কবিতা (স্বরচিত): ‘অব্যক্ত ভালোবাসা’
লেখনীতে: সানজিদা তাসনীম রিতু
আপন হৃদয়ের আকুলতা আর আবেগ
মিশ্রিত করে, একরাশ প্রিয় ফুল নিয়ে
তোমায় বলতে খুব ইচ্ছে করে,
মাতিয়ে রাখা উচ্ছলতার সমগ্র সুখ
কেড়ে নিয়ে, তোমায় জানাতে ইচ্ছে করে
ভালোবাসি তোমাকে, তোমাকে, তোমাকে।
লোনাজলেরা ঝড়ে ভালোবাসার আড়ালে,
বাতাস তার বাঁশিতে বলে তোমার কথা কত
সিক্ত নয়ন আমার বোঝে না তো, তুমি ব্যস্ত।
অব্যক্ত থেকে যায় কত যে কথামালা
নেতিয়ে পড়ে থাকে কত না দেওয়া ফুল,
কবিতাগুলো দিয়ে যায় ভুলের মাশুল।
ভাবিনি কখনও এমনও হবে,
লোমকূপে তোমার ছোঁয়ার শিহরণ জাগে।
বালিশে মিশে থাকে তোমার বিরহের কষ্ট,
সিক্ত নয়ন আমার বোঝে না তো, তুমি ব্যস্ত।
ভালোবেসে আমি অনুরাগের অনলে জ্বলি
লোকে বলে আমি নাকি হয়েছি কলঙ্কিনী,
বাসি হয়ে শুঁকিয়েছে অবেলার অশ্রু যত
সিক্ত নয়ন তবুও বোঝে না যে, তুমি ব্যস্ত।
ভাসিয়ে দিয়েছি তাই মনের আবেগ যত
লোকালয় ছেড়ে আমি বৃন্দাবনে যাবো,
বাসনা লুকিয়ে নিজেকে হারিয়ে আজ
সিন্দুকে বন্দি হবে মন, আমার নেই লাজ।
বি:দ্র: কবিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা পংক্তির শুরুর বর্ণ নিয়ে বিশেষ একজনের জন্য একটি গোপন পূর্ণ বাক্য রয়েছে। প্রিয় পাঠক আপনারা চাইলে বর্ণ গুলো মিলিয়ে সেটি জেনে নিতে পারেন।
ঘুমহীন রাতে লেখা সুখ ছন্দে তুমি,
শব্দবিহীন কাব্যের চরণে ভাবনা;
কল্পিত দেয়ালে আঁকা প্রিয় স্বপ্ন ভূমি,
ইচ্ছে তুলির আঁচড়ে আশার কল্পনা।
অপেক্ষায় কাটে কারো একলা প্রহর,
সে ধাঁধার মাঝে খুঁজি রহস্যের রূপ;
কিন্তু হলো না পূরণ, না পাই উত্তর,
এ শহরের দালান হলো ধ্বংসস্তুপ।
কত নারী সাজায় এ স্বপ্ন রাশি রাশি
পূর্ণতার অতৃপ্ততা নিয়ে চেয়ে রয়,
তবু সে অধরা আশা সত্য কারো নয়,
নিঃশেষে ভগ্নদশায় পরিনত হাসি;
ব্যথিত রমনী ফের করে অনুনয়
সে নিষ্ঠুর দৃষ্টি হেনে বলে আমি আসি।
[দ্রষ্টব্য- আইডির নামটি ছদ্মনাম, কবিতায় মূল নাম ব্যবহৃত হয়েছে।]
কবিতা: “অন্যরকম পাওয়া”
লেখা: তানভীর রানা
.
নীলান্তিকা, তুমি স্বপ্নভুবনের মাঝে ছিলে, আছো;
কল্পনার মায়াজালে গাঁথা পড়েছিলে, থাকবে।
তোমার মনের মাঝে হৃদয়ের গহীনে-
স্থান নাই-বা পেলাম গোলাপ হয়ে,
ডুমুরের ফুল হতে তো পারবো।
পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আলোর ঝলকানি-
নাই-বা দেখালে আমায়, নাই-বা খুঁজলে,
অমাবস্যার আঁধারে একটু তো স্থান হবে।
সুখটুকু আমার জীবনে নাই-বা লেখা থাকলো,
দুঃখগুলো তো আমায় আঁকড়িয়ে ধরবে;
এইতো আমার অন্যরকম পাওয়া।
আনন্দ থেকে যদি বঞ্চিত হতে হয়,
আমি কষ্টকে বরণ করে মালা পরাবো;
বেদনার নীলে নীল হতে তো পারবো!
সবাই তো আর সবকিছু পায় না,
আমিও না হয় না পাওয়ার দলেই থাকলাম,
তবুও তো তোমায় সুখে থাকতে দেখবো;
আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদ না হয়-
অভিমানে অধরাই থেকে গেল,
আমি না হয় অমাবস্যার আঁধারে কাটাবো সারাটা জীবন,
তবুও যেন সুখের পরশ আলতো করে-
তোমাকে প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যায়!
তোমার সুখগুলো ভালোবাসা হয়ে আমাকে ছুঁয়ে যাবে অবিরাম।
এই তো আমার অন্যরকম পাওয়া।
কবিতা (স্বরচিত): এই ছেলে শুনছো?
লেখনীতে: সানজিদা তাসনীম রিতু
আমার ক্যানভাস জুড়ে
তোমার নামের আঁকিবুঁকি,
আলোছায়ার রঙের খেলায়
তোমায় ভেবে চোখ বুজি।
লাল, হলুদ আর নীলের মাঝে
তোমার মুচকি হাসি,
এই ছেলে শুনছো?
আমি তোমায় ভালোবাসি।
আমার কবিতা জুড়ে
ছন্দের ভিড়ে
তোমার নামের আনাগোনা,
কদিন ধরেই চলছে তো বেশ
তোমার আমার জানা-শোনা।
কলমের কালিতে
লেখার গলিতে
ঘুরে বেড়ায় তোমারই ভাবনা,
এই ছেলে শুনছো?
তুমি কি তা জানো না?
আমার সকাল-সন্ধ্যার
গানের কলিতে
তুমিই করো বসবাস।
সুরগুলো সব করে ছুটোছুটি
মন যে করে হাঁসফাঁস।
অন্তরাতে তোমায় দেখেছি ভেবে
হয় যে ভুল বারবার
এই ছেলে শুনছো?
আমি জানি, তুমি আমার।
প্রবন্ধের খুনসুটিতে
কাব্যেরা করে হাসাহাসি,
শব্দের আড়ালে তাই
সুর তোলে কাগজের বাঁশি।
আমার গল্পের জগতে
কথার নাটকে লিখি
তোমায় নিয়ে প্রেমের উপন্যাস।
এই ছেলে শুনছো?
তোমার চোখে যে দেখেছি
আমার হৃদয়ের সর্বনাশ।
এসো, এসো আমার আরো কাছে,
ভিজাও তোমার বর্ষায়
রাঙ্গাও তোমার রোদে
হারাতে দাও তোমার চুলে।
ডুবতে দাও তোমার চোখ
আর একটু, ভালবাসা দাও…!
(ছন্দটি লিখেছে তানভীর)
ছাদের মাঝে দুজন দিকে শুয়ে আছে ইউসুফের মাথা কুহুর কাঁধে, কুহুর মাথা ইউসুফের কাঁধে।শুয়ে শুয়ে পূর্ণিমার এই বড় আলো কিত চাঁদটি দেখে যাচ্ছে তারা। তার সাথে তাল মিলিয়ে ছন্দ বানিয়ে বলছে ইউসুফ।কুহু চুপ করে শুয়ে শুনচ্ছে।কি যে ভাল লাগচ্ছে তার।মাঝে মাঝে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সে।আজ আবার তাদের বিয়ে হয়েছে। ধুমধাম করে। পুরো ময়মনসিংহের মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছে তারা।বারিশের দাদুকে নিয়ে এসেছে তারা।দাদু এখন শয্যাশায়ী।টিনার সাথে রিয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে।বারিশের সব রিয়ানের নামে করে দিছে ইউসুফ। আশিককে জেলে দেয়া হয়েছে। রাহুল তার ওয়াইফ কে নিয়ে আমেরিকা চলে গেছে। মুনতানিছা মা হয়েছে। তার ফুট ফুটে ছেলে, মেয়ে হয়েছে।নাম দিয়েছে, ফারিন, আর ফারহান। তারা খুব খুশি। কুহুর মামীকে তাদের সাথতে রেখেছে। রাহুল নিতে চাইছিল কিন্তু দেয় নি। সব মিলিয়ে শান্তি নেমে এসেছে এই দুজনের জীবনে।
দুজনের মধ্য বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা চলছে। নিরবতা ভেঙ্গে ইউসুফ বলল,
—–কুহু দেখ চাঁদটা কি সুন্দর তাই না!
কুহু অস্পষ্ট শব্দে বলে,
—–হুম।
ইউসুফ আবার বলে,
—–তোর সাথে অনেক অন্যয় করেছি মাফ করেছিস তো?
কুহু সেই একি ভাবে বলল,
—-হুম।
ইউসুফ বুঝলো কুহু অন্য কুছি নিয়ে ভাবনায় মগ্ন।
সে হালকা উঠে কুহুর মুখের দিক ঝুকে বলে উঠে,
—–কুহু! আই নিড ইউ…! কেন আই?
কুহু সেই একি ভাবে বলল,,
—-হুম।।
ইউসুফ এবার হেসে দিল।হাসার শব্দে ধেয়ান ভাঙ্গে কুহুর। পরক্ষনেই মনে পরে কি বলল, ভেবে সাথে সাথে উঠে বসে জিব কাটে। ইউসুফও উঠে বসে এবার ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,
—-আমি সিরিয়াস!
কুহু লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। ইউসুফ এবার গা ঘেসে বসে কুহুর।কুহু কেঁপে উঠে। ইউসুফ এবার কুহুর দু হাত তার হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,
—–ভালই হয়েছে আগে কিছু করতে দাও নি..! এখন সব ডাবল হবে।
কুহুর যেন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা আজ তাকে কত লজ্জা দিচ্ছে..! কিন্তু আজ লজ্জা পেতেও ভাল লাগচ্ছে। এই লজ্জায় আজ সে মরতেও যে রাজি।ইউসুফ এবার কুহুর ধরে রাখা হাতে হালকা চাপ দিল।আর বলল,,
—–আজও কি দূরে শরিয়ে রাখবে?
কুহু চুপ করে মাথা নত করে রাখলো। ইউসুফ বুঝলো নাহ্ লাভ নেই। সে আজও তার কুহুতে আপন করে পাবে না। কষ্ট লাগলো ইউসুফের। খুব কষ্ট। কুহু তেন বুঝে না তাকে? সেই ছোট থেকেই কতটা কন্ট্রোল করেছে শুধু সে জানে।ইউসুফ ছোট শ্বাস নিয়ে বলল,
—-ওকে। বলে উঠে যেতে নিল।
কুহুর জানি কি হলো, সে টান মেরে ইউসুফের বুকে লেপ্টে গেল। ইউসুফ তার উত্তর পেয়ে গেল।সে হেসে কুহুর ঘারে চুমু খেল। তারপর কোলে তুলে হাটা ধরলো তাদের ঘরের দিক।কুহু ইউসুফের গলায় দু হাত ভাল করে বেদ্ধে বুকে মাথা ঠেকিয় চেয়ে রইলো ইউসুফের দিক। লোকটি কত সুন্দর। ২ চেহারেয় যেন মানায় তাকে। নাহ্। আগের চেহেরা বেশী সুন্দর ছিল। যাই হোক মানুষ তো তারি আছে। ভেবে আনমনে হাসলো। কুহুর হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো ইউসুফ। কুহু ইউসুফকে অবাক করে দিয়ে গালে চুমু খেল। ইউসুফ হা হয়ে গেল। থমকে গেল কদম। কুহু যেন আরো লজ্জা পেল। সাথে সাথে মুখ লুকিয়ে ফললো ইউসুফের বুকে।
ইউসুফ মুচকি হেসে বলল,,
বলে বড় বড় পায়ে হাটা ধরলো।কুহু আবার সেই লজ্জা জেকে বসলো।
ইউসুফ রুমে ঢুকে কুহুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিল।তারপর আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ালো। কুহু চোখ বন্ধ করে আছে। মনের মাঝে রংবেরঙের প্রজাপতি উড়ছে। ইউসুফ এবার কুহুর গহনা খুলতে ব্যস্ত। প্রথমে ডান কানের কানের দুল খুলল। এবং সেখানে ঠোঁট ছোয়ালো। কুহু চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো। যা ইউসুফ আয়নায় দেখছে। তার পর বাম কানে দিল। কুহু আবার কেঁপে উঠলো। ইউসুফ মুচকি আসলো।তারপর হাত দিয়ে গলায় স্লাইড করে গলার গহনা খুলে দিল। কুহু এবার তার লেহেঙ্গার কাপর মুঠ করে ধরলো।ইউসুফ আবার কোলে তুলে নিল কুহুকে। এবং বেডে বসালো। তারপর পিঠের দিক কুহুর ব্লাউজের ফিতা খুললো। সেখানে চুমু দিল।কুহু শক্ত হয়ে চাঁদরে হাত দিয়ে বসে রইল। ধীরে ধীরে কুহুর পায়ের কাছে নেমে এলো পকেট থেকে দুটো নুপু বের করে পরিয়ে দিল। এবং দু পায়ে চুমু খেল। কুহু আর নিতে পারলো না সটান করে শুয়ে পরলো সে। এ কেমন অনুভতির সাথে পরিচয় করাচ্ছে তাকে ইউসুফ। এই অনুভতি গুলো যে মেরে দিবে তাকে। একে বারে মেরে দিবে।
ইউসুফ এবার নিজের পাঞ্জাবি খুলে ফেলল। কুহু তাকিয়ে আছে ইউসুফের বুকে সে লুকিয়ে কত দেখেছে এই বুকটা। ইউসুফ কুহুর লেহেঙ্গা পা পর্যন্ত উঠালো। কুহুর সেই পায়ের তিলে গাড় চুমু দিলো। কুহুর যেন দম আটকে আসচ্ছে মরেই যাবে সে আজ।
ইউসুফ এবার উঠে এসে কুহুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। গভীর চুম্বুনে লিপ্ত হলো। এবার কুহুও সাথ দিল তার।ইউসুফ ঠোঁট ছেড়ে নেমে এলো গলায়।প্রথমে ঠোট দিয়ে চুমু দিল। তারপর জিব্বা দিয়ে আদর করতে লাগলো।কুহু যেন শ্বাস নিতে ভুল যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ইউসুফ নেমে এল বুকে। তার পেটে। পেটের দিকে কুহু একটি লাল তীল। ইুসুফের লোভ বাড়লো কামোর বসালো তাতে। এতে কুহু মুখ থেকে অাহ্ শব্দ বের হয়ে আসলো। ইউসুফ তখন মাথা তুলে কুহুর দিক দাঁত কেলিয়ে বলল,,
—–নতুন বউয়ের শরীরে লাভ বাইট না হলে কেমন দেখায় না তাই দিলাম।
কুহু বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে রইলো। লোকটি হাসলেই পাগল। কুহু সবাইকে লাভ বািট দেখিয়ে ঘুরবে নাকি।
ইউসুফ আবার তার কাজে মন দিল। পেটে কিস করতে আবার উপরে উঠে কুহুকে চুমু দিল। তারপর জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার মেতে উঠলো আদিম খেলায়। দুজনে তলিয়ে গেল। ভালবাসার গহীন অতলে…!
এটাই যেন তাদের নতুন জীবনের শুরু। সকল বাঁধা বিপত্তি এক পার করে আজ কুহু তার সাইকো কে পেয়ে গেল। আর ইউসুফ তার বাবুইপাখিকে…!
❤ সমাপ্ত ❤
(আপাদের কথা রাখলাম ওদের মিল করে দিলাম।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কুহু ইউসুফের জন্য দোয়া করিয়েন। ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে স্টোরিটা পড়ার জন্য ?)
আধ আধ চোখ মেলে তাকায় বারিশ। সাথে সাথে উঠে বসে সে, নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পায়।এভাবে হুড়মুড় করে উঠে বসাতে মাথায় অনেক পেন হচ্ছে তার।মাথায় হাত চেপে ধরে সে। তখন সামনে থাকা বৃদ্ধ একটি লোক বলে উঠে,
—-বাবা আপনে ঠিক আছেন?
বৃদ্ধার কথা শুনে বৃদ্ধার দিক তাকায় বারিশ।তারপর বলে উঠে,
—–জ্বি আব্দুল চাচা..!
লোকটি অবাক হয়ে বলল,
—-বাবা আপনে আমারে চেনেন?
বারিশ বিরক্তির সুরে বলল,,
—-কি বলছো তুমি চাচা এসব? আমি কেন চিনবো না তোমাকে?
বৃদ্ধি লোক আরো অবাক হয়ে বলল,
—-বাবা আপনি আমারে কেমনে চিনেন? যত দূর মনে পরে আপনাকে আমি আপনারে আইজকা প্রথম দেখছি।
—-কি বলছো এসব চাচা? আমি ইউসুফ আমাকে চিন্তে পারছো না?
লোকটি এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো। যেন চোখের কৌটা থেকে ফট করে বেরিয়ে আসবে।নিজেকে সামলে লোকটি আবার বলে,
—–কোন ইউসুফ বাবা?
ইউসুফ এবার রাগে বলল,
—–মসকরা কেন করছো চাচা? তুমি আমার বাসায় ২৫ বছর ধরে মালির কাজ করছো আর আমাকে ভুলে গেল?
লোকটি এবার বিস্ময় সুরে বলল,
—–কি বলতাসেন আপনে। ইউসুফ বাবা তো গত হয়েছে বছর পাঁচকে উপরে আর আপনে কন আপনে ইউসুফ কমনে। চেহারাও তো মিল নাই আপনার? আমার উল্লোক পাইছেন?
আব্দুল চাচার কথায় হকচকিয়ে উঠে ইউসুফ, কি বলছেন আব্দুল চাচা এসব?? তখনি নার্স রুমে ঢুকে।নার্স সাথে ইউসুফ বলে উঠে আয়না দিতে।
নার্স আয়না নিয়ে ভিতরে ঢুকে। আয়না দেখে বিস্ময় চেয়ে থাকে কতক্ষন চেহারায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগে এ কার চেহারা? পরক্ষনেই ধীরে ধীরে মনে পরতে থাকে সব। সেদিন তার এক্সিডেন্ট, দাদু তাকে পাওয়া, কুহুকে বিয়ে করা ইউসুফের বাবা মার মৃত্যু..? তার সাথে তখনের কথাও মনে পরে যায়। যখন লাস্ট কুহুকে মেন রোডে জড়িয়ে ধরেছিল।তখনি কেউ হুট করেই মাথায় বাড়ি দেয়। তারপর কিছু মনেই তার।
তখন আব্দুল চাচা বলেন,
—–আমি কাম শেষে রাস্তা দিয়ে চাইতেছিলাম। আপনারে দেখে থেমে যাই। আপানার মাথার পিছনতে অনেক রক্ত পরতেছিল। মানুষ দেখতে ছিল কেউ ধরে করে নাই। পরে আমি অটো ডাইকা আপনারে এহানে নিয়ে আসি।
ইউসুফের আজ অনেক কান্না পাচ্ছে। ভদ্র বেশে ঘুরে ফেরা মানুষ গুলো জানি কেমন। তারা শিক্ষিত হয়েও একে অন্যের জন্য এগিয়ে আসতে চায় না। হারে মানুষ।
ইউসুফ আব্দুল চাচাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—-চাচা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তুমি আমার দ্বিতীয় বার জান বাচিঁয়ে দিছো।প্রথমবার সাপের হাত থেকে আর আজ মরার হাত থেকে। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।
লোকটি হকচকিয়ে উঠে।তারপর ছল ছল চোখে বলে উঠে,,
—আপনি সত্যি আমাগো ইউসুফ বাবা।
ইউসুফ মুচকি হাসে।
————————————–>>>>
কুহুকে হাত পায় শিকল পরিয়ে খাটের সাথে বেঁধে রেখে তার সামনেই চেয়ার টেনে বসে পরে আশিক। পাশেই তার মামা দাড়িয়ে।কুহু কান্না করেই যাচ্ছে। আর ছেড়ে দিতে বলছে তাকে। তখনি আশিক উঠে এসে কুহুর চুলে মুঠ করে ধরে। আর দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
—–খুব বার বেড়েছিস তুই! এবার দেখি কে বাচায় তোরে। তোর বর তো এতক্ষনে পটল তুলেছেরে।
কুহুকে এভাবে ধরায় “আহ” শব্দটি মুখ থেকে বের হয়ে আসে। তার পরেও হাসি রেখা মুখে টেনে কুহু বলে উঠে,
—–তোর মত নর্দমার কিট তার কিছু করতে পারবে না বুঝলি।সে ইউসুফ, আমার ইউসুফ, আমার সাইকো। আমার জন্য সব করতে পারে আর তোদের সব কটাকে মাটিতে মিশিয়ে দিবে বুঝলি। মনে রাখিস#psycho_is_back?। বলে হাসতে লাগলো কুহু।
কুহুর কথায় আশিক ভয়ে তার মাথা চুল থেকে হাত সরিয়ে দিল। কুহুর মামাও এমন কথা ভয়ে ছাপ ফুটে উঠলো মুখে।তিনি তোতলাতে তোতলাতে বললেন,
—–এই মেয়ে কি যা ইচ্ছে বলছিস? ইউসুফ মরে গেছে। আমি মারিয়েছি। সে আসবে কই থেকে? ফালতু কথা সব।
মামা ঘামতে লাগেন দ্রুত রুম ত্যাগ করলেন। এখন যে খবর লাগাতে হবে, বারিশ নাকি ইউসুফ খোঁজ নিতে হবে। এঁকেও শেষ করতে হবে। নয়তো এতদিনের সব পরিকল্পনা শেষ।তখনি সদর দরজা দিয়ে কিছু বিদেশি কালো পোশাক পরিহিত বডি বিল্ডার লোক ঢুকে। প্রতি লোকের হাতে একটি করে বন্দুক।মামা এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে জিগাস করেন,
—–এই আপনারা কে? একটা মেয়রের বাসায় এভাবে কিভাবে ঢুকতে পারেন আপনারা? গার্ডস গার্ডস। বলে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলেন। কিন্তু কেউ আসচ্ছে না।
তখন এক গার্ডস বললেন,
—–এভরিওয়ান ইজ ডেড।
মামার ভয় এবার বাড়তে লাগে,
সাথে সাথেই ইউসুফ ঢুকে মামাকে উদ্দেশ্য বলে উঠে,
—-হাই চাচ্চু! হাউ আর ইউ?বলে আরামসে সোফার উপর পা তুলে বসে পরে।
মামা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। তার পর বললেন,,
—–তু তু তুমি কে?
ইউসুফ বাঁকা হাসলো আর বলল,
—-নিজের ভাতিজাকে চিনতে পারছ না? হাউ স্ট্রেঞ্জ? শুনেছি চাচা নাকি ভাতিজা নাড়ি-নক্ষত্র পর্যন্ত চিনি! আর তুমি আমাকে ভুলে গেলে?
মামা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। রীতিমত কাপাকাপি স্টার্ট তার। তা দেখে ইউসুফ আবার বলল,
—-হায় হায় চাচ্চু কাঁপচ্ছো কেন? কই এত দিন পর তোমার ভাতিজা এসেছে তাকে আদর আপ্যায়ন করবে তা না করে দাড়িয়ে কাঁপচ্ছো? বাট হোয়াই? আচ্ছা তুমি কি ভাবচ্ছো আমি তোমাকে মারতে এসেছি? এক ভ্রু উঁচু করে বলল ইউসুফ।
মামা এবার নিজেকে সামলে চেচিয়ে বলল,
—-তোর সাহস কেমনে হয় আমার বাসায় আসার?
ইউসুফ আবার ভ্রু কুচকে বলল,,
—–তোমার বাসা?
মামা ভরকে গেল, আর বলল,
—-হে আমার বাসা। সব আমার।
—-তার জন্যই তো বাবা- মা এবং কি নিজের জন্মদাত্রী মাকে মেরে দিছো। তা কেমনে পারলা চাচু টাকার জন্য নিজের আপন মানুষকে মেরে দিলে?একটি বার হাত কাঁপলো না?
—–না কাঁপে নাই কাঁপে নাই হাত। সৎ মা, সৎ ভাই তাদের জন্য আমার কিসের দরদ থাকবেরে? সব কিছুতে তোরা ভাগ বসিয়ে ছিলি আমার।
—-আচ্ছা না হয় তারা ভাগ বসিয়েছিল তাই মেরে দিছো। কিন্তু কুহুর মা! কায়নাত আন্টি কি করছিল? সে তো তোমার আপন রক্তের ছিল..!
—-ওর কোনো দোষ ছিল না। বাবা ওর নামে ৬০% সম্পত্তি দিয়ে দিছিল। আর আমাদের দুজনকে ৪০%। আমার একাই ১০০% চাই তাই মেরে দিছি।
—– বাহ্ চাচু টাকার লোভের জন্য নিজের ওয়াইফকেও মেরে দিলা?
মামা বিস্ময়ের সাথে চেয়ে থাকে। আর ভাবে! এটাতো জানার কথা না। সে তো তারে স্টাডি রুমেই রেখে চলে আসচ্ছিল। ইউসুফ কেমনে জানলো?
তখন ইউসুফ বলে উঠে,
—-কি ভাবচ্ছো? আমি কিভাবে জানি তাই তো?
চাচী??
সাথে সাথে রাহুল তার মাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। চাচীর মাথা ব্যান্ডেজ করা। চাচীকে দেখে ইউসুফের চাচা ভুত দেখার মতো চেয়ে থেকে বলে,,
—–তুমি??
চাচী হেসে বলে,
—–পাপ কাউকে ছাড়ে না।
রাহুল বলল,
—–ছি! বাবা তুমি এত নিচ?
ছেলের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে ভেঙ্গে পরছেন রাহুলের বাবা। ছেলের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,
—–বাবা এসব কিছু তোর জন্যই করছি যেন আমার মত ঠকতে না হয়।
—–বাবা কেউ তোমাকে ঠকায়নি উল্টো তুমি ঠকিয়েছো সবাইকে।তোমাকে বাবা বলে ডাকতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার।
ছেলের কথা যেন কলিজায় আঘাত করলো তার। সাথে সাথে বুকে হাত চেপে বসে পরলেন তিনি। বুকে যে চিন চিন ব্যথা শুরু করেছে। মাটিতে বসে ভাঙ্গা গলায় বললেন,,
—-আমার সন্তানদের জন্যই আজ এত সব করেছি তারাই আমাকে আজ ঘৃণা করছে? আমি ভাবতে পারিনি এমন হবে।
—–আমাকে মাফ করে দে বাবা? বলে বুকে জোরে চেপে আহ্ উহু করে চেচাতে চেচাতে চোখ বুজে গেলেন। তখনি ইউসুফ আর রাহুল দৌড়ে তার কাছে যেতেই চাচী বাঁধা দিলেন আর বললেন,,
—–ও নাটক করছে। কাছে যেও না ওর?দীর্ঘ ৩০ টি বছর এ লোকের সাথে বসবাস হারে হারে চিনি এরে আমি।দাড়া প্রমান দিচ্ছি। বলে মামী রান্না ঘরে যায়। কিছুক্ষণ পর একটা বোতল নিয়ে হাজির হলেন।বোতলে পানির সাথে কেরাসিন তেল মিলানো। মামী সাথে সাথে বোতলটি মামার শরীরে ঢেলে দিলেন।
নাকে কেরাসিনের গন্ধ যেতেই। হুড়মুড় করে উঠে বসেন মামা। মামী সাথে সাথে হাসতে হাসতে বলেন,,,
—– দেখে নে তোরা।
উপস্থিত সবাই হতভম্ব। তখন মামা চিল্লিয়ে বলতে লাগে তোদের সবাইকে দেখে নিব আমি বলে উল্টো রাস্তায় দৌড় দিতে নেয়।তখনি পুলিশ হাজির।এবং মামাকে ধরে। ইউসুফ তখন বলে উঠে,
—–আমি চাইলে নিজ হাতে তোমায় মারতে পারতাম চাচু কিন্তু বাবার জায়গায় বসিয়েছি। তাই পারলাম না। তোমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে জানে মেরে দিতাম।
মামাকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। ইউসুফ তখন কুহুর রুমের দিক পা বাড়ায়। তখনি পিছন থেকে গুলির শব্দ আসে। পিছনে ফিরতেই ইউসুফ তার চাচু নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরতে দেখে। সুইসাইড করেছেন তিনি। সবার কর্মের ফল এই দুনিয়ায় পেতেই হয়।ছোট শ্বাস নিয়ে হাটা ধরে উপরের দিক।
—————————–>>>>>>>
নিচে থেকে সোরগোলের আওয়াজ পেয়ে আশিক কুহুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। নিচে কুহুর মামাকে পরে থাকতে দেখে বুঝতে বাকি নেই যে, তাদের খেল খতম। এর মাঝে ইউসুফকে উপরে আসতে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায় সে। বেঁচে থাকলে কুহুকে পাওয়ার সুযোগ আবার পাবে সে।
—————————->>>>>
কুহু সেই একি অবস্থা বসে আছে খাটের সাথে হেলে। চোখ থেকে পানি পরছে তার। তার কাছের মানুষ গুলোকে দূরে শরীয়ে দিয়েছে মামা। আর যে আছে সে অন্যের আইডেন্টিটি নিয়ে। সে তারে কখনো চিনবে?
কুহুর ভাবায় ছেদ পরে কারো আসাতে। কুহু সামনে তাকিয়ে দেখে বারিশ দাড়িয়ে, মাথায় তার সাদা ব্যান্ডেজ। কুহু ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।ইউসুফ কাছে এসে ঝাপটে ধরে কুহুকে আর বলতে লাগে,,
—–বাবুইপাখি কাঁদিস না তোর ইউসুফ তোরে আর কাঁদতে দিবে না।
কঁপালে দু আঙ্গুল ঠেকিয়ে, পায়ের উপর পা তুলে সোফার উপর বসে আছে বারিশ। তার সামনেই চেয়ারের সাথে বাঁধা জেনি, আর ফুপি।তাদের মুখে ভয়ের ছাপ।বারিশ ছোট একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,
—-যার বাসার খাবার খেলি তার ক্ষতি করতে একটু দ্বিধা হলো না?
জেনি ন্যাকা কান্না করে বলল,
—-বিশ্বাস কর বারিশ আমি কিছু করি নাই। যা করেছে এই বুড়ি করেছে।আমি তোমাকে অনেক লাভ করি। আমি কি এসব করতে পারি বল..!তুমি তোমার জেনিকে তো চিনো তাই না..!!
—–ভালবাসা না পাছা দিয়ে ঠেলে দেব তোর ভালবাসা।ন্যাকামি বন্ধ কর। একদম বন্ধ।
তখনি ফুঁপি পাশ থেকে খিস্তি দিয়ে বলল,
—-হারামজাদী! তুই তো বড় শেয়ানারে! মিথ্যা বলে আরিশ বাবার কাছে আমাকে খারাপ বানাতে চাইচ্ছিস! এটা কখনো হবে না…।
তারপর বারিশের দিক তাকিয়ে হেজকি তুলে কান্না করে বলল,
—-বাবা, তুমি বিশ্বাস করতো তোমার ফুপিকে? এই ফুপি তোমাকে ছোট বেলায় এই হাতে কত ভাত খাওয়াইছি..!
বারিশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
—–বাহ্ এত দিন শুনেছি মানুষ নাকি গিরগিটীর মতো রং বদলায়। আজ দেখা হয়ে গেল।আলাদ দেখাও, না। তা যে হাত দিয়ে বারিশকে ভাত খাইয়ে দিয়েছো, সেই হাত কাঁপে নাই একবারও বারিশকে খুন করার সময়?
এই কথা শুনার পর হকচকিয়ে যায় ফুপি।সাথে সাথে কঁপালে বিন্দু বিন্দু জমা হতে লাগলো ঘাম।আমতা আমতা করে বলে,,
—-তুমিই তো বারিশ। আমার আব্বা বারিশ। আমি আবার তোমাকে মারবো অত সাহস এই বুড়ির আছে নাকি বল বাবা। তুমি মসকরা করছো তাই না। শেষের কথা টুকু হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল।
তখনি জেনি বলল,
—-আরিশ এই বুড়ি ধাম্রীর কথায় কান দিবে না। এই খাইশটা মহিলা নিজের হাতে শ্বাস আটকিয়ে মেরেছে।
ফুপি সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলল,
—–মাগি তুই আমারে ফাসেয়তে চাইতেসোস..!
বারিশ এবার সটান হয়ে দাঁড়াল। তারপর তাদের সামনে এসে একজন গার্ডকে ইশারা করল। তারপর ফুঁপি আর জেনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—–তোরা কতটা নিচ তা আমার জানা হয়ে গেছে। তোদের এ বাসায় যেদিন থেকে পা ফেলেছি সেদিস থেকেই অসহ্য লেগেছে। কেন লেগেছে? কারণটা আজ ধরতে পারলাম।শয়তানদের দেখলে আর কেউ না হোক মনটা ভাল করে বুঝতে পারে রে হারামির দল।
তারপর ফুপির পাশে গিয়ে বলল,
—-দাদু তো আপনাকে নিজের মেয়ের জায়গায় বসিয়ে ছিল। আর আপনি? আপনি তার শেষ বয়সের সম্বল তার চোখের মনি আরিশকে মেরে দিলেন? কেমন মা আপনি? কারো সন্তানকে মারতে হাত কাঁপলো না? আপনাকে চৌরাস্তার মোরে দাড় করিয়ে কংকর মারা উচিত।
এবার জেনির সামনে গিয়ে ঠাসস করে থাপর মেরে দিল। তারপর বলল,
—–তোরে তো আমার এই মুহুর্তে দুই পা টান দিয়ে চিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। তুই কেমন মেয়ে হে? তোর থেকে ব্যশ্যা পাড়ার মেয়েরাও শত গুনে ভাল।তোদের মতো মেয়েদের জন্য পুরো মেয়ে জাতীর নাম বদনাম।
কিছুক্ষণ পর গার্ড আমলো তার সাথে লেডি পুলিশ। পুলিশ দেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলো দুজন।আর বলতে লাগলো মাফ করে দিতে। পুলিশদের মদ্য একজন অফিসার আসতেই তার হাতে দুটো পেইনড্রাইভ এগিয়ে দিয়ে বলল,
—-মেম একটিতে বারিশকে মারার ভিডিও আর একটিতে আজকে দাদুকে মারতে ট্রাই করেছিল তার ভিডিও।
পুলিশ বলল,
—- আমি যথা সম্বভ চেষ্টা করবো তাদের কঠিন শাস্তি হোক।বলে চলে গেলেন।
সবাই যেতেই সোফার উপর বসে পরে বারিশ। এ চাপ্টার শেষ হলেও মাথায় এখন চলছে অন্য চিন্তা সেদিন কুহুর সাথে কথা বলার পর থেকে কুহুকে ফোনে আর পাচ্ছে না।টিনার সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে কুহুকে তার মামা টেনে হিচরে নিয়ে গিয়েছে। এখন তার লক্ষ কুহু। বারিশ জানে না কুহু কেমন আছে? ওর মা ওকে কিছু করেনি তো আবার? নাহ আর সময় নষ্ট করা যাবে না। এখনি বের হতে হবে তাকে। এই ভেবে উঠে দাড়ালো বারিশ আর চলে গেল তার গাড়ির উদ্দেশে।
————————————>>>
কুহুর বড় মামা আর আশিক মুখোমুখি বসে আছে স্টাডি রুমে। তখন কুহুর বড় মামা বলে উঠে,
—–তো তুমি কুহুকে বিয়ে করতে চাও!
আশিক মুচকি হেসে বলল,
—–যে কোনো মূল্য আঙ্কেল।
মামা কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর বললেন,
—-ঠিক আছে। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?
—-আমি যে কোনো শর্তে রাজি আঙ্কেল।
—-আগে শুনেতো নেও..?
—-বললামতো আমি রাজি।
—-ঠিক আছে। বলে একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললেন,
—-এখানে সাইন কর!
আশিক হালকা ভ্রু কুচকে বলল,
—-এটা কিসের পেপার আঙ্কেল।
—–প্রপার্টির পেপার।
—-ঠিক বুঝলাম না।
—-বলছি। এখানে লিখা আছে, যে বিয়ের পর কুহুর সহায়সম্পদের উপর তোমার কোনো ইচ্ছে নেই।তুমি সেচ্ছায় তা আমার নামে করে দিচ্ছো।
এ কথায় মুচকি হেসে সাইন করে বলে উঠে আশিক,,
—–এ সবে আমার এমনিতেও কোনো ইন্টারেস্ট নেই।আমি শুধু কুহুকে চাই। আল্লাহর রহমতে আমার কম তো কিছু নেই।
এবার যেন মামা শান্তি নিশ্বাস নিলেন।
তখন আশিক বলল,
—-বিয়েটা আমি আজ আর এই মুহুর্তে করতে চাই। আর তার আগে ওর সাথে দেখা করতে চাই।
মামা হাসি হাসি মুখে বলল,
—-কুহু তোমার যা ইচ্ছে কর।আমার কোনো বাঁধা নেই।
আশিক বের হয়ে গেল রুম থেকে। তখনি রুমে ঢুকলেন মামি।আর বলতে লাগেন,,
—–এসব কি করছো তুমি?
মামা গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—-যেটাতে আমার ভাল।
—-আমি এসব কিছু হতে দিব না। কুহু বিবাহিত।
—-তো?
—-তো মানে? ওর সাথে তুমি এটা কিভাবে করতে পারো? ওকে আমরা ামাদের মেয়ের মত মানুষ করেছি? ওকে তো ছেড়ে দেও। নয়তো?
ভ্রু কঁচকে বললেন মামা,
—–নয়তো কি?
চোখ মুখ শক্ত করে বললেন মামি,
—-আমি সবাইকে সব বলে দিব?
বলেই মামি বাহিরে পা বাড়াতেই। মামা পিছন থেকে মামিকে ফুলের টব দিয়ে বাড়ি মারে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরে তিনি। মাথার পিছন থেকে রক্ত পরে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। তখন মামা বাঁকা হেসে মামির কাছে বসে। মামি এখনো আধ আধ চোখ খোলা।মামা সে হাসি ধরে বলতে লাগে,
—-আমার পথে যে কাঁটা হবে তাকে আমি ছাড়ি না। সে আমার মা, ভাই, ভাইয়ের বউ, আর তার ছেলে হোক না কেন। টাকা আমার সব। টাকা থাকলে বাগের চোখও পাওয়া যায়। আর তোমাকে মারতাম না তুমি সব সময় কানের কাছে পেক পেক কর তাই তোমাকে মেরে দিলাম।
এবার শান্তি।তোমারো আমারো। মামি ততক্ষনে চোক বন্ধ করে ফেলেছেন।
———————————->>>
কুহু খাটের মাঝে হাটুতে মাথা গুঁজে কান্না করছে। তখনি আশিক রুমে ঢুকলো। দরজার আওয়াজে চোখ মেলে তাকায় কুহু। আশিককে দেখে মাথায় রাগ চেপে বসে তার। সাথে সাথে উঠে কলার চেপে ধরে বলে কুহু,
—–তুই আমার বাসায় কেন? বের হো। তোর মুখ দেখতে চাইনা আমি। তুই একটা শয়তান।
আশিক মুচকি হেসে। তার কলার থেকে হাত নামিয়ে তার হাতে মুঠে আবদ্ধ করে বলে উঠে,,
—-আমার এ মুখ যেন তুমি প্রতিটি সময় দেখতে পারো তার ব্যবস্থা করতেই এসেছি।
কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,
—–মানে?
আশিক আলতো করে কুহুর গালে স্পর্শ করে বলে উঠে,
—–মানে তুমি আর কিছুক্ষণের আমার অর্ধাঙ্গিনী হতে চলেছো।
আশিকের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় কুহু। আশিক এখনো মুচকি হাসচ্ছে। এ হাসি যে পুরো শরীর জালিয়ে দিচ্ছে তার।সাথে কষে চর মারলো আশিককে। আর বলতে লাগলো,
—–তোর মত প্রতারককে করবো আমি বিয়ে কখনো না। বের হও আমার রুম থেকে এখনি।
থাপর খেয়ে মাথা রক্ত উঠে যায় আশিকের। সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে। কুহুকেও মারলো চর।তারপর দু বাহু চেপে ধরে বলল,
—–আজ এ দুঃসাহস করেছিস তো করেছিস এর পর এমন করলে জানে মেরে ফেলবো তোকে।
কুহু যেন থাপর খেয়ে তবদা হয়ে গেছে। কি করবে এই মুহুর্তে কি বলবে মাথা আসচ্ছে না।তখনি আশিক কাউকে বলল,
—-ভিতরে আসুন।
সাথে সাথে দুটো মেয়ে এসে হাজির।
—-ওকে রেডি করিয়ে দিন ৩০ মিনিট সময়। বলে বের হয়ে গেল আশিক।
মেয়ে গুলো কুহুকে অনেক ট্রাইক করলো কিন্তু ব্যর্থ
। এই মেয়ের মাঝে একটি বলল,
—-স্যার কে ডেকে আন।
মেয়েটি চলে গেল। তখন কুহু ওই মেয়েটিকে বলল,
ওয়াশরুম থেকে তাকে তয়লা এনে দিতে।
মেয়েটি যেতেই বাহির দিক দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল কুহু। আর আশিকের দিয়া বিয়ের শাড়ি বলকনির স্টিলের সাথে বেঁধে তা দিয়ে নিচে নেমে দিল ভৌ দৌড়।
দৌড়াতে দৌড়াতে মেন রোডে এসে পরে কুহু। সেখানের আশেপাশে তাকাতেই চোখে পরে বারিশকে যে ফোন বের করে কি জানি দেখাচ্ছিল দোকানদারকে।কুহু শইতে না পেরে বারিশ বলে জোরে ডাক দেয়। বারিশ সেদিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখে ফুঁটে উঠে মৃদু হাসির ঝলক।সাথে সাথে দৌড়ে চলে আসে কুহুর কাছে। যখনি কুহুকে জড়িয়ে ধরবে নিজের বাহু ডোরে তখনি…ঠাসসসস…!!!!