Tuesday, September 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2331



বিসর্জন  ষষ্ঠ পর্ব

0

বিসর্জন  ষষ্ঠ পর্ব

– কে বলছেন ?

যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

– ওহ্ আপনি,,, আমার নাম্বার কোথায় পেলেন ?

আপনার বাবার থেকে নাম্বারটা পেয়েছি।

– তো ফোন দিয়েছেন কেন ?

চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।এই মাসেই চাকরিতে জয়েন দিয়েছি।আর আমার পোস্টিং হয়েছে ঢাকাতে।ঢাকায় আসার আগে আপনার বাবার সাথে দেখা করতে গেছিলাম।তিনি আমাকে বলেছেন আপনার সাথে দেখা করতে আর আপনার খোঁজ খবর রাখতে।

– ও আচ্ছা।

কালকে বিকেলে কি আপনার সাথে দেখা করা যাবে ?

– সামনে আমার পরীক্ষা আমি এখন আপনার সাথে দেখা করতে পারবো না।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর কোন একদিন না হয় দেখা করবো।

দেখা করতে পারবে না কথাটা শুনে মনটা কিছু টা খারাপ হয়ে গেল তারপরই মনে হল লিনার পরীক্ষা না থাকলে হয়তো সে দেখা করত।

এভাবেই কেটে গেল আরও এক সপ্তাহ।রাতে আবার ফোন দিলাম।লিনা ফোন রিসিভ করে বলল ওর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ও পরে কথা বলবে।

লিনার অসুস্থতার কথা শুনে সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হল না।

খুব সকালে আবার লিনাকে লিনাকে ফোন দিলাম,,,

মাথা ব্যাথা কমছে ?

– হ্যাঁ,,,ব্যাথার ঐষুদ খেয়েছি এখন আর ব্যাথাটা নেই।

আজকে বিকেলে একটু দেখা করতে পারবেন ? প্লিজ না বলবেন না।

– ওকে,,,,আমি বের হওয়ার আগে আপনাকে জানিয়ে দিব কোথায় দেখা করব।

লিনা যে ঠিকানা দিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সেখানে বসে আছি।ও বলেছিল পাঁচটায় আসবে আমি চারটায় এখানে এসে বসে আছি।ওর সাথে দেখা করব বলে সময় যেন কিছুতেই যাচ্ছিল না।তাই এক ঘন্টা আগেই এখানে চলে এসেছি।এখানে বসে বসে লিনার কথা কল্পনা করতেছি।এর মধ্যেই কে যেন পেছন থেকে বলে উঠলো,,,,

– কখন আসলেন ?

এইতো ঘন্টা খানেক হবে।

– এত আগে আসলেন কেন।আমি তো বলেই দিয়েছি আমি পাঁচটায় আসবো এখানে।

বাসায় একা একা ভাল লাগতেছিল না।তাই চলে এসেছি।

– তাই বলে এক ঘন্টা আগে আসতে হবে।

কি আর করব।একা বাসায় থাকি,কথা বলার মানুষ নেই।তাই একটু আগেই চলে আসলাম।

তো কাল রাতে হটাৎ এত মাথা ব্যাথা হল কেন ?

– যানি না।তবে মাঝে মধ্যেই এমন হয়।ব্যাথার ঐষুদ খেলে আবার কমে যায়।

ডাক্তার দেখিয়েছেন ?

– ডাক্তারের কাছে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছে না।

কালকেই আপনি ডাক্তার দেখাবেন।মনে থাকবে ?

– ওকে দেখাবো।

তো আপনার চাকরি জীবন কেমন চলছে ?

হম ভালোই চলতেছে,,,,,

সেদিন লিনার সাথে দেখা করে বাসায় চলে আসি।তারপর মাঝে মধ্যেই লিনার সাথে আমার কথা হত।তবে বেশি একটা না।

আর এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিল,,,,

এর মধ্যেই একদিন অফিসে থাকা কালীন সময়ে লিনা ফোন দিল।এখন পর্যন্ত ও আমাকে একবারও ফোন দেয়নি।হটাৎ করে ওর ফোন পেয়ে আমি একটু এবাক হলাম,,,,

তাই ফোন রিসিভ করে বললাম।

হ্যাঁ বলেন,,,

– আচ্ছা,,,আপনার খুঁজে কি A- রক্তের কেউ আছে ?

আমার রক্তের গ্রুপেই A-

– সত্যি আপনার রক্তের গ্রুপ A- ?

হম।

– আপানাকে আমি একটা ক্লিনিকের নাম বলছি আপনি এক্ষুনি এখানে চলে আসুন।খুব তারাতারি আসবেন কিন্তু।

ওকে আমি আসতেছি।

– ওকে তাহলে এখন আমি ফোন রাখছি বাই।

এই বলেই লিনা ফোন রেখে দিল।আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেলাম ঐ ক্লিনিকে।সেখানে গিয়ে দেখি লিনা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।আমাকে দেখেই বলল,,,

– আপনি এসেছেন,,,

হম এসেছি।আপনি বলছেন আর আমি আসবো না।এখন বলুন কাকে রক্ত দিতে হবে।

– আমার এক বান্ধবী কাল রাতে এক্সিডেন্ট করে পা অনেকটা কেটে গেছে।শরীর থেকে অনেক ব্লাড বের হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে খুব দ্রুত ওরে ব্লাড দিতে হবে।অনেক জাইগায় A- ব্লাড খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।তারপর আপাকে ফোন দিলাম।কি অদ্ভুত ব্যাপার আপানাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম আপনার ব্লাড A-।এখন আমার বান্ধবীকে আপনার রক্ত দিতে হবে।

তারপর রক্ত দেওয়ার জন্য লিনা আমাকে নিয়ে গেল।

সেদিন লিনার বান্ধবীকে রক্ত দিয়ে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই বাসায় এসে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লিনা অনেক বার ফোন দিয়েছে।এটা দেখার সাথে সাথেই আমি আবার লিনাকে ফোন দিলাম,,,,

– কি ব্যাপার,,,রাতে আমি আপনাকে এতবার ফোন দিলাম আপনি ফোন রিসিভ করলেন না কেন ?

শরীর খুব ক্লান্ত ছিল তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।

– আপনার কি শরীর খারাপ ?

না শরীর ঠিক আছে।

– জানেন আমার বান্ধবীরা সাবাই কাল আপনার খুব প্রশংসা করেছে।তখন আমার খুব ভালো লাগছিল ওদের মুখে আপনার প্রশংসা শুনতে।

আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ কেন ?

– আমার বান্ধবীকে রক্ত দিলেন তাই আপানাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম।

ধন্যবাদ দিতে হবে না।আপনার বান্ধবী মানে তো………….. !!

– কিছু বললেন ?

না কিছু বলিনাই।

সেদিনের পর থেকে লিনার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হতে শুরু করল।এখন আমি ফোন দেওয়ার আগেই সে আমাকে ফোন দেয়।তারসাথে রাত জেগে অনেক কথা বলি।এখন আমি তাকে তুমি করে বলি আর সে আমাকে আপনি করেই বলে।দিনগুলি খুব ভালোই যাচ্ছিল আমাদের,,,,,

তারপর একদিন সে আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলল।আমিও তার সাথে দেখা করতে গেলাম,,,,

– জানেন আজকের দিনটা না আমার জন্য খুব স্পেশাল।

কেন আজকে কি ?

– আজকে আমার জন্মদিন।তাই আজকের দিনটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।

এটা শুনার সাথে সাথেই আমি লিনাকে উইশ করলাম।তারপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বড় একটা কেক অডার করলাম।ওকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে আমি একটু বাহিরে আসলাম।তারপর মার্কেটে গিয়ে আমার পছন্দে ওর জন্য একটা নীল শাড়ি কিনলাম আর ওকে দেওয়ার জন্য কিছু ফুল নিলাম।

তারপর রেস্টুরেন্টে এসে ওকে ফুল আর শাড়িটা দিলাম।শাড়িটা ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।তারপর দুজনে কেক কাটবো এমন সময় লিনা বলল আমার মাথাটা কেমন যানি করছে আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেল।

এক বছর পর••••••

– কিরে আর কতক্ষণ লাগবে তোর,,,,

এইতো মা আমার হয়ে গেছে।

– সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করতেছে।

তুমি যাও আমি আসছি।

আজ আমার বিয়ে।আমি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি আর এদিকে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।মা এটাই বলতে আসছিল আমাকে।

বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরে আমাকে বরন করার জন্য লিনা তার বান্ধবীদের নিয়ে এসেছে।লিনাকে দেখার পরেই আমার বুকের ভিতর টা কেমন করে উঠল।কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও খুব হাঁসিখুশি।

লিনাকে দেখার পরে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে একটা মানুষ এতটা কষ্ট নিয়ে কি করে হাঁসতে পারে।

লিনা আমাকে বরন করে ভেতরে নিয়ে গেল।আমি শুধু তাকিয়ে দেখিতেছি মেয়েটাকে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।

তারপর বিয়ে পারানোর জন্য কাজী এসে যখন আমাকে বলল,,, বলুন বাবা কবুল।অনেক চেষ্টা করতেছি কবুল কথাটা বলার কিন্তু কিছুতেই এই ছোট শব্দটা আমার মুখে আসতেছে না।আমার শুধু বার বার লিনার কথাই মনে হচ্ছিল।

এর মধ্যেই লিনা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।ওকে দেখার পর আর কবুল না বলে থাকতে পারলাম না।

অবশেষে আমার সাথে লিজার বিয়েটা হয়ে গেল।প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্তেও এই বিয়েটা আমাকে করতেই হল।

চলবে,,,,,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed

বিসর্জন পঞ্চম পর্ব

0

বিসর্জন পঞ্চম পর্ব

তার মানে চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।বাবা মা কে খবরটা জানালাম ওনারা খুব খুশি হয়েছেন।তবে বাবাকে দেখে মনে হল বাবা একটু বেশিই খুশি হয়েছেন।হয়তো এটা ভেবেই বাবা বেশি খুশি হয়েছেন যে আমাকে আর ওনার টাকা দিতে হবে না।

সাথে সাথে আঙ্কেলকেও খবরটা জানালাম ওনিও খুব খুশি হয়েছেন খবরটা শুনে।

আগামী মাসের এক তারিখে চাকরিতে জয়েন দিতে হবে।তাই সবকিছু গুছগাছ করে নিলাম। যাওয়ার আগে একবার আঙ্কেলের সাথে দেখা করে গেলে ভাল হয়।

তার পরের দিনেই চলে গেলাম ওনার সাথে দেখা করতে।আমাকে দেখে আঙ্কেল খুব খুব হল।তারপর চাকরির ব্যাপারে জিগ্যেস করল।এর ভেতরেই আমি জিজ্ঞাস করলাম আঙ্কেল লিনা বাসায় নেই ?

– না বাবা,লিনা তো বাসায় নেই।ও তো ঢাকায় চলে গেছে।

লিনা বাসায় নেই কথাটা শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।

– তোমার চাকরির পোস্টিং কোথায় হয়েছে বাবা ?

“ঢাকায় হয়েছে”

– ওহ্ তাহলে তো ভালোই হয়েছে।লিনাও ঢাকায় থাকে তোমারও সেখানেই পোস্টিং হল।দুজন একি শহরে থাকবে।

আঙ্কেল আপনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।আপনি আমাকে ঐ সময় টাকা টা না দিলে চাকরিটা আমার হতো না।

– এভাবে বলো না বাবা।আমার কাছে সে সময় টাকা টা ছিল তাই তোমাকে টাকাটা দিয়ে একটু সাহায্য করছি।আর বাকি সব কৃতিত্বই তো তোমার।

আঙ্কেল আপনাকে ঘিরে যে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে,,,,

– হম আমি যানি আমাকে নিয়ে তোমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে।

তবে শুনো আমি তোমাকে কিছু কথা বলি।এর ভিতরেই হয়তো তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে,,,,

লিজার বয়স তখন ছয় বছর আর লিনার বয়স সারে তিন বছর ঠিক তখনেই তাদের মা মারা যায়।তখন আমি মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।তখন অনেকেই আমাকে বলেছিল আমি যেন আরেকটা বিয়ে করে নেই।কিন্তু আমি আমার মেয়েদের কথা চিন্তা করেই বিয়েটা করিনি।

তখন আমার ছিল বিশাল ব্যবসা।ব্যবসাতে সময় দিতে গেলে মেয়েদের সময় দিতে পারি না।আর তখন মেয়েরাও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।তাই নিজেকে ব্যবসা থেকে গুটিয়ে নিলাম।সবসময় মেয়েদের কাছেই থাকতাম।
তখন দুই মেয়েকে ঘিরেই ছিল আমার পৃথিবী।

তারপর আস্তে আস্তে মেয়েরাও বড় হল বুঝতে শিখলো আমিই তাদের মা আমিই তাদের বাবা।

আমার দুই মেয়েই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল।তাই আমারো ইচ্ছা ছিল আমার দুই মেয়েকেই পড়াশোনা শিখিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলবো।

বড় মেয়েটা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হওয়ার তিন বছর পর যখন ছোট মেয়েটা একদিন ফোন দিয়ে বলল বাবা আপুর মত আমিও ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।সেদিন আমার মনে হয়েছিল হ্যাঁ,আমি পেরেছি আমার মেয়েদের কে সেভাবেই গড়ে তুলতে।

বিগত এক বছর ধরেই বিভিন্ন জায়গা থেকেই অনেক ছেলের বাবাই মেয়েদের বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছে আমার কাছে।সেখানে অনেক বড় ধরেনের চাকরি জীবি ছেলে ছিল,অনেক ধনী পরিবারের ছেলে ছিল।তবে সেই ছেলেদের মধ্যে কোন ছেলেকেই আমার মেয়ের যোগ্য হিসাবে আমার কাছে মনে হয়নি।

এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন তুমি তোমার বাবাকে নিয়ে আসলে আমাদের বাসায়।তুমি তোমার সমস্যার কথা আমাকে খুব সহজেই অকপটে বলে দিলে।কোন কিছুই আড়াল করোনি আমার থেকে।তোমার এই গুনটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।যেহেতু একটা সময় আমি ব্যবসা করেছি তাই মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না।তাই হয়তো সেদিন এতকিছু না ভেবেই তোমার হাতে টাকাটা তুলে দিয়েছিলাম।

তুমি সেদিন চলে যাওয়ার পরেও আমি খুঁজ নিয়ে জেনেছি টাকাটার তোমার খুব প্রয়োজন ছিল সেদিন আর তুমি মানুষ হিসেবেও নাকি খুব ভালো।তারপর আমার মনে হল আমি মানুষ চিনতে মোটেও ভুল করিনি।

তারপর তুমি যখন আমার বাসায় এসে লিজা কে দেখে গিয়ে বললে তুমি লিজাকে নয় লিনাকে বিয়ে করতে চাও।তখন এটা শুনে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম।

আমার বড় মেয়ে লিজা শান্ত প্রকৃতির।রূপে,গুনে শিক্ষায় দিক্ষায় লিনার থেকে লিজা এগিয়ে।লিনাও ভালো তবে ও একটু আনমনা আর ভাবুক প্রকৃতির।

লিজাকে পছন্দ না হয়ে তোমার লিনাকে পছন্দ হয়ে গেল।এমনটা হওয়ার কোন কারন আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আর তুমিও আমাকে এমন ভাবে বললে আমি খুব দ্বিধা দ্বন্ধে পরে গেছিলাম এটা নিয়ে।কি করব ভেবেই পাচ্ছিলাম না।

তারপর ভবিষ্যতের কথা চিন্তে করে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলাম।লিনাকেই তোমার কাছে বিয়ে দিব।

তবে এটার জন্য যে আমার বড় মেয়ে লিজা একটু কষ্ট পেয়েছে এটা আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছি।তবে এই কষ্ট টা সাময়িক।কিছুদিন পরে হয়তো আর থাকেবে না।

সেদিন যদি আমি তোমার কথা না ভেবেই লিজাকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম তাহলে এটা তোমাদের বিবাহ পরবর্তী জীবনে বিরুপ প্রভাব ফেলতো।

তাই আমি আমার ছোট মেয়েকেই তোমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছি।আর তুমি সেদিন যে সৎ সাহস নিয়ে আমাকে কথাটা বলেছিলে।সেদিন তোমার ঐ সৎ সাহসটাকে আমি সম্মান করেছিলাম।

তুমি চাইলেই সেদিন তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার দেওয়া টাকার কথা চিন্তা করে বিয়েটা করে নিতে পারতে।কিন্তু,তুমি তা করোনি।এই বিষটা আমার খুব ভালো লেগেছে।

আর বিয়ের পরে মেয়ের বাবা থেকে জোর করে যে টাকা আদায় করে নেওয়া হয় সেটাকে যৌতুক বলে।এখনো কিন্তু তোমাদের বিয়ে হয়নি।আর সেদিনের দেওয়া টাকাটা আমি কিন্তু তোমাকে যৌতুক হিসাবে দেই নি।তোমার বিপদে আমি শুধু তোমাকে সাহায্যে করেছি মাত্র।আর কিছু না।

তোমার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছিল সেদিন।আর সেই ভালো লাগা থেকেই হয়তো সেদিন তোমাকে টাকাটা আমি দিয়েছি।

আঙ্কেল আমার একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে।

– কি কথা ?

আমার আর লিনার বিয়ের আগেই আমি আপনাকে টাকা টা ফেরৎ দিতে চাই।

– সে সব পরে দেখা দেখা যাবে বাবা।আগে তুমি গিয়ে আগে চাকরিতে জয়েন দাও।

আঙ্কেল এর থেকে এতগুলি কথা শুনে সেদিনের পর থেকে ওনার প্রতি আমার সম্মান বোধ আরও কয়েক গুন বেড়ে গেছে।সত্যিই ওনি একজন অসাধারণ মনের মানুষ।ওনাকে খুব কাছ থেকে না দেখলে আর ওনার বলা কথা গুলি না শুনলে এটা হয়তো কোন দিন জানতেই পারতাম না।

সেদিন যখন ওনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসবো তখন ওনি আমার হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলেন এটা তুমি রাখো।

টাকাটা আমি নিতে চাইনি।কিন্তু,ওনার সাথে আমি পেরে উঠিনি।তারপর একরকম বাধ্য হয়েই টাকাটা আমাকে নিতে হল।

আমার কাছে লিনার ফোন নাম্বার নেই।আঙ্কেলের থেকে কিভাবে ফোন নাম্বার চাইবো এটা চিন্তা করতেই আঙ্কেল বলে ফেলল তোমার কাছে হয়তো লিনার ফোন নাম্বারটা নেই।তুমি ওর ফোন নাম্বারটা নিয়ে যাও,,,

ঢাকায় এসে চাকরিতে জয়েন করেছি এক সপ্তাহ হল।নতুন এসেছি তো তাই এই এক সপ্তাহে কাজের চাপটা আমার কাছে বেশিই মনে হয়েছিল।

আজকে ছুটির দিন হওয়ায় অফিস বন্ধ ছিল।তাই সকাল থেকেই কয়েক বার লিনার নাম্বারটা ফোনে চেপেছি কিন্তু কল দিতে পারিনি।

তাই রাতের বেলা সাহস করে কল দিয়েই ফেললাম।দুইবার রিং হওয়ার পর তৃতীয় বারেই মাথায় ফোন রিসিভ করল,,,,

– হ্যাঁলো,,,,, !!

ভালো আছেন ?

– কে বলছেন ?

যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

– ওহ্,,,আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন ?

আপনার বাবার থেকে নাম্বারটা পেয়েছি।

– তো ফোন দিয়েছেন কেন ?

চলবে…..

লেখা || Tuhin Ahamed

বিসর্জন চতুর্থ পর্ব

0

বিসর্জন চতুর্থ পর্ব

এর মধ্যেই হটাৎ একদিন আঙ্কেল ফোন দিয়ে বলল।আগামীকাল তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসো।

পরের দিন সকাল বেলা আমি,মা আর বাবা লিনাদের বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম।তখন বাবা আমার হাতে একটা আংটি দিয়ে বলল এটা তোর কাছে রাখ।আমি আংটি টা হাতে নিয়ে বললাম বাবা এটা দিয়ে আমি কি করবো ?

– এটা আমি তোকে দেইনি তোর কাছে রাখতে বলছি।এটা আমার বৌমা’র জন্য।

যে বাবা কিনা তার ছেলেকে টাকা দিলে ওটার হিসাব রাখে আর আজ ওনার ছেলের বউয়ের জন্য আংটি নিয়ে যাচ্ছে।এটা ভাবতেই আমার কেমন যানি লাগছে।

যাই হোক অবশেষে আমরা লিনাদের বাসায় গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখি বাসাটা হালকা সাজানো হয়েছে।লিনার বাবা আমাদের দেখতে পেয়েই এগিয়ে এসে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলেন।

লিনার বাবার সাথে আমার বাবা- মা কথা বলতেছিল এর ফাঁকে আমি আঙ্কেল কে জিজ্ঞাসা করলাম,,,,

আঙ্কেল আমি কি লিনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি।

– হ্যাঁ বাবা তুমি গিয়ে কথা বলো,লিনা ওর ঘরেই আছে।আয়েশা তুই ওর সাথে গিয়ে লিনার ঘরটা ওকে দেখিয়ে দে।

এই বাড়ির কাজের মেয়েটা আমাকে লিনার ঘরে নিয়ে গেল।ঘরে গিয়ে দেখি কেউ নেই ঘরে।ঘরটা খুব সুন্দর করে গুছানো।ঘরের দেয়ালে দেয়ালে টানানো ছিল বিখ্যাত চিত্র শিল্পীর আঁকা কিছু ছবি।সেগুলি আমি ঘুরে ফির দেখতে ছিলাম এর মধ্যেই হটাৎ আমার চোখ চলে গেল বারান্দাটার দিকে।বারান্দায় গিয়ে দেখি এখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে টবে।যেহেতু সময়টা ছিল বসন্ত কাল তাই সব গাছেই ফুল ফুটে আছে।

এত গুলি ফুলের মধ্যে আমার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল বেলি ফুল।কারণ বেলি ফুল আমার খুব প্রিয় একটা ফুল।এত প্রিয় একটা ফুল হাতের কাছে পেয়েছি তাই ধরতে খুব ইচ্ছা হল।

যেই না আমি ফুল গুলি ধরতে যাবো ঠিক তখনেই কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো,,,

– সাবধান,,,ফুলে হাত দিবেন না।

কেন ?

– আমি আমার বাগানের ফুলে কাউকে হাত দিতে দেই না।

আর আপনি এখানে কি এসেছেন কেন ?

আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছিলাম।আর এখানে আসার আগে আপনার বাবার থেকে পারমিশন নিয়েই এখানে এসেছি।

– আমি তো একটু পরেই ওখানে যেতাম।আপনি এখানে না আসলেও পারতেন।

আর এখন যেহেতু এসেই পরেছেন তাহলে বলেন কি বলতে চান।

আপনাকে কি আপনার বাবা কিছু বলেছে ?

– হম বলেছে।তবে আপনি কাজটা মোটেও ঠিক করেন নি।আপনার জন্য আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে।

একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিয়ে।এটা নিয়ে তারা অনেক স্বপ্ন দেখে।কোন মেয়ের যখন বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তখন সেই মুহূর্ত থেকে মেয়েটার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন চলে আসে।

আর বিয়ে ঠিক হওয়ার এক সপ্তাহ পরে যখন মেয়েকে বলা হয় ছেলে পক্ষ এই বিয়েটা ভেঙে দিছে।তখন মেয়েটার মনের অবস্থাটা কি হয় একবার দেখেছেন কি ?

আর বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পরক্ষণেই মেয়েটাকে যখন জানানো হয় তাকে নয় তার পরিবর্তে তারই ছোট বোনকে ছেলে পক্ষের পছন্দ হয়েছে তখন ঐ মেয়ের অবস্থাটা কি রকম হয় এটাও একবার ভেবে দেখবেন,,,,

আমি আপনার আপুর সাথে একবার কথা বলতে চাই।ওনার থেকে আমি এটার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিব।

– আপুকে আপনি কই পাবেন।আপু তো বাসায় নেই,,,,

দুইদিন আগে বাবা যখন আপুকে ডেকে নিয়ে কথা গুলি বলেছিল আমি তখন সেখানেই ছিলাম।আপু তখন হাঁসি মুখেই বলেছিল বাবা ওনার যখন লিনাকেই পছন্দ হয়েছে তাহলে লিনার বিয়েটাই আগে হোক।এতে আমার কোন আপত্তি নেই বাবা,,,,

তখন আপু হাঁসি মুখে কথা গুলি বললেও আপুর ভেতরে ছিল একটা চাপা কষ্ট।এটা বাবা বুঝতে না পারলেও আমি কিন্তু সেদিন ঠিকি বুঝেছি।

আর এর জন্যই আপু পরীক্ষার বাহানা দিয়ে আজকে সকালের ট্রেনেই ঢাকা চলে গেছে,,,,

আচ্ছা আপনাকে যদি একটা কথা জিগ্যেস করি তাহলে কি সত্যি করে উওর টা দিবেন ?

হ্যাঁ দিব,,,আপনি বলেন কি জানতে চান।

– আপুর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হল কিন্তু, আপুকে পছন্দ না করে আপনি আমাকে পছন্দ করলেন কেন ? আপু তো দেখতে আমার থেকে কম সুন্দর না।পড়াশোনার দিক থেকেও আপু আমার থেকে অনেক এগিয়ে তাহলে আপুকে আপনার পছন্দ হল না কেন ?

আমি আপনাকে বা আপনার আপু,দুজনের মধ্যে কাউকেই আগে কখনো দেখেনি।বলতে গেলে আপনার আপুকে না দেখেই এই বিয়েটাতে আমি রাজী হয়ে যায়।সেদিন যখন আপনার বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলল লিজা বাসায় এসেছে তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।

তারপর আমি এখানে আসলাম।আর,যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হল তাকে আমি আজ প্রথম বার দেখবো এমন একটা আগ্রহ নিয়েই আমি সেদিন আপনাদের বাসায় এসেছিলাম।

সেদিন যখন আপনাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে দরকায় কলিং বেল দিয়েছিলাম তখন কিন্তু দরজা টা আপনিই খুলেছিলেন আর প্রথম আমি আপনাকেই দেখেছিলাম।তখন আমি আপনাকে দেখে মনে করেছিলাম আপনিই হয়তো লিজা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

লিজা ভেবেই আপনাকে সেদিন আমার প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায়।আর এতটাই ভাল লেগেছিল আপনাকে যার জন্য পরে আর অন্য কাউকে লিজা বলে মানতে পারিনি।

এরপর এটা নিয়ে আমি অনেক বার ভেবেছি কিন্তু মনের সাথে যুদ্ধ করে আমি পেরে উঠিনি।মন যে শুধু আপাকেই চেয়েছিল।

– কিন্তু আপনাকে যে আমার একটুও ভালো লাগে না।

তাহলে কি এই বিয়েটা হবে না ?

– বিয়েটা হবে।কারন বিয়েটাতে যে আমার বাবার সম্মান জরিয়ে আছে।আমি চাইনা আমার বাবার অসম্মান হোক।

তবে এই বিয়েটাতে আমার কোনরকম মত নেই।শুধু বাবার কথা ভেবেই বিয়েটা করব,,,,

তাহলে তো আমি এই বিয়েটা করব না।

– কেন,,,,করবেন না কেন ?

যে বিয়েতে আপনার কোন মত নেই শুধু বাবার সম্মানের কথা ভেবে বিয়েটা করছেন।এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।

– তাহলে কি আপনি আমার মত নিয়ে এই বিয়েটা করতে চান ?

“হম”

– তাহলে যে আমার একটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে।

আপনার মত পাওয়ার জন্য আমি যে কোন শর্ত মানতেই রাজী।কি শর্ত মানতে হবে বলুন।

– আমার আপুর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিয়েটা হবে না।

ওকে আপনার আপুর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে বিয়ে করব না।

– আর আমি যে আপনাকে এই শর্ত দিয়েছি বাবা যেন কখনোই এই কথা জানতে না পারে।

এই আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি এই শর্তের বিষয়টা আমার আর আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।এটা আমি আর কাউকেই বলব না।

সেদিন যখন লিনাকে আংটি পরানোর পরে আঙ্কেল বিয়ের তারিখ নিয়ে কথা তুলল।তখন আমি বললাম আঙ্কেল বিয়েটা আমি এখনেই করতে চাচ্ছি না।চাকরিটা আগে হোক আর এদিকে লিনাও অনার্স টা কমপ্লিট করুক।তাই আমি আপনার কাছে একটু সময় চাই।

তখন আঙ্কেল ওনার মেয়েকে জিগ্যেস করল লিনা তুমি কি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাও ?

– বাবা আপনার মতামতেই আমার আমার মতামত।আপনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।

তারপর আঙ্কেল বললেন বিয়েটা তাহলে কিছুদিন পরেই হোক।এর মধ্যে তুমি নিজেকেও আরেকটু গুছিয়ে নাও।

আঙ্কেলের কথা শুনে আমার মা বাবাও আর আপত্তি করল না।সবাই এটাই মেনে নিল।

সেখান থেকে বাড়িতে আসার তিন দিন পরেই পিওন বাড়ি এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল।চিঠি টা হাতে নিয়ে খুলে দেখি এটা আমার জয়েনিং লেটার।

তার মানে চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।বাবা মা কে খবরটা জানালাম ওনারা খুব খুশি হয়েছেন।তবে বাবাকে দেখে মনে হল বাবা একটু বেশিই খুশি হয়েছেন।হয়তো এটা ভেবেই বাবা বেশি খুশি হয়েছেন যে আমাকে আর ওনার টাকা দিতে হবে না।

সাথে সাথে আঙ্কেলকেও খবরটা জানালাম ওনিও শুনে খুব খুশি হয়েছেন খবরটা শুনে।

আগামী মাসের এক তারিখে চাকরিতে জয়েন দিতে হবে।তাই,,,,

চলবে…..

লেখা || Tuhin Ahamed

বিসর্জন তৃতীয় পর্ব

0

বিসর্জন তৃতীয় পর্ব

এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে।

ওনি আজকে ফোন না দিলে হয়তো ওনার কথা আমার মনেই হতো না।আমি এতটাই আনন্দের মধ্যে ছিলাম যে সবকিছুই কেমন করে যেন ভূলে গিয়েছিলাম।সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই।দিনগুলি আমার ভালই যাচ্ছিল।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম মেয়েকে দেখার জন্য মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে।যাওয়ার সময় বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছিল তখন আমার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল তাই যে মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হবে তাকে না দেখেই তার বাবার থেকে টাকা নিয়ে চলে এসেছি।এখন যদি মেয়েকে দেখে আমার একটুও পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে,,,,

পছন্দ না হলে তখন তো আর আমার কারার কিছুই থাকবে না।টাকা গুলিও জমা দেওয়া হয়ে গেছে যে।ওনি টাকা চাইলেও তো আর টাকা গুলি আমি ওনাকে ফেরৎ দিতে পারবো না।

দূর,,,এখন আর এত চিন্তা করে কি হবে।যা হওয়ার তা তো অনেক আগেই হয়ে গেছে।এখন মেয়ে যদি আমার পছন্দ নাও হয় তাহলেও এই মেয়েকেই বিয়ে করব।যা আছে কপালে।

মেয়েদের বাসার কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কেউ তো দরজা খুলছে না।যেই না দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতে যাবো ঠিক তখনেই দরজা খুলে গেল।দরজা খুলে যাওয়ার পর আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।এই দৃশ্য দেখে আমি কিছুতেই আর চোখ ফেরাতে পারছি না।তাই হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে,,,

ঠিক তখনেই ভেতরে থাকা মেয়েটা বলে উঠলো,,,

– কি ব্যাপার,কাকে চাই ?

আঙ্কেল আমাকে গতকাল ফোন করে বলেছিলেন আজকে আসার জন্য।

ওহ্ বাবা তাহলে আপনার কথাই বলেছিলেন।ওকে আপনি ভেতরে আসুন।

ভেতরে গিয়ে বসলাম।আর মনে মনে বললাম এতক্ষণ আমি কি ভাবতে ছিলাম আর এখানে এসে কি দেখলাম।এমন মেয়ে আমি আর আগে কখনো দেখিনি।এ আমার যেন কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে,,,

এখন আর মনের মধ্যে আগের সেই ভাবনাটা নেই।এখন শুধু মনে হচ্ছে বিয়েটা আমি কখন কবরো।আর মনে হচ্ছে এই মেয়েকে বিয়ে না করতে পারলে আমার জীবনটাই হয়তো বৃথা হয়ে যাবে যে,,,

– তুমি কখন আসলে বাবা ?

এইতো আঙ্কেল কিছু কিছুক্ষণ হল আসলাম।

– আমি একটা কাজে শহরে গিয়েছিলাম।মাত্রই বাসায় আসলাম।তুমি বসো আমি ভেতর থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেছি।

ওকে আঙ্কেল আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি এখানেই অপেক্ষা করতেছি।

আঙ্কেল ভেতরে চলে গেল।আমি একাই বসে আছি।বাড়ির কাজের মেয়ে এসে নাস্তা দিয়ে গেল।কিন্তু,কিছুই খেতে হচ্ছে না।আমার ভাবনায় শুধু মেয়েটাই ঘুরছে।চোখ বন্ধ করলেই দরজার সামনের ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠে।

এর মধ্যে আঙ্কেল এসে পরেছে,,,

– কি ব্যাপার কিছুই খাচ্ছ না যে।

এখন খিদে নেই আঙ্কেল।তাই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

– তোমার চাকরির ব্যাপারটা কি হল ?

টাকা জমা দিয়ে সবকিছু কমপ্লিট করে আসছি আর ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই নাকি জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবো।

– ওকে।

কালকে আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে তাই তোমাকে আজকে আসতে বলেছি।আমি লিজার সাথে কথা বলেছি।ও বলেছে বাবা তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।তোমার মতামতেই আমার মতামত।আর আমি যানি তোমার পছন্দ কখনই খারাপ হবে না।

আঙ্কেল এর থেকে কথা গুলি শুনে খুব খুশি খুশি লাগছিল আমার।

– তুমি বসো আমি লিজাকে নিয়ে আসি।

আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি আরেকটা বার তাকে দেখবো বলে।কি মায়াময় ছিলো তার সে চাহনি,,,,

একটু পরেই আঙ্কেল সাথে করে ওনার মেয়েকে নিয়ে আসলো।কিন্তু,আঙ্কেলের তো শুধু লিজাকে নিয়ে আসার কথা তাহলে সাথে আরেকটা মেয়ে আসলো ওটা আবার কে ?

ওহ্,,,আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আঙ্কেলের তো দুই মেয়ে।ও হয়তো আঙ্কেলের ছোট মেয়ে হবে।

তারপর আঙ্কেল ওনার মেয়েদের আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এ হচ্ছে আমার বড় মেয়ে লিজা আর এইটা হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে লিনা।লিজা এবার মাস্টার্স ফাইনাল দিবে আর লিনা এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরাশুনা করছে।

আঙ্কেলের এই কথাটা আমার বুক ত্রিশূলের মত হয়ে খোঁচা দিল।দরজা খোলার সময় যাকে দেখলাম,যাকে নিয়ে এতকিছু কল্পনা করলাম সে কিনা আঙ্কেলের ছোট মেয়ে।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতেছি না।

এটা শুনার পরে ভেতর থেকে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম।তাই কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

বাসায় এসে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম।এতদিন ছিল এক চিন্তা,মেয়ে আমার পছন্দ না হলে কি করব।আর আজ থেকে নতুন চিন্তা হল যাকে আমার পছন্দ হয়েছে সে হচ্ছে ওনার ছোট মেয়ে।তবে বড় মেয়েও খুব ভালো দেখতেও যতেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু আমার যে ছোট মেয়েকেই ভালো লাগে।

এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু এখনো কোন উপায় বের করতে পারলাম না।তাই বাধ্য হয়েই অবশেষে আঙ্কেলকেই ফোন দিলাম,,,,

ওনার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেই ফেললাম।আঙ্কেল আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই।কিন্তু, কথাটা আপনাকে যে কিভাবে বলব বুঝতেছি না।আর কথাটা শুনে আপনিই বা কি মনে করবেন,,,,,

– আমি কিছুই মনে করবো না বাবা।তুমি কোন রুকম সংকোচ না করেই আমাকে কথাটা বলতে পারো।

আঙ্কেলের মুখ থেকে কথাটা শুনে মনে কিছুটা সাহস পেলাম আর সেই সাহস নিয়েই বলে ফেললাম।আঙ্কেল আমি আপনার বড় মেয়েকে নয়,আপনার ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

আমার কথা শুনে ওনি চুপ হয়ে গেলেন।

তারপর বললেন,,,দেখো বাবা তোমাকে তো আগেই বলেছি আমি আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই।আর এই ব্যাপারে আমার মেয়ের সাথে কথা হয়ে গেছে।আমার মেয়ে আমার এক কথাতেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে।তাছাড়া বড় মেয়েকে রেখে আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিলে মানুষ জনেই বা কি বলবে।

আঙ্কেল আপনি যদি চান আগে আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে তাহলে তাই হবে।লিজার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেই না হয় আমি লিনাকে বিয়ে করব।আমি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করব আঙ্কেল।

আমি চাইলেই হয়তো আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে করে নিতে পারতাম।এই কাজটা করলে এটা আমার মনের বিরুদ্ধে করা হতো।এতে লিজা বা আমি কেউ সুখী হতে পারতাম না।বিয়েটা তো আঙ্কেল দুই-চার দিনের ব্যাপার না।এটা হচ্ছে সারাজীবনের ব্যাপার।

– ওকে।

আমি ভেবে দেখি কি করা যায়।পরে তোমাকে জানাবো।

সাহস করে হয়তো কথা গুলি আঙ্কেল কে বলেছি।কিন্তু,এখন নিজের মধ্যেই কেমন যানি একটা অপরাধ বোধ কাজ করতেছে।যে মানুষটা আমার বিপদে আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই মানুষটাকেই আজ আমি বিপদে ফেলে দিলাম,,,,

এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিলো।আর আমার মাঝে একটা অজানা ভয় থেকেই গেল।

এর মধ্যেই হটাৎ একদিন আঙ্কেল ফোন দিয়ে বলল।আগামীকাল তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসো,,,,,,

চলবে…..

লেখা || Tuhin Ahamed

বিসর্জন  দ্বিতীয় পর্ব

0

বিসর্জন  দ্বিতীয় পর্ব

– তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে এই বাড়িতে তোর কোন যায়গা হবে না।এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।

এই কথা গুলি বলেই বাবা চলে গেল আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি করবো এখন।পরাশুনা শেষ করেছি দুই বছর হল এখনো একটা চাকরি হল না।বাবা যদি এখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবো।আর ওনাকে কথা দিয়ে এসেছি পাঁচ দিনের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করবো।

খুব টেনশনে না পরলে আমি সাধারণত সিগারেট খাই না।তাই আজকে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট খেলে কেমন যানি একটা প্রশান্তি পাই।সিগারেট টানতে টানতে হটাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন এলো।আমি যদি “দশ” লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারি,তাহলে “দশ” লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারবো না কেন ?

চাকরির জন্য যখন বলেছিল পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা দিলে চাকরিটা হবে।আর আমিও তখন ওনার এক কথায় রাজী হয়ে গেছিলাম।কই তখন তো একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি ঘুষ দিয়ে চাকরি নিচ্ছি।তাহলে এখন আমার এটা মনে হচ্ছে কেন,,,আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।

এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো আমার জানা নেই।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাবার ঘরে গেলাম। বাবা আমাকে দেখেই বলল,,, কি সিদ্ধান্ত নিলে ?

আমি এই বিয়েটা করতে চাই বাবা।তুমি ওনাদের সাথে কথা বলো।

আমার কথা শুনার পরে বাবাকে দেখে মনে হল ওনি খুব খুশি হয়েছেন।খুশি হওয়ারি তো কথা বাবা তো এটাই চেয়েছিলেন।আমি যেন এই বিয়েটা করে নেই।

হাতে যেহেতু সময় বেশি নেই তাই আর সময় নষ্ট না করে পরের দিনেই চলে গেলাম মেয়ের বাবার সাথে দেখা করতে।মেয়েদের বাড়ি দেখে আমি অবাক হলাম।এর আগে এত সুন্দর বাড়ি আর কোথাও দেখিনি আমি।বাড়ির ভেতরটা খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো।

আমি আর বাবা বসে আছি ডাইনিং রুমে।কিছুক্ষণ পরেই মেয়ের বাবা আসলো আমাদের সাথে দেখা করতে।বসা থেকে উঠে ওনার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।

ওনার সাথে অনেক কথা হল আমাদের।ওনাকে আমি আমার সম্পর্কে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।ওনি আমার সব কথাই মনোযোগ সহকারে শুনলো।আর ওনার হাঁসি মাখা মুখটাই বলে দিচ্ছিলো ওনার হয়তো আমাকে পছন্দ হয়েছে।

আমারা দুপুরের দিকে ওনার বাসায় গেছিলাম তাই দুপুরের খাবার না খাইয়ে আমাদের ছাড়ল না।দুপুরের খাওয়া শেষে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঠিক তখনেই মেয়ের বাবা এসে আমার হাতে একটা “দশ” লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন।

আমি টাকা টা হাতে নিয়ে প্রথমে বাবার দিকে তাকালাম আর মনে মনে বললাম বাবার জন্যই আজ আমাকে টাকার কাছে বিক্রি হতে হল।

তারপর মেয়ের বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম। আজকেই আমাকে টাকা টা দিয়ে দিলেন যে,,,আর আপনার মেয়ের সাথে তো দেখা হল না।

আমার কথা শুনে ওনি বললেন,,,,

– তুমি না বললে টাকা টা পাঁচ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।তাই আজকেই তোমাকে টাকা টা দিয়ে দিলাম।আর আমার মেয়ে তো এখন বাসায় নেই।আমার দুই মেয়েই ঢাকায় থাকে।তারা সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে।আমার বড় মেয়ে বাড়িতে আসলেই আমি তোমাকে জানাবো তখন তুমি আমাদের বাড়িতে চলে এসো।

আমি এই টাকা টা নিয়ে আমার চাকরির জন্য জমা দিয়ে দিলাম।পরে যদি আপনার মেয়ের আমাকে পছন্দ না হয় তখন আমি কিভাবে আপনাকে টাকা ফেরৎ দিব ?

– সে সব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার মেয়েদের আমি খুব ভাল করেই চিনি।ওরা কখনো আমার কথার অবাধ্য হয় না।আমার কথাই ওদের কথা।

ওকে আমি তাহলে আজকে আসি,,,,,

সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে রাতের ট্রেন ধরেই ঢাকায় চলে আসলাম।তারপর সকাল বেলা টাকা গুলি নিয়ে জমা দেওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলাম,,,

টাকা গুলো অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবেন।এখন মনের মাঝে অন্যরকম একটা প্রশান্তি অনুভব করতেছি।

এখন সময় গুলি খুব ভাল কাটছে।ইচ্ছা মতো খাচ্ছি ঘুমাচ্ছি নেই কোন চিন্তা ভাবনা।সময় গুলি যেন খুব তারাতারিই চলে যাচ্ছিল।

এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে,,,,

চলবে…….

লেখা || Tuhin Ahamed

বিসর্জন  প্রথম পর্ব

0

বিসর্জন
প্রথম পর্ব

বাবার জন্য আজ টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলাম।মনের কাছে,বিবেকের কাছে হেরে গেলাম আমি।

ছোট বেলায় যখন বাবার কাছে কোন প্রয়োজনে টাকা চাইতাম বাবা টাকা ঠিকই দিত কিন্তু বাবার হিসাবের খাতায় টাকার পরিমাণটা লিখে রাখতেন।একদিন খুব আগ্রহ নিয়ে বাবাকে জিগ্যেস করলাম।বাবা আমি তোমার কাছে টাকা চাইলে তুমি আমাকে টাকা দাও ঠিকি কিন্তু ওটা আবার হিসাবের খাতায় লিখে রাখো কেন ?

বাবা বলল,,,,

– এই যে তোকে এত এত টাকা খরচ করে পড়াশোনা করাচ্ছি সে গুলি তোর থেকে আবার আদায় করে নিতে হবে না।এখন যদি আমি হিসাবের খাতায় হিসেবটা তুলে না রাখি তাহলে তো মনে থাকবে না কোন দিন তোকে কত টাকা দিয়েছি।

এতদিন শুধু মানুষের মুখে মুখেই শুনতাম আমার বাবা নাকি খুব কৃপণ।কিন্তু সেদিন বাবার কথা শুনে মনে হল মানুষ ভুল কিছু বলে না।

গতকাল একটা চাকরির ভাইবা ছিল।সব কিছুই ভালো ছিল।তারপরেও চাকরিটা আমার হবে না।এই রকম ঘটনা এর আগেও বহুবার ঘটেছে।ভাইবা ভালো দেবার পরেও চাকরি হয় নি।

এবার অফিসের একজন বলল,ভাই এভাবে চাকরি হবে না।চাকরি পেতে হলে খরচ করতে হবে। খুব কম করে হলেও “দশ” লক্ষ,পারলে বলেন।আর পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা টা দিতে হবে। তাহলে আপনার চাকুরী হয়ে যাবে। আপনার রেজাল্ট ভালো আছে।

আমিও কি যেন মনে করে রাজী হয়ে গেলাম।কিন্তু আমার কৃপণ বাবা আমাকে এতগুলি টাকা দিবে কি না এটা একবারও ভেবে দেখলাম না।কিছু না ভেবেই ওনার কথাই রাজী হয়ে গেলাম।তারপর ওনার থেকে পাঁচ দিন সময় নিলাম।

রাতে আমার এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালাম।উনি বলল, দেখি কি ব্যাবস্থা করতে পারি।আরও কয়েক জনের সাথেও এই ব্যাপারে কথা বললাম।সাবাই একই কথা বলল,,,দেখি কি করতে পারি।

পরের দিন বাড়িতে এসে বাবাকে বিষয় টা জানালাম।আমার সব কথা শুনার পরে বাবা বলল,,,

– তোমার পেছনে আমি ইতিমধ্যেই অনেক টাকা ইনভেস্ট করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও রির্টান দিতে পারোনি তুমি।তাই তোমাকে আমি আর কোন টাকা পয়সা দিতে পারবো না।

বাবার কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে গেলাম।বাবা যদি আমাকে টাকা না দেয় তাহলে তো চাকরিটা আমি পাবো না।আর এত গুলি টাকা তো কেউ আমাকে ধার হিসেবে দিবে না।টাকার চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কেটে গেল তাও কোন উপায় বের করতে পারলাম না।

রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলাম।বাবা রাতে আমার রুমে এসে দেখে লাইট অফ করে অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছি।বাবা লাইট অন করে আমার বিছানায় বসে বলল,,,

– তুই যতই মন খারাপ করে শুয়ে থাকিস না কেন। আমি তোকে কোন টাকা দিতে পারবো না।তবে,,,তুই যদি বলিস তাহলে আমি অন্য ভাবে তোর টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

বাবার কথা শুনে আমি শুয়া থেকে উঠে বললাম কিভাবে ?

– তোর এই ব্যাপারে আমি একজনের সাথে কথা বলেছিলাম।সে আমাকে বলল তার খুঁজে এক লোক আছে ওনার নাকি অনেক টাকা আছে।ওনার দুইজন মেয়ে আছে,ওনার কোন ছেলে সন্তান নেই।তাই ওনি নাকি ভাল একটা ছেলে খুঁজছেন বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।তুই তো ছেলে হিসেবে খুবই ভাল তুই যদি ওনার বড় মেয়েকে বিয়ে করিস তাহলে ওনি তোর চাকরির সব টাকা দিবে।

তুমি কি বলতেছ বাবা,,,আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করব ?

– এটাকে যৌতুক বলে না।ওনার সব সম্পত্তি তো ওনার দুই মেয়েই পাবে।আর তুই তো ওনার মেয়েকে বিয়ে করবি।ওনি ওনার মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের সুখের জন্যই টাকা টা দিবে তাহলে তুই নিতে আপত্তি করছিস না।

না বাবা।আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।দরকার নেই আমার চাকরির।

– তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে এই বাড়িতে তোর কোন যায়গা হবে না।এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।

এই কথা গুলি বলেই বাবা চলে গেল।বাবার কথা শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি করবো এখন,,,


চলবে……

লেখক || Tuhin Ahamed

নিয়তির খেলা  শেষ পর্ব

0

নিয়তির খেলা
শেষ পর্ব

বিকেলের দিকে বাসার কাজের মেয়ে ফোন দিয়ে বলল নিনিতার অবস্থা বেশি ভাল না।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

খবরটা শুনে আমি অফিস থেকে ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে।ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম।

ডাক্তার বলল নিনিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই মূহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।আপনারা সবাই রোগীর জন্য দোয়া করেন।আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ওনাকে সুস্থ করে তোলার জন্য,,,,,

এর মধ্যে নিনিতার মা-বাবাও এসে পরেছে।নিনিতার এই অবস্থার কথা শুনে ওনারা মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পরেছেন।

রাত দশটার দিকে ডাক্তার এসে জানালো আপনাদের কন্যা সন্তান হয়েছে।আর নিনিতার জ্ঞান এখনো ফিরেনি জ্ঞান ফিরলে আপনাদের জানানো হবে।

কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছি এই কথাটা শুনার পর মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হল।একবারের জন্যও মনে হয়নি এটা তো আমার সন্তান না,এই সন্তানের পিতা আমি না।

এদিকে নিনিতার জন্য খুব টেনশন হচ্ছে।ওর এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন।আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি আল্লাহ্ তুমি আমার নিনিতাকে সুস্থ করে দেও।

এর মধ্যে নার্স এসে বলে গেল আপনারা চাইলে আমাদের বাচ্চাকে দেখতে পারেন।নিনিতার মা- বাবাকে বললাম চলেন আমরা বাচ্চাকে দেখি আসি।কিন্তু ওনারা এই বাচ্চাকে দেখতে যেতে আগ্রহী না।আমি ওনাদের কে বললাম,,,

আমার কাছে তো একবারের জন্যও মনে হচ্ছে না এটা আমার মেয়ে না।আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা আমাদেরই মেয়ে।তাহলে আপনারা কেন আমার মেয়েকে দেখবেন না।আমার কথা শুনে নিনিতার বাবা-মা কেঁদে দিলেন।তারপর ওনাদের নিয়েই আমি আমার মেয়েকে দেখতে গেলাম।

আমাদের মেয়েটা দেখতে একদম ওর মায়ের মত হয়েছে।প্রথমে আমি কোলে নিলাম তারপর নিনিতার বাবা- মাও কোলে নিলেন।

অবশেষে সকাল দশটায় নিনিতার জ্ঞান ফিরলো।জ্ঞান ফিরার পর থেকেই আমাদের কে দেখতে চাচ্ছে।আমি আমাদের মেয়েকে কোলে নিয়ে নিনিতার সাথে দেখা দেখা করতে গেলাম। নিনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ও আমার কোলে বাচ্চা দেখে একটু এবাকই হয়েছে।আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম দেখেন আমাদের মেয়ে দেখতে ঠিক আপনার মতোই হয়েছে,,,,,,,,

নিনিতা এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হওয়ার ডাক্তার হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসার অনুমতি দিয়েছেন।বাসায় আসার পর এখন নিনিতা অনেকটাই সুস্থ আর এদিকে আমরা আমাদের মেয়ের একটা নাম ঠিক করলাম।নিনিতার পছেন্দেই মেয়ের নাম রাখা হয়েছে প্রিতি।এই নামটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।

আমাদের মেয়ে একটু একটু করে বড় হচ্ছে আর মেয়ের প্রতি আমার টান টা একটু একটু করে বেড়েই যাচ্ছে।এখন আমি প্রায়ই অফিস ফাঁকি দেই আমার মেয়ের জন্য।ওর সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে।

আর এদিকে নিনিতার সাথে আমার সম্পর্কটা আর দশটা সম্পর্কের মতো না হলেও ডাক টা আপনি থেকে নেমে তুমিতে চলে এসেছে।

আমি তার কাছে কখনোই স্ত্রীর অধিকার চাইনি।আমার ইচ্ছা নিনিতা যেদিন নিজে থেকে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবে সেদিনেই আমার অধিকার আমি বুঝে নিব তার আগে নয়।

প্রিতির বয়স এখন দের বছর।কয়েক দিন ধরে আমার মেয়ে আধো আধো গলায় আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকছে।ওর মুখে বাবা ডাক শুনলে নিমিষের মধ্যেই আমার জমে থাকা সব অপূর্ণতা যেন পূর্ণতা পেয়ে যায়।

প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরার পর বাকিটা সময় আমি আমার মেয়ের সাথে কাটাই।আমাদের বাবা মেয়ের খুনসুটি দেখে নিনিতা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নিনিতা আমার থেকে হয়তো কখনো এতটা প্রত্যাশাই করেনি আর তাই হয়তো এভাবে তাকিয়ে থাকে।

দিনগুলি যেন আমাদের খুব ভালোই যাচ্ছিলো,,,,

কিন্তু এর মধ্যে আবার নতুন করে একটা সমস্যা দেখা দিল।অফিসের একটা কাজে পনেরো দিনের জন্য দেশের বাহিরে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরার পর থেকেই নিনিতাকে আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগছিল।প্রয়োজনের বেশি কথা বলে না আর সারাক্ষণ কেমন জানি চুপচাপ থাকে।অনেক বার নিনিতাকে জিগ্যেস করেছি কি হয়েছে কিন্তু ও আমাকে কিছুই বলছে না।

এখন কি করব আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমি বাহিরে যাওয়ার আগে বাসায় নিনিতা আমাদের মেয়ে প্রিতি আর সাথে কাজের মেয়ে শিমলাকে রেখে গেছিলাম।বাহিরে যাওয়ার আগে সবকিছুই তো ঠিকঠাক ছিল তাহলে এর মধ্যে কি এমন হল যার জন্য নিনিতার এত পরিবর্তন।

মাথায় কিছুই আসছে।হাটাৎ মনে হল শিমলাকে জিগ্যেস করে দেখি তো,,,, ও কিছু জানে কিনা,,,

– শিমলা একটু এদিকে আয় তো

– বলেন কি জন্য ডাকছেন।

– আচ্ছা আমি বিদেশে যাওয়ার পর কি এখানে কোন সমস্যা হয়েছিল।এই ব্যাপারে কি তুই কিছু জানিস ?

আমার কথা শুনে শিমলা কেমন জানি চুপ হয়ে গেল কোন কথা বলছে না।

– কি হল কিছু বলছিস না যে,,,,

– আপনি চলে যাওয়ার দুদিন পর বাসায় একটা লোক আসছিল আর ওনার সাথে ম্যাডামের অনেক ঝগড়া হয়েছিল সেদিন।

– কে আসছিল ? আর ঝগড়াই বা হয়েছিল কেন ?

– আমি তো ওনারে চিনি না আর কোন দিন ওনারে দেখিও নাই এই বাসায় আসতে।সেদিনেই ওনারে প্রথম দেখলাম।আর কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল এটা আমি সঠিক ভাবে কইতে পারুম না তয় আমার মনে হয় আমাদের প্রিতি মামনিরে নিয়ে কিছু একটা কথা হচ্ছিল দুজনের মধ্যে,,,

– কি কথা হয়েছিল কিছু মনে আছে তোর

– আমার মনে হয় ঐ লোকটা আমাদের প্রিতি মামনিরে নিয়ে যেতে আসছিল।

শিমলার কথা শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কে আসছিল সেদিন আর আমাদের মেয়েকে নিতে চায় কেন।

এসব প্রশ্নের কোন উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আর এদিকে নিনিতাও আমাকে কিছুই বলছে না।উত্তর না জানা হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন।

রাতে শুয়ে আছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না।নিনিতার দিকে তাকালাম ওকে দেখে মনে হল সেও এখনো ঘুমায়নি।

এর মধ্যেই নিনিতার ফোনটা বেজে উঠলো।

নিনিতা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল সাথে আমিও গেলাম ওর পেছন পেছন।নিনিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।ওর সব কথা আমি শুনতে পেলেও অপর প্রান্ত থেকে কি বলছিল এটা আমি শুনতে পাইনি।তবে নিনিতার কথা শুনে যা মনে হল কেউ একজন আমাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু সেটা কে এটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

ফোনে কথা বলা শেষ হতেই নিনিতার কান্নার আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।মনে হচ্ছে মেয়েটা কান্না করছে।খুব ইচ্ছা করছিল তখন ওর কাছে গিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিয়ে জিগ্যেস করি কি হয়েছে আমাকে বল,,,,

কিন্তু কেন জানি তার কাছে আমার যাওয়া হল না।

তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক নিনিতার কষ্টের কারন আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।

পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নিনিতা পাশে নেই।ওর ফোনটা এখানেই পরে আছে।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কাল রাতে নিনিতাকে যে নাম্বার থেকে ফোন করেছিল ওই নাম্বারটা আমার ফোনে নেই।তারপর অফিসে গিয়ে ওই নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম এটা রাফি।রাফি নামটা শুনার পর রাফিকে চিনতে আমার একটুও সময় লাগলো না।

তারপর আমি ওকে বললাম আমি নিনিতার স্বামী,আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাই।ওনি না করলেন না।আমার সাথে দেখা করতে ওনি রাজী হয়েছেন।তারপর পর আমি বললাম আপনার হাতে সময় থাকলে আমি আপনার সাথে আজকেই দেখা করতে চাই।ওনি বললেন তাহলে বিকেল 4•00 টায় এই ঠিকানাই চলে আসুন।

4•00 টার একটু আগেই আমি সেই ঠিকানাতে চলে গেলাম।কিছুটা সময় পরেই রাফি এসে জিগ্যেস করলো,,,

– আপনিই কি নিনিতার স্বামী ?

– হম আমিই নিনিতার স্বামী।

– তো আমার সাথে দেখা করার কারণ জানতে পারি কি ?

– হ্যাঁ অবশ্যই,,,,

আপনি আমাদের সুখের সংসারটা কেন ভাঙতে চাইছেন ?

– আমি তো আপনাদের সংসার ভাঙতে চাইনা।আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন তাহলে আমি আর কখনো আপনাদের ধারে কাছেও আসবো না।

– আপনার মেয়ে ? কে আপনার মেয়ে ?

– কেন নিনিতার বিয়ের আগে আপনি জানতেন যে নিনিতা অন্তঃসত্ত্বা ছিল ?

– অন্তঃসত্ত্বা ছিল জানতাম।আর হ্যাঁ জেনেই বিয়েটা করেছি,,,,তো ??

– তো কি,,,,ও আমার সন্তান।এখন আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দিন।

– প্রিতিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করতে আপনার লজ্জা করে না।মেয়েটা যখন অসহায় অবস্থায় আপনার কাছে গিয়েছিল তখন আপনি ওকে বলেছেন আপনি নাকি ওকে স্পর্শই করেন নি।তাহলে এখন কিসের ভিত্তিতে প্রিতিকে নিজের সন্তান দাবি করছেন ?

– তখন এটা বলা ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না।

– বাহ্,,,ভালো বলেছেন।নিজে বিবাহিত হওয়া সত্তেও একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে পরলেন।আর মেয়েটার সাথে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করলেন।আর এখন আসছেন ঐ সম্পর্কের ফসল নিতে।

একটা বার কি ভেবে দেখেছেন যখন স্বার্থপরের মত নিজের স্বার্থ হাসিল করে মেয়েটাকে ছেড়ে চলে গেছিলেন সেই মূহুর্তে মেয়েটার বেঁচে থাকটা কতটা কষ্টকর ছিল।

– শুনেছি আপনি নাকি সে সময় টাকার জন্য নিনিতাকে বিয়ে করেছিলেন।তো আপনার মুখে কি নীতি কথা শোভা পায়।

– হ্যাঁ আমি টাকার জন্য সেদিন নিনিতাকে বিয়ে করেছিলাম ঠিকি কিন্তু টাকার থেকে সম্পর্কটার গুরুত্ব আমার কাছে কম ছিল না।আর হ্যাঁ একটা সময় বুঝলাম টাকার থেকেও সম্পর্ক গুলির গুরুত্ব অনেক বেশি।

আপনি একটা মেয়েকে মাঝ নদীতে ফেলে চলে গেছিলেন।কিন্তু আমি সেখান থেকে মেয়েটাকে তীরে এনে একটা নতুন জীবন দিয়েছি।আর আপনি আবার মেয়েটাকে নদীতে ফেলে দিতে চাইছেন।

– কি করব বলেন বিয়ের ছয় বছর হতে চলল কিন্তু এখনো আমি সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি।একটা সন্তানের জন্য কত জায়গাতেই না গিয়েছি।কিন্তু একটা সন্তানের মুখ আর দেখা হল না।সেদিন যখন রাস্তায় নিনিতার কোলে বাচ্চাটাকে দেখার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম নিনিতা বাচ্চাটাকে নষ্ট করেনি আর ঐ বাচ্চাটাই আমার।তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।বুকটা হা হা করে উঠলো।ছুটে চলে গেলাম নিনিতার কাছে যাতে আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দেয়,,,,,

কিন্তু আজ বুঝলাম এই সন্তান শুধু আমি জন্মই দিয়েছি।এই সন্তানের বাবা হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই।আর কোন দিন সেই যোগ্যতা আমার হবেও না।

এই সন্তানের যোগ্য পিতা আপনি।আপনাদের কাছেই ভালো থাকুক আমার সন্তান।আমি আর কোনদিন এই সন্তানের দাবি নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো না,,,,,

এতটুকু বলেই রাফি নামের লোকটা চলে গেল।

এখন নিজের মাঝে অন্যরকম একটা প্রশান্তি খোঁজে পাচ্ছি।

বাসায় এসে দেখি নিনিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।ওর কাঁদে হাত রাখতেই ও আমার দিকে তাকালো।ওর চোখের কোনের জল মুছে দিয়ে বললাম আমাদের মেয়েকে আর কেউ আমাদের থেকে নিয়ে যেতে চাইবে না।আমি মাত্রই রাফির সাথে দেখা করে এসেছি।রাফি বলেছে ও আর কোন দিন আমাদের কাছে সন্তানের দাবি নিয়ে আসবে না।এই সন্তান আমাদের,,,,,

এতটুকু বলতেই নিনিতা কান্না শুরু করে দিয়েই আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরল,,,আমিও আর কিছু বললাম না। ও কাঁদুক এই কান্না কষ্টের নয় এটা যে সুখের কান্না।



আজকে আমার আর নিনিতার দ্বিতীয় বাসর রাত।অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিয়ে করলে বিয়েটা বৈধ হয় না।আমরা আমাদের বিয়েটাকে বৈধতায় রূপান্তরিত করতেই আজ দ্বিতীয় বারের মত বিয়েটা করলাম।

#সমাপ্ত

(ধৈর্য নিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ)

লেখা || Tuhin Ahamed

নিয়তির খেলা  পঞ্চম পর্ব

0

নিয়তির খেলা
পঞ্চম পর্ব

আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে যেতে আর কতটা সময় লাগবে,,,,

– এইতো পরের স্টেশনেই আমরা নামবো।তারপর সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবো,,,,,

– আমারা চলে এসেছি।

– আমরা কি এখানেই নেমে যাব ?

– হম।

আমি নিনিতাকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম।এখনো ভালো করে ভোরের আলো ফোটেনি।হালকা অন্ধকার রয়ে গেছে।

– এখন কীভাবে যাবো ?

– ওটাই ভাবতেছি।

– আর কতো দূর যেতে হবে ?

– বেশি না আরও ১ কিমি এর যেতে মত হবে।

– রিক্সা নিয়ে নিন।

– হ্যাঁ কিন্তু রাস্তা অনেক খারাপ আর এই শরীরে এভাবে রিক্সায় করে যেতে পারবেন ?

– মনে হয় পারবো।

– এই ভাই ! যাবেন ?

– কোথায় যাবেন স্যার ?

– এইতো সামনের হরিশপুর বাজারের কাছে সরকার বাড়িতে।

– যাবো ভাই।তবে আসার সময় ফাঁকা আসতে হবে তো, তাই ভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দিয়েন।

– হম বাড়িয়েই দিবো চলেন,,,,

আমি ব্যাগ নিয়ে রিক্সাতে উঠলাম,অধের্ক রাস্তা যাওয়ার পর নিনিতা বলল,রাস্তার ঝাকুনির ফলে ওর পেট ব্যাথা করছে,ও আর রিক্সায় করে যাবে না।আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ।

আমি রিক্সা থেকে নামতেই নিনিতাও নেমে গেল।

– চলেন আমরা বাকি রাস্তাটুকু হেঁটেই যাই।আমি আর এভাবে যেতে পারবো না।

আমি রিক্সা ওয়ালাকে বললাম,আপনি ব্যাগ নিয়ে চলে যান,আমারা হেঁটে আসছি।

অবশেষে হেঁটেই ১০ মিনিট পর বাড়ী গেলাম।

বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা হল।নিনিতাকে আমার সাথে দেখে মা,বাবা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছে।

আমি নিনিতাকে বললাম আপনি একটু রেস্ট নিতে থাকুন।আমি একটু বাজারের দিকে যাচ্ছি।

বাজারে এসে এলাকার এক বড় ভাই কে নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গেলাম,সম্পর্কে উনি আমাদের চাচা।

– আসসালামু ! চাচা কেমন আছেন ?

– হ্যাঁ বাবা ভালো, ঢাকা থেকে কখন আসলে ?

– একটু আগেই এসেছি,আপনার কাছে আসলাম একটা অভিযোগ নিয়ে।

– কি অভিযোগ বাবা,,,

– আমাদের রাস্তাটার এই অবস্থা কেন ? গত দুই বছরে রাস্তার কোন কাজ হয়নি।রাস্তায় এত বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।এটা মেরামত করছেন না কেন।

– আমি কি করবো বাবা। এমপি সাহেব কে কতো বার বললাম,এই বাজেটেও মনে হয় হবে না।

– তার মানে আপনি কোন উপকার করতে পারবেন না ?

– বাবা এই রাস্তা পুনরায় মেরামত করতে প্রায় 15 লক্ষ টাকা খরচ হবে। আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।

– যদি আমি সেই রাস্তা তৈরি করে দেই।

– কি বলো ?

– হ্যাঁ।তবে একটা শর্ত আছে রাজনৈতিক কোন ঝামেলায় যেন আমাকে পরতে না হয়।

– আমি এখুনি এমপি সাহেবের সাথে কথা বলছি।

– আপনি কথা বলেন আর আমি রাস্তা মেরামতের সব ব্যাবস্থা করছি।

তারপর আমি কিছু বাজার করে বাড়ী আসলাম।বাড়িতে আসতেই নিনিতা জিগ্যেস করল,,,

– কোথায় গেছিলেন ?

– বাজার করতে আর একটু ঘুরলাম।

মায়ের সাথে দেখলাম ভালোই কথা বার্তা চলেছে নিনিতার।আর মায়ের মুখেও শুধু নিনিতা আর নিনিতা।আর এদিকে আমার মায়ের একটা মাত্র ছেলে আমি এতদিন পরে বাড়িতে এসেছি এই ব্যাপারে আমার মায়ের কোন খায়ালি নেই।এখন নিজেকেই নিজেদের বাড়িতে কেমন জানি অসহায় অসহায় লাগছে।

বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের বাড়ীতে আসলো,,,

– বাবা সুমন বাড়িতে আছো ?

– জি চাচা আসেন ভেতরে আসেন।

– এই নাও বাবা এমপি সাহেবের অনুমতি পত্র আর এটা আমার অনুমতি পত্র। আর এই ৩ জনের সাথে কথা বলে নাও, এরা তোমাকে
তোমার চাহিদা মাফিক যা চাইবা তাই দিবে।

– ধন্যবাদ চাচা। আচ্ছা এই রাস্তা করতে কয় দিন লাগতে পারে ?

– তারাতারি করে করতে চাইলে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

– কিন্তু আমার কাছে যে এতো সময় নেই।আমি বাড়িতে তিন দিন থাকবো আর এই তিন দিনের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে হবে।

– বাবা এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব ?

– টাকা থাকলে চাচা সবকিছুই সম্ভব।প্রয়োজনে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করতে হবে।

– তোমার যে ভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কাজটা করো।

চেয়ারম্যান চাচা চলে গেছে আর এদিকে আমিও কাজের অডার দিয়ে দিয়েছি তারা কাল থেকেই কাজ শুরু করবে আর যে ভাবেই হোক তিন দিনের মধ্যে তারা কাজটা শেষ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে।

পরের দিন সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম।নিনিতা এসে ঘুম থেকে ডেকে বলল,,,,

– বাড়িতে অনেক মানুষ এসে ঝড়ো হয়েছে তারা আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

– ওকে আমি গিয়ে দেখি কারা আসছে,,,

বাহিরে এসে দেখি আমার স্কুলের সব স্যারে’রা এসেছে।আমি সব স্যারদের এক সাথে দেখে একটু আবাকই হয়েছি।স্যারদের সালাম দিয়ে ভেতরের রুমে নিয়ে বসতে দিলাম।তারপর স্যারে’রা বলল,,,,

– আমরা শুনলাম তুমি নাকি আমাদের রাস্তাটা নতুন করে মেরামত করে দিচ্ছ।তাই আমরা সব স্যারে’রা মিলে একটা আবদার নিয়ে তোমার কাছে এসেছি।

– কি আবদার বলেন,,,,

– আমাদের স্কুলের সামনের যে খালি জায়গাটা ছিল সেটা এতদিন আমরা স্কুলের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে এসেছি।কিন্তু এই জায়গার মালিক জায়গায়টা বিক্রি করে দিবে।আমাদের স্কুলের যেহেতু নিজস্ব কোন মাঠ নাই তাই আমরা চাইছিলাম এই জায়গায়টা স্কুলের জন্য কিনে মাঠ হিসাবে ব্যবহার করতে।

– এই ব্যাপারে আমার থেকে কি ধরনের সহযোগিতা চান আপনারা ?

– আমাদের স্কুলের ফান্ডে যে টাকা আছে তা দিয়ে জায়গাটা কিনা সম্ভব না।এখন তুমি যদি আমাদের পাশে থেকে আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করতে তাইলে আমাদের খুব উপকার হতো।

– জায়গাটার মূল্য কত ?

– জায়গার মালিক বলছে যদি স্কুল জায়গাটা নেয় সে ক্ষেত্রে 10 লক্ষ টাকায় জায়গাটা তিনি দিয়ে দিবেন।

– আপনারা ওনার সাথে কথা বলুন।আর হ্যাঁ 10 লক্ষ টাকার পুনো টাকাটাই আমি দিতে চাই।

– তুমি আমাদের অনেক উপকার করলে বাবা।আজ তাহলে আমরা আসি,,,

– আমাদের বাসায় সকালের সকালের নাস্তা করে তারপর যাবেন।

– অন্য একদিন এসে না হয় খেয়ে যাবো।আজকে স্কুলে একটু কাজ আছে তাই আজ যেতে হবে,,,,,

স্যারেরা চলে যেতেই মা এসে বলল,,,

– তুই এখানে এসে আবার কি শুরু করলি বলতো ?

– তেমন কিছু না মা ,রাস্তাটা ঠিক করতেছি আর স্কুলের জন্য জায়গা কিনে দিচ্ছি।

আজকে থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।কাজ ভালো ভাবেই হচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে তিন দিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এর মধ্যেই নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে আমরা কবে ঢাকায় ফিরবো।ওনাকে জানিয়ে দিয়েছি কালকে বিকেলে আমরা ঢাকায় ফিরবো।

সন্ধ্যায় এলাকার কয়েকজন এসে বলল তারা কালকে রাস্তা উদ্বোধনের জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেখানে আমাকে আর নিনিতাকে যেতে হবে।এর মধ্যেই তারা জেনে গেছে নিনিতার জন্যই রাস্তাটা মেরামত হয়েছে তাই তারা চাচ্ছে নিনিতাই কাল রাস্তাটা উদ্বোধন করুক।

এই প্রস্তাব শুনে আমারও খুব ভাল লেগেছে।

পরের দিন সকাল বেলা আমরা রাস্তা উদ্বোধন করতে গেছি।নিনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ও আজকে অনেক খুশি।ওর হাঁসি মাখা মুখ দেখে আমারও খুব ভাল লাগছে।

বিকেল বেলা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যখন ঐ রাস্তা দিয়ে রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম তখন নিনিতা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল।

ঢাকায় এসেই আবার ব্যস্ততার আবরনে বন্ধী হয়ে গেলাম।তবে নিনিতার সাথে আমার সম্পর্কটা আগের থেকে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।

দিন গুলি এখন ভালই যাচ্ছে।আজকে সকালে অফিসে আসার সময় দেখে আসলাম নিনিতার শরীরটা বেশি ভাল না।এই জন্য অফিসের কোন কাজেই আজ মন বসাতে পারছি না।

বিকেলের দিকে বাসার কাজের মেয়ে ফোন দিয়ে বলল নিনিতার অবস্থা বেশি ভাল না।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

খবরটা শুনে আমি অফিস থেকে ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে।ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম।

ডাক্তার বলল নিনিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই মূহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না,,,

চলবে,,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed

নিয়তির খেলা  চতুর্থ পর্ব

0

নিয়তির খেলা
চতুর্থ পর্ব

প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটা মেয়েও কলেজে যেত।আবার কলেজ থেকে আসার সময় ঐ মেয়েটা আমার সাথেই আসতো।

এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন সাহস করে মেয়েটার সাথে কথা বললাম।মেয়েটাও ভাল ভাবেই আমার সাথে কথা বলল।তারপর থেকে মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে কলেজে যেতাম আবার কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বাসায় আসতাম।

এভাবে চলে গেল তিন-চার মাস।এই তিন-চার মাসে মেয়েটার সাথে কত কথাই না বলেছি।তারপর একটা সময় আমি বুঝতে পারলাম আমি মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি।আর মেয়েটা আমার সাথে যেভাবে কথা বলতো আমার কেন যানি মনে হতো মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে।

সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটাকে আমার ভালবাসার কথা বলব।কিন্তু কোন ভাবেই তা বলতে পারতে ছিলাম না।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনে মনে বলি আজকে যে করেই হোক মেয়েটাকে আমার ভালবাসার কথা বলবই বলব।কিন্তু মেয়েটার সামনে কিছু বলতে গেলেই আমার কাঁপাকাপি শুরু হয়ে যায়।কিছুতেই যেন কিছুই হচ্ছিল না।

তারপর হটাৎ মনে পরলো সামনেই তো 14 ফেব্রুয়ারি।সে দিন তো ভালবাসা দিবস।সেদিনেই না হয় আমি আমার ভালবাসার কথা মেয়েটাকে জানাবো।

এর মধ্যেই আমার এক বন্ধু একদিন বিকেল বেলা এসে বলল চল নদীর পার থেকে ঘুরে আসি।নদীর পারে বসে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে তাই আর না করলাম না।ওর সাথে ঘুরতে চলে গেলাম।

নদীর পার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পরলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলের ওপর তারা ছাতার নিচে বসে আছে।আমার আর বুঝতে বাকি রইল না তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কি ধরনের।তখন এই ধরনের প্রেমিক-প্রেমিকা দেখলে আমার মাথায় প্রায়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেত রোদ নাই বৃষ্টি নাই তাও ওরা কেন ছাতার নিয়ে বসে থাকে।যাই হোক এখন আর এই প্রশ্নটা মাথায় আর আসে না।তখন এত কিছু বুঝাতাম না তাই হয়তো এই ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসতো।

হাঁটতে হাঁটতে যতই মেয়েটার কাছে যাচ্ছিলাম মেয়েটাকে কেমন যানি চেনা চেনা মনে হচ্ছিল।আরও কাছে যাওয়ার পর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

এই দৃশ্য দেখার পর প্রেম না করেও সেদিন ছোট খাটো একটা ছ্যাঁকা খেয়েছিলাম,,,

আমার কথা শেষ না হতেই নিনিতা বিকট শব্দে হাসা শুরু করল।ওর হাঁসি যেন কিছুতেই থামছিল না।এই প্রথম ওকে এভাবে হাঁসতে দেখলাম।নিনিতাকে হাঁসলে যে এত সুন্দর দেখতে লাগে এটা কি মেয়েটা যানে,,,কি যানি হয়তো সে তা যানে না।

– তারপর কি এখানেই আপনার প্রেমের সমাপ্তি ঘটলো ?

– আরে না।এর পরেও আরও একটা আছে।

– এখন তো আপনাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে।আচ্ছা আপনি কি এখনো কারো সাথে প্রেম টেম করেন ?

– কি যে বলেন,,,, কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে কি আর আপনাকে বিয়ে করি।

– হম।তাও ঠিক,,,

এখন আপনার পরের প্রেম কাহিনী শুরু করেন।তিনটার মধ্যে দুইটাই যখন বললেন তাহলে ওটা আর বাকি থাকবে কেন,,,,

– এইচ এস সি পরীক্ষায় আমি ভালো রেজাল্ট করেছিলাম আর এস এস সি তে রেজাল্ট ভালই ছিল সেই সুবাদে ভাল একটা ভাসিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই।

আমার বয়স তখন উনিশ কি বিশ,আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে রিনা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়।আগের বারের মত এবারও প্রথম দেখায় প্রেমে পড়লাম আর ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম,কখনও তাকে সেভাবে খুব কাছ থেকে দেখা হয়নি।ফোনের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে কথা হতো।আর এভাবেই তিনটা বছর পার হয়ে গেলো…

সবকিছুই ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে হয়তো পাবো, কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে এলাকায়।আর এটা ভেবেই পড়াশোনায় মনোযোগ দিলাম।

কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে আমাকে বলতো পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না,সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো,আর এটা আমি জানতেই পরলাম না।যখন আমি এটা জানলাম তখন আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো,পরে বুঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা।এই বাস্তবতাকে ঘিরেই হয়তো বেঁচে থাকতে হবে আমাকে।

সেদিন আমি বুঝেছিলাম টাকার ক্ষমতা কতখানি।ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়, আর মধ্যবিত্ত ঘরে ষাট হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই রিনার বাবাও আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না,যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই রিনাও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।

এই চরম বাস্তবতা থেকেই সেদিন শিক্ষা নিয়ে ছিলাম জীবনে বিয়ে করলে টাকাকেই বিয়ে।

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য অনেক ঘুরাঘুরি করেছি কিন্তু কোথায় একটা চাকরি পাইনি।তারপর অনেক কষ্টে সততা আর মেধার জোরে আপনাদের অফিসে চাকরিটা আমি পাই।চাকরির প্রথম দিন থেকেই আপনার বাবা আমাকে অনেক সাপোর্ট করতেন আর ওনার থেকে আমি অনেক ভালবাসাও পেয়েছি।

এরপর একদিন আপনার বাবা আমাকে ডেকে সব ঘটনা খুলে বললেন।আর বললেন এই বিয়েটা তুমি না করলে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।তার পরের ঘটনা তো আপনি সব জানেনই।

– আপনার বলা আগের ঘটনা গুলি শুনে আমার প্রচুর হাঁসি পেয়েছিল।কিন্তু এবার তার উল্টো টা হল।আপনার কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো,,,,,,

– এগুলি এখন শুধুই অতীত।এগুলি এখন আর মনে করি না।

– হম,,,

আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে যেতে আর কতটা সময় লাগবে,,,,

– এইতো পরের স্টেশনেই আমরা নামবো।তারপর সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবো,,,,,

চলবে,,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed

নিয়তির খেলা  তৃতীয় পর্ব

0

নিয়তির খেলা
তৃতীয় পর্ব

– যদি আমার কাছে জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।

– আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,,,,

সেখান থেকে নিনিতাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।নিনিতা অসুস্থ থাকায় দুইদিন আর অফিস যাইনি আমি।

আজ নিনিতা একটু সুস্থ থাকায় আজকে অফিসে এসেছি।বিকেলে অফিস থেকে বের হবো এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসলো বাবা অসুস্থ আমাকে বাড়ি যেতে হবে।আর মা বলল বিয়েটা তো তুই একা একাই করেছিস।আমরা এখনো তোর বউ কে দেখিনি।আসার সময় বৌমা’কে সাথে করে নিয়ে আসিস।

কিন্তু এই অবস্থায় ওকে কীভাবে সেখানে নিয়ে যাবো এটা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তায় পরে গেলাম।

– মা ফোন দিয়ে বলল বাবা অসুস্থ আমি আজকে রাতে বাড়িতে যাব তো আপনি কি আমার সাথে আমাদের গ্রামের বাড়ী যাবেন ?

– এই শরীরে কি এতো দূর জার্নি করাটা ঠিক হবে ?

– আমি আপনাকে যাওয়ার জন্য জোর করবো না।আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আমার সাথে যেতে পারেন।

আমি তাকে আর কিছু বললাম না,আর মনে হয় বলার অধিকার ও নাই।আমিও চাই সুস্থ ভাবেই বাচ্চা টা হয়ে যাক।

রাত 11 টার বাসে যাবো তাই ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম ঠিক তখনেই নিনিতা এসে বলল,,,

– আপনি কি রাতেই চলে যাবেন ?

– হ্যাঁ,রাত 11 টার বাসে যাবো।

– বাসে কেন ? নিজের গাড়ী রেখে।

– এভাবে বউ ছাড়া গাড়ী নিয়ে গেলে খারাপ দেখাবে, তাছাড়া আমি সাধারণ ভাবে থাকতে বেশি পছন্দ করি, অনেক দিন ধরে এই শহরের জগতে নিজেকে আঁটকে রেখেছি।এখন গ্রামে গিয়ে মুক্ত বাতাসে একটু মুক্ত হতে চাই।

রাত সারে নয়টার দিকে নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে বলল,,,,

– নিনিতা বলছে যে, তুমি নাকি আজকে রাতে গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছ ?

– জি হ্যাঁ,,

– নিনিতাকেও নিয়ে যাও।তোমার মা আমাকে ফোন করেছিলো।

– আপনার মেয়ে তো অসুস্থ তাই আমি ভাবলাম ও সুস্থ হোক তারপর না হয় ওকে নিয়ে যাবো।

– কিছু হবে না, তোমরা এসি বাসে যাও। আমি কালকে গাড়ী পাঠিয়ে দিবো,বাসে ঝাকি লাগবে না।

– আপনার মেয়ে যেতে রাজী থাকলে আমার কোন সমস্যা নাই।

ফোন রাখতেই নিনিতা আমার কাছে এসে বলল আচ্ছা আপনার গ্রামের বাড়িতে কি কি দিয়ে যাওয়া যায়।

– বিমান ছাড়া সব কিছু দিয়েই যাওয়া যায়।

– ট্রেন দিয়ে যাওয়া যায় ?

– হম, যাওয়া যায়।

– আমি ছোট বেলায় একবার ট্রেনে উঠেছিলাম এর পর আর কখনো ট্রেনে উঠিনাই।আমি ট্রেন দিয়ে যাবো।

আমি রাতের ট্রেনের একটা কেভিন ভাড়া করলাম।রাত ১১ টায় আমারা ট্রেনে উঠলাম তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিলো।

– আচ্ছা আপনি এতো তাড়াতাড়ি ট্রেনের টিকিট পেলেন কীভাবে ?

– আপনি ট্রেনে যেতে চেয়েছেন।কিন্তু ট্রেনের কোন সিট খালি ছিল না। তাই 1200 টাকার এই কেভিন 4000 হাজার টাকায় নিয়েছি।

– শুধু শুধু এতগুলো টাকা কেন খরচ করতে গেলেন।আমরা না হয় বাসেই চলে যেতাম।

– আপনি বলেছেন ট্রেনে যাবেন 4000 টাকার জায়গায় যদি 4 লাখ টাকাও লাগতো তাহলেও আমি আজকে আপনাকে নিয়ে ট্রেনেই যেতাম।

আমার কথা শুনে নিনিতা আর কিছু বলল না শুধু আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে ছিল।

– আমি একটু ওয়াশ রুমে যাবো।আপনি কি আমাকে ওয়াশ রুম পযন্ত দিয়ে আসবেন ?

– হম অবশ্যই।চলেন,,,

– ওয়াশ রুমে যাওয়ার আগে নিনিতা ওর ফোনটা আমার কাছে রেখে যায়।এই প্রথম আমি ওর ফোন হাতে নিলাম।

ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এর মধ্যে ফোনে একটা কল আসলো।চিন্তায় পরে গেলাম এত রাতে ওকে কে ফোন করল,,,যাইহোক আমি ফোন রিসিভ করলাম না।নিনিতা বের হতেই ওর হাতে ফোন দিয়ে বললাম দেখেন তো কে যানি আপনারে ফোন দিচ্ছে।

– ফোন রিসিভ করলেই পারতেন।

– আপনার ফোন, আমি কেন ধরবো,,,

নিনিতা ফোন বের করে কথা বলল, তারপর বলল, আপনার ফোন বন্ধ কেন ? বাবা বার বার ফোন দিচ্ছিল আপনাকে।

– হ্যাঁ তাই তো।আপনার বাবা আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছে।

– আমি এর আগে একা কোথাও যায় নি, মানে বাবাকে ছাড়া।স্কুল বা কলেজে গেলেও আমাকে বাবা একা পাঠাতো না,আজ এতো দূরে যাচ্ছি তাও এই শরীরে তাই বাবা একটু চিন্তা করছে।

– না ঠিক আছে।বাবার সাথে দেখা করে খুব তাড়াতাড়িই আমরা ঢাকায় ফিরে আসবো।

– আমার না খুব খুদা লেগেছে।আসার সময় বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম।

– তাহলে সেগুলো খান।

– আপনি কিছু খাবেন না ?

– না

– চলেন দুজনে একসাথে খাই।

– ওকে,,,

– আচ্ছা আপনার কি ছোট বেলার কথা মনে পরে ?

– মনে পরবে না কেন।জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়টা যে তখন কাটিয়েছি।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাদ্রাসায় চলে যেতাম তারপর সেখান থেকে এসে স্কুলে যেতাম।স্কুল থেকে এসে সবাই একসঙ্গে পুকুরে গোছল করতাম।পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে চোখ লাল হয়ে যেত।তারপর মা হাতে একটা লাঠি নিয়ে এসে মারের ভয় দেখিয়ে পুকুর থেকে তুলে নিয়ে যেত।দুপুরে খাওয়ার পর মা ঘুমাতে বলত।আমিও গিয়ে বিছানায় শুতাম যখনেই দেখতাম মা ঘরে নেই উঠে এক দৌড়ে মাঠে চলে যেতাম খেলতে।তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম।মা তখন বকাবকি করে পড়তে বসাতো।কিছুক্ষণ পড়ার পরেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো।মায়ের ধমক শুনে চোখ খোলে আবার পড়তাম।একটু পরেই আবার চোখ বন্ধ হয়ে যেত।তারপর মা বুঝে যেত আজ আর পড়াশোনা হবে না।তখন রাতের খাবার খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিত।আর আমিও ঘুমের দেশে চলে যেতাম।

এভাবেই আমার শৈশব কেটেছে।তারপর যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে ক্লাস এইট এ উঠলাম তখনি এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।

– ছোটকালের প্রেম,খুব ইন্টারেস্টিং তো,তারপর কি হল,,,

– মেয়েটা শহর থেকে এসে গ্রামে আমাদের স্কুলে ভর্তি হল।ওকে দেখে আমার খুব ভাল লেগে যায়।তারপর আর কি পরে গেলাম ওর প্রেমে পরে।যে আমি সপ্তাহে ছয় দিনের মধ্যে তিন দিন স্কুলে যেতাম সেই আমি তখন নিয়মিত স্কুলে যেতাম মেয়েটাকে দেখার জন্য আর এদিকে আমার মা কি খুশি এখন আর আমাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হয় না।কিন্তু “মা” তো আর আমার ভেতরের খবরটা জানতো না।আমি যে এখন কেন প্রত্যেক দিনেই স্কুলে যায়।

– তারপর কি হল,,,,

– তারপর আর কি দেখতে দেখতে চলে গেল দুই বছর।এস এস সি পরীক্ষা শেষ হতেই মেয়েটা চলে গেল শহরে।মেয়েটাকে আর কিছু বলা হল না।

– আহারে,,,,আগে বলে দিলেই পারতেন।

– তখন কি আর এত কিছু বুঝাতাম নাকি।ওকে দূর থেকে দেখতাম তাতেই ভালো লাগতো।

– তাহলে এটাই কি ছিল আপনার প্রথম প্রেম ?

– প্রেম আর হল কই।কিছুই তো বলতে পারিনি মেয়েটাকে।

এর পরেও আরও একটা মেয়েকে আমার ভাল লেগেছিল।

– আবার,,,,

– হম

– তো সেটার কি হল,,,,

– গ্রাম থেকে এস এস সি দেওয়ার পর তখন আমি শহরের একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি।বাড়ি থেকে যেতে আসতে বেশি সময় লাগতো তাই কলেজের কাছেই একটা বাসা ভাড়া নিলাম থাকার জন্য।

প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটা মেয়েও কলেজে যেত।আবার কলেজ থেকে আসার সময় ঐ মেয়েটা আমার সাথেই আসতো।

এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন সাহস করে,,,,,

চলবে,,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed