Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2352



তিনি এবং ও ! ১৯.

0
তিনি এবং ও ! ১৯.
তিনি এবং ও ! ১৯.

তিনি এবং ও !

১৯.

জীবনটা নতুন সাজে সাজতে শুরু করলো। আশেপাশে মনে হচ্ছিলো কেউ সুখেরকাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সমস্যা হলো খুব খারাপ ভাবে। আমি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম। জানেন নিদ্র তিনি আমাকে একবারো নিষেধ করেননি।
নিদ্র বলল
– নিষেধ করবেন কেনো?
– নিদ্র আপনি মনে হয় জানেন না, বাংলাদেশের গ্রাম আর মফস্বল শহর এমনকি শহরে বিয়ের পর মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেয়া হয়না। অনেক সময় মেয়ে দের পড়তে দেয়া হলেও কড়া গার্ড এ রাখা হয়।
– তারপর কী হলো? সমস্যা টা তো বলবেন?
– ইভটেজিং বুঝেন? এলাকার কিছু চোর ছ্যাঁচড়া আমার পিছু লেগে গেলো। কলেজ যাওয়া আসার পথে কটু কথা, শিষ দেয়া শুরু করলো। আমার হাজবেন্ড থানায় কেস করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। যেদিন পুলিশে থানায় নিয়ে গেলো সেদিন রাতেই ওরা বাসায় ঢিল মারতে শুরু করলো। বাসার দারোয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিলো। বিশ্রী গালাগাল দিতে লাগলো চোর ছ্যাঁচড়া গুলা। তিনি নিচে গিয়ে দারোয়ান কে বাসার মধ্যে আনতে গেলেন, ওনার মাথাও ফাটিয়ে দিলো। নিদ্র আপনি বুঝতে পারবেন না, আমার অবস্থাটা তখন কেমন ছিলো! আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হতে লাগলো। আমার কারণে তার এরকম ক্ষতি হয়ে গেলো।
– আপনার কোনো ক্ষতি করেনি সেই ইভটিজার গুলো?
– তার আগেই পুলিশ এসে গিয়েছিলো।তার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছিল। আর পড়াশোনা আমি ছেড়ে দিলাম। যে,আমার জন্য এতোকিছু করলো তাকে কীভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখি?
– বাহ কী যে বলেন? ইভটিজিং করতো আপনাকে, গালাগাল করতো আপনাকে, খারাপ লাগার কথা আপনার।
– আরে এলাকাজুড়ে তাকে কথা শুনাতো। আর আমাকে বলাতো তাকে বলা একই।
– তারপর কী হলো? রোমান্স হলো টলো না? তার জন্য আপনি এতো বড় স্যাক্রিফাইজ করলেন তারজন্য তো……………
– বাদ দিন। হাসিখুশি ভাবটা আমাদের সংসারে আবার ফিরে এলো। পুরো বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগতো না।একটা বাচ্চা থাকলে ভালো হতো। আমি প্রায়শই তাকে অন্যভাবে বোঝাতাম। একজন ছোট্ট সংগী দরকার। কিন্তু তিনি বুঝেও না বোঝার ভান করতেন।
– আপনারা কখনো ঘুরতে যেতেন না?
– নাহ, ওই চোর ছ্যাঁচড়ার ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়া যেতো না।যেদিনই বের হতাম সেদিন রাতে বাসায় আবারো ওরা ঢিল মারতো, খুব জোড়ে জোড়ে গালাগাল করতো।আমার হাজবেন্ডের ব্যবসার পার্টনার এবং বন্ধু প্রায়শই বাসায় আসতেন। প্রথম প্রথম আমি তার সামনে যেতাম না। কিন্তু তিনি বললেন,আমার বন্ধুর সাথে তুমি কথাবার্তা বলতে পারো। ও বাসায় আসে আর তুমি যদি কথাবার্তা না বলো তাহলে তো খারাপ দেখায় তাই না?
তারপর থেকে উনি আসলেই বেশ আড্ডা হতো। আমাকে দাবা খেলা উনি শিখিয়েছিলেন। এমনকি রান্নাবাড়া ও শিখেছি ওনার কাছ থেকে।
তবে ওনার বাগানের ফুল গুলো ইউনিক। এরকম ফুলের বাহার আমি কোথাও দেখিনি।
নিদ্র বলল – আপনি তো বাসা থেকে বের হতে পারতেন না। তাহলে বাগান কীভাবে দেখলেন? মোবাইলে? কিন্তু আপনার চেহারায় তো প্রকাশ পাচ্ছে অন্যকিছু!

অদ্রি বলল – তার বাসায় আমরা প্রায়ই যেতাম।
– আপনি একা যেতেন নাকি আপনার হাজবেন্ডও যেতেন?
– প্রথমে তিনি যেতেন আমার সাথে পরে অবশ্য একাই যেতাম।
– উনি বিবাহিত ছিলেন তাই না?
– নাহ, বিয়ের প্রতি ওনার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। সবসময় বিয়ের নেগিটিভ সাইড নিয়ে তর্ক করতেন আমার সাথে।
– আপনারা দূরে কোথাও ঘুরতে যাননি কখনো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– ওনার সাথে আমি একা দূরে কোথাও কেনো যাবো?
নিদ্র হাসার চেষ্টা করে বলল
– আমি তো আপনাকে একা যেতে বলিনি! আপনারা উল্লেখ করেছি। তাতে তো আপনার হাজবেন্ডকেও উল্লেখ করা হয়।
নিদ্রের হঠাৎ করে খারাপ লাগতে শুরু করেছে। পুরো মাথা ঝিম ধরে আসছে। আর মনে হচ্ছে কে যেন কানের কাছে ঝিঝি ঝিঝি করছে।
নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে পড়লো। অদ্রির গল্পটা তার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু তার শরীর তাকে শুনতে দিতে চাচ্ছেনা। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু শরীর তো কারোরই কথা শুনেনা, সে যে অবাধ্য…….!

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৮.

0
তিনি এবং ও ! ১৮.
তিনি এবং ও ! ১৮.

তিনি এবং ও !

১৮.
অদ্রি মুচকি হেসে বলল
– কখনো জানা হয়নি আসলে কি সে কখনো বলেনি।
নিদ্র বলল
– ভালবাসার কথাটা বলতে হয়না সেটা আসলে ফিল করার ব্যাপার। যেমন ধরুন মা আমাদের কখনওই তেমনভাবে বলেননা যে, ভালবাসেন। কিন্তু আমরা জানি মা আমাদের সবথেকে বেশি ভালবাসেন। ছোটোবেলায় আমরা যখন কথা বলতে পারতাম না মাকে কখনওই বলতে পারিনা যে ভালবাসি। কিন্তু মা বুঝতে পারেন। টেলোপ্যাথি একটা বিষয় আছে। আদিম মানুষেরা নাকি টেলোপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। তবে এটা জাস্ট ধারণা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– আমার জন্য কড়া লিকারের চা নিয়ে আসো।
অদ্রি বলল
– আরে না। জ্বর একটু কমেছে কেবল তার উপর রাতে খাওয়া হয়নি আপনার। এখন কড়া লিকারের চা কোনোভাবেই খাওয়া যাবেনা।
নিদ্র চোখ বন্ধ করে বলল
– অদ্রি পান করবো চা!
– হয়েছে হয়েছে। আমি আপনার জন্য যা এনেছি এগুলোই খেতে হবে।
টেলোপ্যাথি বিষয়টা অদ্রির জানা নেই। জিনিষ টা সে কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা।
অদ্রি জিজ্ঞেস করবে কিনা নিদ্রকে বুঝতে পারছেনা। নিদ্রকে জিজ্ঞেস করেই বসলো অদ্রি
– আচ্ছা টেলোপ্যাথি কী?
নিদ্র খেতে খেতে বলল
– আপনি যার কথা ভেবে ঘুমোতে যান ,তিনিও আপনার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমোতে যান । সাইকোলজিক্যাল ভাষায় এটাকে বলে, টেলোপ্যাথি। আরেকটা ধারণা আছে, সেটা হচ্ছে ইংরেজিতে এটা noun
the supposed communication of thoughts or ideas by means other than the known senses.

synonyms:mind reading, thought transference. বাংলায় এটা
বিশেষ্য

জ্ঞানের অর্থে ব্যতীত অন্য অর্থ দ্বারা চিন্তাধারা বা ধারণাগুলির অনুমতিক্রমে যোগাযোগ।

প্রতিশব্দ: মন পড়া, চিন্তা স্থানান্তর।

অদ্রি ইতস্ততভাবে বলল
– আমি ঠিক কিছুই বুঝলাম না।
নিদ্র পরে বলল
– ভুলটা আমারি, আমিই আপনাকে বোঝাতে পারছিনা ভালোভাবে। যাইহোক একদিন ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবো।আজ থাকুক। এমনিতেই আপনি অন্য চিন্তায় হারিয়ে আছেন। তা না হলে আপনি অনেক আগেই ব্যাপার টা বুঝে যেতেন।
– আমি আর কার চিন্তায় হারাবো?
– আপনার গল্পটা বলুন শুনি।বললে মন হালকা হবে আপনার। দেখুন না আমার মায়ের গল্পটা আপনাকে বলেছি ব্যাস মন হালকা হয়েছে। আপনিও বলে ফেলুন।
– আমার জন্ম হয় পাড়াগাঁয়ে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। ৩ ভাইয়ের পর একমাত্র মেয়ের জন্ম হওয়াতে বাবা মা খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবা ছোটোখাটো চাকরী করতেন।আমার বয়স যখন ১৮ তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়েরা সবাই শহরে পড়তে গেলো তাদের খরচ জোগাতে বাবাকে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো।
আমি যে হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলাম তার হেডমাস্টার আমাকে খুব ভালবাসতেন, খুব স্নেহ করতেন। আমার পড়াশোনা টা বন্ধ হয়ে যায়। ভালো রেজাল্ট করেও যখন কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না তখন তিনি একটা উপায় খুঁজে আনলেন।
স্যার ই আমার বিয়ের প্রস্তাব টা আনেন। আসলে স্যার চেয়েছিলেন, এমন একজনের সাথে আমার বিয়ে হোক যে আমার ভরণপোষণ করবে এমনকি আমাকে পড়াবেও তার উপর আমার পরিবারকেও টানবে।

নিদ্র বলল
– এরকম বর পাওয়া যায়? আমার তো বিশ্বাস হয়না।
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– তিনি একজন মহান মানুষ ছিলেন। আপনার বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে তো তার মহত্ত্ব কমে যাবেনা।
– আমি তো এমনি বললাম। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।
– আমার যেদিন বিয়ে হলো সেদিন খুব গরম ছিলো। বিয়ের রাতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে কীভাবে থাকবো?
বিয়ের দিনই তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে এলেন। বাসায় আসার পর বুঝতে পারলাম তার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। বুড়ো এক কাজের মহিলা আছেন। উনিই সবকিছু করেন।
বাসররাতে আমাকে বললেন – যতদিন
তুমি আমাকে পুরোটা না জানো ততদিন আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না।
একজন মানুষ কতোটা ভালো হলে এভাবে বলতে পারেন? জানেন?
– নাহ, বিয়ে মানেই শরীরের বৈধতা ভেবে নেয়।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৭.

0
তিনি এবং ও ! ১৭.
তিনি এবং ও ! ১৭.

তিনি এবং ও !

১৭.
নিদ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো
– অদ্রি আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। গতরাতের ঘটনার জন্য। দেখুন আমি যে সমাজে বড় হয়েছি সেখানে জড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক ঘটনা।ভুল হয়েছে স্বীকার করছি কিন্তু এরকম করবেন না। আরেকটু হলে আমার নাকের বারোটা বাজতো।
অদ্রি বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বলল
– ভাষাটা ভালো ভাবেই আয়ত্ত্ব করেছেন তাহলে কালচার টা আয়ত্ত্ব কেনো করতে পারেননি?
নিদ্র বলল
– বুড়ো দাদী আর কতটুকু বা পারবে? আশেপাশে বাঙালি যারা আছেন তারা তো আর কতটুকুই বা কালচার মানে?
– হয়েছে আর অজুহাত দিতে হবেনা।
– আমি অজুহাত দিচ্ছি না। সত্যটা বললাম।আমি আপনাকে প্রমিজ করলাম, আর কোনোদিনও আপনাকে স্পর্শ করবো না। আপনার অনুমতি ছাড়া কোনোদিনও না।
– আপনি এখান থেকে যান তো। আমার ভালো লাগছেনা।
– বিরিয়ানি টা গরম করে দিন খেয়ে নেই। শত হলেও আমি অতিথি। আমাকে না খাইয়ে রাখবেন?
অদ্রি ওড়না দিয়ে ভালোভাবে নিজেকে ঢেকে দরজা খুলে বলল
– আপনি এতো মিথ্যা বলেন, আমার জানা ছিলোনা।
– না আসলে মাঝেমধ্যে বলতে হয় প্রিয় মানুষের রাগ ভাঙানোর জন্য।
অদ্রি, নিদ্রের এরকম কথায় হাসতে শুরু করলো।অদ্রি ঘর থেকে বের হয়ে নিচে নামতে নামতে বলল
– আপনি এখন আপনার ঘরে যান। বিরিয়ানি আসছে।
অদ্রি বিরিয়ানি গরম করে সাথে সালাদ নিয়ে নিদ্রের রুমে আসলো।
নিদ্রের সকাল থেকেই শরীর গরম লাগছিল। কিন্তু এখন তার নাক ও চোখ জ্বলছে। জ্বর আসবে কিন্তু সেটা আসবে খুব জোড়ালো ভাবে।
বিকালের দিকে জ্বরে নিদ্র বিছানায় পরে রইলো। লিলি, অদ্রি মিলে মাথায় পানি ঢেলে জ্বর কমাতে পারলো না।
রশিদ সাহেবকে দিয়ে বাসায় ডাক্তার আনা হলো।
ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে, একটি প্রেসক্রিপশন রশিদ সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ডাক্তারবাবু বিদেয় হলেন।
সকালের দিকে নিদ্রের ঘুম ভাঙলো অদ্রির ডাকে।
অদ্রি মনে পড়ে গেলো তার স্বামীর সাথের স্মৃতিগুলো। তাকেও ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হতো। কড়া লিকারের এক কাপ চা আর দুটো টোস্ট। ব্যাস তার সকালের নাস্তা এতেই হয়ে যেতো।
আসলে তার খাবার দাবারের প্রতি তেমন আকর্ষণ ছিলোনা। আর রাত হলেই ড্রিংক্স করতো। মাঝেমাঝে এতো বেশি করতো যে, আবোলতাবোল বকতো।
তখন অবশ্য আমি তার সামনে থাকতাম না।
নিদ্র ঘুম ঘুম চোখে খেয়াল করলো অদ্রির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। নিদ্র বলল
– তার কথা মনে পড়ছে?
অদ্রি বলল
– আপনি কীভাবে জানলেন?
– স্বাভাবিক। আগে বলুন তার কথা মনে পড়েছে?
– হ্যা, তিনি মানুষ টাই এমন ছিলেন।
– আপনাকে খুব ভালবাসতো?
অদ্রি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। কখনওই জানা হয়নি, তিনি অদ্রিকে ভালবাসতো কিনা???

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ১৬.

0
তিনি এবং ও! ১৬.
তিনি এবং ও! ১৬.

তিনি এবং ও!

১৬.
গরম গরম আলু পুরি তে কামড় দিয়ে নিদ্রের মন ভালো হয়ে গেলো। সকাল সকাল এরকম সুস্বাদু খাবার পেলে আর কী লাগে? রাতের ঘটনা টা এখনো ভুলতে পারছেনা সে। এভাবে হুটহাট করে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরা ঠিক হয়নি। তবে
সে যেখানে বড় হয়েছে ওখানে তো পরিচিত দের জড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক ঘটনা। লিলি আলু পুরি ভরা প্লেট নিয়ে নিদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লিলি জিজ্ঞেস করলো
– ভাইজান কেমন হইছে?
নিদ্র বলল
– সেই রকম হয়েছে।
লিলি প্লেট নিদ্রের বিছানার উপর রেখে চলে যাবে তখন নিদ্র জিজ্ঞেস করলো
– তোমার ম্যাডাম কী করে?
লিলি বলল
– ম্যাডাম না আপা।
নিদ্র বলল
– আপা কী করে?
– আপা তো এখনো তার ঘর থেকে বেরই হয়নি। সে মাঝেমধ্যে এমন করে।
– কেনো?
– জানি না ভাইজান।
লিলি নিদ্রের ঘর থেকে চলে গেলো। নিদ্র প্লেটের সবগুলো আলু পুরি খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষ হবার পর ভাবতে লাগলো কী করা যায়? অদ্রির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু , অদ্রির সামনে যেতে তার লজ্জা লাগছে।
এদিকে তার মনে কোনোভাবেই শান্তি আসছে না।
নিদ্র অদ্রির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো।
অদ্রি বিছানায় শুয়ে ছিলো। সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে উঠে ” নিদ্রের জড়িয়ে ধরা সময়টুকু ”
কানে বার বার বেজে উঠে, নিদ্রের হৃদস্পন্দন। কী অসহ্য লাগে তখন তার, সে কাউকেই বোঝাতে পারবেনা।
এই প্রথম কোনো পুরুষের এতোটা কাছে সে এসেছে। যে শুনবে সেই অবাক হবে! অবাক হওয়ারই তো কথা! প্রায় ২ বছর সংসার করেছে সে কিন্তু তার স্বামী তার হাতটা পর্যন্ত কখনো স্পর্শ করেনি। সে যে সুন্দরী সেটা বলেছে কিন্তু আবেগহীন ভাবে। বলার কথা বলেছে চোখ মুখে কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়নি।
গতরাতে নিদ্রের চোখে মুখে অদ্ভুত অভিব্যক্তি সে খেয়াল করেছে। যেটা সে তার স্বামীর কাছ থেকে। মানুষ টা কেনো এমন ছিলো সে জানে না। কখনওই জানতে পারেনি। জানার আগেই মানুষ টা টুপ করে চলে গেলো।
নিদ্র কেনো এরকম টা করলো? কী চায় সে? এতোটা কাছে আসার কী খুব দরকার ছিলো? একজন বিধবাই কি ছিলো তার সুন্দর মুহূর্তকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য?
নিদ্র বারবার দরজায় নক করছে। অদ্রি দরজা খুলে বলল
– কিছু বলবেন?
অদ্রির মাথার ঘোমটা খুলে গিয়ে এলোমেলো চুল গুলো কপাল জুড়ে আছে। নিদ্রের ইচ্ছে হচ্ছে, অদ্রির কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিতে। কিন্তু এই ইচ্ছে কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। গতরাতে যা করেছি তাতেই ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে।
অদ্রি দরজা আটকে দিয়ে বিছানার উপর পরে রইলো।
অদ্রি তার মুখের উপর এভাবে দরজা আটকে দিলো যে, সে প্রায় লাফিয়ে উঠেছে। আরেকটু হলে তার নাক এর দফারফা হয়ে যেতো।
আসলেই অদ্রি অনেক রাগী।

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৫.

0
তিনি এবং ও ! ১৫.
তিনি এবং ও ! ১৫.

তিনি এবং ও !

১৫.

নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবছিলো চিৎকার দিবে কি দিবে না?
এতো তিতা আর গরম মসলার গন্ধে ভরপুর।
অদ্রি খেয়াল করলো নিদ্রের চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর নাক কুঁচকে যাচ্ছে যখনি চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
অদ্রি বলল
– চিনি লাগবে চায়ে?
নিদ্র বলল
– মানে, আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার চায়ে আদা, জিরা, তেজপাতা, মরিচ, দাড়ুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি দিয়েছেন।
– এটা চা কোনো তরকারী না নিদ্র। আপনি খান তো চা।
– অদ্রি চা কেউ খায় না, পান করে।
– হয়েছে অনেক হয়েছে এখন আপনি এটা পান করুন। সারাদিন নর্দমায় থেকে আপনার মাথা আওলায়ে গেছে। এখন প্লিজ রেস্ট নেন।
– বিরিয়ানি কখন পাবো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– বিরিয়ানি???
– হ্যা, আপনি তো রান্না করছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– এই চা না খেলে এক দানাও পাবেন না।
– বললামই তো চা খায় না পান করে।
– পান করুন।
– বিরিয়ানির জন্য এই মশলা যুক্ত চা পান করা তো কোনো ব্যাপারই না।

বিরিয়ানি খাওয়ার সময় রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল একটা গাধা।
নিদ্র বলল
– তা আজকে জানলেন?
– আরে একমাত্র ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। আর সে ঠাণ্ডা মেজাজে আছেন।
– আসলে বাবা আমাকে ভালো ভাবে জানেন তো তাই।
– তোমরা বাপ ছেলে কী না কী করো আল্লাহ জানে।
– তবে আজকে আমি ইচ্ছে করে করিনি।
অদ্রি বলল
– খান তো আপনারা চুপ করে। উঁহু এতো কথা বলতে পারেন আপনারা।
রশিদ সাহেব বললেন
– নিদ্র আজকে তোমার জন্য এই মেয়েটাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ইশ মেয়েটার শরীর খারাপ করেছে মনে হয়।
অদ্রি বলল
– নাহ, আমি ঠিক আছি।
রাত ১২ টার পর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে শুরু করলো।
অদ্রি তার জানালা দিয়ে এইসময় বৃষ্টি হতে দেখে একটু বিরক্ত হলো। সাধারণত এই সময় বৃষ্টি হয়না। বর্ষাকাল এমনকি কালবৈশাখী ও অনেক দেরি। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া তার তেমন একটা ভালো লাগেনা। রোদ থাকে না জামা কাপড় শুকাতে চায় না।
অদ্রি ছাদের দরজা খোলার আওয়াজ পেলো। প্রথমে মনে হলো, না হয়তোবা ভ্রম। পরে তার কানে সেই শব্দটা আবারো ভেসে এলো।
এইসময় কে ছাদের দরজা খুলছে? চাবি তো আমার কাছেই থাকে।
অদ্রি মাথায় ঘোমটা ঠিক করে ছাদের দিকে দৌড়ে গেলো। ছাদের দরজা হা করে খোলা। বৃষ্টির পানিরছিটা এসে সিঁড়ি ভিজিয়ে দিয়েছে। গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো অদ্রি।
ছাদে ঢুকে দেখলো নিদ্র দু হাত টান টান করে দাঁড়িয়ে ভিজছে।
ছাদের লাইটের হালকা আলোতে সেই দৃশ্য অপরূপ লাগছে।
অদ্রিও ভিজে যাচ্ছে কিন্তু তার ছাতা আনার খেয়াল ছিলো না। নিদ্র বুঝতে পারলো অদ্রি তার পিছনে বরাবরের মতো এসে দাঁড়িয়েছেন। নিদ্র বলল
– আপনি এখন ছাদে?
– আমি ভাবলাম চোর আসলো নাকি।
– বৃষ্টি হচ্ছিলো, ছাদও খোলা পেয়ে গেলাম
ব্যাস সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম।
– আমাকে একবার বললেই পারতেন। অন্ততপক্ষে আমাকে এভাবে ভিজতে হতো না।
– এই বয়সেই তো ভিজবেন।
নিদ্র অদ্রির কাছে এসে দাঁড়ালো। পুরো শরীর তার ভেজা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তার শরীর ঠাণ্ডায় কাঁপছিল।
অদ্রি বলল
– আপনি কাঁপছেন ঠাণ্ডায়।
– এটাই তো মজা অদ্রি। কিন্তু আপনি তো কাঁপছেন না?
– আমি তো সারাদিন নর্দমায় বসে ছিলাম না।
– উফ অদ্রি আপনি না….
– কী?
নিদ্র অদ্রির আরো কাছে এসে বলল
– অসম্ভব সুন্দরী।
অদ্রি লজ্জায় মাথা নিচু করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, নিদ্র তার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অদ্রির কানে কানে বলল
– সুন্দর মুহূর্ত কে আরো সুন্দর করে তুলতে পারেন আপনি। এজন্যই আপনাকে আটকে রাখলাম।
অদ্রি নিদ্রের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলো। কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? কী করছে সে? কিছুই বুঝতে পারছে না অদ্রি!

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৪.

0
তিনি এবং ও ! ১৪.
তিনি এবং ও ! ১৪.

তিনি এবং ও !

১৪.

রশিদ সাহেব খাওয়া দাওয়া করে সোফায় উপর বসে ঝিমুচ্ছিলেন। তার মনে হলো বাসার মধ্যে কেউ খুব দ্রুত প্রবেশ করলো। সে চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আপাদমস্তক কাদামাটি তে মাখা মানুষ কে দেখে ভয়ে চিৎকার দিলেন।
রশিদ সাহেবের এইরকম গগন ফাটানো চিৎকারে কাদামাটি মাখা মানুষ টাও চিৎকার দিলো। অদ্রি তার রুম থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। অদ্রি কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে দেখে রাগীস্বরে বলল
– নিদ্র, আপনার কিন্তু এরকম করাটা ঠিক হয়নি!
রশিদ সাহেব অদ্রির কথা শুনে কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে ভালোভাবে দেখলো।
নিদ্র হাসতে শুরু করলো। রশিদ সাহেবের বুঝতে বাকি রইলো না এই মানুষ টাই নিদ্র। রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, আমি দূর্বল হার্টের মানুষ। আমাকে এভাবে ভয় দেখানোটা ঠিক হয়নি।
নিদ্র বলল
– আমি ভয় দেখাতে চাইনি।
– তাহলে বাবা এভাবে কাদামাটি মেখে কী করবা?
– আমি ইচ্ছে করে মাখি নি।
নিদ্র কী যেন বলতে যাচ্ছিলো তখন অদ্রি বলল
– আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। তাড়াতাড়ি গোসল করে আসুন।
নিদ্র বলল
– পুরো বাড়ি কাদায় মেখে যাবে।
অদ্রি এতক্ষণ পর খেয়াল করলো তার ড্রয়িংরুম কাদায় মাখামাখি অবস্থা। ১ সপ্তাহ যাবত বাসায় কাজের লোক ছুটিতে। সে কোনোরকম পরিষ্কার করে রেখেছিলো। লিলি টাও তেমন একটা পারেনা। এখন কীভাবে কী করবে? অদ্রি বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো। তার পক্ষে এতোটা কাজ করা সম্ভব না। সারাদিন কিছুই তার পেটে পরেনি।
নিদ্র বলল
– আপনি চিন্তা করবেন না। আমি পরিষ্কার করে দিবো।
অদ্রি বলল
– না না আমিই পারবো। আপনি আপনার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
নিদ্র তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি লিলিকে ডাকলো। লিলি ঘুম ঘুম চোখে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়াল।
অদ্রি বলল
– যা বালতি ভরে পানি নিয়ে আয়, সাবান এর গুড়া আর স্যাভলন লিকুইড নিয়ে আয়। ঘর দিয়ে গন্ধ ছুটছে কাদামাটির।
অদ্রি আর লিলি পরিষ্কার করতে শুরু করলো।
ড্রয়িংরুম পরিষ্কার করে সিঁড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলো নিদ্র চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে নিচে নেমে আসছে।
নিদ্র অদ্রিকে বলল
– আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমি করে দিচ্ছি।
অদ্রি বলল
– আপনি মেহমান।
– তো কী? আমিই তো অকাজ টা করেছি আর আমার অভ্যেস আছে।
– না না আপনি খেয়ে নিন। আমি করছি।
– আপনিও তো খান নি। আপনার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
– আপনি খেয়ে নিন।
পুরোটা পরিষ্কার করতে অদ্রি আর লিলির বেশ সময় লেগে গেলো। সন্ধ্যার সময় পুনরায় গোসল করে খেতে বসলো।
অদ্রি বলল
– কিছু মনে করবেন না। আজকে তেমন কিছুই রান্না হয়নি। সকাল থেকে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। চিন্তায় কারোরই খাওয়া দাওয়ার প্রতি কোনো হুশ ছিলো না।
নিদ্র বলল
– আমি ইচ্ছে করে কাজটা করিনি। রাতে ঘুম হলো না। খুব সকালে হাটতে বের হলাম।
– পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন?
– আরে না। অনেকক্ষণ হাটার পর একটা মাঠের মধ্যে কয়েকটা কুকুর ছানা দেখলাম। কী পরিমাণ কিউট আপনি ধারণাও করতে পারবেন না। আমার বাসায়ও এরকম একটা কুকুর ছানা আছে। আমার খুব মনে পড়ে গেলো। কাছে গিয়ে কুকুরছানার একটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম কয়েকটা বড় আকারের কুকুর আমার দিকে ছুটে আসছে।
দিলাম দৌড়। দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি আর পথও শেষ হয়না আর কুকুর গুলোও পিছু ছাড়ছেনা।
একটা সময় পঁচা নর্দমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলাম। না হয় আমাকে কুকুরের কাছে নিজেকে সমার্পন করতে হবে আর না হয় পঁচা নর্দমায়!
অদ্রি বলল
– আর আপনি পঁচা নর্দমায় ডুব দিলেন। তো এতসময় কই ছিলেন?
– আরে কুকুর গুলো তো যায়ই না। চলে যাবার পর আমি উঠে সোজা বাসায় চলে এলাম। রাস্তায় কতো মানুষ আমাকে দেখে ভয় পেলো।
– এতো সময় থাকলেন কীভাবে?
– কী করার বলুন?
– খাওয়া শেষ হলে আপনার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বেন। আমি গরম দুধ হলুদ দিয়ে নিয়ে আসবো।
– আচ্ছা।
– আর দয়া করে এরকম করবেন না।বলে যাবেন কোথায় যাচ্ছেন।
– কাউকে বিরক্ত করতে চাচ্ছিলাম না।
– আপনি যথেষ্ট বিরক্ত করেন আমাকে। সুতরাং জরুরী কাজে বিরক্ত করলে কিছুই হবেনা।
নিদ্র বলল
– সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এই শুকনো খিচুড়ি ই বিরিয়ানি মনে হচ্ছে।
– আপনি বিরিয়ানি পছন্দ করেন?
– পছন্দের মানে? ভালবাসা, ভালোলাগা সব সব আমার ?

খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিদ্র তার রুমে গিয়ে অদ্রির কথামতো বিছানায় শুয়ে পরলো।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। আর বলল
– একটু বাজার থেকে ঘুরে আসুন। একটা লিস্ট দিচ্ছি সেই অনুযায়ী বাজার করে আনুন।
রশিদ সাহেব বললেন
– আজ আমি এখানেই থাকবো।
– আচ্ছা।

চলবে……!

#Maria_kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১২)

0
  1. #প্রত্যাখান_পর্ব(১২)
    লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

বাব্বাহ! জামাই তো দেখি একদম তৈরি…
দাদার কন্ঠকে অনুসরণ করে পিছু ফিরলাম আমি।
কিন্তু একি! দাদার সাথে সাথে যে আরো কয়েক জোড়া চোখ পলকহীন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে।
প্রশ্ন করলাম। বাবা-মা, কাকা-কাকীমা কিছু বলবে তোমরা?
জবাবে কারো মুখ থেকে কোন শব্দ বের হয়নি। তবে আমার মা এগিয়ে আসে রুমে আমার দিকে।
তারপর তিনি যেটা বলেন সেটা শুনে আমার পুরো শরীর শিহরণ দিয়ে ওঠে। সে স্থানেই থমকে দাঁড়ায় আমি। বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলি কথা বলার শক্তি। মা যেটা বললো সেটা ছিল আমার ভাবনারও অতীত।
অত্যন্ত ধীর এবং স্বাভাবিক গলায় আমার মা সেদিন আমায় জানিয়েছিলো, শুভ্র! এটা বিয়ে বাড়ি। বিয়ে বাড়িতে গ্রামের দূর দূরান্ত থেকে আগত মুরুব্বীয়ান থাকবে। তাই দয়া করে এখানে এমন কিছু করিস না যেটা দেখে লোকে আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারে। আমাদের সম্মানহানি হয়।
লাবণ্যকে আমাদের অনেক পছন্দ। ওর শান্তশিষ্ট বিনয়ী স্বভাবের জন্য সুমনরাও অকে বেশ পছন্দ করেছে। প্রচন্ড চুপচাপ স্বভাবের সে। বয়স কম হলেও যেকোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে ও’র। সে গুনেই তোর দাদাও মুগ্ধ।
এমন মেয়েকে বিনা দ্বিধায় চোখ বোজে বিয়ে করা যায়। যেটা তুইও পারিস।

মায়ের শেষ কথা’য় আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠল। স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনায় ঘামতে লাগলাম আমি। কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলাম মা’কে, মাম্মমানে?
পুনঃবার স্বাভাবিক গলায় মায়ের জবাব, মানে লাবণ্যর বিয়েটা তোর সাথে হচ্ছে। মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়লাম আমি।
বাবা-দাদা, কাকা-কাকীমা, কাজিন এবং একমাত্র ছোটবোন আশা সবাই আমাকে বোঝাতে ব্যস্ত।
ওরা ঠিক কি বলেছে? কি বলে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে? সেটা আমি জানি না। আমি জানি, আমার মাথাটা কেবল ঘুরছিল।
পরে যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরি তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। যেখানে আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো অনেকগুলো মানুষ।
‘কেমন বোধ করছি?’ কোনরকমে এটা জেনেই ওরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে বিয়ের আসরে নেয়ার জন্য।
মা’কে বারংবার একটা কথা বলতে চেয়েও পারিনি বলতে। বিয়ের আসরে গিয়ে চেষ্টার কোন ভ্রুটি করিনি।
কিন্তু আমার মা! আমার কোন কথা শুনার আগ্রহ দেখাননি। ওনার একটাই কথা ছিলো, কথা যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলিস। শুনবো আমি।

বুঝাতে ব্যর্থ আমি একটা সময় চুপ হয়ে যাই।
বিয়ে পরানো শেষ হয়। সামাজিক নানা রীতিনীতি শেষে বউ নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসি।
পাশাপাশি বসে দু’জন। কারো মুখেই কোন কথা নেই। অথচ ভেতরে আমাদের অজস্র কথাদের ভীড় জমেছিল।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। এসিযুক্ত গাড়িতে বসেও ঘামছি আমি ভিষণ।
দু’কান দিয়ে অগ্নির ন্যায় গরম হাওয়া বের হচ্ছিলো আমার। অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে এরকমই হয় বুঝি….!

চলবে….

তিনি এবং ও ! ১৩.

0
তিনি এবং ও ! ১৩.
তিনি এবং ও ! ১৩.

তিনি এবং ও !

১৩.

সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন বদলে যায়। কিন্তু বদলে যাওয়া জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি গুলো রয়ে যায় অগোচরে। কখনো সেটা কাদায় কখনো হাসায়। নিদ্রের জীবনে * মা * সম্পর্কিত যে স্মৃতি গুলো জমে আছে, সেগুলো তাকে শুধুই কাদায়।সারারাত নিদ্র তার মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো।
সকালের প্রথম আলো যখন তার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলো তখন নিদ্র তার বিছানায় বসে পরলো। কী করবে? এভাবে কোনো কাজ ছাড়া বসে থাকতেও তার ভালো লাগছে না। ঘুমও আসেনা। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলো। এতো ভোরে তেমন কোনো মানুষ জন রাস্তায় নেই। কেবল সূর্য তার আলো ছড়াচ্ছে।
নিদ্র হাঁটতে শুরু করলো। তার বাবা বলেছিলেন – সকালের বাতাস বিশুদ্ধ হয়। বাবা তুমি প্রতিদিন সকালে হাঁটবে।
বাবার এই আদেশ আর পালন করা হয়নি।
আজ না হয় পালন করা হোক। মোবাইল টা রুমে রেখে আসাটা ঠিক হয়নি। এই সুন্দর দৃশ্যপট স্থিরচিত্রে ধরে রাখা গেলে ভালোই হতো। বাবাকে দেখানো যেত তার মাতৃভূমির রূপ। তবে আমি পিতৃ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ড এর নাগরিক। বাবা বলেছেন, সবাইকে যেন ব্যাপার টা না জানাই। তা না হলে ফাঁসিয়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে। তারপর আরো ইতিহাস…….
রাস্তার দু ধারে সারি সারি সবুজ গাছ গাছালি। নিদ্র সেই সবুজের মাঝে মিশে যেতে চাচ্ছে। যেন সবুজে মিশে আছে তার প্রাণ তার আত্মার শান্তি।
অদ্রির ঘুম ভাংলো লিলির ডাকে। লিলির এভাবে চেঁচামেচি তে অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হয়েছে টা কী? শুনি যে এভাবে চেঁচামেচি করতে হবে?
লিলি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলল
– আপা, সেই রঙিন চুলওয়ালা কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
অদ্রি বলল
– বাগানে আছে হয়তোবা।
– না আপা কোথাও নেই। ওনার ঘরে বিছানার উপর মোবাইল ফেলে রেখে কোথায় যেন চলে গেছে।
– কী সব বলছিস আছে কোথাও।
অদ্রি বিছানা থেকে নেমে মাথায় ঘোমটা ঠিক করে নিদ্রের ঘরে গেলো।খাটের নিচে খুঁজে দেখলো। পুরো বাড়ির চিপা চাপা সব জায়গা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন রশিদ সাহেবকে কল করলো। রশিদ সাহেব কল রিসিভ করে বলল
– আরে অদ্রি মা, আমি তোমাকে ফোন করবো আর তুমি করলা।
– নিদ্র আপনার ওখানে গেছেন?
– নাহ তো। ও তো আমার বাসা চিনেই না আসবে কীভাবে?
– ওনাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
– ও কি এলাকা চিনে?
– না।
রশিদ সাহেব আর লিলি পুরো এলাকা পাশের এলাকা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন থানায় গিয়ে নিখোঁজ ফাইল লিখিয়ে অদ্রির বাসায় আসলেন।
প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে যাচ্ছে নিদ্রের কোনো খোজ নেই। অদ্রি সকাল থেকে এক ফোটা পানি পর্যন্ত পান করেনি। একজন মানুষ এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
অদ্রির মনে হচ্ছে, নিদ্র তার ঘরেই ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাংলেই নিচে এসে খেতে চাবে।কিন্তু খাবার তো বানানো হয়নি। খানিকক্ষণ পর তার মনে পড়ে, মানুষ টা সকাল থেকে নিখোঁজ।
রশিদ সাহেব অদ্রির পাশে বসে নিদ্রের বাবাকে কল করলো।
নাজমুল সাহেব ফোন রিসিভ করলেন। রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল তোর ছেলেটার কি মাথা খারাপ টারাপ আছে?
নাজমুল সাহেব বললেন
– ওটা আমার ছেলে তোর না যে মাথা খারাপ থাকবে।
– দ্যাখ, আমার ছেলেপুলের মাথা খারাপ নাই। তোর ছেলেরই আছে।
– কী হয়েছে বল।
– আরে সকাল থেকে নিখোঁজ। কোথাও নেই।
নাজমুল সাহেব শান্ত ভাবেই বললেন
– সে সবুজের মাঝে হারিয়ে গেছে হয়তোবা বা পাখির গানে মেতে আছে।
– বাদ দে সাহিত্য। সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে আমরা হয়রান। তার উপর কেউই কিচ্ছু খাইনি।
– দ্যাখ ভাই, ও চলে আসবে। তোরা খেয়ে দেয়ে রেস্ট নে।
– আশেপাশের অবস্থা ভালো না। এটা বাংলাদেশ এখানে মানুষ জনকে কয়েকটা টাকার জন্য খুন করে।
– এটা চিন্তার বিষয়। থানায় গেছিলি?
– ওখান থেকেই তো আসলাম।
– যা এখন খেয়ে নে। যদি রাতে না আসে আমাকে আবার ফোন করিস।
– হ্যা করবানি।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে বলল
– কী বললেন উনি?
– ও আর কী বলবে? একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো চিন্তা নাই। মোটা চামড়ার শালা।
অদ্রি চুপ হয়ে গেলো। রশিদ সাহেব লিলিকে ডাকলেন। লিলি বলল
– রান্না করেছি। খাবেন?
রশিদ সাহেব বললেন
– টেবিলে দে।
অদ্রিকে বলল
– চল মা খেয়ে নেই।
– নাহ আপনি খান। আমার ভালো লাগছেনা।
অদ্রি ঘোমটা টেনে ঠিক করে দোতলায় তার রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো। চাপা কষ্ট কান্নার শব্দে রূপান্তরিত হচ্ছে। একজন ভালো বন্ধু কে এভাবে হারিয়ে যাবে তার জানা ছিলোনা। জীবনের প্রিয় মানুষ গুলো হয়তো এভাবেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ১২.

0
তিনি এবং ও! ১২.
তিনি এবং ও! ১২.

তিনি এবং ও!

১২.
রাতে খাবার সময় বাবা বললেন
– তুমি তোমার মায়ের সাথে কয়েকদিন থেকে আসো। ভালো লাগবে তোমার।
দাদী কিছু বললেন না। চুপচাপ খাচ্ছিলেন। পরেরদিন সকালে দাদী আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে দিলেন। বাবার কথার অমান্য করার সাহস আমার কখনওই হয়নি।মায়ের বাসায় বাবাই আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি অবাক হচ্ছিলাম বাবা কীভাবে জানে মা এখানে থাকে?
আমাকে ব্যাগপত্র সহ দেখে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বাবা এতো সহজে আমাকে এখানে রেখে গেলো কেনো? এই প্রশ্নের উত্তর টাই আমি দিনরার খুজছিলাম।
মার সাথে আমার তেমন কোনো কথা হতো না প্রথম দিকে। মা আমাকে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করতো। নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। গোসল করার পর মাথা মুছে দিতেন।
একদিন মাকে প্রশ্ন করেই বসলাম – আচ্ছা মা, আমাকে বাবা এতো সহজে এখানে রেখে গেলো কেনো?
মা বলল – তোমার বাবা তোমাকে বলে নি?
আমি বললাম – কী বলবে?
মা বলল – আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বেশিদিন হাতে সময় নেই। তুমি আমার স্বাস্থ্য দেখেও বুঝতে পারোনি?
আমার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। এই অল্প সময়ের জন্য মায়ের কাছে এসেছি? আর আমি বুঝতেও পারলাম না মা অসুস্থ?
মা আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– নিড্র, তুমি মন খারাপ করোনা। আর তুমি বুঝবেও বা কীভাবে? আমাকে তো আগে কখনওই দেখোনি।
– মা তুমি মজা করছো তাই না?
– নিড্র তোমার বাবা এতো উদার নয় যে, আমার কাছে তোমাকে রেখে যাবে। আমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। সে জানে, আমার মৃত্যুর পর তোমাকে ফিরে পাবে!

আমি বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম আর বললাম
– তুমি আমাকে কেনো রেখে চলে এসেছিলে?আমার শৈশব তোমাকে ছাড়া কেটেছে মা। মা তুমি জানো তোমার আদর ভালবাসাকে আমি কতোটা মিস করেছি?

কথাগুলো অদ্রিকে বলতে বলতে নিদ্রের চোখে পানি চলে এলো।
অদ্রি বলল
– আপনার মা এখন কেমন আছেন?
নিদ্র বলল
– মা আমাকে আবারো রেখে চলে গেছে। মা তো মাই হয়। জানেন অদ্রি, ক্যান্সার যখন মাকে একদম জাপটে ধরলো তখন মা কথা তেমন বলতে পারতেন না। অল্প কিছু বাংলা শিখেছিলো আমার কাছ থেকে।
হাত পা নড়াচড়াও করতে পারতো না। শুধু বলতো – নিড্র, ফিল কোল্ড।
আমি তখন তার গায়ের কম্বল ঠিক করে দিতাম।
দেখুন না অদ্রি আমার ভাগ্য, মাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। সেই ছোটো থেকে মাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছি। সবসময় ভাবতাম আমার মা থাকলে মায়ের জন্য এটা করবো ওটা করবো। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারতাম না। সে তার শেষ জীবন টা ঠিকি একমাত্র সন্তান কে নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে।
অদ্রি বলল
– আপনার মায়ের ছবি আছে?
– আছে। মা মারা যাবার ১ সপ্তাহ পরই বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিলেন। এখানে পাঠানোর আরেকটা কারণ লুসি।
– আপনার প্রেমিকা?
– নাহ তা ঠিক না। আমার মায়ের নার্স ছিলেন। খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম আর আমার ভালোও লাগে। তাই আরকি তাকে নিয়ে ভাবি। আসলে কিছু একটা করে তো সময় কাটাতে হয়।
অদ্রি বলল
– অনেক রাত হয়েছে আমি আসি।
– হুম।
অদ্রি চলে যাবার পর নিদ্র দরজা আটকে দিয়ে তার ব্যাগ থেকে মায়ের সাথে তার ছবিটা দেয়ালে টানালো।
একদৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

অদ্রি লিলির রুমে গিয়ে দরজায় নক করলো। লিলি ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে বলল
– কিছু লাগবে?
অদ্রি বলল
– তুই এখানকার সবকিছু চিনিস না?
– হ আপা। পুরো এলাকা, পাশের এলাকা সব আমার চেনা।
– কাল আমাদের নিয়ে সব দেখাতে পারবি?
– একদিনে তো আপা হইবো না।অনেকদিন লাগবো।
– অনেকদিন লাগুক। তুই পারবি তো?
– হ আপা পারুম।
– আচ্ছা ঘুমা তুই।
অদ্রি তার রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়ালো। মাথার ঘোমটা খুলে দিয়ে চুলের খোঁপা খুলে দিলো।
কোনো বাতাস নেই, গুমোট গুমোট লাগছে। তারপরও আজ খুব একটা খারাপ লাগছে না তার। অদ্রির মনে হচ্ছে, ভালো একজন বন্ধু পাওয়া গেলো বটে।
নিদ্র তার চোখ মুছে মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মা হাসছে, কতোই না সুন্দর সেই হাসি। মায়েরা কখনওই অসুন্দর হয়না। মাতৃত্ব মা জাতির সৌন্দর্য টাকে বাড়িয়ে দেয়।
নিদ্র আর তার মা একই ফ্রেমে আবদ্ধ কিন্তু তার মা যে নেই। তার মায়ের হাসিটা এভাবেই থেকে যাবে কিন্তু তার……
নিদ্র আর ভাবতে পারছে না। তার মাথা ভার হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে কোথাও যেন কাটা বিঁধছে।
নিদ্রের মনে হলো কেউ তাকে ডাকছে। তার বিছানার উপর কেউ শুয়ে আছে।
নিদ্র বিস্ময় চোখে দেখতে লাগলো, তার মা বিছানায় শুয়ে আছে। আবারো নিদ্র শুনতে পেলো
– নিড্র ফিল কোল্ড।
নিদ্র বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে পায়ের কাছে রাখা চাদর তার মায়ের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল
– মা, ঠিক আছে?
নিদ্র বুঝতে পারছে তার হ্যালুসেনেশন হচ্ছে।তারপরও সে চাচ্ছে, আজীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে মায়ের সাথে।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১১.

0

তিনি এবং ও !

১১.
অন্যথা আমাকে যেতে হলো। বেশ বড়সড় বাড়িতে মহিলা আমাকে নিয়ে গেলেন। ভয়ভয় লাগছিলো আবার চিন্তিতও ছিলাম। কোনোভাবেই মাথায় আসছিলো না আমার মা কোথা থেকে আসলো।
অদ্রি বলল
– সত্যি কি আপনার মা ছিলেন?
নিদ্র বলল
– আহ, গল্পের মাঝে কথা বলবেন না। আমাকে বসতে দিয়ে মহিলা বাড়ির দোতলায় গেলেন। প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে যায় কেউ আসলো না। এদিকে বাসায় যেতে আমার দেরি হচ্ছিলো। আমি উঠে চলে আসবো তখন পেছন থেকে আমাকে বলল
– হেই, কোথায় যাও?
পেছন ফিরে দেখি মধ্যবয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম
– আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিলো। বাবা রাগ করবে।
মহিলা সোফায় বসে বলল
– নাজমুল তো সবসময়ই বেশি সময় মেনে চলে। তুমি বসো আমার পাশে।
আমি তার উল্টো পাশের সোফায় বসাতে মহিলা বললেন
– মায়ের পাশে বসতেও লজ্জা লাগে?
– আপনি আমার মা নন। আমার মা অনেক আগেই মারা গেছেন।
– নাজমুল তোমাকে এই কথা বলেছেন?
– বাবা, সত্যিটা আমাকে বলেছেন। বাবা মিথ্যা বলেন না।
– তোমার মায়ের ছবি আছে তোমার কাছে?
– না, তার কোনো স্মৃতি আমার কাছে নেই।
– কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার কাছে আছে।
তারপর একটা ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন
– নাজমুল, আমি আর আমার কোলে যে ছোট্ট শিশু সেটা তুমি।
ছবিটা হাতে নিয়ে আমি উঠে চলে আসবো তখন উনি বললেন
– ছবিটা দিয়ে যাও। এই একটাই স্মৃতি আমার।
আমাকে জড়িয়ে ধরে মহিলা ডুকরে কেঁদে ফেলল। এই প্রথম কোনো নারীর কান্না আমি গভীরভাবে অনুধাবন করলাম। আমার বুকের মধ্যে ব্যথা করছিলো। অদ্রি এই মধ্যবয়সী মহিলা আমার মা কিনা তখনো জানতাম না। কিন্তু তার স্পর্শ আমাকে মায়ের অনুভূতি দিচ্ছিলো।
অদ্রি বলল
– তারপর কী করলেন?
নিদ্র মুচকি হেসে বলল
– বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। বাবা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, ও ও ওই মহিলার সাথে তোমার সাক্ষাৎ ঘটেছে?
আমি বললাম, হ্যা। বাবা বললেন, সে তোমার জন্মদাত্রী। এখন কথা হচ্ছে, সে মা কিনা আমার সন্দেহ আছে। তা না হলে সে তোমাকে ১ মাসের রেখে চলে যেতেন না পুরোনো প্রেমিকের হাত ধরে।
এমনিতেই আমার অবস্থা ভালো ছিলোনা। এতদিন জেনে আসা সত্যটা হুট করে মিথ্যে হয়ে গেলো। বাবা যা বললেন তাতে তো আরো অবস্থা খারাপ হলো। বাবা আমার অবস্থাটা হয়তোবা কিছুটা বুঝেছিলেন। তাই বললেন – তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় সব শুনবে।
আমি বললাম
– নাহ, এখনি শুনবো।
– তাহলে শুনো। আমি এখানে পড়তে এসে তোমার জন্মদাত্রীর প্রেমে পড়ি।আমি খুব কালো তাই সাদা চামড়ার প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। আমি এখানে খুব ভালো একটা পজিশনে যাই। তারপর তোমার মাকে বিয়ের কথা বলি। সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা বাধলো যে, বিয়ের ১ মাসের মাথায় তোমার জন্মদাত্রী তোমাকে গর্ভে ধারণ করে।
সমস্যাটা তখনি হলো তোমার মা তোমাকে রাখতে চাইলেন না। শেষে অনেক ঝামেলার পর রাজি হলো। তোমার জন্মের ১ মাসেই সে ডিভোর্স নিয়ে চলে গেলেন।
আমি বললাম – কারণ তো আছেই। মা তো অকারণে ছেড়ে যাননি।
– ছেলে মাকে পেয়ে বাবার সাথে তর্ক জুড়ে দিচ্ছো? সমস্যা নেই সত্য জানার অধিকার তোমার আছে।আসলে তোমার মায়ের পুরোনো প্রেমিক তখন এসে হাজির হয়েছিলো। ব্যাস চলে গেলো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমাকে বললেন – তুমি এখন যাও। আমার ভালো লাগছেনা।
আমি বের হবার সময় বুঝতে পারলাম বাবা তার চোখ মুছছেন।
এই প্রথম আমি বাবাকে কাঁদতে দেখলাম। আমার আসলে মায়ের কথাটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হয়নি।

চলবে……!

#Maria_kabir