Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1894



ডেভিল বর পর্ব- ৬

0

ডেভিল-বর
পর্ব- ৬
শিফা_আফরিন
.
.
?
তুমি রাজি তো বেইবি? (মুচকি হেসে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের কাশি উঠে যায়।
(এই অসভ্যটা বলে কী! এবার আমি কি করবো? নিজের কথায় যে নিজেই ফেঁসে গেলাম। ধুরর… ভাল্লাগেনা.. মনে মনে)

রেহান – তোমার ভাবনা শেষ হলে আমার কথার উত্তর দাও। (দাঁতে দাঁত চেপে)

আঁচল – কী উত্তর দিবো বলুন? আমি তো প্রথম দিনই আপনাকে বলে দিয়েছি আমি আপনাকে স্বামী মানতে পারবো না। শুধুমাত্র জিসানকে ভালোবাসি এবং ওকেই ভালোবাসবো।
এই সহজ কথাটা কেনো বুঝতে পারছেন না আপনি বলুন তো?

আঁচলের কাছ থেকে রেহান এমন উত্তর আশা করেনি। আঁচলের কথা গুলো শুনে রেহানের প্রচন্ড রাগ উঠে গেছে।
আঁচলের মুখে আবার জিসানের নামটা শুনে রেহানের রাগের পরিমাণ টা যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

আঁচল রেহানের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে জমে গেছে।
এতোখন আঁচল রেহান কে শুধু কথা শুনিয়েই গেছে। একবারও রেহানের দিকে তাকায় নি। এখন তো বেচারির যায় যায় অবস্থা।

আঁচল – আসলে আমি ই……

আঁচলকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রেহান আঁচলের গলা চেঁপে ধরে।

রেহান – কি ভাবিস নিজেকে হ্যা। তোর এখন বিয়ে হয়ে গেছে। তুই এখন অন্য কারো স্ত্রী। তোর মুখে অন্য ছেলের নাম আসে কি করে?
লজ্জা করে না তোর? বার বার নিজের স্বামীর সামনে অন্য ছেলের নাম নিস।
এতোই যখন জিসান জিসান করিস তাহলে আমার সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছিলি কেনো?
আমি কি তোকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম?

রেহান আঁচলের গলা চেঁপে ধরেই রেগে কথা গুলো বলছিলো।
এদিকে আঁচলের নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি মরে যাবে।
আঁচল নিজের দু’হাত দিয়ে রেহানের হাতটা সরাতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
আঁচলের দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

রেহান আঁচলের চোখে পানি দেখে আঁচলকে ছেড়ে দেয়।

রেহান – ( উফফফ.. কেনো যে আঁচলকে কষ্ট দিতে গেলাম। এমনিই ওর মনে আমার কোনো জায়গা নেই। তার মধ্যে বার বার ওকে কষ্ট দিয়ে আরও দূরে সরে যাচ্ছি। কিন্তু আমিই বা কি করবো। আমি তো চাই ওকে নিজের ভালোবাসায় বাঁধতে। ওর মুখে বার বার অন্য ছেলের নাম সহ্য করতে পারি না আর,,,,,, মনে মনে)

রেহান আঁচলের গলা ছেড়ে দিলে আঁচল কাশতে থাকে। আঁচলের চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে যা রেহান স্পষ্ট বুঝতে পারছে।

আঁচল – ছেড়ে দিলেন কেনো? মেরে ফেলুন আমায়। অন্তত আপনার এই রুপ টা আর দেখতে হতো না।

রেহান – তুমিই তো ছাড়াতে চাইলে!! না হলে তো আজ সত্যিই মেরে ফেলতাম তোমায়। (আঁচলের কান্না থামাতে ঠাট্টা করে বলে)

আঁচল – একদম ফাইজলামি করবেন না বলে দিলাম। আপনি আসলে একটা বাজে লোক। আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল। আর হ্যা… বলছিলেন না আপনাকে কেনো বিয়ে করলাম?
বিয়ে করেছি শুধুমাত্র মা বাবার কথায়। নয়তো আপনার মতো একটা অমানুষ কে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না আমার।

রেহান – ওহহহ তাই? আমি অমানুষ? তো তুমি বিয়ের আগেই কি করে জানতে আমি অমানুষ?
নিশ্চয় আমার সম্পর্কে সব খুজ খবর নিয়েছো? হ্যা…. নিতেই পারো। এতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ হাতছাড়া করতে চায় বলো। (বাঁকা হেসে)

আঁচল – হ্যান্ডসাম মাই ফুট…. (রেগে) বলেই চলে আসতে নেয়।
রেহান আঁচলের হাতটা ধরে ফেলে। আঁচলকে টেনে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।

রেহান – যাই বলো না কেনো বেইবি আমাকেই ভালোবাসতে হবে তোমার। যদি নিজে থেকে ভালোবাসো ভেরি গুড… আদারওয়াইজ জোর করে ভালোবাসা আদায় করবো। (মুচকি হেসে)

আঁচল – জোর করে ভালোবাসা পাবেন? হাসালেন!!!!

রেহান – রেহান চৌধুরীর কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় বেইবি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ভালো তো তুমি আমাকেই বাসবে। (বাঁকা হেসে)

আঁচল – ওফফফ অসহ্য।

রেহান আঁচলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে…..

রেহান – তুমি তো আমাকে স্বামী মানো না তাই না তার মানে তো এটাই দাড়ায় তুমিও আমার বউ না।
আর তাই আমি কাজ ও করবো না। যেদিন বলবে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছো। সেদিন আমিও আমার উপার্জন করা টাকায় আমার বউ কে খাওয়াবো।
আর তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো সারা দিন আমি বাসায় থাকলে তোমার কি হাল করবো।
আফটারওল কাল রাতে তো দেখলেই….. (বলেই আঁচলের কানের লতি তে হালকা করে কামড় দেয়)

আঁচল – আই ডোন্ট কেয়ার…. আপনি কাজে যান বা জাহান্নামে যান আমার দেখার কিছুই নেই।

রেহান – উহুম….. কাজেও যাবো না জাহান্নামে ও যাবো না। সারা দিন তোমার কাছেই থাকবো। এখন খুশি তো? (মুচকি হেসে)

আঁচল রেহানের কথায় চরম বিরক্ত হয়ে রেহান কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চলে আসতে নেয়।

রেহান পিছন থেকে আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আঁচলের ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে থুতনি রেখে বলে…..

রেহান – চলে যাচ্ছো যে? শাস্তি তো এখনো দিই নি। (আঁচলের ঘাড়ে নাক ঘসে)

আঁচল রেহানের এমন আচরণে বেশ অসস্থি ভোগ করে..

আঁচল – ক..কিশের শাস্তি?

রেহান আঁচলের ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলে….
রেহান – ভুলে গেলে বেইবি। শাস্তি তো দিবোই। প্রথমত আমাকে মাথা ব্যাথার কথা বলে বোকা বানিয়ে চলে গেছো। আর দ্বিতীয়ত আমাকে কাজের জন্য খুটা দিয়েছো।

চলবে…

হূর part 2

0

হূর part 2
#Roja_islam

হূর ঘুম থেকে উঠে দেখলো আদনান তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে! হূর আস্তে করে আদনানকে সরিয়ে উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আদনান এর রুমটা গুছালো। কাল ভয়ে এইরুমে ঢুকেনি সে যদি আদনান আবার এটানিয়ে কিছু বলে!

হূর গিয়ে নাস্তা বানাতে লাগলো। আদনান ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে বসতেই! নাকে সুন্দর স্মেল এলো। আদনান চোখ ঢলতে ঢলতে কিচেনে গেলো। হূর মন দিয়ে গোসত ভুনা করছে আর চালের রুটি বানাচ্ছে! আদনান এসব দেখে চোখ বড় বড় করে বললো, ” গোসত কই পেলে বাসায় তো ছিলো না? ”

হূর এর মন চাইলো বললতে, ” চুরি করেছি! ”

কিন্তু বললো না এটা বললে একটা টর্নেডো আসবে যা তার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ করে দিয়ে যাবে তাই! সে বললো, ” মা আপনার জন্য দিয়ে দিয়েছে এসব ”

আদনান কিচেন থেকে চলে যেতে যেতে ভাবলো সে খাবে না। তারপর আবার ভাবলো না স্মেল তো ভালোই আসছে খাওয়া যেতে পারে! ফ্রেস হয়ে রেড়ি হয়ে ডাইনিং গিয়ে দেখলো হূর খাবার বেড়ে দাড়িয়ে আছে। আদনান আর কিছুনা বলে খেয়ে চলে গেলো। হূর দরজা লাগিয়ে রুমে এসে ধুপ করে শুয়ে পড়লো বেডে। জ্বর কমেনি দুর্বল লাগছে শরীল খুব হূর আবার ঘুম দিলো৷

এভাবে ১মাস চলে গেলে আদনান লখ্য করলো হূর আগের থেকে তার সাথে কম কথা বলে। বলে না বললেই চলে৷ পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকে। পাশে ফ্ল্যাটেও আর যেতে দেখেনা৷ একদম চুপচাপ বসে থাকে। রান্নাও ঠিক হয়েগেছে। আধসিদ্ধ, পোড়া খেতে হয়না। সুন্দর স্মেল বের হয় রান্না থেকে। একদম পার্ফেক্ট রান্না খেতেও মজা! আদনান এখন বাসায়ই খায়৷ হূর এখন আদনান এর সব কথা শুনে ভুল হয় না কিছুতেই! আদনান বুঝতে পারে হূর চেঞ্জ হচ্ছে কিন্তু কিছুই বলেনা কারণ চেঞ্জ হলেই তো ভালো। এখন অনেকটা প্যারা মুক্ত আদনান৷

রাত ১১টা আদনান স্কুলের খাতা দেখছে! পাশের রুমে হূর শুয়ে পরেছে খাওয়া দাওয়া শেষে সব গুছিয়ে! হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ কানে এলো আদনানের সে চেচিয়ে বললো হূরকে, ” এই মেয়ে কলিংবেল বাজছে শুনতে পারছো না? যাও দেখো কে এসেছে? ”

হূর আস্তে করে উঠে গেলো দরজা খুলতে৷ কিন্তু খোলার আগে লুকিং গ্লাস এ দেখতে পেলোই পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি দাড়িয়ে৷ হূর উনাকে দেখে আর খুললো না। পিছন ফিরে রুমে যাবে দেখলো আদনান দাড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। হূর বললো, ” পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি খুলতে হবে না! ”

বলে হূর নিজের রুমে চলে গেলো। আদনানের হূরের কথাটা ভালোলাগেনি। সে হূরের রুমে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো, ” কেনো? খুলতে হবে না কেনো? আমার সামনে ঐ মহিলার সাথে কথা বললে ধরা খাবে নিশ্চয়ই? ”

হূর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললো, ” আপনার উনাকে পছন্দ না তাই খুলিনি…! ”

আদনান চেচিয়ে উঠে, ” শাট আপ। মিথ্যে কথা বলবে না। একদম না৷ বলো ঐ ফ্ল্যাটে ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা থেকে কি করো তুমি? ”

হূর ফোফাতে লাগলো কান্না করে দিবে দিবে অবস্থা! জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো, ” আদনান এসব কি বলছো? ”

আদনান রেগে আর কিছু বলবে। তার আগেই হূর ফ্লোরে বসে পরলো! হূর কাদতে কাদতে বললো, ” প্লিজ আর ছোট করবেন না আমায় প্লিজ…দোয়া করুন৷ আমি অনেকদিন বলতে চেয়েছি! আমি কেনো যাই ঐ আন্টির কাছ! আপনি শুনার আগেই আমার গায়ে হাত তুলেছেন! তাই বলতে পারিনি এটা কি আমার দোষ? আজ আপনি না যেনেই আমায় কোন কিছুর অপবাদ দিতে পারেন না। না কিছুতেই না! ”

হতভম্ব হয়ে গেলো আদনান। কারণ হূরের কথা সত্যি সে শুনেইনি কি বলতে চায় হূর! তার আগেই রেগে গিয়েছে। সে কি করবে ঐ পাশের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কোন কথা শুনার আগেই তার মাথা গরম হয়ে যায়! কিন্তু সেটার দোষ তো আর তার বৌ এর নয়। আদনান এর ভেতরের ভালো মানুষটি আজ বললো। না আদনান তুই ভুল।

আদনান কিছু বলবে তার আগেই হূর আবার বললো, ” ঐ বয়স্ক আন্টি ডিভোর্সি! উনি উনার বুড়ো মা নিয়ে একাই থাকেন। আন্টি জব করে সকালে যায় আসতে রাত হয় জ্যাম এর জন্য। বুড়ো মা বাসায় একা থাকে। আমিও একা থাকি জেনে আন্টি আমার কাছে বলে যায় উনার বুড়ো মাকে একটু গিয়ে দেখে আসতে যদি কিছু হয়ে যায়। বুড়ো নানু হাটতে পারেনা আমারো ভয় হয়ে যদি পড়ে টরে ব্যাথা পায়? তাই না গিয়ে পারিনা। আর গেলে নানু উনি ছাড়তে চায়না বুড়ো মানুষ গল্প জুড়ে দেয়৷ উনাকে কষ্ট দিয়ে আসতে পারিনা! এটাই আমার বিরাট অপরাধ তাই তো! আর যাই না উনি ডাকলেও রাতে এসে দরজা খুলিনা! এতেও আপনার প্রবলেম? আপনি আমায় পছন্দ করেন না জানি সেটা তাই বলে এইসব লেইম চিন্তাভাবনা করবেন না আমার ব্যাপারে। ”

এইটুকু বলেই চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ হূর। আদনান মূর্তির মত দাড়িয়েই রইলো৷ হূর আবার বললো, ” আমার বয়স কত আপনি জানেন?? জানতে চেয়েছেন কখনও? আচ্ছা আমিই বলছি! আপনার সাথে আমার বিয়ের ১৫ দিন পর আমি ১৮ তে পাদি! যখন আমার স্কুলে কলেজে পড়ার কথা। বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেয়। তার কারণ ছেলে ভালো শিক্ষিত এবং শিক্ষক বলে কথা। আমার বাবার মতে শিক্ষকরা। আর যাই হোক স্ত্রীকে অসম্মান আর মূর্খের এর মতন গায়ে হাত তুলবে না। কারণ মূর্খ মূর্খই হয় এরা এসব বুঝেনা৷ তাদের এই চিন্তা ভাবনায়! আমি ছোট সেটাও তাদের চোখে পড়েনি৷ আপনার সাথে বিয়ের পর এতছোট বয়সে মা বাবাকে ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে হঠাৎ শহরে এসে আমি ভয় পেয়ে যাই৷ আমি তখনি বুঝতাম আপনার আমাকে পছন্দ নয়৷ আপনার ব্যাবহার এ ভয়ে আমি সব গুলিয়ে ফেলতাম৷ শুরু হয় কাজে একের পর এক ভুল৷ বিয়ের এক মাসেই আমি বেশ কিছুবার থাপ্পড় খাই আপনার হাতে। ভয়ে ভুল আরো বারতে থাকে। এর মধ্যে আন্টি এসে উনার মার কথা বলে। আমার অদের ফ্ল্যাটে যাওয়া শুরু হয়৷ আমার ভুল সুধরাতে পারিনা। আর আপনার বিহেভিয়ার আরো খারাপ হয়৷ আমার কি দোষ বলুন আমি সুধরাতে পারনি কারণ আমি ঘরের কাজ একদমি পারতাম না..! ”

হূর আবারো জোরে কাদতে লাগলো। সে পারে না ঘরের কাজ এটা জেনো তার কত কষ্ট হচ্ছে বলতে৷

আদনান এখনো একি ভাবে দাড়িয়ে! তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। হূর এর বয়স সে জানতো না। কিন্তু ১৮ মাত্র এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে৷ হ্যাঁ বয়স কম ভেবেছিলো কিন্তু এতো কম ভাবেনি সে৷ আর আজকের মতো লজ্জা সে গ্রামের শিক্ষিত ছেলে হয়ে কখনো কাউর থেকে পায়নি। যতটা আজ হূরের কথায় পেলো।

হূর বেশকিছু ক্ষণ কেদে চোখ মুছে বলে উঠে, ” আমাকে আপনার পছন্দ নয় এটা আমার দোষ নয় আপনার দোষ ও নয়৷ তবে আপনি চাইলে বিয়ে ভাঙতে পারতেন আমি পারতাম না। আমার ইচ্ছে ছিলোনা বিয়ে করার পড়ার স্বপ্ন ছিলো খুব করে৷ কিন্তু তাও মা বাবা কথার উপর কথা বলতে পারিনি ছোট বলে আপনি পারতেন কিন্তু করেনি। কিন্তু এভাবে তো আর চলেনা৷ আপনি আমার বাবাকে বলে দিয়েন আমায় এসে নিয়ে যেতে!কারণ আমি বললে তারা বিশ্বাস করবে না আপনি আমায় পছন্দ করেন না। কারণ তাদের মতে আপনি তো শিক্ষক আর ভালো মানুষ। আপনি খারাপ কিছু করতেই পারেন না আমার সাথে। তাই আপনাকেই বলতে হবে বাবাকে! ”

হূরের কথা শেষ হতেই আদনান চলে গেলো রুম থেকে হূর কান্নার ভেঙে পড়লো। আজকেও আদনান বললো না৷ সরি হূর চলো নতুন করে শুরু করি আমাদের ভুল গুলো ভুলো৷ না আজকেও আদনান বললো না। হূরের কপালে হ্যাসবেন্ড, সংসার, স্বপ্ন কিছুই নেই! কেনো? কেনো? কেনো?

চলবে!

[আর ১ পর্বে শেষ]

হূর part 1

0

এক আছাড়ে আদনান তার ফোন ভেঙে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললো, ” আমার ডিনার কই? ”

হূর প্রায় দৌড়ে এসে বললো, ” একটু সময় লাগবে আসলে পাশে ফ্ল্যাটে আন্টি অ…. ”

আর বলতে পারেনি হূর! গালে পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে যায়! আদনান ভয়ংকর কিছু কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় ওয়ালেট নিয়ে! হূর নিরব হয়ে সবটা দেখে কিচেনে ঢুকে গ্যাসটা অফ করে দেয়! রুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো হূর! আয়নার সাথেই কথা বলতে লাগে হূর, ” আমি দেখতে কালো? না সুন্দর? কোনটা প্রবলেম আদনান এর আমি কালো এটা না সুন্দর এটা? দেখলেই কথায় কথায় গালে থাপ্পড় খেতে খেতে আমি ক্লান্ত! ”

রাত ১২ টা,
আদনান বাসায় এসে দেখে শুয়ে আছে হূর বেডে! আদনান শুতে শুতে ভাবে কেনো এই মেয়ের জন্য তার মায়াও হয় না? শুধু শুধু মন চায় থাপড়াতে থাপড়াতে বিদায় করে দেই বাসা থেকে! জীবনটা হেল করে রেখে দিয়েছে…. আমার!

বরকে পাশে শুতে দেখে একবার চোখ খুলে তাকালো হূর আদনানের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে! কেনো এই লোক হূরের সাথে মিস বিহেভিয়ার করে কারণ খুজে পায় না হূর!

সকালে উঠে আদনান হূরকে ডেকে খুজেও কোথাও পায় না! আদনানের মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ ভাবতেই হূর আবার পাশের ফ্ল্যাটে গেলো না তো?? হূরের এই কাজ টা আদনানের মোটেও পছন্দ না। হূর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে আড্ডা দেয়৷ যা খুবি ইরেটেট করে আদনানকে! কিন্তু এই মেয়ে এটা বুঝেইনা।আদনানের কথা হচ্ছে! সে মেরে কেটে ফেলে দিবে হূরকে তাও সে এই ফ্ল্যাটের বাইরে যেতে পারবেনা! এটা বলেও দিয়েছে সে হূরকে কিন্তু না এইমেয়ে কথাই শুনে না তার আড়ালে হূর পাশের ফ্ল্যাটে যাবেই যাবে। এমনিতেই এই মেয়েকে বাবা মার ইচ্ছেতে বিয়ে করেছে আদনান তার তেমন পছন্দনা হূরকে। এমন না যে হূর কালো সুন্দর নয় যে পছন্দ হবেনা। তাও আদনানের পছন্দ নয় এই মেয়েকে। তার উপর এই মেয়ে তার কথা শুনে না! কিছু বললে করে না। খায়না। অসুখ বাধাতে উস্তাদ। রান্না করতে পারেনা। পুড়া আধ সীদ্ধ খেতে হয় আদনানকে। সে রেগে মাসে ২০ দিন বাইরে খায়! যেদিন বাসায় খায় সেদিন হূর থাপ্পড় খাবে গেরান্টি সেটা। কিন্তু এতো মারধর করার পড়েও একটা সাউন্ড এই মেয়ের মুখদিয়ে বের হয় না। এটা কি ধরনের বিহেভিয়ার আদনান বুঝে না। হূর ব্যাথা পেলে কাদেও না। যা আরো রাগ মাথায় উঠিয়ে দেয় আদনানের! কিন্তু সে বের করে দিতে পারেনা হূরকে মা বাবা পছন্দ করে বলে হূরকে! মা বাবা কষ্ট পাবে ভেবে এই যন্ত্রণাকে সহ্য করছে আদনান আজ ৫ মাস ধরে!

শুধু জানে না আর কতদিন সহ্য করতে পারবে সে? আদনান একজন স্কুল টিচার ২ বছর হবে সে চাকরি করছে। ৯ টা বাজে স্কুলের জন্য বেরুতে হবে তাকে! আর হূরের খবর নেই। আদনান রেডি হয়ে না খেয়ে চলে গেলো স্কুলে! স্কুলে ঢুকতেই ফোন এলো শ্বশুর এর নাম্বার থেকে রিসিভ করে কানে রাখলো ফোন আদনান৷

ঐপাশ থেকে হূর এর গলা শুনতে পেলো আদনান হূর সালাম দিয়ে বললো, ” আমি চলে এসেছি বাসায় টেনশন নিও না! তোমার আমাকে প্রয়োজন নেই! যাকে প্রয়োজন যেমনটি প্রয়োজন পছন্দ করে নিও! রাখছি আল্লাহ হাফেজ! ”

এই টুকু বলেই রেখে দিলো হূর৷ আদনান পাত্তা দিলোনা হূর এর কথা বরং ভালো লাগলো আপদ আপাদমস্তক নিজেই তার ঘাড় থেকে নেমেছে।

সে দিব্বি কিছুদিন ভালো পার করলো। শুধু কাপড় টা তার ধুতে হয় যা খুব কষ্ট বাকি সবে কোনও প্রবলেম হয়না! সে আগেও হোটেলে বেশী খেতো এখনো খায়৷ টাকা বেশী যায় তাতেকি মজার খাবার খেতে একটু বেশী টাকা তো লাগবেই। স্কুল শেষে ভার্সিটি ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতে ফিরে ঘুম নিয়ম করে গ্রামে মা বাবার সাথে কথা। সে ভুলেই গেলো তার বৌ নামক একটা কেউ আছে!

এভাবে ১ মাস যাওয়ার পর একদিন হঠাৎ! তার শ্বশুর আসে হূরকে নিয়ে। হূরের বাবা সাধাসিধে গ্রামের মানুষ। তিনি মাফ চান আদনান এর কাছে হূর যদি কোন ভুল করে থাকে তো যেনো আদনান তাকে ক্ষমা করে দেয়। তিনি মাফ চেয়ে রেখে যায় হূরকে। বাবা যাওয়ার পর হূর হেচকি তুলে কাদছিলো। আদনান এভাবে তাকিয়েছিলো হূরের দিকে জেনো আবার এসেছে হূর এখানে। তাই চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে হূরকে! আদনান আর কিছু না বলে চলে যায় বাসা থেকে বেরিয়ে!

হূরের একটু ভয় কমে সে পুরো ফ্ল্যাট কোমরে শাড়ীর আঁচল গুজে পরিস্কার করে। ১ মাসে ফ্ল্যাটকে জঙ্গলে পরিনত করেছে আদনান৷ সব পরিস্কার করে হাফিয়ে উঠে হূর। ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে! সে শাওয়ারে ঢুকে দ্রুত! তারপর খুজে বিস্কিট খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার আজ তিন দিন ধরেই জ্বর ছিলো সেটারি ঔষধ নিলো হূর।

বরাবরের মতো ১২ টার দিকে আদনান খেয়ে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে দেখে হূর নেই। রুমের বাইরেও না দেখে অন্য রুমে উঁকি দিতেই দেখে ঘুমিয়ে আছে হূর। আদনান খেয়াল করে ফ্ল্যাট চকচক করছে। সে খুশী মনে ঘুমুতে যায় তার রুমে । আজ কতদিন পড় শান্তিতে ঘুমাবে পরিস্কার বিছানায়। কিন্তু নিজের রুমে এসে সব নোংরাই দেখতে পায় আদনান। সে রেগে হূরের রুমে যায় গিয়ে ধপাশ করে হূরের পাশে শুয়ে পড়ে! হূর সাথে সাথে ঘুরে ঘুমের মধ্যে আদনানকে জরিয়ে ধরে! সাথে সাথে আদনান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় হূরকে! হূরের শরীর এতো গরম যে মনে হয়েছে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা খেয়েছে আদনান। দ্রুত আদনান হূরের কপালে হাত রেখে রেগে বলে উঠে, ” শুরু হয়ে গেছে! এসেই আমায় জ্বালানো! আমি পারবো না ডক্টর এর কাছে যেতে যা খুশী হোক স্টুপিড গার্ল! ”

বলেই আদনান নিজের রুমে চলে যায় রাগে গজগজ করতে করতে!
হূর
part 1
Roja_islam

[ চঞ্চল মস্তিষ্ক এর লেখা কিছু পর্বে শেষ করে দিবো!]

ডেভিল বর পর্ব – ৫

0

ডেভিল বর
পর্ব – ৫
শিফা_আফরিন
.
.
?
আঁচল বুঝতেও পারেনি রিমি চলে গেলেও বাহিরে দাঁড়িয়ে একজন সব শুনছে।

আঁচল – ওহো রিমি তো বলেছিলো বাবা নাকি সকালে চা খায়। আমি বরং বাবার জন্য চা করে নিয়ে যাই। নিশ্চয় উনি দেখে অনেক খুশি হবে।

আঁচল রেহানের বাবার জন্য চা বানাতে থাকে আর রেহান কে বকতে থাকে।

আঁচল – আস্ত একটা ডেভিল। কোনো কাজ করে না বাবার টাকায় বসে বসে খায়.. লজ্জাও করেনা নাকি।
বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবে তা না সারা দিন বাসায় থেকে ঢ্যং ঢ্যং করে… ধুররর।
ওই লুচু ব্যাটা কাজে না গেলে তোহ আমার ১২ টা বাজাবে।

হায় খোদা এই ডেভিল টাকে বিয়ে না করে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মরে যেতাম তাও ভালো ছিলো। আমার জীবন টাই শেষ করে দিলো হুহহহ।

—- তাই বুঝি? থামলে কেনো বলো বেইবি,,,

আঁচল চা হাতে নিয়ে যেই রান্না ঘর থেকে বের হতে নিবে অমনি কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ায়।
রেহান এতক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো আঁচল বুঝতেও পারেনি।

রেহান চোখ মুখ শক্ত করে কথাটা বলে। রাগে রেহানের চোখ দু’টো রক্তবর্ণ ধারন করেছে।

আঁচল রেহানকে দেখা মাত্রই ভয়ে হাতে থাকা চার কাপ টা ফেলে দেয়….

আঁচল – আহহহ….

চার কাপ টা ফেলে দেওয়ায় অনেকটা চা আঁচলের পায়ে পড়ে। বেচারির পা টা বোধহয় পুরেই গেলো।

রেহান দ্রুত আঁচলের কাছে আসে।

রেহান – আঁচল…. কাপটা পড়লো কিভাবে? সাবধানে কাজ করবে তো নাকি..

আঁচল – আ..আপনি ক…কখন এসেছেন? (ভয়ে ভয়ে)

রেহান – অনেক আগেই এসেছি আর তোমার সব কথাও শুনেছি।
এবার রুমে চলো আগে তোমার পা ঠিক করি তার পর তোমার শাস্তি।

আঁচল – কিশের শাস্তি? (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

রেহান – আমাকে যে এতক্ষন এতো কথা বললে তার শাস্তি। (রেগে)

আঁচল – সরি। আর হবেনা। (কেঁদেই দিলো)

রেহান – আগে চলো তো তার পর বুঝাচ্ছি। (বলেই আঁচলকে কোলে নিতে নেয়)

আঁচল – আরে কোলে নিবেন কেনো?
আমি হেঁটে যেতে পারবো। এতোটাও লাগেনি।

রেহান – আমি নিশ্চয় তোমার কাছে জানতে চাইনি। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রেহানের রাগ দেখে আঁচল চুপ মেরে যায়। রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে যায়।

রুমে এসে রেহান আঁচলকে বিছানায় বসিয়ে দেয়।

রেহান আঁচলের সামনে ফ্লোরে বসে পরে।

রেহান – দেখি পা টা…

আঁচল – আরে বললাম না আমার বেশি লাগেনি। সামান্য গরম। আসলে হটাৎ করে পরে যাওয়াতে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম।

রেহান – আমি তোমাকে ইন্টারভিউ দিতে বলিনি। পা দেখাও। (দাঁতে দাঁত চেপে)

আঁচল রেহানের দিকে পা টা একটু এগিয়ে দিতেই রেহান আঁচলের পা টা নিজের হাঁটুর উপর রেখে দেখতে থাকে বেশে লেগেছে কিনা।

রেহান – জ্বলছে বেশি?

আঁচল – সামান্য গরম। জ্বলবে কেনো…

রেহান – তাও অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিলে ভালো হবে যদি দাগ পড়ে যায় তো…..

আঁচল – ঠিক আছে আমি পরে লাগিয়ে নিবো নি।

রেহান আঁচলের কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিজে অয়েন্টমেন্ট এনে আঁচলের পায়ে লাগিয়ে দেয়।

আঁচল উঠে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে ফেলে….

রেহান – কোথায় যাচ্ছো?

আঁচল – (এই রে ঠিক আটকে ফেলেছে। ভেবেছিলাম কেটে পরবো।)

রেহান – কি হলো চুপ করে আছো কেনো?

আঁচল – ইয়ে মানে…. নিচে যাবো। বাবার জন্য চা করতে।

রেহান – বাবার চা এতক্ষনে নিশ্চয় রিমি দিয়ে এসেছে। তুমি বরং তোমার শাস্তির জন্য তৈরি হয়ে নাও। (মুচকি হেসে)

আঁচল – শাস্তি! (ভয় পেয়ে)

রেহান – হুম। কি জেনো বলছিলে। আবার বলো।

আঁচল – ক…কি ব….বলছিলাম (ভয়ে ভয়ে)

রেহান – তুমি বলবে নাকি আমাকেই বলতে হবে। (রেগে)

আঁচল – আ..আমি বলছিলাম যে.. আপ…আপনি কোনো কাজ ক..করেন না। এটা তো ঠিক না তাই না। (তোতলাতে তোতলাতে)

রেহান – ওহ.. এখন ঠিক ভুল তুমি শিখিয়ে দিবে আমায়?

আঁচল – না একদমই না।

রেহান – তোমার তো অনেক সাহস হয়েছে দেখছি। আমি কাজ করিনা বলে কথা শুনাচ্ছো। তুমি জানো… আজ পর্যন্ত আমার মা ও কাজ নিয়ে কথা শুনায় নি। আর তুমি কাল এসে আজই খুটা দিচ্ছো?

আবার বলছিলে বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াতে…. তাই না

আঁচল – না… মা.মানে হ্যা

রেহান – তার মানে তুমি মেনে নিয়েছো যে তুমি আমার বউ।
আর আমি তোমার স্বামী। তাই তো?(মুচকি হেসে)

আঁচল – আমি সেটা কখন বললাম? (অবাক হয়ে)

রেহান – তুমিই তো বললে… ” বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবে তা না “…… বলো নি?

আঁচল রেহানের কথা শুনে যেনো সপ্তম আসমান থেকে ঠাস করে জমিনে পড়েছে।

আঁচল – (এএএ মা এই ডেভিল টা বলে কি। এ তো পুরো আমার কথায় আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলো… মনে মনে)

রেহান – কি হলো বেইবি। বলো?

আঁচল – হ্যা বলেছি।

রেহান – তুমি যদি মেনে থাকো তুমি আমার বউ তার মানে আমি তো তোমার স্বামী হবোই তাই না।

আমি না হয় আমার বউ কে নিজের টাকায় খাওয়াবো।
কিন্তু তার জন্য তো আমিও আমার বউয়ের কাছে কিছু চাইতেই পারি কি বলো?
তুমি রাজি তো বেইবি? (মুচকি হেসে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের কাশি উঠে যায়….

চলবে…

ডেভিল বর পর্ব – ৪

0

ডেভিল বর
পর্ব – ৪
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান আঁচলের কথা কানে না নিয়ে এক হাতে আঁচলের কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় অন্য হাতে আঁচলের ঠোঁটে স্লাইভ করতে থাকে।
রেহানের নিশ্বাস আঁচলের নাক মুখে পড়ছে। আঁচলের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না।

আঁচল – আ..আমায় যেতে দিন। (খানিকটা বিরক্তি নিয়ে)

রেহান – চুপ….. বলেই আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
কিছুক্ষন পর রেহান আঁচলের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আঁচলের গলায় কিস করে।

আঁচল রেহানকে ছাড়াতে চেষ্টা করতেই থাকে। রেহান আঁচলের হাত দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।

রেহান – তোমার প্রবলেম টা কি বলবে আমায়? তুুমি কি ভাবছো তুমি বললেই আমি তোমায় ছেড়ে দেবো।

কালও বলেছি এখন ও বলছি তুমি আমাকে মানতে পারো বা না পারো আই ডোন্ট কেয়ার। আমি তোমাকে চাই ই চাই। আর আমার কোনো কাজে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করবে না কখনো। তাহলে কিন্তু ফল ভালো হবেনা আঁচল। (দাঁতে দাঁত চেপে)

আঁচল রেহানের কথায় অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। রেহান আঁচলের ভয় পাওয়া দেখে মুচকি হেসে আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।

রেহানের কান্ড দেখে মূহুর্তেই আঁচলের চোখ দু’টো রসগোল্লা হয়ে যায়।
(কোলে নিলো কেনো এই লুচু ব্যাটা৷ হায় আল্লাহ না জানি আবার কি করতে চাইছে। নাহ….কিছু একটা করতে হবে. মনে মনে)

রেহান আঁচলকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
আঁচলের শরীর টা রেহান নেশাভরা দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে।
আঁচল রেহানের চাহনি দেখেই বুঝতে পারছে রেহান কি করতে চাচ্ছে।

আঁচল রেহান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান আঁচলের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।
আঁচল চোখ মুখ খিচে আছে।

আঁচল – বেশি হয়ে যাচ্ছে। এক্ষুনি কিছু একটা করতে হবে.. মনে মনে

রেহান – বেইবি তুমি তৈরি তো? সেকেন্ড টাইম শাওয়ার নিতে। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ওওওওও মা গো…..

রেহান হটাৎ আঁচলের চিৎকার শুনে কিছুটা চমকে যায়।

রেহান – কি হলো আঁচল। চিৎকার করলে যে? বলো আমায় কি হয়েছে?

আঁচল – জানিনা হটাৎ করেই মাথা টা অনেক ব্যাথা করছে।

রেহান এবার চিন্তায় পরে যায়। কি হলো মেয়েটার এতো খন তো ভালোই ছিলো।

রেহান – তুমি শুয়ে থাকো। আমি রুমে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি সাথে একটা পেইনকিলার ও নিয়ে আসবো। তুমি উঠো না কিন্তু।

রেহান আঁচলের কাছ থেকে সরতেই আঁচল শুয়া থেকে উঠে এক দৌড়ে রুমের বাহিয়ে চলে আসে।

রেহান বেচারা বেকুবের মতো দাড়িয়ে আছে।

রেহান – কি হলো এটা! ওর না মাথা ব্যাথা করছিলো? ওহহহহ…..বুঝেছি আমায় বোকা বানানো হয়েছে তাই না। এই টুকুনি একটা মেয়ে আমাকে বোকা বানালো আর আমি বুঝতেই পারলাম না! ধুররর……
দাড়াও না একবার হাতের মুঠোয় পাই তোমার খবর আছে।

আঁচল এক দৌড়ে নিচে আসতেই (রেহানের বোন) রিমির মুখোমুখি হয়…

রিমি – কি গো ভাবি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেনো?

আঁচল – ইয়ে মানে এমনি… (ধুর কেনো যে দৌড়ে আসলাম! এখন ও কি ভাববে? নতুন বউ কিনা দৌড়াদৌড়ি করে… ভাবা যায়…! মনে মনে)

রিমি – উহুম….এমনি এমনি কেউ দৌড়ায় নাকি। নিশ্চয় কারন আছে। তা কারন টা কি ভাবি? কেউ কি তাড়া করছিলো নাকি.. (চোখ মেরে)

আঁচল – আরেহহ না না। যাকগে বাদ দাও ওসব কথা। তুমি তো দেখতে অনেক সুন্দর। আচ্ছা তোমার নাম টাই তো জানা হয়নি।

রিমি – হুহহ…. কথা ঘুরাচ্ছো তাই না। আমার চোখে ফাঁকি দেয়া কিন্তু এতো সহজ না মেরি ভাবিজি।
বাই দ্য ওয়ে আমার নাম রিমি। আর আমি তোমার কি হই জানো তো? একমাত্র ননদিনী।

আঁচল – হুম সেটা তো জানি।

রিমি কথা বলতে বলতে হটাৎ আঁচলের ঠোঁটের দিকে নজর যায়…

রিমি – এ মা ভাবি। তোমার ঠোঁট গুলো এতো লাল হয়ে আছে কেনো? মশা কামড় দিলো নাকি? (মুচকি হেসে)

আঁচল বুঝতে পারে এটা রেহানের কারনেই হয়েছে। ব্যাটা লুচু যেভাবে আমার ঠোঁটের উপর হামলা করেছে… মনে মনে।

রিমি- কি হলো ভাবিজি বলো বলো…

আঁচল – না মানে লিপস্টিক দিয়েছিলাম আরকি।

রিমি – ওহো তাই বুঝি?

আঁচল – হুম। আচ্ছা রিমি রান্না ঘর টা কোনদিকে একটু দেখাবে প্লিজ।

রিমি – মানে! তুমি রান্না ঘরে গিয়ে কি করবে শুনি? তাছাড়া মা একটু বাহিরে গেছে এখনি চলে আসবে। মা বলে গেছে তোমাকে যেনো কোনো কাজ করতে না দিই।
যদি ফিরে এসে শুনে তোমাকে রান্না ঘরে কাজ করতে দিয়েছি জানো তো কি হবে?

আঁচল – আহা কিছু হবেনা। আমি মাকে বলবো নি। তুমি বরং আমাকে রান্না ঘর টা দেখিয়ে দাও।

রিমি – না তা হচ্ছে না। তুমি বরং আমার সাথে আমার রুমে চলো। এক সাথে গল্প করবো দু’জন।

আঁচল – হ্যা তা তো অবশ্যই করবো। এখন আগে রান্না ঘর টা দেখাও। পরে সারা দিন তোমার সাথে গল্প করবো কেমন?

রিমি – ওকে চলো তবে কোনো কাজ করো না কিন্তু। মা আমায় বকবে পরে।

আঁচলের জোরাজোরি তে রিমি আঁচল কে রান্না ঘরে নিয়ে যায়।

এদিকে… রেহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আঁচল এখনো রুমে আসেনি।

রেহান – এখনো রুমে আসেনি বজ্জাতের হাড্ডি টা। ঠিক আছে আমিও দেখি তুমি কতক্ষণ রুমে না এসে থাকতে পারো। (মুচকি হেসে)

রেহান নিচে চলে আসে। নিচে এসেও আঁচলকে খুজে পায়নি।

রেহান ভাবে আঁচল হয়তো রান্না ঘরে গেছে। রেহান রান্না ঘরের সামনে যেতেই আঁচল আর রিমির কথা শুনতে পায়…..

আঁচল -আচ্ছা রিমি তোমার ভাইয়া অফিসে যায় কখন আর কখন ফেরে?

রিমি আঁচলের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয়।

আঁচল – হাসছো যে? (অবাক হয়ে)

রিমি – হাসবো না! তুমি কি বললে ভাইয়া আর অফিস!
ভাবিজি ভাইয়া আজ পর্যন্ত অফিসে যায়নি ইভেন ভাইয়া কোনো কাজ ও করে না। তার কাছে নাকি এই সব বোরিং লাগে।

আঁচল – তাহলে অফিস কে সামলায়?

রিমি – বাবা।

আঁচল – ওহহহ।

রিমি – ভাবি তুমি থাকো একটু আমি রুম থেকে আমার ফোন টা নিয়ে আসছি।

আঁচল – ঠিক আছে যাও।

রিমি চলে গেলে আঁচল সবার জন্য রুটি বানাতে আটা মাখতে শুরু করে।

আঁচল আটা মাখছে আর নিজে নিজে বক বক করছে…

আঁচল – ছি ছি শেষে কিনা এমন একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে হলো যে কিনা কোনো কাজ করে না বাবার টাকায় খায়।

আঁচল বুঝতেও পারেনি রিমি চলে গেলেও বাহিরে দাড়িয়ে একজন সব শুনছে।

চলবে…..

ডেভিল বর পর্ব- ২+৩

0

ডেভিল বর
পর্ব- ২+৩
শিফা_আফরিন
.
.
?
আঁচলের শরীর থেকে শাড়ি টা সরে যায়.. আঁচল তারাতারি করে শাড়িটা দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে ফেলে।

রেহান – আমিই তো..এভাবে প্যাকেট হওয়ার কি আছে। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ছাড়ুন আমায়। আরো কিছু করার বাকি আছে আপনার? (রেগে)

রেহান – না তা না। তবে তুমি চাইলে করতেই পারি।

আঁচল বিরক্তির সাথে রেহানের কাছ থেকে সরে যেতে নিলেই রেহান আবার আঁচল কে নিজের বুকে ফেলে দেয়।

রেহান – জানো… ওহো তোমার নামটাই তো জানা হলো না। বাই দ্য ওয়ে… তোমার নাম কী?

আঁচল রেহানের কথা শুনে রাগে গজগজ করছে। (কেমন লোক রে বাবা! বিয়ে করেছে এতো কিছু হয়ে গেলো এখনো নাকি আমার নামটাই জানে না। ইচ্ছে করে পানিতে চুবিয়ে মারি.. মনে মনে)

রেহান – কি হলো বলো?

আঁচল – জানিনা।

রেহান – আমি জানি। (মুচকি হেসে)

আঁচল রাগি ভাব নিয়ে রেহানের দিকে তাকায়।

রেহান – তুমি কি মনে করেছো কিছু না জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি?
আমি সব শুনেছি এবং সব জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি। (শান্ত গলায়)

আঁচল অবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকায়

রেহান – হুম জিসানের কথা আমিও জানি। আচ্ছা আঁচল সব কিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারো না?
আমি কি এতোটাই খারাপ? তুমি জিসানের জন্যে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো!

আঁচল – কষ্ট দিলাম কখন? কষ্ট দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন আপনি? আমার কোনো কথাই তো শুনেন নি। নিজের ইচ্ছে হলো ব্যাস পূরণ করে নিলেন।

আর হ্যা জিসানের কথা যখন শুনেইছেন তবে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো? কিশের জন্য?
আমি এখনো জিসান কেই ভালোবাসি। আর আপনি আমার সাথে জোর করে শুধু আপনার কামনা মেটাতে পারবেন।
আমি মন থেকে কখনো আপনাকে মেনে নিবো না। নেভার।

রেহান – আঁচল তুমি এখন আমার ওয়াইফ। তুমি আমার সামনে অন্য ছেলের নাম মুখে আনছো কিভাবে?

আঁচল – অন্য ছেলে না জিসানকে আমি ভালোবাসি বুঝেছেন!

রেহান রেগে একহাতে আঁচলের দু গাল চেপে ধরে বলে…

রেহান – ভালোবাসা মাই ফুট… তোর এই সব ন্যাকামি ভুলে যা। আজকের পর থেকে আমার সামনে আর কোনো দিনও কোনো ছেলের নাম নিবি না। আর রইলো তোর মনে জায়গা!!!
সেটা না পেলেও আমার কোনো আপত্তি নেই শুধু তোর শরীর পেলেই চলবে। মাইন্ড ইট। (রেগে)

আঁচলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। তার মানে রেহান ও শুধু তার শরীর চায়? রেহান ও ভালোবাসে নি? একটু আগেও আঁচল ভেবেছিলো রেহানের প্রতিটা স্পর্শ শুধু ভালোবাসার! কিন্তু না।
ভাবতেই আঁচলের গাল বেয়ে কয়েক ফোটা পানি পরে।

রেহান – কাঁদছো কেনো আজিব? যাই হোক.. জানো আঁচল আমার খুব ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর বউ এর সাথে প্রেম করবো, প্রতিদিন রাতে আমার বুকে ঘুমুতে দিবো। এখন তো দেখছি তোমার দ্বারা এসব কিছুই সম্ভব নাহ।

আঁচল অবাক হয়ে যায় রেহানের কথায়। একটু আগেই তো কত কথা বললো। এখন আবার বলছে বুকে ঘুমুতে দিবে। এই লোক টার মাঝে অনেক রহস্য!

রেহান আঁচলকে চুপ থাকতে দেখে আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচল এক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আঁচল কিছুক্ষন আগে রেহানের কাছ থেকে সরতে ছুটাছুটি করায় আঁচলের শরীরের অনেক টা অংশ থেকেই কাপড় সরে গেছে।
আঁচল কে এই অবস্থায় দেখে রেহানকে অদ্ভুত নেশা গ্রাস করে। রেহান নেশাসক্ত দৃষ্টিতে আঁচলের সারা শরীর দেখছে।

আঁচলের সেদিকে কোনো হুশ নেই। সে একদৃষ্টিতে রেহান কে দেখে যাচ্ছে।

রেহান – আঁচল তুমি তো দেখছি আমাকে পাগল করেই ছাড়বে। (নেশা ধরা কন্ঠে)

আঁচল রেহানের কথার কিছুই বুঝতে পারে নি। সে রেহানের চোখের দিকে তাকাতেই দেখে রেহান তাকে ঘোরগালা দৃষ্টিতে দেখছে।

আঁচল নিজের দিকে তাকাতেই চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে যায়। আঁচল নিজের শরীর টা শাড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছিলো। রেহানের সাথে মুচরামুচরি করে কখন যে শাড়ি সরে গেছে বেচারি টের ও পায়নি।

আঁচল – এই জন্যই খচ্চর টা এভাবে তাকিয়ে আছে… মনে মনে।
আঁচল তারাতারি করে শাড়িটা শরীরে দিতে গেলেই রেহান আটকে ফেলে।

রেহান – আমাকে পাগল করে দিয়ে এখন কি পালানোর ধান্দা করেছো নাকি?

আঁচল – মা…মানে.. (রেহানের কাছ থেকে সরতে সরতে)

রেহান – মানে টা দেখাচ্ছি…. বলেই আঁচল কে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
রেহান আঁচলের ঠোঁটে চুমু দিতে থাকে। একসময় কামড় দেয়া শুরু করে। আঁচলের শরীর থেকে শাড়িটা সরিয়ে ফেলে।………..
.
.
সকালে..
রেহান এখনো ঘুমাচ্ছে। আঁচলের ঘুম ভেঙে যেতেই দেখে সে রেহানের বুকে।
রেহান তাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে আঁচলের ছোটার কোনো উপক্রম নেই।
আঁচল অনেক চেষ্টা করেও রেহানের কাছ থেকে ছুটতে পারছে না।

আঁচল রেহানের দিকে তাকাতেই আঁচলের চোখ আটকে যায়।
রেহান এমনি তেই সুন্দর ঘুমের মধ্যে রেহান কে আরও সুন্দর লাগছে।
আঁচল রেহান কে একদৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে।

এদিকে রেহান ঘুম থেকে উঠে আঁচলের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। সেদিকে আঁচলের হুশ নেই।

রেহান – আমি জানি তোহ আমি সুন্দর। তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে? আমার ওত লজ্জা করে নাকি,,(চোখ মেরে)

আঁচল অসস্থিতে পরে যায় ,,,

আঁচল- সরুন আপনি…. আমি উঠবো।

রেহান – কেনো বউ?

আঁচল – কেনো মানে! আমি কি আপনার সাথে সারা দিন থেকে সিনেমার অভিনয় করবো নাকি?

রেহান – উহুম… রোমান্স করবে। (মুচকি হেসে)

আঁচল – অসহ্য….. বলেই উঠে যেতে নেয়। রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিতেই আঁচল রেহানের বুকে এসে পরে..

চলবে…

#ডেভিল বর
#পর্ব- ৩
#শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান- উহুম… রোমান্স করবে। (মুচকি হেসে)

আঁচল – অসহ্য বলেই চলে যেতে নেয়। রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিতেই আঁচল রেহানের বুকে এসে পড়ে।

রেহান- এতো পালাই পালাই করো কেনো বলো তো? আমার মতো এতো হ্যান্ডসাম বর পেয়েছো.. কোথায় সারা দিন আদরে রাখবে তা না..

আঁচল – শুনুন আপনার বকবকানি শুনার বিন্দু মাত্র আগ্রহ আমার নেই। আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।

রেহান – কেনো কোথায় যাবা?

আঁচল – আজিব! আমি শাওয়ার নিবো না?

রেহান – অহহ এই কথা। ভালো এখন যাও শাওয়ার নিতে। পরে আবার নিতে হবে বলে দিলাম তখন কিন্তু আমার উপর রাগ করতে পারবে না বলে দিলাম (চোখ মেরে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মনে হচ্ছে এখনি বুঝি চোখ দুইখানা বেরিয়ে আসবে।
(এই অসভ্য বলে কি!! সারা রাত তো ঘুমুতে দেয়ই নি আবার এখন…… নাআআআ আমি তোহ মরেই যাবো মনে হচ্ছে.. মনে মনে)

রেহান – কি হলো বেইবি? কি ভাবছো? দুইবার শাওয়ার নিবে নাকি এখনি…. (মুচকি হেসে)

আঁচল কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু সে এখন কোনো ভাবেই রেহানের চক্করে পরতে চায় না।
(ধুর বাবা এখন বরং শাওয়ার নিতে যাই। পরের টা পরে দেখা যাবে। মনে মনে)

রেহান – বেইবিইইই…. আঁচল কে ঝাকুনি দিয়ে।

আঁচল – হ্যা হ্যা…

রেহান – কি এতো ভাবছো বলো তো?

আঁচল – বলছিলাম যে আমি শাওয়ার নিতে যাবো এখন।

রেহান – তার মানে তুমি দুবার শাওয়ার নিতে চাও তাই তো? (ভ্রু কুচকে)

আঁচল – হ্যা। (দু’বার না ছাই… পরের টা পরে দেখে নিবো। দেখি কিভাবে আমার নাগাল পাও হুহহ। মনে মনে)

রেহান – ঠিক বলছো তো? পরে আমার দুষ দিবে না কিন্তু। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ওকে বাবা এখন ছাড়ুন তো।

রেহান – ছাড়তে পারি। তবে একটা শর্তে!

আঁচল – আবার কি শর্ত? আপনার কথা মতো তো দু’বার শাওয়ার নিতে রাজি হয়েছি। (অবাক হয়ে)

রেহান – হ্যা সেটা তো হবেই। কিন্তু এখন আমার মিষ্টি চাই।

আঁচল – কিহহহহ! আপনি ঘুম থেকে উঠে এখনো মুখ ধুতে যাননি আর বলছেন মিষ্টি খাবেন!! এই আপনি কি সকালে মুখ না ধুয়েই খাবার খান নাকি? ইয়াককক ছিহহ।
আপনি দেখছি আস্ত একটা খাটাস।

রেহান আঁচলের কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছেনা।

রেহান – এই চুপপপ। কি সব আবল তাবল বকছো? আমি কি ঐ মিষ্টির কথা বলেছি নাকি?

আঁচল – আপনিই তো বললেন।

রেহান – ওকে বুঝেছি মুখে বলে কাজ হবেনা। আমাকেই নিতে হবে।

আঁচল – হ্যা তো আপনিই নিন না। (আমাকে দিয়ে মিষ্টি আনাবে হুহহ.. কাজের মেয়ে নাকি আমি। মনে মনে)

আঁচলের ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে রেহান আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে এনে আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

আঁচল রেহান কে ছাড়াতে ছুটাছুটি শুরু
করে দেয়। রেহান আঁচলে আরও শক্ত করে ধরে চুমু খেতে থাকে।

৫ মিনিট পর রেহান আঁচলকে ছেড়ে দেয়।

রেহান – ব্যাস… আমার মিষ্টি খাওয়া শেষ। এবার তুমি শাওয়ার নিতে যেতে পারো। আর হ্যা সেকেন্ড টাইম শাওয়ার নিতে হবে ভুলো না কিন্তু। (চোখ মেরে)

আঁচল হা করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলছে রেহান। চুমু দিয়ে বলে মিষ্টি খাওয়া শেষ। তার মানে এতো খন ঐ মিষ্টির কথা বলেনি… মনে মনে।

আঁচল রেগে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। রেহান আঁচলের রাগ দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

অনেক খন হয়ে গেলো আঁচলের বেরুনোর নাম গন্ধও নেই। রেহান আঁচলের জন্য ওয়েট করতে করতে হাঁপিয়ে যায়।

রেহান – এই মেয়েটা কি আজ ওয়াশরুমে থাকবে বলে ডিসাইড করলো নাকি। এতো খন লাগে ওর শাওয়ার নিতে। (রেগে)

রেহান আঁচলকে ডাকতে শুরু করে….

রেহান – আঁচল… এই আঁচল…. হলো তোমার? এতো খন ধরে কেও শাওয়ার নেয়? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।

আঁচলের কোনো রেসপন্স নেই। রেহানের রাগ টা আরও বেরে যায়।

রেহান – আঁচল তুমি যদি এখনি না বের হও আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রেহান আবার আঁচলকে ডাক দিতে নিলেই দরজা খুলে যায়।
রেহান সামনে থাকা আঁচলকে দেখে থমকে যায়।
খয়েরী রং এর জামদানি শাড়ি, ভেজা চুল গুলো কোমড় অব্দি ছাড়া, শাড়ি টা পাতলা হওয়ায় আঁচলের পেট টা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রেহান।

রেহানের কেমন জেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে। সে আঁচলের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে।

আঁচল রেহান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয়ে ঢোক গিলে।

আঁচল – (এই লুচু ব্যাটা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? ও কি আবার কিছু করার প্লান করছে নাকি? না বাবা এই লুচু কে বিশ্বাস করা যায় না। আমি বরং কেটে পরি এখান থেকে। মনে মনে)

আঁচল রেহানের কাছ থেকে চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে আটকে ফেলে।

আঁচল – এই রে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো।

রেহান আঁচলের হাত ধরে আঁচলকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে..

রেহান – কোথায় পালাচ্ছো তুমি?

আঁচল – মা.. মানে?

রেহান আঁচলের গলায় মুখ গুঁজে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে…..

রেহান – আমাকে পাগল করে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছো? তা তো হতে দিবো না।

আঁচল যেনো বরফ হয়ে যাচ্ছে রেহানের এতোটা কাছে আসায়।

আঁচল – আমার ক্ষিধে পেয়েছে। প্লিজ আমায় নিচে যেতে দিন। (কাঁপা কন্ঠে)

আঁচলের এমন কাঁপা কন্ঠে রেহানের নেশা টা আরও বেরে যায়।

রেহান – উহুম…. আগে আমাকে খেতে দাও। (ফিসফিস করে)

আঁচল – খাবেন তো ভালো কথা। যান ফ্রেশ হয়ে নিচে যান।

রেহান – খাবো তো তোমার দেয়া মিষ্টি বেইবি।(মুচকি হেসে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের বুঝতে বাকি রইলো না যে সে কি চাচ্ছে।

আঁচল – দেখুন কোনো অসভ্যতামি করবেন না। আমাকে নিচে যেতে দিন প্লিজ।

রেহান আঁচলের কথা কানে না নিয়ে এক হাতে আঁচলের কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরেক হাতে আঁচলের ঠোঁটে স্লাইভ করতে থাকে।

চলবে…

ডেভিল বর প্রথম পর্ব

0

দেখুন একদম আমায় ছুবেন না। আমি আপনাকে আমার স্বামী মানি না। এ বিয়ে ও আমি মানি না। (আঁচল)

রেহান – তুমি মানো না তো কী হয়েছে শুনি,, আমি মানি। আর কি জেনো বলছো ছুবো না তোমায়! হা হা…. আজ আমাদের বাসর আর তুমি আমার বিয়ে
করা বউ। তোমাকে বিয়ে করেছি কি আলমারিতে সাজিয়ে রাখার জন্য!

আঁচল – বসর মাই ফুট। আমি তো আপনাকে মানতেই পারি নি আবার বাসর!
আমার ধারে কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না। নয়লে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।

রেহান – আচ্ছা! তো কি করবে তুমি? তুমি কী ভেবেছো তুমি ভয় দেখালেই আজকের মতো অমন একটা রাত আমি তোমায় না ছুঁয়েই কাটিয়ে দেবো। নোউ ওয়ে। (আঁচলে দিকে এগুতে এগুতে)

আঁচল – আপনাকে বললাম না আমার কাছে আসবেন না। আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেনো? (পিছাতে থাকে আঁচল)

রেহান আঁচলের কাছে চলে আসতেই আঁচল দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চায়।
রেহান আঁচলের এক হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

রেহান – কি মনে করো? তুমি পালাতে চাইলেই আমি তোমাকে পালাতে দিবো? তোমাকে বিয়ে করেছি কি দূরে রাখার জন্য?
তাও আবার আজকের মতো একটা রাত। এখনো ত কিছুই করলাম না আর তুমি পালিয়ে যাচ্ছো? (মুচকি হেসে)

আঁচল – ক…কি করবেন.. আ..আপনি?

রেহান – সেটা না হয় করেই দেখাই। (চোখ মেরে)

আঁচল – আমি কিন্তু চেঁচাবো। ভালোই ভালোই আমায় ছেড়ে দিন বলছি।

রেহান – ওহো তুমি আসলেই একটা বোকা। বাসর রাতে যদি এভাবে চেচাঁমেচি করো তো বাহিরে মেহমান রা আছেন। তারা কি ভাববেন বলো তো। লজ্জা কিন্তু তুমিই পাবে। আমি না। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ছা….
আর কিছু বলতে না দিয়েই রেহান আঁচলের কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আঁচল নিজেকে ছাড়াতে ছুটাছুটি করতেই থাকে। রেহান আঁচলের ঠোঁট দু’টো নিজের ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে নেয়।
পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে আঁচলের ঠোঁটে। রেহান আঁচলের ঠোঁটে হালকা কামড় দিতেই আঁচল রেহানের কাছ থেকে সরে যেতে চায়। রেহান আবার আঁচলকে নিজের কাছে এনে আঁচলের গলায় ঘাড়ে চুমু দিতে থাকে সাথে কামড় ও দিয়ে যাচ্ছে।

আঁচল একদিকে কামড়ের ব্যাথায় অন্য দিকে অসস্থিতে ছটফট করছে।কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে এক গভীর নেশায় ডুবে আছে।

রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আঁচল উঠে যেতে নিলে রেহান আবার ধাক্কা মেরে আঁচল কে ফেলে দিয়ে নিজে আঁচলের উপর উঠে আঁচলের হাত দুটি বিছানায় সাথে চেঁপে ধরে।

রেহান – তুমি চাইলেও আজ আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না। তোমার খারাপ লাগলেও, তুমি না মানলেও আমার কিছুই যায় আসে না বেইবি।

আঁচলের রাগে কষ্টে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।

রেহান স্পষ্ট আঁচলের চোখে পানি দেখতে পায় কিন্তু সেদিকে কোনো নজর না দিয়ে রেহান আবার আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আঁচলের শাড়ির আঁচল টা এক টানে সরিয়ে দিতেই আঁচল শব্দ করে কেদে দেয়।
তাও রেহান নিজের চিন্তা ভাবনা থেকে সরে নি। আঁচলের গালে গলায় কিস করতেই থাকে। আঁচলের শাড়ির কুঁচি টা খুলে ফেলতেই আঁচল বিছানার চাদর খামচে ধরে নিশব্দে কাঁদতেই থাকে।
রেহানের কানে আঁচলের কান্না পৌঁছাতে পারে নি। সে এক অজানা অনুভূতি তে ডুবে আছে।

রাত প্রায় ৩ টা…

আঁচল নিজের শাড়ী টা কোনো রকমে শরীরে পেচিয়ে বসে কান্না করেই যাচ্ছে।

রেহানকে আঁচলের মেনে না নেয়ার ও কারন আছে। কারন টা জেনে নিই….

(আঁচল কলেজে পা রাখতেই একটা ছেলের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। কিছু দিন যেতেই সেই বন্ধুত্ব টা ভালোবাসায় পরিনত হয়। অবস্য আঁচল রাজি ছিলো না কিন্তু জিসান (ছেলেটা) এর পাগলামো দেখে আঁচল ও তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরে।
সেই থেকেই শুরু হয় তাদের ভালোবাসা। দু’জন দুজনকে অনেক ভালোবাসতো, অনেক কেয়ার করতো। আঁচল ও জিসান কে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলো। কিন্তু বছর পরই জিসান আঁচলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আঁচল চিন্তায় পরে যায়। পরদিন জিসানের সাথে আঁচলের দেখা হতেই জিসান বলে সে আঁচলের থেকে অনেক ভালো মেয়ে চায়।
সেদিন জিসান আঁচলের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়। এমনকি আঁচলের নাম্বার ও ব্লক করে দেয়।
সেই থেকে আঁচল পাগলের মতো হয়ে যায়। ঠিক মতো খায় না। কারো সাথে কথাও বলে না আঁচলের মা বাবা আঁচলকে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারে না।
আঁচলের বড় ভাই রিয়াদ আঁচল আর জিসানের ব্যাপারে সব জানতে পারে।
রিয়াদ তার মা বাবাকে সব খুলে বলতেই তারা ভাবে আঁচলের বিয়ে দিলে হয়তো ওই ছেলেকে আঁচল ভুলতে পারবে। আঁচলের মা বাবা আঁচলের জন্য বিয়ে ঠিক করে কিন্তু আঁচল বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়।
শেষে আঁচলের বাবা আর মার কথায় এক প্রকার জোর করেই আঁচলের বিয়ে টা হয় রেহানের সাথে।
আঁচল এখনো জিসান কেই ভালোবাসে তাই সে কোনো ভাবেই রেহানের এই সব মেনে নিতে পারছে না)

— এভাবে বসেই কি সারা রাত পার করে দিবে?

হটাৎ রেহানের কথায় আঁচল ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে।

রেহান – কি হলো ঘুমাবে না? নাকি আরও আদর চাই? (মুচকি হেসে)

আঁচল রেহানের কথা শুনে প্রচুর রেগে যায়।

আঁচল – আপনি একটা অমানুষ, এভাবে আমার অনিচ্ছা স্বত্বেও আমার উপর আপনি অধিকার ফলিয়েছেন!!

রেহান – এবার থেকে সব কিছুই তোমার অনিচ্ছা স্বত্বেই হবে জান বলেই আঁচলকে হেচকা টানে নিজের কাছে আনে।

আঁচলের শরীর থেকে শাড়ি টা সরে যায়। আঁচল তারাতারি করে শাড়িটা দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে নেয়।

রেহান – আমিই তো। এভাবে প্যাকেট হওয়ার কি আছে?? (মুচকি হেসে)

চলবে?

#ডেভিল বর
#প্রথম পর্ব
#শিফা_আফরিন

কনে বদল পার্ট-১০( শেষ পর্ব)

0

কনে বদল
পার্ট-১০( শেষ পর্ব)
# Taslima Munni

সময় এমন এক ঔষধ যা ধীরে ধীরে সব সহজ করে দেয়, ভুলিয়ে দেয়। শিখার না থাকার দুঃখও একটা সময় ভুলে যাবে সবাই।
অনিবার্য পরিণতি কঠিন, কিন্তু সেটাই সময়ের সাথে স্বাভাবিক হয়ে যায়। সন্তানের মৃত্যু হলেও মা-বাবা বুকে পাথর চেপে বেঁচে থাকেন। পিতামাতার মৃত্যুর শোক সহ্য করে সন্তান ও বেঁচে থাকে!
দুনিয়া টা কঠিন।
এতোটাই কঠিন যে একটা সময় চোখের জলও শুকিয়ে যায়।এতো আপনজনের মৃত্যুর বর্ননা অনায়াসে করা যায়!!
শিখাও জানে একদিন এমনই হবে।

অবশেষে মাহিরের বাড়ি থেকে শিখা বিদায় নিলো এই কঠিন সত্যি টা মেনে। একটা তাসের ঘর অথবা খেলাঘর বেঁধে ছিলো শিখা,তার শেষ হয়তো এভাবেই হবার ছিলো।
শিখা ফিরে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ওর ভেতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে কি একটা ভার চেপে আছে যেন। কি যেন ফেলে যাচ্ছে এখানে, অথচ ওর ফেলে যাবার মতো কিছু ছিলো না।
এ বাড়ির মানুষদের প্রতি শিখার অনেক মায়া পড়ে গেছে। এজন্যই হয়তো যাবার সময় কিছুটা খারাপ লাগছে।

শিখা বাড়িতে এসেছে প্রায় একমাস। এর মধ্যে রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে যাওয়া হয়না।দু-একদিন শশী আর শিখার মা ওকে বারান্দায় নিয়ে এসেছিলো। বারান্দায় বসে খোলা আকাশ দেখে মনের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

শিখার শ্বশুর -শ্বাশুড়ি এসেছিলো ওকে নিয়ে যেতে।
কিন্তু শিখা অসুস্থতার অযুহাতে যায়নি।তারপর আরেকদিন শিখার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ইভা,মাহিন সবাই এসে দেখে গেছে।
উনারা অনেক চেয়েছিলেন শিখাকে বাড়ি নিয়ে যেতে, কিন্তু শিখাকে নিয়ে যাবার মতো অবস্থা ছিলো না।

মাহিরও এসেছিলো দু-তিনবার। এসে চুপচাপ শিখার পাশে বসে ছিলো। শিখা ঘুম থেকে জাগার পরে দেখে মাহির বসে আছে!
– আপনি এসেছেন?!!
– কেমন আছো তুমি??
– ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি।
– অনেক শুকিয়ে গেছেন আপনি!
– তাই?
– হুম
এরকম টুকটাক কথা চলে দুজনের মধ্যে।
মাহির অনেক সময় থেকে তারপর চলে যায়।যখনই আসে সাথে করে শিখার ঔষধপত্র যাবতীয় সবকিছু নিয়ে আসে।কত কিছু নিয়ে আসে শিখার জন্য, কত ধরনের ফলমূল; কিন্তু শিখা তো….

বাড়িতে মাহিরের একদন্ড মন টিকছে না।ভেতরে কেমন আনচান আনচান করে। এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।।
শিখার অভাব দিন দিন তীব্র অনুভব করছে।কিন্তু এতো দূর! প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব হয় না।
তার উপর অফিস তো আছেই। মাহিরের ইচ্ছে করে শিখার কাছে যেতে।একদিন হুট করেই চলে আসে।
তারপর সেই টুকটাক কথোপকথন চলে দুজনের মধ্যে।
শিখা খুব একটা কথা বলতে পারে না। তাই মাহির বেশি কিছু বলে না,কারণ তাতে শিখা কথা বলার চেষ্টা করে। কথা বলতে খুব কষ্ট হয় শিখার।
চোখ বন্ধ হয়ে আসে।মনে হয় ঘুম ওর চোখে,তারপরও তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করে। কারণ মাহির সামনে বসে আছে!
মাহির বুঝতে পেরে বলে
– ঘুমাও।আমি তোমার পাশে বসে আছি। আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
শরীরের ধকল সইতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ে শিখা।

সকালের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় শিখার।
চোখ খুলতে পারছে না। কিন্তু মাহির জানালা খুলে দিয়েছে।
– আর ঘুমাতে হবে না। এখন উঠে পড়ো।
কত বেলা হয়ে গেছে!
– আমি কিভাবে উঠবো? নিজে নিজে বসতে পারি নাকি?
– কে বলেছে পারো না? তুমি কি এখন আগের মতো অসুস্থ নাকি? ! তুমি তো অনেক সুস্থ হয়ে গেছো। চেষ্টা করে দেখো,নিজেই উঠে বসতে পারবে।
শিখা মাহিরের কথা শুনে হাত-পা নাড়াচাড়া করে দেখছে।
আসলেই তো! আগের থেকে শরীর কেমন ফুরফুরে লাগছে।
– কই? উঠে বসো এবার।
শিখা উঠে বসার চেষ্টা করছে, প্রথম দুবার একটু উঠেও বসতে পারেনি। তৃতীয় বার উঠে বসে গেছে।
– কি আশ্চর্য! আমি নিজে নিজেই বসতে পারছি?
– বলেছিলাম না ঠিক পারবে।
– কিন্তু… কিভাবে সম্ভব?
– মনের জোর থাকলে আর ভালোবাসা থাকলে সব সম্ভব।
এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।নাস্তা করতে হবে।
– আজ সকাল এতো সুন্দর কেন?
– ওমা! সেটাও জানো না?
– না! আপনি জানেন?
– হুম, জানি তো।
– কেন?
– আজ আমরা নতুন করে জীবন শুরু করবো তাই!
– নতুন করে জীবন শুরু মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না!
– মানে হচ্ছে তুমি আজকে আমার সাথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছো।বুঝতে পেরেছো?
– আমি? কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– আমি যে অসুস্থ! আমার যে খুব বেশি সময় নেই।
– কে বলেছে? ওসব ভুল ছিলো, ডাক্তারের ভুল ছিলো। তোমার অন্য একটা অসুখ ছিলো। এখন তুমি অনেক সুস্থ হয়ে গেছো। আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

– কি বলছেন এসব!?
সত্যিই আমি??..
শিখা উত্তেজনায় বিছানা থেকে নেমে মাহিরের কাছে পায়ে ছুটে গিয়েই ওর হাত ধরলো।
– আমি বাঁচবো! আমি বাঁচতে পারবো? আমার কিছু হয়নি!
– হা।তুমি বাঁচবে। তোমাকে যে বাঁচতে হবে শিখা। আমার জন্য!
– আপনার জন্য??
– হা।আমার জীবন টা এলোমেলো করে দিয়েছিলে,এখন সেটা কে গুছাবে শুনি?
– আমি গুছাবো!
– হা।তুমি।।
সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা…
আমি সুস্থ হয়ে গেছি…!! আমি বাঁচবো…!!
আমার কিছু হয়নি…!!
– শিখা…. এই শিখা…. তুমি কাঁদছো কেন?
-কই!! আমি কাঁদছিনা তো…. আজ আমার অনেক খুশি। খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে।

– আচ্ছা… তুমি তৈরি হয়ে নাও.. আমি এক্ষুনি আসছি। এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
– কোথায় যাচ্ছো তুমি??
মাহির রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। শিখা পিছন থেকে জিজ্ঞেস করছে
– কোথায় যাচ্ছো? মাহির? আমাকে নিয়ে যাবেনা?
আমাকে নিয়ে যাবে কখন?
.
.
.
মাহির যত দূরে যাচ্ছে শিখা তত জোরে ডাকছে কিন্তু মাহির যেন বধির হয়ে গেছে। কিছু শুনতে পাচ্ছে না। এতো চিৎকার করে শিখা ডাকছে কিন্তু এসব কিছু মাহিরের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেনা!
– আমি তৈরি হয়ে থাকবো… তুমি কখন আসবে মাহির…? কখন আসবে?
ধীরে ধীরে শিখার কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে আসছে।শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে!!

– আপু? আপু? তোমার বেশি খারাপ লাগছে?
শিখাপু? ও আপু…. তুমি এমন করছো কেন?
শিখা তাকিয়ে দেখে শশী ওর পাশে বসে কাঁদছে!
– মাহির কই?
– আপু? তোমার এখন কেমন লাগছে?
– মাহির আসেনি?
– মাহির ভাইয়া আজকেই আসবে। তুমি একটু ঘুমাও আপু।

শিখার মা তাড়াহুড়ো করে রুমে আসে।
– মা , আপু কি জানি সব বলে! এখন চোখ খুলে মাহির ভাইকে খুঁজছে।
– আল্লাহ… আল্লাহ তুমি সহায় হও…আমার মেয়েটাকে উদ্ধার করো। ছেলেটা কালকেই ভালো দেখে গেলো!
– মা, আপুর অবস্থা কি বেশি খারাপ?
– কাল থেকে কিছু বুঝতে পারছি না। ও বাড়ির তারা আজকেই আসবে,রাস্তায় আছে। আমার মাথা কাজ করছে না আর!
কখনো অচেতন হয়ে পড়ে,কখনো জ্ঞান ফিরে।

তখন ভর দুপুর। শিখা শশীকে জিজ্ঞেস করলো
– শশী?
– আপু…
– মা কই? আমার পাশে একটু বসতে বল।
– আমি এক্ষুনি বলছি…
মা..মা… তুমি আপুর পাশে বসো।
– মাহির আসেনি? আসবে না আর?
– আসবে আপু… একটু পরেই…আসবে

আরও আধাঘন্টা কেটে গেছে। শিখা আবার জিজ্ঞেস করলো
– মাহির এসেছে?
মা আমাকে একটু পানি দাও…
পানি খাবো।
শিখার মা চামচে করে পানি দেয় দুচামচ পানি খায় শিখা…
তৃতীয় চামচ আর মুখে তুলতে পারেনি।
শিখার চোখে সেই অস্তমিত সূর্যটার দৃশ্য ।
ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে…
শিখাও… নিভে গেলো ধীরে,…. কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে!!
সব মায়াজাল ছিন্ন করে শিখার আলো নিভে গিয়ে গাঢ় অন্ধকার নেমে এলো!!

– সমাপ্ত –

# অনেকেই ” প্রেমে পড়া বারণ ” সিজন ২ চেয়েছিলেন। কিন্ত সিজন ২ কখনো লেখা হয় না। প্রত্যেকটা গল্প আলাদা আলাদা, তাই একই নামে ২ টি করতে ইচ্ছুক নই।তবুও আপনাদের আগ্রহ থাকলে অবশ্যই করার চেষ্টা করবো।?
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। ❤❤

কনে বদল পার্ট – ৯

0

কনে বদল
পার্ট – ৯
# Taslima Munni

মাহির অনেক ভেবে বলল
– আমাকে একটু ভাবতে দাও।
মাহির অনেক ভাবলো শিখাকে যেতে দিবে কিনা।কিন্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা।
ওর ইচ্ছে করছে না যেতে দিতে। এদিকে শিখা যাবার জন্য উতলা হয়ে আছে।
শেষ পর্যন্ত মাহির ওর বাবাকে বললো
– বাবা, শিখা ওর মায়ের কাছে থাকতে চাইছে।
– বেশতো,কাউকে পাঠিয়ে ওর মাকে নিয়ে আসো।
– না বাবা,ও ওবাড়িতে থাকতে চাইছে!
– তা কিভাবে সম্ভব? তুমি জানো না সেখানে কি হালে ছিলো?
– জানি বাবা।
– তবে এ কথা বলছো কি করে? তুমি ওকে মেনে নিতে পারোনি ভালো কথা, তাই বলে ওখানে অবহেলায় ছেড়ে দিবে?
– তুমি বুঝতে পারছো না বাবা,আমি যেতে দিতে চাচ্ছি না।
কিন্তু শিখা যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো।
– হুমম।
আমিও বুঝতে পারছি না কি করা উচিত!
এখানে যে সেবাযত্ন পাবে সেগুলো পাবে কিনা জানি না। কিন্তু তারচেয়ে বড় কথা হলো এই সময় যদি ওর মনে টানে তবে যেতে দেয়াই দরকার। আফসোস রেখে….
– ঠিক আছে বাবা, আমি ওকে আবারও বুঝাতে চেষ্টা করবো যদি মানে তো ভালো আর না মানলে…

আফরোজা বেগমে যখন শুনলেন শিখা ওর বাড়িতে যেতে চাচ্ছে, তখন শিখার কাছে গেলেন। ওর কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত রেখে
– তোমার এখানে অসুবিধা হচ্ছে মা?
– না মা।আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।আপনারা এতো দেখাশোনা করেন, অসুবিধা হবার সুযোগ ই দিচ্ছেন কই?!
– তাহলে বাড়ি যেতে চাচ্ছো কেন?
– মা, কেন জানি মন খুব চাইছে একটা বার যেতে। কিছু দিন থেকেই চলে আসবো।
– সুস্থ হও আগে,তারপর যাবে।
– কিছু দিনের জন্যই তো।আপনি বাবাকে একটু বলেন না মা!
খুব যেতে ইচ্ছে করছে!
– আচ্ছা দেখি, তোমার বাবা কি বলেন!

মাহির শিখাকে আবারও অনেক বুঝালো। কিন্তু শিখা যাবেই বলে ঠিক করেছে। তাই মাহির শেষ পর্যন্ত রাজি হয় শিখাকে যেতে দিতে।
শিখার মা, মামা এসেছে ওকে নিতে।
মাহির শিখার কাছে এসে বললো
– সত্যিই চলে যাচ্ছো?
– হা।
আপনি দেখতে যাবেন আমাকে?
– নাহ!
– কেন?
– দেখতে যাবো কেন?
আমি যাবো নিয়ে আসার জন্য।
– তাই বুঝি?
শিখা হাসে।
– হা তাই।
একটা হাতে শিখার গাল ছুঁয়ে
– ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো।আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমাকে আনার জন্য।
শিখার অজান্তেই চোখ ভিজে গেছে।
মাহিরের সেই হাতেই হাত রেখে বললো
– আপনিও অনেক ভালো থাকবেন। জামাকাপড় এগুলো এলোমেলো করে রাখবেন না।
নিজের খেয়াল রাখবেন।

শিখা অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় নিলো সবার কাছ থেকে।
একদিন অজানা একটা ভয় নিয়ে বউ সেজে এবাড়িতে এসেছিলো। আজ এবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। আর কখনো ফেরা হবে না এবাড়িতে।কখনো এবাড়ির বেলকনিতে বসে শিমুলে আগুন ধরা বিকেল দেখা হবে না।
এ বাড়ি ছেড়ে শিখা চলে যাচ্ছে।

কি আজব! জটিল যায়গা এ দুনিয়া! মানুষ যখন বাঁচতে চায় না, তখন মৃত্যু ধরা দেয় না!
আর যখন বাঁচার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হতে থাকে, বাঁচতে ইচ্ছে করে তখন চারদিক থেকে অন্ধকার হয়ে ঘনিয়ে আসে মৃত্যুর কালো ছায়া।।
শিখার এখন মাঝে মাঝে বাঁচতে ইচ্ছে করে। পাছে এই ইচ্ছেটা তীব্র হয়ে যায়! সেই ভয়ে রীতিমতো পালিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে।
তীব্র হলেও কোনো লাভ নেই জানে,মিছেমিছি মায়া বাড়বে।

ওর প্রতি মাহিরের ভালোবাসা নেই।যা আছে সেটা কেবলই সহানুভূতি।
এতো দিন একসাথে থাকা একটা মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে চলে যাচ্ছে, সেটা,দেখে যেকোনো মানুষের দয়া হবে, খারাপ লাগবে।
মাহিরের ও এমনই হয়েছে।
বড়জোর একটা মায়ায় পড়ে যাবে!!
কিন্তু কি হবে এই মায়ায় জড়িয়ে??
একা যেমন এসেছিলো, সেই একাই চলে যাচ্ছে। না হয় ভালোবাসা নামক অদৃশ্য অনুভূতি টা শিখার জীবনে আসলো না। শিখার জীবনের গল্প না হয় এখানেই থেমে যাবে।
কি ক্ষতি হবে তাতে?
সূর্য পূর্ব দিক বাদ দিয়ে পশ্চিমে উদয় হবে না। ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরবে না।কিছুই থেমে থাকবে না।
সব নিয়মমাফিক চলবে। হয়তো কিছু মানুষের দুঃখ হবে, কষ্ট হবে।
কিন্তু সেটা সাময়িক।
কারণ সময় এমন এক ঔষধ যা ধীরে ধীরে সব কিছু সহজ করে দেয়, ভুলিয়ে দেয়।
শিখার না থাকার দুঃখ ও একটা সময় ভুলে যাবে সবাই।

চলবে….

# টানা ৩৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলো না ।
বাধ্য ছোট করেই দিলাম। আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

কনে বদল পার্ট – ৮

0

কনে বদল
পার্ট – ৮
# Taslima Munni

শিমুল বনে আগুন লেগেছে, পুড়ছে কারো মন! আর অন্য কারো মনে শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে!!
শিখা দুচোখ ভরে দেখছে।আহ! এতো সুন্দর কেন সবকিছু!!
চোখে জল এসে যায়।
– এতো সুন্দর বসন্ত আগে কখনো দেখিনি।
মাহির কিছু বলে না, শুধু শুনে যাচ্ছে শিখার কথা।

শিখার গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। কালের যাত্রার ধ্বনি শিখা শুনতে পাও??
শিখা হয়তো শুনতে পাচ্ছে।।
লুকোচুরি লুকোচুরি…. সব কিছুতে কেমন একটা লুকোচুরি খেলা….!!
সবাই তার সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে!!
শিখাও বাদ যাবে কেন? শিখাও এ খেলায় যুক্ত হয়ে গেছে। এমন ভাবেই থাকে যেন সে কিছুই জানে না!
কিন্তু শিখা সবটা জানে।কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না, যে ও সবকিছু জানে।
কি অদ্ভুত লুকোচুরি!

বেলকনিতে বসেই গোধূলির রঙ গায়ে মাখলো শিখা। শিখা একা নয়,মাহিরও।
জ্বলজ্বল করা সূর্যটা ধীরে ধীরে, নিভু নিভু হয়ে পশ্চিমে ডুবে গেছে, তার সাথে সাথে আধারে ডুবে গেছে সব।
শিখা জানে এই সূর্যটা যেমন নিভু নিভু হয়ে অস্ত গেছে, তেমনি সেও অসীমের পথে যাচ্ছে।
সূর্য অস্ত গেলেও উদয় হয়ে ঝলমলে রোদে হাসবে, কিন্তু শিখার জীবন প্রদীপ নিভে গেলে আর উদয় হবে না।

মানুষের সময় যখন ফুরিয়ে যায় তখন বাঁচার আকুতি আরও তীব্র হতে থাকে। সবকিছু মনে হয় এতো সুন্দর কেন! এতো মায়া কেন!
তবুও কিছু মানুষ মায়া কাটাতে চায়।
শিখার কাছে গোপন করলেও শিখা জেনে গেছে তার লিউকেমিয়া। নিজের অজান্তেই এই রোগ ধীরে ধীরে শেষ করে দিয়েছে তাকে,কখনো গুরুত্ব দেয়নি। অসুস্থ বোধ করলেও কাউকে বলেনি,দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছে, যার শেষ পরিনতি এই!!
একেবারে লাস্ট স্টেজে আসার পরে ডাক্তার দেখানোর হয়েছে।কিন্তু এখন আর কিছুই করার ছিলো না। তবুও হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।
কিন্তু বাড়িতে আসার জন্য ছটফট করায় ডাক্তার ওকে ছেড়ে দিলো।ডাক্তাররাও মানুষ। দুঃখ, কষ্টের অনুভূতি তাদেরও আছে।
শিখার জন্য কিছু করতে পারবে না, শুধু ধরে বেঁধে কিছু মেডিসিন দিতে পারবেন! এটা ভালো করেই জানেন মেডিসিন দিয়েও কিছু হবার নয়।তারচেয়ে যে ক’টা দিন আছে, সেদিনগুলো মেয়েটার পরিবারের সাথে কাটানোই ভালো। এই ভেবেই ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তারা শিখাকে কিছুই জানায়নি। কিন্তু শিখা জেনে গেছে।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিভে শুনে ইভা আপত্তি করছিলো।
সারোয়ার সাহেব, ইভা আর মাহির কথা বলছিলো নিচুস্বরে।শিখা ঘুমে ছিলো। কিন্তু যখন ঘুম ভেঙে গেছে তখন শুনতে পারলো ওকে নিয়েই আলোচনা।
কোনো সাড়া না দিয়ে ঘুমের মতো পড়ে রইলো, কারণ শিখা জানতে চেয়েছিলো ওর কি হয়েছে।
– বাড়ি নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? এখানে তো ট্রিটমেন্ট ভালো চলছে। নিয়ে গেলে যদি আরও সমস্যা হয়??
– লাভ তো তেমন কিছুই হবে না, শুধু শুধু মেয়েটা বন্দী থেকে কষ্ট পেয়ে যাবে।
– কিছুই কি করার নেই বাবা? ডাক্তার কি আশার কোনো কথা বলেনি?
– না গো মা। লিউকেমিয়া একেবারে লাস্ট স্টেজে ডাক্তারের আর কিছু করার নেই।কেমো দিলেও এর ধকল সহ্য করার মতো ক্ষমতা নেই ওর শরীরে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না।
– বাবা, শিখাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। এখানে ওর কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবন কষ্ট পেয়ে গেছে। শেষ ক’টা দিন এভাবে আজাব না দিয়ে ওর ইচ্ছের দাম দেয়া উচিত।
– হা। সেটাই ভালো হবে। সবার সামনে থাকলে মনে কিছুটা শান্তি পাবে।
– তাহলে সেটাই করো ভাই,মেয়েটার এই অবস্থা আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।
শিখা সব কথা শুনেছে। ব্লাড ক্যান্সারে শেষ পর্যন্ত শিখা নিভে যাবে এটা জেনে গেছে।

সন্ধ্যা নামায় মাহির শিখাকে রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দেয়।
কেমন মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার উপর।
– আমার জন্য এতো কষ্ট করছেন কেন?
– কি কষ্ট করলাম?
– এইযে আমার এতো সেবা-যত্ন করছেন!
– তুমি অসুস্থ তাই।
– হুম।
– আমি আমাদের বাড়িতে যেতে চাই…
..
মাকে বলেছি…… উনি আসবেন আমাকে নিতে।
– বাড়িতে যাবে মানে কি?? এই অবস্থায় যাওয়া অসম্ভব। কোথাও যেতে পারবে না। এখানেই থাকবে।
শিখা মৃদু হাসে।
– যেতে পারবো। আমাদের বাড়িতে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।
– তুমি জানোনা ওখানে পরিস্থিতি? সেখানে তোমাকে কিছুতেই যেতে দিবো না।
– যাইহোক,ওটা আমার বাড়ি। জন্মের পর থেকে ওখানেই থেকেছি।এখন কেন জানি মন খুব টানছে সেখানে যেতে। আপনি না করবেন না।
– দেখো শিখা,আমি এই অবস্থায় তোমাকে পাঠাতে পারবো না। তুমি এখানেই থাকবে আমার কাছে।
তোমার মা বোন চাইলেও ঠিক মতো তোমার দেখাশোনা করতে পারবে না।
– ওসব নিয়ে চিন্তা করবেনা না। কিছু দিনেরই তো ব্যাপার!
– কিছু দিনের ব্যাপার মানে?
মাহির চমকে উঠে।
– কিছু দিন পরে তো চলে আসবো।
– হুম।
– আমাকে যেতে দিবেন না? বেশি কিছু চাইনি আপনার কাছে।
– তুমি বুঝতে পারছো না!
– আমি বুঝতে পারছি। আপনি না করবেন না।
আমাকে যেতে দিন।

মাহির গম্ভীর হয়ে গেলো।শিখাকে সে যেতে দিতে চায়না।মাহির চায় শিখা ওর সামনেই থাকুক।
কেন চায় সে নিজেও জানে না। হয়তো মেয়েটার উপর মায়া পড়ে গেছে, তাই।সেখানে গেলে শিখা শান্তি পাবেনা,সেবাযত্ন ও পাবেনা ঠিকঠাক। এসব ভেবেও মাহির ওকে যেতে দিতে চাচ্ছে না।

আর শিখা?
শিখা মনে মনে ভাবছে – আমার জন্য মাহিরের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। মাহিরের জীবনে এক অভিশাপের নাম – ‘ শিখা’। মরেই তো যাবো।কেন অর উপর বোঝা হয়ে থাকবো??
সব দায় থেকে মরার আগেই মুক্তি দিয়ে যাই।
এতো যত্ন, এতো কেয়ার! এসব দেখলে বাঁচার ইচ্ছে হবে।
তারচেয়ে আমি চলে যাবো। সবাই এখানে কত কষ্ট করছে আমার জন্য!.
এইসব কথা ভেবেই শিখা যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
ওদের উপর আর বোঝা হয়ে থাকতে চাইছে না শিখা।

মাহির অনেক ভেবে বললো –
আমাকে একটু ভাবতে দাও।

চলবে…

# প্রচুর বৃষ্টিপাতে বিদ্যুৎ বিহীন থাকায় লিখতে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষমাপ্রার্থী। ?
সম্ভব হলে আজ আরও একটা পার্ট দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
একান্তই না পারলে….ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।