কবিতা- কথা মানে শান্তি কথাতেই অশান্তি
কলমে- আভীদ খান
কথা দিয়ে কাছে টানে
চুপ কথায় হয় অনুভূতি
বেশি কথায় মিথ্যা হয়
অল্প কথায় যত শক্তি।
কথা দিয়ে বিচ্ছেদ হয়
কথাতে যতো ব্যথা আপত্তি
কথার মধ্যে একটা সন্দেহে
সম্পর্কের ঘটে নিষ্পত্তি।
কথার আছে অনেক বল
কথা দিয়ে হয় সঞ্চয় ও সম্বল,
কথা দিয়ে কেউ হৃদয় ছুঁই
কথাতেই প্রেয়সীর মন দূর্বল।
কথা দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায়
কথা দিয়ে ঘটে কতো দ্বন্দ্ব,
কথার কাছে কথা আছে
কথা দিয়ে ছড়াই অকথার দুর্গন্ধ।
কথা দিয়ে কবিতা হয় ছন্দে
কথা হয় কথার কথা সুগন্ধে ও আনন্দে,
কথার জন্যই ভাষার প্রতিকূল সৃষ্টি
কথার জন্য গল্পে উপন্যাসে হয় বিরহ বৃষ্টি।
সত্য কথা, তেতু কথা কিংবা মিষ্টি কথা
কথা দিয়ে সম্বোধন হয়, হরেক ডাকের কথা
কথা নেই তো শহর জুড়ে নামে নিস্তব্ধতা
কথা হলে বেশি কথায় যতো মাথাব্যথা।
কথা দিয়ে করা যায় হৃদয় হরণ
আবার কথাতেই হয় বস্ত্রহরণ,
কথা দিয়ে প্রতিজ্ঞা হয় বাঁচবো আমরণ
কথা দিয়েই ভাঙ্গে বিশ্বাসের চরণ।
কথা দিয়েই প্রেমিকার ঠোঁটে ফোঁটাই হাসি
কথা ভুলের কারণে অনেকেই দেয় গলায় ফাঁসি।
কথা শব্দের জন্যই মুখ আর কানের সৃষ্টি
কথা দিয়েই খুঁজে প্রার্থনায় রহমতের বৃষ্টি।
কথা দিয়ে হয় বিয়ের মন্ত্র উচ্চারণ
কথা দিয়েই হয় মন্দির মসজিদের নিমন্ত্রণ।
কথা দিয়ে স্লোগানে হয় যতো স্বর
কথা দিয়েই খোজা ভগবান আল্লাহ আর ঈশ্বর।
কথা দিয়ে আসল কাজ কথা দিয়েই শেষ
কথা দিয়ে শুরু করে কথা দিয়েই যতো রেশ,
কথা আসল কথা নকল কথাতেই যতো সন্ধি
কথা দিয়ে তৈরি হয় দাঙ্গা হাঙ্গামা কথাতেই হয় বন্দী।
প্রিয় রুদ্রাক্ষী,
কেমন আছো?
তোমার প্রিয় দোলনচাঁপা ভালো আছে তো?
আচ্ছা নিমাই ভট্টাচার্য এর লেখা
তোমার পছন্দের বই মেমসাহেব
তুমি নিয়ম করে পড়োতো?
রুদ্রাক্ষী,
আমি রোজ অনিয়মেই স্মৃতিতে হারিয়ে যাই!
তুমি কি বলতে পারো
স্মৃতিরা কেন এমন হানা দেয় আমার বুকে?
আমার বেখেয়ালি মন কেবলই বলে
আবার নতুন করে শুরু হোক!
বুকের বা পাশের বারান্দায় তোমায় যত্ন করে লুকিয়ে রাখি!
সেবারের মত যেন তৃতীয় পক্ষ আমার রুদ্রাক্ষীর মনটা ছুঁতে না পারে!
রুদ্রাক্ষী যেন হারিয়ে না যায় অচেনা মায়ায়!
আমাদের প্রেমটা হয়েছিল বিশ্বাসে
দু’জন দু শহরের,
তবু দু’জনে মিলে গড়েছিলাম
ভালোবাসার শহর!
সেই শহর ছিল স্বপ্নে আঁকা,
ভালোবাসার কথোপকথনে ভীড় জমতো এক ঝাঁক অতিথি পাখির।
হঠাৎই একদিন আকাশ কালো করে মেঘের গর্জন!
আমি সেই মেঘকেও বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম অতি সংগোপনে!
কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার অভিযোগ আর আমার অভিমানে
ভালোবাসার শহরে ধুলো পড়তে শুরু করে!
আমি প্রতিনিয়ত গোছানোর চেষ্টা করেছি,
চেয়েছি শহরটা থাকুক স্বচ্ছ।
কিন্তু তুমি!
রুদ্রাক্ষী তুমি ঠিক কি চেয়েছিলে?
এই প্রশ্নটা রোজ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে!
আমার উপর আনা অভিযোগ
তুমি আমাকেই জানালেনা!
ডাকলে তুমি বিচারক!
আমরা কিন্তু পারতাম
ছোট ছোট অভিমানগুলো ভেঙে
ভালোবাসার ঘরটা মজবুত করে নিতে!
পারতাম কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে!
তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি না শুনলে
আমি ঘুমোতে পারতাম না
অথচ সব কথা বলতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির সামনে!
এমন বিচারকের মায়ায় কিভাবে জড়ালে?
কিভাবে ভুলে গেলে আমার ভালোবাসাকে?
সবটা মেনে নিয়েও আমি ভালোবেসে গেছি তোমাকে!
আর তুমি কোনো কারন ছাড়াই বিচ্ছেদ চাইলে!
কেমন পাষাণীর মত যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দিলে!
বিনা বার্তায় হারিয়ে গেলে!
অথচ তোমার শেষ কথাটি ছিল ভালোবাসি!
এই একটা শব্দের মায়ায় আমি বেঁচে আছি।
বেঁচে আছি বহুকাল ধরে!
আজ বুড়ো বয়সে এসেও মনে পড়ে
আমার রুদ্রাক্ষীর সেই সাজ!
তুমি কি এখনো লাল টিপ পড়ো?
লাল সাদা শাড়িতে জড়াও নিজেকে?
চোখে কাজল পড়ে কার দিকে তাকাও?
শেষ যেদিন তোমার সাথে কথা হয়েছিল
আমার বুকের মধ্যে ঝড় উঠছিল!
আমি আজও বিশ্বাস করিনা
তুমি আমায় ছাড়া থাকতে পারো!
আচ্ছা সম্পর্কে ইতি টানার পর,
তোমার কখনো মনে হয়নি একবার ফিরে দেখা উচিত?
অন্তত একটা বার যদি ফিরতে তাহলে দেখতে পেতে
তোমার রুপম তোমার অপেক্ষায়।
এই যে দেখো, চুল-দাড়ি পেকেছে,
অথচ কেউ নেই!
পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার বেলায় হাতটি ধরে বলে যাবো, অনেক জ্বালাতন করেছি আমায় ক্ষমা করে দিও!
এতগুলো বছর ধরে আমি শুধু স্মৃতি লালন করেছি,
যেখানে খুঁজে পেয়েছি রুদ্রাক্ষীর কাজল কালো চোখ, লাল টিপ, সাদা শাড়ি!
কত চিঠি ভাঁজে ভাঁজে রেখেছি তোমার নামে!
শুধু ভালোবাসার শহরটাকে আর গোছানো হয়নি!
কতবার গিয়েছি সেই শহরে,
ধুলো জমে আছে শহরের আনাচে কানাচে!
ভালোবাসা এত কাঁদায় কেন রুদ্রাক্ষী?
তোমার অপেক্ষা করতে করতে আমার মধ্য রাতগুলো নির্ঘুম কেটেছে!
বিশ্বাস করো, আমার প্রতিনিয়ত মনে হতো তুমি ফিরবে মধ্য রাতে!
ফিরে এসে আমার চোখের জল মুছতে মুছতে বলবে
“রুপম তোমাকে ভালোবাসি”।
কিন্তু তুমি আর ফিরলেনা।
বাবা মরে যাওয়ার পূর্বে বলেছিলেন,
রুপম তোর ভালোবাসা সার্থক হোক!
মা বলেছিলো,
রুদ্রাক্ষীরা কোনেদিন ফিরেনা বাবা!
আমিও আর বেশিদিন নেই পৃথিবীতে
শেষ বেলায় সূর্য যখন পশ্চিমে
দিনের মায়া কাটিয়ে হারাচ্ছে বহুদূরে
তখনও আমার রুদ্রাক্ষীর কথা মনে পড়ছে!
মনে পড়ছে রুদ্রাক্ষীর সেই ভালোবাসি শব্দটাকে!
আকাশে যখন নীলেরা ভেসে বেড়ায়
আমার মনে হতো আমার রুদ্রাক্ষীর কষ্ট হচ্ছে!
কারন রুদ্রাক্ষীর কষ্টের রং ছিলো নীল!
দু’জন দু’প্রান্তে
আমার মত তুমিও কষ্ট পাচ্ছো কি বহুকাল?
হয়তো না!
এই জীবনের মায়ায় ঘেরা প্রেম
তোমাকে কিসের কষ্ট দিবে!
তুমি তো মায়া কাটাতে জানো!
অবশেষে, ভালো থাকুক এই শহরের রুদ্রাক্ষীরা!
বয়সের ভাড়ে আমি আজ ক্লান্ত ভীষণ
কিন্তু ক্লান্ত হইনি কভু রুদ্রাক্ষীর অপেক্ষায়।
ক্লান্ত দেহে মনটা বড্ড অসহায়!
যদি দেখা মিলতো প্রিয়তমার,
এই ভাবনায় হয়তো মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ হবে আমার!
ভালো থেকো রুদ্রাক্ষী,
ভালো থেকো!
যেদিন হারাবো আমি
দুচোখে আসবে আধাঁর নামি,
অস্পষ্ট সব কথা,নির্জন সাঁঝে
লেখা রবে সব ডায়েরির ভাঁজে
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুজঁবে।
ফুলেরা যখন পাপড়ি ঝড়াবে
তুমি নতুন স্বপ্ন কুড়াবে,
গন্ধ ছড়াবে বেলি আর কণক
ছুবেনা তুমি বড্ড প্রতারক।
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুঁজবে।
আধার কাটিয়ে ঘনালে রাত
জোৎস্না ছড়াবে একফালি চাঁদ,
তোমায় দেখে জাগবে ক্রোধ
জোৎস্নাও বলবে তুমি নির্বোধ।
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুজঁবে।
কাশফুলেরা দুলছে আনন্দে
দক্ষিণ হাওয়া বইছে নদে,
ভাসবেনা তোমার স্বপ্ন ভেলা
তখন যমুনাও তোমায় করবে হেলা।
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুঁজবে।
চেনা সেই প্রিয় গানে
আসবে তুমি আমার টানে,
দেখতে চাইবে দুচোখ ভরে
সে গান ও তোমায় দেবে ফিরে।
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুঁজবে।
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে
বসন্তে ঐ নীলসে মাসে,
চিত্রপটে যতই আঁকো
আমায় তুমি পাবে নাকো।
সেদিন আমায় ভেবে অশ্রু ভেজা চোখ মুছবে
জানি সে অবেলায় খুব করে খুঁজবে।
কবিতা (স্বরচিত) : অযোগ্যের আবেদন
কলমে : সুরাইয়া নিপা
এ যেন এক বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন!
সুখগুলো সব হারিয়ে গেছে,
হাসিগুলো সব ম্লান হয়েছে,
চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে মৃত্যুর মিছিল দেখা
আপন মৃত্যুক্ষণ গোনা,আনমনে কবরের ছবি আঁকা।
বাঁচার করুণ আকুতির ভিড়ে রঙিন পৃথিবী আজ বিবর্ণ।।
কতদিন দেখিনা খোলা আকাশ, ছুটিনা পথে-প্রান্তরে,
দেখিনা পরিচিত মুখগুলো,
গুনিনা নদীর ঢেউগুলো,
শোনা হয়না বৈঠা হাতে উদাস মাঝির গান
আর সাঁঝের বেলা কিচিরমিচির পাখির কলতান
প্রাণের শহর স্তব্ধ আজ, কাটছে দিন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে।।
আর কতদিন! আরও কতদিন থাকতে হবে অলসতার অবসরে?
দেহঘড়িতে জং পড়ছে
মনে হতাশার পাহাড় জমছে,
বন্দীদশায় অর্ধমৃত জীবন্ত লাশ
যেন বদ্ধ দ্বারে উন্মাদ হয়ে ছেড়ে যায় নিঃশ্বাস!
স্বাধীন হয়েও অসহায়তায় পরাধীনতার শিকল পরে।।
আচ্ছা, বিধাতা যদি প্রশ্ন করেন দুঃসময়ে কী শিখেছি
বুকে হাত রেখে বলতে কি পারবো,
” শিখেছি মানবতা, ভুলেছি গর্ব।
শুনেছি বোবা প্রাণীদের কান্না,
বুঝেছি প্রিয়হারাদের যন্ত্রণা।
অর্থলিপ্সা ও অহংকার ভুলে ভালোবাসার শপথ নিয়েছি। “?
নাহ্, পারব না, কারণ আমরা মানুষ
দুঃসময় কেটে গেলে
সব প্রতিজ্ঞা শপথ ভুলে
নেমে পড়বো প্রতিযোগিতায়
ডুবে যাব বিদ্বেষ আর দাম্ভিকতায়
ভালোবাসা ভুলে দেখাব ভীতি, ছড়াব আক্রোশ।।
আবার হবে যুদ্ধ, পড়বে বোমা, মরবে মানুষ নির্বিচারে
হবে ধর্ষণ আর রাহাজানি
ধর্মের নামে খুনাখুনি,
অর্থ বিত্তের হাতবদল
ক্ষমতাশালীর জবরদখল
দুর্বল হবে অসহায় আর মরবে কেবল অনাহারে।।
তবে কি এ- ই ভালো? আমরা এরই যোগ্য?
খোদার আঘাতে কোণঠাসা…
দুর্ভিক্ষ, মহামারী, প্রলয় সর্বনাশা
কেবল থামাতে পারে আমাদের পদস্খলন?
এখনই সময় শুধরে যাবার, বিধাতার কাছে করি আবেদন,
” হে দয়াময়, ক্ষমা করো, পৃথিবীকে দাও আরোগ্য।”।।