অভিশপ্ত_রাত(৩য় পর্ব)

0
2670

অভিশপ্ত_রাত(৩য় পর্ব)

Umme Nipa

শিহাব রুম থেকে বের হয়ে সেই আওয়াজের সন্ধানে ছুটলো।সে যত সামনে এগোয় শব্দ টা তার আরো সামনেই থাকে।ঠিক যেন মরিচিকা।

সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই ছাদের রেলিং ধরে এক মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় শিহাব।

কে?কে ওখানে প্রশ্ন করলেও মেয়েটি শিহাবের দিকে ফিরেনা।

শিহাব কাছে যেতেই দেখতে পেল উপমা।কিন্তু শিহাবের একদম খেয়াল আছে উপমা ঘরে ঘুমোচ্ছে কি করে ও তার আগে ছাদে এল ভাবতে ভাবতেই উপমা বললো,কি ডাক্তার মশাই ভয় পেলে নাকি?আমি ঘুমাইনি বুঝলে?বাতাস এলো তোমার আগেই ছাদে এসেছি।তুমি টের ই পেলেনা।কি যে হয়েছে তোমার আজকাল।

উপমা চলো বাসায়,বাতাস অনেক

উপমা শিহাবের হাত শক্ত করে ধরে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,তুমি তোমার বউকে খুব ভালোবাসো?

শিহাব: এত বছর পর এটা মনে হল?

উপমা: আমি কেন কিছু পাইনা বলতো?

শিহাব উপমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,আমার ভালোবাসা,বিশ্বাস পাবার চেয়েও কিছু বাকি থাকে উপমা?

আমার তোমার বউকে অনেক হিংসা হয় শিহাব।আমি তার জায়গা টায় যদি থাকতে পারতাম?

উপমার এমন কথা শুনে শিহাব চমকে গেল।এরই মাঝে পিছন থেকে উপমা এসে বলতে লাগলো,তুমি এখানে?আমি আর মায়া খুঁজছি তোমায়।

শিহাব চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে উপমা আর মায়া দাড়িয়ে।

আতংক নিয়ে সামনে তাকাতেই কেউ নেই। মানুষটা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল।

উপমা: কি হল?রাত কটা বাজে?

শিহাব মায়ার দিকে তাকাতেই দেখছে মায়া অদ্ভুত রহস্যজনক ভাবে হাসছে।যে হাসি জানান দেয় অনেক কিছু।

সকাল হতেই শিহাব হাসপাতাল গিয়েই লাশ এর খবর নিয়ে জানতে পারে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর মিনু শিহাবকে একটা চিঠি লিখে গিয়েছে,

স্যার,সেবিকা পদে আসার আগে শপথ নিয়েছিলাম সবার বিপদে পাশে থাকবো।কিছু নিয়েই ঘৃনা করবো না।তবে আমি কালকের বিষয় টা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আর হাসপাতালে থাকলে আমার সবসময় এসব তাড়া করে বেড়াবে।আমি মন থেকে কাজ করতে পারিনা।যে মেয়েটার লাশ টা নিয়ে গেল ওর মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক নয়।আমি পুলিশ কে ঘুষ নিতে দেখেছি।আর ওই লাশ কে আহাজারি করতে।জানি বিশ্বাস করবেন না। আমি চাকরি ছেড়ে গ্রামে মায়ের কাছে চলে গেলাম স্যার।ভালো থাকবেন

মিনু।

শিহাব চিঠিটা পড়া শেষ করে চমশা খুলে টেবিল এ রাখলো।এক অজানা ভয় আর চিন্তা তাকে আকরে ধরেছে।উপমাটা ওখানে একা।তার উপর মিনুর সব কথাই আর মিথ্যে মনে হচ্ছেনা।এই মৃত্যুর রহস্য জানতেই হবে।

থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ এর সাথে কথা বলতে গেলে পুলিশ তাকে পাত্তা না দেয়ার ভান করতে লাগলো।

শিহাব: দেখুন লাশ টা নেয়া হল ময়নাতদন্ত এর জন্য কিন্তু না করেই কেন আনা হল

এস.আর মানিক পায়ের উপর পা রেখে বললেন,দেখুন আপনি ডাক্তার তাই সব কিছুতেই কারন খুঁজেন। মেয়ের হাসবেন্ট এসেছিল আর তাদের গ্রামের হাসপাতাল থেকে তার প্রুভ ও এনেছে।ডেলিভারীর সময় মারা গিয়েছিল মেয়েটি।

শিহাব: তাহলে মেয়েটিকে কবর না দিয়ে আপনারা আগে কেন শহরের হাসপাতালে আনলেন?মেয়েটির বাসা কোথায়?

মানিক: বিদ্রুপের সূরে,আপনার মনে হয় গোয়ান্দা হবার সখ ছিল তাইনা?..

শিহাব চুপ করে আছে।মানিক ইসুফকে বললো চা দিতে,শিহাব না সম্মোধন করে উঠে দাড়ালো।

মানিক: শুনুন এসব সিম্পল ঘটনায় মাথা ঘাটানো ঠিক আপনার?

এরই মাঝে উপমার কল,রিসিভ করতেই,ক্লান্ত গলায়,শিহাব কই তুমি?আমার শরীর প্রচন্ড খারাপ লাগছে।দেখোনা মায়াটা না বলে চলে গেল। তুমি আসবে এখন?
শিহাব কল কেটে বাসার দিকে রওনা হল।হুট করে মায়ার চলে যাওয়া তাকে খুব ভাবাচ্ছে।

শিহাব বাসায় যেতেই দেখছে উপমা শুয়ে আছে।কাল ও সুস্থ ছিল আজ হঠাৎ শরীর খারাপের কারন শিহাব বুঝতে পারছেনা।

মায়া বলে যায়নি উপমা?

উপমা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিল না।শিহাব মায়ার কথা বার্তা আমার ঠিক লাগছেনা

শিহাব: কেন?

উপমা: ছাদে গিয়েছিলাম হুট করেই বলছে তোকে যদি ধাক্কা দেই এখন?

শিহাব উপমার পাশে বসে বললো মানে?

উপমা: হুম তারপর আমি বললাম শিহাব টা খুব একা হয়ে যাবে রে।না হলে কবে নিজেই মরে যেতাম। একটা বাচ্চা থাকলে বলতাম দে ধাক্কা।বেচারা বাবা ও হতে পারলোনা

মায়া আমার এ কথা শুনে কান্না শুরু করে দিল।আমি এত জিজ্ঞেস করলাম থামলোই না।
শিহাব: তারপর?
উপমা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,তারপর বলে বাবা ডাক শুনবে।
শিহাব উপমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,তুমি খেয়েছো কিছু?

উপমা হাসি দিল

শিহাব: হাসছো যে?

উপমা: বাচ্চার কথা শুনলেই এড়িয়ে যাও শিহাব।কেন এড়িয়ে যাও?

শিহাব: আচ্ছা উপমা মায়ার বাড়ি কই জানো?

উপমা: নীমতলি গ্রাম।

শিহাব: ওর বাবার নাম বা বরের নাম?

উপমা: তা জানিনা।

শিহাব: মায়া কিছু বলেনি?

উপমা: তুমি মায়ার বেপারে এত আগ্রহী কেন শিহাব?মেয়েটা বেশ সুন্দরী কিন্তু।ভালো ও।মা ও হতে পারবে।তাইনা?

শিহাব: পাগলের মতন কি বলছো উপমা?

উপমা: আমি জানি আমার প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছে।যাবে না কেন আমি কি দিয়েছি তোমায়?

শিহাব উঠে চলে গেল।শিহাব ঝগড়া হবার পূর্ব মুহুর্তে এভাবেই চলে যায়। তর্ক তার একদম ই পছন্দ নয়।

শিহাব ভেবে নিয়েছে সে নীমতলি যাবে।সব কিছু ভালোকরে জানা উচিৎ। সমস্যা সমাধান না করলে সবসময় ই রয়ে যাবে।কিন্তু উপমাকে কার কাছে রেখে যাবে?উপমাকে বলতেও পারছেনা,মায়া বলতে কেউ নেই।বিশ্বাস করবেনা, না হয় ভয় পাবে।

এরই মাঝে পাশের রুম থেকে উপমার চিৎকারের শব্দ শুনে শিহাব দৌড়ে উপমার কাছে যায়।

উপমা মেঝেতে পরে আছে।শিহাব উপমাকে বিছানায় উঠিয়ে পাল্স চেক করে ঘাবড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব।চোখ ভালোভাবে দেখে সে বুঝতে পারে উপমা প্রেগন্যান্ট। কিন্তু কি করে এ সম্ভব?কখনই হতে পারেনা এ মিরাকেল।

উপমার জ্ঞান ফিরলেও শিহাব তাকে বলেনি তার প্রেগনেন্সির কথা।উপমা ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলছে,কি হল ডাক্তার মশাই?

শিহাব:কি?

উপমা: এখনো বলছো না কেন আমায়?

শিহাব: কি বলবো?

উপমা: আমি যে মা হতে চলেছি এত খুশির খবর টা কেন দিচ্ছনা?

শিহাব অনেকটা ইতস্তত হয়ে ভাবছে,উপমা কি করে জানলো!

উপমা এরই মাঝে উঠে বললো,ভাগ্যিস মায়া আমায় বললো।

শিহাব: মায়া?মায়া কোত্থেকে এলো?

উপমা শিহাব কে জড়িয়ে ধরে বললো,এত প্রশ্ন করনা তো।এতদিন পর আমার স্বপ্ন পুরন হতে চললো,আমার তো খুশিতে মরা মরা অবস্থা।

শিহাব:এ কেমন কথা?তুমি শান্ত হও উপমা।আপদত নিজের কথা ভাবো।মায়ার কথা বাদ।

উপমা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না আনন্দের।অশ্রুর ফোঁটা শিহাবের বুকে গড়িয়ে পরছে।শিহাবের বেশ কান্না পাচ্ছে।সে নিজেকে সামলাচ্ছে এই ভেবে,পুরুষ মানুষ এর যে কাঁদতে নেই…

চলবে…

[এটা কেবল ই ভুতের গল্প নয়।এখানে ভালোবাসা,ট্রাজেডি সব। 🙂 ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে