খেলাঘর পর্ব-১৯

0
2180

খেলাঘর পর্ব-১৯
লেখা- সুলতানা ইতি

এই রকম খাবার স্বর্ন দিয়ে মেখে দিলে ও আমি খাই না কিন্তু না খেয়ে উপায় ও নেই উনি অনেক আশা নিয়ে এগুলা করেছে একটু তো খেতে হবে

ইভান- খেতে টেষ্টি লাগছে না মিথিলা

মিথিলা শুধু মাথা নাড়ালো

ইভান- উহ হু মাথা নাড়ালে হবে না,, বলো যে খেতে ইয়ামি হয়েছে

মিথিলা- (ইসস ইয়ামি না ছাঁই, না খেয়ে থাকলে ও তো আমি এই সব খাবার খাই না,)হুম ইয়ামি হয়েছে

মিসেস আয়মন, আর আতাহার চৌধুরী দুজনেই খুব খুশি ছেলের পরিবর্তন দেখে

খাওয়া শেষ করে মিথিলা রুমে এলো, ইভান ও এসেছে এসেই অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো

ইভান শার্ট পরতে পরতে বল্লো
– এ ভাবে বসে না থেকে আমাকে রেডি হতে একটু হেল্প করতে পারো তো

মিথিলা- আপনি তো রেডি হচ্ছেন ই আমি কি হেল্প করবো

ইভান- উফফ কিচ্ছু বুঝে না বউটা আমার,ঘড়ি, ওয়ালেট, এগিয়ে দিতে পারো

মিথিলা- কিন্তু আপনি নিজেই তো ওগুলা রাখেন,আপনি জানেন সেগুলা কোথায়, তা হলে আমাকে এগিয়ে দিতে হবে কেনো

ইভান- উফফ বউ টা আমার একদম আনরোমান্টিক, দাও তো টাই টা পরিয়ে দাও আমায়

মিথিলা- সে কি আপনি টাই লাগাতে জানেন না,তা হলে এতো দিন কে লাগিয়ে দিয়েছিলো

ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
– এতো কথা না বলে টাই টা লাগিয়ে দিলেই তো পারো

মিথিলা- কিন্তু আমি তো এগুলা পারিনা,

ইভানের এখন মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে তবুও মাথা ঠান্ডা করে বল্লো
– কোন ব্যাপার না, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে কি করে টাই বাধতে হয়, এর পর থেকে কিন্তু টাই তোমাকেই বেধে দিতে হবে

মিথিলা বোকার মতো তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে
ইভান- হেভলির মতো তাকিয়ে না থেকে আমাকে কেমন লাগছে বলো

মিথিলা- ভালো

ইভান মিথিলার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বল্লো, আমার হেভলি বউ টা এমন হাভা বোবা হয়ে থাকে কেনো

ইভান মিথিলার অনেক কাছে চলে এসেছে, যতো টা কাছে এলে একে অপরের নিশ্বাস অনুভব করতে পারে

মিথিলা নিশ্বাসবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, এদিক ওদিক শরে যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই

ইভান মিথিলার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিতে দিতে বল্লো
– শুনো হেভলি বউ আমি যাওয়ার পরে একদম বই নিয়ে বসবে না পরিক্ষার এখন ও অনেক দিন বাকি, অতএব এখন না পড়লে ও চলবে,

মিথিলা কিছু বলতে যাচ্ছিলো
ইভান তার ঠোঁটে আংগুল দিয়ে বল্লো শুসসস ছুপ করে থাকো আমি বলছি শুনো
সময় কাটানোর জন্য আম্মুর সাথে কথা বলতে পারো জানো ই তো তুমি আম্মুর কতো টা পছন্দের

নিচের দিকে তাকিয়ে বই পড়লে চোখে প্রব্লেম হবে এই জন্য ই তোমার এতো বেশি পাওয়ারের চশমা পরতে হয়

এই জন্য বলছি এখন বই পড়তে বসো না, বুঝেছো আমার হেভলি বউ

মিথিলা বরফের মতো জমে আছে, কোন কথা ই শরছে না মুখ দিয়ে

ইভান এবার মিথিলার কাছে থেকে শরে গিয়ে বল্লো
– তোমার আটকে রাখা নিশ্বাস টা এবার ফেলতে পারো,এভাবে দমবন্ধ করে রাখার কিছু নেই আমি তোমাকে খেয়ে পেলবো না, এই বলে ইভান বেরিয়ে গেলো

মিথিলা তখন ও মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে
,ইভানের এমন আচরনে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড
কতোক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো মিথিলার খেয়াল নেই
তার পর হুস ফিরে পেয়ে মিথিলা কি করবে ভাবছিলো মনে হলো ইভান বলেছি মিসেস আয়মনের সাথে কথা বলতে

মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মিসেস আয়মন কিচেনে আছে
এই বাড়িতে সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার টা বুয়া তৈরী করে, আর দুপুরের টা মিসেস আয়মন নিজেই রান্না করে

মিথিলা- আজকের রান্না টা কি আমি করতে পারি

মিসেস আয়মন- কোন দরকার নেই আমি পারবো, যতো দিন তুমি আমায় মা বলে না ডাকছো ততদিন তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই

– আমি চেষ্টা করছি উনাকে মা বলে ডাকতে তবুও কেনো পারছি না আজ ডাকবো ই,মিথিলা মনে মনে দশবার মিসেস আয়মন কে মা বলে ডেকে প্র্যাক্টিজ করে তার পর বল্লো

মিথিলা- মা আমি থাকতে আপনি কেনো রান্না করবেন, মেয়ে থাকতে মায়ের রান্না করা কি মানায়

মিসেস আয়মন এতো খুশি হলো যে খুশিতে হাত থেকে পানির ঘামলা টা পড়ে গেছে
তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মিথিলা কে বুকে টেনে নিয়ে বল্লো
আজ সত্যি আমার মেয়ের অভাব পুরোন হলো
মিথিলা বিব্রত বোধ করে বল্লো
– তা হলে রান্না টা আমি করি

মিসেস আয়মন- ঠিক আছে

মিথিলা- আপনি শুধু একবার বলুন কার জন্য কি রান্না করবো

মিথিলা মিসেস আয়মনের থেকে জেনে নিয়ে রান্না শুরু করলো
ইভানের জন্য ফ্রাইড রাইচ রাঁধতে গিয়ে ইহানের কথা মনে পড়ে গেলো, ফ্রাইড রাইচ ইহানের ও খুব পছন্দের খাবার ছিলো

মনে পড়ে যায় সেদিন ইহান মিথিলার হাতের রান্না খেয়ে কি খুশি টা ই না হয়ে ছিলো
সেদিন ইহান কিছু বলতে গিয়ে ও বলেনি তবু ও মিথিলা বুঝে নিয়েছে,ইহান আসলে এটা ই বলতে ছেয়ে ছিলো
আমার ভাগ্য ভালো যে তোকে ভালোবেসেছি বিয়ের পর তোর হাতের নতুন নতুন কতো আইটিমের রান্না খাবো,

কিন্তু আজ ও কোথায় কেউ জানে না,আজ আমি এই রান্না টা ই অন্য কারো জন্য রাঁধছি
মিথিলার মন টা ই খারাপ হয়ে গেলো,

রান্না শেষ করে সব গুলো রান্না নিজের হাতে টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে রাখলো

তার পর মিথিলা ফ্রেশ হতে চলে গেলো
ফ্রেশ হয়ে মিথিলা টেবিলে এসে তো অবাক ইভান আর আতাহার চৌধুরী এসে বসে আছে

মিসেস আয়মন- মিথিলা এরা বাপ বেটা আজ বাইরে খাবে ঠিক করেছে, কিন্তু তুই এতো কষ্ট করে রেধেছিস,তাই ওদের বলে দিয়েছি আজ রান্না টা তুই করেছিস না খেলে সব মিস হবে

মিথিলা- তাতে কি হয়েছে,, অন্য একদিন রান্না করতাম উনাদের জন্য

আতাহার চৌধুরী- বৌ মা নতুন বউয়ের নতুন হাতের রান্না প্রথম দিন সবাই মিলে খাওয়ার আনন্দ ই আলাদা

ইভান- কই মিথিল দাও তাড়া তাড়ি আমার তো আর তর সইছে না

মিথিলা ইভানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো
ইভান- কি হলো এ ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো খাবার সার্ভ করো

মিথিলা আর কিছু না বলে সবার প্লেটে খাবার উঠিয়ে দিলো
খাওয়া শুরু করলো সবাই

ইভান- উমমম এটা তো রেষ্টুরেন্টের রান্না কে ও হার মানাবে, আসলেই তুমি অনেক ভালো রাঁধুনি

আতাহার চৌধুরী- শুনেছি বৌমা সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকতো পড়া লেখা নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতো তা হলে এতো ভালো রান্না শিখলে কখন

মিথিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস আয়মন বল্লো
– বুঝেছো যে রাধে সে চুল ও বাধে

আতাহার চৌধুরী- হুম ঠিক বলেছো মুন

ইভান- আব্বু আমি ভাবছি নতুন বিজনেস স্ট্রাট করবো

ইভানের কথা কেউ ই বুঝেনি তাই আতাহার চৌধুরী বল্লো
– কি রকম বিজনেস

ইভান মুচকি হেসে বল্লো
– হোটেল হোটেল,যেখানে মিথিলা থাকবে রাঁধুনি

মিসেস আয়মন ছেলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লো
– আর তুই থাকবি সার্ভেন্ট, খাবার সার্ভ করবি
ইভান খেতে খেতে স্টাইল করে বল্লো
– না সার্ভেন্ট আমায় পুষাবে না, আমি তো হবো ম্যানেজার,

আতাহার চৌধুরী- তোর ফাজলামি রাখতো,বৌমা এসো তুমি আমাদের সাথে খেতে বসে যাও

মিথিলা- আজ আপনারা খান,আমি না হয় পরেই খাবো

মিসেস আয়মন- কিরে ইভু বসে বসে গিলছিস শুধু,যে কষ্ট করে রেঁধেছে তাকে খেতে বলছিস না যে

ইভান- আম্মু তুমি জানো না সে চাইলে তো আমি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো

ইভানের কথা শুনে মিথিলা লজ্জা পেয়ে কিচেন রুমের দিকে হাটা ধরলো

ইভান- পিছন থেকে মিথিলার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বল্লো
হা করো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমায়

মিথিলার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো
উফফ এই লোকটার মুখে কোন কথা আটকায় না,মা বাবার সামনে কেউ এমন কথা বলে

ইভান- কি হলো হা করো, ওহ আচ্ছা তুমি কি তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে
লজ্জা পাচ্ছো

মিথিলা- প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি নিজেই খেয়ে নিবো

মিসেস আয়মন- মিথিলা লজ্জা পাচ্ছিস কেনো খেয়ে নে আমরা বাপু তোর দিকে তাকাবো ও না,এই চোখ বন্ধ করলাম

আতাহার চৌধুরী- হুম আমি ও

মিথিলা আজ লজ্জার উপর লজ্জা পাচ্ছে
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, দারুন অস্বস্তিতে পড়ে গেলো

ইভান এবার জোর করেই মিথিলা কে খাইয়ে দিলো
মিথিলা কোন ভাবে এক লোকমা খেয়ে পানি খেয়ে রুমে চলে আসলো

রুমে এসেই মাথা নিচু করে বসে আছে আজকের মতো লজ্জা আমি আমার জীবনে ও পাইনি
পাশে ইভানের ফোন বেজেই চলছে অনেক্ষন থেকে
মিথিলা- উনার ফোন আসছে, উনাকে ডাকবো কি, না থাক উনি নিজেই আসবে, কিন্তু কল টা তো আমাদের বাড়ি থেকে এসেছে মনে হয় নির্ঝরিণী শয়তান টা কল করেছে

আমি কি কল ধরবো,উনার ফোন তার অনুমিত ছাড়া ধরবো? ব্যাপার টা কেমন যেন লাগছে
এমন সময় ইভান চলে আসলো,ফোন হাতে নিতে নিতে বল্লো
– কল টা রিসিভ করলেই তো
হতো
মিথিলা – না মানে আপনার ফোন আর আমি?

ইভান- থাক আর বলতে হবে না শালিকার সাথে কথা বলে নিই আগে

– ইয়েস মাই ডিয়ার শালিকা, বলো
নির্ঝরিণীর সাথে কথা বলতে বলতে ইভানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো
ইভান কথা শেষ করে লাইন অফ করে বল্লো
– মিথিলা রেডি হয়ে নাও তোমাদের বাড়িতে যাবো

মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
– মানে এখন? কিন্তু এখন কেনো যাবো

ইভান- সুইট হার্ট শ্বশুর বাড়িতে যেতে কি দিন খন সময় ঠিক করতে হয় নাকি যখন তখন যাওয়া যায়

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে