো হয় না। তবে আজ কেন? মিশুকে সরানো গেল না। শেখ শাহনাওয়াজ শানের পরিবারের কাছে মাফ চাইলো তারা বলল সমস্যা নেই। আজ তো তারা যাচ্ছে না মিশু একেবারে শান্ত হয়ে গেলে তখন না হয় আংটিবদল করা যাবে।

দেড় ঘন্টা পর শেখ বাড়ির দরজা দিয়ে একটা লেহেঙ্গা হিজাব পরিহিতা মেয়েকে ঢুকতে দেখ গেল। সবার দৃষ্টি দরজার দিকেই মেয়েটার চেহারা দেখে কিছু মানুষ অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল ‌। কারন মেয়েটা আর কেউ নয় আমাদের ডক্টর মেহবিন মুসকান। তখন নিকাব খুলেছিল তার পরে তাড়াহুড়োয় আর পড়া হয় নি তাই সবাই মেহবিনের মুখটা দেখতে পাচ্ছে। সে লেহেঙ্গা দুই হাত দিয়ে উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে মিশুর দিকে। মেহবিনের গায়ে এতো দামি লেহেঙ্গা দেখে আহমেদ পরিবার আরো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মিশু এখনো মেঝেতেই বসে আছে চোখ বন্ধ করে। আরবাজ পাশে। মিসেস সাবিনার মেহবিনকে দেখে চোখ ছলছল করে উঠলো। তিনি আগাবে তার আগে মেহবিন গিয়ে মিশুর সামনে বসলো। তা দেখে আরবাজ উঠে গেল। মেহবিন বলল,,

‘ফুল!”

মিশু আস্তে আস্তে চোখ খুললো। মেহবিন ওর চোখটা অস্বাভাবিক লাল দেখতে পেল। মিশু বলল,,

“ফুল তুমি এসেছো?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘একটু পাগল বলাতে তুমি এতো হায়পার হয়ে গেলে। তুমি কি পাগল ফুল?”

মিশু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো তা দেখে মেহবিন বলল,,

“তাহলে পাগলরা পাগল বলাতে হায়পার হয়ে যায় তুমি তো পাগল নও তাহলে হায়পার হয়ে গেলে কেন? আমি তো তোমায় বলেছিলাম তুমি পাগল নও তাই কেউ পাগল বললে তাকে কিছুই বলবে না।”

‘আমি তো শুধু পাগল বলাতেই প্রথমে কিছু করি নি ফুল। ঐ মেয়েটাই তো আমাকে কতোকিছু বলছিল।”

তখন মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,

“তুমি আমাকে সবার সামনে হাড়িয়ে দিলে ফুল। তুমি তো বলছিলে আজ কিছু করবে না তাহলে আজ কি করলে তুমি? সবার সামনে আমাকে ছোট করে দিলে আমাকে সবার কাছে হাড়িয়ে দিলে।”

বলেই মেহবিন দাঁড়ালো আর হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মিশু মেহবিনের কথা শুনে কেঁদে উঠলো ও পুরো কথাটা না বুঝলেও এইটুকু বুঝতে পেরেছে মেহবিন কষ্ট পেয়েছে আর ও মেহবিনকে ছোট করেছে। মিশুকে এভাবে কাঁদতে দেখে সবাই অবাক হলো। তার থেকে অবাক হয়েছে মেহবিনের মুখে মুচকি হাঁসি দেখে। মিশু কাঁদতে কাঁদতে মেহবিনের দিকে তাকালো তখন মেহবিন আরেকটু জোরে হেঁসে দিল । তা দেখে মিশু আরো জোরে কেঁদে উঠলো। সব দেখে শুধু শেখ শাহনাওয়াজ নয় সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। মেহবিন হেঁসে মিশুকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,

‘আমার ফুল এতো কিউট কেন বলোতো মিশুমনি? তুমি জানো তুমি কাঁদলে কতোটা কিউট লাগে।”

মেহবিনের কথা শুনে মিশুর কান্না আপনা আপনি থেমে গেল। মেহবিন মিশুর কান্না থামানোর জন্যই বলেছে এরকম কথা। মিশু অবাক হয়ে মেহবিনকে ছাড়িয়ে বলল,,

‘তুমি সত্যি বলছো আমাকে কাঁদলে কিউট লাগে।”

মেহবিন মাথা উপরনিচ করে বুঝালো হ্যা। তারপর বলল,,

‘কাদলে তো কিউট লাগেই কিন্তু হাসলে আরো বেশি কিউট লাগে।”

মিশু হেঁসে বলল,,

‘সত্যি!”

মেহবিন ও হেঁসে বলল,,

‘হ্যা তিন সত্যি!”

মিশু এবার খিলখিল করে হেসে উঠলো। সবাই আরো অবাক হয়ে গেল এই মেয়েটাই একটু আগে মিশুকে কাঁদিয়েছিল আর এখন এই মেয়েটার কারনেই মিশু হাসছে। মেহবিন উঠে দাঁড়ালো ওর দেখা দেখি মিশুও উঠে দাঁড়ালো। মিশুর জুতোর ফিতে খুলে গেছে মেহবিন মিশুকে বলল বসতেই মিশু বসলো তখন মেহবিন ও বসে পা উঠিয়ে জুতোর ফিতে বেঁধে দিল। মিশু খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। এই মুহূর্তটা আরবাজ হেঁসে ক্যাপচার করলো ফোনে। মেহবিন মিশুর হাত ধরে দাঁড়ালো আর সবার উদ্দেশ্যে বলল,,

‘আজ মিশু যা করেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। তবে সে যদি সুস্থ মানুষ হতো তাহলে হয়তো কোন কথা থাকতো না আসলে মিশু একটু অসুস্থ। তাই বলে আমরা তাকে পাগল উপাধি দিতে পারি না। কারন সে পাগল নয় সে একটু অবুঝ লাইক পাঁচ বছরের বাচ্চা। এখানে যা হয়েছে সেটার দোষ আমি একা মিশুর ওপর দেব না।”

তখন ঐ মেয়েটা যাকে মিশু ধাক্কা মেরেছিল সেই মেয়েটা বলল,,

“তুমি তো এখানে ছিলে না তুমি কি করে বুঝলে এখানে এই পাগলের দোষ নয়।”

মেহবিন হেঁসে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল আর ঠাঁটিয়ে একটা চড় মেরে বলল,,

“বললাম না মিশু পাগল নয় তাই ওকে পাগল বলবেন না। এই জন্য এই থাপ্পড় টা দিলাম আর কি। যাই হোক থাপ্পড় মারার জন্য দুঃখিত।

মেয়েটাকে থাপ্পড় মারতে দেখে সকলেই অবাক হয়ে গেল। তারওপর মেহবিনের দুঃখিত বলার জন্য। মেয়েটি গালে হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। তখন মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“আর যখন ওখানে আপনি ওকে বারবার পাগল বলছিলেন। ওকে প্রলোভিত করছিলেন রাগতে তখন মিশুর ফোনের ভিডিও কলে আমিই ছিলাম তাই ওখানে কি হয়েছে তা নিশ্চয়ই আপনার থেকে জানতে হবে না। আর মিস শিলা আহমেদ?”

হুট করে মেহবিনের মুখে শিলার নাম শুনে শিলা অবাক হয়ে গেল। ও বলল,,

“হ্যা?”

‘মিশুর ধাক্কা লেগে আপনার গায়ে জুস পরে গিয়েছিল তাই না?”

শিলা অবাক হয়েই মাথা নাড়ালো। তখন মেহবিন বলল,,

‘সে কিন্তু তার ভুল বুঝতে পেরে আপনার ড্রেস ঠিকই পরিস্কার করতে গিয়েছিল হ্যা হয়তো টিসু বা কাপড় নেয় নি। কিন্তু কি বলুন তো এটা ওর মাথায়ই আসে নি। যাই হোক সে কিন্তু তার ভুল শুধরানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু ভুলে আপনার পাথর পরে যায়। যাই হোক মিশু ওনাকে সরি বলো।”

মিশু সরি বলল। মেহবিন এবার বলল,,

‘এখন আপনি ওকে পাগল বলার জন্য সরি বলুন।”

শিলা মেহবিনের দিকে তাকালো কিছু বলতে চাইলো কিন্তু মেহবিনের চোখে কি ছিল ওর জানা নেই ও ভয় পেল। ও সরি বলল। এবার ঐ মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

‘মিশু ওনাকে ধাক্কা মেরেছিলে তাই না এখন তুমি তাকে সরি বলো।”

মিশু বাঁধ্য মেয়ের মতো সরি বলল। ওর সরি বলা হলে মেহবিন মেয়েদিকে সবকিছুর জন্য সরি বলতে বলে। মেয়েটা ওর থাপ্পড় খাওয়ার এমনিতেই ভয়ে আছে ও বলল দেখে মেয়েটা তাড়াতাড়ি করে সরি বলে দিল। সবাই সবকিছু দেখে অবাক হলো। মেহবিন শেখ শাহেনশাহ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“অন্যের কথা শুনে নিজেদের লোকদের বিচার করা নির্বোধদের কাজ।”

ও আরো কিছু বলবে তার আগেই মেহবিনের ফোনে ফোন এলো। ও ফোন ধরে বলল,,

“আর একটু পর বের হচ্ছি তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করে দাও আমাদের আরো ঘন্টাদুয়েক সময় লাগবে পৌঁছাতে। আর হ্যা আমার সাথে আরেকজন স্পেশাল গেস্ট আসছে তুমি তার জন্য চকলেট কেকের ব্যাবস্থা করো আর আনলিমিটেড হাওয়ার মিঠাই সাথে আইসক্রিম।

এইটুকু বলে মেহবিন মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘ফুল আর কিছু খাবে?”

মিশু হেঁসে বলল,,

“সবকিছু আমার জন্য?”

“হ্যা তোমার জন্য।”

“তাহলে ফুচকাও রাখতে বলো অনেকদিন হলো খাইনা।”

মেহবিন হেঁসে বলল আচ্ছা তারপর ফোনে ওর ফুচকার কথা জানিয়ে রেখে দিল।সকলে এখনো অবাক হয়েই মেহবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা ঠিক কি চাইছে কারো মাথাতেই আসছে না। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

‘আমায় যেতে হবে এখন আর হ্যা আমি ফুলকেও নিয়ে যাচ্ছি। ও এখানে থাকবেও না আর আপনাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না। এইটুকু কথা দিতে পারছি যে মিশু আমার সাথে ঠিকই থাকবে আর হাসিখুশি ও। আপনারা আপনাদের কাজ শুরু করুন।

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“না আমাদের বাড়ির মেয়ে তোমার সাথে কোথাও যাবে না।”

“আজকে মিশু আমায় দায় তাই আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। তাছাড়া মিশু যখন হায়পার হয়ে গেছিল তখন তো আপনি দায় নেন নি সেই আমাকেই আসতে হলো। সেখানে এখন আপনাদের বাড়ির মেয়ে কোথা থেকে আসছে।”

কথাটা শুনে তিনি আর কিছু বললেন না। শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনকে পারমিশন দিয়ে দিল। মেহবিন আগাতেই সাবিনা আহমেদ মেহেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেহবিন মুচকি হেসে মিসেস আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“কেমন আছো মামনি? অনেকদিন পর তোমায় দেখলাম। আসলে তোমাকে প্রথমেই দেখেছি মিশুকে স্বাভাবিক করতে হতো তাই তখন তোমার সাথে কথা বলতে পারি নি।”

সাবিনা আহমেদ কে জড়িয়ে ধরতে দেখে শেখ বাড়ির সকলেই অবাক হলো। মিসেস আহমেদ ও জড়িয়ে ধরে বলল,,

“ভালো তোর খবর বল? এতোদিন কোথায় ছিলি সেই কতবছর পর দেখা।”

“হুম শান ভাইয়ার সাথে জিনিয়ার বিয়ের কথা নাকি?”

‘হুম!”

“আচ্ছা পরে কথা হবে এখন আমায় যেতে হবে।”

মেহবিন ওনাকে কথা না বলতে দিয়ে মিশুর হাত ধরে বাইরে বের হলো। আর একেবারে গাড়ির সামনে নিয়ে দাড় করালো। মিশু গাড়ির সামনে গিয়ে দেখতে পেল একটা ছেলেকে কোর্ট প্যান্ট পরে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের অস্তিত্ব টের পেয়েই ছেলেটা পেছনে ঘুরলো ছেলেটার চোখ দেখে মিশু বলল,,

‘এই তুমি কে ? তোমাকে তো আমি চিনি! চিনি আমি তোমায়!”

মিশুর কথায় ছেলেটা হাসলো। তা দেখে মিশু মেহবিনের কথামতো পরিচিত মানুষদের চেনার জন্য ছেলেটার চোখের দিকে তাকালো আর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকাতেই থমকে গেল। আর অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

‘অনু!”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মিশুর মুখে অনু শুনে মেহবিন মিহিরের দিকে তাকায়। ও কিছু বলবে তার আগেই মিহির মিশু কে বলল,,

“আমি অনু নই মিস ওর মিসেস? আমি হচ্ছি মিহির, মিহির চৌধুরী আপনার ফুলের মামাতো ভাই।”

এ কথা শুনে মিশু তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“না তুমি অনুই?”

‘আমাকে কি আপনার অনুর মতো দেখতে?”

মিশু ভালো করে কিছুক্ষণ মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘না কিন্তু তোমার চোখ দু’টো তো অনুর মতো।”

‘একইরকম চোখ তো অনেকের হয়।”

কথাটা শুনে মিশুর হাসিমুখটা মিইয়ে গেল। ও অন্যদিকে তাকালো মেহবিন এসে মিশুর হাত ধরলো। তখন মিহির একটা চকলেট মিশুর দিকে এগিয়ে দিল আর বলল,,

‘আপনার নাকি চকলেট অনেক পছন্দ। নিন আপনি চকলেট খান।”

চকলেট পেয়ে মিশুর মুখে হাসি ফুটে উঠল। চকলেটেই মেয়েটা গলে যায়। ও চকলেট নিয়ে বলল,,,

‘ধন্যবাদ।”

তখন মেহবিন বলল,,

“ফুল এবার যাওয়া যাক। গাড়িতে উঠে বসো এখন। আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।”

মিশু গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি কিন্তু সামনে বসবো।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘ঠিক আছে।”

তখন মিহির বলল,,

‘এবার কিন্তু আমি গাড়ি চালাবো মেহু । এইবার আর কোন বারন শুনবো না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।”

মিহির উঠে বসলো সাথে মিশুও আর পেছনে মেহবিন উঠে বসলো। দরজার সামনে থেকে কয়েকজোরা চোখ ওদের দেখলো। যদিও দূরে হওয়ার জন্য ছেলেটার চেহারা কেউ দেখতে পারে নি। এটা দেখার জন্য শিলাও বাদ যায় নি।

_________________

ঘন্টা দুয়েক পর মেহবিন রা মেহরব চৌধুরীর বাড়িতে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে মিশু মিহিরকে বলল,,

“তোমার বাড়ি তো দেখি আমাদের বাড়ির থেকেও বড় আর সুন্দর করে সাজানোও হয়েছে।”

মিহির হেঁসে বলল,,

“আপনার পছন্দ হয়েছে?”

‘হুম খুব খুব।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে মিশুর হাত ধরলো আর বলল,,

“ওয়েলকাম টু মামার বাড়ি মিশুমনি।”

মেহবিনের কথা বলার ধরন দেখে মিশু হাসলো। মেহবিন হেঁসে ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। অনুষ্ঠান শেষ শুধু শাহরিয়ার পরিবার রয়েছে আর বাকি সবাই চলে গেছে। মেহবিন বুঝতে পারলো কিসের জন্য শেষ হয়ে গেছে অবশ্য অনেকটা দেরিও হয়ে গেছে। মিশু মুখরকে দেখে ওর দিকে দৌড়ে গেল আর বলল,,

‘পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তুমিও এখানে আছো?”

মিশুকে দেখে মুখর হাসলো বাকি সবাই অবাক হয়ে মিশুকে দেখতে লাগলো। মুখরের পরিবারের সবাই ওকে চেনে তাই অবাক হয়েছে আর মেহবিনের সাথে দেখে আরো বেশি। মুখর হেঁসে বলল,,

“হুম আমিও আছি দাওয়াত ছিল যে এখানে।”

‘তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি। আমাদের বাড়িতে তো যাওই না এখন।”

“কি বলো তো মিশুমনি তোমার পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি এখন অনেক ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তাই যেতে পারি না। কেমন আছো তুমি?

“অনেক ভালো আছি তুমি কেমন আছো?’

“আমিও ভালো আছি।”

তখন মেহবিন বলল,,

“ফুল এদিকে এসো ?”

মিশু মেহবিনের দিকে এগিয়ে গেল। মেহবিন ওর মামার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। মিশু কেমন করে যেন মেহরব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। মেহরব চৌধুরী মিশুর মাথায় হাত দিয়ে বলল,,

“কেমন আছো মিশু?”

মিশু হেঁসে বলল,,

“ভালো আছি আর তুমি আমায় চেনো? আচ্ছা তুমি কে বলো তো? আর আমাকে চেনো কিভাবে?”

“তোমার কথা তোমার ফুল আমাকে বলেছে । আর আমি তোমার ফুলের মামা সেই হিসেবে তুমি আমায় মামা ডাকতে পারো।”

” মামা !”

“হ্যা মামা।”

“তুমি কতো সুন্দর মামা একদম আমার ফুলের মতো।”

মেহরব চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“তুমিও অনেক সুন্দর একদম ফুলের মতো।”

মিশুও এবার হাসলো। তখন মেহবিন বলল,,

“তোমরা সবাই খেয়েছো মামা?”

“না সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি তো আলভির দাদিকে বললাম ওনারা যাতে খেয়ে নেয় কিন্তু ওনারা বলল তুই আসলে তারপর খাবে।”

মেহবিন একবার আছিয়া খাতুনের দিকে তাকালো উনি এতোক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। ও তাকাতেই তিনি অন্য দিকে ঘুরে গেলেন। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“ওনারা আজ থাকবেন মামা?”

“না চলে যাবেন তোর জন্যই অপেক্ষা করছিল।”

মেহবিন মাহফুজ শাহরিয়ার এর দিকে এগিয়ে গেল আর বলল,,

“সরি বাবা আজ আপনাদের সাথে তেমন কথা হলো না। আসলে ওদিকে বেশ একটা ঝামেলা হয়েছিল তাই যেতে হলো।”

তখন নাফিয়া বলল,,

“তুমি থাকলেও যে আমাদের সাথে অনেক সময় কাটাতে তেমনটাও কিন্তু হতো না মেহু। কারন বাধ্যবাধকতা রয়েছে একজনের। যাই হোক গিল্ট ফিল করার তেমন কারন নেই।সবাই চলে গেল তাই আমরা ভাবলাম তোমার সাথে আবার একটু দেখা করেই যাই। আবার কবে না কবে দেখা হবে। তবে তুমি মিশু আপুকে কোথায় পেলে তাকে আনার জন্যই কি গিয়েছিলে আচ্ছা তোমাদের পরিচয় হলো কিভাবে?

“সে অনেক কথা আপু। এখন বলার সময় নেই। তোমরা খেতে বসো আমি একটু ওপর থেকে আসছি।’

মিশুর কাছে গিয়ে বলল,,

“তুমি কি ফ্রেশ হবে এখন ফুল?”

“না এখন হবো না একদম শোয়ার আগে হবো। এখন হলে আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।”

মিশুর কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“ঠিক আছে। তুমি তাহলে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নাও ঠিক আছে।”

“হুম হুম!”

মেহবিন ওপরে চলে গেল। তখন আদর মিশুর সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,

“আমি আদর। তুমি যার সাথে এসেছো তার ছেলে আমি।”

মিশু অবাক চোখে আদরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তুমি ফুলের ছেলে তাও আবার এতো বড়?

তখন মিহির বলল,,

“না ও মেহবিনের ছেলে নয় আদর আমার ছেলে।”

মিশু মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তোমার ছেলেও আছে। তোমাকে তো দেখে বুড়ো মনে হয় না। তোমার এতো বড় ছেলে কোথা থেকে এলো?”

মিশুর কথায় সকলেই হেঁসে ফেললো শুধু আদর আর মিহির ড্যাব ড্যাব করে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইল।
তখন মেহরব চৌধুরী হেঁসে বলল,,

“মিশুমনি এসব বাদ দাও। এখন চলো তোমার মামীর সাথে আর বোনের সাথে পরিচিত হও।”

তখন মিশু বলল,,

‘আরে দাঁড়াও আদরের সাথে তো আগে হাত মিলাই।”

মিশু আদরের সাথে হাত মিলিয়ে জোরে জোরে নাড়াতে লাগলো। আর বলল,,

‘এটা হচ্ছে মিশুর স্পেশাল হাত মেলানো।”

তখন আদর হেসে বলল,,

‘আমার তোমার হাত মেলানো পছন্দ হয়েছে। এবার আমার পালা।

বলে এবার আদর জোরে জোরে হাত নাড়াতে লাগলো। তা দেখে মিশু আর আদর দু’জনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। দুজনে হাত ছেড়ে দিতেই মেহরব চৌধুরী মাইশা আর উনার মিসেস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর মুখর ও সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নতুন ভাবে। ততক্ষণে মেহবিন নিচে আসলো সকলে ড্রাইনিং টেবিলে বসলো। মেহবিন মিশুকে ওর বাম পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল। আর আদর ওর ডানদিকে বসলো। মেহবিন মিশুর জন্য খাবার বাড়তেই মিশু বলল,,

“তুমি না আমার জন্য চকলেট কেক , হাওয়ার মিঠাই, আইসক্রিম আর ফুচকা রাখতে বলেছো আমি সেগুলো খাবো এগুলো খাবো না।”

“হ্যা খাবে তো। আগে এখন খাবার খাও তারপর রাতে শোয়ার আগে আমরা সব খাবো।”

“সত্যি তো?”

“হুম একদম সত্যি।”

মেহবিন মুচকি হেসে মিশুকে খায়িয়ে দিতে লাগল। কারন ও নিজের হাতে খাবার খেতে পারে না। আদর কে মিহির খায়িয়ে দিচ্ছে তা দেখে মিশু মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তুমিও আমার বাবার মতো তোমার ছেলেকে খায়িয়ে দিচ্ছো। তুমি জানো আমার বাবাও আমাকে সবসময় খায়িয়ে দেয়।”

মিশুর কথা শুনে মিহির হাসলো কিছু বললো না। অতঃপর সবার খাওয়া শেষ হলে। মেহবিন আদরকে বলল মিশুকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে সাথে মিহিরকে ও পাঠালো। ওরা চলে গেলে মেহবিন আছিয়া খাতুনের কাছে গেল আর বলল,,

“যে মানুষটাকে নিজের নাতবউ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। তার জন্য এতোক্ষণ অপেক্ষা করলেন?”

আছিয়া খাতুন বললেন,,

“খোঁচা দিতাছো?”

“না তো সত্যি কথা বলছি।”

“বেয়াদব একটা।”

“শুধু আপনার কাছে।”

মেহবিনের কথায় আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকালেন। মেহবিন মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। আছিয়া খাতুন চোখ নামিয়ে বললেন,,

“তা আজকাল থাকো কোথায়? এ বাড়িতে এসে জানলাম তুমি নাকি কোন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি করো?

“এতদিন খোঁজ না দিয়ে হঠাৎ আমার খোঁজ করছেন কেন?”

“তুমি বাড়ির বউ খোঁজ নেওয়া লাগবো না।”

“বাড়ির বউ তো তখন হবো। যখন আমি আপনার নাতির বউ হয়ে ঐ বাড়িতে যেতে পারবো।”

আছিয়া খাতুন আর কিছু বললেন না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তা দেখে মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“তা কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো!”

“শুধু ভালো নাকি অনেক ভালো?”

“এই তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতেছো?”

“দাদি শাশুড়ি আপনি আমার করতেই পারি।”

“তোমারে আমি ভালো মনে করছিলাম কিন্তু দিনকে দিন তুমি বেয়াদব হয়তেছো।”

“হ খালি আপনার জন্য।”

“তুমি আমারে ভেঙাইতেছো?”

“হ !”

তখন আছিয়া খাতুন জোরে বললেন,,

“ঐ মুখর তোর বউরে সামলা। নাইলে কিন্তু তোর বউয়ের খবর আছে কইয়া দিলাম আমারে তোর বউ ভেঙায়।”

হুট করে আছিয়া খাতুনের এমন কথায় সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। এতোক্ষণ মেহবিন আর আছিয়া খাতুন সবার দূরে সোফায় বসে কথা বলছিল। ওদের কে কেউ ডিস্টার্ব করে নি। মেহবিন আছিয়া খাতুনের কথায় জোরে হেঁসে উঠলো তা দেখে সবাই আরেকদফা অবাক। মেহবিনের হাঁসি দেখে আছিয়া খাতুন রেগে বলল,,

“ঐ মেহু হাসতেছিস কেন? তুই খালি একবার বাড়ি আয় তোর হাঁসি কেমনে বাইর হয় আমিও দেখুম।”

তখন মেহবিন হেঁসে বলল,,

“হ আমিও দেখুম।”

আছিয়া খাতুন মিছে রাগ দেখিয়ে ওখান থেকে চলে গেলেন। আর ছেলের কাছে গিয়ে বললেন এখনই সে চলে যেতে চাচ্ছে। তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসলো। তখন মুখর আর নাফিয়া মেহবিনের কাছে এলো। নাফিয়া বলল,,

“এখানে কি হয়েছিল?”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“তেমন কিছু না তোমার দাদিজানকে একটু জ্বালাচ্ছিলাম।”

মুখর বলল,,

“বেশ হয়েছে বুড়ি খালি আমাদের জ্বালাবে নাকি আমরাও একটু জ্বালাই।”

“এটা কি রকম কথা পাঞ্জাবিওয়ালা।”

নাফিয়া ওদের রেখে চলে গেল। এখন বাড়ি যাবে সবাই তাই ওদেরকে একটুর জন্য হলেও একা ছেড়ে দিল। নাফিয়া যেতেই মুখর বলল,,

‘তা দাদি শাশুড়ি কে কি বলে জ্বালানো হচ্ছিল শুনি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘সেটা আমার আর তার ব্যাপার আপনাকে কেন বলবো?”

‘বলবে না কেন?”

“আমার ইচ্ছে তাই ।”

‘তুমি এমন কেন?”

‘কেমন?”

‘একটা জালিম!”

‘ভালো!”

মুখর বুঝতে পারলো এখানে বলে লাভ নেই তাই ও প্রসঙ্গ বদলে বলল,,

“বিহঙ্গিনী তোমায় আজকে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”

“আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”

“আজ আমি মামাশ্বশুর বাবা থেকে যাই আমার বউয়ের কাছে।”

“আপনার দাদিজান যদি পারমিশন দেয় তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”

“তার মানে তুমি গ্ৰীন কার্ড দিচ্ছো?”

“আজ আমি ফুলের সাথে থাকবো।”

“এটা কেমন কথা আপত্তি ও করছো না আবার বুঝিয়েও দিচ্ছো থাকা যাবে না।”

মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,

“বুদ্ধিমানদের ইশারাই যথেষ্ট।”

মুখর বেচারা একটু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,,

“আমি বুদ্ধিমান না আমি ওতশত বুঝি না আমার বউ থাকতে বলেছে মানে সেটাই অন্য কথা দ্বারা কি বুঝিয়েছে আমি বুঝি নি।”

“তারমানে আপনি বোকা।”

মেহবিনের কথা শুনে মুখর ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর হেঁসে বলল,,

“আমি যদি বোকা হই তাহলে তুমি আমার বউ বোকী।”

বোকী শুনে মেহবিন হাঁসি থামিয়ে তা দিল তা দেখে মুখর আরো জোরে হেঁসে উঠলো। মেহবিন বলল,,

“বোকী এলো কোথা থেকে?আজ আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম আর এটার মানেই বা কি?

“বোকার ফিমেল বোকী রাখলাম আমি। এবার কোথায় যাবে শুনি? সবসময় আমাকে কথার জালে ফাসাও আজ আমি ফাসালাম।”

“ফাসালেন কোথায় শুনি উল্টো নিজে নিজের বোকামি প্রকাশ করলেন। অন্যকে ফাঁসাতে হলেও বুদ্ধি দিয়ে ফাঁসাতে হয়। নিজের মন মতো অযৌক্তিক কিছু বললেই হলো নাকি।”

“এবার কিন্তু আমি দাদির কাছে বিচার দেব বলে দিলাম।”

“দেন না তাতে আমার কি? আপনার দাদিকে দেখে আমি ভয় পাই নাকি।”

মুখর কিছু বললো না। হুট করেই মুখর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো তা দেখে মেহবিন ও হাসলো। মুখর বলল,,

“তোমার সাথে ঝগড়া করেও আলাদা শান্তি আছে। সময়ের ব্যবধানে সবসময় একজন ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন মানুষ হতে গিয়ে নিজের বাচ্চামো কে হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। তোমার আগমনের মাধ্যমে আবার পূর্নজ্জিবীত করেছি।আর সেটা শুধুমাত্র তোমার কাছেই প্রকাশ পায়। আর তুমিও সেই মানুষ টাকে খুব যত্ন করে সামলে নাও। সবকিছুর জন্য শুকরিয়া তোমাকে আমার বাচ্চামোর সঙ্গী সবথেকে আমার উত্তম জীবনসঙ্গী আমার বিহঙ্গিনী।”

মেহবিন কিছু বললো না মুচকি হাসলো। সবাই তৈরি বাড়ি যাওয়ার জন্য মুখরের পরিবার সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। তখন মিহির ও নিচে এসেছিল আদরের রুমে মিশু আর আদরকে রেখে এসেছে। সবাইকে ফ্রেশ হতে বলে আদরের রুমে যায় ওখানে গিয়ে দেখতে পায় দুজন বালিশ নিয়ে মারামারি করছে। মেহবিন হেঁসে বলল,,

“এখানে কিসের যুদ্ধ চলছে শুনি ?”

মেহবিনের আওয়াজ পেয়ে দু’জনেই থেমে যায়। আদর বলল,,

“আমরা তো যুদ্ধ করছি না। আমরা এমনিই মজা করছি।”

“ওহ আচ্ছা ফুল চলো ফ্রেশ হয়ে নাও।”

মেহবিনের কথা শুনে মিশু মাথায় হাত দিয়ে বলল,,

“আমার তো কোন ড্রেসই আনিনি ফুল। এখন কি পরবো আমি।”

তখন মাইশা একটা জামার সেট এনে বলল,,

“টেনশন করো না মিশু আমার একটা পরে নাও।”

মিশু আর মাইশা সমবয়সী বডিও সেম। তাই সমস্যা হবে না। মেহবিন বলল,,

“প্রবলেম সল্ভ এখন চলো। আর আদর তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও।”

মেহবিন মিশুকে নিয়ে চলে গেল। ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো। ও বেরিয়ে দেখল আদর চকলেট কেক নিয়ে বসে আছে। মিশু যেতেই মেহবিন ওটা কেটে সার্ভ মিশুকে আর আদরকে দিল নিজেও নিল। এরপর হাওয়ার মিঠাই আর আইসক্রিম নিয়ে এলো । আর ফুচকা বলল কাল বাড়ি যাওয়ার সময় খাওয়াবে মিশু কিছুই বললো না সব খেয়ে দেয়ে মেহবিনের কোলে শুয়ে পড়লো। মেহবিন মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ও কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। মেহবিন ওকে ভালো করে শুয়িয়ে দিল। ওর ঘুম আসছে না তাই ও ছাদে গেল। ওখানে গিয়ে ওর মামাকে দেখতে পেল দোলনায় বসে আছে। হয়তো তার ও ঘুম আসছে না। ও হেঁটে এগিয়ে গেল আর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“এখনো ঘুমাওনি কেন মামা?”

পাশে তাকাতেই মেহবিন কে দেখে বলল,,

“তুই ও তো ঘুমাস নি। আয় বোস।

মেহবিন মেহরব চৌধুরীর পাশে বসলো। মেহবিন বলল,,

“কি এতো ভাবছো? যা তোমায় ঘুমাতে দিচ্ছে না।”

মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“আজ মেহের থাকলে তোর জীবনটা এমন হতো না।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“হয়তো বা!”

‘মিস করিস?”

“কাকে? মাকে না বাবাকে নাকি ভাইবোন কে নাকি এতো সুন্দর পরিবার কে?”

এটুকু বলে মেহবিন থামলো মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকালেন। তখন মেহবিন আবার বলল,,

“মা তো নেই দুনিয়াতে তাই তাকে মিস করাই যেতে পারে। কিন্তু আর বাকি মানুষজন তাদের কি আমার মিস করা উচিৎ মামা?

মেহরব চৌধুরী এবার অসহায় চোখে মেহবিনের তাকালেন আর বললেন,,

‘মেহু!”

‘মাঝে মাঝে মায়ের প্রতি ভিশন অভিমান হয় আমার। সে নিজে তো আমায় ছেড়ে গেলোই সেই সাথে সবাইকেই আমার আড়াল করে দিয়ে গেল।”

‘আর তোর বাবা! তার প্রতি কখনো কি অভিমান হয় না।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘না তার ওপর অভিমান নেই আমার। আছে এক আকাশ অভিযোগ। সদ্য মা হারা মেয়েটাকে কি সে নিজের কাছে আগলে রাখতে পারতো না।”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-২৫+২৬

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

‘কিছু বললেন চেয়ারম্যান সাহেব?”

মেহবিনের কথায় শেখ শাহনাওয়াজ এর ধ্যান ভাঙলো। তিনি বললেন,,

“না তেমন কিছুই না। অনেক দিন ধরেই ছেলেপক্ষ চাচ্ছিল এঙ্গেজমেন্ট টা করে ফেলতে শুক্রবার একটা ভালো দিন তাই ঐ দিনটাই সিলেক্ট করলাম।”

“ওহ আচ্ছা!”

“সেদিন আপনি থাকলে ভালো হতো। মিশুকে নিয়ে সমস্যা হতো না। আসলে ও তেমন মানুষজনকে ফেস করতে পারে না ও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। ও যদি হায়পার হয়ে সেদিন কিছু করে।”

“তো কিছু করলে কি হবে? আপনার আর আপনার বাবার মাথা নিচু হয়ে যাবে। তার জন্যে আপনার বাবা কারো সামনে ফুলকে আনতে চান না। যে কোন ভালো ওকেশন বা ভালো মানুষজন থাকলে মিশুকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। আপনার কোন আইডিয়া তখন ফুল কি ফিল করে ? একটা পাখিকে যখন প্রথম প্রথম খাঁচায় আটকানো হয় তখন সেই পাখি টা যেভাবে বের হওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে ফুল ও ঠিক তেমনটাই করে। ওর ব্রেনে কতটা চাপ পরে তার ধারনাও আপনাদের নেই। তার জন্য ফুল আরো সুস্থ হতে দেরি করছে।”

শেখ শাহনাওয়াজ অসহায় চোখে মেহবিনের দিকে তাকালেন। কিন্তু আবার অন্যদিকে ঘুরে বললেন,,

“আমি মিশুকে আটকে রাখতে চাই না। কিন্তু ও মাঝে মাঝে এমন পাগলামি করে তার জন্য বাবা ওকে শাস্তি হিসেবে ওকে আটকে রাখেন।”

“বাবার বাধ্য সন্তান হতে যেয়ে নিজের মেয়ের ক্ষতি করবেন না চেয়ারম্যান সাহেব। মেয়েটা আপনার তাই আপনাকেই প্রটেক্ট করতে হবে অন্যরা রক্ত রক্ত বলে ঠিকই চিল্লাবে কিন্তু কেউ তার দায় নেবে না। আপনার মেয়ে তাই দায়টা আপনার।”

“হুম আপনি ঠিক বলেছেন আমার মেয়ের দায় আমার সেই দায়টা অন্য কেউ নেবে না। তবে আমি আবারও বলছি আপনি থাকলে ভালো হতো।’

” সেদিন জিনিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে ফুল ছিল তো সেদিন তো কোন সমস্যা হয় নি। এঙ্গেজমেন্ট এর দিনও হবে না ইনশাআল্লাহ।”

“সেদিন তো আপনি বলে গিয়েছিলেন যাতে মিশু গুড গার্ল হয়ে থাকে। তাই সে ভালো মেয়ের মতোই ছিল তাছাড়া সেদিন তো তেমন কেউ ছিল না আমরা আমরাই। কিন্তু এঙ্গেজমেন্ট এর দিন অনেক লোক থাকবে তাই চিন্তা হচ্ছে উঁহু আমার সম্মানের জন্য নয়। বরং মিশুর জন্য যদি ওর বাচ্চামোর জন্য ওকে কেউ কিছু বলে দেয়। আর ও নিজেকে সামলাতে না পারে।

“আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। তবে এখানে আমার কিছু করার নেই আমাকে যেতেই হবে।”

“তাহলে আর কি করার।”

“আপনার বাবা ফুল কে থাকতে দিতে রাজি হয়েছে?”

“আমি এখনো উনার সাথে কথা বলি নি।”

“হুম তার সাথে কথা বলুন। ফুল এই বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড। যদি ওকে আঁটকে রাখেন তাহলে ওরই ক্ষতি হবে। আর যেটা আমি চাই না। আর হ্যা আমি তার আগে গিয়ে আপনার বাবার সাথে কথা বলবো।”

“হুম আজ আসছি।”

“কিছু খেয়ে যান। বসলেন ও তো না।

“সমস্যা নেই আর আমি খেয়েই বেরিয়েছি। আসি আল্লাহ হাফেজ।”

“হুম আল্লাহ হাফেজ।”

উনি যেতেই মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন মিশুর অনুষ্ঠানে থাকা নিয়ে কিছু বলতো না। যদি না মিশু ওকে রিকুয়েস্ট করতো। মিশু জিনিয়ার বিয়ের কথা শুনেই মেহবিনের কাছে বলেছে সে সবসময়কার মতো ঘরে আটকা থাকতে চায় না তার অনেক কষ্ট হয়। সে ভালো মেয়ের মতোই চুপ করে থাকবে কিছুই করবে না তাও মেনে ওকে যেন অনুষ্ঠানে থাকতে দেয়। এক পর্যায়ে গিয়ে মিশু কান্নাই করে দেয় তার জন্য মেহবিন ওকে বলেছিল সে ব্যবস্থা করবে। কথাটা শুনে মিশু যে কতটা খুশি হয়েছিল তা বলার মতো না। খুশিতে মেহবিন কে জড়িয়েও ধরেছিল।

অনেক দিন পর আজ সকাল দশটার দিকে”কাব্যের বিহঙ্গিনী” পেজ থেকে নতুন পোস্ট করা হয়েছে।

“যেকোনো পরিস্থিতিতে খুব ভেবে চিন্তে এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করা উচিৎ। যাতে পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলেও জীবনে বিরুপ প্রভাব না পরে।”

পোস্ট টা করার পরেই বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিল এটা, এতদিন সে কোথায় ছিল? আর তারপর কমেন্ট সবথেকে বেশি ছিল ঠিক বলেছেন, সহমত ইত্যাদি। হাজার খানেক লাইক শ খানেক কমেন্ট আর শেয়ার ও হয়েছে। পোস্ট টা আরবাজ আর মুখরের চোখ ও এড়ালো না।

দুপুরের দিকে মেহবিনের ফোনে কি যেন করছিল তখন একটা নোটিফিকেশন এলো। নোটিফিকেশন টা অন করতেই দেখলো বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে নতুন পোস্ট হয়েছে। সেখানে লেখা,,

“সে বোধহয় জানতো তার জীবন তার প্রতিকূলেই চলতে চায়। তাই তো সে এমনভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্ৰহন যে প্রতিকূল থাকা সিদ্ধান্তগুলোও তার অনুকূলে চলে আসে। কি বলবো সবাই তো আর বিহঙ্গিনীর মতো এতো বুদ্ধিমতি নয়।”

মেহবিন বুঝতে পারলো এখন লাঞ্চ টাইম চলছে তাই এখন পোস্ট করা হয়েছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে লিখলো,,

“জীবন তো একটাই তাইনা তাই প্রতিটা পদক্ষেপ একটু ভেবেচিন্তেই নেওয়া উচিৎ সবার।”

ওপাশ থেকে তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই আসলো,,

“হুম তাই তো খুব ভেবেচিন্তে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই তো দেখো আজ পরিস্থিতি প্রতিকূলে তবুও জীবনে খুব একটা বিরুপ প্রভাব পড়ছে না।”

“আমাকে বিয়ে না করে অন্য কাউকে বিয়ে করলে হয়তো আপনার জীবন আপনার প্রতিকূলে যেতো না। আচ্ছা আপনার কি আফসোস হয় কখনো?

“এখনো অব্দি কখনো হয়নি। তবে এখানে সবথেকে বড় কথা এটা নিয়ে আফসোস এর কিছু নেই। এটা আমাদের তকদিরে ছিল তাই হয়েছে।
আমার তকদিরে তুমি আর তোমার তকদিরে আমি ছিলাম বলেই আজ আমরা হতে পেরেছি।”

“হুম সেই জন্যই আমারও কখনো রিরুপ কিছু মাথায় আসে নি। কারন আমি আমার রবকে বিশ্বাস এবং ভরসা করি। জীবনে কি হলো না হলো সেটা নিয়ে আফসোস বহুদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি। জীবন সবসময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই থাকে আমার জীবন অনুকূলে আনা আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর ডিপেন্ড করে।”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ রিপ্লাই আসলো না। মেহবিন ভাবলো হয়তো আর আসবে না। তাই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই আবার কমেন্ট এর রিপ্লাই হলো,,

“তাহার রবের প্রতি এতো ভরসা, বিশ্বাস আর ভালোবাসাই আমাকে তাহার প্রতি বারংবার মুগ্ধ করে।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“পৃথিবীর সকল দরজা বন্ধ হলেও ঐ একজনের দরজা কখনো বন্ধ হবে না। তার বান্দার প্রতি তার অসীম দয়া। তিনি তার বান্দার সবকিছুই লক্ষ্য করেন এবং দেখেন। যদি কখনো কোন বান্দা আকাশের দিকেও তাকায় তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন,,

“আকাশের দিকে তোমার বার বার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ করি!”
(সূরা বাকারা – ১৪৪)

তাহলে বলুন আমরা আল্লাহর তায়ালার ওপর ভরসা করবো না তো কাকে ভরসা করবো। মানুষ মানুষকে কখনো কখনো ভালোবেসে ধোঁকা খায় কিন্তু আল্লাহ কে ভালোবাসলে কখনো ধোঁকা খাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘তার কোন বান্দা যদি তার দিকে এক পা আগায় তিনি(আল্লাহ) তার বান্দার দিকে দশ পা আগান।

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা ধৈর্যশীল দের সাথে আছেন’
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট”
~সূরা তালাক-২-৩

ওপাশ থেকে হাসির ইমুজি ওয়ালা একটা রিপ্লাই আসলো। তার সাথে লেখা “আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেদায়েত দান করুক আর তার ওপর তাওয়াক্কাল করে জীবন যাপন করার তওফিক দান করুক।”

মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,

‘আমিন।”

_____________

বিকেলে মুখর আসলো তবে আজ সিভিল ড্রেসে নয় আর মুখে মাস্ক ও নেই। আজ পুলিশের ইউনিফর্ম পরা। মেহবিনের বাড়ির দিকে পুলিশ আসতে দেখে সবাই এগিয়ে এলো। মুখর তা দেখে একটু অবাক হলো। ও গেটের কাছে এসে দাড়াতেই একজন জিজ্ঞেস করল,,

‘ছার আপনে এনে কিসের জন্য আইছেন? কেউ কি কিছু করছে ছার?

মুখর বুঝতে পারলো পুলিশ দেখে সবাই একটু ভয় পেয়েছে আর একটু কৌতূহলও আছে সবার মনে। তবে ওনার মুখে ছার শুনে মুখর বুঝতে পারলো স্যার হিসেবেই ডেকেছে। মুখর হেঁসে বলল,,

‘না কেউ কিছু করে নি। আসলে সেদিন মারামারি হলো না ডাক্তারের সাথে সেই লোকগুলো কে তো ধরা হয়েছে। তাই কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডক্টর মেহবিন এর কাছে এসেছি।”

আর কেউ কিছু বললো না। মুখর ভেতরে ঢুকলো বাকিরা সবাই চলে গেল একজন বাদে পুলিশ মানেই গ্ৰামের মানুষদের কাছে ভয়ের। সবাই চলে গেল তবে একেবারে গেল না বাড়ির ভেতরে ঢুকে লুকিয়ে দেখতে লাগলো। মুখরের সাথের একজন মেহবিনকে ডাকলো মেহবিন আর তাজেল বের হলো রুম থেকে। স্কুল থেকে ফিরেই সে মেহবিনের কাছে চলে এসেছে। মেহবিন মুখর কে দেখে বুঝতে পারলো ওর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছে এমনিতেও সকালে বলেছিল। লোকটা মুখরের কথা জানিয়ে চলে গেল। মেহবিন মুখর কে নিয়ে ঘরে ঢুকালো না ও দেখতে পেয়েছে রাস্তার ওপাশ থেকে ওদের দেখছে তাই ও বারান্দায় দুইটা চেয়ার আনলো। মুখর কে বসতে বলল। মুখর বসতেই তখন তাজেল বলল,,

‘পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি এইহানে কি করতে আইছো?”

তাজেলের কথায় মুখর হেঁসে বলল,,

“তোমার ডাক্তাররে দেখতে এসেছি।”

“কিছু আনো নাই ডাক্তারের লাইগা? তোমার হাতে তো ফলটল কিছু দেহি না। তুমি জানো না অসুস্থ মানুষ রে দেখতে আইলে ফল আনা লাগে।”

তাজেলের কথায় মুখর ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আর মেহবিন মুচকি হাসলো। কিছুক্ষণ ভেবে মুখর বলল,,

“আগে তুমি বলো এখানে কেন এসেছো?”

তাজেল হেঁসে বলল,,

‘ডাক্তাররে দেখতে।”

‘তুমি কি এনেছো তোমার ডাক্তারের জন্য।”

তাজেল আর মেহবিন বুঝতে পারলো মুখর তাজেলকে পিন্স মারছে। তাজেল ও কম যায়না সে দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“আমি ছোট মানুষ কি আর আনুম তাও আমি বরই আনছিলাম। জিগাও ডাক্তার রে।”

তখন মেহবিন বলল,,

‘হুম হুম নেত্রী কিন্তু আমার জন্য আজ বরই এনেছিল। কিন্তু আপনি কিছুই আনেন নি। আবার আমাকে দেখতে এসেছেন।”

তখন মুখর বলল,,

“ওহ আচ্ছা। তাহলে কি আমাকেও কিছু আনতে হবে?”

তখন তাজেল বলল,,

‘হ হ আনতে হইবো। অসুস্থ মানুষরে দেখতে আইছো কিছু আনো নাই এইডা ভালো কথা না।”

“তাহলে তো আনতেই হয়। ঐ দেখো গেট এ কেউ একজন আসছে।”

তাজেল আর মেহবিন দু’জনেই সেদিকে তাকালো। সত্যিই একজন আসছে হাতে বড় একটা বক্স। মুখর মেহবিন কে এগিয়ে যেতে বলল মেহবিন লোকটার থেকে বক্সটা নিয়ে এলো। লোকটা মুখরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। মেহবিন ওটা এনে বারান্দায় রাখলো। তখন মুখর বলল,,

“এই যে সব এসে গেছে নেত্রী। আমি জানি আমি এ বাড়িতে আসলে সবাই যেভাবেই হোক দেখবে আমি যদি নিজের হাতে কিছু নিয়ে আসি তাহলে অনেকেই অনেক কিছু মনে করবে। তাই অন্য একজনের হাত দিয়ে নিয়ে আসলাম। আর হ্যা এখানে শুধু ফল না আরো অনেক কিছু আছে তোমার জন্য এক বক্স চকলেট ও আছে। আমি যাওয়ার পর তোমার ডাক্তারের থেকে নিয়ে নিও।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“আইচ্ছা তুমি তো দেহি খুব চালাক পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”

“একটু চালাক না হইলে কি তোমার ডাক্তাররে বিয়া করতে পারতাম নেত্রী।”

” তুমি তো দেহি আমার মতো কথা কওয়া শুরু করছো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”

“হ তোমার কথা আমার ভাললাগছে তাই। তা কেমন আছো দুজন?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

‘আমায় জিজ্ঞেস করবে না কেমন আছি?”

তখন তাজেল বলল,,

“তুমি ভালো আছো দেইহাই এনে আইছো তাই ডাক্তার জিগাস করে নাই।”

“এই তোমরা দুজন কি আমার সাথে মজা করছো?”

মেহবিন আর তাজেল দুজন দুজনের দিকে তাকালো আর একসাথে হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বলল না আবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল হ্যা।এর মানে মুখর বুঝলো দু’জনে মিলে ওকে বোকা বানাচ্ছিল। মুখর হেঁসে বলল,,,

“তা আপনারা দুজন কি অতিথি আপ্যায়ন করেন না নাকি? কেউ বাড়িতে আসলে নাস্তা দিতে হয় এইটুকু ভদ্রতা নেই নাকি?

মুখরের কথা শুনে মেহবিন ভেতরে গেল আর একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো। মুখর হেঁসে ফেললো তারপর তিনজনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। ওদের কে কেউ কেউ দেখছে বলে মুখর তাড়াতাড়ি চলে গেল। তবে কেউ ওরা কি কথা বলেছে সেটা শুনতে পায়নি। এরপর মেহবিন মুখরের দেওয়া বক্সটা নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। বক্সটা খুলতেই সবার প্রথমেই একটা গোলাপ ফুলের তোড়া দেখতে পেল‌। সেটার ওপরে লেখা বিহঙ্গিনীর সাথে সাক্ষাতের জন্য। তার নিচে দুটো চকলেট বক্স একটা তাজেলের আরেকটা মেহবিনের। তার নিচে কয়েক রকমের ফল। তার নিচে মেহবিনের ফ্রেবারিট চিপস বিস্কুট। এগুলো দেখে তাজেল বলল,,

‘ পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা দেহি তোমারে মেলা ভালোবাসে ডাক্তার।”

মেহবিন কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। তারপর তাজেলের জন্য আনা চকলেট বক্স ওর হাতে দিল সাথে চিপসের প্যাকেট আর বিস্কুট ও দিল।

________________

“‘আপনি নাকি ফুল মানে মিশুমনিকে অনুষ্ঠানে থাকতে বারন করেছেন?”

মেহবিনের কথায় শেখ শাহেনশাহ মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তো কি করমু পাগল কে অনুষ্ঠানে নিজেদের মান সম্মান ডুবামু নাকি।”

“মিশু পাগল নয় ও একটু অবুঝ আর কিছু না। ”

‘এতো বড় দামরা মাইয়ার কাজ যদি পাঁচ বছরের পুলাপাইন এর মতো হয় তাইলে কি চলবো। তারে তো সবাই পাগলই বলবো তাই না। তাই মান সম্মান খুয়ানোর জন্য ওরে অনুষ্ঠানে রাখুম না।

“কোনদিন রেখেছেন কোন অনুষ্ঠানে যে বুঝবেন ও আপনার মান সম্মান ডুবাবে নাকি।”

‘আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তোমার না কথা কওয়াই ভালো।”

‘আমি তো আপনাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে কিছু বলছি না শুধু মিশুকে নিয়ে বলছি। মিশু জিনিয়ার বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড তাই ওকে আটকে রাখবেন না।”

‘অনুষ্ঠানে কিছু হইলে তুমি তার দায় নিবা। তাছাড়া তুমি তো শুনলাম ঢাকায় যাইবা ওরে সামলাইবো কি রা?”

এ কথা শুনে মেহবিন একবার শেখ পরিবারের সদস্যদের তাকালো। মিশু ওর হাতটা শক্ত করে ধরলো। পাগল বলার পরও ও কিছু বললো না কারন মেহবিন বলেছে একটা কথাও না বলতে তাই সে চুপ করে আছে। পুরশুদিন শুক্রবার আর জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট। তাই আজ এসেছে শেখ শাহেনশাহ এর সাথে কথা বলতে। কাল রাতেই শেখ শাহনাওয়াজ জানিয়েছেন তার বাবা রাজি নয় মিশুকে অনুষ্ঠানে রাখতে তাই আজ এসেছে হাসপাতাল থেকে সোজা এখানে। বাড়িতে এসে সবাইকেই পায় শুধু আরবাজ আর ওর কাকা মামা ছাড়া। মেহবিন সবার শেষে মিশুর দিকে তাকালো।তখন মিশু ফিসফিস করে মেহবিনের কানে কানে বলল,,,

“আমি গুড গার্ল হয়ে থাকবো কিছু করবো না প্রমিস।”

তা শুনে মেহবিন শেখ শাহেনশাহ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আমি না থাকলাম তবুও ওকে থাকতে দিন। কিছু হলে আমায় ফোন করবেন আমি চলে আসবো মিশুকে সামলাতে।”

“তোমার কথা শুইনা ওরে রাখতেছি কিছু হইলে তোমার দায় কিন্তু। আর মিশু যদি পাগলামি করে তাইলে এরপর থেইকা আর কোন অনুষ্ঠানেই ওরে রাখা হইবো না।”

শেখ শাহেনশাহ এর কথা শুনে মেহবিন হাসলো সাথে দুজনের মুখেও হাঁসি ফুটে উঠলো তারা হলো শেখ শাহনাওয়াজ আর মিশু। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,,

“আচ্ছা।”

এরপর মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো নওশি দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে মেহবিন বলল,,

“নওশি তুমি এখানে?”

‘আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

‘কেন?”

‘তাজেল,,”

তাজেলের কথা শুনে মেহবিন তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“কি হয়েছে নেত্রীর?”

‘জানিনা কলেজ থেকে আসার পর দেখলাম চুপচাপ শুয়ে আছে। পরে শুনলাম স্কুলেও যায়নি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ও কিছুই বলেনি। ওভাবেই নাকি সকাল থেকে সারাদিন না খেয়ে শুয়েছিল। জোর করেও কেউ ওঠাতে পারে নি। পরে শুনলাম ওর,,

তাজেলের অবস্থা শুনেই মেহবিন তাজেলের বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল। নওশি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না তাই মেহবিনের পেছন পেছন চললো। মেহবিন যখন যাচ্ছে তার নেত্রীকে ঠিক সামলে নিতে পারবে তাই ভেবেই নওশি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন তাজেলের বাড়িতে পৌঁছে দেখলো তাজেলের মা আর ভাইবোন তাদের বারান্দায় বসে কি যেন করছে। ও এক পলক সেদিকে তাকিয়ে তাজেলের ঘরে গেল। নওশি যা বলেছিলো তাই ও শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। মেহবিন তাজেলের পেটের সামনে ওখানে চকিতে বসলো আর তাজেলকে আলতো ডাক দিল,,

“নেত্রী!”

তাজেল আস্তে করে চোখ খুললো। মেহবিন তাজেলের কপালে হাত দিয়ে চেক করলো জ্বর হয়েছে কি না। না জ্বর নেই। তাই ও বললো,,

“কি হয়েছে আমার নেত্রীর ? সে নাকি সারাদিন না খেয়ে শুয়ে আছে।”

তাজেল মেহবিন কে দেখে উঠে বসলো। ততক্ষণে নওশিসহ তাজেলের সৎমাও ঘরে ঢুকেছে। তাজেল কিছু বলছে না দেখে মেহবিন ওর গালে হাত রেখে বলল,,

“নেত্রী কি হয়েছে? তোমার ডাক্তারকে বলবে না?”

তাজেলের চোখটা মুহূর্তেই ছলছল করে উঠলো। তা দেখে মেহবিন একপ্রকার থমকে গেল। এরকম টা ও তাজেলকে কখনো দেখেনি। মেহবিন ওর গালে হাত রেখে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে দিয়ে চোখের নিচে ডলে দিতে লাগলো। তাজেলের কান্না আর বাঁধ মানলো না ও কেঁদে উঠলো। আর মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো। তাজেল মেহবিন কে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। হুট করে এমন কান্না দেখে মেহবিন ভরকে গেল সেই সাথে নওশিও । তাজেলের সৎমাও যে অবাক হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এদিকে তাজেলের কান্না শুনে আশেপাশের সকল মহিলারা চলে এলো। ঘরে ঢুকেই সবাই দেখলো তাজেল মেহবিন কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। মেহবিন তাজেলের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর তাজেল কান্না শেষ করে শান্ত হলো। মেহবিন কিছু বললো না ওকে। ওকে কোলে তুলে তাজেলের সৎমায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাজেলকে আমি আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি। ও আজ আমার সাথেই থাকবে।”

তখন তাজেলের মা মুখ বাঁকিয়ে বলল,,

“তোমাগো এত রঙঢঙ কিসের বুঝি না বাপু। যেনে ইচ্ছা হেনে যাক। দরকার পরে আমার জীবন থেইকা একেবারে চইলা যাক। আমি একটু বাঁচি!

তাজেলের সৎমায়ের কথা শুনে তাজেল মেহবিনকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মানুষ এরকম হয় কিভাবে এমনিতেই দেখছে মেয়েটা কাঁদছে তারওপর এরকম কথা। মেহবিন নওশিকে বলল,,

“নওশি আমার ব্যাগটা একটু আমার বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবে?”

মেহবিনের কথা শুনে নওশি বলল,,

“পারমু না কেন ডাক্তার আপা।আমি এখনি যাইতেছি।”

মেহবিন আর কোন কথা না বলে তাজেলকে কোলে নিয়ে বের হলো। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ও কারো তোয়াক্কা না করে বাড়ি চলে এলো। নওশি ব্যাগ দিয়ে চলে গেল। মেহবিন তাজেলকে বিছানায় বসিয়ে দিল । তাজেল ও বাধ্য মেয়ের মতো বসলো। ও ফ্রেশ হয়ে বের হলো। তখনি মাগরিবের আজান শোনা গেল মেহবিন আজানের জবাব দিয়ে তারপর তাজেলকে বলল,,

“নেত্রী যাও ওযু করে এসো। আমরা একসাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করবো। ”

মেহবিনের কথা শুনে তাজেল বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওযু করে আসলে মেহবিন বড় একটা ওরনা দিয়ে ওর হিজাব বানিয়ে দিল। মেহবিনের কাছে এক্সট্রা জায়নামাজ ছিল সেটাই ওর পাশে বিছিয়ে দিল। তারপর তাজেলের হাত ধরে জায়নামাজে দাড় করিয়ে দিল। দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে তাজেল লম্বা একটা মুনাজাত করলো। মেহবিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে তসবিহ শেষ করে নিল। দু’জনের হয়ে গেলে মেহবিন জায়নামাজ দুটো গুছিয়ে রাখলো। এই মুহূর্তে তাজেলকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। ও ওরনা খুলে মেহবিন কে দিতে চাইলে মেহবিন বলল থাক খুলতে হবে না। তাজেল আর কিছু বললো না চুপ করে বিছানায় বসে রইল। মেহবিন তাজেলের সামনে বসে বলল,,

“আমার নেত্রীকে নীরবতা মানায় না। তাকে সর্বদা চঞ্চলতায় মানায়।”

তাজেল মেহবিনের কথায় ওর দিকে তাকালো। মেহবিন ওর হাত ধরে বলল,,

“কি হয়েছে নেত্রী?”

“আজ সকালে মা আইছিল ডাক্তার!”

তাজেলের কথায় মেহবিন একটু অবাক হয়। তবুও বলে,,

“কি করতে এসেছিল তোমায় দেখতে নাকি তোমায় নিতে?”

“আমি জানি না।”

“মানে? এতো বছর পর সে কেন এখানে এলো?”

“আবার সংসার করার লাইগা।”

“আমাকে ক্লিয়ার করে বলো তো?”

“আমার মায় আমার বাপের কাছে ফিরা আইছে। হেয় নাকি তার ভুল বুঝবার পারছে যে আমার বাপ তারে কতো ভালোবাসতো। আমারে নাকি হেয় অনেক ভালোবাসে তাই নাকি আমাগো ছাড়া এহন হে থাকবার পারবো না। তাই সব ছাইড়া চইলা আইছে আমাগো কাছে।”

“তারপর?”

“আমার বাপ তো আর তারে কোনমতেই উডাইবো না বাড়ি। আমার সৎমায়েও যাচ্ছে তাই কইয়া মুখ করছে। তারা সবাই মিলা কাইজা(ঝগড়া) করে। এক পর্যায়ে মা কয় আমারে আমার সৎমায় আদর করেনা বকা বাজি করে আমার জন্য হইলেও জানি মায়রে থাকতে দেয়। তহন আমার বাপ কয়টা কথা কইছিল আমারে নাকি দরকার পরলে বেইচা দিব নাইলে কাইটা নদীতে ফালাই দিবো। আমারে তার দরকার নাই। আমি কেন মরি না তাইলে তার সংসারে অশান্তি হয় না। আমি নাকি আমার সৎমায়রে জালাই আমি মরলে ভালো হইবো। আমার জন্য নাকি আবার মায়রে রাখবো। এই কথা হইনা আমার মায় চইলা গেছিল আর আসে নাই পুরা দিনে।সবাই ভাবছে আমি কিছু হুনি নাই কিছু দেহি নাই তোমার কাছে প্রাইভেট পরতে আইছি। কিন্তু আমি সব দেখছি সব শুনছি তাই তো তহন কানবার পারি নাই তহন আর বাড়িও যাই নাই পরে গেছিলাম।

তুমি বিশ্বাস করো ডাক্তার। আমার বাপের ঐ কথাগুলা শুইনা আমার মনে হইছিল আমি চোহে আন্দার দেখতেছি। তহন আমি কানবার পারি নাই ডাক্তার। খালি মনে হইতেছিল আমার বাপ আমারে মরার কথা কইছে এতোদিন কেউ না থাকলেও হেই মানুষ টা দিনশেষে খবর নিতো হেই মানুষটাও আমি থাহায় ভালো নাই। কিন্তু আমার বাপ কতো ভালো এর আগে এতকিছু কইছে আমারে নিয়া কিন্তু আমি বাড়ি যাওয়ার পর আমারে জিগাইছিলো আমি স্কুলে যামু নাকি আমার টাকা লাগবো নাকি। কিন্তু হেই ভালোকথা গুলাও আমার মন খারাপ দূর করতে পারে নাই আমার কানে তো একটু আগের কওয়া কথা গুলা বাজতেছিল।

বলতে বলতেই তাজেল আবার কেঁদে উঠলো। মেহবিন এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু কিছু বললো না। কাদুক একটু হালকা হোক। পুরোটা দিন এই কান্নাগুলো আঁটকে রেখেছিল। মেহবিন বুঝতে পারলো না ওর মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই এসব বলেছে নাকি মন দিয়ে থেকে। তবে পরে যেহেতু ভালোভাবেই কথা বলেছে সেহেতু ওর মনে হচ্ছে ওর মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই বলেছে। কিন্তু এটা তো তাজেলের মাথায় ঢুকবে না এখন তবে ঢুকাতে হবে এখন না হয় পরে। তবে এইটুকু বয়সে এতটা ম্যাচুরিটি এসেছে এটা বোধহয় বাস্তবতা থেকেই হয়েছে এগুলোই ভাবলো কিছুক্ষণ। একটু শান্ত হতেই মেহবিন বলল,,

“তোমার বাবা তোমার মায়ের ওপর রাগ করেই ওগুলো বলেছিল যাতে সে চলে যায়। মন থেকে সেসব বলেনি যদি বলতো তাহলে পরে আর তোমার স্কুলে যাওয়ার কথা টাকা নেওয়ার কথা বলতো না।”

“আমি কিছু শুনবার চাই না ডাক্তার। তুমি আমারে কিছু কইয়ো না এহন।”

“আইচ্ছা কিছু না কইলাম এহন তুমি বসো তো একটু কিছু খাইয়া নও।আমি খাবার গরম কইরা নিয়ে আসি। দেহো তো তোমার ভাষা ঠিক আছে নাকি নেত্রী।

মেহবিনের গ্ৰাম্য ভাষা শুনে তাজেল একটু হাসলো আর বলল,,

“তোমার ভুল হইছে ডাক্তার তুমি বসো তো একটু হইবো না। হইবো, বইসা থাহো ইটু, আর নিয়ে আসি হইবো না নিয়া আসি। ”

“যাক অবশেষে নেত্রীর মুখে হাসি ফুটে উঠল।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“নও এহন রান্দুন ঘরে আমার মেলা খিদা লাগছে সারাদিন কিছু খাই নাই।”

মেহবিন হেঁসে ওকে একটা চকলেট দিল। আর বলল,,

“আপাতত এটা খাও। আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।”

মেহবিন রান্না ঘরে চলে গেল। তাজেল ও চকলেট খেতে খেতে পেছন পেছন গেল। মেহবিন খাবার গরম করলো। তারপর একটা প্লেটে বেরে রুমে নিয়ে এলো। তাজেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,

“নাও এখন খাওয়া শুরু কর?”

“তুমি খাইবা না?”

“না আমি পরে খাবো এখন খিদে নেই।”

“ওহ আচ্ছা।

তাজেল একবার খাবারের দিকে তাকালো আবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার মায় আবারো আমারে ধোঁকা দিছে ডাক্তার। আর সাতে এইবার মনে অয় আমার বাপ ও আমারে তাড়াতাড়ি ধোঁকা দিব।

এই ধোকার মানে মেহবিন বুঝলো ছেড়ে গেছে বোঝাতে চেয়েছে তাজেলের কাছে এটাই ধোঁকা। মেহবিন কিছু বললো না তখন তাজেল আবার বলল,,

“তুমি কহনো আমারে ধোঁকা দিও না ডাক্তার। তুমি জানো আল্লাহর কাছে এতোবড় মুনাজাতে কি চাইছি? চাইছি তুমি জানি আমারে কোনদিনও ধোঁকা না দাও।”

তাজেলের এমন কথা শুনে মেহবিন থমকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। এ কয়েকদিনেই মেহবিন ওর কতোটা কাছের হয়ে গেছে এটা ও উপলব্ধি করতে পারছে। নরমালি একটা মানুষের এরকম কথা শুনে ইমোশনাল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মেহবিনের চেহারার তার রেশ মাত্র নেই কারন সে কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন একজন মানুষ। যাকে কেউ কাঁদতে দেখেনি। তাজেল না খেয়ে ভাত নাড়াচাড়া করছে দেখে মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“নেত্রী আমি তোমায় খায়িয়ে দিই?”

তাজেল মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তুমি আমার জবাব দিলা না। আমারে কোনদিন ধোঁকা দিবা না তো?”

মেহবিন জবাব দিতে পারলো না ও নিজেও জানে না এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে। ও প্লেট টা নিয়ে খাবার মেখে তাজেলের সামনে ধরে বলল,

“খেয়ে নাও এখন আর কোন কথা না।”

“ডাক্তার তুমি!”

“নেত্রী আমি কি বললাম তোমায়। এখন খেয়ে নাও।”

তাজেল আর কিছুই বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিল। তারপর তাজেলকে জিজ্ঞেস করল কার্টুন দেখবে কি না। ও বলল দেখবে মেহবিন কার্টুন ছেড়ে দিল। আর ওর সাথে বসে কার্টুন দেখতে লাগলো। তখন ও শুনতে পেল বাইরে থেকে কেউ মেহবিন কে ডাকছে। ও তাজেলকে ঘরে রেখে বারান্দায় এলো। তখন দেখলো তাজেল এর দাদি আর বাবা এসেছে। ও নিচে আসলো। তখন তাজেলের বাবা বলল,,

“তাজেল কি ঘুমাই গেছে?”

মেহবিন মুচকি হাসলো ও বুঝতে পারলো মেয়ের খোঁজেই এসেছে‌। ও বলল,,

“না কার্টুন দেখছে।”

“ও নাকি সারাদিন খায় নাই ও কি কিছু খাইছে?”

“যে বাচ্চাটাকে বেঁচে দিতে চেয়েছেন নাহলে কেটে নদীতে ফেলে দেবেন বলেছেন। তার জন্য হঠাৎ এতো দরদ।”

মেহবিনের কথায় তাজেলের বাবা আর দাদি দুজনেই চমকায়। তাজেলের বাবার চোখ ছলছল করে ওঠে লাইটের আলোয় মেহবিন তা স্পষ্ট দেখতে পায়। ও বলল,,

“চিন্তা করবেন না তাজেল খেয়েছে?”

“ও কি সব শুইনা ফালাইছে?”

মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,

“হুম যার জন্য ও সারাটাদিন চুপ চাপ শুয়ে ছিল। আর আমাকে দেখেই কেঁদে দেয়। তবে ওর মায়ের এখানে আসায় ওর মধ্যে কোন প্রভাব পরেনি প্রভাব পরেছে আপনার কথায়।”

কথাটা শুনেই লোকটা কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“আমি মন থেইকা ওরে কিছু কই নাই। যাতে ওর মায়রে না উঠান লাগে এই জন্য আমি কইছি। আমি ওর মায়রে মেলা ভালোবাসতাম সে আমার ভালোবাসার মুল্য দেয় নাই। এহন ফেরত আইছে যহন আমি আরেকজনরে লইয়া সংসার করতেছি তাজেলের সৎমায় সতিনের মেয়েরেই সহ্য করতে পারে না হেনে সতিনরে করবো কেমনে। আমি তাজেলরে মেলা ভালোবাসি তাই তো ওর সৎমায়ের এতো কথা হুইনাও আমি ওরে আমার সামনে রাহি ‌। দিনশেষে যহন কাম কইরা আমি বাড়ি আসি তখন ওর চেহারা দেখলেই আমি মনে শান্তি পাই। হেই জন্যই বাড়ি আইসা আমি রাইতে ওর খবর নেই। আমি জানি আমি মাইয়ার জন্য ভালো কিছু করবার পারি না। তবে আমি চাই করবার কিন্তু ওর সৎমায়ের জন্য পারি না। তাজেলের ভালো করার নিগা আমি বিয়া করছিলাম কিন্তু বুঝিনাই বিয়া কইরা ওর ভালো না খারাপ কইরা ফালাইছি। ও আমারে কতোদিন ধইরা আব্বা ডাকে না খালি কয় আমার বাপ। আমি তাজেলরে মেলা ভালোবাসি কিন্তু ভালোবাসা দেখাইতে পারি না।”

তখন মেহবিনের পেছন থেকে শোনা গেল ,,

“আব্বা!”

বলেই তাজেল দৌড় দিল আর সোজা ওর বাবার কোলে উঠে পরলো। তাজেলের বাবা ওকে ধরে কেঁদে উঠলো। আর বলল,,

“আমারে মাফ কইরা দিস তাজেল।”

তাজেল কিছু বললো না শক্ত করে ওর বাবাকে ধরে রইলো। এখানের সবকিছুই শুনেছে সে মেহবিনের পেছনেই বেরিয়েছিল সে ওর বাবাকে দেখে আগায় নি। কিন্তু যখন দেখলো ওর বাবা কাঁদছে তখন আর থাকতে পারলো না। তাজেলের বাবা কান্না থামিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। তখন তাজেল বলল,

“আমি আব্বার সাতে বাড়ি গেলাম ডাক্তার আবার কাইল সকালে আসমুনি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আচ্ছা!”

তাজেল ওর বাবার সাথে চলে গেল। মেহবিন হাসলো তাজেলদের দেখে কিন্তু ঘরে ঢুকতেই মেহবিনের হাঁসি গায়েব হয়ে গেল। ওর হুট করেই অস্থির লাগছে ভিশন। ও মেঝেতেই শুয়ে পরলো হাত পা ছড়িয়ে। দৃষ্টি ওপরের দিকে। কিছুক্ষণ পর মেহবিন অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

‘আপনি কি তাজেলের বাবার মতো নিজের কাছে রেখে আগলে রাখতে পারতেন না আমায় বাবা?”

প্রশ্নটা আজকে তার বাবার কাছে করতে ইচ্ছে করছে ভিশন। কিন্তু চাইলেও কি সবসময় সব হয়। মেহবিন একটু কান্না করতে চাইছে কিন্তু পারছে না কারন ও কাঁদতে জানেনা মায়ের কাছে যে কথা দিয়েছিল সে কখনো কাঁদবে না। বারবার কষ্ট পেয়েও না কাঁদতে কাঁদতে এখন কাঁদতে ভুলে গেছে সে। এক শক্ত খোলস দ্বারা নিজেকে আবৃত করেছে। কিছুক্ষণ পর আবার ও বলে উঠলো,,

“আমি ভিশন একলা মানুষ
নিজের ভেতরেই আমার আটকে থাকা।
কেউ কি কখনো বুঝতে পারে
আমার ভেতরে কতোটা কষ্ট ঢাকা।”

‘আমার একাকিত্বের শহরে কখনো অশ্রুর বৃষ্টি আসুক। সাথে খুব বেগে ঝড় উঠুক যাতে সব কষ্টগুলো ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় আমার একাকিত্বের শহর।”

_________________

আজ বৃহস্পতিবার আজকেই হাসপাতাল থেকে ফিরে মেহবিন তার মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে। আদর বলেছে একদিন আগেই যেতে হবে নাহলে নাকি সে তার সাথে কথা বলবে না আরো কতোগুলো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করেছে সাথে ওর মামামামি মামাতো ভাইবোনেরাও যুক্ত হয়েছে। শেষমেষ ওর আর কি করার ও রাজি হয়েছে। মেহবিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল। তাজেলকে বলেছে সে আজ যাবে তাই তাজেল অপেক্ষা করছে। সেদিনের পর থেকে তার বাবার সাথে তার সম্পর্ক অনেকটাই ভালো হয়েছে। এখন ওর সৎমা কিছু বলতে পারে না তাজেলকে ওর বাবা কড়া করে কতোগুলো কথা বলেছে আর এটাও বলেছে তাজেলকে যেন খারাপ কথা না বলে। তাজেলের থেকে বিদায় নিয়ে ও রিক্সায় উঠলো ট্রেনে করেই যাবে সে। অতঃপর স্টেশন গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ট্রেন আসলে ট্রেনে উঠে পরলো। গন্তব্য তার ঢাকা অতঃপর তার মামার বাড়ি।

_________________

“এ কি মিস নাফিয়া আপনি এখানে? একাই এসেছেন নাকি?”

কারো কথায় নাফিয়া পেছনে তাকায়। পেছনে তাকিয়ে আরবাজ কে দেখতে পায়। আরবাজ কে দেখে ও বলল,,

“আরে মিস্টার শেখ! আপনি শপিং মলে তাও আবার গার্লস সেকশনে?”

“আমি আগে প্রশ্ন করেছি মিস?”

“হুম আর আমি একা নই নিসা আর আলভি ভাইয়াও আছে। ওরা ওদের মতো শপিং করছে আর আমি আমার মতো। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দিন?”

“মিশুর জন্য ড্রেস আর জুতো কিনতে এসেছি। কিন্তু কোনটা নেব বুঝতে পারছি না। ও বলেছে সুন্দর দেখে একটা ড্রেস নিতে।”

মিশুর কথা নাফিয়া বলল,,

“মিশু আপু এখন কেমন আছে?”

“আছে আগের থেকে একটু বেটার। আমায় একটু হেল্প করবে?”

নাফিয়া আরবাজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনার মতিগতি আমি বুঝি না কখনো আপনি বলেন কখনো তুমি ?

“আসলে কি বলো তো তোমায় প্রথমে ভাবি তুমি একজন সফল উদ্যোক্তা তাই আপনি বলি। পরে মনে পরে আরে তুমি তো আমার বন্ধুর ছোট বোন তাই । এখন বলো তো আমায় হেল্প করবে কি না?

“মিশু আপুর জন্য যেহেতু সেহেতু হেল্প করাই যায়।”

‘কেন অন্যকারো জন্য হলে কি করতে না?”

‘আপনার গার্লফ্রেন্ড এর জন্য হলে করতাম না।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ মেয়ে বলে কি? আমি কেন হারাম রিলেশনশিপ এ জড়াতে যাবো । যেখানে কিনা আমার আল্লাহ আমার জন্য একজন জীবনসঙ্গী কে নির্বাচিত করে রেখেছেন সেখানে আমি কেন অন্যজনের প্রতি আবেগ দেখিয়ে আমার জীবনসঙ্গীর হক নষ্ট করবো।আমি তো আমার সব আবেগ ভালোবাসা সব আমার হালাল নারীর জন্য রেখেছি। বুঝেছেন ম্যাডাম?”

আরবাজের কথা শুনে নাফিয়া হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর বলে,,

“হুম বুঝলাম আর আপনাকে কখনো কিছু বলবো না আমি।”

‘কেন? কেন?”

“আমি এক লাইন বললে আপনি দশ লাইন শুনিয়ে দেবেন। তাছাড়া এখানে আমি একটা এক্সামপেল দিয়েছি আর আপনি তো পুরো… যাই হোক চলুন মিশু আপুর জন্য শপিং করে দিই।”

আরবাজ আর কিছু বললো না। নাফিয়ার সাথে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আলভি আর নিসার সাথেও দেখা হলো। আরবাজ আলভি কে বলল,,

“কাল অনুষ্ঠান আর আজ এসেছো শপিং করতে‌। কি কাজে ব্যস্ত ছিলে শুনি দুলহারাজা?”

তখন আরভি হেসে বলল,,

‘কি আর বলবো বলো! কাল কাল করতে করতে সেই অনুষ্ঠানের আগের দিনই আসতে হলো। আমাদের শপিং তো শেষ শুধু নাফিয়ার টা হচ্ছে না। একটা গাউন পছন্দ করেছে কিন্তু কি রঙের নেবে বুঝতে পারছে না।”

তখন আরবাজ নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“যাদের মন এতো পবিত্র তাদের শুভ্র রঙেই মানাবে ভালো।”

তখন নিসা বলল,,

‘একদম পারফেক্ট রঙ বলেছো আরবাজ ভাইয়া। আর নাফি আপুকে তো সবথেকে সুন্দর শুভ্র রঙেই লাগে।”

আরবাজ কিছু বললো না শুধু হাসলো সবাই মিলে শপিং করলো। আরবাজকে সাহায্য করার জন্য আরবাজ নাফিয়া কে একটা শুভ্র রঙের হিজাব গিফট করলো। প্রথমে না করলেও পরে নিতেই হলো নাফিয়া কে। ওরা চারজন মিলে কফিও খেল। কথায় কথায় জানতে পারলো আরবাজ এখনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। আরবাজ মুখরের পরিবারকেও দাওয়াত করেছিল কিন্তু মন্ত্রীসাহেবের বাড়ি যেতে হবে বলে মানা করেছে মুখররা। আরবাজ ওদের কে একদিন যেতে বলে চলে গেল। ওরাও নিজেদের মতো বাড়ি চলে গেল।

________________

আজ শুক্রবার আজ সন্ধ্যা সাতটায় জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট হবে। জিনিয়ার হবু জামাইয়ের নাম শান আহমেদ। সন্ধ্যায় সবাই চলে এলো। শেখ শাহনাওয়াজ শেখ শাহেনশাহ সবাই মিলে ওদের ওয়েলকাম করলো। নতুন কিছু মুখ দেখে জিনিয়ার বাবা বললেন,,

“এই নতুন মানুষদের তো চিনলাম না মিস্টার আহমেদ!

শানের বাবা হেঁসে বললেন,,

“উনি হচ্ছে আমার ভাই আলম আহমেদ আর উনি তার স্ত্রী সাবিনা আর ও হলো তাদের একমাত্র মেয়ে শিলা আহমেদ।”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-২৩+২৪

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

(অনুমতি ব্যতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)

ওপাশের আওয়াজ শুনে মেহবিন বলল,,

‘কে?”

‘তোমার মৃত্যু!”

“আমার মৃত্যু আপনি হতে যাবেন কোন দুঃখে। আমার মৃত্যু শুধু আমার রবের নির্দেশেই হবে তাই না। আপনি চাইলেও আমার মৃত্যু হতে পারবেন না কারন এই পৃথিবীতে আমার রবের নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না। খুব বেশি হলে আমার মৃত্যুর একটা কারন হতে পারেন এছাড়া বেশি কিছু হতে পারবেন না।”

মেহবিনের এরকম কথা শুনে ওপাশের লোকটা অবাক হলেও পরে হেঁসে বলল,,

“আচ্ছা তোমার কথাই মেনে নিলাম। তোমার মৃত্যু হতে না পারলাম কিন্তু তোমার মৃত্যুর কারন নিশ্চয়ই আমি হতে পারবো।”

“দেখা যাক না কি হয়। কোন কিছুই এতো কনফিডেন্স এর সাথে বলতে হয় না। কে জানে কার মৃত্যু কখন হয়? এমন ও তো হতে আমি আপনার মৃত্যুর একটা কারন হয়ে গেলাম। যাই হোক এখন বলুন কে আপনি?

“তুমি যার কাজে খুব বাগড়া দিচ্ছো আজকাল সেই আমি অন্ধকারের রাজা!”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,

“নিশাচর!”

‘এই তো চিনতে পেরেছো। যাই হোক আমাকে ধরার পথে যতদূর পর্যন্ত গিয়েছো সেখানেই থেমে যাও এটা তোমার জন্যই ভালো।”

‘থামার জন্য আমি এই পথে যাই নি । একবার যখন এই পথে ঢুকে পরেছি তবে এর শেষ দেখেই ছাড়বো।”

‘সেটা দেখার জন্য তুমি শেষ পর্যন্ত থাকবে তো!”

‘না থাকার কারন দেখছি না।”

‘কারন টা না হয় আমিই দেব। যাই হোক নিজের খেয়াল রেখো এটা এখন খুব দরকার তোমার।”

এটুকু শোনার পরেই ফোনটা কেটে গেল। মেহবিন ফোনটা ট্রেস করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই পেলো না। ও বুঝতে পারলো একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে নন ট্র্যাকার ফোন থেকে কলটা করা হয়েছিল। ও ল্যাপটপ টা নিয়ে এ.এস হাসপাতালের সব খবর নিল। মুখর কিছু ফুটেজ দিয়েছিল সেগুলো ভালোভাবে চেক করলো। তেমন কিছু পেলো না ও খুব তাড়াতাড়ি নিজেই সব বের করবে ঐ হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করে নেবে কিন্তু এই জন্য ওকে ঐ হাসপাতালের কাছাকাছি যেতে হবে। তাছাড়া ওর কাছের ল্যাপটপ দ্বারা সব হবে না। অন্যকাউকে করাতে হবে মানে কোন হ্যাকারকে দিয়ে কাজটা করাতে হবে। মেহবিন ভাবলো এখন সময় নেই অন্য কাউকে দিয়েই করতে হবে ও একজন কে ফোন করে সব বলল আর এটাও বলল তার সকালেই সবকিছু চাই। সে জানালো সকালেই পেয়ে যাবে।

_________________

“ডাক্তার তুমি কিন্তু বদলাই গেছো?”

তাজেলের কথায় মেহবিন তাজেলের পড়া দেখা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকালো। আর বলল,,

‘আমি কোথায় বদলালাম নেত্রী?”

“বদলাও নাই কইতেছো কতোদিন হইয়া গেছে আমরা একসাথে বিকেলে হাঁটতে যাই না।”

“এখানে বদলালাম কোথায়?”

“তোমার এহন আগের মতো সময় নাই আমার সাথে ঘুরার। সময় পাইলেই চেয়ারম্যান বাড়িতে দৌড় মারো। ছুটির দিন ও তুমি ঐ বাড়িতে যাও।”

“আমি তো তোমাকেও সময় দিই।”

“এই দুই দিন দেও নাই পুরশুদিন তুমি ঢাকায় গেছিলা আর কালক্যা চেয়ারম্যান বাড়িতে আইয়া হেই যে বাড়ি ঢুকলা আর বাইর হও নাই।”

“আমার কিছু কাজ ছিল তাই বের হই নি।”

“তাইলে এহন কও তুমি বদলাও নাই।”

মেহবিন বুঝতে পারলো তার নেত্রী দুদিন সময় দেওয়া হয় নি বলে অভিমান করছে। তাই সে হেঁসে বলল,,

“নেত্রী আমার সাথে ঘুরতে যাবা আজ বিকেলে?”

মুহুর্তেই তাজেলের মুখে হাসি দেখা গেল। কিন্তু মেহবিন কে দেখাতে চাইলো না কিন্তু মেহবিন সেটা ঠিকই দেখলো। তাজেল নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলল,,

‘আমার তো ঘুরতে ভাললাগে তুমি যদি নিয়া যাইতে চাও তাইলে যামু। আমি তো আর তোমার মতো বদলাই নাই আমি আমিই।”

মেহবিন তাজেলের হাত ধরে নিজের কাছে এনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,,

‘হুম নেত্রী তুমি তুমিই। তোমার মতো আর কেউ নেই তাই তো তোমায় আমি এত্ত এত্ত ভালোবাসি।”

তাজেল একটা বড় হাঁসি দিয়ে বলল,,

‘সত্যিই তুমি আমারে ভালোবাসো ডাক্তার?”

“হুম হুম সত্যি আমি আমার নেত্রীকে অনেক ভালোবাসি।”

তাজেল মেহবিনের কোল থেকে উঠে দাঁড়ালো আর হেঁসে বলল,,

‘আমিও তোমারে ভালোবাসি ডাক্তার।তুমি আমারে ভালোবাসো শুইনা আমি মেলা খুশি হইছি এই খুশিতে আজক্যা আমার ছুটি। ।

বলেই তাজেল নিজের ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিল আর গেটের কাছে গিয়ে বলল,,

‘ডাক্তার বিকালে আমি রেডি থাকুম তুমি আসলেই যামু ঘুরতে মনে রাইখো।”

তাজেলের এরকম আচরনে মেহবিন হাসলো। এতক্ষন এসব করলো শুধু মেহবিনের সাথে ঘুরতে যাবে বলে। আজকাল সে বেশিক্ষন পরতে চায় না তবে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন দেয় এই জন্য মেহবিন কিছু বলে না। ও খুশি মনে খাবার খেতে বসলো খাওয়া শেষ করে উঠতেই তখন মুখরের ফোন এলো। ফোনটা দেখেই ও মুচকি হাসি ফুটিয়ে ফোনটা ধরলো ও সালাম দেবে তার আগে ওপাশ থেকেই আগে সালাম শুনতে পেল,,

“আসসালামু আলাইকুম বিয়াইনসাব!'”

মুখরের বিয়াইন সাব শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তবে আমি জানতাম মেয়েদেরকে সাহেবা বলে সাব নয়।”

“আমার মুখ আমি সাব বলবো বা সাহেবা তোমার তাতে কি?’

“আমার কিছু না। তবে ভুল হলে স্বীকার করা উচিৎ।”

“তোমাকে কে বললো আমি ভুল করেছি বরং আমি ইচ্ছে করে ভুল করেছি যাতে তুমি ঠিক করে দাও। তাছাড়া এটাকে ভুল বলে না গ্ৰামের মানুষজন বিয়াইসাব বিয়াইনসাব এইগুলাই বলে তুমিও তো গ্ৰামে থাকো তাই বিয়াইনসাব বললাম।

“নিজের ভুলগুলো সহজভাবে স্বীকার করতে শিখুন। তাহলে জীবনে বেশ উন্নতি করতে পারবেন।”

মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“সেটা আমি জানি তবে আমার মিসেস আমি সাবটা এমনিই বলেছি।”

“তা এখন আমার সাথে কে কথা বলছে আগে শুনি?”

“মানে?”

“মানে হলো এই যতদূর মনে হচ্ছে কলটা আমার বিয়াইসাহেব করেছিল । অতঃপর কথার প্রেক্ষিতে এখন মিসেস বলল মানে এখন আমার সাথে কথা বলছে কে আমার বিয়াই নাকি আমার মিস্টার।”

“দুজনেই কথা বলছিল তবে আপাতত এখন ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার আপনার সাথে কথা বলবে।”

“ওহ আচ্ছা তা ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার কি বলবেন বলে ফেলুন।”

“হুম সেটা হলো আমরা এ.এস হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটা যথার্থ প্রমান পেয়ে গেছি। যার মাধ্যমে আমরা একটা একশন নিতে পারি তবে এই হাসপাতাল টা আমার আওতাভুক্ত নয়। তাই আমি নিজে কিছু করতে পারছি না। তবে হ্যা ঐ হাসপাতালে যে জেলার আওতামুক্ত সেখানের ডিসি কে জানিয়েছি ব্যাপারটা । তিনি বলেছেন তিনি আজকেই খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালটা সিল করবেন।”

‘হাসপাতাল সিল করবেন মানে ঐ হাসপাতালের ওনারই কি এর সাথে যুক্ত?”

“জি ম্যাডাম! ওনার একটা ভিডিওর মাধ্যমেই তো পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। সবথেকে বড় কথা এর ক্রেডিট আপনার যায় আপনার হ্যাকার বন্ধুই ভিডিওটি আমায় পাঠিয়েছে।”

“আমি তো বলিনি আপনাকে পাঠাতে তাহলে পাঠালো কেন?”

‘কারন আমিও তোমার মতো তাকে কাজটা করতে দিয়েছিলাম তাই।”

‘ওহ আচ্ছা এমনিতেও আমি সকালে ওগুলো দেখেছি আপনাকে আরেকটু পরে পাঠাতাম।”

“ওহ আচ্ছা । আজ বিকেলে ঘুরতে যাবে?”

“কেন?”

“হাতে হাত রেখে তার, একটু চলতে চাই আবার!”

“বাহ বাহ!”

“যাবে কি না বলো?”

“না বিকেলে নেত্রীর সাথে ঘুরতে যেতে হবে।’

“তোমার নেত্রীকে আমি মানিয়ে নেব।”

“না থাক। আর তাছাড়া অনেকদিন পর আবার জয়েন হলেন তাই এখন আর বাঙ্ক করতে হবে না।”

‘আমি হলাম ইনচার্জ আমার ইচ্ছে আমি বাঙ্ক করবো তোমার তাতে কি?”

“আপনি ইনচার্জ দেখেই তো আপনার দায়িত্ব বেশি। নিজের দায়িত্ব থেকে কখনো পালাতে হয় না।”

“আরে আমার মিসেস এখন তেমন কাজ নেই। তাই যেতে চাচ্ছি।”

“দরকার নেই।”

“এমন করো কেন? আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি আমাদের ডিসির সাথে কথাও বলেছি। আমি এখনো একটু অসুস্থ শুনে উনি দুপুরের পর থেকেই আমার ছুটি মঞ্জুর করেছেন তাছাড়া উনি আমার ওপর বেশ খুশি নিশাচর এর একটা একটা করে উইকেট পরছে তাই।”

“ওকে আপনার ইচ্ছা তবে আমি কিন্তু আমার নেত্রীর সাথেই ঘুরতে যাবো।”

“ওকে আমিও তোমার নেত্রীকে ম্যানেজ করে নেব।”

“যদি সে চায় তাহলেই আপনাকে আমাদের সাথে নেব।”

‘ওকে সমস্যা নেই তোমার নেত্রীকে আমি পটিয়ে নেব দেখে নিও।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ আমায় হাসপাতালে যেতে হবে।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ!”

বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। তারপর রেডি হয়ে হাসপাতালে গেল। দুপুর বেলা ব্রেকিং নিউজ এ এ.এস হাসপাতালের ঘটনা দেখে মেহবিন হাসলো। ও যে কাজটা তাড়াতাড়ি করতে পেরেছে এটা ভেবে খুশি হলো। এখন নিশাচর এর সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো কাল যেগুলো বলেছিল সেগুলোর জবাব হিসেবে আজকের কাজটা নিজে তাকে দিলে ভালো লাগতো। ভাবতে ভাবতেই ওর ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো। ও কানে নিতেই শুনতে পেল,,,

“এই কাজের পেছনে তোমার হাত আছে তাই না?’

নিশাচরের আওয়াজ পেয়ে কেন যেন মেহবিনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও বলল,,

“আমি হলাম মামুলি একজন ডাক্তার। আমি কিভাবে করতে পারি বলুন?”

“একদম আমার সাথে চালাকি করবে না। আমি জানি এর পেছনে কোন না কোন ভাবে তুমি আছো। কারন এর আগে এই বিষয়টা নিয়ে কোন সাধারণ মানুষ মাথা ঘামায় নি তুমিই ঘামিয়েছো।”

“আচ্ছা আপনার কেন মনে হয় আমিই আছি। আমি তো সাধারণ একজন মানুষ আমি কিভাবে এক রাতের ভেতরেই সব বের করতে পারবো।”

“না না তুমি সাধারণ নও তুমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নও।”

‘তাহলে সত্যিই আপনার মনে হয় আমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নই।”

“না নও তুমি। আর নও দেখেই তোমার মৃত্যু খুব নিকটে দেখে নিও।”

“মৃত্যু তো একটা মানুষের সবসময় নিকটেই থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,,
‘ডান চোখ হতে বাম চোখের যতটা দূরত্ব,মৃত্যু তার চেয়ে নিকটে।’
যাই হোক এসব কথা এখন থাক।

“তোমার কি আমায় দেখে একটুও ভয় হয় না।”

“আমি আপনাকে দেখলাম কখন আজব! যে ভয় পাবো?

“দেখেছো দেখেছো তবে চিনতে পারোনি।”

“তারমানে বলছেন আমি আপনাকে দেখেছি।”তাছাড়া একটা কথা আমি ভেবেছিলাম এ.এস হাসপাতালের ওনারই বোধহয় নিশাচর কিন্ত এখন বুঝতে পারলাম আপনি সে নন।

“হুম দেখেছো তুমি আমায়। আর আমি এমন একজন যার নামতো সবাই শুনেছে কিন্তু মানুষ দেখেও দেখেনি। কারন আমি নিশাচর আর নিশাচর মানে অন্ধকার । অন্ধকারে কি কিছু দেখা যায়। তবে তুমি আমায় দেখে থাকলেও এরপর চাইলেও আর দেখতে পাবে না।”

বলেই ওপরপাশ থেকে কলটা কেটে দিল। মেহবিন তা দেখে গভীরভাবে কিছু ভাবতে লাগলো। তার কথা শুনে যে মেহবিন ভয় পেয়েছে এমনটা নয়। বরং সে অবাক হয়েছে যে নিশাচর কে সে দেখেছে। এই পর্যন্ত কতো মানুষকেই সে দেখেছে যাদের চেনে তাদের মধ্যে কন্ঠস্বর মিল নেই কারো। ও বেশি কিছু না ভেবে নিজের কাজে মন দিল।

_________________

তাজেল ভালো একটা জামা পরে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন ওর সামনে একটা রিক্সা থামলো।আর রিক্সায় থেকে জিন্স প্যান্ট গায়ে সাদা গেঞ্জি ওপরে লেদারের জ্যাকেট আর মুখে মাস্ক পরিহিত লোক নামলো আর টাকা দিল টাকা পেতেই রিক্সাওয়ালা চলে গেল। লোকটা তাজেলের পাশে দাঁড়ালো। তাজেল তার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো তবে কিছু বললো না। তার দৃষ্টি রাস্তায় সে অপেক্ষা করছে তার ডাক্তারের জন্য। তাজেলের দেখাদেখি লোকটাও তাজেলের মতো রাস্তায় উঁকি মারছে। তাজেল তা টের পেয়ে বলল,,

“এই যে তুমি কি ছেলেধরা? তুমি কি আমারে ধইরা নিতে আইছো? পারবা না এইহানে একটা চিৎকার দিমু আর গ্ৰামের হগলে আইসা পরবো। পাশেই কুলসুম খেলতেছে ও তো আমারে চেনেই আমার চিৎকারেই হেয় বুঝবো আমি বিপদে পরছি।”

তাজেলের কথা শুনে লোকটা বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো। আর বলল,,

‘তোমার কেন মনে হলো আমি ছেলেধরা? আর আমি যদি ছেলেধরা হই তাহলে তোমাকে কেন ধরবো। তুমি কি ছেলে নাকি?”

তাজেল এবার লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“ঐ আমি ছেলে হমু কোন দুঃখে?”

‘তুমিই তো বললে আমি ছেলেধরা আর ছেলেধরা হলে তো শুধু ছেলেদেরকেই ধরবে তাই না।”

‘ছেলেমেয়ে কোন ভেদাভেদ নাই সবাইরেই ধরে কিন্তু ওগো তো ছেলেধরা কয় তাই কইলাম।”

‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু তোমার কেন মনে হলো আমি ছেলেধরা?”

“মুখটুখ ঢাইকা আইছো আবার আমার পাশে দাঁড়াইড়া দাড়াইয়া আমারে নকল করতেছো। মনে হইতেছে আশেপাশে তাকাইয়া দেখতেছো লোক আছে নাকি‌। সুযোগ পাইলেই উঠাই নিয়া যাইবা।

‘আরে না না আমি তো তোমার মতো কারো জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

“এই এই খাড়াও তোমার কন্ঠ চেনা চেনা লাগতাছে । কিডা তুমি আর কার জন্য অপেক্ষা করতেছো?’

তখন লোকটা নিচু হয়ে মাস্কটা একটু সরিয়ে বলল,,

“তোমার ডাক্তারের জন্য নেত্রী!”

তাজেল হা করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি!”

তাজেলের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“হুম নেত্রী আমি।”

“আগে কইলেই হইতো যে তুমি। হুদাই এতোকথা খরচ করলাম।”

“আমি কি জানতাম তুমি আমায় চিনতে পারবে না। উল্টো ছেলেধরা ভেবে বসবে।”

‘তুমি তো মুখ ঢাইকা আইছো তাই চিনি নাই।”

“তোমার ডাক্তারও তো সেদিন মুখ ঢেকে আমার সাথে কথা বলছিল। তখন তো তুমি তাকে চিনে ছিলে।”

‘তুমি আর ডাক্তার এক নাকি। ডাক্তাররে আমি ভালোমতো চিনি আর রোজ দেহি। তোমারে কি দেহি?”

‘সেটাও ঠিক বলেছো। এই যে আমার দিকে তাকাও আর ভালো করে চিনে রাখো। এরপর থেকে এভাবে দেখলে ফট করেই চিনে ফেলবে।”

‘ধুরু তোমার পাইলে তাকাইয়া থাকতে আমার শরম করে।”

“আরে লজ্জার কি আছে আমি তো তোমার ডাক্তারের জামাই।”

‘হেই জন্যই তো বেশি শরম করে আমার।”

তাজেলের এমন কথায় মুখর হাসলো। আর বলল,,

‘ওহ আচ্ছা তাহলে আর তাকাতে হবে না।”

‘তুমি এইহানে কি কর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা?”

‘তোমার ডাক্তারের সাথে ঘুরতে যাবো আজ।”

মুখরের এমন কথা শুনে তাজেল কোমরে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলল,,

‘ডাক্তার আমার সাথে ঘুরতে যাইবো তোমার সাথে না।”

‘আরে আমিও তো তোমাদের সাথে ঘুরতে যাবো।”

‘তোমারে নিমু না।”

‘কেন নেবে না? আমি কি তোমার ঘাড়ে চড়ে যাবো নাকি।”

“তোমার মতো মানুষ আমার ঘাড়ে চরলে আমি থাকমু নাকি। আমার ঘাড় ভাইঙ্গা যাইবো না।”

‘আরে আমি তো হেঁটে হেঁটেই যাবো তোমাদের সাথে।”

‘না তোমারে নিমু না আমি।”

“কেন নিবে না।”

“আমি আর ডাক্তার খালি ঘুরুম আজক্যা।”

‘ওমন করো কেন নাও না একটু তোমাদের সাথে। তোমাকে চকলেট আইসক্রিম কিনে দেব।”

“ঐডা তো ডাক্তার আমারে মাঝে মাঝেই খাওয়ায়।”

‘আচ্ছা তোমার যা মন চায় তাই কিনে দিমু।”

“ঘুষ দিতেছো তুমি আমারে।”

“তুমি ঘুষ ও চেনো?”

“আরো মেলা কিছু জানি।”

“আচ্ছা আমাকে একটু নাও না তোমাদের সাথে।”

তাজেল মুখরের দিকে তাকালো মুখর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও ওভাবে তাকানো দেখে তাজেল হাসলো আর বলল,,

“তোমারে নিমু আমি এমনিই এতোক্ষণ মজা করছিলাম আমি।”

“তুমি তো দেখি খুব পাকা।”

তাজেল দাঁত কেলালো আর বলল,,

“ডাক্তারের জামাই তুমি তোমারে না নিলে ডাক্তার মন খারাপ করবো না।”

‘কিন্তু তোমার ডাক্তার কি বলেছে জানো? তোমার ডাক্তার বলেছে তুমি যদি বলো তাহলেই আমি সাথে যেতে পারবো। আমাকে সাথে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ তোমায় নেত্রী।”

“হ হ আর ধন্যবাদ জানান লাগবো না। কিন্তু ডাক্তার আসে না ক্যা কতোক্ষণ হইয়া গেল এই সময়ই তো আসে।”

“চলো দুজনে এগিয়ে দেখি।”

“আইচ্ছা চলো!”

তাজেল আগে গেল আর মুখর তাজেলের পেছন পেছন যেতে লাগলো। একটু আগাতেই মেহবিন কে দূরে দেখা গেল রিক্সায় আসছে। ওরা দুজন ওকে দেখে দাঁড়িয়ে পরলো। তখনি একটা গাড়ি পেছন থেকে মেহবিনের রিক্সাটাকে ধাক্কা মারলো। মেহবিন রিক্সা থেকে পরে গেল তখনি পেছনের গাড়ি থেকে কয়েকটা লোক বেরিয়ে মেহবিনের দিকে এগিয়ে গেলো।

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ধাক্কাটা খুব জোরে না তবুও বেশ জোরেই লেগেছিল যার কারণে রিক্সা কাত হয়ে যায় রিক্সাচালক সহ মেহবিন দু’জনেই পরে যায়। সবথেকে আঘাত মেহবিনই পায় স্টিলের হুডের সাথে লেগে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পায় রক্তও পরে হালকা সাথে কপালেও কিছুটা ছিলে যায় পায়। পায়েও হালকা ব্যাথা পায়। ও উঠতেই যাবে তখন যে গাড়িটা ওকে ধাক্কা মারে সেই গাড়ি থেকে মুখোশ পড়া পাঁচ ছয়জন নেমে ওর দিকে এগিয়ে আসে। সাথে রিক্সাওয়ালা কেও ভাগিয়ে দেয়। রিক্সাওয়ালা ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালায়। তবে মেহবিন সব দেখে বুঝতে পেরেছে ইচ্ছে করেই ধাক্কা মেরেছে। দূর থেকে মেহবিনকে রিক্সা থেকে পরে যেতে মুখর আর তাজেল দুজনেই দেখতে পায় দু’জনেই ও দিকে দৌড় লাগায়। মেহবিন বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ায় আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,

“কারা আপনারা আর রিক্সাটাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারলেন কেন?”

তখন ওখানের একজন বলল,,

“তোকে নিয়ে যেতে এসেছি। আর তুলে নিয়ে মেরে ফেলবো। বস তোকে মেরে ফেলতে বলেছে তাই একবার মনে হলো রিক্সাটাই উল্টে দিয়ে তোকে পিষে দিই। কিন্তু পরে মনে পরলো বস তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে মারতে বলেছে আর সেটা নাকি বস লাইভ দেখবে।”

“এটা কি কোন শো নাকিরে যে জনসমক্ষে তুলে নিলেও সবাই মুখ বন্ধ করে সব দেখে যাবে। কেউ আটকাবে না আর কিছু বলবে না।

পেছনে পুরুষ কন্ঠের আওয়াজে সবাই তার দিকে তাকালো। আর তাকিয়ে কালো মাস্ক পরিহিত একজন কে দেখতে পেল তার পাশেই একটা বাচ্চা। মেহবিন মাথা কাত করে দেখলো তাজেল আর মুখর দাঁড়িয়ে আছে । মুখরকে দেখে ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। তখন একজন বলল,,

“এই কে রে তুই? আমাদের কাজে বাগড়া দিচ্ছিস। তোর প্রান যদি প্রিয় হয়ে থাকে তাহলে এখান থেকে চলে যা।”

“উঁহু প্রানের থেকে বেশি প্রিয় জিনিস যে এখানে রয়েছে। তাই যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

তখন আরেকজন বলল,,

“এই ওর কথা কি শুনছিস যা করতে এসেছিস তাই করনা মেয়েটাকে তোল এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে মারা যাবে নাহলে এখানে হুদাই একটা সিন হবে। আমরা ফেঁসে যাবো।

“ঠিক কথাই কইছোস।”

লোকটা মেহবিনের দিকে এগুতেই তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“আপনারা ফেঁসে গেছেন আবার ফেঁসে যাবেন কি?’

বলেই এগিয়ে এসে লোকটার নাক বরাবর একটা ঘুষি দিল। লোকটাকে ঘুষি মারতে দেখে ছেলেগুলো অবাক হলো। মেয়েটাকে তারা যতটা সহজ সরল ভেবেছিল তেমনটা নয়। মেহবিন যেখানে পরেছিল সেখানেই পঞ্চাশ মিটার পেছনে একটা মাঠ আছে সেখানে দশ বারোজন মিলে ক্রিকেট খেলছিল কয়েকটা ছোট বাচ্চাও ছিল। বিকেলে এরা এখানেই থাকে খেলাধুলা করে নয়তো খেলা দেখে। আরেকজন মেহবিনের দিকে এগুতে লাগলেই মুখর ওটাকে মারতে থাকে। দুই জন গিয়ে গাড়ি থেকে হকিস্টিক নিয়ে আসে। শুধু তুলতে হবে বলে ওরা অস্ত্র আনেনি। ওদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। তাজেল দৌড়ে সেই মাঠের ওখানে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনে। ওরা খেলায় ব্যস্ত ছিল তাই এখানে কি হচ্ছিল বুঝতে পারেনি তাছাড়া একটা বাড়িও ছিল যার কারনে কেউ দেখতে পায়নি। তাজেলের কথা শুনে ওরাও ব্যাট স্ট্যাম্প যা আছে সব নিয়ে আসে। মেহবিন কে তারা সবাই চেনে তাই ওর নাম শুনেই চলে এসেছে। এতোগুলো মানুষ কে একসাথে দেখে কিডন্যাপাররা ভয় পেয়ে যায়। তবুও ওখান থেকে পালায় না। যে কাজে এসেছে সে কাজ শেষ করেই যেতে হবে নয়তো মরতে হবে। মেহবিন সবার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। সবার থেকে বেশি অবাক হয় তাজেলের হাতে একটা স্ট্যাম্প দেখে সবার সামনে সে স্ট্যাম্প হাতে দৌড়ে আসছে আজকে মনে হচ্ছে তাকে কোন দলের নেত্রী। ওর অমনোযোগে একজন হকিস্টিক দিয়ে খুব জোরে ওর মাথায় মারে। এমনিতেও রিক্সা থেকে পরে মাথায় আঘাত পেয়েছিল সেখানেই লাগে বাড়িটা ও আওয়াজ করে উঠে। সবাই এটা দেখতে পায় সকলেই এটা দেখে আরো সবগুলো কে ধরে পেটাটে থাকে। মেহবিন মাটিতে বসে পরে মুখর গিয়ে ওকে ধরে। লোকগুলো এবার পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু এবার পালাতে পারেনা। সব ক’টাকে মেরে সাইজ করেছে সবাই মিলে। এখন যারা মেহবিন কে মারতে এসেছিল একটার শরীরেও আর কোন শক্তি নেই। মেহবিন মুখরের হাত ধরে বসে রইলো মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। মুখর রুমাল বের করে সেখানে চেপে ধরলো। মেহবিন সোজা হয়ে দাঁড়ালো কিন্তু থাকতে পারলো না। তাই দেখে মুখর ওকে ভালোভাবে ধরল আর সবার উদ্দেশ্যে বলল,,

“আমাদের কে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে ।একটু পরে পুলিশ আসবে ওদের সেই জিপে তুলে দিয়েন। আমি ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।”

তখন মেহবিন বলল,,

“আমি ঠিক আছি। হাসপাতালে যেতে হবে না বাড়ি গিয়ে ড্রেসিং করলেই হবে।”

‘একটাও কথা না যে নাকি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না সে নাকি হাসপাতালে যাবে না।”

‘লাগবে না আমি ঠিক আছি।”

তখন তাজেল বলল,,

“হেয় ঠিক কইছে কতো রক্ত পরতেছে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলো।”

“নেত্রী!”

“কোন কথা না তাড়াতাড়ি চলো!”

আর মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আর এই যে তুমি তাড়াতাড়ি কোলে তুইলা নাও। দেখতেছো না ডাক্তার খাড়াই থাকতে পারতেছে না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া নও।”

মুখর তাজেলের কথা মেহবিন কে কোলে তুলে নিল। ওখান দিয়ে একটা অটো যাচ্ছিল সবাই মিলে ওটাকে থামিয়ে মুখরকে ওটায় উঠতে বলে। তাজেল খুব শক্ত করে মেহবিনের হাত ধরে রাখে। মুখর মেহবিন আর তাজেল কে নিয়ে হাসপাতালে যায়। মেহবিন কে হাসপাতালের স্টাফরা দেখেই দৌড়ে বড় ডাক্তারকে ডেকে আনে ওকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মেহবিন অটো থেকে জ্ঞান থাকলেও একদম শক্তিহীন হয়ে পরে ও একদম মুখরের বুকে লেপ্টে ছিল। সে অবস্থা দেখে তাজেল খুব কান্না করতে থাকে। মুখরের মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ বের করে নিচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত রাখছে যদিও জানে সে বেশি কিছু হবে না সেরে উঠবে তবুও ওর মন মানছে না। তাজেল আর ও রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তাজেল কে এতো কান্না করতে দেখে মুখর ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,

“তোমার ডাক্তারের কিছু হবে না নেত্রী। তুমি কান্না কোরো না।”

“ডাক্তারের মেলা রক্ত পরছে আমি দেখছি হেয় অনেক কষ্ট পাইতেছে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”

“হুম একটু কষ্ট তো পাচ্ছেই। কিন্তু যদি তোমার ডাক্তার শুনে তুমি তার জন্য কাদতেছো। তাহলে তো তোমার ডাক্তার আরো কষ্ট পাবে সেটা কি ভালো হবে।”

“কি ডাক্তার কষ্ট পাইবো?

“হ্যা পাবে তো! তোমার ডাক্তার তোমাকে এতো আদর করে তুমি কাদলে তো তার কষ্ট হবে।”

তাজেল চোখ মুছে বলল,,

“তাইলে আমি আর কান্দুম না। তুমি কিন্তু আবার ডাক্তাররে কইয়ো না আমি কানছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তখন তাজেল মুখরের হাত ধরে বলল,,

“তুমিও চিন্তা কইরো না পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা ডাক্তার ভালো হইয়া যাইবো।”

তাজেলের কথায় মুখর না চাইতেই হেঁসে দিল। এই মেয়েটাকেই সে এতোক্ষণ শান্তনা দিচ্ছিল আর এখন এই মেয়েটাই ওকে শান্তনা দিচ্ছে। তবে আজ সে নেত্রীর মতোই কাজ করেছে সেই ছেলেগুলোকে ডেকে এনেছে তার জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। মুখর তাজেলের হাত শক্ত করে ধরে বলল,,

“তোমার ডাক্তার তোমাকে যোগ্য নামটাই দিয়েছে নেত্রী।”

“সেইসব ছাড়ো। এহন কও ওরা কি ডাক্তাররে তুইলা নিতে আইছিলো।”

‘হুম।”

“কিন্তু ক্যা?”

“কারন তোমার নেত্রী সবার ভালো করে সেটা একজনের পছন্দ না তাই।”

“ভালো কাজ করা তো ভালো কথা তাইলে একজনের পছন্দ হয় না ক্যা।”

“কারন লোকটা খারাপ তাই।”

তখন একজন নার্স বেরিয়ে এসে বলল,,

“ডক্টর মেহবিনের ব্যান্ডেজ করা শেষ আপনাদের দুজন কে ডাকছে।”

নার্সের কথা শুনে মুখর আর তাজেল রুমের ভেতরে ঢুকলো। আর ঢুকেই দেখতে পেল মেহবিন আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ হাতেও একটু ব্যান্ডেজ করা। ওদের দুজনকে দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘দেখেছেন আমার তেমন কিছুই হয় নি। বাড়ি থেকেই ব্যান্ডেজ করা যেত।

মেহবিনের কথা শুনে মুখর বলল,,

‘হ্যা তাতো করা যেতোই। তুমি তো একদম ফিট এন্ড ফাইন ছিলে।”

“হুম ছিলামই তো। আর নেত্রী তোমাকে তো আমি স্ট্রং ভেবেছিলাম আর তুমি কিনা এইটুকুতেই কেঁদে উঠলে।”

তখন তাজেল বলল,,

‘তোমার কতো রক্ত পরতেছিল দেখছিলা একটুর জন্য অজ্ঞান হও নাই। তাছাড়া আমি মেলা ডরাই গেছিলাম। যদি তোমার কিছু হইয়া যায়। তোমারে হাসপাতালে আনার পর আমি একটুও কান্দি নাই জিগাও তোমার জামাইরে।”

‘তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে না আমি তোমায় চিনি ভালোভাবে। আর সবথেকে বড় কথা তোমরা দুজন থাকতে আমার কি হবে। একজন তো পুলিশ আরেকজন নেত্রী। তুমি ঐ সময় কতোগুলো মানুষ কে ডেকে আনলে আমাদের সাহায্য করার জন্য।”

‘তারা তো পাঁচ ছয়জন আছিল। আর তোমরা মোটে দুইজন তাই তো হেতিগো ডাক দিয়া আনলাম।”

“হুম। তাহলে আজকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল নাকি।”

‘তুমি কি পাগল ডাক্তার এই অসুস্থ শরীর নিয়া কেউ ঘুরতে যায় নাকি‌। চুপ কইরা শুইয়া থাকো।”

‘আমি ঠিক আছি এখন বাড়ি যাবো। চলো বাড়ি যাই তাহলে।”

তখন মুখর বলল,,

“হুম চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। আর হ্যা আমি কিন্তু আজ রাতে তোমার সাথেই থাকবো।”

‘কোন দরকার নেই। আমি ঠিক আছি এই মুহূর্তে আমাদের ব্যাপারে কাউকে কিছু জানাতে চাচ্ছি না। তাছাড়া এখানের কেউ জানেনা আমি বিবাহিত। আপনাকে আমার সাথে দেখলে মানুষজন নানা কথা রটনা করতে পারে।”

তখন তাজেল বলল,,

“কেন কাউরে কিছু জানাই বা কেন?”

‘এখনো সঠিক সময় আসে নি নেত্রী। তোমার এতো সব ভাবতে হবে না। তোমাকে বলেছি না তোমার পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার ব্যাপারে কিন্তু কেউ কিছু না জানে। তেমনটাই রাখবে যেমন টা আজ রেখেছো সবার সামনে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা বলো নি।”

“আইচ্ছা। তাইলে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি চিন্তা কইরো না আজ রাইতে আমি ডাক্তারের লগে থাকুম। এমনিতেও দাদি ফুফুগো বাড়ি গেছে আইজ। রাইতে আমার একাই থাহা লাগতো এর থেইকা আমি ডাক্তারের কাছে থাকুম নি।”

মুখর তাজেলের কথা শুনে হাসলো। ও যে মেহবিনকে অনেক ভালোবাসে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুখর একটা রিক্সা ডেকে দুজন কে উঠিয়ে দিল রিক্সায়। মেহবিন মুখরকে ওদের সাথে যেতে মানা করেছে তাই। আর এটাও বলেছে মেহবিনের এই অবস্থা যেন মুখরের পরিবার আর ওর মামার পরিবার না জানতে পারে। মুখর বলল সে কাউকে জানাবে না। মেহবিন ষরা অর্ধেক রাস্তায় আসতেই একটা গাড়ি থেকে কেউ হাত দিয়ে রিক্সা থামাতে বলল। রিক্সা থামতেই ওদের রিক্সার সামনে গাড়িটি সাইড করে থামলো মেহবিন সামনে তাকাতেই গাড়ি থেকে আরবাজ মিশু আর শেখ শাহনাওয়াজ নামলেন। তাদের দেখে মেহবিন আর তাজেল অবাক হলেও নামলো না। আরবাজ এসে ওদের নামতে বলল তখন তারা দু’জনেই নামলো। মিশু দৌড়ে এসে মেহবিনের হাত ধরে বলল,,

‘ফুল তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কিছু হয় নি তো?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“না তেমন কিছু হয় নি। দেখো আমি ঠিক আছি।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘আপনার খবর পেয়ে মিশু বায়না করলো। তাই আপনাকে দেখতে যাওয়ার জন্যেই হাসপাতালে যাচ্ছিলাম।”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলল,

‘শুধু ফুলের জন্যই আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন আর কিছুর জন্য নয় ?”

‘আপনি আমাদের বাড়িতে থাকেন তাছাড়া মিশুর এতো ভালো বন্ধু তাই আপনাকে দেখতে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

‘আর কোন কারন নেই তো চেয়ারম্যান সাহেব?

মেহবিনের এহেন আচরনে শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের দিকে শান্ত চোখে তাকালেন। আর বললেন,,

“কেন আর কোন কারন থাকার কথা নাকি ডাক্তার?”

‘না এমনিই বাই দা ওয়ে আপনারা জানলেন কিভাবে আমি হাসপাতালে?”

তখন আরবাজ বলল,,

“শুধু আমরা নই পুরো গ্ৰাম জানে আপনি হাসপাতালে আর কেন সেটাও জানে। গ্ৰামের মানুষদের কোন সোর্চ লাগে না। একা একাই বাতাসের সাথে খবর প্রচার হয়।”

‘ওহ আচ্ছা । তাহলে আমরা এখন যেতে পারি। আসলে আমার ভালো লাগছে না বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেব।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘আপনি তো অসুস্থ। মাথায় হাতে দুই জায়গাতেই ব্যান্ডেজ। আপনার তো এখানে কেউ নেই। আপনি বরং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে থাকুন। একা অসুস্থ অবস্থায় থাকাটা ঠিক হবে না।”

তখন মিশু বলল,,

‘হ্যা ফুল তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে থাকবে আমি তোমার খেয়াল রাখবো।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“এখন তো মিশুও বলছে চলুন না হয় আমাদের বাড়ি।”

তখন মুচকি হেসে মেহবিন বলল,,

‘আমি ঠিক আছি চেয়ারম্যান সাহেব। আমার আপাতত কারো প্রয়োজন নেই। আমি ম্যানেজ করে নেব আর হ্যা আমার নেত্রী মানে তাজেল আজ আমার সাথেই থাকবে।”

“ও ছোট মানুষ ও কি আপনার দেখভাল করতে পারবে? তাছাড়া রান্নার ও তো একটা ব্যাপার আছে।”

তখন পেছন থেকে একটা মেয়েলি আওয়াজ এলো ,,

‘সেটা না হয় আমার ওপরেই ছেড়ে দিন চেয়ারম্যান সাহেব। আমিও ডাক্তার আপার সাথেই থাকবো।”

সবাই পেছনে তাকালেই দেখতে পেল নওশি সহ আরো চার পাঁচ জন মহিলা। তখন একজন বলল,,

‘রান্নাবাড়ার চিন্তা করতে হইবো না । আমরা আছি সবাই ডাক্তাররে রাইন্দা খাওয়াইতে পারুম। ডাক্তার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।”

তাদের দিকে তাকিয়ে মেহবিনের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। এই লোকগুলো ওকে আপন করে নিয়েছে এটা ভেবে ওর আনন্দ হচ্ছে। মেহবিন বলল,,

“নওশি তোমরা এখানে?”

‘আপনারেই দেখতে যাইতেছিলাম হাসপাতালে।”

‘ওহ আচ্ছা। এখন আর যাওয়ার দরকার নেই আমিই বাড়ি যাচ্ছি। আর চেয়ারম্যান সাহেব দেখলেন তো দরকার হবে না। আমার কথা ভাবার জন্য শুকরিয়া আপনাদের। তবে চেয়ারম্যান সাহেব শুনলাম আপনার স্ত্রীর বোনের জামাইকে পুলিশে ধরেছে। আপনার এখন তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত হাজার হোক আপনার আত্মীয়।”

মেহবিনের কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,,

‘সেসব কথা বাদ দিন। সে তার কৃতকর্মের জন্য সেখানে গিয়েছে। তাছাড়া যার যাওয়ার সে গিয়েছে মানে আরিফা সে গিয়েছে। আচ্ছা আপনাকে অ্যাটাক করলো কে আর তুলেই বা নিয়ে যেতে চেয়েছিল কে?”

‘আমার ভালো লাগছে না চেয়ারম্যান সাহেব। আমার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত বাকি কথা না হয় পরে হবে।”

তখন আরবাজ বলল,,

‘হুম আমাদের সাথে আমাদের গাড়িতে উঠুন আপনাকে বাড়ি নামিয়ে দিই।”

মেহবিন না করতে চাইলেও সবার সামনে আর না করতে পারলো না। মেহবিন সবাইকে বাড়ি ফিরতে বলল আর রিক্সাওয়ালা কে টাকা দিয়ে তাজেলের হাত ধরে আরবাজ দের গাড়িতে উঠলো। পাঁচ মিনিট পরেই ওর বাড়ির পাকা রাস্তায় গাড়ি থামলো। মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। ও একটু এগুতেই দেখলো বাড়ির সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। মেহবিন এগিয়ে গিয়ে জানতে পারলো তাকেই দেখতে এসেছে। মেহবিন বাড়ির ভেতরে ঢুকে সবাইকে বসতে বললো। তারা বসলো না ওকে দেখেই চলে গেল। মেহবিন ওয়াশরুমে যাবে ফ্রেশ হবে তাজেল ও ওর সাথে ওর হাত ধরে গেল। আরেকটু পর নওশি এলো ওর সাথে থাকবে বলে। রাতে মুখর ফোন করে খবর নিল। মেহবিন জানালো সব ঠিক আছে। তাজেল আর নওশি মেহবিনের খুব খেয়াল রাখলো রাতে খাবার খায়িয়ে দিয়ে ওষুধ ও দিল তাজেল। তারপর শুয়ে পরলো।

পরেরদিন সকাল বেলা দুইজন মহিলা এসে খাবার দিয়ে গেল। একজন কবুতরের মাংস আর ভাত আরেকজন হাঁসের মাংস। এগুলো খেলে নাকি রক্ত বাড়বে। পরের দিন অনেকেই মেহবিন কে এটা ওটা নিয়ে দেখতে এলো। চেয়ারম্যান সাহেব আর মিশুও এলো। দুপুরের খাবার আর ফল নিয়ে।

দেখতে দেখতে তিনটা দিন পার হয়ে গেল মেহবিন এখন অনেকটাই সুস্থ। ও সকালবেলা রোদে বসে আছে বারান্দায় তখন ওর ফোনে একটা কল এলো ও রিসিভ করল ও কিছু বলবে তার আগে ওপাশ থেকেই আওয়াজ আসলো,,

‘তোমার লাক খুব ভালো বুঝলে ডাক্তার?”

মেহবিন বুঝতে পারলো এটা নিশাচর তাই ও বলল,,

“হুম বুঝলাম তো। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আরো আগেই আমাকে ফোন করবেন।

‘এমনিই করলাম একটু ঝামেলায় ছিলাম তাই আর কি? যাই হোক জীবন যেহেতু তোমায় একটা সুযোগ দিল তাই আমিও তোমায় একটা সুযোগ দিলাম। আমার পেছন ছেড়ে দাও আর ভালো থাকো।”

মেহবিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো আর বলল,

‘আচ্ছা।”

‘কি আচ্ছা?”

“কিছু না আপনি আর কিছু বলবেন?”

‘না এইটুকুই ছিল তবে ভবিষ্যতে যদি….. থাক আর না বললাম।”

বলেই ফোনটা কেটে দিল নিশাচর। মেহবিন এবার আর বের করলো না তাকে ট্রেস করা যাবে কিনা জানে যাবে না। তার কিছুক্ষণ পর মুখরের ফোন এলো ও ফোন ধরে সালাম দিল,,

‘আসসালামু আলাইকুম!”

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?”

‘জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”

‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা ওষুধ খেয়েছো?

“হুম খেয়েছি। আপনি খাবার খেয়েছেন?”

‘হুম খেয়েছি।”

‘কোন আপডেট?”

‘হুম সেদিন যারা তোমাকে নিতে এসেছিল তারা সকলেই আজকে রাতে মারা গেছে।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

‘ওহ আচ্ছা। আর কিছু বলবেন?

“হুম তোমার মামার বাড়ি দাওয়াত দিয়েছে আমাদের কে। তোমার মিহির ভাইয়া আর মাইশা আপু একটা বড় ডিলে সাকসেস পেয়েছে তাই তাদের দুজনের ওনারে একটা সাকসেস পার্টি রেখেছে মন্ত্রী মেহরব চৌধুরী।সেখানে মাইশার উডবি হাজবেন্ড হিসেবে আলভিকে পরিচয় করিয়ে দেবে। তার সাথে পুরো পরিবারকেও। যেতেই হবে সবার।”

সব শুনে মেহবিন বলল,,

“হুম মামা আমাকে জানিয়েছে কাল। আজ থেকে ঠিক আটদিন পর শুক্রবার অনুষ্ঠান।”

“তুমি আসবে?”

‘না আসার কারন দেখছি না। তাছাড়া না গেলে আদর আমার সাথে কথাই বলবে না।

‘ওকে তাহলে দেখা হবে বিয়াইন সাহেবা।”

‘ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই বিয়াইসাহেব।”

‘হুম বিয়াইসাহেব থেকে কিন্তু সাবধানে থাকবেন যা তা হয়ে যেতে পারে।”

‘হলেও সমস্যা নেই আমি সামলে নেব।”

‘ওকে আল্লাহ হাফেজ নিজের খেয়াল রেখো। আর হ্যা খাবার আর ওষুধ টাইমলি খেয়ে নেবে। আমি বিকেলে যাব দেখা করতে তুমি বারন করলেও শুনবো না।”

বলেই মুখর কেটে দিল। মেহবিন কিছু বলতেই পারলো না তবে ও হাসলো। তার কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ এলো। তা দেখে মেহবিন উঠে দাঁড়ালো আর আগাতে লাগলো তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘উঠতে হবে না?”

‘সমস্যা নেই চেয়ারম্যান সাহেব । তা এই সময়ে আপনি?”

‘দাওয়াত দিতে আসলাম আপনাকে। সবাইকেই দিচ্ছি তাই আপনাকেও একেবারে দিতে এলাম।”

“ওহ আচ্ছা তা কি উপলক্ষে?”

‘জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট।”

‘ওহ আচ্ছা। কবে?”

“ঠিক আটদিন পর শুক্রবার।”

ডেট টা শুনে মেহবিনের কেন যেন হাঁসি পেল। সে একটু হাসলোও মেহবিন হেঁসে বলল,,,

‘দুঃখিত আমি আপনার দাওয়াত গ্ৰহন করতে পারছি না।”

‘এবার তো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।”

“আছে সমস্যা আমার ঢাকায় যেতে হবে একটা অনুষ্ঠানে। আর অনুষ্ঠানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য।”

‘তাহলে আর কি করার?”

‘হুম সেটাই তবে আপনি কেন বেছে বেছে ঐ দিনেই বাড়ির অনুষ্ঠান রাখলেন?”

তখন চেয়ারম্যান সাহেব অস্ফুট স্বরে বললেন,,

‘যাতে কারো মুখোমুখী না হতে হয়।”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-২১+২২

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিনের কথা শুনে মেহরব চৌধুরী অবাক হয়ে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। লজ্জায় তার মেয়ে মাইশা মাথা নিচু করে রইল। তখন দেখে মেহবিন বলল,,

“কি হলো নিজের হবু জামাইকে দেখবে না নাকি?”

মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘হ্যা হ্যা তা তো দেখবোই। কোথায় সেই ভাগ্যবান পুরুষ? যিনি আমার মেয়ের নজরে এসেছে।”

মুখরদের পরিবারের সকলে বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠছিলেন। মুখরের মামারা চলে গেছেন এখন শুধু মুখররাই রয়েছে। তখন মেহবিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,

“মিস্টার আলভি শাহরিয়ার একটু এখানে আসবেন?”

হুট করে নিজের নামে মেহবিন কে ডাকতে দেখে আলভি হকচকিয়ে গেল। ও কিছুটা আন্দাজ করেছে। ও উঠে দাঁড়াল আর বলল,,

‘জি আমাকে বলছেন?”

‘এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আলভি শাহরিয়ার আছে কি?”

আলভি মেহবিনের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো মেহবিনদের টেবিলের কাছে। ও আসতেই মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘এই যে উনি আলভি শাহরিয়ার সন অফ আছলাম শাহরিয়ার। আর ইনিই সেই ব্যক্তি।”

আলভি সালাম দিল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে সালামের জবাব দিল। আর মেয়ের দিকে তাকালো সে মুচকি হেসে তার বাবার দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়েছে দুজনেই ইস্টাবলিশ পরিবার ও ভালো তাই কোন কারন নেই না করার। তাই বলল,,

“তো আলভি আমি সহজ কথা সহজ ভাবেই শুনতে ভালোবাসি। তা তুমিও কি আমার মেয়েকে পছন্দ করো। মেহবিন যেভাবে বলল তা শুনে বুঝলাম এখানে শুধু আমার মেয়ে নয় তোমারও হাত আছে। তাই সরাসরিই বলো করবে আমার মেয়েকে বিয়ে?”

হুট করে মেয়ের বাবার এমন প্রস্তাব পেয়ে আলভি চমকে উঠলো। ওর ভেতরটা ধক ধক করছে। ও ওর পরিবারের দিকে তাকালো সকলে ওর দিকেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ও সেদিকে একবার তাকিয়ে মাইশার দিকে তাকালো আর বলল,,

‘জি স্যার আমি আপনার মেয়েকে পছন্দ করি আর বিয়ে করতে চাই।”

‘আলহামদুলিল্লাহ এ তো ভালো কথা তাহলে তোমার পরিবারের সাথে আমি কথা বলছি।”

মেহরব চৌধুরী উঠে আছলাম আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে গেলেন আর মেহবিনের কথা অনুযায়ী উনি প্রস্তাব রাখলেন তাদের কাছে। উনারা একদম অবাক হয়ে গেলেন এতোক্ষণ সবাই সব কথা শুনেছে তাই আরো অবাক হলেন একবার দেখায়ই তিনি তার মেয়েকে তাদের বাড়িতে দিতে প্রস্তুত। তারা বললেন কিছুটা সময় দিতে তারপর জানাবে। মেহরব চৌধুরী চলে এলেন ওখান থেকে। মুখরের পরিবারের সবাই ভাবলো আজ নাফিয়ার বিয়ের কথা বলার জন্য এখানে এসেছিল আর হচ্ছে আলভির বিয়ের কথা অবশ্য আলভি আর মুখর দু’জনেই সমান বয়সের। মুখর কিছু দিনের বড়। তখন নাফিয়াই বলল আলভির বিয়ের কথা পাকা করতে সকলের মতামত নিয়ে সবাই বলল কথাবার্তা বলতে কারন পরিবার ভালো সবথেকে বড় কথা তিনি একজন মন্ত্রী আর তার মেয়েও বিসনেস করে যদিও তার ভাই মিহির চৌধুরীর সাথে যৌথ ভাবে। তাতে কি মেয়ে ভালো। সকলে এক জায়গায় বসলো কথা বলার জন্য। তখন মেহবিন ওখান থেকে উঠে এলো আর রেস্টুরেন্টের ছাদে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আছিয়া খাতুন মাইশা কে নিজের কাছে বসিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। সবাই কথা বলছে মুখর মেহবিন কে খুঁজলো না পেয়ে সেও উঠে এলো। আর খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এলো দেখলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহবিন। ছাদেই কতোগুলো ফুল গাছ ছিল মুখর সেখান থেকে কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে মেহবিনের পাশে দাঁড়ালো। আর বলল,,

“আমায় অবিশ্বাস করো না বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন মুখরের দিকে তাকালো আর মুচকি হেসে বলল,,

“যার প্রতিটা সাক্ষাতের ফুলে আমি, যার বর্ষনের ফোটায় আমি, যার অসীম ভালোবাসায় আমি, যার বিশ্বাসে আমি ,যার চাঁদমাখা রাতের অনুভূতিতে আমি,যার একাকী গহীন অনুভবে এ আমি,যার নির্ঘুম রাতের একাকী নিঃশ্বাসে আমি,যার আমায় ভেবে বিষাদে আমি, যার হুট করে মুচকি হাসির কারন আমি,যার আবেগ মাখা চিঠিতে আমি, যার কবিতায় আমি, যার যত্নে আমি, যার প্রাপ্তিতে আমি , যার প্রথম ও শেষ ভালোবাসায় আমি, যার পুরোনো প্রাপ্তির তারিখে আমি, তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করি আমি।”

মেহবিনের কথায় মুখর মুগ্ধ হয়ে গেল আর মুচকি হেসে বলল,,

“তোমাকে যত দেখি তত অবাক হই তোমাকে বোঝা দায়। যাই হোক ফুলগুলো নিয়ে ধন্য করুন রানীসাহেবা।

মেহবিন হেঁসে ফুলগুলো নিলো। আর বলল,,

‘শুকরিয়া জনাব। এখন বলুন ঘটনা কি?

মুখর মেহবিন কে সব বলল তারপর এটাও বলল নাফিয়ার কথা। সব শুনে মেহবিন বলল,,

‘সমস্যা নেই। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই নাফিয়া আপুর জন্য ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন।”

“হুম অপেক্ষাটা ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বোধহয়।”

“আমি তো দেখছি ধীরে ধীরে কমে আসছে।”

“আমার কাছে দীর্ঘ লাগছে।”

‘সেই সারে চারটা বছর কাটিয়ে এসেছেন তখন দীর্ঘ লাগে নি। আর এখানে তো আর অল্প কয়েকটা দিন।আমার তো মনে হচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার অপেক্ষার অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ঘটবে।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

‘এই যে মনি এখানে কি করছো তুমি? আমি কখন থেকে তোমায় খুঁজছি।”

মেহবিন আর মুখর তাকিয়ে দেখলো সেই দশ বছরের বাচ্চা। মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘কেন রাজকুমার আদর আমাকে খুঁজছিল কেন?”

“নিচে তোমায় বাবা আর দাদু ডাকছে। আর এই যে পুলিশ তোমাকেও তোমার বাবা ডাকছে তাড়াতাড়ি চলো।”

আদরের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“পুলিশ কি কথা আমি তোমার কি হই বলোতো সেই সম্মধোন করো না।”

‘মনি যদি আমার ফুপি হয় তাহলে তুমি হও ফুপা। আর আমি যদি ফুপিকে মনি বলি তাহলে তোমার সম্মধোন হয় মনা। তাহলে কি তোমায় মনা বলে ডাকবো পুলিশ?”

আদরের কথায় মুখর হা করে তাকিয়ে রইল আর মেহবিন হেঁসে উঠলো। মুখর নিজেকে সামলে বলল,,

‘না না থাক মনা বলতে হবে না। এর থেকে পুলিশই ঠিক আছে।”

“হয়েছে তোমাদের কথা এখন নিচে চলো।”

মেহবিন আর মুখর আদরের সাথে নিচে চলে গেল। ও যেতেই নাফিয়া হুট করেই মেহবিন কে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,

“তোমায় দেখে কতোটা খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না মেহু। মনে হচ্ছিল এখনি জরিয়ে ধরি কিন্তু সবাই ছিল বলে আর ধরতে পারি নি। কেমন আছো তুমি?”

মেহবিন মুচকি হেসে নাফিয়া কে ছাড়িয়ে বলল,,

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।”

‘আজ যা হলো মন খারাপ করো না আপু।”

“ধুর কি যে বলো তুমি মন খারাপের কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা সবসময় তার বান্দার জন্য ঠিকই করেন। ইনশাআল্লাহ আমার শেষটাও অনেক সুন্দর হবে।”

“ইনশাআল্লাহ আপু। হুম এখন চলো একটু দাদিশাশুড়ির সাথে দেখা করা যাক।”

“হুম কিন্তু মেহু মন্ত্রীসাহেবের পরিবারের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”

“পরে জানা যাবে চলো।”

ওরা মেহরব চৌধুরীর ওখানে চলে গেল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে মেহবিনের হাত ধরে বললেন,,

” ও হচ্ছে আমার ভাগ্নি মেহবিন। যদিও আপনারা ওকে চেনেন তবুও আমার ভাগ্নি হিসেবে তো চেনেন না তাই পরিচয় করিয়ে দিলাম।”

মেহবিনের পরিচয় টা শুধু মুখর আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে ছাড়া সবার কাছে বিষ্ফোরণের ন্যায় ঘটলো। সবথেকে বেশি আছিয়া খাতুন তিনি বললেন,,

“তুমি মিথ্যা কথা বলতেছো না তো? তুমি মেহুর আসল মামা হও তো? কারন আমরা তো জানতাম ওর কেউ নেই ও এতিম।”

মেহরব চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন,,

“না আমি সত্যিই বলছি।”

তখন মেহবিন বলল,,

“এসব ছাড়ো তো মামা তোমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”

তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,

“কেন ছাড়বে? তুমি জানাও নি কেন?”

“কারন তখন আপনারা আপনাদের মন মতো ভেবে নিয়েছিলেন আর যখন আপনাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল তখন মামাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে বিয়ের আগে হয়েছিল কিন্তু বিয়ের পর আপনারা আমার ব্যাপারে জানতে বা শুনতে চান নি।যাক পুরোনো কথা বাদ মামা তুমি বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”

মেহবিনের কথায় পুরোনো কথা কেউ তুললো না তবে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। সবাই দুই মাস পর আলভি আর মাইশার বিয়ের ডেট ঠিক করলো। সবাইকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে শুধু আছিয়া খাতুন বাদে। তিনি একটু সরে গিয়ে অন্য একটা টেবিলে বসলো। মেহবিন সেখানে গিয়ে ওনার পাশে বসলো আর সালাম দিল,,

‘আসসালামু আলাইকুম দাদিজান!”

আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“কেমন আছেন আপনি? আপনাকে দেখে তো খুশি মনে হচ্ছে না।”

‘ভালো আছি। আর আমি খুশিই আছি আমার আরেক নাতির বিয়ে ঠিক হলো।”

“খুশি তো হতেই হবে মাইশা আপু তো আর আমার মতো এতিম নয়। তার স্ট্যাটাস আপনাদের থেকেও ওপরে। একজন মন্ত্রীর মেয়ে বলে কথা। আমার মতো কোন পরিবারহীন একাকী থাকা মেয়ে নয় সে।

মেহবিনের ঠান্ডা মাথায় অপমান টা বেশ প্রভাব ফেলল আছিয়া খাতুন এর ওপর। তিনি মাথা নিচু করে করলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“যাই হোক আপনাকে দেখে খুশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু খুশি না হওয়ার কারন দেখছি কারন আমি তো রাজ রাজই রেখেছি আপনি বলেছিলেন কেউ যেন না জানে যে আপনার নাতি আমার হাজবেন্ড। আজ কিন্তু বাইরের কেউ জানতে পারে নি সে আমার হাজবেন্ড।”

এবার আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“তুমি ভালো আছো মেহু?”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আমি খারাপ থাকি না সবসময় ভালোই থাকি আলহামদুলিল্লাহ।’

‘আমার কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না।”

‘আপনার ব্যবহারে আর আপনার জন্যই দিই না।”

‘তুমি এমন কেন?”

‘কেমন?”

‘বেয়াদপ।”

“এই বেয়াদপ মেয়েটাকেই তো একদিন ভালোবেসে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটার কেউ নেই শুনেই ভালোবাসা কোথা দিয়ে পালালো বলুন তো।”

কথাটা শুনে আছিয়া খাতুন চুপ মেরে গেলেন তখন মেহবিন বলল,,

‘যাই হোক আসছি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

‘আমি যদি আমার কথাটা ফিরিয়ে নেই। তুমি কি আমাদের বাড়িতে আমাদের সাথে থাকবে নাতবউ?”

আছিয়া খাতুনের মুখে নাতবউ শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

‘মন্ত্রীর ভাগ্নি বলে কি এরকম বলছেন দাদিজান?”

“না আমি এমনিই বললাম?”

“ওহ আচ্ছা তাহলে বলছি না এখনি নয়। নাফিয়া আপুর বিয়েটা হোক আপনার কথা অনুযায়ী তখনি সবার সামনে আপনার নাতির বউ হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে যাব আর থাকবো। আচ্ছা দাদিজান আমার একটা কথা বলুন তো সত্যিই কি শুধু আমি পরিবার হীন বলে ওরকম একটা কথা বলেছিলেন যে নাফিয়া আপুর বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি যেন কাউকে না জানাই যে মুখর শাহরিয়ার আমার হাজবেন্ড। আর কেউ যেন আমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে‌। সত্যিই কি ঐ একটা কারন নাকি অন্য কোন কারন ছিল?”

মেহবিনের কথা শুনে আছিয়া খাতুন অবাক চোখে তাকালো আর বলল,,

“এখন বাড়ি যাওয়া লাগবে আমি উঠি।”

“এটা কিন্তু আমার উত্তর নয় দাদিজান।”

“ঐ একটাই কারন আর কোন কারন নেই।”

“একটা মানুষের পরিচয় হিসেবে কি শুধু তার পরিবারই সবকিছু তাঁর নিজের কোন কিছু গ্ৰহনযোগ্য নয়।”

তিনি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“একটা কথা মনে রেখো মেহবিন তোমারে আমি আগেও ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি। তোমার পরিচয় বা পরিবার তোমার ভালোবাসায় কোন কমতি হতে দেয় নাই। তবে নাতবউ হিসেবে তোমারে আমি তখন মানতে পারি নাই। হয়তো আজও পারি না।

“না পারার তো কোন কারন দেখছি না দাদিজান আজ।”

“সেই জন্যই আজ বললাম বাড়ি যাওয়ার কথা।”

বলেই তিনি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলেন। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

” দাদিজান আপনি আমাদের এই সাময়িক বিচ্ছেদের কারন হওয়ার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন নি। এখনো আয়নায় নিজের চোখের সাথে নিজের চোখ মেলাতে পারেন না। এমনিতে ভালোবাসেন তবে নাতবউ হিসেবে কেন নয় এর পেছনের কারন টা কি ছিল দাদিজান?”

মেহবিন সবার কাছে গিয়ে বলল তার যেতে হবে নয়তো ফিরতে অনেক রাত হবে। মুখরের মা মেহবিন কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। মাইশা আর আলভি মেহবিনকে ধন্যবাদ জানালো। আর আদর সে তো কেঁদেই ফেললো এখনি তার মনিকে সে ছাড়তে রাজি না। আদরের মা আদরের তিনবছর থাকতে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। আর যবে থেকে ওর মামার সাথে পরিচয় হয়েছে তবে থেকে মেহবিন ওকে অনেক আদর করে ওকে তাই আদর মনিকে চোখে হারায়। মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে এগুতেই মুখর মেহবিনের কাছে গিয়ে বলল,,

“আজ আমরা একসাথেই যাই না।”

‘আমি এতোক্ষণ থাকবো কোথায় শুনি?’

“আমাদের বাড়িতে চলো না। দাদিজান কিছুই বলবে না।”

‘আমি জানি উনি কিছু বলবে না তবে আমি এখন আপনাদের বাড়িতে যেতে চাইছি না। একেবারে মাইশা আপুর বিয়ের মধ্যে যাবো।”

‘একটা জিনিস ভেবে দেখেছো আমরা কিন্তু এখন বিয়াই বিয়াইন।”

‘তো?”

“এইবার কিন্তু একটা লাইন মারাই যায়। কি বলেন বিয়াইন সাহেবা।”

“ফাউল কথা রাখেন তো।”

“এটা তোমার কাছে ফাউল কথা মনে হলো।”

“তা নয়তো কি? আপনি আপনার মতো আসুন আমি গেলাম আমার টেনের টিকিট রেডি।”

“তুমি ট্রেনে যাবে?”

“তো কি উড়ে উড়ে যাবো?”

“বিহঙ্গিনী সে উড়তেই পারে।”

“বিহঙ্গিনীর ডানা কোথায় যে সে উড়বে।”

“পয়েন্ট!”

“কাব্য আপনি কিন্তু!”

“আমি কি?”

“আস্ত একটা না থাক কিছু বললাম না। আমি গেলাম আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মেহবিন চলে গেল আর মুখর একা একাই হাসতে লাগলো। একটু দূর থেকে মুখরের পুরো পরিবার মুখরকে হাসতে দেখলো। এমনিতে ও বেশি হাসে না তার ব্যক্তিত্ববজায় রেখে চলে এমনিতে বেশ রাগী তবে মেহবিনের কাছে সবসময়ই অন্যরকম।

সেদিনের মতো সবাই তার আপন নীড়ে ফিরে গেল। মুখর রাতেই রওনা দিয়েছিল পরের দিন থেকেই আবার জয়েন করবে। সাতটার দিকে মেহবিন গ্ৰামে পৌঁছালো ও পাকা রাস্তায় নেমে সামনে এগুতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল ওর বাড়ির সামনের বাড়ির থেকে আওয়াজ টা আসছিল। ও আর বাড়িতে না গিয়ে সেখানে গেল ওখানে গিয়ে দেখলো একজন মহিলা মারা গেছে। মেহবিন কে দেখে তাজেল আর নওশি এগিয়ে এলো। ওদের থেকে জানতে পারলো লোকটা এতোদিন হাসপাতালে ছিল আজ মারা গিয়েছে। মেহবিন বাড়ি আসতে নিল কিন্তু তখন চারজন মহিলা এলো একইরকম পোষাক পরা মেহবিন তাজেলকে জিজ্ঞেস করলে ও বলল এই এলাকায় কেউ মারা গেলে নাকি এই চারজনই গোসল করায়। মহিলাদের দের জন্য মহিলা চারজন আর পুরুষ দের জন্য পুরুষ চারজন রাখা হয়েছে এটা নাকি চেয়ারম্যান সাহেব করেছেন তাদের নাকি এই জন্য টাকাও দেওয়া হয়। সবার বাড়ির লোক গোসল করাতে পারে না বলে নাকি এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেহবিন এটা দেখে অবাক হলেও পরে ভাবলো বিষয়টা মন্দ নয় ভালোই। মেহবিনের সামনে দিয়েই মৃত লোকটাকে নিয়ে যেতে নিল কিন্তু মেহবিন তাতে অদ্ভুত কিছু দেখতে পেল । ও এগিয়ে গেল আর মৃত মহিলার কাছে গিয়ে চাদর একটু উঠালো চাদরটা উঠিয়ে ও পুরো অবাক হয়ে গেল। ও সবার দিকে একবার তাকালো আরেকবার বডিটার দিকে। সবই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেহবিন রোবটের মতো ওখান থেকে উঠে এলো। ও কিছুই বুঝতে পারছে না ওর এখন কি করা উচিৎ।

~ চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন হুট করেই সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘আমি এই মহিলাটিকে গোসল করাতে চাই।”

সঙ্গে সঙ্গে সবাই মেহবিনের দিকে তাকালো। তখন ঐ চারজন মহিলাদের একজন বলল,,

“এই কাজডা আমাগো কাজ তুমি করবা কেন?”

“দেখুন এমন কোন কথা নেই আপনাদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে দেখে আপনাদেরকেই করতে হবে অন্যরা কেউ করতে পারবে না। সবথেকে বড় কথা আমাকে একটা কথা বলুন তো, আপনারা গোসল দিয়ে টাকা নেন এটা কি আপনাদের এলাকার সবাই এ সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করেছে নাকি শুধু চেয়ারম্যান সাহেব।

তখন একজন মাতব্বর টাইপ বয়স্ক লোক এগিয়ে এসে বলল,,

“কোন মৃত লোককে গোসল করানো বা কবর দেওয়া এটা এলাকাবাসীর কাজ বা কর্তব্য। তাই প্রফেশন হিসেবে কিংবা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের থেকে টাকা নেওয়া এটার টাকা নেওয়া জায়েজ নেই। তবে যদি পুরো এলাকাবাসী একটি উদ্যোগ নেয় সবার পক্ষ থেকে টাকা দেবেন তাহলে টাকা নিয়ে তাদের গোসল বা কবর দেওয়ার এটা জায়েজ আছে। (শায়খ আহমাদুল্লাহ এর একটা ওয়াজের মাধ্যমে জেনেছি)
চেয়ারম্যান সাহেব কথা বললে আমরা সবাই কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এদের কে আমরা সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে তারপর টাকা দেব। মহিলাদের কম টাকা দেওয়া হয় কারন তারা শুধু গোসল করান।”

মেহবিন সব শুনে বলল,,

“ওহ আচ্ছা ওনারা যাই করুক না কেন আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি ওনাকে গোসল করানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই।”

এ কথা শুনে ঐ চারজন মহিলা বাঁধ সাধলো কিন্তু পরে মেহবিনের যুক্তিসম্মত কিছু কথা শুনে এলাকার সবাই সম্মতি দিল। মেহবিন ঐ চারজন মহিলাকেও কি যেন বলল যার জন্য তারা আর মানা করেনি। মেহবিন বাড়ি এসে তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে ঐ বাড়িতে চলে গেল। তারপর মহিলাটিকে গোসল করানো শুরু হলো। মেহবিন দেখলো মহিলাটির কিডনির ওখানে কাটা এমন কি হার্টের ওখানেও গলার কাছে কাটা চোখ দুটোও নেই। ও বুঝতে পারলো সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেহবিন সব দেখেও কিছু বললো না শুধু শান্ত চোখে তাদের দুজনের দিকে তাকালো দুজন ভেতরে আর দুজন বাইরে মশারি ধরে রেখেছে। মেহবিনের শান্ত দৃষ্টি দেখে মহিলা দুজন অবাক হলো। মেহবিন একটা কাজের বাইরে টু শব্দ করেনি। গোসল করানো শেষ হলে মৃত ব্যক্তিটাকে খাটে শোয়ানো হলো। মেহবিন সেই চারজন মহিলাকে তার সাথে আসতে বলল মহিলা চারজন মেহবিন এর শান্ত রুপ দেখে এমনিতেই ভয়ে আছে। এমনিতেও তারা এই গ্ৰামেই থাকে মেহবিনের সম্পর্কে হালকা পাতলা ধারনা আছে তাই তারা মানা না করে মেহবিনের সাথে চলল। মেহবিন ওদের নিয়ে সোজা ওর বাড়িতে ঢুকলো। দুয়ারে দার করিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,

“এসব কবে থেকে করেন আপনারা?”

মেহবিনের কথায় চারজনই একটা ঢোক গিললো। তখন মেহবিন আবার বলল,,

“আপনারা জানেন আমি সবার সামনে কেন বলিনি যে, ওনার সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু এই কারনে যদি কিছু বলি তাহলে হাঙ্গামা হয়ে যাবে আর মৃত ব্যক্তির জানাযা আর কবর দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তার লাশটাকে টানা হ্যাছরা হবে। কারন তার মৃত্যুটা ব্রেন টিউমারের জন্য হয়েছে। মৃত ব্যাক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করা ভালো । তার দেহখানি যেন তাড়াতাড়ি মাটি পায় এই জন্য কিছু বলিনি। এখন ভনিতা না করে সব বলবেন আপনারা নাকি আমার অন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে।

মেহবিনের কথায় ওনারা ভয় পেয়ে যায়। তখন একজন বলল,,

“আমাগো কাজ শুধু কোন কথা না কইয়া লাশের গোসল করানো কে কেমনে মারা গেল তাতে আমাগো কিছু না।”

‘তারমানে আপনারা আগে থেকেই সব জানতেন । এখন আমাকে বলুন এই কাজে আপনাদের মাথা কে? যে এইসব কিছুর পেছনে সে নিশ্চয়ই বড় কোন মাথা নাহলে এতো সবকিছু প্ল্যান মাফিক করা সম্ভব নয়।”

“আমরা কিছুই জানি না আমাগো খালি এই কামে রাখছে তাই আমরা এই কাম করি।”

“সেটাই তো আপনাদের কে রাখছে চেয়ারম্যান সাহেব নাকি অন্যকেউ?”

“আমাগো তো আগে চেয়ারম্যানসাবই রাখছিল।”

মহিলার কথা শুনে মেহবিন একপ্রকার থমকে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এর পেছনে আছে। তবুও ও ভালো করে কথাটা শোনার ফলে মনে পরলো আগে বলেছে তারমানে পরে কেউ এদেরকে হায়ার করেছে। ও তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“আগে মানে পরে কে আপনাদের বলেছিল যে মৃত ব্যক্তি যেমনই হোক কোন কথা বলা যাবে না?”

“নামটা বলতে পারুম না নাইলে হেয় আমাগো ক্ষতি করবো।”

‘আর আপনারা যদি না বলেন তাহলে কালকেই আমি পুলিশ ডেকে আপনাদের সব কথা বলে দেব।”

পুলিশের কথা শুনে চারজনই ভয়ে কেঁদে উঠলো। তাদের মধ্যে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল,,

“না না বইলেন না আমরা সব কমু আপনারে।”

“হুম বলুন?”

‘এই সবকিছু নিশাচর নামের কেউ একজন ফোন কইরা করতে কইছিল। কইছিল যদি সব তার কথামতো করতে কোন মৃত ব্যক্তির কোন খানে কাটাছেঁড়া থাহে তাইলে জানি আমরা কাউরে কিছু না কই। এই জন্য আমাগো মেলা ট্যাহা দিত আমরাও ট্যাহার লোভে পইরা এই কাম করছি। আমাগো পুলিশে দিয়েন না আমরা গরিব মানুষ কয়ডা ট্যাহাই আমাগো সুখ।”

‘আচ্ছা আপনাদের কিছুই করবো না যদি পুলিশের সামনে আপনারা যা দেখেন এবং জানেন সব বলেন তাহলে। মৃত ব্যক্তির লাশের কাটাছেঁড়া সম্পর্কে সব বলবেন।”

‘না না যদি হেয় জাইনা যায় তাইলে আমাগো ক্ষতি করবো।”

‘কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না আমি সিভিল ড্রেসে তাদের আসতে বলবো। অথবা আপনাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাবো। কাল বিকেলে সব বলবেন সবকিছুর ব্যবস্থা আমি করবো।

তারা কিছুক্ষণ ভেবে বলে তারা বলবে। কথাটা শুনে মেহবিন একটু স্বস্তি পায় কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিশাচরের ওপর রাগতে থাকে।মেহবিন তাদের চারজন কে বলল সে তাদের আরো কিছু বলে চলে যেতে বলল। এতোক্ষণ কেউ আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনছিল। সে ওখান থেকে চলে গেল‌ বাকি চারজন ও গেল । ওনারা চলে যেতেই মেহবিন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য দেয়ালে দুইটা ঘুষি মারলো। আর বলল,,

‘একটা মানুষ কতোটা নিকৃষ্ট হলে এরকম করতে পারে। নিশাচর তোমায় আমি ছাড়বো না তোমার জন্য আর কতো মানুষ কে এভাবে নিজের জীবন দিতে হবে।”

বলেই মেহবিন ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ও এখন গোসল করবে। ও গোসল করে বের হলো খাওয়ার কোন ইচ্ছাই এখন নেই।

________________

পরের দিন প্রতিদিনের ন্যয় সকাল হলো। মেহবিনের নামাজ পরে বাইরে বেরুতেই দেখলো কালকের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। হয়তো কারো সকাল বেলা উঠেই মনে পরেছে তার প্রিয়জন কালকেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন সে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল একটা মেয়ে তার বাড়ির মাটির বারান্দায় বসে কাঁদছে তারপাশে একজন মহিলা বসে আছে সে ওখানে গিয়ে জানতে পারলো মেয়েটার মা ছিল সে। মেহবিন মেয়েটাকে কিছু শান্তনা দিয়ে চলে এলো আর এটাও জেনে এল কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সে জানালো এ.এস হাসপাতাল। ও নামটা শুনে অবাক হয়েছিল এ.এস হাসপাতাল। তার সন্দেহ এতোদিন ছিল এস.এস. হাসপাতালের ওপর তার মধ্যে এই এ.এস হাসপাতাল কোথা থেকে আবার নতুন একটা হাঙ্গামা দাড় করিয়ে দিল। ও বাড়ি এসে মুখরকে ব্যাপারটা জানালো আর এটাও বলল সব সিক্রেট ভাবে করতে হবে। মুখর বলল সে খোঁজ নিয়ে ওকে জানাচ্ছে। আজ শনিবার তাই হাসপাতাল নেই।

বেলা এগারোটার দিকে মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ও দেখলো মিশু আর আরবাজ দুজনে একে অপরের সাথে খুনশুটি করছে আর হাসছে। মিশু তো চুল ও টেনে দিচ্ছে আরবাজ ও কম যায়না সেও দিচ্ছে দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি। আরবাজের নজর গেল মেহবিনের দিকে মেহবিন কে দেখেই আরবাজ সোজা হয়ে দাঁড়ালো হাঁসি মুখটাও একটু মূর্ছা গেল। ও বলল,,

“মিশু তোর ফুল এসেছে?’

মেহবিন তখনও ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মিশু দৌড়ে গিয়ে মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো। তা দেখে মেহবিনের ধ্যান ভাঙলো। মেহবিন মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল,,

“বাহ আজ দেখছি ফুল খুব খুশি!”

মিশু আদুরে গলায় বলল,,

“তো খুশি হবো না বাড়িতে বিয়ে লেগেছে তো।’

“তাই বুঝি তা কার বিয়ে লাগলো?”

“কার আবার জিনিয়ার। তুমি জানো ওর বিয়ে না কাল ঠিক হয়ে গেছে দুই মাস পর ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে তার আগে কয়েকদিন পরেই নাকি এঙ্গেজমেন্ট।”

“ওহ আচ্ছা!”

তখন আরবাজ বলল,,

“কেমন আছেন ডক্টর?”

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”

“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা অনেকদিন পর দেখা হলো আপনার সাথে।

“হুম আপনি বেশ ব্যস্ত মানুষ তাই দেখা হয় না। শুধু আপনি না এই বাড়ির সকল পুরুষ মানুষই ব্যস্ত শুধু শেখ শাহেনশাহ বাদে।”

“নামটাই যে শাহেনশাহ তাই শাহেনশাহ এর মতোই চলাফেরা।”

আরবাজের কথা শুনে মিশু হাসলো মেহবিন ও মুচকি হাসলো। ওখানে জিনিয়া মুনিয়া নুপুর আর রাইফা ছিল। এতোদিনে আসা যাওয়ায় জিনিয়া আর মুনিয়ার সাথে ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে মেহবিনের। মেহবিন এগিয়ে গিয়ে জিনিয়াকে শুভেচ্ছা জানালো। জিনিয়াও মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানালো। তখন রাইফা সবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। মিশু বলল আজ সবার সাথে গল্প করবে মেহবিন কে নিয়ে তাই মেহবিন ও সবার সাথে বসলো। সবাই খাচ্ছে আর কথা বলছে মেহবিন ও বলছে তবে খাচ্ছে না। তা দেখে নুপুর বলল,,

“ডক্টর মেহবিন আপনাকে এই বাড়িতে অনেকবার আসা যাওয়া করতে দেখেছি কিন্তু কোনদিন কিছু খেতে দেখিনি।”

এ কথা শুনে মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“কারন এ বাড়িতে যখন আসি তখন সবসময় আমার পেট ভরা থাকে। আর আমি অতিরিক্ত খাবার খাইনা এই জন্যই খাওয়া হয় না। কারন অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা আমার পছন্দ নয়।”

“আসলেও কি তাই? অনেক সময় খাবারের সময় হয়েছে আপনি খান নি আপনাকে খালুজান খাওয়ার অফার করেছে তবুও আপনি এ বাড়িতে খান নি।”

“তখন খাইনি কারন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাছাড়া আমার খাবার সবসময় রেডি করাই থাকে তাই। বাই দা ওয়ে খাওয়ার টপিক ছাড়ুন এবার বলুন তো আপনি কোন হাসপাতালে জব করেন?”

“কেন?”

“এমনি জানতে চাইলাম আর কি?”

“ওহ আমি এ.এস হাসপাতালে ডক্টর হিসেবে আছি। মজার ব্যাপার জানেন ওটা আমারই বাবার হাসপাতাল।”

এ.এস হাসপাতালের কথা শুনে মেহবিন একটু অবাক হলেও পরে হাসলো। আর বলল,,

“ওহ আচ্ছা সেই জন্যই তো এখানে থাকলেও চাপ নেই আপনার। যখন তখন যাওয়া আসা করতে পারেন।”

“তা তো অবশ্যই নিজেদের জিনিসের ভাবটাই আলাদা। অবশ্য এটা সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে না।”

নূপুরের সুক্ষ কথার ভাঁজে অপমানটা শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“হ্যা হ্যা তা ঠিকই বলেছেন। সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে কিভাবে? তারা তো নিজেদের যোগ্যতার দ্বারা ডক্টর হয়েছে। বাবার টাকায় বা নামে ফুটানি মেরে ডক্টর হয় নি তাই না।”

মেহবিনের কথায় নুপুরের হাঁসি মুখটা মূর্ছা গেল আর অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে গেল। তখন মিশু বলল,,

“ঐ তোমরা দুজন ডক্টর ফক্টর ছাড়ো তো। এই রাইফা তুমি না ভালো কফি বানাও ওটা বানিয়ে নিয়ে আসো তো। আজ ফুল কফি খাবে তাই না ফুল।”

হুট করে মিশুর কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকালো। তারপর রাইফার দিকে তাকালো। রাইফা বলল,,

“ঠিক আছে আপু আমি যাচ্ছি।”

তখন মেহবিন বলল,,

“না না আমি খাবো না। আপনার কষ্ট করতে হবে না।”

তখন ওপর থেকে আরবাজ এলো একটা কফির কৌটা নিয়ে এসে রাইফার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,

‘এই যে রাইফা শুনলাম কফি নাকি শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি এটা এনেছি। এটা আমার ফ্রেবারিট কফি তুমি এটা নাও ডক্টর নিশ্চয়ই এখন খাবেন কারন কফি কখনো অতিরিক্ত খাবার হয় না। আর হ্যা রাইফা আমার জন্যও বানিও কেমন?”

মেহবিন কিছু বললো না রাইফা কফির কৌটা নিয়ে চলে গেল। আরবাজ হেঁসে সবথেকে দূরের সোফাটায় বসলো। আজ চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে নেই কোথায় যেন গিয়েছেন আর মহিলারাও কোথায় যেন গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর রাইফা কফি নিয়ে এলো প্রথমে মেহবিন কে দিল মেহবিন কিছু না বলেই তার দিকে একবার তাকিয়ে কফিটা নিল। তারপর আরবাজ কে দিল বাকি সবাইকেও দিল। কফিতে চুমুক দিয়ে মেহবিন বলল,,

“কফিটা অনেক ভালো হয়েছে।”

রাইফা মুচকি হেসে বলল,,

‘ধন্যবাদ।”

‘মিস্টার বাজপাখি সরি মিস্টার আরবাজ। আসলে মিশুর কাছে থেকে বাজপাখি শুনতে শুনতে ভুলে বেরিয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না।

আরবাজ মুচকি হেসে বলল,,

“কোন সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি।”

“আচ্ছা আপনার বাবা কখন আসবেন আমার উনার সাথে কিছু কথা ছিল।”

‘এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন।”

“ওহ আচ্ছা।

এইটুকু বলে রাইফার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“রাইফা আপনি এখন কি করেন?

রাইফা শান্ত চোখে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপতত সংসার করছি।”

“আমি আপনার পেশার কথা বলেছি?”

“পড়াশোনা শেষ করে এখন পেশা বলতে গেলে আমি হাউজ ওয়াইফ।”

মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ঐ চোখে অনেক কথা আছে যা ও কারো সাথে কখনো শেয়ার করেনি। অদ্ভুত একটা যন্ত্রনা আছে ঐ চোখে। মেহবিন আর কিছুই বললো। কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ এলেন মেহবিন কে কফি খেতে দেখে একটু অবাকই হলেন। তিনি নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলেন তারপর নিচে এলেন। মেহবিন এবার বাড়ি ফিরবে তাই ও শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“চেয়ারম্যান সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আপনার সাথে কেউ না থাকলে ভালো হয়।”

মেহবিনের এমন কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ উঠে বললেন,,

“তাহলে আমরা বাগানে গিয়ে কথা বলি।”

বলেই তিনি হাঁটা ধরলেন মেহবিন ও সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। আর সে বাড়িতে ঢুকবে না। বাগানে যেতেই সেখানে বসার জায়গা আছে সেখানে শেখ শাহনাওয়াজ বসে আছেন। মেহবিন কে দেখে তিনি বললেন,,

“বলুন কি বলবেন?”

“আপনি যে গোসল ও কবর দেওয়ার জন্য লোক রেখেছেন তাদের বদলাতে হবে।”

“কেন? বদলানোর যথার্থ কারন দেখাতে হবে তো। সেই কারন কি?”

“আমি বলেছি এটা আপনার কাছে যথেষ্ট নয় কি?”

“না যথেষ্ট কারন নয় আপনি বলুন?”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব বললো সে শেখ শাহনাওয়াজ কে জানাতে চাইছিল না কিন্তু উনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে জানাতেই হলো।সব বলার এটা বলল,,

“আর আপনি এটা জানেন কি ঐ হাসপাতালের নাম কি? সেই হাসপাতালের নাম এ.এস হাসপাতাল যা কিনা ডক্টর নুপুরের বাবার মানে আপনার আত্মীয় এর।”

এ কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ বিস্ফোরিত চোখে মেহবিনের দিকে তাকালো। আর বলল,,

“আপনার কাছে কোন প্রমান আছে যে নুপুরের বাবাই এই কাজ করে। উনি তো হাসপাতালের ওনার কতো ডাক্তার আছে সেখানে সেখানের কেউ তো করাপ্টেড হতে পারে। হয়তো উনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না।”

‘হ্যা হতেও পারে আপনার মতো!”

‘মানে?”

মেহবিন বুঝতে পারলো ও কি বলেছে। তাই কথা সামলাতে বলল,,

“কিছু না আর আমি তো বলিনি নুপুরের বাবাই এগুলোর মাথা।”

“তাহলে কে এগুলোর মাথা।”

“কখনো নিশাচর মানে অন্ধকারের রাজার নাম শুনেছেন?”

নিশাচর এর নামটা শুনেই শেখ শাহনাওয়াজ চমকে উঠলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“এই সবকিছুর একটাই মাথা নিশাচর। এবং সবকিছু তিনিই লোকদের দ্বারা প্ল্যানমাফিক করেন।”

“তাহলে তো আমাদের এই বিষয়ে কোন স্টেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

“সেটাই তো প্রমান লাগবে এ.এস হাসপাতালের কে করছে এটা নিশাচর এর সাথে মিলে। আগেই আমি কোন স্টেপ নিচ্ছি না কারন আমি জানি না ঐ হাসপাতালের কে আছে যিনি এইসব কাজ করছে। তবে টেনশন নেই খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবো।”

‘আমার কোন সাহায্য লাগলে বলবেন।”

‘আপতত আপনি ঐ লোকগুলো কে বদলান। আর আমি দেখছি তাদের পুরুষদের মধ্যে কেউ কিছু জানে কি না। আপনি একটু তাদের নাম বলুন এবং বাড়িটা এই এলাকার কোথায় সেটাও বলুন আমি যাওয়ার পথে সবার সাথে দেখা করবো।”

শেখ শাহনাওয়াজ সবার বাড়ির ঠিকানা ও নাম বলে দিল। মেহবিন ওখান থেকে চলে গেল। আর শেখ শাহনাওয়াজ এর কথামতো বাড়ি বাড়ি গেল কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো তারা রাতেই হাওয়া হয়ে গেছে। ওর সন্দেহ গাঢ় হলো ও মহিলাদের ব্যাপারেও খোঁজ নিল তাদের বাড়িতেই গিয়ে দেখতে পেল তারাও নেই।সবাই নিখোঁজ এক রাতের ভেতরেই সবাই হাওয়া।মানে টা কি এসবের কালকেও মহিলারা সব বলার জন্য রেডি ছিল। না ওর আগে থেকেই অন্য একটা ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। এখন ওর হাতে কোন প্রমান নেই যে কালকের মহিলার শরীরে কাটাছেঁড়া ছিল। নিজের ওপরেই খুব রাগ উঠলো ওর। তবুও ও হাল ছাড়লো না ও মুখরকে ফোন করে সেই আটজনের ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে বলল। আর এটাও বলল সব তাড়াতাড়ি বের করতে। রাতে মেহবিনের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো ও ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,

‘অতিরিক্ত কৌতুহল ভালো নয় ডাক্তার। কখনো কখনো এর কারনে মৃত্যু কে আলিঙ্গন করতে হয়।”

~ চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১৯+২০

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

শেখ শাহনাওয়াজ কে দেখে মেহবিন অবাক হলেও কিছু বললো না। ও ভালোভাবে ওরনা মাথায় দিল। শরীরে জ্বর থাকার জন্য একটু দুর্বলতা এখনো আছে। এক পা এগুতেই ও পরে যেতে নিল তা দেখে শেখ শাহনাওয়াজ এগিয়ে এলেন মেহবিন বারান্দার রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নিল। তারপর বড় বড় শ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আর তালা খুলতে লাগলো চাবি দিয়ে। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘আপনি ঠিক আছেন?”

‘হুম ঠিক আছি।”

“আপনি কি অসুস্থ ডাক্তার?”

ততক্ষণে মেহবিন তালা খুলে ফেলেছে। ও বাইরে বেরিয়ে এসে বলল,,

“হুম একটু জ্বর এসেছিল। আপনি এতো সকাল সকাল কারো কিছু হয়েছে?

“সকাল সকাল কোথায় আটটা বাজে।”

“ওহ আচ্ছা কিছু বলবেন?”

“হ্যা। এখানেই কি সব বলবো?

এ কথা শুনে মেহবিন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এখন তো মুখর রুমে আছে। তবুও মেহবিন বলল,,

“ভেতরে চলুন নাহলে?”

“ভেতরে কেউ আছে নাকি?”

শেখ শাহনাওয়াজ এর কথা শুনে মেহবিন অবাক হয়ে গেল। ও সব সাইডে রেখে বলল,,

‘হুম আমার জামাই আছে।”

“কি?”

“কিছু না!”

“আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”

‘আপনার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক চেয়ারম্যান সাহেব।”

“হয়তো আমার সাথে মজাই করছেন। আরে এমন করে বলার কিছু নেই। আমি ভেতরে যাবো না। আমি এমনিই জিজ্ঞেস করলাম আসলে আপনার জ্বর ছিল রাতে কি একাই ছিলেন নাকি তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় মেহবিন একটা শ্বাস ফেললো। সত্যি কথার ভাত নাই। মেহবিন বলল,,

‘না তেমন কেউ ছিল না একাই ছিলাম। আপনি কি ভেতরে গিয়ে বসবেন?

“না ভেতরে ঢোকা টা ঠিক হবে না। আপনাকে বলতে এসেছিলাম আজ তো সোমবার সামনে শুক্রবার জিনিয়া কে দেখতে আসবে। এই জন্য আপনার দাওয়াত। আপনি এমনিতেও যেতেন কিন্তু কিছু মেহমান আসবে তাই আপনাকে দাওয়াত দিলাম।”

“দুঃখিত সামনে শুক্রবার আমার ঢাকায় যেতে হবে মিশুকে বলে যাবো আমি কোন সমস্যা নেই। আর হ্যা প্লিজ ওকে রুমে আটকে রাখবেন না। ওর বন্ধ জায়গায় দম আটকে আসে নিজেকে পাগল পাগল মনে করে। আমি বলে যাব যাতে কোন দুষ্টুমি না করে ভদ্র ভাবে থাকে।”

“তারমানে আপনি যাবেন না?”‎আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হলে সে লোক যেন তা গ্রহণ করে।
( -সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (১৭৫০), মুসলিম)

“দুঃখিত দাওয়াত রাখতে টা পারছি না। যদি ঢাকায় না যেতে হতো তাহলে নিশ্চয়ই আপনার দাওয়াত রাখতাম।”

“সত্যিই কি রাখতেন?”

“হয়তো বা কিন্তু এক্সিডেন্টলি এন্ড আনফরচুনেটলি আই এম লাকি। আর কিছু বলবেন?”

“না এইটুকুই বলার জন্য এসেছিলাম।”

‘ওহ আচ্ছা।”

‘তাহলে আমি আসছি সাবধানে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

“হুম আল্লাহ হাফেজ।”

শেখ শাহনাওয়াজ চলে গেলেন। মেহবিন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ও ওয়াশরুমে চলে গেল। তখন আমাদের নেত্রী এলো হাতে খাবার নিয়ে। বারান্দা খোলা দেখে সোজা মেহবিনের রুমে গেল ও ভেতরে গিয়ে দেখলো কেউ কম্বল মুড়ে দিয়ে শুয়ে আছে। ও ভাবলো হয়তো মেহবিনই তাই কম্বলটা মাথার দিক থেকে একটু সরিয়ে ঠিক দেবে ভেবে কম্বল সরালো। মেহবিনের জায়গায় মুখরকে দেখেই ও ‘আল্লাহ’ বলে উঠলো। মুখর নড়ে চড়ে উঠলো তা দেখে তাজেল তাড়াতাড়ি করে নিজের মুখ চেপে ধরলো ও আবার ও উকি দিয়ে দেখলো যে মুখর না মেহবিন ওখানে। ভালো করে চোখ মুখ ডলে আবারও দেখলো না এবার ও মুখরই। ও বলে উঠলো,,

“ডাক্তার রাইতের মধ্যে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা হইয়া গেছে। আল্লাহ কি হইছে। এইডা কেমনে হইলো? কালক্যা সন্ধ্যার আগেও তো ডাক্তাররেই দেইখা গেলাম এহন পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কেমনে হইলো।”

তখনি মেহবিন এলো ও দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো মেহবিন। মেহবিন ওকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল,,

“নেত্রী!”

মেহবিন কে দেখে তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“ও আল্লাহ ডাক্তার তাইলে তুমি ঠিকই আছো। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা হও নাই।”

তাজেলের কথায় মেহবিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,

“মানে?’

“মানে হইলো আমি তো আইসা ভাবছিলাম কম্বলের তলে তুমি আছো। তাই কম্বল সরাইছিলাম পরে দেহি পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমি তো ভাবছিলাম তুমি রাইতে বদলাই গেছো।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,

“তাই নাকি। তা আমি বদলে গেলে তুমি কি করতে?”

“তহন তুমি পোলা হইতা আর আমি তোমারে বিয়া করতাম।”

তাজেলের বিয়ে করার কথা শুনে মেহবিন আরো জোরে হেঁসে উঠলো। আর বলল,,

“হ্যা নেত্রী আমিও ছেলে হলে তোমায় বিয়ে করতাম। এতো সুইট আর কিউট বউ থাকতো আমার।”

তখন শোনা গেল ,,

“হুম তুমি ছেলে হলে আমিও মেয়ে হতাম। আর তোমায় বিয়ে করে নেত্রীর সতিন ও হতাম। আমিও নেত্রীর মতো সুইট আর কিউট সতিন পেতাম।”

মুখরের এমন কথায় মেহবিন আর তাজেল মুখরের দিকে তাকালো। মুখর কম্বল থেকে মাথা বের করে কথাটা বলল। মুখরের এমন কথায় তাজেল বলল,,

“ডাক্তাররে তো আমি বিয়াই করবার দিতাম না। তোমারে আবার বিয়া করতো কহন আর তুমি সতিনই হইতা কহন।”

“আমার মতো একজন কিউট মানুষটাকে তুমি সতিন বানাতে না।’

“না বানাইতাম না। তাছাড়া ২য় বউ মেলা পাজি হয় আমার সৎ মায়ের মতো।”

তাজেলের কথায় মেহবিন প্রসঙ্গ বদলে বলল,,

“হ্যা হ্যা অনেক হয়েছে এখানে কারো বদল হচ্ছে না। আর কেউ কাউকে সতিন বানাচ্ছে না। নেত্রী তুমি এখন এখানে?”

“তোমার তো জ্বর দুইদিন ধইরা তাই আমার ছুটি। দাদিরে তোমার জ্বরের কথা কইছিলাম তাই দাদি সকাল সকাল পাতলা খিচুড়ি রাইন্দা দিছে তাই নিয়াইলাম। কিন্তু আইসা দেখলাম পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালাও আছে‌। এই হানে তো খালি তোমার জন্যই দিছে।”

“ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই। কাব্য আপনি উঠুন তো দেখেন উঠতে পারেন কি না। আমি বালটিতে পানি নিয়ে আসছি ঘর থেকেই হাত মুখ ধুতে হবে।”

তখন মুখর বলল,,

“আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার ছিল।”

এ কথা শুনে মেহবিন একটু চিন্তায় পরে গেল। বারান্দা দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে হবে। যদি কেউ দেখে নেয় এই মুহূর্তে কাউকে জানাতে চাচ্ছে না সে তাদের ব্যাপারটা। মেহবিন একটা বুদ্ধি বের করলো একটা শাল এনে মুখরকে দাড় করিয়ে ঢেকে দিল। তারপর জিজ্ঞেস করল একা যেতে পারবে কিনা ও বলল পারবে তাই শালটা দিয়েই নিজেকে আড়াল করে চলে গেল ওয়াশরুমে। মুখর যেতেই তাজেল বলল,,

“হেতি আইলো কহন?আর হেতি মনে অয় অসুস্থ মাথায় ব্যান্ডেজ আবার হাতেও ব্যান্ডেজ।”

“হুম অসুস্থ আর অসুস্থ হয়েই এখানে এসেছে। তবে নেত্রী সে যে এসেছে এটা কিন্তু কাউকে বলা যাবে না।”

তাজেল মেহবিনের কপালে গলায় হাত দিয়ে বলল,,

“ঠিক আছে। দেহি তোমার জ্বর এখন আছে না গেছে। তোমার তো দেহি জ্বরে চেহারা বচকাই গেছে গা ডাক্তার।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হেঁসে বলল,,

“আমায় কি খারাপ দেখতে লাগছে নেত্রী?”

“আরে না তোমারে কি খারাপ লাগবার পারে। তুমি কতো সুন্দর এতেও তোমারে এক্কেরে সুন্দর লাগতাছে।”

তখন মুখর এলো মেহবিন দরজায় ভালো করে পর্দা টেনে মুখরের দিকে একটা টাওয়েল এগিয়ে দিল। মুখর নিয়ে বিছানায় বসলো ঠান্ডার মধ্যে শুধু গেঞ্জি পরে থাকবে নাকি তাই চাদরটা ও দিয়ে রাখতে বলল। মেহবিন রান্না ঘরে গেল মুখর আর তাজেল দুজনেই মানা করেছিল। কিন্তু সে তো মেহবিন মানা করেও লাভ নেই। কিছুক্ষণ পর মেহবিন নুডুলস রান্না করে নিয়ে এলো। প্লেট আনলো খিচুড়িও আনলো। মেহবিন তাজেলকে নুডুলস খেতে বলল তা তাজেল মানা করলো একটু আগেই খেয়ে এসেছে সে। তাজেল ওদের রেখে চলে গেল।আজ আর আসবে না। মেহবিন মুখরকে খাবার খেতে বলে বারান্দায় গিয়ে কেচিগেইট আটকে এলো। ও আসতেই মুখর মেহবিনের গলায় কপালে হাত দিয়ে বলল,,

“এতক্ষন নেত্রী ছিল বলে কিছু বলতে পারিনি। যাক জ্বরটা নেই তেমন এখন আলহামদুলিল্লাহ। আর তুমি কোন সাহসে জ্বরের মধ্যে কিছু গায়ে না দিয়ে শুয়েছিলে?”

“কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।”

“নিজের খেয়াল তো রাখে মানুষ।’

“হুম এখন খাওয়া শুরু করুন।”

“আজ কিন্তু ডান হাতেই লেগেছে গুলি।”

মুখরের কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকালো আর নুডুলস মুখের সামনে ধরল। তখন মুখর বলল,,

“আমার খিচুড়ি দাও কতোদিন খিচুড়ি খাইনা।”

মেহবিন নুডুলস রেখে খিচুড়ি দিল। যত্ন করে মুখরকে খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়ে দিল নিজেও খেল। তারপর মুখরকে শুয়ে থাকতে বলল। আর ভুলেও যাতে ঘরের বাইরে না যায় সেটাও বলল। তখন মুখর বলল,,

“তুমিও শুয়ে থাকো না?”

“আমার এখন ভালো লাগছে একটু রোদে বসে থাকবো।”

“আমি একা একা থাকবো নাকি? একটা উপন্যাস পড়ে শোনাও। আর আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”

মেহবিন একটা উপন্যাস এনে মুখরের পাশে আধশোয়া হয়ে একহাত দিয়ে মুখরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আরেক হাত দিয়ে উপন্যাসের বইটা ধরে গল্প শোনাতে লাগলো। মুখর ও চোখ বুঝে প্রিয়সীর কন্ঠে উপন্যাস মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো। একটা সময় মুখর ঘুমিয়ে গেল। তা দেখে মেহবিন ভালো করে কম্বল টেনে দিল উপন্যাস এর বইটা রাখলো তখনি মুখর ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো মেহবিন কিছুই বললো না। ও মুখরকে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মুখরকে ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো রান্না করতে হবে। ও ফ্রিজ থেকে মাছ মাংস বের করলো। তারপর নিজের মন মতো রান্না করতে লাগলো। রান্না শেষ করে গোসল করে আসলো এখন ওর ফ্রেশ ফিল হচ্ছে। জ্বরটা বোধহয় আর আসবে না। তখনি মুখরের ফোনটা বেজে উঠলো মুখরের বাবা ফোন দিয়েছে। মুখরকে ডাকলো কিন্তু উঠলো না তাই নিজেই ফোন রিসিভ করে সালাম দিল,,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! মেহবিন তুমি! মুখর ঠিক আছে তো? আর ও কি তোমার কাছে আছে।”

“হ্যা বাবা উনি আমার কাছেই আছে আর ঠিকই আছে।’

“আলহামদুলিল্লাহ সকালে শুনলাম ওর গাড়িটা রাস্তায় এমনিই পরে আছে। আর ও বাসায় ও ফেরেনি বলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

“ভয়ের কোন কারণ নেই বাবা উনি ঠিক আছেন শুধু মাথায় আর হাতে হালকা চোট পেয়েছেন। ওনার ওপর কিছু গুন্ডারা এটাক করলে উনি তাদের ওপর গুলি ছুড়ে গুলি শেষ হলে উনি পালিয়ে এই এলাকায় আসেন। রাত বেশ ওনার ও শরীরে তেমন শক্তি ছিল না তাই আমার বাড়িতেই চলে আসেন।”

“আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। এখন কেমন আছে মুখর ও কি করছে?”

“উনি ঘুমাচ্ছে তাই তো ফোনটা আমি ধরলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

তখন পাশ থেকে কেউ বলল,,

“আমি কথা বলবো আমার কাছে ফোনটা দাও।”

মেহবিন বুঝতে পারলো এটা মুখরের মায়ের গলা। তিনি ফোন নিতেই মেহবিন সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন মা!

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। ছেলের এই খবর শুনে আর কতো ভালো থাকবো মেহু মা। মুখর এখন কেমন আছে মেহু মা ? বেশি আঘাত পায় নি তো!”

“আরে রিল্যাক্স তেমন কিছুই হয় নি শুধু হালকা চোট পেয়েছে। এখন ঠিক আছে। আপনার ছেলে তো খেয়েদেয়ে ঘুমাচ্ছে। উনি উঠলেই আপনাকে ফোন দিতে বলবো।”

“ঠিক আছে এই নাও নাফিয়া তোমার সাথে কথা বলবে।”

“আসসালামু আলাইকুম আপু।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম মেহু।”

“তোমার ভাইয়া ঠিক আছে আপু চিন্তা করো না।”

“তোমার কাছে যেহেতু আছে তাহলে চিন্তা কিসের? আমি তোমার সাথে কথা বলবো বলে ফোনটা নিয়েছি। কেমন আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমরা কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি। বিশেষ করে আমি তো একদম ভালো আছি তোমাদের কে এভাবে রেখে।”

“ওহ হো আপু এসব কথা ছাড়ো তো । এতে না তোমার হাত আছে না আমাদের। তাই এসব কথা একবারও বলবে না এখন বলো বাবা বাড়িতে নাকি তোমরা দুজন বাবার অফিসে।”

“আমরাই অফিসে বাবা তো কিছু বলবেই না। মা কিভাবে যেন জেনেছে ভাইয়ার কিছু হয়েছে ব্যস শুনেই দৌড় বাবার অফিসে।”

“মায়েরা এরকমই বোধহয় সন্তানের একটু আঘাত ও তাদের সহ্য হয় না।”

বলেই দেখলো মুখর ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“উনি উঠে পরেছে নাও কথা বলো।”

মেহবিন ফোনটা মুখর কে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। তখন মুখর ফোনটা নিয়ে বলল,,

“শুকরিয়া নাফি।”

‘শুকরিয়া কিসের জন্য ভাইয়া?”

“মেহুকে জিজ্ঞেস করার জন্য সে কেমন আছে। তুই জানিস মেহুর না দুদিন ধরে জ্বর। আমিও জানতাম না এ বাড়িতে এসে জানলাম। কাল ঐ অবস্থায় এ বাড়িতে আসার কতটা উদগ্রীব হয়ে আমার সেবা করছিল কি বলবো তোকে। তখনো জানতাম না ওর জ্বর । রাতে আমার সেবা করতে করতেই আমার মাথার কাছে ঘুমিয়ে পরেছিল রাতে শীতে কাঁপছিল ওকে ডেকে আমার পাশে শুয়িয়ে ছিলাম। সকালে উঠে আমার যা প্রয়োজন সব করলো আজ আর তেমন জ্বর নেই তবুও জ্বর থেকে উঠে কি কারো ভালো লাগে । আমি জানি আমি ঘুমানোর পর ঠিকই দুপুরের রান্না করেছে। কিন্তু একটা টু শব্দ করে নি। মাকে কিন্তু ঠিকই জিজ্ঞেস করলো সে কেমন আছে কিন্তু মা ছেলের চিন্তায় তাকে জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছে সে কেমন আছে। যদিও মা মেহুকে ভালোবাসে সেটা জানি কিন্তু আজ কেন যেন নিজেকে খুব অসহায় লাগছে নাফি। তুই ওকে যখন ওকে জিজ্ঞেস করলি তখন আমার অসহায়ত্ব বোধহয় কমলো। আগে না হয় ওর কেউ ছিলনা এখন তো আমরা আছি তবুও মেয়েটার কোন অভিযোগ নেই আমাদের প্রতি।

ফোনটা লাউড স্পিকারে ছিল মুখরের মা বাবা মুখরের কথা শুনে ওনাদের চোখ ছলছল করে উঠলো সাথে নাফিয়ারও। তখন মেহবিন এলো বালটিতে পানি নিয়ে আর বলল,,

“কথা বলা হয়েছে আপনার। এখনো বিছানা ছাড়েন নি? হাত মুখ ধুয়ে নিন আমি খাবার বাড়ছি ওষুধ ও তো আছে। মায়ের সাথে কথা বলেছেন?”

মুখর মেহবিনের কথা শুনে বলল,,

“এই নাফি মায়ের কাছে দে।”

মেহবিন ওকে রেখে আবার চলে গেল। মুখরের মা ফোন নিয়ে বলল,,

‘মুখর আমি বোধহয় একজন ভালো মা হতে পারি নি বল তাই না?”

তখন মুখর বলল,,

“কি আজেবাজে বকছো তুমি ভালো মা না শুধু বেস্ট মা। আমার কথায় মন খারাপ করো না ওটা এমনিই বলেছি। তুমি তো বেস্ট মা তাই ছেলের কথা শুনে পুরো দুনিয়া ভুলে গেছো। আমি এখন ঠিক আছি তুমি টেনশন করো না।”

আরো কিছুক্ষণ বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিল। ততক্ষণে মেহবিন সব খাবার নিয়ে এসেছে। মুখর কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো তারপর ভাত মাখিয়ে খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়ে দিল। মুখর হেঁসে বলল,,

‘নিঃসন্দেহে তুমি একজন উত্তম স্ত্রী বিহঙ্গিনী।”

‘আপনার মুখে মেহু ডাকটাও খারাপ না কাব্য।”

‘তোমার যেভাবে কাব্য ডাকতে ভালো লাগে তেমন আমার ও বিহঙ্গিনী ডাকতে ভালো লাগে।”

‘হুম ভালো। এখন চুপ করে শুয়ে থাকুন।”

“আমি কোন আইসিইউ এর পেশেন্ট না যে সবসময় শুয়ে থাকতে হবে।”

‘তা না থাকলেন অসুস্থ তো। তাছাড়া আপনি এমন একটা জায়গায় আছেন যেখানে চাইলেও বেরুতে পারবেন না।”

‘হুম!

মুখর তার কিছুক্ষণ পর এক বায়না করলো সে গোসল করবে কিন্তু এখন তো ব্যান্ডেজ ভেজাতে পারবে না। মুখরের জোরাজুরিতে ও বালটি ভরে পানি এনে ওর শরীর মুছিয়ে দিল। তারপর গেঞ্জি খুলতে বলল,,

“তুমি আবার আমাকে খালি গায়ে থাকতে বলছো?”

মেহবিন একটা হুডি এনে মুখরের সামনে ধরে বলল,,

“আপনার এটা আমার কাছেই ছিল।”

“ওহ্ আচ্ছা তাইতো বলি এটা কোথায় গেল।”

মেহবিন ওকে হুডিটা পরিয়ে দিল। সারাদিন এভাবেই গেল রাত এগারোটা মুখর এখন চলে যাবে। দিনের বেলায় তো আর এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না কখন কি হয়। তাছাড়া এই বাড়িতে থাকাটাও সেফ নয় যেকোন সময় কেউ দেখে ফেলতে পারে। তাই ও ডিসাইড করেছে চলে যাবে। গাড়ি নিয়ে কেউ পাকা রাস্তায় মুখরের জন্য অপেক্ষা করছে সেটায় করেই সে বাড়ি যাবে। হুট করে মেহবিন বলল,,

“আপনার আজ যাওয়ার কি দরকার ছিল আরেকটা দিন এখানে থাকতে পারতেন তো?”

“দরকার ছিল তাই যাচ্ছি।”

“এখন তো আপনি সুস্থ না আরেকটা দিন থাকুন না। আমার একটুও অসুবিধা হবে না।”

“সরি বিহঙ্গিনী তোমার কথাটা রাখতে পারলাম না। তুমি টেনশন করো না। অসুস্থতার জন্য ছুটি দিয়েছেন আমাকে আজ একেবারে বাড়ি যাবো।সামনের সপ্তাহে আসবো।ও তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছিলাম। শুক্রবার নাফিয়াকে দেখতে আসবে।”

“ওহ আচ্ছা! আমিও শুক্রবার একটা কাজে ঢাকায় যাবো।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে এখন আসি নিজের খেয়াল রেখো আর সাবধানে থেকো।”

“বাসায় গিয়ে কল করবেন সাবধানে যাবেন আমি অপেক্ষায় থাকবো।”

“হুম আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ আল্লাহ হাফেজ।”

মুখর বেরিয়ে গেল মেহবিন বারান্দা থেকে দেখলো।তারপর রুমে চলে গেল। আর মুখরের ফোনের অপেক্ষা করতে লাগলো। কয়েক ঘন্টা বাদে মুখর জানালো সে সেফলি পৌঁছে গেছে। মেহবিন নিশ্চিন্ত ঘুমিয়ে পরলো। অসুস্থতার জন্য তিনদিন ছুটি নিয়েছিল সে। কাল আবার হাসপাতালে যেতে হবে।

পরদিন থেকে মেহবিনের জীবন নরমাল দিনের মতোই শুরু হলো। ফজরের নামাজ নাস্তা বানানো তাজেল কে পড়ানো নাস্তা করে রেডি হয়ে হাসপাতালে যাওয়া।তাজেল অবশ্য মুখরের কথা জিজ্ঞেস করেছিল মেহবিন বলেছে চলে গেছে। দুপুরের দিকে মেহবিনের হাসপাতালে একটা পার্সেল আসে। মেহবিন পার্সেল টা খুলতেই দেখতে পেল কতগুলো অর্কিড ফুল আর তার ওপরে একটা চিঠি। সে মুচকি হেসে চিঠিটা খুলতেই তাতে লেখা,,

“অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাব্যের বিহঙ্গিনীর সাথে দেখা হয়েছিল কিন্তু আশেপাশে ফুল আর পরিস্থিতি ছিল না বলে দেওয়া হয় নি। তবে জানি এটা নিয়ে বিহঙ্গিনীর মনে একটুও মন খারাপ কিংবা আক্ষেপ কোনটাই নেই। এমনকি তার মাথাতেও নেই তার কাব্য তাকে ফুল দেয় নি। তবুও আমার কথা তো আমি রাখবো তাই না। ফুল গুলো নিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিও সেটাই আমার প্রাপ্তি।”

ফুলের সাথেও একটা চিরকুট আছে। মেহবিন মুচকি হেসে সেই চিঠিটা খুলল সেটায় লেখা,,

‘আমার প্রতিটা সাক্ষাতের ফুল তুমি, আমার বর্ষনের ফোটায় তুমি, আমার অসীম ভালোবাসায় তুমি, আমার বিশ্বাসে তুমি, আমার চাঁদমাখা রাতের অনুভূতিতে তুমি, আমার একরাশ মায়া তুমি,আমার একাকী গহীন অনুভবে তুমি,আমার সচেতন মনে তুমি ,আমার নির্ঘুম রাতের একাকী নিঃশ্বাসে তুমি, আমার তোমায় ভেবে বিষাদে তুমি, আমার হুট করে মুচকি হাঁসির কারন তুমি,আমার আবেগ মাখা চিঠিতে তুমি, আমার কবিতায় তুমি, আমার যত্নে তুমি, আমার প্রাপ্তিতে তুমি,আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসায় তুমি।আমার পুরোনো প্রাপ্তির তারিখে তুমি। সবশেষে ভালোবাসি তোমায় আমি।”

এরকম আবেগমাখা চিরকুট দেখে কারো মুখে কি হাঁসি না ফুটে থাকতে পারে। মেহবিন মুচকি হেসে চিরকুট টা বারবার পরতে লাগলো এটা যে কতটা ভালোলাগার অনুভূতি তা বোঝানো সম্ভব নয়।

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

দুপুরের খাবারের সময় শেখ শাহনাওয়াজ এর ফোন এলো। সবেই মেহবিন এর অর্ধেক খাওয়া হয়েছে। তার ফোন দেখে খাওয়া বাদ দিয়ে মেহবিন ফোনটা নিয়ে সালাম দিল ,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আপনি কি এখন হাসপাতালে?

“জি হাসপাতালেই।”

“আপনি কি একটু এখন আমাদের বাড়িতে আসতে পারবেন?”

“কেন কারো কিছু হয়েছে নাকি?”

“হ্যা আসলে রাইফা হুট করেই অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছে।”

রাইফার কথা শুনে ও দাঁড়িয়ে পরলো। কিন্তু কি ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসলো আর বলল,,

“কি হয়েছে উনার অজ্ঞান হলো কিভাবে? আপনাদের বাড়িতে ডক্টর নুপুর থাকে সে কোথায় গিয়েছে।”

“আসলে সে হাসপাতালে গেছে আজ নেই।”

“উনার জ্ঞান কি ফিরেছে নাকি এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে।”

‘এখনো জ্ঞান ফেরেনি তাই তো আপনাকে ফোন করেছি।”

“কখন অজ্ঞান হয়েছে?”

“প্রায় দশ মিনিট হবে। আপনি প্লিজ আসুন।”

মেহবিন হাত ধুয়ে বলল,,

‘আসছি।”

এমনিতেও ও আজ তাড়াতাড়িই চলে যেত আজ তেমন ভীর নেই তাই ওর সিনিয়র ডক্টর বলেছেন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেতে। মেহবিন সিনিয়র ডক্টরকে বলে প্রয়োজনীয় সব নিয়ে বের হলো। আজ অনেকদিন পর আবুলের সাথে মেহবিনের দেখা হলো। ও তাড়াতাড়ি করে রিক্সায় উঠে বসলো। মেহবিন জিজ্ঞেস করল,,

“কেমন আছেন আবুল ভাই। বাড়ির সকলে ভালো আছে?”

“হ আফা ভালো আছে। তোমারে অনেকদিন পর দেইখা ভাল লাগতাছে। তা কোনে যাইবা বাড়ি নাকি?”

“না চেয়ারম্যান বাড়িতে যেতে হবে। ও বাড়ির বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলুন।”

“আইচ্ছা।”

“ভাবি আর ফাতেমা কে তো পাঠিয়ে দিতে পারেন আমার বাড়িতে।”

“আইচ্ছা কমু নি।”

তার কিছুক্ষণ পরেই মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে এলো। আবুল তো ভাড়া নেবেই না। মেহবিন জোর করে উনাকে টাকাটা দিল। ও বাড়ির ভেতরে ঢুকলো ও আসতেই শেখ শাহনাওয়াজ ওকে নিয়ে রাইফার ঘরে নিয়ে গেলেন। সকলে ওখানেই আছে। রুমের ভেতর গিয়ে দেখল রাইফা বিছানায়।এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ও গিয়ে চেক করলো তারপর একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল,,

“চিন্তার কোন কারন নেই। ইনজেকশন পুশ করলাম আরেকটু পরেই উনার জ্ঞান ফিরে আসবে। অতিরিক্ত টেনশন আর দূর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে। উনি বোধহয় ঠিক ঠাক ভাবে খাবার খান না।”

তখন সায়িদের মা সাহেদা খানম বললেন,

“মেয়েটাকে কতো বলি ঠিক মতো খাবার খেতে যদি শুনে আমার কথা। হয়ে গেল তো অসুস্থ। আর টেনশন কিসের এতো ছয়মাস ধরে বিদেশ ঘুরে এলো এতো বড় বাড়িতে সবার সাথে থাকে এখানে টেনশনের কি আছে।”

তখন মেহবিন বলল,,

“একজনের জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনো অন্যের পরিস্থিতি বোঝা যায় না। তাই এসব নিয়েই কথা না বলাই ভালো। আর টেনশন এটা অনেক কারনে হতে পারে। বিদেশে ঘুরেছে বা এতো বড় বাড়িতে থাকে সবার সাথে থাকে বলে মনে জীবনে কোন টেনশন আসবে না এরকম তো কোন কথা নেই তাই না। নাহলে তো বড়লোকদের কোন টেনশনই থাকতো না। বরং বড়লোকদের আরো টেনশন আরো বেশি।শুধু মানুষ থাকলেই হবে না মন খুলে কথা বলার জন্যও তো মানুষ থাকতে হবে। কখনো কখনো অনেক ছোট কারনেও আমাদের অনেক টেনশন হয়। আজকাল টেনশন কোন বড় ব্যাপার নয়।”

মেহবিনের কথা শুনে সাহেদা খানম চুপ মেরে গেলেন। তখনি রাইফার জ্ঞান ফিরলো। ও সবার আগে মেহবিনের দিকেই তাকালো । মেহবিন জিজ্ঞেস করল,

“এখন কেমন লাগছে আমাকে আপনার? কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে কি?”

রাইফা বলল,

“আমি ঠিক আছি এখন। হুট করেই চোখে অন্ধকার দেখলাম তারপর আর কিছু মনে নেই।”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওনার জন্য কিছু পাতলা খাবার আনার ব্যবস্থা করুন। আর কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো আনানোর ব্যবস্থা করুন।

মেহবিনের কথা শুনে আরিফা জামান আর সাহেদা খানম খাবার আনতে গেল। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ কে জিজ্ঞেস করল,,

“ফুল কোথায়?”

“ও তো ঘুমিয়ে পরেছে।”

“ওহ আচ্ছা আর বাড়ির সকলে কোথায়? মিস্টার সায়িদকে খবর দেওয়া হয়েছে?”

“হুম ও বলেছে এখন আসতে পারবে না। আর বাকি সবাই নিজেদের কাজে মেয়েরা সবাই কলেজে গেছে। আপনি একটু রাইফার কাছে থাকুন। আমি গেলাম ওষুধ আনানোর ব্যবস্থা করি।”

“হুম!”

শেখ শাহনাওয়াজ চলে গেলেন। মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো রাইফা ওর তাকানো দেখে মাথা নিচু করে নিল। হুট করে মেহবিন বলল,,

“সবথেকে হাঁসি খুশি থাকা মেয়েটা এমন ডিপ্রেশনে কিভাবে পরে গেল?”

মেহবিনের কথায় রাইফা মেহবিনের দিকে তাকালো আর বলল,,

“আমার পার্সোনাল বিষয়ে আপনার কথা না বললেও চলবে।”

‘ওকে আপনার হাতে দাগ কিসের রাইফা আফনূর?”

মেহবিনের কথায় রাইফা হকচকিয়ে উঠলো আর বলল,,

“মানে?’

“আপনার হাতে কারো আঙুলের গভীর দাগ দেখতে পেলাম মনে হয় কেউ অনেক শক্ত করে ধরেছিল হাতটা।হয়তো অনেক ব্যাথা। আপনার হাতে মারের দাগ কেন রাইফা আফনূর? এটা কিন্তু পার্সোনাল না প্রফেশনাল এজ এ ডক্টর হিসেবে।”

মেহবিনের কথা শুনে মেয়েটি থমকে গেল। মেহবিন হেঁসে বলল,,

“কি হলো বলুন না?”

“আমার কোন বিষয়েই আপনি কথা বলবেন না। আপনি শুধু একজন ডক্টর আর কিছুই না। আমাকে পার্সোনাল কোন প্রশ্ন করার অধিকার নেই আপনার।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“হুম হুম আপনি ঠিক বলেছেন আমি শুধু একটা ডক্টর।যাই হোক আসি নিজের খেয়াল রাখবেন। আর হ্যা একটা কথা নিজের আপনজন বলে অন্যায় করলেও ছেড়ে দেবেন এটা কিন্তু ঠিক না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। যেমনটা আগে করেছেন।”

বলেই মেহবিন বের হলো। বেরুতেই দেখলো মিশু চোখ কচলে কচলে হাঁটছে। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“ফুল ওভাবে হাঁটলে তো পরে যাবে।”

মেহবিনের এমন কথায় মিশু তাড়াতাড়ি করে হাত নামালো আর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি তো এখন ঘুমিয়ে নেই। তাহলে ফুল তুমি এলে কোত্থেকে তুমি তো আমার স্বপ্ন আসো।তুমি সত্যি সত্যি এসেছো নাকি?

মেহবিন এগিয়ে গিয়ে একটা চিমটি দিয়ে বলল,,

“আমি তোমার সামনে সত্যি সত্যি এসেছি।”

মিশু হাত ডলতে ডলতে বলল,,

“হ্যা তুমি তো দেখি সত্যি সত্যি এসেছো।”

“হুম।”

মেহবিন মিশুর সাথে কিছু সময় কাটিয়ে চলে গেল। সাহেদা খানম রাইফার ঘরে গিয়ে খাবার টা রেখে বলল,,

“আমি তো ভেবেছিলাম কোন সুখবর পাবো তা দেখি সে গুড়ে বালি।”

রাইফা কিছুই বললো না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। সাহেদা খানম চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ ওষুধ এনে দিলেন রাইফা হালকা কিছু খেয়ে শুয়ে পরলো।

__________________

আজ শুক্রবার নাফিয়া কে দেখতে আসবে কিন্তু বাড়িতে না তারা একটা বড় রেস্টুরেন্টে দেখা করবে বলেছে। তা দেখে মুখর বলল,,

“আবার রেস্টুরেন্ট কেন? আমাদের বাড়িতে কি জায়গা কম আছে।”

তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,,

“এতো কথা বইলো না নাতি ছেলেরা যা বলছে তাই হইবো। ভালোই ভালোই বিয়েটা হলেই হলো।”

“তুমি না অসুস্থ তোমার তো জার্নি করা ঠিক না।”

“তাই বইলা আমি যামু না নাকি। আমি যামু তো।”

“পরে কিছু হলে আমরা কিন্তু দায়ী থাকবো না বলে দিলাম।”

“আইচ্ছা।”

সেদিন মুখর বাড়ি ফিরেছিল ঠিকই কিন্তু আছিয়া খাতুন কে বলা হয় নি মুখরের অসুস্থতার কথা। তিনি আবার একটুতেই হায়পার হয়ে যায়। মুখর অনেকটাই সুস্থ কাল থেকে আবার ও জয়েন করবে। সবাই দুপুরের দিকে বেরিয়ে পরলো। রেস্টুরেন্টের রুমের মতো ওখানের একটা টেবিল বুকিং করেছে। ওখানে যেতেই দেখলেন ছেলেপক্ষ বসে আছে। নাফিয়া আজ সিম্পল গাউন পরেছে আর হিজাব বেঁধেছে। সে তার ভাইয়ের সাথেই চলছে। মুখরের সাথে মুখরের মামার ফ্যামিলি ও এসেছে আর মামাতো বোনটা মুখরের সাথে চিপকানোর ধান্ধায় আছে। মুখরের বাম পাশে নাফিয়া বসলো আর ডান পাশে মুখরের মামাতো বোন ফারজানা। সবাই দেখে মুখর কিছু বলতে পারলো না কিন্তু মনে মনে সে ভিশন বিরক্ত। সবাই মিলে কথা বলতে লাগলো। হুট করে ফারজানার হাতে পানির গ্লাস লেগে মুখরের ওপর পরে গেল।ওর শার্ট ভিজে গেল ও তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো ফারজানা টিসু নিয়ে মুখরের শার্ট মুছে দিতে লাগলো। মুখর ওকে সরিয়ে দেবে এমন সময় রুমের দরজা খুলে আগমন ঘটলো বোরকা হিজাব পরিহিতা ডক্টর মেহবিন মুসকান এর প্রথমে মুখরের ফ্যামিলি দেখে অবাক হলেও পরে মুখর আর ফারজানা কে ওভাবে দেখে আরো অবাক হলো। ও কোন রিয়াকশন না দিয়ে সোজা হেঁটে ওদের পাশের টেবিলে বসে পরলো। এমন একটা ভাব যেন ও মুখরের পরিবার কে চেনেই না। আছিয়া খাতুনসহ মুখরের পুরো পরিবার মেহবিনকে এখানে দেখে কিছু টা চমকে উঠলো। সকলের দৃষ্টি মেহবিনের ওপর কিন্তু মেহবিনের দৃষ্টি তার ফোনে। মুখর ফারজানা কে সরিয়ে দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে আস্তে করে বলল,,

‘এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা। এরপর এরকম করবি তো ঠাঁটিয়ে দুটো লাগাবো বেয়াদপ।”

ওর কথা শুনে ফারজানা সরে এলো। তখন মুখর সবার উদ্দেশ্যে বলল,,

“আপনারা নিজেদের মতো কথা বলুন আমি আসছি।”

বলেই ওখান থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহবিন আড় চোখে সব দেখলো কিন্তু রিয়াকশন দিল না। তখন একটা ওয়েটার এলো মেহবিনের কাছে এসে অর্ডার জানতে চাইলে মেহবিন সব অর্ডার দিয়ে বলল,,

“আমার কিছু লোক আসবে তারা আসলে তারপর সার্ভ করবেন। আপতত একটা কফি দিন।

‘ওকে ম্যাম’ বলেই লোকটা চলে গেল। আছিয়া খাতুন কান উঠিয়ে সব শুনলেন। মেহবিনের কফি চলে এলে মেহবিন সেটা খেতে লাগলো। তখন মুখরদের টেবিলে ছেলের বাবা বললেন,,

“তাহলে আমাদের ছেলেকে পছন্দ হয়েছে তো মিষ্টার শাহরিয়ার?”

ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না। ভালোই আছে তা দেখে মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,

“জি আপনার ছেলেকে আমাদের পছন্দ হয়েছে?”

“আমাদের ও আপনাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। তাহলে ওরা আলাদা ভাবে নিজেদের মধ্যে কথা বলুক।”

তখনি বাইরে কিছু বডিগার্ড রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পরলো আর দুজন লোককে একজন মহিলা আর একজন পুরুষকে ঐ রুম দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল। ওখানের একজন কে দেখে মাহফুজ শাহরিয়ার দাঁড়িয়ে পরলেন ওনার দেখাদেখি সকলেই দাঁড়ালেন কারন আগমনটা ছিল একজন মন্ত্রীর ,মন্ত্রী মেহরব চৌধুরীর। মেহবিন সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল। এখানে কমিশনার এর ফ্যামিলি কে দেখে মন্ত্রীসাহেব অবাক হলেন। মাহফুজ শাহরিয়ার আর আছলাম শাহরিয়ার এগিয়ে গেলেন । হাজার হোক মন্ত্রী বলে কথা আর আছলাম শাহরিয়ার ও সামনে নির্বাচনে দাঁড়াবেন একটু সম্মান প্রদর্শন তো করতেই হয়। মেহরব চৌধুরী এগিয়ে এসে বললেন,

“একি সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন কেন বসুন। আজ আমি কোন মন্ত্রী হিসেবে এখানে আসিনি তাই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে না।”

সকলে বসলো তখন মাহফুজ শাহরিয়ার সালাম দিলেন,,

‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম কমিশনার সাহেব। তো কমিশনার স্যার এখানে? পুরো পরিবার কে সময় দেওয়া হচ্ছে বুঝি।”

‘তেমনটাই আর কি। কেমন আছেন আপনারা।”

‘জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনারা?

“জি আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“আচ্ছা আপনাদের মতো সময় কাটান। আর প্লিজ আমায় দেখে অপ্রস্তুত হবেন না।”

মন্ত্রী সাহেব ও তার মিসেস সোজা মেহবিনের টেবিলে গেল মেহরব চৌধুরী মেহবিনের পাশে আর তার মিসেস তার অপজিটে বসে পরলো। সেটা দেখে মুখরদের পরিবার পুরো শকড। মেহবিন এমনে কফি খেতে লাগলো যেন পৃথিবীতে কফি খাওয়ার থেকে ইমপোর্টেন্ট কিছু নেই। তা দেখে মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘আই এম সরি মা। একটু লেট হলো এখানে আমার দোষ নেই সব দোষ এই মহিলার।”

মেহবিন কিছুই বললো না। তখন মিসেস মেহরব বললেন,,

‘এখন সব আমার দোষ হয়ে গেল। তা মিটিং ছিল কার আমার না তোমার। সেখান থেকে বেরুতেই তো দেরি হয়ে গেল। আমার কোন দোষ নেই বলে দিলাম।”

মেহবিন এবার ও কিছু বললো না। তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘এই কথা বলবি না। এতোদিন পর দেখা।

মেহবিন ঘড়ি দেখে বলল,,

‘আঠারো মিনিট পনেরো সেকেন্ড লেট তোমরা। এরপরেও তোমাদের সাথে কথা বলা উচিৎ আমার। আমি কিন্তু কিছু বলি নি তোমরাই বলেছিলে আমার আগে তোমরা এখানে থাকবে আর দেরি হলে আমার যা ইচ্ছা তাই করতে।”

‘সরি বললাম তো।”

‘শুধু সরি বললেই হলো?”

‘তা কি করলে আমার মায়ের রাগ ভাঙবে? কান ধরে সরি বললেই এই তো ধরছি।”

উনি কান ধরতে যাবে তার আগেই মেহবিন ওনার হাত ধরল আর বলল,,

“কি করছো তুমি? তুমি একজন মন্ত্রী হয়ে পাবলিক প্লেস এ কি করছো? তোমার সম্মান কোথায় তুমি জানো। পাবলিক প্লেসে কান ধরে রাগ ভাঙালে যে মানুষ গুলো খুশি হয় আমি তাদের মধ্যে নই। তারা তো বিবেকহীন যে তাদের খুশির জন্য একজন মানুষ তার সম্মান বিসর্জন দেয় এটা বুঝতে পারে না বরং তারা অন্যরকম খুশি হয় তাদের প্রিয়জন সবার সামনে কান ধরে রাগ ভাঙাচ্ছে বলে। আমি রাগ করে নেই।

মেহবিনের কথা শুনে মেহরব চৌধুরী হাসলেন সত্যিই তো এরকম টা ক’জন ভাবে। এদিকে মুখরদের টেবিলে সবাই অবাক চোখে ওদের টেবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহরব চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“সত্যি তো?”

‘হুম!”

“তা তোমার গুনধর পুত্ররা আর পুত্রী কোথায়? তারা কি তোমার মতো মন্ত্রীর থেকেও বেশি ব্যস্ত নাকি।”

তখনি মেহবিনের থেকে বড় দুজন ছেলে আর মেয়ে সরি সরি বলতে বলতে এগিয়ে এলো। মেয়েটা এসে সোজা মেহবিনের অপজিটে তার মায়ের পাশে বসে পরলো। আর ছেলেটা মেয়েটার পাশে। তখন মেহবিন বলল,,

“কখন আসার কথা ছিল তোমাদের আমার থেকে তোমাদের বাড়ি কাছে তবুও তোমরাই দেরি করেছো।”

তখন মেয়েটা হেঁসে বলল,,

“আরে মেহু কথায় আছে মক্কার মানুষ হজ্জ পায়না ব্যাপারটা হলো তেমন।”

“হুম তাই তো দেখছি তা আরেকজন কই? আমাদের ড্যাশিং রাজকুমার কই?”

তখন মুখরের সাথে এন্ট্রি হলো দশ বছরের এক বাচ্চার। সে এসেই বলল,,

‘এই যে আমি আসলে কি বলো তো আসতে গিয়ে এই পুলিশের সাথে ধাক্কা। আমার হাতে চকলেট ছিল সেটা আমার এতো সুন্দর সাদা শার্টে লেগে গেল। পরে উনি আমাকে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে আমার শার্ট পরিস্কার করে দিল তাই দেরি হলো।”

মুখর এসে সব বলল আর মেহরব চৌধুরীর সাথে কুশল বিনিময় করলো আর নিজেদের টেবিলে চলে গেল। এমন একটা ভাব সে ও কাউকে চেনে না। এদিকে পাশে মন্ত্রীর পরিবার আছে বলে সবাই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে। মেহবিন ছেলেটাকে নিজের পাশের চেয়ারে বসালো। ওয়েটারকে ইশারা করলো খাবার দিয়ে যেতে ওয়েটার খাবার সার্ভ করলো। তখন এদিকে নাফিয়া আর ছেলেটাকে কথা বলতে পাঠানো হলো। ওরা ওখান থেকে বেরিয়ে টপ ফ্লোরে নেমে গেল। তখন নাফিয়া বলল,,

‘আপনার কিছু বলার আছে?”

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,,

‘না!”

‘মানে আমার সম্পর্কে সব জেনেও আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি।”

‘সব জেনে মানেও আমি যতটুকু জানি তাতে তো অসুবিধা নেই কোন।”

“তারমানে আপনি আমার সম্পর্কে সব জানেন না?”

“তেমন কি কোন কারন আছে যা এই বিয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ?”

নাফিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে নিশ্চিত ছেলেটা তার সম্পর্কে কিছু জানে না। সে বলল,,

‘কয়েক বছর আগে আমি পেটে আঘাত পেয়েছিলাম সেই আঘাতের ফলে আমার একটা সমস্যা তৈরি হয়। ডক্টর বলেছেন আমি নাকি কোনদিন মা হতে পারবো না। কারন মা হওয়ার চান্স শুধুমাত্র দুই পার্সেন্ট।”

কথাটা শুনেই ছেলেটার মুখের হাঁসি গায়েব হয়ে যায়। নাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

‘আমি যতটুকু মনে হয় আপনাদের পরিবার কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আপনি জানেন না এটা ভেবে অবাক হয়েছি। তো এবার বলুন আপনি রাজি আছেন কি আমাকে বিয়ে করতে?”

ছেলেটা বলল,,

‘একটা মানুষের জীবনে বিয়েটাই সব না। যদি বাবা ডাকটাই না শুনতে পারি তাহলে বিয়ে করে লাভ কি?”

‘আপনার স্টেড ফরওয়ার্ড কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি তাহলে এবার ওখানে যাওয়া যাক। আপনি আপনার পরিবার কে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।”

ছেলেটা নাফিয়া কে ফেলেই চলে গেল।ও ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তখন একটা ওয়েটার ওকে এসে একটা ফুল আর চিরকুট দিল। ও জানতে চাইলে ওয়েটার বলল বলা যাবে না। নাফিয়া ফুলটা নাকে ধরে তার সুবাস নিল তারপর চিরকুট খুলল,,

“পৃথিবীতে কোনকিছুই পারফেক্ট নয় যদি হতো তাহলে এতো সুন্দর চাঁদ হয়েও তার গায়ে দাগ থাকতো না। তাই কোন কিছু নিয়ে আফসোস করবেন না। ভরসা রাখুন আপনার রবের প্রতি শেষটা সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ।”

চিরকুট টা পরে অজান্তেই নাফিয়ার মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। সে হেঁসে ফুল আর চিরকুটটা ব্যাগে ভরে মুখরদের কাছে চলে গেল। ওখানে গিয়ে দেখতে পেল ছেলেটা তার বাবা মায়ের সাথে আলাদা করে কথা বলছে অন্য জায়গায়। ও যেতেই মুখর বলল,,

“কি বলল?”

“যা সবাই বলে আমি কিন্তু বলেছিলাম আমার সম্পর্কে আগে বলে দিতে এখন এখানে এসে?”

“আমার জানামতে বাবা বলেছে। তাদের কোন আপত্তি নেই দেখেই তো এখানে আসা হয়েছে।”

“জানি না আমি কিছু জানতেও চাই না। এখন আমি কফি খাবো অর্ডার করো।”

মুখর উঠে এক কাপ কফি অর্ডার করলো। মেহবিন রা নিজেদের মতো খাবার খাচ্ছে। মেহবিন সেই ছোট ছেলেটাকে খায়িয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা মেহবিন কে অনেক কিছু বলছে। মেহবিন মুচকি হেসে শুনছে। কিছুক্ষণ পর মেহবিনদের খাওয়া শেষ। ছেলেটা তার মতামত জানিয়ে দিল আর ওখান থেকে চলে গেল। ছেলের মা বাবাকে বলা হয়েছিল তারা মুখরদের পরিবারের নাম টাকা দেখে লোভে পরেছিল তাই ছেলে কে জানায় নি।সবার হাসিখুশি মুখটা ছোট হয়ে গেল। কিন্তু নাফিয়া ঠিকই আছে সে কফি খাচ্ছে। মেহবিন সব দেখলো তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“বিলটা কিন্তু আমার নামে হবে।”

তখন মেহবিন বলল,,

‘এখানে ডেকেছে কে আমি না তুমি? একটা কথাও বলবে না। ট্রিট আমার দেওয়ার কথা তাই বিল আমি দেব।”

“ওহ হ্যা তুই তো বললি ট্রিট দিবি তা কি খুশিতে ট্রিট?”

মেহবিন ওর টেবিলে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,

“বোনের জামাই পেয়ে গেছি তাই? তোমার মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করে তাই বলতে এখানে ডেকেছি তোমাদের। আনফরচুনেটলি সে এখানেই আছে।”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১৭+১৮

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো। আর বলল,,

‘Or Kitne Intezer Or Kitne Sabr Karu!”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘অপেক্ষা করতে করতে কি আপনি ক্লান্ত হয়ে পরেছেন?”

“তার অপেক্ষার যদি সারাজীবন ও অপেক্ষা করতে হয় তবুও ক্লান্ত হবো না। তাছাড়া তুমি এমন একজন মানুষ যার ওপর আমার মুগ্ধতা কখনো হাড়ায় না। সবথেকে বড় কথা
“আল্লাহ মানুষের উপর তার সাধ্যাতীত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না!”
~সূরা বাকারা~২৮৬
এবং
ধৈর্য্য মানুষকে ঠকায় না,
বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়।
[সূরা যুমার – ১০]
আমিও সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি। ইনশাআল্লাহ শেষটা সুন্দর হবে।

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“বিচ্ছেদ এমনভাবে হয়েছে যে গন্তব্যটাই বদলে গেছে। তার সাথে একজন মানুষকেও নিরবে বদলে দিয়েছে। যে মানুটা অপেক্ষা করতে জানতো না ধৈর্য্য ধরতে কষ্ট হতো। তার এখন সারাজীবন অপেক্ষা করতেও দ্বিধাবোধ হচ্ছে না।”

মুখরের চোখটা ছলছল করছে । ও বলল,,

“মাওলানা তারেক জামিল একটা কথা বলেছিলেন,

এমন ভাবে বিচ্ছেদ হয়েছে যে গন্তব্য বদলে গেছে। একজন মানুষ পুরো শহরকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে।”

এ কথা শুনে মেহবিন ঘুরে দাঁড়ালো তখন মুখর বলল,,

“আমায় একটু জড়িয়ে ধরবে বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন আবার মুখরের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আর মুচকি হেসে মুখরের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মুখর চোখে অশ্রু আর মুখে হাসি নিয়ে মেহবিন কে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,

“তোমায় খুব ভালোবাসি বিহঙ্গিনী। আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই।”

বলতে বলতেই মেহবিনের কাঁধে মুখরের দুই ফোঁটা পানি পরলো। মেহবিন স্থির চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মুখর ওকে ছেড়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

‘নিজের খেয়াল রেখো আসছি! আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ!”

মেহবিন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মেহবিন ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে হাঁটা ধরলো। পেছনে একবার ফিরে তাকালোও না মুখর সেদিকে তাকিয়ে রইল। সে কেন তাড়াতাড়ি করে একবার ও পেছনে না তাকিয়ে চলে গেল তা মুখর ভালো করেই জানে। ও গেট দিয়ে ঢোকা না পর্যন্ত তাকিয়ে রইল মুখর বাড়ির ভেতর ঢুকতেই মুখর গাড়ি নিয়ে চলে গেল। মেহবিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে কাযা সালাত গুলো আদায় করে নিল। তারপর বিছানায় বসে ফোন স্কল করতে লাগলো।
_____________

“সে সব ছাড়ে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের প্রতি মায়া ছাড়তে পারে না। কাউকে বলতেই পারে না শুধু এক চিলতে হাসি মুখে বিদায় নেয় সেই স্থান। কি অদ্ভুত ভালোবাসা তার। সে তার এই ছবির মতোই ঝাঁপসা তাকে দেখে মনে হয় ইশশ যদি তাকে একদম ভালোভাবে বুঝতাম।”

পোস্ট টা পাঁচ মিনিট আগে করা হয়েছে বিহঙ্গিনীর কাব্য এর আইডি থেকে। সাথে অনেক দূরের একটা ঝাঁপসা ছবি। কালো বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় ক্যাপ পরা আর ক্যাপের ওপরে সোনালী রঙের কিছু জ্বলজ্বল করছে। পোস্ট টা চোখে পরতেই মেহবিন লিখলো,,

“তবুও তো সবসময় বুঝে ফেলেন।”

“বুঝতে পারলাম আর কই?”

“পারলেন না বুঝি?”

“বুঝতে পারলেও কিছু করতে পারি না। তাহলে সে বুঝতে পারার মূল্য রইলো কোথায়?”

“কি করতে পারলেন সেটা বড় কথা না বুঝতে পারাটাই বড় কথা।”

“বুঝতে পেরে কিছু না করতে পারার মতো ব্যর্থতা আর কিছুই হয় না।”

“বুঝতে পারেই বা ক’জন। এখনকার সময়ে ভুল বোঝাটা সহজ কিন্তু একটা মানুষের পরিস্থিতি এবং একজন মানুষ কে বুঝতে পারা সবথেকে কঠিন । সেখানে আপনি অনায়াসেই বুঝতে পারেন এটা আপনার অর্জন।”

ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই এলো না। তার কিছুক্ষণ পর বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে আরো একটা পোস্ট হলো দু’জনের একটা কাপল ছবি যেখানে কাব্য তার বিহঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার ক্যাপশনে লেখা।

“আমি আবারও চাই প্রেমে পড়তে! কিন্তু অন্যকারো নয় শুধু তোমার। আমি আবারও চাই প্রেমে পরতে উঁহু একবার নয় আমি বারবার পরতে চাই শুধু তোমার। আমার একান্তই ব্যক্তিগত শুধু তোমার।’

পোস্ট টা দেখতেই মেহবিনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে মুচকি হেসে লিখলো,,

“তো পড়ুন না মানা করেছে নাকি কেউ?’

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“না মানা করেনি আর কেউ মানা করলেই আমি শুনবো নাকি?”

“হ্যা সেটাও ঠিক।”

“আজকের দিনটা সবথেকে ভালো দিনের মধ্যে একটা ছিল।”

“ইনশাআল্লাহ আপনার রোজ রোজ এমন ভালো দিন আসুক।”

“আমিন।”

________________

“নিয়মিত তাকে ভালোবাসুন যাকে ভালোবেসে ঠকবেন না। তাকে ভালোবাসুন যে আপনার জন্য অপেক্ষা করে কখনো ক্লান্ত হয় না। তাকে ভালোবাসুন যে কখনো আপনার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয় না। তাকে ভালোবাসুন যার ভালোবাসা আপনাকে মুগ্ধতায় আটকে থাকতে বাধ্য করে।”

পোস্ট টা কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে করা হয়েছে। এতক্ষন মুখরের এটা নিয়ে আফসোস থাকলেও এখন নেই। এখন আফসোস এর ওখানে মুখে ফুটে উঠেছে এক তৃপ্তির হাঁসি। কতোগুলো লাভ রিয়াক্ট কমেন্ট শেয়ার হয়েছে। ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় একটা পেজ কাব্যের বিহঙ্গিনী। কিন্তু কখনো এই নামের আড়ালের মানুষটাকে কেউ দেখেনি এমন কি তার নাম ও জানে না কেউ।

____________

রাত নয়টা এমন সময় মেহবিনের ফোনে চেয়ারম্যান সাহেব এর একটা কল এলো। মেহবিন ফোন ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

ওপাশ থেকে চেয়ারম্যান সাহেব এর কন্ঠ শোনা গেল।

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনি আজ আসেন নি কেন?

“আমার পার্সোনাল কিছু কাজ ছিল। সন্ধ্যার পর বাসায় এসেছি।”

“ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনার জন্য মিশু রাগ করে আছে। সারাদিন আপনার অপেক্ষায় ছিল।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ওর মনে ছিলনা মিশুকে বলতে।ও বলল,,

“মিশু ওখানে আছে?”

“হ্যা আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে ও সোফায় বসে আছে। সে রাতে খায় ও নি।”

“একটু ওর কাছে যান আমি কথা বলছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

শেখ শাহনাওয়াজ মিশুর কাছে গেলেন আর বললেন,,

“মিশু দেখো তোমার ফুলবন্ধু ফোন করেছে।”

মিশু ওর বাবার দিকে তাকিয়ে ফোনটা কানে নিয়ে বলল,,

“কেউ যেন আমার সাথে কথা বলতে না আসে। আমি সারাদিন তার অপেক্ষায় ছিলাম সে আসেনি কেন?”

মিশুর কথা শুনে মেহবিন একটু হাসলো। কথা বলবে না তবুও নিজের কাছে ফোন নিয়ে নিয়েছে। মেহবিন হেঁসে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

মিশুর কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না। তাই মেহবিন বলল,,

“সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। সালাম শুনে তার জবাব না দিয়ে একটা মুসলিম কখনো চুপ থাকতে পারে না।”

তখন মিশু বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“কেমন আছো ফুল?”

“ফুল কে?”

“তুমি!”

“উঁহু আমি ফুল না, আমি মানুষ। বাবা বলেছে তুমি হলে ফুল।”

“আজ থেকে আমি তোমায় ফুল বলে ডাকবো।”

“কয়েকদিন ধরে ফুল বলে তো আমি তোমায় ডাকি।’

“তাতে কি আমিও ফুল বলেই ডাকবো।”

“আমাদের দুজনের নাম তাহলে সেইম সেইম হলো।”

“হুম আমাদের সেইম সেইম নাম। এখন বলো রাতে খাওনি কেন?

“তুমি আসো নি তাই আমি তোমার ওপর রাগ করেছি।”

‘তা কি করলে রাগ ভাঙবে?

‘কোন কিছুই করলে রাগ ভাঙবে না।”

“কাল যদি আমি অনেকক্ষন তোমার সাথে থাকি তবুও রাগ ভাঙবে না।”

মেহবিনের এ কথা শুনে মিশু খুশি হয়ে গেল আর বলল,,

‘সত্যি ফুল তুমি সত্যি কাল আমার সাথে অনেকক্ষন থাকবে।”

“হ্যা অনেকক্ষন থাকবো। এখন তুমি খেয়ে নাও।”

“আচ্ছা খেয়ে নেব। আচ্ছা কাল কখন আসবে তুমি? তুমি আসলে একজনের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব।”

“কার সাথে ফুল?”

“সেটা সিক্রেট তুমি আগে আসো তো? আর হ্যা কাল তোমার আরেকটা ছোট বন্ধু আছে না কি যেন নাম তুমি যাকে নেত্রী বলো তাকেও নিয়ে এসো ও খুব ভালো আমার কতো যত্ন করলো।”

“ওর নাম তাজেল। শেখ তাজেল!”

‘হ্যা হ্যা তাজেল ওকেও নিয়ে এসো কাল আমরা অনেক খেলবো।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

মেহবিন ফোনটা রেখে দিল। আর ভাবতে লাগলো কার সাথে মিশু ওর পরিচয় করিয়ে দেবে। এদিকে সবাই শেখ শাহনাওয়াজ আর মিশুর দিকে তাকিয়ে আছে। নুপুর বললেন,,

‘মেয়েটাকে নিয়ে আপনাদের দুজনের বাড়াবাড়িটা একটু বেশি না খালুজান।”

এ কথা শুনে মিশু বলল,,

‘ঐ নুপুর ডাক্তার তুমি চুপ থাকো। তুমি কোন কথা বলবা না।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“আমার মেয়ের যা ইচ্ছে হয় তাই করুক নুপুর তোমার কোন কথা না বলাই ভালো।”

“আসলে আমি তেমন কিছু মিন করিনি। আঙ্কেল আপনাদের কথা বাদই দিলাম মেয়েটার বা কি রাগ করেছে ওর ওপর তাতে ওর কি? মেয়েটাও মিশুকে এমনভাবে ওর সাথে কথা বলে যেন ওর পরম আত্মীয়। মিশু যাই করুক না কেন রেগে থাকুক জোরে কথা বলুক কতটা নম্র ভাবে সবসময় মিশুর সাথে কথা বলে। এটা সত্যি ভালো নাকি নিজের স্বার্থের জন্য ভালো হওয়ার নাটক করছে সেটাও তো চিন্তার বিষয় নাহলে জানা নেই শোনা নেই একটা মেয়ে এতো ভালো হবে নাকি। এখনকার সময়ে কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না।”

শেখ শাহনাওয়াজ হেঁসে বললেন,

“তা যায় না তবে মেয়েটাকে যতদূর দেখেছি ততটুকু কে বুঝেছি মেয়েটা সবসময় আলাদা সত্যতা নিয়েই চলাচল করে। কাউকে দেখানোর জন্য সে কিছু করে না। কারন হয়তো মেয়েটা জানে ,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।

কিন্তু আফসোস সবাই এটা মানে না। যাই হোক মিশু চলো খেয়ে নাও এখন।”

‘হ্যা বাবা চলো আমার খুব খুদা লাগছে।”

“হুম চলো তবে একটা কথা মনে রেখো এরপর থেকে খাবারের ওপর রাগ করবে কখনো খাবারের ওপর করতে হয় না মিশু।”

“আমি কোথায় খাবারের ওপর রাগ করলাম আমি তো ফুলবন্ধুর ওপর রাগ করেছিলাম।”

‘এই যে তুমি তোমার বন্ধুর ওপর রাগ করে খাবার খেলে না। এটাই খাবারের ওপর রাগ করা।”

‘আচ্ছা পরে বোলো এখন চলো বাজপাখি কোথায় সেও তো আমি খাইনি বলে খায় নি। তুমিও তো খাওনি। চলো। আচ্ছা তুমি থাকো আমি বাজপাখি কে ডেকে নিয়ে আসছি।”

সে বাজপাখি ডাকতে ডাকতে আরবাজ এর রুমে গেল। আর ওকে নিয়ে এলো তারপর তিনজনে বসে খেতে লাগলো। বাকিরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। নুপুর আরো কিছু বলতো কিন্তু শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় চুপ করে রইলো।

পরেরদিন তাজেল এসেছে মেহবিনের কাছে পরতে। এসে সালাম দিয়ে বলল,,

“ডাক্তার কাল কহন আইছো?”

‘রাতে!”

‘ওহ আইচ্ছা তাইলে তো অনেকক্ষন ঘুরছো। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কিন্তু ভালো আছে তোমাগো দুই জনরে কাইল মেলা সুন্দর লাগতেছিল।

‘হুম!

তাজেল কিছু বললো না কিন্তু একটু পর পর মেহবিনের দিকে তাকাতে লাগলো। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“কিছু বলবে নেত্রী?

‘আইজ আমরা জুলাপাতি করুম তোমার দাওয়াত রইল।”

“জুলাপাতি কি?”

‘তুমি জুলাপাতি বুঝোনা মানে হইলো আমরা সব ছোট পুলাপাইন নিজেগো বাড়ি থিকা চাইল ডাল দিয়ে একসাথে রান্না কইরা খামু।”

‘ওহ আচ্ছা চড়ুইভাতি!”

‘চড়ুইভাতি আবার কি? আমরা তো চড়ুই রে ভাত দিমুনা তাইলে চড়ুইভাতি কেমনে হইবো। তাছাড়া আমরা তো কহনো চড়ুইরে ভাত দিই না।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,

“তোমার জুলাপাতির ভালো নাম চড়ুইভাতি।”

‘মানে শুদ্ধ ভাষা।”

‘হুম।”

“জুলাপাতিরে আবার চড়ুইভাতি রাখলো কোন হালায়। হেয় কি জুলাপাতি করবার যাইয়া চড়ুইরে খাইতে দিছিল।”

“হালা কোন ধরনের শব্দ নেত্রী?”

‘আরে ভুলে মুখ দিইয়া বাইর হইয়া গেছে। যাই হোক তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।”

‘আমিও জানি না। আচ্ছা তোমাদের চড়ুইভাতি, মানে জুলাপাতি কখন?

‘এই তো বারোটার দিকে এহন যাইয়া যারা জুলাপাতি করবো তাগো সবার বাড়ি থেইকা চাল নিমু তারপর লাখড়ি খুটুম (কুড়ানো) তারপর চুলা খুদুম (মাটির ভেতর চুলা বানানো) তারপর সবাই মিলা রান্না করুম।”

“তোমরা রান্না করতে পারো?”

“আমরা ছোট না আমরা কেমনে পারুম। কিন্তু প্রতিবার নওশি আপা দেহায় দেয় হেয় তো আমাগো সাথে জুলাপাতি করে। আর আমরা রান্দি খুব ভালো না হওলেও খাওয়া যায়। কিন্তু হেইডাই আমাগো মেলা স্বাদ লাগে।”

“আচ্ছা!”

“তোমার দাওয়াত রইল কিন্তু।”

“এবার তোমাদের জুলাপাতি আমার বাড়িতেই করো না। আমিও একটু দেখতাম কিভাবে কি কর?”

“তাইলে তো ভালোই হইলো আমরা একটা জায়গা খুজতেছিলাম।”

‘আচ্ছা তাহলে এখানেই করো। আর হ্যা মিশুমনি তোমায় আজ আমার সাথে ওদের বাড়ি যেতে বলেছে।”

‘মিশুমনি কিডা ওহ চেয়ারম্যানের পাগল মাইয়া থুরি মাইয়া।”

‘হুম।”

তাজেল কে পড়ানো শেষ হলে তাজেল সবাইকে ডেকে মেহবিনের কথা বললো সবাই নিজেদের বাড়ি থেকে সব নিয়ে এলো। ওরা মোট সাতজন তাদের মধ্যে নওশিও একজন। ওরা সব করলো চুলা বানালো সব মেহবিন দেখলো রান্না করলো যা যা দরকার মেহবিন নিজের ওখান থেকে দিল। অতঃপর রান্না শেষ করে সবাই গোসল করতে গেল এসে খাবার খাবে‌। তার আগে কলাপাতা কেটে এনে রেখেছে তাজেল আর নওশি। সবার পথমে নওশি এলো মেহবিন নওশিকে জিজ্ঞেস করল,,

“তুমিও ওদের সাথে চড়ুইভাতি করো?”

‘ওরা তো আর রান্না পারে না। তাই ওদের সাহায্য করার জন্য আমি থাকি তাছাড়া আমার ভালো লাগে এটা।”

অতঃপর সবাই আসলে একসাথে কলা পাতায় এক সাথে খাবার খেলো। মেহবিন সবাইকে চকলেট ও দিল।সবাই খুশি মনে বাড়ি চলে গেল। দুপুর দুইটার পর মেহবিন তাজেলকে নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল । বাড়িতে ঢুকতেই মেহবিন একটা মুখ দেখে একটু থেমে গেল। মিশু ওকে দেখেই দৌড়ে এসে ওকে নিয়ে একটা মেয়ের সামনে দার করিয়ে বলল,,

“ফুল ও হলো রাই!”

মেহবিন অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

“রাই ! রাইফা আফনূর!”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন অস্ফুট স্বরে মেয়েটার নাম নিলেও বোধহয় নামটা কেউ শুনতে পায় নি। মেয়েটাও মেহবিনের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না দেখে মিশু আবার বলল,,

“ফুল তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? ও হলো রাইফা আর রাইফা ও হলো আমার ফুল বন্ধু?”

মিশুর কথায় মেয়েটি জোরপূর্বক হেঁসে বলল,,

“ওহ আচ্ছা তাহলে এই তোমার বন্ধু আপু।”

‘হ্যা এটাই আমার বন্ধু।”

মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,,

‘আসসালামু আলাইকুম।”

মেহবিন বলল,,

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“আপনার নামটা যদি বলতেন? আপনি আপুর বন্ধু আমি তো আর আপনাকে সেই হিসেবে বন্ধু বলতে পারি না।”

এবার মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“আমি ডক্টর মেহবিন!”

‘ডক্টর মেহবিন?’

‘জি। আর ও হলো তাজেল আমার বন্ধু।”

তখন তাজেল সালাম দিল রাইফাকে রাইফাও এর জবাব দিল। মেহবিন মিশুকে বলল,,

“ফুল ইনি তোমার কে হয়?”

‘কাকার ছেলে সায়িদ আছে না ওর বউ।”

‘ওহ আচ্ছা।”

“তাজেল চলো আমরা আজ আমরা অনেক খেলবো। ফুল তুমিও চলো।”

তখন পাশ থেকে সায়িদ বলল,,

‘মিশুআপু আমার সাথে তোমার বন্ধুর পরিচয় করিয়ে দেবে না।”

‘তোর সাথে কেন পরিচয় করিয়ে দেব। তোরে আমার ভালো লাগে না। তুই কি রাইফার মতো ভালো নাকি।”

‘আরে আপু তুমিও না সবসময় শুধু আমায় ভুল বুঝো। বাই দা ওয়ে ডক্টর মেহবিন আমি ডক্টর সায়িদ।”

মেহবিন বলল,,

“আপনিও ডক্টর?”

“হুম আমিও ডক্টর। এই তো ছয় মাসের জন্য একটা রিচার্জ করতে গিয়েছিলাম বিদেশ। রাইফাকেও সাথে নিয়েছিলাম কালকেই ফিরেছি আমরা।

মেহবিন রাইফার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সায়িদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওহ আচ্ছা। ফুল চলো আমরা যাই।”

মেহবিন তাজেলের হাত ধরে মিশুর সাথে গেল। তাজেল মেহবিন কে ফিসফিস করে বলল,,

‘ডাক্তার তোমার সাথে আসা উচিত হয় নাই আমার?”

‘কেন কি হয়েছে?”

“এই চেয়ারম্যান বাড়ির হগলে কেমনে চাইয়া রইছে আমার পাইলে। আর আসার পর থেইকা একটা কথাও কইতে পারলাম না। আমার কেমন জানি দম বন্ধ লাগতেছে।”

‘আরে কিছুই হবে না এখন তো আমরা মিশুর ঘরেই থাকবো।”

“এরপর থেইকা আমারে আর আনবা না।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চলো।”

মেহবিন মিশুর ঘরে চলে গেল। তখন চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,,

‘আরিফা ওদের রুমে হালকা নাস্তা পাঠাও।”

‘মনে তো হয়না মেয়েটা খাবে? আজ পর্যন্ত কতোবার আসা যাওয়া হয়েছে কিন্তু মেয়েটা কিছুই খায়নি।”

‘তো কি হয়েছে আজ তো একটা ছোট মেয়েও আছে। কে খেলো না খেলো তা দেখে আমাদের কোন কাজ নেই। আমাদের কাজ অতিথিদের আপ্যয়ন করা তাই করবে।”

“ঐ মেয়েটার সাথে যে মেয়েটা এসেছে সে কে?”

শেখ শাহনাওয়াজ তাজেলের বাবার নাম বলতেই আরিফা জামান বললেন,,

“ও যার বউ পালিয়ে গেছে মেয়েটাকে রেখে। আর সেও একজন কে বিয়ে করে নিয়েছে। ঐ মেয়ের সাথে এই ডাক্তারের কিভাবে পরিচয় হলো। আর এরকম মেয়েকে আমাদের বাড়িতেই কেন বা নিয়ে এসেছে।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“কারন আপনাদের বাড়ির মেয়ে নিয়ে আসতে বলেছে বলে তাই সে এখানে। আর তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে এই জন্যই যে তার পরিচয় সর্বপ্রথম সে একজন মানুষ তাই।’

সবাই তাকাতেই দেখলো বুকে হাত বেঁধে মেহবিন দাঁড়িয়ে। ওকে দেখেই আরিফা জামান একটু ভরকে গেল আর বলল,,

“আমি সেরকম কিছু বুঝাতে চাই নি?”

মেহবিন মুখ শক্ত করে বলল,,

“ওহ আচ্ছা এরকম মেয়ে বলতে কি বুঝিয়েছেন আপনি?”

“মানে ওর মা পালিয়ে গেছে।”

“তো কি হয়েছে ওর মা পালিয়ে গেছে। ও কি একবারও বলেছে ওর মাকে কারো সাথে পালিয়ে যেতে। এতকিছুর মাঝে ওর দোষ কোথায়? তবে এটা জানেন কি ওর মা চলে যাওয়ায় সবথেকে লস কিন্তু ওরই হয়েছে। ওর মা পালিয়ে তো গেছে কিন্তু ওকে একা রেখে গিয়েছে এই পৃথিবীতে । ওর বাবা দু’দিন কান্না করলেও নিজের জন্য সঙ্গী ঠিকই খুঁজে নিয়েছে কিন্তু ও পায়নি একটা মা। তাকে আপনি এরকম মেয়ে বলতে কি বুঝাতে চান। যে মেয়েটার মা পালিয়ে গেছে সেই মেয়েটা খারাপ। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বলছি আমি এই কয়েকদিনে যতগুলো মানুষ কে দেখেছি তাদের মধ্যে আমার নেত্রীর মতো ভালো মানুষ আমি একটাও দেখি নি।”

সবশুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“ডাক্তার আপনি এখানে কিছু লাগবে?”

“হুম মিশু পানি খেতে চেয়েছে।”

“ওহ আচ্ছা। এখানে যা হলো তার জন্য আমি দুঃখিত।”

‘যেখানে আপনার দায় নেই সেখানে দায় দেখাতে যাবেন না চেয়ারম্যান সাহেব। নিজের পুরোনো অভ্যাস বদলান। নিজের দায়গুলো তো ঠিকমতো পালন করতে পারেন না। কিন্তু অন্যের দায় নিজের কাঁধে ঠিকই তুলতে পারেন।”

মেহবিনের কথায় শেখ শাহনাওয়াজ কিছু বললেন না। অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন। মেহবিন আরিফা জামান এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘কাল যদি আমি ফুলকে কথা না দিতাম তাহলে আমার নেত্রীর অপমানের জন্য এখানে আর এক মুহূর্ত থাকতাম না।”

তখন আরিফা জামান বললেন,,

“আমি দুঃখিত আসলে আমি সেভাবে মিন করিনি।”

“কি মিন করেছেন সেটা না হয় থাক আপতত পানি দিন।কথা তো অনেক বলা যায়। কিন্তু কথার আসল মর্ম তো কথা বলার উপস্থাপনের ওপর নির্ভরশীল। যেমন ভাবে কথাগুলো উপস্থাপন করবেন তেমনটাই না বুঝতে পারবে মানুষ জন। যাই হোক এটা নিয়ে কথা বললে কথা বাড়বে। ”

তখন রাইফা পানি নিয়ে এলো । মেহবিন তার দিকে একবার তাকিয়ে পানি নিয়ে চলে গেল। তখন আরিফা জামান বললেন,,

“মেয়েটা আমাকে এতোগুলো কথা শুনালো আপনি কিছুই বললেন না। শুধু আমাকে নয় আপনি তো দুঃখিত প্রকাশ করলেন তাও মেয়েটা আপনাকে কথা শুনালো আপনি কিছুই বললেন না। উল্টো তার কথা শুনে উল্টো দিকে ঘুরে গেলেন যেন আপনি কোন দোষ করেছেন।”

শেখ শাহনাওয়াজ শান্ত স্বরে বললেন,,

“মেয়েটা তো ভুল কিছু বলেনি তাই কিছু বলিনি। সত্যিই তো আমরা একজনের জন্য আরেকজন কে দোষারোপ করে কিছু বলতে পারি না।”

বলেই তিনি চলে গেলেন। আরিফা জামান শুধু তাকিয়ে রইলেন তার ভিশন রাগ হলো। রাইফা একটু পর কিছু হালকা খাবার নিয়ে মিশুর রুমে গেল। মেহবিনের চোখ বাঁধা তাজেল আর মিশু কানামাছি খেলছে। তিনজনের মুখেই হাঁসি। তাজেল আর মিশু একটু পর পর মেহবিন খুচাচ্ছে। এখন ওরা একটা জায়গায় লুকিয়ে গেল। তা দেখে রাইফা খাবারটা বিছানায় রাখলো । এদিকে মেহবিন ওদের খুঁজতে খুঁজতে রাইফার কাছে এসে গেছে ওকে ধরতে গিয়েও মেহবিন থেমে গেল। মেহবিন চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে রাইফাকে দেখে বলল,,

‘আপনি কখন এলেন?”

“একটু আগেই খাবার দিতে এসেছি।”

“ওহ আচ্ছা ফুল, নেত্রী বেরিয়ে এসো আমরা আর কানামাছি খেলবো না।”

মেহবিনের কথা শুনে দুজনেই বেরিয়ে আসলো। মিশু রাইফা কে দেখে বলল,,

“রাইফা তুমি এখানে আসো তুমিও বসো।”

“না আপু আমার কাজ আছে আমি গেলাম।”

“আরে বসোই না কোন কাজ নেই।”

মিশুর জোরাজুরিতে রাইফা বসলো। মেহবিন তাজেল কে নিয়ে একপাশে বসলো। কিছুক্ষণ গল্প করলো মেহবিন একটা কথাও বললো না। মিশু তাজেলকে নিয়ে নাস্তা খেল কিন্তু মেহবিন এক গ্লাস পানিও খেল না। কিছুক্ষণ পর মেহবিন মিশুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য মিশু কিছুই বললো না কারন সে আজ ভিশন খুশি।
___________________

রাতে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে একটা পোস্ট হলো,,

‘আমার উপস্থিতি যাদের মনে খুশি আনতে পারে না। তাদের সাথে আমার দেখা না হোক।”

তবে এবার আরবাজ আর মুখর এর সাথে মেহবিনের আরো একজন পরিচিত মানুষ পোস্ট টা দেখতে পেল। যদিও সে মেহবিনই যে এই পেজের মালিক সেটা জানে না।

____________

‘তাহার সাথে আমার বারবার দেখা হোক। আর তাহার আর আমার প্রতিটা সাক্ষাৎ তাহার মুখে এবং আমার মুখে হাসি ফোঁটার কারন হোক।”

বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে একটা পোস্ট হলো। পোস্ট টা চোখে পরতেই মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,

‘প্রতিটা সাক্ষাতেই প্রতিবারের মতো ফুল দেওয়া হোক। হাসার কারন এমনিতেই হয়ে যাবে।”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

‘তারমানে আমার জন্য তাহার মুখে হাঁসি ফুটে না শুধু ফুলের জন্য হাঁসি ফুটে উঠে।”

‘আমি কখন বললাম শুধু ফুলের জন্য হাঁসি ফুটে ওঠে?”

‘তাহলে প্রথমে কি বললে? সেখানে কি আমাকে মেনশন করেছো একবার ও?”

“সে কি জানে সে নিজেই একটা ফুল। যাকে দেখেই আমার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে।”

‘এ্যা আর কিছু না আরে ফুল তো মেয়েদের কে বলে তুমি আমাকে বলছো কেন? এ কথাটা না হয় আমি বলতে পারি তুমি কেন?

‘এমনিই আমার তো ভালোই লাগছে। তাছাড়া শখের মানুষকে যেকোন নামে সম্বোধন করা যায়।”

‘তাই বলে মেয়েলি সম্মধোন?”

‘তাহলে আপনাকে ফুল না ফল বলবো। এটা বললে ভালো লাগবে।”

“ধুর ধুর এসব কি বলো আমি কাব্যই ঠিক আছি কি ফুল ফল শুরু করছো?”

‘এখন এসব বাদ দিন। আচ্ছা কাব্য আমায় একটা কথা বলুন তো আপনি একজন পুলিশ অফিসার। আপনার কতো কাজ তারমাঝেও আমার পোস্ট দেখে আপনি রোজ পোস্ট করেন। আমি কমেন্ট করলে সাথে সাথে রিপ্লাইও করেন।”

“একটা মানুষ ২৪ ঘন্টা সবসময় ব্যস্ত থাকে না। হ্যা একটা কাজ করছি সেখানে শখের মানুষের জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় বের করে তার পোস্ট দেখা খুব বড় ব্যাপার নয় শুধু দরকার একটু মানসিকতা। তাছাড়া যে সময়টায় আমি বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে তোমার সাথে করা বলি সেটা আমার ছুটির পর আমি বাড়ি আসি তখন। একটা মানুষের যতোই ব্যস্ততা থাকুক সেখান থেকে সময় বের করাটা তার নিজের ওপর ডিপেন্ড করে। সে চাইলেই করতে পারবে এটা বড় কোন ব্যাপার না। শুধু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো আমাকে সময়টুকু বের করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ বলে থাকে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি। ব্যাপারটা হলো সে চেষ্টাই করেনি সময় বের করার।”

কমেন্ট টা পড়ে মেহবিন লিখলো,,

‘বুঝলাম!”

“কি বুঝলে?”

“একটা মানুষ সবসময় ব্যস্ত থাকে না‌।”

“ব্যস এইটুকুই?”

“তো আরো কিছু বোঝার কথা ছিল নাকি?”

“তেমন কিছুই না।”

“ওহ হো মনে পরেছে আরো একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি?”

“কি?”

“এটাই যে মানুষ তার শখের মানুষের জন্য ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করতে পারে।”

“এই কথাটা আগে বললেই হতো?”

“আগে বললে কি হতো?”

“কিছু না।”

“আচ্ছা।”

“মেয়ে তুমি এমন কেন?”

“কেমন?”

‘অদ্ভুত রহস্যময়ী।”

“আচ্ছা।”

______________

দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে গেল তিনটা মাস। এখন গ্ৰামের সবাই মেহবিন কে বেশ ভালোভাবেই চেনে। মেহবিন যতটুকু পারে ততটুকু সবাইকে সাহায্য করে। এমন কি তাদের কিছু বিষয়ে মেহবিনের কাছে পরামর্শ ও নিতে আসে। মেহবিনের সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে নেত্রী গ্ৰামের মানুষজনদের নিয়ে। সে প্রতি শুক্র শনি মিশুর সাথে দেখা করতো। মাঝে মাঝে মুখরের সাথেও ঘুরতে যেতো একটু। মেহবিনকেও শেখ শাহনাওয়াজ পরিবারের একজন করে নিয়েছে এতে অবশ্য কিছু মানুষের অবজেকশন ছিল। মেহবিনের তাদের ব্যাপারে কিছু যায় আসে না। দুদিন ধরে মেহবিনের জ্বর এসেছে। তাজেল দিনের বেলা মেহবিনের কাছেই থাকে। রাত প্রায় দশটা এখন জ্বর অনেকটাই কম। কিন্তু শরীর টা বেশ দুর্বল। ও একা একাই শুয়ে আছে। এমন সময় মুখরের কল এলো। এতো রাতে কল করেছে একটু চিন্তিত হলো আর ফোন ধরলো ও ধরতেই কিছু শুনতে পেল ও বুঝতে পারল মুখরকে কেউ তাড়া করেছে । কিন্তু মুখরের আওয়াজ পেল না। ও ফোন কেটে মুখরের ফোন ট্রেস করার চেষ্টা করলো। ও দেখতে পেল এখন মুখরের লোকেশন ওর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। ও বের হবে বারান্দায় এসে তালা খুললো বের হবে নাকি ভাবতে ভাবতেই কেউ ওর বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে পরলো ও লোকটাকে কিছু করবে তার আগেই ও রক্তাত্ব অবস্থায় মুখরকে দেখতে পেল। ও তাড়াতাড়ি করে মুখরকে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে নিতেই মুখর ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পরে গেল। হাত মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। মেহবিন এ অবস্থা দেখে আঁতকে উঠলেও প্রথমে বারান্দার কেচিগেইট এ তালা মারলো ঘরের দরজার পর্দা টেনে দিল। মুখরকে ধরে বিছানায় শুয়িয়ে দিল। মুখর অসহায় মুখে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর শরীরে অবশিষ্ট শক্তি নেই বোধহয়। মেহবিন গরম পানি বসিয়ে মুখরের রক্ত পরিষ্কার করতে লাগলো। হাতে একটা গুলি লেগেছে তা প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে করেছে। বাসায় সবকিছুই রাখে মেহবিন আজ ও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সমস্যাটা হলো মুখর কে নিয়ে যদি ও ব্যাথায় চিৎকার দেয় তাহলে সবাই জেনে যাবে এই বাড়িতে মেহবিনের সাথে পুরুষ মানুষ আছে। মেহবিন বলল,,

“আপনার তো গুলি লেগেছে এটাকে এখনই বের করতে হবে।’

মুখর অসহায় স্বরে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,,

“সমস্যা নেই তুমি বের কর?”

“আপনি ব্যাথাটা সহ্য করতে পারবেন তো?”

“পারবো।”

বিছানায় মেহবিনের একটা ওরনা ছিল ওটা নিয়ে মুখর নিজের মুখে যতটা ঢোকানো সম্ভব ঢুকিয়ে নিল। আর কামড় দিয়ে ধরে রাখলো। মেহবিনের আজকে নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে এর আগে বোধহয় ও এতটা অসহায় বোধ করে নি। মেহবিন আস্তে আস্তে ধীরে বুলেটটা বের করতে লাগলো যাতে মুখরের কম ব্যাথা লাগে । বুলেটটা বের করার সময় যেন মেহবিনের নিজেরই জান বের হচ্ছিল। মুখর ছটফট করছিল তবুও একটা শব্দ বাইরে যেতে দেয় নি কাপরটা শক্ত করে কামড়ে ধরে রেখেছিল। মেহবিন হাতের ব্যান্ডেজ শেষ করে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসলো। মেহবিন যত্ন সহকারে মুখরকে খায়িয়ে দিল। ওষুধ ও খায়িয়ে দিল। এখন মুখরের বেশ ভালো লাগছে ওর একটু ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন এখন তো উঠতে পারবে না। তাছাড়া বাইরে বের হওয়াও টাফ বারান্দায় বাথরুম মেহবিন এতো ঝামেলা না নিয়ে বালটি করে পানি নিয়ে এলো। তারপর শার্টে হাত দিতেই মুখর বলল,

“কি করছো?”

“দেখতেই তো পাচ্ছেন শার্ট খুলছি ?”

“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ কি বলো শার্ট খুলছো কেন?

“আপনার কি মনে হয় এই অবস্থায় আপনার শার্ট খুলে আমি কি করবো?”

“কি করবে মানে আমার ইজ্জত ও তো হরন করতে পারো?’

“সিরিয়াসলি কাব্য। আপনার এই বাচ্চামো দেখে আমার ভিশন রাগ লাগছে এখন। আপনি কি সারারাত এই রক্ত মাখা ময়লা শার্ট পরেই থাকবেন?”

“তো কি করবো তোমার সামনে খালি গায়ে থাকবো নাকি? আমার লজ্জা করবে না।”

“আপনার লজ্জা লাগবে না। নিচে তো স্যান্ডু গেঞ্জি আছে তাই না। খুলুন তো খুলুন।”

“ওহ হ্যা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

মেহবিন মুখরের শার্ট খুলে দিল আর গামছা দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিল। আর পেছনের বারান্দায় গিয়ে ভালো করে পা ধুয়িয়ে দিল। তারপর বিছানায় শুয়িয়ে দিল আবার ওপরে কম্বলটাও টেনে দিল। ও চেয়ারে বসে বলল,,

“এসব কি করে হলো?’

মুখর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“পুলিশ স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। এমন সময় দেখি কেউ রাস্তায় পরে আছে। সেটা দেখতে বাইরে বেরিয়ে তার কাছে যেতেই কেউ আমার মাথায় কিছু একটা দিয়ে আঘাত করলো। পেছনে ঘুরে দেখি বেশ কয়েকজন ততক্ষণে রাস্তার মানুষটাও দাঁড়িয়েছে। পরে ওদের থেকে জানতে পারলাম নিশাচর পাঠিয়েছে আমাকে শেষ করতে। এতদিন নাকি আমাকে সময় দিয়েছিল কিন্তু আমি তার বিরুদ্ধে গিয়ে বাবুল কে বের করে আবার জেলে ঢুকিয়েছি তাই নাকি আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমি ওদের কথা শুনে রিভলবার বের করি আর দৌড়ে অন্য একটা জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে ওদের দিকে গুলি ছুড়ি। ওদের সাথে গুলাগুলি শুরু হয়। কিন্তু আমি একা কিছুতেই ওদের সাথে পারছিলাম না। গাছের মাধ্যমে নিজেকে আড়াল করি তবুও একটা লেগেই যায় হাতে এদিকে আমার গুলিও শেষ হয়ে যায় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তারপরেই দৌড় লাগাই তারপর জানিনা দৌড়াতে দৌড়াতে কখন এই এলাকায় ঢুকে পরেছি। এদিকে শরীরের শক্তি ও ফুরিয়ে এসেছিল তাই তোমাকে ফোন দিই তখনই ওরা আমায় দেখে ফেলে আবার তাড়া করে। তারপরেই কোন কিছু না ভেবে ওদের থেকে লুকিয়ে এখানে চলে আসি।”

“ওহ আচ্ছা বাকি কথা পরে দেখা যাবে এখন আপনি ঘুমান।”

“তুমি কি করবে? এসো শুয়ে পড়।”

“আপনি ঘুমান আগে তারপর শুবো। আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

মেহবিন মুখরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণের মাঝেই মুখর ঘুমিয়ে পড়লো। মেহবিনের শরীরটাও খুব একটা ভালো না তাই ও নিজেও মুখরের মাথার কাছে বসে বসেই ঘুমিয়ে পরলো। এদিকে রাতে মেহবিনের জ্বর বেরে গেল। ও ঠান্ডায় কাঁপছিল হুট করেই মুখরের ঘুম ভেঙে গেলে ও দেখলো মেহবিনের এই শীতের মাঝেও কিছু নেই ও ঠান্ডায় কাঁপছে। মুখর উঠতেই ওর মাথা আর হাত পচন্ড ব্যাথা ও মেহবিন কে ডাকতে লাগলো আর বলল ওর পাশে শুয়ে পরতে। মেহবিন ঘুমের ঘোরেই মুখরের পাশে শুয়ে পড়লো। মুখর কম্বল টা ভালো করে দিয়ে দিল আর মেহবিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ধরলো। এই মুহূর্তে ও উঠতে পারছে না তাই ওষুধ বা মেহবিনের জন্য কিছুই করতে পারছে না এই জন্য ওর আফসোসের শেষ নেই। কিন্তু একটু উষ্ণতা ঠিকই দিতে পারবে তাই হাতে ব্যাথা থাকা সত্ত্বেও ও মেহবিনকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। কখন যে নিজেও ঘুমিয়ে গেল ও বুঝতে পারল না। সকাল বেলা বাইরে থেকে কারো ডাকে মেহবিনের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে মুখরের বাহডোরে পেল দেখে এক প্রকার চমকেই গেল সে। এদিকে বাইরের আওয়াজ ও তীব্র হচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি করে মুখরকে কম্বল দিয়ে ঢেকে উঠে এলো। বারান্দায় এসেই একপ্রকার থমকে গেল। আর মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,,

“চেয়ারম্যান সাহেব!”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১৫+১৬

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“তার আকাশে মেঘ জমলে আমার আকাশ অন্ধকার হয়। হায় এ কেমন বিষন্নতা?”

পোস্ট টা মাত্রই করা হয়েছে বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে। মেহবিন এমনিই ফোন স্কল করছিল হুট করেই পোস্টটা সামনে আসলো। মেহবিন বুঝতে পারলো আজকের পোস্ট এর জন্য এরকম পোস্ট করা হয়েছে এই আইডি থেকে। মেহবিন কমেন্ট করলো,,

“এটাই এক অর্ধাঙ্গের বৈশিষ্ট্য।”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“আমারটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার এতো কিসের বিষন্নতা বিহঙ্গিনী?’

তাকে শুধু এই মানুষটিই তার হাল জিজ্ঞেস করে। উত্তর দেওয়া টা তার কাছে কঠিন হলেও ,এটা দেখে সে সবসময় মুচকি হাসে। মেহবিন মুচকি হেসে সাদাত হোসাইন এর একটা কবিতা লিখলো।

“আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি।
যত্ন করে খুব খেয়ালে রোজ
আমি’টাকে আমার ভেতর রাখি।

আমি ভীষণ অভিমানের মেঘ
আমি ভীষণ ক্লান্ত একা ভোর।
কষ্টগুলো রোজ জমিয়ে ভাবি
সুখগুলো সব থাকুক না হয় তোর।

আমি ভীষণ মন খারাপের দিন
আমি ভীষণ কান্না মাখা রোদ।
অশ্রুগুলো বর্ষা জলে ভাসাই
ঋণগুলো সব না হয় হল শোধ।

আমি ভীষণ স্মৃতির খেরোখাতা
মলাট জুড়ে হাজার আঁকিবুঁকি।
আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
‘আমি’টাকে আমার ভেতর রুখি।

~ সাদাত হোসাইন

বরাবরের মতো এবারও ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো না। কিন্তু মেহবিন এবার আর চুপ করে রইলো না। সে আরো একটা কমেন্ট করলো।

“আমি হাড়িয়েছি আমার সব প্রিয় জিনিস কে। তবুও আমি এগিয়ে যাই সামনে কে জানে আবার কোন জিনিস প্রিয় হয়ে যায়।”

এখন ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। না সাময়িক সময়ের জন্য হারানোর শোক বড়।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে লিখলো,,,

“নিঃসন্দেহে সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। সাময়িক সময়ের জন্য হারালেও কিছুটা অপেক্ষা করলে সেই জিনিস টা পাবেন। আপনি যাই করুননা কেন? একটা সময়ের পর আপনার অপেক্ষার অবসান হবে। কিন্তু সারাজীবনের জন্য হারালে আপনি যতই অপেক্ষা করুন সেটা আর পাবেন না। তাকে দেখার তৃষ্ণায় আপনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে তবুও তাকে দেখার সুযোগ পাবেন না। তাকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ছটফট করবেন তবুও একটু ছুঁতে পারবেন না। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তার জন্য অপেক্ষা করবেন কিন্তু এ অপেক্ষার শেষ হবে না। ভেতরে ভেতরে তার অপেক্ষা করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবেন তবুও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তাকে পাবেন না। তখন আপনার মস্তিষ্ক জুড়ে একটাই কথা ঘুরবে ইশশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে যদি তাকে দেখতে পারতাম।”

“সেই জন্যই তো সারাজীবনের জন্য যাতে হারাতে না হয় তাই সাময়িক সময়ের জন্য হাড়িয়েছি।”

“না হাড়ান নি একটু সঙ্গ ছেড়েছিলেন শুধু। তবে ছিলেন তো সবসময় আমার সাথেই। হয়তো একটু দূরে।”

“সামনে শুক্রবার তৈরি থেকো তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো। তবে হ্যা তুমি তোমার কালো বোরকা হিজাব নিকাব পরে এসো সাথে সেই ক্যাপ।”

মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ব্যস কথোপকথন শেষ। মেহবিনের মুডটা এখন বেশ ভালো। যদিও তার কাব্য তার জন্য সেই মুডটা ভালো করার জন্যই পোস্ট করেছিল।

____________

“নেত্রী কাল তো খুব বলেছিলে সব পড়াশোনা শেষ তাহলে আজ কি হলো?”

মেহবিনের কথায় তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,

‘আমি তো পড়ছিলাম ডাক্তার কিন্তু কি কও তো আমার মাথা আমারে ধোকা দিছে।সে মনে রাহে নাই।”

“ধোকা কাকে বলে নেত্রী?”

মেহবিনের কথায় তাজেল ওর দিকে তাকালো আর বলল,,

‘আমি তো জানি না কিন্তু এইডা বুঝি। আমার বাপ আমারে একবার কইছিল আমার মায় নাকি তারে ধোঁকা দিয়া চইলা গেছে। এনে তো আমার পড়াও চইলা গেছে তাই কইলাম। মানে হইলো, চইলা যাওয়া মানেই ধোঁকা দেওয়া ঠিক আছে না ডাক্তার।”

তাজেলের এমন কথায় মেহবিন কিছু বললো না এই টুকু বয়সে ওকে ধোকার মানে টা সে শেখাতে চায় না। তখন তাজেল একটা দাত কেলানি দিয়ে বলল,,

“তুমি আমারে সত্যি মারবা ডাক্তার?’ এই দেহো আমার দাঁত কেলানি কি সুন্দর।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

‘তোমার দাঁতে পোকা হইছে বুঝছো নেত্রী। তাই এতো দাঁত কেলানোর দরকার নেই।”

“তুমি হাচা কথা কইতাছাও নাকি ডাক্তার? খাইছে আমি তো এহন ভালো মতো খাইতে পারুম না।

“নেত্রী তুমি না একটা,,

“কি আমি?”

“একটা কিউটের ডিব্বা।”

“আমি তো মানুষ তুমি ডিব্বা পাইলা কই। তোমার চোহে সমস্যা হইছে তুমি ঠিকমতো চোহে দেহো না তোমার চোহের ডাক্তার দেহান লাগবো। তুমি মানুষরে ডিব্বা দেখতেছো।

মেহবিন এবার একটু বেশিই হাসলো। আর বলল,,

“হইছে নেত্রী তুমি মানুষ। আমার তোমাকে ডিব্বা বলা উচিত হয় নি।

“আইচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এহনো আমারে মারবা নাকি ডাক্তার?”

“না! তুমি ঠিক বলেছিলে তোমাকে আমি মারতেই পারবো না।”

“তাইলে কানে ধরাইবা? আমার কান কিন্তু এহনো বিষ (ব্যাথা)।

“তাও করবো না।”

“তাইলে কি করবা?”

‘কিছুই করবো না। তবে হ্যা তুমি এখন আমার সামনে বসে পুরো পড়া মুখস্থ করবা এটা তোমার শাস্তি।”

“তাইলে আমারে চকলেট দিবা?”

“সব পড়া হলে দেব।”

‘আইচ্ছা তাইলে পরতেছি।”

“যদি না দিতাম তাহলে কি করতে?”

“এখন ব্যাগটা নিয়া পলাইতাম।”

“হুম হুম অনেক হয়েছে এখন পড়।

তাজেলের পড়া শেষ হলে মেহবিন ওকে চকলেট দিল। আজ দুজনেরই বন্ধ তাই দশটার দিকে পরতে এসেছিল তাজেল। তাজেল যেতে নিলে মেহবিন বলল,,

“নেত্রী তুমি কিন্তু কিছু ভুলে যাচ্ছো?”

তাজেল একটা হাঁসি দিয়ে বলল,,

“আসসালামালাইকুম?”

“এটা কি সঠিক হয়েছে নেত্রী? তোমাকে বলছি সালামের ভালোভাবে উচ্চারণ না হলে সেটার অর্থের বিকৃতি হয়ে যায়। যদিও অজান্তেই হয় মানুষ বুঝতে পারে না তবে এর এই ভুলের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত, একজন আরেকজনকে বদদোয়া দিচ্ছি। একজন আরেকজনের ধ্বংস, ক্ষতি, অকল্যাণ কামনা করছি।
সওয়াবের বদলে পাপের বোঝা ভারি হচ্ছে।

-যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে,
১) স্লামালাইকুম
২) আস সালামালাইকুম
৩) সেলামালাইকুম
৪) আসলা মালিকুম ইত্যাদি

যার অর্থ শান্তির পরিবর্তে গজব, অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।

আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার। যেমনঃ
১) অলাইকুম সালাম
২) অলাইকুম আস-সালাম
৩) আলিকুম সালাম ইত্যাদি
যার উত্তরেও গজব,অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।
নাঊজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অনেকেই ভুল করে তাই আমাদের সঠিক টা জানতে হবে নেত্রী।এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে। সালামের সঠিক উচ্চারণ হলো,,

“আসসালামু আলাইকুম” অর্থ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”ওয়ালাইকুমুস সালাম” অর্থ আপনার ওপরেও শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে শুদ্ধ ভাবে করতে হবে নেত্রী।”

সবশুনে তাজেল বলল,,

‘আসসালামু আলাইকুম। এবার ঠিক আছে।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। মাশাআল্লাহ এবার ঠিক আছে।”

“আল্লাহ হাফেজ ডাক্তার।”

“আল্লাহ হাফেজ নেত্রী।”

তাজেল চলে গেল। মেহবিন আস্তে আস্তে তাজেল কে সব শেখাচ্ছে। নামাজ ও পরতে বলেছে দাদির সাথে। ও বলেছে আস্তে আস্তে শিখে ফেলবে।

_____________________

“তো বল তো একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে এরকম আচরণ করলি কিভাবে? আচ্ছা আমায় একটা কথা বলতো শুধুমাত্র নিজেদের খায়েশ মেটানোর জন্য তোরা মেয়েদের সাথে এরকম করতি না আরো কোন কারন আছে। যা জানিস ভালোই ভালোই বলে দে তাহলে আর তোদের ঐ শরীরে হাত দেব না।”

মুখর শামীম আর ওদের বন্ধুদের কে এসেই মেরেছে। এখন শান্ত হয়ে বসে ওকে এ কথা জিজ্ঞেস করল। মুখরের কথায় শামীম চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,,

‘আমরা নিজেদের জন্যই এসব করছি।”

‘তাহলে সহজেই মেনে নিলি তোরা। কালকে না বললি তোদের ফাঁসানো হয়েছে। তা রাতে কি নিশাচর এসেছিল নাকি?

নিশাচর নামটা শুনতেই সবগুলো চমকে উঠলো। শামীম আমতা আমতা করে বলল,,

“নিশ্ শশাচর কে?”

মুখর হেঁসে বলল,,

“তোদের ইলজিক্যাল ফাদার?”

তখন এস আই বলল,,

“স্যার ইলজিক্যাল ফাদার কি?”

‘নিশাচর তো ওদের বায়োলজিক্যাল ফাদার না কিন্তু বাবার মতো ওদের এ কাজে ঢুকিয়েছে তাই আমি নাম দিলাম ইলজিক্যাল ফাদার।”

“স্যার আপনিও না।”

‘আমি কিছুই না। তো শামীম বল কতো বছর ধরে নিশাচরের সাথে কাজ করিস। আর এতে তার লাভই বা কি হয়।”

‘আমি চিনি না নিশাচর কে। আমি জানি না তার সম্পর্কে।”

‘তারমানে নিশাচর নামে কেউ একজন তো আছে তাইনা।”

এ কথা শুনে শামীম একটা ঢোক গিললো তা দেখে মুখর বলল,,

‘কিরে আছে তো কেউ একজন নিশাচর নামে তাই না। আচ্ছা সেসব বাদ দে এখন বল তোরা না হয় মেয়েদের ধর্ষণ করে নিজেদের খায়েশ মেটাতি কিন্তু ওরা আত্মহত্যা করলে নিশাচরের কি লাভ হতো?

“আমরা জানি না।’

“না জানলে কেমনে হবে ভাই?”

‘আমাদের শুধু বলা হতো মেয়েকে তুলে তার সর্বনাশ করতে। এর জন্য আমাদের টাকাও দিতো আর ড্রাগস ও দিতো যা আমাদের প্রয়োজন।”

“তারমানে তোর ড্রাগ এডিক্টেড।”

“হ সেই কলেজে ওঠার পর থেইকা। তারপরেই তো আমার অন্ধকার জগতে পা রাখা শুরু যদি একজন ভালো মানুষই হইতাম তাইলে কি এইগুলা করতে পারতাম। তবে আপনে বিশ্বাস করেন আমরা নিশাচর রে দেহিনাই কোন দিন। খালি নাম শুনছি আর হেই আমাগো মালিক। আর এতে তার কি লাভ এইডাও আমরা জানি না।”

মুখর ওদের আরও কিছু জিজ্ঞাসা করে বাইরে বের হয়ে নিজের কেবিনে আসলো । ওদেরকে প্রচুর মেরেছে মুখর। তারপরেও ওদের দেখে ওর ইচ্ছে করছিল ওদের মেরে ফেলতে। একটা ধর্ষকের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ওদের যাতে ফাঁসি হয় এর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে মুখর। কিছুক্ষণ পর মুখরের ল্যান্ড ফোনে একটা কল এলো ও ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,

“কি ইন্সপেক্টর কি খবর?”

মুখর হেঁসে বলল,,

‘আমি ভেবেছিলাম আপনি ফোন দিবেন। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই খবর পেয়েছেন আপনার ছেলেপেলেদের ধরে আনা হয়েছে। অবশ্য খোঁজ তো রাখবেনই হাজার হোক তাদের ইলোজিক্যাল ফাদার বলে কথা।’

“ইলোজিক্যাল ফাদার আবার কি?”

“কিছু না শুধু আমার দেওয়া একটা নাম নিশাচর।”

“আমি ওদের জন্য তোমায় ফোন দিইনি।”

“তাহলে কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন?”

‘এই তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে তোমার উপদ্রব বেড়েছে তাই জন্য।”

“আমাকে ভয় পাচ্ছেন নাকি নিশাচর?”

তখন ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। আর কিছুক্ষণ পর শোনা গেল,,

“নিশাচর নাম আমার আমি ভয় পাই না ভয় দেখাই।”

“আমি কিন্তু এখনো ভয় পাইনি।”

“একটা গুলি খেয়েও মন ভরেনি তাহলে?”

“দশটা খেয়ে মরে গেলেও বোধহয় মন ভরবে না। আমার মন তো আবার বিশাল বড় এতসহজে ভরে না।”

“আমার সাথে মজা করছিস?”

‘না তো আমি তো সত্যি কথা বলছি। যাই হোক আপনি হুট হাট করে তুই সম্পর্কে যান কেন বলুন তো? এমন ভাবে কথা বলেন বোধহয় আপনি আর আমি বন্ধু।”

‘আমি তো বন্ধু তোকে বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই হলি না।”

“পুলিশ কখনো ক্রিমিনালের বন্ধু হতে পারে না।”

“এই ইন্সপেক্টর মুখ সামলে!!”

“আমি তো মুখ সামলেই কথা বলছি আপনার এতো জ্বলছে কেন বলুন তো।”

‘তুই যতো যাই করিস না কেন? শামীমের থেকে আমার কোন খবর পাবি না কারন ওরা কখনো দেখেই নি আমাকে আর আমার সম্পর্কে জানেও না।”

‘আমি কখন বললাম আমি ওদের কিছু করে আপনার ব্যাপারে জানবো। আপনার ব্যাপারে তো আমি জানি শুধু আপনাকে চিনি না। যেদিন চিনবো না সেদিন এমন ভাবে ধরবো তুই চাইলেও নিজেকে আড়াল করতে পারবি না।”

‘আগে চিনে তো দেখা তারপর না হয় ধরার প্রশ্ন আসবে?”

“খুব বেশিদিন এখানে আসা হয়নি তাতেই তোর দুজন মাথাকে বের করা শেষ। এরপরেও তোর এতো এটিটিউড?”

“এতো বছরের গড়া সাম্রাজ্য তুই কি ভেবেছিস এতো সহজেই ভেঙে যাবে নারে আমি অত সস্তা নই।”

“সেটা তো সময় বলে দেবে তুই সস্তা না দামী।’

বলেই মুখর ফোন কেটে দিল। ল্যান্ড লাইনে ফোন করে বলে ও লোকটার ট্রেস করতে পারছে না। মুখর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।

_________________

রাতে খাবার টেবিলে মুখর জানালো ও বাসা ভাড়া পেয়ে গেছে পুলিশ স্টেশনের কাছে কালই ওখানে চলে যাবে সে। প্রথমে শেখ শাহনাওয়াজ আপত্তি করলেও পরে মুখরের কথায় মেনে নিয়েছে । মুখর চলে যাবে শুনে মিশুর মন খারাপ হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মুখর আরবাজ কে নিয়ে নিজের ঘরের চলে গেল। কালকেই চলে যাবে সে। মিশুও গেল ওদের পেছনে ও গিয়ে বলল,,

“পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তুমি সত্যি আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাবে?”

মুখর হেঁসে মিশুকে একটা চকলেট দিয়ে বলল,,

“হ্যা যাবো তবে তোমার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা করে যাবো।”

“তুমি যদি চলে যাও। তাহলে আমায় চকলেট দেবে কে প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার পর?”

“আরবাজ দেবে ওর কাছে চকলেট পাঠিয়ে দেব আমি তোমার জন্য। আবার আমি যখন আসবো তখন নিয়ে আসবো তোমার জন্য।”

“তুমি চলে গেলে আমার খারাপ লাগবে তো।’

“উহু বেশি খারাপ লাগবে না তোমার বন্ধু আছে তো! তোমার সাথে ফোনে প্রতিদিন কথা বলে । আবার তার বন্ধের দিন ও তো তোমার সাথে সময় কাটাবে বলেছে।”

‘তবুও সে তো বন্ধু আর তুমি তো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”

মিশুর কথায় আরবাজ আর মুখর দু’জনেই হাসলো। আরবাজ বলল,,

‘মন খারাপ করিস না মিশু। মুখর আসবে তো মাঝে মাঝে।”

“হুম। তুমি খুব ভালো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”

‘তুমিও খুব ভালো মিশু।”

মিশু হাসলো তারপর চকলেট খেতে খেতে বেরিয়ে গেল। আরবাজ আর মুখর কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে গেল।
____________

সামনে শুক্রবার চলে এসেছে মেহবিন সকাল সকাল নয়টায় গোসল করে এসে রোদে বসলো। এগারোটার দিকে বিহঙ্গিনীর কাব্য চলে আসবে। কিছুক্ষণ এটা সেটা ভাবলো। তারপর সময় দেখে রেডি হতে গেল। কালো বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় কালো ক্যাপ পরে সব তালা দিয়ে রাস্তায় আসলো। রাস্তায় আসতেই দেখলো একটা কালো গাড়ির সামনে কালো পাঞ্জাবি, কালো মাস্ক আর ক্যাপ পরিহিত ব্যক্তি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে চিনতে তার একটুও ভুল হলো না। তাকে দেখে মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। মেহবিন এগিয়ে গেল লোকটা তাকে দেখে ডান হাতটা বুকের বাঁ পাশে রাখলো তা দেখে মেহবিন হাসলো। মেহবিন তার সামনে দাঁড়িয়ে হেঁসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম ইয়া হাবিবি। মাশাআল্লাহ আপনাকে একদম রানীর মতো লাগছে বিহঙ্গিনী।”

“শুকরিয়া আপনাকেও কোন রাজার থেকে কম লাগছে না কাব্য।”

“আয় হায় তোমার মুখে কাব্য নামটা কি যে সুন্দর লাগে। কাব্য নামটা হয়তো তোমার নামকরনে রাঙানো বলে।”

মেহবিন মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে কয়েকটা চিঠি বের করলো আর সামনের মানুষটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“আমার অবসরে আপনাকে নিয়ে লেখা কাব্য।”

কাব্য মুচকি হেসে চিঠিগুলো গাড়িতে রেখে সেখান থেকে বড় একটা লাল গোলাপের তোরা দিয়ে বলল,,

“আপনাকে এত প্রেমময়ী কে হতে বলেছিল বলুন তো? যার প্রতিটা সাক্ষাতই আমাকে নতুন করে প্রেমে পড়ার অনুভূতি দেয়।”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

কাব্যের এমন কথায় মেহবিন হাসলো আর ফুলগুলো নিয়ে বলল,,

‘হয়তো একটা সময়ের প্রেমিক পুরুষের চোখে অনেক প্রেম ছিল তাই তো এতো প্রেমময়ী হতে পেরেছি।”

কাব্য মুচকি হেসে বলল,,

‘এখন প্রেমিক পুরুষ নয় কেন?”

“এখন তো সে আমার অর্ধাঙ্গ। এখন কি সে আর প্রেমিক পুরুষ আছে নাকি!”

‘তার মানে বলছো অর্ধাঙ্গ হওয়ার সাথে সাথে প্রেমিক পুরুষ চলে গেছে।”

‘আমি কখন বললাম প্রেমিক পুরুষ চলে গেছে। বরং অর্ধাঙ্গ হওয়ার সাথে সাথে তার প্রেমিক পুরুষ পদ থেকে প্রমোশন পেয়েছে।”

‘কথায় তোমার সাথে কেউ পারবে না।”

“তাই নাকি?”

“হ্যা তাই।”

“ডাক্তার ইইডা কিডা?”

হুট করে কারো কথায় দুজনেই চমকে উঠলো । পাশে তাকাতেই মেহবিন দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘নেত্রী!”

“ডাক্তার তোমাগো দেহি সব কালা। মাথায় দেহি দুইজনেই ক্যাপ পরছো। এইডা কিডা ডাক্তার তোমার জামাই নাকি?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“জামাই হলে কি করবে নেত্রী।”

“একটা লজেন খাওয়ামু হেতিরে।”

তখন কাব্য বলল,,

‘তাহলে দিয়ে দাও লজেন। আমি তোমার ডাক্তারের জামাই।”

তাজেল একবার কাব্যের দিকে তাকালো আবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তোমার জামাই দেহি শরম পায় ডাক্তার। তাই তো মুখ ঢাইকা আইছে।”

তাজেলের কথায় কাব্য হেঁসে বলল,,

“শরম পাই নাই গো নেত্রী এমনি মাস্ক পরছি।”

“তুমি আমারে চেনো নাকি । আর তুমি আমারে নেত্রী কইতেছো কেন? ঐডা খালি ডাক্তার ডাকবো।”

“আমি তোমার ডাক্তারের জামাই তাই তো তোমায় নেত্রী ডাকছি। আর হ্যা আমি তোমায় চিনি।”

“ডাক্তারের জামাই দেইখা নেত্রী ডাকায় কিছু কইলাম না।”

“অন্যকেউ হলে কি করতে শুনি।”

“ডাক্তারের বাড়ির পাশে একটা বাবলা গাছ আছে না। ঐ গাছে বাইন্ধা পিটাইতাম।”

তাজেলের এমন কথায় কাব্যের মুখটা চুপসে গেল আর মেহবিন জোরে হেঁসে উঠলো। কাব্য বুকে হাত দিয়ে বলল,,

“তোমার ডাক্তারের জামাই দেখে বাইচা গেছি।”

“ডাক্তার তোমার জামাইরে এটটু দেহি। দেহি তোমার থিকা কালা না ধলা।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“দেখাতে পারি যদি একটা কথা রাখতে পারো। তুমি কিন্তু কাউকে বলতে পারবে না এটা আমার জামাই।”

“আইচ্ছা তোমার নেত্রী তোমারে কথা দিতাছে কাউরে কইবো না। এহন কইয়া ফালাও, না তোমার জামাইরে দেখাই ফালাও, আরে না ঐ কালা পাঞ্জাবিওয়ালা মুখ খুলো।”

কাব্য একটু নিচু হয়ে হেঁসে মুখ খুললো তাজেল কাব্যের দিকে একবার তাকালো আরেকবার মেহবিনের দিকে। কাব্যের মুখ দেখে তাজেল হা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,,

“এই পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তোমার জামাই ডাক্তার?”

মেহবিন মাথা নাড়লো। তা দেখে তাজেল মাথায় হাত দিল আর বলল,,

“তাইলে হেইদিন জিগাইলাম তোমার জামাই নাকি তুমি হেইদিন কইলা না ক্যান?”

তখন কাব্য মাস্কটা পরে তাজেলের নাক ধরে একটু টান দিয়ে বলল,,

“সেদিন তো তোমার পা দিয়ে রক্ত বের হওয়ার জন্য তোমার প্রশ্নটা চাপা পরে গিয়েছিল।”

“ওহ আইচ্ছা তোমরা কোথাও ঘুরতে যাইতেছো নাকি?”

“হুম যাচ্ছি তো!”

তখন মেহবিন বলল,,

‘তুমি এখানে কি কর এখন?”

‘কিছু না এমনিই কিন্তু দেহো সেদিন আমার শরীর লুকাইলেও চোখ দেখছিল। আইজ কিন্তু কেউ লুকায় নাই সবাই সব দেখছে।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“তুমি আমার নেত্রী দেখেই কিন্তু সব জানতে পারলে। অন্যকেউ হলে কিন্তু জানতো না।”

“আইচ্ছা ঐডা ঠিক আছে। তা তোমার জামাই এর নাম কি? পাঞ্জাবিওয়ালা তো তুমি রাখছো।”

তখন মুখর কোলে নিয়ে গাড়ির ওপর বসিয়ে বলল,,

“তোমার ডাক্তার আমার আরো একটা নাম রেখেছে জানো। আমার নাম মুখর শাহরিয়ার কাব্য। মুখর শাহরিয়ার আমার বাবা মা রেখেছে আর কাব্যটা তোমার ডাক্তার।”

“একদম আমার মতো তাজেল আমার বাপ মায় রাখছিল আর শেখ আমি লাগাইছি।”

“হুম ঠিক কিছুটা তোমার মতোই শেখ তাজেল। তা তুমি চকলেট খাবে?”

‘না ডাক্তার আমারে মাঝে মাঝেই চকলেট দেয়। এহন খাইতে ইচ্ছা করতেছে না। আমি এহন খেলতে যামু। ওনে গেলেই ভাগ দেওয়া লাগবো।”

“ওহ আচ্ছা।”

“হ এহন আমারে নামায় দেও।”

মুখর তাজেল কে নামিয়ে দিল। তখন তাজেল বলল,,

“আমি কিন্তু তোমারে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কমু ঠিক আছে। নামটা এক্কেরে ভাললাগছে পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি তো আবার পুলিশ তাই পুলিশ ডাকমু ঠিক আছে।”

“ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা তাই ডেকো।”

‘হুনো ডাক্তার রে দেইখা রাইখো হেতিরে জানি কেউ আবার নিয়া যায় না।”

“আমি থাকতে তোমার ডাক্তারে নেবে কে?”

‘তা ঠিক আছে তুমি তো আবার পুলিশ। ডাক্তার আসবা কোন সময়?

মেহবিন বলল,,

“বিকেলে বা সন্ধ্যা হতে পারে রাত ও হতে পারে বলতে পারছি না।”

‘তাইলে কাল আমার ছুটি?”

‘না পড়াবো।”

“একদিন না পরাইলে কি অয়?”

“আজকে না তোমার ছুটি ছিল!”

“হ তাই তো। আইচ্ছা তোমরা যাও আমি গেলাম খেলায় দেরি হইতেছে। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম!

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

তাজেল চলে গেল মুখর সেদিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেয়েটা কিন্তু কিউটের ডিব্বা!”

মুখরের কথা মেহবিন হেঁসে বলল,,

“এখানে নেত্রী থাকলে কি বলতো জানেন? বলতো আপনার চোখে সমস্যা আছে ডাক্তার দেখাতে হবে আপনি মানুষ কে ডিব্বা দেখেন।”

মুখর হাসলো আর বলল,,

“ক্যারেক্টার একটা!”

“যাই হোক চলুন নাকি এখানেই থাকবেন। আশেপাশে মানুষ নেই তাই কি হয়েছে নেত্রীর মতো অনেকেই এখান দিয়ে যাওয়া আসা করবে।”

“হ্যা তা ঠিক বলেছো। উঠো গাড়িতে?”

মুখর আর মেহবিন গাড়িতে বসলো । গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিছুদূর যেতেই মুখর বলল,,

“এক মাস চার দিন পর বিহঙ্গিনীর সাথে তার কাব্যের দেখা হয়েছে।”

“উহু শুধু এক মাস চার দিন নয়। এক মাস চার দিন তিন ঘন্টা উনিশ মিনিট পর।”

“বাহ বিহঙ্গিনী ঘন্টা আর মিনিটের খবর ও রেখেছ?”

“বিহঙ্গিনীর সাথে কাব্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই এই ছোট ছোট বিষয়েও খেয়াল রাখতে হয়।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কি বিহঙ্গিনী তার কাব্যের হাতটা জড়িয়ে ধরবে?”

মেহবিন মুচকি হেসে এগিয়ে এসে মুখরের হাত জড়িয়ে ধরলো ওর কাঁধে মাথা রাখলো। তখন মুখর বলল,,

“এখন কোথায় যাবে?”

“ঘুরতে নেওয়ার কথা আপনার। তাহলে আমি কেন বলবো?”

“আচ্ছা দুপুরে কি খাবে?”

‘আপনার যা পছন্দ?”

“তাহলে চলো আজ জমিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি খাবো। যেটায় আলু দেওয়া থাকে। তুমি কিন্তু তোমার প্লেট থেকে আলু আমায় দেবে।

মুখরের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে দেব। আমি তো জানি আপনার কাচ্চির থেকে কাচ্চির আলু পছন্দ।”

“আমি কিন্তু কাচ্চি শুধু তোমার সাথে খাই।”

“হ্যা হ্যা তাই তো! সেদিন মিস্টার বাজপাখির সাথে কে বিরিয়ানি খেয়েছিল?

মেহবিনের এ কথা শুনে মুখর একটু হাসলো তারপর বললো,,

“ওটায় কিন্তু আলু ছিল না। আমি আলু ওয়ালা কাচ্চি শুধু তোমার সাথে খাই। আচ্ছা বাদ দাও তুমি কিন্তু আমার ক্যাপের ওপরের লেখা দেখো নি।”

“আপনাকে কে বলল আমি দেখেনি আমি দেখেছি ওখানে ইংরেজি তে লেখা BIHONGGINIR KABBO!”

“হুম ভালো আজ তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।”

“আজ আপনার নামে আমার দিনটা লিখে দিয়েছি আপনার যেথায় ইচ্ছে সেথায় যান।”

মুখর একটা শুনশান লেকের জায়গায় নিয়ে গাড়ি থামালো সময়টা দুপুর বারোটা । কেউ নেই আশেপাশে। মুখর বেরিয়ে মেহবিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেহবিন হেঁসে তার হাতে হাত রাখলো। তারপর দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো। হুট করেই মুখর বলল,,

“তোমার নিকাব টা একটু খুলবে বিহঙ্গিনী? বহুদিন হয়ে গেছে আমি মুগ্ধ চোখে তোমার হাঁসি দেখার সুযোগ পাইনি।”

মুখরের এমন কথায় মেহবিন একটু থমকালো । তারপর হেঁসে নিকাব টা খুললো। মুখর মুগ্ধ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মুখর বলতে লাগল,,

“এই বিশ্বে সবচাইতে ভয়ানক জিনিস কি জানো? নারীর চোখ আর হাঁসি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ মানুষ এখানেই আঁটকে যায়।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘এ কথা কে বলেছে?”

“আমি বললাম আর লেখিকা আজরিনা জ্যামি বলল।’

‘লেখিকা বললে ঠিক আছে কিন্তু আমার কাছে আপনার বলার গ্ৰহনযোগ্যতা হলো না।”

“আমায় আন্ডারেস্টিমেট করছো?’

“না তো কোথায় করলাম।”

মুখর মেহবিনের হাত ধরলো আর তার চোখে চোখ রেখে বলল,,

“তুমি আমার শীতের সকালের সোনালী সূর্য কণা,
তুমি মানে নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা।

তুমি মানে নতুন আলো, নতুন দিনের আভাস
আমার মনের মনিকোঠায় শুধু তোমার বসবাস।

তুমি মানে মেঘলা দিনের একটুখানি রোদ
তোমার জন্য পাড়ি দিতে পারি অনেকখানি পথ।

তুমি মানে রোদেলা দুপুরের এক টুকরো মেঘ
তোমায় নিয়ে মনের মাঝে অভিমান অনেক।

তুমি মানে উত্তাল সমুদ্রের এক টুকরো ঢেউ
তুমি ছাড়া আমার বলো আর কাছের কি আছে কেউ।

তুমি মানে গাছের ডালে বিহঙ্গদের বসেছে মেলা
তোমার অপেক্ষায় আছি শেষ যে হয়ে যায় বেলা।

তুমি মানে আঁধার রাতের একটুখানি আলো
আমি তোমায় বাসি আমার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালো।

মুখরের এমন কবিতা শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“কিছু মুহূর্ত এতো সুন্দর হয় কেন কাব্য? ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য নাকি স্মৃতি রাখার জন্য?”

মুখর হেঁসে বলল,,

“দুটোর জন্যই। ভালোবাসাময় এক মুহুর্ত সারাজীবন ধরে পুনঃজীবিত করে রাখার জন্য।”

“হুম!”

“কি হুম?”

“কিছু না!”

“জায়গা টা কেমন?”

“বেশ ভালো।”

“আমার খুদা লাগছে তাহলে যাওয়া যাক।”

“আরেকটু থাকি না?’

“আরো কিছু জায়গায় যেতে হবে সাথে ফুতপাত দিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটতেও তো হবে।”

মুখরের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“আপনি কোন দিন ও শুধরাবেন না।”

“না তোমার কোন সমস্যা?”

“উঁহু কোন সমস্যা নেই এখন চলুন জনাব।”

ওরা দুজনে ওখান থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। ওদেরকে কালো পোষাকে দেখে সবাই ওদের দিকে তাকালো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাপল। মুখর মেহবিনের হাত ধরে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে যা সবার নজর কারলো সব থেকে নজর কারলো দুজনের ক্যাপ যেখানে তাদের নিজেদের দেওয়া নাম আছে সোনালী রঙের। ওরা ভেতরে একটা রুমের মতো সেখানে চলে গেল। মুখর দু’জনের জন্য কাচ্চি অর্ডার করলো। মুখর মাস্ক খুলে ফেললো মেহবিন সেদিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে মুখর বলল,,

“কি দেখছো?”

“আপনিও প্রেমময় কিন্তু কম নন।”

‘আয় হায় এই জালিম মেয়েটা আমার প্রশংসা করছে ভাবা যায়।”

“যে মানুষ টা আমার দিকে সবসময় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে সঠিক সময়ের জন্য আমার জন্য অপেক্ষা করে তার প্রশংসা করবো না।”

“শুধু কি আমি করি তুমিও তো অপেক্ষা কর। আমার অপেক্ষা তো শেষ হবে একদিন। কিন্তু তুমি যার জন্য অপেক্ষা কর তার অপেক্ষার অবসান কি কখনো হবে?”

মুখরের এই কথায় মেহবিনের হাঁসি মুখটা একটু থমকে গেল। তবুও আবার মুচকি হেসে বলল,,

“আল্লাহ চাহে তো হবে। ওসব নিয়ে আমি ভাবি না। জীবনের এতটা পথ একাই পাড়ি দিয়ে এসেছি। এরপর তো আপনি আছেন ঠিকই জীবন কেটে যাবে।”

তখনি ওয়েটার এলো খাবার নিয়ে। মেহবিন বলল,,

“খাবার এসে গেছে আপনার না খুদা লাগছে শুরু করুন।”

“আজ আমি তোমায় খায়িয়ে দিই?”

“কেন সবগুলো আলু নিবেন বলে?”

মেহবিনের এমন উত্তর মুখর আশা করেনি। ও হা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি বললাম কি, আর তুমি বললে কি? তুমি একটা যা তা!”

মুখরের এমন কথায় মেহবিন হেঁসে ফেললো। আর সামনের চেয়ারটা থেকে উঠে এসে মুখরের পাশের চেয়ারে বসলো। আর বলল,,

“নিন খায়িয়ে দিন।”

মুখর হেঁসে বলল,,

“তুমি একটা,,”

“কি?”

“গোলাপ ফুল!”

‘সাবধান গোলাপ ফুলে কিন্তু কাঁটাও থাকে।”

‘তোমার সবকিছুই মধুর লাগে আমার তা হোক স্নিগ্ধতা বা হোক আঘাত।”

‘হুম অনেক হয়েছে এখন শুরু করুন। আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আমারই খুদা লেগে গেছে।”

‘সবসময় কথা কাটানোর ধান্ধায় থাকো। যাই হোক হা করো।”

মুখর মেহবিন কে যত্ন করে খায়িয়ে দিল মেহবিন ও খায়িয়ে দিল। দূর থেকে কেউ একজন এটা দেখে মুচকি হাসলো। সাথে সাথে একটা নিজের আইডি তে পোস্ট ও করলো ” ভালোবাসা সুন্দর যদি মানুষটা সঠিক হয়!’

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা বের হলো আর হাত ধরে রাস্তার ফুটপাতে হাঁটতে লাগলো। একজন ফুল বিক্রেতা আসলে মুখর একটা বেলি ফুলের মালা জরিয়ে দিল মেহবিনের হাতে। পুরো সারাটা দিন নিজেদের মতো কাটালো। কয়েকটা ছবিও তুললো। সন্ধ্যার পর মেহবিন কে পাকা রাস্তায় নামিয়ে দিল সাথে সে ও নামলো। মেহবিন হেঁসে বলল,,

“আজকের দিনটা অনেক সুন্দর ছিল কাব্য।”

‘হুম তা তো সুন্দর হবেই বিহঙ্গিনী যে তার কাব্যের সাথে মিলেছিল।”

‘হুম!”

মেহবিন অদ্ভুত ভাবে মুখরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে মুখর বলল,,

“কিছু বলবে বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,,

“বলার মতো কিছু নেই। কি বলবো?”

“তোমায় নিয়ে?”

“আমার আমিকে নিয়ে কিছু বলার নেই। সময়ই পাইনি কোনদিন নিজেকে নিয়ে ভাবার। কিন্তু সবাই ভাবে কতো অফুরন্ত সময় আমার।”

মেহবিনের এমন কথা শুনে মুখর ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আর বলল,,

“সত্যিই কি পাওনি সময়?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“ছোটবেলায় ছিলাম মুক্ত পাখির মতো এখানে ওখানে নিজের ইচ্ছে মতো উড়ে বেড়াতাম নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কই। দিন তো এমনিই পেরিয়ে যেত। পাখনা দিয়েছিল আমার মা বাবা। মাকে হারালাম সাথে নিজেকে। নীড় পরিবর্তন হলো সেখানে মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা করলাম নিজেকে তাদের সাথে। মানাতে মানাতে জীবনে কিছু মানুষ এলো খুব কাছের হলো মাঝপথে ছেড়ে চলে গেল । আবার একা হয়ে পরলাম তবুও নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা আবার করলাম। আবার নীড় হারালাম নতুন করে নিজের নীড় খুঁজতে লাগলাম একটা নীড় হলো তারপর আপনাদের সাথে পরিচিত হলাম। আপনি এলেন অন্যরুপে অনেক ভাবনা চিন্তার পর আপনাকে নিজের সাথে জড়ালাম। তারপর সাময়িক বিচ্ছেদ হলো আমাদের নিজেকে নিজের একাকিত্বের সাথে আবার মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা করলাম। অতঃপর আমার একাকীত্ব আমার সঙ্গী হলো কিন্তু গন্তব্য বদলে গেল। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আবার তীব্র চেষ্টা করলাম বা করছি। এখন বলুন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কখন পেলাম। জীবনের এতটা সময় পার করে এলাম অথচ নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ই পেলাম না। কি অদ্ভুত তাই না। উর্দু তে যদি বলি,,

“Itna Saal gujar di Per Waqt hi nhi Mila..koe puche Mujhe Aise kya kia Zo Waqt hi nhi Mila.. Eh to Mujhe nhi Malum per Mujhe Waqt hi nhi Mila.

সবশুনে মুখরের চোখটা ছলছল করে উঠলো। অথচ মেহবিনের মুখে স্নিগ্ধ হাঁসি। মুখর অসহায় চোখে একটা হাঁসি দিয়ে বলল,,

Kash Hum Sath hote, Kash Hardin Aise Khubsurat Hota.

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

Honge na! Sabr Kijiye.. Allah Hafiz…

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১৩+১৪

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন শামীমের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কি শামীম ব্যস্ত হয়ে পরলাম তো তাই না!’

শামীম রেগে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তোর তো সাহস কম না। তুই আমার গায়ে হাত তুলোস? তুই জানোস আমি কে? তুই মেম্বারের পোলার গায়ে হাত দিছোস তোর তো এর ফল ভোগ করতেই হইবো।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“কেনরে তুই কি ফলের গাছ লাগিয়েছিস নাকি? আমি না জানলাম তুই কে? কিন্তু এবার তুই বুঝবি আমি কে!

শামীম রেগে মেহবিনের দিকে তেড়ে এলো। ততক্ষণে তাজেল ব্যাট নিয়ে এসেছে মেহবিন তাজেলের হাত থেকে ব্যাট নিয়ে শামীমের হাতে খুব জোরে একটা বাড়ি মারলো। আর বলল,,

“এখন বল কেমন লাগছে?”

শামীম হাত ঝাড়া মেরে আবার মেহবিনের দিকে এগিয়ে এলো। এবার মেহবিন ইচ্ছে মতো শামীমকে মারতে লাগলো মেহবিনের কানে শুধু সাইমার কান্না আর কথাগুলো বাজছিল। সেদিন সাইমা কতোটা অসহায় ছিল আর সেই সুযোগে সে কি করেছিল। মেহবিন কে মারতে দেখে মাঠের সব মানুষ এগিয়ে এলো। শামীমের সাথে চারজন ছেলে ছিল তারা থামাতে গেলেও মেহবিন দুই চারটে তাদেরকেও দিল তাই কেউ আগানোর সাহস পেল না।। মুহুর্তেই মাঝে গ্ৰামে ছড়িয়ে গেল গ্ৰামে আসা নতুন মেয়েটা মেম্বারের ছেলেকে মেরেছে। এতকিছুর মাঝে সাইমার মুখে ছিল তৃপ্তি হাঁসি হয়তো শামীমের এই অবস্থা ওকে প্রশান্তি দিয়েছে‌। তবুও আলাদা একটা ভয় কাজ করছে। না নিজের জন্য নয় মেহবিনের জন্য। মেহবিন ইচ্ছে করে এমন এমন জায়গায় মেরেছে শামীমের যা শামীম কাউকে খুলে বলতেও দ্বিধাবোধ করবে। শামীম মাটিতে শুয়ে আছে মেহবিন জোরে ব্যাটটা ফেলে বলল,,

“এই মেহবিন দূরে ছিল তাই তোর জন্য ভালো ছিল। মেহবিন মুসকান নামটা সরল সহজ হলেও মেহবিন মুসকান তা নয়। মেহবিন হচ্ছে এক জলন্ত আগুন তার থেকে দূরত্ব বজায় থাকাই উত্তম। কাছে এলে ঝলসে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।”

মেহবিন হাঁপিয়ে উঠেছে ও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিল এখানে পানি নেই একটু পানি খাওয়ার দরকার ছিল। মেহবিন নিজেকে শান্ত করে নওশি তাজেল , কুলসুম সাইমার কাছে গেল।ওরা বেশ ভয় পেয়েছে মেহবিনের মার দেখে। মেহবিন যেতেই তখন নওশি বলল,,

“এটা কি করলেন আপু? ওরা যে খারাপ এসব করে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার ছিল?”

“দরকার ছিল নওশি। আমি যদি ভুল না হই তাহলে ওরা এই এলাকায় সব মেয়েদের ইভটিজ করে। ওদের একটা উচিত শিক্ষা হওয়া দরকার। মেম্বারের ছেলে বলে তার সব দোষ মাফ এটা তো কোন কথা হতে পারে না। প্রত্যেককে তার নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।”

তখন তাজেল বলল,,

“ডাক্তার তুমি এক্কেরে সেই কাম করছো। এই শামীম তো নওশি আপারও একদিন হাত ধরছিল। তোমার হাত যহন ধরলো তহন তো মনে হইতেছিল তোমার মতো আমিও ওরে মারি।”

মেহবিন নওশি বলল,,

“এই তোমরা তাদের কিছু বলোনি দেখেই আজ তারা আমার হাত ধরার সাহস পেয়েছে। যদিও এরপর থেকে আর সাহস পাবে না বোধহয়। নওশি তোমায় একটা কথা বলি মানুষ নরমের যম। যত নরম হবে তত মানুষ তার ইচ্ছে মতো তোমায় আচড় করবে। শক্ত হও দেখবে সহজে তোমাকে কেউ আঁচড় করতে পারবে না। এমন একটা যুগে আমরা বাস করি যেখানে মেয়েরা নিরাপদ নয় তাই সব মেয়েদের উচিৎ নিজেদের জন্য হলেও কিছুটা সেল্ফ ডিফেন্স শিখে রাখা। ”

তখন নওশি বলল,,

“আমরা তো আপনার মতো এতো সাহসী নই ডাক্তার আপা। আপনার মতো এই সাহস আর মনোবলের বড্ড অভাব।”

“ভয়কেই জয় করতে হবে নওশি। নাহলে সারাজীবন অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন কাটাতে হবে। তোমার জীবন তোমার অধিকার তুমি কিভাবে নিজের জীবন পরিচালনা করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা জীবন পরিচালনা করেন কিন্তু এর সাথে তোমার ইচ্ছে এবং প্রশান্তিও গুরুত্বপূর্ণ। ”

তখন একজন মেহবিনের কাছে এসে মেহবিন কে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“আপনি না ডাক্তার আপনি এই ভাবে মারতে পারলেন?”

তখন মেহবিন বলল,,

“ডাক্তাররা শুধু বাঁচাতে নয় ক্ষেত্র বিশেষে মারতেও পারে। তাছাড়া ও খুব একটা ভালো কাজ করেনি যে তাকে সালাম করতে হবে। মার খাওয়ার মতো কাজ করেছে তাই মেরেছি।”

“আমার পোলারে মারার ফল কিন্তু তোমার ওপর বেশ ভারী হইবো। আমি কিন্তু চেয়ারম্যানসাব এর কাছে বিচার দিমু। তুমি কেমনে এই গ্ৰামে থাকো সেইটাও দেখুম।

মেহবিন বুঝতে পারলো এটাই তাহলে শামীমের বাবা। মেহবিন তার কথা শুনে শক্ত কন্ঠে বলল,,

“যার কাছে ইচ্ছে তার কাছে বিচার দিন আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আর হ্যা এটা যেন আপনাদের ওপর ভারী না হয়ে যায়। আমার তো মনে হচ্ছে এই গ্ৰাম থেকে যেতে এখনো ঢের দেরি। এখন কথা না বলে আপনার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওখানে দেখবেন ডাক্তার আছে।

মেহবিনের কথা শুনে লোকটা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল। মেহবিন সকলকে নিয়ে বাড়ি চলে গেল। সাইমা বেশ ভয়ে আছে তার বাড়ির ছেলেই শামীম কি হবে আল্লাহ ভালো জানে। সে ভয়ে ভয়ে নিজের বাড়ি ঢুকলো। তখন ওর মা বলল,,

“কিরে শামীমরে নাকি হেই নতুন মাইয়া ডাক্তার মারছে?”

সাইমার কি হলো কে জানে এতক্ষন ভয় থাকলেও এখন কেন যেন ভয়টা কাজ করছে না। সাইমা বলল,,

“হুম মারছে আমিও ওইহানেই আছিলাম।”

“তোর সামনে তোর কাকাতো ভাইরে মারলো আর তুই কিছু কইলি না খাড়াইয়া খাড়াইয়া দেখলি।”

“আমি কিছু কইলে শুনতো নাকি‌। তাছাড়া তোমাগো বাড়ির পুলা খুব ভালো কাম করে নাই। হেয় মাইর খাইছে তার কামের লাইগা‌।

বলেই সে ঘরে ঢুকে পরলো তা দেখে সাইমার মা কিছুটা অবাক হলেন। শামীমকে সে নিজের ছেলের মতো দেখেন তার ছেলে নেই বলে। তিনি তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে গেলেন মারার কথা শুনেই শামীমের মা বাবা ঐদিকে ছুটেছিলেন । তিনি ঘরদোর সব ঠিক করে এখন যাবেন। সাইমারা দুই বোন সাইমার বড় বোন দুই বছর আগে সুইসাইড করে মারা গেছে।। তবে ঘটনা আছে কারন নাকি সে নাকি কাউকে ভালোবাসতো তার বাড়ির লোক মানে নি দেখে সুইসাইড করেছে ‌।

এদিকে আরবাজ আর মুখর এসেছিল এইদিকে সব শুনে ওরা দুজন একেঅপরের দিকে তাকালো। আর হুট করেই হেঁসে উঠলো। তখনি মুখরের ফোনটা বেজে উঠলো ও ফোন ধরলো ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,

“তখন ফোন দিয়েছিলেন কেন?”

“তখন কি আপনি মারামারি করতে ব্যস্ত ছিলেন ম্যাডাম?”

মুখরের কথায় মেহবিন একটু হাসলো আর বলল,,

“এ কথা আপনার কানেও পৌঁছে গেছে?”

“শুধু আমার না পুরো গ্ৰাম জানে যে নতুন ডাক্তার মাইয়া মেম্বারের ছেলেকে পিটিয়েছে। মাইক লাগে নি এমনিতেই ফাইব জি স্পিডে চলে গেছে। অবশ্য গ্ৰামে এরকমই ঘটে কোনকিছুই লাগে না কিন্তু খুব দ্রুত খবর পুরো গ্ৰামে ছড়িয়ে পড়ে।

“ওহ ভালো তা ফোন দিয়েছিলেন কেন?”

“ব্যান্ডেজটা চেন্জ করতে হতো তো!”

“কেন চকলেট বয় কি পারতো না আমায় লাগবে কেন?”

“না চকলেট বয় তো পারতো না। ও আর মিশু তো টুইন মিশুর রক্তে ফোবিয়া আছে। এখন হুট করে জখম দেখে যদি আরবাজ আমায় ফেলেই দৌড় দেয় তাহলে আমার কি হবে?”

মুখরের কথা শুনে আরবাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল আর ধাপ করে একটা কিল বসিয়ে দিল। তা দেখে মুখর আউচ করে শব্দ করে উঠলো তা শুনে মেহবিন বলল,,

“কি হয়েছে আপনার?”

“মিশুর বাজপাখি আমায় মেরেছে ফোবিয়ার কথা বলেছি বলে।”

“আপনি একটা কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন মানুষ পাঞ্জাবিওয়ালা। আপনাকে এসব নেকামোতে মানায় না।”

“সব মানুষই নিজের ব্যক্তিগত মানুষের কাছে খোলা বইয়ের মতো বুজলে বিহঙ্গিনী।আর আমার ব্যক্তিগত মানুষের সামনে আমায় মেপে মেপে নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রেখে কথা বলতে হয় না। তার কাছে আমি স্বাধীন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারি। জীবনের অনেক কিছুই যেগুলো বাকি সেগুলো আমি তার সামনে করি। এতে অবশ্য সে খুশিই হয় কিন্তু ওপরে ওপরে রাগ করে।”

“তো ব্যান্ডেজটা কি আমারই পাল্টাতে হবে?”

“কথার টপিক পাল্টাচ্ছো?”

“আমি তো তাও কথা বলছি আপনার মতো একদম চুপ হয়ে যাই নি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তো তাই বললাম।”

“না থাক আজ আর তোমার পাল্টাতে হবে না। এমনিতেই মারামারি করে টায়ার্ড তুমি। আরবাজ বেশ শক্তিশালী আশা রাখছি ও পালাবে না তাই আজ বরং ওকে দিয়েই করাই‌।”

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ!”

মুখর আরবাজের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরবাজ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আরবাজ এবার মুখরের চুল ধরে ঘুরাতো লাগলো মুখর না না করেও কিছু করতে পারলো না। তখন মুখর বলল,,

“ঐ তুই কোন রাগ ঝাড়ছিস বলতো? তোর সামনে ওর সাথে কথা বলেছি বলে নাকি তোকে ভীতু বলেছি বলে?”

তখন আরবাজ চুল ছেড়ে দিয়ে বলল,,

“গাধার নানা তুই যদি বুঝতি তাহলে তো হতোই?”

বলেই আরবাজ হাঁটা ধরলো। মুখর ও দৌড়ে ওকে ধরলো আর বলল,,

‘ আইচ্ছা আমি না বুঝলাম। এখন বল আমার ব্যান্ডেজ পাল্টাতে পারবি কি না নাহলে আমার হাসপাতালে যাওয়া লাগবে।”

“তোর হাসপাতালে যাওয়া বেটার হবে আমি যদি আবার তোর জখম দেখে পালিয়ে যাই।”

“আরে ভাই আমি মজা করছি আর ঐ কথা এই জন্য বলছি যাতে তারে কনভিন্স করা যায়। পরে মনে হইলো তারে দিয়ে এখন করানো উচিৎ হবে না। এমনিতেও আজ বেশ বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে তারপর আমাদের দুজনকে ওখানে দেখলে নানাজনে নানান কথা বলতো পরে তার অসুবিধা হতো।”

“হুম এখন বাড়ি চল। কিন্তু মিশুর থেকে লুকিয়ে করতে হবে ও ভুলেও যেন তোর জখম না দেখে।”

“হুম চল আমার কিউটি দোস্ত।”

“একদম ন্যাকামি করবি না নাহলে লাত্থি মাইরা এই রাস্তায় শোয়াই রাখমু।”

“আমি ডরাইছি দোস্ত আর ন্যাকামি করুম না। এহন নও বাড়ি যাই।”

এ কথা আরবাজ মুখরের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো। এরা এরকমই এদের কে ম্যাচুয়ার মানুষ মনে হলেও দুজন দুজনের কাছে ন্যাকামিতে সেরা একদম খোলা বইয়ের মতো। মুখর আর আরবাজ বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখল জিনিয়া মুনিয়া নূপুর বাড়ির মহিলা সদস্যরা মেহবিনের মারামারি নিয়ে কথা বলছে মিশু এক পাশে বসে হা করে সব শুনছে। আরবাজ কে দেখে মিশু বলল,,

“বাজপাখি জানো বন্ধু নাকি একটা ছেলেকে খুব মেরেছে?”

মুখর আর আরবাজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“হ্যা মেরেছে কিন্তু তোমরা জানলে কিভাবে?”

তখন মুনিয়া বলল,,

“মেম্বার হাসপাতালে যাওয়ার আগে কাকাকে বলেছে।এর একটা বিহিত নাকি কাকাকেই করতে হবে। আর উনাকে সাথে করেও নিয়ে গেছে।”

‘ওহ আচ্ছা।”

_________________

পরের দিন সকাল বেলা মেম্বার আর চেয়ারম্যান আরো কিছু গন্য মান্য লোক মেহবিনের বাড়িতে গেল । মেহবিন সবাইকে বসিয়ে চা নাস্তা দিল । তারা জানালো যে একটা সালিশ হবে মেহবিনের কালকের কার্যকলাপ নিয়ে। মেহবিন নিজের সম্পর্কে কিছুই বলে নি। শুধু বলেছে এখন ওর সময় নেই সালিশ অনেক সময়ের ব্যাপার তাই ওর বন্ধ মানে শুক্রবার করলে ভালো হয়। তাছাড়া শামীম ততদিনে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠবে ওদের সবাই এবং ওখানে যারা যারা ছিল তাদের নিয়ে করলে ভালো হয় সবাই থাকলে বোঝা যাবে আসলে কার দোষ ছিল। সেখানে যা রায় হবে মেহবিন মেনে নেবে। মেহবিনের যুক্তি দেওয়া কথা শুনে সবাই ওর কথায় রাজি হয়েছে মেম্বার একটু হম্বিতম্বি করলেও চেয়ারম্যান এর ওপরে কথা বলার সাহস হয় নি। এতকিছুর মধ্যেও আজ শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের বাড়ি থেকে কিছুই খেলেন না কারন তিনি তার কথা ভুলেন নি। সবাই চলে গেলে মেহবিন হাসলো এখনকার যুগেও গ্ৰামে সালিশ এর মাধ্যমে অনেক ঘটনার ফয়সালা হয়। সে কেন সময় চেয়ে নিল এটা শুধু সেই ভালো জানে।

পুরো গ্ৰাম সেদিনের পর থেকে বেশ চুপচাপ। সাইমা নওশি কুলসুম কেউ আর মেহবিনের সাথে দেখা করে নি। করেছে শুধু তাজেল ওর সব হলো মেহবিন আর মেহবিন কে সাপোর্ট করাই ওর কাজ। আজ শুক্রবার তিনটার সময় সালিশ বসবে মেহবিন কে দুটোর সময় থাকতে বলেছে শেখ শাহনাওয়াজ মিশুর সাথে না হয় একটু সময় কাটাবে। মেহবিন দুইটার সময় বোরকা হিজাব আর মাথায় ক্যাপ পরে এলো। কারন আজ ওখানে মুখর ও থাকবে। মেহবিন তাজেলকে দিয়ে সাইমা আর নওশিকে পরে আসতে বলে চেয়ারম্যান বাড়িতে এলো । মিশু অনেক কথাই বলল মেহবিন ও শুনলো । সালিশ টা হবে চেয়ারম্যান বাড়ির বাগানে ওখানে সব মানুষ এসে হাজির শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় মেহবিন এলো বাড়ির মহিলাদের বাইরে বের হতে মানা করেছে। শেখ শাহেনশাহ ও আজ এখানে উপস্থিত। মেহবিন কে একপাশে একটা চেয়ার দেওয়া হয়েছে কিন্তু মেহবিন বসে নি। বাকি সবার অবস্থা ভালো হলেও শামীমের অবস্থা খুব একটা ভালো না তাই সে চেয়ারে বসে রয়েছে‌। প্রথমে চেয়ারম্যান সাহেব মেহবিন কে বললেন,,

‘আপনি নতুন গ্ৰামে এসেছেন। গ্ৰামে এসেই গ্ৰামের ছেলেদের গায়ে হাত তোলা আপনার উচিৎ হয় নি।”

মেহবিন মুখটা শক্ত করে শান্ত স্বরে বলল,,

‘শামীমের ভাগ্য ভালো ওকে শুধু মেরেছি আমার হাত ধরার জন্য ওর হাত কেটে ফেলিনি সেটাই বেশি।”

মেহবিনের শান্ত স্বরে বলা কথাটা শুনে শামীম আতকে উঠলো। বাকি সবার মাঝে গুঞ্জন উঠলো। তখন মেম্বার বললেন,,

‘দেখছেন চেয়ারম্যান সাহেব মাইয়ার ত্যাজ দেখছেন। কয় মারছে তাই আমার পুলার ভাগ্য ভালো হাত কাইটা ফালাই নাই তাই বেশি। এরকম জল্লাদ মাইয়া মানুষ আমাগো এলাকায় থাহার কোন অধিকার নাই। ওরে দেইহা আরো মাইয়ারা মারামারি শিখবো।

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“আমি তো হুনলাম ওরা তোমার পথ আটকাইয়া কিছু জিগাস করার জন্য মারছো। এলাকার ছেলেপেলে নতুন দেইখা তোমার পথ আটকাইয়া কিছু জিগাস করতেই পারে তাই তুমি ওগো এইভাবে মারবা।

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“ওখানে কি হয়েছে তাতো আপনি জানেন না তাই না। ওখানে তো আপনি ছিলেন না ওখানে তারা শুধু আমার পথ আটকিয়ে কথা বলছিল নাকি আমার হাত ধরে অসভ্যতামি করছিল তাতো আপনি দেখেন নি। তাহলে এতো সিওর হয়ে কিভাবে বলছেন আপনি যে ওখানে কি হয়েছিল?

হাফ্‌স ইবনে আ’সেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে সব শোনা কথা বলে বেড়াবে।” (মুসলিম ৫)

মেহবিনের এক কথায় পুরো মজলিস চুপ হয়ে গেল। শেখ শাহেনশাহ অপমানে মাথা নিচু করলেন। যদিও মেহবিনের দিকে তিনি তাকিয়েছিলেন কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলেন না উনি। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“তো আপনিই পরিস্কার ভাবে বলুন ওখানে কি হয়েছিল?”

তখন মেহবিন বলল,,

“এখানে ভুক্তোভোগী আমি নই। তাই যে এখানে ভুক্তভোগী তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তো শামীম তুমি বলো তোমাকে কিসের জন্য উনি মেরেছেন?

শামীম একবার মেহবিনের দিকে তাকালো মেহবিন শান্ত দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। শামীমকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ও নিজেও সেদিকে তাকালো শামীম সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল। আর বলল,,

“আসলে সেদিন উনি সাইমার সাথে বেরিয়েছিল তাই আমি ওদের দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোন সমস্যা আছে কিনা? যদি উনি আমাদের গ্ৰাম কে দেখতে চান আমি ওনাকে দেখাবো। আর কোন সমস্যা থাকলে আমি সেই সমস্যার সমাধান করে দিব। ওনার একটা ফোন আসে তখন ভুলে আমার হাতের সাথে হাত লেগে যায়। তারপরেই উনি আমাকে মারতে লাগে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করুন আমার বন্ধুদের?

মেহবিন মনে মনে হাসে নিজেকে শিক্ষিত প্রমান করার জন্য শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে। আর কি সুন্দর করে মিথ্যে গুলো গুছিয়ে বললো। চেয়ারম্যান সাহেব শামীমের বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলেন তারা শামীমের কথার সাথে তাল মেলালো। তখন চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,,

“এখন আপনি বলুন?”

“একজন এতো বড় মেয়েকে নিশ্চয়ই হাত ছোয়া আর হাত ধরার মাঝে পার্থক্য বোঝাতে হবে না। আর সে এমনি কথা বলেছে নাকি অসভ্যতামি করেছে সেটাও বোঝাতে হবে না।

তখন মেম্বার বললেন,,

“আইচ্ছা আমি মাইনা নিমু। যদি সেইখানে থাকা কেউ একজন বলে যে সে জোর করে তোমার হাত ধরছিল আর তোমার সাথে অস্যতামি করছে।”

মেহবিন সবার দিকে তাকালো ওখানে থাকা সবাই চুপ। এতকিছুর মাঝেও মেহবিন তাজেল নওশি আর সাইমা কে দেখতে পেল না। মেহবিন নওশিকে না আশা করলেও সাইমাকে আশা করেছিল। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তখন কেউ সবার পেছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো,,

“আমি দেখছি আমি হেইদিন ডাক্তারের লগে আছিলাম।”

কারো আওয়াজে সবাই পেছনে তাকালো তাজেল দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে সাইমা আর নওশি। তাজেল সবাইকে বলল,,

“সামনে যাইতে দেও আমাগো আমরা হইলাম সাক্ষী।”

সবাই ওদের কে জায়গা করে দিল। শামীম আর ওর বাবা সাইমাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে। শামীম ভয় পাচ্ছে আবার সাইমার ওপর রাগ ও হচ্ছে। ও মনে মনে বলছে এখান থেকে যাক তারপর সাইমার খবর করবে। কিন্তু ও আজ সাইমার মাঝে ভয় দেখতে পাচ্ছে না। তাজেল সামনে আসতেই মেম্বার বলল,,

“ঐ তাজেল তুই হইলাম ছোট পুলাপাইন তোর বড়গো মধ্যে কথা কইতে হইবো কেন? তাছাড়া তোর কথা নেওয়া হইবো না। ”

“কেন নেওয়া হইবো না? আমিও সেইহানের একজন তাছাড়া আমি তো দেখছি শামীম ভাই ডাক্তারের হাত ধরছিল। খালি তাই না আমারেও মেলা বাজে কথা কইছে।”

“তুই চুপ থাক তাজেল বড় গো মধ্যে একদম কথা কবি না।”

তখন সাইমা বলল,,

“ও ছোট থাকলে কি হবে চাচা আমি তো ছোট না। সেই দিন শামীম ভাই আমাগো পথ আটকায়া ধরছিল ডাক্তার আপা রাস্তা ছাড়তে কইছিল হেয় ছাড়ে নাই উল্টা অসভ্যতামি করছে। তারপর ওনার একটা ফোন আইতে উনি ওখান থেকে যাইতে লাগছিল তহন শামীম ভাই ওনার হাত ধরছে। তাই ডাক্তার আপা উনারে মারছে।”

তখন নওশি বলল,,

“সাইমা যা বলছে তা সব সত্য আমিও ওখানে ছিলাম।”

তখন আরো দুই তিনজন ছেলে বলল,,

“আমরাও দেখছি!”

তখন মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“হাজারো মিথ্যার মাঝে শুধু একটা সত্যের জন্য হাত উঠানোর সাহস রাখতে হয়। যখন সেই হাতটা উঠে যায় তখন মিথ্যেটা ফিকে হয়ে যায় সেই একটা সত্যের হাতের সাথে আরো সত্যের হাত উঠে যায়।এভাবেই সত্যের জয় হয়।”

ব্যস শামীম আর ওর বাবা একটা চাপে পরে গেল ওরা ভেবেছিল ওদের ভয়ে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু ওরা ভাবতেই পারে নি নিজের বাড়ির লোক ওকে ফাঁসিয়ে দেবে। পুরো মজলিস আবার ও গুঞ্জন উঠলো। চেয়ারম্যান সাহেব সকলকে থামালেন আর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সবাই নিজেদের মতামত পেশ করলেন তাদের মতে মেহবিন মারলেও এতো মারা উচিত হয় নি। তাই একজন বলল,,

“সামান্য হাত ধরায় তোমার এতটা মারা উচিত হয় নাই।দেখতেছো পুলাডা খাড়াই থাকতে পারতেছে না। হেই হিসেবে তোমার ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগবো।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘সমস্যা নেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। তো বলেন মেম্বার সাহেব কতো টাকা খরচ হয়েছে হাসপাতালে? তবে এর পরে কি হবে সেটা জানি না সেটার ক্ষতিপূরণ আমি দিতে পারবো না।”

“মানে?”

“ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার দয়া করে আপনার কাজ টা করুন?”

তখন মুখর একটা হাঁসি দিয়ে সামনে এলো। এতক্ষন পেছনে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির হাসি হাসছিল সে আর আরবাজ। মুখর এসেই শেখ শাহনাওয়াজ এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

‘শামীম ও তার বন্ধুদের কে এরেস্ট করা হবে। সে গুনে গুনে পাঁচটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এবং তারা সবাই আত্মহত্যা করেছে তাদের মধ্যে শামীমের কাকাতো বোন সাইমার বড় বোন ও একজন। তাদের একেকজনের আত্মহত্যার কারন আলাদা আলাদা বলে জানা গেলেও কারন একটাই তারা সবাই শামীম ও তার বন্ধুদের জন্য ইজ্জত হাড়িয়েছিল। শেষমেশ নিজেদেরকে টিকিয়ে না রাখতে পেরে সবাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।

কথাটা শোনা মাত্রই শামীম লাফ দিয়ে উঠলো তার ঘাম ঝড়তে লাগলো। ওর বন্ধুদের ও তাই। এদিকে সাইমার বাবা আর সাইমা পুরোই থমকে গেল।সাথে পুরো গ্ৰামের মানুষ জন। এস আই সহ আরো কয়েকজন কনস্টেবল এসে শামীম ও তার বন্ধুদের ধরলো। শামীম চিল্লিয়ে বলল,,

“আমি কিছু করি নাই। আমারে এই ডাক্তার ফাসাইতেছে। আমি আর আমার বন্ধুরা যে ধর্ষণ করছি তার প্রমান কি?”

তখন মুখর একটা ফোন বের করে সামনে নিয়ে বলল,

“তার প্রমান তো আমরা তোমার ফোন থেকেই জেনে গেছি শামীম। ডক্টর মেহবিন এমনিই এমনিই শুধু তার হাত ধরার জন্য তোমাকে মারে নি। তুমি যে একটা ধর্ষক সেটা জেনেই এতো মেরেছে। কিন্তু আফসোস তার তোমাকে খুন করতে পারলে তার শান্তি লাগতো কিন্তু কি করবে বলো উনি তো আর খুনি নয়।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“এসব কি মুখর?”

“এখন কি আপনাদের ওর ফোনের ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে প্রমান করতে হবে যে ও ধর্ষক।”

মুখরের কথায় পুরো মজলিস মাথা নিচু করে নিল। কেউ ভাবতেই পারে নি নিজের এলাকার ছেলেই তার এলাকার মেয়েদের ইজ্জত লুট করবে। সেদিন সবার অগোচরে মেহবিন শামীমের ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল কেউ দেখতেই পায় নি। যদিও ওর ভাগ্য ভালো ছিল তাই ফোনটা মাটিতে পরে গিয়েছিল। নাহলে হয়তো বা পেত না। ফোনটা ও নিজেই অন করেছিল সব তথ্য এই কয়েকদিনে সে নিজেই কালেক্ট করে আর সব মুখরকে পাঠায় মুখর এগুলো দেখে বুঝতে পেরেছিল এই জন্যই এই গ্ৰামে আত্মহত্যা বেড়েছিল। তবে এর মধ্যেও আরেকটা কথা এইসবের পেছনেও নিশাচর যুক্ত আত্মহত্যার সাথে নিশাচর এর কি সংযুক্ত থাকতে পারে এটা মুখরের মাথায় আসছে না। কিন্তু সব শুনে মেহবিনের মাথায় ঠিকই এসেছে এর সাথে কি সম্পর্ক।সবাইকে এরেস্ট করা হলে একে একে সবাই বাড়ি চলে গেল। আর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরলো শামীমের খবর।মুখর সবার শেষে সেই পাঁচজনের নাম ও বলেছে সব মেয়ের বাবারা এখানেই ছিল তারা তেরে শামীম আর তার বন্ধুদের মারতে গিয়েছিল পুলিশ তাদের থামায়। তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাইমার বাবা সব শুনেই শামীম কে কয়েকটা থাপ্পর মেরেছে এতোক্ষণ শামীমের বাবা লম্ফঝম্প করলেও এখন নিশ্চুপ। কারন তিনি তার ভাতিজাদের খুব আদর করতেন। সাইমা তো খুব কাঁদছে নওশি ওকে সামলাচ্ছে মেহবিন এসে সাইমাকে সামলালো। শামীম কে নিয়ে যাওয়ার পর মেহবিন বলেছিল ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কি না সকলেও মাথা নিচু করে না করে দিয়েছে। সাইমার বাবা সাইমা কে নিয়ে গেল। তাজেল মেহবিনের হাত ধরে নওশিকে নিয়ে বাড়ির পথে আগালো। হুট করে নওশি বলল,,

“ডাক্তার আপা আজ কিন্তু আপনি আপনার নেত্রীর জন্যই জিতে গেলেন। কারন আমরা আপনার কথায় এখানে এসেছিলাম ঠিকই কিন্তু সব বলার সাহস ছিল না। তাজেল যদি তখন না বলতো আমি আছি নাহলে আমরা সাহস পেতাম না। ঐ যে আপনি বললেন না শুধু একটা হাত উঠানোর সাহস থাকতে হয়। সেই হাতটাই আপনার নেত্রীর। ওর জন্যই সাইমা আর আমি সাহস পেয়েছি।”

তখন তাজেল বলল,,

“আমার ডাক্তার পড়াইতে যাইয়া আমারে কইছে মিথ্যার কাছে মাথা না নুয়াইতে। তোমরা যদি নাও আইতা আমি একাই চিল্লাইতাম আমার ডাক্তারের লাইগা। আমার কথা নিক আর না নিক। কইছে একজন রে কইতে হেই একজন না হয় আমিই হইতাম। হে তো ভুল কিছু করে নাই। ঔ শামীমরে আমার একটুও ভালো লাগে না।”

মেহবিন তাজেলকে কোলে তুলে বলল,,

“আমার নেত্রী সত্যি সত্যি একদিন বড় যোগ্য নেত্রী হবে।”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন নওশি আর তাজেলকে নিয়ে বাড়ি এলো। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো কিছু লোকজন । এগুতেই মেহবিন বুঝতে পারলো ওর জন্যই এসেছে। সবাই মেহবিন কে অনেক দোয়া করলো আর ওর প্রশংসা করলো। মেহবিন সবাইকে বিদায় দিয়ে দেখলো সাইমা দাঁড়িয়ে আছে। তাজেল আর নওশি বাড়ি চলে গেছে আগেই। মেহবিন সাইমাকে ঘরে নিয়ে বসালো। তারপর বলল,,

“কিছু বলবে সাইমা?”

সাইমা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনে আগে থেকেই জানতেন যে আমার বোনরে শামীম ভাই তার ভোগের বস্তু বানাইছিল?”

“আগে থেকেই না দু’দিন আগে জেনেছি। তবে তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না শামীমের সর্বচ্চো শাস্তি হবে। আর তোমার কথাও কেউ জানবে না।

“আমার কথা বাদ দেন। আপনে জানেন বড় আপা শামীম ভাইরে পছন্দ করতো আমারে কইছিল কিন্তু হেই পছন্দের মানুষটাই বড় আপার সবথেকে বড় জিনিসে আঘাত করছে। ওর মানতে খুব কষ্ট হইছে তাই না।”

“তুমি তো শামীম কে ভাই মানতে সবকিছু ঘটার পর তোমার মানতে কি সহজ হয়েছিল। যেখানে তোমার সহজ হয়নি সেখানে তোমার বড় বোন কিভাবে সহজে মানতে পারতো। তাই তো নিয়তির কাছে হার মেনে নিয়েছে।”

“বড় আপার সময় যদি আপনে থাকতেন তাইলে আমার বড় আপারে আর মরা লাগতো না। হয়তো বড় আপার মতো আমিও মরতাম কিন্তু আপনের লাইগা আমার বাচার নতুন আলো দেখতাছি।”

“তোমার মায়ের অবস্থা কেমন এখন?”

‘মা তো শুইনাই অজ্ঞান হয়ে গেছিল। তার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরছে এহন আর কিছু কইতেছে না একদম চুপ হইয়া গেছে।”

“তোমার এখন তোমার মায়ের কাছে থাকা উচিত সাইমা। তাকে তোমার দরকার হয়তো তোমাকে দেখেই তোমার বড় আপার কথা ভুলে থাকতে পারবে।”

“আমি এহন কি করুম আপা?”

“কি করবা মানে কি পুরোনো ভুলে সব নতুন করে শুরু করবা।”

“চাইলেই কি সব ভোলা যায়?”

“না ভোলা যায় না তবে ভুলে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তোমার এখনো অনেকটা পথ পারি দেওয়া বাকি সাইমা। তোমার মা বাবার জন্য হলেও সব ভুলে তাদের নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে হবে। দরকার হলে এই তিক্ত স্মৃতি ভোলার জন্য জায়গা পরিবর্তন করো। কিন্তু হ্যা তোমার জীবনে যা ঘটেছে সেটায় তোমার কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমার দোষ না থাকলেও সাফার তোমাকেই করতে হবে।”

“হ আব্বায় কইছে আমরা এনে আর থাকুম না শহরে বা অন্য কোন জায়গায় চইলা যামু। হের লাইগাই আপনার কাছে আইছি।”

“নতুন জায়গায় গিয়ে নতুনভাবে সব শুরু করো তোমার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।”

মেহবিনের কথায় সাইমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। ও বলল,,

“আমি কোনদিন ও বিয়ে করুম না আপা। আমার জীবনের সাথে কাউরে জড়াইতে পারুম না।

“আরে আরে তোমার বয়স কতো এখনি বিয়ের চিন্তাভাবনা করছো। এখনো অনেক সময় বাকি?

“আমি বিয়ে করলে তারে ঠকানো হইবো। তাই আমি বিয়া করুম না।

“ঠকানো কাকে বলে জানো যেটা তুমি নিজ ইচ্ছায় অন্যায় করো কিন্তু কাউকে না বলে লুকিয়ে করো ধোকা দাও যা তোমার করা উচিৎ না। তোমার সাথে যা হয়েছে তা খারাপ হয়েছে এখানে তোমার দোষ নেই।পৃথিবীতে সবার দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। আমি এটা বলবো না তুমি একেবারে তাকে না জানাও বরং তাকে জানাও। যদি সেরকম কাউকে পাও যে তোমার সবটা জেনে তোমাকে নিজের করতে চায় তবে তাকে বাঁধা দিও না। আর বিয়ে করাটা ফরজ। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে বিয়ে না করে মারা গেলে তোমাকে এবং তোমার মা বাবা কে বিচার দিবসের দিন অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তাই এই চিন্তা কে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল নতুন জায়গায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাও। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। তবে একটা কথা সবসময় মনে রেখো আল্লাহ দেখছেন সবাইকে তিনি তার বান্দাদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না কখনো। ভালো থেকো নিজের ও তোমার মা বাবার খেয়াল রেখো।”

“আমি কি আপনারে জরায় ধরতে পারি ডাক্তার আপা।”

মেহবিন হেঁসে মাথা নাড়ালো সাইমা মেহবিন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“আপনে অনেক ভালো আপা একদম আমার বোনের মতো আমারে বোঝাইলেন। আপনে যা যা করলেন আমাগো লাইগা এই জন্য আমরা সারাজীবন ঋনি থাকমু। আপনার অনেক ভালো হোক আপা।”

মেহবিন সাইমাকে শান্ত করলো আর বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। মেহবিন একদম একা এখন মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওর এই একাকিত্ব কবে ঘুঁচবে এটা ও নিজেও জানে না। মাঝে মাঝে ওর একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ওর জীবনটা এমন কেন? কিন্তু কোথাও থেকে কোন উত্তর আসে না। ভাবতে ভাবতে তখনি মেহবিনের ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলো চেয়ারম্যান সাহেব এর ফোন ও ফোন উঠিয়ে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

ওপাশ থেকে মিশু উত্তেজিত কন্ঠে সালামের জবাব দিল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! বন্ধু! বন্ধু!

“মিশুমনি কি হয়েছে?”

“বাবার না কি যেন হয়েছে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তুমি আসো না প্লিজ।”

“কখন থেকে? আর বাড়ির সবাই কোথায়?”

মিশু কান্না করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,

“সবাই তো নিজেদের ঘরে। আমি বাবার রুমে আসতেই দেখলাম বাবা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আমি ডাকলাম বাবা কথা বলতে চাইলো কিন্তু কথা বলতে পারলো না। বাড়ি তো বাজপাখিও নেই আমি কি করবো? পরে বাবার ফোন দেখতে পেয়েই তোমায় ফোন দিলাম।”

“মিশুমনি কান্না করে না। আমি এখনই আসছি তুমি বাড়ির বাকি সবাইকে ডাকো।”

মেহবিন যেভাবে ছিল সেভাবেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল।বাড়ি থেকে এক দৌড়ে সে সোজা চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়েছে এমনিতেও পাচ দশ মিনিটের পথ ছিল ও দৌড়েই সে বাড়িতে পৌঁছে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এর ঘরের সামনে যেতেই ও শুনতে পেল,,

“আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো তুমি বুঝতে পারছো ভাইয়া? মিশু তো কিছু বুঝতেই পারছিল না। ইনহেলার টা ঠিক সময়ে না পেলে কি হতো বলো তো। তোমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা সেটা তো তুমি জানো ওটা কাছাকাছি রাখতে পারো না সবসময়।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ আস্তে আস্তে বললেন,,

“আরে এখন ঠিক আছি তো। আর কতো বলবি আমজাদ? এতোদিন পর বাড়িতে এলি একটু ভালো ভালো কথা বল।”

সব ঠিক আছে দেখে মেহবিন কথা না বলে পেছনে ঘুরতে নিল তখন আরবাজ বলল,,

“আপনি না বাড়ি চলে গেলেন। আবার এখন এ বাড়িতে মিশু ঠিক আছে তো?”

আরবাজের কথায় মেহবিন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। ও বলল,,

“আসলে মিশুমনি ফোন দিয়েছিল চেয়ারম্যান সাহেব এর নাকি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ও কি করবে বুঝতে পারছিলো না। তাই আমাকে ফোন দিয়েছিল এখানে এসে বুঝলাম আমার কোন দরকারই নেই তাই চলে যাচ্ছিলাম।”

মেহবিন আর আরবাজের কথা শুনে তখন শেখ বাড়ির সকলে শেখ শাহনাওয়াজ এর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মিশুও বেরিয়ে এলো আরবাজ কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে মিশু বলল,,

“ও বন্ধু তুমি এসেছো? জানো বাবা এখন ঠিক হয়ে গেছে কাকা ইনহেলার দিয়ে দিয়েছে। আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না কি করবো । কাকা বলল কাকা না এলে নাকি কি জানি হতো?”

তখন শেখ আমজাদ বলল,,

“ও কে?”

“ও হলো আমার বন্ধু কাকা। আমি ওকে ফোন দিয়েছিলাম আসার জন্য।

মেহবিন বলল,,

“আমি ডক্টর মেহবিন।”

“ওহ আচ্ছা আমি ডক্টর আমজাদ। মিশু তাহলে একজন ডাক্তারকেই ফোন করেছিল।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“মিশু তোমার বন্ধুকে একটু পাঠিয়ে দাও তো।”

তার কথা শুনে মেহবিন ভেতরে ঢুকলো পেছনে আরবাজ আর মিশু ও ঢুকলো।আরবাজ এতোক্ষণ বাড়ি ছিল না। মেহবিন বের হওয়ার পর কিছু ইম্পোর্টেন্ট কাজ পরতেই চলে গিয়েছিল তাই ও জানেনা কি হয়েছিল। মেহবিন ঢুকতেই দেখল শেখ শাহনাওয়াজ আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। মেহবিন জিজ্ঞেস করল,,

“এখন কেমন লাগছে চেয়ারম্যান সাহেব?”

শেখ শাহনাওয়াজ মুচকি হেসে বললেন,,

“ভালো।”

“কিছু বলবেন? না মানে সন্ধ্যে হয়ে আসছে তো বাড়ি যেতে হবে।”

“আমার জন্য এতো তাড়াতাড়ি এসেছেন দেখে ভালো লাগলো হয়তো দৌড়ে এসেছেন ।পাঁচ মিনিট বসে জিরিয়ে নিন পানি খান। তাছাড়া এখানে আপনার লাভ হবে তো,

“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করতে থাকে।” জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করা কি? তিনি বললেন, “এর ফলমূল সংগ্রহ করা।”
(মুসলিম ২৫৬৮)

মেহবিন কিছু বললো না চুপ করে বসে রইল। আরবাজ শেখ শাহনাওয়াজ এর ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। তার হুট করেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল তখনই মিশু আসে। মেহবিন কে ফোন করে সবাইকে ডাকে তখনই শেখ আমজাদ বাড়িতে ঢোকেন মিশুর কথা শুনে দৌড়ে এসে শেখ শাহনাওয়াজ কে ইনহেলার দেন তারপরে উনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। পাঁচ মিনিট পর মেহবিন উঠেই বলল,,

“এবার আমি বাড়ি গেলাম চেয়ারম্যান সাহেব। আমি ভেবেছিলাম আমাকে হয়তো দরকার পরবে তাই তাড়াতাড়ি এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই। এসেছিলাম কিন্তু প্রয়োজনের খাতিরেই তাই প্রয়োজন যখন নেই তাহলে সেখানে থাকার কোন মানে হয় না। আসছি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

” দুঃখিত!”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেন?”

“কিছু না আপনি বাড়ি যান সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়!”

মেহবিন কোন কথা না বলে চলে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ ওদিকে তাকিয়ে রইলেন। আরবাজ ও আর সুযোগ পেল না কিছু বলতে। দরজা দিয়ে বেরুতেই মুখরকে দেখতে পেল। ওদের থানায় রেখেই কাগজকলম এর কাজ শেষ করে এসেছে এখন শামীম অসুস্থ তাই জিজ্ঞাসাবাদ কাল করবে। মেহবিন এগিয়ে গেল মুখরের দিকে। মুখর হেঁসে মেহবিনের হাতে কতোগুলো ফল গুঁজে দিয়ে বলল,,

“আজ কিন্তু দেখা হয়েছিল কিন্তু ফুল দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তোমার বাড়ির দিকে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি বাড়ি ছিলেনা। তাই এগুলো সাথে নিয়েই আসছিলাম। কে জানতো ফুলগুলো তার মালিকের কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে তাই তো না পরে গিয়ে আমার পকেটেই অবস্থান করছিল।”

“আমরা কোথায় অবস্থান করছি এটা ভেবেও আপনার ফুল দেওয়া উচিৎ নয় কি মিস্টার মুখর শাহরিয়ার?”

“আমার ওতো ভাবাভাবির সময় নেই। আমি শুধু আমার কথা রাখবো।”

“আপনি এমন কেন?”

“কেমন?”

“একটা পাগল! যাই হোক এখন এখানে একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা সেফ নয়। আসছি আল্লাহ হাফেজ।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ।ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ।”

মেহবিন চলে গেল মুখর ও বাড়িতে ঢুকলো। তারপর ওখানে গিয়ে আরবাজের থেকে জানতে পারলো শেখ শাহনাওয়াজ অসুস্থ হয়ে পরেছিল তাই মেহবিন এসেছিল। মুখর আর আরবাজ দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিল। নিচে আসতেই মুখর দেখলো আরবাজের মামা আর কাকা ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। মুখর এ দৃষ্টির মানে বুঝলো না। হুট করে আরিফা জামান এর ভাই আরিফ জামান বলল,,

“তাহলে তুমিই আমাদের থানার নতুন ওসি?”

মুখর মুচকি হেসে বলল,,

“জি আঙ্কেল।”

“আসলে আমি বাড়ি থাকলেও কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতাম। যে তোমার সাথে পরিচয় হয়ে উঠতে পারে নি। আর তাছাড়া তেমন দেখাও হয় নি।”

“সমস্যা নেই আঙ্কেল। যে মানুষ কাজ কে ভালোবাসে তার কাছে তার কাজটাই সবার উর্ধ্বে।”

মুখরের কথা শুনে আরিফ জামান হাসলো আর বলল,,

“তা যা বলেছো। আমি হলাম আরিফ জামান আরবাজের মায়ের ভাই মানে আরবাজের মামা।”

“ওহ আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন মামা?”

“ছোট খাটো একটা ব্যবসা করি।”

“ওহ আচ্ছা!”

তখন শেখ আমজাদ বললেন,,

“আমাকে বোধহয় একবারও দেখো নি?”

“জি আঙ্কেল তবে আরবাজের থেকে আপনার ব্যাপারে শুনেছি। আপনি তো অনেক বড় একটা দায়িত্ব নিয়েছেন। পুরো একটা হাসপাতাল আপনি চালান।”

মুখরের কথায় লোকটা হেঁসে বললেন,,

“এগুলো সব ভাইয়ার কিন্তু ভাইয়া চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছে দেখে আমাকেই সব করতে হচ্ছে আপাতত। কতোবার ভাইয়াকে বললাম এসবের দরকার নেই আমি ডাক্তার এতেই চলবে তুমি তোমাদের হাসপাতাল দেখো কিন্তু কে শোনে কার কথা।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,

“কখনো কখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করতে হয় বুঝলি।”

“তুমি আবার নিচে আসতে গেলে কেন ভাইয়া?”

“আমি এখন সুস্থ এখন বেশি কথা না।”

“আচ্ছা তুমি বসো। শুনলাম তুমি নাকি ঐ মেহবিন মেয়েটাকে ঐ বাড়িতে থাকতে দিয়েছো? আবার শুনলাম নুপুরকে নাকি মিশু বাদ দিয়ে ওকে রেখেছে।”

“হুম মেয়েটার যোগ্যতায় সে সবকিছু পেয়েছে। যাই হোক এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।”

“মেয়েটার যোগ্যতা তো আছেই না হলে সরকারী হাসপাতালের ডক্টর বাবুলের পোল খুলতে পারে। আবার আজকের বিষয়েও শুনলাম শামীমের পুরো ঠিকুচিগোষ্টি বের করেছে আবার কয়েকদিন আগে মেরেছেও।”

শেখ শাহনাওয়াজ হেঁসে বললেন,,

“সে হচ্ছে জলন্ত আগুনের এক অগ্নিকন্যা। তাকে দূর থেকে উজ্জ্বল মনে হলেও কাছ থেকে মারাত্বক। তাকে দূর থেকে দেখাই উত্তম কাছে গেলে ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

তার কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আরবাজ আর মুখর হাসলো। তখন মিশু বলল,,

“আমার বন্ধু অগ্নিকন্যা বাবা?”

শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“হুম শুধু খারাপ মানুষের সাথে। এমনিতে তো তোমার বন্ধু একটা ফুল যার সুবাসে সুবাসিত করে অন্যদের কে।”

“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে তো আমার বন্ধু ফুল এরপর থেকে আমি আমার বন্ধুকে ফুল বলে সম্বোধন করবো।

বলেই মিশু আরবাজ এর সামনে গিয়ে বলল,,

“চকলেট দাও বাজপাখি তুমি আজ কাজে বাইরে গিয়েছিলে। আমার জন্য চকলেট আনার কথা ছিল।”

আরবাজ হেঁসে বলল,,

“আমি আনিনি মনে ছিল না।

মিশু আরবাজের চুল ধরে ঘুরাতে লাগল আর বলল,,

“কেন আনোনি তুমি ? তুমি জানতে না আমি অপেক্ষা করবো। পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি প্রতিদিন একটা করে আমার জন্য চকলেট আনে তুমি কেন আনলে না‌।

“আরে ভাই ছাড় আমি এনেছি এমনিই মজা করছিলাম।”

কথাটা শুনে মিশু হাসলো আর ছেড়ে দিল তখন আরবাজ বলল,,

“পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি কি তোকে আজ চকলেট দিয়েছে?”

“না ”

“তাহলে শুধু আমাকে মারলি কেন?”

“সে তো আমায় প্রতিদিন খাবারের পরে একটা করে চকলেট দেয়। সেই জন্যই তো এখন কিছু বলি নি।”

“ওহ আচ্ছা তোর চকলেট আমার টেবিলের ওপর।”

“আচ্ছা!”

মিশু ওপরে চলে গেল। তখন জিনিয়া, মুনিয়া আর আরিফ জামান এর মেয়ে নিসা বলল,,

“ভাইয়া তুমি রোজ রোজ শুধু মিশু আপুর জন্য চকলেট আনো। এখানে তো আমরাও আরো চারজন থাকি তাই না। ”

“তোরা আর ও কি এক হলি নাকি । তোরা বুঝদার আর ও অবুঝ।”

“এখন তোমার চকলেট খাওয়ার জন্য পাগল হতে হবে নাকি আরবাজ ভাইয়া।”

নূপুরের কথা শুনে আরবাজ আর মুখর রেগে গেল। আরবাজ রেগে বলল,,

“কাল কি বলেছিলাম আমি ঐ ওয়ার্ডটা !!”

আরবাজের কথায় সবাই ভয় পেল নুপুর বলল,,

“সরি সরি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আমি সত্যি এটা বলতে চাই নি।”

“এরপরে যদি আমি আর একবার শুনি নূপুর তাহলে সেটাই হবে তোর এই বাড়ির শেষ দিন। আর জিনিয়া মুনিয়া নিসা তোদের জন্যেও চকলেট এনেছি ওগুলো ফ্রিজে রেখে দিয়েছি গিয়ে দ্যাখ আছে।”

তখন জিনিয়া বলল,,

“এখন না আমরা বরং পরে নিয়ে নেব।”

আরবাজ আর কিছু বললো না। ও মুখর কে নিয়ে চলে গেল।

_______________

মেহবিন বাড়ি এসেই দেখতে পেল ওর কেচিগেইট আটকানো এটা দেখে অবাক হলেও বারান্দায় এসে বুঝলো আরবাজ এসেছিল কারন বারান্দায় চকলেট রাখা। সেই কেচিগেইট আটকে রেখে গেছে হয়তো।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে মুয়াজ্জিন সাহেব। মেহবিন আজানের জবাব দিয়ে ওযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল‌। সবশেষে জায়নামাজেই শুয়ে রইলো মেহবিন। তার কিছু ভালো লাগছে একা একা সব করে হাঁপিয়ে গেছে সে । জায়নামাজেই চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ পর কারো আওয়াজ শুনতে পেল মেহবিন ।

“ঐ ডাক্তার বাইরে আসো তো একটু?”

মেহবিন বাইরে বেরিয়ে দেখলো তাজেল আর একজন মহিলা দাঁড়িয়ে। একে সে চেনে তাজেলের দাদি সে। মেহবিন বাইরে এলে তাজেল বলল,,

‘আইজ দাদি ভিজাইনা পিঠা বানাইছে তাই তোমার লাইগা নিয়া আইছি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বাটিটা নিল আর বলল,,

‘ধন্যবাদ নেত্রী! তা তুমি খেয়েছো তো?

“হ খাইছি মজা হইছে অনেক। তাই তো তোমার লাইগা নিয়া আইলাম তুমি এর আগে এই ভিজাইনা পিঠা খাইছো?”

‘খেয়েছিলাম অনেক ছোট বেলায় তারপর আর খাইনি।”

“ওহ আইচ্ছা তোমায় মায় বোধহয় পিঠা বানাইতে পারে না।”

তাজেলের এই প্রশ্নে মেহবিন একটু থমকে গেল। কিন্তু এরপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,

‘আমার মা আমার ছোটবেলাতেই মারা গেছে নেত্রী।”

মেহবিনের কথায় তাজেল কিছু বললো না। তাজেলের দাদি বলল,,

‘মন খারাপ কইরো না কারো মা বাপ সারাজীবন বাইচা থাকে না। সবারই একদিন আল্লাহর কাছে ফেরত যাওয়া লাগবো মানুষ মরনশীল। তুমি পিঠা খায়া নিও। আইজকা আসি‌।”

“আচ্ছা সাবধানে যাইয়েন দাদি।”

তখন তাজেল বলল,,

‘আমার দাদি তোমার দাদি লাগে ডাক্তার?

‘কেন নেত্রী তোমার সমস্যা নাকি আমি যদি তোমার দাদিরে দাদি ডাকি।”

“না না কোন সমস্যা নাই‌। আমার দাদি মানে তোমার দাদি। আমার নওশি আপা মানে তুমি নওশি আপার আপা।”

তাজেলের কথা শুনে মেহবিন হাসলো। মেহবিন তাজেলের গাল ধরে বলল,,

‘তুমিও না নেত্রী যাও এখন বাড়ি যাও গিয়ে পরতে বসো। কাল যদি পরা না হয় তাহলে কিন্তু আমি স্কেল দিয়ে বাড়ি মারবো।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“পারবা না মারতে ডাক্তার। আমি যদি একটা দাঁত কেলানি দিই তুমি আর মারতেই পারবা না আমারে।আমার হাঁসি যে সুন্দর তুমি জানো।”

তাজেলের কথায় মেহবিন কখনোই না হেঁসে পারে না। তাই হেঁসে বলল,,

“না মারতে পারলাম কিন্তু কান ধরে দাঁড় করিয়ে তো রাখতে পারবো।”

“আমার কান অনেক বিষ (ব্যাথা) ডাক্তার। কানে হাত দেওয়া যাইবো না।”

“নেত্রী তুমিও না এতো বাহানা করছো কিন্তু বলতে পারছো না ‘ডাক্তার কাল আমি পরে আসবো। তুমি মারার বা কান ধরে দাঁড় করানোর সুযোগই পাবে না। তা না করে তুমি কিসব করছো।”

“আরে ডাক্তার তোমার লগে মজা নিলাম। আমার পড়া শেষ। আইজ তো ছুটি আছিল আমি পরা শেষ কইরা রাখছি।”

‘তুমি আমার সাথে মজা নিলা ঠিক আছে। কাল শুধু একটু ভুল হোক তারপর দেখাবো মজা কাকে বলে।”

“তুমি কিছুই করতে পারবা না। যহন দেখুম হইতেছে না তহনি ব্যাগ নিয়া পলামু।”

“তবে রে!”

“দাদি তাড়াতাড়ি নও ডাক্তাররে দিয়া বিশ্বাস নাই মারতেও পারে।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“হ্যা মারতেও পারি। দাদি নেত্রীকে নিয়ে সাবধানে যাবেন।”

তাজেল আর ওর দাদি চলে গেলো। মেহবিন ঘরে এসে ঢাকনা উঠালো চারটে পিঠা দিয়েছে। মেহবিন মুচকি হেসে একটা পিঠা খেল। আর বলল,,

“যাদের মা নেই তারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়।”

________________

‘যাদের চোখে যখন প্রচুর বর্ষন চলে তখন সবাই দেখে। কিন্তু যাদের চোখে বর্ষন হয় না অথচ বুকে অসহ্য যন্ত্রনা হয় কিন্তু মুখে থাকে স্নিগ্ধ হাঁসি তখন বুকের ঐ অসহ্য যন্ত্রনাটা কারো চোখে পড়ে না।”

নোটিফিকেশন এর আওয়াজ পেয়ে ফোনটা চেক করতেই মুখরের সামনে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজের নতুন পোস্টটা দেখা গেল। মুখর পোস্ট টা দেখেই পুরো থমকে গেল।

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১২

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“পুরুষ মানুষ একটাই জাতি কিন্তু পুরুষে পুরুষে কতটা পার্থক্য। যেমন একটা পুরুষের কাছেই একটা মেয়ে সবচেয়ে নিরাপদ থাকে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে একটা পুরুষের কাছেই একটা মেয়ে সবচেয়ে অনিরাপদ সাব্যস্ত হয়।”

মুখর শুয়ে শুয়ে ফোন স্কল করছিল এমন সময় ‘কাব্যের বিহঙ্গিনী’ পেজের কিছুক্ষণ আগের করা পোস্ট টা সামনে এলো। কমেন্ট রিয়াক্ট শেয়ারের ঝড় উঠেছে আজ। মুখর বসে ভাবতে লাগলো আজ নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। কারন কাব্যের বিহঙ্গিনী তার পারিপার্শ্বিক বিবেচনা করেই সর্বদা পোস্ট করে। পোস্ট টা মাগরিবের নামাজের সময়ের পর করা হয়েছে‌।

মেহবিন খাবার খাচ্ছিল এমন সময় ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলো। বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে নতুন পোস্ট করা হয়েছে,,

‘আমি তোমার দ্বিধায় বাচি, তোমার দ্বিধায় পুরে যাই।”

মেহবিন খাওয়া শেষ করে মুচকি হেসে কমেন্ট করলো,,

“এটা কি কোন কথা না কবিতা?”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“কোন কথাও না আর কবিতাও না এটা আমার অনুভূতি।”

‘যদিও আমি শুনি নি তবে এটা বোধহয় কোন গানের লাইন।”

‘হয়তো বা আমিও শুনিনি তবে ফেসবুকে ক্যাপশন দেখেছি পরে মনে হলো এটা আমার সাথে মিলে যায়।”

“তা আমায় নিয়ে কিসের দ্বিধা আপনার?”

‘আমার মনে হয় তোমাকে আজ পর্যন্ত আমি পুরোটা চিনতে পারি নি।”

‘অথচ আপনিই আমাকে সবথেকে ভালো চেনেন।”

‘চিনতে আর কোথায় পারলাম।”

“পারলেন না বুঝি?”

‘আমার মনে হয় তুমি কোনকিছুর অপেক্ষায় আছো। আচ্ছা তুমি কিসের অপেক্ষায় থাকো? কিসের এতো অপেক্ষা তোমার?”

প্রশ্নটা দেখে মেহবিন একটু অপ্রস্তুত হলো তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে লিখলো,,

“হুমায়ূন আহমেদ এর রজনী উপন্যাসে একটা উক্তি আছে জানেন,,
❝মানুষ হয়ে জন্মানোর সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে মাঝেমাঝে তার সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে যেতে পারেনা। তাকে অপেক্ষা করতে হয়। কিসের অপেক্ষা তাও সে ভালোমতো জানেনা।❞

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বরাবরের মতো ওপাশ থেকে আর কোন কমেন্ট এলো না । মেহবিন তা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা উপন্যাস এর বই নিল বারান্দায় গেল। রাতের নিরব পরিবেশে নিজের মতো সময় কাটাতে লাগলো।
_________________

রাতে শেখ বাড়ির খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে বসেছে। শেখ শাহনাওয়াজ মেয়েকে খাওয়াচ্ছেন আর নিজেও খাচ্ছেন। হুট করে মিশু বলল,,

“এই যে নূপুর ডাক্তার তুমি কি আমাদের বাড়ি থেকে যাবে না?”

মিশুর এমন কথায় সবাই মিশুর দিকে তাকালো। কিছুজন রেগেই তাকালো। মিশুর প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরল ডক্টর নূপুর। সে বলল,,

“কেন মিশু আপু আমি থাকলে কি তোমার সমস্যা হবে।”

“না কিন্তু তোমার তো কাজ শেষ। এখন তো আমার বন্ধু আছে। তাহলে তুমি এ বাড়িতে থেকে কি করবে?”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“কে এ বাড়িতে থাকবো আর কে থাকবো না সেইটা না হয় আমিই ভাবমু। নূপুর তোমার ডাক্তার হইলেও সে বউমার বোনের মেয়ে মানে তোমার খালাতো বোন। তার কাজ না থাকলেও হেয় এই বাড়িতেই থাকবো যেমনটা আগে থাকতো।”

“কেন নূপুর ডাক্তারের মা বাবা নেই নাকি যে এখানে থাকবে।”

মিশুর এই কথায় শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“মিশু এভাবে বলতে হয় না। ও তোমার বোন হয় তো।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“তুমি পাগলকে কি বোঝাচ্ছো শাহনাওয়াজ।”

পাগল শব্দটা মিশু সহ্য করতে পারে না। মিশু পাগল শুনেই কাঁচের গ্লাসটা ফেলে দিল। আর চিৎকার করে বলল,,

“আমি পাগল নই!”

মিশুর এরকম চিৎকারে সবাই চমকে উঠলো। শেখ শাহনাওয়াজ মেয়ের হাত ধরে বলল,,

“মিশুমনি শান্ত হও তুমি তো পাগল নও তাহলে।”

মিশু চিৎকার করেই বলল,,

“তাহলে তোমার বাবা কেন বলল।”

“মিশু শান্ত হও আর কেউ তোমায় পাগল বলবে না।”

“তোমার বাবা আমায় পাগল বলল কেন?”

“ওটা এমনিই বেরিয়ে গেছে তুমি শান্ত হও খেয়ে নাও।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“এমনি এমনি বলি নি পাগল কে পাগল বলেছি তাতে কি হয়েছে?”

মিশু এবার শেখ শাহনাওয়াজ এর হাত ছাড়িয়ে পানির জগটা আছাড় মারল। আর চিৎকার করে বলতে লাগল,,

“আমি পাগল নই আমাকে পাগল বলবে না। নই আমি পাগল তুমি শুনতে পাচ্ছো।”

বলতে বলতেই ওখান থেকে সরে এলো আর একটা ফুলদানি ভেঙে ফেললো। তখন আরবাজ উঠে ওকে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,,

“আমার বোনকে যে পাগল বলবে তাকে কিন্তু আমি ছেড়ে কথা বলবো না। শেখ শাহেনশাহ নিজের জবানকে কন্ট্রোলে রাখুন নাহলে কবে জানি কারো হাতে আপনার জবান বন্ধ হয়ে যায়। দুদিন আগে না ইস্তেমা থেকে ফিরলেন অথচ ভেতরটাই শুদ্ধ করে আসতে পারলেন না।”

“বাজপাখি!”

“কেউ আর তোকে পাগল বলবে না মিশু বাজপাখি আছে তো!”

আরবাজ কোন রকমে মিশুকে সামলালো। আর ওকে নিয়ে ওপরে চলে গেল । তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘বাবা বলে এটা ভেবো না সবসময় তোমাকে ছেড়ে দেব। একদিন কেউ গুনে গুনে তোমার কৃতকর্মের হিসাব নেবে। এটা কেন ভুলে যাও। আর হ্যা পাগল কাকে বলছো সেটাও একটু খেয়াল করো মিশু এই শেখ বাড়ির সন্তান আমার মেয়ে সে খবরদার বলে দিচ্ছি এরপর যদি পাগল ওয়ার্ড টা ইউজ করো তাহলে আমি ভুলে যাব তুমি আমার বাবা।”

“শাহনাওয়াজ তুই কিন্তু বেশি,”

“আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”

বলেই শেখ শাহনাওয়াজ না খেয়েই চলে গেলেন। পুরো পরিবেশটাই একপ্রকার থমকে গেল। কিছু কিছু মানুষের মুখে অদ্ভুত হাসি ও দেখা গেল। তাদের মধ্যে ডাক্তার নূপুর ও একজন। মুখর মিশুর আওয়াজ পেয়ে নিচে এসেছিল সবকিছু ওপরে দাঁড়িয়েই পর্যবেক্ষন করেছে সে। তার ভালো লাগছিল না বলে সে আজ রুমেই খেয়ে নিয়েছে।

___________

“ডাক্তার আজ ঘুরতে যাবা। তুমি কিন্তু এই গ্ৰামের আসার পর থেইকা ঘুরতে যাও নাই।”

“পরার সময় ঘুরতে যাওয়ার কথা আসলো কোথা থেকে নেত্রী।”

সকাল বেলা সময়টা সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত মেহবিন তাজেলকে পড়ায়। আজ ও পড়াচ্ছিল হুট করেই পড়ার মাঝেই তাজেল ঘুরতে যাওয়ার কথা বলল। তাজেল মাথা চুলকিয়ে বলল,,,

“আজ পরতে ভাল লাগতেছে না ডাক্তার?”

“তাহলে তোমার বাবার কথাটা ধরে নেব নাকি নেত্রী। তোমার পরতে ভালো লাগতো না তাই পড়া বাদ দিয়েছিল।”

“ধুরু তুমি কিসের মধ্যে কি টাইনা আনতেছো।তুমি কিন্তু দুই দিন ধইরা আমারে পরাইতেছো। আমি কিন্তু এই দুই দিন ভালো মতো পরছি খালি আইজ কইলাম এই কথা।”

“আচ্ছা!”

“হ এহন কও তুমি ঘুরতে যাবানি?”

“আমি তো ঘুরতে ঘুরতেই বাড়ি আসি।”

‘হেই ঘুরা আর এই ঘুরা কি এক নাকি।”

“তাহলে কি?”

“আইজকা তুমি হাসপাতাল থেইকা আসার পর আমি তুমি, কুলসুম আর নওশি আপা ঘুরবার যামু। এই আমগো গ্ৰামডাই চক্কর মারুম। নওশি আপা সেই দিনের পর থিকা ঘরের বাইরে বাইর হয় না।”

“তারমানে নওশির জন্য বলতেছো?”

“হ এই তো বুঝছো।”

“আচ্ছা তাহলে যাবো । তবে আরেকজন কেও সাথে নেব। এই যে আমার বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিট পর যেই বাড়িটা আছে শামীম নামের ছেলের কাকাতো বোন ওকেও নেব। তুমি বাড়ি যাওয়ার সময় ওকে একবার বলে যেও।”

“তুমি শামীম ভাইরে চিনলা কেমনে?”

‘চিনি না শুধু নাম শুনেছি। মেয়েটার বাড়ি কাল গিয়েছিলাম অসুস্থ ছিল সে কিন্তু আমি তার নাম জানি না। শামীম নামটা শুনেছিলাম।”

“মাইয়াডা রোগা পটকা আছিল তাই না ?”

“হুম!”

‘তাইলে তুমি সাইমা আপার কথা কইতেছো।”

‘মেয়েটার নাম তাহলে সাইমা।”

‘হ সমস্যা নাইকা তোমার নেত্রী খবর কইয়া দিব নে। তাইলে আইজকা আমার ছুটি আমি গেলাম তুমি না যাইতে দিলেও আমি যামু।”

বলেই তাজেল ব্যাগ নিয়ে দৌড় তা দেখে মেহবিন হাসলো। রান্নাবান্না নামাজ পরেই শুরু করে সে তাই তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। মেহবিন গোসল করে খেয়ে নিল তারপর রেডি হয়ে বের হলো।

বিকেলে মেহবিন আজ তাড়াতাড়ি এসেছে । মেহবিন কে রিক্সা থেকে নামতে দেখেই তাজেল সবাইকে খবর দিতে গেল। মেহবিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে নিল । একটা সাদা রঙের থ্রিপিস পরে মাথায় কাপড় দিয়ে ঘর তালা দিয়ে বের হলো। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো নওশি আর সাইমা কথা বলছে । কুলসুম আর তাজেল হাত দিয়ে কি যেন খেলছে। মেহবিন গিয়েই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। হুট করেই মেহবিন বলল,,

“সাইমা তো কি ভাবলে?”

সাইমা মেহবিনের দিকে তাকালো কিন্তু কোন জবাব দিল না। তা দেখে মেহবিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা মাঠের কাছে এসে পরেছে। ছোট বড় সবাই খেলছে কেউ ক্রিকেট তো কেউ ব্যাড মিন্টন আবার কেউ ফুটবল ও খেলছে। ওগুলোই মেহবিন দেখতে দেখতে আসছিল। তখন কতোগুলো ছেলে একসাথে এলো তাদের মধ্যে একজন এসে বলল,,

‘কিরে সাইমা নতুন ডাক্তারকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিস নাকি।”

হুট করে কারো কথায় চমকে সাইমা মেহবিনের হাত ধরলো। মেহবিন ছেলে গুলোর দিকে তাকালো আর সাইমার দিকে তাকিয়ে দেখল সাইমা ভয় পাচ্ছে তা দেখে মেহবিন বুঝতে পারলো হয়তো এই ছেলেটাই শামীম। মেহবিনের মুখটা মুহূর্তেই শক্ত হয়ে উঠলো। ও বলল,,

“তুমিই শামীম?”

শামীম কিটকিটিয়ে হেঁসে বলল,,

“আরে ডাক্তার ম্যাডাম দেহি আমারে চেনে।”

“হুম রাস্তা ছাড়ো।”

‘আরে এতদিন শুধু দূরে থেইকাই আপনারে দেখছি। আজ সামনাসামনি দেখলাম এত সহজে কি রাস্তা ছাড়া যায়।”

তখন তাজেল বলল,,

“শামীম ভাই রাস্তা ছাড়ো নাইলে কিন্তু খারাপ হইয়া যাইবো।”

“ঐ পুঁচকে কথা কম ক। দেখতেছোস না বড়রা কথা কইতেছে তুই কথা কস কেন? তোর মায় তোরে কিছু শিখাই নাই‌। আরে তোরে শিখাইবো কেমনে হেতি তো আবার অন্য নাগরের লগে ভাইগা গেছে গা।”

কথাটা শুনে তাজেল মেহবিনের জামা ধরে পেছনে গেল। মেহবিন খুব কষ্টে নিজের রাগটাকে কট্রোলে রেখেছিল কিন্তু তাজেলকে এ কথা বলতে শুনে ওর রাগটা হুট করে আরো বেড়ে গেল । ও কিছু বলবে তার আগে ওর একটা কল এলো। ও না দেখেই ফোনটা উঠিয়ে একটু সরে যাচ্ছিল তখন শামীম ওর হাত ধরলো। ও ফোনের মানুষ টাকে বলল,

“আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি। এখন একটু ব্যস্ত আছি।”

বলেই মেহবিন ফোনটা রেখে দিল। তখন শামীম বলল,,

“আমি তো দেখলাম আপনে ফ্রি আছেন তাহলে ব্যস্ত থাকার কথা কইলেন কেন?

মেহবিন এতোক্ষণ বোধ হয় শামীমের লিমিট ক্রস করার কথাই ভাবছিল। করে ফেললো মেহবিনের হাত ধরে। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“আমার মনে হয় এখন ব্যস্ত হয়ে পারবো তাই আগেই জানিয়ে রাখলাম আর কি।

বলেই মেহবিন শামীমের মুখে একটা ঘুষি মারলো। হুট করে ঘুষি খেয়ে শামীম পিছিয়ে গেল। আর সবাই অবাক চোখে মেহবিন কে দেখতে লাগলো। কেউ ভাবতেই পারে নি মেহবিন এরকম কিছু করবে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“নেত্রী ওখান থেকে একটা ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে আসো তো!”

তাজেল দৌড় দিল মেহবিন সাইমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী। জুলুমকারীর জুলুম সহ্য করাও একটা অপরাধ। যত চুপ থাকবে তত তাদের অত্যাচার বেড়ে যাবে।”

~চলবে,,

কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-১১

0

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন কথাটা শোনার সাথে সাথে একটু দাঁড়ালো। কথা বলা মানুষ টাকে একবার দেখলো। আর বলল,,

“সবাইকে দিয়ে যদি সব কাজ হতো। তাহলে আগেকার মানুষ গরু দিয়ে নয় গাধা দিয়েই হাল চাষ করতো।”

হুট করে এমন কথায় সবাই হতভম্ব হয়ে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে রইল। যার উদ্দেশ্য কথাটা বলেছে মেহবিন সে আর কেউ নয় মিশু দাদুভাই শেখ শাহেনশাহ কে। তিনি মেহবিনের দিকে তাকালেন মেহবিন এর মুখটা কঠোর হয়ে আছে। তিনি রেগে কিছু বলতে গিয়েও আবার থেমে গেলেন। শান্ত স্বরে বললেন,,

“তাইলে তুমিই হেই ডাক্তার। যার জন্য তোমারে ডাকা হইছে হেই কাম করো।”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“গরম পানি আনতে বলুন।”

মেহবিন মিশুর কাছে গেল সে চোখ বন্ধ করে আছে। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“বন্ধু চোখ খোলো দেখো তোমার বন্ধু এসে পরেছে?’

“বন্ধু রক্ত দেখো তুমি।”

“তুমি চোখ খুলো রক্তের দিকে তাকাতে হবে না আমার দিকে তাকাও।”

মেহবিন মিশুর হাত ধরলো মিশু মেহবিনের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ আরবাজ ওর পায়ের কাঁটা জায়গায় কাপড় চেপে ধরেছিল। আরবাজ মেহবিন কে জায়গা দিয়ে উঠে গেল । গরম পানি আনলে মেহবিন আস্তে আস্তে যত্ন করে কাটা জায়গা পরিস্কার করলো। ওষুধ লাগাতে যাবে তার আগে ও একবার মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আজও কি তুমি আমায় কামড় দেবে?”

“যদি দিই তাহলে তুমি কি রাগ করবে বন্ধু?”

মেহবিন বুঝতে পারলো আজও দিতে পারে তারপরেও ও কিছু বললো না। ওষুধ লাগাতেই মিশু আরেক পা দিয়ে মেহবিন কে লাথি দিতে নিলে আরবাজ ওর পা ধরে ফেললো। মিশু একটু ব্যাথার জন্য শব্দ করলো কিন্তু মেহবিনের ঘাড় শক্ত করে ধরে রাখলো তা মেহবিন হেঁসে ওর পায়ে ঔষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। মেহবিন উঠতেই মিশু বলল,,

“ধন্যবাদ বাজপাখি তুমি আমার পা না ধরলে আমি বন্ধুকে ব্যাথা দিতাম।’

আরবাজ কিছু না বলে শুধু হাসলো। মেহবিন মিশুকে বলল,,,

“তুমি গাছ থেকে পরলে কিভাবে?”

“কি জানি আমি তো আমাদের গাছ থেকে পেয়ারা পারার জন্য গাছে উঠেছিলাম। কিন্তু কিভাবে যেন পরে গেলাম। নিচে একটা চারা ছিল আমি দেখতে পাইনি। তাতেই কেটে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা তোমার সাথে কে ছিল?”

“বাজপাখি ছিল তো।”

মেহবিন একবার আরবাজ এর দিকে তাকালো সে করুন চোখে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহবিন বলল,,

“এভাবে করলে কিভাবে হবে বন্ধু। তোমাকে তো নিজের খেয়াল নিজে রাখতে হবে। কয়েকদিন আগেও তো মাথা ফেটে গেছিল আবার আজ পা কেটে গেল। এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে হবে। তুমি না রক্ত দেখে ভয় পাও তাহলে সবসময় তো আমি আসতে পারবো না তখন তুমি ব্যাথা পাবে না। নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো!”

“সরি বন্ধু আমি আজ থেকে নিজের খেয়াল রাখবো।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“কতো নিজের খেয়াল রাখো বোঝায় যায়। তোমার জন্য আলাদা কইরা ডাক্তার রাখতে হয়। আজ আবার তুমি বায়না করলা সেই ডাক্তার রে দিয়া চিকিৎসা করাইবা না তোমার নতুন কাউরে লাগবে।

ওনার কথা শুনে মিশু ভয়ে মেহবিনের হাত শক্ত করে ধরলো। মেহবিন বলল,,

“মিশুমনি যার কাছে কমফোর্টেবল তার কাছে থেকেই না, চিকিৎসা নেবে তাই না‌।”

“মিশু তো এর কাছেই কমফোর্টেবল ছিল তুমি আইসা ওর কমফোর্টেবল জোন বদলাই দিছো।”

মেহবিন আর কিছু বললো না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন একবার শেখ শাহেনশাহ এর পাশে মেয়েটাকে দেখলো‌। মেয়েটা কেমন করে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহবিন তার কাছে গিয়ে বলল,,

“আপনিই তাহলে মিশুমনির পার্সোনাল ডক্টর?”

“জি আমিই সে!”

“আমি ডক্টর মেহবিন মুসকান।’

“আমি ডক্টর নূপুর।”

“ওহ আচ্ছা!”

“আপনার নামটা কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না।”

মেহবিন কিছু বললো না শুধু হাসলো তারপর মিশুর কাছে গিয়ে বলল,,

“বন্ধু আমায় যেতে হবে আমি আসি ঠিক আছে।”

তখন মিশু বলল,,

“বন্ধু শুক্রবার আসবে তো আমার সাথে দেখা করতে?”

“হ্যা আসবো তো। আল্লাহ হাফেজ মিশুমনি! নিজের খেয়াল রেখো। আমি যেন তোমাকে আর আহত হতে না দেখি।”

“আচ্ছা।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“দুপুরের খাবারের সময় তো হয়ে গেছে কিছু খেয়ে যান!”

মেহবিন প্রতিবারের মতো মুচকি হেসে বলল,,

“দুঃখিত আপনার প্রস্তাব গ্ৰহন করতে পারছি না। আমায় যেতে হবে হাসপাতালে কাজ আছে।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“শেখ বাড়িতে এসে কেউ খালি মুখে যায় না।”

“আমি তো যাই জিজ্ঞেস করুন এ বাড়ির লোকেদের।”

“আরবাজ যাও মেয়েটারে হাসপাতালে দিয়া আইসো।”

“আমি নিজেই যেতে পারবো সাবেক চেয়ারম্যান সাহেব। আমার কাউকে দরকার নেই।”

বলেই মেহবিন বেরিয়ে গেল। সকলে অবাক হয়ে মেহবিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মেহবিন কিভাবে জানলো শেখ শাহেনশাহ আগে চেয়ারম্যান ছিলেন। মেহবিন রাস্তায় যেতেই কিছুক্ষণ পর রিক্সা পেয়ে গেল একেবারে হাসপাতালে গেল। নিজের কেবিনে বসলো দুপুরের খাবার খাবে এমন সময় একজন নার্স এলো নিচে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এসেছে। মেহবিন তাড়াতাড়ি করে নিচে যেতেই দেখলো মুখর ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে রেখেছে বাম হাতে গুলি লেগেছে। মেহবিন মুখর কে বসিয়ে ওর শার্টের হাতা কাঁচি দিয়ে কাটতে লাগল তা দেখে মুখর বলল,,

‘আপনি আমার ইউনিফর্ম এভাবে কাটছেন কেন? আমার ইউনিফর্ম টা নষ্ট হয়ে যাবে তো।”

মুখরের এরকম কথা শুনে মেহবিনের রাগ হলো। তাই ও শান্ত স্বরে বলল,,

“যখন গুলি লেগেছে তখনই আপনার ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নষ্ট ইউনিফর্ম কে কাঁচি দিয়ে কেটে নতুন করে আমি আর কি নষ্ট করবো।”

“তবুও আমার ইউনিফর্ম।”

“নিশ্চয়ই আপনার আরো ইউনিফর্ম আছে।”

“থাকলে কি হবে এটা তো আমার সবথেকে ফ্রেবারিট।”

“একদম বাচ্চামো করবেন না নাহলে কিন্তু পুরো শার্টটাই খুলে রেখে দেব।”

“আয় হায় মেয়ে বলে কি শার্ট খুলে নিলে আমার মান সম্মান সব এখানেই যাবে।”

“আপনি আপনার মুখটা বন্ধ করবেন নাকি,,

“করছি করছি!”

মুখর আর কোন কথা বললো না। মেহবিন ট্রিটমেন্ট শুরু করলো মেহবিন কে দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। তা দেখে মুখর হাসলো। মেহবিন মুখরকে হাসতে দেখে বলল,,

“বেশি দাঁত কেলালে মুখ কিন্তু সেলাই করে দেব।”

মেহবিনের কথা শুনে মুখর ফিসফিস করে বলল,,

“আপনাকে রাগতে দেখলে আমার ভিশন ভালো লাগে ডক্টর।”

“আপনার ভালো লাগা আপনার কাছেই রাখুন।”

“আমি একজন আহত ব্যক্তি। আমার সাথে একটু মিষ্টি করে হাসিমুখে কথা বলুন। যাতে আপনার হাসিতে ডুবে আমার সব কষ্ট ভুলে যাই।”

মেহবিন চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালো তা দেখে মুখর বলল,,

“আয় হায় এই দৃষ্টিতেই তো মুখর শাহরিয়ার খুন হয়ে যায়।”

এরকম পরিস্থিতিতে এ কথা শুনে মেহবিনের ইচ্ছে হচ্ছে মুখরের মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু ও পারছে না। মেহবিন যত্ন করে মুখরের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল। আর সাথে সাথেই ওখান থেকে চলে গেল। কেন চলে গেল সেটা মুখর ভালো করেই বুঝতে পারলো। মুখর আস্তে আস্তে মেহবিনের কেবিনে গেল দেখলো মেহবিন মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। তা দেখে মুখর বলল,,

“মানলাম সে কাঁদতে জানে না তারমানে এটা নয় তার কষ্ট হয় না।”

মুখরের এমন কথায় মেহবিন মাথা উঁচু করলো। মুখর মেহবিনের চোখের দিকে তাকালো। না সব স্বাভাবিকই রয়েছে তাকে দেখে কেউ বলতে পারবে না তার ভেতরে কিছু আছে। মুখরকে দেখে মেহবিন তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“আপনি এখানে কেন? আপনার তো রেস্টের প্রয়োজন।”

মুখর চেয়ারে বসে বলল,,

“আরে রিল্যাক্স পুলিশদের এরকম আঘাতে কিছুই হয় না। তাছাড়া তুমি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছো তো দেখবে কিভাবে ফাইভ জি স্পিডে ক্ষত সেরে যায়।”

“আপনার হেঁয়ালিপূর্ণ কথা রাখুন এবার বলুন এরকম কিভাবে হলো।”

“আজ ডক্টর বাবুল কে কোর্টে ওঠানোর ডেট ছিল। ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম মাঝপথে কেউ পথ আটকে দেয়। আর আমাদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে শুরু হয় গুলাগুলি এক পর্যায়ে দেখি বাবুল পালাচ্ছে। ওর দিকে গুলি ছুড়তে যাবো তখন কেউ আমার বা হাতে গুলি করে দেয়।”

মেহবিন সবকিছু শুনে বলল,,

“আপনি কিন্তু আমায় বলেছিলেন আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

‘এমনিতে আমি নিজের খেয়াল রাখি কিন্তু এরকম ভুলে হয়ে যায় আর কি‌ ।”

“একদম আজাইরা কথা বলবেন না। এই জন্যই তো আপনার দাদি আপনাকে এই পেশা ছেড়ে দিতে বলে।”

“আর আমার দাদি!! হেয় তো সবসময় আমার ভালোই চায় কিন্তু ভালো চাইতে গিয়ে কখনো কখনো খারাপ হয়ে যায়।”

“সে কথা বাদ দিন দুপুরে খাবার খেয়েছেন?”

“আর খাওয়া! গুলি খেয়েই পেট ভরে গেছে আমার।”

মেহবিনের খাবারটা ওর সাইডেই ছিল মেহবিন একটা প্লেটে বেড়ে মুখরের সামনে দিল। তা দেখে মুখর বলল,,

“আমার হাত তো?”

“গুলি বাম হাতে লেগেছে ডান হাতে না।”

“জালিম কোথাকার!”

মেহবিন বলল,,

“ভালো! হয়েছে এখন খান।”

“তুমি খেয়েছো?”

“না আমি খাবো না।”

“কেন?”

“আপনার গুলি খাওয়া দেখে পেট ভরে গেছে।”

মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“আমি খেলে তুমি খাবে কিভাবে? এখানে তো একজনের খাবার আছে। তাই বলছো তুমি খাবে না।”

“আমি আপাতত চকলেট খেয়ে নিব আর বাড়ি গিয়ে খাবার খেয়ে নেব আপনি খান।”

“তুমি মেয়ে এতো সত্যবাদী কেন হুম। তুমি কিছুই আড়াল করো না ।”

‘আমি এরকমই তবে সবকিছু প্রকাশ কিন্তু আমি সবার কাছে করি না।”

“হুম আমি তো এখন শেখ বাড়িতে যাবো। ওখানে গিয়ে খেয়ে নেব তুমি খাও।”

“তারা তো আর জানে না আপনি গুলি খেয়ে বাড়ি ফিরবেন। তারা সকলে খেয়ে নিয়েছে আপনি খান এখন।”

“তুমি কিভাবে জানলে?”

“মিশুর পা কেটে গেছিল তাই গিয়েছিলাম। এখন একটাও কথা না খান।’

“আমি,,”

“কি বললাম আপনাকে খেতে বললাম না। এতো বেশি কথা বলেন কেন? খাওয়ার পর ওষুধ আছে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে তো নাহলে অপরাধীদের কিভাবে ধরবেন?

“তা ঠিক বলেছো খেয়েই নিই। তোমার হাতের রান্না অনেকদিন পর। শুকরিয়া আল্লাহ আমার রিজিক এখানে দেওয়ার জন্য।”

মেহবিন কিছু বললো না। এই সময় এখানে কেউ আসবে না। তাই মেহবিনের কোন চিন্তা নেই। মুখর খাচ্ছে আর মেহবিনের দিকে তাকাচ্ছে মেহবিন একটা চকলেট নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে ‌। মুখর অর্ধেক খাবার সাইড করে রেখে তারপর নিজের হাত ধুয়ে নিল অন্য এক বাটিতে। মুখর হাত ধুয়ে বলল,,

“আমার খাওয়া ডান এখন খেয়ে নাও তুমি!”

মেহবিন মুখর কে ওষুধ দিয়ে বলল,,

“চকলেট বয় নিচে এসেছে আপনাকে নিতে এখন আপনি বাড়ি যান গিয়ে রেস্ট নিন। আর হ্যা ঠিক মতো ওষুধ খাবেন। কাল ছুটি নিন পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না।”

“এর মাঝে আরবাজ কেও বলেছো?

“আপনার কি মনে হয় এই সময় আপনাকে ড্রাইভ করতে দেব।”

“তুমি না একটা,,!

মেহবিন ভ্রু কুঁচকে বলল,,

“কি?”

“কিছু না।”

“আল্লাহ হাফেজ আমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

“খেয়ে নিও কিন্তু আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মুখর চলে গেল। মেহবিন মুখরের রাখা খাবার গুলো খেয়ে নিল। এরপর আবার পেশেন্ট দেখতে লাগলো। আজ একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছে মেহবিন । চারটার দিকে এসেছে সে কারন পরে আর পেশেন্ট ছিল না। মেহবিন রিক্সা থেকে নামতেই দেখলো দুজন মহিলা ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মেহবিন তাদের দিকে এগিয়ে বলল,,

“কিছু দরকার আপনাদের?”

তাদের মধ্যে একজন বলল,,

“হ তোমারে আছিল।”

“জি বলুন?”

“আমার মাইয়ার আইজ অজ্ঞান হইয়া গেছিল। তুমি যদি একটু দেখতা।”

“কখন অজ্ঞান হয়েছিল?”

“এগারোটার দিকে।’

“সেই সকালে হয়েছিল প্রায় এখন বাজে সাথে চারটা আপনারা হাসপাতালে না নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”

“জ্ঞান আইছিলো দেইখা নেই নাই।”

“আচ্ছা চলেন দেখি?”

মেহবিন ওনাদের সাথে চললো পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর বাড়ি এসে গেল। ঘরে গিয়ে দেখলো একটা রোগা পাতলা মেয়ে শুয়ে আছে। চোখের নিচে দিয়ে কালি জমে আছে। মেহবিন গিয়ে মেয়েটাকে চেক আপ করলো তারপর তার মাকে জিজ্ঞেস করল,,

“আপনার মেয়ে কি বিবাহিত?”

মেহবিনের এই প্রশ্ন শুনে সবাই একে অপরের দিকে তাকালো। মেহবিন মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটা মাথা দিয়ে কি যেন না না করছে মেহবিন কে হয়তো নিষেধ করছে কিছু বলতে। মেয়েটার মা বলল,,

“না আমার মেয়ে বিবাহিত না কেন কি হইছে? ওর বয়স তো সবে পনেরো।

মেয়েটার মায়ের কথা শুনে মেহবিন বুঝতে পারলো মেয়েটা কি না না করছিল। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর বলল,,

“না না এমনিই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। শরীরে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন এর অভাব তাই এরকম হয়েছে।”

“আর কইয়ো না কতোবার কই ঠিক মতো খা। এই রোগা পাতলা শরীর দেইখা তোরে বিয়া করবো কিরা? যদি আমার কথা হুনে একটু।”

মেহবিন বলল,,

“আপনারা একটু যান আমি ওর সাথে একলা একটু কথা বলতে চাই।”

“একলা ক্যান আমিও থাহি।”

“দেখি ওর আরো কোন সমস্যা আছে কি না। কারন সব তো আর বোঝা যায় না ও নিজে বললে সুবিধা হবে। আপনি থাকলে ভয়ে হয়তো কিছু বলবে না।”

“আইচ্ছা ঠিক আছে।”

বলেই সবাই ঘর থেকে চলে গেল। মেহবিন মেয়েটার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,,

“আমি কিছু বলবো নাকি তুমি বলবে?”

মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে বলল,,

“আমার পেটে কি বাচ্চা আছে ডাক্তার আপা?”

এই পিচ্চি মেয়ের মুখে বাচ্চার কথা শুনে অবাক হওয়ার কথা থাকলেও মেহবিন অবাক হলো না। মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,

“না!”

“তাইলে কি সমস্যা?”

“তোমার শারীরিক সম্পর্ক যা তোমার শরীর গ্ৰহন করতে পারে নি। তাই এই অবস্থা। এখন বলো তুমি সেচ্ছায় এসব করেছো নাকি কেউ জোর করে কিছু করেছে।”

একথা শুনেই মেয়েটা কেঁদে উঠলো। আর বলল,,

“আমি তো এইসব কিছুই বুঝি না ডাক্তার আপা। চারদিন আগে শামীম ভাই কইলো আমারে নিয়া বেরাইতে যাইবো হেই ঢাকায় তার বইনের বাড়ি।”

“শামীম কে?”

“আমার কাকাতো ভাই যে মহিলা মায়ের সাথে আপনারে ডাক দিতে গেছিল তার পুলা। হের এইবার পড়াশোনা শেষ।”

“তারপর বলো?”

“মারে কইলে মায় কইলো আপাগো বাড়ি থেইকা ঘুইরা আসতে। সবে স্কুল শুরু হইছে এখন ক্লাস না করলেও হইবো। আমিও খুশি মনে গেলাম কিন্তু মাঝ রাস্তায় যাইয়া আমারে এক বোতল আর সি কিনা দিল আমিও খাইলাম কিছুক্ষণ পর আমার কেমন জানি লাগতেছিল ভালো লাগতেছিল না মাথা ঝিম মাইরা ধরলো। আমি কইলাম শামীম ভাই আমার ভালো লাগতেছে না উনি কইলো আর একটু আইসা পরছে। আমিও চুপ কইরা রইলাম বাস থামলে হেয় আমারে হাত ধইরা নামাই লো। তারপর একটা বাড়ি ঢুকলো এদিকে আমি চোহে কিছু দেহি না। আমি ভাবলাম হয়তো আপাগো বাড়ি আইসা পরছি আমিও গেলাম উনি রুমে নিয়া গিয়াই আমি কিছু বলার আগেই উনি আমারে তারপর ,,

বলতে বলতেই মেয়েটা কেঁদে উঠলো মেহবিন গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। মেহবিন বুঝতে পারলো কি হয়েছে মেয়েটার বয়সি বা কতটুকু মেয়েটা বলছেও সে কিছু বোঝেনা কিন্তু তার সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে এটা সে বুঝতে পেরেছে আর এর থেকে সন্তান ও হওয়া সম্ভব এটাও বুঝেছে সে। মেহবিন মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল তখন মেয়েটা বলল,,

“আমি তো শামীম ভাই রে বিশ্বাস কইরা গেছিলাম আমার মায় বাপ ও তারে বিশ্বাস কইরা আমারে এতদূর পাঠাইছে তাইলে উনি আমার সাথে এইরকম কেমনে করতে পারলো। আমি তো তারে আমার ভাই মানি আমার বাপ মাও তারে পুলা মানে তাইলে হেয় কেমনে পারলো এইরকম একটা কাজ করতে। হেয় আমারে আর আপার বাড়ি নেয় নাই বাড়ি আইসা কইছে আমি নাকি রাস্তায় অসুস্থ হইয়া পারছিলাম তাই আপার বাড়ি যায় নাই। আমার মায় বাপে এক কথায়ই বিশ্বাস কইরা নিছে। এতো বিশ্বাস করা মানুষ গুলারে উনি কেমনে পারলো ঠকাইতে। উনি কেমনে পারলো একটা মেয়ের ইজ্জত নিতে আমি তো ওনার কাকাতো বোন কিন্তু বইনের মতোই তো।

মেহবিনের হাত দুটো শক্ত হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে এখনি ঐ ছেলেটাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে কিন্তু ও পারছে না। মেহবিন মেয়েটাকে সোজা করে বসিয়ে বলল,,

“শান্ত হও! সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি পুলিশের কাছে চলো শামীম কে ওর কৃতকর্মের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।”

“না আমি পুলিশের কাছে যামু না। ওনে গেলেই সবাই আমার কথা জাইনা যাইবো। আমার মায় বাপে এইসব হুইনা তহনি মরবো। আমগো কাছে আমাগো মান সম্মানই সব।”

“তাই বলে অপরাধী নিজের শাস্তি পাবে না।”

“আপনি না কইলে কেউ জানবো না। কারন আমি মা হমুনা কারন তহন সব শেষ হওয়ার পর আমার জ্ঞান ফিরলে উনি আমারে ওষুধ খাওয়ায়ছিল। আর কইছিল কেউ কিছু বুঝবো না উনি আমার লগে কিছু করছে কিনা। আর কইছে যদি আমি মুখ খুলি তাইলে উনি নাকি ভিডিও বানাইছে হেইডা সবার কাছে কইয়া দিব।”

এবার তো মেহবিনের পুরো মাথাটাই গরম হয়ে গেল। একটা ছেলে কতটা খারাপ হলে এরকম করতে পারে। এরকম ঘটনা শুধু শহরে না গ্ৰামেগনঞ্জে কোথায় কোথায় হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। মেহবিন বলল,,

“এবার যদি ভিডিও নিয়ে তোমাকে ব্লাকমেইল করে আবার সেরকম কিছু করতে চায় তাহলে কি করবে তুমি?”

মেয়েটা এবার মাথা নিচু করে নিল। আর বলল,,

“পুরশুদিন স্কুল থেইকা দুই পিরিয়ড কইরা বাইর হইতে বলছে।”

মেহবিন এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না উঠেই সিমেন্ট এর খুঁটিতে জোরছে একটা ঘুষি দিল। এটাই ওর রাগ নিয়ন্ত্রণের একটা পদ্ধতি। কোন কিছুর আওয়াজ পেয়ে মহিলা দু’জন বাইরে থেকে ঘরে ছুটে এলেন। এসেই বললেন,,

“কি হয়েছে?”

মেহবিন বলল,,

“কিছু না ব্যাগটা খুঁটির সাথে জোরে লেগেছিল।”

মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার মেয়ে কান্দে ক্যান?”

“আপনার মেয়ে ভয় পাচ্ছে যে বড় কোন রোগ হয়েছে কি না। আপনার মেয়েকে ভয় পেতে বারন করুন কারন এখনো সব হাতের বাইরে যাইনি চাইলেই কিছু করতে পারবো আমরা।”

“মানে?”

“মানে হলো এখন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করলে ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ হয়ে যাবে।”

“ওহ আচ্ছা।

তিনি গিয়ে গিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আরে তুই ভয় পাইস না। সব ঠিক হইয়া যাইবো।”

মেয়েটা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল আর বলল,,

“আম্মা আমার খুব ভয় করতেছে আমি মনে হয় আর বাচুম না ‌।”

বলেই আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগল মেহবিন বুঝতে পারলো এই কান্না কিসের। এ যে অপরাধীকে শাস্তি না দিতে পারার কান্না। নিজের সতীত্ব হারানোর কান্না। সব মুখ বুজে সহ্য করার জন্য কান্না। মেহবিন মেয়েটাকে বোঝাতে ব্যর্থ তা ভেবে সে নিজেকেও ব্যর্থ ভাবছে। মেহবিন শূন্য চোখে বের হতে নিল। তখন সেই মেয়েটা বলল,,

“ডাক্তার আপা!”

মেহবিন বলল,,

“কেউ যদি যেচে নিজের জীবনকে নষ্টের দিকে নিয়ে যায় সেখানে অন্যকেউ কিভাবে তার জীবন কে ভালো করবে বলো। নিজের জীবন কে ভালো করতে হলে নিজেকেই শক্ত হতে হবে আর জীবনের হাল ধরতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো আসছি ‌।”

“আপনে?”

‘প্রকৃতির সাথে সময় কাটাও ভালো লাগবে। আজ আসি নিজের খেয়াল রেখো। আর হ্যা আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।”

বলেই মেহবিন বেরিয়ে আসলো পাঁচটা বাজতে কিছু মিনিট বাকি। রাস্তায় বেরুতেই দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে আছে মেহবিন বুঝলো ওর জন্যই‌। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আজকাল কারো কাছেই মেয়েরা নিরাপদ নয় দেশে কোথায় কোথায় মেয়েরা এভাবে হ্যারাসমেন্ট হচ্ছে কে জানে। কাকাতো ভাই হলে কি হবে মেয়েটা তো ছেলেটাকে নিজের ভাই মেনে আসছিল এতোদিন। ভাই হিসেবে যাকে প্রটেক্ট করার কথা সেখানে ভাই হয়েই সে জঘন্য একটা কাজ করেছে। এই জামানায় কে কাকে বিশ্বাস করবে। এরকম কতো ধর্ষণ হচ্ছে কে জানে। হয়তো এই মেয়েটার মতো নিজের সম্মানের কথা ভেবে চুপ করে সব সহ্য করছে । আবার কেউ হয়তো নিজেদের ইচ্ছায় কি আর বলবো আজকাল হারাম রিলেশনশিপ একটা ট্রাডিশন হয়ে দাড়িয়েছে। আসতাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলী! আল্লাহ তায়ালা সকল হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুক। এসব ভাবতেই ভাবতেই তাজেল মেহবিনের কাছে চলে এলো। মেহবিন আজ আর কিছু বললো না ওর খুব রাগ হচ্ছে ঐ ছেলেটার প্রতি। তাজেল মেহবিনের হাতি ধরে বলল,,

“ডাক্তার আজ ইস্কুলে গেছিলাম আমার দুই জন নতুন বন্ধু হইছে জানো?”

মেহবিন শুধু বলল,,

“ভালো!”

তাজেল হেঁসে দুইটা লজেন্স হাতে নিয়ে মেহবিনের সামনে রেখে বলল

“ডাক্তার তোমার লাইগা ইস্কুল থেইকা লজেন আনছি।একটা ধরো খাও। আইজকা একসাথে লজেন খামু একটা তোমার একটা আমার।

তাজেলের লজেন্স দেখে মেহবিনের একটু ভালো লাগলো। তাজেলের মুখে হাঁসি দেখে মেহবিনের মুখেও হাসি ফুটে উঠল। কেন যেন মনে হচ্ছে তাজেল এর মুখের হাসিই ওর বুকে প্রশান্তি দিচ্ছে। মেহবিন মুচকি হেসে একটা লজেন্স নিল আর খেয়ে বলল,,

“নেত্রী বলো তো তোমার লজেন বেশি মজা নাকি আমার চকলেট।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“দাও তাইলে চকলেট আমি খাইয়া দেহি কোনটা বেশি স্বাদ।”

ততক্ষণে তাজেলের মুখের লজেন্স শেষ। মেহবিন নেওয়ার সাথে সাথেই সে লজেন্স এর প্যাকেট ছিড়ে গালে দিয়েছিল। মেহবিনের কথা শুনে সে চিবিয়েই খেয়ে ফেলেছে। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট দিয়ে বলল,,

“ধরো খেয়ে বলো।”

তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“আমি জানি তোমারে কইলে তুমি চকলেট দিবা। আসলে তোমার সব চকলেট ফুরাইয়া গেছে আমার খাইতে ইচ্ছা করছিল তাই কইলাম। আমি না খাইয়াও কইতে পারি তোমার চকলেট বেশি স্বাদ।”

বলেই তাজেল হাসলো মেহবিনের কি হলো মেহবিন হাঁটু গেড়ে বসে ওকে জরিয়ে ধরে বলল,,

‘তুমি জানো নেত্রী? তুমি আমার জীবনের এক টুকরো প্রশান্তি।”

~ চলবে,,