Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2371



নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৪

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাজে, চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি মেঘ সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন কাজ করছে। মেঘের দিকে বারবার তাকাচ্ছি সন্ধ্যার পর থেকে মেঘ কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছে, আমার সাথে তেমন কথা বলছে না কি যেন শুধু ভাবে। সন্ধ্যায় কার আর কি মেসেজ এসেছিল জানিনা তবে এইটুকু বুঝতে পারছি এই মেসেজের কারণেই মেঘ এতো অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মেঘের ফোন আমি অনেক সময় ঘাটাঘাটি করেছি কিন্তু মেসেজটা পাইনি, মেঘ হয়তো ডিলিট করে ফেলেছে। মেসেজটা কি ছিল আর কার ছিল জানতে পারলে ভালো হত।
মেঘ: ঘুমাচ্ছ না কেন? (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, পাশ ফিরে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: তুমি ঘুমাবে না?
মেঘ: হু পরে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: রাগ করছ কেন ঘুমিয়ে পড়ো আমার কিছু কাজ আছে দেরি হবে।
কিছুনা বলে চুপচাপ পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। মেঘ যখন লুকাতে চাইছে তাহলে আমি কেন জানতে চাইবো? যতো খুশি লুকিয়ে রাখুক।

মেঘ: কণা এই কণা উঠো। (মেঘের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে আস্তে আস্তে ওর দিকে তাকালাম)
মেঘ: গুড মর্নিং।
আমি: হু!
মেঘ: অবাক হচ্ছ যে?
আমি: না দেখছি।
মেঘ: কি দেখছ? (অবাক হয়ে মেঘকে দেখছি রাতের মেঘ আর এখনের মেঘের মধ্যে এতো পার্থক্য। রাতে মুখ গোমরা করে ছিল অন্যমনস্ক ছিল আর এখন পুরো স্বাভাবিক)
মেঘ: কথা বলছ না কেন?
আমি: এখন তো তুমি স্বাভাবিক বলবে কাল কি হয়েছিল?
মেঘ: অফিসে যাবো মিটিং আছে পারলে সবকিছু একটু গুছিয়ে দাও।
আমি: এড়িয়ে যাচ্ছ?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: কিসের মিটিং?
মেঘ: তোমার চাচ্চু জানেন। (চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম)

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেঘের দিকে তাকালাম, মেঘ আমার ফোন টিপছে আবার সেই কালকের চিন্তিত মুখ।
আমি: আমার ফোনে কি দেখছ?
মেঘ: কিছুনা তো।
আমি: দ্যাত সবসময় শুধু কথা লুকায়। (রাগে গজগজ করতে করতে ওর ঘড়ি ফাইল শার্ট প্যান্ট সবকিছু বিছানায় ছুড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

বেশ বুঝতে পারছি মেঘ আমাকে এড়িয়ে চলছে, মেঘ এইটা কেন বুঝতে পারছে না এভাবে এড়িয়ে চললে আমাদের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরবে। আর আমিতো ওর বউ তাহলে আমার কাছে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখবে কেন আমাকে এড়িয়ে চলবে কেন?
মেঘ: কাঁদছ কেন তুমি? (মেঘ এসে আমার পাশে দাঁড়ালো, কিছুনা বলে চোখের পানি মুছে নিলাম)
মেঘ: বলনা কাঁদছ কেন?
আমি: তাতে তোমার কি?
মেঘ: আমারই তো সবকিছু আমার পাগলী কাঁদবে কেন? (মেঘ আমার দুগালে ধরে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকালো)
আমি: ইদানীং তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছ।
মেঘ: কখন এড়িয়ে চললাম?
আমি: এইযে এখন নিজেই টাই বেঁধে নিলে।
মেঘ: তুমিই তো বলো রোজরোজ টাই বেঁধে দিতে পারবে না।
আমি: এসব তো এমনি বলি।
মেঘ: ওকে.. (মেঘ আমাকে ছেড়ে টাই খুলে নিলো)
মেঘ: নাও এবার বেঁধে দাও।
আমি: পারবো না। (একটানে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল, আমার ঠোঁটের একদম কাছে ওর ঠোঁট দুটু আনলো)
মেঘ: অফিসে যাবো প্লিজ মুখ গোমড়া করে থেকো না, একটা মিষ্টি হাসি দাও।
মৃদু হেসে ওর টাই বেঁধে দিলাম, আমার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে মেঘ বেরিয়ে গেল।

ফোনের কোনো কিছু বাকি রাখিনি মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটএ্যাপস সবকিছু দেখলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না, আশ্চর্য মেঘ তাহলে সকালে আমার ফোনে কি দেখছিল? নাকি ও দেখে ডিলিট করে ফেলেছে?
রুহান: কণা আসবো? (রুহানের ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, রুহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: হ্যাঁ এসো। (রুহান এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো)
আমি: কিছু বলবে?
রুহান: আম্মুর ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাইছিলাম।
আমি: গতকাল থানায় গিয়েছিলাম চাঁচিকে দেখে এসেছি।
রুহান: আম্মু…
আমি: শুধরাননি উনি।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি কিন্তু ভেবে রেখেছিলাম উনি নিজেকে কিছুটা শুধরিয়ে নিলে আমি উনাকে ছাড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসবো কিন্তু…
রুহান: আমি আম্মুর সাথে একবার কথা বলতে চাই।
আমি: চাইলে বলতেই পারো কিন্তু আমার মনে হয় না কোনো লাভ হবে। কাল উনি আমার সাথে যেভাবে কথা বলেছেন তাতে বুঝতে পেরেছি উনি এতটুকুও নিজেকে বদলাননি আগের মতোই আছেন।
রুহান: একটু চেষ্টা করে দেখি।
আমি: হুম আজ থানায় চলে যাও।
রুহান: আমি আম্মুকে বুঝাতে পারলে তুমি…
আমি: হুম ছাড়িয়ে আনবো।
রুহান: ঠিক আছে আসছি।
রুহান বেরিয়ে যেতেই পিছু পিছু আমিও বেরিয়ে আসলাম।

পপি: ভাবি তুমি নাশতা করবে না?
মা: মেঘ তোমাকে জাগাতে মানা করলো তাই সবাই তোমাকে রেখেই নাশতা করে নিলাম।
আমি: এখন কিছু খাবো না মা পরে খেয়ে নিবো।
মা: খেয়ে নিও কিন্তু।
দাদী: এই এদিকে আয় তো। (দাদী আমার হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালেন)
আমি: কি হয়েছে দাদী?
দাদী: তুই আর মেঘ কি বুঝেছিস বলতো?
আমি: মানে?
দাদী: বিয়ে হয়েছে এতোদিন হয়ে গেল অথচ কোনো খুশির সংবাদ শুনতে পাচ্ছি না কেন?
আমি: দাদী…
দাদী: আরে বাবা লজ্জা কিসের? তোহার একটা ভাই লাগবে না?
আমি: দ্যাত আপনি থাকুন আমি চলে যাচ্ছি।
দাদী: আমি কিন্তু মেঘকে বলবো খুব শীঘ্রই খুশির সংবাদ চাই। (দাদী জোরে জোরে কথাটা বললেন মা আর পপি হাসছে দেখে দৌড়ে উপরে চলে আসলাম)

তোহা: নতুন আম্মু চলনা আমার সাথে। (রুমের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ তোহা পিছন থেকে আচলে ধরলো)
আমি: কোথায় মামুনি?
তোহা: বাগানে যাবো।
আমি: কেন?
তোহা: চলই না।
তোহা আমার হাত ধরে টেনে বাগানের দিকে এগিয়ে গেল।

আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তোহা ফুল গাছের দিকে এগিয়ে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্ড দেখছি। তোহা একটা একটা করে বেলী ফুল গাছ থেকে নিচ্ছে দেখে আমিও এগিয়ে আসলাম।
আমি: ফুল দিয়ে কি করবে তোহা?
তোহা: উফফ মেয়েটা বড্ড বেশি কথা বলে, এতো কথা না বলে কিছু ফুল তুলে দাওতো। (মেয়ের কথা শুনে না হেসে পারলাম না)
তোহা: এই দেখো এখনো বসে আছে আরে কিছু ফুল তুলে দাও আমার অনেক ফুল লাগবে।
আমি: কিন্তু মামুনি গাছ থেকে ফুল ছেঁড়া তো ঠিক না গাছ কষ্ট পায়।
তোহা: আম্মু আব্বুর জন্য একটু ছেঁড়া যা… (তোহা জিহ্বায় কামর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
তোহা: এই যাহ্‌ বলে দিলাম।
আমি: গণ্ডগোল আছে মনে হচ্ছে? আমার আম্মুর মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে?
তোহা: বলা যাবে না।
আমি: খুব পেকে গেছ আম্মুর থেকে কথা লুকানো হচ্ছে?
তোহা: উঁহু আমি পঁচা মেয়ে নই কথা লুকাবো কেন?
আমি: তাহলে বলো ফুল দিয়ে কি করবে?
তোহা: পরে বলবো সারপ্রাইজ।
আমি: ওলে বাবা আমার আম্মু সারপ্রাইজ দিতে শিখে গেছে?
তোহা: হ্যাঁ ফুফি শিখিয়েছে। আর কথা নয় এখন ঝটপট ফুল তুলে দাওতো।
আমি: দিচ্ছি দিচ্ছি।
ঝুড়ি ভরে ফুল তুলে দিলাম। ফুলের ঝুড়িটা হাতে নিয়ে তোহা লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠে গেল, মেয়েটাই জানে এতো বেলী ফুল দিয়ে কি করবে।

তোহা ফুল নিয়ে পপির রুমের দিকে চলে গেল, আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
রুমে আসতেই শুনতে পেলাম আমার ফোন বাজছে হাতে নিয়ে দেখি আম্মু।
আমি: হ্যালো আম্মু।
আম্মু: একটু বেরুতে পারবি?
আমি: কেন আম্মু?
আম্মু: একটু উকিলের কাছে যেতাম।
আমি: হঠাৎ উকিলের কাছে কেন?
আম্মু: ইকবালকে নিয়ে একটু কথা বলে দেখতাম। আসলে শায়লার মুখের দিকে তাকানো যায়না মেয়েটা শুধু কাঁদে।
আমি: ঠিক আছে তুমি আবার কেঁদো না তো।
আম্মু: ঠিক আছে চলে আসিস।
আমি: আচ্ছা।
ফোন রেখে ভাবছি মেঘকে ফোন করবো কিনা। মেঘকে তো বলে যাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু মেঘ তো এখন মিটিং এ ফোন দিলে তো রেগে যাবে। থাকুক আম্মুর সাথেই তো যাচ্ছি এসে বলে দিবো।

রেডি হয়ে দাদী আর মা’কে বলে বেরিয়ে পড়লাম। উকিলের কাছে তো যাচ্ছি অযতা, কোনো লাভ হবে না। শুধু আম্মুর মনের অশান্তিটা দূর করার জন্য যাচ্ছি। পুলিশ আঙ্কেল তো বলেছেন তিন-চার বছরের আগে সম্ভব না কিন্তু এ কথা আম্মুকে বুঝাই কি করে?

বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিলো।
আমি: ভালো আছ?
ভাবি: হ্যাঁ তুমি?
আমি: ভালো, আম্মু কোথায় রেডি হয়েছে?
ভাবি: হ্যাঁ।
আম্মু: কিরে চলে এসেছিস?
আমি: হ্যাঁ চলো।
আম্মু: ভিতরে এসে কিছু খেয়ে যা।
আমি: খিদে তো আছে কিন্তু সম্ভব না সন্ধ্যার আগে বাসায় পৌঁছাতে হবে।
আম্মু: ঠিক আছে চল।
আম্মুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

উকিল: দেখুন আপনারা যা যা বলেছেন সে অনুযায়ী মনে হচ্ছেনা কাজটা এতো সহজ হবে, চার- পাঁচবছর এর আগে তো কোনোভাবেই সম্ভব না। (উকিলের কথা শুনে আম্মু কেঁদে ফেললেন, আগেই বলেছিলাম কিন্তু আম্মু শুনেনি)
আম্মু: কোনো ভাবেই কি সম্ভব না?
আমি: আম্মু তুমি কথা বলো আমি একটু আসছি।
রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, আম্মুর কান্নাকাটি দেখতে ভালো লাগেনা। আমিও তো চেয়েছিলাম ভাইয়াকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পাপ যে বেশি করে ফেলেছে তাতে আমাদের কি করার আছে, পাপ করলে শাস্তি পেতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আমিতো ভাবছি আমার শ্রদ্ধেয় মামা কবে এরেস্ট হবেন, উনি এরেস্ট হলেই আমি চিন্তা মুক্ত হবো। আচ্ছা পুলিশ আঙ্কেল কে একটা ফোন করবো? করেই দেখি কি বলে।

আঙ্কেল: হ্যাঁ কণা মা…
আমি: কিছু করতে পারলেন?
আঙ্কেল: না তবে ইকবাল একটা জায়গার নাম বলছিল যেখানে ওর বাবা সবসময় থাকে আগামীকাল আমরা সেখানেই যাবো।
আমি: যতো দ্রুত সম্ভব ওকে ধরার চেষ্টা করুন।
আঙ্কেল: ঠিক আছে।
আমি: রাখছি।
আম্মু: কণা চল। (ফোন রাখতেই আম্মু এসে পিছন থেকে ডাক দিলেন)
আমি: কথা বলা শেষ?
আম্মু: হুম।
আমি: হবে না বললো তো? আমিতো তোমাকে আগেই বলেছিলাম শুননি আমার কথা।
আম্মু: মেয়েটার কথা ভেবে এসেছিলাম কিযে হবে মেয়েটার।
আমি: কেন তোমার কাছে থাকবে।
আম্মু: তাতো থাকবেই চল বাসায় ফিরে যাই।
আমি: আম্মু আমার খুব খিদে লেগেছে কিছু না খেলে আমি আর থাকতে পারবো না।
আম্মু: ঠিক সময় না খেয়ে অসময়ে খাওয়ার অভ্যাসটা ছাড়িসনি দেখছি। চল রাস্তায় কোনো রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়ে নিবি।
আমি: ঠিক আছে।

পাশের একটা রেস্টুরেন্টে খেতে আসলাম। যদিও আমি বাইরের খাবার অপছন্দ করি পেটের জন্য আসতে হলো, কেন যে সকালে কিছু খেলাম না, এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে খিদে তো লাগবেই।
আম্মু: তুই খাবার অর্ডার কর আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আমি: ঠিক আছে। (পা নাচাচ্ছি আর খাবারের মেনু দেখছি হুট করে কে যেন আমার সামনে এসে বসলো। সামনে তাকিয়ে দেখি কালকের সেই লোকটা যে আমার হাত ধরেছিল। চোখ বড়বড় করে তাকালাম ওর দিকে)
আমি: কি ব্যাপার আপনি?
–চিনতে পেরেছ তাহলে?
আমি: চিনবো না কেন? কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?
–আসলে আমি তোমাকে ফলো করছিলাম। দেখলাম তুমি রেস্টুরেন্টে ঢুকেছ তাও আবার তোমার আম্মু পাশে নেই তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এখানে এসে বসলাম।
আমি: ফলো করছিলেন মানে? আপনি কি আমাকে চিনেন? তারমানে গতকাল ভুল করে নয় আপনি ইচ্ছে করেই আমার হাত ধরেছিলেন।
–বোকা মেয়ে এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছ?
আমি: কি চান আপনি?
–আসলে তোমাকে ফাঁসানো হচ্ছে আমিতো তোমাকে হেল্প করতে এসেছি। (লোকটা ফিসফিসিয়ে কথাটা বললো, আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি)
–জায়গাটা নিরাপদ নয় তাই এখানে সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব না, এইযে চিঠিটা নাও এখানে সবকিছু লেখা আছে। (লোকটা আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো, ভাবছি নিবো কিনা)
–আরে নাও আমি বেশি সময় তোমার কাছে থাকতে পারবো না। (কাগজটা আনার জন্য হাত বাড়াতেই কাগজ দিতে দিতে লোকটা আমার হাত ধরে ফেললো)
আমি: একি করছেন হাত ছাড়ুন।
–না ছাড়লে?
আমি: না ছাড়লে? দাঁড়া দেখাচ্ছি। (আমি পায়ের জুতা খুলছি দেখে লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল)
আম্মু: কণা কি হয়েছে কাকে দৌড়াচ্ছিস?
ওয়েটার: মেডাম কোনো সমস্যা?
আমি: না। আম্মু চলো জায়গাটা আমাদের জন্য সেইফ না।
আম্মু: ঠিক আছে চল।

গাড়িতে বসে ভাবছি লোকটা কে ছিল আর কেনই বা এমন করছিল? লোকটা দুদিন আমার হাত ধরলো কিন্তু কেন? আচ্ছা এমন নয়তো মেঘকে যেভাবে বারবার ফাঁসানো হয়েছিল সেভাবে আমাকে এখন ফাঁসানো হচ্ছে? হয়তো লোকটা আমার হাত ধরার সময় আড়াল থেকে কেউ ছবি তুলেছিল আর সেটা গতকাল মেঘকে পাঠিয়েছিল যার কারণে মেঘ আমার সাথে এমন করেছে। যদি আমার ধারণা ঠিক হয় তাহলে তো আজও ছবি তুলেছে আর সে ছবি অবশ্যই মেঘকে দিবে। যে এই কাজ করছে তার আসল উদ্দ্যেশ্য মেঘ আর আমাকে আলাদা করে ফেলা। কিন্তু কে সে মামা নয়তো?
আম্মু: কণা কি ভাবছিস? আমরা তো চলে এসেছি নেমে আয়। (হঠাৎ আম্মুর ডাকে হকচকিয়ে উঠলাম, তাকিয়ে দেখি বাসার সামনে চলে এসেছি)
আমি: না আম্মু ভিতরে যাবো না বাসায় চলে যাবো। বিকেল হয়ে এসেছে তোহা আমাকে খুঁজবে।
আম্মু: ঠিক আছে সাবধানে যাস।
আমি: আচ্ছা।
আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

দাদী: কিরে চলে এসেছিস? তোর মা কেমন আছে? (ড্রয়িংরুমে আসতেই দাদী বসা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে প্রশ্ন করলেন)
আমি: ভালো দাদী।
দাদী: আচ্ছা তোর আর মেঘের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে?
আমি: নাতো কেন?
দাদী: এই অসময়ে অফিস থেকে ফিরে আসলো মুখটা দেখলাম গম্ভীর।
আমি: কি মেঘ চলে এসেছে?
দাদী: হ্যাঁ এইমাত্র আসলো।
আমি: ঠিক আছে আমি আসছি।
দাদী: যা গিয়ে দেখ কি হয়েছে।
দৌড়ে রুমের দিকে আসলাম।

মেঘ দরজা খুলা রেখেই বেডে বসে আছে, মাথায় হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে রেখেছে।
আমি: মেঘ.. (আমার ডাকে মাথা তুলে সামনে তাকালো)
মেঘ: কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: আম্মুর সাথে উকিলের কাছে।
মেঘ: সত্যি নাকি অন্য কোথাও গিয়েছিলে? আমাকে বলে যাওনি কেন? (আমার সন্দেহটাই ঠিক, মেঘকে আজকের ছবি দেওয়া হয়েছে আর মেঘ এসব দেখে বাসায় চলে এসেছে)
আমি: তুমি মিটিং এ ছিলে তাই ফোন করে বিরক্ত করিনি।
মেঘ: আমি যদি বলি তুমি অন্য কোথাও গিয়েছিলে?
আমি: আমাকে বিশ্বাস না করাটা তোমার ব্যর্থতা তবে আম্মুর থেকে জেনে নিতে পারো।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমাকে সন্দেহ করার আগে তোমার আমাকে একবার সবকিছু জানানোর প্রয়োজন ছিল, এসব সত্যি কিনা জানতে চাওয়া উচিত ছিল।
মেঘ: তারমানে তুমি…
আমি: জানিনা তবে আন্দাজ করে নিয়েছি।
মেঘ: আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না তবে এটাও সত্যি রোজ রোজ একি জিনিস দেখলে…
আমি: বউকে অবিশ্বাস করা যায় তাইতো?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে কিছু জানাওনি তাই শুধু এইটুকু বলে রাখছি তোমাকে যেমন বারবার ফাঁসানো হয়েছিল ঠিক সেভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
তোহা: এই তোমরা এতো দুষ্টু কেন সবসময় শুধু ঝগড়া করো। (মেঘ কিছু বলার জন্য আমার দিকে এগিয়ে আসছিল তোহা মাঝখানে চলে আসাতে মেঘ থেমে গেল)
আমি: তোমার হাত পিছনে কেন আম্মু হাতে কি আছে?
তোহা: বলেছিলাম না সারপ্রাইজ। (তোহা হাসতে হাসতে হাত দুটু সামনে নিয়ে আসলো, দু হাতে দুটু বেলী ফুলের মালা)
আমি: এই মালা কে বানিয়ে দিলো?
তোহা: ফুফি।
মেঘ: খুব সুন্দর হয়েছে মামুনি এবার তুমি খেলতে যাও।
তোহা: না আমিতো মালাগুলো তোমাদের দেওয়ার জন্য এসেছি। তোমরা মালা গুলো নিয়ে একে অপরকে পড়িয়ে দিবে আর বিনিময়ে আমাকে কিছু দিবে।
মেঘ: কি চাও তুমি?
তোহা: আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।
মেঘ: কিন্তু..
আমি: থাকুক না মেয়েটা চাইছে যখন তখন নাহয় যাবো।
মেঘ: তোহা এসব তোমাকে কে শিখিয়ে দিয়েছে?
তোহা: নাম বলা যাবে না তুমি বলো যাবে কিনা?
মেঘ: ঠিক আছে আগামীকাল যাবো।
তোহা: এবার মালাটা নাও আর নতুন আম্মুকে পড়িয়ে দাও।
মেঘ: পরে পড়িয়ে দিবো তুমি যাও। (মেঘ তোহার থেকে মালা আনতেই তোহা দৌড়ে চলে গেল)
মেঘ: বয়েই গেছে তোমাকে মালা পড়াতে। এসব যদি সত্যি হয়…(মেঘ আঙ্গুল তুলে আমাকে শাসাচ্ছিল ওর আঙ্গুলটা নামিয়ে দিলাম)
আমি: ওইযে ওয়াশরুমটা ওইদিকে মাথায় পানি ঢেলে আসো তাহলে হয়তো মাথায় ঢুকবে যে এসব আমাকে ফাঁসানোর জন্য করা হচ্ছে।

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে এখনো আমি বারান্দায় চলে এসেছি। যে বুঝেও না বুঝে তাকে কি বুঝানো যায়? আমাদের সাথে বারবার এমন হচ্ছে তাও মেঘ কিভাবে আমাকে সন্দেহ করতে পারলো? আমাকে সন্দেহ করার আগে তো ওর একবার ভাবা উচিত ছিল এসব পিক শুধু ওকে দেওয়া হয় কেন আর আমাকেও তো জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। এসব না ভেবে আমাকে জিজ্ঞেস না করে মেঘ নিজে নিজে ভেবে আমাকে সন্দেহ করে বসে আছে। থাকুক আমিও কোনো কিছু বুঝাতে বা বিশ্বাস করাতে যাবো না। সন্দেহ খুব খারাপ জিনিস যখন এই সন্দেহের কারণে আমাকে হারাবে তখন বুঝবে। আমি বুঝাতে যাবো কেন ও যদি আমাকে সন্দেহ করতে পারে তাহলে আমিও অভিমান করতে জানি…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৩

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

ভোরবেলা কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো, এতো ভোরে কে আসলো? উঠতে চাইলাম মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, ওর হাত দুটু সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু ও আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আমি: মেঘ হচ্ছে কি ছাড়ো কে যেন এসেছে।
মেঘ: হু..
আমি: দ্যাত কাকে কি বলছি ও তো পুরো ঘুমে।
মেঘ: ঘুমে না আমি তোমাকে যেতে হবে না অন্যকেউ ঠিক দরজা খুলে দিবে।
আমি: আর কারো ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা কে জানে কলিংবেল তো সমানে বেজেই চলেছে।
মেঘ: ওইযে শুনো কলিংবেল বাজা বন্ধ হয়ে গেছে এবার শান্তু হয়ে ঘুমাও তো।
মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো, ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এই মায়া ভরা মুখটা যেন সারাজীবন দেখতে পারি মেঘ, কখনো যেন কোনো কিছু আমাদের আলাদা করতে না পারে। মেঘকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলাম।

আম্মু: সব তো শুনলে এখন বলো কণাকে এমন পরিস্থিতিতে একা রেখে আমি কিভাবে কানাডা থাকি। (ঘুম থেকে উঠে নিচে আসতেই দেখি আম্মু আর চাচ্চু ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছেন)
আমি: চাচ্চু কখন এলে?
চাচ্চু: এইতো ভোরবেলা। এসে যা শুনছি ইচ্ছে হচ্ছে তোকে আর তোর আম্মুকে আমার সাথে নিয়ে যাই। কিন্তু তোকে নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না।
আমি: কানাডা গিয়েও তো আম্মু নিরাপদে থাকতে পারছে না।
শায়লা: আর তো মাত্র কয়টা দিন বদমাইশ লোকটা এরেস্ট হয়ে গেলেই সবাই শান্তিতে থাকতে পারবে। (শায়লা চা নিয়ে এসে টেবিলে চায়ের কাপ রাখতে রাখতে বললো। সত্যি মেয়েটাকে যত দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি)
চাচ্চু: সামাদ এরেস্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি আছি তোমাদের সাথে ভয় নেই।
আমি: কিন্তু চাচ্চু ওদিকে তোমার ব্যবসা…
চাচ্চু: ওসব তোর চাঁচি সামলে নিবে।
জোহা: আব্বু আমি কবে যাচ্ছি?
আমি: তুই কোথায় যাবি?
জোহা: কোথায় আবার কানাডা।
আম্মু: আপাতত তুই আমার কাছে থাক পরে যাবি। (শায়লার দিকে চোখ পড়লো সমানে কাজ করে যাচ্ছে। উঠে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম)
আমি: তুমি এতো কাজ করছ কেন কাজের লোক আছে তো।
শায়লা: একটু করি সমস্যা কোথায়?
আমি: না চলো আমাদের সাথে বসে গল্প করবে। (শায়লাকে টেনে এনে আম্মুর পাশে বসিয়ে দিলাম)
শায়লা: একটু কাজ করলে কি এমন হতো?
আম্মু: তুমি তো এ বাড়ির বউ তুমি কাজ করবে কেন? (শায়লা মুখ গোমরা করে ফেললো, হয়তো ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। সত্যি মেয়েটা ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে)
আম্মু: কি হলো আবার মুখ গোমরা করলে কেন?
আমি: এই চলো তো তুমি আমার সাথে। (শায়লাকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে আসলাম)

শায়লা বাগানে এসে দোলনায় বসে ঢুকরে কেঁদে উঠলো।
আমি: আরে কি হলো?
শায়লা: তোমরা কতো ভালো আর আমি তোমাদের সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করেছি।
আমি: আমিও তো তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আর তুমি তো এসব পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করেছ।
শায়লা: তুমি তো জানতে না আমি অভিনয় করছিলাম কিন্তু আমিতো জানতাম তোমরা খুব ভালো। তাছাড়া মেঘকে তো আমি ছিনতাম ওর সাথেও তো খারাপ ব্যবহার করেছি বারবার ওকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছি।
আমি: বাদ দাওনা এসব। (শায়লা সমানে কেঁদেই চলেছে কি যে করি)
আমি: আমার মিষ্টি ভাবির মুখে কান্না নয় মিষ্টি হাসি মানায়। (শায়লার গাল টেনে দিলাম ও ফিক করে হেসে দিলো)
আমি: হাসছ কেন?
শায়লা: শত্রু থেকে ভাবি?
আমি: হ্যাঁ আজ থেকে তুমি আমার ভাবি আর আমি তোমার ননদিনী। আজ থেকে কোনো শত্রুতা নয়। (বারবার ওকে শায়লা ডাকতে এখন নিজের মুখেই বাঁধছে, আগে যাই করে থাকুক এখন তো ও আমার ভাইয়ের স্ত্রী)
ভাবি: ঠিক আছে ননদিনী।
মেঘ: এইযে মেডাম ভাবির সাথে আড্ডা দিলে হবে রুমে যে নিজের স্বামীকে রেখে গেছ সে খেয়াল আছে? (মেঘের কথা শুনে ছাদের দিকে তাকালাম, ছাদে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে)
আমি: আসছি।
ভাবি: আমি এখানে একটু সময় বসি তুমি রুমে যাও।
আমি: আচ্ছা তুমি তো মেঘের সাথে দুবছর সংসার করেছ মেঘের পছন্দ অপছন্দ কি একটু বলবে আমাকে? (ভাবি আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো)
আমি: হাসছ যে..
ভাবি: একজন কে ভালোবেসে অন্য জনের সাথে সংসার করার মতো কষ্ট যন্ত্রণা আর কিছুতে নেই অথচ এই কষ্টটাকেই পরিস্থিতির চাপে পরে আমাদের মেনে নিতে হয়। দুবছর অনেক সময় কিন্তু এতোটা সময়ের মধ্যেও মেঘের সাথে আমার তেমন কোনো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি, ওর পছন্দ অপছন্দ কখনো জানতে চাইনি। মেঘকে ইকবালের কথা বলতে পারিনি আর মেঘের মায়ের কথায় বেবি নিতে হয়েছিল। আসলে তো মেঘ আর আমার মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোনো কথাই হতো না। বুঝতাম মেঘ আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু কিছু করার ছিল না কারণ আমি যে ইকবালকে ভালোবাসি।
আমি: (নিশ্চুপ)
ভাবি: জানো তো ভালোবাসা এমন এক জিনিস যার জন্য মানুষ সব করতে পারে যেমনটা আমি করেছি। ইকবাল আমাকে প্রথমেই তোমার কথা বলেছিল মানতে কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছিলাম আর বলেছিলাম আমি ওর ঘরের এক কোণে পরে থাকবো তোমাকে বিয়ে করার পরও, ইকবাল আমাকে ভালোবাসে তো তাই তোমাকে বিয়ে করতে চাইতো না কিন্তু ওর আব্বু সবসময় আমাদের আলাদা করে দেয়ার ভয় দেখাতো। ইকবালের বাবার অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম তাইতো উনি যা বলতেন তাই করতে হতো আমাকে। মেঘ আর তোমাকে আলাদা করার জন্য উনি ডিভোর্স পেপার মেঘের ফাইলের ভিতর রেখেছিলেন মেয়েটিকে দিয়ে, আর ফোনে সব কথা আমাকে দিয়ে বলিয়েছেন। তোমাদের আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি আ…
আমি: ইচ্ছে করে তো আর দাওনি বাদ দাও এসব। বিকেলে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবো তোমাকে নিয়ে কেমন?
ভাবি: সত্যি?
ওর মুখে হাসির ছলক দেখে মৃদু হেসে চলে আসলাম।

মেঘ: এই আমাকে একা রেখে বাগানে কি করছিলে? (রুমে আসতেই মেঘ আমার দুগালে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো)
আমি: কি হয়েছে এমন করছ কেন?
মেঘ: তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও একা থাকতে পারিনা। (মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম)
মেঘ: হাসছ যে?
আমি: সত্যি আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও একা থাকতে পারোনা?
মেঘ: বললাম তো পারিনা।
আমি: যদি কখনো দুজন আলাদা হয়ে যাই তখন?
মেঘ: আলাদা হয়ে যাবো মানে?
আমি: না মানে যদি কখনো এমন কোনো পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় আমাদের যে দুজন আলাদা হয়ে যেতে হবে তখন কিভাবে থাকবে?
মেঘ: পারবো না আর এমন পরিস্থিতি আমি আমাদের জীবনে আসতে দিবো না। (মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো)
আমি: আরে পাগল কাঁদছ কেন আমিতো কথাটা এমনি বলেছি।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে যাবো।
মেঘ: আমি যেতে দিলে তো। (মেঘ আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে চুমু দিলো)
আমি: এতো ভালোবাস আমায় এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে?
মেঘ: যতদিন আমি তোমার পাশে আছি ততদিন দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (মৃদু হেসে মেঘের বুকে মাথা রাখলাম)
আমি: বিকেলে একবার থানায় যাবো ভাইয়া আর চাঁচির সাথে দেখা করবো।
মেঘ: বাসায় যাবে না?
আমি: হ্যাঁ যাবো থানা থেকে সোজা বাসায়।
মেঘ: আমাকে তো অফিসে যেতে হবে।
আমি: হুম যাও কাল থেকে চাচ্চু সবকিছুর দায়িত্ব নিবে তোমার আর এতো টেনশন করতে হবে না শুধু চাচ্চুর সাথে সাথে থাকলেই হবে।
মেঘ: ঠিক আছে।
আমি: রেডি হয়ে এসো আমি নাশতা দিচ্ছি।
মেঘ: ওকে মহারাণী।

মেঘকে অফিসে পাঠিয়ে জোহা আর ভাবির সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আজ মনে হচ্ছে সত্যি সব ঠিক হয়ে গেছে। এতোদিন পর আবার সেই হাসি আড্ডা। এখন শুধু মামা এরেস্ট হবার অপেক্ষা, থানায় গিয়ে পুলিশ আঙ্গেলের থেকে জানতে হবে কবে এরেস্ট করতে পারবে ওরা মামাকে।
আম্মু: কণা তুই কি থানায় যাবি?
আমি: হ্যাঁ আম্মু।
আম্মু: একটু কথা বলে দেখিস তো ইকবালে…
আমি: আম্মু কেঁদো না আমি কথা বলে দেখবো।
আম্মু: ঠিক আছে একটু তাড়াতাড়ি চলে যা।
আমি: আচ্ছা।

জোহা আর আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি ভাবি ভাইয়ার হাত ধরে পাগলের মতো কাঁদতেছে। ভালোই হয়েছে ভাবিকে নিয়ে থানায় এসেছি, অন্তত ওদের দুজনের দেখা তো হলো। ভাইয়াকে যে কবে বাসায় ফিরিয়ে নিতে পারবো, ভাবির কান্না সত্যি এখন অনেক কষ্ট দেয়।
আমি: জোহা তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি।
জোহা: ঠিক আছে।

আমি: আঙ্গেল কোনো ভাবেই কি সম্ভব না?
আঙ্গেল: না যদিও ইকবাল আত্মসমর্পণ করেছে তারপরও তিন-চার বছরের কমে সম্ভব না। আর ওর নিজের দেওয়া জবানবন্দীই তো সবচেয়ে বড় প্রমাণ। (আঙ্গেল এর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল, তিন-চার বছরের কমে ভাইয়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না এই কথা ভাবিকে বলবো কিভাবে? ভাবি তো এই কথা শুনে আরো ভেঙ্গে পড়বে)
আঙ্গেল: আর হ্যাঁ ইকবাল ওর বাবার সম্পর্কে সবকিছু বলেছে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ওকে এরেস্ট করার চেষ্টা করবো।
আমি: ঠিক আছে আমি চাঁচির সাথে দেখা করতে চাই।
আঙ্গেল: কি করবে দেখা করে? এই বজ্জাত মহিলা এতটুকুও শুধরায়নি।
আমি: একবার দেখা করেই যাই এসেছি যখন।
আঙ্গেল: ঠিক আছে।

চাঁচির সামনে আসতেই উনি আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন।
চাঁচি: বজ্জাত মেয়ে এখানে কেন এসেছ?
আমি: দেখতে এসেছিলাম আপনি কিছুটা শুধরিয়েছেন কিনা। আসলে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
চাঁচি: এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বল।
আমি: সামলেই তো বলতে এসেছিলাম আপনিই তো বজ্জাত মেয়ে বলে আমার মাথাটা গরম করে দিলেন।
চাঁচি: বজ্জাত মেয়েকে বজ্জাত বলবো নাতো কি বলবো?
আমি: যদি নিজেকে কিছুটা শুধরে নিতেন তাহলে এখান থেকে আপনাকে নিয়ে যেতাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনাকে এখানেই থাকাটা মানায়।
চাঁচি: চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে।
আমি: রুহানের জন্য এসেছিলাম নাহলে.. দ্যাত আপনার সাথে কথা বলে শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট হচ্ছে।

ভাবির কাছে চলে আসলাম, মেয়েটা এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।
আমি: অনেক কেঁদেছ এখন থামো তোমরা।
ভাইয়া: কণা ওকে বাসায় নিয়ে যা।
আমি: হুম নিয়ে যাচ্ছি আর তোমাকেও খুব তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাবো। (ভাইয়া মুচকি হাসলো তাহলে কি ভাইয়া জানে এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব না)
ভাইয়া: বাসায় যা।
আমি: হুম।

গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছি, বুঝতে পারছি না ভাবিকে কিভাবে সত্যিটা বলবো আর আম্মুকেই বা কি বলবো। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গেছে এখন দেখছি আমার জীবনের সবকিছু ঠিক করতে গিয়ে ভাইয়া আর ভাবির জীবনের সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে।
জোহা: আপু দেখো পুতুল গুলো কি সুন্দর। (জোহার কথা শুনে গাড়ির গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকালাম, দোকানে পুতুল রাখা এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে)
আমি: গাড়িতে বস আমি আসছি।

জোহা আর তোহা দুজনের জন্য দুটু পুতুল কিনলাম।
আমি: আরে আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? (টাকা দিতে যাবো তখনি অচেনা একটি লোক আমার হাত ধরে ফেললো, লোকটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি)
–আসলে আমার স্ত্রী ঠিক এমনি একটা শাড়ি পড়েছে তাই ভুল করে আমার স্ত্রী মনে করে আপনার হাত ধরে ফেলেছি। (লোকটা চলে গেল আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। লোকটার কথা কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না লোকটা মিথ্যে বললো নাকি সত্যি)
জোহা: আপু কি হয়েছে?
আমি: আর বলিস না লোকটা নাকি ভুল করে ওর স্ত্রী ভেবে আমার হাত ধরে ফেলেছে।
জোহা: ভুল করে…
আমি: ঠিক এমন শাড়িই নাকি ওর স্ত্রী পড়েছে তাই ভুল হয়ে গেছে নাকি।
জোহা: হতেই তো পারে।
আমি: আমার কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না লোকটার কথা।
জোহা: এতো ভেবো নাতো চলো।
আমি: হুম।

জোহা আর ভাবিকে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় ফিরে আসলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মেঘ হয়তো অফিস থেকে চলে এসেছে। কলিংবেল চাপতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমি: মা তোহা কোথায়?
মা: রুহানের কাছে দেখেছিলাম।
আমি: ঠিক আছে।
দাদী: এসেই মেয়ের দিকে ছুটছিস আমরা বুঝি কেউ না?
আমি: দুদিন হলো মেয়েটাকে দেখিনা পরে আসছি আপনাদের কাছে। (দৌড়ে রুহানের রুমে আসলাম, রুহান আর পপিকে রোমান্টিক অবস্থায় দেখে ফেললাম)
আমি: এই সরি সরি ভুল হয়ে গেছে।
রুহান: সমস্যা নেই।
আমি: দরজা খুলে রোমান্স মুটেও ঠিক না, আমার ননদিনী তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
পপি: ভাবি তুমি না..
আমি: চলে যাচ্ছি ডিস্টার্ব করবো না আমার মেয়ে কোথায়?
রুহান: ভাইয়া নিয়ে গেছে রুমেই হয়তো।
আমি: ঠিক আছে ছুটিয়ে রোমান্স করো হিহিহি।

রুমে এসে দেখি তোহা বেডে বসে বসে খেলছে আর মেঘ জুতো খুলছে। পুতুলটা মুখের সামনে ধরে তোহার দিকে এগিয়ে গেলাম।
তোহা: নতুন আম্মু এসেছে। (তোহা খুশিতে হাত তালি দিচ্ছে। মেয়ের কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছি, পুতুলটা তো অনেক বড় মুখের সামনে ধরলে চেনার কথা না কে এসেছে অথচ তোহা কিভাবে যেন আমাকে ছিনে ফেললো)
মেঘ: তুমি তোহার আত্মার সাথে মিশে গেছ বুঝতে পেরেছ আর হা হয়ে তাকিয়ে থেকো না। (মেঘ হাসছে দেখে ওকে ভেংচি দিয়ে তোহাকে কোলে তুলে নিলাম)
তোহা: এতো বড় পুতুল আমার জন্য?
আমি: হ্যাঁ আমার মামুনিটার জন্য।
তোহা: কিন্তু আমার তো এত্তো বড় পুতুল চাই না আমার তো পুঁচকে পুতুল চাই।
মেঘ: তোহা কোন পুতুলের কথা বলছে বুঝতে পেরেছ?
আমি: এই হাসবা নাতো বাপ মেয়ে দুটু এক রকম। (মেঘ হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে চলে যাচ্ছিল হঠাৎ ওর ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠতেই থেমে গেল)
মেঘ: কণা দেখো তো।
আমি: আমার মেয়েকে নিয়ে বিজি আছি দেখতে থাকো। (মেঘ নিজেই এসে ফোন হাতে নিলো। কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করার পর আমার দিকে তাকালো)
আমি: কি হয়েছে?
মেঘ: কিছুনা।
আমি: চলে যাচ্ছ যে কি হয়েছে বলবে তো, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
মেঘ: বললাম তো কিছু হয়নি।
আমি: বলো প্লিজ কি হয়েছে। (মেঘের কাছে এসে ওর হাত ধরে ফেললাম। মেঘ আমার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে আমার দুগালে ধরলো)
মেঘ: এসব নিয়ে কথা বলে তোমাকে আমি হারাতে চাই না।
আমি: মানে?
মেঘ: তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।
মেঘ মৃদু হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল, আমি হা হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলে গেল মেঘ এসব আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২২

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

মামা এসে বাসায় ঢুকতেই পিছু পিছু শায়লা আর ইকবাল এসে ঢুকলো। আম্মু ভয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালেন।
মামা: ভয় নেই বোন আমি এখানে খুন করতে আসিনি সবকিছু মিটমাট করতে এসেছি।
আমি: কিসের মিটমাট?
মামা: বোন তুই বল কণা মামুনিটা ক্লান্ত হয়ে গেছে এসব জামেলা পোহাতে গিয়ে।
আম্মু: আমিতো ভেবেছিলাম তুমি…
মামা: মারা গেছি? নারে মরিনি প্রতিশোধ না নিয়ে মরি কিভাবে বল।
আম্মু: কিসের প্রতিশোধ?
ইকবাল: আমার আম্মুকে খুন করার।
আম্মু: ভাবিকে খুন? আমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছ কেন?
ইকবাল: কারণ তোমরা সবাই মিলে আম্মুকে খুন করেছিলে মা হারা করেছিলে আমাকে।
আম্মু: তোকে এসব এই লোকটা বলেছে তাই না? আরে এই লোক তোকে মিথ্যে বলেছে আমরা কেন ভাবিকে মারতে যাবো মেরেছে তো এই লোকটা নিজেই।
ইকবাল: কি?
মামা: ইকবাল ও তোকে ভুল বোঝাচ্ছে।
আম্মু: না বাবা আমি কেন তোকে ভুল বুঝাতে যাবো? যা সত্যি তাই বলছি।
আমি: সত্যিটা কি স্পষ্ট করে বলে দাও আম্মু।
আম্মু: সত্যি এটাই ভাইজান নিজে ভাবিকে খুন করেছিল আর সেজন্য আব্বু ওকে জেলে দিয়েছিল কিন্তু ও কয়েকমাস পরেই পালিয়ে যায়। (আমি এসব কথার কিছুই বুঝতে পারছি না, ইকবাল উঠে আম্মুর কাছে গেল)
ইকবাল: ফুফু সবকিছু খুলে বলো প্লিজ।
মামা: শারমিন ভালো হবে না আর একটাও মিথ্যে বললে কিন্তু…
আম্মু: এতো বছর পর যখন তুমি তোমার পাপ নিজেই টেনে সামনে এনেছ তাহলে আজ আমি বলবই।
ইকবাল: বল ফুফু প্লিজ!
আম্মু: তখন আমার বিয়ে হয়নি। হুট করে একদিন ভাইজান একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। মেয়েটি বড়লোক শুনেই আমরা বুঝে ফেলি ভাইজান ওকে ফাঁসিয়ে নিয়ে এসেছে কারণ উনার স্বভাবই এরকম। ছোট বেলা থেকেই যতো ধরনের খারাপ কাজ আছে সব ভাইজান করে, বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছেন উনাকে সঠিক পথে আনার কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। সেদিন তোর আম্মুকে কেউ মেনে নেয়নি কিন্তু আমি মেনে নিয়েছিলাম, পরবর্তীতে সবাইকে বুঝিয়ে সবটা মানিয়ে নিয়েছিলাম।
ইকবাল: তাহলে আম্মু খুন হলো কিভাবে?
আম্মু: একটা বছর কেটে যায় এভাবেই। এই লোকটা বরাবরই সম্পত্তির লোভী ছিল তাই তোর আম্মুকে সবসময় বলতো সবকিছু উনার নামে লিখে দিতে কিন্তু ভাবির ভয় হতো সবকিছু দেওয়ার পর যদি ভাবিকে ভুলে যায়। এর মধ্যে ভাবির কোল আলো করে তুই আসলি, ভাবি সবকিছু তোর নামে করে দিলো। আর এই রাগে এই লোকটা ভাবিকে খুন করে পেলে। বাবা নিজের হাতে উনাকে পুলিশে তুলে দেন। তুই আমার কাছেই থাকতি কিন্তু কয়েকমাস পর উনি পুলিশের থেকে পালিয়ে যান তারপর বাড়িতে এসে জোড় করে তোকে নিয়ে যান। অনেক খুঁজেছি তোকে কিন্তু পাইনি। বাবা বলেছিলেন তোদের ভুলে যেতে কখনো যেন তোর জন্য না কাঁদি কিন্তু কয়েকমাস তোকে নিজে আগলে রেখেছি তো তাই লুকিয়ে কাঁদতাম। সময় সব গাঁ শুকিয়ে দেয় তেমনি তোর কষ্টটা ভুলে গেলাম যখন কণা আসলো আমার কোল জোড়ে। তোকে হারানোর কষ্টটা কখনো প্রকাশ করতাম না তাই কণা কখনো জানতে পারেনি ওর মামা আছে মামাতো ভাই আছে। (আম্মু ইকবাল দুজনেই কাঁদছে, কতো বছর পর ওদের দেখা হলো)
ইকবাল: ফুফু আমি সারাটা জীবন তোমাকে নানা নানুকে ঘৃণা করে এসেছি কারণ এই লোকটা বলেছিল তোমরা আম্মুকে খুন করিয়েছ। আর এজন্য আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এতোকিছু করেছি।
মামা: অনেক হয়েছে শারমিন মিথ্যে বলা আমি যে কারণে এসেছি তা আমাকে বুঝিয়ে দে আমি চলে যাচ্ছি।
আম্মু: কিসের জন্য এসেছ সম্পত্তি?
মামা: হ্যাঁ।
আম্মু: কিন্তু কোন সম্পত্তি? এখানে যা দেখছ সব কণার আব্বুর গড়ে তোলা।
মামা: আমার ভাগের সম্পত্তি কোথায়?
আম্মু: বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমি সবকিছু বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানায় ডোনেট করে দিয়েছি।
মামা: এসব তো আমি বুঝবো না আমার সম্পত্তি চাই।
ইকবাক: সম্পত্তি চাই সম্পত্তি চাই সম্পত্তি চাই, ছোটবেলা থেকে এই একটা শব্দই শুনে এসেছি তোমার মুখ থেকে। এতো লোভ তোমার যে আমার আম্মুকে মেরে ফেললে?
মামা: ইকবাল শারমিন তোকে মিথ্যে বলেছে।
ইকবাল: কোনো মা মিথ্যে বলতে পারেনা আর ফুফুর কান্নাই বলে দিচ্ছে ফুফু মিথ্যে বলছে না। মিথ্যে তো তুমি বলেছ আমাকে সারাজীবন। তোমাকে আমি ছাড়বো না।
মামা: ইকবাল তুই কিন্তু ভুল করছিস।
ইকবাল: হ্যাঁ ভুল করছি কি করবে আমাকেও মেরে ফেলবে তাই তো? মেরে ফেলো তোমার মতো বাবার সন্তান হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
মামা: ইকবাল..
ইকবাল: একদম চিৎকার করো না, ভুলে যেওনা তোমার সব খারাপ কাজের সাক্ষী আমি।
মামা: কি করবি তুই?
ইকবাল: আম্মুর খুনের প্রতিশোধ নিবো।
আম্মু: ইকবাল থাম এই মানুষটার সাথে কথা বাড়াস না।
আমি: আম্মু কি হয়েছে তোমার।
মেঘ: আম্মু.. (আম্মু টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন, আম্মুকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে)
ইকবাল: ফুফু কি হয়েছে?
আমি: পানি দাও আম্মুকে।
শায়লা: এইযে পানি। (শায়লার হাত থেকে পানি এনে আম্মুকে খাওয়ালাম)
ইকবাল: সব হচ্ছে এই লোকটার জন্য… আব্বু কোথায়? (পিছনে তাকিয়ে দেখি মামা নেই তারমানে পালিয়ে গেছে)
ইকবাল: ভয়ে পালিয়ে গেল।
মেঘ: কণা আম্মুকে রুমে নিয়ে শুয়ে দাও।
আমি: ঠিক আছে।

আম্মুকে রুমে এনে শুয়ে দিতেই ইকবাল আম্মুর পায়ের কাছে বসে আম্মুর পা জড়িয়ে ধরলো।
ইকবাল: ফুফু আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি এসব আব্বুর কথায় করেছি। লোকটা আমাকে সবসময় বলেছে আম্মুকে তোমরা মেনে নেওনি তোমরা খুন করিয়েছ তাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি এমন করেছি। তবে ফুফাকে আমি খুন করিনি আব্বু করিয়েছে আমি আর শায়লা তো আব্বুর কথামতো চলেছি শুধু।
আম্মু: পা ছেড়ে এদিকে আয়। (ইকবাল গিয়ে আম্মুর পাশে বসলো, আম্মু একটা হাত ওর মুখে বুলিয়ে দিলেন। কি করবো বুঝতে পারছি না ক্ষমা করে দিবো ওকে কিন্তু পরে যদি আবার কোনো ক্ষতি করে)
ইকবাল: বিশ্বাস করো ফুফু আব্বু সবসময় বলেছে তুমি আমাদের শত্রু, আগে যদি জানতাম আব্বু আম্মুকে খুন করেছে তাহলে আমি তোমার কাছেই থাকতাম অন্তত একজন মা তো পেতাম।
আম্মু: কাঁদিস না।
ইকবাল: আমি সত্যি একটা অপদার্থ, প্রতিটা মুহূর্তে আমি তোমাদের উপর নজর রেখেছি অথচ একবারের জন্য মনে হয়নি আমার ফুফু খারাপ কাজ করতে পারেনা।
আম্মু: এখন তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস তাতেই আমি খুশি।
ইকবাল: কিন্তু অনেক দেরি যে হয়ে গেছে ফুফু। খারাপ লোকটার কথায় আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি এবার এসব প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
শায়লা: মানে কি করবে তুমি?
ইকবাল: আত্মসমর্পণ করবো আব্বুর সব খারাপ কাজের হিসেব দিবো আর আব্বুকে ধরিয়ে দিবো।
শায়লা: কি বলছ এসব? (শায়লা ইকবালের থেকে সরে আসতে আসতে ফ্লোরে এসে বসে পড়লো, পাগলের মতো কাঁদছে শায়লা। কি যে হচ্ছে সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে)
ইকবাল: আমি আত্মসমর্পণ করবো তবে তোমরা আমার শায়লাকে কোনো শাস্তি দিওনা। মেয়েটা বড্ড ভালো শুধুমাত্র আমাকে হারানোর ভয়ে আব্বুর কথামতো সব করে গেছে, তবে ও শুধু কণাকে ফোনে ভয় দেখিয়েছে আর কোনো খারাপ কাজ করেনি। (ইকবাল কথাগুলো বলতে বলতে আমার দিকে তাকালো, উঠে আমার দিকে এসেই আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো)
আমি: আরে কি করছ?
ইকবাল: ভাইকে ক্ষমা করে দে বোন। আমি কথা দিচ্ছি আমি আত্মসমর্পণ করবো আর আব্বুকে ধরার জন্য পুলিশকে সব রকম সাহায্য করবো। (কি করবো বুঝতে পারছি না মেঘের দিকে তাকালাম ও বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইকবালের নজর মেঘের দিকে পড়তেই উঠে মেঘের কাছে গেল)
ইকবাল: শায়লা একটা অন্যায় করেছে শুধু আর সেটা তোমার আর তোহার সাথে। তবে জানো তো পাগলীটা রোজ রাতে তোহার জন্য কাঁদে আমি বলেছিলাম তোহাকে নিয়ে আসতে কিন্তু ও তোমার কথা ভেবে তোহাকে আনতে চায় না। তুমি তোহাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই। এতোদিন ও যা যা করেছে সব অভিনয় ছিল। মেয়েটাকে উপর থেকে যতোটা খারাপ মনে হয় ভিতর থেকে ঠিক ততোটাই ভালো। কণা আর তোমাকে কষ্ট দিয়ে ও নিজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো। আব্বু সবসময় ওকে ভয় দেখাতো আব্বুর কথামতো না চললে ওর থেকে আমাকে আলাদা করে নিবে আর ও আমাকে হারানোর ভয়ে সব খারাপ কাজ মুখ বুজে করে যেতো কারণ পাগলীটা যে আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। (ইকবাল শায়লা দুজনেই কাঁদছে, মেঘ এগিয়ে গেলো ইকবালের দিকে)
মেঘ: যদি তোমাকেই ভালোবাসতো তাহলে আমাকে বিয়ে করেছিল কেন?
ইকবাল: ওর পরিবারের জন্য। আমি তো খারাপ তাই ওর পরিবার মেনে নেয়নি, জোড় করে ওকে বিয়ে দিয়ে দেয়। তোমাকে কিছু বলতে পারতো না আবার আমাকে ভুলতে পারছিল না এভাবে দুবছর কেটে যায়। শায়লার বাবার মৃত্যুর পর ও আমার কাছে ফিরে আসতে চায়, আমিও খুব করে চাইছিলাম ও যেন আমার জীবনে ফিরে আসে। কি জানো তো যতোই খারাপ হই শায়লার প্রতি আমার ভালোবাসা সত্যি ছিল। আমি শায়লাকে বলেছিলাম তোহাকে নিয়ে আসতে আমি তোহাকে মেনে নিবো কিন্তু শায়লা বলেছিল তোহা মেঘের প্রাণ, তোহাকে নিয়ে আসলে মেঘ বেশি কষ্ট পাবে।
মেঘ: ভালোই হয়েছে শায়লা আমার জীবন থেকে না গেলে তো আমি কণাকে পেতাম না। শুধু আমার তোহা মা হারিয়েছে আ…
আমি: মেঘ তুমি আজো আমাকে তোহার মা ভাবতে পারনি?
মেঘ: সে কথা নয় কণা আ…
ইকবাল: আমি জানি কণা তুই তোহাকে খুব ভালোবাসিস তোর উপর নজর রাখতে গিয়ে বুঝেছি।
আম্মু: থামবি তোরা?
ইকবাল: ফুফু বলনা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ। আর শায়লা, ওকে কোনো শাস্তি দিওনা ও সত্যি খুব ভালো মেয়ে। আমাকে ভালোবাসে তো তাই হারানোর ভয়ে আব্বুর কথামতো কণাকে ফোন দিয়ে ভয় দেখাতো।
আম্মু: হুম বুঝতে পেরেছি।
শায়লা: তুমি আত্মসমর্পণ করলে আমার কি হবে?
আম্মু: তুমি আমার কাছে থাকবে বৌমা।
আমি: আম্মু কি বলছ…
আম্মু: তুই থাম। ইকবাল কম হউক বেশি হউক পাপ করেছে তাই ওর শাস্তি প্রয়োজন, তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি ওকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।
আমি: আম্মু হুট করে সিদ্বান্ত নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? আর পাপ তো শায়লাও করেছে।
আম্মু: মানুষ চিনতে আমি ভুল করিনা আর শায়লার পাপের শাস্তি তো ও পাচ্ছে তোহার জন্য কেঁদে।
আমি: আম্মু…
মেঘ: কণা আপাতত আম্মুর কথা শুনো আর ইকবাল আত্মসমর্পণ করে কিনা দেখো তাহলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে ওরা সত্যি ভালো হয়ে গেছে নাকি অভিনয় করছে। (মেঘ আস্তে আস্তে বললো, কি করবো সত্যি বুঝতে পারছি না)
ইকবাল: ফুফু আমি আসছি আমার শায়লাকে তুমি দেখে রেখো। আর কণা ভয় পাবি না একদম আব্বু তোদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আমি খুব শীঘ্রই আব্বুকে এরেস্ট করাবো।
ইকবাল চলে গেল, শায়লা খুব কাঁদছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সব কেমন যেন গুলিয়ে গেল। শায়লা কি সত্যি ভালো এতোদিন কি সত্যি মামার কথায় আমাদের সাথে অভিনয় করেছিল? হতেও পারে প্রিয়জনকে হারানোর ভয়ে তো মানুষ সব করতে পারে।

রুমে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম, বাইরে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি সত্যি কি সবকিছু ঠিক হয়ে গেল? এভাবে হুট করে সব পাল্টে যাবে আমিতো কল্পনাও করতে পারিনি। শুধুমাত্র একটা সত্যি সব পাল্টে দিলো। এতোদিন ইকবাল জানতো মামিকে আম্মুরা খুন করেছে আর আজ জানলো মামা নিজেই খুন করেছে আর এই একটামাত্র সত্যি সব পাল্টে দিলো।
মেঘ: কণা বাসায় কখন যাবো?
আমি: আজকে এখানে থাকি প্লিজ।
মেঘ: কিন্তু তোহা?
আমি: তুমি চলে যাও।
মেঘ: অসম্ভব আমি তোমাকে রেখে যাচ্ছি না, যেতে হয় দুজন একসাথে যাবো।
আমি: এমন করোনা প্লিজ আজ আম্মুর কাছে থাকি?
মেঘ: আমারো তো আমার বউয়ের কাছে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা দাঁড়াও তোহাকে ফোন করি।
আমি: ঠিক আছে। (মেঘ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পপির কাছে ফোন করলো)
পপি: হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
মেঘ: আজ আসতে পারবো না তোহাকে রাখতে পারবি?
পপি: তোহা থাকলে আমি রাখতে পারবো না কেন?
মেঘ: তোহার কাছে ফোনটা দে।
পপি: দাঁড়াও।
তোহা: আব্বু…
মেঘ: মামুনি আমরা তো আজ আসতে পারবো না তুমি একা থাকতে পারবে?
তোহা: হ্যাঁ পারবো আমি ফুফির কাছে থাকবো। (ওদের কথার মাঝখানে পুলিশ আঙ্গেল এর কল এসে ঢুকলো)
আমি: মেঘ ফোনটা রাখো আঙ্গেল ফোন দিচ্ছেন। (মেঘ ফোন রাখতেই মোবাইল নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

আমি: হ্যাঁ আঙ্গেল..
আঙ্গেল: ইকবাল আত্মসমর্পণ করেছে।
আমি: কি? (আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না, তারমানে ওরা সত্যি ভালো হয়ে গেছে)
আঙ্গেল: শুধু তাই নয় ওর বাবার সমস্ত খারাপ কাজের প্রমাণ দিবে বলেছে যেন আমরা খুব তাড়াতাড়ি ওর বাবাকে এরেস্ট করতে পারি।
আমি: আমি ঠিক শুনছি তো?
আঙ্গেল: হ্যাঁ মা ইকবাল ওর সমস্ত অন্যায় স্বীকার করেছে।
আমি: ঠিক আছে ওর বাবাকে এরেস্ট করার ব্যবস্থা করুন খুব শীগ্রই।
আঙ্গেল: ঠিক আছে। (ফোন রেখে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক এতোদিনে সব ঠিক হতে যাচ্ছে)
মেঘ: আমার মনে হচ্ছে সব ঠিক হয়ে গেছে এখন তোমার মামা এরেস্ট হলেই তোমরা বিপদমুক্ত।
আমি: হুম।

রাতের আধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর দুপর থেকে এখন পর্যন্ত দেখা শায়লাকে নিয়ে ভাবছি। কেমন যেন দুটানায় পরে গেছি আমি। ইকবাল আত্মসমর্পণ করলো, সারাটা বিকেল শায়লার সাথে কাটালাম একবারের জন্যও মনে হয়নি মেয়েটা খারাপ অথচ ওরাই এতোদিন আমার বাঁচা অসম্ভব করে তুলেছিল। শায়লা নিজের হাতে রান্নাবান্না করেছে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করছে একবারও আমার মনে হয়নি এই মেয়েটা এখন আমাদের সাথে অভিনয় করছে বরং মনে হচ্ছে শায়লা ভালো শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে খারাপ হওয়ার অভিনয় করেছিল।
মেঘ: অনেক রাত হয়েছে তো ঘুমাবে না?
আমি: শায়লার ব্যবহারে তোমার কি মনে হচ্ছে?
মেঘ: হয়তো তুমি রাগ করতে পারো তবে সত্যি এটাই শায়লা সবসময় এমন শান্তশিষ্ট ছিল। তোহা হবার পর থেকে ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে তারপর তো ডিভোর্স দিয়ে চলে গেল। শায়লার আগের রূপ আমি আজ দেখতে পাচ্ছি কাজেই বলতে হচ্ছে শায়লা ভালো হয়ে গেছে। অবশ্য ও তো ভালোই ছিল শুধু ইকবালকে হারানোর ভয়ে খারাপ হবার অভিনয় করেছিল। আর আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষ এই ভয় পায় যেমনটা আমি পাই তোমাকে হারানোর। (মেঘ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: আচ্ছা শায়লা তোহাকে নিয়ে যাবে নাতো?
মেঘ: না কারণ শায়লা বুঝতে পেরেছে আমি তোহাকে কতোটা ভালোবাসি তাছাড়া এখন তো এইটাও জানে তুমি তোহার আরেক মা।
আমি: হুম।
মেঘ: অনেকদিন পর তোমাকে টেনশন মুক্ত লাগছে তাই…
আমি: তো?
মেঘ: কিছুই না।
আমি: কি করছ?
মেঘ: আমিতো কিছুই করছি না যা করার আমার হাত করছে। (মেঘ আমার শাড়ির নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পেটে হাত বুলাচ্ছিল জোড় করে ওর হাত সরিয়ে দিলাম)
মেঘ: এখন? (মেঘ আমাকে কোলে তোলে নিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে মুচকি হাসলো)
আমি: ছাড়ো না প্লিজ!

মেঘ: ছেড়ে দিলাম।
আমি: কোমরটা বোধয় ভেঙ্গেই গেছে। (মেঘ আমাকে বিছানায় এনে দফ করে ছেড়ে দিয়েছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে..)
মেঘ: আমি আদর করে দিচ্ছি ব্যথা কমে যাবে।
আমি: দুষ্টুমি করবে না একদম।
মেঘ: আমিতো আজ দুষ্টুমি করবোই পারলে আটকিয়ে দেখাও।
মেঘ আমার উপরে শুয়ে আমার দুহাতের আঙ্গুলের ভাজেভাজে ওর আঙ্গুল গুলো আটকে দিলো। আমার চোখের দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে আছে, আমি জানি ও কেন এভাবে তাকিয়ে আছে। মেঘ ভালো করে জানে আমি ওর চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনা আর ও এভাবে তাকিয়ে থাকলে ওকে আমি আটকাতেও পারিনা, তাইতো ও এভাবে তাকিয়ে আছে। চুপচাপ চোখ দুটু বন্ধ করে নিলাম, মেঘ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো “কি মেডাম আটকাবে না”
উত্তরে শুধু মৃদু হাসলাম। মেঘ আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২১

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আম্মুকে সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আম্মু ফোন রিসিভই করছে না। শপিংমলে আছে নাকি বাসায় পৌঁছেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কিযে করবো এখন…
মেঘ: একটু স্থির হয়ে বসো প্লিজ।
আমি: আমার আম্মু মৃত্যুর মুখে আর তুমি…
মেঘ: না মানে অস্থিরতার সময়… (রাগি চোখে তাকালাম মেঘের দিকে, চুপ হয়ে গেল একদম)

ফোন হাতে নিয়ে রুমে পায়চারী করছি আর আম্মুর ফোনের অপেক্ষা করছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম।
আমি: আম্মু কোথায় ছিলে?
আম্মু: কেন কি হয়েছে?
আমি: তুমি বাসায় আছ তো?
আম্মু: হ্যাঁ একটু শপিং এ গিয়েছিলাম বাসায় আসছি মাত্র।
আমি: যাক নিশ্চিন্ত হলাম।
আম্মু: হয়েছে কি বলবি তো?
আমি: সব বলবো আগে তুমি দেশে আসো।
আম্মু: দেশে?
আমি: হ্যাঁ আজ বিকেলের ফ্লাইটেই চলে আসো। কোনো প্রশ্ন করবা না, আমি এয়ারপোর্টে তোমাকে রিসিভ করার জন্য থাকবো।
আম্মু: তোর চাচ্চুকে জিজ্ঞেস করে নেই?
আমি: জিজ্ঞেস করতে হবে না শুধু বলো তুমি দেশে আসছ আমার কাছে।
আম্মু: কখন যে কি তোর মাথায় ঘুরপাক খায় কিছুই বুঝিনা।
আমি: তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নাও।
আম্মু: ঠিক আছে রাখছি।

ফোনটা বিছানার উপর রেখে একটা সস্থীর নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলাম। আম্মুকে কোনোভাবে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারলে শায়লা আর ইকবালকে ছাড়ে কে। একবার শুধু আম্মুকে এয়ারপোর্ট থেকে ভালোভাবে বাসায় নিয়ে আসি তারপর শায়লার শশুড়কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো আমি।
মেঘ: আম্মু বিকেলের ফ্লাইটে আসলে তো রাত হয়ে যাবে।
আমি: হ্যাঁ এগারোটা বাজবে।
মেঘ: এয়ারপোর্ট থেকে এতো রাতে নিয়ে আসাটা রিস্ক হয়ে যাবে না?
আমি: তাইতো।
মেঘ: কি করবে?
আমি: সমস্যা নেই পুলিশ আঙ্গেলকে বলে সঙ্গে করে দুজন পুলিশ নিয়ে যাবো।
মেঘ: ঠিক আছে।

মা রান্না করছেন আমি হাতে হাতে সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছি কিন্তু কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না। আব্বুকে হারিয়েছি এখন যদি আম্মুর কিছু হয়ে যায় আমিতো শেষ হয়ে যাবো। আম্মুর কিছু হবার কথা ভাবতেই ভিতরে ছ্যাঁত করে উঠে।
মা: বৌমা তোমার কি হয়েছে বলতো তোমাকে এতো অস্থির অস্থির লাগছে কেন?
আমি: কিছু হয়নি তো মা।
মা: কিছু নিয়ে টেনশনে আছ?
আমি: আসলে আজ আম্মু আসছেন তাই একটু টেনশন হচ্ছে।
মা: তোমার মায়ের তো আর কোনো বিপদ হবে না শায়লা তো জেলে তাহলে এতো ভয় পাচ্ছ কেন?
আমি: ভয়টা তো শায়লার শশুড়কে নিয়ে মা কখন কি করে বসবে বুঝতেই পারছি না।
মা: কলিংবেল বাজছে দেখতো কে এসেছে।
আমি: দেখছি।

দরজা খুলে বাবাকে দেখে থমথম খেয়ে গেলাম, জানিনা বাবাকে বুঝিয়ে সবকিছু ঠিক করবো কিভাবে।
বাবা: কেমন আছ মা? বাসার সবাই কোথায় ডাকো সবাইকে, পাক্কা তিনদিন পর বাসায় আসলাম সবাইকে দেখি একটু।
আমি: ডাকছি বাবা।
বাবা: আমার তোহা দাদুভাই কোথায়?
তোহা: এইতো আমি। (পপির হাতের আঙ্গুল ধরে হাটছিল তোহা, বাবাকে দেখে দৌড়ে এসে কোলে উঠে বসলো। বাবার কন্ঠ শুনে সবাই একে একে ড্রয়িংরুমে আসতে শুরু করলো)
বাবা: পপি তোর হাতে কি হয়েছে?
পপি: আসলে বাবা…
বাবা: রুহান তোর আবার কি হলো মুখটা এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেন?
দাদী: আমি বলছি তোকে সবকিছু তবে আগে বল তুই টেনশন করবি না হুট করে রেগে যাবি না।
বাবা: ঠিক আছে বলো আগে কি হয়েছে।
দাদী বাবাকে প্রথম থেকে সবকিছু বলতে শুরু করলেন। জানিনা বাবা কেমন রিয়াক্ট করবেন, ভয় হচ্ছে আমিতো বাবাকে কথা দিয়েছিলাম। বাবার চোখের সামনে থেকে রান্নাঘরে চলে আসলাম মায়ের কাছে।

মা: মানুষটার আবার না কিছু হয়ে যায় এসব শুনে।
আমি: কিছু হবে না মা একটু ধৈর্য ধরুন।
বাবা: এতোগুলো বছর ধরে আমি কাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসলাম? হ্যাঁ সেদিন একটা এক্সিডেন্ট ঘটেছিল কিন্তু আমিতো ওদের আপন করে নিয়েছিলাম আর ও কিনা আমাকে শত্রু ভেবে এসেছে সবসময়? (বাবার কথা গুলো শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। সত্যিই তো যাকে এতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখলেন সে কিনা এমন করলো। আপন মানুষ গুলো আঘাত করলে সত্যি খুব কষ্ট হয়)
মেঘ: আব্বু এসব নিয়ে টেনশন করোনা তো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও। (বাবার দিকে একবার তাকালাম মাথা নিচু করে রুমের দিকে চলে গেলেন)

আর কিছুক্ষণ পর আম্মুর ফ্লাইট এখন পর্যন্ত তো সব ভালোই চলছে বাকি সময়.. হুট করে ফোন বেজে উঠলো, কেঁপে উঠলাম ফোনের শব্দে। আগের সেই লোকটির নাম্বার দেখে ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম।
–কণা মামুনি বয়সে তো একটা পিচ্ছি মেয়ে তুমি আমাকে টপকে যাওয়ার কথা ভাবছ কিভাবে?
আমি: মানে?
–ভেবেছিলে আমার ছেলে আর বৌমাকে না ছেড়েই তোমার আম্মুকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমিতো তোমার আম্মুর ঠিক পিছনের সিটে বসে আছি, আমাদের ফ্লাইট একসাথেই। (ভেবেছিলাম লোকটা জানতে পারবে না কিন্তু ও তো আম্মুকে ফলো করছে, এখন কি করবো)
–কি হলো মামুনি চুপ হয়ে আছ যে? দেখবে তোমার আম্মুকে ভিডিও করে পাঠাবো?
আম: কি চান আপনি?
–ওই এটাই আমার ছেলে আর বৌমাকে ছেড়ে দাও।
আমি: ওদের ছেড়ে দিলে পর যে আপনি আম্মুর ক্ষতি করবেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
–বললাম তো আপনজনদের মারতে আমার আবার একটু কষ্ট হয়।
আমি: কে আপনি? আমাদের কে হন?
–জানতে চাও তাহলে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করো সামাদ কে?
আমি: সামাদ?
–হ্যাঁ আমি সামাদ বাকিটা তোমার আম্মুর থেকে জেনে নিও রাখছি এখন। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন ইকবাল আমাকে ফোন করে নাহলে তোমার আম্মু…
আমি: না না আমি ফোন করে বলছি ছেড়ে দিতে।
–লক্ষী মামুনি।
লোকটা ফোন রেখে দিলো। পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে এতো কষ্টের পর ওদের ধরা গেল আর এখন কিনা ছেড়ে দিতে হবে।

ফোনটা সমানে বেজেই চলেছে ইচ্ছে করেই রিসিভ করছি না। মাত্র পাঁচ মিনিট আগে পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন করে বলেছি ওদের ছেড়ে দিতে আর গুনে গুনে পাঁচ মিনিট পরেই শায়লা ফোন করলো। এখন ফোন রিসিভ করলেই শায়লা হাসবে আর আমার বোকা হয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
মেঘ: কি হলো ফোন রিসিভ করছ না কেন?
আমি: থাকুক না শায়লার তাচ্ছিল্যের হাসিটা শুনতে চাই না।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি হেরে গেছি মেঘ।
মেঘ: দূর পাগলী কাঁদছ কেন আর হেরে যাবে কেন? ওরা তো আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে না, তুমি আম্মুকে আগে তোমার কাছে নিয়ে এসো তারপর আবার ওদের শাস্তি দিবে।
আমি: সে সুযোগটা কি ওরা আমাকে দিবে?
মেঘ: দেখো সব কিছুর মূলে তোমাদের সম্পত্তি আর এই সম্পত্তি পাওয়ার জন্যই ওরা এতোকিছু করছে, ওরা এই সম্পত্তি না নিয়ে দেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। আবার ফিরে আসবে ওরা আর তখন আম্মুও তোমার কাছে থাকবে তখন ওদের আবার এরেস্ট করাতে পারবে।
আমি: পারবো তো নাকি ওরা এভাবে অন্যায় করেও খুলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াবে?
মেঘ: নিজের উপর ভরসা রাখো কণা, তুমি ঠিক পারবে।
আমি: হুম

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি আম্মুকে রিসিভ করার জন্য। সঙ্গে করে দুজন পুলিশ এনেছি ভয় হচ্ছে সামাদ এর লোকজন হয়তো আমাদের আশে পাশেই আছে।
মেঘ: ওইতো আম্মু। (মেঘের কথা শুনে সামনে তাকালাম, আম্মু আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। আমার দুচোখ সামাদ নামের লোকটাকে খুঁজছে কিন্তু সন্দেহজনক কাউকে তো দেখছি না। তবে কি সামাদ আমাকে বোকা বানালো? না না বোকা বানাবে কি করে ও তো বলেছিল এয়ারপোর্টে আম্মুর পিছনের সিটে বসা, যদি না আসবে তাহলে জানবে কিভাবে)
আম্মু: কণা কাকে খুঁজছিস আমিতো তোর সামনে।
আমি: কাউকে না আম্মু গাড়িতে চলো।
আম্মু: আচ্ছা তুই আমাকে এভাবে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললি কেন?
আমি: সব বলবো বাসায় চলো।
আম্মু: ঠিক আছে।

বাসায় আসতে আসতে রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেল, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি: আম্মু তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
আম্মু: ঠিক আছে।
আমি: মেঘ তুমিও ফ্রেশ হয়ে এসো।
মেঘ: ওকে।

টেবিলে খাবার এনে সাজাচ্ছি আর ভাবছি ভালোয় ভালোয় তো আম্মুকে বাসায় নিয়ে আসলাম কিন্তু ওই লোকটা কি আমাদের পিছু ছাড়বে? সম্পত্তি চাইছে তারমানে সবকিছু নিজের নামে না নেয়া পর্যন্ত সে আমাদের পিছু ছাড়বে না। আব্বুর এতো কষ্টের সম্পত্তি ওই খারাপ লোকটাকে দিয়ে দিতে হবে নাকি? ফোনের স্কিনে চাচ্চুর নাম্বার ভেসে উঠলো, ফোনটা রিসিভ করলেই চাচ্চু নানা প্রশ্ন করবেন তাও রিসিভ করলাম।
আমি: চাচ্চু…
চাচ্চু: কি হয়েছে কণা তোর মা’কে এভাবে হুট করে দেশে যেতে বললি? ভাবি ঠিকমতো পৌঁছেছে তো?
আমি: হ্যাঁ চাচ্চু আম্মুকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছি।
চাচ্চু: এখন বলতো কি হয়েছে তোর কন্ঠটাও আমার ঠিক লাগছে না। (কি করে বলি চাচ্চু আমার সন্দেহের তালিকায় তুমি ছিলে তাই তোমাকে কিছু জানাইনি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এসবের পিছনে তুমি নেই)
চাচ্চু: কি হলো বল।
আমি: আসলে চাচ্চু আব্বুকে যারা খুন করেছিল তারা আম্মুকেও মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছিল আমাকে তাই আমার কাছে নিয়ে এসেছি।
চাচ্চু: আমার কাছে কি তোর আম্মু সেইফ থাকতো না?
আমি: ছিল না চাচ্চু, ওখানে আম্মুকে ফলো করা হচ্ছিল তাইতো ভয় পেয়ে…
চাচ্চু: আমাকে একবার বলতে পারতি।
আমি: আসলে বলিনি…
চাচ্চু: আমি আগামীকাল আসছি।
আমি: চাচ্চু শুনো…
চাচ্চু তো রেগে গিয়ে ফোন রেখে দিলেন। আমাদের আপন কেউ বলাতে ভেবেছিলাম সবকিছু চাচ্চু করছেন কারণ চাচ্চু ছাড়া আমাদের আপন কেউ নেই। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে চাচ্চু এমন করতেই পারেনা। তাহলে কে করছে এসব আমাদের আপন আর কে আছে?

মেঘ: কণা তুমি খাবে না?
আমি: হুম তোমরা খাও আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আম্মু: এতো কিসের টেনশন করছিস?
আমি: কিছুনা আম্মু ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি।

রুমে এসে লোকটার নাম্বারে ফোন দিলাম, রিং হয়েই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করলো।
–মামুনি তোমার দেখছি বড্ড কৌতূহল।
আমি: কে আপনি পরিচয় দিন।
–এতো তাড়া কিসের আস্তে আস্তে পরিচয় দিবো…
আমি: কি চান আপনি?
–সবকিছু।
আমি: মানে?
–আসলও চাই শোধও চাই এক কথায় সবকিছু চাই।
আমি: আপনার কি মনে হয় আমার আব্বুর এতো কষ্ট করে গড়ে তোলা সবকিছু আপনাকে আমি দিয়ে দিবো?
–আগে বোকা ছিলাম তাই জোড় করিনি কিন্তু এখন জোড় করবো প্রয়োজন হলে তোমাকে আর তোমার আম্মুকে খুন করবো।
আমি: আগে মানে?
–বহু বছর আগে।
মেঘ: কণা কি হলো এতো দেরি হচ্ছে কেন? (দ্যাত মেঘ ডাকছে)
আমি: আসছি।
–এতো কৌতূহল ভালো না মামুনি। সময় হলে আমিই তোমার সামনে আসবো এয়ারপোর্টে দুচোখ দিয়ে আমাকে তোমার খুঁজে বেড়াতে হবে না। (তারমানে লোকটা আমাকে এয়ারপোর্টে দেখেছে কিন্তু আমিতো দেখিনি। অবশ্য দেখলে তো চেনারও কথা না, জন্মের পর ওকে দেখেছি বলেতো মনে হয় না)
–আচ্ছা মামুনি এক কাজ করলে কেমন হয় একসাথে বসে সবকিছু যদি মিটমাট করে নেই? দেখো আমাকে সবকিছু দিয়ে দিলে কিন্তু আমি আর তোমাদের জ্বালাবো না।
আমি: একটা কানাকড়িও দিবো না আমি আপনাকে।
ফোন কেটে দিলাম। লোকটা তো কোনো ভাবেই পরিচয় দিচ্ছে না, আম্মুকে কি জিজ্ঞেস করবো?

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই আম্মু আর মেঘ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো।
আমি: কি হয়েছে?
আম্মু: ফ্রেশ হতে এতো সময় লাগে?
মেঘ: আমাদের খাওয়া তো শেষ।
আমি: সমস্যা নেই আমি একা খেতে পারবো।
আম্মু: হ্যাঁ সেটা আমিও জানি এবার বল কি বলবি।
আমি: আম্মু খেতে দাও সারাদিন খাওয়া হয়নি তাছাড়া আমি খুব ক্লান্ত ঘুম পাচ্ছে, এসব নিয়ে সকালে কথা বলবো। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
আম্মু: তোর মতিগতি বুঝার সাধ্য কারো নেই। (আম্মু রুমের দিকে চলে গেলেন)
মেঘ: কি হলো আম্মুকে এসব বললে না কেন?
আমি: লোকটার কথায় যা বুঝতে পেরেছি লোকটা আমাদের আপন কেউ আর আম্মু ওকে চিনেন। যেহেতু লোকটা এমন করছে তারমানে ও আমাদের শত্রু। আম্মু এতোটা জার্নি করে এসেছেন এখন এসব বলে আম্মুকে টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না আম্মুর ঘুম প্রয়োজন।
মেঘ: ঘুম তো তোমারও প্রয়োজন কণা, একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছ এসব টেনশনে নিজের কি অবস্থা করেছ?
আমি: (মৃদু হাসলাম)

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই ফ্রেশ হয়ে আম্মুর রুমে আসলাম, এখন আম্মুকে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন কে এই সামাদ। কিন্তু আম্মু আর জোহা সবকিছু গুছগাছ করছে কেন?
আমি: আম্মু কি করছ?
আম্মু: জোহার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছি।
আমি: কেন?
আম্মু: আমি দেশে চলে এসেছি জোহা আর এখানে থাকবে কেন?
আমি: তারমানে তোমরা বাসায় চলে যাচ্ছ?
আম্মু: হ্যাঁ, মেয়ের শশুড় বাড়িতে থাকা যায় নাকি? তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই ডাকিনি সব গুছিয়ে নিয়ে তোকে ডাক দিতাম।
আমি: কিন্তু আম্মু তোমরা একা ওই বাসায়…
জোহা: আব্বু আসছেন তো আজ।
আম্মু: হ্যাঁ তোর চাচ্চু আসছে কিছুদিন আমাদের সাথে থাকবে।
আমি: ঠিক আছে চলো আমিও যাবো তোমাদের সাথে।
আমি: তুই?
আমি: বিকেলে চলে আসবো।
আমি: ঠিক আছে।

আম্মু আর জোহাকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসলাম সাথে মেঘও এসেছে। যদিও চাচ্চু আসছেন তারপরও খুব ভয় হচ্ছে আম্মুকে এই বাসায় রাখতে।
জোহা: আমি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।
আম্মু: ঠিক আছে।
আমি: আম্মু বসো এখানে তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আম্মু: বল কি কথা? (সোফায় বসতে বসতে বললেন আম্মু, আমিও বসলাম)
আমি: আম্মু যারা আব্বুকে খুন করেছিল তাদের আমি জেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার জন্য ওদের আবার ছেড়ে দিতে হয়েছে।
আম্মু: আমার জন্য…
আমি: যে সবকিছু করছে সে তোমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিল আমাকে তাই ছাড়তে হয়েছে।
আম্মু: এজন্যই তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে আসলি? কিন্তু লোকটা কে?
আমি: তোমাকে চিনে আম্মু তুমিও হয়তো চিনো, লোকটা তো বলছে আমাদের আপন কেউ।
আম্মু: আপন…
আমি: সামাদ নামে কাউকে চিনো আম্মু?
আম্মু: সামাদ? (আম্মু চমকে গিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন)
আমি: চিনো তুমি? উনার ছেলের নাম ইকবাল।
আম্মু: সামাদ, ইকবাল? হ্যাঁ চিনি তো।
আমি: কে উনি?
আম্মু: তোর মামা। (এবার আমার চমকে যাওয়ার পালা, এতো বড় হয়েছি কখনো শুনিনি আমার কোনো মামা আছে। সবসময় শুনে এসেছি আম্মু একা, আর কয়েক বছর আগে তো নানা নানু দুজনই মারা গেছেন)
আমি: আম্মু কখনো তো বলনি আমার কোনো মামা আছে, সবসময় তো বলেছ তুমি একা তোমার কোনো ভাইবোন নেই।
আম্মু: বলবো কিভাবে সামাদ তো… (কলিংবেল বেজে উঠলো, এই সময় কে আসলো)
আম্মু: আমি দেখছি।

আম্মু দরজা খুলতে গেলেন, কে এসেছে দেখার জন্য আমিও দরজার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আম্মু দরজা খুলে আচমকা পিছিয়ে আসলেন, একজন লোক এসেছে। আম্মু ভাইজান বলেই আচল দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন। দাঁড়িয়ে পড়লাম, তারমানে এই লোকই সামাদ মানে আমার মামা? কিন্তু কেন এসেছে এই লোক? আম্মুর কোনো ক্ষতি করবে নাতো…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২০

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

হসপিটালে কি ঘুম হয়? রাতে একদম ঘুম হয়নি। ইচ্ছেই হচ্ছে না অফিসে যেতে তাও যেতে হবে। ঝটপট একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখান থেকে অফিস তারপর রাতে সোজা বাসায়।
মেঘ: একা যাবে নাকি আমিও আসি।
রুহান: হ্যাঁ ভাইয়া আমি আছি এখানে তোমরা দুজন অফিসে চলে যাও। তাছাড়া বিকেলে তো পপিকে রিলিজ করে দিবে আমরা বাসায় চলে যাবো।
আমি: ঠিক আছে চলো।
মেঘকে নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম।

মেঘ: তুমি তো সকালে নাশতা করনি আমি কিছু নিয়ে আসছি তুমি বসো। (অফিসে এসেই মেঘ খাবার আনতে চলে গেল)
আসিফ: মেডাম আসবো?
আমি: হ্যাঁ আসুন।
আসিফ: এখন থেকে রোজ আসবেন তো? অফিসের কিন্তু এই কয়দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
আমি: বসুন।
আসিফ: হুম।
আমি: আমার এইসব অফিস কাজকর্ম একদম ভালো লাগে না তাছাড়া এসব তো আমি তেমন বুঝিও না তাই ভাবছি সবকিছুর দায়িত্ব মেঘকে বুঝিয়ে দিবো।
আসিফ: এই বয়সে এসব সামলানো একটু কঠিন তবে আমার মনে হয় মেঘ স্যার এর চেয়ে আপনি ভালো পারবেন।
মেঘ: আমার বদনাম করা হচ্ছে? (মেঘ খাবার নিয়ে চলে আসলো)
আসিফ: একদম না স্যার, মেডামকে শুধু বলছিলাম…
মেঘ: আমি বোকা তাইতো?
আসিফ: মেডাম স্যার কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন।
আমি: আরে না ও তো ফাজলামো করছে।
মেঘ: তবে আসিফ কিন্তু মিথ্যে বলেনি, আমার চেয়ে এই পিচ্ছি মেয়ের মাথায় কিন্তু অনেক বুদ্ধি। এই পিচ্ছি মেয়ে যেভাবে সব বিপদ কাটিয়ে সবকিছু সামলিয়ে নিচ্ছে আমার পক্ষে তো তা সম্ভবই হতো না।
আসিফ: আমিতো এটাই বলতে চাইছিলাম। কে না কে আপনাকে ফোন করে হুমকি দিলো আর আপনি ভয় পেয়ে মেডামকে কিছু জানালেন না আর মেডাম দেখুন এসেই মেয়েটিকে পুলিশে দিয়ে দিলেন। (মেঘ আর আসিফ কথা বলছে আমি ভাবছি মেয়েটিকে তো জেলে দিলাম কিন্তু মেঘকে ভয় দেখালো কে? আর আম্মুকে মেরে ফেলার ভয় দেখালো কেন আম্মু তো কানাডায়। তবে কি কেউ কানাডায় আম্মুকে ফলো করছে আমাকে জব্দ করার জন্য? যদি তাই হয় তাহলে তো এটা শায়লারই কাজ)
মেঘ: কি ভাবছ? (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, তাকিয়ে দেখি আসিফ চলে গেছে আর মেঘ দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
আমি: দরজা লাগালে কেন?
মেঘ: তোমার তো আবার লজ্জা বেশি যদি লজ্জা পাও।
আমি: লজ্জা পাবো মানে?
মেঘ: ভয় নেই খাইয়ে দেবো মাত্র। (ভেংচি দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম)
মেঘ: খেয়ে নাও।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
আমি: দেখছি কতোটা ভালোবাস।
মেঘ: একটা মাত্র বউ ভালো না বাসলে হবে? (মৃদু হেসে মেঘের হাত থেকে খাবার খেয়ে নিলাম)

মেঘ আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে আর আমি ল্যাপটপে কাজ করছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, জোহা ফোন করেছে।
আমি: হ্যাঁ জোহা বল।
জোহা: তোমার মেয়ে কথা বলবে।
আমি: দেতো।
তোহা: নতুন আম্মু তুমি কবে আসবে?
আমি: আর কিছুক্ষণ মামুনি চলে আসবো।
তোহা: তুমি খুব পঁচা শুধু আমার থেকে দূরে দূরে থাকো।
আমি: এখনি আসছি মামুনি।
তোহা: সত্যি?
আমি: হ্যাঁ সত্যি। (ফোন রাখতেই দেখি মেঘ আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি?
মেঘ: এখনি চলে যাবে?
আমি: সবকিছুর আগে আমার মেয়ে বুঝেছ? আমার মেয়ে বলেছে আমি নাকি পঁচা ওর থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকি তাই চলে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ শুনো এসবের দায়িত্ব এখন তুমি নাও আর পারবো না এতোদিক সামলাতে।
মেঘ: ওকে মহারাণী।
আমি: আসছি।
মেঘ: সাবধানে যেও।

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই জোহা দরজা খুলে দিলো সাথে তোহা। আসার সময় চকলেট আর বেলুন নিয়ে এসেছিলাম তোহা এসব দেখেই হেসে দিলো, এই হাসিটা যেন সব কষ্ট মুছে দেয়।
তোহা: তুমি তোমার কথা রেখেছ উম্মম্মম্মম্মম্মম্মমাহ। (জোহার কোল থেকেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলো)
আমি: পাগলী মেয়ে।
মা: অন্যকারো মেয়েকে কেউ এতোটা আপন করে নিতে পারে আগে কখনো দেখিনি।
আমি: অন্যকারো মেয়ে মানে? কে অন্যকারো মেয়ে?
মা: সরি সরি ভুল হয়ে গেছে তোহা তো তোমারই মেয়ে।
আমি: আপনারা কেন আমাকে তোহার মা ভাবতে পারেন না?
মা: সেটা বলতে চাইনি এখন যা যুগ এমন ভালো কেউ বাসে না।
আমি: এই তোহার জন্যই তো আমি মেঘকে পেয়েছি আপনাদের সবাইকে পেয়েছি এমন একটা সুন্দর পরিবার পেয়েছি।
মা: সুন্দর পরিবার আর থাকলো কোথায়? তোমার শশুড় যখন গ্রাম থেকে ফিরে এসে এই অবস্থা দেখবে জানিনা মানুষটা এই আঘাত সহ্য করতে পারবে কিনা।।আমি: আমার কি করার ছিল মা, চাঁচি এতো অন্যায় করেছেন যে উনাকে শাস্তি না দিলে উনি প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায় আরো বেশি করতেন।
দাদী: যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, এমন মানুষ বাড়িতে না জেলে থাকাই মানায়। কি কান্ডটাই না করল।
মা: বৌমা রুহান আর পপি কবে ফিরবে?
আমি: বিকেল তো হয়ে এলো কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।
মা: ঠিক আছে।
জোহার থেকে তোহাকে এনে রুমে চলে আসলাম।

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তোহা বিছানায় বসে বেলুন আর চকলেট নিয়ে খেলছে। খুব ক্লান্ত লাগছে তাই তোহার এক পাশে শুয়ে পড়লাম।

মেঘের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, কবে যে চোখ দুটু বুজে এসেছিল বুঝতেই পারিনি। পাশ ফিরে তাকালাম তোহা এখানে নেই, মেঘ সোফায় বসে জুতো খুলছে।
মেঘ: তোহা আম্মুর কাছে, এই অসময়ে ঘুমাচ্ছ কেন?
আমি: বুঝতে পারিনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
মেঘ: তাই? (মেঘ টাই খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
মেঘ: এতো ঝর ভয়ে যাচ্ছে যে তোমাকে একটু ভালোবাসাও হয় না। (মেঘ আমার উপর শুয়ে আমার নাকে ওর নাক ঘষে দিলো)
আমি: কি করছ দরজা খুলা।
মেঘ: সবাই পপির কাছে কেউ আসবে না এখন।
আমি: সরো আমি ফ্রেশ হবো।
মেঘ: উঁহু! (মেঘ আমার কপালে চুমু খেলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট দুটু আলতো করে ছুয়ালো)
আমি: মেঘ কি করছ সরো বলছি। (কোনো কথা না বলে আমার গলায় ওর নাক ঘষে যাচ্ছে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওকে)
মেঘ: এইটা কি হলো?
আমি: সঠিক কাজ হয়েছে।
মেঘ: বুঝাবো পরে। (মেঘকে ভেংচি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

পপি: মা আর কেঁদো না আমি ঠিক আছি। (পপির রুমে সবাই ভীড় জমিয়েছে, মা পাশে বসে কাঁদছেন। বারান্দার দরজা খুলা দেখে ওদিকে চোখ পড়লো রুহান দাঁড়িয়ে আছে, ওর দিকে ওগিয়ে গেলাম)
আমি: রুহান।
রুহান: হুম।
আমি: কাঁদছ তুমি?
রুহান: নাতো। (রুহান চোখের পানি মুছে নিয়ে বাইরে রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারছি রুহান চাঁচির জন্য কাঁদছে। বাবা নেই ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে বড় হয়েছে এখন মা’কে ছাড়া থাকতে কষ্ট তো হবেই)
আমি: আমাকে ক্ষমা করে দিও এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। তুমি চাইলে আগামীকাল চাঁচির সাথে দেখা করে আসতে পারো। কথা দিচ্ছি উনি যদি নিজেকে এতটুকু শোধরে নেন তাহলে আমি উনাকে ছাড়িয়ে আনবো।
রুহান: হুম। (এই মুহূর্তে রুহানকে শান্তনা না দেওয়াটাই ভালো একা থাকুক কিছুটা সময়। চলে আসলাম ওদের রুম থেকে)

যেভাবেই হউক ইকবালকে ধরতে হবে নাহলে কোনো কিছুই সম্ভব হবে না। একবার ইকবালকে ধরতে পারলে আমার সব শত্রু বেরিয়ে আসতো কিন্তু ইকবালকে পাবো কোথায়?
মেঘ: আরে এভাবে আনমনা হয়ে কেউ হাটে? এখনি পরে যেতে তো। (এসব ভাবলে মাথা ঠিক থাকে না, হুচট খেয়ে পরে যাচ্ছিলাম মেঘ ধরে ফেললো)
আমি: ধরার জন্য তুমি আছতো।
মেঘ: সবসময় কি আমি থাকবো মেডাম? (মেঘ আমার কোমরে ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল)
আমি: আজ তোমার হয়েছে কি বলতো এতো রোমান্স আসছে কোথা থেকে?
মেঘ: রোমান্টিকতা প্রতিদিন থাকে শুধু রোমান্স করার মতো সুযোগ আর সময় হয় না।
দাদী: যেখানে সেখানে রোমান্স ভালো না বাসায় ছোটরা আছে। (দাদীর কথায় দুজন আলাদা হয়ে গেলাম, দাদী চোখে হাত দিয়ে হাসছেন)
মেঘ: বুড়ী তুমি বুঝি এভাবে প্রেম করনি? (মেঘ যে কি.. দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।)

গভীর রাত মেঘ আর তোহা ঘুমাচ্ছে আমি রুমের মধ্যে পায়চারী করছি, ঘুম কিছুতেই আসছে না। শায়লাকে পুলিশে না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না। যেভাবেই হউক ইকবালকে ধরে শায়লার কাছে পৌঁছতে হবে কিন্তু কিভাবে? আচ্ছা শায়লাকে এরেস্ট করালে কি ইকবালকে ধরা যাবে? হ্যাঁ হতেই তো পারে শায়লাকে এরেস্ট করলে ইকবাল বেরিয়ে আসবে। এইটা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই, যা করার আগামীকালই করতে হবে।
মেঘ: কণা তুমি ঘুমাওনি?
আমি: হু ঘুম আসছে না।
মেঘ: এদিকে এসো। (বিছানায় এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম, মেঘ আমার চুলে একটা হাত রাখলো)
মেঘ: কি হয়েছে এতো রাতে না ঘুমিয়ে পায়চারী করছিলে কেন?
আমি: আমার ভালো লাগছে না মেঘ, এতোদিন হয়ে গেল অথচ আব্বুর খুনিদের এরেস্ট করাতে পারলাম না।
মেঘ: কেঁদো না প্লিজ তুমি তো চেষ্টা করছ।
আমি: আর চেষ্টা করলে হবে না শায়লাকে আমি প্রমাণ ছাড়াই এরেস্ট করাবো তারপর পুলিশ ওর থেকে সব বের করবে।
আমি: শায়লাকে পুলিশ জিজ্ঞেস করলে হয়তো ইকবালের কথা বলে দিতে পারে।
আমি: হুম তাই করতে হবে।
মেঘ: সকালে ভেবো এখন ঘুমাও প্লিজ।
আমি: হুম।

আমি: আঙ্গেল আমি শায়লাকে জেলের অন্ধকার রুমে দেখতে চাই।
আঙ্গেল: কিন্তু কণা মা…
আমি: এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে বলে এরেস্ট করুন তারপর কয়েকটা দিলে সব সত্যি গড়গড় করে বলে দিবে।
আঙ্গেল: ঠিক আছে আমি দেখছি। (ফোন রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, এবার শায়লাকে ধরতে পারলে শান্তি পাবো।)
মেঘ: কণা কি শুরু করেছ সকাল হতে না হতেই…
আমি: প্রমাণ জোগাড় করার তো কম চেষ্টা করিনি এখন এটাই রাস্তা।
মেঘ: যা খুশি করো।
আমি: এতো রেগে যাচ্ছ কেন নাকি শায়লাকে অন্ধকার রুমে দেখতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে তোমা…
মেঘ: এই শুনো আমি তোমাকে ভালোবাসি শায়লা মরলো না বাঁচলো আমি জানতে চাই না। (মেঘ দুহাতে জোড়ে আমার মাথা চেপে ধরলো)
আমি: তাহলে এতো রেগে যাচ্ছ কেন?
মেঘ: তোমাকে হারানোর ভয়ে বুঝেছ? এসবের মধ্যে যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।
আমি: আমার কি হবে কিছু হ…
মেঘ: যদি হয়ে যায় তখন? (মেঘ আমাকে টেনে নিয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, কি বলবো এখন ওকে? ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পাওয়াটা যে স্বাভাবিক)
মেঘ: যা করো সাবধানে করো আমার কণার যেন কোনো ক্ষতি না হয়। (মেঘ আচমকা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেল)

সবার সাথে বসে নাশতা করছি হঠাৎ রুম থেকে ফোনের রিংটোন ভেসে আসলো, পুলিশ আঙ্গেল ফোন দিয়েছেন মনে হয়। তাড়াতাড়ি উঠে রুমে চলে আসলাম।
আমি: আঙ্গেল…
আঙ্গেল: শায়লা ইকবাল দুজনই এরেস্ট হয়েছে।
আমি: সত্যি?
আঙ্গেল: হ্যাঁ চাইলে তুমি একবার আসতে পারো।
আমি: আসছি আমি। (ফোন রেখে পিছন ফিরতে দেখি মেঘ দাঁড়িয়ে আছে)
মেঘ: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: পুলিশ ষ্টেশন।
মেঘ: একা?
আমি: হ্যাঁ তোমার তো অফিস আছে।
মেঘ: আমিও যাবো তোমার সাথে চলো।
আমি: অফিস…
মেঘ: তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না আমি। (কবে যে তুমি আমাকে এতো ভালোবেসে ফেলেছ বুঝতেই পারিনি)
মেঘ: কি ভাবছ?
আমি: কিছুনা চলো।

শায়লাকে জেলের ভিতরে দেখে নিজের ভিতরে শান্তি লাগছে। আমাদের দেখেই শায়লা এগিয়ে আসলো।
শায়লা: খুব শান্তি লাগছে তাই না?
আমি: প্রচুর শান্তি।
শায়লা: আমাদের কেন এরেস্ট করালি?
আমি: মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না?
শায়লা: প্রমান জোগাড় করেছিস এরেস্ট যে করালি?
আমি: ভেবেছিলাম প্রমাণ জোগাড় করে তারপর তোদের এরেস্ট করাবো কিন্তু তুই তো তার সুযোগ রাখলি না তাই এখন তোদের পিঠিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে প্রমাণ জোগাড় করবো।
শায়লা: তোকে…
ইকবাল: শায়লা কেন ওদের সাথে বকবক করছ আর তো কিছুক্ষণ তারপর আমরা বাসায় চলে যাবো। (ইকবাল সামনে এসেই জোড়ে হেসে উঠলো)
মেঘ: মানে কি?
ইকবাল: বাসায় চলে যাও এতো খুশি হওয়ার কিছু হয়নি। (ওদের কথার কিছুই বুঝতে পারছি না এতোটা কনফিডেন্স নিয়ে কিভাবে ওরা বলছে বাসায় চলে যাবে)
ইকবাল: কণা তোমাকে বিয়ে করার অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম কিন্তু আফসোস হুট করে মেঘের সাথে তোমার বিয়েটা হয়ে গেল।
মেঘ: কণা তুমি ওকে চিনতে?
আমি: নাতো এর আগে কখনো দেখিনি।
ইকবাল: কিন্তু আমি তোমাকে দেখেছি কারণ তুমি যে আমাদের আপন কেউ একজন।
আমি: মানে?
ইকবাল: এতো মানে খুঁজ না বাসায় চলে যাও আর কিছুক্ষণ পর ফোন করে তোমার পুলিশ আঙ্গেল কে বলো আমাদের ছেড়ে দিতে।
আমি: এতো কাঠখড় পুড়িয়ে এরেস্ট করিয়েছি কি ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
ইকবাল: ছাড়বে ছাড়বে কণা সোনা এখন বাসায় চলে যাও।
মেঘ: কণা ওদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে চলো তো এখান থেকে।
আমি: হুম চলো।

ইকবাল আমাকে ওর আপন কেউ কেন বললো? আমি তো ওকে এর আগে কখনো দেখিনি অথচ ও আমাকে বিয়ে করার প্ল্যান করেছিল।
মেঘ: কণা ওই ইকবাল কিনা কি পাগলের মতো বকবক করলো আর তুমি এসব নিয়ে ভাবতে বসে গেলে। বাসায় এসে তো ফ্রেশও হওনি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
আমি: ইকবাল আমার কে হয়? আমাকে আপন কেউ বললো কেন?
মেঘ: আরে ও হয়তো তোমাকে চিন্তায় ফালানোর জন্য মিথ্যে বলেছে।
আমি: না আমি এই নামটা আগে কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না।
মেঘ: দুনিয়ায় কি ইকবাল নামে শুধুমাত্র একটি মানুষই আছে আর কারো নাম ইকবাল হতে পারে না?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: ফ্রেশ হয়ে এসো।

মেঘ: কণা তাড়াতাড়ি এসো। (ফ্রেশ হতে এসেছিলাম মেঘের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম)
আমি: কি?
মেঘ: ভিডিওটা দেখো। (মেঘের হাত থেকে আমার ফোন এনে ভিডিও দেখতে শুরু করলাম। আম্মু আর চাঁচিআম্মা শপিংমলে, কে যেন আম্মুদের ফলো করছে আর সেটা ভিডিও করে আমার হোয়াটস এ্যাপে দিয়েছে)
আমি: এইটা কোথায় পেলে?
মেঘ: কে যেন ফোন করে বললো হোয়াটস এ্যাপ অন করতে তারপর অন করে দেখি এই ভিডিও। (মেঘ কথা শেষ করার সাথে সাথে ফোন বেজে উঠলো, অচেনা নাম্বার)
–কণা মামুনি ভিডিওটা দেখেছ?
আমি: আপনি…
–তুমি চিনবে না তবে তোমার আম্মু ভালো করেই চিনে।
আমি: আম্মু ক…
–বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমার ছেলে আর বৌমাকে ছেড়ে দাও নাহলে তোমার আম্মু…
আমি: ওহ আপনি দুই বদমাইশ এর…
–বললাম তো এতো কথা ভালো লাগেনা। দেখো তোমার আম্মুকে মারতে আমার অনেক কষ্ট হবে আপনজনদের মারতে যেমনটা হয় আরকি কিন্তু আমার ছেলের জন্য তো এইটুকু কষ্ট সহ্য করতেই হবে। ভেবে দেখো কি করবে।

লোকটা ফোন রেখে দিলো দফ করে বিছানায় বসে পড়লাম। এবার কি করবো? আম্মুর জন্য ওদের ছেড়ে দিতে হবে? কিন্তু পরে যদি আর ওদের শাস্তি দিতে না পারি? কিন্তু আম্মুকেও তো বাঁচাতে হবে…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৯

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

মেঘের বুকে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি ও আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কতো ঝর বয়ে যাচ্ছে আমাদের উপর দিয়ে শান্তিতে থাকার কোনো উপায় নেই। শায়লাকে পুলিশে দিতে পারলে হাফ ছেড়ে বাঁচতাম কিন্তু কোনো প্রমাণই তো পাচ্ছি না। প্রমাণ পাবোই বা কি করে শায়লা তো কোনো প্রমাণ রেখে কাজটা করেনি। এখন একমাত্র রাস্তা শায়লার হাজবেন্ডকে ধরে পুলিশে দিতে হবে আর ওর মুখ থেকেই সব সত্যি বের করতে হবে। মেঘের ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে ফোন আসাতে বেশ অবাক হলাম। কে ফোন দিলো? মেঘের বুকের উপর তুথুনি রেখে ওর দিকে তাকালাম, মেঘ ফোন রিসিভ করলো।
মেঘ: হ্যালো।
শায়লা: মেঘ কণা কোথায়? (শায়লা ফোন করেছে দেখে মেঘ সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো)
শায়লা: কি হলো কথা বলছ না কেন? কণা কোথায়?
মেঘ: কণাকে কি প্রয়োজন?
শায়লা: ওর ফোনটা ওর বোনের কাছে হসপিটালে রেখে এসেছে ওর কাছে তোমার ফোনটা দাও আমি কথা বলবো।
মেঘ: কণা এখন ব্যস্ত আছে কথা বলতে পারবে না।
শায়লা: কণা কোথায় সেটা বলো।
মেঘ: কোথায় আবার আমার বুকে ঘুমুচ্ছে।
শায়লা: উউউউহহহহ।
মেঘ: চিৎকার করো না ফোন রাখো।
শায়লা: কণাকে বলে দিও ও আমার লোককে পুলিশে দিয়ে ভালো করেনি, এর ফল ওকে ভোগ করতেই হবে। (শায়লা ফোন রেখে দিতেই মেঘ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো)
মেঘ: কাকে পুলিশে দিয়েছ?
আমি: আসিফ এর বদলে যে মেয়েটি জয়েন করার মিথ্যে অভিনয় করেছিল।
মেঘ: তুমি জানতে এই কথা?
কণা: উঁহু সেদিন জেনেছি। কিন্তু তুমি তো জানতে আমাকে বলনি কেন?
মেঘ: কণা আমরা সবাই শায়লার জালে আটকা পরে আছি।
আমি: মানে?
মেঘ: আমি এসব বুঝতে পেরে তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কে যেন ফোন করে আমাকে বলে তোমাকে কিছু জানালে তোমার আম্মুকে মেরে ফেলবে…
আমি: কি?
মেঘ: হ্যাঁ আর আমি নিশ্চিত এই লোকের কথামতো শায়লা সব করছে।
আমি: শায়লার হাজবেন্ড নয়তো?
মেঘ: হতে পারে।
আমি: কিন্তু আম্মুকে মারবে কিভাবে আম্মু তো কানাডায়?
মেঘ: তাতো জানিনা তবে লোকটার কথায় আমি সত্যি ভয় পেয়েছিলাম। টাকা নিয়ে গেলেই কি আম্মু ভালো থাকলেই তো হলো তাই তোমাকে বলিনি।
আমি: আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেঘ: এসব নিয়ে পরে ভেবো এখন একটু ঘুমাও তো।
আমি: হুম।
মেঘের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ঘুমিয়ে রইলাম।

সকালে মেঘের ডাকেই ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি মেঘ ওর ঠোঁট দুটু আমার ঠোঁটের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে আসছে। একটা আঙ্গুল ওর ঠোঁটে রাখতেই যেন ওর ঘোর কেটে গেল।
আমি: কি হচ্ছে?
মেঘ: প্লিজ!
আমি: উঁহু চলো হসপিটালে যেতে হবে।
মেঘ: যাবো তো প্লিজ একবার মিষ্টি দুটু খেতে দাও।
আমি: মেঘ না প্লিজ! (মেঘ মুখ গোমড়া করে বারান্দায় চলে গেল। আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম)

ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় আসলাম মেঘ রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর বাইরে তাকিয়ে আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে।
আমি: এতো কি ভাবছ? (মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখলাম। মেঘ আমার দুহাতের উপর ওর দুহাত রাখলো)
মেঘ: ভাবছি তোমার সুন্দর জীবনটা আমি কিভাবে একটু একটু করে নষ্ট করে দিচ্ছি।
আমি: মানে? (মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওকে আমার দিকে ফিরালাম)
মেঘ: বিয়েটা হয়তো একটা এক্সিডেন্ট ছিল কিন্তু তারপর থেকে তো তোমার জীবনে একটার পর একটা ঝর বয়েই যাচ্ছে আর এইসব হচ্ছে আমার জন্য। শায়লা তোমা…
আমি: এসব শায়লা করছে মেঘ, এতে তোমার দোষ কোথায়?
মেঘ: শায়লা আমার আগের স্ত্রী বলেই তো এমন করছে নাহলে তো ও তোমাকে চিনতো না।
আমি: তাই বলে তোমার দোষ হয়ে গেল?
মেঘ: হ্যাঁ শায়লা…
আমি: এসব বলছ আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাই না?
মেঘ: আরে পাগলী কাঁদছ কেন আর আমি তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবো কেন?
আমি: হসপিটালে যাচ্ছি। (হনহন করে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে)

গাড়িতে উঠে বসতেই মেঘ দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠলো। কিছুনা বলে চুপচাপ একপাশে এসে বসে পড়লাম।
মেঘ: আমার পাশে এসে বসো নাহলে গাড়ি চলবে না।
আমি: তোহা ঘুম থেকে জেগে আমাকে খুঁজবে তাড়াতাড়ি চলো।
মেঘ: বললাম তো আমার পাশে এসে না বসলে গাড়ি চলবে না।
আমি: লাগবে না তোমার যাওয়া সরো আমি ড্রাইভ করতে জানি। (মেঘকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলাম মেঘ আমাকে টেনে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো তারপর মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো)
মেঘ: সবসময় এতো রেগে যাও কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আচ্ছা বাবা সরি আর কখনো এসব বলবো না।
আমি: মনে থাকে যেন।
মেঘ: থাকবে, এবার বলো শায়লার ব্যবস্থা কি করেছ? ওর জন্য তো আমরা শান্তিতে থাকতে পারছি না।
আমি: শায়লার হাজবেন্ডকে পুলিশে দিবো আর পুলিশ ওর মুখ থেকে সব সত্যি বের করবে তারপর শায়লাকে এরেস্ট করাবো।
মেঘ: শায়লার হাজবেন্ড?
আমি: হিহিহি..
মেঘ: হাসছ কেন?
আমি: হাসবো না শায়লা তো তোমাকে বলেছিল ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে আর তুমি সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছিলে।
মেঘ: আমি সত্যিই অনেক বোকা।
আমি: জ্বী এবার একটু তাড়াতাড়ি চলুন আমার মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘ: ওকে।

তোহা: নতুন আম্মু কোথায় গিয়েছিলে তুমি? (দরজায় আসতেই তোহা প্রশ্ন করলো, এবার মেয়েকে কি বলে বুঝাবো)
আমি: বাসায় মামুনি।
তোহা: তুমি খুব পঁচা আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলে।
আমি: এইতো চলে এসেছি।
জোহা: মামুনি তোমার আম্মু তো তোমার আব্বুর রাগ ভাঙাতে গিয়েছিল হিহিহি।
আমি: এই চুপ কর।
জোহা: সত্যি বলেছি চুপ করবো কেন?
আমি: রুহান তোমরা বাসায় চলে যাও আমি আর মেঘ আছি এখানে।
রুহান: ডক্টর বললো বিকেলে তোহাকে রিলিজ করে দিবে তখন নাহয় সবাই একসাথে বাসায় যাবো।
জোহা: হ্যাঁ এটাই ভালো হবে আর ততক্ষণে আপু তুমি তোমার কাজটা সেরে পেলো।
আমি: কি কাজ?
জোহা: শায়লার হাজবেন্ড এর ঠিকানা এখন আমাদের হাতে।
আমি: তাহলে তোমরা এখানে থাকো আমি আর মেঘ আসছি।
জোহা: ঠিক আছে।
রুহান: আমি আসবো?
মেঘ: না তুই এদিকে থাক।
রুহান: ঠিক আছে।

চাঁচির পাঠানো ঠিকানায় পুলিশ নিয়ে মেঘ আর আমি আসলাম কিন্তু বাসায় তো তালা দেওয়া।
মেঘ: কণা এই ঠিকানা ভুল নয়তো?
আমি: ভুল হবে কিভাবে? আচ্ছা তালাটা ভেঙে ফেলো ভিতরে গিয়ে দেখি। (পুলিশ তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো কিন্তু পুরো বাসা খালি। আশ্চর্য চাঁচি কি আমাকে ভুল ঠিকানা দিলো)
মেঘ: এইটা ভুল ঠিকানা আমি নিশ্চিত।
আমি: নিজের ছেলের এই অবস্থা দেখে ভুল ঠিকানা দেওয়ার সাহস চাঁচির হবে না। তুমি এখানে থাকো আমি আসছি।
মেঘ: উপরে যাচ্ছ কেন?

পুরো বাসা ঘুরে দেখতে দেখতে বেড রুমে এসে ঢুকলাম, যা খুঁজছি তা বেড রুমে পাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি।
মেঘ: কি খুঁজছ বলতো?
আমি: ছবি।
মেঘ: কার?
আমি: এইতো পেয়ে গেছি।
মেঘ: এইটা তো শায়লা…
আমি: হ্যাঁ পাশে এই লোক তারমানে এইটাই শায়লার হাজবেন্ড।
মেঘ: হুম।
আমি: চলো।

আমি: এই লোককে যেখানে পাবেন এরেস্ট করবেন।
পুলিশ: কিন্তু…
আমি: চাচ্চুকে ফোন করতে হবে নাকি?
পুলিশ: না না আমরা ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
আমি: ঠিক আছে।

আবার হসপিটালে ফিরে আসলাম। এভাবে ব্যর্থ হবো ভাবতেও পারিনি। কিন্তু একটা জিনিস আমার মাথাতে ঢুকছে না রুহানের এই অবস্থা দেখেও চাঁচি ভুল ঠিকানা দিলো নাকি? যদি সঠিক ঠিকানা দিয়ে তাকে তবে কি শায়লা কোনো চালাকি করেছে? শায়লার কথা ভাবতে ভাবতেই শায়লা ফোন দিলো।
আমি: হ্যালো।
শায়লা: আমাদের ধরা এতো সহজ না।
আমি: মানে?
শায়লা: ইকবালকে এরেস্ট করাতে গিয়েছিলি পেরেছিস?
আমি: তারমানে আমার ধারণা ঠিক এইসব তোর চালাকি।
শায়লা: হ্যাঁ তুই বাসা থেকে বেরুনোর পর পরই আমি ইকবালকে ফোন করে ওই বাসা থেকে সরে যেতে বলি তা…
আমি: এসব খবর চাঁচি দিচ্ছে তাই না?
শায়লা: তুই খুব চালাক জানিস তো…
আমি: তোর পাখনা আমি ভাঙবো চাঁচিকে পুলিশে দিয়ে, অনেক বার সাবধান করেছি এই মহিলাকে আর নয়।
শায়লা: ইকবালকে খুঁজার চেষ্টা করিস না বার বার ব্যর্থ হবি সফল হতে পারবি না কখনো।
ফোনটা কেটে দিলাম, চাঁচিকে তো আজ আমি শাস্তি দিবো অনেক বেড়েছে এই মহিলা।

আমি: রুহান আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার আম্মুকে পুলিশে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে। (তোহার পাশে বসতে বসতে কথাটা বললাম সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
পপি: ভাবি এসব তুমি কি বলছ? হ্যাঁ মানছি উনি ভুল করেছেন তাই বলে নিজের মানুষকে জেলে…
আমি: উনার ভুলটা এখন অপরাধে রূপ নিয়েছে পপি তাই উনার শাস্তি প্রয়োজন।
রুহান: নতুন করে আবার কিছু করেছেন?
আমি: হ্যাঁ আমি আর মেঘ বাসা থেকে বেরুনো মাত্রই উনি শায়লাকে ফোন করে সব বলে দিয়েছেন। আর শায়লা ওর হাজবেন্ডকে ওই বাসা থেকে সরিয়ে ফেলেছে নাহলে আজ নিশ্চিত ইকবালকে ধরা যেতো। শুধুমাত্র চাঁচির কারণে আমি আব্বুর খুনিদের শাস্তি দিতে পারছি না।
রুহান: যদিও ছেলে হয়ে কথাটা বলতে কষ্ট হচ্ছে তাও বলছি আম্মুকে তুমি পুলিশে দিয়ে দাও যদি নিজেকে একটু শুধরে নিতে পারেন তখন নাহয়…
আমি: তখন আমি নিজেই উনাকে সসম্মানে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবো রুহান।
রুহান: (নিশ্চুপ)
জোহা: তোহাকে নিয়ে আগে বাসায় যাই তারপর চাঁচির ব্যবস্থা করো।
আমি: হুম।

বিকেলে তোহাকে রিলিজ করে দিলো, সবাই তোহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আসার পথে পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছি কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো চলে আসবেন।
মা: তোরা সবাই চলে এসেছিস?
পপি: মা চাঁচি কোথায়?
মা: রুমেই আছে কেন কিছু হয়েছে? (সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। রুহান চুপচাপ সোফায় বসে পড়লো। পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন দেওয়ার পর থেকে মেঘ চুপচাপ হয়ে গেছে কোনো কথা বলছে না আমার সাথে)
আমি: জোহা তোহাকে নিয়ে তুই রুমে যা।
জোহা: ঠিক আছে আপু।
মেঘ: কণা বলছিলাম…
চাঁচি: রুহান বাবা তুই ঠিক আছিস তো? (চাঁচি দৌড়ে এসে রুহানকে জড়িয়ে ধরলেন)
রুহান: ছাড়ো আমাকে।
চাঁচি: এই বদমাইশ মেয়ে তোকে আটকে রেখেছিল তোর কোনো ক্ষতি করেনি তো? তুই আসলি কিভাবে?
রুহান: আমার সাথে তো পপিকেও আটকে রেখেছিল আম্মু কই পপিকে তো কিছুই জিজ্ঞেস করলে না।
চাঁচি: আগে আমার ছেলে বুঝেছিস?
দাদী: কিরে কি হয়েছে কে কাকে আটকে রেখেছিল?
চাঁচি: কে আবার তোমার আদরের নাতবৌ আমার ছেলেকে আটকে রেখেছিল।
আমি: দাদী চাঁচিকে একবার জিজ্ঞেস করুন তো এসব আমি কেন করেছিলাম। (কলিংবেল বেজে উঠলো, দরজা খুলতে আমিই আসলাম)

দরজা খুলে পুলিশ আঙ্গেলকে দেখতে পেলাম। আঙ্গেল ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে চারদিকে চোখ বুলালেন।
আঙ্গেল: কণা মা কেমন আছ?
আমি: এইতো ভালো।
চাঁচি: বাসায় পুলিশ কেন? (ভয়ে আতকে উঠলেন চাঁচি)
রুহান: তোমার শাস্তি প্রয়োজন আম্মু অনেক পাপ করেছ।
চাঁচি: ওহ ওই বজ্জাত মেয়ের সাথে তুই যোগ হয়েছিস? তাহলে তো আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। (কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই চাঁচি টেবিল থেকে ফল কাটার চাকুটা হাতে নিয়ে পপির গলায় ধরে ফেললেন)
আমি: আরে চাঁচি কি করছেন?
মা: কি করছ পাগল হয়ে গেছ আমার মেয়েকে ছাড়ো।
চাঁচি: জেলে যখন যেতেই হবে আমার শত্রুর মেয়েকে শেষ করেই যাবো।
রুহান: আম্মু পপি শুধু তোমার শত্রুর মেয়ে না আমার স্ত্রী ছাড়ো বলছি ওকে।
চাঁচি: ছাড়বো আমাকে যেতে দাও তাহলে।
মেঘ: কণা আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি চাঁচিকে যেতে দাও আমার বোনকে বাঁচাও।
দাদী: অনেক্ষণ ধরে তোমার বদমাইশি দেখছি ছোট বৌমা ছাড়ো বলছি পপিকে।
চাঁচি: বললাম তো আমাকে যেতে দাও…
আঙ্গেল: আপনার মতো খারাপ মানুষকে সামলানোর জন্যই তো আমরা। (পুলিশ আঙ্গেল চাঁচির হাত ধরে ফেললেন, চাঁচি ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে পপির হাতে চাকু লাগিয়ে দিলেন। পপির হাতের শিরা কেটে গেছে হয়তো, ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে ওর হাত থেকে)
রুহান: পপি…
মেঘ: বলেছিলাম তোমাকে চাঁচিকে ছেড়ে দাও শুননি, আমার বোনের কিছু হলে কিন্তু… (মেঘ আমাকে শাসিয়ে পপির কাছে চলে গেল)
আঙ্গেল: আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাও ভয় নেই সব ঠিক হয়ে যাবে। (আঙ্গেল চলে যেতেই পপির কাছে আসলাম এখনো ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে)
মা: ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চল।

পপিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি। আমার খুব ভয় হচ্ছে যদি পপির কিছু হয় আমাকে মেঘ কখনো ক্ষমা করবে না। কিন্তু আমারই বা কি করার ছিল চাঁচি এতো নিচে নেমে যাবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।

সবাই কাঁদছে আমি একা একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি এমনটা হবে কল্পনাও করতে পারিনি।
রুহান: ডক্টর আমার পপি.. (হঠাৎ রুহানের কথা শুনে পিছনে তাকালাম ডক্টর বেরিয়ে এসেছে)
ডক্টর: চিন্তার কোনো কারণ নেই.. (ডক্টর এর কথা শেষ হবার আগেই রুহান দৌড়ে কেবিনের ভিতর ঢুকে গেল। মেঘ দরজা থেকে পপিকে এক নজর দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসলো)
মেঘ: কণা সরি আসলে তখন মাথা ঠিক ছিল না তাই উল্টাপাল্টা কত কিছু বলে ফেলেছি তোমাকে।
আমি: এমন পরিস্থিতিতে কারো মাথা ঠিক থাকে না মেঘ। বিশ্বাস করো আমি ভাবতে পারিনি চাঁচি এতো নিচে নেমে যাবেন আর এমন জঘন্য কাজ করবেন।
মেঘ: চাঁচি আমাদের এতো ঘৃণা করেন আর আমরা কিনা বুঝতেই পারিনি।
আমি: মেঘ তুমি কিন্তু এখনো আমাকে বলনি তুমি চাঁচি আর রুহানের কাছে কিসের ঋণী।
মেঘ: ছোটবেলায় খেলতে খেলতে বাসার বাইরে রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না কিন্তু সেদিনের সেই স্মৃতি আজো মনে পড়ে আমার। মাঝ রাস্তায় হাটছিলাম সামন দিক থেকে গাড়ি আর পিছনে চাচ্চু। চাচ্চু বারবার বলছিলেন সরে যেতে কিন্তু ছোট ছিলাম তো চাচ্চু বুঝতে পেরেছিলেন সরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আর তাই চাচ্চু দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন আর নিজে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যান… (মেঘ হাউমাউ করে কাঁদছে কি বলবো ওকে বুঝতে পারছি না)
মেঘ: এই দৃশ্য মাঝেমাঝে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে বিশ্বাস করো কণা তখন আমার গা শিউরে উঠে। সেদিন চাচ্চু মারা যান, রুহান তখন খুব ছোট। আব্বু রুহান আর চাঁচির দায়িত্ব নেন। আমরা সবসময় চাঁচি আর রুহানকে ভালোবেসেছি কিন্তু চাঁচি যে সেদিনের ঘটনার জন্য আমাকে দায়ী ভাবেন সেটা কখনো বুঝতে পারিনি।
আমি: হুম আর এজন্যই চাঁচি তোমাদের শত্রু ভাবেন আর তাই এতোকিছু করেছেন, বারবার তোমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন আর আজ তো পপিকে…
মেঘ: চলো পপির কাছে।

পপি শুয়ে আছে পাশের চেয়ারে রুহান বসে বসে কাঁদছে, একটু দূরে মা আর দাদী বসে আছেন।
আমি: রুহান যা হয় ভালোর জন্যই হয় তা আজ আবার প্রমাণ হয়ে গেল। (আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো)
রুহান: মানে?
আমি: পপির আজ এ অবস্থা হয়েছে বলেই তো পপির প্রতি তোমার ভালোবাসাটা প্রকাশ পেলো।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: এভাবে মানুষ প্রিয়জনের জন্যই কাঁদে রুহান।
পপি: ভাবি…
আমি: পপি তুমি চুপ থাকো। রুহান এখন তো আর অস্বীকার করতে পারবে না যে তুমি পপিকে ভালোবাস না।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: এখন কিন্তু আর নিশ্চুপ হয়ে থাকাটা মানায় না। (রুহান সবার দিকে তাকালো ও হয়তো মা’কে দেখে লজ্জা পাচ্ছে)
মা: চলুন মা আমরা ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসি।

মা আর দাদী বেরিয়ে যেতেই রুহান পপির কপালে চুমু খেলো।
রুহান: ভালোবাসি। (পপি মৃদু হেসে রুহানের হাত ধরলো)
মেঘ: এইযে মেডাম আমিও কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি।
মেঘ ওদের সামনেই আমার দুগালে ধরে কপালে আলতো করে চুমু খেলো, লজ্জায় মেঘের বুকেই মুখ লোকালাম…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৮

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

মেঘের চোখেমুখে পানির ছিটা দিতেই ওর জ্ঞান ফিরল, চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি: তোহার কি হয়েছে।
মেঘ: আমি তোমার তোহাকে আগলে রাখতে পারিনি। (মেঘ আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে কেঁদে দিলো)
আমি: মেঘ তোহার কি হয়েছে বল।
মেঘ: হসপিটালে চলো তোহা তোমাকে দেখতে চাইছে।
আমি: আমার তোহা…
মেঘ: ভয় পেয়ো না কিছু হবেনা তোহার, তুমি চলে আসার পর কিছু মুখে দেয়নি সারাক্ষণ তোমাকে ডেকে ডেকে কেঁদেছে। আজ সকালে হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পরে তারপর হসপিটালে নিয়ে এসেছি। তোমাকে অনেক বার ফোন করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ।
জোহা: আপু দেরি করো না চলো।
আমি: হুম।

অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, বেডে নিথর হয়ে পরে আছে আমার তোহা। চুপচাপ ওর মাথার কাছে এসে বসলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই তোহা চোখ মেলে তাকালো।
নার্স: আপনি বোধহয় বাচ্চাটির মা তাইতো আপনার ছোঁয়া পেতেই জ্ঞান ফিরে আসলো। এতোক্ষণ ধরে তো নতুন আম্মু নতুন আম্মু বলে ডেকেই যাচ্ছে আর বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।
আমি: মামুনি…
ডক্টর: মাস্কটা খুলে দাও। (ডক্টর রুমে এসে বলতেই নার্স এসে তোহার অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দিলো)
তোহা: নতুন আম্মু। (তোহা আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমিও জড়িয়ে ধরলাম আমার সোনামণিটাকে)
ডক্টর: এই বয়সে এতো কষ্ট বাচ্চাটি নিতে পারেনি আর ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া না করা থেকেই এই অবস্থা হয়েছে। আপাতত আর কোনো সমস্যা হবে না তবে ভবিষ্যৎ এ যেন ও আর কখনো এমন পরিস্থিতির স্বীকার নাহয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
আমি: আর হবে না, তোহাকে এখন থেকে আমার বুকে আগলে রাখবো।
মা: বৌমা নিজেকে সামলাও এভাবে কেঁদো না।
আমি: আপনারা এতো গুলো মানুষ আমার ছোট মেয়েটাকে দেখে রাখতে পারলেন না?
পপি: ভাবি আমরা কি কম চেষ্টা করেছি, তোহা তো তোমাকে ছাড়া কিছুই বুঝছিল না।
মেঘ: কণা ওদের অজতা বকো না, তোহা তো তুমি খাইয়ে না দিলে খায় না এই দুদিন কিছুই মুখে দেয়নি সারাক্ষণ কেঁদেছে তাই এই অবস্থা হয়েছে।
চাঁচি: তোহা নাহয় বাচ্চা মেয়ে তাই মায়ের জন্য না খেয়ে নিজের এমন হাল করেছে কিন্তু তুই? তুই তো বুঝিস তাহলে তুই কেন দুদিন কিছু মুখে দেসনি সারাক্ষণ কেঁদেছিস? এতো আহ্লাদ ভা…
মেঘ: আমার যন্ত্রণা তুমি কি বুঝবে চাঁচি, তুমি তো…
চাঁচি: আমি কি বল।
আমি: থামবে তোমরা? (ওদের ধমক দিতে গিয়ে চাঁচির দিকে নজর পড়লো, আচ্ছা সেদিন রাতে চাঁচি কোথায় ছিলেন? জ্ঞান ফেরার পর তো চাঁচিকে দেখতে পাইনি)
চাঁচি: এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
আমি: বুঝার চেষ্টা করছি। (মৃদু হাসলাম, চাঁচি বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন)
মা: অনেক হয়েছে এবার সব ঠিকঠাক করো, বৌমা তুমি মেঘকে ক্ষমা করে দিয়ে বাসায় ফিরে এসো।
জোহা: মানুষ ভুল করলে ক্ষমা করা যায় খুন করার চেষ্টা করলে না। বাসায় গেলে পর যদি আবার আপুকে…
আমি: জোহা থাম তুই।
জোহা: আপু একদম ওকে ক্ষমা করবে না করেছ তো আমি তোমাকে জোর করে নিয়ে কানাডা চলে যাবো। (মেঘ মুখ গোমরা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। যেভাবেই হউক চাঁচিকে দিয়েই সব সত্যি বের করতে হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেদিন রাতের ঘটনার সাথে মেঘ নয় চাঁচি যুক্ত। তোহাকে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম, মেঘ চলে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম)
মেঘ: এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন পরে গিয়ে ব্যথা পাবে তো।
আমি: মেঘ এখনো সময় আছে প্লিজ সত্যিটা বলো।
মেঘ: আর কোন সত্যি জানতে চাও বলতো? সত্যি তো এটাই আমি তোমাকে খুন করতে চেয়েছিলাম।
আমি: তুমি আমাকে খুন করবে কেন তুমি তো আমাকে ভালোবাস। তুমি শুধু একটা কারণ দেখাও যে এই কারণে তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছি…
মেঘ: কারণ তো তুমিও জানো কণা। আমি শায়লার কথামতো তোমাকে খুন করতে চেয়েছিলাম, তুমি আমার আর শায়লার মাঝখানে বারবার আসছ তাই।
আমি: মিথ্যে কথা আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি তো শায়লাকে নয় আমাকে ভালোবাস।
মেঘ: নাহ আমি শায়লাকেই ভালোবাসি।
আমি: একদম মিথ্যে বলবে না।
মেঘ: কণা সবাই দেখছে কলার ধরেছ কেন ছাড়ো।
আমি: ছাড়বো না তুমি বলো সব মিথ্যে তুমি এমনটা করনি।
মেঘ: ছাড়ো বলছি।
আমি: আহহ। (দুহাতে মেঘের শার্টের কলার চেপে ধরেছিলাম, মেঘ আমার হাত ছাড়াতে গিয়ে কাটা হাতে ব্যথা দিয়ে ফেললো)
মেঘ: কণা আমি দেখে দেইনি বিশ্বাস করো। খুব ব্যথা পেয়েছ তাই না? (মেঘ হাতের এপাশ উপাশ দেখছে আর আমি দেখছি ওকে)
আমি: ব্যান্ডেজ করা হাতে এভাবে কি দেখছ?
মেঘ: বিশ্বাস করো আমি দেখে দেইনি। (মেঘ ব্যান্ডেজ এর মধ্যে একটা চুমু খেলো, ওর দুচোখে পানি)
আমি: কাটা হাতে ব্যথা পেয়েছি বলে যে এতোটা উতলা হয় সে নাকি আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। (মেঘ কথাটা শুনে আমার হাত ছেড়ে দিলো, কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে হনহন করে চলে গেল। মেঘ তো পালিয়ে গেল কিন্তু আমি সত্যিটা বের করে মেঘকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবো আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি)

এবার এমন প্ল্যান করবো চাঁচি সব সত্যি বলতে বাধ্য হবে। তার আগে সবাইকে বাসায় পাঠানো প্রয়োজন, সবাই এখানে থাকলে আমার প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হবে না। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললাম…
আমি: মা আপনি আর বাবা চাঁচিকে নিয়ে বাসায় চলে যান দাদী একা আছেন তো, এদিকে আমরা আছি।
মা: কিন্তু…
আমি: তোহার কিছু হবেনা মা আমি আছি তো।
মা: ঠিক আছে।

সবাই চলে গেল। আমি, জোহা, রুহান আর পপি তোহার পাশে বসে আছি, আর তোহা ঘুমিয়ে আছে।
আমি: রুহান আমাকে একটা হেল্প করবে?
রুহান: কি হেল্প বলো।
আমি: তোমার আর পপির একটু অভিনয় চাই আমি।
পপি: মানে?
আমি: আমি যা যা বলি তাই শুধু করে যাও সময় হলে ঠিক জানতে পারবে কেন করেছি এসব।
রুহান: এখন নাকি?
আমি: তোহাকে রেখে অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব না তাই এখানেই করতে হবে আর সেটা রাতে।
রুহান: ঠিক আছে।
পপি: কিন্তু কি কাজ?
আমি: পরেই নাহয় বলবো।

আম্মু: তুই ওখানে বিপদে পড়েছিস আমি বেশ বুঝতে পারছি।
আমি: না আম্মু সবাই তো আছে আমার পাশে কেন অজতা টেনশন করছ বলতো।
আম্মু: আমি আগামীকাল দেশে আসছি।
আমি: আম্মু প্লিজ এই ভুল করো না। তুমি এখানে আসলে আমার টেনশন বাড়বে, আব্বুর মতো তোমার উপর শায়লা যেকোনো সময় হামলা করতে পারে।
আম্মু: শায়লা কে? (ভুলু মনে বলে দিলাম এখন তো আম্মু হাজারটা প্রশ্ন করবে)
আম্মু: বলছিস না কেন এই শায়লাটা কে?
আমি: আম্মু শায়লা-ই আব্বুকে খুন করিয়েছে।
আম্মু: কিন্তু কেন? কে এই শায়লা আমাদের ক্ষতি করে ওর কি লাভ?
আমি: এসব তোমায় পরে বলবো আম্মু, ওর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই আমার হাতে তাই ওকে এরেস্ট করাতে পারছি না। আমি প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করছি তুমি প্লিজ এখানে এসো না।
আম্মু: এমন বিপদের মধ্যে তুই একা…
আমি: একা কোথায় জোহা আছে মেঘ আছে ওদের পরিবারের সবাই আছে আমার পাশে।
আম্মু: ঠিক আছে।
আমি: তুমি টেনশন করো না রাখছি।
আম্মু: হুম।
ফোন রেখে যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলাম, সত্যি যদি আম্মু চলে আসতেন তাহলে আর একটা টেনশন আমার বেড়ে যেতো।

রুহান আর পপি দুজন দু চেয়ারে বসে আছে, ওদের হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে দিয়েছি। রাত অনেক হয়েছে ডক্টর তোহাকে দেখে গেছে এখন আর আসবে না। রুহান আর পপির কাছে এসে ওদের দুজনের মুখ রুমাল দিয়ে বেঁধে দিলাম।
আমি: বাহ্ দারুণ লাগছে তোমাদের, মনে হচ্ছে তোমাদের দুজনকে আমি সত্যি সত্যি কিডন্যাপ করেছি।
জোহা: আপু রুহান ভাইয়ার আম্মুকে ভিডিও কল করবো?
আমি: হ্যাঁ তাড়াতাড়ি কর।
জোহা: আপু রিসিভ করছে নাতো।
আমি: শান্তিতে ঘুমুচ্ছে, কল দিয়ে যা একবার রিসিভ করুক শান্তির ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

কয়েকবার কল করার পর চাঁচি ফোন রিসিভ করলেন, ফোন রিসিভ করা মাত্র রুহানের দিকে ফোনটা ধরলাম। ঘুম ভাঙ্গতেই ঘুম ঘুম চোখে নিজের ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে উনি চিৎকার করে উঠলেন।
চাঁচি: আমার রুহান…
আমি: ভালো করে দেখে নিন আপনার ছেলে কি অবস্থায় আছে।
চাঁচি: আমার ছেলের সাথে এমন করছ কেন?
আমি: কারণ আপনি আমার সাথে করছেন তাই। আপনি বারবার আমার সাথে খেলবেন আর আমি একবারো খেলবো না তা কি করে হয় চাঁচি শাশুড়ি।
চাঁচি: রুহানের কোনো ক্ষতি করবে না তুমি বলে দিলাম।
আমি: জোহা চাকুটা রুহানের গলার কাছে ধরতো।
চাঁচি: এই চাকু সরাও আমার ছেলের লেগে যাবে।
আমি: সব সত্যি না বললে আপনার ছেলের গলাটা আলাদা করে ফেলবো।
চাঁচি: আমি সবাইকে ডাকছি তোমার কাজকর্ম সব দেখাবো।
আমি: খবরদার বাবা মা’কে ডাকতে যাবেন না, উল্টাপাল্টা করেছেন তো রুহানকে মেরে ফেলবো। আর আপনি ভালো করেই জানেন এমন দু একটা লাশ ঘোম করা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না, তখন কিন্তু নিজের ছেলের লাশটাও শেষ বারের মতো দেখতে পারবেন না।
চাঁচি: আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও, তোমার কাছে তো পপি আছে ওকে মেরে ফেলো। (কথাটা শুনে রুহান আর পপির চোখ বড়বড় হয়ে গেল)
আমি: আপনি না আসলেই একটা খারাপ মানুষ আপনার শাস্তি প্রয়োজন, আর রুহানকে মেরে ফেললেই আপনার চরম শাস্তি হবে।
চাঁচি: দ্যাত আমি অজতা টেনশন করছি, রুহান তো তোমাকে ভালোবাসে তাই তুমি ওকে মারতেই পারো না।
আমি: ভুল ভাবছেন চাঁচি শাশুড়িআম্মা, রুহান আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি না। এমনিতে রুহান আমাকে মেঘের সাথে সুখে ঘর করতে দিচ্ছে না তাই ওকে মেরে ফেললে আমার অনেক লাভ।
চাঁচি: এই না না তুমি বল কি জানতে চাও আমি সব বলবো।
আমি: সেদিন রাতে আমাকে খুন করতে চেয়েছিল কে? মেঘ নাকি আপনি?
চাঁচি: আআমমি আআর শাশায়লার লোক।
আমি: মেঘ’কে ফাঁসালেন কিভাবে? না তোতলিয়ে ভালোভাবে বলুন নাহলে কিন্তু রুহানকে…
চাঁচি: না না বলছি… আমি তোমাদের রুমে ঢুকা মাত্রই শায়লা মেঘের ফোনে মেসেজ করে যেন আমি খুন করার পর মেঘকে ফাঁসানো যায় কিন্তু মেসেজের শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। আমি আগেই তোমাদের রুমের লাইট অফ করে রেখেছিলাম, মেঘ মেসেজ দেখে উঠে লাইট জ্বালাতে চায় তখনি শায়লার লোক বারান্দা থেকে কিছু একটা ফেলে দিয়ে শব্দ করে তখন মেঘ লাইট না জ্বালিয়েই বারান্দার দিকে চলে যায়। ততক্ষণে তোমার ঘুম ভেঙে যায় আমি রুমে আছি এইটা বুঝতে পেরে তুমি চিৎকার দিতে পারো তাই তোমার মুখ চেপে ধরি। দুজনের লড়াইয়ের শব্দ শুনে মেঘ চলে আসে, আমার হাতে চাকু ছিল সেটা তোমার হাতে লেগে যায় তখনি মেঘ আমার হাত ধরে ফেলে। মেঘের হাতে চাকুটা ধরিয়ে দিয়ে আমি ফালিয়ে আসি, মেঘ আমার পিছু পিছু এসেছিল কিন্তু তোমাদের রুম থেকে বেরুতেই বাইরের আলোয় মেঘ আমাকে দেখে ফেলে ততক্ষণে তুমি রুমের লাইট জ্বালিয়ে মেঘকে চাকু হাতে নেওয়া অবস্থায় দেখে ফেলো। মেঘ আমাকে দেখে বোবা হয়ে গিয়েছিল তাই তখন কোনো কথা বলেনি। আমি ভেবেছিলাম মেঘ সবাইকে বলে দিবে তাই সে রাতে রুম থেকে আর বের হইনি কিন্তু মেঘ দোষটা নিজের কাধে নিলো। (চাঁচির কথাগুলো শুনে সবাই বোবার মতো হয়ে গেলাম, রুহানের দিকে তাকালাম ও নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে)
আমি: আপনি তো মেঘের মায়ের মতো তাই আপনাকে বাঁচিয়ে মেঘ নিজে খুনি সেজেছে আর আপনি.. ছিঃ
চাঁচি: এবার আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।
আমি: তার আগে বলুন শায়লাকে সাহায্য কে করছে? কে আছে শায়লার পিছনে?
চাঁচি: শায়লার স্বামী আছে, ও কোথায় আছে আমি জানিনা।
আমি: আপনি জানেন বলুন বলছি নাহলে…
চাঁচি: বলছি, শায়লার স্বামী পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে আছে আমি ওর ঠিকানা জানি, তোমাকে বলবো প্লিজ রুহানকে ছেড়ে দাও। রুহান ছাড়া যে আমার কেউ নেই, ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।
আমি: আপনি তো এমনিতেও বাঁচবেন না অনেক পাপ করে ফেলেছেন এবার আপনাকে আমি পুলিশে দিবো। ঠিকানাটা এক্ষণি মেসেজ করুন।
চাঁচি: ঠিক আছে রুহানকে ছেড়ে দাও।

ফোন রেখে রুহান আর পপির বাঁধন খুলে দিলাম, রশি রুমাল সবকিছু সরিয়ে ফেললাম।
আমি: যাও তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো।
জোহা: আপু কি অভিনয়টাই না করলে তুমি মনে হচ্ছিল সত্যি ওদেরকে কিডন্যাপ করেছ।
আমি: এমনটা না করলে সত্যিটা চাঁচি কখনোই বলতো না।
পপি: রুহান কাঁদছ কেন? (পপির কথা শুনে রুহানের দিকে তাকালাম, নীরবে কেঁদে যাচ্ছে)
আমি: রুহান কি হলো কাঁদছ কেন?
রুহান: আমার আম্মু এতোটা খারাপ আর আমি কিনা বুঝতেও পারিনি।
আমি: উনি নিজের স্বার্থে সব করতে পারেন রুহান, ভয় পেয়ো না আমি উনাকে ভয় দেখাবো মাত্র পুলিশে দিবো না।
রুহান: না কণা আম্মু পাপ একটু বেশিই করে ফেলেছেন উনার এখন শাস্তি প্রয়োজন।
পপি: আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না ভাইয়ার উপর চাঁচির কিসের এতো রাগ।
আমি: চাঁচি তোমাদের শত্রু ভাবেন পপি।
পপি: কিন্তু কেন?
আমি: এই প্রশ্নের উত্তর আমারো জানা নেই, মেঘ হয়তো বলতে পারবে।
পপি: সেই ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি আব্বু আমাদের যতটুকু ভালোবাসেন রুহানকেও ততটুকু ভালোবাসেন, রুহানকে কখনো বুঝতে দেননি ওর যে বাবা নেই। আর চাঁচি কিনা আমাদের শত্রু ভাবেন, আজ তুমি এমনটা না করলে তো জানতেই পারতাম না।
আমি: শান্ত হও পপি, সব ঠিক হয়ে যাবে। রুহানকে দেখো আমি আসছি।
জোহা: কোথায় যাবে এতো রাতে?
আমি: মেঘের কাছে।
পপি: ভাইয়া…
আমি: বাসায় আছে। তোমরা সবাই থেকো এখানে তোহাকে দেখো আসছি।
রুহান: কণা একা যেও না এতো রাতে।
আমি: যেতে পারবো।

বাসায় এসে কতক্ষণ ধরে কলিংবেল চাপতেই বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন।
বাবা: একি বৌমা তুমি?
আমি: মেঘ কোথায় বাবা?
বাবা: রুমেই আছে।
দৌড়ে রুমের দিকে আসলাম।

মেঘ তো রুমে নেই, তাড়াতাড়ি বারান্দায় আসলাম কিন্তু মেঘ এখানেও নেই। এতো রাতে মেঘ কোথায় গেল, ছাদে যায়নি তো? ছাদের দিকে দৌড় দিলাম।

ছাদের কিনারায় মেঘ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। মেঘ আমার দুহাত ধরে আমাকে ওর সামনে এনে দাঁড় করালো, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ও। কিছু না বলে জাপটে ধরলাম ওকে।
মেঘ: কণা কি হয়েছে?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কথা বলছ না কেন? এতো রাতে চলে আসলে যে তোহা কোথায়?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
আমি: যতক্ষণ না আমাকে জড়িয়ে ধরছ আমি কোনো কথা বলব না।
মেঘ: এবার বলো। (মেঘ আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: সব সত্যি আমি জেনে গেছি মেঘ, তুমি এই কাজ করনি চাঁচি করেছে।
মেঘ: মানে কিভাবে জেনেছ?
আমি: আগে বলো তুমি চাঁচিকে বাঁচাতে চেয়েছিলে কেন? নিজের উপর সব দোষ নিয়েছ কেন?
মেঘ: চাঁচি এমনিতে শায়লার সাথে জড়িয়ে আছেন তুমি একবার ক্ষমা করে দিয়েছ কিন্তু বারবার তো ক্ষমা করবে না। তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছেন জানতে পারলে তো তুমি চাঁচিকে পুলিশে দিতে।
আমি: হ্যাঁ দিতাম, যে বারবার অপরাধ করে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন মেঘ।
মেঘ: কিন্তু আমি চাইনা চাঁচি কোনো শাস্তি পাক।
আমি: কিন্তু কেন?
মেঘ: কারণ আমি চাঁচি আর রুহানের কাছে ঋণী হয়ে আছি। (মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: কিসের ঋণ?
মেঘ: এইটা নাহয় পরে বলবো। (মেঘ আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল, আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ওর কপাল আমার কপালে ঠেকালো)
মেঘ: কষ্ট হয়নি এই দুদিন আমাকে ছাড়া থাকতে?
আমি: হয়েছে তো।
মেঘ: আমিতো আর একদিন এভাবে থাকলে মরেই যেতাম। না পারছিলাম খাবার খেতে না পারছিলাম ঘুমাতে আর না পারছিলাম নিশ্বাস নিতে। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমি আমার কণা’কে হারিয়ে ফেলেছি, আর বুঝি ফিরে পাবো না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা তোমাকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না আমি বাঁচতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।
মেঘ ওর বুকের সাথে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আমিও জড়িয়ে ধরলাম। মেঘ আমাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে পাগলের মতো কাঁদছে, বাঁধা দিচ্ছি না। কাঁদুক এই দুদিনের জমানো কষ্ট গুলো কেঁদে উড়িয়ে দিক…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৭

1

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি ডক্টর হাতে ব্যান্ডেজ করছে, সবাই পাশে দাঁড়ানো মেঘ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অজ্ঞান হবার আগে দেখেছিলাম মেঘ ডক্টরকে ফোন করে কতোটা অনুরোধ করেছে, হাতে কি একটা যেন বেঁধে দিয়ে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সবাইকে পাগলের মতো ডাকছিল। চোখ বুজার আগে মেঘের কান্না শুনেছিলাম। আর এখন মেঘ শান্ত হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই শুধু ডক্টর যাওয়ার অপেক্ষা করছে। জানি সবাই কিছুক্ষণ পর নানা প্রশ্ন করবে জানিনা কি উত্তর দিবো।
ডক্টর: একটু সাবধানে থাকবেন হাতে যেন কোনো ছুট না লাগে।
আমি: ঠিক আছে।
ডক্টর: আর ওষুধ গুলো ঠিকমতো খাবেন।
আমি: হুম।
বাবা: রুহান ডক্টরকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।
ডক্টর: লাগবে না আমি যেতে পারবো।
বাবা: এতো রাতে।
ডক্টর: সমস্যা নেই পারবো। (ডক্টর চলে গেল, দাদী এসে আমার পাশে বসলেন)
দাদী: কি করে হলো এসব?
আমি: (নিশ্চুপ)
মা: কথা বলছ না কেন বৌমা?
বাবা: মা বলো এসব কি করে হলো।
আমি: বলবো তার আগে আমি মেঘের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। (আমার কথা শুনে একজন আরেকজনের দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে)
রুহান: তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলে তাই না? ভাইয়ার অবহেলা তোমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করেছে ভাইয়াকে তো…
আমি: রুহান আমিতো বলেছি আমি আগে মেঘের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
রুহান: ঠিক আছে।
সবাই একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, মেঘ আস্তে আস্তে এসে আমার পাশে বসলো।

মেঘ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, ইচ্ছে করেই ও তাকাচ্ছে না।
আমি: সবসময় তো বলো আমি তোমাকে বলার বা আমাকে বুঝানোর মতো সুযোগ সময় কোনোটাই তোমাকে দেই না আজ দিচ্ছি শুধু একবার বলো এমনটা কেন করেছ?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমার দিকে তাকাও মেঘ প্লিজ বলো এমনটা কেন করেছ তুমি তো আমাকে ভালোবাস।
মেঘ: আসছি আমি।
আমি: তুমি এই রুমের বাইরে গেলে আমি হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলবো আর আমি ভালো করেই জানি তুমি এইটা চাও না।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: মেঘ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছিলে, আমার শুধু মনে হচ্ছে কোথাও কোনো একটা ভুল আছে। প্লিজ তুমি একবার বলো তুমি এই কাজ কর…
মেঘ: আমিই করেছি কণা। তুমি তো আমার হাতে চাকু দেখেছ তাহলে বিশ্বাস করতে পারছ না কেন? তাছাড়া আমিতো এতোটা ভালো নই যে আমার দ্বারা খারাপ কাজ করা সম্ভব না।
আমি: মেঘ তুমি কি লোকানোর চেষ্টা করছ?
মেঘ: কি লুকাবো?
আমি: কিছু একটা তো লোকানোর চেষ্টা করছ তুমি, মেঘ প্লিজ বলো…
মেঘ: কতোবার বলবো আমিই করেছি।
আমি: কিন্তু কেন?
মেঘ: শায়লার কথামতো করেছি।
আমি: তাহলে একেবারে মেরে ফেললে না কেন? পাগলের মতো আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলে কেন? দিশেহারা হয়ে ডক্টরকে ফোন করে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলে কেন?
মেঘ: জানিনা।
আমি: মেঘ শুনো… (মেঘ আমার কথা না শুনে চলে গেল, কি লুকাচ্ছে মেঘ আমার থেকে)
জোহা: আপু ভাইয়া তো চলে গেল কি হয়েছে বলো আমাকে।
আমি: কিছু হয়নি চল বাসায় চলে যাবো।
জোহা: মানে এতো রাতে বাসায়…
আমি: এখানে আমি এক মুহূর্তও থাকতে চাই না।
বাবা: কেন মা কি হয়েছে?
আমি: আজ আমাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে ভবিষ্যৎ এ আবারো হয়তো হবে। আমি এখানে থাকবো না।
বাবা: খুন? কে করবে এই কাজ?
আমি: শায়লা করিয়েছে।
দাদী: তুই ওই বাসায় গেলে যে খুনি চেষ্টা করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
আমি: করলে করেছে আমি এই বাসায় থাকবো না।
পপি: তোমরা কেন বুঝতে চাইছ না ভাবি ভাইয়ার উপর অভিমান করে চলে যেতে চাইছে।
আমি: (নিশ্চুপ)
পপি: ভাইয়াকে বলো ভাবিকে আটকাতে তাহ…
মেঘ: না পপি ও চলে গেলেই আমি খুশি হবো। (মেঘ দরজার বাইরে থেকে কথাটা বলতেই বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো, যার জন্য এতো কিছু করলাম সে কিনা আজ..)
মা: মেঘ কি বলছিস এসব?
মেঘ: ওকে চলে যেতে বলো আম্মু।
আমি: চলেই তো যাবো এক্ষণি চলে যাবো।
জোহা: আপু কি করছ হাতে ছুট লাগবে। সকাল হতে দাও আমরা সকালে চলে যাবো।
বাবা: কি হয়েছে খুলে বলো একটু আমাকে।
আমি: শায়লার কথা মতো মেঘ আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। (চিৎকার করে বললাম, এই কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল)
রুহান: এতো বড় সাহস ওর। (রুহান দরজার বাইরে থেকে মেঘকে টেনে নিয়ে আসলো, সবাই ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
রুহান: কণা যা বলছে তা কি সত্যি ভাইয়া? (মেঘ আমার দিকে তাকালো কোনো কথা বলছে না, আমি সবাইকে বলতে চাইনি সবার রাগারাগিতে মেঘ যদি সত্যিটা বলে দেয় এই আশায় বলেছি। আমি জানিতো মেঘ এমন কাজ করতেই পারেনা কোথাও কোনো একটা ভুল আছে)
বাবা: মেঘ কথা বলছিস না কেন? বৌমা যা বলছে তা কি সত্যি?
দাদী: তুই কণাকে খুন করতে চেয়েছিলি তাও শায়লার কথামতো?
মেঘ: হ্যাঁ আমিই করেছি এসব। (মেঘ চিৎকার করে উঠতেই মা গিয়ে মেঘকে অনেক গুলো থাপ্পড় দিলেন)
বাবা: এক্ষণি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবি নাহলে…
মেঘ: চলে যাচ্ছি।
পপি: ভাইয়া শুনো এতো রাতে কোথায় যাবে? (মেঘ চলে যাচ্ছে আমিতো জানি মেঘ এমন কোনো কাজ করতেই পারেনা, মেঘ এতো রাতে বাইরে গেলে যদি শায়লা মেঘের কোনো ক্ষতি করে)
আমি: মেঘ এখন বেরিয়ে গেলে আমিও এতো রাতে বেরিয়ে যাবো।
রুহান: মানে কি? যে তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলো তার জন্য তু…
আমি: বললাম তো ও চলে গেলে আমিও চলে যাবো।
জোহা: আমরা সকালে চলে যাবো আপু আর শুধু এই বাসা থেকে নয় এই দেশ থেকে চলে যাবো, আমি আব্বুকে ফোন করে সবটা বলছি। কোনো খুনির সাথে তোমার সংসার করতে হবে না।
আমি: চাচ্চুকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই জোহা, আম্মু টেনশন করবেন।
জোহা: তুমি এই খুনিদের মধ্যে থাকবে নাকি? ওরা তো যেকোনো সময় তোমাকে খুন করতে পারে। আমার তো এখন মনে হচ্ছে চাচ্চুকে মেঘ’ই খুন করেছে।
আমি: জোহা না জেনে কাউকে দোষ দেওয়া ঠিক না।
জোহা: না জেনে কোথায় দোষ দিলাম? যে রাতের অন্ধকারে নিজের স্ত্রীকে খুন করার চেষ্টা করতে পারে সে তো খুনিই। আপু আমি তোমাকে বলছি ওকে পুলিশে দাও নাহলে ও আবারো তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে।
মা: আমার ছেলেটাকে জেলে দিওনা অন্য যা শাস্তি দিতে হয় দাও।
আমি: ভয় নেই মা আমি এমন কিছু করবো না। (মা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন, একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মেঘ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে)
জোহা: আপু আমি এখানে আছি তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো, সকাল হলেই আমরা আমাদের বাসায় চলে যাবো।
আমি: হুম।

ঘুম ভাঙ্গতেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। জোহা আমার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে দেখে ওকে ডেকে তুললাম। আমাকে এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে তাহলে হয়তো মেঘ সত্যিটা বলবে। আর সত্যিই যদি মেঘ এমনটা করে থাকে তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কানাডা চলে যাবো।
জোহা: আপু চলো। (ঘুমন্ত তোহার দিকে তাকিয়ে আছি, মেয়েটাকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে)
জোহা: আপু যদি সম্ভব হতো তোহাকে নিয়ে যেতাম, সম্ভব নাতো ওরা দিবে না তাছাড়া কোন অধিকারে নিয়ে যাবো।
আমি: একবার মেঘকে বলে দেখনা।
মেঘ: বলতে হবে না আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। (তোহার কপালে একটা চুমু দিয়ে মেঘের কাছে আসলাম, কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে আসলাম)

বাবা: আমাদের ক্ষমা করে দিস মা এমন হবে কখনো ভাবিনি। আমরা তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
মা: মেঘ এমন হয়ে যাবে আমরা কেউ তা ভাবিনি আমাদের কারণেই তো তুমি বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলে।
জোহা: হ্যাঁ আর এটাই ছিল আপুর সবচেয়ে বড় ভুল। নিজেদের ছেলেকে একটু বুঝান, ভবিষ্যৎ এ আর কখনো এমন কিছু করার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু আপুর কথা শুনবো না ওকে…
আমি: জোহা চুপ কর।
জোহা: কেন চুপ করবো? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো ফিরে পেতাম তোমাকে?
আমি: আমার তোহাকে দেখে রেখো সবাই। (চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলাম)

জোহা: আপু কিছু খেয়ে ওষুধ গুলো খেয়ে নাও। (বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘের কথা ভাবছিলাম, জোহা খাবার নিয়ে আসলো)
আমি: খাবার…
জোহা: দারোয়ানকে দিয়ে আনিয়েছি রান্না তো পারিনা।
আমি: আমাদের আগের কাজের খালাকে ফোন করে আসতে বলেছি টেনশন করিস না উনি চলে আসবেন।
জোহা: ঠিক আছে তুমি খাবারটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও।
আমি: হু। (জোহা খাবার রুমে রেখে চলে গেল, পিছু পিছু আমিও আসলাম)

খাবার মুখে দিতেই তোহার কথা মনে পরে গেল, রোজ তো আমিই তোহাকে খাইয়ে দেই আমি ছাড়া অন্যকারো হাতে মেয়েটা খেতে চায় না। ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখতে না পেয়ে মেয়েটা অনেক কেঁদেছে হয়তো, খাবার খেয়েছে কিনা কে জানে। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, মেঘ ফোন করেছে দেখে বেশ অবাক হলাম। বার বার ফোন বেজেই চলেছে বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললাম। মেঘ সত্যিটা না বলা পর্যন্ত কথা বলবো না ওর সাথে।

ছাদের এক কোণে বসে বসে ভাবছি শায়লা ছোট তোহাকে ছেড়ে কিভাবে থেকেছে আমার তো এই কয়েক ঘন্টায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। তোহার দুষ্টুমি গুলো খুব মনে পড়ছে, মন চাইছে একটাবার তোহার মুখে নতুন আম্মু ডাকটা শুনতে। হয়তো আবার কখনো তোহা আমাকে নতুন আম্মু বলে ডাকবে, হয়তোবা আর কখনো তোহা আর আমার দেখা হবে না নতুন আম্মু ডাকটাও শুনা হবে না।
বুয়া: মা কে জানি আসছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য। (বুয়ার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: কে এসেছে খালা?
বুয়া: একজন ছেলে।
আমি: ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।

কে এসেছে ভাবতে ভাবতে নিচে আসলাম, ড্রয়িংরুমে সোফায় একটি ছেলে বসে আছে। আমাকে দেখেই ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো।
আমি: আপনি…
–আমার নাম আসিফ আপনাদের ম্যানেজার।
আমি: আপনাকে তো সেদিন দেখিনি আমি তো সেদিন অফিসে গিয়েছিলাম।
আসিফ: আমি অসুস্থ ছিলাম আসলে অসুস্থ ছিলাম বললে ভুল হবে, আমাকে কারা যেন মেরেছিল। আমি ছিনিনি তাদের তবে এখন বুঝতে পারছি কেন আমাকে আহত করে হসপিটালে পাঠানো হয়েছিল।
আমি: কেন?
আসিফ: আমি আপনার সাথে অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু হসপিটাল থেকে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি কারণ আপনার ফোন নাম্বার ছিল না আমার কাছে। এই বাসায় অনেক বার ফোন করেছিলাম কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি এতোদিন অফিসে আসিনি কিন্তু কেউ কোনো খুঁজ নেয়নি। আজ আপনাকে খুঁজে এই বাসায় এসেছি আর পেয়েও গেলাম।
আমি: আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
আসিফ: গতকাল অফিসে এসে দেখি আমার চাকরি নাকি নেই আমার জায়গায় একটি মেয়ে বসে আছে। আমি জোর করে সবকিছুর হিসেব মিলাতে যাই আর গিয়ে দেখি সব গড়মিল তখন বুঝতে পারি আমাকে সরানো হয়েছিল এজন্যই।
আমি: এখন বুঝলাম আপনাকে সরিয়ে মেয়েটিকে আনা হয়েছিল টাকা…
আসিফ: দশ কোটি টাকা লস হয়েছে মেম আর সব টাকা একটা একাউন্টেই ট্রান্সফার করা হয়েছে।
আমি: নাম কি?
আসিফ: ইকবাল…
আমি: ইকবাল?
আসিফ: চমকে উঠলেন যে?
আমি: নামটা বেশ চেনাচেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না।
আসিফ: আমি একটা কথা ভেবে পাচ্ছি না, মেঘ স্যার তো আমাকে চিনেন তাহলে মেয়েটিকে কেন চাকরি দিলেন আর আমার কোনো খুঁজ নিলেন না কেন? এতোগুলো টাকা অন্য একটা একাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে অথচ মেঘ স্যার কিছুই বুঝতে পারেননি? ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না মেডাম? (আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না মেঘ এতো গুলো টাকার গড়মিল দেখেও আমাকে কিছু জানালো না কেন)
আমি: আগামীকাল থেকে আমি অফিসে যাবো সবকিছু আমিই এখন থেকে দেখাশোনা করবো। আর হ্যাঁ কাল থেকে আপনিও আসবেন।
আসিফ: ঠিক আছে মেডাম।
আসিফ চলে গেল, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না মেঘ আমাকে কিছু জানায়নি কেন নাকি টাকার ব্যাপারটা মেঘ নিজেই জানতো না? মেঘকে তো এখন কিছু জিজ্ঞেসও করা যাবে না কথাই তো হয়না আমাদের।

আসিফ: মেডাম এই মেয়েটিই আমার পরিবর্তে আছে আর হ্যাঁ গতকাল রাতে আরো পাঁচলক্ষ টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে আগের একাউন্টেই। (অফিসে এসে এইসব দেখতে হবে ভাবিনি, আর মেয়েটি তো সেই মেয়ে যে আমাকে শায়লা আর মেঘের কথা বলেছিল)
আমি: কে তুমি?
–আআমি…
আমি: কে পাঠিয়েছে তোমাকে?
–শাশায়লা মেমেডাম।
আমি: তোতলাচ্ছ কেন ভালো ভাবে বলো তোমাকে এখানে কে এনেছে আর এইসব কেন করেছ কার কথায় করেছ?
–শায়লা মেডাম এনেছে আর এইসব উনার কথাতেই করেছি।
আমি: যার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয় সে কে?
–শায়লা মেডাম জানে আমি কিছুই জানিনা।
আমি: মেঘ জানতো?
–হ্যাঁ তবে স্যার আপনাকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু ওই লোকটা স্যারকে ফোন করে কাকে যেন মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তাই স্যার আপনাকে কিছু বলেনি।
আমি: সেদিন তুমি শায়লার কথা মতো আমাকে মেঘের বিরুদ্ধে এসব বলেছিলে তাই না?
–হ্যাঁ।
আমি: আসিফ পুলিশ এনে ওকে দিয়ে দাও।
–আমি কিছু করিনি মেডাম।
মেয়েটির কথায় পাত্তা না দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। মেঘকে আজ ফোন করে সব জিজ্ঞেস করবো কেন ও এমন করছে কিসের ভয়ে এমন করছে।

বাসায় এসে মেঘকে অনেক বার ফোন করলাম কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছে না হয়তো আমি গতকাল রিসিভ করিনি এই রাগে। ফোনটা আবার অফ করে রেখে দিলাম যা জিজ্ঞেস করার মেঘকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করবো, যদি কখনো ওর সাথে দেখা হয়। জানিনা আর কখনো ওর সাথে আমার দেখা হবে কিনা।

আজ ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল, তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। জোহা আমার পিছন পিছন খাবার নিয়ে হাটছে, দুদিন পেরিয়ে গেল এই বাসায় এসেছি এই জোহাটাই আমাকে দেখে রাখছে। জোহা আছে বলেই হয়তো আমি এখনো ভেঙে পড়িনি।
জোহা: তুমি কি খাবে নাকি আমি আব্বুকে ফোন করে সব বলে দিবো?
আমি: সবসময় চাচ্চুর ভয় দেখাস কেন?
জোহা: কারণ তুমি ভালো করেই জানো আব্বু এসব জানলে তোমাকে কানাডা নিয়ে যাবে।
আমি: হু।
জোহা: খেয়ে নাও কলিংবেল বাজছে আমি দেখি কে এসেছে।
আমি: ঠিক আছে।

জোহা: কেন এসেছ এখানে আমার বোনকে খুন করতে? আজ কি নিয়ে এসেছ চাকু নাকি অন্যকিছু? (জোহার চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি নিচে আসলাম। ড্রয়িংরুমে মেঘকে দেখে বেশ অবাক হলাম)
জোহা: আপু একদম ওর কাছে যাবে না বলে দিলাম।
আমি: তুমি এখানে? আর তোমার এই অবস্থা কেন? (মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুদিনে কেমন যেন রোগা হয়ে গেছে ও, চুলগুলো সব উসকোখুসকো)
জোহা: বেরিয়ে যাও বলছি। (আচমকা মেঘ দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি)
মেঘ: কণা আমাদের তোহা…
আমি: কি হয়েছে তোহার?
মেঘ: তোহা তোহা হসপিটালে।
মেঘ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, দফ করে মেঘের মাথার কাছে বসে পড়লাম। কি হয়েছে আমার তোহার মেঘ এমনভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়লো কেন? তাহলে কি তোহা…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৬

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

রুহান: তোহা কোথায়? ভাইয়া তোহাকে নিয়ে ফিরেছে তো? (আনমনা হয়ে রান্নাঘরে কাজ করছিলাম হুট করে রুহান এসে পিছনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো)
আমি: হু!
রুহান: কি হয়েছে?
আমি: কোথায় কি?
রুহান: তুমি কাঁদছ কেন? তোহার জন্য নাকি? আরে তোহাকে তো ভাইয়া নিয়ে এসেছে।
আমি: কোথায় আমি কাঁদছি নাতো। (রুহান কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল)

মেঘকে তো খুব ভালোবাসি হয়তো প্রকাশ করি না, ওকে আজ থাপ্পড় দিয়ে নিজেই কষ্ট পাচ্ছি তাইতো নীরবে কেঁদে যাচ্ছি। আমি কখনো এমনটা চাইনি কিন্তু কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে…
রুহান: রুমে চলো। (রুহান আবার ফিরে এসেছে আর আমার হাত ধরে টানছে)
আমি: মানে?
রুহান: ভয় পেয়ো না আমার রুমে নয় তোমাদের রুমে চলো।
আমি: আরে কি করছ? (রুহান আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো)

মেঘ মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে, রুহান আমাকে এনে মেঘের পাশে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিলো।
রুহান: তুমি কি ভেবেছ কণা নিজেও সুখে থাকবে না আমাকেও সুখী হতে দিবে না?
আমি: মানে?
রুহান: পপি আর আমার বিয়ে দিয়েছ হয়তো মন থেকে মেনে নিতে পারছি না কিন্তু তোমাকেও তো আর ডিস্টার্ব করছি না তাহলে তুমি কেন সুখে থাকবে না? সবসময় তোমাদের দুজনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয় কেন?
মেঘ: রুহান এসব বাদ দে।
রুহান: না আমি বাদ দিবো না। আমি সুখে থাকি বা না থাকি কণা কে তো সুখে থাকতেই হবে।
আমি: আগে নিজের বউকে সুখী করো তারপর অন্যের বউকে সুখী করতে এসো।
রুহান: (নিশ্চুপ)
মেঘ: রুহান যাতো এসব নিয়ে অজতা মাথা ঘামাস না।
রুহান: তোমাদের এই ভুল বুঝাবুঝি ভালো লাগে না। তোমরা তো ছোট বাচ্চা না যে একজন আরেকজন কে বুঝাতে পারো না। তুমি কোথায় যাচ্ছ কি করছ সবকিছু কণাকে বলে গেলেই তো হয়।
মেঘ: আজ তো বলেছিলাম কিন্তু রাস্তায় শায়লার ফোন এসেছিল ও কি কি বলেছিল তুই তো সব শুনেছিস। শায়লা আমাকে বারবার ফাঁসাচ্ছে আর আমি বারবার বোকার মতো শায়লার ফাদে ফেঁসে যাচ্ছি কিন্তু এই কথাটা আমি কণাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। বুঝাবো কি করে কণা তো আমাকে কিছু বলার বা ওকে বুঝানোর মতো সুযোগ সময় কোনোটাই দিচ্ছে না।
রুহান: কণা আজ কিন্তু ভাইয়া আর আমি বিয়েতেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে শায়লা ফোন করে বলে ও তোহাকে কিডন্যাপ করে নিয়েছে। তুমি তোহাকে খুঁজে না পেলে কষ্ট পাবে তাই ভাইয়া তোহাকে আনতে চলে যায় কিন্তু শায়লা ভাইয়াকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে, তোমার সামনে বলেছে ওদের বিয়ে আজ তাই ভাইয়া ওখানে গিয়েছে। তুমি শায়লার চালাকি বুঝতে পারোনি ভাইয়াকে ভুল বুঝেছ। (রুহানের কথা শুনে মাথা নিচু করে রাখলাম, চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। কি করলাম আমি এইটা? না বুঝে মেঘকে এভাবে আঘাত করলাম। শায়লার ছাল বুঝতে না পেরে মেঘকে এতো কষ্ট দিলাম আমি)
রুহান: প্লিজ আর ভুল বুঝাবুঝি নয় আসছি।
রুহান চলে যেতেই মেঘের দিকে তাকালাম নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে, আমার দিকে তাকাচ্ছে না। মেঘের গালে আমার আঙ্গুলের দাগ বসে আছে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে, জানিনা কিভাবে ক্ষমা চাইবো এখন মেঘের কাছে। ক্ষমা চাইলে মেঘ আমাকে ক্ষমা করবে তো?
মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে উঠে দাঁড়ালাম দুহাতে মেঘের মুখ উপরে তুলে ওর গালে চুমু বসিয়ে দিলাম, মেঘ হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, মুচকি হেসে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।

সন্ধ্যার আকাশ চারদিক একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে আসছে, মৃদু বাতাসের মধ্যে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না মেঘের কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো, মেঘ আমাকে আদৌ ক্ষমা করবে কিনা তাও জানিনা আমি। আস্তে আস্তে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
মেঘ: কণা…(হঠাৎ মেঘের কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম, ও আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
মেঘ: এই সময় ছাদে দাঁড়িয়ে আছ যে।
আমি: এমনি।
মেঘ: এখনো রেগে আছ? (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, কি বলছে এসব ও? আমি কেন রাগ করে থাকবো রাগ তো করার কথা ওর)
আমি: তুমি সব ভুলে গেলে?
মেঘ: সবকিছু মনে রাখতে নেই।
আমি: তাই বলে থাপ্পড়ের কথাটাও ভুলে গেলে। (কথাটা বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। মেঘ আমার কাছে এসে দুহাত দিয়ে আমার মুখ তুলে ধরলো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি)
মেঘ: তুমি তো না বুঝে থাপ্পড়টা দিয়েছ আর এমন পরিস্থিতিতে তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এই কাজটাই করতো। তাছাড়া তুমি তো তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ অনুতপ্ত হয়েছ আর সেটা তোমার দুচোখে ফুটে উঠেছে। কেউ তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হলে তার উপর কি আর রাগ করে থাকা মানায়?
আমি: তুমি আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিলে?
মেঘ: ভালোবাসি তো পাগলী। (মেঘ আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছি এতোটা ভুল আমি কি করে করতে পারলাম)
মেঘ: এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি চলে যাবো।
আমি: কোথায় কাঁদছি নাতো। (মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম)
মেঘ: রুমে চলো।
আমি: না এখানেই ভালো লাগছে।
মেঘ: ছাদে ভালো লাগছে নাকি আমার বুকে এভাবে থাকতে ভালো লাগছে? (মেঘ হাসছে নিশ্চুপ হয়ে ওর বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছি)

মেঘ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর আমার একটা হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলা করছে। চুপচাপ ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে এবার রুমে যাওয়া দরকার।
আমি: মেঘ নিচে চলো তোহা কোথায় দেখতে হবে।
মেঘ: পপির কাছে আছে টেনশন করো না।
আমি: ঠিক আছে রুমে তো চলো।
মেঘ: কেন আমার কাছে থাকতে ভালো লাগছে না তোমার?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: হয়তো এখনো মনে রাগ পুষে রেখেছ বিশ্বাস করো আমি কোনো ভুল করিনি শায়লা আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমিতো তোহাকে আনার জন্যই গিয়েছিলাম কিন্তু শায়লা দিচ্ছিল না হঠাৎ করে ওর আড়চোখে দরজার দিকে তাকানো দেখে আমি পিছন ফিরে তাকাই আর তোমাকে দেখতে পাই। আর তখনি শায়লা সুযোগ বুঝে বিয়ের কথা বলে যেন তুমি আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে চলে যাও আর তুমি করেছও সেটা।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: সেদিন অফিস থেকে খাবার আনার জন্য আমি রেস্টুরেন্টে যাইনি তোমাকে ফলো করতে করতে গিয়েছিলাম কারণ তুমি বলেছিলে শায়লার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে যাচ্ছ। শায়লা কতোটা ভয়ংকর আমি তো জানি তাই তোমার কোনো বিপদ হতে পারে ভেবে তোমাকে ফলো করেছিলাম কিন্তু কথাটা তোমাকে বলতে পারিনি কারণ তুমি না বুঝে রেগে যেতে।
আমি: সত্যি আমি একটা বোকা মানুষ।
মেঘ: শায়লা তোমার সামনে যা ঘটাচ্ছে তুমি তাই দেখছ আর আমাকে ভুল বুঝছ একবারো ভাবছ না আমিতো তোমাকে ভালোবাসি তাহলে শায়লার কথামতো এসব করবো কেন? ডিভোর্স পেপার নিয়ে ঝগড়া করেছ অথচ আমি জানতামই না শায়লা কখন ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করেছে আর আমার ফাইলের ভিতর ডিভোর্স পেপারটা দিয়ে দিয়েছে।
আমি: ডিভোর্স পেপার দেখলে কারো মাথা ঠিক থাকে নাকি কিছু ভাবার মতো?
মেঘ: উঁহু ঠিক থাকবে কিভাবে তুমি যে আমায় ভালোবাস।
আমি: বাসি না।
মেঘ: সেটা তো আস্তে আস্তে বুঝেই যাচ্ছি।
আমি: হু!
মেঘ: কোনো প্রমাণ পেয়েছ?
আমি: না।
মেঘ: শায়লা অনেক চালাক কোনো প্রমাণ রেখে ও কাজ করে না। দেখেছ তো স্যার কে খুন করার সময় ইচ্ছে করে ফোনে আমার নাম্বার রেখে ফোনটা তোমাদের বাসায় ফেলে এসেছিল আমাকে ফাঁসানোর জন্য, এইটা থেকেই বুঝে নাও শায়লা কতোটা চালাক।
আমি: কিন্তু যে করেই হউক প্রমাণ তো আমাকে জোগাড় করতেই হবে।
মেঘ: চাঁচি ছাড়া অপশন নেই কিন্তু চাঁচিকে পুলিশ নিয়ে গেলে আব্বু আবারো স্ট্রোক করবেন।
আমি: চাঁচি যে জড়িত তুমি জানো কিভাবে আমি তো তোমাকে বলিনি।
মেঘ: রুহান বলেছে সবকিছু আর তুমি এইটা নিয়ে রুহানকে ব্ল্যাকমেইল করে ওদের বিয়ে দিয়েছ এইটাও বলেছে।
আমি: কি করবো বল পপির কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না তাই বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হলো।
মেঘ: চাঁচির সাথে কথা বলে দেখো উনাকে বুঝিয়ে বলো যদি অন্য কোনো প্রমাণের কথা বলেন। (তোমাকে কি করে বুঝাই মেঘ চাঁচি কিছুতেই আমাকে প্রমাণ দিবে না কারণ চাঁচি তোমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে চাঁচি যে তোমাদের শত্রু ভাবে সেটা তো তোমরা জানো না)
মেঘ: কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন?
আমি: এমনি রুমে চলো।
মেঘ: চলো।

রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আম্মুর অনেক গুলো ফোন, তাড়াতাড়ি আম্মুকে ফোন দিলাম।
আম্মু: খুব অস্থির লাগছেরে মা।
আমি: কেন আম্মু কি হয়েছে?
আম্মু: এতো দিন হয়ে গেল অথচ তোর আব্বুর খুনি কে জানতে পারলাম না।
আমি: তুমি টেনশন করো নাতো আমি ঠিক জেনে যাবো আর খুনিকে খুব কঠিন শাস্তিও দিবো।
আম্মু: কখন খুঁজে পাবো কেঁদে কেঁদে আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেলে পর?
আমি: রাগ করোনা আম্মু আমি ঠিক খুঁজে বের করবো খুনিকে।
আম্মু: ভালো লাগছে না রাখছি। (আম্মু ফোন কেটে দিলেন বিছানায় দফ করে বসে পড়লাম, আর ভালো লাগছে না কিযে করি আমি)

চাঁচি: তোমাকে এভাবে ভেঙে পড়ে যেতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। (দরজায় তাকিয়ে দেখি চাঁচি হাসছেন, বিছানায় বসে বসে কাঁদছিলাম তাই উনি এতো খুশি হয়েছেন। ভাগ্যিস মেঘ রুমে নেই)
চাঁচি: আমি শায়লার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করবো ওকে জেলে দিবো! কোথায় গেল তোমার এসব বড়বড় কথা?
আমি: একটি মেয়ে তার বাবার খুনিকে শাস্তি দিতে পারছে না ভেবে কাঁদছে আর আপনি এই নিয়ে ঠাট্টা করছেন? অবশ্য করবেনই না বা কেন আপনি নিজেই তো এই কাজে জড়িত।
চাঁচি: আমি জড়িত এইটার কোনো প্রমাণ তো নেই তোমার কাছে।
আমি: পুলিশ যখন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেস করবে তখন গড়গড় করে পেট থেকে সব কথা বের হয়ে আসবে আফসোস আমি আপনাকে পুলিশে দিতে পারছি না শুধুমাত্র বাবার কথা ভেবে এই খান পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে। তবে হ্যাঁ শায়লার পিছনে কে আছে এইটা আমি খুব তাড়াতাড়ি জেনে যাবো আর শায়লাকে পুলিশে দিয়ে ওর পেট থেকে সব কথা বের করবো।
চাঁচি: আমি তো তোমাকে একটা সাহায্য করেছি, শায়লার পিছনে মেঘ আছে ও সব আড়াল থেকে করছে বলে দিয়েছি তো তোমাকে।
আমি: মিথ্যে কথা মেঘ আর আমাকে আলাদা করার জন্য আপনি এসব করছেন আমি সব বুঝে গেছি। আপনি মেঘদের শত্রু ভাবেন তো তাই চাইছেন মেঘকে কোনোভাবে জেলে দি…
চাঁচি: বোকা মেয়ে তো তুমি তাই মেঘ তোমাকে বুঝিয়ে ফেলেছে। একদিন খুব বাজে ভাবে ঠকে যাবে তখন বুঝবে মেঘকে বিশ্বাস করে কতো বড় ভুল করেছ আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়। (চাঁচি মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে গেলেন। না পারছি উনাকে কিছু বলতে না পারছি শায়লাকে ধরতে, প্রমাণ ছাড়া শায়লাকে এরেস্ট করাবো কিভাবে)

তোহা: আচ্ছা নতুন আম্মু এইরকম মানুষ পুতুল হয় না? (বিছানা ঠিক করছিলাম তোহার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম, তোহা একটা ছোট পুতুল আমার দিকে ধরে রেখেছে)
মেঘ: হয়তো মামুনি। (মেঘের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকালাম ওর দিকে)
তোহা: আমাকে এনে দাওনা।
মেঘ: তোমার আম্মুকে বলো ও চাইলেই আমি তোমাকে পুঁচকে একটা মানুষ পুতুল এনে দিতে পারি। (মেঘের কথার মানে বুঝে ওর দিকে বালিশ ছুড়ে মারলাম ও দিব্বি হাসছে)
তোহা: ওওও নতুন আম্মু এনে দাওনা আমাকে একটা মানুষ পুতুল।
আমি: দিবো মামুনি এখন খাবে চলো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে তো।
মেঘ: কণা তোমার ফোন বাজছে।
ফোন হাতে নিয়ে দেখি উকিল, তাড়াতাড়ি বারান্দায় চলে আসলাম।

আমি: হ্যালো।
উকিল: হ্যাঁ মা তোমার নতুন উইল রেডি।
আমি: যেভাবে বলেছিলাম ঠিক তেমন তো?
উকিল: হ্যাঁ একদম তোমার কথামতো করেছি।
আমি: ঠিক আছে আপনার কাছে রেখে দিন সময় হলে আমি নিয়ে আসবো।
উকিল: ঠিক আছে।

ফোন রেখে রুমে আসতেই দেখি মেঘ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি?
মেঘ: কে এমন ফোন করলো যে আমার সামনে কথা বলতে পারোনি?
আমি: তোমার সামনে কথা বলতে পারবো না কেন উকিল চাচ্চু ফোন করেছিলেন।
মেঘ: কেন?
আমি: নতুন উইল তৈরি করতে বলেছিলাম করেছেন তাই জানানোর জন্য ফোন করে…
মেঘ: নতুন উইল?
আমি: হ্যাঁ চমকে উঠলে কেন?
মেঘ: কেমন উইল তৈরি করেছ?
আমি: এইতো তোহার নামে আপাতত কিছু নেই আমার অবর্তমানে সবকিছু তোহার নামে হবে, মানে আমি মারা গেলে তোহা সব পা..(মেঘের চিন্তিত মুখ দেখে আমার কথা আটকে গেল, আশ্চর্য মেঘ এতো কি চিন্তা করছে)
তোহা: নতুন আম্মু খাবো।
আমি: হ্যাঁ মামুনি চলো।
তোহাকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরুতেই মনে হলো কেউ একজন দরজার পাশ থেকে দৌড়ে চলে গেল। চারদিকে চোখ বোলালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না আশ্চর্য কে আমাদের কথা শুনছিল লুকিয়ে লুকিয়ে? নাকি আমার চোখের ভুল এইটা? আচ্ছা চাঁচি নয়তো?

চাঁচি: ঘরে দুই দুইটা বউ রেখে আমাকে কাজ করতে হয় ভালো লাগেনা।
মা: তোমাকে তো করতে বলছি না কাজের লোক আছে ওরা করছে তুমি শুধু শুধু করো কেন? (চাঁচি কি সত্যিই রান্নাঘরে ছিল নাকি আমাকে আসতে দেখে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এসব বলছে)
চাঁচি: আচ্ছা বউরা তো খাবারটা টেবিলে নিতে পারে তাইনা?
পপি: আমিতো নিতে আসছিলাম তুমিই তো রুহান ডাকছে বলে আমাকে রুমে পাঠিয়ে দিলে অথচ রুহান রুমেই নেই।
চাঁচি: কেকেকেন রুরুহান ডাকলো তো…(চাঁচির দিকে আমার তাকানো দেখে উনি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন)
আমি: মা একটু শুনোন তো। (মা’কে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসলাম)
মা: কি হয়েছে বৌমা?
আমি: মা চাঁচি কি এতোক্ষণ আপনার সাথে এখানেই ছিলেন নাকি কোথাও…
মা: না কোথাও যায়নি ও তো আমার সাথেই আছে এতোক্ষণ ধরে, কেন বলতো?
আমি: এমনি।
তোহা: নতুন আম্মু আসো না।
আমি: আসছি মামুনি।

তোহাকে ঘুম পারাচ্ছি আর মেঘকে দেখছি, এখনো আগের মতো চিন্তিত হয়ে বসে আছে। খাবার খেলো কারো সাথে কোনো কথা বলেনি কিসের যেন চিন্তা ওকে ঘিরে রেখেছে।
আমি: ঘুমুবে না?
মেঘ: হ্যাঁ আসছি। (মেঘ এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো)

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, পুরো রুম অন্ধকার দেখে বেশ অবাক হলাম ডিম লাইট তো জ্বালানো ছিল। ফোন খুঁজতে গিয়ে দেখলাম মেঘ বিছানায় নেই আশ্চর্য মেঘ কোথায়? বাথরুমে যায়নি তো? আমার ফোন খুঁজে পাচ্ছি না দেখে মেঘের বালিশের কাছে হাত দিলাম, ওর ফোন পেয়ে টর্চ জ্বালাতে যাবো তখন ফোনের স্কিনে মেসেজ চোখে পড়লো “মেঘ কাজ শেষ তো” মেসেজ পড়ে কিছু বুঝতে না পেরে মেসেজ লিস্টে ঢুকলাম “মেয়েটা বড্ড জ্বালাচ্ছে ওকে আজ রাতেই শেষ করে দাও মেঘ” শায়লার এই মেসেজ দেখে ভয়ে আতকে উঠলাম ফোনটা আমার হাত থেকে ফ্লোরে পরে গেল। উঠে বসে পড়লাম সারা শরীর ঘামছে আমার, মেঘ আর শায়লা আমাকে খুন করার প্ল্যান করছে? এখন কি করবো আমি চলে যাবো? কিন্তু তোহা, মেয়েটাকে রেখে যাওয়া তো সম্ভব না। আস্তে আস্তে উঠে ফ্লোরে মেঘের ফোনটা খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। কোন দিকে দরজা কোন দিকে সুইচ কিছুই আন্দাজ করতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন রুমে হাটছে চিৎকার দিতে যাবো তখনি আমার মুখ চেপে ধরলো। ধস্তাধস্তিতে দেয়ালে এসে আটকে গেলাম। হাতে কিসের যেন টান লাগলো হয়তো চাকু রক্ত ঝরছে হাত থেকে বেশ বুঝতে পারছি। হঠাৎ দরজা কিছুটা খুলে গেল বাইরের আসা আধো আলোতে কোনোভাবে আন্দাজ করে সুইচ এর কাছে এসে বাতি জ্বালালাম। মেঘে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ওর হাতে চাকু, ফ্লোরে বসে পড়লাম মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। চিৎকার দিবো কিংবা মেঘকে কোনো প্রশ্ন করবো এই শক্তিটুকু আমার নেই, হাতের দিকে তাকালাম রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। আচমকা মেঘের হাত থেকে চাকুটা পরে গেল, মেঘ হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। মেঘ মাথা নিচু করে রেখেছে দেখে আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম, কাটা হাতে ওর মুখটা তুলে আমার দিকে করলাম, মেঘ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে পানি টলমল করছে ওর দুচোখে। চিৎকার করে উঠলাম “মেঘ কেন করলে এমন আমিতো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, দিনের পর দিন তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে গেছ তারপরও আমি কিছু বলিনি নীরবে ভালোবেসে গেছি তোমাকে আর তুমি এই প্রতিদান দিলে”

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৫

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই মেঘকে দেখে বেশ অবাক হলাম, রাতে ড্রিংক করে মাতাল হয়ে যাওয়া ছেলেটা কতো সুন্দর করে আয়না দেখে হেলেদুলে চুল আছড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে ওর হেলেদুলে চুল আছড়ানো দেখলাম, এবার ওর মিটিমিটি হাসি দেখে আর কথা না বলে থাকতে পারলাম না।
আমি: ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাচ্ছ। (আমার কথা শুনে একনজর আমার দিকে তাকালো তারপর আবার আয়নার দিকে নজর দিলো)
আমি: কোথায় যাচ্ছ তুমি?
মেঘ: আন্দাজ করে নিয়েছ তো বিয়ে করতে যাচ্ছি, এখন আমি যা বলি না কেন তোমার বিশ্বাস হবে না কারণ তুমি আমাকে এক ফোটাও বিশ্বাস করো না।
আমি: সোজা উত্তর দাও কোথায় যাচ্ছ?
মেঘ: উত্তর না দিলে কি করবে শুনি।
আমি: তোমার ভাগ্য ভালো তোহা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে নাহলে…
মেঘ: মেয়েটা বাবার কষ্ট একটু বুঝে। (ও হাসছে আর হাতের ঘড়িটা ঠিক করছে)
আমি: তারমানে শায়লা ঠিকি বলেছিল আজ তোমাদের বিয়ে।
মেঘ: হু তুমি যাবে নিমন্ত্রণ খেতে?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: এখন আর মুখ গোমড়া করে রেখে লাভ নেই। (কিছু বলতে পারলাম না চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। তোহাকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম, মেঘের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বারান্দায় চলে আসলাম)

সত্যিই তো এখন আর মুখ গোমড়া করে বা কেঁদে কি হবে আগেই তো বুঝা উচিত ছিল এভাবে হুট করে বিয়ে করা ঠিক হবে না। বিয়ে তো সারাজীবন এর বন্ধন এই বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে হাজার বার ভাবা উচিত, আব্বু আর আমিতো ভাবিনি। অবশ্য আমাদের দোষ কোথায় আমি তো তোহার মা হওয়ার জন্য বিয়েটা করেছি আর আব্বু তো বুঝতে পারননি মেঘ এতোটা…
মেঘ: কি ভেবেছ আমি সত্যি শায়লাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি? (পাগলের মতো কাঁদছিলাম আর বারবার চোখের পানি মুছার বৃথা চেষ্টা করছিলাম হুট করে মেঘ এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে ছাড়িয়ে দিয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম)
মেঘ: তুমি সব দিকে চালাক শুধু আমার ভালোবাসা বুঝার সময় বোকা। (মেঘের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, মেঘ একদম আমার কাছে এসে দাঁড়ালো)
মেঘ: তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি বিয়ে করতে যাচ্ছি। বুঝনা কেন যে ছেলে ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে টুকরোটুকরো করে ফেলেছে সে ছেলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে কিভাবে?
আমি: শায়লা যে বললো…
মেঘ: পাগলী বুঝার চেষ্টা করো ও আমাকে তোমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে। তোমার কি মনে হয় আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছিলাম? না কণা আমি সাইন করিনি, শায়লা আমার সাইন নকল করেছিল। (আমার দুচোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো)
মেঘ: তুমি আমাকে যতোই ভুল বুঝ সত্যি তো এটাই আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবো।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: রুহান আর আমাকে আব্বু পাঠাচ্ছেন আব্বুর বন্ধুর বাসায় বিয়েতে, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তাই তোমাকে রাগানোর জন্য এমন হেলেদুলে চুল আছড়াচ্ছিলাম।
আমি: হু!
মেঘ: আর কেঁদো না আসছি। (মেঘ আমার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেল। মেঘকে সত্যি বুঝা বড় কঠিন এই ভালো তো এই খারাপ)
মেঘ: এইযে!
আমি: আবার কেন এসেছ?
মেঘ: এভাবে শান্ত হয়ে আমার সব কথা শুনতে পারো না? তাহলেই তো আর ভুল বুঝাবুঝি হতো না। কাউকে ভুল বুঝার আগে তাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হয় তুমি তো আমাকে কখনো বুঝিয়ে বলার সুযোগটা দাও না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আসছি আর হ্যাঁ রাতের জন্য সরি আর কখনো ড্রিংক করবো না।
মেঘ চলে গেল, ওর বলা শেষ কথা গুলো ভাবছি। সত্যিই তো আমি মেঘকে কখনো কিছু বলার সুযোগ দেইনা সবসময় নিজের মতো করে ধরে নেই আর দুজনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আজকের মতো যদি ওকে সবসময় বলার সুযোগ দিতাম তাহলে হয়তো এতোটা দূরত্ব আমাদের মাঝে তৈরি হতো না।
জোহা: আপু আপু…
আমি: হুম আয়।
জোহা: একটা কথা ছিল।
আমি: বল।
জোহা: আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না আমি কানাডা চলে যাই প্লিজ।
আমি: আমাকে একা রেখে চলে যাবি?
জোহা: এই বাসায় তো শুধু জামেলা আর ভালো লাগেনা।
আমি: একটু মানিয়ে নে প্লিজ আর কয়েকটা দিন।
জোহা: হুম। (এসব অশান্তি আমারই ভালো লাগছে না জোহার তো মন খারাপ হবেই)

চাঁচি: শুধু নবাবজাদির মতো খেলে হবে কাজ করতে হবে না? (খাবার মুখে দিচ্ছিলাম চাঁচির কথা শুনে খাবার রেখে মা আর বাবার দিকে তাকালাম)
মা: তুমি কিন্তু আজকাল বেশি কথা বলছ আমার বৌমাকে দিয়ে আমি কাজ করাবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার।
চাঁচি: ঠিক আছে তাহলে আমিই আমার বৌমাকে দিয়ে কাজ করাবো তখন কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারবে না। (চাঁচির কথা শুনে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা তো খুব চালাক, এই কথাটা বলেছেন যেন মা রেগে গিয়ে নিজের বৌমা বলেন আর উনি উত্তরে পপিকে দিয়ে কাজ করানোর কথা বলতে পারেন। আচ্ছা তাহলে তুমি এভাবে পপির প্রতি প্রতিশোধ নিতে চাইছ)
আব্বু: একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
চাঁচি: কোনো বাড়াবাড়ি হয়নি বউদের রেখে আমরা কাজ করবো কেন বৌমারা কিসের জন্য?
আমি: আপনাকে তো কেউ কাজ করতে বলে না বাসায় কাজের লোক আছে ওরা করে প্রয়োজন হলে আরো কাজের লোক আনবো।
চাঁচি: কাজের লোক কাজ করবে কেন…
আমি: আপনারা চুপ থাকুন উনাকে আমি দেখছি। (চাঁচির হাত ধরে টেনে উনার রুমের দিকে নিয়ে আসলাম)

চাঁচি: এসব হচ্ছে কি হাত ছাড়ো আমার। (উনার হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম)
চাঁচি: কি করছ এসব?
আমি: আপনি যা চাইছেন তার উল্টোটা। খুব সখ পপিকে দিয়ে কাজ করানোর তাই না? প্রতিশোধ নিতে চান…
চাঁচি: হ্যাঁ আমি প্রতিশোধ নিতে চাই পপিকে আমি তিলে তিলে শেষ করে দিবো।
আমি: আপনার এই আশা কখনো পূরণ হবে না।
চাঁচি: হবে প্রয়োজন হলে অন্য বাসায় চলে যাবো।
আমি: তার আগেই যদি আপনাকে আমি জেলে পুরে দেই। (চমকে উঠলেন উনি)
আমি: চাইলে এখনি আমি আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি।
চাঁচি: আমি যে তোমার আব্বুর খুনের সাথে জড়িত তার কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
আমি: সেদিন আপনি শায়লার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন তখন আমি সব রেকর্ড করেছি, রেকর্ডে স্পষ্ট শুনা যায় শায়লা আব্বুকে খুন করিয়েছে আর আপনি এর সাথে যুক্ত আছেন। (উনি ভয়ে আতকে উঠলেন কথা বলতে পারছেন না শুধু ঘামছেন)
আমি: আমি যা যা বলি তাই করুন নাহলে কিন্তু…
চাঁচি: কি করতে হবে?
আমি: শায়লার সাথে কে কে যুক্ত আছে?
চাঁচি: মেঘ আর শায়লা এসব করছে।
আমি: মিথ্যে কথা মেঘকে তোমরা ফাঁসাচ্ছ।
চাঁচি: তুমি এমনিতে খুব চালাক শুধু মেঘকে বুঝার সময় বোকা।
আমি: মানে?
চাঁচি: মেঘ করছে এসব সবকিছু ওদের নামে করে নিয়ে তোমাকে লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে দিবে।
আমি: মেঘ যে এসব করছে তার প্রমাণ কি?
চাঁচি: মেঘ আর শায়লার বিয়ে হচ্ছে আজ শায়লার অন্য একটি বাসায় চাইলে দেখে আসতে পারো। (উনার কথা শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো, তাহলে কি মেঘ আমাকে মিথ্যে বললো)
চাঁচি: তোহাকে ঘুমে রেখে নাশতা করতে এসেছিলে তো…
আমি: তোহা?
চাঁচি: হুম তোহা, গিয়ে দেখো তোহা রুমে নেই।
আমি: মানে তোহা কোথায়?
চাঁচি: শায়লার লোক এসেছিল তুলে দিয়েছি ওদের হাতে। দেখো এবার মেঘ তোহাকে নিয়ে ফিরে আসে কিনা।
আমি: আমার তোহা কোথায়?
চাঁচি: আরে ছাড়ো লাগছে।
আমি: তোহার জন্য না আমি খুন করতে দুবার ভাববো না। (উনার গলা চেপে ধরলাম, আমার হাত ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন)
আমি: শায়লা তোহাকে নিয়ে কোন বাসায় আছে বলে দিন নাহলে আপনাকে আমি এখানেই খুন করবো। (উনি জুড় করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলেন তারপর হাপাতে হাপাতে বললেন..)
চাঁচি: বলার সুযোগ না দিলে বলবো কিভাবে আর একটু হলেই তো মারা যেতাম।
আমি: আপনার মতো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মেরে ফেলাটাই ভালো।
চাঁচি: আমি গিয়ে এক্ষণি সবাইকে বলবো তুমি আমার গলা চেপে ধরেছিলে।
আমি: একটু শুনে যান..(উনি চলে যাচ্ছিলেন আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালেন)
আমি: এখান থেকে আর এক পা নড়লে এখনি পুলিশে ফোন করবো আর বলবো আপনি আমার তোহাকে কিডন্যাপ করেছেন।
চাঁচি: তুমি এতো…
আমি: খারাপ মেয়ে তাইতো? জানেন তো সন্তানের জন্য প্রত্যেক মা’ই খারাপ হতে দুবার ভাবে না।
চাঁচি: হুহ!
আমি: আপনি যে আব্বুর খুনের সাথে জড়িত এইটা বাবা জানেন আর উনার সম্মানের কথা ভেবেই আপনাকে পুলিশে দিচ্ছি না। এখন যদি বাবাকে গিয়ে বলি আপনি আমাদের তোহাকে কিডন্যাপ করেছেন তাহলে কেমন হবে?
চাঁচি: এমনটা করো না।
আমি: তাহলে চুপচাপ বলে দিন তোহা কোথায়।
চাঁচি: বলছি। (চাঁচির থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে আসছিলাম আবার পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: আবার খারাপ কাজ করার আগে রেকর্ড এর কথাটা মাথায় রাখবেন কেমন?
হাসতে হাসতে চলে আসলাম। ভালোই বোকা বানিয়েছি উনাকে, আসলে তো আমার কাছে কোনো রেকর্ডই নেই।

শায়লা: মেঘ আমি ভাবছি তোহাকে তো আমার কাছে রাখবোই তোমাকেও আমার কাছে রেখে দিবো, বিয়ের পর তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
মেঘ: মানে? (মেঘ হুট করে পিছনে তাকালো, আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি চুপচাপ দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছি, মেঘকে এখানে দেখতে হবে এইটা ভাবিনি। মেঘ আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে এসেছিল আব্বু পাঠিয়েছেন বিয়েতে আর ও নিজেই এখানে বিয়ে করতে এসেছে)
মেঘ: কণা…
আমি: আজকেও কি তোমাকে কিছু বলার সুযোগ দিতে হবে?
মেঘ: আমার কথা তো শুনো…
আমি: সব তো নিজের চোখেই দেখছি আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তোহা কোথায় আমার তোহাকে দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি।
শায়লা: তোহাকে তুমি কোন অধিকারে নিতে এসেছ?
আমি: বিয়ের দিন আমাকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল সে অধিকারে।
শায়লা: এসব ভুলে যাও।
আমি: চুপ কর কেমন মা তুই? নিজের মেয়েকে কিডন্যাপ করে আনতে হয়…
শায়লা: একদম বাজে কথা বলবে না।
আমি: এখানে দাঁড়িয়ে তোদের নাটক দেখতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না তোহাকে ফিরিয়ে দে আমি চলে যাচ্ছি।
মেঘ: কণা শায়লা তোহাকে…
আমি: তোমার কাছে তো কিছু জানতে চাইনি কেন কথা বলছ? তোমার ডিভোর্স চাই তো দিয়ে দিবো তবে তোহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
মেঘ: আমি তো তোহাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এসেছি।
শায়লা: কেন মিথ্যে বলছ মেঘ? তুমি তো একটু আগে বললে আমরা আবার এক হবো আ…
মেঘ: শায়লা প্লিজ অনেক নাটক করেছ আর করো না, বারবার তুমি আমাকে ফাঁসাচ্ছ আর কণা আমাকে ভুল বুঝে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে।
শায়লা: আমি তোমাকে ফাঁসাতে যাবো কেন আজ আমাদের বিয়ে এইটা তো আমাদের দুজনের ইচ্ছেতেই হচ্ছে।
মেঘ: কিসের বিয়ে? তুমি আমাকে ফোন করে বলেছ তোহাকে কিডন্যাপ করেছ আমি আসলে দিয়ে দিবে, কণা শোনার আগেই আমি তোহাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি…
শায়লা: মেঘ কেন মিথ্যে বলছ এই মেয়েটার ভয়ে?
মেঘ: চুপ করো আর পারছি না…
আমি: চুপ করবে তোমরা দুজন? তোমাদের যা নাটক করতে হয় আমি চলে গেলে পর করো আমার তোহাকে ফিরিয়ে দাও।
শায়লা: তোহা আমার মেয়ে দিবো না আমি।
আমি: যদি তোহার বিনিময়ে সবকিছু তোকে দিয়ে দেই?
শায়লা: ভেবে দেখতে পারি।
আমি: পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ভাব।
তোহা: নতুন আম্মু। (তোহা হুট করে কোথা থেকে যেন আসলো, আমাকে দেখেই দৌড়ে আসতে চাইলো কিন্তু শায়লা ওকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: বলেছি তো সবকিছু দিয়ে দিবো।
মেঘ: শায়লা তোহাকে ছেড়ে দাও।
শায়লা: তোমরা দুজন এমন ভাবে বলছ মনে হচ্ছে আমি তোহাকে কিডন্যাপ করে আটকে রেখেছি আরে ও তো আমার মেয়ে।
আমি: তুমি ওকে ছাড়বে নাকি আমি পুলিশ নিয়ে আসবো?
শায়লা: পুলিশ আনলে ভালো হয়। পুলিশই নাহয় বলে দিবে তোহা কার কাছে থাকবে, ওর আসল আম্মুর কাছে নাকি নকল আম্মুর কাছে। (চুপচাপ সোফায় বসে পড়লাম এখন কি করবো? পুলিশ আনা যাবে না তাহলে তোহাকে শায়লার কাছেই থাকতে হবে। আমি এখ..)
মেঘ: কণা প্লিজ ভেঙে পড়ো না। (মেঘ আমার পাশে এসে বসতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম)
শায়লা: তোহাকে দিতে পারি এক শর্তে তুমি মেঘকে এক্ষণি ডিভোর্স দিবে আর এখানে বসে আমাদের দুজনের বিয়ের সাক্ষী হবে।
মেঘ: শায়লা বেশি বাড়াবাড়ি করছ কিন্তু।
শায়লা: তাহলে তোহা আমার কাছেই থাকবে।
তোহা: আমি থাকবো না তোমার কাছে। (তোহা শায়লার হাতে কামর বসিয়ে দিলো, শায়লা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে তোহাকে ছেড়ে দিতেই ও দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো)
তোহা: নতুন আম্মু চলো।
আমি: আসছি ডিভোর্স পেপারটা আজ তোমার মুখে ছুড়ে মারবো। (মেঘকে কথাটা বলে বেরিয়ে আসলাম তোহাকে কোলে নিয়ে, পিছু পিছু মেঘও বেরিয়ে আসলো)

গাড়িতে এসে বসতেই মেঘও গাড়িতে উঠতে চাইলো, ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।
মেঘ: কণা আমার কথা শুনো…
মেঘের ডাকে পিছু না চেয়ে চলে আসলাম।

বাসায় ঢুকতেই দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। আমাদের দেখেই মা তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসলেন।
মা: কোথায় ছিলে তোমরা? তোহাকে না দেখতে পেয়ে তো আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আমি: তোহাকে শায়লা নিয়ে গেছিল।
বাবা: কিন্তু কিভাবে?
আমি: হয়তো এ বাড়িরই কেউ শায়লাকে সাহায্য করেছে। (চাঁচির দিকে তাকিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম)
বাবা: মেঘ তুই ফিরে আসলি যে বিয়েতে যাসনি? (বাবার কথা শুনে পিছনে তাকালাম মেঘ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
দাদী: কথা বলছিস না কেন? (মেঘ কারো কথার জবাব না দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো, আমিও রুমে চলে আসলাম)

মেঘ: কণা আমার কথা শুনো প্লিজ। (তোহাকে বিছানায় দাঁড় করিয়ে পিছন ফিরতেই মেঘের সাথে ধাক্কা খেলাম, ও আমার একটা হাত ধরে ফেললো)
মেঘ: আমাকে বলার সুযোগ দাও প্লিজ।
আমি: আমার হাত ছাড়ো
মেঘ: তুমি কিন্তু আবারো ভুল করছ কণা। (ঠাস করে মেঘের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম, ও গালে হাত দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: এই থাপ্পড়টা তোমাকে আমার অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল, দুমুখো সাপ একটা।
মেঘের দু চোখ থেকে পানি ঝরছে দেখেও আর দাঁড়ালাম না চলে আসলাম ওর সামনে থেকে…

চলবে?