Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2364



গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(দ্বিতীয় অংশ)

রচনা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

বাসা’য় ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে সোফা’য় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। রুমে ঢুকে বাসা’র আন্টি। আন্টিকে দেখে সোফায় শুয়া থেকে উঠে বসে নীলিমা। সালাম দেয়। ‘আসসালামু আলাইলুম, আন্টি!’ স্মিতহাস্যে সালামের জবাব দেয় মহিলা’টি। ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। তা কেমন কাটলো মা ভার্সিটির প্রথম দিন….!’ নীলিমা’র জবাব, আলহামদুলিল্লাহ আন্টি! বেশ ভালো… আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি চা দিচ্ছি। কথাটি বলেই কিচেনের দিকে পা বাড়ায় আন্টি। বিকেলে বাসার ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করছিল নীলিমা। রুমে এসে উপস্থিত হয় আন্টি। কিছুক্ষণ চুপচাপ বিছানা’র এককোণে বসে থাকার পর মুখ খুলেন তিনি। প্রশ্ন করেন, তারপর?! কি করলে? কিছুই তো জানালে না… ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। অসহায় মুখে আন্টির মুখের দিকে তাকায় সে। আন্টি আবারো বলা শুরু করেন, কথাটা বলতে আমার নিজের কাছেই লজ্জা লাগতেছে কিন্তু কি করবো? আসলে মা আমাদের বাসা’টা তো দেখছো! ছোট্ট একটা বাসা। এই ছোট্ট বাসার মধ্যে তোমার আংকেল আমি, সিয়াম(০৫), আর পিচ্চিকে নিয়ে থাকা’টাই খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে তুমি…(….)….??? নীলিমা নিশ্চুপ। আন্টি আবারো বলতে শুরু করেন, ‘হ্যাঁ, মানলাম তুমি ফ্লোরেই থাকো। কিন্তু এভাবে আর কত দিন?’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীলিমা। জ্বী, আন্টি! বুঝতে পারছি। আর এটাও বুঝতে পারছি আপনাদের আমি খুব ঝামেলা’য় ফেলে দিয়েছি। আচ্ছা, দেখি কালকে কলেজে গিয়ে আশেপাশে কোথাও বাসা পাই কি না…! পরদিন ক্যাম্পাসে নিজ ডিপার্টমেন্টের কিছু মেয়েদের সাথে মাঠের মধ্যিখানে বসে নীলিমা। ক্লাসমেট’রা সবাই যেখানে গল্প-গুজব আর হাসি আনন্দে মেতে উঠেছে নীলিমা সেখানে সেই আড্ডা’র মাঝে থেকেও ডায়েরী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। এদিকে শুভ্র? বসে আছে ক্লাসে কিন্তু একটুও মনোযোগ নেই স্যারে’র লেকচারের দিকে। মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। ক্লাসে বসেও গভীর ভাবনা’য় মগ্ন শুভ্র।নজর এড়ায় না তাসনিয়া’র। শুভ্র’র থেকে ক্ষাণিকটা দুরে বসে স্যারের লেকচার শুনছিল সে। সেখান থেকে’ই ডাক দেয় শুভ্র’কে। ‘ শুভ্র, এই শুভ্র, শুভ্র…..’ সাড়া নেই শুভ্র’র। দুর থেকে এগিয়ে এসে, পাশে বসে তাসনিয়া। ধাক্কা দেয় শুভ্র’কে। চমকে উঠে পাশে তাকায় শুভ্র। ‘ তুই?’ — জ্বী, আমি! তা সম্রাট শাহজাহান কার কল্পনা’য় বিভোর আপনি? — কিসের কল্পনা?! — ন্যাকা সাজবেন না একদম। আমাকে এটা বলুন যে আপনি বাহিরে কেন তাকাচ্ছিস বার বার? কেউ আছে নাকি? — আশ্চর্য! কে থাকবে? — না মানে রুবেল বলল আপনি নাকি ১ম বর্ষের এক মেয়েকে দেখে ফিদা হয়ে গেছিলেন? — আমরা এখন ক্লাসে আছি তাসনিয়া। তাই দয়া কর। মুখে একটু তালা লাগা। — বলুন না সম্রাট শাহজাহান! মেয়েটি দেখতে কি রকম? — তাসনিয়া তুই চুপ করবি? নাকি… — কি করবেন? মারবেন? বেশ তো! তাই করেন। তারপরও তো আপনি আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন না সম্রাট শাহজাহান! তাসনিয়া’র উঁচু গলা’র কথা স্যারের কান অবধি পৌঁছতে খুব বেশী সময় নেয়নি। রাগান্বিত স্বরে শুভ্র’র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন স্যার, আমার অর্থনীতি ক্লাসে ইতিহাসের আলোচনা করছে কে? কার এতবড় সাহস? ভদ্র বালকের ন্যায় শুভ্র তাসনিয়া’র দিকে ইঙ্গিত করে। বলে দেয়, ‘স্যার! আমি নয়, তাসনিয়া…’ রাগান্বিত দৃষ্টিতে স্যার তাসনিয়া’র দিকে তাকায়। তাসনিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই স্যারের জবাব, ‘বের হও ক্লাস থেকে। এই মুহূর্তে বের হয়ে যাও আমার ক্লাস থেকে।’ তাসনিয়া চলে যায়। যাওয়া’র আগে শাসিয়ে যায় শুভ্র’কে। ‘বাহিরে আয়! তোর খবর আছে।’ ক্লাস শেষে কাঙ্খিত স্থানে গিয়ে হাজির হয় শুভ্র এবং তার বন্ধু’রা। প্রতিদিনের সেই নির্ধারিত স্থানে গিয়ে বসে। বাঁচাল তাসনিয়া গাল ফুলিয়ে সে স্থানে আগে থেকেই বসে। শুভ্র’কে দেখে ক্ষাণিকটা সরে গিয়ে বসার জন্য জায়গা করে দেয়। সবাই গল্পে মশগুল। শুধু তাসনিয়া’য় চুপচাপ বসে নিচের দিকে তাকিয়ে। ধাক্কা দেয় রুবেল। ‘কি ব্যাপার তাসু বেবি! কি হলো তোমার?’ ক্ষাণিকটা নড়ে বসে তাসনিয়া। এর ছাড়া কিচ্ছু বলেনি। গল্প থামিয়ে ফিরে তাকায় নিপা। ডাক দেয় সে’ও। ‘তাসু?! এই তাসু! কথা বলছিস না কেন? জবাব দেয় না তাসনিয়া। এবার ধাক্কা দেয় শুভ্র। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরে যায় তাসনিয়া। প্রচন্ড রাগে ফুসে উঠে সে। এই তুই আমায় ধাক্কা দিয়েছিস কেন? তোর সাহস কিভাবে হলো আমায় ধাক্কা দেয়ার? মারামারি, কথা কাটাকাটিতে মেতে উঠে শুভ্র এবং তাসনিয়া। চেঁচিয়ে উঠে সুমাইয়া। ঐ মোবাইলের পোকা আতিক্যা! ফোন রাখ, এদের ঝগড়া থামা। ফোনটা আতিকের হাত থেকে কেড়ে নেয় সুমাইয়া। বাধ্য আতিক ঝগড়া থামাতে কাছে যায়। একটা সময় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে নিজ স্থানে। বিরক্তিকর ভঙ্গিতে যে যার মতো কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। ঘটনা স্থলে হাজির হয় নীলিমা। ডাক দেয় শুভ্র’কে- আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া। থেমে যায় ঝগড়া। কান থেকে হাত সরিয়ে নেয় বাকিরা। শুভ্র এবং তাসনিয়া’র সাথে বাকিরাও ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে তাকায়। নীলিমা’কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ্র। সালামের জবাব দেয়। তারপর___ — নীলিমা? কিছু বলবেন?!!! — জ্বী, ভাইয়া! একটু দরকার ছিল। — বলুন… — এখানে না। একটু ঐদিকে প্লিজ… — ঠিক আছে। চলুন। — …………….. — …………… — ভাইয়া… — বলনু! কি হেল্প করতে পারি আমি আপনার জন্য? — আপনি তো এ এলাকার’ই, নাহ? — হু, ঐতো! পাশেই আমার বাসা। কেন? কোন সমস্যা? — সমস্যা বলতে জরুরী ভিত্তি’তে আমার একটা বাসা দরকার। — হোস্টেলে মনে হয় এখনো একটা কি দুটো সিট খালি আছে। আমি কি হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলে দেখবো? — না, না! হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা’টা চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার দরকার একটা ভালো বাসা। যেখান থেকে আমি টিউশন+পড়াশুনা দুটোই চালিয়ে যেতে পারবো। — ঠিক আছে। আমি আপনাকে কালকে জানাচ্ছি। — কালকে নয় ভাইয়া। আজকে… — আজকেই? — হ্যাঁ, আজকেই। আপনি কি আজকে আমাকে এই এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবেন? যদি কোন সমস্যা না হয়! — এখন? — হ্যাঁ… — ঠিক আছে। চলুন। — ………..

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(দ্বিতীয় অংশ)

রচনা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র ১ম অংশ

0
নিশ্চুপ বালিকা
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

১ম অংশ)

নিশ্চুপ বালিকা
 

রচনাঃ- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তির সমস্ত কার্যক্রম শেষে আগত নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ তথা নবীন বরণের আয়োজন করা হয়। আয়োজন করে উক্ত ভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র’রা। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে একজন করে নেতা থাকবে। আর সেই নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী নবীন বরণের সমস্ত কার্য সম্পূর্ণ হবে। আর সে নিয়মানুসারেই প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের নেতা’রা তাদের নিজ নিজ দল নিয়ে ভাগ হয়ে যায়। শুভ্র…! অনার্স চতুর্থ বর্ষের অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের একজন মেধাবী ছাত্র। স্বীয় মেধা, অমায়িক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুনে ভার্সিটির সকল শিক্ষকদের কাছে শুভ্র স্নেহের পাত্র। অন্যদিকে পড়াশুনা’র পাশাপাশি সাংস্কৃতিক নানা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহন তথা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে ভার্সিটির ছোট বড় সকলের কাছে শুভ্র একটি প্রিয় নাম। সর্বোপরি, ভার্সিটির বড় ভাই হিসেবেও শুভ্র বেশ পরিচিত নাম। ভার্সিটির যে কোন সমস্যা সমাধানে ছাত্র-ছাত্রী’রা সবার আগে বড় ভাই তথা শুভ্রর’র কাছে’ই এগিয়ে আসে। আর সেই শুভ্র’ই হলো অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের প্রধান নেতা। শুভ্র যেহেতু অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের নেতা তাই ওর কাজ হলো এ বছর অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়া সকল ছাত্র ছাত্রীদের বরণ। আর সে অনুযায়ী’ই একটা সুন্দর সাজানো গোছানো রুমে বরণ চলছিল। বরণের একদম শেষ পর্যায়ে রুমে এসে হাজির হয় নীলিমা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরীতে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়ায় শ্রেণীকক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে একদম পিছনের বেঞ্চে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে সে। নীলিমা! যেন এক ডানাকাটা পরী ভুল করে স্বর্গ ছেড়ে মর্তলোকে নেমে এসেছে। যার রূপ-লাবণ্য প্রতিটি মেয়ের ঈর্ষার কারণ। কিন্তু নীলিমা?!! ওর মধ্যে নেই কোন রূপের গরিমা। ভিষণ সাধাসিধে আর চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে ‘ও’। ওড়নার একাংশ সবসময় ওর মাথা’য় ঘোমটা’কারে দেয়া থাকবে’ই। সবাই যেখানে বরণের আনন্দে মেতে উঠেছে। সহপাঠীদের সাথে হাসি আনন্দ আর সেল্ফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে। নীলিমা সেখানে একা একটা বেঞ্চে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। যেন সে কোন জায়গায় আছে সেটাই অজানা। হাতে ফুল, ফাইল কিংবা মিষ্টান্ন কিছুই নেই। অনুষ্ঠানেও মন নেই মেয়েটির। নজর এড়ায় না শুভ্র’র। চোখে মুখে রাগের আভা ফুটে উঠে ওর। ভ্রু-জোড়া কিঞ্চিৎ বাকা করে কাছে যায়। কিছুটা রাগী স্বরে ডাক দেয়- ‘ এই মেয়ে! এই…’ পুরো কথা বলতে পারেনি তার আগে’ই মাথা তুলে তাকায় নীলিমা। নীলিমা’র শান্ত-স্নিগ্ধ মায়ামাখা মুখ দেখে চুপসে যায় শুভ্র। সমস্ত রাগ উবে যায় ওর। স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। মুখ থেকে কোন কথা’য় সরছে। যেন সে কথা বলা’র শক্তি হারিয়েছে। শুভ্র যখন অনেক’টা ঘোরের মধ্যে ডুবে যায় বন্ধু’রা তখন পাশে এসে দাঁড়ায়। শরীরে কিছুটা ধাক্কার সাথে প্রশ্ন করে, ‘কিরে? চল। বরণ কাজ তো সম্পূর্ণ’ই হলো।’ ঘোর কাটে শুভ্র’র! মৃদু হাসি দিয়ে বন্ধুদের দিকে ফিরে তাকায়। ‘আমাদের আরো একটা নবাগত অতিথি বরণের বাকি রয়ে গেছে। টেবিল থেকে ফুল, ফাইল আর স্কেল, কলম আর মিষ্টান্ন এদিকে এগিয়ে দে তো। বন্ধু আতিক দ্রুত টেবিলের কাছে যায়। আর টেবিল থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসে এগিয়ে দেয় শুভ্র’র দিকে। শুভ্র সেটা এগিয়ে দেয় নীলিমা’র দিকে। আগামী দিনগুলো অনেক অনেক সুন্দর হোক। শুভকামনা নিরন্তর। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। সম্মানের সহিত সেগুলো গ্রহন করে। তারপর স্মিতহাস্যে জানায়, ধন্যবাদ। ‘কই? এবার তো চল..’ বন্ধু আতিকের দিকে তাকিয়ে শুভ্র’র জবাব, হু! চল…. ক্লাস শেষে সবাই যখন বন্ধু বান্ধবদের সাথে হৈ-হুল্লুর আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মগ্ন, নীলিমা তখন ক্যাম্পাসের অদুরে বকুলতলায় চুপটি করে বসে। ক্লাস রুমের বাহিরে মাঠে দাঁড়িয়ে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একজোড়া চোখ নীলিমা’কে’ই খুঁজছিল গভীর সংগোপনে। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত দু’চোখ সেখানেই থেমে যায় যেখানে চুপটি করে নীলিমা বসে। দ্রুত পায়ে বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেখানে হাজির হয় শুভ্র। চোখে চশমা, হাঁটুতে খুলে রাখা ডায়েরী। চেহারা’য় শান্ত-স্নিগ্ধ ভাব, গভীর মনোযোগের সহিত ডায়েরী’তে লিখালিখি করছে নীলিমা। আবারো মুগ্ধ শুভ্র ভাবনা’র অতলে ডুবে যায়। ঘোর কাটে বন্ধু আতিকের ডাকে। ক্ষাণিক ধাক্কার সাথে টানা গলায় প্রশ্ন করে, কিরে? এভাবে ‘থ’ হয়ে গেলি যে? বন্ধুদের দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় নীলিমা’র দিকে। জোর গলায় ডাক দেয় – ‘এই যে মিস ? এদিকে…’ ডায়েরী থেকে ইতস্তত দৃষ্টি ফিরিয়ে ডানে ফিরে তাকায় নীলিমা। ক্যাম্পাসের সেই বড় ভাইগুলোকে চিনে নিতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি ও’র। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। মাথা’য় ওড়না’টা আরো ভালো ভাবে টেনে দিয়ে কাছে আসে শুভ্র’র। সালাম দিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে- জ্বী, ভাইয়া! আমাকে বলছেন? টানা টানা কন্ঠে শুভ্র’র জবাব, জ্বী! আপনাকে’ই বলছি। ক্লাস শেষের বিরতি চলছে। সবাই মাঠে আড্ডা দিচ্ছে। আপনি এখানে একা একা কি করছেন? আমতাআমতা স্বরে নীলিমা’র জবাব, ইয়ে না মানে এমনি, ভালো লাগছিল না… কথা কেড়ে নেয় শুভ্র। যান, ঐ যে মাঠে আপনাদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা বসে আছে। সেখানে আড্ডা দেন গিয়ে। ভালো লাগবে… প্রতি উত্তরে এবার আর কোন কথা বলেনি নীলিমা। চুপচাপ বই আর ডায়েরী হাতে বাধ্য বালিকা’র ন্যায় মাঠের দিকে চলে যায়…. ক্যাম্পাস থেকে বাসা’য় ফিরছিল নীলিমা। কলেজ গেইটের সামনে যেতে’ই পিছন থেকে কারো ডাক শুনতে পায়। ডাকটা বড্ড চেনা চেনা লাগছিল ওর। থমকে দাঁড়ায় নীলিমা। সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ্র। জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে নীলিমা ফিরে তাকায় শুভ্র’র মুখপানে। জবাবে মাথা চুলকানো ছাড়া কিচ্ছু বলেনি শুভ্র। মুখ খুলে নীলিমা। সালাম দিয়ে বিনয়ের সহিত প্রশ্ন করে, কিছু বলবেন ভাইয়া? সালামের জবাব দিয়ে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে শুভ্র। ঢোক গিলে জানায়- ‘ আমি শুভ্র। অনার্স ৪র্থ বর্ষ। অর্থনীতি ডিপার্টমেন্ট। এই এলাকা’রই স্থানীয় বাসিন্দা। আপনি?’ ধীর কিন্তু স্পষ্ট ভাষা’য় নীলিমা’র জবাব, আমি নীলিমা। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। আর পড়াশুনা’র তাগিদে সুদুরের সেই নরসিংদী থেকেই এ শহরে এসেছি। ঢাকা শহরে আপন বলতে আমার তেমন কেউ নেই। আপাতত মায়ের দুর সম্পর্কের একটা বোনের বাসা’য় উঠেছি। বাকি পরিচয়টুকু মনে হয় আপনি জানেন! নীচু স্বরে শুভ্র’র জবাব, ওহ, আচ্ছা! ঠিক আছে… এই রিক্সা, এদিকে! আসি। আসসালামু আলাইকুম…. চোখের সামনে দিয়ে রিক্সা’য় উঠে নীলিমা চলে যায়। পিছনে সালামের জবাব দিয়ে হা করে শুভ্র তাকিয়ে নীলিমা’র চলে যাওয়া পথে’র পানে…

নিশ্চুপ_বালিকা(১ম অংশ) রচনাঃ- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

Angry_Husband Season_2_Part_4

0

Angry_Husband
Season_2_Part_4
Written by Avantika Anha
আরাভ বের হয়ে দেখে আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে সেল্ফি তুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিছু সময় পর আমি আরাভের কাছে আসলাম…
আমি- ওই Angry Husband চলেন সেল্ফি তুলি।
আরাভ- আবার সেল্ফি? (কিছুটা ভ্রু কুচকে)
আমি- ও না না আর ভাঙ্গিয়েন না। এই ফোনটার ক্যামেরা সেই ভাল্লাগছে। এটা আমার নিউ জানটুস । উম্মাহ। (ফোনে কিস করলাম)
আরাভ- (হেসে দিলো)
আমি- (ওর হাসি দেখে আমিও হেসেই দিলাম) আপনার হাসি কিউট একটা সেল্ফি তুলি। স্মাইল প্লিজ। (কইয়াই সেল্ফি তুললাম)
আরো কয়েকটা সেল্ফি তুলছিলাম । এমন সময় প্রেয়সি আসলো।
.
প্রেয়সি- কি জিজু আমার লগে সেল্ফি তুলবেন না?
আরাভ- অবশ্যই।
.
এরপর প্রেয়সি ও ওর বান্ধবীরা পিক তুলতে লাগলো। কেউ কেউ বললো, ভাইয়া আপনি অনেক কিউট। আমার তো আপনার মতোই বর চাই। এসব শুনে আমার রাগ উঠে গেলো। তার জন্য পুরো অনুষ্ঠান রাগে আর আরাভের সাথে কথা বলি নাই। আরাভ অবশ্য পাশে দাড়িয়েছিলো। এছাড়া আড় চোখে দেখেছিলো আমাকে। কিন্তু আমি মুখ বাঁকা করে দাড়িয়ে ছিলাম। লোকজন সবাই চলে গেলো। যাওয়ার আগে আম্মু বলে গেলো, কাল নাহয় দুইদিন পরে আমাকে আমার বাড়িতে(বাপের বাড়ি) যেতে হবে। তাও নাকি জামাইরে নিয়া। আপনারাই বলেন। বাড়ি আমার, জামাই রে নিয়া কেন যাবো? আর এই ইতর তো রাগের ডিব্বা। তাও কিছু বললাম না।
.
অনুষ্ঠান শেষে আমাকে মা(শাশুড়ি) বললো, ফ্রেশ হয়ে নিতে।
আমি রুমে আসতেই আরাভ এলো আমার পিছুপিছু,
আরাভ- কি ব্যাপার বকবক করা মেয়ে আজ শান্ত, চুপচাপ, রেগে কেনো?
আমি- আপনার কি?
আরাভ- বলো।
আমি- আপনি তো চিপকু। যান যান ওদের সাথে পিক তুলেন। আমি কতো করে বলার পর আপনি আমার সাথে পিক তুলছেন। আর ওদের সাথে সহজেই তুললেন। হুহ।
আরাভ- আরে ওরা তো ছোট।
আমি- ছোট তো এতো চিপকু কেনো?
আরাভ- তুমি জ্বলতেছো কেনো? এতো তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে গেলা নাকি। আসলে আমি এমনি মানুষ প্রেমে পড়ে যায়। (মজা করে বললাম)
আমি- যা ভাগ লুচ্চা পোলা।
আরাভ- আমি লুচ্চা ? (এটা কেউ বলে নি। এই মেয়েই প্রথম বলছে। তাই আরাভ কিছুটা ভ্রু কুচকালো)
আমি- হুমমম । মহা লুচ্চা । লুচ্চা আরাভ। লুচ্চা লুচ্চা লুচ্চা। (ওর দিকে না তাকাতেই)
.
ও কোনো জবাব দিলো না। তাই ওর দিকে তাকায় দেখি ও রেগে আছে। ওর রাগী চেহারা দেখে আমি পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম। এদিকে নিজেকে গালি দিতে লাগলাম,”শয়তান মাইয়া এতো বেশি বকিস কেনো? আজ তুই শেষ)
আমি- চুপচাপ কাপড় নিতে ফ্রেশ হতে যাবো। বাথরুমের দিকে পা বাড়াতে লাগলাম। এমন সময় আরাভ আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো। আবার সেই জায়গা। দেয়াল। আমি ভাবি মাঝে মাঝে দেয়াল কি ওর প্রিয় জায়গা। রাগলেই আমি দেয়ালে। হায়রে দেয়াল। ওমা এখন এসব ভাবছি কেনো? আরাভ রেগে বম হচ্ছে আর এদিকে আমার হার্ট ধুক ধুক করছে ভয়ে।
.
আরাভ- আমি লুচ্চা?
আমি- না না আপনি অনেক ভালো। খুব ভালো পোলা। এমন ভালো পোলা হয়ই না। খুব ভালো আপনি। এত্ত সুইট যে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে কিস করে দেই। (এই বলে জিহ্বাতে কামড় দিলাম। এতো বেশি বকবক করি কেনো?)
আরাভ- ও তাই নাকি? (ভালো করেই বুঝেছি ও পাম মারতেছে)
আমি- জ্বী জ্বী। (ভয়ে ভয়ে)
আরাভ- তাহলে কিস করো।
আমি- এ্যা
আরাভ- এ্যা না হ্যা । কিস মি।
আমি- ওই লুইচ্চা পোলা লজ্জা নাই একটা মেয়ের কাছে কিস চাস। (আবার মুখ দিয়ে ভুলে বলে ফেলছি।)
আরাভ- কিহ?
আমি- আপনি না আমি লুচ্চা আমি মহা লুচ্চা। আপনি তো ভালো মি. আরাভ। (আবার পাম মারতে লাগলাম)
আরাভ- লুচ্চা কাকে বলে দেখাচ্ছি।
.
এই বলে আরাভের মুখ আমার মুখের কাছে এগোতে লাগলো। আর আমার হার্টের ধুকধুকানি আরো বেড়ে গেলো ভয়ে। আমি ভয়ে আর লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। এতো ভয় পাইছি যে চোখ বন্ধ করে ফেলছি।
আরাভ তাকিয়ে আছে আনহার দিকে। ওর(আমার) লজ্জা মাখা মুখ দেখে আরাভ আমার কাছে গেলো আরাভ। কিন্তু কাছাকাছি হলো ঠিকই কিন্তু হঠাৎ ও আমাকে ছেড়ে দিলো।
আমি তখনও ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।
আরাভ- চোখ খুলো যাও ফ্রেশ হও।
আমি দেখি আরাভ ছেড়ে দিছে আমাকে। তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে আমি বাথরুমে দৌড়। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটা সুতি থ্রি-পিছ পড়ে ফেললাম। পুরো দিন এতো উঠা নামা করে আমি পুরাই টায়ার্ড। তাই রাতের খাবার না খেয়েই বিছানায় একটু হেলানি দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম। রাতের খাবারের জন্য আরাভ আমাকে ডাকতে এলো । এসে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। তাই আরাভ আমাকে ডাকতে লাগলো। এদিকে আমি ঘুমের ঘোরে দেখি প্রেয়সি আমাকে ডাকতেছে। কিন্তু আসলে যে আরাভ ডাকছে বুঝতেই পারি নি। তাই ঘুমের ঘোরে আমি আরাভকে লাথি দিয়ে বসলাম। আর বললাম, “কুত্তি প্রেয়সি। আমি ঘুমাচ্ছি না । ডাকিস কেন? ঘুমাতে দে।”
.
আরাভ এদিকে থ। সে ভাবছে, “মেয়েটার শক্তি আছে কিন্তু আমাকে মারলো হুহ।
আরাভ- চোখ খুলে দেখো কে?
আমি- হুম আয় তুইও ঘুমা।
.
বলে আরাভকে টান দিলাম। আরাভ ভাবে নি আমি টান দিবো তাই সে পড়ে গেলো আমার পাশে। কিন্তু হাতটা শক্ত লাগলো।
আমি- বইন তুই মোটা হইছিস। এতো শক্ত কেন। দূর হ।একদম ওই বাদরের মতো। বান্দর পোলাটার মতো বডি বানাচ্ছিস। (কইয়া আবার লাথি। এখনো আমি চোখ খুলি নি।)
কিন্তু এবার চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখি আরাভ। এতোক্ষন এসব শুনে আরাভ রেগে গেছে। আমি ওকে দেখে থ। একটু চিল্লায় উঠলাম, আম্মুউউ ।
আরাভ- আমি মোটা?
আমি- না না পার্ফেক্ট। ছেলেদের এমনি হতে হয়।
আরাভ- আর কি জানি বললা। ও লাথি মারলা তাই না।
.
এতোক্ষনে আমি উঠে বসে পড়েছি।
আমি- না না সরি আর হবে না এই যে কান ধরলাম। (কান ধরে)

.
আরাভ এক টান দিয়ে আমাকে দাড়া করিয়ে দিলো। এতোক্ষনে ভয়ে আমার ঘুমের ঘোর কেটে গেছে। ও আমার কোমড় ধরে আমাকে ওর কাছাকাছি আনলো।
আরাভ- এবার বলো আমি কি?
আমি- আন্নে ভালা পোলা। আমি বাজে মাইয়া। ছেড়ে দেন।
আরাভ- ওহ তাই। কান ধরো ।
আমি- এই যে এই যে। (আবার কান ধরলাম)
আরাভ- গুড । খাবার রাখা আছে খেয়ে নেও। (এই বলে ওকে ছেড়ে দিলাম)
আমি- এই খাবারের জন্য আমার সাধের ঘুম ভাঙলেন?
আরাভ- খেয়ে নেও ৫ মিনিটের মধ্যে । নাহলে আমার জুতা পরিষ্কার করতে হবে।
আমি- কিহ?
আরাভ- ইওর টাইম স্টার্টস নাও।
আমি- কিন্তু
আরাভ- টাইম যাচ্ছে।
.
দুররররর। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খেতে লাগলাম। খাওয়া বললে ভুল হবে গিলতে লাগলাম। পানি খেয়ে খেয়ে। তাড়াতাড়ি খেতে গিয়েও একটু খাওয়ার পর আর খেতে পারছিলাম না।
আমি- আর খাইতে পারছি না ।
আরাভ- শেষ করেন ম্যাডাম।
আমি- আপনি খাইছেন?
আরাভ- হুমম।
আমি- এটাও খান।
আরাভ- নাহ।
আমি- এই একবার আমার হাত দিয়া খান।
আরাভ- আমি বাচ্চা?
আমি- না না আপনি তো বুইড়া।
আরাভ- কিহ?
আমি- খান।
.
এই বলে জোড় করে খাইয়ে দিলাম।
আরাভ- কি করছো?
আমি- এই নেন আরেকবার।
আরাভ- নাহ।
আমি- খান বলছি।
.
এভাবে করে তিনবার খাওয়ায় দিলাম জোড় করে।
আরাভ- হলো তোমার। (এবার রেগে গেছি)
আমি- না আরেকবার খান।
আরাভ- নিজে শেষ করো নইলে।
আমি- রাগেন কেনো? একবার খান খালি তারপর আমিই খাবো।
আরাভ- প্রমিস ?
আমি- জ্বী।
.
এরপর আরাভকে একবার খাইয়ে আমি নিজে খেয়ে । ব্রাশ কইরা ঘুমায় গেলাম। পরের দিন ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কারণ আমি বাড়ি যাবো।
.
আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর এসে দেখি আরাভ ঘুমাচ্ছে। আমার মাথায় আবার শয়তানি আসলো। তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে নিলাম। এসে বরফ গুলো আরাভের গেঞ্জির ভিতরে ঢুকিয়ে দিলাম। কয়েক মিনিটে বরফ তার কাজ করে দিলো। আরাভ উঠে গেলো বরফের ঠান্ডায়। তাড়াতাড়ি বসে পড়লো। নিজের গেঞ্জিতে বরফ আর সামনে আমাকে আরাভ বুঝে গেলো কাজটা আমার।
আরাভ- আনহাআআআআ
আমি- কিইইইইই?
আরাভ তোমার আজ বারোটা বাজাবো।
আমি- আগে ধরেন তো। (এই বইলা দৌড় দিলাম)
.
এদিকে আরাভ রেগে আছে। কিন্তু ও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। বাইরে এসে দেখে নাস্তা রেডি। নাস্তার টেবিলে…
মা- তা তোমরা কয়দিন থাকবা ?
আমি- আপনিই বলুন মা কয়দিন থাকবো?
মা- তোমাকে তো আমরা মিস করবো। তবুও ৫ দিন থেকো।
আমি- ওক্কে।
মা- আরাভ তুই অফিস থেকে তো অফ এ আছিস। বাকী সব তোর বাবা সামলে নিবে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
কিছু সময় পর আমি আর আরাভ বাইরে যেতে বের হলাম। এখনো আরাভ কিছু বলে নাই। তাই আমি ভাবছি ওয় ভুলে গেছে।
.
গাড়িতে…
আমি- মি. আরাভ কত্ত মজা হবে তাই না?
আরাভ- আনহা শাস্তি নিবা না?
আমি- মানে?
আরাভ- তুমি শয়তানি করবা আর শাস্তি পাবা না তা তো হবে না।
আমি- আপনার মনে আছে?
আরাভ- মিসেস আনহা আহমেদ। আরাভ কখনো কিছু ভুলে না।
আমি- একটু বেশিই মনে রাখে। (আস্তে)
আরাভ- কিহ?
আমি- না না সরি সরি।
আরাভ- শাস্তি পেতেই হবে। ম্যাডাম আপনার ব্যাগ চেক করুন।
.
আমি সাথে সাথে ব্যাগ খুলে দেখি একটাও কিটক্যাট নাই। আমি কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে আরাভের দিকে তাকালাম।
আমি- ও ভাই আমার কিটক্যাট দিয়া দে ।
আরাভ- আমি ভাই ?
আমি- না আপনি জানু মনু স্বামী। এবার তো দেন।
আরাভ- এমন করে বলতে থাকো। ভালো লাগলে দিয়ে দিবো।
আমি- রুড পোলা। দুররর।
আরাভ- নিতে চাও কি না?
আমি- জানটুস। মনটুস । কলিজা। কিডনি, ফ্যাপসা, গলা, চোখ, মুখ, নাক।
আরাভ- ওয়েট ওয়েট। কলিজা আর ফ্যাপসা বলে জানতাম। গলা, চোখ,মুখ, নাক কই থেকে আইলো?
আমি- এগুলোও তো বডি পার্ট।
আরাভ- দুররর।
আমি- এবার কিটক্যাট দেন।
আরাভ- পিছনের সিটে রাখা দেখো।
আমি- এ্যা আমি তো লক্ষ্যই করি নি।
আরাভ- হাহা।
আমি- হুহ।
.
আমরা বাড়ি পৌঁছে গেলাম। এদিকে আরাভ জামাই আদর পেতে লাগলো। একটা জিনিস বুঝি না। বিয়া আমার হলো। কই একটু আমাকে দেখবে সবাই ওরে দেখতেছে। হুররর।
.
রুমে চলে আসলাম।
প্রেয়সি- আপ্পি আমার জন্য কি আনছো?
আমি- কেনো তোর বোন আসছে এটা কি যথেষ্ঠ নয় ?
প্রেয়সি- দুররর। কিছুই আনলা না বাজে আপু।
আমি- বইন তোর বোনটা কতো কষ্ট সহ্য করে আইলো ওই রাগী পোলাকে সহ্য করলো। আর তুই গিফ্ট চাস । কই একটু আপুর সেবা করবি।
প্রেয়সি- কিছু আনলে করতাম।
আমি- ওহ।
.
পিছন থেকে কখন আরাভ আসছে আমরা দেখি নি, “ও আনে নি তো কি? আমি গিফ্ট আনছি তোমার জন্য প্রেয়সি।”
আমি- এ্যা কি গিফ্টা?
আরাভ- এই নাও (এই বলে আরাভ প্রেয়সিকে একটা হ্যাডফোন দিলো।)
প্রেয়সি- ওয়াও। সেই তো। থেংকু জিজু। দেখছিস আপি আমার জিজু কতো ভালো।
আমি- হ গিফ্ট পাইয়া বোন নাই।
প্রেয়সি- জিজু তুমি বেস্ট। আপু আরো তোমাকে কতো কি বলে।
আমি- চুপ চুপ।
আরাভ- কি বলে?
আমি- কিছু না। ওই প্রেয়সি তুই না । নইলে আমি তোর চুল ছিঁড়ে দিবো এখনি।
.
কথাটা শুনে প্রেয়সি দৌড়। আরাভ আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি জানি ওয় জিগাবে আমি কি করছি আর কেমনে জিগাবে তাও জানি। ও কিছু বলার আগেই আমাকে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
আমি- মি. আরাভ টিকটিকিইইইইই।
আরাভ- কই? (ও ওইদিকে তাকাতেই আমি দিলাম দৌড়)
.
চলবে???

Angry_Husband Season_2 _Part_3

0
Angry_Husband Season_2 _Part_3
Angry_Husband Season_2 _Part_3

Angry_Husband
Season_2 _Part_3

Written by Avantika Anha
আরাভ উঠে চলে গেলো। আমি এদিকে আবারো মনে মনে ওরে গালি দেওয়া শুরু করলাম,”বান্দর,রাক্ষস,গাধা,হাতি,বাজে পোলা কোনেকার আম্মু হাত ব্যাথা কেহো বাঁচাও আমারে এই Angry husband এর কাছে থেকে।” এইসব বলতে বলতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
কিছু সময় পর আরাভ ঘরে আসলো। কিছু সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো। শেষে ও ভাবতে লাগলো,”ওর চেহারাটা এতো মায়াবী কেনো? মায়াবী হলেও কিন্তু একটু বেশিই ফাজিল। দেখে মনেই হয় না এতোটা ফাজিল ও।” আরাভ আমার গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। তারপর পাশে শুয়ে পড়লো। সকাল সকাল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখি আরাভের এক হাত আমার পেটের উপর। হয়তো ঘুমের ঘোরে এসেছে। কিন্তু আমার তবুও প্রচুর লজ্জা লাগছিলো। তাড়াতাড়ি ওর হাত সরিয়ে দিতে যাবো কিন্তু তখনি ও একটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার লজ্জা আরো বেড়ে গেলো। কি করবো ভেবে পারছিলাম না। তাই আমি আরাভকে ডাকলাম।
.
আমি- মি. আরাভ ও মি. আরভ।
.
আরাভ নড়ে চড়ে গেলো। আমি আবার ডাক দিলাম। কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর মি. আরাভের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমাকে এতো কাছাকাছি দেখে সেও কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
আরাভ- তুমি আমার এতো কাছে আসছো কেনো ?
আমি- ভালো করে তাকায় দেখেন আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। আপনার জন্যই আমি উঠতে পারছি না। ছাড়ুন আমাকে।
.
এই কথা শুনে আরাভ আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকবো তার আগে আমার মাথায় একটা বিষয় আসলো।
আমি- Angry husband আপনাকে না লজ্জা পাইলে সেই কিউট লাগে। ইচ্ছা করে গাল দুইটা ধরে টানি। (এইটা বলে আমি তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে গেলাম)
.
আরাভ ভাবতে লাগলো, এই মেয়ের মুখে কিছু আটকায় না। দুররর।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম। আজ যেহেতু বউভাত তো আভার কাছে গেলাম কারণ তৈরি তো হতে তো হবেই আমাকে আভা তৈরি হতে বললো তাড়াতাড়ি। তাই আমি ঘরে গিয়ে লেহেঙ্গাটা নিয়ে বাথরুমে গেলাম। এদিকে আরাভ রুমে এসে পাঞ্জাবি পড়ছিলো। ও যে ঘরে আসছে আমি জানি না। আমি লেহেঙ্গা পড়ে বের হয়ে দেখি আরাভ। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এদিকে আমি দেখলাম নীল পাঞ্জাবিতে ওকে সেই লাগছে। দেখে পুরাই ক্রাশ খেয়ে গেলাম। ওর দিকে তাকায় হাটতে গিয়ে খাইলাম উস্টা। উস্টা খেলাম তো খেলাম পড়লাম আরাভের উপর কিন্তু আরাভ নিজেকে সামলায় নেওয়ায় নিচে পড়ে গেলাম না আমরা। কিন্তু আরাভের কাছাকাছি চলে আসলাম। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কোমরে হাত দিলো। ওর মুখটা আমার কাছাকাছি চলে আসলো। একটু বেশিই কাছাকাছি আসছিলো। আমার ওই সময় সেই পরিমাণ লজ্জা লাগছিলো। হঠাৎ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো..
আমি- মি. আরাভ আমার লজ্জা লাগছে।
.
আরাভ কিছুটা ঘোরের মধ্যে ছিলো তাই প্রথমে শুনতে পেলো না। ওর মুখটা আমার মুখের আরো কাছে আসতে লাগলো। ভয় লেগে গেলো। তাই একটু জোড়েই চিৎকারের মতো করে “আম্মুউউউ” বলে উঠলাম।
আরাভের ঘোর ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- কি হলো চিল্লাচ্ছো কেনো?
আমি- ভয় লাগছে আপনি এতো কাছে এসেছেন তাই।
.
এই কথা শুনে আরাভের প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো। এমন একটা রোমান্টিক সময়ে কেউ যদি এমন বলে আর যাকে বলে সেই মানুষটা যদি আরাভের মতো হয় তাহলে আমার মতো আনহার বারোটা বাজবেই। আরাভের একটা গুণ আছে। রাগলে মুখটা কিছুটা লাল লাল হয়ে যায়। কিন্তু আরাভ রাগ টাকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বিছানায় বসে পড়লো।
এদিকে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমি ভালো করেই বুঝেছি আরাভ রেগে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গার পিছনের ফিতাটা বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই বাঁধতে পারছিলাম না। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি কিছুতেই ফিতাটা বাঁধতে পারছি না। আরাভ উঠে আমার কাছে আসলো।
.
আরাভ- দেও আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- না থাক।
আরাভ- চুপপপপ বললাম না আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- ওকে ওকে দেন। এতো Angry হওয়ার কি আছে? আমি বাচ্চা মানুষ ভয় লাগে তো।
আরাভ- তুমি বাচ্চা?
আমি- হুমমম।
আরাভ- হাহা এমনি তো পাকা বুড়ি। আর এমনি ক্ষেত্রে বাচ্চা।
আমি- বাঁধে দেন তো। এমনি বউভাত। একটু ভালো করে তৈরি হতে হবে তো।
আরাভ- কেনো? (বেঁধে দিতে দিতে)
আমি- প্রথম বিয়ে বলে কথা। একটু ভালো ভাবে সাজতে হবে তো। পরে বিয়ে হলে নাহয় কম সাজবো।
আরাভ- কিহ তুমি আবার বিয়ে করবে?
আমি- না মানে
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। আবারো আরাভ আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আরাভ। দুইদিনে ৪ বার এমন করছে। প্রতিবারই রেগে। আরাভের রাগী লুক দেখে আমি ভিগি বিল্লি। নিজেকে মনে মনে গালি দিতে লাগলাম, “বান্দরনি মাইয়া কি বলিস এসব। জানিসই তো কিরাম রাগী তাও বকবক। আম্মু বাঁচাও আমাকে।”
আরাভ- এবার বলো কি বললা?
আমি- আমি তো কিচ্ছু বলি নি। বিয়া কি আমি আর বিয়াই করবো না।
আরাভ- হুমম। অন্য ছেলেদের থাকে তোমার দূরে থাকতে হবে।
আমি- হুমম হুমম। আমি পোলা কি আমি আর কারো কাছেই যাবো না। আমি আপনার কাছেও আসবো না।
আরাভ- কিহহহহ (আরও রাগ লেগে গেলো)
আমি- না মানে আমি আপনার কাছেই থাকবো। এই যে এতো কাছেই থাকবো। কোনো দূরে যাবো না। এবার ছাড়েন। আভা অপেক্ষা করতেছে।(কি যে বলি)
আরাভ- (আনহার কথা শুনলে হাসিও পায়। রাগও লাগে দুররর।)
আমি- কি হলো ছাড়বেন না? আচ্ছা সমস্যা নাই ধরেই থাকেন। আমি কিচ্ছু বলবো না।
.
আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর মুচকি একটা হাসি দিলো। কিন্তু ওটা আমার শয়তানি হাসি মনে হচ্ছিলো। যাই হোক আমাকে ছাড়ছে তো। এইটা মাথায় আসতেই আমি আমার জিনিস গুলো নিয়ে দৌড় আভার ঘরে।
.
আভা- কি ভাবি রোমান্স করছিলে নাকি?
আমি- আরে না।
আভা- তাই নাকি? হিহি।
আমি- শয়তানি হাসি দিচ্ছো কেনো গো।
আভা- হাহা তোমাদের শয়তানি দেখে। দেও তৈরি করে দেই।
.
সেদিন তৈরি হয়ে ঘরে চলে গেলাম। ভালোই লাগছিলো। তাই কয়েকটা পিক তুলে নিলাম। তারপর প্রেয়সিকে পিক গুলো পাঠাতে লাগলাম। নিচের দিকে তাকায়ই রুমের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু দরজার কাছে যে আরাভ ছিলো দেখি নি। কপাল পুড়লো আবার খাইলাম ঢাক্কা। চোখ তুলে উপরে তাকায় দেখি আরাভের সাথে ঢাক্কা খাইছি। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো কাজল কালো চোখে, গোলাপি লিপস্টিক, টিকলি, হালকা গহনা, হাত ভর্তি মেহেদী আর আলতা পায়ে আমাকে সেই লাগছে। এভাবে আমাকে দেখে আরাভ আবারো হারায় গেলো আমার মাঝে। কিন্তু আমার এসবের অভ্যাস না থাকায় আবার তারে ডাক দিলাম। সে চুপচাপ ছিলো। তাই কয়েকটা ঝাঁকি দিলাম। তার ঘোর আবারো ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলো কি বলছিলা।
আমি- সেল্ফি তুলবেন? আসেন একটা সেল্ফি তুলি।
আরাভ- (সামান্য সেল্ফির জন্য আমার ঘোর ভাঙলো। আরাভ সেই রেগে গেলো।)
আমি- (তাকিয়ে দেখলাম। সে লাল হচ্ছে। বুঝলাম না কিছুই রাগ করলো কেনো?) আচ্ছা থাক তুলতে হবে না।
আরাভ- না না দেও আমি তুলে দিচ্ছি।
আমি- সত্যি?
আরাভ- হুম হুম সত্যি।
.
আমি ফোন টা ওর হাতে দিলাম। দিতেই ও রেগে ফোনটা নিজের কাছে রেখে নিলো।
আমি- কি হলো। পকেটে ঢুকালেন কেনো?
আরাভ- আজ আর এই ফোন পাবে না তুমি।
আমি- প্লিজ দেন। আজ সেল্ফি তুলতে হবে তো।
আরাভ- না দিবো না।
আমি- আম্মু তোমার মেয়ের ফোন কেড়ে নিছে। আম্মু গো তুমি কই? (কাঁদো কাঁদো স্বরে)
আরাভ- নাটক কইরা লাভ নাই। দিচ্ছি না।
আমি- দূরররর ।
.
রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলাম ওখান থেকে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। আমি আমার ফোনকে মিস করতেছি। আর ওই হালারপো ফোন দেয়ও না। অনেকবার ফোন চাইলাম কিন্তু দিলো না। মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। আমি আরাভকে রুমে ডাকলাম। অনেক দরকার আছে এটা বলে। হাতে একটা ব্যাট নিলাম। আরাভেরই পুরোনো। বাট ম্যানেজ করছি। আরাভ ঘরে আসতেই আমি দরজা লাগায় দিলাম।
আরাভ- ওএমজি আনহা তুমি আমাকে ধর্ষণ করবা?
আমি- কিহ না তো। আমি ছি ছি ছি । আমি এমন কেনো করবো?
আরাভ- তো দরজা লাগালা কেনো? দরজা খুলো বাহিরে মেহমান আছে।
আমি- না খুলবো না।
আরাভ- খুলো আমার বন্ধুরা আছে।
আমি- ফোন দেন।
আরাভ- তুমি ফোনের জন্য এতো কিছু করছো?
আমি- হুমমম ফোন দেন। বান্দর পোলা আমার ফোন দেন বলছি।
আরাভ- না দিলে কি করবা?
আমি- ওই হারামি, রাক্ষস, বান্দর আমার ফোন দে। দে বলছি।
আরাভ- (আরাভ ভেবেছিলো রোমান্টিক কিছু হবে। কিন্তু এমন হলো না আর আমার মুখে তুই তুই ভাষা শুনে ওর রাগ উঠে গেলো। আমার ফোনটা ভেঙ্গে দিলো)
আমি- আপনি ভেঙ্গে দিলেন?
আরাভ- নিচে পড়ে আছে দেখো না?
আমি- বান্দর পোলা। আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন কেনো?
আরাভ- আমাকে তুই বললা কেনো?
আমি- আমার ফোনননননন। (ফোনটা অনেক সাধের। বাপের কাছে মেলাদিন কান্দে কান্দে নিছি সেই ফোন ভাঙ্গে দিছে)
আরাভ- তুই বলার শাস্তি।
আমি- (কেঁদে দিলাম সাধের ফোনটার জন্য)
আরাভ- (কাঁদে কেনো? ফোনের জন্য কেউ কাঁদে নাকি?) কি হলো কাঁদছো কেনো?
আমি- আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন। আপনি অনেক বাজে।

.
এই বলে আমি কাঁদতে লাগলাম। আরাভের আমার কান্না দেখে খারাপ লাগলো। কি জানি ওর মাথায় এলো আর ও বাইরে চলে গেলো। আমি কিছু সময় পর কান্না মুছে বের হয়ে গেলাম।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর আরাভ এলো। সবাই খাচ্ছিলো। খাওয়ার টেবিলে। আরাভ আসার সাথে সাথে আমাকে দুই মিনিটের জন্য বলে ঘরে নিয়ে গেলো।
আমি- (রাগে কথা বলছিলাম না। অন্য দিকে ঘুরে ছিলাম)
আরাভ- কি হলো। কথা বলো মিস. বাঁচাল।
আমি- কি বলবেন বলেন। আপনার সাথে আমি কথা বলবো না। আমার ফোন ভাঙ্গে দিছেন আরো বড় কথা।
আরাভ- এই নাও। (এইটা প্যাকেট দিলো)।
.
আমি খুলে দেখি নতুন ফোন আর সেই ফোনই যেটা নেওয়ার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের।
আমি- আপনি কেমনে জানলেন আমার এই ফোন কিনার ইচ্ছা?
আরাভ- প্রেয়সি বললো। তাই কিনে আনলাম।
আমি- ওয়াও এটার ক্যামেরা সেই থেংকু। উম্মাহ(এই বলে আরাভের গালে একটা কিস করে। খুশি মনে বাইরে চলে গেলাম)
.
আরাভ হাসতে লাগলো, “এই মেয়েটা আজব।”
.
চলবে?????

 Angry_husband season_2_ Part_2

0
 Angry_husband season_2_ Part_2
 Angry_husband season_2_ Part_2

 Angry_husband
season_2___Part_2

Written by Avantika Anha
আরাভ রেগে চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো।
.
আভা- ভাবি তোমার কপালে আজ দুঃখ আছে। ভাইয়া এমনিতেই কতো রাগী। তার উপর তুমি তার মুখের বারোটা বাজাইছো। আজ তো তুমি শেষ।
আমি- আরে না কিচ্ছু হবে না। আমি যাচ্ছি। (মুখে এমন বললেও আমার ভয় লাগছিলো খুব)
.
ভয়ে ভয়ে আমি রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আরাভ এখনো মুখ পরিষ্কার করে নি। মুখ টা লাল হয়ে আছে ওর। হায় রে আজ আমার খুন হবে। আমারে কি করবে? চড় মারবে নাকি এই ভাবতে ভাবতে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই এক হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো।
আমি- ক.ক কি হইছে?
আরাভ- তুমি জানো না কি হইছে? হা মজা করো আমার সাথে।
আমি- আপনি মজা করার মানুষ নাকি যে ম.মজা করবো।(কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ভয়ে তোতলায় যাচ্ছে)
আরাভ- ও তাই । আমার মুখের এমন অবস্থা করছো কেনো?
আমি- আমি করি নি। (চোখ নিচে রাখছি ভয়ে। ওর মুখ আমার মুখের কাছাকাছি)
আরাভ- আমার দিকে তাকিয়ে বলো কিছু করো নি।
আমি- (ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর নাক রাগে কিছুটা লাল হয়ে গেছে। এটা দেখে আমার প্রচন্ড পরিমাণ হাসি পেলো। হাসি আটকাতে পারলাম না) হিহিহি
আরাভ- (হাসি দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম) হাসছো কেনো ?
আমি- হিহিহি কমু না।
আরাভ- বলো।
আমি- আপনার নাকটা লাল হয়ে গেছে রাগে আর আপনাকে এমনে পুরাই বানর লাগতেছে হিহিহি।
আরাভ- কিহহ।
আমি- চেক করেন আপনি ওইখানেই আয়না আছে।
.
.
আরাভ আয়নায় তাকায় দেখে একটু আজব লাগছে ঠিকি। কিনগতু পুরো বান্দর তো না। তাই ও আবার আমাকে বকা দেওয়ার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমি ওখানে নাই। কারণ ও আয়না দেখতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি দৌড় দিছি। হেতের রাগের কাছে আমি শেষ। আমি ওখানে নাই দেখে আরাভ আরো বেশি রেগে গেলো। তারপর ও মুখ ধুয়ে বাইরে এলো।
.
এদিকে আমি আভার রুমে চলে গেলাম। যাতে ও খুঁজে না পায়।
আভা- কি ভাবি। ভাইয়া কি করলো? খুব বকলো নাকি?
আমি- পালায় আসছি বইন।
আভা- হাহা। ভাইয়া ছাড়বে না দেইখো। আর কাল তো বউভাত তোমার শপিং করবা না? আজকে যাবো কিন্তু।
আমি- হুমমম আচ্ছা। আমি কি পড়বো শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?
আভা- উমমমম লেহেঙ্গা। ব্লু পইড়ো ভাইয়ার প্রিয় রং।
আমি- আমারো প্রিয়।
আভা- বাহ কাপল দেখি প্রিয় প্রিয় সেম।
.
এমন সময় আরাভ আসলো। ওকে দেখে আমি ভয়ে শেষ আভাও। আভা জানে আমি ভয় পাচ্ছি কেনো তাই ও কথা বদলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
আভা- ভাইয়া হঠাৎ আমার রুমে আমাকে তো ভুলেই গেছোস।
আরাভ- আভা তোর নাটক শেষ হইছে ? আনহা রুমে চলো।
আমি- আপনি কে ভাই?
আরাভ আরো রেগে গেলো- রুমে যাবা নাকি তুলে নিয়ে যাবো।
আমি- যাচ্ছি।
.
ভেজা বিড়ালের মতো অবস্থা হয়ে গেলো আমার। রুমে যেতেই আরাভ দরজা লাগায় দিলো। আল্লাহ আমারে বাঁচাও। কেহো আমারে তুইলা নেও। এই রাগী পোলার হাত থেইকা বাঁচাও আমারে।
আরাভ- খুব মজা করার শখ তাই না তোমার?
আমি- ভাই প্লিজ মাফ কর আমাকে।
আরাভ- (আরও রেগে গেলো। কারণ যাই হোক আনহা ওর বউ। আর বউ এর মুখে ভাই ডাক শুনতে কারই বা ভালো লাগে।) মাফ করবো এক শর্তে।
আমি- হ্যা হ্যা আমি রাজি।
আরাভ- ওয়েট।
.
এই বলে আরাভ ওর আলমারি এর অর্ধেক কাপড় বের করলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধুয়ে দিতে বললো। এতো কাপড় দেখে আমি থ।
.
আমি- এতো কাপড় আমি ধুয়ে দিবো?
আরাভ- এটা যদি না ধুয়ে দাও। তোমাকে মরিচ খাইতে হবে।
আমি- (ঝাল খাই মোটামোটি। কিন্তু মরিচ অসম্ভব) কিহ ।
.
আরাভ আগে থেকেই মরিচ এনে রাখছিলো। ও হাতে তিনটা মরিচ নিলো। লম্বা লম্বা সবুজ মরিচ দেখে আমি ভয়ে শেষ। হেতের ভরসা নাই। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে কাপড় গুলো নিয়ে ধুয়ে দিতে লাগলাম। আর আরাভ বাইরে চলে গেলো।
.
এদিকে কাপড় কাঁচতেছি আর আরাভকে গালি দিচ্ছি।
আমি- এতো কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না। বিয়ে টা আর করা ঠিক না। আমি কি এমন ভুল করেছি । এতো Angry husband কেনো পেয়েছি। এই পোলারে কেউ মাইরালাও। আমি তারে দিমু গিফ্ট।
.
হায়রে কপাল। কোনেকার এক বান্দর পোলা। ওইটা একটা ইদুর। না না ইদুর না চামচিকা। ওরে ধইরা পিডাইয়া পিডাইয়া লাল,নীল,হলুদ,বেগুনী করে দেওয়া উচিত। টিকটিকি পোলা। হুহ। ওয় তো একটা রাক্ষস। ওরে কিল করবো আমি বান্দর কোনেকার। (এসব বলতে বলতে কাপড় কাঁচতে লাগলাম)
.
আরাভ কি জানি নিতে ঘরে এসেছিলো।এদিকে আমার মুখে এসব কথা শুনে ও আরও বেশি রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না। কাপড় ধুয়ে আমি গোসলটাও করে ফেললাম। হাত ব্যাথা করছিলো। তাই কিছু সময়ের জন্য রুমে আসলাম। আরাভ আসলো…..
আরাভ- এতোটুকুতেই টায়ার্ড। যাও আমার জন্য কিছু নিয়ে আসো ক্ষুধা লাগছে।
আমি- এখনি তো নাস্তা খেলেন।
আরাভ- তাহলে এক কাজ করো শরবত নিয়ে আসো।
আমি- হারামি পোলা। আমারে এতো কাম করাইয়াও তোর শান্তি নাই। খাড়া আইতাছি নিয়া।
.
গিয়ে আমি শরবত বানালাম। ওরে এতো সহজে ছাড়বো না। তাই শরবতে বেশি করে মরিচের গুড়া দিয়ে দিলাম। আরাভ হঠাৎ রান্নাঘরে আসলো আর দেখে ফেললো আমাকে মরিচের গুড়া মেশাতে।
আরাভ- কি করছো তুমি?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- কি মিশিয়েছো ?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- তাই ।
আমি- জ্বী।
আরাভ- খেয়ে দেখতে হবে তো।
আমি- হুমমম নিন খান খান।
আরাভ- তুমি খাবে।
আমি- না মানে।
আরাভ- খাওওওওওও।
.
কি করবো ভাবতে ভাবতে আইডিয়া এলো। কারণ ওটায় আমি খুব বেশি পরিমাণ মরিচের গুড়া মিশিয়েছি। খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নেওয়ার আগে ফেলে দিলাম।
আরাভ ভালোই বুঝলো যে আমি ইচ্ছে করে ফেলছি। তাও কিছু বললো না।
আরাভ- পরিষ্কার করে নেও।
আমি- হুম।
.
কাচের গ্লাস ছিলো তাই হাতটা কেটে গেলো।
আমি- আম্মুউউউ।
আরাভ- কি হলো? কেটে ফেললা। বাচ্চা নাকি? সাবধানে করতে পারো না।
.
আমার চিৎকার শুনে আরাভের মা রান্নাঘরে এলো।
মা- কি হলো কাটলো কিভাবে? গ্লাস ভাঙ্গে গেলো কিভাবে?
আমি- ভুলে।
মা- নিশ্চয়ই আরাভ কিছু করেছে। আরাভ তোর রাগকে কন্ট্রোল করা শিখ।
আরাভ- কিন্তু মা।
মা- চুপপপপপ।
.
আরাভ চুপ করে বকা শুনলো। ওকে বকা শুনতে দেখে আমি সেই পরিমাণ খুশি হলাম।
মা- ওষুধ লাগিয়ে দে আনহা কে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ রুমে এসে আমাকে ওষুধ দিয়ে দিলো। আমার ডান হাত কাটছে এই জন্য আরাভ আমাকে আর কাজ করাতে পারবে না এই ভেবে আমি সেই খুশি।
আরাভ কিছুই বললো না । গোসলে গেলো। আমি বাহির দিক দিয়ে দরজা লাগায় দিলাম।
কিছু সময় পর আরাভ দরজা খট খট করতে লাগলো। আমি এদিকে আর খুলি না দরজা।
আরাভ ভিতর থেকে বলতে লাগলো…
আরাভ- আনহা আমি জানি এটা তোমার কাজ। দরজা খুলো তোমার আজ খবর আছে।
আমি- তাহলে খুলবো না।
আরাভ- আনহা খুলো।
আমি- না।
আরাভ- আচ্ছা কিছু করবো না খুলো।
আমি- এক শর্তে।
আরাভ- কিই?
আমি- আমার ৫ টা কাজ করবেন। আর কথা গুলো শুনবেন তাহলে।
আরাভ- চালাকি করো । যাস্ট বের হতে দেও।
আমি- তাহলে খুলবো না ওয়াদা করেন।
আরাভ- না।
আমি- ওকে থাকেন আপনি।
আরাভ- আচ্ছা ওকে ওকে ওয়াদা রইলো শুনবো।
আমি- হিহি ওকে।
.
এরপর আমি দরজা খুলে দিলাম। আরাভ প্রচন্ড রেগে কিন্তু ওয়াদা করছে বলে কিছু বলতে পারলো না। সেদিন আমি আর আভা শপিং এ গেলাম। আরাভ নাকি যাবে না।
আমি- চলেন শপিং এ।
আরাভ- না আমি যাবো না।
আমি- আপনি যাবেন এবং আমি যা যা চাবো তাই করতে হবে এটাই আপনার প্রথম কাজ।
আরাভ- দুরর।
.
ওইদিন সারাদিন আমরা শপিং করলাম। আরাভের পকেট ফাঁকা করতে লাগলাম। কিন্তু ও ওয়াদার কারণে কিছুই বলতে পারলো না।
.
সেদিন রাতে…..
আমি- মি. আরাভ পা টিপুন।
আরাভ- কিইইইইই।
আমি- ওয়াদা ভুলে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ২য় কাজ। করুন।
.
আরাভ কিছু না বলে রাগী লুকে পা টিপতে লাগলো। আমি সেই খুশি হয়ে ওর একটা সেল্ফি তুললাম। এবার আর আরাভ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।
আরাভ- কি ভাবো নিজেকে হা। চালাকি করো?
আমি- মি. আরাভ আমার লাগছে।
আরাভ- চুউউউপ।
আমি- সিরিয়াসলি লাগছে।
আরাভ- বললাম না চুপ।
.
এতে আমার চোখে পানি চলে আসলো। কষ্টে আর কিছু বললাম না।আমার চোখে পানি দেখে আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর ঘরের বাইরে চলে গেলো।
.
চলবে…..

Angry_Husband Season_2_ Part_1

0
Angry_Husband Season_2_ Part_1
Angry_Husband Season_2_ Part_1

Angry_Husband
Season_2_ Part_1

Written by Avantika Anha
.
আমি- আপনি আমাকে চিটিং করে বিয়ে করলেন কেনো বান্দর পোলা।
আরাভ- ওই মেয়ে ভালো করে কথা বলবা আমার সাথে। ভুলে যাবা না যেভাবেই হোক আমি তোমার স্বামী। বেশি কথা বললে কিন্তু থাপ্পর খাবা।
আমি- (সাথে সাথে মনে পড়ে গেলো প্রথম থাপ্পড়ের কথা।যেটা আরাভের কাছে আমি প্রথম খাইছিলাম।মনে পড়তেই হাত গালে চলে গেলো।) আর কি পারেন রাক্ষস কোথাকার। আপনার নাম না আরাভ ছিলো।রাহিদ কেমনে হলো। এ্যা আমার কত্ত শখ ছিলো। কিউট একটা বর হবে। কই থেকে এই Angry পোলা আমার কপালে জুটে গেলো।
আরাভ- হাহা আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার মিস. আনহা। সরি মিস. না মিসেস আনহা। তুমি কি ভেবেছিলে বর আমার পাশের ছেলেটা ছিলো ওটা আমার বন্ধু ছিলো। হাহা প্লানটা আমারি। এবার বুঝবা আমি কতোটা রাগী।
আমি- আমি বাড়ি যাবো থাকবো না এইখানে। আম্মুউউউউ আম্মু গো তুমি কই। এই টিকটিকি মার্কা ছেলে আমাকে চিটিং করে বিয়ে করছে।
আরাভ- আনহা একদম চুউউপ। চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আমি- না আমি ঘুমাবো না আমি এইখানে থাকবোই না আমি বাড়ি যাবো।
.
আরাভ আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিলো।
আরাভ- শুনো আমার সাথে লাগতে মানা করছিলাম তোমাকে। কিন্তু শুনো নি। একের পর এক ঝগড়া লাগিয়েই গেছো আমার সাথে। এখন বুঝবা আসল রাগ কাকে বলে। বুঝতে থাকো মিসের আহমেদ।
আমি- কিন্তু।
আরাভ- চুপ । কোনো কথা না শুয়ে পড়ো। নাহলে বাসর রাত করে ফেলবো আজই জোড় করে। যদিও আমার অধিকার আছে আমি তোমার স্বামী। সব নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু আমি এভাবে তোমাকে অাস্তি দিবো না। আলাদা ভাবে দিবো। শুয়ে পড়ো এখন জানু। গুড নাইট।
আরাভ ছেড়ে দিয়ে ও বিছানায় বসলো। আমি নিজের একটা সুতি জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকার আগে বললাম, “বান্দর পোলা। আমি আপনারেও বাঁশ দিবো। যদি না দেই তাহলে আমার নামও আনহা না।”এই বলে আমি বাথরুমে দৌড় দিলাম। আরাভ কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
.
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো আরাভ আর আমার মধ্যে। আমাদের সম্পর্কটা ঝগড়াটে তা এতক্ষণে আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন। আমি আনহা বর্তমানে ভার্সিটি প্রথম বর্ষে পড়ি। আর উনি মি. রাগী আরাভ। বান্দর মার্কা পোলা।নিজের কোম্পানি আছে। আরাভ ওর পরিবার আর একটা বন্ধুকে নিয়ে আমাদের বাড়ি গেছিলো। আমি আমার পরিবারের ওপরে বেশি কথা বলি না। তাই আমি ভেবেছিলাম আরাভের বন্ধুই হয়তো ওর হবু বর। যার নাম রাহিদ। কিন্তু আরাভের পুরো নাম যে রাহিদ আহমেদ আরাভ তা আমি জানতামই না। আমাদের পরিচয়ও একটা ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। তাই তারে আমি Mr. Angry নাম দিয়েছি। বিয়ে কিভাবে হলো তা তো জেনেই গেছেন। এবার পরিচয়ের ঘটনাটা বলা যাক।
..
..
..
ফ্লাশব্যাক…..
প্রায় ২ মাস আগে…
আমি আর মিমি আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিলাম। এদিকে আরাভ মিটিং এর জন্য অফিস যাচ্ছিলো। রাস্তায় ওর কার নষ্ট হয়। মিটিং এর জন্য দেরি হচ্ছিলো। তাই সে ফোন দিয়ে গাড়ি আনতে বললো কাউকে। সে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলো। আমি মিমির সাথে গল্প করছিলাম তাই সামনে কে লক্ষ্য করি নি। সামনে ইট ছিলো তাও দেখি নি। খাইছি উস্টা আর আমার হাতের আইসক্রিম সোজা গিয়ে লেগে গেলো আরাভের মুখে আর হোয়াইট শার্টে। আমি ভয় তো একটু পাইছিই। তবুও সাহস নিয়ে সরি বলে আরাভের দিকে তাকালাম। যদিও তখন তার নাম একদম জানতাম না। আইসক্রিম লেগে আরাভের মুখ সত্যিই বান্দরের মতো লাগছিলো। তাই ভুলে হেসে ফেলছি। এই হাসাই আমার কাল হয়ে দাড়াইছে। এমনি এই পোলা রাগী। আমার হাসি দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো।
আরাভ- এই যে মিস. আপনার সাহস তো কম না। এক আমার উপর আইসক্রিম লাগালেন। সরি বললেন মানলাম। কিন্তু হাসলেন কেন? আমাকে কি আপনার ফানি মনে হচ্ছে।
আমি- আসলে হয়েছে কি ভাইয়া ইট ছিলো আরকি.. (বিষয়টা বুঝাতে লাগলাম)
আরাভ- একদমমমমম চুউউপ।
আমি- আরে আরে বলতে তো দেন।
আরাভ- বললাম না চুউউউপ। কোনো কথা না পরিষ্কার করে দেন। রুমাল বা টিস্যু দিয়ে।
আমি- আরে একটু শুনেন।
.
আরাভ আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। সোজা চড় বসিয়ে দিলো।
.
আরাভ- বললাম না। আরাভের মুখের উপর বেশি কথা বলা আরাভ একদম পছন্দ করে না।
.
আমি চুপচাপ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম।
মিমি- দোস্ত এটা কেমন পোলা। এখন কি হবে?
আমি- চুপচাপ
আরাভ- যা বললাম করেন। সোজা কথা।
.
আমি মিমির কানে বললাম…
দোস্ত পিছন দিকে দৌড় মারবো ওকে। ওই পাশের গলিটায়। ১ ২ ৩ বলার সাথে সাথে।
মিমি- ওকে
আরাভ- কি হলো কি ফিসফিস করছেন। পরিষ্কার করেন।
আমি- বান্দর পোলা। মারেন আমারে। দেখতে তো ভুতের মতো। ভুতকে ওমনেই মানায়। দুররর হন ।মিমি ১ ২ ৩ দে দৌড়।
.
বলেই আমি আর মিমি দিলাম দৌড়।
আরাভ আরও বেশি রেগে গেলো। সে ঠিক করে নিলো এই মেয়েকে ও একদিন শাস্তি দিবেই।
.
এটুকুতেই শেষ নয়। একদিন আমি ফোনে পিচ্চি বাচ্চাদের খেলার পিক তুলছিলাম।আর ওদের সথে খেলা করছিলাম পার্কে বসে। ওইদিন ওখান থেকে হঠাৎ একটা বাচ্চা রাস্তা হারায় কোনদিকে জানি চলে যায়। আর রাস্তা হারিয়ে ফেলে আরাভ বাচ্চাটাকে দেখে এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আছে। বাচ্চাটা সম্পর্কে আমার কাজিন হওয়ায় আমি পুরো পার্ক মাথায় তুলে ফেলি । হঠাৎ আরাভ আসে সায়ানকে(কাজিনটা) নিয়ে। আমি ভেবে ফেলি আরাভ সায়ানকে কিডন্যাপ করেতেছিলো। পুরো মাঠ জড়ায় ফেলি। আর কিছু মানুষ মিলে আরাভকে মারা শুরু করে দেয়।
.
সায়ান- আপ্পি আংকেলটা আমাকে বাঁচিয়েছে। মারতে মানা করো।
আমি- ওমা সত্যি?
সায়ান- হুমম আপ্পি।
আমি- ওই হনুমান আগে বললি না কেনো? এবার যে কি হবে আমার?
.
.
ভয়ে তাড়াতাড়ি ওদের থামিয়ে আরাভকে সরি বলি। কিন্তু আরাভ কিছু না বলেই চলে যায়। আরাভ সেদিনই ঠিক করে নেয় আমাকে শাস্তি দিবে। আরাভ প্রচন্ড রাগী ছেলে। ওর পরিবারের সবাই ওকে ভয় পায়।
.
একদিন আরাভের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্রীদের ছবি দেখা হচ্ছিলো।
.
আরাভ- কি মা এসব? আমি এখন বিয়ে করবো না। তোমাকে তো বলেছিলাম।
মা- একবার দেখ শুধু।
আরাভ- না ।
মা- দেখলে কি হয়?
আরাভ- দুরর
.
.
আরাভ ছিবি দেখা শুরু করলো। ওসব ছবির ভিড়ে আনহার ছবি দেখে আরাভ ঠিক করে ফেলে ওকে কি করতে হবে। তারপর আরাভের প্লান অনুযায়ী আজকের বিয়ে। আমি এদিকে রাগে শেষ হচ্ছি কারণ রাগী মানুষ আমার অপছন্দ। আর কে এভাবে বদলা নিতে বিয়ে করে আপনারাই বলুন।
.
ফ্রেশ হয়ে দেখি আরাভ ঘুমায় গেছে আমি সেই খুশি হয়ে ওকে বকা শুরু করলাম।
আমি- বান্দর পোলা, রাক্ষস একটা, শয়তান কোনেকার, ইদুর,বিড়াল টিকটিকি, তুই একটা বাজে ছেলে আমাকে শাস্তি দিস। কতো শখ ছিলো একটা কিউট বর হবে। যে আমাকে কত্ত ভালোবাসবে আর কোথা থেকে তুই একটা রাগী বান্দর মার্কা পোলা আমার ঘাড়ে চাপলি হুহ। তোকে আমি পুড়া রুটিব খাওয়াবো। ইদুরের বিষ মিশায় খাওয়াবো।
.
আরাভ চোখ খুললো। ও আসলে ঘুমানোর নাটক করছিলো। আমার এতো গুলো বকবক শুনে ও রাগে শেষ। আমার হাত ধরে এক হ্যাচকা টান দিলো। সোজা পড়লাম ওর বুকে। আর এদিকে আমার অবস্থা যায় যায় ভাব। কারণ আরাভ সব শুনে ফেলছে। আমি নিজেকে বলতে লাগলাম, আনহা এটাই তোর শেষ দিন। কে বলছে এতো বকভক করতে বুঝ এবার।
.
আমি- আমি না কিছু বলি নি । এসব তো নিজেকে বলছিলাম আমি।
আরাভ- ও তাই নাকি তা তুমি মেয়ে থেকে ছেলে হলা কেমনে । বকবক যখন করছিলা তখন তো এক পোলার কথা বলছিলা।
আমি- ভাই মাফ কর আমাকে। আমি আর কিচ্ছ বলবো না এই দেখেন কান ধরছি। (এক হাত দিয়ে এক কান ধরলাম)
আরাভ- আমি তোমার ভাই নাকি বর?
আমি- আপনি তো একটা বান্দর (আস্তে বললাম)
আরাভ- কি ? কি বিড়বিড় করছো জবাব দেও।
আমি- আপনি তো বর।
আরাভ- শাস্তি পেতেই হবে। পা টিপো আমার।
আমি- কিহহ ।
আরাভ- কিহ না হুম। টিপো নাহলে আজ এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে তোমাকে বাথরুমেই রাত কাটাতে হবে। চুপচাপ যা বলছি করো ।
আমি- হুহ আমারো সময় আসবে।৤
আরাভ- আমি থাকতে এখন আমার সময় যা বললাম করো।
.
কি আর করার চুপচাপ পা টিপতে লাগলাম আর মনে মনে আরাভকে গালি দিতে লাগলাম। আরাভ এদিকে হাসতে লাগলো মুচকি মুচকি। আনহাকে আরাভ ঘৃণা করে না। কিন্তু ওর আনহাকে শাস্তি দেওয়ারও আছে। তাই ও বিয়ে করলো।
.
আমি এদিকে পা টিপছি আর ঘুমে টুপতেছি। পা টিপি আর ঘুমে টুপি। হঠাৎ ঘুমিয়েই পড়লাম। আরাভ তাকিয়ে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। ও আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো।
.
পরেরদিন…
আমি উঠে দেখি আমি ঠিকঠাক শুয়ে আছি। আর পাশে Mr Angry ঘুমাচ্ছে। রাগ উঠে গেলো।আমাকে এতো শাস্তি দিয়ে ঘুমানো। ওকে আমি মজা দেখাবো । যেই ভাবা সেই কাজ। লিপস্টিক আনলাম। ওর মুখে ওটা দিয়া দাগ দিয়ে ওরে ভুতের মতো বানালাম। তারপর জ্বলদি জ্বলদি ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে বাইরে চলে এলাম। দেখি আরাভের মা বাইরে।
.
আমি- সরি দেরি হয়ে গেলো। আমার ঘুম ভাঙ্গে নি আন্টি।
মা- আন্টি কেন মা হবো তোর। পর দেরির কি? তুই আমার মেয়ের মতো।
আমি- আপনাকে কাজ করতে হবে না আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।
মা- এখন না । আজ তুই দেখ ও। শিখ পরে অন্য কোনোদিন।
আমি- আরে হেল্প তো করি। আমি না আপনার মেয়ের মতো। মেয়ের কথা কি শুনবেন না ?
মা- হাহা হুমমম। আয় সাহায্য কর। আরাভ কই ঘুমাচ্ছে?
আমি- জ্বী।
মা- এখনো । আচ্ছা নাস্তা হলে ওকে ডাকবি।
আমি- আচ্ছা (ডাকবো। আগে উঠুক নিজেকে দেখে তো পাগল হয়ে যাবে)
.
এদিকে আরাভ উঠলো। ওর আবার জ্বলদি পেপার পড়ার অভ্যাস তাই ঘরের বাইরে গেলো। ওকে দেখে মা (আরাভের আম্মু) আর আমি হাসতে লাগলাম। কিছু সময় পর আভা (আরাভের বোন) এলো। ও নিজেও হেসে ফেললো।
আরাভ ভাবতে লাগলো সবাই হাসছে কেনো? কিন্তু গুরুত্ব দিলো না। ঘরে গিয়ে পেপার পড়তে লাগলো। পেপার পড়া শেষে হঠাৎ ওর চোখ আয়নায় গেলো। আরাভ বুঝে গেলো সবাই কেনো হাসছে আর এই কাজ যে আমি করেছি তাও বুঝে গেলো। কারণ সবাই ওকে ভয় পায় ওর রাগের জন্য ।
.
এদিকে মা ও আভাও বুঝলো এই কাজ আমার । কিন্তু কেউ কিছু বললো না। শুধু এটা বললো… তুই অনেক ফাজিল আনহা।
.
এদিকে আরাভ…. আনহা বলে জোড়ে ডাক দিলো।

.

.
চলবে?????

সুখের আশা 

0

সুখের আশা 

লেখা –সুলতানা ইতি

মধ্যভিত্ত ঘরের মেয়ে জিমি, স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া সবে মাত্র ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠলো,,
এইটে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে, স্বপ্ন অনেক বড় লয়ার হবে সে,
এই বয়সে মেয়েরা পড়াশুনার পাশা পাশি আর অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে
যেমন,একদিন কোন এক রাজকুমার এসে ঘোড়ায় করে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,,,

জিমি ও তার বিপরীত নয়,কিন্তু সে তার মনে এই সব কিছুর থেকে পড়া লেখার স্থান বেশি দিয়েছে,

একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে জিমি বসার ঘরে অনেক মেহমান দেখতে ফেলো
যখন সে তার মাকে জিজ্ঞাস করলো
– মা বসার ঘরে এরা কে?
জিমির মা তার মামির সাথে কি যেন কাজে ব্যাস্ত, তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এরা তোকে দেখতে এসেছে,তোর মামা গত কাল ই আমাকে পাত্র পক্ষের কথা জানিয়েছিলো,
কিন্তু আমার তোকে বলতে মনে ছিলো না,

জিমি মায়ের কথা শুনে অবাক হলো,কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,যেন সব কথা তার হারিয়ে গেছে,

জিমির বাবা নেই, মামার বাসায় থাকে তারা,মামি ব্যাপার টা ভালো চোখে দেখে না, হয়তো এই জন্য,তাড়া তাড়ি তাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চাইছে,

জিমি নিঃশব্দে চোখের পানি ছেড়ে দিলো কান্না করা ছাড়া সে আর কি করতে পারে,

জিমির মা মেয়ের পাশে এসে বসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বল্লো কাঁদছিস কেনো মা
জিমি অশ্রুভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মা আমি বিয়ে করতে চাই না এখন,আমি আর ও পড়া শুনা করব,জিমির মা কিছু বলার আগে

তার মামি বল্লো
-তা বললে কি হয় বিয়ের পরে জামাইকে পড়াতে বলিস, গরিব ঘরের মেয়ে, আবার বাবা নেই,এদের এতো আহ্লাদ থাকতে নেই,,কোন ভাবে স্বামির হাতে মৃত্যু পর্যন্ত কাটাতে পারলে ই ভালো

জিমি মামির কথা শুনে কিছু বলতে যাবে,জিমির মা জিমি কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– ভাবি আপনি কিছু চিন্তা করবেন না, আমি জিমি কে বুঝিয়ে বলবো

জিমির মা মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, মেয়েকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন
– মা রে তুই আমার একমাত্র মেয়ে তোকে নিয়ে কম স্বপ্ন আমি দেখিনি,কিন্তু সবার সব স্বপ্ন পূরন হয় না, তোর পড়া শুনার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়,সে গুলা কি আর তোর মামার পক্ষে দেয়া সম্ভব বল,

জিমি – মা, আমি আর মামার কাছে বই কিনার টাকা চাইবো না,আমি ও কাজ করবো পড়া ফাকে ফাকে

জিমির মা বল্লো
– পাগলি মেয়ে, এতো কথা বলতে নেই মা,তা ছাড়া দেখতে এলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই

অবশেষ এ মায়ের কথাতে জিমি পাত্র পক্ষের সামনে যেতে রাজি হয়,
পাত্র পক্ষ জিমি কে দেখে যাওয়ার সময় জানিয়ে দেয় মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে

এ কথা জিমি শুনতেই কান্নায় ভেংগে পড়লো, ছেলে কে তার পছন্দ হয়নি,কালো,মোটা,বেটে, কথা গুলো ও বলতে পারে না ঠিক করে,

জিমি তার মাকে জানিয়ে দেয় ছেলে তার পছন্দ হয়নি, কিন্তু জিমির মামার একটা ই কথা ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে টাকা পয়সার অভাব নেই, ১০ ভরি গয়না দিয়ে তারা জিমি কে সাজিয়ে নিবে

জিমি মামার সামনে থেকে চলে আসে কান্না ছাড়া তার কোন পথ নেই মা, মামার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলবে না, এটা সে জানে,

তা হলে কি টাকার কাছে তাকে বিক্রি করে দিচ্ছে,জীবন সংগী নির্বাচন করার কোন অধিকার তার নেই কারন সে গরিব, বাবা নেই,এদের কোন ভাবে দিন কাটলে ই হলো,

বিয়ে হয়ে যায় জিমির, সে তার মন থেকে পড়া শুনা করার স্বপ্ন টা ঝেড়ে ফেলে দেয়,এখন তার একটা ই স্বপ্ন স্বামির ভালোবাসা পাওয়া,কিন্তু ভয় হয় এর থেকে ও যদি সে বঞ্চিত হয়,

বিয়ের দিন রাতে জিমি বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো একটা খাটে, মনের মধ্যে হাজার কথা আকি জুকি দিচ্ছে, জিমির বর ঘরে প্রবেশ করতে ই জিমি উঠে গিয়ে তাকে সালাম করে

জিমির বর যেন একটা রোবট কোন কথা না বলে ই সে খাটের এক কোনায় বসলো

জিমি সাহস করে কথা বল্লো আগে,,
-আপনাকে একটা কথা বলতে চাই
– বল

জিমি তার বরের কথা শুনে একটু বিস্মিত হলো, তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমি পড়া শুনা করতে চাই

– বিয়ের পরে মেয়েদের পড়া শুনা করা আমি পছন্দ করি না,বউ, বউয়ের থাকিস, এই বলে সে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো

জিমি সারা রাত কান্না করে পার করলো,
বিয়ের কয়দিন পরে ই জিমি জন্ম দিন আসে,

জিমির স্বপ্ন দেখে তার বর যদি তাকে জন্ম সারপ্রাইজ কোন গিপ্ট দিয়ে চমকে দিতো
কিন্তু কি করে সে তো জানে ই না জিমির জন্ম দিনের কথা, রাতে জিমি সেধে সেধে তাকে বলো
– এই যে শুনছেন আগামি কাল আমার জন্ম দিন

জিমি চায় তার বিয়ের পর জন্ম দিন টা নতুন মানুষের সাথে নতুন ভাবে কাটাতে

জিমির বর জিমি কে, ধমক দিয়ে বল্লো,এই সব রং ডং বাদ দে, তুই কি বাচ্ছা নাকি যে জন্ম দিন পালন করতে হবে

জিমি সেদিন রাতে ও খুব কান্না করে,একটু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার কি তার নেই,

একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হতো

জন্ম দিনে উইশ না ই বা করলো,কথা টা সুন্দর ভাবে বললে কি এমন ক্ষতি হতো

আজ জিমির বিয়ের এক বছর পূর্ন হলো,কিন্তু জিমি আজ আর বলেনি তাকে ম্যারেজ ডের কথা,
হয়তো বললে আবার সেই রকম ধমক মাখানো কয়টা কথা শুনতে হবে,

তবু ও জিমি হাল চাড়েনি অপেক্ষায় আছে এক দিন সব কিছু তার মনের মতো হবে,
ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,
যেখানে কান্না বলে কিছু থাকবে না,,এই আশা টা ই হয়তো জিমি কে বাছিয়ে রেখেছে,

সমাপ্ত

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

0
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

গাইথি নির্বাক দৃষ্টিতে চুহেসের যাওয়ার তাকিয়ে আছে চুহেসের এই অদ্ভুত আচরনে সত্যি একটু অভাক হয়েছে
গাইথি ব্যাপার টা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ির বিতর যায়

আহমদ মেহেরাহ গাইথির বাবা মেয়েকে দেখে বল্লো কি রে মা কোথায় ছিলি
গাইথি- বাবা নিদিপাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম

আহমদ মেহেরাহ- মা তুই এখন বড় হয়েছিস যখন তখন যেখানে সেখানে যাওয়া ঠিক নয়

গাইথি- ওহ বাবা বান্ধুবীর বাড়িতেই গিয়েছি অন্য কোথা ও যাইনি
এই বলে গাইথি বাড়ির বিতরে চলে গেলো
গাইথি গিয়ে তার ভাবিকে বল্লো
– ভাবি কি করচো
গাইথির ভাবি ঐশী বল্লো
– কি আর করবো দেখতেই পাচ্ছো কাজ করছি আমার তো আর তোমার মতো রাজ কপাল নয় যে সারা দিন টই টই করে এসে সব রেডী পাবো

গাইথি- ওহ ভাবি তুমি এমন করছো কেনো, তুমি তো আমার লক্ষি ভাবি তোমার মুখে এই সব কথা মানায় বলো

ঐশী- থাক আর পাম্প দিতে হবে না, সাইমুম কল দিয়েছিলো, তোর সাথে কথা বলতে চাইছিলো

গাইথি- ওহ ভাবি মেজাজ খারাপ করো না তো,উনি কল দিয়েছে কেনো

ঐশী- আমি কি করে জানবো, দেখ গাইথি ছেলেটা ভালো ভদ্র তোর ভাইয়া তোর ভালো চায় বলেই তো সাইমুমের মতো একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে

গাইথি- আমি জানি ভাইয়া ভালো চায় ভাবি,কিন্তু এ কেমন ভালো চাওয়া,একবার ও জানতে চাইলো না বিয়েতে আমার সম্মতি আছে কি না

ঐশী- রেগে যাচ্ছিস কেনো বিয়েটা তো আর এখন হচ্ছে না, লম্বা সময় আছে,এর মধ্যে ওর সাথে কথা বল দেখবি ভালো লাগবে

গাইথি কিছু না বলে চলে গেলো
গিয়ে নিজের রুমের দরজা আটকে দিলো, ফেজবুক লগইন করলো নাহ আজ ও কোন মেসেজ এলো ঐ আইডি থেকে,ছেলেটা কি হারিয়ে গেলো নাকি আজ চার দিন হলো কোন মেসেজ নেই

গাইথি ভাবছে পিছনের কথা, কবিতা গাইথির বরাবরি অপছন্দ ছিলো কিন্তু কেনো জানি ঐ দিন একটা কবিতা তে চোখ আটকে যায় কবিতা টা ছিলো এমন
“আমার একলা দিনের ক্লান্ত বেলায় আমার মাঝে আমার বাস
সেই মেঘলা দিনের নিভু আলোয় লেপ্টে ছিলো দূরের ওই নীলাকাশ”

কয়েকবার পড়ার পর কবিতা টা গাইথি মুখাস্ত হয়ে যায়, আইডির নাম দেখে ছেলে না মেয়ে বুঝা যাচ্ছে,নেইজিনের নীড়ে,এটা কি হতে পারে,তার পর কিছু না ভেবেই ইনবক্সে নক করে,
হাই আপনি কি কবি?
কবিতা কি আপনার খুব পছন্দ
– কি করেন আপনি

কিন্তু মেসেজ সিন করার কোন নাম গন্ধ নেই
দুই দিন পরে মেসেজের এন্সার আসে,
-না আমি কবি নই, কবিতা আমার ভালো লাগে তাই দিলাম

প্রায় সংগে গাইথি রিপ্লায় দেয়
-ওহ আমি ভেবেছি আপনি কবিতা লিখেন
আবার রিপ্লায় আসে
– নাহ আমি ওতো সময় পাই না যে বসে বসে কবিতা লিখবো

গাইথি বল্লো
-আপনি কি করেন
– কোথায় থাকেন
-আমরা কি বন্ধু হতে পারি

গাইথির প্রশ্নের কোন উত্তর আসলো না অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর গাইথি ফেজবুক থেকে বেরিয়ে যায়,এ কেমন মানুষ কথা কয়টা বলেই অফলাইনে চলে গেলো দূর,এই প্রথম কাউকে নিজে থেকে মেসেজ দিলাম আর সে এতো দাম দেখালো,এটা তো পূরো পুরি আমাকে ইনসাল্ট করেছে

আজ চারদিন ফেরিয়ে গেলো এখন ও মেসেজ গুলো সিন ও হলো না এন্সার এলো না,

গাইথি কে ডাকলো তার ভাবি ঐশী
ঐশী- গাইথি মিশমি কাঁদছে ওকে নিয়ে একটু কান্নাটা থামিয়ে দে না আমি পারছি না

গাইথির ভাইজি মিশমি বয়স দু বছর, এখন দু একটা করে আধো আধো কথা বলে
গাইথি মিশমি কে নিয়ে বাগানের দিকে গেলো

চুহেস রেস্ট হাউজে এসেই তার রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো
সব কিছু তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে গাইথি ই যে তার বাবুই,

ছোট বেলায় গাইথির মিষ্টি কথা, সব থেকে বেশি চুহেসের কাছে কাছে থাকা সব মিলিয়ে চুহেস গাইথি কে আদর করে বাবুই বলে ডাকতো, আজ সেই বাবুই কে দেখে তার বিস্ময়ের শেষ নেই তার বাবুই তাকে ছিনতে পারেনি, এটা যে খুব যন্ত্রনার কি করবে মানবে চুহেস তা

চুহেস গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো আয়না নিজেকে দেখছে, এটা সত্যি
কিন্তু তার চাওয়ার মাঝে ছোট বেলার চুহেস কে খুজে ফিরছে, সে কি এতোটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে যে বাবুই তাকে ছিনতে পারেনি , কি করলে বাবুই তাকে ছিনবে,
একটা পথ আছে তা হলো আহমদ মেহেরার সামনে যাওয়া তা হলে উনি আমাকে ছিনবে,

আর গাইথি ও তার ছোট বেলার কথা মনে করবে, কিন্তু আমি এতো তাড়া তাড়ি আহমদ মেহেরার সামনে যেতে চাই না,
আগে বাবুইকে ভালো করে বুঝতে হবে, ওকি ছোটবেলারর চুহেস কে মনে রেখেছে,
নাহ আমাকে আরেক বার গাইথির মুখোমুখি হতে হবে, একবার কেনো প্যাচে ফেলে গাইথি কে আমার পাশে পাশে রাখতে হবে

সেদিন বিকেলে আবার চুহেস গাইথিদের ওখানে যায়, এবার আর নিহার কে সাথে নিলো না
একা ই গেলো, অনেক্ষন গাইথিদের বাড়ির দিকে নজর রাখলো

নাহ কেউ বের হচ্ছে না বাড়ি থেকে, কি করা যায় একবার কি বেতরে যাবো,
কে আছে এখন ওদের বাড়িতে?
বাবুইর মা নেই, কিন্তু আমার ছিনার মতো আহমদ মেহেরাহ আছে,
তার সাথে অনেক পুরনো হিসেব বাকি,কিন্তু বাবুইর ব্যাপার টা অন্য
ভালোবাসি বাবুই কে বাবুই কি আমার এই অবেলায় ভালোবাসা টা মেনে নিবে
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে কি করা যায়,
এমন সময় চুহেসের নজর পড়ে গাইথির দিকে গাইথি যেন কোথায় গিয়েছে এখন বাড়িতে ফিরছে

চুহেস এগিয়ে গেলো গাইথির সামনে
গাইথি একটু অভাক হলো চুহেস কে দেখে
-আরেহ আপনি এই সময় এখানে

চুহেস- হুম তোমার সাথে দেখা করতে এলাম( কিছু মনে করোনা বয়সে তুমি আমার অনেক ছোট তাই তুমি করে বললাম)

গাইথি ইষ্যত হেসে বল্লো,
-ইটস ওকে, কি মনে করবো আমি,,আপনি তো বললেন না আমার সাথে কেনো দেখা করতে এলেন
চুহেস- এখন এখানে বলা সম্ভব নয়
গাইথি- তা হলে?
চুহেস- তুমি কাল আমার সাথে দেখা করবে দিঘীর উত্তর পাশে যে খালি জায়গা টা, ওটা অনেক সুন্দর আমি সেখানে সকালবেলা অপেক্ষা করবো,মনে রেখে সকাল বলতে খুব সকালে

কথা শেষ করে চুহেস হন হন করে হাটা ধরলো
গাইথি কে কিছু বলার সুযোগ দিলো না

গাইথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোক টা এমন কেনো,দেখে মনে হচ্ছে অতি ভদ্র কিন্তু রোবটের মতো

গাইথি বাসায় ফিরে এলো,দুটো টিউশনি করায় তার জন্য তাকে প্রতিদিন বিকেলে বের হতে হয়

গাইথি মনে মনে চুহেসের কথা ভাবছিলো এমন সময় গাইথির কল আসে,মোবাইল স্কিনে নামটা দেখে গাইথি খুশি হয় শ্রুতি আপু ফোন করেছে আমেরিকা থেকে

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৩

0

অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৩

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

চুহেস কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেলো
রেস্ট হাউজে এসেই বিছানার উপর এলিয়ে দিলো নিজেকে

নিহার – স্যার ডিনার রেডী আপনি আসুন
চুহেস- আমি খাবোনা আজ, নিহার তুমি যাও
নিহার- স্যার না খেলে শরির খারাপ করবে

নিহারের কথা শুনে চুহেস রেগে যায়
– এই ছেলে তোমার কি আমাকে কোন দিক দিয়ে বাচ্ছা মনে হয়,আমাকে বাচ্ছাদের মতো বুঝাচ্ছো, না খেলে শরির খারাপ করবে, আমি তোমার থেকে সব কিছু ভালো বুঝি যাও এখান থেকে

চুহেসের এসব কথা নিহারের কাছে নতুন নয় তবু ও গ্রামে আসার পর এই প্রথম রাগ দেখালো সেই ভেবে একটু অবাক হলো নিহার দরজার বন্ধ করে নিহার বেরিয়ে যায়

চুহেস চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে আজকে কফি শপের মেয়েটা কে কোথায় যেন দেখেছি,হা সকাল বেলার ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে কিন্তু সকালে আমি তার দিকে এতো খেয়াল করিনি,
আজ সন্ধায় যখন ওর চোখের দিকে নজর পড়লো মনে হলো ঐ চোখ আমার খুব পরিচিত কিন্তু এমন মনে হলো কেনো, ওর সাথে কি আমার পূর্বের কোন যোগসাজশ আছে মনে পড়ছে না,
আচ্ছা মেয়েটার নাম কি? নাম টা ও তো জানা হলো না, ইসস আবার যদি দেখা হতো তা হলে নাম টা যেনে নেয়া যেত

এই সব ভাবনার মধ্যে দিয়ে চুহেস কখন যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো টের ফেলো না,, সকালে ঘুম ভাংলো নটা বাজে
তা ও নিহার এসে জাগিয়েছে

চুহেস ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে বল্লো, আর ও আগে ডেকে দাওনি কেনো নিহার, তোমাকে বলেছিনা গ্রামে যতো দিন থাকবো সকাল সকাল উঠে হাটতে বের হবো

নিহার অপরাধির মতো উত্তর দিলো,আসলে স্যার কাল রাতে আমার মনে হলো আপনার শরির ভালো নেই তাই আর জাগাইনি এতো সকাল সকাল

চুহেস -ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি একটু গ্রাম্য বাজার টাতে ঘুরতে যাবো তুমি ও যাবে আমার সাথে সো রেডী হয়ে নাও

চুহেস ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো নিহার কে নিয়ে
নিহার- স্যার আপনি কিন্তু নাস্তা করেন নি কাল রাতে ও না খেয়ে ঘুমালেন
চুহেস- হুম গ্রামের বাজারে কোন একটা দোকানে বসে কিছু খেয়ে নিবো
নিহার- কি বলছেন স্যার আমি যতোটুকু জানি গ্রামের এই সব দোকানে অসাস্থকর পরিবেশে খাবার তৈরী হয় এগুলা খেলে শরির আর ও খারাপ করে

চুহেস নিহারের কথা শুনে মৃদু হাসলো, বল্লো আজ না হয় খেয়ে দেখবে শহরের ঐ দামি রেস্টুরেন্ট এর খাবারের ছেয়ে গ্রামে রাস্তার পাশের দোকানের খাবার অনেক সুস্বাদু

নিহার- স্যার কিছু মনে করবেন না একটা কথা জানার খুব ইচ্ছে

চুহেস- বলো
নিহার- গ্রামে আসার পর আপনাকে দেখে গ্রামের সব কিছুর প্রতি আপনার টান দেখে মনে হচ্ছে আপনার ছোট বেলা কেটেছে এই রকম ই কোন একটা গ্রামে

নিহারের কথা শুনে চুহেস গম্ভীর হয়ে বলে
-উওর টা যে তোমার পেতেই হবে এটা কোন জরুরী নয়

চুহেসের গম্ভীর কন্ঠ শুনের নিহার আর কথা বাড়ানোর সাহস ফেলো না
ওরা গিয়ে রাস্তার পাশে একটা টং দোকানে বসেছে

দোকানে চা কেক কলার ওয়ার্ডার দিলো চুহেস,
চুহেস এগুলা ওয়ার্ডার দিয়েছে দেখে নিহার বড় বড় চোখ করে চুহেসের দিকে তাকায়, তার মুখে কোন কথা নেই সে সত্যি বোবা হয়ে গেছে মনে হয় মেহেরা ফ্যাশন শো এর মালিক এখন সাধারণ খাবার খাবে তা ও রাস্তার দ্বারে টং দোকানে বসে(কথা গুলো নিহার মনে মনে বলছিলো)

চুহেস- ও ভাবে তাকানো কিছু নেই নিহার আমরা সবাই মানুষ এক মাটিতে তৈরী আল্লাহ আমাদের মাঝে কোন বেঁধা বেধ সৃষ্টি করে দেয় নি,আমরা নিজেরা ই নিজের মধ্যে এতোটা দূরুত্ব সৃষ্টি করেছি,
এই খাবার যদি একজন দিন মুজুর মাঠে কাজ করা লোক খেতে পারে টঙ দোকানে বসে
তা হলে আমি কেনো পারবো না,
ঘৃনার চোখে নয় নিহার ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখো সব কিছুই আপন মনে হবে

নিহার যেন আবার ও বড় দরনের ধাক্কা খেলো চুহেসের কথাগুলো দোকানি মন দিয়ে শুনছিলো,
এতোক্ষনে চুহেস ছোট বেলার মতো করে চায়ের মধ্যে চুবিয়ে বন খেতে লাগলো নিহার খাওয়া ভুলে গিয়ে চুহেসের দিকে তাকিয়ে আছে, ওর চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না,সামনে বসে থাকা লোকটি তার বস

চুহেস খাওয়া শেষ করে নিহারকে বল্লো তুমি তো কিছুই খেলেনা, তুমি কি এখানে খাবে নাকি বড় মার্কেটে গিয়ে কোন একটা রেস্টুরেন্ট এ খাবে
নিহার- না স্যার আমি এখানেই খাবো আপনি খেয়েছেন যখন তখন আমি ও খেতে পারবো

এতোক্ষনে দোকানি কথা বল্লো,দোকানি মাঝ বয়সের তিনি বল্লো কিছু মনে করোনা বাবা তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা আমাদের গ্রামের নয়

চুহেস- জ্বী চাচা আমরা আপনাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছি
দোকানী – কিন্তু বাবা তুমি কি এ গ্রামে আগে কখনো এসেছো
চুহেস- কিছু বল্লোনা

কিছুক্ষন পর দোকানী আনন্দে চিৎকার করে উঠে বল্লো,-তোমাকে ছিনতে পেরেছি আমি, তুমি আবরারের ছেলে তাই না, কি যেনো একটা নাম ছিলো তোমার মনে পড়ছে না

চুহেস- মাথা নিছু করে বল্লো জ্বী আপনি ঠিক ধরেছেন আমি আবরার মেহেরার ছেলে চুহেস মেহেরা

দোকানী চুহেস কে জড়িয়ে ধরলো বল্লো তোমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলো আল্লাহ ভালো মানুষদের
খুব তাড়া তাড়ি নিয়ে যায় যার দৃষ্টান্ত তোমার বাবা আর মা রেখে গেছে

তা বাবা আহমদের খবর কি কিছু জানো
চুহেস- না চাচা তাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি,আর কেমন করে রাখবো সব কিছু না জানলে অল্প কিছু তো আপনারা জানেন

দোকানীরর নাম রহিম তিনি বল্লেন- হুম তা ঠিক, তোমার জেঠিমা তো দু বছর আগে পৃথিবী ছেড়েছে,
শ্রুতির বিয়ে হয়েছে খুব ভালো জায়গাতে, আদনান বিয়ে করেছে একটা মেয়ে আছে

আহমদ এখন চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সারাদিন বাড়ির পাশে একটা চেয়ারে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে মনে হয় কারো পথ ছেয়ে বসে আছে

চুহেসেরর রহিম চাচার কথা শুনে চোখে পানি চিক চিক করছে, তবু ও অন্য দিকে তাকিয়ে পানি লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলো, তার পর বল্লো
-চাচা বাবুই কেমন কেমন আছে সে এখন কতো বড় হয়েছে বলতে পারেন

রহিম হেসে জবাব দিলো পারবো না কেনো, ওতো একটা লক্ষি মেয়ে।এবার কলেজে উঠেছে শুনেছি, এই তোমরা আসার আগে আমার দোকানে এসে ছিলো

চুহেস আর কিছু বল্লো না
কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লো চাচা আপনি আমার কথা টা একটু গোপন রাখবেন

রহিম- তা কেনো বাবা,তোমার কি এখন উচিত নয় সব ভুলে তোমার জেঠুর সাথে দেখা করা উনি যা করেছে তার শাস্তি উনি পেয়েছেন এবার তো তার কাছে ফিরে যাও

চুহেস কিছু না বলে, বল্লো আসি চাচা,
এতোক্ষন নিহার এদের মাঝে নিরব একজন দর্শক এর মতো সব কথা শুনছিলো, শুনে চুহেস কে সকালে করার প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেয়ে গেছে

চুহেস দোকান থেকে বেরিয়ে গেছে তার পিছু পিছু নিহার ও হাটছে
নিহার- স্যার এবার কোথায় যাবেন ভাবছেন
চুহেস- আনমনা হয়ে বল্লো,চলো দিঘীর পাড়ে যাবো এখন অবশ্য দিঘীটা নেই তবে জায়গাটার নাম পরিবর্তন হয়নি

নিহার- ওখানে কেনো স্যার
চুহেস কিছু বল্লোনা নিরবে হাটতে শুরু করলো উদ্দেশ্য যদি একবার বাবুই কে দেখতে পায়

কদমতলী দিঘীর পাড়ে এসে চুহেস দাড়িয়ে আছে ভাবছে এক সময় এখানকার পঞ্চাশ একর জমির মালিক ছিলো আমার দাদা, দাদার মারা যাওয়ার পর বাবা আর জেঠু মালিক হয়,

তার পর একদিন এক ভয়াবহ এক্সসিডেন্টে বাবা কে হারাই আমি তখন খুব ছোট আমি আর মা দুজনের কোন ভাবে দিন চলে যেতে বাবাকে হারানোর ধাক্কাটা হয়তো মা সইতে পারেনি,

এমন সময় নিহার কিছু একটা বল্লো,চুহেস ও ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে
চুহেস- কিছু বল ছিলে নিহার
নিহার- হুম স্যার হাটতে হাটতে অনেক দূর এসেগেছি কোথায় যাবেন

চুহেস নিহারের কথা শুনে আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো হুম ঐ তো বাড়িটা দেখা যাচ্ছে
নিহার- এই বাড়িটা কার?
চুহেস- কিছু বল্লোনা আনমনে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে একটু পরে দেখলো একজন বৃদ্ধা উঠোনে চেয়ার পেতে বসলো

এমন সময় একটা মেয়েলি কন্ঠে কথা কানে এলো চুহেসের তাকিয়ে দেখলো সেদিনের সেই মেয়েটি

মেয়েটি- এই নিয়ে আপনার সাথে তিন বার দেখা হচ্ছে আপনি কে আপনাকে তো আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না

চুহেস- হুম আমরা পরশু গ্রামে এসেছি এই তো গুরা ঘুরি করবো এই আরর কি

মেয়েটি বল্লো- তা আমাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো

মেয়েটির কথা শুনে চুহেসের হৃদয়ের সাগরে চলাত করে উঠলো, তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো – ওহ বাড়িটা বুঝি আপনাদের

মেয়েটি- হুম,কিন্তু আমাদের এতোবার দেখা হয়েছে আমি এখনো আপনার নামটা ই জানতে পারেনি
– ওহ তাই তো,আমি চুহেস আর ও নিহার
– আমি গাইথি

চুহেস নামটা শুনে চমকে উঠে, মনে হচ্ছে তার মনের মধ্যে ঢেউ বয়ে গেলো

গাইথি- কি ভাবছেন
চুহেস নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো কিছু না,

গাইথি- চলুন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বসবেন

চুহেস- না আজ না অন্য একদিন এই বলে উলটো দিকে হাটা দরলো
গাইথি নির্বাক দৃষ্টিতে চুহেসের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে
to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২

0
obelay valobashar
obelay valobasha

অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-২

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

ভোর পাঁচটা বাজার আগেই চুহেসের ঘুম ভেংগে যায় ঘড়িতে তখন চারটা চল্লিশ বাজে, চুহেস নিজেই ভেবে পাচ্ছে না এতো ভোরে তার ঘুম ভাংলো কি করে
কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে ও লাভ হয়নি ঘুম তার এলো না চারিদিকে ফজরের আজান শুরু হলো
আসতে আসতে হালকা ভোরের আভা দেখা দিলো
চুহেস বিছানা ছেড়ে উঠলো

-যাই হেটে আসি অনেক দিন ভোরের আলো বাতাস স্পর্শ করেনি আমার শরির আজ করবে, আর সেটা যদি গ্রামে স্বচ্ছ আলো বাতাস হয় তা হলে তো আর কথা ই নেই

বেরিয়ে পড়লো চুহেস ভাবনাহীন ভাবে চলতে শুরু করলো অনেক দিন পর এ ভাবে হাটছে ভালো লাগছে এখনো পুরোপুরি অন্ধকার কাটেনি

কিছুক্ষন উদ্দেশ্য হীন ভাবে হেটে থেমে গেলো তার পর ই মনে হলো কদমতলী দিঘীর কথা সাথে সাথে চুহেস ছোট বেলায় হারিয়ে গেলো, কতো যে কেঁদেছে একা একা ঐ দিঘীর পাড়ে বসে
এখন ও মনে পড়ে সব দুঃখের সাথি ঐ দিঘী ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এসে হাটা ধরলো পথ ঘাট সব কেমন অপরিচিত হয়ে গেছে

পনেরো বছরে অনেক কিছুই পালটে গেছে এখন গ্রাম গুলো গ্রামের জায়গায় নেই শহরে পরিণত হয়েছে তবু ও ভালো লাগছে হয়তো জন্মভূমি বলেই এতো ভালো লাগা

কিন্তু কিছুতেই কদমতলী দিঘী টা খুজে পাচ্ছে না চুহেস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাস করে নিবে এই ভেবে,
পূর্ব আকাশ লাল হয়ে উঠেছে হয়তো কিছুক্ষন পরেই সূর্য উঠবে কিন্তু মানুষজন মনে হয় এখন ও ঘুম থেকে উঠেনি

ঘড়িতে কাটায় সাতটা বেজে গেলো কিন্তু এখনো কাউকে দেখলাম না

চুহেস- এবার কি সত্যি ফিরে যেতে হবে
না আমার শৈশবের প্রিয়ো জায়গা টা এক নজর না দেখে কিছুতেই যাবো না

এমন সময় কারো হাসিতে চুহেস চমকে উঠলো, দুটো মেয়ে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে

চুহেস মনস্থির করে নিলো এদের কেই জিজ্ঞাস করবে
দিঘী টার কথা
আসতে আসতে মেয়ে দুটো আর ও কাছে চলে এলো

চুহেস- এক্সকিউজমি কদমতলী দিঘী টা কোন দিকে একটু বলবেন

মেয়ে দুটো দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন চুহেসের দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো আপনি কি এই গ্রামে নতুন

চুহেস কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
– হুম বলতে পারেন নতুন

মেয়ে দুটো বল্লো আসুন আমাদের সাথে

প্রায় আধ ঘন্টা হাটার পর মেয়ে দুটো বল্লো এই জায়গার নাম ই কদমতলী দিঘী

চুহেস- ধন্যবাদ, মনে হয় আর একটু ওদিকে গেলেই দিঘী টা পাবো তাই না

মেয়ে দুটো বিস্ময় চোখে চুহেসের দিকে তাকিয়ে বল্লো আপনি মনে হয় কিছুই জানেন না ঐ দিঘী টা অনেক দিন আগে বালি দিয়ে পুরিয়ে ফেলেছে এখন সেখানে বিরাট এক কন্সটাকশনের কাজ চলছে একটু ওদিকে গেলেও দেখতে পাবেন,

চুহেস- ধন্যবাদ আপনাদের কে
মেয়ে দুটো চলে গেলো

চুহেস মনে খুব আঘাত ফেলো ছোট বেলার স্মৃতি টা এই ভাবে মুছে যাওয়াতে, কিন্তু ঐ দিঘীতে তো আমাদের ৫%অংশ ছিলো তা হলে জেঠু কি আমাদের অংশ বিক্রি করে দিয়েছে

আর ভাবতে পারলো না ফিরে এলো রেস্ট হাউজে, তখন সকাল দশটা বেজে গেছে প্রায়

চুহেস কে দেখে নিহার এসে বল্লো স্যার এতো ভোরে কোথায় গিয়েছিলেন কতো খুঁজেছি চলুন নাস্তা করবেন

চুহেস- হুম তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
চুহেস ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা খেতে বসলো

নিহার-স্যার মিঃ প্লাতিনি ফোন করেছিলো, উনি আমাদের কম্পানির সাথে ডিল টা করতে চায়

চুহেস- কোন টা
নিহার- ঐ যে ডিজাইনের ব্যাপার টা, যেটা আপনি না করে দিয়েছিলেন,এখন তিনি আপনি যেমন টা বলেছিলেন তেমন ডিজাইন দিবে বলেছে

চুহেস- তুমি বলোনি আমি এখন ঢাকার বাইরে

নিহার- বলেছি, মিঃ প্লাতিনি নিজেই আসতে পারবে না উনি চিন গিয়েছে, ডিলটা করতে আসবে উনার ম্যানেজার, লোকেশন বললে ম্যানেজার সরাসরি চলে আসবে

চুহেস- ঠিক আছে আসতে বলো

নিহার- মিটিং টা কি এখানে হবে নাকি বাইরে কোথা ও

চুহেস- বাইরে কোন একটা কফি শপে হলে ভালো হয়,এখনকার সব কিছুর সাথে পরিচিত হওয়া যাবে

নিহার- ওকে স্যার তাই হবে

নাস্তা শেষে চুহেস রুমে ফিরে এলো উদ্দেশ্য একটু ঘুমিয়ে নিবে, শুধু শুধু গেলাম
শৈশব এর প্রিয় জায়গা টা তো ফেলাম ই না উলটো মনের কোনে কষ্টটা বেড়েছে, এই ভেবে যে আমার সব কিছু কেনো এতো তাড়া তাড়ি পরিবর্তন হয়ে যায়,কেনো কোন কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করে না
চুহেসের ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজা নক হওয়াতে

চুহেস- এসো, ছোট্ট করে কথা টা বল্লো
নিহার- স্যার কি কিছু ভাবছেন
চুহেস- না, তুমি কিছু বলবে?
নিহার- হুম
চুহেস- বলো
নিহার- মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার আজ সন্ধায় মিটিং টা করতে চায়,, উনারা রওনা হয়েছেন
চুহেস- ঠিক আছে সময় মতো সব রেডী করে নিও,
নিহার- ওকে স্যার

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই চুহেস আর নিহার কফিশপে বসে অপেক্ষা করছে, কাজের বেলায় চুহেস কোন গাফিলতি করে না, কোন কাজে দেরী করা,অনিয়ম প্রশ্নেই আসে না, মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার আসার ১৫ মিনিট আগেই চুহেস গিয়ে বসে আছে, ফাইল গুলো নতুন করে দেখে নিচ্ছে

ঘড়ি দেখে চুহেস বল্লো নিহার মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার এর নাম কি
নিহার- আদনান স্যার

চুহেস- মিঃ আদনান এখনো আসছে না কেনো ১০ মিনিট লেইট

নিহার- স্যার মনে হয় জ্যামে পড়েছে,এক্ষুনি এসে পড়বে হয়তো

মিঃ আদনান যখন কফিশপে এসেছে তখন অলরেডি ৩০ মিনিট লেইট
নিহার গেছে আদনান কে নিয়ে আসতে

নিহার- মিঃ আদনান আপনার এতো লেইট হলো কেনো স্যার কিন্তু খুব রেগে আছে,আমাদের চুহেস স্যার টাইমের ব্যাপারে খুব কড়া

আদনান- হুম বুঝতে পারছি বুঝেন ই তো ঢাকা থেকে আসা তো কোন মুখের কথা নয় রাস্তায় অনেক ঝামেলা থাকে

নিহার আদনান কে নিয়ে চুহেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো

যদি ও চুহেসের রাগে আগুন হয়ে থাকার কথা কিন্তু কেনো জানি রাগ তার আসছে না

এদিকে আদনাম ভাবছে এমা কি বলে আমার বয়সের একটা ছেলে মেহেরা ফ্যাশন শো এর বস এটা ও মানতে হবে কিন্তু এই বস কে কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে

চুহেস- মিঃ আদনান চলুন কাজের কথা বলি
চুহেসের কথায় আদনান বাস্তবে ফিরে এলো জ্বী স্যার বলুন,

চুহেস সব ফর্মালিটি শেষ করে ডিলটা সাইন করলো

সব কাজ চুকাতে রাত ১১ টা বেজে গেছে
চুহেস- মিঃ আদনান এ রাতে তো আপনি ঢাকায় ফিরতে পারবেন না

আদনান- জ্বী স্যার, আমি ঢাকাতে ফিরছি না আজ, এখানে ই আমার গ্রামের বাড়ি আজ রাত টা সবার সাথেই থাকবো ভাবছি আমার বোন তো শুনেই পাগলের মতো ছুটে এসেছে

চুহেস- ওহ আচ্ছা, এই বলে চুহেস কফিশপ থেকে বের হয়ে আসছিলো এমন সময় কারো সাথে যেন ধাক্কা খেলো, ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে

চুহেস খুব অভাক ই হলো এতো রাতে একা একটা মেয়েকে কফিশপে দেখে

মেয়েটি চুহেসের ভাবনা ভেংগে দিয়ে বল্লো আরেহ আপনি ও তো সে যাকে সকালে আমি দিঘীর পাড়ে নিয়ে এসেছিলাম

এতোক্ষনে চুহেস খেয়াল করলো এই মেয়েটি সকালের দুটি মেয়ের মধ্যে একটি

চুহেস- হুম মনে পড়েছে, তা এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন
মেয়েটি আমার ভাইয়া এখানে এসেছে, তার কাছে এসেছি

চুহেস- ও আচ্ছা, এই বলে বেরিয়ে গেলো কফিশপ থেকে

to be continue