Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1896



বউ চুরি পর্ব :১২

0

বউ চুরি

পর্ব ঃ ১২

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

মুসকান কে হসপিটালাইজেশন করা হয়েছে। ডক্টর রা তাদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইমন কেবিনের বাইরে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোজাম্মেল চৌধুরী ও এসে গেছে। দিপক এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হসপিটাল এসেছে। দীপান্বিতার সাথে বেশ ধমকাধমকি করছে এসেই।

তুমি থাকতে এতো বড় ঘটনা কি করে ঘটতে পারে মা। একটা মেয়েকেই তোমরা সামলে রাখতে পারলে না। এই জন্যেই তোমাদের এতো চাওয়া সত্বেও একটা কন্যা সন্তান পৃথিবী তে আনতে পারো নি। মেয়ের মা হওয়া এতোটা সহজ নয়। মেয়ের মা হতেও বেশ যোগ্যতা লাগে কড়া গলায় বললো দিপক। কথা গুলো দীপান্বিতার না লাগলেও ইরাবতীর বেশ লাগলো। কারন তার ও যে একটা কন্যা সন্তান হয়েছিলো কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। মুসকান কে সকালে বলা কথা গুলো ভাবতেই তার বুক কেঁপে ওঠলো। খুব অপরাধ বোধ কাজ করছে তার । দিপকের দিকে মাথা তুলেও তাকাতে পারছেনা ইরাবতী। দিপক বেশ বুঝতে পারছে খুব সন্দেহ হলো ইরাবতীকে তাই সে আবারো বলতে শুরু করলো।
তোমাদের সবার এটা মাথায় রাখা উচিত ছিলো মুসকানের বয়সটা কম। তাই ওকে তোমাদের সেভাবেই রাখা উচিত ছিলো। তোমরা যখন ভালবাসা দেখাবে তখন শাসন ভুলে যাবে। আবার যখন শাসন করবে তখন ভালবাসা ভুলে যাবে। তাহলে তো এসবই হবে । আসল সমস্যা কোথায় জানো আসল সমস্যা তোমাদের মধ্যেই তোমরা নিজেদের ঠিক করো তাহলেই সব ঠিক হবে।
আর যদি মুসকানকে নিয়ে তোমাদের এতোই সমস্যা হয়ে থাকে আমি আর বাবা মিলে ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবো। বাবা একটা মেয়ে আর আমি একটা বোনের দায়িত্ব ঠিকি নিতে পারবো।
হ্যাঁ তোমরা বলতে পারো মুসকান ভুল করেছে। তার শাস্তি কি ও কম পেয়েছে?? সবটাই তো শুনেছি কিছুই আমার অজানা নয়। তারপর ও এতো বড় কান্ড কি করে ঘটে।
মানলাম ও ভুল করেছে সেই ভুলের জন্য তো ও অনুতপ্ত ও হয়েছে। এমনতনা যে ভুল করেও ও তার জন্য শাস্তি পায়নি বা অনুতপ্ত হয়নি। একটা কথা মনে রেখো অনুতপ্ত কারীর পাশে থাকতে হয় দূরে সরিয়ে দিতে হয় না।
ইমন চুপ করেই আছে তার গলা দিয়ে একটা স্বর ও বের হচ্ছে না।
ইরাবতী আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না দিপকের বলা কথা গুলো তার মনে বেশ কড়া নেড়েছে। তাই সে কান্নায় ভেঙে পড়লো আর বললো-

সব আমার দোষ আমি যদি সকালে ঐভাবে কিছু না বলতাম তাহলে এটা হতো না।
দীপান্বিতা সহ সবাই অবাক হয়ে গেলো। ইমন চোখ দুটো খুললো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে আসলো। মায়ের কাঁধে ধরে বললো কি বলেছো মা?? (ধীর গলায়)

ইরাবতী সকালে বলা কথা গুলো ইমন কে বললো।দীপান্বিতা সহ সবাই কথা গুলো শুনলো। দিপক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। দীপান্বিতা কান্না করেই চলেছে।
ছিঃ মা ছি ঃ তুমি এতোটা করবে আমি ভাবতে পারিনি। বলেই মায়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। ইরাবতীর খুব ভয় করতে লাগলো। তার ছেলে তার থেকে দূরে সরে যাবে না তো……..

ডক্টর বেরিয়ে আসলো। ইমন ডক্টরের কাছে গিয়ে মুসকানের কথা জিগ্যাস করতেই ওনি বললেন। ভয়ের কারন নেই আপনারা টেনশন করবেন না।আর একটু দেরী হলেই সব শেষ হয়ে যেতো। মেয়েটার শরীরও বেশ দূর্বল স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে রাখা হয়েছে। আপনারা পেমেন্ট করে দিন।
ইমন এর বুকের উপর থেকে পাথর সরে গেলো। দ্রূত গিয়ে সব কাজ কমপ্লিট করে আবারো কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরাবতী দীপান্বিতা বাড়ি চলে গেছেন । দিপক আর ইমন রয়েছে মোজাম্মেল চৌধুরী ও বেরিয়ে গেছেন।

দিপক ইমনের পাশে বসে বললো- ইমন ভাইয়া তোমার কি মুসকান কে নিয়ে সমস্যা আছে?  থাকলে সরাসরি বলো সেই ভাবেই ব্যাবস্থা নিবো।
ইমন কঠোর চোখে তাকাতে গিয়েও পারলো না। নিচের দিকে মাথা রেখেই বললো- তোর কি মনে হয় তোর বোন কে নিয়ে আমার সমস্যা আছে।
দিপক বললো- আমিতো জানতাম ভাইয়া আর যার ই সমস্যা হোক তোমার সমস্যা হবেনা। মুসকানকে আমরা তোমার জন্যই পেয়েছি। একটা বোনের তো খুবই শখ ছিলো ভাইয়া। আর সেই শখটা তুমিই পূরন করেছো। এতোটা কষ্ট করে যাকে আমাদের পরিবারে নিয়ে এসেছো আজ তার এমন অবস্থা কেনো ভাইয়া??
ইমন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- সবটাই আমার ভুল। আমি ওকে বোঝাতে চেয়েছিলাম একটা আর ও বুঝে নিয়েছে আরেকটা। আমার বুঝা উচিত ছিলো ওর মাথায় এতো জটিল, প্যাচানো জিনিস ঢুকবেনা। আর আমি যাই করিনা কেনো আমিতো ওকে আড়াল থেকে সাপোর্ট দিচ্ছিলাম। কিন্তু সেটুকু বোঝার ক্ষমতা ওর হয়নি এখনো। আর মায়ের থেকে আমি এটা আশা করিনি। দীপান্বিতা কাকি যতোটা মুসকানকে আপন করতে পেরেছে আমার মা পারেনি।
দিপক বললো- কিভাবে পারবে তার কাছে সবার আগে তার নিজের ছেলে। শুধু সে না তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো এমনটাই করতো। দুনিয়ার মানুষগুলো বড় স্বার্থপর ভাইয়া বুঝলে বড় স্বার্থপর।

তুই চিন্তা করিস না এবার আমি সবটা ঠিক করে নিবো। তোরা শুধু মুসকানকে সাপোর্ট দিয়ে যাবি।
আর আমি জানি মুসকান বুঝবে আমায়  না বুঝলেও আমি ওকে সাহায্য করবো বুঝতে। মেয়েটা অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে অনেকটা পালটেও গেছে।

হুম ভাইয়া এটাই স্বাভাবিক আসলে কি জানো ভাইয়া প্রত্যেকটা কষ্টই মানুষ কে কিছু না কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। আর সেই সব শিক্ষা নিয়েই মানুষ নিজেকে পালটাতে পারে। বুঝতে পারে নিজেদের ভুল।

Every pain gives a lesson,,
And
Every lesson changes a person,,

প্রতিটি ব্যাথা একটি পাঠ দেয়,,

এবং

প্রতিটি পাঠ একজন ব্যাক্তিকে পরিবর্তন করে।।

হুম। আমি আর আমার মুসকান কে দূরে রাখবো না। আর কখনো আমার থেকে আলাদা হওয়ার সুযোগ দিবো না। আর কখনো ও চাইবেনা আমার ভালবাসা ওপক্ষা করে আমার থেকে দূরে যেতে। সেই সাহসটাও আর পাবেনা।
দিপক ইমনের কাঁধে হাত দিলো,ভরসা দিলো।
সারাদিন পেরিয়ে গেছে। দিপক ও বাড়ি ফিরে গেছে ইমন যায় নি সে তার হৃদপিণ্ড টাকে রেখে বাড়ি ফিরবে না। ফিরতে হলে তাকে সাথে নিয়েই ফিরবে। হারানোর ভয় যে কতোটা যন্ত্রনা দায়ক সেটা সে হারে হারেই টের পেয়েছে। বেডের পাশে বসে আছে ইমন। মুসকানের মুখ পানে চেয়ে আছে। অক্সিজেন মাস্ক পড়া, স্যালাইন ও চলছে। চোখ দুটো বন্ধ। ইমন পাশে বসে এক ধ্যানে দেখে যাচ্ছে। ডক্টর এসেছে মুসকানকে দেখতে ইমন কে কয়েকবার ডাকতেও কোন সারা পেলো না। অবশেষে কাঁধে হাত দিতেই কেঁপে ওঠলো ইমন। চোখের কোনে একটু পানির রেখা বেরিয়ে গেলো।

ডক্টর বললো- খুব ভালোবাসেন তাইনা……
ডক্টরের মুখে এমন কথা শুনে ইমন একটু ইতস্তত বোধ করলো।
সকাল থেকে আপনাকে দেখছি। এরকম আরো অনেক পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করেছি। কিন্তু আপনার মতো এমন পাগল স্বামী আমি দেখিনি। সত্যি ওনি খুব ভাগ্যবান আপনার মতো একজন স্বামী পেয়েছে। ( মুসকান কে দেখিয়ে )
তবুও কেনো এমন কাজ করলো বুঝতে পারছিনা।
ইমন বললো- মেয়েটা যে বড্ড অভিমানী আর অভিমান যে কতোটা ভয়ংকর আজ বুঝতে পেরেছি আমি।
চিন্তা করবেন না ঘুমাচ্ছে ১২ঘন্টা ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে জ্ঞান ফিরবে।
ডক্টর কিছুক্ষন কথা বলে স্যালাইনটা খুলে দিয়ে চলে গেলো । ইমন স্পেশাল পারমিশন নিয়েছে যাতে মুসকানের কেবিনেই থাকতে পারে। সারারাত সে মুসকানের পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মন প্রান ভরে দেখেছে তাকে। তার পৃথিবীর আলো মুসকান।
তিন দিন কেটে গেছে এই তিনদিন ইরাবতী, দীপান্বিতা, দিপক,দিপু, মোজাম্মেল এসে দেখে গেছেন মুসকান কে। সবাই মুসকানের সাথে যথেষ্ট ভালো আচরন করেছে। ইমন মনে অনেক অভিমান নিয়েই মুসকানের সেবা করেছে। আজ দুপুরেই মুসকান কে নিয়ে বাড়ি ফিরবে ইমন। মোতালেব চৌধুরী অস্থির হয়ে গেছে মুসকান কে দেখার জন্য।

মুসকানের চুল গুলো বেশ এলো মেলো হয়ে আছে। আজি বাড়ি ফিরবে কিন্তু ইমন চাইছে না এমন অবস্থায় মুসকানকে নিয়ে বের হতে। তাই দিপক কে  কিছু জিনিস কিনে আনার জন্য,পাঠিয়ে দিলো।
মুসকান তেমন কথা বলে না বেশ কিছুদিন এমন ই থাকতে হবে। গলায় বেশ মোটা লাল আভায় দাগ পড়েছে। ইমন একটু পর পর ই সেদিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে – সুস্থ হয়ে নাও এই কাজের এমন শাস্তি দিবো আর আমাকে রেখে কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারবে না ওয়েট এন্ড সি। ভেবেই মুচকি হাসলো।
ইমনের হাসিটা মুসকান বেশ লক্ষ করলো। হাসিটা তার রহস্যজনক লাগলো তাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে।
ইমন ওঠে দাঁড়ালো দিপক কে ফোন করে তারাতারি আসতে বলেই ফোন কেটে দিলো। ফোন পকেটে রেখে মুসকানের দিকে তাকালো। মুসকান সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
ইমন ও আবার অন্যদিকে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রইলো। ( দুজনের মধ্যেই বেশ জরতা কাজ করছে )

কিছুক্ষন পরেই দিপক চলে এলো আর ইমনের হাতে একটা ব্যাগ দিয়েই চলে গেলো। ইমন ব্যাগ থেকে চিরুনি টা বের করে মুসকানের দিকে এগিয়ে গেলো। ব্যাগটা পাশে রেখে চিরুনি ডান হাতে নিয়েই মুসকানের পাশে বোসলো। মুসকান অবাক চোখে তাকালো ইমনের দিকে ইমন ইশারা দিয়ে সামনে ঘুরতে বললো। মুসকান চুপচাপ তাই করলো পিছন ফিরে বসলো ইমনের সামনে।
ইমন মুসকানের চুলে হাত দিতেই মুসকানের পুরো শরীরে এক মলিন শিহরন বয়ে গেলো। তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। ইমন আলতো করে খুব আদর মেখে চুল গুলো আচড়াতে শুরু করলো। মুসকানের খুব ভালো লাগছে ইমনের স্পর্শ পেতে ইদানীং তার খুব করে ইচ্ছে হয়। এমন কান্ড না ঘটালে তো আর এতো কাছে পেতামনা, এতো আদর যত্ন পেতাম না। মরতেই তো গিয়েছিলাম ফিরিয়ে যখন এনেছে সবাই তার মানে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। মনে মনে ভাবছে মুসকান।
ইমন সুন্দর করে চুল আঁচড়ে চুলগুলো বেঁধে দিলো।
চুল ও আঁচড়াতে পারে বাহ দারন তো। মনে মনে বেশ খুশি হলো মুসকান।
ইমন ওঠে সব কিছু গুছিয়ে নিলো। আজি বাড়ি ফিরবে তারা। মুসকানের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পেলো মুসকান মিটি মিটি হাসছে।
ইমন ও মুচকি হাসলো। চুল আঁচড়ে দিয়েছি এতেই এতো খুশি অল্পতেই এতো নরম হয়ে যাও এরপর কি হবে?? ভাবতে ভাবতেই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো কিছু কাজ করলো। দিপক মুসকানের কাছে গিয়ে বোসলো।

দিপক ওকে নিয়ে আয় আমি বাকি জিনিস নিচ্ছি গাড়িতে গিয়ে বোস।

দিপক মুসকানকে নিয়ে গাড়িতে বোসলো।

বাড়ি ফিরতেই ইরাবতী, আর দীপান্বিতা পরম স্নেহে মুসকান কে নিয়ে তার রুমে গেলো। মোতালেব চৌধুরী এসে মুসকানকে বেশ অভিমানী শাসন করলো। মুসকান হাসির মাঝেও কেঁদে ফেললো এই জিনিসগুলোরই তো অভাবে ভুগছিলো সে। পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা প্রচন্ড পরিমানে ভালবাসার কাঙাল হয়। আর এই কাঙাল দের মধ্যে মেয়েদের তালিকাই বেশি। আর তাদের মধ্যে মুসকান ও একজন। যে প্রচন্ড পরিমানে ভালবাসা চায়, আদর চায়, স্নেহ চায় । আর এই ভালবাসা আদরের মাঝে বিন্দু পরিমান অবহেলাও সে সহ্য করতে পারেনা।

রাত দশটা বাজে মুসকানকে খাওয়িয়ে দীপান্বিতা ইমনের রুমে রেখে গেছে।
ইমন ল্যাপটবে বসে কাজ করছিলো। এই কয়েকদিনে একটুও কাজ করতে পারেনি। অফিস ও যায় নি সারাক্ষণ মুসকানের আশে পাশে ছিলো। বউ এর সেবা করে গেছে এখন তার বউ অনেকটাই সুস্থ। তাই একটু অফিসের কাজ গুলো দেখে নিচ্ছে।

এদিকে মুসকান একবার এপাশ হচ্ছে আবার ওপাশ হচ্ছে। আর ইমনের দিকে তাকাচ্ছে ইমন আড় চোখে মুসকান কে মাঝে মাঝে দেখে যাচ্ছে।
মুসকান আবারো ওঠে বোসলো ইমনের দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।
দশমিনিট যাবত মুসকান শুধু ছটফট করছে ওঠছে বসছে।
ইমন আড় চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
তার বউ কেনো এমন করছে বোধ হয় একটু টের পেয়েছে সে।
ল্যাপটব টা অফ করে মুসকানের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো মিটিমিটি।
মুসকান আবারো এপাশ ফিরলো ইমনকে ওভাবে দেখে আবার চট করে ওপাশ ফিরে শুয়ে রইলো।
ইশ কি লজ্জাটাই না পেলাম। মনে মনে বলেই দুচোখ চিপে শুয়ে রইলো মুসকান।
ইমন লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।
মুসকানের পাশে শিয়ে রইলো। বেশ দূরত্ব বজায় রেখে।
মুসকানের খুব ছটফট লাগছে ইমনের বুকে ঘুমাবে সেই অপেক্ষাতেই আছে। কিন্তু সে তো দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে রইলো। মনে মনে ফুসছে মুসকান বেশ নড়া চড়াও করতে লাগলো। ইমন মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছে আর দেখতে চাচ্ছে মুসকান ঠিক কি করে।

হঠাৎ ই মুসকান ওঠে বোসলো আর কাঁদতে শুরু করলো।

চলবে………………..।

বউ চুরি পর্ব :১১

0

বউ চুরি
পর্ব :১১
লেখিকাঃ জান্নাতুল নাঈমা

রাগে সে কি করবে বুঝতে পারছে না। সব তছনছ করে দিতে ইচ্ছা করছে তার। মুসকান কে কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাত মুসকান ওঠে এক দৌড়ে বাথ রুম চলে গেলো। ইমন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি ঘটলো ব্যাপারটা………

মুসকান এর গা গুলাতে লাগলো। নেশা করে এসেছে আজো এতো বাজে গন্ধ ভেবেই বমি বমি ভাব হলো তার। চোখে মুখে পানি দিয়ে বেশ কিছুক্ষন গলায় পানি দিয়ে গড়গড় করে ফেলে দিলো। এখন তার একটু ভালো লাগছে।
ছি কি গন্ধ, ওগুলো কিভাবে খায় মানুষ ছি।
তয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো মুসকান।
ইমন এখনো দাড়িয়ে আছে দুহাত মুঠ করে। কঠোর চোখে দেখছে সে মুসকান কে।

মুসকান তয়ালে টা রেখে মাথা নিচু করেই এগিয়ে এলো ইমনের দিকে। সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। সরি বলবে বলবে ভাব এমন সময় ইমন মুসকানের হাত ধরে টেনে বাইরে দাঁড় করালো। মুসকান অবাক চোখে ইমনের দিকে তাকালো। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আবারো কিছু বলবে এমন সময় ইমন বলে ওঠলো- আমার রুমে যেনো তোমায় আর কখনো না দেখি।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। ধীর গলায় বললো- কি বলছো??
একবার বলেছি শুনতে পাওনি। এক কথা বার বার আমি বলিনা আশা করি সেটা তুমি জানো। ধমকের সুরে বলে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- সরি।
আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। একটু শুনবে?? মায়া ভরা চাহনিতে তাকালো ইমনের দিকে।

চুপ কোন কথা নেই। আমার সামনে থেকে সরে যাও তোমার মুখ দেখতেও ইচ্ছা করছে না। বলেই বেশ শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। মুসকান আবারো কেপে ওঠলো। এইভাবে ইমন তাকে বের করে দরজা লাগাবে সে ভাবতে পারেনি। বিশ্বাস করতে পারছে না এতোক্ষন যা ঘটলো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ধপ করে দরজার সামনেই বসে পড়লো।
দরজায় মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে যাচ্ছে মুসকান। ইমন ও দরজার ওপাশে বসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় দরজায় মাথা হেলিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো মুসকান। কান্নার শব্দ, ফুপানির শব্দ আর পাচ্ছে না ইমন।
হয়তো ওর রুমে চলে গেছে ভেবেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

ভোরের দিকে ইরাবতী ছেলের রুমে আসতেই দরজার সামনে মুসকান কে দেখতে পেলো।
একি তুমি এখানে কেনো জোর গলায় বললো ইরাবতী। নাহ ঘুম ভাঙছে না।
নিচু হয়ে হালকা ঝাকাতেই ঘুম ভেঙে গেলো মুসকানের। চোখ দুটো কচলে ইরাবতীকে দেখে হালকা চমকে ওঠলো। ওঠে দাঁড়ালো মাথা নিচু করে। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই বুকটা হুহু করে ওঠলো।

কি আমার ছেলে ঘরে জায়গা দেয়নি তো। দিবেওনা তোমার জন্য এটাই ভালো হবে তুমি আর ইমনের ধারে পাশে এসো না। তোমাকে ইমন আর চায় না এটা নিশ্চই বুঝতে পেরে গেছো।
মুসকান অসহায় মুখে তাকালো ইরাবতীর দিকে।
এই কি সেই মামনি যে আম্মুর থেকে বেশি ভালোবাসতো আমায়?
সব ভালবাসা শেষ হয়ে গেলো। শুধুই নিজের ছেলের জন্য আমায় ভালোবেসেছিলো মন থেকে মেয়ের মতো ভালোবাসেনি?  মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
কি হলো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো। দেখো ইমন এর কাছে এসে লাভ নেই আমরা ওর জন্য মেয়ে দেখবো আর অন্যএ বিয়ে দিয়ে দিবো। তুমি এতোদিন যেভাবে ছিলে ওভাবেই থাকো। এতোদিন যেহেতু আমার ছেলেকে মেনে নিতে পারোনি এখনও আর মেনে নিতে হবে না। এ বাড়িতে জায়গা পেয়েছো এতেই সন্তুষ্ট থাকো।
পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে যায় যখনি ইমনের অন্যএ বিয়ের কথা শুনে মুসকান।  সত্যি নিজের ভালবাসার মানুষ অন্যকারো হয়ে যাওয়ার কথা শুনলে কতোটা যন্ত্রনা হয় হারে হারে টের পাচ্ছি আমি। একি কষ্ট ও তো ইমন ভাইয়া ও পেয়েছে। কতোটা আঘাত তাকে আমি দিয়েছি। সেই সব আঘাত কি আমি ভালোবেসে ভুলিয়ে দিতে পারবো না। একটা সুযোগ কি আমাকে কেউ দিবেনা। চোখ বেয়ে পানি ঝড়ে পড়লো। ইরাবতী দেখেও না দেখার ভান করে দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দিলো।
ইমন ঘুম ঘুম চোখে হালকা তাকিয়ে ওঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো। নেশার রেশটা তার কাটেনি এখনো। ইরাবতী ছেলের কান্ড দেখতে দেখতে ভিতরে গেলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মুসকান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। দৃষ্টি তার বিছানার দিকে।
ইরাবতী ইমন কে ডাকতে লাগলো। মায়ের ডাকে ভালোভাবেই  ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। ওঠে বোসলো।
কি অফিস নেই আজ কে??
আছে তো।
তাহলে ওঠসিস না কেনো এখনো যা ফ্রেশ হয়ে নে।
ইমন বিছানা থেকে নামতে যাবে এমন সময় ইরাবতী বললো- দিপক আজি আসবে হয়তো বিকাল হবে। কাল তোকে আর দিপক কে নিয়ে আমার বান্ধবীর বাসায় যাবো ওর ছোট মেয়ে কে দেখতে।
দিপকের জন্য??  বলেই ওঠে দাঁড়ালো খুব স্বাভাবিক ভাবেই।
না দিপকের জন্য না তোর জন্য। মেয়েটা খুব ভালো দেখতেও সুন্দরী।
ইমন রেগে গেলো মাকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় চোখ পড়লো দরজার বাইরে। মুসকান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
মুসকান কে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
আচ্ছা ঠিক আছে কখন বের হবে কাল আমাকে জানিও। আমি সময় বের করে নিবো বলেই বাথরুম চলে গেলো।
মুসকান আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না দৌড়ে গিয়ে তার রুমের দরজা আটকে দিলো। কান্নায় ভেঙে পড়লো।
হে আল্লাহ আমার শেষ আশাটাও আর রইলো না। সব শেষ হয়ে গেলো। আমাকে এ বাড়ির কেউ ভালোবাসে না কেউ নেই আমার। কেউ নেই, কেউ নেই বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই নেতিয়ে পড়লো মেয়েটা। ধীর গলায় বলতে থাকলো – আমি তোমাকে ভালবাসি খুব ভালোবাসি। একদিন দূরে গিয়েই আমি তোমাকে খুব খুব করে অনুভব করেছি বিশ্বাস করো। তোমার আদর তোমার ভালবাসা খুব মিস করি। আমাকে তো তোমার মতো করে কেউ আগলে রাখে না ইমন ভাইয়া। জানো এবাড়ির কেউ আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। আমি না খেয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নেয় না। আমর মন খারাপ দেখে কেউ আর অস্থির হয়ে পড়ে না। আমি খুব একা হয়ে গেছি খুব। আমার বুকের ভিতর খুব কষ্ট হয়। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তুমি কেনো বুঝছোনা কেনো দূরে সরে যাচ্ছো। আমি ভুল করেছি আমাকে তুমি আরো অনেক অনেক মারো তবুও ছেড়ে যেওনা। আমার কেউ নেই কেউ তো নেই আমার। আপন মনে কেঁদে যাচ্ছে আর এসব বলে যাচ্ছে মুসকান। যে কেউ দেখলে এখন ভাববে এ একটা মানসিক রোগী।

সকালের খাবাড় খেয়ে যে যার মতো চলে গেলো।
ইমন রুমে এসে কিছু ফাইল নিয়ে বের হচ্ছে।

আলেয়া মুসকানের খাবাড় নিয়ে বেশ কিছুক্ষন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। কোন সারা শব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে ওকি দিতেই যা দেখলো তাতে তার হাত থেকে সব খাবাড় পড়ে গেলো।
ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠলো। ইমন বাবা গো……….

ইমন আলেয়ার এমন চিৎকার শুনে ছুটে এলো। সাথে ইরাবতী, দীপান্বিতা দিপু ও এলো।
ইমন জানালায় তাকাতেই তার হৃদস্পন্দন থেমে গেলো। পাগলের মতো দরজায় দুকাধ দিয়ে দুবার ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। তার শরীরে যেনো হাজারগুন শক্তি বেড়ে গেছে। প্রিয় জিনিস হারানোর ভয়টা যে কি সেটা সে দ্বীতিয়বার আবার অনুভব করতে লাগলো।
দরজা খুলতেই দৌড়ে গিয়ে মুসকানের পা দুটো ধরলো।
সবাই এসে তারাতারি মুসকানের গলা থেকে ওড়নার বাঁধন টা খুলে ফেললো। ইমন মুসকান কে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো।
মুসকান… এই মুসকান…. কি করলে এটা তুমি,, কেনো করলে। এই আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাচ্ছিলে এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোমায়।
বার বার একি ভুল কেনো করছো এবার কিন্তু আরো বড় শাস্তি দিবো তোমায়। চিৎকার করে বললো ইমন।
মুসকান নেতিয়ে পড়লো ইমনের কোলে।

ইমন তারাতারি হসপিটাল যেতে হবে সময় নেই ইমন ওঠো। দিপান্বিতা চিৎকার করে বলে ওঠলো। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো। ইমন মুসকান কে কোলে নিয়ে পাগলের মতো ছুটে গেলো। গাড়িতে ওঠে তার বুকে মুসকান কে চেপে ধরলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর ইমন কান্না করতে করতে মুসকান কে ডেকে যাচ্ছে। পাগলের মতো করছে সে। ছটফট করছে মুসকানকে বার বার জাগানোর চেষ্টা  করছে। ইমনের চোখের অজস্র পানি মুসকানের মুখে পড়ছে।

ইরাবতী, দিপান্বিতা, দিপু, আলেয়া পিছনের গাড়িতে আসছে। মোজাম্মেল চৌধুরী কে ফোনে জানানো হয়েছে।

আল্লাহ আমার মুসকানের যেনো কিছু না হয় আল্লাহ তুমি একটু মুখ তুলে তাকাও। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো ইমন।

চলবে……………………..

বউ চুরি পর্ব : ১০

0

বউ চুরি
পর্ব : ১০
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

ডিভোর্সের কথা শুনে ইমনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চট করে ওঠে দাঁড়ালো রাগে তার শরীর কাঁপছে মায়ের মুখে এমন কথা শুনবে সে কল্পনাও করতে পারেনি । অবশ্য মুসকান যা করেছে এতে এমন কথা বলাটাও স্বাভাবিক তবুও তার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।

না মা এটা আমি করতে পারবো না। আমি মুসকান কে ছাড়তে পারবো না। এমন কথা দয়া করে তুমি বলো না।

ইরাবতী ও দাঁড়িয়ে পড়লো। বেশ রেগেই বললো-
কি ভেবেছিস তুই ?  তোর সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি বলে এবারেও তাই হবে। তুই যদি এটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল ভাবছিস। যা সব ঘটে গেছে এর পর আর সম্ভব না।

ইমন করুন মুখে মায়ের দিকে তাকালো। তার মা কখনো কড়া কথা বলার মানুষ না। কিন্তু আজ মায়ের মুখে কড়া কথা শুনতে হচ্ছে। এতে মায়ের কোনো দোষ নেই। মা তো আমার ভালোর জন্যই আমার ভালো করার জন্যই এসব বলছে। কিন্তু এসব এ যে আমার ভালো হবে না। বরং আমার জীবনটাই থমকে যাবে। মুসকান বিহীন ইমন যে এই পৃথিবীতে বাঁচতে পারবে না। না বাঁচতে পারবে না মরতে পারবে। বাঁচা মরার মাঝে থমকে যেতে হবে। মনে মনে ভেবে যাচ্ছে ইমন।
মা আমি মুসকান কে ছাড়তে পারবো না। আমি ছাড়া আর ওর কে আছে এই পৃথিবীতে বলো?  কার কাছে যাবে ও?
কেনো যার কাছে গিয়েছিলো,যার জন্য এ পরিবারের মান সম্মান এর কথা একবারো চিন্তা করেনি তার কাছেই যাবে। এমন কুরুচিপূর্ণ একটা মেয়ে আমরা কিভাবে মানুষ করলাম সেটাই ভেবে পাই না।ওর স্বভাবেই প্রমান হয়ে গেছে ও আমাদের বংশের কেউ না। কারন এ বংশের কারো রুচি মনোভাব এতো টা নিম্ন মানের না। প্রচন্ড রাগ নিয়ে কথা গুলো বললো ইরাবতী।
ইমন দুহাত শক্ত করে মুঠ করে রইলো। তার পৃথিবীর এক অংশ আরেক অংশের এইভাবে অপমান করছে। না পারছে সহ্য করতে না পারছে কিছু বলতে। তারা দুজনেই যে তার পৃথিবী। মায়ের জায়গায় বাবা বা অন্য কেউ হলে হয়তো এতোক্ষনে ইমনের রাগটা বেরিয়ে আসতো। কিন্তু এখানে যে তার মা তার বউ এর ব্যাপারে বলছে। কিছু বলার নেই তার শুধুই হজম করতে হবে।

দেখ তুই চুপ করে থাক বা চিল্লাচিল্লি কর তোর আর মুসকানের ডিভোর্স হবেই। তুই যদি চাস মুসকান এবাড়িতে থাকবে থাকুক। এতে আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু এ বাড়ির অন্যকারো ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ বার আমি ছেলের বউ এর মুখ দেখতে চাই। ছেলে ছেলের বউ নাতি নাতনী নিয়ে সংসার টা ভরে ওঠুক সেটাই চাই। শান্তি চাই, ছেলের মুখে হাসি দেখতে চাই, ছেলের সুখের সংসার দেখতে চাই , আমার ভরা সংসার দেখতে চাই। এমন একটা বউ চাই যে আমার ছেলের যত্ন নিবে , আমার ছেলের মন বুঝবে। এটাই তো চাওয়া আর কি চাইবো বল। তুই ছেলে হয়ে এইটুকু দেখতে দিবি না আমায় বল এইটুকু কি আমি দেখে যেতে পারবো না। এইটুকু যদি দেখতে না দেস আমি মরে গেলে সারাজীবন আফসোস করবি দেখে নিস বলেই কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো ইরাবতী।

ইমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি বলবে সে কি বুঝাবে মা কে যা হয়েছে এর পর কি সত্যি কিছু বুঝানোর বাকি আছে। আর মা যা চায় সেটা কি মুসকান কোন দিন ও বুঝবে। স্বামী হিসেবে কি কোন দিন মেনে নেবে আমায়। জোর করে সব পাওয়া গেলেও ভালবাসা টা তো আর পাওয়া যায় না।
মুসকান এর পর কি চায় সেটা আমাকে বুঝতে হবে। ওর মনের কথা আমাকে জানতেই হবে। আর সবার আগে দাদুর সাথে কথা বলতে হবে।

পরের দিন অনেক সকালে ইমন মোতালেব চৌধুরীর সাথে দেখা করে।মুসকান হেনা জয় বিষয়ে সব কথা দাদুকে জানায়। হেনার ব্যাপারেও জানায়। মুসকান তার অতীত সম্পর্কে জেনে গেছে এ মূহুর্তে মেয়েটা খুব ডিপ্রেশনে আছে। এছাড়াও সব থেকে বড় কথা রাগ করে জেদের বসে  স্বামীর অধিকার জোর করে আদায় করেছে সে   সব মোতালেব চৌধুরী কে জানানো হয়।
সব শুনার পর মোতালেব চৌধুরীর সাথে বেশ কিছু পরামর্শ করে ইমন চলে যায়।

ঘুম থেকে ওঠে মুসকান পুরো রুমে চোখ বুলালো। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ কিছুক্ষন দেখলো। বুকটা তার হুহু করে ওঠলো। এতোদিন যাদের নিজের লোক বলে ভেবে এসেছে আসলে তারা তার নিজের কেউ নয়। অথচ তাদের সাথে কতো বাজে আচরন করেছে সে। দুঃখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। খুব অনুতপ্ত মুসকান ওড়নাটা মাথায় ভালো করে চেপে রুম থেকে বেরিয়ে এলো মুসকান৷ সবার আগে দাদুর রুমে গিয়ে দাদুর পায়ে পড়লো।

আমাকে ক্ষমা করে দাও দাদু আমাকে তুমি ক্ষমা করে  দাও বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো।
মোতালেব চৌধুরী বুঝতে পারলো মেয়েটা বেশ অনুতপ্ত। তবুও সে চুপ করে রইলো।
মুসকান পায়ের কাছে বসেই অঝড়ে কাঁদতে লাগলো।
আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি দাদু আমাকে  তোমরা ক্ষমা করে দাও। কিহলো দাদু কিছু বলছো না কেনো??
ভুল তো তুমি আমার সাথে করোনি। যার সাথে তুমি অন্যায় করেছো,  যার সাথে তুমি বেইমানী করেছো ক্ষমা টা তার কাছেই চাও।
মুসকান করুন মুখে তাকালো মোতালেব চৌধুরীর দিকে। এই মানুষ টা আমাকে কতোটা ভালোবাসতো। কতোটা স্নেহ করতো আর সে আজ এইভাবে পর হয়ে কথা বলছে। ভাবতেই মুসকানের বুকের ভিতর হাহাকার করতে শুরু করলো।

এখানে কি করছো তুমি । আমার বাবার ধারে পাশে তোমাকে দেখতে চাই না। বেরিয়ে যাও বলছি। ( মোজাম্মেল চৌধুরী)
ধমক শুনে চমকে ওঠলো মুসকান। ভয়ে ভয়ে ওঠে দাঁড়ালো। এসবে সে একদমই অভ্যস্ত নয়। বড় আদরে মানুষ হয়েছে সে। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ বড্ড আগলে মানুষ করেছে তাকে। ধমক তো দূরের কথা কখনো চোখ রাঙিয়েও কথা বলেনি ইমন ছাড়া অন্য কেউ। অথচ আজ সবার চোখের বিষ সে।

আমাকে ক্ষমা করে দাও বড় বাবা। বলেই কেঁদে ওঠলো মুসকান।
প্লিজ দয়া করে বেরিয়ে যাও। তোমার মুখ দেখতেও ঘৃনা হচ্ছে। ক্ষমা করে কি হবে যা সর্বনাশ করার তা তো করেই ফেলেছো। আমার ছেলেটার জীবন শেষ করে দিয়েছো। অপাএে ঘি ঢাললে এমনটাই হয়। যাও এখান থেকে ধমকে ওঠলো মোজাম্মেল চৌধুরী।

মুসকান মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলো। সামনে ইমন পড়তেই ইমন একবার মুসকানের চোখের দিকে তাকালো । মুসকান ও করুন চোখে তাকালো তার দিকে । ইমন চোখ সরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। মুসকানের বুকের ভিতর ঝড় বইতে লাগলো। ছুটে তার নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কান্নায়  ভেঙে পড়লো।
যে যার মতো ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লো। ইমন না খেয়েই বেরিয়ে গেছে।
কেউ মুসকান কে খাওয়ার জন্য ডাকে নি। আলেয়া তার খাবাড় নিয়ে রুমের সামনে এসে বেশ কয়েকবার ডাকতেই দরজা খুলে দিলো মুসকান।
খাবার খেয়ে নাও মুসকান । এ বাড়ির কারো আর তোমার খোজ নেওয়ার সময় নাই। নিজের খোজ নিজেরই নিতে হবো। তোমার মায়ের ইচ্ছা থাকলেও কেউ তাকে তোমার খোজ নিতে দিব না।
মুসকান বাঁকা হাসলো। তুমি কেনো নিয়ে এলে খাবাড়। কেনো খোঁজ করতে আসলে সবার মতো তুমিও করতে।
তা কি করে করি সবাই যেমনই করুক একজন তো ঠিকি খেয়াল রাখছে। তার আদেশেই তো আমি আসছি । কিন্তু সেটা তো তোমাকে জানানো যাবে না মা। ( মনে মনে)
খেয়ে নিয়ে ওষুধ টা খেয়ে নিও মা আমার বাড়ি যাওয়া লাগবো আবার বলেই বেরিয়ে গেলো আলেয়া।
মুসকান খাবাড়টার দিকে চেয়েও দেখলো না। তার যে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বাকি আছে।
নিচে নেমে এলো মুসকান ইরাবতীর কাছে ক্ষমা চাইলেও লাভ হলো না। সে কোন কথাই শুনতে রাজি নয় এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলো সে তার ছেলের অন্যএ বিয়ে দিবে। যা শুনে মুসকানের মাথা টা বেশ ঘুরে গেলো। তবুও নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে উপরে ওঠে এলো।
দীপান্বিতা কাল থেকে সুযোগ খুজছিলো মুসকানের সাথে একা কথা বলার আর সে সুযোগ টা সে পেয়েও গেলো।

রুমে গিয়ে ডাকলো- মুসকান…..
মুসকান দীপান্বিতা কে দেখেই আম্মু বলেই ছুটে তাকে জাবটে ধরে অঝরে কাঁদতে লাগলো। দীপান্বিতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

তুমি আমার নিজের মা না। দিপু আমার নিজের ভাই না। আমার বাবা আমার বাবা না। কেউ আমার নয় এ বাড়ির কেউ আমার নয়। বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো মুসকান। দীপান্বিতার চোখ দিয়েও পানি বেরিয়ে এলো।মুসকান যে কতো বড় আঘাত পেয়েছে সেটা দীপান্বিতা খুব করেই টের পেলো। কিন্তু সেটা ভাবী বড় ভাই তো বুঝবে না তাদের কাছে তাদের ছেলের থেকে তো অন্য কেউ আপন হবে না। মনে মনে ভাবলো দিপান্বিতা।
তুই কেনো এতো বড় অন্যায় টা করলি মুসকান। ইমন তো তোকে খুব ভালোবাসতো ঐ ছেলেটার ভালোবাসার অমর্যাদা কেনো করলি বলতো। আর কেমন বন্ধু দের সাথে মিশেছিস যে তারাই তোর ক্ষতি করে দিলো।
মুসকান ওঠে দীপান্বিতার দিকে তাকালো জিগ্যাসু দৃষ্টিতে।
হ্যাঁ। তোর বান্ধবী হেনাই তোর চরম ক্ষতি করে দিলো।আর সেটা তুই টেরই পেলি না।
মানে…..৷
ইমনের মধ্যে কি কমতি ছিলো যে তুই ঐ বাজে ছেলের সাথে পালিয়ে গেলি। হ্যাঁ তুই ওকে ভাই হিসেবে দেখেছিস তাতে কি রক্তের সম্পর্কের ভাই তো না। আর কি করলি পালিয়ে গেলি বিয়ে হয়ে গেছে তোর কি করে পারলি এমন জঘন্য কাজ করতে। এখন দেখ কি হলো সব হারালি তুই। আর যার কথায় এতোসব করলি সে যে তোকে কতো বড় ধোকা দিয়েছে বুঝতেও পারলি না। এতো বোকা কেনো তুই মানুষ তো নিজের ভালো মন্দ বুঝে তুই কেনো বুঝলি না বলতো।

কি বলছো আম্মু??
হ্যাঁ ঠিকি বলছি। তুই জানিস হেনা কেনো তোকে সাহায্য করেছে জয়ের সাথে পালিয়ে যেতে??
কেনো??  কাঁপা কাঁপা গলায় বললো মুসকান।
কারন হেনা ইমনের জীবন থেকে তোকে সরিয়ে ইমনের জীবনে আসতে চেয়েছিলো। হেনা ইমন কে পছন্দ করে তাই। আর তুই আর জয় যখন বাইকে ছিলি হেনাই ছবি ওঠিয়ে ভাইরাল করেছে।
মুসকান বিস্ময় চোখে তাকিয়ে রইলো দীপান্বিতার দিকে। কি বোলছো এসব?
হ্যাঁ ঠিকি বলছি।
মুসকান ভাবতে লাগলো আগের সব কথা। হেনার বলা প্রত্যেকটা কথা মনে পড়তেই বুকের ভেতর ছেদ করে ওঠলো। সত্যি তো হেনা তো অনেকবার বলেছে তোর ভাই আমার ক্রাশ। এমনকি ইমনকে যাতে না মেনে নেই সেই জন্য রাত দিন হেনাই আমাকে অনেক বুঝিয়েছে যে ভাই কখনো স্বামী হতে পারেনা। ইমনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সব প্ল্যান তো হেনাই বলেছে। আর আমি বোকার মতো ওর কথায় সব করে গেছি। মনে মনে ভেবে আবারো কেঁদে ওঠলো মুসকান।
দীপান্বিতা বুকে টেনে নিলো মুসকান কে। কাঁদিস না মুসকান। তোকে পেটে ধরিনি তো কি হয়েছে সেই পাঁচদিন বয়স থেকে তোকে লালন পালন করেছি। প্রথম দিকে ভাবী বেশি খেয়াল রাখলেও তোকে দত্তক নেওয়ার পর তো সব দায়িত্ব আমিই পালন করেছি। মেয়ের পরিচয়ে বড় করেছি। দিপক, দিপুর থেকে তোকে বেশি আগলে মানুষ করেছি । এ পরিবারে মেয়ে সন্তান ছিলো না তোকেই আমরা আমাদের সন্তানের মতো করে মানুষ করেছি। আর ইমন ও তো তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেই কোন বয়স থেকে আট বছর বয়স থেকেই।
ছোট বেলার অসংখ্যা কথা মুসকানকে বললো দীপান্বিতা । কান্নার মাঝেও হেসে ওঠলো মুসকান।
এখন কি হবে আম্মু কেউ তো আমাকে এখন আর ভালোবাসে না। মামনি, বড় বাবা,দাদু কেউ না এখন কি হবে।
চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে । সবার আগে তুই ইমন এর থেকে ক্ষমা চেয়ে নে। ছেলেটা তোর জন্য পাগল রে মা। তুই একবার ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নে ভালবাস বউ এর অধিকার নিয়ে ওর কাছে যা দেখবি ওর রাগ কমে গেছে। ইমনের রাগ পড়ে গেলে আর সবাই যদি দেখে তুই ইমন কে ভালোবাসতে শুরু করেছিস তাহলে সবার রাগ ই কমে যাবে। তবে মন থেকে স্বামী হিসেবে মানতে হবে মন থেকে ভালোবাসতে হবে এছাড়া তুই আর ইমনের মন পাবিনা মনে রাখিস ।

মুসকানের বুকটা কেঁপে ওঠলো সেই রাতের কথা ভাবতেই তার গলা শুকিয়ে গেলে।ইমনের বলা প্রত্যকটা কথা তার কানে বাজতে লাগলো।আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।
আমাকে আর ভালোবাসবে না আম্মু আর ভালোবাসবে না বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো।

ভালবাসার কথাও না। লজ্জা করে না ভালবাসার কথা বলতে। আমার ছেলেটা কে দিনের পর দিন ঠকিয়ে গেছো। শুধুমাএ আমরা বলে এখনো এ বাড়িতে রেখেছি অন্য কেউ হলে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতো। ইরাবতী এসে এক দমে কথা গুলো বলে  ফেললো।
মুসকানের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।

ভাবী কি বলছো এসব।
তুই চুপ কর। মনে রাখিস ও তোর পেটের সন্তান না। যদি তোর নিজের মেয়ে হতো অবশ্যই তোর কথা এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের কথা শুনতো। একটা বাইরের মেয়ের কথায় চলতো না। আমি তো বাইরের কাউকে দোষ দিবো না। দোষ ওর নিজের ই আজ যদি বাইরের কেউ এসে বলে ইমন কে বিষ খাওয়িয়ে মেরে ফেলো এ মেয়ে তাতেও দ্বিধা করবে না। কি আর মারবে আমার ছেলেকে তো মেরেই ফেলেছে। যে ছেলে কোন দিন সিগারেট ছুয়েও দেখে নি সে এখন রাতের বেলা নেশা করে পড়ে থাকে৷ সব এই মেয়ের জন্য হয়েছে। আমার ছেলের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে এই মেয়ে।

মামনি আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমাকে তুমি মাফ করে দাও। বলেই কাঁদতে লাগলো মুসকান।

ক্ষমা কিসের ক্ষমা আমার কাছে আমার ছেলেই সব এর বাইরে আমি আর কাউকে চিনিনা। যার জন্য এ পরিবারে এতো ক্ষতি হয়ে গেলো বাবার এমন অবস্থা হলো। ইমনের এমন অবস্থা হলো তাকে আমি ক্ষমা করতে পারবো না।
তুমি আমার ছেলেকে স্বামী হিসেবে মানো না তাইতো??
মুসকান অবাক চোখে তাকালো ইরাবতীর দিকে।

মানতে হবে না। ডিভোর্স পেপার রেডি করার ব্যবস্থা করেছি । শুধু সাইন করে দিও আর কিছু না। আমি আমার ছেলের আবার বিয়ে দিবো।
মুসকান দুপা পিছিয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পুরো শরীর তার অবশ হয়ে এলো।

ভাবী কি বোলছো এসব ডিভোর্স মানে। এতো বড় শাস্তি দিওনা মেয়েটাকে ওকেও তো বুঝতে হবে। আর দোষ শুধু ওর না সবারই আছে। আমাদের কি দোষ নেই??  ইরাবতীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো দীপান্বিতা।
ইরাবতী কোন কথা না বলে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান ফ্লোরে থ মেরে বসে গেলো। হঠাৎ ই  চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠলো।
দীপান্বিতা কাছে গিয়ে বোসলো  কাছে টেনে নিলো মুসকান কে।
মুসকান দীপান্বিতা কে আঁকড়ে ধরে অঝড়ে কাঁদতে লাগলো।
কাঁদিস না মা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি নিজে ইমনের সাথে কথা বলবো। আমি জানি ইমন কখনো এটা হতে দিবে না।

লাঞ্চ টাইমে মোজাম্মেল চৌধুরী ইমনের সাথে দেখা করলো। মুসকানের সাথে তার ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে মোজাম্মেল চৌধুরী।

না বাবা এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।
এতো কিছুর পর ও তুমি এই কথা কিভাবে বলছো?? তোমার মাথা ঠিক আছে??
হ্যাঁ বাবা একদম ঠিক আছে।
মোজাম্মেল চৌধুরী চিৎকার করে ওঠলেন না ঠিক নেই। পাগল হয়ে গেছো তুমি। নিজের পরিবারের কথা ভাবছোনা শুধু পরিবার না তুমি নিজের কথাও ভাবছো না। ঐ মেয়েকে নিয়ে কোনদিন সুখী হতে পারবে না। একটা কথা মনে রেখো ছোট লোক কোনদিনও বড় লোক হতে পারে না। যতোই মুসকান কে এই বিলাসবহুল বাড়িতে এনে মানুষ করা হোক না কেনো। ওর স্বভাবে ছোটলোকি থাকবেই কারন ওর জন্মই ছোট লোকের ঘরে। আমরা চেষ্টা করেও ওর শেকড় বদলে ফেলতে পারবো না।

ইমন প্রচন্ড রেগে গেলো। ব্যাস বাবা অনেক বলে ফেলেছো তুমি আর না। একটা কথা মনে রাখো তুমিও আমি চুপ করে আছি বলেই তোমরা মুসকানের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেনা। আর করলেই যে সেটা আমি মেনে নেবো তা কিন্তু না।
মোজাম্মেল চৌধুরী ধমকে বললেন ইমন…………..
গলা টা নামিয়ে বাবা। মুসকান আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আর কে বললো ও ছোটলোকের সন্তান?  কে বললো ও ছোটলোক ঘরের সন্তান?
মুসকান দীপান্বিতা কাকি আর মইন কাকার সন্তান। ছোট লোক হয়ে কেউ জন্ম নেয় না বাবা এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষ ই একি পরিচয়ে পৃথিবীতে তে আসে আর সেটা হচ্ছে তারা মানুষ।  কেউ টাকাওয়ালা বাবার ঘরে জন্মায় কেউ টাকা ছাড়া বাবার ঘরে জন্মায় তাই বলে যে তারা ছোটলোকের ঘরে জন্মেছে তা কিন্তু না। কোটি টাকার মালিক হলেও অনেকের মাঝে ছোটলোকি স্বভাব থাকে আর দারিদ্র্য ব্যাক্তিদের ও অনেক বড় মন থাকে।
জন্মের পর থেকে মুসকান আমাদের পরিবারে ছোট কাকার পরিচয়ে বড় হয়েছে। জন্ম দিলেই শুধু বাবা মা হওয়া যায় না । ঠিক তেমনি মুসকানের জন্ম যার ঘরেই হোক তারা মুসকানের অভিভাবক নয়। বরং যাদের কাছে মানুষ হয়েছে তারাই ওর আসল অভিভাবক তারাই ওর আসল শেকড় । আর আশা করি তারা যে ছোট লোক নয় সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
আর একটা কথা মাথায় রেখো মুসকানের সাথে সব থেকে বড় অন্যায় কিন্তু আমি করেছি। ওর ভালোর জন্য করলেও অন্যায় টা আমরা সবাই করেছি ওর সাথে।
ওকে ঐভাবে ওর জন্মদাত্রী মায়ের থেকে নিয়ে আসা। সে বিষয়ে ওকে কিছু জানতে না দেওয়া এগুলো কি অন্যায় নয়??  হয়তো এতে ওর ভালো হয়েছে তবুও তো ওকে এতোদিন অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ওর সাথে আমার বিয়েটাও ওর থেকে গোপন রাখা হয়েছে। এটা কি আমাদের ভুল হয়নি আমাদের সবার উচিত ছিলো আগে থেকেই ওকে সবটা জানানো । কিন্তু আমরা ভালো করতে গিয়ে ওকে না জানিয়ে অনেক বড় ভুল করে  ফেলেছি। সত্যি ভেবে দেখতো যাকে ছোট থেকে ভাই মেনে এসেছে তাকে কি করে একবারেই স্বামী হিসেবে মেনে নেবে। এটা আমাদের সবার বোঝা উচিত ছিলো।
আর জয় এর ব্যাপারে সবটা তো জানোই। আজ যদি মুসকান তোমার নিজের মেয়ে হতো তাহলে কি করতে বাবা?  নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করো।
তবুও আমি মুসকান কে শাস্তি দিয়েছি। দরকার পড়লে আরো দিবো কিন্তু কোন ভাবেই আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।

এটাই তোমার শেষ কথা??
হ্যাঁ এটাই শেষ কথা।
বিয়ে একবারই করেছি বাবা দ্বিতীয় বার করা সম্ভব না। ডিভোর্স তো কোন ভাবেই সম্ভব না। বাবা.. বিচ্ছেদর চিন্তা না করে কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় সেই চিন্তা করো। দেখবে সংসারে সুখ ফিরে আসবে। একটা জিনিস খেয়াল করেছো বাবা বর্তমান পরিস্থিতি তে সম্পর্ক গড়ার থেকে ভাঙার খবড় বেশী শোনা যায় । চারদিকে শুধু বিচ্ছেদ আর বিচ্ছেদ কেনো বাবা বিচ্ছেদই কি একমাএ সলিউশন?

ঢাকা শহরে তালাকের আবেদন বাড়ছে। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। গত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তালাকের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়-প্রায় ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দুই সিটিতে আপস হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশের কম।
গত ছয় বছরে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অর্ধলাখের বেশি তালাকের আবেদন জমা পড়েছে। এ হিসাবে মাসে গড়ে ৭৩৬ টি, দিনে ২৪ টির বেশি এবং ঘণ্টায় একটি তালাকের আবেদন করা হচ্ছে।
বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল দশমিক ৬। বর্তমানে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক এক।
এসবের কারন কি বাবা জানো?  কারন হচ্ছে বোঝাপড়ার অভাব। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস,ভরসা,সম্মান, ভালোবাসার অভাব। আর এই একি সিচুয়েশনে আমি আমার জীবনে আসতে দিবো না।

তোর জীবনে সেই সিচুয়েশনে এসেছে ইমন। মুসকান তোকে না ভালোবাসে না ভরসা করে আর না কখনো করবে।

সম্মান তো করে বাবা….
সেটা তুই কীভাবে বুঝলি ওর ব্যবহারে তো কখনো বুঝিনি।
তুমি না বুঝলে আমি বুঝলেই চলবে।
তাহলে তুই তোর জেদ থেকে সরবি না। ( কঠোর গলায়)

ইমন বাঁকা হাসলো।
বাবা কেউ পড়ে গেলে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে হয় । যাতে সেই হাতের উপর ডিপেন্ড করে যে পড়ে গেছে সে আবার ওঠে দাঁড়াতে পারে। তাকে আরেকটু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে হয় না। আর আমি মুসকানের দিকে সেই হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। আর আমি চাই তোমরা সবাই আমার পাশে থাকো। আর যদি তোমরা আমার পাশে থাকতে না চাও তাহলে আমি তোমাদের জোর করবো না। আমার নিজের উপর কনফিডেন্স আছে । আমি সফল হবোই।
আর একটা কথা বাবা আমার মনে  রাগ কাজ করছে না। আমার মনে জেদ কাজ করছে  আর সেটা হচ্ছে নিজের জিনিস হাসিল করে নেওয়ার জেদ। কিন্তু তোমাদের সবার রাগ আর অভিমান কাজ করছে যেটা কোন সমাধান নয়।
মুসকানের পাশে এখন আমাদের সবার থাকা দরকার দূর্ভাগ্যবশত কেউ ওর পাশে নেই। কোন ব্যাপার না সময়ের সাথে আবার সব ঠিক করে নিবো আমি।
যা খুশি কর তুই। মনে রাখিস এরপর কিছু ঘটলে সেটা তোর নিজের কারনেই ঘটবে।

ইমন আবারো হেসে ওঠলো। আর কিছু ঘটবে না বাবা মিলিয়ে নিও। বলেই ইমন সেখান থেকে চলে গেলো।মোজাম্মেল চৌধুরী ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলেন।
আট বছর বয়স থেকে যে জেদ মনের ভিতর পুষে রেখেছি সেই জেদ এতো অল্পতেই কি করে ভেঙে ফেলি। মনে মনে ভাবতে ভাবতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো ইমন। কোথায় যাবে কি করবে কিছু জানেনা সে ।   শুধু কিছুক্ষন একা সময় কাটাতে হবে তার এতো চাপ সে আর নিতে পারছেনা।  এদিকে তার সব বন্ধু বান্ধব যতো লোক আছে সবাই কে দিয়ে খোঁজ করিয়েছে যে কারা মুসকান আর জয়ের বিষয় নিয়ে বেশী জল ঘোলা করছে। যেভাবেই হোক বিষয় টা ধামা চাপা দিতে হবে। কিছু করার নেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতেই হবে৷ তার কাছে মুসকান ই সব আর কিছু নিয়ে তার ভাবার সময় নেই। আর একবার চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। আর এই মূহুর্তে সবাই মুসকানের বিপক্ষে আমি সামনে থেকে সাপোর্ট নাই বা দিলাম। আরাল থেকে সাপোর্ট দিতে তো ক্ষতি নেই। বউ টা তো আমারই দায়িত্ব টাও আমার।

রাত দশটা বেজে গেছে ইমন এখনো বাড়ি ফেরেনি। ইরাবতী ফোন দিয়ে দিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে। তবুও তার ছেলে ফোন ধরছে না। মোজাম্মেল চৌধুরী চিন্তা করতে নিষেধ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে কাল দিপক ফিরবে দীপান্বিতা তাই বেশ ব্যাস্ত ছেলের রুম গুছাচ্ছে। দিপু আর মুসকান গল্প করছিলো বেশ কিছুক্ষন যাবৎ ইমনের রুমে। দিপুর ঘুম পেতেই সে তার রুমে চলে গেলো। মুসকান একা একা অনেক রকম চিন্তা করতে লাগলো আর ভাবলো আজ ইমন ফিরলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে । দরকার পড়লে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে স্বামীর পায়ে পড়লে তো কোনো ক্ষতি নেই। আজ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসবে সে ইমন কে। বউ হয়েই লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবে। দীপান্বিতার কাছে ধীরে ধীরে সব কাজ শিখে নিবে। সবার মন জয় করে চলবে সে। কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিবে না কাউকে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো মুসকান।

রাত এগারোটার পর ইমন বাড়ি ফিরলো। নিজের রুমে প্রবেশ করতেই মুসকান কে দেখতে পেলো।
চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজো সে ড্রিংকস করেছে চোখ জুরে নেশা নেশা ভাব। নেশা নেশা চোখেই তাকালো মুসকানের দিকে। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে গেলো।
বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মুসকান। ইমন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ধীরে ধীরে মুসকানের দিকে এগোতে লাগলো। দুটো নেশা যখন একসাথে কাজ করে তখন আর মানুষ তার নিজের মধ্যে থাকে না ইমনের ও ঠিক সেই অবস্থা।
মুসকানের শরীরে ইমনের হাতের স্পর্শ পড়তেই জেগে ওঠলো মুসকান। চোখ মেলে তাকাতেই ইমনকে দেখে কেঁপে ওঠলো। একটু সরতে যাবে সাথে সাথেই ইমন একদম নিজের সাথে চেপে ধরলো মুসকান কে। মুসকানের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা  কি করবে সে কিই বা বলবে। ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু সেদিনের কথা মনে পড়তেই ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেলো। হার্ট বিট বেড়ে গেলো তার ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- রাতের খাবাড় খেয়েছো?

তার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে ইমন তার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে মুখ ডুবিয়ে দিলো মুসকানের গলায়।মুসকানের পুরো গলা জুরে একমনে আলিঙ্গন করতে লাগলো। মুসকানের পুরো শরীর শিউরে ওঠলো। খামচে ধরলো ইমনের পিঠে। মুসকানের হাতের আঁচড়ে চোখ তুলে একবার মুসকানের দিকে তাকালো মুসকানের চোখ দুটো বন্ধ সেই সাথে চোখের পাতাগুলো কাঁপছে। যা দেখে ইমনের পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো।  ইমন ঘোর লাগা চোখে  ধীরে ধীরে মুখ এগুতে লাগলো তার মুখের দিকে ।মুসকানের শ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। ইমন তার ঠোটের স্পর্শ মুসকানের ঠোঁটে দিতেই মুসকান ইমনের দুগালে শক্ত করে  ধরে সরিয়ে দিলো।  ইমন একটু সরে যেতেই মুসকান ওঠে বসে ওড়নাটা ঠিক করে নিলো।
মুসকানের এমন কান্ডে ইমন প্রচন্ড রেগে গেলো। এমন কঠিন মূহুর্তে এমন আচরন সে আশা করেনি। আবার মুসকানের সাপোর্ট ও আসা করেনি।
নেশার ঘোরে নিজের মাথা ঠিক রাখা যায় না তবে কিছু কিছু কষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যায়।
কিন্তু মুসকান তার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দিয়েছে। পরিবারের সাপোর্ট পাচ্ছে না। মা বাবা ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছে। আর যার জন্য সবার বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেও তাকে এইভাবে অবহেলা করছে। সমস্ত রাগ এখন মুসকানের উপর এসে জমা হলো। রাগে চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করলো তার।  রাগী চোখে  বড় বড় করে তাকালো মুসকানের দিকে।

চলবে……..

বউ চুরি পর্ব : ৯

0

বউ চুরি
পর্ব : ৯
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

মুসকানের জ্ঞান হারানোর খবড় শুনে ছুটে আসে ইমন। কি করে এমন হলো প্রশ্ন করায় রূপম বলে দেয় যে সে সব জানিয়ে দিয়েছে মুসকান কে।

এটা তুমি কি করলে ? আমার কাছে না শুনেই তুমি কেনো করলে এটা বলেই মুসকানের কাছে গিয়ে গালে হাত দিতেই বেশ তাপ অনুভব করলো।
কপালে হাত দিয়ে, গলায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে গা পুরে গেছে। এটাই স্বাভাবিক কাল রাতে যা হয়েছে এরপর এটুকুই তো স্বাভাবিক । বয়সটা নিতান্তই কম কিন্তু ওর এতোবড় ভুলটা আমি কি করে সহ্য করতাম । মনপ্রান দিয়ে যে শুধুই ওকে ভালোবেসেছি আমি।  দ্বিতীয় কোন নারীর আগমন ঘটতে দেইনি। শুধুমাএ ওকে চেয়ে এসেছি সেই ছোট বয়স থেকেই। আমার ভালবাসার গভীরতা কতোটা সেটা তো এই বাড়ির সবাই, মহান আল্লাহ তায়ালা জানে। তাহলে কেনো এইসব ঘটছে। আমিতো এসব চাইনি আমি তো মুসকান কে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে চেয়েছিলাম । ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এরকম বিবস্ত্র করে তো ওকে কাছে চাইনি কখনো তাহলে কেনো এসব ই হলো। কি করে মেনে নিতাম আমি মুসকান এর পাশে অন্য কাউকে। নিজের জিনিসে কখনো এই ইমন অন্যকারো ভাগ বসাতে দেয় নি আর ভবিষ্যতেও কখনো দিবে না। যা আমার তা তো আমারই হবে । এতোদিন যেটা আমি ভালোবেসে উসুল করতে চেয়েছি ভালোবেসে কাছে পেতে চেয়েছি সেটা না হয় এখন অন্যভাবে উসুল করে নিবো। তবে আমার আঠারো বছরের পরিশ্রম বৃথা হতে দিবো না । এতো তারাতারি হাল আমি ছাড়বো না। যেটুকু করেছো তার শাস্তি পেয়েছো মুসকান কিন্তু ভবিষ্যতে যেনো আর কখনো এমন কিছু তোমার কল্পনা তেও না আসে সেই ব্যবস্থাও করবো। ভালবাসার মানুষ অন্যকারো হয়ে যাওয়ার ভয়, নিজের মানুষ ছেড়ে গেলে যে তীব্র যন্ত্রনা হয় সেটা তুমি এবার হারে হারে টের পাবে। মনে মনে অসংখ্য ভাবনা ভেবে ডক্টর কে ফোন করলো ইমন।

ইমন এটা বলাটা উচিত ছিলো বলেই বলেছি । কিন্তু এখন কি হবে দাদুকে নিয়ে আসছে। ভাবতে পারছিস মুসকান কে দেখলে সবার মনোভাব কি হবে। মুসকানের সাথে কি হবে ভাবতে পারছিস। ( রূপম )

যা হবে একদম ঠিক হবে  । এটাই ওর প্রাপ্য ছিলো। ভুল করলে তো তার মাসুল দিতেই হবে । এখন যদি ওর ভুলের শাস্তি ওকে না দেওয়া হয় তাহলে আবার ও ভুল করতে ওর দ্বিধা হবে না। আবারো যে একি ভুল করবে না তার কি গ্যারান্টি দিতে পারো তুমি।
ওকে আমি খুব কষ্টে বহুদূর থেকে নিয়ে এসেছি। ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য না ওকে সারাজীবন নিজের কাছে রাখার জন্যই।  যেটা সহজ ভাবেই করা যেতো সেটা তো ও নিজেই কঠিন করে ফেলেছে। এখন ও নিজেউ ভোগ করুক এসব । আমি যেমন ওকে ভালোবাসি ঠিক তেমনি আমার পরিবারকেও ভালোবাসি । আমার কাছে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ আমার বউ ঠিক ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ আমার পরিবার। যদি মুসকানের অতীত টা এমন না হতো যদি মুসকান কে আগে থেকে সব জানানো হতো। আর সব জেনে ও এমন ভুল করতো তাহলে একদম জানে মেরে দিতাম। কারন আমার জিনিস আমার না হলে আর কারোই হতে দিতাম না । এতে সারাজীবন জেলের ভাত খেতেও রাজি হতাম বা ভাসি তে ঝুলতেও দ্বিধা করতাম না । কিন্তু ওর ভাগ্য টা ভালো মহান আল্লাহ তায়ালা ওর ভাগ্যের সাথেই আমার ভাগ্য জুরে দিয়েছে। না ঠিক তা না আমার ভাগ্যের সাথে ওর ভাগ্য জুরে দিয়েছে ।
এ ভালবাসার গভীরতা বিশাল।
কারো সাধ্য নেই এই ভালবাসার মাঝে বাঁধা হয়ে আসার ।

রূপম ইমনের কাঁধে হাত রেখে বললো- সত্যি তুই পাগলের মতো ভালোবাসিস মেয়েটাকে। দেখিস মুসকান ও তোকে একদিন তোর থেকেও হাজারগুন বেশী ভালোবাসবে।
ইমন বাঁকা হেসে বললো- আমার থেকে বেশী ভালোবাসবে ও কখনোই না।  অন্য সব দিক দিয়ে ওর থেকে পিছিয়ে থাকলেও এই দিক দিয়ে আমিই এগিয়ে থাকবো । কারন ওর আগে আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।  তীলে তীলে সাজিয়েছি ওর জীবন আমি । ওর আঠারো বছরের জীবন গড়ে তুলেছি আমি এই ইমন চৌধুরী। ❤❤

ডক্টর এসে মুসকান কে চেক আপ করলো। ডক্টর ইমনের দিকে অবাক হয়ে একবার তাকালো । ইমন বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো। মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু বলার মতো ভাষা নেই তার। ডক্টর কিছু ওষুধ লিখে দিলো আর বললো- শরীরটা বেশ দূর্বল পালস অনেক বেশী। ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করাও, রেষ্টে রাখো আর ওষুধ গুলো ঠিকভাবে খাওয়িয়ে দিও সাত দিনেই সেরে যাবে। ডক্টর চলে যাবে দরজার কাছে গিয়েও থেমে গেলো পিছন দিকে তাকিয়ে বললো- ইমন..

জি আংকেল বলুন।
তুমি খুব বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ছেলে আশা করি এমন কিছু করবে না যাতে সেই উপাধিটা চলে যায়।
খেয়াল রেখো নিজের বউ এর বলেই বেরিয়ে গেলো।
মইন চৌধুরীর বন্ধু ইশতাক ডক্টর ছোট থেকেই তার এ বাড়িতে আসা যাওয়া। মুসকান ইমন সম্পর্কে সে ভালোভাবেই জানে। এমনকি গতোকাল কি ঘটেছে সবই শুনেছে। তবুও তার মনে হলো মেয়েটা বাচ্চা মেয়ে  ভুল করে ফেলেছে শুধরে দেওয়া যাবে। আজ যদি তার মেয়ে এমন ভুল করতো তাহলে সেও সুদরে দেওয়ার চেষ্টা করতো। একটা সুযোগ অবশ্যই দিতো।  তাই ইমন কে ওভাবে বলে চলে গেলো।
ইমন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলেয়া চাচী কে সব বুঝিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন মুসকানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আলেয়া চাচী মুসকানের জন্য খাবাড় তৈরী করছে।
ইমন মুসকানকে বেশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে যাচ্ছে কাল রাতের কথা ভাবতেই তার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠছে।
কিন্তু কোন উপায় ছিলো না যে এটা ছাড়া। আমি যে সত্যি কাল নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমার এই হিংস্র রূপ তোমার কাছে বের করতে চাইনি। কিন্তু তুমিই বাধ্য করলে। ( মনে মনে )
মুসকানের ঠোঁট, গলার দাগ গুলো দেখে ইমনের বেশ খারাপ লাগলো। ওড়না দিয়ে ভালোভাবে গলাটা ঢেকে দিলো কিন্তু মুখ তো আর ঢাকা যাবে না।
থাকুক ভুল করেছো শাস্তি পেয়েছো আর এ চিন্হ টা তো আমার ই দেওয়া। ভেবেই কষ্টের মাঝেও এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো ইমনের মুখে।

আলেয়া চাচী মুসকান কে ওঠিয়ে হালকা খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো। মুসকান ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো । ঘুমের ঘোরেই বির বির করতে লাগলো – আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার খুব লাগছে ছেড়ে দাও আমায়। ইমন যখন আরেকবার মুসকান কে দেখতে তার রুমে আসে তখন মুসকানের বির বির করা কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করে । আর সব বুঝতেও পারে । বড্ড মায়া হলো তার ভালবাসার কাছে প্রত্যকটা মানুষ ই খুব দূর্বল হয়।
রাগের বশে খুব খারাপ কিছুই হয়ে গেছে। আমার বোঝা উচিত ছিলো ওর সহ্য করার ক্ষমতা কতোটা ধ্যাত বলেই বেরিয়ে গেলো ইমন।
তাকে যে এখন অনেক কঠিন সময় দিয়ে যেতে হবে। আর একজনের ও তো শাস্তি পাওয়ার আছে। নিজের বউকে শাস্তি দিয়েছি কিন্তু এইসবের নাটের গুরু যে তাকে তো এবার শাস্তি পেতেই হবে।

মোতালেব চৌধুরী কে হইল চেয়ারে করে বাড়িতে প্রবেশ করালো মোজাম্মেল চৌধুরী। ইরাবতী, দীপান্বিতা, দিপু, মহিউদ্দিন মোতালেব চৌধুরীর ছেলে রূপমের বাবা ও এসেছেন মফিজ চৌধুরী সেজো ছেলে সেও এসেছেন । আরেক ছেলে মতিস চৌধুরী সে গ্রামে ফিরে গেছেন কিছুক্ষন আগেই ।
বাড়িতে আসতেই মুসকানের আসার খবড় শুনে মোজাম্মেল চৌধুরী হুংকার ছাড়লেন । কিছুতেই সে তার বাড়িতে মুসকানের জায়গা দিবে না।
মোতালেব চৌধুরীর এক হাত অবশ হয়ে গেছে। মুসকানের উপর তার রাগের মাএা কতোটা এ মূহুর্তে বুঝা যাচ্ছে না । তিন ছেলে মিলে মোতালেব চৌধুরী কে তার রুমে পৌঁছে দিলো৷ ইরাবতী, দীপান্বিতা ইমন কে কড়া গলায় বললো- কেনো সে মুসকান কে ফিরিয়ে নিয়ে এলো?
মা, চাচীর প্রশ্নে ইমন লজ্জিত। কিন্তু কি করবে ভালবাসার কাছে এই লজ্জা টা যে কিছুই না । ইমন আর রূপম মিলে সবটা বুঝালো তাদের তবুও তারা মানতে রাজি না । মুসকানকে তার অতীত সম্পর্কে জানানোর পর তার অবস্থার কথাও জানানো হলো। এবার দুজন ঠান্ডা হলো। বিস্মিত চোখে তাকালো রূপমের দিকে।

হ্যাঁ বড় মা হ্যাঁ কাকি সবটা শুনে অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে মেয়েটা। অনুতপ্ত সে আর মুসকান যে ছেলের সাথে চলে গিয়েছিলো সেও ওকে ঠকিয়েছে। আসলে ছেলেটা বিবাহিত ভন্ড উদ্দেশ্যে এসব করেছে সে।
এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো আমার ছেলের এমন নিষ্পাপ ভালোবাসাকে ওপেক্ষা করে বেইমানী করে  প্রতারনা করে নিজেই এক প্রতারকের পাল্লায় পড়েছিলো৷ কিন্তু ওর জন্য যে আমাদের পরিবারের মান সম্মান শেষ হয়ে গেলো। বাবার এই অবস্থার জন্য তো শুধুমাএ মুসকান ই দায়ী। ওর ভুলের কি সত্যি ক্ষমা হয়।
ইমন কি বলবে আর কিছু বলার ভাষা নেই তার। সে বেরিয়ে গেলো।  যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলো- যাই করো না কেনো ও যেনো এ বাড়ির বাইরে পা না রাখে। মনে রেখো মুসকান আমার লিগ্যাল ওয়াইফ।

ইরাবতী ছেলের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।
আমার ছেলেটার এই ভালবাসার যোগ্য কি ঐ মেয়ে।
বড় মা দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস এবার মুসকান ইমনকে আর ওপেক্ষা করতে পারবে না।
দীপান্বিতা কিছু বললো না। সেখান থেকে চলে গেলো। এদিকে মুসকান বেঘোরে পড়ে ঘুমাচ্ছে জ্বর টা ছাড়েনি তার । এবাড়ির কেউ তার খোঁজ নেওয়ার জন্য আসেনি। আলেয়া ও কাজে ব্যাস্ত দীপান্বিতার মনটা ছটফট করছে খুব কিন্তু সাহস করে ওঠতে পারছেনা যাওয়ার।
দিপু এসে মুসকান কে দেখে গিয়ে দীপান্বিতা কে বললো ঘুমাচ্ছে তাই সে আর এলো না। হাজার হোক মেয়ের পরিচয়ে বড় করেছে পেটে ধরেনি কিন্তু পাঁচ দিন থেকেই মানুষ করেছে সে। মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছে মায়াটা তার ও যে বেশ রেয়েছে মুসকানের প্রতি। দুপুরে সবাই যে যার মতো খেয়ে নিলো। মুসকানের কথা কেউই স্বরন করলো না। সবার খাওয়ার পর দীপান্বিতা আলেয়া কে দিয়ে মুসকানের খাবার পাঠিয়ে দিলো।আলেয়া মুসকানের খাবাড় সহ ওষুধ নিয়েও গেলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হেনার বাবা মা মেয়ের সব কথা শুনে বেশ লজ্জিত।
ইমনের সামনে মেয়েকে ঠাশশ করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলো। ছিঃ এই জন্য তোকে পড়াশোনা করাচ্ছি এইসব করার জন্য তোকে ফোন হাতে দিয়েছি। অন্যের জীবন কে শেষ করে দেওয়ার জন্য।
হেনা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো – আমার কি দোষ বাবা মুসকান ই তো বলেছিলো জয়ের সাথে কথা বলবে। জয় কে ভালোবাসে আর ইমন ভাইয়া মুসকান কে জোর করে বিয়ে করেছে।
মুসকান বলবে বলেই তুই এসব করবি বলেই আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো গালে।
ইমন সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ফোন বের করে একটা রেকর্ড অন করলো-

হ্যাঁলো নিলা….
হুম হেনা বল কি খবড়?
খবড় তো ঝাক্কাস…..
হেনার গলা শুকিয়ে গেলো বড় বড় চোখ করে তাকালো ইমনের হাতের ফোনের দিকে।
তাইনাকি সব প্ল্যানে কাজ হয়ে গেছে??
হ্যাঁরে এতোদিন ধরে মুসকান বোকা টা কে যে ভাবে খুশি সেভাবে নাচিয়েছি। যেদিন থেকে শুনেছি মুসকানের প্রতি ইমন ভাইয়ার আলাদা টান আছে। সেদিন থেকেই মুসকানের মনে একটু একটু করে বিষ ঢুকিয়েছি ইমন তার চাচাতো ভাই তাকে কখনো যেনো এর বেশি না ভাবে সেই জন্য দিনের পর দিন বুঝিয়ে গেছি।

তাও কি কাজ হলো বিয়ে তো করেই ফেললো। ( নিলা)

আরে শোন আগে সবটা।
হুম বল?
বিয়ে হয়েছে তাতে কি ওদের মধ্যে সেরকম কোন সম্পর্কই নেই মুসকান নিজে বলেছে আমাকে। তাই তো সেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে জয়কে জানাই  তারপর মুসকান কে বুঝাতে থাকি ইমন ভাইয়া ওর জাষ্ট  ভাই  ভাই কে কখনো স্বামীর স্থান দেওয়া যায় না। আর আমি সফল ও হই মুসকান কখনোই ইমন ভাইয়ার প্রতি দূর্বল হয়নি বরং ঘৃনার পরিমান বেড়ে গেছে। সেই সাথে জয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই। জয়ের ব্যাপারে ভালো ভালো কথা বলি মুসকান ও গলে যায়। অবশেষে ছক্কা মেরে দিয়েছি। জয়ের সাথে পালিয়ে গেছে আর এই মনোরম দৃশ্য টার পিকচার ওঠিয়ে নেটে ছেড়ে দিয়েছি। ইমন ভাইয়া আর মুসকান কে ভালোবাসবে না। তাদের পরিবারের মান সম্মান ডুবিয়ে যে মেয়ে চলে গেছে সে মেয়েকে তারা আর কেউ মেনে নিবে না। ইমন ভাইয়াও শখড পাবে আর এই সুযোগ টাই কাজে লাগাবো আমরা । তোর ভাইয়ের মাধ্যমে যে করেই হোক ইমন ভাইয়ার সাথে আমার কানেক্ট করিয়ে দিবি।

ওকে দোস্ত আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।

ইমন রেকর্ড টা অফ করে হেনার সামনে গিয়ে ঠাশশ করে একটা থাপ্পর দিলো । হেনা টাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে গেলো। গালে তার পাঁচ আঙুল স্পষ্ট ফুটে ওঠলো।
ইমন হেনার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো- মেয়েকে ঠিক ভাবে মানুষ করতে পারেননি । দুইটা চড় দিলেন হাত দিয়ে না কি দিয়ে বুঝতে পারলাম না  মাড়তে হলে এইভাবে মারবেন।
হেনার বাবার মুখটা চুপসে গেলো।
ইমন হেনার উদ্দেশ্য বললো- এই মেয়ে বয়স কতো তোমার। হেনা ওঠে দাঁড়ালো কান্না মিশ্রিত গলায় বললো আঠারো। বাহ বেশ বুদ্ধিমান মেয়ে বয়সের সাথে বুদ্ধি টাও বেশ তবে কি জানো পাকা না কাচাই রয়ে গেছে।
তবে তোমার প্ল্যান টা কিন্তু জোস ছিলো। আমি আগেই জানতাম এতো বড় কাজ মুসকানের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় । মানুষের যখন পতন আসে তখন সে নিজের বুদ্ধির থেকে পরের বুদ্ধি তে বেশী চলে মুসকানেরও ঠিক একি অবস্থা হয়েছে।
আর কি বললে মুসকানের জন্য মান সম্মান
নষ্ট হয়েছে??  না মান সম্মান তো তোমার জন্য নষ্ট হয়েছে। তোমাকে আর কি শাস্তি দিবো বলো হাটুর বয়সি মেয়ে হয়ে তুমি আমার সাথে খেলতো এসেছো। তোমার ঘটে যদি বুদ্ধি থাকতো তুমি আমার বিশ্বস্ত বডিগার্ড এর বোন এর কাছে ফোন দিয়ে নিজের কুকীর্তির কথা বলতে না। যা করেছো করেছো যা ক্ষতি হওয়ার আমাদের পরিবারের আর মুসকানের হয়েছে । তুমি একটা মেয়ে বাচ্চা মেয়ে তোমাকে আর কিছু বলতে চাই না শুধু মুসকানের আশে পাশে যেনো তোমায় না দেখি। মেয়ে বলে ছেড়ে দিলাম তোমায়। হেনার বাবা মা  ভয়ে  ঢোক গিললেন।

আপনি মুসকান কে তবুও মেনে নিবেন?
তাহলে আমার কি হবে বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ওঠলো হেনা।
ইমন বাঁকা হেসে বললো – চিন্তা করো না বড় হও তোমার পাএ আমি জেগাড় করে দিবো।
আমার বউ হওয়ার বয়স বা ভাগ্য কোনটাই তোমার হয়নি আর হবেও না।

হয়েছে মুসকান আর আমি তো একি বয়সি।
এই চুপ কর তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ( হেনার বাবা)

ইমন আবারো বাঁকা হেসে বললো – তুমি মুসকান নও। এটা সব সময় মাথায় রেখো। আর হ্যাঁ মুসকান হওয়ার চেষ্টা ও করো না । এই পৃথিবীতে মুসকান এক পিস ই রয়েছে আর মুসকানের ইমন ও এক পিস ই রয়েছে।

মেয়ে কে সামলে রাখবেন। আপনার সম্মান আপনার মেয়ের সম্মানের কথা ভেবে ছেড়ে দিলাম। মেয়ে টার ভালো চিকিৎসা নিবেন এই বয়সেই এমন হলে ভবিষ্যতে বিপদে পড়বেন। হেনার বাবার উদ্দেশ্য কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেলো ইমন।

হেনা তার কাজে ফেইল করে গেলো । তার প্রথম প্রেম শুরু হওয়ার আগেই ভেঙে গেলো। খুব শখড পেলো গালে হাত দিয়েই কাঁদতে লাগলো।
কাঁদিস না মা তোর জন্য অনেক ভালো ছেলে আসবে দেখিস। (হেনার মা)
হেনার বাবা বিরক্তি মুখ করে চলে গেলো মা মেয়ের সামনে থেকে।

রাত দশটায় বাড়ি ফিরলো ইমন। আলেয়ার কাছে মুসকানের খবড় শুনে মুসকানের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো  । কারন তার রুমে মুসকান রয়েছে ।
ইরাবতী ছেলের কাছে এসে বললো- বাবা খাবি না??
না মা ভালো লাগছেনা শুয়ে পড়ো গিয়ে।
ছেলের মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে ইরাবতী বললো-
তুই সিগারেট খেয়েছিস। তুই তো সিগারেট খাস না।

ইমন বাঁকা হেসে ওঠে বোসলো। জীবন কি এক নিয়মে চলে মা??  আমরা যেভাবে জীবন সাজাতে চাই সেভাবে কি চলে??  চলে না তো মা, আমার জীবনটাও তো সেরকমই সব নিয়ম ভেঙে গেছে।

ইরাবতী ইমনের মাথায় হাত রেখে বললো – তুই চিন্তা করিস না। তোর বাবা ডিভোর্স পেপার রেডি করবে কালই ওকিলের সাথে কথা বলবে।
আর তোর জন্য আমি মেয়ে দেখা শুরু করবো অনেক ভালো মেয়ে এনে দিবো বাবা। মুসকান তোকে স্বামী হিসেবে চায় না আর ও যা করেছে এতে তোর বাবা, চাচারাও আর ওকে তোর বউ হিসেবে মানবে না তোর দাদু ও না। এর থেকে ভালো তোদের ডিভোর্স হয়ে যাক। জীবনটাকে অন্যভাবে নতুন করে শুরু কর……..

চলবে………..

বউ চুরি পর্ব : ৮

0

বউ চুরি
পর্ব : ৮
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

বিয়ে কমপ্লিট। বিয়ে শেষে দুজনকেই নামাজ পড়তে বলা হলো। মুসকানকে ইমনের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। যেটা মোটেই মুসকানের ভালো লাগলো না। কিন্তু তার প্ল্যান অনুযায়ী সব চুপচাপ মানতে হবে। কিন্তু দুজনে একসাথে থাকতে হবে এটা ভেবেই ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেলো। কি করবে এখন  তার মাথায় কিছু আসছে না। ভারী সাজ ছেড়ে সেলোয়ার  কামিজ পড়ে নিলো। ইমন চেয়েছিলো রুমে এসে প্রানভরে তার বউ কে দেখবে। বধূর সাজে তাকে অপ্সরীর মতো লাগছিলো ইমনের কাছে। কিন্তু তার আর সে ভাগ্য হলো না। রুমে এসে দেখলো কোন সাজের ছিটে ফোটাও নেই। গাড় খয়েরি রং এর একটা সেলোয়ার পড়ে আছে । তাতেও বেশ সুন্দর লাগছে। সবেমাএ বিয়ে হয়েছে বউ বউ লাগছে তাকে। শুধু যে শাড়িতেই বউ বউ লাগবে তা নয়। এই সেলোয়ারেই মুসকানকে তার দ্বিগুণ সুন্দরী আর বউ বউ লাগছে।

অযূ করেছো ?
না।
যাও অযূ করে আসো। আমি করে এসেছি।
মুসকান কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেলো। অযূ করে মাথায় এড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে এলো মুসকান।
ইমন দেখে মুচকি হাসলো একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। বাচ্চা বউ। হাসিটা চেপেই দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে মুসকান কে নামাজে দাঁড়াতে বললো।
মুসকান ও বাধ্য মেয়ের মতো নামাজে দাঁড়ালো। দুজনেই তাদের নামাজ সম্পন্ন করলো। ইমন পাঞ্জাবি টা খুলবে এমন সময় মুসকান বলে ওঠলো-
আমার একটা কথা ছিলো।
ইমন পান্জাবিটা খুলে ফেললো। সাদা গেন্জি পড়া ছিলো বুকের লোম গুলোও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
হুম বলো বাধা কিসের।
মুসকান একটু ইতস্ততভাবে বললো- আমার পরিক্ষা যে অবদি শেষ না হচ্ছে……..
ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কিছু না বলে একটা শর্ট প্যান্ট আর টি শার্ট নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।
মুসকাম পুরো রুম জুরে পাইচারী করতে লাগলো। তার মন শরীর কোনোটাই স্থির রাখতে পারছে না।

তুমি কি বলতে চাইছো খুব ভালো করেই বুঝেছি মুসকান। বলেই বাঁকা হাসলো ইমন। বুকের ভিতর চাপা কষ্ট অনুভব করলো তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বেরিয়ে এলো ইমন।

এভাবে পাইচারি করছো কেনো যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
মুসকান অবাক চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ফেলে বিছানার এক কোনায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
ইমন এর বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠলো। এই মেয়েটা আর কতো ভাবে ইগনোর করবে আমাকে।
কেনো বুঝতে পারছে না আমার কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় বিছানায় ঐ জায়গাটাই পেলো ঘুমানোর জন্য।  কি করে বুঝাবো একে আমি। ওর মাথায় যে কিছুই কাজ করছে না। খুব জেদ এই জেদটাই না ওর কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইমন লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়লো। চোখে তার ঘুম নেই তবুও চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুসকান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।

রাত দুটায় মুসকান ঘুমের তালে নড়তে গিয়ে ধপাশ করে পড়ে গেলো বিছানা থেকে। ঘুমের মধ্যে ওভাবে পড়ায় বেশ লেগেছে সেই সাথে ঘুম ও ভেঙে গেছে। আহ করে আর্তনাদ করে ওঠলো মুসকান।
ইমন শব্দ পেয়ে দ্রুত লাইট অন করলো। ছুটে গিয়ে মুসকান কে ধরে ওঠালো। ব্যাথা পেয়েছো কোথায় লেগেছে??
মুসকান কাঁদো কাঁদো গলায় বললো – আমি এখানে থাকবো না। আমার রুমে যাবো। বলেই কেঁদে ওঠলো।
ইমন বুঝেছে বেশ লেগেছে।
কোথায় লোগেছে বলো।
না কোথাও না। আমি এখানে ঘুমাবো না। আবার যদি পড়ে যাই। প্লিজ আমার রুম যেতে দাও।
ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান তার সাথে এক রুমে থাকতে চাচ্ছে না। আর পরে যাওয়ায় এটাকে ইশু করে চলে যেতে চাইছে।
তুমি চলো ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায় মিসেস চৌধুরী ভেবেই বাঁকা হাসলো ইমন।
এটাই তোমার রুম মাঝরাতে বিরক্ত করো না। আর যাতে না পড়ো সেই ব্যাবস্থাই করছি। বলেই লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো।
কি করছো ছাড়ো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো মুসকানের।
ইমন তার কথার উওর না দিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো। নিজেও শুয়ে পড়লো।মুসকান ওঠতে যাবে ঠিক তখনি একটানে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলো। নিজের সাথে জাবটে ধরলো মুসকানের মাথাটা ঠিক তার বুকে ঠেকে আছে। মুসকান ছুটতে চেষ্টা করছে কিন্তু ইমন তাকে সম্পূর্ণভাবে তার সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। তার দুপা দিয়ে মুসকানের পা আঁকড়ে রেখেছে। হাত দিয়ে মুসকানের পিঠ চেপে রেখেছে। তবুও মুসকান ওঠার চেষ্টা করছে।

এই একদম চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। এবার আর পড়বে না কারন পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গায় আছো এখন তুমি। মুসকান তবুও চেষ্টা করলো। কিন্তু না পাড়লো না অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ইমনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো। মুসকানের ঘুমন্ত নিশ্বাস ইমনের বুকে পড়ছে। প্রচন্ড সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে তার। বাসর রাত টা তার স্বার্থক মনে হচ্ছে।

এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। মুসকানও পড়াশোনায় মনোযোগ দিলো।সারাদিন ইমনের আশে পাশেও ভিড়ে না মুসকান। কিন্তু রাত হলে যতোই ছলচাতুরি করুক ইমনের বুকেই তার ঘুমাতে হয়। এতোটা স্নেহ ভালবাসা যেনো মুসকানের গায়েই লাগে না। কোন অনুভূতিই কাজ করে না তার। বরং এর থেকে রেহাই পেতে ওঠে পড়ে লেগেছে সে।
ইমন ও বাবার ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। মন দিয়ে বিজনেস সামলাচ্ছে।

মুসকানের এইচ.এস. সি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
তাই ইমন তাকে একটু বেশী সময় দিচ্ছে। এই বেশী সময় দেওয়াটা মুসকানের সহ্য হচ্ছে না। খুবই বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে তার কোন বড় সড় কাজ হাসিলে বাঁধা হয়েছে ইমন।
দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ আজ মুসকানের শেষ পরীক্ষা। মুসকান কে হলে বসিয়ে ইমন বেরিয়ে এসেছে । গাড়িতে ওঠবে এমন সময় রায়া ডাকছে – ইমন ভাইয়া দাঁড়াও তোমার সাথে কথা আছে।
একি তুমি পরীক্ষা তো শুরু হয়ে যাবে।
হোক এখনো বিশ মিনিট আছে আমি এই সময়ে তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলতে চাই।
ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কি এমন জরুরী যে এক্সাম বাদ দিয়ে এখানে এসেছে এতো তারাহুরো নিয়ে। ( মনে মনে)
আচ্ছা তারাতারি বলো এক্সাম শুরু হয়ে যাবে।
রায়ার কথা শুনে ইমনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ছিঃ এতোটা নিচ মনের মেয়েকে আমি ভালোবেসেছি ছি ঃ। ইমন আর এক মূহুর্ত সেখানে দেরী করলো না।  রায়াকে ধন্যবাদ দিয়ে ভালো ভাবে পরীক্ষা দিতে বলে চলে গেলো।
পরীক্ষা শেষে ইমন এর আসার কথা ছিলো তাই মুসকান পিছনের গেইট দিয়ে বেরিয়েছে। আর সেখানে তার অপেক্ষায় ছিলো জয়। জয়কে দেখে মুসকানের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো। জয় ও তাকে দেখে হাসি দিলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই জয় আসে মুসকান কে দেখতে।  দেশে এসেছে দুমাস হলো। কিন্তু মুসকানের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি কারন সবসময় ইমন থাকতো সাথে। ইমনের ব্যাপারে সব জানে জয় সেই সাথে মুসকানের বিয়ের ব্যাপারেও। প্রথমে ভেবেছিলো এই সম্পর্ক থেকে সরে যাবে। যেহেতু ইমন একজন নাম করা নেতা সেহেতু তার যে বেশ বিপদ হবে মুসকানের জন্য বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু ঐ যে সুন্দরী নারীর প্রতি যে কোন পুরুষেরই একটা আকর্ষণ থাকে। মুখে যতোই বলুক চেহেরা সব না মনই আসল। কিন্তু ১০০ ভাগের ৯৫ ভাগ পুরুষ ই সুন্দরের পূজারী।  জয়ের ক্ষেএেও সেটাই ঘটেছে  মুসকানের রূপ এর কাছে তার বিবেক হেরে গেছে। চেহেরার প্রেমে পড়ে সব ভুলে গেছে সে । সে যে পরের বিয়ে করা বউ এইটুকুও তার মাথায় খেলছে না তার শুধু মুসকানকে চাই। আর যেখানে মুসকানই ইমন কে মানতে পারছে না সেখানে আর অন্য কিছু ভাবতে পারেনি জয় । মুসকানের সাথে যে ইমনের শারীরিক সম্পর্কও হয়নি সে বিষয়েও জয় জেনেছে। সবটা মুসকান আর হেনার মাধ্যমেই । আর এতোদিন মুসকানের সাথে যোগাযোগ হেনার মাধ্যমেই করেছে জয়। মুসকান ও তার ফোন বা ইমনের বাড়ির কারো ফোন থেকে জয়ের সাথে যোগাযোগ করেনি। যার ফলে এ বিষয়টা সম্পূর্ণই ইমনের অজানা ছিলো।

বাইকে ওঠো মুসকানের উদ্দেশ্য বললো- জয়।
মুসকান বাইকে ওঠার আগে একবার ইমনের কথা ভাবলো- কাজটা আমি ঠিক করছিতো।
না আমি কোন ভুল করছিনা। ঐ বাড়ির কেউ আমার কথা ভাবেনি সবাই সবার ইচ্ছে চাপিয়ে দিয়েছে। যাকে ভাই হিসেবে মেনেছি তাকে কি করে স্বামী হিসেবে মানবো। জোর করে কারো মন পাওয়া যায় না মি.ইমন চৌধুরী। ( মনে মনে )
কিহলো তারাতারি করো অনেক পথ যেতে হবে।
হ্যা করছি বলেই বাইকে চেপে বোসলো মুসকান। আর ঠিক সেই সময়ই দূর থেকে তাদের একটা পিকচার তুলে নিলো হেনা। সাথে সাথে পিকচারটা ফেসবুকে আপলোড করে দিলো।
দশমিনিটের মাথায় মোজাম্মেল চৌধুরীর বাড়ির সব ফোন বেজে ওঠলো। মোজাম্মেল চৌধুরী কে পিকচার ও পাঠিয়ে দেওয়া হলো। অফিস সহ পুরো বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। চৌধুরী বাড়ির মেয়ে সেই সাথে চৌধুরী বাড়ির বউ। ইমনের বউ এসব করে বেরাচ্ছে বাইরে বউ পরোকিয়া করছে। পালিয়ে গেছে সমাজের মানুষের ছিঃ ছিঃ  পড়ে গেলো। ঘরে বাইরে কোথায় মুখ দেখানোর জো রাখলো না মুসকান। মোজাম্মেল চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো৷ কিন্তু ইমন সে কোথায় এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ তাকে কেউ দেখতে পারছে না। তার জন্যই আজ চৌধুরী বাড়ির এতো ক্ষতি হয়ে গেলো। কি করে মুখ দেখাবে তারা মানুষ কে। ইরাবতী কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়লো।তারপর যা হলো সেটা সবার ধারনার বাইরে।
মোতালেব চৌধুরী সব শুনে  স্ট্রোক করলেন। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে হসপিটাল ছুটে গেলো। রূপম ও খবড় পেয়ে চলে এসেছে সবাই হসপিটালে। গ্রাম থেকে তিন ছেলেও চলে এসেছে বাবার খবড় শুনে। দিপু, দীপান্বিতা ইরাবতী সবাই কেঁদে চলেছে।
মোজাম্মেল চৌধুরী বলে দিয়েছেন ঐ মেয়েকে আর তার বাড়িতে জায়গা দিবে না। আর তার ছেলে তার ও এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু মাএ তার জেদের কারনে আজ মোতালেব চৌধুরীর এই অবস্থা। ছেলে ছেলের বউ কারো ক্ষমা নেই।

দু’ঘন্টা পর –
ইমন তার বাবাকে ফোন করলো আর শুধু একটা কথাই বললো- বাবা তোমরা দাদুর ভালো চিকিৎসা নাও সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এই শেষবার তোমার ছেলের উপর ভরসা করো। আমাদের পরিবারের মান সম্মান যে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে তাকে আমি ছাড়বো না। আর যার জন্য দাদুর এই অবস্থা তাকেও এবার কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর আজ কেউ বাড়ি আসবে না। হসপিটালের কাছে আমাদের যে ফ্ল্যাট আছে সেখানে থাকবে। আলেয়া চাচীকে পাঠিয়ে দিয়েছি সেখানে। ইমন তার সব কথা বলে ফোন কেটে দিলো। যতোই হোক মোজাম্মেল চৌধুরী আর ইরাবতীর একমাএ ছেলে ইমন। তার কথা ফেলতে পারেনা কেউ। আর তার ছেলে কোন অন্যায় করার মতো ছেলে না। শুধু মাএ মুসকানের প্রতি দূর্বল থাকায় মুসকান কে বেশ ছাড় দিয়েছে। তবে এবার ইমন চুপ করে থাকবে না সেটা মোজাম্মেল চৌধুরী ভালো ভাবেই টের পেলো। একদিকে মুসকানের প্রতি রাগ অপর দিকে করুনা হলো।

জয় আর মুসকান ঢাকার বাইরে এসে গেছে। মুসকানের পানি পিপাসা লাগাতে জয় পানির বোতল কিনতে গেছে  মুসকান কে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে।
মুসকানের কেমন অস্থিরতা লাগছে। জীবনে প্রথম পরিবার ছাড়া একা কোথাও যাচ্ছে। আপনজনদের ছেড়ে এসে তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। তবে এই খারাপ লাগার মাঝে যে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করলো সেটার বিষেসত্ব কারন সে খুজে পেলো না।
আরেকটা জিনিস ও সে অনুভব করলো রাস্তায় জয় তাকে একা ছেড়ে পানি আনতে চলে গেলো। কিন্তু আজ জয়ের জায়গায় ইমন থাকলে সে সেটা কখনোই করতো না । কারন ছোট থেকে যেভাবে দেখেছে ইমন কে তাতে এভাবে খোলা রাস্তায় একা দাঁড় করিয়ে রাখার মতো ছেলে ইমন না । মনের অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে।
মানুষ তার ভুল গুলো তখনি বুঝতে পারে যখন তার একটা ভুলের কারনে জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায় । কিন্তু মুসকান ভুল বুঝতে পেরেছে কিনা সেটা তেমন বোঝা গেলো না । তবে তার বুকের ভিতর যে শূন্যতা অনুভব হচ্ছে সেটা ঠিক বোঝা গেলো।

আমিতো জয় কে ভালোবাসি তাহলে কেনো জয়ের সাথে একসাথে থেকেও আমার মনে শান্তি আসছে না। কেনো আমি খুশি হতে পারছিনা। কেনো এমন অশান্তি লাগছে। কেনো ইমন ভাইয়া কে বার বার মনে পড়ছে। মনে মনে ভাবতে ভাবতে তার খেয়াল হলো আশে পাশে অনেক মানুষ তাকে লক্ষ করছে। কানাকানি করছে। মুসকান একটু ইতস্ততভাবে গুটিশুটি মেড়ে দাঁড়ালো।
জয় এখনো আসছে না কেনো সন্ধ্যা নেমে এলো কোথায় জয় । কয়েকটা বখাটে ছেলে মুসকান কে দেখে মুসকানের দিকে এগোতে লাগলো। মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। হঠাৎ ই ছেলে গুলো পিছিয়ে গেলো আর এগুলো না মুসকান পিছন ফিরে তাকাতেই বেশ কয়েকজন ছেলে দেখতে পেলো। এদের দেখেই ঐ ছেলেগুলো চলে গেলো। ভয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো মুসকান।
ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে একটা ফোন এগিয়ে দিলো। একটা ভিডিও অন করে মুসকানের দিকে এগিয়ে দিতেই মুসকানের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠলো। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো । থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ভিডিওতে স্পষ্ট জয় কে ইমন গাছের সাথে বেঁধে মারছে। মারতে মারতে আধ মরা করে এম্বুলেন্স করে পাঠিয়ে দিলো।
মুসকান ভয়ে কেঁদে ওঠলো। একজন ছেলে বললো- দোষ আপনার বেশী তাই জয় জানে বেঁচে গেলো। নয়তো ওর জান এখানেই খতম করে দিতাম আজ । মুসকানের নাকের কাছে একটা স্প্রে করতেই মুসকান জ্ঞান হারিয়ে ঢোলে পড়লো।

রাত এগারোটা বেজে গেছে। ইমনের রুমে মুসকান বেঘোরে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আর ইমন একের পর এক সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। সাতাশ বছরের জীবনে এই প্রথম সিগারেট খাচ্ছে ইমন। শুধু সিগারেট নয় মদ ও পান করে চলেছে সমান তালে। চোখ দুটো তার রক্তবর্ণ ধারন করেছে। হিংস্র বাঘের থেকেও ভয়ংকর লাগছে তার চোখ দুটো।
এক বোতল মদ শেষ করে ছুঁড়ে  ফেললো। ঢোলতে ঢোলতে ওঠে দাঁড়ালো ইমন বিছানা থেকে একটানে মুসকান কে তুলে বাথরুম নিয়ে  ছিটকে ফেললো।ঝর্ণা জুরে দিলো। পানি গায়ে পড়তেই মুসকান হালকা জেগে ওঠলো । তার শরীর যেনো অবশ হয়ে আছে মুসকানের জ্ঞান ফিরতে দেখেই ইমন তার শরীর থেকে শার্ট খুলে ফেললো।
মুসকান হুহু করে কেঁদে ওঠলো। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে আর ইমন কে এমন ভয়ংকর রূপে দেখে সে আঁতকে ওঠলো। একটু পিছুতেই দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলো। ইমন একদম এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে।
মুসকান দুহাত জোর করে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও আমায়। ইমন মুসকানের দুগালে শক্ত হাতে চেপে ধরলো। এই কিসের ক্ষমা তোকে তোর মতো চরিএহীনা কে কখনো ক্ষমা করা যায় না।
ততুমি নেশা করেছো…….
মুসকানের গাল ছেড়ে দিলো। হ্যা করেছি নেশা আজ তোর এমন অবস্থা করবো যে তুই কল্পনাও করতে পারবি না। এই ইমন কতোটা ভয়ংকর হতে পারে
আজকের পর দেখবি তুই। দেখবি আমার রূপ কতো ভয়ংকর। তোকে ভালবেসেছি বলে এতোদিন তোকে আমি কিছু বলিনি কিন্তু আজ তুই কি করলি। তুই আমার পুরো পরিবারটাকেই শেষ করে দিলি।
মানে। ( তুতলাতে তুতলাতে বললো মুসকান )
এই চুপ একদম ন্যাকামি করবি না। তোর জন্য আমার দাদু হসপিটালে রয়েছে স্ট্রোক করেছে। তোর জন্য আমার বাবার মান সম্মান আমার মান সম্মান ধূলোয় মিশে গেছে । ইমন আর কিছু না বলে মুসকান কে টেনে বাথরুম থেকে বের করলো।
কি হয়েছে দাদুর??  আমি দাদুর কাছে যাবো।
এই চুপ সব ছেড়ে চলে গিয়েছিলি আর কোন অধিকার নেই তোর এই বাড়িতে। তোকে এনেছি একটাই কারনে সেটা কি জানিস। তোর মতো মেয়ের সাথে ঠিক যা করা দরকার তার জন্যই এনেছি। ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য তুই না। যা পাওয়ার যোগ্য সেটাই পাবি আজ তুই। বলেই মুসকানের ওড়নাটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো।পিছন দিকে ঘুরিয়ে জামার চেইন খুলে ফেললো।
মুসকান ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্লিজ আমাকে দাদুর কাছে যেতে দাও। এমন করো না প্লিজ।  ইমনের পায়ের কাছে বসে পায়ে ধরে অঝরে কাঁদতে লাগলো মুসকান। ইমন আরো দ্বিগুন রেগে গেলো একটানে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। রাগে ক্ষোপে ঝাপিয়ে পড়লো মুসকানের উপর। মুসকান ছটফট করতে লাগলো। ইমনের শক্তির সাথে সে পেরে ওঠছে না। ইমন হুশে নেই নেশায় উন্মাদ হয়ে গেছে আজ সে । মুসকানের আর্তনাদ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না।
মুসকানের চিৎকার রুমের চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকলো। বাড়িতে একটা পিপড়াও নেই যে মুসকান কে ইমনের থেকে রক্ষা করবে।
সারারাত ইমন মুসকানের শরীরের উপর তার সমস্ত রাগ ক্ষোপ ঝাড়লো। মুসকান আর্তনাথ করতে করতে এক সময় চুপ হয়ে গেলো। তবুও ইমনের কোন খেয়াল নেই সেদিকে। এই একটা কারনেই আজ সে নেশা করেছে  কারন হুশে থাকলে মুসকানের আর্তনাদ সে সহ্য করতে পারতো না।

শেষরাতের দিকে ইমন ছেড়ে দিলো মুসকান কে। মুসকান এখন আর চিৎকার করছেনা। কান্নার শব্দ ও পাওয়া যাচ্ছে না। ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে বাইরে চলে গেলো। মুসকান শরীর ব্যাথায় ওঠার সাহস পেলো না  বিছানায়ই নেতিয়ে পড়লো। আজানের সময় মুসকান ওঠে বোসলো বিছানার চাদর গায়ে চেপেই বাথরুম চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। আয়নার সামনে তাকাতেই বিবস্ত্র অবস্থায় নিজেকে দেখে ডুকড়ে কেঁদে ওঠলো।
ঠোঁটে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে , ঘারে জখম হয়ে আছে কামিজ ওঠিয়ে পেটে তাকাতেই নোখের আচ দেখতে পেলো। গলার নিচে কামড়ের দাগ স্পষ্ট। চোখ বেয়ে পানি পড়েই চলেছে। ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালো ভাবে ঢেকে বাইরে বেরিয়ে এলো মুসকান। পুরো বাড়িটা শুনশান নিরবতা। কেউ নেই বাড়িতে ইরাবতীর রুমে যেতেই ইমন কে দেখতে পেলো ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে । আজি প্রথম ইমনের চোখে পানি দেখলো মুসকান। ছেলেরা নাকি সহজে কাঁদে না । তাহলে ইমন ভাইয়া কাদছে কেনো?  আমাকে শাস্তি দিয়েও কি তার শান্তি হয় নি। মুসকান ভিতরে না গিয়ে চলে যাবে এমন সময় ইমন ওঠে দাঁড়িয়ে বললো-
তুই এখানে কেনো এসেছিস আর তুই এখনো এ বাড়িতে কি করছিস। বেরিয়ে যা আর কোন কাজ নেই তোর এ বাড়িতে ।  যা তোর জয়ের কাছে যা হসপিটালে গিয়ে বল তোর স্বামী তোর দেহ ভোগ করে তোকে বিদায় জানিয়েছে। দেখ তোর নাগর তোকে এক্সেপ্ট করে কিনা। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। মুসকান আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ালো না। দৌড়ে ইমনের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো। কি করে যাবে সে তার সব কিছু যে এখন ইমনের দখলে। একটা রাতেই যেনো সব বদলে গেছে। স্বামীর ছোঁয়া যে পবিএ ছোয়া সেই ছোয়া কি করে সে ওপেক্ষা করবে  সে । আর কাল সে বুঝতে পেরেছে জয়ের সাথে তার ভালবাসার সম্পর্ক নয়  যে টুকু সেটা শুধুই ভাললাগার সম্পর্ক ছিলো। যতটা টান সে ইমনের থেকে দূরে গিয়ে ইমনের প্রতি অনুভব করেছে ততোটা জয়ের সাথে থেকেও জয়ের প্রতি অনুভব করেনি। বরং সর্বক্ষন তার মনে ইমনই ঘুরছিলো। কিন্তু এখন কি করবে সে বাড়ির সবার কাছে কি করে মুখ দেখাবে।
রুমে কারো আসার শব্দ শুনে ওঠে তাকালো মুসকান।
রূপম ভাইয়া তুমি?
হ্যাঁ আমি। এই তুমি কেমন মেয়ে হ্যাঁ যে একটা ছেলের মন নিয়ে খেলা করো। একজন না এ বাড়ির প্রত্যেককেই নিয়ে খেলেছো তুমি ছিঃ।
ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে বলেই কেঁদে ওঠলো মুসকান৷ রূপম মুসকানের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তার সাথে কি ঘটেছে। তাই আর বাড়তি কথা না বলে বললো-
মুসকান আজ তোমাকে আমি অনেক বড় একটা সত্যি জানাতে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে আজ সবটা তোমার সামনে আসা উচিত। আর কতো বড় বেইমানী করেছো এই পরিবারের সাথে সেটাও জানা উচিত।

মমানে…………..
ইয়েস মুসকান। তাহলে শুনো আজ থেকে আঠারো বছর আগের ঘটনা………….. ( সব ঘটনা খুলে বললো রূপম )
সব শুনে ধপ করে বসে পড়লো মুসকান। তার মানে আমি এবাড়ির কেউ নই। আমার মা, আমার বাবা,আমার ভাই এরা কেউ আমার নয়।

না মুসকান এই বাড়িতে যদি আপন কেউ থেকে থাকে  তোমার সেটা ইমন। আর মা বাবা যা পেয়েছো সবটাই তোমার ই কিন্তু এদের পেয়েছো ইমনের জন্যই। একবার ভেবে দেখো ঐটুকু বয়সে ইমন তোমার প্রতি কতটা টান অনুভব করে এখানে নিয়ে এসেছে। এ বাড়িতে সবাই তোমাকে এতো আদর স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছে শুধু মাএ ইমনের জন্য। ইমনের মতো করে এই পৃথিবীতে কেউ তোমাকে এতো আগলে রাখতে পারবেনা এতে ভালোবাসতে পারবেনা। এমন কি যে ছেলের জন্য তুমি এতো বড় অন্যায় করলে আজ সেও তোমায় মেনে নিবে না।
মুসকান রূপমের দিকে তাকালো।
হ্যাঁ মুসকান হ্যাঁ। জয় কখনোই তোমাকে নিখূত ভালোবাসেনি ও যা করেছে সবটা তোমার রূপের জন্য মন থেকে কোনদিনই তোমায় ভালোবাসেনি।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা জয় কে ফোন করো এই নাও ফোন। ফোন করে একবার জানাও যে ইমনের সাথে তোমার বৈবাহিক সব সম্পর্ক হয়েছে এটাও বলো সবটা জোর করে করা হয়েছে। সব শুনে জয় তোমায় মেনে নিতে পারবে কিনা শুনে নাও।

মুসকান নিজেও জানে সে জয় কে ভালোবাসেনা । আর ইমনকে ছেড়ে যাওয়া এখন আর সম্ভব না  কারন মুসকান এখন সম্পূর্ণই ইমনের হয়ে গেছে । তবুও কি যেনো ভেবে জয়কে কল করলো । কাল রাতে যা হয়েছে সব বললো ।

দেখো মুসকান তুমি বিবাহিতো। আর তোমার জন্য এখন আমি হসপিটালে ভর্তি। দয়া করে আর আমাকে ফোন করো না  । স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো । আর একটা সত্যি কথা আজ বলি তোমায় আমিও বিবাহিত বিদেশে আমার বউ রয়েছে। তোমাকে দেখে আমি লোভ সামলাতে পারিনি । তাই ভেবেছিলাম তোমাকে এক রাতের জন্য হলেও আমার কাছে নিয়ে আসবো। কিন্তু তুমি ইমন চৌধুরীর খুবই মূল্যবান সম্পদ তাই তোমার গায়ে আমি কেনো কেউ ই আচঁ লাগাতে পারবে না ।
মুসকান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ফোন রূপমের কাছে দিয়ে দিলো ।

আমি এতোটা জখন্য আমি কি করে ইমনকে এতো আঘাত দিতে পারলাম। যার দয়ায় বেঁচে আছি এতো সাম্ভ্রান্ত পরিবার পেয়েছি সেই তাকেই আমি ঠকালাম। এই পরিবারের এতো বড় ক্ষতি করে ফেললাম আমি।
অপরাধ বোধে মুসকান ভেঙে পড়লো।
রূপম আরো কিছু বলতে যাবে তখনি…….  জ্ঞান হারায় মুসকান। জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই বার বার বলছিলো –

না এটা হতে পারে না এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

সারারাত শারীরিক যন্ত্রনা, রূপমের বলা কথাতে মানসিক ভাবেও বেশ আঘাত পায় মুসকান। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় তার শরীর অবশ হয়ে আসে ।  শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়েই জ্ঞান হারায় সে ।

চলবে…………………

বউ চুরি পর্ব : ৭

0

বউ চুরি
পর্ব : ৭
লেখিকা :জান্নাতুল নাঈমা

গালে হাত দিয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠলো মুসকান। ঠোটের কোনায় কেটে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে। যা দেখে ইমনের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠলো। কি করবে সে কিছু বুঝে ওঠতে পারছে না। দ্রুত সেখান থেকে সরে গেলো। মুসকানের কান্না সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। না আছে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা।

ছোট কাকি…………..
এক ডাকেই দৌড়ে এলো দীপান্বিতা পিছনে ইরাবতী ও।
ইরাবতী বললো- বাবা মাথা ঠান্ডা কর। কি হয়েছে বল আগে।
একদম চুপ মা কোনো কথা বলবে না।
ঠিক এই কারনেই আমি ওকে ফোন দিতে চাইনি  আজ দেখতে পারছো কতোদূর চলে গেছে বিষয় টা।

দেখো ইমন আজ আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমি অনেক আগেই তোমাদের বলেছিলাম মুসকান কে আগেই জানাও বিষয় গুলা। কিন্তু তোমরা ছোট ছোট করে আর এ বিষয়ে ওকে জানাওনি আমাকেও জানাতে দাও নি। আইনগত ভাবে মুসকান আমার মেয়ে হলেও ওর সব দায়িত্ব তোমরাই পালন করেছো। এমনকি শাসনটাও তোমরা করেছো। কোন ভুল করলেও বকা দেওয়ার সুযোগই দাওনি। ভাবি সবসময় ওর ভুলটা আড়াল করে নিয়েছে। আমি জানি সবটা ভালবাসা থেকেই করেছো ভাবি তবুও অতি আদরে বাচ্চারা বাদর হয়ে যায়।
আমি চাইলেও পারিনি শাসন করতে কারন দূর্বলতাটা এক জায়গায় মুসকান আমার পেটের সন্তান না।আর ইমনের জন্যই আমরা ওকে পেয়েছি। সবার আগে ইমনের অধিকার মুসকানের উপর । দীপান্বিতা কে থামিয়ে দিয়ে ইমন বললো-
কাকি মুসকানের কাছে যাও ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে।
দীপান্বিতা বড় বড় করে তাকালো। যতোই বলুক শাসনের কথা ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছে তার কিছু হলে ইমনের পর সবার আগে তার কষ্ট হবে।
দীপান্বিতা আর দেরী না করে মুসকানের রুমে চলে গেলো।

ইরাবতী ছেলেকে সান্ত্বনা দিলো- বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না। এই বয়সে ভুল হয়েই থাকে বয়সটাইতো এমন আবেগের। কিন্তু সেটা থেকে বের করে আনতে হবে আমাদের ওকে।
যে পর্যন্ত বিয়েটা না হচ্ছে মুসকানের ফোনটা তোমার কাছে রাখবে। ভুলেও যেনো ফোন ও না পায়। তাহলে কি হবে সেটা সবার কল্পনার বাইরে। বলেই চলে গেলো ইমন। ইরাবতী মুসকানের রুমে গিয়ে দেখলো
দীপান্বিতা কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে মুসকান।
ইরাবতী গিয়ে ওদের পাশে বোসলো।
মুসকান…
ইরাবতীর ডাক শুনে মুসকান ডুকরে কেঁদে ওঠলো। এতো বছরে কেউ তার গায়ে হাত তুলে নি। আর আজকে দুবার গায়ে হাত তুলেছে ইমন।
ইরাবতী আর দীপান্বিতা মিলে মুসকান কে অনেক বুঝালো। ইরাবতী হাতজোর পর্যন্ত করলো তার ছেলেকে গ্রহন করার জন্য। কিন্তু না মুসকান তার জেদ থেকে সরলো না। সে কখনোই মানতে রাজি না। তার মনে তার প্রথম ভালোলাগা জয়ই রয়ে গেছে। কিশোরী বয়সের প্রথম আবেগ।
তার সেই আবেগের কাছে এতোগুলো মানুষের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই।

পরের দিন মুসকান কলেজ যেতে চাইলেও তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হলো না।
তার ফোন ও বন্ধ করে ইরাবতী তার কাছে রেখে দিয়েছে। রূপম আর তার বউ রিপা আর মেয়ে রূপকে এসেছে। সব শুনে তারা খুবই আহত সব থেকে বেশী আহত হয়েছে রূপম। কারন রূপমই প্রথম ব্যাক্তি যে কিনা ইমনের চোখে মুসকানের জন্য গভীর টান অনুভব করেছে। ছোট্ট মুসকানকে তার অসহায় মা আর নানীর থেকে কিভাবে কতো কষ্টে এই বিলাসবহুল বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে তার প্রথম শাক্ষি এই রূপমই।
বড় মা চিন্তা করো না আমি আর রিপা মিলে মুসকান কে বোঝাবো। ইমন কোথায় এখন?
ইরাবতী বললো- ছেলেটা আমার একবারে ভেঙে পড়েছে। বাইরে থেকে যতোই নিজেকে শক্ত রাখুক না কেনো ওর ভিতরে কি হচ্ছে সেটা আমি ঠিকি বুঝতে পারছি। ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করেনা। রাতে ঘুমায় না বলেই মুখ চেপে কেঁদে ওঠলো।
বড় মা কাঁদবেন না আমরা সবাই মিলে মুসকান কে ঠিক বুঝিয়ে নিবো। আর দাদু তো এক ঘন্টার মধ্যেই এসে পড়বে।
হ্যাঁ। যাও তোমরা উপরে।
দীপান্বিতা কাকি কে দেখছি না যে?? ( রিপা )
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে – একি রূপ আপুন এসেছে নাকি??
রিপা আর রূপম বললো- কেমন আছো কাকি?
এই তো ভালো তোমরা?? এই যে রূপ আপুন এদিকে আসো।

ভালো। রূপ যাও মাম্মাম তোমার ছোট আপুন।
রূপ গুটি গুটি পায়ে দীপান্বিতার কাছে গেলো। রূপ খুবই শান্ত স্বভাবের । দীপান্বিতা রূপ কে কোলে তুলে নিলো। তাদের বংশে রূপমের ঘরেই প্রথম কন্যা সন্তান। তাই রূপ কে সবাই খুব আদর করে। সবাই জানে মুসকান প্রথম মেয়ে সন্তান মোতালেব চৌধুরীর বংশে। কিন্তু ইমনের পরিবার, রূপমের পরিবার আর দাদু ছাড়া কেউ আসল সত্যিটা জানে না।

রিপার সাথে মুসকান বেশ কিছু ক্ষন গল্প করলো। কিন্তু মুসকানের মনটা সেখানে নেই তাকে বেশ উদাসীন লাগছে। রিপা বুঝতে পারলো। রূপম কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে গেলো ইমনের রুমে ইমন এইমাএই ফিরেছে। রিপা মুসকান কে অনেক বুঝালো প্রথমে মুসকান মানতে না চাইলেও পরে চুপ করে রইলো।কারন সে বুঝে গেছে ইমন কে না মানলেও সবাই মিলে তাকে বাধ্য করবে। তাই সে আর কিছু না বলে চুপ থাকলো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে এসব থেকে বের হওয়া যায়।
জয় যদি দেশে থাকতো তাহলে সে জয়ের সাথে পালিয়ে যেতো  তবুও ইমনকে সে মানতে পারবেনা। কিন্তু সে উপায় ও তার নেই তাই সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো।
রূপ কে ঘুম পাড়ানোর জন্য রিপা চলে গেলো মুসকানের রুম থেকে।

ইমন আর রূপম বেশ কিছুক্ষন আলোচনা করলো। মুসকান কে তো মানতেই হবে ভাইয়া। যতো যাই হয়ে যাক মুসকান আমার ওকে আমি হারাতে পারবো না। যে কোন মূল্যে আমার ওকে চাই। ওকে চাই কি ও তো আমারই। সেই কোন ছোট বয়সেই ওকে আমার করে নিয়েছি আমি। সেই বয়স থেকেই একটা একটা করে স্বপ্ন বুনেছি। ঐ সময় যদি আমি ওকে ঐভাবে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আজ আমি কেনো পারবোনা ওকে আমার করে নিতে। যতোটা কঠিন হওয়া দরকার হবো। ভালোবেসে যদি নিজের করতে না পারি আজ যা হয়েছে এর থেকে কঠোরতর অবস্থা করে আমি ওকে নিজের করে নিবো। এক উপরওয়ালার ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে।
এতো হাইপার হোস না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দাদু তো আসছেই দেখ না কি হয় আজ রাতে।

কই বাড়ির সবাই কই গো??  আমার গিন্নি কোথায়……..। বউ মা…..। মোতালেব চৌধুরীর ডাকে সবাই নিচে নেমে এলো। দিপু গিয়ে জরিয়ে ধরলো। সবার সাথে কথা শেষে রূপম আর ইমনের সাথে কথা বললো।
কি দাদু ভাই আমার গিন্নি কোথায়??? ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো মোতালেব চৌধুরী।
তোমার গিন্নির তোমার শোকে  আর কোনোদিকে খেয়াল নেই। গিয়ে দেখে আসো তোমার গিন্নি কে। বলেই গট গট করে বেরিয়ে গেলো ইমন।
মোতালেব চৌধুরী চশমাটা ভালো করে চোখে লাগিয়ে রূপমের দিকে তাকালেন।
সব বলছি তুমি আগে রেষ্ট নিয়ে নাও কতো দূর থেকে এসেছো।
হ্যা বাবা আপনি আপনার রুমে যান সব গুছিয়েই রাখা হয়েছে। দিপা তুই বাবার ব্যাগটা নিয়ে রাখ। ইরাবতী কথাটা বলেই  শ্বশুরের জন্য খাবাড় তৈরী করতে লাগলেন সাথে রিপা সাহায্য করছে।
মুসকানের রুমে রূপ ঘুমাচ্ছে। মুসকান দাদু আসার খবড় শুনে বরাবরের মতো খুশি হয়নি।  কারন এবার দাদু এসেছে তার আর ইমনের বিয়ে উপলক্ষে। তাই সে রাগে দাদুর সাথে দেখা করতেও যায় নি।

কই আমার গিন্নি কোথায়?  বলতে বলতেই রুমে ঢুকলেন মোতালেব চৌধুরী। মুসকান ওঠে বললো- কেমন আছো দাদু ভাই।
মোতালেব চৌধুরী দুকাধে ধরে মুসকানের কপালে চুমু খেলো।
কেমন আর থাকি গিন্নি আমার আসার খবড় শুনেও একবারের জন্য ও বাইরে আসে নি। কি আর থাকি বলো। বিছানায় বসলো মোতালেব চৌধুরী  রূপ কে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো – দেখো একদম তোমার মতো হয়েছে দেখতে। সেই গুলগাল মুখটাই বসানো। ঠিক যেনো ছোট্ট মুসকান।
মুসকান চাপা হাসলো। বরাবরের থেকে পুরোই আলাদা আচরন । মোতালেব চৌধুরী ও বুঝতে পারলো। রূপম সবটাই খুলে বলেছে তাকে। তাই সে মুসকান কে কাছে ডেকে তার পাশে বসিয়ে তার একহাত চেপে বললো- এই যে গিন্নি সাহেবা আমার দাদু ভাই টা কি এতোই অপছন্দের পাএ নাকি?  যে তাকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছো।
মুসকানের প্রচুর রাগ হলো কিন্তু এই বয়স্ক মানুষটার সামনে সেটা প্রকাশ করলো না। হাত ছাড়িয়ে বললো- কিছু খেয়েছো দাদু ভাই চলো খাবে।
কথা ঘুরাচ্ছো??  বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো মোতালেব চৌধুরী।
মুসকান ইতস্ততভাবে বললো- না মানে আসলে।
না মানে আসলে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে তাইতো গিন্নি।
মুসকান কিছু বললো না বড্ড চুপসে গেছে মেয়েটা। সত্যি কি তাই নাকি মনের ভেতর অন্য কিছু চলছে?
মোতালেব চৌধুরী ও বেশ বোঝালো মুসকান কে মুসকান শুধু হু হা করলো । কিছুক্ষন পর কি যেনো ভেবে মুসকান বললো- দাদু বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া যায় না?  আমার আব্বুও তো এখানে নেই বড় ভাইয়াও নেই। তাদের ছাড়া কিভাবে…..
আরে গিন্নি চিন্তা করছো কেনো? এখন তো শুধু পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হবে। মইন আর দ্বিপক আসলে  বড় অনুষ্ঠান করবো। ইমন দাদু ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
হায় আল্লাহ কোনোভাবেই কি সম্ভব না এই বিয়ে আটকানো। কেউ আমার কথা শুনছে না কেউ ভাবছে না আমার কথা সবাই ইমন ইমন করছে। আমি যেনো এ বাড়ির কেউ না।
কি হলো গিন্নি সাহেবা চলুন। খেতে ডাকছে তো।
ভাবনা থেকে বেরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে – হুম চলো।
সবাই একসাথে খেতে বসেছে । ইমন মুসকান মুখোমুখি মুসকান নিচের দিকে মুখ করেই খেয়ে যাচ্ছে। ইমন, রূপম, মোতালেব চৌধুরী, মোজাম্মেল চৌধুরী কথা বলছে। ইমনের কন্ঠ মুসকানের কানে বিষের ছুরির মতো আঘাত করছে। গলা দিয়ে তার খাবাড় যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে – প্রত্যেকটা মানুষ ই যেনো জোর করে ভালবাসবে জোর করে সব চাপিয়ে দিবে। আমার জীবনটাই এমন যে সবার জোরের উপর চলতে হয়। নিজের মা ও কেমন পর হয়ে গেছে। চোখ দুটো টলমল করছে পানিতে। কেউ খেয়াল না করলেও ইমন ঠিকি খেয়াল করছে। সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে এদিকে মুসকান ওর ফোন খুঁজে হয়রান। কোথাও পেলো না তার ফোন। অবশেষে তার মায়ের কাছে জিগ্যাস করতেই তার মা তাকে ইচ্ছে মতো অপমান করে দিলো জয়ের কথা বলে খুব অপমান করলো। আর বললো ইমনকে মেনে নিতে নয়তো নিজের ভাগ্য নিজে খাবি। মুসকান রাগে ক্ষোপে নিজের রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো।
মা মেয়ের এই কথোপকথন আর কেউ না জানলেও ইমন ঠিকি জানলো।

পরের দিন সকালে –
ছোট খাটো অনুষ্ঠানের আয়জন করা হয়েছে। বাড়ির লোক ছাড়া বাইরের আর কাউকেই আনা হয়নি। শুধু রায়া কে আনা হয়েছে ইমনই খবড় দিয়ে এনেছে রায়া কে। মুসকান কে ঘুম থেকে ওঠিয়ে গোসল করতে বলা হলো। কিন্তু না সে জেদ করে বসে রইলো সে কিছু করবে না। রায়া তাকে একঘন্টা বুঝিয়েছে না কোনো লাভ হয়নি। সবার সাথেই বাজে আচরন করেছে মুসকান। মোজাম্মেল চৌধুরী একদম চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। কিন্তু সে রেগে গেলে আর কারো উপায় থাকবে না। সেও যথেষ্ট বিরক্ত – কি বেয়াদবী পুরো বাড়ির মানুষ কে নাচাচ্ছে মেয়েটা। সবাই এতো এতো রিকোয়েস্ট করছে তবুও কাজ হচ্ছে না । রেগে গিয়ে বললো মোজাম্মেল চৌধুরী। কথাটা ইমনের কানে যেতেই ইমন প্রচন্ড রেগে গেলো।
ইরাবতী মোজাম্মেল চৌধুরী কে চুপ করতে বলছেন না চুপ করছেনা বলেই যাচ্ছে । ছোট থেকে এতো আদরে মানুষ করা হলো আর সেই মেয়ে কিনা আমাদের উপর দিয়ে যায়।
আমার ছেলে কে তার মানতে এতো অসুবিধা আবার বাইরের ছেলের জন্য তার মন কাঁদে। কি পেয়েছে টা কি মেয়েটা। এতোটা বেয়াদবী আমার বাড়িতে কেউ করে পাড় পেয়ে যাবে এটা কিন্তু ভেবো না কেউ।
তুমি চুপ করবে কেউ শুনে ফেলবে তো। বাড়ির সবাই কাজে ব্যাস্ত থাকায় মোজাম্মেল চৌধুরীর কথা গুলো ইরাবতী আর ইমন ছাড়া কেউ শুনতে পায় নি।
ইমন তার বাবার বলা কথা গুলো শুনে রাগে সেখান থেকে দ্রূত উপরে চলে গেলো।ছেলের এভাবে চলে যাওয়ায় মোজাম্মেল চৌধুরী চুপ হয়ে গেলো।
বার বার বলছিলাম চুপ থাকো চুপ থাকো। আমার ছেলেটাকে সবাই মিলে আর কতো কষ্ট দিবে তোমরা রেগে গিয়ে বললো ইরাবতী।
মোজাম্মেল চৌধুরী ও সেখান থেকে চলে গেলেন। রাগ এবার তার ও ওঠেছে। চৌধুরী বাড়ির সব হাসি যেনো মিইয়ে গেছে। অশান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে এ বাড়িতে। ইরাবতী অশান্তি মনেই কাজে মন দিলেন।

এতোদিন একটা বেয়াদব মানুষ হয়েছে এবাড়িতে। বাবার চোখে কতোটা ছোট হয়ে গেলে মুসকান ছি। সবকয়েকটা মানুষ আজ বিরক্ত তোমার উপর। তোমার ত্যাজ যদি আজ এই ইমন নাভেঙেছে।ভাবতে ভাবতেই মুসকানের রুমে ঢুকলো ইমন।
মুসকান চুপ করে বসে আছে আশে পাশে কিচ্ছু খেয়াল রাখছে না। রায়া একাই বক বক করে যাচ্ছে বুঝাচ্ছে তাকে।
ইমন বললো- রায়া নিচে যাও মায়ের কাছে।
রায়া ওঠে বললো- আচ্ছা ভাইয়া যাচ্ছি।
মুসকান ইমনের কথা শুনে চমকে ওঠলো।
রায়া বের হতেই সেও বের হতে যাবে এমন সময় তার আগেই ইমন গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

দরজা লাগাচ্ছ কেনো?  আমি বাইরে যাবো বলেই সিটকেরি খুলতে যাবে এমন সময় ইমন তাকে পাজাকোল করে নিলো।
কি করছো ছাড়ো আমায়। ছুবে না আমায় তুমি।

ছাড়ো বলেই ধস্তাধস্তি করতে লাগলো।
চুপপ…ধমকে ওঠলো ইমন। একদম কোনো কথা নয় বলেই বাথরুম গিয়ে  বাথরুমের দরজা চাপিয়ে দিলো।
এখানে কেনো আনলে ছাড়ো আমায়।
ইমন কোল থেকে নামিয়ে দিলো মুসকানকে।
এতো ছুটাছুটি করে কি লাভ ছুটার ক্ষমতা টা তো আল্লাহ তায়ালা দেয় নি তোমায় । বলেই বাঁকা হাসলো ইমন। মুসকান বাথরুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই ইমন মুসকানের কোমড় শক্ত করে চেপে একদম নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
মুসকান নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো ইমনকে । কিন্তু তার শক্তির সাথে সে পেড়ে ওঠলো না।
একদম নিজের কাছে নিয়ে মুসকানের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো- সবাই যেটা পারেনি এই ইমন সেটা করে দেখাবো এখন।
মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো- আমাকে যেতে দাও। আমি বাইরে যাবো। ইমনের একহাতই ছাড়াতে পারছে না মুসকান এতোটা শক্ত ভাবেই ধরে আছে তাকে।
মুসকান আর কোন উপায় না পেয়ে ইমনের বুক বরাবর জোরে কামড় দিলো। তবুও ইমন তার হাতের বাঁধন আলগা করলো না। বাঁকা হাসলো।
মুসকান খুনের আসামির মতো ভয়ে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে ইমনের মুখের দিকে তাকালো মুসকান। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।
ইমন তার বুকের দিকে তাকিয়ে বললো- ভালবাসার প্রথম চিহ্ন টা দিয়েই দিলে। ( বাঁকা হেসে)
মুসকানের প্রচন্ড রাগ হলো। গন্ডারের চামড়া ( মনে মনে)
ছাড়ো আমায় প্লিজ।
ইমন দরজায় হেলান দিয়ে ছেড়ে দিলো মুসকান কে। প্লিজ যেতে দাও আমায়।
চুপপ ছাড়তে বলেছো ছেড়েছি। কিন্তু যেতে দেবো সেটা ভেবো না।
এই কি শুরু করেছো সকাল থেকে প্রত্যেকটা মানুষ কে হয়রান করেছো। অনেক সময় দিয়েছি। কিন্তু না সোজা কথার মানুষ তুমি না। সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে আঙুল বাঁকা করতে এই ইমন চৌধুরী খুব ভালো করেই জানে। বলেই একটানে গায়ে থেকে ওড়না নিয়ে ছুড়ে ফেললো।
মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। পিছন ফিরে দাঁড়ালো। ভয়ে তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।
ইমন ঝড়নাটা জুরে দিলো মুসকানের পিছনে একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনেই একসাথে ভিজছে।
ইমনের বেশ ভালোই লাগছে বিয়ের দিন একসাথে বর বউ গোসল করছে । যার মাঝে আলাদা এক অনুভূতি আছে। কিন্তু মুসকানের অনুভূতি টা খুবই বাজে ছিলো । রাগে, ক্ষোপে লজ্জায় সে ইমনের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
এটাই তো চেয়েছিলে তুমি তাইতো সবার অবাধ্য হচ্ছিলে তাইনা । বলেই দুহাতে ধরে  মুসকানকে তার দিকে ফেরালো।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। ভয়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়ালো। ভেজা শরীরে খুব অসস্থিতে ভুগছে সে। একহাত দিয়ে ভেজা চুল গুলো বুকের উপর এনে ফেললো।
ইমন বাকা হাসলো । ভেজা শরীরে তার বউ কে খুবই স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো ইমনের। ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিচ্ছে সে। মুসকান ভয়ে এক পা পিছতেই ইমন শক্ত করে এক হাতে  কোমড়ে চেপে একদম তার কাছে নিয়ে নিলো।
মুসকান হাত দিয়ে তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর ইমন এক ধ্যানে তার ভেজা মাতাল করা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইমনের ঘন নিশ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই সে ছটফট করতে লাগলো। হাত দিয়ে বার বার ধাক্কাতে লাগলো। কার জেদ কতোটা সেটার যেনো পাল্লা চলছে। একজন কাছে আসতে চাইছে আরেক জন দূরে সরতে চাইছে। আজ যেনো তাদের জেদের ওজন মাপা হবে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে।  ইমন বিরক্ত হয়ে মনে মনে বললো- এই মেয়েটার কি কোনো অনুভূতি নেই। একে তো আজ আমি মনে মনে বলেই  রাগ থেকেই সে জোর করে মুসকানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মুসকান হাত দিয়ে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করছে তবুও পারছে না। দুজনেই ভিজে চলেছে সমান তালে। যতোই মুসকান ইমনকে ছাড়ানোর জন্য তার নোখের আচ লাগাচ্ছে ততোই ইমন ক্ষেপে যাচ্ছে ভালবাসা রাগ সবটাই যেনো তার ঠোঁটের উপর ঝারছে আজ। সাথে শক্ত করে চেপে আছে তার কোমড়। মুসকান এর চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। দম যেনো তার আটকে যাচ্ছে।
বেশ সময় পর ছেড়ে দিলো মুসকান কে। একবার মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
নিজের রুমে পা ফেললো সে । আজ যেনো কোন কিছুই কন্ট্রোলে ছিলো না তার।

মুসকান সেখানেই বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। গলা ফাটিয়ে কাঁদছে সে। কতোটা রাগ ঘৃনা যে হচ্ছে তার কান্নার মাঝেই ফুটিয়ে তুলছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট দেখছে আর কাঁদছে। গোলাপি ঠোঁট টা রক্ত জমাট বেঁধে কালচে বর্ন ধারন করেছে। নিজেকে দেখে দেখে কেঁদেই চলেছে সে।
বিয়ে করবে আমায় তুমি বিয়ে। আচ্ছা ইমন চৌধুরী বিয়ে করার শখ যদি না মিটিয়েছি আমি।তোমার সম্মান যদি ধূলোয় মিশিয়ে না দিয়েছি তাহলে আমার নাম ও মুসকান না। এই মুসকান কি করতে পারে এবার হারে হারে টের পাবে তুমি।
তোমার মান সম্মান নিয়ে যদি আমি না খেলা করেছি তো আমি ও এই চৌধুরী বাড়ির মেয়ে না । জেদ শুধু তোমার না আমারো আছে। বিয়েটা আমি করবো কিন্তু সংসার আমি যাকে ভালবাসি তার সাথেই করবো। আজ হোক বা কাল হোক  শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমার জীবনটা নরক করে তুলবো আমি।
আর সব শেষে এমন খেলা দেখাবো যেটা এ বাড়ির কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
সবাই যদি স্বার্থপর হতে পারে  আমি কেনো পারবো না।
এ বাড়ির কেউ যখন আমার কথা চিন্তা করেনি আমি কেনো করবো ।
না কখনোই না বিয়েটা আজ আমি করবো। কিন্তু এর পরিনতি কতোটা ভয়াবহ হবে তুমি ভাবতেও পারছো না। মি. ইমন চৌধুরী । চোখের পানি মুছে বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো মুসকান। রুমে এসে এসে দেখলো বিছানায়  বেনারশী গয়না রাখা আছে। সেই সাথে রিপা আর রায়াকেও দেখতে পেলো।

একদম বউ এর সাঝে সাজিয়েছে মুসকান কে। দেখতে অপরূপ লাগছে। মুসকান ও বেশ শান্ত হয়েই রয়েছে । সবাই যা বলছে সব শুনছে। বেশ অবাক হলো সবাই।
ইমনও বেশ অবাক এতো শান্ত যে?  ওষুধ টা কি কাজে লাগলো?? নাকি পেটে কোন শয়তানি বুদ্ধি আঁকছে।

চলবে……………..

বউ চুরি পর্ব : ৬

0

বউ চুরি
পর্ব : ৬
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

প্রচন্ড রাগ নিয়ে মুসকানের রুমে গিয়ে লাইট অন করে একটানে বিছানা থেকে তুলে ফেললো। দুগালে কঠোর করে চিপে প্রশ্ন করার কথা ছিলো তুই এতো সাহস কোথায় পেলি।  কিন্তু তা হলো না।   গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে এমন সময় ধরে ফেললো ইমন বুকের বা পাশটায় হেলে পড়ে আছে মুসকান । যতোটা রাগ ক্ষোপ নিয়ে এসেছিলো সবটা পানি হয়ে গেছে মুসকানের ঘুমন্ত মুখটা দেখে। ঘুমের  তালেই আষ্টেপিষ্টে জরিয়ে ধরলো  ইমন কে। ইমনের শরীরটা শীতল হয়ে গেলো। ভালবাসার মানুষের স্পর্শ পেয়ে তার পুরো শরীরে শীতল শীহরন বয়ে গেলো।
ধাও ধাও করে জ্বলে ওঠা আগুনে কেউ যেনো এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে। ইমনের অনুভূতি টা এখন ঠিক তেমনি। মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে সব ভুলে গেলো ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো। ঘুমন্ত মুসকান কে বরাবরই তার অপরূপ সুন্দরী লাগে। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ঐ মায়া ভরা মুখটার দিকে। আমার বউ, আমার মুসকান, আমার স্লিপিং বিউটি বলেই কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।
এতো ঘুম বর এসে আদর করে যাচ্ছে তবুও টের ই পাচ্ছে না মুচকি হেসে ভাবলো ইমন।
মুসকান কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিয়ে। আশে পাশে তাকালো হ্যাঁ যেটা খুঁজছে সেটা পেয়েছে। মুসকানের ফোন টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ইমন।

নিজের রুমে গিয়ে ভালো ভাবে ফোন চেক করলো। সবার সাথে মেসেজিং দেখলো সবটাই স্বাভাবিক। শুধু অস্বাভাবিক ছিলো জয়ের সাথে করা মেসেজিং।
ইমনের ইচ্ছে করছে জয়কে গিয়ে খুন করতে আর মুসকান কে কঠোর শাস্তি দিতে।
কিন্তু ভালবাসার মানুষের কাছে যে প্রত্যেকটা মানুষ ই দূর্বল। কি করে শাস্তি দিবে সে মুসকানকে। সেই ছোট্ট বাচ্চাটা যাকে কিনা সেই আট বছর বয়স থেকেই ভালোবেসে এসেছে। শুধু ভালবাসা নয় পরম স্নেহে মানুষ করেছে। ষোল বছর ধরে স্বপ্ন বুনেছে। ভালবাসার মাএা টা যে গভীর থেকেও গভীর। মুসকান তার সম্পত্তি নয় মুসকান তার সম্পদ।
বয়সটা তো অনেক কম এই বয়সে ভুল পথে যাবেই। কিন্তু সেই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার  । সে আমার বউ। এই পৃথিবীতে সে শুধুই আমার জন্য এসেছে। তাইতো তার টানে আমি সেই দূরান্তে থেকে নিয়ে এসেছিলাম তাকে। সে যে শুধুই আমার, শুধুই আমার। আর আমার জিনিসে অন্য কেউ হাত দিলে সেই হাত আমি তুলে নিবো।
নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে বলতে মাঝরাতে মায়ের রুমে এসে দাঁড়ালো ইমন।
দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই ইরাবতী বেরিয়ে এলো। এতো রাতে তুই? কি হয়েছে বাবা?  শরীর খারাপ?
না মা আমার রুমে চলো কথা আছে৷ বলেই মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো নিজের রুমে।
ইমন তার মা কে সবটা বললো। মুসকানের করা প্রত্যেকটা মেসেজ ও বললো।ইরাবতী ভাবতে পারছেনা এমনটা হবে। ছেলের মনের অবস্থার কথা ভেবে তার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো।
বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিস।
না মা তুমি ক্ষমা চাইছো কেনো। তোমার তো দোষ নেই। কিন্তু এখন আমি যা বলছি তুমি তাই করবে।
ইরাবতী ছেলের দিকে তাকালো।
ইমন তার দাদু কে গ্রাম থেকে আসতে বললো।রূপম তার বউ আর তার তিনবছরের মেয়েকেও আসতে বলার জন্য বললো।দীপান্বিতা কে সকালে সবটা জানাতে বললো।আর মুসকানকে বুঝানোর দায়িত্ব ইরাবতী কে আর দীপান্বিতা কে দিলো। এখনি যদি সবটা বুঝে না নেয় তাহলে বড্ড দেরী হয়ে যাবে   । যা হয়েছে যতোটুকু এগিয়েছে আর এগোতে দিতে মোটেই রাজি না ইমন৷ তার জিনিস সে এবার বুঝে নিতে চায়। ইরাবতী আর কিছু বললো না । ছেলের কথা মেনে নিয়ে ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে গেলো। কারন তার আর কিছু বলার মুখ নেই।
বাচ্চা ছেলে হয়ে সেই আটবছর বয়সে যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছো । ছোট থেকে আগলে মানুষ করেছে। কোন বিপদ আসতে দেয় নি অসহায় পরিবারের মেয়েকে নাম করা পরিচয়ে বড় করেছে। সবটা তো তার ভালবাসার জন্যই। বাচ্চা থেকেই যাকে বউ মেনে এসেছে তাকে কি করে অন্যকারো হতে সহ্য করবে। সব টা ভেবেই ইরাবতীও সম্মতি দিলো। শুধু চিন্তা হলো মুসকান কে নিয়ে। মেয়েটাও যে বড্ড জেদী।

ইমন রাতেই জয়ের সব ডিটেইলস খুজে বের করলো। আর যা পেলো তাতে জয় এই দেশেই থাকেনা। দুবছর যাবত দেশের বাইরে আছে দেশে ফিরতে আরো একবছর। তাই ইমন জয়কে নিয়ে এখন আর ভাবলো না। এখন তার কাজ মুসকান কে নিজের করে পাওয়া। কিন্তু রাগ হলো একটা কথা ভেবেই সেই বিদেশি লোক ই খুজে বের করলো। এই একটা বিষয়ের জন্য ছোটবেলায় তোমার পুতুল খেলাই বন্ধ করে দিয়েছি। যে পর্যন্ত বিয়ে না হচ্ছে সে পর্যন্ত ফোন ইউস করাও বন্ধ করলাম। বিদেশি লোক এতোই পছন্দ।কিন্তু জয় তো বিদেশি না আচ্ছা  যাও হানিমুনে দেশের বাইরেই নিয়ে যাবো। আর জয়ের ব্যবস্থাও নিবো দেশে ফিরুক।

ঘুম থেকে ওঠে মুসকান ফোন খুজে না  পেয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। দীপান্বিতা কে ইরাবতী সবটা খুলে বলায় সে মুসকানের উপর বেশ রেগে আছে। মুসকানের চেচামেচি তে রুমে এসে বললো- কি হয়েছে চেচাচ্ছিস কেনো?
আমার ফোন কোথায় আম্মু??
ফোন নেই।
নেই মানে ফোন দাও আমার।
চুপ চিল্লাচ্ছিস কেনো?  তোকে ফোন কে কিনে দিয়েছে জানিস?
মানে এখানে কে কিনে দিয়েছে এটা আসছে কেনো?
আসছে কারন ফোন টা ইমন কিনে দিয়েছে।
মুসকান রেগে গেলো । দীপান্বিতার সামনে গিয়ে বললো-
আমি তো ভাইয়াকে কিনে দিতে বলিনি। আমার বাবার কি টাকা কম পড়েছে আম্মু যে সব ভাইকে দিতে হবে। আর ফোন কিনে দিয়েছে বলে সেটা আবার নিয়েও নিয়েছে নাকি। তাহলে কিনে দিয়ে নিজেকে বড় দেখানোর মানে কি?
মুসকান ছি এতটা বেড়ে গেছিস তুই। ধমকে ওঠলো দীপান্বিতা।
মুসকান এতোদিন আমরা তোমাকে কিছু বলিনি কারন ইমন নিষেধ করেছিলো।ও চেয়েছিলো আরো কিছু বছর পর সব তোমায় জানানো হবে। কিন্তু তুমি এতটা বেড়ে যাবে আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। তাই আর সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।
মানে কি জানাওনি আম্মু? কি বলছো?
তুমি যখন অনেক ছোট তখনি আমরা ইমনের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। এমনকি তোমাদের সামাজিক রীতিতে বিয়েও হয়েছে সেই চার বছর বয়সে আর ইমনের বারো বছর বয়সে।

কিহ….. কি বলছো এসব । তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোমরা এটা কিভাবে করতে পারো। আর বিয়ে কিসের বিয়ে এগুলো আমি মানি না। বাচ্চা বয়সের এইসব কখনো সত্যি না।

মুসকান চুপ করো তোমাকে এটা মানতেই হবে । তোমার দাদীর শেষ ইচ্ছা এটা আর তোমার দাদু আজই আসছে তোমাদের আবার বিয়ে দেওয়া হবে। তখন ছোট হলেও এখন তোমরা কেউই ছোট না।
অসম্ভব আম্মু আমার পক্ষে এই বিয়ে সম্ভব না। আর ইমন ভাইয়া কে আমি ভাই হিসেবে দেখে এসেছি তার সাথে তো কখনোই পসিবল না।

তোমার নিজের ভাই না মুসকান। নিজের কি কোনো রক্তের সম্পর্কই তো নেই তোর এ বংশের সাথে সেটা কি করে বুঝাই তোকে। ( মনে মনে)
দেখ সামাজিক রীতি তে তুই ইমনের বউ। আর এ বাড়ির সবাই সবটা জানে। তুই মেনে নে সবটা এতেই মঙ্গল। আর চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো ভাই বোনদের বিয়ে হয় রূপম তো খালাতো বোনকে বিয়ে করেছে। এটা কোনো সমস্যা না।

কিসের মঙ্গল আমি কিছুতেই এটা মানতে পারবো না কিছুতেই না । বেরিয়ে যাও রুম থেকে বেরিয়ে যাও। চিৎকার করে বলতে বলতে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিলো দীপান্বিতা কে। দরজা লাগিয়ে পুরো রুম তছনছ করে ফেললো। কিছুতেই সে মেনে নিতে পারছে না এসব।সব কিছু আজ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো তার কাছে। তার মানে এটাই আসল কারন। সবাই জানতো শুধু আমি ছাড়া। আমার কথা কেউ ভাবলো না সবাই তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী সব ডিসিশন নিয়ে নিলো। ছোট বেলায়ই সবটা নিজেদের মতো করে সাজালো। একবারো ভাবলো না আমি কি চাই। সবাই এটা কি করে করতে পারলো  কান্নায় ভেঙে পড়লো মুসকান।
দরজার বাইরে ইমন দাড়িয়ে সবটা শুনেছে। দুহাত মুঠ করে দেয়ালে শক্ত করে কয়েকটা ঘুষি দিলো। দীপান্বিতা বললো-
ইমন তুমি ও এমন শুরু করো না। দুজনই এমন করলে কেমন হবে।  সময় দাও একটু মেয়েটাকেও তো একটু বুঝতে হবে।
ইমন কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো।

পুরো বাড়ি টা থমথমে হয়ে গেছে । মুসকান দরজা খুলার নাম করছে না। না করছে কোনো সারা শব্দ । বারোটা বেজে গেছে ইমন ও রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। সেও খুলছেনা দরজা সবাই টেনশনে পড়ে গেলো। কিন্তু কারো সাহস হলো না ইমনকে ডাকার। বেশকিছুক্ষন পর দিপু এসে ইমনের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল- ভাইয়া আপু দরজা খুলছে না কিছু বলছেওনা। তুমি দরজা খুলার ব্যবস্থা করো যদি আপুর কিছু হয়।
কিছুক্ষন পড়েই ইমন দরজা খুললো। দরজা খুলে সোজা মুসকানের রুমের দিকে গেলো । কাধ দিয়ে দুটা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। জিম করা বডি গায়ে বেশ জোর রয়েছে তাই আর কিছুর প্রয়োজন পড়লো না। দরজা খুলতেই দেখলো মুসকান ফ্লোরে পড়ে আছে। ইমন কাছে যেতেই দেখলো মুসকান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে  চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। আর কিছু না ভেবে মুসকান কে পাজাকোলে নিয়ে নিলো।
সাথে সাথে মুসকান রাগে ক্ষোপে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বললো-  ছাড়ো তুমি ছুবেনা আমাকে ছাড়ো। কেউ ছুবে না আমায়। ইমন সেদিকে পাত্তা দিলো না তার মতো সে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো। মুসকান ধপ করে ওঠে দাঁড়ালো। ইমনের চোখে চোখ রেখে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ইমন মুসকানের চোখ দেখে অবাক হয়ে গেলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে। লাল টকটকে হয়ে গেছে চোখ দুটো।

আঙুল তুলে মুসকান বললো- আজকের পর আমার আশে পাশেও তুমি আসবে না। অনেক সহ্য করেছি আর না । স্বামী সাজতে এসেছো স্বামী?  বিয়ে করবে বিয়ে?  তোমার লজ্জা হওয়া উচিত ভাইয়া লজ্জা হওয়া উচিত তোমার ছি ঘেন্না হচ্ছে তোমাদের সবার প্রতি।
পুতুল খেলা পেয়েছো আমার জীবনকে তাইনা। এই মুসকান কোনোদিন ও তোমাকে বিয়ে করবে না।

ইমনের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। বড্ড বড় বড় কথা শিখেছে আঙুল তুলে কথা বলা। চোখ রাঙানো সবটা সহ্য করেছে ইমন। কিন্তু বিয়ে করবে না এটা সহ্য করতে না পেরে দু হাতে মুসকানের গাল দুটো শক্ত করে চেপে ধরলো। মুসকান উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে ইমন যে তার থেকে বেশ লম্বা।
বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে। আমার বউ তুমি, সেই কবেইতো বউ করে নিয়েছি তোমায়। সামাজিক রীতিতে তোমার উপর সব অধিকার আছে আমার সব।
ইমনের নিশ্বাস মুসকানের মুখের উপর পড়তেই মুসকান এক ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে দিলো।
ছাড়ো আমায় ছুবেনা আমাকে। গা ঘিনঘিন করছে আমার ঘেন্না লাগছে তুমি ছুলেই। ছুবে না আমাকে।

মুসকান তুমি মাথা ঠান্ডা করে সব কথা শুনো। আমাকে রাগিয়ে দিয়ো না।

কি করবে রাগালে কি করবে মারবে?  কাটবে?  যা ইচ্ছে করো তবুও তোমাকে আমি স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। সম্ভব না আমার পক্ষে কখনোই না  তেড়ে এসে বললো মুসকান । আজ যেনো কারো কথাই সে শুনবে না। আগুনে ঘি ঢেলে দিলে যা হয় তেমনটাই হয়েছে আজ। মুসকানের রাগ জেদ যেনো হাজার গুন বেড়ে গেছে। ইমন নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।  কিন্তু মুসকান এর কথায় সে তার কন্ট্রোল বার বার হারিয়ে ফেলছে।

আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে একমনে – করবোনা তোমাকে বিয়ে আমি৷ পৃথিবী ওলটে গেলেও না।
ইমন মুসকানের হাত শক্ত করে চেপে পিছন দিকে বাঁকিয়ে একদম তার কাছে নিয়ে নিলো।
একদম বুক বরাবর চেপে ধরে আছে মুসকানকে  মুসকান ছুটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু ইমনের শক্তির সাথে সে পেরে ওঠলো না।
ছাড়ো আমায় ছাড়ো। আমার লাগছে ছাড়ো।
এক হাত পেটের কাছে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন । আরেক হাতে মুসকানের ডানহাত শক্ত করে চেপে আছে । কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর গলায় বললো- অনেক বলে ফেলেছো আর না। আঙুল তুলে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না । বার বার ভুল করলে তার শাস্তি তো পেতেই হবে বলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো হাত । মুসকান ব্যাথায় কুকঁড়িয়ে গেলো। চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়তে লাগলো। ইমন সেদিকে খেয়াল না করে বললো- স্বাধীনতা তাকেই দেওয়া হয় যে স্বাধীনতার সৎ ব্যবহার করতে জানে। স্বাধীনতার অপব্যবহার কারীর কাছ থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়াই শ্রেয় । আর রইলো বিয়ে বিয়ে করবে কি করবে না সেটা ঠিক করবো আমি না তুমি কিছু বলবে না আমি তোমার কথা শুনবো । আর এই ত্যাজ টা সবার সাথে দেখাও আমার সামনে একদম দেখাতে আসবে না।
বলেই ছেড়ে দিলো মুসকান কে। রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মুসকান হাতে ব্যাথায় হাত ধরেই বসে কাঁদতে থাকলো। ছি তুমি এতো জখন্য ছি। জোর করে কিছু পাওয়া যায় না ইমন চৌধুরী এটা মনে রেখো। এই মুসকান কিছুতেই তোমাকে মেনে নিবে না। মুসকানের রাগ যেনো আরো হাজার গুন বেড়ে গেলো।

আমি এতোটা কঠোর হতে চাইনি মুসকান।
তুমি আমাকে বাধ্য করেছো।
ইমন ইরাবতীকে মুসকানের খাবার আর ব্যাথার মলম নিয়ে যেতে বললো। তার বউ কতোটুকু ব্যাথা সহ্য করতে পারে সেটা তার খুব ভালো করেই জানা।
ফুলের টোকা পড়তে দেয়নি এতোবছর মুসকানের গায়ে কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই
তাকে এতুটুকু করতে হলো। মাথাটা তার যে ছোট থেকেই বেশ গরম। মুসকান ও এতোদিন তার সামনে এমন আচরন করতে পারেনি। কিন্তু আজ যা করেছে যা বলেছে এর পর ইমন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি।

ইরাবতী মুসকানের হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে – দেখ মুসকান ইমন সেই ছোট থেকে তোমাকে ভালোবাসে। আমরা সবাই তেমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। এ বংশে মেয়ে ছিলো না তুমি আসার পর সবাই তোমাকে আগলে মানুষ করেছে। আমাদের বংশের একমাএ মেয়ে তুমি। তাই ইমনের সাথে বিয়ে দিয়ে এ বাড়িতেই রাখতে চাই আমরা তোমাকে। আমার ছেলেকে কষ্ট দিওনা মা। এতটা অবাধ্যতা করোনা  । দেখো পৃথিবীর সব সুখ তোমার পায়ের নিচে এনে দিবে। আর দেখো বিয়ের পর সারাজীবন আমাদের কাছেই থাকতে পারবে তুমি। এর পর ও তুমি না করবে।

তোমার ছেলের হয়ে তুমি বলছোতো।
কিন্তু দেখো আমার আম্মু ও আমার পাশে নেই বলেই মুসকান কাঁদতে লাগলো।
এটা কেমন কথা আমি কি তোমার মা না আর এ বাড়ির সবাই তোমার পাশে আছে। আর সব থেকে বেশী যে আছে সে হলো ইমন।
ব্যাস আর কিছু শুনতে চাই না । তোমার ছেলে আমাকে মেরেছে আজ এই দেখো হাতটা কি করেছে।
মলম দিয়েছিতো ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলেটা যে বড্ড রাগি মা কিন্তু ওর মন টা খুব ভালো। তুমি এমন কিছু বলো না যে রাগের মাথায় ও এইসব করে ফেলে।
তোমার ছেলের মতো করে থাকা সম্ভব না।
আমার গায়ে হাত তুলেছে আজ এর পর তোমার ছেলের মুখ ও দেখতে চাইনা আমি।
নিজের মা এমন শত্রুর মতো হয় জানা ছিলো না । বাবা নিশ্চয়ই এমন করতো না বলেই কাঁদতে লাগলো।ইরাবতী কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। মেয়েটার ও যে জেদ ষোল আনা।

জয়ের মেসেজে ভরে গেছে ইনবক্স ইমন ইচ্ছা মতো যা তা বলেছে জয়কে। অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছে আর বলেছে দেশে ফিরলে তোর অবস্থা এমন করবো যে রাস্তার কুকুর ও ভয় পাবে তোকে দেখে। জয়কে ব্লক করে দিয়েছে।
এদিকে মুসকান ফোন না পেয়ে সারাদিন পাগলের মতো ছটফট করেছে।
তবুও তাকে ফোন দেওয়া হয়নি।
বাধ্য হয়ে সাহস করে ইমনের রুমে পা বাড়িয়েছে মুসকান। তার ফোন চাই।
ইমন ল্যাপটবে কাজ করছে এমন সময়  মুসকান রুমে ঢুকলো।ইমন একবার দেখে আবার কাজে মনোযোগ দিলো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে সাহস করে বললো-  ভাইয়া…
ইমন ক্ষেপে চট করে ল্যাপটব অফ করে বিছানায় রেখে ওঠে দাঁড়ালো।
ভ্রু কুচকে মুসকানের মুখের দিকে তাকালো।এতো দিন জানতেনা তাই ভাই ভাই করেছো এখনতো জানো তবুও ভাই। এখন তো কিছু বলাও যাবে না এই বাঘিনি কে । ( মনে মনে )
আমতা আমতা করে বললো- আমার ফোন দাও।
ওহ এই কথা তাহলে । একটা দিন থাকতে পারলেনা ফোন ছাড়া। ( মনে মনে)

ফোন দিয়ে কি হবে??
আসলে……
জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো ইমন -হুম আসলে কি??
রায়াকে ফোন করবো একটু।
ওকে আমারটা দিয়ে করো।
মুসকানের রাগ ওঠে গেলো। কেনো তোমারটা দিয়ে কেনো আমার ফোন দাও।
যদি বলি ওটা তুমি আর পাবেনা।
কেনো পাবো না তেমাকে ওটা দিতে হবে। আমার বাবা মা তো তোমার কথায় ওঠে বসে।  তারা তো দিবেনা তাই তোমাকেই দিতে হবে।
হুম দিবো শর্ত আছে।
কোনো শর্ত মানতে পারবো না আমি।
ইমন আরেকটু কাছে গিয়ে বললো- এততো ত্যাজ দেখাচ্ছো কেনো। কুল হয়ে কথা বলো আমার সাথে আমি হাইপার হয়ে গেলে কিন্তু সামলাতে পারবে না।

মুসকান আর কিছু না বলে শান্ত ভাবেই বললো- ফোন দাও ভাইয়া প্লিজ।
ইমন আর কিছু না বলে পকেট থেকে ফোন বের করে দিলো। আর বললো-
যথার্থ ব্যবহার করবে ফোনের নয়তো কপালে দুঃখ আছে।
মুসকান ফোন দেখে ইমনের কোনো কথায় কান না দিয়ে ফোনটা নিয়ে তারাহুরো করে চলে গেলো। যেনো তার অমূল্য রত্ন সে পেয়ে গেছে। কিন্তু ইমন বাঁকা হাসলো কারন মুসকানের ফোন ট্র্যাক করা হয়েছে। যাই করুক না কেনো সব সে জানতে পারবে। 
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মোতালেব চৌধুরী আজ আসতে পারেনি কাল আসবে। এদিকে সব ব্যবস্থা করা শেষ। মুসকান কারো সাথেই ঠিকভাবে কথা বলে না। সবার উপর তার খুব রাগ। এদিকে সে অনেক চেষ্টা করেও জয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না । করবে কি করে জয়কে যে ব্লক করা হয়েছে। জয়ের এক বন্ধু ঢাকাতেই থাকে মুসকান তার আইডিতে মেসেজ করে বললো-  ভাইয়া জয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন প্লিজ প্লিজ  সেই বন্ধু জয়কে বলার পর জয় সাথে সাথেই মুসকান কে কল করলো।

হ্যালো মুসু কেমন আছো??
একদম ভালো নেই একদম না।
জানি বলেই জয় মুসকান কে সব খুলে বললো।
কিহ ইমন ভাইয়া তোমাকে এসব বলেছে। আমি কিছু জানতাম না জয় কিছু না।
হুম জানি মুসু তুমি কেঁদো না। আমি খুব তারাতারি ফিরবো আর তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
কিন্তু এরা তো আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে জয়।
মুসু তুমি যে করেই হোক বিয়েটা আটকাও। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না মুসু রানী প্লিজ তুমি আটকাও সব ।
আমিও পারবো না জয় । আমিও তোমাকে ছারা থাকতে পারবো না।

দরজা খোলার শব্দে চমকে ওঠলো মুসকান। তারাতারি ফোনটা কেটে দিলো।মুসকান ফোন বালিসের নিচে রেখে দাঁড়িয়ে বললো- কে? 
ইমন লাইট অন করে দু পকেটে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।   একটা রহস্যময়ী হাসি  দিলো ইমন যেই হাসিটা  দেখে মুসকানের বুকটা কেমন ধক করে ওঠলো।
মুসকান পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে আর তার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিললো।
ভাইয়া আম্মু মনে হয় ডাকছিলো তখন যাই আমি। বলেই ইমন কে পাশ কাটাতে যাবে তখনি ইমন মুসকানের হাতে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
মুসকান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইমনের চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে । রাগে তার কপালের রগ গুলে নীল হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এক দুমাসেই এতো ভালবাসা যে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেই পারবেনা। তাহলে আমার এতগুলো বছরের কি হবে। শান্ত গলায় বললো ইমন।
মুসকান চোখ তুলে তাকালো। ইমনের চোখ দুটো দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠলো ।
বলো আমার ভালবাসার কি হবে চিৎকার করে বলে ওঠলো ইমন। মুসকান কেঁপে ওঠলো।
ইরাবতী দিপান্বীতা চিৎকার শুনে দৌড়ে এলো। কিন্তু রুমে ঢুকার সাহস পেলো না।
আল্লাহ এ পরিবারে কি অশান্তি শুরু হলো। রক্ষা করো আল্লাহ। ইরাবতী কথা গুলো বলতে বলতে চলে গেলো সাথে দীপান্বিতা ও।

প্লিজ ছাড়ো আমাকে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো মুসকান।
ছাড়ার জন্য তো তোমায় ধরিনি আমি । এই বলো কিভাবে ভালবাসা হয় এক মাসে কি বোঝ তুমি ভালবাসার  বলো ( ধমকের সুরে )

মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে বলে ফেললো – জয় কে ভালবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই আমি।

ঠাশশ…………

চলবে………………….

বউ চুরি পর্ব : ৫

0

বউ চুরি
পর্ব : ৫
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

বন্ধু দের সাথে রেষ্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছে মুসকান। রায়া,হেনা,আবির,রাফি,নিলয়,আশা,সাতজন  মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এদিকে ইমনের এক চামচা আবির এর খোজ নিয়ে এখন আবির কোথায় আছে  সেই খবড় ও ইমনের কাছে পৌঁছে দিলো। সাথে যে মুসকান ও রয়েছে এটাও তাকে জানানো হয়েছে।

ইমন মিটিং শেষ করে একটার দিকে রেষ্টুরেন্টের উদ্দেশ্য বের হলো।তার সাথে সব সময় বাইরে তার চ্যালারা থাকে। কিন্তু এখন সে মুসকানের কাছে যাচ্ছে তাই এদের সাথে নেওয়া যাবে না । কারন মুসকান কে তার ক্ষমতা সম্পর্কে সে জানাতে চায় না। তাই তার চ্যালাদের বললো-
আমি মুসকান কে যখন নিয়ে চলে আসবো তারপর তোমরা ওখানে যাবে। মুসকানের সামনে কেউ আসবে না। আমরা চলে যাওয়ার পর আসবে। আর দূরত্ব বজায় রেখেউ ওয়েট করবে রেষ্টুরেন্টের বাইরে।

ঠিকাছে ভাই। আপনি যান।
ইমন সানগ্লাস টা চোখে দিয়ে গাড়িতে ওঠে বোসলো। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিলো।
নয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছো এখন একটা বাজে। একটু বেশীই স্বাধীনতা পেয়ে গেছো বোধ হয়। শুধু মাএ ছোটো বলে তোমাকে আমি ছাড় দিচ্ছি। তাই বলে লিমিট ক্রস করবে আর আমি সেটা দেখেও চুপচাপ থাকবো এটা ভাবলে তুমি ভুল মুসকান। (মনে মনে)

মুসকান কাল যে তোকে রাতে ফোন দিলাম  কে ধরেছিলো?
ফোন দিয়েছিলি মানে?  কখন আমিতো জানি না।
কি বলছিস?  একটা ছেলে ধরেছিলো তো।
ছেলে মানে। কে তাহলে ইমন ভাইয়া না তো। এই যা সর্বনাশ। ( মনে মনে)
তুই কি বলেছিস উত্তেজিত হয়ে জিগ্যাস করলো মুসকান?
তেমন কিছুতো বলিনি, তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছি বাট কেটে দিলো।
ওহ যাক বাচালি।
কেনো কে ছিলো?
ইমন ভাইয়া।
তোর ভাই?
হ্যা বড় চাচার ছেলে বড্ড জ্বালায় দোস্ত।
কি বলছিস দোস্ত ইমন ভাইয়া তোকে জ্বালায়? ( রায়া)
বড় ভাই থাকলে এমনই হয় বুঝলি। ( আবির)
আরে না আমার নিজের ভাই খুব ভালো বড় ভাই ও ছোটটাও বাট ইমন ভাইয়া বেশি রাগি। আর বেশি খবড় দারি করে।
সবাই মুসকানের কথা শুনে তাকালো ওর দিকে।
তোর ভাইটা বেস হ্যান্ডসাম রে। আমার তো সেই লাগে।যখনি দেখি  ইচ্ছা করে গিয়ে প্রোপোজ করিগা। ( হেনা)
তোর তো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই প্রোপজ করতে ইচ্ছে করে । ( আশা)
সবাই হো হো করে হেসে ওঠলো।
যা ভাবছো তা না।  উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট বুঝলা। বাইরে থেকে যতটা সুন্দর ভেতরে ততোটাই বদমেজাজি। ( মুসকান)

তাতে কি এমন পারসোনালিটির ছেলেইতো আমি চাই রে।
এই হেনা এই কথা গুলো আমাদের সামনে বলেছিস ভালো কথা। আর কারো সামনে বলিস না। ইমন ভাইয়ের কানে গেলে আর আস্ত রাখবে না। তার চ্যালারাই তোকে ওঠিয়ে নিয়ে যাবো গা। ( রাফি )
সবাই বড় বড় করে তাকালো। মুসকান তো অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
কি বলছিস ভাইয়ার চ্যালা মানে?
সে কি রে তুই তোর ভাইয়ের ব্যাপারেই জানিস না। ( নিলয় )
এই আমিও তো জানিনা। আমাকেও বল। ( আবির )
আরে ওর ভাই তো………. আর বাকি টুকু বলতে পারলো না রাফি তার আগেই হেনা বললো- ঐ তো আমার ক্রাশ আসছে…. ওয়াও কি লাগছেরে মুসকান।
সবাই তাকালো রেষ্টুরেন্টের বাইরে  ইমন ঢুকছে। মুসকান এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। ভয়ে ঢোক গিললো।
আল্লাহ এখানে ভাইয়া কি করে আসলো । আমি এখানে এটা জানে না তো?
এই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?  বন্ধুদের সাথে আসতেই পারিস এতো ভয়ের কি আছে?  ( আবির )
সারাদিন তো বই এ মুখ গুজে থাকিস এতো বড় একজন নেতার ছেলে, বড় একজন নেতা তাকেই চিনিস না  । আর ওনি অনেক রাগী মানুষ তাও তো জানিস না। ( নিলয় )
আরে নাম তো শুনেছি।কিন্তু ইনিই যে ওর ভাই তা তো জানিনা।  ( আবির )
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মুসকান ভয়ে ভয়ে বসে রইলো আর আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলো।হেনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রায়া বুঝতে পারছে মুসকান কে কি পরিমান বকা খেতে হবে।  আশাও তাকিয়ে আছে সামনে দেখতে দেখতে ইমন তাদের কাছে চলে আসলো।

ভাইয়া ভালো আছেন?? ( রায়া )
ভাই কেমন আছেন?  দাড়িয়ে বললো – নিলয়, রাফি,আবির।

ইমন – ভালো। তোমাদের কাজ শেষ?
আমতা আমতা করে বললো রায়া – আসলে আমার জন্মদিন তো তাই ট্রিট…..৷ 
থামিয়ে দিয়ে – যা জিগ্যাস করেছি সেটাই বলো?
হ্যা। ( রায়া )
মুসকান তাহলে এখন চলো। বাড়ি ফিরতে হবে।
ভাইয়া ওদের সাথে যাই।
চোখ রাঙিয়ে – পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসবে আমি ওয়েট করছি বলেই বেরিয়ে গেলো।
সবার সামনে মুসকান  জোর পূর্বক  হাসি দিয়ে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো মাথা নিচু করে।

এতো কড়া শাসন। ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগছে। ( আশা )

তোর সব জায়গাতেই গোয়ান্দা গিরী তাই না  । ওনি মানুষ টাই এমন ওনার বাড়ীর মেয়েকে তো গার্ড এ রাখবেই। ( রাফি )
ঠিক বলেছিস৷ ( নিলয় )
চল সবাই  মলিন মুখে বললো রায়া। কারন সে জানে মুসকানের সাথে এখন কি হবে।
হে চল। ( নিলয় )
আমারো জানি কেমন একটা লাগছে৷ কাল ফোন করেছিলাম তখনো কেমন একটা যেনো বিহেইভ করলো।( আবির )
আরে ছাড় তো চল সবাই।  ( হেনা )

ওরা সবাই বেরিয়ে পড়লো মেয়েরা এক রিকশা নিয়ে চলে গেলো।কিন্তু নিলয়, রাফি,আর আবির যেতে পারলো না  । ইমনের চ্যালারা তাদের পথ আটকিয়েছে।

মুসকানের সাথে তোমাদের কি সম্পর্ক?? ( রাকেশ ইমনের বিশ্বস্ত একজন চ্যালা)
মানে কি বলছেন আমরা সেইম ক্লাশে পড়ি।  আমরা ফ্রেন্ড।

ফ্রেন্ড তো ভালো কথা এতো ঘুরাঘুরি কিসের। আর রাত করে ফোন দেওয়া কিসের। আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো রাকেশ।
দেখুন আমি জাস্ট খবড় নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
তোকে খবড় নেওয়ার জন্য কতো টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে?? (রেগে গিয়ে)
রাকেশ ভাই সত্যি আমরা শুধুই বন্ধু আর কিছু না৷ ( নিলয় )
আর কিছু হওয়ার চেষ্টা ও করবিনা। আর নিলয় তুই তো চিনিস ইমন ভাই কে তুই আবিরকে বলে দিস যেনো মুসকান কে ফোন না দেয় আর কখনো।ভাই রেগে গেলে কিন্তু আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। দ্বীতিয়বার যেনো এমনটা আর না হয়।

ওকে ভাই এমন হবে না। (  নিলয় )
রাফি আর আবির অবাক হয়ে শুনছে এটা কেমন বিহেইভ । বোনের ফ্রেন্ড রা ফোন দিলে এমন থ্রেড কেউ দেয় । আবির, রাফি অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
রাকেশ হাজারটা কথা শুনিয়ে দিলো।আর বললো মুসকানের সাথে পড়া শোনার ব্যাপার ছাড়া কোনো কথা না বলতে। ইমন ভাইয়ের কড়া নিষেধ রয়েছে। নিলয় তাদের ভালো করে জানে তাই সে সব কথায় সম্মতি দিয়ে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো।
রাকেশ ইমনকে ফোন দিয়ে বললো – ভাই কাজ শেষ।
ইমন রেখে দিয়ে সোজা বাসার দিকে চললো।

নিলয় এটা কি হলো??
আবির তুই আর মুসকান কে ফোন দিবি না।পড়ার ব্যাপারে রায়াকে জানাবি রায়া মুসকানকে জানাবে। আসলে আশা ঠিকি বলেছে কিছু একটা গোলমাল আছে। আমিও অবাক হয়েছি আমরা তো ক্লাসমেট আমাদের সাথেও কথা বলা বারন। এর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো কারন আছে ।
আমার মনে হয় ইমন ভাই মুসকান কে পছন্দ করে। ( রাফি )
তা কি করে হয় ওরা ভাই বোন। ( আবির )
আপন না চাচাতো।  আর আমি একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলের এইসব বিহেভিয়ার অবশ্যই বুঝবো ( রাফি )
হতে পারে এটা ওদের ব্যাপার বাদ দে। ( নিলয় )

বাসার সামনে এসে অনেক জোরে ব্রেক করলো ইমন। মুসকান ভয় পেয়ে গেলো। পুরো রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।
মুসকান ইমনের দিকে মলিন মুখে তাকালো।
হা করে কি দেখছো নামো।  ধমকে ওঠলো ইমন মুসকান কেঁপে ওঠলো। তারাহুরো করে নামতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলো। ইমন তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে মুসকান কে ওঠালো।
এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি?  সারাদিন বাইরে ছিলে তখন তারাহুরো করো নি। এখন বাসার সামনে এসে কিসের তারাহুরো?  যাও ভেতরে যাও।
মুসকান কেঁপে ওঠলো  হাতে একটু ছিলে গেছে । হাত ধরেই বাসার ভিতর চলে গেলো। ইমন ড্রাইভার কে হাড়ি পার্ক করেতে বলে ভিতরে গেলো।
মুসকান কে আর দেখতে পারলো না। হয়তো নিজের রুমে আছে আমি মা কে ফোন দিয়ে শুনি কখন আসবে।
হ্যালো মা কখন ফিরবে?
এইতো বাবা ফিরছি । তোর কাকি কদিন পর ফিরবে আমি আর তোর বাবা আসছি।
ওকে রাখছি।
আমার জাস্ট দম বন্ধ লাগছে। ছোট থেকে অনেক সহ্য করেছি আর পারছিনা। কি ভেবেছে কি নিজেকে আমার অভিভাবক। আমার মা আছে বাবা আছে বড় ভাই আছে। তারা তো এমন নয় মামনি বড় বাবা তারাও এমন নয় । ইমন ভাইয়া কি পেয়েছেটা কি বন্ধু দের সাথেও আড্ডা দেওয়া যাবে না তার জন্য। ওটা করা যাবে না সেটা করা যাবে না। এমনকি আমার ফোনটাও তার অনুমতি নিয়ে কেনা হয় । না আমি আর এসব সহ্য করবো না আমারো একটা লাইফ আছে। চাচাতো ভাই ভাইয়ের মতো থাকবে এতোটা বাড়াবাড়ি আর সহ্য করবো না। আম্মু আসুক তারপর এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো। রাগে ফুসসে আর একমনে রুমে পাইচারী করতে করতে কথা গুলো বলে যাচ্ছে মুসকান।
ইমন রুমের সামনে থেকে সবটা শুনেছে। এমনিতেই তার মাথা গরম হয়ে ছিলো এসব শুনে আরো দ্বিগুন রাগ ওঠে গেলো রুমে ঢুকতেই মুসকান স্টপ হয়ে গেলো। চুপ করে দাড়িয়ে রইলো আর ভয়ে ঢোক গিললো।
সহ্য টা কে করছে তুমি না আমি?  আর কি হেস্তনেস্ত করবে তুমি ?
নয়টায় বের হয়েছো দুটায় ফিরেছো।
এতোটা বেপরোয়া ব্যবহার এই বাসায় চলবে না। আর এতো ছেলে বন্ধুদের সাথে মেশাও যাবে না। পড়াশোনা করার জন্য তোমাকে বাসার বাইরে যেতে দেওয়া হয়। কারো সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য না।
আমিতো বললামই রায়ার জন্মদিন আজ। চোখ তুলে তাকিয়ে বললো মুসকান।
জন্মদিন তো কি হয়েছে চার ঘন্টা রেষ্টুরেন্টে থাকতে হবে তোমার?
ওরা তো আমার বন্ধুই ওদের সাথে একদিন আড্ডা দিয়েছি এতে কি হয়েছে? রেগে গিয়ে এই প্রথম মুসকান ইমনের মুখের ওপর জবাব দিলো।
ইমন তো অবাক যে মেয়ে কোনদিন ভয়ে তার দিকে চোখ তুলে কথা অবদি বলেনি। সে আজ মুখে মুখে তর্ক করছে।
চুপপ একদম চুপ। মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গেছো। বড় হয়ে গেছো অনেক এতোটা অধঃপতন তোমার।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। তবুও আজ সে নিজেকে স্ট্রং রেখে ইমনের সাথে সরাসরি কথা বলবে। সে তার বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চাইবে।
চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো – ছোট থেকে আমার সব কিছুতে তুমি বাঁধা দিয়েছো । কখনো তোমার কথার অবাধ্য হইনি। আমার খাওয়ার ব্যাপারে, আমি কি পোশাক পড়বো সেই ব্যাপারে, আমি কোন স্কুলে পড়বো কোন কলেজে পড়বো সবটাই তোমার ঠিক করে দেওয়া। বাসায় সবাই তোমার কথায় ওঠে আর বসে এমনকি আমার নিজের মা বাবা,আর ভাইয়েরাও। কিন্তু সবকিছুর তো একটা সীমা আছে ভাইয়া। আমি আর পারছিনা আমার নিজেরও একটা লাইফ আছে, আমার নিজের একটা পরিবার আছে । তুমি কেনো আমার লাইফ এতো হ্যান্ডেল করবে। এটা কি বাড়াবাড়ি না? সব মেনে নিলাম কিন্তু আমি তোমার জন্য আমার বন্ধু দের সাথেও আড্ডা দিতে পারবোনা। কোন ভাই এমন হয় বলোতো। আমার ফ্রেন্ড দের ও তো বড় ভাই আছে তারা তো এমন না। আমার নিজের ভাই ও তো এমন টা করে না । তুমি কেনো এমন করো সব বিষয়ে, আমার আর ভালো লাগছেনা এসব আর না । বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ইমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে বিশ্বাস করতে পারছে না মুসকান তাকে এসব বলে গেলো। সবেমাএ কলেজে পড়ছে এখনি ও এইসব বলছে তাহলে আর কিছুদিন পর কি বলবে। আমার ওকে এতো আগলে রাখাটা ওর বিরক্ত লাগছে। নিজের পরিবার আর আমাকে আলাদা করে দেখছে। শুধুমাএ বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে বারন করেছি বলে আজ এতো সব কথা বললো।তার মানে এগুলো ওর আগে থেকেই মনে ছিলো শুধু আজ বিরক্ত হয়েই সব বললো। এতোদূর এগিয়ে গেছে বিষয় গুলো।
আমি কেনো এমন করছি সেটা তো ওকে এখনি জানাতে চাইনা। কিন্তু পরিস্থিতি তো অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। আমার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মুসকান। আমার এতোদিনের পরিশ্রম কে ও এতোটা তুচ্ছ করে ফেলছে না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।
রুম থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় থমকে দাঁড়ালো।
ভাবতে লাগলো-  মুসকান তো এই কথা টা ঠিকি বলেছে বোনদের তো এতোটা গাইড দিয়েও কেউ রাখে না । ও তো আর জানে না ওর আমার সম্পর্ক তাইতো এগুলো মেনে নিতে পারেনা  যখন জানবে তখন ঠিকি বুঝবে সবটা। আমি মায়ের সাথে রাতেই কথা বলবো।

মুসকান ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা তার বড্ড খারাপ। কিছু ভালো লাগছেনা তার। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই নিজের রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লো।
কিছু ক্ষন পরেই ইরাবতী আর মোজাম্মেল চৌধুরী বাড়ি ফিরলেন। ফিরেই মুসকানের সাথে দেখা করতে তার রুমে আসলো।
একি মেয়েটা এই অসময়ে সুয়ে আছে শরীরটা কি এখনো খারাপ নাকি।
মুসকান, মুসকান।
মামনি তুমি এসেছো। বলেই ওঠে ইরাবতী কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো মুসকান।
কি হয়েছে মা কাঁদছো কেনো এইতো এসে গেছি। কি হয়েছে বলো?
মুসকান কেঁদেই চলেছে। কাঁদতে কাঁদতে আর কিছু বলতেই পারছেনা। ইরাবতী মুখটা ওঠিয়ে চোখের পানি মুছে কপালে চুমু দিয়ে বললো – কি হয়েছে বল মা ইমন বকেছে?
মুসকান আবারো তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। ইরাবতী বুঝলো হয়তো ইমন কিছু বলেছে।
মুসকান কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠলো- আমার সব কিছুতে ইমন ভাইয়া কেনো এতো বাধা দেয়। কেনো আমি অন্য সবার মতো ফ্রি ভাবে চলতে পারিনা। ভাইয়া কেনো আমাকে সব কিছুতেই এতো বকাবকি করে। আমার আর ভালো লাগছেনা কিছু  আমি আর এসব নিতে পারছি না।
মুসকান দেখি দেখি আমার দিকে তাকাওতো। কি বলছো হুম?  ইমনতো তোমাকে কতো ভালোবাসে কতো কেয়ার করে। ভালবাসা থেকেই তো শাসন আসে তাইনা। সেটা নিয়ে এতো কাঁদতে হয় বোকা মেয়ে।
ভালোতো তোমারাও বাসো সবাই বাসে কই তোমরা তো এমন করো না।
কেনো যে ইমন এমন করে সেটা যদি তুই জানতি তাহলে কি আর এইভাবে কাদতি। তুই যে ওর হৃদপিন্ড মা ওটা বোঝার সময় তো এখনো হয়ে আসেনিরে। ( মনে মনে)
আমরা করিনা কিন্তু ওর ভালবাসা আলাদা তাই এমন করে এটা নিয়ে এতো মন খারাপ করার কিছু হয় নি মা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও মুখটা শুখিয়ে গেছে।
না মামনি আমি কিছু করবো না। তুমি ভাইয়াকে বলো আমার সাথে যেনো এমন না করে। আমি আমার বন্ধু বান্ধব দের সাথেও কেনো মিশতে পারবো না বলো?
ইরাবতী চিন্তিত মুখ করে বললো।
মানে?
হুম মামনি। মুসকান সবটা খুলে বললো ইরাবতী কে।
তুমি তো এটা ঠিক করোনি মা। এতো সময় বাইরে ছিলে কেনো।
সরি মামনি। তাই বলে আর ওদের সাথে মিশতে পারবো না এটা কেমন কথা?
আচ্ছা সেটা আমি দেখছি।
মুসকানের চোখ চকচক করে ওঠলো। সত্যি….
হুম সত্যি।
আচ্ছা তুমি কিন্তু বলে দিবে ভাইয়া কে।
হুম যাও ফ্রেশ হয়ে পড়তে বোসো।
ওকে মামনি বলেই ইরাবতীর গালে কিস করলো।
ইরাবতী হাসতে হাসতে বললো- পাগলী একটা।

রাত দশটা বেজে গেছে ইমন এখনো বাড়ি ফিরে নি। সেই যে মুসকানের সাথে কথা কাটাকাটি করে বেরিয়েছে আর ফিরে নি। ইরাবতী ফোন করে তারাতারি আসতে বলাতে এসে কলিং বেল বাজালো ইমন। ইরাবতী গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ইমন গিয়ে সোফায় বোসলো । ইরাবতী এক গ্লাস পানি নিয়ে ইমনকে দিলো।
মুখটা শুখিয়ে গেছে কেমন সারাদিন খাসনি কিছু? ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে দিবো।
না মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
আমারো আছে। আগে খেয়ে নে পড়ে সব শুনবো।
না আগে কথা শুনো তার পর ।

ইরাবতী ছেলের জেদের সাথে পারবেনা তাই বললো – ঠিকাছে বল।
মুসকান কে আর এভাবে দূরে রাখা ঠিক হবে না মা।
সব শুনেছি আমি । তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস কিছু হবে না। আর একটা বছর ওয়েট কর ওর এক্সামটা হোক তার পর  যা করার করবি।
কিন্তু ও আমাকে আজ যা বলেছে।
কি?
সব খুলে বললো। সব শুনে ইরাবতী হেসে দিলো।
আরে পাগল মেয়েটা তো বুঝোনা তাই অমন বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে সবটা বুঝাবো দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তারাহুরো করে কিছু করা  ঠিক হবেনা।
কিন্তু মা।
আর কোনো কিন্তু না । তুই এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে ওকে ওর মতো থাকতে দে একটা বছরই তো  । পড়াশোনা করলে বন্ধু বান্ধব থাকবেই এটা নিয়ে এমন করিস না। তুই তোর বাবার ব্যবসায় মনোযোগ দে তো। কদিন পর বিয়ে করবি বউ কে নিজের রোজগারে খাওয়াতে হবে তো ।
মায়ের কথা মেনে নিলো ইমন । আর এক বছর সে তার বউ এর জন্য অপেক্ষা করবে। মুসকানকেও এতো বেশী শাসন করবে না। এতে মুসকানের চোখে সে খারাপ হয়ে যাবে। তাই ভাবলো থাকুক ও ওর মতো। আমার জিনিস তো আমারই থাকবে। আর পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই আমার জিনিসে হাত দেওয়ার।
ডিনার করে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো। বেশ কিছুদিন হলো ইমন মুসকানকে আর বকাবকি করেনা। মুসকান পড়াশোনা আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যাস্ত। ইমন ও বাবার ব্যাবসা আর নির্বাচন নিয়ে বেশ বিজি । কিন্তু ইমনের চ্যালারা ঠিকি মুসকানের খোঁজ খবড় ইমনকে দেয় । আবির, নিলয়,রাফি এরা তেমন মিশে না মুসকানের সাথে শুধু দরকারে কথা বলে তবুও খুব কম।

এদিকে মুসকান নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করছে। ইমন তাকে আর কিছু বলে না বলে মনে মনে বেশ খুশি। ইমন তার সামনেও আসেনা। কিন্তু রাতে ঘুমানোর পর মাঝরাতে ঠিকি মুসকানের রুমে এসে তার মুখপানে দীর্ঘসময় চেয়ে থাকে। যা ইমন আর উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।

জয় নামের এক ছেলের সাথে ফেসবুকে আলাপ হয় মুসকানের। বেশ কিছু দিন যাবতই তাদের কথা হয়। ইদানীং পড়াশোনা বাদ দিয়েও অনলাইনে থাকে মুসকান। জয়ের সাথে কথা বলতে বলতে একমাসে সেটা তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বই সামনে নিয়ে চ্যাট করে যায় সমান তালে। ইরাবতী খাওয়িয়ে দেয় আর মুসকান চ্যাট করে। মুসকানের এই বিষয় গুলা কারো চোখ এড়ায় না। ইমন ও বেশ লক্ষ করছে কিন্তু নির্বাচনের জন্য বেশ ব্যাস্ত থাকায় এদিকে তেমন গুরুত্ব দিতে পারেনি। রাতে ডিনার শেষে ইমন নিজের রুমে গিয়ে ল্যাপটবে কিছু কাজ করে মুসকানের আইডি লগ ইন করলো। আইডি লগ ইন করে যা দেখলো এতে ইমনের মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেলো। রাগে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো৷ তার এতোদিনের সাজানো স্বপ্ন এইভাবে নষ্ট হতে পারেনা ।
মুসকান কে স্বাধীনতা দিয়ে মায়ের কথা শুনাটা কি তাহলে আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।
নিজের জিনিসে এই ইমন কখনোই ছাড় দিবেনা। তুমি কতো বড় ভুল করলে এবার হারে হারে টের পাবে৷ আর এই জয় কার জিনিসে হাত দিয়েছে সেটা এবার বুঝবে। আর তোমার প্রেমলীলা আমি বের করছি বলেই দ্রুত মুসকানের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইমন।

চলবে…………………..

বউ চুরি পর্ব : ৪

0

বউ চুরি
পর্বঃ ৪
লেখিকাঃ জান্নাতুল নাঈমা

ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে নিয়ে মুসকান স্তব্ধ হয়ে গেলো।এমনিতেই শরীরের অবস্থা ভালো না। তার ওপর ইমন, তার চাচাতো ভাই এসে তাকে ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে দিচ্ছে। শরীরটা আরো দ্বিগুন অবশ হয়ে গেলো।লজ্জায় তার ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কি করবে এখন কিছু বুঝতে পারছে না। পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। চোখ দুটো পানিতে চিক চিক করছে।  মামনি আর আম্মুর কাছে শুনেছে পুরুষ মানুষ দের থেকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে এসব বিষয় একান্তই মেয়েদের বিষয়। কিন্তু আজ যা হলো এতে মুসকানের মরে যেতে ইচ্ছে করছে বিষয়টা সে হজম করতে পারছে না। হাজার হলেও ইমন কে সে বড় ভাই হিসেবে অনেক সম্মান করে, ভয় পায়। তাদের দুজনের সম্পর্কের যে বিশেষায়িত গভীরতা সেটা তো আর সে জানে না।
ইমন একটু ইতস্ততভাবে বললো- আমি যাচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। বলেই বেরিয়ে গেলো।এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়বে সেও ভাবে নি। মুসকান এর অমন চাহনি অমন বিব্রত মুখ দেখে খুব কষ্ট হলো তার। বড্ড আফসোস হলো নিজের বউ এর সামনে কতোটা ফর্মালিটি করে চলতে হচ্ছে। সামাজিক রিতীতে তো মুসকান ইমনের বিয়ে করা বউ। সেই বারো বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা। মুসকান হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু ইমন তো ভুলে নি। নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। সময় যেনো পারই হচ্ছে না বড্ড অধৈর্য হয়ে পড়েছে ইমন।
মুসকান বাথরুম গিয়ে খুব কান্না করলো। পিরিয়ডের সময়টা তার খুব কষ্টে কাটে। এমন সময় তার জ্বর ও এসে যায়। তার মামনি আর আম্মু খুব যত্ন নেয় ব্যাথার ওষুধ খাওয়ায়। কিন্তু আজ কে করবে এসব। মুসকানের বড্ড অসহায় লাগলো নিজেকে। ফ্রেশ হয়ে এসে তার আম্মু কে ফোন দিয়ে জানালো। কিন্তু তার তো বাবা মারা গেছে। মোজাম্মেল চৌধুরী ফিরলেও ইরাবতী আর দীপান্বিতা ফিরতে পারবে না।
মুসকান কেঁদে কেঁদে  সব বললো।ইরাবতী শুনে মুসকানকে সান্ত্বনা দিলো আর বললো- এমন করো না মা এতে এতো কষ্ট লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আর ইমন তো বাইরের ছেলে না। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় তুমি এতোটা লজ্জা পেওনা৷ ভাত খেয়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে সুয়ে থাকো কেমন।
মুসকান তবু স্বাভাবিক হতে পারলো না। কিছুতেই সে স্বাভাবিক হতে পারলো না।

ইমন বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো। মুসকান তবুও খেতে গেলো না। ইমন বুঝতে পারলো মুসকান লজ্জায় বের হচ্ছে না।  তাই সে বাধ্য হয়েই মুসকানের রুমে গেলো গিয়ে দেখলো মুসকান চুপ করে বসে আছে চোখ মুখ লাল বালিশটা পেটে চেপে বসে আছে। ইমন একটু কঠিন স্বরে কথা বলে মুসকান কে খেতে নিয়ে গেলো। মুসকান চুপচাপ খাচ্ছে কিন্তু ইমন খাচ্ছে না। সে আবার মুসকানের রুমে গিয়ে বিছানার চাদর চেন্জ করলো। চাদর টা বাথরুমে রেখে আবার মুসকানের কাছে গেলো।
ব্যাথার ওষুধ সাথে একটা গ্যাসট্রিক এর ওষুধ দিয়ে ইমন চলে গেলো।মুসকানের যেনো আর খাবাড় গলা দিয়ে নামছে না। তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। বড্ড কান্না পাচ্ছে তার। কিন্তু কি আর করার উপায় নেই তাই সে খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলো।

ইমন কখনো নিজের জামা কাপড় ও নিজে পরিষ্কার করে নি। কিন্তু আজ তার বউ এর বিছানারচাদর তাকেই পরিষ্কার করতে হবে। কারন সে চায় না বাড়ির কাজের লোক রা তার বউ এর ব্যাক্তিগতো বিষয় জানুক। তাছাড়া তার বাবা রাতেই ফিরবে শশুড় এর চোখে পড়লে মুসকান আরো বেশী লজ্জা পেয়ে যাবে তাই সে তারাহুড়ো করে চাদরটা পরিষ্কার করলো।মুসকান রুমে এসে একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে সুয়ে পড়লো কুলবালিশটা জরিয়ে। সে খেয়ালই করলো না তার বাথরুমে কেউ আছে।
ইমন চাদর নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো।মুসকান ধরপরিয়ে ওঠে বোসলো বড় বড় করে তাকালো ইমনের দিকে।
ইমন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।
মুসকান তো অবাক হওয়ার সীমা ছাড়িয়ে গেলো।যে ছেলে কিনা এক গ্লাস পানি ও নিজের হাতে খায় না সে আমার বিছানার চাদর পরিষ্কার করলো তাও ঐ টা ছি ছি  আল্লাহ আজ আমার সাথে কি হচ্ছে এসব। তার বিছানায় তাকিয়ে খেয়াল করলো অন্য চাদর সে বুঝতে পারলো ইমন ই করেছে এসব। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সুয়ে পড়লো।

ইমন দুপুরের খাবাড়টা খেয়ে মুসকানের রুমে গেলো।
মুসকান ঘুমাচ্ছো??
সাথে সাথেই মুসকান ওঠে বোসলো ওড়নাটা ঠিক করে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো।
কিছু বলবে ভাইয়া???
এখন কেমন লাগছে।
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। আমতা আমতা করে আস্তে করে বললো- ঠিকআছি।
ইমন আর চুপ করে থাকতে পারলো না মোড়াটা টেনে বিছানার পাশে বসে পড়লো।
এতোটা ইতস্তত বোধ করার কোনো মানে হয় না মুসকান।

না মানে আসলে……
আসলে বিষয়টা কিছুই না। তুমি যতোটা হাইড করতে চাইছো এটা ততোটা হাইড করার বিষয়ই না । তুমি একটু বেশিই লজ্জা আর ভয় পাচ্ছো। এটা কি আদেও লজ্জা কর বিষয়??  নাকি মেয়ে হিসেবে গর্ব করার বিষয়। একটু ভেবে দেখোতো??
মুসকান অবাক হয়ে তাকালো ইমন মুসকানের মুখ পানে চেয়ে রয়েছে। মুসকান ইমনের চাহনি দেখে মাথা আবারো নিচু করে ফেললো। ইমন তার কথা গুলো বলতে থাকলো। মুসকানের হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছিলো।

আচ্ছা দেখো দিপক যখন জানতে পারলো দীপান্বিতা কাকি মা হতে চলেছে। তখন কি দিপক বা কাকি লজ্জা পেয়েছে?? বা আমার আব্বু যখন জানতে পারলো কাকি মা হতে চলেছে তখন কি কাকি লজ্জা পেয়েছে যে তার ভাসুর জেনে গেছে সে সন্তান সম্ভবা। কাকি কিন্তু লজ্জা পায় নি বরং কাকি সহ বাড়ির সবাই খুশি হয়েছে  । কাকির ভাই যখন জানতে পারলো তার বোন মা হতে চলেছে তখন ও কিন্তু কেউ লজ্জা পায়নি। ইভেন প্রত্যেকটা মানুষ জেনে খুশি হয়েছে। হোক পুরুষ হোক নারী প্রত্যেকেই খুশি হয়েছে খবড় টা শুনে। কারন এটা প্রকৃতির নিয়ম। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনেই পিরিয়ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  শুধু মেয়ে না ছেলেদের জন্য ও। কারন একটা মেয়ের যদি পিরিয়ড না হতো একজন স্ত্রীর যদি পিরিয়ড না হতো একজন স্বামী,পুরুষ কখনোই বাবা হতে পারতো না। যে বিষয়টা মানুষের জীবনে এতো সুখকর এতো আনন্দ দায়ক জীবন উপহার  দেয় সে বিষয়টা কখনোই লজ্জা জনক বিষয় হতে পারে না। একজন পুরুষের উচিত প্রত্যেকটা নারীকে রেসপেক্ট করা। নারীদের এসব বিষয় নিয়ে পুরুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। একটা নারীর যতোটা কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আছে একজন পুরুষের তা নেই। পিরিয়ডের যন্ত্রনা থেকে শুরু করে মা হওয়ার তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করতে পাড়ার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা একজন নারীকেই দিয়েছেন। তাই পিরিয়ডের জন্য লজ্জা নয় গর্ব করা উচিত। যেসব নারীরা এটা নিয়ে লজ্জা ভয় পায় তারা বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়।আর যেসব পুরুষ রা এটা নিয়ে পজিটিভ মেন্টালিটি না রেখে নেগেটিভ মেন্টালিটি রাখে এটা কে নিয়ে হাসাহাসি করে, রাস্তা ঘাটে বাজে মন্তব্য করে তারা সত্যিকারের অর্থে পুরুষ ই নয়। তারা কাপুরষ। মানুষ হয়েও পশুর সমতুল্য কারন তারা  ভুলে যায় তারাও কোনো মায়ের, নারীর সন্তান । আর সেই মা, নারীর যদি পিরিয়ড না হতো তাহলে সে পৃথিবীর আলোই দেখতে পারতো না। তাই সব সময় একটা কথা মাথায় রাখবে পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা বা ভয় নয় গর্ব করা উচিত ?।

মুসকান অবাক চোখে দেখছে ইমন কে। তার কথার মাঝেই হারিয়ে গেছে৷ সত্যিতো তার কথা গুলো ঠিক। একধ্যানে তাকিয়ে আছে মুসকান। ভয় লজ্জা দুটোই কেটে গেছে। লজ্জা কেটে গেছে বললে ভুল হবে। তবে কোনো ভয় বা অসস্থি লাগছে না আর তার।

আচ্ছা তুমি সুয়ে রেষ্ট নাও আমি এিশ মিনিট পর আসছি।
মুসকান মাথা ঝাকালো।
ইমন চলে গেলো বাইরে। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে শান্তি তে চোখ বুঝলো।আর ইমনের কথা গুলো ভাবতে লাগলো।যতোটা কর্রশ ভেবেছিলাম ততোটা কর্কশ নয়। বেশ জ্ঞান আছে কতো সুন্দর কথা বলতে পারে কতো আদর করলো আজ। ভাইয়া সত্যি খুব ভালো মনের আনন্দে চোখ বুঝে শান্তি তে রেষ্ট নিতে লাগলো সে।

পাঁচটার  দিকে ইমন মুসকানের রুমে আসলো ভেবেছিলো আজ তাকে নিয়ে বেরোবে। কিন্তু তা আর হলো না তাই বাইরে থেকে খাবাড় আনিয়েছে। আর আলেয়া চাচী কে রাতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে। কারন রাতের খাবাড়ের ব্যবস্থা করেছে সে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মুসকান….
কাধে হাত দিতেই বুঝলে শরীরটা বেশ,গরম। কপালে হাত দিতেই দেখলো বেশ,জ্বর । মুসকান গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ঠান্ডা লাগছে দেখেই বুঝতে পারলো।তারাতারি ওঠে গিয়ে একটা কম্বল নিয়ে এসে গায়ে দিয়ে দিলো। ইরাবতী কে ফোন করে সবটা জানালো।
তুই ওকে একটা প্যারাসিটামল খাওয়িয়ে দে আর রাতে একা রাখিস না বমিও হতে পারে।
কিন্তু মা….
কোনো কিন্তু নয় এখন বিপদের সময় এতো কিছু ভাবার টাইম নেই। আর ওর ভালোটা আগে দেখ। আর নিজের বউ এর বিপদে নিজে ছাড়া আর কাকে পাশে রাখতে চাস?  এখন তো আমরা কেউ নেই এদিকের অবস্থা ভালো না রাখছি।তোর বাবাও ফিরতে পারবেনা আজ কে। বলেই কেটে দিলো ইরাবতী শোকের বাড়ি তাই অতো ভাবার টাইম নেই তার । ইমন বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলো এক রুমে সারারাত কাটাতে হবে তাকে মুসকানের সাথে। তার থাকার অধিকার আছে স্বামী হিসেবে সব অধিকারই আছে তার তবুও যে একটা কিন্তু রয়ে গেছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে মুসকানের মুখের দিকে তাকালো। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। নাক টা বেশিই লালচে বর্ন ধারন করেছে। মনে হয় ঠান্ডা ও লেগে গেছে। তার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এসে মুসকানের রুমে বসে কাজ করছে। দু’ঘন্টা পর মুসকান নড়াচড়া করে ওঠতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ইমন বুঝতে পারলে হয়তো মাথা তুলতে পারছে না জ্বর ঠান্ডার কারনে মাথা ভারী হয়ে আছে। তাই সে কাছে গিয়ে দুকাধে ধরে ওঠে বসালো। মুসকানকে স্পর্শ করতেই তার বুকের ভেতর শিহরন বয়ে গেলো। মেয়েটা একবারেই নেতিয়ে পড়েছে। শরীরটাও নেতিয়ে গেছে কেমন। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ ই রেখেছে । ওর মুখের দুকে তাকিয়ে বন্ধ চোখ দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠলো ইমনের । ইচ্ছে করলো গাল দুটো টেনে দিতে , কপালে ভালবাসার পরস একে দিতে, কিন্তু এখন সেসব কিছুই করা যাবে না।
গায়ে বেশ জ্বর তারাতারি খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে ভেবেই ইমন ওঠতে নিলো কিন্তু মুসকান মামনি বলেই কাঁদতে শুরু করলো।  ইমন আবারো বিছানায় বসে পড়লো  মুসকানের গালে হাত দিয়ে বললো- এই কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? কিছু হবেনা।
মুসকান ইমনের বুকে মাথা রেখেই কাঁদতে লাগলো।
ইমনের বুকে মুসকানের শরীরের সমস্ত তাপ অনুভব হতে লাগলো।সেই সাথে অনুভব করলো মুসকানকেও। পুরো শরীর জুরে শিহরন বয়ে গেলো তার  কোনো কিছু না ভেবেই সেও বুকে জরিয়ে নিলো ।
জ্বরের ঘোরে মুসকানের কথা গুলো যেনো মাতাল করে দিলো ইমন কে । মুসকানের শরীরের ঘ্রান তার নাকে পৌঁছাতেই তার বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
মামনি আমার খুব শীত করছে। ভালো করে বুকে নাও না । বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমন আরো গভীর ভাবে বুকে জরিয়ে নিলো । সে যেনো হারিয়ে গেছে। ডুবে গেছে তার পিচ্চি বউ এর শরীরের ঘ্রানে, মাতাল করা কন্ঠে। সত্যি মেয়েটার শরীরের ঘ্রানটা  বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ তুলে দেয়। বাচ্চা কালে ছিলো একরকম বহুবছর পর আবারো পেলাম আরেক রকম তবে এটা সত্যি মারাত্মক। কেমন যেনো লাগছে আমার। এমন অস্থিরতা এমন সুখ যেনো আগে  কখনো লাগেনি। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের উক্তি টা সত্যি ফিল করতে পারলাম আজকে –
অল্প বয়সী মেয়েদের শরীরের
গন্ধ খুব খারাপ…
এই গন্ধে মহাপুরুষেরা যেন
কেমন হয়ে যায়…!

আমি কি সত্যি আজ আমার মাঝে আছি। আমার বউ টা কি আমাকে আজকে আমার মাঝে রেখেছে। নাকি তার মাঝেই হারিয়ে গেছি। তার মাঝেই ডুবিয়ে নিতে চাচ্ছে আমাকে। আমি কেমন হয়ে গেলাম?

বেশকিছু ক্ষন পর – মুসকান কে শুইয়িয়ে দিলো। সে আবারো ঘুমিয়ে গেছে।  ইমন তারাতারি গিয়ে খাবাড়গুলো গরম করে মুসকানের রুমে নিয়ে আসলো।তাকে তারাতারি খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। বউ কোথায় স্বামীর সেবা করবে তা না সংসার শুরু হওয়ার আগেই তার সেবা করতে হচ্ছে । সব সুদে আসলে ফেরত নিবো। ( মুচকি হেসে )।

মুসকান কে ওঠিয়ে খুব যত্ন সহকারে খাওয়িয়ে দিলো। কয়েক লোকমা খেতেই বমি বমি ভাব করলো তাই আর না খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো।মুসকান আবারো সুয়ে পড়লো।
ইমন নিজেও খেয়ে নিলো।
মুসকানের রুমে এসে দেখলো সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ধীর পায়ে তার কাছে গিয়ে বেশ,কিছুক্ষন তার মুখপানে চেয়ে রইলো।  ষোল বছর আগের সেই পিচ্চি মুখটা আর এই মুখটা ভেবেই তার হাসি পায়।
বউ আমার বউ, আমার পিচ্চি বউ, আমার আদরের বউ, আমার চুরি করা বউ, আমার বউ মনে মনে বলতে বলতে মুখ এগিয়ে নিলো মুসকানের মুখের দিকে। তার গভীর ঘুমন্ত নিঃশ্বাস ইমনের মুখে পড়তেই ইমন তারাহুরো করে কপালে একটা কিস করেই ওঠে বাইরে চলে গেলো।

না এক রুমে সম্ভব না থাকা। আরো বেশী দূর্বল হয়ে পড়ছি আমি। অসুস্থ বলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি নয়তো আজ কি হতো আল্লাহ ভালো জানে।

ফোনের শব্দে আবারো রুমে আসলো ইমন। পড়ার টেবিলে ফোন বাজছে।

কাছে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই আননোন নাম্বার দেখতে পেলো।
ওর ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কে কল দিবে। ভ্রু কুচকে তাকালো মুসকানের দিকে। আবারো ফোনের দিকে তাকালো বেজেই চলেছে। রিসিফ করে –

হ্যালো কে বলছেন??
আমি আবির এটা মুসকানের নাম্বার না??
হ্যা। ( রাগে গট গট করতে করতে বললো – ফোন হাতে পেতে না পেতেই ছেলেরা ফোন দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে তুলে দেই কয়েকটা লাগিয়ে।)
ওকে কি দেওয়া যাবে??
কি দরকার আমাকে বলো। আর কে তুমি?
আমি ওর সাথেই পড়ি। আজ কলেজ যায়নি তাই আর কি খোজ নিচ্ছিলাম৷ আমি ওর বন্ধু।
ওহ। আজ যায় নি। তো কি হয়েছে কলেজ তো যাবেই। একদিনেই এতো খোঁজ নেওয়ার কিছু হয় নি।
আচ্ছা ওকে বলবেন আবির ফোন দিয়েছিলো।
ইমন আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।
তারপর নিজের ফোন বের করে কাকে যেনো ফোন দিয়ে বললো- মুসকানের সাথে পড়ে ছেলেটার নাম আবির কাল ওর সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিবি।
ওকে ভাই ওকে।
ইমন মুসকানের ফোন বেশ ঘাটাঘাটি করলো। তার মধ্যে দুটা অচেনা নাম্বার পেলো। তার মধ্যে একটা আবিরের আরেকটা নিজের ফোনে সেফ করে রাখলো।
ফেসবুক অ্যাপ ও দেখতে পেলো।
বাহ ফেসবুক একাউন্ট ও খোলা হয়েছে। আর আমি জানিও না । এইসবের জন্যই এতো আগেই ফোন দিতে চাইনি।
ফেসবুকে ঢুকেই দেখতে পেলো একাউন্ট  দুদিন আগের খোলা  । বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ফ্রেন্ড ও রয়েছে। আইডিটা নিজের ফোনেও লগ ইন করে রাখলো। ইমেইল আইডি তাই সে তার ফোনে আইডি টা জিমেইল করে রাখলো। মুসকানের থেকে আইডি হাত ছাড়া হলেও তার থেকে হবে না।
রাগে সে সারারাত ঘুমাতে পারলো না। কেনো জানি ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।

সকালের দিকে জ্বর ছেরে গেছে মুসকানের। আজানের সময়ই মুসকানের জর আছে কিনা দেখে রুম থেকে চলে গেছে ইমন । মুসকান ঘুম থেকে ওঠেই ইরাবতীকে ফোন করে জানলো সে বিকালেই এসে পড়বে।
মুসকান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।
আলেয়া এসে ব্রেকফাস্ট করে রেখেছে। মুসকান গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বের হবে এমন সময় ইমন নিচে নেমে এলো।
কেথায় যাচ্ছো??
কলেজে ভাইয়া।
বাসায় কেউ নেই তুমি কলেজ যাচ্ছো। আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করোনি?
মুসকান নিচের দিকে তাকিয়েই বললো- আসলে তারাহুরো করে। ( মুসকান কখনোই ইমনের চোখে চোখ রেখে কথা বলে না)

চুপপ কিসের তারাহুরো ক্লাশ শুরু হতে আরো দু’ঘন্টা বাকি। এতো তারাহুরো কিসের? কাল জ্বর ছিলো জ্বর কমতে না কমতেই ছুটাছুটি করতে হবে।

  আসলে রায়ার জন্মদিন আজ তাই একটু আগেই যাওয়ার কথা ছিলো।

রায়া মুসকানের বেষ্ট ফ্রেন্ড। ইমন রায়াকে খুব ভালো করেই চিনে তাই আর কিছু বললো না। কি যেনো একটা ভেবে বললো-
ওহ। যাও তবে গাড়ি নিয়ে যাবে তোমাকে কলেজ ছেড়ে দিয়ে আসবে।
ঠিক আছে বলেই বেরিয়ে গেলো মুসকান।
ইমন কাকে যেনো ফোন করে কথা বলে। রেডি হয়ে সেও বেরিয়ে পড়লো।

আজ যে মুসকানের কপালে কি আছে তা সে নিজেও জানে না।

চলবে………

বউ চুরি পর্ব : ৩

0

বউ চুরি
পর্ব : ৩
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

ইমন রুমের ভেতর গিয়ে পুরো রুমটায় চোখ বুলালো।পুরো রুমটা অগুছালো।
রাত এগারোটা বাজে হয় তুমি চেয়ার টেবিলে বসে পড়া শুনা করবে নয়তো ঘুমাবে। কিন্তু সেসব না করে গান গাইছো। আর কিসব গান ধমকে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো আমতা আমতা করে বললো- আমিতো ঘুমুতেই যাচ্ছিলাম।
চুপপ, একদম মিথ্যা বলবে না। রুমের চেহেরা দেখে কি মনে হয় তুমি ঘুমাতে যাচ্ছিলে? রাত এগারোটা বাজে এতো রাতে কিসের লাফালাফি। দিন দিন বড় হচ্ছো না ছোট হচ্ছো??
মুসকান ঢোক গিললো। কি করে বুঝলো আমি এসব করছিলাম। হায় খোদা এর জন্য কি নিজের রুমেও স্বাধীন ভাবে কিছু করতে পারবো না। সেই ছোটো থেকে যখনি আমার একটু নাচতে ইচ্ছা করে গাইতে ইচ্ছা করে এই কর্কশ ভাই টা বাইরে গেলে করতাম। কখনোতো সামনে করিনি তাহলে আজ বুঝলো কি করে। মনে মনে ভাবতে লাগলো আর ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে।
হাতে তুরি বাজিয়ে – কিহলো সমস্যা কি?
না মানে আসলে ভাইয়া……
চুপপ,একদম চুপপ, যাও রুম ঠিক করে ঘুমাতে যাও।
মুসকানের চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়লো। সে একটু ধমক ও সহ্য করতে পারে না। কিন্তু একমাএ ইমনই তাকে অল্পতেই বেশ ধমকা ধমকি করে। সবাই যতোটা আদরে রাখে ইমন ততোটাই শাসনে রাখে।একজন তো লাগবেই শাসনের জন্য নয়তো বয়সের দোষে পড়া শোনা, আরো অনেক বিষয়েই বেঁকে যাবে। তবে এই শাসনের পেছনে যে মহাসমুদ্রের ভালবাসা লুকিয়ে আছে তা কি মুসকান কখনো বুঝতে পারবে?

মুসকান ধীর পায়ে গিয়ে পুরো রুম টা গুছালো। ইমনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাতে ফোন ইউস করছে। ইমন একটু মাথা উঁচু করে মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান চুপটি মেরে সুয়ে পড়লো। ইমন মুচকি একটা হাসি দিলো। ধীরে ধীরে তার বিছানার পাশে এগিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মুসকান চোখ পিটপিট করে ঘুমের অভিনয় করে চলেছে। ইমন তার মুখের পানে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে চলে গেলো রুমের বাইরে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে।তার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় মুসকানের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেই। তার মুখের মায়াতে যে সেই বাচ্চা কালেই পড়ে গেছে৷ সেই মায়াতে ডুবে ডুবেই আজ এতো বছর পার করেছে সে। আরো বহুবছর পার করতে চায়। তার বাচ্চা বউ এর সাথে।

সকাল আটটা বাজে। দিপান্বীতা মুসকানকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য রুমে ঢুকলো।ইরাবতী খাবাড় তৈরী করছে ছেলে মেয়ের জন্য। ইমন আর দিপু ( দিপান্বীতার ছোটো ছেলে) কথা বলছে। দিপু মুসকানের দুবছরের ছোটো । তার বড় ভাই দিপক পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে গেছে। ৬বছর হলো। আর কয়েকমাস পরেই ফিরে আসবে। মুসকানের জন্য ইমন দেশের বাইরে যায় নি। দেশেই পড়াশোনা করেছে।
মুসকান, ওঠো মা সকাল হয়ে গেছে, ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে। কলেজ আছেতো। বলতে বলতেই তার কোলবালিশ সরিয়ে তাকে ওঠিয়ে বসালো। মুসকান ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো চোখ দুটো কচলে – আরেকটু ঘুমাই আম্মু।
দীপান্বিতা চুল গুলো ঠিক করে বেঁধে দিয়ে ব্রাশ নিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলো। প্রতিদিনই এভাবেই তাকে ঘুম থেকে ওঠানো হয়। ক্লাস নাইনেই তাকে আলাদা রুমে থাকতে দেওয়া হয়। মুসকান ওঠে বাথরুম চলে গেলো।দীপান্বিতা বিছানা গুছিয়ে নিচে চলে গেলো।
মুসকান রেডি হয়েই নিচে নেমে আসলো।
ইমন, দিপু খেতে শুরু করেছে। মুসকান এসে ডায়নিং টেবিলে বোসলো। পড়নে তার কলেজ ড্রেস। চুল গুলো উপরে বাধা। চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ইমন এক নজর মুসকান কে দেখলো । হালকা লিপস্টিক, কাজল দেওয়াটা ইমনের কাছে খুব একটা ভালো লাগলো না।
কলেজ যাচ্ছে পড়াশোনা করতে সাজগোজের কি আছে?  এমনিতেই তো সুন্দর এতো কিছুর কি প্রয়োজন?  ইমন আর না খেয়ে ওঠে পড়লো। উপরে গিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হলো। বেরোনোর সময় মুসকানকে বলে গেলো দশ মিনিটের মধ্যেই বের হবে।
মুসকান একটা ভেঙচি কেটে দিলো দিপু হাসতে হাসতে টেবিলে লুটিয়ে পড়ছে।
এই চুপ একদম হাসবি না । চুপচাপ খা।
আপু তুমি ইমন ভাইয়া কে অনেক ভয় পাও তাইনা??
কেনো তুই পাসনা??
হুম পাইতো বাড়ির সবাইতো পায়।
হ্যা সে তো পাবেই এমন গুনোধর ছেলে, গুনোধর  ভাই থাকলে ভয় না পেয়ে কি আর থাকা যায়।
কিহলো এতো কথা কিসের তারাতারি খেয়ে নাও। মুসকান, ইমন কিন্তু রাগারাগি করবে।
হ্যা মামনি তোমার ছেলে তো সব কিছুতেই রাগারাগি করে। বলেই মুসকান ওঠে গেলো।বের হওয়ার সময় বলে গেলো- মামনি কাল যেটা বলেছি বড় বাবাকে বলেছোতো৷ আম্মু,আব্বু তো রাজি হচ্ছে না আমার কিন্তু চাই ওটা চাই ই।
ইরাবতী চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ইমন যদি রাগারাগি করে কিন্তু মুসকানের তো দরকার হতেই পারে তাই ভেবে সে ছেলে কে জানাবে ভাবলো।

এতো সাজগোজ করে কেউ কলেজে যায় এতো কিসের সাজগোজ??ড্রাইভ করতে করতে বললো ইমন।
মুসকান মনে মনে গালি দিতে লাগলো।এখন এটা নিয়েও তোর সমস্যা তুই কেমন ভাইরে….
কিহলো আমি কিছু বলছি।
না আসলে ঐ একটু আর কি।
একটু না বেশি সেটা আমি জানতে চাইনা। পড়াশোনা করবে পড়াশোনার মতো। সেজেগুজে কলেজ যাওয়া একদম পছন্দ করিনা। সিম্পল ভাবেই কলেজ যাবে কাল থেকে। সাজার সময় সাজ, পড়ার সময় পড়া। যখন যেটা মানান সই সেটাই করবে ওকে।
মুসকান মাথা ঝাকালো।
ইমন মুসকান কে কলেজ পৌঁছে দিয়ে আবার বাড়ি ফিরলো তার মায়ের জরুরি তলব।

না মা এখনি না ইন্টার এক্সামটা দিক তারপর। এখনো কিন্তু মুসকান ছোটোই । আর ওর দরকার হলে তোমার ফোন আছে, ছোট কাকির আছে, আমার আছে সমস্যা কি।
আসলে বাবা ও বলছিলো ওর সব ফ্রেন্ড দের আছে। ওর ও নিজের জন্য…
না এখন সময় হয় নি ফোন দেওয়ার সময় হলে ঠিক দিবো৷
মুসকান মন খারাপ করবে। আর ওর ও তো একটা শখ আল্হাদ বলে কিছু কথা আছে। আর তুই যেভাবে ওকে কড়া শাসনে রাখছিস এভাবে কিন্তু আরো বেঁকে যাবে। কিছু কিছু জিনিস ছাড় দিতে হয় বাবা। বাচ্চা মেয়েতো।
যা চায় সব ই তো পায় মা। আর যা দেইনা অবশ্যই সেখানে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে। ওর ভালোটাই তো আগে দেখছি।
ইমন আর কোনো কথা না। তুই ওকে ফোন দিবি। ডিজিটা যুগ এ ফোন ছাড়া সত্যি চলে না পার্সোনাল ফোন রাখা উচিত।
মা ছেলের বেশ কথা হলো। মায়ের কথায় বাধ্য হয়েই ইমন মুসকানের জন্য ফোন কিনলো। মন তার সায় দিচ্ছিলো না তবুও কিনলো মা আর বউ এর আবদার কি ফেলা যায়।
মুসকান ফোন পেয়ে খুব খুশি বিকাল থেকে খুব লাফালাফি করছে। দিপু আর মুসকান মিলে রুমে দরজা দিয়ে বেশ কিছুক্ষন নাচানাচি করলো। মেয়েটা বড্ড পাগলি টাইপের। কিছু চাইলে সেটা পেলে খুবই খুশি হয় । ছোটো থেকে নাচ খুব ভালোবাসে, নাচ গান এ ডুবে থাকে। আজ তো পুরো বাড়ি মাথায় করে রেখেছে খুশিতে।
সন্ধ্যার পর ইমন বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরে রুমে যেতেই পাশের রুম থেকে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ ভেসে এলো।
ইমন শার্ট, প্যান্ট চেন্জ করে টি শার্ট আর শর্ট প্যান্ট পড়ে তার পাগলি কে দেখার জন্য তার রুমের দরজা ধাক্কা দিলো কিন্তু ভেতর থেকে আটকানো।
বেশ কিছুক্ষন টোকা দিয়েও কাজ হচ্ছিল না কোনো সারা নেই। দরজা ছেড়ে জানালা দিয়ে ওকি দিতেই যা দেখলো তাতে তার জান যায় যায় অবস্থা।
এতো দিন মায়ের কাছে শুনেছে এই পাগলামির কথা আজ নিজের চোখে দেখছে। ছোটো বেলায়ও দেখেছে। কিন্তু এখনো সেই স্বভাবটা রয়েছে ইমন ভাবতেই পারছে না। সে হাসবে না রাগবে বুঝতে পারছে না। অবশ্য কতটুকুই বা বড় হয়েছে এখনো তো বাচ্চা মাএ ষোল বছর বয়স কিশোরী বয়স বাচ্চামোটা কাটেনি তেমন।

ইমনের পুরো শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে। এইভাবে নিজের বউ কে দেখে কি কন্ট্রোল করা যায়। ফর্সা পেট টা বার বার ওকি দিচ্ছে। তার বউ যে এতো বাচ্চা এতো পাগলি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। নিজেতো পাগলি আমাকেও পাগল করে ছাড়বে। এতো মনের আনন্দে নাচ করছে।
মনে মনে ভাবছে আর এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে ইমন। লাল লং স্কার্টের সাথে লাল ব্লাউজ পড়া, ওড়নাটা একপাশে দিয়ে মনের আনন্দে সে নাচ করে যাচ্ছে। সে আবার নায়িকাদের মতো পেট বের করে না নাচলে আনন্দ পায় না। যে গানে নাচবে সে গানে তেমন স্টাইল করেই নাচবে। নাচ শেষে গান বন্ধ করে  ব্লাউজের চেইন খোলার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ালো পেছন হাত দিয়ে খুলে ফেললো পুরো পিঠটা দেখা যাচ্ছে ইমন থমকে গেলো। মুসকানের পিঠের তিলটাতে আটকে গেলো তার চোখ।
তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে সেখান থেকে এক পা ও নড়ার শক্তি নেই। কেমন একটা আকর্ষণ অনুভব হচ্ছে তার। কিন্তু এখন কি এখানে থাকা ঠিক হবে। মুসকান পিছন ফিরে ঘুরবে এমন সময়ই ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে সরে গেলো সেখান থেকে।  মনের সাথে যুদ্ধ করে ইমন সেখান থেকে চলে গেলো।মাথায় তার হাজারো চিন্তা। এক বাড়িতে নিজের বউ আছে সময় তো পার ই হচ্ছে না। সময় যেনো থেমে রয়েছে। বউটা বোধ হয় বেশিই পিচ্চি হয়ে গেছে। বউ এর বড় হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে আমি আবার বুড়ো না হয়ে যাই। সাদে পাইচারী করছে ইমন।

বর্তমান –

অতীত ভাবতে ভাবতে বেশ রাত হয়ে গেছে।
নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইমন।
আজ রাতে আর তার খাওয়া হলো না। তার মা খেতে বললেও না করলো পেট ভরা বলে কাটিয়ে দিলো।ছেলে যে বউয়ের চিন্তায় চিন্তায় খাওয়ার কথা ভুলে গেছে তা ইরাবতী খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।তার ছেলের মনে কি চলছে সেটাও সে বেশ টের পাচ্ছে। কিন্তু মুসকান তো এখনো অনেকটাই ছোটো আরেকটু সময় তো ওকে দিতেই হবে। সেটা ভেবেই ইরাবতী তার ছেলের ইচ্ছেটার গুরুত্ব দিলোনা। আর কয়েকটা বছর থাকুক দুজন দুজনের মতো করে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সকাল বেলা ইরাবতী, দীপান্বিতা, মোজাম্মেল চৌধুরী আর দিপু চলে গেলো দীপান্বিতার বাবার বাড়ি। দীপান্বিতার বাবা মারা গেছেন। মইন চৌধুরী দেশের বাইরে আছেন কাজের জন্য। ইমন যাবেনা কারন মুসকান কে সেখানে পাঠানো হয় নি। দীপান্বিতার বাবার বাড়ি মুসকান কে যেতে দেওয়া হয় না। সবাই জানে মুসকান দীপান্বিতার মেয়ে। কিন্তু দীপান্বিতার বাবার বাড়ি এটা মানলেও পাড়া প্রতিবেশি বেশ সন্দেহ  প্রকাশ করে নানারকম প্রশ্ন করে। মুসকান এখন বড় হয়েছে সেইসব প্রশ্নে সে বিব্রত হবে। তার মনেও যদি সন্দেহ ঢুকে যায় তাই ইমন কোনো প্রকার রিস্ক নিতে চায় না। এছাড়া প্রতিবেশীরা সব সময় খোঁচানোর ধান্দায় ই থাকে হোক না শোকের বাড়ি।
মুসকান খুব মন খারাপ করলো কিন্তু কি আর করার তাকে তো নিয়ে যাওয়া হলো না।

ইশ এই কর্কশ ভাইয়ার সাথে আমায় থাকতে হবে। আলেয়া চাচীর কাছে গিয়ে গল্প করি যাই। ( এ বাড়ির কাজের লোক) আবার ভাইয়া এসে কি না কি ভুল পেয়ে বকা শুরু করবে। ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে আসলো মুসকান।
আলেয়া চাচী রান্না বসিয়েছে। কি আর করার আবার নিজের রুমে চলে গেলো। ফোন টা বের করতেই দেখলো দুটা মিসড কল।অচেনা নাম্বার তাই সে আর ব্যাক করলো না। হেডফোন কানে দিয়ে মনের সুখে গান শুনতে লাগলো।
দুবার ফোন বাজার পর রিসিফ করলো ইমন।
ভাই সামনে নির্বাচন। সেই নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করার দরকার ছিলো। আর আপনার বাবা তো আজ নেই আপনি আসলে ভালো হতো।
আমি আজ যেতে পারবো না আলোচনা সভা টা কাল এগারোটার দিকে করে নিবো সবাই কে জানিয়ে দাও। কাল করলে কোনো সমস্যা নেই একমাস টাইম আছে। মনোযোগ দিয়ে তেমাদের দায়িত্ব পালন করো।
ওকে ভাই।
ফোন কেটে দিলো ইমন। আজ সে বাড়িতেই থাকবে দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করবে মুসকানের সাথে। রাতে একসাথে ডিনার। সন্ধ্যায় ফুসকা খেতেও নিয়ে যাবে। সব প্ল্যান করা শেষ ইমনের।

দুটা বাজে আলেয়া খাবাড় গুছিয়ে রেখে বাড়ি চলে গেছে। বিকালে এসে রাতের খাবাড় তৈরী করে দিয়ে যাবে।
ইমন মুসকান কে খেতে ডাকতে গেছে। গিয়ে যা দেখলো তাতে ইমন বেশ ঘাবড়ে গেলো।
বিছানায় গুটিশুটি মেরে সুয়ে আছে মুসকান।
পেটের দিকে বালিশ চেপে রেখেছে। ইমন এগিয়ে গিয়ে বললো- মুসকান কি হয়েছে?  এইভাবে শুয়ে আছো কেনো?  শরীর খারাপ লাগছে?
মুসকান,মুসকান, কাঁদছো কেনো? দেখি ওঠে বসো।
মুসকানের কাঁধে ধরে ওঠাতেই যাবে এমন সময় মুসকান ধমকে ওঠলো।
চলে যাও ভাইয়া, আমি খাবনা এখন।
ইমন অবাক হলো এইভাবে তো মুসকান তার সাথে কখনোই কথা বলে না। কি হলো হঠাৎ। কপালে হাত দিতেই বুঝলো শরীর টা হালকা গরম। জ্বর এসেছে ভেবেই ওঠে যাবে এমন সময় চোখ পড়লো ওয়ারড্রব এর সামনে। সব অগুছালো রুমটা এলোমেলো। তাই আবার মুসকানের দিকে তাকালো। অনেকক্ষন পর্যবেক্ষণ করলো কি হতে পারে জ্বর হলে মুড এতো খারাপ হবে কেনো?
মুসকান অল্প করে খেয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়ে এসে ঘুমাও।
বলছিতো ভালো লাগছেনা। প্লিজ যাও এখন আর মামনিকে তারাতারি আসতে বলো।
আচ্ছা কিন্তু কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো।
তুমি এখন যাও ভালো লাগছেনা।
তুমি ঘামছো কেনো? এসি চলছে তবুও ঘামছো। তোমার শরীর কি অনেক খারাপ লাগছে।
মুসকান আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
হঠাৎ ইমনের চোখ পড়লো বিছানার চাদরে। আকাশি আর সাদা মিক্স করা চাদরটায় লাল রঙে ছেয়ে আছে।
ইমন দেখে বেশ বুঝতে পারলো সমস্যা টা কি। মুসকান যে লজ্জায় তাকে কিছু বলতে পারছেনা এটাও বেশ বুঝতে পারলো। এতো কমন একটা বিষয়ে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে মাথায় আসছে না ইমনের। এদিকে তার মা কাকিও বাসায় নেই। আলেয়া চাচীও চলে গেছে যা করতে হবে তাকেই করতে হবে।
সত্যি আমার বউটা বাচ্চা প্রতিটা পদে পদে সেটা টের পাচ্ছি। কিন্তু ওর তো অনেক কষ্ট হচ্ছে ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান পেটের যন্ত্রনায় নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছে। এই সময় টা একটা মেয়ের জন্য কতটা কঠিন সেটা একটা মেয়েই বুঝতে পারে। কোনো ছেলের পক্ষেই সেটা অনুভব করা সম্ভব না। তারা বুঝবে যে এমন অবস্থায় একটা মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে  কিন্তু সেই তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করতে পারবেনা। এটা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা যতটা ধৈর্য্য নারীদের দিয়েছেন ততোটা পুরুষ দের দেননি।নারীদের প্রত্যেকটা ক্ষেএেই লড়াই করে বাঁচতে হয়। কখনো শারীরিক লড়াই কখনো মানসিক লড়াই। নারীদের পুরো জীবনটাই চলে লড়াইয়ের মধ্যে। জন্মের পর থেকেই তাদের জীবন চালিত হয় প্রত্যেকটা ধাপে।আর সেই ধাপগুলোর মধ্যে প্রথম ধাপেই আছে মুসকান।

পনের মিনিট পর রুমে আসলো ইমন। হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে মুসকান কে ডাকলো। মুসকান ওঠে বললো- আম্মু, মামনি এসেছে? 
না আসেনি এটা নাও।
মুসকান ইমনের হাতের দিকে তাকালো।।

চলবে…….