Thursday, August 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2340



খেলাঘর পর্ব-৩২

0

খেলাঘর. পর্ব-৩২
লেখা- সুলতানা ইতি

আয়াপের কথা শুনে ছেয়ে আছে তার দিকে নির্ঝরিণীর মুখে তার কোন কথা নেই পুরো বরফের মতো জমে গেছে

আয়াপ- হেই তুমি কি সবার সামনেই এমন নার্ভাস ফিল করো নাকি,আমাকে দেখলেই এমন হয়ে যাও

নির্ঝরিণী কোন কথা বল্লো না শুধু ঠোট দুটো নড়ে উঠলো কিন্তু কোন শব্দ বের হয়নি

আনিশা-ওকে আপনারা পরে কথা বলবেন এখন কেক কাটতে হবে, চলুন

কেক কাটার পর আবির বল্লো
আয়াপ একটা গান ধর আজকের দিনে তুই গান না গাইলে কেমন দেখায় বলতো

আয়াপ গান তো গাইবো ই, গান ই তো আমার প্রান
আয়াপ গান ধরলো
“নির্ঝরে বৃষ্টি করেছে সৃষ্টি
মনের মাঝে ভালো লাগার নতুন আবেশ
এলো মেলো ভেবে যায় মন তোমাকে সারাক্ষন
এতো ভালোবাসে তোমায় মন, তবু ও লাগে অচেনা অচেনা…
নির্ঝরে বৃষ্টি……..

দিলে এক পলক দেখা
তখন ই হয়েছে লেখা আছো তুমি
হৃদয়ে আঁকা
হোওওওও নির্ঝরে বৃষ্টি করেছে সৃষ্টি
মনের মাঝে ভালো লাগার নতুন ছোয়া ”

নির্ঝরিণী তনয় হয়ে গান শুনছিলো বাইরে বৃষ্টির ছন্দ গানের ছন্দ মিলেমিশে একা কার হয়ে গেছে মনে হচ্ছে গানের প্রতিটা শব্দ আমার জন্য গাওয়া

আয়াপের গান শেষ হতেই সবাই আরেকটা গাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করলো
আয়াপ- গাইজ গান তো আমি গাইবো,তোমাদের কথা আমি ফেলতে পারবো না,কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে

আমন্ত্রিত সব মেহমান এক স্বরে বলে উঠলো শর্ত যা ই হোক তারা মানবে তবু ও তারা গান শুনবে

আয়াপ- আমার সাথে আরেক জনের গান গাইতে হবে আর সে হচ্ছে আনিশার পাশে দাঁড়ানো কোকিলা কন্ঠি প্লিজ চলে আসুন

নির্ঝরিণীর আবার হার্টবীট বেড়ে যায় সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো

আনিশা- কিরে আয়

নির্ঝরিণী – আ,মি আমি

আনিশা- তুই পরে তোতলাস আগে আয় আনিশা হাত ধরে আয়াপের পাশে দাড় করিয়ে দিলো

আয়াপ গান শুরু করলো

“নাম টা তোমার জানা কি যাবে
ঠিকানাটা পাওয়া কি যাবে???হোওওওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানা টা পাওয়া কি যাবে

এই টুকু বলে নির্ঝরিণী কে বল্লো এই বার তোমার গাওয়ার কথা

নির্ঝরিণী লজ্জা পেয়ে গেলো আয়াপের এর এমন কথা তে
আয়াপ লজ্জা পেতে বলিনি গান গাইতে বলেছি
এবার নির্ঝরিণী সব লজ্জা সংকোচ ভুলে গাইতে শুরু করলো

??নামটা না হয় আমার রাখো তুমি তোমার. নিজের মতো করে ডাকবে যে নামে আমায় সারাটি জীবন ধরে ???

হোওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানাটা পাওয়া কি যাবে??????????

কেড়ে নিয়েছো মন তুমি প্রথম দেখায়,, পরিচয় না জানলে খুঁজবো তোমায় কোথায়

ছুঁয়েছ এই মন প্রথম দেখায় যখন পেয়ে যাবে পরিচয় ভেবনা এতো এখন

হোওওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানা টা কি পাওয়া কি যাবে ?????????????
নিজের দেয়া নামে আগে ডাকো আমায় পরিচয় পরে না হয় দেয়া যাবে তোমায় ?????????
পড়েছি বেকায়দায় কি আর করা যায় আজ থেকে কোকিলা বলে ডাকবো যে তোমায়

হোওওও নাম টা আমার এখন বলা যাবে ঠিকানাটা এখন দেয়া যাবে ??নাম টা আমার এখন বলা যাবে ঠিকানাটা এখন দেয়া যাবে
“”” আমার নাম “”””????????

নির্ঝরিণী নাম না বলে গান বন্ধ করে দিলো চারিদিকে করতালিতে মুখর

নির্ঝরিণী আবার এসে আনিশার পাশে দাড়ালো
আনিশা- খাবার রেডি চল খাবি, সবাইকে খেতে দিলো প্রতি টেবিলে দুজন করে
কাকতালিয়ে ভাবে আয়াপ আর নির্ঝরিণী এক টেবিলে পড়ে গেলো

আয়াপ কে দেখে নির্ঝরিণীর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো
আয়াপ- তোমার বান্ধুবীর কাছে শুনলাম তুমি বেশ ছটফট করা মেয়ে,অনেক কথা বলো কিন্তু আমার সামনে আসলে কথা বলো না কেনো

নির্ঝরিণী কিছু বল্লো না শুধু মুচকি হাসলো

আয়াপ নির্ঝরিণীর হাসি দেখে আপন মনেই বলে উঠলো
“ঐ মেয়ে তোর মুচকি হাসি দেখে
হৃদয় আমার উঠলো জেগে
প্রেমের উজান যায় বয়ে
আমার এই মন সাগরে
প্রেমের খেয়া পার করে আয়না,

আমার এ মন পিঞ্জরে
যতন করে আদর দিয়ে রাখি তোকে
হিয়ার মাঝে,তোর ঐরেশমি চুলের মাঝে
রাখতে দিবি কি
আমার হৃদয় নিংড়ানো ফুল

চলে আয়না হিয়ার মাঝে
রাখবো তোর সব ই বায়না
ভিজবো দুজন একই সাথে
দুজনারে প্রেম সাগরে
ও সখি তুই করিস না আর বাহানা”

নির্ঝরিণী খাওয়া কম্পলিট না করে উঠে গেলো

আয়াপ- যাক ভাভা চলে গেলো? হয় হয় এমনি হয় কতো মেয়ের ক্রাশ আমি আর আমার ক্রাশ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না,নিজেই নিজের কথায় হাসলো

রাত বারোটা বাজে আনিশা নির্ঝরিণী কে বল্লো ঝড় তুই থেকে যা না আজ

নির্ঝরিণী – নারে আপু বকবে তা ছাড়া আপু আমায় নিতে আসবে

আনিশা- বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তোর আপু মনে হয় আজ আর আসতে পারবে না

নির্ঝরিণী – আপু যখন একবার আসবে বলেছে তখন আসবেই আমি বরং গেইটে গিয়ে অপেক্ষা করি তা ছাড়া বৃষ্টি এখন থেমে গেছে

আনিশা- ওকে, তুই যা ভালো বুঝিস
নির্ঝরিণী গেইটের সামনে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো

দূর থেকে আয়াপ নির্ঝরিণী কে দেখছে
মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো আহামরি সুন্দরী না হলে এতো ভালো লাগে কেনো তাকে
সব সময় দেখতাম মেয়েদের গালে টোল পড়ে আর এমন টোল পড়া মেয়েদের উপর কতো ছেলে ই ক্রাশ খায়, আমি ও এমন ক্রাশ খেয়েছি,কিন্তু এই মেয়ে তো পুরো ভিন্ন,

এই মেয়ে হাসলে তার থুঁতনির দু পাশে টোল পড়ে কি সুন্দর ই না লাগে তাকে এই রকম আন কমন সুন্দর্য আমি আর দেখিনি থুঁতনির দু পাশে টোল তো কখনো ই দেখিনি

কপালের উপর পড়ে থাকা গুচ্ছ চুল যেন ওর সুন্দর্যের আরেক উপমা একটা মেয়ের এতো গুলো আকর্ষনিয় সুন্দর্য থাকতে পারে,সেই প্রথম দিনের ওর লজ্জা মেশানো হাসি আমায় পাগল করে দিয়েছে তার পর দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে যাওয়া হার্ট ছেপে বসে থাকা সব কিছু যেন এতো মহময়ী লাগছে কেনো?

কিন্তু ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো,কেউ কি আসবে তাকে নিতে? আমি কি জিজ্ঞাস করবো? যদি আমায় ছ্যাচড়া মনে করে, ধেৎ মনে করুক তাতে আমার কি গিয়ে জিজ্ঞাস করি
– এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে,কেউ কি আসবে?

নির্ঝরিণী এক পলক তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে বল্লো
– হুম

আয়াপ- কে বয় ফ্রেন্ড?,নিজে প্রশ্ন করে নিজেই মনে মনে বল্লো আল্লাহ যেন উওর টা হ্যাঁ না হয়

নির্ঝরিণী নিচের দিকে তাকিয়ে বল্লো
আমার আপু আসবে

আয়াপ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো,একটা হাসি দিয়ে বল্লো
– এতো রাতে মনে হয় তোমার আপু আসবে না

নির্ঝরিণী – আপু যখন একবার আসবে বলেছে না এসে আর থাকবে না

আয়াপ- দেখো বৃষ্টি মনে হয় আবার শুরু হবে চলো তোমায় নামিয়ে দিই তোমার বাসায়
এই বৃষ্টির রাতে তোমার আপু আর আসবে না মনে হয়

তুমি চাইলে আমি তোমাকে ড্রপ করতে পারি আমার সাথে গাড়ি আছে

নির্ঝরিণী – কোন দরকার নেই আমার আপু আসবে বলেছে যখন তখন আসবে ই

আয়াপ- এতো রাতে একা দাঁড়িয়ে থাকা সোভা পাচ্ছে না প্লিজ চলো তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি, ট্রাস্ট মি,কোন প্রব্লেম হবে না

নির্ঝরিণী আয়াপের দিকে আবার তাকালো না, নিঃসন্দেহ একে বিশ্বাস করা যায়,মানুষের অপরাধ তার চোখের চাহনিতে লুকিয়ে থাকে এর চোখ তা বলছে না

আয়াপ- দাঁড়িয়ে না থেকে চলো তো

নির্ঝরিণী আর কোন কথা না বলে গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসলো

আয়াপ আর কিছু বল্লো না একটু কথা বলার সুযোগ পেয়েছে এতেই হলো,সামনের সিটে আসতে বললে যদি কিছু মনে করে

আয়াপ গাড়ি স্ট্রাট দিলো
গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে নির্ঝরিণী কে একবার দেখে বল্লো
– তোমার নাম টা এখন ও জানা হয়নি বলবে কি তোমার নাম টা

– নির্ঝরিণী

আয়াপ- নির্ঝরিণী, নিরজোহর একজন কন্ঠ শিল্পী, চাইলে তুমি ও ভালো গাইকা হতে পারবে যদি চাও আমি তোমায় হেল্প করবো

নির্ঝরিণী – আপু বকবে এই সব বললে

আয়াপ- তোমার আপু কি বদরাগী নাকি

নির্ঝরিণী এবার জোর গলায় কন্ঠে একটু ঝাঁজ মিশিয়ে বল্লো
– কাউকে না দেখে তাকে ভালো করে না ছিনে,তার ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক নয়, আমার আপু অনেক ভালো ‘ my sister world best sister’

আয়াপ মনে মনে বলছে যাক ভাভা কি এমন বললাম যে এতো রিয়েক্ট করতে হলো
– ওহ তাই, ভালো তো খুব ভালো

মিথিলা আজ রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে কি করবে কিচ্ছু তার মাথায় আসছে না
আয়ান কয়েক বার এসে ডেকে গেছে তবু ও কোন রেসপন্স করেনি, কয়েক দিন পর আয়ান আর নির্ঝরের পরীক্ষার ফি আসবে কোথা থেকে দিবে এতো টাকা,কেনো ই বার বার আমার সাথে এমন হচ্ছে

এর মাঝে নির্ঝরিণী এসে যায়,বাসায় এসে আয়ানের কাছে সব কথা শুনে নির্ঝরিণী ভয় পেয়ে যায়, আপু তো এমন কখনো করে না আজ তা হলে কি হলো,আমাকে আনতে যাবে বলে তা ও গেলো না, কি হয়েছে আপুর

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-৩১

0

খেলাঘর পর্ব-৩১
লেখা- সুলতানা ইতি

আর খবর করতে হবে না অনেক খবর হয়ে গেছে আমাদের, বারোটার আগে ঘুমাবো না হলো তো
মিথিলা মুচকি হেসে আয়ানের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলো

সকাল বেলা নির্ঝরিণী এসে বল্লো
আপুউউউউউ
মিথিলা- কিরে কিছু বলবি?

নির্ঝরিণী – শুন না আপুনি

মিথিলা- এতো ডং করছিস কেনো, যা স্কুলের জন্য রেডি হয়ে নে

নির্ঝরিণী – আপু আমার একটা কথা ছিলো
মিথিলা- বল

নির্ঝরিণী – আগে বলো বকবে না আর আমার কথা টা তুমি রাখবে

মিথিলা – আচ্ছা যা বল

নির্ঝরিণী – আপু আজকে না আনিশার বার্থডে, তো আমাদের সবাই কে ইনভাইট করেছে স্কুল শেষে ওর বাড়ি যেতে বলেছে

মিথিলা- হুম বুঝলাম, ফিরবি কখন

নির্ঝরিণী – অনেক রাত হয়ে যাবে আসতে না পারলে ওদের বাড়ি থেকে যাবো

মিথিলা ভাবনায় পড়ে গেলো কি করবে এখন আবার বোন কে অচেনা একটা বাসায় রাতে থাকতে বলতে ও মন শায় দিচ্ছে না
– ঠিক আছে যাস, তবে আমি টিউশনি শেষে তোকে আনতে যাবো,, তোর বান্ধবীর বাসার এড্রেস দে

নির্ঝরিণী – তোমার যেতে হবে না আপি, এক রাত থাকলে কি হবে

মিথিলা ধমক দিয়ে বল্লো
– বেশি বুঝিস না, রাত পর্যন্ত থাকতে দিয়েছি এটা ই কি বেশি নয়
নির্ঝরিণী – ওকে তুমি যা বলবে

,,মিথিলা বেশির ভাগ সময় হেটেই যায় স্কুলে যখন টাইম থাকে না তখন রিক্সায় যায়
আজ টাইম আছে তাই হেটেই যাচ্ছিলো
মিথিলার সামনে ঠিক দু হাত দূরে একটা গাড়ি এসে থেমে যায়

গাড়ি থেকে ইহান কে নামতে দেখে মিথিলা থমকে যায়, মনে হচ্ছে চোখে ভুল দেখেছে আজ এতো গুলো দিন পর ইহানের সাথে দেখা হবে ভাবতে ও পারিনি,
অনেক চেঞ্জ হয়েছে ইহান,

ইহান মিথিলার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় দেখছে মিথিলা কে দু চোখ ভরে,

ইহান- এখন ও আগের মতো ই বিউটি আছিস ন্যাচারাল বিউটি, চশমার পাওয়ার টা মনে হচ্ছে চেঞ্জ করতে হয়েছে,
হা হা ইহান নিজেই হেসে দিলো আমি তোকে নিয়ে খুব ভাবি মিথিলা

কথা টা শুনে মিথিলা ইহানের দিকে তাকায়

ইহান- না মানে ভাবি আর কি তুই যখন বুড়ি হবি তখন তোর চোখে কতো পাওয়ারের চশমা উঠবে সেটা নিয়ে,আচ্ছা থাক এই সব কথা,কেমন আছিস বল,কোথায় যাচ্ছিলি

মিথিলা- স্কু.লে -স্কুলে যাচ্ছি

ইহান- ওহ, বাচ্ছা কাচ্ছা পড়াস নাকি, ম্যাডাম ম্যাডাম লাগছে তোকে
চুলে বেণী বাধা,চোখে চশমা পরনে শাড়ি আগে কতো করে বলে ও তোকে একদিনের জন্য শাড়ি পরাতে পারিনি

মিথিলা – ভু-ভুলিসনি সে সব কথা

মিথিলার কথা শুনে ইহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে
– তুই এখন ও সেই আগের মতো নার্ভাস ফিল করছিস, এই আমি কি বাঘ নাকি রে, ভয়ে তুতলিয়ে কথা বলছিস

মিথিলা- কবে এলি, আর সেদিনের পর থেকে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি

ইহান- খুঁজছিলি নাকি,কেনো খুঁজছিলি?

মিথিলা- ক্ষমা করেছিস তো

ইহান- রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবি নাকি কোথায় ও গিয়ে বসবি
মিথিলা- আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাবে
তুই কিন্তু আমার একটা কথার উওর দিসনি

ইহান- সব প্রশ্নের উত্তর একদিনেই পেতে চাস? তাই আমি বলবো না, আচ্ছা বাই তোর তো লেইট হয়ে যাচ্ছে
এই বলে ইহান মিথিলা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে চলে যায়

মিথিলা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতে পারছে না সে এই মুহুর্ত টা কি স্বপ্ন ছিলো,হঠ্যাৎ করে ইহান কোথা থেকে এলো,অস্ট্রিয়া থেকে কখন এসেছে
ঘড়িতে কাটায় কাটায় দশটা বাজে মোবাইলে এলার্ম দেয়া ই ছিলো,এলার্মের শব্দে মিথিলার ঘোর কাটে একি স্কুলে কখন গিয়ে পৌছবো ইসসস আজ আমার চাকরী টা মনে হয় থাকবে ই না
স্কুলে যেতে যেতে দশটা চল্লিশ ভেজে গেছে যা ভয় পেয়ে ছিলো ঠিক তাই হলো, আজ প্রিন্সিপাল মিথিলা কে সবার সামনে ডেকে নিয়ে অপমান করেছে সাথে স্কুল থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে,,প্রিন্সিপাল এর একটাই কথা অন্য শিক্ষক দের কাছে মিথিলা উদাহরণ হয়ে থাকবে লেইটে করে আসার ফল এইটা ই,তা ছাড়া মিথিলা কে অনেক ছাড় দিয়েছে আর নয়

মিথিলা আজ চোখে অন্ধকার দেখছে সংসার ভাই বোনের পড়া শুনা চলবে কি দিয়ে, অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে দূর আকাশের পানে পৃথিবীর মানুষ গুলো এতো নিষ্টুর কেনো

আনিশা নির্ঝরিণী কে বল্লো শুন ঝড় তুই কিন্তু একটা গান গাইবি আজ
নির্ঝরিণী – আমি? এমা না না কি বলছিস আমি গান গাইতে পারবো না এতো লোক জনের সামনে আমি কি করে গান গাই বল

আনিশা-সেদিন স্কুলে গেয়েছিস না?
কিন্তু তবু ও নির্ঝরিণী রাজি হয়নি
রাত আটটায় অনুষ্টান শুরু হয় যদি আনিশার বাবা মা রাত বারোটায় কেক কাটতে ছেয়ে ছিলো কিন্তু আনিশা এতে শায় দেয়নি কেনো না ওর বান্ধবীরা এতো রাত অব্দি থাকতে পারবে না

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে আনিশার কাজিন আবির এসে যায়
আনিশা- আবির ভাইয়া তুমি আসতে এতো লেইট কেনো করলে

আবির- আরেহ পাগলি তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে

আনিশা- কি সারপ্রাইজ গো
আবির, কই আয়াপ বিতরে আয়,
আমার বন্ধু আয়াপ খান বর্তমানে নাম করা একজন সিংগার আর মেয়েদের হার্ট থ্রোব

আনিশা- ওয়াও আবির ভাইয়া আয়াপ খান যে তোমার ফ্রেন্ড আগে বলোনি তো

আবির- আগে বল্লো কি এখন তুই অবাক হতি

আনিশা- তা ঠিক, তো আয়াপ ভাইয়া কেমন আছেন,জানেন আমার একজন বান্ধুবী আপনার অন্ধ ভক্ত, এতো ভক্ত যে কি বলবো আপনার সব গান ওর কালেক্টে থাকে,, আর সব গুলো গান হাজার বার শুনে

আয়াপ-ওয়াও তা সে কি আজ পার্টিতে এসেছে

আনিশা- অফকোর্স, ভাইয়া, দাড়ান ডেকে আনছি, ঝড় টা যেন কোথায় গেলো
এই ঝড় এদিকে আয়

নির্ঝরিণী – আসছি রে
আনিশা- কোথায় ছিলি

নির্ঝরিণী – তোর রুমের বারান্দায় ছিলাম আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে, বৃষ্টির আগের ঠান্ডা আব হাওয়া টা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম

আনিশা- হুম আজ তোর কপাল ভালো যা দেখবি তাতে ইই তোর মন ছুয়ে যাবে
নির্ঝরিণী – মানে?

আনিশা- চল দেখবি
আয়াপ কে দেখে নির্ঝরিণীরর হার্ট বীট আবার বেড়ে যায়,, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে হার্ট বীট টিক টিক করে চলছে শব্দ টা নির্ঝরিণী শুনতে পাচ্ছে এমন লাগছে, নির্ঝরিণী চোখ বুঝে গেলো

আনিশা- আয়াপ ভাইয়া এই আপনার পাগলী ভক্ত
আয়াপ- আরেহ এতো সেই কোকিলা কন্ঠি হেই তোমাকে না বলেছি আমাকে মেসেজ করতে

নির্ঝরিণী আয়াপের কথা শুনে ছেয়ে আছে তার দিকে,মুখে তার কোন কথা নেই

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-৩০

1

খেলাঘর পর্ব-৩০
লেখা-সুলতানা ইতি

এটাই আমার শাস্তি আজ আমি বড্ড একা হয়ে গেছি আম্মু বড্ড একা, মিস করছি তোমাকে কিন্তু তোমার কাছে যাওয়ার কোন পথ খোলা নেই

দরজা নকের শব্দ শুনে মিথিলা গিয়ে দরজা খুলে দেখলো উতলা এসেছে

মিথিলা- আরে উতলা তুমি? তুমি তো আমাদের বাসায় আসো ই না,এখন কি মনে করে এলে

উতলা- না আপু এমনি এসেছি বিকেল বেলা ভালো লাগছিলো না তাই,,নির্ঝরিণী কোথায় আপু

মিথিলা- আয়ান আর ও পড়ছে, সামনে এক্সাম তো তাই

উতলা- ঠিক আছে আমি যাই ওদের সাথে দেখা করে আসি, এই বলে মিথিলা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্টাডি রুমের দিকে গেলো উতলা

মিথিলা- মেয়েটা তো বড্ড ফাজিল,লজ্জা শরম কিছু নেই নাকি,একটা ছেলের পিছনে ধেইধেই করে ঘুরছে,আল্লাহ ওর পাল্লায় পড়ে আমার ভাইয়ের পড়ার যেন কোন ক্ষতি না হয়

উতলা নির্ঝরিণীরর সাথে কথা বলছে আর আড় চোখে আয়ান কে দেখছে

নির্ঝরিণী মুচকি হেসে বল্লো
– আপু তোমার চোখ বার এদিক ওদিক ঘুরছে কেনো তুমি কি কাউকে খুজছো আই মিন কাউকে দেখছো

উতলা লজ্জা পেয়ে বল্লো নাহ কাকে দেখবো কাউকে না,আচ্ছা তুই কি আয়াপ খানের সাথে যোগাযোগ করেছিস

নির্ঝরিণী ফিস ফিস করে বল্লো
– আস্তে বলো আপু শুনলে বকবে, আসলে আমি কার্ড টা ফেলে দিয়েছি

উতলা- কি বলছিস, এই রকম সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে

নির্ঝরিণী কিছু বলতে যাবে এমন সময় মিথিলা এসে বল্লো
– কিরে নির্ঝর তোর অংক টা করেছিস তো? আয়ান ইংলিশ রচনাটা পড়া হয়েছে?

মিথিলা জানে ওদের পড়া হয়নি তবু ও উতলা কে চলে যেতে বলার এটা একটা কৌশল

নির্ঝরিণী আমতা আমতা কিরে বল্লো
– না আপু

মিথিলা- তা হলে কি করছিলি এতোক্ষন

উতলা- আপু ও আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছে ঠিক আছে আমি যাই

মিথিলা- না তুমি বসো প্রব্লেম নেই

উতলা- না থাক পরে আসবো আমি
উতলা চলে যায়
মিথিলা যেন হাফ ছেড়ে বাছলো এই মেয়ের কাছে থেকে আমার ভাইকে দূরে দূরে রাখতে হবে এই বয়সে এই সবের পিছনে ঝড়িয়ে গেলে পড়াশুনা গোল্লায় যাবে

কিরে আয়ান কি করছিস
আয়ান- এই তো আপু লিখছি

মিথিলা- তোকে তো পড়তে দিয়েছি লিখতে দিইনি,দেখি তো কি লিখেছিস

আয়ান কাগজ টা তাড়াতাড়ি শরাতে যাবে তার আগেই মিথিলা কাগজ টা কেড়ে নেয় কি লিখেছিস এই সব তুই
” উতলা তোমাকে দেখলে কেনো চোখের
তৃষ্ণা মিটে না,শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে,হাহাকার করে আমার মন একটু বৃষ্টি দিয়ে মরুভূমি টা ভিজিয়ে দিবে বলে
তোমার চোখের ঐ লম্বা গুছানো পাপড়ির বাঁঝে ফুঁ দিয়ে এলো মেলো করে দিতে চাই
তুমি কি রেগে যাবে,
তোমার ঠোটের উপর তিলটা ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে”এভাবে আর ও কিছু এলো মেলো কথা লিখেছে আয়ান
মানে কি আয়ান? এসব কি? তুই এতো খারাপ হয়ে গেছিস ছিঃ বাইর হও আজ তোর একদিন কি আমার একদিন

আয়ানা- আ.পু প্লিজ আর এমন করবো না এবারের মতো
– ঠাসসসস মিথিলা আয়ান কে থাপ্পড় মারে তার পর শোলা দিয়ে অনেক মার ধর করে
তোর জন্য আমি কখনো কোন ব্যাপারে কাপর্ন করিনি শুধু ছেয়েছি ভালো রেজাল্ট আর তুই প্রেম করছিস? করাচ্ছি তোকে প্রেম, বাইর হও, বাড়ি থেকে, তোর মতো ভাইয়ের দরকার নেই আমার
আমি কার জন্য এতো কষ্ট করতেছি বল আমার জন্য? কই আমার তো কোন লাভ দেখছি না, মিথিলা বলতে বলতে কেঁদে দিলো নির্ঝরিণী ও কাঁদছে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে হয়তো মাথা উচু করে চোখের পানি কাউকে দেখাতে চায় না তাই

মিথিলা কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো, টিউশনি করিয়ে তার পর ফিরবে অনেক রাতে
তৃধা দের বাড়ি একটু দূরে টিউশানি শেষে প্রতিদিন রিক্সায় আসে আজ কেনো জানি রিক্সায় উঠতে ইচ্ছে করলো না হেটেই আসছে

আয়ানের কান্না মাখা মুখ টা ভেসে উঠছে চোখের সামনে, এভাবে গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি আমার ওরা তো এখন আর ছোট নেই, ইসস কি করলাম এটা আমি ওরা আমায় মায়ের মতো করে দেখে , আর আমি?
আচ্ছা আজ মা বেছে থাকলে কি মারতো ওদের হয়তো মারতো না
মিথিলা এই সব ভাবছে আর আনমনে হাটছে কখন যে মাঝ রাস্তায় চলে এসেছে খেয়াল নেই তার হঠ্যাৎ কই থেকে যেন একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়

ভাগ্যিস খুব একটা লাগেনি মিথিলা নিজেই উঠে দাড়ালো যেই ড্রাইবার কে কিছু বলার জন্য মুখ তুলেছে অমনি ড্রাইভার কে দেখে মুখ টা বন্ধ হয়ে গেলো ড্রাইবার আর অন্য কেউ নয় ইভান ই ছিলো
ইভান ব্যাস্ত কন্ঠে বল্লো
– একি তুমি এখানে এতো রাতে,তোমার লাগেনি তো কোথা ও

মিথিলা প্রথম কথার উত্তর না দিয়ে পরের টার উত্তর দিলো
– ছোটলোক পরিবারের মানুষদের এই রকম একটু আধটু হোছট খেতে হয়,এ আর এমন কি,,হোছট খেয়ে অনেক কিছু বোঝা যায় শিখা যায়

ইভান- চলো তোমায় পৌছে দিই

মিথিলা- স্যরি গরিব ঘরে জন্ম নিয়ে পায়ে হেটে অনেক দূর যেতে শিখেছি,বড় লোকদের মতো গাড়ি হাকিয়ে যাওয়ার অভ্যাস নেই

এই বলে মিথিলা দূর্ত হাটতে থাকলো পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা লেগেছে হাটতে কষ্ট হচ্ছে তবু ও সব শক্তি এক করে হাটছে

মিথিলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ইভান
– তুমি ঠিক আগের মতো ই আছো মিথি একটু ও চেঞ্জ হওনি শুধু তোমার মনে ঝং ধরেছে আমার জন্য, তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি মিথি তুমি সত্যি অনন্য

আব্বু আম্মু ঠিক মানুষটি কে ই সিলেক্ট করেছিলো আমি ছিনতে পারিনি
ইভান আবার গাড়িতে গিয়ে বসলো
মনে পড়ে গেলো তার,এই রকম ই এক্সিডেন্ট করে একদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো সেদিন তোমাকে না ছিনে রুঢ় ব্যাবহার করেছিলাম,কিন্তু আজ তোমায়
ছিনতে ফেরে ও আটকে রাখার কোন অধিকার আমার নেই,আমি নিজেই নিজের অধিকার হারিয়েছি

মিথিলা হাটছে মনে তার প্রশান্তি কাজ করছে
আজ ইভান কে একদম অন্য রকম লাগছে ছন্নছাড়া, আজ তার চোখের ভাষা জানান দিচ্ছিলো আমায়
সে অসহায় এই টা ই তো আমি ছেয়ে ছিলাম মনে মনে সত্যি তাই হলো

যে চোখ দিয়ে সে আমায় ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখে ছিলো,আজ সে চোখেই আমার জন্য একরাশ ভালোবাসা দেখেছি আমি,কিন্তু আজ আমার এই ভালোবাসার দরকার নেই বেশ আছি ভাই বোন কে নিয়ে ওদের নিয়ে ই আমার পৃথিবী

মিথিলা বাসায় এসে দেখলো নির্ঝরিণী পড়ছে
মিথিলা- কিরে পড়ছিস?
নির্ঝরিণী – হুম

মিথিলা- খেয়েছিস তোরা

নির্ঝরিণী – আয়ান খায়নি তাই আমি ও খাইনি

মিথিলা- কোথায় আয়ান?

নির্ঝরিণী – শুয়ে আছে
মিথিলা কিছু না বলে আয়ানের রুমে গেছে আয়ান শুয়ে আছে ঠিক শুয়ে নেই কাঁদছে বালিশে মুখ গুঁজে
মিথিলার বুকের ভিতর ছ্যাঁত করে উঠেছে কি করলাম এটা আমি মা বাবা হারা ভাই কে মারলাম
আস্তে করে মিথিলা ডাকলো
– আয়ান, আয়ান

আয়ান চুপটি করে শুয়ে আছে হয়তো চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছে

মিথিলা- আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই আমি আর তোর গায়ে হাত তুলবো না তোকে বকবো না

আয়ান এবার উঠে বসলো
– না আপু তোমার কোন ভুল নেই ভুল আমার ই আমি না বুঝে তোমায় কষ্ট দিয়েছি মাফ করে দাও আমায়

ভাই বোন কিছুক্ষন গলা ঝড়িয়ে কাদলো
তার পর মিথিলা নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো আয় খাবি
মিথিলা আয়ান আর নির্ঝরিণী কে খেতে দিলো
কিন্তু ওরা দুজনেই বসে আছে কেউ খাচ্ছে না

মিথিলা কিরে খাচ্ছিস না কেনো
আয়ান- তুই খাইয়ে দে, নইলে খাবো না

মিথিলা একটি কথা ও না বলে ভাত মাখিয়ে ভাই বোন কে খাইয়ে দিলো
খাওয়া শেষে মিথিলা বল্লো এখন সোজা গিয়ে পড়তে বসবি রাত বারোটার আগে ঘুমাবি না যদি ঘুমাস তো,খবর আছে দুজনের

আয়ান- আর খবর করতে হবে না অনেক খবর হয়ে গেছে আমাদের, বারোটার আগে ঘুমাবো না হলো তো

মিথিলা মুচকি হেসে আয়ানের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলো

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২৯

0

খেলাঘর পর্ব-২৯
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা এখন ও বাসায় এসে পৌছয়নি
নির্ঝরিণী কখন বোনের কাছে কথা গুলো বলবে সে জন্য ছটফট করছিলো

এর মাঝে আয়ান এসে নির্ঝরিণী কে পোচাতে শুরু করলো

আয়ান- এই নির কোথাও তোর গান আয়াপ খানের অপছন্দ হয়নি তো,তাই তোকে বকা দেয়ার জন্য তার ঠিকানা দিয়ে গেছে

নির্ঝরিণী – ভাই ভালো হচ্ছে না,উনি কিন্তু আমায় কোকিলা কন্ঠি ও বলেছেন

আয়ান- কি বলিস তো, তুই তো অনেক মানুষের সামনে তোর বেসুরা বাঁশি বাজিয়েছিস তাই তিনি তোর মান রক্ষার্তে তোর একটু প্রশংসা করলো আর কি

নির্ঝরিণী কিছু বলতে যাবে তখন ই দরজায় নক হয়
নির্ঝরিণী দরজা খুলে দিলো

মিথিলা ঘরে পা দিতেই নির্ঝরিণী বল্লো
জানো আপু আজ কি হয়েছে

মিথিলার ক্লান্তিতে শরির ভেঙে আসছিলো,বোনের এই হাসি মুখ দেখে ক্লান্তি কে প্রশ্রয় না দিয়ে বল্লো
– না বললে জানবো কি করে

আয়ান- আপি আমি বলছি,আজ আমাদের বাঁশি ওয়ালী তার বেসুরা সুরে বাঁশি বাজিয়েছে শিল্পি আয়াপ খানের মঞ্চে

মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
নির্ঝর কবে থেকে বাঁশি বাজানো শিখলো

নির্ঝরিণী – আপি তুমি ভাইয়ের কথা শুনো না তো

আয়ান- আরেহ আপু শুন না,মানে গান গেয়েছিলো আর কি,তো আয়াপ খনা ওর সম্মান বাছানোরর জন্য একটু প্রশংসা করেছিলো এই আর কি

নির্ঝরিণী – এবার আমার কিছু বলি আপু,আজ আমাদের লাজুক রোমিও…..

আয়ান – নির প্লিজ আপু কে কিছু বলিস না তোকে ক্যাটবেরি দিবো,অনেক গুলো আইসক্রিম দিবো

নির্ঝরিণী – আপু দেখো আমাকে ঘুষ দিতে চাচ্ছে কিন্তু আমি তো ঘুষ নিবো না,আমি আজ বলবো ই

মিথিলা- আসল কথা বল

নির্ঝরিণী – আজ আমদের রোমিও প্রথম বারের মতো তার জুলিয়েটের সাথে কথা বলেছে তা ও কি লজ্জা ই না পাচ্ছিলো, অবশ্যইই জুলিয়েট ও লজ্জা পেয়েছিলো,কিন্তু আমাদের রোমিও ভেবেছে আমি কিছুই দেখিনি তাই সে এতোক্ষন আমাকে পচাইতেছিলো নিশ্চিন্তে

আয়ান- মাথা নিচু করে আছে

মিথিলা- আর তুই কি বলতে ছেয়ে ছিলি

নির্ঝরিণী আয়াপ খানের সব কথা বলে

মিথিলা সব কথা শুনে শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বললে
নির্ঝর, আয়ান,তোদের দুজনকে ই বলছি
এই সময় টা পড়াশুনায় ফোকাস করার সময়,সামনে এস. এস.সি এক্সাম সেদিকে যেন খেয়াল থাকে

আর নির্ঝর তোকে বলছি এই সব সেলিব্রেটিদের কথায় এতো নাচার কিছু নেই, এদের টাকা আছে এরা সব করতে পারে, আমরা খুব ই সাধারণ পরিবারে মানুষ হয়েছি সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, মনে থাকবে?

নির্ঝরিণী আর আয়ান দুজনেই মাথা নাড়িয়ে শায় জানালো
মিথিলা ফ্রেশ হতে চলে গেলো,,

– নায়া কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি বাসায় এসো,হুমম আমি এসেছি অনেক্ষন হলো
কথা শেষ করে ইভান কল অফ করে দিলো অফিস শেষ করে ইভান বাসায় এসে দেখলো নায়া নেই তাই ওকে কল করে আসতে বল্লো

উফফ খিধে পেয়েছে খুব, দেখিতো রান্না করা আছে কি না, একি কিছু ই তো রান্না করা নেই, ইভানের মেজাজ গরম হয়ে যায়

সন্ধ্যা লগ্নে নায়া বাসায় এলো
ইভান- কোথায় গিয়েছিলে?

নায়া- এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছি

ইভান – ইদানীং তোমার বন্ধু বান্ধবের অভাব নেই দেখছি,হোয়াটএবার রান্না করে যাওনি কেনো

নায়া- আমি কি কাজের বুয়া নাকি যে রান্না করবো,তোমার খিদা ফেলে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খাইতা

ইভান- বাইরের খাবার খেতে খেতে আমার অবস্থা শেষ নায়া,,আমি আর খেতে পারছি না,কতো দিন বাড়ির রান্না খাই না

নায়া- তো আমি কি করবো? আমি রাঁধতে পারি না,

ইভান- তুমি পারো টা কি? এটা পারো না ওটা পারো না,বাসায় বুয়া রাখতে দিচ্ছো না,বুয়ার পাশে দিয়ে হাটতে তোমার ঘেন্না লাগে, তুমি পারো টা কি

নায়া- হোয়াট, তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো,,

ইভান- নায়া আমি তোমার হাজবেন্ড আমার কিসে ভালো কিসে মন্দ তোমার তা দেখতে হবে

নায়া- উফফ থার্ড ক্লাস হাজবেন্ড দের মতো কথা বলো না তো

এমন সময় নায়ার কল আসে
– হ্যালো বেবী, এই তো বাসায়, ওয়াও আমি আসছি

কল অফ করে নায়া বেরিয়ে যাচ্ছিলো
ইভান নায়ার পথ আটকে দাঁড়ায় কোথায় যাচ্ছো?কে ফোন করেছে

নায়া- রোমি ফোন করেছে

ইভান- এতো রাতে তুমি রোমির বাসায় যাচ্ছো? ইদানীং খুব বেশি রোমির সাথে সময় কাটাচ্ছো মনে হচ্ছে

নায়া- আমি কার সাথে সময় কাটাবো,কার সাথে কাটাবো না সেটা আমার ব্যাপার তুমি এতে ইন্টারফেয়ার করতে এসো না

ইভান- আমি তোমার হাজবেন্ড নায়া তোমার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আছে আমার

নায়া- উফফ,আমি তোমাকে সে অধিকার কখনো দিই নি ইভান,শরো তো,রাত নটা বাজে বলছে অনেক রাত, থার্ড ক্লাস মেন্টালিটি

ইভান- বাহ এখন আমার মেন্টালিটি থার্ড ক্লাস হয়ে গেলো,বিয়ের আগে পর্যন্ত তো আমি তোমার চোখে পৃথিবীর সেরা প্রেমিক ছিলাম,আর এখন?

নায়া- তখন তুমি এমন ছিলে না……

ইভান- নায়া তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না,তোমার জন্য আমি আমার ফ্যামেলী ছেড়েছি

নায়া- ওহ আর আমি কিছু ছাড়িনি তাই না,তোমার জন্য আমার ড্যাড মোমের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে আমার একমাত্র ভাই আমায় বোন বলে দাবি করে না

ইভান- কারন তুমি অন্যের স্বামি কে কেড়ে নিয়েছো তাই

নায়া তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বল্লো
– ভূতের মুখে রাম নাম,তোমার বউ থাকতে তুমি আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে কেনো,,তোমার চরিত্রে যে দোষ আছে সেটা দেখছো না

ইভান আর কিছু বলতে পারলো না এই ফাকে নায়া বেরিয়ে গেলো, ইভান কিছুই বল্লো না কিই বা বলবো আমি
সব অপরাধ তো আমার ই,মিথিলার মতো একটা মেয়েকে আমি কষ্ট দিয়েছি, আমার পছন্দের খাবার রান্না করে কতো রাত আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলো, আর আমি কি না ছিঃ
ইভান সোফায় গা এলিয়ে দিলো বড্ড ক্লান্ত লাগছে মোবাইল টা নিয়ে মায়ের নাম্বার ডায়েল করলো
ওপাশ থেকে মিসেস আয়মন কল রিসিভ করে বল্লো
– কে বলছেন?
ইভান- আম্মু আমি….

কথা শেষ করতে দিলো না ইভান কে
– স্যরি আমাদের কোন সন্তান নেই রঙ নাম্বার
মিসেস আয়মন অপাশ থেকে কল অফ করে দিলো

এটা ই আমার শাস্তি আজ আমি বড্ড একা হয়ে গেছি আম্মু বড্ড একা,

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২৮

0

খেলাঘর পর্ব-২৮

লেখা-সুলতানা ইতি
আজ নির্ঝরিণী ও কোন হেল্প করেনি সকাল থেকেই স্কুলে যাওয়ার জন্য তার কতো আয়োজন ভাবা যায় বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী আয়াপ খান আসছে

মিথিলা – আয়ান নির্ঝরী খেতে আয়, আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে

আয়ান এসে বল্লো আপু
– আজ নির্ঝর কে খাবার টেবিলে পাবি না

মিথিলা- কেনো

আয়ান- আজ নির যেই সাজ দিয়েছে খেতে গেলে ওর লিপইস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে না হি হি হি

মিথিলা কিছু বলার আগে নির্ঝরিণী এসে বল্লো
– আপু তুমি ফাজিটার কোন কথা শুনবে না,দেখো আমি কেমন সেজেছি

মিথিলা বোনের দিকে তাকিয়ে আয়ান কে বল্লো
– কিরে দুষ্টু কই নির্ঝর সেঝেছে বল

নির্ঝরিণী – আরেহ আপু আমি কেনো সাজতে যাবো বলো,আমি তো তোমারি বোন তাই না

আয়ান- ঠিক আছে তুই মিথিলার বোন কিন্তু আলাদা,রাগি, গুন্ডি,বদমেজাজি আর কতো কি

নির্ঝরিণী – আপু ওকে কিছু বলো আমি কিন্তু না খেয়ে চলে যাবো বলে দিলাম

মিথিলা মিষ্টি স্বরে ভাইকে ধমক দিয়ে বল্লো
– তোরা কবে যে বড় হবি, এখন ও একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকিস

আয়ান- তোর মতো বোন রুপি মা যতো দিন থাকবে ততদিন আমরা বড় হবো না

নির্ঝরিণী – ঠিক বলেছিস ভাই, আপু একদম মায়ের মতো মমতাময়ী,, বইয়ে পড়েছি মা না থাকলে নাকি বড় বোন মায়ের জায়গা নিতে পারে,তুই আমাদের মায়ের জায়গা ই নিয়েছিস আপু

মিথিলা কিছু বল্লো না,আবেগে কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে তার
– তোরা খেয়ে দরজায় তালা টা লাগিয়ে চলে যাস, আমি ছাবি নিয়ে যাচ্ছি আমার লেইট হয়ে গেছে অনেক

মিথিলা না খেয়ে বেরিয়ে গেলো ভাই বোন দের দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়া দেখে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছে এ দিকে দশ মিনিট লেইট হয়ে গেছে আজ কি হয় কে জানে

মিথিলা আজ স্কুলে যেতেই প্রিন্সিপ্যাল তার রুমে ডেকে নিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছে তাকে শেষে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়েছে, আর যেন কখনো লেইট করে না আসে আসলেই তার বিরুদ্ধে কঠিন স্টেপ নেয়া হবে

মিথিলা কিছু না বলে মাথা নিছু বেরিয়ে গেলো কি বলবে সে দোষ তো তার ই, এভাবে প্রায় ই ওর লেইট হয়,কাল থেকে আর ও ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে

নির্ঝরিণী স্কুলে আসতে ই ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড আনিশা বল্লো
কিরে আজ এতো তাড়াতাড়ি এলি তোকে তো ক্লাস শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ছাড়া এতো সকাল কখনো স্কুলে আসতে দেখিনি

নির্ঝরিণী – উফফ আশা (আনিশা কে নির্ঝরিণী আশা ডাকে, আনিশা নির্ঝরিণী কে ঝড় বলে ডাকে)আজকের দিনে আমি লেইট করে আসবো এটা তুই ভাবলি কি করে

আনিশা- সেটাই তো তুই যে গান পাগলি তার উপর তোর পছন্দের শিল্পী আসছে তোর কি আজ আর বাড়িতে মন বসবে,আজ তো ঝড়ের গতিতে আসবি

নির্ঝরিণী – চল তো আগের সারিরর সিট নিতে হবে নইলে উনাকে দেখতে পাবো না,,

আনিশা- হুম তাই তো,না দেখলে কি তোর ঘুম হবে
নির্ঝরিণী – ফাউল বকিস না,,চল

আজ উতলা স্কুলে আসতে লেইট হয়ে গেছে,, আজকের দিনে লেইট হওয়া ঠিক মানতে পারছে না মেজাজ তার খুব বিগড়ে আছে, কিন্তু স্কুল ঘেটে আয়ান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই তার মন টা ভালো হয়ে গেলো

উতলা আয়ানের দিকে তাকিয়ে সব সময় একটা মিষ্টি হাসি দেয় আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি

আজ উতলা পাস কেটে যেতেই আয়ান চারি দিকে তাকিয়ে দেখলো নির্ঝরিণী আসে পাশে আছে কি না, যখন দেখলো নেই
তখন উতলা কে পিছন থেকে ডাক দিলো,
– এই উতলা শুনতো

উতলা লাজরাংগা চাহনিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটি নিঃশব্দ হাসি দিয়ে বল্লো
– ডেকেছো?

আয়ান উতলা কে ডেকে অস্বস্তিতে পড়ে যায় আবার উতলা তাকে তুমি করে বলছে এটা তো তার হার্টে গিয়ে বিঁধেছে

উতলা- তুমি কিছু বলছো না যে

আয়ান স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বল্লো
– তু- তুই আজ এতো লেইটে আসলি যে

উতলা কানে পিছনে চুল গুঁজতে গুঁজতে বল্লো
– মা আজ চুল বেধে দিতে সময় নিয়েছে তাই

আয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে বল্লো
– ওহ

উতলা আর কিছু না বলে চলে গেলো আয়ান যেন হাফ ছেড়ে বাছলো আবার চারি দিকে তাকালো না নির্ঝরিণী নেই
উতলা কে দেখলে আমার কি যেন হয় বুঝি না বাপু,
উতলা বেশি ফর্সা নয়, আবার উজ্জ্বল শ্যামলা ও না তবু ও ওর চেহারা এতো মিষ্টি,সব ছেয়ে ওর হাসি সুন্দর এই হাসিতেই আমি শেষ,

চোখের পাপড়ি গুলো বড় বড় নিচের দিকে তাকিয়ে হাটলে যেন চোখ বুঝে হাটছে এমন মনে হয় ভারী মায়াবী লাগে তখন,

উতলা কে দেখলে আমার মন সত্যি উতলা হয়ে উঠে,ঠিক মতো গুছিয়ে কথা ও বলতে পারি না ওর সামনে গেলে

এমন সময় সিয়াম এসে আয়ানের পিঠে থাপ্পড় মেরে বল্লো সালা তুই এখানে

আয়ান উতলার চিন্তায় বুধ হয়ে ছিলো সিয়ামের থাপ্পড় চমকে উঠে

সিয়াম- সালা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলি নাকি, চমকে উঠলি যে

আয়ান- কিছু না চল

সিয়াম- আজকের অনুষ্ঠান হোষ্ট করে সোহাগ ভাই,উনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়

আয়ান- হুম ভালো, চল গিয়ে বসি আয়ান আসতে আসতে লেইট করে ফেলেছিলো তাই ওরা সবার পিছনে সিট পেয়েছে

সবাই বসে অপেক্ষা করছে কিন্তু গায়ক এখন ও এসে পৌছয়নি,দশ মিনিট লেইট
এমন সময় গাড়ির হর্ন শুনা গেলো সবার মধ্যে চাঞ্চল্যতা দেখা দেয়

আয়াপ খান এসেই আর দেরি করেনি সোজা স্টেজে চলে আসে
নির্ঝরিণী অপলক ছেয়ে আছে হাজার হাজার কোটি কোটি বালিকার হার্ট থ্রব আয়াপ খানের দিকে,সত্যি ওর কন্ঠের থেকে ও অনেক সুন্দর, জোড়া ভ্রু, খোঁচা খোঁচা দাড়ি,হেয়ার স্টাইল সব যেন নজর কাড়া, মুখে যেন হাসি লেগেই আছে

আনিশা নির্ঝরিণী কে ধাক্কা দিয়ে বল্লো
– কিরে তোর মাঝে আছিস তো নাকি আয়াপের মাঝে হারিয়ে গেছিস

নির্ঝরিণী – পাকনামি করিস না তো,সামনে তাকা
নির্ঝরিণী আবার আয়াপের মাঝে ডুবে গেলো, এতো দিন শুধু গান শুনেছে,আজ গান ও শুনিবে দেখবে ও

আয়াপ – গাইজ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত তোমাদের অপেক্ষা করানোর জন্য তবে আর তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে না তো হয়ে যাক গান
আয়াপ গিটার বাজিয়ে গান ধরলো
“আমি তোমাকে আর ও কাছে থেকে তুমি আমাকে আর ও কাছে থেকে
যদি জানতে চাও তবে ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও।।

নদী কেনো যায় সাগরের ডাকে
ছাতক কেনো বৃষ্টির আশায় থাকে
যদি বুঝতে চাও
আমি তোমার ঐ চোখে চোখ রেখে
তুমি আমার ঐ চোখে চোখ রেখে।।
স্বপ্ন দেখে যাই
তবে ভালোবাসা দাও, ভালোবাসা নাও

কাছে এলে যাও দূরে শরে
কতো দিন রাখবে আর একা করে
মনের টেনে নাও
আমি তোমার ঐ হাতে হাত রেখে
তুমি আমার ঐ হাতে হাত রেখে ।।

এসো এগিয়ে যাই
শুধু ভালোববাসা দাও ভালোবাসা নাও”

গান শেষ হতেই,দর্শকের রিকুয়েস্ট আরেকটা গাইতে হবে
আয়াপ চোখ বন্ধ করে আবার গান ধরলো

“ভালোবাসি কতো টা নাই বা বলি
কিছু কথা শুনার বোঝার কি বলি ।।
বুঝে নাও তুমি আমার চোখ টা দেখে
আছে কতো ভালোবাসা হৃদয় মেখে

বুঝে নাও তুমি আমার চোখ টা দেখে আছে কতো ভালোবাসা হৃদয় মেখে

যে পথে চলে সবাই সে পথে চলি না কারনে অকারনে ভালোবাসি বলি না ।।

বুঝে নাও তুমি আমায় চোখ টা দেখে
আছে কতো ভালোবাসা হৃদয়ে মেখে ।।

আমাদের প্রেম কেনো সবার মতো হবে তবে কি এই প্রেম উদাহরণ রবে ।।

বুঝে নাও তুমি আমার চোখ টা দেখে আছে কতো ভালোবাসা হৃদয়ে মেখে

ভালোবাসি কতো টা না ই বা বলি কিছু কথা নয় শুনার বোঝার রেখে বলি।।

এভাবে কয়েকটা গান গেয়ে একটা বিরতি নিলো
নির্ঝরিণী তনয় হয়ে শুনছিলো আয়াপ যে স্টেজ থেকে নেমে গেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই
আনিশা টিপ্পনী কেটে বল্লো
– আহ হারে রোমিও চোখের আড়ালে চলে গেছে, কিন্তু জুলিয়েট বুঝতেই পারেনি

নির্ঝরিণীর তনয়তা কেটে যায় আনিশার কথায়
নির্ঝরিণী -কিছু বললি?

আনিশা- নাহ কিছু বলেনি,আচ্ছা শুন না যদি এখন এই স্টেজে তুই একটা গান গাস তা হলে কেমন হবে বলতো

নির্ঝরিণী – মাথা খারাপ হয়নি আমার,এই স্টেজে গান গাওয়ার যোগ্যতা আমি রাখি না

আনিশা- আচ্ছা রাখিস কি রাখিস না দেখ তা হলে
আনিশা উঠে গেলো,কিন্তু কেনো গেলো নির্ঝরিণী বুঝতে পারেনি

কিছুক্ষন পর উপস্থাপক সোহাগ ভাই ঘোষনা দিলো
– গাইজ এখন নিশ্চই আপনারা বসে বসে বোর হচ্ছেন কিন্তু আমার মনে হয় আর বোর হতে হবে না আমদের অতিথি এখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছে তার মাঝে এখন আপনাদের সামনে গান নিয়ে আসবে এই স্কুলের সবার পরিচিত বোন নির্ঝরিণী,

নির্ঝরিণী নিজের নাম ঘোষনা হতে দেখেই লাফিয়ে উঠে তার পর কিছু না ভেবেই স্টেজে গিয়ে গান ধরলো

“তুমি যে কতো আদরের তুমি রয়েছো মন ঝুড়ে
ওওও জানি না সেই তোমাকে
কেনো এতো ভালো লাগে
মন দুয়ারে ডেকে যাই সুখের আংগিনায়

তোমারি মনেতে আমি
ভালোবেসে স্বপ্নেতে নামি
ওও আছো যখন বুকের
ভিতর দেবো তোমায় সুখের আছর।।

ওও চাইছো যখন মনের পাঁজর
দেবো তোমায় প্রেমের বাসর”

নির্ঝরিণীর গান শেষ হতেই পিছনে ফিরে দেখে তার স্বপ্নের পুরুষ আয়াপ খান দাঁড়িয়ে আছে, সে ও সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাত তালি দিচ্ছে
নির্ঝরিণী পলকহীন ভাবে কিছুক্ষন আয়াপের দিকে ছেয়ে থেকে তার পর দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে যায়,সিটে এসে ই বুকের মধ্যে হাত দিয়ে ছেপে বসে আছে,হার্টবীট দূর্ত চলছে তার

নির্ঝরিণীর পুরো ব্যাপার টা আয়াপ ফলো করে মুচকি হেসে নিজে গান ধরলো,দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠান শেষ হয় সবাই অটোগ্রাফ ফটোগ্রাফ নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলো আয়াপ খানের কাছে

শুধু নির্ঝরিণী যায়নি,তার স্টেজে চোখা চোখির কথা মনে পড়লেই হার্টবীট বেড়ে যায়
নির্ঝরিণী এখন ও হার্ট ছেপে বসে আছে

আয়াপ সবার ভীড় ঠেলে নির্ঝরিণীর কাছে গিয়ে বল্লো
হেই কোকিলা কন্ঠি তুমি ফটোগ্রাফ নেবে না
নির্ঝরিণী চমকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়

আয়াপ আবার সেই পাগল করা হাসি দিয়ে বল্লো
কুল বেবী কুল,এতো নার্ভাস হচ্ছো কেনো, বাই দ্যা য়ে এখন আমার তাড়া আছে, তুমি এই কার্ড টা রাখো আর কিছু না হোক একটা মেসেজ অবশ্যই দিবে আর হা তুমি খুব ভালো গান করো
বাই কোকিলা কণ্ঠি ,
আয়াপ চলে গেলো
সবাই নির্ঝরিণী কে ঘিরে ধরলো
আনিশা- কিরে এতো গুলো মেয়ে থাকতে, উনি তোর সাথে নিজে নিজে কথা বল্লো কেনো,, নাকি তোকে উনার….

নির্ঝরিণী – আনিশা বাজে বকিস না তেমন কিছু ই না,তোদের কথায় গান গেয়েছি,গান ভালো হয়েছে সেটা ই বলেছে উনি

উতলা এসে যোগ দিলো
– তাই নাকি তা হলে তোকে কার্ড দিয়ে গেলো কেনো

নির্ঝরিণী আর কিছু না বলে দূর্ত পা ফেলে বাসায় চলে আসে
মিথিলা তখন এসে পৌছয়নি
নির্ঝরিণী কখন বোনের কাছে কথা গুলো বলবে সে জন্য ছটফট করছিলো

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

মন ফড়িং ❤ ১৫. 

3
মন ফড়িং ❤
১৫.
অদ্রির কথাগুলো রিতার কাছে ঠিক ভালো লাগলো না। রিতা বুঝতে পারছেনা অদ্রি ওর স্বামী সম্পর্কে বলছে নাকি অনু কাউকে নিয়ে?
 এই মেয়েকে বুঝতে তার এতো সময় কেনো লাগছে? যেকোনো মানুষকে বুঝতে তার ১ সপ্তাহের বেশি সময় লাগেনা কিন্তু এই মেয়ের ক্ষেত্রে সময়টা শুধু বাড়ছেই, কমছে না। আসলেই এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে, কিছু না খুব কম মানুষ থাকে যাদের ভেতরের খোঁজ পাওয়াই দায়! অদ্রি তাদের মধ্যেকার একজন। রিতার মনে প্রশ্ন জেগেছে কাকে নিয়ে বলছে? প্রশ্নটা করতেও দ্বিধা হচ্ছে। রিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে অদ্রি বললো
– কীসব আবোলতাবোল বলছি আমি। বিয়ে উপলক্ষে আপনার কিছু কেনাকাটা করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা?
রিতা বললেন
– বয়স হয়েছে আমার। এখন কি আর আগের মতো সখ আছে নাকি?
– কী যে বলেন? বয়সের সাথে তারুণ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তারুণ্যকে সবসময় নিজের মধ্যে ধরে রাখতে হয় তাতে বয়স বাঁধা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা।
– তাহলে তুমি কেনো এভাবে বুড়ির মতো থাকো? নিজের গায়ের থ্রিপিসের দিকে তাকাও তো।
অদ্রির গায়ে সাদা রঙের থ্রিপিস। বেশ কয়েকদিন অবশ্য রঙিন পোশাক পড়া শুরু করেছিলো কিন্তু নিদ্রের এভাবে হুট করে উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকে আবার আগের মতোই হয়ে গেছে। তবে পুরোপুরি না। ভয়ংকর একটা স্বপ্ন তার পিছু ছেড়েছে।
এখনো মনে পড়লে অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে শরীর ও মনে।
অদ্রি মুচকি হেসে বললো
– বাদ দিন আমার কথা। আমি তো বিধবা মহিলা। আমার আবার সাজগোজ বলতে কিছু আছে নাকি?
রিতা বললেন
– তোমার বয়স অল্প। এখনো বিয়ের বয়স আছে।
– তা আছে বৈকি। রশীদ চাচা এসেছেন?
রিতা বললেন
– নাহ, তবে চলে আসবে মনে হয়।
– দুপুরে আজকে আমি রান্না করবো। অনেকদিন রান্না করা হয়না।
– তুমি ভালোভাবে সুস্থ হও তারপর দেখা যাবে।
– হঠাৎ মনে হলো রান্না করলে ভালো লাগবে। খালা মনি আমি শুটকি টা ভালো রান্না করতে পারি। খাবেন?
– তাহলে করো। তবে সব আমি গুছিয়ে দিবো।
– না, তা হবেনা। আজকে আপনি রেস্ট নিবেন। আমি সব রান্না করবো। আপনি একটা কাজ করতে পারেন। মেহমান দের জন্য কোন দিন কী কী রান্না করবেন লিস্ট করে ফেলুন।
– লিস্ট করবো কিন্তু আমাকে সাহায্য করতে দিতে হবে।
– না, সব আমি একাই করবো।
রশীদ সাহেব ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সকাল ১১ টায়। নাজমুল কে সে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তার এখানে নিয়ে আসবেন। যদিও তার বাসায় থাকার মতো জায়গা নেই। অদ্রির বিশাল বাড়ি তো পরেই আছে। নো চিন্তা!
ঢাকায় তার পৌঁছাতে বেশ কম সময় লাগলো কারণ রাস্তায় জ্যাম কম ছিলো।
 প্ল্যাকার্ডে বড় বড় অক্ষরে নাজমুল লিখে এনেছেন। যাতে সহজেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। কতো বছর পর দেখা হচ্ছে কেউ কাউকে প্রথম দেখায় না চেনার কথা।
নাজমুল সাহেব বেশ অস্বস্তি বোধ করছেন। তার পাশের সিটে যে বসেছে তার শরীর দিয়ে খুব বিশ্রী একটা গন্ধ আসছে।গন্ধটা কোনোভাবেই দূর করা যাচ্ছেনা। পারফিউমের বোতল অর্ধেকটা খালি হয়ে গেছে। কেউই তার কথা বিশ্বাস করছেনা। যাকেই বলছে
– শোনেন ভাই, এই লোকটার গায়ের গন্ধটা কি বাজে!
সেই বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিচ্ছে
– আমি তো পাচ্ছিনা।
শেষ পর্যন্ত নিদ্রের সিটে নাজমুল সাহেব বসলেন এবং নিদ্রকে বাবার সিটে বসতে হলো। পাশের লোকটা খুব একটা সুবিধার না। কেমন যেন লাগছে নিদ্রের। লোকটার চাহনিতে, কথায় বাজে কিছু আছে। কিন্তু বাজে জিনিসটা সে ধরতে পারছেনা।
এয়ারপোর্টের বাইরে প্ল্যাকার্ডে নিজের নাম দেখে নাজমুল সাহেব নিদ্রকে বললেন
– দ্যাখ আমার দোস্ত, আমার জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
আসমা জামান বললেন
– রশীদ ছাড়া আর কেউই আসবেনা তোর জন্য।
– ক্যান ক্যান মা?
– তুই বন্ধুদের খোঁজ খবর রাখিস নাকি? রশীদ তো সহজ সরল সোজা মানুষ। তাই তোর জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছে।
– মা এইটা তুমি কিছু বললা?
– যা সঠিক তাই বলেছি।
দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ভেবেই নিদ্র বললো
– তাহলে তোমার দোস্তের কাছে যাওয়া যাক, বাবা।
নাজমুল সাহেব আসমা জামানকে অবাক করে বললেন
– ওর মেয়ের বিয়ের খরচ আমি দিবো অর্ধেকটা।
আসমা জামান বললেন
– হেহ, ব্যাংকে ইঁদুর দৌড়ে কূল কিনারা পাচ্ছেনা সে,আবার অন্যের মেয়ের বিয়ের খরচ দিবে।
নিদ্র দাদীকে অনুনয় করে বললো
– প্লিজ দাদী, চুপ করো না। এখন ঝগড়া করার সময় না।
রশীদ সাহেব চার সিটের গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলেন। গাড়ি খোঁজার ঝামেলাটা অন্ততপক্ষে কমে গেলো।
গাড়ির সিটে হেলান দিতেই নিদ্র ঘুমিয়ে পড়লো।
আসমা জামানও হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলেন। নাজমুল সাহেব আর রশীদ সাহেব বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করলেন।
ঢাকার জ্যামে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই রশীদ সাহেব একটু চিন্তিত ছিলেন। পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেলে সমস্যার শুরু হবে। অদ্রিকে বলাও হয়নি নাজমুলের কথা। মোবাইলের ব্যাটারি লো হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। মাথার মধ্যে টেনশন ঘুরপাক খাচ্ছে। টেনশন গেড়ে বসলো যখন বিশাল লম্বা জ্যামে আটকে গেলেন।
নাজমুল সাহেব ভ্রুকুটি করে বললেন
– লও ঠ্যালা সামলান রশীদ সাহেব।
– ঠ্যালা এখানে আটকে যাওয়া প্রত্যেকটা মানুষই সামলাবে।
নাজমুল সাহেব নিদ্রকে দেখিয়ে বললেন
– আমার বাবাজি কী ঘুমটাই না দিচ্ছে।
– এই বয়সেই তো ঘুমাবে নাকি?
– রশীদ তুই এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছিস ক্যানো সবকিছু?
– কী করবো বল? সেই ১১ টা থেকে দৌঁড়ের উপর আছি। তার উপর এই জ্যাম।
– মনে কর কোনো জ্যাম নেই। আমরা বেশি গল্প করবো বলেই গাড়ি থামিয়েছি।
বেশ জমিয়ে গল্প করার যায় তাই তো?
– মনে করা যেতো যদি আশেপাশে যানবাহনের প্যা পু শোনা না যেতো।
– রশীদ প্লিজ….
আসমা জামান রশীদ সাহেবকে বললেন
– বাবা, আশেপাশে পানের দোকান আছে নাকি?
– হ্যাঁ অবশ্যই।
– যাও বাবা পান নিয়ে আসো তো। যাতে জ্যামটাকে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাটিয়ে দিতে পারি।
রশীদ সাহেব পানের খোঁজে বের হয়ে পড়লেন।
অদ্রির ডান হাতে গরম তেলের ছিটা লেগে ফোসকা পড়ে গেছে। ভুলটা তারই, মাছ গরম তেলে ছাড়ার সময় একটু আস্তে ছাড়তে হয়। কী যেন হলো ওর। জোরে ছাড়ার সাথে সাথেই অনেকটা গরম তেল এসে ডান হাতের কনুই থেকে বেশ খানিকটা নিচে লাগলো। পুরো জায়গাটা পুড়ে কালো হয়ে গেলো আর প্রায় ১ ঘণ্টা পর ফোসকা পড়ে গেলো। রিতা আশেপাশে ছিলো না। অদ্রিরও ইচ্ছা করছিলো না তাকে ডাকতে। একবার বলে যেহেতু ফেলেছে সেহেতু আর না করার উপায় নাই।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে গোসলে ঢুকে অদ্রির ঘুম আসছিলো। দ্রুত গোসল সেরে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
অদ্রি যখন ঘুমালো তখন ঘড়িতে দুপুর  ৩ টা বাজে। রিতা লিস্ট করে, গোসল সেরে ঘুমিয়ে ছিলেন।লিলি বাদে পুরো বাসায় কেউই জেগে ছিলোনা। টেবিলে খাবার গোছানই ছিলো কিন্তু কেউই খায়নি। লিলি দুপুরে খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলো।
৩ টার পরপরই গাড়ি এসে থামলো অদ্রির বাড়ির গেটের সামনে। নাজমুল সাহেব অবাক হয়ে বললেন
– তোর বাড়ি?
– আরেনা আমার এক ভাগ্নীর বাড়ি। পুরো বাসায় মাত্র তিন জন থাকে। এই বাড়িতেই তোদের থাকতে হবে। বিশাল উঠান আছে যখন ইচ্ছা তখন হাঁটাচলা করতে পারবি। এমনকি বাড়ির মধ্যেও পারবি কারণ ও নিজের রুম থেকে সহজে বের হয়না।
– তোর বাড়ি আর তোর ভাগ্নীর বাড়ি কি এক?
– আমার বাসায় তোদের থাকার মতো জায়গা নাই রে।
– তাহলে আমরা হোটেলে উঠি?
নিদ্র গাড়ি থেকে বের হয়ে বললো
– বাবা, এখানে থাকাটাই বেটার।
আসমা জামানও পানের পিক ফেলে বললেন
– রশীদ যা বলে শোন।
নাজমুল সাহেব নিরুপায় হয়ে বললেন
– ঠিক আছে, গণতন্ত্র আমার দিকে রায় না দিলে কী আর করার!
রশীদ সাহেব বললেন
– ব্যাগপত্র বের কর আমি এতোক্ষণে ভিতরে গিয়ে দেখি সব ঠিক আছে কিনা!
রশীদ সাহেব ভিতরে গিয়ে দেখলেন লিলি প্লেটে খাবার বাড়ছে।
– লিলি, অদ্রি কই?
লিলি দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
– আছে হয়তোবা তার রুমে।
– ঘুমুচ্ছে নাকি?
– তা জানে ক্যাডা?
রিতা তার রুম থেকে বের হয়ে লিলিকে বললেন
– প্লেটে খাবার নিয়ে তোমার রুমে যাও।
রশীদ সাহেব কে বললেন
– অদ্রি ঘুমাচ্ছে মনে হয়। জরুরী কিছু হলে ডেকে দিবো?
– না। শুধু বলো নিচের আর দোতলার রুম গুলো তালা দেয়া নাকি?
– না। আজকেই আমি ওগুলো পরিষ্কার করেছি।
নাজমুল সাহেব, আসমা জামান আর নিদ্র তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
রিতা বুঝতে পারলেন মেহমান এসেছে। এখন কিছুই জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবেনা। আপাতত রুমের দরজা খুলে দিতে হবে।
নিচের তলার পাশাপাশি দুটো রুম আসমা জামান আর নাজমুল সাহেব বেছে নিলেন।
নিদ্র কোনটা নিবে জিজ্ঞেস করার আগেই রিতা দেখলেন, ছেলেটা দোতলায় উঠে যাচ্ছে। আর বিশেষ সেই রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলো।
ওই রুমটাতে অদ্রি কাউকেই থাকতে দেয়না। এমনকি রুমটা নিজে পরিষ্কার করে। এই ছেলে কি জানে বিষয়টি? তার নিজের কি ওকে জানানো উচিৎ না?
রশীদ সাহেবকে আড়ালে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– ওই ছেলেটা উপরের ওই রুম কেনো বেছে নিলো? অদ্রি তো ওখানে কাউকেই প্রবেশাধিকার দেয়নি। জানতে পারলে ও খুব রেগে যাবে।
রশীদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন
– মোটেও রাগবে না।
– সত্যি?
– হ্যাঁ, খাবার দাবার আছে কিছু নাকি বাইরে থেকে আনতে হবে?
– বাইরে থেকে আনতে হবে না।
চলবে……!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ❤ ১৪. 

0
মন ফড়িং ❤
১৪.
নাজমুল সাহেব নিদ্রের ঘাড়ে হাত রেখে বললেন
– my dear son, তল্পিতল্পা গুছিয়ে ফেলুন। আগামীকাল আমাদের ফ্লাইট।
– সকালে?
– হ্যাঁ বাবা সকালে। তোমার দাদীর আর আমার তল্পিতল্পা গোছানো প্রায় শেষ।
– বাবা?
– হ্যাঁ বল।
– চলো না একেবারেই ফিরে যাই দেশে।
– নারে। অভ্যস্ত হয়ে গেছি এই কালচারে। নিজেকে বদলাই কীভাবে?
– মানুষের  ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া।
– যাহ, যা যা প্রয়োজন গুছিয়ে ফেল। তারপর রাতে বিশাল ঘুম দিবি।
নাজমুল সাহেব ধীরে ধীরে বারান্দা থেকে নিজের রুমের দিকে এগোলেন। সত্যিই ছেলের কথাটা ভেবে দেখার মতো। এখানে তারও কেমন দম বন্ধ লাগছে আজকাল।
আসমা জামান স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন। মন তার অতীতে যাত্রা করেছে আজ বহুদিন পর।
পুরো বাড়িতে উৎসব শুরু হয়েছে। এক গ্রামের পুরো মানুষ ভীড় জমিয়েছে মাতবর বাড়ির একমাত্র কন্যার বিয়ের সাজ দেখার জন্য। আসমা জামান এর বয়স তখন কেবল ২২ শে পা দিয়েছে। লাল টুকটুকে বেনারসি তে তাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। বর যাত্রী আসলো সেই রাত ১০ টায়। দুপুর থেকে ভারী শাড়ী আর গহনা পড়ে বসে থাকতে থাকতে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে ছোটো মামী তার কান ধরে টেনে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো
– আর কতো ঘুমাবি রে? বর চলে এসেছে রে, উঠ!
বাসর রাতে আসমা জামানকে অবাক করে তার স্বামী ক্ষমা চেয়েছিলেন। কারণ, দুপুরের পরিবর্তে রাতে আসার জন্য। সেই কতো যুগ আগের ঘটনা। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। গ্রামের পথ হলে য়ো কোনো কথাই ছিলো না। আসমা জামান লাজুক স্বরে বলেছিলেন
– আপনি ক্ষমা চাইবেন না।
– কেনো আসু?
স্বামীর আদরের ডাকে সে লাজে রাঙা হয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলেন। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলেছিলেন।
তার স্বামীই তাকে পড়াশোনা ছাড়তে দেননি। কিন্তু মানুষটা তাকে ছেড়ে চলে গেলো। একাকী জীবন পার করে দেয়ার মতো যন্ত্রণা এই পৃথিবীতে নেই। একজন মানুষকে হাশরের মাঠে পাশে পাবার আশায়, জান্নাতে একসাথে থাকার লোভ সামলাতে ক’জন মানুষ ছাড়তে পারে? সে তো পারবেনা।
এক ছেলে নিয়ে জীবন পার করে দিলেন। ছবির মানুষটা হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিদ্রের সাথে মানুষটার বেশ মিল আছে। স্বভাবে কিছুটা, চেহারায় মিল আছে। শুধু মিল নেই একটা বিষয়ে। সেটা হচ্ছে – রসিকতার বিষয়ে। মানুষটা বেশ রসিকতা জানতো। তুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়ে এমন রসিকতা করতেন যে,আসমা জামান হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে যেতেন।
হাসি খুশি মানুষটা দুম করে হাওয়া হয়ে গেলো।
নাজমুল সাহেব পানির বোতল নিয়ে মায়ের রুমে এসে হাজির।
আসমা জামান ছেলেকে আসতে দেখে ছবিটা সরিয়ে ফেললেন। নাজমুল সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে বললেন
– মা, সব গোছানো শেষ?
আসমা জামান বললেন
– আমরা গিয়ে উঠবো কই?
– হোটেলের কি অভাব আছে?
– হোটেলে থাকা আর বাসায় থাকা কতো পার্থক্য তুই জানিস?
– মাটির চুলার রান্না খাবারের তুলনা নেই মা। আচ্ছা চলো একটা ব্যবস্থা হবেনেই। আগে তোমার বাবার বাড়ি গিয়ে দেখি।
– ঘাড় ধরে বের করে দিবে।
– এতো সোজা নাকি? টাকা থাকলে সব হয় মা বুঝছো?
– তা না হয় বুঝলাম। কাল কটায় বের হবো আমরা?
– ৯ টায় হলেই হবে।
– নিদ্রের কী অবস্থা? ও গোছানো শুরু করেছে?
– বলে তো এলাম। আচ্ছা মা তুমি থাকো আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
– হাবিজাবি খাবি না তো আবার?
– না মা। এই একটু ঘুরে আসতে ইচ্ছে হলো।
রশীদ সাহেব বেশ চিন্তায় আছেন। অদ্রি তাকে পুরো বাড়ি এমনকি উঠোন, ফুলের বাগান সবকিছু মেরামত করে নতুনত্ব আনার দায়িত্ব দিয়েছে। তার উপর ১৫-২০ জনের মতো মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সব তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। তাছাড়া আর কেউই তো নেই দায়িত্ব নেবার মতো। তার ছেলেদের এই দায়িত্ব দেয়াই যাবেনা কারণ অদ্রি তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেনা। তাছাড়া টাকা পয়সার ব্যাপারে অদ্রি হিসাব নিজ থেকে চাইবেনা। রশীদ সাহেবের নিজ থেকেই দিতে হবে।
তার প্রথম কাজ হবে রংমিস্ত্রির সাথে কথা বলা। তারপর দিনমজুর দিয়ে পুরো বাড়ির আগাছা কেটে পরিষ্কার করাতে হবে। বাগানের পুরো অবস্থা খারাপ, এটা বেশ ঝামেলায় ফেলবে।
মুদির দোকানে চেনাজানা আছে, লিস্ট ঠিকঠাক মতো করে দিলে আর কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু তার আগে সবকিছুর জন্য মোটামুটি কী পরিমাণ টাকা লাগবে, অদ্রিকে জানাতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় নাজমুলকে জানানো হয়নি।
আলনা থেকে আধা ময়লা ফতুয়া টা গায়ে দিলেন। সেল ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্লেক্সিলডের দোকানের দিকে পা বাড়ালেন।
বিদেশে ফোন দিতে অনেক টাকা লাগে তাই ফ্লেক্সিলডের দোকানে যাওয়া।
লোড দেয়ার পর তিন বার রিং বাজার পরে নাজমুল সাহেব ফোন রিসিভ করলেন।
রশীদ সাহেব বললেন
– কেমন আছিস দোস্ত?
– এই আছি বেশ। তোর কী খবর?
– আর খবর! ছোটো মেয়েটার বিয়ে, জামাই বেশ বড়লোক। বুঝিসই তো।
– বুঝেছি চুষে খাচ্ছে তোকে নাকি খেতে চাচ্ছে?
– আরে তা না। ছেলে শুধু বলেছে মেয়েকে ধুমধামে উঠিয়ে দিলেই হবে।
– শোন প্রথম দিকে এমনই বলে। পরে দেখা যায় বড়লোক ভিক্ষুক।
নাজমুল সাহেব হো হো হো করে হাসতে শুরু করলেন।
হাসি থামিয়ে বললেন
– এই বড়লোক ভিক্ষুক তুই খুঁজে বের করেছিস নাকি তোর মেয়ে?
– মেয়ে।
– দাওয়াত দেয়ার জন্যই তো ফোন দিয়েছিস?
– হ্যাঁ, তোর পরিবারের সবাইকে দাওয়াত রইলো।
– আমরা আগামীকালের ফ্লাইটে দেশে আসছি। থাকার কোনো জায়গা নেই।
– ও নিয়ে চিন্তা করিস না। আগে তুই আয় তারপর দেখা যাবে।
– তোর মেয়েটা কি তোর মতোই আবুল দেখতে হয়েছে নাকি ভাবীর মতো সুন্দরী?
রশীদ সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন
– মোটেও আমি আবুলের মতোন দেখতে না।
– রিপা কি মিথ্যা বলতো?
– অতীত তুলিস না। বড্ড ব্যথা লাগে রে ভাই।
– আচ্ছা যা তুললাম না। তো আগামীকাল ফিক্সড?
– ইনশাআল্লাহ। তয় রাখি এখন বেশি টাকা কেটে যাচ্ছে।
– আচ্ছা।
অদ্রি জানালা দিয়ে নিস্তব্ধ সোনালী দিনের সৌন্দর্য দেখে রিতাকে বললো
– প্রকৃতির মতো কেউ সুন্দর হতে পারে কখনো?
অদ্রি তাকে এই টাইপের প্রশ্ন করতে পারে ভাবতেও পারেননি। আমতা আমতা করে বললেন
– আল্লাহ তো তার চেয়েও সুন্দর।
– আল্লাহ তায়ালা তো সবচেয়ে বেশি সুন্দর। তার সাথে কোনো কিছুরই তুলনা হয়না।
– হ্যাঁ, আল্লাহ মাফ করো। ভুলে কথাটা বলছি।
– কোনো মানুষ হতে পারে প্রকৃতির মতো সুন্দর?
– মনে হয়না।আর হলেও আমি চোখে দেখিনি।
– আমি দেখেছি জানেন। খুব কাছ থেকে দেখেছি কিন্তু ছুঁয়ে দেখার সাহস হয়নি। খুব কাছ থেকে পেয়েও স্পর্শ করার অধিকার আমার ছিলোনা।
চলবে……!
© Maria Kabir

অন্যরকম_বিয়ে শেষ_অংশ

1

অন্যরকম_বিয়ে শেষ_অংশ

এই মেয়ে রাতে আমার ঘরে কি করতে এসেছে,,,

– তুমি এখানে কেন ?

– কেন আবার ? সারাজীবন তোমার বোনের ঘরে থাকব নাকি,,, ??

আমি ওর কথা বাদ দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলাম।মিলিকে কিছু বলে লাভ নাই।বাবা মা সবাই এখন ওর পক্ষে চলে গেছে।

আমি কিছু বললেই বলে,

– বউ হয়না তোর,,

কেউ আমাকে একটুও বোঝার চেষ্টা করেনা।

কিছুক্ষন যেতেই মিলি সাজতে বসে গেল,, আমি তাই দেখে বললাম,,,

– ঘুমানোর আগে সেজে কি করো ?

মিলি ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে দিতে বলল,,,

– পরে বুঝবা,,

ওর সাজগোজ শেষ হলে ও আমার কাছে এসে বলল,,,

– কেমন লাগছে আমাকে ?

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

– এমনিতেই তুমি এত সুন্দর তাও সাজো কেন ?

– তোমার জন্যই সাজলাম,,

কি করো তুমি ?

এত সুন্দর বউ থাকতে কষ্ট করে গল্প লিখে মেয়ে ইম্প্রেস করে কি করবা,,,,

– আমি মোটেও মেয়েদের ইম্প্রেস করার জন্য লিখিনা,,,

– জানি তুমি কেমন,,,জলদি শুতে আসো,,,
লাইট জালানো থাকলে ঘুম আসেনা।।।

মিলি গিয়ে শুয়ে পরলো।মিলির কথা শুনে মনে হলো ও আমার বউ হয়ে গেছে,,পুরোপুরী সিরিয়াস রকমের বউ।

ও শুয়ে পড়ার পর আমি এখনো বিছানার দিকে যাইনি।তবে আমার এখান থেকে ওর সুন্দর মুখ টা ঠিকই দেখা যাচ্ছে।

এই মেয়ের সাথে আজ রাতে থাকলে আমি নির্ঘাত এই মেয়ের প্রেমে পরে যাবো।

ঘরের বাইরে থাকাও যাবেনা,,বাবা দেখলে আরেক প্রবলেম।

এক প্রকার বাধ্য হয়ে বিছানার দিকে গেলাম।
মিলিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে কি সুন্দরই না লাগছে।

ভাবলাম ওর কপালে একটা চুমু খাব কিনা।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি পাশে মিলি নেই।মাকে গিয়ে মিলির কথা জিগ্যেস করতেই মা বলল,,,

– মিলি বাসায় নেই।

– বাসায় নেই মানে কোথায় গেছে।

– মিলি একটু ওর বাবার বাসায় গেছে।

– কিন্তু ও তো আমাকে কিছু বলে যায়নি।

– তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই আর তোকে ডাকে নি।আর ও তো একটু পরে এসেই পরবে।

– বাসায় মিলি নেই বাসাটাই কেমন যানি খালি খালি লাগছে,,,তাই সকালের নাস্তা না করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।


রাতে বাসায় এসে দেখি মিলি চুলে তেল দিচ্ছে।আমাকে দেখেই বলল,,,

– আমাকে নাকি সকালে খুঁজছ ?

– হম,যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেলেই পারতা।

– তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাক দেই নি।

– এর পর থেকে যেখানে যাবে আমাকে বলে যাবে।

– আচ্ছা,,,

মাঝ রাতে যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখি মিলি আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। অনেক চেষ্টা করেও ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।

কি আর করা ওই ভাবেই কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম আর মাঝে মাঝে মিলিকে দেখছিলাম।আর মনে মনে ভাবছিলাম মেয়েটা এত সুন্দর কেন,,,

ও আমার এত কাছে ছিল যে, ওর নিশ্বাস আমার মুখের উপর পরছিল।আমার রুম দোতলায় হওয়ায় ঘরের জানালা দিয়ে ভালই
বাতাস আসে। বাতাসে ওর মাথার চুল গুলো উড়ছিল।কিছু চুল এসে ওর কপালের উপর পরেছিলো, আর ওগুলা আমার মুখেও লাগছিল। তাই আমি হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে
দিতে লাগলাম।চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে মিলির দিকে তাকাতেই দেখি,,মিলির চোখ খোলা।

আমাকে দেখে মিলি হাসতে হাসতে বলল,,,

– কি করো ?

– না কিছুনা,,,,

– আচ্ছা,,, ঘুমাও তাহলে,,,

– তোমার থেকে একটা কথা জানার খুব ইচ্ছা,,,

– কি কথা বলো,,,

– আমি কি সত্যিই আগে কখনো তোমাকে বিয়ে করেছিলাম।

– হঠাত্ এই কথা কেন।

– সেদিন বাবাকে যে বিয়ের কাগজ দেখালে সেটাতে আমার সাইন ছিল।কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে আমি তো তোমাকে বিয়ে করিনি।তাহলে এই সাইনটা কাগজে কেমনে আসলো,,,

– আমাকে তৃতীয় বার যে হেল্প করছিলা সেটা তোমার মনে আছে ?

– হম, খুব মনে আছে।সেই হেল্প করে পুলিশের দৌড়ানি পযন্ত খেয়েছি।

আমার মনে পরে গেল সেদিনের কথা,,,,

সেদিন সকালে ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখনেই মিলির নাম্বার থেকে কল আসলো কিন্তু রিসিভ করিনি।কারন এই কল রিসিভ করলেই আবার হয়তো কোন বিপদে পরব।অনেক বার কল আসলো তাও আমি রিসিভ করলাম না।

অবশেষে একটা টেক্সট আসলো,,,,

“আমি খুব বিপদে পরেছি ••••••• এই ঠিকানাই আপনি এখনেই চলে আসুন প্লিজ”

এই টেক্সট দেখে আর ঠিক থাকতে পারলাম না।চলে গেলাম মিলির দেওয়া ঠিকানায়।গিয়ে দেখি এটা একটা কাজী অফিস।

আমাকে দেখেই মিলি বলল,,,

– আপনি এসেছেন,,,

– কি সমস্যা বলো।

– আমার বান্ধবীর বিয়ে এই শুক্রবারে।কিন্তু সে একটা ছেলে কে খুব ভালবাসে।আর ছেলেটাও তাকে খুব ভালবাসে।ছেলে আর মেয়ে দুজনেই বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে।

– এখন আমি কি করব ?

– একটু পরেই ওদের বিয়ে হবে।আর এই বিয়েতে আপনাকে সাক্ষী হতে হবে।

সেদিন আমি ঐ বিয়ের সাক্ষী হতে চাইনি।কিন্তু বাধ্য হয়ে সাক্ষী হতে হল আমাকে।

বিয়ে শেষে জানতে পারলাম মেয়েটার বাবা নাকি পুলিশ।তার পর তো বুঝতেই পারছেন অবস্থা কি রকম হতে পারে,,,,

হম আমার সব মনে আছে,,,

– সেদিন তুমি কয়টা কাগজে সাইন দিয়েছিলে ?

– দুইটা কাগজে।

– সেই দুইটা কাগজের মধ্যে একটা হল তোমার বাবাকে যেটা দেখিয়েছি ওটা।এই সব কিছুই আমি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম।

– মিলির কথা শুনে খাট ভেঙে নিচে পরে যাওয়ার মত অবস্থা হল আমার।এই মেয়ে বলে কি,,,,

যাই হোক এমনটা না করলেও পারতে।

– এটা তো কিছুই না।তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য এর থেকেও বেশি কিছু আমি করতে পারি।

– এতো ভালবাসো আমায় ?

– হম,অনেক ভালবাসি তোমায়।

এবার তাহলে কাছে এসো,,,,,

– আমি মেয়েটার কাছে না গিয়ে পারলাম না,, কিসের এত আকর্ষণ বুঝলাম না।

অবশেষে মেয়েটার বুদ্ধি এবং ভালোবাসা দুটোর কাছেই আমি পরাজিত হলাম।

#সমাপ্ত

(আজকে গল্পটা শেষ করে দিলাম।গল্পটা কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন। )

লেখা ||Tuhin Ahamed

অন্যরকম_বিয়ে চতুর্থ_অংশ

0

অন্যরকম_বিয়ে চতুর্থ_অংশ

বিয়ের আগে আমাদের দুই ফ্যামিলির যেখানে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল সেটা এখন প্রায় শত্রুতায় পরিণত হল।মুখ দেখাদেখি বন্ধ।কথা বলা বন্ধ।

মিলির এ নিয়ে কোন অনুশোচনা ছিল না।বিয়ের পর ওর সব কাপড় চোপড় আমাদের বাড়িতে চলে এল,, বাড়ি বলতে আমার ঘরে। ওর সব কিছু আমার ঘরে থাকলেও ওর নিজের জায়গা হত না আমার ঘরে।

আমি বাসায় থাকতে ও আমার ঘরে ঢুকত না, কথাও কম বলত প্রয়োজন ছাড়া কথা হত না।তবে দুই দিন যেতেই ওকে মেরে ফেলার প্লান বাদ দিয়ে,,,ওকে ইগ্নোর করা শুরু করলাম।

বাসার কেউ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করেনা,
বাহিরের কাউকে বলবো তারও কোন উপায় ছিল না।এ অবস্থায় মিলিকে মেরে ফেলা ঠিক হবেনা।তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম।

আমার সাথে মিলির খুব অল্পই কথা হতো।সেটাও খুব প্রয়োজনীয়।ও আমাকে এখন তুমি করে বলা শুরু করছে।

কি অদ্ভুত, যে মেয়েটা দুদিন আগে ভাইয়া আর আপনি বলত সে আজ তুমি বলে,,,নাম ধরে ডাকে,,,, যদিও হ্যাজবেন্ডকে কেউ ভাইয়া
বলেনা।তবুও ব্যাপার টা কেমন জানি।

ওর সারাদিন কোন কাজ থাকেনা,,সেজে গুজে থাকা ছাড়া।ইদানিং শাড়ি পরাও শুরু করেছে।

গতকাল ওকে বললাম,,,,

– ব্যাপার কি শাড়ি পরো কেন ?

– বাড়ির বউ শাড়ি পরব না,,

– ও আচ্ছা,,

– কেন,,,আমি শাড়ি পরলে ভাল লাগেনা ?

– না খুব বাজে লাগে,,
.
তবে মিলিকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর লাগত।শাড়িতে বেশ মানিয়ে যেত ওকে।

মেয়েটা আমাকে সরাসরি ভালবাসি বললে কিছু একটা ভেবে দেখতাম তাই বলে এ ভাবে,,,,

মিলিকে কিছু একটা বললেই সেটা বাবা মায়ের কানে চলে যেত। এই যে শাড়িতে ওকে বাজে বলেছি এটাও মায়ের কানে চলে গেলো।

খেতে বসে মা আমাকে কথা শুনিয়ে দিল।
বললো,,,

– প্রেম করে বিয়ে করেছিস,এখন আবার এমন করিস কেন ?

– কি করেছি ?

– মিলির সাথে খারাপ ব্যাবহার করিস কেন,,এত ভাল একটা মেয়ে।আমাদের কোন কথাই ফেলেনা।আর খারাপ ব্যাবহার করবিনা।

– আমি কারোর সাথেই খারাপ ব্যাবহার করিনা,,
.
আমার কোন কথাই মা বাবা বুঝত না।
যে কোন কিছু হলেই ভাবত সেটা আমার দোষ।
.
সমস্যা শুধু বাসাতে তা নয় ক্যাম্পাসেও হলো।
যখন সব বন্ধু বান্ধবীরা জানলো বিয়ে করেছি,

সবাই আমার উপর মন খারাপ করলো।অনেক কষ্টে ওদের বোঝালাম সব হুট করে হয়েছে।সবাই মিলিকে দেখতে চাইলো।

এটা অবশ্য খুব একটা প্রবলেমের ছিলনা।
মিলির কলেজ আর আমার ভার্সিটি প্রায় এক সাথেই ছিল

তাই একদিন মিলিকে ডাক দিয়ে দেখিয়ে দিলাম।সবাই মিলিকে দেখে মিলির খুব প্রশংসা করল।এত মিষ্টি মেয়ে তুই কিভাবে বিয়ে করলি ?তোর ভাগ্য ভাল। ওদের কথা শুনে মনে হয়েছিল ওরা কেউ আমার বন্ধু না সব মিলির বন্ধু।

এরপর থেকে যত দিন যেতে লাগল মিলি আমার উপরে অধিকার খাটানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

সেদিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম, হুট করেই দেখি মিলি আমার রুমে এলো।

– কি ব্যাপার ? অনুমতি ছাড়া আমার ঘরে আসলে কেন ?

– কিসের অনুমতি,,,,আমারও ঘর এটা,,,,

– কি কারণে ঢুকছ ?

– কলেজ যাবো,,

– তো যাও,, কলেজে এ পড়ো,, সাথে করে যেতে হবে নাকি,,

– বাবা বলছে তোমায়,আমাকে কলেজে রেখে আসতে,,

– আমি পারবো না,, আর তুমি আপনি করে বলবা আমাকে,,

– কিসের আপনি ? আর পারবানা কেন ?

– তোমাকে কলেজে নিয়ে গেলে বাইকের যে তেল ফুরাবে সেই তেলের টাকা কে দিবে ?

– আজব তো,, বিয়ে করছ।আমার পিছনে খরচ করবা না তো কার পেছনে করবা ?

বিয়ের আগে হেল্প চাইলে তো ঠিকি করতা,,,,,
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঘরের বাহির থেকে বাবা বলতেছে,,,,

– চিৎকার হয় কিসের ? যা কলেজ নিয়ে যা,,
.
বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস তখনো হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কুমুকে নিয়ে বের হতে হলো।

একবার ভাবলাম মেয়েটাকে নিয়ে ট্রাকের নিচে ফেলে দেই,, পরে মনে হলো এইভাবে তো নিজেও মরবো। না এইভাবে হবে না।

মিলিকে বাইকে নিয়ে আরেক অসুবিধা এই মেয়ে এত চেপে বসে কেন,,,,

একবার বলেই ফেললাম,,,,

– মিলি এভাবে কেন বসো ?

– কিভাবে ?

– আগে যে ভাবে বসতে সেভাবে বসো,,,,

– আগে তো আমরা স্বামী স্ত্রী ছিলাম না তাইনা ?
এর পর আমি আর কিছু বললাম না। খুব দ্রুত মিলিকে কলেজে পৌছে দিলাম।

কিন্তু, সেখানে গিয়েও আরেক প্রবলেম। বাইক ঘুরিয়ে ফিরে আসার সময় মিলি বলল,,,,

– টাকা দাও কিছু ?

– কেন?

– কেন আবার ? আমার হাত খরচ লাগবেনা ?

– আমার কাছে চাও কেন ?

– উহু তুমি ছাড়া কে দিবে ? কার কাছে চাইবো,,
.
কলেজের সামনে কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিলনা।তাই বাধ্য হয়ে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিতে হল।
.
মিলিকে কলেজ থেকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল অবশ্য কিন্তু আমি আর গেলাম না।

সেদিন সারাদিনে বাসায় ও ফিরলাম না।মিলি দুবার ফোন করেছিল ফোন ও ধরিনি।রাত্রে বাসায় এসে শুনি অনেক কিছু হয়েছে।মিলির বাসা থেকে সব মেনে নিয়েছে।

একটাই মেয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না।আমার অবশ্য এ বিষয়ে কোন ইন্ট্রারেস্ট ছিল না।

তবে সেদিনের পর থেকে মিলির খবর দারী বেড়ে গেল।এটা কেন করি ? ওটা কেন করি ?
ঠিকমত খাচ্ছিনা কেন ? এই কাপড়ে ভাল লাগেনা।ওখানে যাবানা ইত্যাদি।

ওর এসব কাজ কর্মের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতেও পারতাম না। বাবা মা দুজনেই ওর পক্ষে ছিল।আমি শুধু সব মুখ বুজে সহ্য করে নিতাম।

তবে আজ মিলি অতিরিক্তই করে ফেলল।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে
পিসিতে বসেছিলাম। ইদানিং কিচ্ছু লেখা হয়না মন মেজাজের অবস্থা চূড়ান্ত রকমের খারাপ।

কিছুক্ষন যেতেই দেখি মিলির প্রবেশ আমার ঘরে।

এই মেয়ে রাতে আমার ঘরে কি করতে এসেছে,,,

-তুমি এখানে কেন ?

-কেন আবার ? সারাজীবন তোমার বোনের ঘরে থাকব নাকি,,,,, ??

চলবে..

লেখা ||Tuhin Ahamed

অন্যরকম_বিয়ে তৃতীয়_অংশ

0

অন্যরকম_বিয়ে তৃতীয়_অংশ

– ভাইয়া আমার একটা হেল্প লাগবে ?

– তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমারে হেল্প করব।

– কেন ভাইয়া ? আমি কি কিছু করেছি ?

– সেদিনের কথা কি ভূলে গেছ ?

– আপনার জন্মদিন,আর আমি আপনাকে গিফ্ট দিব না।

– তাই বলে আমার টাকা দিয়ে আমাকেই গিফ্ট দিবা ?

– ভাইয়া আমি মাএ কলেজে পড়ি আমার তো কোন ইনকাম সোস নাই তাই আপনার টাকা দিয়ে আপনাকেই দিলাম।হিসেবের খাতায় লিখে রাখুন পড়ে না হয় শোধ করে দিব।

আর,আপনার টাকা দিয়ে কিনলেই কি আর আমার টাকা দিয়ে কিনলেই কি ঘুরে ফিরে তো এক কথাই।

– কি বললা বুঝলাম না।

– কিছুনা ভাইয়া।

– ওকে,পথ থেকে সরে দাঁড়াও আমি এখন যাবো,,,

– প্লিজ ভাইয়া,আপনি এই হেল্প না করলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে,,,

আজকে কলেজে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা আছে। কিন্তু, কোন রিক্সা পাচ্ছি না কলেজে যাওয়ার জন্য।পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে আর মাএ ‘দশ’ মিনিট বাকি আছে,,,

– ওকে,বাইকে উঠে বসো,,,



– ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনার জন্য আজকে পরীক্ষাটা দিতে পারবো।

– ওকে, আমি তাহলে এখন যাই,,,,

এই মেয়ে’রে হেল্প করার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না।নেহাত পরীক্ষা বলে হেল্পটা করেছিলাম সেদিন।

এর কিছুদিন পরেই সব বন্ধুরা মিলে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিক তখনেই কোথা থেকে এক মেয়ে আমার সামনে এসে বলল,,,

– কেমন আছেন দুলাভাই ?

এই মেয়ের কথা শুনে আমি সহ আমার বন্ধুরাও টাশকি খেল,,,

– আমি তো আপনাকে চিনি না।মনে হচ্ছে আজকেই আপনাকে প্রথম দেখলাম।তাহলে আমি আপনার দুলাভাই হলাম কেমনে ?

– হ্যাঁ,ভাইয়া আপনি আমাকে চিনেন না কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।

– কিভাবে ?

– সেদিন আপনি মিলিকে নিয়ে কলেজে এসেছিলেন তখন আপনাকে দেখেছি।আপনি চলে যাওয়ার পরে মিলিকে জিগ্যেস করছিলাম এই ভাইয়া টা কে ? দেখতে খুব হ্যান্ডসাম ?

তখন মিলি বলল এটা হচ্ছে তোদের দুলাভাই।একদম নজর দিবি না এই দিকে।

এই মেয়ের কথা শুনে আমার বন্ধু গুলা আমারে অবিশ্বাস করতে শুরু করল।ওদের কে সত্যি টা বুঝাতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।

থাক আজকে আর তিন নাম্বার হেল্প এর কথা বলব না।মিলির মামার বাড়িতে এসে পরেছি।ওকে নিয়ে এখনেই বাসায় যেতে হবে বাবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেছে।

মিলিকে তার মামার বাসা থেকে বের করে সকালের কথাটা জিজ্ঞেস করতেই ও চোখে পানি এনে বলল,,,

– এটা না বললে বাবা অন্য ছেলের সাথে জোর করে আমার বিয়ে দিত তাই এমন বলেছি,,

– তাই বলে আমার কথায় বলতে হল,,,আর কাউকে পেলে না।

– তখন কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।তাই আপনার নামটাই বলে দিছি।

– আচ্ছা,ঠিকাছে।এখন আমার বাবার সামনে গিয়ে সব সত্য খুলে বলবা,,,তোমার জন্য বাবা আমাকে ভূল বুঝতেছে।

– আচ্ছা,,,আমি বাসায় গিয়ে সব সত্য খুলে বলব।আর আপনার কোন দোষ নেই এটাও বলব।

– মিলির কথা শুনে একটু স্বস্তি এল।এবার আর বাবা আমাকে অবিশ্বাস করতে পারবে না।


মিলিকে আমার বাবার সামনে নিয়ে যেতেই বাবা মিলিকে জিজ্ঞেস করলো কয় মাস হয়েছ বিয়ের ?

– দুই মাস,,

– বিয়ের কাগজ আছে ?

– হ্যাঁ,আছে,,

– দেখাও তো বিয়ের কাগজ টা।

যাহ্ বাবা মেয়েটা দেখি আমাকে আবার ফাঁসিয়ে দিল,এই মেয়ে তো খুব জটিল জিনিস।


কিন্তু এইবার কোথায় যাবে।বাবাকে বিয়ের কাগজ কেমনে দেখাবে।এইবার তাকে ধরা পরতেই হবে।আমাকে ফাঁসানোর মজা এবার টের পাবে।

– এই নেন আঙ্কেল বিয়ের কাগজ।

মিলি বাবার হাতে কাগজটা দিতেই আমি বাবাকে বললাম বাবা এইসব জাল কাগজ।
আমি ওরে বিয়েই করিনি।

কিন্তু বাবা কাগজটা ভাল করে দেখে বললেন,,,

– এ দিকে আয় তুই।

– আমি ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে গেলাম।

বাবা আমার হাতে কাগজটা দিয়ে বলল মেনে নিলাম কাগজটা জাল।

কিন্তু তোর করা সাইনটাও কি জাল ?

– আমি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখি এটা তো আমার দেওয়া সাইন।

কিন্তু, এটা কিভাবে সম্ভব আমি তো বিয়েই করিনি।তাহলে আমার হাতের সাইনটা এখানে আসলো কিভাবে।ব্যাপারটা আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মতো হয়ে গেল।

নিশ্চয়ই মেয়েটা এখানেও কিছু একটা করেছে। আমার এত্ত টা রাগ উঠলো মনে হল এই মেয়েরে মেরেই ফেলি।

কিন্তু বাবা কি বুঝল কে জানে,,

আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলল,,,

– হারামজাদা দাড়া আজকেই তোর ব্যাবস্থা করতেছি আমি,,

ততক্ষনাৎ বাবা কাজী ডাকলেন আমাদের বিয়ে
পড়ানোর জন্য। বাবা এসব কোর্ট ম্যারেজ এ বিশ্বাসী নন

কিন্তু আমি তো কোর্ট ম্যারেজেই করিনি।আমি অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে বোঝাতে পারলাম
না।

এই বিয়েটা যে আমি করিনি

আর মিলির বাবার প্রতিও আমার বাবার একটা জেদ চেপে গিয়েছিল তাই উনি বিয়ে দিয়েই ছাড়লেন।

আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।মিলির উপর এত রাগ উঠল,, আমার মনে হলো ওকে আমি
একলা পেলেই মেরে ফেলবো। ভেবেছিলাম এ কাজটা প্রথম রাত্রেই করবো।আমার কাছে শুতে এলেই করবো।

কিন্তু মিলি আর এলোনা।মিলি ওই রাতে আমার ছোট বোনের রুমেই রইলো।

আমি শুধু ভাবছিলাম কদিন ওই রুমে থাকবে এটাই দেখবো।ওকে মারার জন্য একটা সুযোগ এই যথেষ্ট।

কিছুতেই ঘুম আসছিল না রাতে।বার বার শুধু ঐ কাগজটার কথাই মনে হচ্ছিল।আমি মানি আমার ভূলে যাওয়ার একটা রোগ আছে তাই বলে এত বড় একটা বিষয় ভূলে যাব।না এ হতেই পারে না।

নিশ্চয়ই এখানে কিছু একটা রহস্য আছে।আর সেটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।

চলবে…..

#লেখা || Tuhin Ahamed