Thursday, August 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2341



অন্যরকম_বিয়ে দ্বিতীয়_অংশ

0

অন্যরকম_বিয়ে দ্বিতীয়_অংশ

– এ দিকে আয় তুই,,,
.
আমি বাবার ঘরে ঠিকমত না ঢুকতেই বাবা বিছানা থেকে উঠে এসে এক থাপ্পর মেরে আমার কান তব্দা করে ফেলছে,,,

বাবা আমাকে আরো একটা থাপ্পর দিবে ঠিক সেই মুহূর্তে মা এসে বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল।

-এত বড় ছেলেকে কেউ মারে নাকি ?

আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম,

– কি হয়েছে ‘মা’? বাবা আমাকে এভাবে মারল কেন ?

বাবা বিছানায় গিয়ে বসে শান্ত হয়ে বলল,,,,

– জীবনে আমাকে কেউ এত অপমান করেনি আজ তোর জন্য এত অপমানিত হতে হলো,,,

– মানে কি? কে করছে অপমান ?

মা পাশ থেকে বলল,

– কে আবার,,,তোর শশুর করেছে।

– আমার শুশুর কে ?

– মিলির বাবা।

এমন ভাব করতেছিস মনে হয় কিচ্ছু জানিস না তুই,,,তুই এইটা কেমনে করলি,,,আমাদের কে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না।

– আমি সত্যি কিছু জানিনা মা,,,,

ঠিক তখনেই বাবা জিজ্ঞেস করল,,,

-কত দিন হয়েছে করছিস ?

-কি ?

– আবার জিগ্যেস করস কি ?

– না বুঝলে জিগ্যেস করব না ?

– বিয়ের কথা বলছি,,,

বাবার মুখে বিয়ের কথা শুনে আমি অবাক হলাম,মনে হল এই মাএ আকাশ থেকে পরলাম।

– কিসের বিয়ে ? কার বিয়ে ? কোথায় বিয়ে ?

– তুই নাকি আমার বন্ধুর মেয়ে রে বিয়ে করেছিস,,,

– এত বড় মিথ্যে কথা কে বলল তোমারে ?

– মিলির বাবা বলেছে তুই নাকি ফোন করে ওনারে বলেছিস তুই মিলিকে বিয়ে করেছিস। আর দুপুরে মিলির বান্ধবীরাও বাসায় এসে বলেছে ওরা নাকি তোদের বিয়ের সাক্ষী।
.
এবার আমার মাথায় সব কিছু ঢুকল। এত বড় একটা ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছে মেয়েটা আর আমি কিছুই বুঝলাম না।

এরকম একটা কাজ কেন করলো মেয়েটা,,,

আমি বাবার কাছে গিয়ে বললাম,,,,

– বাবা আমার মনে হয় কোথাও একটা মিসটেক হইছে,,

– কোথাও কোন মিসটেক হয়নাই,,,, মিলি এখন কোথায় ?

– ওর মামার বাড়িতে রেখে আসছি,,,

– বিয়েই যদি না করে থাকিস তাহলে ওরে মামার বাড়িতে রেখে আসলি কেন ?

– প্রব্লেমটা তো এখানেই বাবা,,,

– যা এক্ষুনি নিয়ে আয়,,

– কিন্তু বাবা আমার কথাটা তো আগে শুনবে।

– কিচ্ছু শুনবো না,,, আগে ওকে নিয়ে আয় যা শুনার ওর মুখ থেকেই শুনব।

আমি মিলিকে আনতে বাসা থেকে বের হলাম।

সকালের কথা মনে করে নিজের প্রতি খুব রাগ হল।কেন যে এই মেয়ে রে আমি হেল্প করতে গেলাম।এই মেয়ে কে হেল্প করা মানেই বিপদ কাঁদে নিয়ে ঘুরা।

ওরে প্রথম বার হেল্প করে বিপদে পেরেছিলাম প্রায় ছয় মাস আগে।আর তখন থেকেই বিপদে পরা শুরু।সেদিন রাতে মিলি ফোন দিয়ে বলল,,,

– ভাইয়া একটা হেল্প করবেন ?

– আগে বলো কি হেল্প সম্ভব হলে অবশ্যই করবো,,,

– কাল আমার এক কাজিনের জন্মদিন ওর জন্য আমি কিছু শপিং করতে চাই,,,

– কত টাকা ধার দিতে হবে ?

– ভাই টাকা ধার দিতে হবে না।

– তাহলে,,,,

– ছেলেদের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নাই।আপনি সাথে গেলে সহজেই কেনাকাটা করতে পারতাম।

– ওকে,,,কখন যেতে হবে বল,,,

– ভাইয়া কালকে সকালে।

– ওকে।

সকালে গেলাম মিলির সাথে শপিং করতে।মিলি আমার পছন্দে দুইটা শার্ট একটা পাঞ্জাবি নিল,,,

সেদিন আবার আমারও জন্মদিন ছিল।মনে মনে কল্পনা করলাম আজ যদি মিলির মতো আমার একটা কাজিন থাকতো তাহলে আমাকেও এইভাবে জন্মদিনে উপহার দিত।

কেনাকাটা শেষ করে আমি আর মিলি কাউন্টারে গেলাম প্রেমেন্ট করতে,ঠিক তখনেই মিলি বলল,,,

– ভাইয়া আপনি একটু দারান,আমি ওয়াশ রুম থেকে আসতেছি,,,

– ওকে যাও,,,

মিলি চলে যেতেই আমি কাউন্টারে জিগ্যেস করলাম কত প্রেমেন্ট করতে হবে ?

– ‘স্যার’ 4500 টাকা।

– আমি মিলির জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম কিন্তু ও এখনো আসতেছে না।আর টাকা টাও ওর কাছে ও প্রেমেন্ট করবে।

আধ ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু মিলির কোন দেখা নেই।

হটাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসলো।মেসেজটা দেখি মিলির নাম্বার থেকে এসেছে,,,

“ভাইয়া শপিং আপনার জন্যই করেছি।টাকা টা প্রেমেন্ট করে শপিং গুলি নিয়ে বাসায় চলে যান।আর হ্যাঁ,এই গুলি হচ্ছে আপনার জন্মদিনের উপহার”

শুভ জন্মদিন ভাইয়া,,,,

– মেসেজটা পরে আমি পুরা বেক্কেল হয়ে গেলাম।এই মেয়েটা আমার সাথে এমন একটা গেইম খেলল আর আমি কিনা বুঝতেই পারলাম না।

যাই হোক পকেটে টাকা ছিল বিধায় সেদিন মান সম্মান নিয়ে ফিরতে পারছিলাম।

সেদিন সেখানে দারিয়ে কান ধরে বলেছিলাম এই মেয়ের সামনে আর কখনো পরব না।

কিন্তু তা আর হল কই,,,,

সেই ঘটনার কয়েক দিন পরেই মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেল।একদিন সকালে নাস্তা করে বাইক নিয়ে বের হতেই রাস্তায় দেখা হয়ে গেল,,,,

কি ব্যাপার এইভাবে রাস্তা আটকে দাঁড়ালে কেন ?

– ভাইয়া আমার একটা হেল্প লাগবে ??

চলবে….

#লেখা || Tuhin Ahamed

অন্যরকম_বিয়ে  প্রথম_অংশ

0

অন্যরকম_বিয়ে
প্রথম_অংশ

ভাইয়া ঐ আপু টা আপনারে যেতে বলছে,,,

– কোন আপু ?

– ঐ রাস্তার পাশে দারিয়ে আছে যে।

– ওকে, তুমি গিয়ে ঐ আপুরে বলো ভাই চা’ টা শেষ করেই আসতেছে,,,

– ওকে ভাইয়া,,,

দোকানে বসে চা’ খাচ্ছিলাম ঠিক তখনেই একটা ছোট বাচ্চা এসে বলল একটা মেয়ে নাকি আমাকে যেতে বলছে।তাই ‘চা’ টা তারাতারি শেষ করে গেলাম মেয়েটার কাছে,,,

কাছে গিয়ে দেখি এতো মিলি।মিলি হচ্ছে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।ওদের বাসা আমাদের বাসা প্রায় পাশাপাশিই।

মিলিকে দেখে বুকের ভেতরে কেমন করে উঠল।এই মেয়ের সাথে দেখা হওয়া মানেই বিপদে পরা।তাও কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম,,,

– কি জন্য ডেকেছ বল,,,

– ভাইয়া আমি একটা বিপদে পরছি।আমাকে একটু হেল্প করতে হবে।

– কিন্তু আমি তো তোমাকে কোন রকম হেল্প করতে পারবো না।

– কেন ভাইয়া ?

– তোমাকে হেল্প করতে গেলে আমি নিজেই যে বিপদে পরে যাই।

– এইবার আর বিপদে পরবেন না।

– তোমাকে এখন পযন্ত তিন বার হেল্প করেছি আর তিন বারই আমি বিপদে পরেছি।এইবারো যে বিপদে পরবো না তার গ্যারান্টি কি ?

– আমি নিজে গ্যারান্টি এইবার আপনি আর কোন রকম বিপদে পরবেন না।

– ওকে,,,আগে সমস্যার কথা বলো তারপর ভেবে দেখবো হেল্প করব কি করব না।

– ভাইয়া বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছেন।

– এটা তো খুবি ভাল কথা।

– কিন্তু ভাইয়া আমি একজন কে ভালবাসি তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ভাইয়া।

– এটা তোমার বাবাকে বল,,,

– বাবাকে বলেছি।কিন্তু বাবা আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতেছে না।

– তো এখন আমি তোমাকে কিভাবে হেল্প করবো ?

– আপনি বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলবেন।

– আমাদের সম্পর্ক মানে ??

– আমি যাকে ভালোবাসি তার আর আমার সম্পর্কে বলবেন।

– ওহ্,,,,

– আমি বাবার সাথে আপনার কথা বলিয়ে দিচ্ছি আপনি বলেন।

– আমি একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতেছি না।

– কি বিষয় ভাইয়া।

– তোমার বাবা তোমার কথা বিশ্বাস করে না তাহলে আমার কথা বিশ্বাস করতে যাবে কেন ?

– আমি বাবাকে বলেছি আপনি সব কিছুই যানেন।

– কিন্তু আমি তো কিছুই যানি না।

– একটু মিথ্যা বলবেন বাবাকে এই আরকি।

– মিথ্যা বলাটা কি ঠিক হবে ?

– আপনার এই একটু মিথ্যাই পারে আমাদের দুজনের ভালবাসা এক করে দিতে পারে।প্লিজ ভাইয়া শেষ বারের মতো এই হেল্প টা করেন।

– ওকে কিভাবে কি বলব তুমি একটু শিখাইয়া দেও।

– বাবা যাই বলবে আপনি শুধু হম বলবেন।

– ওকে দেও তাহলে তোমার বাবারে ফোন।

– হ্যালো,,,,

– ‘আসসালামু অলাইকুম’ অঙ্কেল।

– মিলি যা যা বলেছে সব কিছুই কি সত্য ?

– হ্যাঁ,সব সত্যি।

– কাজটা মোটেও ভাল হয়নি,,

– হ্যাঁ,কিন্তু কি আর করার আছে,,,

– আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো,

– সব মেনে নেওয়াই ভাল,,,সবকিছুই তো আপনার মেয়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে।

– দ্বারা আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি,,

ফোন লাউড স্পিকারে ছিল।মিলির বাবা এই কথাটা বলতেই মিলি আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কলটা কেটে দেয়।

– কি ব্যাপার কলটা কেটে দিলে কেন ?

– বাবার যা জানার তা তো জানা হয়ে গেছে,,,

– কিন্তু আমি ওনার শেষের কথাটার মানে বুঝলাম না।

– বাবা বলতে চেয়েছেন আপনি বাবার বন্ধুর ছেলে হন।আমার এই ব্যাপারটা আপনি জানেন তাহলে বাবাকে আগে কেন বললেন না।

– কিন্তু আমার কাছে কেমন কেমন যানি লাগল কথাটা।

– আরে বাবা আপনাকে এটাই বলেছে,,,,

-ওকে।

তোমার কাজ তো হয়ে গেছে তাহলে আমি এখন আসি।

– ধন্যবাদ ভাইয়া,,,,

কিন্তু ভাইয়া আমার আর একটা হেল্প লাগবে ?

– আবার হেল্প,,,, ওকে বল কি হেল্প,,,,

– আমাকে একটু আমার মামার বাড়িতে দিয়ে আসবেন ?

– ওকে,,,, দিয়ে আসবো।

মিলিকে তার মামার বাড়িতে দিয়ে আসার সময় আমার ফোনে একটা কল আসল,,,ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বাবা কল দিয়েছে,,,

বাবা সচারাচর আমাকে ফোন করেনা।
ফোন ধরার পর বাবা শুধু বলল,,,,

– তুই তারাতারি বাসায় আয়,,,

আমার মনে হলো বাসায় খুব বড় বিপদ হয়েছে,,,তাই দেরি না করে তারাতারিই চলে আসলাম।

বাসায় ঢুকে বুঝলাম বাসার পরিবেশ থমথমে।ড্রয়িং রুমে কেউ নেই।প্রথমে ছোট বোনের রুমের দিকে গেলাম।ওই রুমে না ঢুকতেই বাবা ডাক দিল,,,

-এ দিকে আয় তুই,,,,

আমি বাবার ঘরে ঠিকমত না ঢুকতেই বাবা বিছানা থেকে উঠে এসে এক থাপ্পড় মেয়ে আমার কান তব্দা করে ফেলছে,,,,,


চলবে,,,,

#লেখা || Tuhin Ahamed

৩২বছরের ছেলে ১৭ বছরের মেয়ে ২য়(শেষ পাট)

0

৩২বছরের ছেলে ১৭ বছরের মেয়ে ২য়(শেষ পাট)

লেখা/রুবেল(হিংসুটে ছেলে)

 

,

মিলি যদি ও একটু অাগে হাসি খুশি ছিলো, যখন শুনতে পেল রিপন অার বাংলাদেশে নাই, মিলি তখন হঠাৎ এ অজ্ঞান হয়ে গেল,
!
এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না, তাহলে রিপন অামাকে কখনো ভালোবাসে নাই
এ সব ভাবতে ভাবতে মিলি মাটি তে পড়ে গেল।
মিলির বাবা মা এখন কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না,
বেশ কিছু পরিচিত অাত্বীয়-স্বজন কে দাওয়াত করেছে, রাহাত পরিচিত না হলে ও ব্যবসার ক্ষেত্র অনেটা পরিচিত তাই মিলির বাবা রাহাত কেউ দাওয়াত করেছে,
!
মিলির জ্ঞান ফিরে অাসলেও,
মিলি কারো সাথে কথা বলছে না, কেমন পাথর গুলোর মত হয়ে গেছে,
মিলির বাবা মা ও কেমন যেন ভেজা বিড়াল গুলোর মত চুপ হয়ে অাছে,
একে একে সব অাত্বীয় -স্বজন নিজের বাড়িতে যাওয়া শুরু করছে,
রাহাত অাগে থেকে সবটা জানে,
মিলির বাবার কাছে গিয়ে তাকে বুজাতে লাগলো,
কিন্তু মিলির বাবার একটাই কথা অামার মেয়েটার এখন কি হবে?
রাহাত হঠাৎ এ বললো অাপনার অাপত্তি না থাকলে অামি মিলি কে বিয়ে করবো,
যদি ও কোন বাবা মা চাইবে না যে তার মেয়ে তার বয়সের দ্বিগুন কোন ছেলের সাথে বিয়ে হোক,
কিন্তু এখন মিলির বাবা মার জন্য এটাই এখন ভালো প্রস্তাব,
!
এখানে মিলির মতামতের কোন মুল্য নেই,
মিলির ইচ্ছা না থাকলেও এ বিয়াটা করতে হবে,
এ ছাড়া মিলির কাছে অার কোন উপায় নেই,
!
তার পর মিলির অ্র রাহাতের বিয়ে হয়ে গেলো, মিলির বাবা মিলি কে বুকে জড়িয়ে কান্না করে মিলি কে গাড়িতে তুলে দিলো।
মিলি অঝড়ে কেঁদে যাচ্ছে,
রাহাত গাড়ি নিয়ে বাড়িতে পৌছালো,
রাহাত বাড়িতে একা থাকে তাই রাহাত কে একাই সবটা করতে হলো,
মিলিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল,
!
মিলি তুমি এ ভাবে কান্না করতিছো কেন(রাহাত)
দেখো অামি তোমার বেপারে সবটা যানি (রাহাত)
!
অাপনি সব কিছু যানার পরও কেন এটা করলেন(মিলি)
দেখো ঔ মহুতে ঔ খানে দাড়িয়ে অামার যা করার উচিত ছিলো অামি তাই করছি, (,রাহাত)
ও তার মানে অাপনি অামাকে দয়া করছেন(মিলি)
তুমি যদি এটা কে দয়া মনে করো তো করতে পারো, শোন অামি যানি অামি তোমার বয়সে অনেক বড়ো হয়তো অামি যা করছি তা ঠিক হয়নি,
কিন্তি বললাম না ঔ মহুতে অামার যা করার উচিত ছিলো অামি তাই করছি,
তুমি তোমার বাবা মার কাছে যেমন ছিলো ঠিক এখানে সে ভাবে থাকবে,
অামি শুধু তোমাকে অার তোমার বাবা মাকে সমাজের চোখে নিচু হতে দেই নাই, (রাহাত)
ও তার মানে শুধু দয়া করছেন, স্ত্রী মানেন নাই(মিলি)
দেখো বিয়ে যখন করছি তখন তো সমাজের চোখ এ তুমি অামার স্ত্রী তাই না,
!
মিলি তুমি অসুস্থ অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমাও, (রাহাত)
এই দয়া কত দিন থাকবে (মিলি)
দেখো এ ভাবে বলছো কেন,
অার তুমি এটাকে দয়া মনে করতিছো কেন?
কত দিন থাকবে মানে, বললাম তো ইসলাম অনুযায়ী তুমি এখন অামার স্ত্রী, অামি যতো দিন বেচে থাকবো ততো দিন তো তোমাক দেখতে হবে তাই না? এখন তুমি কত দিন থাকবে অামার কাছে অামি যানি না,(রাহাত)
!

ভালোবাসবেন অামায় সারাজীবন? বলে মিলি রাহাত কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো,
রাহাত অাস্তে করে মিলি কে জড়িয়ে বললো
মিলি এ ভাবে কাদছো কেন, অতীত সব ভুলে যাও, কথা দিলাম সারাজীবন পাশে থাকবো,
!

সমাপ্ত

গল্পটা শেষ করতে চাই নাই। কিছু একটা কারনে দ্রুত শেষ করতে হলো, যানি শেষ টা ভালো হয়নী,
!
ভালোবাসা জাতী অার বয়স অনুযায়ী হয় না, ২০ বছরের মেয়ে ৪০ বছরের ছেলে কে ভালোবাসতে পারে,
যাই হোক এবার মিলি বুড়োর বুকে ভালোই থাকবে

অতিরিক্ত কিছু কথা ঃ অাপানার প্রেমিক কখনো অাপনাক রুমডেট এর কথা বলে তার হাতে ৫০০ টাকার নোট দিয়ে বলুন যা কোন বেশ্যার কাছে গিয়ে রুমডেট করে অায় অামি বেশ্যা না।
ভালোবাসায় কোন নোংরামি নাই, অাছে শ্রদ্ধা, সন্মান অার ভক্তি,
ভালো থাকবেন সবাই।

৩২ বছরের ছেলে ১৭ বছরের মেয়ে পাট ১

1

৩২ বছরের ছেলে ১৭ বছরের মেয়ে

লেখা /রুবেল(হিংসুটে ছেলে)

মিলি পেগনেন্ট, এ অবস্থায় তাকে বিয়ের পিরিতে বসতে হলো।মিলির কপালটা এতটাই খারাপ যে,যার সাথে বিয়ে সেও তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো বিদেশ এ ।এখন মিলির কি হবে?আত্বহত্যা ছাড়া মিলির আর কোন উপায় নেই।পেগনেন্ট মেয়ে কে কে বিয়ে করবে? তিন কুটি টাকা যৌতুক দিলেও আমার মনে হয় কেউ বিয়েতে রাজি হবে না। কিন্তু না যৌতুক না বিনা যৌতুক এ মিলি কে বিয়ে করতে কেউ একজন রাজি হলো।আমার মনে হয় এই ছেলেটা বোকা নয়তো এর কোন প্রবলেম আছে,তাই রেডিমেড সন্তান এর বাবা হতে যাচ্ছে।কিন্তু না যে ছেলে বিয়ে করতে রাজি হইছে সে শিক্ষিত এবং একজন বিসনেস ম্যান।হ্যা তার নাম রাহাত।রাহাত সাহেব এ মিলি কে বিয়ে করতে রাজি হইছে।রাহাত সাহেবের বয়স যখন ২২ তখন সে বিয়ে করে ১৯ বছরের একটা মেয়ে কে। বিয়ের ১বছর না হতেই তার স্ত্রী গর্ব অবস্থায় মারা যায়।রাহাত তার স্ত্রী রাইসা কে অনেক ভালোবাস তো তাই তো রাইসা মারা যাওয়ার ১২ বছর গত হওয়ার পরও রাইসার যায়গায় অন্যকাউ কে নিয়ে আসেনি।কিন্তু ৩২ বছর বয়সে এসে বুড়োর এ কোন ভিমলতি ধরলো সে বিয়ে করতে চায় গর্ববতী মেয়ে যে কি না তার বয়সের অর্ধেক।হ্যা মিলির বয়স এখন ১৭+।যার কি না বিয়ের বয়স এ হয়নী সে আবার নাকি পেগনেন্ট।১৪ থেকে ১৮/১৯ বছর এই বয়সের মেয়েদের মধ্যে
!
আবেগটা বেশি থাকে।তাই তো এই বয়সের ছেলে মেয়েরা বেশি ভুল করে।মিলির ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে ।মাধ্যমিক পাশ করে মিলি সবে মাত্র কলেজে উঠেছে।এরি মধ্যে সে প্রেম ও জড়িয়ে গেছে।চলুন একটু ফ্লাসব্যাক এ যাই।

~মিলি তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?(রিপন)
এটা তুমি কি বলছো রিপন?আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি (মিলি)
প্রমান কি?(রিপন)
হা হা হা তুমি কি চাও আমি বাংলা সিনেমার নাইকাদের মত পাহাড়ের দিকে দৌড়ে যাই আর তুমি পিছে পিছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলবে এটা তুমি কি করছো?তোমার কিছু হলে আমার কি হবে(মিলি)
না এসব কিছু করতে হবে না আমি যা বলবো তুমি তা করতে পারবে বা রাজি হবে(রিপন)
আমার ভালোবাসা নিয়ে যখন তোমার এত সন্দেহ,ঠিক আছে আমি যে তোমাক ভালোবাসি এটা প্রমান দিতে তুমি যা বলবে আমি তাই করবো(মিলি)
মিলি তুমি যে আমাকে ভালোবাসো এটা আমি যানি।আর আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করবো।এটা ও তুমি যানো।তাহলে তুমি বললে কেন প্রমান কি?আরে ধুর তোমাকে রাগানোর জন্য বলছি।কিন্তু তূমি তো রাগ এ করলে না।হা হা হা আমি রাগ করলে তুমি খুশি? ওকে যাও রাগ করলাম।আরে আরে পাগলীটা রাগ করে না সরি সোনা।একি ছাড়ো এখানে অনেক লোকজন তো।তাহলে বলো তুমি রাগ করো নাই।
!
এই বয়সী ছেলে মেয়ের প্রেমের মহুর্ত গুলো লিখে শেষ করা যাবে না।এক প্রর্যায় ভালোবাসার প্রমান দিতে গিয়ে বা তার ভালোবাসা ধরে রাখতে মিলি কে দেহ দিতে ।।

!
একটা কথা মনে পড়ে গেলে ধর্ষন হওয়ার পর পুলিশ জরিনা কে বললো।আচ্ছা জরিনা তোমাকে যখন জোর করে ধর্ষন করা হলো তখন তোমার কেমন লেগেছিলো।জরিনা উত্তরে বললো কি যে বলেন স্যার জোর করে মিষ্টি খাওয়ালে কি তিতা লাগে?(কাল্পনিক কথা)

!
জরিনার মত ঠিক মিলির হয়েছে।মিলি প্রথমে দেহ দিতে আপত্তি করলেও পরবর্তীতে মিলির ইচ্ছায় অনেক বার দেহের আদান প্রদান হয়েছে রিপনের সাথে।মিলি এবং রিপন দেহের ক্ষুদা মিটাতে গিয়ে ভুলেই গেছিলো পরর্বতীতে কি হতে পারে।।

!
এ ভাবে চলতে থাকে তাদের ফালতু ভালোবাসা।কিছু দিন পর মিলি তার দেহের পরিবর্তন দেখতে পায়।অথ্যাৎ একটা মেয়ে গর্ববতী হলে প্রাথমিক প্রর্যায় যে উপসর্গ গুলো দেখা যায় যেমন মাথা ঘুড়া বমি বমি ভাব ইত্যাদি মিলির মাঝে দেখা যায়। এ সব দেখে মিলির বাবা মা টেনশন এ পড়ে যায়।মিলিও বুঝতে পারে তার কি হতে যাচ্ছে।মিলি কে ডাঃ কাছে নিতে চাইলে প্রথম এ মিলি না করে ।পরে বাধ্য হয়ে মিলি কে ডাঃ কাছে যেতে হয়।ডাঃ পরিক্ষা নিরিক্ষা কর মিলির বাবা মা কে সবটা খুলে বলে।
!
মিলির বাবা মা অনেটা প্রভাবশালী তাই মিলির মুখ থেকে সবটা শুনার পর রিপনের কাছে যায়।এবংভয় ভিতি দেখি নিজেদের মান ইজ্জত বাচানোর জন্য রিপন কে বিয়েতে রাজি করায়।রিপন ও বাধ্য ছেলের মত তাদের কথা মেনে নেয়।রিপনের বাবা মা দেশের বাহিরে থাকে রিপন এখানে হোস্টেল এ থেকে লেখাপড়া করতো।এরি মধ্যে রিপনের বাবা মা রিপনের জন্য ভিসা পাসপোর্টি আর বিমানের টিকিট রেডি করে পাঠিয়ে দেয় রিপনের কাছে।বাংলাদেশে আর রাখবে না বিদেশে নিয়ে লেখা পড়া করাবে।তাদের ছেলে যে অকাম করছে এটা তারা জানতো না।রিপন ও চালাকি করে বিদেশে যাওয়ার দিনে বিয়ের সব কাজ শেষ করতে বলে।এ সুযোগটা আমি পেলে সত্যি মিলি কে বিয়ে করতাম কারন প্রভাবশালী শশুর থাকে মানে অনেক কিছু।রিপন বোকা তো তাই পালিয়ে ছিলো।যাই হোক তার পর বিয়ের সব কাজ ওকে ।বর আসবে কিন্তু কেন যে আসতিছে না মিলির বাবা ভেবে পাচ্ছে না।তাই লোকজন পাঠিয়ে দিলো রিপনের কাছে ।কিন্তু রিপন কে আর কে পায় সে তো ১ ঘন্টা আগে পাখি হয়ে উড়ে গেছে। এখানে মিলির বাবা মার ভুল ছিলো সেটা হলো রিপনের বাবা মার সাথে কথা না বলা।তাদের সাথে কথা বললে হয়তো এমনটা হতো না।

চলবে

টেস্টটিউব  ৪র্থ পর্ব ( অন্তিম পর্ব )

0

টেস্টটিউব
৪র্থ পর্ব ( অন্তিম পর্ব )
#লিখা:#Nilufar_Nijhum

– কিসের ভয়!
– যদি এতেও ভাল কিছু না হয়?
– কি হবে না হবে সেটা পরের কথা, আগেই খারাপ টা ভেবে নিচ্ছো কেন! আগেতো চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ্‌ সহায় থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো দেখে নিও। তার চেয়ে এসব বাদ দিয়ে যা বলছি তাই কর। আম্মাকে ডেকে আনো।
– আচ্ছা যাচ্ছি।

নীলা আম্মাকে ডাকতে গেছে, এদিকে আমি ভাবছি কিভাবে আম্মাকে সব টা বোঝাব!

– আবির আমাকে ডাকছিলি বাবা?
– হ্যাঁ আম্মা, আসলে একটা কথা বলার জন্যই ডাকছিলাম।
– কি কথা?
– আম্মা, তার আগে বলো, তুমি নীলাকে তো ভালবাসো, তাই না? বলো ভালবাসোনা?
– হুম্ম বাসিতো। ও তো আমার কাছে, আমার মেয়ের মত, কিন্তু-
– কিন্তু আমাদের বাচ্চা হচ্ছেনা বলেই তোমার মন খারাপ তাইতো?
– হুম্ম বুঝতেই তো পারছিস। কত সখ করে তোর বিয়ে দিলাম, তুই যাকে পছন্দ করলি তাকেই বউ করে আনলাম অথচ কপালে কিনা এই লিখা ছিল!
– আচ্ছা আম্মা ধর, নীলা যদি তোমার ছেলের বউ না হয়ে মেয়ে হতো, আর ওর শ্বশুর বাড়িতে যদি বলা হতো, ওর বাচ্চা হয়না বলেই ওরা আবার তাদের ছেলের বিয়ে দিতে চায়, তুমি মা হয়ে কি সেটা মেনে নিতে পারতে? না সইতে পারতে?
– না, বাবা, এসব ভাবি বলেইতো এতদিন মুখ বুঝে আছি। ভেবেছিলাম আল্লাহ হয়তো একদিন না একদিন মুখ তুলে চাইবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো কোন আশায় আর রইলো না।
– আম্মা এখনো আশা আছে, হয়তো পদ্ধতিগত ব্যাপারটা আলাদা। আচ্ছা, তুমি আর একটা কথা বলতো, এই সমস্যা যদি নীলার না হয়ে আমার হতো? প্লিজ আম্মা তুমি বুঝার চেষ্টা কর।
– কি করতে চাস? খুলে বলতো।
– আম্মা ডাক্তার নীলাকে নিয়ে ডেকেছিল, আমি সেই হিসাবে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো, দরকারে ভাল গাইনী দেখাবো। তারপর বাকি সবকিছু উনাদের কাছেই। তোমরা আগের সময়ের মানুষ, তাই হয়তো এটাকে অন্য ভাবে ভাবছো, তবে নিঃসন্তান থাকার চেয়ে এটা অনেক ভাল।
– আচ্ছা, আমিতো এতকিছু বুঝিনা, তুই যা ভাল বুঝিস তাই কর। তোরা ভাল থাকলে আমিও ভাল থাকবো। আমি নিজেও চাই তুই আর নীলা সারাজীবন একসাথে ভাল থাক।

আম্মার এমন কথা শুনে নীলা আম্মাকে ধরে কাঁদতে লাগে। আম্মা নীলাকে বুকে নিয়েই বলে-
– পাগলি মেয়ে, আমিতো জানি তোরা দুটিতে একটা প্রাণ। শুধুমাত্র আমার স্বপ্ন টা পুরণ হয়না ভেবেই কষ্ট পাচ্ছিলাম।
– আম্মা, আমিও তো কষ্টে থাকি, আপনাদের ইচ্ছে পুরণ করতে পারিনা ভেবে।
– আর মন খারাপ করোনা, আবির যা বলে তাই কর। ডাক্তার যেভাবে বলেন তাই কর। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝছিনা,এটা কি বুঝলাম নাতো!

আম্মার কথা শুনে আমি বলি,
– আম্মা ওইটা টেস্টটিউব পদ্ধতি। বাকিটা ডাক্তারের কাছে গেলেই জানবো। উনি আমাদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন।
– আচ্ছা যা তাহলে। সবকিছু যেন ভালই ভালই হয়।
– ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ভরসা আম্মা। তুমি দোয়া কর। যেন আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

তারপর ডাক্তারের কাছে নীলাকে নিয়ে যাই ডাক্তারের কাছে যেতেই, ডাক্তার নীলাকে বলে-
– দেখুন, আপনি তো মা হতে পারছেন না ভেবেই কষ্ট পাচ্ছেন অথচ এইভাবে আপনার সে স্বপ্ন পূরণ হবে। শুধু আপনার মনে সাহস রাখতে হবে আর আমাদেরকে একটু কো- অপারেট করতে হবে।
– জ্বি, আমি চেষ্টা করবো।
– এইতো ভেরী গুড! আপনাকে বাকিটা বুঝিয়ে দিবো তাহলে এটার ব্যাপারে আপনার সমস্ত ভীতি চলে যাবে। তাছাড়া এটা এখন প্রায়শ হচ্ছে। আমরা এর সমন্ধ্যে জানিনা বলেই এটাকে ভয় পাই।

ডাক্তারের কথা শুনে আমি বলি, ম্যাডাম একটু খুলে বলুন তো, টেস্টটিউব পদ্ধতিটা আসলে কি? নীলা তো খুব ভয় পাচ্ছে ভাবছে , এটা খারাপ কিছু!

– এটা খারাপ বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আসলে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বা কাঁচের ভেতর নিষেক (ভিট্রো = কাঁচ, ইন ভিট্রো = কাঁচের ভেতর) বা টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনাদের মত যারা নিঃসন্তান তারা সন্তান লাভ করে থাকেন। টেস্ট টিউব এই পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিম্বানু ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। তারপর সেটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়। একই সময়ে স্বামীর অসংখ্য শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা থেকে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু। তারপর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণুকে নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশটিকে সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের অনুরূপ পরিবেশের একটি ইনকিউবিটরে। ইনকিউবিটরের মধ্যে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পরই বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। ভ্রূণ সৃষ্টির পর সেটিকে একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে জরায়ুতে সংস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পরই তা চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে । যার ফলে জন্ম নেয় টেস্টটিউব বেবি। এই টেস্টটিউব বেবি মাতৃগর্ভেই বেড়ে ওঠে এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয়। কোনো টেস্টটিউবে এই শিশু বেড়ে ওঠে না। স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর সঙ্গে টেস্টটিউব বেবির জন্মদানের প্রক্রিয়ায় পার্থক্য এটুকুই যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর পুরোটাই সম্পন্ন হয় মায়ের ডিম্বনালি এবং জরায়ুতে। আর টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে স্ত্রীর ডিম্বাণু এবং স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে সেটিকে একটি বিশেষ পাত্রে রেখে বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় নিষিক্তকরণের জন্য। নিষিক্তকরণের পর সৃষ্ট ভ্রূণকে স্ত্রীর জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। সূচনার এই সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টাতে শিশু একদম স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। এবার বুঝেছেন?
– জ্বি ম্যাডাম। তবে আমার স্ত্রীকে একটু বুঝান, ওর মনেই যত ভয় কাজ করছে।

এরপর ডাক্তার নীলাকে বুঝিয়ে বলেন-
– শুনুন, ভয়ের কিছু নেই, এমন নয় যে এইভাবে কেউ বাচ্চা নিচ্ছেনা। এটা সর্বশেষ উপায়। সুতরাং ভয়কে জয় করতে হবে।

ওর সাথে কথা বলা শেষে ম্যাডাম বলেন-
– আবির সাহেব আপনাকে একটু মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে এসময়, আপনার স্ত্রীর প্রতি এইসময় একটু বেশিই খেয়াল রাখতে হবে, এবং যত্ন নিতে হবে। আর আরো একটা জরুরী কথা হচ্ছে , এই চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল।
– ম্যাডাম তার জন্য সমস্যা নেই।
– আচ্ছা ওই কথায় রইলো তাহলে। সামনে সপ্তাহে আসবেন, বাকি সব প্রসেস গুলো তখনি বুঝিয়ে দিবো কেমন?
– জ্বি অবশ্যই।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে নীলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি- এমন সময় ও বলে উঠলো-
– আবির,
– হুম,
– আমারতো বিশ্বাস-ই হচ্ছেনা আমি সত্যি সত্যি মা হতে পারবো!
– বিশ্বাস হবেনা কেন বল, ডাক্তারের সব কথা তো নিজের কানেই শুনলে, এবার খুশিতো? আর তো বলতে পারবেনা, তুমি কখনো মা হতে পারবেনা?
– সব কিছু তোমার ভালোবাসার জোরেই হচ্ছে। অন্য কেউ হলে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিতো। আমার ভাগ্য আমি তোমাকে পেয়েছি।
– আমি ভাবছি আম্মা কতটা খুশি হবেন।
– হুম্ম আম্মা তো এই চেয়েছেন, সব সময়।
– আচ্ছা, একটা জিনিস মিস করে ফেললাম,
– কি?
– এই সুযোগে আমার একটা বিয়ে করা হতো।
– কি বললে?
– কিছুনা, ভুল করে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।
– পাজি কোথাকার! ভুল করে! আর একবার বলে দেখো, তোমার কি অবস্থা করি!
– আচ্ছা, বাবা বলবোনা হলো তো?
– হুম্মম, হলো!
– নীলা, জানো সত্যি বলতে আজ আমি খুব খুশি।
– কেন?
– আমার পাগলিটার মুখে হাসি ফুটেছে বলে।
– এই জন্য খুশি?
– বাবা হওয়ার জন্য খুশি না?
– না তা কেন? তবে যে আসবে সে তো আর তোমার আগে আমার কাছে বেশি নয়! সবকিছুর আগে তুমি আমার কাছে। তারপর অন্যকিছু।
– হুম্ম বুঝলাম।
– কি বুঝলা!
– বুঝলাম আমি একটা পাগলকে বিয়ে করেছি।
– হুম্মম যেমন তেমন পাগল নয়, একেবারে তোমার জন্য পাগল।
– হয়েছে, এবার চুপ কর,বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। মানুষে দেখলে সত্যি সত্যি বলবে ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে!
– এই কথা! আমার তো সব সময় জোরে জোরে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে, আমি তোমাকে ভালবাসি।
– আল্লাহ! এবার আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর!
– আচ্ছা, তবে ডাক্তারের কথা মনে আছেতো? এখন থেকে তোমার বেশি বেশি যত্ন নেয়া লাগবে।
– সেতো পরে, এখন তো নয়।
– উঁহু আমি এখন থেকেই নিবো।
– আচ্ছা, নিও।

১০ মাস পর…..

নীলা ক্লিনিকে অ্যাডমিট, কিছুক্ষণের মধ্যে ওকে ওটিতে নেয়া হবে। যাওয়ার সময় বারবার আমার হাত ধরে কান্না করে বলছিলো, আমাকে যদি ও আর ফিরে না দেখে, তাই শেষ দেখা দেখে নিচ্ছে। আমি এত শক্ত মনের হয়েও কান্না চেপে রাখতে পারিনা।

৩ ঘন্টা প্রায় শেষ, আমি কি করবো, কিছুই বুঝিনা, শুধু অস্থির হয়ে পাইচারি করতে থাকি। আমার এমন অবস্থা দেখে আম্মা বারবার বলেন,
– তুই একটু শান্ত হ। এত অস্থির হোসনা, আল্লাহ কে ডাক, একমাত্র আল্লাহ ভরসা। উনি চাইলে ডাক্তারদের ওসিলাই সব ভালই ভালই মিটিয়ে দিবেন।

৪ঘন্টা পর গাইনি ম্যাডাম বের হয়েই বললেন-
– আবির সাহেব, আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়ায় অপারেশন সাকসেস!
– ম্যাডাম কোন সমস্যা হয়নিতো?
– কেস একটু ক্রিটিক্যাল ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত সব ভালই হয়েছে। আর আপনাদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।
– আমি কি এখন নীলার সাথে দেখা করতে পারবো?
– পারবেন তবে এখন নয়। উনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে , আই সিউ তে। উনার ঘুম ভাঙলে আয়া আপনাকে ডেকে দিবে , আমি বলে রেখেছি। বাচ্চার ও এক্সট্রা কিছু ট্রিটমেন্ট চলছে সেসব মিটে গেলে দেখতে পারবেন।
– বেডে কখন দেয়া হবে?
– একটু সময় লাগবে।
– আচ্ছা। ম্যাডাম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এতটা করার জন্য।
– আরেহ এটাতো আমাদের কর্তব্য! আপনাদের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি, এটাই বড় ব্যাপার। তাছাড়া এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল মি.আবির। আল্লাহ সহায় ছিলেন, আর আপনাদের ভাগ্য ভাল ছিল। সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছে।

নীলাকে বেডে দেয়া হয়েছে, ওর পাশেই ছোট্ট পুতুল টাকে নিয়ে আম্মা বসে আছেন। আমাকে দেখেই বললেন,
– এই নে, ওকে একটু কোলে নিয়ে বউমার সাথে কথা বল, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।

আমি আমাদের ছোট্ট পুতুল টাকে কোলে নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে বললাম,
– ও কার মত হয়েছে বলতো-?
– তোমার মত।
– তোমার স্বপ্ন পূরণ হল তাহলে?
– হুম্মম।
– ওকে পেয়ে আমাকে ভুলে যেওনা কেমন!

আমার কথা শুনে নীলা কাঁদে। এই কান্না কষ্টের কান্না নয় সুখের কান্না!

——-

#রিপোস্ট: এই গল্প টা হঠাত করেই ভেবে লিখা। আসলে ছোট বেলা থেকে এই পর্যন্ত অনেক পরিবারকে ভাঙতে দেখেছি শুধুমাত্র তাদের সন্তান হয়না বলেই! এমনকি নিজের আত্মীয়দের মধ্যেও দেখেছি। যেখানে, শুধুমাত্র বাচ্চার কারণে ১০/১২ বছরের সংসারটা ভেঙে গেছে !

#তাইএইখানেআমিদুটোমেসেজদিতেচেয়েছি,

১. ভালবাসার বিকল্প কিছুই হয়না, শুধুমাত্র ভালবাসার জোরেই অনেক অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব। তাই শুধুমাত্র একটা সমস্যার কারণে কাছের মানুষটিকে ছেড়ে যেতে নেই। বরং তার পাশে থেকে সেটাকে মোকাবিলা করতে হয়।

২. যাদের সন্তান হচ্ছেনা, তারা অবশ্যই এটা বিকল্পরূপে ভাবতে পারেন। তাতে সন্তানহীন হওয়ার কষ্ট থেকে অন্তত বাঁচতে পারবেন।

টেস্টটিউব ৩য়_পর্ব

0

টেস্টটিউব ৩য়_পর্ব

#লিখা:#Nilufar_Nijhum

আবির, তোর সাথে একটু কথা আছে,
– হ্যাঁ আম্মা বলো কি বলবা।
– বলছি, আমার তো বয়স হলো বাবা , এবার তো তুই ঘরে বউ নিয়ে আয়, আমিও নাতী নাতনীর মুখ দেখে যাই।
– কি যে বল আম্মা! এত তাড়াতাড়ি কই যাইবা তুমি? অনেক বছর বাঁচবে তুমি, বুঝছ?
– পাগল ছেলের কথা শোনো, আল্লাহ্‌র ডাক আসলে কারর কি আর থাকার জো আছে?

– তবুও তুমি এসব বলবানা। আমার ভাল্লাগেনা শুনতে। আমার আম্মা আমাকে রেখে কোথাও যাবেনা।
– আচ্ছা সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু এবার আমি সত্যি সত্যি ঘরে বউ আনতে চাই। তুই আর না করতে পারবিনা। তুই ভেবে দেখতো? তুই সকালে অফিস যাস, আসিস সন্ধ্যায়। আমার একা একা বাসায় কি করে সময় কাটে! এই বয়সে কি একা একা ভাল্লাগে? তাছাড়া এখন তো ভাল চাকরীও করছিস। আর তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা না, তেমন হলে আমরা মেয়ে খুঁজি, আর যদি তোর খোঁজে থাকে বলতে পারিস।
– আম্মা তুমি এত বিয়ে বিয়ে করে পাগল হচ্ছো কেন!
– ও তুই বুঝবিনা! তার আগে বল, তোর চেনাজানায় কোন মেয়ে আছে কিনা ?
– আচ্ছা আম্মা,তোমার কি এখন বিয়ে দেয়ায় লাগবে? আর কয়টা দিন যাক না!
– নাহ, আমি আর একদিন ও অপেক্ষা করতে চাইনা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবা মায়ের কত স্বপ্ন থাকে তুই বুঝবিনা।
– তাই বলে এত তাড়া!
– তোর এসব না না আমি আর শুনছিনা, অনেক হয়েছে আর নয়। এখন বল, তোর খোঁজে কি মেয়ে আছে? থাকলে বল, না থাকলেও বল। আমি তাহলে সেইভাবে খবর নিবো।
– আম্মা আছে, ও ভার্সিটিতে পড়ছে। ওরা চাইছিল পড়া শেষ করে বিয়ে দিতে। তাই বলছিলাম।
– তাতে কি! বিয়ের পরেও পড়বে। বিয়ের পরে কি কেউ পড়াশোনা করে না?
– তা নয়।
– তাহলে? শোন, ভালই হলো, মেয়ে যখন দেখায় আছে, আমরা শুধু গিয়ে দেখে, মেয়ের মা বাবার সাথে কথা বলে, উনাদের মতামত থাকলে পাকা দিন তারিখ করে আসি। তুই বাসার ঠিকানা টা দে , আমি তোর মামাকে আর ছোট কাকাকে নিয়ে যাব।
– এটা ওর বাসার ঠিকানা। তুমি গিয়ে পরিচয় দিবে। মেয়েটির নাম নীলা। আর ওর আম্মু সব জানে। তোমরা যেও কোন সমস্যা হবেনা।

তারপর দেখাশোনা শেষে, বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। বিয়ে নিয়ে নীলার অনেক স্বপ্ন ছিল, রোজ রোজ স্বপ্ন দেখতো, কিভাবে বিয়ে হবে , কি রঙ এর শাড়ি পড়বে, আমি কি কি পরবো, সবকিছু! ওর পছন্দমতই ওর জন্য সবকিছু কেনাকাটা করা হয়।

বিয়ের দিন সারাদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন ওকে বাসর ঘরে দেখি, মনে হয় একটা পুতুল বসে আছে! হালকা ঘোমটায় ওকে আরো বেশি মোহনিয়া করে তুলেছিল!

ও বাসর ঘরে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো, আমি রুমে ঢুকতেই বলে উঠে-
– এতক্ষণে আপনার আসার সময় হলো! সেই কখন থেকে একা একা বসে আছি!
– রাগ হয়েছে বুঝি? খুব তো বরকে আপনি আপনি বলা হচ্ছে!
– ঠিক ই বলছি।
– এখন তাহলে কি উপায়?
– জানিনা।
– আচ্ছা জানোনা যখন তখন আর কি! পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমাই।
– খবরদার বলছি। এক পা গেলে খবর আছে।
– আচ্ছা যাচ্ছিনা তাহলে, হাজার হলেও দশ টা নয় পাঁচ টা নয় আমার একটা মাত্র বউ, তার কথা কি না শুনে পারি!
– আবার মজা করছো? আর দশ টা পাঁচ টা মানে? বউ আবার কয়টা হয়!
– কয়টা আবার?একটাই তো হয়।
– তুমিই তো এইমাত্র বললা!
– ও তো কথার কথা বলেছি! মজা বুঝোনা?
– হুম্ম তোমার ব্যাপারে আমি সব সময় সিরিয়াস, সুতরাং বুঝে মজা করবা, বুঝেছো?
– হু, হু সারাজীবন একটাই থাকবে।
– হু দুটোর কথা ভাবলে মেরে ফেলবো। মনে থাকে যেন?
– ওরে বাবা, এ কেমন বউ? বিয়ের রাতে বরকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়!
– শোনো, এখন তো ভয় দেখাইতেছি, তেমন হলে আরো কিছু করতে পারি। তাছাড়া এতদিন যত জালাইছো, সব তার সুদে আসলে তুলে নিবো।
– আচ্ছা, ভালোবাসা টাও সুদে আসলে দিও তাহলে?
– ভেবে দেখবো।

ও এমনি ছেলেমানুষ ছিলো, সব সময় ওর কথার মধ্যে একটা দুষ্টুমি থাকতো- যা ওকে ভালবাসতে আমাকে বাধ্য করতো!

সেদিন যখন ওকে বলি-

– আচ্ছা শোনো, তোমাকে একটা কথা বলার আছে।
– একটা কথা কেন! হাজার টা বলো, আমিতো শোনার জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করে আছি।
– আসলে এটা তোমার বা আমার কথা নয়, এটা আম্মাকে নিয়ে।
– কি কথা?
– তুমিতো জানো, আম্মা তো একা মানুষ, বয়স ও হয়েছে। আব্বু মারা যাওয়ার পর উনি নিজের সুখ আহ্লাদের কথা ভাবেন নাই, মামারা চেয়েছিলেন আম্মা আবার সংসার করুক কিন্তু শুধুমাত্র আমার মুখের দিকে চেয়ে উনি কিছুই করেন নাই। বাবার কেনা এই বাড়িটা আর আমাকে সম্বল করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন, এইগুলো মামা- মামীদের মুখে শুনেছি। তাই তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, তুমি আম্মাকে কখনো কষ্ট দিওনা। উনি বয়স্ক মানুষ কখনো কিছু ভুল বললে তার জন্য কষ্ট পেওনা। কারণ এতে আমার খারাপ লাগবে। এই কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে, তোমরা দু’জন মানুষই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তুমি কষ্ট পেলে যেমন আমি কষ্ট পাবো, তেমনভাবে আম্মা কষ্ট পেলেও কষ্ট পাবো। তোমার কাছে আমার এইটুকুই চাওয়া।
– আচ্ছা, চিন্তা করোনা, তুমি না বললেও আমি কখনো উনাকে কষ্ট দিতাম না। তাছাড়া তোমার মা তো এখন থেকে আমারো মা। আজকের পর আমি উনার কোন অযত্ন হতে দিবোনা। উনার সকল দায় দায়িত্ব এখন থেকে আমার।

নীলা সেদিন কথা দিয়েছিল, এবং সে কথা আজ পর্যন্ত সে রেখেছে। ও আজ পর্যন্ত আম্মাকে নিয়ে কোন অভিযোগ তোলেনি। আবার আম্মাও তাই।

কিন্তু ইদানীং এর ওর কথা শুনে আম্মা একটু বিচলিত বেশ বুঝতে পারি। আসলে উনার জায়গায় যে কেউ হলে আরো বেশিই করতেন। এই বয়সে নাতী নাতনীর জন্য অস্থির হবেন সেটাই স্বাভাবিক। উনি যে নীলা কে কম ভালবাসেন তা নয়। ভালবাসেন বলে বিয়ের এত বছরে বাচ্চা হচ্ছেনা দেখেও কখনো নীলা কে কটুক্তি করে কিছু বলেননি।

– আবির?
– হুম্মম, কি হলো, ঘুম ভেঙে গেল তোমার?
– হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কি সারারাত জেগেই ছিলে?
– নাহ, এমনি আর কি। তুমি উঠলে কেন! আর একটু ঘুমালেও তো পারতে?
– নাহ হঠাত কেন জানি ঘুমটা ভেঙে গেল! তাকিয়ে দেখি তুমি এখনো জেগে! আমাকে ঘুমাতে বলে নিজেই তো ঘুমাওনি। কি নিয়ে এত চিন্তা করছো বলতো?
– তেমন কিছুনা। তোমার আমার অতীতের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেছিলো। কত সুন্দর ছিল দিনগুলো!
– হুম্মম ঠিক,অতীত-ই ভাল ছিল, কোন সমস্যা ছিলনা।
– আবার শুরু করলে? শোন, অতীতের কথা ভাবলে, আমার একটাই জিনিস পেতে ইচ্ছে করে,
– কি সেটা?
– আমার সেই আগের নীলাকে। যে সারাক্ষণ হাসতো, ছুটাছুটি করতো ,যে চঞ্চল মেয়েটিকে আমি ভালবেসেছিলাম, আমি ওকে খুব মিস করি।
– ওহ এই কথা! তারমানে আমি এখন সেকেলে হয়ে গেছি? আমাকে আর ভাল্লাগেনা?
– তা কেন! তবে অমন হলে ভাল হতো।
– ধুর, কি যে বল! এখন কি ওইসব ছেলেমানুষি করার বয়স আছে?
– কি এমন বয়স হয়েছে? তুমি আমার কাছে সব সময় আমার সেই পাগলিটাই থাকবে।
– সেটাই তো সমস্যা! ছাড়তে চেয়েও পারিনা। মায়ায় পড়ে যাই বারবার!
– বরের প্রতি মায়া থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
– কিন্তু তবুও নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়, মনে হয় আমি শুধু নিজের সুখের কথায় ভাবছি!
– শোনো, এমনটা কখনো ভাববেনা। তুমিই আমার সকল পূর্ণতা।
– না আবির, তুমি যা বলছো তা ঠিক নয়,সন্তান একটা সংসারের সেতুবন্ধন, সেটা স্বামী-স্ত্রী বলো, আর শ্বশুর শাশুড়ি বল, এটাই সত্যি। তারচেয়ে, তুমি আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো। আমার যতই কষ্ট হোক, তোমার ভালোর কথা ভেবে, এই সংসারের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে, আমি মেনে নিব। তুমি বিয়ে কর, প্লিজ। আম্মাকে, মামাদের মেয়ে দেখতে বলো, আমি আম্মুদের বাড়ি চলে যাব। তারপর দেখে শুনে একটা চাকরী নিব, দিব্বি আমার জীবনটা কেটে যাব। তোমার সামনে থাকলে তোমার আমার দুইজনের কষ্ট হবে তার চেয়ে-
– কি বললে তুমি? নীলা এমন পাগলামি কথাবার্তা যদি সবসময় বলতে থাকো আমি সত্যি সত্যি কোথাও চলে যাব। আমাকে তখন খুঁজলেও আর পাবেনা।
– চুপ এমন কথা কখনো বলবেনা! কোথায় যাবে তুমি? তুমি গেলে আম্মাকে কে দেখেবে? তেমন হলে সবার ভালর জন্য আমিই যাব।
– তুমি কোথায় যাবে শুনি?
– কোথায় আর যাব। আমার তো যাওয়ার জায়গা ওই একটাই, বাবার বাড়ি। তুমি রেগে যেওনা। আমি বলছিলাম তুমি যদি আর একটাবার ভেবে দেখো-
– আমার যা ভাবার ভাবা হয়ে গেছে-
– কি ভেবেছো!
– তুমি আমি ডাক্তারের কাছে যাবো, ডাক্তারের পরামর্শ নিবো। দেখো নিশ্চয় ভাল কিছুই হবে।
– আবির আদৌ কি তা সম্ভব!
– কেন সম্ভব নয়? ডাক্তার তো নিজেই আমাকে বলেছেন সেই কথা? তুমি আম্মাকে ডাকো, আম্মাকে সবকিছু বলতে হবে।
– উনি কি এটা মেনে নিবেন!
– কেন নিবেন না? অবশ্যই নিবেন। যাও আম্মাকে ডেকে নিয়ে আসো- আমি রাতেই ফোন দিয়ে ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে রেখেছি,যাও দেরি করোনা।
– আজকে অফিস যাবেনা?
– নাহ, ছুটি নিয়েছি।
– ওমা কখন?
– রাতেই।
– এতকিছু কখন করলে?
– ওইতো রাতেই। যাও আর কথা বাড়িও না। নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। উনাকে সব বলা আছে। প্রথম সিরিয়ালে তোমাকেই উনি দেখবেন।
– উনি কি মহিলা ডাক্তার?
– হুম্ম গাইনী বিশেষজ্ঞ।
– কিন্তু আমার কেন জানিনা ভয় করছে!
– কিসের ভয়?

#চলবে…

টেষ্ট_টিউব  ২য়_পর্ব

0

টেষ্ট_টিউব ২য়_পর্ব

লিখা:Nilufar_Nijhum

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেই নীলা কাঁদতে থাকে। শেষে ওকে থামাতে বলি-

– নীলা?
– হুম,
– আমার দিকে তাকাও। দেখো আমাকে, আমি কি তোমাকে কখনো কিছু বলেছি?
– নাহ,
– তাহলে? মানুষের কথায় কান দাও কেন! মানুষের কথায় কি এসে যায় হু? যেদিন আমি বলবো সেদিন কষ্ট পাবে। বুঝেছো?
– হুম।

আমার কথা শুনে ও চুপ হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে সব সময় কষ্টে কষ্টে মরে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারি। প্রতিদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে ওর মলিন মুখটা যখন দেখি খুব খারাপ লাগে, অথচ কিছুই করতে পারিনা!

চুপ করে আছি দেখে ও বলে উঠে-
– আবির,
– হু, বল, কিছু বলবা?
– অনেক ভেবে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
– কি?
– আগে বল, রেগে যাবেনা?
– আচ্ছা, কি এমন কথা? যা শুনে রাগতে পারি!
– আমি তোমার বিয়ে দেবো।
– কিহ!!! পাগল হইছো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
– আগে ছিলো কিনা জানিনা, তবে এখন ঠিক আছে।
– ঠিক থাকলে এমন উদ্ভট চিন্তা আসতো না তোমার!
– তুমি যায় বলো, আর যায় বোঝাও না কেন, এটা আমার আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। এতদিন তোমাকে হারানোর ভয়ে এসব ভাবতে পারিনি! বলতে পারো সাহস করে উঠতে পারিনি। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমি আসলেই স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম! আম্মা, গুরুজনেরা যা বলেন ঠিকই বলেন। সত্যিতো, ভবিষ্যৎ বংশ রক্ষা বলে একটা ব্যাপার আছে! আমি এতদিন তোমাকে কারর সাথে ভাগাভাগি করতে পারবো না ভেবেই এই বিষয়ে ভাবিনি। কিন্তু এখন আমি মনস্থির করে ফেলেছি।
– কিসব আজেবাজে বকো? তুমি ভাবছো কি করে, শুধুমাত্র বাচ্চা হয়না বলেই আমি তোমার উপরে এতবড় অন্যায় করবো? আজ আমার জায়গায় তুমি থাকলে, তুমি কি তাই করতে পারতে? পারতে নাতো !
– আমার আর তোমার ব্যাপার ভিন্ন। আমি শুধুমাত্র নিজের কথা ভেবে এতবড় অন্যায় করতে পারিনা।
– অন্যায়ের তুমি কি বুঝো? হু! এসব বাদ দিয়ে ঘুমাও। যত জেগে থাকবা, ততই মাথায় আজেবাজে ভাবনা ঢুকবে!

আমার কথা শুনে, নীলা কি বুঝে জানিনা, রাতের সমস্ত কাজ গুছিয়ে ও শুয়ে পড়ে। সারাদিন সংসার সামলিয়ে তারপর এই সব চিন্তাভাবনাই বোঝা যায় ও অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে!মাত্র কয়দিনেই চোখের নিচে কালি ও জমেছে। এত করে বুঝাই তবুও বুঝেনা! কে কি বললো সে নিয়েই ভেবে মরে! ইদানীং আমিও অফিসের এটা সেটাই ব্যস্ত থাকি, ওর দিকে সেভাবে নজরও দিতে পারিনা! নাহ আমার মনে হয় ওকে আরো একটু সময় দেওয়া উচিৎ। ও বুঝেনা, আমি শুধু সন্তানের জন্য ওকে ভালবাসিনা! ওর জন্যই ওকে ভালবাসি! প্রয়োজনে অন্য কোন ব্যবস্থা নেবো তাই বলে ওকে দেয়া প্রতিজ্ঞা আমি ভুলে যাবো, ও ভাবছে কি করে!

এইতো কয় বছর আগেও ও কতটা প্রাণোচ্ছল চঞ্চল ছিল! সত্যি বলতে, আমি ওর ওই চঞ্চলতা দেখেই ওকে ভালবেসেছিলাম। সেদিন ভার্সিটিতে একটা প্রোগ্রাম চলছিল। আমি তখন থার্ড ইয়ারে, আর ও সবে মাত্র ক্লাশ শুরু করেছে। পরিচয় টাও সেইরকম কাকতালীয় ভাবেই!

আমার এখনো মনে আছে, সেদিন বিকেল বেলা অলস হয়ে শুয়ে ছিলাম- হঠাত- ইমন এসে বললো-

– এই আবির চল, উঠ, এক জায়গায় যাবো।

– কোথায়?

– ভার্সিটির ক্যাম্পাসে!

– কেন?

– দেখে আসলাম কিসের যেন অনুষ্ঠান চলছে।

– ও তো ডেইলি ডেইলি হয়! এটা কি আর এমন নতুন কথা!

– নতুন কথা হল, তুই আমি এখন সেখানেই যাবো।
– ধুর, তখন থেকে কিসব ভাঙা রেকর্ডের মত বকেই যাচ্ছিস! বলছিতো এসব আমার ভাল্লাগেনা।

– আরেহ চল ব্যাটা। রুমে তো শুয়েই থাকবি। তারচেয়ে কিছুক্ষণ গান টান শুনে আসি।

– যেতে পারি, এক শর্তে,

– কি শর্ত?

– তুই কিছু খাওয়াইবি।

– ওহ, এই কথা? যা- খাওয়াবো। ঝটপট উঠে রেডি হয়ে নে।

ওর কথা শুনে একরকম বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে যাই। বিরস মনে একপাশে আমি আর এমন ইমন গিয়ে দাঁড়াই। মাইকে কি যে বলে- কিছুই বুঝিনা! হঠাত দেখলাম একটা সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পরা মেয়ে মাইক্রোফোন নিয়ে দাঁড়ালো।

মেয়েটিকে দেখেই চমকে উঠি! আরেহ এত স্নিগ্ধ শুভ্র মেয়ে এই ক্যাম্পাসে! এর আগে তো দেখিনি!

ইমনের ঘাড়ে হাত চাপিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, মেয়েটিকে দেখে নড়েচড়ে দাঁড়াই। আমার অবস্থা দেখে, ইমন বলে-
– ধুর ব্যাটা একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক। এত নড়িস কেন!

– মেয়েটি কে রে? এর আগেতো দেখিনি।

– কার কথা বলছিস?

– এই যে, যে এখন কবিতা পড়ে শোনাচ্ছে?

– কেন ব্যাটা? এত ঠিকুজী কুষ্ঠি জেনে তুই কি করবি?

– সেটা পরে বলছি, আগে বল?

– আরেহ, ও তো বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর। নতুন এসেছে।

– তুই চিনিস?

– ওই হালকা পাতলা। মেয়েটা ভাল কবিতা লেখে, আবৃত্তি ও ভাল করে।

– তুই ওর খবর নে, ওর সাথে আমাকে যেমনে পারিস যোগাযোগ করিয়ে দে।

– আমি কেমনে পারুম? আমি কি ওর বন্ধু লাগি? না ভাই ব্রাদার লাগি? অদ্ভুত! তোরে নিয়ে আনাটাই ভুল হইছে। সাথে আবার খাওয়ানো বাবদ লস!

– যা তোকে খাওয়াতে হবেনা, মাফ কইরা দিলাম।

– এমনভাবে বলছিস যেন ধার করছি, তার মাফ দিচ্ছিস!

– যেটা বলছি সেটা কর। বকবক বাদ দিয়ে, আজকেই খবর নে। বাসা কই, নাম কি সব।

– বাসা কই জানিনা, নাম জানি।

– নাম কেমনে জানলি?

– ওই যে কবিতা আবৃত্তির আগে মাইকে নাম এ্যনাউন্সমেন্ট করলো তাই শুনেছি। কেন, তুই শুনিস নাই?

– খেয়াল করি নাই।

– তো এখন এত উৎসাহ কেন! তাছাড়া তুই কেমিস্ট্রির স্টুডেন্ট, বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর মেয়েতে তোর কি কাম!

– সে তুই বুঝবিনা।

– যা বলছি তাই কর।

তারপর থেকে ইমনের পিছনে লেগে থাকি, অবশেষে, ইমন অনেক বুদ্ধি করে ওর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর থেকে দুইজন দুই বিভাগের হয়েও আসতে আসতে চেনাজানা, সম্পর্ক। একসময় আমরাই ভার্সিটির সেরা কাপোল! ভার্সিটির এমন কেউ ছিলনা, যে আবির- নীলা এই নাম দুটি চিনতো না।

সম্পর্ক টা তখন একদম তুঙ্গে! কেউ কাউকে একদিন না দেখলে, না কথা বললে থাকতে পারিনা। যেই আমি কবিতা টবিতা পছন্দ করতাম না, সেই আমি কিনা ওর কবিতার ভক্ত হয়ে উঠলাম! অদ্ভুত সুন্দর কবিতা লিখতো ও! মুগ্ধ না হয়ে পারা যেতো না! আর ও বেশিরভাগ কবিতা আমাকে নিয়েই লিখতো। আমি ওর পাশে বসলে ও সে সব শুনাতো।

সময় দ্রুত শেষ হয়ে যায়! আমার তখন মাস্টার্স শেষের দিকে, আর ও তখন সবেমাত্র সেকেন্ড ইয়ারে। আমি বের হয়ে যাবো ভেবে নীলার সেই কান্না! বলে আমাকে না দেখে ও থাকবে কি করে!

ওকে অনেকভাবে বুঝাতে হয়েছে, তুমি পড়াশোনা কর, এর ফাঁকে আমি চাকরী জোগাড় করি। তাছাড়া বের হয়ে গেলেও সপ্তাহে তো একবার দেখা হবেই। এত মন খারাপ করোনা প্লিজ। শুনে ও বলতো-

– আবির, তুমি কথা দাও দিনে অন্তত একবার এসে দেখা দিয়ে যাবে।

– পাগলি, চাকরী না হওয়া অব্দি বলছো, সে না হয় ঠিক আছে, কিন্তু চাকরী হলে কিভাবে রোজ আসবো তুমিই বল!

– হুম্মম বুঝছি। কিন্তু আমার তো খুব কষ্ট হবে!

– সেতো আমারো হবে? আমি কি তোমায় না দেখে ভাল থাকবো?

– হুম্মম, জানি। কিন্তু একটা কথা।

– কি!

– আমি তোমার সামনে থাকি বা না থাকি, তুমি কিন্তু কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না।

– আচ্ছা, চোখ আছে যখন তাকাবো না?

– কি বললা?

– আচ্ছা আচ্ছা সরি। এমনি মজা করছি। আচ্ছা তুমিই বল আমার এমন পাগলি টা থাকতে কি আমি আর কারর দিকে তাকাতে পারি? কখনওই না!

ও সব সময় এমনি সব পাগলামো করতো। তারপর আমি যেদিন ফাইনালি বের হয়ে আসি। আমি বের হওয়ার এক বছর এর মধ্যে জব পাই।

চার বছরের সম্পর্ক তখন চলছে- অফিস শেষে ওর সাথে দেখা করার সুযোগ খুব কম হত। এই নিয়ে ওর প্রায় গোমড়া মুখ দেখতে হতো। অভিমান করে ও তখন বলতো-

– আবির, তুমি আমাকে আগের মত আর ভালোবাসো না!

– কে বলেছে বাসিনা?

– আমি বুঝতে পারি! আগে কতটা আমার জন্য পাগল ছিলে, আর এখন!
– আরেহ, পাগলি, ব্যস্ত থাকি বুঝতে হবেতো! তাছাড়া তোমাকে ঘরে তুলতে হবেনা? একটু গুছিয়ে নিচ্ছি। বুঝোয়তো।

– আমার অতো বেশি কিছু লাগবেনা। তুমি থাকলেই চলবে।

– তোমার লাগবেনা , কিন্তু আমার হবু শশুরের তো লাগবে , তাছাড়া আব্বু মারা যাওয়ার পর আম্মা আমাকে একা হাতে মানুষ করেছেন, তার ও তো কিছু দায়- দায়িত্ব আছে!

– হুম্মম।

– নীলা,

– হু,

– রাগ করছো?

– নাহ, আমি কার কে যে রাগ করবো!

– শোনো পাগলির কথা! আচ্ছা তুমি আমাকে না বুঝলে কে বুঝবে বলতো? তাছাড়া, আমি একটু গুছিয়ে না নিলে তুমি তোমার আব্বুর সামনে আমার কি পরিচয় দিবে?

– হইছে, আর বুঝাতে হবেনা!

– না এই যে তুমি সপ্তাহে একদিন দেখা করার জন্য রাগ করছো, বুঝোতো- বাকি দিন গুলো আমার কতটা স্ট্রেস এর উপর দিয়ে যায়! সারাদিন অফিস করে এতটা ক্লান্ত থাকি, যে বাসা থেকে এতদূর আসতে আর সময় পাইনা।আর হলের ও তো অনেকপ্রকার নিয়ম কানুন আছে, চাইলেও তো আর হয়না। তাছাড়া-

– তাছাড়া কি?

– শোনো, বিয়ের আগে একটু কম কম দেখায় ভাল। তাতে ভালবাসা বাড়ে।

– হুম বলছে তোমাকে! ঠিক আছে, তাহলে একবারই বিয়ে করতে এসো। তার আগে আর আসা লাগবেনা।

– হা হা হা, পাগলি! আমি কি তাই বলেছি!

এইভাবে ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা চলতে থাকে। রাগ, অভিমান, ভালবাসার খুনসুটি তে মেশানো সেই সম্পর্ক!

এরই মধ্যে আম্মা আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে উঠেন। একদিন আম্মা আমার রুমে এসে বলেন-

#চলবে…

টেস্টটিউব  ১ম_পর্ব

0

টেস্টটিউব
১ম_পর্ব

লিখা: Nilufar_Nijhum

আবির সাহেব আপনার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবেনা। সেইক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আপনাদের আর চেষ্টা না করাই ভাল।

ডাক্তারের এমন কথায় আমি চমকে উঠি! তারমানে নীলা আর কখনোই মা হতে পারবেনা! কিন্তু এটা আমি মেনে নিলেও ও তো মেনে নিতে পারবেনা! পরিবারের কথাতো বাদই দিলাম! তবুও ডাক্তারকে বলি,
– আচ্ছা, ডাক্তার কোনই কি ভরসা নেই?
– আসলে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা দেখেছি তাতে আপনার স্ত্রীর জন্মগতভাবে ভ্যাজাইনাল লেন্থ অনেক বড়। তাই শুক্রাণু ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে জাইগোট উৎপন্ন হতে পারছে না। তবে আমি একটা উপায় বলে দিতে পারি। যদি আপনি সেই ব্যবস্থা নিতে চান?

– কি সেটা? বলুন? আমি যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণে রাজি আছি।
– আপনারা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (কৃত্রিম জন্মপদ্ধতি) এর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন।
– এটা তো জটিল ব্যাপার, সেইক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর মতামত নেয়ার প্রয়োজন আছে।
– হুম্ম তাতো অবশ্যই। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করুন। তারপর যা ডিসিশন নেয়ার নেবেন।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে ভাবছি, এই খবর জানলে নীলা কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে? এতবড় ধাক্কাটা কি ও নিতে পারবে? ভাবতে ভাবতেই নীলার ফোন,
– কোথায় তুমি?
– এইতো আসছি। আর অল্পক্ষণ এর মধ্যেই চলে আসছি।

আচ্ছা বলে ও ফোন কেটে দেয়। কিন্তু ও যা জানতে চায় তার কি উত্তর দিবো!

ও জানে, আসার পথে ডাক্তারের চেম্বারে যাবো। অফিসে থাকাকালীন বারবার ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছে, ফেরার পথে যেন অবশ্যই ডাক্তারের চেম্বার হয়ে ফিরি।

বাসায় ঢুকতেই হাতের ব্যাগটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতে ও জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকে- আমি কিছু বলছিনা দেখে, নিজেই বলে উঠে-

– কিগো, কিছু বলছো না যে? আজকে তো রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল? তুমি যাওনি?

– নাহ আজকে আসলে সময় পাইনি। দেখি কাল যাবো।

– আচ্ছা আবির, তুমি এমন কেন! আমার প্রতি তোমার কি কোন গুরুত্বই নেই! তুমিতো জানো সেদিন ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার পর থেকে আমি কতটা চিন্তাই আছি!

– আহ! এত অস্থির হচ্ছো কেন! আজ যেতে পারিনি- তো কি হইছে! আগামীকাল নিশ্চয় যাব, একদম ভুল হবে না দেখে নিও।

– ঠিক আছে মনে থাকে যেন।

– একদম না।

কিন্তু আজ যে আমি ডাক্তারের কাছ হয়েই ফিরছি, ওকে বলতে গিয়েও বলতে পারিনা।

চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললাম,
– খুব খুধা লেগেছো খেতে দাও।
– হু- দিচ্ছি।

বলেই ও চলে যায়। ভাবছি খবর টা ওকে কিভাবে দিবো! আর ওই বা এটা কিভাবে নিবে! কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। পাগলিটা এটা শুনে নিশ্চয় খুব কষ্ট পাবে। বাচ্চা নিয়ে ওর বরাবরি অনেক স্বপ্ন।

হঠাৎ নীলার ডাক-
– কই হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসো। খাবার দেয়া হয়েছে টেবিলে।
– এইতো আসছি।

খেতে বসেছি, কিন্তু খাওয়াই মনযোগ নেই। খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছি দেখে, ও বলে উঠলো-
– তুমি কি কিছু নিয়ে খুব আপসেট?
– কই নাতো! কেন বলতো?
– মনে হলো! খাচ্ছো না ভালভাবে!
– ও কিছুনা। এমনি। তুমি শুধু শুধুই ভাবছো!তোমরা খেয়েছো?
– হু, কিন্তু তুমি একটা কথা বলতো, তুমি কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো? ডাক্তার খারাপ কিছু বলেছে? নিশ্চয় আমার সমস্যা।
– বোকা বোকা কথা বলো নাতো! কিসব ভাবো আর বলো!

এই কথা শুনে নীলা, কি বুঝে, বুঝতে পারিনা। চুপ করে টেবিল থেকে উঠে যায়।

খাওয়া শেষ করে, ল্যাপটপ নিয়ে একটু বসেছি,
কিন্তু মাথায় কিছুই আসছেনা। ঘুরে ফিরে একটাই কথা কানে বাজছে, নীলা মা হতে পারবেনা! আবার এটা ওকে বলতেও পারছিনা। কিন্তু এইভাবে কতদিন! একদিন না একদিন তো জানবে!

এমন সময় আম্মা দরজায় এসে ডাক দেন-
– আবির ঘরে আছিস?
– হ্যাঁ, আম্মা এসো। কিছু বলবা?
– আজকে নাকি তোর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল? ডাক্তার কি রিপোর্ট দিলেন?
– আম্মা আজকে যাইনি। রিপোর্ট নিয়ে এসে তোমাকে জানাবো। অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ো। ও ভাল কথা, তোমার সুগার টা কাল একবার মাপাতে হবে।
– সুগারের আর দোষ কি বল? এই বয়সে এত চিন্তা আর নিতে পারিনা।
– আম্মা তুমি শুধু শুধু কেন যে এত চিন্তা কর! যাও ঘুমাও। রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে।

আম্মা চলে গেলে নীলা চুপ করে বসে থাকে। বুঝতে পারি আম্মার কথায় কষ্ট পেয়েছে। ওর মন হালকা করতে বলি-
– নীলা,
– হুম।
– আচ্ছা, একটা কাজ করলে কেমন হয়?
– কি কাজ!
– তুমি মন খারাপ করবেনা তো?
– আগে বলো!
– যদি কোন কারণে আমাদের বেবি আসতে সমস্যা হয়, আমরা কিন্তু ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (কৃত্রিম জন্মপদ্ধতি) এর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি। যদি তুমি চাও, এমনটা যে হচ্ছেনা তা কিন্তু নয়, বিজ্ঞান এখন কত উন্নত বলতো!
– কি বলতে চাও! আমি মা হতে পারবো না তাইতো? তুমি আজ নিশ্চয় ডাক্তারের কাছে গেছিলে, কিন্তু আমাকে বলছো না!
– আচ্ছা পুরো কথাটা তো শুনবে?
– কি শুনবো! আমার যা বোঝার বুঝা হয়ে গেছে, প্লিজ তুমি সব খুলে বল। নইলে আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে যাব।
– তার আগে বল, আমি যাই বলি তুমি শুনে কষ্ট পাবেনা?
– কষ্ট পাওয়ার মত হলে পাবো না! আর কি এমন কথা যে কষ্টের কথা বলছো? তারমানে, সবাই যা ভাবে সেটাই ঠিক? আমারই সমস্যা, তোমার সমস্যা নয়?
– আহা এত অস্থির হও কেন। সমস্যা যেখানে, সমাধান ও সেখানে। সুতরাং এত চিন্তার কিছু নেই।
– এতকিছুর পর ও বলছো চিন্তা করবো না!

ওর কথা শুনে চুপ হয়ে যাই! নীলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে। কিন্তু ওকে যে কিভাবে বুঝাবো বুঝতে পারিনা!

পরে শান্ত হলে বলি,
– নীলা,
– হুম্ম, বল!
– চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত, দরকারে আমরা অন্য কোন ডাক্তার দেখাবো, এদেশে না হলে বিদেশে যাব। এত ভেঙে পড়ার কিছু হয়নি! তুমি কেন এত ভেঙে পড়ছো?
– আবির, তুমিতো বুঝোনা, নানান জনে নানান কথা বলে, আমার কতটা কষ্ট হয় বলতে পারো? আমার কষ্ট টা কেউ বুঝেনা, আমারো তো ইচ্ছে হয় একটা ছোট্ট শিশুর মা ডাক শুনতে! আমার কি ইচ্ছে করেনা?
– কে বলেছে, তুমি মা হবেনা?
– তুমি যাই বলো না কেন,আমি বুঝে গেছি আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। মা হওয়ার স্বাদ আমি আজীবন নিতে পারবো না! এতদিন তবুও আশায় বুক বেঁধে ছিলাম, এখন তো তাও আর রইলো না! আমি কি নিয়ে বাঁচবো!

নীলার এই কথায় আমি কোন উত্তর দিতে পারিনা। বাচ্চার জন্য ও পাগল প্রায়। বিয়ের পর থেকে এমন কিছু নাই যা ও করেনি। এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার ছুটে বেড়িয়েছে। বাচ্চা নেওয়ার জন্য ওর চেষ্টার কোন শেষ নেই! যে যা বলে তাই শুনে! সে একজন শিক্ষিতা মেয়ে হয়েও কবিরাজি ঝাঁড়- ফু, তাবিজ-মাদুলি কোনটাই বাদ রাখেনি! বিয়ের শুরু থেকেই প্রায় বলতো-
– আবির আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হবে , দেখে নিও ও দেখতে ঠিক তোমার মত হবে।

আমি ওর পাগলামো দেখে হাসতাম। কিন্তু একদিনও ভাবিনি এটা ওর জীবনে দুঃস্বপ্ন হয়ে যাবে!

এরমধ্যে ডাক্তারের দেয়া রিপোর্ট এর ব্যাপারে সবাই জেনে গেছে। সবটা জানার পর কিছুদিন সবাই চুপ থাকলেও এখন অনেকে আড়ালে আবডালে বলাবলি করে, আমার কানে যে কম বেশি আসেনা তা নয়। সবার ওইসব কথা শুনে নীলা প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে আর বলে-
– আবির, এখন সবাই বলছে, এরপর তুমিও বলবে, আমি বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম। তারপর আমাকে করুনা করবে, আগের মত আর ভাল বাসবেনা তাইনা?

– কি সব উল্টাপাল্টা কথা বল হহু! এসব মাথায় নিয়ে শুধু ঘুরে বেড়াও তাইনা? পাগলি কোথাকার!
– এখন যতই শান্তনা দাও, আমি জানি একদিন তুমিও বিরক্ত হবে। করুনা দেখাবে।

ওকে মুখে যাই বলিনা কেন, ও এখন বুঝবেনা। বেশ বুঝতে পারছি, যত দিন যাচ্ছে, আত্মীয়স্বজনদের কটু কথায় ওর মনোবল ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করবো, সমাজের বাইরে তো কেউ নই! ওকে তো চাইলেই সমাজের বাইরে নিয়ে গিয়ে রাখতে পারবোনা! মানুষ বললে তা আটকাবো কি করে!

এদিকে আম্মাও ইদানীং আফসোস করে একে ওকে শুনিয়ে বলেন- সব কপাল, নইলে কপালে এমন বউ জুটবে কেন! বংশ হয়তো নির্বংশই থাকবে। আমার একটামাত্র ছেলে, এখন যদি এই হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ বংশ বলতে কিছুই থাকবে না। শেষ বয়সে নাতী নাতনীর মুখ ও দেখে যেতে পারবো না!

বুঝতে পারছি, আম্মা এটা নিয়ে বেশ বিরক্ত কিন্তু নীলা কষ্ট পাবে ভেবে বলতে পারেন না। কারণ, আম্মা নীলাকে নিজের মেয়ের মত দেখেন।

আম্মা, বিয়ের দিন-ই সংসারের চাবি, নীলার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল- আজ থেকে এই সংসারের সমস্ত দায় দায়িত্ব তোমার। তুমি এসে গেছো, এখন আমার ছুটি। তোমার কাছে শুধু আমার একটাই চাওয়া, বছর ঘুরে, ঘর আলো করে যেন আমার নাতী-নাতনী আসে। আমি যেন ওদের সাথে শেষ বয়সে হাসতে খেলতে দুনিয়া থেকে যেতে পারি।

আম্মার এই কথা শুনে, আমি আর নীলা দুইজনেই লজ্জ্যা পাই।

কিন্তু আজ যখন সব আশা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে, আম্মা ও একটু মনঃক্ষুণ্ণ।

এইসব দেখে শুনে নীলা কান্না করে, আর বলে-

– আচ্ছা আবির তুমিই বল, কোন মেয়ে কি ইচ্ছে করে কখনো সন্তানহীন থাকে? প্রতিটা মেয়েই তো বিয়ের পর প্রথম স্বপ্ন দেখে সে মা হবে। একজন মেয়ের জীবন তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সে মা হয়। কিন্তু যদি শারীরিক কোন সমস্যায় বাচ্চা না হয়, তাতে তার কি করার থাকতে পারে? শারীরিক সমস্যা টা তো আর নিজের হাতে তৈরি নয়! বিভিন্ন কারণে একজন নারী সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে। তাতে তার কতটুকু হাত থাকে বলতে পারো, আমার ব্যাপারে আমারই বা কতটুকু হাত আছে? আমি কি ইচ্ছে করে এমন করেছি? আল্লাহ যদি আমাকে অক্ষম করে দেন আমি কি করতে পারি! কিন্তু জানোতো সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সমাজ কখনো সন্তান জন্মদানে অক্ষম নারীকে মেনে নিতে পারে না। আজ আমার জায়গায় তুমি হলে তারা কেউ কখনো বলত না, আমি যেন তোমাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করি। অথচ দেখো, আমি যেখানে যাই, আমাকে শুনতে হয়, আমি যেন তোমার বিয়ে দিয়ে দেই।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই নীলা কাঁদতে থাকে। শেষে ওকে থামাতে বলি-

#চলবে…

জুয়াড়ি স্বামী শেষ পর্ব

0

জুয়াড়ি স্বামী শেষ পর্ব

লেখক/ ধ্রুব
????????

দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালালাম

সিগারেটটা টানতে টানতে ভাবছি
অনেকদিন পর নীলাকে দেখবো
সাথে এটাও ভাবছি সবকিছু জানলে মেয়েটা না জানি কি ভাববে

সময়টাও বড্ড স্বার্থপর একটু তাড়াতাড়ি চললে কি হয়

এদিকে সাগর নীলা আর পাখিকে ডাক দিয়ে বলে

সাগর/ শোন আজ আমার কলিজার টুকরা বন্ধুটা আসবে ও দুপুরে এখানে খাবে রান্নাবান্না যেন ভালো হয়

নীলা না বুঝলেও পাখি ঠিক-ই বুঝেছে বন্ধুটা কে

নীলা বার বার জানার চেষ্টা করলে পাখির একটা উত্তর আমি তাকে কখনও দেখিনি তবে আজ দেখবো মনে হয়

যাইহোক নীলা আর পাখি দুজনে রান্না ঘরে গেলো

সাগর এমনভাবে বললো মনে হয় হয়তো মহান কোন লোক আসবে

দুপুর হওয়ার আগে নীলা আর পাখি দুজন মিলে রান্নাবান্না শেষ করলো

দুজনে গোসল করে রেডি হচ্ছে ঠিক তখন-ই আমি গেলাম

সাগর এসে দরজা খুললো

শালা দরজা খুলে এত জোরে চেপে ধরে বলে

সাগর/ কিরে বউকে ছাড়া বুঝি আর থাকতে পারছিসনা

আমি/ এত-ই যখন বুঝিল তখন পাঠিয়ে দিস কেন

সাগর/ দূরররর বেটা তাহলে খেলাটা কিভাবে জমতো

আমি/ আরে রাখ তোর খেলা আমার বউ কই সেটা বল

সাগর/ দেখ হয়তো তার ঘরে আছে তোর কথায় ভাবছে হয়তো

আমি/ ওহহহ তাই নাকি
যাই গিয়ে দেখি

আমি নীলার ঘরে গিয়ে দেখি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে

ওঁকে দেখে মনে হয় ত্রিভুবনে ওর কেউ নেই

আমি পিছন গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি

আমি/ আমার লক্ষীসোনা বউ কতদিন তোমায় দেখিনা
কেমন আছো তুমি

নীলা পিছন ফিরে দেখে তার জুয়াড়ি স্বামীটা
আমায় দেখে বিশ্বাস হয়নি তার আর যখন বিশ্বাস হলো তখন নীলা বলে

নীলা/ এই এখন তুমি কেন আসলে যদি তোমার বন্ধু দেখে ফেলে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে

তাছাড়া এ বাড়িতে আজ মেহমান আসবে সাগর ভাইয়ার খুব কাছের এক বন্ধু

আমি/ কেন আসলাম মানে তোমায় নিতে আসলাম
চলো আমার সাথে

নীলা/ চলো মানে কোথায় যাবো আর কি কিভাবে যাবো

আমি/ আমাদের বাসায় এখানে আর কত থাকবে

নীলা/ সব টাকা শোঁধ করে দিছো

আমি/ না

নীলা/ তাহলে কিভাবে নিয়ে যাবে আমায়

আমি/ নিয়ে যাবার রাস্তা আমার জানা আছে তুমি শুধু আমার উপর একটু ভরসা রাখো

নীলা/ হুহহহহ…ভরসা করবো তোমায় যে ছেলে টাকার জন্য বউ বন্ধক দেয়

আমি/ এত কথা না বলে চলোতো যতসব

নীলার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম খাওয়ার টেবিলে

সাগর/ কিরে বেটা বউয়ের রাগ ভাঙ্গতে এত সময় লাগলো তোর

আমি/ হুমমম তাড়াতাড়ি খেতে দে খুব খিদে লাগছে

নীলা একবার আমার দিকে আরেকবার সাগরের দিকে
এসব কি হচ্ছে আমার সাথে

আমি নীলার হাত ধরে বসিয়ে দিলাম

সাগর/ আরে রুবি (পাখি) তুই দাঁড়িযে কেন তুইও বস

নীলা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে এই রুবিটা কে এই বুঝি সে যার কথা বলেছিলো

কিন্তু আমরা দুজন মেয়ে পাখি আর ছাড়া তো আর কেউ নেই

আমি/ কাকে খুঁজো রুবিকে

নীলা/ না মানে হুমমমম

আমি/ আরে পাগলি যাকে তুমি পাখি বলে জানতে সে হলে রুবি

আসলে ও এ বাড়ির কাজের মেয়ে নয় সাগরের খুব কাছের একজন তোমার খারাপ লাগবে বলে ওকে কাজের মেয়ের পরিচয়ে নিয়ে আসলাম

নীলা/ মানে

আমি/ মানে এটা
ছোটকাল থেকে আমি মেয়েদের বিশ্বাস করতামনা
সহ্যও করতে পারতামনা

কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে আমার ভিতরে সেই আমিটা কে হারিয়ে ফেলি

তাই সাগরের সাথে মিলে এই নাটকটা করতে হল আমাকে

আসলে আমি জুয়াড়ি নয়
সবটা ছিলো আমাদের বানানো নাটক

নীলা/ এসব করার কি খুব দরকার ছিলো

আমি/ হ্যাঁ আগেও বলছি মেয়েদের আমার একদম সহ্য করতে পারতাম

মা আর এই সাগরের চাপে পড়ে বিয়েটা করলাম

বাঁসর ঘরে তোমাকে দেখে কেন জানি তোমার প্রতি আমার আকর্ষণটা বেড়ে গেলো

তাই ভাবলাম যাকে এই প্রথম এত ভালোবাসবো তাকে একটু বাজিয়ে দেখতে হয়
আমার জন্য সে কি করতে পারে

আমার দুঃসময়ে সে কি আমার পাশে থাকবে নাকি আমাকে একা করে নিজে নিজের সুখের কথা ভাববে

সাগর/ হ্যাঁ বোন ধ্রুব যা বলছে সব সত্যি
আমি ওর থেকে কোন টাকা পাবোনা সব ছিলো আমাদের সাজানো নাটক

নীলা এবার সত্যি সত্যি কেঁদে দিলো না এটা কোন দুঃখের কান্না নয় সুখের কান্না

নীলা বসা থেকে উঠে আমার চুল টানতে আর খুব মারতে লাগলো

কুত্তা বিলাই বান্দর রাক্ষস এভাবে কেউ বউকে পরীক্ষা করে

আমি/ এই শুধু কি মারবে বুকে নিবেনা

নীলা/ না

আমি/ কেন

নীলা/ কারন…. আমি তোমার বুকে হারাতে চাই তোমাকে আমার বুকে নয়

নীলাকে বুকে জড়িয়ে নিবো

তখনও আবার সেই বাঁধা

আমি/ আবার কি হলো

নীলা/ আগে কান ধরে উঠবস করো আর কথা দাও এমনটা আর কখনও করবেনা

কি আর করা যে বউ আমার জন্য এতকিছু করলো
আমি কি তার জন্য এটুকু করতে পারিনা

যখন-ই কান ধরতে যাবো নীলা

নীলা/ থাক আর ধরতে হবেনা
সবার সামনে আমি আমার স্বামীকে ছোট করতে চাইনা

আমি/ তাহলে

নীলা/ গাঁদা তাহলে আবার কি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমায়

যেন এ বাঁধন কবু ছিড়ে যাবার নয়

নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম

পাশে রুবি আর সাগর দুজনে হাত তালি মারে

আমি মনে মনে ভাবছি আজ ভাগ্যবান বলে এমন একটা পাগলি পাইছি

কয়জনের ভাগ্যে জুটে এমন একটা পাগলি

?‍❤‍??‍❤‍??‍❤‍??‍❤‍??‍❤‍??‍❤‍?সমাপ্ত?????

জুয়াড়ি স্বামী পর্ব/৮

3

জুয়াড়ি স্বামী পর্ব/৮
লেখক/ ধ্রুব

????????

পাখি/
নেন আপা ঘুমিয়ে পড়ুন

নীলা/ ওহহহ হ্যাঁ চলুন
নীলার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে কি ভাবছি আর কি হচ্ছে

কিছুই বুঝতেছিনা

পাখি/ কি হলো আপা ঘুমাবেন না

নীলা/ ঘুম আসছেনা

পাখি/ কেন আপা
ওহহহ বুঝেছি নতুন বাসায় তাই বলে ঘুম আসছেনা

জানেন আপা আমাগো সাগর ভাইয়া আর ধ্রুব ভাইয়া খুব ভালো আর তাদের সম্পর্কটাও

ওরা একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা

নীলা/ মানে কি বলছো তুমি এসব

পাখি/ না মানে মুখ ফুসকে বেরিয়ে গেছে

নীলা/ তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো

পাখি/ তওবা তওবা আপা আপনি এটা কি বলেন

চলেন ঘুমিয়ে পড়েন আমি লাইট বন্ধ করে দিচ্ছি

নীলা/ না…..
মানে

পাখি/ ভয় নেই আপা যদি কিছু হওয়ার থাকতো তাহলে আমার সাথে হতো

ঘুমিয়ে পড়ুন

পাখি লাইটা বন্ধ করে দিলো

একটু পরে পাখি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে

কিন্তু নীলার চোখে একটুও ঘুম নেই

নীলা ভাবছে ধ্রুব খেয়েছে নাকি নাকি এখনও জুয়ার আসরে বসে আছে

আমার কথা কি তার মনে পড়ছে নাকি আমি ভেবে ভেবে চোখের জলে বুক বাসায়

কি স্বার্থপর মানুষ একটা ফোন দিয়েও জানতে চাইনি কেমন আছি আম

কখন যে চোখটা লেগে গেলো নীলা নিজেও বুঝতে পারেনি

আর আমিও বাসায় নাক ডেকে ঘুমাই

বউটা তো বন্ধুর বাসায় আছে এতে এত চিন্তা করার কি আছে

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো হাতমুখ ধুঁয়ে নাস্তার টেবিলে যেতে

আম্মু/ হ্যাঁ রে ধ্রুব নীলাকে কখন নিয়ে আসবি

মেয়েটাকে ছাড়া ঘরটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে

আমি/ কথা হয়েছে ও আরও দু একদিন থাকতে চাইছে আমিও হ্যাঁ বলে দিলাম
আজ থাকুক কাল নাহয় নিয়ে আসবো

ঐদিকে নীলা হয়তো আমার পথ চেয়ে বসে আছে কখন ওকে ঐ বন্ধী খাঁচা থেকে মুক্ত করে আনবো

দেখতে দেখতে আরও দুটো দিন কেটে গেলো

এই তিনদিনে না নীলার সাথে কথা বলতে পারছি আর না একনজর দেখতে পারছি

মনটা বড্ড আনচান আনচান করছে

কাল সকাল হতে নাহয় যাবো সাগরের বাড়িতে

সময় কতটা দীরগতিতে চলে তা শুধু তাঁরাই জানে যারা অপেক্ষা করে

ঘড়ির কাঁটা যেখানে আছে মনে হয় সেখানে পড়ে রইলো

দ্যাতততত কখন যে সকাল হবে
আর কখন যে নীলাকে দেখতে পাবো

এমনটা ভাবছি রাতে শুয়ে শুয়ে

অবশেষে কাটলো আমার অপেক্ষার প্রহর

খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম

বাসা থেকে বের হতে

আম্মু/ আজ আর কোন কথা শুনবনা তোর

আজ আমি নিজে গিয়ে বউমাকে নিয়ে আসবো

মায়ের মুখে একটা চিমটি দিয়ে বললাম

আমি/ তার আর দরকার নেই আমি যাচ্ছি তোমার বউমাকে নিয়ে আসতে

আম্মু/ তাই যেন হয় শুনে রাখ আমার বউমা ছাড়া তোরও আজ ঘরে জায়গা নেই

আমি/ আচ্ছা আম্মু
বাসা থেকে বের হয়ে

সাগরকে ফোন দিলাম

সাগর/ কিরে ফইন্নি এত সকালে ফোন কেন করলি

আমি/ কারন… আমি তোর বাসায় আসতেছি নীলাকে
আনার জন্য

সাগর/ না না এখন না

আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম সাগর এমনভাবে বলছে মনে হয় আমি অন্যকারও বউ চুরি করতে যাচ্ছি

আমি/ এখন না মানে কি হুহহহ

সাগর/ মানে এটাই তুই এখন আসবিনা

ব্যাস একটু বেলা করে আসবি আর খেয়ে দেয়ে তারপর বউকে নিয়ে যাবি

আমি/ ওরে শালা আগে বলবিনা আমিতো ভয় পেয়ে গেছি

আচ্ছা তাহলে আমি দুপুরে আসবো

এখন রাখলাম

চলবে