–আমি আগেই বলেছিলাম আমি এসব পরব না।দেখলে তো কি হল,,,
এখন সকাল হয়ছে,তুমি পাশের রুম থেকে আমার কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এসো।
•
–ওয়েট কর,,,আমি এখুনি এনে দিচ্ছি,,,
•
–আমি বাথরুমে ওয়েট করতেছি।তারাতারি নিয়ে আসবা,,,
•
–এই যাব আর আসব,,,
মিলির এই অবস্থা দেখে আমার খুব হাঁসি পাচ্ছে,কিন্তু এই মূহুর্তে হাঁসতে পারছি না।খুব কষ্টে হাঁসিটা চেপে রাখতেছি,,,,,
•
–থ্রি পিস পরি ?
•
–আজকে আমাদের বৌভাত।আর তুমি আজকে থ্রি পিস পরবা,,,,
•
–তোমাকে না কাল রাতে বললাম আমি শাড়ি পরতে পারি না।
•
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমি বললাম,,,
–মিলি তোমাকে শাড়িই পরতে হবে।
•
–কেন ?
•
–আত্ত্বীয় স্বজন’রা তো নতুন বউ দেখতে আসবে,,,,
•
–তাহলে এখন কি করব,,,
•
–আমি পরিয়ে দিই,,,
•
–তুমি ভাল করে পরাতে পারবে কি,,
•
–দেখা যাক পারি কিনা,,,,
•
–তুমি আমাকে শাড়ি পরাবে এটা শুনেই আমার লজ্জা লাগছে,,,
•
–আমরা তো এখন স্বামী-স্ত্রী।স্বামী স্ত্রীর মাঝে লজ্জা থাকতে নেই।
•
–ওকে,তুমিই শাড়ি পরাবা কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
•
–কি শর্ত বল,,,
•
–শাড়ি পরানোর সময় তোমার চোখ বন্ধ করে রাখবে।
•
–চোখ বন্ধ করে রাখলে শাড়ি পরাবো কিভাবে ??
তার থেকে বরং তুমি চোখ বন্ধ করে রাখো আমি শাড়ি পরিয়ে দিই,,,
•
–ওকে,আমি চোখ বন্ধ করলাম তুমি পরিয়ে দাও,,,
•
–আমি মিলিকে শাড়ি পরাচ্ছিলাম ঠিক তখনেই পেছন থেকে ভাবি বলে উঠল,,,,
এক রাতেই এত দূর চলে গেলে,,,,,
–ভাবির কথা শুনে আমি আর মিলি দুজনেই খুব লজ্জা পেলাম।
•
–ভাবি তুমি যা ভাবতেছ আসলে তা না,মিলি শাড়ি পরতে পারে না,তাকে একটু হেল্প করতে ছিলাম এই আর কি,,,
•
–আমাকে বললেই পারতে আমি পরিয়ে দিতাম,,,
তুমি বাহিরে যাও আমি মিলিকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।
•
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে মাএ বিছানায় এসে শুয়েছি,,,
— তুমি কি ঘুমিয়ে পরেছ ?
•
–নাহ,,,,কিছু বলবা,,,
•
–তোমার হাতটা কি ধরতে পারি ?
•
–কেন ?
•
–ধরতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে,,,
মিলি আমার দিকে ওর একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,
–নাও ধরো,,,,
•
আমি ওর হাত ধরে বললাম,,,,
•
–মিলি তোমার হাত তো খুব সুন্দর আর তুলতুলে নরম।
•
–অন্ধকারে সুন্দর না কালো কিভাবে বুঝলা ?
•
–অনুভব করলাম,,,,
•
–আমার আর কি কি অনুভব করতেছ এই অন্ধকারে ?
•
–তোমার ঠোঁট দুটোও সুন্দর,,,,
•
–হা হা হা,,,,চুমু খাবা ধান্দা,,,
•
–হম
•
–আজ থেকেই শুরু করে দিবা,,,,
•
–প্রথম রাত থেকেই শুরু করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু তা তো আর হল না।তাই আজ থেকেই শুরু করতে চাই,,,
•
–ওকে,কাছে আসো তাহলে,,,
•
•
আমার পাইজামাটা গত ঈদের নামাজ পরতে গিয়ে ছিড়ে গেছে।আর আমার কোন পেন্ট তোমার সাইজের হবে না।
•
–তাহলে,,,
•
–একটা আইডিয়া আছে,,,
•
–কি আইডিয়া বল শুনি,,,
•
–পাঞ্জাবির সাথে লুঙ্গি পরতে পারবা ??
•
–কি বললা তুমি ??
•
–না মানে,বলছিলাম যে লুঙ্গি তো ভাল জিনিস আর একটা রাতেরেই তো ব্যাপার।একটু কষ্ট করে কোন ভাবে রাতটা পার করে দেও।
•
–তাই বলে আমি মেয়ে হয়ে বাসর রাতে ছেলেদের লুঙ্গি পরবো ?? আর এই কথা যদি কেউ শুনে তারপর কি হবে ভেবে দেখছ ?? না এটা কোন ভাবেই সম্ভব না,,,
•
–তাহলে কি আর করা যেটা পরে আছো ওটা পড়েই ঘুমাও।
•
–এই শাড়ি পরে আমার কিছুতেই ঘুম আসবে না রাতে।প্লিজ কিছু একটা কর,,,
•
–এছাড়া আমার কিছু করার নাই।ভেবে দেখো তুমি কি করবা।আমার খুব ঘুম পাইছে আমি এখন ঘুমাবো,,,
•
–এই না,তুমি ঘুমাবা না।
•
–তাহলে কি করব,,,
•
–ওকে তোমার পাঞ্জাবী টাই দেও তাহলে,,,
কিন্তু আমি ঘুমালে তো কাপড় ঠিকঠাক থাকে না।তাহলে লুঙ্গি পরে কিভাবে ঘুমাব,,,
•
–দারাও তোমাকে লুঙ্গির সাথে আর একটা জিনিস দিচ্ছি,,,
এটা হচ্ছে আমার শট পেন্ট লুঙ্গির নিচে পরবা তাহলে সেফ থাকবা।
একেবারে ইনটেক জিনিস,কিনার পরে পরা হয়নাই।
মিলি আমার হাত থেকে কাপড় গুলি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতে পারছি মিলি হয়তো আমার সামনে কাপড় চেন্জ করতে চাচ্ছে না।
অচেনা একজনের সামনে কাপড় চেঞ্জ করা
খুব সমস্যারই। যদিও আমি ওর হ্যাজবেন্ড তবুও,, পুরনো হলে হয়ত কোন সমস্যা ছিলনা। নতুন বলেই হয়ত এত সমস্যা।
আজ নিয়ে মাত্র তিনবার আমার সাথে ওর কথা বা দেখা হয়েছে।এখনো প্রেম ভালবাসা কিছু হয়নি। তবে শীঘ্রই হবে,, আজ রাতেই হবে হয়তো,,
.
আমি ওর অস্বস্তি বুঝতে পেরে বললাম,,,,
–আচ্ছা,,তুমি চেঞ্জ করো,,আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি,,
•
–আচ্ছা,,
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর পাঁচ মিনিট পরেই মিলি এসে বলল,,,,
–আমার হয়ে গেছে ভেতরে আসো,,,,
•
ও আমাকে তুমি করে বলাতে কেমন যানি একটা অন্যরকম অনুভূতি হল।আগেও তুমি করে বলেছে কিন্তু এমন লাগেনি,,,,
আমি ঘরে ঢুকে দেখি মিলি পাঞ্জাবী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।একটু ঢোলাঢালা হয়েছে অবশ্য,,, দেখতে কিন্তু মন্দ লাগছিল না।
আমি কিছুক্ষন ওভাবেই তাকিয়ে রইলাম।
মিলি লজ্জা পেয়ে বলল,,,,
•
–এভাবে তাকিয়ে থাকা কিন্তু ঠিক না,,,
•
–কেন ?
•
–কারণ আমি অনুমতি দিচ্ছিনা,
•
–অনুমতি দাও হে প্রিয়তমা,,,
•
–আজ কোন কিছুর অনুমতি পাবে না।
•
–কেন ?
•
–ঘুমাব,,,খুব ক্লান্ত লাগছে,,,
•
–আচ্ছা,চলো শুয়ে পরি।
•
–হম,,
•
–আর এই নাও কাথা,এটা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়।
•
–ওকে,,,
খাটের মাঝখানে এমন দেওয়াল উঠাচ্ছ কেন ?
•
–তুমি যাতে এইদিকে না আসতে পারো,,,
•
–কি আজব ব্যাপার,আমি আমার বউয়ের কাছে যাব না,,,
•
–হম যাবা,,,কিন্তু আজকে না।
কি আর করা এক বুক হতাশা নিয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ সারাদিন আমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।এখন ভাল একটা ঘুম দিতে হবে।
সকাল বেলা,,,,
–রাফি,,,রাফি,,,এই রাফি,,,,,,,
•
–হম বল,,,
•
–কাল রাতে যে লুঙ্গি পরে শুইছিলাম এটা তো খুঁজে পাচ্ছি না,,,
•
–কি বল,,,আমি তো রাতে দেওয়াল টপকে তোমার কাছে যাইনি,,,
বিয়ের রাত প্রথম পর্ব
•
•
আমার খুব ঘুম পাইছে,আমি কি এখন ঘুমাতে পারি ?
•
–হ্যাঁ,অবশ্যই।কিন্তু এই শাড়ি পড়ে তো তুমি ঘুমাতে পারবে না।এটা চেন্জ করে একটা সুঁতির শাড়ি পড়ে তারপর ঘুমাও।
•
–আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা,,,,
•
নতুন বউয়ের মুখ থেকে কথাটা শুনে আমার বুকটা কেমন করে উঠল।যদিও এটা তেমন কঠিন কোন কথা না,তবে বাসর রাতে বউয়ের থেকে শোনার জন্য আমার কাছে এটা কঠিন কিছুই মনে হল।
•
একবার মনে হল,এই মেয়ে যখন সামান্য একটা শাড়ি পড়তে পারেনা, তাহলে এই মেয়ে পারে টা কি,,,
এ আমি কাকে বিয়ে করলাম,,,
যদিও চেহারা সুরত মাশল্লাহ ভালই।
আগে দুবার দেখা হওয়াতে তো এমন মনে হয়নি,,ভালই মনে হয়েছিল।
প্রথম বার যেদিন মিলির দেখা হল, সেদিন মিলির কথা শুনে মনে হয়েছিল এই মেয়ে জিনিয়াস টাইপের কিছু একটা।
মা অবশ্য আগেই বলেছিল, যে এই মেয়ে লেখাপড়ায় যেমন রান্না বান্নাতেও তেমন।
•
মিলির সাথে দেখা হওয়ার দিন আমি একটু লেট করে ওর সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম।তাই দেখে মিলি বলেছিল,,,,
-আপনাকে তো বিয়ে করা যাবেনা।সময় এর প্রতি কোন রেসপন্স নাই আপনার।
•
–রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল,,,,
•
–আচ্ছা, মেনে নিলাম। তো এখন বলেন আপনি কি কি কাজ করতে পারেন ?
•
–মোটামুটি সব পারি,,,,
•
–রান্না বান্না কিছু জানেন ?
•
মিলির মুখে এই প্রশ্নটা শুনে আমার মনে হয়েছিল,,,,আমি পাত্রী আর ও আমাকে দেখতে এসেছে।
আর রান্না বান্না আমার পারা খুব দরকার। রান্না বান্না না পারলে জীবন ব্যার্থ।
এরপর শুরু হল মিলির কথা।পুরো সময় আমি আর কোন কথাই বলিনি যা বলেছিল মিলিই।সে কি কি পারে তাই বলছিল।কিন্তু এই মেয়ে যে সামান্য শাড়ি পড়তে পারেনা সেটা কে জানত,,,
বিয়েতে আমার খুব একটা মত ছিলনা,, মিলিকে দেখে সামান্য অহংকারী মনে হয়েছিল,কিন্তু বাসার সবার নাকি খুব পছন্দ হয়েছে।
এরকম মেয়ে তারা আগে কোথাও দেখেনি।
তাই বাড়ির মানুষের কথা ভেবেই বিয়ে করা।
আমি মুখ তুলে মিলির দিকে তাকালাম।
বিছানার এক পাশে হাতে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিলি।
কি সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে।আর একটু আগেও ওকে অহংকারী মনে হচ্ছিল,, কিন্তু এখন কত পবিত্র লাগছে।
মিলির গায়ে এখনো লাল রঙ্গের মোটা একটা জামদানীশাড়ি। বিয়ের শাড়ি পড়ে তো আর ঘুমানো যায়না তাই মা একটা সুতি শাড়ি দিয়ে গেছে ওকে,,,,
আমি আস্তে করে বললাম,,,,
•
–এখনো তো শাড়িই পড়ে আছ।তাহলে ওটা কিভাবে পড়লে ?
•
–এটা তো আমি পরিনাই,আমারা বাসা থেকে পড়াই দিছে,,,
•
–ও আচ্ছা,
.
আমি কিছুক্ষন ভেবে তারপর বললাম,,,,
–আমি একটু একটু শাড়ি পড়াতে পারি।তো আমি কি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিব ?
•
–এটা তো মেয়েদের কাজ।তুমি এটা শিখলে কি করে।সত্যি করে বল এর আগে কয়জন কে শাড়ি পড়িয়েছ ??
•
–এর আগে আমি আর কাউকে শাড়ি পড়াই নি।আর এটা আমি ইউটিউব থেকে শিখছি।
•
–এত কিছু থাকতে হটাৎ এটা শিখতে গেলে কেন
•
–যদি কখনো কাজে লাগে,এটা ভেবেই শিখেছিলাম।
•
মিলি আমার কথার কোন জবাব দিলনা।
আমি আবার বললাম,,,,
–কি হল পড়িয়ে দিব ?
•
মিলি নীচু গলায় বলল,,,,
–কিন্তু আমি শাড়ি কোন ভাবেই শাড়ি সামলাতে পারিনা,,,এটা পড়লে আমার খুব আনইজি ফিল করি।রাতে ঘুমালে শাড়ি ঠিক রাখতে পারি না।
•
–তাহলে কি করা যায় ?
•
–জানিনা,,,,,
•
–তুমি বাসা থেকে কোন কাপড় আনোনি ?
•
–এনেছি তো,কিন্তু কাপড়ের ব্যাগ অন্য রুমে,,,,,
•
–ওহ,,,,,এখন তো অনেক রাত,,,বাড়ির সবাই হয়ত শুয়ে পড়েছে।
•
–হুম,,,,
আমি কিছুক্ষন ভাবনা চিন্তা করে বললাম,,,
–আমার পাঞ্জাবি পড়ে শুতে পারবা,,,
•
–হম পারবো,কিন পাঞ্জাবির সাথে নিচে কি পরবো ?
•
–আমার পাইজামাটা গত ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে ছিড়ে গেছে।আর আমার কোন পেন্ট তোমার সাইজের হবে না।
•
–তাহলে,,,
•
–একটা আইডিয়া আছে,,,
•
–কি আইডিয়া বল শুনি,,,
•
–পাঞ্জাবির সাথে লুঙ্গি পড়তে পারবা ??
•
–কিহ্ বললা তুমি,,,,, ???
গলার কাছে মনে হচ্ছে কথা গুলো আটকে আছে। অদ্রি চেষ্টা করছে বলতে কিন্তু পারছেনা। খুব অসহ্য লাগছে অদ্রির। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার চোখের চাহনি আগের মতো নেই।প্রিয় মানুষকেও কোনো একসময় অচেনা কেউ মনে হয়।
অদ্রিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিদ্র হকচকিয়ে গেলো। কী বলবে বুঝতে না পেরে, জিজ্ঞেস করলো
– কিছু বলবেন?
অদ্রি চোখের দৃষ্টি নামিয়ে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে গেলো।
তার বলা কথা গুলো অদ্রির ভালো লাগেনি? নাকি এই মেয়ে তাকে বিরক্তিকর পাব্লিক হিসেবে দেখছে? তার মনে হয় এভাবে হুট করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। মেয়েটা তাকে সত্যি পছন্দ করেনা। পছন্দ করলে তো অন্ততপক্ষে তাকে এভাবে দেখে চোখেমুখে আনন্দের ছিটেফোঁটা ছাড়া থাকতো না।
দরজা আটকে দিয়ে নিদ্র জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
আসলেই তার আসাটা ঠিক হয়নি। সকালেই চলে যাবো। এভাবে কারো বিরক্তিকর পাব্লিক হিসেবে থাকা যায়না।
এতোদিনের স্বপ্ন, আশা সব এক পলকের ব্যবধানে হারিয়ে ফেললাম।
এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষকে ক’জনই বা নিজের করে পায়?
ওর মতো মেয়ে আমাকে কেনো ভালোবাসবে? তাকে ভালোবাসার মতো কোনো কারণই নেই।
বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে অদ্রি কাঁদতে শুরু করলো। কান্নার শব্দ যেন কেউ শুনতে না পারে তাই উপর হয়ে মুখ চেপে কাঁদছে। তার এরকম ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয়নি। নিদ্র কী না কী মনে করেছে কে জানে!
নিদ্রকে জাপটে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এতোদিনের দূরত্বটা তাতে যদি একটু হলেও ঘুচতো। এতোদিনের পোড়া ঘায়ে শান্তির ছোঁয়া পাওয়া যেতো।
মন চাচ্ছে ছুটে গিয়ে জাপটে ধরে পড়ে থাকতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে উল্টো।এতো কাছে এসেও, কতোটা দূরে!
নাজমুল সাহেব উঠোনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। অন্য কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় পড়বেন। সামনাসামনি কিছু না বললেও আড়ালে ঠিকই বলবে
– বুড়ো হয়েছে কিন্তু বাজে অভ্যাস ছাড়লো না। ক’দিন পর যাবে কবরে এখনো শয়তানি ছাড়লো না।
বিশেষ করে রিতা নামের ওই ভদ্র মহিলা তাকে ভালো চোখে দেখছেন না। কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকায়। তার উপর যদি এভাবে সিগারেট খেতে দেখে, তাহলে তো মহাঝামেলায় পড়বেন।
পাঁচ নম্বর সিগারেট ধরিয়ে নাজমুল সাহেব বিপদে পড়লেন। রিতা এদিকেই এগিয়ে আসছে কিছু একটা বলতে বলতে।
রিতা বাড়ির মূল দরজা খোলা দেখে আটকাতে এসে খেয়াল করলেন উঠোনের আড়ালে যেখানে একটু অন্ধকার ঠিক সেখানেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছেন।
রিতার ভয়ভীতি কম। একাই হাতে শক্ত লাঠি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।
নাজমুল সাহেব তাড়াতাড়ি করে সিগারেট ফেলে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন।
রিতা কাছে আসতেই নাজমুল সাহেবকে দেখে হাতের লাঠি পিছনে লুকিয়ে ফেলে বললেন
– এতো রাতে এখানে কী করছেন?
নাজমুল সাহেব বললেন
– ইয়ে মানে আরকি রুমের মধ্যে দম আটকে আসছিলো…..
– এখানে চোরের অভাব নেই। দেখা গেলো দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে কোনো ক্ষতি করে বসতে পারে। আপনার বাইরে আসার ইচ্ছা হলে আমাকে বলবেন বা অন্য কাউকে বলবেন। দরজা আটকে দিবে।
– আমি আসলে ভাবলাম কাউকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা। তাই আরকি।
– আচ্ছা যাইহোক এখন থেকে কথাটা মনে রাখবেন।
নাজমুল সাহেব রিতার চলে যাওয়ার সময় অবাক হলেন। এই মহিলা হাতে বেশ ভালো চোর মারার লাঠি নিয়ে এসেছিলেন। ভাগ্যিস তিনি আগে থেকে কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন তা না হলে আজকে তার খবর ছিলো। বহুত ডেঞ্জারাস মহিলা দেখছি। সাবধানে থাকতে হবে।
এতো দিন পর এলাম আর মাটির চুলার রান্না খাবো না, তা কি হয়? মোটেও না। যেভাবেই হোক মাটির চুলার রান্না তার খেতেই হবে। রশীদকে বলে দেখতে হবে।
পানের ব্যাগে পানও ফুরিয়ে গেছে। রশীদও বাসায় চলে গেছে। কী করা যায়?
রিতাকে বলবো? না, এভাবে অচেনা কাউকে কিছু বলা যায়না।
ফ্লাক্সে চা বানিয়ে রাখতে বলেছিলো অদ্রি। হঠাৎ এতো চা দিয়ে কী কাজ সেটা বুঝতে পেরেছেন কিন্তু ওকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। চোখ মুখ ফোলা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শরীর খারাপ কিনা?
উত্তরে ডান হাত দেখিয়ে বললো হাতের ব্যথা। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারেননি।
সারাক্ষণ এই মেয়েটার চিন্তা তার মাথায় ঘুরে বেড়ায়।
রাতের জন্য রান্না করতে হবে তাকে। লিলি ওর রুমে আরামে ঘুমিয়ে আছে বোধ হয়।
লিলির রুমের দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দেয়ার পর বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে বললো
– বিরক্ত করছেন কেনো?
– রাতের জন্য রান্না করতে হবে।
– তো আমি কী করবো শুনি?
– আমার হেল্পার হতে হবে তোমাকে অদ্রি বলেছে। কথা কানে গেছে?
– আমি অদ্রি না যেয়ে তোমার বেয়াদবিকে আশকারা দিবো। ৫ মিনিটের মধ্যে রান্নাঘরে আসবা তা না হলে তোমাকে সোজা করার উপায় আমার জানা আছে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। ডানা মেলেছো না? ডানা দুটো কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো।
দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে দিলো।
অদ্রি বললো
– ভেতরে আসা যাবে?
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
অদ্রি নিজের সাথে প্রায় যুদ্ধ করেই আবার নিদ্রের কাছে এসেছে। সন্ধ্যার দিকের ব্যবহারের জন্য স্যরি বলবে।
নিদ্র বিছানার উপর বসে পড়লো। অদ্রি দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো
– সন্ধ্যার ওরকম ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আসলে ভাবতে পারিনি আপনি আসবেন।
– আমি আগামীকাল সকালেই চলে যাবো। আপনার বিরক্তির কারণ হতে চাচ্ছি না।
অদ্রি মাথার ঘোমটা ঠিক করে বললো
– আমি মোটেও বিরক্ত হইনি।
– তা তো আপনার ব্যবহারেই বুঝতে পারলাম। এতোগুলা কথা বললাম আর আপনি কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন।
– আমি তো বললামই আমি অবাক হয়েছিলাম। আপনার প্রশ্নের উত্তর কী দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই….
– হয়েছে আর অজুহাত দিতে হবেনা।
– আমি অজুহাত দিচ্ছি না, সত্যিটা বলছি।
নিদ্র দরজা আটকে দিতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দরজা আটকে দেয়ার সময় অদ্রি জিজ্ঞেস করলো
– আমি চলে যাই তারপর দরজা আটকাবেন।
দরজা আটকে দিয়ে অদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।
অদ্রি আর তার মধ্যে ব্যবধান রইলো মাত্র কয়েজ ইঞ্চি। মাথার ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে এলোমেলো চুলে আঙুল চালিয়ে দিয়ে বললো
– চুলগুলোর তো অন্ততপক্ষে যত্ন করতে পারেন।
নিদ্র এতোটা কাছে এভাবে আসতে পারে ভাবতেই পারছেনা অদ্রি। উষ্ণ নিশ্বাস অদ্রির মুখের উপর সুমধুর ছন্দে আছড়ে পড়ছে।
নিদ্র নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। অদ্রির কোমর বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো। ডান হাত দিয়ে ঘাড়ের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট দিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো।
অদ্রির কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে। ঘাড়ের ওই অংশটুকু থেকে পুরো শরীরে বিদ্যুত বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে নেয়ার জন্য দেয়াল ঠেসে দাঁড়ালো।
দুজনের মধ্যে একে অপরকে পাওয়ার জন্য তোলপাড় শুরু হয়েছে।
চাতকী নিজেকে উজাড় করার অপেক্ষায় ছিলো আর চাতক সব লুটে নিজের করে নেয়ার অপেক্ষায়।
অদ্রির কপোলে চুমু দিয়ে, ডান গালে তারপর বাম গালে যেন পথিক পাগলের মতো তার জীবনের সবচেয়ে দামী পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
নর – নারীর মাঝের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী এক মুহূর্ত তারা পার করছে।
সময় আটকে আছে তাদের দুজনের মাঝে। দুজনেই আজ মহাব্যস্ত ভালোবাসা নামক অনুভূতি প্রকাশে!
উপমা ঘরে রাখা সব তাবিজ খুলে পিছনের পুকুরে ফেলে দিতে নিল।ফেলে দেয়ার সাথে সাথেই তার চোখ আটকে গেল দূরের গাছের পাশে কেউ দাড়িয়ে আছে।ওপাশ টায় ময়লা ফালানো হয়।যার কারনে কোন বসতী নেই।ওখনে কেইবা থাকবে।উপমা ফিরে আসতে নিলেই তার কানে ভেসে আসে গুন গুন করে কান্নার আওয়াজ। যা তাকে মনে করিয়ে দেয় এটা মায়ার ই কান্না।এ শব্দ খুব চেনা।
উপমা ঘরে গিয়েই তরিঘরি করে ব্যাগ গুছাচ্ছে।শিহাব উপমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,কি বেপার?
উপমা: আমরা চলে যাব। এক্ষন ই যাব।
শিহাব:আহ পাগল হলে নাকি?
উপমা বিছানায় বসে কেঁদে দিয়ে বললো,আমার বাচ্চাকে বাঁচাতেই হবে।মায়া আগে কাছে আসতো।এখন না আসলেও দূরে বসে কাঁদে।I think she’s jealous.
শিহাব হেসে দিল।
উপমা: হাসছো কেন?
শিহাব: মরার পর কেউ হিংসা প্রেম ভালোবাসার অবস্থায় থাকে?
উপমা: আমি অত কিছু জানিনা।
শিহাব: তোমার কি উচিৎ নয় তোমার বান্ধবীর মৃত আত্মাকে শান্তি দেয়া?তার খুনিকে খুঁজে বের করা?ও বার বার কেন আসে?She knows you can help her
উপমা চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। কি তার করা উচিৎ সে জানেনা।
নিজাম মামাকে উপমা বলে দিল,আজিজ ফকির কে গিয়ে বলতে উপমা আসতে পারবেনা তার শরীর খারাপ।
নিজাম ও যেই কথা সেই কাজ।তবে এ কথা শুনে আজিজ ফকির অনেক টা রাগান্বিত হয়ে তাকে বললো,বাচ্চার ভালো চাইলে তাকে আসতে হবে।আমি আজ তার জন্য অন্য কোথাও যাই নি।
উপমা শিহাব কে উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো,প্রমান ছাড়া কাউকে শাস্তি দেয়া যায়? আমরা তো কোটে গিয়ে বলতে পারবোনা মৃতের আত্মা আমাদের কাছে এসে বলেছে
শিহাব: মায়ার দাফন কই হয়েছিল?
উপমা: খালাম্মা বললো পুলিশ নাকি বলেছে লাশ চুরি হয়েছে
শিহাব চেঁচিয়ে বললো কি?এগুলো তো মিথ্যা কথা।আমায় বাকি কলিগ রা বলেছিল তাকে তার বর ই নিয়ে গেছে।
উপমা: কিন্তু খালাম্মা বললো মায়া মারা যাবার কিছুদিন যেতে না যেতে ই ওর স্বামীও মারা যায়
শিহাব হতাশ হয়ে বসে পরলেন।কোন আলোর রাস্তা দেখা যাচ্ছেনা। পুলিশের কাছে মামলা দিবে যে তা আজিজ অনেক টাই পুপুলার।তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রমান লাগবে।লেইম কথা দিয়ে তাকে বেশিদিন হাজত খাটানো যাবে না।
রাত ১২:০১.
উপমা শিহাব ঘুমাচ্ছে।সন্ধ্যা নামতেই উপমার বেশ ভয় শুরু হয়েছিল।আজ আমাবস্যা, চারদিকে বেশ অন্ধকার তার উপর ঝড়ো বাতাস।দমকা বাতাসে জানালাটা খুলে যায়। শব্দে উপমার ঘুম ভেঙে যায়। বিছানায় শুয়েই জানালার দিকে তাকিয়ে আছে উপমা।জলন্ত মোম পতপত বাতাসে নিভু নিভু অবস্থা।জানালার পর্দা উড়ছে। খানিক বাদেই মোম নিভে গেল।উপমা শিহাবের জামা শক্ত করে ধরে মুখ গুঁজে নিল
খানিক বাদেই ভারি পুরুষ কন্ঠে কেউ ফিস ফিস করে বলছে আজ আমাবস্যা। ওঠো…সন্তাতের ভালো করতে চাও তো ওঠো।
উপমা ভরকে গিয়ে জানালার দিকে তাকায়। অন্ধকারেও জানালা ওপাশ টায় কেউ দাড়িয়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে।
এরই মাঝে উপমা বেশ শুনতে পেল শিহাব বাইরে দাড়িয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে উপমা দরজা খুলো।আমি বাইরে ভিজে যাচ্ছি।
শিহাবের কন্ঠ শুনে উপমা দিক বেদিক হারিয়ে ফেললো।শিহাব যে তার পাশে শুয়ে তা তার খেয়াল নেই।
উপমা উঠে দরজা খুললো।চারপাশে কাউকে দেখছেনা।চারদিকে গুবগুবে অন্ধকার।হঠাৎ উপমা দেখতে পেল অন্ধকার এর মাঝে উঠোনের মাঝে শিহাবের মত কেউ দাড়িয়ে
শিহাব তুমি ভিজছো কেন?রাত জাগা কি অভ্যাস হয়ে গেছে।
শিহাব হাসছে।
উপমাও বাইরে নামলো।মোবাইলে লাইট অন করে উঠোনে মারতেই কাউকে দেখলো না উপমা।খুব ভয় পেয়ে গেল উপমা।গা কাঁপছে খুব।পেটেও ব্যথা শুরু হল।এরই মাঝে জোড়া কালো কুচকুচে বিড়াল দেখতে পেল উপমা তার সামনে।কপালে লাল রঙের তিলক।উপমার দিকে তাকিয়ে বিড়াল গুলি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।বিড়াল গুলিকে অনেক টা দেখতে মানুষ এর মতন।অনেক টা ই আজিজ ফকির এর মতন।তবে আজিন ফকির হুবহু নয়।
উপমার আর ভয় লাগছেনা।সে বিড়াল এর পিছন পিছন বেখেয়ালে হেঁটে চলেছে।তার নিজের প্রতি নিজেই নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে যেন।
বাতাসে খোলা দরজায় বার বার বন্ধ হচ্ছে আর খুলছে।শিহাব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মায়া ধীরে ধীরে এসে শিহাবের পাশে বসলো
তুমি ঘুমোচ্ছো?
উপমার খুব বিপদ শিহাব।খুব বিপদ।ঠিক আমার মতন অবস্থা ওর হতে চলেছে।
সেবার আমার জামাই এসে আমায় বলে দিল আজিজ ফকির বলছে তোর উপর বদ জ্বীনের আছড় আছে।তুই যদি তার কাছে না যাস তাইলে আমি তরে তালাক দিমু।
ওর কথা শুনে আমি গিয়েছিলাম।সংসার ভাঙতে আমি চাইনি।
আজিজ ফকির আমায় ও এমন রাতে ছলে বলে নিয়েছিল। ৮মাসের বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় ও সে আমায় বহুবার ধর্ষণ করে।সেই রাতে আমার চিৎকার কেউ শুনেনি।আমি বার বার বলেছিলাম আমার বাচ্চাকে কেউ বাঁচাও…কেউ আসেনি।
কষ্ট সহ্য না করতে পেরে আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। আজিজ এতই জানোয়ার আমার কষ্ট তার বুকে সামান্য মায়ার জন্ম দেয়নি।সে আমায় গলা টিপে মেরে ফেললো।পচা ডোবায় পা উপরে দিয়ে পুতে দিল।সবাই জানলো বদ জ্বীন আমায় মেরে ফেলেছে।
আমার মা পুলিশের কাছে গিয়েছিল।ওই পুলিশ কে আমার জামাই টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল।আমার স্বামীকে আজিজ লোভ দেখিয়েছিল আমার লাশ বিনা দাফনে পুড়িয়ে ফেললে আজিজ অনেক অনেক টাকা দিবে।লাশ পোড়াবার আগেই আমি আমার স্বামীকে মেরে ফেলি তবে আজিজ এর কালা জাদুর সাথে আমি পারিনি আগাতে।সে আমায় ওই ডোবার পাশে পুতে রেখেছে।আমার দাফন হয়নি।আমার খুব কষ্ট বলতে বলতে মায়া গুন গুন করে কেঁদে দিল।
শিহাব ওঠো..উপমার খুব বিপদ।হাসপাতালে তুমি ই প্রথম আমায় মৃত ঘোষনা করেছিলে।আমি মানতে পারিনি আমার মৃত্যু হয়েছে।তাই তার প্রতিশোধ তোমার স্ত্রী এর উপর নিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পরে দেখেছি আমার বান্ধবী। প্রানের বান্ধবীর কি করে ক্ষতি করে।মেয়েটা যে তুমি বলতে পাগল।তুমি কি উঠবে না?আমার যে ক্ষমতা নাই উপমাকে বাঁচানোর।উঠো…
দরজা বাতাসের ধাক্কায় বার বার আছড়ে পরছে।শব্দে হঠাৎ শিহাবের ঘুম ভেঙে যায়। চারদিকে অন্ধকার।তার মানে মায়া আবার স্বপ্নে এসেছিল।শিহান চিৎকার করে বার বার উপমা উপমা বলে ডাকছে।
অন্ধকারে হাত দিয়ে বিছানায় খুঁজে দেখলো কেউ নেই এখানে।
শিহাব দ্রুত মোবাইল হাতে নিল।১:৪৫বাজে তখন।বৃষ্টি থেমে গেলেও আশে পাশে ব্যাঙ ডাকার শব্দ।
শিহাব নিজাম কে কল দিয়ে আনলো।গ্রামের কয়েকজন মিলে উপমাকে খুঁজছে।
উপমা বিড়ালের পিছন পিছন হাটতে হাটতে বার বার মনে হচ্ছে কেউ বলছে না উপমা না।তাও যেন সে থামছেনা।
আজিজ ফকিরের ঘরের সামনে এসে বিড়াল উধাও হয়ে গেল।আজিজ উপমার কাছে এসে বললো সন্তানের ভালো চাও?
উপমা মাথা নাড়িয়ে বললো হুম।
আজিজ উপমার কপালে তিলক একে দিয়ে বললো আসতে চাও নি কেন?তাই তো ছলে বলে আনালাম
২টা বাজতেই উপমা ধীরে ধীরে ঘাটে নামলো।চারপাশে মোম জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।
উপমা ডুব দিল।পেটে আবার প্রচুর ব্যথা শুরু হল।
আজিজ উপরে বসে মন্ত্র পরছে।
উপমা পুকুর থেকে উঠলো।ভেজা কাপড় এ মেয়েটির দিকে আজিজ হিংস্র দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।পশুত্ব যেন জেগে উঠছে আজিজের মাঝে।কামনা বাসনা জাগ্রত করছে নিজের মাঝে।উপমাকে ঘরে নিয়ে বসালো।ঠান্ডায় সে ঠক ঠক করে কাঁপছে আর বলছে আমি বাসায় যাব।
আজিজ বললো হুম যাবে।এখন ই তো জ্বীন আসবে,এই বলে উপমার হাত বাধলো
উপমা: হাত বাঁধছেন কেন?
আজিন: জ্বীন আসলেই খুব শক্তিশালী। না বাধলে নিজেই নিজের হাত দিয়ে বাচ্চাকে মারতে পারো।তুমি কি চাও মারতে?
উপমা: না না আরো শক্ত করে বাঁধুন
আজিজ বেধে দরজা বন্ধ করতেই উপমা চেঁচিয়ে বললো দরজা বন্ধ করবেন না।আমি বাসায় যাব। উপমার ধীরে ধীরে সব ঘোর কাটতে লাগলো।মায়ার খুনি যে ইনি তাও মনে এলে উপমা চিৎকার দিতে নিল।
আজিজ উপমার মুখ বেধে বিছানার উপর ফেলে দিল।হিংস্র কুকুরের মতন উপমার উপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
চারপাশ খুঁজে শিহাব আজিজের বাড়ির সামনে উপস্থিত হল।গ্রামবাসীরা বার বার ডাকার পরে আজিজ দরজা খুলে কিছু না বোঝার ভান করলো এরই মাঝে ভিতর থেকে কারো গোঙানীর শব্ধ পেয়ে সবাই ভিতরে গিয়ে দেখলো উপমাকে বেধে রেখেছে। শিহাব চিৎকার দিয়ে উপমার বাঁধন খুলে উপমাকে জরিয়ে ধরলো।উপমা ঠক ঠক করে কাঁপছে।এক পর্যায় শিহাবের বুকেই সেন্সলেস হয়ে ঢলে পরে শিহাবের বুকে।
আজিজ কে পুলিশে তুলে দেয়া হয়।উপমা এখন কিছুটা সুস্থ।আজিজ কে রিমান্ডে নিলে আজিজ মায়ার মৃত্যু আর লাশ গুম করার কথা স্বীকার করে।মায়ার লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়।
এরপর থেকে মায়াকে আর দেখা যায় নি।
৮মাস পর ই উষার জন্ম হয়।ফুটফুটে মেয়েটা যেদিন হয়েছিল ভরা পূর্নিমা।সেদিন প্রকৃতিও অবাক করেছিল। অঝোর বৃষ্টি ঝরছিল তাও আকাশে চাঁদ ছিল।এমন দৃশ্য আগে দেখা যায় নি।
উষার বয়স এখন ছয়।মা বাবার মেয়ের চেয়ে ও মা বাবার মায়ের মতন শাসন করে মেয়েটা।শিহাব উপমার সব সুখ যেন ওকে ঘিরে।
হঠাৎ করেই উপমা আজকাল বাড়ির আশে পাশে বিড়াল দেখতে পায়। স্বপ্নে সেই আজিজ কে বার বার দেখে শিউরে ওঠে উপমা।শিহাব কে জানালে শিহাব বুঝতে পারে কিছু একটা আবার হবে।গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো আজিজ ছাড়া পেয়েছে।
ছাদের সিঁড়ি তে বিড়াল দেখে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় উপমা।তার পর থেকে সে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে।ঢেপ ঢেপ করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে খায়িয়ে দিলে খায়।প্রায় প্রায় বিড়াল থেকে ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে উপমা।শরীরের দিন দিন অবনতি হচ্ছিল তার।শিহাব এ রোগের কারন ধরতে পারেনা।শিহাব ও দিন দিন মন মরা হয়ে পরলো।মেয়েকে জরিয়ে ধরে প্রায় ই কেঁদে দেয় শিহাব।
ইদানীং শিহাব খেয়াল করে উষা ছাদে বসে একা একা কারো সাথে কথা বলে।জিজ্ঞেস করলে বলে পাপা কই কথা বলি?আমি তো এমনিতেই বসে আছি।
হঠাৎ রাতে শিহাব ঘুম থেকে উঠে দেখে মাঝে উষা নেই।সে ভয় পেয়ে সারাঘর খুঁজে। উপমা বোবা হলেও বুঝতে পারে তার মেয়ের বিপদ।সেও আতংক নিয়ে চারপাশ খোঁজে।হঠাৎ করে ঊষা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে বললো বাবা খুজছো আমায়?
শিহাব এর খুব মনে পরে সে এই মাত্র দেখেছে ওয়াশ রুমের দরজা বাইরে থেকেই দেয়া ছিল।হয়তো ভুল দেখেছে তাই ভেবে সব ভুলে যায়।
শিহাব উপমার পাশে বসে খবরের কাগজ খুলে দেখে কিছুটা আতকে গেল।আজ সকালে নীমতলিতে আজিজ নামে কারো লাশ ডোবা থেকে উদ্ধার হয়।তার মাথা মাটির তলায় ছিল আর পা উপরে।সারা গ্রাম বলছে সে বদ জ্বীন সাধনা করতো।আর তারাই তাকে মেরেছে।তবে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
শিহাব: আতকে উষার দিকে তাকালো।
ঊষা মুচকি হাসি দিয়ে বললো পঁচা লোক এভাবেই মরে তাইনা পাপা?
শিহাবের মনে বার বার একই প্রশ্ন জাগে,ইংরেজি পেপার এতটুক মেয়ে কি করে পড়ে? পড়লেও কি করে জানে আজিজ খারাপ?
শিহাব : তুমি কি করে জানলে মা?
ঊষা: আমার মা ই আমায় বলেছে।অনেক আগে।আমার সব মনে আছে পাপা।
উপমার ঘুম ভাঙলো।উপমা উঠে বসতেই ঊষা উপমাকে জড়িয়ে ধরে ফিস ফিস করে বললো মা পাপা অনেক ভীতু।দেখো সে কি ভয় পাচ্ছে।ঘামছে খুব।তুমি আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেও।
উপমা মেয়ের কথা শুনে খিল খিল করে হেসে দিল।উপমার হাসির শব্দ শুনে শিহাব চমকে গিয়ে উপমাকে বললো তুমি কথা বলতে পারছো উপমা?
উপমা মৃদ্যু হেসে বললো হুম।আজ সকাল থেকে
শিহাবের চোখ ছল ছল করছে।
আকাশে মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে,চাঁদের পাশে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে শুকতারা ।চারদিকে দিনের মতন ফক ফকে আলো।আজ ঊষার জন্মদিন।রাত ১০টা। অদ্ভুত রকম বৃষ্টির ফোঁটা পরছে আর আকাশে বিন্দু পরিমান মেঘ এর চিহ্ন ও নেই।হালকা বাতাস।শরতের চাঁদ যেন সবকিছু চিকচিক করে রেখেছে। উপমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে শিহাব এবং ঊষা।বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।আর উপমা শিহাবের মাথায়।আদো স্বরে গাচ্ছে উপমা,আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা। এই বলে ঊষার কপালে চুমো দিচ্ছে উপমা।ঊষা ঘুমোচ্ছে…
শিহাব উঠে বললো চাঁদের কপালেই চাঁদ টিপ দিবে নাকি আমার মতন অধমের কপালেও দিবে?
উপমা হেসে শিহাবের কপালেও চুমো দিল।
বাইরে চাঁদের আলোর তীব্রতা বাড়ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে উপমা।মনে হল ভেসে উঠলো আকাশে মায়ার মুখ।হাসি মাখা চোখ দিয়ে উপমার দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।এই প্রথম মায়াকে হাসি খুশি দেখছে উপমা।মায়ার হাসি ভরা মুখ দেখে উপমার চোখে আনন্দের জল জমে গেল এ যেন অনেক টা জোৎস্না আকাশের বুকে বৃষ্টির আবির্ভাব।যেখানে কোন অভিশপ্ত আধারের ঠাঁই নেই…
(সমাপ্ত)
#এখানে ঊষার চরিত্রটাকে আমি একটু অলৌকিক শক্তির অধিকারী হিসেবে শুরু থেকেই বুঝাতে চেয়েছি।উপমার শরীরে আসা থেকে দুনিয়ায় আসার দিন অবধি তাকে শুভ শক্তির অধিকারী হিসেবে বুঝাতে চেয়েছি।ছাদে বসে কারো সাথে কথা বলে এটা দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু ভাবনা আনতে পারেন এটা ও তার অসাধারণতার একটি পার্ট বলতে পারেন।কথা বলার কেউ টা মায়া এ হতে পারে।মায়ার উপমার মেয়ের প্রতি আগ্রহ টা ও হতে পারে।সব রহস্য ক্লিয়ার করা যায়না। তাহলে গল্পের সৌন্দর্য হারায়।কিছু জিনিস অসমাপ্ত সুন্দর। যে যার কল্পনার রাজ্য সেটা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হওয়া যায়। কিছু শিশু জন্ম থেকে অসাধারণ হওয়া তো দোষের কিছু নয়।ঊষাই গল্পের বন্ডিং এবং টার্নিং পয়েন্ট।ভয় টাকে জমিয়ে রাখারমতন চরিত্র 🙂
উপমা শিহাবের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,শিহাব মনে আছে সেবার তুমি হলে একা ছিলে।রুমে কংকাল ছিল আর তুমি ভয়ে সারারাত আমার সাথে কথা বলেছিলে।
শিহাব এসব কিছু কানেই তুলছেনা।ভয়ানক জায়গা টা তার মনে ভেসে আসছে বার বার।
উপমা শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে।এত ভালো মানুষটাকে কি করে ঠকাই আমি?আমার কি বলা উচিৎ? না না আমার সন্তানের ভালোর কথা ভাবা উচিৎ আমার, এই ভাবতে ভাবতে উপমার মনে ঝড় বয়ে যায়।
শিহাব ক্লান্ত গলায় বলছে শুয়ে পরো
উপমা: আর কিছুক্ষণ থাকো এভাবে।আমার খারাপ লাগছেনা।
শিহাব: আমার সন্তান এলে এই কোল তো শুধু তার ই হয়ে যাবে।
উপমা খিল খিল করে হেসে দিয়ে বলছে কী হিংসুক তুমি!
শিহাব চোখ বন্ধ করেই স্বস্তির হাসি দিল।উপমার হাসি একেবারেই বিশুদ্ধ। এ হাসিতে কোন ক্ষাঁদ নেই।যা শুনলে বুকের ভিতর অব্ধি গিয়ে লাগে।
উপমা: চুপ হয়ে গেলে যে?
শিহাব: আমি যদি জোকার হতে পারতাম!
উপমা: কেন?
উপমা: তোমায় হাসাতে পারতাম।আমি মানুষ টা আসলেই বোরিং। হাসাতে পারিনা।তুমি দিন রাত যদি হেসেই থাকতে কত ভালো হত।
উপমার চোখে বেয়ে টপ টপ করে জল শিহাবের গালে পরলো।শিহাব চোখ মেলে উপমার দিকে তাকালো।
হাসাতে তো পারি ই না উল্টো কাঁদাতে পারি তাইনা উপমা?এ সময় কাঁদতে বারণ করেছি না?
উপমা: ঘুমাও।কিছুক্ষনের মাঝেই আজান দিবে।
শিহাব চোখ বন্ধ করলো।
মাত্র একদিন বাকি আছে আমাবস্যা আসার।কি করে যাবে সে ভাবতে ভাবতে তার মনে হল মায়ার কথা।এতদিন এলো মায়ার একটা খোঁজ নেয়া হল না।উপমা মায়ার খোঁজে মায়ার বাড়ির দিকে রওনা হল।তার বাড়িতে গেলেই তার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা পাবে।
১৫মিনিটের পথ।রাস্তাগুলি অনেক পরিবর্তন।চারপাশে বাড়ি ঘরের সংখ্যা ও বেড়েছে খুব।
মায়ার বাড়ির সামনে এসেও অনেক টা তফাৎ খেয়াল করলো উপমা।ভিতরে যেতেই ছোট বাড়িটি দেখে চিনতে ভুল হয়না মায়ার বাসা।
ভিতরে কেউ আছেন প্রশ্ন করতেই ভিতর থেকে বয়স্ক মহিলা বাইরে নেমে এলো।মহিলাকে দেখে চিনতে ভুল হয়না উপমার।
খালাম্মা?
-কে মা তুমি?
আমি উপমা খালাম্মা।চিনতে পারেন নি?ওই যে মায়ার সাথে স্কুলে পড়তাম। টিফিনের সময় কত আপনার হাতের রান্না খেয়েছি।
মহিলা উপমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।মা ও মা তোমার গা দিয়া আমার মাইয়ার ই গন্ধ আইতাছে মা।আমার কলিজাডা পুইরা যায়রে মা।কতদিন আমার মায়রে বুকে ঝাপটায় ধরিনা।
উপমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।মহিলার কথা কিছুই বুঝছেনা।
খালাম্মা মায়া কই?ও কি আসছে?
-কই দিয়া আইবোরে মা!আমার মায় তো আর আইবেনা
উপমা: খালাম্মা কি হইছে?এই তো কিছুদিন আগেও মায়াকে দেখলাম।
মহিলা কান্না থামিয়ে দিয়ে বললো,কি কও মা?আমার মাইয়া আজ চাইর মাস হইল মারা গেছে।ওই লাশ টা ও পুলিশ দিল না।কয় চুরি হইয়া গেছে বলতে বলতে মহিলা বসে পরলেন।
উপমা যেন নিজের কান কেও বিশ্বাস করাতে পারছেনা।মায়া আর নেই!তাহলে ও বার বার আমার সাথে দেখা করেছিল।ও অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল।
পেটে ভিশন যন্ত্রণা শুরু হল উপমার।বাচ্চাটা যেন নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো।
উপমা বসে পরে স্থির ভাবে বলতে লাগলো খালাম্মা আমায় একটু পানি দিবেন?
দাড়াও মা আনতাছি বলে মহিলা জলদি ঘরের ভিতর চলে গেল।
পানি ঢক ঢক করে পান করে মহিলার দিকে তাকিয়ে উপমা জিজ্ঞেস করলো মায়া কিভাবে মারা গেছে খালাম্মা?
মায়ার মা চোখ আঁচল দিয়ে মুছে বললেন,আমার মাইয়ারে আমার মাইয়া জামাই ই মারছে।দেইখা শুইন্না বিয়া দিলাম তা এত বদ মানুষ এর লগে।বেটা মায়ারে প্রচুর মারধর করতো।টাকা দিতে বলতো।শেষের দিকে আরেকটা বিয়াও করবে বলছে।মায়ারে পাগল বানাইছে।সবাই জানতো মায়ার উপর নাকি জ্বীন ভর করছে।আমি সব জানি মা।ওই সব আজিজ ফকিরের চক্রান্ত। শেষ বার যহন আমার মায় আমার কাছে আইল তহন বার বার কইছে মা আমার ঘরের চারপাশে তাবিজ পাই আমি।ঘর থেইক্কা ধুপ এর গন্ধ আসে রাইত হইলেই।সন্ধ্যা বেলা বিড়াল আসে ঘরে।আমি দরজা লাগাই তাও আসে।আমারে ওরা বাঁচতে দিব না।ওরা কুফুরি কালাম দিয়া আমায় শেষ করতে চায়।আমার লগে বদ জ্বীন আছে এইয়া তুমি বিশ্বাস করো মা?
আমি তহন মাইয়ারে বার বার কইছি মা রে আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।আল্লাহ তো বার বার সুযোগ দিছিল আমি ই বুঝিনাই।
উপমা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,কোন ফকির?
– আজিজ ফকির।গ্রামের সবার মাথা খাইছে।সবাই ওরে অন্ধ ভরসা করে।
উপমা ভয় ঠান্ডা হয়ে গেল।কি করতে নিয়েছিলাম আমি ভাবতে ভাবতে উঠে দাড়ালো।
-কই যাস মা?
উপমা: খালাম্মা আমি যাব এখন।আচ্ছা মায়ার জামাইরে পুলিশ দেন নায়?
-আল্লাহর বিচার আছে মা।মায়ার মরার ১৫দিনের মাথায় ও এক্সিডেন্ট এ মইরা যায়।যেই হাত দুইটা দিয়া আমার মায়রে মারছে সেই হাত দুইটা পুইড়া কয়লা হইয়া গেছে।
উপমা কিছু না বলে চলে যেতে নিল।পেটে খুব যন্ত্রণা শুরু হয়েছে
মা তুমি আবানা আর?প্রশ্ন টা মায়ার মা আবেগ নিয়ে করলেন।
উপমা পিছন তাকিয়ে বললো খালাম্মা আসবো।দোয়া করবেন।আমার সন্তান যেন দুনিয়ায় সুন্দর ভাবে আসে।
মায়ার মা শাড়ির আঁচল মুখে গুঁজে দিয়ে কান্নার স্বরে বললেন,আমার মায়া ও পোয়াতি ছিল
উপমা মাথা নিচু করে হাঁটা দিল।বার বার তার সেদিনের কথা মনে পরে যায়। মায়াও সেদিন পুড়ে যাওয়া হাত নিয়ে তাদের কাছে এসেছিল।
বাড়ি থেকে বের হতে হতে বার বার মনে হচ্ছে মায়ার স্বরে কেউ বলছে,উপমা সাবধান।
ক্লান্ত পায়ে বহু কষ্টে হেটে বাড়ি ফিরলো উপমা।শিহাব উপমাকে দেখেই দৌড়ে উপমার কাছে গেল।
কই গিয়েছিলে উপমা? কিছুটা রাগী স্বরে বললো শিহাব।
এই শরীরে একা একা কেন গিয়েছো?তুমি জানো আমি কত চিন্তায় ছিলাম।মামার বাসায় গিয়েছি।কত জায়গায় না খুঁজেছি তোমায়।
উপমা চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়ে আদো আদো করে বলছে শিহাব মায়া…মায়া…এই বলে অজ্ঞান হয়ে যায়।
শিহাব উপমাকে তুলে ঘরে এনে শুয়িয়ে দেয়।চোখে মুখে পানি দেয়।উপমার জ্ঞান ফিরেই সে পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলছে,ঊষাটা না খুব দুষ্ট হয়েছে।কি নড়াচড়া করছে দেখো।
শিহাব কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলে মানে!এত অল্প সময় কি করে বেবি রেস্পন্স করতে পারে!উপমার ভুল ভেবে চুপ করে রইল।
উপমা শিহাবের হাত নিয়ে উপমার পেটে রাখলো।রাখার পর শিহাবের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো।অদ্ভুত ভাবে বাচ্চা নড়ছে।এমনভাবে নড়ছে যেন সারা শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে উপমার।
শিহাব ধীর গলায় বললো উপমা আমরা চলে যাব। আর এখানে থাকবো না।
উপমা শিহাবকে শক্ত করে ধরে বললো,শিহাব মায়া অনেক আগেই মারা গিয়েছে।আমি ওদের বাসায় গিয়েছি।খালাম্মা বললো মায়া ৪মাস আগে মারা গিয়েছে।তুমি বলো,তুমি ও না দেখলে ও এসেছিল বলো?ও কি চায় আমার কাছে শিহাব?আমার বাচ্চার ক্ষতি করতে চায়?
শিহাব: ও না তোমার বান্ধবী বলো?মনে আছে তুমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে তখন ও নাকি এসেছিল।
উপমা: হুম ও আসতো আমি বিপদে পরলেই ও ছুটে আসতো।আমার বাচ্চাকে নিয়ে ওর অনেক চিন্তা হয় নাকি।আমার বাচ্চাকে নিয়ে ওর কেন চিন্তা হয়! এই প্রশ্ন করে শিহাব কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল উপমা।
শিহাব: মায়া মারা যাবার পর মায়াকে পুলিশ আমাদের হাসপাতালেই আনে।আমি ই ওকে প্রথম চেক আপ করেছিলাম।ওর সারা শরীরে কাদা ছিল।ওর মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক ছিলনা।কিন্তু তার প্রমান হয়নি।
উপমা: হুম ওকে নাকি ওর বর মেরেছে।থাক এসব নিয়ে আমাদের ঘাটতে হবেনা।তুমি আমায় অনেক দূরে কোথাও নিয়ে যাও শিহাব।আমার বাচ্চাকে বাঁচাও।
শিহাব উপমার কপালে চুমো দিয়ে আস্থা দিলো,আমি থাকতে কিছু হবেনা তোমার উপমা।আমার উপর ভরসা নেই?
উপমার জ্ঞান ফিরতেই দেখছে শিহাব উপমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
উপমা চিৎকার দিয়েই বললো,শিহাব মায়া ঠিক নেই।ওখানে মায়া ছিল।মায়ার মুখ টা কি ভয়ংকর।
শিহাব সব বুঝতে পারলো তবুও কিছু হয়নি এমন ভাবে বললো,তুমি বাইরে কেন গেলে উপমা?এটা কি শহর?গ্রামে কেউ রাতে নামে?আর তোমার এ অবস্থা?আমি ভাবছি চলে যাব আগের জায়গায়।
উপমা: কেন যাবে?তোমাকে না পেয়েই তো গেলাম।কই গিয়েছিলে?
শিহাব: পুকুরপাড় এ বসেছিলাম।হঠাৎ চিৎকার শুনে দৌড়ে আসি আমি।দেখি ওখানে পরা।বাচ্চাটার ক্ষতি হলে কি হত বলতো?
উপমা পেটে হাত দিয়ে কাঁদছে। কত সাধনার ফল।আগলে রাখা বুঝি এমন ই কঠিন।
উপমা মনে মনে ভাবছে মায়া ঠিক নেই।মায়ার কিছু হয়েছে।না হয় মায়ার রূপ ধরে কেউ এসে ধোঁকা দিচ্ছে।ইদানীং মায়া বার বার স্বপ্নে আসাটাও কি কাকতালীয়? না কিছু একটা তো আছেই।
শিহাব গ্রামের হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে।মানুষ এর কাছে অল্প দিনেই বেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছে সে।
মায়ার কথা অনেকের কাছে জানতে চাইলেও কেউ তেমন কিছুই বলতে পারেনি।
উপমা প্রায় সময় নিজে কাঁথা সেলাই করে।পুকুরপাড় এ বসে কাথা সেলাই করা যেন তার পছন্দের কাজের একটি।
হঠাৎ মনে হল পাশে কারো উপস্থিতি।দমকা বাতাস এসে পরিবেশ টা কেমন থমথমে করে দিয়েছে।
উপমা এপাশ ওপাশ তাকাতে খানিক ভয় পেয়ে যায়। মনে মনে দোয়া পরে ফুঁ দিয়ে আবার কাথা সেলাই এ মনোযোগ দিল সে।হঠাৎ কানে ভেসে এলো কারো গুন গুন করে কান্নার আওয়াজ।উপমা আশেপাশে তাকাতেই খেয়াল করলো পুকুরের ঠিক ওপারে মায়ার মতন অবিকল কেউ মায়াভরা মুখ দিয়ে উপমার দিকেই তাকিয়ে আছে।দূর থেকেই মনে হচ্ছে কত জন্মের অভিমান ভরা মুখ।
উপমা দেখেও না দেখার ভান করে ঘরের ভিতর চলে গেল।
শিহাব আসলেই তাকে বলতে হবে,এ বাড়িতে কিছু একটা আছে যা ঠিক নেই।
শিহাব কিছুতেই কিছু সমাধান করতে পারছেনা।উপমার কাছে জিজ্ঞেস করাটাও বোকামী হবে।মায়ার মৃত্যু উপমা নাও মেনে নিতে পারে।ভয়ের কারণ হতে পারে যা ওর শরীরের পক্ষে ভালো নয়।
উপমা তার মামাকে জিজ্ঞেস করলো,আশেপাশে ফকির বা দরবেশ আছে মামা?
নিজাম চিন্তা ভরা মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন?
উপমা: মামা ইদানীং খুব বাজে স্বপ্ন দেখি।ভয় পাই খুব।শিহাব এগুলো বিশ্বাস করেনা মামা।তুমি প্লিস ওকে কিছু জানিয়ো না মামা।
নিজাম: পাশের গ্রামে আজিজ নামে এক হুজুর থাকে।তার অনেক নাম আছে।তুই গেলে নিয়ে যাব।
উপমা রাজি হল।শিহাব বাসায় না থাকা অবস্থায় উপমা তার মামাকে নিয়ে সেদিকে গেলেন।
মস্ত বড় বাড়ি। উঠোন ভর্তি মানুষ এর লাইন।কেউ বা অসুস্থ,কেউ বাচ্চা নিয়ে আবার কেউ গর্ভবতী।এত মানুষ উপকার পেয়েছে বলেই এসেছে।
ঘন্টাখানেক পর উপমার সিরিয়াল এলো।ঘরের ভিতর দেয়ালে দেয়ালে অদ্ভুত ভাষায় কত কি লিখা।আসন পেতে বসে আছেন এক বৃদ্ধ লোক।দাড়ি নেই তবে মস্ত বড় ঘোঁফ।তার চারপাশে ২০-২৫টা বিড়াল।যাদের কপালে তিলক আঁকা।
উপমা: কয়েকদিন যাবত আমি ঢাকা থেকে এখানে এসেছি।ইদানীং আমি বাসার আশেপাশে আজেবাজে কিছু দেখে ভয় পাচ্ছি।আমি মা হতে চলেছি।এতে আমার আর বাচ্চার দুজনের ই ক্ষতি।প্লিস কিছু একটা করুন।
উপমার হাত ধরে এদিক ওদিক দেখলেন আজিজ। স্পর্শটা উপমার খারাপ লাগলেও মনের ভুল বলে এরিয়ে গেছেন।
আজিজ: সন্তানের খুব বড় বিপদ।এর প্রানের ঝুঁকি আছে।
উপমা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,আমি কি করতে পারি?
আজিজ: মারাত্মক কিছু আমি দেখছি।যে বার বার দেখা দিতে চায় সে বাচ্চার ক্ষতি করতে চায়।দূর থেকে ক্ষতি করতে চায়
উপমা কেঁদে দিল।বাবা এ আমার অনেক সাধনার ফল।অনেক বছর পর আমি মা হতে যাচ্ছি। প্লিস কিছু একটা করুন
আজিজ: একটা ছাগল দিবা।কেন কিসের জন্য এসব প্রশ্ন রাখবানা।
উপমা: আচ্ছা।
আজিজ: আর আমি কিছু তাবিজ দিচ্ছি একটা হাতে বাধবা।আরেকটা ঘরের দক্ষিণ পাশে ঠিক আছে?
উপমা: আচ্ছা
আজিজ:আর সামনের সপ্তাহে অমাবস্যা। আমি জ্বীন টানি।তুমি তখন উপস্থিত থাকবা।সেই জ্বীন সমাধান দিবে।
উপমা: আমার বর এসব ব্লিভ করেন না।ডাক্তার মানুষ বুঝেন ই তো।আমি মামাকে নিয়ে আসবো।
আজিজ:না কাউকে আনা যাবেনা। ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ এলে জ্বীন আসবেনা
উপমা: রাতে আমি কি করে আসবো?
আজিজ: দিনে এসে থাকবে।আমি রাতে কাজ শেষ এ পৌঁছে দিব
উপমা কিছু না ভেবেই সম্মতি দিল
শিহাবের কাছে সব কিছু লুকিয়ে গিয়েছে উপমা।জানে শিহাব রাগ করবে।হাতে তাবিজ দেখে শিহাব জিজ্ঞেস করে,কি এটা
উপমা মুচকি হেসে বলে মামা এনে দিল।শিহাবের আর সন্দেহ হয়না।
দু একদিন উপমা মায়াকে আর দেখেনা।কিন্তু শিহাব কিছুদিন যাবত মায়ার উপস্থিতি টের পায়।সন্ধায় বাইরে নামতেই অন্ধকারে গাছের আড়ালে কারো জ্বল জ্বল করা চোখ শিহাব দেখতে পায়।সামনে আসছেনা মায়া।কেন আসছেনা তা শিহাবের জানা নেই।
উপমাকে পাশে বসিয়ে শিহাব বার বার বলছে উপমার এসময়ে কিভাবে চলা উচিৎ, কি কি খাওয়া উচিৎ। কিন্তু উপমা আনমনা হয়ে ভাবছে আমাবস্যা আসতে আর মাত্র তিন দিন বাকি।কিভাবে রাতে যাবে?শিহাবকেই বা কি বলবে?
উপমা?
হুম
কি ভাবছো?
কই কিছুনা।
আজ একটা মজার ঘটনা হয়েছে জানো।এক বাচ্চা মেয়েকে আমি ওষুধ কিনে দিয়েছি বাচ্চার মা টাকা দিতে পারেনি বলে তার নাকফুল টা খুলে দিল।গ্রামের মানুষ কি সরল তাইনা?
উপমা: তারপর?
শিহাব: আমি নাকফুল ফিরিয়ে দিয়ে বললাম মেয়ের বিয়ের জন্য রেখে দিন
উপমা: মায়েরা এমন ই। সন্তানের জন্য সব পারে।
শিহাব: হু
উপমা মনে মনে ভাবতে লাগলো আমারো আমার সন্তানের জন্য পারতেই হবে
উপমা শিহাবের হাত নিজের পেটের কাছে কাছে চেপে ধরে বললো,মেয়ের নাম কি রাকবে?
শিহাব : ছেলে হবেনা কে বললো হুম
উপমা কিঞ্চিত চুপ করে থেকে বললো আমার মন বলছে মেয়ে হবে।মেয়ের কি নাম দিব বলো?
শিহাব: ঊষা।
উপমা: আচ্ছা তাই ই হবে। আমি মরে গেলেও ঊষার আলোয় জ্বল জ্বল করে রাখবে তোমার জীবন।
শিহাব উপমার মুখ চেপে ধরে বললো,এতকাল যে চাঁদ টা আমায় আলোকিত করলো তাকে ছাড়া আমার সারা পথ যে অন্ধকার হয়ে যাবে।তুমি বেঁচে থাকো আমার চোখের আলো হয়ে।
উপমা চোখ বন্ধ করে আছে।চোখের জল অনেক টা বাঁধ ভাঙা স্রতের মতন।যাকে কোন ভাবে আটকে রাখা যায়না। চোখ বন্ধ করেও না।
গড়িয়ে পরা পানি মুছে দিল শিহাব।উপমাকে কড়া স্বরে বললো এই যে ম্যাম যেটা বলা হয়নি,এ সময় কোন ভাবেই কান্না করা যাবে না।কেমন?
উপমা চোখ না খুলেই মুচকি হেসে বললো হুম।
গভীর রাত উপমা ঘুমচ্ছে। শিহাবের ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে চাঁদের আলো জ্বল জ্বল।দরজা খুলে পুকুরপাড় এ গিয়ে বসলো শিহাব।হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্ষ অনুভব হল।তাকিয়ে দেখলো উপমা
তুমি এলে এখানে?
উপমা শিহাবের পাশে বসে বললো এমনেই।
কিছুক্ষণ থেমে থেকে উপমা উঠে হাঁটা নিল।শিহাব পিছন পিছন ডাকছে আর যাচ্ছে। উপমা কোন ভাবেই থামছেনা।প্রায় আধাঘণ্টা হেঁটে উপমা এক নির্জন জায়াগায় থামলো।
চারপাশে খোলা জায়গা।অনেকদিন আগে হয়তো এখানে ধান চাষ করতো।দুপাশে বাশ বাগান এর ঝোপ।আর সামনেই একটা ডোবা
উপমা কলেজ থেকে পাক্কা দু মাসের ছুটি নিয়েছে।তার প্রথম সন্তান আসাকে কেন্দ্র করে তার আনন্দের শেষ নেই।
শিহাব মর্গে গিয়ে মায়াকে যেখানে রাখা হয়েছিল তার আশপাশ দেখছে।কোথাও কিছু নেই।এরই মাখে উপমার কল।রিসিভ করতেই ক্লান্ত স্বরে উপমা বললো,দেখোনা শিহাব সেন্সলেস হয়ে পরে গিয়েছিলাম।ভাগ্যিস মায়া এসে আমায় পানি দিল।ও না থাকলে যে কি হত?তুমি তো ছুটি ও নিলেনা!সন্তান কি আমার একার শিহাব?
শিহাব বুঝতে পারছে উপমা ঠিক নেই।ও বার বার মায়াকে দেখছে।যেখানে মায়ার অস্তিত্ব নেই।
উপমা: কি হল?আসবে কখন?
শিহাব: উপমা আমায় সিরিয়াস্লি বলবে একটা কথা?
উপমা: তুমি বাসায় আসো আমার খুব ক্লান্ত লাগছে
আজকাল শিহাবের কাজে খুব বেঘাত ঘটছে।কাজে মন দিতে পারছেনা কোন ভাবেই।তার ছুটি নেয়া উচিৎ। সেবক লুতফর দৌড়ে এসে বললো,স্যার আপনাকে সেলিম স্যার ডাকছেন।
শিহাব: হাপাচ্ছো কেন তুমি?
লুতফর: স্যার আপনে জলদি যান
শিহাব ডাঃ সেলিমের চেম্বারে যেতেই সেলিম চিন্তা স্বর নিয়ে বলছে,শিহাব আমি কি বুড়ো হয়ে গেলাম?
শিহাব মনে মনে ভাবছে গুরুগম্ভীর লোকটা হঠাৎ রসিকতা কেন করছে?
স্যার বয়স টা বেপার না।দক্ষতাটাই বেপার।
সেলিম দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো,আজ সকালে একটি লাশ এলো।৫তলা থেকে মাথায় ইট পরে লোকটির মাথা থেতলে যায়। আমি চেক করেও দেখেছি সে মারা গিয়েছে সাথে সাথে।
শিহাব: তাহলে?
সেলিম: মৃত মানুষকে নড়তে দেখেছো কখনো?
শিহাব: মানে?
সেলিম: চলো আমার সাথে।আমি লাশ টা রেখে এসে পুলিশদের সাথে কথা বলছিলাম।দরজা থেকে ভিতরে তাকাতে আমি দেখলাম লাশটা নড়ছে।
আমি আবার গিয়ে চেক করলাম।কিন্তু সে মৃত তখনো। কিন্তু আমার এখনো খেয়াল আছে শিহাব আমি তাকে হাত পা ছড়াতে দেখেছি।
শিহাব এসব কথা মাথায় ই নিচ্ছেনা। উপমার কথা বার বার মনে পরছে।লাশ ঘরে যেতেই সেলিম শিহাব কে উদ্দেশ্য করে বললো, দেখো কিভাবে ইট পরেছে।মাথা একেবারে থেঁতলে গেছে।এ যদি বেঁচেও থাকতো তাহলেও স্মৃতি শক্তি হিন ভাবে।
শিহাব লাশটার দিকে তাকাতেই ভরকে উঠলো।এ তো মানিক।সেই পুলিশ মানিক এই বলে শিহাব উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলো
সেলিম: তুমি চিনো কি?
শিহাব কথা না বলে লাশ এর হাত পা চেক করে দেখলো।লাশের হাত এর তালুতে গভীর ভাবে ক্ষত।ইট পরে মৃত মানুষের হাতে পোড়া দাগ কি করে থাকতে পারে তার তা জানা নেই।
সেলিম: আমিও তাই ভাবছি।পুলিশের লোক তদন্ত করবেই।
শিহাব: এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয় স্যার,এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয় এ বলে দৌড়ে চলে গেল শিহাব।
উপমা: ওখানে মামা থাকেন।এছাড়া কেউ না।এত জায়গা রেখে ওখানে?
শিহাব: তোমার ইচ্ছে করেনা শৈশবের জায়গায় যেতে?
উপমা: হুম করে।অনেক করে।মাকে নিয়ে যদি যাই কেমন হবে?মা বাবার ও অনেক স্মৃতী ওখানে।বাবা মারা যাবার পর মা প্রায় ই বলতো ওখানে যাবার কথা।
শিহাব: আচ্ছা আমিও ছুটি নিব ভাবছি।সেকদিন ওখানের মানুষ এর সেবা করলাম।আল্লাহ আমায় সন্তানের মুখ দেখার তৌফিক দিয়েছেন আমার উচিৎ অসহায় মানুষ এর জন্য কিছু করা।
উপমা: মায়াকে বললে ও খুব খুশি হবে।ও কি যে পাগলের মতন বকে।আজ কি হয়েছে জানো?এত জিজ্ঞেস করলাম হাত পুড়লো কি করে?বলে পুলিশকে চরম শিক্ষা দিতে।
শিহাবের চট করেই মনে পরলো মানিকের হাতে পোড়া দাগের কথা।তার মানে কি মায়া ই মারলো মানিক কে?কি করে পসিবল?
উপমা নীমতলি যাব না।আমরা অন্য কোথাও যাই।
উপমা: বউকে আশা দেখিয়ে এখন ভেঙে দিবা ডাক্তার মশাই?ভালো কাজে পিছিয়ে যেতে নেই।তুমি খেয়ে নেও আমি আর খাবনা।
৫দিনের মাথায় উপমা সব গুছিয়ে নিয়েছে।মায়া বিছানার পাশে বসে হাসছে।
উপমা: হাসছিস কেন?আচ্ছা তুই কই উধাও হয়ে যাস রে?
মায়া: বান্ধুবীর আর তার জামাইর প্রেম দেখলে আমার খুব হিংসা হয় জানিস?
উপমা: রাখ তো।তামাশা শুধু।তুই কই যাস বল?
মায়া: যাই এক জায়গায়।বার বার তোর বাচ্চার কথা মনে আসে তাই চলে আসি দেখতে।
উপমা: তুই যাবি নীমতলি?
মায়া মুখ মলীন করে বলছে,ওখানেই তো আমার শেষ ঠিকানা রে
উপমা: কি বলিস?
মায়া উঠে দাড়ালো।আমি যাব এখন
উপমা: থাক না।দুপুরে কিছু খেয়ে যা। এখন ই ও আসবে
মায়া: অন্যদিন।তুই খেয়াল রাখিস নিজের।আর নিজের মেয়ের
উপমা: আমার যে মেয়েই হবে তা কি করে বুঝলি?
মায়া: আমি বুঝি সব ই।
পুলিশ মানিকের মৃত্যর রিপোর্ট একেবারেই স্বাভাবিক এসেছে।তাকে দাফন করা হয়ে গিয়েছে।শিহাব এখনো নিজেকে বিশ্বাস করায় এটা খুন।স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।
নীমতলী ছোট গ্রাম হলেও অনেক উন্নত জায়গা।শিহাব একটি ভাড়া বাসা ঠিক করেছে।দু রুম চারপাশে বাগান।পিছনে খোলা জায়গা।বিশাল পুকুর। বাসা ঠিক করে দিয়েছে উপমার মামা নিজাম।তাদের বাসার কাছাকাছি।এত বড় বাড়ি। বাড়ির মালিক থাকেন ঢাকা।গ্রামে কেউ ভাড়া থাকেনা বলেই চলে।মাত্র ১৫০০টাকায় ভাড়া নিয়েছে তারা।
উপমা খুব খুশি।এতদিন পর যেন খোলা প্রকৃতি দেখে তার বেশ ভালো লাগছে।পুকুরঘাটে বসে শিহাবকে বলছে ছোটবেলায় এমন পুকুর দেখেছি।কতকাল বাদে দেখলাম শিহাব।
শিহাব: মা আসলে ভালোই হত।
উপমা: ভাবি অসুস্থ খুব।এমন অবস্থায় কি করে আসবে।শিহাব আমরা এখান থেকে অল্প কিছু দূরে থাকতাম।যাবে?
শিহাব: আহ এমনেই জিজ্ঞেস করলাম।ওকে কেন ওর বর তাড়িয়ে দিল তাই জানা উচিৎ তাইনা?
উপমা: ওকে কতবার বললাম আমার সাথে আসতে আর খোঁজ ই পেলাম না।
শিহাব: ঘরে চলো।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।এখন বাইরে থাকা উচিৎ হবেনা
উপমা: তুমি এসব বলছো?এসব ব্লিভ করো?
শিহাব হেসে বললো,ডাক্তার এর চেয়েও তো আমি কারো বাবা তাইনা?সন্তানের জন্য চিন্তা হয়না বুঝি?
ইদানীং উপমা বার বার স্বপ্নে ফুটফুটে কন্যা সন্তান দেখছে।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় মেয়েটা উপমার কোল থেকে বার বার মায়ার কোলে হাত বাড়াচ্ছে।একই স্বপ্ন দেখতে দেখতে উপমা চিন্তায় পরে গিয়েছে।আজ ভোর রাতেও সেই একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় উপমার।পাশে শিহাবকে না দেখতে পেয়ে উপমা উঠে বসে।গ্রামে রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ থাকেনা।আগে বিদ্যুৎ ছিলইনা।এখন তাও পাওয়া যায়। উপমা দরজা খোলা দেখে বুঝেছে শিহাব উঠোনে বসে আছে।বিদ্যুৎ না থাকলে এমন ভাবেই চেয়ারে বসে থাকে।চাঁদের আলোয় উঠোন আলোকিত।উপমা শিহাব ডাকতে ডাকতে উঠোনে নামলো।শিহাব সাড়া দিচ্ছেনা।চেয়ারে কেউ যে বসে আছে তা উপমা দিব্বি দেখতে পাচ্ছে।
শিহাব তুমি ওখানে?শিহাব?
কাছে যেতেই দেখলো মায়া চেয়ারে বসে আছে।উপমার দিকে তাকিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো খুব কষ্ট রে আমার। ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে উপমা।বাচা আমায় তুই।
শিহাব রুম থেকে বের হয়ে সেই আওয়াজের সন্ধানে ছুটলো।সে যত সামনে এগোয় শব্দ টা তার আরো সামনেই থাকে।ঠিক যেন মরিচিকা।
সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই ছাদের রেলিং ধরে এক মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় শিহাব।
কে?কে ওখানে প্রশ্ন করলেও মেয়েটি শিহাবের দিকে ফিরেনা।
শিহাব কাছে যেতেই দেখতে পেল উপমা।কিন্তু শিহাবের একদম খেয়াল আছে উপমা ঘরে ঘুমোচ্ছে কি করে ও তার আগে ছাদে এল ভাবতে ভাবতেই উপমা বললো,কি ডাক্তার মশাই ভয় পেলে নাকি?আমি ঘুমাইনি বুঝলে?বাতাস এলো তোমার আগেই ছাদে এসেছি।তুমি টের ই পেলেনা।কি যে হয়েছে তোমার আজকাল।
উপমা চলো বাসায়,বাতাস অনেক
উপমা শিহাবের হাত শক্ত করে ধরে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,তুমি তোমার বউকে খুব ভালোবাসো?
শিহাব: এত বছর পর এটা মনে হল?
উপমা: আমি কেন কিছু পাইনা বলতো?
শিহাব উপমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,আমার ভালোবাসা,বিশ্বাস পাবার চেয়েও কিছু বাকি থাকে উপমা?
আমার তোমার বউকে অনেক হিংসা হয় শিহাব।আমি তার জায়গা টায় যদি থাকতে পারতাম?
উপমার এমন কথা শুনে শিহাব চমকে গেল।এরই মাঝে পিছন থেকে উপমা এসে বলতে লাগলো,তুমি এখানে?আমি আর মায়া খুঁজছি তোমায়।
শিহাব চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে উপমা আর মায়া দাড়িয়ে।
আতংক নিয়ে সামনে তাকাতেই কেউ নেই। মানুষটা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল।
উপমা: কি হল?রাত কটা বাজে?
শিহাব মায়ার দিকে তাকাতেই দেখছে মায়া অদ্ভুত রহস্যজনক ভাবে হাসছে।যে হাসি জানান দেয় অনেক কিছু।
সকাল হতেই শিহাব হাসপাতাল গিয়েই লাশ এর খবর নিয়ে জানতে পারে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর মিনু শিহাবকে একটা চিঠি লিখে গিয়েছে,
স্যার,সেবিকা পদে আসার আগে শপথ নিয়েছিলাম সবার বিপদে পাশে থাকবো।কিছু নিয়েই ঘৃনা করবো না।তবে আমি কালকের বিষয় টা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আর হাসপাতালে থাকলে আমার সবসময় এসব তাড়া করে বেড়াবে।আমি মন থেকে কাজ করতে পারিনা।যে মেয়েটার লাশ টা নিয়ে গেল ওর মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক নয়।আমি পুলিশ কে ঘুষ নিতে দেখেছি।আর ওই লাশ কে আহাজারি করতে।জানি বিশ্বাস করবেন না। আমি চাকরি ছেড়ে গ্রামে মায়ের কাছে চলে গেলাম স্যার।ভালো থাকবেন
মিনু।
শিহাব চিঠিটা পড়া শেষ করে চমশা খুলে টেবিল এ রাখলো।এক অজানা ভয় আর চিন্তা তাকে আকরে ধরেছে।উপমাটা ওখানে একা।তার উপর মিনুর সব কথাই আর মিথ্যে মনে হচ্ছেনা।এই মৃত্যুর রহস্য জানতেই হবে।
থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ এর সাথে কথা বলতে গেলে পুলিশ তাকে পাত্তা না দেয়ার ভান করতে লাগলো।
শিহাব: দেখুন লাশ টা নেয়া হল ময়নাতদন্ত এর জন্য কিন্তু না করেই কেন আনা হল
এস.আর মানিক পায়ের উপর পা রেখে বললেন,দেখুন আপনি ডাক্তার তাই সব কিছুতেই কারন খুঁজেন। মেয়ের হাসবেন্ট এসেছিল আর তাদের গ্রামের হাসপাতাল থেকে তার প্রুভ ও এনেছে।ডেলিভারীর সময় মারা গিয়েছিল মেয়েটি।
শিহাব: তাহলে মেয়েটিকে কবর না দিয়ে আপনারা আগে কেন শহরের হাসপাতালে আনলেন?মেয়েটির বাসা কোথায়?
মানিক: বিদ্রুপের সূরে,আপনার মনে হয় গোয়ান্দা হবার সখ ছিল তাইনা?..
শিহাব চুপ করে আছে।মানিক ইসুফকে বললো চা দিতে,শিহাব না সম্মোধন করে উঠে দাড়ালো।
মানিক: শুনুন এসব সিম্পল ঘটনায় মাথা ঘাটানো ঠিক আপনার?
এরই মাঝে উপমার কল,রিসিভ করতেই,ক্লান্ত গলায়,শিহাব কই তুমি?আমার শরীর প্রচন্ড খারাপ লাগছে।দেখোনা মায়াটা না বলে চলে গেল। তুমি আসবে এখন?
শিহাব কল কেটে বাসার দিকে রওনা হল।হুট করে মায়ার চলে যাওয়া তাকে খুব ভাবাচ্ছে।
শিহাব বাসায় যেতেই দেখছে উপমা শুয়ে আছে।কাল ও সুস্থ ছিল আজ হঠাৎ শরীর খারাপের কারন শিহাব বুঝতে পারছেনা।
মায়া বলে যায়নি উপমা?
উপমা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিল না।শিহাব মায়ার কথা বার্তা আমার ঠিক লাগছেনা
উপমা: হুম তারপর আমি বললাম শিহাব টা খুব একা হয়ে যাবে রে।না হলে কবে নিজেই মরে যেতাম। একটা বাচ্চা থাকলে বলতাম দে ধাক্কা।বেচারা বাবা ও হতে পারলোনা
মায়া আমার এ কথা শুনে কান্না শুরু করে দিল।আমি এত জিজ্ঞেস করলাম থামলোই না।
শিহাব: তারপর?
উপমা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,তারপর বলে বাবা ডাক শুনবে।
শিহাব উপমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,তুমি খেয়েছো কিছু?
উপমা হাসি দিল
শিহাব: হাসছো যে?
উপমা: বাচ্চার কথা শুনলেই এড়িয়ে যাও শিহাব।কেন এড়িয়ে যাও?
শিহাব: আচ্ছা উপমা মায়ার বাড়ি কই জানো?
উপমা: নীমতলি গ্রাম।
শিহাব: ওর বাবার নাম বা বরের নাম?
উপমা: তা জানিনা।
শিহাব: মায়া কিছু বলেনি?
উপমা: তুমি মায়ার বেপারে এত আগ্রহী কেন শিহাব?মেয়েটা বেশ সুন্দরী কিন্তু।ভালো ও।মা ও হতে পারবে।তাইনা?
শিহাব: পাগলের মতন কি বলছো উপমা?
উপমা: আমি জানি আমার প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছে।যাবে না কেন আমি কি দিয়েছি তোমায়?
শিহাব উঠে চলে গেল।শিহাব ঝগড়া হবার পূর্ব মুহুর্তে এভাবেই চলে যায়। তর্ক তার একদম ই পছন্দ নয়।
শিহাব ভেবে নিয়েছে সে নীমতলি যাবে।সব কিছু ভালোকরে জানা উচিৎ। সমস্যা সমাধান না করলে সবসময় ই রয়ে যাবে।কিন্তু উপমাকে কার কাছে রেখে যাবে?উপমাকে বলতেও পারছেনা,মায়া বলতে কেউ নেই।বিশ্বাস করবেনা, না হয় ভয় পাবে।
এরই মাঝে পাশের রুম থেকে উপমার চিৎকারের শব্দ শুনে শিহাব দৌড়ে উপমার কাছে যায়।
উপমা মেঝেতে পরে আছে।শিহাব উপমাকে বিছানায় উঠিয়ে পাল্স চেক করে ঘাবড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব।চোখ ভালোভাবে দেখে সে বুঝতে পারে উপমা প্রেগন্যান্ট। কিন্তু কি করে এ সম্ভব?কখনই হতে পারেনা এ মিরাকেল।
উপমার জ্ঞান ফিরলেও শিহাব তাকে বলেনি তার প্রেগনেন্সির কথা।উপমা ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলছে,কি হল ডাক্তার মশাই?
শিহাব:কি?
উপমা: এখনো বলছো না কেন আমায়?
শিহাব: কি বলবো?
উপমা: আমি যে মা হতে চলেছি এত খুশির খবর টা কেন দিচ্ছনা?
শিহাব অনেকটা ইতস্তত হয়ে ভাবছে,উপমা কি করে জানলো!
উপমা এরই মাঝে উঠে বললো,ভাগ্যিস মায়া আমায় বললো।
শিহাব: মায়া?মায়া কোত্থেকে এলো?
উপমা শিহাব কে জড়িয়ে ধরে বললো,এত প্রশ্ন করনা তো।এতদিন পর আমার স্বপ্ন পুরন হতে চললো,আমার তো খুশিতে মরা মরা অবস্থা।
শিহাব:এ কেমন কথা?তুমি শান্ত হও উপমা।আপদত নিজের কথা ভাবো।মায়ার কথা বাদ।
উপমা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না আনন্দের।অশ্রুর ফোঁটা শিহাবের বুকে গড়িয়ে পরছে।শিহাবের বেশ কান্না পাচ্ছে।সে নিজেকে সামলাচ্ছে এই ভেবে,পুরুষ মানুষ এর যে কাঁদতে নেই…
চলবে…
[এটা কেবল ই ভুতের গল্প নয়।এখানে ভালোবাসা,ট্রাজেডি সব। 🙂 ]
উপমার হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটাকে সে কতকাল চিনে।
উপমা পানি দিতে পারো আমায়?কথাটা শিহাব কাপা গলায় ই বললো।
পানির কথা বলতে না বলতেই মেয়েটি ঘরের ভিতর চলে গেল।আমি ভয়ে শিউরে উঠছি।কি করা উচিৎ আমার,কিভাবে পদক্ষেপ নিব কিছুই বুঝছিনা
উপমা গামছা নিয়ে শিহাবের মাথা মুছে দিচ্ছে আর বলছে ওকে দেখে চমকে গেলে কেন?ও আমার স্কুল বান্ধুবী।ক্লাস ৯অবধি একত্রে পড়েছি। তারপর বাবা ট্রান্সফার হয়ে চলে এল আর দেখা হয়নি ওর সাথে।আজ কতকাল বাদে ওকে দেখলাম।মেয়েটা খুব অসহায় জানো।বর বাসা থেকে নাকি নামিয়ে দিয়েছে।প্লিস তুমি কিছু বলোনা।ও কয়েকদিন থাক আমাদের সাথে।আমিও একা থাকি,বান্ধুবীর সাথে সময় টা বেশ কেটে যাবে।
শিহাব: নাম কি তোমার বান্ধবীর?
এরই মাঝে মেয়েটি পানির গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে বললো,মায়া…মায়া আমার নাম
শিহাবের হাত কাঁপছে , পানি ঢক ঢক করে পান করলো শিহাব।আর মনে মনে ভাবছে,নাহ কাল ই আমার জানতে হবে এই মেয়ের আসল পরিচয়।মিনু হয়ত ঠিক দেখেছিল।না না কি ভাবছি?কি করে সম্ভব?
উপমা এরই মাঝে উঠে বললো,শিহাব কি হয়েছে আজ?চুপচাপ হয়ে গেলে কেন?ফ্রেশ হয়ে নেও,খাবো… খুব ক্ষুধা লেগেছে আমার।আর মায়া ও খায়নি।
মিনুর কোলে নবাগতা ফুটফুটে বাচ্চা।বাচ্চার মায়ের জ্ঞান ফিরে নি এখনো। বাচ্চাটা মিনু কোলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কত শত বাচ্চাকে সে স্পর্শ করে কোন সম্পর্ক ছাড়া।তারপর না বাচ্চারা তাকে মনে রাখে না সে বাচ্চাকে।বার বার তার সেই মৃত অদেখা বাচ্চার চেহারা কল্পনা করতে গিয়ে এমন ই এক বাচ্চার চেহারা ভেসে আসতেছে।
এরই মাঝে সেবিকা নাজমা মিনুকে ডাক দিলেন।
হুম আপা বলেন,
মিনু পুলিশ এসেছে।
কেন?
ওই যে লাশ টা? আজ যে টা আসছিল বাচ্চা ছিল পেটে তার লাশ নিতে।
এমা ময়নাতদন্ত হবেনা?
না রে।পুলিশ নাকি তার মৃত্যুর কারণ জানতে পেরেছে।এখন লাশ নিয়ে দাফন করা হবে।
মিনু দৌড়ে মর্গের ঘরে গেল।পুলিশ আর ডাক্তার ভীড় করে আছে দরজা।অচেনা মেয়েটিকে নিয়ে মিনুর বেশ আগ্রহ।
ভীড় সরিয়ে মিনু ভিতরে গেল।বডিটা ওভাবেই পরে আছে।দুজন বয় বডিটাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মিনু ধ্যান দিয়ে তাকিয়ে আছে।বডির সাথে সাথে মিনুও যাচ্ছে। এম্বুলেন্স এ তোলা হল বডি।বডির সাথে যিনি আছেন,হয়তো তার আপনজন কেউ।খুব অস্বাভাবিক ভাবে তার মুখে বিদ্রুপের হাসি।গাড়িতে ওঠার সময় পুলিশের পকেটে টাকা গুঁজে দিল।মিনুর বুঝতে বাকি নেই কিছু ভুল আছে এখানে।
গাড়ি ছেড়ে দিল।এরই মাঝে ভিতর থাকে একটা হার কাচ এর গায়ে বার বার ধাক্কা দিচ্ছে আর যেন বলছে,মিনু আমার বাচ্চাকে দুনিয়ায় আনতে দেও, মিনু পেটে খুব ব্যথা।আমার বাচ্চাটা মরে যাবে।
গাড়িটা তীব্র গতীতে চলে গেল।মিনুর কানে ওই একই সূর বাজতে থাকলো।এক আক্ষেপভরা সূর।যে সূর এক নিমিষেই বুক কে দুমড়ে মুছরে দিতে পারে।
উপমাকে অনেকদিন পর খুশি দেখছে শিহাব। শিহাবের মাথায় চিন্তার ভাঁজ।উপমাকে একা রাখা কি উচিৎ হবে?মায়া মোটেও সুবিধার কেউ না।
উপমা শিহাবের বুকের উপর মাথা রেখে মলীন গলায় বললো,শিহাব তুমি কি মায়াকে দেখে খুশি নও?
শিহাব তার কথার উত্তর না দিয়েই প্রশ্ন করলো,উপমা তোমার বান্ধবী কি করে তোমার ঠিকানা জানলো?বেপারটা রহস্যজনক না?
উপমা হেসে শিহাবের চোখের চশমা সরিয়ে বিছানার পাশে রেখে বললো,
ডাক্তারি রেখে গোয়েন্দাগিরী করতে পারতে!
শিহাব কঠিন স্বরে ধমক দিয়ে বললো,হেয়ালি রাখো।
উপমা: আমি বাজারে গিয়েছিলাম,তখন আমি দেখি ও রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। আমায় দেখে চিনে নিল।আমার একটু অসুবিধা হলেও পরিচয় দিতে আমি চিনে নিয়েছি।তুমি জানো ও বেশ ভালো ছাত্রী ছিল।আমি ধারে কাছেও ছিলাম না।অনাহারের সংসারে মেধাবী মেয়েটার আজ এই হাল।আমি চাই ওর একটু উপকার করতে।
শিহাব: মৃত মানুষ কে কবর দেয়া ছাড়া আর কি উপকার করা যায়?
উপমা: তুমি আবার হাস্যকর কথা বলছো।ঘুমাও তো।
এরই মাঝে দরজার ওপাশে বিকৃত ছায়া দেখে শিহাবের চোখ ওদিকে চলে যায়
ওখানে কিছু একটা আছে উপমা।দেখতে দেও আমায় এই বলে উঠতে নিলেই উপমা শিহাবের হাত শক্ত করে ধরে বলে,এত আগ্রহ নিয়ে এসব না খুঁজে একবার আমার বাচ্চা না আসার কারণ টা তো খুঁজতে পারতে ডাক্তার মশাই?
উপমার মলীন মুখ টা দেখে শিহাবের খুব মায়া হল।সে জানে উপমা কখনই মা হতে পারবেনা।কারণ টা উপমা নিজেই।কিন্তু শিহাব কখনই তা সাহস করে বলতে পারেনা।উপমার জন্য তার ভালোবাসার চেয়েও যে খুব মায়া কাজ করে…
উপমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই মেয়েটা চট করে ঘুমিয়ে যায়। শিহাব সেই টেকনিক জানে।বিয়ের ন বছরে জানা টা পসিবল।প্রেম করেই তাদের বিয়ে।বিয়ের আগেও ৪বছরের পরিচয় তাদের।এক মানুষ কে চিনতে কি যুগ লাগে!
উপমা ঘুমিয়ে গেছে।ঘুমন্ত মেয়ের মুখে ইদানীং আক্ষেপ এর ছাঁপ ভেসে উঠে। যা শিহাব বেশ বুঝতে পারে ইদানীং। উপমার দিকে তাকিয়ে টপ টপ করে পানি ফেলছে শিহাব।মেয়েটার সব কিছু থেকেও কেন যেন কিছুই নেই।তার উপর মায়া নামের যে বন্ধু তার একাকীত্বর সাথী হবে বলে ভাবছে সে আসলেই কি ওর জন্য উপকারী! তাড়িয়ে দিলেও কি ওকে ছেরে যাবে!আমার কি করা উচিৎ?আমি কি জেনে বুঝে তোমায় বিপদে ফেলে দিচ্ছি?আমার কারনেই কি মায়া ক্ষিপ্ত!আমার কাছেই কেন ওই লাশ এলো! এখন কেন আমার বাসাতেই!এর উত্তর জানতে হবেই
বাইরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হল আবার।জানালার পর্দা পত পত করে উড়ছে।হুট খুব কাছ থেকেই ভেসে আসছে সেই পরিচিত কন্ঠ, আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা….