Tuesday, September 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2332



নিয়তির খেলা  দ্বিতীয় পর্ব

0

নিয়তির খেলা দ্বিতীয় পর্ব

নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।যায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।

আমি গাড়িটা থামালাম।

নিনিতা:- এখানে গাড়ী থামালেন কেন ?

আমি:- নামেন।

নিনিতা:- কেন?

আমি:- এতো প্রশ্ন কেন ? নামেন !

নিনিতা গাড়ি থেকে নামতেই ওকে বললাম আপনি এখানে একটু দাঁড়ান আমি আসতেছি।



পাঁচ মিনিট পর নিনিতার কাছে আসতেই নিনিতা বলল,,,

নিনিতা:- কি ব্যাপার,আপনি রেস্টুরেন্টের ভেতরে যাওয়ার পরেই রেস্টুরেন্ট থেকে সব মানুষ বের হয়ে চলে যাচ্ছে কেন।

আমি:- আগে ভেতরে চালুন তারপর বলছি।

নিনিতা:- হম,এখন বলুন সবাই এভাবে বের হয়ে গেল কেন।

আমি:- এই রেস্টুরেন্ট এর মালিক কে গিয়ে বললাম এই রেস্টুরেন্ট টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে খালি করে দিন।আমি আমার ওয়াইফের সাথে একান্তে এখানে কিছুটা সময় কাটাবো।

নিনিতা:- আপনি বলাতেই ওরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো রেস্টুরেন্ট টা খালি করে দিল।

আমি:- প্রথমে না করেছিল।তারপর আমি বললাম আমি এফ আর গ্রুপের এমডি।রেস্টুরেন্ট টা আমাকে খালি করে দিতেই হবে।আর আমি এখানে যতক্ষণ সময় কাটাবো ততক্ষণে আপনি যত টাকা বিক্রি করতেন আমি আপনাকে এর তিন গুণ টাকা বিল হিসেবে দিব।

নিনিতা:- তারপর কি হল ?

আমি:- তারপর কি হল এটা তো আপনি নিজেই দেখলেন।

নিনিতা:- এসবের কি দরকার ছিল ? এখানে কি এমন আছে যে ওদের এত টাকা দিতে হবে ?

আমি:- আপনি টাকার চিন্তা করছেন ? আমি অন্য চিন্তা করছি ?

নিনিতা:-কি ?

আমি:- এখানে আমি ২ টা স্বপ্ন পূরণ করলাম।

নিনিতা:- কি কি?

আমি:- ১০ বছর আগে আমি যখন ঢাকায় আসি, আমি জানতাম আমি হয়তো অতো বেতন পাবো না যে আমার বউকে ফাইভ-স্টার
হোটেলে নিয়ে গিয়ে ডিনার করাতে পারবো, তাই তাকে অল্প টাকায় কীভাবে সুখে রাখা যায় সে চিন্তা করতাম,কিন্তু আজ এখানে এসে আমার সেই স্বপ্নটা পূরন করলাম।

নিনিতা:- আর ?

আমি:- টাকা আর ক্ষমতার বলে সময়কে কিনে নিলাম।

জায়গাটা অনেক শান্ত তাই না ?

নিনিতা:- এদিক অদিক কি খুঁজছেন ?

আমি:- ওয়েটার কে বলি আমাদের কে খাবার দিতে।

নিনিতা:- আমি এখন কিছু খাবো না।

আমি:- আপনি কিছু না খেলে যে আমার দুইটা স্বপ্নের মধ্যে একটা স্বপ্ন পূরন হবে না

নিনিতা:- আজ এতো ম্যায়া হলো কীভাবে ? নাকি আমি মরে যাবো এ কথা শুনে এতো খুশী ?

আমি:- না ভাবলাম। বিয়ে যখন করেছি,তখন নিজের স্বপ্ন গুলো অন্তত পূরণ করে নেই।

নিনিতা:- দেখেন আমার শরীর এখন ভালো নাই, তাই আপনার স্বপ্ন এখন পূরণ করতে পারবো না।আর কয়েক মাস পর বাচ্চাটা হয়ে যাক,আমি সুস্থ হই, তখন আপনার সব স্বপ্ন পূরন করব।

আমি:- আচ্ছা একটা কথা প্রশ্ন করবো ?

নিনিতা:- কি বলেন ?

আমি- এই বাচ্চা আসলো কীভাবে ?

নিনিতা:- মানে ?

আমি- না মানে,এই বাচ্চার বাবা কে ? কীভাবে আপনার সাথে আপনার পরিচয় হলো ? সে এখন কোথায় আছে ?

নিনিতা:- দুই বছর আগে ছেলেটার সাথে আমার পরিচয়,ছেলেটার নাম রাফি প্রথম তার সাথে পরিচয় হয় আমার বান্ধবীর বাসায়। সে আমার বান্ধবীর ছোট ভাইকে প্রাইভেট পড়াতো, সেই সূত্রে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়।

তারপর মাঝে মাঝে বান্ধবীর বাসায় গেলে ওর সাথে আমার কথা হত।এভাবে ৬ মাস চলার পর তার সাথে আমার রিলেশন হয় ছেলেটা নাকি গরীব ছিল, কিন্তু অনেক মেধাবী।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তখন গনিতের ওপর মাস্টার্স করছিলো, আমি তাকে অনেক ভাবে হেল্প করতাম।পড়াশোনা শেষ হতেই বাবাকে বলে তার চাকরির ব্যবস্থা করে দেই।

তার চাকরি হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর সে একদিন আমাদের বাড়ী আসলো, সে দিন বাসায় কেউ ছিল না আর রাতেও আসবে
না আব্বু-আম্মু।

সে দিন রাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো,
বুঝলাম না। আমি এসব করতে চাই নি,কিন্তু সে বলল,আমার তো এখন চাকরি হয়েই গেছে।আর কিছুদিন পরেই তোমার বাবার সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব আমি।ওকে অনেক ভালবাসতাম তাই ওর কথা ফেলতে পারিনি সেদিন।

সে দিনের ঘটনার মাস খানেক পর একদিন রাফিকে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে রিক্সায় করে কোথায় যেন যাচ্ছে।প্রথমে ভাবলাম এটা হয়তো ওর কোন কাজিন।কিন্তু না,পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওটা ছিল রাফির বিবাহিতা বউ।দুই বছর আগেই রাফি এই বিয়েটা করেছিল।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না।

আমি যার এতো উপকার করলাম যাকে এতো বিশ্বাস করলাম সে যে আমাকে এইভাবে ধোঁকা দিবে কখনও বুঝিনি, সে আমাকে একটুও ভালোবাসে নি, সে শুধু আমাকে ব্যাবহার করেছে।সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু আমার এই রকম ক্ষতি করলো কেন ?

দুই মাস পর জানতে পারলাম যে আমি প্রেগন্যান্ট।আমি তাকে অনেক বার ফোন করলাম, কিন্তু সেই নাম্বার বন্ধ। আমার আব্বুও
খোঁজ নিলো,আব্বুর এক বন্ধু তার সাথে দেখা করলে সে বলে সে আমাকে ছুয়েও দেখেনি, এই বাচ্চার বাবা সে না,সে আমার শুধু বন্ধু ছিল।আর এখনো তাই আছে

আমি তো এই শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, আমি আত্মহত্যা ও করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি বেঁচে যায়,তখন জোর করে আপনার সাথে আমার বিয়ে দেয়।আপনিও তো শুধু আমাদের টাকা দেখে আমাকে বিয়ে করেন।

আচ্ছা একজন কে মন থেকে ভালোবাসা কি পাপ ? আমার বাবার অনেক টাকা,এটা কি আমার জন্য অভিশাপ ? আমি কি ভালোবাসা পাবার যোগ্য না ?

নিনিতাকে কিছু বলতে পারিনি, শুধু চোখ দুটো মুছলাম।এতদিন শুধু আমি আমার কষ্ট টা কে অনেক বড় মনে করতাম, কিন্তু ওর গল্প শুনে মনে হলো, আমার কষ্ট ওর সামনে ছোট্ট একটা আঁচড় মাত্র।এটা ভেবে আরও খারাপ লাগলো মেয়েটা পাহাড় পরিমাণ কষ্ট নিয়ে একটা লোভী মানুষের সাথে সংসার করে যাচ্ছে।

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেরই আলাদা কিছু গল্প থাকে।যা হয়তো আমাদের অনেকরই জানা থাকে না।তাদের ব্যাপারে পুরোপুরি না জেনেই আমরা নানা রকম মন্তব্য করে থাকি।নিনিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।এতদিন নিনিতার প্রতি আমার অন্যরকম ধারণা ছিল কিন্তু ওর থেকে ওর জীবনের বাস্তবতা শুনে ওর প্রতি থাকা আমার ভুল ধারণা গুলি ভেঙে গেল।

আমি:- আচ্ছা,রাফি নামের ছেলেটা যদি কখনো আপনার কাছে এসে ওর সন্তানের দাবী করে বসে।তখন আপনি কি করবেন ?

নিনিতা:- আপনার কি মনে হয় তখন আমার কি করা উচিত।

আমি:- সমস্যা টা আপনার ব্যক্তিগত।আপনার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি তো কিছু বলতে পারবো না।

নিনিতা:- সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত হলেও এখন আমি আপনার বিবাহিতা বউ।এখানে আপনারও কিছু মতামত থেকেই যায়।

আমি:- যদি আমার জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।

নিনিতা:- আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,,,,

চলবে,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed

নিয়তির খেলা  প্রথম পর্ব

0

নিয়তির খেলা
প্রথম পর্ব

আজকে চার মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে বিয়ে করলাম যদিও সে সন্তানের পিতা আমি না।কিন্তু নিয়তির এই খেলায় বিয়েটা আমাকে করতেই হল।বিয়ের আগে যখন মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়েছিল তখন প্রথমেই মেয়েটা আমাকে প্রশ্ন করেছিল,,,,

আমি অন্তঃসত্ত্বা এটা জানার পরেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে কেন রাজী হলেন ?

– টাকার জন্য রাজী হয়েছি।আপনার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।আর ওনি আমাকে বলেছেন আমি যদি আপনাকে বিয়ে করি তাহলে ওনি ওনার সম্পত্তির অধের্ক অংশ আমার নামে লিখে দিবেন।তাই এই বিয়েটা করতে আমি রাজী হয়েছি।

সামান্য টাকার জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলেন,,,সত্যিই যে পুরুষ মানুষরা স্বার্থপর হয় আপনাকে দেখে আবার সেটা বুঝতে পারলাম।

– আচ্ছা এখন যদি এই একই প্রশ্ন আমি আপনাকে করি তাহলে,,,

আমি শুধু আমার সন্তানের একটা পরিচয়ের জন্য এই বিয়েটাতে রাজী হয়েছি।আমার সন্তানের জন্মের পর কেউ যেন তার বাবার পরিচয় জানতে না চায় এটা ভেবেই আপনার সাথে বিয়েটা করে নিচ্ছি।

– টাকার জন্য আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হওয়ায় আমি আপনার কাছে স্বার্থপর হয়ে গেলাম।আর আপনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েও আমাকে বিয়ে করতেছেন আপনার সন্তানের পরিচয়ের জন্য তো আপনি কি স্বার্থপর নন।

মেয়েটা আর আমার কথার কোন উত্তর দিল না।
কিছু সময় নিরব থেকে আবার বলল,,,

আমার এই অবস্থা কি করে হল এটা জানবেন না ?

– এখন জানতে ইচ্ছে করছে না।যদি কখনো জানতে ইচ্ছে হয় তখন না হয় আপনার থেকে জেনে নিব।

ওপাশে শুয়ে আছে আমার নতুন বউ।আজকেই প্রথম ওর নামটা জানতে পারলাম।ওর নাম নিনিতা

দূরত্ব আর অসহায়ত্ব জিনিসটা কি সেটা আজকে ঠিক অনুধাবন করতে পারলাম।চোখ দিয়ে না চাইতেও কেন জানি জল গড়িয়ে পড়ছে,হয়তো অতীত গুলো আজ খুব মনে পড়ছে।

বয়স তখন উনিশ কি বিশ, রিনা নামের একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখনও তাকে ভালো করে দেখিনি, এভাবে তিনটা বছর পার হয়ে
গেলো…

সব ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে হয়তো পাবো, কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে।

কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না বলেছিল, সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো, আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো, পরে বূঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা।

সেদিন আমি বুঝলাম টাকার ক্ষমতা কতখানি।ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়, আর মধ্যবিত্ত ঘরে ষাট হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই রিনার বাবাও আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না,যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই রিনাও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।

আমি সেদিন একটা জিনিস শিখলাম, আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে সব আছে, সেই টাকাই আপনাকে দিবে ভালো মানুষের সার্টিফিকেট,সেই টাকাই দিবে সুখ, আর সত্যিই তো মেয়েটাকে আমার সাথে বিয়ে দিলে হয়তো সারাজীবন বাসের ধাক্কা খেয়ে খেয়ে জীবন পার করতে হতো।

আর এখন হয়তো ওর স্বামী ওর জন্য গাড়ী কিনবে, আমার সাথে থাকলে তাকে সারা জীবন ভাড়া বাড়ীতে থাকতে হতো, দুই ঈদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হতো,কোন টা নিজের জন্য আর কোন টা পরিবারের জন্য, কিন্তু এখন সেটা করতে হবে না,সত্যিই তো টাকাই সব।

সেদিন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও টাকাকে বিয়ে করবো, হোক সে মেয়ে কালো, বা অন্ধ বা ডিভোর্সি।বড়লোকের মেয়ে হলেই হবে।

দুই বছর আগে, আমি এই কোম্পানিতে জয়েন্ট করি।আমি যে কোন দিন নিনিতাকে(কোম্পানির মালিকের মেয়ে) বিয়ে করবো সেটা আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবি নি, কারণ স্বপ্নেরও কিছু সীমানা থাকা উচিৎ।

কিন্তু কয়েকদিন আগে হটাৎ স্যার(নিনিতার বাবা) এসে ওনার মেয়ের সম্পর্কে সবকিছু আমাকে বলল।তারপর বলল এ বিয়ে তোমাকে করতেই হবে, না হলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।

প্রয়োজনে উনি কোম্পানির ৫০% সহ ওনার সম্পত্তির অধের্ক আমার নামে লিখে দিবে।

মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ হয়তো হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না,আর নিনিতা দেখতেও অনেক সুন্দরী। আর বাচ্চা ওটা ব্যাপার না নিজের বলে চালিয়ে দিবো।

ব্যাস হয়ে গেলো বিয়ে কি অদ্ভুত ব্যাপার! কাবিন-নামা তে তারিখ এক বছর আগের। সাক্ষী কাজী সাহেব সবাই খুশী, আমার স্যার কাজী সাহেব কে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলো, উনি খুশী হয়ে চলে গেলো,উনি বলল,স্যার আপনি চিন্তা করবেন না,আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো, এই বিয়ে আজ না আজ থেকে ১ বছর আগে এই তারিখে হয়েছে।

এই হচ্ছে টাকার ক্ষমতা নিয়ম শুধু গরিবের সময় গরিবের মেয়ে পালিয়ে গেলে সেটা মানুষ বলে রহিমের মেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়েছে, আর বড়লোকের মেয়ে পালিয়ে গেলে বলে, আরে বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গেছিলো।টাকা থাকলে সব নিয়ম-কানুন পকেটে চলে যায়।

পরের দিন সকালে,,,

স্যার:- বাবা, নীরব,আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে, আর দুপুরে তোমাকে অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাই ১২ টার মধ্যে অফিস চলে আসো।

আমি:- জি আচ্ছা!

বিয়ে হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আমি নিনিতার সাথে একবারও কথা বলেছি কি না ঠিক মনে পড়ছে না।

বড়লোক বাবার মেয়েদের প্রতি আমার ধারণা আগে থেকেই ভালো না, হয়তো ছবি আর খবর দেখে এই মনোভাব আর নিনিতাকে কে দেখে সে ভাবনা যেন ১০০% সত্যি হয়ে গেলো।

যাক আমার এসব ভেবে লাভ নাই,আমার টাকা চাই,আমি সেটা পেয়ে গেছি।দুপুরে অফিস গেলাম আমাকে নতুন এমডি করা হলো।

আমি:- একটা কথা বলবো ?

স্যার:- হা বলো বাবা!

আমি:- আমার বেতন কতো ?

স্যার:- তুমি হয়তো বুঝো নি।আজ থেকে আমার কোম্পানির ৫০% মালিক তুমি নিজে।আর প্রতি মাসে এই কোম্পানি থেকে যা লাভ আসবে তার অধের্কটা তোমার।

আমি:- এই পদের বেতন কতো ?

স্যার:- আগের জন কে আমি ৪ লক্ষ ৫০ টাকা দিতাম।

আমি:- আমাকেও তাই দিবেন। আর কোম্পানির যে লাভ হবে সেটা কোম্পানিতেই থাক।

সন্ধ্যায় স্থানীয় একটা বড় কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হলো।সবাই জানলো, আমারা ১ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করি, কিছু দিন হল আমার শ্বশুর জানতে পারে তাই আজকে অনুষ্ঠান।

হাজার হলেও এক মাত্র মেয়ে বলে কথা।
শ্বশুর এক কোটি টাকার একটা নতুন গাড়ী আমাকে উপহার দিলো।সাথে থাকার জন্য একটা বাড়িও দিল।বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমি নিনিতাকে নিয়ে নতুন বাড়ীতে উঠলাম।

মাস দুয়েক পরের কথা,,,

সন্ধ্যায় হটাৎ করে নিনিতা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো, আমি খবর পেয়ে অফিস থেকে সোজা হাসপাতাল গেলাম ডাক্তার আমাকে বলল যে নিয়মিত না খাওয়ার কারণে সে অনেক
দুর্বল হয়ে গেছে, তার ওপর সে সব সময় চুপচাপ থাকে।

সত্যিই তো এই দুই মাসে আমার মনে পড়ে না যে ঠিক মতো প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে দুই মিনিট কথা বলেছি কিনা…

অথচ আমি সেই ছেলে যাকে বড় ভাইয়ারা বউ পাগল বলতো,কারণ আমি ওদের বলতাম বিয়ে করে বউকে সময় দেন, টাকা না দিতে পারেন ভালোবাসা দেন, সময় দেন।সত্যি মানুষ পরিবর্তনশীল। তাই তো আমিও এই রকম হয়ে গেছি।

নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।যায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার
যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।

আমি গাড়িটা থামালাম।

নিনিতা:- এখানে গাড়ী থামালেন কেন ?

আমি:- নামেন।

নিনিতা:- কেন?

আমি:- এতো প্রশ্ন কেন ? নামেন !

চলবে….

লেখা || Tuhin Ahamed

মা হওয়ার গল্প

0

আমার প্রথম বাচ্চা,নরমাল এ হয়।প্রায় ১৮ঘন্টা লেবার ছিল।আমি চিৎকার চেঁচামেচি খুব কম করসি,প্রতিবার ব্যাথার দমক আসলে আমি শুধু দাঁত মুখ খিচে বেডের রড ধরে পরে থাকতাম।
আমার জনাব ভীতু মানুষ।ইনডিউজ এর জন্য সেলাইন পুশ করার সাথে সাথেই আমি বললাম,”তুমি চলে যাও,থাকার দরকার নাই।”
সে বলল,”না আমি থাকবো।”
২-২.৩০ঘন্টা সে আমার হাত ধরে হাউ মাউ করে কাঁদলো, এরপর ঝটকা দিয়ে বের হয়ে চলে গেল।শুনছি বাকি রাত জায়নামাজে বসে কেঁদে কেঁদে কাটাইসে।

২য় বার,আমার নরমাল হওয়ার পুরা চান্স ছিল, ডাক্তার,সব রিলেটিভ খুব চাপ দিল,নরমাল করো।আমি,আবার সেই পেইন নেয়ার জন্য রাজি ছিলাম না।
পরে সবাই ওকে ধরলো,যেন আমাকে রাজি করায়।সে জাস্ট বলল,”ওকে পেইনে আমি দেখসি,আবার দেখার ক্ষমতা আমার নাই।আমি ওকে এই নিয়ে প্রেসার দিব না।ও যেটা ভালো বুঝে,সেটাতেই আমি সাথে আছি।”

আমার সিজার হলো।
কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরে আমাদের মধ্যে ডিস্টেন্স অনেক বেড়ে যায়।ও আমাকে টাচ ই করতো না,কাছে আসা তো দূরে থাক।বলত,”তুমি ব্যাথা পাবা।আরো সময় যাক।”
কিন্তু আমি বুঝতেসিলাম,এতে দূরত্ব আরো বাড়বে,কমাবে না।তাছাড়া এমন দুর্বল সময়ে অনেকেই সুযোগ নেয়।
মাঝে মাঝে ওর উপর রাগ হত,পোস্ট প্রেগনেন্সি হরমোন এর জন্য ডিপ্রেশন, ফ্রাস্ট্রেশন মাথায় চেপে বসত।
মাঝে মাঝে ড্যাম কেয়ার ভাব করতাম,থাক,না আসলে নাই,আমার অত শখ নাই,যাক জাহান্নামে।আমার কি।

এভাবে মাসের পর মাস যেতে থাকে,ডিপ্রেশন কথায় ও মুখে বুঝা যেতে শুরু করে,দুইজনের ই।
জানি না আমার ভিতরের কেউ খুব তাগাদা দিল,নাহ,তোমাকেই আগাতে হবে,তোমাকেই ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে,না হলে এই সম্পর্কের খবর আছে।
বাচ্চা আসার আগেও যে কাজ করার কথা জীবনে ভাবি নাই,তাই করা শুরু করলাম।
সে অফিস থেকে ফেরার আগে সেজেগুজে বসে থাকতাম।
নিজের সব ক্লান্তি,একটা বাক্সে বন্ধি করে হাসি খুশি,উচ্ছল থাকতাম।
কোন মতে বাচ্চাকে ঘুম পারায়, আগের মত তার সাথে বসে রাত জেগে টিভি দেখতাম,ঘুমে, টায়ার্ডে চোখ জ্বলত, তাও মধ্য রাতে চা,নাস্তা নিয়ে বসে গল্প করে,মুভি দেখতাম।
ধীরে ধীরে খুবই ধীরে ধীরে সে নরমাল হতে থাকলো, আমি তার কাছে তার বাচ্চার মা হওয়ার সাথে সাথে আবার বউ হতে থাকলাম।
ও পরে বলসিল,আমি যদি না আগাতাম,এই ডিস্টেন্স কোনদিন কমত না হয়ত আরো খারাপ দিকেই যেত।।।

এত প্যাচাল পারলাম,এক ছোট বোনের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে।তার একটাই ধারণা, জামাই তার প্রতি আর ইন্টারেস্টেড না।আর ভালোবাসে না ইত্যাদি।।
আর এমন সিচুয়েশন এর মধ্য দিয়ে ম্যাক্সিমাম নতুন প্যরেন্টস যায়।
আর দুঃখজনক হলেও খুব কম হাজব্যান্ড ই এই ক্ষেত্রে হেল্পফুল আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়।
আর প্রেগনেন্সি হরমোন এর চাপে আমরাও নিজের রাগ জিদ দেখিয়ে সিচুয়েশন আরো খারাপ করে ফেলি।
আমরা যেভাবে মা হই, ছেলেরা সেভাবে বাবা হয় না।দশ মাস বাচ্চা আমাদের ভিতরে থাকে,বাবা রা হয়ত শুধু বাইরে থেকে কিক ফিল করে।এরপর একদিন হঠাৎ করেই একটা বাচ্চা তার কোলে দিয়ে বলা হয়,”এই নাও তোমার বাচ্চা,তুমি এখন বাপ।”

ওদের খুশির ঝাপটা টা কেটে যাওয়ার পর আসে রেস্পন্সিবিলিটি আর নতুন লাইফে এডজাস্টমেন্টের ধাক্কা।বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং হতে কিছু সময় লাগে,তার উপর তার বেটার হাফ পুরা দিন থাকে টায়ার্ড,খিটখিটে মেজাজে।সেলাই এর ব্যাথায় কাতর।

এই অবস্থায় বেশিরভাগ সময় সে নিজেকে দূরে রাখাটাই সবার জন্য ভালো বলে মনে করে।”আমি আর কিছু করতে পারতেসি না,তো ওদেরকে স্পেস দেই ” ,অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকা বা আলাদা বিছানায় ঘুমানো কে সে নিজের দ্বায়িত্ব ভাবে।এভাবে সে আস্তে আস্তে একা হয়ে যায়।

অনেকে শুনি হাজব্যান্ড ছাড়া বাচ্চা নিয়ে আলাদা ঘুমায়,কারন বাচ্চা রাতে কাঁদলে বাবার ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।এটা আমার মতে খুবই ভুল কাজ।

বাচ্চা হলে মা কে কোটি কোটি স্যাকরিফাইজ করতে হয়।সাথে বাবাকেও কিছু স্যাকরিফাইজ করতে শিখা উচিত।বাচ্চার ঘুম ভাঙলে মা কে ঘুমাতে দিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা,বাচ্চার টুকটাক কাজ করা বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং বাড়ায়, দ্বায়িত্ব বোধ বাড়ায়,নিজেকে ইনভলব,গুরুত্বপূর্ন ভাবতে পারে।

আলহামদুলিল্লাহ, সেই কয়েকমাসের কষ্টের ফল,এখন পাচ্ছি।বাবা ছেলের বন্ডিং দেখতে দেখতে আমার সময় কেটে যায়,ছেলের সব কাজে সে এগিয়ে আসে,আমার সব কাজে হেল্প করে,যতটা সম্ভব আমাদেরকে সময় দেয়,আমাকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে, আলহামদুলিল্লাহ এখন সব নরমাল,actually নরমাল থেকেও অনেক বেশি ভালো।
আগে যত ভালোবাসতো,কেয়ার নিত,এখন তার দশ গুন নেয়।

তাই কষ্টই হোক,আমাদের ও উচিত দিন বা রাতের কিছু সময় হাসব্যান্ডের জন্য দেয়া।যেভাবেই হোক,যত কষ্টই হোক,যত টায়ার্ড থাকি।

দিনশেষে কিন্তু,আমদের সবারই দুইটা বাচ্চা,একটা শাশুড়ির বাচ্চা,একটা আমার বাচ্চা??

 মা_হওয়ার_গল্প
 পিংকি

তিনটি_হাস্যকর_ঘটনা(সত্য ঘটনা)ঃ

1

তিনটি_হাস্যকর_ঘটনা(সত্য ঘটনা)ঃ

#এক.আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।কিন্তু আমি বোরকা একদম নেকাবসহ পড়তাম। তাই আমাকে এইট নাইনের মত লাগতো।একদিন রাত দশটায় আমি, আব্বু-আম্মু আর আমার ছোটভাই বাড্ডা থেকে লোকাল বাসে বাসায় আসতেছিলাম।তো আমরা সিট না পাওয়ায় দাড়িয়ে ছিলাম।বাস ব্রেক করার সাথে সাথে আমি সিটে বসা এক ছেলের মাথার চুল শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে নিজেকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছিলাম। তারপরও প্রায় ৫/৭ মিনিট আমি চুল ধরেই দাড়িয়ে ছিলাম।আমার খেয়ালই ছিলনা।পরে যখন আমরা নেমে যাবো তখন হঠাৎ ই তাকিয়ে দেখি ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয় আছে।আমিও তাড়াতাড়ি তার চুল ছেড়ে নেমে পড়ছি। খুব লজ্জা পেয়েছালাম।

#দুই.আমি একদিন অটোতে উল্টো দিকের সিট এ বসছি। আর একটা ছেলে ড্রাইভারের সাথে বসছে ঠিক আমার পিছনেই। সারা রাস্তা ভালভাবে হেলান দিয়ে গেছি।নামার পরে দেখি ছেলে টা হা করে তাকিয়ে আছে।পরে দেখি অটোর মাঝখানে গ্রিল নাই। সারা রাস্তা দুইজন দুজনের পিঠে পিঠ লাগাইয়া গেছি। লজ্জায় আমি শেষ

#তিন.
আব্বু কক্সবাজারে ঘুরতে গেছে। আমি আমার বয়ফ্রেন্ড কে কল করতে বলছি আম্মুর নাম্বারে। হঠাৎ আম্মু কোথা থেকে এসে পড়লো কে জানে। তো বিএফ কল করলে ফোন রিসিভ করলো আম্মু। আমার বিএফ তো বুঝতে পারে যে ওই টা আমি না। তো ও বলে যে, “আন্টি রাখি আছে?” আম্মু বলল যে, “না এখানে রাখি নামের কেউ নেই। তখন ও ফোন রেখে দিলো। তার পরপর ই আব্বু কল করলো। আম্মু নাম্বার ভালো করে না দেখে ই ফোন রিসিভ করে। আমি তো ভয়ে শেষ, আবার আমার বিএফ কল করলো নাকি ভেবে। আব্বু আম্মু কে জিঙ্গাসা করলো ” মধু লাগবে??” আম্মু বলল, ” মধু নামের কেউ নেই।” আব্বু আবার বলল, “লাগবে না?” আম্মু বলল,”আপনি কাকে চান?” আব্বু মজা করে বলল, “তোমাকে চাই”।
পরে আম্মু হাসতে হাসতে বলে তোর আব্বু ফোন করছে। খুব বাঁচা বেচে গেছিলাম……

#ঘটনাগুলো_আমার_নয়
#সংগ্রহ করা

Jara Tasnim

আব্বু কথা রেখেছেন। তিনবার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর আমার বোনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন রিকশাওয়ালার সাথে।

1

আব্বু কথা রেখেছেন। তিনবার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর আমার বোনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন রিকশাওয়ালার সাথে। সব বাবাই যদিও এরকম কথা রাগ করে বলেন কিন্তু আমার আব্বু এক কথার মানুষ। বলেছেন এবং দিয়েছেন।
আমার রিকশাওয়ালা দুলাভাইকে নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত। যখন তখন আমার সাথে এসে শালী শালী বলে ঢং করে লোকের মধ্যে আমার খুবই বিরক্ত লাগে।
ভয়ে ভয়ে আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করছি। আমি ফেল করতে চাইনা। আমি রিকশাওয়ালা বিয়ে করতে আগ্রহী নই।
দুলাভাইয়ের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা জানতাম না। আব্বু একদিন ওনার রিকশায় বাজার করে ফিরছিলেন তখন উনি আব্বুর সব বাজার নিজে হাতে করে বাসায় পৌছে দিয়ে গেছেন দেখে আব্বু মুগ্ধ হয়েছেন। যার ফলস্বরূপ ওনার সাথে আমার বোনের বিয়ে। কিন্তু ওনার ফ্যামিলির সাথে আমাদের এখনো দেখা হয়নি। দুলাভাই সারাদিন রিকশা চালিয়ে এসে বাসায় এসে ঘাম মুছতে মুছতে ডাকেন,”ও বউ,ও শালী!পানি দেও।”
মনের দুঃখে আমার বোন কয়েকবার আত্নহত্যা করতে গেছে। প্রতিবারই আব্বুর কাছে জোরসে থাপ্পড় খেয়েছে।
দুলাভাইকে আমার বোন দেখতে পারে না। রাতে আমার ঘরে এসে থাকে আর সারারাত কাঁদে, “লাবণ্য এ আমার কি হয়ে গেল রে!! আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল সরকারি অফিসার আর আমার বিয়ে হয়ে গেল একটা রিকশাওয়ালার সাথে রে!!!”
আপুকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। সামনে আমারো রেজাল্ট আমি খুবই আতংকে আছি। হয়তো আমার বর হবে এক অটোওয়ালা। তারপর দুই ভায়রা-ভাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকালে একজন অটো নিয়ে বের হবে একজন রিকশা। এদিকে আমরা দুই বোন প্রাইভেট কার ছাড়া কোথাও যাই না। কি একটা অবস্থা!
দুঃশ্চিন্তায় শিউরে উঠে আমার আর সেই রাতে ঘুম হয় না।
আমার বিদেশ থাকা ফুপী বাসায় এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করেছেন! আব্বুকে বলছেন,এইটা তুমি কি করলা? এতবড় ক্ষতি কেউ নিজের মেয়ের করে? এরচেয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতা, আমি কি মরে গেছিলাম?
এসব বলতে বলতে দুলাভাইয়ের কাছে গিয়ে রাগী গলায় বললেন,”you scoundrel! How dare you? I will sue you!!”
দুলাভাই বললেন, “You can’t,bcz she is my legal wife. And whatever. I have no mistakes actually..”
আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে দুলাভাই আবার বললেন, “আমিও ভালো ঘরের সন্তান।আমিও ইন্টার ফেইল। ইংরেজিতে ভালোই ছিলাম অংকে ধরা খাইছি। এজন্য আমার আব্বুও আমাকে রিকশা কিনে দিছে!”

write: Jannatul Firdous

মায়ার শাশুড়ি 

0

বিয়ের পর আজ আমার শ্বশুড় থুরি শ্বাশুড়ি বাড়িতে পঞ্চম দিন, আসলে শ্বাশুড়ি বাড়ি বলার কারণ হলো এই বিশাল বাড়িটা আমার শ্বশুড় করেছেন তার প্রিয়তমা ইস্ত্রির নামে, এবং আমার শ্বাশুড়িই যে এই বাড়ির একমাত্র রাজা তা বিয়ের পরের দিন তার আদরের ছোট খোকাকে অফিসে পাঠিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন,সমস্ত খাবার আমাকে দিয়ে রান্না করালেও পরিবেশনের দায়িত্ব টা তিনি নিয়ে এটা আমায় খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আমার মতো অবলা শাবনূর এর কপালে বাংলা সিনেমার রিনা খান দাজ্জাল শ্বাশুড়ি জুটেছে,,, সে যাই হোক এই ৫ নম্বর দিনের সকাল বেলায় আমি সকলের জন্য খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছি, সবাই খেতে বসলে,আমার শ্বাশুড়ি আম্মা এসে চিল শকুন নজর দিয়ে খাবারের খুত বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে খাবার পরিবেশন করতে করতে বলিলেন
—এত খাবার রান্না করেছো কেন বউমা বেচে যাওয়া খাবার কি তোমার বাপের বাড়ি পাঠাবা?
এইত্ত শ্বাশুড়ির লাইনে আসছেন বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলতেছেন, আমার জা এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে যথেষ্ট ভয়ে আছে আমার রাগ ঘুড়ে তার বাপের বাড়ি যাবে এই আশংকায়, আমি একটু ভেবে চিন্তে বুঝলাম মায়াগিরি দেখানো ছাড়া উপায় নাই, শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে টেবিলের থেকে মেলামাইনের তরকারি পরিবেশনের চামচটা নিয়ে একটা বাড়ি মারলাম টেবিলে, বা হাত মাজায় দিয়ে চেচিয়ে বললাম
—এই যে আমার শাশুড়ির ছোট খোকা তুই কিন্তু বলেছিলি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কেউ কোনো কথা কখনো বলবে না, আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি

আমার বরটা ফেরদৌস টাইপ নিরীহ চোখে আমার দিকে চাইলো সাথে আমার শ্বাশুড়ি বাড়ির বাকি সবাইও আমার এই আচমকা প্রতিবাদী ছোট বউয়ের চরিত্র দেখে কিছুটা টাস্কিতো ভাবে তাকালেন।

—ছোট বউ, তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ছোট খোকার সাথে তুই তোকারি করতেছ!

আমি একটু ভয়ে আমার শ্বশুর আর ভাশুরের দিকে তাকালাম তাদের চোখে সম্মতি দেখে আবার প্রতিবাদী শাবনূর চরিত্রে ফেরত গিয়ে বললাম,

—শোনেন শাশুড়ি আম্মা, ৪ বছর প্রেমের সম্পর্কে আপনার ছোট খোকারে আমি অলিম্পিক দৌড় দেওয়াইছি আমার পিছনে, সেখানে এইগুলা তো কিছুই না, ৪ বছরে তার ধৈর্য দেইখে নিশ্চিন্ত হইছি সে হইলো গৃহপালিত স্বামী এবং ছেলে আপনি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বললে সে যেমন মায়ের বাধ্যগত সন্তানের মতো প্রতিবাদ করিবে না তেমনি আমিও হইলাম তার প্রাণ ভোমরা আমাকেও সে ছাড়িবার পারবে না…. এখন চুপচাপ এইখানে বসে পড়ুন খাবার আজকে থেকে আমি পরিবেশন করব নয়তো ছোট খোকার মায়ের সাথেও তুই তোকারি শুরু করব কিন্তু।
আমার শ্বশুর একটু শব্দ করে হেসে উঠলেন আমার শাশুড়ি খাইয়ালামু লুকে তাকাতেই শ্বশুর আব্বা চুপ,
—এই শাশুড়ির ছোট্ট খোকা কি হলো হা করে তাকিয়ে না থেকে খেয়ে নাও, আর খবরদার কেউ যেন আমার শ্বশুর আব্বার অযত্ন না করে আজ থেকে, অনেক সহ্য করেছেন তিনি,
আমার শাশুড়ি আহত বাঘিনীর মতো ফুসছেন এক্ষুনি তার থাবায় কাউকে জখম না করলে তার শান্তি নেই তিনি তার ছোট খোকার দিকে তাকাচ্ছেন,নিশ্চয়ই অপদার্থ বলে ছেলে কে মনে মনে গালি দিচ্ছেন, আমার শাশুড়ি না খেয়েই শহর কাপানো শব্দে গিয়ে তার ঘরের দরজা লাগালেন,ওমনি আমার শ্বশুর আব্বা সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন,
—বুঝলি বড় খোকা এতদিনে তোর মায়ের শিক্ষা হলো
—তাই তো দেখছি বাবা
যদিও আমি একটু কানকাটা টাইপ তাও লজ্জা পেয়ে গেলাম, আসলে এ সব আমার শ্বশুরের প্লান ছিল তার ইস্ত্রি কে একটু গরম করার জন্য মাঝে মাঝেই নাকি তিনি এমন করেন,নতুন বউ হিসেবে আজ দায়িত্ব টা আমার ছিল রাগ আবার তিনিই ভাঙাবেন, তাতে অসুবিধা নেই।
আমার শাশুড়ি রিনা খানের ডুপ্লিকেট অরিজিনাল না একটু পরেই তার রাগ ভেঙে যাবে মাথায় তেল নিতে পারি না আমি তেলের বাটি নিয়ে তার সামনে বসলে ঠিকই যত্ন করে তেল দিয়ে চুলে বেনী করে দেবেন আমি জানি,রাগের বশে চুলের মুঠি ধরে টান দিলেও অসুবিধা নেই, ইন্ডিয়ান সেসা তেল নিয়ে আমার চুল আপাতত ঘন কালো এবং মজবুত আছে।আবার হয়তো কোনোদিন একটু অভিমান করে আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলে উঠবে, তাতেও অসুবিধা নেই, বৌমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলা প্রতিটা শাশুড়ির শাশুড়িগত অধিকার।

 মায়ার শাশুড়ি
সামিয়া খান

আসরের নামাজের কয়েক মিনিট পর কতগুলো যুবক চিৎকার করে উঠল,

1

আসরের নামাজের কয়েক মিনিট পর কতগুলো যুবক চিৎকার করে উঠল, কে কোথায় আছ, তাড়াতাড়ি এসো, এক ব্যক্তিকে রেল কেঁটে চলে গেছে! ঘঠনাস্থলের আশেপাশের লোকজন সকলেই এসে উপস্থিত হল।রেলেকাঁটা ব্যক্তিকে ঘিরে সকলে জটলা বেঁধে দাঁড়াল। দেখা গেল হতভাগ্য ব্যক্তিটি একজন যুবক। ১৯ বছর বয়সের এক টগবগে যুবক! রেলের চাকা যুবকের দেহকে দু’টুকরো করে ফেলেছে!দেহের নিম্নাংশ রেলের চাকার সাথে মারাত্নক ঘর্ষণের ফলে কোথাও যেন উড়ে গেছে! উপরাংশ এখনও জীবিত, তড়পাচ্ছে আর লাফাচ্ছে! লোকেরা দেখতে পেল যুবকের বুকের ভেতর এখনও রূহ বিদ্যমান! হৃদপিন্ড এখনও শ্বাস-প্রশ্বাস সঞ্চালণ করছে! যুবকটি এখনও জীবিত!!! উপস্থিত লোকদের একজন এগিয়ে আসল। মুমূর্ষু যুবকের মাথা কোলে উঠিয়ে নিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে কালেমার তালক্বীন দিতে শুরু করল। বলতে লাগল: বল হে যুবক, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! বল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! কালেমার আওয়াজ শুনতেই যুবক আগের চেয়ে আরও বেশি কেঁপে উঠল! যুবক কাঁপতে থাকল!
শরীর ঝাড়া দিতে থাকল! অবশেষে উচ্চারণ করেই ফেলল: আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ! অতঃপর যুবকের দেহ স্থির হয়ে গেল। হৃদপিন্ড শান্ত হয়ে গেল। রূহ মওলার ডাকে সাড়া দিয়ে দেহ ত্যাগ করে চলে গেল। যুবক মারা গেল। কালেমার উপরই মারা গেল! লোকেরা হাঁক ছুড়ল, একটা চাদর নিয়ে এসো! দেহের উপরাংশ চাদরে উঠাব।বাকি অংশ খুঁজে উপস্থিত করব।
রাত্রি ছিল বিদঘুটে অন্ধকার। কতগুলো নওজোয়ান তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনের টর্চ অন করল। যুবকের দেহের উপরাংশ ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা পাওয়া গেল, তা খুঁজে চাদরে বহন করে রেললাইনের পার্শ্বস্থ একটি কফিখানায় নিয়ে আসা হল। লোকেরা যুবকের দেহে তল্লাশি চালাল, নাম-ঠিকানা কোনকিছু পাওয়া যায় কি না। একজন ব্যক্তি যুবকের ডান হাতটা ধরল, অমনি চিৎকার করে উঠল- ইয়া আল্লাহ!এই যুবকটা খৃষ্টান!!! তার হাতে ক্রুশ!!! লোকেরা লাশটি উঠিয়ে নিল।তারা দিশেহারা হয়ে গেল, এখন কি তারা লাশটিকে ফেলে চলে যাবে? অথচ যুবকটি কালেমার উপর মৃত্যুবরণ করেছে। নাকি তার পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছিয়ে দিবে, যাতে খৃষ্টান গোরস্থানে দাফন করা যায়?! উপস্থিত লোকেরা যুবকের লাশকে নিশ্চুপ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে আর নিঃশব্দে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে! হঠাত পথিমধ্যে গ্রামের প্রথম রাস্তার মুখে যুবকের পিতার দেখা মিলল! কারণ, ঘঠনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রামেই যুবকের ঠিকানা। যুবকটি মসজিদের সন্নিকটেই মারা গেছে! মসজিদের আশপাশের সকলেই মুসলিম। যুবকের পিতা কান্নারত অবস্থায় মাথা ঝুকিয়ে নিয়ে বলল, আমি যা বলব, তাতে আপনারা যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে যাবেন! আমি আপনাদেরকে লজ্জাবনত হয়ে বলছি, আমার এই ছেলে কুরআনের তেলাওয়াত শুনার বড্ড পাগল ছিল! হ্যাঁ,সে একজন খৃষ্টান। তবুও সে মুসলিমদের কুরআন শুনতে পছন্দ করত! আমি তার কামরায় ঢুকতাম। ঢুকে তাকে দেখতে পেতাম সে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে কিছু শুনছে। আমি জিজ্ঞেস করতাম: বাছা! কী শুনছ?
সে বলত:আব্বু, গান শুনছি! তবুও আমি কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে নিতাম। দেখতাম সে কুরআনের তেলাওয়াত শুনছে! আমি তাকে নিষেধ করতাম। ধমক দিতাম। শক্তাশক্তি করতাম। বলতাম: তুমি যদি কুরআন শুনা বন্ধ না কর, তাহলে আমি তোমাকে মেরে ফেলব! সে উত্তরে বলত: আব্বু, আপনি কখনও তা পারবেননা!কখনও আমায় হত্যা করতে পারবেননা! আমাকে বিরত রাখতে পারবেননা! কুরআন থেকে আমাকে দূরে রাখতে পারবেননা! উপস্থিত লোকেরা কান্নাশ্রু মিশ্রিত আনন্দে একেঅপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল! তারা যুবকের ব্যথিত-বিষন্ন পিতাকে বলল: আপনার ছেলে কালেমার উপর মৃত্যুবরণ করেছে! নিজ মুখে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করে মৃত্যুবরণ করেছে! সে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করেছে অর্ধদেহে! ব্যথায় কাতর যুবকের পিতা বলল: আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, যা আমার ছেলে সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অত:পর সে উচ্চারণ করল- আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ! ঐ রাত্রে যুবকের বাসর রাত ছিল। দিনেই সে বিয়ে করেছিল। বাসর রাতের পরিবর্তে তার জানাযার নামায পড়া হল! মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হল। ঘঠনাটি বাস্তব সত্য। ঘঠনাটি শাইখ মুহাম্মাদ আস-সাওয়ী তার কোন এক বয়ানে বলেছেন। তিনি ঘঠনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
সূত্র- আরবের সাড়াজাগানোফেইসবুক পেইজ
# ﻛﻞ _ ﻳﻮﻡ _ ﻗﺼﺔ _ ﺗﻬﺰ _ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ হতে অনূদিত।
কুরআনের প্রতি মহব্বতের কারণে আল্লাহ খুশি হয়ে দুই ব্যাক্তিকে ঈমান দিয়ে দিলেন। আল্লাহু আকবার! সুবহানাল্লাহি ওবিহামদিহী! কুরআনগুলো আজ আমাদের ঘরে বড় অবহেলিত! প্রিয় ভাই-বোন আমরা কি দৈনিক অল্প কিছু সময় কুরআনের পরশে ব্যয় করতে পারি না? আসুন ২৪ ঘন্টায় অন্ততপক্ষে আধাঘন্টা হলেও আমরা কুরআনের জন্য ব্যয় করি। আল্লাহ তাওফিক দিন।
আমিন….

#Collected

গল্প :সালামের ফল

0

দেখ দেখ মাইয়াডা খালাম্মার মতো বোরকা পইরা যাইতাছে ভেতরে নাজানি কত্ত সুন্দর ,যদি একবার পাইতাম ইশশশ ”
আমি জারিন। বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলাম ছাত্রীদের বাংলা ক্লাস নেওয়ার জন্য। রাস্তায় চার-পাঁচ জন বখাটে খেলের দল থেকে একজন উপরের কথা গুলো বললো। আমি কথা গুলো শুনে থেমে গেলাম।পিছনে ফিরে তাদের কাছে গেলার। তারা সবাই চুপ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, হয়তো ভাবছে চড় টর মারি কিনা। আমি সুন্দর করে সালাম দিলাম ।কেউ সালামের উত্তর দিল কিনা বুঝা গেল না। তারপর বললাম ‘আচ্ছা আপনাদের মধ্যে লিডার কে? ‘
সবাই দেখি মাঝখানে একজনের দিকে তাকালো,তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম “আচ্ছা ধরেন আপনার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে তো আমি আপনার বউ হবো তখন যদি আপনার বউকে কেউ এই ধরনের কথা বলে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন? ” (এভাবে বললাম কারন তাদেরকে মা বোনদের কথা বলে লাভ নাই) ছেলেটি বললো : না একদম খুন করে ফেলবো।( যে কথা গুলো বলছে তার দিকে একটু রাগী চোখে তাকালো)
আমি বললাম : খুন করতে হবে না যেসব মেয়েদের এসব খারাপ কথা বলেন তারা আপনাদেরও বউ হতে পারে এটা মাথায় রাখিয়েন।
ছেলেগুলো অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গিয়েছিল।
কারো মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।
তারপর আমি আর কিছু না বলে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।
পরের দিন আবার একি জায়গায় ছেলেগুলো দাড়িয়ে ছিল আমি সামনে দিয়ে যেতেই সবাই একসাথে সালাম দিল। সালামে একটু তাচ্ছিল্য মেশানো ছিল। আমি উত্তর দেওয়ার পরে সবাই আবার একসাথে বলে উঠলো “কেমন আছেন ভাবি ?” শুধু লিডার ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি ভালভাবেই উত্তর দিলাম “জি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি। আপনারা? ”
সবাই বললো ভাল। আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলতে হয়। আর সালামের অর্থ হলো “আপনার উপর শান্তি বর্শিত হোক ” সালাম একটা দোয়াও। সালাম দিলে ভাল করে দিবেন। তাদের মধ্যে একজন কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু লিডার ইশারায় চুপ থাকতে বললো
।আমি আর কিছু না বলে সালাম দিয়ে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।
এরপর থেকে আমাকে দেখলেও কেউ আর কিছু বলতো না, শুধু মাঝে মাঝে সালাম দিত। কিছু দিন যাওয়ার পর খেয়াল করলাম অন্যছেলে গুলো না থাকলেও তাদের লিডার দাড়িয়ে থাকে। আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যেতাম।
আরো কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন উনি আমাকে সালাম দিল আমি উত্তর দিলাম। তারপর বললো …..
“আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। কিন্তু কিভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না ( মাথা চুল্কে, নিচের দিকে তাকিয়ে) আসলে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই । ”
আমি বললাম :দেখুন আপনি হয়তো ঠিক মতো নামাজ পরেন না। নেশা টেশাও করেন। কিন্তু আমি এমন একজনকে চাই যে সব সময় আল্লাহ্‌ তালার কথা মনে করিয়ে দিবে। আপনি যদি সেরকম হওয়ার চেস্টা করেন তাহলে ভেবে দেখবো,কথাটা বলেই দ্রুত পায়ে চলে গেলাম।এরপর থেকে তাকে আর সেখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম না।
তারপর ২ – ৩ মাস পর আমি তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । একদিন যাওয়ার পথে উনি আমাকে সালাম দিলেন, আমি প্রথমে চিনতে পারছিলাম না। তারপর তাকিয়ে দেখি স্বাভাবিক ভাবে দাড়ি রাখা মায়াবী মায়াবী চেহারার সেই ছেলেটি আমি বললাম “জী বলুন ” উনি বললেন “আমি এখন নিয়োমিত নামাজ পরি। নেশা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। ইসলামের বিধান মেনে চলার চেস্টা করি। এখন কি আমাকে মেনে নেওয়া যায়?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম ” জি আমার পরিবারে প্রস্তাব পাঠান ” উনি খুশি হয়ে বললেন ” আলহামদুলিল্লাহ্‌, অবস্যই খুব তারাতাড়ি পাঠাবো ”
তার নাম হলো সাবিত। তার পরিবার ভালই ছিল কিন্তু সে বন্ধুদের সাথে মিশে ওরকম হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হলো।
বাসর রাতে উনি আমাকে প্রথম দেখেন ,কিছুখন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলেন “আমি যেমন ভেবেছিলাম আল্লাহ তার থেকেও সুন্দর আর মূল্যবান উপহার আমাকে দিয়েছেন ,চলো নামাজ পরে নতুন জীবনের জন্য দোয়া করি ”
তার কথা শুনে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো।

(কাল্পনিক)
গল্প :সালামের ফল
লেখা : Afia Tabassum Akhi

ত্যাগ  র্পব – দুই এবং শেষ

0

ত্যাগ
র্পব – দুই এবং শেষ

#কয়েকঘন্টাপর…..
আমি মিরার রুমে ই ছিলাম। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আতিক এসেছে।
যা অনুমান করেছিলাম তাই….. আতিক খালি হাতে ফিরেছে।
ওর চোখ-মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ছুটে এসেছে এখানে। হয় তো মিরার জন্য চিন্তা হচ্ছিলো তাই। মনে প্রশ্ন জাগলো ” এতো ভালোবাস মিরা কে…..?”

আতিকের চোখে বিষ্ময় আর অনেক গুলো প্রশ্নের ছাপ দেখতে পেলাম।
মিরার বেডের পাশে খাবারের খালি প্লেট আর ওকে একটি বাচ্চা কে জড়িয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আতিক বেশ অবাক হয়েছে বুঝলাম। আতিক কোনো প্রশ্ন করার আগে আমি ই বলতে লাগলাম,,,,,,,
:— আপনি কোনো বাচ্চা খুঁছে পাবেন না তা আমি জানতাম। এই মেয়ে টি এখন থেকে আপনাদের দুজনের। বাচ্চা টি কে কোলে তুলে দেওয়ার পর ই আপনার ওয়াইফ শান্ত হয়েছেন।

আতিক আমার দিকে কৃতজ্ঞতাপূর্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,
:— থ্যাংকস এ লট ডক্টর…. আপনার এই ঋণ আমি কি ভাবে শোধ করবো আমি বুঝতে পারছি না।
আমি বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,
:— এই বাচ্চা টি কে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে যদি মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে ই আমার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে।
:— অবশ্যই….. কিন্তু বাচ্চা টি কার??
:— আমি বিকালে বাচ্চাটির বার্থ সার্টিফিকেট আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবো। তখন ই না হয় দেখে নেবেন।

কথা টা বলেই সেখান থেকে চলে এলাম।

পুরনো সব স্মৃতি, পুরনো মানুষগুলো, চেনা শহর সব কিছু কে পেছনে রেখে পাড়ি জমিয়েছি কানাডার উদ্দেশ্যে। যে সুযোগ টা হাত ছাড়া করে ফেলেছিলাম। সে সুযোগ টা আরো এক বার পেলাম,শুধুমাত্র রাবেয়া আপার সুপারিশের কারনে।
তাই পুরনো সব কিছুর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে অপরিচিত শহরের উদ্দেশ্যে চলেছি।
দুচোখে বাঁধ ভাঙা কান্না আসছে। মনে হচ্ছে নিজের কলিজা টা ছিড়ে ওদের দিয়ে এসেছি। নিজের শেষ সম্বল টাও আজ বিলিয়ে দিলাম। তাতে কি….?? ভালোবাসার মানুষ টার জন্য না হয় আরও এক বার #ত্যাগ স্বীকার করলাম……

বিকালে এক জন র্নাস আতিকের কাছে এসে ওর হাতে
একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,
:—ড. অলিভিয়া আপনাকে এই খামটা দিয়ে দিতে বলেছিলেন।
নাম টা শুনে আতিকের বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।
আতিক নার্স কে প্রশ্ন করলো,,,,,,,
:— কি নাম বললেন?? ড. অলিভিয়া?
:— হ্যা, রাবেয়া ম্যাডামের সাথে যে ম্যাডাম আপনার স্ত্রীর অপারেশন করেছেন তিনি।
:— ওহ….. আচ্ছা দিন।

আতিক খামটা খুলে দেখলো তাতে একটা বার্থ সার্টিফিকেট আর তার সাথে একটা চিঠি রয়েছে। বার্থ সার্টিফিকেট টা দেখতে ই যেনো তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সার্টিফিকেটে বাচ্চার মায়ের নাম এর জায়গায় লেখা অলিভিয়া হোসেন আর বাবার নামের জায়গায় লেখা আতিক হোসেন অর্থাৎ তার নাম। আতিকের হাত কাপতে লাগলো। মনে মনে সে বলতে লাগে,,,,,,,
:— এটা কি করে সম্ভব…..!!!
কাপা কাপা হাতে ও চিঠি টা খোলে। তাতে লেখা রয়েছে:—

” আতিক……
এখনো কি তুমি বুঝতে পারো নি কিছু? এতো গুলো দিন তোমার পুরনো ছয় বছরের ভালোবাসা তোমার চোখের সামনে ছিলো। অথচ তুমি তাকে চিনতেই পারলে না…..??
তুমি এখন এটাই ভাবছো তাই না যে এই বাচ্চা টার বাবার নামের জায়গায় তোমার নাম কেনো লেখা?
হ্যা….তুমি যেটা অনুমান করছো সেটা ই। এই বাচ্চার বাবা তুমি ই আতিক….। তুমি যখন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তখন যে আমি দুসপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম সেটা আমি নিজেও জানতাম না। নয়ন মনি তোমার মেয়ে।
আতিক আমি তোমার চোখের জল সহ্য করতে পারি না। আর তুমি মিরার চোখের জল সহ্য করতে পারো না। তাই নয়ন মনি কে তোমাদের দিয়ে গেলাম। আতিক… নয়ন মনি আমার চোখের মনি। বড় সাধ করে ওর নাম রেখেছিলাম। মনি আমার নাড়ী ছেড়া ধন। কতো টা কষ্ট হয় কোনো মায়ের তার দুধের বাচ্চা অন্যকে দিয়ে দিতে সেটা তো তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে। বুকটা ফেটে যাচ্ছিল মনি কে রেখে আসার সময়।
আমি জানি মিরা আমার মেয়ে টাকে পূর্ন মাতৃস্নেহ দেবে। তোমার কাছে আমার একটা ই অনুরোধ, মনির প্রতি কখনো অবহেলা করো না।
আর ভয় পেও না তোমার জীবনে আমি কখনো বাধা হয়ে দাড়াবো না। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগও নেই। তুমি ভালো থাকলেই আমি খুশি।
তোমরা ভালো থেকো এদোয়া ই করি।
অলিভিয়া…..”

চিঠিটা পড়া শেষ করে আতিক হন্নে হয়ে অলিভিয়া কে খুঁজতে লাগে। সমস্ত হসপিটল খুজে অলিভিয়া কে না পেয়ে সেই নার্স এর কাছে যায় সে, যে তাকে অলিভিয়ার চিঠি টা দিয়েছিলো।

:— নার্স… ড. অলিভিয়া এখন কোথায়?
:— ম্যাডাম তো আজ দুইটার ফ্লাইটে কানাডা চলে গেছেন।
:— কিহ….. কানাডা চলে গেছে….!!! আচ্চা ওনার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে বলতে পারবেন??
:— সরি স্যার…ওনার সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায় নেই।

আতিক অসহায়ের মতো মিরার কেবিনে ফিরে আসে। মিরা ঘুমাচ্ছে। আতিক ধীর পায়ে নয়ন মনির কাছে এগিয়ে যায়। মাটি তে বসে পরে। নয়ন মনি কে কোলে তুলে নিয়ে সে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,,,,,,,
:— তুই দেখতে একদম তোর মায়ের মতো হয়েছিস। কিন্তু তোর মা যে আমায় একবার তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও দিলো না। এক বার সবটা বলার সুযোগও দিলো না। আমি যে তোর আর তোর মায়ের কাছে অপরাধী হয়েই রয়ে গেলাম রে মা….. ।
কথাগুলো বলেই আতিক কাদতে লাগলো। কোনো রকমে চোখের জল টা মুছে সে আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,
:— তোর মায়ের সাথে আমি যত টা অন্যায় করেছি, তার চেয়ে দ্বিগুণ ভালোবাসা দিয়ে আমি তোকে বড় করবো, দ্বিগুণ ভালোবাসা দিয়ে তোকে আগলে রাখবো, একটা আচড়ও তোর গায়ে লাগতে দেবো না। কথা দিলাম আমি তোকে….কথা দিলাম রে মা…..

কথাগুলো বলে আতিক মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে আবার কাদতে লাগলো।


#২০বছরপর……….

আজ বহু বছর পর আবার দেশের মাটিতে পা রাখলাম।
এই কয়েক বছরে কি পেয়েছি সেটা হিসাব করে দেখলাম, স্বামী-সংসার-সন্তান না পেলেও ডাক্তারি পেশার কারনে সাধারন গরীব মানুষ গুলোর অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এতোগুলো বছরে সাহস পায়নি আতিক আর আমার মেয়েটার কোনো খোজ নেবার। অতীত আমার বন্ধ দরজায় বার বার কড়া নেড়েছে। কিন্তু সে ডাকে সাড়া দিলে যে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারতাম না।

ফিরে এসেছি সেই চিরো চেনা জায়গায়। যেখানে প্রথম নিশ্বাস নিয়েছিলাম, যে ছোট্ট বাড়ি টায় আমার আর আতিকের ছোট্ট সংসার টা শুরু করেছিলাম। বাড়ি টা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এই কয়েক বছরে সব কিছু বদলে গেছে।
বদলে গেছে আমার চশমার পাওয়ার, পাক ধরেছে চুলে।
সব কিছু বদলে গেছে কিন্তু আমার বাড়িটা একটুও বদলায় নি। ঠিক যেমন টা রেখে গিয়েছিলাম তেমন টা ই আছে। অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম,,,,,,,,
:— এটা কি করে সম্ভব!! এতোগুলো বছরে তো বাড়ি টার পোকামাকড়ের বাড়ি হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো…..!!!

হঠাৎ আমার পাশ থেকে মোদাচ্ছের কেউ বলে উঠলো,,,,,,,,
:— আমি জানতাম…… জানতাম তুমি ফিরে আসবে।
আমি বিষ্মিত হয়ে পাশ ফিরে তাকালাম। ওমা এযে অল্প বয়সি এক মেয়ে। আমি বলতে লাগলাম,,,,,,,,,
:— কে মা তুমি…..? কি বলছো?
:— আমায় চিনতে পারলে না? ভালো করে দেখো।

আমি তাকিয়ে রইলাম আর চেষ্টা করলাম চেনার। হঠাৎ বুকের ভেতর টা ধুক করে উঠলো। যা ভাবছি তাই ই নয় তো?? তবে আমি কি ভাবে ওর চোখে চোখ রেখে কথা বলবো?? ওর তো কোনো দোষ ছিলো না। ও যদি আমায় প্রশ্ন করে কেনো আমি এমনটা করেছিলাম, তবে আমি কি জবাব দেবো? আমি যে ওর কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।

মেয়েটি বলতে লাগলো,,,,,,,,
:— কেনো চোখ নামিয়ে নিচ্ছো মা….?? তুমি তো চোখ নামিয়ে নেওয়ার মতো কোনো কাজ করো নি…. তবে কেনো অপরাধীর মতো মাথা নিচু করছো??

আমি চোখ তুলে অবাক দৃষ্টি তে ওর দিকে তাকালাম।

:— একটা বার তোমার মেয়ে টা কে বুকে টেনে নেবে না? একটা বার মনি বলে ডাকবে না?

আমার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এলো।
কাপা কাপা কন্ঠে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,
:— মনি….আমায় ক্ষমা করে দিস মা…..

মনি ঝাপিয়ে আমার বুকে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,
:— এমন করে বলো না মা…. আমি জানি মা একটা মেয়ে কখন তার নাড়ী ছেড়া ধন অন্যকে দিয়ে দিতে পারে। আমিও যে একটা মেয়ে। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।
জানো মা…. ছোট বেলায় বাবা কে প্রায় দেখতাম তোমার ছবির সামনে বসে কাদতে। বাবা কে কতো বার জিঙ্গেস করেছি “কেনো বাবা কাদছো? ছবি টা কার?” বাবা শুধু বলতো “সময় আসুক তোকে সব বলবো।”
তারপর আমার যখন সাত বছর তখন মা মানে মিরা মা হুট করে ই একদিন স্টোক করে মারা গেলো। বাবা সেদিনও খুব কেঁদেছিলো। মনি মা জন্মগত ভাবেই মানসিক রোগী ছিলো। তাই আমি আর মা দুজনেই বাবার কাছে ছোট বাচ্চার মতো ছিলাম। ছোট বাচ্চার মতো বাবা আমাদের দুজন কেই সামলে রাখতো।

আমি এবার মনি কে থামিয়ে প্রশ্ন করলাম,,,,,,,,
:— কি বল্লি তুই…!!! মিরা জন্মগত মানসিক রোগী ছিলো? আর ও মারাও গেছে?
:— হ্যা মা….আর তোমার কথা আমি জানতে পারি আমার যেদিন পনেরো বছর বয়স পূর্ন হলো সেদিন। সে দিন বাবা আমাকে সব বলে। তোমার সাথে বাবার পরিচয়, বিয়ে, ডিভোর্স, তারপর আবার মিরা মায়ের সাথে বিয়ে সবটা। তোমার কথা জানার পর আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুমি নিজেকে এতোটা ই গুটিয়ে রেখেছিলে যে তোমার কোনো খোজই আমি বা বাবা কেউ পাই নি। তারপর বাবা একদিন আমায় তোমাদের এই ছোট্ট বাড়িটায় নিয়ে আসে। আমার আর বাবার বিশ্বাস ছিলো শেকড়ের টানে এই বাড়ি টা তে তুমি একদিন ঠিক ফিরে আসবে। তাই আমি আর বাবা রোজ বিকালে এখানে এসে তোমার প্রতীক্ষায় থাকতাম। আর দেখো আজ ঠিক তুমি চলে এলে।

আমি অবাক হয়ে মনি কে জিঙ্গেস করলাম,,,,,,,,,
:— তোর বাবাও আমার প্রতীক্ষা করতো!!!
:— কেনো মা…. তোমার কি বিশ্বাস হচ্ছে না?? আমি জানি তোমার বাবার প্রতি অভিমান আছে। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে ছেড়ে মিরা মা কে বাবা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেনি…. বাধ্য হয়ে করেছিলো।
তোমার আর বাবার বিয়ের কথাটা দাদাভাই জানতেন না তা তো তুমি জানোই। দাদাভাইয়ের অনেক টাকার ঋণ ছিলো। পাওনাদারদের টাকা দিতে না পারায় তাদের করা অপমানের কারনে দাদাভাই যখন প্রায় মৃত পথযাত্রী ঠিক সেই সময় মিরা মায়ের বাবা দাদাভাইয়ের সব ঋণ পরিশোধ করতে রাজি হোন। কিন্তু তার বিনিময়ে মিরা মা কে বিয়ে করার সর্ত দেন।বাবা তখন জন্মদাতা পিতাকে বাচানোর জন্য নিজের ভালোবাসা #ত্যাগ করেছিল। কিন্তু বাবা তোমাকে এখনো আগের মতোই ভালোবাসে। তুমি বাবা কে ভুল বুঝো না প্লিজ।

আমার দুচোখে নোনা জল ভীড় করেছে আবার। আমি কেবল মনি কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হলো আমাদের থেকে কিছুটা দূরে কেউ দাড়িয়ে আছে। আমি চোখ মুছে ভালো করে তাকালাম। ওটা যে আতিক তা বুঝতে আমার খুব বেগ পেতে হলো না। ওর চোখদুটো জলে ভেজা। কতো দিন পর মানুষ টা কে দেখলাম…..

আমি আতিক কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম,,,,,,,
:— দূরে দাড়িয়ে আছো কেনো?? এসো এখানে।

দেখলাম আতিকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আতিক এগিয়ে আমাদের কাছে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,,
:— অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে….
জানি না আমি আদোও ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য কিনা। তবুও তোমার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি।

আমি নিজে নিজে ভাবতে লাগলাম,,,,,,
আতিকের আমার প্রতি করা অন্যায় গুলোর কোনো প্রতিবাদ আমি না করলেও আমার চুপ থাকা টাই হয় তো আমার প্রতিবাদ ছিলো। মনের কোথাও না কোথাও আতিকের প্রতি অভিমান জমে ছিলো। এই দীর্ঘ কয়েক বছরে সে অভিমান আরো বেড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আজ সবটা শোনার পর অভিমান গুলো যেনো কর্পুরের মতো উবে গেছে।

আমায় চুপ থাকতে দেখে আতিক আবার প্রশ্ন করলো,,,,,,,,,
:— কিছু বলছো না যে…আমায় ক্ষমা করেছো তো অলিভিয়া?
আমি আতিকের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম। অতঃপর বলতে লাগলাম,,,,,,,,
:— তোমার প্রতি আমার আগেও কোনো অভিযোগ ছিলো না আজও নেই।
মনি উৎসাহ নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,
:— তবে এখন থেকে আমরা সবাই সুখে-দুঃখে এক সাথে থাকবো। মা তুমি কাল ঘুমের দীর্ঘ দেহ পেরিয়ে এসেছো। জীবনে প্রতিবাদহীন ভাবে অনেক #ত্যাগ স্বীকার করেছো। আর না…..। কি থাকবে তো মা বলো…..

আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে মনির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মাথা নাড়লাম……..

#সমাপ্ত……..

#লেখিকাঃ Jara Tasnim(Hidden Girl)

ত্যাগ পর্ব – এক

0

ত্যাগ পর্ব – এক

লেখিকাঃ Jara Tasnim(Hidden Girl)

সেদিন প্রায় এক বছর পর আমার প্রাক্তন স্বামী আতিকের সাথে দেখা হয়েছিল। সঙ্গে তার বর্তমান স্ত্রীও ছিল। তার স্ত্রী পেসেন্ট আর আমি ডাক্তার। দীর্ঘ চার বছর রিলেশনের পর বিয়ে করে দুবছরও সম্পর্ক টা কে টিকিয়ে রাখতে পারি নি। এক বছর আগে, এক বারও পেছনে না তাকিয়ে আতিক এতো বছরের সম্পর্ক টা কয়েক মুহূর্তে ভেঙে দিয়ে নিষ্ঠুরের মতো চলে গিয়েছিল।

আর মাত্র চার ঘন্টা পর আমার ফ্লাইট ছিল। জীবনের সব কিছু হারিয়ে যখন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম ঠিক তখন ই জীবনে এতো বড় একটা সুযোগ এসেছিল । হাসপাতালের সবার থেকে বিদায় নিতে এসেছিলাম। হঠাৎ পুরুষ কন্ঠের কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো কানে। কারো কিছু হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য এগিয়ে যেতেই দেখলাম এক লোক নার্সদের সামনে হাত জোর করে খুব কান্না-কাটি করছে আর বলছে,,,,,,
:— দয়া করে আমার স্ত্রী কে সু্স্থ করে দিন।

আর সেই লোক টি অন্য আর কেউ নয়। আমার ই প্রাক্তন স্বামী আতিক। বুকের ভেতর টা আমার মুছরে উঠেলো। দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলাম। চেম্বারে গিয়ে মুখে মাক্স আর গায়ে এ্যফ্রন জড়িয়ে নিয়ে ফিরে এলাম। কাপা কাপা কন্ঠে আতিক কে জিঙ্গাস করলাম,,,,,,,
:— কি হয়েছে আপনার ওয়াইফের??

আতিক কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,
:— আমার ওয়াইফ চার মাসের প্রেগনেন্ট। হঠাৎ ওর খুব পেইন হচ্ছিলো। হাসপাতালে নিয়ে আসতে আসতে মিরা(আতিকের স্ত্রী) সেন্সলেস হয়ে গেছে।

আতিকের স্ত্রীর প্রেগনেন্সির কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা আবারও মুছড়ে উঠলো।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে আতিক আমার সামনে হাটু গেরে বসে পরে। কাদতে কাদতে বলতে লাগে,,,,,,,
:— প্লিজ ডক্টর আমার ওয়াইফের ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।

আরো অনেক কিছুই সে বলছিলো হয় তো। তবে আমার সে দিকে মনোযোগ ছিলো না। আমি চলে গিয়েছিলাম এক বছর আগে। যে দিন আতিক হঠাৎ সামনে এসে হাটু গেরে বসে আমার মুখের সামনে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দিয়েছিল আর বলেছিল,,,,,,,,,
:— আমাদের ডিভোর্স টা করতেই হবে। না হলে আমার বাবা কে বাচাতে পারবো না।

আমি কেবল থ্… হয়ে আতিকের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
বিষ্মিত চোখে আতিক কে জিঙ্গেস করেছিলাম,,,,,,
:— কি হয়েছে তোমার আতিক….!!! এসব কি বলছ তুমি??
:— প্লিজ কোনো প্রশ্ন করো না। আমি কোনো উত্তর দিতে পারবো না। প্লিজ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দাও।

সেদিন প্রথম আমি আতিকের চোখে জল দেখেছিলাম।
ওর চোখের এক এক ফোটা জল এক এক বার করে আমার বুকের ভেতর টায় আঘাত করে যাচ্ছিলো।
তাই সাইন করে দিয়েছিলাম ডিভোর্স পেপারে কোনো প্রশ্ন না করেই।
ভালোবাসার মানুষের জন্য একবার না হয় #ত্যাগ স্বীকার করলাম।

সেদিন কেবল “আমাকে ভুলে যাওয়ার চেস্টা করো। আর পারলে ক্ষমা করে দিও” বলেই আতিক চিরদিনের জন্য আমার থেকে দূরে চলে গিয়েছিল।
আর আমি….? আমি নিঃস্ব-অসহায়ের মতো অশ্রুসিক্ত চোখে ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়েছিলাম।

চোখে প্রায় জল চলে আসছিলো। চোখের পানি কে চোখে বন্দি করে বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। এগিয়ে গিয়ে মিরা কে চেকআপ করলাম। অবস্থা খুব একটা ভালো না। ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।
এদিকে এই মুহুর্তে ড. রাবেয়া ছাড়া ভালো কোনো ডক্টর ডিউটিতে নেই। আর তাকে সাহায্যের জন্য অবশ্যই আর এক জন ডক্টর লাগবে।

আতিক এখনো কেদেই যাচ্ছে আর মিরার মাথায় হাত বোলাচ্ছে।
এক বছর আগেও আমি ওর চোখের জল সহ্য করতে পারি নি। আর আজও পারলাম না…..
কেন্সেল করে দিলাম কানাডা যাওয়া। হাত ছাড়া করে দিলাম জীবনে সাফল্যের সব চেয়ে বড় সুযোগ টাও।
ভালোবাসার মানুষের জন্য আর এক বার না হয় #ত্যাগ স্বীকার করলাম।

O.T. তে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে কেউ নাম ধরে ডাক দিলো। পেছনে ফিরতে ই দেখলাম ড. রাবেয়া আমার দিকে বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছেন।

ড. রাবেয়া আমাকে জিঙ্গেস করলেন,,,,,,
:— তোমার না ফ্লাইট আছে…! O.T. ‘র জন্য রেডি হচ্ছো যে….!! যাবে না তুমি….?
:— নাহ….. রাবেয়া আপা।
:— কি বলছো তুমি !! এমন সুযোগ তুমি আর পাবে ?? পাগল হয়েছো নাকি???
আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,,,,,,
:— অপারেশন টা আপনি একা করতে পারবেন না তা আমি জানি। আর পেসেন্টের জীবনের থেকে কি ডাক্তারের ক্যারিয়ার বড়…. রাবেয়া আপা??

রাবেয়া আপা বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি তার চোখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম যে তিনি কিছু আন্দাজ করেছেন। রাবেয়া আপা আমাকে কোনো প্রশ্ন করার আগে ই আমি সেখান থেকে এক প্রকার পালিয়ে এলাম।


অপারেশন শেষ…….
মিরার বাচ্চা টা কে বাচানো সম্ভব হয় নি। বাচ্চাটি আরো কিছুদিন আগেই পেটের মধ্যে মারা গিয়েছিল। মেয়ে টা খুব পাগলামি করছে। বাচ্চা কে হারানোর কষ্ট বেশ বড় একটা ধাক্কা হয়ে দাড়িয়েছে ওর জন্য।

#দুদিন_পর…….
মিরা ঘুমাচ্ছে। আতিক মিরার হাত টা ধরে বসে আছে।
আর আমি দূর থেকে ওকে দেখছি।
আচ্ছা আতিক তোমার কি আমার কথা একটুও মনে নেই?
যার চোখের গহীনে বারবার তলিয়ে যেতে বলতে, তার চোখ দেখেই তুমি আজ চিনতে পারলে না।
যার কন্ঠস্বর না শুনে থাকতে পারতে না, তোমার নিশ্বাস থেমে যায় বলতে, তার কন্ঠ এতোবার শুনেও তুমি চিনতে পারলে না।
যাকে ছাড়া তুমি বাচবে না বলতে তাকে ছাড়া তুমি দিব্বি অন্য এক মেয়ের সাথে সুখে সংসার করছো। এখন আমি তোমার কাছে কেবলি এক বেগানা নারী।

হায় রে…. আমার নিঠুর ভবিতব্য….
তবে কেমন ভালোবাসতে তুমি আমায়???
না না…. হয় তো আমার ই অপারগতা। হয় তো আমার ভালোবাসায় খাদ ছিলো। হয় তো মিরার ভালোবাসা তোমায় আমার ভালোবাসা ভুলিয়ে দিয়েছে…..
নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।

হঠাৎ একজন নার্স এসে বলল,,,,,,,,,
:— ম্যডাম আপনাকে রাবেয়া মেডাম ডেকে পাঠিয়েছেন।
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বললাম,,,,,,,,
:— হু….. গিয়ে বলো আসছি।
:— আচ্ছা।

আমি চোখ ভালো করে মুছে নিয়ে রাবেয়া আপার রুমে চলে গেলাম। রাবেয়া আপার রুমে যেতেই তিনি আমার হাতে একটা খাম তুলে দিলেন।

পরের দিন……
মিরার পাগলামি আরো বেড়ে গেছে। কিছুতেই খাওয়ানো যাচ্ছে না ওকে। এমোতাবস্থায় একটা শিশু বাচ্চা ওর কোলে তুলে দেওয়াটা খুবই জরূরি। রাবেয়া আপার পরামর্শ অনুযায়ী আতিক এতিম খানায় ছুটেছে একটা বাচ্চার আসায়। কিন্তু আমি জানি আতিক কে খালি হাতে ফিরতে হবে। এই শহরে এতো ছোট বাচ্চা পাওয়া অসম্ভব ছাড়া আর কিছুই না।

আমি মিরার কেবিনে গেলাম, একটা ছোট্ট শিশু কে কোলে নিয়ে। দরজা খুলতেই কিছু একটা এসে স্বজরে আমার কপালে আঘাত করলো।
আমি কপালে হাত চেপে তাকিয়ে দেখলাম একটা চামচ।
মিরা জিনিস পত্র সব ছুড়ছে আর চিৎকার করছে। নার্স দুজনের প্রায় নাজেহাল অবস্থা ওকে সামলাতে গিয়ে।

আমি এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,
:— মিরা শান্ত হও….
:— না আমি থামবো না। আগে আমার বেবি কে আমার কাছে এনে দাও। তোমরা সবাই আমার বেবি কে লুকিয়ে রেখেছো। ফিরিয়ে দাও আমার বেবি কে…. ফিরিয়ে দাও বলছি…..
আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে আমার কোলে থাকা তিন মাসের মেয়ে শিশুটি কে মিরার কোলে তুলে দিয়ে বলল,,,,,,
:—এই তো তোমার বেবি….তোমার মেয়ে….
মিরা বিষ্ময় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো,,,,,,,
:— আমার মেয়ে….!!??

কথা টা বলে মিরা বাচ্চটির দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। আর সে চাহনি তে বিষ্ময়ের সাথে আমি স্পষ্ট ঢিকরে পরা মাতৃস্নেহ দেখতে পারছিলাম। পরম স্নেহে বাচ্চা টি কে সে বুকে জড়িয়ে নিলো।

#কয়েকঘন্টাপর
আমি মিরার রুমে ই ছিলাম। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আতিক এসেছে…..

#চলবে………

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইরো)