Wednesday, July 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2372



নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

দূর থেকে ফজরের আযানের সূর ভেসে আসছে শুনে চোখের পানি মুছে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম, মেঘ’কে সামনে দেখে একটু অবাকই হলাম। মেঘ থাপ্পড় দেওয়ার পর কোনো কথা না বলে তোহাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় চলে এসেছিলাম। এতোটা সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদেই কাটিয়ে দিয়েছি।
আমি: আপনি ঘুমাননি?
মেঘ: ঘুম আসেনি।
আমি: ওহ!
মেঘ: তখনের এমন ব্যবহারের জন্য সরি, বুঝতেই পারছেন মাথা ঠিক নেই। বিয়েটা করার ইচ্ছে তো আমার ছিল না তা…
আমি: হুম বুঝতে পেরেছি।
মেঘ: একটা অনুরোধ করবো রাখবেন প্লিজ।
আমি: বলুন।
মেঘ: আপনি গোসল করে নিন নাহলে…(মেঘ মাথা নিচু করে থেমে গেলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এই কথা ও বলতে পারলো)
মেঘ: ভুল বুঝবেন না প্লিজ! আসলে আমি দাদিকে খুব ভয় পাই আর দাদির জন্যই বিয়েতে রাজি হয়েছি, এখন দাদি যদি জানতে পারে আমি আপনাকে মেনে নেইনি তাহলে…
আমি: সদ্য বিয়ে হওয়া নতুন বউরা যেমন ভোরবেলা গোসল করে আমাকেও তাই করতে বলছেন তো?
মেঘ: প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি নিরুপায় হয়েই এমন জঘন্য কথা বলেছি। জানি আপনি এই কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে…
আমি: হুম রাতের থাপ্পড়ের চেয়ে এই কথাটায় বেশি কষ্ট পেয়েছি। আমার স্বামী যে কিনা আমাকে ছুঁয়েও দেখলো না উল্টো বাসর রাতে থাপ্পড় গিফট করলো, আর আমাকে কিনা সেই স্বামীর জন্য লোক দেখানোর জন্য… ছিঃ!
মেঘ: ভুল বুঝবেন না প্লিজ দাদি বুঝতে পারলে রেগে যাবে দাদি অসুস্থ উত্তেজিত হলে সমস্যা… (মেঘের পুরো কথা শেষ হবার আগেই ওকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম)

চুপচাপ খাটের এক কোণে বসে আছি, মেঘ আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে বাতরুমে চলে গেলো হয়তো লোক দেখানোর জন্য এখন গোসল করবে। ছিঃ ভাবতেই আমার রাগ হচ্ছে মানুষ এমনো হয়?

মেঘ: যান গোসল করে আসুন। (মেঘের কন্ঠ শুনে পাশে তাকালাম, মাত্র গোসল করে আসাতে মেঘ’কে অন্যরকম এক সৌন্দর্য যেন ঘিরে রেখেছে। সব ছেলেদের কি এমন সুন্দর লাগে নাকি মেঘ খুব বেশি ফর্সা বলে এতোটা সুন্দর লাগছে)
মেঘ: কি হলো?
আমি: হু!
মেঘ: গোসল করে আসুন।
আমি: পারবো না আমি লোক দেখানোর জন্য আপনার কথামতো চলতে।
মেঘ: তাহলে সূর্য উঠার আগেই বাবার বাড়ি চলে যান তোহার কাছে থাকতে হবে না। (ঘুমন্ত তোহার দিকে তাকাতেই চোখ দুটু ভিজে উঠলো, বিয়েই তো করেছি নিষ্পাপ এই শিশুর জন্য এখন নাহয় ওর জন্যই সব মেনে নিবো)

গোসল সেরে রুমে এসে মেঘ’কে কোথাও দেখতে পেলাম না, হয়তো বেরিয়ে গেছে। একটু সাজুগুজু করে তোহার পাশে এসে বসলাম, সাথে সাথে মেয়েটির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দুহাত দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরে আধোআধো কন্ঠে বলে উঠলো…
তোহা: আমার আম্মুটা। (মা হওয়ার সুখ বুঝি এরকমই, তোহার কন্ঠে আম্মু ডাক শুনে আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো)
তোহা: ও নতুন আম্মু কাঁদছ কেন তুমি?
আমি: কোথায় নাতো মামুনি, চলো ফ্রেশ হবে তুমি।

তোহাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম, সবাই ডাইনিং এ বসা। মেঘ’কে বসা দেখে আর ওদিকে গেলাম না সোফায় এসে বসলাম। সাথে সাথে দাদি উঠে এসে আমার পাশে বসলেন।
দাদি: তোহা যাও তো আব্বুর হাতে খেয়ে নাও।
তোহা: কেন? আমার তো এখন আম্মু আছে আমি আম্মুর হাতে খাবো। (তোহা কথাটা বেশ জোরেই বলে ফেলেছে, মেঘ মন খারাপ করে খাবার না খেয়ে বসে আছে। মেঘ হয়তো ভাবছে আমি ওর থেকে ওর মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছি)
আমি: মামুনি আমি তোমাকে দুপুরে খাইয়ে দিবো এখন বাবার হাতে খেয়ে নাও। (তোহা আর কোনো কথা বললো না মেঘের কাছে চলে গেলো)
দাদি: কিরে রাতে ঘুম কেমন হলো? (দাদির এমন প্রশ্ন শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো)
দাদি: তুই হয়তো রেগে আছিস হুট করে এমন কিছু হয়ে যাওয়াতে, তোরও হয়তো কোনো স্বপ্ন ছিল যা আমাদের জন্য বিসর্জন দিতে হলো।
আমি: না দাদি আমি রেগে নেই তাছাড়া তোহাকে আমি মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি বলেই তো বিয়েটা করেছি।
দাদি: তুই রাজি হবি আমি ভাবতেই পারিনি, রায়হান চৌধুরীর মেয়ে আমাদের মতো গরীব ঘরে বউ হয়ে আসতে রাজি হবে তা…
আমি: আব্বুর হয়তো অনেক কিছু আছে কিন্তু আপনাদেরও তো কম নেই তাছাড়া আপনাদের ঘরে তো সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস আছে, আমার মেয়ে “তোহা”
দাদি: ভাগ্যিস তুই মেঘ এর স্ত্রী হয়ে এসেছিস, শায়লার মতো কেউ হলে তো তোহার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো।
আমি: শায়লা…
মেঘ: কণা একটু রুমে আসবে! (বাব্বাহ্ রাগি বোম এর মুখ থেকে এতো সুন্দর কথাও বের হয়)
আমি: আসছি।
দাদি: আমার দাদুভাইটা একটু রাগি কিন্তু অনেক রোমান্টিক, যা যা রুমে যা।
আমি: দাদি আপনি না!

রুমে এসে দেখি মেঘ রেডি হচ্ছে অফিস যাবে বোধহয়। বিয়ের পরদিন বোধহয় ওর মতো রাগি বোম গুলার দ্বারাই অফিস যাওয়া সম্ভব।
মেঘ: ওহ আপনি এসেছেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: এভাবে তাকিয়ে আছেন যে, আরে আগে তো দাদি ছিল তাই তুমি করে বলেছিলাম। (ভেবেছিলাম ভালোবাসা দিয়ে সব ঠিক করে দিবো কিন্তু মনে হচ্ছে সম্ভব না)
মেঘ: যেহেতু বিয়েটা হয়েই গেছে তাই তোহার দায়িত্ব এখন থেকে আপনার। দেখে রাখবেন ওকে আমি অফিস যাচ্ছি।
আমি: আজ অফিসে না গেলে হয় না? (কথাটা বলে জিহ্বায় কামর দিলাম নিজের অজান্তেই কি বলে ফেললাম)
মেঘ: কেন আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে? হানিমোনে যাবেন? ভুলে গেছেন রাতের থাপ্পড়ের কথা? একদম অধিকার ফলাতে আসবেন না আসলে আবারো থাপ্পড়…
আমি: এই আপনি কি মানুষ নাকি রাগি বোম? (মেঘকে কথা শেষ করতে না দিয়ে এই কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাতে থাপ্পড় দিয়ে সকালে সরি বলেছে এখন আবার থাপ্পড় এর ভয় দেখাচ্ছে, অদ্ভুত মানুষ একটা)

আমি: হ্যালো আব্বু।
আব্বু: হ্যাঁ মা কেমন আছিস?
আমি: এইতো ভালো তোমরা কেমন আছ?
আব্বু: আর বলিস না তোর মা তো কাঁদতে কাঁদতেই শেষ, আমি নাকি তোর জীবন নষ্ট করে ফেলেছি।
আমি: না আব্বু আমি অনেক ভালো আছি এখানে সবাই খুব ভালো আম্মুকে বুঝিয়ে বলো।
আব্বুর সাথে আরো কিছুক্ষণ ফোনে কথা বললাম, ফোন রেখে পিছন ফিরতেই মেঘ’কে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম!
মেঘ: কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? (মেঘ আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে, ওর এমন অদ্ভুত চাহনি আর এগুনো দেখে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ বারান্দার রেলিং এ এসে আটকে গেলাম। মেঘ একদম আমার গাঁ ঘেসে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো তারপর আমার দুদিকে দুহাত দিয়ে রেলিং ধরে আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো)
আমি: আআআপনি এমমন করছেন কেন?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো কথা বলছেন না কেন?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: সরুন আমি রুমে যাবো।
মেঘ: এই মেয়ে পেয়েছটা কি আমাকে যখন যাকে দিয়ে খুশি বকা শুনাচ্ছ। বিয়ে করে কি এমন করেছি যে আমি এখন অফিসেও যেতে পারবো না? একবার তুমি না করছ তো একবার দাদি না করছে পেয়েছ কি আমাকে হ্যাঁ? আমি অফিসে না গেলে কি তোমার বাবা আমাকে চাকরিতে রেখে দিবে নাকি মাস শেষে বেতনটা পাঠিয়ে দিবে? যত্তোসব। (মেঘ কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছিল আমি আস্তে করে পিছন থেকে বললাম…)
আমি: মনে হচ্ছে রাগি বোম ফেটে গেছে। (মেঘ আমার কথা শুনে আবার ফিরে আসলো। আমার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো)
মেঘ: এই তোমরা মেয়ে জাত এমন কেন?
আমি: সব মেয়ে এক না, সবাইকে নিজের বউয়ের সাথে তুলনা করবেন না বলে দিলাম।
মেঘ: হুহ আসছে সব মেয়ে এক না! সব মেয়ে এক সব নষ্ট, সবাইকে আমি ঘৃণা করি।
মেঘ: আপনার ঘৃণা করাতে কোনো মেয়ের কিছু যায় আসে না।
মেঘ: দ্যাত।
মেঘ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো। এই রাগি বোম এর ভালোবাসা পাওয়া কি আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব?

সন্ধ্যায় তোহাকে নিয়ে বসে গল্প করছি হুট করে মেঘ কোথা থেকে তাড়াহুড়ো করে এসে রুমে ঢুকলো।
মেঘ: কণা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি: বলুন।
মেঘ: যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো আর ডিভোর্স সম্ভব না তাই আমাদের মধ্যে কিছু…
আমি: আমাকে মেনে নিতে আপনার সমস্যা কোথায়?
মেঘ: আমার মনে হয় সব মেয়ে এক আমি এখন আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারিনা।
আমি: আপনার প্রথম স্ত্রী কি এমন করেছিল যে দুনিয়ার সব মেয়ের উপর আপনার ঘৃণা জন্মে গেছে।
মেঘ: বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও আমি শায়লাকে অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু শায়লা সবসময় ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি করতো। তোহা জন্ম নেওয়ার ছয় মাস পর হঠাৎ একদিন শায়লা আমাকে বললো ওর পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব না, ও ডিভোর্স চায়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বললো ও আগে কাউকে ভালোবাসতো এখন তার কাছে ফিরে যেতে চায়। অনেক বুঝিয়েছিলাম শায়লাকে কিন্তু ওর এক কথা, ও ওর ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরে যেতে চায়। ছোট্ট তোহাকে ফেলে রেখে যেতে ওর এতটুকু কষ্ট হয়নি। আমার তো রাগ একটাই অন্য কাউকে যখন ভালোবাসতো তাহলে আমার সাথে বিয়ে নামক নাটক করার কি প্রয়োজন ছিল।
আমি: শায়লা এমন ছিল বলে যে সব মেয়ে এক তাতো নয়। আমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসি না তাহলে আমাকে মেনে নিতে পারবেন না কেন?
মেঘ: এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আজ থেকে আপনি সোফায় ঘুমাবেন, আমার সামনে বেশি আসবেন না, আমার কোনো কিছুতে অধিকার খাটাবেন না আ…
আমি: সব পারবো কিন্তু সোফায় ঘুমাতে পারবো না, আপনার ইচ্ছা হয় আপনি গিয়ে ঘুমান। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এখানেই এই বিছানায় ঘুমাবো।
মেঘ: আমি আমার মেয়েকে রেখে ঘুমাবো না।
আমি: আমিও আমার মেয়েকে রেখে ঘুমাবো না।
মেঘ: আল্লাহ্‌ এই ঝগড়াটে মেয়ে কোথা থেকে আমার কপালে জুটিয়ে দিলে।
দাদি: মেঘ কণা নিচে আয় তোরা দেখ কারা এসেছে। (দাদির ডাক শুনে তোহাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, পিছু পিছু মেঘও আসছে)

ড্রয়িংরুমে রুহানকে বসে থাকতে দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, ও এখানে কি করছে? আমার কোলে তোহা আর পাশে মেঘ’কে দেখে রুহান বেশ অবাক হয়েই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
রুহান: কণা তুমি?
দাদি: তুই ছিনিস ওকে? ও তো মেঘ এর স্ত্রী।
রুহান: অসম্ভব এইটা হতে পারে না।
দাদি: কেন কালই তো ওদের বিয়ে হলো ফোনে তো তোদের বললামই।
রুহান: আরে দাদি তোমরা কেন বুঝতে পারছ না ওকে আমি ভালোবাসি, আমি ছাড়া অন্য কাউকে ও বিয়ে করতে পারেনা। কণা শুধু আমার বউ হবে তিনবছর ধরে আমি এই স্বপ্ন দেখে আসছি।
রুহানের চিৎকারে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মেঘ এর দিকে তাকালাম, ওর চোখে শুধু রাগ আর ঘৃণা।
মেঘ: ছিঃ শেষপর্যন্ত আপনিও…
মেঘ চলে গেলো তোহাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

বেশি বড় না আবার বেশি ছোটও না মাঝারি আকারের একটি রুম, পুরো রুম জুড়ে নীল সাদা অর্কিড ফুলের ছড়াছড়ি। সাথে পুরো রুম জুড়ে জ্বলছে অনেক গুলো ক্যান্ডেল লাইট। খাটের চারপাশে চোখ বোলালাম, পুরো খাটটি সাজানো হয়েছে শুধু নীল সাদা অর্কিড দিয়ে। আচ্ছা নীল সাদা অর্কিড তো আমার পছন্দের ফুল তাহলে কি আমার জন্যই আজ এই বাসর ঘর আমার মনের মতো করে সাজানো হয়েছে? কিন্তু কে সাজাবে, মেঘ? নাহ মেঘ আমার মনের কথা জানবে কিভাবে আর মেঘ আমার মনের মতো করে বাসরঘরই বা সাজাবে কেন? এই বাসর ঘরের তো কোনো প্রয়োজন নেই কারণ মেঘ তো বিয়েটাই করেছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্বে। অবশ্য আমারো এই বিয়েতে তেমন মত ছিলনা। নিজের দিকে একবার চোখ বোলালাম সবুজ রঙের বেনারসিতে বউ সাজে আমাকে দারুণ লাগছে। আচ্ছা আমি যে বিয়ের সময় সবুজ রঙের বেনারসি পড়ার স্বপ্ন দেখতাম সেটা তো কেউ জানতো না তাহলে এই রঙের বেনারসি কেন? খাটের একপাশে ঘোমটা দিয়ে বসে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসলাম। মেঘ এসেছে, বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে ওকে বর সাজে একবার দেখতে। ঘোমটাটা আলতো করে একটু সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম, মেঘ মাথার পাগড়ীটা খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো তারপর হনহন করে হেটে বারান্দায় চলে গেলো। মেঘের এমন আচরণে আমি মুটেও অবাক হইনি এমনটাই তো হবার ছিল।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত দুটু বাজে। এখনো খাটের একপাশে চুপচাপ বসে আছি, মেঘ এখনো বারান্দায় ভাবতেই ভীতরটায় একটু কষ্ট অনুভব হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের মাঝখানে থাকা ঘুমন্ত পরীটার দিকে তাকালাম। নিষ্পাপ এই শিশুটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। তোহার মায়াবী মুখটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম, এই নিষ্পাপ মুখ দেখলে সব কষ্ট যেন ভুলে যাই।

চার বছরের ছোট্ট মেয়ে তোহা, মেঘ এর একমাত্র রাজকন্যা তোহা। সেই ছোট্ট বেলায় তোহাকে ফেলে রেখে মেঘ এর প্রথম স্ত্রী চলে গিয়েছিল, মেঘ ওর আদর ভালোবাসা দিয়ে তোহাকে একটু একটু করে বড় করে তুলছে। আজ তোহার বার্থডে, মেঘ আব্বুর বন্ধু আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে তাছাড়া মেঘ এখন আব্বুর অফিসে চাকরি করে সেই সুবাদে আব্বুর সাথে তোহার বার্থডে পার্টিতে এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে আমার জীবনের মুড় এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি।

এইতো আজ সকালে ঘটে যাওয়া কাহিনী…
বারান্দায় বসে পড়ছিলাম হুট করে আব্বু এসে পিছনে দাঁড়ালেন।
আমি: কি কিছু বলবে?
আব্বু: হ্যাঁ এক জায়গায় যেতে হবে।
আমি: কোথায়?
আব্বু: মেঘ’কে তো তুই চিনিস।
আমি: হ্যাঁ আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে।
আব্বু: হ্যাঁ আর ও তো এখন আমার অফিসেই চাকরি করছে মাঝে মাঝে বাসায়ও আসে, আজ ওর মেয়ের জন্মদিন তা…
আমি: তুমি যাও আমি যেতে পারবো না।
আব্বু: কেন?
আমি: আব্বু তুমি কি ভুলে গিয়েছ তোমার কণা এখন ইন্টার পড়ছে সামনে ওর পরীক্ষা।
আব্বু: ভুলিনি মা কিন্তু আমার সঙ্গে তুই গেলে ওরা সবাই খুব খুশি হতো আর মেঘ এর মেয়েটা একটু সময়ের জন্য হলেও তোর মতো একজন বন্ধু পেতো।
আমি: আব্বু একটি বাচ্চার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার মা, তোহার তো মা নেই আমি কিভাবে…
আব্বু: মা নেই বলছিস কেন? বল রাক্ষসীটা তোহাকে ফেলে চলে গেছে।
আমি: ওই একি হলো।
আব্বু: চল না মা সবাই তোকে দেখে খুব খুশি হবে, আহসানুল যখন গ্রামে থাকতো তখন একবার গিয়েছিলি তখন তো তুই ছোট ছিলি, চলনা মা। জানিস তো তোহা মেয়েটাকে দেখলে বড্ড মায়া হয়। (তোহাকে তো আগে কখনো দেখিনি শুধু ওর গল্পই শুনেছি আব্বুর মুখে, আজ গেলে মন্দ হয় না তোহাকে দেখা হবে)
আমি: ঠিক আছে যাবো।
আব্বু: রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।

রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আব্বু আম্মু আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আম্মু: আমার কণা মামুনিকে শাড়িতে কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছে।
আমি: সত্যি বলছ নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছ?
আব্বু: সত্যি মা তোকে খুব সুন্দর লাগছে।
আম্মু: হ্যাঁ মেয়ে কিন্তু বড় হয়ে গেছে…
আব্বু: বিয়ে দিয়ে দিতে হবে হাহাহা।
আমি: আব্বু, আম্মু আমি কিন্তু তোমাদের আগেই বলেছি এই বিয়ে টিয়ে আমি এতো তাড়াতাড়ি করছি না।
আব্বু: ওকে ওকে এখন চল।

একমাত্র রাজকন্যার বার্থডে বলে কথা, পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম হুট করে মেঘ এসে সামনে পড়লো।
মেঘ: কণা আপনি আমার বাসায় আসবেন আমিতো ভাবতেই পারিনি।
আমি: তোহাকে দেখতে এসেছি কোথায় ও?
মেঘ: আপনি একটু ওয়েট করুন আমি নিয়ে আসছি। (মেঘ তোহাকে আনতে চলে গেলো)

পুরো বাসা জুড়ে মেহমানের আনাগোনা, আব্বু আম্মু আহসানুল আঙ্কেল ও সাবিরা আন্টির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
মেঘ: কণা এইযে আমার রাজকন্যা তোহা। (মেঘ এর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, মুগ্ধ হয়ে গেলাম তোহার মায়াবী চেহারা দেখে। এমন নিষ্পাপ শিশুকে রেখে মেঘ এর স্ত্রী চলে গেলো কিভাবে)
মেঘ: তোহা মামুনি এইযে এইটা তোমার কণা আন্টি। (তোহা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি হলো মামুনি? আন্টিকে হাই বলো।
তোহা: এইটা তো আমার আন্টি না। (আধোআধো কন্ঠে বলে উঠলো তোহা, বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে)
তোহা: এইটা তো আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন কথায় মেঘ আমি দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না। তোহা এসে আমার শাড়ির আচল ধরে চিৎকার করে উঠলো)
তোহা: সবাই শুনো এইটা আমার নতুন আম্মু।

সবাই বেশ অবাক হয়ে আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে খুব অসস্থি হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চলে যাই এখান থেকে কিন্তু পারছি না তোহার নিষ্পাপ চেহারা আমাকে বাধা দিচ্ছে।
মেঘ: কণা আমি সত্যি দুঃখিত আমার মেয়ে এমন কিছু বল…
আব্বু: কণা মা কি হয়েছে? তোহা এসব কি বলছে?
মেঘ: স্যার, তোহা বাচ্চা মেয়ে তো তাই ভুল করে…
তোহা: আমি মুটেও ভুল করে বলিনি, এটাই আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন আচরণে শুধু অবাকই হইনি খুব অসস্থিও হচ্ছে, খুব কান্না পাচ্ছে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে)
মেঘ: আম্মু তোহাকে নিয়ে যাও তো এখান থেকে। (সাবিরা আন্টি এসে তোহাকে কোলে তুলে নিলেন, তোহা যাবে না বলে হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করছে)
আব্বু: দাঁড়ান তোহার সাথে আমি কথা বলছি।
আমি: আব্বু কোনো কথা বলতে হবে না বাসায় চলো।
তোহা: নতুন আম্মু তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে আমি কিন্তু কিছুই খাবো না। (তোহা কাঁদছে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে আবার ওর মুখে নতুন আম্মু ডাক শুনে রাগও হচ্ছে খুব)
তোহা: আজ থেকে এইটা আমার নতুন আম্মু, তুমি এক কাজ করো তো এই পরীটাকে এক্ষণি বিয়ে করে ফেলো। (তোহার এমন কথা শুনে মেঘ ধমক দিয়ে উঠলো, মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দাদুর কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো)

সবাই আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে দেখে আব্বুর হাত ধরে টান দিলাম।
আমি: চলো আব্বু এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।
আব্বু: দাঁড়া মা, কোথায় যাবি বাসায়? মেয়েটাকে কাঁদিয়ে চলে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবি? (সত্যিই তো এমন একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কাঁদিয়ে কি আমি ভালো থাকতে পারবো)
আব্বু: কণা মা জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা জিনিস কিন্তু আল্লাহ্‌…
আমি: কি বলতে চাইছ আব্বু?
“রায়হান যা চাইছে তা কিন্তু আমরাও চাইছি” (কথাটা শুনে পাশে তাকালাম, মেঘ এর আব্বু আম্মু আমার সামনে দু হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন)
আব্বু: আহসানুল আমি কিন্তু…
আহসানুল আঙ্গেল: তুই আমার বন্ধু তাই বলে তোর মেয়েকে তো আমি জোড় করে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে পারি না, আজ কণার উপর সব ছেড়ে দিলাম। মা তুমি যা চাইবে তাই হবে।
আমি: কি বলছেন এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় আপ…
সাবিরা আন্টি: হয়তো আল্লাহ্‌ চাইছেন তোমাদের দুজনের চারহাত এক হউক তাইতো এই বাচ্চা মেয়ের দ্বারা…
আমি: এ হয় না আন্টি আমি…
“কেন হয় নারে কণা, তুই বড় হয়ে গেছিস বলে আমাদের কথা শুনবি না? নাকি আমরা তোদের চেয়ে গরীব বলে আমাদের পরিবারে আসতে চাইছিস না” (পিছনে দাদিকে দেখে সালাম করলাম, সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম উনাকে)
আমি: দাদি এসব কিছুই না, আপনারা কেন বুঝতে চাইছেন না…
দাদি: এসব নয়তো কি? আমার মেঘ দাদুভাই দেখতে খারাপ? (দাদির কথা শুনে মেঘের দিকে তাকালাম, ও রাগে ফুঁসছে)
মেঘ: সবাই যারযার মতামত জানিয়ে দিচ্ছ হচ্ছেটা কি এসব? একটা বাচ্চা মেয়ে বললো আর তোমরাও ওর সাথে বাচ্চা হয়ে গেলে? ভালো করে শুনে রাখো আমি বিয়ে করতে পারবো না। (মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেলো)
দাদি: কণা তোর কি মতামত?
আম্মু: অনেক্ষণ ধরে চুপচাপ সবার কথা শুনে যাচ্ছি, কি পেয়েছেন আমার মেয়েটাকে? আপনারা বললেই আমরা বিয়ে দিয়ে দিবো নাকি?
আব্বু: শারমিন আমি কিন্তু এই বিয়েতে রাজি।
আম্মু: কিন্তু আমি রাজি না। (আব্বু আম্মুর তর্কাতর্কি দেখে দূরে সরে আসলাম, তোহাকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না মেয়েটা কি কাঁদছে নাকি)

তোহা: আজ থেকে তুই আর আমার আম্মু না, আমি তোকে ফেলে দিবো। আম্মুরা খুব দুষ্টু হয়, প্রথম আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আজ নতুন আম্মুও আমাকে রেখে চলে যেতে চাইছে। আর আব্বু তো আরো দুষ্টু, আজ আমাকে বকা দিয়েছে। (তোহাকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে চলে এসেছিলাম, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তোহার কন্ঠে এসব শুনে ভিতরে চোখ রাখলাম। তোহা হাতের পুতুলটা ছুড়ে ফেলে দিতে যেতেই মেঘ তোহাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো)
তোহা: ছাড়ো আমাকে, তুমি আমাকে বকা দিয়েছ কথা বলোনা আমার সাথে। (তোহার কান্নাভেজা কন্ঠে মেঘের কান্না যেন আরো বেড়ে গেলো)
মেঘ: মামুনি আমি আর তোমাকে বকা দিবো না, তুমি এই পুতুলটা ফেলে দিওনা। এই পুতুল তো তোমার মা তাই না?
তোহা: চাই না আমার আম্মু, সব আম্মুরা দুষ্টু হয় সব আম্মুরা পঁচা। (তোহার এই কথাটা যেন আমার কলিজায় এসে লাগলো। ছোট মেয়েটির মা নেই, একটু মায়ের ভালোবাসা চাইছে ওর মন আর আমি কিনা…)
মেঘ: মামুনি তুমি যা চাইছ তা হয়না মা। কণা আন্টিটা অনেক বড় লোক আর বড়লোক মেয়েরা বাচ্চা ফেলে চলে যায় কণা আন্টি খুব পঁচা তোমাকে ফেলে চলে যাবে। তুমি আর জেদ করো না।
তোহা: বললাম তো এই পরীটাই আমার নতুন আম্মু হবে নাহলে আমি না খেয়ে খেয়ে মারা যাবো তখন বুঝ…
মেঘ: চুপ কর মা, এসব কি বলছিস? তুই ছাড়া আমার আর কি আছে তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে। (মেঘের মেয়েকে এমনভাবে জরিয়ে ধরে কান্না দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না)
আমি: মেয়েকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না যখন মেয়ের কথা মেনে নিচ্ছেন না কেন? (মেঘ আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি বলছেন এসব? এইটা হয় না।
আমি: কেন হয় না? আমি যদি ছোট্ট তোহার জন্য নিজের সব স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হতে পারি তাহলে আপনি বাবা হয়ে পারবেন না কেন?
মেঘ: আপনি রাজি মানে?
আমি: হ্যাঁ আমি এই বিয়েতে রাজি। আমি তোহা মামুনির নতুন আম্মু হতে চাই।
তোহা: এ্যা আমার নতুন আম্মু পঁচা না খুব ভালো। (তোহা এতোক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আমার কথা গুলো শুনছিল, বিয়েতে রাজি বলতেই দৌড়ে এসে আমার কোলে উঠলো)
মেঘ: আমি পৃথিবীর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করি না বুঝেছেন? এই বিয়ে হবে না, আমি ঘৃণা করি মেয়ে জাতিকে।
আমি: তোহার নতুন আম্মু হবো বলেছি যখন তখন হবই পারলে আটকান।
তোহা: হিহিহি পরীটা। (তোহা হাসতে হাসতে আমার নাক টেনে দিলো, ওকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম)

আব্বুর সাথে আম্মু এখনো তর্ক করছেন দেখে আমি গিয়ে আব্বুর পাশে দাঁড়ালাম।
আমি: আব্বু আমি বিয়েতে রাজি। (সবাই অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার আমার কোলে থাকা তোহার দিকে তাকাচ্ছে)
আম্মু: কণা কি বলছিস ভেবে চিন্তে বলছিস তো?
আমি: হ্যাঁ আম্মু।
দাদি: আমি জানতাম কণা এই বিয়েতে রাজি হবে।
মেঘ: কিন্তু আমি রাজি না। (মেঘের কথা শুনে ওর পরিবারের সবাই ওর কাছে গিয়ে বুঝাতে শুরু করলো। আম্মু এসে তোহাকে আমার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসলেন)

আম্মু: কণা তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
কণা: না আমি ঠিক আছি আর আমি তোহার আম্মু হতে চাই।
আম্মু: এই পরিবারে তুই থাকবি কিভাবে? তাছাড়া মেঘ বিবাহিত।
কণা: কেন থাকতে পারবো না এই পরিবারে? কি কম আছে ওদের? আমাদের চেয়ে অনেকটা গরিব এটাই তোঁ? আমি মানিয়ে নিতে পারবো। আর মেঘ এর কথা কি বললে ও বিবাহিত? তাতে কি হয়েছে আম্মু, ওর বিয়েটা টিকেনি এতে কি ওর দোষ?
আম্মু: কিন্তু মেঘ তো বিয়েতে রাজি না, তুই সুখী হবি নারে মা।
আমি: আজ রাজি না কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে পর হয়তো একদিন মেনে নিবে তাছাড়া আমি তোহার জন্য বিয়েটা করছি তাই তোহা আমার কাছে থাকলে আমি আর কিছুই চাই না।
আম্মু: তোর যা মন চায় কর।

আম্মু চলে গেলেন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি আমি কি ঠিক করছি এসব? পরক্ষণেই তোহার মায়াবী মুখটার দিকে নজর পড়লো, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নাহ এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে শুধুমাত্র তোহার জন্য, আর মেঘ তো খারাপ ছেলে নয়, শুধু মেয়েদের জন্য ওর মনে একটু ঘৃণা জন্মে গেছে, আমি নাহয় আমার ভালোবাসা দিয়ে সব ঘৃণা ধুয়ে মুছে দিবো।
মেঘ: ওকে আমি রাজি। (মেঘের কথা শুনে তাকালাম ওর দিকে, স্পষ্ট বুঝতে পারছি ও পরিবারের সবার কথায় রাজি হয়েছে)

কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিয়ের আয়োজন করা হলো, সন্ধ্যাবেলা মেঘের বাড়িতেই বিয়েটা হয়ে গেলো। আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমিও বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু আজ সবকিছু…

বারান্দার দরজা খুলার শব্দ শুনে ঘোমটাটা পুরোপুরি সরিয়ে মেঘের দিকে তাকালাম। এতোক্ষণ হয়তো একের পর এক সিগারেট টেনেছে, ওর চোখ মুখ তো তাই বলছে। এলোমেলো পায়ে হেটে এসে মেঘ দফ করে সোফায় বসে পড়লো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ চেঁচিয়ে উঠলো…
মেঘ: এই মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আর বউ সেজেই বা বসে আছ কেন? খবরদার একদম অধিকার ফলাতে আসবা না আমি মেয়েদের ঘৃণা করি। (বিয়ে তো জীবনে একটাই হয় তাই মেঘের কথার পাত্তা না দিয়ে খাট থেকে নেমে ওকে সালাম করতে গেলাম)

সালাম করতে যেতেই মেঘ আমার দুহাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলো আমার গালে। থাপ্পড়ের শব্দে তোহা ঘুম থেকে উঠে বসে গেছে আর আমি বোবার মতো গালে হাত দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রথম রাতেই এমন, জানিনা বাকি জীবনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।

চলবে?

ভালোবাসি

0

গল্প : ভালোবাসি

লেখিকা : নীল পরী

আজ “রাহির” কলেজ এর প্রথম দিন। খুব ভালো লাগলো দিনটা। নতুন প্রকৃতি, নতুন আবহাওয়া, নতুন টিচার্স, আর হারামি নতুন ফ্রেন্ডস।প্রতিদিন খুব ভালোই লাগে ক্লাস করতে টিচার্সদদের বকা শুনতে,, কিন্তুু এমন সব হারামি ফ্রেন্ডস থাকলে টিচার্সদের বকা শুনতে কোনো শএুর দরকার পরে না। তবুও অরা বেষ্ট ফ্রেড। আর নতুন নতুন কলেজ গেলে ছেলেদের থেকে প্রেমের অফার তো আসবেই। তাই বল কি প্রেমে করতে হবে না। তার পর ও ভালো লাগা বলে একটা কথা তো আছেই। অনেকটা দিন পার হয়ে গেলো একটি ছেলেকে দেখতে দেখতে ভালোলেগে গেলো। আসলে এই ছেলেটাকে রাহিরই খুব বিরক্ত লাগতো। কিন্তুু কখন যে কেমন করে ভালোবেসে ফেললো বুঝে উঠতে পারেনা। যাই হোক রাহির ভালোলাগার মানুষটির নাম হলো ” নাহিদ”
নাহিদের সাথে ভালো করে যে দিন কথা হলো তা হলো….
রাহি : হাই,,,,( মুগ্ধতার চোখে)
নাহিদ : ( অবাক চোখে তাকিয়ে আছে)
রাহি: কি হলো,? শুনতে পাচ্ছো না বুঝি.. এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো যেনো ভূত দেখছো???
নাহিদ : না মানে…..
রাহি:না মানে কি হুমমমম।
নাহিদ : আসলে আমি ভাবছি যে তুমি আমাকে পছন্দ করো না, আর সে তুমি আমার সাথে কথা বলছ নিজে থেকে তা কোনো কারণ ছাড়াই।
রাহি : হুমমমম তাই তো।
নাহিদ : হুমমম তাই।
রাহি : তাই না আসলে কিছু বলার ছিল আমার তোমার সাথে।
নাহিদ : অহহহহহ, ওকে বলো তাহলে….
রাহি : এখন ভুলে গেছি পরে বলব ( কেনো জানি লজ্জা লাগলো)
নাহিদ : ওকে ঠিক আছে মনে পরলে বলো।
রাহি : ওকে ( নিচে তাকিয়ে একটু হাসি মুখে)।

এমন করে চলে গেলো কিছু দিন। নাহিদের সাথে কথা হয় বাট বলতে পারে না মনের কথা। একদিন কথা বলতে বলতে হঠাৎ নাহিদ রাহিকে বলল…
নাহিদ : “রাহি” আমার না একটি মেয়েকে ভালোলেগে গেছে, সত্যি বলতে কী আমি তার প্রেমে পরে গেছি….
রাহি : (চুপ)
নাহিদ : এই রাহি চুপ কেনো তুমি কিছু বলো কি করে মেয়েটাকে বলবো।
রাহি 🙁 চুপ কান্না চোখে)
নাহিদ: রাহি আমার দিকে তাকাও তো।
রাহি : ( মাথা নিচু করে আছি)
নাহিদ : এই রাহি এই তুমি কাদঁছো কেনো..??
রাহি : কিছু না বলে নাহিদ কে জরিয়ে ধরে কান্না চোখে বলতে লাগলাম নাহিদ…(বলেই চুপ করে আছি)
নাহিদ : বলো কি হয়েছে..???
রাহি : আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নাহিদ : (মনে মনে হাসে কিছু বলে না চুপ করে শুন্ছে)।
রাহি: নাহিদ আমি তোমাকে কেমন করে জেনো ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু বলতে পারছি না। এখন তুমি বলো যে,,(কথাটা শেষ না হতেই)
নাহিদ : i love you rahi
রাহি 🙁 চমকে গিয়ে) তুমি না বললে তোমার একটি মেয়েকে ভালো লেগেছে..???
নাহিদ : আরে পাগলি সেই মেয়েটি তো তুমিই,,,আমি আগে দেখতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না। তাই বলছি,, তুমি বুঝ না হুমমমম।
রাহি : হুমমম অনেক ভালোবাসি আমি তোমাকে নাহিদ।
নাহিদ: আমিও….এখন তো বলো…..
রাহি : কি..???
নাহিদ : ভালোবাসি….
রাহি : হুমমমম,, খুব ভালোবাসি নাহিদ,
নাহিদ : হুমমমম
রাহি: i love you
নাহিদ : i love you too
রাহি : আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো কখনো…???
নাহিদ : না যাবো না। যত বাধাই আসুক না কেনো আমরা এক সাথে তার সমাধান করবো।
রাহি : হুমমমম

এমন করে চলতে থাকে দিন। রাহির ফ্রেন্ডস আর নাহিদের ফ্রেন্ডস খুব খুশি তাদের নিয়ে। ভালোই যাচ্ছিলো দিন। কিন্তু কেমন করে জানি বাসায় এক এক করে সবাই জেনে যায়। প্রতিদিন কলেজ ও যেতে পারে না আর নাহিদ কে ছাড়া রাহি থাকতে পারে না। আর নাহিদ ও। কিন্তু ফোনে কথা হয় তাদের। রাহি খুব কান্না কাটি করে,,, এমন করে চলে যায় কিছু দিন,,, না পেরে নাহিদ রাহির বাসায় আসে আর রাহিকে ডাকতে থাকে….
নাহিদ : রাহি রাহি….
রাহি : নাহিদ তুমি এসেছ….আমাকে নিয়ে যাও তুমি।
নাহিদ : হুমমমম নিয়ে যাবো কিন্তুু এভাবে না বিয়ে করে আমার বউ বানিয়ে।

রাহির বাবা তাই নাকি, আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে বলছ এত বড় সাহষ তোমার।
রাহি : বাবা আমি নাহিদ কে ভালোবাসি
রাহির বাবা : ভালোবাসো,, মানি না আমি
রাহি: তুমি না মানো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
রাহির বাবা রেগে রাহিকে চর মারলো আর নাহিদ কে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।রাহি বলে নাহিদকে এই জীবনে না পেলে এই জীবন আমি চাই না। নাহিদ এর ও একই অবস্থা নাহিদ রাহি না খেয়ে খেয়ে নিজেদের শেষ করে দিতে চাচ্ছে। নাহিদ এর মা বাবা ছেলের এই অবস্থা আর দেখতে পাড়ছে না তাই রাহির বাসায় যায় নাহিদ তে সাথে নিয়ে। রাহির বাবা বলে….
রাহির বাবা : আপনারা এখানে কেনো এসেছেন…?
নাহিদের মা : কেনো এসেছি বুঝতে পারছেন না আপনি। দেখুন আমার ছেলেকে কি অবস্থা হয়েছে।
রাহির বাবা : তো আমি কি করবো..???
নাহিদের মা : আপনার কি একটু ও মায়া লাগে না। নিজের মেয়েকে দেখুন তো একবার।আপনার জিৎ এর জন্য এই ছেলে মেয়ে দুজন মরে যাবে।
রাহির বাবা : রাহির দিকে তাকিয়ে তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে, বলে কি অবস্থা বানিয়েছিস তুই মা।
রাহি : বাবা তাতে তোমার কি তোমার তো কিছু যায় আসে না।
নাহিদের মা : মেনে নেন অদের।আর আপত্তি কইরেন না।
রাহির বাবা : রাহি আমি কি তকে ভালোবাসি না মা।
রাহি : বাবা তুমি আমাকে ভালোবাসো,, কিন্তু নাহিদ ও আমাকে ভালোবাসে,, আমার জীবনে তোমাদের দুজনের ভালোবাসাই চাই….
রাহির বাবা : নাহিদ তুমি আমার মেয়ের সাথে প্রেম করো..????
নাহিদ : না
রাহি : নাহিদ কি বলছ তুমি…?
নাহিদ : আমি তো রাহি কে ভালোবাসি ,,, প্রেম আর ভালোবাসা এক না।
রাহি : হুমমম আমি ও ভালোবাসি ( নাহিদ কে জরিয়ে ধরে)

সবাই দুজনকে মেনে নিল মাঝ খানে কষ্ট ও পেতে হলো,,,

সমাপ্ত

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:6

1

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:6

লেখা –সুলতানা ইতি

আনুশা: ইচ্ছে করে এখন এই কলেজ থেকে চলে যাই,এই ছেলেটা যে ভাবে আমার পিচনে লেগেছে, তাতে বুঝতে পারছি এই কলেজ এ থাকলে শান্তি পাবো না, কিন্তু যাবো কোথায়?
অহ এই সময় আবার কে ফোন দিলো, ওও অন্নি
হ্যালো অন্নি কি খবর তোর

অন্নি: হুম আমি ফোন দিলেই খবর জানতে চাস,নিজে থেকে কখন ও ফোন করেছিস

আনুশা: প্লিজ অন্নি রাগ করিস না সময় পাই না আর আজ থেকে তো মোটে ও পাবো না জানিস প্রিন্সিপাল স্যার আর দুটো টিউশনি খুজে দিয়েছে আমায়

অন্নি: জানি আমি,এখন বল নতুন কলেজ নতুন ফ্রেন্ডস কেমন লাগছে

আনুশা: নতুন ফ্রেন্ডস মাই ফুট

অন্নি : রেগে যাচ্ছিস কেনো কি হইছে বল

আনুশা: কি হয়নি সেটা বল,তার পর অন্নিকে প্রথম থেকে সব কথা বললাম

অন্নি: ???????বলিস কিরে হুহুহুহুহুহুহুহুহু হা হা হা হা

আনুশা: অন্নি???????

অন্নি: ওকে ওকে আর হাসবো না,তবে ছেলেটি মনে হয় তোকে সত্যি লাভ করে রে

আনুশা: অন্নি তুই সব জেনে ও এই কথা বলছিস,ভালোবাসা সম্পর্ক। এই সবের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই,ভালো বাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে বলে ও আমার মনে হয় না

অন্নি: তুই থাম, পৃথিবীর সবাই কি এক রকম

আনুশা: প্লিজ অন্নি এখন তুই এটা বলিস না,যে আনু তুই ছেলেটার সাথে কথা বল

অন্নি: আমি ওটা বলছি না ছেলেটা তোকে পছন্দ করে এটা ছেলেটার প্রব্লেম তোর না, তুই এই সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস কেনো

আনুশা: অন্নি তুই কি বলছিস ঐ ছেলের জ্বালায় আমি ঠিক মতো ক্লাস করতে পারছি না, আর তুই বলছিস আমি????,উফফগ অন্নি তুই ফোন রাখ তো আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে

অন্নি: ওকে রাখছি মাথা ঠান্ডা হলে ফোন করিস, আল্লাহ হাফেয,

আনুশা : মনে মনে অন্নি কে বকতে লাগলো
বাসায় এসে ও মুড অফ করে বসে আছে

আনুশার আম্মু: ভেবে ছিলাম মেয়েটা পড়া শুনা করলে সবার সাথে মিসবে আবার আগের মতো হয়ে উঠবে,এই তো দেখছি পুরোই উল্টা ও আর ও গম্ভির হয়ে যাচ্ছে কিছু জিজ্ঞাস করলে ও বলবে না

আনুশা: জীবন টা কেনো আমার এমন, যখন ই ভাবলাম এখন থেকে ভালো থাকবো ঠিক তখন ই একটা ঝড়ের পূর্বাশ দেখতে পাই,
না এই সব ভাবলে হবে না আমাকে পড়া শুনা করতে হবে আমাকে অনেক বড় হতে হবে কিছু কিছু মানুষ কে বুঝিয়ে দিতে হবে,তারা না থাকলে ও আমরা ভালো থাকতে পারি

এই ভাবেই কাটছে আনুশার দিন রাত,একটু আশার আলো আর অনেক হতাশা, কলেজ টিউশনি আর পড়া শুনা,আর তানভীর এর জ্বালাতন তো আছে ই★

আনুশা : রাতের শহর টা খুব ভালো লাগে বিশেষ করে যখন জানালা দিয়ে বাইরে দেখি, তখন বড় বড় দালান গুলোর জানালা দিয়ে জোনাকির আলোর মতো লাইটের আলো বের হয়ে আসে, চার দিকে অন্ধকার, আর জোনাকির আলোর মতো এই সামান্য আলোটা মন টা একদম মাতাল করে দেয়

আনুশার আম্মু: কিরে ঘর অন্ধকার করে বসে আছিস যে

আনুশা: মা ভালো লাগছে অন্ধকার, লাইট জালিয়ে ও না তো

আনুশা আম্মু: তা বললে কি আর হয়, আনু পড়তে বসবি না আজকে

আনুশা: আজ ভালো লাগছে না মা

আনুশার আম্মু: শুনো মেয়ের কথা, আর মত্র কয়েকটা দিন আছে পরিক্ষার আর মেয়ে বলে কি,আমি অতো কিছু বুঝি না লাইট জালিয়ে দিলাম পড়তে বস

আনুশা: উফফ মা একদম কিচ্ছু বুঝে না, কি আর করা যাই পড়তে বসি,পড়তে ও তো মন চায় না কি করি

হুম ঐ দিন যে ডায়েরী কিনেছি তাতে তো কিছু ই লিখিনি, আজ লিখবো,যেই ভাবে সেই কাজ ডায়েরী নিয়ে বসে পড়লাম,

?????ডায়েরি পাতা উল্টিয়ে মাথায় বাঁজ পড়লো,আমি তো এই টা কিনার পর থেকে সময়ের অভাবে কিছুই লিখিনি,তা হলে লিখা টা লিখলো কে,পড়ে দেখি তো কি লিখেছে

” আড়ালে যত দূরে হোক ঐ আকাশ
তবুও আমি তার নিচেই হাটি প্রতিদিন
যতো টা গভীরে আছে চোখের জ্বল,

তবুও আমি করি সেখানে নিজেকে ভিলিন
রাত শেষ যখন ট্রেনের শব্দে ভোর
কাটে না তখন হাজার সপ্নের ঘোর

খুজেছি তখন অজনা সুখ ঐ চোখে
কি যেন দেখি আমি ভিশন ও ভিবর “”

বাহ কবিতা টা তো খুব সুন্দর । কিন্তু এটা লিখলো কে,,কবিতা টা একদম সেই রকম,,,
না না না কি ভাবছি এই সব আমি, এই সব সুন্দর জিনিশ গুলো উপভোগ করা আমার জন্য নয়,????? রাগে ডায়েরী টা চুড়ে মারলাম,কোন ভাবে তানভীর এই লিখাটা লিখেনি তো, ও যদি লিখে থাকে, তা হলে ওর সাহস কি করে হয় আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডায়েরী তে কিছু লিখার????
আনুশার আম্মু’ কিরে ডায়েরী টা পেলে দিলি কেনো

আনুশা:মা তুমি এখানে,?

আনুশার আম্মু : দেখতে এলাম তুই পড়ছিস কি না

আনুশা: দেখা হয়ে গেছে,এখন যাও তো আমাকে একা থাকতে দাও

আনুশার আম্মু: তোর কি হয়েছে বলবি আমাকে

আনুশা: কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি,এখন পড়বো তুমি যাও তো মা

আনুশার আম্মু: যাচ্ছি তুই রাগ করিস না
চলে এলাম মেয়েটার যে কি হয়েছে বুঝিনা,কতো হাসি খুশি চট পটে মেয়ে ছিলো আমার,আর এখন তো হাসতে ও ভুলে গেছে

আনুশা: খুব কান্না পাচ্ছে যতো এই সব ফালতু জিনিশ থেকে নিজে কে দূরে রাখতে চাই ততই কেনো কাছে চলে আসে এই সব, আর না,আর কয়েকটা দিনই তো, এক্সাম এর পর অন্য কোথায় ও চলে যাবো,তার আগে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে,
কিন্তু আজ কিছুতেই পড়াতে মন দিতে পারছি না,খুব রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করে সব ভেঙে পেলে দি

তানভীর : কয়েক দিন পরে এক্সাম,কিন্তু কিছু তে ই পড়তে পারছি না, সারাক্ষন মনে হয় আনুশা আমার আসে পাশে আছে কেনো এমন হচ্ছে,আনুশা কে তো আমার ফিলিংস টা বুঝাতে ই পারছি না।মেয়েটা এমন কেনো বুঝি না,ইসস ও যদি আর ও আট দশটা মেয়ের মতো হতো,তানভীর না না আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না,আর ও কেন অন্য মেয়েদের মতো হবে, ওর এমন ভাব দেখেই তো ওর প্রেমে পড়েছি আমি

তানভীর এর আম্মু: কিরে তানভীর কি ভাবছিস এই পড়ন্ত বিকেল এ

তানভীর : আম্মু কিছু না তো ( শুনেছি আব্বু আম্মুর নাকি লাব ম্যারেজ, আর মা বাবা যেমন হয় ছেলে মেয়ে ও নাকি তাদের মতো হয়)

তানভীর এর আম্মু: তুই যতোই বলিস কিছু হয়নি আমি বুঝি কি লুকাচ্ছিস, বল।

আম্মু তুমি ও না কি লুকাতে যাবো বলো

তানভীরের আম্মু: দেখ বাবা তুই এখন ও এতো টা বড় হয়ে যাসনি যে আমি তোর না বলা কথা গুলো বুঝতে পারবো না

তানভীর : আমি আম্মুর দিকে অভাক চোখে তাকিয়ে আছি,আর ভাবছি মেয়েদের মনটা কতো কমল তা আমার আম্মু কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না আব্বুকে তো বুঝার মতো সময় পাইনি,উনি থাকে দেশের বাইরে দুই তিন বছর পরে একবার আসে কয়েক মাস থেকে আবার চলে যায়,এই আম্মু ই আমার সব

তানভীরের আম্মু : কিরে বলবি না মায়ের কাছে

আম্মু আমার কাছে এসে মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতস জিজ্ঞেস করলো, আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম

আম্মু: জানিস তোর আব্বু যেদিন আমাকে প্রথম দেখে অনি নাকি আমাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে পেলে,কিন্তু আম্মু প্রথম প্রথম পাত্তা দিতাম না

তানভীর : কেনো দিতে না আম্মু

আম্মু: তোর বড় আন্টির যখন বিয়ে হয় তখন দেখলাম তোর আংকেল তোর আন্টিকে কারনে, অকারনে বকতো মারতো সেই থেকে ছেলে দের আমার ভয় হতো,কিন্তু তোর আব্বু কে দেখে আর তোর আব্বুর ভালোবাসা দেখে, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে পৃথিবীতে সব মানুষ এক নয়

তানভীর : তার মানে আনুশার জীবনে কি এমন কিছু আছে? যে জন্য ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না

আম্মু: কিরে কি ভাবছিস,মেয়েটার নাম কি,?

তানভীর : অবাক হয়ে কোন মেয়ে আম্মু

আম্মু: এতো অবুঝ সাজছিস কেনো,এখন যে মেয়েটার কথা ভাবছিস আমি তার কথা ই জিজ্ঞেস করছি

তানভীর : তুমি কি করে বুঝলে আম্মু আমি এখন কারো কথা ভাবছি

আম্মু: বুঝবো না,আমি যে মা সন্তানের মনে কি চলছে আমি তো বুঝতে পারছি,

তানভীর : সত্যি আম্মু তুমি পৃথিবীর সেরা মা,আমার লক্ষি আম্মু

হয়েছে হয়েছে আর পাম মারতে হবেনা,আমার বউ মার নামটা তো বল

তানভীর : আম্মু ওর নাম আনুশা,ও সবার থেকে আলাদা আম্মু,সারাক্ষন পড়াশুনা করে,আর চুপ চাপ থাকে,

আম্মু: কোথায় থাকে বল আমাকে আমি ওর আম্মুর সাথে কথা বলবো

তানভীর : কোথায় থাকে জানি না কথা বলতে গেলে,কিছু বলার সান্স এ দেয়না এটা ওটার বাহানা করে চলে যায়

আম্মু: ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,অনেক দেরি হয়ে গেছে আমি নাস্তা দিচ্ছি খেয়ে পড়তে বস,আর এখন এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে পেল

তানভীর : হুম
কি হুম আয় খাবি চল,আম্মু আমাকে টেনে নিয়ে গেলো

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:5

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:5

লেখা –সুলতানা ইতি

 

পরদিন সকাল বেলা আনুশা তাড়া তাড়ি রেডি হচ্ছে কলেজ এ যাওয়ার জন্য
আনুশার মা: কিরে কই যাচ্ছিস তুই এতো সকাল সকাল?

আনুশা: কোথায় সকাল মা আটটা বাজে,আর আমি কলেজ এ যাচ্ছি আর একটা দিন ও নস্ট করতে চাই না

মা: তাই বলে এতো তাড়া তাড়ি

আনুশা: মা রাস্তায় জ্যাম থাকে তো অনেক

আনুশার আম্মু: ওকে যা মন দিয়ে পড়া শুনা কর

আমি মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে কলেজ এর পথে রওনা হলো
এ যেন আমার নতুন জীবনে পা রাখলাম আমি, কখন ও কি ভেবেছি আবার পড়া শুনা করবো আগের মতো, আল্লাহ সব কিছু তোমার রহমতেই সম্ভব হয়েছে,তুমি না চাইলে কিচ্ছু হতো না, শুকরিয়া আল্লাহ তোমার দরবারে, কলেজ এসে পৌঁচলাম দেখলাম ক্যাম্পাসে বসে অনেকই আড্ডা দিচ্ছে,যাই হোক আমি ঐ সব আড্ডা টাড্ডার মধ্যে নাই সোজা চলে গেলাম ক্লাস এ

পুরো ক্লাস টা পাকা কেউ নেই তবে সবার বই গুলো ঠিক আছে যাই হোক গিয়ে বসলাম একটা ব্যান্সে , পাশে একটা বইয়ের ব্যাগ রাখা আছে এটা কার ছেলের না মেয়ের দূর আমার এতো কিছু জানার দরকার নাই,ক্লাস শুরু হতে এখন ও লেট তার ছেয়ে বরং বই খুলে একটু পড়ি
কিছুক্ষন পর

ক্লাস সব স্টুডেন্ট রা আসা শুরু করছে শুধু আমার পাশের টা আসেনি
স্যার চলে আসছে ক্লাস এ

হঠ্যাৎ একটা ছেলে বল্লো আসবো স্যার

(আসো)

স্যার: সবাই শুনো তোমাদের এক্সাম অতি সন্নি নিকটে সো তোমরা মন দিয়ে পড়া শুনা করো এই কয়টা দিন আউট সব প্লেন বাদ দিয়ে পড়া শুনাতে মন দাও
স্টুডেন্ট : ইয়েস স্যার
স্যার আর ও কিছুক্ষন লেকচার দিয়ে চলে গেলো, আমি স্যার পড়াটা নিজে নিজে আবার করে বুঝবার চেস্টা করছি

?????আরেএএএএ miss attitude তুমি এখানে?

কথাটা শুনে তাকালাম,হুম আমার পাশে সেই ছেলেটা, যার সাথে প্রথম দিন ধাক্কা খেয়েছিলাম, সেই ছেলেটা বসেছে আর আমি খেয়াল ই করিনি,ওহ নো এতো বড় blunder আমি কি করে করতে পারি,

ছেলেটি: এই যে mis attitude এতো কি ভাবছো?বাই দা য়ে নাম কি তোমার?

আনুশা: আমার নাম যাই হোক না কেনো আপনাকে বলবো কেনো আর আমি মটেই Attitude দেখাচ্ছিনা সো আমাকে ঐ নামে ডাকবেন্না, আর আপনি আমার পাশে কি করছেন? (ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস কিরলো আনুশা)

ছেলেটি: এই যে হ্যালো, আমি আপনার পাশে না আপনি আমার পাশে এসে বসেছেন,কেনোনা আপনার আগে আমি এসেছি

আনুশা: ওকে ফাইন আপনার জায়গাতে আপনি থাকুন আমি গেলাম এই বলে আমি একদম পিচনে গিয়ে বসলাম,এই ছেলেটার গায় পড়ে কথা বলার ভাবটা আমার একদম ভালো লাগছে না কি যে করি

ছেলেটি: সেই প্রথম ধাক্কা খেয়ে এই মেয়ের চোখের দিকে নজর পড়েছিলো উদ্ভট মায়াবি চোখ, যেন চোখেই তার কথা বলে,আচ্ছা ওর চোখ গুলো কি ওর নাম টা আমায় বলে দিতে পারে না নাকি, দূর কি সব ভাবছি আমি

আনুশা: ক্লাস শেষ তাই চলে যাচ্ছিলাম হঠ্যাৎ

এই যে miss Attitude, একটু শুনবেন,

আনুশা: আসে পাশে তাকালাম দেখলাম ছেলেটা আমাকেattitude বলে ডাকাতে সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে, আমার তো রাগ চরমে উঠে যাচ্ছে, অনেক কস্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম

হাই আমি আনুশা আর ভুল করে ও আমাকে ঐ সব নামে ডাকবেন্না, এই বলে চলে যাচ্ছিলাম

ছেলেটি: আনুশা শুধু নিজের নাম টা ই বললে আমার নামটা শুনবে না,

আনুশা: আমি না শুনার মতো করে হাটছি
ছেলেটি চিৎকার করে বলল, হেই মিস আনুশা আমার নাম তানভির, তানভির মাহমুদ

আনুশা,; আমি আমার মতো করে চলে এলাম বাসায় এই সব ফালতু ছেলেদের কথা ভাবার সময় আমার হাতে নেই

আনুশার আম্মু: কিরে নতুন কলেজ নতুন সব কিছু কেমন লাগলো তোর,

আনুশা: ভালো
আনুশার আম্মু: ভালো হলে মুখটা এই রকম পেচার মতো করে রাখছিস কেনো

আনুশা: তুমি ও না মা,মানুষ এর মুখ কখন ও পেচার মতো হয়,আচ্ছা যাও খেতে দাও খিদে পেয়েছে( কথা গুরানোর জন্য)

আনুশার আম্মু: কথা গুরাচ্ছে মেয়ে আমার খুব বড় বড় ভাব নিচ্ছে সত্যি কি বড় হয়েছে

আনুশা: মা যাও তো খাবার দাও,

আনুশার আম্মু: দিচ্ছি আয়
খেয়ে দেয়ে একটু শুতে যাবো অমনি মনে হলো আজ ডায়েরী টা তে কিছু লিখবো অনেক দিন হয় তেমন করে ডায়েরী লিখা হয় না
ডায়েরী খুলে লিখতে বসলাম
ইসস যা সেই কবে যে ডায়েরীর পেজ গুলো শেষ হয়েছে মনে নেই
ঠিক আছে কোন ব্যাপার না,কাল কলেজ এ যাওয়ার সময় একটা কিনে নিবো
আনুশার আম্মু: কিরে কি এতো বিড় বিড় করছিস বল তো,

আনুশা: না আম্মু তেমন কিছু ই না

আনুশার আম্মু: তা হলে যা ঘুমা একটু,বিকেল এ তো আবার টিউশনি করতে বের হবি,

আনুশা: হুম,ইসস কি যে করি, চাকরি টা ও ছেড়ে দিয়েছি নতুন টিউশনি ও তো পাইনি,এই দুই টা দিয়ে তো আর সব খরচ চলবে না, কি করি,?

পরদিন আনুশা কলেজ এ যাওয়ার পথে ডায়েরী কিনবে কি না ভাবছে,যদি ডায়েরি না কিনি তা হলে কিছু টাকা বেছে যাবে, এখন কি করি? দেখি তো ব্যাগের মধ্যে জমিয়ে রাখা কোন টাকা পাই কি না,আরেবাস এই তো পেয়ে গেছি এই দিয়ে হয়ে যাবে যাই কিনে নিয়ে আসি, ডায়েরী কিনে সোজা কলেজ এ চলে গেলাম, গিয়ে ক্লাস বসলাম,

প্রিন্সিপাল স্যার: আনুশা একটু এই দিকে আয় তো
আনুশা: স্যার কেনো ডাকছে শুনে আসি

তানভীর ক্লাস এ এসে আরে এই টা miss attitude na কিন্তু কই গেলো ও তো ক্লাস ছাড়া অন্য কোথায় যায় না

এমন সময় অন্য আরেক টা ছেলে যাওয়ার সময় তার ধাক্কা খেয়ে আনুশার বই পড়ে যায়,তানভীর ছেলেটা কে কিছু বলতে গিয়ে ও বল্লো না,তানভীর এর চোখ আটকে গেলো একটা ডায়েরীর উপর

তানভীর ; আরে mis.attitude আবার ডায়েরী ও লিখে দেখিতো ডায়েরি তে কি আছে,( যদি ও অন্যের ডায়েরী পড়া ঠিক নয়) তবু ও এই ডায়েরী টা খুলে দেখি,সে কি কিছুই তো লিখা নেই,তার মানে এটা miss Attitude আজ কিনেছে, আচ্ছা যদি এই ডায়েরী টার প্রথম লিখা আমার হয়,,তা হলে ত বেশ ভালো হবে, miss attitude, একটু চমকে যাবে যেই ভাবা সেই কাজ, কাজ শেষ করে সব কিছু আগের মতো করেই রেখে দিলো

আনুশা: উফফ স্যারর কে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না,আমাকে আর ও দুটো টিউশনি পাইয়ে দিলো, যদি ও যাতায়াত করা টা একটু কঠিন তবু ও ভালো

তানভীর : হেই মিস a,সরি আনুশা, কেমন আছো

আনুশা: এ আবার এখানে হায় আল্লাহ আজ আবার আমার সাথে বসে নি তো

তানভীর; হেই মিস সারা দিন কি এতো ভাবো,

আনুশা: সেটা আপনাকে বলবো কেনো?

তানভীর : না বলতে চাইলে তো আর ঝোড় করে শুনতে পারবো না

আনুশা: তাই তো,এতো যাতে বুঝেন তা হলে আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলতে আসেন কেনো

তানভীর : আচ্ছা ও কোথায় থাকে কিছুই তো জানি না, একবার জিজ্ঞাস করবো।
এমন সময় স্যার এন্ট্রি
তানভীর : উফফ এই স্যার টা একটু পরে আসলে কি হতো মনে মনে স্যার এর চৌদ্দ গুস্টি উদ্ধার করলো তানভীর
তার পর গিয়ে নিজের জায়গাতে বসলো

ক্লাস শেষ এ আনুশা চলে যাচ্ছিলো

তানভীর : আরে ও তো চলে যাচ্ছে এই মিস এ,,না না আনুশা প্লিজ দাড়াও

আনুশা: না শুনার মতো করে হাটছে,

তানভীর : দৌড়ে গিয়ে হাফাতে হাফাতে, হেই ললনা কোথায় থাকো বলো না
আনুশা: ( কি পাগল ছেলেরে এই কথা বলার জন্য এতো দূর দৌড়ে আসে কেউ)

তানভীর : বলো না..?

আনুশা: আমার নাম পাকি অই আকাশে থাকি,( আমি কি কম জানি নাকি,দিলাম বলে, এইই বার বুঝো ঠেলা)এই বলে চলে গেলো

তানভীর : যাক বাবা কি জিজ্ঞাস করলাম আর কি বলে গেলো, তবে যাই বলো না কেনো ললনা আমি তোমার পিছু ছারছি না,এই তানভীর যাকে মন থেকে চায় তাকে পেয়ে তার পর শান্ত হয়

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:4

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:4

লেখা –সুলতানা ইতি

হঠ্যাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আমার তো মেজাজ গরম হয়ে গেলো

আনুশা: চোখে দেখতে পাননা চোখ কি হাতে নিয়ে হাটছিলেন???

ছেলেটি:?????

আনুশা: কি হলো এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,জীবনে কি মেয়ে মানুষ দেখেননি নাকি

ছেলেটি: আমি না হয় চোখ হাতে নিয়ে হাটছিলাম তাই দেখতে পাইনি,তাই বলে আপনি কি নাকের জন্য চোখে দেখান না নাকি,আর দেখবেন কি করে নাক এই ভাবে উচো করে রাখলে চোখে দেখবেন কি করে

আনুশা:??????

ছেলেটি: বাই দ্যা য়ে আপনাকে তো কখন ও এই কলেজ এ দেখিনি,নতুন নাকি
আনুশা: আপনাকে আমার পরিচর দিতে আমি বাধ্য নই, এই বলে আনুশা হন হন করে হাটা শুরু করলো

ছেলেটি: ওয়াও I like attitude

আনুশা: উফ কথায় থেকে যে আসে এরা বুঝি না গায়ে পড়ে ঝগড়া করা এদের স্বভাব
এখন প্রিন্সিপাল এর রুম টা খুজে পেলেই হলো ঐ তো একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি গিয়ে জিজ্ঞেস করি প্রিন্সিপাল এর রুম কোন দিকে

এই যে একটু শুনবেন প্লিজ

মেয়েটি: আমাকে ডাকছেন

আনুশা: হুম আপনাকে প্রিন্সিপাল এর রুম টা কোন দিকে বলতে পারবেন

মেয়েটি: আসুন আমার সাথে

আনুশা: হুম চলুন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,

মেয়েটি : ইটস ওকে এই টা ই প্রিন্সিপাল স্যার এর রুম আপনি ভিতরে যান,আমি আসছি
আনুশা: ওকে ধন্যবাদ:
মেয়েটি মুছকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো

আনুশা: আসসালামু আলাইকুম,স্যার আসবো

প্রিন্সিপাল স্যার: হুম আসো, তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না,
আনুশা: আমাকে আনিস আংকেল পাঠিয়েছে

প্রিন্সিপাল স্যার : ও ওও তুমি আনুশা,তোমার কথা আনিস আমাকে বলেছিলো,কিন্তু আনিস যত বার না বলেছে তার থেকে বহুবার অন্নি আমাকে বলেছিলো
অন্নির কথা অনুযায়ী তোমার তো আর ও আগে আসার কথা এতো দেরি হলো যে
আনুশা: আসলে স্যারর অনেক জ্যাম ছিলো রাস্তায় তাই

স্যার: ইটস ওকে অন্নি বলেছিলো তুমি পড়া শুনায় খুব ভালো তাই আমি অন্নির কথায় বিশ্বাস করে তোমার কোন পরিক্ষা নিচ্ছি না এমনিতে এখন বছর এর শেষ সময় এখন কোন কলেজই ভর্তি নেয় না, অন্নি আমার মেয়ের মতো তাই ওর রিকুয়েস্ট আমি পেলতে পারিনি,আমি তোমার ভর্তি নিয়ে নিলাম কিন্তু তোমাকে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে

আনুশা: কিন্তু স্যার নিয়মিত ক্লাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না আমি একটা জব করি পাশা পাশা রাতে টিউশনি করাই

স্যার: তা হলে তো অনেক প্রব্লেম কি করা যায়,আচ্ছা শুনো তোমাকে পড়া শুনা করে ভালো রেজাল্ট পেতে হলে একটু তো কষ্ট করতে হবে তুমি জব টা ছেড়ে দাও আর ও কয়েকটা টিউশানি খুজে নাও

আনুশা: কিন্তু স্যার পাবো কথায় টিউশনি,

স্যার: টেনশন করো না আমি খুঁজে দিবো তুমি শুধু মন দিয়ে পড়া শুনা টা করবে,

আনুশা: ওকে স্যার তা হলে আমি আসি

স্যার: সাবধানে যেও
কলেজ থেকে বের হওয়ার পর শুধু ভাবছি
পৃথিবীতে কতো প্রজাতির মানুষ আছে,তা বুঝতেই পারতাম না যদি লাইফে এই ঝড় টা না আসতো,আমার বাবা যাকে আমার বাবা বলতে ও ঘেন্না লাগে যে মানুষ টার মনে তার শন্তানদের জন্য বিন্দু মাত্র ভালোবাসা ছিলো না আচ্ছা বুঝলাম মায়ের প্রতি ভালোবাসা ছিলো না কিন্তু আমরা তিন বোন কি দোষ করেছি আমরা তো তারই মেয়ে, তবুও আমাদের একা করে অন্য। মহিলার সাথে সংসার করছে ছিঃ ছিঃ ধিক্কার জানাই এই সব পুরুষ দের,
আর নিহাল সামান্য একটা ভুলের জন্য আমার লাইফে মস্ত বড় একটা স্পট পেলে দিলো সত্যি এদের কে পুরুষ ভাবা যায় না এরা আসলে কাপুরুষ,
আর কলেজ এর প্রিন্সিপাল স্যার কয়েক ঘন্টার ই তো আলাপ,অথচ মনে হলো উনি আমার কতো আপন কেউ আর ভাবতে পারছি না একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ি,
রিক্সাতে উঠতেই অন্নির ফোন এই আরেক টা মেয়ে মনে হয় আমাকে জীবনে ও মনের আড়াল করবে না,আমার মা আর অন্নি আমার বেস্ট দুজন মানুষ আল্লাহ তুমি প্লিজ দেখো এরা যেন আমার লাইফ থেকে হারিয়ে না যায়, ইসস কল টা কেটে গেলো আবার কল আসলো বিলম্ব না করেই রিসিভ করলাম

অন্নি: কিরে কোথায় তুই কল রিসিভ করছিলি না কেনো আর সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে হয়েছে তো

আনুশা: যত দিন আমার বোনের মতো বান্ধবি আমার সাথে আছে তত দিন সব ঠিকই থাকবে

অন্নি: তোর পাশে তো থাকতেই ছেয়েছি তুই তো রাখলি না

আনুশা: রাখলাম না মানে তুই সব সময় আমার মনের মধ্যেই থাকিস

অন্নি: এখন বল প্রিন্সিপাল আংকেল কে কেমন লাগলো

আনুশা: উনার কথা আর বলতে, কেমন বাবা বাবা গন্ধ উনার মধ্যে, মনে হয় না যে উনি স্যার

অন্নি: বলেছিলাম না তোকে আরে আমার বাবার বন্ধু বলে কথা

আনুশা: হুম আংকেল এর মতোই প্রিন্সিপাল স্যার

অন্নি: এখন কোথায় তুই?

আনুশা: রিক্সাতে বাসায় যাচ্ছি

অন্নি: ও যা তাইলে আর কাল থেকে ক্লাস শুরু করবি আর মন দিয়ে পড়া শুনা করবি s,s,c তে যেমন রেজাল্ট করলি তার থেকে ও ভালো কিছু চাই

আনুশা: এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পরে ভালো রেজাল্ট করতে পারবো কি না জানি না

অন্নি: তুই পারবি আমি জানি তোর মনের ঝোর কতো টা এখন রাখিরে ভালো থাকিস

লাইন কেটে দিলো অন্নি, ওর গুড ফ্রেন্ড পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার রিক্সা এসে পৌছলো বাড়া মিটিয়ে বাসায় ডুকলাম

মা আমাকে দেখে মনে হলো শস্তি পেলো, মাকে দেখে মনে হলো আমি হারিয়ে গেছি আর এখন আমায় ফিরে পেয়েছে

আনুশা: মা তুমি এমন করে তাকিয়ে আছো যেন কতো যুগ পর আমাকে দেখেছো
মা: তাকাবো না সকালে তো না খেয়ে বেরিয়ে গেলি আমার বুঝি চিন্তা হয় না
আনুশা: উফফ মা আমি এখন আর ছোট নেই দেখো কতো বড় হয়েছি

মা: সে তো দেখতেই পাচ্ছি,বড় হয়েছিস দেখেই তো এখন আর মায়ের কথা শুনিস না
আনুশা: মা তুমি ও না, খিদা পেয়েছে খেতে দাও
হুম আয় দিচ্ছি,মা মেয়ে খেয়ে
দেয়ে, যোহর এর নামাজ পড়ে শুয়ে গল্প করছে প্রিন্সিপাল স্যার এর কথা বল্লাম

মা: প্রিন্সিপাল স্যার ঠিক ই বলেছে তোর এখন জব করা টা ঠিক হবে না, আগে ভালো করে পড়া শুনা করে ভালো রেজাল্ট করে তার পর না হয় জব করবি

চলবে

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া,,,, পর্ব-3

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া,,,,

পর্ব-3
লেখা –সুলতানা ইতি

 

এখন ও s,h,c exam দেয়া হয়নি এই পড়া দিয়ে জব পাওয়া টা খুব কঠিন, পাশের বস্তির এক আন্টি কে গিয়ে বললাম আমাকে কয়েক টা বাচ্ছা খুজে দিতে, আমি পড়াবো তাদের কে,
আন্টি বল্লো উনি যে বাসায় কাজ করে ঐ বাসার বাচ্চার জন্য টিচার লাগবে আমি বললাম আন্টি প্লিজ আপনি ওদের কে আমার কথা বলুন আমি পড়াবো,
আন্টি বল্লো কাল সকালে তুমি আমার সাথে যেও,আমি অনেক টা খুশি হলাম
পরদিন সকালে আন্টির সাথে গেলাম ঠিক হলো প্রতিদিন সন্ধার পরে পড়াতে হবে ২০০০ টাকা করে দিবে আমি ও রাজি হয়ে গেলাম, রোজ টিউশনি করে এসে মায়ের সাথে কাজে হেল্প করি,এর মধ্যে মা ও একটা বাসায় কাজ পেয়ে যায়
আমি আর ও কয়েকটা টিউশনি যোগাড় করে ফেলি,
এর মধ্যে এক স্টুডেন্ট এর বাবা ধরে, একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব নিই,বলতে গেলে আংকেল অনেক জরা জরি করে কাজ টা আমায় পাইয়ে দেয়,
সেদিন যে আমি কতো খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না মাকে নিষেধ করি উনি যেন অন্যের বাসায় কাজ না করে, আমার ৪ টিউশনি আর জব এর টাকাতে মা মেয়ে দুজনের খুব ভালো কেটে যাবে এর মধ্যে বড় আপু ছোট আপুর সাথে যোগা যোগ করি, আমরা ভালো আছি শুনে আপুরা খুব খুশি হলো,
এই ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো বস্তির ঐ ভাংগা বাসা টা ছেড়ে দিয়ে ভালো একটা রুম বাড়া করেছি,পড়ন্ত বিকেল এ বসে আছি একটু পরে টিউশিনিতে যাবো ভাবছি কয়েক দিন আগের কথা কি ছিলাম, আর কি হয়ে গেলাম,
অবশ্য এখন ভালো ই আছি আল্লাহর কাছে শত কুটি শুকরিয়া
হঠাৎ মোবাইল এর রিং টনে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো অছেনা একটা নাম্বার কিছু না ভেবেই কল টা রিসিভ করি,কন্ঠ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না ফোনের ঐ পাশে কে আছে, হুম আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড অন্নির কথা বলছি

অন্নি: কিরে কেমন আছিস আমার কথা কি মনে আছে তোর

আমি: তোর কথা কি কখন ও ভুলতে পারি,আসলে তোর নাম্বার টা হারিয়ে পেলেছিলাম তাই আর কি,তুই আমার নাম্বার কই পেলি,

অন্নি: সুমি আপুর কাছে থেকে নিয়েছি,আন্টি কেমন আছে রে

আনুশা: ভালো, সেদিন অনেক কথা হলো অন্নির সাথে,টিউশনির সময় হয়ে গেছে তাই অন্নিকে বলে লাইন কেটে দিই,,
পরদিন একি সময়ে অন্নির ফোন

অন্নি: আনুশা তোকে একটা কথা বলতে ফোন করেছি

বল কি কথা?

অন্নি: তুই তো এখন ভালো একটা পর্যায় আছিস,পড়া শুনা টা আবার শুরু কর,তুই অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলি
কথা টা শুনে খুশিতে আমার চোখ জল জল করছিলো, অন্নি তুই তো খুব ভালো কথা বলেছিস। দাড়া আমি কালকেই ট্রাই করবো, এই কথা টা কথা আমার মাথায় আসেনি আর কেউ আমায় বলে ও দেয়নি,

অন্নি: আমি তো বলেছি, এতেই হবে,

আনুশা: এখন এই সময়ে কি ভর্তি নিবে

অন্নি: নিতে ও পারে রিকুয়েস্ট করে দেখ

আনুশা: আচ্ছা দেখছি,

অন্নি: এখন রাখিরে পরে কথা হবে

আনুশা; ওকে রাখ

মোবাইল রেখে রেডী হয়ে টিউশনি করাতে গেলাম ওখান থেকে রাত ১০ টায় ফিরলাম।

মা: আনু খাবি চল

আনুশা: মা খেতে ইচ্ছে করছে না আমার তুমি খেয়ে নাও

মা:তুই কি কোন ব্যাপার নিয়ে টেনশন এ আছিস?

আনুশা: মা বিকেলবেলা অন্নি কল দিয়েছিলো বল্লো আবার পড়া লিখা স্ট্রাট করতে এখন এই সময়ে কলেজে কি ভর্তি নিবে তাই ভাবছি

মা: এতো ভাবিস না তো আল্লাহ রাজি থাকলে সব হবে চল খেয়ে নিবি,

মা জোর করে খেতে নিয়ে গেলো খেয়ে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম,আর আল্লাহ কে বললাম আল্লাহ যাতে কলেজ এ ভর্তি হওয়া নিয়ে কোন প্রব্লেম না হয়, রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি

ফজর এর আযান এর সাথে সাথে ওযু করে নামায পড়তে গেলাম নামায শেষ এ আল্লাহর কাছে দুই হাত উঠালাম হে আল্লাহ হে ফারও আরদেগার সবমস্ত সৃস্টির মালিক তুমি, আল্লাহ আমি কোথায় ছিলাম কোথায় এসে দাড়ালাম সব তোমার দয়ায়,হে দয়াময় পরম করুনাময়, দয়া করো গো আমি যেন কলেজ এ ভর্তি হতে পারি কোন জামেলা যেন না হয় আল্লাহ আমার মনের আশা টা তুমি পূর্ন করো আমিন

নামায শেষ এ একটু শুতে গেলাম যদি একটু ঘুমাতে পারি এই আশায়

মা: কিরে উঠ অনেক বেলা হলো

আনুশা: মায়ের কথায় চট করে উঠে বসলাম মা কখন যে চোখ টা লেগে এসেছিলো বুঝতে পারিনি

মা: হুম সেটাই তো কতোইই বা বয়স হলো এই বয়সে কতো পরিশ্রম করিস,আমি মা হয়ে সেটা কি করে সয্য করি বল

আনুশা: উফফ মা তুমি না একটু বেশিই বলছো আমি একদম ঠিক আছি, এর মাঝে মোবাইল বেজে উঠলো,

মা: তুই কথা বল আমি তোর খাবার রেডি করছি

আনুশা: অন্নি বল

অন্নি: কোথায় ভর্তি হবি ভেবেছিস কিছু

আনুশা: নারে ভাবেনি দেখি এখানে কোন কলেজে এডমিশন নিতে পারি কি না

অন্নি: তোকে আর কষ্ট করতে হবে না, আমি তোর কথা বাবা কে বলেছি মতিঝিল একটা কলেজ আছে বুঝলি অই কলেজ এর প্রিন্সিপাল বাবার বন্ধু, তুই সেখানে গিয়ে বলবি আনিস আংকেল পাঠিয়েছে, ব্যাস আর কিছু করতে হবে না তোকে যা করার প্রিন্সিপাল স্যার করবে

আনুশা: কিন্তু অন্নি কলেজ টার নাম।কি,

অন্নি : মোশারফ হোসেন কলেজ

আনুশা : ওকে আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছি

অন্নি: তা হলে রাখি টেক কেয়ার,,

ফোন রেখে আনুশা রেডি হয়ে নিলো

মা: কোন কলেজ এ ভর্তি হবি ভেবেছিস কিছু

আনুশা: মা অন্নি ফোন করেছিলো তার পর অন্নি যা যা বলেছিলো সব কথা মাকে বলে
মা: যাক আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম, অন্নি মেয়ে টা খুব ভালো

আনুশা: তা ঠিক বলেছো মা,আমি তো পুরোনো সবার সাথে যোগা যোগ বন্ধ করেই দিয়েছি,তার পরে দেখো অন্নি কেমন আমাকে খুঁজে বের করে পেল্লো

মা: হুম আমাদের এই অসময় ভাবি যে এমন করবে আমি ভাবতে ও পারিনি,আর অই নিহাল কতো বিশ্বাস করে ওর হাতে তোকে উঠিয়ে দিয়েছিলাম

অন্নি: অহ মা তোমাকে না কতো বার বলেছি আমার সামনে ঐ নাম টা উচ্ছারন করবে না,ভুলে থাকতে চাই আমি সব কিছু,তুমি কেনো বার বার ঐখারাপ সময় গুলো আমার মনে করিয়ে দিচ্ছো তুমি কি চাও আমি মরে যাই
মা: এমন করে বলিস না মা,তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁঁচবো ঠিক আছে আমি আর কোন দিন ঐ সব নাম তোর সামনে বলবো না

আনুশা; ঠিক আছে আমি বের হচ্ছি

মা: কিন্তু তুই তো কিছুই খেলি না

আনুশা: খেতে ইচ্ছে করছে না মা, দোয়া করো আমি আসছি আনুশা বের হয়ে গেলো

মা: আমি জানি মেয়েটার মন আমি খারাফ করে দিয়েছি, কিন্তু টাকা নষ্ট হবে, এই ভয়ে পথে কিচ্ছু খাবে না, এখন কি করি

আনুশা ঠিকানা অনুযায়ী কলেজ এ গিয়ে পৌছলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১১:৩৯ উফফ জ্যাম এ পড়ে দেরি হয়ে গেলো,এখন প্রিন্সিপাল এর রুম কোন দিকে এই সব ভাবছে আর আনমনে হাটতে হাটতে কলেজ এর ভিতরে চলে গেলো

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

0

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আমি লাফ দিয়ে উঠে মামি কে জড়িয়ে ধরে বললাম, মামি সব শেষ হয়ে গেছে
মামি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো, কি হয়েছে বল?
মামির চিৎকারে মা,আর মামা উঠে আসে, মা তো আমাকে দেখেই অবাক, দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো কি হয়েছে রে মা, আমাকে বল,বল আমাকে,আমি মাকে সব কথা খুলে বলি,মামি তো কথা টা শুনেই রেগে আগুন

মামি: মুখ পুড়ি এতো কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে বিয়ে দিলাম,ওতো গুলো টাকা খরচ করলাম,আর উনি কি না তার পরদিন এসে বলছে সব শেষ হয়ে গেছে,
অলক্ষুণে মেয়ে বের হো আমার বাড়ি থেকে, তোকে এই বাসায় রাখলে আমার মেয়েকে ভালো জায়গাতে বিয়ে দিতে পারবো না,

মামা: তুমি এমন বলছো কেনো কপালে যা ছিলো তা ই তো হয়েছে

মামি: তুমি চুপ করো সব কাজেই তোমার একটু বেশি বেশি

আমি: মামি এখন আমি কোথায় যাবো

মা: ভাবি আমার মেয়েটা কে একটু ঠায় দাও

মামি: এই মেয়ে তুই তোর মাকে নিয়ে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি

জানি মামিকে এখন কোন কিছু বুঝিয়ে লাব হবে না তাই নিশ্চুপ মাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে, কোথায় যাবো মা মেয়ে কেউই জানি না দুজনই কাদছি

মা: আনু এখন আমি তোকে নিয়ে কোথায় যাবো

আনুশা: মা তুমি বড় আপু না হয় ছোট আপুদের বাসায় গিয়ে থাকো, আমার জন্য ভেবো না

মা: নারে তা হয় না, আমি মেয়েদের বাসায় গিয়ে থাকলে শশুর বাড়িতে তাদের মুখ ছোট হয়ে যাবে, আর তা ছাড়া শিলার স্বামি টা ও তো তেমন ভালো না, আমার মেয়ে কে খোটা দিবে।আর সুমির জামাই কিছু বলবে না কিন্তু ওর শাশুড়ি এই টা ভালো চোখে দেখবে না
তার ছেয়ে বরং, আমাদের মা মেয়ের অনিশ্চিত জীবনে ওদের সাথে যোগা যোগ না রাখাই ভালো

মাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বলসলাম
ভাবছি জীবন টাকে কি ভাবে সাঝাতে ছেয়ে ছিলাম, আর চোখের পলক এ এই জীবন টা এলো মেলো হয়ে গেলো, এই সব কিছু ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে সব কিছু ঝাপ্সা দেখতে পাচ্ছি হঠ্যাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম
মা: একি আনু তোর কি হলো আনু মা চোখ খোল কেউ একটু সাহায্য। করবেন আমার মেয়েটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,

কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এলো না, আল্লাহ আমি এখন কি করবো আমার মেয়েটা কি এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে আনুশার মায়ের কান্নাতে প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আর একটু পর ই আকাশ এর বুক ছিরে কান্না বেরিয়ে আসবে,ঝুম বৃস্টি শুরু হয়ে গেলো, বৃস্টির পানি চোখে পড়ে আনুশার জ্ঞান ফিরে আসে

আনুশা: মা তুমি কাঁদছ কেনো দেখো আমার কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি,

মা: তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?

আনুশা: হুম একদম
আচ্ছা মা এই ভাবে তো পথে বসে দিন কাটানো যাবে না আমরা কোথায় যাবো বলো তো

মা: শুনেছি তোর হোসেন মামা ঢাকাতে থাকে অনেক বড় লোক, উনার কাছে যেয়ে দেখি আমাদের মা মেয়ের কোন থাকার যায়গা হয় কি না(হোসেন মামা মায়ের দূর সমর্পকের চাচাতো ভাই)

আনুশা: যখন আপন মানুষ গুলো মুখ ফিরিয়ে নিলো তখন উনি কি আমাদের থাকতে দিবে ( মনে মনে বললাম) মুখে মাকে বললাম চলো তা হলে গিয়ে দেখি, এইখান থেকে একটু হাটলে তার পর ট্রেন পাওয়া যাবে

মা: কিন্তু আমাদের কাছে তো টাকা নেই টিকেট কাটবো কি করে

আনুশা: মা শুনেছি ট্রেন এর শেষ ডিকিতে করে গেলে টাকা লাগে না,
মা মেয়ে হাটতে শুরু করলাম কতো জনের লোলুপ দৃস্টি দিয়ে আমাকে যে গিলে খাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই

অবশেষ এ ট্রেন এর শেষ ডিকিতে আমাদের যাওয়ার যায়গা হলো লম্বা সময়ের পর কমলা পুর গিয়ে পৌছলাম, সেখান থেকে রাত দিন একা কার করে ডাকার সিটি তে আসলাম, এখন হোসেন মামা কে খুজে পাওয়া বড় দায়, অনেক ঘেটে ঘুটে তার পর মামার ঠিকানা পাওয়া গেলো হোসেন চৌধুরী,

এই দিকে খুব খিদে পেয়েছে,মায়ের ও এক ই অবস্তা মা যে মুখ পুঁটে বলছে না, সেটা আমি ঠিক ই বুঝেছি, কতো বার কতো মানুষ এর মুখে শুনেছি ডাস্টবিন এ নাকি বড় লোকে দের বাশি খাবার পাওয়া যায় তাই মাকে নিয়ে আগে ডাস্টবিন খুজতে লাগলাম,অবশেষ এ কিছু খাবার পেয়ে আমি আর মা খেয়ে নিলাম

তার পর ঠিকানা মতে হোসেন মামার বাসায় গেলাম দারওয়ান ভিতরে ডুকতে দিচ্ছে না অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর মামা এলো ইয়া বড় একটা গাড়ি হাকিয়ে মা ভাইজান ভাইজান বলে ডাকতে ডাকতে গাড়ির পিছন পিছন ভিতরে গেলো সব ছেয়ে বেশি অবাক তো আমি তোখন হলাম যখন মামা বল্লো মাকে নাকি উনি চিনেই না,
আমি মাকে বললাম মা চলো এখান থেকে ইট পাথরে গড়া মানুষ এর মাঝে তুমি মনুষ্যত্ব খুজে পাবে না মাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম
কোথায় যাবো ভাবছি,হঠ্যাৎ মনে হলো এখানে কম দামে বস্তির ঘর পাওয়া যাবে লোক জন কে জিজ্ঞেস করে করে মির পুর একটা বস্তিতে গিয়ে উঠলাম,বস্তির মালিক কিছুতেই ঘর বাড়া দিতে ছাইছে না,বাড়া পরিশোধ করতে পারবো না এই ভয়ে,
মা উনার হাতে পায়ে ধরে,উনার দয়া হলো অবশেষ এ একটা ঘর দিলেন উনি আমাদের কে,ঠিক ঘর কি না বুঝতে পারছি না বৃস্টি হলে ঘরটাতে পানি পড়বে সে দিকে আমি একশো ভাগ সিয়ুর,তবুও থাকার মতো একটু জায়গা তো হলো আমি মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি,কি করবো ভাবছি,আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না, কারো জন্য জীবন থেমে থাকতে পারে না,আমি তো পারবো না থামিয়ে রাখতে, আমাকে রুখে দাড়াতেই হবে,
মা: কিরে আনু কি ভাবছিস এতো
আনুশা: কিছু না মা
মা: আমি কিন্তু অনেক কিছু ভেবেছি,
আমি: কি ভাবলে মা,
মা: বড় লোকেদের বাসায় গিয়ে কাজ চাইবো
আমি কিছু বললাম না,বলার মতো কোন ভাষা আমার নেই,এই ভাবে ৩-৪ দিন পার হয়ে গেলো কোন কাজ এখন ও পাইনি

to be continue

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া। পর্ব-1

0

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া।

পর্ব-1
লেখা –সুলতানা ইতি

আজ আমার বাসর রাত আর অন্য সব মেয়েদের মতো আমার ও এই রাত টা নিয়ে অনেক সপ্ন হুম একটু পরেই আমার সপ্নটা সত্যি হতে চলছে।, বিয়ে টা আমার পারিবারিক ভাবেই হয়েছে ছেলেকে আমি এখন ও দেখিনি মাকে বলেছি তার পছন্দ ই আমার পছন্দ, উফফ উনি এখন ও আসছে না কেনো আর কতোক্ষন অপেক্ষা করবো,

আচ্ছা যাই হোক উনি আসার আগে আপনাদের কে আমার পরিছয় টা দিয়ে নি,আমি আনুশা রহমান, মায়ের ছোট মেয়ে আমার বড় দুবোন আছে অদের বিয়ে হয়ে গেছে, মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই আমি মায়ের কথার বিরুদ্ধে যাইনি কেউ মনে হয় আসছে, পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে।
নিহাল আসছে হুম আমার বরের নাম নিহাল, দরজা খুলে ভিতরে আসলো নিহাল
আমার মধ্যে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো আসার আগে মুরুব্বিরা বলেছে বাসর রাতে স্বামিকে পায়ে ধরে সালাম করতে হয়, আমি তাই উঠে গিয়ে নিহাল কে সালাম করে উঠে দাড়ালাম অমনি

ঠাসসসসসসসসস

নিহাল আমাকে থাপ্পড় মারলো বাসর রাতে এই প্রথম কোন মেয়ে তার স্বামির হাতে থাপ্পড় খেয়েছে, এই রকম কোন ইতিহাস আমি আগে শুনিনি
আমি থাপ্পড় খেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে ভুলে গেছি

আনুশা: তুমিইইইইইই????

নিহাল: হুম আমি মনে পড়ে তোমার কলেজের সেই দিনের কথা

আনুশা: আমি সত্যি টা জানার পর তোমার কাছে বার বার ক্ষমা ছেয়েছি নিহাল

নিহাল: ক্ষমা, আমার ওতো বড় একটা ক্ষতি করলে তুমি কলেজে সবার সামনে আমাকে বদনাম করেছো প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে তোমার জন্য আমার পুরো লাইফ বরবাদ হয়েছিলো,আর তোমাকে আমি এতো সহজে ক্ষমা করে দিবো এই টা তুমি ভাবলে কি করে

আনুশা: তাই বলে তুমি এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে

নিহাল: তুমি আমাকে কলেজে সবার সামনে অপমান করেছো আর আমি তোমাকে সমাজের সামনে অপমান করবো তুমি জানতে না ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়,
কাল যখন সবাই জানবে যে বাসর রাতে স্বামি তার স্ত্রী কে ডির্বস দিয়েছে সবাই তোখন তোমাকেই আঙুল তুলবে।

আনুশা: নিহালের পায়ে পড়ে প্লিজ নিহাল এমন করো না, দেখো স্ত্রী মর্যাদা না দাও কিন্তু তুমি আমাকে ডির্বস দিয়ো না, আমি তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়ের মতো থাকবো??????

উফফফ পা ছাড়, এই মেয়ে তুই পা ছাড় বলছি ????
এতো অহংকার এখন কোথায় গেলো তোর,,
আনুশা: আমার এই কষ্ট দেখে আমার মা মরে যাবে উনি সইতে পারবে না প্লিজ নিহাল

নিহাল,উফফ ছাড়

নিহাল আমাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়,এক নিমিষে আমার সব সপ্ন ভেঙে গেলো আমি ভাবতে ও পারিনি নিহাল আমার থেকে এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে
হুম সে দিন কলেজ এ যেতেই দেখি সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে আমি কিছু বুঝতে পারিনি
অন্নি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সে এসে বল্লো আনুশা চল একবার নোটিশ বোর্ড দেখবি
আমি,কি আছে সেখানে
অন্নি আগে চল, গেলেই বুঝতে পারবি নোটিশ বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে আমার চোখ তো চড়ক গাছে
মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছিলো নোটিশ বোর্ড এ আমার আর নিহাল এর একটা ছবি ছিল তাতে লিখা ছিলো I love you আনুশা,,, নিহাল তোখন সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাসে বসে আমি সবার সামনে নিহাল কে থাপ্পড় মারি

নিহাল কিছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না সোজা বাসায় চলে আসি,পরে ৭দিন আর আমি কলেজে যাইনি,
যখন গেলাম কলেজ এ তখন জানতে পারলাম প্রিন্সিপাল নিহাল কে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে

নিহাল এর চিৎকার এ আমি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসি
নিহাল এর হাতে কিছু পেপারস আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না অই গুলা কি
নিহাল প্লিজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না

নিহাল: তোকে ক্ষমা করবো নো য়ে, এই নে ডির্বস পেপারস এ সাইন করে দিলাম এই বার তুই বেরিয়ে যা তুই জানিস তোর সেদিন কার ভুলের জন্য আমার কতটা সাফার করতে হয়েছিলো আজ ও আমি সাফার করছি তুই বের হো আমার বাড়ি থেকে

আনুশা; নিহাল আমি এতো রাতে কোথায় যাবো প্লিজ আমাকে আজকে রাত টা থাকতে দাও আমি কাল ভোর না হতেই উঠে চলে যাবো,
নিহাল তুই এখন যাবি, নইলে আমি তোকে বাইরে ফেলে আসবো কথা বলেই নিহাল আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেলো,
যাওয়ার পথে নিহাল এর মাকে সামনে পেয়ে আমি কান্না করে বললাম মা আমি এতো রাতে কই যাবো,নিহাল এর মা কিছু না বলে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, নিহাল আমাকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো,
আমি অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি এখন কোথায় যাবো আমি
আমার তো বাবার বাড়ি নেই বাবা ও নেই মা মামার বাড়ি থাকে মামার দয়ায় আমাদের তিন বোনের পড়া লিখা আর বিয়ে হয় এখন যদি আমি মামার বাড়ি যাই তা হলে কি ওরা আমায় মেনে নিবে?
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে কি ছেয়েছি আর কি হলো উফফ আমি এখন কোথায় যাবো, কি করবো, কিচ্ছু মাথায় আসছে না, মা তো আমায় এখন এভাবে দেখলে উনাকে আর বাঁচাতে পারবো না আর কাল সকালে সবাই যখন জানতে পারবে তখন কি হবে
উফফ নিজের চুল নিজেই টেনে চিড়তে ইচ্ছে করছে এই সব কথা ভাবছি আর অগোছালো পা পেলে হাটছি
আসলে সেই দিন কলেজে আমার এতো টা রাগ না দেখালে ও হতো আজকে আর এই দিনটা দেখতে হতো না অনেক পরে জানতে পারি আসলে সেদিন নিহাল অই কাজ টা করেনি আমাদের ফ্রেন্ড চারকেল এর একজন মজা করে এমন করেছে পরে অনেক খুঁজে নিহাল কে পেয়ে ক্ষমা ও ছেয়ে নিয়েছি,কিন্তু নিহাল যে আমাকে এতো বড় একটা প্রতিদান দিবে আমি বুঝতেই পারিনি
হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এলাম আর বেশি দূর নেই মামার বাড়ি না আর হাটতে পারছি না বসে পড়লাম রাস্তার পাশে
অনেক্ষন বসে থাকলাম তার পর আবার হাটতে লাগলাম,, অবশেষ এ পৌছে গেলাম মামার বাড়িতে না এতো রাতে আর কাউকে ডাকবো না ভোর হতে চলল প্রায় এখন দরজার পাশে বসেই এই টুকু সময় কাটিয়ে দিতে পারবো ভাবছি সকাল হলে যখন সবাই আমাকে দেখবে তখন কি ভাব্বে তারা কেমন হবে তাদের মনের অবস্থা, ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ভাবতে ভাবতে দরজার পাসে হেলান দিয়ে বসলাম, চোখ টা লেগে এসেছিলো মনে হয়
ভোরে মামির চেঁচা মেছিতে লাফিয়ে উঠলাম
মামি:এইইইই তুই এখানে কি করছিসস

to be continue,

প্রেমেরপরশ  পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

3

প্রেমেরপরশ 

পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

জামিয়া_পারভীন

__ “ নাহহ!  হটাৎ করে লোকটা হারিয়ে গেলো ই বা কোথায়।  ” রিমি ওর ভাইকে বলে।

শুভ তখন বলে,

__ “ চিন্তা করিস না,  কালপিট কে একদিন না একদিন খুঁজে পাবোই। যারা কিনা আমার নিরুকে এতিম করেছিলো,  যারা নিরুর বোন কে নষ্ট করেছে,  যে কিনা আমার একমাত্র বোনকে নিয়ে গেমস খেলেছে।  তাকে আমি সহজে ছেড়ে দিবো না।  একদিন সময় আসবেই।  আর সেদিন সব শত্রু কে জীবন থেকে সরিয়ে দিবো।  ”

__ “ চলো ভাইয়া,  ভাবী বাসায় একাই আছে।  ”

শুভরা চলে আসে বাসাতে।  দেখতে দেখতে এক মাস কেটে যায়।  শুভর একার পক্ষে এতো বড় বিজনেস সামলানো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে।  সারাক্ষণ অফিসে,  একেক সময় একেক অফিসে যাওয়া,  আর বাসায় বসে ল্যাপটপ এ অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে শুভ।  আজকাল নিরুকে বা শায়ান কেও তেমন সময় দিতে পারেনা শুভ।

সেদিন রাতে ঘরে গিয়ে শায়ানের পাশে বসে,

__ “ পাপ্পা টা কেমন আছে,  আই এম সো সরি পাপ্পা,  তোমার আব্বু টা খুব পঁচা।  তোমাকে একদম ই সময় দিতে পারে না। ”

শায়ান বাবার গলা পেয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসে আর শব্দ করে।  নিরু পিছন থেকে শুভ কে জড়িয়ে ধরে,  অনেক দিন পর নিরুর স্পর্শে শুভ কেঁপে ওঠে।  নিরুর দিকে তাকিয়ে দেখে,  নিরু কালো শাড়ির সাথে পিংক কালারের পাড়ের  সিল্কের শাড়ি পড়েছে।  চোখে কাজল দিয়েছে গাড় করে।  চুল গুলো বুকের বাঁ পাশে ছেড়ে রেখেছে।  গলায় কিছুই দেয়নি কিন্তু কানে পিংক কালারের দুল দিয়েছে।  পায়ে নুপুর পড়েছে নিরু এই প্রথম।

নিরুর দিকে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখে কিছুক্ষণ।  এরপর নিরু বলে,

__ “ বেবি হবার পর তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো।  নাকি আগের মতো ভালোবাসোনা আমায় আর।  ”

__ “ বউটা মনে হচ্ছে অনেক অভিমান করেছে আমার উপর।  ” নিরুর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় শুভ।  এরপর আবার বলে,

__ “ সামনে তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিবে, রিমিও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।  তাই তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছি।  এতোদিন তো এতো মানসিক টেনশন এ পড়াশোনা কিছুই করোনি।  তাছাড়া সাগর ভাই নেই।  এতো বড় বিজনেস আমাদের সাথে তোমার পারিবারিক বিজনেস সব একা সামলাতে হচ্ছে।  এতো কিছু মেইনটেইন করে সত্যিই আমি আমার পরিবার কে সময় দিতে পারিনি।  আমি জানি তুমি মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছো।  মাফ করে দেয়া যায়না তোমার হাজবেন্ড টা কে। ” শুভ নিরুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।।

__ “ জানো!  খুব একা লাগে নিজেকে।  তুমি সব সময় ব্যস্ত থাকো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? ”

__ “ কি কাজ বলো? ”

__ “ এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে রিমির জন্য একটা পাত্র দেখলে কেমন হয়। ”

__ “ আগে তো শেষ হোক,  এরপর না হয় দেখা যাবে।  ”

নিরুকে জড়িয়ে ধরে আরোও শক্ত করে।  এরপর শুভ বলে,

__ “ এখন না হয় তোমার সাথে একটু রোমান্স করি। ” বলেই নিরুর গলাতে মুখ গুঁজে দেয় শুভ।  ওরা ভাসুক ওদের ভালোবাসার রাজ্যে।

৫ মাস পর,

শুভদের বাসার ভিতর  সাজানো হয়েছে ফুলে ফুলে।  বাইরে দিকে রঙ বেরঙের লাইটিং।   অনেক মেহমান কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।  আজ রিমির গায়ে হলুদ।  রিমি কে হলুদ শাড়ি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।  নিরু রিমিকে কানে কানে বলে,

__ “ একেবারে হলুদ পরী লাগছে তোমাকে ননদিনী।  ” বলে নিরুর চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে রিমির গলাতে দিয়ে দেয়।

__ “ ভাবী এই বিয়েটা করতে ইচ্ছে করছে না।  কোন ভাবে কি নিষেধ করা যায় না। ”

__ “ তোমার কি অন্য কোন পছন্দ আছে রিমি! ”

__ “ তুমি তো জানোই যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায়,  সে যতই খারাপ হোক না কেনো ভুলে থাকা খুব কষ্টের।  আমি কেনো জানি অন্য কাউকেই মেনে নিতে পারছিনা।  ”

__ “ যাই করো,  ভুল বুঝোনা আমায়,  কষ্ট হলেও বিয়েটা করেই নাও।  কারণ জীবনে সুখী হতে হবে রিমি।  একা একা শুধুই কষ্ট ই পাবে।  কাউকে জীবন সাথী হিসেবে পেলে আরোও ভালো লাগবে দেখিও।  অতীত ভুলিয়ে দিবে তোমার বর। ”

__ “ হুমম”

সবার হৈচৈ শুরু হয়ে যায়,  একে একে সবাই রিমির গায়ে হলুদ দেয়,  মিষ্টি খাওয়ায় রিমিকে।  সবার খাওয়ানো হয়ে গেলে সাগর শুভকে ভিডিও কল দেয়।  সেখানে রিমি আর সাগর দুজনেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।  নিরুর কাঁধে মাথা দিয়ে রিমি বসে আছে।  রাতে রিমির হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়।  রাত দুটো তে সবাই কফি পান করে।

মজার ছলে রিমি শুভ কে বলে,

__ “ ভাইয়া আমার বিয়ের গিফট চাই এখুনি।  ”

__ “ কি বল! ”

__ “ ভাবীর সাথে ডান্স করবে তুমি আজ।  ”

সবাই হাত তালি দিতে থাকে,  নিরুও রিমির মন রক্ষার্থে রাজি হয়ে যায়,  কিন্তু বলে,

__ “ আমি নাচবো ঠিক আছে,  যদি আমার সাথে এখানে যতো  কাপল আছে সবাই নাচে। এমনকি আব্বু আম্মু কেও নাচতে হবে ।  ”

সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়,  মেয়েকে সুখী দেখতে সবাই রাজী হয়ে যায়।

শুভ একটা গান প্লে করে, আর গানের তালে যে যেমন পারে ডান্স দেয়।

এখন তো সময় ভালোবাসার

এ দুটি হৃদয় কাছে আসার

তুমি যে একা আমিও যে একা

লাগে যে ভালো ও প্রিয় ও প্রিয়।।

পেয়েছি তোমাকে এতদিনে

যেও না সরে গো আভিমানে।

আমি তোমারই ও বুকের **।।

কী ছোয়া আমাকে দিলে তুমি

রাত দিন তোমাকে ভাবি আমি।

কেন বোঝ না প্রেমেরও পাগলামি।।

পরদিন বিয়েতে বরযাত্রী আসে, কেউ গেট আটকায় নি।  বর‍যাত্রী বেশ অবাক হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অন্যরা আপ্যায়ন করলো বরযাত্রী দের কে।  বরের বোন বলে,

__ “ বর তো এলো,  বউ কোথায়।  একটু দেখি তাকে।  “

রিমির ফুপাতো বোন বলে,

__ “ বউ দেখা মুখের কথা না,  দেখতে হলে শর্ত আছে।  ”

__ “ ওকে ডান,  চলো নিয়ে যাও বউয়ের কাছে।  ”

পাশের রুমে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়।  সবার চক্ষু চড়কগাছ হবার দশা।  একই পোশাক একই সাজসজ্জার দুইটা মেয়ে বউ সেজে বসে আছে।

__ “আসল বউ কোনটা!” বরের ভাই জিজ্ঞেস করে।

__ “ আসল বউ কোনটা সেটা বলবেন আপনারা!  যদি আসল বউ চিনতে না পারেন তাহলে কিন্তু ১ লক্ষ টাকা আমাদের গচ্চা দিয়ে বিয়ে বসতে হবে। ” রিমির ফুপাতো বোন রোজী বলে।

__ “ আমার বউ আমি খেয়াল করলেই চিনতে পারবো। ” একটু ওভার কনফিডেন্সের সাথে বলে রিমির হবু বর।  ”

চয়ন খেয়াল করে ভালো ভাবে,

দুই টা মেয়েই লাল লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে,  গলা ভর্তি সেম গয়না দুজনের ই।  হাত ভর্তি সেম চুরি,  আংটি।  মেহেদীর ডিজাইন টা একটু আলাদা মনে হচ্ছে চয়নের।  কিন্তু বুঝতে পারছেনা, কারণ দুজনের মাথার উপর শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এমন ভাবে শুধু থুতনি দেখা যাচ্ছে।

__ “ আর পর্যবেক্ষণ করার টাইম নেই,  এখুনি বলে দিন কোনটা আপনার বউ! ” রোজী বলে,

ডান পাশের বউ টা একটা আঙুল তুলে,  এতে চয়ন ভাবে যে বউ মনে হয় তাকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করছে।  হুট করেই বলে দেয়,

__ “ ডান পাশের টা আমার বউ।  ”

সবাই হো হো করে হেসে উঠে,  মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলা হয়।  চয়ন এবার নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।  শুভ পাশ থেকে এসে বলে,

__ “ ভায়া ডান পাশের টা আমার বউ,  বাম দিকের টা তোমার। হাহাহা ”

নিরু আর রিমি দুজনে ই মুচকি হাসে,  অতঃপর চয়নের কাছে এক লক্ষ টাকা আদায় করে ছাড়ে রিমির ভাই বোনেরা।

ভালো ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে,  রিমি কে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুর বাড়ি।

দুইদিন পর রিমির শ্বশুর বাড়ি তে অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। নিরু শুভ সহ অনেক আত্মীয় আসে রিমি আর চয়ন কে নিয়ে যেতে।

রিমি চেয়ারে বসে আছে,  নীল রঙ এর বেনারসি পড়ে। চয়ন নীল শেরওয়ানি পড়েছে।  দুজন কে বেশ মানিয়েছে।  ফটোগ্রাফার ডাকা হয়েছে,  ছবি তুলার জন্য।  রিমি কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে একজনের কলার চেপে ধরে।

নতুন বউয়ের এমন কীর্তি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।  রিমি চিৎকার দিয়ে উঠে,

__ “ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া! ”

সবাই দৌড়ে আসে,  নিরুও অবাক হয়ে যায়।  শুভ গিয়ে লোকটা কে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে।

চয়ন শুভ কে সরিয়ে ধরলেও রাকিবের অবস্থা মার খেয়ে কাহিল হয়ে যায়।  নাক,  মুখে রক্ত ফুটে উঠেছে।

__ “ ভাইয়া,  আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি!  ফটোগ্রাফার কে মারছেন কেনো? ”

__ “ এই লোক একটা ক্রিমিনাল,  এতোদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলো।  আজ পেয়েছি ওকে,  আমরা কি ছেড়ে দিবো নাকি?”

বিয়ে বাড়ির সব লোকে জটলা পাকিয়ে ফেলে।

শুভ পুলিশ কে ফোন দেয়,  সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে।  রাকিবের মাধ্যমে ওর মা কেও ধরে ফেলে।

রাকিবের স্বীকারোক্তি  নেওয়ার সময় শুভ উপস্থিত থাকে। প্রচুর টর্চার করার পর রাকিব স্বীকার করে সব।

রাকিব বলে,

__ “ রুবিকে ভালোবেসেছিলাম সত্যিই সম্পত্তির মালিক ভেবে  কিন্তু যখন আম্মা বলে রুবির নামে কোন সম্পত্তি নেই তখন রুবিকে ত্যাগ করি। এরপর জানতে পারি সব কিছু নিরুর নামে।  ওকে ইউজ করার চেষ্টা করেও পারিনি।  কোনভাবে বেঁচে যায়।  পরে বড়লোক মেয়ে দেখে রিমির বান্ধবী কে পটিয়ে ওর নাম্বার নিয়ে ওর সাথে প্রেম করি।  পরে জানতে পারি নিরুর ননদ রিমি।  এক সাথে বড়লোক হবার স্বপ্নে আমি বিভোর হয়ে পাপের পর পাপ করতে থাকি।  ”

রাকিব এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোর্ট এ ওর ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়,  ওর মা খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এতো কিছু জানার পর চয়ন একটু রাগ করলেও চয়ন কে নিরু বোঝানোর পর চয়ন ভুল বুঝতে পারে।  রিমি কে মেনে নেয় চয়ন।

সাগর তুরস্কের কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করবে না ইচ্ছে হলে বিয়ে করবেনা এটা সম্পুর্ণ সাগরের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।

শুভ কাজের চাপ সামলাতে না পেরে রিমির অংশ টুকু রিমির নামে করিয়ে দেয়,  এতে চয়ন দেখবে বিজনেস।

শুভ এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলো।

নিরু শায়ান কে খাওয়াচ্ছে,  এমন সময় শুভ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিরুকে,

__ “ আরে করছো টা কি?  বাবুর ক্ষিদে পেয়েছে তো। ”

__ “আমার ও খুদা পেয়েছে!  আমি কখন খাবো।  ”

__ “ হিংসুটে! ”

শায়ান কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নিরু,  উল্টো দিকে ঘুরে শুতেই শুভ হ্যাচকা টানে নিরু কে শুভর উপর নিয়ে নেয়।

__ “ কি মহাশয়,  এতো দিন পর কি রোমান্স উথলে উঠেছে নাকি!”

__ “ হুমম ”

শুভ নিরুর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

( সমাপ্ত)

#বিঃদ্রঃ জানিনা কেমন হলো ,  এটা আমার লিখা তৃতীয় উপন্যাস। আসলে আমি লিখালিখি শুরু করেছি শখের বসে। কেমন করে লিখতে হয় নিজেও জানিনা। এই লিখা শুরুর পর অনেকের কটু কথা শুনেছি।  সেগুলো উহ্য করে আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে লিখায় মন দিতাম।  লিখালিখি শুরুর পর আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।  খুব ভালো লাগতো তখন।  কিন্তু কাজের চাপে নিয়মিত ভাবে পর্ব গুলো দিতে পারিনি। তাই খুব খুব দুঃখিত।  তাছাড়া এগুলো প্রথম প্রথম লিখা তাই ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে।  সেইজন্য ক্ষমা করে দিবেন।  আর এই উপন্যাস টা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন।