Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2354



তিনি এবং ও ! ৪.

0
তিনি এবং ও ! ৪.
তিনি এবং ও ! ৪.

তিনি এবং ও !

৪.
নিদ্র যে তাকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করবে এটা অদ্রি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। অদ্রি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দিন পর তার আজকে একটু ভালো লাগছে। শুধু অনেক দিন না অনেক অনেক অনেক দিন। এই নতুন আসা মানুষ টা তাকে বিরক্ত করেই তার মাঝে ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। অদ্রির খুব ইচ্ছে করছে, খুব ইচ্ছে করছে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে। মাঝেমধ্যে যুক্তিহীন কাজ করতে তার ইচ্ছে করে কিন্তু করা আর হয়না। আজ সে করবে।
কিছুক্ষণ পর নিদ্র আবার তার দিকেই আসলো। এবার নিদ্র একটু হেসে বলল
– ইয়ে মানে আমার কাছে রশিদ চাচার মোবাইল নাম্বার নেই।
অদ্রি বলল
– বুঝলাম, তারপর??
– আপনার কাছে তো থাকবে। আমাকে দিবেন?
– যদি না দেই?
– কেনো দিবেন না?
– এইযে আমাকে বিরক্ত করছিলেন এখন আমি আপনাকে বিরক্ত করি?
নিদ্র মাথা চুলকিয়ে বলল
– মনে হয় পারবেন না।
– কেনো?
– কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত করতে হলে তার বিরক্ত হবার কারণ গুলো জানতে হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো তাকে বিরক্ত করে সেগুলো জানতে হয়।
– আমি অবশ্য জানি না। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?
নিদ্র প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
– মোবাইল নাম্বার টা?
অদ্রি বলল
– আচ্ছা আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি লিখে আনছি।
মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নিদ্র রশিদ সাহেবকে ফোন দিলেন। প্রথমে একজন বয়স্ক মহিলা ফোন রিসিভ করলেন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর রশিদ সাহেবকে পেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– কে বলছেন?
– চাচা আমি নিদ্র!
– আরে বাবা তুমি? আমি ফোন করবো তার আগেই তুমি করে বসলা।
– চাচা আমাকে একটু বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন?
– কী লাগবে বলো আমি এনে দেই।
– চাচা আমার আর ভালো লাগছে না এভাবে বাসার মধ্যে বসে থাকতে।
– তাহলে আমি আসতাছি। তুমি কী কী কিনবা, কোথায় কোথায় যাবা সব ঠিক করে ফেলো।
বিকাল ৪ টায় বের হলো রশিদ সাহেব আর নিদ্র। পুরো বাজার কয়েকবার রিভিশন দিয়ে নিদ্র যখন বাসায় ফিরল তখন রাত ৯ টা।
রশিদ সাহেব বাসার গেটে দিয়ে তার বাসায় চলে গেলেন।
নিদ্র কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে অদ্রি দরজা খুললো।
নিদ্রের হাতের ব্যাগপত্র আর রঙের কৌটা দেখিয়ে বলল
– আপনি একটু সাহায্য করুন না?
অদ্রি নিদ্রের হাত থেকে রঙের কৌটা নিয়ে বলল
– রাতে কী খাবেন বলে গেলেন না যে?
– বলেন কী? রান্না করেন নি? আমার তো খুবই খিদে পেয়েছে। আগে জানলে আমি খাবার কিনে আনতাম।
অদ্রি বলল
– আহা। পুরো কথা না শুনে এতো মন্তব্য করেন কেনো?
– আরে আপনি এতো পথ হাঁটলে বুঝতেন।
– হয়েছে হয়েছে। আমি আমার মতো রান্না করেছি।
– যাক আপনি আসলেই সাক্ষাৎ মা দূর্গা। একেবারেই চৈত্রের ফাটা মাঠে এক পশলা বৃষ্টির মতো।
রাতের খাবার টেবিলে অদ্রি আর নিদ্র বেশ গল্প করলো। দূর থেকে লিলি দেখছিল। সে তার আপামনিকে এই প্রথম এভাবে কথা বলতে দেখছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা তাতেই……
অর্ধেক চাঁদ টার দিকে অদ্রি তীব্রচোখে তাকিয়ে আছে। গতকালই এই চাঁদ টা সে এখানেই দেখেছে। কোনো পরিবর্তন নেই, থাকলেও খুব অল্প। এই চাঁদ টাই আস্তে আস্তে ছোটো হবে। একসময় চাঁদ টাকে আর দেখা যাবেনা। তখন পুরো পৃথিবী টা কালো অন্ধকারে ডুবে থাকবে রাতের বেলায়। তারপর একদিন আবার চাঁদ টাকে দেখা যাবে। আবার সে আস্তে আস্তে বড় হবে….. কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে কেনো হয়না এমন? মানুষ কেনো তার শৈশব কে বারবার ফিরে পায়না?কেনো যৌবন চলে যায়না?
হলে ভালো হতো অদ্রি ভাবে। অদ্রির চোখ আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। দুচোখের কোণ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে শুরু করলো। এই একই ঘটনার দিনের পর দিন ঘটছে। অদ্রি প্রতিনিয়ত এক অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে নিশ্বাস ফেলছে। যেন,অপেক্ষা এক চিরসত্য মৃত্যু।
কতক্ষণ যে এভাবে কাটে অদ্রির কখনওই খেয়াল থাকেনা। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
অদ্রির মনে হলো কেউ তার রুমের দরজায় নক করছে। চোখ মুছে গায়ের জামা কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে দেখে নিদ্র হাতে দুটো মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি তার আপাদমস্তক দেখলো। পুরো শরীর রঙ লেগে আছে। এমনকি তার মুখেও বেশ রঙ লেগেছে। অদ্রি গভীর কণ্ঠে বলল
– এতো রাতে?
– হ্যা।ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?
অদ্রি দরজার সামনের থেকে সরে দাঁড়ালো। তারপর বলল
– হ্যা আসুন কিন্তু বিছানায় বসবেন না।
– না বসবো না। আমি মেঝেতেই বেশ থাকতে পারি।
অদ্রি মাথার ঘোমটা আবার টেনে বলল
– আপনার গায়ে কাঁচা রঙ….
– কফি?
– কে বানিয়ে দিলো?
– আমার ১ বছর বয়সী কফি মেকার টা। বেশ কফি বানায়।
– নাহ আমি এখন খাবো না।
– আরে অদ্রি কফি কেউ খায় না, পান করে।
মেঝেতে বসে হাতের একটা মগ অদ্রি দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– তো আপনি কাঁদছিলেন কেনো?
অদ্রি কফির মগ নিয়ে নিদ্রের থেকে একটু দূরে মেঝেতে বসে বলল
– কাঁদছিলাম না তো।
নিদ্র বলল
– আপনি মিথ্যে বলতে একদম এক্সপার্ট না। কারণ টা?
– আপনি আমার বাড়িঘরের কী করছেন? জানা যাবে?
– দেখুন প্রসঙ্গ পাল্টানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না।
বলার ইচ্ছা না হলে বলবেন না। আর আপাতত ওই রুমটা আমার। আমি যা ইছা করতে পারি।
– আমার বলার ইচ্ছা নাই।
– আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই না?
– আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। হাজব্যান্ড আছে।
– আবারো মিথ্যে। হাজব্যান্ড থাকলে এতো রাতে আপনার বেডরুমে আমি বসে থাকতে পারতাম না।
– আপনি আপনার রুমে যান।
– আচ্ছা আপনি আমার একটাও প্রশ্নের উত্তর দিলেন না কিন্তু!
– উত্তর দিতে হবে এমন কোনো দায়বদ্ধতা আমার নেই।
– আপনি আইনজীবী হলে আমি ১০০% শিওর ১ টা কেসও হারতেন না।
– আর আপনার মতো মক্কেল পেলে আমার আইন পেশা ছেড়ে বনবাসে যেতে হবে।
– মনে পড়েছে! আপনার কাছে আমার বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলো।
নিদ্র বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল।
অদ্রি বলল
– করুন, সীমিত জ্ঞানের আলোকে উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।
নিদ্র বলল
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন….
– দেখুন আপনি আরেকবার এরকম করলে আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো।
– বলছি। বাংলা চলচ্চিত্র এ দেখা যায় নায়িকা বা কেউ বনবাসে যায় বা পাঠানো হয়।
– হ্যা।তারপর?
– তারা তো এক কাপড়ে যায়। সাথে কোনো জামা কাপড় থাকেনা। বনেও কাপড় চোপড় দেয়ার মতো নেই।
– হ্যা। আপনার প্রশ্নটা তো বলুন।
– কিছুদিন পর দেখা যায় জামা কাপড়ে অন্য রঙের জোড়া তালি দেখা যায়। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে ” এই জোড়া তালি দেয়ার কাপড় পায় কোথায়? তারা সুই সুতাও বা কোথায় পায়?

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৩.

0

তিনি এবং ও !

৩.
তাহলে এই মেয়েকে খুব সহজে রাগানো যাবে। মেয়েটার অভদ্র আচরণ কীরকম হতে পারে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে নিদ্রের। বড় বাটির এক বাটি নুডুলস নিয়ে নিদ্রের সামনে টেবিলে রাখলো। নিদ্র বলল
– চামচ ছাড়া খাবো কী করে?
মেয়েটা বলল
– আমি আনছি।
মেয়েটা চামচ এনে নিদ্রের সামনে রেখে বলল
– সকালে কী খাবেন?
নিদ্র চামচ বাটির মধ্যে দিয়ে বলল
– নুডুলস এতো ঝোল কেনো করলেন? এটা তো স্যুপ মনে হচ্ছে।
মেয়েটা বলল
– আপনি চুলায় যে পরিমাণ পানি দিয়েছিলেন তাতে ভাবলাম…….
– সকালে তো খাচ্ছি নুডুলস। দুপুরের জন্য রান্না করতে পারেন।
– কী কী খাবেন?
– বাংলাদেশী খাবার রান্না করবেন। এখন কী রান্না করবেন সেটা আপনার ইচ্ছা।
– একটা প্রশ্ন করবো?
নিদ্র নুডুলস মুখে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
– আপনার নাম?
– নিদ্র। আপনার নাম টা বলবেন?আপনাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি ঝামেলায় পরে যাচ্ছি। বারবার মেয়েটি মেয়েটি বলতে হচ্ছে।
– আমাকে নিয়ে ভাবছেন? কিন্তু কেনো?
– সে পরে একদিন বলবো।
– আমার নাম অদ্রি।
– অদ্রি অদ্রি…….
অদ্রি কিছু একটা চিন্তা করে নিজেকে গুটয়ে নিলো।সে স্বভাবত এই বয়সের ছেলেদের সাথে কথা বলেনা।
এই লিলি, লিলি….? বলে অদ্রি সেই ১২-১৩ বছরের মেয়েটাকে ডাকতে লাগলো। নিদ্র বেশ মন দিয়েই নুডুলস খাচ্ছে। রান্না ভালো হয়েছে অন্ততপক্ষে তার চেয়ে। সে কোনোমতে পেট বাচানোর জন্য নুডুলস রান্না করতে পারে আর চা, কফি।
লিলি প্রায় দৌড়ে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
– বলেন আপা।
– আমার পানের বাটা কই?
নিদ্র বলল
– পানের বাটা কী?
লিলি বলল
– পানের বাটা হচ্ছে এমন একটা বাটি যেখানে পান খাবার সবরকম মশলা থাকে।
নিদ্র বলল
– পান খাবে কে? আমি ওসব খাইনা।
অদ্রি বলল
– আমি খাবো।
লিলি পানের বাটা এনে অদ্রিকে দিলো। অদ্রি পান বানিয়ে মুখে দিলো। অদ্রির মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারলো নিদ্র। নিদ্র বলল
– আপনার তো কষ্ট হচ্ছে। তাহলে খাচ্ছেন কেনো?
নিদ্রের কথার উত্তর দিতে গিয়ে অদ্রির পান গলায় ঠেকে যায়। এবং কাশতে শুরু করে।
অদ্রির এই অবস্থায় লিলি ইতস্ততভাবে দৌড়া দৌড়ী শুরু করলো। কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– পানি দাও।
লিলি এক গ্লাস পানি দিলো অদ্রির হাতে। এতকিছু হয়ে গেলো কিন্তু নিদ্র খুব স্বাভাবিক থাকলো। সে চেয়ার থেকে উঠলোই না। কিছু একটা সে ভাবছে।
দুপুরের খাবার নিদ্র একাই খেলো। কেউ তার সাথে খেতে বসলো না।লিলিকে ডেকে অদ্রির রুম কোনটা জেনে নিলো। খাওয়া শেষ করে দোতলার দক্ষিণ পাশের একদম কোণার ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু লাগবে?
নিদ্র বলল
– আমাকে যে ঘরটা দেয়া হয়েছে ওটাকে আমি নিজের মতো সাজাতে পারি?
– হ্যা পারেন।
কথাটা বলেই নিদ্রের মুখের উপর দরজা আটকে দিলো। নিদ্র কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার নক করলো দরজায়। পূর্বের ন্যায় আবারো দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু বলবেন?
নিদ্র বলল
– আমি কি আমার মতো করে ঘরটাকে কালার করতে পারি?
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হ্যা পারেন।
দরজা আটকে দিয়ে অদ্রি ভাবলো এ আবার নক না করে?
আবারো দরজায় নক করলো নিদ্র। এবার দরজা খুলে বেশ রাগীস্বরে অদ্রি বলল
– কী সমস্যা আপনার? কী বলবেন সেটা একবারে বলা যায়না?
– আমি কি আমার ইচ্ছেমত আলমারি বা বুক সেলফ কিনে আনতে পারি?
– আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন কিন্তু বাড়িঘর ভেঙে ফেলবেননা। আর প্লিজ কিছু বলার থাকলে বলুন।
– নাহ কিছু বলার নেই।
নিদ্র হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়া দেখছে। আর সে বুঝতে পেরেছে, আসলে ছেলেটা তাকে বিরক্ত বা রাগাতে চাচ্ছিলো। এবং ছেলেটি সফল ও হয়েছে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২

0
তিনি এবং ও ! ২
তিনি এবং ও ! ২

তিনি এবং ও !
২.
নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলো,আজ দাদী থাকলে সে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে পারতো। দাদী মুখের দিকে তাকিয়ে খুব সহজে মনের অবস্থা বলতে পারে। কীভাবে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে দাদী বলেছেন – চেষ্টা কর পারবি।
নিদ্র চেষ্টা অবশ্য তেমন করেনি।
কী দরকার একজন মানুষের অবস্থা জানার? জানলে আরো বিপদ। সেই মানুষটার কষ্ট তার সহ্য হবেনা। শুধুশুধু কষ্ট পাওয়া।
নিদ্রের ভালো কাটছে না সময়। তার বাবা তাকে লুসির থেকে দূরে রাখার জন্য এখানে পাঠিয়েছে। লুসির সাথে যোগাযোগ করতে পারে এমন পথও রাখেননি। পুরাতন মোবাইল কেড়ে নিয়ে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছেন। এমনকি সিম কার্ড ও চেঞ্জ।
লুসি এতো ভালো একটা মেয়ে কিন্তু কেনো বাবা তাকে পছন্দ করেননা ভেবেই বের করতে পারেনা।
এই সুন্দর সকালে তার লুসির কথা খুব মনে পড়ছে।
অর্ধেক চা ফেলে দিয়ে দোতলায় নিজের রুমে ফিরে এসে মেঝেতে বসে পরলো।
হাতের ছোটো আংটির দিকে তাকিয়ে লুসির কথা ভাবছে। লুসি এখন কী করছে? হয়তোবা এখন ঘুমের মধ্যে খুব খিদে পাওয়া যাওয়াতে সে কিচেনে একাই নুডুলস রান্না করে খাবে।
সাথে সাথে নিদ্র লাফিয়ে উঠে তার ব্যাগের কাছে এগিয়ে গেলো। ২ টা মিনি নুডুলস প্যাকেট নিয়ে রান্নাঘরের খোঁজে বের হলো রুম থেকে। সাধারণত নিচতলায় রান্নাঘর থাকে। রান্নাঘরের দরজায় পর্দা দেয়া থাকেনা – এই যুক্তিটাকে কাজে লাগিয়ে সে রান্নাঘর খুঁজে পেলো। সে এ বাড়িতে আসার পর কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। তারমধ্যে কয়েকটি হচ্ছে
– এই বাড়িতে লোক সংখ্যা খুব কম।
– যারা থাকে তারা তাদের নিজেদের রুমে থাকতে পছন্দ করে।
– এদের খাদ্যের প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই।
– এদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। একজন অতিথি এসেছে বাসায় সেদিকে খেয়াল নেই।
তবে এতে নিদ্রের ভালোই হয়েছে অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে। তা না হলে সারাক্ষণ বাবার মতো ঘাড়ে কেউ চেপে থাকবে এটা খুবই বিরক্তিকর।
রান্নাঘরও তেমন গোছানো না। অনেকক্ষণ খোঁজার পর একটা ছোটো পাতিল পেয়েছে। তার দাদীর ঠিক এমন একটা পাতিল আছে। তবে সেটা অনেক পুরাতন।
পাতিলে পানি দিয়ে চুলায় দিবে তখন নিঃশব্দে নিদ্রের পেছনে এসে কেউ একজন দাঁড়ালো। নিদ্র বেশ বুঝতে পেরেছে তার পেছনে কেউ আছে। না বোঝার ভান করে পাতিল চুলায় দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলো।
– আপনি আমাকে বললেই পারতেন।
নিদ্র স্বাভাবিক স্বরেই বলল
– আপনাকে পাবো কোথায়?
– আসলে আমি অনেক দুঃখিত, অনেক বেশি।
নিদ্র নুডুলসের প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হাতে দিয়ে বলল
– যেহেতু আপনি এতো দুঃখ প্রকাশ করছেন সেহেতু রান্না করেই দিন।
মেয়েটি নিদ্রের দিকে তাকালো চোখ বড়বড় করে। মেয়েটির লাল টকটকে চোখ দুটোতে তার চোখ পরাতে সে ভয় পেয়ে গেলো। তার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। দুটো চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাই তো এই মেয়ে। মেয়েটা চোখ সরিয়ে নিলো। নিদ্র বলল
– আপনি অসুস্থ?
মেয়েটি বলল
– না তো।
– তাহলে চোখের এই অবস্থা যে?
মেয়েটি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি ডাইনিং রুমে বসুন। নুডুলস আমি নিয়ে আসছি।
নিদ্র যেন শুনেও না শোনার ভান করে বলল
– আপনার চোখ এতো লাল কেনো?
মেয়েটি এবার আগের তুলনায় বেশি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি যান এখান থেকে। দয়া করে অভদ্র আচরণ করতে বাধ্য করবেন না।
নিদ্র চুপচাপ ডাইনিং রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
অভদ্র আচরণের কী করেছে সে? যে এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলতে হবে?
খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছে তাতেই এতো রাগ।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১

0
তিনি এবং ও ! ১
তিনি এবং ও ! ১

তিনি এবং ও !

১.
-আরে তুমি নাজমুলের ছেলে নাকি?রশিদ সাহেব নিদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটি বললেন।
নিদ্র একটু হেসে তার বাবার বয়সী লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বাবার বাল্যকালের বন্ধু রশিদ সাহেব বেশ হাসিখুশি মেজাজের।
নিদ্র কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা এই মানুষ টা কীভাবে তার বাবার বন্ধু হলো। তার বাবার সাথে রশিদ সাহেবের কোনো মিলই নেই, বরং অমিলে পরিপূর্ণ।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা তোমার নাম টা বলো? খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রের নাম থেকে শুরু করে সবকিছুই জানেন। তারপরও সে আলাপ জমানোর জন্য প্রশ্নটা করলেন। ২১-২১ বছরের যুবকের সাথে গল্প করার মজাই আলাদা। এদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বুকের ছাতিতে হাজারো স্বপ্ন জমে থাকে। সেই স্বপ্নগুলো জানার প্রবল ইচ্ছা।
নিদ্র বলল
– নিদ্র।
রশিদ সাহেব বললেন
– তা বাবা তোমার প্লেনে কাটলো কেমন?
নিদ্র একটু চিন্তিত হয়ে পরলো। সে প্রশ্নটা ধরতে পারছেনা। প্রশ্নের উত্তর দিবে কীভাবে?
নিদ্রের চুপ থাকা দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– তো এখন যাওয়া যাক। ঢাকাশহর বুজেছো বাবা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে এয়ারপোর্ট এর বাইরে পার্কিং করা তার গাড়ির দিকে নিয়ে এলেন।
নিদ্রের মনে হচ্ছে সে এখনো ছোট্ট বালক। একটু অসাবধানতায় সে পথ হারিয়ে ফেলবে। অবশ্য বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম আসা। কিন্তু তাতে ভয় নেই, গুগোল ম্যাপ আছে।
রশিদ সাহেব গাড়ির ড্রাইভার কে বললেন,নিদ্রের ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলতে। নিদ্রকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে সে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলো।
নিদ্র তার ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ টাকে তার পাশে রেখে চোখ বুজে বসে রইলো। বাবা তাকে কেনো এখানে পাঠালেন, সেটা ভেবে বের করা দরকার।
প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত জ্যামে বসে আছে। খুবই বিরক্ত লাগছে তার।বাংলাদেশে এখন শীতকাল চলছে। তাই সে সোয়েটার পড়ে এসেছে কিন্তু এখানে এসে তার উল্টো ব্যাপার টা ঘটলো। ঠাণ্ডা তো দূরে থাক গরম পরেছে, সে খুব ঘামছেও।
রশিদ সাহেব বললেন
– বুঝছো বাবা এই হইলো ঢাকা। যেখানেই যাও জ্যাম পিছ লেগেই থাকে।
নিদ্র বলল
– আমি যতদূর জানি আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে ৫ ঘণ্টা লাগবে।
রশিদ সাহেব হেসে বললেন
– সাথে জ্যামের হিসাবটা করছিলা?
– না, বাবা তো বলে নাই এরকম কিছু।
– আমি জানতাম ওই ব্যাটা কিছুই বলবে না। বাবা তুমি কিছু খাবে?
– চাচা খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ফ্রেশ না হয়ে কীভাবে খাই?
– দেখো বাবা এখন দুপুর ৩ টা বাজে। বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
– আচ্ছা, হালকা খাবার থাকলে দিন।
রাত ৮ টায় নিদ্র আর রশিদ সাহেব গন্তব্যে পৌঁছালেন।
গাড়ি থেকে নেমে বিশাল উঠানের একপাশের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিদ্রের বেশ ভালো লাগলো। বাড়িটা তার পছন্দ হয়েছে, এখানে থাকতে তার কোনো সমস্যা নেই। সোডিয়াম আলোতে পুরো পরিবেশ টা তার ভালো লাগছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন বাড়ির মধ্যে।
বাড়ির মধ্যে ঢুকতে বিশাল ড্রয়িংরুম এ সোফায় রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, তুমি এখানে যত দিন ইচ্ছা থাকবে।
১২-১৩ বছরের একটা মেয়ে এসে রশিদ সাহেবকে বলল
– চাচা, আপামনি তো….
রশিদ সাহেব বললেন
– তুই ওকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে। যা যা লাগবে ওকে ঠিকমতো দিবি। আর যত্নে কোনো কমতি যেনো না হয়।
তারপর নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা আমি যাই।
নিদ্র অবাক হয়ে বলল
– আপনি কোথায় যাবেন?
– বাসায়, বাবা আমার বাসায় অনেক মানুষ। তোমার থাকার মতো জায়গা নেই। তাই এখানে রেখে গেলাম।
– আমি একটা হোটেলেই থাকতে পারতাম।
– এখানে তোমার থাকার মতো ভালো হোটেল নেই। এটা মফস্বল শহর।
– হ্যা, ঢাকা থেকে তো দূরে।
– বাবা, আমার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগছে। তুমি বিদেশে বড় হয়েও এতো স্পষ্ট বাংলা বলতে পারো। খুবই ভালো।
নিদ্র আর কিছুই বলল না। রশিদ সাহেবের চলে যাওয়াটা দেখছে।
রাতে তার ঘুম তেমন ভালো হলো না।খুব ভোরেই বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। ঘুম না আসলে বিছানায় শুয়ে থাকাটা বিরক্তিকর।
হাত মুখ ধুয়ে সে নিজের আনা হিটার দিয়ে পানি গরম করে টি প্যাক দিয়ে চা বানিয়ে ফেলল। প্রিয় চায়ের মগ হাতে নিয়ে নিঃশব্দে সে নিচে নেমে এলো। বাড়িটা ডুপ্লেক্স তাকে দেয়া হয়েছে দোতলার উত্তরের রুমখানা। এখনো তার ভালোভাবে রুমটা দেখা হয়নি।
হাতে চায়ের মগ নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলো।
দক্ষিণ দিকটাতে ফুলের বাগান দেখে নিদ্রের খুব ইচ্ছা করলো ফুলগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে। তার নিজস্ব একটা বাগান আছে। সেখানে অবশ্য এখানকার থেকেও বেশি ফুল। ফুলগুলো দেখতে গিয়ে নিদ্রের দোতলার একটা খোলা জানালায় চোখ পরলো।
জানালার ধারে একজন যুবতী এলোমেলো খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে। যার চোখের দৃষ্টি আকাশের দিকে। হালকা বাতাসে যুবতীর চুল গুলো দুলছে কিন্তু মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার মুখের উপর এক চিলতে রোদ এসে পরলো। নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে একটা শব্দ বারবার আওড়াতে লাগলো
– এলো চুলে বিষণ্ণ যুবতী। কী কারণ হতে পারে তার বিষণ্ণতার?? কী কারণ???

চলবে…….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ১১.শেষ পর্ব!

0

ডুমুরের ফুল
১১.

শেষ পর্ব!

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জাদিদকে ফোন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে যায় হেমলতার ফোন আসেনা। জাদিদ বিরক্ত হয়ে হেমলতাকে ফোন করলো। দুইবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।
– হেমলতা!
– হেমলতা তো অসুস্থ। তুমি কে বাবা?
জাদিদ কণ্ঠ শুনে প্রথমে একটু ভড়কে গিয়েছিলো। হেমলতা এমনকি অসুস্থ যে ফোন রিসিভ করতে পারলো না। ফোন কেটেও দেয়া যাবেনা। তাহলে সন্দহের চোখে দেখবে। সাহস করে বলেই ফেলল
– জাদিদ, হেমলতার ফ্রেন্ড।
– ওহ আচ্ছা।
কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো। ইনি হেমলতার কাছের কেউ। আর হেমলতার অসুস্থতায় তিনি বেশ চিন্তিত।
– হেমলতার কী হয়েছে?
– আরে বাবা কী বলবো বলো। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় লবণ দিছে। ভালো কথা তুই বুঝতে পারছিলি না যে কোন লবণ। কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হতো। তা না মেয়ে আমার নিজেই লবণ চেখে দেখেছে। ডাক্তার বলল অল্প পরিমাণ পেটে গেছে আর একটু বেশি হলেই ওকে আর…….
হেমলতার বাবা আর কিছুই বলতে পারলেন না।
জাদিদ বুঝতে পেরেছে যে ইনি হেমলতার বাবা।
– আংকেল এখন ও কোথায়?
– ডায়াবেটিক হাসপাতালে।
– আংকেল এখন তো কেবল সন্ধ্যা। আমি আসলে সমস্যা হবে না তো?
– আরে না। আসো। ওর তো তেমন কোনো ফ্রেন্ড নাই। মিম্মা না মিমি ও এসে দেখা করে গেছে। হেমের মন খুব খারাপ। ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডই তার আবার ছেলে বা মেয়ে কি।
– কতো নাম্বার রুম?
– পুরাতন বিল্ডিং এর ৩ তলার হাতের ডান পাশের রুম।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসার জামা পাল্টে নিলো। রুম থেকে বের হওয়ার সময় বাবার মুখোমুখি হয়ে গেলো। ছেলেকে এই সময় বের হতে দেখে একটু অবাক হলেন। এই বয়সের ছেলেরা রাতেও আড্ডা দেয়। কিন্তু জাদিদ তা করেনা।
ছেলের দিকে হেসে বললেন
– কই যাওয়া হচ্ছে?
– এইতো বাবা। আমার এক ফ্রেন্ড অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি তাই তাকে দেখতে যাচ্ছি।
– তোমার সাথে গেলে কি তুমি বিরক্ত বোধ করবে?
– না। দুজনে গল্প করতে করতে গেলে ভালোই হবে।
– চলো ।
জাদিদ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
– তুমি এই পোশাকে যাবা?
– খারাপ কী?
– নিজের দিকে তাকাও তো?
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলেন আসলেই এই পোশাকে বের হওয়া যায়না। তাইলে একটু দাড়া।
তাদের বাড়ি থেকে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা। তারপরো বাবা ছেলে রিক্সায় উঠলেন।
কেবিন খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগলো না। দরজা আটকানো না কিন্তু ভেজানো। তাই নক করতে হলো।
দরজা খুললেন হেমলতার বাবা। মেয়ের সাথে গল্প করছেন।
জাদিদকে দেখে চেনার কথা না কিন্তু ও ছাড়া তো আর কেউ আসার কথা না তাই তিনি বুঝতে পারলেন জাদিদ এসেছে। হাসার চেষ্টা করলেন কিন্তু সেটা আর হাসি হলো না।
– আসো।
দরজা পুরোটা খুলে দিলো। মাঝারী আকারের রুম। রুমের দুকোণায় দুটো খাট পাতা। একটি রোগীর জন্য সেটাতে হেমলতা কাথা গায়ে দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় আছে। আরেকটাতে এখন কেউ নেই। রোগীর সাথে রাতে থাকার জন্য এই বিছানা রাখা হয়েছে।
দুটো টুল এগিয়ে দিয়ে মনোজ সাহেব বলল
– বসো বাবা। আর ইনি তোমার বাবা?
জাদিদ টুলে বসতে বসতে বলল
– জি।
জাদিদ হেমলতার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখছে এই একটা দিনের অসুস্থতায় মেয়েটার চোখের নিচে কালি পরে গেছে। চুল গুলো উশখু খুশকু। খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তারপরও হেমলতাকে অসম্ভব ভালো লাগছে জাদিদের কাছে। হেমলতা কোনো কথা বলছে না।
মনোজ আর জাদিদের বাবা কথা বলতে বলতে রুম থেকে বাহিরে চলে গেলেন।
হেমলতা এখনো কোনো কথা বলছে না। জাদিদ টুল নিয়ে হেমলতার বিছানার পাশে বসলো। তারপর হেমলতার হাত তার দুহাতের মুঠোয়ে নিয়ে আলতো চাপ দিলো।
হেমলতা জাদিদের এভাবে হাত ধরাতে চমকে উঠে বলল
– একি? তুমি এভাবে হাত ধরেছো কেন? হাত ছাড়ো। বাবা দেখলে কী মনে করবে?
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলতে গিয়ে হেমলতা হাঁপিয়ে উঠলো। সারাটা দিন তার খুব কষ্ট হয়েছে। পরীক্ষা হল থেকে বের হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে বমি শুরু হলো।নানী অসুস্থ, বাবা কাজে তাই কেউ আসেনি। মিম্মা মনোজ সাহেবকে ফোন করে
তারপর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বমি তো থামছিলো না তার উপর আবার চোখ উল্টে যাচ্ছিলো। হেমলতার এই অবস্থা দেখে মিম্মা ভয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়।
বিকালের দিকে হেমলতা একটু স্বাভাবিক হয়।রাতে থাকবেন লাইলী বানু। মিসেস জয়নবের শরীর বেশ খারাপ। সে নিজেই তো কিছু করতে পারেনা সে আবার কেমনে অন্য কারো সেবা করবে।
জাদিদ হেমলতার দিকে না তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল
– লবণ এর কি অভাব ছিলো?
হেমলতার মুখ এমনিতেই ফ্যাঁকাসে এই প্রশ্ন শুনে আরো ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে রইলো। এতক্ষণ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। প্রশ্ন শুনে সেটা বন্ধ হয়ে গেলো।
জাদিদ আগেকার মতো করেই বলল
– তুমি একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট। একজন মানবিক বা ব্যবসায়ী শাখার স্টুডেন্ট এই ভুল করলে একটা লজিক ছিলো। যে তারা এই ব্যাপারে জানে না। কিন্তু একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট এর জন্য এইসব ব্যাপার জানা তো ক, খ জানার মতো। যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
হেমলতা জাদিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে জাদিদের ভাব ভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারছিলো না।
জাদিদ হেমলতার হাত দুটো তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো।
জাদিদের আলতো স্পর্শে হেমলতার শরীরে কারেন্টের শকের মতো লাগলো।
হেমলতা তাড়াতাড়ি তার হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না।
জাদিদ হেমলতার চোখে চোখ রেখে বলল
– হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করবা না। এমনিতেই আমার শক্তি বেশি তার উপর আবার তুমি অসুস্থ।
হেমলতা চোখ সরিয়ে বলল
– সবাই খারাপ কিছু ভাববে।
– কেউ দেখছে না তো। আর আমরা তো খারাপ কিছু করছি না তো।
হেমলতা ইতস্ততভাবে বলল
– ফ্রেন্ড রা তো এগুলা করেনা।
জাদিদ টুল ছেড়ে দিয়ে হেমলতার বিছানায় বসে পড়লো। হেমলতা দূরে সরে গেলো।
– দেখো বাবা তোমার বাবাকে আপাতত এখানে আসতে দিবেন না।
– বুঝলাম না?
– তোমার আমার মাঝে প্রথমে ফ্রেন্ডশিপ ছিলো কিন্তু সেদিনকার পর থেকে অন্য একটা অনুভূতি আমাকে তাড়া করে ফিরছে।
আমি জানি না কেন এমন হলো।
জাদিদ হেমলতার উশখু খুশকু চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো।
জাদিদের এমন আচরণ হেমলতার কাছে খুব অচেনা লাগছিলো। অস্বস্তি লাগছিলো আবার জাদিদের স্পর্শও ভালো লাগছিলো। মিশ্র অনুভূতি খেলা করছে তার মনে।
জাদিদ হেমলতার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– তুমি না খুব সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর। আমার তোমাকে খুব ভালোলাগে।
হেমলতা ভাবতেও পারছেনাজাদিদ তাকে পছন্দ করতে পারে। অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। হেমলতা এতক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। জাদিদের এই কথা শোনার পরেই সে জাদিদের দিকে তাকালো।
জাদিদ তার ডান হাতের দুই আংগুল দিয়ে হেমলতার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো।
হেমলতা কেঁপে উঠলো।
হেমলতার কেঁপে ওঠাতে জাদিদ হেসে ফেললো।
হেমলতা বলল
– তুমি কী বলছো? বুঝতে পারছো?
– হ্যা আমি বুঝতে পারছি। তোমাকে খুব ভালোলাগে। মনে হয় তোমার প্রেমে পড়েছি।
হেমলতা এই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
জাদিদ আবার বললো
– মনে যা হচ্ছে আমি তোমাকে ভালবাসি।
দেখো হেম আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। তারপর ও মাঝেমাঝে বলে ফেলি। আর আমি আগামীকাল চলে যাবো ঢাকায়। যাওয়ার আগে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস গুলো জানিয়ে দিলাম। এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কী করবা। আমি তোমাকে কোনোরকম ফোর্স করবোনা।
হুট করে জাদিদের মুখে যে উজ্জ্বলতা ছিলো সেটা উবে গেলো। হেমলতা খেয়াল করলো ব্যাপার টা।
জাদিদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হেমলতা বুঝতে পেরেছিলো এখন কিছু না বললে আর কোনোদিন ও ওর বলা হবেনা।
জাদিদের হাতের মুঠো থেকে ওর হাত মুক্ত হয়ে গেলো।
হেমলতা জাদিদের হাত ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে বলল
– আমাকে ভালোবাসার কারণ আমার জানা নেই। জানার ইচ্ছাও নাই। কিন্তু একটা কথা কি তোমাকে ভালবাসার অনেক কারণ আছে।
ভালবাসার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু আমার ভালবাসায় আছে। তোমাকে তো প্রথম দেখাতেই ভালবেসেছি। কিন্তু মিশতে চাই নেই। আমার মতো এতো সাধারণ মেয়ে তো তোমার যোগ্য না।
তারপর ও তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছেটা মনের একটা স্থানে আটকে ছিলো।
তুমি ফ্রেন্ড হওয়ার কথা বললে তখন ভয় হয়েছিলো খুব। আমার ভিতরকার ফিলিংস টা যদি বেড়ে যায়?
জাদিদ মুচকি হেসে বলল
– আর বলতে হবেনা। বুঝেছি আমি। অসুস্থ মানুষের এতো কথা বলা ঠিক হবেনা। হেমলতা কখনো ডুমুরের ফুল দেখেছো?
– নাহ!
– ডুমুরের ফুল ডুমুরের ফলের মধ্যেই থাকে। উদ্ভিদবিজ্ঞান এ তো ছিলো আমাদের। তুমি না ভারী ফাঁকিবাজ।
যাই হোক। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। ভিতর থেকে ফুল তার সৌন্দর্য টা ফলের গায়ে ছড়িয়ে দেয়। ফলের সেই সৌন্দর্যে পাখি রা আকৃষ্ট হয়।
হেমলতা তোমার সৌন্দর্য টা মনের ভিতর। যে তোমার মনের সৌন্দর্য টা উপলব্ধি করতে পারবে সেই তোমাকে ভালবেসে ফেলবে। তুমি হচ্ছো ডুমুরের ফুল। তোমার মনের সৌন্দর্য টা যেমন আমাকে আকৃষ্ট করেছে ঠিক তেমন ভাবে তোমার সাধারণ রূপ আমাকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে। তোমার হাসিতে সরলতা খেলা করে।

জাদিদের বাবা বুঝতে পেরেছিলেন তার ছেলে এই মেয়েকে পছন্দ টছন্দ করে। ছেলের ওই মেয়ের দিকে তাকানো দেখেই ব্যাপার টা আড়ো বেশি পরিষ্কার হয়েছে তার কাছে। দুজনকে একটু আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি মনোজ সাহেবকে নিয়ে বাহিরে বের হয়েছেন। ছেলে এই মেয়েকে যদি ভালবেসেই থাকে বাসুক না। জাদিদের পছন্দ সে ভালো ভাবেই জানেন। ছেলে অবশ্যই ভদ্র মেয়েকেই বেছে নিয়েছে।
অনেকদিন পর আজকে তার খুব ফ্রেশ লাগছে তার। মনে আনন্দের সমুদ্র বয়ে যাছে। তার ছেলে প্রেমে পড়েছে। তার অর্থ এইযে তার ছেলে সুস্থ স্বাভাবিক।

জাদিদ হেমলতার হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
– আর কোনোদিন এরকম করবে না।
হেমলতা ঘাড় নাড়িয়ে বলল
– হুম।
– লবণ খাওয়ার সখ মিটেছে?
– হুম।
হেমলতা মাথা নিচু করে বলল
– তোমায় ভালবাসি, বড্ড বেশি ভালবাসি।
জাদিদ বলল
– জানি তো। কেশবতী আমার! শুধুই আমার!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ১০.

0
ডুমুরের ফুল ১০.
ডুমুরের ফুল ১০.

ডুমুরের ফুল
১০.
ফোন রেখে দেয়ার পর হেমলতাকে দেখার ইচ্ছে জাগলো। জাদিদের মনে হচ্ছিলো অনেকদিন দ্যাখেনি। কিন্তু মাত্র ৫-৬ দিন আগেও দেখা হয়েছে। হেমলতাকে কল করলো। হেমলতা কেবল চোখ বুজেছে আর তখনি ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। সে এক চোখ বন্ধ রেখে আরেক চোখ খুলে কল রিসিভ করলো।
তারপর বলল
– কি?
জাদিদ একটু হেসে বলল
– ঘুমুচ্ছো?
– তুমি কী ঘুমুতে দিচ্ছো? কেবলি চোখ বুজেছি আর তুমি ফোন দিলা।
– আরে বাহ! আমি তো একবারমাত্র ফোন করলাম। আর আমার দোষ হয়ে গেলো?
– আর প্যাঁচানো বন্ধ করে বলো কী কারণে ফোন করলা?
– আমাকে খুব বিরক্তিকর লাগছে তোমার? কথা বলার তেমন কেউ নাই তাই ফোন করলাম আর তুমি?
হুট করে জাদিদ রেগে যায়। আজকেও তাই। রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিয়ে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।
জাদিদের কথায় পুরোপুরিভাবে বোঝা যাচ্ছিলো যে সে রেগে গেছে। রাগের কারণটা হেমলতা বুঝতে পেরে জাদিদকে কল দিলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
– তুমি নাকি ঘুমাবা? তাহলে আমাকে ফোন দিলা ক্যান?
– আমি অনেক দুঃখিত।
– কেন?
– তোমাকে রাগিয়ে দিলাম তাই ।
– এক শর্তে আমি দুঃখিত শব্দটা গ্রহণ করবো।
– বলে ফেলো।
– সত্যি তো?
– হ্যা!
কখনো হেমলতার ছবি জাদিদ চায়নি। কেমন যেন লাগছিলো ওর। তারপরও কাঁপা স্বরে বলল
– না মানে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাই আর কি একটা ছবি যদি ইনবক্সে দিতা। ভালো হতো।
হেমলতা জাদিদের কাঁপা স্বর শুনে হাসতে শুরু করলো।
হেমলতার হাসি তার বরাবরি ভালো লাগে কিন্তু আজকের হাসিতে তার কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো। জীবনের সতেরো টা বছর সে পার করেছে কোনোদিন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে সে সেধে কথা বলেনি ছবি চাওয়া তো দূরে থাক। ফেসবুকে সে অনেক সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েদের ছবি দেখেছে তেমন একটা ভালো লাগেনি। ফেসবুকে রিএক্ট অপশন থাকা সত্ত্বেও সে শুধু লাইক দিয়েই চলে এসেছে। কোন একটা মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করেছিলো কারণ মেয়েটা তাকে ইনবক্সে কমেন্ট করতে বলেছিলো। তারপর নোটিফিকেশন আসতে আসতে সে শেষ পর্যন্ত কানে ধরেছে বাইচ্চা থাকতে সে কোনোদিন কোনো মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করবেনা।
আর আজকে সেই ছেলে খুব সাধারণ এক মেয়ের কাছে ছবি চাচ্ছে।
হেমলতা হাসতে হাসতেই বলল
– আহারে।
ছবি তো তেমন তোলা হয়না। যা আছে তার মধ্যে থেকেই দিচ্ছি।
ফেসবুকে আসো।
– হুম।
ইনবক্সে কয়েকটি ছবি সেন্ড করে মেসেজ দিলো
– এখন আমি ঘুমাই।
– যাও ঘুমাও।
হেমলতা নেট কানেকশন অফ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। একবার ঘুম ভাঙলে তার আর ঘুম আসেনা। ছবি চাওয়ার কারণ টা তো জাদিদ বলল। কিন্তু তাকে দেখতে কেন মন চাবে তার?
সেদিন যখন ও আমার চুল বেধে দিচ্ছিলো তখন ওর চোখে অন্য কিছু খেলা করতে দেখেছি।
যেভাবে আমাকে দেখছিলো তাতে তো অন্যকিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু কী বোঝাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। এই প্রথম কোনো পুরুষের চোখে তার জন্য কিছু একটা দেখেছে। সে কি আমায়?
প্রশ্নটা করেই হেমলতা তাচ্ছিল্য স্বরে নিজেকেই বলল
– নাহ হতে পারেনা। ওর সম পর্যায়ের আমি না। ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়েছে বলেই কি…….
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বুঝতে পারেনি।
ছবিগুলো দেখতে তার ভালোই লাগছে। এই প্রথম সে হেমলতাকে সাজা অবস্থায় দেখলো। সাজার ধরনে মনে হচ্ছে কোনো বিয়েবাড়ি তে দাওয়াতের সময় তোলা ছবি।
গাঢ় জাম রঙের শাড়ি পড়া, চোখে কাজল, জাম রঙের লিপস্টিক, চুল ছাড়া। দুইহাতে অনেক চুড়ি। সব মিলিয়ে হেমলতাকে তার অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। আসলে যারা সবসময় খুব সাধারণ ভাবে থাকে তারা সাজলে অসম্ভব সুন্দরী লাগে।
জাদিদ শাড়ী পড়া ছবিটা দেখছে। হেমলতাকে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে। ও তো চুল বেণী ছাড়া কিছুই পারেনা আর এভাবে সাজা তো অসম্ভব।
কেশবতী কেশ এলিয়ে দিয়ে এখন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। কথাগুলো নিজে নিজেই উচ্চারণ করছে।
সে যে প্রেমে পড়তে পারে এটা ওকে যারা চিনে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।
প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে একবার হলেও প্রেমে পড়ে।
জাদিদ বই গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলো। স্বপ্ন তাকে তাড়া করে ফিরছে। স্বপ্ন টা তাকে সুখী করছে। কিন্তু একবারের জন্যেও তার মাথায় আসছে না যে হেমলতা তার নাও হতে পারে। ছোটবেলা থেকে সে যা চেয়েছে তাই পেয়ে এসেছে। সে বুঝতে পেরেছিলো তার মা বাবা কখনো আর একসাথে থাকবে না। তাই সে কখনো সেটা চায়নি।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে হেমলতাকে মেসেজ দিলো
– all the best
হেমলতা মেসেজের রিপ্লে দিলো
– all the best

তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ আর বাকি খালি ব্যবহারিক পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হলেই জাদিদ ঢাকা চলে যাবে। তার বাবা ঢাকার কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে রেখেছেন।
হেমলতার ফরিদপুর ছেড়ে কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। কারণ তার নানী অনেক অসুস্থ। তার খুব ইচ্ছে ছিলো নাত্মীকে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন কিন্তু শরীর এতো খারাপ যে তার এখন বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বলকে দূরে পাঠাতে মন মানছে না।
নানীর এই অবস্থা দেখে সেও ফরিদপুর এর বাইরে না যাওয়ার চিন্তা করেছে।
জাদিদ এই কথা শোনার পর বলেছে
– তুমি তোমার নানীর কাছেই থাকো। ফরিদপুরেও তো সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ার কলেজ আছে তারপর রাজেন্দ্র কলেজ আছে।
– আমার মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা নাই। কাটা ছেঁড়া ভয় লাগে।
– ইঞ্জিনিয়ার কলেজে পড়বা
– নাহ আমার অনার্স করার ইচ্ছা।
– হ্যা খারাপ কী? রাজেন্দ্রতে তো পিওর সাইন্সের সাবজেক্ট আছে।
– আমার বাংলা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। খুব সহজ সাবজেক্ট। বেশি পড়া লাগবে না।
– শুনো বাংলা সহজ না। ছন্দ, মুক্ত অক্ষর উপন্যাসের ব্যাখ্যা পড়তে পড়তে বুঝবা।
– হইছে ভয় দেখানো লাগবে না।
– আমি ভয় দেখাচ্ছি না। সত্যি টা বললাম। তুমি যদি পারো আমার কী?
– হ্যা তাই তো।
ব্যবহারিক পরীক্ষা রসায়ন বাদে সবগুলো ভালোই হয়েছে হেমলতার। রসায়ন প্রথম পত্র ব্যবহারিক পরীক্ষায় লবণ দেয়া হয়। সনাক্ত করার জন্য। রঙিন লবণ সনাক্ত করা সহজ। আর ইন্টারমিডিয়েট এ একটাই লবণ দেয়া হয়। কিন্তু হেমলতার কপালে পরলো সাদা লবণ। সাদা লবণ সনাক্ত করা কঠিন। কারণ এতে সবগুলো গ্রুপ টেস্ট করতে হয়। সে বিশাল ঝামেলা। যারা পারে তাদের কাছে কম ঝামেলার। কিন্তু হেমলতা এতদিন ফাঁকিবাজি করে এসেছে। আর এখন তো তার ঠ্যালা বুঝছে। খাবার লবণও তো সাদা হয়। তাই হেমলতা ভাবলো খেয়ে দেখতে পারে। অল্প একটু লবণ জিহ্বায় দিয়ে বুঝতে পারলো এটা খাবার লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড।
ল্যাবরেটরি এর লবণ। শত শত স্টুডেন্ট পরীক্ষা দিয়েছে। লবণে যে ময়লা ছিলো আর সেটা যে ক্ষতি করতে পারে এটা হেমলতার মাথায় আসেনি। সোডিয়াম ক্লোরাইড এর সাথে যে লেড লবণ মিশ্রিত ছিলো সেটা কারো জানা ছিলো না। আর এটা ভুলবশত হেমলতাকে দেয়া হয়েছে। লেড লবণ গুলো সাধারণত বিষাক্ত হয়।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৯.

0
ডুমুরের ফুল ৯.
ডুমুরের ফুল ৯.

ডুমুরের ফুল
৯.
ঘুম ভেঙে গেলো জাদিদের। ঘুমের সাথে সাথে স্বপ্নও ভেঙে গেলো। এতো সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে গেলো আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নাই।
জাদিদ ফোন ওপেন করলো সময় দেখার জন্য।স্বপ্নে এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে দেখলো। তার মাকেও সে কখনো দেখেনি। একটা চাপা অভিমান আছে তার মা বাবার প্রতি।
হেমলতাকে তার ভালো লাগে। তবে ফ্রেন্ড হিসাবে। কিন্তু আজকে সন্ধ্যায় কী যে হলো। মেয়েটাকে কখনো সে এভাবে হাসতে দেখেনি। চোখ সরাতেই পারছিলো না সে।
রাত ৩ টা বাজে।
জাদিদ হেমলতার নাম্বারে কল করলো। বাজার সাথে সাথেই রিসিভ করলো হেমলতা।
এতো রাতে জাদিদের কল আসাটা তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে শুরু করলো।
জাদিদের কথা বলতে কেমন যেন লাগছিলো। হুট করে তার মাঝে যে পরিবর্তন এসেছে সেটাই মূলত দায়ী। তারপরও ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কী করো?
হেমলতা ঘুমাতে যাবে আর তখনি জাদিদের কল আসছে। তার ঘুম আসেনি কিন্তু পড়তে মন বসছিলো না। তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতে যাবে আর জাদিদের কল।
হেমলতা বলল
– কিছুই না। তুমি কী করো?
– আমি শুয়ে আছি।
– ঘুমাও তাহলে।
– কেবল ঘুম থেকে উঠলাম। আর কতো ঘুমাবো?
– তাহলে পড়ো।
– পড়া নাম নিও না তো।
– ভালো স্টুডেন্ট পড়া লাগে না। বুঝি তো।
– ভালো স্টুডেন্ট?
জাদিদ হাসলো।
হাসির কারণ বুঝতে না পেরে বলল
– হাসার কিছু বলছি আমি?
– আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না।
– হইছে মিথ্যা বলা লাগবেনা।
– মিথ্যা না রে হেম সত্যি।
– বুঝলাম ভালো স্টুডেন্ট ছিলা না তাহলে এখন ভালো হলে কীভাবে?
– মা – বাবার ডিভোর্স এর পর আমি পুরোপুরিভাবে একা হয়ে যাই।ছোটবেলা থেকে আমার খেলার একমাত্র সংগী ছিলো মা। মা চলে গেলেন। বাবা তো মাত্র ১ মাস থাকেন আমার সাথে। কষ্ট টা ভুলে থাকার জন্য সারাদিন রাত বইতে ডুবে বসে থাকতাম। এক বইকে ৪-৫ বার করে পড়তাম। খবরেরকাগজ, ম্যাগাজিন সবকিছু পড়তাম। পড়তে পড়তে হয়ে গেলাম।
– টিভি দেখলেই তো পারতা।
– টিভি তে গান বা মুভিতে বা নাটকে পরিবার দেখাতো। বাচ্চাদের দেখাতো তাদের মা বাবা তো একসাথে থাকে কিন্তু…
জাদিদ আর বলতে পারলো না।
হেমলতা বুঝতে পেরে বলল
– আচ্ছা থাক আমি বুঝেছি। আর বলতে হবে না।
– না না আমি বলবো। তোমাকে শুনতে হবে।
– আমি শুনতে রাজি আছি। কিন্তু তুমি তো কষ্ট পাচ্ছো!
– মনের কষ্টগুলো কখনো কাউকে বলিনি। ফ্রেন্ডশিপ করিনি। কারন তাদের গল্পে মা বাবার কথা থাকে। আমার তো গল্প করার মতো তেমন কোনো কিছু নাই। মা বাবার কথা মনে পড়ে। নিজেকে ভালো রাখার জন্য আমি ফ্রেন্ড ছাড়া। জুবায়ের এর সাথে বলা আছে আমার মা বাবা পরিবার নিয়ে কোনো কথা যেন না বলে আমার সামনে।
– দেখো আমারো তো মা নেই। আমি কী…..
জাদিদ হেমলতার কথার মধ্যে কথা বলে উঠলো
– শুনো তোমার মা মারা গেছেন। আমার মা মারা যাননি। দুজন নিজের ইচ্ছা, ভালো থাকা টাকেই প্রাধান্য দিলো। আমার কথা কেউ ভাবলো না।
জাদিদ যে রেগে গেছে সেটা হেমলতা বুঝতে পেরেছে। রাগ ভাঙানোর উপায় তার জানা নেই। কী করবে বুঝতে পারছিলো না।
– এইজন্যই আমাকে তুমি ফ্রেন্ড হিসাবে বেছে নিয়েছো?
– অনেক কারণ আছে। একটা না হাজারটা কারণ আছে। যার বর্ণনা করা সম্ভব না।
– আচ্ছা হইছে এখন এগুলা বাদ দাও তো। এই ধরনের কথা আবার বললে আমি কিন্তু….
– কিন্তু কী? কথা বলবা না আর?
– আরে না মার কথা মনে পড়ে যাবে আর
– কি? কান্নাকাটি করবা?
কথাটা বলেই জাদিদ হাসতে শুরু করলো। হাসি থামিয়ে বলল
– তোমরা মেয়েরা খালি পারো কান্নাকাটি করতে।
হেমলতা হাসতে হাসতে বলল
– তোমরা তো সেটাও পারো না।
– আমরা এতো সহজে চোখের পানি ফেলি না।
– ভালো তো। পড়াশোনা কিছু করছো নাকি?
– ইনশাআল্লাহ সকাল থেকে শুরু করবো। জানো আমি স্বপ্ন দেখেছি।
– এমনভাবে বলছো যেন স্বপ্ন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
– স্বপ্ন টা শুনলেই বুঝবা সেটা কোন গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
– তাহলে শোনায়। শুনি।
জাদিদ পুরো স্বপ্নটা নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করলো।
কিন্তু কাকে সে দেখেছে সেটা হেমলতাকে বলল না।
হেমলতা একটু মজা করে বলল
– মেয়েটা কে?
– পরে বলবো।
– তুমি যা বললা তার সারমর্ম এটাই যে তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়েছো।
– এটাই প্রেম?
– তাছাড়া খামোখা কেন একটা মেয়ের পিছনে এভাবে দৌড়াবা?
– ছিনতাই কারীর পিছনেও তো দৌড়ানো লাগে তাই বলে কী?
– খালি প্যাঁচাও কেন?
– তোমার লজিক টা আসলে অতো শক্ত না তাই প্রশ্ন টা করলাম।
– অতো লজিক আমি বলতে পারবো না।
– তাহলে সত্যি আমি প্রেমে পড়েছি?
– হ্যা।
– আহা! স্বপ্ন কী জিনিষ? সে কেন আমার স্বপ্নে আসলো? আমার সামনে আসুক।
– আহারে! একটু সবুর করো।
জাদিদের মন চাচ্ছিলো এখনি বলে দিতে। কিন্তু ও যদি মাইন্ড করে বসে? কথা না বলে তাহলে পরীক্ষা খুব খারাপ হবে। পরীক্ষা শেষ হলে বলবো।
হেমলতা যখন প্রথম এই ছেলেকে দেখেছিলো তখনি তার খুব মনে ধরেছিলো। ভালোলাগা টা তো প্রথম দেখাতেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এতো ভালো স্টুডেন্ট, এতো সুন্দর ছেলে ওকে কীভাবে ভালবাসবে? ফ্রেন্ড হিসাবে চেয়েছে বলেই যে সে ওকে ভালবাসবে এমন কোনো আশা সে খুঁজে পায়নি।
কথা বলতে বলতে কখন যে হেমলতা ঘুমিয়ে গেছে জাদিদ বুঝতে পারেনি। ও এক নাগাড়ে কথা বলে যখন থামলো তখন বুঝতে পারলো হেমলতা ঘুমুচ্ছে। তা না হলে সে এতক্ষণ ধরে কথা বলছিলো আর হেমলতা চুপ করে আছে সেটা তো সম্ভব না। এমনিতে জাদিদ বেশি কথা বলেনা। কিন্তু হেমলতার সাথে সে প্রচুর কথা বলে। দাদীর সাথে তো সে ঠ্যাকায় না পড়লে কথা বলেনা। যতক্ষণ সে বাসায় থাকে ততক্ষণ দরজা বন্ধ করে সে বসে থাকে বা ঘুমায় বা পড়ে। তিনবেলা খাওয়া আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না। কিন্তু দাদীর সাথে যদি কোনো কারণে কথা বলতেই হয় তাহলে খুব হাসিহাসি মুখ করে রসিকতা করে কথা বলে। মা – বাবার ডিভোর্স এর সব থেকে বড় কারণ এই বৃদ্ধা। এটা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। হেমলতাকে তার এই রুম এই বাসার ছাদ দেখানোর ইচ্ছা ছিলো কিন্তু দাদীর জন্য সে বাদ দিয়েছে। হেমলতাকে দেখলে সে তার ছেলের বউ বানানোর চেষ্টায় লেগে যাবে। এই কারণে এই বাসায় কোনো মেয়ে আসে না।
সে তার ছেলেকে এখনো যুবক ভাবে।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে পড়তে বসলো।
হেমলতার একটা ছবিও তার কাছে নাই। ফেসবুকে হেমলতার কোনো ছবি নাই।
পরীক্ষা শুরুর আগেরদিন জাদিদের বাবা আসলেন। ছেলের এতো বড় পরীক্ষা আর সে আসবে না কেমন হয়?
এবার সে ছুটি একটু বেশি নিয়েছে। ছেলের সব পরীক্ষায় সে যাবে।
পরীক্ষার আগের রাতে হেমলতা জাদিদকে ফোন করলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
– পরীক্ষার আগের রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে হয়।
– হেহ! তোমার পরীক্ষা নাই?
– আছে।
– তাহলে তুমি ঘুমাও নাই ক্যান?
– আমি লাস্ট রিভিশন দিচ্ছি। ১০ মিনিটেই ঘুমাতে যাবো।
– তাহলে তো ডিস্টার্ব করলাম।
– আরেনা। আমার বোরিং লাগছিলো। ফেসবুকেও যেতে মন চাচ্ছেনা। আর তোমাকে যে ফোন দিবো দেখা গেলো তুমি ঘুমুচ্ছো।
– হইছে হইছে বুঝছি কালকে পরীক্ষার হলে ফাটিয়ে দিবে তুমি!
– পরীক্ষার হল কোনো টাকবেল না যে ফাটাবো।
হেমলতা হাসতে শুরু করলো।কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল
– তোমার পাশে সিট পরলে ভালো হতো।
– আমি পরীক্ষার হলে কাউকে একটা কমা পর্যন্ত দেখাই না। তুমি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড তারপরও আমি দেখাবো না।
হেমলতা বলল
– আর এই কারণে আমাকে পড়ায় এতো সাহায্য করেছো?
– শুনো তুমি সারদায় পড়ো আর আমি রাজেন্দ্রে। এই দুই কলেজের সিট একসাথে জীবনেও পরবে না। ওই আশায় পানি ঢাইলা দাও।
– থাক থাক বুজছি। এখন আমি ঘুমাবে। তবে আমার সিট কিন্তু রাজেন্দ্রেই পরছে।
– ভালো হইছে বুঝবা গার্ড কাহাকে বলে।
– শুনো সারদা গার্ডে সেরা ফরিদপুর এ। একজন শিক্ষকই যথেষ্ট ৫০-৬০ জন স্টুডেন্ট কে টাইট দেয়ার জন্যে।
– উফ আল্লাহ এর রহমত সিট পরেছে ইয়াসিন কলেজে। তবে এটাও কম না।
হেমলতা হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল
– আচ্ছা রাখি। ঘুমাবো আমি।
– আচ্ছা ঘুমাও। শুভ রাত্রি
– good night.

চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৮.

0

ডুমুরের ফুল

৮.
জাদিদের এক পলকে তাকিয়ে থাকাটা হেমলতা খেয়াল করেনি। সে ব্যস্ত ছিলো অন্য জগতে। জাদিদ হেমলতার চুল গুলো হাতের মুঠো দিয়ে ধরে বলল
– কাকরা বা অন্যকিছু আছে?
– ছিলো কিন্তু আন্টি চুল বাধার সময় কোথায় যেন রাখছে। আসার সময় তো মনেও ছিলো না।
– হুম।
তারপর জাদিদ চুলে গিট মেরে দিয়ে বলল
– এতো বড় মেয়ে কিছুই পারো না?
– না, তা তো দেখছোই।
একজন ছেলে যে তার চুল বেধে দিয়েছে তাতে তার কিছুই মনে হচ্ছে না। বরং তার মনে হচ্ছে এটা স্বাভাবিক।
দুজনের মাঝে হঠাৎ অনেক বড় পরিবর্তন হয়ে গেলো কিন্তু দুজনের কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।
রিক্সা রেল লাইন পার হওয়ার সাথে সাথেই হেমলতা বলল
– এখানে নামিয়ে দিলে ভালো হয়। নানী যদি দেখেন আমি কোনো ছেলের সাথে রিক্সায় একসাথে এসেছি। তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
– কিন্তু আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হ্যা কিন্তু সে তো বুঝবে না।
জাদিদ কিছুক্ষণ চুপ রইলো তারপর বলল
– আচ্ছা নামো।
তারপর রিক্সাওয়ালা কে বলল
– মামা এখানে একটু রাখেন।
রিক্সা থামানোর সাথে সাথেই হেমলতা নেমে গেলো।
কিছু না বলেই হেমলতা তার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলো।
জাদিদ একদৃষ্টিতে হেমলতার চলে যাওয়া দেখছিলো।
রিক্সাওয়ালা মামা বলল
– ভাইগ্না গাড়ি স্টার্ট দিমু?
প্রশ্ন শুনে জাদিদের সৎবিত ফিরে এলো।
– হ্যা মামা দেন।

হেমলতা বাসায় ঢোকার সময় একজন ব্যাগ হাতে ভদ্রলোক বের হলেন।
হেমলতাকে ঢুকতে দেখে লাইলী বানু দৌড়ে এসে বলল
– তোর নানীর শরীর ভালো না। এতক্ষণ কই ছিলি?
– ডাক্তার ডাকা হয়েছে?
– হ, কেবল গেলো।
– কী বলেছে?
– আমি তো জানি না। আমাকে বলে নাই। তোর নানী জানে।
হেমলতা নানীর রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন। নাত্মীর আসাতে সে চোখ খুললো।
হেমলতা বলল
– কী হয়েছে?
– আরে তেমন কিছু না।
– মেডিসিন দিয়েছে?
– তা তো দিছেই।
– আমি এখন চা খাবো। তুমি খাবা?
– দে তবে কড়া লিকার হালকা মিষ্টি।
– আচ্ছা।
হেমলতা নিজ হাতে চা বানিয়ে নানীর রুমে নিয়ে এলো।
দুজনে চুপচাপ চা খেলো। হেমলতা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রুম থেকে যাবার সময় বলল
– রেস্ট নাও তুমি। যা লাগবে আমাকে বা লাইলী আপা কে বলবে।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে মুচকি হেসে বলল
– আচ্ছা।
হেমলতা পড়তে বসলো।
জাদিদ বাসায় গিয়ে রুম এ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমের ঘোরে একটা অচেতন ভাব রয়ে গেলো।
জাদিদ অনেকদিন পর স্বপ্ন দেখছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে স্বপ্ন দেখছে সে। স্বপ্নের মাঝে মনে হচ্ছে তার – সে মাটির রাস্তায় হাঁটছে। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। রাস্তার সাথে ঝোপের মতো ছোট ছোট গাছ। তাতে বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটে আছে। স্বপ্ন তো সাদাকালো হয়। কিন্তু সে স্পষ্ট দেখছে যে ফুল গুলো রঙিন। সে আশেপাশে দেখছে। এতো সুন্দর পরিবেশ তার জীবনে প্রথম দেখলো। পাখির কলকাকলি কানে আসছে তার। কোনো একটা ছন্দ আছে তাতে। কিছুক্ষণ এভাবে হাঁটার পর তার কানে ঝুমুরের আওয়াজ আসলো। আওয়াজ টা তার পাশের ঘন গাছপালার ভেতর থেকে আসছে।
ঝুমুরের আওয়াজ এর আগেও সে শুনেছে। তাই আওয়াজটা যে ঝুমুরের সে সহজে বুঝতে পেরেছে।
ক্রমেই আওয়াজ টা তীব্র হচ্ছে। কিন্তু শব্দের তীব্রতা তাকে পীড়া দিচ্ছে না। কেন যেন তার শুনতে ইচ্ছে করছে। হুট করেই শব্দের তীব্রতা কমতে শুরু করলো। ওর মনে হলো ঝুমুরের আওয়াজটা দূরে চলে যাচ্ছে।
যেদিক দিয়ে আওয়াজটা ভেসে আসছে জাদিদ সেদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। তার এই শব্দের উৎস টা দেখতে হবে। জানতে হবে। কে ঝুমুর পায়ে হাঁটছে? নাকি কেউ না? নাকি ওর ভ্রম? প্রশ্নগুলো জাদিদকে ভাবাচ্ছে এবং সে আবিষ্কার করলো বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপালে জমা হচ্ছে।
ক্রমশ শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। সে কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর তার থেকে বেশ দূরে সাদা ছায়া দেখা যাচ্ছে। ঝুমুরের আওয়াজ আর কানে আসছে না। ছায়াটা স্থির হয়ে আছে।জাদিদ আরো দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলো।
ছায়াটার কাছাকাছি এসে সে বুঝতে পাড়লো দীর্ঘ কেশ নিয়ে সাদা শাড়িতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ে ঝুমুর। পিছন থেকে তাকে এতো আকর্ষণীয় লাগছে যে ফেস দেখার জন্য জাদিদ উন্মাদের মতো কেউ একজনের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো।
চেনা হাতের স্পর্শ, চেনা ফেস সেই চেনা মানুষ টা তাকে এতদূর টেনে এনেছে। জাদিদ অবাক হয়ে গেলো একি এতো হেমলতা।
জাদিদের অবাক হওয়াতে হেমলতা অট্টহাসিতে মগ্ন হয়ে গেলো।
আজকে সন্ধ্যায় তো জাদিদ এই হাসির শব্দেই মুগ্ধ হয়েছিলো।
জাদিদ সাদা শাড়ীতে জড়ানো খোলা এলোকেশী এই মানবীকে দেখছে।
যেন সময় থমকে গেছে। এই সবুজে ঘেরা পরিবেশে প্রিয় মানুষ টার প্রিয় হাসিতে যেন ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে জাদিদের।
চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৭.

0
ডুমুরের ফুল ৭.
ডুমুরের ফুল ৭.

ডুমুরের ফুল
৭.
হেমলতা বিষন্ন হাসি হেসে বলল
– তোমার তো মা জীবিত আছেন আর আমার তো….
হেমলতার হঠাৎ তার মৃতা মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। মনে পড়ে যাওয়াতে সে আর কথা বলতে পারলো না। মনে হচ্ছে কে যেন তার গলায় অনেক ভার চাপিয়ে দিয়েছে।
জাদিদ বুঝতে পারছে যে মায়ের কথা হেমলতার খুব মনে পড়েছে। হেমলতাকে কখনো সে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেনি। জুবায়ের এর কাছ থেকে হেমলতার সম্পর্কিত সকল বিষয় জাদিদ জেনে নিয়েছিলো। জাদিদ এমন একজন ফ্রেন্ড চেয়েছিলো – যে ওর কষ্ট গুলো খুব সহজে বুঝতে পারবে। মুখ ফুটে তাকে কিছুই বলতে হবে না। যেমন আজকে জাদিদ শুধু ওর মা বাবার ডিভোর্স এর কথা বলেছে তাতেই হেমলতা বুঝতে পেরেছে জাদিদের ভিতরের কষ্টটা।
ওর মতোই মা – বাবা ছাড়া একজনকে ফ্রেন্ড হিসাবে চেয়েছে এবং পেয়েছোও। কারণ জাদিদ নিজেও মা – বাবা ছাড়া। মা – বাবা থাকতেও নেই।
হেমলতারও তাই। মা তো মারাই গেছেন আর বাবা তো ছোট মার জন্য পারেন না।
একজন মা ছাড়া সন্তানই বুঝতে পারে মা না থাকার কষ্টটা। আর কেউই পারে না।
জাদিদ পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলল
– আচ্ছা তুমি চুল বেণী ছাড়া কিছুই কি করতে পারো না?
– নাহ। নানী বেণী ছাড়া কোনো স্টাইলের চুল বাঁধতে পারেন না। আর মা তো নেই।
মা মারার যাবার পর থেকে নানী তার জগত। মা মরা মেয়েটাকে মিসেস জয়নব আগলে রেখেছেন। মেয়ে যদি বখে না যায় তাই সহজে কারো সাথে মিশতে দেন না। এমনকি কোনো প্রকার ফ্যাশন করতে দেন না। আর হেমলতাও সব কিছু মেনে নিয়েছে। হয়তোবা নানী কষ্ট পাবে সেই কারণে।
জাদিদ বলল
– আরে ইউটিউব এ তো কতো প্রকার চুল বাধার ভিডিও পাওয়া যায়। তোমার একমাত্র ফ্রেন্ড মিম্মার কাছ থেকে তো শিখতে পারো।
– আসলে জাদিদ আমার না ভালো লাগেনা।
– চুল খোলা তো রাখতে পারো?
– লম্বা চুল তো নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়ে যায়।

জাদিদের মা মাইমুনা ইফতি। ছেলেকে সে অনেক ভালবাসেন।
কিন্তু স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়াতে তার ডিভোর্স টা নিতে হলো। আজকে তার একমাত্র ছেলে তার হাতের রান্না খেতে চেয়েছে তাই সে অনেক কষ্টে রান্না করেছে। গ্রীসে তো সে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খায়। একা মানুষের জন্য রান্না করাটা তার কাছে সময় নষ্ট বলে গণ্য।
ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করে গোসল করে কেবল একটু শুয়েছিলো আর জাদিদ হাজির।
প্রায় ৫ বছর পর ছেলেকে দেখে সে আনন্দিত যেমন হয়েছেন ঠিক তেমনি কষ্টও পেয়েছেন।
ছেলেটাকে নিজের কাছে রাখতে পারলে ভালো হতো।
দুটো রুম, একটা বাথরুম, একটা বেলকুনি আর একটা কিচেন সহ এই ফ্ল্যাট টা সে ৩ দিনের জন্য বুকিং করেছেন। ছেলেটার সাথে অনেক সময় কাটাবে সে।
টেবিলে খাবার গোছাতে গোছাতে জাদিদের মা এগুলো ভাবছিলেন।
গোছানো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ছেলেকে ডাকলেন
– জাদিদ বাবা আয়। তোর ফ্রেন্ড কেও আসতে বল।
– আসছি মা।
জাদিদ আর হেমলতা টেবিলের পাশে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
জাদিদ টেবিলের খাবার দেখে মার দিকে তাকিয়ে বলল
– তোমার মনে আছে? আমার পছন্দের খাবারের কথা?
মাইমুনা ইফতি ছেলের পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল
– মা কখনো ভুলতে পারে?
জাদিদ আবদার করে বসলো
– মা তুমি খাইয়ে দাও।
– আচ্ছা, দিচ্ছি।
মাইমুনা ইফতি হেমলতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
– মা তুই হাত দিয়ে নিয়ে খা। যা যা লাগবে নিজের হাতে বেড়ে খা।
– জি।
হেমলতা একটা কাচের প্লেট নিলো।
টেবিলের খাবার দেখে নিলো এক পলকে। পোলাও চালের ভাত রান্না করেছে। ঘ্রাণ নাকে আসছে তাতেই সে বুঝতে পারছে। ঝোল তরকারীর অভাব। ইলিশ মাছ ভাজা, চিংড়িমাছ ভাজা, রুই মাছ ভাজা, পুটি মাছ ভাজা আর বেগুন ভাজা। জাদিদ মাছ ভাজা পছন্দ করে। আর মুরগির মাংস পাতলা ঝোল করেছে। আরেকটা যে কী রান্না করেছে সেটা হেমলতা বুঝতে পারেনি।
পোলাও চালের ভাত হেমলতা কোনোদিন খায়নি । তার খেতে কেমন যেন লাগছে।
হেমলতার অবস্থা দেখে মাইমুনা ইফতি নিজেই খাবার বেড়ে দিলেন। সব মাছ ভাজা প্লেটে তুলে দিলেন।
হেমলতার থুঁতনি ধরে বলল
– আমি খাইয়ে দেই?
হেমলতা মাথা নিচু করলো। সেই ৫ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছে। মায়ের হাতে খাবার খেতে কেমন লাগে সেটা তার মনে নেই। মাঝেমাঝে মার কথা খুব মনে পড়ে। তখন মায়ের কাপড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। মায়ের জামা কাপড় নানী না ধুয়ে রেখে দিয়েছেন তার জন্য। যাতে মায়ের জামা কাপড় থেকে গায়ের গন্ধটা তাকে মায়ের অভাব পূরণ করে।
মায়ের স্পর্শও তার মনে নেই।
চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
সবার সামনে এভাবে কেঁদে ফেলাতে হেমলতা একটু লজ্জা পেল।
মাইমুনা ইফতি দুজনকে খাইয়ে দিলেন।
তারপর তিনি খেতে বসলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর জাদিদ তার ব্যাগ মায়ের হাতে দিয়ে বলল
– আমার পুরাতন কাপড় চোপড় সব এখানে আছেন।
ব্যাগ হাতে নিয়ে মাইমুনা ইফতি বললেন
– আধোয়া তো?
– হুম।
আমি তোর জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় এনেছি।
তারপর একটা কালো রঙের লাগেজ পাশের রুম থেকে নিয়ে আসলেন।
হেমলতা সোফায় চুপচাপ বসে ছিলো।
হেমলতাকে বললেন
– তোর জন্য আমি কিছু এনেছি। তবে বাসায় গিয়ে দেখবি। ওকে?
হেমলতা শুষ্ক হাসি ঠোঁটের এক কোণায় এনে বলল
– জি।
তারপর মা ছেলে গল্প জুড়ে দিলেন। ছবি তুলল সবাই।
কয়েকটা ছবি খুব ভালো হয়েছে।
হেমলতার বেণী খুলে খুব সুন্দর করে বেধে দিলেন।
স্বন্ধ্যা হবে হবে এমন সময় জাদিদ ব্যস্ত হয়ে উঠলো বাসায় যাওয়ার জন্য। হেমলতারো আর থাকা সম্ভব না।
মাইমুনা ইফতি তাদের রিক্সায় উঠিয়ে দিলেন। আগামীকাল আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা আসলো।
এই প্রথম ওরা রিক্সায় এক সাথে উঠলো। হেমলতার অস্বস্তি লাগছিলো।
চুল কীভাবে যেন বেধে দিছে ও বুঝতে পারেনি। এখন মনে হচ্ছে খুলে যাবে যেকোনো সময়।
হেমলতা কাপড় চোপড় ওড়ণা ঠিক করতে গিয়েই চুল খুলে গেলো। এতো লম্বা চুল সে কীভাবে কী করবে বুঝতে পারছিলো। এর উপর আবার জোড়ে বাতাস শুরু হলো।
চুল এলোমেলো ভাবে উড়তে শুরু করলো। কপালে ছোট ছোট চুল গুলো উড়ছিলো। তাতে ওর সুড়সুড়ি লাগছিলো।
মনের অজান্তেই হেমলতা হাসতে শুরু করলো। অট্টহাসিতে সে মগ্ন।
জাদিদ এতক্ষণ ধরে রাস্তার লোকজন, গাড়ি দেখছিলো।
অট্টহাসির আওয়াজে সে হেমলতার দিকে তাকালো।
হেমলতার মুখের উপরে, কপালে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে খেলে যাচ্ছে।
বাতাসের গতি বৃদ্ধিতে চুলগুলো উড়ে জাদিদের মুখের উপর এসে খুব মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তার সাথের এই মেয়েটি যে এতো সুন্দর করে হাসতে পারে তার জানা ছিলো না।
হাসির শব্দে, চুলের মিষ্টি গন্ধে চিরচেনা হেমলতাকে তার অচেনা লাগছে।
গোধূলি লগ্নের রক্তিম আভায় এই হেমলতাকে খুব রহস্যময়ী লাগছে।

চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৬.

0
ডুমুরের ফুল ৬.
ডুমুরের ফুল ৬.

ডুমুরের ফুল
৬.
হেমলতা ফোন রেখে দিয়ে আবার পড়ায় মন দিলো। ১২ টায় গোসল করে জোহরের নামাজ পড়ে নিলো।
মিসেস জয়নব বিবির আজকাল শরীর টা ভালো না। এই পর্যন্ত ছোটখাটো রোগ ছাড়া তেমন কোনো রোগ হয়নি। মৃতা মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে তার।
মনোজও আজকাল তেমন একটা আসতে পারেনা মেয়েকে দেখতে। তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী হেমলতার সাথে যোগাযোগ করাটা পছন্দ করেনা। ঝগড়া ঝাটি করে দুই কন্যা এক ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।
মিসেস জয়নব বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় গল্পের বই পড়ছিলেন। হেমলতা নানীর রুমের সামনে এসে দাঁড়াতে রুমের ভেতর থেকে মিসস জয়নব ডাকলেন
– আয়, ভিতরে আয়!
হেমলতা নানীর বিছানার কাছে চেয়ার টেনে বসলো। তারপর বলল
– নানী
– হুম বল
– দুপুর ৩ টায় একটু বাইরে কাজ আছে।
– স্যারদের কাছে তো পড়া শেষ? তাহলে বাইরে ক্যান যাবি?
– পরীক্ষা বেশিদিন নাই। পরীক্ষার পর সবাই কোচিং করতে ঢাকা চলে যাবে। দেখা না হইতেও পারে। তাই আর কী আজকে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।
– ওহ। যাবি তো যা। কিন্তু সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসবি।
– আচ্ছা।
– টাকা আছে? নাকি লাগবে?
– যা আছে তাতে হবেনা।
মিসেস জয়নব তার বালিশের নিচ থেকে ছোট্ট ব্যাগ বের করলেন।চকচকা ৫০০ টাকার নোট হাতে দিয়ে বলল
– আরো লাগবে?
– নাহ। এতেই হবে।
– যাওয়ার সময় দেখা করে যাস।
– হুম।
– আর শোন। এখানে খাবি নাকি ফ্রেন্ডদের সাথে?
– ফ্রেন্ডদের সাথে।
কথাটা বলেই হেমলতা নিজের রুমের দিকে এগোলো।
সত্যি তো জাদিদ তো খাওয়ার কথা কিছু বলেনি! টাকা তো আমার কাছে আছেই।
হেমলতার ছোটবেলা থেকেই টাকা জমানোর অভ্যাস। তার নিজের কাছে যা আছে তাতে হয়ে যাবে কোনো রেস্টুরেন্টের খাবার বিল।
অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পেয়েছে হেমলতা তাও চড়া ভাড়ায়। হাতের ঘড়িতে সময় দেখে নিলো হেমলতা
-২.৪৫ বাজে।
বায়তুল আমান থেকে র‍্যাফেলস বেশ দূরে।হাজী শরিয়তউল্লাহ বাজার, র‍্যাফেলস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফরিদপুর শাখা,ওয়ালটন এর কাস্টমার কেয়ার, টেলিটক এর অফিস আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস এখানে এক সাথে জড়সড় হয়ে আছে।
র‍্যাফেলস এর সামনে রিক্সা এসে থামলো। ভাড়া দিয়ে একটু এগিয়ে র‍্যাফেলস এর মেইন গেটের সামনে দাঁড়ালো। ২.৫৭ বাজে কিন্তু জাদিদ এখনো আসেনি।
হেমলতা কী করবে বুঝতে পারছিলো না। জাদিদকে ফোন করলো। রিসিভ হলো
– কই তুমি?
– এইতো মাত্র ১ মিনিট।
হেমলতা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো।
জাদিদের বাসায় পানি ছিলো না। ট্যাংকিতে কী যেন সমস্যা হয়েছে। পানি সাপ্লাই হচ্ছেনা। মিস্ত্রী এনেছিলো কিন্তু কোনো কাজতো হয়নাই উল্টো বিগড়ে দিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে জুবিলী ট্যাংকের পুকুরে গোসল করেছে। কিছু আধোয়া কাপড় চোপড় নেয়ার ছিলো। সবকিছু করতে গিয়ে তার একটু লেট হয়ে গেলো।
জাদিদের মনে হচ্ছিলো যদি ও আলোর বেগে ছুটতে পারতো? তাহলে ন্যানোসেকেন্ড সময় লাগতো পৌঁছাতে।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো হেমলতা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা এমন কেন? একটু সাজগোছ তো করতে পারে? এই বয়সের মেয়েরা কতো সুন্দর ভাবে সেজে থাকে।অন্তত চোখে কাজল তো দিতে পারে। আর কোনোদিন খোলা চুলে এই মেয়েকে দেখলাম না। সবসময় বেণী
।তাও ভালো বাচ্চাদের মতো দুটো বেণী করে না। একটাই করে। আর এতো কালো চুল কীভাবে হয়?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জাদিদ হেমলতার দিকে এগিয়ে আসলো।
হেমলতা জাদিদের দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক। হাতে এতো বড় ব্যাগ কেন? আর স্যুট ব্লেজার এগুলা কেন পড়ছে?
হেমলতা কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে জাদিদকে প্রশ্ন করেই বসলো
– হাতে এতো বড় ব্যাগ কেন?
জাদিদ বুঝতে পেরেছে যে হেমলতা অবাক হয়েছে তার এই ব্যাগ আর পোশাকে। একটু চমকে দেয়া যাক।
দুষ্ট হাসি মুখে এনে বলল
– ব্যাগে আমার সব জামা কাপড় আর তোমার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে এনেছি।
– বুঝলাম তুমি কোথাও যাচ্ছো তাই তোমার কাপড় চোপড় কিন্তু আমার জন্য কেন জামা কাপড় এনেছো।
– হেমলতা একটু শান্ত হও। আমার কথা শুনো। আমি একা যাচ্ছি না। তুমিও সাথে যাচ্ছো। আর তোমাকে তো জামা কাপড় আনার কথা বলা যায় না। তাহলে তো তুমি আসবাই না।
– মানে কি?
হেমলতার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু কপাল ঘামছিলো। এই ছেলে বলে কি?
– মানে হচ্ছে যে হোটেলের ভিতরে কাজী সাহেব আর উকিল সাহেব বসে আছেন। তুমি শুধু ৩ বার কবুল বলবা। তারপর হোটেলে রুম বুকিং দেয়া আছে। তোমার আমার ফুলসজ্জা রাত…..
জাদিদ আর বলতে পারলো না। হেমলতা ওর কথার মাঝে কথা বলে উঠলো
– তুমি তো ভারি খারাপ ছেলে। ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড বইলা এখন বিয়ে করার কথা বলছো?
– আরে আমি তো ভালো প্রস্তাব দিয়েছি। শুনো এমন উকিল এনেছি যে বান কি মুনের ক্ষমতাও হবে না আমাদের ডিভোর্স করানোর।
হেমলতা কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এখান থেকে পালানো দরকার।
হেমলতা পিছন ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো। জাদিদ হাত টেনে ধরে বলল
– আরে কই যাও।
– হাত ছাড়ো।
– আরে আমি তো মজা করছিলাম।
হেমলতা ভাবলো জাদিদ এখন মিথ্যা কথা বলছে। তাই ভাবলো তার এখান থেকে যেভাবে হোক পালাতে হবে।
– না মানে আমার তো শরীর ভালো লাগছে না তাই বাসায় যেতে হবে।
এই কথা শুনে জাদিদ হাসতে শুরু করলো। তারপর কোনো মতে হাসি চেপে বলল
– পাগল মেয়ে। আমি সত্যি মজা করেছি। তবে তোমার মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পেলে জীবন রংগিলা হয়ে যাবে।
এখানে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন আর অতি সৎ উদ্দেশ্য ।
হেমলতা বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
জাদিদ এক হাতে ব্যাগ আরেক হাতে হেমলতাকে টেনে নিয়ে র‍্যাফেলস এর ভিতরে ঢুকলো। হেমলতা বিশ্বাসও করতে পারছিলো না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছিলো না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে।
রিসিপশনে একজন মধ্যবয়সী নারী বসে ছিলেন। জাদিদ হেমলতাকে একটু দূরে দাড় করিয়ে রেখে রিসিপশনে গেলো।
হেমলতা দূর থেকে খেয়লা করলো জাদিদ হেসে হেসে কী কী যেন বলছে।
জাদিদকে হেমলতার দিকে আসতে দেখে হেমলতা চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিলো।
তারপর জাদিদ হেমলতার হাত ধরে টেনে লিফটের দিকে নিয়ে গেলো।
হেমলতার অসস্তি লাগছিলো জাদিদের হাত ধরাতে।
– জাদিদ আমার হাত ছাড়ো।
– না। তুমি পিছন থেকে পলাবা।
– সত্যি আমি পলাবো না। বিশ্বাস করো।
– আরে হাত ধরলে কী এমন হয়। আর চুপ করো তো। বেশি কথা বলো।
তারপর মুচকি হেসে বলল
– হেম! আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।
জাদিদের চোখের দিকে তাকিয়ে হেমলতা কিছু না বলেই জাদিদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।
৩ তলাতে লিফট থামলো।
হেমলতা খেয়াল করলো এটা তো আবাসিক।
কিছু না বলেই জাদিদের পিছুপিছু চলতে শুরু করলো।
তারপর একটা রুমের সামনে এসে ওরা দাঁড়ালো।
জাদিদ কলিং বেল চাপলো। সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো।

হাসিহাসি মুখে একজন ৪০-৪৫ বছরের নারী দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর ফরশা, মাথা ভরা কালো লালচে চুল। এই বয়সেও তার চেহারায় মাধুর্য টা হারিয়ে যায়নি।
হেমলতা অবাক চোখে দেখছিলো যে মহিলার পরনে হালকা বাদামী রঙের গাউন। গায়ের রঙের সাথে পুরোপুরিভাবে মিশে গেছে। এক গাল হেসে জাদিদকে বলল
– my son ভিতরে এসো!
জাদিদ এখনো হেমলতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
হেমলতার দিকে তাকিয়ে বলল
– হেই বনলতা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসো ভিতরে এসো।
জাদিদ হেমলতার হাত ধরে টেনে রুমে ঢুকার সময় বলল
– মা! বনলতা না হেমলতা ওর নাম।
হেমলতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মহিলার দিকে। সত্যি তো দুজনের চেহারা হুবহু এক।
জাদিদ হেমলতাকে বলল
– আরে বসো।
রুম টা বেশ বড়। এক কোণায় জানালার ধারে বেড। আর দক্ষিণের দেয়ালের সাথে মাঝারি আকারের সোফাসেট বসানো। হেমলতা ছোট সোফায় বসলো। জাদিদের মা হেমলতার থুঁতনি ধরে বলল
– মাশাআল্লাহ। নামের সাথে চেহারার মিল আছে বটে।
জাদিদ ওর মাকে বলল
– মা খিদে পেয়েছে। খাবো। আজকে তুমি খাইয়ে দিবে। সেই কবে খেয়েছিলাম মনেও নেই।
– একটু বোস বাবা। এই রুমের সাথে কিচেন আছে। আমি তোদের জন্য নিজ হাতে রান্না করেছি।
আমি টেবিলে খাবার সাজিয়ে ডাকছি তোদের।
– আচ্ছা।
হেমলতা কিছুই বুঝতে পারছিলো না। হতভম্ব অবস্থায় বসে ছিলো।
জাদিদ হেমলতার অবস্থা বুঝতে পারছে। তাই সে বলল
– আমার মা। গ্রীসে থাকেন।
– তোমার বাবা?
– আচ্ছা তোমাকে তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি?
– নাহ।
– আমি যখন ক্লাস ৫ এ পড়ি তখন মা – বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। রাগের মাথায় মা গ্রীসে চলে যান। আমাকে তার কাছে নেয়ার জন্য অনেক কাঠ কয়লা পুড়িয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মাকে শেষ বার দেখেছিলাম যখন ক্লাস ৮ এ পড়ি।
তাছাড়া তো ভিডিও কলে কথা হয়।
কথাগুলো বলে জাদিদ একটু হাসতে চাইলো কিন্তু তা আর ঠিক হাসি বলা যায় না।
হেমলতা বুঝতে পারছিলো তার সামনে বসে থাকা ছেলেটার মাঝে চাপা কষ্ট জমে আছে। যা সে কখনো প্রকাশ করেনা।

চলবে…..!

#Maria_kabir