Wednesday, August 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2344



খেলাঘর পর্ব-১৫

0

খেলাঘর পর্ব-১৫
লেখা-সুলতানা ইতি

নির্ঝরিণী কাঁদছে ভাই কে ঝড়িয়ে ধরে তাদের কান্নার তালে অন্ধকার থেকে আলো তে পরিনত হচ্ছে
আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো নির কাঁদিস না,চল আপু কে ফোন করি

নির্ঝরিণী – এতো সকাল সকাল ফোন দেয়া টা কি ঠিক হবে তা ছাড়া আপুর তো ফোন নেই, কার ফোনে দিবি

আয়ান- আমি বিয়ের দিন এক পাকে দুলা ভাইয়ের থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়েছি

নির্ঝরিণী – তবু ও এখন কল দেয়া ঠিক হবে না ভাই,দুলা ভাইয়া ব্যাপার টা হয় তো ভালো ভাবে নিবে না

আয়ান- তা হলে আরেকটু পরে দিবো কি বলিস
নির্ঝরিণী – সেটাই ভালো

সকাল আট টা বেজে গেছে, এ বাড়িতে সবাই এখন ও নিরব কেনো? মিথিলা বুঝতে পারছে না,,মিথিলা একটু ঘুমাতে চাইলে ও ঘুম হয়নি তার,
উঠে রুমের সব কিছু দেখতে লাগলো, ইভানের সব কিছু পরিপাটি বুঝা ই যাচ্ছে ইভান অগোছালো নয়, পুরো ইহানের উলটো,ইহান কোখন ই গোছানো ছিলো না

উফফ আবার ভাবছি ইহানের কথা, একা থাকলে ইহানের চিন্তা মাথা থেকে ফেলতে পারবো না,মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে কিচেন রুমের দিকে গেলো,বুয়া কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে
বুয়া মিথিলা কে দেখে বল্লো
-বউমনি কিচেনে আসলেন কেন,আম্মা দেখলে আমাকে বকা দিবে

মিথিলা- উনারা কেউ উঠেনি

বুয়া- হুম এতোক্ষনে উঠে যাওয়ার কথা আমার নাস্তা হয়ে গেছে টেবিলে দিচ্ছি আপনি গিয়ে বসুন

মিথিলা কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো
ফিরে এলো রুমে সবার আগে গিয়ে টেবিলে খাবারের জন্য বসে থাকবে ব্যাপার টা মিথিলার কাছে ভালো লাগেনি,ইভান তখন ও ঘুমাচ্ছিলো,
আমি কি উনাকে ডাকবো? ডাকলে যদি রেগে যায়,আবার না ডাকলে ও কেমন দেখায় নাস্তার সময় তো অনেক আগেই হয়েছে
– এই যে শুনছেন, এই যে শুনুন, উঠে পড়ুন একটু পরে নাস্তার জন্য ডাকবে হয়তো

ইভান এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে শুলো,
মিথিলা- কি ঘুম রে ভাভা, এই যে আটটার বেশি বাজে এখন ও শুয়ে থাকবেন, উঠুন

ইভান এবার আর শুয়ে না থেকে উঠে বসলো
মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– শুনো আমার একটা নাম আছে ইভান, আম্মু আব্বু ইভু বলে ডাকে তুমি ইভান বললেই চলবে, এভাবে এই যে শুনুন এগুলা কি বলে ডাকছো দাদি মার্কা কথা সব,
আর শুনো কি আপনি আপনি করছো তুমি করে বলবা ইহান এক নিশ্বাসে কথা গুলো শেষ করে ওয়াশ রুমে গেলো

বুয়া এসে মিথিলা কে ডেকে গেলো
মিথিলার লজ্জা লাগছিলো সবার সামনে যেতে তবু ও না যেয়ে উপায় নেই, কিন্তু একা যাবো না উনি আসলে সাথে যাবো, কিন্তু উনি তো আমায় এক্ষুনি কতো গুলো কথা শুনালো, রাতে মনে হলো উনি সেদিনের ছেলেটি নয়,সকালে ধারনা চেঞ্জ করে দিলো কেমন মানুষ উনি আমি দাদি মার্কা কথা বলি

মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবছে
ইভান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষন মিথিলার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলো মিথিলা যে বাস্তব জগতে নেই সেটা ইভান খুব ভালো ভাবেই বুঝেছে ইভান মিথিলা কে না ডেকেই ডাইনিং এ চলে আসলো নাস্তা করার জন্য
মিসেস আয়মন- ইভু বৌ মা কই ঘুম থেকে উঠেনি

ইভান – রুমে আছে
আতাহার চৌধুরী- এ কেমন কথা ইভু নতুন বউ কে রুমে রেখে তুই একা নাস্তা করতে চলে এলি, যা গিয়ে বউ মা কে নিয়ে আয়

ইভান একরাশ বিরক্তি নিয়ে মিথিলা কে ডাকতে গেলো
মিথিলা তখন ও দাঁড়িয়ে ভাবছিলো
ইভান মিথিলার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বল্লো এই মিস ভাবুক কি ভাবছো এতো,

ইভানের কথায় মিথিলা চমকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়
ইভান – তুমি তো জানতে ই নাস্তা রেডি হয়েছে তা হলে টেবিলে না গিয়ে রুমে এসে কি ভাবছিলে

মিথিলা কিছু বল্লো না
ইভান – ঠিক আছে বলতে হবে না আসো আব্বু আম্মু বসে আছে তোমার জন্য

মিথিলা আর ইভান গিয়ে পাশা পাশি চেয়ারে বসলো
আতাহার চৌধুরী- গুড মর্নিং মা
মিথিলা বিব্রত হয়ে বল্লো
মর্নিং

মিসেস আয়মন নিজ হাতে মিথিলার প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বল্লো, একদম লজ্জা করবে না মা এই বাড়িটা তোমার নিজের বাড়ির মতো করে থাকবে, কোন অসুবিধা হলে ইভান কে বলবে সে যদি তোমার কথা না শুনে তা হলে আমাকে বলবে তার ঘাড় তেড়ামি ছাড়িয়ে দিবো

ইভান- আম্মু এটা তুমি ঠিক করলে না,দল চেঞ্জ করলে কেনো

মিসেস আয়মন- দল চেঞ্জ করলাম কোথায়,তুই কথা না শুনলে তোকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি।

ইভান- তোমার পক্ষ পাতিত্ব কথা শুনবো না আমি

মিসেস আয়মন- তুই শুনবি তোর বাপ শুনবে
আতাহার চৌধুরী জুস খাচ্ছিলো স্ত্রী কথা শুনে উনার কাশি শুরু হলো

মিসেস আয়মন- তোমার আবার কি হলো

আতাহার চৌধুরী- আমি তো তোমার কথা শুনি তবু ও বৌমার সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা না করে শান্তি পাচ্ছো না তাই তো

মিসেস আয়মন- বেশ করেছি, শুনো বৌ মা, তোমাকে খুব চালাক হতে হবে, নইলে ইভান কে টাইট দিয়ে রাখতে পারবে না,পুরুষ মানুষ কে যদি কড়া শাষনে না রাখো তা হলে এরা তোমার মাথায় লবন রেখে বরই খাবে
বুঝেছো

মিথিলা আস্তে করে বল্লো
– হুম
মিসেস আয়মন- হুম কি,তুমি কিচ্ছু বুঝোনি,কোন ব্যাপার না আমি আছি তো সব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য,আর শুনো কখনো আমাকে শ্বাশুড়ি ভাববে না,মা ভাববে মায়ের থেকে বেশি বান্ধুবী ভাববে তা হলে অবলিলায় সব কথা বলতে পারবে, বুঝেছো

মিথিলা খাবার বন্ধ করে থ মেরে বসে আছে শ্বাশুড়িরা এমন হয় তার জানা ছিলো না,সবার কাছে শুনলাম শ্বাশুড়ি হয় দজ্জাল মার্কা আর ইনি তো দজ্জাল কি করে হতে হয় সেটা শিখাচ্ছে,

মিথিলার এমন অবস্থা দেখে আতাহার চৌধুরী বল্লো – বউ মা অবাক হচ্ছো তাই না,অবাক হওয়ার কিছু নেই তোমার শ্বাশুড়ি এমন ই, থাকতে থাকতে বুঝতে পারবা

তার পর আতাহার চৌধুরী ইভান কে বল্লো
– হ্যানিমুন প্ল্যান কোথায় করলি

ইভানের খাবার নাকে উঠে যায় কাশি শুরু হয়ে গেলো, তার পর পানি খেয়ে বল্লো
– আব্বু মুখে একটু লাগাম দাও, কি যে বলো তুমি

আতাহার চৌধুরী- কেনো লজ্জা পাচ্ছিস শুন,আমার তো আর ছেলে মেয়ে নেই যে তাদের মাধ্যমে তোর মনের ইচ্ছে জানবো,তাই কোন লজ্জা নয় বল হ্যানিমুনে কোথায় যাবি

ইভান – এখন ও ভাবিনি পরে ভেবে বলবো

বাবা ছেলের কথা শুনে মিথিলার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো

আতাহার চৌধুরী- ঠিক আছে দেরি হলে ও চলবে কাল তোদের রিসেপশন, তার পর তুই তোর শ্বশুর বাড়ি যাবি বউ মাকে সাথে নিয়ে আর…..

আতাহার চৌধুরী কে কথা শেষ করতে না দিয়ে ইভান বল্লো
– অসম্ভব আমি কিছুতেই ওদের বাড়িরে যেতে পারবো না

আতাহার চৌধুরী- কঠোর হয়ে বল্লো
– আমি তোর মতা মত চাইনি, আদেশ করেছি,আশা করি তুমি আমার কথা অমর্যাদা করবে না,সে শিক্ষা তোমাকে আমরা দিই নি

ইভান নাস্তা পুরো কম্পলিট না করেই বেরিয়ে যায়
মিথিলার ও আর খাওয়া হয়নি,রুমে চলে আসে ইভানের আচরণ মিথিলা কে খুব ভাবাচ্ছে, তাহলে কি ইভান বিয়েতে রাজি ছিলো না এই জন্য ই কি বিয়ের আগে রিতি অনুযায়ী আমায় দেখতে যায়নি, নাকি সাথে নেয়া হয়নি,বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে
এদিকে ইহানের ও কোন খবর পাচ্ছি না সেদিন যে রাগি লুক নিয়ে বেরিয়েছে আল্লাহ জানে কেমন আছে ইহান, অরণি সাম্মি রাহি কারো সাথে কথা বলতে পারিনি, তবু ও কোন খবর পেতাম, এখন বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই

ইভান বাসা থেকে বেরিয়ে নির্জন একটা জায়গায় এসে বসে পড়ে,আব্বু আম্মু কেনো এমন করেছে আমার সাথে শুধু বিয়েটা দিয়ে ওরা খান্ত হয়নি কি সব রিছুয়ালস সব মানতে হবে , একটা মাত্র সন্তান আমি তাদের আমার ইচ্ছের ও কোন দাম নেই
ইভানের মোবাইল টা বেজে যাচ্ছে আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করছে না
বার বার কল আসছে দেখে রিসিভ করলো
রাগি কন্ঠে বল্লো
– হ্যালো কে
– আসসালামু আলাইকুম দুলা ভাই আমি আয়ান, কেমন আছেন

আয়ানের নামটা শুনে ইভান আর ও বিরক্ত হয়ে যায় তবু ও নিজেকে কন্ট্রোল করে বল্লো
– হুম বলো
– কেমন আছেন আপনি দুলা ভাই
– ভালো,তুমি কিছু বলবে?
– আপুর সাথে কথা বলবো
– আমি বাইরে বাসার নাম্বারে কল দাও এই বলে ইভান কল অফ করে দেয়

আপির সাথে কথা বলবে, ইসস মনে হচ্ছে আমি আপির সেক্রেটারি, অর্ডার করছে আমাকে,ঐ মেয়ের জন্য আমার লাইফ টা হেল হয়ে গেলো, কি পেয়েছে আব্বু আম্মু ওর মাঝে ওকেই বিয়ে করতে হবে আর কাউকে না

নির্ঝরিণী – কি বল্লো আয়ান?
মন খারাপ করে আয়ান বল্লো নির দুলা ভাইয়ার কথা গুলো ভালো মনে হলো না আমার কাছে সৌজন্যবোদ দেখালো না,আব্বু আম্মুর কথা থাক আমি কেমন আছি সেটা ও জিজ্ঞাস করেনি

নির্ঝরিণী – কি বলিস? আচ্ছা এগুলা এখন মা বাবা কে শুনানোর দরকার নাই, এম্নিতে বাবার শরির ভালো না

আয়ান -পাগল হয়েছিস এখন না বললে কখন বলবো,এগুলা গোপন করলেই কি আপু সুখি হবে

নির্ঝরিণী – দেখ সত্যি টা আমরা কেউ ই দেখিনি হয়তো দুলা ভাইয়া কোন কাজে বেশি ব্যাস্ত তাই তোর সাথে ঠিক করে কথা বলেনি

আয়ান- কি জানি,আচ্ছা যা তোর কথা ই থাক বলবো না কাউকে কিছু

মিথিলা একা একা রুমে বসে আছে মিসেস আয়ম মিথিলার কাছে এসে বল্লো
কি করছো মা

মিথিলা- কিছু না
মিসেস আয়মন চলো আমরা কথা বলি,, শ্বাশুরি বৌ মা দুজন দুজন কে বুঝতে হেল্প করি

মিথিলা কিছু বল্লো না শুধু একটু হাসলো
মিসেস আয়মন এসো আমরা বাগানে গিয়ে বসিয়

মিথিলা আর মিসেস আয়মন বাগানে এসে বসলো
মিথিলা চারিদিকে তাকাচ্ছে বাড়িটা আসলেই সুন্দর
-আপনাদের বাড়ি টা কিন্তু খুব সুন্দর

মিসেস আয়মন মুচকি হেসে বল্লো
– হুম কিন্তু তুমি মনে হয় এখন আমাদের কে তোমার ভাবতে পারোনি,, তাই বাড়িটা আমাদের না বলে আপনাদের বলেছে

মিথিলা ছুপ হয়ে গেলো মিসেস আয়মনের কথা শুনে
– শুধু তাই নয় তুমি এখন অব্দি আমাকে একবার ডাকোনি মা বলতে হবে এই জন্য

মিথিলা- আসলে ঠিক তা নয় আমি….

মিসেস আয়মন- বুঝেছি লজ্জা পাচ্ছো তাই তো,কোনন প্রব্লেম নেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি যখন এই বাড়িতে বউ হয়ে আসি, আমি ও তখন লজ্জা পেতাম,তোমার শ্বশুর কে তো দেখলে আমি পালিয়ে যেতাম,তবে এখন কার ছেলে মেয়েরা অন্যরকম এরা নিজেরা ই পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়

মিসেস আয়মনের শেষের কথাটা মিথিলার মনে লাগলো, তা হলে সত্যি কি ইভান অন্য কাউকে পছন্দ করতো, আমি কি একবার জিজ্ঞাস করবো? না থাক এখন না

মিসেস আয়মন- আচ্ছা শুনো তোমাকে বৌমা বলে ডাকতে পারবো না, আমার কোন মেয়ে নেই আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকবো, তুই বললে তো কোন প্রব্লেম নেই তোমার

মিথিলা- আপনার যেমন টা ভালো লাগে,আমার কোন আপত্বি নেই

মিসেস আয়মন খুশি হয়ে বল্লো
– শুন মিথিল স্বামিদের আচলে বেধে রাখতে জানতে হয়,নইলে ওরা অন্যকারো আঁচলেন বাধা পড়ে যায়

মিসেস আয়মনের কথা শুনে মিথিলার বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠে, তবু এ নিজেকে সামলে নেয়
– আর তুমি যে ভাবে লজ্জা পাচ্ছো তাতে মনে হয় না তুমি আমার ইভুকে তোমার আঁচলে বাধতে পারবে,শুনো মেয়ে কেয়ারফুলি থাকবা,,হয়তো তোমাদের বিয়েটা ভালোবেসে হয়নি,কিন্তু বরকে ভালোবেসে, দাম্পত্য জীবন কে ভালোবাসা ময় করে তুলতে হয় বুঝেছো

মিথিলা মাথা নাড়ালো
– কি শুধু শুধু মাথা নাড়াচ্ছো,ইভু রুমে এসেছে যাও এখন ইভুর সাথে কথা বলো, আমরা কথা বলার জন্য অনেক সময় পাবো

মিথিলা – না মানে আমি রুমে গিয়ে কি বলবো

মিসেস আয়মন- বোকা মেয়ে কিছু বলবে না,, শুধু ওর কিছু লাগে কি না খেয়াল রাখবে,আমার যখন নতুন বিয়ে হয় তখন আমি লজ্জা পেলে ও তোমার শ্বশুর লজ্জা পেতো না, তিনি মাথায় পাকা চুল বাছতে দিতো আমাকে

মিসেস আয়মনের কথা শুনে মিথিলা হাসতে শুরু করে
মিসেস আয়মন – এই তো সব সময় এমন হাসি খুশি থাকবি বুঝেছিস,যা এখন

মিসেস আয়মন মিথিলা কে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বসে বসে হাসছে হয়তো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে তার

ইভান গাইয়েত শার্ট খুলে বিছানাই সটান হয়ে শুয়ে পড়লো, আবার কি ভেবে উঠে বসলো
এমন সময় মিথিলা রুমে এলো ইভানের দিকে চোখ পড়তেই মিথিলা পিছনে ফিরে বল্লো
ছিঃ ছি
আপুনি খালি গায়ে কেনো কিছু একটা পরে নিন

ইভান আরেহ তুমি এমন করছো যেন আমি পর পুরুষ, আমি কি দেখতে খারাপ নাকি যে তুমি ছিঃ ছিঃ করছো, ভার্সিটি তে সব মেয়ের ক্রাশ আমি ছিলাম,আবার অস্ট্রিয়া তে কতো মেয়ে আমার পিছন পিছন গুরতো,তোমার বর হিরো বুঝলে ইভান হাত দিয়ে চুলের স্টাইল করতে করতে বল্লো

মিথিলা এবার ইভানের দিকে ফিরে তাকালো ততক্ষনে ইভান গেঞ্জি পরে নিলো, মিথিলা ইভানের দিকে ছেয়ে আছে সত্যি দেখতে ইভান হিরোর মতো লম্বা ছোড়া,
বিলাইর মতো সাদা নয় তবে ফর্সা,চুলের স্টাইল টা ও দারুন ঘন চুল জেল করা, বডির মাসেল দেখে মনে হয় বক্সিন লড়তে পারবে

মিথিলা তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে
ইভান- আচ্ছা তুমি কি চশমা ছাড়া মোটে ও দেখতে পাওনা

মিথিলা এই প্রশ্নেত উত্তর টা দিতে চায় না, আবার কি বলে কথা গুরাবে সেটা ও বুঝতে পারছে না,তাই ছুপ করে দাঁড়িয়ে আছে

ইভান -এই মেয়ে তো কথা ই বলে না এর সাথে মিশবো কি করে,,আমার নায়া মুহুর্তেই সবাই কে আপন করে নেয়,,ক্লাবে ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো,কিন্তু ওর সাথে পরিচিত হওয়ার পর খুব আপন মনে হয়ে ছিলো ওকে কিন্তু এ তো কথা ই বলে না

ইভান- তুমি হঠ্যাৎ রুমে এলে কিন্তু কিছু বললে না, কিছু বলবে

মিথিলা- না মানে আপনার মা,ইয়ে না মানে মা আসতে বলেছিলো

ইভান- না মানে আপনার ইয়ে মা কি শব্দ এগুলা, এতো নার্ভাস কেনো তুমি,শুনো আমি নার্ভানেস একদম পছন্দ করি, বি স্টোং ওকে

মিথিলা – মাথা নাড়ালো

ইভান-মুখে বলতে পারছো না ইডিয়েট ইভান আবার রেগে যায়,, এবার রেগে গিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে সাওয়ার নিতে শুরু করে,মাথাত উপর পানি পড়ছে
ইহান ভাবছে রেগে গেলে আব্বু বলে মাথায় পানি ডালতে এতে নাকি রাগ কমে যায়,আসলেই রাগ কমে গেছে,কিন্তু এই মেয়ে এতো কথা কম বলে যে ওর সাথে কথা বলতে গেলেই আমার মেজাজ খারাপ হবে কি করবো আমি

পরদিন রিসেপশন পার্টি শেষে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরী ছেলেকে বুঝিয়ে মিথিলাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠালো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-১৪

0

খেলাঘর পর্ব-১৪
লেখা-সুলতানা ইতি

এর মাঝে আয়ান এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না ঝুড়ে দিলো
আয়ান কাঁদছে আর বলছে আপি তুই চলে গেলে আমরা কার সাথে দুষ্টুমি করবো, কাকে রাগাবো বল, আপু তুই যাস না আমাদের ছেড়ে বাবা মা কেউ তোকে ছাড়া ভালো থাকবে না

মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে অশ্রু নেই,,শুধু আয়ান কে বুকের সাথে মিশিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

অরনিরা আয়ান কে ছাড়িয়ে মিথিলা কে নিয়ে গেলো বরের কাছে কন্যা সম্প্রদান হবে এখন,,

মিথিলার বাবা মিথিলার হাত আর ইভানের হাত এক করে বল্লো,
বাবা আজ তোমাদের চার হাত এক করে দিলাম এই হাত ছেড়ো না,,আমার মেয়েটা একটুকরো কাছা মাটি,যেমন ইচ্ছে তেমন করে গড়ে তুলো তাকে,কখনো কষ্ট ফেলে ও অভিযোগ করবে না,বাবা তুমি তো জানো কাছা মাটি কে যেমন করে তেমন ই হয়,,আমার মেয়ে ও তেমন

মাসুম ফারুকির কথা গুলো ইভান কে খুব বিরক্ত করছে
এতো প্যাচানোর কি আছে,এতো কষ্ট হলে মেয়ে বিয়ে না দিলেই পারতো কেউ তো ঝোর করে নিয়ে যাচ্ছে না মেয়ে কে,নিজেরা ই দিচ্ছে আবার নিজেরাই প্যান প্যান করছে,আসলে সব অভিনয় এতো বড় ঘরে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে এ টুকু অভিনয় না করলে হয়?

মাসুম ফারুকি ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে কি বুঝলো জানি না,উনি মেয়ে কে বুকে ঝড়িয়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো এবার আর মিথিলা নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি বাবা কে ঝড়িয়ে কান্না শুরু করে,
ফাতেমা বেগম কাছে আসতেই মিথিলা বাবা কে ছেড়ে মাকে ধরে কান্না শুরু করলো,

ইভানের বিরক্তির শেষ নেই এতো কাঁদছে কেনো সবাই, মনে হচ্ছে এটা একটা মৃত বাড়ি

মিথিলাকে সাম্মি গাড়ি তে নিয়ে বসালো মিথিলা গাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্ঝরিণীর কাছে গিয়ে বল্লো
-শুন মন দিয়ে পড়া শুনা করবি,মা বাবার খেয়াল রাখবি আয়ানের সাথে একদম ঝগড়া করবি না,জিমি আপু ফোন করলে বলিস, আমি তার কথা খুব ভেবেছি,কেনো আসে নি সে

নির্ঝরিণী কাঁদতে কাঁদতে বল্লো আপি এসব কথা থাক এখন,
গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে রাহি এসে মিথিলার পাশে দাড়ালো, তাদের চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে প্রিয় বান্ধুবীর বিয়োগ তাদের কে ও কাঁদাচ্ছে,

অরণি – চল মিথিল,সবাই মিলে মিথিলা কে ইভানের পাশে বসিয়ে দিলো গাড়ি চলছে মিথিলার কান্নার গতি আর ও বাড়ছে, এই কান্না কিসের মিথিলা বুঝতে পারছে না,তবে এই টুকু বুঝতে পারছে এই চোখের পানিতে পাওয়ার ছেয়ে হারানোএ যন্ত্রনা বেশি,

মিথিলার কান্না ইভান কে ভাবাচ্ছে না,বরং ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো এতো কান্নার কি আছে,শ্বশুর বাড়ির যাচ্চো,যমের বাড়ি তো নয়, তার পর টিসু এগিয়ে দিয়ে বল্লো না ও চোখ মুছে নাও

মিথিলা ইভানের কথা শুনে অবাক হয় ভয়েজ টা পরিচিত মনে হচ্ছে কোথায় যেন শুনেছি,,কিন্তু লজ্জার কারনে তাকাতে পারছে না মিথিলা,,কাপা হাতে টিসু নিয়ে চোখ মুছে কিন্তু কান্না তখন ও থামেনি নিঃশব্দে চোখের অশ্রু ঝরছে

মিথিলা মাথা নিচু করে ঘোমটা টেনে দেয়াতে ইভান মিথিলা কে দেখতে পাচ্ছে না,কিন্তু ইভানের কাছে মিথিলা কে পরিচিত মনে হচ্ছে

গাড়ি পৌছে গেছে গন্তব্যে মিসেস আয়মন বধু বরন করে ঘরে তুললেন,
রাত এগারটা এক গাধা ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার উপর বসে আছে মিথিলা,বিছানার চাদর টা অনেক সুন্দর,সাধার মধ্যে লাল গোলাপ আর চড়ানো ছিটানো ফুলের পাপড়ি,,

এমন সময় দরজায় শব্দ হলো
ইভান ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে খাটের এক কোনায় এসে বসলো
মিথিলা তখন ও মাথা নিচু করে বিছানারচাদর দেখছে,

ইভান কিছুক্ষন ছুপ করে থেকে মিথিলার দিকে তাকায় এখন ও বড় করে ঘোমটা দিয়ে আছে উফফ এ কেমন মেয়ে এ যুগে এমন মেয়ে আছে নাকি

ইভান হালকা করে গলা টা কেশে ইভানের উপস্থিতি জানান দিলো

কিন্তু মিথিলার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না

ইভান- এই যে শুনছেন, আপনি চাইলে চেঞ্জ করে আসতে পারেন, সারাক্ষন তো এই ভারি ভারী জিনিষ গুলো পরে থাকার কোন মানে হয় না

এবার মিথিলা মাথা নিচু করেই উঠে দাঁড়ালো
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
– আপনি অলওয়েজ মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকেন নাকি

এবার মিথিলা,ভাবলো
না এটা ঠিক হচ্ছে না উনি আমার স্বামি,এখন পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখা হয়নি এবার দেখার সময় এসেছে

মিথিলা ঘোমটা সরিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে শকড খেলো,মনে হয় তার মাথায় ভাজ পড়লো
– আপনিইইইইই

ইভান- তুমিইইইইইই
তার পর দুজনের মুখেই কোন কথা নেই

মিথিলা মনে মনে বলছে
ছিঃ এমন ছেলের সাথেই আমার বিয়েটা হতে হলো যে কিনার সাধারণ ভদ্রতার জ্ঞান টুকু রাখে না

ইভান ভাবছে
-একি সে দিনের সে মেয়েটা ইস মেয়েটা জানি আমায় কি ভাবছে,হয়তো পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ আমি এটা ই ভাবছে

ইভান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বল্লো
– তোমার নামটা যেন কি

মিথিলা কোন উত্তর না দিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো,এই রুমে এসেই সব চিনে নিয়েছে মিথিলা কোন টা ওয়াশ রুম,কোন টা বেলকনি,মিথিলা ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে মেয়েদের প্রয়োজনীয় সব রাখা আছে সেখানে,
-যাক বাবা এগুলা খুঁজতে কোন ঝামেলা পোহাতে হলো না

ইভান- মেয়েটার কতো বড় সাহস আমার প্রশ্নের এন্সার না দিয়ে চলে গেলো,,দেখে তো পুচকি একটা মনে হয় কিন্তু জেদ আছে তা হলে,, সেদিনের জন্য কি স্যরি বলবো? দূর বলতে হবে না,
নায়ার কাছে এসব কিছু কোন ম্যাটার করতো না কিন্তু এই মেয়ে যে ফ্যামেলী তে স্ট্রাগল করেছে তাতে সেদিনের ব্যাপারটা ওর কাছে এক ভিরাট ইস্যু

ধ্যাত আমি এখন ও নায়ার কথা ভাবছি কেনো, নায়া অতিত বর্তমান নিয়ে খুশি থাকতে হবে,তাতে মা বাবা খুশি হবে কিন্তু নায়া কে ভুলবো কি করে

ইভানের ভাবনায় ছেদ পড়লো ওয়াশ রুমের দরজার খোলার শব্দে ,
ইভান ই আগ বাড়িয়ে কথা বল্লো
– শুনো তোমাকে তুমি করেই বলছি, বয়সে তুমি অনেক ছোট,আর সবাই তো বিয়ে করা বউকে তুমি ই বলে তাই না,কথা টা ইভানের গলায় আটকে আসছিলো,তবু ও বলে থামলো

মিথিলা সে দিনের সেই ছেলের সাথে আজকের এই ছেলের মিল খুঁজছে দুজন একই মানুষ হলে ও কিছু একটার যেন অমিল রয়ে গেছে

ইভান কি বলবে ভেবে না পেয়ে বল্লো
তুমি কি নাইটি পরতে লাইক করো, তা হলে পরতে পারো,ওখান টায় সব রাখা আছে হাত দিয়ে ইশারা করে ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা ব্যাগ দেখালো

এবার মিথিলা যতো টা সম্ভব চোখ বড় করে অবাক হয়ে ইভানের দিকে তাকায়

ইভান- ধ্যাত আবার কি বললাম এতো মনে হয় এগুলাতে অভ্যাস্ত নয়,ঠিক আছে পরতে হবে না মনে হয় তুমি এগুলা কে ডিজলাইক করো তাই না,
আচ্ছা তুমি কি অলওয়েজ চোখে চশমা পরে থাকো, কথা অন্য দিকে গুরানোর জন্য ইভানের এই প্রশ্ন

মিথিলা এবার ও কোন কথা না বলে খাটের অপর পাশ টায় শুয়ে পড়ে

ইভান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মিথিলার দিকে, এই মেয়ে কথা বলতে জানে না নাকি,আচ্ছা আম্মু যেন এর কি নাম বলেছে দূর মনে ও করতে পারছি না এখন,
রাত টা তাদের এ ভাবেই কেটে যায়, ইভান খাটের এক পাশে মিথিলা অন্য পাশে

মিথিলা ঘুমের ভান করলে ও ঘুমায়নি ভাবছে ইহানের কথা কি করছে সে এখন খুব কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা
কিন্তু সে অরনি কে ভুল বুঝলো কেনো
ইহান কি সত্যি আমায় কোন দিন ক্ষমা করবে না
সাম্মি কে তো বলেছি ইভানের মাঝে ইহান কে খুঁজে নিবো কিন্তু আদৌ কি তা আমি পারবো

ফজরের আজান কানে যেতেই মিথিলা সব ভাবনা বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, নাহ ইহানের কথা ভাবা ঠিক হচ্ছে না, একজনের স্ত্রী হয়ে অন্যজনকে নিয়ে ভাবা সত্যি অন্যায়,
মিথিলার নজর পড়লো ঘুমন্ত ইভানের দিকে খুব নিষ্পাপ লাগছে ঘুমন্ত ইভান কে,, কে বলবে এই ছেলে টা ই সেদিন এতো রুঢ় ব্যাবহার করে ছিলো তার সাথে

মিথিলা ভাবনা যগতে তালা দিয়ে ওযু করে নামায পড়ে নিলো
নামায পড়ে আবার একটু শুয়ে নেয়ার চিন্তা করলো
এই বাড়িতে সবাই কখন ঘুম থেকে উঠে কে জানে

নামাযের বিচানায় বসে আছে মাসুম ফারুকি,আজ মোনাজাতে অনেক কেঁদেছে মেয়েদের জন্য কাকে নিয়ে ভাববে তিনি, ছোট বোনের বিয়ে গেছে অথচ বড় বোন আসেনি ব্যাপার টা সত্যি দৃষ্টি কটু,আত্মিয় স্বজন সবাই প্রশ্ন করেছিলো জিমির না আসা নিয়ে,, কিন্তু কি করে সবাই কে বলি জিমির বর তাকে আসতে দেয়নি
ফাতেমা বেগম স্বামির পাশে এসে বসলো
কি ভাবছো এতো,প্রেসারর বাড়িয়ে ফেলবে আবার

মাসুম ফারুকি- না ভেবে উপায় আছে ফাতেমা মিথিলার বিয়েতে জিমি আসেনি দেখছো না সবাই কেমন চোখে দেখেছে আমাদের

ফাতেমা বেগম – তুমি ভেবো না জিমির সাথে আমার কথা হয়েছে,সব ঠিক আছে,,

আজ সকাল না হতেই নির্ঝরিণীর ঘুম ভেংগে যায় নির্ঝরিণী বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো বারান্দায় আগে থেকেই আয়ান দাঁড়িয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী – ভাই তুই ঘুমাসনি

আয়ান- নির্ঝর মিথিলা আপু নেই ঘর টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে বলতো স্টাডি রুমে যেতে ইচ্ছে করেনা,কর্নারের চেয়ার টা তে সব সময় আপু বই নিয়ে বসে থাকতো বল,আয়ান কথা বলতে বলেই কান্না শুরু করে দিলো
নির্ঝরিণী ও কাঁদছে ভাই কে ধরে
তাদের কান্নার তালে অন্ধকার থেকে আলোতে পরিনত হচ্ছে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

.খেলাঘর…পর্ব-১৩

0
.খেলাঘর...পর্ব-১৩

.খেলাঘর…পর্ব-১৩
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখের পানি ইহান দেখে ফেলতো
মিথিলা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে কোথায় যাবে জানে নেই তবে এই মুহুর্তে তার বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না, রিক্সা ওয়ালা জানতে চাইলো কোথায় যাবে.

মিথিলা- কোথায় ও না মামা এমনিতেই গুরেন তো,দেখি কোথায় গিয়ে পৌছে,,রিক্সাওয়ালা মিথিলার দিকে একবার ছেয়ে রিক্সা চালাতে শুরু করলো

অরনি- ইহান তুই ঠিক আছিস
ইহান- হুম দোস্ত ঠিক করে নিয়েছি নিজেকে
যদি ও ইহান মুখে বলে ঠিক আছে কিন্তু ভেতর টা তার ধুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে

অরনি – যাবি তুই মিথিলার বিয়ে তে
ইহান- হোয়াই নোট
অরনি- ওহ আচ্ছা

ইহান- আচ্ছা দোস্ত ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না,আমি যাই

অরনি- তুই সত্যি ঠিক আছিস তো
ইহান মিষ্টি হেসে বল্লো টেনশন নিস না দোস্ত আমি একদম ঠিক আছি

ইহান সোজা কলেজ থেকে বাড়ি চলে আসে, কোন কিছুতেই তার ভালো লাগছে না
ইহান ভাবলো
-ঘুমাতে হবে আমাকে, কিন্তু ঘুম তো আসবে না, ইহান রায়হান চৌধুরীর রুমে গিয়ে সেখান থেকে কয়েক টা ঘুমের ওষুধ এনে খেয়ে নিলো,, আজ বাসা টা ও খালি মা গেছে নানু কে দেখতে বাবা তো সারা দিন বিজনেস নিয়ে পড়ে থাকে,

খালি বাসায় নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়া যাবে
স্কুলের অনুষ্ঠানে নির্ঝরিণী ওদের যে ছবি টা লুকিয়ে তুলেছিললো সে ছবিটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো ইহান,আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না ইহান গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে

মিথিলা রিক্সায় বসে ভাবছে আমি কি পারবো অন্য কারো সাথে সুখি হতে, ইহান যে আমায় সত্যি ভালোবাসে, ওর ভালোবাসা অবজ্ঞা করা কি ঠিক হচ্ছে,কিন্তু এখন তো সব শেষ,বাবার মান সম্মান ঝড়িয়ে পড়েছে,এখন কিচ্ছু করা যাবে না,
মিথিলা গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেছে
হঠ্যাৎ তাদের রিক্সার সামনে একটা কার এসে ধাক্কা দিতে যেয়ে ও দেয়নি,অনেক টা হার্ডব্রেক করে গাড়ি টা থেমে যায়

রিক্সার ঝাঁকুনি তে মিথিলা বাস্তবে ফিরে এলো কার থেকে একটা ছেলে নেমে এসে, শুধু শুধু রিক্সাওয়ালা কে মারতে লাগলো

মিথিলা- আরেহ আরেহ করছেন কি উনার তো কোন দোষ নেই আপনি পাগলের মতো গাড়ি নিয়ে এসে সামনে পড়লেন

ছেলেটি রিক্সা ওয়ালা কে ছেড়ে দিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– দেখে তো বাচ্ছা একটা মেয়ে মনে হয়,আর সে কি না আসছে আমাকে শাসন করতে,

মিথিলা- স্যরি আমি আপনাকে শাসন করতে আসিনি, আপনি ভুল করছিলেন আপনার ভুল টা ধরয়ে দিতে এসেছি,আপনি মামা কে স্যরি বলুন

ছেলেটি তাচ্ছিল্য হেসে বল্লো
এই রিক্সাওয়ালা আপনার মামা,

মিথিলা- উনি আমার নিজের মায়ের ভাই না হোক, কোন না কোন মায়ের ছেলে কোন বোনের ভাই,সো সে দিক থেকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখুন

ছেলেটি রেগে গিয়ে বল্লো,এই মেয়ে ইভান চৌধুরী কে ভদ্রতা শিখাতে এসো না, সোজা নিজের পথে যাও

মিথিলা – আপনার মতো অভদ্র ছেলে তো দুনিয়াতে দেখিনি,বাবার বয়সের একজনের সাথে বেয়াদবি করেছেন আবার বড় কথা বলছেন

ইভান- এই মেয়ে একদম প্যান প্যানাবি না যা এখান থেকে নইলে, এই বলে ইভান মিথিলার হাত ধরে টানতে থাকে

মিথিলা আরেহ করছেন কি ছাড়ুন,আমি কিন্তু চিৎকার করবো

ইভান মিথিলার হাত ছেড়ে দিয়ে বল্লো ছুপ ছাপ চলে যা,আমাকে জ্ঞান দিবি না

মিথিলা আর কিছু না বলে রিক্সা ওয়ালা কে পরিমানের ছেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বিধায় করে নিজে হাটতে থাকে

ইভান গিয়ে আবার ড্রাইভিং সিটে বসে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখলো রিক্সা ওয়ালা নেই,

ইভান- ইস কি করেছি আমি ওদের সাথে, বাসায় বাবা মা কে কিছু বলতে না ফেরে অসহায় একটা মানুষ কে অত্যাচার করলাম, আর একটা মেয়ে কে অসম্মান করে কথা বললাম ছিঃ

এখন আমি তাদের কোথায় খুঁজে পাবো,
আচ্ছা বাবা মা কি সত্যি সন্তানের ভালো চায়,তা হলে আমার বাবা মা এমন কেনো

নাকি আমার চয়েজ টা ই ভুল, উফফ কিচ্ছু ভাবতে পারছি না, ইভান কিছুক্ষন ছুপ করে থেকে মাথা ঠান্ডা করে গাড়ি স্ট্রাট দিলো
আর কারো সাথে গোল মাল করতে চায় না,গাড়ির গতি স্লো করে চালাচ্ছে

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো আজ হলুদ ছোয়া,অরনি বিকেল বেলায় এসে পড়েছে,
অরনি ইহান কে নিয়ে মিথিলার সাথে কোন কথা বলেনি যেন সে মনে মনে চাইছে মিথিলার বিয়ে টা হয়ে যাক

অরনি- মিথিলা তোর হবু বর কেমন রে
মিথিলা- জানি না,
অরণি – সে কি বিয়ে করবি আর বর কে দেখিস নি,,আচ্ছা সে কি তোকে দেখেছে
মিথিলা- মনে হয় দেখেনি

অরনি চিন্তিত চাহনিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তা হলে বিয়ে হচ্ছে কেনো

মিথিলা- জানি না,বাদ দে এই সব,,ইহান কি আসবে?
অরণি – বলেছিলো আসবে, এখন ও আসছে না কেনো সেটাই কথা

মিথিলা – সাম্মি রা আজ আসবে না, তবে বিয়ের দিন ঠিক আসবে বল্লো

ইহান শোয়া থেকে উঠে বসলো
সেদিন ঘুমের ওষুধ গুলো কাজ করেছে খুব, জীবনের প্রথম ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে ওষুধ গুলো প্রায় চার পাচ দিন শরিরে কাজ করেছিলো,পুরো তিন দিন তো ঘুমিয়ে কাটিয়েছে
ভাগ্যিস বড় লোক বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছি,তাই তো তাদের সন্তান দের গতিবিধির উপর নজর নেই,,মিথিলার মতো কোন সুইট ফ্যামেলি তে জন্ম নিলে তো কোন আগে কান্না কাটি পড়ে যেতো
এদিক থেকে ভাগ্যবান ইহান তুই
নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে আর তৈরী হচ্ছে মিথিলার হলুদ ছৌয়াতে যাওয়ার জন্য

হলুদ শাড়িতে মিথিলা কে কেমন লাগছে,কতো বার রিকুয়েস্ট করেছি একদিন শাড়ি পরার জন্য,,পরেনি,আজ হয়তো নীতি অনুযায়ী পরবে,,আমি ও দেখবো হয়তো এই দেখাতে কোন অধিকার থাকবে না তবু ও দেখবো
ইহান তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লো

মিথিলার হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি মিথিলার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা হলুদ আর বিয়ের তত্ব নিয়ে চলে এসেছে সবাই তাদের নিয়ে ব্যাস্ত মিথিলা অরনি নির্ঝরিণী বসে আছে,কর্নারের একটা রুমে এদিকে তেমন লোকজন আসে না

এমন সময় অরনির ফোনে কল আসে
অরনি- ইহান বল কই তুই,ওহ চলে এসেছিস,, আমি নির্ঝর কে পাঠাচ্ছি

অরনি ফোন রেখে বল্লো
ইহান এসেছে নির্ঝরিণী তুমি যাও গিয়ে ইহান কে এখানে নিয়ে এসো

নির্ঝরিণী উঠে গেলো
মিথিলার বুকের ভিতর হাতুড়ি ফেটানো শুরু করলো ইহান কে কি করে ফ্যাস করবে,
ইহান রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় মিথিলার দিকে অপলক ছেয়ে আছে আজকের দিনে ও চোখ থেকে চশমা টা খোলেনি, চশমা না থাকলে চোখের গভীরতা মাপা যেতো
যেন এক হলুদ পরী বসে আছে

নির্ঝরিণী – ভাইয়া দাঁড়িয়ে পড়লেন যে আসুন
ইহান ভিতরে যায়

তার পর নানান কথার মধ্যে কেটে যায় সময়
হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়,আজ সবার মাঝে ইহান মিথিলা কে হলুদ ছোয়ানোর ছুতোয় একটু ছুঁয়ে দিলো,হয়তো এই ছোয়া টা ই জনম জনম স্মৃতি হয়ে বেছে থাকবে ইহানের মনের মাঝে, অনেক রাত অব্দি থেকে ইহান চলে আসে,অরনি থেকে যায় মিথিলার কাছে,
আজ মিথিলার দু চোখ কিছুতেই এক করতে পারেনি, ইহানের নেশা ধরানো চাহনি চোখের মাঝে ভেসে উঠছে

মিথিলা নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– এ আমি কি করছি আর কিছু ঘন্টা পর এক জনের বউ হবো,আর আমি কি না,এখন ও ইহান কে ভুলতে পারছি না,আচ্ছা ইহান কে তো কখনো ভালোবাসি বলিনি তবে কেনো আমার এতো ভয় এতো অনুশোচনা,ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেছে, মিথিলা আর শুয়ে না থেকে উঠে এলো

সকাল দশটায়ায় পার্লারের লোক পাঠিয়ে দিলো মিথিলার শ্বাশুড়ি একমাত্র ছেলের বিয়েতে কোন কিছুর ঘাটতি রাখতে চান না মিসেস আয়মন,তাই তো কনে সাজানোর দায়িত্ব ও তারা নিয়েছে

আজ সাম্মি রাহি ও এসেছে মিথিলার সাজানো শেষ,মিথিলার পাশে সাম্মি আর রাহি বসে আছে অরনি কি কাজে যেন বাইরে গেছে ইহান তখনো এসে পৌছয়নি

সাম্মি- মিথি তুই এটা কি করছিস তুই পারবি ইহান কে ভুলে থাকতে

মিথিলা- আমি ইহান কে ভালোবাসিনি

রাহি- কিন্তু আমরা বুঝি,তুই ইহান কে ভালোবাসিস,কিন্তু সেটা গোপন করছিস কেনো সেটা ই বুঝতে পারছি না

সাম্মি- তোর বর কি যেন নাম ওহ ইভান,তুই কি ইভানের সাথে সুখি হতে পারবি

মিথিলা অনেক্ষন ছুপ করে বল্লো
– আমি ইভানের মাঝে ইহান কে খুঁজে নিবো

রাহি- পারবি তুই, দুটি আলাদা মানুষ কে এক করতে, ভালোবেসে ইভানের সাথে সংসার করতে

মিথিলা- উফফ এতো বেশি কথা বলিস কেনো তোরা ছুপ করনা

বাহিরে হইচই শুরু হয়েছে, বর এসেছে হয়তো,,আর কিছুক্ষন পর মিথিলাদের রুমে লোক জনের ভরে গেলো,, কেউ এলো বউ দেখতে,কেউ এলো বিয়ে এজান নিতে,

মিথিলা কে কবুল বলতে বলা হয়েছে
মিথিলা চোখ বন্ধ করে আছে চোখের সামনে ইহান দাঁড়িয়ে আছে আবার চোখ খুল্লো
মিথিলার চারিদিকে তাকালো মনে হচ্ছে সব ঘুরছে

কাজি আবার কবুল বলতে বল্লো
মিথিলা কবুল বলেই অরনির কলে ঢলে পড়লো,সবার মাঝে হইচই শুরু হলো

নির্ঝরিণী – অরনি আপু মিথিলা আপুকে শুয়ে দাও দূর্বলতা থেকে এমন হয়েছে,

সাম্মি- প্লিজ সবাই এই রুম থেকে যান,, আগে জ্ঞান ফেরানো দরকার

অরনি মিথিলাকে রেখে উঠে দাঁড়ালো, নির্ঝর পানি নিয়ে এসো,ততক্ষনে রুম থেকে সবাই চলে গেছে,

নির্ঝরিণী পানি নিয়ে আসার পর মিথিলার চোখে মুখে পানি ছিটানো হয়,মিথিলার সেন্স ফিরে আসে সাম্মি তুই ঠিক আছিস

নির্ঝরিণী – আমি যাই মাকে বলে আসি আপুর জ্ঞান ফিরেছে

মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অরনি কে বল্লো
ইহানন এসেছে

অরনি- হুম অনেক আগেই

মিথিলা- তুই সব সময় ওর পাশে থাকিস,ওকে কখনো একা করে যাস না

অরনি- ও কি আমার কথা শুনবে

মিথিলা- আমি জানি অরু তুই ইহান কে ভালোবাসিস

মিথিলার কথা শুনে সাম্মি রাহি অবাক হয়ে অরনির দিকে তাকায়

অরণি ইতস্তত হয়ে বল্লো
– তুই কি আমার জন্য ই ইহান কে রিজেক্ট করেছিস,,

মিথিলা- জানি না রে

অরণি – আমি কিন্তু চাইতাম তোরা দুজন যেন ভালো থাকিস

মিথিলা- আর আমি ছেয়েছি কারো মনে কষ্ট না দিতে,ইহান আমাকে ভালোবাসলে ও আমি ইহান কে তার অনেক পর থেকে ভালোবাসি,কিন্তু তুই তার ও আগে থেকে ইহান কে ভালোবাসিস, তোরা ভাবতি আমি সারাক্ষন বুঝি বই নিয়ে পড়ে থাকি,কিন্তু আমি বইয়ের মাঝে ডুবে থেকে ও তোকে খেয়াল করেছি অরু,আমি ও একটা মেয়ে আমার ও মন আছে, শুনেছি মেয়েদের সিক্সত সেন্স খুবই প্রখর আমি সেই প্রখরতা দিয়ে ইহানের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি,

আর আমি ইহানের ডাকে সাড়া দিলে তুই কষ্ট পাবি,কারন ইহান আমাকে চাইতো বলেই তুই ইহান কে বুঝতে দিতিস না,,যেদিন ইহান আমায় প্রপোজ করে সে দিন তোর চোখে আমি পানি দেখতে পাই,ইহান আমার জন্য কষ্ট ফেলে তুই ইহানের কষ্টে হাজার গুন বেশি কষ্ট পেতিস

অরনি-মিথিলা তুই আমাকে হারিয়ে দিলি,সব ধারনা ভুল প্রমান করলি,তুই কি করে পারলি, বল

মিথিলা কিছু বলতে যাবে এমন সময় রুমে ইহান এলো,ইহান ওদের সব কথাই শুনতে পায়
– বাহ খুব সুন্দর হয়েছে তোদের নাটক টা একজন বেষ্ট ফ্রেন্ডের মুখোশ পরে ছিলো আর একজন জেনে শুনে আমায় ব্যাবহার করেছে
খেলা করেছে আমার ভালোবাসা নিয়ে
তোদের দুজনের একজন কে ও আমি ক্ষমা করবো না

মিথিলা- তুই শুন…
ইহান মিথিলা কে থামিয়ে দেয়
কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,,আমি ভাবতাম তুই ভালোবাসা বুঝিস না তোর জগতে শুধু বই নিয়ে,কিন্তু না তুই তো আসল শয়তান,সব বুঝে ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়েছিস,তুই আমাকে অবহেলা করতি,আর আমি তত মনের এখানে তোকে জায়গা দিতাম,ভাবতাম হয়তো তুই একদিন আমার ভালোবাসায় সাড়া দিবি,কিন্তু দিলিনা,একেবারে বিয়ের কার্ড নিয়ে হাজির হলি আমার সামনে
ভেবেছি না বুঝে তুই বিয়েটা করছিস, ছুটে এলাম বধুর সাজে তোকে দেখবো বলে,ভাগ্যিস এলাম,নইলে বন্ধু নামের শক্রুদের ছিনতাম কি করে

মিথিলা- তুই অরু কে ভুল বুঝছিস ইহান

ইহান- ব্যাস আর কোন কথা নয়,মিথিলা তুই কোন দিন সুখি হবি না,একটা হৃদয়ের হাহাকার তোকে সুখি করবে না,ইহান বেরিয়ে যায়

অরু মিথিলাকে কিছু বলতে যাবে তার মাঝে গেষ্টরা চলে এসেছে,সবাই বলছে অনেক দেরি হয়ে গেছে,এবার কনে বিধায় দিতে হবে
ফাতেমা বেগম আর মাসুম ফারুকি ব্যাস্ত হয়ে উঠলো,,সব রেডি করতে
এর মাঝে আয়ান এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না ঝুড়ে দিলো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

মন ফড়িং ❤১২.

0

মন ফড়িং ❤

১২.

আসমা জামান রান্নাঘরে নিদ্রের জন্য খাবার তৈরি করছেন। প্রায় ১ সপ্তাহের মতো হয়েছে ছেলেটা কোনোরকমে খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারপরও সে মুখ ফুটে কিছু বলছেনা। নিজের কষ্ট হবে তারপরও তাকে কষ্ট দিবেনা। নাজমুলের তো খোঁজ পাওয়াই দায়। এতো ড্রিংক করতে শুরু করেছে যে কোনো হুশ থাকেনা। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর রাতে নিজের ঘরে বসে এলকোহল গিলবে!
নিদ্র বেশ ক্লান্ত হয়ে বাসায় পৌঁছে দেখলো দাদী রান্নাঘরে! মনে মনে খুব খুশি হলেও ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ না করে বললো
– দাদী এসবের কি দরকার ছিলো?
আসমা জামান ভেংচি কেটে বললেন
– আমি না করলে করবে টা কে?
– তা অবশ্য ঠিক! তা কী কী রান্না হচ্ছে?
– চিকেন স্যুপ, চিকেন ব্রোস্ট আর আপনার পছন্দের সালাদ।
নিদ্র তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো
– তাহলে আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসি?
– অবশ্যই। আর তোর বাবাকে ডেকে আন।
নিদ্র বেশ ক্লান্ত স্বরে বললো
– আপনার ছেলে আপনিই ডেকে আনুন।
– আমি তো ডেকেছিলাম, আমার কথা কে শোনে!
– আমি দেখছি।

গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নাজমুল সাহেবের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রুমের দরজা বন্ধ ভেতর থেকে। এর অর্থ বাবা ভেতরে!
– বাবা, চলো একসাথে খেতে বসি।
দরজায় টোকা দিয়ে কথাটা বেশ কয়েকবার বললো। কোনো।সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় বেশ জোরে টোকা দিতে লাগলো। বাবার কিছু হলো না তো? দিনের এই সময়টাতো সে বাসায় থাকেনা। আজকে এইসময় বাসায় তার উপর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
নিদ্রের খুব চিন্তা হচ্ছে।
রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে দাদীকে জিজ্ঞেস করলো
– দাদী, বাবা কখন থেকে দরজা লক করে এভাবে আছে?
– সেই ১২ টা থেকে।
– আমাকে বলবে না?
– আরে ও তো এমন প্রায়ই করে।
– কিন্তু তার রুমে সাড়াশব্দ পাওয়া যায় কিন্তু আজকে একেবারেই নিখোঁজ অবস্থায় আছেন।
– সব রুমেরই তো এক্সট্রা চাবি আছে। সেটা দিয়ে খুলতেই পারিস।
– বাবার রুমের এক্সট্রা চাবি তার কাছেই রাখেন।
– তাহলে লক খোলার মিস্ত্রী নিয়ে আয়। আমি ততক্ষণে ডাকাডাকি করে দেখি।
নিদ্র দ্রুত মিস্ত্রীর খোঁজে বের হলো। আসমা জামান ছেলের চিন্তায় রান্নাবান্না বন্ধ করে তার রুমের দরজায় টোকা দিলেন। নরম স্বরে বললেন
– বাবা নাজমুল শোন তো!বাবা আয় একসাথে খেয়ে নেই। বাবা, এমন করিস না।
আসমা জামান কাঁদতে শুরু করলেন। ছেলে মরে গেছে নাকি কে জানে?
নিদ্র পাগলের মতো লোক খুঁজছে। প্রায় ১ ঘণ্টা হতে চললো কিন্তু একজন মানুষ সে পেলো না।
একজনকে বেশ চড়া ভাড়ায় পেলো। নিদ্রের জমানো ডলারের বেশ খানিকটা খরচ হয়ে গেলো। কিছুই করার নেই তার।
বাসায় এসে দাদীকে বাবার রুমের দরজার সামনে বসে কাঁদতে দেখে নিদ্র হকচকিয়ে গেলো।
আধা ঘণ্টা চেষ্টা করার পর লক খুলতে সক্ষম হলো।
দরজা খুলে নিদ্র তার বাবাকে দেখে অবাক! নাজমুল সাহেব তার রকিং চেয়ারে হাতে বই পড়ার মতো করে নিয়ে বসে আছেন। বেশ মনযোগ দিয়েই বই পড়ছেন। নিদ্র তার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। নাজমুল সাহেব ছেলের দিকে না তাকিয়ে বললেন
– আমার বই পড়ায় বিরক্ত কেনো করছো তোমরা?
নিদ্র ঠান্ডা স্বরে বললো
– তুমি উল্টো করে বই কেনো পড়ছো কেনো বাবা?
নাজমুল সাহেব ইতস্ততভাবে বললেন
– সে তুমি বুঝবেনা। now get lost my dear son!
নাজমুল সাহেব পুরোপুরি নেশা অবস্থায় আছেন সেটা নিদ্র বুঝতে পেরে চুপচাপ রুম ছেড়ে বের হয়ে আসলো।
মিস্ত্রীকে তার ডলার বুঝিয়ে দিয়ে দাদীকে বললো
– খাবার দাও তো দাদী!
আসমা জামান রান্নাঘরে ফিরে এসে স্যুপের বাটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

রিতা ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে আছেন। অদ্রি ঘুমুচ্ছে আর লিলি কী করছে তার জানা নেই। মেয়েটাকে তার চোখে চোখে রাখা উচিৎ। এটা ঠিক খুব বেয়াদব মেয়েটা। কিন্তু মেয়েটার ক্ষতি হলে তার খারাপ লাগবে,খুব খারাপ লাগবে!

রশিদ সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন
– একটা মতামত দাও তাও।
– বলো।
– নাজমুলকে দাওয়াত করলে কেমন হয়? বড়লোক মানুষ দাওয়াতে না আসলেও গিফট পাঠাবে এটা আমি শিওর।
– দাওয়াতে আসবেনা তাহলে গিফট কেনো নিবা? লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়বা!
– ছোটো মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি তো দামী গিফট দেয়া দরকার। খোঁটা শুনতে হবে ওর। আমরা না হয় লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়লাম কিন্তু ও তো ভালো থাকুক।
– মেয়েটাও আছে এতো বড়লোক ছেলের সাথে প্রেম কেনো করতে হবে?
– প্রেম কি বলে কয়ে হয় নাকি? আর আমাদের চাওয়া তো একটাই ছেলে মেয়ে ভালো থাকুক। আর ছোটো হচ্ছি নিজেদের লোকের কাছেই। অন্ততপক্ষে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে তো হেয় হতে হবেনা।
– তাহলে করো দাওয়াত আর অদ্রির বাসায় কবে উঠবো আমরা?
– ওই বাড়ি রঙ করাতে হবে তারপর আমরা উঠবো।
– মেয়েটাকে বিয়ে দেয়া দরকার।
– তা দরকার কিন্তু আমি তো ওকে এসব বলতে পারছিনা। তুমি একটা কাজ করতে পারবা?
– বলো!
– ওকে একটু বিয়ের কথা বলে দেইখো তো কী বলে?
– আমার সাথে তো তেমন চেনাজানা নাই। ও আমার কথায় বিরক্ত হবে।
– বিরক্ত হলেও প্রকাশ করবেনা।

অদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়িতে রাত ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। টেবিলে আজকে পানি রাখা নেই। লাইট জ্বালিয়ে খুঁজে নিজের রুমে পানি না পেয়ে নিচে নামার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হলো।
অদ্রির মনে হচ্ছে নিদ্রের ঘরের দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওইদিকটার লাইটটা বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বালানো হচ্ছেনা। লিলিটার যে কী হয়েছে আল্লাহ জানে!

চলবে……!

© Maria Kabir

খেলাঘর পর্ব-১২

0

খেলাঘর  পর্ব-১২

লেখা-সুলতানা ইতি
মিসেস আয়মন- ছেলে আর যাই করুক আমার কথার অবাধ্য হবে না,একবার বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে

আতাহার চৌধুরী- তাই যেন হয়
ভিবিন্ন কথার মাঝে তারা পৌছে গেলো বাড়িতে
মিসেস আয়মন বাড়িতে এসেই খোজ নিলো ইভান এসেছে কি না

বাড়ির পরিচারিকা জানালো এখনো আসেনি
মিসেস আয়মন ছেলে কে ফোন করলো
– কোথায় তুই ইভু তাড়া তাড়ি আয়, কথা আছে তোর সাথে,….
হুম এক্ষুনি আসবি

মিসেস আয়মন কল অফ করে আতাহার চৌধুরী কে বল্লো
– ইভু আসছে,, তুমি দেখো নিজের বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিজেই করবে

আতাহার চৌধুরী- তোমার ছেলে যে এক গুয়ে, আমার মনে হচ্ছে না এতো সহজে হার মানবে

মিসেস আয়মন- তা হলে বাজি ধরো,দেখি কে জিতে

আতাহার চৌধুরী- ভাভাহ আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমার সাথে বাজি ধরবো, কলে কৌশলে বাজিতে তুমি জিতবে

মিসেস আয়মন- তা হলে হার মানলে

আতাহার চৌধুরী- না মেনে উপায় আছে

এর মাঝে ইভান এসে গেলো
ইভান- আম্মু বলো কি বলবে

মিসেস আয়মন- বস তার পর বলছি

ইভান- বসতে পারবো না বলো

মিসেস আয়মন উঠে গিয়ে ছেলেকে এনে নিজের পাশে বসালো,,মায়েদের সেই মমতা মাখানো কন্ঠে বল্লো
– ইভু, মা,বাবা সব সময় সন্তানের ভালো চায়,জীবনের সব ছেয়ে ইমপট্যান্ট জিনিশ টা বেছে নিতে সন্তান যখন ভুল করে তখন মা বাবা ই এগিয়ে আসে, সন্তানের ভুল টা শুধরিয়ে দিতে,যেমন টা ছোট বেলায় দিতো

ইভান- কিন্তু আম্মু যাকে নিয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে তাকে আমি পছন্দ করবো না

আতাহার চৌধুরী- অবশ্যই করবি,আমি তো বলেছি মিথিলার সাথে দেখা কর

ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
ঐ একটা মেয়ের মাঝে তোমরা কি পেয়েছো বুঝি না,,নায়া এর ছেয়ে হাজার গুন ব্যাটার,, ঐ মিডেলক্লাস মেয়েটার মতো না

মিসেস আয়মন- দেখ বাবা নায়া পার্টি তে যায় নাইট ক্লাবে যায়,ভিবিন্ন বন্ধুদের সাথে রাত বিরাতে দেখা করে, এগুলা তোর এখন ভালো লাগলে ও বিয়ের পরে লাগবে না,তখন সংসারে অশান্তি হবে,,তুই মিথিলাকে নিজের মতো করে নিস

আতাহার চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বললেন
তুমি মিথিলাকে মিডেল ক্লাস বলছো? তোমার যোগ্য নয় বলছো? ভেবে দেখো কোন না কোন ক্ষেত্রে তুমি মিথিলার অযোগ্য,মায়ের গর্ভ থেকে কেউ যোগ্য হয়ে জন্ম নেয় না, যোগ্য করে নিতে হয়

ইভান- কিন্তু আব্বু….
মিসেস আয়মন- আর কোন কথা নয়,তোর আর মিথিলার বিয়ে আগামি মাসের পনেরো তারিখে, নিজেকে তৈরী করে নে

ইভান- তোমাদের যেমন ইচ্ছে
এই বলে ইভান নিজের রুমে চলে গেলো,মোবাইল বের করে নায়ার একটা একটা করে ফটো গুলো দেখছে,কি অপূর্ব লাগছে নায়াকে
নায়ার ফটোর দিকের তাকিয়ে থেকেই ঘুমিয়ে পড়লো ইভান

মিথিলা আজ অনেক দিন হলো কলেজে যায় না,যেতে ইচ্ছে করছে না কলেজে,রোজ রোজ ইহান কে ফ্যাস করতে পারছে না মিথিলা
মিথিলা ঠিক করেছে বাসায় বসেই পড়বে কলেজে যাবে না

অরনি কয়েকদিন কল করেছিলো মিথিলা কল রিসিভ করেনি, কাউকে রিসিভ করতে ও নিষেধ করেছে,

মিথিলা বই সামনে নিয়ে এগুলা ভাবছিলো
নির্ঝরিণী – আপি তোমার হবু শ্বাশুড়ি মা ফোন করেছে,কথা বলবে

মিথিলা- উনি কি আমার সাথে কথা বলতে চায়

নির্ঝরিণী – উনি তো ফোন করেই তোমার সাথে কথা বলতে ছেয়েছিলো,আমি মাকে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি

মিথিলা- ওহ আচ্ছা
নির্ঝরিণী ছুটে গিয়ে আবার মোবাইল নিয়ে হাজির হলো
– আপু কথা বলো

মিথিলা মোবাইল নিয়ে
প্রথমে সালাম দিলো মিসেস আয়মন কে

মিসেস আয়মন- ভালো আছো মা,কি করছো তুমি

মিথিলা- ভালো আছি,আপনি ভালো আছেন

মিসেস আয়মন- আচ্ছা মা শুনো আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়েছি তোমাদের বাড়িতে,বিয়ের কার্ড রেডি হয়ে গেছে,স্পেশাল ভাবে তোমার জন্য বিশ টা কার্ড পাঠিয়েছি,তোমার ফ্রেন্ডস দের ইনভাইট করার জন্য,আর বাকি গুলো তোমার বাবার কাছে দিও

শুনো মা, বিয়ের কার্ডের ডিজাইন আমার ইভান পছন্দ করেছে,তাই আর তোমাকে বলিনি,,ডিজাইন হয়তো তোমার পছন্দ হবে না,তবু ও বলছি এখন থেকে মানিয়ে নিতে শিখো

মিথিলা- ঠিক আছে আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন না কার্ড দেখে আপনাকে বলবো

মিসেস আয়মন- পাগলি মেয়ে এখন ও আন্টি বলা হচ্ছে না,,মা কখন বলবি
মিথিলা……

মিসেস আয়মন- ওকে একবার শুধু আমার বাড়িতে নিয়ে আসি তার পর দেখবো তুই কেমন করে আমাকে মা না ডাকিস
এখন রাখছি আমি বাই

মিথিলা ফোন রেখে ভাবছে মিসেস আয়মনের কথা,,মানুষ টা খুব ই মিশুক, যে কাউকে আপন করে নিতে পারে,,

মিথিলার ভাবনায় ছেদ পড়লো মাসুম ফারুকির আগমনে
তিনি এসে মেয়ের পাশে বসলো
মিথিলা- বাবা কিছু বলবে

মাসুম ফারুকি- শুনলাম তুই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস

মিথিলা- কে বল্লো বাবা,এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করেনি,কাল থেকে তো যাচ্চি আবার

মাসুম ফারুকি- তোর মা বল্লো তোর নাকি মন খারাপ, কলেজে যাচ্ছিস না

মিথিলা- তেমন কিছু নয় বাবা,সব ঠিক আছে

মাসুম ফারুকি- আচ্ছা তা হলে আমি যাই আমার আবার অনেক কাজ

মিথিলা- বাবা অনেক তো হলো এবার একটু রেস্ট নাও এভাবে সারা দিন চলতে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা

মাসুম ফারুকি- এই তো আর কয় বছর তার পর আয়ান বড় হয়ে গেলে ওর হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আমি বিশ্রাম নিবো
আচ্ছা মা এখন উঠি

মাসুম ফারুকি চলে গেলেন
মিথিলা বাবার যাওয়ার পথে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বইয়ের দিকে নজর দিলো আজ কয়দিন
পড়া ও হচ্ছে না ঠিক মতো

পরদিন মিথিলা কলেজে যেতেই ইহান অরনি ঘিরে ধরলো,এতোদিন কলেজে আসেনি কেনো তাই
অরনি- তুই তো কখনো এমন অনিয়ম করিসনি পড়ালেখার ব্যাপারে, তা হলে এখন এমন করছিস কেনো

মিথিলা- ভালো লাগেনি তাই আসিনি,

ইহান- দেখ মিথি তোর না আসার কারন যদি আমি হয়ে থাকি তা হলে বলবো তোর ভালোর জন্য আমি এই কলেজ ছেড়ে চলে যেতে রাজি আছি,

মিথিলা- তোর আর কষ্ট করতে হবে না ইহান আমি ই চলে যাচ্ছি

ইহান- মানে

মিথিলা-সামনের মাসের পনেরো তারিখে আমার বিয়ে……

মিথিলাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ইহান আর অরনি একি স্বরে বল্লো
মানেহ কি বলছিস তুই
দেখ ফাজলামি করিস না

মিথিলা- ফাজলামি নয়,এই দেখ আমার বিয়ের কার্ড,আচ্ছা অরু সাম্মি আর রাহির মোবাইল নাম্বার টা দে তো আমাকে, ওদের কে ও তো বলতে হবে

অরনির কানে মিথিলার কথা গুলো পৌছয়নি,,
অরনি মিথিলা কে ইহানের কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেলো
– মিথি তোর মাথা ঠিক আছে, তুই কেনো ইহান কে কষ্ট দিচ্ছিস বল

মিথিলা- তোর কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই,,বাই দ্যা য়ে তোরা আমার বিয়েতে এলে খুশি হবো,এতোক্ষনে ইহান মিথিলাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে

ইহান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো – অবশ্যই যাবো মিথি তোর বিয়ে আর আমি,আমরা যাবো না

মিথিলা অন্য দিকে ফিরে বল্লো
– আমি আসছি
মিথিলা বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখের পানি টা ইহান দেখে ফেলতো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

দই সমাচার 

0

মিষ্টির দোকান থেকে দই কিনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় এক গাড়ী পুলিশ এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। গাড়ী থেকে নেমেই কয়েকটা পুলিশ সোজা বন্দুক আমার দিকে করে বললো, এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে এক্ষুনি বের করুন নাহলে আপনাকে গুলি করতে বাধ্য হবো। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। সকাল সকাল এ কি বিপদে পড়লাম রে বাবা। ভয়ে ভয়ে বললাম, স্যার এর মধ্যে বগুড়ার দই আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে বললাম, স্যার আমার বিয়েশাদি হয়নাই। আপনি দয়া করে বন্দুকটা বুকের দিকে অথবা মাথার দিকে তাক করে ধরুন। ওখানে গুলি লাগলে আমি আর এই জীবনে বিয়ে করতে পারবো না। ছোটবেলা থেকে আমার বিয়ে করার খুব ইচ্ছে।

পিছন থেকে এসআই সাহেব এগিয়ে এসে বললো, মানুষের এতো ইচ্ছে থাকতে তোর এই বিয়ে করার ইচ্ছের কারণ টা কি? আমি বললাম, বিয়ের পর অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে। তারপর শিশুপার্কে গিয়ে এক ব্যাটার উপর প্রতিশোধ নিবো। সেদিন প্রেমিকার সাথে শিশুপার্কে গেছিলাম। এক ব্যাটা আমাদের ঢুকতে দেয়নাই। বলছে ওখানে শিশু ছাড়া ঢোকা নিষেধ।

এসআই আমার কানমলা দিয়ে বললো, পরিবার পরিকল্পনার শ্লোগান শুনিস নাই? দুইটি বাচ্চার বেশি নয়৷ একটি হলেই ভালো হয়। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, স্যার বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। সেইখানে আমার ৩-৪ বাচ্চাকাচ্চা আপনাদের কাছে বেশি হয়ে গেলো? এসআই ধমক দিয়ে বললো ,অই তুই চুপ থাক। বেশি কথা বলিস। ঐ কেউ একজন এর প্যাকেট খুলে দেখ ভিতরে কি আছে।

একজন এগিয়ে এসে প্যাকেট খুলে দেখে বললো, স্যার ভিতরে দই ছাড়া কিচ্ছু নাই।

এসআই বললো, দইটাও চেক করে দেখ। গাড়ির ভিতরে দেখ চামুচ আছে সেটা নিয়ে আয়।

কনস্টেবল একটা চামুচ এনে দই থেক এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার ফার্স্টক্লাস দই। জীবনে এমন দই খাইনাই।

এসআই বললো, কি তাই নাকি? সত্যি ভালো তো?

কনস্টেবল বললো, জ্বী স্যার। একদম খাটি দই।

এবার আমার বিশেষ যায়গায় দিকে বন্দুক তাক করে থাকা কনস্টেবল এসআইকে বললো, স্যার বউয়ের যন্ত্রণায় বাসায় মিষ্টি খাইতে পারি না। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওখান থেকে এক চামুচ দই খাই? খুব খাইতে ইচ্ছে করতেছে।

এসআই বললো, ঠিক আছে খা। তবে এক চামুচের বেশি খাবি না।

এরপর সেই কনস্টেবল এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার দই খেয়ে মুখের চুলকানি বেড়ে গেছে। আরেক চামুচ খাই স্যার?

এসআই বললো, ঠিক আছে খা।

এবার খেয়াল করে দেখলাম, সব পুলিশ সদস্যরাই এসআইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ এরাও খেতে চায়।

আমি দৌড়ে গিয়ে সেই কনস্টেবলের হাত থেকে দইয়ের হাঁড়ি দুইটি কেড়ে নিয়ে বললাম, স্যার আর দই দেওয়া যাবে না। আপনার দুই কনস্টেবল আমার এক হাঁড়ির অর্ধেক দই শেষ করছে। আমি আর দই দিবো না।

এবার আরেক কনস্টেবল বলে উঠলো, ও ভাই আমারে এক চামুচ দই দেন না। এমন করেন কেন?

আমি রেগে গিয়ে বললাম, দেখেন ভাই। আমার আব্বা আমাকে এমনেই বিশ্বাস করে না। ভাববে আমি রাস্তায় দই খেয়ে হাঁড়ি খালি করেছি। আপনারা থাকেন আমি চালালাম।

এসআই সাহেব বললেন, “আজ নির্বাচন” জানো না?এসব প্যাকেট নিয়ে ঘুরলে পুলিশ সন্দেহ করবেই।যাইহোক, এটা কোথাকার দই?

আমি বগুড়ার দই বলে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলাম। একবার পিছন ফিরে দেখি সবাই আমার হাতের দইয়ের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছি বাসায় গিয়ে আব্বারে কি জবাব দিমু।

বাসার প্রায় সামনে চলে এসেছি। দেখি গলির মোড়ে কয়েকজন পুলিশ সমস্যা দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম শেষ। এবার আর আমার দই নিয়ে বাসায় যাওয়া হবে না। কোনো চিন্তা না করেই দইয়ের প্যাকেট দুইহাত দিয়ে শক্ত করে ধরে দিলাম ভৌ-দৌড়।

আমি দৌড়াচ্ছি পুলিশ সদস্যরা আমার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। আমি আরো জোরে দৌড়াচ্ছি। ওরাও আমার পিছু আরো জোরে দৌড়াচ্ছে। বেশকিছু দূর দৌড়ানোর পর হাল ছেড়ে দিলাম। ইতিমধ্যে উনারা আমাকে ধরে ফেললো। আবার বন্দুক আমার দিকে তাক করে বললো, সত্যি করে বল এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে?

আমি বললাম, আমার জীবন থাকতে বলবো না।। এর আগেরবার যে ভুল করছি সেটা আর করবো না।

একজন পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছে থেকে দইয়ের প্যাকেট কেড়ে নিয়ে খুলে দেখে বললো, আরে এর মধ্যে তো দই।

আমি বললাম, হ্যাঁ দই।

উনি বললেন, তাহলে তুই দৌড়াচ্ছিলি কেন?

আমি রাগ নিয়ে বললাম, আপনারা মানুষের হাতে দই দেখলেই খাওয়া শুরু করেন। এই ভয়ে দৌড় দিছি।

হঠাৎ একজন পুলিশ সদস্য বললো, তোর কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। চল থানায় চল।

আমি থানায় দইয়ের প্যাকেট নিয়ে বসে আছি। এরমধ্যে আব্বা এসে হাজির।

আব্বা- তুমি কি করছ? পুলিশ তোমাকে ধরছে কেন?

আমি- আব্বা আমি পুলিশকে দই খাইতে দেই নাই। তাই আমাকে ধরে নিয়ে আসছে।

আব্বা – জেলে বইসা আমার সাথে মজা করো?

আমি- আব্বা বিশ্বাস করেন আমি মজা করতেছি না।

হঠাৎ সেই এসআই এসে বললো, আরে তুই এইখানে কেন? এসআই আর আব্বাকে পরের ঘটনা সব খুলে বলতেই এসআই বললো, তোকে মুক্তি দিতে পারি এক শর্তে।।

আব্বা বললেন, কি শর্ত এসআই সাহেব?

এসআই বললেন, দইয়ের হাঁড়ি দুটো আমাকে দিতে হবে। নাহলে সাতদিন জেল খাটতে হবে।

আব্বারে বললাম, আব্বা আমার সাতদিন জেল খাটতে কোনো সমস্যা নাই। আপনি দইয়ের হাঁড়ি দুইটা নিয়ে যান।

আব্বা আমাকে ধমক দিয়ে বললো, তুই চুপ থাক হারামজাদা। এসআই সাহেব হাঁড়ি দুইটা আপনি রাখেন। তবুও আমার ছেলেরে ছাইড়া দেন।

আমি আর আব্বা থানা থেকে বের হচ্ছি। এমন সময়
এসআই সাহেব বললেন, কিছুদিন ধরে বউ রাগ করে শ্বশুর বাড়ি গেছে। আমার বউয়ের রাগ আবার বগুড়ার মিষ্টি দই ছাড়া ভাঙ্গানো যায় না।

থানার বাইরে আইসা আব্বাকে বললাম, আব্বা জোরে হাঁটেন। আব্বা বললেন, কেন? আমি বললাম, আপনি না বলছিলেন একটা টক দই আর একটা মিষ্টি দই নিতে। এরা তো মিষ্টি দইটা খাইছে টক দইটা নিচে আছে। এসআইয়ের বউ যখন টক দইয়ে মুখে দিবে তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন?

হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে আব্বা নাই। কিন্তু একটু দূরে চোখ রাখতেই টের পেলাম আব্বার মতো একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে।

দই সমাচার

রিফাত আহমেদ

নবনী

0

রেস্টুরেন্টের মালিক প্রায় অপমান করেই নবনী আর জাকির কে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে দিলো। ওরা বের হয়ে যাবার সময় মালিক অন্যান্য কাস্টমার দেখে গলা উঁচু করেই বললো, আমার রেস্টুরেন্টে এসব চুমাচুমি, ধস্তাধস্তি চলবে না। হালাল ভাবে আমি রেস্টুরেন্ট চালাই। এসব বেহালাল কাজ আমার রেস্টুরেন্টে হবে না।

রাস্তায় বের হয়ে নবনী প্রায় কেঁদে ফেললো। কি হতে কি হয়ে গেলো নবনী কিছুই বুঝতে পারেনি। জাকির নবনীর পিছুপিছু হাঁটছে। ওকে কি বলবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। আসলে ব্যাপারটা যে এরকম হবে সেটা ও নিজেও বুঝতে পারেনি।

আজবাদে কাল নবনীর সাথে জাকিরের বিয়ে হবে। নবনীর বাবাই এই বিয়ে ঠিক করেছে। এর আগেও ওরা দুইবার বাইরে দেখা করেছে। রেস্টুরেন্টে বসে বিভিন্ন গল্পগুজব করেছে। বিয়ের পর কি কি ভাবে সংসার সাজাবে। কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে সেসবই ছিল গল্পের মূল বিষয়।

আজকেও স্বাভাবিক ভাবেই ওরা রেস্টুরেন্টে এসে খাবার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছিল। এমন সময় লোডশেডিং হয়। হঠাৎ জাকিরের মনে কি যেন হয়ে গেলো। অন্ধকারে চুপ করে নবনীর গালে চুমু খাবার সময়ই জেনারেটর চালু হয়ে গেলো। আলো জ্বলতেই সরাসরি ওদের দেখে ফেললো রেস্টুরেন্টের মালিক।

উনি এগিয়ে এসে বললেন, উঠুন আপনারা চেয়ার থেকে। এক্ষুনি আমার রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যান। রেস্টুরেন্টের অন্যান্য কাস্টমার সবাই একে অন্যের মুখ দেখাদেখি করছিল তখন। আসলে ওরাও বুঝতে পারেনি। কেন এভাবে ওদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। নবনী আর জাকির অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবার শিক্ষা দেয়নি নাকি? লজ্জা করেনা পাবলিক প্লেসে এসে পরপুরুষের সাথে এভাবে ঢলাঢলি করতে। মুরুব্বি মানেন না?বাড়িতে আমার নিজের ছেলে মেয়ে আছে। ওদের তো আমি কখনো এমন শিক্ষা দেইনি। কেমন বাপ মা আপনাদের? এরকম নানান কথা বলে উনি চিৎকার করে যাচ্ছেন। ততক্ষণে ওরা দুজন রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।

নবনী বেশ অপমানিত বোধ করছে। কথাগুলো ভেবে প্রায় কেঁদেই দিলো। এতগুলো মানুষের সামনে লোকটা অপমান করে বের করে দিলো তাদের।

জাকির বারবার ডাঁকছে কিন্তু নবনীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে। সে এখনো বুঝতে পারছেনা এতগুলো মানুষের মধ্য থেকে কেন তাদের এভাবে অপমান করে বের করে দেয়া হলো। ঢলাঢলির কথাটা কাকে বললেন উনি। সে তো জাকিরের থেকে দূরত্ব রেখেই বসেছিলো। জাকির দ্রুত পায়ে এগিয়ে নবনীর সামনে এসে দাঁড়ায়।

~ নবনী প্লিজ শুনো, আমি সত্যিই চুমু খেতে চাইনি। এমন কোনো ইচ্ছে আমার ছিলোনা কিন্তু তখন হঠাৎ করে কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারছিনা।

~ তাহলে চুমু খেতে গেলেন কেন? নবনী দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলো।

~ বললাম তো ভুলে। এছাড়া আজ বাদে কাল তুমি আমার স্ত্রী হতে যাচ্ছ। এভাবে ওভার রিএক্ট করার কি আছে?

~ ওভার রিএক্ট! অন্তত একবার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিলো। আমি এটা চাই কিনা। এখনো কিন্তু আপনার স্ত্রী আমি হইনি। আর আপনার স্ত্রীকে কি আপনি রাস্তাঘাটে চুমু খেয়ে বেড়াবেন?

~ ঘরের বউ যখন । অনুমতি নেয়ার কি আছে?

একথা শুনে নবনী চুপচাপ হেঁটে চলে আসে। জাকির ডাকলেও ও আর পিঁছু ফিরে তাকায়নি। জাকির বারবার কল দিচ্ছে। নবনী কলটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে রাখে।
বাসায় এসে চুপচাপ রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। কি হতে কি হয়ে গেলো। এরকম একটা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না। তাছাড়া জাকির এরকম করবে সেটাও সে ভাবতে পারেনি। বিয়েটা পারিবারিকভাবে ঠিক হয়েছে, দুদিন পরে বিয়ে তা না হয় মানলাম। তাই বলে অন্ধকারে পেয়ে চুমু খেতে হবে? একবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করলো না? জাকির এতটাই খারাপ। ছিঃ
.
নবনীর মনে হলো সে অন্যায় করছে নিজের সাথে। নীরবতা আর রাগ কোনো কিছুর সমাধান হতে পারেনা। নবনী জাকিরকে কল করে বিকেলে তার সাথে দেখা করতে বলে। জাকির এসেই প্রথমে নবনীর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে তার ভূলের জন্য। কিন্তু নবনী দমে যাওয়ার পাত্রী না। কোনভাবেই সে জাকিরকে আর মেনে নিবেনা। জাকিরের কথা বলার এক পর্যায়ে নবনী বলে উঠে,

~ শুনুন, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।

~ আজ বাদে কাল আমাদের বিয়ে। আর এখন তুমি আমার সাথে মশকরা করছো? নিজের এত বড় ক্ষতি করোনা নবনী।

~ নিজের ক্ষতি করতে চাইনা বলেই এ বিয়ে আমি করবো না। যে নারীদেরকে সম্মান দিতে জানেনা তার সাথে আমার যায় না।

~ বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দাও। আমরা যে সংসারটা সাজাতে চেয়েছিলাম সেটা সাজাতে দাও প্লিজ।

~ প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন। যাকে বিয়ে করবেন তাকে পণ্য না ভেবে মানুষ বলে ভাবুন। তারপর সংসার সাজাবেন।

কথাগুলো বলেই নবনী ফিরে আসছে। এখন অনেক হালকা লাগছে নিজেকে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। চুপচাপ এরকম অন্যায় মেনে নেয়ার মেয়ে সে না। এ অন্যায় মেনে নেয়ার কোনো কারণও নেই। নবনী জানে, তার বাবা তাকে সাপোর্ট করবে। বাবার আদর্শেই তো সে আদর্শিত।
.
বাসায় ফিরে নবনী তার বাবার কাছে গিয়ে বলে, বাবা কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। একটু শুনো এদিকে। নবনীর বাবা তার পাশে এসে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবি?

~ আমি জাকিরকে বিয়ে করতে পারবো না বাবা। এ বিয়ে ভেঙে দিয়েছি আমি।

~ পাড়া-পড়শী সবাই জানে আজ বাদে কাল তোর বিয়ে হবে জাকিরের সাথে। আর এখন বলছিস বিয়ে করবি না। কাউকে পছন্দ করিস?

~ না

~ তাহলে বিয়ে করবিনা কেন?

~ যে পুরুষ নারীদের সম্মান করতে জানেনা তার সাথে আমার জীবন বাঁধা অসম্ভব। বাবা আমি “আলোকবর্তিকা” সংঘের সদস্য। সে সংঘ নারীকল্যাণমূলক কাজ করে। সমাজের অসহায়, অবহেলিত, নির্যাতিত নারীদের জন্য আমি কাজ করি। নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ব্রত নিয়ে পথ চলছি আমি। সেখানে নিজের সাথেই এতবড় অন্যায় আমি কিভাবে মেনে নিই বলো।

~ নবনী মা শোন, সে কি এমন করছে যার জন্য তুই একাই এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিলি। আর যা করুক না কেন। সেটার জন্য তোর কাছে না হয় ক্ষমা চেয়ে নিবে। কিন্তু বিয়েটা ভাঙিস না মা। বিয়ে ভাঙা মেয়েদের মর্যাদা এই সমাজ দেয়না।

~ প্রাচীন সমাজের ঘুণে ধরা চাকার নিচে পিষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না বাবা। আমি সমাজের উল্টো পথে হাঁটি। আমার কাছে আত্নমর্যাদা সবার আগে। আমি যদি নিজেকে সম্মান না দেই তাহলে অন্যজন থেকে সম্মান প্রত্যাশা করাটা বোকামি। আর যা-ই হোক, আমি নিজেকে অপমান করতে পারবো না।

~ নবনী একটু বুঝার চেষ্টা কর। তোর বিয়ের কথা সবার জানাজানি হয়ে গেছে। পরেরবার তোকে বিয়ে দিতে হলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। আর যদি বিয়ে না হয় তখন আজীবন সবাই তোকে ছোট করে দেখবে। অলক্ষুণে ডাকবে। পাড়া-পড়শীর একথা ওকথা শুনে হীনম্মন্যতায় বাঁচতে হবে। পারবি?

~ আজীবন মেয়েরাই কেন এসব সহ্য করে আসবে বাবা? চিরকাল ছেলেপক্ষ বিয়ে ভেঙে যায়, মেয়েটার অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেনা। আজ কোনো মেয়ে স্বয়ং তার বিয়ে ভাঙলো। এবার তারা একটু সহ্য করুক, বুঝুক.. বিয়ে ভাঙার যন্ত্রণা। এ বিয়ে হবেনা। ব্যস।

~ নবনী আমাদের টিকে থাকা দায় হবে এ সমাজে। রাগ, জেদ এগুলো পুরুষদের মানায়। নারীদের সর্বদা কোমল হতে হয়।

~ বাবা তুমি তো আমাকে এ শিক্ষা দাওনি। তাহলে আজ কেন নিজের বিরুদ্ধে কথা বলছো? তুমিই আমাকে শিখিয়েছো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে।

~ অনেক সময় মাথা নোয়াতে হয় মা। সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার তাগিদে।

~ আর কত বাবা? নারীরা চিরকাল মাথা নুইয়ে সব সয়েই গেছে, প্রতিবাদ করেনি। মাথা নুয়াতে নুয়াতে এখন আর নুয়াবার জায়গা নেই। কপাল মাটিতে ঠেকে গেছে। এবার একটু ঘুরে দাঁড়াই?

নবনীর কথা শুনে তার বাবা প্রায় কেঁদে ফেললো। মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছে ভেবে গর্ব হচ্ছে। মেয়ের আত্নবিশ্বাস দেখে কলুষিত সমাজের ভয়টাও কাজ করছেনা আর।
.
আমাদের সমাজে নবনী চরিত্রের মেয়েদের খুব অভাব। এ সমাজের মেয়েরা পরিবারের জন্য চুপচাপ নিজেকে বিসর্জন দেয়। টু শব্দটি করেনা।

ঘুণেধরা সমাজে চিরকাল কন্যাপক্ষ শুধু পাত্রপক্ষের সামনে কেঁদে বুক ভাসায়। তাদের হাতে পায়ে ধরে আঁকুতি মিনতি করে। নারীরা তো দূর্বল নয়। ইসলাম নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যটা আমরাই সৃষ্টি করি। নীরবে সব সয়ে অন্যের কাছে নিজেকে বলি দেওয়া কোনো যুক্তিসঙ্গত কাজ না। সবসময় সয়ে না গিয়ে কিছুসময় রুখে দাঁড়াতে হয়। বাঁচতে হলে বাঁচার মতো বাঁচুন। নিজেকে সম্মান করতে শিখুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সাহস রাখুন।

নবনী
~

রিফাত আহমেদ

চতুষ্কোণ

0

আমাদের ক্লাসে নীলিমা নামে যে কালো মেয়েটা ছিল।রনি তাকে খুব জ্বালাতন করতো। ক্লাসে ও নীলিমাকে নাইজেরিয়ান বেগুন ছাড়া কখনো ডাকতো না। মেয়েটাকে প্রায় সময় দেখতাম রনির এমন কথা শুনে প্রচণ্ড মন খারাপ করতো। মাঝেমধ্যেই ক্লাস থেকে কাঁদো কাঁদো চোখে বেরিয়ে যেতো।

অনেকবার রনি কে বুঝিয়ে ছিলাম। দেখ কোনো মানুষকে এভাবে তার চেহারা নিয়ে খোটা দেওয়া উচিৎ না।কিন্তু রনি কখনো আমার কথা শুনেনি।বারবার এই কাজ করে গেছে।

কিন্তু আজ রনির বাবার অপারেশন করতে যে টাকা লাগছে সেটা সম্পূর্ণ দিয়েছে নীলিমার বাবা। বিনিময়ে রনিকে বিয়ে করতে হয়েছে নীলিমা মতন নাইজেরিয়ান কালো বেগুন কে।

ট্রেনে একজন হিজড়া মাসুদ সাহেবের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলায় উনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। নতুন বউয়ের সামনে এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন হিজড়ার গালে। থাপ্পড়ের চোটে ট্রেনের সীটের রড লেগে কপাল কেটে যায় হিজড়ার। কাঁদো কাঁদো চোখে মাসুদ সাহেবের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো হিজরাটা। তারপর, ট্রেন থেকে নামবার আগে বলে গেলে “আল্লাহ এর বিচার করবে”।

একটু আগে হিজড়ার দল এসে মাসুদ সাহেবের প্রথম সন্তান কে নিয়ে গেলো।ওরা কোথা থেকে যেন খবর পেয়েছে এই বাড়িতে একটা হিজড়া সন্তান আছে মাসুদ সাহেবের। মাসুদ সাহেবের স্ত্রী চিৎকার করে কাঁদছে। হঠাৎ মাসুদ সাহেবের সেই দিনের ট্রেনের কথা মনে পড়ে গেলো।

পলাশপুরের চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে জয়। কিন্তু আজ ও আত্মহত্যা করতে চলেছে। মানুষের কাছে এই মুখ ও কিভাবে দেখাবে! সবাই জয়কে এখন অন্যচোখে দেখছে। এলাকার কোনো মানুষের আর কিছু জানা বাকি নেই । সবাই জেনে গেছে জয়ের বউ জয়ের ছোট ভাইয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়ে ধরা পরেছে।

আম গাছের সাথে একটা দড়ি ঝুলছে। দড়িটাকে মালার মতো করে বানিয়ে নিজের গলায় পড়ে নিলো জয়। পায়ের নিচের চেয়ারটাকে লাথি দিতে যাবে এমন সময় কে যেন জয়ের কানে কানে বলে উঠল।” তুই বন্ধু হয়ে আমার বউয়ের সাথে এসব করতে পারলি? কি দোষ করেছিলাম আমি! যে তুই আমার বউয়ের দিকে নজর দিলি।তোকে কিছু বলার নেই।মাথার উপড়ে আল্লাহ আছে তিনি বিচার করবে “।

জয়ের হঠাৎ মনে পড়ে গেলো পাঁচ বছর আগেকার কথা। তুষারের বউয়ের সাথে জয়ের যে একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল সেটা তুষার জেনে গিয়েছিল। পরে লোকলজ্জার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়।এই ঘটনা জয় আর তুষার ছাড়া কেউ জানে না। হঠাৎ নিজের অজান্তে জয় পা দিয়ে নিচের চেয়ার টা ফেলে দিলো। বারকয়েক কেঁপে উঠে ঝুলে রইলো জয়ের শরীর।

লোকাল বাসে খুব ভিড়। আবির ও ওর ছোটবোন খুব ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠে দাঁড়ালো। ভাই বোন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দুইজন ছেলের মুচকি হাসি দেখে আবির ছেলে দুটোর হাসির কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলো। একটু পরেই আবির কারণ খুঁজে পেলো। ছেলে দুটো হাসছে আবিরের বোনকে দেখে। আবিরের বোনের পিঠে জামার গলার ফাঁক দিয়ে একটা সাদা ফিতা দেখা যাচ্ছে। মুহূর্তেই আবিরের কান রাগে লাল হয়ে উঠলো।ছেলে দুটোকে জবাই করতে ইচ্ছে হচ্ছিল আবিরের। কিন্তু লোকাল বাসে কিছু বলাও যাচ্ছে না। ছেলে দুটোর চোখ থেকে বোনকে আড়াল করে রইলো।

হঠাৎ দুটো সীট ফাঁকা হওয়াতে দুই ভাইবোন বসে পড়লো। কিন্তু আবিরের মনে মনে তখনো আগুন জ্বলছে। হঠাৎ আবিরের মনে পড়লো কয়েকদিন আগের কথা।

টিএসসিতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় দুজন মেয়ে ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের একজনার পিঠের জামার গলা দিয়ে নিচের অন্তবার্সের ফিতা দেখে আবির ও ওর বন্ধুরা মিলে হাসাহাসি। অথচ মেয়ে দুইটি জানতেও পারেনি ওদের হাসির কারণ।

আজ নিজের বোনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে নিজেই নিজের গালে মনে মনে চড় মেরে চলেছে আবির।অথচ পাশে বসা বোন কিছুই বুঝতে পারছে না।

( জগৎসংসার কখনো ঋণী থাকতে চান না। যেকোনো ভাবে তার ঋণ শোধ করে দেন। যদি কেউ ভালো কাজ দিয়ে জগৎসংসার কে ঋণী করেন। তাহলে জগৎসংসার ভালো কিছু দিয়েই সেটা শোধ করবে। আর যদি খারাপ কাজ দিয়ে ঋণী করেন তাহলে…………!)

চতুষ্কোণ

রিফাত আহমেদ

লিখা: ২৩ মার্চ ২০১৮

ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার

0

পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখলাম সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে সীট পরেছে। দেখতে এক্কেবারে ক্যাটরিনা কাইফের মতন। জামাকাপড় ও সুগন্ধির ঘ্রাণ বলে দিচ্ছে বড়লোকের মেয়ে। মনে মনে ভাবলাম একটু খাতির জমানো যাক। পরীক্ষায় টুকটাক সমস্যা হতেই পারে।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আপনি কোন কলেজ থেকে এসেছেন। মেয়েটা কোনো উত্তর দিলো না। ভাবলাম শুনতে পায়নি তাই আবার একই প্রশ্ন করলাম। কিন্তু এবার বুঝলাম, মেয়েটা শুনেই না শুনবার ভান করছে। সুন্দরী মেয়েরা যেমন অহংকারী হয় আরকি। সুন্দর চেহারা ও দামি কাপড়চোপড় কিনার যোগ্যতা কোনোটাই আমার নাই। মনে মনে নিজের উপর কিছুটা রাগ হলো। কেন যে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলাম।

উচ্চ মাধ্যমিকে সাইন্সের ছাত্র ছিলাম। খারাপ ছাত্র ছিলাম না। বিশেষ করে সাইন্সের বিষয় গুলোতে।জেনারেল সাবজেক্ট গুলোর পরীক্ষা চলাকালীন মেয়াটা কখনো আমার সাথে কথা বলেনি। আমিও আর নিজেকে ওর কাছে ছোট করতে যাইনি।

 

পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা দিন লক্ষ্য করলাম প্রশ্ন বেশ কঠিন। পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একপ্রকার হাহাকার চলছে। নিজের প্রশ্ন দেখে বুঝলাম প্রায় প্রশ্ন কমন এসেছে। খাতার দিকে মনোযোগ দিয়ে লিখা শুরু করলাম। এমন সময় পাশে বসা সুন্দরী ক্যাটরিনা কাইফ বলে উঠলেন এইযে ভাই “এক নাম্বার প্রশ্নটা কি আপনার কমন এসেছে? “।
‎এইবার এসেছে আমার সুযোগ। শুনেও না শুনবার ভান করে রইলাম। সুন্দরী আবার আমাকে একই প্রশ্ন করলেন। আমিও আবার না শুনবার ভান ধরে নিজের উত্তর পত্রতে লিখে যাচ্ছিলাম।

আশেপাশে ছেলেমেয়েদের সাথে সুন্দরীর ফিসফিসানি ও কলম কামড়ানোর ধরণ দেখে বুঝে গেলাম ক্যাটরিনা আপুর কমন আসেনি। মনে মনে আমি হানি সিং ও দিপিকা পাড়ুকোনের সাথে “লুঙ্গী ড্যান্স” দিচ্ছি। ভাবছি উচিৎ শিক্ষা হয়েছে ওর। আজ কোথায় যাবে তোমার অহংকার।

অর্ধেক প্রশ্ন লিখা শেষ। এমন সময় সুন্দরী দেখি কলম দিয়ে আমাকে গুঁতা মারে। এমনেই আমার ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড কাতুকুতু। ক্যাটরিনার কলমের গুঁতায় এক্কেবারে লাফিয়ে উঠলাম। আশেপাশে ছেলেমেয়ে আমার বাঁদরের মতন লাফ দেখে হেসে একাকার। মুখে প্রচণ্ড বিরক্তি এনে ক্যাটরিনা আপুকে জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে।
ক্যাটরিনা আপু কাঁদোকাঁদো হয়ে উত্তর দিলো “উনার নাকি কোনো প্রশ্ন কমন নাই”। আমি যদি তাকে সাহায্য না করি তাহলে নিশ্চিত ফেল। এইবার আমার মনের মধ্যে বেজে উঠলো গুরু মাইকেল জ্যাকসনের “বিট ইট” গানটা। কিন্তু গুরুজন বলেছেন মেয়েদের প্রতি দয়া দেখানো আর নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।

আমি ক্যাটরিনা আপুকে সাহায্য করার জন্য রাজি হলাম।ক্যাটরিনা আপু শুনে তো মহাখুশি। কিন্তু উনাকে একটা শর্ত দিলাম। প্রত্যেকটা নাম্বার দেখানোর জন্য উনাকে দশ টাকা করে দিতে হবে। অর্থাৎ দশ নাম্বার মার্কের জন্য উনাকে দিতে হবে একশো টাকা।
মেয়ে আমার কথা শুনে পুরাই টাস্কি। এই ছেলে বলে কি! আমি বলে দিলাম, আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে জানাবেন।

ক্যাটরিনা আপু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে আমার হাতে একশো টাকা তুলে দিলেন। আমিও নির্লজ্জ ভাবে সেই টাকা হাত পেতে নিলাম। মাসে মাসে যদি হাজার টাকা প্রাইভেট টিউটর কে দিতে পারে।তাহলে এক পরীক্ষায় কিছু টাকা খরচ করলে কোনো কিচ্ছু হবেনা এইসব ক্যাটরিনা আপুদের।

এইভাবে সম্পূর্ণ পরীক্ষায় ক্যাটরিনা আপুকে উত্তরপত্র দেখিয়ে যাচ্ছি আর আস্তে আস্তে নিজের পকেট ভারি করছি। মনে মনে যে কি পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম।

পরীক্ষা শেষ হলে উত্তরপত্র জমা দিয়ে বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে কথা বলছি। এমন সময় দেখি ক্যাটরিনা আপুও বের হয়েছে। এগিয়ে গেলাম ক্যাটরিনা আপুর দিকে। পকেট থেকে টাকা গুলো বের করে উনার হাতে দিয়ে বললাম। পরীক্ষার হলে পাশের সীটে বসা কোনো ছেলে কথা বলতে চাওয়া মানে খারাপ কিছু না। সে দেখতে খারাপ হতে পারে তার কাপড়চোপড় দেখতে সুন্দর না হতে পারে। কিন্তু “প্লিজ, ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার!”

ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার

রিফাত আহমেদ

লিখা: ৫ এপ্রিল ২০১৮

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ 

0

যদি বউয়ের সাথে প্রচন্ড ঝগড়া করার পরেও সে বাপের বাড়িতে না গিয়ে আপনার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করে। তাহলে বুঝবেন আপনার বউ আপনাকে প্রচন্ডরকম ভালবাসে।

হতে পারে সেই রান্নায় আজ ঝাল বেশি হয়েছে।আপনি মুখে দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বউয়ের উপর। আরে বোকা ওই ঝালটাই আপনার বউয়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

হতে পারে সেই রান্নার একদম লবন হয়নি। খেতেই পারছেন না। সেটাও ধরে নিতে হবে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

হতে পারে সেই রান্না খেয়ে আপনার পেট খ্রাপ হয়েছে। দুই মিনিট পরপর আপনাকে বাথরুম যেতে হচ্ছে আর এটা দেখে আপনার বউ মুচকি মুচকি হাসছে। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

ঝগড়ার পর আপনার বউ আলাদা ঘরে শুয়েছে। আপনি রাতের বেলা চুপিচুপি তার ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তারপর তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই মাথার হাতুড়ি দিয়ে টিং করে একটা বারী খেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে রইলেন। চোখ খুলে দেখলেন আপনি হাসপাতালে আর আপনার স্ত্রী আপনার পাশে বসে। আর আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সে আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তারপর ধরুন সুন্দরী একটা নার্স আপনার রুমে ঢুকলো। আপনার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে। কিন্তু আপনার বউ আপনার চোখ আড়াল করে রেখেছে। নার্সকে একটুও দেখতে দিচ্ছে না। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তারপর মনে করেন বউ নাই। এই সুযোগে আপনি নার্সকে একটু দেখার চেষ্টা করলেন আর ঠিক তখনি আপনার বউ এসে হাজির। আপনি সাথেসাথে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। আর আপনার বউ চেয়ার তুলে আবার আপনার মাথায় বারী দিলো। আবার আপনি জ্ঞান হারালেন। তারপর চোখ খুলে দেখলেন আপনি শুয়ে আছেন আপনার বাড়িতে। চোখ ছাড়া সমস্ত মুখে ব্যান্ডেজ করা। আপনার বউ আবার আপনার সামনে বসে আছে একটা খুন্তি নিয়ে। আপনার চোখ খুলা দেখতেই সে বলে উঠলো,

“আবার যদি কোনো মেয়ের দিকে চোখ দিয়েছ তাহলে এই খুন্তি দিয়ে তোমার চোখ দুটো তুলে নিবো। তখন আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ দিতে পারবে না। ”

এই কথা শুনে আপনার প্রচন্ড রাগ হতে পারে।

কিন্তু ভাই। এটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ

রিফাত আহমেদ