১বছর পর___ ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া’য় স্বয়ং ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা শুভ্রকে এক বিশেষ মর্যাদা দেন। অনার্স পাস করার পর মাস্টার্সের ছাত্রত্ব, পাশাপাশি নিজের ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা, ভাবতেই শিহরণ দিয়ে উঠে শুভ্র’র পুরো শরীর। যে ইয়ারে শুভ্র মাস্টার্সে ভর্তি হচ্ছিল, একই ইয়ারে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের ভতি কার্যক্রম চলছিল। ডিপার্টমেন্টের অফিসে শুভ্র ওর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে বাসায় এসে খুবই অবাক হলো। আশ্চর্য হলো ওর কাগজপত্রের সঙ্গে একটি মেয়ের ছবি দেখে। সম্ভবত ছবিটি ছিল কোন এক নতুন ভর্তি হওয়া অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রীর। দেখে আশ্চর্য হলো শুভ্র। পাশেই বসেছিল শুভ্র’র মা। ছবিটা হাত থেকে নিয়ে বলল, মেয়েটা খুব সুন্দর। শুভ্র হেসে মাকে বলল, মা! চোখগুলো খুব’ই সুন্দর। একটি বইয়ে পড়েছিলাম পটলচেরা চোখ নাকি মেয়েদের আকর্ষণীয় করে। পটলচেরা চোখের সঠিক সংজ্ঞা আমি জানি না বা বুঝি না। তবে মা দেখো, তার চোখটা কিন্তু এর চেয়ে বেশী কিছু। রসিকতার ছলে মায়ের জবাব, ওহ, আচ্ছা! খুব মনে ধরেছে, নাহ?! দুষ্টুমির ছলে শুভ্র’র জবাব, হ্যাঁ, মা খুউব। কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে মায়ের জবাব, ওকে! কাল তো তোমার বাবা আসছেই বাহির থেকে। পরশু না হয় দেখে যাবো। কি বলো? পর্দার’র আড়ালে দাঁড়িয়ে মা ছেলের কথোপকথন পুরোটাই শুনে নেয় নীলিমা। ঘটনা বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকে দ্রুত সে স্থান পরিত্যাগ করে…. ‘
নিলীমা আর তন্নয় একে অপরকে খুব ভালোবাসে। তন্নয় নিলীমাকে প্রথম প্রপোজ করে কিন্তু নিলীমা রাজি হয়নি। তখন তন্নয়কে নিলীমা খুব অবহেলা করত।নিলীমা আর তন্নয়ের ২বছর আগের কথা। ২ বছর আগে ও নিলীমা তন্নয়কে এতটা ভালোবাসেনি । তন্নয় নিলীমার কাছে গেলেই বিরক্তি বোধ করতো। একদিন তন্নয় নিলীমা কে বলল….
তন্নয় : হাই……
নিলীমা : (কিছু বলে না)
তন্নয় : কি হলো তোমাকে বলছি শুনতে পাচ্ছো….????
নিলীমা : কি এমন চেচাছেন কেনো..?? আপনার ইচ্ছা হইছে আপনি বলছেন আমি কি আপনাকে আমার সাথে কথা বলতে বলছি।
তন্নয় : হুমমম তা বল নাই,, তাই বলে কি কথা বলা যায় না।
নিলীমা : (চুপ করে চলে গেলো কিছু না বলে)
এমন অবহেলা, বিরক্তি, আর তন্নয়ের ভালোবাসায় দিন চলতর থাকে।যত বার তন্নয় নিলীমার কাছে যায় ততবারই নিলীমা তন্নয়কে অপমান করে। এমন করে চলে গেলো অনেকটা দিন। কিন্তু নিলীমা সেই তন্নয় কে অপমানই করে। এমন করতে করতে কখন যে নিলীমা তন্নয়ের প্রেমে পরে গেছে নিলীমা বুঝতেই পারেনি। নালীমা এখন তন্নয়কে অপমান করলে তার নিজেরই খারাপ লাগে, বাসা বার বার তন্নয়ের কথা ভাবে। হঠ্যাৎ তন্নয়কে সে দেখে না। তন্নয় আর আসে না নিলীমার কাছে। নিলীমা খুব চিন্তায় পরে যায় যে তন্নয় কেনো আসে না। তবে কি আর আসবে না। যদি না ই আসবে তাহলে কেনো বুকের ভিতর ভালোবাসাে সৃ্ষ্টি করলো। নিলীমা এখন খুব কাদে তন্নয়ের জন্য, অপেক্ষা করে কিন্তু তন্নয় আসে না। নিলীমা তন্নয়ের বন্ধুদের কাছে খবর পেলো যে তন্নয়ের খুব জ্বর কয়দিন ধরে। তন্নয়ের বন্ধুরা তখন নিলীমাকে খুব বকা বকি করে কেনো তন্নয়ের খবর চাও, এখন তন্নয়কে অপমান করতে পারো না বলে..??? তখন নিলীমা কান্না করেদেয় আর বলে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,, আর এটা ও বুঝেছি যে আমি তন্নয়কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, তন্নয় যে আমার অমূল্য রতন। তখন তন্নয়ের বন্ধুরা খুসিতে চিতকার দিয়ে উঠে আর বলে ভাবি এখন কান্না থামান। তন্নয়ের জ্বর কমলে আমরা তাকে বলে দিব সব ঠিক হয়ে যাবে। তন্নয়ের জ্বরের কথা শুনে তন্নয়কে দেখতে খালা আর খালাতো বোন আসে। তন্নয় এখন আগের থেকে একটু সুস্থ্য বলে খালাতো বোনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আর তা নিলীমা দেখে। তন্নয়ের পাশে মেয়ে দেখে নিলীমার রাগ হয় আর তন্নয়ের কাছে গিয়ে বলে……
নিলীমা : এটা কি হচ্ছে..???
তন্নয় : কি হচ্ছে আর কি হচ্ছে…!!!
নিলীমা : কি হট্ছে হুমমম মেয়েটা কে..??
তন্নয় : কেনো তা বলতে হবে নাকি….?
নিলীমা : হে বলতে হবে। মেয়ে নিয়ে ঘুরা হয় বুঝি…??? তোমার না জ্বর..???
তন্নয় : যদি বলি এটা আমার বউ তা হলে কি করবে। আর আমার জ্বর তুমি কি করে জানলে…???
নিলীমা : (কান্না করে) এটা তোমার বউ তুমি বিয়ে করলে কবে…???
তন্নয়: তা কি তোমায় বলতে হবে..???
নিলীমা : বলো না তন্নয় মেয়েটা কে..??? আমার খুব খারাপ লাগছে…।
তন্নয় : ও আমার খালাতো বোন তন্নিমা।
নিলীমা : তন্নিমা
তন্নয় : হুমম কেনো।
নিলীমা : তোমার নাম তন্নয় আর অর নাম তন্নিমা মিলিয়ে।
তন্নয় : হুমমম ভাই বোনের নাম কি এক হয় না।
নিলীমা 🙁 হাসি দিয়ে) হে হয়। আমি তো তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে তোমার খোজ নিয়ে ছিলাম, জানতে পারলাম তোমার জ্বর।
তন্নয় : কেনো খুজ নিয়েছ তুমি আমার..?? কে হই আমি তোমার…? নাকি অপমান করতে পারছো না বলে…??
নিলীমা : (তন্নয়কে জরিয়ে ধরে) Sorry তন্নয় আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি তন্নয়, আর তুমি বললে তুমি কে আমার,,… তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন।তুমি যে আমার জীবনের আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
তন্নয় : সত্যি বলছ নিলীমা..???
নিলীমা : হে তন্নয়….. I Love You ?
তন্নয় : নিলীমা I Love You Too ?
নিলীমা : আমাকে ছেড়ে যাবে না তো..
তন্নয় : না কখনো যাবো না… তোমাকে আমার এই বুকে রাখবো আমি ও যাবো না তোমাকে ও কখনো যেতে দিবো না.
নিলীমা : হুমমম যাবো না।
এমন করে চলে গেলো কিছু সময়। তন্নয়ের খালাতো বোন বলে আরে ভাইয়া আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু। তন্নয় বলে তো কি হয়েছে। আমি একটু প্রেম করছি আমার পাগলিটার সাথে। নিলীমা বলে হুমমম ঠিকইতো।
তন্নয় আর নিলীমা এখন দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। একে অপরকে ছাড়া থাকতেই পারে না। ওদের বিয়ে হয়েছে। অরা খুব খুশি। নিলীমা প্রেগনেন্ট অরা মা বাবা হবে খুব খুশি অনেক স্বপ্ন। তার পর পার হয়ে গেল কয়টি মাস….নিলীমার জমজ দুটি বাঁচ্চা হয় একটি ছেলে একটি মেয়ে। মেয়ের নাম রাখে তন্নয়ের সাথে মিল করে তন্নি আর ছেলের নাম রাখে নিলীমার সাথে মিল করে নিলয়। অদের হাসি খুশিতে দিন কাটে খুব খুশি অরা। আজ তন্নয়ের জন্ম দিন। নিলীমা অনেক আয়োজন করেছে,,, আর সবাইর সামনে তন্নয়কে একটি কিস করে বলে তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন,,, তন্নয় ও বলে তুমি আমার অমূল্য রতন। তার পর জরিয়ে ধরে একে অপরকে।
সমাপ্ত
(প্রিয় পাঠক, গল্পটি কেমন লাগলো লাইক, কমেন্টস করে জানাবেন সবাই।
গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।)
আমি আপনাদের সবার কাছে নিহারের হয়ে ক্ষমা চাইছি
উপস্থিত সবাই চুপ কারো মুখে কোন কথা নেই
সবার প্রথমে গাইথি কথা বল্লো
– আপনি কথা গুলো বলে সবার কাছে ভালো হয়ে গেলেন,আমার কি হবে একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়া কতোটা অপমানের, সেটা আপনার মতো লোকের বুঝার কথা নয়
চুহেস গাইথির দিকে এক নজর তাকিয়ে বল্লো
– ঠিক বলেছো,,তোমাকে অপমানের হাত থেকে বাচানোর একটা এ উপায় আছে, যার সাথে তোমার বিয়ে ভেঙেছে তার সাথে আবার বিয়ে হওয়া
এবার আদনান বল্লো
– কিন্তু সে যদি আমার বোন কে বিয়ে করতে রাজি না হয়
চুহেস- রাজি হবে,আমি কথা বলবো ওর সাথে আপনারা ওকে আসতে বলুন
আদনান। ঐশীর দিকে তাকায়
ঐশী বুঝতে পারলো আদনান কি বলতে চায়
– ঠিক আছে আমি ফোন করছি
চুহেস উপস্থিত গ্রামবাসী দের উদ্দেশ্য করে বল্লো,
-সব ঝামেলা তো শেষ হলো,এবার নিশ্চয়ই আপনাদের আর কিছু বলার নেই
গ্রামের সকলের মাঝে দোকানি রফিক ও ছিলো,
– সে বল্লো না বাবা আর কিছু বলার নেই আমাদের
গ্রামের সবাই চলে গেলো,শুধু দোকানী রফিক যায় নি
চুহেস গভীর ভাবে যেন কিছু ভাবছে
আমি যদি সাইমুম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি তা হলে আমি আর ও দূর্বল হয়ে পড়বো, হয়তো সাইমুম কে সব কথা গুছিয়ে বলতে পারবো না,তার আগে এখান থেকে সরে পড়তে হবে
চুহেস আদনান কে উদ্দেশ্য করে বল্লো,আমি সাইমুম এর জন্য একটা মেসেজ লিখে রেখে যাচ্ছি, দয়া করে আপনি, ও আসলে দিয়ে দিবেন
এখন তা হলে আমরা উঠি, চুহেস আদনানের হাতে মেসেজ লিখা কাগজ টা দিয়ে
নিহার কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ,
চুহেসের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে আহমদ মেহেরা,দোকান দার রফিক, আর উপস্থিত সবাই
কারো মুখে কোন কথা নেই
নিরাবতা ভেঙে রফিক বল্লো
আহমদ,তুমি এখন ও চুপ করে থাকবে, অনেক তো অন্যায় হলো ছেলেটার প্রতি,আর কোন অন্যায় হতে দিও না,সে আমাদের গাইথি মাকে ছোট বেলা থেকেই অনেক পছন্দ করে
আদনান রফিকের কথা শুনে অবাক হয়ে আহমদ মেহেরাকে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– বাবা রফিক চাচা কি বলছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,চুহেস স্যারের সাথে আমাদের কি আগের কোন সম্পর্ক আছে
আহমদ মেহেরা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে, এই বয়সে এসে ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তা তিনি কোন দিন ভাবেন নি, কি জবাব দিবে ছেলে মেয়েদের
শ্বশুরের নিরাবতা দেখে ঐশী বল্লো
– বাবা আমার মনে হয় চুহেস ছেলেটার সাথে এই ফ্যামেলির একটা যোগসাজশ আছে,অনেক দিন আগে আমি কিছু কাগজ পত্র
গুছাতে গিয়ে একটা ছবির এ্যালভাম পাই,এ্যালভামের অনেক ছবির সাথে আমি গাইথির সাথে একটা ছেলের ছবি দেখি,সেই ছবির ছেলেটার সাথে এই চুহেস ছেলেটার চেহেরা হুবহু মিলে যাচ্ছে
হঠ্যা ৎ গাইথির মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করে
সে ঐশী কে বলে
– ভাবি ছবি টা তে কি আমার গায়ে সাদা জামা ছিলো
ঐশী- হুম, সাদা জামা ছিলো তোর গায়ে
গাইথি যেন চুপসে যায়, হয়তো সে অতিতের সাথে কিছু মিলাতে চেষ্টা করছে
আদনান আবার ও বল্লো,
– বাবা ছোট বেলায় তুমি আর মা, আমাকে পড়া লেখার জন্য মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলে, তবু ও আমার পঞ্চইন্দ্রিয় বলছে, ছোট চাচার ছেলে , আজকে আমাদের এই চুহেস স্যার,
একবার আমি বাড়িতে আসার পর চুহেসের কথা জানতে চাইলে তুমি বলে ছিলে চুহেস তোমার টাকা চুরি করে পালিয়েছে,
কথা টা তুমি মিথ্যা বলেছিলে সেটা আজকের চুহেস কে দেখে ই বুঝতে ফেরেছি আমি
সন্তানের মুখে এসব কথা শুনে আহমদ মেহেরার চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পড়ছে
গাইথি এগিয়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে বসে
– বাবা তুমি আর কিছু লুকিয়ে ও না, যা জানো সব বলো
এবার আহমদ মেহেরা কথা বল্লো,চোখ মুছে তিনি বলতে শুরু করলেন
– এই গ্রামে অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলো আমার বাবা আজম মেহেরা, তার মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে, আহমদ ও আবরার সে সম্পত্তির মালিক হয়
কিন্তু তখন আমার মাঝে লোভ কাজ করছিলো
আমি চেষ্টা করতে শুরু করলাম কি করে আবরার কে সম্পদ কম দেয়া যায়,
কিন্তু সেটা কিছুতেই সম্ভব ছিলো না, কারন বাবা মিত্যুর আগে উইল করে যায়, যেন আমাদের মাঝে আর কোন ঝামেলা না থাকে,
আবরার তার বউ ছেলে কে নিয়ে আলাদা থাকতো আমাদের থেকে, একদিন খবর এলো অফিস থেকে ফেরার পথে রোড এক্সসিডেন্টে আবরার গুরুতর আহত হয়,আবরার কে হোসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়,
খবর পেয়ে আমরা ও সেখানে যাই আবরার ইমারজন্সি তে তিন দিন ছিলো, তার পর সে মারা যায়
হয়তো আবরার এভাবে চলে যাওয়া টা,চুহেসের মা মেনে নিতে পারেনি, সে আসতে আসতে অসুস্থ হয়ে যায়,
তখন আমাদের ওদের বাড়িতে রিতিমত আসা যাওয়া হতো, ব্যাংকে যা টাকা ছিলো তা এক সময় শেষ হয়ে যায়,
আবরারে বউ আফসানা তখন আমাকে ডেকে বলে
– ভাইজান টাকা পয়সা সব তো শেষ আমার চিকিৎসার পিছনে, আমি হয়তো আর বাছবো না, তবুও আমার ছেলেটার কথা ভাবলে বাছার খুব ইচ্ছে হয়,
তার তো আর কেউ নেই, আপনার ভাই চলে গেছে,কিছু সম্পত্তি আমার নামে রেখে গেছে সেখান থেকে কিছু বিক্রি করে চিকিৎসা টা করাতে চাই,
আর চুহেসের সম্পদ চুহেস বড় না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবে না
আমি এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, বললাম ঠিক আছে আফসানা আমি টাকা দিবো, সে টাকার বিনিময়ে তুমি কিছু জমি আমার নামে লিখে দিও, আফসানা রাজি হয়,
আমি আফসানার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আফসানার নামে থাকা সব সম্পত্তি আমার নামে লিখিয়ে নিই, তার কিছু দিন পরে আফসানা ও আবরারে পথে পাড়ি দেয়,
চুহেস কে আমি আমার কাছে নিয়ে আসি,তোর মা চুহেস কে পছন্দ করতো না,
সে বলতো চুহেসের থাকা খাওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়, বিশেষ করে চুহেস গাইথির সাথে খেলতো, সারা দিন গাইথি চুহেসের পিছু পিছু থাকতে,আর এটা সেটা আবদার করতো,
চুহেস গাইথির সব আবদার মেনে নিতো ব্যাপার টা তোদের মা ভালো চোখে দেখতো না
একদিন গাইথি কে নিয়ে চুহেস রাতে চাঁদ দেখতে বের হয় তোদের মা অনেক রেগে যায় চুহেসের উপর ওকে অনেক মারধর করে,
আমার কাছে নালিশ করে আমি চুহেস কে না মারলে,অনেক খারাপ ভাষায় কথা বলি,
এই টুকু বলে আহমদ মেহেরা থামলো নিজের চোখের পানি মুছলো,উপস্থিত সবার চোখে পানি
আহমদ মেহেরা চোখের পানি মুছে আবার বলতে শুরু করলো,ছোট থেকে চুহেসের আত্মসম্মান একটু বেশি ছিলো,হয়তো এই জন্য ই সে রাতে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়,
আমরা কেউ আর তার খোজ নিতে চেষ্টা করিনি, আসতে আসতে সবাই চুহেসের কথা ভুলে যায়,,
আহমদ মেহেরা থামলো,কারো মুখে তখন কোন কথা নেই,
এমন সময় সাইমুম এসে উপস্থিত হয়,,সাইমুম গাইথি কে দেখে অবাক হয়,
সাইমুম গাইথির দিকে এক গাধা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, গাইথি কারা তোমাকে নিয়ে গেছে, আমি জানি তুমি অন্য কারো সাথে যেতে পারো না,নিশ্চয়ই তোমাকে কোন বোখাটে তুলে নিয়ে গেছিলো, তোমার কোন ক্ষতি করেনি তো তারা
গাইথি সাইমুমের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে
– ভাইয়া তুমি একে কেনো ডেকেছো বলো,এই বলে গাইথি তার রুমে চলে যায়
আদনান গাইথির দিকে একটুকরো কাগজ এগিয়ে দেয়
সাইমুম- কি আছে এটা তে
আদনান- তুমি দেখো
সাইমুম কাগজ টা খুলে দেখে কয়েক টা লাইন লেখা”গাইথি তোমার ছিলো তোমার আছে,তোমার থাকবে
চুহেস মেহেরা
সাইমুম – কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লো, এখন আপনারা কি ভেবেছেন এই ব্যাপার টা নিয়ে
আদনান- আমরা এখন এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না তুমি এখন আসতে পারো
সাইমুম আদনান এর এমন ব্যাবহারে একটু অবাক হলো তার পর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো
নিহার- ঠিক আছে স্যার এই নিয়ে পরে কথা বলবো আগে ডক্টর কে ফোন করে আসতে বলি,ক্লোরোফম করা হয়েছে গাইথি ম্যাডাম কে এখন ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে হবে,
চুহেস আঁতকে উঠে বল্লো
– কে করেছে ওকে ক্লোরোফম,
নিহার সেদিকে কান না দিয়ে ডাক্তার কে ফোন দেয়, ডাক্তার এসে গাইথি কে ইনজেকশন দিয়ে, চলে যায়,একটু পরেই গাইথি নড়েচড়ে উঠলো
এই পুরোটা সময় চুহেস নিরব দর্শক এর মতো ছেয়ে ছিলো, বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না, কি হচ্ছে সব টা যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
গাইথি চোখ মেলে তাকিয়ে চার পাশ দেখে নিয়ে দফ করে উঠে বসলো, আমি,আমি এখানে কি করছি, আজ তো আমার বিয়ে হওয়ার কতা ছিলো
গাইথির কথা শুনে চুহেস নিহারের দিকে তাকিয়ে বলে
-নিহার ও এসব কি হলছে কি হয়েছে পুরো ব্যাপার টা আমাকে বলো,
গাইথি এতোক্ষনে নিহার আর চুহেস কে লক্ষ করলো
গাইথি চুহেস কে দেখে আগুনের মতো জ্বলে উঠে
– আপনি, আপনি এখানে কি করছেন,আর এই সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে আমি কি করছি
চুহেস নিহারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে
নিহার সাসহ সঞ্চয় করে নিচ্ছে, আজকে প্রথম চুহেসের মুখের উপর কথা বলবে তাই কি বলবে প্রথমে সেটা ও গুছিয়ে নিচ্ছিলো মনে মনে, তার পর বলতে শুরু করলো
– স্যার আমি আপনার কাছে আজ অনেক বছর ধরে আছি, দেখেছি আপনাকে খুব কাছ থেকে,আমি কখনো আপনাকে মন খুলে আনন্দ করতে দেখিনি,
সব সময় মনে হয়েছে আপনি, কিছু যেন একটা লুকিয়ে রাখতে চাইছেন
সুন্দর নগর যে কদিন চিলাম,আপনাকে অনেক ফ্রেশ দেখেছি আমি, তার পর খেয়াল করলাম আপনি সব সময় গাইথি ম্যাডামের সাথে দেখা করার জন্য উদ্দিগ্ন হয়ে থাকতেন,
আমার মনে হয়ে ছিলো আপনারা দু জন, দুজন কে ভালোবাসেন,
তাই যখন নিধিপার কাছে ম্যাডামের বিয়ে কথা শুনি
তখন আমি একটা প্লান করি,নিধিপার ইচ্ছে ছিলো না আমার প্লানের মধ্যে থাকা,
তবু ও থাকতে আমি বাধ্য করি, আর ম্যাডাম কে এখানে নিয়ে আসি নিধিপার সাহায্যে
নিহারের কথা শেষ হওয়ার পরে ও চুহেস দাঁড়িয়ে আছে আগের মতো করে, কোন রেসপন্স দেখা গেলো না তার মাঝে, হয়ত ঘোরের মধ্যে আছে
গাইথি চিৎকার বলে এখন আমার কি হবে গ্রামের মানুষ এমনিতে অনেক ক্ষ্যাপে আছে আমাদের উপর, এখন ভাইয়া, আর বাবা কি বলবে ওরা তো এখন আমায় ঘৃনা করবে, এই বলে গাইথি কান্না শুরু করে দেয়
গাইথির কান্নার আওয়াজ কানে যেতে চুহেস স্বাভাবিক হয়,,গাইথিকে লক্ষ করে বলে
-প্লিজ তুমি কেদো না তোমার চোখে এই নোনা পানি একেবারে মানায় না,প্লিজ তুমি কাদবেনা
যা হয়েছে পুরোটা ই ভুল বুঝা…
চুহেস কে কথা শেষ করতে দিলো না গাইথি
– আপনি চুপ করুন, এই সব কিছু আপনার জন্য ই হয়েছে, আমার বিয়েটা দু বছর পরে হওয়ার কথা ছিলো, শুধু আপনার জন্য তাড়াহুড়া করে এখন হচ্ছিলো,
সেটা ও হতে দিলেন না,আমার বাবা, ভাই এখন গ্রামে মুখ দেখাবে কি করে,
এখন আসছে উনি ভালো সাজতে,নিজে লোক পাঠিয়ে নিজে ই সাধু সাজছে এখন
গাইথির কথা গুলো চুহেসের গায়ে কাটার মতো বিঁধছে যার সুখের জন্য ঐ পথ থেকে সরে এলাম, তার মুখে এই সব কথা শুনতে মোটেই ইচ্ছে হচ্ছে না
কঠোর গলায় চুহেস বল্লো
– চুপ করো গাইথি এই সব আমার তোমার মুখ থেকে শুনতে হবে ভাবতে পারিনি,,
নিহার তুমি অনেক বড় ভুল করেছো আমাকে না জানিয়ে কাজ টা করে, কারো সাথে একটু কথা বললে,বা ঘুরতে গেলেই কি তাকে ভালোবাসে,তোমার মেন্টালিটি কবে থেকে এত নিচু হলো,
গাইথি- থাক এখন আর এতো সাফাই গাইতে হবে না,যা ক্ষতি হয়েছে সব আমার হয়েছে, আমি এখানে আর এক মুহুর্ত থাকবো না এই বলে গাইথি উঠে চলে যাচ্ছিলো
চুহেস ধমক দিয়ে বল্লো
– দাড়াও গাইথি তুমি এখানে নিজের ইচ্ছে তে আসনি যে তুমি নিজের ইচ্ছেতে যাবে
তুমি আর এক পা দিবে না বাড়ির বাইরে, ভোর হলে নিহার তোমাকে যে ভাবে এনেছে সে ভাবেই দিয়ে আসবে
নিহার – আমি কেনো স্যার
চুহেস- কারন তুমি ওকে এনেছো আমাকে জিজ্ঞাস করোনি, তাই এখন তুমি ই যাবে,
নিহারের আরর কথা বলার সাহস হলো না
চুহেস কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো, যা ঘটেছে তার জন্য মোটে ই প্রস্তুত ছিলাম না,, নিহার যে এই রকম একটা কাজ করবে ভাবতে ই পারেনি,
তবে নিহারের ভাবনা একদম ই ভুল নয়,তবে কিছু কিছু ঠিক কাজ কে পরিস্থিতি ভুল প্রমাণিত করে দেয়,
আজ বাবুই এতো কাছে থেকে ও আমার এতো দূরে, ওর প্রতি আমার কোন অধিকার নেই,, বাবুই নিশ্চয়ইই সাইমুম কে অনেক ভালোবাসে,হয়তো সাইমুম আমার থেকে ও অনেক ভালো বাসে বাবুই কে, সবাই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়,হয় তো আমি তাদের দলের একজন,
চুহেসের ভাবনা ছেদ পড়ে, নিহারের কথায়
নিহার- স্যারর ভোর হয়ে গেছে
চুহেস – হ্যা তো যাও ওকে যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসো
নিহার- স্যার সত্যি যাবো
চুহেস রেগে গিয়ে বল্লো
– আমি কি মিথ্যা করে যেতে বলেছি
নিহার আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায় গাইথি কে নিয়ে
ওরা যাওয়ার পর চুহেস যেন ভাবনার অতল সাগরে ডুবে গেলো
তার পর নিজেই নিজেকে বল্লো
– নাহ আমি ভুল করেছি নিহার কে একা পাঠিয়ে গ্রামের মানুষ নিহার কে ভুল বুঝে মারধর করতে পারে
তার পর চুহেস গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়,
ড্রাইবার কে বল্লো গাড়ির যত দ্রুত চালানো যায়, সে দিকে যেন খেয়াল রাখে, ঠিক সময় গ্রামে পৌছতে হবে
নিহার যখন গাইথি কে নিয়ে গ্রামে পৌছয় তখন দুপুর আড়াইটা বাজে, গাইথি গাড়ি থেকে নেমেই বাড়ির দিকে যায়, নিহার ভয়ে ভয়ে পিছন পিছন আসছে
গাইথি তার ভাই আদনান কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে ভাইয়া যা ঘটেছে তাতে আমার কোন দোষ নেই, প্লিজ ভাইয়া তুমি আমায় ভুল বুঝো না
আদনান- তোকে আমি কোন দিন ভুল বুঝিনি তুই আমার ছোট বোন, অনেক ভালোবাসি তোকে কিন্তু তুই তার মর্যাদা রাখলি না
আদনান নিহার কে দেখতে পায়
– একি আপনি এখানে কেনো আসছেন, আপনি এখনি এখান থেকে চলে যান, আমার বোন কে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই অনেক আর কোন ঝামেলা চাই না আমি
গ্রামের গন্য মান্য কয়েকজন গাইথিদের উঠুনে ভীড় করে, তাদের একটা ই দাবি নিহার কে ছেড়ে দেয়া যাবে না, ঠিক এই সময় সেখানে চুহেস পৌছয়, নিহারের ভয় টা দূর হয়ে যায় চুহেস কে দেখে
আদনানের চোখ চুহেসের উপর পড়তেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলে
-আরেহ স্যার আপনি এখানে
চুহেস- হুম আপনার বাবা কোথায় ডাকুন তাকে আমি কয়েক টা কথা বলবো
আদনান-বাবা ঘরেই আছে, এই বলে আদনান আহমদ মেহেরা কে ডেকে দেয়
আহমদ মেহেরা তো চুহেসের দিকে তাকিয়ে স্টাচু হয়ে যায়,
চুহেস স্বাভাবিক ভাবে আহমদ মেহেরা কে সালাম দিয়ে বসতে বলে
আহমদ মেহেরা যেমন আছে তেমন ই দাঁড়িয়ে থাকে
চুহেস আর কিছু না বলে বলল
– আমি আসল কথাতে আসি, গত মাসে আমি গ্রামে ঘুরতে আসি, সাথে এই ছেলে আমার, পি. এ. নিহার আসে
একদিন হঠ্যাৎ করে গাইথির সাথে আমার পরিচয় হয়,সে থেকে দু এক বার আমাদের দেখা হয়,কিন্তু নিহার অন্য কিছু ভেবে নেয়। হয়তো সে ভেবেছিলো…থাক সে সব কথা,তাই সে গত কাল গাইথিকে নিয়ে যায়,এর পুরো টা ই ভুল বুঝা বুঝি,আমি আপনাদের সবার কাছে নিহারের হয়ে ক্ষমা চাইছি
কি বলছো তুমি,মাথা ঠিক আছে তোমার
নিহার- মাথা একদম ঠিক আছে, এখন তুমি বলো আমার কথাতে তুমি রাজি কি না
নিদিপা কিছুক্ষন ভেবে বল্লো যদি রাজি না হই?
নিহার- তা হলে আমি অন্য পথ খুঁজে নিবো,তবু ও গাইথি কে আজ আমি নিবো ই
নিদিপা- ঠিক আছে আমি রাজি, আমায় কি করতে হবে বলো
নিহার- তুমি গাইথি কে কোন একটা অজুহাত দেখিয়ে বাড়ির পিছনে নিয়ে আসবে আমার গাড়ি একটি গাছের আড়ালে পার্ক করা থাকবে,
প্রথমে তুমি তার নাকে এই ক্লোরোফম ভেজা রুমাল টা ছেপে ধরবে, পরে আমি ওকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাবো, কেউ সন্দেহ করবে না
নিদিপা- আর আমি আমার কি হবে
নিহার একটু অবাক হওয়ার ভান করে বল্লো
-তোমার আবার কি,তুমি যেখানে আছো সেখানে ই থাকবে বা নিজের বাড়ি চলে যাবে
নিদিপা-আমি যাবো না তোমার সাথে?
নিহার- ওহ. নো. নিধি তোমার তো কোন বুদ্ধি নেই তুমি সহ উধাও হলে সবাই তোমাকে সন্দেহ করবে, আর তা ছাড়া আমি গাইথি কে বিয়ে করার জন্য সাথে নিচ্ছি না,গাইথি আমার স্যারের বেছে থাকার পেরনা, বুঝেছো
নিধিপা মুখ বোতা করে বল্লো- হুম
নিহার – ডোন্ট ওরি ডার্লিং যাও তাড়া তাড়ি,
নিদিপা যাওয়ার জন্য পিছনে পা বাড়ালো
নিহার- দাড়াও, এই রুমাল টা সাথে নিয়ে যাও
নিদিপা রুমাল নিয়ে আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না
গাইথি বউ সেজে বসে আছে পাশে কেউ নেই সবাই কাজে ব্যাস্ত,শ্রুতি আপু ও আসতে পারেনি আমেরিকা, থেকে দুলা ভাই ছুটি পায়নি, তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হচ্ছে তেমন করে মেহমান দাওয়াত দেয়া হয়নি, সত্যি জীবন টা বড় ই বিচিত্র, আমরা কি চাই তা আমরা ই জানি না, এমন সময় গাইথি নিধিপাকে আসতে দেখলো
ইশারা করে ডাকলো গাইথি নিদিপা কে
নিদিপা- গাইথি তোকে বউ সাজে খুব মানিয়েছে
গাইথি সে কথায় কান না দিয়ে বল্লো
– তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষন
নিদিপা- ছিলাম একটা কাজে, এই শুন না তোর সাথে কিছু কথা আছে
গাইথি মুখটা মলিন করে বল্লো
চুহেসের কথা বলবি তাই তো,
নিধিপা- নারে অন্য কথা
গাইথি- বল
নিধিপা- এখানে বলা যাবে না
গাইথি- এখানে বললে কি প্রব্লেম, কেউ তো নেই
নিধিপা- তুই দেখছিস না ঐশী ভাবি কিচ্ছুক্ষণ পর এসেই তোকে দেখে যায়। তা ছাড়া বিয়ে বাড়ি কে কখন এসে পড়ে
চল না তোদের বাগানে যাই
গাইথি- তুই পাগল হয়েছিস কেউ দেখলে আমাকে এখন সন্দেহ করবে
নিধিপা- আরেহ কেউ দেখবে না,
তবু ও গাইথি কিছুতেই রাজি হলো না যেতে
নিধিপা আর কোন উপায় না দেখে হঠ্যাৎ গাইথির মুখে রুমাল ছাপা দিয়ে ধরলো,
গাইথি কিছুক্ষন চটপট করে থেমে গেলো
নিধিপা বুঝলো জ্ঞান হারিয়েছে,
নিধিপা ধুরু ধুরু বুকে গিয়ে দরজা আটকে দিলো যেন এ দিকে কেউ না আসে
তার পর নিহার কে কল দিয়ে সব টা বলে
নিহার- এখন গাইথি কে বের করে নিয়ে আসবো কোন পথে
নিধিপা- তুমি গাইথির রুমের বারান্দা দিয়ে খুব সহজে নিয়ে যেতে পারবে তাড়া তাড়ি এসো
নিহার আর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে, নিধিপার বলা কথা মতো রুমে এসে গাইথিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বেরিয়ে এলো,
ফিস ফিস করে নিধিপা কে বল্লো আমি যাওয়ার পর ই তুমি রুমে দরজা খুলে দিবে বেশি সময় দরজা বন্ধ থাকলে কেউ এ পথে চলে আসতে পারে ,
নিহার- তুমি আবার এসেছো কেনো
নিধিপা- পথে যদি জ্ঞান ফিরে আসে গাইথি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করবে, তখন নতুন করে বিপদে পড়বে তুমি
নিহার- জ্ঞান ফিরে আসবে না তুমি নিশ্চিন্ত থাকো,যে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করেছি এতে সহজে জ্ঞান ফিরে না ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে হয়, এই বলে গাইথি কে পিছনে সিটে রেখে গাড়ির দরজা লক করে
ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো
নিধিপা- সর্বনাশ, যদি মরে যায়
নিহার- উফফ বোকার মতো কথা বলো না এই বলে গাড়ি স্ট্রাট দিলো, গাড়ি চলতে শুরু করলো
চুহেস সারাদিন অফিস করে এসে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো
আজ নিহার কেনো ছুটি নিলো কে জানে, ও না থাকাতে আজ সব ছাপ পড়েছে আমার উপর,
এ দিকে ওকে ছাড়া আমি অচল,আমার সব কাজের খবর রাখে নিহার , আর একবার এই রকম ছুটি নিলে চাকরি থেকে বাদ করে দিবো
চুহেসের ক্লান্তিতে চোখ বুঝে এলো, মনটা আর ও খারাপ হয়ে গেলো
ইদানীং একা থাকলে ই বাবুইর কথা মনে পড়ে যায়, গ্রামে গিয়ে ওকে এতো কাছে দেখতে পেয়ে এমন লাগছে ,
আচ্ছা বাবুই এখন কেমন আছে, ও কি আমার কথা ভুলে গেছে, দু চার দিনের পরিচয় ভুলে যাবার ই কথা,বাবুইর কাছে দু চারদিন হলে ও, বাবুই কে আমি সেই ছোট থেকে দেখছি, ইশ যদি ছোটবেলার সব কথা ওর মনে থাকতো, কতো ভালো হতো,
আচ্ছা ও কি আমাকে দেখেই দৌড়ে আসতো কাছে, নাকি পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে পালিয়ে যেত,
খুব ইচ্ছে করে অফিস শেষে ক্লান্ত শরির নিয়ে বাসায় ফিরে এই রকম একটা মিষ্টি মুখ দেখতে
কিন্তু আদৌ কি দেখতে পাবো,
চুহেস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বাজে
– ইস নিহার নেই কখন
কি করতে হবে মনে করিয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই, আজ আর খাওয়া হলো না, যাই ফ্রেশ হয়ে এসে এক সাথে ডিনার করে ফেলবো,
নিহার ছেলেটা কে যত যাই বলি না কেনো খুব ভালো ছেলে,আমার সব ঝাড়ি মুখ বুঝে সহ্য করে , রাবেয়া খালা নিজের ছেলের কাছে যাওয়ার আগে আমার জন্য নিহার কে ঠিক করে যায়,
নিশ্চয় উনি সব জেনে বুঝে ই নিহার কে এপয়েন্ট করেছে, ফ্রেশ হয়ে এসে বুয়া কে টেবিলে ডিনার দিতে বল্লো,
চুহেস খাচ্ছে আর ভাবছে আমার যদি নিহারের মতো একটা ভাই থাকতো,
নিহারের এই একনিষ্টার জন্য ওকে ভালো একটা কিছু উপহার দিতে হবে,কিন্তু কি দিবো, আজ নিহার আসুক ওকে জিজ্ঞাস করবো ও সব ছেয়ে বেশি কিসে খুশি থাকে
খাওয়া শেষ করে নিহার নিজে রুমে এলো, নাহ চোখ বন্ধ করা যাবে না,চোখ বন্ধ করলেই বাবুই চোখের সামনে বসে থাকবে,
তার ছেয়ে ভালো গিটার টা নিয়ে ছাদে চলে যাই,এই গিটার টা রাবেয়া খালা দিয়েছে,
বলেছে বেশি একা লাগলে গিটার টা আমাকে সংগ দিবে সত্যি তাই, গিটারে যখন টুং টাং সুর তুলি তখন মন টা এক অজানা আবেশে ভরে যায়,
রাত প্রায় সাড়ে দশটা চুহেস এখন ও ছাদে বসে রেলিং ধরে নিছের দিকে ছেয়ে আছে , চারিদিকে অন্ধকার আর ব্যাস্ত শহরের গাড়ি গুলোর হেড লাইট এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে
মনে হয় রাতের অন্ধকারে জোনাকি আলো জ্বালিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে
হঠ্যা চুহেসের চোখ আটকে যায় নিচের গাড়ির বারান্দায়, নিহার গাড়ি থেকে বের হচ্ছে, ওর কোলে মধ্যে কাউকে নিয়েছে মনে হচ্ছে পাঁজাকোলা করে কাউকে বিতরে নিয়ে আসছে যাই দেখে আসি তো ব্যাপার টা কি
তার মানে তুমি বলতে চাইছো কথা টা সাধারন ঠিক আছে তা হলে চলো কাজী অফিস যাই
এবার গাইথি হাটা বন্ধ করে থেমে যায়, চুহেসের দিকে তাকিয়ে বলে
-আপনি কি সিরিয়াস, নাকি মজা করছেন
চুহেস-কেনো তোমার কি মনে হচ্ছে
গাইথি রেগে গিয়ে বলে
-আমার কিছুই মনে হচ্ছে না আসলে আপনার সাথে কথা বলা ই আমার ভুল হয়েছে প্লিজ আপনি যান,এই বলে গাইথি আগে আগে হাটা শুরু করলো
চুহেস – এই গাইথি আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে, প্লিজ রাগ করো না, আচ্ছা যাও এই কান ধরেছি এবার তো আমার দিকে তাকাও
গাইথি থমকে দাড়ালো পিছনে তাকিয়ে দেখে সত্যি চুহেস কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে,
গাইথি চুহেসের কাছে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে
-আপনি কি পাগল, এ ভাবে রাস্তার মধ্যে কেউ কান ধরে, কেউ দেখলে কি হবে বলুন তো, হাত নামান
চুহেস কান ছেড়ে দিয়ে বল্লো
-কি করবো বলো, এমন না করলে তো তুমি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে
গাইথি ভাবছে চুহেসের মতো একটি ছেলে আমার জন্য এতো পাগলামি করছে কেনো, কি হই আমি তার মাত্র তো কয়েক দিনের পরিচয়
চুহেস- কি হলো কথা বলছো না যে
গাইথি- কি বলবো?
চুহেস- চলো কোথাও গিয়ে বসি
গাইথি- আমার কলেজ
চুহেস- আজ আর যেয়ে লাভ নেই দেখো ১১টা বাজে সো চলো কোথাও বসি
গাইথি- কোথায় বসবেন
চুহেস- কোন খোলা মাঠ হলে ভালো হয়
তা হলে চলুন আমাদের বাড়ির ওদিকে একটা খোলা মাঠ আছে সেখানে যাই
চুহেস- চলো
অনেক্ষন হলো চুহেস সবুজ ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে ছেয়ে আছে মনে হচ্ছে সে এ জগতে নেই, ঐ বিশাল আকাশে যেন কিছু খুঁজছে মনযোগ দিয়ে
গাইথি নিরাবতা ভাংলো, আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি
চুহেস- কি কথা
গাইথি- হয়তো কথাটা বলার কোন প্রয়োজন নেই তবুও বলছি
চুহেস গাইথিকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
-ওতো ভণিতা না করে সোজাসুজি বলো, কথা টা কি
গাইথি-আমি এঙ্গেজড
কথা যেন চুহেস বুঝতে পারলো না সে এমন ভাবে বল্লো
– কি বললে তুমি
গাইথি- হুম যা শুনেছেন তা সত্যি, আমার এস এস সি পরিক্ষার পরেই পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠান করে এঙ্গেজ হয়
চুহেস পুরো কথা টা শুনে পাথরের মতো বসে রইলো, তার পর রাগ না করে নরম স্বরে বল্লো
-তুমি কথা টা আমায় কেনো বলেছে, তুমি কি কিছু আঁচ করতে ফেরেছো
গাইথি-নাহ মানে,আমি এমনি বলেছি
চুহেস- মিথ্যা বলছো কেনো তুমি ভেবেছো আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি, তাই তুমি কথা টা বলে আমাকে সাবধান করেছো,সাবধান করার মতো কিছু হয়নি গাইথি, আমি চললে যাচ্ছি আমার ব্যাস্ত শহরে,আর হয়তো আমাদের দেখা হবে না আবার কাজে ডুবে যাবো
হয়তো কোন এক পড়ন্ত বিকেলে কপির ধোয়া তোমার কথা মনে করিয়ে দিবে,কিন্তু তা আমি মন থেকে ধোয়ার মতো করে ই উড়িয়ে দিবো, হয়তো কোন নির্জন সন্ধা কপি খাওয়ার সংগী হিসেবে তোমাকে পাশে চাইবে,কিন্তু আমি সেটা পাত্তা দিবো না, যদি শিশির ভেজা ঘাসের উপর তোমার হাত ধরে হাটার ইচ্ছে হয়, আমি ছুঁয়ে যাবো পাতায় ঝমে থাকা শিশির বিন্দু কে তবুও আসবো না বাধা হয়ে তোমার সুখের জীবনে,
আচ্ছা চলি, এই বলে গাইথি কে একটা কথার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো
গাইথি থ হয়ে সেখানে বসে আছে, কি বলে গেলো ও কিছুই বুঝলাম না দার্শনিকের মতো কতো গুলো কথা বলেই চলে গেলো,আচ্ছা ওকি সত্যি চলে যাবে আর কখনো ফিরবে না কথা টা মনে হতেই গাইথি মনের গহীনে কাটা বিধার মতো ব্যাথা অনুভব করলো
চুহেস চলে যাবে কথা টা আমি মানতে পারছি না কেনো, উফফ আর ভাবতে পারছি না,এই কয়দিনে আমার জীবন টা পুরো পালটে দিলো,
গাইথি আনমনা হয়ে সেখানে কতোক্ষন বসে ছিলো তার খেয়াল নেই,অবশেষে বাড়ির পথে হাটা ধরলো
চুহেস আনমনা হয়ে হাটছে যেনো সে নিজের মধ্যে নেই,বাবুই কি বিয়ে তে রাজি নয় ওর কথার ধরন দেখে বুঝলাম বিয়েতে ওর মত নেই তা হলে কেনো বিয়ে ঠিক হলো,বাবুই কি আমাকে…
এই টুকু ভেবেই আবার থেমে গেলো নাহ
এই সব কি ভাবছি আমি
এতো অল্প সময়ে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না আর বাবুই তো ছোট বেলার কথা ভুলেই গেছে,
রেস্ট হাউজে এসেই নিহার কে বল্লো
-নিহার সব কিছু কি রেডী?
নিহার- জ্বী স্যার,আমরা ভোর রাতে রওনা হতে পারবো
চুহেস- ভোর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না নিহার,আমরা এখন ই রোওনা হবো
নিহার অবাক হয়ে বল্লো -এখন
চুহেস- কেনো তোমার কি কোন কাজ আছে না কি এখানে
নিহার – না স্যার ঠিক আছে চলুন
ব্যাগ প্যাক সব গাড়িতে উঠালো নিহার, ড্রাইভিং সিটে নিহার বসে গাড়ি স্ট্রাট করলো
পিছনে চুহেস বসে, মন টা তার খুব ভারী হয়ে আছে মনে হচ্ছে সব ছেয়ে মূল্যবান জিনিষ টা যেন রেখে যাচ্ছে,
নিহার খেয়াল করলো চুহেসের দিকে, তার পর বল্লো
– স্যারের কি মন খারাপ,
চুহেস- না,
নিহার- মনে হয় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন দেখে মন ভালো নেই আপনার
চুহেস ধমক দিয়ে বল্লো সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করো চারিদিকে নজর দিতে হবে না
নিহার আর কিছু বল্লো না গাড়ির লুকিং গ্লাসে দিয়ে চুহেসের দিকে নজর রাখলো হয়তো নিহার চুহেসের মন পড়ার চেষ্টা করছে, ভাবছে নিহার সামনে তাকিয়ে স্যার মনের মাঝে এতো কষ্ট লুকিয়ে বেছে আছে কি করে
প্রায় নয় ঘন্টা পরে ওরা ঢাকায় গিয়ে পৌছলো, জ্যামের কারনে দেরি হয়েছে, রাত তখন দুইটা
চুহেস ফ্রেশ হয় এসে বসে থাকলো কি করবে কিছুই ভালো লাগছে না
নিহার- স্যার আপনি ঘুমিয়ে নিন, সময় মতো আমি আপনাকে ডেকে তুলবো,
এই বলে নিহার চলে যায়
চুহেস যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে মন টা বার বার কুহ ডাকছে, কেনো এমন লাগছে বুঝতে পারছি না, সুন্দর নগরের আপন মাটি আপন মানুষ বাবুই কে রেখে আসার জন্য ই কি এমন লাগছে, কিন্তু বাবুই তো আমার নয় সে অন্য কারো জন্য বউ সাজবে, ছোটবেলায় ওকে আমি নিজ হাতে বউ সাজিয়ে দিতাম ওর জন্য ই মেয়েদের সব সাজের নাম আমার মনে রাখতে হতো, ভেবেছিলাম বড় হলে একেবারে বউ সাজিয়ে নিয়ে আসবো আমার কাছে, কিন্তু তা আর হলো না,একটা ঝড় এসে আমাদের সাজানো বাগান টাকে এলোমেলো করে দিলো,
গুছিয়ে দেয়ার জন্য নতুন করে কেউ আসেনি,যারা এসেছিলো বন্ধু বেসে, তারা স্বার্থের জন্য এসেছিলো, স্বার্থ নেই তারা ও এখন আর নেই,আফসোস আহমদ মেহেরা এতো আপন হয়ে ও তাদের দলের
ভাবতে ভাবতে ই চুহেসের তদ্রা লেগে এলো চোখে
পরদিন থেকেই চুহেসের আবার ব্যাস্ত জীবন শুরু, এতো ব্যাস্ততার মাঝে ও চুহেস তার বাবুই যে ভুলতে পারছে না, কিন্তু না ভুলতে চাইলে ও ভুলে থাকার অভিনয় করতে হবে, বাবুই আমার নয়,
নিহার কতো গুলো ফাইল হাতে নিয়ে চুহেসের ক্যাবিনে যায়
ক্যাবিনে ডুকে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো
– চুহেস খেয়াল করেনি
নিহার বুঝে ছিলো স্যার নিজের মাঝে নেই, কেনো নেই তা ও বুঝতে পারছে নিহার,
– আর নয় অনেক হয়েছে এবার আমি নিজেই স্যারের এই কষ্ট টা দূর করার চেষ্টা করবো,
নিহার স্যার বলে ডাক দিলো
চুহেস চমকে উঠে বল্লো হা তুমি, কখন এলে
নিহার- এই তো কিছুক্ষন আগে, এই ফাইল গুলো তে আপনার সাইন লাগবে
চুহেস- রেখে যাও
নিহার- স্যার আমার এক দিনের ছুটি লাগবে
চুহেস- তোমাকে তো চাকরী তে জয়েন করার সময় বলা হয়েছে দুই ঈদ ছাড়া তুমি এমনি কোন ছুটি পাবে না।
নিহার- তবু ও স্যার একদিনের জন্য
চুহেস- ঠিক আছে দিলাম
নিহার ছুটি পেয়ে খুশি হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে নিদিপার কাছে ফোন করে(পাঠক নিদিপা গাইথির বান্ধুবী ভুলে যাবেন না)
নিদিপার আর নিহারের পরিচয় হয় গ্রামে একদিন চুহেস কে খুঁজতে বেরিয়ে না পেয়ে বোর হচ্ছিলো
তখন নিহারের মনে দুষ্ট বুদ্ধি এলো যে অনেক ছেলে ই তো রাস্তা মেয়ে দেখলে পটাতে চায়,আজ আমি ট্রাই করে দেখি পারি কিনা,
ঠিক তখন নিদিপা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো
নিহার- আরেহ তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি,এমন ভাবে নিহার বল্লো যেন অনেক দিনের পরিচিত নিদিপা
নিদিপা তো অভাক হলো
নিদিপা- মানে কি বলছেন আপনি
নিহার- আরেহ তুমি আমাকে ছিনতে পারছো না আমি নিহার
নিদিপা-কিন্তু আপনাকে কোথাও দেখেছি বলে আমার মনে হয় না
নিহার- আচ্ছা বাদ দাও,তোমার নাম টা যেন কি?
-আমি নিদিপা
নিহার- ওহ হা এই তো মনে পড়েছে নিদিপা,আচ্ছা নিদিপা আজ তা হলে আসি
এই বলে নিদিপা কে কোন কথা সুযোগ না দিয়ে উলটো দিকে হাটা ধরলো
নিদিপা তো কোন কিছু ই বুঝতে পারলো না পুরো ব্যাপার টা যেন মাথার চার ইঞ্চি উপর দিয়ে গেলো
নিহার ফিরে এসেই ফেজবুকে নিদিপা নাম সার্চ দিয়ে নিদিপার আইডি খুঁজে বের করে নিদিপা কে মেসেজ দেয়
হাই আপনি কি নিদিপা? আই মিন রাস্তার
ও পাড়ের নিদিপা
প্রায় ঘন্টাখানেক পর নিদিপার রিপ্লায় আসে আপনি সেই হঠ্যাৎ দেখার ছেলেটি তাই তো
এ ভাবে ই তাদের কথা বলা শুরু হয় এক সময় প্রেম হয়
নিদিপার কাছে থেকে নিহার জানতে পারে আজ তার বান্ধুবী গাইথির বিয়ে
নিহারের মনে কৌতুহল জাগে,
নিহার-কোন গাইথি?
নিদিপা- তুমি চিনবে না, আমার বান্ধুবী কে
নিহার- ছিনলে ও ছিনতে পারি তুমি বলো তো
তার পর নিদিপার কাছে সব বর্ননা শুনে,নিহার বল্লো
-নিদিপা বিয়েটা হতে দেয়া যাবে না
নিদিপা- কেনো
নিহার সব কথা নিদিপা কে বলে
নিদিপা সব কথা শুনে বলে কিন্তু গাইথি কি তোমার স্যার কে পছন্দ করে?
নিহার- আমার মনে হয় করে,তার পর নিদিপার সাথে নিহার একটা প্লান করে
প্লান অনুযায়ী আজ নিহার ছুটি নিয়ে গাইথি দের গ্রামে যাবে
নিহার যখন গাইথি দের গ্রামে পৌছয় তখন বিকেল তিনটা,
রাস্তায় জ্যাম না থাকার কারনে ঠিক সময়ে আসতে ফেরেছে
নিদিপা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো নিহারের জন্য
নিহার- সব ঠিক ঠাক ভাবে আছে তো নিদিপা
নিদিপা- কিচ্ছু ঠিক নেই, গাইথি বিয়েটা করবেই সে কিছুতেই স্বিকার করছে না চুহেস কে সে পছন্দ করে
নিহার- তা হলে কি করা যায় এখন
নিদিপা- বুঝতে পারছি না
নিহার-উপায় একটা আছে
নিদিপা- খুশি হয়ে বলে কি
নিহার- কিডন্যাপ, আমি গাইথি কে কিডন্যাপ করবো তুমি আমাকে সাহায্য করবে
নিদিপা- কিহ,কি বলছো তুমি, মাথা ঠিক আছে তোমার
গাইথি খুশি হলো মোবাইলে স্কিনের দিকে তাকিয়ে শ্রুতি আপু কল দিয়েছে আমেরিকা থেকে
গাইথি কল রিসিভ করে কথা শুরু করলো
– হা আপি বল, কেমন আছিস? আমার দুলাভাই কেমন আছে
শ্রুতি- ভালো রে, কি খবর তোর পড়াশুনা কেমন চলছে
– ভালো আপি,
এই শুন না আপি আমাদের এলাকায় না একটা রোবট এসেছে,
গাইথি- আরেহ ভাবি জানবে কি করে এই রোবট টা মানুষের মতো দেখতে মানবিক জ্ঞান সম্পূর্ণ কিন্তু মানুষ নয়
এতোক্ষনে শ্রুতি গাইথির কথা বুঝলো
– বুঝেছি তোর কথা তা রোবট কে, বলতো শুনি
গাইথি- কে সেটা বলতে পারবো না গ্রামে এসেছে বেড়াতে, জানিস কাল সকালে আমাকে দেখা ও করতে বলেছে
শ্রুতি- হুম রোবটের তো দেখছি ভালোবাসার ও মন আছে, নইলে তোর মতো মেয়ের সাথে দেখা করতে চাইতো না কিন্তু নাম তো বললি না
গাইথি- রোবটের নাম চুহেস, চলা ফেরা পুরোই রোবটিক
শ্রুতি – চুহেস, ভাবান্তরিত কন্ঠ নাম টা নিজে রিপ্লাই করে
গাইথি- আপি তোর কি হইছে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবছিস
শ্রুতি- না কিছু না, আচ্ছা শুন ঐ ছেলের সাথে দেখা করা তোর ঠিক হবে না, তুই ভুলে যাস না তুই আরেক জনের বাগদত্তা এখন
গাইথি- আপি তোরা তোদের চাওয়া টা কেনো আমার উপর ছাপিয়ে দিচ্ছিস বলতো, সাইমুম আমেরিকা থাকে
দুলা ভাইয়ের সাথে ভালো পরিচয়, তার মানে এই না যে তার সাথে আমি সুখি হবো,
যার সাথে কখনো মনের মিল টা ই হবে না তার সাথে সুখি হবো কি করে?
শ্রুতি গাইথিকে ধমক দিয়ে বল্লো
-বেশি পাকামি করছিস, তুই এখন ও ছোট ভালো মন্দ বুঝার বয়স হয়নি
গাইথি- আমি যখন ছোট তখন বিয়ে দিচ্ছিস কেনো
শ্রুতি- কঠিন কন্ঠে বল্লো বিয়েটা এখন হচ্ছে না,
গাইথি – বিয়ে এখন না হলে কেনো এতো হাতে পায়ে তাড়াহুড়া করে বেড়ি পরিয়েছো আমার,
ঐ সাইমুম ফোন করলে বলবে এটা করবেনা ওটা করবে না বান্ধুবীদের বাসায় যাবে না,
টিউশনি করবেনা,
বিয়ে না হতেই তার এতো হুকুম বিয়ে হলে কি করবে দূর ভালো লাগে, তোমাদের সাথে কথা বলাটা ই ভুল,
গাইথি রেগে গিয়ে কল কেটে দিয়ে মোবাইল টা ছুড়ে মেরে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো
কেউ আমার কথা টা বুঝতে চায় না, মা থাকলে হয়তো আমার কথা টা বুঝতে চাইতো,
আমি এতো টাকা ওয়ালা সাইমুম কে চাই না, আমি সাধারণ একটা মানুষ চাই যার কাছে টাকা থাকবে না কিন্তু অপুরন্ত ভালোবাসা থাকবে
কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ে গাইথি
প্রায় দেড় ঘন্টা হেটে দিঘীর পাড়ে পৌচয় তার পর জায়গা মতো গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ে,
সকালের শিশির ভেজা ঘাসের উপর পা ভিজিয়ে হাটতে ধারুন এক অনুভূতি হয়, আর হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তো কথা ই নেই
গ্রামে সকালে প্রাকৃতিক সুন্দর্য ই অন্য রকম,
অনেক্ষন চুহেস বসে আছে আসতে আসতে সকালে শিশির গুলো রোদের তাপে ঘাসের উপর থেকে মাটিতে পড়ে মিশে যাচ্ছে,
কিন্তু এখন ও গাইথির আসার নাম নেই,গাইথি কি তা হলে আসবে না , আসতেই হবে গাইথি কে, আমি ডেকেছি ওকে আমার ডাকে সাড়া দিতে ই হবে
এই ভাবে আনমনে নিজের সাথে কথা বলছে চুহেস
এমন সময় গাইথি এসে পিছনে দাঁড়ালো
চুহেস- গাইথি সামিনে এসো আমার পাশে বসো
গাইথি অবাক হলো তার পর জিজ্ঞাস করেই ফেল্লো
গাইথি- আচ্ছা মিঃ চুহেস,আমি তো শব্দ করে আসিনি,এমন কি কোন কথা ও বলিনি,আপনাকে স্পর্শ ও করিনি ,তবু ও কি করে বুঝলেন যে আমি এসেছি
চুহেস- আমি বুঝি গাইথি
গাইথি- কি করে আপনি কি যাদু জানেন , অদৃশ্য জিনিশ দেখতে পান
চুহেস কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়
– তুমি বুঝবে না গাইথি
এ ভাবে অনেক কথা হয় ওদের মাঝে
তার পর গাইথি বল্লো
– আপনি আমাকে কেনো দেখা করতে বলেছেন সেটা কিন্তু বলেন নি এখন ও
চুহেস কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তবু ও বল্লো
-এমনি এই যে কথা বলছি একা থাকলে তো তা পারতাম না,
আচ্ছা এবার তা হলে উঠি এই চুহেস উঠে দাড়ালো
গাইথি অভাক হলো
গাইথি-আপনি অনেক টা রোবটের মতো
চুহেস কিছু বল্লো না, নিচু স্বরে বল্লো,আমাদের আবার কখন দেখা হবে গাইথি
গাইথি প্রশ্নটা শুনে চমকালোনা, স্বাভাবিক ভাবে বল্লো
– যখন আপনি চাইবেন,
গাইথির উওর শুনে চুহেস অবাক হলো,তার পর বল্লো
-তুমি খুব মিশুক একটা মেয়ে, অচেনা মানুষদের সাথে খুব সহজে মিশতে পারো , আমার সাথে এতোক্ষন ছিলে, আবার দেখার করার জন্য ও রাজি আছো তাই বললাম
গাইথি- কেনো আপনি ও তো অচেনা মানুষের মিশতে পারেন,এই এতোক্ষন কথা বললেন
চুহেস গাইথির কথা শুনে যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেলো অচেনা হুম অচেনা আনমনে কথা বলে হাটতে শুরু করলো
গাইথি ভাবছে সত্যি কি এই লোকটা আমার অচেনা, ওর সাথে কথা বলে এতো ভালো লাগছে কেনো আমার মনে হচ্ছে কতো আগের পরিচিত
চুহেস হাটছে আর ভাবছে সত্যি কি বাবুই অচেনা আমার কাছে
না মোটেও অচেনা নয়,
বাবুইর কথা ছোট বেলার মতো, হাত নেড়ে কথা বলার অভ্যাস টা এখনো যায়নি, আর নিজে কথা বলে নিজেই হাসে ব্যাপার টা সত্যি আকর্শন করেছে
চুহেস বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসলো
নিহার- স্যার আমাদের কালকেই ফিরে যেতে হবে, গাজীপুরের কারখানাতে একটু প্রব্লেম দেখা দিয়েছে শ্রমিক দের মাঝে
সেটা আপনাকে ই হ্যান্ডেল করতে হবে
চুহেস- ঠিক আছে কাল কখন যেতে হবে
নিহার- সকালবেলা রওনা হলে ভালো হয় স্যার, জ্যাম কম থাকবে পথে
চুহেস- ঠিক আছে তাই হবে
চুহেস নাস্তা খেয়ে আর এক মিনিট ও দেরি করলো না
চলে এলো গাইথিদের বাড়ির পাশে যদি গাইথি কে দেখতে পায় তো জানিয়ে দিবে যাওয়ার কথা
আর হলো ও তাই গাইথি কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো
গাইথি- ওহ হো আজ অনেক লেইট হবে কলেজে যেতে কি যে করি নিদিপাকে বললাম যাওয়ার সময় আমাকে ডাকতে শয়তান টা ডাকলোই না
বেখায়ালী হাটতে গিয়ে গাইথি চুহেসে সামনে পাড়ে
চুহেস গাইথি কে দেখে অবাক হলো না বরং মনে মনে খুশি হলো আর মনের খুশি টাকে প্রকাশ না করে বল্লো
-আরেহ তুমি? কলেজে যাচ্ছো বুঝি,
গাইথি- হুম,
চুহেস-তা এতো তাড়াহুড়ার কি আছে,
গাইথি-অনেক লেইট হয়ে গেছে
চুহেস- দেরি যখন হয়েছে তখন আজ কলেজে না গেলে হয় না
গাইথি- মানে, কলেজের জন্য বেরিয়ে এখন বুঝি আমি কলেজে যাবো না
চুহেস দুষ্টুমির হাসি হেসে বল্লো
-তুমি চাইলে আমরা কাজী অফিস যেতে পারি
গাইথি- মানে কা,কাজী অ, অফিস
চুহেস গাইথির অবস্থা দেখে হো হো হও করে হেসে উঠলো
গাইথি এই প্রথম চুহেসের হাসি দেখছে মন দিয়ে দেখছে, মনে হচ্ছে অনেক দিন পরে সে এমন মন খুলে হাসছে
গুনি জ্ঞানিরা মেয়েদের হাসি নিয়ে বিশ্লেষণ করে বের করেছে কিছু শব্দ” হাসিতে মুক্ত ঝরে আর কতো কি”
কিন্তু কেউ কি জানে ছেলেদের হাসিতে ও মুক্ত ঝরে যেমন টা চুহেসের হাসিতে ঝরছে
চুহেস হাসি থামিয়ে গাইথির দিকে খেয়াল করে দেখলো গাইথি এই জগতে নেই
গাইথি চোখের সামনে চুহেস বা হাতে তুড়ি বাজিয়স বল্লো
-কোথায় হারিয়ে গেলে বলো
গাইথি চমকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়
চুহেস -বাই দ্যা য়ে তুমি মনে ভয় পেয়েছো
গাইথি- মোটেই না, আমি কি ভিতু নাকি যে সাধারণ একটা কথায় ভয় পাবো
চুহেস- তার মানে তুমি বলতে চাইছো কথা টা সাধারণ, ঠিক আছে তাইলে চলো কাজী অফিস যাই
Angry_Husband Season_2_ Part_29 Written by Avantika Anha
আরাভ- আস্তে খাও রে।
আমি- আপনি চুপ করুন। এতোদিন পর ফুচকা খাচ্ছি। আপনি কি বুঝবেন? আমার মতো আলাদা তো ছিলেন না।
আরাভ- হুম বুঝছি তাও আস্তে খাও নইলে গলায় লাগবে।
আমি- লাগবে না।
.
খেয়ে খেয়ে প্রায় অনেক গুলো ফুচকা খেয়ে ফেললাম। আরাভ পানি এগিয়ে দিলো পানি খেলাম।
আরাভ- আনহা একটা কথা বলবো?
আমি- হুমম বলুন।
আরাভ- আমি তো জানতামই না আমার বউ এতো বড় পেটুক।
আমি- কি বললেন ?
আরাভ- পেটুক বললাম পেটুক।
আমি- এই ভালো হচ্ছে না কিন্তু আপনাকে আমি মাইরালাম।
আরাভ- আহা পেটুক বউ আমার।
আমি- আমি পেটুক না ওকে?
আরাভ- পেটুক না হলে এতোগুলো ফুচকা কে একা খায়?
আমি- এতোদিন পর হলে যে কেউ খাবে আর ওটা যদি কোনো মেয়ে হয় তাহলে এমনি হবে।
আরাভ- তাও সবশেষে তুমি পেটুক।
আমি- ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
আরাভ- হুহাহা আনহা পেটুক।
আমি- ওই angry husband আপনাকে আমি কুচি কুচি করবো আফ্রিকান ইঁদুর কোনেকার।
আরাভ- হায়য়য়য়।
আমি- কি?
আরাভ- এতোদিন পর এই নাম তোমার মুখে শুনে আমি তো পুরাই দিওয়ানা।
.
আমি ওর দিকে তাকায় ভেংচি দিলাম।
.
সেদিন রাতে,,,,
আমি ভাবতেছি কি করা যায়? মাফ করবো কি না? মন বলছিলো মাফ কর, আবার ব্রেইন বলছিলো যে এতো কষ্ট দিলো এতো সহজে মাফ না করতে। কি করবো কিছুই বুঝছিলাম না। আনভীর ঘুমোচ্ছিলো। আনভীরের কথা ভাবছিলাম, ওরও বাবা প্রয়োজন। তাহলে কি মাফ করে দিবো ওকে। কিছু মাথায় আসছিলো না। আরাভ ঘরে আসলো।
আরাভ- ঘুমাইছে বাবু?
আমি- হুমমম।
আরাভ- তুমি ঘুমাবা না?
আমি- ঘুমাচ্ছিলাম এখনি।
আরাভ- বুঝি বুঝি আমার অপেক্ষা করছিলে।
আমি- একদম না।
আরাভ- ম্যাম আমি জানি আপনি কেমন সো মিথ্যা বলে লাভ নাই।
আমি- হাহা যদি জানতেন সেদিন তাহলে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে আমাকে নিজের থেকে দূর করতেন না। এমনকি বুঝতেন যে আমি সব পরিস্থিতিতেই আপনার পাশে থাকতে চাই।
.
আরাভ আর কিছু বললো না। শুয়ে পড়লো। পরেরদিন খবর এলো আরাভের মা নাকি অনেক অসুস্থ। আরাভ আর অপেক্ষা করলো না। আমাকে আর আনভীরকে নিয়েই হসপিতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। দেখলাম এক ক্যাবিনে মা আছেন।
.
আমাকে দেখেই মা ইশারায় ডাকলেন। সবার কাছে শুনলাম হালকা নাকি চিন্তার কারণে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন উনি।
.
আমি- আসসালামুয়ালাইকুম।
মা- (ইশারায় সালাম নিলো)
আমি- (আনভীরকে দেখালাম) আপনার নাতি।
মা- (আনভীরের মাথায় হাত রাখলো। দু ফোঁটা পানি পড়লো তার চোখ দিয়ে)
.
পরিবারের বাকীরাও আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো। আনভীরকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। তবুও আমি কারো প্রশ্নের জবাব দিলাম না। মা কিছুটা সুস্থ হয়ে বললো আমাকে তাদের ছেড়ে যেন না যাই। কিছু বলতে পারলাম না। তাকে বললাম, “হুম আমি আর যাবো না।”
.
মা কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো। রাতে আরাভ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি- ছাড়ুন।
আরাভ- কেনো গো?
আমি- আমি মায়ের কথায় এখানে আছি। আপনাকে আমি এখনো মাফ করি নি মাথায় রাখবেন।
.
আরাভ কিছু না বলে আমাকে ছেড়ে দিলো।
আমি- হুমমম।
.
আরাভ রাগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরাভের মাঝে এখনো রাগ আছে এই জিনিসটা দেখে আমি মুচকি মুচকি হাসলাম। কারণ আমি ঠিক করছি আরাভকে মাফ করবো কিন্তু এতো সহজে না।
.
রাতে আরাভ ঘরে এলো,
আরাভ- আনহা।
আমি- কন।
আরাভ- আমি না।
আমি- কি?
আরাভ- তোমাকে অন্নেক ভালোবাসি।
আমি- আপনি কি ড্রিংক করেছেন?
আরাভ- হুমমম। তুমি আমাকে এতো কষ্ট দেও কি করবো বলো?
আমি- তাই বলে ড্রিংক?
আরাভ- হুম খাবা তুমি।
আমি- আপনার হুশ নাই এখন। আসুন শুয়ে পড়ুন।
আরাভ- না আগে তুমি বলো তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
আমি- না বলবো না।
আরাভ- আমিও শুবো না।
আমি- আপনি শুয়ে পড়ুন প্লিজ।
আরাভ- না আমি মায়ের কাছে যাবো মাকে গিয়ে বলবো তুমি বলছো না আমাকে।
.
আমি ভাবলাম যে, মা ওকে এই অবস্থায় দেখলে আরো চিন্তায় পড়বে। সব ঘরে থাকলেই ভালো তাই,
আমি- যাইয়েন না। আই লাভ ইউ।
আরাভ- এভাবে না আমাকে হাগ করে বলো।
আমি- না শুয়ে পড়ুন।
আরাভ- আমি গেলাম।
আমি- আচ্ছা আচ্ছা।
.
আরাভকে হাগ করে ভালোবাসি বললাম।
আরাভ- এবার একটা কিসসি।
আমি- একদম না।
আরাভ- আচ্ছা গেলাম।
আমি- ওকে যান।
আরাভ- সত্যি গেলাম।
আমি- যান যান আমি তো আর মানা করি নি।
.
আসলে আরাভ ড্রিংক করে নি। নাটক করছিলো। প্রথমে বুঝি নি। কিন্তু হাগ করে বুঝলাম। কারণ প্রথমে টললেও জড়িয়ে ধরার সময় আরাভ সোজা ছিলো। আর সেই সাথে তার হার্টবিটও ঠিক ছিলো।
আরাভ- না কিসসি দেও।
আমি- দাড়ান।
আরাভ- না আমি দাড়াবো না।
আমি- একটু।
আরাভ- জ্বলদি আসো।
.
একটা লাঠি আনে আরাভকে মারা শুরু করলাম।
আরাভ- আরে আরে এসব কি বর নির্যাতন হচ্ছে।
আমি- নাটক আমার সাথে। বুঝাচ্ছি মজা।
আরাভ- আরে আরে বইন থাম।
আমি- থামানো বুঝাচ্ছি।
.
আরাভ দৌড়াচ্ছে। আমিও পিছনে লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছি।
কিছু সময় পর, আমি হাপিয়ে গেলাম। সাথে আরাভও। দুজনেই হাপাচ্ছি।
আরাভ- ওই গুন্ডি থামো রে।
আমি- নাটক কেন করলেন?
আরাভ- ভালোবাসা নিতে।
আমি- তোর ভালোবাসার গুষ্টি কিলাই। আমি এখনো তোরে মাফ করি নি। কর তো যা ইচ্ছা তা। (রাগে বললাম)
.
আরাভ কিছু বললো না। কিন্তু হাসতে লাগলো।
আমি- হাসছো কেনো?
আরাভ- কিছু না গো। তুমি আমাকে মাফ করবাই আমি জানি।
আমি- দেখা যাবে।
আরাভ- হুহাহা।
আমি- বুইড়া বেডার ঢং বেশি।
আরাভ- যাই বলবা বলো আমি বুড়া না ওকে?
আমি- বুড়া বুড়া বুড়া।
আরাভ- আনহা বেশি হচ্ছে আমি বুড়া না।
আমি- মি. আরাভ বুইড়া বুইড়া।
আরাভ- আনহার বাচ্চি দেইখা নিমু তোরে।
আমি- এই যে দেখেন।
আরাভ- খাড়া রে।
.
আরাভ উঠতে ধরবে তার আগেই আমি রুমের বাইরে চলে গেলাম। আরাভ ভাবছিলো ধীরে ধীরে আমি আগের অবস্থায় আসছি। তাই ও কিছুটা খুশি হলো।
.
বাইরে দেখি, আভা টিভি দেখছে। টিভিতে এক মহিলাকে দেখাচ্ছে। যার স্বামী তাকে ছেড়ে দিছে ও প্রেগনেন্ট অবস্থায়। এসময় সে কষ্ট পাচ্ছে। এসব দেখে নিজের অবস্থা মনে পড়লো। আভা আমাকে দেখেই চ্যানেল পাল্টালো কিন্তু আমার খুব কষ্ট লাগছিলো।
কিছু সময় পর রুমে ঢুকতেই,
.
আরাভ- ওগো কাছে আসো। (একটু ঢং করে)
আমি- শুনুন আমার সাথে ঢং করবেন না। আমি এখনো আপনাকে মাফ করি নি। এখানে আছি আমি শুধু মায়ের জন্য।
আরাভ- মানে কি?
আমি- যা শুনলেন।
আরাভ- তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
আমি- না বাসি না।
আরাভ- ওহ।
আমি- জ্বী
.
আরাভ মন খারাপ করে শুয়ে পড়লো।
.
রাতে,,, আরাভ ভাবছে, “আমি কি আনহার উপর জোর করছি? ও তো আমাকে মনে হয় না আর ভালোবাসে। কি করবো কিছু বুঝছি না।” আরাভের মাথায় এসবই ঘুরছে। কিন্তু সে কি করবে কিছুই বুঝছে না। সে ভাবলো আনহা যদি সত্যি ওকে না চায়, ও তাকে মুক্তি দিয়ে দিবে।
.
কিন্তু আনহাকে ছাড়া থাকতে হবে এই কথাটা ভাবতেই আরাভের মন আরো খারাপ হয়ে উঠলো। কারণ ও এখন আনহাকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।
.
পরেরদিন,,,,,,
আনভীর কাঁদছিলো।
আমি- আনভীরকে একটু দেখুন তো কি হয়েছে?
.
আরাভ চুপচাপ আনভীরকে কোলে নিয়ে চলে গেলো ঘরের বাইরে। এটা দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ অন্য দিন হলে আরাভ আনভীরকে কোলে নিয়েই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনেক কথা বলতো।আজ আবার কি হলো ওর?” এটাই ভাবছিলাম।
.
কিন্তু বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিলাম না। আমি সকালে গোসল করে নিলাম। বের হয়ে দেখি আরাভ অফিসে গেছে। কিন্তু আমার কেমন খটকা লাগলো। কারণ আরাভ যাওয়ার আগে আমাকে একবারও কিছু বললো না।
..
মনে মনে ভাবছি, “আমি কি বেশি কিছু বলে ফেলছি ওকে?” ভেবে নিলাম, আর না। আমিও আর এভাবে ঝগড়ার মাঝে থাকতে পারবো না। ঠিক করে নিলাম ওকে মাফ করে আবার নতুন শুরু করবো।”
.
যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম রান্নাঘরে। দেখলাম ওখানে আভা কি জানি করছে। আমাকে দেখেই,
আভা- ভাবি এখানে যে?
আমি- না মানে রান্না করতে আসছি একটু।
ভাবি- ও আচ্ছা আসো আসো। একটা কথা ছিলো বলবো?
আমি- হুমম বলো।
আভা- ভাবি তোমাদের ঝগড়া তো মিটে গেছে তাই না?
আমি- না মানে হ্যা। কিন্তু কেনো?
আভা- না মনে হলো ভাইয়ার মন খারাপ। কাল রাতে পানি আনতে এসেছিলাম। দেখি ভাইয়া সোফার ঘরে হেলানি দিয়ে আছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো কষ্টে আছে তাই আস্ক করলাম আরকি। কিছু মনে করো না।
আমি- একটু ঝগড়া হইছিলো আর কি।
আভা- ওওও আমি ভাবলাম কি না কি। যাই হোক মিটিয়ে নিও।
আমি- হুমম ওর জন্যই রান্না করতে আসছি। দুপুরে ওর জন্য খাবার নিয়ে যাবো।
আভা- বাহ দারুণ তো।
আমি- তুমি আনভীরকে একটু দেখবে?
আভা- আচ্ছা বলার কি আছে। আমি দেখে রাখবো আনভীরকে।
আমি- থেংকস। আমাকে চিন্তামুক্ত করলে।
আভা- এখন রান্না করো। কোনো সাহায্য লাগবে নাকি?
আমি- না না আমি নিজেই করবো নে। তুমি শুধু আনভীরকে একটু দেখে রেখো।
আভা- আচ্ছা।
.
খুশি মন নিয়ে রান্নাঘরে আরাভের পছন্দের বিরিয়ানি বানাইলাম। অনেকদিন পর প্রিয় মানুষটির জন্য কিছু রান্না করতে গিয়ে এমনিই মনটা প্রচুর ভালো হয়ে গেলো।
.
আমি রান্নাশেষে তৈরি হয়ে নিলাম। তারপর আরাভের অফিসের ওদিক রওয়ানা হলাম।
.
অফিসে যেতেই অনেকে অামাকে দেখে অবাক হলো। হয়তো এতোদিন পর বলে। আবার অনেকে খুশিও হলো। অনেকের সাথে কথা বলে আরাভের ক্যাবিনের বাইরে যেতেই শব্দ পেলাম একটা মেয়ের, “আরে সোজা হন। নড়ছেন কেনো?” এই টাইপ কথা। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে যা দেখলাম রাগ ৩৬০° তে উঠে গেলো।
.
“ভিতরে এক মেয়ে আরাভের ব্লেজারে কফির দাগ মুছে দিচ্ছে।” আর হাসে হাসে কথা বলছে।
.
আমি- ওই শয়তান্নি ছাড় উনাকে।
.
আমার কথা শুনে আরাভ আর ওই মেয়ে দুজনেই আমার দিকে ঘুড়লো।
আমি- ওই শাকচুন্নি ছাড় ওনাকে শুনতে পাচ্ছিস না।
.
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে কিন্তু আরাভ চুপ করতে বললো।
আরাভ- তুমি এখানে যে?
আমি- তুই চুপ কর। আগে ওই শাকচুন্নি তোর সাহস তো কম না উনার গায়ে হাত দিস।
আরাভ- আনহা বিহেভ ইওরসেল্ফ একটা বাচ্চার মা তুমি। তাও এমন কেনো?
আমি- ওই শয়তান তোর লজ্জা করে না? তুইও তো একটা বাচ্চার বাপ। তাও শাকচুন্নিদের সাথে থাকস কেন?
আরাভ- আনহা।
আমি- নাম নেওয়া বন্ধ কর। বুড়া বেডা। কয়েকদিন পর টাকলু হবি তাও মাইয়াগো লগে এতো কাছাকাছি যাস।
আরাভ- বউ কাছে না আসলে কি করবো?
আমি- আমি যাই না তোর কাছে? হা গতকাল রাতেও তো… (পুরোটা বলতে পারলাম না। আরাভ এসে মুখ চেপে ধরলো)
.
.
আরাভ- চুপ একদম চুপ। আশা এখন এখান থেকে যাও। পরে আসবা।
.
আমি তার হাতে কামড় দিলাম। আরাভ একটু আহ করে হাত নামিয়ে নিলো।
আমি- তুই চুপ।
আরাভ- আ…
আমি- বললাম না চুপ। ওই মাইয়া তুই উনার কাছে গেলি কেন? তুই আর আসবি না। তোর চাকরি ওভার যা তুই। গেট আউট ইউ শাকচুন্নি।
আশা- ম্যাম আমি তো যাস্ট।
আমি- কোনো যাস্ট না তুই কেনো আমার উনার কাছে আসবি। আমার উনার উপর আমি ছাড়া কেউ লাইন মারতে পারবে না। ইউ আফ্রিকার তেলাপোকা গেট আউট।
আশা- ম্যাম আমার চাকরি খাইয়েন না। আই নিড দিস।
আমি- এক মিনিট।
.
ব্যাগ থেকে একটা ব্রাদার্স ব্যান্ড বের করলাম।
আমি- এটা পড়া উনাকে।
.
মেয়েটা একবার আমার দিকে তাকালো একবার আরাভের দিকে। অগত্যা ওই ব্যান্ড পড়ায় দিলো আরাভকে।
আমি- বলো এবার।
আশা- কি?
আমি- আজ থেকে
আশা- আজ থেকে…
আমি- আরাভ স্যার আমার নিজের ভাই এর মতো।
আশা- আরাভ স্যার আমার নিজের ভাই এর মতো।
আমি- আমি আর তার দিকে ভাই ছাড়া অন্য নজরে তাকাবো না। যদি তাকাই তাহলে ম্যাম যেন আমাকে কুচি কুচি করে টমিকে খাওয়ায়।
আশা- (বললো)
আমি- এবার গেট আউট এখান থেকে ইউ শাকচুন্নি
.
.
মেয়েটা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। আমি ভালোই বুঝলাম মেয়েটা ভয় পাইছে। বাট মেয়েটা যেতেই মাথায় এলো আমি কি কি করলাম? আমি আরাভের দিকে তাকালাম,
আরাভ- এটা কেমন বিহেভ?
আমি- ইয়ে মানে।
আরাভ- হোয়াট দা হেল। মেয়েটাকে কাঁদিয়ে ছাড়লা।
.
আমি মাথা নিচু করে আছি।
আরাভ- জবাব দেও না কেন? এমনি বলো ভালোবাসো না। এটা আবার কেনো করলা?
আমি- আমি আপনাকে…
আরাভ- চুপপপপ। যাস্ট গেট আউট।
আমি- না মানে।
আরাভ- বললাম না যাও।
আমি- ওকে ফাইন। আর শুন মুখবাকা আমি তোরেই ভালোবাসি। ভাবলাম সব ঝগড়া মিটাবো। তোর লাইগা বিরিয়ানিও বানাইছিলাম। বাট না আর দিবো না। সব আমিই খাবো। গেলাম আমি। ইউ ইঁদুর হুহ।
.
আরাভ কিছু বলার সুযোগ পেলো না। আমি চলে আসলাম।
.
আমি বেড়িয়ে আসতেই আরাভও বেড়িয়ে এলো। আমাকে থামাতে। কিন্তু আমি চলে আসতে ধরেছিলাম। আরাভ রাগের মাথায় আমাকে ওসব বললো। কারণ আমার রাতের ব্যবহার তার মাথায় গেঁথে ছিলো।
.
আমি বুঝেছি কিন্তু এতোটা বলবে কেনো? এই রাগে আমি বাড়ি এলাম। দেরি করেই ফিরলাম। কারণ আগে বিরিয়ানি খামু আমি। তাই এক রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। আরাভ আমার গাড়ি এক রেস্টুরেন্টের বাইরে দেখলো। ও নিজেও ভিতরে গেলো।যেয়ে দেখে আমি টিফিন খুলে বিরিয়ানি খাচ্ছি আর আইসক্রিমও খাচ্ছি রেস্টুরেন্ট থেকে। এটা দেখে আরাভের প্রচন্ড হাসি পেলো। ও ভাবতে লাগলো, “আজব পাগলি। এরকম কে করে?”
.
ও আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি একবার তাকালাম কিন্তু পরে ইগনোর করলাম।
আরাভ- সরি ম্যাম। রেগে ছিলাম।
আমি- কে আপনি?
আরাভ- চিনো না?
আমি- না।
আরাভ- তাই?
আমি- জ্বী। গেট আউট। আমি বিরিয়ানি খাচ্ছি।
আরাভ- আমাকে দিবা না?
আমি- নো। এটা আমিই খাবো।
আরাভ- ওকে।
.
আরাভ সামনে বসে পড়লো। আর আমি খেতে লাগলাম। ও ভেবেছিলো আমি ওকে দিবো। কিন্তু না আমি বলছি যে, আমি খাবো মানে আমিই। ঠিকই সব খেলাম।
আরাভ- আনহা তুমি দিন দিন পেটুক হচ্ছো।
আমি- ভালো।
আরাভ- আরে সরি।
আমি- নো।
আরাভ- আর হবে না সরি।
আমি- আপনি সবসময় আমাকে কষ্ট দেন। আপনি ভালো না। চলে যান।
আরাভ- আর হবে না।
আমি- ঠিকই করবেন।
আরাভ- আর করবো না। ওই শুনো মিটায় ফেলি সব চলো।
আমি- মিটাইতে চাইছিলাম। কিন্তু আর মিটাবো না।
আরাভ- ওই সরি তো।
আমি- না।
আরাভ- সরি সরি সরি।
আমি- এক শর্তে।
আরাভ- রাজি।
আমি- প্রপোজ করতে হবে এখানে সবার সামনে ।
আরাভ- এই বয়সে?
আমি- জানি তো বুড়া হইছেন তবুও করেন।
আরাভ- ওকে।
আমি- সরিও বলতে হবে কান ধরে।
আরাভ- কিইইই?
আমি- হুম।
আরাভ- না কখনো না।
আমি- ওকে আপনি যান আমি আইসক্রিম খাই।
.
আরাভ ঠিকই উঠে চলে গেলো। আমি ভাবলাম রাগে গেছে। যাই হোক আইাক্রিম আগে শেষ করি। আমি এক নাগাড়ে খেয়ে যাচ্ছি। আরেকটা আইসক্রিম অর্ডার দিলাম। খাচ্ছিলাম এমন সময় আরাভ এলো। হাত ভর্তি মেলা গুলো কিটক্যাট এক বক্সে। এতো কিটক্যাট দেখে আমি তো অবাক।
.
.
কিটক্যাট গুলো এগিয়ে দিয়ে,
আরাভ- ম্যাম আমি জানি আমি ভুল করি। কিন্তু কোনোদিন এমন পরিস্থিতি আসবে না যে আমাকে ছাড়তে হবে। আমি আপনার সব জুড়ে আবারো থাকতে চাই। ভালোবাসি আপনাকে। এক্সেপ্ট করবেন?
আমি- এতো কিটক্যাট দেইখা তো মোরে অন্য কেউ প্রপোজ করলেও এক্সেপ্ট করমু। জ্বলদি দেও।
আরাভ- তোরে আমি প্রপোজ করতাম না। ভাগ।
আমি- ইয়ে মানে সরি। তোমাকেই এক্সেপ্ট করমু তো আর কাউকে না। এবার তো দেও।
আরাভ- না।
আমি- ওগো প্রিয় ইঁদুর দেও তো।
আরাভ- হায়রে পাগলি। এই নেও।
.
আমি- লাভ ইউ।
.
এই বলে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলাম। বাকী সবাই তালি দিলো।
.
.
সমাপ্ত। কাল্পনিক গল্প এটা।
এরপর আসছে #এক_রাতের_বউ আশা করি পাশে থাকবেন সবাই।
Angry_Husband Season_2_Part_28 Written by Avantika Anha
ও ধীরে ধীরে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার প্রচুর রাগ উঠে গেলো এবার।
আমি- ওই হারামি ছাড় আমারে।
আরাভ- নো ম্যাম ছাড়বো না।
আমি- ছাড়বি কি না বল?
আরাভ- অনেক কষ্টের পর পাইছি তোমাকে কেমনে ছাড়ি বলো?
আমি- তোকে ছাড়তেই হবে।
আরাভ- না আমি ছাড়বো না।
.
রাগ উঠে গেলো রাগের বসে আরাভের পায়ে দিলাম এক লাথি আরেক ঘুসি দিলাম কুনুই দিয়ে ওর পেটে। সাথে সাথে আরাভ ছাড়ে দিলো আমাকে।
আরাভ- ডাইনি এভাবে কেউ স্বামীকে মারে?
আমি- হিহি ভালো হইছে।
আরাভ- সিরিয়াসলি লাগছে আর তুমি হাসছো।
আমি- কই দেখি?
.
আরাভের দিকে হেলতেই ও আমাকে আবারো চিপে ধরলো। এবার দুই হাতও ধরে ফেললো।
আমি- ওই ইঁদুর ছাড় আমাকে।
আরাভ- না মিসেস আহমেদ।
আমি- তুই ছাড়বি কি না বল?
.
(দুজনেই ফিসফিস করে কথা বলছি। যেনো আনভীর না উঠে যায়)
আরাভ- নো আমি তো ছাড়বো না।
আমি- ভার মে যা রাক্ষস।
.
এই বলে আরাভের হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম। এতো জোড়ে দিলাম যে আরাভ কিছুটা চিৎকার দিলো এবার। ও ভাবে নি আমি এতো জোড়ে ওকে কামড় দিবো।
.
আরাভ- রাক্ষসী।
আমি- হিহিহি।
আরাভ- তোরে আমি দেখে নিচ্ছি।
.
এই বলে আরাভ আমার কাছাকাছি চলে আসলো।
আমি- দূরে যান।
আরাভ- নাহ আরো কাছে আসবো দূরে যেতে বললে।
আমি- ওহো তাহলে কাছে আসেন।
আরাভ- আসছি কাছে।
.
(আরাভ কাছে আসলো আরো)
আমি- এটা চিটিং তুমি এখনো চিটার। এতোদিনেও বদলাও নি। (ঘোরে চলে যাচ্ছিলাম)
আরাভ- হাহা আমি এমনি।
আমি- নাহিইইইইই।
আরাভ- চুপ। (ঠোঁটে আঙ্গুল দিলো)
.
আমি আরো ঘোরে ডুবে গেলাম। আরাভ একদম কাছাকাছি আসবে এমন সময়ই আনভীর কেঁদে উঠলো। আর আমার ঘোর ভেঙ্গে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে আনভীরকে চুপ করাতে লাগলাম।
.
আরাভ- বাবা তুই কাঁদারো সময় পেলি না। আব্বু আম্মুর রোমান্সের বারোটা বাজালি। (আস্তে বললাম)
.
আমি- কিছু বললেন আপনি?
আরাভ- না না কিছু না। ইউ কন্টিনিউ চুপ করাও বাবুকে।
আমি- জ্বী।
.
আমি তখনো রাগের কথা ভুলে গেছিলাম। কিন্তু কিছু সময় পর মনে পড়লো। আবারো অভিমানী আনহা হয়ে উঠলাম।
আরাভ- আমি আসবো?
আমি- না। এতোদিন নিজে সামলাইছি। সামনেও আমিই সামলাবো। কোনো স্বার্থপর মানুষের সাহায্য লাগবে না।
আরাভ- আনহা আমি স্বার্থপর নই।
আমি- হা হা হা। আপনি স্বার্থপরই। নাহলে আমাকেই চিনেন না। তাই তো স্বার্থপর ভাবছেন আমাকে।
আরাভ- মানে ভালো করে বলো।
আমি- না কিছু না।
.
আমি আর কিছু বললাম না। আরাভও আর কথা বাড়ালো না। কারণ ও বুঝেছে আমি কি মিন করেছি। আরাভ নিজে অনুতপ্ত। “আমি তখনি বুঝেছি আরাভ এর বেশি দোষ নাই। কিন্তু বিষয় সেটা ছিলো না। বিষয় হলো সে কখনো আমাকে চিনতেই পারে নি। মিথ্যের আশ্রয় না নিয়ে আমাকে পাশে রাখতো। বিষয়টা যদি সত্যিও হতো আমি তো আর ওকে ছেড়ে যেতাম না।” এই বিষয়গুলো আমার মাথায় ঘুরতেছিলো। আরাভও ভাবছিলো সব ওর দোষ। কিন্তু ও সব ঠিক করবে এটা ফিক্স করলো। রাতটা কোনোমতে পার হলো।
.
পরেরদিন আরাভ ভিডিও কলে তার পরিবারকে কল দিলো। ওখানে সবাই ছিলো আমার পরিবারও। চিন্তার কারণে আমার খোঁজ নিতেই আম্মু আব্বু নাকি ওখানে গিয়েছে। যা কথায় কথায় শুনলাম।কলেও সবাই আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু আমি জেদ ধরে রাজি হলাম না। শেষে সবাই আরাভকে বললো, “তুই-ই বুঝা ওকে। ভালো করে।” আরাভ হুম বললো।
.
নাস্তার টেবিল থেকে শুরু সব জায়গায় আরাভ আমার সাথে থাকতেছে। এমনকি আমাকে জ্বালাচ্ছেও। শান্তিমতো প্লানও করতে দিচ্ছে না। কোনোমতে ছাদে যাইতে দিয়েছে। ভেজা কাপড় শুকোতে দিয়ে ঘরে গিয়ে দেখি আরাভ আনভীরের সাথে খেলছে। আর কি কি বলছে।
.
কথাগুলো এরুপ, “বাবা তোর মায়ের রাগ কবে কমবে? তুই জ্বলদি বড় হ আচ্ছা। তখন দুজনে মিলে তোর মায়ের রাগ ভাঙ্গাবো। ও না না বেশি দেরি হয়ে যাবে। তোর মাকে ছাড়া তো আর আমি থাকতে পারবো না।” আনভীরও কি বুঝছে হাসতেছে”। ওদের এই অবস্থা দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝছি না।
.
আমি কেনো যেন চাইলেও আরাভকে ক্ষমা করতে পারছি না। কি জানি আমাকে একটা আটকাচ্ছে ওকে ক্ষমা করতে। আমি হয়তো মাফ করতাম কিন্তু খারাপ তখন লেগেছে যখন ও আমাকে এতোদিনেও চিনেনি। তাই কিছু না বলেই অন্য দিকে চলে এলাম। রুমে গেলাম না আর।
.
কিছু সময় জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। কেনো যেন নিস্তব্ধ লাগছে চারপাশ। এই নিস্তব্ধতাও আমাকে গ্রাস করছে। এক অজানা কারণে মনটাকে আরো বেশি উদাসী করছে। কি হচ্ছে নিজেও বুঝছি না। চোখে পানি টলমল করা শুরু করছে। চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। কিছু সময় পর হঠাৎ কে জানি আমাকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আমি- আপনি ছাড়ুন আমাকে। আনভীর কই?
আরাভ- ছাড়ার জন্য এই হাত ধরি নি। আনভীর ঘুমাচ্ছে।
আমি- হাহাহা।
আরাভ- হাসছো যে?
আমি- আপনি তো ছাড়ার জন্য ধরেন নি। ধরেছেন ইচ্ছা মতো চালানোর জন্য তাই তো ইচ্ছা হয়েছে ছেড়েছেন। ইচ্ছা হয়েছে আবার ধরতে এসেছেন। ছাড়ুন আমার ঘুম পাচ্ছে।
.
আরাভ ছেড়ে দিলো।
আরাভ- তুমি তো দিনে ঘুমাও না।
আমি- কিছু অভ্যাস পরিবর্তনশীল। লাইক এটাও।
আরাভ- হুমম বদলে গেছো সত্যি। এখন তোমার কথায় বড় বড় ভাব এসেছে।পিচ্চি পিচ্চি ভাব নাই।
আমি- তা তো হবেই জীবন শিখিয়েছে। আপনি শিখিয়েছেন। আচ্ছা যাই আমি ঘুমাই। বের তো হতে দিবেন না।
.
আমি চলে গেলাম। আরাভের খুব কষ্ট হচ্ছে কথাগুলো শুনে। কিন্তু ও নিজেকে সামলে দিলো। এই বলে যে, ও দোষী।
.
বিকালে আনভীরকে নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে দেখি ফুচকা রাখা। আমি থ এইনে ফুচকা কেমনে?
আরাভ- আমি আনছি।
আমি- আমি কি জিজ্ঞেস করছি? (যদিও মনে মনে ঠিকই করছি)
আরাভ- মনের কথা তোমার এখনো বুঝি মিসেস আহমেদ।
আমি- (ভেংচি দিলাম)
.
আরাভ কাছে এসে আনভীরকে কোলে নিলো।
আরাভ- নেন ম্যাম শুরু করুন। আপনার জন্যই।
.
আমি অপেক্ষা না করে খেতে লাগলাম। কারণ অনেক দিন পর খাচ্ছি।
.
আমি খেয়েই যাচ্ছি।
.
এদিকে আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি- হাসবেন না। একদম না। আমার জায়গায় হলে বুঝতেন। এতোদিন পর আহা। টেস্টি।
.
ঝাল লাগছে তাও খাচ্ছি। আরাভ পানি এগিয়ে দিলো।
.
চলবে…..