Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1895



কনে বদল পার্ট – ৭

0

কনে বদল
পার্ট – ৭
# Taslima Munni

একটা মানুষের চেহারা তার ভেতরের সব সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিতে পারে না।
সুন্দরকে চিনতে হয়,জানতে হয়!!
শিখার অবর্তমানে মাহির এটা ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে।

কিছু উপলব্ধি বড্ড অসময়ে হয়!!
মাহির উপলব্ধি করতে পারছে সে শিখায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
মনের দ্বিধা-দ্বন্ধে এতো দিন মাহির ভেতরে ভেতরে জ্বলে যাচ্ছিলো।
আর কয়েকটা দিন তারপর মাহির ও ফিরে যাবে।

মাহিরের সব কাজ শেষ করে ফিরে আসে।
শিখা মাহিরকে দেখে খুব খুশি হলো।
কিন্তু শিখার অবস্থা দেএ মাহির কষ্ট পেলো।
– কেমন আছো, শিখা?
– আপনি এসেছেন?
– হা।আমি চলে এসেছি। এখন কেমন আছো তুমি?
– আমি ভালো আছি।
শিখা উঠে বসার চেষ্টা করে।
– এই, উঠতে হবে না। শুয়ে থাকো তুমি।
– আমি ঠিক আছি।উঠতে পারবো।
– জানি উঠতে পারবে, কিন্তু উঠার প্রয়োজন নেই।।
মাহির জানে শিখা নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারে না, কিন্তু ওকে দেখে উঠার চেষ্টা করছে।
– কিছু খেয়েছো?
– হুম।
এমন সময় ইভা রুমে প্রবেশ করে।
– মাহির,কথা পরে হবে। তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।মা খাবার রেডি করছেন।
মাহির ফ্রেশ হবার জন্য চলে গেলো।

ইভা বিছানার কাছে গিয়ে শিখাকে তুলে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে এলোমেলো চুল বেঁধে দিলো।
তারপর ঔষধ খাওয়াতে চায়।
– আর ভালো লাগে না। আর ঔষধ দিও না ভাবি।
– কোনো কথা না, চুপচাপ খেয়ে নাও।
– এতো গুলো খেতে কষ্ট হয়।আমি খাবো না।
– দেখো বাচ্চাদের মতো জেদ করে।
ঔষধ না খেলে হবে নাকি?

মাহির এসে দেখলো ইভা ঔষধ খাওয়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু শিখা কিছুতেই খেতে চাচ্ছে না।
– ভাবি,আমার কাছে দাও।
মাহির ইভার কাছ থেকে ঔষধ নিয়ে নেয়।
– ঠিক আছে, তুমি খায়িয়ে দাও।আমি আসছি।
ইভা চলে গেলো।
– হা করো।
– খেতে পারবো না। কেন জোর করছেন?
– আমি বলেছি,তাই খেতে হবে।
শিখা আর কথা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে ঔষধ খেয়ে নিলো।

বাড়িতে আসার পরে মাহির যত সময় থাকে শিখার অনেক খেয়াল রাখে।
রাতে মাহির শিখার পাশে বসে আছে।
শিখা চোখ বন্ধ করে আছে। মাহির ভাবলো শিখা ঘুমে। তাই একটা বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ছিলো।
শিখা একটু মাহিরের দিকে ফিরে বললো
– আমার মা আর শশীকে একটা খবর দিবেন?
– ঘুমাওনি তুমি? আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছো।
– মাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে। কতদিন দেখিনা মার মুখ।
– আচ্ছা কালই বাবাকে বলবো। তুমি এখন ঘুমাও।
– হুমম। ঘুমাবো।

পরদিন সকালে মাহির সারোয়ার সাহেবকে বললো
– বাবা, শিখার মাকে এখন একটা খবর দেয়া দরকার।
– হা।উনাকে খবর দিয়েছি গতকাল।উনি আজকেই আসবেন।
– তাহলে তো ভালো ই হয়েছে।
– তুমি কি আজ কোথাও বের হবে?
– না বাবা , আজ কোথায় যাবো না।

শিখা অসুস্থ শুনে শিখার মা, শশী,শিখার মামা ছুটে আসেন।
বিয়ে নিয়ে যত কান্ড! তারপর উনারা কখনো এমুখো হতেন কিনা সন্দেহ!
কিন্তু এমন একটা খবর জানার পরে কোনো মা না এসে পারেন না।
– শিখা!
শিখার মা ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন!.
– আপু..
– মা.. শশী! তোমরা এসেছো!
– একি অবস্থা হয়েছে তোর!!
আমাকে কেউ একটা বার বললো না আমার মেয়েটার এই অবস্থা!!
মাগো তোর একি হাল হয়েছে!!
শিখার মা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে গেছেন।

আফরোজা বেগম আর ইভা উনাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। আফরোজা বেগমে উনাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন আর ইভা শশীকে।
শিখার মা কেঁদেই চলছে।
আফরোজা বেগম শিখার মাকে বললেন
– আপা! শিখা যে পরিস্থিতিতে এই বাড়িতে এসেছিলো তাতে আমার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন ছিলো তবুও মেনে নিয়েছি।
শিখা আমার ছেলের বউ। ওকে এই অবস্থায় দেখে আমরা কেউ ভালো নেই।
আপনি তো সব শুনেছেন।এখন যদি ওর সামনে এভাবে কান্নাকাটি করেন, তবে মেয়েটার মনের জোর হারিয়ে ফেলবে।ওর সামনে আমরা কিছুই আলোচনা করি না।

– বোন!!… অনেক দয়া আপনাদের। এতো কিছুর পরেও মেয়েটাকে ঠাঁই দিয়েছেন। কিন্তু এই অবস্থায় মেয়েটাকে দেখে কিভাবে শান্ত থাকবো বলুন??
– জানি আপা।কিন্তু তবুও শিখার জন্য নিজেকে সামলে নিন।

শিখার মা ওর পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রাখলো।
– মা…
– কেমন আছিস রে মা?
– তুমি আমার উপর রাগ করে আছো?
– না মা।রাগ করে থাকবো কেন? একটু রাগ করিনি।
– কত খারাপ ব্যবহার করেছি।
– তুই সুস্থ হয়ে উঠ।দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
– মা,…. আমাকে নিয়ে যাবে?
– হা মা। নিয়ে যাবো।তুই যাবিনা আমার সাথে?
শিখা কিছু সময় চুপ থেকে বললো
– আবার একদিন এসে আমাকে নিয়ে যেও।আজকে যাবো না তোমার সাথে। আরেকটু সুস্থ হয়ে যাই।তুমি এসে নিয়ে যেও।
-আচ্ছা মা।

সারোয়ার সাহেব, আফরোজা বেগম আর শিখার মা একসাথে বসে কথা বলছেন।
– ভাই, মেয়েটাকে আমি সাথে নিয়ে যেতে চাই।আপনারা আপত্তি করবেন না।
– ভাবি,বুঝতে পারছি।কিন্তু এই অবস্থায় ওকে নিয়ে গিয়ে আপনি কতটা কি করতে পারবেন জানি না।
আমার মনে হয় এখানে থাকাটাই ভালো হবে।
– শিখা এখন যেতে চাচ্ছে না, কিছু দিন পরে নাকি যাবে। আমি সপ্তাহ খানেক পরে নিয়ে যাবো।
– সে পরে দেখা যাবে।
আপনারা আজকে কোথাও যাচ্ছেন না।দুটো দিন থেকে যাবেন।
– ভাই, কিভাবে…
– হা আপা।দুটো দিন থেকে গেলে শিখার ভালো লাগবে। আপনি আর আপত্তি করবেন না।
সারোয়ার সাহেব আর আফরোজা বেগমের অনুরোধে শিখার মা দুদিন থেকে গেলেন শিখার কাছে।
উনার তো ইচ্ছে করে সারাক্ষণ মেয়ের পাশে থাকতে। কিন্তু মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এভাবে থাকা! তার উপর বিয়ের বিষয়টা উনার ভালো করেই মনে আছে।
সেই মরমে উনি মরে যাচ্ছেন। তবুও মেয়ের জন্য লাজ লজ্জা, সম্মানের কথা ভুলে তিনি ছুটে এসেছেন।

বসন্ত এসে গেছে । গাছে গাছে নতুন পাতায় আর ফুলের মেলা বসেছে।
শিমুল, পলাশ,কৃষ্ণচূড়ায় ছেয়ে গেছে প্রকৃতি।
মাহিরদের বাসার পাশে বড় বড় কয়েকটি শিমুল গাছ আছে। মাহিরের বেলকনিতে থেকে স্পষ্ট দেখা যায় গাছে যেন আগুন লেগেছে!
শিখা শুয়ে শুয়ে জানালার ফাঁকে একটু একটু দেখে সেই আগুন।
– বসন্ত এসেছে! শিমুল ফুল অনেক সুন্দর।।
– তোমার ভালো লাগে?
– অনেক।
– দেখবে?
– অই যে দেখা যায়।
– আরও দেখাবো।আসো।
মাহির শিখাকে ধরে নিয়ে ব্যালকনিতে বসিয়ে দেয়।
– এবার দেখো তো কেমন?

শিমুল বনে আগুন লেগেছে, পুড়ছে কারো মন!
আর কারো মনে শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে!!
শিখা দুচোখ ভরে দেখছে।আহ! এতো সুন্দর কেন সবকিছু!!
চোখে জল এসে যায়।
– এতো সুন্দর বসন্ত আগে কখনো দেখিনি।
মাহির কিছু বলে না, শুধু শুনে যাচ্ছে শিখার কথা।

চলবে….

কনে বদল পার্ট – ৬

0

কনে বদল
পার্ট – ৬
# Taslima Munni

যাই বলো ভাই,তোমার খেয়াল তো ছিলো না সেটা আমি জানি। তার সাথে অবহেলাও ছিলো।
মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কেবল কষ্ট পেয়েছে। নিজের দিকে একটুও খেয়াল করেনি।

মাহির, ইভা কথা বললেও সারোয়ার সাহেব গম্ভীর ভাবে বসে রইলেন।

– মাহির, তুমি আজকে একটু তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করো। আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো ডাক্তারের সাথে।আমার বন্ধু, অনেক বড় ডাক্তার। কথা হয়েছে ওর সাথে। সেখানেই যাবো।
– ঠিক আছে, বাবা।

শিখাকে নিয়ে সারোয়ার সাহেব, মাহির ডাক্তারের কাছে গেলো। সবকিছু দেখে ডাক্তার শিখাকে ইমার্জেন্সি হসপিটালাইজড করলো।

পনেরো দিন ধরে শিখা হাসপাতালে ভর্তি। শিখার শ্বশুর, ইভা আছে শিখার সাথে। মাহির প্রতিদিন সকালে একবার দেখে যায়, আবার রাতে ফেরার সময় শিখাকে দেখে যায়।
বন্দি শিখা আরও বেশি বন্দী হয়ে গেছে। চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে ছটফট করছে। এখানে দম আরও বন্ধ হয়ে আসছে।
– ভাবি!
ইভা শিখার শিয়রে বসে আছে। একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলো
– কিছু বলবে?
– এখানে আর কতদিন থাকতে হবে?
– এইতো, আর কিছু দিন। তুমি সুস্থ হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।
– আমি বোধ হয় আর বাঁচবো না,তাই না?
শিখা ইভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
– ছিঃ শিখা! ওসব বাজে কথা একদম বলবে না। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
– আমার কি হয়েছে, ভাবি?
– এইযে খাওয়া দাওয়া করোনি,নিজের খেয়াল রাখোনি! এইজন্যই অসুখ করেছে।
– আমাকে এখান থেকে নিচে চলো।বাড়িতে নিয়ে চলো। দেখবে আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো।
– আচ্ছা নিয়ে যাবো। এখন কথা না বলে চুপ করে ঘুমাতে চেষ্টা করো।আমি তোমার পাশেই আছি।
– আমার জন্য কত কষ্ট করছো তুমি।
– আমি তোমার বোন না?
– হা,তুমি আমার বোন।
– তো বোনের জন্য এইটুকু করবো না? আচ্ছা আমার অসুখ হলে বুঝি তুমি আমার জন্য করবে না!! বুঝেছি।
কপট অভিমানের সুরে বললো ইভা।

শিখা ইভার একটা হাত ধরে
– তুমি আমার বোন।সত্যিকারের বোন।
বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আমার মা কি জানে আমি এখানে?
– না।তোমার মা অসুস্থ ছিলেন। তাই উনাকে কিছু বলতে বাবা নিষেধ করেছেন। উনি আরেকটু সুস্থ হয়ে উঠুক তখন বাবা নিজেই বলবেন।
– কি হয়েছে মায়ের?
– তেমন কিছু না। আগের অসুখই, সাথে জ্বর ছিলো। কিন্তু তোমার মা টেনশন করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন আবার এখানেও চলে আসতে চাইবেন। তাই বাবা বলেনি কিছু।
– ভালো করেছেন।

সারোয়ার সাহেবকে শিখা অনেক অনুরোধ করলো তাকে এখান থেকে নিচে যেতে।
শিখা কেমন অস্থির হয়ে গেছে এখান থেকে বের হবার জন্য।।

রাতে মাহির একটু দেরি করে আসলো। কারন শুক্রবার সারাদিন সে শিখার কাছেই থাকে। তাই বৃহস্পতিবার একটু দেরি করেই আসে।

শিখা ঘুমিয়ে আছে। মাহির শিখার পাশে এসে বসলো। ঘুমন্ত শিখার মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতর টা হু হু করে উঠলো।
নিজের অজান্তেই মাহির শিখার একটা হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। এই প্রথম মাহির শিখার হাত স্পর্শ করলো। তাও আবার যখন শিখা হাসপাতালের বিছানায়!!
শিখার ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম ভাঙার পরে দেখলো মাহির ওর হাত ধরে বসে আছে।
শিখার চোখ ছলছল করছে।
– আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান না!!
– নিয়ে যাবো।আরেকটু সুস্থ হয়ে যাও।তারপর।
– এখানে থাকলে আমি সুস্থ হবো না। দম আটকে মরে যাবো।।
– আচ্ছা নিয়ে যাবো।ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিয়ে যাবো, চিন্তা করো না।
– আপনি অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।
– কিভাবে?
– শুনেছি ভাগ্যবানের বউ মরে। আপনিও ভাগ্যবান হয়ে যাবেন। অবশ্য বউ আর হতে পারলাম কই!
– কেন এইসব কথা বলছো? তোমার কিচ্ছু হবে না। আর এই কথাটা দ্বিতীয় বার যেন তোমার মুখে না শুনি।
– আমি খুব অপয়া! যেখানে যাই সবার উপর ঝামেলা হয়ে যাই।আপনার জীবনটা আমার জন্য কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।
– হা এলোমেলো হয়ে গেছে। এবার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে এলোমেলো জীবন গোছানো দায়িত্ব নিতে হবে তোমার।
শিখা মৃদু হেসে চোখ বন্ধ করলো। মুখে কিছুই বললো না।

মাহির শিখার মাথায় হাত রাখে। শিখা অনুভব করে মাহিরের স্পর্শ। মনে হয় স্বপ্নের মতো। কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না শিখার।পাছে স্বপ্ন ভেঙে যায়!!
শুধু টপটপ করে দুই ফোটা পানি চোখ থেকে দু’দিকে গড়িয়ে পড়লো।

মাহির অনেক সময় শিখার পাশে বসে থাকলো।কেন জানি উঠতে ইচ্ছে করছে না মাহিরের।

শিখা কিছুতেই হাসপাতালে থাকতে চাইছে না। সবাইকে অনেক অনুরোধ করলো তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু যখন দেখলো কেউ নিয়ে যাচ্ছেই না,তখন জিদ ধরে বসলো।
কিছুতেই ঔষধ মুখে তুলছে না।এখান থেকে না নিয়ে গেলে ঔষধ খাবে না বলে জিদ ধরে আছে।

– বাবা, শিখাকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না।জিদ ধরে আছে বাড়িতে যাবার জন্য। অস্থির হয়ে গেছে মেয়ে টা।।
– হুম।
গম্ভীরমুখে বললেন সারোয়ার সাহেব।
– দেখি ডাক্তারের সাথে কথা বলে কি বলে।মাহির আসুক।
তখনই মাহির আসলো। ইভা মাহিরকে দেখে
– অইতো মাহির এসে গেছে।
– বাবা, ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি।কালকেই রিলিজ দিয়ে দিবে।
– রিলিজ দিলেই তো হবে না। বাড়িতে নিয়ে কি এই চিকিৎসা করা যাবে।
– কিছু করার নেই বাবা,এখানে রাখলে অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হবে না
তাছাড়া শিখা এখানে থাকতেই চাইছে না। ওকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কি লাভ?
– এটা ঠিক ই। আচ্ছা যাবার ব্যবস্থা করো।
– আচ্ছা ,আমি এম্বুল্যান্স ঠিক করে রাখবো।
– তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?
– না বাবা, আমার আরও আট দশ দিন লাগবে। শেষ হলেই যেতে হবে। এছাড়া যাবার উপায় নেই।
– ঠিক আছে।

পরদিন শিখাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলেন সারোয়ার সাহেব আর ইভা। এম্বুল্যান্সের পিছনের গ্লাস গলিয়ে এই শহরের বড় বড় অট্টালিকার ফাঁকে একটু আকাশ উঁকি দিচ্ছে। শিখা চোখ খুলে সেই আকাশ দেখছে।
যখন শহর থেকে বেরিয়ে এলো তখন আকাশ আরও স্পষ্ট দেখতে পেলো।
এই আকাশ দেখে যেন শিখার মনে একটা স্বস্থি এলো। এই শহরকে বিদায় জানিয়ে শিখা চললো বাড়ির পথে।

মনে হচ্ছে শিখার জন্যেও সেই পথ যেন অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে।
অবশেষে শিখা বাড়ি পৌছালো।

আজ পাঁচ দিন হলো শিখা চলে গেছে বাড়িতে। মাহির ঢাকায় থেকে গেলো।
কিন্তু কিছুতেই মনে শান্তি পাচ্ছে না। শিখা যখন হাসপাতালে ছিলো দিনে দুবার দেখা করতে গেছে।
কিন্তু এখন পুরো বাসা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এই বাসার প্রতিটি জিনিসের শিখার ছোঁয়া আছে। প্রতিটি জিনিস নিজের হাতে সাজিয়েছিলো।

মানুষ নিজের অজান্তেই কারো অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই মানুষটাকে যতই অবহেলা করা হোক, তার উপর যতই বিরক্তি আসুক,ঘৃণা করুক , তার অনুপস্থিতিতে তার অভাবটা অনুভব হয়।
বাড়িতে একটা বিড়াল পুষলেও তার উপর মায়া পড়ে যায়। আর শিখা তো জলজ্যান্ত একটা মানুষ!!

শিখা নিজের হাতে বিছানা গুছিয়ে রাখতো,মাহিরের জামা-কাপড় ধুয়ে রাখতো।খুব ভোরে উঠে মাহিরের জন্য নাস্তা তৈরি করতো, অফিসে যাবার আগে কাপড় আয়রন করে দিতো।।
কিন্তু এই কদিনে পুরো বাসা দেখে মনে হচ্ছে -এটা একটা গোডাউন! এখানে সেখানে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পরে টেবিলে নাস্তা তৈরি করা থাকে না।
অফিস থেকে ফেরার পরে কেউ একগ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয় না।

মাহির শিখার অভাব খুব অনুভব করছে। একটা মানুষের চেহারা তার ভেতরের সব সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিতে পারে না।
সুন্দরকে চিনতে হয়,জানতে হয়!!
শিখার অবর্তমানে মাহির এটা ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে।

চলবে….

কনে বদল পার্ট – ৫

0

কনে বদল
পার্ট – ৫
# Taslima Munni

মায়ের উপর অভিযোগ নেই।অভিমান আছে।
আর কিছু না পারলে তিন মা মেয়ে তো এক সাথে মরতে পারতাম!!

শিখার কথা শুনে মাহিরের চোখ কখন ভিজে গেছে টের পায়নি।
বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠলো। কত রঙের দুঃখ আছে মানুষের মনে!!
শিখাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না মাহির। শুধু বললো
– ঘুমিয়ে পড়ো।
শিখা ঠিকই ঘুমিয়ে পড়লো, কিন্তু মাহিরের চোখে ঘুম আসেনি।

মাহির শিখার দুঃখের গল্প শুনে শিখার প্রতি কিছুটা নমনীয় হতে চাইলো।কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মাহিরের মন ঠিক উল্টিয়ে দেয়।
মাহির ঢাকায় এসেছে বউ নিয়ে, এই কথা শোনার পরে মাহিরের এক সাইফ তার বউ নিয়ে আসে মাহিরের বাসায়।
শিখাকে দেখে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করা মাহিরের চোখ এড়ায়নি।
শিখা অনেক আপ্যায়ন করলো মাহিরের বন্ধু আর বন্ধু-পত্নীকে।
শিখা কিচেনে ব্যস্ত ছিলো। মাহিরও একটু বাহিরে গিয়েছিলো।সাইফ আর সাইফের বউ বেলকনিতে বসে ছিলো।
মাহির ওদের ডাকতে এসে শুনলো সাইফের বউ বলছে
– তুমি দেখো বয়সে অনেক বড় হবে। মাহির ভাইয়ের পাশে একদম মানায়নি। গায়ের রঙ ও ময়লা!
– এটাকে ময়লা বলে না,শ্যামলা বলে।
– অই একই কথা। কেমন যেন!
– খুবই ভদ্র আর অমায়িক। হয়তো এতো সুন্দরী নয়।
– পেহলে দর্শনদারী, ফের গুণ বিচারি!! তোমার কি মনে হয় মাহির ভাই ওর সাথে সুখী হবে? উনার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে একে দেখলে মানুষ বড় বোন ছাড়া কিচ্ছু ভাববে না।
উনি কিভাবে মানিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ ই জানেন!!
– হুমম।।
এসব শুনে মাহিরের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু ওদেরকে কিছু তো বলা যায় না। আর তারা সত্যি কথাই তো বলেছে। ভুল কিছু বলেনি।
ওরা সেদিন বিদায় নিলেও মাহিরের মনে আরও বিষাদ দিয়ে গেলো।

শিখার প্রতি যতটুকু দুর্বলতা তৈরি হচ্ছিলো সেটাও এখন অসহ্য মনে হতে লাগলো। আগে টুকটাক কথা বললেও এখন সেটাও বলে না।
সারাদিন একা বাসায় শিখার দম বন্ধ হয়ে আসে।মাহির রাতে ফিরে সকালে চলে যায়।শিখার দিকে খেয়াল দেবার প্রয়োজন বোধ করেনি।

এই বন্ধ অবস্থায় থেকে থেকে যেন শিখার প্রাণ হাঁসফাঁস করছে একটু মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে।মফস্বলের মেয়ে শিখা।এই বন্দী দশায় ওর শরীরের অবনতি হচ্ছে কেবল।
না খেতে পারছে,না শান্তি পাচ্ছে। অসুস্থ বোধ করছে।কিন্তু কাকে বলবে?
মাহিরের সময় কই ওর দিকে ফিরে দেখার!!
দিন দিন শিখা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
ও কিছু খেতে পারছে না। সারাদিন কিছু খায় কিনা মাহির কখনো জিজ্ঞেস করেও দেখেনি।
রাতে মাহিরের সাথে খেতে বসলেও মাহির খেতে খেতে ফোন ঘাটে।
খাবার শেষ করে উঠে চলে যায়।
শিখা যে কিছুই খেতে পারছেনা সেদিকে ও খেয়াল করেনি।

এরমধ্যে হঠাৎ একদিন শিখা ঘুমিয়ে আছে,মাহির শিখার দিকে খেয়াল করে দেখে মেয়েটা অনেক শুকিয়ে গেছে।
মাহির ভাবলো হয়তো এখানে মানিয়ে নিতে পারছেনা।
পরদিন সকালে মাহির শিখাকে জিজ্ঞেস করলো
– তুমি কি অসুস্থ?
– না তো।আমি ঠিক আছি।
– কিন্তু তোমাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে। অনেক শুকিয়ে গেছো।
– কিছু হয়নি। এখানে কেমন বন্দী বন্দী মনে হয়। ভালো লাগছে না আমার।
– হুম। আর তো দেড় মাস।দেখতে দেখতে চলে যাবে।
তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।
– আচ্ছা বলবো।

দুদিন পরে মাহির খেয়াল করে শিখাকে খুব অসুস্থ লাগছে।চোখে মুখে অস্বাভাবিক কিছু একটা বুঝতে পারছে।মাহির আরও খেয়াল করলো শিখা কিছুই খেতে পারছেন না।
– তুমি যে বললে অসুস্থ না! আমি তো দেখছি তুমি সুস্থ না।কিছু ই তো খাওনি।
কি হয়েছে তোমার? তোমার চোখে কেমন ফুলে গেছে!
– আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন? আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না।
– আচ্ছা সে দেখা যাবে।আগে তোমার ডাক্তার দেখাতে হবে।

দুদিনের মধ্যে মাহিরের সুযোগ হয়নি ডাক্তার দেখানোর।
সেই রাতে শিখার অনেক জ্বর উঠে। মাহির সারারাত জেগে জলপট্টি দেয় মাথায়।
শিখা এক রাতে যেন বিছানার সাথে মিশে গেছে! ঔষধ এনে খাওয়ানোর পরে জ্বর কমলেও শিখা যেন শরীরে কোনো শক্তিই পাচ্ছে না।
মাহির আর দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।
অনেক ঔষধপত্র নিয়ে তারা ফিরলো।

চার- পাঁচ দিন পরে মাহির ইভাকে ফোন করে বললো
– ভাবি, তুমি একটু ভাইয়া বা বাবাকে নিয়ে একটু ঢাকায় আসো।
– কেন মাহির? কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
– শিখা খুব অসুস্থ। ওকে একা রেখে আমি যেতে হয়।
কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
একা রেখে যাবো ভরসা পাচ্ছিনা।তোমরা আজই আসো।
– কি হয়েছে শিখার?
– জানি না ভাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা আসো।
– ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না। আজই আসবো।

মাহিরের ভাবি আর বাবা এসে ঢাকা পৌছালো।
তারা এসে শিখাকে দেখে চমকে উঠলো।শিখা ঘুমে।উনারা আসবেন সেটাও শিখা জানে না।
– একি হাল হয়েছে মেয়েটার! একদম চেনাই যাচ্ছে না।
তুমি ওর দিকে খেয়াল রাখোনি? কি অবস্থা হয়েছে ওর! নিশ্চয়ই খাওয়া দাওয়া একদম করেনি।
– ভাবি, আমি সারাদিন বাসায় থাকলে তো! সকালে বের হই সেই রাত হয়ে যায় ফিরতে ফিরতে। আগেই বাবাকে বলে ছিলাম। বাবা তো বুঝেনি।
একা সারাদিন কি করে সেসব তো আমি খেয়াল রাখতে পারিনা।
আর এমনিতেই আমি প্রেশারের মধ্যে থাকি।

– যাই বলো ভাই,তোমার খেয়াল তো ছিলো না সেটা আমি জানি। তার সাথে অবহেলায় ছিলো।
মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কেবল কষ্ট পেয়েছে। নিজের দিকে একটু ও খেয়াল করেনি।

মাহির, ইভা কথা বললেও সারোয়ার সাহেব গম্ভীর ভাবে বসে রইলেন।

চলবে….

কনে বদল পার্ট- ৪

0

কনে বদল
পার্ট- ৪
# Taslima Munni

সেই দুই হাজার টাকা যদি না থাকতো তবে আজ তোমরা সারোয়ার সাহেবের ছেলের পরিচয় না, কামলা সারোয়ারের পুত পরিচয়ে বাঁচতা!!

বুঝতেই পারছো সেই ছেলেটা তোমার বাব!!আর সেই টাকাটা কে দিয়ে ছিলো জানো? শিখার বাবা।

মাহিরের চোখ ভিজে গেছে।

এখন যদি মনে করো সেই টাকা শোধ করার জন্য তোমাকে ব্যবহার করছি বা তোমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি তবে ভুল করছো।
বাবারে… কিছু ঋণের শোধ হয় না।
কোনো কিছুর বিনিময়ে সেই দুই হাজার টাকার মূল্য পরিশোধ সম্ভব হবে না।

শিখাকে যখন বিয়ে করাতে চেয়েছিলাম তখন শিখার বাবার পরিচয় জেনেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে শিখার বদলে অন্য মেয়েকে দেখিয়েছে সেটা তো জানতাম না।
ওর মায়ের সাথে কথা বলার পরে বিষয় টা পরিষ্কার হয়ে গেছে আমার কাছে। শিখার বাবা মারা যাবার পরে ওর চাচাদের অত্যাচারে ওদের জীবন বিষিয়ে গেছে। আর শিখার বিয়ের এসব সব ওর চাচাদের প্ল্যান অনুযায়ী হয়েছিলো।
কেন করেছিলো সে সব পরে জেনে যাবে।
মানুষের ভিতর দেখার চেষ্টা করো।তাহলেই মনে শান্তি পাবে।
এখন যাও আমি একটু বিশ্রাম নিবো।

মাহির খুব হতাশ হয়ে চলে গেলো।

কয়েকদিনের মধ্যেই মাহির নতুন বাসা নিলো। শিখা সাথে করে নতুন বাসায় উঠলো।
শিখা নিজের হাতে এই নতুন সংসার সাজালো।
মাহির এখন স্বাভাবিক ব্যবহারই করে শিখার সাথে।
একদিন ইভা ফোন দিলো মাহিরকে।ইভা শিখার কথা জিজ্ঞেস করতেই মাহির বললো
– শিখা ভালোই আছে।
– তোমাদের মধ্যে কি সব ঠিক হয়েছে?
– ভাবি, আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই মানতে পারছিনা।
– ও কিন্তু অনেক ভালো একটা মেয়ে।তোমার কতটা খেয়াল রাখে সেটা বোধহয় তুমি নিজেও বুঝতে পারো না।
– জানি। কিন্তু…. বাদ দাও ভাবি।
– হুম। ওকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো।তাহলে তোমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ভালো থেকো।রাখছি।

মাহির সত্যিই চাইছে মানিয়ে নিতে। কিন্তু শিখা সামনে আসলেই ওর মেজাজ বিগড়ে যায়। খারাপ ব্যবহার না করলেও স্ত্রী বলে ভাবতে পারছেনা।
সেই সকালে বেরিয়ে যায় মাহির।রাত আট টার পরে ফিরে। শিখা সারাদিন বাসায় একাই থাকে। মাহির এসে খাবার খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ করে কিছু। শিখার সাথে প্রয়োজনের বাইরে কথা বলার মতো সময় যেমন নেই, তেমনি মাহির নিজেও সময় খুঁজে না কথা বলার জন্য।
শুক্রবার দিনটা অর্ধেক ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়।
এক শুক্রবার রাতে শিখা যখন সব কাজ সেরে রুমে আসলো, তখন মাহির কি মনে করে শিখাকে জিজ্ঞেস করে ফেললো
– তোমার বাসায় কে কে আছে?
এতো দিন এসব জানার প্রয়োজন বোধ করেনি।
– অনেক মানুষ আছে। মা আছে,আমার বোন শশী আছে। বড় চাচা, বড় চাচীমা,উনার এক ছেলে, দুই মেয়ে, ছোট চাচা-চাচি,উনাদের দুই ছেলে মেয়ে।
– বাহবা! এতো দেখছি বিরাট পরিবার।
– হা।সবাই একসাথেই থাকে।
– তোমার চাচারা নাকি অনেক… তোমার বাবা তো শুনেছি ভালো জব করতেন।
চাইলে তো তোমরা আলাদা থাকতে পারতে।
– এটাই নাকি আমাদের পরিবারের রেওয়াজ; যাই কিছু হয়ে যাক,কেউ আলাদা থাকতে পারবে না। আমার দাদু উনার সম্পত্তির যে উইল করে গেছেন, তাতে আছে কেউ একজন যদি আলাদা হয়ে যায় তবে শুধু সে বঞ্চিত হবে না,বাকি সবাইও বঞ্চিত হবে। কারণ সব তাহলে একটা ট্রাষ্টে চলে যাবে।
এই ভয়ে কেউ আলাদা হয়নি।আমাদের ও আলাদা হতে দেয়নি।
বাবা মারা যাবার পর পেনশনের একটা টাকাও মায়ের হাতে রাখতে পারেননি।সব চাচারা নিয়ে গেছেন।
– হুম। বুঝেছি।

সবকিছুর পিছনে তোমার চাচারা! বুঝলাম, কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে এতো নাটকের কারণ তো বুঝলাম না।
শিখা মৃদু হেসে বললো
– আমি যে দেখতে ভালো নই।
তাই সবার বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম।

বাবা মারা যাবার তিন বছরের মাথায়, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর যখন ভর্তি হতে চেয়েছি,চাচারা পড়া বন্ধ করে দিলেন। মেয়েদের এতো পড়ার নাকি দরকার নেই।
অনেক চেষ্টা করেও আর পড়তে পারিনি।
মা চেয়েছিলেন বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু বড় চাচী প্রথম বাধা দিলেন। বললেন এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।
আসলে মা আর আমি সংসারে সব কাজ করতাম। প্রায়ই মা অসুস্থ হয়ে পড়তেন, তখন আমি আর শশী মিলে রান্না করা,কাপড় কাচা,ঝাড় দেয়া…. সব করতাম।
বিনে পয়সার চাকর কেউ এতো সহজে ছাড়ে!!

আমাদের পড়া বন্ধ হলেও অন্যরা সবাই ঠিকই পড়াশোনা করেছে।। কিন্তু উনার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে, কারণ মানুষের মুখে শুনেছে বাড়ির বড় মেয়ের এখনো বিয়ে দেয়নি। এজন্য অনেকেই উনাদের বদনাম করেছে।
পরপর কয়েকটি বিয়ে ভাঙার পরে চাচির টনক নড়ে। এবার আমাকে বিদায় করতে উঠে পড়ে লাগেন।

কিন্তু আমি তো সুন্দর নই, তার উপর বয়স ত্রিশের কোটা ছুঁয়েছে! এই মেয়েকে দেখতে এসে কেউ পছন্দ করবে??
বারবার চেষ্টা করেও যখন দেখলো কেউ আমাকে পছন্দ করছে না, তখন তারা আরও মরিয়া হয়ে গেলেন।
উঠতে বসতে অনেক অপমান করতেন তারপর গায়েও হাত তুলেছে। কারণ আমার অপরাধ হলো -আমার বিয়ে হচ্ছে না। কেউ পছন্দ করছে না।

তারপরে আমার মামাতো বোন দোলন কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো। শুনলাম ওকে দেখতে আসবে এখানে। ওকে পছন্দ করলো।বিয়ে ঠিক হলো।।
বিয়ের আগের রাতে জানলাম বিয়েটা আমার। বুঝলাম আমার বদলে দোলকে দেখিয়েছে।এটা কত বড় অন্যায়! লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো।

অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক বুঝিয়েছি।কিন্ত শেষ পর্যন্ত মা বললেন, বিয়ে না করলে উনি বিষ খাবেন। বিষের শিশি হাতে নিয়ে বসে ছিলেন। তখন আমার আর কিছু করার ছিলো না।

আমার মা অনেক অসহায়। রোজ রোজ উনাদের কাছে আমার জন্য অপমান সহ্য করতে করতে উনি আর পারছিলেন না। আমাকে অই নরক থেকে বাঁচাতে অন্যায় জেনেও মা এটা করেছে।
মায়ের উপর অভিযোগ নেই।অভিমান আছে।
আর কিছু না পারলে তিন মা মেয়ে তো এক সাথে মরতে পারতাম!!

শিখার কথা শুনে মাহিরের চোখ কখন ভিজে গেছে টের পায়নি।

চলবে….

কনে বদল পার্ট – ৩

0

কনে বদল
পার্ট – ৩
# Taslima Munni

গভীর রাতে গোঙানির শব্দে মাহিরের ঘুম ভাঙে।প্রথমে ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারেনি কিসের শব্দ। ঘুম একটু কাটতেই বুঝতে পারলো শব্দটা নিচে থেকে আসছে।
মাহির উঠে বসলো।
লাইট অন করার পর দেখলো শিখা কাঁপছে।
গায়ে কাঁপুনি দেয়ার মতো শীত নেই, তবুও মেয়েটা কাঁপছে!
মাহির ভাবলো হয়তো জ্বর এসেছে। কাছে গিয়ে দেখবে কি দেখবে না….
অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত গিয়ে কপালে হাত রেখে দেখে অনেক জ্বর মেয়েটার গায়ে। এ অবস্থায় নিচে শুয়ে থাকা ঠিক হবে না। কিন্তু…
এইযে শুনছো?…. এই মেয়ে..
আস্তে করে ধাক্কা দিলো।কিন্তু শিখা কোনো সাড়া দিলো না।

মাহির শিখাকে মেনে নিতে পারেনি ঠিক। কিন্তু এভাবে জ্বরের মধ্যে একটা মানুষকে নিচে ফেলার রাখার মতো অমানুষ নয়।।
শিখাকে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।

পরদিন সকালে মাহির ইভাকে গিয়ে বললো
– ভাবি,শিখার অনেক জ্বর। তুমি ওকে খায়িয়ে দিও।
– ওর গায়ে তো জ্বর ছিলোই।এখন মনে হয় আরও বেড়ে গেছে।
– হুম।
মাহির চলে গেলো।

মাহির ঔষধের প্যাকেটটা এনে শিখার সামনে দিয়ে বললো
– এখানে ঔষধ আছে। খেয়ে নিও।
মাহিরের এই সামান্য কথায় শিখা অনেক খুশি হলো। এতটুকু চিন্তা করেছে ওর জন্য এটাই তো অনেক!!
কিছু দিনের মধ্যে শিখা সুস্থ হয়ে উঠলো।

সারোয়ার সাহেব বলার পরেও শিখা ওর মাকে ফোন করেনি।হঠাৎ কি মনে করে ওর মাকে ফোন করলো।
– হ্যালো… মা।
– শিখা!! তুই কেমন আছিস? এতো দিন হয়ে গেছে একটা ফোন করিসনি! তুই ভালো আছিস তো মা?
– এতো কিছু জেনে কি করবে?
তোমার কাঁধের বোঝা নেমে গেছে! এটাতেই খুশি থাকো না।
– এভাবে বলছিস কেন? তুই তো জানিস..
– জানি বলেই তো বললাম। তোমার ঘরে বয়স্ক একটা মেয়ে ছিলো, তার বিয়ে দিতে পারছিলেনা। ঠকিয়ে হোক আর যেভাবেই হোক বিয়ে দিয়ে ঘাড় থেকে নামিয়েছ।আপদ বিদায় হয়েছে। আর তো চিন্তার কিছু নেই!!
– মা রে… তুই আমার দুঃখ টা বুঝলি না?
কাঁদতে কাঁদতে শিখার মা বললো।
– রোজ রোজ তোর এত অপমান আমি আর কত সহ্য করতাম??
– আর তো সহ্য করতে হবে না
শুনো মা, আমাকে আর ফোন দিও না। এখানে সবাই খুব ভালো মানুষ। এতো কিছুর পরেও তোমার মেয়েকে বাড়িতে যায়গা দিয়েছে। কিন্তু তোমাদের উনারা সহ্য করতে পারেন না। তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখি সেটা উনাদের পছন্দ না।
– ঠিক আছে। তুই যদি ভালো থাকিস তাহলে যোগাযোগ করবো না। তবুও আমার মেয়েটা একটু সুখ পাক।
– শশীকে বলে দিও আমি ভালো আছি।
– কথা বলবি শশীর সাথে? নে কথা বল।
– না বলবো না। যোগাযোগ যেন না করো সেটা জানাতে ফোন করেছি।আর আমার শ্বশুরকেও ফোন দিবে না।
রাখলাম।
বলেই ফোন রেখে দিলো শিখা।
মাকে এতো কড়া ভাষায় কথা বলে, এতো খারাপ ব্যবহার করেও শিখার ভাবলেশহীন। যেন কিছুই হয়নি!!

শিখা বয়সে মাহিরের থেকে দুই-তিন বছরের বড়। তার উপর মাহিরের পাশে বড্ড বেমানান। শিখার সেই রূপ নেই যা দিয়ে স্বামীর মন ভুলাবে! সাধারণের থেকে সাধারণ চেহারার মাঝে যেন বয়সের ছাপটা স্পষ্ট বোঝা যায়।
মাহির কোনো ভাবেই এটা মেনে নিতে পারছেনা।
শিখার ব্যবহারে মন নরম হলেও শিখার মুখের দিকে তাকালে যেন মাহিরের মন বিষিয়ে যায়।
শিখা মাহিরের গলার কাঁটা হয়ে গেছে। সেই কাঁটা না গিলতে পারছে না বের করতে পারছে।
ওর জীবন বিষিয়ে গেছে। শিখাকে নিজের স্ত্রী বলে কারো সামনে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করে।

মাহিরের বিয়ের পরে যখন ওর বোনদের শ্বশুর বাড়ি থেকে লোক আসবে শুনলো,মাহির রীতিমতো পালিয়ে থাকলো। কারণ ওর পক্ষে শিখাকে বউ বলে পরিচয় দেয়া সম্ভব না।
দুনিয়া সুন্দরের পূজারী। সুন্দর চেহারার আড়ালে কুৎসিত, বিকৃত মন থাকলেও সুন্দরের দোহাই দিয়ে পাড় পেয়ে যায়!
আর কুৎসিত একটা চেহারার আড়ালে সুন্দর একটা মন থাকলেও সেটা অযত্নে, অবহেলায়, অপমানে রোজ রোজ নরকের যন্ত্রণা সহ্য করে।

মাহির আর শিখার বিয়ে হয়েছে অনেক দিন হয়ে গেছে। মাহিরের বাবা জোর করে শিখাকে এই বাড়িতে রাখলেও মাহির যে মেনে নিতে পারেনি সেটা উনি জানেন।
তিনি একদিন ইভাকে বললেন
– মাহির বোধহয় বিয়েটা এখনো মেনে নিতে পারেনি।।
– আসলে বাবা… মাহিরের পক্ষে কি এতো তাড়াতাড়ি মেনে নেয়া সম্ভব? ওর যায়গা থেকে চিন্তা করে দেখুন।আমরা তো মেনে নিয়েছি। মাহিরও ঠিক মেনে নিবে।আরও কিছু দিন সময় দিন।
আপনি চিন্তা করবেনা না।
– হুমম।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাহিরের বাবা।

মাহিরের অফিসের একটা ট্রেনিং এর জন্য ৩ মাস ঢাকায় থাকতে হবে। এটা জেনে মাহির অনেক খুশি হলো। কিছু দিন সে এই বাড়ির বাইরে থেকে মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে পারবে।
এই খবর বাড়িতে জানার পরেও সারোয়ার সাহেব মনে মনে বুদ্ধি করলেন, এই সুযোগ। মাহির আর শিখা নিজেদের মতো কিছু দিন থাকুক এই বাড়ির বাইরে। এতে হয়তো মাহিরের মন গলবে। তিনি মাহিরকে বললেন
– যাচ্ছো যে থাকবে কোথায়? অফিসের কোনো ব্যবস্থা আছে?
– হা বাবা।উনারা সব ব্যবস্থা করে দিবেন।
– হুম। ওখানেই থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি?
– না,তা নেই।অনেকেই বাইরে থাকবে। যার ইচ্ছে সেখানে থাকবে।
– তাহলে তো ভালো ই হয়েছে। তুমি তিন মাসের জন্য একটা বাসা ভাড়া করে নাও।
– বাসা ভাড়া করে কি করবো? আমি তো সেখানেই থাকতে পারবো।
– না পারবে না। কারণ শিখাও যাবে তোমার সাথে।
-বাবা.. আমি তো বেড়াতে যাচ্ছি না।
– সেটা জানি। কিন্তু বাসা থেকে গিয়ে ট্রেনিং করতে পারবে না এমন তো কোনো কথা নেই।
খোঁজ নিয়ে আগে বাসার ব্যবস্থা করো।
তাছাড়া কি খাবে না খাবে তার ঠিক নেই।শিখা তোমার সাথেই যাবে।
– আচ্ছা, ঠিক আছে।

মাহির মুখকালো করে বেরিয়ে ওর মার কাছে গিয়ে বলে
– মা….
বাবা কি শুরু করেছেন এসব? সব কিছু কি জোর করে চাপিয়ে দিতে চান আমার উপর?
সারোয়ার সাহেব মাহিরের পিছনে দাঁড়িয়ে কথা শুনছেন সেটা মাহির বুঝতে পারেনি।
– তোমার উপর চাপিয়ে দিতে চাইছিনা। যাতে তুমি মানিয়ে নিতে পারো সেই চেষ্টা করছি।।

মাহির পিছনে ফিরে ওর বাবাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেললো।
– বসো মাহির। আজ তোমাকে একটা গল্প বলি।

একটা ছেলে ছিলো। সে পড়াশোনায় খুব ভালো। অনেক আগ্রহ ছিলো পড়ার। স্কুলের স্যার মেডাম বলতেন, ” ছেলে টা অনেক মেধাবী,জীবনে অনেক বড় হবে। ”
কিন্তু ছেলে টা এতো গরীব ছিলো যে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার তৌফিক ছিলো না।
অনেক কষ্টে দশম শ্রেণি অবধি পড়ার পরে ছেলেটার পড়া বন্ধ হয়ে যাবে প্রায়,এমন অবস্থা। কারণ সামনে মেট্রিক পরীক্ষা।কিন্তু ফরম পূরণ করার জন্য অনেকগুলো টাকার প্রয়োজন। ছেলেটার বাবা দিন মজুরের কাজ করতো।
এতো গুলো টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। অনেক যায়গায় হাত পাতলো । কিন্তু খুব সামান্য কিছু টাকা ধার পেলো। কারণ দিন মুজুরকে কেউ সহজে ধার দেয় না, দিলেও খুব সামান্য।
ফরম পূরণ করার শেষ দিন ছেলেটা বসে বসে কাঁদছে। কারণ তার পরীক্ষা আর দেয়া হবে না। কষ্টে তার বুক ফেঁটে যাচ্ছিলো।

তখন ছেলেটার এলাকার এক বড় ভাই আসলো। সে শহরের কলেজে পড়তো। অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো তার সাথে। বয়সে দুই-তিন বছরের বড় হলেও বন্ধুর মতো। সেই ছেলেটা ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলো। তাদের আবার অবস্থা অনেক ভালো ছিলো।
সে ছেলেটাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? ছেলেটা সব বলার পরে বললো
– আয় আমার সাথে।
তারপর নিজে ঘর থেকে টাকা নিয়ে স্কুলে গিয়ে ছেলেটা সব টাকা পরিশোধ করে দিলো। ছেলে টা পরীক্ষা দিলো। সবাই যেমন ভালো ভেবেছিলো, তারচেয়েও অনেক ভালো রেজাল্ট করলো । পত্রিকায় ছবি ছাঁপালো।

তারপর শহরের কলেজে সেই ভাই তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি।নিজের পড়াশোনার খরচ ছেলেটা নিজেই টিউশনি করে জোগাড় করে।।
পড়াশোনা শেষ করে অনেক বড় একটা চাকরি করে।

কিন্তু সেই যে দুই হাজার টাকা ছেলেটার প্রয়োজন ছিলো, সেটা না পেলে ছেলেটা হয়তো দিন মুজুরের কাজই করতো।

সেই দুই হাজার টাকা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেই জন্যই আজ এই বাড়ি! এতো আরাম আয়েশ! তোমাদের সব চাহিদা অনুযায়ী পেয়েছো। লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করছো।সম্মানের জীবন কাটাচ্ছো।

সেই দুই হাজার টাকা যদি না থাকতো তবে আজ তোমরা সারোয়ার সাহেবের ছেলের পরিচয় না, কামলা সারোয়ারের পুত পরিচয়ে বাঁচতা!!

চলবে….

কনে বদল পার্ট- ১+২

0

কনে বদল
পার্ট- ১+২
# Taslima Munni

এই পাপ আমাকে করতে বলো না,তোমার পায়ে ধরি মা । আমি এটা করতে পারবো না। এটা অন্যায়, এটা পাপ!!
– একদম চুপ মেরে থাকবি শিখা। পাপ- পূণ্য আমাকে শেখাতে আসবি না।একটা শব্দও যেন না শুনি।শুনলে খুব খারাপ হবে।
দরজা আটকে চলে গেছে শিখার মা।
একটু পরে শিখার ছোট বোন শশী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
– আপু..
– শশী…বোন আমাকে বাঁচা।এতো বড় অন্যায় আমি করতে পারবো না।
শশীর চোখেও পানি এসে গেছে শিখার কাকুতি মিনতি দেখে।

আজ শিখার বিয়ে। বিয়ে নিয়ে আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো ভাবতে পারছেনা শিখা। ওর চোখে এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।শিখা জানে না কি হবে, তবে এটা জানে যা হবে, খুব খারাপ কিছু হবে।

যে ছেলেটার সাথে বিয়ে, তার নাম মাহির।
সেও জানে না কি হতে যাচ্ছে। জানে শুধু শিখার বাড়ির কয়েকজন মানুষ।

কনে বদলে গেছে। বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত বা বাধ্য হয়ে করা হচ্ছে এমন নয়। এটা সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পনা করে হচ্ছে।
শিখা নিজেও জানতো না। বিয়ের আগের রাতে জানতে পেরেছে বিয়েটা শিখার!!
বিয়েটা ভেঙে দিবে বা ছেলেকে, ছেলের বাড়ির কাউকে জানাবে এই সুযোগও নেই।

শশী শিখাকে ধরে কাঁদছে।
– আপু, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
শিখা নিজেও জানে শশীর কিছু করার নেই। তবুও ভেসে যাওয়ার আগে মানুষ শেষ চেষ্টা করে, খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা।

শিখাকে বউ সাজিয়ে একটা ঘরে আটকে গেছে ওর মা।এদিকে বর এসে গেছে। বরযাত্রী অনেক দূর থেকে এসেছে। তাই খুব বেশি মানুষ আসেনি। বরের বাড়ির কেউ শিখার সাথে দেখা করার সুযোগ পায়নি।খুব কৌশলে আটকে দেয়া হয়েছে। কনের সাজ শেষ হয়নি বলে ভেতরে যাবার অনুমতি নেই কারো।
বিয়ে পড়ানোর একটু আগে শিখার মা এসে কানে কানে শিখাকে বললেন
– ঘোমটা খুলবি না, কোনো ঝামেলা না করে কবুল বলবি।
না হলে এই দেখ!
বিষের শিশিটা দেখালেন।
আমি তোর মা।আমি আবার অনুরোধ করছি কোনো ঝামেলা করবি না, করলে শশী আর আমি দুজনেই বিষ খাবো। এখন তুই জানিস তুই কি করবি।
হয় বিয়ে করবি না হয় এটা শশীকে খায়িয়ে আমিও খাবো।
-মা….!!তুমি আমাকে এতো একটা অন্যায় করতে বললে!! তারচেয়ে জন্মের পরে আমার গলায় বিষ ঢেলে দিতে!!
শিখারর মা মুখশক্ত করে উঠে চলে গেলেন।

বিয়েটা হয়ে গেছে। এছাড়া আর কোনো পথ ছিলো না শিখার।
বরযাত্রী কনে নিয়ে বিদায় হলো।এখনো কেউ জানতে পারলো না কনে বদলে গেছে। শিখাকে নিয়ে বরযাত্রী ফিরে যাচ্ছে।
শিখা জলে যাচ্ছে।
হা জলেই যাচ্ছে। যে শ্বশুর ঘরে যাচ্ছে সেখানে নিশ্চয়ই তার জন্য কেবল জল আর জলই আছে।
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর । সাথেও কেউ আসেনি।যেন হাত পা বেঁধে জলে ফেলে পুরো পরিবার বেঁচে গেছে!
এতো শত ভাবনা আর দুঃচিন্তার করতে করতে শ্বশুর ঘরে পৌঁছে গেলো শিখা। সবাই দৌড়ে এসে বউবরণ করে ঘরে তুললো।। সবাই এলো নতুন বউ দেখতে।

ঘোমটা খুলে বউ মুখ দেখাতে গিয়ে মাহিরের ভাবি ইভা চিৎকার করে উঠলো
– এটা কি!!!
– কি হয়েছে? কি হয়েছে? মাহিরের মা দৌড়ে এলেন।
– এ মেয়ে তো সেই মেয়ে না!! বউ বদলে গেলো কি করে?!!
বিস্মিত চোখে ইভা জিজ্ঞেস করলো।
– কি! এতো বড় জোচ্চুরি! ইভা তোমার শ্বশুরকে ডাকো। কই তুমি?
তাড়াতাড়ি এদিকে আসো।
মাহিরের মা মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লেন!!
আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিলো!

মাহির, মাহিরের ভাই মাহিন , মাহিরের বাবা সবাই চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে এলেন।।
– কি হয়েছে? এতো চেঁচামেচি কিসের?
– কি হয়েছে? দেখো… দেখো…

শিখার ঘোমটা টেনে সরিয়ে দেয় মাহিরের মা।
– একি! এ আবার কে?? এসবের মানে কি?
– মানে বুঝোনি? তোমার ছেলের কপাল পুড়েছে! বউ বদলে দিয়েছে!.
ঠকিয়েছে!!
– কি!!
– বাবা,তুমি এক্ষুনি ফোন করো।
মাহিন সারোয়ার সাহেবকে বললো।
– হা…. ফোন তো দেবোই! সাথে জেলের ভাত খায়িয়ে ছাড়বো। এত বড় ফ্রড!
মাহির চুপচাপ রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে শুনছিলো।
এবার সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।শিখার দিকে ফিরেও দেখলো না।

এদিকে শিখার অবস্থা! লজ্জায় অপমানে মাটিতে মিশে যেতে পারলে বেঁচে যেতো!
ওর মা ওকে কিসের মধ্যে ফেলে দিলো!!
এরচেয়ে মৃত্যু ঢের ভালো ছিলো।

– এই মেয়ে তোমার নাম কি?
কি হলো কথা বলছো না কেন? সারোয়ার সাহেব ধমকে জিজ্ঞেস করলেন।
শিখা ভয়ে চমকে উঠে,কাঁদতে কাঁদতে বলে
– শি-শিখা..
– অহহ! এই আসল শিখা! ফ্রড তো প্রথমেই করেছে এখন বুঝতে পারছি।
সারোয়ার সাহেব শিখার মামাকে ফোন করলেন।
প্রচন্ড রাগারাগি করলেন। শিখার মামা অনেক কিছু বুঝাতে চাইলেন, কিন্তু সারোয়ার সাহেব এসব কথা শুনতেই চাইলেন না।বললেন
– আপনাদের মেয়েকে এসে নিয়ে যান।
– বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আপনার বাড়ির বউ আপনি কি করবেন সেটা আপনি জানেন।।
এটা বলেই শিখার মামা ফোন রেখে দিলেন।

সারোয়ার সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন।উনি এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি। যা-ই করেন না কেন ভেবে চিন্তে করতে হবে। মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে!!
– কি হলো? এতো রাত হয়ে গেছে এই মেয়েকে পাঠাবে কখন?
– একটু একা ছেড়ে দাও আমাকে। তোমার সবাই যাও এখান থেকে। আমি মেয়েটার সাথে কথা বলবো।
– ওর সঙ্গে কথা বলে কি হবে?!! বিদায় করো এক্ষুনি।
– আহ! যাও তো।।
সারোয়ার সাহেব অত্যন্ত রাগী মানুষ। সবাই বাঘের মতো ভয় পায় উনাকে। তাই আর কিছু বলার আগেই সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সারোয়ার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন
– এই মেয়ে, তুমি জানো তুমি কি করেছো?
আমার ছেলের জীবন নিয়ে তোমরা খেলেছো।
এতো বড় জুচ্চুরি কেন করা হয়েছে আমাকে বলো।
শিখা মাথা নিচু করে কেঁদেই চলছে।
– কি আশ্চর্য! তোমাকে তো কথা বলতে হবে। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।
তোমার মায়ের নাম্বার দাও।
শিখা কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল থেকে ওর মায়ের নাম্বার টা বের করে দিলো।

শিখার মায়ের সাথে প্রায় একঘন্টা কথা বলেন সারোয়ার সাহেব।
তারপর মাহিরকে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
শিখা, মাহির, সারোয়ার সাহেব মুখোমুখি বসে আছে।
শিখা মাথা নিচু করে বসে আছে।
মাহির অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
– মাহির।
– জী বাবা।
-জন্ম,মৃত্যু আর বিয়ে এই তিনটি জিনিস মানুষের হাতে থাকে না।এটা তুমি বিশ্বাস করো?
– করি।
– এই যে মেয়েটা ‘ শিখা’, ওর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে ; এটাও তোমার ভাগ্যে ছিলো।
তোমাকে শিখার সামনে কিছু কথা বলি।
তোমরা দুই ভাই আর তোমাদের বোন আনিশা আর আনিকা, তোমরা যখন যা চেয়েছো তা-ই তোমাদের দিয়েছি।কোনো দিন কিছু চাইনি তোমাদের কাছে।
আজ তোমার কাছে আমার চাওয়া আছে।
এটাকে চাওয়া বলো আর অনুরোধই বলো, এটা তোমাকে রাখতে হবে।
– বাবা,তুমি কি বলতে চাইছো?
-শিখার সাথেই তোমার সংসার করতে হবে।
– কিন্তু বাবা…
– আমি তোমার কাছে কিন্তু আশা করছি না মাহির।
– এটা ফ্রড করে বিয়ে। আমি কিভাবে..!
– এতে দোষ থাকলে মেয়েটার পরিবারের।এই মেয়ের দোষ নেই।ওকে বাধ্য করা হয়েছে।
– বাবা আমি…
– এই মেয়ে এখানেই থাকবে এটাই আমার শেষ কথা। এখন যাও গিয়ে বিশ্রাম করো।

দীর্ঘ দুই ঘন্টা পরে সারোয়ার সাহেব দরজা খুলে বেরিয়ে ইভাকে ডেকে বললেন
– শিখাকে নিয়ে ওর ঘরে যাও।ওর বিশ্রাম প্রয়োজন।
– কিন্তু বাবা….
– আমি তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছি, ইভা।
– আচ্ছা বাবা।
ইভা মুখ কালো করে শিখাকে বললো
– এসো আমার সাথে।।
ইভা শিখাকে নিয়ে চলে গেলো।

– তুমি এটা কি করলে? এই মেয়ে এখানে থাকবে??!! জুচ্চুরি করে বিয়ে দিয়েছে। এখন এই মেয়ে নিয়ে আমার ছেলে সংসার করবে?
– আফরোজা, মেয়েটা এখানেই থাকবে। এটা নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না।
– কেন বলবো না? আমার ছেলের জীবন নিয়ে কথা! এই মেয়েকে আমার ছেলের পাশে কোন দিকে মানায়?
আর দেখো, এই মেয়ে মাহিরের চেয়ে বয়সে বড় হবে।
– কি শুরু করেছো!! খাবারের ব্যবস্থা করো। অনেক রাত হয়ে গেছে।
সারোয়ার সাহেবের মুখের উপর আর কথা বলার সাহস নেই আফরোজা বেগমের। তাই উনি বিরক্তি নিয়ে চলে গেলেন।

রাত প্রায় তিনটা বাজে। মাহির রুমে আসলো।
কাঁদতে কাঁদতে শিখার চোখ ফুলে গেছে। মাহিরকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।
মাহির চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো।
শিখা কি করবে বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়েই রইলো।
বেশ কিছুক্ষন পরে মাহির তাকিয়ে দেখে শিখা দাঁড়িয়ে আছে।
– এই মেয়ে শুনো, বাবার জন্য এবাড়িতে এমনকি এই রুমে থাকার অনুমতি পেয়েছো।কিন্তু তাইলে বলে ভেবো না আমার স্ত্রীর যায়গা পাবে।।
দুই দিন আগে আর পরে এই বাড়ি তোমাকে ছাড়তেই হবে।
এখন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে চাদর পেতে শুয়ে পড়ো।আর ভুলে আমার সামনে পড়বে না।
এটা বলেই মাহির বালিশ ছুড়ে দিলো।

শিখা এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো বোধহয়। কারণ ওর মধ্যে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি।শুধু চোখ থেকে টপটপ করে কিছু পানি ঝরে পড়ছে।
শিখা বালিশ টা নিয়ে ফ্লোরে একটা চাদর পেতে শুয়ে পড়লো।

চলবে….

# কনে বদল
# পার্ট – ২
# Taslima Munni

এই মেয়ে! তোমাকে নিষেধ করেছিলাম না আমার সামনে আসতে?
এখনো এই রুমে কি করছো??
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মাহির শিখাকে রুমে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
– আমি বাহিরে গিয়েছিলাম,কিন্তু আমাকে বললো রুমেই থাকতে। এখান থেকে বের না হতে।
– এই সকাল বেলা উঠেই…. ঠিক আছে বের হতে হবে না। আমিই বের হয়ে যাচ্ছি।
মাহির বের হয়ে যায়।

শিখা বসে বসে কাঁদছে। কি নসীব ওর!
প্রতি পদক্ষেপে এখানে অপমান সহ্য করতে হবে সেটা বেশ বুঝতে পারছে।
কিছু সময় পরে ইভা এসে কিছু খাবার দিয়ে বললো
– তোমার খাবার, খেয়ে নাও।
খাবার টা সামনে দিয়ে ইভা চলে গেলো।
শিখাকে তাদের সাথে খেতেও ডাকেনি।আলাদা করে রুমে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে।
এই খাবার খাওয়াও লজ্জাজনক, কিন্তু খিদে এমন এক জিনিস যেটা দুইদিন পেটে দানাপানি না পড়লে বোঝা যায়।
শিখার পেটেও দুদিন ধরে কিছু পড়েনি।খাবার টা পেয়ে মান অপমান উপেক্ষা করে শিখা খাবার টা মুখে দিলো।
একটু পরেই শুনতে পেলো
– কোনো অনুষ্ঠান হবে না। সব বাতিল করো।মাহির বলে গেছে ও এসবে থাকতে পারবে না। থাকবে কি করে?? আমার ছেলের পাশে একে নিয়ে দাঁড়াবে? ছেলেটা আমার না খেয়ে বেরিয়ে গেলো!!…
ওর বাবার ভীমরতি হয়েছে… এই মেয়েকে এখনো বাড়িতে রেখেছে। আমার ছেলের জীবন থেকে সুখ চলে গেছে।
মাহিরের মায়ের কথাগুলো শিখা রুমে থেকেই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।
খাবারটা আর শেষ করা হলো না।
মনে মনে ভাবছে উনারই বা কি দোষ?! মাহির উনার ছেলে। মাহির সুদর্শন যুবক। ফর্সা সুন্দর গায়ের রঙ,দেখতে হাজারে একজন!!
তার পাশে শ্যাম বর্নের শিখা বড্ড বেমানান।
তার উপর অযত্নে অবহেলায় শিখার কপালের বলি রেখা গাণিতিক হারে জানান দিচ্ছে শ্রীহীনতার!
মোট কথা মাহিরের পাশে শিখা কুৎসিত!!
এমন ছেলের জন্য কোন মা শিখার মতো বউ চাইবে???

ও আল্লাহ!……. কি অপরাধে আমাকে এমন শাস্তি দিচ্ছো!! আত্নহত্যা করা যদি মহাপাপ না হতো, তাহলে এই জীবন রাখতাম না। কিন্তু ইহকাল চলে যাক… আমার পরকালের সহায় থেকো প্রভু….
আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা দাও…. না হলে মৃত্যু দিয়ে আমাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও…
শিখা মনে মনে প্রার্থনা করে।

দুপুরবেলায় ইভা এসে শিখাকে নিয়ে মাহিরের মায়ের রুমে যায়।
– মা শিখাকে নিয়ে এসেছি।
– ভেতরে এসো।
ভেতরে এসে শিখা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
– এখানে বসো।
খাটের কিনারায় বসতে ইশারা করলেন।
– মা আমি যাই?
– আচ্ছা যাও।
ইভা চলে গেলো।
– তুমি এখন এ বাড়ির বউ। তোমার শ্বশুর যখন বলেছেন তখন তুমি এখানেই থাকবে। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। তুমি কি সেটা মানতে পারবে?
– কি শর্ত মা?
– তুমি তোমার বাবার বাড়িতে কখনো যেতে পারবে না! হয় এখানেই থাকবে আর বাবার বাড়িতে গেলে একেবারেই চলে যাবে।
শিখার চোখ টলটল করছে।
– ঠিক আছে মা।আপনি যেমনটা বলবেন সেটাই করবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও সারাক্ষণ রুমে বসে থাকতে হবে না।ইভার সাথে বাড়ির সবকিছু দেখেশুনে নাও।
ইভা…ইভা…
– জি মা?
– শিখাকে নিয়ে সব কিছু দেখিয়ে বুঝিয়ে দাও।
– আচ্ছা মা।
– মাহির ফিরেছে?
– না মা।ফোনও ধরছে না।
– আচ্ছা ওকে নিয়ে যাও।

আফরোজা বেগম ভেতরে ভেতরে খুব নরম মনের মানুষ। শিখার উপর উনার রাগ আছে, তারচেয়েও বেশি রাগ ওর পরিবারের উপর।
শিখাকে মানতেও পারছেন না, কিন্তু সারোয়ার সাহেবের সাথে কথা বলার পরে এটাও বুঝলেন শিখাকে ফেলতেও পারবেন না।

অনেক রাতে মাহির বাড়ি ফিরে। শিখা অপেক্ষা করছিলো কখন মাহির ফিরবে।
মাহির রুমে ঢুকে নিজের মতো সব কিছু করে যাচ্ছে কিন্তু রুমে যে আরেকটি প্রাণীর অস্বস্তি আছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করছে না।
– আপনি এতো রাত করলেন যে?
মাহির কোনো উত্তর দিলো না।
শিখা কিছুক্ষন পর শিখা আবার বললো
– দেখুন, এটা আপনার বাড়ি,আপনার রুম।আমার জন্য আপনি কেন নিজের রুম ছেড়ে দিয়েছেন?
বেশ বিরক্তি নিয়ে মাহির বললো
– তোমার জন্য রুম ছেড়ে দিয়েছি? কে তুমি? আর নিজেকে এতো ইম্পোর্টেন্ট ভাবছো কেন, যে তোমার জন্য আমি রুম ছেড়ে দিবো??
শিখাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো মাহির।
– আমি কিছু দিন পরেই চলে যাবো। এই কয়েকদিন একটু ঝামেলা সহ্য করতে হবে আপনাকে।
– যাক! তুমি যে একটা ঝামেলা সেটা কমপক্ষে বুঝতে পেরেছো!! আমি ধন্য!!!

মাহির বিছানায় শুয়ে আলো নিভিয়ে দিলো।
শিখা অন্ধকারেই কোনো রকমের বালিশ টা নিয়ে নিচে বিছানা পেতে নিলো।

শ্বশুর বাড়িতে আসার পরে শিখা নিজের ফোন একেবারে বন্ধ করে রেখে দিয়েছে, যাতে করে ওর সাথে কেউ বাড়ি থেকে যোগাযোগ করতে পারে না।

বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। শিখা মোটামুটি মানিয়ে নিতে পেরেছে। এবাড়ির মানুষগুলো ভালো। শিখা যেমন টা ভেবেছিলো তারা তেমন নয়।এতো কিছুর পরেও তারা শিখার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। শুধু মাহির মেনে নিতে পারেনি। সারোয়ার সাহেব হঠাৎ শিখাকে উনার রুমে ডেকে পাঠালেন।
– বাবা, আমাকে ডেকেছেন?
– তোমার মায়ের সাথে কথা বলেছো?
– জি না।
– তোমার ফোন অফ করে রেখেছো।উনি আমাকে ফোন করেছেন। মায়ের সাথে কথা বলে নিও।
শিখা কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইলো।
– আমি ওই বাড়িতে আর যাবো না।
– আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে। তার আগে তোমার মায়ের সাথে কথা বলো।
শুনো শিখা, কোনো মা ই সন্তানের অমঙ্গল চায় না।তোমার মা এটা কেন করেছে সেটা তুমি নিজেও জানো।তারপরও কেন মায়ের উপর অভিমান করে থাকবে?
– আচ্ছা বাবা,আমি কথা বলে নিবো।
– ঠিক আছে। যাও।

শিখা জানে না, তা নয়।ও জানে কেন ওর মা এমন করেছে। আর মা তো কিছু করেনি!
শুধু চাচাদের কথা মতো কাজ করেছে… করতে বাধ্য হয়েছে!!
তবুও শিখার অভিযোগ নেই কারো উপর। কেবল নিজেকেই দোষারোপ করে!!

শিখা এখানে সংসারের সব কাজে ইভাকে,শ্বাশুড়িকে সাহায্য করে। ওর ব্যবহারে, কাজে সবাই সন্তুষ্ট। হয়তো সেই রূপ নেই শিখার।কিন্তু সবার মন জয় করে নিয়েছে নিজের ব্যবহারে।

মাহিরের সব কাজ শিখা নিজের হাতেই করে। তবে সেটা মাহিরের আড়ালে। মাহির যেন সামনে দেখলেই সহ্য করতে পারে না শিখাকে।

এতো দিন ধরে ফ্লোরে শুয়ে শিখার সর্দি জ্বর বেঁধে গেছে।
ইভা ওকে কিচেনে কাজ করতে দেয় না,তবুও জোর করেই শিখা কাজ করে।
ইভা বলে
– তোমাকে এতো করে বলি তবুও শুনো না।এই অবস্থায় কাজ না করলে হয় না? বড় একটা অসুখ বাঁধিয়ে ছাড়বে!
– এতো টুকু করতে দাও, ভাবি।সারাদিন বসে থেকে থেকে আর ভালো লাগে না।এই সময় টুকু তোমাদের সাথে কাজ করতে ভালো লাগে আমার। আর একা বসে থাকতে ভালো লাগে না।।
– বুঝেছি।কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় কাজ করলে আরও অসুখ বাড়বে শিখা।
– বাড়বে না ভাবি।আমার অভ্যাস আছে।
ইভা শিখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, তবে কিছু বললো না।

মাহির বিয়ের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলো। ছুটি শেষ হয়ে গেছে। এখন থেকে অফিস করছে। ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা।ইদানীং মাহির কিছুটা নমনীয় হয়ে গেছে শিখার প্রতি। আগের মতো উঠতে বসতে বিরক্তি প্রকাশ করে না। তবে খুব ভালো ব্যবহার ও করে না।
মনে হয় শিখা ওদের পরিবারের একজন সদস্য, সবার সাথে ভালো সম্পর্ক শুধু মাহিরের সাথে কোনো লেনাদেনা নেই।

রাতে শুধু রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। দুটি মানুষ একটা রুমে। তবুও কেউ কারো সাথে কথা বলে না।

চলবে…

বউ চুরি পর্ব : ১৬ ( শেষ পর্ব )

0

বউ চুরি
পর্ব :  ১৬ ( শেষ পর্ব )
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

রাত আট টা বাজে বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। এমন আচরন ইমনের থেকে কেউ আশা করেনি। ইরাবতী কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে গেছেন ।

কলিং বেল এর আওয়াজ শুনতেই ইরাবতী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। ইমনকে দেখেই কান্না করে বুকে জরিয়ে নিলো।
কোথায় ছিলি বাবা?  এইভাবে কিছু না বলে কোথায় চলে গেছিলি।
ইমন মায়ের কাধে ধরে ওঠিয়ে বললো- আরে মা কাঁদছো কেনো?  আমি এসে গেছিতো। খুব জরুরি একটা কাজে বের হয়েছিলাম। ফোনেও চার্জ ছিলো না। আর এতোটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে ফোন করার সুযোগ ও পায়নি। ভিতরে চলো তো শুধু শুধু কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়েছো।
সারাটাদিন পুরো বাড়ির মানুষ তোর জন্য চিন্তা করছে এমন কান্ড জ্ঞান হীন তুই। রেগে গিয়ে বললো মোজাম্মেল চৌধুরী।
মোতালেব চৌধুরী ও বেশ বকা ঝকা করলো ইমনকে।
ইমন তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসো কি কাজ করেছো সেটা না হয় পরে শুনা যাবে। তোমার মা সারাদিন কিছু মুখে দেয় নি। আর আমার মেয়েও সারাদিন কিছু মুখে দেয় নি । সেই যে দরজা বন্ধ করেছে আর খুলেও নি। মইন চৌধুরী কথা গুলো বলে উপরে যেতে নিলো।
মূহুর্তেই ইমনের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। বুক টা ধক করে ওঠলো।
দরজা বন্ধ করেছে মানে?  আর তোমরা এখানে খোশ গল্প করছো সবাই মিলে। রেগে গিয়ে বললো ইমন।
মইন চৌধুরী থেমে গেলো।
ভাই রাগ করো না। আমি জানালা দিয়ে চেক করেছি মুসকান শুয়ে শুয়ে কেঁদেই চলেছে। অনেক ডাকাডাকি করেও কাজ হয়নি। (দিপক)

ইমন আর এক মূহুর্তও দেরী না করে ছুটে উপরে চলে গেলো। বাড়ির সবাই নিশ্চিতে যে যার কাজে মন দিলো। ইমন এসে গেছে মুসকান কে সেই সামলে নিবে এখন আর কারো চিন্তা নেই।
দরজায় দুবার নক করেও কাজ হলো না।
মুসকান দরজা খুলো আমি খুবই ক্লান্ত।
ইমনের গলার আওয়াজ শুনেই মুসকান বিছানা ছেড়ে ওঠে দৌড়ে দরজা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে। ইমন টাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে যেতে নিয়েও পড়লো না  মুসকানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মুসকান ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে।
তুমি কোথায় চলে গেছিলে……. এইভাবে কেনো গেলে তুমি?  আমার খুব কষ্ট হয়েছে, খুব চিন্তা হয়েছে।বলেই অঝরে কাঁদতে লাগলো মুসকান।

ইমনের খুব ভালো লাগছে মুসকানের মনে তার এতোটা গুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে দেখে। বুকের ভিতর একটা প্রশান্তি কাজ করলো তার। সারাদিনের সব ক্লান্তি যেনো এক নিমিষেই দূর হয়ে গেলো।

আরে বোকা মেয়ে কেঁদো না তো খুব দরকারি কাজে গিয়েছিলাম। ফ্রেশ হয়ে ডিনার টা সেরে নিয়ে সব বলবো চলো।
মুসকান ইমনকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
আমার থেকে কাজের গুরুত্ব টাই বেশি হয়ে গেলো। সারাটাদিন কোন খোঁজ নেই। ঘুম থেকে ওঠেই কাজে চলে গেলে। একটা বার তো বলে যেতে পারতে। যা করেছো ভালোই এখন এসেছো কেনো?  সারাদিন যেখানে ছিলে সেখানে যাও। ধমকের স্বরে এক দমে কথা গুলো বলে দূরে সরে গেলো মুসকান। চোখ দিয়ে পানির পরিবর্তে এখন যেনো আগুন ঝরছে।

ইমনের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। একি রূপ তার বউয়ের। এততো রাগ, এততো অভীমান?
মুসকান আর কিছু না বলে রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
ইমন তার যাওয়ার পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।

বউ তো রেগে গেছে এখন কি হবে?  বউ এর রাগ কি করে ভাঙাবো?  একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো ইমন।
সবাই মিলে একসাথে ডিনার করলো। মুসকান নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করলো। পুরোটা সময় কারো দিকে সে তাকায় নি।
ইমন বেশ বুঝলো রাগটা বেশ ভারী হয়েছে আজ।
কিন্তু আমি কেনো না বলে বেরিয়েছি কোথায় গিয়েছিলাম সব শুনলে আর রেগে থাকবে না জানি। এইতো আর একটু সময় সব রাগ ভাঙিয়ে দিবো। মনে মনে ভাবলো ইমন।
সবার খাওয়া শেষে মোজাম্মেল চৌধুরী ইমনকে জিগ্যাস করলেন কোথায় গিয়েছিলি?
ইমন বললো- খুব জরুরি কাজে কিন্তু কি কাজ এই মূহুর্তে বলতে পারছিনা বলেই উপরে চলে গেলো ইমন। ইমনের কথায় কেউ রাগ না করলেও মুসকান আরো দ্বিগুন রেগে গেলো।
আর ঠিক করলো সে আজ ইমনের সাথে থাকবেনা তার রুমেও যাবে না এটাই তার শাস্তি আজকের জন্য।

মুসকান ওর নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আসার সময় দীপান্বিতা বার বার বলেছে – বেশী রাগ করতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজে ডাকিস না। পাগলকে ক্ষেপিয়ে তুলিস না। রাগ না করে ইমনকে ভালো করে জিগ্যাস কর কোথায় ছিলো।
মুসকান বললো- পারবোনা আমি। আর আমি ঐরুমেও যাবো না আমার রুমে আমি ঘুমাবো  তুমি যাও তো বলেই মুসকান গটগট করে এসে শুয়ে পড়েছে।

এগারোটা বেজে গেছে। এবার ইমন বিরক্ত হয়ে গেছে দু’ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছে মুসকানের জন্য।
কি করছে এতো যে এখনো রুমে আসছে না। এবার ইমনের রাগ ওঠে গেলো রেগে রুম থেকে বেরিয়ে ।
চিৎকার দিয়ে ডাকলো…… মুসকানননন………..

পুরো বাড়িটাই যেনো কেঁপে ওঠেছে ইমনের এক ডাকে। এমনিতেই সারাদিন বেশ ধকল গেছে তার। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছে। ভেবেছিলো ফ্রি হয়ে মুসকান কে সব বলবে। কিন্তু তার তো কোন খবড় নেই। তাই আর রাগ টা কে কন্ট্রোল করতে পারলো না।
ইরাবতী দৌড়ে বেরিয়ে এলো সেই সাথে দীপান্বিতা ও।
দিপক ও বেরিয়ে এসেছে ।
দীপান্বিতা ভয়ে ভয়ে ইমনের সামনে গিয়ে বললো- আসলে মেয়েটা একটু রাগ করেছে তো তাই খেয়ে দেয়ে ওর নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কথাটা শুনে ইমনের মেজাজটা পুরোই বিগরে গেলো।
ইরাবতী  কিছু না বলেই চলে গেলো । দিপক ও চলে গেলো।
দীপান্বিতা বললো- তুমিও তো ক্লান্ত ঘুমিও পড়ো যাও বলেই সেও চলে গেলো। সবাই যেনো তার সামনে থেকে চলে গেলেই রেহাই পায়।

ইমনের ডাক শুনে মুসকানের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। রাগ করে কি লাভ হলো রাগ করে আরো বিপদ ডেকে আনলাম। এখন আমার জান যায় যায় অবস্থা। মনে মনে বলছে আর আল্লাহ আল্লাহ করছে মুসকান।
দরজায় টোকা পড়তেই মুসকান ধপ করে ওঠে বোসলো।
এখন কি হবে বলেই  মুসকান কাঁদতে লাগলো ভয়ে।
কয়েকবার টোকা পড়তেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।  কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলো।
ইমন রাগি চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। কঠোর গলায় বললো- এটা করে কি লাভ হলো তোমার?  মাঝখান থেকে আমার মেজাজটা খারাপ করে দিলা। এখন যদি তোমাকে শাস্তি দেই কে বাঁচাবে তোমায়?
মুসকান কান্না জুরে দিলো। তুমি আমাকে না বলে চলে গেছিলে, তাই তো আমি তোমার সাথে আজকে না ঘুমিয়ে তোমাকে শাস্তি দিতে চেয়েছি।…..
ইমন মুসকানকে কোলে তুলে নিয়ে বললো- এখন দেখো শাস্তি কে পায় ইমন পায় নাকি মুসকান পায়। বলেই নিজের রুমে চলে গেলো ইমন।
মুসকান কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো…সেও তার উপর শুয়ে পড়লো। মুসকান বাঁধা দিলেও কোন কাজ হলো না । সারারাত তার উপর রোমান্টিক অত্যাচার চালিয়ে গেলো। সারারাত কেউ চোখের পাতা এক করেনি । শেষরাতে ইমন মুসকান কে বুকে জরিয়ে নিলো আর বললো-
আমাকে ছেড়ে এক রাত অন্যকোথাও থাকার কথা ভুলেও চিন্তা করবে না  আর যদি করেছো আজ যা হলো এটার রিটার্ন হবে। কোন ছাড়াছাড়ি নেই যতোই কান্নাকাটি করো লাভ নেই যেমনটা আজ হলো না।
মুসকান কোন কথা বললো না শুধু গুটিশুটি মেরে ইমনের বুকে শুয়ে রইলো।
ইমন ও মুসকানকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো-

আমি ঐ লোকটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আর লোকটাকে ময়মনসিংহ পৌঁছে দিয়ে এসেছি। আর সব খোঁজ খবড় নিয়ে এসেছি।
মুসকান ইমনের দিকে তাকালো ড্রিম লাইটের আলোতে ঝাপসা দেখতে পেলো। ইমন আবারো বললো- হুম  ওনি তোমার বাবা নয় তবে ওনাকে তোমার বাবাই পাঠিয়েছে। তোমার নানী যার থেকে তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম। ওনি মারা গেছেন তিনমাস হলো। মারা যাওয়ার আগে ওনি সত্যিটা ওনার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে বলে গেছিলেন।
তোমার মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে কিন্তু তোমার বাবা মানুষ টা খুব একটা সুবিধার না । এই কথাটা আমি আগেও শুনেছি আর এবারেও শুনেছি। ওনি মেয়েকে দেখার ইচ্ছা পোষন করেছে একটাই কারনে সেটা হচ্ছে লোভ । আর ওনার প্ল্যান ছিলো আমার ঠিকানা খুঁজে বের করে তোমাকে খুঁজে বের করে তোমাকে তার পরিচয় দিবে। আর তারপর তোমাকে ইমোশনালি ব্ল্যামেইল করবে। তুমি মা বাবার টানে তার সাথে চলে যাবে আর ওনি তোমাকে আটকিয়ে আমাকে চাপ দিয়ে টাকা পয়সা হাসিল করবে।
আর এসব আমি ঐ লোকটার মুখ থেকে বের করেছি। বয়স্ক মানুষের গায়ে হাত আমি তুলিনা তাই টাকার লোভ দেখিয়ে সব কথা বের করেছি।আর ওনাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ময়মনসিংহ রেখে এসেছি আর তোমার বাবার সাথেও দেখা করে এসেছি। আর বলেও এসেছি দ্বিতীয় বার যেনো এমন কথা চিন্তা ও না করে। তাহলে একদম জানে মেরে দিবো সবগুলো কে।

মুসকান কথাগুলো শুনে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমনকে।
ইমন ও তাকে জরিয়ে নিয়ে বললো- ইমন চৌধুরীর সাথে খেলতে এসেছিলো খেলা শুরুর আগেই শেষ করে দিয়েছি সব।
কিন্তু আমি একটা জিনিস ভেবেছি তোমার মা কে আমি ঢাকা নিয়ে আসবো। তুমি ভয় পেওনা আমাদের কাছে না। তোমার কাছেও না কিন্তু ওনি তো তোমার জন্মদাএী মা। ওনার জন্যই আমি তোমাকে পেয়েছি তাই ওনার একটা নিরাপদ জায়গা দেওয়া আমার কর্তব্য। তেমার বাবা ওনাকে খুব টর্চার করে সেই টর্চার থেকে আমি ওনাকে রেহাই দিতে চাই।
ইমন ওর প্ল্যান সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই বললো। কিন্তু সেসব মুসকানের কানে পৌঁছাল না। কারন সে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইমন যখন টের পেলো মুসকান ঘুমাচ্ছে তখন ভাবলো- এই মেয়ে আজ গেছে………..  সারাটাদিন মাটি করে দিয়েছি। ( মুচকি হেসে)

সেদিন ইমন সারাদিন বাড়িতেই কাটালো। সারাদিন বউ এর সেবা করতে হলো রুম থেকে মুসকানকে বের হতে দিলো না। কারন তাহলে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হবে। মুসকানও সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালো সকালে শুধু ইমন ভাত খাওয়িয়ে একটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিয়েছে।  দুপুরে দুজনই রুমে খাওয়া দাওয়া করলো।দিন পেরিয়ে রাত হলো। রাত পেরিয়ে দিন। এভাবেই চলতে থাকলো তাদের ভালবাসাময় সময় গুলো। এর মধ্যে তাদের বিয়ের ডেট ও ঠিক করা হলো।
খুব ধুমধামের সাথে তাদের তৃতীয় বার বিবাহ সম্পন্ন হলো। তাদের বিয়ের একমাস বাদেই দিপক ও বিয়ে করলো। দুই বউ নিয়ে চৌধুরী পরিবার বেশ রমরমা হয়ে গেলো।
দিপকের বউ মুসকানের থেকে দুবছরের সিনিয়র থাকায় সেও মুসকান কে ছোট বোনের মতোই ভালবাসে। এক সম্পর্কে মুসকান দিপকের বউ এশার বড় আরেক সম্পর্কে ছোট ননদ। বয়সে ছোট হওয়াতে সে মুসকান কে নাম ধরেই ডাকে।

কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস। মুসকানকেও ভার্সিটিতে ভর্তি করানো হয়েছে। ইমনও বিজনেসে মন দিয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছে। বিজনেসের পাশাপাশি ইমন মুসকানকেও যথেষ্ট সময় দেয়  অফিস আর সংসারে সময় দিতে গিয়ে পলিটিকস জীবন থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসেছে। কিন্তু তার চ্যালারা মাঝে মাঝেই তার সাথে দেখা করে যায়। যে কোন জরুরি মিটিং এ ইমনকে থাকতেই হয়। তবে খুব কম সময় দেয়। মুসকান এগুলো তেমন পছন্দ করেনা৷ এছাড়া মারামারি কাটাকাটি সে ভীষণ ভয় পায়।
তার কথাতেই ইমন সেদিকে তেমন ভীরে না। তবে বিপক্ষ দলরা এখনো বাঘ এর মতো ভয় পায় ইমন কে।

একদিন মুসকান ইমন কে জিগ্যাস করেছিলো- আচ্ছা পলিটিকস তো তোমার নেশা। তাহলে এটা ছাড়লে কেনো? 
ইমনের উওর ছিলো –
কই ছাড়লাম আর ছেড়েছি কিন্তু ভুলিনি তো। প্রয়োজনে আবারো সেই নেশায় মত্ত হতে পারবো।
তবে কি জানো? 
মুসকানের কানের কাছে এসে ভারী আওয়াজে –
তোমার চেয়ে ভয়াবহ আর কোন নেশা আমাকে আজও ছুঁতে পারেনি!?

একবছর পর –

ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই মাথা ঘুরে পড়ে যায় মুসকান।
ইমন গাড়িতে ওয়েট করছিলো মুসকানের জন্য দিপুর ডাকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। দিপক আর এশা হানিমুনে গিয়েছে। বাড়িতে তেমন কেউ নেই মোতালেব চৌধুরী ও গ্রামের বাড়িতে গেছেন। মোজাম্মেল চৌধুরী আর মইন চৌধুরী আগেই বেরিয়ে গেছেন।
ইরাবতী দীপান্বিতা ছুটে এলো। ইমন মুসকান কে সেন্সলেস অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবরে যায়।
তাকে পাজাকোল করে নিয়ে উপরে চলে যায়।
দিপু ডক্টর কে ফোন করে উপরে যায়। ইরাবতী দীপান্বিতা মুসকানের চোখে মুখে পানি ছিটাতেই তার জ্ঞান ফিরে।
ইমনের কোলে মাথা মুসকানের চোখ খুলতেই ইমনের মুখ ভেসে আসে।
সবাই একসাথে বলে ওঠলো –
তোর খারাপ লাগছে বলবিতো নাকি?  ( দীপান্বিতা)
শরীর দূর্বল লাগছে একবার বলতে পারতে জোর করে ভার্সিটিতে কে যেতে বলেছে তোমায়?  ( ইমন )
আহ তোরা মেয়েটা কে এখন এসব বলা বাদ দিবি। ইরাবতী কথাটা বলেই মুসকানের পাশে এসে বোসলো।
মুসকান কেমন লাগছে?? 

মামনি মাথাটা বেশ ভারী লাগছে।
ইমন কপালে গলায় হাত দিলো।
কই জ্বর তো নেই তাহলে এমন হওয়ার মানে কি?
ইরাবতী মুচকি হেসে ওঠে পড়লো। দীপান্বিতা ও কিছু একটা আচ করলো।
ইমনের তার মাকে বেশ সন্দেহ হলো সেই সাথে মুসকান কেও।

কারন বেশ কিছুদিন যাবৎ ই মুসকানকে সে খেয়াল করছে৷ খাওয়া দাওয়া একদম ই করতে চায় না।
খাওয়ার মাঝে বমি হওয়াটা তো নিত্যদিনের স্বভাব হয়ে গেছে। ইমন বেশ চিন্তিত মুখে বসে রইলো।

ডক্টর এসে মুসকান কে চেক আপ করলো। আর বললো শরীর তো বেশ দূর্বল ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করোনা নাকি।
ইমন আজ থেকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করাবে । খেয়াল রাখবে ওর আর কিছু টেস্ট দিয়ে দিচ্ছি কালই গিয়ে এগুলো করিয়ে নিবে।

ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইমনের কাঁধে হাত রেখে বললো- বাবা হতে চলেছো সবাইকে মিষ্টি মুখ করিও।
মূহুর্তেই ইমনের শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেলো।
সে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
আলাদা এক ভাললাগা বয়ে গেলো তার শরীর মন জুরে।
কিন্তু এটা কেনো হলো?
আমি যে পই পই করে বললাম আরো এক-দুবছর পর কনসিভ করবে। আমার কথা না শুনেই এতোবড় সিদ্ধান্ত একাই নিয়ে নিলো নাকি এখানে আমার মায়ের ও হাত আছে  মায়ের দিকে তাকালো ইমন। ইরাবতীর হাসি মুখটা মিলিয়ে গেলো সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নিচে।
ইমন এবার সিওর হলো মুসকান তার মায়ের কথাতেই ইমনের অবাধ্য হয়েছে। সে কোন প্রকার সেফটি নেয়নি। মনে মনে খুশি এবং রাগ দুটোই অনুভব করলো ইমন কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলো না।

আচ্ছা আংকেল নিচে গিয়ে বসুন মা মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করছে। ইমন জানে তার মা এটাই করছে এখন ।
দিপু তো প্রচুর খুশি সে একসাথে মামা, চাচা দুটোই হবে। দৌড়ে গিয়ে দিপককে ফোন করে জানালো সে।
দীপান্বিতা ও খুশি হয়ে তার স্বামী কে ফোন করতে গেলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রুমে ইমন আর মুসকান শুধু আর কেউ নেই।
ইমন মুসকানের পাশে গিয়ে বোসলো। ধীরে ধীরে কান এগিয়ে নিলো মুসকানের পেটের দিকে।

এই এখানে কে আছিস??  এততো আগেই আসার জন্য পাগল হয়ে গেছিস?? মা কে একটু ভালবেসেছি বলে হিংসে হয়েছে নাকি খুব??  দিলিতো একবছর আমার আদরে জ্বল ঢেলে। এখন তো আদর করতে গেলেও হাজার বার ভেবে করতে হবে।
মুসকান লজ্জায় একদম লালে লাল হয়ে গেছে৷ ইমনের বলা কথাতে খুশিতে তার চোখ গড়িয়ে পানি বের হয়ে গেলো।
ইমন ধীরে ধীরে ওঠে মুসকানের দিকে তাকালো।
মুসকান চোখ সরিয়ে নিলো।

ইমন স্থির দৃষ্টিতে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো- ইচ্ছা তো করছে ইচ্ছারকম শাস্তি দেই। আমার কথার অবাধ্য হওয়া……….  দাঁড়াও এই শাস্তি তোলা রইলো। তোমার মতলব আমার বেশ বোঝা হয়েছে। আমার কাজের উপর সবসময় তো তোমার হিংসে তাইনা। আর এইজন্যেই এটা করলে এখন কাজ বাদ দিয়ে মা আর বাবু সামলাতে হবে।
আমি ভেবে পাইনা তোমার এততো সাহস কই থেকে আসে। নিজেইতো বাচ্চা আরেকটা বাচ্চা কে কি করে সামলাবে। বার বার বললাম মা যা ইচ্ছা বলুক তুমি অনার্স টা শেষ করো তারপর বেবী নেওয়ার কথা ভাববো। পড়াশোনার মাঝে এমন কাজ মোটেই ঠিক হয়নি। আর বয়স কতো হুম বিশ ই তো হয়নি। বিশ পড়তেও দিলে না একটা কথাও শুনোনা।
এই আজ বললাম কথার অবাধ্য হবে তো একদম খেয়ে ফেলবো বলে দিলাম।
এখন আর একা নেই সাথে আরেকজন ও আছে। যা বলবো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। নয় এমন অবস্থা করবো দেখে নিও বলেই মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো  আর ভাবলো-
কতোটা ভাগ্য নিয়ে যে এই মানুষ টাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি……………………….
কিন্তু এখন তো আমার উপর আরো ভালবাসার টর্চার হবে শুধু তো পুচকির বাবা না সবাই তো এখন আমাকে কেয়ার করে করে পাগল বানিয়ে দিবে ?।
শরীর দূর্বল থাকায় সুখময় কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো মুসকান।

ইমন চিন্তা করো না যা হয়েছে সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।

সেটা তো আমি করবো কাকি। বাবা হওয়ার আনন্দ তো আমার মাঝে অবশ্যই এসেছে। আর মুসকানের থেকে বেশী খুশি আমি হয়েছি। কিন্তু তোমরা সবাই জানো মুসকান খুবই দূর্বল। মানসিক শারীরিক দুদিক থেকেই বেশ দূর্বল। ও আর সবার মতো তেমন স্ট্রং নয়। আমি চেয়েছিলাম একটা বয়সে আসুক বিশ পার হোক পঁচিশ বছর বয়সের মধ্যেই একটা বেবী নিতে চেয়েছিলাম। আর এটা আমি সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক ভাবেও মুসকান তৈরী হতো। বাচ্চা নেওয়ার ও একটা পারফেক্ট বয়স আছে। আর আমি মনে করি মুসকানের এই বয়স টা বিয়ের জন্য পারফেক্ট হলেও বাচ্চা নেওয়ার জন্য পারফেক্ট না।
আমি মুসকান কে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইছিলাম না কাকি।
চিন্তা করো না কিছু হবে না আল্লাহ ভরসা। কাল গিয়ে চেক আপ করে নিও আমরা সবাই মিলে ওর যত্ন নিবো।
বাড়ির সবাই ইমনকে বুঝালো। ইমনও আল্লাহ ভরসা বলে এসব চিন্তা বাদ দিলো।
পুরো বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলে গেলো।
মোতালেব চৌধুরী ও শুনে বেশ খুশি হলো। সবাই বেশ খুশি। সেই সাথে মুসকানের আদর ও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
পরেরদিন সব টেস্ট পজিটিভ এলো। ইমন মুসকানকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলো।

ইমন মুসকান কে প্রচুর প্রচুর ভালবাসা দিচ্ছে সারাদিন ইমন অফিস সামলিয়ে মুসকানের ও খোঁজ নিচ্ছে। মাঝে মাঝে দুপুরে বাড়ি এসে মুসকানের সাথে একসাথে লাঞ্চ করছে। বাড়িটা যেনো একদম পরিপূর্ণ।

চৌধুরী বাড়ির সবাই দিনগুনে যাচ্ছে নতুন সদস্য আসার।
ইমন মুসকান ও দিন গুনে চলেছে। তিনমাসের প্র্যাগন্যান্ট মুসকান। ডক্টরের থেকে চেকআপ করে বাড়ি ফিরেছে ইমন আর মুসকান।
ইমন মুসকান কে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিচ্ছে আর নানারকম গল্প করছে।
গল্পের এক পর্যায়ে মুসকান বললো- আচ্ছা পুচকির নাম কি হবে???…………..

ইমন বললো-  পুচকোও তো হতে পারে……

না না পুচকো না আমাদের পুচকি হবে । তুমি নাম বলো???

ইমন বেশ কিছুক্ষন ভেবে খাবাড় প্লেট টা রেখে হাত ধুয়ে মুসকান কে বুকে জরিয়ে নিলো। আর বললো-

আমাদের পুচকির নাম হবে তোমার নামের প্রথম ওয়ার্ড আর আমার নামের শেষ ওয়ার্ড।

মুসকান বললো-
কিহ……………..

ইমন ঠোঁটের কোনে হাসির ঝলক নিয়ে বললো-

❤মুন❤

# সমাপ্ত #

বউ চুরি পর্ব :১৫

0

বউ চুরি

পর্ব ঃ ১৫

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

ইমন গভীর দৃষ্টিতে মুসকানের দিকে তাকালো। অমন দৃষ্টিতে চোখ রাখার সাহস মুসকানের হলো না চোখ সরিয়ে নিলো সে।
ইমন মুচকি হাসলো……..
মুসকান এদিকসেদিক তাকিয়ে আবারো ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো- কিছু কি হয়েছে?  তখন এমন করলে কেনো?
ইমন ওঠে বোসলো মুসকানকে কাছে টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
মুসকান.. কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না তো??
ইমনের হঠাৎ এমন প্রশ্নে মুসকান ঘাবড়ে গেলো।
আমাকে কি এখনো বিশ্বাস করছেনা…… ( মনে মনে )
কি হলো বলো?
মুসকান দুহাতে গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো ইমনকে। বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে বললো- অমন ভুল করার সাহস আমার আর হবে না..।
ইমনের বুকের বা পাশে কান পেতে আছে মুসকান তার হৃদস্পন্দন গুলো গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেই সাথে নিজের হৃদস্পন্দনের ও গতি বেড়ে চলেছে।
ইমনের অশান্ত মন যেনো শান্ত হয়ে গেছে। মুসকানের এই একটা কথাতেই তার ভয় অনেক টাই কেটে গেছে  ।
ইমন বললো- মুসকান যদি কখনো তোমার আসল বাবা -মা  আসে তোমার কাছে তাহলে তুমি কি করবে….?
মূহুর্তেই মুসকান ইমন কে ছেড়ে ওঠে পড়লো।
চোখ গুলো বেশ ভয়ার্ত আর অসংখ্য প্রশ্নে ভরা চাহনীতে তাকালো ইমনের দিকে।
ইমনের ও খানিকটা গলা শুকিয়ে গেছে। করুন চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। এতোটা অসহায় বোধ হয় তার আর কখনো লাগে নি।
মুসকান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো – কি বলছো?
ইমন নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো –
একসপ্তাহ হলো ঢাকায় একজন লোক এসেছে। বয়স ৫০ হবে বা তার বেশি। লোকটা ময়মনসিংহ থেকে এসেছে। আর আমার খোজ করছে শুধু যে আমার তা না রূপম ভাইয়ার খোজ ও করছে। সঠিক ঠিকানা না থাকায় হয়তো আমার কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
মুসকান কাঁপা গলায় বললো- লোকটা কে??
ইমন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- হয়তো তোমার বাবা।
মুসকান কথাটা শুনে নিজের দুকান দুহাতে চেপে ধরলো।
না….. ওনি আমার বাবা না। ওনি আমার বাবা না আমার বাবা তো বিদেশে আছে। আমি আর কাউকে বাবার জায়গা দিতে পারবো না। আর কাউকে মায়ের জায়গা দিতে পারবো না। প্লিজ আমাকে তুমি এসব কথা আর বলো না আমি সহ্য করতে পারিনা। চিৎকার করে বলেই অঝরে কাঁদতে লাগলো।
ইমন মুসকানকে একদম কাছে টেনে বুকে চেপে ধরলো । এই পাগলি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
ভয় পাচ্ছো কেন কিছু হবে না আমি আছিতো।
মুসকান ইমনের শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো।
আমি কোথাও যাবো না, কোথাও না । আমি আম্মু,মামনি,বড় বাবা,ভাইয়া,দিপু,তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। এক মনে বলে যাচ্ছে আর কেঁদে চলেছে।
মুসকানের এই কান্নামাখা কথাতে ইমনের বুকটা একদম প্রশান্তি তে ভরে গেলো। ঠোঁটে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।
মুসকানকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো।
নাহ আমি যা ভেবেছিলাম ভুল  সত্যিতো জন্মের পর থেকে এবাড়ির সবাইকে দেখে বড় হয়ে ওঠেছে। সবার আদর ভালবাসায় বড় হয়েছে। শুধু জন্ম দিলেই বাবা – মা হওয়া যায় না।
রক্তের সম্পর্কই বড় সম্পর্ক নয়  আত্মার সম্পর্কই বড়।
এবাড়ির সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। আর সব থেকে বড় কথা ও আমার বউ। ওর ওপর এখন সবার আগে আমার অধিকার।

এই বোকা মেয়ে………….. কে বলেছে আমাদের ছেড়ে যেতে ?
আর তুমি গেলেই আমরা যেতে দিবো কি করে ভাবলে?
তুমি তোমার স্বামীকে কি এখনো চিন্তে পারলেনা??
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। বুকে মাথা রেখেই বললো- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না… পারবো না তোমায় ছেড়ে থাকতে…. আমার আর কাউকে চাইনা। তোমরা থাকলেই হবে। যাদের চিনি না জানিনা তাদের কাছে কেনো যাবো আমি। যাদের কখনো দেখিইনি… আর তারা এতোবছর পর কেনো এলো হঠাৎ? এতোবছর তো এলো না। আমি ওদের চাইনা… এটাই আমার বাড়ি এখানেই আমার সব রয়েছে। আমি আর কোথাও যাবো না। মুসকান এক দমে কথা গুলো বলে থেমে গেলো।
ইমন কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।
সত্যি তো এই কথাটা তো আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। এটা তো আমার মাথায় আসেনি।
আর মুসকান কে আমার নিয়ে আসার ব্যাপারে তো একজনই জানতো আর সে হলো ওর নানী। ওর মা ও তো জানতো না। তাহলে ঐ লোকটা কে কি চাই ওনার।  যে করেই হোক আমাকে জানতে হবে। বাবা যা করেছে একদম ঠিক আমি সব ঝামেলা শেষ করেই অফিস যাবো। আগে আমার হৃদপিন্ড টা স্বস্থিতে রেখে নেই। এমনি এমনি আমি সব কাজ ফেলে আসিনি আজ।
এই একটা পুচকে মেয়ে যে আমার কাছে কতোটা ইমপরটেন্ট সেটা শুধু এক উপরওয়ালাই জানে। সব ঝামেলা মিটাবো, সব টেনশন দূর করবো তারপর বড় করে অনুষ্ঠান করে আবারো তৃতীয় বার বিবাহ সম্পন্ন করবো। এক বউকেই তিনবার বিয়ে।
সুখের একটা সংসার সাজাবো…. আমার পিচ্চি বউ এর কোল আলো করে একটা পুচকি আসবে। আমি সামলাবো বউ আর বউ সামলাবে আমার সন্তান কে।
আমার এতো স্বপ্নের মাঝে আরেকটা বাঁধা কোনভাবেই আসতে দিবো না। এর জন্য যা করতে হবে যে অবদি যেতে হবে আমি এই ইমন চৌধুরী যাবো। মনে মনে এসব কথা ভেবে ইমন মুসকানকে বললো-
মুসকান ওঠো কেঁদো না যেই আসুক না কেনো তুমি এটা ভেবো না যে তোমাকে দিয়ে দিবো বা তারা তোমায় নিয়ে যাবে। বউ তুমি আমার। তুমি শুধু এ বাড়ির মেয়ে না এবাড়ির বউ তুমি।
মোজাম্মেল চৌধুরীর একমাএ পুএবধূ তুমি। তোমার উপর এ বাড়ির লোকের ই সবার আগে অধিকার।
বলেই মুসকানের চোখের পানি মুছে দিলো।
যাও এবার মায়ের কাছে গিয়ে কাজে একটু হেল্প করো কেমন। আমার কিছু কাজ আছে সেগুলো ও আমি সেরে নেই।
বলেই মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু খেলো।
মুসকান সব চিন্তা দূর করে দিলো। ইমন থাকতে তার আর কোন চিন্তা নেই। চোখ বুঝে ভরসা করার মতো মানুষ তার আছে। ভেবেই নিচে চলে গেলো।
এদিকে ইমন তার কিছু বন্ধু দের ফোন করে লোকটাকে কড়া নজরে রাখতে বললো। আর বললো এক সপ্তাহ আমি বাড়িতে রিল্যাক্সে কাটাতে চাই।
সব কাজ বাদ রেখে। কেউ যেনো আমাকে ডিসটার্ব না করে খেয়াল রাখিস।

রাতে সবাই মিলে একসাথে ডিনার করলো।
সবাই বেশ খুশি ইমন সব কাজ অফ করে বাড়ির সবাইকে সময় দিবে  । মইন চৌধুরী ও দুদিন বাদে ফিরবেন । বাড়িটা আবারো রমরমা হয়ে ওঠেছে।

ইমন ইউটিউবে শাড়ি পরানো শিখে নিচ্ছে। একদিন শাড়িতে বউ দেখে তার মন ভরে নি । সে চায় প্রতিদিন তার বউকে শাড়ি পড়া দেখতে।
মুসকান রুমে এসে বিছানা ঠিক করে ইমনের দিকে তাকালো।
ইমনও একবার তাকিয়ে ওঠে পড়লো।
শাড়ি পড়তে পারোনা তুমি তাইতো……
না তো  কাল তো আম্মু পড়িয়ে দিয়েছিলো।

হুম আমি মায়ের রুম থেকে আসছি….. তুমি শাড়ির সাথে আর যা যা পড়া লাগে পড়ে নাও। কথার নড়চর যেনো হয়না তাহলে কপালে দুঃখ আছে….
বলেই ইমন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মুসকানের চোখ কপালে….. এ আবার কেমন থ্রেড। শাড়ি পড়া নিয়ে থ্রেড দিয়ে গেলো ?।
মুসকান তারাহুরো করে ব্লাউজ,পেটিগোট পড়ে নিয়ে ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখলো।
ইমন ইরাবতীর থেকে একটা জাম কালারের কাতান শাড়ি নিয়ে রুমে এলো । আর ঠিক করলো কালকেই মুসকানের জন্য শাড়ি কিনতে যাবে সে।

রুমে ঢুকেই মুসকানকে দেখে ইমনের বড্ড হাসি পেলো। একদম পুতুল পুতুল লাগছে তোমাকে…
মুসকান লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ইমন মুসকানের কাছে এসে ওড়নায় হাত দিতেই মুসকানের বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
ইমন ওড়নাটা সরাতেই মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
ইমন শাড়িটা যতোক্ষন পড়াচ্ছিলো ততোক্ষন মুসকানের চোখ দুটো বন্ধই ছিলো শাড়ি পড়ানো শেষে ইমন বললো –
এই যে এখন চোখ টা খুলেন। একদিন শাড়ি পড়েতো পাগল করো দিয়েছেন । এখন থেকে রোজ শাড়ি পড়বেন ওকে। আজ আমি পড়িয়ে দিলাম এরপর নিজেও শিখে নিবেন।
মুসকান চোখ খুললো –
আমি শাড়ি সামলাতে পারিনা হাঁটতে পারিনা…. ( আল্হাদী স্বরে বললো)
ইমন মুসকানকে বিছানায় বসাতে বসাতে বললো-
কি পারেন আপনি, কি সামলাতে পারেন তাহলে কোন কিছুই তো সামলাতে পারেন না আধাঘন্টা আদর ই সহ্য করতে পারেন না কান্না কাটি জুরে দেন। এখন থেকে সব কিছু সামলাতে শিখুন। সবার আগে বরকে সামলান বলেই ইমন ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেলো।
মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ইমনের কথা শুনে তার পুরো শরীর শিউরে ওঠেছে। ধ্যাত বলেই চোখ দুটো দুহাতে বন্ধ করে ফেললো।
ইমন চিরুনি নিয়ে এসে মুসকানের পিছনে বোসলো।
চুলগুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে। রাতে চুল খুলে ঘুমাবে না…… মুসকানের কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো- এগুলোও বড্ড জ্বালায় আমাকে বলেই চুলগুলো আচড়াতে শুরু করলো।
মুসকানের পুরো কান জুরে শিহরন বয়ে গেলো। লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। সেই সাথে বড্ড ভালোও লাগছে তার।
স্বামীর এতো ভালবাসা এতো আদর পেতেও অনেক ভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হয়। এইদিক থেকে সে ভাগ্যবতী।
নিজ হাতে শাড়ি পরিয়ে দেওয়া চুল আঁচড়ে দেওয়া স্বামী কজনের ভাগ্যে জোটে???
মুসকান সুখের সাগরে ভাসতে শুরু করলো। ইমন তার চুল আঁচড়ে সেগুলো বেনুনি বেঁধে দিলো।
এসব কাজ সে কখনো করেনি। শুধুমাএ মুসকানের জন্যই এসব ইউটিউব ঘেটে ঘেটে শিখে নিয়েছে।

সেদিন ও তাদের ভালবাসাময় রাত কাটলো। দিনটা মুসকানের ঘুমে ঘুমেই কাটলো। ইমন তাকে খাওয়িয়ে একটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আর সে পুরোদিন ঘুমিয়েই পার করলো। আর ইমন তার জন্য তেরোটা শাড়ি নিজে পছন্দ করে কিনে আনলো।
তারপরের দিন মইন চৌধুরী ফিরলেন । সবাই খুব খুশি। মইন চৌধুরী আর মোজাম্মেল চৌধুরী মোতালেব চৌধুরীর সাথে বেশ সময় কাটালেন। মুসকানও এখন মোতালেব চৌধুরীর সাথে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দিনগুলো তাদের সবার ভালোই কাটছিলো।
দেখতে দেখতো ছয় দিন কেটে গেলো।
বাড়ির সবাই ইমন মুসকানের বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য ওঠে পড়ে লাগলো। ইমন কিছুদিন সময় চেয়ে নিলো। আর কেউ না জানলেও মুসকান ঠিকি বুঝলো কেনো ইমন সময় নিচ্ছে।

রাত দশটা বাজে মুসকান শাড়ির আঁচল কাধে ভালোভাবে দিয়ে চুলগুলো আঁচড়াচ্ছিলো। আর ইমন বিছানায় শুয়ে তাকে দেখছিলো। এই কদিনে মুসকান শাড়ি পড়াটা শিখে গেছে। দিনের বেলা শাড়ি না পড়লেও রাতে তাকে ঠিকি শাড়ি পড়তে হয়। ইমনের ই আদেশ এটা। তবুও শাড়ি সামলানোটা মুসকানের কাছে বেশ কষ্ট দায়ক । কিন্তু স্বামীর ভালোলাগার জন্য তাকে এটুকু তো করতেই হবে।

ইমন এক ধ্যানে মুসকানকে দেখে যাচ্ছে আর ভাবছে –
দিন দিন যেনো চেহেরার উজ্জ্বলতা টা বেড়ে যাচ্ছে। আগের থেকে বড্ড বেশিই সুন্দরী হয়ে গেছে মেয়েটা।
পুরো শরীরে আলাদা এক সৌন্দর্যতা ভর করেছে। একদম পরিপূর্ণা যুবতী লাগছে মুসকানকে তার কাছে।
মুসকান চুলগুলো বেঁধে ঘুমানোর প্রিপারেশন নিয়ে বিছানায় এসে বোসলো।
শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে তো। ( ইমন )
মুসকান শুয়ে পড়লো ধীরে ধীরে ইমনের বুকে এগুতো লাগলো। কিন্তু ইমন আজ তাকে বুকে নিলো না। সে নিজেই ধীরে ধীরে মুসকানের দিকে এগুলো মুসকান কিছু বুঝে ওঠতে পারলো না।
কি করছো…. আমায় বুকে নাও…….

উহম…………কোন কথা না……..
ইমন মুসকান কে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে তার বুকে মাথা রাখলো।
আর ভারী আওয়াজে বললো- ডিস্টার্ব করবে না বউ…  শান্তির একটা ঘুম দিবো….. চুপচাপ ঘুমাও নয়তো খবড় আছে।
মুসকান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
মানুষ টা সত্যি অদ্ভুত যেমন ভালোবাসতে পারে তেমন ভালবাসা আদায় ও করে নিতে জানে। (মনে মনে)
মুসকান ইমনের মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে লাগলো। চুলগুলো হালকা টেনে দিলো ইমন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। মুসকান ও ঘুমিয়ে পড়লো।
এ যে এক মধুর সম্পর্ক। স্বামী স্ত্রীর পরম ভালবাসার বন্ধন। দুজনেই যেনো দুজনের পরিপূরক  একে অপরের দুনিয়া। যেখানে কারো সাধ্য নেই তাদের আলাদা করার। তীলে তীলে গড়ে তুলা সম্পর্ক গুলো সত্যি খুবই সুন্দর হয়।
ইমন মুসকান কে জয় করে নিয়েছে তার নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়ে।
পানির অপর নাম জীবন,,, আর ইমনের জীবনের অপর নাম মুসকান ❤❤

ইমন অনেক ভোরে ঘুম থেকে ওঠে বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। কাউকে কিছু না বলে মুসকান ঘুমিয়ে ছিলো তাই তাকেও কিছু জানায় নি।
মুসকান ঘুম থেকে ওঠে ইমনকে দেখতে পেলো না।
বাড়ির কেউ ই তাকে দেখেনি।
মুসকান ফোন করলেও ফোন বন্ধ পেলো।
এমন কাজ সে কখনো করে না। মুসকান বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলো ইমনের খবড় নেই। বাড়ির সবাই ও এবার চিন্তা করতে লাগলো। মোজাম্মেল চৌধুরী, দিপক তেমন চিন্তা করছে না কারন তারা এটা সিওর ইমন কোন জরুরি কাজে বের হয়েছে। কিন্তু ইমনের মা, আর বউকে এটা তারা বুঝাতেই পারছে না।
এদিকে মুসকান কেদে কেঁদে অস্থির। সকালে খায়ও নি। মইন চৌধুরী জোর করে এক লোকমা খাওয়িয়ে ছিলো আর খাওয়াতে পারেনি।
মুসকান সারাদিন অপেক্ষা করলো তবুও ইমন ফিরলো না। এবার বাড়ির সকলেই চিন্তায় পড়ে গেলো।
কাজে বের হলে তো একবার জানাবে ফোন করে। কোন বিপদ হলো না তো???
মুসকান বিপদের কথা শুনে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। সবার এতো ডাকা সত্তেও সে দরজা খুললো না।

চলবে……………..

বউ চুরি পর্ব :১৪

0

বউ চুরি

পর্ব ঃ ১৪

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

রুমে প্রবেশ করে বিছানায় চোখ পড়তেই ইমন শখড খেলো। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো তার। ইমন কে দেখে মুসকান বেশ লজ্জা আর অসস্থি তে পড়ে গেলো। শাড়ির আঁচল বার বার টেনে কাঁধে জরিয়ে নিচ্ছিলো।
ইমন মুসকানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই রইলো।
আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?  সত্যি মুসকান শাড়ি পড়েছে তো? ধীর পায়ে এগিয়ে ঘড়ি আর ওয়ালেট টা টেবিলে রাখলো।
ইমনের গলা দিয়েও আজ স্বর বের হচ্ছে না। এসি চলা সত্তেও মুসকান ঘেমে ওঠছে নাক, কপাল ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ইমনের ও কপাল ঘামতে শুরু করেছে।
ইমন দ্রুত পায়ে বাথরুন চলে গেলো।
মুসকান এর বুকের ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে।
আমার সাথে তো কথাই বললো না। তাহলে কি শাড়ি পড়া পছন্দ হয়নি, আমাকে কি শাড়িতে ভালো লাগছে না। নানারকম ভাবনায় মুখ টা চুপসে গেলো মুসকানের।
এদিকে ইমনের বুকের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আমার স্বপ্ন কি সত্যি হতে যাচ্ছে?  আমার এতো দিনের ইচ্ছা টা আজ পূরন করলো মুসকান। আমার সেই পিচ্চি বউ টা আজ শাড়ি পড়েছে। কতোই না ইচ্ছা ছিলো বউ টা কে শাড়ি পড়া দেখবো, ঘুম ভাঙতেই এলো মেলো শাড়ির মাঝে মুসকান কে দেখবো । আর ও লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকাবে। আমিও পরম আবেশে জরিয়ে নিবো আমার মাঝে।
ইমন চোখে মুখে পানি দিলো তার বুকের ভিতর বেশ অস্থিরতা কাজ করছে। এই অস্বাভাবিক অস্থিরতা কি স্বাভাবিক করতে পারবে মুসকান?  এইভাবে আমার সামনে আসলে নিজেকে সামলানো টা যে বড় দায় হয়ে পড়ে। ওকে কি কেউ এভাবে পাঠিয়েছে নাকি নিজের ইচ্ছাতেই। ইমন বেশ দ্বিধায় পড়ে গেছে খুব চেষ্টা করছে নিজেকে সামলানোর কিন্তু পারছেনা।
আমিতো চেয়েছিলাম ও নিজে থেকে আমার কাছে আসবে  স্ত্রীর অধিকার চাইবে। কিন্তু ও তো মুখ ফুটে সেটা চায়নি।  একটা গভীর শ্বাস ছেড়ে তয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ইমন।

চুপ করে বসে এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচড়াচ্ছে সমান তালে। ইমন কে দেখে আরেকটু গুটিশুটি মেরে বোসলো। ইমন মুসকান কে এইভাবে দেখে তয়ালে টা রেখে বললো –
রাতে খাওয়া হয়েছে??
মুসকান মাথা ঝাকিয়ে হুম বললো।
ইমন মুসকানের পাশে এসে বোসলো। আর বললো-
হঠাৎ শাড়ি পড়লে…. কে পড়িয়ে দিলো…?

মুসকান নিচু স্বরে বললো- আম্মু।

ওহ শাড়ি পড়েই ঘুমাবে?
ইমনের এমন প্রশ্নে মুসকান চোখ তুলে তাকালো ইমনের দিকে। দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে গেলো ইমন আজ মুসকানের চোখে গভীর চাহিদা অনুভব করতে লাগলো। সামনের চুল গুলো কানের পিঠে গুজে মুসকান চোখ সরিয়ে নিলো।
একরাশ অভিমান ভর করলো তার মনে  তাই বললো-
আচ্ছা আমি শাড়ি পালটে আসি বলেই বিছানা ছেরে নেমে দাড়ালো।
মুহূর্তে ইমনের বুকের ভিতর ধুকপুকানি টা বেড়ে গেলো। আমি কি কোন ভুল করলাম। মেয়েটাকে আজ কতোটা আবেদনময়ী লাগছে………….ধ্যাত কি যে করি আমি বলেই সেও দাঁড়িয়ে পড়লো মুসকানের এক হাত টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। মুসকান এক পা আগাতেই টান অনুভব করলো চোখ খুলতেই ইমনের মুখ টা ভেসে এলো।
লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। ইমন একহাতে মুসকানের কোমড় জরিয়ে আরেক হাতে তার চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।

আমি কি শাড়ি পালটে আসতে বলেছি? মুসকানের একদম কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো ইমন। ইমনের গরম শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার। তার ও শ্বাস ঘন হয়ে আসলো ইমন মুসকানের ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দ পেয়ে আর কোন প্রশ্ন করলো না। কোমড় টা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- অপরূপ সুন্দরী লাগছে। শাড়িতে তোমায় একটু বড় বড় লাগে, মনে হচ্ছে কোন এক অপ্সরীর আগমন ঘটেছে আজ আমার ঘরে। ইমনের বলা কথা গুলো মুসকানের কান জুরে শীতল শিহরণ বয়িয়ে দিলো। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।
ইমন মুসকানের কানের পিঠে আলতো করে চুমু খেলো। মুসকান হালকা কেঁপে ওঠলো ইমনকে দুহাতে জরিয়ে ধরলো।
ইমন বুঝে গেছে মুসকান আজ তাকে কাছে চাইছে। তার চাওয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাধ্য ইমনের নেই।
মুসকান কে সরিয়ে ইমন গিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো।
মুসকানের কাছে এসে তাকে পাজাকোল করে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো।
দুজনেরই হার্টবিট দ্রুত গতিতে ওঠানামা করতে শুরু করেছে। মুসকান ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে যা ইমনকে একদম পাগল করে দিচ্ছে। আর কোন বাঁধা নেই ইমনের যেখানে মুসকান ই তাকে কাছে চাইছে সেখানে আর কারো সাধ্য নেই তাদের আলাদা করার, বা দূরে সরিয়ে দেওয়ার।
ইমন আজ একদম মুসকানের মাঝে হারিয়ে গেলো। না আছে রাগ না আছে ক্ষোপ সম্পূর্ণ ভালবাসায় একে অপরের সাথে মিলিত হলো। ভালবাসার অন্য এক রূপ মুসকান খুজে পেলো। সে আজ পুরোটাই ইমনের দখলে কোন ভয় নেই, অভিমান নেই, আছে শুধু দুজনের দুজনের প্রতি অসীম ভালবাসা।
সারারাত ইমন মুসকানের মাঝেই ডুবে ছিলো।
কতো দিনের জমিয়ে রাখা ভালবাসা যে আজ সে মুসকানকে দিচ্ছে সেটা মুসকান ই টের পাচ্ছে খুব করে। সে যেনো ক্ষূদার্ত বাঘ হয়ে গেছে তাকে বাঁধা দেওয়ার শক্তি বোধ হয় এই পৃথিবীতে কারো নেই।

ভোর পাঁচটার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। মুসকান কে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। মুসকান ও পরম আবেশে তার বুকে ঘুমাচ্ছে। পাশে তাকাতেই মুচকি হাসলো ইমন। ভেবেছিলো এলোমেলো শাড়িতে বউ দেখবে কিন্তু বউ এর গায়ে তো শাড়ির ছিটে ফোটাও নেই। বিছানার একপাশে শাড়ি পড়ে আছে। মুসকান কে ছাড়িয়ে আস্তে করে ওঠে পড়লো ইমন। বাথরুম গিয়ে গোসল সেরে নিলো। পিঠের দিকে বেশ জ্বালা অনুভব করছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে মুসকানের হাতের দিকে তাকালো বেশ রাগ হলো তার।
এতো বড় বড় নখ রাক্ষসী হয়ে গেছে নাকি আজি এই নখের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভেবেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো চোখ দুটো তার বড় বড় হয়ে গেলো গালেও বেশ দাগ পড়ে গেছে।
সবগুলোই নখের আঁচ।
বাহ বেশ ভালোতো এখনতো অফিস বাদ দিয়ে রুমেই বসে থাকা লাগবে। মানুষের সামনে বের হওয়াও মশকিল হয়ে যাবে। অন্য মানুষ না হয় বাদ ই দিলাম বাড়ির লোক কে মুখ দেখাবো কি করে। এই মেয়েকে তো আজ দেখেই ছাড়বো। ইমন প্রচন্ড রেগে গিয়ে মুসকান কে ডাকতে শুরু করলো।
মুসকান ওঠো, সকাল হয়ে গেছে ওঠো বলেই গালে হাত দিতেই বেশ তাপ অনুভব করলো।
একি এতো গরম কেনো গাল বলেই কপালে গলায় হাত দিতেই বুঝলো বেশ জ্বর এসে গেছে।

হায় কপাল এই ছিলো আমার কপালে একরাতেই জ্বর এসে গেছে। সেদিন না হয় ভিন্ন ছিলো ব্যাপারটা আজ জ্বর কেনো ধূর……
ইমন মুসকানকে কোলে করে নিয়ে বাথরুম বসিয়ে দিলো ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। মুসকানের ও  ঘুম ছেড়ে গেছে। ইমন কিছু ক্ষন হেল্প করে বাইরে চলে গেলো।
বেডশিট টা চেন্জ করে নিজে রেডি হতে শুরু করলো।
মুসকান ঢোলতে ঢোলতে গোসল করে বেরিয়ে এলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ইমন অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল আটটা বেজে গেছে। মুসকানের এমন অবস্থা দেখে ইরাবতীকে ফোন করো খাবাড় রুমেই পাঠিয়ে দিতে বললো।
ইমন একটা শুকনো তয়ালে নিয়ে মুসকানের পাশে বসে মুসকানকে একটু ওঠিয়ে চুল গুলো ভালোভাবে মুছে দিতে লাগলো।
মুসকান কেমন লাগছে শরীর খারাপ লাগছে কি? 
মুসকানের ঘুমের রেশটা কাটেনি চোখ বুজেই আছে সে। ইমন চুলগুলো মুছে তার মাথাটা বালিশে রাখলো। মুসকান গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো আর অস্পষ্ট ভাবে বললো –
মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে ভাইয়া…….  শরীর ও খুব ব্যাথা করছে দুপা একদম বিষে যাচ্ছে, কোমড় ব্যাথায় আর থাকতে পারছিনা ওঠতেও পারছিনা… বলেই কেঁদে ফেললো মুসকান।

ইমন মাথায় হাত রেখে বড় বড় করে মুসকানের দিকে তাকালো। মুসকান চোখ বুজেই কেঁদে চলেছে।
ইমন কিছু বলার ভাষা খুজে পেলো না।

দীপান্বিতা খাবাড় নিয়ে দরজায় নক করছে। ইমন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কাকি আসো ভিতরে।
আসলে মুসকানের একটু জ্বর হয়েছে খাবাড় রেখে যাও আমি ওকে খাওয়িয়ে দিবো।
আমি দেই খাওয়িয়ে তুমি খেয়ে অফিস যাও।
না সমস্যা নেই এক ঘন্টা সময় আছে তুমি যাও।
দীপান্বিতা আর কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেলো  খাবাড়টা রেখে।
ইমন গিয়ে মুসকান কে ওঠিয়ে বসালো। নিজের হাতে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিলো। মুসকান খেতে চাইলো না ইমন জোর করে তাকে অল্প খাওয়ালো সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।
এই মেয়ে নাকি আমার সেবা করবে?  এর সেবা করেই আমার রাত দিন পার হচ্ছে একটু ভালবাসা দিলে হাজারগুন ফেরত নিচ্ছে বড্ড বদমাইশি শিখেছে। মনে মনে ভাবছে আর মুচকি হাসছে ইমন।
হাত ধুয়ে মুসকানকে একটা জ্বরের ওষুধ সাথে ব্যাথার ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো। মুসকান আবারো ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

হায়রে ঘুম একদিন একটু জেগেছে এতেই তার এতো ঘুম বাব্বাহ।

এ বউ না ননির পুতুল কিছুইতো বুঝিনা। ছুঁয়ে দিলেই গলে যায়।
মনে মনে ভাবতে ভাবতে মুসকানের একদম কাছে এসে কপালে আলতো করে চুমু খেলো। ঠোঁট আর গলায় চোখ পড়তেই ইমন বাঁকা হাসলো।
ভালবাসার স্পর্শ গুলো এমনই হয় নাকি??…….

ইমন নিচে নেমে এলো বেরোনের সময় তার মা কে বলে গেলো দুপুরে মুসকানের জ্বর টা চেক করতে। জ্বর না কমলে আরেকটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিতে বললো।

ভাইয়া তোমার গালে কি হয়েছে??  দিপুর করা প্রশ্নে ইমন একটু চমকে ওঠলো।

দিপু তারাতারি গাড়িতে গিয়ে বোস। ইমন এদিকে আসোতো। ( দীপান্বিতা) 

দিপু আর কিছু না বলে চলে গেলো। ইমন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাচ্ছিলো। দীপান্বিতা ইমনকে বললো-
তোমার কাকা ফিরছে এ সপ্তাহেই। তারপর তোমাদের বিয়ের বড় করে অনুষ্ঠান হবে।  তারপর দিপক এর জন্য মেয়ে দেখবো।দুজনের মধ্যে বেশ কিছু কথা হলো  কথা শেষে ইমন চলে গেলো।

অফিস যাওয়ার সাথে সাথে মোজাম্মেল চৌধুরী বেশ ধমকে কথা বললো লেট করার কারনে। ইমন রাগ করতে গিয়েও করলো না। কারন এতটুকু স্বাভাবিক ইমন অফিসে কমই সময় দিচ্ছে। নাহ আজ থেকে কাজে মনোযোগ দিতে হবে অনেক গাফিলতি করেছি আর না। ইমন ভাবতে ভাবতে এগুচ্ছিলো নিজের কেবিনের দিকে এমন সময় পিছন থেকে সাব্বির ডেকে ওঠলো – ইমন।
ইমন পিছন তাকাতেই বেশ অবাক হলো।
কিরে তুই এখানে??
হ্যাঁ। তোর সাথে আমার খুব দরকারি কথা আছে।
কি হয়েছে বল তোর মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
এখানেই বলবো নাকি অন্য কোথাও।
চল আমার কেবিনে চল।
ওকে।
সাব্বিরের কথা গুলো শুনে ইমনের বুকের ভিতর ছেদ করে ওঠলো। পরোক্ষনেই আবার ভাবলো না মুসকান আমার বউ। আজ আমি একা না মুসকান ও আছে আমার পাশে। আর কোনো ভয় নেই আমার আমার বউ কে আমি কাউকে দিবো না কাউকে না। এতো কিছুর পর আমি ওকে একদম নিজের করে নিয়েছি। ওকে ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব কখনোই সম্ভব না সেটা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
লোকটা কি এখনো ঢাকাতেই আছে?
হ্যাঁ ঢাকাতেই আছে। লোকটাকে আমার সুবিধার মনে হয়নি দেখে।

আচ্ছা কোথায় ওঠেছে জানিস?
হ্যাঁ জানি।
ঠিকানাটা মেসেজ করে দিয়ে রাখ।
ওকে।

বিপদ যেনো পিছু ছাড়ছেইনা ইমনের। একের পর এক বিপদ সামনে আসছে। সব বিপদই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে ইমন। কিন্তু এই বিপদটা সামলে ওঠতে পারবে তো?  নাকি আবারো নতুন ঝড়ের আগমন ঘটতে চলেছে? এতো বছরের পুরোনো অতীত টা কেনো সামনে আসতে চাইছে? মুসকান কি রক্তের টানে ফিরে যাবে? আমার ভালবাসা কি আবারো ওপেক্ষা করবে মুসকান? প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করলো ইমন।
মোজাম্মেল চৌধুরী ছেলের এমন অবস্থা দেখে দিপককে কিছুদিন ইমনের দায়িত্ব নিতে বললো।ইমন ও একটু স্বস্তি পেলো অফিস থেকে বিকালেই বাড়ি চলে গেলো। দিপক অফিস চলে গেলো। ইমন বাড়ি ফিরে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো। দুপুর পরেই মুসকানের জ্বর কমে গেছে।
নিজের রুমে মনের সুখে গুনগুন করছিলো আর চুল আচরাচ্ছিলো। এমন সময় ইমন রুমে ঢুকেই পিছন থেকে খুব শক্ত করে জাবটে ধরলো মুসকানকে।
আকস্মিক ঘটনায় মুসকান স্তব্ধ হয়ে গেলো। বেশ কিছু ক্ষন সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে। ঘুরে দাড়াতে চাইলে ইমন একটু আলগা করলো হাতের বাঁধন। মুসকান ঘুরতেই একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ইমন।
মুসকান ও তার পিঠে শক্ত করে চেপে ধরলো। দুজনই দুজনের বুকের ধুকপুকানি অনুভব করছে। দুজনের হৃদয়ই একই সাথে সমান তালে স্পন্দিত হচ্ছে।
বেশকিছুক্ষন পর মুসকান অনুভব করলো ইমন খুবই শক্ত ভাবে চেপে ধরেছে। বিষয়টা এমন যেনো কেউ তার থেকে মুসকানকে কেড়ে নিচ্ছে কিন্তু সে যেতে দিবেনা। মুসকান একটু নড়তে চেয়েও পারলো না আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন।
মুসকানের এবার দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা কোনভাবেই ছাড়াতে পারছে না ইমন কে।
ছাড়ো আমার লাগছে তো?  কি হয়েছে এমন করছো কেনো?
না কোনভাবেই ইমন ছাড়ছে না। মুসকান ইমনের বুকের স্পন্দন তার অস্থিরতা বেশ বুঝতে পারছে। সেই সাথে এটাও খেয়াল হলো যে সে বিকালেই বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু তার তো রাতে ফেরার কথা…..
মুসকান একটু জোর খাটিয়েই ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। ইমন এবার হুশে ফিরে এলো আর মুসকানকে ছেড়ে দিলো। তার চোখের কোনে পানি জমে আছে।

এক হাতে চোখ মুছে তয়ালে নিয়ে বাথরুম ঢুকে পড়লো। মুসকানের বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো।
কাঁদছে চোখে পানি? কিন্তু কেনো?  আমাদের তো সব ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে কিসের কষ্ট কি হয়েছে ইমন ভাইয়ার?  আমার জন্য সেদিন প্রথম ইমন ভাইয়াকে কাঁদতে দেখেছি। এমন স্ট্রং একজন মানুষ খুব বড়সড় আঘাত না পেলে তো কাঁদার কথা না। আজ তাহলে কি হলো কিসের আঘাত পেলো। তার সাথে কি আমি জরিয়ে আছি কোন ভাবে?  আমাকে জানতেই হবে কি হয়েছে জানতেই হবে।
পুরুষ মানুষ এতো সহজে কাঁদে না। নিশ্চয়ই বড় কোন আঘাত পেয়েছে আমায় সব জানতেই হবে।

ইমন বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। মুসকানকে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো-
মুসকান কিছু হালকা খাবাড় নিয়ে আসো খেতো দাও আমায়। স্বামীর হুকুম যেনো তার বুকের ভিতর ভালো লাগার শিহরন বয়িয়ে দিলো। চটপট নিচে নেমে গেলো দিপান্বিতাকে বলতেই সে মুসকানকে কিচেনে নিয়ে গিয়ে নুডলস তৈরী করা শিখিয়ে দিচ্ছিলো আর দেখিয়ে দেখিয়ে তৈরী করে ফেললো।
মুসকান সেটা নিয়েই রুমে চলে গেলো।
ইমন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো। মুসকান আসতেই ফোন রেখে দিলো।
মুসকান তার সামনে নুডলস দিতেই সে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে পানি খেয়ে নিলো।
তারপর মুসকানকে পাশে বসতে ইশারা করলো।
মুসকান পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে রইলো।
ইমন তার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না।
জ্বর তো কমে গেছে। এখন শরীর ঠিকাছে তো??
ইমনের করা প্রশ্নে মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো- হ্যাঁ…..ঠিকি আছে তো।
ইমন চট করে মুসকানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মুসকান হঠাৎ এমন কান্ডে চমকে ওঠলো। তারপর ভালোভাবে বোসলো।
ইমন চোখ বুজে রয়েছে চোখ বুজেই বললো – মাথাটা বেশ ধরেছে একটু চুলগুলো টেনে দাওতো।
হুম বলে মুসকান আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো…..
কই চুল টেনে দিতে বলেছিতো হাত বুলাতে বলিনি….

না মানে আসলে ব্যাথা লাগে যদি……
ইমন বাঁকা হাসলো চোখ বুজেই… তোমার ঐ ছোট্ট হাতের টানে আমার ব্যাথা লাগবে না। রাতে যা ব্যাথা দিয়েছো সেটাই সহ্য করে নিয়েছি। আর এটা তো আমি নিজে বলছি।
মুসকান ভ্রু কুচকে তাকালো।
ব্যাথা মানে আমি কখন ব্যাথা দিলাম। ( মনে মনে )

হঠাৎ ই ইমন ধপ করে ওঠে বোসলো।
মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো- যাও নেইল কাটার টা নিয়ে আসো।
মুসকান অবাক চোখে তাকিয়ে জিগ্যাস করলো-কি হলো নেইল কাটার কেনো??
যা বলছি তাই করো আগে যাও।
মুসকান গিয়ে নেইল কাটার নিয়ে আসলো।
ইমনের হাতে দিয়ে চলে যাবে ঠিক তখনি ইমন তার এক হাতে ধরে হেচকা টান দিলো। মুসকান টাল সামলাতে না পেরে ইমনের উপর গিয়ে পড়লো।
ইমন তাকে পিছন দিক করে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বোসলো। মুসকানের কাঁধে থুতনি রেখে  বাম হাত দিয়ে মুসকানের বাম হাত সামনে নিয়ে ডান হাতে নেইল কাটার নিয়ে মুসকানের নখ কাটতে শুরু করলো।
একি কি করছো ভাইয়া…. নখ কাটছো কেনো??
এগুলো তো আমি অনেক কষ্ট করে রেখেছি। প্লিজ কেটোনা।
উহম………..এততো নড়াচড়া করো না হাতে লেগে যাবে।
না তুমি কেটোনা……
চুপপপপ।

ইমনের এক ধমকে চুপসে গেলো মুসকান। আর কোন কথা সে বললো না। ইমন খুব মনোযোগ দিয়ে যত্ন সহকারে নখ গুলো কেটে দিলো। নখ কাটা শেষে নেইল কাটারটা পাশে রেখে দুহাতে মুসকানকে জরিয়ে নিলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- এগুলো বড্ড জ্বালিয়েছে আমায় আর যাতে না জ্বালাতে পারে সেই ব্যাবস্থা করলাম। ইমনের গরম নিশ্বাস কানে লাগতেই মুসকানের পুরো শরীর শিউরে ওঠলো।
ইমন আরেকটু গভীরভাবে জরিয়ে নিয়ে ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
কারো আসার শব্দ পেয়ে চট করে ছেড়ে দিলো মুসকান কে। মুসকান একটু সরে হাঁপাতে লাগলো।
মুসকান আপু মুসকান আপু….. মুভীটা শুরু হয়ে গেছে তারাতারী আসো। বলেই রুমে ঢুকলো দিপু। ইমনকে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।
ইমন ওঠে দাঁড়াতেই দিপু বললো-
না মানে আপু জানাতে বলেছিলো। আমি যাই পড়তে বসিগা। বলেই ছুটে পালালো দিপু।
ইমন মুসকানের দিকে তাকাতেই –
কইই…… আমি কখন ওকে বললাম ঢের মিথ্যা কথা। ( তুতলিয়ে বললো মুসকান )

হ্যাঁ সত্যি তো তুমি তো মুভী একদমই লাইক করো না। জানিতো আমি। আমি ঘুমাবো তুমি মাথাটা টিপে দিবে ওকে। বলেই ইমন আবারো মুসকানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মুসকান মুখটা ভাড় করে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে। ইশ মুভীটা দেখা হলো না…… ( মনে মনে )
কিহলো মাথায় হাত রাখো….
হুম এইতো রাখছি।
মুসকান ইমনের চুলগুলো আলতোভাবে টেনে দিচ্ছে ইমন পরম আবেশে চোখ বুজে রয়েছে।

কিছুক্ষন পর মুসকান ডাকলো- ইমন ভাইয়া………..
ইমন চোখ বুজেই বললো- এখানে তোমার কোনো ভাই নেই… ( কঠোর গলায়)

মুসকান একটু ভয়ে ঢোক গিললো।
না মানে আসলে… আমার কিছু বলার ছিলো…..
হুম বলে ফেলো..
মুসকান আরেক ঢোক গিলে বললো-
তোমার কি কিছু হয়েছে..?  মানে কোনভাবে কষ্ট পেয়েছো??

ইমন চোখ মেলে তাকালো। মুসকান কিছু শুনার জন্য উৎসুক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

মুসকান কি তখনকার অমন আচরনে এটা জিগ্যাস করছে?? ও আমাকে বুঝার চেষ্টা করছে তাহলে। আমার কষ্টটা ও কি একটু হলেও টের পেয়েছে??
পাবে নাইবা কেনো এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো। ও যে আমার অর্ধাঙ্গিনী।

চলবে…………….

বউ চুরি পর্ব :১৩

0

বউ চুরি

পর্ব ঃ ১৩

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

দুহাটু ভাজ করে হাটুর উপর থুতনি রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে মুসকান। ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ওঠে বোসলো।
কি হলো কাঁদছো কেনো কঠোর গলায় জিগ্যাস করলো ইমন।
মুসকান এবার ডুকরে কেঁদে ওঠলো।

কি হলো ঘুম বাদ দিয়ে কেঁদে চলেছো কেনো?  কি হয়েছে বলো?
মুসকান নাক টেনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো –
তুমি এখনো আমাকে ক্ষমা করোনি ইমন ভাইয়া। এখনো আমায় ক্ষমা করোনি বলেই আবারো কেঁদে ওঠলো।
ইমন মুচকি হেসে কঠোর গলায় বললো- ক্ষমা তো সেদিন করবো যেদিন ইমন ভাইয়া থেকে ভাইয়াটা কেটে যাবে।
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। ইমনের দিকে তাকালো ইমন হাসি মুখটা চেপে শক্ত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো।
মুসকান অমন চাহনি দেখে আবারো মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করলো।

ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান কি চাইছে।
তুমি এই একটু চাওয়া এইভাবে চেয়ে তো নিজের ই বিপদ ডেকে আনলে। একটু কাছে পেতে চেয়ে নিজের সর্বনাশ নিজেই করে ফেললে।মনে মনে ভাবলো ইমন।

ইমনের ভালবাসা পাওয়ার জন্য তোমার চোখের পানি ফেলার প্রয়োজন কেনো পড়বে মুসকান??
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। চুপ হয়ে গেলো সে তার মনের চাওয়া যে ধরে ফেলেছে ইমন।
নিজের জিনিস পাওয়ার জন্য এইভাবে কাঁদতে হয় না। আর আমার নিয়মে এইভাবে কাঁদলে কি হয় জানো??
মুসকান একটু ঘুরে অবাক চোখে তাকালো ইমনের দিকে। মনে মনে ভাবলো এখন কি কাঁদার জন্য ও আমাকে বকবে?
আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য আমার বউ কাঁদবে আর আমি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?  বলেই বাঁকা হাসলো ইমন।
মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো।
ইমন ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে পিছন থেকে জরিয়ে নিলো নিজের সাথে। মুসকানের কাঁধে থুতনি রেখে ধীর গলায় বললো- শাস্তির পালা তো অনেক ভারী হয়ে গেছে মুসকান। আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার  সিদ্ধান্ত নেওয়ার শাস্তি টা তো তোমাকে দেওয়া হয়নি।
ইমনের গরম নিশ্বাস মুসকানের গলা,কান জুরে শীতল শীহরন বয়িয়ে দিলো।সেই সাথে মনে জমলো ভয়। শাস্তি কিসের শাস্তি কি করবে আমার সাথে মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
ইমন আরো গভীর ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো মুসকানকে। নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে গলার দাগটায় আলতো করে চুমু খেলো।
হালকা কেঁপে ওঠলো মুসকান, পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার।
ইমন মুসকানের চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রান নিচ্ছে। মুসকান ইমনের শক্ত বাঁধন ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
শান্ত গলায় বললো- আমি শুধু একটু তোমার বুকে ঘুমুতে চেয়েছিলাম।
ঘোর লাগা গলায় ইমন বললো – হুম তো???
আমার কাছে তুমি এক বিন্দু ভালবাসা চেয়েছো। আর আমি তোমাকে আমার পুরো হৃদয়টাই দিয়ে দিতে চাইছি।
তুমি চেয়েছো এক বিন্দু ভালবাসা আর আমি দেবো মহা সমুদ্রের ভালবাসা।।
বলেই ঘারে নাক ডুবিয়ে দিলো। মুসকানের পুরো শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে সেই সাথে বেড়ে যাচ্ছে হৃদস্পন্দন। ঘনঘন নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে সে। ইমন আরো গভীর ভাবে তাকে জরিয়ে নিচ্ছে নিজের সাথে।
ছাড়ো…. কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠলো মুসকান।
ইমন ঘোরে চলে গেছে মুসকানের কথা তার কান অবদি গিয়েও যায় নি। বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো মুসকান কে নিজের গায়ের শার্ট টা খুলে বিছানার পাশে রাখলো।
মুসকান ভয় পেয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো সেই রাতের কথা।
ইমন মুসকানের দুহাত নিজের বাঁধনে রেখে ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো। মুসকানের ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়াতেই মুসকান হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
ইমন মুসকানের দিকে অবাক চোখে তাকালো। বেশ বুঝতে পারলো ভয়ে মেয়েটার অবস্থা শেষ। কিন্তু এই ভয়টা তো কাটাতে হবে। ধ্যাত বাচ্চা বউ থাকলে এই হলো এক জ্বালা। এখন বউ কে আগে বুঝাও ম্যানেজ করো তারপর আদর করো বউ। ( মনে মনে )  ভেবেই সরে গেলো মুসকানের থেকে। পাশে শুয়ে পড়লো একটা বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে।
মুসকান নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিলো। কিন্তু তার যেনো কেনো খুব কান্না পাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছে বার বার নাক টানছে।
কিছুক্ষন পর ইমন মুসকান কে কাছে টেনে নিলো। নিজের বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়ে বললো- ঘুমাবে??
মুসকান আস্তে করে বললো- হুম।
ওকে ঘুমাও আমি আছি বুকেই থাকবে ঘুমিয়ে পড়ো। মুসকনের কান্না চলে গেছে যা চাইছিলো পেয়েছে এখন সেটা । বুকে নিয়ে ঘুমানো মানেই তার মনে হয় ইমনের সব রাগ চলে গেছে। আর ইমন তাকে ভালোও বাসছে। আর সেদিন রাতে তার সাথে যা হয়েছিলো সেটা ইমনের রাগ ছিলো তাই অমন করেছে। সত্যি সেদিন ইমনের রাগ ছিলো কিন্তু স্বামীর অধিকার ও যে ছিলো সেটা এখনো সে বুঝতে পারেনি। আর না বুঝার চেষ্টা করেছে। ছোট থেকে তেমন কারো সাথে মেশা হয়নি তার কয়েকটা বন্ধু বান্ধব ছাড়া। আর ইমনের বাড়িতে কোন বড় বোন নেই যে মুসকান কে সবটা বুঝিয়ে বলবে। ইরাবতী, দীপান্বিতা তো মায়ের মতো তারাও কখনো তাকে তেমন কিছু বলেনি। আর এটা ইমন খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।

মুসকান কে বুকে নিয়েই ইমনও ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছে। খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। অফিস যেতে হবে তাই ওঠে ফ্রেশ হবে ভেবে মুসকান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।মুসকান ও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে ইমনকে। একটু ছাড়াতেই আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো মুসকান। ইমন মুচকি হাসলো জেগে থাকলে কি লজ্জাটাই না পেতে। (মনে মনে)

মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। আস্তে করে ডাকলো মুসকান…. ওঠো আমার অফিস আছে তো ওঠতে হবে আমায়।
নাহ ওঠার নাম নেই। বাধ্য হয়ে মুসকান কে ছাড়িয়ে পাজকোল করে নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।
মুসকানের তবুও ঘুম ভাঙলো না। সে কোলেই ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের মোড়ায় বসিয়ে একহাতে পানি নিয়ে হালকা ছিটিয়ে দিলো মুসকানের চোখে। সাথে সাথে সে কেঁপে ওঠলো ঘুম ছেড়ে গেছে তার। চোখ মেলে তাকাতেই লোমশ বুক দেখতে পেলো আরেকটু বড় করে তাকিয়ে ইমনের হাসি মাখা মুখ ভেসে এলো তার চোখে। ওঠে দাঁড়ালো আর চমকে ওঠলো নিজের দিকে তাকিয়ে এতো লজ্জা পেলো যা বলার মতো না। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো। ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান লজ্জা পেয়েছে কারন তার গায়ে ওড়না নেই।
কি আমার সাথে গোসল করবে নাকি চলে যাবে??
সাথে সাথে মুসকান বেরিয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
ইমন বাঁকা হাসলো।

মুসকান রুম থেকে বেরিয়ে তার রুমে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।
ইরাবতী আর দীপান্বিতা খাবাড় তৈরী করছে কিচেনে গিয়ে ইরাবতীর পাশে দাঁড়ালো মুসকান।
দীপান্বিতা বললো- ওঠে পড়েছিস?  ইমন ওঠেছে?
হ্যাঁ আম্মু ওঠেছে।
ইরাবতী বললো- যাও এই খাবাড় গুলো ডায়নিং টেবিলে নিয়ে রাখো আর আজকে সব কিছু তুমিই গুছিয়ে দাও ইমনকে। মুসকান বাধ্য মেয়ের মতো সব নিয়ে রাখলো সেই সাথে খাবাড় ও গুছিয়ে রাখলো।
মোজাম্মেল চৌধুরী ইমন,দিপক আর দিপু এসে খেতে বসলো। দীপান্বিতা আর ইরাবতী সবাই কে খাবাড় দিচ্ছে আর মুসকান ইমনকে। দীপান্বিতা বলে বলে দিচ্ছে মুসকান কে। কারন মুসকান এর আগে কখনো কাজ করেনি। তাই আজি তার প্রথম কাজ শেখা। ইমন মনে মনে বেশ খুশি হলো বউ খাবাড় সাজিয়ে দিচ্ছে বলে। সেদিনের সেই পিচ্চি টা আজ আমার বউ হয়ে খাবাড় গুছিয়ে দিচ্ছে ভেবেই তার বেশ খুশি লাগছে। নিজেকে বড় সুখী মনে হচ্ছে তার।

সবাই বেশ খুশি হলো মুসকানের বিহেইভে। মোজাম্মেল চৌধুরী ভাবলো – খারাপ সময়ের পরেই ভালো সময় আসে। যাক ইমন মুসকান যদি নিজেরা ঠিক থাকে ওদের মধ্যে সব ঠিক থাকলে ওরা খুশি থাকলে আর কি লাগে। খারাপ সময় গুলো ভুলে গিয়ে সবাই আবারো ভালোভাবে জীবন কাটাই ভেবেই ইরাবতীর দিকে তাকালো ইরাবতী ও চোখ উপর নিচ করে আশ্বাস দিলেন। দীপান্বিতা মোতালেব চৌধুরীর জন্য খাবাড় নিয়ে উপরে চলে গেলো।
ইমনও ব্রেকফাস্ট করে উপরে চলে গেলো।  ইরাবতী মুসকান কে বললো- মুসকান যাও ইমনের কাছে এখনিতো বেরিয়ে যাবে ছেলেটা। কি লাগে সেগুলো দেখে দাও ঘড়ি, ফোন, ওয়ালেট সব গুছিয়ে দিবে আজ থেকে । তোমার বড় বাবাকে তো এখন পর্যন্ত ও আমি এসব হাতে হাতে এগিয়ে দেই। দিপক বললো – কিরে পিচ্চু যা গিয়ে বরের সেবা কর। দিপু মিটি মিটি হাসতে লাগলো।
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। মাথা নিচু করেই উপরে চলে গেলো।
ইমন সব গুছিয়ে বেরিয়ে যাবে এমন সময় মুসকান মাথা নিচু করেই রুমে ঢুকলো। ইমন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো- কিছু বলবে??
মুসকান ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো- সব তো নিয়েছো আমি তাহলে কি এগিয়ে দিবো বলেই মুখটা ভার করে ফেললো।
ইমন অবাক হয়ে বললো- মানে কি?
মামনি যে বললো তোমার ঘড়ি,ওয়ালেট,ফোন এগিয়ে দিতে। কিন্তু তুমিতো সব গুছিয়ে নিয়েছো।
এবার ইমন বুঝতে পারলো তার মা ঠিক কি বলেছে। প্রচুর হাসি পেলো তার হাসি চেপেই বললো- তুমিতো লেট করে ফেলেছো। ঠিকভাবে কাজ তো শিখোইনি লেট তো হবেই। এক কাজ করো আজকে একটা করো কাল থেকে সবগুলোই করবে।
মুসকান জিগ্যাসু চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো তোমার হাতে এক গ্লাস পানি পান করেই রোজ অফিস বের হবো।
মুসকানের মনটা ভালো হয়ে গেলো। ছুটে নিচে গিয়ে এক গ্লাস পনি নিয়ে উপরে চলে এলো।  ইমনের দিকে কাঁপা কাঁপা হাতেই পানি দিলো। বেশী এক্সাইটেড থাকলে মুসকানের হাত কাপে, শুধু এক্সাইটেড না ভয়েও তার হাত কাপে। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটার কারন ইমন খুব করে বুঝতে পেরেছে।
মুসকানের হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে ইমন বেরিয়ে যেতে নিলো। কিন্তু কেন জানি আবার ও ফিরে তাকালো মুসকানের দিকে। খুব কাছে এসে বললো- খাওয়া তো হয়নি এখনি নিচে গিয়ে খেয়ে নিবে কেমন।
মুসকান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ইমন দুহাতে মুসকানের গাল ধরে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে চলে গেলো।
মুসকানের হার্টবিট দ্রূত গতিতে বেড়ে গেলো। কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করলো তার মধ্যে।
সবদিনের থেকে আজকের অনুভূতি টা সত্যি আলাদা। আজকে সত্যি মনে হচ্ছে এটা আমার শশুর বাড়ি। এটা আমার স্বামীর ঘর। একটু আগে যে বেরিয়ে গেলো সে আমার স্বামী। ভেবেই বেশ লজ্জা পেয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।

বেশকিছু ক্ষন পর রুম থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই আ………….বলে চিৎকার করে ওঠলো। দিপক দৌড়ে উপরে চলে এলো । একি তোর পা কাটলো কিভাবে???  মুসকানের কাছে গিয়ে ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। পা দিয়ে প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। দীপান্বিতা ইরাবতী ও এলো দীপান্বিতা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে দিপক কে দিলো। দিপক ব্যান্ডেজ করে দিলো। ইরাবতী কাচগুলো পরিষ্কার করে মুসকানের জন্য খাবাড় নিয়ে এলো। আলেয়া আজ আসেনি তাই সব কাজ তাদের ই করতে হচ্ছে।
দীপান্বিতা মুসকানের কান্না থামাতে ব্যাস্ত। একটু দেখে চলবিতো একের পর এক অঘটন ঘটিয়েই চলেছিস। কিভাবে এটা হলো হ্যা ধমকে ওঠলো দীপান্বিতা।
মুসকান কাচুমাচু হয়ে বোসলো।
কেনো যে হলো সেটাই তো বলতে পারবো না আম্মু। তোমার মেয়ের জামাইয়ের ভালবাসা পেয়ে নিজে নিজেই লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকতেই গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে গেছে। হাতে গ্লাস ছিলো এটাও খেয়াল ছিলোনা, গ্লাসটা পড়ে গেছে এটাও বুঝিনি। এমন ঘোর লাগা ভালবাসা কেউ দেয় ?। মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
দীপান্বিতা খাবাড় মেখে মুসকানের সামনে ধরে আছে এদিকে মুসকানে ইমনের কথাই ভেবে যাচ্ছে। একজন যে তার সামনে খাবাড় ধরে আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই।
কি হলো খাবি নাকি মাথায় ঢেলে দিবো সব।
চমকে ওঠলো মুসকান। দীপান্বিতার হাতে খাবাড় দেখে হা করলো দীপান্বিতা মুখে খাবাড় ঢুকিয়ে দিলো।
দিপু কে কলেজে পৌছে দিয়ে ইমন অফিস চলে গেছে। অফিস ঢুকতেই মুসকানের পা কাটার খবড় তার কানে পৌঁছে গেলো।

এই মেয়েটা একদন্ড শান্তি ও দিবেনা আমাকে। কি এমন কাজ করেছে এক গ্লাস পানি খাওয়িয়ে তার পা কেটে গেছে। এতোদিন পর অফিস এসেছি শান্তি তে কাজ করবো তা না আরেকজন পা কেটে বসে রইলো। যাতে সব এটেনশন তার দিকে থাকে ধ্যাত।কাজে মনোযোগ ই আসবে না।
সারাদিন বড় অস্থিরতার মাঝে অফিস করেছে ইমন। আটটায় সবাই বের হয় কিন্তু ইমন সাতটায় ই বেরিয়ে গেছে। মোজাম্মেল চৌধুরী বুঝতে পেরেছে কেনো বেরিয়ে গেলো । তাই সে সবটা সামলে নিয়েছে।

সবাই টিভি দেখছে সাথে মুসকান ও বসে আছে। দীপান্বিতা আর দিপক বসে তার বিয়ের আলোচনা করছে। বাড়িতে আরেক বউ আনার জন্য সবাই খুব উৎসুক হয়ে আছে। মুসকান তো খুবই খুশি একটা ভাবী পাবে বলে।
আম্মু আম্মু ভাইয়ার বিয়েতে কিন্তু আমি ডান্স করবো। আর আমাকে অনেক অনেক নিউ ড্রেস কিনে দিতে হবে ভাইয়া।
আম্মু আমাকেও দিতে হবে। ( দিপু )

আচ্ছা বাবা সব হবে আগে তো মেয়ে দেখি। দীপান্বিতা কথাটা বলেই ওঠে গেলো। আর ওরা তিনজন টিভিতে মনোযোগ দিলো।
এদিকে ইমন বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে গেছে। মুসকানকে ওর রুমে খুজে পায়নি তাই সবার রুম ই খুজলো তবুও পেলো না।
ছোট কাকি মুসকান কোথায়?? দীপান্বিতা কিচেনে যাচ্ছিলো এমন সময় পিছন থেকে বললো ইমন।

দীপান্বিতা পিছনে তাকিয়ে বললো-

ওওও তুমি এসে গেছো। মুসকান তো দিপকের রুমে আছে তিন ভাইবোন মিলে টিভি দেখছে।
ইমন দিপকের রুমে গিয়ে দেখলো তিনজনের টিভিতে গভীর মনোযোগ।
ইমন গিয়ে বললো কি করছিস তোরা?  আর দিপু তোর পড়াশোনা নাই?
দিপক তুই ও ওদের সাথে যোগ দিয়েছিস দিপুকে তো পড়তে বসাতে পারতিস নাকি?
মুসকান আর দিপুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দুজনেই ঢোক গিললো।
তুমি কখন এলে?  এই অনেক দিন পর একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম ওদরে সাথে। দিপু যা  পড়তে বোস তুই গিয়ে এখন।
দিপু ধীরে ধীরে পা এগিয়ে চলে গেলো।মুসকানের পা কাটার জন্য আর যেতে পারলো না। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো তাকে যেনো বকা খেতে না হয়।
বোসো ভাইয়া কিছুক্ষন সময় কাটাই। ইমন দিপকের পাশে গিয়ে বোসলো। দুজনে বেশ কথাবার্তা বলছে আর মুসকান টিভির দিকে চোখ আর তাদের দুজনের দিকে কান পেতে বসে আছে। চুপচাপ শুনে যাচ্ছে তাদের গল্প। সব ই বিজনেসের আর পলিটিকস এর আলোচনা সেই সাথে দিপকের বিয়ে নিয়েও বেশ কথা বার্তা হলো। ইমন কথার ফাঁকে ফাঁকে মুসকানকে আড় চোখে দেখছিলো। দিপক কিছুটা টের পেয়ে কাকে যেনো ফোন করবে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ওদের একটু কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
মুসকান টিভিতেই চোখ স্থির রেখেছে ইমন যে তার পাশে আছে সেদিকে খেয়ালই দিচ্ছে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিক ই তার হার্টবিট ১০০গতিতে দৌড়াচ্ছে।
হঠাৎ টিভি অফ হয়ে গেলো। মুসকান পাশে তাকাতেই দেখলো ইমনের হাতে রিমোট। হ্যা সেই অফ করে দিয়েছে।
এতো মনোযোগ টিভিতে আমি যে পাশে আছি সেটার খেয়াল ই নেই। বলেই মুসকানের একদম কাছে এসে বোসলো। ডানহাত নিচে নিয়ে মুসকানের পায়ে হাত দিতেই মুসকান কেঁপে ওঠলো।
কি করছো…. ( ধীর গলায়)
ইমন পা টা উপরে ওঠিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখলো। বেশ অনেক কেটেছে তাইনা??
মুসকান মাথা উপর নিচ করলো।
কেনো কাটলো, কিভাবে কাটলো, একটু সচেতন থাকতে পারোনা?  ধমকে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো ভয়ে ভয়ে বললো- গ্লাস পড়ে ভেঙে গেছিলো।
হ্যাঁ ভাঙবেই একটা কাজ ঠিক ভাবে করতে পারোনা। এক গ্লাস পানি খাওয়িয়ে নিজের পা কেটে ফেলেছো। সবসময় নিজের ক্ষতি নিজেই করার জন্য ওঠে পড়ে লাগো তাইনা। ধমকে ধমকে কথা গুলো বলে যাচ্ছে ইমন। মুসকান কান্না করে দিয়েছে। ইমনের ও খুব কষ্ট হচ্ছে মুসকানের একটু ব্যাথাও সে সহ্য করতে পারেনা। সারাদিন যে সে কিভাবে অফিস করেছে শুধু সেই জানে। তাই ভালবাসাটা রাগের মধ্যেই প্রকাশ করছে সে। মুসকান কি এই গভীর ভালবাসা বুঝতে পারবে???
ইমন মুসকানের পা টা আরেকটু উচু করে ব্যান্ডেজের জায়গায় একটা চুমু খেলো। ইমনের এমন কান্ডে মুসকান স্তব্ধ। কান্না থেমে গেছে তার পুরো শরীর শিউরে ওঠেছে। হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। ভালবাসার তীব্র অনুভূতি গুলো বোধ হয় খুব করে স্পর্শ করতে শুরু করেছে মুসকান কে। ইমন শান্ত স্বরে বললো- এখনো কি ব্যাথা আছে??
মুসকান মাথা নাড়িয়ে না করলো।
ইমন মুসকানের গালে এক আঙুল দিয়ে পানি মুছে দিলো। তারপর ওঠে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো।

কি করছো ভাইয়া দেখবে তো?
দেখুক ভাই +দেবর নো প্রবলেম বলেই বাঁকা হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন। ভালোই কাটছে মুসকান ইমনের সম্পর্ক মুসকান ও ধীরে ধীরে ইমনের ভালবাসা গুলো অনুভব করতে শুরু করেছে।  পায়ের জন্য সে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও ইমন ঠিকি রোজ রাতে পরম আদর স্নেহে তাকে বুকে টেনে নেয়। সারারাত ইমনের বুকেই ঘুমায় সে। দিনে হাজার ব্যাস্ততায় কাটালেও রাত টা ইমন ঠিকি মুসকান এর জন্য জমা রাখে। এতো প্রেম এতো ভালবাসার মায়া মুসকানের মনে ঠিকি কড়া নাড়ে।
একজন পুরুষের  অসীম ভালবাসাকে ওপক্ষা করার ক্ষমতা একজন নারীর নেই। মুসকান ও পারেনি ইমনের অসীম ভালবাসাকে ওপেক্ষা করতে।

ইদানীং যেনো অনুভূতিরা তাকে বড্ড জ্বালায়।
ইমন ও বেশ করে বুঝতে পারে তবুও সে চুপ করেই থাকে কি জানি তার মনে কি চলছে।
দিন দিন যেনো ইমনের প্রতি মুসকানের টানটা বেড়েই চলেছে ইদানীং তার দিনে সময় কাটেনা। ইচ্ছা হয় দিনেও ইমনের সাথে কাটাতে কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়।
সেদিন মুসকান ইরাবতীর রুমে যাচ্ছিলো দরজার সামনে দাড়াতেই শুনতে পেলো ইরাবতী আর দীপান্বিতার কথোপকথন।
দেখ ইমন আর মুসকানের একটা সন্তান হলে আর কোন চিন্তা থাকবে না। তাছাড়া কদিন পর মুসকানের রেজাল্ট বের হবে ভার্সিটি ভর্তি করাতে হবে। ইমন তো ওকে পড়াশোনা করাবেই কিন্তু আবারো যদি কোন অঘটন ঘটে যায়? এর থেকে একটা বাচ্চা নিক তাকে আমরা মানুষ করবো আর মুসকান পড়াশোনা করবে। সংসার বুঝে নিবে ধীরে ধীরে৷ স্বামী সন্তানের টান অনুভব করবে। আর নিজের সন্তানের টান যে কোন মায়েরই আছে হোক সে পাগল বা অবুঝ।

কিন্তু ভাবী ইমন তো এতো তারাতারী এসব ভাববে না। আর মুসকানের সাথে যে ইমনের ওরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি সেটা কিন্তু ওদের দেখেই বুঝা যায়।
তুই কি করছিস তুই বুঝা তোর মেয়েকে। এখন ই তো সময় আমি কিছু জানিনা তুই ওকে বুঝাবি।
আচ্ছা আমি কথা বলবো মুসকানের সাথে।
তাদের কথা গুলো শুনে মুসকান কিছু হলেও বুঝেছে। আর এটাও বুঝেছে এ বাড়ির সবাই এখনো তাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে ওঠতে পারেনি। এটাই তো স্বাভাবিক আমাকে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতেই হবে মনে মনে ভাবলো মুসকান।

রাত নয়টা বেজে গেছে ইমন আজ এখনো বাড়ি ফিরেনি। এদিকে দীপান্বিতা আজ মুসকানকে অনেক কিছু বুঝিয়েছে মায়ের সামনে বেশ লজ্জাও পেয়েছে আজ সে। দীপান্বিতা মুসকান কে জোর করেই মেরুন কালারের সিল্কের শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। শাড়ী পড়ে মুসকান হাটা তো দূর নড়তেও পারছে না তাই চুপ করেই বসে আছে।
এদিকে ইমন ফেরার পর ইরাবতী তাকে খাওয়িয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। মুসকান কে দেখতে না পেরে তার খুব অসস্থি লাগছে।  তারাহুরো করে রুমের দিকে এগোচ্ছে তার ক্লান্তি যে দূর হয় নি। তার এখন মুসকানের মুখ দেখা চাই নয়তো তার ক্লান্তি দূর হবেনা।
কিন্তু সে তো জানে না আজ তার জন্য কতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

চলবে…………………………..