Friday, August 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2338



চুক্তির বউ ৫ম পর্ব

0

চুক্তির বউ ৫ম পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারায় মেঘের উপরে গিয়ে পড়ে।এদিকে মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে।মেঘের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ।আজ যেন মেঘকে নতুন রূপে দেখছে।শ্রাবণ মেঘের অনেকটা কাছে চলে যায়।মেঘের নিঃশ্বাসের প্রতিটা শব্দ শ্রাবণের বুকে এসে লাগছে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা শ্রাবণ কে ছুঁয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই শ্রাবণের চুক্তির কথা মনে পড়ে।উঠতে গেলে আবার বিছানায় পড়ে যায়।
শ্রাবণ ভাবে মেঘ ঘুমিয়ে পড়লো তাহলে টান লাগলো কোথায়?তখনই ওর চোখ পড়ে নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে।শ্রাবণের হাতের ঘড়ি মেঘের শাড়ির আঁচলের সাথে আটকে আছে।এরজন্যই শ্রাবণ যখন উঠতে যাচ্ছিলো শাড়ির টান লেগে পড়ে যায়।ঘড়ি থেকে আচলটা সরিয়ে মেঘের থেকে দূরে সরে যায়।মনে মনে বলে….
তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মেঘ কি করবো বলো আমি যে নিরুপায়।যদি এই চুক্তিটা আমাদের মাঝে না আসতো তাহলে এইভাবে তোমাকে কষ্ট পেতে দিতাম না।জানিনা কোনোদিন সত্যি টা তোমাকে বলতে পারবো কি না।শুধু এইটুকু বলতে পারি এই চুক্তির মাধ্যমেই তোমাকে এক বছরের জন্য হলেও নিজের বউ হিসেবে পেয়েছি এটাই অনেক।এই চুক্তিটা না থাকলে আজ তুমি আমার কাছে থাকতে না।এক বছর মেঘ মাত্র এক বছর।কিন্তু এখন এই বছর আমার কাছে অনেক কিছু।
কথাগুলো বলার সময় শ্রাবণের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে।চোখের জল আড়াল করতে রুম থেকে বেড়িয়ে রুমের পাশে বেলকুনিতে চলে যায়।
এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়।শ্রাবণ মেঘকে অনেক টা সময় দেওয়ার চেষ্টা করে যদিও অফিসের কাজ সামলে খুব একটা সময় পায় না তবুও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে না।
সকাল বেলা শ্রাবণ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি সোফায় বসে গল্প করছিলেন।এমন সময় মেঘের ফোনে একটা কল আসে।মেঘ ওর শ্বাশুড়ি মাকে বলে যে বাইরে একটা কাজ আছে যেতে হবে।মেঘের শ্বাশুড়ি খুব ভালো একজন মানুষ ওনি বাধা দেন নি মেঘকে।মেঘ ফুলিকে মায়ের খেয়াল রাখতে বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।
একটুপর একটা টেক্সিতে করে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।মেঘ যখন রেস্টুরেন্ট পৌঁছায় তখন দেখে পিয়ালি ওর জন্য অপেক্ষা করছে।তারপর কফি অর্ডার করে মেঘ চেয়ারে বসে।
মেঘঃহ্যা পিয়ালি বল কি জন্য ডেকেছিস?
পিয়ালিঃমেঘ তুই কেমন আছিস?
মেঘঃভালো।(একটা চাপা হাসি দিয়ে)
পিয়ালিঃস্যারের সাথে বিয়ের পর তো তোর সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি।আন্টি মারা গেলেন তাকেও গিয়ে দেখতে পারলাম না।সরি রে।
মেঘঃদুর তুই সরি কেনো বলছিস?সব আমার কপাল রে।
পিয়ালিঃসত্যি কি তুই ভালো আছিস?
মেঘঃভালো না থাকার কি আছে?এতো বড়লোক একজন মানুষ এর সাথে আমার বিয়ে হলো ভালো না থেকে উপায় আছে।
পিয়ালিঃতোর কথাবার্তা এমন লাগছে কেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা আড়াল করছিস?
মেঘঃছাড় তো এসব কথা বল কেনো ডেকেছিস?
পিয়ালিঃতুই কি কিছু জানিস না?
মেঘঃকোন ব্যাপারে?
পিয়ালিঃস্যার মানে তোর স্বামী।
মেঘঃকেনো কি হয়েছে?
পিয়ালিঃঅফিসে তোর পদে একজন কে জব দেওয়া হয়েছে।
মেঘঃজানি সে একজন মেয়ে।
পিয়ালিঃজানিস তাহলে চুপ করে আছিস কেনো?
মেঘঃমানে…….
পিয়ালিঃস্যার তিনমাসের জন্য রিদিকে নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছেন।
মেঘঃতো।
পিয়ালিঃমেঘ কি হয়েছে তোর।ওনি তোর স্বামী আর তুই ওনাকে আটকাবি না।কি দরকার এসব ডিল করার আর তিনমাসের জন্য অন্য দেশে যাওয়ার।আর ওই মেয়েটাকেই কেনো নিয়ে যাবেন।অফিসে তো অন্য স্টাফেরা আছে।
মেঘঃঅফিসের কাজে যাবে এতে তুই এতো ভাবছিস কেনো?
পিয়ালিঃমেঘ তুই তো এতো বোকা না।ওই মেয়েটা সারাক্ষণ স্যারের মাথায় চড়ে থাকে।স্যার যেখানে যাবেন ওই রিদি মেয়েটাও সেখানে যাবে।
মেঘঃপিয়ালি এতে এতো ভাবার কি আছে।অফিসের কাজেই তো যাচ্ছে।
পিয়ালিঃমেঘ বাচ্চাদের মতো বিহেভ করিস না।কেনো বুঝেও না বুঝার ভান করছিস?তোর স্বামী তোকে না বলে অফিসের কাজে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা যাবে আর তুই একা একা থাকবি।
মেঘঃপিয়ালি প্লিজ এসব কথা নাইবা বললি ভালো লাগছে না আমার এইগুলো শুনতে অন্য কিছু বল।
পিয়ালিঃওহহ সরি।একটা কথা মেঘ তুই কি শাণের জন্য স্যারকে দূরে সরিয়ে রাখছিস?
মেঘঃপিয়ালি শাণ কে এর মাঝে টেনে আনছিস কেনো?
পিয়ালিঃমেঘ তুই যদি ভেবে থাকিস শাণের জন্য স্যারকে অবহেলা করবি তাহলে জেনে রাখ তুই কিন্তু তোর জীবনের সব চাইতে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছিস।
মেঘঃভুল….একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেঘ।ভুল তো সেদিন করেছি যেদিন শ্রাবণ মাহমুদের বউ হয়ে ওই বাড়িতে পা রেখেছি।
পিয়ালিঃমেঘ……..একটা ধমক দিয়ে।
মেঘঃতুই স্যারের জন্য আমাকে ধমকালি।
পিয়ালিঃসরি রে।মেঘ তুই ভালো করেই জানিস শাণ একটা প্রতারক।আর তুই শাণের জন্য স্যারকে দূরে কেনোই বা রাখবি বল।
মেঘঃশাণ প্রতারক না পিয়ালি।
পিয়ালিঃমিথ্যে ভালোবাসার মায়াজালে আটকা পড়েছিস তুই তাই বুঝতে পারছিস না কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।তবে হ্যা যখন বুঝতে পারবি তখন যেন খুব বেশি দেরী না হয় মেঘ।
মেঘঃশাণকে নিয়ে আর একটা কথাও আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই না।আর হ্যা ওনি আমার স্বামী।আমি ওনাকে নিয়ে কি ভাববো না ভাববো সেটা আমি জানি।আর আমি এটাও জানি আমাকে ঠিক কি করতে হবে।মাত্র তো তিনমাস তারপরেই সব শেষ।
পিয়ালিঃমানে কি উল্টা পাল্টা বলছিস?
মেঘঃজাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
এইবলে মেঘ উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।পিয়ালি পিছন থেকে শুধু একটা কথাই বলে।
পিয়ালিঃঅতীতে যে ভুলটা করেছিলি সেই ভুল আর করিস না মেঘ।সব হারাবি তুই।
মেঘ পিয়ালির কথাটা শুনে অবাক হয়ে পিছনে তাকায়।তারপর বলে….
মেঘঃহারানোর মতো নেই কিছু যা ছিলো অনেক আগেই হারিয়েছি নতুন করে কিছু হারাবে না আমার।আর অতীতে ভুল আমি করিনি।
এইবলে মেঘ সামনের দিকে হাটা শুরু করে।তারপর বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
বাসায় এসে বার বার পিয়ালির কথাগুলো মনে পড়তে থাকে।ভুলে যেতে চাইলেও কানে বাজে একটা কথা অতীতের ভুলটা করিস না মেঘ।
মেঘ রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আমি তো কোন ভুল করিনি তাহলে কেনো আমাকে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে।কেনো আমার সাথেই এমন হচ্ছে।সব ভুলেই তো ভালো ছিলাম আমি কেনো স্যার চুক্তিটা মাঝখানে নিয়ে এলো।কেনো এই চুক্তি দিয়েই আবার আমার মনে শাণের দেওয়া আঘাত গুলো ফিরিয়ে দিলো।কেনো কেনো কেনো?
মেঘের কান্না যেন থামছেই না।
রাতে শ্রাবণ বাসায় ফিরে ব্যাগ প্যাকিং করা শুরু করে।মেঘ খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসে।এসে দেখে শ্রাবণ ব্যাগ গুছাচ্ছে।
মেঘঃআমি হেল্প করবো।
শ্রাবণঃনা আমি নিজেই করে নিবো।
মেঘঃআচ্ছা।মা অপেক্ষা করছে খাবার টেবিলে।
শ্রাবণঃতুমি যাও আমি আসছি।
মেঘ যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শ্রাবণ আবার মেঘকে ডাকে…….
শ্রাবণঃমেঘ শোণ।
মেঘ থেমে যায়……
মেঘঃজ্বি বলেন।
শ্রাবণঃকোথায় যাচ্ছি ব্যাগ কেনো গুছাচ্ছি জিজ্ঞেস করলে না?
মেঘ অনেকটা অবাক হয় শ্রাবণের এমন কথায় তারপর বলে……..
মেঘঃকারো পারসোনাল ব্যাপারে জানার তেমন ইচ্ছা বা আগ্রহ কিছুই আমার নেই।
শ্রাবণঃকিন্তু তুমি তো আমার…….
মেঘঃহুম আমি….(একটু থেমে)আমি আপনার #চুক্তুর_বউ ।তাই আমার মনে হয় না কোনো কিছু জানার অধিকার আমি রাখি।একবছর তো চলেই যাচ্ছে হাতে মাত্র তিনমাস পনেরো দিন তারপর আপনার এই এগ্রিমেন্ট থেকে আমি মুক্ত।
মেঘ চলে গেলো……..
শ্রাবণ এর মাথায় ছিলোই না মাত্র তিনমাস পনেরো দিন সময়।তার মাঝে তিনমাস শ্রাবণ আমেরিকাতে থাকবে ইচ্ছে করছে ডিলটা এক্ষুণি ক্যান্সেল করে দেই কিন্তু সেই চান্স ই নেই।আগেই সব ফাইনাল হয়ে গেছে।
এসব ভাবছিলো এমন সময় রিদির কল……
শ্রাবণঃহ্যা রিদি বলো।(কাঁপা কাঁপা গলায়)
রিদিঃস্যার আপনি ঠিক আছেন তো।
শ্রাবণঃহ্যা আমি ঠিক আছি।কি জন্য কল দিলে সেটা বলো?
রিদিঃস্যার আমরা কাল সকালেই এয়ারপোর্ট এ যাচ্ছি।আপনি আমাকে কষ্ট করে পিক করতে পারবেন।
শ্রাবণঃতুমি নিজেই এয়ারপোর্ট চলে এসো আমি অপেক্ষা করবো।
রিদিঃএকই জায়গায় যখন যাচ্ছি তখন একসাথে গেলেই বা কি দোষ?
শ্রাবণঃওকে ফাইন একসাথে যাবো।
শ্রাবণ রাগে রাগে গজগজ করতে লাগলো।কি জন্য যে ওকে জব দিতে গেলো এখন সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে এই মেয়ে সারাক্ষণ মাথার কাছে ছারপোকার মত ঘুরে বেড়ায়।খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই নাকি।হাত থেকে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে।তারপর নিচে যায় খাবার খেতে।
শ্রাবণঃমামনি কালকে সকালের ফ্লাইটে আমেরিকা যেতে হচ্ছে।তিনমাসের জন্য একটা ডিল ফাইনাল করতে যাচ্ছি।তুমি একটু সাবধানে থেকো।
শ্রাবণের মাঃতিনমাস অনেকটা লম্বা সময় হয়ে গেলো না।
শ্রাবণঃকিছু করার নেই মামনি সাইন করে ফেলেছি যেতেই হবে।
শ্রাবণের মাঃএক কাজ কর বউ মাকে সাথে নিয়ে যা।বিয়ের পর তো ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয় নি।সারাদিন বাসায় একা একা থাকে।
মেঘঃনা মা আমি এখানেই ভালো আছি।আমার জন্য কারো কাজে ডিস্টার্ব হোক এটা আমি চাই না।আর আমি চলে গেলে আপনার দেখা শুনা করবে।
শ্রাবণের মাঃসেকি রে মা।তাই বলে তুই যাবি না।
মেঘঃনা মা আমি যাবো না।
শ্রাবণঃকারো যাওয়া লাগবে না আমার সাথে।রিদি আছে আমি সব সামলে নেবো।
খুব জুড়ে কথাটা বলে শ্রাবণ খাবার না খেয়েই উঠে গেলো।শ্রাবণের মা পিছন থেকে ডাকলেও শুনে না।
মেঘ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে।আজ শ্রাবণ চলে যাবে।শ্রাবণ এর জন্য নাস্তা বানাতে গেলো।
সকাল আটটার দিকে শ্রাবণ মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হবে।তখন পিছন ঘুরে একবার তাকায়।মেঘ বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে।শ্রাবণ মেঘকে ডাক দিবে ভেবে আবারো থেমে যায়।
কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়।শ্রাবণ ভাবছে হয়তো মেঘের মনে নিজের জন্য বিন্দুমাত্র অনুভুতির জন্ম হয়নি।তাই মেঘ ওর থেকে দূরে দূরে থাকছে।
অন্যদিকে মেঘ ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।শ্রাবণ যখন গাড়িতে উঠছিলো তখন আবার উপরে তাকায়।শ্রাবণ কে নিচে দেখে মেঘের ঘুর কাটে।একই ওনি তো চলে যাচ্ছেন।আমাকে একবারও ডাকলেন না কেনো?একটুপর শ্রাবণ গাড়িতে উঠে তারপর এয়ারপোর্ট এর দিকে এগিয়ে যায়।
মেঘের মন ঘরে ঠিকছে না।বার বার মাথায় পিয়ালির কথাগুলোই বাজছে।পিয়ালির কথার মাঝে কেমন যেন রহস্যের চাপ ছিলো মেঘ সেটা বুঝতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু কি লুকাচ্ছে পিয়ালি সেটাই মেঘ জানে না।
শ্রাবণ আমেরিকাতে পৌঁছার পর মাকে কল করে জানিয়ে দিলো।মেঘ মনে মনে একটু কষ্ট পেলেও পরক্ষণে মনে পড়ে মেঘ শ্রাবণের #চুক্তির_বউ।
কেনোই বা আমার কাছে কল করবে আমি তো ওনার কিছুই না।এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের মন খারাপ হয়ে যায়।কখনো শ্রাবণ কে নিয়ে ভাবতে গেলেই মনে পড়ে আর মাত্র কয়েকমাস তারপরেই সব শেষ।কি দরকার এসব?কেনোই বা মায়ার বাধা পড়বে।কিছুদিন পর তো আলাদা হয়েই যাবে।তাহলে আর এতো ভাববে কেনো?
এদিকে শ্রাবণ চলে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি মিলে বেশ ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন।কলিংবেল
এর আওয়াজ কানে আসতেই মেঘ দরজার দিকে আগায়।ভাবতে থাকে এসময় কে আসতে পারে।কারো আসার কথা ণা।তাহলে কে এলো এই সন্ধ্যেবেলা।
মেঘ দরজা খুলে দরজার সামনে তাকিয়ে পিয়ালিকে দেখে একটা হাসি দিলো।তারপর ওকে ভেতরে নিয়ে বসালো।
মেঘঃআজ হঠাৎ কি মনে করে?
পিয়ালিঃকেনো আমি আসতে পারি না?
মেঘঃএই খালি প্যাচ টেনে কথা বলিস কেনো?
পিয়ালিঃদেখেন না আন্টি আপনার বউমা কতো শয়তান।বিয়ের পর নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড কে তো ভুলেই গেছে একবার খুঁজ নিয়েও দেখে না বেঁচে আছি নাকি মারা গেছি।
শ্রাবণের মাঃহ্যা তাইতো।বউমা তুমি ওর খুঁজ নেওনি এটা কি সত্যি?
মেঘঃমা ওর কথা বিশ্বাস করবেন না তো গতসপ্তাহে আমরা দেখা করলাম।শাঁকচুন্ন
ি টা সেটা চেপে যাচ্ছে।
পিয়ালিঃবেশি বেশি বকবক করিস না যা আমার জন্য চা নিয়ে আয়।চা খেতে খেতে এই সন্ধ্যেবেলা একটা আড্ডা হয়ে যাবে।
শ্রাবণের মাঃহ্যা বউমা যাও তুমি চা নিয়ে আসো আমি ওর সাথে গল্প করি।
মেঘ চলে যাওয়ার পর পিয়ালি আর মেঘের শ্বাশড়ি মিলে গল্প করছেন।
পিয়ালিঃআপনার শরীর এখন কেমন আছে আন্টি?
শ্রাবণের মাঃএইতো আছি রে মা ভালো।তোর কি খবর?
পিয়ালিঃভালো আছি।আন্টি স্যার কেমন আছেন?
শ্রাবণের মাঃকাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত কল করার সময় পায়না।মাঝে মাঝে কল করে খুঁজ নেয়।
পিয়ালিঃআন্টি মেঘ কি এখনো কিছু জানতে পারেনি?
শ্রাবণের মাঃমেঘ এখনো ওর সাথে স্বাভাবিক হতে পারেনি পিয়ালি।ওরা দুজন যে আলাদা থাকে সেটা আমি জানি।আমি মেঘকে বলেছি শ্রাবণের থেকে সব জেনে নিতে কিন্তু মেয়েটা কেনো যেন এক পা আগালে দুপা পিছিয়ে পড়ে।
পিয়ালিঃআপনি নিজেই তো বলে দিতে পারেন।
শ্রাবণের মাঃআমি চাই মেঘ নিজে থেকে বুঝে নিক।শ্রাবণ ওর স্বামী শ্রাবণের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার ওর আছে কিন্তু কেনোও মেয়েটা স্বাভাবিক হচ্ছে না সেটাই মাথায় যাচ্ছে না।
পিয়ালিঃসেদিন আমি অনেক বুঝিয়েছি কাজ হয় নি।ও চাইলেই স্যারকে আমেরিকা যাওয়া থেকে আটকাতে পারতো।
এরইমাঝে মেঘ চা নিয়ে হাজির…………
মেঘঃআমাকে রেখে কি কথা হচ্ছে শুনি?
পিয়ালিঃআর কথা হলো কই।চাইলাম আন্টির সাথে একটু সুখ দুঃখের কথা ভাগাভাগি করবো তা না দিলি এসে জল ঢেলে।
মেঘঃগরম চা ঢেলে দিবো বলে দিলাম।তুই মায়ের সাথে গল্প করবি তাতে আমি আবার জল ঢাললাম কই।আমি তোকে বারণ করছি নাকি যে মায়ের সাথে আড্ডা দিস না।এক নাম্বারে শয়তান মেয়ে।
শ্রাবণের মাঃথামবি তোরা।কই একটু বান্ধবী কে নিয়ে গল্প করবি তা না ঝগড়া করে যাচ্ছে।
মেঘ একটু হেসে পিয়ালির কাছে বসে।তিনজনে মিলে আড্ডা দিয়ে অনেকটা সময় কাটায়।তারপর রাতের খাবার খেয়ে পিয়ালি চলে যায়।মেঘ অনেক জুড় করে কিন্তু পিয়ালি কাজের অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে গেলো।
চলবে………..

চুক্তির বউ ৪র্থ পর্ব

0

চুক্তির বউ ৪র্থ পর্ব

লেখা:তামান্না
হাসপাতালের সামনে এসে শ্রাবণ ব্রেক করতেই মেঘ ধাক্কা খায় সাথে সাথেই মেঘের ঘোর কাটে…
শ্রাবণঃনামো।
মেঘঃআপনি ভেতরে যাবেন না।
শ্রাবণঃনা আমার অফিসে কাজ আছে। তুমি অপেক্ষা করো আমি বিকেলে এসে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।
মেঘঃআপনি না বললেন মিটিং কেন্সেল করেছেন।
শ্রাবণঃহ্যা করেছি।
মেঘঃতাহলে কি কাজ অফিসে?
শ্রাবণঃনতুন যে আসবে তাকে সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।
মেঘঃসেটা তো ম্যানেজার কে বলে দিলেই হয় আপনার যাওয়ার কি দরকার?
শ্রাবণঃজয়েন যে করবে সে একজন মেয়ে আর আমার খুব কাজের কেউ।
শ্রাবণের এমন কথায় মেঘ প্রথমে একটু কষ্ট পেলেও পরে আবার সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে…..
মেঘঃস্পেশাল কেউ হয়।
শ্রাবণঃহ্যা স্পেশাল।
মেঘ আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। একবার ও পিছন ফিরে তাকায়নি।এক রকম দৌড় দিয়ে হাসপাতালের ভেতর ডুকে যায়। শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে গেলো।
মেঘ সারাদিন তার মায়ের সেবা করেছে মায়ের সাথে অনেক আড্ডা দিলো।
মেঘের মাঃমেঘ একটা কথা বলি।
মেঘঃহ্যা মা বলো কি বলবে?
মেঘের মাঃতুই শ্রাবণের সাথে ভালো আছিস তো।
মেঘঃমা এটা কেমন প্রশ্ন? ভালো না থাকলে কি আজ শ্রাবণ নিজে আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে যেত।
মেঘের মাঃআমি জানতাম শ্রাবণ তোকে বুঝবে।
মেঘঃহুম……..
শ্রাবণ অফিসের নতুন কর্মচারী কে কাজ বুঝিয়ে দিলো তারপর হাসপাতালে গেলো।
শ্রাবণঃএটা কি হলো মা?(ভেতরে ডুকতে ডুকতে)
মেঘের মাঃকেনো বাবা কি হয়েছে?
শ্রাবণঃমেয়েকে কাছে পেয়ে ছেলেকে ভুলে গেলেন এটা কিন্তু ঠিক হলো না।
মেঘের মাঃকে বলেছে ভুলে গেছি?
শ্রাবণঃতা নয়তো কি?মেয়েকে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখলেন আর আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি।
মেঘের মাঃশোণ ছেলের কথা।এদিকে এসো তো।
শ্রাবণ একটা চেয়ার টেনে ওনার পাশে বসলো।মেঘ বার বার শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে।মায়ের কাছে এলে ছেলেটা কেমন অন্যরকম হয়ে যায় আর বাসায় সবসময় গোমড়া মুখ নিয়ে থাকে।
কি আছে ওনার মনে?কেনো এমন অভিনয় করছেন?নিজেতো কষ্ট পাচ্ছেন সাথে আমাকেও একটা চুক্তির মাঝে আটকে রাখছেন।ওনি আসলেই চান টা কি?
শ্রাবণঃহ্যা মা বলুন।
মেঘের মাঃআমার না এইখানে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর পারছি না থাকতে।
মেঘঃকি বলছো মা?তুমি ঠিক আছো তো ডাঃ কে ডাকবো?
মেঘের মাঃনা রে মা আমি ভালো আছি।আমার না বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে করছে।আমাকে নিয়ে যা এখান থেকে।
মেঘ একবার শ্রাবণের দিকে তাকায় তারপর আবার মায়ের দিকে তাকায়।শ্রাবণ হয়তো বুঝতে পারছে মেঘের চোখের ভাষা। তাই শ্রাবণ নিজেই মুখ খুলে।
শ্রাবণঃমা আমি ডাঃ কে বলে দেখছি রিলিজ করে দেয় কি না?
মেঘঃকিন্তু মা কে নিয়ে যাবো কোথায়?
শ্রাবণঃকেনো?আমাদের বাড়ি আছে কি জন্য?
মেঘঃওখানে নেওয়া টা ঠিক হবে না।
শ্রাবণঃআমি তোমার কোনো কথাই শুনছি না।মা আজ আমাদের এইখানেই যাবে।আর এখন থেকে ওখানেই থাকবেন এটা আমার ডিসিশন। তুমি কোনো কথা বলবে না এটাই ফাইনাল।
আমি দেখি ডাঃ কি বলেন।
তারপর শ্রাবণ ডাঃ এর সাথে কথা বলতে গেলো…..
শ্রাবণঃডক্টর আসবো।(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)
ডাক্তারঃহ্যা শ্রাবণ এসো।কিছু বলবে।
শ্রাবণঃআসলে আমি চাইছিলাম মাকে আজকেই বাসায় নিয়ে যেতে এখানে থাকতে হয়তো ওনার অসুবিধা হচ্ছে।
ডক্টরঃসেটা ঠিক তবে শ্রাবণ ওনার ঠিক মতো যত্ন নিতে হবে যদি ও ওনার হাতে সময় খুব কম তাও যতদিন আছেন ততদিন তোমাদের একটু কষ্ট করতে হবে।
শ্রাবণঃএটা কোনো ব্যাপার না ডাঃ আমি আর মেঘ সব সামলে নিবো।ওনার সেবার কোনো ত্রুটি আমি রাখবো না।
ডক্টরঃসেটা আমি জানি শ্রাবণ তোমাকে তো আমি আজ থেকে জানিনা।তোমার মায়ের দিকটাই দেখো না আজ দুবছর ধরে ওনার এই অবস্থা অথচ তুমি ওনাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করছো।
শ্রাবণঃমামনির এই অবস্থার জন্যতো আমিই দায়ী ডক্টর যদি একটু সেবা করে আমার পাপের বুঝা টা হাল্কা করতে পারি সেটাই বা কম কিসের।
ডক্টরঃদেখো আমি এভাবে বলিনি।তুমি আমার কথায় কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত শ্রাবণ।আসলে এ পর্যন্ত তোমার মায়ের সবরকম ট্রিটমেন্ট এই হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় আর সেটা আমি ই হ্যান্ডেল করে আসছি। আমি তো সবই জানি তাই বললাম। I am sorry Shrabon.
শ্রাবণঃIt’s okay Doctor…..আমি কি মাকে নিয়ে যাবো।
ডক্টরঃতোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে।দাড়াও আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি তুমি আজকেই ওনাকে নিয়ে যাবে।
শ্রাবণঃThank You Doctor.Thank You So Much…..
ডক্টরঃএটা আমার দায়িত্ব শ্রাবণ।আমি জানি ওনার কোনো অযত্ন হবে না।
শ্রাবণঃআসি তাহলে।
ডক্টরঃতুমি যাও আমি ওনার রিলিজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
শ্রাবণঃOkay….
তারপর শ্রাবণ কেবিনে ডোকে মেঘের মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো।ডক্টর ডিসচার্জ পেপারে সই করতে বলে মেঘের মাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়।
এরপর ওরা বাসায় চলে আসে।এখানে আসার পর মেঘকে সবদিকটাই সামলাতে হচ্ছে।একদিকে মায়ের সেবা অন্যদিকে শ্বাশুড়ি মায়ের যত্ন সব মিলিয়ে মেঘ একটু চাপে থাকলেও কাউকে কোনোপ্রকার কষ্টে ফেলতে চায় না নিজের হাতেই সব কাজ সামলে নেয় মেঘ।
শ্রাবণ ও অনেক হেল্প করে মেঘের কাজে।যতটা সময় বাসায় থাকে সেই সময় টুকু মেঘকে কাজে সাহায্য করে।
এভাবেই দিন কেটে যায় দেখতে দেখতে মেঘ আর শ্রাবণের বিয়ের প্রায় ৪ মাস কেটে যায়। মেঘ অনেকবার চেষ্টা করেছে শ্রাবণের ব্যাপারে সব জানতে কিন্তু বরাবরি মেঘকে হার মানতে হচ্ছে।একটা সময় ছিলো মেঘ শুধুমাত্র একজন স্টাফ ছিলো শ্রাবণের। আর আজ শ্রাবণের বউ।যদি ও এটা চুক্তির মাঝে সীমিত ছিলো তাও এই কয়েকমাসে শ্রাবণের প্রতি মেঘের একটা টান জন্মাতে শুরু করে।মেঘ নিজেও জানে না সে শ্রাবণের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে।অথচ এই সম্পর্ক টা আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো স্বাভাবিক না।মেঘ বার বার শ্রাবণের সমস্ত অতীত জানতে চায় শত চেষ্টার পরেও মেঘের জানা হয়ে উঠে না।
এই চার মাস ভালো কাটলেও বিপত্তি ঘটে পাঁচ মাসের মাথায়।মেঘের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তার সবচাইতে কাছের মানুষ।বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।হ্যা সে আর কেউ না মেঘের মা।আজ সকালের ঘটনা……..
শ্রাবণ অফিসে যাওয়ার পর মেঘ,মেঘের মা,মেঘের শ্বাশুড়ি সবাই মিলে একটা গল্প করছিলেন।হঠাৎ করেই মেঘের মা বুকের ব্যথায় চটপট করতে থাকেন।মেঘ দ্রুত ডাঃ কে কল করে একটা এম্বুলেন্স এ করে ওর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শ্রাবণের মাকে বাসায় রেখে গেলো। মেঘ শ্রাবণ কে কল করে হাসপাতালে আসতে বলে। যখন শ্রাবণ হাসপাতালে যায় মেঘের মা শ্রাবণের হাত ধরে শুধু একটাই কথা বললেন……
মেঘের মাঃশ্রাবণ আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো।সব হারিয়েছে ও আজ আমি চলে যাচ্ছি। হয়তো আল্লাহ আমাকে এই পৃথিবীর সুখ থেকে বঞ্চিত করতে চান তাই তো আজ আমাকে ওপারে যাওয়ার জন্য ডাকছেন।আমি চলে যাওয়ার পর ওর আপন বলতে তুমি আর তোমার মা থাকবে।তুমি আমার মেয়েটাকে একটু ভালো রেখো বাবা।
শ্রাবণঃমা প্লিজ শান্ত হন।কিচ্ছু হবে না আপনার এক্ষুণি ঠিক হয়ে যাবেন।আমি ডক্টর কে ডাকছি।
শ্রাবণ ডাঃ কে ডাকলে গেলে মেঘ খুব জুরে একটা চিৎকার দেয়…..
মেঘঃমা……….ও মা কথা বলো না মা।প্লিজ কথা বলো।এভাবে আমাকে একা করে দিও না মা।আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া ও মা কথা বলো না প্লিজ চুপ করে থেকো না।ও মা থাকাও না আমার দিকে।
মেঘের কান্না দেখে শ্রাবণ থমকে যায়। ডাঃ কে ডাক দিলে ওনি এসে পালস চেক করে ওনাকে মৃত ঘোষনা করেন।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মেঘ একটাও কথা বলেনি।কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা। কারো সাথে কথা বলে না।শ্রাবণ জানাজা শেষ করে ওনাকে কবরস্থান এ দাফন করে এলো।
হাসপাতাল থেকে আসার পর মেঘ এখনো নিজের রুম থেকে বের হয় নি।শ্রাবণ ওর মায়ের সাথে কথা বলে মেঘের কাছে যায়।
মেঘ কেমন যেন ধুম মেরে বসে আছে।কোনো দিকে তাকাচ্ছেও না।শ্রাবণ এসে ওর কাছে বসলো।ওর হাতে হাত রেখে আলতো স্বরে ডাক দিলো।
শ্রাবণঃমেঘ কিছু খেয়ে নিবে এসো।
শ্রাবণের ছোঁয়া পেয়ে মেঘ যেন হোশ ফিরে পায়।ঝাপটে ধরে শ্রাবণ কে।সারাদিন ধরে কান্না করেছে তাও যেন কান্না থামার নাম নিচ্ছে না।শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে মেঘ।
শ্রাবণঃমেঘ প্লিজ শান্ত হও।দেখো এটা তো হওয়ারই ছিলো।কেউ তো সারাজীবন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেনি।আজ অথবা কাল আমাদের কেও যেতে হবে।পৃথিবী তে আমরা কেউই স্থায়ী না।আমাদের জন্য পরকাল বলেও একটা জীবন আছে।ইহকালীন জীবন ছেড়ে আমাদের সবাইকেই একদিন পরপারে আশ্রয় নিতে হবে।প্লিজ মেঘ একবার বুঝার চেষ্টা করো।তুমি তো জানোই তোমার মায়ের কতো বড় রোগ ছিলো।হার্টের ফুটো অপারেশন করেও রোগীকে বাঁচানো যায় না অথচ তুমি মাকে পাঁচ মাস নিজের কাছে পেয়েছো।এরকম রোগী তো অপারেশন থিয়েটারেই মারা যায়। আল্লাহ কতো মহান যে ওনি তোমার তোমার মাকে কিছুদিন বেঁচে থাকার সুখ দিয়েছেন।
মেঘঃ…………….অবিরাম পানি জড়ছে চোখ থেকে।
শ্রাবণঃপ্লিজ মেঘ একটু শান্ত হও।
মেঘঃডক্টর মিথ্যে বললো কেনো?ওনি তো ছয়মাস সময় দিয়েছিলেন তাহলে কেনো আজ মা আমাকে একা করে চলে গেলো কেনো এমন হলো।(গলাটা ধরে আসছে কথা বলার মতো শক্তি নেই তাও কান্নাভরা কন্ঠে বলতে থাকে)
শ্রাবণঃতুমি তো জানো মেঘ মায়ের কান্ডিশন কেমন ছিলো তাও বোকার মতো কথা কেনো বলছো।আর ডাক্তার কি মানুষ এর জীবন মরনের খবর জানে নাকি ওনারা শুধু নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে সামান্য কিছু বুঝার চেষ্টা করেন আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে ওনি ছয়মাস সময় বলেছিলেন।
শ্রাবণ মেঘকে কোনোরকম বুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে বসায়।মেঘ এক মনে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে খেতে ইচ্ছে করছে না।গলা দিয়ে খাবার নামছেই না।কিন্তু না খেলে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
মেঘ খাচ্ছে না দেখে শ্রাবণ নিজেই মেঘের মুখে খাবার তুলে দিলো।শ্রাবণ খাবারটা মুখের সামনে তুলে দিতেই মেঘ আপনা থেকেই হা করে খেয়ে নেয়।হয়তো শ্রাবণ বকা দিবে ভেবে খেয়ে নিলো।
মেঘকে খাইয়ে দিয়ে শ্রাবণ ওকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে ঘুমোতে বললো।
মেঘঃকেনো এমন হলো?
মেঘ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।শ্রাবণ ওর পাশে বসে ওর মাথাটা বালিশে রেখে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
শ্রাবণঃপ্লিজ মেঘ আর কান্না করে নিজেকে কষ্ট দিও না।এতে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে।
মেঘঃ………..
শ্রাবণঃবললাম না ঘুমিয়ে পড়তে।তুমি কেনো বুঝোনা মেঘ তোমার কিছু হলে আমি…….
মেঘঃচোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণঃওইভাবে তাকাবে না ঘুমাও বলছি।(নিচু স্বরে ধমক দিলো)
মেঘ সাথ সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।একটু পর মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো।শ্রাবণ উঠে মায়ের রুমে যাবে অমনি টান খেয়ে বিছানায় পড়ে যায়।
চলবে……..

চুক্তির বউ ৩য় পর্ব

0

চুক্তির বউ ৩য় পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ রুমে ডুকে মেঘকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।ভাবতে থাকে আজকের দিনটার কথা।মেঘকে কতোটা কষ্ট দিলো একটা চুক্তির কাগজ দিয়ে,মেঘ জানেও না তার সাথে কি হলো।শ্রাবণ নিজেকে বার বার বকছে ওকে সত্যিটা বলতেই পারতো কিন্তু এতে যদি মেঘ দূরে সরে যায় সেই ভয়েই তো একটা চুক্তি।কিন্তু শ্রাবণ কি পারবে এই চুক্তির মাধ্যমে মেঘের মনে জায়গা করে নিতে নাকি মেয়েটা ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিবে।শ্রাবণ নিজের ডায়রীটা হাতে নিয়ে লেখা শুরু করে।
শ্রাবণের একটাই অভ্যাস এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছুই এই ডায়রীতে লিখে রাখা।যত কষ্ট যত সুখ সব কিছুই এর মাঝে লেখা।লিখতে লিখতে শ্রাবণ চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝরাতে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়।রুমের লাইট অন দেখে মেঘ অবাক হয়। এতো রাতে লোকটা লাইট জ্বালিয়ে রাখলো কেনো?চারিদিক তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ চেয়ারেই ঘুমিয়ে আছে।মেঘ উঠে শ্রাবণের পাশে যায়।হাতের নিচে একটা ডায়রী দেখে মেঘ সেটা ধরবে কি ধরবে না এই সব ভাবতে ভাবতে ডায়রীটা হাতে নিয়েও আবার টেবিলেই রেখে দিলো।কারো পারসোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া টা চরম অন্যায়।মেঘ সেই অন্যায় কিছুতেই করবে না।মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় শেষ এর দিকে।তাই ওয়াশরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পালটে অন্য একটা শাড়ি পরে নেয়।অজু করে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে নিলো
তারপর কোরঅান তেলাওয়াত করে।ফজরের আজান দিলে নামাজ আদায় করে নেয়।একটু পর চারিদিক টা আলোয় চিকচিক করবে।দেরী না করে মেঘ রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।তখন ওর শ্বাশুড়ি মায়ের গলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল।ওনার ফুঁপানির কন্ঠ শুনে মেঘের বুঝতে বাকী রইলো না যে ওনি কান্না করছেন।কিন্তু এতো সকাল কেনো কাঁদছেন সেটা জানার বড্ড কৌতূহল হয় মেঘের।দরজার কান পেতে এমন কিছু কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছু সময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে আগায়।সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে করে।তারপর শ্রাবণের মায়ের রুমে ঠোকা দেয়,
মেঘঃমা দরজা টা কি খুলবেন?
শ্রাবণের মাঃকে বউমা?
মেঘঃহ্যা মা আমি মেঘ।
শ্রাবণের মাঃওখানেই থাকো আসছি মা।
ওনি উইল চেয়ার ঠেলে দরজা খুলে মেঘকে দেখে অবাক।এক্কেবারে ঘরের গিন্নি।হাতে চায়ের কাপ।চুলে খোপা শাড়ির আচল কোমরে গোজা।
মেঘঃমা আপনার চা,(চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে)
শ্রাবণের মাঃএকই মা এতো সকালে তুমি রান্না ঘরে ফুলি কোথায়?
মেঘঃফুলি অন্য কাজ করছে তাই আমি রান্নাটা করে নিলাম।
শ্রাবণের মাঃইশ প্রথম দিন ই রান্না ঘরে কেনো গেলে মা ফুলিই করে দিতো।
মেঘঃমা এতোদিন ফুলি সব করেছে আজ থেকে আমি করবো আপনি কিন্তু আপত্তি করতে পারবেন না।আর আপত্তি করলেও আমি শুনছিনা।আমি কিন্তু খুব বেয়াদব টাইপের মেয়ে কথা না শুনার অভ্যাস আমার আছে।
শ্রাবণের মাঃতোমার সাথে কথায় পারবো না।এসো ভিতরে এসো।
মেঘঃচা টা নিন।আর কি খাবেন বলুন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
শ্রাবণের মাঃকিছু লাগবে না মা।এতোদিনে আমার ঘরে লক্ষি এসেছে আমার বাদর ছেলেটা এবার একটু ভালো থাকবে।
মেঘঃকেনো মা,ওনি কি ভালো থাকতেন না?
শ্রাবণের মাঃনা মা ঠিক তা না।তুমি ওর স্ত্রী।ওর সব কথা জানার অধিকার তোমার আছে তবে সেটা আজ না অন্যদিন তোমাকে বলবো।
মেঘঃমা আপনি কি কিছু লুকাচ্ছেন আমার থেকে?
শ্রাবণের মাঃতোমার থেকে কিছু লুকানোর অধিকার আমার নেই মা।এখানে বসো……(বিছানায় বসিয়ে)
মেঘঃতাহলে এইভাবে বলছেন কেনো?বলুন না মা কি হয়েছে আমি কি জানতে পারি না?
শ্রাবণের মাঃজানবে তবে সেটা শ্রাবণের থেকে আমি কিছু বললে শ্রাবণ কষ্ট পাবে।আমি চাই তুমি সেটা ওর থেকে জানো।আর ওর ভেতরের একটা গিল্টি ফিলিং আছে যে টা তোমাকেই দূর করতে হবে।ও বার বার নিজেকে দোষী ভাবছে কিন্তু আমি তো মা আমি জানি আমার ছেলেটার কোনো অন্যায় নেই।
মেঘঃআমি কিভাবে জানবো মা?
শ্রাবণের মাঃবোকা মেয়ে তুমি ওর বিবাহিতা স্ত্রী। এমন কিছু ব্যাপার নেই যে টা শ্রাবণ তোমার থেকে লুকাবে তবে কিছু একটা নিয়ে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি আজো জানতে পারছি না কিন্তু বুঝতে পারি আমার ছেলের কষ্ট।ও রোজ রাতে একটা ডায়রীতে কি যেন লিখে রাখে যে তা আমি রোজ ফলো করতাম কিন্তু কাল জানিনা ওর মনের মধ্যে কি ঝড় গেছে শুধু এইটুকু জানি আমার ছেলেটা ভালো নেই।মেঘ আজ থেকে তো তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।পারবি না আমার ছেলেটাকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে।পারবি না আমার ছেলের মনের সব গিল্টি ফিলিং গুলো দূর করতে, পারবি না ওকে তোর ভালোবাসা দিয়ে একটা সুন্দর জীবন গড়ে দিতে।(মেঘের হাতে হাত রেখে)
কি করবো মা আমি।আমি যে একটা চুক্তির ভেতর আটকে আছি যে টা এক বছর পর শেষ হয়ে যাবে তারপর তো দুজন দুপ্রান্তে ছিটকে পড়বো।এই বছরে কিভাবে পারবো আমি ওনার কষ্ট টা দূর করতে জানিনা কি আছে ওনার মনে তবে যাই থাকুক সেটা আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)
শ্রাবণের মাঃকি রে মা রাখবি না আমার এই অনুরোধ?
মেঘঃছি ছি মা আপনি এভাবে বলবেন না।আমি চেষ্টা করবো ওনার কষ্ট গুলো দূর করার।
শ্রাবণের মাঃ যা গিয়ে দেখ ওর কি লাগে।আমি একটু রান্নাঘর এ দেখি ফুলি কি করছে?
মেঘঃমা আপনি বিশ্রাম নিন।তাছাড়া এখন তো আমি আছি আমি থাকতে আপনি কষ্ট করে রান্না ঘরে যাবেন সেটা কিভাবে হয় বলেন তো।
শ্রাবণের মাঃঠিক আছে রান্নাঘরে যাচ্ছি না আমাকে একটু সোফার কাছে নিয়ে চল।একটু বসি।
মেঘঃঠিক আছে আসুন।
মেঘ উইল চেয়ার টা ঠেলে ওনাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর রুমে গিয়ে দেখে শ্রাবণ চেয়ারে নেই।ওয়াশরুম থেকে টেপ এর আওয়াজ আসছে তারমানে ওনি ওয়াশরুমে।
মেঘ রুমটা টিকটাক করে নিচে চলে আসে।
তারপর সব নাস্তা রেডি করে সবাইকে খাবার দিলো।সকালের নাস্তা শেষ করে শ্রাবণ রেডি হয় অফিস যাবে বলে।
মেঘঃএকই আপনি রেডি অনেক দেরী হয়ে গেলো তাইনা।ইশ কখন অফিস যাবো।(রুমে ডুকতে ডুকতে)
শ্রাবণঃকোথায় যাবে?(ভ্রু কুঁচকে)
মেঘঃকেনো অফিস যাবো আজ না একটা মিটিং আছে অফিসে।
শ্রাবণঃতো কি হয়েছে?
মেঘঃকি হয়েছে মানে অফিস যাবো।রেডি হবো এখন।
শ্রাবণঃতুমি কোথাও যাচ্ছ না?
মেঘঃমানে কি?
শ্রাবণঃমানে খুব সহজ তুমি অফিস যাচ্ছ না আমি একাই যাচ্ছি।
মেঘঃকিন্তু কেনো?
শ্রাবণঃতোমার পোস্টে আজ থেকে অন্য একজন জয়েন করবে।
মেঘঃমানে আমার জব।
শ্রাবণঃনেই।(টাই বাধবে বাধতে)
মেঘঃWhat?(মেঘ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে)
শ্রাবণঃকি হলো টা কি তোমার?
মেঘঃএখন আমি কি করবো?মায়ের ট্রিটমেন্ট এর এতো টাকা কোথায় পাবো।কিভাবে মায়ের ওষুধের টাকা জোগাড় করবো কিভাবে মাকে বাসায় নিয়ে যাবো তাছাড়া এখনো বাড়িওয়ালার অনেক দেনা বাকি।এখন কি করবো আমি কিভাবে সবটা ম্যানেজ করবোম(মেঘ ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙে পরে)
শ্রাবণঃমেঘ কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
মেঘঃআমার চাকরী টা কেনো কেঁড়ে নিলেন জানতে পারি।
শ্রাবণঃতোমার আর চাকরীর কি দরকার ঘরের বউ হয়ে চাকরী করবে এটা কেমন যেন দেখায় তাছাড়া একই অফিসে স্বামী-স্ত্রী চাকরী করবে এটাতো বেমানান। আর আমি যেখানে তোমার স্বামী সেই অফিসে তুমি জব করতে Comfortable Feel করবে না তাই পোস্ট এ অন্য কাউকে জয়েন দিলাম।
মেঘঃওহহ ভালো ঘরের বউ হয়ে মায়ের দায়িত্ব নেয়া থেকে বঞ্চিত হলাম।
শ্রাবণঃমানে কি বলছো?
মেঘঃকিছু না।আপনি যান আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।আজ তো জরুরী মিটিং আছে।
শ্রাবণঃমিটিং কেন্সেল করে দিয়েছি।
মেঘঃকেনো?
শ্রাবণঃঅন্য একটা কাজ আছে।
মেঘঃওহ তাহলে যান দেরী হয়ে যাবে।
শ্রাবণঃতুমি রেডি হও।একসাথে বের হবো।
মেঘঃকেনো?আমি কোথাও যাবো না।
শ্রাবণঃএতো প্রশ্ন করার অধিকার আমি তোমাকে দেইনি।তুমি আমার স্ত্রী তাই এখন থেকে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।যাও গিয়ে রেডি হও।(ধমক দিয়ে)
মেঘঃআমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি আপনার #চুক্তির_বউ আপনি যা বলবেন আমাকে তো তাই করতে হবে।সেই অধিকার থেকেই একটা কথা জানতে চাইবো বলবেন।
শ্রাবণঃকি জানতে চাও বলো?(হাটু গেড়ে বসে অনুর হাতে হাত রাখে)
মেঘঃআপনি তো একজনকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো?তাও একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করিয়ে।আমি কি খুব বড় ক্ষতি করেছি আপনার যার জন্য এতো বড় সাজা টা আপনি আমায় দিলেন।আজ অব্দি কোন কথাটা শুনিনি আপনার অফিসের সব কাজ ঠিক মতো করে নিজের মাকে নিয়ে যে দুনিয়া টা ছিলো এখন তো সেটাও শেষ হয়ে গেলো।কেনো করলেন এমন টা আমার সাথে।
শ্রাবণঃআমি তোমার সব কথার জবাব দিতে বাধ্য নই।শুধু একটা কথা জেনে রাখো শ্রাবণ মাহমুদ আজ অব্দি যা যা চেয়েছে তার মা বাবা তাকে সেটাই এনে দিয়েছে আর আজ তার মায়ের চাওয়ার গুরুত্ব সে দেবেনা এটা তো হতে পারে না।আমার মামনিকে আমি খুশি দেখতে চাই আমার মামনি আমার সব চাওয়া পূরণ করেছে তাই আমি তার একটু হলেও মামনিকে ফিরিয়ে দিতে চাই।আর হ্যা আজ থেকে আমি তোমাকে যতটুকু জানার অধিকার দিবো ঠিক ততটুকুই জানবে।এর থেকে বেশি কিছু প্রশ্ন করবে না আমার পছন্দ না এখন চুপচাপ গিয়ে রেডি হও।মাকে দেখতে যাবো।তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে আবার অফিস যেতে হবে।
মেঘঃআপনি কেনো এমন করছেন।যে টা জানতে চাইলাম উত্তত দিন না প্লিজ।কেনো আমার জীবনটা নিয়ে খেলছেন আপনি।কি অধিকারে।
শ্রাবণঃআমি তোমার জীবন নিয়ে খেলছি এটা তুমি ভাবলে কিভাবে মেঘ।তোমার মুখে একবার
ও আটকালো না এইরকম কথা বলতে তুমি এতোটা পাষাণ কিভাবে হও বলোতো?(শ্রাবণে চোখে জল টলমল করছে)
মেঘঃঅন্যায় আপনি করলেন আর অপরাধী আমি বাহ মি.শ্রাবণ মাহমুদ বাহ কি সুন্দর কথা বললেন আপনি।যাই হোক আমি একা যেতে পারবো আপনার আর দরকার হবে না আপনি অফিসে যান।
শ্রাবণঃবেশি বকবক না করে তাড়াতাড়ি রেডি হও।আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
শ্রাবণ আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মেঘ রেডি হয়ে নিচে নামে তারপর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে।মেঘ বার বার শ্রাবণের দিকে তাকায়।শ্রাবণ একটা কথাও বলে না।চুপচাপ ড্রাইভ করে যাচ্ছে।শ্রাবণের চোখে এখন জল এর চিহ্ন বুঝা যাচ্ছে। অনু ভাবতে থাকে…..
কি এমন কষ্ট ওনার যার জন্য ওনি এখনো এতো কষ্ট পান।আমার সাথেই বা এমন এগ্রিমেন্ট কেনো করলেন।কিভাবে বুঝবো আমি?কিভাবে জানবো সব সত্যি?কি এমন গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে যার জন্য আমাকেই ওনার #চুক্তির_বউ হতে হলো।এতো কিসের কষ্ট ওনার।সব জানতে হবে আমাকে সব জানতে হবে।যেভাবেই হোক মায়ের কথা আমাকে রাখতেই হবে।আমি মাকে কথা দিয়েছি ওনার সব কষ্ট দূর করে ওনার মুখের হাসি টা আবার ফিরিয়ে আনবো।আমাকে যে পারতেই হবে মা।পারতেই হবে।শত হলেও আমি ওনার এগ্রিমেন্ট করা বউ। আর একবছর তো অনেক সময় আমি এই একটা বছরকেই কাজে লাগাবো।
চলবে………….

চুক্তির বউ  ২য় পর্ব

0

চুক্তির বউ ২য় পর্ব

লেখা:তামান্না

বিয়ের সব কাজ শেষ করে কাজী চলে গেলো।মেঘ শ্রাবণ কে বলে…

মেঘঃস্যার এবার তো আমি মায়ের কাছে যেতে পারি।

শ্রাবণঃহ্যা এসো।

মেঘঃএই পোশাকে।

শ্রাবণঃহ্যা…এটাই পরে যাবে।তোমার মায়ের কাছ থেকে আশির্বাদ নিতে হবে না।ওনার তো দেখা দরকার ওনার মেয়েকে বউ সাজে কেমন লাগছে তাও আবার #চুক্তির_বউ।(মেঘের একদম কানের কাছে গিয়ে মুখ নিয়ে বলে)

শ্রাবণের মাঃকি রে কি বলছিস ওকে?

শ্রাবণঃমামনি ও ওর মায়ের দেখা করতে চায়।কথা ঘুরিয়ে।

শ্রাবণের মাঃঠিক আছে তুই ওকে নিয়ে,আর হ্যা তাড়াতাড়ি আসিস।আমাকে একটা করিস আমি চিন্তায় থাকবো।

শ্রাবণঃমামনি তুমি চিন্তা করো না আমরা ফিরে আসবো।ফুলি এই ফুলি কোথায় তুই?

ফুলিঃজ্বি ভাইজান বলেন।

শ্রাবণঃমামনির খেয়াল রাখিস আমি একটু বাইরে যাবো।

ফুলিঃজি ভাইজান রাখবো।আপনে কোনো টেনশন করবেন না।

শ্রাবণঃগুড…মেঘ চলো আমাদের বেরোতে হবে।

মেঘঃআসছি মা।

শ্রাবণের মাঃতাড়াতাড়ি এসো।

মেঘঃজি মা আসবো।

ওরা হাসপাতালে গেলো,মেঘ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো ওর মায়ের এখন কি অবস্থা।

মেঘঃDoctor আমার মা কোথায়?

ডাক্তারঃওনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।যদি ও ওনার অপারেশন সাকসেসফুল তবুও ওনাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা……

মেঘঃমানে কি Doctor?

ডাক্তারঃদেখো শ্রাবণ জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে এখন ওনি চাইলে মানুষ কে বাঁচাতে পারেন আবার মারতেও পারেন।আপনার মা আর বেশিদিন বাঁচবেন না।

মেঘঃআপনি পাগল হয়ে গেছেন Doctor।এটা কখনোই হতে পারে না আমার মা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।আমি মায়ের কাছে যাবো।

মেঘ এক ছুটে মায়ের কেবিনে ডোকে মায়ের পাশে বসে কান্না করতে থাকে।

এদিকে শ্রাবণ ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

শ্রাবণঃDoctor ওনাকে কবে রিলিজ করছেন?

ডাক্তারঃদুদিন পর ওনাকে রিলিজ করে দিবো।আর একটা কথা।

শ্রাবণঃহ্যা Doctor বলুন।

ডাক্তারঃপ্লিজ ওনার একটু খেয়াল রাখবেন ওনার হাতে মাত্র ছয়মাস সময় আছে।এই ছয়মাস ওনাকে একটু দেখে রাখবেন।

শ্রাবণঃOkay Doctor I will try my best.

ডাক্তারঃThank You Shrabon.

শ্রাবণঃআমি আসছি।

শ্রাবণ কেবিনে এসে দেখে মেঘ পাগলের মতো কান্না করছে অনিক কিভাবে ওকে সামলাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ওর ঘাড়ে হাত রেখে ওকে শান্ত্বনা দেয়।

শ্রাবণঃমেঘ প্লিজ তুমি এভাবে ভেঙে পড়োনা।
তুমি যদি দুর্বল হয়ে পড়ো তাহলে তোমার মাকে কে সামলে রাখবে।ওনি তো এখন ও জানেন না ওনার হাতে সময় মাত্র কটা মাস।

মেঘ পিছন থেকে ঘুরে শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে…

মেঘঃমায়ের কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো না স্যার।মা ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই।আমি যে খুব একা হয়ে যাবো।

শ্রাবণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

শ্রাবণঃকেনো আমরা আছি তো।আমি আর মামনি কেনো এভাবে ভেঙে পড়ছো।মেঘ তুমি নিজেকে সামলাতে শিখো।

শ্রাবণের কথায় মেঘ ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে যায়।

মেঘঃI am sorry…

মেঘের মাঃমেঘ…….অস্পষ্ট ভাবে ডাক দিলেন।

মেঘঃমা তুমি ঠিক আছো তো।

মেঘের মা উঠতে গেলে শ্রাবণ ওনাকে ধরে পিটের পিছনে বালিশ দিয়ে ওনাকে বসিয়ে দেয়।

মেঘের মাঃবাহহ তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই সাজে।(বিয়ের পোশাক দেখে)

মেঘঃমা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

মেঘের মাঃশ্রাবণ আমাকে সব বলেছে।

মেঘঃতুমি জানো।(অবাক হয়ে)

মেঘের মাঃহ্যা…অপারেশন এ যাওয়ার আগে ওর সাথে আমার কথা হয়েছিলো আমি ওকে অনুমতি দেই তোকে বিয়ে করার।

মেঘের মনে ভয় ডুকে যায় কি বলে স্যার মাকে বিয়ের জন্য রাজী করে ফেললো তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট এ সই করা বিয়ে।মা কি এটা জানে।মা এটা জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মেঘ শ্রাবণের দিকে এক নজর তাকিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।

মেঘের মাঃতুই খুব সুখী হবি মা।আমি তোর জন্য আল্লাহর কাছে রোজ কান্নাকাটি করে তোর জন্য এমন একজন কে চেয়েছি।শ্রাবণ খুব ভালো ছেলে মা ও তোকে খুব ভালো রাখবে।

মেঘঃমা…এখন এসব কথা ছাড়ো তো.আগে বলো তোমার এখন কেমন লাগছে?

মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।কথা ঘুরাতেই এমন কিছু বলা।

মেঘের মাঃআমি একদম ঠিক আছি।

শ্রাবণঃমা এখন একটু রেস্ট নিন নয়তো আবার শরীর খারাপ করবে।

মেঘের মাঃঠিক আছে।

শ্রাবণঃমেঘ চলো আমরা বাসায় যাই মামনি অপেক্ষা করছে।

মেঘঃস্যার আমি এখানেই থাকি মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

মেঘের মাঃকিন্তু মা আজ তো তোদের বিয়ের প্রথম…

মেঘঃমা প্লিজ…যাই বলো আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না এটাই ফাইনাল।

মেঘ বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।

মেঘের মাঃপাগল মেয়ে।

মেঘঃতোমার ই তো।

শ্রাবণঃমা আমি মামনিকে কল করে বলছি মেঘ আসতে চাইছে না।

মেঘের মাঃনা বাবা মেঘ যাবে।আজ মাত্র ওর বিয়ে হলো।আজ তো ওর বরের বাড়িতে থাকার কথা তাছাড়া আমি এখন ভালো আছি।তোমরা সকালে এসো রাতে তো দুজন থাকতে পারবে না।এটা Hospital।এখানে কি এতলোক জন Allow করবে।

মেঘঃকিন্তু মা আমি তোমাকে ছাড়া।

মেঘের মাঃরাতটাই তো।সকালে আসিস অনেক সময় আড্ডা দিবো মা মেয়ে মিলে।এবার যা তোর সংসার সাজানোর প্লেন কর।

মেঘঃমা….(মেঘ কান্নায় ভেঙে পরে।মায়ের কথা শুনে মেঘের কান্নার বেগ যেন বাড়তেই থাকে)

মেঘের মাঃকাঁদে না মা।আজ যে সুখের দিন।আজকের দিনে কাঁদতে নেই।(মেঘের চোখের পানি মুছে ওর কপালে চুমু দিলেন)

মেঘঃমা আমি যাব না।

মেঘের মাঃমায়ের কথা শুনতে হয়।আর তোর শ্বাশুড়ি মা তো অপেক্ষা করছে তোদের জন্য।

মেঘঃতাতে কি হয়েছে?

মেঘের মাঃশ্রাবণ ওকে নিয়ে যাও তো বাবা।

মেঘঃমা তুমি এমন করছো কেনো?

মেঘের মাঃপাগলি মেয়ে।নিজের বরের বাড়ি যাবি না এখানে থাকবি সেটা হয় নাকি।

শ্রাবণঃও খুব জেদি মা আমার একটা কথাও শুনে না বকা দিন তো একটু।

মেঘ রাগে কটমট করে শ্রাবণের দিকে তাকায়।

শ্রাবণঃএইভাবে তাকিয়ো না মা বকা দিবে।

মেঘের মাঃঅনু কি শুরু করলি তুই যাবি ওর সাথে।

মেঘঃযাচ্ছি তো।নিজের মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইকে প্রায়োরিটি দিচ্ছো।তুমি খুব পঁচা।

মেঘ রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

মেঘের মাঃতোমার কাছে একটা অনুরোধ বাবা।

শ্রাবণঃছি মা অনুরোধ কেনো বলছেন বলুন না আপনি কি বলবেন?

মেঘের মাঃআমি জানি আমার হাতে সময় নেই।আমি যখন থাকবো না ওকে দেখে রেখো বাবা।আমি চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে।এটা একটা সন্তানের কাছে তার মায়ের অনুরোধ।(শ্রাবণের হাত ধরে)

শ্রাবণঃমা আমি আপনাকে আগেই সব বলেছি।আপনি একদম ভাববেন না।মেঘের দায়িত্ব যখন আমি নিয়েছি তখন ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব ও আমার আজ হোক কাল হোক ও আমার হবেই।হ্যা এটা ঠিক যে মেঘ আগে একজনকে ভালোবাসতো।হয়তো সে থাকলে আজ মেঘ আমার হতো না।মা আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ থেকে মেঘকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।একফোঁটা কষ্ট ও ওকে স্পর্শ করবে না মা।শুধু আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন আমার সর্বস্ব দিয়ে মেঘকে ভালো রাখতে পারি।

মেঘের মাঃআমি দোয়া করি একদিন তোমার ভালোবাসার জয় হবেই।আমার মেয়েটা যে কবে বুঝবে কে জানে?

শ্রাবণঃচিন্তা করবেন না।বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন ও চাইলেও এই পবিত্র বন্ধর থেকে মুক্ত হতে পারবে না।আমি ওকে মুক্তি দেবো না।সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে আমাদের মাঝে।মামনি তো ওকে চোখে হারায়।

মেঘের মাঃতোমার মতো একজনের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে পেরেছি এর থেকে বড় সুখ আমার কাছে আর কি হতে পারে।

শ্রাবণঃআসি মা মেঘ গাড়িতে একা।

মেঘের মাঃঠিক আছে বাবা এসো।

শ্রাবণ গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ চুপচাপ বসে আসে কেউ কোনো কথা বলছে না।ভাগ্যিস মেঘ তখন কেবিনে ছিলো না নইলে সব শুনে ফেলতো মেয়েটা।এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে আসে।গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যায়।

মেঘ ফ্রেশ হতে যায়। শ্রাবণ ওকে আলমারি থেকে কিছু শাড়ি বের করে দেয়।আর একটা শাড়ি পরে নিতে বলে।মেঘ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্নাঘরে যায়।

তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ।

চলবে………….

চুক্তির_বউ  ১ম_পর্ব

0

চুক্তির_বউ
১ম_পর্ব
টক টক টক টক টক,,,,,,,,
মেঘঃMay I come I’m sir .
শ্রাবণঃYes,Please come.
মেঘঃSir কেনো ডেকেছেন আমাকে?
শ্রাবণঃহ্যা বলছি বসো এখানে।
মেঘঃOh Sure.(বসতে বসতে)
শ্রাবণঃশুনলাম তোমার টাকার দরকার।কথাটা কি সত্যি?
মেঘঃআসলে স্যার…
শ্রাবণঃসত্যি কি না সেটা বলো।
মেঘঃহ্যা স্যার টাকা দরকার।
শ্রাবণঃকত টাকা দরকার?
মেঘঃপ্রায় দশ লাখের মতো।
শ্রাবণঃটাকা টা আমি তোমাকে দেবো।
মেঘঃআপনি কেনো আমাকে এতোগুলো টাকা দিবেন?তাছাড়া এতো টাকা আমি আপনার থেকে নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃটাকা তো খুব ইম্পরট্যান্ট তোমার কাছে।
মেঘঃহ্যা ইম্পরট্যান্ট।কিন্তু আমি আপনার থেকে টাকা টা নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃটাকা তো আমি তোমাকে এমনি এমনি দিবো না,
মেঘঃতাহলে কেনো দিবেন টাকা?
শ্রাবণঃআমার একটা কাজ তোমাকে করে দিতে হবে,
মেঘঃকি এমন কাজ যে যার বিনিময়ে আপনি আমাকে এতোগুলো টাকা দিবেন?
শ্রাবণঃসেটা কিছুক্ষণ পর বলবো।এখন বলো টাকা টা নিবে কি না।
মেঘঃস্যার টাকা আমার দরকার কিন্তু আমি সেটা এমনি এমনি নিতে পারবো না।কি কাজ আর সেটা কতোটা ইম্পরট্যান্ট আমাকে জানতে হবে না হয় টাকা আমি নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃতাহলে তোমার মা কে বাঁচাবে কিভাবে যদি টাকা জোগাড় না হয়।
মেঘঃআপনি কিভাবে জানেন আমার মায়ের ব্যাপারে?(অনেকটা অবাক হয়ে)
শ্রাবণঃসেটা তোমার দেখার বিষয় না।এখন দেখো তুমি কি করবে?
মেঘঃকি কাজ করতে হবে বলুন?
শ্রাবণঃএকটা Agreement পেপারে সই করতে হবে।
মেঘঃকিসের এগ্রিমেন্ট?
শ্রাবণঃবিয়ের।
মেঘঃমানে…..(অনেকটা ধাক্কা খায় মেঘ)
শ্রাবণঃমানে হলো একটা বিয়ের এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করবে তাহলে আমি তোমাকে টাকা টা দিবো।এগ্রিমেন্ট হবে এক বছরের একবছর পর তুমি তোমার পথ দেখবে আমি আমার পথ।ক্লিয়ার…….
মেঘঃসরি স্যার।(মেঘ উঠে গেলো)
শ্রাবণঃভেবে দেখো সময় মাত্র চব্বিশ ঘন্টা।
মেঘ কিছু না বলে নিজের ডেস্ক এ বসে ভাবতে থাকে।ডাঃ বলেছে যেভাবে হোক টাকা টা জোগাড় করতে নয়তো তাদের আর কিছু করার থাকবে না।মা কে তো বাঁচাতেই হবে যেভাবেই হোক প্রয়োজনে নিজেকে মেরে ফেলে হলেও মায়ের ট্রিটমেন্ট আমি করাবো কিন্তু স্যার মায়ের খুঁজ পেলেন কিভাবে? আর এগ্রিমেন্ট পেপার ই বা কেনো?বিয়ে যদি করতে না চান তাহলে বিয়ের নাটক কেনো?জানতে হবে আসল রহস্য টা কি?
পিয়ালিঃকি রে মেঘ কি ভাবছিস?
মেঘঃঅন্যমনস্ক….
পিয়ালিঃমেঘ কি ভাবছিস বলবি তো?
মেঘঃহুম হ্যা পিয়ালি তুই কি বলবি বল?
পিয়ালিঃবলবি তো তুই।
মেঘঃমানে কি বলবো আমি?
পিয়ালিঃতোকে স্যারের সাথে কথা বলতে দেখলাম কিছু হয়েছে।
মেঘঃনা……
পিয়ালিঃতাহলে কি এতো ভাবছিস?
মেঘঃতুই তো জানিস মা ছাড়া আর কেউ নেই আমার আজ যদি সেই মাকেই না বাঁচাতে পারি তাহলে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।যে মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছে নিজের সুখ না দেখে আমার সুখের কথা ভেবেছে আজ সে মায়ের মৃত্যু কিভাবে নিজের চোখে দেখি বলতে পারিস।
পিয়ালিঃমন খারাপ করিস না কিছু একটা উপায় নিশ্চয় পাওয়া যাবে।
মেঘঃহুম……
মেঘ সারারাত ঘুমোতে পারেনি।কিভাবে ঘুমাবে মা যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে তাহলে মেয়ে কিভাবে ভালো থাকে।
রাতটা কোনোভাবে পার করে মেঘ।সকালে অফিসে গিয়ে শ্রাবণের সাথে দেখা করতে গেলো।
মেঘঃস্যার আসবো।
শ্রাবণঃআরে মেঘ তুমি কি ব্যাপার?আজ নিজেই এলে।Any Problem?
মেঘঃসমস্যা তো একটাই।
শ্রাবণঃতারমানে আমার প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি তুমি তাইতো।
মেঘঃআর কোনো অপশন কি নেই?
শ্রাবণঃনা এইটাই একমাত্র অপশন।লাইফ তোমার।মা ও তোমার সিদ্ধান্ত ও তোমার দেখো কি করবে।
মেঘঃআমি রাজি।
শ্রাবণঃগুড….আমি জানতাম তুমি এই প্রস্তাব ফেলতে পারবে না।
মেঘঃস্যার টাকা টা আজই দরকার।
শ্রাবণঃহ্যা…টাকা আজই দিবো আর বিয়েটা ও আজই হবে।
মেঘঃকিন্তু স্যার…..
শ্রাবণঃকোনো কিন্তু না এসো আমার সাথে।
কোনো প্রশ্ন না। যেখানে যাবো সাথে তুমি ও যাচ্ছ আর হ্যা ভয় পেয়ো না তোমার মায়ের ট্রিটমেন্ট এর টাকা আমি দিচ্ছি এটাই ফাইনাল।
মেঘঃThank You Sir…
শ্রাবণঃএসব না বললেও চলবে।এসো তো আগে।
শ্রাবণ মেঘকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসালো তারপর নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করে।
মেঘঃআমরা কোথায় যাচ্ছি?
শ্রাবণঃগেলে বুঝতে পারবে এতো প্রশ্ন করো কেনো তুমি?
মেঘঃনা স্যার এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম।
তারপর মেঘকে নিয়ে একটা বাড়ির ভেতরে ডোকে,মেঘ চারিদিকে তাকিয়ে আছে এটা বাড়ি না রাজপ্রাসাদ।এতো সুন্দর বাড়ি কারো হয় নাকি।
শ্রাবণের সাথে মেঘ ভেতরে গেলো,ভয়ে মেঘের গলার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু একটা কথাও মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
শ্রাবণঃমামনি,মামনি দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?
একটু পর হুইল চেয়ারে বসে একজন মহিলা এগিয়ে এলেন শ্রাবণের কাছে।হ্যা ওনি শ্রাবণের মা।একটা এক্সিডেন্ট এর পর থেকে ওনি পেরালাইজড হয়ে যান সেই থেকে হাটাচলা করতে পারেন না।
শ্রাবণের মাঃএই তো শ্রাবণ আমি।এতো চিৎকার করে ডাকছিস কেনো?
শ্রাবণঃকাকে নিয়ে এসেছি দেখো?
শ্রাবণের মাঃবাহহ খুব সুন্দর তো।একি সেই মেয়ে যাকে তুই?
শ্রাবণঃমামনি, মামনি শোণ আজ কে ওর আমার বিয়ে তুমি সব আয়োজন করো আমি একটু আসছি ওকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
শ্রাবণের মাঃএতো দিনে একটা কাজের মতো কাজ করতে যাচ্ছিস।ঠিক আছে আমি তোর উকিল আংকেল কে আসতে বলি সব কাগজ পত্র রেডি করে রাখি তোরা শপিং করে আয়।
শ্রাবণঃওকে।
শ্রাবণের মাঃএদিকে একটু আসবে মা।
মহিলার মুখে মা ডাক শুনে মেঘের ভেতর কেমন যেন মুচড় দিয়ে উঠলো।মেঘ ওনার পায়ের কাছে গিয়ে বসে হাতে হাত রাখে।
শ্রাবণের মাঃআজ থেকে আমার এই বাদর ছেলেটার সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার।ওকে দেখে রাখবে কেমন।আমার ছেলের পছন্দ যে এতো সুন্দর আমার জানা ছিলোনা।এই বলে ওনি অনুর কপালে একটা চুমু দিলেন।
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।কি বললেন ওনি এটা।মেঘের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো।শ্রাবণ সোজা সাপ্টা জবাব দিলো।
শ্রাবণঃএভাবে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি এসো শপিং করতে হবে।
মেঘ রিতিমতো ভয়ে পেয়ে গেলো শ্রাবণের এরকম কথায়।কি আজব লোক রে বাবা,নিজের
স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছে।নাকি ওনার এই বিয়ের পিছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।কে জানে কি চান ওনি।ওনার মতিগতি বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেননি মনে হয়।যাই হোক এতো ভেবে কাজ নেই।এখন মা কে বাঁচানোর এই একটাই উপায় যেভাবে হোক মা কে আমার চাই ই চাই।
দুজনে টুকটাক শপিং করে বাসায় আসে।শ্রাবণ মেঘকে একটা শাড়ি পরে রেডি হতে বলে।একটুপর কাজী আসবে তার পর থেকেই মেঘের আগামী এক বছর চুক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে।একটা সম্পর্ক কি চুক্তি দিয়ে শুরু হয় মেঘ ভাবছে এগুলো শ্রাবণের কথা হুশ ফিরে।
শ্রাবণঃএই যে হ্যালো তাড়াতাড়ি রেডি হও এক্ষুণি কাজী এসে যাবে।
মেঘঃস্যার আমার মা।
শ্রাবণঃতোমার মায়ের অপারেশন আজকে রাতেই হবে।তুমি সেখানে যাবে কিন্তু আমাদের বিয়েটা আগে হোক তারপর।
মেঘঃঅপারেশন এর টাকা।
শ্রাবণঃওটা অলরেডি জমা দেওয়া হয়ে গেছে আর ডাক্তারের সাথে আমার কথাও হয়েছে।
মেঘঃওহহহ……
শ্রাবণঃতুমি রেডি হয়ে এসো আমি নিচে অপেক্ষা করছি।
মেঘঃহুম….মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো….
শ্রাবণঃওহ হ্যা একটা কাজ বাকি।
শ্রাবণ আলমারি থেকে একটা কাগজ বের করে মেঘের হাতে দিলো।
মেঘঃএটা কি স্যার?
শ্রাবণঃএটাই এগ্রিমেন্ট পেপার।
মেঘ হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো।শ্রাবণ ওকে থামিয়ে দেয়।
শ্রাবণঃএখন এটা পড়ে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি সাইন করো।
মেঘঃএক্ষুণি সাইন করতে হবে।
শ্রাবণঃহ্যা এক্ষুণি।তাড়াতাড়ি করো।
মেঘ ভয়ে ভয়ে কলম তা হাতে তুলে নিলো।
হ্যা আল্লাহ বাঁচার কি কোনো উপায় নেই শেষ পর্যন্ত একটা এগ্রিমেন্ট কাগজে সই করে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে।কিন্তু যদি শান এটা জানে তাহলে ওকে কি জবাব দেবো।অবশ্য ওর আর এখন আমার লাইফ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই যদি থাকতো তাহলে এভাবে….
ভাবতে ভাবতে মেঘের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
শ্রাবণঃএতো ভেবে লাভ নেই যা হবে ভালোই হবে তোমার মাকে তো ফিরে পাবে।
মাকে বাঁচাতে আজ নিজের জীবনকে একটা চুক্তির ভেতরে নিয়ে নিলাম।একটা সাক্ষর এর মাধ্যমে আমি আমার সব হারাতে যাচ্ছি তবে যাই হোক এর জন্য তো আমি মাকে ফিরে পাবো এটাই আমার কাছে অনেক।
হুট করেই মেঘ কাগজে সই করে কাগজ টা শ্রাবণের হাতে দিলো।শ্রাবণ সেটার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো তারপর ওটা আলমারি তে রেখে মেঘ কে নিচে আসতে বলে নিজে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মেঘ খুব জুড়ে কান্না করতে লাগলো।আজ সব শেষ হয়ে গেলো সব।
চলবে…….

মন ফড়িং ❤ ১৬. 

3
মন ফড়িং ❤
১৬.
– সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে আসার আগে আমাকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?
রশীদ সাহেব বললেন
– অবশ্যই।
রিতা তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলেন।বেশ কয়েক মাস পর তার পুরাতন রোগ টা ধরা পড়েছে। মাথার ভেতর কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। হাত পা কাঁপে। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকলে হাত পা  কাঁপা টা কমে কিন্তু মাথার সমস্যা টা যেতে একদিনের বেশি সময় নেয়।
নিজের উপরই বিরক্ত হলেন রিতা। অসুস্থ হওয়াএ আর সময় পেলো না।
চুপচাপ শুয়ে রইলেন। ঘুমানো যাবেনা, তাহলে মেহমানদের খাবার,পানি গুছিয়ে দেয়ার কেউই নেই। লিলিকে দিয়ে ওই আশা করা ভুল, চরম ভুল। ওদিকে অদ্রি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাতে ইয়া বড় একটা ফোসকা বানিয়ে এখন পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে।
ঘুম ভাঙলেও সমস্যা। ওই রুমে কেনো থাকতে দেয়া হলো?অদ্রির এই  প্রশ্নের উত্তরে সে কী বলবে? নতুন মেহমানকে তো আর রাগ শোনানো যায়না। সব দায় তার কাঁধে নিতে হবে।
নিদ্র রুমে ঢুকতেই অবাক হলো। সবকিছু ঠিক যেমন সে রেখে গিয়েছিলো তেমনই আছে। দেয়ালের নকশা, রঙ সে যেমন করেছিলো ঠিক তেমনই আছে। বিছানার চাদরের রঙটা খুব সুন্দর। হালকা বেগুনি রঙের মধ্যে কস্তুরি ফুলের নকশা। নিশ্চয়ই অদ্রির পছন্দ। মেয়েটা সবসময় হালকা রঙ পছন্দ করে।
অদ্রি কী করছে? আছে, তার রুমে চুপচাপ বসে বা জানালা থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নিদ্র অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা আপসানো, একটু ধাক্কা দেয়াতে পুরোটা খুলে গেলো।
নিদ্র নিঃশব্দে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দিলো।
হাতের তোয়ালে টা পাশে রাখা চেয়ারে রেখে দিলো। অদ্রি ঘুমুচ্ছে, কে বলবে ঘুমুচ্ছে? ঘুমালে গায়ের জামা কাপড় ঠিক থাকেনা বা এলোমেলো থাকে। কিন্তু এই মেয়ের হয়েছে উল্টো।
বুকের উপর ওড়নাটাও একদম ভালোভাবে আছে। ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে বালিশের উপরে। ডান হাতে কালসিটে দাগ আর ফোসকা দেখে নিদ্র অনুমান করলো, হয়তোবা গরম তেলে পুড়ে গেছে। নিশ্বাস পড়ছে ছন্দে ছন্দে। অদ্রি একটু নড়ে উঠলো আর তখনই নিদ্রের ঘোর কাটলো।
নিদ্র মুচকি হেসে অদ্রির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত তোয়ালে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বাসায় নতুন একজন মানুষ আছে, সে কোনোভাবে দেখে ফেললে বিপদ।
বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। প্রথম চুমুর অনুভূতি তাকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। কী মনে করে যেন কাজটা সে করে ফেললো।
তার কি ভাবা উচিৎ ছিলো অন্ততপক্ষে একবার?
অদ্রি কি বুঝতে পেরেছে? না, বুঝতে পারলে ও ওইভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারতো না। নিশ্বাসের উঠানামা তে বোঝা যেত সে জেগে আছে।
নিশ্বাসের উঠানামা ধীরে ধীরে যদি হয় তখন বোঝা যায় সে ঘুমুচ্ছে।
কীসব ভাবছে সে? নিজেকে বিজয়ী মনে হচ্ছে। অনেক বড়সড় যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছে। সামান্য একটা চুমু কিন্তু অনুভূতিটা অসামান্য।
তবে অনুভূতিটা শুধু সেই পেয়েছে, অদ্রি তো ঘুমুচ্ছিলো।
নাজমুল সাহেব তার মাকে ডেকে বললেন
– মা, দেখো তো খাবার আছে কিনা?
– দেখছি।
আসমা জামান বসার ঘরে রশীদ সাহেবকে খবরের কাগজ পড়তে দেখলেন। বসার ঘর মানে ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।
রশীদ সাহেবকে বললেন
– রশীদ নাজমুল খেতে চাচ্ছে।
– আচ্ছা আপনারা টেবিলে বসুন। আমি রিতা আপাকে ডেকে আনি।
রিতা নাজমুল সাহেবের প্লেটে ডাল বেড়ে দিচ্ছিলেন তখন নিদ্র নিচে নেমে আসলো।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রশীদ সাহেবকে বললেন
– চাচা, লিলি টা কই?
– আছে ওর রুমে।
নিদ্র তার সামনে রাখা প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে বললো
– চাচা, ভাজি টাজি আছে নাকি?
রিতা বললেন
– হ্যাঁ আছে।
আসমা জামান রিতাকে জিজ্ঞেস করলেন
– আজকে কি শুটকি রান্না হয়েছে নাকি?
– হ্যাঁ।
– গন্ধটা কতদিন পর পেলাম। আমি আজকে শুধু শুটকি দিয়েই খাবো।
সন্ধ্যার দিকে অদ্রির ঘুম ভাঙলো। আজকে সে খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে। ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই সে কপালে হাত দিয়ে হেসে ফেললো। স্বপ্নটা কিছুটা এমন ছিলো – নিদ্র চুল মুছতে মুছতে তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। তার কিছুক্ষণ পর তার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলো। অসম্ভব সুন্দর স্বপ্ন, দিবাস্বপ্ন যা পূরণ হবার নয়।
 ডান হাতটার উপর ভর করে শোয়া থেকে উঠতে গিয়ে অদ্রির ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। পুরো হাত ব্যথা।
বাম হাতের উপর ভর করেই তাকে উঠতে হলো।
মুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসলো। রিতাকে সোফার উপর বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– খেয়েছেন আপনি?
– না, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
– আপনি খেয়ে নিতেন। শুধু শুধু কষ্ট করতে হলো আপনাকে।
– তুমি নিজ হাতে রান্না করেছো। তাই ভাবলাম একসাথে খাই।
টেবিলে খাবার দেখে অদ্রি জিজ্ঞেস করলো
– লিলি একা এতো খাবার খেলো কীভাবে? নাকি রশীদ চাচা এসেছিলেন?
– রশীদ সাহেব তিনজন মেহমান নিয়ে এসেছেন। তারাই এখানে এসে দুপুরের খাবার খেয়েছেন।
– তারা চলে গেছে নাকি?
– না, মনে হয় থাকবেন।
– রাতের যোগ্য খাবার আছে নাকি রান্না করতে হবে?
– রান্না করতে হবে।
– লিলিকে সাথে নিও হেল্পার হিসেবে।
– রাজি হবে?
– কেনো হবেনা? চামচ হলে সুবিধা হতো খেতে। পুরো ডান হাত নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।
– নিষেধ করেছিলাম।
খাওয়া শেষ হলে অদ্রি দোতলায় উঠে চলে যাচ্ছিলো। রিতা বললেন
– একটা কথা বলার ছিলো।
অদ্রি থেমে গিয়ে বললো
– বলুন।
– তিনজনের একজন মেহমান ওই রুমটাতে উঠেছে। সে অন্য রুমে নাকি যাবেনা।
– কোন রুম খালা মনি?
– দক্ষিণের কোণার দিকের রুমটা।
– আচ্ছা আমি দেখছি।
অদ্রির মেজাজ বিগড়ে গেলো। ওই রুম অন্য কারো জন্যে না। দক্ষিণের দিকে আরো একটা রুম আছে। পারলে ওখানে উঠুক, কিন্তু ওই রুমে না।
দরজায় কয়েকটা জোরে টোকা দিয়ে অদ্রি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
দরজা খুলে নিদ্র মুচকি হেসে বললো
– ম্যাডাম, এতো অস্থিরতা কীসের? একটু ঘুমাবো আর আপনি দরজা প্রায় ভেঙে ফেলার প্ল্যান পূরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
অদ্রি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিদ্রের দিকে। তার দু চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
সত্যিই কি নিদ্র?
স্বপ্ন দেখছে না তো সে???
চলবে……!
© Maria Kabir

sanam teri kasam part 11

0

@@ sanam teri kasam @@
.
পর্ব : (১১/শেষ)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
–চুপ ফাজিল। (আম্মু)
.
আমাকে পাঠাচ্ছে ভালো কথা এই উটের বাচ্ছা নূরী কে
সাথে পাঠাচ্ছে কেনো।এমনিতে নূরীর জন্য শান্তি নাই
যখন তখন ধমক দেয়, মারার জন্য তাড়া করে। ওখানে তো
আমাকে একলা পাবে তখন কি করবে অাল্লাহ জানে।
নূরী কে আমার একটুও বিস্বাস হয় না যখন তখন যা খুশি
করতে পারে।
.
কি আর করা। ইচ্ছে না থাকার পরও নূরী কে নিয়ে ঢাকায়
আসতে হলো।
সবকিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখায় কোন প্রবলেম
হলো না।
জ্যামে পড়ে নতুন বাসায় এসে পৌছাতে পৌছাতে রাত ২
টা বাজলো।
বাসায় ডুকে মাথা খারাপ হয়ে গেলো ইচ্ছে করছে নূরী
কে ঘুশি মেরে মেরে ভর্তা বানিয়ে দিই।
এত ঘন্টা ধরে জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি, বাসায়
ডুকে একটা ঘুম দিবো তা আর হলো কোথায়।সব দোষ নূরীর
আব্বু বলছিলো সবকিছু ঠিক করে রাখবে কিন্তু নূরীর জন্য
কোন কিছুই হলো না ও যদি বারন না করতো তাহলে
ঘুমাতে পারতাম।
ক্ষিদেও লাগছে খুব, পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।
একটা বিছানার চাদর নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।জানি
ক্ষিদের কারনে ঘুম হবে না।এদিকে আসার পর থেকে
দেখছি নূরী অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকায়। এতদিন
হয়ে গেলো তবুও এখনো আমি নূরীর চোঁখের বাসা বুঝলাম
না।
.
–কি রে কি ভাবছিস।(নূরী)
.
–ইচ্ছে করছে তোরে পিটাই।(আমি)
.
–কেনো আমি কি করছি।(নূরী)
.
–কেনো তুই জানিস না কি করছিস।তোর জন্য আমাকে
নিচে শুতে হচ্ছে আজ।আমাকে ডিস্টার্ব করবি না আমি
ঘুমাবো।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা আমি খেয়ে নিই।(নূরী)
.
–তুই খাবার ফেলি কোথায়। (আমি)
.
–কেনো আসার সময় তো শাশুড়ি মা দিয়েছিলো তোর
মনে নাই।(নূরী)
.
–তোরে দিছে তুই খা আমি খাবো না।(আমি)
.
–তুই না খেলে আমার কি আমি খেয়ে নিই।(নূরী)
.
জানি পাগলিটা খাবে না আমি না খেলে।দেখি না কি
হয়। ক্ষিদের কারনে ঘুম হচ্ছে না তবুও চুপ করে শুয়ে আছি।
.
–আদর খাবি না তুই।(নূরী)
.
–না খাবো না।তুই খা।(আমি)
.
–তুই জানিস না, তুই না খেলে আমি খেতে পারি না।খু্ব
ক্ষিদে পেয়েছে আর পারছি না সহ্য করতে।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আর কাঁদতে হবে না,আমিও খাবো।
(আমি)
.
–আমাকে খাইয়ে দিবি না।(নূরী)
.
–ঠিক আছে খাইয়ে দিবো চল,আর ছলনা করতে হবে না।
(আমি)
.
–আমি ছলনা করছি।(নূরী)
.
–আরে বাবা ভুল হয়ে গেছে এবার খেয়ে নেয় তো
পাগলি।খুব ঘুম পাচ্ছে। (আমি)
.
খাওয়া শেষ করতে করতে ৩:৩০ বাজলো।রাতও শেষ হয়ে
আসলো আর এখন যদি না ঘুমাই তাহলে কখন ঘুমাবো।
শুয়েছি মাএ সাথে সাথে নূরী এসে আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো। মনে হয় এতক্ষন নূরী এ সুযোগটার
অপেক্ষায় ছিলো।
.
৯ টার দিক ঘুম ভাঙ্গলো।তখনও নূরী ঘুমাচ্ছে। ঘুমানো
অবস্থায় যে মেয়েদের এত সুন্দর লাগে নূরী কে না
দেখলে বুঝতে পারতাম না।ইকবাল ভাইয়ের কাছে
শুনেছিলাম ঘুমানো অবস্থায় নাকি একটি মেয়ের
সৌন্দর্য ফুটে উঠে।আজ ইকবাল ভাইয়ের কথাটি সত্যি
মনে হচ্ছে।বেহায়া চোঁখ দুটো যেনো সরতে চাইছে না
নূরীর উপর থেকে।
নূরী তো আমার।নূরী কে তো আমি ভালোবাসি, হয়তো
কখনো মুখ ফুটে বলিনি এই যা।মুখে বলিনি বলে কি নূরী
কে ভালোবাসি না নাকি আমি তো পারবো না বাঁচতে
নূরী কে ছাড়া।
.
না এবার যেতে হবে প্রায় ১০ টা বাজতে চললো বাইরে
থেকে কিছু নিয়ে আসি পেটে মনে হয় ধর্মঘট করছে।
.
দুজনে নাস্তা করে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করলাম।দুপুরের
মধ্যে কাজ শেষ করে বাইরে গিয়ে খাবার নিয়ে
আসলাম। গোসল শেষ করে এসে দেখি নূরী খাবার নিয়ে
বসে আছে।খাওয়া শেষ করে দুজনে একসাথে বাইরে বের
হলাম।কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটা করার আছে।নূরী
আবার বাইরের খাবার খেতে পারে না।
.
কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম।
অফিস শেষ করে বাসায় আসি আবার সকালে অফিসে
যাই।পাগলিটা সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে কখন
আসবো আমি।
এতদিন হয়ে গেলো পাগলিটা কে নিয়ে কোথাও ঘুরতে
বের হইনি।পাগলিটা কে অালাদা করে কখনো সময় দিই
নাই।জানি পাগলিটার কোন অভিযোগ নেই আমার উপর
তবুও আমার কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছিলো।
.
আব্বু আম্মু, বন্ধুরা সবাই আসলো। আমাদের ঘুছিয়ে নেয়া
সংসার টা দেখতে।আব্বু আম্মু আসার পর থেকে দেখছি
নূরীর সময় হয় না আমার সাথে কথা বলার। সবসময় এটা ওটা
নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নূরী যে প্রেগন্যান্ট সেটা বুঝতে চায়
না। ওকে কতবার যে বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু সে
কিছুতেই বুঝতে চায়।ও বুঝতে চায় না ওর তলপেটে একটু
একটু করে বেড়ে উঠছে আমাদের সন্তান।
.
–নূরী তুই এমন কেনো।বলতো।তুই যদি এত দৌড়াদৌড়ি
করিস তাহলে আমাদের বাবুটার কি হবে।(আমি)
.
–তুই কি করে জানিস বাবু হবে। বাবুনিও হতে পারে।(নূরী)
.
–আচ্ছা যা ভুল হয়েছে, আমাদের সন্তান।(আমি)
.
–আমাদের নবাগত সন্তানের নাম কি রাখা যায় বলবো।
(নূরী)
.
–মেয়ে হলে বৃষ্টি রাখবো বলে দিলাম।(আমি)
.
–বৃষ্টি কি তোর gf ছিলো।ছেলে হলে মেঘ রাখবো বলে
দিলাম তুই তখন কোন প্রকার বাধা দিতে পারবি না।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, এখন থেকে তুই যদি বেশি
দৌড়াদৌড়ি করিস তাহলে আজ থেকে তোর সাথে কোন
কথা নেই।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আর দৌড়াদৌড়ি করবো না,আমি আজ
থেকে বিছানা থেকে নামবো না। (নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে নামতে হবে না তোরে আমি আছি না
তোর সেবা করতে।(আমি)
.
–তুই গিয়ে তোর অফিসের সেবা কর,আমার জন্য আমার
শাশুড়ি আছে না।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে,এখন ঘুমা।(আমি)
.
১০ এপ্রিল আজকে ওর ডেলিভারির তারিখ।পাগলিটার
তলপেটে বেড়ে উঠা নবজাতক আজকে পৃথিবীর মুখ
দেখবে।পৃথিবীতে আসবে আমার আর নূরীর সন্তান। এই
দিনটার জন্য ১০ মাস ১০ দিন দরে অপেক্ষা করছি।
পাগলিটা আমাদের সন্তানের নাম ঠিক করে রাখছে,
মেঘ।যদি মেয়ে হয় তাহলে বৃষ্টি।
.
অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়ার আগে শুধু একটি কথাই
বলছিলো পাগলিটা, “আমি যদি ফিরে না আসি তোর
বুকে তাহলে তুই আমাদের সন্তান কে দেখে রাখিস আর
প্রতিদিন আমার কবরে একটি করে গোলাপ রাখবি”।
.
সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা
করছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।আল্লাহ যেনো আমার
নূরী কে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়।আমার আর কিছুই চাই
না আমি আমার নূরী কে চাই।আল্লাহ তুমি আমার নূরী কে
ফিরিয়ে দাও।
.
প্রায় ৩ ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো।
সবাই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছি, ডাক্তার
বললো,” আমরা অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু মা মেয়ে
কাউকে বাঁচাতে পারিনি”।
.
আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কি করবো
আমি বুঝতেছি না।আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটি
পৃথিবীতে আর নেই এটা যেনো আমি বিস্বাস করতে
পারছি না। দু-চোঁখ দিয়ে অবিরাম জলের ধারা বয়ে
যাচ্ছে।আমি যেনো সব শক্তি হারিয়ে ফেলছি।
.
মা মেয়ে দুজনের করবে প্রতিদিন একটা করে গোলাপ
রাখি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে।
ওরা তো চলে গিয়ে মুক্ত হয়ে গেছে। ভালো থেকে নূরী
ভালো তুমি আমাকে একা করে দিয়ে।
.
.
.
★★★সমাপ্ত ★★★

sanam teri kasam

0

@@ sanam teri kasam @@

.
পর্ব : (১০)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
দূর ভাল্লাগে না।ঘুমের ঘোরে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ইচ্ছে করছে নিজের কপাল নিজেই ফাটিয়ে দিই।
অনেক্ষন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরলাম থুক্কু
শ্বশুর বাড়ি ফিরলাম।বাড়িতে ডুকে আব্বুর অগ্নি মূর্তি
দেখতে পেলাম।বাপরে আমি বাড়ি থেকে বের হলে
যেনো সব বিপদ ঘটে।আজকে আবার কি হলো।
.
–কিরে তোর কোথায় ছিলি এতক্ষন।।(নীরব)
.
–কেনো একটু বাইরে গিয়েছিলাম এখানে বসে বসে কি
করবো।(আমি)
.
–এখন গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। (নীরব)
.
–যাচ্ছি যা,তবে একটা কথা বলে যা আব্বু এত রেগে
আছে কেনো।(আমি)
.
–তোরে যদি হাতের কাছে পেতো তখন বুঝিয়ে দিতো
কেনো এত রেগে আছে।(নীরব)
.
–আরে কি হয়েছে সেটা তো বলবি।(আমি)
.
–তোর মোবাইলে একটা মেয়ে কল করছিলো।তোর বউ
সেটা আঙ্কেলের কানে তুলছে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে।
(নীরব)
.
–ওহহহ এই ব্যাপার। ভাই আমারে তোরা একটা রাক্ষসীর
হাতে তুলে দিয়েছিস।এই মাইয়া আমারে একদিন না
একদিন উপরে পাঠিয়ে দিবে।(আমি)
.
–বাজে বকিস না।ওর মতো মেয়ে হয় না।ও। তোরে খুব
ভালোবাসে।ও তোর জন্য মরতেও পারে।(নীরব)
.
–হিহিহিহিহিহি মরতে তো আমিও পারি তবে
ভালোবাসার জন্য না।(আমি)
.
–দাঁত কেলানো বন্ধ করে রেডি হয়ে নেয় না হলে
অাঙ্কেল তোরে উপরে পাঠিয়ে দিবে।(নীরব)
.
ভ্যাগিস বেঁচে গেছি।সময়মত চলে এসেছি না হলে
আজকে কপালে দুঃখ ছিলো।কোন মেয়ে আবার আমাকে
ফোন দিবে।আমি তো কোন দিন কারো সাথে কৌতূহল
বসত কথা বলি নাই আর আজকে আমার নাম্বারে কল
দিলো।
কে জানে এর মাঝে কত শতাংশ মিথ্যা আছে।এক্ষুনি
গিয়ে দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।
.
–কি মশাই কেমন দিলাম।(নূরী)
.
—————–
.
— মোবাইল খুজছিস তাই তো।সেটা পাবি না।(নূরী)
.
–মোবাইল টা দেয় আমি দেখবো কে সে সৌভাগ্যভান
ব্যক্তি যে আমাকে ফোন দিলো।(আমি)
.
–তোর কি মনে হয় আমি তোরে মোবাইল দিবো। একটা
শর্তে মোবাইলটা দিতে পারি।(নূরী)
.
–কি শর্ত।কালকে এত শর্ত দেওয়ার পরেও আরো শর্ত
বাকি আছে তোর।(আমি)
.
–মোবাইল যদি চাস তাহলে ১০ বার কান ধরে উঠবস কর।
আর হ্যাঁ সকালে একটা ভুল করছিস সেটার অপরাধে ১০
মিনিট এক পায়ে দাড়িয়ে থাকবি কান ধরে।(নূরী)
.
–এই আমার মোবাইলের দরকার নাই।তোর শর্তেরর কোন
দরকার নাই।মোবাইল নিবো না শর্তও মানবো না।(আমি)
.
এখন আমি শিউর। শুধু শিউর না ১০০০% শিউর যে কেউ ফোন
দেয় নাই সব নূরীর কারসাজী। মাইয়াটারে ইচ্ছে করে
মাথার উপর থেকে ছেড়ে দিই।
.
রাতে খাবার পর বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম ভালো
লাগছিলো না।আমি যেখানে যাই না কেনো ১ দিন ১
রাতের বেশি থাকতে পারি না।বাড়ীতে আসার চেষ্টা
করেও ব্যর্থ হলাম।মন খারাপ করে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
নূরীর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে না এই মাইয়ার জন্য
বাড়ীতে যেতে পারি নাই।
বিছানায়র এক পাশে শুয়ে পড়লাম।ক্লান্ত থাকায়
বিছানায় পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম।
হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চোঁখ খুলে দেখি লাইট
জ্বলছে কিন্তু আমি তো লাইট অফ করে শুয়েছি।নূরী
দিয়েছে মনে হয় কিন্তু ও এত রাতে আলো জ্বালিয়ে কি
করবে।মাথাটা একটু ঘুরিয়ে দেখি নূরী তাকিয়ে আছে।
এবার বুঝতে কোন সমস্যা হলো না যে এটা নূরীর কাজ।
ইচ্ছে করছে চুলের মুঠি ধরে কিছুক্ষণ পিটাই।
ইচ্ছে থাকার পরও কিছু করলাম না ১০ টা না ৫ টা না
একটা মাএ বউ আমার।
.
–কিরে কথা বলবি না আমার সাথে।(নূরী)
.
–তোর সাথে কথা বলার কোন প্রশ্নই আসে না।তোর জন্য
আজকে বাড়ীতে যেতে পারি নাই সে দুঃখ ভুলতে
বসেছিলাম ঘুমিয়ে তুই ঘুমটাও নষ্ট করে দিলি। (আমি)
.
–আমার কি দোষ বল।আজ সারাদিন তুই আমার সাথে কথা
বলিস নাই,এখন আবার একদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ছিস যে
জন্য তোর বুকে মাথা রাখতে পারছিনা আমি। (নূরী)
.
–বুকে মাথা রাখতে পারছিস না তাই বলে আমার ঘুম
ভেঙ্গে দিবি।আহ্ কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম
মেয়েটি যেনো কিউটের বস্তা। (আমি)
.
–ওহহহ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে তোর ময় চায় না।
বিয়ের পরেও অন্য মেয়ে কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস।
আজকে এর একটা সমাধান করে তবেই ছাড়বো আমি।(নূরী)
.
–চুপচাপ ঘুমা বলছি নইলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।
(আমি)
.
নূরী আর কোন কথা বলেনি,চুপচাপ আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো।একটি বারও কোন প্রকার শব্দ করলো
না।যাক ভালোই হলো শান্তিতে তো ঘুমাতে পারবো।
.
নূরী আবার কি হলো।মেয়েটি সত্যি রহস্যময়। এই হাসি এই
কান্না।এতক্ষন শুয়েছিল চোঁখ বন্ধ করে আর আমি চোঁখ
বন্ধ করার সাথে সাথে কান্না শুরু করছে।
.
–নূরী কান্না বন্ধ কর বলছি।(আমি)
.
–……………
.
–কেনো কাঁদছিস বলতো।(আমি)
.
–………….
.
–এবার কিন্তু তোরে নিচে ফেলে দিবো।কান্না যদি না
থামাস।(আমি)
.
–……….
.
–নূরী আমার কিন্তু ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তুইতো টি-
শার্ট পুরোটা ভিজিয়ে ফেলছিস।(আমি)
.
মুখ তুলে একটু চাইলো আমার দিকে তারপর আবার কান্না
জুড়ে দিলো।বিরক্ত হয়ে গেছি নূরীর এমন অাচারনে।দূর
ভাল্লাগে না এইসব নেকামি।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নাক টানাটানি শুরু
হয়ে গেছে থুক্কু সর্দি শুরু হয়ে গেছে।সর্দি আমার একদম
পছন্দ না।সর্দি না হয়ে যদি জ্বর হতো সেটাই ভালো
হতো।
.
দেখতে দেখতে আমার আর নূরীর বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হলো।
রাগ, অভিমান, ঝগড়া করে চলে আমাদের দুজনের পথচলা।
বিয়ের ৬ মাস পর আব্বু আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়ার
সিকদান্ত নিয়েছে। আব্বু চায় আমি ঢাকাতে থেকে
আব্বুর আমাদের বিজনেস সামলাই ইমন আর আব্বু মিলে
এখানে (চিটাগাং) সামলাবে।
.
–সবকিছু রেডি করা আছে তোরা গিয়ে ওখানে উঠবি।
(আব্বু)
.
–আব্বু আমি বলি কি ইমন ওখানে চলে যাক। ও তো
অনেকদিন ধরে ঢাকাতে কাজ করছে ও ভালো ভাবে
সামলাতে পারবে। আমি না হয় এখানে সামলাবো।(আমি)
.
–না তা হবে না আমি যা বলছি তাই হবে।তোরা ঢাকাতে
যাবি।(আব্বু)
.
–আমরা মানে আমি তো একাই যাবো। (আমি)
.
–তোর বউ কোথায় যাবে নূরী কে সাথে নিয়ে যাবি।
বিয়ের পর তো কোন দিন মেয়েটি কে নিয়ে ঘুরতে বের
হয়েছিস বলে মনে হয় না।(আম্মু)
.
–তুমি আবার কখন আসলা এখানে , নূরীর গুনগান গাইতে।
(আমি)
.
–চুপ ফাজিল। (আম্মু)
.
.
চলবে

sanam teri kasam part 9

0

@@ sanam teri kasam @@
.
পর্ব : (৯)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
–তোর মতো ছোটখাটো একটা হাতির বাচ্ছা যদি আমার
বুকে মাথা রেখে ঘুমাস তাহলে তো আমি মরে যাবো।
আচ্ছা রাজি।(আমি)
.
–কি আমি হাতির বাচ্ছা। তার মানে আমার আব্বু আম্মু
হাতি।দাড়া তোরে পরে দেখে নেবো।
শর্ত (৩)কোন মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না।(নূরী)
.
–এটা পারবো না।মেয়ে যদি সামনে পড়ে যায় তখন কি না
তাকিয়ে থাকা যায়।তাছাড়া বাড়ী থেকে বের হলে তো
শুধু মেয়ে দেখতে পাই।(আমি)
.
–তাকাতে বারন করছি তাকাবি না। যদি বেশি
বারাবারি করিস তাহলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে
দিবো।(নূরী)
.
–একি তুই বাঁসর ঘরে বর পিটাবি নাকি।(আমি)
.
–আবার যদি কথা বলিস তাহলে শুধু পিটাবো না আরো
অনেক কিছু করবো।চুপচাপ যে শর্ত গুলো দিচ্ছি সেগুলো
পালন করবি কোন কথা বলবি না এখন শুধু শুনবি।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, এই দেখ মুখে তালা দিলাম।(আমি)
.
–শর্ত (৪) নামায পড়তে হবে প্রতিদিন। (নূরী)
.
–আর কোন কিছু না থাকে বলার তাহলে আমি একটু ঘুমাই।
তোর বক বক শুনতে বিস্বাস কর আর ভাল্লাগছে না।(আমি)
.
আল্লাহ আমারে উডিয়ে নাও না কেনো।এ মাইয়ার
জ্বালায় শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবো না নাকি।
আল্লাহ তোমার কি কোন দয় মায়া নাই।তুমি কি করে
পারলে আমার মতো একটা নিষ্পাপ শিশুকে নূরীর মতো
একটা জলহস্তীর সাথে বিয়ে ঠিক করে দিলে, শুধু ঠিক
করে বিয়েটাও হয়ে গেলো কেনো এমন করলে আল্লাহ।এই
মাইয়া এতক্ষন বসে বসে কানের পোকা বের করার পরও
এখন বসে বসে কাঁদছে। না পারছি মারতে, না পারছি
বাইরে বের করতে আর না পারছি ঘুমাতে কি করবো।
খোদা।
.
— এই মুটকি তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি নাকি তোর
মুখে টেপ লাগিয়ে দিবো।(আমি)
.
–তুই আমাকে মুটকি বললি বান্দর পোলা।( নূরী)
.
–মুটকি কে মুটকি বলবো না তো কি রসগোল্লা বলবো
নাকি।তোর কান্না থামা বলছি না হলে কিন্তু……।
(আমি)
.
–কিন্তু কি?হ্যাঁ। তুই কি করবি।কথা ছিলো আমাকে বুকে
মাথা শুতে দিবি তুইতো সেটা করিসনি আরো উল্টো
আমাকে হুমকি দিচ্ছিস।(নূরী)
.
–আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গিয়েছে আয় বুকে আয়।(আমি)
.
— এইতো লক্ষি বর।(নূরী)
.
–এই চুপচাপ শুয়ে থাক না হলে খাটের নিচে ফেলে
দিবো। (আমি)
.
কতক্ষণ ঘুমাইছি জানি না।সকাল সকাল দরজা
ধাক্কানোর শ্বদে ঘুম ভাঙ্গলো।প্রথমে মনে করছিলাম
ডাকাত পড়ছে।কিন্তু না ডাকাত আসবে কোথায় থেকে
আমাদের এখানে তো চিরুনি তল্লাসি করলেও একটা
চোর পাওয়া যাবে না ডাকাত তো অনেক দূরের কথা।
পাশে তাকিয়ে দেখি নূরী নেই।আয় হায় এই মাইয়া আবার
গেলো কই।মাইয়ার চিন্তা পরে করবো আগে শ্বশুরের
দরজা
বাঁচাই।
দরজা খুলে তো আমি অবাক বুড়িটা এখানে কি করছে।
.
–বুড়ি তুমি এখানে কি করছো।তুমি জানো না সহ্য
বিবাহিত বর কনের ঘরে ডুকতে নেই।
(আমি)
.
–এই চুপ কর তো। বড় বড় ডায়লগ দিতে আসছে।তুই সারারাত
কি অত্যাচার করছিস মেয়েটির উপর আমি জানি না মনে
করছিস।(নানি)
.
–তুমি কি আমাদের খাটের নিচে বসে ছিলে নাকি।
(আমি)
.
–বসে থাকবো কেনো রে বান্দর। তোর নানা যা করছিলো
বাঁসর রাতে কি আর বলবো। (নানি)
.
–আমি এখন তোমার বাঁসর রাতের গল্প শুনতে ইচ্ছুক নই।
তুমি যাও আমি ঘুমাবো।(আমি)
.
–রাতে খুব দখল গেছে মনে হয়।(নানি)
.
–বুড়ি এবার কিন্তু খুব বেশি বারাবারি হয়ে যাচ্ছে।তুমি
যাও।(আমি)
.
–যাবো মানে কি রে। তুই আমার নাত বউয়ের সাথে কি
করছিস। কি অত্যাচার করছিস আমাকে জানতে হবে।
(নানি)
.
–ওহে বুড়ি আমাদের মাঝে কিছু হয়নি। তুমি যা ভাবছো
তার কিছুই হয়নি বুঝছো বুড়ি।(আমি)
.
–সেটা তো তোরে দেখলে বুঝা যাচ্ছে কি হয়েছে আর
কি হয় নাই।(নানি)
.
–ওই বুড়ি ওই আমারে দেখলে বুঝা যাচ্ছে মানে কি।
(আমি)
.
বুড়ি আমার কথার কোন উওর না দিয়ে সোজা রুমে ডুকে
পড়লো।রুমে ডুকছে সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু বুড়ি
এটা কেনো বললো আমাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে।
.
–পেয়েছি পেয়েছি তুই না বলছিস তোদের মাঝে কিছু হয়
নাই তাহলে নূরীর ঘাড়ে কামড়ের দাগ কেনো।তোর গলায়
লিপস্টিকের দাগ কেনো লেগে আছে এখনো।(নানি)
.
–বুড়ি তুমি এখানে আসছো কেনো।(আমি)
.
–রাতে কিছু হয়েছে কি না সেটা বুঝতে আসছি।(নানি)
.
–কি বুঝলা তুমি।(আমি)
.
–বুঝলাম কাজ হয়ে গেছে।(নানি)
.
–এ্যয়য়য়য়, বুড়ি বলে কি।আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।(নূরী
আর আমি একসাথে বলে উঠলাম।)
.
না না এ অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। আমাদের মাঝে
যখন রাতে কিছুই হয়নি তাহলে বুড়ি কি করে বুঝলো
আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে। তাছাড়া বুড়ি নূরীর ঘাড়ে
কামড়ের দাগ আর আমার গলায় লিপস্টিকের দাগ ফেলো
কি করে।
.
–নূরী এসবের মানে কি বল আমায়।(আমি)
.
–কোথায়? কি সবের মানে বলবো তোরে।(নূরী)
.
–এই যে বুড়ি বলে গেলো এসবের মানে কি।(আমি)
.
–আমি জানি না।(নূরী)
.
–তুই জানিস।আমি তো তোর মতো লিপস্টিক লাগাই না
তাহলে বুড়ি লিপস্টিকের দাগ পেলো কি করে।(আমি)
.
–আমি জানি না কি করে তোর গায়ে লিপস্টিক
লাগলো।(নূরী)
.
–এখনো সময় আছে সবকিছু স্বিকার কর না হলে কিন্তু ।
(আমি)
.
–না হলে কি হ্যাঁ কি করবি তুই কালকে রাত থেকে হুমকি
দিয়ে আসছিস দেখছি কি করবি তুই করে দেখা।(নূরী)
.
–কি করবো মানে এক্ষুনি চলে যাবো।তোর বউ ভাতে
থাকবো না।যখন সবাই এসে জানতে চাইবে তোর বর
কোথায় তখন তুই কি করবি।থাক তুই তোর মতো গেলাম
আমি।(আমি)
.
–বলছি দাড়া প্লিজ।আমাদের মাঝে কালকে রাতে
অনেক কিছু হয়েছে।(নূরী)
.
–যেমন……. (আমি)
.
–বাঁসর রাতে যা হয় তা হয়েছে।(নূরী)
.
–আমি কোথায় ছিলাম।(আমি)
.
–তুই আমার কাছে ছিলি আমার সাথে ছিলি। আর তোর
গলায় লিপস্টিকের দাগ আমি দিয়েছি।আমি জানতাম
যে সকালে নানি আসবে তাই তোর গায়ে লিপস্টিক
লাগিয়ে দিয়েছি কারন তুই ঘুমের ঘোরে ছিলি তোর কিছু
মনে থাকবে না জানি তাই লিপস্টিক লাগিয়ে বুঝিয়ে
দিলাম আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে । (নূরী)
.
–তোরে আমি দেখে নিবো দেখিস তুই।(আমি)
.
–আমি তো কোথাও যাচ্ছি না তোর কাছে আছি
থাকবো। তুই ছাড়া আমাকে কে দেখবে বল।(নূরী)
.
.
.
চলবে@@ sanam teri kasam @@
.
পর্ব : (৯)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
–তোর মতো ছোটখাটো একটা হাতির বাচ্ছা যদি আমার
বুকে মাথা রেখে ঘুমাস তাহলে তো আমি মরে যাবো।
আচ্ছা রাজি।(আমি)
.
–কি আমি হাতির বাচ্ছা। তার মানে আমার আব্বু আম্মু
হাতি।দাড়া তোরে পরে দেখে নেবো।
শর্ত (৩)কোন মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না।(নূরী)
.
–এটা পারবো না।মেয়ে যদি সামনে পড়ে যায় তখন কি না
তাকিয়ে থাকা যায়।তাছাড়া বাড়ী থেকে বের হলে তো
শুধু মেয়ে দেখতে পাই।(আমি)
.
–তাকাতে বারন করছি তাকাবি না। যদি বেশি
বারাবারি করিস তাহলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে
দিবো।(নূরী)
.
–একি তুই বাঁসর ঘরে বর পিটাবি নাকি।(আমি)
.
–আবার যদি কথা বলিস তাহলে শুধু পিটাবো না আরো
অনেক কিছু করবো।চুপচাপ যে শর্ত গুলো দিচ্ছি সেগুলো
পালন করবি কোন কথা বলবি না এখন শুধু শুনবি।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, এই দেখ মুখে তালা দিলাম।(আমি)
.
–শর্ত (৪) নামায পড়তে হবে প্রতিদিন। (নূরী)
.
–আর কোন কিছু না থাকে বলার তাহলে আমি একটু ঘুমাই।
তোর বক বক শুনতে বিস্বাস কর আর ভাল্লাগছে না।(আমি)
.
আল্লাহ আমারে উডিয়ে নাও না কেনো।এ মাইয়ার
জ্বালায় শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবো না নাকি।
আল্লাহ তোমার কি কোন দয় মায়া নাই।তুমি কি করে
পারলে আমার মতো একটা নিষ্পাপ শিশুকে নূরীর মতো
একটা জলহস্তীর সাথে বিয়ে ঠিক করে দিলে, শুধু ঠিক
করে বিয়েটাও হয়ে গেলো কেনো এমন করলে আল্লাহ।এই
মাইয়া এতক্ষন বসে বসে কানের পোকা বের করার পরও
এখন বসে বসে কাঁদছে। না পারছি মারতে, না পারছি
বাইরে বের করতে আর না পারছি ঘুমাতে কি করবো।
খোদা।
.
— এই মুটকি তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি নাকি তোর
মুখে টেপ লাগিয়ে দিবো।(আমি)
.
–তুই আমাকে মুটকি বললি বান্দর পোলা।( নূরী)
.
–মুটকি কে মুটকি বলবো না তো কি রসগোল্লা বলবো
নাকি।তোর কান্না থামা বলছি না হলে কিন্তু……।
(আমি)
.
–কিন্তু কি?হ্যাঁ। তুই কি করবি।কথা ছিলো আমাকে বুকে
মাথা শুতে দিবি তুইতো সেটা করিসনি আরো উল্টো
আমাকে হুমকি দিচ্ছিস।(নূরী)
.
–আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গিয়েছে আয় বুকে আয়।(আমি)
.
— এইতো লক্ষি বর।(নূরী)
.
–এই চুপচাপ শুয়ে থাক না হলে খাটের নিচে ফেলে
দিবো। (আমি)
.
কতক্ষণ ঘুমাইছি জানি না।সকাল সকাল দরজা
ধাক্কানোর শ্বদে ঘুম ভাঙ্গলো।প্রথমে মনে করছিলাম
ডাকাত পড়ছে।কিন্তু না ডাকাত আসবে কোথায় থেকে
আমাদের এখানে তো চিরুনি তল্লাসি করলেও একটা
চোর পাওয়া যাবে না ডাকাত তো অনেক দূরের কথা।
পাশে তাকিয়ে দেখি নূরী নেই।আয় হায় এই মাইয়া আবার
গেলো কই।মাইয়ার চিন্তা পরে করবো আগে শ্বশুরের
দরজা
বাঁচাই।
দরজা খুলে তো আমি অবাক বুড়িটা এখানে কি করছে।
.
–বুড়ি তুমি এখানে কি করছো।তুমি জানো না সহ্য
বিবাহিত বর কনের ঘরে ডুকতে নেই।
(আমি)
.
–এই চুপ কর তো। বড় বড় ডায়লগ দিতে আসছে।তুই সারারাত
কি অত্যাচার করছিস মেয়েটির উপর আমি জানি না মনে
করছিস।(নানি)
.
–তুমি কি আমাদের খাটের নিচে বসে ছিলে নাকি।
(আমি)
.
–বসে থাকবো কেনো রে বান্দর। তোর নানা যা করছিলো
বাঁসর রাতে কি আর বলবো। (নানি)
.
–আমি এখন তোমার বাঁসর রাতের গল্প শুনতে ইচ্ছুক নই।
তুমি যাও আমি ঘুমাবো।(আমি)
.
–রাতে খুব দখল গেছে মনে হয়।(নানি)
.
–বুড়ি এবার কিন্তু খুব বেশি বারাবারি হয়ে যাচ্ছে।তুমি
যাও।(আমি)
.
–যাবো মানে কি রে। তুই আমার নাত বউয়ের সাথে কি
করছিস। কি অত্যাচার করছিস আমাকে জানতে হবে।
(নানি)
.
–ওহে বুড়ি আমাদের মাঝে কিছু হয়নি। তুমি যা ভাবছো
তার কিছুই হয়নি বুঝছো বুড়ি।(আমি)
.
–সেটা তো তোরে দেখলে বুঝা যাচ্ছে কি হয়েছে আর
কি হয় নাই।(নানি)
.
–ওই বুড়ি ওই আমারে দেখলে বুঝা যাচ্ছে মানে কি।
(আমি)
.
বুড়ি আমার কথার কোন উওর না দিয়ে সোজা রুমে ডুকে
পড়লো।রুমে ডুকছে সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু বুড়ি
এটা কেনো বললো আমাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে।
.
–পেয়েছি পেয়েছি তুই না বলছিস তোদের মাঝে কিছু হয়
নাই তাহলে নূরীর ঘাড়ে কামড়ের দাগ কেনো।তোর গলায়
লিপস্টিকের দাগ কেনো লেগে আছে এখনো।(নানি)
.
–বুড়ি তুমি এখানে আসছো কেনো।(আমি)
.
–রাতে কিছু হয়েছে কি না সেটা বুঝতে আসছি।(নানি)
.
–কি বুঝলা তুমি।(আমি)
.
–বুঝলাম কাজ হয়ে গেছে।(নানি)
.
–এ্যয়য়য়য়, বুড়ি বলে কি।আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।(নূরী
আর আমি একসাথে বলে উঠলাম।)
.
না না এ অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। আমাদের মাঝে
যখন রাতে কিছুই হয়নি তাহলে বুড়ি কি করে বুঝলো
আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে। তাছাড়া বুড়ি নূরীর ঘাড়ে
কামড়ের দাগ আর আমার গলায় লিপস্টিকের দাগ ফেলো
কি করে।
.
–নূরী এসবের মানে কি বল আমায়।(আমি)
.
–কোথায়? কি সবের মানে বলবো তোরে।(নূরী)
.
–এই যে বুড়ি বলে গেলো এসবের মানে কি।(আমি)
.
–আমি জানি না।(নূরী)
.
–তুই জানিস।আমি তো তোর মতো লিপস্টিক লাগাই না
তাহলে বুড়ি লিপস্টিকের দাগ পেলো কি করে।(আমি)
.
–আমি জানি না কি করে তোর গায়ে লিপস্টিক
লাগলো।(নূরী)
.
–এখনো সময় আছে সবকিছু স্বিকার কর না হলে কিন্তু ।
(আমি)
.
–না হলে কি হ্যাঁ কি করবি তুই কালকে রাত থেকে হুমকি
দিয়ে আসছিস দেখছি কি করবি তুই করে দেখা।(নূরী)
.
–কি করবো মানে এক্ষুনি চলে যাবো।তোর বউ ভাতে
থাকবো না।যখন সবাই এসে জানতে চাইবে তোর বর
কোথায় তখন তুই কি করবি।থাক তুই তোর মতো গেলাম
আমি।(আমি)
.
–বলছি দাড়া প্লিজ।আমাদের মাঝে কালকে রাতে
অনেক কিছু হয়েছে।(নূরী)
.
–যেমন……. (আমি)
.
–বাঁসর রাতে যা হয় তা হয়েছে।(নূরী)
.
–আমি কোথায় ছিলাম।(আমি)
.
–তুই আমার কাছে ছিলি আমার সাথে ছিলি। আর তোর
গলায় লিপস্টিকের দাগ আমি দিয়েছি।আমি জানতাম
যে সকালে নানি আসবে তাই তোর গায়ে লিপস্টিক
লাগিয়ে দিয়েছি কারন তুই ঘুমের ঘোরে ছিলি তোর কিছু
মনে থাকবে না জানি তাই লিপস্টিক লাগিয়ে বুঝিয়ে
দিলাম আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে । (নূরী)
.
–তোরে আমি দেখে নিবো দেখিস তুই।(আমি)
.
–আমি তো কোথাও যাচ্ছি না তোর কাছে আছি
থাকবো। তুই ছাড়া আমাকে কে দেখবে বল।(নূরী)
.
.
.
চলবে

sanam teri kasam part 8

0

@@ sanam teri kasam @@
.
পর্ব : (৮)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি পাঠাও।(আমি)

.

কি কপাল আমার জোর করে বিয়ে করতে হলো আবার এখন লুকানোর অপরাধে থাপ্পড় খেলাম।
.
–এই নে তোর খাবার।খেয়ে নেয় তাড়াতাড়ি। (নীরব)
.
–তোর মুখে ওটা কি ডুকিয়েছিস রে। (আমি)
.
–না ওটা কিছু না তুই খেয়ে নেয়।(নীরব)
.
–শালা হারামি আমার ভাগের ডিমটা মেরে দিলি। (আমি)
.
–মারছি বেশ করছি এখন যদি আরেকটু দেরি আস্তে আস্তে করে তোর পুরো প্লেটের সব শেষ হয়ে যাবে শুধু ভাত পড়ে থাকবে।(নীরব)
.
–তুই আমার সামনে থেকে যা রাক্ষস। (আমি)
.
আমি শান্তিতে খেতেও পারবো না মনে হয় যে অবস্থা শুরু করছে।
.
–এই পিমু কি এদিকে আসেন তো একটু।(আমি)
.
–কি হয়ে বলেল ভাইয়া।(রাকিবের gf)
.
–হাতে ওটা কি?(আমি)
.
–প্লেট। (পিমু)
.
–আরে বাবা সেটা তো আমিও দেখতে পাচ্ছি। কি নিয়ে যাচ্ছেন সেটা জানতে চাইছি।(আমি)
.
–খাবার নিয়ে যাচ্ছি নূরী ভাবীর জন্য।হ্যাপি।(পিমু)
.
–প্লেট টা নিচে নামান তো একটু।(আমি)
.
–এটা কিন্তু আপনি ঠিক করেন নাই ভাইয়া।বেচারি দুপুরে খেতে পারেনি আর এখন আপনি মাংস, ডিম সব নিয়ে নিলেন মাছটা ছাড়া।(পিমু)
.
–আপনাকে এত টেনশন করতে হবে না। ও এমনিতে ছোটখাটো একটা হাতির বাচ্ছা মাংস আর ডিম যত খাবে ততবেশি মোটা হবে।(আমি)
.
আহহহহহুহুহুহুম খাওয়া হয়েছে হেব্বি। এবার একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলে বাঁচি।
.
–বস শেরওয়ানীটা পড়ে নে। (জাহেদ)
.
–কেনো। (আমি)
.
–বাঁসর ঘরে ডুকবা শেরওয়ানী পড়বা না তা কি করে হয়।(নীরব)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে পড়ে নিচ্ছি। (আমি)
.
বাইরে বা অন্য রুমে যাওয়া যাবে না আব্বু আম্মু দুজনে মিলে পিটাবে তাই বাধ্য হয়ে নূরীর রুমে যাচ্ছি কারন ওখানে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
.
–নে ভাই চল আমি রেডি।(আমি)
.
–বসের দেখি আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। (জাহেদ)
.
–না বেটা সহ্য হচ্ছে না তোদের সাথে বকবক করে যদি সারারাত কাটিয়ে দিই তাহলে বাঁসর রাতে বিড়াল মারবো কি করে।(আমি)
.
–আচ্ছা চল তোরে বাঁসর ঘরে ডুকিয়ে দিয়ে ওদের আবার বাড়ীতে ছেড়ে দিতে হবে। (নীরব)

.
রুমের সামনে গিয়ে দেখি বন্ধুদের gf গুলোর সাথে দুপুরের সেই মেয়েটি আছে তাদের সাথে আরো কয়েকটা সুন্দরি ললনা দাড়িয়ে আছে।
.
–ভাইয়া ১০ হাজার টাকা বের করেন না হলে রুমে ডুকতে দিবো না।(ললনা একটা)
.
–এক টাকাও দিবো না।(আমি)
.
–তাহলে আপনার আর বাঁসর করা হলো না।(ওরা)
.
–এই বেবি চল তুমি না বলছিলা নূরীর সতীন হতেও রাজী আমার জন্য, তাহলে দেরি করছো কেনো চল নূরী কে বাদ দিয়ে তোমার সাথে বাঁসর করি।(আমি)
.
–আদর ভাইয়া কি সব উল্টাপাল্টা বলছেন রুমে গেলে তারপর বুঝবেন কত ধানে কত চাল।(পিমু)
.
–এই নাও তোমাদের
টাকা। এবার ওকে ছেড়ে দাও।(অসীম)
.
–মাএ ৫ হাজার।(পিমু)
.
–অনেক দিয়েছি আর না এবার রুমের চাবি খুলে দাও আর বাড়ীর দিকে রওনা হও।(জাহেদ)
.
হারামি বন্ধুরা সবাই আমারে রুমে ডুকিয়ে দিয়ে চলে গেলো।রুমের চারদিকে লুকানোর মতো একটা জায়গা খুজতেছি আমি জানি আমাকে মার খেতে হবে।হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম আমার পা ছুয়ে নূরী সালাম করছে।
.
–উঠো মা উঠো।বেঁচে থাকো স্বামী সন্তান নিয়ে।(আমি)
.
–কি কইলি তুই।(কলার চেপে ধরে, নূরী)
.
–কি আর বলবো সালাম করছো তাই তোমার জন্য দোয়া করলাম।(আমি)
.
–তাই বলে মা বলবি।(নূরী)
.

–লক্ষি মেয়ে বরের সাথে কেউ তুই তোকারি করতে নেই।(আমি)
.
–পাম দিস না।তুই কি ভাবছিস পাম দিয়ে তুই বেঁচে যাবি আজকে দুপুর থেকে যা যা করছিস সবকিছুর শাস্তি তোরে পেতে হবে বান্দর।(নূরী)
.
–মারামারি করে কি লাভ হবে সোনা তার থেকে বেশি ভালো হবে যদি আমরা বাঁসর রাতের টি-20 ম্যাচটা খেলা শুরু করি কি বলো তুমি।(আমি)
.
–তোর টি-20 ম্যাচ পরে হবে আগে তোরে শাস্তি পেতে হবে তারপর ম্যাচ। (নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাজি।(আমি)
.
–এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবি আমি তা কল্পনাতেও ভাবিনি।যে ছেলে বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না সে এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলো। (নূরী)
.
–রাজি না কি আর কোন উপায় আছে বল।এখন যদি রাজি না হতাম তাহলে তো শাস্তি শেষ হতে রাত পেরিয়ে যাবে টি-20 খেলা আর হবে না।(আমি)
.
–হয়েছে এবার আমাকে প্রপোজ কর। (নূরী)
.
–পারবো না।(আমি)
.
–আমি বলছি তুই আমাকে প্রপোজ করবি।(নূরী)
.
–বললাম না তোরে আমি প্রপোজ করতে পারবো না। (আমি)
.
–কেনো পারবি না।(নূরী)
.
–পারবো না কেনো সেটা আমি জানি না। (আমি)
.
–শুধু একবার হাটু গেড়ে বসে বল তুই আমাকে ভালোবাসিস।(নূরী)
.
–পারবো না বলতে।কালকে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আমি ঘুমাবো তুই আমাকে ডিস্টার্ব করবি না।(আমি)
.
–তুই ম্যাচ খেলবি না।(নূরী)
.
–তোর ম্যাচের গুষ্টি কিলাই খেলবো না ম্যাচ।(আমি)
.
কালকে রাতে না ঘুমানোর কারনে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ঘুম চলে আসলো।
জানি না কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।
ফোঁপানোর শ্বদে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে দেখি নূরী বিছানায় মাথা দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।
এখনো কাপড় চেন্স করে নাই।
.
–নূরী কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো।(আমি)
.
–তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না আদর।(নূরী)
.
–বেশি কথা বলিশ তুই।এখনো ফ্রেশ না হয়ে বসে বসে কাঁদছিস কেনো।(আমি)
.
–কি করবো তুইতো আমাকে ভালোবাসিস না।(নূরী)
.
–যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর তোর সব কথা শুনবো।(আমি)
.
–এই বান্দর পোলা আমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে তুই ঘুমাচ্ছিস।(নূরী)
.
–খুব ঘুম পাচ্ছে বক বক না করে তুইও ঘুমা।(আমি)
.
–ঘুমাবো তবে কিছু শর্ত আছে।(নূরী)
.
–কি শর্ত বলে শুয়ে পড়।(আমি)
.
–শর্ত শুনে তা পালন করার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে তারপর ঘুমাবি।(নূরী)
.
–প্যাঁচাল কম করে শর্তগুলো ফটাফট বল।(আমি)
.
— শর্ত (১) আমাকে ভালোবাসতে হবে।(নূরী)
.
–তোরে ভালোবাসার কি আছে ভালোবাসলেও তুই আমার ভালো না বাসলেও তুই আমার।(আমি)
.
–চুপ আমি তোর হবো না তো অন্য কারো হবো নাকি।শর্ত (২)আমাকে তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে দিতে হবে।(নূরী)
.
–তোর মতো ছোটখাটো একটা হাতির বাচ্ছা যদি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাস তাহলে তো আমি মরে যাবো।
আচ্ছা রাজি।(আমি)

.
.
.
চলবে