Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1893



ডেভিল বর পর্ব – ১৫

0

ডেভিল বর
পর্ব – ১৫
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যাই হবে না। (মুচকি হেসে)

আঁচল ও বাহিরে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই আঁচলদের বাসায় পৌঁছে।

আঁচল বাড়িতে ঢুকেই তার মাকে দেখতে পায়৷
আঁচল দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে।

আঁচলের মা – কেমন আছিস মা?

আঁচল – অনেক ভালো মা। তুমি কেমন আছো বলো?

আঁচলের মা – তুই ভালো আছিস শুনেই আমি শান্তি।

আঁচলের বাবা – কিরে মা আমায় ভুলে গেছিস তাই তো?

আঁচল তার মাকে ছেড়ে দৌড়ে বাবার কাছে যায়।

আঁচল – না বাবা কেনো ভুলবো বলো তো?

আঁচলের বাবা – তুই এখনো আমার উপর রেগে আছিস নারে মা?

আঁচল – উহুম….. একদমই না।

রেহান ও গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নেয়।

আঁচলের মা – হয়েছে এবার তোমরা উপরে যাও।

আঁচল রিমিকে একটা রুমে নিয়ে যায়৷

আঁচল – রিমি তুমি এই রুমেই থেকো। আর পাশের টা আমার রুম কোনো সমস্যা হলে ডেকো কেমন।

রিমি – ওকে ভাবি।

আঁচল রেহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

আঁচল – নিন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমি যাবো।

রেহান – কেনো?

আঁচল – কেনো মানে? ফ্রেশ হবো না নাকি আমি?

রেহান – হ্যা। তা চলো না দুজন একসাথেই যাই৷ (চোখ মেরে)

আঁচল – অসভ্য। — বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রেহান হাসাতে হাসাতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।

কিছুক্ষণ পর…

আঁচল রুমে এসে দেখে রেহান এখনো বের হয়নি।

আঁচল – (আজিব! এতোখন ধরে ওয়াশরুমে ঢুকে আছে। এদিকে আমি যে এখনো ফ্রেশ হয়নি সে খেয়াল আছে উনার।)

আঁচল গিয়ে দরজায় নক করে..

আঁচল – এইযে… হলো আপনার? আর কতোখন ওয়েট করবো বলুন তো। আজকে সারা দিন কি আপনি ওয়াশরুমে থাকার প্লান করেছেন নাকি?

রেহান কোনো সাড়া দেয়নি। আঁচলের প্রচুর রাগ হয় রেহানের উপর।

আঁচল চলে আসতে নিলেই কেউ আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে আসে।
আঁচল ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিয়েই রেহান মুখ চেঁপে ধরে।

আঁচল তাকিয়ে দেখে রেহান মুচকি হাসছে।

আঁচল – আপনি সাড়া দেননি কেনো? আর এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি বলুন তো? এভাবে ওয়াশরুমে নিয়ে এসেছেন!

রেহান – অসভ্যতামি কেনো হবে? আমি কি অন্যের বউ কে টাচ করেছি নাকি? আমি তো আমার রাগী বউকেই টাচ করেছি।

আঁচল – কি! আমি রাগী?

রেহান – কি মনে হই তোমার? (ভ্রু কুঁচকে)

আঁচল – (ঠিকই তো। বিয়ের প্রথম দিন থেকে তো শুধু রেগেই আসছি। মনে মনে)

আঁচল – আপনার হয়ে গেছে?

রেহান – হুম।

আঁচল – তাহলে আপনি বেরুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

রেহান – জ্বী না। আমার সামনেই ফ্রেশ হতে হবে।

আঁচল রেহানের কথায় রেগে গিয়ে রেহান কে ধাক্কা দিতে গেলে রেহান আঁচলকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আঁচলের ঠোঁটের কোণে চুমু দেয়।

আঁচল চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান তা দেখে মুচকি হেসে আঁচলকে ছেড়ে দেয়।

রেহান – ফ্রেশ হয়ে নাও কেমন। আমি গেলাম (মুচকি হেসে)

আঁচলও মুচকি হাসে। আজ রেহানের স্পর্শে আঁচলের কোনো রাগ হয়নি।

কিছুক্ষন পর আঁচল বের হয়ে রেহান কে খুজতে থাকে।
আঁচল নিচে নেমে দেখে রেহান ড্রয়িং রুমে বসে আঁচলের কাজিন দের সাথে গল্প করছে।

তার মধ্যে হিয়া (আঁচলের কাজিন) তো প্রায় রেহানের সাথে ঘেঁষে বসে আছে।

হিয়া আঁচলের ১ বছরের ছোট। দেখতে অনেক সুন্দরী। মুখের কথাও অনেক সুন্দর।

আঁচল খেয়াল করে রেহান কিছু একটা বললেই হিয়া হাসতে হাসতে বার বার রেহানের উপর পড়ে যাচ্ছে। আঁচল রেগে কটমট করে সেখান থেকে চলে আসে।
রেহান খেয়াল করে আঁচল অনেকটা রেগে গেছে। আঁচল চলে যাওয়ার পর রেহান ও হিয়ার কাছ থেকে উঠে আসে।

রেহান – (বাহহ… আমার বউ টা মনে হই জ্বলছে। তাহলে তো একটু জ্বালাতেই হয়।)

রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল বেলকনির দোললায় বসে আছে।

রেহান গিয়ে আঁচলের পাশে বসতেই আঁচল রাগি লুক নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
রেহান আঁচলের কান্ড দেখে হেসে দেয়।

আঁচল রিয়াদের রুমে আসে।

আঁচল – ভাইয়া…

রিয়াদ আঁচলের ডাকে আঁচলের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।

আঁচল – ভাইয়া তুমি আমার সাথে কথা বলো নি যে। আমি কি তোমার পর হয়ে গেলাম?

রিয়াদ আঁচলের কথায় কেঁদে দেয়।

রিয়াদ – বোন আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি কখনো চাইনি এইভাবে তোকে কষ্ট দিতে। তোর লেখাপড়া নষ্ট করে দিতে। কিন্তু আমি যে তোর কষ্ট দেখতে পারছিলাম না। ঐ জিসানের জন্য যে তুই প্রতিটা দিন কাঁদতি আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। তাই তোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।

আঁচল ওর ভাইয়ের কান্না দেখে থমকে গেছে। এই প্রথম রিয়াদ কে কাঁদতে দেখছে আঁচল। আঁচলের অনেক কষ্ট হচ্ছে রিয়াদের চোখের পানি দেখতে।

আঁচল রিয়াদের পাশে বসে রিয়াদের চোখের পানি মুছে দেয়।

আঁচল – এই সব থাক না ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি এই কয়দিনে জিসান কে ভুলে গেছি। আর রেহান… উনি সত্যিই অন্য রকম ভাইয়া।
আমার অতীত টা জানার পরও যে আমাকে এতো টা ভালোবাসবে আমি ভাবতেও পারিনি। শুধু তাই নয় উনাকে আমি অনেক কষ্ট ও দিয়েছি ভাইয়া। কিন্তু তারপরও উনি আমাকে কিছু বলেনি শুধু পাগলের মতো ভালোবেসে গেছেন।

রিয়াদ আঁচলের কথা শুনে আঁচলের দু গালে হাত রেখে বলে…

রিয়াদ – তুই পারবি তো বোন সব কিছু ভুলে রেহানের সাথে সারা টা জীবন সুখে কাটাতে?

আঁচল – হ্যা ভাইয়া। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই পারবো আমি।

রিয়াদ আঁচল কে জড়িয়ে ধরে

রিয়াদ – জানিস বোন আমার আর কোনো কষ্ট নেই।
আমার বোন টা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। ভালো খারাপের পার্থক্য করতে শিখেছে আমার বোন টা।

আঁচল – হয়েছে এবার চোখ মুছো। আর শুনো অনেক দিন কিন্তু আইসক্রিম খাইনি। সো আজ তোমার ছাড় নেই বলে দিলাম।

রিয়াদ – অনেক দিন কোথায় রে? মাত্র তো ৩ দিন হলো। (ভ্রু কুচকে)

আঁচল – সেটাই অনেক দিন আমার কাছে। ও তুমি বুঝবে না। তিন দিন তো নয় যেনো তিন বছর ভাভাগো ভাভা।

রিয়াদ – ঠিক আছে সন্ধার সময় পেয়ে যাবি।

আঁচল – থ্যংকু।

দুপুরে…

আঁচলের মা সবাই কে খাবার টেবিলে ডাকে। আঁচলের কাজিন রাও বসে।

হিয়া – আমি বরং রেহান ভাইয়ার সাথেই বসি — বলেই রেহানের পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ে।

রেহান – হুম তাই ভালো। (আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

আঁচল এইসব দেখে প্রচন্ড রেগে যায়।

আঁচল না খেয়েই উঠে পড়ে।

রিয়াদ – আঁচল তুই তো কিছুই খাস নি। উঠে পড়লি যে?

আঁচল – আমার পেট ভরে গেছে ভাইয়া আমি আর খাবো না।

আঁচলের কথা শুনে সবাই হা হয়ে আঁচলের দিকে তাকায়।

আঁচলের মা – তোর পেট ভরে গেছে মানে!! তুই তো এখনো খাবারে হাত ই দিস নি।

আঁচলের – ( খাবার না খাবার না! উনাদের ঢ্যং দেখেই আমার পেট ভরে গেছে। আর খাবো কি ভাবে? যত্তসব)
মা আমি রুমে গেলাম।

রিয়াদ – রেহান.. আঁচলের কি হয়েছে বলো তো? ও হটাৎ এমন রিয়েক্ট করলো কেনো?

রেহান – ভাইয়া আপনি বুঝতে পারেন নি? আঁচল হিয়াকে আমার পাশে বসতে দেখে একটু জেলাস ফিল করছে। (হেসে)

আঁচলের বাবা – একটু না অনেক খানি (বলেই হো হো করে হেসে দেয়)

রিয়াদ – তার মানে বাবা তুমিও??

আঁচলের বাবা – হ্যা আমিও বুঝতে পেরেছি। আঁচল হিয়াকে রেহানের পাশে দেখতে পারছে না।

হিয়া – কিন্তু আমি তো শুধু ভাইয়ার সাথে ফান করি। আর তোমরা তো জানোই আমি অনেকটা মিশুক স্বভাবের। তাছাড়া ভাইয়া আমার বড় আপুর বর আমি ভাইয়ার দিকে ঐ রকম নজর দিবো কেনো? আপুই কি পিচ্চি নাকি? একটুও বুদ্ধি নেই।
ওকে আপুই যখন পছন্দই করে না তাহলে আমি বরং ভাইয়ার সাথে বেশি কথা বলবো না।

রেহান – আরেহ না না শালিকা। তুমিই পারবে আমাদের মাঝের দূরত্ব কমাতে। (মুচকি হেসে)

রেহানের মা – তার মানে তোমার আর আঁচলের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হয়নি?

রেহান – মা আপনি তো জানেন ই আপনার মেয়ে কতোটা জেদী। ওর সাথে স্বাভাবিক হওয়াটা এতো সহজ না। কিন্তু আমার মনে হই হিয়া এটা সহজেই পারবে।
কি বলো শালিকা আমায় সাহায্য করবে তো?

হিয়া – আবার জিগায়।। কিন্তু তার বিনিময়ে আমাকে ট্রিট দেয়া লাগবে কিন্তু।

রেহান – এটা নিয়ে ভেবো না ডিয়ার।

এদিকে আঁচল গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে এসে বসে আছে।

আঁচল – ওহ মাগো মনে হচ্ছে পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। কখন থেকে না খেয়ে আছি। ভেবেছিলাম ভালোমন্দ রান্না হয়েছে পেট ভরে খাবো!! ওই লুচু আমার খাবারের উপর ঠাডা ফালাই দিলো!
ছি ছি ঘরে বউ থাকতেও অন্য মেয়ের সাথে এতো ঘেঁষা ঘেঁষির কি মানে হই? তাও আবার আমারই কাজিনের সাথে। ইচ্ছে করছিলো ঐ দুই বজ্জাতের হাড্ডিকে গলা টিপে মেরে দিই। আমি যে না খেয়ে আছি তার দিকে কোনো নজর নেই ঠিকি হিয়ার সাথে গিলতে বসে গেছে ডেভিলের বাচ্চা ডেভিল।

এরই মধ্যে দরজা খুলার শব্দ পেয়ে আঁচল তাকিয়ে দেখে রিয়াদ হাতে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

রিয়াদ – কিরে তুই ঐ সময় না খেয়ে চলে আসলি যে?

আঁচল – ভাইয়া আমার ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসছি।

রিয়াদ – ঠিক আছে এখন খেয়ে নে।

আঁচল – ভাইয়া খাবো না প্লিজ জোর করো না।

রিয়াদ – আঁচল…. খেয়ে নে বলছি। (ধমক দিয়ে)

রিয়াদ কে আঁচল বরাবরই অনেক ভয় পায়। তাই আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে।

চলবে….

ডেভিল বর পর্ব – ১৪

0

ডেভিল বর
পর্ব – ১৪
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। সো চুপ থাকো।

আঁচল কিছু না বলে চুপ করে থাকে।

রেহান আঁচলকে ছাদে এনে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
আঁচল এই প্রথম রেহান দের বাসার ছাদে এসেছে।
আঁচল ঘুরে ঘুরে দেখছে।
ছাদের চার কোণায় চারটা লাইট লাগানো যার জন্য রাত হলেও অনেক টা আলোকিত হয়ে আছে ছাদ টা। আঁচলের সবচেয়ে ভালো লাগে দোলনা দেখে দোলনার পাশে অনেক গুলো ফুল গাছ ও লাগানো।

হটাৎ আঁচল পেটে কারো ছোঁয়া পায়।
রেহান আঁচলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ঘাড়ে থুতনি রাখে।

রেহান – ভালো লেগেছে?

আঁচল – হ্যা। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি।

রেহান – একটা কেনো! হাজার টা প্রশ্ন করো বউ। নো প্রবলেম।

আঁচল – আপনার বেলকনিতে ও দেখলাম অনেক গুলো ফুল গাছ আবার এখানেও।
এগুলো কি আপনার পছন্দ নাকি রিমির।

রেহান – ধুর বোকা! যদি রিমির পছন্দ হতো তাহলে নিশ্চয় আমার বেলকনিতে ফুল গাছ থাকতো না। আসলে আমারই ফুল অনেক প্রিয়।

আঁচল – ওহহ।

রেহান – চলো দোলনায় গিয়ে বসি। — বলেই আঁচলের হাত ধরে দোলনায় বসিয়ে রেহান আঁচলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

আঁচল – আজিব! এখানে কি শুয়ার জায়গা নাকি? এতো শুয়ার ইচ্ছে হলে ঘরেই তো শুতে পারেন তাইনা।

রেহান – এসব তুমি বুঝবে না পিচ্চি। রাতে বউয়ের কোলে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখা টাও অন্যরকম লাগে।

আঁচল – ওহহ আচ্ছা।

রেহান – তুমি কিছু বলছো না যে! আমিই একা বক বক করে যাচ্ছি।

আঁচল – আমি আর কি বলবো?

রেহান – আচ্ছা কাল তাহলে বাড়িতে যাবে। আই মিন আমার শশুড়বাড়ি।

আঁচল – আমি তো কাউকে বলিনি।

রেহান – তাতে কি। সকালে জানিয়ে দিবা।

আঁচল – আচ্ছা দেখি।

রেহান – আচ্ছা আঁচল সত্যি করে একটা কথা বলবে?

আঁচল – হ্যা বলুন।

রেহান – যদি এখন জিসান ফিরে আসে তো? তুমি কি ওর কাছে ফিরে যাবা?

আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান অসহায় ভাবে আঁচলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের চাহনি তে কিছুটা ভয়ও দেখা যাচ্ছে। যেনো আঁচলকে হারানোর ভয়। রেহান এক দৃষ্টিতে আঁচলের দিকে তাকিয়ে আঁচলের বলা উত্তরের অপেক্ষা করছে।

আঁচল – এই সব না বললে ভালো হয় না?

রেহান – আঁচল প্লিজ আমার কথার উত্তর দাও।

আঁচল – দেখুন আমি জিসান কে ভালোবাসতাম ঠিক। কিন্তু ও তো আমাকে ঠকিয়েছে তাইনা। এতো ভালোবাসার পরও যে আমাকে ঠকিয়েছে তার কাছে কিভাবে ফিরে যাবো আর।

রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হাসে যেনো কঠিন কিছু জয় করে নিয়েছে।

আঁচল – এবার তাহলে উঠুন। রুমে যাই এমনিতেও অনেক রাত হয়েছে। এতো রাতে ছাদে থাকার দরকার নেই।

রেহান আঁচলের কথা শুনে উঠে বসে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বলে….

রেহান – রুমে কেনো? (ভ্রু কুচকে)

আঁচল – আজিব! সারা রাত এখানে কাটাবো নাকি?

রেহান – বুঝেছি তো বেইবি।

আঁচল – কি বুঝলেন?

রেহান – আদর করবা আমায় তাই তো? (চোখ মেরে)

আঁচল – আপনি এতো অসভ্য কেনো বলুন তো?
রাত হয়েছে আমার ভয় করে তাই বলছি।

রেহান মুচকি হেসে উঠে আঁচল কে আবার কোলে তুলে নেয়।

আঁচল – কি পাগলামো করছেন? আমি কি হেটে যেতে পারবো না নাকি?

রেহান – আমি থাকতে তুমি এতো কষ্ট করবে কেনো বেইবি। (মুচকি হেসে)

আঁচল – আহারে…

রেহান আঁচলকে নিয়ে রুমে চলে আসে।

আঁচল বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই রেহান বলে উঠে….

রেহান – একি তুমি ঘুমানোর প্লান করছো নাকি হ্যা? (ভ্রু কুঁচকে)

আঁচল – তো কি করবো শুনি? আপনাকে নিয়ে নাচবো যত্তসব। (রেগে)

রেহান আঁচলের পাশে এসে শুয়ে আঁচলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়…

রেহান – উহুম…সারা দিন যে এতো কষ্ট দিলে এখন ভালোবাসা চাই। (মুচকি হেসে)

আঁচল – দেখুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। প্লিজ ঘুমাতে দিন।

রেহান – নো ওয়ে। — বলেই আঁচলের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।

আঁচল – ঘুমাতে দিন প্লিজ।

রেহান বুঝতে পারে আঁচলের হয়তো খারাপ লাগছে তাই ঘুমাতে চাইছে। রেহান আঁচলকে আর বিরক্ত করে নি। শুধু মুচকি হেসে আঁচলকে টেনে বুকে নিয়ে আসে।

আঁচল – কি হচ্ছে টা কি বলুন তো!

রেহান – চুপচাপ এখানেই ঘুমাউ। নয়তো আজ সারা রাত ঘুমাতে দিবো না বেইবি৷

আঁচল আর কথা না বলে রেহানের বুকেই শুয়ে পরে। বেচারি ঘুমাতে পারলেই বাঁচে। রেহান ও আঁচলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

সকালে….

আঁচলের ঘুম ভাঙ্গলেও নড়াচড়া করতে পারছে না। বুঝতে পারছে ওর উপর কেউ আছে। আঁচল ভালো করেই বুঝতে পারে লোক টা কে!
রেহান আঁচলের গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। এদিকে বেচারির যেনো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আঁচল ধীরে ধীরে রেহান কে সারতে নিলেই রেহান আঁচলকে আরও চেপে ধরে।

রেহান – উহো বেইবি… আমার ঘুম হয়নি। আমাকে ডিস্টার্ব করো না তো।

আঁচল – আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম কোথায়?
আপনার ঘুম হয়নি ভালো কথা। বিছানায় গিয়ে সারা দিন পড়ে পড়ে ঘুমান না। না করেছে কে আজিব!

রেহান – না আমি এখানেই ঘুমাবো। তুমি নড়াচড়া করলে খবর আছে তোমার।

আঁচল – আরেহহ! আজ না বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো আপনিই তো বললেন।

রেহান – হ্যা তো? এতো সকাল সকালই চলে যাবা নাকি?

আঁচল – না তা না। গুছানো বাকি আছে তাই। আর মার সাথে ব্রেকফাস্ট বানাতে যাবো ছাড়ুন।

রেহান আঁচলের কথার প্রতিউত্তরে কিছু না বলে আঁচলের গলায় চুমু দিয়ে উঠে পড়ে৷

আঁচল – আপনি না ঘুমাবেন? উঠলেন যে!

রেহান – তুমি ঘুমাতে দিলে তো! (গম্ভীর কন্ঠে)

আঁচল মুচকি হেসে উঠে যায়। আঁচলের মুচকি হাসি টা রেহানের চোখ এড়াতে পারেনি।

রেহান – (বেইবি তুমি আর কতো আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো আমি দেখে নিবো… মনে মনে)

আঁচল ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে। এসে দেখে রিমি ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
রিমি আঁচলকে দেখেও না দেখার ভান করে।

আঁচলের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। রিমি তো আঁচলকে প্রথম থেকেই অনেক ভালোবাসতো। তাহলে হটাৎ করে কি হয়ে গেলো মেয়েটার?
আমার উপর কোনো কারনে রেগে আছে? (হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আঁচলের মাথায়।)

আঁচল – রিমি… ব্রেকফাস্ট কি বানাবো একটু বলে দিলে সুবিধা হতো।

রিমি – তোমার কিছু করতে হবেনা। মা ঘুম থেকে উঠে করে নিবে। (আঁচলের দিকে না তাকিয়ে)

আঁচল – রিমি তুমি কি কোনো কারনে আমার উপর রেগে আছো। কাল রাত থেকে দেখছি তুমি কেমন বিহেভ করছো আমার সাথে।

রিমি – কেনো? কোনো খারাপ বিহেভিয়ার করেছি নাকি? ক্ষমা চাইতে হবে তোমার কাছে?

আঁচল – এসব কি বলছো? আমি এ’কথা বলিনি।

রিমি – তো কি বলেছো? কি মিন করতে চেয়েছো বলো।

আঁচল – না কিছুনা। আচ্ছা আমি যাই। ( রিমির সাথে কথা বললে ও হয়তো আরও রেগে যাবে তার চেয়ে বরং আমিই কিছু একটা বানিয়ে ফেলি। মনে মনে)

আঁচল রান্না ঘরে চলে যায়।আর এদিকে রিমি আঁচলের সাথে রেগে নিজের রুমে চলে আসে।

আঁচল পরোটা বানাচ্ছে হটাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল রেগে যায়।
রেহান আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।

রেহান – বেইবি তোমার ভেজা চুলের ঘ্রান তো আমাকে পুরা নিহত করে দেবে গো।

আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহানের পেটে কনুই লাগিয়ে দেয়।

রেহান – আহহ আঁচল এই সব কি ছেলেমানুষী করছো বলো তো? (রেগে)

আঁচল – আমাকে কাজ করতে দিন বলছি। নয়তো আপনাকে গরম পানিতে চুবাবো বলে দিলাম। (রেগে)

আঁচলের রাগ দেখে রেহান ভয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করে।

আঁচল ব্রেকফাস্ট রেডি করে সবাই কে ডাকে।
একসাথে সবাই ব্রেকফাস্ট করে নেয়।

রেহান – মা বাবা বলছিলাম যে কালকে তো আঁচলের বাড়িতে যাওয়া হয়নি তো আজকে নিয়ে যাই। ওর ও ভালো লাগবে বাড়িতে গেলে তাই আরকি।

রেহানের বাবা – হ্যা তা তো ভালো কথা। নিয়ে যা। কাল তো তোর জন্যই যাওয়া হয়নি।

রেহানের মা – তাই তো। যা কান্ড করলি কাল।

রিমি – আচ্ছা কালকের কথা বাদ দিলে ভালো হয় না? (বিরক্ত হয়ে)

রেহানের বাবা – হ্যা। আচ্ছা আমি উঠি।

রেহানের মা বাবা রিমি উঠে চলে যায়। রেহান এখনো বসে আছে।

আঁচল – আপনার কি খাওয়া শেষ হয়নি? আরও খাবেন আপনি? (অবাক হয়ে)

রেহান – হুম খাবো তো।

আঁচল রেহানের কথায় হা হয়ে যায়। বলে কি! এতো খাবার উনার পেটে জায়গা নিবে কিভাবে। ধুর যা করার করুক আমি গিয়ে গুছিয়ে নিই।

আঁচল উঠে চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।

রেহান – আমাকে না খাইয়ে চলে যাচ্ছো যে? (মুচকি হেসে)

আঁচল – খান না সবই খেয়ে নিন। নিষেধ করেছে কে যত্তসব।

রেহান দু’হাতে আঁচলের মাথায় ধরে নিচু করে আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
আঁচল বেচারি বড়সড় শক খায়।
আঁচল একদিকে রেহানকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে আর অন্য দিকে দেখছে কেউ চলে আসলো কিনা।

অনেক খন হয়ে যাওয়ার পরও রেহান আঁচল কে ছাড়েনি। আঁচল রেহানের সাথে পেরে না উঠে ক্লান্ত হয়ে রেহান কে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে দেয়।

হটাৎ রিমি চলে আসে। রিমি ওদের দু’জন কে এ অবস্থায় দেখে চোখে হাত দিয়ে উল্টো দিক ঘুরে যায়।
রিমি মনে মনে অনেক টা খুশি হয় এই ভেবে যে আঁচল হয়তো রেহান কে মেনে নিয়েছে।

রেহান আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকে সাথে আঁচল ও।
রেহান দেখতে পায় রিমি চোখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ রেহান সাথে সাথে আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে যায়।

রেহান – আঁচল বেইবি যখন তখন তোমার রোমান্স করতে মন চাই হ্যা। এভাবে ড্রয়িং রুমে কেউ লিপ কিস করে বলো তো।

রেহানের কথায় আঁচল যেনো আকাশ থেকে ধুপ করে মাটিতে পড়ে।

আঁচল চোখ বড়বড় করে রেহানের দিকে তাকায়…

আঁচল -কিই…! আমি?

রেহান ইশারায় রিমিকে দেখিয়ে বলে…

রেহান – হ্যা তুমিই তো। (চোখ মেরে)

রিমি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চলে যায়। আর আঁচল রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে এসে গুছাতে থাকে।

বিকেলে…

আঁচল রেহানের মা বাবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে বের হয়। রেহান আর আঁচলের সাথে রিমিও যায়। যদিও প্রথম যেতে রাজি ছিলো না কিন্তু আঁচলের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়।

রিমি গিয়ে গাড়িতে পেছনের সিটে বসে পড়ে।
আঁচল ও রিমির পিছন পিছন গিয়ে রিমির সাথে বসে যায়।

রেহান এই সব দেখে রেগে যায়। রেহান ড্রাইভিং সিটে বসে আঁচলকে বলে….

রেহান – আঁচল সামনে এসে বসো।

আঁচল – থাক না আমি বরং রিমির সাথেই বসি।

রেহান – তুমি আসবে কি না? (রেগে)

আঁচল রেহানের রাগ দেখে উঠে গিয়ে সামনে বসে পড়ে।

রেহান মুচকি হেসে এক হাতে আঁচলের একহাত ধরে অন্য হাতে ড্রাইভিং করতে থাকে।

আঁচল – কি করছেন? ছাড়ুন। হাত ধরে রাখলে গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে আপনার।

রেহান – নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যা নেই।

চলবে….

ডেভিল বর পর্ব – ১৩

0

ডেভিল বর
পর্ব – ১৩
শিফা_আফরিন
.
.
?
আঁচল রেহানের ফেইস দেখে না হেসে পারেনা। কেমন বাচ্চা দের মতো আচরণ করছে দেখো। দেখলে তো মনেই হবেনা উনি এক নাম্বারের ডেভিল।

আঁচল – আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ।

এর মধ্যেই দরজায় কেউ নক করে। আঁচল রেহান কে ছাড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দেখে রিমি দাঁড়িয়ে আছে।

রিমি – লেবুর রস এনেছিলাম। তুমি খাইয়ে দিতে পারবে ভাইয়াকে? নাকি আমিই খাইয়ে দিবো? (শক্ত গলায়)

আঁচল রিমির কথায় বেশ অবাক হয়ে যায়। এতো কঠিন ভাবে কথা বলছে কেনো রিমি! আগে তো কোনো দিন এমন ভাবে কথা বলেনি।

রিমি – কি হলো পারবে নাকি তোমার সমস্যা হবে?

আঁচল – না না সমস্যা কেনো হবে? আমি পারবো। দিয়ে যাও।

রিমি আঁচলের হাতে গ্লাস টা দিয়ে চলে যায়। আঁচল দরজা লক করে রেহানের কাছে আসে….

আঁচল – এইযে শুনুন… এই পানি টা খেয়ে নিন।

আঁচলের কথায় রেহানের কোনো হেলদোল নেই। রেহান বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।

আঁচল – একি ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা… ইচ্ছে করছে এই অসভ্য টার মাথায় পানি টা ঢেলে দিই।

আঁচল গ্লাস টা টেবিলে রেখে রেহান কে সোজা করে।

আঁচল – আপনি উঠবেন নাকি না? (রেগে)

রেহান উঠে বসে…..

আঁচল – নিন এটা খেয়ে নিন। (গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে)

রেহান – উহুম… এটা খাবো না।

আঁচল – তো কি আমার মাথাটা খাবেন… যত্তোসব। (রেগে)

রেহান – না তো। আমি তোমাকে খাবো বেইবি।

আঁচলের মাথাটা এবার পুরো গরম হয়ে যায়। আঁচল রেহানের মুখ চেপে ধরে কিছুটা লেবুর রস মুখে ঢেলে দেয়।
রেহান মুখ খিচে ফেলে। আঁচল একি ভাবে গ্লাসের পুরোটা লেবুর রস খাইয়ে দিয়ে রেহান কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়।

প্রায় অনেকখন পর রেহান শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।

আঁচল বিছানায় বসে ছিলো। হটাৎ রেহান কে দেখে আঁচল অবাক হয়ে যায়। খালি শরীরে রেহানের সুন্দর্য টা আরও বেড়ে গেছে। আঁচল এক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান ধীরে ধীরে আঁচলের কাছে চলে আসে কিন্তু আঁচল আগের মতোই হা করে তাকিয়ে আছে৷

রেহান – কি গো বউ এভাবে তাকিয়ে আছো যে। আমাকে বেশি হট লাগছে বুঝি! (মুচকি হেসে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের ধ্যান ভাঙ্গে। আঁচল তারাতারি করে চোখ নামিয়ে নেয়।

রেহান আঁচলের সামনে এসে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে।

রেহানের শরীরে হালকা পানি লেগে থাকায় আঁচল ও কিছুটা ভিজে যায়।

আঁচল – কি শুরু করলেন? ছাড়ুন আমায় ভিজে যাচ্ছি তো আমি।

রেহান – তো কি হয়েছে ভিজে গেলে যাবা। (আঁচলের ঘাড়ে নাক ঘসে)

আঁচল – আপনার কি নেশা কাটেনি নাকি? (রেগে)

রেহান – হুম কেটেছে তো। এখন যে তোমার নেশা ধরেছে।
আচ্ছা বেইবি একটা কথা বলো তো?

আঁচল – কি?

রেহান – আজ তো তোমার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো তাই না? তো গেলে না কেনো?

আঁচল রেহানের কথা শুনে তেলে ভাজা বেগুন হয়ে যায়।

আঁচল – আপনার জন্যই তো আমার যাওয়া হয়নি। আপনি যে সকালে বেরিয়েছেন আর এখন রাত ১১ টার উপরে বাজে এতোখনে এসেছেন। তো আমি কিভাবে যেতাম শুনি। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে না করেছি যেতে পারবো না শরীর ভালো লাগছে না।
মা অনেক টা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। আর এটা নাকি নিয়ম। তাও না করে দিয়েছি।

রেহান – আমি নেই তো কি হয়েছে তুমি একাই তো চলে যেতে পারতে তাইনা। অবশ্য আমাকে তো তুমি কেয়ার ও করো না। আমি না থাকলেই তো তোমার জন্য মঙ্গল তাইনা সোনা।

আঁচল – হ্যা যেতে পারতাম কিন্তু এটা তো হয়না। নিয়ম তো নিয়ম ই। তাছাড়া মাও আমাকে কথা শুনাতো। তাই যাইনি।

রেহান – তাই? নাকি আমাকে ছাড়া থাকতে পারতে না। তাই যাওনি। নিশ্চয় আমাকে মিস করতে তাইনা বেইবি।

আঁচল – আগ্গে না। আমার বয়েই গেছে আপনার মতো ডেভিল কে মিস করবো। ছাড়ুন আমায়।

আঁচল চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের কোমড়ে আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে।

রেহান – জানি তো আমার জন্যই তো যাওনি। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ওকে বাবা আপনার জন্যই যাইনি। এবার ছাড়ুন।

রেহান – বাবা না তো সোনা বর বলো বর।

আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহান কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরে আসে।

আঁচল – দিলেন তো ভিজিয়ে। আপনি আসলে মারাত্মক অসভ্য।
এবার চলুন খেয়ে নিবেন।

রেহান – খাবো না বেইবি। তুমি খাওনি নিশ্চয়। আমি এসে তো তোমাকে বেলকনিতে পেলাম।

আঁচল – আমার ক্ষিদে নেই। আপনি খেয়ে নিবেন চলুন। এমনিতেও সারা দিন খান নি মনে হই।

রেহান – ওয়েট আমি এখনি আসছি।

আঁচল – আবার কোথায় যাচ্ছেন?

রেহান – ওহ মাহহ আমাকে কাছে না পেলে কষ্ট হবে বুঝি?

আঁচল – আপনি আসলে একটা…..

রেহান – কি গো? (চোখ মেরে)

আঁচল – যান তো। যেখানে যেখানে যেতে চাইছিলেন গিয়ে আমাকে রক্ষে করুন প্লিজ যান।

রেহান মুচকি হেসে চলে যায়।

আঁচল বিছানায় বসে বক বক করেই যাচ্ছে।
আস্ত একটা অসভ্য। এ তো আমাকে পুরো জালিয়ে মারবে সারা টা জীবন।

কিছুক্ষণ পরই রেহান হাতে প্লেট নিয়ে রুমে আসে।

আঁচল – এসব কি? (অবাক হয়ে)

রেহান – খাবার এনেছি।

আঁচল – কিন্তু কেনো? আর আপনি খাবার পেলেন কোথায় বলুন তো

রেহান – আরে বেইবি মা তোমার আর আমার খাবার রেখে দিয়েছিলো। আমি নিয়ে আসলাম।

আঁচল – আমি খাবোনা বললাম তো। আপনি খেয়ে নিন।

রেহান বিছানায় এসে বসে….

রেহান – নাও হা করো।

আঁচল – আপনি কি খাবেন?

রেহান – চুপচাপ হা করো (ধমক দিয়ে)

আঁচল কথা না বলে হা করে। রেহান আঁচলের মুখে খাবার তুলে দেয়।
আঁচল ও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।

রেহান – নাও এবার আমাকে খাইয়ে দাও।

আঁচল রেহানের কথা বলে হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রেহান – এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে খাইয়ে দাও।

আঁচল – আমি পারবো না।

রেহান – ওকে ফাইন। তাহলে আমিও না খেয়ে থাকি। যদিও খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো বাট কি আর করার। (অসহায় ভাবে)

আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহানের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে।

রেহান – ( বেইবি দেখি আর কতো দিন তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো। আমি ঠিক আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে নিজের করে নিবো দেখে নিও…. মনে মনে)

খাওয়া শেষ করে রেহান বলে….

রেহান – বেইবি চলো এক জায়গায় যাই। তোমার খারাপ লাগবে না বরং অনেক খুশি হবে দেখে। চলো….

আঁচল – কোথায়? (অবাক হয়ে)

রেহান – আহা চলো তো আগে। গেলেই বুঝবে।

আঁচল – এতো রাতে কোথায় যাবো? আপনার মাথা ঠিক আছে তো?

রেহান – চুপ করে আমার সাথে চলো। আর হ্যা কোনো শব্দ যেনো না হই। আই মিন কেউ যেনো না জেগে যায়। সবাই বোধহয় ঘুমাচ্ছে।

আঁচল – কিন্তু কোথায় যাবো সেটা তো বলুন।

রেহান – ছাঁদে যাবো। (মুচকি হেসে)

আঁচল – এত রাতে ছাঁদে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তার চেয়ে বরং কাল সকালে যাবেন ওকে।

রেহান আঁচলের কথা শুনে হেসে দেয়।

রেহান – সকালের আকাশ আর রাতের আকাশ অনেক পার্থক্য আছে সোনা। চলো না।

আঁচল আর কথা না বারিয়ে রাজি হয়ে যায়।

রেহান – আমার গুলুমুলু বউ টা। (ঢ্যং করে)

আঁচল – কিহহ! আমি কি এতোটাই মোটা যে গুলুমুলু বলেছেন?

রেহান – আরে বাবা এমনিই বললাম। চলো এবার।

রেহান আর আঁচল চুপিচুপি ড্রয়িং রুম দিয়ে বের হয়ে আসে।

মেইন দরজার কাছে আসতেই রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।

আঁচল – আরেহহ আমার কি পা নেই নাকি। আমি হেটে যেতে পারবো নামান বলছি।

রেহান – কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। সো চুপ থাকো।

চলবে….

ডেভিল বর পর্ব – ১২

0

ডেভিল বর
পর্ব – ১২
শিফা_আফরিন
.
.
?
রিমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই চিৎকার করে উঠে…

রিমি – ভাইয়াআআ…

রেহান সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না। হাতে ড্রিংক এর বোতল। শার্টের ইন টাও ঠিক নেই। টাই টাও অর্ধেক খুলে বাঁকা হয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো।

রিমি এই প্রথম নিজের ভাইকে এতো টা অগোছালো দেখছে। যে ছেলে এতোটা পরিপাটি তার আজ এই হাল শুধুমাত্র আঁচলের জন্য। হ্যা…আঁচলের জন্যই আজ ভাইয়া ড্রিংক করেছে। রিমি কিছুতেই রেহানের এমন অবস্থা মানতে পারছে না।

রিমি – (সব হয়েছে তোমার জন্য ভাবি। আমার ভাইয়া আজ পর্যন্ত ড্রিংক করা তো দূরে থাক খারাপ কোনো ছেলেদের সাথে কথাও বলেনি। আমার ভালো ভাইয়াটা তোমার জন্য এই পথে গিয়েছে। আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না ভাবি। নেভার… মনে মনে)

রেহানের বাবা মা একপ্রকার দৌড়ে দরজার সামনে আসে।

রেহানের বাবা – কিরে রিমি তুই ভাইয়া বলে চিৎকার করে আর কিছু বললি না ক…….

রেহানের বাবা মা রেহানকে দেখে থমকে যায়। এই রেহান যেনো তাদের কাছে অচেনা লাগছে।
রিমি আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

রেহানের মা – রেহান তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তোর। (রেহানকে ঝাকুনি দিয়ে)

রেহান ওর মার কাধে মাথা ফেলে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

রেহান – মা জানো ও আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। আমি আর পারছি না মা। তুমিই বলো আমি কি এতোটাই খারাপ মা। মা আমার সত্যিই অনেক কষ্ট হই। মরে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি তো জানো মা আমি কখনো কাউকে ভালোবাসি নি। ওকে তো প্রথম থেকেই অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি। নিজের থেকেও বেশি। ও কেনো বুঝতে পারে না মা। ওকে তুমি বুঝাও না ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি মরেই যাবো মা। (কাঁদতে কাঁদতে)

রেহানের মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনে রেহানের মার ভেতর টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠে। রিমিও শব্দ করে কেঁদে দেয় রেহানের মা শক্ত করে রেহান কে জড়িয়ে ধরে বলে….

রেহানের মা – কি হয়েছে তোর বাবা? কেনো এই সব বলছিস? কি হয়েছে আমাকে বল না। (কেঁদে দিয়ে)

রেহানের বাবা – কিরে রিমি রেহান এইসব কেনো বলছে রে। কি হয়েছে ওর ?

রিমি – মা বাবা তোমরাও না! দেখতেই তো পারছো ভাইয়ার অবস্থা। কি থেকে কি বলে ফেলছে এই সব না ধরলে হইনা?
আমি বরং ভাইয়া কে রুমে দিয়ে আসি। কিছুক্ষন পর লেবুর পানি খাইয়ে আসবো নি।

রিমি রেহানের কাছে যেতেই রেহান ইশারা করে রিমিকে দাঁড়াতে বলে।

রেহান – আমি যেতে পারবো। তুই রুমে যা।

রিমি – ভাইয়া তুই পারবি না। তুই তো দাঁড়াতেই পারছিস না যাবি কিভাবে?

রেহান – বললাম না আমি পারবো তুই যা। বলেই রেহান দুলতে দুলতে রুমের দিকে যেতে থাকে।

রেহানের মা – রিমি তুই বরং রেহানের জন্য লেবুর পানি নিয়ে যা।

রিমি – হ্যা মা যাচ্ছি।

এদিকে আঁচল বেলকনিতে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
রেহান ধীরে ধীরে রুমে এসে আঁচলকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছেনা।
রেহান সারা রুম পাগলের মতো খুজছে কিন্তু আঁচলকে কোথাও দেখতে পায় না।

রেহান – আমি যা ভেবে ছিলাম তাই হয়েছে। তুমি ঠিক আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আঁচল। তুমি ঐ জিসানের সাথে চলে গেলে!
আমি কিভাবে থা……

হটাৎ রেহানের চোখ যায় বেলকনিতে। রেহান স্তব্ধ হয়ে যায়। আঁচল গুটিশুটি মেরে বেলকনিতে শুয়ে আছে।

রেহান – এইতো আমার আঁচল। আমি জানতাম তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যেতে পারবে না। সরি সোনা তোমায় আবার ভুল বুঝেছিলাম।

রেহান বেলকনিতে আঁচলের কাছে যায়। আঁচল গভীর ঘুমে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রেহান আঁচলের মাথার কাছে বসে পড়ে।
একহাতে আঁচলের মাথাটা নিজের কোলে রাখে। আরেক হাতে আঁচলের চুল গুলো ঠিক করতে থাকে।

আঁচল কিছুটা নড়েচড়ে উঠে।

হটাৎ রেহান আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ঘুমের মধ্যেই আঁচলের মনে হচ্ছে কেউ যেনো তার নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলতে চাইছে।
আঁচল সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রেহান।

আঁচল রেহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।

রেহান কিছুটা দূরে সরে যেতেই আঁচল তারাতারি করে উঠে বসে।

আঁচল – আপনি ড্রিংক করেছেন? (অবাক হয়ে)

রেহান – কই! না তো।

আঁচল – একদম মিথ্যে বলবেন না। ড্রিংক না করলে আপনার মুখ থেকে এতো বাজে গন্ধ কেনো আসছে। আপনি ড্রিংক ও করেন? কই আগে জানতাম না তো! আর কি কি গুন আছে আপনার।

রেহান আঁচলের কথার উত্তর না দিয়ে আঁচলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আঁচল বেশ অবাক হয়ে যায়। হটাৎ করে রেহান এমন কিছু করবে আঁচল ভাবতেও পারেনি।

রেহান – বেইবি জানো আমি তখন তোমাকে কোথাও পাচ্ছিলাম না। আমার না অনেক কষ্ট লাগছিলো। এইযে এইখানে কষ্ট হচ্ছিলো (নিজের বুকে হাত দিয়ে)
আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি জিসানকে ভালোবাসো আমি আর কিছু বলবো না কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না সোনা।

আঁচল রেহানের এমন বাচ্চামো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আঁচল- আপনি উঠে রুমে যান। এখন আপনার মাথা ঠিক নেই৷।

রেহান – তুমি নিয়ে চলো না বেইবি প্লিজ। (করুন সুরে)

আঁচল – আমি কিভাবে নিবো শুনি?

রেহান – কেনো? কোলে করে নিবে! (মুচকি হেসে)

রেহানের কথা শুনে আঁচল যেনো গাছ থেকে ধপ করে পড়েছে। বলে কি? ড্রিংক করে কি মাথার তার কয়েকটা ছিড়ে গেলো নাকি!

আঁচল – আপনার মাথা টা কি গেছে? কি সব বলছেন আপনি? আমি আপনাকে কোলে নিবো? আপনার মতো একটা হাতিকে আমি কোলে নিতে পারবো? কি মনে হই আপনার!

রেহান – ওওও পারবে না! (অসহায় ভাবে)

আঁচল – না পারবো না।

রেহান – তাহলে আর কি করার আমিই বরং তোমাকে কোলে নিয়ে যাই। (আঁচলের কোল থেকে মাথা তুলতে তুলতে)

আঁচল – কিইইই!!! আপনি এই অবস্থায় আমাকে কোলে নিবেন!! আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? নিজেই তো ঠিক করে হাটতে পারছেন না আবার আমাকে কোলে নিয়ে আমার কোমড় টার বারোটা বাজাবেন তাই তো!

রেহান – মোটেই না। দেখোই না পারি কিনা। বলেই রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।

আঁচল বেচারি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে। এমনিতেই রেহান দুলতে দুলতে হাটছে তার মধ্যে আবার আঁচলকে কোলে নিয়েছে। এখন যদি ফেলে টেলে দেয় তো কি হবে!!

আঁচল – দেখুন রেহান ভালোই ভালোই আমাকে নামান বলছি। বেশি বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। নামান আমায়।

কে শুনে কার কথা রেহান দুলতে দুলতে আঁচলকে নিয়ে রুমে যাচ্ছে।
আঁচল ভয়ে রেহানের শার্টের কলার শক্ত করে ধরে আছে।

রেহান আঁচলকে খাটের কাছে এনেই ধপ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজেও আঁচলের উপর পড়ে যায়।

আঁচল – রেহান আপনার মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হচ্ছে প্লিজ আপনি সরুন।

রেহান আঁচলের মুখের সামনে মুখ এনে দেখে আঁচল চোখ মুখ খিচে আছে।

রেহান – বাজে গন্ধই তোমাকে সহ্য করতে হবে বেইবি। (মুচকি হেসে)

আঁচল – কি হচ্ছে টা কি। ছাড়ুন আমায়। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার মুখের বাজে গন্ধ টা কিছুটা হলেও কমে যাবে। যান প্লিজ।

রেহান – তুমি ফ্রেশ করিয়ে দাও না বেইবি। (আঁচলের গলায় মুখ গুঁজে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

আঁচল – বুঝেছি আপনি এবার সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছেন তাই এই সব অদ্ভুত কথা বলছেন। আর কিছুক্ষন আপনার সাথে থাকলে না আমিও পাগল হয়ে যাবো বুঝেছেন?

রেহান – আমি কি এমন ভুল বলেছি? আমি তো তোমার স্বামীই তাই না।

আঁচল – স্বামী না ছাই। আপনি যান তো। (বিরক্ত হয়ে)

রেহান – না যাবো না (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

আঁচল রেহানের ফেইস দেখে না হেসে পারে না। কেমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করছে দেখো।
দেখলে তো মনেই হবেনা উনি এক নাম্বারের ডেভিল।

চলবে…

ডেভিল বর পর্ব – ১১

0

ডেভিল বর
পর্ব – ১১
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – আঁচল…. দরজা খুলো।

আঁচল কোনো সাড়া দেয় নি। রেহান এবার চিন্তায় পড়ে যায়। কিভাবে রাগ ভাঙ্গাবে! এই মেয়ে তো দরজাই খুলছে না।

রেহান আরও কয়েক বার আঁচলকে ডাকে…

রেহান – আঁচল…. আমার ভুল হয়ে গেছে সোনা। একটু বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আর এমন হবে না। দরজা খুলো প্লিজ বেইবি।

আঁচল নাছোড়বান্দা দরজা খুলার নামও নেইনি। রেহান এবার খনিকটা রেগে যায়।

রেহান – আঁচললললল….. তুমি দরজা খুলবে নাকি আমি ভেঙ্গে ঢুকবো…? (দাঁতে দাঁত চেপে)

আঁচল তাও দরজা খুলে না। এবার রেহান রেগে দরজায় লাথি মারে।
লাথির শব্দ শুনে আঁচল ভয় পেয়ে যায়। যদি সত্যি সত্যিই রেহান দরজা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তো আমার কপালে শনি লেখা আছে মনে হই।

আঁচল এক লাফে উঠে দরজা খুলে দেয়। আঁচল দরজা খুলতেই রেহান ঘরে ঢুকে দরজা টা আবার লাগিয়ে দেয়। আঁচল বেশ ভয় পেয়ে যায়।

রেহান – আঁচল আমি সরি। সত্যিই বুঝতে পারিনি উনি তোমার ভাই। কি বলো তো সারাক্ষন তোমার মুখে ঐ জিসানের নাম শুনতে শুনতে আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খায়… যদি তুমি আবার জিসানের কাছে চলে যাও তো!
আমি সরি সোনা। আর মারবো না তোমায়। এই কান ধরছি দেখো।

আঁচল এবার রেগে চিৎকার করে উঠে..

আঁচল – কি পেয়েছেন আমাকে? কাঠের পুতুল আমি? যখন ইচ্ছে হবে মারবেন আবার ইচ্ছে হলে সরি বলবেন? আপনি আমাকে কিছু বলতে দিয়েছিলেন? আপনি জানতে চেয়েছিলেন ছেলেটা কে? তার আগেই আপনি যা নয় তা বলেছেন। কেনো বলুন তো? আমি কি মানুষ না? আপনার সব রকম অত্যাচার কেনো সহ্য করবো আমি? হোয়াই? (কাঁদতে কাঁদতে)

রেহান বুঝে উঠতে পারছে না আঁচলকে কিভাবে শান্ত করাবে। আঁচল যে পরিমাণ রাগ করেছে!

রেহান – আঁচল একটু শান্ত হও প্লিজ। বললাম তো আর এমন হবেনা। (আঁচলের হাত ধরে)

আঁচল এক ঝটকায় নিজের হাত টা সরিয়ে নেয়।

আঁচল – ডোন্ট টাচ মি ওকে। আমি আর আপনার সাথে এক মূহুর্ত ও থাকবো না। আপনি একটা জানোয়ার। আপনি প্রথম দিন থেকেই আমার উপর অত্যাচার করে যাচ্ছেন। আমি চলে যাবো। আপনার সাথে থাকবো না আমি। (চিৎকার করে)

চলে যাওয়ার কথা শুনে রেহানের প্রচুর রাগ উঠে যায়।
রেহান আঁচলের দু বাহু চেঁপে ধরে কাছে এনে বলে…..

রেহান – চলে যাবি মানে! তুই কি মনে করিস আমি তোকে এতো সহজে যেতে দিবো। নো ওয়ে।
স্বামী হই তোর আমি। তোকে মারতে পারি আবার ভালোবেসে কাছে টেনেও নিতে পারি। তুই চলে যাওয়ার কথা মাথায় আনলি কি করে? শুন আমি বেঁচে থাকতে এটা কখনো হবে না। আমায় ছেড়ে চলে যাওয়ার ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। আমি মরে গেলে যা ইচ্ছে করিস। (রেগে)

আঁচল রেহানের এমন আচরনে ভয় পেয়ে যায়।
তাও বার বার এক কথাই বলে যাচ্ছে….. আমি চলে যাবো.. আমি আপনার সাথে থাকবো না।
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে আঁচলের।

রেহান নিজের রাগ কে কনট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বার বার আঁচলের মুখে ” চলে যাবো ” কথাটা শুনতেই রেহানের রাগের পরিমাণ কমার বদলে যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

হটাৎ আঁচল বলে উঠে….

আপনি খারাপ। আপনি শুধু আমার উপর অত্যাচার করেই যান। আমার জিসানই ভালো ছিলো। আপনি খারাপ।

রেহান এবার নিজের রাগের কনট্রোল হারিয়ে ফেলে। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁচলের গালে কষে চর মারে। আঁচল ছিটকে বিছানায় পড়ে যায়।

রেহান – তোর জিসান জিসান জিসান!!! বিয়ের প্রথম দিন থেকে সেই একি নাম বলে যাচ্ছিস। তোর জিসান তোকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে ভুলে গেছিস তাই না। আর আমার ভালোবাসা তোর চোখে পড়ে না। তোর জিসান কি আমার থেকেও বেশি ভালোবেসেছিলো তোকে?

রেহান রেগে চিৎকার করে কথাগুলো বলতে থাকে কিন্তু আঁচলের কোনো রিয়েকশন না পেয়ে রেহান আঁচলের কাছে গিয়ে আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে সোজা করতেই দেখে আঁচল সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।

রেহান রাগে নিজের হাত দিয়ে দেয়ালে কয়েকটা আঘাত করে। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

ঘন্টাখানেক পর রিমি রুমে এসে দেখে আঁচল ওভাবে বিছানায় পড়ে আছে। রিমি দৌড়ে আঁচলের কাছে এসে আঁচলকে ডাকতে থাকে।

রিমি – ভাবি… কি হয়েছে তোমার?

রিমি বুঝতে পারে আঁচল সেন্সলেস হয়ে আছে। রিমি দ্রুত পানি এনে আঁচলের মুখে ছিটাতেই আঁচলের সেন্স আসে।

রিমি – ভাবি কি হয়েছে বলো তো? তুমি সেন্সলেস হলে কিভাবে?

রিমির কথা শুনে আঁচল সব কিছু মনে করার চেস্টা করে।

আঁচল – জানিনা।

রিমি – আচ্ছা চলো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। রেস্ট নেবে চলো। ভাইয়া যে কোথায় গেলো খবর নেই কোনো। এদিকে তোমার এই অবস্থা সে খেয়াল আছে ওর!

আঁচল – তুমি যাও রিমি। আমি নিজে রুমে যেতে পারবো।

রিমি – ওহো চলো তো। রিমি জোড় করে আঁচলকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসে।

আঁচল – রিমি শুনো..

রিমি – বলো ভাবি

আঁচল – মা বাবাকে কিছু বলো না কেমন। শুধু শুধু টেনশন করবে।

রিমি – আচ্ছা বলবো না। তুমি রেস্ট নাও। আমি তোমার আর ভাইয়ার খাবার টা রুমে দিয়ে যাবো নি। তোমার নিচে নামার দরকার নেই।

রিমি চলে যায়। আঁচল দুচোখ বন্ধ করে।

রাত ১০ টা……

রিমি আঁচল আর রেহানের খাবার টা নিয়ে এসে দেখে আঁচল বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।

রিমি – ভাবি…..ভাইয়া এখনো বাসায় আসেনি?

আঁচল – তো আমি কি করবো?

রিমি – তুমি ফোন করে একটা খবর তো নিতে পারতে।

আঁচল – তুমি ফোন করে নাও।

রিমি – দেখো ভাবি… তোমার অতীতে কি হয়েছে সব ভুলে যাও। এখন তুমি কারো স্ত্রী। তোমার অতীতে যাই হয়ে থাকুক এতে আমার ভাইয়ার দোষ কোথায় বলো তো?
আমার ভাইয়া কেনো কষ্ট পাবে? আর রইলো ফোন করা…. ভাবি…. ভাইয়া তোমার সাথে রাগ করেছে আমার সাথে না। এখন তুমিই বলো ফোন টা কার করা উচিত আমার নাকি তোমার?

আঁচল চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।

রিমি – ভাবি আমার ভাইয়া টা অনেক অভিমানী। ওকে কষ্ট দিও না প্লিজ। ও হয়তো অভিমান করে এমন কিছু করে বসবে যা কেউ ভাবতেও পারবে না। — বলেই রিমি চলে আসে আঁচলের রুম থেকে।

এদিকে রেহানের মা চিন্তায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে…

রিমি – মা একটু শান্ত হও প্লিজ ভাইয়া চলে আসবে এখনি।

রেহানের মা – ও এমন কেনো করছে রে? ও তো কোনো দিন বাড়ির বাহিরে এতোখন থাকেনি। আমার ছেলেটা ঠিক আছে তো? (কাঁদতে কাঁদতে)

রিমি – মা ভাইয়ার কিছু হয়নি। তুমি দেখো ভাইয়া চলে আসবে।

রেহানের বাবা – কি চলে আসবে চলে আসবে বলছিস! এখনো তো এলো না। কোথায় গেছে কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।

রিমি – বাবা তুমিও এমন করছো কেনো বলো তো? তুমিও এতো চিন্তা করলে মাকে কে সামলাবে। (বলেই কেঁদে দেয়)

রেহানের বাবা একের পর এক রেহানকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না।

এদিকে…

আঁচল বেলকনিতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। ওর জন্যই আজ এতো গুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ও যদি রেহান কে মেনে নিতে পারতো আজ এমনটা হতো না।

হটাৎ বেল বাজতেই রেহানের মা বলে…

রেহানের মা – ঐ তো আমার ছেলেটা চলে এসেছে নিশ্চয়। — বলেই উঠে যেতে নিলে রিমি আটকে ফেলে।

রিমি – মা তুমি বসো আমি গিয়ে দেখছি।

রিমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই চিৎকার করে উঠে….

রিমি – ভাইয়াআআ……

চলবে….

ডেভিল বর পর্ব -১০

0

ডেভিল বর
পর্ব-১০
শিফা_আফরিন
.
.
?
রিমি দরজা খুলে দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।

রিমি – কাকে চাই?

ছেলেটা – আঁচলকে!

ছেলেটার কথা শুনে রিমি খানিকটা রেগে যায়।

রিমি – আপনি জানেন আঁচল আমার ভাবি হই। আর অন্য কারো ওয়াইফ কে আপনি নাম ধরে বলছেন কেনো?

ছেলেটা – এতো কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই। আপনি আঁচলকে ডাকুন। আঁচল আমাকে ঠিকই চিনবে।

রিমি – আরেহহ আজিব! আপনাকে আমরা চিনি না তাহলে কেনো ডাকবো বলুন তো?

ছেলেটা – আমরা নই। বলুন আপনি চেনেন না। এতো কথা না বলে ডাকুন আঁচলকে।

ওরা দু’জনের চেঁচামেচি শুনে আঁচল রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

আঁচল – কি হলো? কার সাথে চেঁচাচ্ছো?
আঁচল দরজার সামনে আসতেই ছেলেটাকে দেখে বড়সড় একটা শক খায়।

আঁচল – আদি ভাইয়া তুমিইইই!!! (অবাক হয়ে)

আদি – কি!! কেমন দিলাম সারপ্রাইজ টা? (মুচকি হেসে)

রিমি – ভাবি তুমি উনাকে চেনো?

আঁচল – আরে কি বলো চিনবো না কেনো? উনি আমার ফুপাতো ভাই আদি। অবশ্য ফুপাতো ভাই বললে ভুল হবে কারন আদি ভাইকেও আমার নিজের ভাই মনে করি। উনি আমার বিয়েতে থাকতে পারেননি দেশের বাহিরে ছিলেন তাই।

আদি ভাইয়া তুমি দেশে ফিরলে কবে।

আদি – এইতো কাল। আর আজ নাকি মামুনি রা আসবে তোকে নিতে আমাকেও বলছিলো তোকে দেখে যেতে তাই ভাবলাম আমিই আগে এসে তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিই। মামুমির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে এলাম।

আঁচল – খুব ভালো করেছো ভাইয়া। আমি খুউউব খুশি।
এই দেখো তোমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে সব কথা বলে ফেলছি। তুমি ভেতরে এসো। — বলেই আদির হাত ধরে টেনে ভেতরে আনে আঁচল।

রেহান নিচে নামছিলো এমন সময় দেখে আঁচল একটা ছেলেকে হাত ধরে বসতে বলছে। মূহুর্তেই রেহানের ভেতর ভয় ঢুকে যায়।
ছেলেটা জিসান নয়তো? জিসান কি আঁচলকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে?
না না! এটা হতে দিবো না। আঁচল আমার বিয়ে করা বউ। আঁচল এখন আমার আমানত। ওর দিকে কেউ নজর ও দিতে পারে না।
রেহানের রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে আছে। ইচ্ছে করছে জিসান কে এখনি মেরে পুঁতে ফেলতে।
আর আঁচল!!! ও কিভাবে পারলো জিসানের হাত ধরতে!
আগে আঁচলকে দেখে নিই। তার পর ঐ জিসান!

রেহান রেগে আঁচলের কাছে আসে।
আঁচল রেহানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

আঁচল – শুনুন.. উনি…

আঁচলকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রেহান আঁচলের হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়।

এদিকে রেহানের এমন কান্ডে আদি আর রিমি হা করে তাকিয়ে থাকে।

আদি – কি হলো বলুন তো?

রিমি – কিছুই তো বুঝলাম না।

রেহান আঁচলকে রুমে এনে দরজা লক করে দেয়।

আঁচলের এক হাত পিছনে নিয়ে মোচড় দিয়ে ধরে। আঁচল ব্যাথায় কুকড়ে উঠে।

আঁচল – আহহ রেহান কি হচ্চে টা কি। আমার হাত টা ছাড়ুন। লাগছে আমার। (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

রেহান – লাগুক। তুই যদি আজ মরেও যাস তবুও আমার কষ্ট নেই। তোর এত বড় সাহস হলো কি করে? তুই আমার ওয়াইফ ভুলে গেছিস?

আঁচল – কি করেছি আমি? এতো মেজাজ দেখাচ্ছেন কেনো? মানুষ মনে হয়না আমাকে? আপনার সব রকম অত্যাচার মেনে নিবো কেনো বলুন তো? (কেঁদে দিয়ে)

রেহান রেগে আঁচলের গালে কে ঠাস করে চর মেরে দেয়। আঁচল ছিটকে মেঝেতে পড়ে যায়।
রেহানের এমন আচরণ আঁচল মোটেই মানতে পারছে না। সব কিছু যেনো এলোমেলো লাগছে আঁচলের।
আঁচল গালে হাত দিয়ে রেহানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

রেহান আঁচলকে টেনে তুলে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
রেহানের এমন হিংস্র রুপ দেখে আঁচল ভয়ে কাঁপছে।

রেহান – আমি তোর উপর অত্যাচার করি তাই না। আমার ভালোবাসা তোর অত্যাচার মনে হই। আর তোর ঐ জিসান তোকে অনেক ভালোবাসতো তাই না। এই জন্যই তুই তোর জিসানের সাথে চলে যাওয়ার প্লান করছিলি।

আঁচল – মানে? (অবাক হয়ে)

রেহান – মানে কি বুঝতে পারছিস না? তোর জিসান এই বাড়িতে কি করছে? কেনো এসেছে ও এই বাড়িয়ে? তোকে নিয়ে যেতে তাই তো? আর তুইও তোর জিসানের সাথে পালানোর প্লান করছিস। (চিৎকার করে)

এবার আঁচল বুঝতে পারে। আদি কে জিসান ভাবছে রেহান। আঁচলের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

আঁচল এক ঝটকায় রেহান কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে….

আঁচল – জিসান! কে জিসান? উনি আমার ভাইয়া বুঝেছেন? আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।
আপনি ভাবলেন কি করে ঐ বেইমান টাকে হাত ধরে এ বাড়িতে নিয়ে আসবো। হ্যা মানছি আমি ওকে এখনো ভুলতে পারিনি। ভালোবাসি এখনো। তার মানে এই না আমি আবার ঐ বেইমান কে সুযোগ দেবো।

রেহান আঁচলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি ভাবছিলো সে আর কি হয়ে গেলো। আঁচলকে ভুল বুঝেছে ওর গায়ে হাতও তুলেছে। এটা মোটেও ঠিক হয়নি।

রেহান – আঁচল আসলে আমি….

আঁচল হাত তুলে রেহান কে থামিয়ে দেয়।

আঁচল – থাক। আপনার নিচু মনমানসিকতা পাল্টান রেহান। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রেহানের বোকামির জন্য তার নিজের উপরই মারাত্মক রাগ হচ্ছে। এভাবে আঁচলকে কষ্ট দিয়ে দিন দিন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

আঁচল অন্য একটা রুমে দরজা লাগিয়ে কান্না করতে থাকে।
বার বার এই লোকটা জিসানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কেনো? যতোই চাইছি জিসান কে মন থেকে মুছে ফেলবো ততোই ওর কথা বলে মনে করিয়ে দেয়।

এদিকে আদি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে আঁচলকে দেখতে পারছে না আর। আদিও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। রেহান যেভাবে রেগে আঁচলকে নিয়ে গেলো! কি জানি কি হয়েছে।
রিমি রেহানের রুমে আসে।

রিমি – ভাইয়া কি হয়েছে রে? তুই ঐ সময় ভাবিকে রেগে নিয়ে আসলি কেনো?

রেহান রিমিকে সব টা বলে।

রিমি – ও মা ভাবির বয়ফ্রেন্ড ছিলো! জানতাম না তো। যাই হোক ঐটা ভাবির অতীত। তুই কেনো ভাবিকে ওর অতীত নিয়ে সন্দেহ করলি? তোর কি মনে হয় নিজের স্বামীর বাসায় কেউ তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আসে!
তোর কোনো দিন আর বুদ্ধি হবেনা।

রেহান চুপ করে বসে আছে।

রিমি গিয়ে আদিকে সব বলতেই আদি হেসে দেয়।

আদি – বাবাহ রেহান আমার বোন টাকে এতো ভালোবাসে! সত্যি আমি অনেক খুশি হয়েছি আমার বোন টা এমন একটা বর পেয়েছে যে কিনা ওকে চোখে হারায়।
আচ্ছা আমি বরং আসি। আঁচল তো আজ বাড়ি যাবেই তখন না হয় ওর সাথে আড্ডা দিতে পারবো। এখন রেহান কে বলুন আমার বোনের অভিমান খানা ভাঙ্গতে। বলেই আদি চলে যায়।

এদিকে রেহান আঁচলকে খুজতে থাকে। রিমি কে জিগ্যেস করতেই বলে….

রিমি – বাহিরে তো যায় নি। তুই দেখ হয়তো কোনো রুমেই দরজা আটকে বসে আছে। যা গিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গা। বলেই রিমি চলে যায়।

রেহান রিমির পাশের রুমটায় দেখে দরজা লাগানো। ঘরের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে। রেহানের বুঝতে বাকি রইলো না আঁচল এই রুমেই আছে।

রেহান – আঁচল….., দরজা খুলো

চলবে…

ডেভিল বর পর্ব- ৯

0

ডেভিল বর
পর্ব- ৯
শিফা_আফরিন
.
.
?
রুমে এসে আঁচল পিছন ফিরে দেখে রেহান দাঁড়িয়ে দু’হাত পকেটে গুঁজে মুচকি হাসছে। আঁচল আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে আসে।

সারা দিন আঁচলের ভালোই কাটে। রিমির সাথেও অনেক গল্প করে। তাছাড়া কালকে আঁচলের বাড়ি থেকে লোক আসবে ভাবতেই আঁচলের খুশি খুশি লাগছে।

রাতে…

আঁচল ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকে দেখে কেউ নেই।

আঁচল – যাক বাবা বাঁচা গেলো। অসভ্য টা রুমে নেই। আমি এই সুযোগে চেঞ্জ করে আসি। এই সব শাড়ি টারি পড়ে কি ঘুমানো যায় নাকি। আজিব।

আঁচল নিজের লাগেজ থেকে একটা লং টপস্ আর একটা প্লাজো বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
এদিকে রেহান বেলকনিতে ছিলো কেউ এসেছে ভেবে রুমে আসতেই দেখে কেউ নেই।
রেহান ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারে ভেতর থেকে লক করা।

রেহান – ওহহ। মহারানি নিশ্চয় ওয়াশরুমে আছে। রেহান বিছানার বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরই আঁচল ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
রেহান আঁচলকে দেখে একদম হা!!
রেহানের মুখ থেকে আচমকা বেড়িয়ে আসে… মাশআল্লাহ।

আঁচল রেহানের কথায় বিরক্ত হয়নি বরং এই প্রথম বার রেহানের মুখের কথায় আঁচলের ভালো লাগছে।

রেহান ধীর পায়ে আঁচলের দিকে এগুতে থাকে।
রেহানের এগুনো দেখে আঁচল ভয়ে ঢোক গিয়ে। আঁচল শক্ত হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

রেহান আঁচলের অনেক টা কাছে চলে আসে। রেহানের প্রতিটা হার্টবিট যেনো আঁচল গুনতে পারছে। আঁচল চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।

রেহান আঁচলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে….

রেহান – বেইবি আমাকে পাগল করার জন্য তুমি তৈরি দেখছি!!
বলেই আঁচলের কানে চুমু দেয়।

আঁচল যেনো ফ্রিজড হয়ে গেছে রেহানের ঠোঁটের ছোঁয়ায়।
রেহান আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

আঁচল এবার খনিকটা বিরক্ত হয়ে যায়।

আঁচল – আপনি কেমন মানুষ বলুন তো! আমার অতীত টা জানার পরও আপনি কেনো আমার সাথে এমন করছেন? হ্যা মানলাম আপনি আমার স্বামী। আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু তাই বলে প্রথম দিন থেকেই আপনার অধিকার দেখাবেন? আমাকে কি একটু সময় দেয়া যেতো না? (চিৎকার করে)

আঁচলের এমন রিয়েক্টে রেহান চুপ মেরে যায়। আঁচল কে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই দূরে সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রেহান চলে যাওয়ার পর আঁচল বিছানায় একপাশে শুয়ে কেঁদে যাচ্ছে। রেহানের এমন অধিকার ফলানো টা যেনো আঁচল কিছুতেই মানতে পারছে না।
প্রায় দু ঘন্টা পার হয়ে যায় রেহান রুমে আসে না। আঁচল ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে রেহান ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

রেহান – আঁচল কি আমায় কোনো দিনও মেনে নিতে পারবে না? আমি কি এতোটাই খারাপ। এতোটাই অযোগ্য। ও কি কোনে দিনও জিসান কে ভুলতে পারবে না। ও শুধু আমার রাগটাই দেখলো অত্যাচার টাই দেখলো। আমি যে ওকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারেনা ও!!
আমিও তো চেয়েছিলাম ওকে সময় দিতে। কিন্তু ভয় হয়েছিলো যদি ও আমায় ছেড়ে জিসানের কাছে চলে যায়। তাই তো ওকে সময় দিই।
ও কি শুধু ঘৃণা করেই যাবে আমায়। আমার রাগের মাঝে লুকানো ভালোবাসা টা বুঝতে পারবে না কোনো দিনও!!! (ভাবতে ভাবতেই রেহানের চোখ দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু ঝড়ে)

নাহ! আমি এভাবে ওর ঘৃণার কাছে হেরে যাবো না। বরং আমার ভালোবাসা দিয়েই ওকে নিজের করে নিবো।

রেহান ছাদ থেকে রুমে এসে দেখে আঁচল গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। রেহান আঁচলের পাশে বসে আঁচলের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।

” সত্যিই এই মুখটায় জাদু আছে। যখনই দেখি শুধু আমাকে কাছে টানে “।

রেহান আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে আঁচলকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে….

আঁচলের ঘুম ভাঙতেই নিজেকে রেহানের বুকে আবিষ্কার করে। আঁচল কাল রাতের কথা ভাবছে।

আঁচল – কাল রাতে তো উনি রুম থেকে চলেই গিয়েছিলো। আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তাহলে কখন আসলেন? আমিও বুঝতে পারিনি।

এইসব ভাবতে ভাবতে রেহানের দিকে তাকাতেই দেখে রেহান আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

আঁচল কিছু না বলে রেহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আঁচল – কেস টা কি হলো। অসভ্য টা একবারও আটকালো না। বাবা! ভালো হয়ে গেলো নাকি!

আঁচল শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে।
রেহান উঠে আঁচলের কাছে গিয়ে টাওয়েল
টা নিয়ে নেয়।

আঁচল – কি হলো?

রেহান – আমি মুছে দিচ্ছি বসো।

রেহান আঁচলকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে নিজে আঁচলের চুল মুছে দিচ্ছে। আঁচল রেহানের এমন কাজে অবাক না হয়ে পারে না।

রেহান – আচ্ছা বেইবি তুমি এতো সকাল সকাল শাওয়ার নিলে কেনো বলো তো। কাল রাতে তো কিছুই হয়নি।

আঁচল রেহানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে রেহানের দিকে তাকায়।

রেহান – হুম সত্যিই তো। কাল রাতে কিছুই হয়নি। তুমি যা রেগে ছিলে বাপরে!

আঁচল – (আমিও কি ভাবি এই অসভ্য আজীবন অসভ্যই থেকে যাবে। কি সব বলে যাচ্ছে দেখো! মনে হই লজ্জা বলতে যে একটা শব্দ আছে সেটা উনি জানেনই না। হুহহহ….)

রেহান আঁচলের চুল মুছে দিয়ে আঁচলের চোখে কাজল দিয়ে দেয়।

রেহান – ব্যাস। এবার আমার মিষ্টি বউয়ের উপর কারো নজর লাগবে না। (মুচকি হেসে)

আঁচল চুপ করে আছে। রেহান আঁচলকে চুপ থাকতে দেখে বলে….

রেহান – আমার পারিশ্রমিক টা দিবে না?

আঁচল – মানে? ( অবাক হয়ে)

রেহান – ও বাবা! এতো কষ্ট করে চুল মুছে দিলাম। কাজল দিয়ে দিলাম তার বিনিময়ে আমি কিছুই পাবো না?
সেটা কি করে হয় বেইবি। (মুচকি হেসে)

আঁচল বুঝতে পারে রেহান কি চাইছে। আঁচল কিছু বলার আগেই রেহান আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।

আঁচল – অসভ্য। বলেই রেগে রুম থেকে চলে আসে। আঁচল নিচে চলে আসতেই রিমির সাথে দেখা হয়।

রিমি – বাহ ভাবি। তোমাকে অনেক কিউট লাগছে।

আঁচল – হয়েছে এবার চলো। আজ আমি রান্না করি।

রিমি – কিন্তু মা!

আঁচল – মাকে আমি পরে যা বলার বলবো তুমি চলো তো।

রিমি আঁচলকে নিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
আঁচল সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানায় রিমিও আঁচলকে সাহায্য করে। হটাৎ বেল বাজতেই দিতেই রিমি বলে…

রিমি – ভাবি তুমি বরং ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজাও। আমি দেখে আসি কে এসেছে।

রিমি দরজা খুলতেই দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।

রিমি – কাকে চাই?

ছেলেটা – আঁচলকে!

চলবে…

ডেভিল বর পর্ব- ৮

0

ডেভিল বর
পর্ব-৮
শিফা_আফরিন
.
.
?
—- তাই বুঝি বেইবি।

কথাটা শুনতেই আঁচল পেছন ফিরে তাকায়…..

আঁচল – আআআআআ….

রেহান দ্রুত এসে আঁচলের মুখ চেঁপে ধরে।

রেহান – এই মেয়ে এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো?

আঁচল – আপনি কি বলুন তো? আপনি নিশ্চয় কোনো আত্মা। না হলে এভাবে সব সময় আমার কথার মাঝ খানে চলে আসেন কিভাবে?

আঁচলের কথা শুনে রেহান হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। এই মেয়ে বলে কি!!

রেহান – আমি তোহ তোমার কিউট বর। (মুচকি হেসে)

আঁচল – আরে রাখেন আপনার বর টর। ঐ রিমি টা কোথায় গেলো। ও তো এখানেই ছিলো আমার সাথে।

রেহান – তুমি এমন ভাবে টেডি দেখায় মন দিয়েছিলা তোমাকে যদি কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতো তাহলেও তুমি টের পেতে না।
অবশ্য আমি থাকতে কেউ তোমাকে নিয়ে যাবে দূরে থাক টাচ ও করতে পারবে না। বুঝলে বেইবি। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ওফফ….আপনার এই সব কথা বন্ধ করুন তো। রিমি কোথায় সেটা বলুন। (বিরক্তি নিয়ে)

রেহান – আহারে এই টুকু বুদ্ধি নেই আমার বউ টার। আচ্ছা আমরা রোমান্স করার সময় রিমি এখানে থেকে কি করবে বলো তো?
আমার তো সমস্যা নেই কিন্তু তুমি তো লজ্জা পাবে তাই না। (চোখ মেরে)

রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই পাগল টা বলে কি!!

আঁচল – আপনি সত্যিই একটা ডেভিল। অসভ্যের দুলাভাই। যত্তসব অসহ্য। বলেই রুম থেকে চলে যেতে নেয়।

রেহান আঁচলের হাত ধরে টান মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে দু’হাতের উপর ভর দিয়ে আঁচলের দিকে ঝুঁকে পরে।
আঁচল ভয়ে কয়েকটা ঢোক গিলে। না জানি এই অসভ্য টা কি করে বসে আল্লাহ মালুম। (মনে মনে)

রেহান – বেইবি অসভ্য বলেছো যখন একটু অসভ্যতামি তো করতেই হই কি বলো! (মুচকি হেসে)

আঁচল – (এই রে সেরেছে! এবার পালাবো কি করে আমি। মনে মনে)

রেহান নেশার দৃষ্টিতে আঁচলের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।
আঁচল বিষয় টা খেয়াল করতেই বলে উঠে…….

আঁচল – এ মা রিমি….! তুমি কখন এলে?

রেহান আঁচলের কথা শুনে হেসে দেয়। আঁচলের বোকামি দেখে বেচারার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।

আঁচল অবাক হয়ে যায় রেহানের এমন কান্ডে।

রেহান – বেইবি তুমিও না!! ভালো করে তাকিয়ে দেখো দরজা টা ভেতর দিয়ে লক করা। তুমি কি ভেবেছো আমি দরজা খুলা রেখেই তোমার সাথে রোমান্স করবো।

আঁচল তাকিয়ে দেখে সত্যিই তো দরজা তো লক করা। কিন্তু আমার কি দোষ! আমি তো এই অসভ্যর কাছ থেকে পালানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলাম।
যাই হোক এই সুযোগ এ আমি বরং পালাই। যেই ভাবা সেই কাজ।

রেহান এখনো বিছানায় শুয়ে হেসেই যাচ্ছে। আঁচল এক লাফে শুয়া থেকে উঠে পালাতে নিলেই রেহান আঁচলের শাড়ির আঁচল ধরে ফেলে।

রেহান – পালানোর ধান্দা তাই না। পালানোর জন্যই রিমি এসেছে বলেছিলে? এবার পালাও তো দেখি! (মুচকি হেসে)

আঁচল – ছাড়ুন আমায়।

রেহান কিছু না বলেই শাড়ির আঁচলটা ধরে টান দেয়।
আঁচল ও বাধ্য হয়ে রেহানের কাছে চলে যায়।
রেহান আঁচলকে নিজের উপর নিয়ে আসে আঁচলের কোমড় শক্ত করে ধরে….

রেহান – তোমার এই একটা রোগ জানো আঁচল!!
রোমান্স করার সময় মুড নষ্ট করে দাও।

আঁচল – তো এখন আপনার রোমান্স করার টাইম নাকি আজিব!! (বিরক্ত হয়ে)

রেহান – তাহলে কখন শুনি? রাতে ? (মুচকি হেসে)

আঁচল – আপনার সাথে কথা বললেই আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। ছাড়ুন আ…..

রেহান আঁচলকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আঁচলের ঠোঁট আকড়ে ধরে। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও রেহান আঁচলের ঠোঁট ছাড়ছে না।
এদিকে আঁচল বেচারির যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

আঁচল না পেরে রেহানের হাতে জোরে নখ দিয়ে আঁচড় কাটে। যেহেতু আঁচলের নখ গুলো চাইনিজ কুড়াল কেও হার মানাবে রেহানের অবস্থা কি হয়েছে সেটা রেহানই বুঝতে পারছে।

রেহান – আহহহ আঁচল! তুমি কি পাগল! এভাবে কেউ আঁচড় কাটে? (ধমক দিয়ে)

রেহানের ধমক শুনে আঁচল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে রেহানের কাছ থেকে চলে আসতে নিলেই রেহান পেছন থেকে আঁচলের কোমড় ধরে টেনে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে আঁচলের উপর উঠে শরীরের ভার ছেড়ে দেয়।

রেহান – সাহস তো কম না তোমার! আমার হাতের ১২ টা বাজিয়ে দিছো। এর শাস্তি তো পেতেই হবে। (রেগে)

আঁচল – (এ মা…. না জানি আবার কোন শাস্তি দিবে আল্লাহই জানে। মনে মনে।)

আঁচল কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রেহান আঁচলের গলায় মুখ গুঁজে দেয়।আঁচল ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
রেহান আঁচলের গলায় চুমু দিয়ে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়।

আঁচল – আউউচচ….. মরে গেলাম গো…. এ তো আস্ত রাক্ষস…. আমাকে খেয়ে ফেলতে চাইতে গো মা….. (ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিয়ে)

রেহান আঁচলের উপর থেকে উঠে যায়…..

রেহান – এটাই হলো তোমার শাস্তি বুঝছো। স্টুপিড…. বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আঁচল গলায় কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দেখতে থাকে।

আঁচল – রাক্ষস কোথাকার! আমার এতো সুন্দর গলায় দাঁত বসিয়ে দিলো। ইচ্ছে করছে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মারি।

—- কি বলো ভাবি! আমি ভাইয়ে মারার প্লান করছো বুঝি?

আঁচল কারো কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিমি।

আঁচল – এই তুমি কোথায় গিয়েছিলে বলো তো? (কিছুটা রেগে)

রিমি – বারে!! আমি না গেলে রোমান্স করতে কিভাবে শুনি? (আঁচলের গলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে)

আঁচল তারাতারি করে গলা টা ঢেকে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিমি আঁচলের কান্ড দেখে হাসছে।

আঁচল – ধুর রিমিটার কাছে থাকলেও এখন জ্বালিয়ে মারবে। আর রুমে গেলে তো ঐ ডেভিল টা! ওহহহ আল্লাহ দড়ি ফালাও আমি উপরে চলে যাই!!

আঁচল আর কিছু না ভেবে রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রেহান বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে বই পড়ছে।
আঁচলকে আসতে দেখে একবার আঁচলের দিকে তাকিয়ে আবার বই পড়ায় মন দেয়।

আঁচল – যাক বাবা ডেভিল টার মাথা থেকে আমাকে জ্বালানোর ভুত দূর হয়েছে।
আঁচল বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

রেহানের বেলকনি টা সত্যিই অনেক সুন্দর। আর এই সুন্দর্য টাকে বাড়িয়ে দিয়েছে ফুল গাছ গুলো।
বেলকনিতে অনেক গুলো ফুল গাছ। বোধহয় রেহান এই গাছ গুলোর যত্ন করে।

আঁচল ফুল গুলোতে হাত দিয়ে দেখে বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে আঁচলের চুল গুলো উড়ছে।
আঁচলের অনেক ভালো লাগছে এই পরিবেশ টা। সে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনেকক্ষণ আঁচলকে রুমে আসতে না দেখে রেহান বই টা রেখে উঠে দাড়ায়।
বেলকনির সামনে আসতেই আঁচলকে দেখে রেহানের চোখ আটকে যায়।

রেহান চুপিচুপি বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়।
আঁচলের চুল গুলো উড়ে রেহানের চোখমুখে পড়ছে।
এতে রেহান মোটেই বিরক্ত হচ্ছে না। বরং অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে রেহানের মনে।

হটাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আঁচল চমকে উঠে। পিছন ফিরে বুঝতে পারে রেহান।
রেহান আঁচলের কাছে গিয়ে পেছন থেকে আঁচল কে জড়িয়ে ধরে আঁচলের চুলে মুখ ডুবায়।

আঁচল রেহান কে ছাড়াতে চাইলে রেহান আরও শক্ত করে আঁচলকে জড়িয়ে ধরে।

আঁচল – কি হচ্ছেটা কি! ছাড়ুন আমায়। (বিরক্ত হয়ে)

রেহান আঁচলের কথা শুনে কিছু না বলে আঁচলকে ছেড়ে দেয়। আঁচল সেখান থেকে চলে আসে।

রুমে এসে আঁচল পিছন ফিরে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে মুচকি হাসছে।
আঁচল আর কিছু না বলে চলে আসে রুম থেকে।

চলবে….

ডেভিল বর পর্ব -৭

0

ডেভিল বর
পর্ব -৭
শিফা_আফরিন
.
.
?
আঁচল – ঠিক আছে কি শাস্তি দেবেন বলুন। (মাথা নিচু করে)

রেহান – যা শাস্তি দিবো মেনে নিতে হবে। রাজি? (মুচকি হেসে)

আঁচল – অসহায় ভাবে রেহানের দিকে তাকিয়ে হ্যা বলে।

রেহান আঙুল দিয়ে ঠোঁট ইশারা করে দেখায়।

আঁচল – কী? (অবাক হয়ে)

রেহান – কি বুঝো না। ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। গিভ মি আ কিস।

রেহানের কথা শুনে আঁচল চোখ বড় বড় করে রেহানের দিকে তাকায়।

আঁচল – মানেএএএ….!

রেহান – এতে এতো রিয়েকশন করার কি আছে আজিব।

আঁচল – আমি পারবো না।

রেহান – পারতে তো তোমাকে হবেই বেইবি। টাইম ওয়েস্ট করো না। কুইক…..

আঁচল – বললাম না পারবো না। আমি কি এমন ভুল করেছি যে এই সব বলছেন? আর যদি শাস্তি দেয়ার এতোই ইচ্ছে থাকে তো অন্য ভাবে দিন। এইসব পারবো না ব্যাস৷

রেহান – আর ইউ শিঅর অন্যভাবে দিবো! (বাঁকা হেসে)

রেহানের হাবভাব আঁচলের মোটেই ভালো লাগছে না। আঁচল কিছু একটা বলে রেহানের কাছ থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে।

আঁচল – আমার ক্ষুধা পাচ্ছে। আমি নিচে যাই? (করুন সুরে)

রেহান – আহারে আমার বেইবি টার কষ্ট হচ্ছে ক্ষুধায়। আগে বলবা তো নাকি। ওয়েট আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। (মুচকি হেসে)

আঁচল – আপনি খাইয়ে দিবেন মানে। খাবার তো নিচে! খেতে হলে তো নিচে যেতে হবে তাইনা। আচ্ছা ঠিক আছে চলুন তবে।
বলেই চলে যেতে নেয়।

রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে আসে। আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।

রেহান – ব্যাস। আমার খাওয়ানো শেষ। (মুচকি হেসে)

আঁচল – (এই লুচু দেখছি শুধু লুচুই না পাগল ও। মনে মনে)

রেহান – এইভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি আমার পাওনা টাও দিবে। (আঁচলের নাকে নাক ঘষে)

আঁচল – আপনি কি আমায় ছারবেন!!! আপনি না খেয়ে থাকলে থাকুন। আমায় অন্তত যেতে দিন। (কিছুটা রেগে)

রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হাসে….

রেহান – ওকে বেইবি চলো। তবে রাতে কিন্তু ছাড় পাবা না সব সুদে আসলে চাই। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ওফফফ অসহ্য….. বলেই চলে যায়।

রেহান – বেইবি অসহ্য বলো আর যাই বলো তোমার মনে তো আমি জায়গা করে নিবোই।

আঁচল নিচে যেতেই রিমি বলে উঠে…..

রিমি – ভাবি তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? আমি ফোন এনে দেখি তুমি নাই।

আঁচল – আর কেথায় যাবো তোমার অসভ্য ভাই তো…..
সবটা না বলেই থেমে যায়।
(ধুরর কি করছি আমি। রিমি কে সব বলেই দিচ্ছি। লজ্জা শরম কি হানিমুনে গেলো নাকি ধ্যাতত….. মনে মনে)

রিমি – আহারে বেচারি…. হয়ছে আর লজ্জা পেতে হবেনা। এবার চলো খেয়ে বসবে।

আঁচল রেহানের মার কাছে যায়।

আঁচল – আন্টি আমাকে দিন। আমি সবাইকে সার্ভ করে দিই। আপনি বরং বসুন।

রেহানের মা আঁচলের কথা শুনে ডানে বামে তাকিয়ে দেখে উনার সাথে আরও কেউ আছে কি না।

আঁচল – কাউকে খুঁজছেন আন্টি?

রেহানের মা – না মানে দেখছিলাম আন্টি কাকে ডাকছো। আমার সাথে আর কেউ আছে কিনা।

রেহানের মার কথা শুনে আঁচল মাথা নিচু করে ফেলে।

আঁচল – আসলে অভ্যেস নেই তো তাই। আস্তে আস্তে শিখে যাবো মা।

রেহানের মা আঁচলের কথা শুনে মুচকি হাসে।

রেহানের মা – ঠিক আছে তুমি বসো। খেয়ে নাও অনেক বেলা হয়ে গেছে।

আঁচল – বলছিলাম যে আপনি বসুন না। আপনারা খেয়ে নিলে না হয় আমি বসবো।

রেহানের মা – আহা কথা বলো না তো বসো তুমি। (আঁচলের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়)

কিছুক্ষন পরই রেহান আসে। রেহান আঁচলের ঠিক বিপরীত পাশের চেয়ার টেনে বসে পরে।

রেহানের মা সবাইকে সার্ভ করে দেয়। রেহান আঁচল ও খেতে শুরু করে।

হটাৎ রেহানের মাথায় দুষ্টুমির বুদ্ধি আসে। রেহান ওর পা দিয়ে আঁচলের পায়ে স্লাইভ করে।

হটাৎ কেউ এমন করায় আঁচল বিষম খায়।

রিমি – কি হলো ভাবি? নিশ্চয় তোমার বাড়ির মানুষ তোমার কথা মনে করছে।

আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান মুচকি হাসছে।

আঁচল – (ওহহ তাহলে এই কথা!! অসভ্য কোথাকার খেতে এসেও শান্তি দিচ্ছে না। মনে মনে)

রেহান খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। আঁচল উঠে রেহানের রুমে না গিয়ে রিমির রুমে যায়।

রিমি – আরেবাস! তুমি এসেছো! ভালো হয়েছে। গল্প করতে পারো কি বলো?

আঁচল – হুম সে জন্যই তো আসা।

রিমি – আচ্ছা ভাবি আমার ভাই টাকে কেমন লাগে গো?

আঁচল – এ আবার কেমন কথা?

রিমি – মানে আমার ভাই মানুষ হিসেবে কতটা ভালো? আমার ভাইয়ের মন টা কেমন? এই সব নিশ্চয় তুমি একটু হলেও বুঝতে পেরেছো।

আঁচল – ভালো না ছাই। আস্ত একটা লুচু।
(এই রে আবার কি সব বলে দিলাম। ওফফ আমার মাথা টা ইচ্ছে করে বারি মেরে ফাটাই দিই। কিছু নাই মাথায়…. মনে মনে)

রিমি – ও মা কি বলো লুচু…!

এদিকে রেহান অনেকক্ষণ ধরে দেখছে আঁচল রুমে আসছে না….

রেহান – এই মেয়েটা যে কি! আমাকে সময়ই দিতে চায় না। সব সময় পালিয়ে বেড়ায়। এখন নিশ্চিত রিমির সাথে আছে।
দেখি গিয়ে দুজন কি করছে। (বলেই রিমির ঘরে যায় রেহান।)

রিমি – ভাবি বলো না লুচু কেনো বললে? আমি তো জানি আমার ভাই কারো সাথে কোনো দিন রিলেশন ও করেনি। তাহলে! তুমি এই কথা বললে কেনো। (বলতে বলতে দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখে রেহান দাড়িয়ে আছে। রেহান রিমিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলছে চুপ করে থাকতে)

আঁচল রিমির খাটে রাখা টেডি গুলো দেখছে আর কথা বলছে। রেহান কে আঁচল খেয়াল করে নি।

রেহান রিমি কে ইশারা করে বলে চলে যেতে। রিমিও চুপচাপ উঠে চলে যায়। আঁচল টেরও পায়নি যেহেতু বেচারি টেডি দেখা নিয়ে ব্যাস্ত।

আঁচল – লুচুকে লুচু বলবো না তো কি বলবো? জানো তোমার ওই ডেভিল ভাই আমাকে সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারছে।

—- তাই বুঝি বেইবি…..

কথাটা শুনেই আঁচল পেছন ফিরে তাকায়…

চলবে…

হূর part 3

0

হূর part 3

#Roja_islam

আদনান ওয়াশরুমে ঢুকে ঝড়না ছেড়ে দাড়িয়ে আছে৷ কান দিয়ে তার ধোঁয়া বের হচ্ছে। এমন লাগছে তার! লাগবে নাই বা কেনো? আজকের মতো লজ্জা সে আগে পায়নি। কোনদিন না। একটা বাচ্ছা মেয়ের উপর অনেক জুলুম করে ফেলেছে আদনান। সত্যি কোম হাত উঠায়নি। তার উপর আজ উল্টো কিছু বলেই ফেলছিলো!

আদনান আর কিছু ভাবতে পারলো না! ওয়াশরুমে প্রায় দু’ঘন্টার মতন দাড়িয়ে ভিজেছে! তারপর রুমে এসে দেখে হূর এই রুমে আসেনি৷ আদনানের আর ডাকতে ইচ্ছা হলো না। তবে হূর জরিয়ে ঘুমুলে ঘুম ভালো হয় আদনানের। কিন্তু আজ নিজেও ঐরুমে যেতে পারবেনা। আদনান মুখ লুকুচ্ছে যেমন হূরের থেকে৷ শুয়ে পড়ে আদনান আজ একাই৷

পাশের রুমে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ে হূরও। সকালে ঘুম ভাঙে হূরে আজ দেরিতেই। উঠে দেখে ১০ টার উপরে বাজে৷ হূর দ্রুত পাশের রুমে যায়। আদনান নেই হূর আবারও কান্না করে দেয়৷ কি আছে তার কপালে আল্লাহই জানে। হূর ভাবছে৷ সে কাল কেনো এতসব বলতে গেলো কেনো? এখন যদি আদনান সত্যি বাবাকে বলে দেয় তাকে নিয়ে যেতে৷

দিনটা পার হয়ে গেলো হূরের গলা দিয়ে কিছু নামলো না সারাদিন ভয়ে! ৫ টায়র দিকে আদনান বাসায় এসে চুপচাপ শুয়ে থাকে হূর কিছুক্ষণ আদনান এর দিকে তাকিয়ে বললো, ” আদনান? ”

আদনান আস্তে করে বললো, ” জ্বর এসেছে! ঔষধ থাকলে দাও! ”

হূর আর এক সেকেন্ড দেরি করলোনা। দ্রুত আদনানকে ধরে একটু ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করতে বলে৷ হূর সব এগিয়ে দেয়৷ আদনানকে বেডে শুইয়ে দিয়ে। হূর কিচেনে এসে খাবার প্লেট এ করে নিয়ে আদনানকে বহু কষ্টে একটু খাইয়ে দেয়৷ তারপর ঔষধ খাইয়ে দিতেই আদনান ঘুমিয়ে যায়! হূরের কোলে মাথা রেখেই। হূর শুধু শুধুই কেনো জেনো একটু হাসে!

দুদিন চলে যায় আদনানের জ্বর বেড়ে যায়৷ স্কুল থেকে ছুটি নিতে হয়৷ ডক্টর দেখাতে হয়৷ দুদিন হূর শুধু আদনানের জ্বর কমাতেই ব্যস্ত ছিলো৷

৫ দিনের দিন আদনান এর জ্বর কমে। সে এখন মোটামুটি সুস্থ। আদনানের মা বাবা ফোন করে হূরের প্রশংসার পঞ্চমুখ তাদের ছেলের খুব খেয়াল রাখে। হূর না থাকলে কে করতো তাদের ছেলেকে সুস্থ অচেনা শহরে?

এসব শুনে আদনান এর খুব রাগ হয় মা বাবার উপর। কারণ তাদের কথায় সে হূরকে বিয়ে করেছে হূরের বয়স কম তারাতো জানতো। কি করে পারলো এতো ছোট্ট একটা মেয়েকে নিজের ২৫ বছর এর ছেলের বৌ করতে! যদিও অনেক কিছু আদনান বলতে পারতো তার মা বাবাকে৷ কিন্তু বলেনি কষ্ট পাবে ভেবে। কিন্তু সে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো৷

পরদিন সকালে নাস্তার পর হূর রুমে আসতেই আদনান বললো, ” হূর?? ”

হূর আস্তে করে বলে, ” জ্বী কিছু করতে হবে? ”
“হ্যাঁ রেডি হয়ে নাও বাইরে যাবো তোমায় নিয়ে? ”

হূর এর আর সাহস হয়না আদনানকে প্রশ্ন করার! কই যাবে তাকে নিয়ে! শুধু ভয় হতে থাকে হূরের বাবার বাড়ীতে রেখে আসবেনা তো তাকে? চোখে পানি চলে আসে এটা ভেবেই হূরের!

সারেদশটার দিকে হূরে হাত ধরে বিল্ডিং থেকে বের হয় আদনান। হূর তো অবাক আদনান রাস্তায় তার হাত ধরেছে? কি করতে যাচ্ছে আদনান??

আদনান হূরকে নিয়ে তার কলেজে যায়। হূরকে ভর্তি করার সকল কথা পরিচিত স্যারের সাথে বলে আসে৷ যেহেতু বছরের মধ্যে ভর্তি। তাই একটু দৌড়া দৌড়ি করতে হবে তাও। আদনান সিধান্ত নিয়েছে সে পরাবে তার বৌকে৷

কলেজ থেকে বেরিয়ে আদনান তার খুব কাছের বন্ধুর বাড়ী যায়৷ আদনানের বন্ধুর বৌ হূরকে দেখে তার নাম দিয়েছে পুতুল৷ কারণ হূর পুতুলের মতোই দেখতে৷ সারাদিন বন্ধুর বাসায় থেকে হূরকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে আদনান৷ হূর সারাদিন রোবট তাজ্জব বোনলে যেমন লাগবে সেরকমই দেখাচ্ছিলো। আজ হূর অন্য এক আদনানকে দেখেছে। আর দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো আজ আদনান হূর ছিলো এ এক অন্য অনুভূতি হূরের৷ আদনান আজ খুব ভালো ব্যাবহার করেছে হূরের সাথে আজ যা এই ৫ মাসের মধ্যে করেনি৷ আর কলেজে ভর্তির ব্যাপারটার জন্য হূর একটুও প্রস্তুত ছিলো না। সে কিছুই বিশ্বাস করতে পারছেনা!

আদনান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুলে। হূর তাকিয়ে থাকে আদনান এর দিকে! চিন্তে পারছেনা যেমন আদনানকে হূর। আদনান হূরকে কিছুই বলেনা৷ শুধু কপালে চুমু এঁকে দিয়ে হূরকে জরিয়ে ধরে নিয়ে শুয়ে পড়ে বেডে। হূর কান্নায় ভেঙে পড়ে তাতে।

তারপর ৪টি বছর চলে যায় না। হূরকে ছাড়েনি আদনান। হূর ভালো আছে আদনানের সাথে এখন ঐদিনের পর আদনান নিজেকে চেঞ্জ করে নিয়েছে৷ অনেক ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে রেখেছে সে হূরকে। কিন্তু ক্ষমা চায়নি কোনদিন হূরের কাছে কখনও। যদিও এখন আদনান মন বলে একটি বা হূরের কাছে ক্ষমা চাইতে ভালোবাসি বলতে কিন্তু পারেনা কই জানি সামান্য ইগো কাজ করে। আদনান বুঝে স্বামী স্ত্রীতে ইগো থাকা ঠিক না। তাও ইগো টাই যেনো জিতে যায় বারবার৷

হূর এখন অনার্স এর স্টুডেন্ট। পড়াশোনা স্বামী সংসার শ্বশুর শাশুড়ী সব সামলিয়েছে সে৷ খুব ভালোবাসা দিয়ে আদনানকে আগলে রেখেছে আগের পিচ্ছি আর পিচ্ছি নেই সবি বুঝে এখন। আর আদনান কে পাগলের মতো ভালোবাসে আগের সব কিছুই দূরস্বপ্ন ছাড়া কিছুই মনে হয়না তার৷ হূর সব ভুলে গিয়েছে৷

আজ হূরের জন্মদিন। আদনান তার মা বাবাকে নিয়ে ঘরে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে! কিন্তু সকাল থেকে হূরের শরীল বেশি ভালো নয়৷ সন্ধ্যায় না পেরে ডক্টর এর কাছে গেলে আদনান হূর জানতে পারে তাদের ঘরে নতুন অতিথি আসতে যাচ্ছে। হূরকি খুশী হবে কি আদনান তার দিগুণ খুশী চেম্বার থেকে বেরিয়ে আদনান বললো, ” হূর কই আমি আজ তোমায় গিফট দিবো তুমিই আমায় দিয়ে দিলে?? ”

হূর লজ্জিত হেসে বললো, ” থ্যাংক ইউ আদনান সব চমৎকার ভাবে বদলে দেওয়ার জন্য! ”

আদনান কিছু বলতে পারেনা। সে আর তার মা বাবা এতো অন্যায় করেছে হূরের সাথে তাও হূর কিছু বছরে সব ভুলে আজ তাকে থ্যাংক ইউ বলছে আর সে তার মিস বিহেভিয়ার এর জন্য আজো একদিন সরি টুকু বলেনি? ছেলে মানুষ হলে এতো ইগো সম্পর্কে থাকাকি আধো ভালো। না আজ সে সরি বলবে। বলেই যাই হয়ে যাক মনের কথাটাও বলবে৷ আর কোন সংশয় মনে রাখবেনা আদনান। ভাবতে ভাবতেই বাড়ী ফিরে আদনান!

বাসায় ফিরে আদনান এর মা বাবা এই নিউজ দিলে তারা খুশীতে আটখানা হয়ে যায়। সাথে হূরের সেই আন্টি আর নানু। হূরের জন্মদিন এর খুশী দিগুণ হয়ে যায়৷ রাতে সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে। কথাবার্তা চলে বেশ সময় ধরে। আন্টি নানু বিদায় নেয়। আদনান এর মা বাবাও ঘুমুতে যায়৷ সব গুছিয়ে হূর নিজের রুমে গিয়ে দেখে জানালার সামনে মন মরা হয়ে দাড়িয়ে আছে আদনান। হূর জরিয়ে ধরে আদনান কে পিছন থেকে। আদনান হূরে হাত ধরে থাকে। হূর কিছুক্ষণ পড় বলে উঠে, ” তুমি খুশী নও আদনান? আমাদের বেবির জন্য?”

আদনান দ্রুত হূরের দিকে ফিরে বলে উঠে, ” আমাকে তোমার খুব খারাপ মনে হয় না হূর? ”
হূর হেসে বলে, ” একদম না। আপনি খারাপ হলে ভালো কে? আপনি আমার লক্ষ্মী বর বুঝেছে! এখন বলুন আজকের দিনে মন খারাপ কেনো? ”

আদনান এবার হূরের চোখে চোখ রেখে বললো, ” আমি আজ অনেক খুশী হূর অনেক। তোমায় এতো অবহেলার পরেও তুমি আমায় পরিপূর্ণ করেছো সব সময়। তুমি ধৈর্য ধরেছো। খারাপ ভালো সময় আমার পাশে থেকেছো। তোমার মতো একজনকে পেয়ে আমি খুব খুশী। শুধু আমায় ক্ষমা করে দিও হূর আমার ভুল গুলোর জন্য।আই লাভ ইউ হূর। অনেক ভালোবাসি তোমায়! ”

হূর হতবিহ্বল হয়ে গেলো। কারণ এই তিন টা ম্যাজিকাল ওয়ার্ড জীবনের প্রথম কাউর মুখে শুনলো হূর আর সেটাও তার এই রাগী নরম মনের বরটার থেকে। হূর আজ সব পেয়ে গেলো মনে হচ্ছে। হূর আদনানকে জরিয়ে ধরে বললো, ” আই লাভ ইউ টু। কিন্তু ক্ষমা কেনো চাইছেন? আদনান যা হয় ভালোই হয়৷ যদি হুট করেই পেয়ে যেতাম সব হয় তো মূল্য বুঝতাম না সেগুলোর। কষ্ট করে ধৈর্য ধরে বুঝতে শিখেছি সব পেয়েছি৷ তাই জীবনের সব কিছু আমার কাছে এখন অনেক মূল্য বান। আল্লাহ ধৈর্যের পরিক্ষা নেন এক সময় ঠিকি সুখ দেন। আমাকেও দিয়েছে। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। ”

অদের সম্পর্ক এর পড়ে আরো গাঢ় হয়! ভালোবাসা দিগুণ হয় ৷ ৯ মাস পর হূরের একটি মিষ্টি দেখতে মেয়ে হয়৷ আদনান নাম ও রাখে “মিষ্টি!”

……সমাপ্ত…..

[ যদি গল্পটা বড় করতাম সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারতাম৷ তাও জানাবেন কেমন হয়েছে ?]