Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2363



Angry_Husband Season_2___Part_7

0
Angry_Husband Season_2___Part_7
Angry_Husband Season_2___Part_7

Angry_Husband
Season_2___Part_7
Written by Avantika Anha
পরেরদিন….
সকালে..
ঘুম থেকে উঠে দেখি আরাভ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আরাভের ঘুমন্ত মুখটা দেখে কেউ বলতেই পারবে না এই ছেলে এতো রাগী। ইচ্ছা করছিলো আমার যে, ওরে একটু…
.
কি পাঠক কি ভাবেন? হিহি ইচ্ছা করছিলো ওর গাল দুইটা টানি। যেই ভাবা সেই কাজ। আস্তে আস্তে আরাভের গাল টানতে লাগলাম। কিন্তু সেটা আর বেশি সময় হলো না। ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম কি হবে ? এই ভেবে যে, আরাভ আমারে কি যে করবে। ওর ঘুম এত্ত পাতলা কেনো? এসব প্রশ্নই মাথায় ঘুরছিলো।
আরাভ- কি করছো?
আমি- গাল টানি।
আরাভ- কেনো?
আমি- না মানে সরি।
আরাভ- সরি বললে তো হবে না।
আমি- মারবেন না প্লিজ।
আরাভ- মারবো কেনো?
আমি- না এর আগে একটা বাচ্চার গাল টানছিলাম। সে আমাকে কামড় দিছে। সেইইই ব্যাথা পাইছিলাম।
আরাভ- হাহাহা। (হাসতে লাগলো)
আমি- হাসেন কেনো? ব্যাথা পাইছিলাম আর আপনার মজা লাগে।
আরাভ- একটা বাচ্চার কাছে কামড় খাও হাহা। আর সামান্য কামড়ে ব্যাথা। হাহাহা
আমি- ব্যাথা কেমন দেখবেন? খাড়ান।(এই বলে আমি আরাভের গলার কাছে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম)
.
আরাভ থতমত হয়ে গেলো।
আরাভ- কামড় দিলা কেনো?
আমি- হিহি। আপনি হাসলেন কেনো?
আরাভ- দাড়াও এবার আমি মজা দেখাচ্ছি। (আরাভ এক হাত দিয়ে আমার মুখ আটকে ধরলো। আরেক হাত দিয়ে আমাকে ওর আরও কাছে নিয়ে গিয়ে আমারো গলায় কি কামড় বসালো।)
আমি- এ্যা এ্যা এ্যা (কাঁদতে লাগলাম। কারণ আমার লেগেছে)
আরাভ- কাঁদো কেনো?
আমি- আপনি পঁচা।
আরাভ- হাহা তুমি যে কাঁমড় দিলা।
আমি- হুহ। আরও দিবো। (এই বলে ওর ঘাড়ে আরেকটা কামড় দিয়ে ওখান থেকে পালালাম)
.
তারপর ও যেখানে একা ছিলো সেখানে আমি যাচ্ছিলাম না।
খাবার টেবিলে দেখলাম ওয় কলার দিয়ে শার্ট পড়েছে। এতে ওর ঘাড় আর গলা কিছুটা ঢেকে গেছে। কিন্তু তবুও গলার টা দেখা যাচ্ছে। এই দেখে আমি হাসা শুরু করলাম। কাপলদের কেনো যে পাশাপাশি বসতে হয়। আমি ওড়না দিয়ে গলাটা পেচিয়ে রাখছি।
আম্মু- কি রে এভাবে ওড়না নিলি যে। গলা ব্যাথা নাকি ?
আমি- না আম্মু। স্টাইল আর কি। (মিথ্যা বললাম)
আরাভ- (বুঝে গেছি কেনো এমন করে ওড়না নিয়েছে)
আম্মু- তুই আর তোর স্টাইল হায় রে।
আমি- হুহ।
প্রেয়সি- (কানের কাছে এসে বললো…) আপু কি ঢাকো লাভ বাইট নাকি?
আমি- চুপ।
প্রেয়সি- ভাইয়ারও গলায় দেখতেছি যে।
আমি- বেশি দেখা শুরু করছিস।
আম্মু- তোরা কি ফুসফুস করতেছিস?
আমি- না মা কিছু না।
প্রেয়সি- না আম্মু আপুর..
ও কিছু বলার আগেই আমি ওর মুখ চেপে কানে কানে বললাম, “তোরে গিফ্ট দিমু চুপ কর।” ও আর কিছু বললো না। কথা ঘুরিয়ে নিলো।
.
আরাভ- কি হইছে? (জিগাইলো আস্তে)
আমি- ও বুঝে ফেলছে কামড়ের দাগ।
আরাভ- সব দোষ তোমার। লজ্জার অবস্থা।
আমি- দুরর বাদ দেন। আমরা কি পর নারী পুরুষ। কি হবে? (আস্তে আস্তে বললাম)
আরাভ- জবাব দিলো না। আরকি কোনো জবাবই খুঁজে পেলো না লজ্জায়।
.
.
দুপুর ১২ টায়….
আমি মিমির সাথে কথা বলছিলাম ফোনে, এমন সময় আরাভ আসলো কিন্তু আমি ওকে দেখলাম না। আমি আর মিমি সবদময় একে অপরকে বাবু,জানু,সোনা করেই কথা বলি তাই সেভাবেই কথা বলছিলাম। আরাভ জানতো না আমি মিমির সাথে কথা বলছি…
আমি- বাবু আই মিস ইউ।
মিমি- মিস ইউ টু গো। বিয়ের পর তো ভুলেই গেলি।
আমি- না গো তোমাকে কি ভুলি নাকি? শুনো আজ বাড়ি এসো । ঘুরতে যাবো।
মিমি- তোর বর যাবে?
আমি- না যাস্ট ইউ এন মি। ওকে বাই। ওয়েট করছি।
.
আরাভ ভাবছে কার সাথে এতো কথা। আর এরকম কথা কেনো। আমি এইদিকে ফোনে কথা বলে গোসলে গেলাম। আরাভ কিছুটা রেগে যাচ্ছে। যে কার সাথে এমন কথা। ওর মাঝে কিউরিসিটিও হচ্ছে যে, কে সে? ও একবার এগিয়ে যাচ্ছিলো ফোনের কাছে আরেকবার পিছিয়ে যাচ্ছিলো। গিয়ে ফোন হাতে নিলো। কিন্তু দেখে ফোন লক করা। রাগ উঠে গেলো। কিন্তু কি করবে ও? সোজা তো আর বলতে পারবে না ও যে কে ফোন করছে জানবে ও। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। অপেক্ষা করতে লাগলো আমার বাইরে আসার। আমি গোসল শেষে বাইরে আসতেই ও আমার কাছে আসলো…
আমি- কি হইছে আর আপনার হাতে আমার ফোন কেনো?
আরাভ- না মানে পাস টা দেও তো। আমার ব্যালেন্স শেষ কল করবো একটা জরুরী।
আমি- ও দেন। (পাস টাইপ করে ওরে দিলাম)
.
আমি চলে গেলাম ছাদে চুল শুকাতে। এদিকে আরাভ ফোনের কললিস্টে গিয়ে দেখে মিমির নাম। এটা দেখে নিজের প্রতি একটা লজ্জাবোধ আসলো। কিন্তু কিছু বললো না। পরে আমাকে অনেকগুলো কিটক্যাট দিয়েছিলো। কিন্তু কেনো দিলো জানলাম না।
.
সেদিন মিমি আসলো। অন্যান্য ফ্রেন্ডরা আসলো। মজায় মজায় নিজের বাড়িতে কিছুদিন কাটালাম। তারপর আরাভ আর আমি ওর বাড়িতে ফিরে গেলাম। আমরা হানিমুনে কোথাও গেলাম না। কারণ আমার ভার্সিটির ছুটি শেষ হয়ে গেছিলো। সময় যেতে লাগলো। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি ভার্সিটি যেতে লাগলাম। আমি ভার্সিটিতে থাকতাম আর আরাভ অফিসে। যাওয়ার আগে ও আমাকে দিয়ে যেতো আর নিয়েও আসতো ও।
.
একদিন আমি বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম আরাভের। আমার ব্যাচের এক বন্ধু বাইক নিয়ে সামনে এলো।
রাফি- কি রে জিজু কই?
আমি- জানি না আইতেছি মে বি।
রাফি- আহা বিয়া কতো মজার। আমার যে কবে হবে?
আমি- হালা আগে বড় হ। শুন তো আমার লাইগা একটা আইসক্রিম আন।
রাফি- টাকা নাই।
আমি- হালা ফকির। যা আন।
রাফি- খাড়া।
আমি- দুইটা আনিস। আমি কিপটা না। একটা তোরেও খাওয়ামু।
রাফি- হ বরের টাকায় লাফাচ্ছিস। আগে তুই আরও বেশি কিপটা ছিলি।
আমি- টাকা ফিরায় দে হালা।
রাফি- মজা করলাম দোস্ত আনতাছি।
.
রাফি আইসক্রিম আনলো। আমি আর রাফি দাড়ায় খাচ্ছিলাম। আর গল্প করছিলাম। মাঝে মাঝে হাসাহাসিও করছিলাম। এমন সময় আরাভ এলো। আমি অন্যের সাথে এতো হাসাহাসি করছি এটা দেখে ও জ্বলতে লাগলো সেই সাথে রেগেও গেলো। আমি আরাভকে দেখে রাফিকে বাই বলে গাড়িতে উঠলাম। আরাভ লাল হয়ে গেছে রাগে। আর ড্রাইভ করতে লাগলো। এদিকে আমি বুঝতেছিলাম না ওয় রাগলো কেনো?
আমি- রাগেন কেনো?
আরাভ- (জবাব দিলো না)
আমি- কি হলো রেগে আছেন যে?
আরাভ- ওই ছেলেটা কে?
আমি- ফ্রেন্ড।
আরাভ- এতো চিপকু কেনো?
আমি- ওমা জ্বলছে নাকি ? প্রেমে পড়ে গেলেন আমার?
আরাভ- (কিছু বললো না। কারণ জবাব জানা নাই)
আমি- ওকে ওকে আমি আর‌ মিশবো না। ব্যাপার না জ্বলিয়েন না মি. হাজবেন্ড।
আরাভ- কবে এক্সাম তোমার? (কথা ঘুরাতে)
আমি- এইতো সামনের মাসে।
আরাভ- পড়া কেমন হচ্ছে?
আমি- মোটামোটি।
আরাভ- আজ থেকে রাতে পড়তে বসাবো আমি তোমাকে।
আমি- এ্যা
আরাভ- হ্যা।
আমি- না
আরাভ- কেনো (কিছুটা শক্ত ভয়েসে)
আমি- আচ্ছা পড়াইয়েন।
.
রাতে…..
আরাভ পড়াতে বসলো। ওয় পড়াচ্ছে আমি কিছু বুঝছি। আবার কিছু বুঝি না। কিন্তু চুপচাপ।
আরাভ- বলো এটা মুখস্ত।
আমি- বলতে বলতে ভুলে গেলাম।
আরাভ- কান ধরে উঠা বসা করো।
আমি- কিইইইই?
আরাভ- জ্বী।
আমি- না না না।
আরাভ- কান ধরবা নাকি স্কেল দিয়ে মার খাবা।
আমি- যাচ্ছি যাচ্ছি।
.
আমি কান ধরে উঠা বসা করতে লাগলাম। এদিকে আমাকে দেখে আরাভ হাসতে লাগলো।
আমি- শয়তান পোলা। আমাকে কান ধরায়। আমারো দিন আসবে। দেখে নিবো। বাজে মানুষ। রাক্ষস কোথাকার। ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খাইস পঁচা। (এইসব বলতে বলতে কান ধরে উঠাবসা করতে লাগলাম)
আরাভ- আর কিছু
আমি- (ওর দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে গেছে) না না।
আরাভ- আরও ৫০ বার উঠা বসা করো।
আমি- কিহ?
আরাভ- জ্বী।
.
বাধ্য হয়ে করতেই হলো। এবার মনে মনে ওরে গালি দিতে লাগলাম। নইলে শুনলে আমাকে আবার শাস্তি দিবে ওয়। তারপর পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আরাভ তাকিয়ে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। ও মুচকি হাসতে লাগলো। বলতে লাগলো “পাগলি শাস্তি পেয়ে ঘুমায় গেলো। গুড নাইট” আমাকে ঠিক করে শুঁইয়ে দিলো।
.
এক্সাম শেষে…..
একদিন আমি আরাভের অফিসে গেলাম ওর জন্য টিফিন নিয়ে। গিয়ে দেখি একটা মেয়ে পড়ে যেতে ধরেছিলো আরাভ ওর কোমড় ধরে আটকালো। রেগে গেলাম।
আমি রুমে ঢুকেই…
আমি- ওই মাইয়া ফিল্মি স্টাইলে ঝুলে আছো কেনো উনার সাথে?
.
মেয়েটা উঠে দাড়ালো…
মেয়েটি- তোমার কি? এটা স্যার আর আমার ব্যাপার তুমি কে?
আরাভ- আনহা চুপ।
আমি- কেনো চুপ করবো। এই শাকচুন্নিটা কে? আর এতো চিপকে কেনো? আর আপনি ধরলেন কেনো?
মেয়েটি- স্যার ইনি কে?
আমি- আমি কে মানে? ওই তুই এখনো উনার পাশে দাড়িয়ে কেনো? সরে যা । (এই বলে মেয়েটাকে ঢাক্কা দিলাম)
আরাভ- (রেগে আমাকে থাপ্পর দিলো) কেমন বিহেভ এটা? ও অফিসে নিউ আমি কাজ শিখাচ্ছিলাম। পড়ে যেতে ধরেছিলো তাই এমন করে আটকিয়েছি। ওর মাথায় লাগলে কি হতো?
আমি- ও ভালো। থাকুন ওকে নিয়ে। এই নিন আপনার খাবার। শখ করে বানিয়ে আনছিলাম। এখন এই পেত্নির হাতেই খান। আমি থাকবো না। গেলাম।
.
এই বলে আমি ওই মেয়েটাকে আরেকবার ঢাক্কা দিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে। ওর জন্য আমি থাপ্পর খাইছি ওরে ছাড়বো কেমনে?
.
আরাভ আমাকে আটকাতে চাইলো কিন্তু আমি চলে আসলাম তাড়াতাড়ি। ও অফিসে ফিরে এলো। ওই ক্যাবিনে তখনও মেঘ নামের মেয়েটা দাড়িয়ে ছিলো। ও বুঝলোও না কি হলো? ও আসলে জানে না আরাভের বউ আমি।
আরাভ ক্যাবিনে যেতেই…
মেঘ- স্যার ওই পাগল করে মেয়েটা কে?
আরাভ- কাকে পাগল বললে? (রাগী লুকে)
মেঘ- না মানে ওই মেয়েটাকে।
আরাভ- হাউ ডেয়ার ইউ। সি ইজ মাই ওয়াইফ। তোমার সাহস তো কম না ওকে পাগল বলো।
মেঘ- না মানে সরি স্যার আমি জানতাম না। আই মিন উনি এতো ক্ষ্যাত বিহেভ করলো। তাই আরকি।
আরাভ- হোয়াট? তোমার চাকরি শেষ। গেট আউট। আনহার ব্যাপারে কিছু বলবা না। সে মিসেস আরাভ আহমেদ। ওকে?
মেঘ- স্যার সরি। চাকরি থেকে বের করবেন না প্লিজ।
আরাভ- গেট আউট।
.
মেঘের চাকরি চলে গেলো। আরাভ কাজ গুছিয়ে বাড়িতে গেলো। গিয়ে দেখে আনহা ঘরে নাই। সেই সাথে ওর সব জিনিসও নাই। আরাভ ভয় পেয়ে গেলো। এই ভেবে আনহা কই গেছে?
.
ও ওর মায়ের ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে আমার (আনহার) সব জিনিস ওর মায়ের ঘরেই।আর আনহা ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে আছে। আরাভ রুমে যেতেই…
আমি- মা এই ছেলেকে বের করে দেন।
মা- আরাভ তুই ওকে কষ্ট দিয়েছিস?
আরাভ- মা এমন কিছু না।
আমি- মা ও আমাকে মারছে। ওকে গেট আউট করেন।
আরাভ- ওকে ফাইন আমি যাচ্ছি। (কিছুটা রেগে)
.
আরাভ চলে গেলো ওর ঘরে।
.
চলবে……

Angry_Husband Season_2___Part_6

0
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha

Angry_Husband
Season_2___Part_6
Written by Avantika Anha
কিন্তু প্রশ্ন, “আরাভ যে বললো আমাদের ৩ বার দেখা হইছে। কিন্তু কেমনে? আমার তো মনেই নাই। দুইবারের কথা নাহয় মনে আছে ৩য় বার কখন? আরাভকে জিজ্ঞেস করতে হবে।” এই কথা গুলো মাথায় ঘুরতেছিলো। আমি চুপচাপ ছাদে চলে গেলাম। বোর লাগছিলো। তাই চুপচাপ পা টিপে টিপে রুমে গেলাম। দেখি ঘরে আরাভ নাই। আমি চুপচাপ আমার গিটারটা বের করে নিলাম। নিয়ে আবার দৌড় দিতে গেলাম এমন সময় আরাভের গলা পেলাম।
আরাভ- কই যাও?
আমি- জ…জ্বী ক…কোথাও ন..ন….না তো। (ভয়ে)
আরাভ- তোতলাচ্ছো কেন?
আমি- ক… কইইইই?
আরাভ- এই যে।
আমি- আপনার ভয়ে।
.
এই বলে আমি ভয়ে দৌড় দিলাম। কারণ আমি জানি ওয় আবার Angry হতে পারে। আমি ছাদে চলে গেলাম। ছোট বেলায় গান ভালো লাগতো। এমনি এমনিই কিছু গান গাওয়া শিখছি। সেই সাথে গিটার বাজানোও শিখে নিছি। তাই শখ করে গিটার বাজালাম…..
.
“ভালো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।”
.
গান শেষ হতেই পিছন থেকে কার যেনো গলা পেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ।
আরাভ- ভালোই তো গান করো।
আমি- হিহিহি এত্ত পামমমম।
আরাভ- সিরিয়াস।
আমি- আপনি গান শুনান তো একটা।
আরাভ- আমি পারি না।
আমি- না না না আপনি বসুন এখানে আর গান শুনান।
আরাভ- না না আমি এসব পারি না।
.
এই বলে আরাভ চলে যাচ্ছিলো। তখন আমি ওকে আটকানোর জন্য ওর শার্টের হাতের কাছের কিছুটা অংশ ধরে টানলাম।
আরাভ- কি হলো?
আমি- না শুনালে যেতে দিবো না।
আরাভ- আরে আমি পারি না তো।
আমি- আমি জানি না কিছু। গান শুনান।
আরাভ- ওকে ওকে। কি গান শুনবা?
আমি- পৃথিবীর যতো সুখ আনলাম
আরাভ- ওকে.. পৃথিবী
আমি- দাড়াননননন। গিটার বাজাতে পারেন ?
আরাভ- হুমমম।
আমি- তো বাজান । ধরুন। (এই বলে গিটার টা আরাভের হাতে ধরিয়ে দিলাম।)
আরাভ- “পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে,
আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ”
.
আমি- ওয়াওওওওওওওও। আপনি তো সেই গান করেন।
আরাভ- না তো।
আমি- সেইরাম। খাড়ান আমি আমার ফ্রেন্ডদের ফোন করে ডাকি কালকে। আপনার গান শুনাবো।
আরাভ- এই না।
আমি- আরে আমি তো ডাকবোই কারণ আমার বর পারে এতো ভালো। ওদের শুনাইয়া একটু জ্বলাইতে হবে তো।
আরাভ- হাহাহা কিইই।
আমি- আরে সত্যি। আচ্ছা দাড়ান আমি আইসক্রিম আনি। খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি খাবেন ?
আরাভ- না।
আমি- ওকে।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি করে আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি দুইটা আইসক্রিম আনলাম।
আরাভ- বললাম যে খাবো না।
আমি- হুমমম জানি তো।
আরাভ- তা দুটো আনলে যে।
আমি- হুম দুটোই আমি খাবো।
আরাভ- কিহহহ?
আমি- হুমমম। আমি তো দুটোই খাবো। কতোদিন পর খাচ্ছি।
আরাভ- না। ঠান্ডা লাগবে।
আমি- না আমি খাবোই।
.
এই বলে আমি দুটোই ছিড়তে গেলাম। কিন্তু আরাভ একটা কেড়ে নিলো। আমি জিজ্ঞেস করায় বললো, “এতো নাকি খাওয়া যাবে না। আরাভ ফেলে দিতে ধরেছিলো। একটা।
আমি- ফেলিয়েন না প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা। প্রেয়সিকে দিচ্ছি।
আমি- না আপনি খান। প্লিজ প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা ওকে।
.
আমি আর আরাভ পাশাপাশি বসে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আর সেই সাথে গল্প করতে লাগলাম। গল্প করতে করতে বুঝছিলাম আমি যে, মি. আরাভ এতোটা খারাপ না। ভালোও উনি। আইসক্রিম খাওয়া শেষে মি. আরাভ হাসতে লাগলো।
আমি- কি হলো হাসতেছেন কেনো?
আরাভ- আইসক্রিম দিয়ে নিজের মুখের কি অবস্থা বানিয়েছো ?
আমি- কই দেখি? (এই বলে ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম, আইসক্রিম দিয়ে উপরের ঠোঁটের সামান্য উপরে নাকের নিচ অংশে আইসক্রিম জমেছে)
.
এটা দেখে আমিও হাসতে লাগলাম। আরাভ তাকিয়ে ছিলো। কারণ ওর জানা ছিলো না যে, নিজের উপরও কেউ এতো হাসে।
আরাভ- থামো মিস. হাসুরি । পরে হাইসো। যাও পরিষ্কার করো।
আমি- আপনি মুছে দিন।
আরাভ- কিহ।
আমি- আরে মুছুন না। আমি একটা পিক তুলবো।
আরাভ- কিইইইইই? (চোখ বড় করে)
আমি- হুমমম। ইন ফিউচার আমাদের যে নাতি নাতনি হবে। ওদের দেখাতে হবে তো। আপনি তো এমনিই পুরাই আনরোমান্টিক। তবুও একটা ইজ্জত আছে না। ওরা তো জানবে ওদের দাদা-দাদি/নানা-নানি একটু হলেও রোমান্টিক ছিলো।
.
আরাভ আমার মুখে এমন ধরনের কথা শুনে পুরাই থ। কেউ এভাবে এসব বলতে পারে এটাও তার জানা ছিলো না।
আমি- হা করে আছেন কেনো?
আরাভ- না কিছু না।
আমি- পুরাই আনরোমান্টিক এমনি কই আমি। হিহিহি। থাক লাগবে না।
.
এই বলে আমি চলে গেলাম। আরাভ থ হয়ে ছিলো তখনো।
.
রাতের দিকে……
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। আরাভ কখন এলো তাই তা বুঝলাম না। ও কি জানি কাজে কিছুটা বাইরে গিয়েছিলো। ফিরে এসে দেখে আমি ঘুমাচ্ছি তাও হেলানি দিয়ে। আরাভ বুঝে গেলো আমি ওরই অপেক্ষা করছিলাম। আরাভ আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। আরাভের কিছুটা নেশা নেশা লাগছিলো। এটা অন্য কোনো নেশা নয়। শুধুই কিছুটা মায়ার নেশা। যা ধীরে ধীরে আরাভের উপর চড়ছিলো। আমার নেশা। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো। আর একটা স্মৃতি মনে করতে লাগলো। আরাভ আর আমার প্রথম দেখা। যে দেখার স্মৃতি আমি জানি না। কারণ সেদিন আরাভের চেহারাটা আমি দেখি নি কারণ আরাভের মুখটা কাপড়ের কি জানি দিয়ে ঢাকা ছিলো। আরাভ দেখেছিলো আমাকে….
সেদিনই ভালো লেগে যায় আরাভের আমাকে..
তারপর খোঁজার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু পায় নি। পরে যেদিন পআনার আরাভের সাথে দেখা হলো, ঢাক্কা খেলাম। সেদিন আমি না চিনলেও আরাভ চিনতে পেরেছিলো। কিন্তু আমি একটু বেশি গোলমাল করি তাই আরাভ রাগ সামলাতে না পেরে আমাকে চড় মেরেছিলো।
.
আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে হলো পরিচয়, চলুন জানা যাক…
.
আরাভ স্মৃতির পাতায় চোখ দিলো।
সবসময় ফাজলামি পছন্দ করে আনহা(আমি)। আরাভও কিছুটা ফাজিল। কিন্তু অনেক বেশিই রাগী। আমি ও আমার ফ্রেন্ডরা গিয়েছিলাম কাছাকাছি একটা পাহাড় এরিয়া দেখতে। সে সময় আমি ফাজলামি করে একটা বাস আসতে দেখি। সেখানের আরাভ ও তার পরিবারের অন্যরা ছিলো। আরাভের একটা কাজিন ছিলো। যে আরাভকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আরাভ পাত্তা দেয় না। এই কাহিনী আমি জানতাম না। সে কাজিনটার নাম ছিলো জান্নাত। জান্নাত তার এক ফ্রেন্ড এর সাথে একটা ফুলের গাছের আড়ালে প্লান করছিলো। সেটাও আমি জানতাম না। এমনি ফাজিল। আর ওই গাছের ফুলগুলো ভালো লেগেছিলো। তাই আমার বান্ধবীদের সাহায্যে গাছে উঠছিলাম ঠিকই। কিন্তু সব গুলো আমার সাথে ফাজলামি করে চলে যায়। পরে যাই প্যারায় কারণ আমি নামতে পারছিলাম না। সেই সময় জান্নাত আসে আর প্লান করে। সব বুঝে যাই। আরাভ রান্নার চুলার ওদিক কি জানি করছিলো। শুধু জামা দেখে আর ওদের কথা শুনে বুঝলাম সবটা। ইচ্ছ হলো সাহায্য করি। সেই জন্য জান্নাত রা সরে যাওয়ার পরপরই কি জানি করতে আরাভ অন্য দিকে যাচ্ছিলো। ওদিক গাছ থেকেই ডাকলাম….
আমি- এই যে ভাইয়া শুনুন।
আরাভ প্রথমে থামলো কিন্তু ভাবলো ওকে ডাকছে না কেউ। তাই চলে যেতে ধরলো। কিন্তু আমি আরো কয়েকবার ডাকলাম। ডাক শুনে এদিকে আসলো… আরাভ দেখলো একটা মেয়ে বয়স ১৬/১৭ ওকে ডাকছে। মেয়েটি কালো গাউন পড়ে ছিলো সাথে ওড়না। আমি মাঝে মাঝেই কথা বলতে বলতে হাসি। তাই তখনও হেসে ফেলছি। আরাভ ক্রাশ খেয়ে যায়।
আমি- ভাইয়া ভুত হয়ে দাড়াইয়েন না। একটা হেল্প করুন। পরিবর্তে আপনার একটা বিপদ আছে সামনে কমিয়ে দিবো।
আরাভ- কিহ? এমনিই হেল্প করছি। এতো বাহানা করার কি দরকার?
আমি- মই টা আনুন।
.
আরাভ মই আনলো। আমি নামতে ধরলাম।
আরাভ- সাবধানে।
আমি- আরে আমি পারবো পারবো। (এখনো আরাভের চেহারা দেখি নি)
.
বেশি নিজের উপর ভরসা করার ফল হিসেবে পা পিছলে পরে গেলাম। আর পড়লাম আরাভের উপরে। আর হাতের ফুল গুলো আমাদের উপর পুরাই রোমান্টিক ব্যাপার। এদিক বেশি মানুষ আসে না। তাই কেউ দেখলো না। আরাভ তাকিয়ে থাকলো,কাজল কালো চোখজোড়ার দিকে। সবচেয়ে বেশি ওর চোখ গেলো আমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলের উপর। কিন্তু আমার মাথায় সেই টাইমে রোমান্টিক কিছু আসে নি তাই উঠে পড়লাম। আরাভও উঠে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলছিলাম আপনাকে সাবধান হতে।
আমি- তা বিষয় না। ধন্যবাদ। আর শুনুন ওই মেয়েটা আপনার কে হয়? (জান্নাতকে দেখিয়ে)
আরাভ- কাজিন কেনো?
আমি- আপনাকে মে বি ভালোবাসে আর আপনি রিজেক্ট মারেন।
আরাভ- আপনি কেমনে জানলেন?
আমি- (বললাম কিভাবে জানলাম) জান্নাত ওর কোল্ড ড্রিংকে আজ কিছু একটা মেশাবে। তারপর কর্ণারে নিয়ে গিয়ে খারাপ অবস্থায় ছবি তুলবে। ইত্যাদি সব বললাম।
আরাভ- (এসব শুনে পুরাই রেগে গেলো আরাভ)
আমি- ওহো এতো রাগিয়েন না। ওর প্লানে ওরেই মারুন।
আরাভ- মানে?
আমি- ওরেই ওটা খাওয়ান। আর সেই সময় ও সবার সামনে উল্টা পাল্টা কাম করবে। আর ওর বাবা মা ওরেই বকবে সিম্পল। খালি ও খাওয়ার কিছু সময় পর ওরে বলবেন, ও একটা ঝাড়ুদারনি। আর শুনুন ওর ফ্রেন্ড টারে অন্য জায়গায় বিজি কইরেন। তার মাঝেও ঘাপলা।
আরাভ- নাইস আইডিয়া।
আমি- আমি তো জানি। আনহার আইডিয়া সেইরাম হয়। আচ্ছা আমি যাই আগে আমার বান্ধবী গুলার বারোটা বাজামু। আমাকে ছেড়ে গেছে।
.
এই বলে সেদিন ওখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাই। আরাভ কিছুই বলতে পারে না। কিন্তু মনে মনে হাসে আমার কথা গুলো ভেবে। ও জেনে যায় আমার নাম আনহা কিন্তু আমি ওর চেহারাও দেখি নাই সেদিন। যাওয়ার সময় আরাভ দেখেছিলো আমাকে, কিন্তু আমি দেখি নি। ও ডাকার আগেই সেখান থেকে চলে যাই। তারপর আজকের দেখা।
.
এসব স্মৃতি মনে করতেই আরাভ হেসে ফেলে। ওর ঘোর কেটে যায়। ঘুমিয়ে পড়লো আরাভ। এই ভেবে, জানে না সে কাল এই মেয়ে আরও কি কি পাগলামি করে।
.
চলবে…..

Angry_Husband Season_2___Part_5

0
Angry_Husband Season_2___Part_5
Angry_Husband Season_2___Part_5

Angry_Husband
Season_2___Part_5
Written by Avantika Anha
তারপর আর আরাভের সামনে আসি নি সারাদিন। মুখপোড়া বান্দর টা আমাকে দেখলে যে শাস্তি দিবে আমি ভালো করেই জানি। মানুষ এতো রাগী কেমনে হতে পারে ইয়ার।
.
রাতের বেলায়….
আমি প্রেয়সির রুমে গেলাম।
প্রেয়সি- কি রে আপি তুই আমার রুমে যে….
আমি- না মানে এতোদিন তোকে অনেক মিস করছি তো তাই ভাবছি আজ তোর সাথেই থাকবো।
প্রেয়সি- ওমা তুই আমাকে মিসও করিস। কি হইছে? সত্যি বল।
আমি- তোর বড় বোন আমি নাকি তুই আমার বড় বোন। সরে যা আমি এখানে ঘুমাবো। কোনো মুভি লাগা তো। ভুতের মুভি দে।
প্রেয়সি- এ্যা । আমার ভয় লাগে।
আমি- হাহা। এতো বড় হইয়া ভয় পাইস।
প্রেয়সি- নিজে বেশি লাফাইয়ো না। তুমি নিজেও ভয় পাও।
আমি- তোরে কইছে আমি ভয় পাই না। লাগা তুই। (সত্যি ভয় পাই। কিন্তু ওর সামনে সাহস দেখাতে বললাম)
প্রেয়সি- ওকে ওয়েট।
.
প্রেয়সি ভুতের মুভি চালু করে দিলো। আর এদিকে দুজনেই কাচুমাচু হয়ে আছি। আমি একবার প্রেয়সির দিকে তাকায় ঢোক গিললাম আরেকবার প্রেয়সি আমার দিকে তাকায় ঢোক গিলতে লাগলো। দুজনেই নিজেকে সাহসী দেখানোর ট্রাই করছি।
.
এদিকে আরাভ ভালোমতোই বুঝছে যে, আমি ভয় পেয়েই ওর সামনে আসছি না। কিন্তু এখন তো রাত। রাতেও কেনো আসছে না এটাই ভেবে পাচ্ছে না আরাভ। তাই ও একটু দেখতে বের হলো কই আমি। এদিক ওদিক ঘুরে সে প্রেয়সির রুমের বাইরে এসে দাড়ালো।
কিছু কথা শুনতে পেলো..
প্রেয়সি- আপু ভয় লাগছে।
আমি- কিসের ভয় হা। মজাই তো হচ্ছে। (এদিকে ভয়ে আমার অবস্থাও শেষ কিন্তু প্রকাশ করছি না)
.
আরাভ রুমে আসলো। পুরো রুম অন্ধকার ছিলো। তাই হঠাৎ ও আসায় আমি আর প্রেয়সি দুজনই চিল্লায় উঠলাম। আমাদের চিৎকার শুনে আম্মু আর আব্বু রুমে আসলো।
আম্মু- কি হইছে রে চিল্লাচ্ছিস কেনো?
আমি- না না কিছু হয় নি। এমনি এমনি।
আম্মু- ও বুঝছি। দুজনেই তো ভুত ভয় পাইস । তবুও সাহস করে দেখতেছিস কেনো?
আমি- ওই আর কি না মানে।
আম্মু- চুপচাপ আনহা তুমি রুমে যাও। জামাই তুমিও যাও। তুমি এখানে কি করছো?
আরাভ- আনহা কে ডাকতে এসেছিলাম।
আম্মু- ও আনহা যাও।
.
কিছু করার নাই আমি রুমে গেলাম। আমি রুমে গিয়েইইইই বকবক করতে শুরু করলাম…
আমি- সব দোষ আপনার। এতো রাগী কেনো? বান্দর কোনেকার। আপনার থেইকা তো রকিও ভালো।
আরাভ- রকি কে?
আমি- পাশের বাড়ির আংকেলের খরগোস।
আরাভ- হোয়াট? (রাগ উঠে গেলো)
আমি- হোয়াট না আপনি বাজে মানুষ হুহ।
.
এই বলে বিছানার দিকে পা বাড়াচ্ছিলাম। সেই সময় আরাভ আমার হাত ধরে টান দিলো। আবার আমি দেয়ালের সাথে।
আরাভ- আমি কি এবার বলো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি- না ক. ক. কিছু না।
আরাভ- বলো কি বলছিলা ?
আমি- আপনি ভ. ভালো। (কি করি কি করি ভেবে আইডিয়া পেলাম)
আরাভ- বলো বলছি। (একটু জোড়ে)
.
আমি ফিল্মে দেখছিলাম। তার চেষ্টাই করার নামে মাথা ঘুরে পড়ার ভান করলাম। আমি পড়তে যাচ্ছিলাম এমন সময় আরাভ আমাকে ধরলো। আরাভ আমাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু আমি চোখ খুলছিলাম না। কারণ জানি চোখ খুললে বাঁশ আছে।
আরাভ- আনহা চোখ খুলো। প্লিজ। ওই ।
.
আমি এদিকে চুপচাপ। আরাভ আমাকে কোলে করে বিছানার দিকে আগাচ্ছিলো। আমার গালে দুই ফোঁটা পানি পড়লো। হায় খোদা। বুঝে গেলাম। আরাভ কাঁদে ফেলছে। আমি তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেললাম। আরাভ আমাকে চোখ খুলতে দেখে কান্না থামালো। আমাকে শুইয়ে দিতেই আমি বসে পড়লাম।
আমি- মি. আরাভ কাঁদিয়েন না প্লিজ। আমি যাস্ট একটু নাটক করছি। যেনো আপনি আমাকে না বকেন তাই আর কি।
আরাভ- কি?? তুমি নাটক করছিলা।
আমি- হিহি হুমম। সরি সরি।
.
আরাভ তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আমাকে একটা থাপ্পর দিয়ে দিলো। থাপ্পর খেয়ে এবার আমার মাথা সত্যি বন বন করতে লাগলো কিন্তু কিছু কইলাম না। জানি ওয় রাগ করছে। নিজের বাড়ি না বলে ওয় ছাদে গেলো। এতো রাতে ভুতের মুভি দেখার পর ছাদে যাইতে ভয় লাগছিলো। তবুও চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে ছাদের উপরে উঠলাম। একবার তাকিয়ে দেখি পুরাই অন্ধকার একটু একটু আলো আসছে পাশের বাড়ির থেকে হালকা আলো আমাদের ছাদে পড়ছিলো। দেখি আরাভ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কি করবো ভেবে পারছিলাম না। তবুও আরাভের পাশে দাড়িয়ে কান ধরে “সরি” বললাম। আরাভ আমার দিকে একবার তাকালো কিন্তু জবাব দিলো না।
আমি- সরি তো প্লিজ এতো রাগেন কেনো?
আরাভ- নিশ্চুপ।
আমি- মি. আরাভ আপনি যদি মাফ না করেন আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো।
আরাভ- যা ইচ্ছা করতে পারো।
আমি- (ভাবছি চিল্লাইলে সমস্যা হবে।) না না চিল্লাবো না। লাফ দিবো।
আরাভ- হাহা নাটক। দেও লাফ।
আমি- আমি কিন্তু সিরিয়াস।(কেউ রাগ করলে সেই খারাপ লাগে)
আরাভ- ওহ। (এখনো রেগে)
.
আমি দেখি ও সিরিয়াস হচ্ছে না। এমনি আমার উঁচু জায়গা একটু ভয় লাগে। তাও সাহস নিয়ে আগালাম। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও তাকাচ্ছে না। তাই পিলার এর উপর বসে পড়লাম। নিচের দিকে একবার তাকালাম। নাহ পড়লে খালি হাত পা ভাঙবে। মরবো না। আমি আরাভের দিকে একবার তাকালাম, বললাম, “সরি শেষ বার বেঁচে থাকলে কথা হবে।” এই বলে পিলারের উপর দাড়াইলাম। আম্মু ভয় লাগে খুব। মনে মনে ভাবছি থাক। অন্য উপায়ে রাগ ভাঙ্গাবো নামে যাই। কিন্তু নামার আগে হলো এক বিপদ ব্যালেন্স হারাবো হারাবো এমন ভাব হয়ে গেলো। তখনি আরাভ আমার হাত ধরে দিলো টান ওর দিকে। ও আর আমি দুজনেই পড়ে গেলাম। ও নিচে আমি ওর উপরে। ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি দেখলাম আমার হাত কিছুটা ছিলে গেছে । সেই সাথে আরাভের হাতেও লেগেছে। নিরবতা ভেঙ্গে…
আমি- কোমড় ভাঙলো ?
আরাভ- কী?
আমি- না মানে আপনার উপর পড়লাম তাই আর কি।
.
এই বলতে বলতে উঠে বসলাম। আরাভ আমাকে টেনে নিয়ে ঘরে নিয়ে গেলো….। আমি ভাবছি রাগ মনে হয় কমে গেছে। কিন্তু নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়েই আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। আর সেই সাথে আমার দুই শক্ত করে চেপে ধরলো। এতোটাই শক্ত করে ধরেছিলো যে আমার প্রচন্ড ব্যাথা করতে শুরু করলো।
আরাভ- তুমি কি বাচ্চা মেয়ে হা…
কি ভাবো নিজেকে ড্রামা কুইন?
আমি- না আমি আনহা ভাবি নিজেকে।
আরাভ- চুপপপপপ একদম চুপপ।
.
এই বলে এর হাত দিয়ে আমর মুখ চেপে ধরলো।
আরাভ- ছাদে লাফ দিতে কে বলছে হা ? পড়ে গেলে কি হতো ?
.
আমি আরাভের হাতে কামড় দিলবলে আরাভ হাতটা সরিয়ে নিলো..
আরাভ- কামড় দিলে কেনো?
আমি- কথা তো বলতে দেন। সরি তো।
আরাভ- ভালো।
আমি- এখনো রাগ আমি আবার ছাদে যাবো বাই।
.
এই বলে আমি আরাভের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। ও কিছুটা আস্তে ধরেছিলো তাই ছাড়িয়ে নিতে পারলাম। আমি যেতে ধরলাম যখন তখন আরাভ আমাকে আবার টান দিলো ওর দিকে তারপর…
আরাভ- চুপচাপ শুয়ে পড়ো ঘুমাও।
আমি- না আমি ছাদে যাবো।
আরাভ- বললাম না শুঁয়ে পড়ো।
আমি- না না না।
.
আরাভ আমাকে এক টানে বিছানায় নিতে জোড় করে শুঁয়ে দিলো। আমি আবার উঠতে ধরলাম। এইবার আরাভ আমার পাশে শুয়ে দুহাত আর দু পা দ্বারা আমাকে আটকে ধরলো। এইবার আমি বারবার চেয়েও উঠতে পারছিলাম না। রেগে গেলাম…
আমি- বান্দর পোলা, বাজে পোলা, শয়তান কোনেকার দুররররর হন। ছাড়েন আমাকে।
আরাভ- কি বললা? (কিছুটা রাগী স্বরে)
আমি- না না আপনি এভাবেই থাকেন। ছাড়তে হবে না তো। আমি ঘুমাচ্ছি। যাচ্ছি না। এই দেখেন চোখ বন্ধ তো। গুড নাইট। (ওর রাগী স্বর শুনে ভয় পেয়ে গেছি)
আরাভ- (কিছু বললো না। কিন্তু ওর হাসি পাচ্ছিলো খুব। আরাভ প্রায়ই ভাবে প্রচন্ড বকবে আনহাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর বাচ্চা বিহেভের জন্য পারে না। কিন্তু আজ ওর প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো।কেউ কি এভাবে করে? রাগ করছি তো করছি। পড়ে গেলে কি হতো?)
.
আমি চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছি না। কিন্তু চোখ খুললে আরাভ রাগ করবে। এমন করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলো আরাভের দ্রুত ও উঠে দেখে আমি কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে আছি। এক হাত ওর কাধ বরাবর। আর পা দুটো আমার আরাভের পায়ের আড়ালে পড়ে গেছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে কিছুটা আরাভের মুখে। এই অবস্থায় আরাভের মনে হচ্ছিলো, “আনহার মাঝে মনে হয় একটা আকর্ষণ ওকে আনহার দিকে টানছে।” সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে ওর ঠোঁটজোড়া। কিন্তু ওর কপালে কিস করতে ইচ্ছে করছে আরাভের। এটায় তো সমস্যা নেই । তাই ও নিজের অজান্তেই আমার কপালে কিস করে বসলো। এতে আমি কিছুটা নড়ে উঠলাম। আরাভ তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়লো। তার কিছু সময় পর আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নামাযটাও সেরে নিলাম। বের হয়ে দেখি আরাভ আব্বুর সাথে গল্প করছে দেশ নিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবি ছেলেরা এমন কেনো? তাও কিছু বললাম না। সেদিন সারাদিন আমার ফ্রেন্ডরা এলো। গল্প গুজবেই কাটলো। সেদিন বিকেলে আমার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো।তাই কাউকে না বলে দোকান গেলাম কিন্তু কাছাকাছি আইসকক্রিমের দোকানে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। কেউ যেনো আমার কাধে হাত দিলো। পুরো ভয় পেয়ে গেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ।
.
আমি- আপনি এখানে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আরাভ- কাউকে না বলে বাইরে এসেছো কেনো?
আমি- আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো। তাই আসলাম। কিন্তু এসে দেখি দোকান বন্ধ।
আরাভ- ও আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি- মি. আরাভ চলেন।
আরাভ- কোথায়?
আমি- একটু সামনে আরেকটা দোকান আছে।
আরাভ- ওহ চলো।
.
এই বলে আমি আর আরাভ হাটতে ধরলাম। আমার একটা বদ অভ্যাস আছে। বাইরে হাটলে পাশে যদি কেউ থাকে তাহলে হাত না ধরলে শান্ত পাই না। তাই কিছু না ভেবেই আমি আরাভের হাতটা ধরে ফেললাম। ও কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলো। কিন্তু কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে ভাবছিলো, “পিচ্চিটার মনে এতো সাহস কিভাবে হলো?” দোকানে যেতে দোকান পার হতে হবে। তাই আমি আর ও রাস্তা পার হবো। এমন সময় আরাভের ফোনে একটা কল আসলো। দরকারি কল। তাই ও কলটা ধরলো। ও আমাকে একটু দাড়াতে বললো। আমি ভাবলাম দাড়িয়ে কি করবো? এই ভেবে আমি পার হয়ে দোকানটায় গেলাম।
.
আমি- আংকেল ৮টা কোণ আইসক্রিম দেন।
আংকেল- আচ্ছা।
.
পাশে কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে ছিলো।
একজন- আপু এতো ঠান্ডা কেনো আমাদেরও খাওয়াও।
.
বুঝে গেলাম, ছেলেগুলো বাজে তাই কোনো কথা বললাম না। আংকেলকে ৫০০ টাকার নোট দিলাম। উনি খুচরা দিতে লাগলো।
আবার একজন কথা বলে উঠলো- কি আপু? খাওয়াবেন না নাকি? আমাদেরও তো খেতে ইচ্ছে করে।
হঠাৎ আরাভ এলো আর কথাটা ওর কানে গেলো….
আরাভ- কেনো মা খাওয়ায় না?
ছেলেগুলোর একজন- আপনার লাগছে কই?
আরাভ- ও আমার বউ। আর মেয়ে দেখলে বাদরামি আসে তাই না? এক থাপ্পর দিবো বাপ বাপ করবা। মাকেও এমন লুলামি কথা বলো নাকি? হা মেয়েদের রিস্পেক্ট করো। বদৌলতে রিস্পেক্ট পাবে।
ওরা- সরি ভাইয়া। সরি আপু।
.
আমি খুচরা টাকাটা নিয়ে আরাভকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম। কারণ ওর যা রাগ থাপ্পর দিতেও পারে।
রাস্তায় পুরো আরাভ রেগে ছিলো। আমি বুঝে গেছি ও আমার উপর রাগ করছে। তাই কিছু বললাম না । বাড়িতে যায়ে আইসক্রিমটা ফ্রিজে রেখে রুমে আসলাম। ও রুমে ঢুকতেই…
আরাভ- কি মনে করো নিজেকে? বললাম না একটু থামো আমি আসছি। এতো জেদ কেনো হা? নাকি ছেলেগুলোকে তোমারো ভালো লাগছে। এরকম কথা শুনতে ভালো লাগে নাকি?
আমি- আপনি কিন্তু বেশি বলছেন।
আরাভ- কি বেশি হা?
আমি- চুপ করুন আপনি। নিজে খুব ভালো। শোধ তুলতে বিয়ে করছে আরো বড় কথা।
.
আরাভ আরো রেগে গেলো এ কথা শুনে আমাকে টান দিয়ে আবার দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। ওর রাগ আবার উঠছে। চোখ দুটো কিছুটা লাল হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছি রেগে।
আরাভ- কি বললা ? আমি শোধ তুলতে বিয়ে করছি?
আমি- তা নয় তো কি ২ বার দেখাতে তো খালি ঝগড়াই হইছে এইজন্যই তো।
আরাভ- চুপ একদম চুপ কে বলছে দুইবার দেখা হইছে? আমাদের আরো একবার দেখা হইছে। তুমি না জানলেও আমি জানি।
আমি- এ্যা।
আরাভ- কেনো গেছিলা? আমি না বললাম থামতে।
আমি- ভাবলাম। নিজেই কিনে নেই তাই আরকি।
আরাভ- বেশি পাকামি এইটুকু মেয়ের।
আমি- আমি তো এইটুকু না। এই যে ৫” ৫ ।
আরাভ- আমি ৫”১০ সো? আমার কাছে এইটুকুই।
আমি- নিজে লম্বা বলে কথা শুনান।
আরাভ- কথা সেটা না। কথা হলো।
আমি- চুপপপপ। এটাই কথা। এমনি তো কিউট। রাগলে এতো ওয়াইলড ক্যাট হন কেনো?
আরাভ- হুহ।
আমি- মি. আরাভ একটা সত্যি কথা বলবো?
আরাভ- হুম।
আমি- আপনাকে রাগলে সেই লাগে একটা পিক তুলি দেখি ছাড়েন তো।
আরাভ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এই অবস্থায় কেউ এমন কথা বলবে বলে ওর জানা ছিলো না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তবুও ছেড়ে দিলো আমাকে। আমি গিয়েই ফোন নিয়ে ওর একটা পিক তুলে নিলাম।
আমি- এই দেখেন সুন্দর লাগছে না? আমি প্রেয়সিকে দেখায় আসি আচ্ছা টাটা।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি রুম ছেড়ে চলে গেলাম। আসলে ভয় পেয়েই পালাইছি। এটা আরাভ জানেই না। এই ভেবে হাসতে হাসতে পালালাম।
.
চলবে…..

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৮)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র(০৮)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র(০৮)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৮)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

ক্যাম্পাস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। পাখির ঢানা’র মত’ই দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে ছিল। পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে তখন’ই। কাছে আনতে আনতে’ই সেটা কেটে যায় কল। কে কল দিয়েছে সেটা না দেখে’ই ফোনটা রাখতে যাচ্ছিল নীলিমা।বেজে উঠে আবারো কল। এবার ছো মারা’র ন্যায় কলটা রিসিভ করে কানে ধরে নীলিমা। ওপাশ থেকে নীলিমা’র খালা’র স্বর শুনা যাচ্ছে। ধীর গলায় সালাম দেয় নীলিমা। — আসসালামু আলাইকুম। — ওয়ালাইকুম আসসালাম। — কে নীলিমা? — হ্যাঁ,(গম্ভীর স্বরে) — বাড়িতে কথা বলছিলে আজকে? — নাহ!(গম্ভীর স্বরে) — তোর বাবা এসব কি শুরু করেছে? আর কত! আর কত কথা শুনতে হবে আমাকে? তোর বাপে’র জন্য এখন তো মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়িতে মুখ’ই দেখাতে পারবো না… — কি হয়েছে? — গতকাল বিকেলে আমার শ্বশুর বাজারে বসেছিল। তোর বাপ তখন নেশায় বিভোর হয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে তোর বাপ ঐ মহিলা’র উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। তখন বাজার ভর্তি মানুষের সামনে ঐ মহিলা তোর বাপকে তার পায়েক্যাম্পাস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। পাখির ঢানা’র মত’ই দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে ছিল। পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে তখন’ই।র জুতা দিয়ে পিটাইছে। আমার শ্বশুর রেগে গিয়েছিল এই ভেবে একটা মহিলা, যে কি কিনা বাজারের বেশ্যা নামে পরিচিত সে কিভাবে তোর বাপের গায়ে হাত তুলে। তাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন ওনি। সেখান থেকে নিজেই লজ্জা পেয়ে আসে। বাজারের মানুষজন তোর বাবা’র কুকৃর্তি’র খবর জানিয়ে দেয়। শুন! একটা কথা বলি। বাপরে তো এ জন্মে আর ভালো করতে পারলি’ই না। তাই বলি কি লেখাপড়া যেটুকু করছিস করছিস’ই। এইবার শহরে কোন পোলা ধইরা বিয়ে বসে পর। না হয় গ্রামে এসে বাপ বেটি তিনজনে মিলে বিষ খেয়ে মরে যা। মা’রে তো আগেই খাইছস! — আচ্ছা, খালা! রাখছি… ফোন কান থেকে নামিয়ে ছুঁড়ে ফেলে বিছানায়। তারপর বালিশে মুখ ঢুকিয়ে গুমড়ে কেঁদে উঠে নীলিমা। ‘বাবা! এ তুমি কি করলা? আমার কথা নাইবা ভাবলা। কিন্তু লিমা! ওর কি হবে? ওর ভবিষ্যতের কথা কি করে একটা বারের জন্য ভাবলে না। কেন বাবা? কেন এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলে তুমি!’ ফুপিয়ে কাঁদছিল আর বিলাপ করে কথাগুলো বলছিল নীলিমা। দরজা’য় ঠকঠক আওয়াজ হয়। দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে দরজা’র দিকে এগিয়ে যায় নীলিমা। ‘আসসালামু আলাইকুম, মেম! বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন।’ সালামের জবাব দিয়ে স্মিতহাস্যে রুমে আসে প্রিন্সিপাল মেম। — তারপর! কেমন চলছে পড়াশুনা? পরীক্ষা কেমন হচ্ছে। — আলহামদুলিল্লাহ মেম! ভালো’ই… — পরীক্ষা’য় কিন্তু 1st class চাই…! — ইনশাআল্লাহ মেম! — আচ্ছা, টেবিলে খাবার দিয়েছে। নিচে আসো। — জ্বী, মিম! আসছি… — আর হ্যাঁ! কোন কিছু’র দরকার পরলে অবশ্যই আমাকে জানাবে। — জ্বী, মেম! — ওকে, আসো তবে… — আচ্ছা… প্রিন্সিপাল মেম চলে গেলে ওয়াশরুমে যায় নীলিমা। জামাকাপড় চেঞ্জ করে চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে নিচে নামে নীলিমা। খাবার টেবিলে পূর্ব থেকে’ই শুভ্র বসে। শুভ্র’কে দেখে চেয়ার টেনে বসতে বসতে নীলিমা’র প্রশ্ন, মেম কোথায়! মেম’কে যে দেখছি না? খাবার খেতে খেতে শুভ্র’র জবাব, — মেম ভার্সিটি থেকে লাঞ্চ করে আসছে। তাই আর খেতে চাচ্ছে না… — ওহ! — তারপর? কেমন চলছে পরীক্ষা? — আলহামদুলিল্লাহ! ভালো… — হতে’ই হবে… — (নিশ্চুপ) — আচ্ছা, তোমার সেন্টার কোথায় যেন পরেছে? — মহিলা কলেজ। — ওহ, আচ্ছা! — (নিশ্চুপ) — আচ্ছা, কাল কি আমরা কোথাও ঘুরতে যেতে পারি? — পরীক্ষা আছে তো! — কয়টায় শেষ হবে পরীক্ষা? — বিকেল ৫টায়। — সমস্যা কোথায়? তখন’ই না হয় আমরা ঘুরে আসবো! — কিন্তু মেম বাসা’য়…(….)…??? — আচ্ছা, এককাজ করো! — জ্বী… — তুমি কালকে পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি বাসা’য় চলে আসো। — এই না বললেন ঘুরতে যাবেন? — যাবো তো! — আমরা যাবো রাতের শহর দেখতে! — মেম যদি কিছু বলে? — সে চিন্তা তোমার করতে হবে না। আমি মেম’কে ম্যানেজ করবো। আর এমনিতেও কিচ্ছু বলবে না। দেখে নিও… — তাই যেন হয়…

 

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র(০৭)

0
golpota nish chop balikar
golpota nish chop balikar

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র(০৭)

golpota nish chop balikar
 

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

ঘড়িতে সময় রাত্রি ১১টা বেজে ৩৭মিনিট। খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে সেই সাড়ে ১০টার দিকে। জায়গাটা নতুন। হয়তো এ কারণেই ভালো লাগছিল না নীলিমা’র। কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ ছটফট করে বেরিয়ে পড়ে তাই ছাদের উদ্দেশ্য।
ছাদে উঠে থমকে দাঁড়ায় নীলিমা। ছাদের একপাশে দুরের ল্যাম্পপোস্টের আলোর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ শুভ্র দাঁড়িয়ে।
চলে যাচ্ছিল নীলিমা। পিছু ডাকে শুভ্র। পূর্বের ন্যায় একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পিছু না ফিরেই প্রশ্ন করে, চলে যাচ্ছেন?!
আমতাআমতা স্বরে নীলিমা’র জবাব, জ্বী। না। মানে। আপনি। আসলে..(…)..?
ফিরে তাকায় শুভ্র। ধীর পায়ে দুর থেকে কাছে চলে আসে নীলিমা’র।

— কেন? কোথাও কি এমন লেখা আছে
নাকি যেখানে আমি থাকবো সেখানে
আপনি থাকতে পারবেন না?
— না মানে আসলে…
— হ্যা, বলুন…!
— আমি কি ছাদে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারি?
— আবারো! আচ্ছা এটা কি ধরনের প্রশ্ন
বলুন তো?!
— না মানে আপনার যদি কোন আপত্তি
থাকে। তাই আর কি….
— (নিশ্চুপ)
— মনে হচ্ছে আপনার আপত্তি আছে…
— হ্যাঁ, আপত্তি আছে আমার। ঘোর
আপত্তি। আপনি যান! দয়া করে আপনি
রুমে যান! ছাদে আপনার জায়গা নেই
কোন। কেননা এই ছাদের পুরো’টাই
এখন আমার দখলে।

পূর্বের দাঁড়ানো স্থানে ফিরে যায় শুভ্র। তাকে অনুসরন করে ভীরু পায়ে তার ঠিক পাশেই এসে দাঁড়ায় নীলিমা। নিরবতা। কিছুক্ষণ ঘোর নিরবতা বিরাজ করে দু’জনের মাঝে।
কিছু একটা বলতে গিয়েও বার বার থেমে যাচ্ছে নীলিমা। আসলে এই মুহূর্তে সে কি বলবে আর ঠিক কি বা বলা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছে না সে।
নীলিমা’র অগোচরে আড়চোখে নীলিমা’কে একবার দেখে নিয়ে আবারো মূর্তির ন্যায় দুরের রাস্তায় জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্টের দিকে তাকিয়ে শুভ্র।
শুভ্র’র সে দৃষ্টি অনুসরন করে নীলিমা’ও তাকায় ল্যাম্পপোস্টের দিকে।
অকস্মাৎ শুভ্র’র কিছু বুঝে উঠা’র আগেই আবৃতি করতে শুরু করে-

তোমার শহরে লাখো মানুষের
আনাগোনা।
প্রতিদিন শত শত মানুষ
তোমার শহরে যাচ্ছে;
কেউ বেড়াতে, কেউবা কাজের তাগিদে।
খবরের কাগজেও প্রায়’ই দেখি সেই শহরের নাম,
যে জনবহুল শহরে তোমার হাত ধরে একদিন আমি হেঁটেছিলাম।
সহস্র ভীড় উপেক্ষা করে-
অজস্র মিনারে, সৌধে, রাজপথ, অলিগলি, বিলাসবহুল রেস্তোরায়, রমনার বটমূলে ঘুরে আমায় নিয়ে সেদিন’টি তুমি কাটিয়েছিলে;
অনর্গল কথা বলে,
হেসে হাসিয়ে পথ হেটেছিলে।
দীর্ঘ আঙ্গুল উঁচিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয়ের সাথে আমায় পরিচয় করাচ্ছিলে।
আর আমি?!!!
সেসব দেখার ছলে তোমাকেই দেখছিলাম।
পায়ের আঙ্গুল ঘেষে ইয়া বড় বড় সব গাড়িঘোড়া,
দুর্দান্ত গোধূলী ছিল আমাদের উষ্ণ কাঁধ ঘেষে।
গাড়িচাপা পড়ব ভেবে হ্যাচকা টানে
সামলাচ্ছিলে ভ্যাবাচ্যাকা এই আমাকে।
অলস আমি, কিছুদূর হেঁটেই ক্লান্ত।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে, ঘরে ফিরতে চাই।
সেদিন আসবার কালে পরম আদরে
কাছে টেনে এই আমার চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে ছিলে,
নাকে, মুখে, গালে, কপালে ভালোবাসার এক উষ্ণ পরশ এঁকে দিয়েছিলে।

জানতাম সইবেনা;
কোনকালে এত সুখ সয় নি আমার।
যে শহর তোমার পথের ভাগ দিয়েছিল এই আগন্তুককে,
সে-ই পথ ভাগ করে দিল তোমার আমার।
কত অবলীলায় আজ তুমি
সেই পথে হাঁটো অন্য ছায়ার সঙ্গে,
অন্য আঙুল ধরে!
কত অনায়াসে হেসে উড়িয়ে দিয়েছ স্মৃতির ফানুস!
পথক্লান্ত আমি কখন ঘোরের মধ্যে ফিরেছি এখানে,
নিজেই জানি না।
তবু আজও……
তোমার শহরের নাম
অথবা কোন জনসমুদ্রে ঢাকা রাস্তার ছবি আমাকে থামায়;
সেদিনের সেই পড়ন্ত বিকেলে ফেলে আসা
আমাদের একমাত্র জীবন্ত অধ্যায় আমাকে আজো কাঁদায়।

সেই কখন থেকে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় নীলিমা’র দিকে তাকিয়ে শুভ্র। সেদিকে দৃষ্টি নেই নীলিমা’র। নীলিমা’র দৃষ্টি দুর বহুদুরে।আবৃতি শেষেও মিনিট দুয়েক চুপচাপ পূর্বের ন্যায় একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল নীলিমা। তারপর শুভ্র’র দিকে না তাকিয়েই একটা সময় রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পিছু ডেকে বলে উঠে শুভ্র-

‘কত যে ছবি জমা থাকে মনে কেই বা তার খবর রাখে…’

ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পূর্ব স্থানে গিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা। পাশাপাশি একই ভঙ্গিতে গম্ভীর দৃষ্টিতে দুরের ল্যাম্পপোস্টের দিকে তাকিয়ে শুভ্র’ও। আর সেদিকে তাকিয়েই শুরু হয় দুজনের কাব্য কথন। শুরু’টা শুভ্র’ই করে…

— বালিকা তোমার মনের মাঝে
কেন আজি শ্রাবণ ব্যথা
সরিয়ে তারে শুনাও আজি
বসন্তের’ই ফাগুন কথা।
— যে গেছে সে কি আসবে ফিরে,
চোখের জলে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না…
— জল ভরা মেঘে
যদিও শ্রাবন অবিরত,
তবুও বসন্ত বয়ে চলে চুপিসারে
ফল্গুধারার মত……
— তুমি চলে গেলে,
বসন্তের ছোঁয়া মুছে গেছে
জীবন থেকে।
বাইরে আকাশে
আজও শিমুল পলাশ রঙ সাজায়,
মন মরুতে চর জেগেছে
শ্রাবন রাতে ভিঁজিয়ে যায়।
তোমাকে ছুঁয়ে থাকা স্বপ্নগুলো
আজও আমায় গুমরে কাঁদায়,
এখন জেনেছি আমি
সে আর আসে না ফিরে
যে চলে যায়।
— বসন্ত চিরকাল আসে
আজও এসেছে।
মনের জানালা খুলে দ‍্যাখো
তার ছোঁয়া পাবে।
আমাদের সৌভাগ্য
বসন্ত আমাদের দরজায় আসে,
আমাদের তার দরজায় যেতে হয় না।
— আমার দরজায় আর আসে না …
— আশাহত হতে নেই।
একটু পরে কি হবে,
তুমি আমি কেউ জানিনা!
আশায় তো জীবন, তাই না?

‘হ্যাঁ, সে আশাতে’ই তো বেঁচে থাকা।’
একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীলিমা।
পাশ থেকে শুভ্র’র জবাব, তারপর! রাত্রি তো অনেক হলো। রুমে যাবেন না?
শান্ত গলায় নীলিমা’র জবাব, হ্যাঁ! চলুন…

দ্রুতপায়ে ছাদ ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় নীলিমা। তাকে অনুসরন করে শুভ্রও যাচ্ছে নিজ রুমে….

#

ভালোবাসার বন্ধন

0

ভালোবাসার বন্ধন

  সাহরিয়ার শেখ সাব্বির

এ কোন মায়ায় তুমি জড়ালে আমায়,

দূরে যেতে চাইলেও পারি না ভুলে থাকতে তোমায়।

ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ আমি,

আর এই জগতের সেরা সৌন্দর্য্য তুমি।

কাছে টেনে ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও আমায়,

ভালোবাসি একটু বেশি আমি যে তোমায়।

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৬)

0
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৬)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পরদিন জিনিসপত্র গুছিয়ে প্রস্তুত নীলিমা আন্টির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আন্টি’র কোলের ঐ ছোট্ট বাচ্চা’র কপালে চুমু খেয়ে পাঁচ বছরের ছোট্ট সিয়ামের গালটা টেনে দেয়। — তারপর! ভাইয়া মনে থাকবে তো কি বলেছি আমি? — কি বলেছো?(বোকার মতো) — মন দিয়ে পড়াশুনা করবা। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করবা আর দুষ্টুমি করবা না, মনে থাকবে? — হ্যাঁ, মনে থাকবে। — এইতো গুড বয়! ঘড়িতে একনজর তাকিয়ে নীলিমা ফিরে তাকায় আন্টির দিকে। — আংকেল-আন্টি! মাগরিবের আজান দিয়ে দিবে। আমি আসি তাহলে। — আচ্ছা, মা যাও! ঐখানে পৌঁছে একটা কল দিও।(আন্টি) — আচ্ছা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন আর ওকে(কোলের শিশু) নিয়ে বাহিরে এসো না তুমি। আমি এগুলো(জিনিসপত্র) গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি।(আংকেল) — আচ্ছা, ঠিক আছে! নীলিমা মা! ভার্সিটি ছুটি দিলেই এসো কিন্তু… — ঠিক আছে, আসি! আসসালামু আলাইকুম।(নীলিমা) — ওয়ালাইকুম আসসালাম।(আন্টি) বইয়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে নীলিমা। আরো একটা বিশালাকার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নামে মন্তু আংকেল। রেখে আসে গাড়িতে। ছুটে এসে নীলিমা’র হাতের ব্যাগটাও নিয়ে যায়। গাড়িতে রাখে। ততক্ষণে নীলিমা সেখানে হাজির হয়। দোতলা’র জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা আন্টি’র দিকে একবার তাকিয়ে আংকেলের দিকে ফিরে তাকায়। — আসি আংকেল। — ঠিক আছে। আর এটা রাখো। (১০০০টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে) — আরে না! কি করছেন আংকেল! আমার টাকা লাগবে না। টাকা আছে! — তুমি না চিপস আর ঝালমুড়ি খুউব পছন্দ করো?! এটা তার’ই জন্য দিলাম। বিকেলে যখন ঝালমুড়ি ওয়ালা আসবে। তখন কিনে খেও। না চাইতেও টাকা’র নোট’টা হাতে ধরিয়ে দেয় মন্তু আংকেল। নীলিমা সালাম দিয়ে বিদায় নেয়। গাড়িয়ে গিয়ে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। চেনা মানুষজন আর চেনা জায়গা রেখে নীলিমা যাচ্ছে অচেনা গন্তব্যে। আর তারই কল্পনা’য় কিছুক্ষণের জন্য বিভোড় হয়ে যায় নীলিমা। “মা জননী নামেন! আইয়্যা পরছি।” মধ্য বয়স্ক ড্রাইভারের ডাকে ঘোর কাটে নীলিমা’র! একপলক বাহিরে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় ড্রাইভারের দিকে। জবাব দেয়, ‘জ্বী, আংকেল! নামছি…’ ব্যাগ হাতে নামতে যাচ্ছিল নীলিমা। পাশ থেকে ড্রাইভারের জবাব, ব্যাগ রাখেন মা! আপনি ভিতরে যান। এসব আমি নিয়া আইতাছি… হাসোজ্জ্বল মুখে নীলিমা’র জবাব, সমস্যা নেই আংকেল! আমি নিতে পারবো এটা। আপনি না হয় ঐ ব্যাগটা নেন। জবাব আসে, ঠিক আছে মা! নীলিমা বইয়ের ব্যাগ হাতে নেমে পরে। গেইট পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। যতটা সহজ ভাবছিল আসলে ঠিক ততটা সহজ ছিল না কাজটা। বড্ড ভারী ছিল ব্যাগটা। দরজা অবধি পৌঁছতে নীলিমা রীতিমত হাফিয়ে গেছে। ততক্ষণে ড্রাইভার ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ‘যাই! এসেই তো পরেছি। আরেকটু…’ মনে মনে কথাটা বলে যেই না নীলিমা রুমের ভেতরের দিকে মোড় নিচ্ছিল ওমনি কারো সাথে ধাক্কা লাগে। নীলিমা হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। ধরে ফেলে কেউ একজন। ‘ড্রাইভার আর দাড়োয়ান ছিল তো! আপনাকে এসব কে আনতে বলেছে?’ বন্ধ চোখ খুলে তাকায় নীলিমা! শুভ্র’কে দেখে চোখ দুটো গোল মার্বেলের মতো হয়ে যায় ও’র। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্র’র দিকে। শুভ্র ছেড়ে দেয় নীলিমা’কে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া লোকটাকে ডাক দেয়। ‘চাচা! ব্যাগটা উপরে ওনার রুমে রেখে আসুন…’ জ্বী, বাবা! ব্যাগ হাতে বাড়ির কাজের লোকটা চলে যায় বিপরীত দিকে। ঘোর কাটে নীলিমা’র। আআআপনি প্রিন্সিপাল মেমের….(…)…??? পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। নিচে আসে স্বয়ং প্রিন্সিপাল মেম! “নীলিমা এসে গেছো?” — আসসালামু আলাইকুম মেম! — ওয়ালাইকুম আসসালাম। আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?! — না, মেম! কোন অসুবিধে হয়নি। — আচ্ছা! ঠিক আছে। রুমে গিয়ে ফ্রেস হও। আর তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে? এই যে! কি বলছি কথা কি কানে যায় নি? — জ্বী, মেম! যাচ্ছি… নীলিমা’র দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে সে স্থান পরিত্যাগ করে শুভ্র…. রাত্রে খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করছিল কাজের মহিলাটি। চেয়ার টেনে পাশে এসে বসে প্রিন্সিপাল মেম। নীলিমা তখন উপরে দাঁড়িয়ে। মেম সেদিকে লক্ষ্য করে ডাক দেয় নীলিমা’কে। সে কি! দাঁড়িয়ে কেন তুমি? আসো… ভীরু পায়ে নিচে নেমে আসে নীলিমা। সামনের ঐ চেয়ার টেনে বসে। হাসোজ্জল মুখে মেম এর জবাব, ভয় পাচ্ছো? বোবা চাহনীতে মেম-এর দিকে তাকিয়ে নীলিমা। আবারো হাসোজ্জল মুখে মেম-এর জবাব, লজ্জা বলো আর ভয় বলো সবকিছুকে দুরে সরিয়ে রাখো। আমারো মেয়ে আছে। তোমার মতই। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছে। আর যেটা বলছিলাম! এটা তোমার নিজের বাড়ির মতই। যখন যা লাগবে নিঃসঙ্কোচে বলবে আমাকে। মনে থাকবে? নীলিমার ছোট্ট জবাব, ‘জ্বী, মেম!’ হাসিমুখে মেম-এর জবাব, ঠিক আছে! এবার খাওয়া শুরু করো… নীলিমা খাওয়া শুরু করতেই দ্রুতগতি’তে কোথা থেকে যেন ছুটে আসে শুভ্র। তারপর মেম এর পাশের চেয়ারটাই বসে। ইনি আবারো এখানে? তখন না মেম ডাকলো? তবে কি ওনিও এ বাসা’য়…(…)…??? কৌতূহলে নীলিমা কিছুক্ষণ শুভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর একসময় কৌতূহল মেটাতে খাবার খাওয়ার মাঝেই বলে ফেলে, মেম ওনি কি আমার মতই এ বাসায়…(….)…..??? পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। বিষম খায় শুভ্র। প্রিন্সিপাল মেম শুভ্র’র দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে নীলিমা’র দিকে ফিরে তাকায়। ‘ না নীলিমা! ও আমার ছেলে….!’ ‘ওহ, আচ্ছা ‘ বলে লজ্জানত মুখে নীলিমা ফিরে তাকায় শুভ্র’র দিকে। হুম! খাবারের সময় কথা বলতে হয় না। খাবার খাও এখন… দ্বিগুন লজ্জায় শুভ্র’র থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিজের মাথা নিচু করে তাকায় নীলিমা…

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

1
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

লাইব্রেরীতে বসে পত্রিকা পড়ছিল নীলিমা। হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে শাকিলা। ‘নীলি! প্রিন্সিপাল মেডাম তোকে ডাকছে।’ ‘আমাকে? প্রিন্সিপাল মেম? কেন?’ প্রশ্নগুলো করতে করতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। নীলিমা’র সাথে শাকিলা’ও উঠে দাঁড়ায়। জবাব দেয়, সেটা তো আমি জানি না। তোকে যেতে বলেছে তাই বললাম। — এখন’ই? — হ্যাঁ, এখন’ই যেতে বলেছে। — ঠিক আছে। আমি আসছি। — হু! ধীর পায়ে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা। বুকটা ধুরুধুরু কাঁপছে ওর। ভেবে পাচ্ছে না সে প্রিন্সিপাল মেম হঠাৎ’ই কেন ওকে ডাকবে ওকে! কি হতে পারে এভাবে জরুরী তলবের কারণ? খাতাপত্র ঘাটছিল মেডাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় অনুমতি নেয় নীলিমা। ‘আসতে পারি মেম?’ মাথা তুলে তাকায় প্রিন্সিপাল মেম। হাসোজ্জ্বল মুখে জানায়, ওহ, তুমি! আসো, আসো! কাঁপা শরীরে ভেতরে প্রবেশ করে নীলিমা। মেডামের ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ‘আসসালামু আলাইকুম, মেম!’ — ওয়ালাইকুম আসসালাম। দাঁড়িয়ে কেন? চেয়ার আছে। বসো… — না মেম! সমস্যা নেই। — হু! তুমি তো অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তাই না? — জ্বী, মেম! — কোন ডিপার্টমেন্টের জানি? — অর্থনীতি! — অর্থনীতি! খুব ভালো একটা সাবজেক্ট। — (নিশ্চুপ) — বাসা কোথায় তোমার? — নরসিংদী! — অনেকদূর! — জ্বী, মেম! — কোথায় উঠেছ? — আপাতত আন্টির বাসায় উঠেছি! — গত ২দিন যাবৎ শুভ্র’র মুখোমুখি হতে তোমায় বেশ কয়েকবার দেখেছি। কোন সমস্যা? — ইয়ে মানে মেম সমস্যা… — মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি তোমার কোন সমস্যা হয়েছে কি? — মেম আমি আসলে ঢাকা শহরে এর আগে একা কখনো আসিনি। এবার’ই প্রথম একা আসলাম। আমার একটা বাসা দরকার ছিল। যেখান থেকে আমি পড়াশুনা আর পাশাপাশি তার খরচটা যোগাতে পারি। শুনেছি শুভ্র ভাইয়া এ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই ওনার শরণাপন্ন হয়েছিলাম যদি কোন হেল্প করতে পারে। — এই নাও! এই কাগজে তোমার বর্তমান ঠিকানা আর নাম্বারটা লিখো… — জ্বী, মেম… — (……..) — মেম! (কাগজটা এগিয়ে দিয়ে) — ওকে, তুমি এখন আসতে পারো। — জ্বী, আসসালামু আলাইকুম মেম। নীলিমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীলিমা বেরিয়ে যেতেই দরজা’র সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ্র। ‘আসতে পারি মেম?’ — হ্যাঁ, আসো! — ……….. — বসো।(চেয়ার দেখিয়ে) — (নিশ্চুপ) — দুপুরে খেয়েছ? — নাহ! — খাওনি কেন? — খাবার আনিনি।(নিচু হয়ে) — এই যে। নাও। কোন কথা ছাড়া’ই দ্রুত খেয়ে নাও। বিরতি শেষ হওয়া’র ১৫মিনিট আছে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) —- (চুপচাপ খাওয়া শুরু করে শুভ্র) খাওয়া শেষে উঠে যাওয়া’র সময় পিছন থেকে ডেকে উঠে, এই শুনো! — জ্বী, মেম! — তনিমা নাকি কি যেন নাম মেয়েটা’র? যার জরুরী ভিত্তিতে বাসা’র প্রয়োজন?! — জ্বী, মেম! ওর নাম নীলিমা… — হ্যাঁ, যাই হোক! ওকে বলো কাল থেকে ও আমাদের বাসায় থাকবে। ও যাতে ওর সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রেডি থাকে। কাল আমার ড্রাইভার যাবে ওকে আনতে। আর তাছাড়া আমি ওকে রাতে কল দেবো। — জ্বী, মেম! — ওকে, এখন তাহলে ক্লাসে যাও। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে আতিকের পাশে গিয়ে বসে শুভ্র। অজানা কারণে চোখে মুখে ওর মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। প্রশ্ন করে বন্ধু আতিক- ” কিরে! সেই কখন থেকে দেখছি একা একা হাসছিস! ঘটনা কি?” — আমি??? — জ্বী, আপনি! — কখন?(স্মিতহাস্যে) — এখন! — চুপ কর! মন দিয়ে ক্লাস কর। — আচ্ছা, না বললে আর কি… ‘আতিক’ স্যারের লেকচার শুনায় মন দেয়। এদিকে শুভ্র! বেঞ্চের মধ্যে কুনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে গভীর ভাবনা’য় মগ্ন হয়ে যায়।

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (৪র্থ অংশ)

0
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র

(৪র্থ অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পরদিন ক্লাসের বিরতি চলছিল। সবাই যখন যে যার মতো বাহিরে চলে যায় নীলিমা তখন বই নিয়ে চুপটি করে বসে। বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছিল নীলিমা। পাশে এসে বসে বান্ধবি শাকিলা। শাকিলা’কে দেখে বইটা বন্ধ করে ফেলে নীলিমা। কিছু বলবি? ইয়ে ফোনের ঐ ছেলেটা কে? সত্যি’ই কি তোর বয়ফ্রেন্ড? জবাবে ক্ষাণিক হাসে নীলিমা। ভ্রু-জোড়া কিঞ্চিৎ বাকা হয়ে যায় শাকিলা’র। আশ্চর্য! হাসির কি বললাম এখানে? – কিছু না। – তো হাসির কারণ কি? – ছাড়তো। তারপর আন্টি কেমন আছে? – নীলি! কথা ঘুরাবি না একদম। – ও আমার প্রাক্তন! – মানে এক্স বয়ফ্রেন্ড? – হু, – ব্রেকআপ হলো কিভাবে? – কারণ জানতে চাস না শাকিলা। ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করে এখনো। – এতটা ঘৃণা?! – হ্যাঁ, ঘৃণা করি আমি ওকে। খুব খুউব ঘৃণা করি… – তাহলে এভাবে ওয়ালপেপারে সেট করে রাখার মানে কি? ডিলিট করে দিলেই পারিস। – নাহ, ডিলিট করবো না আমি। – কেন? – ওকে আমি ভুলতে চাই না। সারাজীবন ঘৃণা করে বাঁচতে চাই। ওয়ালপেপারেই থাকবে ও। যতবার দেখবো মনে মনে ঠিক ততবার গালি দেবো। আর এটাই হবে ওর প্রাপ্য। – আমি কি জানতে পারি আসলে ঠিক কি হয়েছিল? – ও একটা প্রতারক শাকিলা। – ………. – ও আমাকেও ভালোবাসতো আবার একইসাথে আমার বান্ধবিকেও আই লাভ ইউ বলতো। – মানে এক সাথে দুইজনের সাথে প্রেম? – হ্যাঁ… – তারপর? – তারপর যখন আমরা দু’বান্ধবি বিষয়টা জানতে পারি তখন পরিকল্পনা করি। হিয়া ওকে দেখা করার জন্য ডাকে। ও আসে। কথা ছিল ও হিয়া’র সাথে দেখা করবে। কিন্তু সেখানে সেদিন আমাদের দুজনকেই দেখতে পায়। – ইন্টারেস্টিং তো! তারপর… – তারপর আর কি… ও আমাদের দু’জনকেই অস্বীকার করে। – মানে??? – মানে ওর স্পষ্ট কথা, ও আমাদের কাউকে চিনে না। – তারপর? – কেটে পড়ে… – পরে কথা হয়নি আর? – নাহ! হিয়া’রও অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। আর আমিও সিম চেঞ্জ করে ফেলি। – সম্পর্কের ইতিটা তবে সেখানেই ঘটে? – হ্যাঁ… – স্যরি, অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললাম। – শাকিলা! জীবন বহতা নদীর মতো। কারো জন্য থেমে থাকে না। সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে চলছে বিরামহীনভাবে। ভালোই আছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় কি যেন নেই। তখন ডেল কার্নেগীর কথা মনে হয়। তিনি লিখেছেন, একজন বিশেষ লোকের ভালোবাসা হয়তো তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মন থেকে ভালোবাসা নামক বস্তুটি কখনো হারায় না। সেটা আরেকজনকে খুঁজে নেয়। একজনের প্রতি ভালোবাসা আরেকজনে সঞ্চার হয়ে যায়। জেনে রেখো আরেকজন আছে। তাই নষ্ট হলাম না। ধ্বংস করলাম না নিজেকে। পরদিন প্রতিদিনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরী করে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয় নীলিমা। প্রথম ক্লাসের বিরতি শেষে সবাই তখন মাঠে আড্ডায় মেতে উঠেছিল। দুর থেকে নীলিমা’কে আসতে দেখে’ই আড্ডার মাঝ থেকে উঠে পড়ে শাকিলা। নীলিমা কাছে আসতেই প্রশ্ন করে, কিরে? এত লেইট করলি যে? মাঠের মাঝেই বসে পরে নীলিমা। নীলিমা’র অনুকরণে নিঃশব্দে শাকিলা’ও বসে পরে পাশে। শাকিলা’র হাতে ছিল কাগজের পাখা। নীলিমা সে পাখা হাতে নিয়ে বাতাস করতে শুরু করে। পাশ থেকে শাকিলা’র প্রশ্ন- ‘কিরে? বাসা পেয়েছিস?’ পাখাটা হাত থেকে পাখা’টা নামিয়ে ফেলে নীলিমা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানায়, পাইনিরে। — নীলি! তোকে আমি বলছিলাম শুভ্র ভাইয়া’র সাথে কথা বলতে…! — হাঃ হাঃ বড় ভাই! তোদের ঐ বড় ভাই আজ দু’দিন ধরে নিখোঁজ। — মানে কি? — মানে আর কি? ওনাকে আমি কালকে সারাদিনে একবারো ক্যাম্পাসে দেখিনি। তারপর আজ এই যে এত লেইট হলো ওনার জন্য শুধু। ওনাকে খুঁজতে খুঁজতে এখন আমি ক্লান্ত…. — এত সকালে ওনাকে কেন খুঁজছিস? — কি জন্য আবার? ভাবছিলাম আজকে সকাল সকাল’ই বের হবো। — এখন তো ক্লাসটাও মিস করে ফেললি! — বাদ দে! কয়টা বাজে? — এখন তো ১১টা বেজে ৭মিনিট। ২য় পিরিয়ড শুরু হওয়ার এখনো ৮মিনিট বাকি আছে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) — ভাল্লাগছে না! আচ্ছা, রুমে চল… — চল…. একসাথে দুটো ক্লাস শেষ করে তবে’ই বাহিরে আসে নীলিমা। এদিকওদিক তাকিয়ে নীলিমা’র দু’চোখ কেবল শুভ্র’কেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও পায়নি। বিষণ্ন মনে বকুলতলায় বসেছিল নীলিমা। কোথা থেকে যেন ছুটে আসে শাকিলা। হাপাতে হাপাতে জানায়, শুভ্র ভাইকে প্রিন্সিপাল মেডামের রুমে দেখে এসেছি। তুই তাড়াতাড়ি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়া….! বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। প্রিন্সিপালের রুমে? — হ্যাঁ! ঐখানে বসে কিছু একটা খাচ্ছে দেখলাম! — খাচ্ছে? তাও প্রিন্সিপালের রুমে? — সেটাই তো দেখলাম। — আচ্ছা, ধন্যবাদ! তুই তাহলে এখন যা…. — ওকে! বাই… — আল্লাহ হাফেজ। বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে নীলিমা অফিসের সামনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। মিনিট দশেক পর বেরিয়ে আসে শুভ্র। ডানে তাকিয়ে নীলিমা’কে দেখে বিপরীত দিকে মোড় নেয় শুভ্র। ঐপাশের গেইট দিয়ে বেরিয়ে পরে বাহিরে। দ্রুত পায়ে পিছন দিয়ে ছুটতে থাকতে নীলিমা। সেটা দেখে শুভ্র আরো দ্রুত হাটা শুরু করে। ব্যর্থ নীলিমা এবার পেছন থেকে ডাক দেয়, ভাইয়া…! ডাক শুনে গম্ভীর মুখে পেছনে ফিরে তাকায় শুভ্র। ছুটতে ছুটতে কাছে যায় নীলিমা। সালাম দেয়। — আসসালামু আলাইকুম! — ওয়ালাইকুম আসসালাম। — আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান হয়ে গেছি ভাইয়া। — কেন? — ঐ যে মনে নেই আপনার? আপনি বলছিলেন আমাকে বাসা খুঁজে দিবেন! — হ্যাঁ, মনে পড়ে’ছে! — তো যাবেন এখন? — স্যরি, নীলিমা! যেতে পারবো না আমি। — যেতে পারবেন না মানে? — মানে আমার কাজ আছে। আপনি যান! আর বাসা খুঁজা এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। — ওহ, আচ্ছা! — হু, আসি আমি। শুভ্র চলে যায়। বিষণ্ন মনে নীলিমা কতক্ষণ সে স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর সামনের দিকে পা বাড়ায়।

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (৩য় অংশ)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র (৩য় অংশ)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র (৩য় অংশ)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(৩য় অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পুরো এলাকা ঘুরে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে ফিরে আসে ওরা। কাঙ্খিত বাসা খুঁজে পায়নি নীলিমা। শুভ্র ফিরে তাকায় নীলিমা’র পানে। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় বয়ে গেল। লাঞ্চের টাইমও পেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন জায়গা। রাস্তাঘাটও তেমন চিনেন না। বাসায় আপনার জন্য চিন্তা করবে সবাই। আপনি তাহলে আজ যান। ইনশাআল্লাহ! আগামীকাল আবারো আমরা বের হবো। মলিন মুখে শুকনো হাসির রেখা ফুটে উঠে নীলিমা’র। পুরোটা দিন আমার সাথে থেকে আমার কাজে সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ। আসি। আসসালামু আলাইকুম। সালাম দিয়ে পায়ে পায়ে মন্থর গতিতে সামনের দিকে এগুচ্ছিল নীলিমা। অকস্মাৎ পিছু হটে। ফিরে আসে পূর্বের জায়গায়। শুভ্র তখনো সে স্থানে দাঁড়িয়ে। নীলিমা’কে দেখে প্রশ্ন করে, কিছু বলবেন? নীলিমা শুভ্র’র হাত ঘড়িটির দিকে ইঙ্গিত করে। প্রশ্ন করে, কয়টা বাজে? হালকা হাসিতে শুভ্র’র জবাব, এইতো! ২টা বেজে ১৭মিনিট। ক্ষাণেক ভেবে নীলিমা’র প্রশ্ন, ঢাকা শহরে একেলা আমার এটাই প্রথম পদার্পণ। যদিও এর আগে বহুবার এসেছি। কিন্তু সেটা একা নয়। আরো ছোট ছিলাম তো। সবসময় আমার হাতটা ধরে কাউকে না কাউকে ধরে রাখতেই হয়েছে। জবাবে কিচ্ছু বলেনি শুভ্র। নীলিমা আবারো বলতে শুরু করে, আসলে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে শহরটা একটু ঘুরে দেখতে। ঘড়ি’র সময় বলছে, সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক দেরী। তো যাবেন আমার সাথে? অবশ্য যদি আপনার সমস্যা না হয়। মনের খুশিতে আত্মহারা শুভ্র। তথাপি সে আনন্দ ভেতরে চেপে রাখে। সাড়া দেয় নীলিমা’র ডাকে। একটা রিক্সা ডাকে। রিক্সায় চেপে দুজন রওনা দেয়। দুজনেই নিরব। রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। হঠাৎ ঝাকুনিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল নীলিমা। ধরে ফেলে শুভ্র। সোজা হয়ে বসে নীলিমা। শুভ্র তখনো নীলিমা’র হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। স্তব্ধ নীলিমা। মুঠোবন্দি হাতটা মৃদু কাঁপছে ওর। ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা চলছে কিন্তু পারছে না। একটা সময় ঘোর কাটে শুভ্র’র। ছেড়ে দেয় হাতটা। ক্ষাণেক মাথা চুলকিয়ে ‘স্যরি’ বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। জবাবে কিচ্ছু বলেনি নীলিমা। মিনিট ক্ষাণেক পর সোজা হয়ে বসে শুভ্র। সামনের দিকে তাকিয়ে নীলিমা। শুভ্র লক্ষ্য করল নীলিমা’র নাকের ডগায় মুক্তোদানা’র ন্যায় জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শুভ্র’র বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল মাঝের দূরন্তটুকু কমিয়ে নীলিমা’র কাছে যেতে। আলতো করে ওর হাত দু’খানি ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই অত্যন্ত সংগোপনে মনের ইচ্ছেকে ভিতরেই ধামাচাপা দিয়ে দেয়। ইচ্ছেগুলোকে বুকের ভেতরে ধামাচাপা দিলেও নীলিমা’র সাথে শুভ্র’র চোখাচোখি হয়েছে বেশ কয়েকবার। নীলিমা যখন এদিকওদিক তাকাতো, শুভ্র তখন নীলিমা’র দু’চোখে বিচরণ করতো। আবার কখনো বা ধরা পড়ে যেত। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছালো ওরা। নদীর পাড়ে কোলাহল মুক্ত একটি জায়গায় গিয়ে বসল। কাটালো স্বপ্নময় একটা দিন। তারপর সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফিরলো। পরদিন প্রতিদিনকার ন্যায় নির্ধারিত সেই স্থানে’ই গোল বৈঠকে বসে শুভ্র’র বন্ধু’রা। শুভ্র’র সবচেয়ে কাছের বন্ধু আতিক। আর সেই আতিকের থেকে সবাই ইতোমধ্যে জেনে গেছে চঞ্চল শুভ্র’র হঠাৎ এভাবে বদলে যাবা’র কারণ। তাই তখনকার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ছিল ‘শুভ্র…’ আলোচনা’র এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং শুভ্র। ওকে দেখে সবাই চুপসে যায়। আতিক ওর জায়গা থেকে ক্ষাণিকটা সরে জায়গা করে দেয় বসার জন্য। ওখানে বসে’ই সামনে বসে থাকে তাসনিয়ার দিকে দৃষ্টি যায় শুভ্র’র। কি ব্যাপার? তুই হাসছিস যে?! আরে দোস্ত! কই হাসলো ও? ও তো গতকাল থেকেই মুখে তালা লাগিয়েছে। পাশ থেকে রুবেলের জবাব। মুখে রাগের আভা ফুটে উঠে শুভ্র’র। ফিরে তাকায় রুবেলের দিকে। আর কত? আর কত দালালী করবি ওর হয়ে? আর একটা কথা বলতো! তোর এত জ্বলে কেন’রে? বিকৃত স্বরে রুবেলের জবাব, ওরে! আমার কেন জ্বলবে? আমি তো শুধু…. যখন’ই ওরে কিছু বলি তুই ঝাপিয়ে পড়িস আমার উপর। যা নয় তা বলিস। আবার তোর কিছু হলে সবার আগে ও এগিয়ে আসে। ঘটনা কি? মুখ খুলে তাসনিয়া__ — মানে কি শুভ্র? তুই তখন থেকে কিসব উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছিস…?! — উল্টাপাল্টা নয় যা দেখছি তাই বলছি। — তোর দেখার মধ্যে ভুল আছে শুভ্র। আমি শুধু রুবেলের বিপদে নয়, সবার বিপদে ঝাপিয়ে পড়ি। — ওরে বাহ্! তাই নাকি…?! — কেন? কোন কনফিউশন আছে?! — কেন? বললেই কি তুই কনফিউশন দুর করে দিবে নাকি? — তুই শুধু বল কি করতে হবে তোর জন্য? আমি সেটাই করে দিতে রাজি। — বেশী কিছু করতে হবে না। আপাতত ঐ যে লাল ড্রেস পরোয়া মেয়েটা আছে না আমার হয়ে তাকে গিয়ে প্রপোজ করবি। বলবি যে, শুভ্র তোমাকে ভালোবাসে। — মানে কি? (বিস্ময়ে হতবাক তাসনিয়া) — কি? চুপসে গেলি যে? খুব না বললি… — ওয়েট! কোন মেয়েটাকে বলতে হবে?! — ঐ যে লাল ড্রেস, মাথা’য় ওড়না দেয়া… — ও মাই গড! ঐ টুনটুনি পাখিকে! আগে বলবি না! তোরা বস। আমি এখন’ই আসছি… — এই তাসু, যাসনে। মজা করছি আমি…. — হাঃ হাঃ হাঃ (সবাই উচ্চস্বরে) — আল্লাহ! এ তো সত্যি সত্যি চলে গেছে… — যাবে না তো কি করবে? এভাবে কেউ কাউকে পঁচায়? না হয় একটু আমার বিপদে এগিয়েই আসে। তাই বলে…(রুবেল) — চুপ কর রুবেইল্যা! — …… —- উফ! এ আবার না জানি কি করে বসে! মাঠের মধ্যিখানে পত্রিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে তার উপর গোল করে বসেছে নীলিমা এবং তার ক্লাসমেট’রা। সেখানেই গোল বৈঠকের ফাক দিয়ে তাসনিয়াও বসে পড়ে নীলিমা’র পাশে। মিশুক তাসনিয়া মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পরিচিতি পর্ব সেরে ভাব জমিয়ে ফেলে নীলিমার ক্লাসমেটদের সাথে। বাকি রইল নীলিমা। নীলিমা’র ক্লাসমেট’দের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাসনিয়া তাকায় নীলিমার দিকে। ‘বাহ্! খুব সুন্দর তো তোমার ডায়েরী’টা! কোথা থেকে কিনেছ এটা?’ নীলিমা’র সাথে তাসনিয়া’র গল্পের শুরুটা এখান থেকেই। তারপর অনেক অনেক কথা হয়। সেই অনেক কথার ফাঁকে তাসনিয়া মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে নীলিমা’কে ঠিক কিভাবে বলবে শুভ্র’র কথা! মনে মনে আল্লাহ নাম জপে কাঙ্খিত কথাটা বলার জন্য মুখ খুলে তাসনিয়া। আচ্ছা, নীলিমা শুনো… বিনীত ভঙ্গিতে নীলিমা’র জবাব, জ্বী আপু! বলুন… — আসলে তোম….(….)….??? — জ্বী, বলুন… — একমিনিট। (তাসনিয়া’র দৃষ্টি যায় নীলিমা’র ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে। এক সুদর্শন যুবকের পিকচার নীলিমা’র ফোনের ওয়ালপেপারে সেট করা। সেটা দেখে থেমে যায় তাসনিয়া।) — …….. — একটা প্রশ্ন করবো নীলিমা? — কেন নয়? অবশ্যই…. — স্ক্রিনের ঐ ব্যক্তি’টি কে? আমি কি জানতে পারি? — (নীলিমা নিশ্চুপ) — বয়ফ্রেন্ড?! — হু…(নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়) — কি করে ভাইয়া? — ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করে। — কত বছরের রিলেশন? — সাড়ে তিন বছর। — ওহ, আচ্ছা! আমার ক্লাস আছে। আজ তাহলে আসি… — আল-বিদা! মন খারাপ করে শুভ্র’র পাশে গিয়ে বসে তাসনিয়া। ওপাশ থেকে আতিকের প্রশ্ন, কিরে? বলেছিস? কি বলল? নিশ্চয় প্রিন্সিপালের কাছে বিচারের হুমকি দিয়েছে? পাশ থেকে নিপা’র জবাব, আরে ব্যাটা চুপ কর! তুই দেখছি রিলেশন শুরু’র আগেই ভেঙে দিবি…! সুমাইয়ার প্রশ্ন, তাসু! রিপ্লাই কি আসলো? পজিটিভ নাকি নেগেটিভ? কিছুটা কৌতূহলের সাথে রুবেলের জবাব, তারপর তাসু বেবি! কি বললো আমাদের ভাবি সাহেবা? রাগটাগ দেখায়নি তো?! মন খারাপ করে তাসনিয়া’র জবাব, ওই মেয়ে’র বয়ফ্রেন্ড আছে….! কিহ? একসাথে সবাই লাফিয়ে উঠে। চুপচাপ সবার কথা শুনছিল শুভ্র। অকস্মাৎ তাসনিয়া’র এ হেন কথা শুনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কিছুটা কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করে তাসনিয়া’কে, মানে কি? তুই সত্যি সত্যি ওকে আমার কথা বলে এসেছিস নাকি? অকপটে তাসনিয়া’র জবাব, জ্বী! বলে এসেছি। নিপা’র প্রশ্ন, আসল ঘটনা কী? একটু ঝেড়ে কাশলে হতো না? শুকনো কাশি দিয়ে নড়ে বসে তাসনিয়া। তারপর সবটা খুলে বলে। সব শুনে মাথা নিচু হয়ে যায় শুভ্র’র। বন্ধু-বান্ধব’রা যে যার মতো এ বিষয়কে কেন্দ্র করে হাসাহাসিতে মেতে উঠেছে। তখনো শুভ্র বিষণ্ন মনে নিচের দিকে তাকিয়ে। অজানা কষ্টে ভেতরটা দুমড়ে, মুচড়ে যাচ্ছে ওর। কাঁধে হাত রাখে আতিক। মলিন মুখে সেদিকে ফিরে তাকায় শুভ্র। ‘চল! ওদিকটাই হেটে আসি…’ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ্র। আতিকের সাথে ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়।

 

গল্পটা_নিশ্চুপ বালিকা’র

(৩য় অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’