Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2353



তিনি এবং ও ! ১০.

0
তিনি এবং ও ! ১০.
তিনি এবং ও ! ১০.

তিনি এবং ও !

১০.
বিকালের দিকে বাগানে চেয়ার পেতে চুপচাপ বসে আছে নিদ্র। দূর আকাশের দিকে তার দৃষ্টি।
নিদ্র খেয়াল করলো কেউ একজন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কে আর হবে? এই বাড়িতে মানুষ মাত্রই বর্তমানে দুজন। অদ্রি আসবে না কারণ দুপুরে আবারো তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে। আর লিলি তো কখনওই তার আশেপাশেও আসেনা। দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখে। এখানে চেয়ারও নেই যে বসতে বলবে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে। বসতে বললেই তাকে চেয়ার ছাড়তে হবে। বিশেষ প্রয়োজন হলে সেই কথা বলবে। নিদ্র আকাশের দিকে মন রাখার চেষ্টা করছে। অনেকক্ষণ যাবত পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে বলল
– আমি বসতে পারি এখানে?
নিদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখলো অদ্রি হাতে চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র বলল
– আপনার বাড়ি আর আপনিই অনুমতি চাচ্ছেন?
অদ্রি চেয়ার পেতে বসে মাথার ঘোমটা ঠিক করে বলল
– মানে আপনাকে বিরক্ত করতাম না ইয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
নিদ্র বলল
– বিরক্ত তো করেই ফেলেছেন এখন জিজ্ঞেস করুন!
অদ্রি মাথা নিচু করে লাজুক স্বরে বলল
– আপনি চুলে কোন কালার ব্যবহার করেছেন সেটা জানতে চাচ্ছিলাম।
নিদ্র ঠাট্টার সুরে বললে
– কেনো? আপনিও করবেন নাকি?
অদ্রি মাথা উঁচু করে বলল
– নাহ নাহ আমাকে ওসব সাজে না।লিলির খুব পছন্দ হয়েছে কালার টা। ও নাকি পার্লার থেকে করাবে।
– আমি ভাবলাম আপনি রঙিন হতে চাচ্ছেন। যাই হোক, আসলে আমি কোনো কালার ব্যবহার করিনি।
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– কিন্তু বাঙালী দের এরকম চুলের রঙ তো হয়না। আমি তো এরকম শুনিও নাই।
– ডাবল সংকর বাঙালী দের হয়।
– বুঝলাম না।
– বাঙালী তো সংকর জাতি। আমি হলাম সেই সংকর জাতির সংকর।
– কীসব বলছেন আপনি।
– আমার বাবা বাঙালী আর মা জাতিতে ইংরেজ। বাবা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাইরের ইউনিভারসিটি তে পড়তে যান। মাও ওখানে পড়তো। ব্যাস প্রেম হয়ে গেলো, বিয়ে করলেন তারপর ডাবল সংকরের নিদ্র জন্ম নিলো।
– কিন্তু আপনার কথায় তো মনেই হয়না। আপনার বাংলা বলার ধরণে মনে হয় মানে আপনার বাংলা টা তো তাহলে এতো ভালো থাকার কথা না।
– মায়ের ভাষা তখনই তো শিখবো যখন মাকে পাবো! মাকেই তো পাইনি। আমার জন্মের সময়ই মারা গেছেন। দাদীর কাছে মানুষ হয়েছি। বাংলার অধ্যাপিকা ছিলেন। বুঝতেই পারছেন।
– আপনার মা আপনার মতোই সুন্দর ছিলেন?
– সে তেমন সুন্দর ছিলেন না। শুধু গায়ের রংটাই সাদা। আমার চেহারা বাবা – মা কারোরই মতো হয়নি। মায়ের গায়ের রঙ, চোখের আইরিশের রঙ আর চুলের রঙ এককথায় সকল রঙ তার থেকে প্রাপ্ত। বাবার কী পেয়েছি আমি আজও খুঁজে পাইনি।
আর যখন যা ইচ্ছা হয় বলে ফেলি এটাও আমার মায়ের স্বভাব।
তবে লুসি খুব সুন্দরী।
– ইংরেজজাতি সুন্দর হয়।
– আমি তো আমার কথা বললাম। আপনার কথা জানতে পারি?
অদ্রি প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল
– রাতে কী খাবেন?
নিদ্র বলল
– আপনি যা খাওয়াবেন।
অদ্রি দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। অদ্রি তার মায়ের মুখখানা মনে করার চেষ্টা করছে। মধ্যবয়সী একজন মহিলার নিড্র ডাকটা তার কানে বাজছে।
রাতে নিদ্রের রুমে অদ্রি চেয়ার এনে রাখলেন। চেয়ার রাখার সময় অদ্রি দেয়ালের রঙ দেখলো। কী চকচকে রঙ! আর কেমন বেমানান।
নিদ্র বিছানার উপর আসন পেতে বসে পুরাতন একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলো। নিদ্র বলল
– আপনাকে মিথ্যে বলেছি।কিন্তু আপনি বুঝতে পারেননি।
অদ্রি দেয়ালে হেলান দিতে গেলো তখনি নিদ্র বলল
– আপনি রঙিন হয়ে যাবেন। রঙ পুরোপুরি শুকায় নাই।
অদ্রি বলল
– এ ঘর টাতে তেমন আলো বাতাস আসেনা।
– কিছুই করার নেই। এখন এটাতে মন বসিয়ে ফেলেছি।
– কী মিথ্যে বলেছেন? আপনার বিষয়ে বলতে গেলে কিছুই জানি না। সেক্ষেত্রে মিথ্যেটা বুঝতে না পারাটা ব্যর্থতা না।
– কিছুই জানতে হয়না। কথা বলার ধরনে ধরা যায়।
– শিখিয়ে দিবেন?
– আমার মায়ের বিষয়ে আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। আপনি শুনবেন?
অদ্রি বলল
– বলুন।
নিদ্র বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে বসলো। অদ্রি তার মুখোমুখি বসলো।
নিদ্র এখনো সেই বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে।
নিদ্র বলল
– মা শব্দটার অর্থ আমার জানা ছিলোনা। লালনপালন সবকিছু আমার দাদী করেছেন। বাবা কখনওই বেশি আদর করেননি আবার কমও করেননি। মায়ের কোনো স্মৃতি নিয়ে বাবা আমাকে বড় হতে দেননি। একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মা কোথায়? বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন — সে মারা গেছেন তোমার জন্মের সময়। মা কেমন ছিলেন? কীরকম দেখতে সেটা আমি কোনোভাবেই জানতে পারিনি। কিন্তু মায়ের চেহারা কেমন হতে পারে সেটা আমি মনে মনে এঁকে রেখেছিলাম। বাবা খুব কালো, দাদীও তাই। আর আমি সাদা। বাবা আমার অমিল গুলোই আমি মায়ের বৈশিষ্ট্য স্বরূপ মেনে নিলাম।
আমার বয়স ২১ হবে ১ সপ্তাহ বাকি। ফ্রেন্ডদের সাথে বাস্কেটবল খেলছিলাম। খেলার বিরতির সময় পাশেই বসে ছিলাম। একজন বয়স্ক মহিলা আমাকে বললেন – আপনি নিড্রো নাজমুল?
আমার নামের বিকৃতি টা আমার সহ্য হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু এই বয়স্ক মহিলার বলার ধরণে আমার মেজাজ কিছুটা খারাপ হলো। বিরক্তি নিয়েই বললাম – হ্যা।
বয়স্ক মহিলা বললেন – তোমার মা খুব দেখত্ব চাচ্ছে তোমাকে। আমার সাথে চলো।
আমার অবাক হলাম। তাকে বললাম – আপনার ভুল হচ্ছে। আমার মা তো অনেক আগেই মারা গেছেন।
বয়স্ক মহিলা বললেন – আমার ভুল হচ্ছে না। তোমার মা জীবিত। চলো আমার সাথে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৯.

0
তিনি এবং ও ! ৯.
তিনি এবং ও ! ৯.

তিনি এবং ও !

৯.
রশিদ সাহেবের চলে যাবার পর নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে রইলো। অদ্রির সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। আর সেও বা কেমন?
নিদ্র ভাবছে, অদ্রিও তো তার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারতেন। হাজব্যান্ডকে এতোই ভালবাসতো যে, ২য় বিয়ে তো দূরে থাক কোনো ছেলের সাথেও বন্ধুত্ব সম্পর্ক টুকু নেই।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিদ্র গভীর নিদ্রায় ঢলে পরলো। স্বপ্নবিহীন ঘুম ভাঙল খটখট আওয়াজে। কেউ একজন তার রুমে আছেন, এমনকি কিছু একটা করছেন। হাঁটা চলার শব্দ তার কানে আসছে। কে হতে পারে? শব্দটা চেনা চেনা লাগছে। ভাসা ভাসা কথা তার কানে আসলো। কিন্তু কথাটা সে বুঝতে পারলো না। তার ইচ্ছে করছে বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে কিন্তু সে তাও পারছে না। হাত, পা নাড়াতে পারছেনা।কণ্ঠস্বর আবারো ভেসে আসলো। সে এবার স্পষ্টত বুঝতে পারলো, তার মা বলছে
– নিড্রো, ওয়েক আপ বেবি।
তার মাই তাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য ঘরে আওয়াজ করছিলো। নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– মা, ঘুমাতে দাও।
এই সময় তার মায়ের মুখখানা দেখতে ইচ্ছে করছেনা। মাঝেমধ্যেই এমন হয়। মাকে খুব ঘৃণা করে আবার মাঝেমধ্যে খুবই ভালবাসে।
দুপুরের খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে অদ্রি গোসল করতে তার ঘরে গেলো।রশিদ সাহেব নিদ্রকে ডাক দিতে যাবেন আর তখনি নিদ্র নিচে নেমে এলো। নিদ্রকে দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– এই বয়সে ঘরে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে?
নিদ্র বলল
– একা একা ঘুরতে ভালো লাগেনা।
– আমার যে বাবা সময়ের অভাব। তুমি অদ্রিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেই তো পারো?
– চাচা আপনি পাগল হয়ে গেছেন। ওনাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে কেউ একজন জীবিত ফিরে আসবে। না হয় আমি আর না হয় উনি।
রশিদ সাহেব আৎকে উঠলেন এবং বললেন
– এমন কেনো হবে?
নিদ্র টেবিলে চেয়ার টেনে বসে বলল
– উনার সাথে আমার মিনিটে মিনিটে ঝগড়া লাগে।আমি কী না কী বলবো, উনি লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবেন। আর না হলে কোনো পুকুর বা খালে ফেলে দিলেন।
রশিদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন
– ব্যাটাছেলে মানুষ গায়ের জোরে সাঁতরে উঠে আসবা।
নিদ্র মন খারাপ করে বলল
– সেটাই তো পারিনা। আমার নাকি পানিতে দোষ আছে দাদী বলে। পানিতে নামলেই পানির দানব আমাকে তার কন্যার সাথে বিয়ে দিবেন। তারপর আজীবন পানির রাজ্যে আমাকে বসবাস করতে হবে।
রশিদ সাহেব হা হা হা হা করে হাসতে শুরু করলেন।বললেন
– তোমার দাদী যা বলেছেন, তুমি যে কতো সুন্দর সেটা দেখেই বলেছেন। এতো সুন্দর ছেলে নাজমুলের হতে পারে, আমার বিশ্বাসই হয়নি প্রথমে। পরে যখন……
রশিদ সাহেব আর কোনো কথা বলতে পারলেন না। তার কথার মাঝেই অদ্রি বলল
– লিলিকে দেখেছেন আপনারা?
নিদ্র টেবিলের উপর রাখা খাবারের বাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও বাটিগুলো ঢাকা। মূলত সে অদ্রিকে ইগনোর করতে চাচ্ছে। এই মেয়ে কথায় কথায় রেগে যায়। লুসি অবশ্য তেমন না। খুবই সুইট আর হাসিখুশি।কতদিন তাদের দেখা হয়না। এখন কী করছে লুসি? নিদ্র ভাবছে। এখন তো ওখানে রাত। হয়তোবা কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে। আচ্ছা কাঁদলে ওর নাক লাল হয়ে যাবে। কতো কিউট লাগবে ওকে। জীবনের প্রথম প্রেমটা হয়তোবা এমনি হয়। নিদ্রের ভাবতেই অবাক লাগছে। সে প্রেমে পড়েছে লুসির।
রশিদ সাহেব আর অদ্রি কথা বলছে। সেদিকে নিদ্রের একদমই খেয়াল নেই। রশিদ সাহেব নিদ্রের হাতে ঝাকি দিয়ে বলল
– এই ছেলে?
সাথে সাথেই নিদ্রের হুশ হলো। নিদ্র বলল
– কিছু বলবেন?
রশিদ সাহেব খাবার প্লেটের দিকে ইশারা করে বলল
– খেয়ে নাও।
খাবারের দিক তাকাতেই অদ্রির দিকে চোখ পরলো। ঠিক তার উল্টো পাশে বসেছে। ধবধবে সাদারঙ এর থ্রিপিচ পড়েছেন। মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে ভাত মাখাচ্ছেন অদ্রি।
সাদারঙ অল্প বয়সী মেয়েকে ঠিক মানায় না। তার কাছে মনে হয়, অল্পবয়সী রা রঙিন পোশাক পড়বে। লিলি অদ্রির পাশে পানের বাটা রেখে চলে গেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– অদ্রি, লিলি খাবে না?
অদ্রি মুখে খাবার রাখা অবস্থায় বলল
– ও খেয়েছে।
অদ্রি বুঝতে পারছে নিদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকাটা তার কাছে অসহ্য লাগছে। অদ্রি বলল
– আপনার কিছু লাগবে? ডাল বা মাছ ভাজা?
নিদ্র বলল
– আপনি সাদারঙ পড়বেন না প্লিজ। অদ্রি আপনাকে সাদারঙ এ ঠিক মানায় না।
নিদ্র এই প্রথম অদ্রির নাম ধরে ডাকলো।
অদ্রি অবাক হলো, এই প্রথম নিদ্র তাকে নাম ধরে ডেকেছে। আর কী সাবলীল ভাবেই নামটা উচ্চারণ করলো। যেন, কতকালের চেনা………

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৮.

0

তিনি এবং ও !

৮.
রশিদ সাহেব নিদ্রকে বললেন
– বাবা তুমি চুপ থাকো।
নিদ্র রশিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
নিদ্র চুপচাপ লুঙী নিয়ে দোতলায় উঠে তার রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
চোখ বন্ধ করে অদ্রিকে নিয়ে ভাবছে। রশিদ সাহেব অদ্রিকে বলল
– মা, ছেলেটা একটু মন খোলা ধরণের।
অদ্রি বলল
– চাচা, আমি বুঝি কিন্তু কী করবো? পারিনা আমি।আমি চেষ্টা করি একজন মানুষ কে নিয়ে ভালো ভাবে থাকার।কিন্তু….
অদ্রি দুহাত দিয়ে মুখ আটকে কাঁদতে শুরু করলো।
রশিদ সাহেব বললেন
– দেখো দিখি মেয়ের কাণ্ড।আহ! অনেক হয়েছে।
রশিদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আজ ভাবলাম তোর এখানে দুপুরে দুটো খাবো। তা না তুই কাঁদতে বসে গেলি।
অদ্রির কান্নার শব্দে লিলি তার রুম থেকে বের হলো। লিলি অদ্রির পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। অদ্রির কান্নাকাটি দেখতে সে অভ্যস্ত। দুইটা বছর যাবত সে এই বাড়িতে আছে। অদ্রির সাথে তার তেমন কথাবার্তাও হয়নি কিন্তু একসাথে থাকতে থাকতে ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে।অদৃশ্য এই ভালবাসাটাই তাকে এই নিঃসঙ্গ মেয়েটির কাছে আটকে রেখেছে। রশিদ সাহেব লিলিকে বললেন
– তুই আমাদের জন্যে রান্না কর। আজ এখানে খাবো।
লিলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। রশিদ সাহেব লিলিকে জিজ্ঞেস করলেন
– নিদ্রের ঘর কোনটা রে?
লিলি বলল
– দোতলার উত্তরের ঘরটা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের দয়জায় নক করলেন। নিদ্র দরজা খুলে দিলো।রশিদ সাহেব ঘরের মধ্যে ঢুকে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইলেন। তারপর নিদ্রকে বললেন
– তোমার মাথা খারাপ নাকি?
নিদ্র বলল
– না তো। কেনো?
দেয়ালের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন
– এগুলা কীরকম রঙ? আর কোনো রঙ নাই বাজারে?
– আমার ভালো লেগেছে তাই করেছি।
– অদ্রি জানে?
– হ্যা, সে বলেছেন, আমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারি শুধু ভেঙে ফেলা বাদে।
– লাল, হলুদ আর বেগুনি রংধনুর মতো করে পুরো দেয়াল জুড়ে রঙ করেছো। আচ্ছা তুমি নিজে করেছো?
– জি চাচা।
রশিদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন
– তুমি রংমিস্ত্রীর কাজ কোথা থেকে শিখলা?
– হাত খরচ জোগাতে গিয়ে শিখতে হয়েছে।
– নাজমুলের তো টাকার অভাব নেই। কীভাবে কী হা?
– আরে চাচা বাবা যা কিপটা। প্রতিদিন ১০ ডলার করে দেয়। ওতে আমার হয় নাকি?তাই একেক সময় একেক কাজ করে পকেট খরচ চালাই।
– ইংলিশও খাওয়া হয়??
– ইংলিশ খাওয়া হয়না চাচা। আমি ওই কোল্ড ড্রিঙ্ক টা খাই। আর একটু ঘোরাফেরার শখ আছে এই আরকি।
– তোমার দাদীও দিতে পারেন?
– হ্যা, কিন্তু দেননা।
– যাক ভালো অল্প বয়সে ইনকাম করতে শিখে গেছো।
– চাচা কী একটা বিশ্রী ব্যাপার। বিশাল বিলাসবহুল বাড়িতে বাস করেও আমাকে এসব কাজ করতে হয়।
– শুনো বাবা কিছু কথা বলার ছিলো।
– বলেন। এই ঘরে চেয়ার নেই চাচা। আপনি বিছানার উপরে বসেন।
রশিদ সাহেব বিছানার উপরে আসন পেতে বসলেন। পাশে নিদ্র বসলো। রশিদ সাহেব বলতে শুরু করলেন
– অদ্রির সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। খুবই অল্প জানি। যতটুকুই জানি ও মেয়েটার চরিত্রদোষ নেই। ওর বয়স তোমার মতো বা একটু বেশি হবে। আমি সঠিক জানি না। আজ ২ বছর যাবত ও এখানে লিলিকে নিয়ে থাকে। বাসায় দারোয়ান আছে , কাজের দুইজন মহিলা আছে। আপাতত ছুটিতে আছে। অদ্রি এতিমখানায় মানুষ হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে একজন ভদ্রলোক ওকে ওখান থেকেই বিয়ে করেন। ভদ্রলোক অনেক ধনী ছিলেন। এইযে বাড়িটা দেখছো এটা ওনারই টাকা দিয়ে কেনা। বিয়ের ১ বছরের মাথায় অদ্রির স্বামী মারা যান বা সুইসাইড করেন। তারপর অদ্রি এখানে চলে আসে। আমার সাথে ওর পরিচয় লিলির মাধ্যমে। লিলি ভবঘুরে টাইপের মেয়ে।আগে সারাদিন পুরো এলাকা চষে বেড়াতো। ওর সাথে প্রথমে আমার দেখা হয়। পরে ওর মাধ্যমে এখানে আসা যাওয়া।
অদ্রির বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে, একটা মেয়েও হয়েছে।
আমার খুব কষ্ট হয় বাবা, এই মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে। বাবা অনেক চেষ্টা করেছি বিয়ে দেয়ার কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরংচ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় অবস্থা। পরে বউ বলল, যেভাবেই হোক সম্পর্ক টা যেন নষ্ট না হয়।
নিদ্র কথা গুলো শুনছে আর গভীর চিন্তায় পরে যাচ্ছে। যতোই গল্পটা সামনের দিকে এগোচ্ছে ততোই তার চিন্তার গভীরতা বাড়ছে। নিদ্র খুব আস্তে আস্তে বলল
– আমি এসব জানতাম না। ভেবেছি…
রশিদ সাহেব বললেন
– তোমাকে আরো কিছু জানতে হবে। ও আমাকে টাকাপয়সা দিয়েও সাহায্য করে। দানশীল মেয়ে। কোনো বাজে অভ্যেস নেই।
রশিদ সাহেব গভীর নিশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলেন নিচ তলায়।
দেখতে হবে না , অদ্রি কী কী রান্না করছে??

চলবে……..!

©Maria Kabir

তিনি এবং ও ! ৭

0
তিনি এবং ও ! ৭
তিনি এবং ও ! ৭

তিনি এবং ও !

৭.
নিদ্র নাস্তা করে রশিদ সাহেবকে ফোন করলো। রশিদ সাহেবের আজকে সকালের দিকে আসার কথা। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু তার দেখা নেই। কল ধরলেন রশিদ সাহেব। নিদ্র কিছু বলার আগে রশিদ সাহেব বললেন
– আরে বাবা আমি ফোন করবো তোমাকে আর তুমিই করে বসলা।
– চাচা আসবেন কখন?
– এইতো পথে আমি।
– তাড়াতাড়ি আসুন।
নিদ্র ফোন কেটে দিয়ে তার ঘরে বসেই রঙ করা কেমন হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে। খুবই উদ্ভট রঙ হয়েছে। যে কেউ ঘরে আসলে প্রথমে হতভম্ব হয়ে যাবে। ব্যাপার টা হজম করতে সময় লাগবে। রশিদ চাচা দেখলে কেমন রিএক্ট করবে সেটা ভেবে নিদ্র একা একাই হাসছিলো।
মানুষ কে অবাক করে দেয়ার মধ্যে আলাদা মজা পাওয়া যায়।
অদ্রিও তো এই ঘরে এসেছিলো কিন্তু সে কেনো অবাক হলো না? নাকি সে প্রকাশ করেনি? নাকি সে লক্ষ্যই করেনি?
নিদ্র, অদ্রির ঘরের দরজায় নক করলো। অদ্রি দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। নিদ্র বলল
– আপনি তো বললেন না?
অদ্রি বলল
– কী বললাম না?
– আমার ঘরের কালার?
অদ্রি মাথা উঁচু করে কিছু একটা বলতে যাবে আর তখন নিদ্রের চোখে চোখ পড়লো। নিদ্র সেই লাল টকটকে চোখের দিকে তাকিয়ে আবারো ভয় পেলো। নিদ্র কিছুটা পিছনে সরে আসলো। অদ্রি বুঝতে পেরে বলল
– খেয়াল করিনি। চলুন দেখে আসা যাক।
লিলি প্রায় দৌড়ে এসে বলল
– আপামনি রশিদ চাচা এসেছেন।
অদ্রি বলল
– বসতে বল।
নিদ্র বলল
– আমার একটু কাজ আছে রশিদ চাচার সাথে।
অদ্রি বলল
– আচ্ছা, পরে দেখা যাবে।
রশিদ সাহেব শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। নিদ্রকে বললেন
– বাবা তুমি এগুলা কী বানাইতে দিছিলা?
নিদ্র শপিং ব্যাগ থেকে লাল, হলুদ, নীল রঙের লুঙ্গী বের করলো। রশিদ সাহেব বিরক্ত স্বরে বললেন
– এই বাপের জন্মে দেখলাম না কেউ লুঙ্গীতে রাবার ব্যবহার করে।
– আরে চাচা লুঙী পড়লে দেখা গেলো কোন সময় কার সামনে খুলে যায়। সিকিউরিটি সিস্টেমে ঝামেলা। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি।
– শক্ত করে পড়লেই তো হয়। তাই বলে মেয়ে মানুষের স্কা্র্টের মতো?
– আরে চাচা আগে সিকিউরিটি তারপর ওসব।
– তোমার লুঙী পড়তে হবেনা।
– আমি পড়বোই। বাংলাদেশে আসছি আর এটা ট্রাই করবো না সেটা কীভাবে হয়?
– বাবা তুমি আর কোনো কালার খুঁজে পেলে না?
অদ্রি রশিদ সাহেবের পাশের সোফায় এসে বসলো।
নিদ্র বলল
– এখনি তো সময় চাকচিক্যময় থাকার।
নিদ্রের হাত থেকে লুঙী নিয়ে অদ্রিকে দেখিয়ে রশিদ সাহেব বললেন
– এইগুলা কেউ পড়ে?
নিদ্র বলল
– উনি কীভাবে বলবেন? নিজেই তো বিধবা সেজে বসে থাকে।
সে আর চাকচিক্যের কী বুঝবে?
রশিদ সাহেব বললেন
– ও যা তাই সেজে থাকে।
নিদ্র অবাক হয়ে বলল
– মানে?
রশিদ সাহেব শান্ত ভাবে বললেন
– অদ্রি বিধবা।
নিদ্র বলল
– এতো অল্প বয়সে বিধবা? তো বিয়ে দেন নি কেনো?
অদ্রি বজ্রকণ্ঠে বলল
– আপনাকে সেটা ভাবতে হবেনা। আপনি আপনার চর্কায় তেল দিন।
নিদ্র বলল
– আমি ভাবতে আসিনি। সাধারণ প্রশ্ন করেছি , তাতে এতো রাগ করার কী আছে?
– আপনি ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে পরবেন না।
– দেখুন আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে পরিনি। আপনি এখনো অনেক ইয়াং তাই জিজ্ঞেস করেছি। আর এই প্রশ্নটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন।

চলবে…..!

#Maria_kabir

_ নিষাদ… ❤ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ❤

0
আমার সে আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে! আমি প্রথম দিকে খুব অবাক হতাম। বিশ্বাসই হতোনা সে আমাকে ভালোবাসতে পারে? এতো অসুন্দর মেয়েকে এতোটা তীব্রভাবে কেউ ভালোবাসতে পারেনা। কিন্তু আমার সেই বিশ্বাস সে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে! তার সাথে প্রতিদিন নিয়ম করে কথা না বললে মুখ ফুলিয়ে থাকে। ম্যাসেজের রিপ্লাই না দিলে তো কথাই নাই। পাগলের মতো বিহেভ করে।
– এই তুমি ম্যাসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো না কেনো? কিছু হয়েছে? আমি কিছু করেছি?
সুন্দরী মেয়েদের ভাগ্যে এরকম পুরুষ থাকে। আমার মতো মেয়েদের ভাগ্যে থাকে রাগী, রুক্ষমূর্তি, রুক্ষভাষী পুরুষ। যে পুরুষ আমার মতো মেয়েদের বিয়ে করে আইবুড়ো নামক শব্দটার হাত থেকে রেহাই দিয়েছে। সেই পুরুষ তো রাগ দেখাবেই।
আমি তার সাথে দেখা করতে চাইতামই না। নিজের অসৌন্দর্যো টাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম। সে বুঝতো। বুঝেই বলতো
– এই স্কার্ফের নেকাব টা একটু খুলো না।
– নাহ।
– মাত্র ৫ মিনিটের জন্য। শুধু দেখবো, মাত্র ৫ মিনিট।
আমি বাধ্য হতাম নিষাদের কথা মানতে।
আমরা সবাই চাই কেউ একজন থাকুক যার আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা থাকবেনা। আমি পেয়েছিলাম এমন কাউকে। পেয়েছিলাম বলে ভুল হবে, পেয়েছি।
আমার জন্য তার রাজ্যের চিন্তা।
একবার হলো কী আমি আর ও ক্যাম্পাসে বসে গল্প করছিলাম। ওর ওইদিন মন বেশ ভালো ছিলো।
ওইসময় খুব সুন্দরী একটা মেয়ে এসে নিষাদকে উদ্দেশ্য করে বললো
– এই মেয়েটার জন্য আমাকে ইগ্নোর করছো?
বেশ তাচ্ছিল্যের সাথেই কথাটা বলেছিলো। আমার অবশ্য খারাপ লাগেনি কারণ এরকমই কথা শুনতে অভ্যস্ত আমি। কিন্তু নিষাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। একটু আগেও হাসছিলো কিন্তু ওই কথাটা শোনার পরে ওর হাসি থেমে গেলো।
নিষাদ কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলো। আমিও ওর পিছু পিছু উঠে চলে এলাম। মেয়েটা ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
সন্ধ্যায় ওকে আমিই ফোন দিলাম। ওই ঘটনার পর সারাদিন আমাকে ফোন দেয়নি, ম্যাসেজও দেয়নি।
– কী করছো?
আমি বেশ ভালো আছি বোঝানোর চেষ্টা করেই একটু হাসি হাসি মুখে কথাটা বলেছিলাম।
ও শুকনো কণ্ঠে বললো
– কিছুনা।
– দুপুরে খেয়েছিলে?
– হ্যাঁ।
– আমার মনে হয় তুমি মিথ্যা বলছো।
– আমার কিছুই ভালো লাগছেনা। এখন একটু দেখা করতে পারবে?
আমি কিছু বলতে যাবো তখন ফোনের ওপাশ থেকে অনেক গুলো কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম হাসি ঠাট্টা করছে।
আমি ফোন কেটে না দিয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম।
কেউ একজন বললো
– নিষাদ তুই শেষ মেষ ৪ ফুটের প্রেমে পড়লি? ক্যাম্পাসের সবচেয়ে কিউট ছেলে তুই। আর তুই কিনা?
আরেকজন বললো
– আমি তো জানতাম ওই মেয়ের সাথে নোট আর সাজেশন এর জন্য মিশিস। তলে তলে এতো কিছু?
এরকম আরো বাজে কথা, টিটকিরি করছে। ও সম্ভবতঃ চুপচাপ আছে। কোনো কথা বলছেনা। আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমার জন্য না। ওর জন্য। আমার জন্য কতো কথা ওকে শুনতে হচ্ছে।
নিজের উপরই রাগ জমছে।
আমি মেধাবী না হয়ে সুন্দরী হতাম তাহলে মনে হয় খুব বেশি ভালো হতো।
নিষাদ আসলেই খুব সুন্দর। এতো সুন্দরের পাশে আমাকে ঠিক মানায় না।
ওই রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওকে ছেড়ে দিবো। ও না চাইলেও।
কিছু ভালোবাসার গল্প এভাবেই অসমাপ্ত থেকে যাওয়াই ভালো।
তারপর প্রায় ১ সপ্তাহ আমি ওকে ইগ্নোর করার চেষ্টা করবো তাতেই ও সরে যাবে।
রাতে ঘুম হয়নি। সারারাত শুধু ভেবেছি ও ঠিক আছে তো? দুপুরে খায়নি রাতেও কি একই কাজ করেছে?
খুব সকালে হোস্টেলের বাইরে একটু হাঁটতে বের হলাম। রাতে ঘুম না হলে খুব খারাপ কাটে দিনের সিংহভাগ সময়। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। মন বলে ছেড়ে দিতে আবার সেই মনই বলে না, পারবো না।
মহাবিপদ !
হোস্টেলের বাইরে একটু দূরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ওকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলাম। ও কখনোই আমার হোস্টেলের সামনে আসেনা।
আমি দূর থেকেই বুঝতে পারলাম ও রাতে ঘুমাতে পারেনি। চোখের দৃষ্টি এলোমেলো। চুল গুলো কেমন এলোমেলো।
আমি ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে ঘুম হয়নি?
– হুম।
– রাতে খাওনি তাই না?
– হুম।
– নিষাদ, ছেলেমানুষী কেনো করো? আমি তো আছিই! যে যাই বলুক।
– রূপন্তী ওদের কথা গুলো তুমি শুনেছো তাই না?
– হ্যাঁ, তাতে কী?
– তোমার খারাপ লাগেনি?
– আমার ওসব এখন গায়ে লাগেনা। এই  চার ফুট আট ইঞ্চি শরীর, বোচা নাক, শ্যামবর্ণা মেয়েকে প্রতিনিয়ত এসব কথা শুনতে হয়েছে এবং সে অভ্যস্ত।
– আমি মনে হয় তোমাকে কথাগুলো আবার মনে করিয়ে দিলাম।
– বাদ দাও। চলো কিছু খাবে। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা আর কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকতে পারবে।
– হোস্টেলে গিয়েই খাবো।
– না, তা হবেনা। চলো বলছি।
– জানো রূপন্তী ওদের আমি কিছু বলতে পারিনি।
– থাক বলতে হবেনা। আমাদের একসাথে দেখলেই ওরা উত্তর পেয়ে যাবে।
সেদিনের সেই ঘটনা আমাদের সম্পর্ক টাকে আরো শক্ত করে দিয়েছিলো।
ওর রুমমেটরাও হাবিজাবি বলতে বলতে একসময় চুপ হয়ে গিয়েছিলো। সেই সন্ধ্যার কথাগুলো আজও আমার কানে ভাসে। মানুষ আসলে বলবেই কিন্তু সেগুলো কানে দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাওয়াটা ভুল।
ওইদিন যদি আমি নিষাদকে ছেড়ে দিতাম তাহলে ওকে পেতাম না।
আমাদের ছোট্ট সংসারে দুই মেয়ে। যেদিন আমাদের বিয়ে হলো সেই সুন্দরী মেয়ে আমাকে অভিনন্দন জানাতে এসে কানেকানে বলেছিলো
– নিষাদ ওর প্রাক্তন প্রেমিক।
আমি কথাটা শুনে হেসেছিলাম। ইচ্ছে করছিলো, উচ্চস্বরে হেসে বলি
– প্রেমিক শব্দের অর্থ জানো মেয়ে? প্রেমিক কখন হয়?
প্রেমিক তখন হয় যখন তুমি প্রেমিকার ন্যায় আচরণ করো। মেয়ে তুমি যদি তাকে ভাঙিয়ে খেয়ে তাকে প্রেমিক বলতে চাও আর নিজেকে প্রেমিকা! তাহলে আমি শুধু হাসবো।
ওই সুন্দরী, নিষাদের প্রথম প্রেমিকা ছিলো। নিষাদ মানতে নারাজ। প্রেমিকা কি প্রেম করলেই হয় নাকি? প্রেম না করেও প্রেমিকা হওয়া যায়। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট ছেলের প্রেমিকা – এমনটার জন্যই সে,আমাকে চেয়েছিলো। ভালোবাসতে পারেনি। আমিও একই নেশায় ছুটেছিলাম। পরে দেখি সব ফাঁকা।
আমি চেয়েছিলাম কাউকে প্রেম শিখাবো, ভালোবাসা শিখাবো তারপর তাকে প্রেমিকা বানাবো। যেটা রূপন্তী তোমার দ্বারাই হয়েছে। তুমিই প্রেমিকা, তুমিই প্রেয়সী।
সম্পর্কে থাকা অবস্থায় ওর প্রথম সম্পর্কে জড়ানো, প্রথম প্রেমিকা ( যদিও তার মতে প্রেমিকা না) সম্পর্কে এটুকুই বলেছিলো। আমার অবশ্য খারাপ লাগেনি। কারণ ওই মেয়ের কথা বলার সময় ওর চোখে ঘৃণা স্পষ্ট দেখতে পাই আমি।
নিষাদ এর মতো পুরুষের অপেক্ষায় থাকে হাজারো অসুন্দর মেয়ে। সেই হাজারো অসুন্দর মেয়ের মধ্যে আমার মতো ২/১ জন নিষাদকে পায়।
নিষাদের ছোঁয়ায় নিজের উপরই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর সকল নিষাদকে অজস্র ধন্যবাদ আর ভালোবাসা দিলেও তাদের জন্য সামান্যই হবে।
_ নিষাদ… ❤
সত্য ঘটনা অবলম্বনে ❤
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(১১)
প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

সে রাতে অজানা কারণে ঘুম চোখে আসেনি আমার। অবশ্য খাতির যত্নের কোন অন্ত ছিল না ওদের।

অনেকটা জামাই আদর বলা চলে। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।

হাতে একটা লুঙ্গি ধরিয়ে দিয়ে জানান দেন,

দ্রুত গোসল সেরে নাস্তার টেবিলে আয়।

মায়ের কথামতো সুবোধ বালকের ন্যায় চুপটি করে গোসলখানায় চলে গেলাম।

গোসলখানা থেকে ফিরে সোজা নাস্তার টেবিলে।

সকালেও আমাকে ঘিরে ওদের আপ্যায়নের শেষ ছিলো না।

এমনভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে আমাকে খাওয়াচ্ছিলো যেন আমি তাদের নতুন জামাই আর এটা আমার শ্বশুরবাড়ি।

কোথাও একটু কম পড়লেই বদনাম রটে যাবে।

ব্রেকফাস্ট শেষে যাচ্ছিলাম রুমের দিকে।

সম্মুখে এসে দাঁড়ায় বাবা।

হাতে ৩০হাজার টাকার মতো ধরিয়ে দিয়ে ধীর গলায় জানান,

সুমনরা মার্কেটে যাচ্ছে। তুমিও যাও। আর হ্যাঁ! আঁখিকেও সাথে করে নিও।

কিন্তু বাবা আমি….

পুরো কথা বলতে পারিনি। চটজলদি বাবার জবাব,

একে তো বিয়ে বাড়ি।

তারউপর তোমার এই বেশভূষা।

কিরকম দেখা যায় না ব্যাপারটা? বাবার কথায় লজ্জা পেলাম ভিষণ।

সত্যিই তো! আমি তো এখনো লুঙ্গি পরেই হাঁটাচলা করছি।

কথা বাড়ালাম না আর।

লুঙ্গি পাল্টে বাসা থেকে নিয়ে আসা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে নিলাম।

কাজিনদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম কেনাকাটার উদ্দেশ্যে…

. — সুমন! এসব কি কিনেছিস তুই? —

কি কিনলাম? — মায়ের জন্য শাড়ি ঠিক আছে।

কিন্তু এ লাল লেহেঙ্গা, চুড়ি কার জন্য কিনলি? —

সে তুই বুঝবি না। চুপ থাক। — ওহ, আচ্ছা! –(নিশ্চুপ সুমন) —

আতিক দেখি! তোর হাতে এসব কি? কিসব বক্সটক্স কিনে আনছিস!

— এগুলোতে কিছু স্বর্ণালংকার আছে। — মানে???

— মানে সুবর্ণ নাকি প্রফুল্ল! কি যেন নাম মেয়েটির?

ঐ যে কাকিমার বান্ধবীর মেয়ে হয়… — লাবণ্য!!!

— হ্যাঁ, লাবণ্য! কাকিমা এগুলো লাবণ্যর জন্য কিনেছে।

— উপহার? — কিছুটা সেরকমই।

— ওহ, আচ্ছা! গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই ঘটে যায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

লাবণ্যকে গোসল করানো হচ্ছিলো উঠোনে। আমরা বাড়িতে ঢুকতেই শুরু হয়ে যায় পানি ছুড়াছুঁড়ি।

আমার কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত থেকে শপিং ব্যাপটা টান দিয়ে নিয়ে কাজিনরা দেয় ভোঁ দৌঁড়।

সে যাত্রায় ওরা রক্ষা পেলেও আমি পাইনি। কোথা থেকে যেন দু’তিনজন মহিলা বদনা ভর্তি পানি নিয়ে এসে ভিঁজিয়ে দেয় আমাকে।

একজন তো পুরো বালতি ভর্তি পানি এনে আমার মাথায় ঢেলে দেয়।

ভাগ্যিস! হাতে শপিং ব্যাগ ছিলো না।

থাকলে নির্ঘাত আমার সাথে সাথে সেগুলোরও নাজেহাল দশা হতো।

কাকভেঁজা আমি যখন রুমে প্রবেশ করি তখন আমাকে দেখে কাজিনরা হাসাহাসিতে মেতে ওঠে।

এ হাসি সে হাসি নয়। হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ওদের।

কিচ্ছু বলিনি আমি। সদ্য কিনে আনা তোয়ালে এবং পাজামা-পাঞ্জাবি হাতে চলে যাই গোসলখানার দিকে।

ফিরে আসি মিনিট দশেক পর’ই।

সবাই কিরকম ‘থ’ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ওদের তাকানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোন ভিন গ্রহের প্রাণী ভুল করে ওদের গ্রহে চলে আসছি।

কিছু একটা বলতে যাবো তখনই পেছন থেকে বুড়ো দাদুর গলা ভেসে আসে।

বাব্বাহ! জামাই তো দেখি একদম তৈরি…

চলবে…

একটি পানকৌড়ির গল্প….  ১০. 

0
একটি পানকৌড়ির গল্প….
১০.
পিএ ইউনুস একা গ্রামের দিকে যেতে রাজি হচ্ছে না। আফতাব হোসেন তাকে অনেক বার বুঝিয়েছেন কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। এর আগে নাকি একা গ্রামে গিয়ে ভয়াবহ বিপদে পড়েছিলেন।
আফতাব হোসেন কোনো উপায় না পেয়ে ইউনুসকে বললেন
– তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ডকে নিয়ে যাও সব খরচ আমার। রাজি?
ইউনুস বিজ্ঞের মতো করে বললেন
– রাজি। কী কী প্রশ্ন করতে হবে আমাকে লিখে দিয়েন। ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
– শর্ত হচ্ছে কোনো তথ্যই তুমি ছাড়া দ্বিতীয় জন যেন না জানে। প্রত্যেক মানুষের অপ্রীতিকর অতিত থাকে। আমাদের দুজনের কাজ হচ্ছে সেটা জেনে ছোট্ট মেয়েটার সাহায্য করা। বুঝতে পারছেন?
– তাহলে আজকেই যাবো?
– অবশ্যই।
২ দিন পর পিএ ইউনুস আর তার ক্লোজ ফ্রেন্ড ফিরে এলেন। পিএ ইউনুসকে চুপচাপ দেখে আফতাব হোসেন জিজ্ঞেস করলেন
– কোনো সমস্যা হয়েছিল ওখানে?
– না জার্নি করার কারণে হালকা মাথাব্যথা হয়েছে এই আরকি।
ইউনুসের দেয়া  আর তার জোগাড় করা ইনফরমেশন নিয়ে সমাধানের দিকে পা বাড়ালেন। রাত প্রায় ২ টা বেজে ১০ মিনিট তার স্ত্রী রেহানা সেই টিয়াপাখি নিয়ে খেলছে! বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিয়াপাখির সাথে খেলতে নাকি তার খুব ভালো লাগে। এই বারান্দা থেকে রাস্তাটা পুরোপুরি দেখা যায়। রাস্তায় যা যা ঘটছে যাবতীয় কর্মকাণ্ড আরামে বসে বসে দেখা যায়। আফতাব হোসেন প্রথম প্রথম বেশ মনযোগ দিয়েই দেখতেন। আজকাল আর তেমন ভালো লাগেনা।
মানুষের বড্ড অদ্ভুত স্বভাব। একসময়ের প্রাণের চেয়ে প্রিয় জিনিসটাও অপ্রিয় হয়ে যায় সময়ের প্রবাহে!
মোটামুটি একটা সমাধানে আসতে পারছেন না। নিজের উপরই বিরক্ত হলেন আফতাব হোসেন। বিরক্তি কাটানোর জন্য স্ত্রীর কাছে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন!
রাস্তার দিকে চোখ দুটো আটকে গেলো আফতাব হোসেনের!
কোনো এক ছায়া মূর্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আফতাব হোসেন মুচকি হেসে স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা চলো তো ঘুমাই।
রেহানা বললেন
– আর একটু থাকিনা।
– মনে হচ্ছে আমার চেয়ে টিয়াপাখিটাকে বেশি ভালোবাসা হয়?
রেহানা বললেন
– কী যে বলো? তোমার সাথে একটা টিয়াপাখির তুলনা হয়?
– তাহলে চলো ঘুমাবে। অনেক রাত হয়েছে।
আমার সকালে জরুরি কাজ আছে। পেট ভরে খেয়ে বের হবো।
ভোর ছ’টায় রিনির ফোনে আফতাব হোসেনের ঘুম ভাঙলো। অনেক রাতে ঘুমানোর কারণে মাথাটা তার ঝিম ধরে আছে। কোনোমতে ফোন রিসিভ করলেন। ফোনের ওপাশ থেকে রিনি বললেন
– আপনি ৭ টার মধ্যে আসতে পারবেন?
– ৮ টায় আসি? আমার স্ত্রীর রান্না এখনো হয়নি।
– এখানে এসে নাস্তা করবেন।
বাধ্য হয়ে আফতাব হোসেনকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে  বের হলেন। ফারিয়ার নামের খাতাটা নিয়ে বিরক্তিকর মেজাজ নিয়ে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
আফতাব হোসেনকে দেখে দারোয়ান কোনো কথা না বলেই গেট খুলে দিলেন। সাথে বড়সড় সালামও দিলেন।
ড্রয়িংরুমে ঢুকেই দেখতে পেলেন রিনি ম্যাডাম বসে আছেন। গায়ের জামা কাপড় এলোমেলো, মাথার চুল এলোমেলো আর দৃষ্টিতে তার ভয় খেলা করছে। চোখ দুটো লাল টকটকে আর ফুলে আছে।
সোফায় বসে টি-টেবিলের ওপর খাতাটা রেখে আফতাব হোসেন বললেন
– কোনো সমস্যা হয়েছে?
রিনি কিছু বলতে গিয়েও পারলেন না। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। চোখ দুটো বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আ
আফতাব হোসেন বললেন
– কাঁদবেন না প্লিজ। কী হয়েছে আস্তে ধীরে বলুন।
রিনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। বয়স্ক একজন মহিলা নাস্তা এনে টি-টেবিলের ওপর রেখে গেলেন।কাজের লোক হবে সম্ভবত।
রিনি বললেন
– গতকাল রাতে ঘুমাবো মানে বিছানায় শুয়েছি কেবলমাত্র। আমি।সাধারণত রাত ১২ টার দিকেই বিছানায় যাই। লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকারে ঘুমাই। স্বাভাবিকভাবেই ঘর পুরো অন্ধকার। চোখ লেগে আসছে ঠিক তখন মনে হলো আমার পাশে কেউ শুয়ে আছে। নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলাম। গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকলে মানুষের যেভাবে নিশ্বাস পড়ে ঠিক তেমন। আমি ভয়ে চোখ খুলতে পারছিলাম না। পুরো শরীর আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে।
তারপর চিৎকার শুনতে পারলাম, ভয়ংকর চিৎকার! আমার পাশ থেকেই আসছে। আমি লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি ১০-১১ বছরের একটা মেয়ের শরীর ছটফট করছে। মেয়েটার মাথা পুরো থেতলে গেছে আর পুরো শরীরে রক্ত!
তারপর আর মনে নেই। ভোর ৫ টায় রুনুর মা এসে,আমাকে রুমের ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখেছে।
রিনি শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।
– রক্ত কি আপনার বিছানার চাদরে লেগে ছিলো?
কান্না থামিয়ে বললেন
– না।
– আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো। আপনার মেয়ের সমস্যা আপনি জানেন তাই তো?
– হ্যাঁ।
– সারাক্ষণ  মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখার কারণ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত আপনি। এজন্যই আপনার গতকাল রাতে হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো।
– সমস্যার কোনো সমাধান করতে পেরেছেন?
– আপনি বাসায় একা থাকেন?
– না, রুনুর মা আর দারোয়ান।
– আপনার বাবা?
– দুই বছর আগেই মারা গেছেন।
– স্বাভাবিক মৃত্যু?
– স্ট্রোক করেছিলেন।
– আপনার মা, ভাই বা বোন কেউই নাই?
– মা আর ভাই আছেন তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবা মারা যাবার পর মা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন।
– আপনার চেনাজানা পুলিশের লোক আছে?
– না।
– তাহলে ভালো। আমি আপনাকে একজন পুলিশের ঠিকানা আর নাম লিখে দিচ্ছি। তার সাথে গিয়ে দেখা করবেন।
– আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা!
– ওই ঠিকানায় পৌঁছে গেলে বুঝতে পারবেন। আপাতত আমি আসি।
– নাস্তা করে যান।
– না, আমার স্ত্রী আমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে আছে।
আফতাব হোসেন রিনির বাড়ি থেকে বের হয়ে রশীদ আলমকে ফোন করলেন। দু’বার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন রশীদ আলম।
– ভালো আছেন রশীদ সাহেব?
– এইতো আছি। কিছু বলবেন?
– আপনার স্ত্রীকে একটু আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবেন। সমস্যা নাই আমার স্ত্রী বাসায় আছেন।
– এখনই যেতে হবে?
– নাহ ১০ টায় আসলেই হবে।ফারিয়ার অবস্থা এখন কেমন?
– ওই আগের মতোই।
ফোন কেটে গেলো। আফতাব হোসেন বুঝতে পারলেন ফারিয়ার বিষয়ে রশীদ আলম বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
রশীদ আলমের সম্পর্কে রিনি যা বলেছেন সব সত্য। জুয়াখেলা রশীদ আলমের নেশা ছিলো।
রেহানা বসার ঘরে ছোট্ট সোফায় বসে আছেন। তার মুখোমুখি লিমা বসে আছেন। লিমা ঠিক ১০ টায় এসে হাজির হয়েছেন কিন্তু আফতাব হোসেন বাসায় নেই। রেহানা ফোন করেছিলো। আফতাব হোসেন বলেছেন
– ১০ মিনিট পর আসছি।
কিন্তু ২৫ মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ নেই। রেহানা, লিমাকে বারবার দেখছেন পা থেকে মাথা অবদি। সৎ মা এতো ভালো কীভাবে হতে পারে ভেবে!
৩৫ মিনিট পর আফতাব হোসেন হাসোজ্জল মুখে ঘরে ঢুকলেন। লিমাকে বসে থাকতে দেখে আফতাব হোসেন মুচকি হেসে বললেন
– আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এভাবে অপেক্ষায় রাখার জন্য।
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– এভাবে কাউকে বসিয়ে রাখা ঠিক? বাসায় মেয়েটা একা একা আছে।
– কেনো আপনার ছেলেটাও তো একা!
লিমা কী বলবে বুঝতে পারছিলেন না। মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
আফতাব হোসেন স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা তুমি তোমার কাজে যাও।
রেহানা বেগম কোনো কথা না বলেই উঠে গেলেন।
বসার ঘরের পাটিতে আরাম করে বসে আফতাব হোসেন বললেন
– আপনি মানুষ টা কিন্তু খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন!
– আপনি আপনার এসিস্ট্যান্টকে আমার গ্রামে পাঠিয়েছিলেন?
– আপনি তো সব জানেনই তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
– আপনাকে সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়েছিলো, সমস্যা তৈরি করার জন্য না।
– সত্যিটা কি আপনি বলবেন না আমি বলবো?
– কীসের সত্যি শুনি?
– আপনার পরিবার গ্রামের উচ্চবিত্ত। আপনি দেখতেও যে খুব অসুন্দর তা না। আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ। গ্রামের মেয়ে হিসেবে উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হবার কথা অবিবাহিত যুবকের সাথে। কিন্তু আপনার হলো বিবাহিত মধ্যবিত্ত একটা মেয়ে সহ পুরুষের সাথে। আমি ভেবেছিলাম আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এইজন্যই এরকম পরিবারে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি যে শিক্ষিত সেটা আপনার কথাবার্তায় আর আপনার বাবার কথায় বোঝা যায়। আমি ভাবলাম ফারিয়ার মা রিনির মধ্যে সমস্যা আছে। রিনির বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। পুরো ধারণাটাই ভুল। ম্যাডাম লিমা আপনার অতীত আমি বলবো নাকি আপনি নিজেই বলবেন?
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম। সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর করতো। প্রথম দিকে আমি রাজি হয়নি। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। এভাবে বেশ কয়েকবার চলার পরে টেস্ট এক্সামের কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই। বাসায় কী বলবো? কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।
সবুজ নাম ছিলো ওর। ওকে জানালাম। ও বললো, ” এই বাচ্চা আমারও তো নাও হতে পারে! কার না কার পাপ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো তার কোনো ঠিক আছে? “
আমি কিছুই বলার সাহস পাইনি। শুনেছিলাম তার বলা কথা গুলো। কতো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যেগুলো বলছে। জানেন আফতাব হোসেন, খুব চেনা মানুষ যখন অচেনা হয়ে যায় তখন না কিছু বলার বা করার থাকেনা।
আমি ওই অবস্থায় ফাইনাল এক্সাম দিলাম। সমস্যা হয়নি কারণ আমার তখন ৪ মাস চলছিলো বা ৫ মাস।
কিন্তু আমি তাকে ঠিক ভুলতে পারলাম না। আমার জমানো কিছু টাকা ছিলো সেটা দিয়েই এক্সামের পর থেকে গিয়েছিলাম মহিলা হোস্টেলেই। বাবা খুব বিশ্বাস করে শহরে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাস ভাঙতে দেখলে বাবা হয়তোবা সহ্য করতে পারতেন না। বাচ্চাটাকে লুকিয়ে জন্ম দিয়ে এতিমখানায় দিয়ে দিবো। পাপ আমার ওর তো না। কিন্তু কী যে হলো, সবুজ এক্সিডেন্টে মারা গেলো। তখন আমার ৯ মাস। ডেলিভারির কাছাকাছি সময়। ওকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য লাশকাটা ঘরের দিকে গেলাম।
সবুজের মাথা পুরো থেতলে গিয়েছিল। চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা এ আমার সেই সবুজ।
শুনেছিলাম অন্ধকারে একা একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তারপর ট্রাকের নিচে পড়ে সব শেষ। মাথার থেতলে যাওয়া অংশ বেলচা দিয়ে উঠাতে হয়েছিলো।
ওইদিনই আমার ডেলিভারি হলো। মরা মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম আমি। সবুজের শেষ চিহ্নটাও আমার কাছ থেকে সরে গেলো। প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। হোস্টেলের সবাই জানতে পারলো আমি অবিবাহিত। কেউই আমাকে রাখতে চাইলোনা। বাধ্য হয়ে আমার বান্ধুবী বাসায় নিয়ে গেলো। প্রায় ৬ মাস ওভাবে থাকার পর আব্বা আমাকে রশীদের সাথে বিয়ে দিলেন। বিয়ে দিতে পারতেন না যদি রশীদের ছোট্ট মেয়েটার কথা না জানতাম।
আমার মন বললো – আমার মেয়ে ফিরে এসেছে।
আমি ওকে মেয়ের স্নেহে বড় করেছি কিন্তু সবুজের এক্সিডেন্টের ঘটনা কয়েকবার ওকে বলেছিলাম।
আমার বুকের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টের কথা গুলো অবুঝ ফারিয়াকে বলতাম। অন্যভাবে বলতাম। কষ্টটা হালকা হতো। কিন্তু এটা যে ওর উপর এরকম প্রভাব ফেলবে আমি বুঝিনি। আমিই ওকে নিষেধ করেছিলাম আপনাকে যেন আমার এক্সিডেন্টের গল্পটা না বলে।
– তা তো আমিই বুঝতে পেরেছি। আপনি রিনির কাছে কেনো যেতেন?
– আমার কেনো যেন মনে হতো রিনি ওর মা না। আমার ওই মরা মেয়েটাই ফারিয়া।
তাই বারবার বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করতাম রিনি ওর সত্যিই মা কিনা।
– কিন্তু আপনি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
আমি কিছু কথা বলবো শান্ত ভাবে শুনবেন।
– হ্যাঁ।
– আপনার প্রভাব থেকে ফারিয়া মুক্ত হতে পারলে সুস্থ হতে পারবে। আপনার ঔ এক্সিডেন্টের গল্পটা ওর উপর খুব গাঢ় প্রভাব ফেলেছিলো। আর তার ফলাফল তো আপনি নিজেই জানেন। আমি তাই ফারিয়াকে তার জন্মদাত্রী মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার সুস্থ হবার এই একটাই উপায়। আপনি যতোই চেষ্টা করুন না কেনো ওকে ওই এক্সিডেন্টের গল্পটা বলবেনই। আপনি নিজেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। গতকাল রাত ২ টায় আপনি এই বাসার সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই না?
– হ্যাঁ।
– কারণ জিজ্ঞেস করবোনা। ফারিয়ার মৃত্যু যদি না তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন। আর আপনার ছেলেটার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। তা না হলে একেও হারাবেন আপনি।
– আমি কি ওকে লাস্ট বারের মতো দেখতে পারবো?
– না, আপনাকে দেখলে ও যেতে চাইবেনা রিনির কাছে। ফারিয়াকে যদি সত্যি নিজের মেয়ে ভাবেন তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন।
লিমা অল্পতেই কাঁদতে শুরু করার মতো মেয়ে। কিন্তু আজকে তার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও পড়ছেনা।
রিনি ঘুমন্ত মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েকে যে এভাবে পেয়ে যাবে বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। আফতাব হোসেন তাকে একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর নাম,ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে। সবই আল্লাহর রহমতে হয়েছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়রওয়ানা হয়েছেন। একটা দিনও সে এখন নষ্ট কর‍তে চাননা তিনি।
সকালের দিকে আকাশে মেঘ সাজতে শুরু হয়েছিলো। সেই মেঘ এখন বৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে। রিনির আজ প্রায় ১১ বছর পরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মেয়েটা তার কোলে কতো আরামে ঘুমিয়ে আছে। এই ঘুম ভাঙানো যাবেনা। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে বৃষ্টির  ফোঁটা  স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বৃষ্টির ফোঁটার মতো তার জীবনেও এখন নতুন সুখের বর্ষণ শুরু হয়েছে নতুন করে!
সমাপ্ত।
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(১০)
প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম আমি। ঘোর কাটে মহিলাদের হাসির আওয়াজে। আমাকে দেখে লাবণ্যর ভেঁজা শরীরটা হলুদের শাড়ি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। প্রচন্ড এক লজ্জায় সে স্থান ছেড়ে চলে আসার সময় ধাক্কা খাই পিচ্চি এক মেয়ের সাথে। আমার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেয় সে। নিঃশব্দেে এক নিশ্বাসে গ্লাস পানিশূন্য করে ফেলি। আমাকে ঘিরে আবারো হাসিতে মেতে ওঠে কাজিন’রা। ওদের কর্মকাণ্ড যতই দেখছিলাম বেশ অবাক হচ্ছিলাম আমি। বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল এত হাসির কারণ কি? সে স্থান ছেড়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় দূর্ঘটনাবশত পা পিছলে পড়ে যাই মাটিতে। কিছুক্ষণ আগেই ঠিক এ স্থান থেকে লাবণ্যকে গোসল করে রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। শরীর কাদামাটিতে ভরে যায় আমার। এ এক বিশ্রী অবস্থা। খবর শুনে ছুটে আসে মা। জানান দেন, ‘দ্যাখ! বাড়ির উঠোনেই তেতুল গাছ। তার উপর আজ শনিবার। বিয়ে বাড়ি এটা। কি হতে কি হয়ে যায় তার কোন ইয়ত্তা নেই। তাই বলি কি গোসলটা করে নে বাবা! মায়ের অন্ধবিশ্বাস এবং সারা গায়ে লেপ্টে থাকা কাদা মাটির দরুন অগত্যা সে রাতে আমায় গোসলটা করতে হয়েছিল। গোসল করে পড়লাম আরেক মহা ঝামেলায়। আমার সাথে কোন জামা কাপড় ছিলো না গোসল শেষে যেটা পরে নিবো। এদিকে কেউ একজন আমায় কোথা থেকে জানি একটা লুঙ্গি, গামছা দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আল্লাহ! শেষে কি না আমায় লুঙ্গি পরে ঘুরতে হবে বিয়ে বাড়িতে! কি করবো! এ ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তাও দেখতে পাচ্ছিলাম না কোন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে লুঙ্গিটা তাই পরে নিতে হলো আমায়। পরনে লুঙ্গি আর শরীরে গামছা জড়িয়ে আমি যখন রুমে যাই তখন হাসাহাসির একটা রোল পড়ে যায় কাজিনদের মধ্যে। তাদের কথোকপথনগুলো এমন ছিল- রুবেলঃ- হাউ ফানি! আমাগো শুভ্র লুঙ্গি পড়েছে। আতিকঃ- কি কিউট লাগছেরে ভাই তোকে। একদম ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতই… লিমাঃ- আতিক্যা দ্যাখ! শুভ্র’রে ট্যাগ কইরা ওর লুঙ্গি পরনে অবস্থায় ছবি দিয়েছিলাম। ৪মিনিটে ৩৯৮ রিয়েক্ট…. সুমনঃ- ভাই তুই লুঙ্গি পরছোস ভালা কথা৷ নিচে হাফপ্যান্ট পরছোস তো…! মানে বুঝস তো! একটা দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। চেঁচিয়ে ওঠি আমি। চুপ হয়ে যায় সবাই। এরকম সময়ই দরজায় কড়া নাড়ে কেউ। লজ্জায় দ্রুত বারান্দার দিকে চলে যাই আমি। সোফা ওঠে দাঁড়ায় লিমা। এগিয়ে যায় দরজা’র দিকে। — আপু তুমি? (অবাক লিমা) — জ্বী, (লাজুক লাবণ্য) — আসো। রুমে আসো। — না মানে এ শার্ট আর প্যান্ট’টা দেয়ার ছিল ওনাকে। — শুভ্র বারান্দায়। তুমি যাও দিয়ে আসো… — আআআমি? — হ্যাঁ, যাও…. ভীরু পায়ে লাবণ্য এগিয়ে আসে বারান্দায় দাঁড়ানো আমার দিকে। পেছন থেকে ধীর গলায় ডেকে ওঠে আমায়, শুনছেন? একে তো লুঙ্গি পরনে তার উপর খালি গা। লজ্জায় প্রায় মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তথাপি তাকাতে হলো পেছনে। নিঃশব্দে হাতে রাখা প্যান্ট-শার্ট’টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় লাবণ্য। মাথা নিচু রাখা অবস্থায় সেটা গ্রহন করে ‘জ্বী, আচ্ছা’ বললাম আমি। গা থেকে গামছা খুলে রাখলাম বারান্দায় রাখা চেয়ারে। শার্ট গায়ে দিতে যাবো ওমনি পিছু ফিরে তাকায় লাবণ্য। এগিয়ে আসে আমার দিকে। এবারো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার উপক্রম আমার। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন করলাম, Any problem? লাবণ্য আমার দিকে গোসলখানায় ফেলে আসা মোবাইলটা এগিয়ে দেয়…. চলবে….

তিনি এবং ও ! ৬

0
তিনি এবং ও ! ৬
তিনি এবং ও ! ৬

তিনি এবং ও !

৬.
কম্পানির কী নাম দেয়া যায়?স্বপ্নের মধ্যেই সে ভাবতে লাগলো। এতো নাম তার মনে থাকে কিন্তু আজ কোনো নাম তার মনে পড়ছেনা। একটা নাম তার মনে পড়লো – অদ্রি সাত রঙের নতুন বাজার। বেশ বড় নাম হয়ে যায়। কাস্টমার নাম পড়তে গিয়েই বিরক্ত হবে। তবে নামটা ইন্টারেস্টিং। স্বপ্নের মধ্যেই তার ঘুম আসলো। নৌকার মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়লো।নিদ্রের মনে হলো, কেউ তার মাথার কাছে ঠকঠক আওয়াজ করছে। আস্তে আস্তে আওয়াজ বাড়ছেই। তারপর মনে হলো, কেউ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। এতো ইন্টারেস্টিং চিন্তা রেখে দরজা খুলতে তার ইচ্ছে করছে না।কড়া নাড়তে থাকুক কোনো সাড়াশব্দ না পেলে চলে যাবে।
নিদ্র গভীর নিদ্রারত অবস্থায় বিছানায় পরে রইলো। অদ্রি এক হাতে খাবারের ট্রে আরেক হাতে চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে অনেকক্ষণ কড়া নাড়ছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তার দুহাত ব্যথা হয়ে গেছে।
নাস্তা টেবিলেই রাখা ছিলো নিদ্রের জন্য। কিন্তু ১১ টা বেজে যায় নাস্তা করতে না আসাতে অদ্রি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। গত রাতে ওরকম খারাপ ব্যবহার করাটা ঠিক হয়নি। ওই কারণেই নিদ্র নাস্তা করতে আসছে না। বাসার মেহমান না খেয়ে থাকবে, খুবই খারাপ। তাই নিজেই নাস্তা নিয়ে এসেছে।
এতো জোড়ে জোড়ে দরজায় শব্দ করার পরও যখন দরজা খুলছেনা তখন অদ্রি ভাবলো – কিছু হয়ে গেলো নাকি?
অদ্রির গতরাতের কথা মনে পড়েও খুব খারাপ লাগতে লাগলো। মানুষ টা তো কোনো খারাপ কিছুই করেনি তাহলে সে কেনো এমন ব্যবহার করেছে? কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
আগের তুলনায় আরো জোড়ে দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর দরজা খুলে নিদ্র শুধু মাথা বের করে ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কিছু বলবেন?
অদ্রি বলল
– মানে বেলা ১১ টা বাজে আপনি নাস্তা করতে আসলেন না। তাই ভাবলাম আপনি অসুস্থ কিনা?
নিদ্র মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– রাত ভরে দেয়াল রঙ করেছি। ঘুমিয়েছি ভোররাতের দিকে।
– বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
– দুঃখিত বলে কী লাভ? ঘুম তো ভেঙেই দিলেন।
অদ্রি খেয়াল করলো নিদ্রের এক চোখ খোলা আরেক চোখ বন্ধ। বন্ধ চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা জানা দরকার। অদ্রি বলল
– আপনার চোখে কোনো সমস্যা?
নিদ্র বলল
– ঘুম যেন না ভাঙে তাই এই কাজ করেছি। কিন্তু লাভ হলো না।
– আমি সত্যি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
– হয়েছে দুঃখিত দুঃখিত বাদ দিন। নাস্তা কী এনেছেন?
কথাটা বলে নিদ্র দরজা পুরোটা খুলে দিয়ে বলল
– ভিতরে রেখে যান।
অদ্রির নাকে রঙের গন্ধ আসলো। রঙের গন্ধ তার একদমই সহ্য হয়না। এই কারণে এই বাড়িতেও রঙ করা হয়না। রুমের ভিতরে ঢুকে অদ্রির অস্বস্তিকর লাগছে। ট্রে আর ফ্লাক্স টেবিলের উপর রেখে দিয়ে অদ্রি দ্রুত পায়ে চলে যেতে লাগলো। নিদ্র পেছন থেকে বলল
– চায়ের কাপ তো দেন নি। আর আমারটাও আপনার রুমে গতরাতে ফেলে এসেছি।
অদ্রি যেতে যেতে বলল
– আমি নিয়ে আসছি।
অদ্রি চলে যাবার পর নিদ্র ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো।
নাস্তা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে কে বলবে যে,সে রাগী? হুটহাট করে রেগে যায়। মেয়েটা রাগী হলেও খারাপ না।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো অদ্রি তার দিকে পেছন ফিরে কিছু একটা করছে। অদ্রি বুঝতে পারেনি নিদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।
নিদ্র খুব ধীরেধীরে অদ্রির পেছনে এসে দাঁড়ালো।তাদের মধ্যেকার দূরত্ব অনেক কম। নিদ্র ফিসফিস করে বলল
– কী করছেন?
অদ্রি প্রায় লাফিয়ে উঠলো। নিদ্র হেসে ফেলল।অদ্রি পেছন ফিরে বলল
– আপনি দূরে দাঁড়ান।
নিদ্র বলল
– প্রতিশোধ নিলাম। গতরাতের প্রতিশোধ নিলাম।
অদ্রি বলল
– তাই বলে এভাবে? আর আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন।
– আমার লুসি আছে।
অদ্রি বলল
– চা করেছি আপনি নাস্তা করে নিন।
– তা কী নাস্তা এনেছেন?
– পরোটা আর ডিম ভাজি।
– লুসি অবশ্য ভালো রান্না করতে পারেনা। আমাদের বিয়ে হলে ঝামেলায় পড়তে হবে। দুজনের কেউই রান্না পারিনা। চা কফি খেয়ে দিন পার করতে হবে।
অদ্রি বলল
– আমাকে কেনো বলছেন?
নিদ্র চায়ের কাপ নিয়ে বলল
– যাতে আপনার বরের খাবার বিষয়ক কোনো সমস্যা না হয়।আমাকেই দেখুন, খাবার নিয়ে আমার এখনি টেনশন হচ্ছে।

অদ্রি মাথা নিচু করে কী যেন ভাবলো। তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। যেতে যেতে অদ্রির দুচোখ ভিজে উঠেছে। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে ফেলল।
অদ্রির পুরোনো স্মৃতি আবার মনে পড়ে গেলো। খুব কষ্টে সে নিজেকে একটু ঠিক করেছিলো। কিন্তু এই মুহূর্ত তাকে, তাকে আবারো সেই পুরোনো স্মৃতিতেই ডুবিয়ে দিলো।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৫.

0

তিনি এবং ও !

৫.
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে মগ মেঝেতে রেখে বলল
– আমি জানবো কীভাবে?
নিদ্র বলল
– আমি এর একটা উত্তর জানি। তবে ঠিক হবে কিনা জানি না।
– তাহলে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন?
– কিছু প্রশ্নের উত্তর একাধিক হয়ে থাকে। ধরুন আমি যেই প্রশ্নটা আপনাকে করলাম সেটার একাধিক উত্তর হয়।সবগুলোই আমার গবেষণা করে বের করা।
– আপনি গবেষণাও করেন?
নিদ্র লাজুক লাজুক স্বরে বলল
– ওই টুকটাক। তো বলি?
– আপনি আমাকে যেভাবেই হোক বলবেন। আমি সম্মতি দানে হয়তোবা আপনি বিষয়টা ঘুরিয়ে বলবেন না আর সম্মতি না দিলেও…..
নিদ্র, অদ্রির কথার মধ্যেই বলল
– বুঝতে পেরেছি আপনি অনেক বুদ্ধিমান।
অদ্রি বাধা দিয়ে বলল
– বুদ্ধিমতী।
নিদ্র হা হা হা হা করে হাসতে শুরু করলো। অদ্রি তার হাসির দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কতদিন পর এই বাড়িতে কেউ একজন মন খুলে হাসলো।
নিদ্র হাসি থামিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো তখন অদ্রি বলল
– আপনি হাসি থামাবেন না প্লিজ। হাসুন প্রাণ খুলে, অনেকদিন এই বাড়িতে কাউকে এভাবে হাসতে দেখিনি।
নিদ্র হাসতে হাসতেই বলল
– কেনো? আপনার বাড়িতে হাসির উপর ১৪৪ ধারা জাড়ি করা নাকি?যে হাসলেই ফায়ার….. ঢুস ঢুস ঢুস ঠা ঠা ঠা…. ফায়ার হবে?
অদ্রি কফির মগ হাতে নিয়ে বলল
– আপনার কফি ঠাণ্ডা হচ্ছে।
– আপনি বললেন না তো?
– কী বলি নাই?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?
– বললামই তো নেই।
– তাহলে কী কারণে মন খারাপ?
– আমার মন খারাপ আপনাকে কে বলল?
– আমি খুঁজে কিছুটা বের করেছি। বলি?
– হ্যা বলুন।
– আপনি হাসছেন না। যাও একটু আকটু হাসছেন কিন্তু তার পরপরই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
– আমি খুব কম হাসি তাই…..
– আর আপনি খুব হালকা রঙের জামা কাপড় পড়েছেন।তবে অনেকে হালকা রঙ পছন্দ করে কিন্তু এতোটা সিম্পল তো হয়না। আর আপনার এলো চুলেই ধরা দিয়েছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আপনি খুব চিন্তিত বা মন খারাপ। আর আপনার বয়সী মেয়েরা বেশ সাজগোজ করে। এমনকি খুব সাধারণ মেয়েরাও অন্ততপক্ষে চোখে কাজল দেয়।
অদ্রি মাথার ঘোমটা ঠিক করে নিলো যদিও সেটা ঠিক করার প্রয়োজন ছিলোনা।
নিদ্র বলল
– আপনার চোখের দৃষ্টি খুব উদাসীন। একটা শূন্যতা খেলা করছে।
অদ্রি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি এখন যেতে পারেন।
নিদ্র মেঝে থেকে উঠে চলে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর অদ্রি তার হাতের কফির মগ আর নিদ্রের রেখে যাওয়া মগ স্বযত্নে তার পছন্দের টেবিলের উপর রেখে দিলো।
কী যেন মনে করে নিদ্রের কফি মগের ঠাণ্ডা কফিতে চুমুক দিলো।
চিনি ছাড়া কফি, কী ভয়ংকর তিতা। তার কফি তো এমন ছিলোনা।
অদ্রির রাতের ঘুমটা ভালোই হলো। এদিকে নিদ্র সারারাত জেগে রুমের চার দেয়ালে নকশা করেছে। ভোররাতে সে ঘুমাতে গিয়ে বুঝতে পেরেছে এখন ঘুমালে তার পুরো দিন পার হয়ে যাবে।
আবার না ঘুমালে সারাদিন মাথা ঝিম ধরে থাকবে। শেষ পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে পরলো। ঘুমের মধ্যে নিদ্র স্বপ্নে দেখলো – সে বিশাল রঙের নদীতে নৌকায় বসে আছে।
নদীটা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ।
ঢেউ আসছে একেক সময় একেক রকম। নিদ্র হাত বাড়িয়ে ঢেউ স্পর্শ করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। অনেক চেষ্টা করেও সে স্পর্শ করতে পারলো না। স্বপ্নের মধ্যেই নিদ্র বুঝতে পারলো সে স্বন দেখছে।
এতো রঙিন স্বপ্ন মনে হয় সে আজই প্রথম দেখলো। সে ভেবে নিলো, ফিরে গিয়ে রঙের ব্যবসা করবে।

চলবে……..!

#Maria_kabir