লেখা- সুলতানা ইতি
ঠিক আছে এই নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো এখন চলো মোম ড্যাড তোমার জন্য অপেক্ষা করছে
ইভান- চলো মাই জান
মিথিলার ফোন অনেক্ষন থেকে বেজেই যাচ্ছে ফোন রিসিভ করতে তার ইচ্ছে করছে না, সে জানে ফোনের অপাশে তার জন্য কি খবর অপেক্ষা করছে,
এক সময় অধৈর্য্য হয়ে ফোন রিসিভ করে
নির্ঝরিণী -আপু তুই ফোন রিসিভ করছিলি না কেনো?.
মিথিলা- কিছু বলবি?
নির্ঝরিণী – অনেক কিছুই তো বলবো
মিথিলা- বল
নির্ঝরিণী – মার অসুখ বেড়ে গেছে রে, তোর দেয়া টাকা গুলো ও শেষ
মিথিলা নিরুত্তাপ কন্ঠে বল্লো
– শেষ হওয়ার ই কথা
নির্ঝরী – বড় দুলা ভাই জুয়া খেলতে গিয়ে ধরা পড়েছে পুলিশ হাজতে আছে
মিথিলা শান্ত কন্ঠে বল্লো
– এতে আমরা কি করতে পারি এমন টা তো হওয়ার ই ছিলো
নির্ঝরিণী – জানি না কিন্তু আপু খুব কাঁদছে
মিথিলা রোবটিক কন্ঠে বল্লো
– কাদার ই কথা
নির্ঝরিণী – আপু তুমি কি আমার সাথে জোক করছো
মিথিলা- তোর কি তাই মনে হয়
নির্ঝরিণী – জানি না আমি রাখছি
নির্ঝরিণী কল অফ করে দেয়, বাবা যেতে না যেতে সংসার টার কি হয়ে গেলো,ভাই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ভণ্ডামি করছে মা অসুস্থ হয়ে গেছে মিথিলা আপু কেমন যেন পালটে গেছে,ওকে আকড়ে ধরে বাছতে ছেয়েছি কিন্তু আজকের কথা গুলো শুনে কেমন যেন মনে হচ্ছে
উফফ আল্লাহ এই সাজানো গোছানো সংসারে কার নজর পড়েছিলো, আজ অনেক দিন মা অসুস্থ ঠিক মতো ওষুধ চলছে না আমি কি করবো,
নাহ আমাকেই কিছু একটা করতে হবে আমার মায়ের জন্য,,পাশের বাসার আন্টি ব্যাগ বানিয়ে মার্কেটে বিক্রি করে,আজ থেকে তার সাথে আমি ও যোগ দিবো
মিথিলার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে আপাদাত সব চিন্তা বাদ দিয়ে মন দিয়ে লেখা পড়া টাকে কাছে টেনে নিয়েছে মিথিলা, দু সাবজেক্ট শেষ মোটামুটি ভালো ই হয়েছে পরিক্ষা গুলো বাকি গুলো এমন হলেই হয়
কাল অর্থনীতি পরীক্ষা মিথিলা পড়ছে, এমন সময় মিথিলার ফোনে কল আসে, ফোন স্ক্রিনে নাম্বার দেখে মিথিলা একটু অবাক হলো
ইভান কল করেছে তা ও আমাকে মিথিলা কল রিসিভ করার আগেই কল কেটে যায় একটা মেসেজ আসে
‘মিথিলা এখন ই তুমি আমার অফিসে চলে আসো,আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি’
কিহহ অফিস যেতে বলেছে আমি কি ভুল পড়েছি মিথিলা আবার করে মেসেজ টা পড়ে নাহ ভুল না তা হলে, উনি কেনো আমায় অফিস যেতে বলেছে
যেতে যখন বলেছে তা হলে যাওয়া যাক দেখি কি হয়
মিথিলা চুল গুলো ঠিক করে নিলো, চশমা টা ভালো করে মুছে নিলো
মিসেস আয়মন- কিরে মিথিলা কোথায় ও বেরুচ্ছিস নাকি
মিথিলা- মা আপনার ছেলে অফিসে যেতে বলেছে
মিসেস আয়মন- কি বলছিস? ইভু তোকে যেতে বলেছে
মিথিলা- হুম
মিসেস আয়মন খুশি হলো
– ঠিক আছে মা যা তা হলে
মিথিলা বেরিয়ে গেলো
কয়েক ঘন্টার মধ্যে মিথিলা পৌছে গেলো
অফিস কাউন্টার থেকে ইভানের কেবিন কোন ফ্লোরে জেনে নিলো
মিথিলা নক না করেই ইভানের কেবিনে ডুকে গেলো,, কেবিনে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মিথিলা
সেদিনের সেই মেয়েটা ইভান কে জড়িয়ে ধরে আছে ইভান ও তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে
মিথিলার উপস্থিতি ইভানরা কেউ টের পায়নি
মিথিলার হাত পা কাঁপছে, সেখান থেকে শরে আসার মতো শক্তি যেন তার নেই
মিথিলার হাত লেগে একটা ফুলের টব পড়ে যায়
ইভান চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে
ইভান- এ কি তুমি এখানে? শেষ পর্যন্ত এখানে ও চলে এসেছো,, বড় লোক ছেলে কে হাত করার এতো শখ তোমার
ওহ শখ তো হবেই এখন এই রকম চালবাজি করেই তোকে তোর বাবার সংসার চালাতে হবে
শুন যা দেখেছিস দেখেছিস সব ছেপে যাবি আব্বু আম্মু কে কিচ্ছু বলবি না তার বিনিময়ে তুই অনেক টাকা পাবি যা দিয়ে তুই তোর বাবার ভাংগা সংসার টা কে ঝোড়া লাগাতে পারবি
মিথিলা অবাক দৃষ্টিতে ইভানের দিকে ছেয়ে আছে এতো দিন ভেবেছে ইভান রাগি কিন্তু আজ আর তা মনে হচ্ছে না,আজ চরিত্রহীন মনে হচ্ছে
নায়া- ডার্লিং কে ও?
ইভান- জান বুঝতে পারছো না সে ছোট লোকের বাচ্ছা টা
নায়া- ও এই কি সেই,শুনো ইভান কে স্বামি হিসেবে পাবে এটা ভুলে যাও, আর কিছু দিন পরেই আমরা বিয়ে করছি
মিথিলার মাথা ঘুরছে মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে
নাহ আমাকে এখন জ্ঞান হারালে চলবে না মিথিলা অনেক কষ্টে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে এলো মেলো পা ফেলে হাটছে সে উদ্দেশ্য হীন ভাবে
ইভানের এমন ব্যাবহার মিথিলা নিতে পারছে না কাঁদছে বালিশ এ মুখ গুঁজে
মিসেস আয়মন ভাবছে কি হলো ওদের মাঝে সব ই তো ঠিক হয়েছে দেখলাম নাকি মিথ্যা ছিলো সব
মনে হয় ভুল করে ফেলেছি মিথিলার মতো একটা ভদ্র সহজ সরল মেয়ের সাথে ইভানের বিয়ে দিয়ে
গিয়ে দেখি আসি মেয়েটা এখন কি করছে
মিসেস আয়মন এসে দেখলো মিথিলা কাঁদছে, মিসেস আয়মন ভাবছে, কি বলে আমি মেয়ের কান্না থামাবো মেয়েটা যে আমার বড্ড সহজ সরল
– মা মিথিলা?
মিসেস আয়মনের ডাক শুনে মিথিলা উলটো দিকে ফিরে চোখের পানি মুছে মিসেস আয়মনের দিকে ফিরে
মিসেস আয়মন- কাঁদিস না মা,ইভুর কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কি হয়েছে সেটা আমরা জানি না, তবে এ ভাবে বসে থাকলে তো হবে না ইভানের প্রব্লেম টা কি আমাদের জানতে হবে,,
মা একজন স্ত্রীর কর্তব্য স্বামি কে সৎ পথে ফিরিয়ে আনা, একজন স্ত্রী চাইলে সব পারে তুমি ও পারবে মা, একটু চেষ্টা কর
মিথিলা ছুপ করে থেকে মিসেস আয়মনের কথা গুলো শুনলো কিন্তু কিচ্ছু বলেনি
মিসেস আয়মন- মা স্বামিরা একটু আধটু রাগ দেখাবেই, বুঝে ও দেখাবে, না বুঝে ও দেখাবে সেটা মেনে নিতে হয় মা,এ ভাবে ভেঙে পড়লে চলে,
আচ্ছা মন খারাপ হয়েছে না খুব, চল আমরা গুরতে যাবো এখন ই
মিথিলা- আমার ভালো লাগছে না আপনি যান
মিসেস আয়মন- ভালো লাগবে, আয় না
মিথিলা- আর পাচ দিন পরেই আমার পরীক্ষা পড়তে হবে,আমি এখন কোথায় ও যাবো না
মিসেস আয়মন আর কথা বাড়ালো না,তিনি চলে গেলেন
মিথিলা উঠে দাঁড়ালো, আগে সাওয়ার নিবে তার পর পড়তে বসবে চোখ মুখের যা হাল হয়েছে
মিথিলা কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার শাড়ি গুলো এলো মেলো
– উফফ আগে মা সব গুছিয়ে রাখতো এখন সব নিজের করতে হচ্ছে শাড়ি গুলো যে এলো মেলো হয়ে আছে খেয়াল করিনি
মিথিলা শাড়ি গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একটা চশমার বাক্স ফেলো বাক্স টা ছিনতে একটু ও কষ্ট হয়নি তার ইহানের দেয়া চশমা টা ভেঙে যাওয়ার পর এই বাক্স টা তেই রেখেছিলাম,, চশমা টা আজ ও ঝোড়া লাগাতে পারিনি দেখি তো এখন ঝোড়া লাগে কি না,
মিথিলা বাক্স টা খুলে অবাক হলো,চশমা টা ঝোড়া লাগানো বুঝা ই যাচ্ছে অনেক চেষ্টার পর চশমা টা ঝোড়া লেগে ছিলো, কিন্তু কে ঝোড়া লাগিয়েছি? বাক্স টার ভিতর ভালো করে তাকাতে গিয়ে একটা চিরকুট পেলো,তাতে লেখা
” যা তোমার কাছে স্পেশাল তা আমার কাছে ও স্পেশাল চশমা টার জন্য তোমার এতো মন খারাপ হতে দেখেই বুঝেছি এটা তোমার কাছে স্পেশাল,আমার ভাবনা টা আর ও মজবুত হয়, তোমার শাড়ির মাঝে ভাঙা চশমার বাক্স টা আর ভিতরে চশমার ভাঙা টুকরো দেখে তাই খুব যত্ন করে ঝোড়া লাগিয়ে রেখেছি,অনেক কষ্ট হয়েছে তবু ও ফেরেছি কারন জিনিষ টা যে তোমার কাছে মূল্যবান”
মিথিলার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো বুঝার আর বাকি রইলো না কাজ টা যে ইভানের,
মুহুর্তেই মিথিলার মন ভালো হয়ে যায়,খুশি মনে সাওয়ার সেরে,পড়তে না বসে রান্না করতে যায়,কতো ভুল বুঝেছি উনাকে,আমাকে ভালো না বাসলে আমার জন্য ফেলে দেয়া একটা জিনিষ কে এভাবে যত্ন করে কেউ?
আমি সত্যি উনাকে বুঝতে পারি না
রান্না বান্না শেষ করে মিথিলা ইভান কে কল দেয় কিন্তু ইভান কল রিসিভ ই করেনি
ধ্যাৎ উনি কল কেনো রিসিভ করছে না,,নিজেই নিজের মন কে বুঝালো হয়তো কাজে ব্যাস্ত আছে
বরাবরের মতো ইভান আজ ও লেইট করে বাসায় ফিরে, মিথিলা জেগেই ছিলো
ইভান কপাল কুঁচকে বল্লো
– এতো রাতে জেগে আছো যে
মিথিলা ইভান কে হঠ্যাৎ ই ঝড়িয়ে ধরে বল্লো
-ধন্যবাদ
ইভান আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠে মিথিলা কে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো
– সো হোয়াট?
মিথিলা – আমার প্রিয়ো জিনিষ গুলো কে আপনার এতো টা প্রিয়ো মনে করার জন্য
ইভান- মানে
মিথিলা- মনে হচ্ছে কিছুই বুঝেন নি,আমি সেই চশমা টার কথা বলছি,জানেন চশমা টার পিছনে একটা কাহিনী আছে
ইভান- উফফ মিথিলা আমি খুব টায়ার্ড তোমার কাহিনী ফাহিনি এখন শুনতে পারবো না, আর হা তোমার জায়গাতে অন্য কারো জিনিষ হলে ও আমি এ ভাবেই করতাম সো এতে এতো এক্সাইটেড হওয়ার কিছু নেই,ক্লিয়ার?
কথা শেষ করে ইভান শুয়ে পড়লো
মিথিলা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে যাক ভাভা কি এমন বললাম যে এতো রেগে গেলো
সত্যি উনি যে কি বুঝা মুশকিল,যাই ভাভা ঘুমাই অনেক রাত হয়েছে
পরদিন ইভান ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে যাচ্ছিলো আজ নায়ার সাথে ব্রেকফাস্ট করার কথা, নায়া বায়না করেছিলো একদিন ওর সাথে ব্রেকফাস্ট করতে
ইভান কে বেরিয়ে যেতে দেখে মিসেস আয়মন গম্ভীর কন্ঠে বল্লো
– ইভান ব্রেকফাস্ট না করে কোথায় বেরুচ্ছিস
ইভান- আম্মু একদিন বাইরে ব্রেকফাস্ট করলে কিচ্ছু হবে না
মিসেস আয়মন- শুধু কি একদিন? এখন লাঞ্চ ডিনার সবটা ই বাইরে করিস? আয় বউমা ব্রেকফাস্ট তৈরী করেছে খেয়ে যাবি
ইভান- আম্মু রোজ রোজ এক হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে না
মিসেস আয়মন- এ কেমন কথা ইভান মেয়েটা তোর পছন্দের খাবার রান্না করে তোর জন্য অপেক্ষা করে তুই আসিস ই না,আর এখন উলটো কথা বলছিস
ইভান রেগে যায় এবার মিথিলা কে বলে এই মেয়ে এই
– কে বলেছে তোমায় আমার জন্য রান্না করে বসে থাকতে? আমি বলেছি? না তো, তা হলে একদম নেকামি দেখাবে না
ইভান রেগে বেরিয়ে যায়
মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছে না
নায়া ডাইনিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে ইভানের জন্য
রাইমা চৌধুরী- নায়া ইভান মনে হয় আজ আর আসবে না তুই নাস্তা শুরু করে দে
ইতিমধ্যে ইভানকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নায়া শুধু ইভান যে ম্যারিড এটা গোপন রেখেছে
নায়া-( ইভান আসবে না? ওকে আসতেই হবে? ঐ মেয়ে কিছুতেই ওকে আটকে রাখতে পারবে না সে ক্ষমতা তার নেই)তুমি ও না কি যে বলো মোম ইভান কখনো আমার কথা ফেলেনি ও আসবে হয়তো কোন কারনে লেইট হচ্ছে
রাইমা চৌধুরী- কি জানি তুই ভালো বুঝিস
রায়হান চৌধুরী নিশ্চুপ খাচ্ছিলো স্ত্রীর সাথে এবার তিনি যোগ দিলেন
– বুঝলে রাই আমরা তখন একে ওপরের সাথে দেখা করলে কি বলবো না বলবো সব ঘুলিয়ে ফেলতাম এখনকার ছেলে মেয়েরা অন্য রকম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিয়ে করে নেয়,,
নায়া- ওহ ড্যাড এমন বলছো যেন আমরা বিয়ে করে নিয়েছি তোমাদের না জানিয়ে,শুধু ইভানের মা বাবা কে জানানো হবে না কারন তারা আমাকে মেনে নিবে না
রায়হান চৌধুরী- কেনো মানবে না তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস এতে অন্যায় কি আছে,তুই আমাকে বিয়ের প্রপোজাল কেনো পাঠাতে দিচ্ছিস না বল
নায়া- ড্যাড ছুপ থাকো তো,যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না
রায়হান চৌধুরী- ছুপ ই তো আছি তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোর বিয়ে আমরা সুন্দর ভাবে দিবো তা না
নায়া মিঃ চৌধুরী কে থামিয়ে বল্লো
– উফফ ড্যাড মিডিল ক্লাস ফ্যামেলীর বাবাদের মতো কথা বলো না তো,তারা নিজের পছন্দ ছেলের মেয়ের উপর ছাপিয়ে দেয়
রাইমা চৌধুরী- দেখ মা আমরা তোর বাবা মা আমরা তোর ভালো চাই….
এমন সময় কলিংবেল বেঝে উঠে
নায়া- কেমন ভালো চাও আমি বুঝি এখন আর একটা কথা ও বলবে না ইভান এসে গেছে নায়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়
নায়া ইভান ঝড়িয়ে ধরে বল্লো সুইট হার্ট এতো লেইট হলো যে
ইভান- ডার্লিং জানোই তো কতো কি ফ্যাস করে আমায় আসতে হয়
নায়া- ঠিক আছে এই নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো এখন চলো ড্যাড মোম তোমার জন্য অপেক্ষা করছে
কাল থেকে তিনবার লিখে তিনবার ই ভুলে টাস লেগে ডিলেট হয়ে গেছে খুব বিরক্ত নিয়ে এখন আবার লিখেছি জানিনা কেমন হয়েছে
উনি ঠিক ই বলেছে এই সল্প পড়াশুনা দিয়ে উনার এতো বড় ইন্ডাস্ট্রি তে জব পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্য কোথায় ট্রাই করবো আমি? এই সব ভাবনার মধ্যে ই মিথিলা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো,
আজ মিথিলার কেনো জানি সময়ের আগেই ঘুম ভেংগে গেছে পাশে ইভান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে, কি যেন একটা স্বপ্ন দেখে মিথিলার ঘুম ভেঙে যায়,
কিছুক্ষন এ ভাবে থম মেরে বসে থাকার পর মিথিলার স্বপ্নের কথা মনে হলো
হুম ইহান ফিরে এসেছে মিথিলাকে নিতে মিথিলা ও ইহানের হাত ধরে চল্লো ইহানের সাথে
পিছনে ফিরে ছেয়ে দেখে অসহায় ইভান কাঁদছে ওদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে কিন্তু কিছু বলছে না,
তার পর ই জেগে উঠা উফফ এই স্বপ্ন দেখার মানে কি কেনো আমি এই স্বপ্ন দেখলাম যদি ইহানের কাছে যাওয়ার ই হতো তা হলে আমি ইভান কে বিয়ে করেছি কেনো,ইভানের ঘুমন্ত মুখের দিকে ছেয়ে আছে মিথিলা, কি নি:স্বপাপ চেহারা,
যেই না মিথিলা ইভানের মুখ টা ছুয়ে দিতে গেলো অমনি ইভান জেগে উঠে মিথিলার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বল্লো
– কি করছো তুমি
মিথিলা বিব্রত বোধ করতে লাগলো,অনেক কষ্টে বল্লো
– ম ম মশা ব বসেছিলো আ- আপনার গালে,সত্যি বলছি মশা ছিলো ওটা
ইভান- হোয়াট মশা আসবে কোথায় থেকে আজ মশারস্প্রে মারনি
মিথিলা- দিয়েছিলাম তো, তবু ও
ইভান- হোয়াটএবার ঘুমাও তো যত্ত সব
ইভান আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো
মিথিলা যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে
আজ আর ঘুম হবে না মিথিলা বুঝে গেছে,সময়ের আগে ঘুম ভাঙলে মিথিলাত আফসোস এর সিমানা থাকে না,কেননা ঘুম যে আর আসবে ই না
আজ বিকেলের আড্ডায় ইভান নেই তবু ও আসর জম জমাট হয়ে উঠেছে আতাহার চৌধুরী, মিসেস আয়মন ই পারে একটা আসর মাতাতে
মিথিলা তো এমনি কম হাসে কম কথা বলে তবু ও মাঝে মাঝে উনাদের সাথে যোগ দেয়
মিথিলা- বাবা,মা আপনাদের কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে, কিছু বলার আছে
আতাহার চৌধুরী হাসি মুখেই বল্লো
– তোমার যা ইচ্ছে তা চাইতে পারো বলতে পারো,আমি আর মুন তা হাসি মুখে গ্রহন করবো
মিথিলা অনেক ইতস্তত হয়ে বল্লো
– আমি একটা জব করতে চাই বাবা,
মিসেস আয়মন – কেনো আমাদের আল্লাহ এতো দিয়েছেন যে আমাদের বাড়ির বউয়ের আলাদা করে ইনকামের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না
মিথিলা বিব্রত হয়ে বল্লো
– না মানে আমাদের বাড়িতে মা অসুস্থ ছোট দুই ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতে তো হবে
আতাহার চৌধুরী- এ জন্য তোমার চাকরি করতে হবে কেনো আমাকে বললেই তো আমি সব ব্যাবস্থা করে দিতাম
এবার মিথিলা স্পষ্ট ভাষায় বল্লো
– বাবা এ ভাবে আমার মা ভাই বোন মরে গেলে ও আপনাদের কাছে থেকে সাহায্য নিবে না
মিসেস আয়মন- কেনো? আমরা কি তোমাদের কেউ নই
মিথিলা- কথা সেটা নয় মা,কথা হচ্ছে মেয়ের জামাইর বাড়ি থেকে এই রকম হেল্প আমার মা নিবে না মরে গেলে ও না,যদি আমি জব করি আর সেখান থেকে মায়ের চিকিৎসা করাই এতে আমার ও তৃপ্তি হবে,
আতাহার চৌধুরী- বুঝতে পেরেছি মা,কিন্তু তুমি আমাকে বলছো কেনো,ইভান কে বললেই তো,ও আমাদের অফিসে তোমার জবের ব্যাবস্থা করে দিতো
মিথিলা – আমি উনাকে বলেছি, উনি বলছে আমার এই পড়া দিয়ে নাকি হবে না
মিসেস আয়মন- চিন্তা করো না, আজ বাসায় আসুক ইভান আমরা কথা বলবো তার সাথে
কিন্তু আজ ও ইভান ডিনারের সময় আসেনি, অনেক রাতে এসেই শুয়ে পড়েছে আজ মিথিলা কিছু বলেনি,, ছুপ ছাপ দুজনেই দু দিকে ফিরে শুয়ে আছে
একজন ভাবছে সারাদিন নায়ার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোর কথা,নায়া খুব শিগ্রই বিয়ে করতে চায়
ভাগ্যিস বুদ্ধি খাটিয়ে সময় নিয়েছি,,নইলে কি যে হতো মিথিলা থাকতে নায়াকে বিয়ে করা কি সম্ভব নায়া তো বলেছে সে আলাদা বাসায় থাকবে বাবা যেহেতু তাকে মানবে না সেহেতু উনাদের কাছে এসে জ্বামেলা বাড়াতে চায়না, কিন্তু মিথিলা যদি জেনে যায় তখন তো আব্বু আম্মু ও জানবে তখন কি হবে
মিথিলা ভাবছে কি করে একটা জব জোগাড় করা যায়, নির্ঝরিণীর পড়া একদম পিছিয়েছ গেছে, আয়ান কে আবার ভালো পথে আনতে হবে মায়ের চিকিৎসা, উফফ অনেক টাকার দরকার আমার,
ইসস আমার যদি অনেক টাকা থাকতো তা হলে এই জিমি আপুর জামাইকে দেখাতাম মজা, সব শেষে মায়ের হার নিয়ে গেলো,, মা যক্ষের ধনের মতো হার টা আগলে রেখেছিলো নিজের কাছে
মায়ের কাছে শুনেছি বাবা পুরো এক বছর টাকা জমিয়ে তার পর হার টা দিয়েছিলো মাকে,বাবার কথা মনে পড়তেই মিথিলার চোখ বেয়ে নিশ্চুপ নির্ঝর পানি ঝরতে লাগলো
কাঁদতে কাঁদতে মিথিলা ঘুমালো,
সকাল বেলা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো রাতে কান্না করার কারনে চোখ ফুলে গেছে এখন সবাই কি ভাববে
মিথিলা চোখের চশমা টা ঠিক করে মাথায় কাপড় ভালো করে টেনে দিয়ে নাস্তা বানাতে গেলো,আজ মিথিলার ইচ্ছে করছে নতুন বউয়ের মতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকতে যেন তার চোখ সবার নজরের আড়ালে রাখতে পারে
নাস্তার টেবিলে সবাই ছুপ ছাপ খাচ্ছে নিরাবতা ভেঙে
আতাহার চৌধুরী বল্লো- ইভু তোর তো একজন অ্যাসেসটেন্ট দরকার তাই না? তুই চাইলে তো বউ মাকে সেই পদে নিয়োগ দিতে পারিস,তাতে দুজনের পাশা পাশি থাকা ও হলো
ইভান শান্ত কন্ঠে বল্লো
– আব্বু আতাহার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির এমডি আমি,আমার অ্যাসেসটেন্ট হবে এইচ এস সি অধ্যায়নরত একটা মেয়ে,এটা কি করে সম্ভব আব্বু যে কাজ গুলো আমার সেক্রেটারির করতে হবে তার একটা ও মিথিলা পারবে না
মিসেস আয়মন- তা হলে তুই শিখিয়ে নিস
ইভান- আমি একবার বলেছি তো হবে না,ব্যাস হবে না
আতাহার চৌধুরী শান্ত কন্ঠে বল্লো
-তা হলে রিসেপসেনিষ্ট জারা কে প্রমেশন দিয়ে উপরে নিয়ে যা আর বউ মাকে সেখানে দে,এবার এটা বলিস না যে বউমার সেই যোগ্যতা ও নেই
ইভান এবার রেগে গিয়ে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিথিলা কে বল্লো
এই মেয়ে এক থাপ্পড়ে দাঁত সব ফেলে দিবো, কি বলেছি তোমায়? তোমায় বলিনি অন্য জায়গাতে জব খুঁজতে, তা হলে চালাকি করে বাবা কে কানভেন্স করতে গিয়েছিলে কেনো,, সারা দিন আমাকে চোখে চোখে রাখতে চাও তাই না,আঁচলে বাধতে চাও আদৌ সেই ক্ষমতা তোমার আছে,রাবিশ
ইভান বেরিয়ে যায়,
আকস্মিক এমন পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না
মিথিলা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,, নিঃশব্দে চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে
মিথিলা কিছু না বলে রুমে চলে আসলো বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো, ইভানে এমন ব্যাবহার সে নিতে পারছে না, কাঁদছে অঝর নয়নে,
আমি তোমার কোন কথার উওর দিবো না..
ইভানের কথা শুনে নায়া ছুপ হয়ে গেলো
– নাহ এ ভাবে করে আমি ইভান কে ফিরে পাবো না ঐ হাভা মেয়ের কাছে আমার ভালোবাসা হেরে যাবে এটা আমি কখনো হতে দিতে পারি না, এবার নায়া কান্না করে দিলো, কাঁদতে কাঁদতে বলছে
– ইভান ভালোবাসি তোমায় আজ ও , তুমি পারো না আবার ফিরে আসতে?
ইভান নায়ার কান্না দেখে বিমূঢ় হয়ে পড়ে কি বলবে বা কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না ইভান
– নায়া প্লিজ তুমি কেদো না, প্লিজ কান্না থামাও
নায়া ননস্টপ কান্না করেই যাচ্ছে থামানোর কোন নাম নেই
ইভান এবার রেগে গিয়ে হাত দিয়ে টেবিলে ঝোরে থাপ্পড় দিয়ে বল্লো
– এই কান্না থামাও কি শুরু করলে,কান্না থামাও আর এখান থেকে যাও
নায়া এবার কান্না বন্ধ করে ইভানের দিকে ছেয়ে আছে
ইভান- ( ও ভাবে তাকিও না নায়া আমি যে তোমার চোখের দৃষ্টিতে খুন হয়ে যাচ্ছি)ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– কি হলো তাকিয়ে আছো কেনো, যাও বলছি
নায়া এবার উঠে দাঁড়ালো
– ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু এটা আমার শেষ যাওয়া নয় আমি আসবো আবার আমার ভালোবাসা আদায় করতে
নায়া বেরিয়ে গেলো
ইভানের অফিসের কাজে মন বসছে না নায়ার কান্নামাখা মুখ টা চোখের পাতায় ভেসে উঠছে,,
আমি কি নায়ার সাথে অন্যায় করেছি মেয়েটির তো কোন দোষ নেই সে আমায় ভালোবেসেছে,,
যেখানে আজ এতো গুলো দিন পরে ও মিথিলা আমায় ভালোবাসতে পারেনি, ইভান ঠিক করলো আর অফিস করবে না বাসায় ফিরে যাবে
মিথিলা – উনার আজ আবার কি হলো লাঞ্চ করতে এলো না ফোন করবে বলে ফোন করলো না,,দূর ইভান কে আমি সত্যি বুঝতে পারি না,, আজ আসলে বাড়ি যাওয়ার কথা বলবো দেখি উনাকে দিয়ে আয়ান কে বুঝাতে পারি কি না,,
উফফ টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাবো এদিকে কয়দিন পর ফাইনাল এক্সাম আসছে, যাই উনি আসার আগে পড়তে বসি আসলে তো আবার পড়তে দিবে না,পড়লে নাকি চোখের প্রব্লেম বেড়ে যাবে,সত্যি পাগলামি কতো প্রকার আছে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম না
মিথিলা সব ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ার দিকে মন দিলো,,
মিসেস আয়মনে এসে মিথিলা কে বল্লো কিরে পড়ছিস?
মিথিলা- হুম,সামনে এক্সাম তো তাই,কিছু বলবেন?
মিসেস আয়মন- ইভান অফিস থেকে ফিরেছে দেখলাম,,কিন্তু মুখটা ওর থমথমে হয়ে আছে,কি হয়েছে জানো কিছু
মিথিলা- উনি যে ফিরেছে সেটা তো আমি খেয়াল করিনি,উনি আমায় ডাকে ও নি,আচ্ছা দেখছি আমি
মিসেস আয়মন – হুম যা তা হলে,, শুন স্বামির মন খারাপ থাকলে মন ভালো করার দায়িত্ব কিন্তু স্ত্রীর উপরেই পড়ে
মিথিলা কিছু বল্লো না রুমে এসে দেখলো ইভান ড্রেস চেঞ্জ না করেই শুয়ে আছে কপালে হাত দিয়ে
ইভানের এই অবস্থা দেখে মিথিলা ভ্রু কুচকালো এই প্রথম ইভান কে এমন চিন্তিত দেখলো মিথিলা
– কি এমন হলো যে এতো গভীর চিন্তায় ডুবে আছে উনি
মিথিলা ইভানের পাশে বসে কপাল থেকে হাত টা সরাতেই ইভান উঠে বসলো
– তুমি?
মিথিলা- হুম আমি,মনে হচ্ছে আপনি আমায় এই প্রথম দেখলেন, ওমন করে তাকিয়ে আছেন
ইভান- কিছু বলবে? বললে বলো,নতুবা এখান থেকে যাও, ভালো লাগছে না কিছু
মিথিলা- আপনি এমন করছেন কেনো,অফিসে কি কোন প্রব্লেম হয়েছে? খুব বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে আপনাকে
ইভান – না অফিসে কোন প্রব্লেম হয়নি,আর কোথায় আমি চিন্তা করছি, মনে হচ্ছে তোমার চশমার পাওয়ার চেঞ্জ করতে হবে, যাও তো এখন জালিও না আমাকে
মিথিলা ইভানের ব্যাবহারে অবাক হলো খুব,আবার উনি সেই রুপে ফিরে এলো? কিন্তু কেনো? আমি কি কিছু করেছি
ইভান মিথিলা কে বসে থাকতে দেখে বল্লো
– বসে আছো কেনো যাও,,
মিথিলা উঠে চলে এলো স্টাডি রুমে
ভাবছে বসে বসে কি হলো ইভানের এমন বিহেভ করছে কেনো আমার সাথে
ভেবেছি উনাকে নিয়ে একবার ঐ বাসায় যাবো কিন্তু উনার যে মেজাজ উঠেছে কোন কথাই তো বলতে পারবো না উনাকে
রাতে ঘুমাতে এসে ও ইভান মিথিলার সাথে কোন কথা বলেনি,, অন্য পাশে ফিরে শুয়ে আছে
মিথিলা আবার অবাক হলো, রোজ ঘুমানোর আগে উনার কতো কথা শুনতে হতো সব শেষে আমায় ঝড়িয়ে ধরে ঘুমাতো,আজ একেবারেই কথা বন্ধ,
ধ্যাত আমি এতো ভাবছি কেনো মানুষের কি কোন কারনে মন খারাপ হতে পারে না, পারে তো,,এতো না ভেবে আমি ঘুমাই গিয়ে
মিথিলা ইভানের গায়ে একটি হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু এতে ও ইভানের মাঝে কোন পতিক্রিয়া দেখা গেলো না
আজ সকালে নাস্তার পর ইভান নিজেই নিজে রেডি হলো আজ আর মিথিলা কে টাই বেধে দিতে ডাকেনি,
মিথিলা টাই বাধতে এসে দেখে ইভান রেডি মিথিলা আর কোন কথা বলেনি
ইভান বেরিয়ে যাচ্ছিলো
মিথিলা – আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো
ইভান- সময় নেই, আমার
ইভান চলে গেলো
মিথিলা- যাক ভাবা কি এমন হলো যে বক বক করা মানুষ টি ছুপসে গেলো
কিন্তু আমার যে বাড়ি যাওয়া খুব দরকার তা হলে কি করি এখন
আমি মাকে বলে চলে যাই,মাকে দেখে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ মিসেস আয়মন কে বলে মিথিলা বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়
নির্ঝরিণী মিথিলা কে দেখে খুব খুশি হয়
নির্ঝরিণী – আপি দুলা ভাই আসেনি কেনো
মিথিলা- অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত
নির্ঝরিণী – ওহ আচ্ছা এসো মাকে দেখবে চলো
মিথিলা মায়ের কাছে গিয়ে মাকে দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো কি হাল হয়েছে মায়ের, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে শরিরের হাড় ছাড়া মাংস নেই
হ্যারে নির্ঝর, মাকে ঠিক ভাবে খাবার খাওয়াস না
নির্ঝরিণী – আপি মা খেতে চায় না,ঝোর করে খাওয়াতে হয়,আজ দুই দিন থেকে তো মায়ের কোন কথা ও নেই দেখনা তুমি এসেছো বলে ও কোন রেসপন্স করেনি বলতে বলতে নির্ঝরিণী কেদে দিলো, আপু আমার খুব ভয় করছে
না জানি মাকে হারাতে হয় আমার
মিথিলা ছোট বোন কে কাছে টেনে নিলো
কাঁদিস না নির্ঝর মায়ের ভালো করে চিকিৎসার দরকার এখন
নির্ঝরিণী – কিন্তু আপু মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার সংসারের উপার্জনের পথ তো বন্ধ কি করবো বল
মিথিলা- আমি ও সেটা ই ভাবছি, আয়ান কখন বাড়ি ফিরে
নির্ঝরিণী – ঠিক নেই আপু অনেক রাতে ফিরে আর অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে,ওর পাশে দিয়ে হাটার সময় আমি খারাপ একটা গন্ধ পাই
নির্ঝরিণী – একদিন এসেছিলো এসে মায়ের গলায় থাকা হার টা নিয়ে গেছে দুলা ভাইয়ের নাকি টাকার দরকার
মিথিলা- ওহ সেই হার টা না যেটা বাবা মাকে বিয়ের প্রথম বিবাহবার্ষিকী তে দিয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী – হুম আপু,মা এই হার টা কখনো হাত ছাড়া করেনি,আর মা অসুস্থ হতে না হতে আপু সেটা নিয়ে গেলো,আচ্ছা আপু বড় আপু এমন হলো কেনো
মিথিলা- জানি না,হয়তো বড় আপু যেই পরিস্থিতিতে আছে,সেই পরিস্থিতি তাকে এমন হতে বাধ্য করেছে
আচ্ছা নির্ঝরী আমার এখন যেতে হবে আমি ইভানের কাছে বলে আসিনি, তুই আমার এই আংটি টা রাখ এটা বিক্রি করে যা পাস তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যা,তার পর দেখি কি হয়
নির্ঝরিণী – আপু তুমি আজ থাকো না
মিথিলা- ইভান কে সাথে নিয়ে এসে একদিন থাকবো এখন আসিরে
মিথিলা বেরিয়ে গেলো
মিথিলা সোনারপুর বাজারে এসে রিক্সা নিলো, আসার সময় মিসেস আয়মন খুব করে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে ছিলো কিন্তু মিথিলা আনেনি,,মিথিলা যেই রিক্সাতে উঠতে যাবে ওমনি পাশে গাড়ি পার্কিং এ একটা গাড়ি দেখতে পেলো যেটা ইভানের গাড়ি
– উনার গাড়ি এখানে তার মানে আশে পাশে কোথায় ও আছে, ঠিক আছে আমি একটু অপেক্ষা করি
কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ইভান কে একটা কফিশপ থেকে বেরুতে দেখলো,কিন্তু একা নয় সাথে একটা মেয়ে যার সাথে ইভান খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো
মিথিলা- কে এই মেয়ে? আমি কি যাবো ওদের সামনে না থাক যাবো না, আমাকে এখানে দেখে যদি রেগে যায়,বাসায় গেলে জিজ্ঞাস করবো মেয়েটা কে?
মিথিলা বাসায় ফিরে অপেক্ষা করতে লাগলো
অনেক রাতে ইভান বাসায় ফিরে বিয়ের পর এই প্রথম ইভান এতো লেইটে বাসায় এসেছে,
মিথিলা ইভানের জন্য অপেক্ষা করেই ছিলো
ইভান- কি হলো ঘুমাও নি?
মিথিলা ইভানের কথার উত্তর না দিয়ে বল্লো
– চলুন খাবেন
ইভান- খেয়ে এসেছি
মিথিলা একটু অবাক হলো এই প্রথম ইভান ফ্যামেলির সবাইকে রেখে বাইরে খেয়ে এসেছে,
– মেয়েটি কে ছিলো?
মিথিলার কথা শুনে ইভান চমকে উঠে
– কোন মেয়েটি?
মিথিলা- যার সাথে আজ সোনারপুর বাজার কফিশপ থেকে হাত ধরে বেরিয়ে ছিলেন
ইভান কিছুক্ষন মিথিলার দিকে ছেয়ে থেকে বল্লো
– আমাদের বিজনেস পার্টনার
মিথিলা একটু শকড খেলো এতো অল্প বয়সী সুন্দরি মেয়ে বিজনেস পার্টনার? মিথিলা নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বল্লো দূর কি সব ভাবছি আমি,এমন টা তো হতেই পারে,সব ফ্যামেলি তো আর এমন না যে মেয়ের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে বিয়ে দিয়ে দিবে
ইভান- বাই দ্যা য়ে তুমি সেখানে কি করছিলে,
মিথিলা- মা খুব অসুস্থ মাকে দেখতে গিয়েছি, শুনুন না আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো
ইভান- টায়ার্ড লাগছে খুব ঘুমাতে দাও
মিথিলা- আমার কথা টা শুনুন না
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো আচ্ছা বলো কি বলবে
মিথিলা- আমার না একটা জবের দরকার,আপনি যদি আপনার অফিসে কোন ব্যাবস্থা করে দিতেন
মিথিলা মুচকি হেসে বল্লো
টাই টা দিন বেধে দিচ্ছি আপনি না একদম বাচ্ছাদের মতো বিহেভ করেন,,অথচ এই বয়স হচ্ছে আপনার বাচ্ছা পালার বয়স
আর আপনি কি না বাচ্ছা হয়ে যাচ্ছেন দিনে দিনে
ইভান- ওহ হো মিথিলা আদি কালের দাদিদের মতো বিয়ে হতে না হতে বাচ্ছা বাচ্ছা করো না তো,,
মিথিলা- আমি কি আপনার কাছে বাচ্ছা এখন ছেয়েছি নাকি কিন্তু আমরা তো একদিন বাবা মা হবো তাই না
ইভান- নো য়ে,আগামি দশ বছরের আগে বাচ্ছার কথা ঠোঁটে ও আনবে না এমনিতে ও বাচ্ছা হলে ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে তোমার
মিথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে বলে কি এই লোকে দশ বছর ততদিনে তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো আমার বাচ্ছা পালবে কে
ইভান- সুইট হার্ট হা করে থেকো না চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার
ইভান নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেলো মিথিলা সারা সকাল বসে বসে ইভানের কথা গুলো ভাবছে দশবছরে ও বাচ্ছা নেবো না হায় হায় বলে কি,আমি তো মাস্টার্স কম্পলিট করার আগেই বাচ্ছা নিবো ভেবে ছিলাম আর উনি কি না দূর ছঁাই ভাবতে ভাবতে অনেক বেলা হয়ে গেছে আজ দুপুরের রান্না রাঁধবো কখন
এমন সময় মিথিলার ফোন বেজে উঠে
উফফ এই সময় আবার কে ফোন করলো? ওহ নির্ঝরিণী!
হ্যালো নির্ঝর বল
নির্ঝরিণী – কেমন আছিস আপু
মিথিলা- ভালো তুই কেমন আছিস,মা কেমন আছে
নির্ঝরিণী – আমি ভালো আছি আপু,মা ভালো নেই, গত কয়েক দিন থেকে মা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না
মিথিলা- আমাকে আগে বলিস নি কেনো, ডাক্তার দেখিয়েছিস,,
নির্ঝরিণী – ডাক্তার দেখিয়েছি এ দিকে…..
মিথিলা- কি বল থেমে গেলি কেনো
নির্ঝরিণী – আপু আয়ান এখন আর পড়াশুনা করে না স্কুলে যায় না অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে, আপু আমার মনে হয় আয়ান বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়,আপু আমার না খুব ভয় করছে
মিথিলা- আয়ান এমন করছে? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না, আচ্ছা তুই ভয় পাস না মার দিকে খেয়াল রাখিস আমি দেখি কি করতে পারি,আচ্ছা এখন রাখ রে রান্না বসাতে হবে এখন আমাকে
মিথিলা কল অফ করে দিয়ে চিন্তায় পড়লো কি হলো আয়ানের,, ও দুষ্টু ছিলো ঠিক কিন্তু এতো টা তো অনিয়ম ছিলো না, তা হলে?, হায় আল্লাহ বাবা যেতে যেতে কি হয়ে গেলো মা অসুস্থ ভাই কেমন হয়ে গেলো কি করবো এখন আমি
আজ ইভান অফিসে আসতে আসতে লেইট হয়ে গেছে,এদিকে আর এন কম্পানির লোকেরা এসে গেছে তারা মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে ইভান এসেই মিটিং রুমে চলে যায়,
ইভান মিটিং রুমে ডুকেই আর এন কম্পানির নতুন এমডির সাথে পরিচিত হতে গিয়ে একটা বড়সড় শকড খেলো,কোন ভাবে মিটিং টা শেষ কতে ইভান নিজের ক্যাবিনে এসে চেয়ার গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, উলটাচ্ছে স্মৃতির পাতা
অস্ট্রিয়া থেকে ফেরার দুই দিন আগে নায়ার সাথে মিট করতে গিয়ে নায়া কে বলেছিলো দেশে ফিরেই আব্বু আম্মু কে বলে বিয়ের কথা ফাইনাল করবে,
নায়া সেদিন খুব কেঁদে ছিলো, কান্নাভেজা কন্ঠে আমার হাত ধরে বলেছিলো
– ইভান প্লিজ আমায় ভুলে যেও না,,খুব ভয় করছে আমার, শুনেছি চোখের আড়াল হলে নাকি মনের আড়াল হয়ে যায়, কথা টা যেন সত্যি না হয়
সেদিন নায়াকে আমি অনেক করে বুঝিয়ে রেখে এসেছি,কিন্তু দেশে আসার পর আব্বু আম্মুর একটা ই কথা নায়ার সাথে যেন কোন যোগাযোগ না রাখি, ফেলতে পারিনি আমি আব্বু আম্মুর কথা,,নায়ার সব স্মৃতি ভুলতে চেষ্টা করেছি,আজ ও সেই চেষ্টা করি আর এখন সেই নায়া আমার সামনে আচ্ছা নায়া আর এন কম্পানির নতুন এমডি যাদের সাথে আমাদের বিজনেস আগা মাথা ঝড়িয়ে আছে
এমন সময় ক্যাবিনের দরজায় নক হলো
আয়ান চোখ বন্ধ রেখেই বল্লো
– ইয়েস কাম
কি ব্যাপার চোখ বন্ধ করে আছো যে,নাকি আবার কি করে সিটিংবাজি করবে সেটা ভাবছো
ইভান চোখ খুলে দেখে নায়া ইভানের সামনে
ইভান মুখে হাসি টানার ব্যার্থ চেষ্টা করে বল্লো
– বসো
নায়া- থ্যাংস তুমি না বললে ও আমি বসতাম অনেক পুরোনো হিসেব কষার বাকি আছে যে
কেনো এমন করলে ইভান ভালোবাসার হাত তুমি বাড়িয়ে দিয়েছো আমার দিকে,তা হলে তোমার বাড়ানো হাত টা ফিরিয়ে না দেয়া কি আমার অপরাধ ছিলো
ইভান- এমন করে বলো না নায়া আমি তো এখন ও তোমায়……
ইভান কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ইভানে কল আসে
ইভান কল রিসিভ করে
– হ্যালো?
অপাড় থেকে মিথিলা বলে
– আজ বাসায় লাঞ্চ করবেন না? লাঞ্চের সময় ফেরিয়ে যাচ্ছে
ইভান- আমি তোমায় পরে কল করছি
ইভান কল অফ করে দেয়
নায়া- কার ফোন ছিলো তোমার বউয়ের?
ইভান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নায়ার দিকে
নায়া- অবাক হওয়ার কিছু নেই তুমি কি ভেবেছো যে আমার সাথে চিটারি করেছে তাকে আমি এ ভাবে ছেড়ে দিবো,না এএতো সহযে নয় তাই তো দেশে এসেই তোমার সম্পর্কে খোজ নিতে শুরু করি আর পেয়ে ও যায় খুব সহজে,
আমাকে শুধু একটা কথা বলো কি এমন পেয়েছো ঐ হাভা মেয়েটির মাঝে,যা আমার মাঝে ছিলো না?
ইভান কথার প্রসংগ পাল্টানোর জন্য বল্লো
– কি খাবে বলো?
নায়া কর্কশ কন্ঠে বল্লো
আমি তোমার সাথে রসালাপ করতে আসিনি
ইভান এবার শক্ত কন্ঠে বল্লো
– আমি তোমার কোন কথার উত্তর দিবো না,,
সুইট হার্ট শ্বশুর বাড়িতে যে কি দিন খন সময় ঠিক করতে হয় নাকি, যখন ইচ্ছে তখন যাওয়া যায়
মিথিলা ভাবছে অন্যকিছু বিয়ের রিচুয়ালস মানতে মা, বাবা কতো বুঝিয়ে উনাকে পাঠিয়েছে আর আজ উনি নিজের ইচ্ছে তে যাচ্ছে, ব্যাপার টা আসলেই সহজ নয়, আচ্ছা উনি নির্ঝরিণীরর সাথে কথা বলে তার পর আমাদের বাড়িতে যাবে বল্লো,কিন্তু কেনো?,নির্ঝরিণীর কোথায় উনি যেতে রাজি হবে? এটা মানা যায় না?
তা হলে
বাবার কিছু হয়নি তো বাবা ঠিক আছে তো?
মিথিলার বুকটা কেপে উঠে।
ইভান নিজে তৈরী হচ্ছে
কি হলো হেভলি? বসে আছো যে লেটস গো বাবার বাসায় যাচ্ছি. তা ও কার বাবার বাসা ভাবতে পারছো হেভলির বাবার বাসা,তৈরী হয়ে নাও তাড়া তাড়ি ডার্লিং
মিথিলা- বাবা ঠিক আছে তো
ইভান- বলো কি? বাবা ঠিক থাকবে না কেনো,
তা তুমি কি শাড়ি টা চেঞ্জ করবে, নাকি যেমন। আছো তেমন ই যাবে
মিথিলা- পাঁচ মিনিট বসুন
মিথিলা ঠিক পাঁচ মিনিটের ভিতরেই তৈরী হয়ে নিলো
আয়ান কিছু বল্লো না শুধু শুয়ে রাখা লোকটার মুখের কাপড় শরিয়ে দিলো
মিথিলা দেখতে ফেলো তার বাবা চির নিদ্রায় শায়িত হয়ে আছে
মিথিলা অঝোর নয়নে কাঁদছে
কাদতে কাঁদতে বল্লো
বাবার কি হয়েছিলো আয়ান তোরা আমায় আগে বলিসনি কেনো
আয়ান কিছু বলছে না কাঁদছে ও না ছুপ করে বসে আছে
নির্ঝরিণী কোথায় থেকে যেন এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে
মিথিলা ও কাঁদছে এর মধ্যে জিমি আপু এসে পড়ে সে ও কাঁদছে
ইভান আয়ান কে নিজের কাছে টেনে নেয়
ইভান- আয়ান আংকেলের কি হয়েছিলো? তোরা আমাদের আগে বলিসনি কেনো
আয়ান- বলার মতো সুযোগ পাইনি ভাইয়া, হঠ্যাৎ করেই বলছে বুক ব্যাথা করছে,তো মা বল্লো ডক্টরের কাছে যাবে কি না
বাবা নিষেধ করলো যাবে না,
এর কিছুক্ষণ পরেই আম্মুর চিৎকার শুনে আমি এসে দেখি আব্বু আর নেই ডক্টর এনেছি, ডক্টর তখন আব্বু কে মৃত ঘোষনা করে
ইভান- আংকেল স্টোক করেছে, কিন্তু উনি এতো কিসের চিন্তা করতো
আয়ান আর কিছু বল্লো না
মিথিলা বোনদের ঝড়িয়ে কিছুক্ষন কান্না করার পর
মিথিলা- মা কোথায় মা
নির্ঝরিণী কাঁদতে কাঁদতে বল্লো মার জ্ঞান নেই আপু,অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে হাতে সেলাইন চলছে,
মিথিলা মায়ের পাশে গিয়ে মাকে ডাকা ডাকি করলে ও ফাতেমাবেগমের সেন্স ফিরেনি
সন্ধায় ছয়টা দাপন কাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়,
আত্মীয় স্বজনেরা অনেক ই চলে গেছে,
ইভান থাকতে ছেয়ে ছিলো মিথিলা ঝোর করে ইভান কে পাঠিয়ে দিয়েছে,
এই জন্য যে, আমাদের বাড়িতে এসি নেই আপনার থাকতে কষ্ট হবে,আমি চাই না আপনি মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে বকা ঝকা করুন
ইভান- মিথিলা প্লিজ ঐ দিনের জন্য আ’ম স্যরি
মিথিলা- তবু ও প্লিজ আপনি যান
ইভান- মিথিলা আমি এই সময় তোমার পাশে থাকবো না তা হয় কি করে
মিথিলা- কাল সকালে আবার আসবেন আমি কি আসতে নিষেধ করেছি নাকি,আমি বলেছি আপনি এখন যান
ইভান- ওকে তা হলে তুমি ও চলো
মিথিলা- না আমাকে আমার ভাই বোনের পাশে থাকতে হবে,প্লিজ আপনি যান আর কথা বাড়াবেন না
ইভান সত্যি আর কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে
ফাতেমা বেগমের অবস্থা ভালো না, এই কয়দিনে তিনি বিছানার সাথে মিশে গেছে
মিথিলা তো মায়ের কাছে আসলেই কান্না করে
তাই নির্ঝরিণী মিথিলাকে আসতে দেয় না
এর মাঝে একদিন ইভান এসে মিথিলা কে নিয়ে যায় মিথিলা যদি ও যেতে চায়নি তবু ও আর কয়দিন থাকবে সে জন্য ইভান ঝোর করে নিয়ে গেছে
ইভান এখন অনেক বেশি সময় দেয় মিথিলা কে যেন সে স্বাভাবিক হতে পারে
মিথিলা- সে কি আপনি টাই লাগাতে জানেন না,তা হলে এতো দিন কে লাগিয়ে দিয়েছিলো
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
– এতো কথা না বলে টাই টা লাগিয়ে দিলেই তো পারো
মিথিলা- কিন্তু আমি তো এগুলা পারিনা,
ইভানের এখন মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে তবুও মাথা ঠান্ডা করে বল্লো
– কোন ব্যাপার না, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে কি করে টাই বাধতে হয়, এর পর থেকে কিন্তু টাই তোমাকেই বেধে দিতে হবে
মিথিলা বোকার মতো তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে
ইভান- হেভলির মতো তাকিয়ে না থেকে আমাকে কেমন লাগছে বলো
মিথিলা- ভালো
ইভান মিথিলার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বল্লো, আমার হেভলি বউ টা এমন হাভা বোবা হয়ে থাকে কেনো
ইভান মিথিলার অনেক কাছে চলে এসেছে, যতো টা কাছে এলে একে অপরের নিশ্বাস অনুভব করতে পারে
মিথিলা নিশ্বাসবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, এদিক ওদিক শরে যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই
ইভান মিথিলার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিতে দিতে বল্লো
– শুনো হেভলি বউ আমি যাওয়ার পরে একদম বই নিয়ে বসবে না পরিক্ষার এখন ও অনেক দিন বাকি, অতএব এখন না পড়লে ও চলবে,
মিথিলা কিছু বলতে যাচ্ছিলো
ইভান তার ঠোঁটে আংগুল দিয়ে বল্লো শুসসস ছুপ করে থাকো আমি বলছি শুনো
সময় কাটানোর জন্য আম্মুর সাথে কথা বলতে পারো জানো ই তো তুমি আম্মুর কতো টা পছন্দের
নিচের দিকে তাকিয়ে বই পড়লে চোখে প্রব্লেম হবে এই জন্য ই তোমার এতো বেশি পাওয়ারের চশমা পরতে হয়
এই জন্য বলছি এখন বই পড়তে বসো না, বুঝেছো আমার হেভলি বউ
মিথিলা বরফের মতো জমে আছে, কোন কথা ই শরছে না মুখ দিয়ে
ইভান এবার মিথিলার কাছে থেকে শরে গিয়ে বল্লো
– তোমার আটকে রাখা নিশ্বাস টা এবার ফেলতে পারো,এভাবে দমবন্ধ করে রাখার কিছু নেই আমি তোমাকে খেয়ে পেলবো না, এই বলে ইভান বেরিয়ে গেলো
মিথিলা তখন ও মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে
,ইভানের এমন আচরনে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড
কতোক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো মিথিলার খেয়াল নেই
তার পর হুস ফিরে পেয়ে মিথিলা কি করবে ভাবছিলো মনে হলো ইভান বলেছি মিসেস আয়মনের সাথে কথা বলতে
মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মিসেস আয়মন কিচেনে আছে
এই বাড়িতে সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার টা বুয়া তৈরী করে, আর দুপুরের টা মিসেস আয়মন নিজেই রান্না করে
মিথিলা- আজকের রান্না টা কি আমি করতে পারি
মিসেস আয়মন- কোন দরকার নেই আমি পারবো, যতো দিন তুমি আমায় মা বলে না ডাকছো ততদিন তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই
– আমি চেষ্টা করছি উনাকে মা বলে ডাকতে তবুও কেনো পারছি না আজ ডাকবো ই,মিথিলা মনে মনে দশবার মিসেস আয়মন কে মা বলে ডেকে প্র্যাক্টিজ করে তার পর বল্লো
মিথিলা- মা আমি থাকতে আপনি কেনো রান্না করবেন, মেয়ে থাকতে মায়ের রান্না করা কি মানায়
মিসেস আয়মন এতো খুশি হলো যে খুশিতে হাত থেকে পানির ঘামলা টা পড়ে গেছে
তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মিথিলা কে বুকে টেনে নিয়ে বল্লো
আজ সত্যি আমার মেয়ের অভাব পুরোন হলো
মিথিলা বিব্রত বোধ করে বল্লো
– তা হলে রান্না টা আমি করি
মিসেস আয়মন- ঠিক আছে
মিথিলা- আপনি শুধু একবার বলুন কার জন্য কি রান্না করবো
মিথিলা মিসেস আয়মনের থেকে জেনে নিয়ে রান্না শুরু করলো
ইভানের জন্য ফ্রাইড রাইচ রাঁধতে গিয়ে ইহানের কথা মনে পড়ে গেলো, ফ্রাইড রাইচ ইহানের ও খুব পছন্দের খাবার ছিলো
মনে পড়ে যায় সেদিন ইহান মিথিলার হাতের রান্না খেয়ে কি খুশি টা ই না হয়ে ছিলো
সেদিন ইহান কিছু বলতে গিয়ে ও বলেনি তবু ও মিথিলা বুঝে নিয়েছে,ইহান আসলে এটা ই বলতে ছেয়ে ছিলো
আমার ভাগ্য ভালো যে তোকে ভালোবেসেছি বিয়ের পর তোর হাতের নতুন নতুন কতো আইটিমের রান্না খাবো,
কিন্তু আজ ও কোথায় কেউ জানে না,আজ আমি এই রান্না টা ই অন্য কারো জন্য রাঁধছি
মিথিলার মন টা ই খারাপ হয়ে গেলো,
রান্না শেষ করে সব গুলো রান্না নিজের হাতে টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে রাখলো
তার পর মিথিলা ফ্রেশ হতে চলে গেলো
ফ্রেশ হয়ে মিথিলা টেবিলে এসে তো অবাক ইভান আর আতাহার চৌধুরী এসে বসে আছে
মিসেস আয়মন- মিথিলা এরা বাপ বেটা আজ বাইরে খাবে ঠিক করেছে, কিন্তু তুই এতো কষ্ট করে রেধেছিস,তাই ওদের বলে দিয়েছি আজ রান্না টা তুই করেছিস না খেলে সব মিস হবে
মিথিলা- তাতে কি হয়েছে,, অন্য একদিন রান্না করতাম উনাদের জন্য
আতাহার চৌধুরী- বৌ মা নতুন বউয়ের নতুন হাতের রান্না প্রথম দিন সবাই মিলে খাওয়ার আনন্দ ই আলাদা
ইভান- কই মিথিল দাও তাড়া তাড়ি আমার তো আর তর সইছে না
মিথিলা ইভানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো
ইভান- কি হলো এ ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো খাবার সার্ভ করো
মিথিলা আর কিছু না বলে সবার প্লেটে খাবার উঠিয়ে দিলো
খাওয়া শুরু করলো সবাই
ইভান- উমমম এটা তো রেষ্টুরেন্টের রান্না কে ও হার মানাবে, আসলেই তুমি অনেক ভালো রাঁধুনি
আতাহার চৌধুরী- শুনেছি বৌমা সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকতো পড়া লেখা নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতো তা হলে এতো ভালো রান্না শিখলে কখন
মিথিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস আয়মন বল্লো
– বুঝেছো যে রাধে সে চুল ও বাধে
আতাহার চৌধুরী- হুম ঠিক বলেছো মুন
ইভান- আব্বু আমি ভাবছি নতুন বিজনেস স্ট্রাট করবো
ইভানের কথা কেউ ই বুঝেনি তাই আতাহার চৌধুরী বল্লো
– কি রকম বিজনেস
মিসেস আয়মন ছেলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লো
– আর তুই থাকবি সার্ভেন্ট, খাবার সার্ভ করবি
ইভান খেতে খেতে স্টাইল করে বল্লো
– না সার্ভেন্ট আমায় পুষাবে না, আমি তো হবো ম্যানেজার,
আতাহার চৌধুরী- তোর ফাজলামি রাখতো,বৌমা এসো তুমি আমাদের সাথে খেতে বসে যাও
মিথিলা- আজ আপনারা খান,আমি না হয় পরেই খাবো
মিসেস আয়মন- কিরে ইভু বসে বসে গিলছিস শুধু,যে কষ্ট করে রেঁধেছে তাকে খেতে বলছিস না যে
ইভান- আম্মু তুমি জানো না সে চাইলে তো আমি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো
ইভানের কথা শুনে মিথিলা লজ্জা পেয়ে কিচেন রুমের দিকে হাটা ধরলো
ইভান- পিছন থেকে মিথিলার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বল্লো
হা করো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমায়
মিথিলার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো
উফফ এই লোকটার মুখে কোন কথা আটকায় না,মা বাবার সামনে কেউ এমন কথা বলে
ইভান- কি হলো হা করো, ওহ আচ্ছা তুমি কি তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে
লজ্জা পাচ্ছো
মিথিলা- প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি নিজেই খেয়ে নিবো
মিসেস আয়মন- মিথিলা লজ্জা পাচ্ছিস কেনো খেয়ে নে আমরা বাপু তোর দিকে তাকাবো ও না,এই চোখ বন্ধ করলাম
আতাহার চৌধুরী- হুম আমি ও
মিথিলা আজ লজ্জার উপর লজ্জা পাচ্ছে
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, দারুন অস্বস্তিতে পড়ে গেলো
ইভান এবার জোর করেই মিথিলা কে খাইয়ে দিলো
মিথিলা কোন ভাবে এক লোকমা খেয়ে পানি খেয়ে রুমে চলে আসলো
রুমে এসেই মাথা নিচু করে বসে আছে আজকের মতো লজ্জা আমি আমার জীবনে ও পাইনি
পাশে ইভানের ফোন বেজেই চলছে অনেক্ষন থেকে
মিথিলা- উনার ফোন আসছে, উনাকে ডাকবো কি, না থাক উনি নিজেই আসবে, কিন্তু কল টা তো আমাদের বাড়ি থেকে এসেছে মনে হয় নির্ঝরিণী শয়তান টা কল করেছে
আমি কি কল ধরবো,উনার ফোন তার অনুমিত ছাড়া ধরবো? ব্যাপার টা কেমন যেন লাগছে
এমন সময় ইভান চলে আসলো,ফোন হাতে নিতে নিতে বল্লো
– কল টা রিসিভ করলেই তো
হতো
মিথিলা – না মানে আপনার ফোন আর আমি?
ইভান- থাক আর বলতে হবে না শালিকার সাথে কথা বলে নিই আগে
– ইয়েস মাই ডিয়ার শালিকা, বলো
নির্ঝরিণীর সাথে কথা বলতে বলতে ইভানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো
ইভান কথা শেষ করে লাইন অফ করে বল্লো
– মিথিলা রেডি হয়ে নাও তোমাদের বাড়িতে যাবো
মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
– মানে এখন? কিন্তু এখন কেনো যাবো
ইভান- সুইট হার্ট শ্বশুর বাড়িতে যেতে কি দিন খন সময় ঠিক করতে হয় নাকি যখন তখন যাওয়া যায়
মিথিলা ছেয়ে আছে ইভানের চোখের দিকে আজ প্রথম বার চার চোখের মিলন হলো, আজ মিথিলা সব লজ্জা সংকোচ ভুলেই ইভানের পানে ছেয়ে আছে, হয়তো ঐ চোখে কিছু খুঁজছে
ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– বাহ দারুন লাগছে তোমায় এসো আয়নার সামনে এসো সব গুলো একবার ট্রাই করে দেখবে
মিথিলা- না থাক সব গুলো ট্রাই করতে হবে না একটা হলেই চলবে
ইভান- তা হলে বাকি চশমা গুলো যে তোমার ছোঁয়া না পাওয়ার কষ্টে ধুমড়ে মুষড়ে শেষ হয়ে যাবে, প্লিজ মিথিল বিয়ের পর প্রথম তোমাকে কিছু দিলাম এটা ও তুমি ফিরিয়ে দিবে
মিথিলা আজ ইভানের আচরনে শকড এর উপর শকড পাচ্ছে
মিথিলা – আর কিছু বল্লো না
ইভান – স্যরি মিথিল
মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে ইভানের দিকে মুখে তার কোন কথা নেই
ইভান- তখনকার আচরনের জন্য স্যরি,আসলে ভুল টা আমার ই ছিলো, আমি আম্মু কে জিজ্ঞাস করলেই এতো প্রব্লেম হতো না
এবার মিথিলা একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো
– ইটস ওকে
ডক্টর বল্লো মিথিলা টেনশন করছে কিন্তু কি এমন টেনশন মিথিলা করছে,ও কি ওর বাবা মায়ের কথা বেশি ভাবছে,আমি কি জিজ্ঞাস করবো একবার,,আচ্ছা আমি এতো ভাবছি কেনো আমি ওর হাজবেন্ড এইটুকু জানার রাইট তো আমার থাকতেই পারে
ইভান- You can share with me your problem
মিথিলা ইভানের কথা শুনে চমকে উঠে ইভানের দিকে তাকায়,ইভান কি কিছু বুঝতে ফেরেছে, না বুঝার ই তো কথা
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমার কোন প্রব্লেম নেই,যে সেয়ার করবো আপনার সাথে
ইভান- তা হলে এমন ছুপ ছাপ থাকো কেনো সারা দিন
মিথিলা- আপনি মনে হয় জানেন না আমি ছুপ ছাপ থাকতে পছন্দ করি,আর বই পড়তে পছন্দ করি
ইভান- সেটা আমি আয়ানের কাছে শুনেছি,কিন্তু তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা ডুবে আছো
মিথিলা- না তেমন কিছুই না
ইভান মনের গভীরতা দিয়ে ভালোবাসা মেশানো কন্ঠে বল্লো
মিথিল আমি তোমাকে শুধু একজন ওয়াইফ হিসেবে চাই না
আমি তোমাকে চাই এজ আ ফ্রেন্ড এজ আ গার্ল ফ্রেন্ড এন্ড এজ এ গুড ওয়াইফ হিসেবে চাই,
আর তাই আমি তোমার সাথে আগে আমাদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করতে চাই, এই যে তুমি আমাকে দেখলে আতংকিত হও ভয় পাও এগুলা আমার ভালো লাগে না আর তুমি না কোথায় কোথায় কাঁদবে না
কান্না আমার পছন্দ না বুঝেছো
মিথিলা- হুম
ইভান- হুম নয়,পালটা প্রশ্ন করতে পারো না আমাকে,তোমার দেখছি তোমার বরের প্রতি কোন আগ্রহ নেই
এখন ই তো আমাদের দুজন দুজন কে বুঝার সময় যেহেতু আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ,এখন তো আর তেমন এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়না বললেই চলে,কিন্তু তুমি ও মা বাবার বাধ্য শন্তান আমি ও,তাই আমাদের এভাবে আদিকালি স্টাইলে বিয়ে হলো, আমি তোমাকে বুঝতে চাই মিথিলা
আচ্ছা তুমি কি কি বই পড়তে পছন্দ করো
মিথিলা- আমার তো সব বই পছন্দ তবে এখন সামনে পরিক্ষা তাই অন্য বই ইচ্ছে হলে ও পড়তে পারবো না, আচ্ছা আপনার কোন বই পড়তে ভালো লাগে
ইভান- আমার কথা বলে লাভ নাই আমি তোমার বীপরিত আমার বই পড়তে ভালো লাগে না
মিথিলা- সে কি আপনি তো আয়ান আর নির্ঝরিণীর মতো,তা দেশের বাইরে গিয়ে পড়লেন কি করে
ইভান- সে পড়েছি কোন ভাবে আব্বু আম্মুর ভয়ে
মিথিলা- কিন্তু আপনাদের মাঝে কথা শুনে তো মনে হয়না আপনি আব্বু আম্মু কে ভয় পান
ইভান- এটা তো ফান করি কিন্তু সিরিয়েসলি পড়াশুনার ব্যাপারে আব্বু আম্মু কখনো ছাড় দেয়নি
মিথিলা- ও, উনাদের কথা শুনে বুঝার উপায় নেই উনারা যে এতো স্টিক্ট
ইভান- না, কারন এই চশমা চোখের গভীরতা ঢেকে রাখে,যদি চোখের গভীরতা মাপতে না পারি, চোখের প্রেমে পড়তে না পারি,তা হলে সেটা কোন প্রেম ই নয়
মিথিলা- আপনি তো দার্শনিকদের মতো কথা বলেন দেখছি
ইভান- হুম তবে আমি দার্শনিক নয়,, আমি ইতিমধ্যে খোজ শুরু করেছি,শহরের সেরা চক্ষু ডক্টরের,যদি এখানে না হয় তা হলে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো,তার আগে তোমাকে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করাবো
মিথিলা হেসে বল্লো
– এখন আপনি চোখের ডাক্তার হবেন নাকি
ইভান মুগ্ধ নয়নে মিথিলার হাসি দেখছে
– সুইট স্মাইল
মিথিলা – লজ্জা পেয়ে হাসি থামিয়ে পেল্লো
ইভান, উফফ হাসির প্রশংসা না করলেই হতো,হাসি টা আর ও কিছুক্ষণ চলতো
– হুম বউ যখন চোখে দেখেনা তখন বরকে তো ডক্টর হতেই হবে
মিথিলা- শুনি আপনার চিকিৎসার নমুনা
ইভান- শুনাবো না, দেখাবো, যাস্ট ওয়েট করো শুধু
তার পর দুজনেই নিরব
আবার নিরাবতা ভেঙে ইভান বল্লো
– স্যরি
মিথিলা- এবার কিসের জন্য?
ইভান- বিয়ের আগে তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছি তাই
মিথিলা- তখন তো আপনি আমায় ছিনতেন না
ইভান- তবু ও একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করা ঠিক হয়নি
মিথিলা- সেদিন আপনি রিক্সা ওয়ালা মামার সাথে খারাপ বিহেভ করেছেন বেশি,স্যরি বলতে হলে উনাকে বলুন
ইভান- কিন্তু আমি উনাকে পাবো কোথায়
মিথিলা -আমাদের কলেজের সামনেই পাবেন
ইভান- আচ্ছা,সে না হয় ক্ষমা ছেয়ে নিবো তার কাছে,কিন্তু তুমি কি আমার স্যরি একসেপ্ট করেছো
মিথিলা- হুম মঞ্জুর করলাম
ইভান- হোয়াট মন. জু,হোয়াটএবার কি বললে
মিথিলা হেসে বল্লো
– একসেপ্ট করলাম
আপনি তো বাংলা ভাষায় কাছা
ইভান- আজ অব্দি কেউ বলেনি,তুমি খাটি বাংলা ভাষায় কথা বলেছো তাই বুঝতে পারিনি
সেদিন ওদের চমৎকার একটা রাত পার হয়,সারা রাত বেলকনিতে বসে গল্প করে শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে এলো,আজ প্রথম বার,ইভান মিথিলা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে
অনেক রাতে ঘুমানোর কারনে সকালে মিথিলার ঘুম দেরিতে ভাংগে
ঘুম ভেংগে মিথিলা অবাক, পুরো রুমের কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে,সব কিছু সবুজ, রুমের দেয়াল থেকে পর্দা পর্যন্ত সবুজ, একেবারে পুরো রুম সবুজে সবুজ
মিথিলা বিছানায় থ মেরে বসে আছে,রুমের এমন চেঞ্জ কেনো বুঝতে পারছে না মিথিলা
ইভান- বলে ছিলাম না, করে দেখাবো
মিথিলা- কি?
ইভান- আজ থেকে তোমার চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু,ডক্টর বলে চোখে প্রব্লেম হলে সবুজ শ্বাগ খেতে, সবুজ পাতার দিকে তাকাতে,কিন্তু আমি তোমার জন্য এই শহরে অরিজিনাল সবুজ পাচ্ছি না তাই,সবুজ রঙ নিয়ে এলাম,
তবে ছাদে অর্দেকের বেশি সবুজ বাগান করা হবে আজ থেকে তুমি প্রতি দিনের কিছু অংশ ছাদে কাটাবে,তখন যেন তোমার চোখে চশমা না থাকে
মিথিলা- এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি
ইভান- এখন চলো বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসো
মিথিলা খেতে গিয়ে আবার শকড খেলো
আজ নাস্তার আইটিমে সব সব্জি, সবুজ শ্বাক
মিথিলা- আমি তো এগুলা খাই না
মিসেস আয়মন- খেয়ে দেখনা, আমার পাগল ছেলে সকাল থেকে এতো সব আয়োজন করেছে তোর জন্য
মিথিলা আর কিছু বল্লো না, এই রকম খাবার স্বর্ন দিয়ে মেখে দিলে ও আমি খাইনা,কিন্তু না খেয়ে উপায় ও নেই উনি অনেক আশা নিয়ে এগুলা করেছে একটু তো খেতে হবে
ইভান- এই জন্য ই তো তুমি কারো সাথে মিশতে জানো না
মিথিলা আর কিছু বল্লো না মনটা তার খারাপ হয়ে গেছে, ক্লাস সেভেনে এক্সামের সময় ইহানের সাথে আমার পরিচয়, সেদিন ম্যাথ এক্সাম ছিলো আমি আমার মতো করে এক্সাম দিচ্ছি, এই ভাবে দেড় ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর পিছনের বেন্স থেকে কেউ একজন ফিস ফিস করে বল্লো
এই মেয়ে সব নাম্বার কি তুমি একা ই নিবে আমাদের কে একটু হেল্প করতে পারো না
মিথিলা তখন পিছনে ফিরে একটা ছেলে কে দেখতে পায় হুম এই ছেলেটা ই ছিলো ইহান,ইহান আগে ক্লাসে অনিয়মিত ছিলো কিন্তু মিথিলার সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত হয়ে যায়,
সেই এক্সাম হল থেকেই তাদের একটু একটু কথা আর একটু একটু বন্ধুত্ব শুরু হয় এক সময় বেষ্ট ফ্রেন্ডশিপ, এর মাঝে হৃদয় টা কখন আদান প্রদান হয়ে গেছে টের ই পায়নি কেউ,মিথিলার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় নিশ্বাস নিতে তার কষ্ট হচ্ছে মিথিলা চোখ বন্ধ করে ফেল্লো
ইভান মিথিলা কে ছুপ হয়ে যেতে দেখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিথিলার মুখটা বিষাদময়
– কি হয়েছে মিথিলা কোন সমস্যা
মিথিলা কোন জবাব দিলো না, আজ সকালে অরনিরা এসেছিলো তাদের কাছে থেকে মিথিলা জেনেছে ইহান কোথায় ওরা জানে না সেদিন নাকি ইহান বাড়ি যায়নি,ইহানের বাবা মা সুইজারল্যান্ড তাই তাদের সাথে ও যোগাযোগ করতে পারেনি,ইহান সেদিনের পর থেকে আর কলেজে ও আসেনি বলতে বলতে অরনি কেদে দিয়েছিলো
মিথিলা অরনিকে কিছুই বলতে পারেনি সে নিজেই ইহানের লাপাত্তা হওয়া টা মেনে নিতে পারছে না
গাড়ি চলছে মিথিলার বন্ধ চোখের পাতা বেধ করে টপ টপ করে পানি পড়ছে
ইভান অবাক হলো মিথিলার অবস্থা দেখে,এই তো কথা বলছিলো এর মাঝে আবার কি হলো সেটা ই বুঝতে পারছেনা ইভান
– মিথিলা এই মিথিলা
এতো কাছে থেকে ও ইভানের কথা গুলো তার কানে প্রবেশ করছে না
ইভান বিরক্ত হয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো, মেয়েটা কে খুব ইরিটিয়েড লাগে,,এই যুগে এমন বিরক্তিকর মানুষ ও আছে, কি এতো ভাবে সারা দিন কে জানে,
ইভানরা এসে পৌছে গেলো
– আমরা পৌছে গেছি,এবার তো একটু স্বাভাবিক হও,নইলে আব্বু আম্মু ভাববে আমি তোমার সাথে কি না কি করে ফেলেছি
মিথিলা কিছু বল্লো না নিঃশব্দে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলো
সন্ধায় সবাই এক সাথে গল্পের আসরে বসলো
গল্পের মাঝে মাঝে খাওয়ার জন্য আছে হালকা স্নেক্স
আতাহার চৌধুরী- বাবা দু দিনেই শালিকা দুলা ভাইয়ের মন জিতে নিয়েছে দেখছি,তা ও তো তোর কপাল ভালো, আমার তো কোন শালি ছিলো না, মুন কে বিয়ে করে কপালটা ই পুড়লো
মিসেস আয়মন, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আতাহার চৌধুরীর দিকে
– কি বল্লে তুমি
আতাহার চৌধুরী- কিছু বলিনি তো
মিসেস আয়মন- ছেলে আর ছেলের ভয়ের সামনে ইজ্জতের ফালুদা করতে না চাইলে মুখ সামলে কথা বলবে
আতাহার চৌধুরী- মনে থাকবে,এতো রাগছো কেনো মুন
মিসেস আয়মন – যেমন বাপ তেমন ছেলে,শালির প্রশংসা করছে আমার মিথিলা কম কিসের
ইভান- যাক বাবা কি এমন বললাম।দুলা ভাই হিসেবে এই টুকু বলা যাবে না
মিথিলা ওদের মাঝে নিরব দর্শক, কোন কথা ই তার মুখে নেই,বাবা ছেলে এমন কথা ও
বলতে পারে এ তার প্রথম শুনা
ইভান- আরেহ আম্মু আব্বু শুনো ই না, নির মানে আমার শালিকা আমায় উদ্ভট একটা উপহার দিয়েছে
মিসেস আয়মন- কি রকম?
ইভান- পায়রা,সাথে অদ্ভুত একটা যুক্তি
আতাহার চৌধুরী-পায়রা? তুই কিছু বলিসনি
ইভান- আমি গফুর চাচার পায়রার পরকিয়ার গল্প টা শুনিয়ে দিয়েছি
মিসেস আয়মন-হাসতে শুরু করে
শালি দুলা ভাই, দুজনের মাথার তার লুজ আছে
ইভান- আম্মুউউ
আতাহার চৌধুরী- হয়েছে এবার কাজের কথায় আসি
সবাই হাসি বন্ধ করে গম্ভীর হলো
আতাহার চৌধুরী- তোর বিয়ের আনন্দে অফিসে তেমন একটা কাজ হয়নি, অনেক কাজ পড়ে আছে
ইভান- নো প্রব্লেম আব্বু আমি কাল থেকেই
অফিসে জয়েন করবো
মিসেস আয়মন- কাল থেকে? না না আর কয়টা দিন যাক তার পর
আতাহার চৌধুরী- আমি ও তাই চাই,কিন্তু কন্সট্রাকশান সাইটে ইভান ছিলো, এতো দিন কাজ টা বন্ধ ছিলো আর কতো দিন বন্ধ থাকবে,যেহেতু প্রথম থেকে ইভান সেখানে আছে, সেহেতু আমি গেলে এখন প্রথম থেকে কাগজ পাতি সব ঘাটতে হবে,,
ইভান- কিছু করতে হবে না কাল থেকে আমি আছি,বিয়ে করেছি বলে আর কয়দিন বসে থাকবো
মিসেস আয়মন- মিথিলা তুই কিছু বলছিস না যে
মিথিলা- আমি কি বলবো উনি যা ভালো বুঝে
মিসেস আয়নন হতাশ হলেন মিথিলা এখন ইভানের মন অব্দি পৌছতে পারেনি এর মধ্যে ইভান কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লে তো মোটে ও সময় হবে না
-তুমি না বলে ছিলে এদের হ্যানিমুনে পাঠাবে সেটার কি হলো
হ্যানিমুনের কথা শুনে মিথিলার হার্টবিট বেড়ে যায়
ইভান- আম্মু এখন ওসব ছাড় পরে যাওয়া যাবে,অফিসের কাজ গুলো গুছিয়ে নিই তার পর যাবো
মিসেস আয়মন- তোদের যেমন ইচ্ছে
ইভান- ওকে আমি ফাইল গুলো এখনি আবার দেখে নিচ্ছি তা হলে কাল আর জামেলা থাকবে না।
ইভান উঠে রুমে চলে এলো
রুমে এসে ইভান পুরোনো সব ফাইল দেখতে শুরু করলো, কিন্তু সব গুলোর মাঝে ব্ল্যাক কালারের ফাইল টা না পেয়ে খুঁজতে শুরু করলো,ওটা তো কাবার্ডের দ্বিতীয় তাকে রেখেছিলাম এখন কোথায় গেলো
ইভান কাবার্ডের দ্বিতীয় তাকে মিথিলার শাড়ি গুলো ভাজ করা দেখতে পেলো কিন্তু ফাইল নেই
ইভান- মিথিলা এই মিথিলা এই দিকে আসো তো
মিসেস আয়মনের সাথে মিথিলা বসে ছিলো, ইভান ডাকছে শুনে মিসেস আয়মন খুশি হয়ে বল্লো
মিথিলা ফাইল খুঁজতে সামনের দিকে এগুচ্ছিলো আর ইভান চিন্তিত মুখে পিছু হাটছিলো
ইভানের ধাক্কা লেগে মিথিলা পড়ে যায়,সাথে চশমা টা চোখ থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়
ইভান রেগে যায়
– ইডিয়েট দেখে হাটতে পারো না এখন ফ্লরে বসে আছো উঠো, আর ফাইল টা এক্ষুনি খুজে দেবে
কিন্তু মিথিলার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই চশমা টা ভেঙে গেছে মিথিলা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত কাঁদছে মিথিলা চশমা টা তার কাছে মূল্যবান ছিলো,এই চশমা টা কখনো চোখ থেকে খুলবেনা কথা দিয়েছিলো ইহান কে,আজ চশমা টা ভেঙে গেলো
ইভান- এই মেয়ে একটাই চশমা ই তো বেঙেছে এতে এমন কান্নার কি আছে, এই রকম দশটা চশমা চলে আসবে আমার একটা ফোন কলে
মিথিলা কর্কশ কন্ঠে বল্লো
চশমা টা আপনার কাছে হেলা পেলা হলে ও আমার কাছে এর মূল্য আছে,সব কিছু টাকা দিয়ে বিচার করতে যাবেন না
ইভান- একদম লেকচার দিবে না উঠো বলছি
ইভানের ধমক শুনে মিথিলা উঠে দাঁড়ালো কিন্তু স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তার আগেই মিথিলা ঢলে পড়ে যাচ্ছিলো
ইভান বরাবর ই রাগি চোখেই মিথিলার দিকে তাকিয়েছিকো হঠ্যাৎ মিথিলা কে পড়ে যেতে দেখে ইভান ধরে ফেল্লো
-মিথিলা,কি হয়েছে তোমার চোখ খোল মিথিলা, মিথিলার কোন রেসপন্স না পেয়ে ইভান মিথিলাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলো
ইভান রুম থেকে একটু উচ্ছ স্বরে ডাকলো
– আব্বু. আম্মু, দেখে যাও মিথিলার কি হলো যেন
মিসেস আয়মন,আর আতাহার চৌধুরী এসে মিথিলাকে সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো
কি হয়েছে মিথিলার
ইভান- জানি না আম্মু, হঠ্যাৎ ই এমন হলো
মিসেস আয়মন- বললেই হলো,এমনি এমনি কেউ কেউ সেন্সলেস হয় না মিথ্যা বলিস না
আতাহার চৌধুরী- মুন আগে বৌমার জ্ঞান ফিরাতে হবে এই সব কথা ছাড়ো এখন
মিসেস আয়মন- হুম ঠিক বলেছো ডক্টর কে ফোন করো
ইভান- আম্মু ডক্টর ডাকতে হবে না,চোখে মুখে পানি মারো দেখবে সেন্স ফিরবে
মিসেস আয়মন- ছুপ, একদম ছুপ তোর কোন কথা নেই এখানে,
আতাহার চৌধুরী- ডক্টর কে কল করলো,কিছুক্ষন পর ডক্টর এসে পড়লো
ডক্টর মিথিলা কে দেখে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে বল্লো
– ভয়ের থেকে এমন হয়েছে, আর রোগী মনে হয় টেনশন করে অনেক, সব সময় মনমরা হয়ে থাকে এই জন্য,,স্বাভাবিক ভাবে রাখতে হবে উনাকে নইলে হার্টের প্রব্লেম দেখা দিতে পারে,একটু পরে ই জ্ঞান ফিরে আসবে, কোন চিন্তা করবেন না
ডক্টর চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে মিথিলার সেন্স ফিরে আসে
মিথিলা সেন্স ফিরতেই বল্লো
– আমার চশমা টা কি ফেলে দিয়েছেন
ইভান- হুম বুয়া এসে রুম টা পরিষ্কার করে নিলো,টেনশন করো না আমি বুঝতে পেরেছি চশমা ছাড়া তুমি চলতে পারো না,,চশমা এনে দিবো তোমায়
মিথিলা ছুপ হয়ে গেলো,,চশমা টা ফেলে দিয়েছে শুনে মবে খুব কষ্ট ফেলো ইহানের কথা মনে পড়ছে অনেক,মিথিলা বিড় বিড় করে বলছে ইহান আমি তোর কথা রাখতে পারিনি
মিসেস আয়মন- মিথিলা কিছু বলছো কি
মিথিলা – না
আতাহার চৌধুরী- বৌমা তুমি কি কোন ব্যাপারে খুব চিন্তিত
মিথিলা- না আমি ঠিক আছি
মিসেস আয়মন উঠে দাঁড়ালো, ইভু বুয়ার হাতে গরম দুধ পাঠিয়ে দিচ্ছি,মিথিলা কে খাইয়ে দিস
মিসেস আয়মন চলে গেলো
ইভান কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলো
নিজেই নিজের মনের সাথে কথা বলছে
– আমার এমন ব্যাবহার করা উচিত হয়নি মিথিলার সাথে, কয়দিন হলো মেয়েটা আসছে এখন ও তো কিছুই বুঝে উঠেনি, আমি আম্মু কে জিজ্ঞাস করলেই তো ফাইলটার সন্ধান পেয়ে যেতাম,আচ্ছা মিথিলা চশমা টা ভেংগে যাওয়াতে কষ্ট ফেলো কেনো, ওটা কি তার কাছে খুব স্পেশাল? হতে পারে
ইভান বেরিয়ে গেলো
মিথিলা এবার উঠে দাড়ালো,বুয়া অনেক আগেই দুধ দিয়ে গেছে মিথিলা পরে খাবে বলে রেখে দিয়েছে।
চশমার ভাঙা টুকরো গুলো কোথায় ফেলতে পারে ডাস্টবিন এ, কিন্তু ডাস্টবিন খুঁজে দেখতে গেলে যদি কেউ দেখে ফেলে
না তবু ও আমাকে দেখতে হবে ইহানের শেষ স্মৃতি ছিন্ন আমি ফেলে দিই কি করে
মিথিলা নিঃশব্দে হেটে ডাস্টবিনের কাছে যায় অনেক খুঁজে চশমার টুকরো গুলো পেলো,ভাগ্যিস সব গুলো টুকরো একড়া পলিথিন মুড়ানো ছিলো,এই জন্য মিথিলা নিশ্চিত ছিলো, সব গুলো ভাংগা অংশ এক জায়গা তেই আছে
মিথিলা রুমে ফিরে এলো,ভাংগা টুকরো গুলো মিলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,চশমা ছাড়া খালি চোখে নিপুন ভাবে কোন কাজ ই করতে পারে না মিথিলা চশমার টুকরো গুলো যত্ন করে রেখে দিলো মিথিলা
ইভান অনেক রাতে এলো,মিথিলার জন্য ডজন খানেক চশমা নিয়ে
মিথিলা- এতো চশমা নিয়ে আমি কি করবো
ইভান- আমি ও এতো গুলো আনতে চাইনি, কিন্তু চশমা চুজ করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম মনে হলো এটা না ওটা বুঝি তোমার চোখে ভালো মানাবে এভাবে সব গুলো দেখে মনে হলো এখানে সব চশমা ই তোমার চোখের জন্য পারফেক্ট
একটা করে চোখে দাও তো দেখি কোন টা তোমায় বেশি সুইট লাগবে
মিথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে,সত্যি আমি ইভান কে বুঝতে পারছি না,এই তো কয়েক ঘন্টা আগের ইভানের সাথে এখন কার ইভানের কোন মিল নেই,
এই ইভান কে দেখে মনে হচ্ছে যুগ যুগ এর সাথে কাটিয়ে দেয়া যায়
ইভান- হা করে দেখছো কি, এসো দেখি তো এই চশমা টা পরো চোখে
ইভান নিজে মিথিলার চোখে চশমা পরিয়ে দিলো
ইভান ছেয়ে আছে মিথিলার চোখের দিকে
মিথিলা ছেয়ে আছে ইভানের চোখের দিকে আজ প্রথম বার চার চোখের মিলন হলো,আজ মিথিলা সব লজ্জা সংকোচ ভুলেই ইভানের পানে ছেয়ে আছে,হয়তো ঐ চোখে কিছু খুজছে
পরদিন রিসেপশন পার্টি শেষে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরী ছেলে কে বুঝিয়ে মিথিলা কে নিয়ে পাঠিয়ে দিলো মিথিলাদের বাড়ি তে
ইভান গাড়ি ড্রাইভ করছে মিথিলা তার পাশের সিটে বসে আছে
ইভানের গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আয়ানের কথা মনে হলো
– তুমি কি তোমার বাড়িতে কথা বলেছো
মিথিলা- হুম মা আর বাবার সাথে বলেছি
ইভান- কেনো তোমার ভাইয়ের সাথে বলনি,ওরা তো তোমার ব্যাপারে ভিষন পজেটিভ
মিথিলা এবার ও ছুপ থাকলো
ইভান বুঝলো মিথিলা কথা বলতে চায় না তার সাথে, আচ্ছা এখন নায়া যদি আমার সাথে থাকতো তা হলে কি হতো,হয়তো এতোক্ষনে কথা দিয়ে আমাকে পাগল করে দিতো, ইসস যদি নায়া কে পেতাম জীবনে, আম্মু বলে মিথিলা আমার জন্য বেষ্ট কিন্তু আমি তা এক বিন্দু ও ফিল করতে পারছি না,
নায়ার চোখের গভীরতা মাপা যেতো, কিন্তু এই মেয়ে সারাদিন চশমা দিয়ে চোখ ঢেকে রাখে, লাইফে এমন একজন কে ছেয়েছিলাম যার চোখের মাঝে ডুব দেয়া যায়,পেয়েছি ও তাই,কিন্তু আব্বু আম্মুর কারনে পেয়ে ও হারাতে হলো
আরেহ আরেহ গাড়ি থামান, আমরা বাড়ি ক্রস করে চলে যাচ্ছি তো
ইভান- ইডিয়েট, সিট বেল্ট বাধনি কেনো, এখন মাথায় লেগেছে না
মিথিলা- না মানে লাগেনি তেমন, ঠিক আছি আমি
ইভান ঠিক আছে নামো আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি
মিথিলা – এখানে গাড়ি পার্ক করতে পারবেন না, এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে আমাদের বাজার,সেখানে একটা গ্যারেজ আছে,গ্যারেজের মালিক কে টাকা দিয়ে গাড়ি সেখানেই রাখতে হবে
ইভান – ড্যাম ইট, আগে বলোনি কেনো, তা হলে আসার সময় রেখে আসতাম, এখন আবার যাবো?
মিথিলা ছুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
ইভান- ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আমি গাড়ি
পার্ক করে আসছি
মিথিলা- গাড়ি এখন এখানে থাক আপনি ও আমার সাথে আসুন,পরে আয়ান কে সাথে নিয়ে গাড়ি রেখে আসবেন
ইভান- ঠিক আছে চলো
মিথিলা কে পেয়ে নির্ঝরিণী আর আয়ানের আনন্দ ধরে না
মিথিলা- কেমন আছিস তোরা
আয়ান- আপু ভালো ছিলাম না তোকে ছেড়ে,এখন ভালো আছি,
মাসুম ফারুকি বসে ইভানের সাথে কথা বলছে ঠিক কথা ও বলছে না দুজন ই ছুপ করে আছে ইভান বোর হচ্ছে,
নির্ঝরিণী – আমি বলেছি আপি
মিথিলা মনে মনে অনেক খুশি ইহানের কথা জানা যাবে ওরা আসলে
ইভান আর আয়ান ফিরে এলো
ইভান এসেই মিথিলা কে ডাকতে শুরু করলো
মিথিলা কই তুমি
মিথিলা – বলুন
ইভান – প্রচণ্ড খিধা লেগেছে খেতে দাও
ইভানের কথা শুনে মিথিলা ভ্রু কুঁচকে ইভানের দিকে তাকালো
ইভান- এমন গুন্ডি মার্কা চাহনিতে ছেয়ে না থেকে যাও খাবার রেডি করো
মিথিলা ভাবছে উনার আবার কি হলো হুট হাট রেগে যাওয়া মানুষ এতো মিষ্টি কথা বলছে কেনো
– মা খাবার দিয়েছে হয়তো,যা হাকিয়ে বললেন মা আর নির্জর শুনেছে
ইভান যেতে যেতে বল্লো তোমার বোনের সঠিক নাম টা কি বলো তো
মিথিলা কিছু বলার আগে নির্ঝরিণী বল্লো দুলা ভাই আমাকে আপি নির্ঝর বলে ডাকে, রেগে গেলে পুরো নাম ধরে নির্ঝরিণীইই বলে চিৎকার দেয়, আয়ান ডাকে নির বলে,মা ডাকে নির্ঝরী
বাবা তেমন কিছু বলে না, মা বলে কথা বলে বেশি
ইভান চেয়ার টেনে বসে খেয়ে খেতে বল্লো বাবা তোমার তো নামের গোডাউন দেয়া দরকার একটা ই নাম কতো ভাগ হলো,
বাই দ্যা য়ে,তোমার আপুর রাগ আছে নাকি
নির্ঝরিণী ভয়েজ টা আরেকটু নিচু করে অনেক ফিস ফিস ভাবে বল্লো
-রাগ আছে মানে একদম ধানিলংকা,দুলা ভাই সাবধান থাকবেন, আপনার জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে,না জানি কবে আপনি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যান
আয়ান এসে নির্ঝরিণীর শেষের কথা টা একটু শুনতে পায়
– ও নিয়ে তুই ভাবিস না নির,দুলা ভাই জ্বললে আপুর প্রেমে জলবে, এমনি এমনি না
ইভান হাসছে আর খাচ্ছে
মিথিলা- আয়ান খেতে বসলে কথা বলতে নেই জানিস না
আয়ান ফিক করে হেসে বল্লো
– আপ্পি তুই কথা টা দুলা ভাই কে বলেছিস তাই না
মিথিলা- বেশি বুঝিস কেনো আমি তোকে বলেছি
আয়ান- কিন্তু আমি তো খাচ্ছি না আমি কথা বলতে ই পারি খাচ্ছে তো দুলা ভাইয়া
মিথিলা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো
ইভান- নির তুমি জানো না আমি কথা কম বলা পছন্দ করি না
এবার মিথিলার কপাল আর ও কঞ্চিত হয়ে গেলো
বলছে কি লোক টা, আমার বাড়িতে এসে আমার ভাই বোন কে পেয়ে তার পাখা গজিয়ে গেছে, বাড়িতে তো সারা দিন রাগ দেখায়
মিথিলা আর কিছু না বলে চলে যায়
নির্ঝরিণী – দুলা ভাই, আমার আপি টা খুব ভালো,কিন্তু একটু কষ্ট করে তাকে বুঝে নিতে হবে
ইভান- হুম তোমার মতো শালি থাকতে দুলা ভাই কেনো কষ্ট করবে তুমি বুঝিয়ে বলো বোন কে,ইভান খাওয়া শেষ করে হাত মুছে উঠে দাঁড়ালো
নির্ঝরিণী – আপু রুমে আছে যান আপনি
ইভান চলে যায়
নির্ঝরিণী – কিছু বুঝলি ভাই
আয়ান- কি বুঝবো
আপু আর ভাইয়ার মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি
আয়ান- তা ঠিক বলেছিস, এখন কি করবো আমরা
নির্ঝরিণী – কি আর করবো,
ঘুমাচ্ছে মিথিলা আর ইভান গভীর রাতে ইভানের ঘুম ভেংগে যায় প্রচণ্ড গরমে,ফ্যানের বাতাস থেকে ও গরম হাওয়া বের হচ্ছে ইভান ঘামছে বিছানা ছেড়ে উঠে এদিক সেদিক হাটতে শুরু করে, মিথিলাদের বাড়িটা পুরোনো মডেলের রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা নেই
ইভান প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে মিথিলার উপরে
মিথিলা ঘুমাচ্ছে কোন খবর ই নেই তার পাশে একটা মানুষ ঘুমাচ্ছে না, সে কি করে ঘুমাতে পারে?
ইভান- এই মিথিলা, মিথিলা, মিথিলাআয়ায়া,
মিথিলা বেঘোর এ ঘুমাচ্ছে
ইভান একটু থেমে আবার ডাকতে শুরু করে
ইভান এদিক ওদিক পায়চারি করছে,তার পর একটু থেমে বল্লো
আমি ঘুমাতে পারছি না
মিথিলা- কেনো
ইভান- ঘরে এসি নেই,আমার এসি ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস নেই, আমি শিতের রাতে ও এসি চালিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাই আর এখানে গরমের মাঝে এসি নেই থাকো কি করে তোমরা
মিথিলা- দেখুন আমরা আপনাদের মতো বড় লোক নই যে ঘরে এসি লাগাবো, আমার বাবা খুব সামান্য বেতনে চাকরী করে,আর আমরা অনেক সুখিও শুধু এসির বাতাসের মধ্যে ঘুমালে কেউ সুখি হয় না
ইভান রেগে গিয়ে বল্লো
– ইডিয়েট তোমায় লেকচার দিতে বলিনি
মিথিলা ইভানের দিকে তাকিয়ে ছুপ হয়ে গেলো
ইভান- রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা নেই কেনো
মিথিলা- জানি না ইচ্ছে হলে আপনি একটা লাগিয়ে নিন,,মিথিলা রাগি স্বরেই বলেছে
ইভান- হা তাই তো করতে হবে দেখছি, দেখে তোমাকে খুব ইনোসেন্স মনে হলে ও আসলে তুমি মোটেও ইনোসেন্স নও, একটা লোভী নইলে এমনি এমনি কি আর আমার মতো বড়লোক ছেলে কে বিয়ে করো, মিডেল ক্লাস ঘরের মেয়েরা এমন লোভী হয় এটা তো আমার জানা ই ছিলো, এরা এদের ইনোসেন্স চেহারা দেখিয়ে বড় লোকদের মন গলিয়ে নেয়, যেমন আমার বাবা মা তোমাকে দেখে হয়েছিলো, চিন্তা করো না এক সপ্তাহ এর মধ্যে তোমাদের আদিকালের এই বাড়ি টা ভেংগে নতুন করে বাড়ি বানিয়ে দিবো,,তাতে তোমার বাবা মায়ের ও লাভ হবে, আর তুমি তো এই উদ্দেশ্য নিয়ে ই বিয়ে করেছো যেন বাবা মাকে হেল্প করতে পারো
মিথিলা পুতুলের মতো বসে ইভানের কথা গুলো শুনছিলো, আর চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছিলো, মিথিলা ইভান কে কিছু না বলেই ছুপ করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো, হয়তো কান্না লুকাচ্ছে মিথিলা
ইভান রাগে ক্ষোভে খাটের এক পাশে বসে পড়লো খুব রাগ হচ্ছে বাবা মায়ের উপর,বাকি রাত টা বসে বসেই পার করে দিয়েছে
ইভান সকাল বেলায় চলে যেতে ছেয়ে ছিলো, মাসুম ফারুকি আর ফাতেমা বেগম ঝোর করে খুব,তাই অনিচ্ছায় থেকে গেলেও শর্ত দিয়েছে বিকেলের মধ্যে চলে যাবে
সবাই শর্ত মেনে ও নিয়েছে
দুপুরে খাওয়ার পরে ইভান আর এক সেকেন্ড ও দেরি করেনি, চলে যাওয়ার জন্য রেডি হলো
নির্ঝরিণী – দুলা ভাই এই দুপুরে কেউ যায় শ্বশুর বাড়ি থেকে বলেন
ইভান- অনেক থেকেছি আর থাকতে পারবো না তা ছাড়া দুপুর কোথায় আড়াইটা বাজে বেরুতে বেরুতে তিনটা বেঝে যাবে যেতে যেতে চারটা ছুঁয়ে যাবে
নির্ঝরিণী আর কিছু বল্লো না,
মিথিলা যাওয়ার সময় মা বাবা কে ঝড়িয়ে ধরে খুব কাদলো
আয়ান- আপি আবার কবে আসবি
মিথিলা কিছু বল্লো না, সে নিজেই জানে না
আবার কবে আসতে দিবে তাকে
মিথিলা কে ছুপ করে থাকতে দেখে ইভান বল্লো
– তুমি বোন কে আসতে বললে দুলা ভাইকে বললে না যে
আয়ান- বোন আসলে দুলা ভাই না এসে আর পারবে না তাই
ইভান- বড্ড পেকে গেছো,আমরা খুব শিগ্রই আসবো বুঝলে,এখানে আমার শালা শালি কে রেখে যাচ্ছি না,ইভান হাসতে হাসতে ড্রাইভিং সিটে বসলো,যেই সিট বেল্ট বাধতে যাবে তখন ই নির্ঝরিণী কোথায় থেকে যেন দৌড়ে এসে বল্লো,গাড়ি স্ট্রাট দিবেন না প্লিজ
ইভান নির্ঝরিণী কে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো
নির্ঝরিণী – এটা আপনার জন্য দুলা ভাইয়া,আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা উপহার
ইভান দেখলো নির্ঝরিণীর হাতে একটা খাঁচা, আর ভিতরে দুই টা পায়রা
– পায়রা? পায়রা দিয়ে কি করবো? আর পায়রা ও কি উপহার হতে পারে
নির্ঝরিণী -গুনি জ্ঞানিরা যদি ও বলে ফুল ভালোবাসার প্রতিক, কিন্তু নির্ঝরিণী একজন বিখ্যাত গুনি মানুষ,সে রিসার্চ করে দেখলো,পায়রা হচ্ছে ভালোবাসার অন্যতম প্রতিক,
ইভান- বুঝাও
নির্ঝরিণী – এই ধরুন আপনি কবুতর গুলো পুষবেন, আর রোজ এদের ভালোবাসা ময় মুহুর্ত গুলো দেখবেন এরা পুরুষ কবুতর টা মেয়ে কবুতর টা কে খুব ভালোবাসে,আবার মেয়ে কবুতর টা ও পুরুষ কবুতর কে ভালোবাসে, এরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না, এদের কে দেখে আপনাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে
ইভান অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো, তার পর হাসি থামিয়ে বল্লো
– শুনো গুনি মানুষ তোমায় একটা গল্প শুনাই, এই যে আমাদের বাসায় পরিচারক গফুর চাচা, পায়রা পুষতো, তো একদিন কি হলো শুনো,
এক খাঁচার পুরুষ পায়রা,অন্য খাঁচার মেয়ে পায়রার সাথে পালিয়ে গেলো(পরকিয়া)
অবশেষে দুই খাঁচা তে একা একটা পুরুষ পায়রা আর মেয়ে পায়রা ছিলো,তো তারা দুজন একা না থেকে দুজনে সংসার শুরু করলো মেয়েরা পায়রা যখন ডিম পেড়ে তা দিতে বসলো
তখন পালিয়ে যাওয়া মেয়ে পায়রা টা ফিরে এলো, এবার পুরুষ পায়রা টা তাকে প্রথমে ঠোকরা তো,পরে পরে ও দুটো বউ নিয়ে ই সংসার শুরু করলো, তার ও দু মাস পরে ফিরে আসা মেয়ে পায়রা টা, বেনামি উড়ে আসা একটা পুরুষ পায়রার সাথে ভেগে গেলো
ইভান কথা শেষ করে আবার হাসতে শুরু করলো,
নির্ঝরিণী হাসলো না মুখ টা কালো করে বল্লো
– ঠিক আছে নিতে হবে না আপনাকে
ইভান হাসি থামিয়ে বল্লো
– আরেহ আরেহ যাচ্ছো কেনো দাও আমি নিবো শালিকার দেয়া কোন জিনিষ ফিরিয়ে দিতে নাই,তা হলে ভিটামিন শালিস এর অভাবে দিল কালা রোগ হয়
এবার আয়ান নির্ঝরিণী দুজনে এক সংগে হেসে উঠলো,
ইভান পায়রা গুলো নিয়ে গাড়ির পিছনে রেখে সামনে এসে গাড়ি স্ট্রাট করলো
গাড়ি চলছে ইভানের দৃষ্টি সামনে,
ইভান- তোমার বোন তো অনেক বেশি কথা বলে আর হাসাতে ও পারে,তুমি তো দেখছি কিছুই জানো না
মিথিলা- পড়া ও ফাকি দিতে জানে
ইভান- ও তা হলে তুমি পড়া ফাঁকি দাও না
মিথিলা- মোটেও না আমি সব সময় ক্লাসের ফাষ্ট গার্ল ছিলাম, আর আমার কখনো কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে হতো না,আপনা আপনিই আমার অনেক ফ্রেন্ড হয়ে যেতো