Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1888



নিয়তি ( পর্ব–১২)

0

নিয়তি ( পর্ব–১২)
.
.
দুপুর বেলা ইমাদ চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখে নাজিফার মা এসেছে। ওনাকে দেখে ইমাদের কপালে ভাজ পড়ে গেলো। তার মানে সকালে নাজিফা যেটা বলেছে সেটা সত্যি!!!!! নিজের ভালো তো পাগল ও বুঝে অথচ এই মেয়েটি নিজের ভালো বুঝেনা।
ইমাদকে দরজার সামনে দেখে সালেহা বললো —-আরে ইমাদ এসেছিস তুই??? এই দেখ কে এসেছে???
নাজিফার মা তখন বললো —– বাবা কেমন আছো????
—- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন????
সালেহা ইমাদের এরুপ আচরণ দেখে আশ্চর্য হলেন —- তার মানে নাজিফা যে বললো, ইমাদ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে সেটা সত্যি!!!!!!
— জ্বি বাবা আমি ও ভালো আছি।
ইমাদ মুখটাকে ম্লান করে সালেহাকে জিজ্ঞাসা করলো—- মা নাজিফা কোথায়????
সালেহা হেসে বললো —আমার রুমে গেছে।
—- কেন???
—কেন আবার ওর লাগেজ গুছাতে।
এই বলে সালেহা নাজিফার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে
—- বেয়াইন তো ওকে নিয়ে যেতে এসেছে, তাই মেয়েটি জামা– কাপড় নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ইমাদ প্রখর নয়নে সালেহার দিকে চেয়ে……..
—— মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো!!!!!!এই তোমার কি জ্বর হয়েছে। তুমি এই মহি……….
সালেহা ইমাদের মুখ চেপে ধরে, অতঃপর আস্তে বললো —- কি হচ্ছে কি এসব? ওনার সামনে কি তুই এভাবে আচরণ করবি????
ইমাদ মুখ থেকে সালেহার হাত সরিয়ে….
—–হ্যা একশো বার করবো।
—- যা তো এখান থেকে, ওনি কি আর জোর করে নাজিফাকে নিয়ে যাচ্ছে । নাজিফা নিজে ও যেতে চাচ্ছে।
— কি!!!!!! দাড়াও।



ইমাদ সোজা সালেহার রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখে নাজিফা লাগেজে জামা– কাপড় ঢুকাচ্ছে। ইমাদ কোনো কথা না বলে, ওর হাতটা গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধরে উগ্র মেজাজে বলে —— সমস্যা টা কি আপনার????
—– আমার আবার কি সমস্যা, আর হাতটা ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি খুব।
— পান আপনার ব্যাথা পাওয়ায় উচিত। আপনি সকালে যেটা বলেছেন তা সত্যি!!!
—- তা নয়তো কি আমি আপনার সাথে মিথ্যে বলেছি!
—- এই আপনার আর মায়ের হলো টা কি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কিছুদিন আগে ও তো এ মহিলাটির উপর আপনার অনেক রাগ ছিলো।
—- ওনাকে আপনি মহিলা বলছেন কেন, ওনি তো আপনার গুরুজন।
—- যে আপনাকে এতো কষ্ট দিলো সে আর যাইহোক তাকে আমি সম্মান করতে পারবোনা।
—— বাবা!!! তা আমাকে কেউ কষ্ট দিলে তাতে আপনার কি!!!!
—- আ,আ,আামার কিছুনা, আপনাকে কষ্ট দিলে আমার কি???
—- আবার ইগো দেখাচ্ছেন।
নাজিফা কিছুটা বিরক্ত হয়ে……
—- দেখি আমার হাতটা ছাড়ুন, আমাকে যেতে হবে ।
—- না ছাড়বোনা। কি করবেন আপনি না ছাড়লে???
— আপনে কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন, আর তাছাড়া আমার হাত ধরার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে???
—- আপনি আমার বিয়ে করা বউ অতএব আপনার হাতটা আমি একশো বার ধরার অধিকার রাখি।
—- তাহলে আপনি বলছেন আমি আপনার বিয়ে করা বউ?
ইমাদ একটু শান্ত হয়ে……..
—- তা নয়তো কি যেহুতো মায়ের জোরে বিয়ে করেছি সেহুতো বউ।
—- ও তার মানে আপনি আমাকে বউ হিসেবে মানছেন না তাইতো??
—- ইয়ে মা,মানে আমি তো আ, আপনাকে বিয়ের রাতেই বলে দিয়েছিলাম আপনাকে আমি কখনোই স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা।
নাজিফা জোরে হাতটা ছাড়িয়ে — তাহলে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেন??? আমি আপনার কিছু লাগিনা, বরং আমি চলে গেলে আপনি অনেক বেশি খুশি হবেন।
.
.
.
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
নাজিফা লাগেজ নিয়ে নিচে চলে আসলো , সালেহার তা দেখে মুখটা শুকিয়ে গেলো। তার মানে ইমাদ এখন ও নাজিফাকে নিজের মনের কথা বলতে পারলোনা। কিন্তু এখন যদি নাজিফার মা ওকে নিয়ে চলে যায় তাহলে তো……….
এই বলে সালেহা ভয়ে ঘামাতে লাগলো —- আমি কি নাজিফার কথায় এই নাটক টা করে ভুল করলাম, ইমাদ যদি ওকে না আটকায় তাহলে……….
নাজিফা সালেহার সামনে এসে— মা ভালো থাকবেন আমি চলে যাচ্ছি নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।
—- সালেহা আস্তে– আস্তে বললো — তুমি সত্যি যাচ্ছ!!!!!!
— দেখ না মা কি হয়।
—- কিরে নাজিফা শাশুড়ির সাথে কি বিড়বিড় করে বলছিস, চল।
— হ্যা মা।
ইমাদ উপর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে — মানে কি ওনি সত্যি চলে যাচ্ছে। ওনি আমাকে ছেড়ে সত্যি চলে যাচ্ছে।



নাজিফা আড়চোখে উপরের দিকে বারবার তাকাতে লাগলো, —- কি ব্যাপার ওনি কি আমাকে বাঁধা দিবেননা! মা কে পশ্রয় দিয়েছি যে কারনে সেই প্লান টা কি আমার সফল হবেনা!!!!
এমন সময় হঠ্যাৎ ইমাদ উপর থেকে নাজিফাকে বললো —- দাঁড়া ও!
নাজিফা আনন্দ চোখে ইমাদের দিকে চেয়ে রইলো। ইমাদ নিচে নেমে এসে নাজিফাকে বললো —- কোথায় যাচ্ছ তুমি?
—– আপনি বুঝি জানেন না।
,ইমাদ নাজিফার হাত ধরে,,,,,
—- তুমি আমার স্ত্রী, অতএব তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাখেনা।
নাজিফার মা তখন রেগে বললো — কিন্তু বাবা তুমি তো ওকে ভালোবাসোনা, তাইতো মোহন ওকে এখন ও ভালোবাসে ওকে আবার ফিরে পেতে চায় তাই আমি….
—- চুপ থাকুন কে বলেছে আমি ওকে ভালোবাসিনা, আমি ওকে………
চুপ হয়ে যায় ইমাদ, নাজিফা করুন চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো —- কি হলো চুপ হয়ে গেছেন কেন প্লিজ কথা বলুন, প্লিজ বলুন।।।।।
—- কি, কিছুনা ।
নাজিফার মায়ের দিকে ইমাদ আঙ্গুল তুলিয়ে—- লজ্জা লাগেনা আপনার এই চিন্তা ভাবনা করতে , আপনি আমার ওয়াইফ কে বাহিরের একটি লোকের হাতে তুলে দিবেন!!! কে মোহন, মোহনের সাথে নাজিফার কোনো সম্পর্ক নেই। নোহন ছিলো নাজিফার অতীত আর আমি নাজিফার বর্তমান।
নাজিফার দিকে চেয়ে,,,,,,,
—— আর আপনি! আপনার মাকে পশ্রয় দিচ্ছেন, ওনি আপনার মা দেখে আর কিছুই বললাম না, মা ওনাকে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যেতে বলবেন।
এই বলে নাজিফা ইমাদকে নিয়ে উপরে চলে যায়।



নাজিফা বিছানায় বসে নিচের দিকে চেয়ে ——– আপনি কেন আমাকে যেতে দিলেন না????
ইমাদ হাঁটু গেড়ে বসে, নাজিফার হাঁটুতে হাত রেখে—– কেন বুঝচ্ছেন না আমি আপনাকে……..
—- কি আপনি আমাকে????
—- সব কথা মুখে বলতে হয় তাইনা??????
——– মানুষকে মনের সব কথা তার প্রিয় মানুষকে বলার সৎ সাহস থাকতে হয়, কেননা জিবনে যদি সেই মানুষটার সাথে চলতে হয় তাহলে এক আত্মা হয়ে যেতে হয়, ভালো বন্ধু হতে হয়।
তবেই দুজনে পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে।।
( চলবে)
লিখা– আসমা আক্তার পিংকি।।।

নিয়তি ( পর্ব–১১)

0

নিয়তি
( পর্ব–১১)

সকালে নাজিফার ঘুম ভাঙ্গতেই ও ইমাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায় , চোখ কচলাতে থাকলো, বারবার নিজের হাতে চিমটি দিয়ে দেখতে লাগলো এটা কি স্বপ্ন না বাস্তব??? আমি কিছু ভুল দেখছি, না তো , ইমাদ সাহেব নামাজ পড়ছেন!!!!!!!! এটা কিভাবে সম্ভব!!! আমার তো মাথা ঘুরছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কি তাকে কবুল করে নিয়েছে!!
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

ইমাদ নামাজ পড়ে মোনাজাত শেষে পিছনে তাকাতেই, নাজিফাকে দেখে মাথা থেকে টুপি টা খুলে ফেললো, আমতাআমতা করে নাজিফাকে বললো —- এ,এ এভাবে তাকিয়ে থাকার কি হলো???
—- ইয়ে মা, মা,মা, আপনি না,না,নামাজ পড়েছেন????
—তা একথা বলতে গিয়ে এতো আমতাআমতা করার কি হলো????
— আপনি সত্যি নামাজ পড়েছেন????
.
.
ইমাদ চেঁচিয়ে — চেঁচিয়ে — জানেন তো এই জন্য আমি বাসায় নামাজ পড়তে চায়নি, জানতাম আপনি এমন করবেন, মসজিদে যাওয়ার জন্য যেই রওয়ানা দিলাম ওমনেই বাহিরে ঝড় — বৃষ্টি শুরু হলো। তাই যেতে পারলাম না, এই বলে ইমাদ হাতের জায়নামাজ টা গুছাতে লাগলো।
.
.
নাজিফা ছেলেটির দিকে চেয়ে রইলো, অদ্ভুত মায়াবী চেহারা, বাদামি রংয়ের চোখ, গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়, কুচকুচে কালো ভ্রু, আর তার উপরে পরনে নীল কালার পান্জাবি, আর মাথায় সাদা টুপি, সত্যি এ তো সেই মানুষ যে আমার রাত জাগার কবিতা ছিলো , যে আমার গল্পের নায়ক ছিলো ।আজ পবিত্র কোরআনের সেই মধুর প্রশান্তি আয়াত টার কথা খুব মনে পড়ছে———–
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ
“ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরিন”
“নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”
Verily, Allah is with those who are Patient
[Quran 2:153]
নাজিফা উপরের দিকে দুহাত তুলে শুকরীয়া আদায় করলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে।
ইমাদ তখন ভ্রু কুঁচকে বললো ……
—- তা ম্যাডাম দু হাত উপরের দিকে তুলে কি করছেন আজকে কি আপনি নামাজ পড়বেন না???
—- এ্যা, ও হ্যা,পড়বো তো।
ইমাদ জায়নামাজ টা রেখে নাজিফাকে অযুর পানি এনে দেয়।
নাজিফা তখন একটু মলিন মাখা মুখ নিয়ে,,,,
— তা এভাবে আর কয়দিন আমাকে পানি এনে দিবেন???
—- আপনি যতদিন চাইবেন।
—- আমি যদি বলি সারাজীবনের জন্য।
ইমাদ কি ভেবে হেসে বললো —-তার মানে আপনি সারাজীবন এভাবে পুঙ্গ হয়ে থাকবেন!!!! হা,হা,হা
এই বলে ইমাদ ঘর থেকে বাহিরে চলে যায়। নাজিফা ভাবলো ছেলেটি বুঝলো না তার কথার ভাবার্থ, এভাবে হাসি — ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিলো!!!!!



ইমাদ ঘর থেকে বের হয়ে পিচ ঢালা পথে, নীল আকাশ কে বন্ধু করে হাঁটতে থাকে, আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে– হেসে আল্লাহ কে বলতে থাকে —অভিমান করে তোমায় ভুলে থাকতে গিয়েছিলাম আল্লাহ, কিন্তু এমন একটা মানুষকে জীবনে পাঠালে যে কিনা আমাকে আবার তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলো, আমাকে বুঝিয়ে দিলো তুমি তোমার বান্দা দের প্রতি পদে পরীক্ষা করো কেবল , আর সেই মানুষটাকেই আবার তুমি আমার জীবন থেকে নিয়ে যাবে!!!!
আর এতোই যদি সারাজীবন আমাকে পাশে চান তাহলে সুস্থ হয়ে কেন বলেন চলে যাবেন ???? কেন ও একবার ও বলেননা দেখুন আমি কিন্তু আপনার স্ত্রী আমি আপনাকে ছেড়ে যাবোনা।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

ইগো দেখান আমার সাথে তাইনা, চলে যাক তাতে আমার কি, যতসব, আমি ও ইগো দেখাবো এবার থেকে।



——– এই যে আঙ্কেল ফুল নিবেন?
—- কে??
ইমাদ পাশে তাকিয়ে দেখে রুক্ষ চুলের, ছেড়া ফ্রক পরুয়া, শুকনো, করুন চাহনির একটি ১০ কি ১১ বছরের মেয়ে। হাতে লাল গোলাপের বিশাল তোড়া, আর রজনীগন্ধা ফুল, বকুল ফুলের মালা, আর ও দুই রকমের ফুল।
ইমাদ একটু গম্ভীর হয়ে,,,,,,,
—— না লাগবেনা।
—- কি রাগ করেছেন কারো সাথে???
.
.
ইমাদ চুপ করে একটি গাছের নিচে বসলো, মেয়েটি ইমাদের পাশে বসে বলতে লাগলো —- নেন না আঙ্কেল, দুটো পয়সা দেন না সবথেকে কম দামে দিবো।।
—- নিয়ে কি করবো বল মা, কাকে দিবো নেওয়ার যে কেউ নেই,আর তাছাড়া এতো ফুল দিয়ে আমি কি করবো?
, তুই বরং ফুল গুলো রেখে দে আর এই নে এই ৫০০ টা টাকা রাখ।
মেয়েটি একটু হেসে— বুঝছি আনটির সাথে ঝগড়া হয়েছে তাইনা???
— এতো পাকা বুড়ি কেন তুই??
— জানেন আঙ্কেল আমার আম্মু যখন আব্বুর সাথে রাগ করতো আব্বু তখন একটি গোলাপ আম্মুকে দিতেই আম্মু মুচকি হাসি দিয়ে সব অভিমান দূরে ঠেলে দিতো। কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার পর আমার আম্মু কোমায় চলে গেছে আর আমি এতিম হয়ে গেছি , নিজের পেট চালাতে এই ফুল বিক্রি করি। আঙ্কেল ফুল পবিত্র এটা যে কারো মন ভালো করে দেয় আপনি বরং এই সবগুলো ফুল আনটিকে দিয়েন। দেখবেন আনটির মন ভালো হয়ে যাবে।



মেয়েটি ফুল গুলোকে ইমাদের পাশে রেখে ৫০০ টাকা নিয়ে খুশিতে পিচ ঢালা পথের সাথে মিলে গেলো। ইমাদ কেন জানি মেয়েটির আবদারটা ফেরাতে পারলো না। আল্লাহ তো আমার মেয়েগুলোকে ওর মতো করলো না, আমাকে তিনি কত ভালোবাসলেন অথচ আমি ওনার উপর অভিমান করে ছিলাম!!!
ইমাদ অনুতপ্ত হয়ে পাশে তাকাতেই ফুল গুলো দেখে মেয়েটির শেষ কথাটি মনে পড়লো — আঙ্কেল ফুল পবিত্র।
তার মানে এটি পবিত্র কোনো মানুষকেই দেওয়া উচিত।
ইমাদ ফুল গুলো হাতে নিয়ে বাড়িতে গেলো।



রুমে ঢুকার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইমাদ একশো বার ভাবলো — ভিতরে কি এই ফুল নিয়ে যাবো??? না থাক ফুল গুলো বাহিরে রেখে আসি, না কেন রাখবো আমি কি ওনার জন্য কিনেছি আর তাছাড়া এটা আমার ঘর আমি যেটা ইচ্ছে সেটা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারবো ।
.
ইমাদ একটা ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে নাজিফা বিছানা জারছে।
ইমাদ ধমক দিয়ে — এ কি আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!!!!
— কে ও ইমাদ সাহেব, কেন আমার মাথা খারাপ হবে???
— আপনি এই ভাঙ্গা পা নিয়ে বিছানা থেকে নেমেছেন???
—- আসলে পায়ের ব্যাথা টা না কমে গেছে, আর তাছাড়া এ ভাবে শুয়ে থাকলে হবেনা, কাজ আছে অনেক মেয়েগুলোকে স্কুলে পাঠানো, ওদের জন্য নাস্তা করা,এগুলো তো প্রতিদিন আর আপনি করে দিবেন না।
ইমাদ গোমরা মুখ করে,,,,,,,,,,,,,
—- যা খুশি তাই করুন আপনি।
— তাইতো করবো। এনিওয়ে আপনার হাতে ওগুলো কি???
— এলে বাবালে আপনি কি ছোট খুকি যে এগুলোর নাম জানেন না???
—– তা না আসলে এতো ফুল আপনার হতে এগুলো কি আমার………….
ইমাদ একটু হেসে,,,,,,,
— কি হলো চুপ হয়ে গেছেন কেন ???? যেটা বলতে গিয়েছেন সেটা বলুন।
—— না মানে আসলে এতো ফুল আপনার হাতে, এগুলো কি আমার কাছে বিক্রি করতে আনছেন।।
ইমাদ চেঁচিয়ো –কি!!!!!!
আমি ফুল বিক্রি করবো আপনার কাছে!!!
— তা নয়তো কি, এতো ফুল পাগলে ও তো আনে না। যারা আনে তাদের এক কথায় ফুল বিক্রেতা বলে। এই আপনার কি চাকরি চলে গেছে???
— কেন??
–না মানে ফুল বিক্রির পাল্লায় নামছেন যে।



ইমাদ নাজিফার কাছে এসে আঙ্গুল তুলে বলে— আপনি না কখনো আমাকে বুঝবেন না।কখনো না।
এই বলে ইমাদ অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলে,
নাজিফা শান্ত কন্ঠে বলে— এতে বুঝে কি হবে যদি সেই মানুষটা ইগোর জন্য নিজের মনের কথা না বলতে পারে ।
ইমাদ তেড়ে এসে নাজিফার হাত ধরে — আপনি বুঝি ইগো দেখাচ্ছেন না, আর কিসের মনের কথা বলবো আপনাকে???লিসেন কিছু বলার নেই আপনাকে , আপনে চলে গেলে আমি বরং খুশি হবো।
ইমাদ হাতের সব গুলো ফুল নিচে ফেলে দিলো।
রেগে চলে যেতে চাইলে,
নাজিফা অন্যমনস্ক হয়ে ইমাদকে বললো — আজ দুপুরে মা আসবে আমায় নিয়ে যেতে।
ইমাদ কথাটির কোনো গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেলো।
নাজিফা মুখে হাসি ফুটিয়ে মেঝে থেকে সবগুলো ফুলের তোড়া উঠিয়ে, ঠুনকো হেসে বললো — আপনার মনের কথা গুলো যদি আমি এতো তাড়াতাড়ি বুঝি , তাহলে যে আপনাকে আমি ইগো থেকে বের করতে পারবোনা , আর আপনাকে চাপা স্বভাবের মানুষ থেকে ও যে আমি মুক্ত করতে পারবোনা।তাই না হয় অবুঝেই রয়ে গেলাম।


#________________চলবে________________

নিয়তি ( পর্ব–১০)

0

নিয়তি ( পর্ব–১০)

— জানেন আমি না ওকে ডিভোর্স করতাম না যদি দেখতাম ও আমাকে সামান্য টুকু ভালোবাসে। কিন্তু ও আমাকে নয় বরং বিয়ের পর ও, এক মেয়ের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম আমি মোহন আমাকে ভালোবাসেনা। তাই মুক্ত করে দিলাম, মুক্ত আকাশে ও উড়ে চলে গেলো একবার ও ফিরে তাকালোনা ।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
.
.
.
নাজিফা নিশ্চুপ হয়ে যায়, ইমাদের দিকে চেয়ে দেখে ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ইমাদ, তাও একটু হেসে, নাজিফার দিকে চেয়ে বলে—- ভালোবাসতে ওকে খুব তাইনা????
—– কেউকে কারো ভালোবাসা পেতে হলে সেই মানুষটাকে অর্জন করতে হয়, ও তো আমাকে কখনোই অর্জন করতে পারেনি তাইতো আমি ও ওকে কখনোই ভালোবাসতে পারিনি, ওকে ছেড়ে চলে আসার সময় হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হয়নি, বুকের বা পাঁজরে কষ্ট লাগেনি, একবার ও পিছুটানে অনুতপ্ত হয়নি। সোডিয়ামের আলোয় কখনো একা হাঁটা হয়নি, সহজে দুঃস্বপ্ন ভেবে মানুষটাকে ভুলে গিয়েছি।
—- তাহলে আমি কেন মিতুকে ভুলতে পারচ্ছিনা ???
—- কারন আপনি তাকে ভালোবাসেন। অন্তরের সবটুকু অনুভূতি দিয়ে আপনি তাকে অর্জন করতে পেরেছেন , তাই মিতুকে আপনি কখনো ভুলতে পারবেন না। আর যেদিন মিতুকে ভুলে যাবেন সেদিন আপনি নিজেই বুঝে নিবেন আপনি ওকে কখনোই ভালোবাসেন নি তাইতো ওর অনুপস্থিতি আপনাকে ওকে ভুলিয়ে দিলো। কিন্তু তাই বলে চলে যাওয়া মানুষটার জন্য জিবন থমকে দেওয়া মানেই আপনি হেরে গেছেন, কিন্তু তাই বলে চলে যাওয়া মানুষটার জন্য অন্য কাউকে ভালোবাসতে না পারা মানে আপনি ভালোবাসার আসল সংজ্ঞায় জানেন না।
.
.
.
ভালোবাসা মানে প্রথম ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার সাথে মনে রেখে পুরনো অনুভূতিতে আবার কাউকে ভালোবাসতে পারা ,আবার কেউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, আবার কাউকে নিয়ে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করা , কেননা জিবনে বাঁচতে হলে আপনাকে ভালোবাসতেই হবে , ভালোবাসা নামের চার অক্ষরের শব্দের সাথে জড়িত হতে হবেই।
—- না তা কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব নয়, মিতু ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
—- ইমাদ সাহেব বাস্তবতা দেখুন, আবেগে নিয়ে আর যাইহোক বাঁচা যায়না।
ইমাদ নাজিফার কথার আর কোনো উওর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিজের একরাশ আবেগ নিয়ে ছাদের উপর চলে যায়, আকাশের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো, ওই নিশ্চুপ তারাগুলোর সাথে কথা বলতে লাগলো , কিন্তু ছেলেটি বুঝতে পারছেনা তারা গুলো যে নির্বাক এরা না ওর দুঃখ বুঝবে না ওর কষ্ট।


দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীল আকাশের কোনো এক পাশে মিতুর মুখটা খুঁজতে থাকে । হঠ্যাৎ মনে হলো কেউ একজন আলতো করে হাতটাকে স্পর্শ করছে। তাকাতেই দেখে নওরীন।
—- বাবাই ও বাবাই তুমি এতো রাতে ছাদে কি করছো????
—– তুই এখানে এসেছিস কেন????
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

—- ওই মে….
—– কি হলো??বল তুই এখানে কেন এসেছিস ???
—- বাবাই ওই মেয়েটি পাঠিয়েছে।
—- এরকুম বলতে হয়না মা, ওনি তো….
— কি বাবাই, ওনি কি??? আচ্ছা বাবাই আমি ওনি কে কি বলে ডাকবো???
ইমাদ হাটু গেড়ে বসে,,,
—- তোর ইচ্ছে মা, তুই যেটা বলে ডাকবি।
—- বাবাই ওকে আমি মামুনি বলে ডাকি???
ও না আমার মায়ের মতো, বাবাই এই মামুনি টা অনেক ভালো, অনেক সুন্দর একেবারে পরীর মতো, আমাকে আর বোনকে অনেক ভালোবাসে, আর!!!
—– আর কি???
—- আর তোমাকে ও অনেক ভালোবাসে।
ইমাদ সহসা অট্টহেসে উঠলো — ওনি আমাকে ভালোবাসে, যদি তাই হয়তো তাহলে তো এভাবে চলে যাওয়ার কথাই বলতোনা। যদি তাই হতো তাহলে এভাবে আমায় একা ফেলে যাওয়ার চিন্তাই করতো না।
—- কি হলো বাবাই তুমি কি ভাবছো???
—– না কিছুনা, আসলে তোর মামুনিটা সবাইকে ভালোবাসলে ও আমায় ভালোবাসে না।
নওরীন ধমক দিয়ে,,,,
— কে বলেছো তোমায়???? মামুনি তোমায় অনেক ভালোবাসে তাইতো আমাকে ছাদে পাঠিয়েছে তোমায় ধরে আনতে, তুমি যদি এখন না যাও তাহলে মামুনি নিজে এখন উপরে চলে আসবে এই ভাঙ্গা পা নিয়ে।
—– এসব তোকে ভয় দেখিয়েছে মা , বুঝছিস?
নওরীন ইমাদের হাত ধরে,,, ,
—- বাবাই প্লিজ চলো, না হলে কিন্তু মামুনি উপরে চলে আসবে।
—- বললাম না আসবেনা, তোকে ভয় দেখিয়েছে আমি ওনার কি লাগি যে আসবে।
—- আমাকে বলে দিয়েছে ৫ মিনিটের ভিতরে তোমায় নিয়ে নিচে না নামলে, সত্যি উপরে চলে আসবে।
ইমাদ পকেট থেকে মোবাইল বের করে টিপতে– টিপতে নওরীনকে বললো — বুঝলি মা, পৃথিবীর সবাই স্বার্থপর নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ — কাউকে ভালোবাসেনা, তোর মামুনি ও নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউকে ভালোবাসেনা।
এই বলে ইমাদ মোবাইল টিপায় ব্যস্ত হলো, নওরীন ইমাদের হাত ধরে টানছে।

হঠ্যাৎ নাজিফার গলার চিৎকার পেয়ে ইমাদের হাত থেকে মোবাইল টা নিচে পড়ে যায়।ইমাদ তার দিকে খেয়াল ও করলো না, নিস্তেজ হয়ে গেলো — নাজিফার আবার কিছু হলো না তো!! ও কি সত্যি উপরে চলে এসেছে!!!


ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

নওরীন ইমাদের হাত ধরে —- বাবা মামুনির গলার আওয়াজ না!!!!!!!
— এ্যা, না কি বলছিস তুই।
এই বলে,
ইমাদ এক দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নামতেই দেখে নাজিফা সিঁড়ির মধ্যে বসে পা ধরে কান্না করছে। ইমাদ ওকে সিঁড়িতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়, ওর সামনে গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলে—- আপনি এই অবস্থায় সিঁড়িতে উঠলেন কেন????
—– আপনার জন্য।
— চুপ থাকুন আমার জন্য, যতসব, এখন এই পায়ের ব্যাথা তো আর ও বেড়ে গেছে।
নওরীন অমনেই বললো — ঠিকে তো তোমার জন্য, কতবার বলেছি মামুনি আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের ভিতরে নিচে না গেলে উপরে চলে আসবে এই ভাঙ্গা পা নিয়ে এখন বুঝলে।।
— চুপ থাক তুই আমাকে আগে বলবিনা যে সত্য করে বলেছে।
—- বাবা!!! আমি কি বলেছি মামুনি মিথ্যে করে বলেছে! এখন তুমি সব দোষ আমায় দিচ্ছ?
—- না সব দোষ আমারেই এখন চুপ থাক । যা নিচে গিয়ে বরফ নিয়ে আমার ঘরে আয় প্লিজ ।
— ওকে বাবাই।
নওরীন চলে যেতেই, ইমাদ নাজিফাকে কোনো সংকোচ না করেই কোলে নিয়ে ঘরের উদ্দেশ্য হাঁটতে নিচে নামতে লাগলো । নাজিফা অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। শক্ত করে ওর কাঁধ দুটো কে আকড়ে ধরলো। ওর এভাবে শক্ত করে আকড়ে ধরা দেখে ইমাদ বুঝে ফেললো, মেয়েটি ওর মাঝেই এমন কেউকে খুঁজছে যে ওকে শত বিপদের মাঝে ও শক্ত করে ধরে রাখবে, ওর সুখে সুখী, আর দুখে দুখী হবে।



রুমে নিয়ে নাজিফাকে বিছানার উপর শোয়াতেই নওরীন বরফ নিয়ে ইমাদের ঘরে আসে।
— বাবাই এই নেও।
—-হুম।
Ice হাতে নিয়ে ইমাদ নওরীনকে বললো — শুন এটা যেনে আর কেউ না জানে???
—- কেন বাবাই???
— কেন আবার মা জানলে বাবাইকে বকবে।
—- আমি খুশি হব দিদুন তোমায় বকলে। দাঁড়া ও আমি এখনেই দিদুনকে গিয়ে বলছি।
এই বলে নওরীন চলে যেতেই ইমাদ ওকে বারবার ডাকতে থাকে। অতঃপর নাজিফার দিকে চেয়ে গরম চোখে,,,,
—- কে বলেছে উপরে যেতে??
— আপনি তাহলে কেন আমার উপর রাগ করে উপরে চলে গিয়েছেন???
—- তাই বলে আপনি উপরে চলে আসবেন এই অবস্থায়!!!!
—- হুম যাবো, একশো বার যাবো।
—- আপনার সাথে কথা বলে পারা যায়না।
ইমাদ আর কথা না বাড়িয়ে নাজিফার পায়ের সামনে গিয়ে বসে ওর পায়ে বরফ লাগাতে থাকলো।
( চলবে)
লিখা– আসমা আক্তার পিংকি।

নিয়তি ( পর্ব–৯)

0

নিয়তি ( পর্ব–৯)

ইমাদ অবাক হয়ে যায়। নিশ্চুপ ভাবে নাবার মুখের দিকে চেয়ে রয়। আমার মেয়েটি আজ অবদি মায়ের ভালোবাসা পায়নি, কিন্তু আজ সে নাজিফাকে নিজের মা মনে করছে, আমি কী করে ওকে কষ্ট দেই। নাজিফা তো চলে যাবে, আমি তো ওকে আটকে রাখতে পারবোনা।
— কী হদো বাবাই তুমি কী ভাবতো???
— কিছুনা মা, যা তুই তোর মায়ের কাছে যা আমি আসছি।
নাবা চলে যেতেই ইমাদ রান্নায় ব্যস্ত হয়।হঠ্যাৎ তার মনে হলো আমি নাবাকে কী বলে পাঠালাম। কথাগুলো ভাবতেই ইমাদ মুখে হাত দিয়ে ফেলে আমি কী কোনো মায়াজালে পড়ে যাচ্ছি, না আমার দ্বারা এরুপ কিছু হওয়া উচিত নয়।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

নাজিফা শুয়ে ভাবছিলো — জীবনটা কত বিচিত্র, হরেক রকমের মানুষ, হরেক রকমের জীবন।
হঠ্যাৎ নাজিফার মনে হলো পর্দার আড়ালে কেউ লুকিয়ে রয়েছে। একটু বিস্মিত হয়ে নাজিফা জিজ্ঞাসা করলো — কে ওখানে???
নাজিফার গলার স্বরে পেয়ে , নওরীন ওর সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। নওরীনকে দেখে নাজিফা মুচকি হেসে বললে — কী হলো ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন মা??? এদিকে এসো।
নওরীন ওমনেই কান্না করে নাজিফা কে এসে জড়িয়ে ধরে, —- স্যরি আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ব্যাথা দেয়নি।
— খাদি আপুকে আদর কদলে হবে আমাকে কদবে না।
কথাটি শুনে নাজিফা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে নাবা। চোখের জলগুলো ছেড়ে বললো — তুই ওখানে দাড়িয়ে কেন???? আয় এদিকে।
নাবা খিলখিল করে হাসতে— হাসতে, নাজিফাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। নাজিফা ওদের দুজনকে শক্ত করে আগলে ধরে চোখের জল গুলো মুছে ভাবতে লাগলো —– জীবনে কিছু না পেলে ও যে কদিন এই বাড়িতে আছি দুটো ছোট বাচ্চার ভালোবাসা নিয়েই না হয় থাকবো।


ইমাদ হঠ্যাৎ রুমে চলে আসে, এরুপ দৃশ্য দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে।
নওরীন কান্না মাখা কন্ঠে নাজিফাকে বলে—- বিশ্বাস করো আমি চাইনি তুমি পড়ে যাও, ফুফু আমাকে বলেছিলো তুমি নাকি শুধু বাবাইর জন্য পায়েস রেধেছো যা খেলে বাবাই আমাদেরকে ভুলে যাবে , তাই ফুফু আমার হাতে তেল আর কলার খোসা দিয়ে বললো — এগুলো বাবাইর ঘরের সামনে ফেলে দিতে, আর এগুলোতে পিছল খেয়ে তোমার হাতের থেকে পায়েসের বাটিটা পড়ে যাবে, ব্যস। আমি ও তার জন্য এমন করেছি, আমাকে মাফ করে দেও।
— তোমার কেন মনে হলো আমি শুধু তোমার বাবাইর জন্য রান্না করেছি, আর তাছাড়া তোমাদের বাবাই তোমাদের এতো কম ভালোবাসেন যে আমি সামান্য পায়েস খাওয়া লেই তিনি তোমাদের ভুলে যাবেন!!!!
— স্যরি আমি আর কখনো এমন কাজ করবোনা।
ইমাদ আড়াল থেকে সব কথা শুনতে পেয়ে প্রচন্ড রেগে নিতুর ঘরে যায়।
গিয়ে দেখে নিতু বসে— বসে গান শুনছে। ইমাদ নিতুর হাতটা ধরে ওকে নাজিফার রুমে নিয়ে আসে।
—- কী হলো ভাইয়া তুই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন???
নাজিফা ও ইমাদের এরুপ কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়, নাবা আর নওরীন কখনোই ইমাদকে এতোটা রাগতে দেখেনি, ভয়ে দুজনে নাজিফাকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
—– তুই কী করেছিস তুই জানিস না???
—- ইয়ে মা,মা,মানে কী করেছি????
নিতুর হাতটা ধরে নাজিফার পায়ের সামনে নিয়ে গিয়ে ইমাদ বললো —- যা নাজিফার পা ধরে মাফ চা।
—- ভাইয়া!!!! তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস??????? আমি কেন ওর পা ধরবো।
—— কারন তোর কারনে ও পিছল খেয়ে পড়েছে।।।
—- মা,মা, মানে কে বলেছে তোকে এসব???



নাজিফা ও সংকোচ নিয়ে ইমাদকে বলে—– কে বলেছে আপনাকে দেখুন………
—– চুপ থাকুন, আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলছিনা, সো প্লিজ আপনে কথা না বললেই আমি সবথেকে খুশী হব।
নাজিফা চুপ হয়ে যায়।
—– কী হলো নিতু তোর কানে কথা যাচ্ছে না??
ইমাদ প্রচন্ড জোরে ধমক দিতেই নিতু — কাঁপা–কাঁপা কন্ঠে নাজিফার কাছে মাফ চাইতেই নাজিফা একটু সংকোচ নিয়ে নিতুকে বলে —- ঠিক আছে, বাট তুমি নিজে এই কাজটি করলে বিশ্বাস করো আমি কিছুই মনে করতাম না, কিন্তু তুমি একটি নয় বছরের বাচ্চাকে দিয়ে…..
আসলে কি এটা উচিত হয়েছে বলো??
তুমি তো বড়, তুমি ওর ফুফু তুমি যদি ওকে এসব করতে শিখাও তাহলে বড় হয়ে ওর কি হবে তুমি বুঝতে পারছো।
নিতু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো,
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
— Next time তুই যদি নাজিফার সাথে খারাপ কিছু করেছিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা।
— ভাইয়া তুমি না ওকে পছন্দ করোনা তাহলে তোমার এতো জ্বলে কেন????
—- কারন ওকে আমি পছন্দ না করলে ও…….
—– কী ও…
—- ও এ বাড়ির বউ, ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী।
ব্যস এটুকুই বলেছেন এতেই আমি খুশি, আমার আর কিছু লাগবেনা বাকি টা জিবন আপনার মুখের এই কথাগুলো মনে রেখেই কাটিয়ে দিতে পারবো। জানিনা মন থেকে বলেছেন কিনা, কিন্তু বলেছেন যে এতেই আমি খুশি ।।।।



নাজিফা ইমাদের দিকে চেয়ে মনের সাথে কথা বলতে থাকে। এদিকে ইমাদের কথায় নিতু ভীষণ রাগ করে রুম থেকে চলে যায়। নিতু চলে যেতেই ইমাদ নাজিফাকে বললো — আল্লাহ কে তো খুব ভালোবাসেন, যদি সত্যি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথা নিচু করবেন না। সেটা যত ছোট কিংবা বড় অন্যায় হোক না কেন । ঠিক আছে??.
ইমাদের কথায় নাজিফা মাথা নেড়ে হ্যা বললো। ওর এতো সুন্দর কথাটি সত্যিই নাজিফার জন্য প্রয়োজন। আসলেই জিবনে চলার পথে আমাদের অন্যায়কে পশ্রয় দেওয়া সত্যিই উচিত নয় সেটা নিজের অতি কাছের মানুষ করলে ও।



রাতের দিকে ইমাদ ঘরে আসতেই নাজিফা ইতস্ততভাবে ইমাদকে বলে–
— আমি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাইনা????
ইমাদ আশ্চর্য হয়ে,
—- হঠ্যাৎ এমন কথা?
—- না মানে সারাদিন আমি আপনার ঘরে আপনার বিছানার উপর শুয়ে আছি, আপনি একটু বিশ্রাম ও নিতে পারছেন না।
—- এমন করে বলার কী আছে, এ ঘরটি তো আপনার ও কেননা আপনি আমার……..
ছেলেটি চুপ হয়ে যায়, বড্ড চাপা স্বভাবের কখনোই নিজের মনের কথাগুলো প্রকাশ করেনা, সবগুলো মনে রেখে নিজেই একা কষ্ট পায়।
—– আমি আপনার কী???
—- এ্যা, না কিছুনা এনিওয়ে খাবারটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। বেশি রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
—- আপনাকে আমি আর কয়দিনেই জ্বালাবো, আমি সুস্থ হয়ে গেলে, সত্যিই চলে যাবো।
ইমাদ নাজিফার সামনে এসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে চেঁচিয়ে — চেঁচিয়ে বলতে লাগলো—- কথা – কথায় এতো যাই — যাই করেন কেন?????
আপনার ভিতরে মায়া– ভালোবাসা কিছুই নেই, তাইতো একজন কে ছেড়ে চলে আসতে পেরেছেন।
ইমাদ বুঝতে পারলোনা রাগের মাথায় সে মুখ ফসকে এমন একটা কথা বলে ফেললো ।
নাজিফা মুখে ঠুনকো হাসি নিয়ে,,,
—— ও যদি আমার সামান্য টুকু ভালোবাসা গ্রহন করতো আর ও যদি আমাকে সামান্য টুকু ভালোবাসা দিতো তাহলে বিশ্বাস করুন আমি ওকে ছেড়ে চলে আসতাম না।
ইমাদ অনুতপ্ত ভাবে নাজিফার দিকে চেয়ে বলে —- I am sorry, আসলে রাগের মাথায় মুখ ফসকে কথাগুলো বের হয়ে গেছে।।।।
—- ঠিক আছে, ব্যাপার না এসব শুনার অভ্যাস আমার আছে।
— প্লিজ রাগ করবেন না, আমি আপনাকে হার্ট করতে চাইনি।
— না, না করবো কেন।
— আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি???
— জ্বি বলুন।
—- না মানে আসলে আপনার হ্যাজবেন্ডকে আপনি কেন ছেড়ে দিয়েছেন তা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
—- সিরিয়াসলি!!!!! এইতো কয়দিন আগেই বলেছিলেন আমার অতীত সম্পর্কে জানার আপনার কোনো আগ্রহ নেই তাহলে আজ কী এমন হলো যে জানতে চাচ্ছেন???
—-আসলে আপনি বোধ হয় জানেন না মানুষের চিন্তা– ভাবনা মিনিটে- মিনিটে বদলায়, সেদিন যা বলেছিলাম তখন হয়তো আপনার সম্পর্কে আমার যে ধারনা ছিলো তা হয়তো এখন পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে , আপনি না বলতে চাইলে আমি জোর করবো না।It’s oky…
ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা অন্যমনস্ক হয়ে ওর হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে, নয়ন বেয়ে অশ্রু মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।



ইমাদ ওর পাশে বসে।
—— জানেন আমার না কপালটাই খারাপ তাইতো এমন একজনের সাথে বিয়ে হয়েছে যে আমাকে পণ্য করতে চেয়েছিলো।
— মানে???
—- আসলে আমার হ্যাজবেন্ড মানে মোহন, ও কখনোই চাইতো না আমি পর্দা করি, ও চাইতো আমি সবসময় ফ্যাশন করে ওর বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেই , নাইট ক্লাবে যেনো যাই ,
ওর বসের সাথে যেনো দেখা করি মিষ্টি করে ওর বসের সাথে, কলিগ দের সাথে , বন্ধু দের সাথে যেনো কথা বলি, হাসাহাসি করি , ফূর্তি করি, কিন্তু আমি ওকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না যে, — আমি শুধু ওর সম্পত্তি, এখানে কাউকে নজর দিতে দেওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা, আমি ওকে বুঝাতে পারতাম না যে আজ মরে গেলে কাল দুদিন, এ দুনিয়ার রং তামাশা সবকিছুই ক্ষণিকের। প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে এসে আমায় মারতো এমন কি বিয়ের প্রথম রাতে ও নেশা করে এসে আমার গায়ে হাত তুলেছিলো , সেদিনেই বুঝে ফেলেছিলাম মা টাকার বিনিময় এ ছেলেটির কাছে আমায় বিক্রি করে দেয়।




বিয়ের পর সারাদিন আমার শাশুড়ি আর মোহনের অত্যাচারে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, অনেক বার ওকে বুঝিয়েছি কিন্তু ও উল্টে আমাকে হাতের কাছে যা পেতো তা দিয়ে মারতো। আয়নার সামনে গিয়ে যখন ওর মারের আঘাত গুলো নিয়ে দাঁড়াতাম, আয়না ও দেখতাম আমাকে উপহাস করছে , আমার হৃদয়টা ও আমাকে উপহাস করতো— এই আমি শিক্ষিত ব্যক্তি, এই আমি নিজেকে সম্মান করি, এটাকেই যদি শিক্ষিত ব্যক্তির নমুনা বলা হয় তবে এই শিক্ষার থেকে মুর্খ থাকা অনেক ভালো। চোখের জল মুছে ফেললাম সেদিন থেকে নিজের অধিকার নিজে আদায় করবো ভেবে নিলাম তাইতো রাতে মোহন এসে যখন আমায় ওর বসের সাথে ফোনে কথা বলতে দেয় , আমি ঠাস করে ওকে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেই, ও আমাকে সম্মান করতে পারেনা, তাই আমি ও ওকে সম্মান করতে সেদিন থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।
চলবে
লিখা– আসমা আক্তার পিংকি।

নিয়তি ( পর্ব–৮)

0

নিয়তি ( পর্ব–৮)

নাবা ইমাদের প্রশ্নে নাজিফার দিকে তাকালে নাজিফা নাবাকে ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলে।
ইমাদ আবারো নাবাকে জিজ্ঞাসা করে — বলো তুমি কী বলতে চেয়েছো????
— না কিদুনা।
এই বলে নাবা এক দৌড়ে রুম থেকে চলে গেলে, নাজিফা জোরে একটা শ্বাস ফেলে বললো —— বাঁচা গেল।
ইমাদ তা দেখে বলে— কোনো কিছু তো আপনি আমার থেকে গোপন রাখতে চাচ্ছেন।
— কী গোপন করবো, ইয়ে মানে এসব না বলে আপনি এতোক্ষন কোথায় ছিলেন সেটা বলুন?
— সেটা যেনে আপনি কী করবেন?
এনিওয়ে আমি নিচে যাচ্ছি।
ইমাদ নিচে নামতেই দেখে চারপাশে নিশ্চুপ কোনো সাড়া শব্দ নেই।রান্না ঘরে ও কেউ নেই, কদম, বুয়া,মা কাউকে কোথা ও দেখা যাচ্ছেনা। ইমাদ আশ্চর্য হয়ে সালেহার ঘরে গিয়ে দেখে সালেহা শুয়ে রয়েছে।
—– মা কী হয়েছে তুমি এভাবে শুয়ে রয়েছো কেন??
—- আর বলিস না বাবা, সকাল থেকে কোমর টা যা ব্যাথা করছে!!!
—- কী বলো ডাক্তার ডাকবো আমি???
— না,না, ডাক্তারের আবার কী দরকার??? একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
—এটা আবার কেমন কথা ঘুমের সাথে কোমরের কী সম্পর্ক????
— ও তুই বুঝবিনা। যা তো আমাকে একটু ঘুমাতে দে।
— সে তো বুঝলাম কিন্তু সকালের নাস্তা কী আজ তৈরি হবেনা???বুয়া, কদম ভাই এরা কই???
—- ওদের সবার ও কোমর ব্যাথা।
—- কী!!!!!
— না মানে বাবা, কদমের হাত ব্যাথা তো তাই সে আসবে না, আর সকিনার পা ব্যাথা তাই ও আসবেনা।
— যাক বাবা তোমরা কী সবাই নাজিফার সাথে রোগী হয়ে গিয়েছো??? এখন বাচ্চাদের কী খায়িয়ে স্কুলে পাঠাবো আর তাছাড়া নাজিফার ঔষধ খেতে হলে তো কিছু খেতে হবে।
— হ্যা তাইতো বাবা না হলে মেয়েটা কিভাবে সুস্থ হবে??? আমি বলি কী তুই তো অনেক ভালো রান্না করতে পারিস, আগে মানে মিতুর জন্য, এই আমার জন্য তুই তো কত কিছু অফ ডে তে রান্না করতিস, তো আজকে না হয়…….
অমনেই ইমাদ চোখ বড় করে তাকাতেই সালেহা আস্তে– আস্তে বললো — না মানে আমি নাবা আর নওরীনের কথা ভেবেই বলছি, নাজিফার জন্য কিন্তু বলেনি। আর তাছাড়া আমি ও কতদিন হয়ে গেলো তোর হাতের খাবার খাইনা। আগের মতো একটু হাসিখুশী থাকনা বাবা,আগের মতো শখ করে একটু কিছু রান্না করনা।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
—- না মা এসব আর আমার দ্বারা হবেনা, যার জন্য করতাম সে তো আমায় ছেড়ে চলে গেছে। সো আমি পারবোনা।
ইমাদ এই বলে চলে যায়।
সালেহা মুচকি হেসে বললো — বাবা তোকে যে আজ রান্নাঘরে যেতেই হবে, আফটারঅল আমরা সবাই যে রোগী, হা,হা।



ইমাদ,উপরে গিয়ে নাজিফার সামনে এদিক থেকে ওদিকে পায়চারি করতে লাগলো আর নিজে- নিজেই বকতে লাগলো।।।
— এ্যা আমাকে রান্না করতে বলছে, আমি কী মেয়ে নাকি যে রান্না করবো। যতসব, আমার হয়েছে সব জ্বালা, সবাই রোগী শুধু আমি সুস্থ তাই মেয়েদের মতো এখন আমাকে রান্না করতে হবে।
এই বলে ইমাদ নাজিফার দিকে চেয়ে রইলো।
— নাজিফা ভয়ে- ভয়ে ইমাদকে বললো — আমি কিন্তু কিছু করিনি। তাহলে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছেন কেন???
—– আপনার জন্যই তো বাড়ির সকলে অসুস্থ।
—- কে আবার অসুস্থ হলো??
— কে আবার, আমার মা জানের কোমর ব্যাথা, কদমের হাত ব্যাথা, বুয়ার পা ব্যাথা।
— ওমা, এতো ব্যাথা কেন???
— কারন আজকে ব্যাথা দিবস।
— সত্যি আজকে ব্যাথা দিবস!!!!! আগে বলবেন না।
এই বলে নাজিফা ইমাদের দিকে তাকাতেই দেখে সাহেব রেগে দানবের মতো হয়ে গেছে, নাজিফা ইমাদের চেহারার দিকে চেয়ে বললো — এভাবে তাকাবেন না, ভয় লাগে।
— চুপ থাকুন। আমি মরছি জ্বালায় আর আপনি মজা করছেন???


নাজিফা চুপ হয়ে বসে রইলো। ইমাদ কিছুসময় চুপ থেকে নাজিফাকে বললো — আমার কী মনে হয় জানেন??? আমার মনে হয় মা এসব ইচ্ছে করে করছে যাতে আমি রান্নাঘরে যাই। আমি কী মেয়ে যে রান্না ঘরে যাবো রান্না করতে, আজকে সারাদিন সবাই না খেয়ে থাকুক তাতে আমার কী??? ভালো করে আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি।
এই যে আমার বোনটা নিতু এতো বড় হয়েছে অথচ রান্নার র ও পারেনা। আমার বৌ মনি ওরফে ভাবী, তেনাকে যদি ভাবী বলি আরে কী চেঁচামেচি শুরু করে ভাবী শব্দটা নাকি অনেক গাইয়া অথচ রান্নাবান্না খেলতে ও পারে কিনা সন্দেহ আছে। আর আমাকে দেখুন,
আমি পড়াশুনার জন্য যখন বাহিরে ছিলাম, তখন তো ব্যাচেলর ছিলাম, ব্যস নিজের রান্না নিজেই করতাম, রান্না তো মানুষের একটা শখ ও হতে পারে কিন্তু আজকালকার মেয়েরা রান্না করতেই চায়না।
কিন্তু ওরা বুঝেনা……..
ইমাদ চুপ হয়ে গেলে কেননা নাজিফা ওর মুখের ভিতরে কয়েকটা কাগজ ঢুকিয়ে দেয়।
ইমাদ রেগে গিয়ে বলে — আপনি এটা কী করলেন???
—- সেই কখন থেকেই কানের সামনে বকবক করেই যাচ্ছেন? কয়টা বাজে খেয়াল আছে, সাড়ে আটটা আজকে ও কী নাবা, নওরীন স্কুলে যাবেনা।
—- কী!!! সাড়ে আটটা বেজে গেল।
ইমাদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে রান্না ঘরে চলে যায়। নাজিফা বসে– বসে মুচকি হাসতে থাকে। আর এদিকে ইমাদ রান্নাঘর গিয়ে রুটি আর ডিম বাজি করে। নাবা নওরীন, নিতু,সালেহা,সবাই ইমাদকে রান্নাঘরে দেখে অবাক। সালেহা আড়াল থেকে দাড়িয়ে ইমাদকে রান্নাঘরে দেখে বললো — বললাম না বাবা আজকে তোকে দিয়েই আমি সকালের নাস্তা বানাবো।
কতদিন পর তুই আবার একটু রান্না করলি।
নিতু তো নাজিফার উপর রেগে শেষ— ভাবী মারা যাওয়ার পর ভাইয়া কখনোই রান্নাঘরের সামনে পর্যন্ত আসেনি, অথচ এই মেয়েটির জন্য আজ আবারো ভাইয়া নাস্তা বানাচ্ছে!!!!


নাস্তা বানানো শেষ হতেই ইমাদ নাবা আর নওরীনকে রেডি করে খাবার খায়িয়ে স্কুলে দিয়ে আসে। স্কুল থেকে বাসায় এসে মাকে নাস্তা দিয়ে নাজিফার কাছে রুটি আর ডিম বাজি নিয়ে যায়।

নাজিফা তো ইমাদকে এই অবস্থায় দেখে পুরোই অবাক। এতো সুন্দর মনটা এতোদিন কোথায় লুকিয়েছিলো???? ওর রাগের ভিতরে যে এতো সুন্দর একটা মন আছে তা আমরা কেউই দেখতে পায়নি।
— এই যে কী ভাবছেন???
— না কিছুনা। অবশেষে আপনি তাহলে রান্নাঘরে গেলেন??
— কী করব বলুন রান্নাঘরে না গেলে যে আপনার ঔষধ খাওয়া হতোনা।
— আমি ঔষধ না খেতে পারলে তাতে আপনার কী????
—– ইমাদ কিছুসময় চুপ থেকে বললো — আপনি ঔষধ খেতে না পারলে যে আমার রুম থেকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারবেন না।
—- আসলে কী শুধু এর জন্যই, আসলে আমি বড্ড বেশি বোকা মেয়ে তাই হয়তো,।
……..
—- কী হলো আবার কী ভাবছেন???
—- ভাবছি আমি সুস্থ হয়ে গেলে শুধু এই রুম থেকে নয় এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।

কথাটি শুনতেই ইমাদের কেমন যেনো খারাপ লাগছিলো। ইমাদ বুঝতে পারছিলো না কেন। কারন সে তো এটাই চেয়েছিলো এই মেয়েটি যেনো ওর জীবন থেকে দূরে চলে যায়। তাহলে আজ ও যখন চলে যাওয়ার কথা বলছে তাহলে খারাপ লাগছে কেন।
—— তা এখান থেকে কোথায় যাবেন????
—- গ্রামে?
— কী মায়ের কাছে?


মা শব্দটি শুনলেই মেয়েটির চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায়। নিয়তির পরিহাসে ছোটবেলায় বাবা মারা যায়, আর মা নিজের আপন হয়ে ও সবসময় সৎ মায়ের মতো আচরণ করেছে। ভেবেছিলাম জীবনে এমন একটা প্রিয়মানুষ আসবে যার আগমনে আমি আমার সমস্ত দুঃখ — কষ্ট ভুলে যাবো। কিন্তু সবার কপালে সব সুখ যে আর হয় না , এমন একটা মানুষ জীবনে আসলো যে কীনা………
নাজিফার চোখে– মুখে বেদনার সেই নীল রং টা ফুটে উঠে। অবশ্য উঠবে নাই কেন এমন একটা অমানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে যে বিয়ে রাতেই নাজিফা বুঝে ফেলেছি এর সাথে সংসার করা যাবেনা। কিন্তু লোকনিন্দা থেকে বাঁচতে ২ টা বছর মেয়েটি সমস্ত কষ্ট সহ্য করে সংসার টা করে । অবশেষে একদিন সত্যিই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। আর পারলোনা, ডিভোর্স দিতে ই হলো। কিন্তু মেয়েটি বুঝলোনা আমরা এমন একটা সমাজে থাকি যেখানে একজন মেয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়া মানে সে এমন কিছু করে ফেলেছে যার জন্য প্রতি- মিনিটে- মিনিটে তাকে মৃত্যুর স্বাদ টা গ্রহন করতে হবে। ওর কোনো অধিকারেই নেই ভালো ভাবে বাঁচার, ওর কোনো অধিকারেই নেই অমানুষ কারো সাথে বিয়ে হলে ও তাকে ডিভোর্স দেওয়ার। আর যদি হয় সে পরহেজগার মেয়ে তাহলে তার পরহেজগারি তা নিয়ে কথা উঠে । পরহেজগার মেয়ে মানে তোমার স্বামী রাতে যদি মদ খেয়ে এসে ও তোমাকে মারে সমাজের মানুষের কথা অনুযায়ী তোমার কাছে সে ব্যাথা অমৃতের মতো লাগতে হবে উহ,আহ ও করতে পারবে না।
নাজিফা টপটপ করে চোখের জল গুলো ছেড়ে দিলো, জীবন যুদ্ধে সে পরীক্ষা দিতে- দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে, মাঝে – মাঝে বেলাশেষের সূর্য টা তার হৃদয়ের আকাশে উঠেছে কী না সেটা অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটি খোঁজে, কিন্তু বেলা যে শেষ হয়না তার তাইতো মাঝি তার ঘাটে এখন ও আসেনি, বেলাশেষের সূর্য টা ও — যে এখন ও উঠেনি।



ইমাদ নাজিফাকে এতোক্ষণ অবদি নিশ্চুপ দেখে ওর কাছে যেতেই দেখে মেয়েটি কাঁদছে।
— এ কি আপনার চোখে জল কেন??? আপনি কথায় – কথায় এতো কাঁদেন কেন????
— না এমনি?????
—– তা বললেন না তো কোথায় যাবেন????
—– কোথায় আর যাবো, দেখি গ্রামে গিয়ে যদি ভালো কোনো চাকরি পাই তাহলে একাই থাকবো ।
নাজিফার উওরে ইমাদ একটু হেসে বললো — তা পড়াশুনা কত দূর করেছেন যে চাকরি করবেন, দেখে তো মনে হয়না পড়াশুনা করেছেন।
নাজিফা তখন ক্ষীণ কন্ঠে বললো —-অ্যাকাউন্টের উপর বি.বি. এ কমপ্লিট করেছি, তারপর আর পড়াশুনা হয়নি মায়ের কারনে, এটুকু অবদি পড়তেই তো আমাকে…… নাজিফা চুপ হয়ে যায়,
ইমাদের দিকে তাকিয়ে দেখে, ছেলেটি অনিমেষ ভাবে ওর দিকে চেয়ে আছে।

—- এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন???
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
—- আপনি বি.বি.এ কমপ্লিট করেছেন!!!!
—অবাক হচ্ছেন, আসলে আমাদের মানুষগুলোর সমস্যা কি জানেন?? কেউ যদি রবকে ভালোবাসে তার হুকুম মেনে চলে সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক তার সম্পর্কে আমাদের ধারনা সে অবশ্যই আনস্মার্ট, গাইয়া,,টাইপের ব্যক্তি হবে। আর জেনারেল পড়াশুনা সেটার সামনে ই যেনো তার যাওয়া উচিত নয়। অথচ সত্যিকারের যে রবকে ভালোবাসে সে সবচেয়ে স্মার্ট, শিক্ষিত ও সুশীল ব্যক্তি।সেই মনে করে শুধু দ্বীনি ইলম নয় একজন ব্যক্তি হিসেবে আমাকে সবকিছুর উপর জ্ঞান অর্জন করা উচিত।



ইমাদ বাকরোধ হয়ে যায়, আসলেই আমাদের কাছে কোনো ব্যক্তি রবকে ভালোবাসা মানে তার সম্পর্কে আমাদের কোনো ভালো ধারনাই আসেনা।
ইমাদ মুখে অস্ফুট হাসি ফুটিয়ে নাজিফাকে বললো ——- শুভকামনা, ভালো থাকবেন আর যদি কিছু লাগে তাহলে আমাকে বলবেন।
এই বলে ইমাদ চলে যায়।
নাজিফা ও চলে যেতেই বলে উঠলো
—- এতোকিছু না বলে যদি একবার বলতেন প্লিজ আপনি যেয়েন না, তাহলে বিশ্বাস করুন আমি পৃথিবীর সব সুখ আজ পেয়ে যেতাম। কিন্তু চার অক্ষরের ভালোবাসা শব্দটি হয়তো আমার কপালেই নেই।



দুপুর তিনটে বাজে নাবা আর নওরীন বাড়ি ফিরে আসে, ইমাদ আজ চেম্বারে যায়নি, সকালে নাজিফার কথাগুলো যেনো তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু কেন এই প্রশ্নটির উওর তার জানা নেই। ইমাদ আবার ও রান্নাঘরে গেলো , নিজেই — নিজেকে বলতে লাগলো — ইমাদ যেহুতো মেয়েটি চলে যাবে সেহুতো যে কয়দিন এই বাড়িতে আছে, মেহমান হিসেবে তুই না হয় তার সেবা কর।
—- বাবাই- বাবাই তুমি কী কদতো?????
প্রশ্নটি শুনে ইমাদ সামনে তাকাতেই দেখে নাবা, একটু হেসে বললো — আমি রান্না করছি মা।
— কার দন্য মায়ের দন্য।।।।
—- ইমাদ অবাক হয়ে যায়, নাবার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে নাবাকে জিজ্ঞাসা করলো— আচ্ছা মা তুমি ওকে মা বলে ডাক ও কেন???
—- বা দে মাকে মা বদবো না তো কি বদবো?????
( চলবে)

নিয়তি (পর্ব–৭)

0

নিয়তি (পর্ব৭)

নাজিফা তখন ইমাদকে বললো —- কিন্তু…..
—– কিন্তু কী, এখন কী বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলবেন খেতে পারবোনা, আমায় খায়িয়ে দেন।
—- তা বলবো না, তবে সত্যি আমি নিজের হাতে খেতে পারবোনা।
— ব্যাথা তো পেয়েছেন কপালে আর পায়ে, হাতে তো পাননি।তাহলে খেতে পারবেন না কেন???
নাজিফা ইমাদের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে , বালিশ থেকে কোনো মতে বসতে চাইলেই পায়ে প্রচন্ড জোরে টান খায়, কপালের আঘাতটা একটু বেশি লেগেছে যার কারনে মাথা ও বারবার ঘুরছে।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ইমাদ দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে নাজিফার সামনে এসে বললো,—- আমায় না মেরে ছাড়বেন না।
এই বলে নাজিফাকে কোনোমতো বসিয়ে, ভাত মেখে ওর মুখের সামনে নিতেই ইমাদের হাতটা বারবার কাঁপতে লাগলো। নাজিফা তা দেখে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, ইমাদ তখন বললো — এমন হা করে তাকানোর কী আছে?????
— না মানি আপনি আমাকে সামান্য দুটো ভাত খাওয়াতে গিয়ে আপনার হাত কাপঁছে???
—- না কাঁপবে কেন? আমি তো মেয়ে আমার দশ- বারটা বাচ্চা আছে, প্রতিদিন ওদের খায়িয়ে– দিতে- দিতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে । যতসব, নিন খান।
নাজিফা আর কোনো কথা না বলে
ইমাদের হাত থেকে খাবারটা মুখে নিলো। পৃথিবীর সব সুখ যেনো আজ ওর পায়ের নিচে লুটোপুটি খাচ্ছে। বাকা চাঁদটা ও যেনো তা দেখে হাসছে, আর সুখ নামের নৌকায় উঠতে পেরে মেয়েটির চোখে আজ ওও অশ্রুকণার ছোয়া দেখা যাচ্ছে।



ইমাদ তা দেখে বললো — এ কী নাকের জল আর চোখের জল এক করেছেন কেন? তরকারীতে কী জাল হয়েছে বেশি?
নাজিফা মাথা নেড়ে বললো — না।
— তাহলে আপনার কী সবসময় কান্না করা একটা রোগ হয়ে গেছে।
নাজিফা ইমাদের কথায় ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি ফুটিয়ে বললো —- কেউ এভাবে খায়িয়ে দেয়নি তো কখনো, তাই আনন্দে চোখে জল চলে এসেছে।
নাজিফার কথায় ইমাদ অনেকক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থাকে, মেয়েটি বড়ই অদ্ভুত, একটা মায়াজালে আমায় বেধে ফেলছে, কিন্তু এই মায়াজালে যে আমি আর পড়তে চাইনা। নিজের আবেগটাকে লুকানোর জন্য ইমাদ অট্টহেসে বলতে লাগলো — ছোট বেলায় মা কখনো খায়িয়ে দেয়নি।
নাজিফা কথাটির কোনো উওরেই দিলোনা, কেবল নিশ্চুপ ভাবে বসে চোখের জলেই ফেললো। ইমাদ তখন পকেট থেকে রুমাল বের করে নাজিফাকে দিয়ে বললো — এই সস্তা চোখের পানি গুলো মুছুন।
নাজিফা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই ইমাদ বললো — যে কথায়- কথায় চোখের জল ফেলে তার চোখের জল সস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।


ইমাদ এই বলে ওয়াশরুমে যায় হাত ধুতে। এসে দেখে নাজিফা রুমালটা নিয়ে সমানে নিজের নাক মুছছে। ইমাদ রেগে গিয়ে নাজিফাকে বলে —ইয়াক, এই রুমালটা আমি কী করে ইউজ করবো, ছিঃ, ছিঃ, এই ভাবে তো বাচ্চারা ও করেনা।
—- স্যরি, এই বলে নাজিফা মাথা নিচু করে ইমাদকে রুমালটা দিতেই ইমাদ বলে-উঠলো—- আমি তো পাগল এই নোংরা রুমালটা আমি এখন নিবো।
— যাক বাবা আপনি তো আপনার এই রুমালের জন্য আমায় বকছেন, এই নেন আমার আর লাগবেনা।
— লাগবে কেমনে চোখের জলের সাথে নাকের জল ও মুছে ফেলছেন, এখন আর এটা কী আপনার লাগবে? গাধী একটা ওটা ফেলে দিন। এই নিন ঔষধ খান।



—- আচ্ছা ঔষধ তো খেলাম এবার আমি কী যেতে পারি, না মানে আপনার রুমে তো আর বেশিসময় থাকা উচিত নয়, এবার আমি বরং মায়ের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি ।
—– কী ঢং দেখাচ্ছে, এই যে এই মচকানো পা নিয়ে দু সপ্তাহ এই বিছানা থেকে উঠতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে, আর ওনি যাই – যাই করে, যতসব।
— আপনি কথায় – কথায় এমন ঝগড়া করেন কেন?
— কী আমি ঝগড়া করি, ভালো উঠতে পারেন কিনা দেখুন তো?
—- না উঠতে পারলে কী আর করবো এখানেই ঘুমাবো।
— এর জন্য ই তো পড়েছেন, আমার এখন মনে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে করেই পড়েছেন, ঘর থেকে বের করে দিয়েছি বলে সেই প্রতিশোধ নিতে এমন করেছেন।
নিন ঘুমান।
—- আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
— সেই চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা।
ছেলেটি কথায়- কথায় রাগ দেখায়। তবে এই রাগের ভিতরে ওর অনুরাগ টা লুকিয়ে রয়েছে, যা যে কাউকে আপন করতে দ্বিধা বোধ ও করেনা।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা


ইমাদ ঘরের আলো অফ করে দেয়, হালকা ডিম লাইটের আলোয় সোফায় শুয়ে বাহিরের পাণে চেয়ে থাকে। নাজিফা ঘুমিয়ে পড়ে। নিঃশব্দ পরিবেশ, নিশ্চুপ চারপাশ, বাহিরে হঠ্যাৎ বৃষ্টি, কিচিরমিচির আর গুনগুনানি শব্দ, হঠ্যাৎ করে মেঘের গুড়ুম – গুড়ুক ডাক, জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানির হালকা স্পর্শ আর মৃদু বাতাসে ঠান্ডা অনুভূতি হওয়ায় ইমাদ জানালা লাগাতে বিছানার সামনে যেতেই চোখ পড়ে নাজিফার মুখ পানে মায়ারঘোরে হারিয়ে যায় ছেলেটি, একটা অজানা,অচেনা মায়া তাকে স্পর্শ করছে, অজানা এক অনুভূতিতে বারবার শরীর শিহরিয়ে উঠছে।
ঘোমটার আড়ালে এতদিন যে মেয়েটিকে সে লুকিয়ে থাকতে বলেছে আজ তার মুখ খানা দেখতে পেয়ে ইমাদের মনো হলো রাত্রির আকাশে এ যেনো এক সুখ তারা যে নিজের আলো দিয়ে পুরো আকাশটাকে দীপ্তময় করে রেখেছে। তার চেহারাটা এতোটা মলিন আর মায়াবী যে, যে কেউই ওই মুখের দিকে তাকিয়ে শত প্রহর কাটিয়ে দিতে পারে। কাঁচা হলদের ন্যায় গায়ের রং, মনে হয় যেনো নূর ঝরছে, ওর চলার গতি সহজ,দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের শুচিতা অপূর্ব।
এক কথায় সে যে গাছে ফুটেছে তাকে অতিক্রম করে রজনীগন্ধার শুভ্র মঞ্জরীর মতো সরল বৃন্তটির উপর দাড়িয়ে রয়েছে।
ওর উপমা ওই, ইমাদ যে কখন এসব ভাবতে- ভাবতে নাজিফার পাশে চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনি।



ফজরে আজান কানে যেতেই নাজিফার ঘুম ভেঙ্গে যায়, চোখ মেলে দেখে ইমাদ ওর পাশে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে। নাজিফা ওর দিকে চেয়ে অসহায়ভাবে বলতে লাগলো —- আল্লাহ আমার জন্য রাতে ওনি ঠিক করে ঘুমোতে পারলোনা। আল্লাহ তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেও, যাতে আমি এই ঘর থেকে তাড়াতাড়ি যেতে পারি। যাই নামাজ টা পড়ে নেই। এই বলে নাজিফা নিচে পা রাখতেই ব্যাথায় জোরে চিৎকার দেয়। ওর চিৎকার শুনে ইমাদ চোখ খুলতেই ওকে এই অবস্থায় দেখে প্রচন্ড জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো — এতো বেশি বুঝেন কেন, এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছিলেন?
— না মানে অযু করতে।
— তো আমাকে ডাকলেই তো পারতেন। আর এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে কী হয়না??????আপনার যে অবস্থা তাতে আপনি নামাজ পড়বেন কী করে?
—- অসুস্থ বলে তো খাওয়া– দাওয়া,,আরাম- আয়েশ ছেড়ে দিচ্ছিনা, তাহলে নামাজ কেন ছেড়ে দিবো??
—– আল্লাহ যদি এতোই ভালোবাসে আপনাকে তাহলে কষ্ট দিচ্ছে কেন???
—– মা- বাবা আমাদের ভালোবাসে বলেই যে আমাদের সব আবদার মিটায় এমন নয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ আমাদের ভালোবাসে বলে যে অসুখ, সমস্যা দিবেনা এমন নয়, বরং আর ও বেশি করে তিনি তার প্রিয় বান্দাদেরকে সমস্যা দেয়,যাতে তারা সেই সমস্যার মাঝে ও তাকে স্মরন করে কিনা তা পরীক্ষা করে।
ইমাদ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বালতিতে করে অযুর পানি নিয়ে এসে নাজিফার সামনে দিয়ে বলে—- নিন সকাল-সকাল আমাকে কষ্ট না দিয়ে তো ছাড়বেননা।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
—- আমি তো আপনাকে কষ্ট দিতে চায়নি, আপনি নিজেই তো পানি আনতে গিয়েছেন, আমি তো উঠে গিয়েই ওয়াশরুমে অযু করে আসতাম।
—- চুপ থাকুন উঠে গিয়ে অযু করতে আসতেন , হাঁটতে পারতেন যে অযু করতেন।



নাজিফা অযু করতে লাগলো, ইমাদ সেই সৌন্দর্য এক দৃষ্টিতে অবলোকন করতে থাকে । ওর পানে চেয়ে থেকে ইমাদ কল্পনার রাজ্য বিভর হলো।
—- এই যে এভাবে কী দেখছেন???
নাজিফার কথায় ইমাদ কল্পনার জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরলো, একটু সংকোচ নিয়ে বলল——Nothing, আপনি এখন কীভাবে নামাজ পড়বেন, আপনি তো দাঁড়াতে পারবেননা।
— আল্লাহ আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছেন, অসুস্থ অবস্থায় আমরা,বসে, শুয়ে এবং ইশারা দিয়ে ও নামাজ পড়তে পারি।
—- ওকে তাহলে আপনি পড়ুন আমি আসছি।
—- কোথায় যাচ্ছেন????



নাজিফার প্রশ্নটায় ইমাদ নাজিফার দিকে তাকাতেই নাজিফা বলতে লাগলো — না মানে এতো সকাল– সকাল বাহিরে যাচ্ছেন তো তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আর তাছাড়া আপনি নামাজ পড়বেন না???
— যিনি আমার স্ত্রী কে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন তিনি কখনোই আমাকে ভালোবাসতে পারেনা, সুতারং আমি আসছি।
ছেলেটা এখন ও নিজের কাছের মানুষের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছেনা। কিন্তু কেন সে বুঝছেনা, একদিন আমাদের সকলকে তার কাছে চলে যেতে হয় আর এটাই নিয়ম, কেউ হয়তো দুদিন আগে যায়, কেউ হয়তো দুদিন পরে । নাজিফা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, নামাজে মগ্ন হলো।



সকাল আটটায় নাবা ইমাদের রুমে আসে, নাজিফা তখন ঘুমাচ্ছিলো । নাবা ওর মাথার পাশে বসে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো —- মা ও মা।
নাবার আলতো ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শে নাজিফার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মায়া মাখা মুখখানি দেখতে পেয়ে নাজিফা একটু উঠে বসে নাবাকে আদর করে বললো — নাবা তুমি এখানে?
—- মা তুমি ভাদো আতো?
— হ্যা তো মা এইযে ভালো আছি ।
—- মা,মা, আপু, আপু ইততে কতে কদেনি, ফুপি — ফুপি বদেছে, তোমাকে ব্যাতা দিতে।
নাজিফা নাবার আদৌ- আদৌ মুখের বাণী শুনে বুঝলো, সব ঘটনা। নিশ্চুপ হয়ে গেলো। নিতুকে বাহিরে যেতে দেয়নি বলে ও এভাবে নওরীনকে ব্যাবহার করে আমাকে………….
এমন সময় ইমাদ রুমে আসে, নাবাকে দেখে বলে — আম্ম ু তুমি এখানে।
—- বাবাই দানো, বোন আম্মুকে……
অমনেই নাজিফা নাবার মুখ চেপে ধরলো।
ইমাদ তা দেখে বললো — ওর মুখ চেপে ধরলেন কেন???
ও কী বলতে চেয়েছি???
—- কিছুনা, আসলে এমনেই।
ইমাদ নাবার কাছে এসে নাজিফার হাতটি সরিয়ে বললো — আম্মু তুমি কী বলতে চাও?
( চলবে)
লিখা আসমা আক্তার পিংকি

নিয়তি (পর্ব-৬)

0

নিয়তি (পর্ব-৬)

নাজিফার চিৎকার শুনে ইমাদ দরজা খুলতেই দেখে নাজিফা নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, নাজিফার এই অবস্থা দেখে ইমাদের মিতুর মৃত্যু টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো, মনে ভিতর ভয়েরা বাসা বাধতে লাগলো। ভাবতে লাগলো — এই মেয়েটি ও যদি মিতুর মতো মরে যায়!!”!
এদিকে নাজিফার চিৎকারের আওয়াজ শুনে সালেহা, নিতু ইমাদের ঘরের সামনে এসে দেখে নাজিফা মেঝেতে পড়ে রয়েছে।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
সালেহা বিস্মিত হয়ে, ইমাদকে জিজ্ঞাসা করলো—- কী হয়েছে ওর???
ইমাদ কোনো কথাই বললো না, ইমাদ নাজিফার হাতটাকে শক্ত ধরে বললো — এই যে শুনছেন? এই যে আপনাকে বলছি।
নাজিফার কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় ইমাদ ওকে কোলে করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। অতঃপর বিছানার উপর শুইয়ে দেয়। নিতু তো নাজিফার এই অবস্থা দেখে ভয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। সালেহা নাজিফার মাথার পাশে বসে কাঁদতে থাকে। এদিকে নওরীনের কানে নাজিফার চিৎকার যেতেই নওরীন ভয়ে কাঁপতে থাকে আর বলে— স্যরি আমি তোমাকে ব্যাথা দিতে চায়নি। নাবা পাশে কাঁদতে — কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে।
ইমাদ যেহুতো পেশায় একজন ডাক্তার তাই সে নিজেই নাজিফার ট্রিটমেন্ট করতে শুরু করলো। ডয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স টা বের করে তুলো দিয়ে নাজিফার কপালের রক্তগুলো মুছতে লাগলো, তারপর ব্যান্ডেজ করে দিলো। কাগজে কিছু ঔষধের নাম লিখে সালেহাকে দিয়ে বললো— মা তুমি এটা গিয়ে কদমকে দেও, ও যেনো এই ঔষধগুলো নিয়ে আসে।
সালেহ তখন ইমাদকে বললো — ও ঠিক হয়ে যাবে তো বাবা???
ইমাদ বলতে লাগলো —- আমি ওর কিছু হতে দিবেনা মা, আমি আর কোনো লাশ দেখতে পারবোনা।
সালেহা অদ্ভুত ভাবে ছেলের দিকে চেয়ে রইলো। আমার ছেলের এই নরম হৃদয়টা এতোদিন কোথায় ছিলো, নিজেকে পাষাণ পরিচয় দিয়ে, সোডিয়ামের আলোয় একা- একাই নিজের কষ্ট গুলোর সাথে নিজে বন্ধুত্ব করেছে, অথচ আমি মা হয়ে একবার ও বুঝতে পারলাম না।
— কী হলো মা, দাড়িয়ে আছো কেন?
যাও।
— হ্যা বাবা যাচ্ছি।


সালেহা চলে যাওয়ার পর ইমাদের চোখে জল টপটপ করতে লাগলো। কেন জানী বারবার মিতুর কথা মনে পড়ছে। এখন ও মনে আছে, এই ঘরের সামনে মিতু ও এভাবে পিছল খেয়ে পড়ে যায়।
রক্তাক্ত অবস্থায় ওকে নিয়ে আমি পাগলের মতো হসপিটালে যাই,
ডাক্তার ওকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার কিছুসময় পর আমাকে বললো— হয় মাকে বাঁচাতে পারবো, নয় বাচ্চাকে।
-কথাটি শুনার সাথে– সাথে, আমি কোনো কিছু না ভেবেই কোনো সংকোচ ছাড়াই বলে দেই — আমার বাচ্চাকে লাগবেনা ডাক্তার, আপনি প্লিজ আমার স্ত্রী কে বাঁচান।।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা


কিন্তু মিতু আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ডাক্তারকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়— ওর যা কিছু হোক কিন্তু এই বাচ্চার যেনো কোনো কিছু না হয়।
ডাক্তার বুঝে উঠতে পারলোনা সে কী করবে, কিন্তু ডাক্তার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে মিতুকে বাঁচাতে, কিন্তু ভাগ্যের লিখন কী আর বদলানো যায়, চলে গেলো সে আমাকে ছেড়ে এই বর্ষার এমন একটি দিনে।
এই ভেবে ইমাদ কষ্টে হাতের পাশের লাম্পট্য নিজের হাত দিয়ে জোরে বাড়ি দিতেই তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়,হাতটা কেটে রক্ত পড়তে থাকে,
কিন্তু ছেলেটি একটু বুঝতে পারলোনা সে একটি আঘাত পেয়েছে। কেননা মিতু চলে যাওয়ার আঘাতের কাছে এই আঘাত কিছুই না।ইমাদ অন্ধকারে নিচের দিকে মাথা নিচু করে নাজিফার পাশে বসে থাকে।

ঘন্টাখানিক পর নাজিফার জ্ঞান ফিরে , হালকা- হালকা চোখ খুলতেই দেখে ইমাদ পাশে বসে রয়েছে। বাহিরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, ঝিরঝির বাতাস বয়ে চলছে, পোকামাকড় অজানা শব্দ, বুনো মশকের গান,
আর ঘরে হালকা নিয়ন আলোয় নাজিফা দেখছে ইমাদের চোখের কয়েক ফোঁটা জল গাল বেয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে, ওর রক্তাক্ত হাতটা,নাজিফার হাতের পাশে,
নাজিফা তা দেখে নিজের হাতটাকে ওর হাতের উপর রাখতেই ইমাদ মাথা উঁচু করে নাজিফার দিকে তাকিয়ে দেখে ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে। মেয়েটি অসহায়ভাবে ইমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে, ইমাদ তখন চোখের জল গুলোকে মুছে নাজিফাকে বলে —– এতো বড় হয়েছেন অথচ এখন ও ঠিক হাঁটতে পারেনন না? পড়ছেন তো পড়েছেন আমার ঘরের সামনে এসে পড়তে হলো???আমার জীবনটা আর কত শেষ করবেন? আপনি ও কী আমাকে শান্তি দিবেন না?ছোটবেলায় বাবা- মা ভালো করে হাঁটতে শিখায় নি।
আপনারা মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা, যখন- তখন পড়ে যান।
নাজিফা তখন ক্ষীণ কন্ঠে ইমাদকে বলে — কী করবো বলুন, মেয়ে মানুষ মানেই তো বিয়ে অবদি বাবা মানুষটা শক্ত করে হাতটা ধরে রাখা, বিয়ের পর প্রিয়মানুষটা শক্ত করে হাতটা ধরে রাখা। তাই তারা একা হাঁটতে গেলে হোচট খাবেই। আমার কপাল খারাপ তাই প্রিয় কোনো মানুষ নেই যে হোচট খেলে হাতটা শক্ত ধরবে।
নাজিফার কথায় ইমাদ আমতাআমতা করে বললো — কিছু পারেন না পারেন, বেশ কথা বলতে পারেন। আপনার যদি এখন কিছু একটা হয়ে যেতে?
— তাতে আপনার কী?
— আ,আমার আবার কী, একজন মানুষ হিসেবে ও তো কষ্ট লাগতো।



এমন সময় সালেহা ঘরে ঢুকে পড়লো ঔষুধ নিয়ে, ঘর অন্ধকার দেখে সালেহা বলতে লাগলো — কীরে ইমাদ এমন ঘর অন্ধকার করে রেখেছিস কেন?????
এই বলে ঘরে আলো জ্বালাতেই ওনার চোখ পড়ে ইমাদের রক্তাক্ত হাতের দিকে। সালেহা তখন চিৎকার দিয়ে বলে — ওমা তোর হাতের এই অবস্থা কেন???
নাজিফা তখন ইমাদের হাতের দিকে চেয়ে এমন অবস্থা দেখে উঠে বসতে চাইলে — ইমাদ বলে — চুপ করে শুয়ে থাকুন একদম উঠার চেষ্টা করবেন না।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
— কিন্তু আপনার হাতের এই অবস্থা কীভাবে???
—- সেটার কৈফিয়ত কী আপনাকে দিতে হবে???
সালেহা তখন বললো — কিন্তু আমাকে তো দিতে হবে।
এই অবস্থা কেন করলি???
— মা তুমি কী এখন এসব জানবে নাকি আমার হাতটাকে ব্যান্ডেজ করবে???
— হ্যা তো নিজে কেটে এখন আমাকে ব্যান্ডেজ করতে বলছে।
এই বলে সালেহা কাঁদতে — কাঁদতে ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করলো। এই মা দের এই একটা সমস্যা সন্তানের সামান্যা কিছু হলেই শুধু কান্নাকাটি।
— আচ্ছা মা আমার কী এমন হয়েছে যে তুমি এতো কান্নাকাটি করছো???
— চুপ কর একদম কথা বলবিনা।
এই নে ঔষধ গুলো। একটা পিছল খেয়ে পড়ে আছে, আরেকটা হাত কেটে কাহিনী শুরু করছে , পাগল হয়ে গেছিস তোরা দুজন, আমায় না কাঁদিয়ে ছাড়বিনা।
এই বলে সালেহা চলে গেলো।



সালেহা চলে যেতেই ইমাদ নাজিফাকে বললো — এই সব কিছুর জন্য আপনি দায়ী?
—- যাক বাবা আমি আবার কী করলাম??
— আপনাকে কেউ বলেছে আমার ঘরের সামনে এসে পড়তে??
— আমি কী আর ইচ্ছে করে পড়েছি???
ইমাদ তখন নাজিফাকে ধমক দিয়ে বললো — চুপ থাকুন, আমি একজন ডাক্তার অতএব আমি যা বলবো আপনাকে চুপচাপ শুনতে হবে, একটা কথা ও মাটিতে পড়তে দেয়না।
—- আচ্ছা মাটিতে কথা আবার পড়ে কী করে????
—- আবার!!!
—- ওকে আর কথা বলবোনা, এই হলাম চুপ।
হ্যা চুপ করে থাকুন। মা তো রাগ করেছে এখন আর এই ঘরের সামনে ও আসবেনা। তাই আমাকেই আপনার জন্য খাবার আনতে নিচে যেতে হবে, যতসব।
—–Excuse me,একটা কথা ছিলো।
— আবার, আপনার কানে কী কথা যায়না।
— এই কথাটা বলার পর আমি আর কথা বলবো না।
— সত্যি।
— হুম।
— বলুন, তাহলে শুনি।
— আসলে আমি এখন কেন খাবার খাবো?
— কারন আপনাকে ঔষধ খাওয়ানো হবে তাই।আর কিছু?
— না।
— তাহলে চুপচাপ থাকুন, আর যদি কথা বলেছেন কিংবা মুখ খুলছেন তো……
এনিওয়ে আমি নিচ থেকে আসছি।


কিছুক্ষণ পর ইমাদ খাবার নিয়ে উপরে এসে নাজিফার পাশে বসতে গিয়ে নাজিফাকে বলতে লাগলো—- আচ্ছা আমার ঘরের সামনে তেল, কলার খোসা এগুলো আবার আসলো কোথা থেকে? সাথে পায়েস, পানির গ্লাস, বাটি পড়ে আছে সে তো বুঝলাম আপনি এনেছেন, কিন্তু কলা না কলার খোসাতো আপনি আনেন নি সেটা কোথা থেকে আসলো? আমি ও তো এখন পিছল খেয়ে পড়তে গিয়েছিলাম, পরে বুয়াকে বলে আসলাম এগুলো পরিষ্কার করতে।
এই বলে ইমাদ চুপ হয়ে গেলে, একটু রেগে নাজিফার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো — আপনি কী আমাকে পাগল ভেবেছেন?
নাজিফা মাথা নেড়ে বললো — না।
— আজিব তো আপনি! এই আপনি কী বোবা।
— হ্যা ( মাথা নেড়ে)
— মানি! এইতো দিব্যি কথা বলছিলেন, আর এখন বোবা হয়ে গেলেন।
নাজিফা তখন ইমাদকে ইশারা দিয়ে বললো — আপনি তো আমাকে চুপ থাকতে বলেছেন?
ইমাদ তখন নাজিফার দিকে দুহাত তুলে বলতে লাগলো আমার ভুল হয়ে গেছে, দয়া করে আমায় মাফ করুন আর এই খাবার আর ঔষধ খেয়ে আমায় উদ্ধার করুন।
( চলবে)
লিখা — আসমা আক্তার পিংকি।

নিয়তি ( পর্ব–৫)

0

নিয়তি ( পর্ব–৫)

সকাল ১০ টায় নাজিফা সালেহার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে— মা আপনি কী আমার উপর রাগ করেছেন?
সালেহা তখন একটু হেসে বললো — না কেন ও রাগ করবো? কিন্তু মন খারাপ আসলে ছেলেটা কখনো না খেয়ে এভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাইনি তো , আর নওরীন ও না খেয়ে আছে, তাই।
—- আচ্ছা মা ওদের সবথেকে পছন্দের নাস্তা কী আপনি জানেন?
—– জানবোনা কেন??
আসলে নওরীন আর ইমাদ দুজনেই আলুর পরটা খুবেই পছন্দ করে। আলুর পরটা দেখলে দুজনেই লোভ সামলাতে পারেনা ।
—- আগে বলবেনা মা, আসলে এই আলুর পরটা আমার বাবা ও খুব পছন্দ করতো, বাবার জন্য বানাতে– বানাতে এই পরটার সাথে আমার একটা বন্ধুর সম্পর্ক হয়ে গেছে তাই আমার হাতের আলুর পরটা মানে সেই।
সালেহা তখন বললো —- তাহলে তুমি তাড়াতাড়ি করে কয়েকটা আলুর পরটা বানিয়ে ফেলো, আমি কদমকে বলি ইমাদের চেম্বারে নিয়ে যেতে, কিন্তু নওরীন?
—- ও তুমি চিন্তা করোনা, ওকে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার।

এই বলে নাজিফা তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে গিয়ে আলুর পরটা বানালো, টিফিন বক্সে কয়েকটা ইমাদের জন্য চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়, আর কয়েকটা নিয়ে নওরীনের ঘরে যেতেই দেখে মেয়েটি পেটে হাত দিয়ে বসে আছে, মুখটা শুকিয়ে গেছে।
নাবা সামনেই বসে খেলছে, দুজনে এখন ও স্কুল ড্রেস টা ও খুলে নি।
আমার উপর রাগ করে আজকে স্কুলে যায়নি বুঝলাম, কিন্তু ড্রেস টা ও খুললোনা , এই ভেবে নাজিফা একটা কাশি দিলো। ওর কাশির আওয়াজ নাবার কানে যেতেই — নাবা বলে উঠলো,—– মা তুমি আততো। নওরীন ওমনেই দরজার দিকে তাকাতেই নাজিফাকে দেখে বলে উঠলো— তুমি আমার ঘরে কেন???
নাজিফা একটু নিচু স্বরে নওরীনকে তখন বললো —- তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি।
—- আমি খাবোনা।
—- দেখ আমার উপর রাগ করে তো আর না খেয়ে থাকা উচিত নয়।নেও খেয়ে নাও মা।
—- বললাম না আমি খাবোনা।
—- ঠিক আছে, তুমি না খেলে আমি খেয়ে ফেলছি, আলুর পরটা আমার ও খুব প্রিয়।
আলুর পরটা শুনতেই নওরীন একটু আমতাআমতা করে বললো —– তো তোমার হাতে ওটা আলুর পরটা?
—- হ্যা তো।
—– কে বানিয়েছে, তুমি??
—– হুম আসলে আমার বাবা বলতেন আমার হাতের
আলুর পরটা নাকি অনেক মজা।
—- তো কী হয়েছে এগুলো আমাকে শুনাও কেন? আমি খাবোনা।
—- ঠিক আছে, আমি তাহলে যাই।
ওমনেই নওরীন বললো —- এই শুনো।
নাজিফা তখন বললো— তুমি আমাকে বলছো??
—- হুম, আসলে তুমি যেহুতো এতোবার বলছো তো একটু খেয়ে দেখতে পারি।



নাজিফা নওরীনের কথাটি শুনে খুশী হয়ে গেলো ,
নওরীনের কাছে গিয়ে বসে ওর সামনে খাবার টা দিলো।নওরীন তখন একটু সংকোচ নিয়ে বললো — খাবো?
—- ওমা! এ আবার কেমন কথা খাও।
নওরীন খেতে লাগলো, পরটাগুলো ওর এতোই ভালো লেগেছে যে ও নাজিফাকে বলতে লাগলো— তুমি তো ভালো রান্না করতে পারো।
—- ধন্যবাদ।
নাজিফা তারপর কিছুসময় চুপ থেকে নওরীনকে বললো —- আচ্ছা মা তুমি কেন আমার উপর রাগ কর??
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
আমি তো তোমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করিনা, আর বড়দের সাথে এভাবে আচরণ করলে যে আকাশের মালিক খুব অসন্তুষ্ট হয়।
—- নওরীন অমনেই খাবারটা রেখে কৌতুহল নিয়ে নাজিফাকে জিজ্ঞাসা করলো —- আল্লাহ বুঝি খুব অসন্তুষ্ট হয় আমি বড়দের সাথে খারাপ আচরণ করলে।
— হ্যা তো মা।
— কিন্তু আমি তো বড়দের সাথে খারাপ আচরণ করিনা, আমি শুধু তোমার সাথে খারাপ আচরণ করি কারন ফুফু বলেছে তুমি নাকি আমাকে আর নাবাকে বাবাইর কাছ থেকে ……….

ওমনেই নিতু ঘরে ঢুকে যায়, নওরীনের দিকে চোখ বড় – বড় করে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বলে—- ওকে চুপ থাকতে।
নওরীন ও চুপ হয়ে গেলো। নাজিফা নওরীনকে তখন বলে— কী হলো মা চুপ হয়ে গেছো কেন?? কী বলেছে ফুফু আমাকে বলো।
নিতু তখন নাজিফার সামনে এসে বলতে লাগলো —- আমার নামে নওরীনকে তুমি কী বলছো?
নাজিফা নিতুকে দেখে বুঝতে পারলো নওরীন কেন চুপ হয়ে যায়। এবং এ ও বুঝতে পারে একটি ৯ বছরের মেয়ের এরুপ আচরণের পিছনে আমরা বড়রাই দায়ী। বাচ্চারা কখনোই খারাপ মন– মানসিকতার হয়না, তাদের নির্মল হৃদয়কে যদি কোনো অপবিত্র ব্যক্তি তাদের নিজের মনের মতো গড়ে ঠিক তখনি সেই বাচ্চাটির হৃদয়ে অপবিত্রতা বাসা বাধে।
—– কী হলো চুপ করে আছো কেন?? কানে কথা যায়না। আমার নামে কী বলে তুমি নওরীনের কান ভারী করছো???
—- এই জন্যই বলি নওরীন কেন হঠ্যাৎ চুপ হয়ে গেছে?
— মা,মা,মানে কী বলতে চাইছো?
— না কিছুনা, অন্তত এই বাচ্চাদের সামনে তোমাকে আমার কিছুই বলার নেই।
এসো ড্রইং রুমে এসো।
নাজিফা নিতুকে ড্রইং রুমে এনে জিজ্ঞাসা করতে লাগলে — তুমি নওরীনকে কী বলেছো????
——- মা,মানে আমি আবার নওরীনকে কী বলবো???
—- কিছুই বলোনি।
—- না তো, এনিওয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলবো আমি এখন বাহিরে যাচ্ছি।
—- কী! তুমি এভাবে বাহিরে যাবে?
—-কেন কী হয়েছে?
—- তুমি জিন্স — টপস পড়ে বাহিরে যাবেনা, এরুপ রং চটা লিপস্টিক দিয়েছো কেন? আর এমন কার্লি চুলগুলোকে লাল আর বাদামি রং করে তোমার মনে হচ্ছে তোমাকে খুবেই ভালো লাগছে??
—- তাতে তোমার কী??
— দেখ নিতু তোমার মনে হচ্ছে এগুলো তে তোমাকে খুব স্মার্ট লাগে, কিন্তু বিশ্বাস করো নিজের দেশের সাদামাটা পোশাকেই আর , পর্দায় মেয়েদের সৌন্দর্য। তুমি কেন নিজেকে বাহিরের বখাটে ছেলেদের কাছে পণ্য তৈরি করবে, একটা কথা মনে রেখো, জিন্স– টপস, রং চটা লিপস্টিক দিয়ে ছেলেদের সামনে চলাফেরা করলেই তাকে আর যাই হোক সত্যিকারের স্মার্ট বলেনা। সত্যিকারের স্মার্ট হতে হলে নিজেকে সম্মান করতে শিখতে হয়। অন্যের সামনে নিজেকে পণ্য বানাতে হয়না, আর একটা সুন্দর মন থাকতে হয়।



—- ও প্লিজ আমি তোমার এসব বকবকানি শুনতে চাইনা।
— এসব তোমার বকবকানি মনে হচ্ছে, তুমি না মাদারাসার স্টুডেন্ট। অবশ্য পৃথিবীর প্রত্যেক জায়গায় ভালো– খারাপ আছে সুতারং এ আর নতুন কী।
— এই চুপ থাকো তো আমি গেলাম।
নাজিফা অমনেই নিতুর হাতটা ধরে বললো — যতক্ষণ না তুমি শালীনতার পোশাকে তোমাকে আবৃত করবে ততক্ষণ অবদি তোমার কোথাও যাওয়া হবেনা।
নিতু ওমনেই হাত ছাড়াতে চাইলে সালেহা এসে বলে উঠলো— শাবাশ মা! এতোদিনে আমি যা করে উঠতে পারিনি তুই তা করেছিস, যা ওকে ঘরে নিয়ে আটকে রেখে আয়।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
নাজিফা বললো তা করা লাগবেনা মা —ও যদি এভাবে বাহিরে যায় তাহলে আজ ওকে আর এই বাড়িতে ঢুকতে দিবেন না।
সালেহা তখন বলে উঠলো— ঠিক আছে মা তুই যা বলবি তা হবে।
নিতু তো নাজিফার উপর রেগে ওর সামনে এসে চেঁচিয়ে — চেঁচিয়ে বললো,—– কাজটা ঠিক করলে না, আমি তোমাকে দেখে নিবো।
উপর থেকে ফাহাদ আর ফাহমিদা তখন নিচে নামতে — নামতে বললো — আবার কী হলো?
নিতু তখন বললো — কী হবে বৌমনি তোমাকে যেমন অপমান করেছে আমাকে ও তাই করছে আর দেখো মা তাতে শায় দিচ্ছে।



ফাহাদ তখন সালেহাকে বললো — মা এটা আপনি ঠিক করছেন না, ও আমার বউকে ইনসাল্ট করেছে, এ বাড়িতে এসেছে এখন ও একদিন ও হয়নি অথচ আমার বউয়ের পোশাকআশাক নিয়ে মন্তব্য করছে।
— ঠিক করেছে তোর বউ যেমন পোশাকআশাক পড়ে তেমন মন্তব্য শুনবে।
ফাহাদ আর ফাহমিদা কোনো কথাই বললো না আর , দুজনেই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজেদের কাজে চলে গেলো।
নিতু আর কোনো উপায় না পেয়ে উপরে যেতে বাধ্য হলো।
এদিকে কদম ফিরে আসলে নাজিফা ওকে জিজ্ঞাসা করে — কদম ভাই তোমার সাহেব খেয়েছে?
কদম বললো — জানীনা আফা সাহেব আমাকে শুধু বললো বক্স টা রেখে যেনো চলে যাই।
কথাটি শুনে নাজিফা একটু মুচকি হেসে কদমকে বললো — তোমার সাহেব তোমার সামনে খেতে লজ্জা পাবে তাই হয়তো রেখে দিতে বলেছে।



সারাদিন এতো অশান্তির পর ও
সন্ধেবেলা নাজিফা মাগরিবের নামাজ শেষ করে রান্নাঘরে যায় সবার জন্য পায়েস রান্না করতে। এমন সময় ইমাদ বাড়ি ফিরে আসে , রান্নাঘরে গিয়ে টিফিন বক্স টা রাখতেই নাজিফাকে দেখে রান্না করছে। ইমাদ তখন একটু গম্ভীর কন্ঠে বললো — এই যে শুনছেন??
নাজিফা ঘোমটার আড়াল থেকে বললো — জ্বি আমাকে বলছেন???
—- তো আর কাকে বলবো, এখানে কী আর কেউ আছে???
—– তাইতো, তো কী বলবেন শুনি?
—— ইয়ে মানে মজা হয়েছে অনেক, Thanks.
ইমাদ এই বলে চলে যায়। নাজিফা ওর চলে যাওয়ার দিকে অনিমিষ ভাবে চেয়ে রইলো। ছেলেটাকে বুঝতেই পারছিনা, কখনো ভালো তো কখনো খারাপ। কখনো নরম তো কখনো গরম।


এদিকে নিতুকে বাড়ি থেকে বের হতে না দেওয়াই নিতু, নওরীনের ঘরে যায়, গিয়ে দেখে নওরীন আর নাবা দুজনেই পড়তে বসেছে। নিতু নওরীন কাছে গিয়ে বসে বলে—- কী রে সকাল বেলা তোরে আলুর পরটা খায়িয়েছে বলে তুই আমি যা বলেছি তোকে, সব বলে দিতে ছেয়েছিস ওই মেয়েটাকে??
নওরীন তখন মাথা নিচু করে বললো — ঐ আনটি টাতো খারাপ না, তুমি বলছো ও আমাদের কাছ থেকে আমাদের বাবাইকে কেড়ে নিবে, কই ঔ আনটি টাতো এমন কিছুই করছেনা।
—– বাবা!!! নওরীন সকালে মেয়েটা দুটো আলুর পরটা তোর জন্য বানিয়েছে বলে তুই নিজের ফুফুকেই অবিশ্বাস করলি?
—– না মানে ফুফু আমি তা বলতে চাইনি, আমি বলতে চেয়েছি………

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
—– থাক বাবা থাক, তোদের ভালো চাই বলেই আমি তোকে সাবধান করেছিলাম, এখন দেখি আমারেই ভুল হয়েছে, ওকে ফাইন আমি তোকে আর কিছুই বলবোনা, কিন্তু আমি যেহুতো তোর ফুফু তাই তোকে শেষ একটা কথা বলছি —– তোর বাবাইকে হাত করার জন্য যেয়ে দেখ মেয়েটা এখন পায়েস বানাচ্ছে, তোর বাবাই এটা খাওয়ার পর মেয়েটাকে বিশ্বাস করবে আর সেই সুযোগ নিয়ে মেয়েটা তোকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে। আমি বরং এসব ভেজালে নেই যাই, বাবা।
এই বলে নিতু চলে যেতে চাইলে নওরীন ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো — তুমি সত্য কথা বলছো??
— বিশ্বাস না হলে নিজ চোখে গিয়ে দেখে আয়, তোদের কাউকে দিবেনা শুধু তোর বাবাইকেই দিবে, দেখিস।
—- ফুফু তুমি আমাকে বলে দেও আমি কী করলে ও আমার বাবাইকে পায়েস টা দিতে পারবেনা।
নওরীনের কথাটি শুনে নিতুর মুচকি হাসি দিয়ে ভাবতে লাগলো — এবার দেখ তোমার আমি কী হাল করি।
এদিকে নাবা নওরীনের হাতটা ধরে কাঁদতে — কাঁদতে বললো — আপু ফুপি পদা। ফুপি ভাদো না।
নিতু তখন নওরীনকে বললো — দেখেছিস নওরীন এসেছে একদিন না হতেই তোর বোনকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে, তুই তারপর ও কিছু করবিনা??
— ফুফু তুমি ওর কথা বাদ দেও, তুমি আমাকে বলো কী করতে হবে।
নিতু তখন নওরীনের হাতে এক বোতল তেল আর কলার দুটা খোসা দিয়ে বললো — এই নে, এই তেলটা তোর বাবার দরজা সামনে গিয়ে ঢেলে দিবি, আর তার উপর কলার খোসাটা ফেলে দিয়ে আসবি।
নওরীন তখন একটু ভয়ে- ভয়ে বলতে লাগলো — এতে ওর কিছু হবেনা তো ফুফু???
—– আরে কিছু হবেনা, ও তো খাবার নিয়ে তোর বাবাইর কাছে যাবে, তোর বাবাইর দরজার সামনে যখন তেলে আর কলার খোসার উপর পিছলা খাবে তখন ওর হাত থেকে খাবার টা শুধু পড়ে যাবে, ব্যস তোর বাবাইকে আর খাওয়াতে পারবেনা।
—তাহলে আমি এখনেই কাজটা করে আসছি ।
— হুম যা।
নাবা তখন আবার নওরীনকে বলতে লাগলো —- আপু আম্মু বেদা পাবে। তুই দাদনা।
কিন্তু নাবার কথা কী আর নওরীন শুনবে, নিতু যে মেয়েটিকে ভয়ের জগতে পাঠিয়ে দিলো, যা থেকে বের হতে হলো তাকে এই কাজটি করতেই হবে।

এদিকে নাজিফা পায়েস, আর কিছু খাবার নিয়ে ইমাদের ঘরের দিকে যেতে লাগলো। মেয়েটি মনে- মনে ভাবতে লাগলো– ওনাকে খাবারটা দিয়ে এসে মাকে আর নিতুকে নাস্তা দিয়ে আসবো তারপর আমি আমার সোনামনিদের নিজের হাতে খায়িয়ে দিবো , আর নাবাকে কোলে নিয়ে একটু আদর করবো।
মেয়েটি ভাবনার জগতে আনন্দেই ছিলো, কিন্তু বুঝতেই পারলোনা, তার ভালোবাসার মূল্যটা কারো কাছে নেই। যেই মাএ ইমাদের ঘরের সামনে পা রাখলো ওমনেই পিছল খেয়ে দেওয়ালের সাথে গিয়ে বাড়ি খেয়ে নাজিফার কপাল ফেটে যায়, সাথে — সাথে একটা চিৎকার দিয়ে মেয়েটি মেঝেতে পড়ে যায়।
( চলবে)
লিখা– আসমা আক্তার পিংকি।

নিয়তি ( পর্ব–৪)

0

নিয়তি
( পর্ব–৪)
লিখা— আসমা আক্তার পিংকি।।।।
_________________________________________
— বৌ মনি কী হয়েছে? তুমি এতো রেগে আছো কেন???
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
আর বলিস না ভাই, তোর বউ তো প্রথম দিনেই আমার মুখের উপর কথা বলছে, আমার পোশাকআশাক নিয়ে পর্যন্ত মন্তব্য করছে।
ইমাদ ফাহমিদার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে কোনো কিছু না ভেবেই নাজিফার কাছে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো —– মানবতার ক্ষাতিরে একটা স্যরি বলেছি বলে আপনি কী সাপের পাঁচ পা দেখেছেন ??????
নাজিফা কোনো কথাই বললো না, অনায়াসে ইমাদের সব কথা শুনতে লাগলো। ইমাদ ওর এরুপ নিশ্চুপতা দেখে অবাক হয়ে গেলো —- মানুষ এতো ধৈর্যশীলতা কীভাবে হয়!!!!!
—- কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেন???
লিসেন যান বৌ মনির কাছে গিয়ে মাফ চান ।


—– দেখুন আমি ওনাকে খারাপ কিছুই বলিনি, জাস্ট বললাম যে ওনি এসব পরে আপনার সামনে আসাটা ঠিক মানায় না।
—–দেখেছো ইমাদ আবার সেই একই কথা বলছে, যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা, আজ তোমার দাদাভাইয়ের কাছে যদি আমি না বিচার দিয়েছি তাহলে আমার নাম ফাহমিদা না। আর ও যদি আমার কাছে মাফ না চায় তাহলে আমি আজ কোনো খাবারেই খাবোনা, এই বলে দিলাম।
এই বলে ফাহমিদা নিজের ঘরে চলে গেলো, সালেহা তখন একটু মুচকি হেসে বললো — উফ! বাঁচলাম কেন যে আমার বড় ছেলে এর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে আল্লাই ভালো জানে।
—–ইমাদ নে খেয়ে নে, একটু তাড়াতাড়ি কর নাবা আর নওরীনের স্কুল আছে তো। ইমাদ আর কোনো কথাই বললো না , ও বুঝেছে ফাহমিদার কাজেই শুধু ঝগড়া করা, এখন ও মনে পড়ে মিতুর সাথে সামান্য কারন নিয়ে কী পরিমান ঝগড়া করতো, তবে মিতু এই মেয়েটির মতো নিশ্চুপ থাকতো না, মিতুকে যদি বৌ মনি বলতো একটা, মিতু বলতো একশো টা , এখন ও মনে পড়ে শুুধু মাএ বৌ মনির কারনে ও কতবার আমাকে বলেছিলো — চলো আমরা আলাদা হয়ে যাই। কিন্তু এই কথাটি কখনোই আমি মায়ের কান অবদি আসতে দেয়নি, কারন আমি জানতাম — মা আর যাই হোক আমাদের দুই ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়াটা কখনোই মেনে নিতে পারবেনা। কেননা বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আর দাদাভাইয়ে তো মায়ের কাছে সব।



আজ আবার এই বৌ মনির কারনে সেই মানুষটাকে মনে পড়ে গেলো, যে আমাকে অসহায় করে দূরে কোথা ও চলে গেলো। মিতুর কথা মনে পড়তেই ছেলেটার চোখ- দুটো লাল হয়ে যায়, ছেলে মানুষ তাই সে বুঝে ফেললো কান্না তাকে মানায় না। সহসা ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে দাড়ালো , নাজিফা তখন নিতুকে আর শাশুড়ি কে রুটি দিচ্ছিল, ইমাদের এভাবে উঠে দাড়ানো দেখে, সালেহা বিস্ময় কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো — কী হয়েছে? এভাবে উঠে দাড়িয়েছিস কেন???
—– খিদে নেই?
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
এই বলে ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা অমনেই ওর হাতটা গিয়ে ধরে ফেললো , নাজিফার এতো সাহস দেখে ইমাদ খুব বেশি অবাক হয়— চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো —- How dare you?????আপনি আমার হাত ধরার সাহস কোথায় পেলেন ???
—- সাহস তো আপনিই দিয়েছেন।
—- মানে???
— মানে হলো আপনি যখন আমার অনুমতি না নিয়ে আমার হাত ধরার সাহস পেয়েছেন ঠিক তেমনি আমি ও আপনার অনুমতি না নিয়ে আপনার হাত ধরার সাহস পেয়েছি।
নাজিফার এমন উওর শুনে সালেহা খুশিতে বলতে লাগলো—শাবাশ মা!
ইমাদ অবাক হয়ে গেলো, ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই মেয়েটি সত্যিই অদ্ভুত, এতো খারাপ কথা বলি কিন্তু. তারপর ও ………….
—- কী হলো কী ভাবছেন?
— না কিছুনা।
—- যান টেবিলে গিয়ে বসুন।
—- আমি কী আপনার কথা শুনবো নাকি??? কে আপনি যে আপনার কথা শুনতে হবে???
—- আমি হয়তো আপনার কেউ না, কিন্তু দেখুন, না খেয়ে থাকলে তো আর সবকিছুর সমাধান করা যায়না, তাই বলি কী এতো কথা না বলে খেতে বসুন।
নাবা ও তখন বলতে লাগলো — বাবাই আতো, আতো।
মেয়ের কথা ফেলাতে না পেরে ইমাদ খেতে বসে।



নাজিফা সবাই কে খাবার দিয়ে এক পর্যায় নাবাকে নিজের হাতে জ্যাম আর পাউরুটি খাওয়াতে গেলে নওরীন নাজিফার হাতটা ধরে ফেলে, চোখগুলোকে বড়— বড় করে নাজিফাকে বলতে লাগলো —- তুমি একদম আমার বোনকে খাওয়া বেনা।
নাজিফা একটু স্নেহময় কন্ঠে নওরীনকে তখন বললো —- মা ও তো ছোট ওকে আমি খায়িয়ে না দিলে ও খাবে কী করে???
নওরীন তখন হাসতে— হাসতে বললো —– আপনি তো মাত্র একদিন হয়েছেন এসেছেন, এতদিনতো আমার বোনকে দিদুনেই খায়িয়ে দিতো, সুতারং আজকে ও না হয় দিদুনেই খায়িয়ে দিবে।
নিতু নওরীনের কথাগুলো শুনে মনে– মনে বলতে লাগলো — গুড নওরীন, এটাই তো আমি চেয়েছি আর তুই করেছিস, ভেরি গুড।
ইমাদ নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো নওরীনের এরুপ আচরণ দেখে, মাত্র নয় বছর বয়স অথচ এই বয়সে ও এতো পরিমান খারাপ হয়ে গেছে। হয়তো মেয়েটিকে আমার ও পছন্দ না কিন্তু তাই বলে আমি যেরুপ আচরণ করতে পারি ও তো তা পারেনা, কেননা ও তো বাচ্চা আর তাছাড়া শত হোক নাজিফা তো ওর মায়ের মতোই।
এই ভেবে ইমাদ নওরীনকে অনেক জোরে একটা ধমক দিলো , নওরীন অমনেই কান্না করে দিলো।
নাজিফা তখন ওকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে , ও তখন নাজিফাকে বলে — Don’t touch me,তোমার জন্য বাবাই এই প্রথম আমাকে বকা দিয়েছে। এই বলে না খেয়ে চলে গেলো। নাজিফা তখন ইমাদকে বললো — এটা আপনি কেন করলেন, ও তো ছোট মানুষ, আর ছোট মানুষ দের ভালোবাসা দিয়ে বুঝাতে হয় ধমক দিয়ে নয়।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

—- আপনি চুপ করুন সব আপনার জন্যই হয়েছে, জাস্ট আপনার জন্যই আমি আমার মেয়েকে এই প্রথম বকেছি।



এই বলে ইমাদ না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিতু তখন সালেহাকে উস্কানির জন্য বলতে লাগলো —- দেখেছো কী মেয়ে বউ করে আনলে?? যে ভাই কখনো না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হতোনা, আজ এই প্রথম সে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে ।
শত হোক ছেলেতো না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে এটা সত্যি, সালেহার খুব খারাপ লাগে , নিতুকে, কোনো কিছু না বলেই সালেহা নিশ্চুপ ভাবে রুমে চলে গেলো ।



নিতু তা দেখে মহা খুশিতে গান গাইতে লাগলো, আর নাস্তাটা নিয়ে উপরে চলে গেলো। নাজিফার চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায় — উপরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে বলতে লাগলো — আমি কী কখনোই কাউকে সুখী করতে পারবোনা, আল্লাহ আপনি কী কখনোই আপনার এই বান্দাকে একটু সুখ দিবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ আপনি আমাকে সাহায্য করবেন, কিন্তু আর কতদিন আমি এভাবে মানুষদের কষ্ট দিবো, অমনেই দু ফোঁটা অশ্রু নাজিফার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো, ঠিক তখনি নাবা নাজিফার আঁচল ধরে টান দিলো, নাজিফা বিস্মিত হয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখে নাবা ।
ওর সামনে বসতেই, নাবা বলতে লাগলো — এই তুমি আমাকে তায়িয়ে দিবেনা??? তুমি তাদছো কেন??
নাজিফা ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো — এমনেই কাঁদছি মা। আয় আমি তোকে খায়িয়ে দিচ্ছি, এই বলে নাজিফা নাবাকে খাওয়াতে লাগলো। নাবা তখন নাজিফাকে বলতে লাগলো —- তুমি কে?? তুমি কী মা, তুমি কী মা???
নাজিফা তখন নাবাকে কোলে নিয়ে বলতে লাগলো — হ্যা মামুনি, আমিই তোর মা।
নওরীন অমনেই নাজিফার সামনে এসে বলতে লাগলো — না , তুমি মা নও, ফুফু বলেছে তুমি সৎ মা। নাবা ওনার কোল থেকে নাম বলছি, ওনি আমাদের মা নয়।
এই বলে নওরীন নাবাকে জোর করে নাজিফার কাছ থেকে নিয়ে যায়, নাবা কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে — আমি মা দাবো, মা আমি তোমার কাদে
তাদবো।
( চলবে).

নিয়তি ( পর্ব–৩)

0

নিয়তি
( পর্ব–৩)
লিখা— আসমা আক্তার পিংকি।
_______________________________________
সকালে নাজিফার মধুর সুরের কোরআন পাঠ করা শুনে সালেহার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সালেহা চোখ খুলেই দেখতে পেলো মেয়েটি কোরআন পড়ছে আর বিনিয়ে– বিনিয়ে কাঁদছে। সালেহা ওর পাশে গিয়ে বসতেই, নাজিফা চোখের জল মুছে সালেহাকে বললো — আম্মু আপনি নামাজ পড়ে নিন।
নাজিফার এই ব্যাকটির মাঝে সালেহা যে শান্তি সুখ পেলো তা অনেককাল আগেই ছেলেমেয়েদের বিপথে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গিয়েছি । সালেহা ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নাজিফাকে বললো — আচ্ছা নাজিফা তোমার কখনো রবের উপর রাগ হয়নি???
—- কেন?
—- না মানে তিনি তোমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে, অথচ তুমি তার হুকুম মেনে চলো, তাকে ডাকো।
নাজিফা তখন হেসে বললো — রবের উপর রাগ করা যায় না মা কিন্তু অভিমান করা যায়, যা নিমিষে আবার রবের সামান্য নেয়মত পেয়ে ভালোবাসায় পরিনত হয়। আর রব কখনো তার বান্দাদের কষ্ট দেয়না, বরং পরীক্ষা করে দেখে তার বান্দা তাকে কত ভালোবাসে। তবে সবাইকে পরীক্ষা করে না, যারা তার হুকুম মেনে চলে, তাকে ডাকে, তার উপর ভরসা রাখে রব কেবলি তাদেরেই একটু বেশি পরীক্ষা করে। কিন্তু তাই বলে কী আমি বলতে পারি আমার রব আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন??
মাশাআল্লাহ! কী সুন্দর কথা।



— আচ্ছা আম্মু এ বাড়ির কেউ সকালের নামাজ পড়ে না?
সালেহা তখন একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো — আমি হয়তো ভালো নয়রে মা , তাই হয়তো ছেলেমেয়ে গুলোকে রবের সাথে পরিচয় করাতে পারলাম না।
ফাহাদ মানে আমার বড় ছেলে ও তো কোনো কালেই মানুষ হয়নি, ওর কাছে জীবন মানে একটাই তাই মাস্তি– আড্ডা, আর গার্লফ্রেন্ড, ভেবেছিলাম বিয়ের পর মানুষ হবে কিন্তু যাকে বিয়ে করলো, সে নিজেই তো চাইনিজ, আমার ছেলেকে কী আর মানুষ করবে ও নিজেই.তো… ……
সালেহা চুপ হয়ে গেলো, তারপর ঠোঁটের কোনে ঠুনকো হাসি ফুটিয়ে বললো– অবশ্য অন্যের মেয়েকে কী বলবো, আমার নিজের মেয়ে নিতুকেই তো আজ অবদি ঠিক করতে পারলাম না। মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম যাতে মেয়েটি একটু ঠিক হয় কিন্তু কোথায় কার ভালো দিন — দিন আর ও বেশি বেহায়াপনা হয়ে গেছে। পড়ালেখা ও বন্ধ করে দিয়েছে।
নাজিফা তখন একটু ক্ষীণ কন্ঠে বললো — আর মা ওনি???
— কে ইমাদ? জানীস মা ও আমার গর্ব করার সন্তান ছিলো। কখনো ওর ভিতরে আমি সামান্যটুকু ও অনৈতিক কাজ দেখিনি । ছোটবেলা থেকেই ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, আদর্শ বান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে, ও অনেক ভালো একজন ডাক্তার ও। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না, কাল যে মানুষ টা আমির ছিলো, আজ সে ফকির হয়ে গেলো। ইমাদের ও তাই হলো, মিতুর মৃত্যুটা ও ঠিক মেনে নিতে পারছেনা। মানবেই বা কীভাবে আমার ছেলেটা যে ওকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু নাবা হওয়ার সময় ওর মারা যাওয়াটা আমার ছেলেটাকে এতোটাই পাথর বানিয়ে দিয়েছে যে ও এখন ভুল করে ও আল্লাহ কে ডাকে না
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

—– নাজিফা তখন শান্ত কন্ঠে বললো — আসলে মা আমরা না আমাদের রবকে বুঝতেই পারিনা, দুনিয়ার সামান্য ভালোবাসায় কত পরীক্ষা দিতে হয়,
কিন্তু তারপর ও আমরা প্রিয়মানুষকে ভালোবাসি, ওকে নিয়ে থাকতে চাই,
আর যখন কথায় — কথায় কেউ বলে — আমি রবকে ভালোবাসি,তখন কেন মা ওনি আমাদের পরীক্ষায় ফেললে আমরা ওনাকে ভুলে যাই??
সালেহা চুপ করে থাকে, কেননা এর উওর হয়তো সালেহার কাছে ও নেই। আমরা মানুষরা তো এমনেই।



সকাল নয়টায় ইমাদ বাচ্চাদেরকে নিয়ে নিচে নামে, নাজিফা রান্না ঘর থেকে একটু আড় চোখে চেয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হলো, হঠ্যাৎ কী যেনো মনে করে নাজিফা আবার ইমাদের দিকে তাকালো, তারপর সহসা বলে উঠলো —- মাশাআল্লাহ, ছেলেরা ও এতো সুন্দর হয়। সত্যিই মানুষটা অনেকটাই সুন্দর।
ইমাদ নিচে নামতেই সালেহাকে দেখলো সোফায় বসে আছে , সালেহার কাছে গিয়ে বললো— মা, নাবা আর নওরিনকে রেডি করে দেও, স্কুলের জন্য।
সালেহা ছেলের সাথে কোনো কথা না বলেই নাবা আর নওরিনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
ইমাদ তখন চারপাশে তাকিয়ে নাজিফাকে খুঁজতে থাকে, হঠ্যাৎ চোখ পড়ে রান্নাঘরের দিকে। আর দেখতে পেলো বিশাল ঘোমটা দিয়ে কেউ একজন রুটি বানাচ্ছে। ছেলেটি বুঝতে পারলো, ও নাজিফা। অতঃপর ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো। নাজিফা কোনো কথাই বললো না, রুটি বানাতে লাগলো। ইমাদ তখন বারবার কাশি দিতে লাগলো। নাজিফা তা ও কোনো কথা বললো না।
ইমাদ তখন একটু রেগে গিয়ে বলতে লাগলো —– কী মানুষ রে বাবা!! সেই কখন থেকে কাশি দিচ্ছি অথচ এক গ্লাস পানি ও দিচ্ছেনা।
নাজিফা তখন গম্ভীর কন্ঠে বললো —– হাতের সামনেই পানি, একটু নিয়ে নিলেই তো হয়।
ইমাদ রেগে গিয়ে বলতে লাগলো —- এভাবে বলার কী আছে, আমি দেখতে পায় নি তো।
এই বলে পানি খেতে লাগলো। এক গ্লাস নয়, তিন– চার গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো। নাজিফা তখন বলতে লাগলো —— এতো পানি খেলে তো পরে নাস্তা খেতে পারবেন না ।
— খাবো না, তাতে আপনার কী??আমি এতোক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আছি, কই একটি বার ও তো বললেন না কিছু লাগবে কীনা??? বা আমাকে কী কিছু বলবেন? ?
—- হাসালেন আমার সাথে আবার আপনার কী কথা??
— ইমাদ তখন আর ও এক গ্লাস পানি খেয়ে বলতে লাগলো —- ইয়ে মানে আমি তো খুব ভালো ছেলে বুঝলেন কখনো কোনো মানুষকে কষ্ট দেইনা বুঝলেন , আমার আবার মানুষের প্রতি খুবেই দয়া, এতো দয়া, এতো দয়া যে আমি মাঝেমাঝে রাস্তায় তো পথশিশুদের দেখলে দুঃখ করি। তো বুঝলেন আমি মানুষকে কষ্ট দেইনা।
—- এতো ঘুরিয়ে- পেছিয়ে না বলে কী বলতে চান সেটা বলুন।
—– ইয়ে মানে, আপনি ও তো মানুষ আপনাকে ও তো কষ্ট দেওয়া উচিত নয়, তো…..
—- তো কী?
—- তো, মা,মানে কালকে রাতে আপনাকে ইয়ে মানে ডিভোর্সি বলার জন্য স,স,স্যরি।
এই বলেই ছেলেটি নিমিষে কোথায় যেনো চলে গেলো।


স্যরি শব্দটি নাজিফার কানে যেতেই।, নাজিফা অবাক হয়ে গেলো — ইমাদ সাহেব আমাকে স্যরি বললেন!!! আদৌ কী আমি ঠিক শুনেছি? অবশ্য ছেলেটি একটা স্যরি বলতে গিয়ে কত সংকোচ যে করলো, বাট শেষে স্যরিটা বললো, আসলেই ওনি ভালো তবে নিজের ভালোটাকে মানুষের সামনে প্রকাশ করতেই ভুলে গেছে, এই যা।
ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি ফুটিয়ে মেয়েটি ভাবতে লাগলো —– এতো কটু কথা বলার পর ও যখন মানুষটা একবার স্যরি বললো তাও এতো সংকোচ করে তখন অভিমানগুলো সত্যিই নিমিষে অজানা দেশে পাড়ি দিলো।



এই ভেবে নাজিফা আবার রুটি বানাতে লাগলো। এমন সময় সালেহার মেয়ে নিতু কানে হেডফোন দিয়ে নিচে নামলো, নাজিফাকে রান্না ঘরে দেখতে পেয়ে বলতে লাগলো—- এই যে একটু তাড়াতাড়ি হাত চালান, সকালের নাস্তা কী দুপুরে খাওয়াবে??
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ওমনেই ফাহাদের বউ নাইট ড্রেস পরে নিচে নেমে নিতু কে বলতে লাগলো —- Good morning নিতু , What’s happen????
—- আর বলোনা খুব ক্ষুদা পেয়ে গেছে বাট দেখো ওকে ও এখন ও নাস্তায় বানাইনি।
—– কী করে পারবে বল, এসবের জন্যইতো সংসার করতে পারেনি।
—– ঠিক বলেছো, দেখো আমার কী পরিমান ক্ষুদা লেগেছে।

সালেহা তখন বলতে লাগলো —- আহারে আমার মেয়েটার যে কী ক্ষুদা লেগেছে।
সালেহাকে দেখতে পেয়ে নিতু চুপ হয়ে যায়। সালেহা তখন নাবা আর নওরিনকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে নিতুর সামনে এসে বললো —- তা মা আপনার আজকে এতো তাড়াতাড়ি ক্ষুদা পেয়ে গেলো, আপনি তো নবাবজাদি, দুপুর ১২ টা ছাড়া আপনার ঘুমেই ভাঙ্গেনা, আর একটা ছাড়া আপনার সকালের নাস্তায় হয়না। তা আজকে আপনি এতো তাড়াতাড়ি উঠলেন যে???
নিতু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো, ফাহমিদা তখন বলতে লাগলো — থাক না মা এসব কথা।
—- তুমি চুপ করো, তোমরা দুজনেই তো একই ঘাটের মাঝি, তুমি ও দেখি আজকে এতো তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসলে??? আর তেমাকে না বলেছি এসব নাইট ড্রেস পরে নিচে নামবেনা।
—- উফ! মা এটা ফ্যাশন।



।—- এই ফ্যাশন করতে গিয়ে এই বাড়ির বড় বউয়ের সম্মানটা আবার হারিয়ে ফেলে ও না। মা খাবার হয়ে গেছে সবাইকে বসতে বলুন।
নাজিফার মুখ থেকে এমন উক্তি শুনে ফাহমিদা রেগে গিয়ে নাজিফাকে বলতে লাগলো —- যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা, এসেছো এখন ও একদিন ও হয়নি আর এখনি আমার সাথে এরুপ আচরণ!!!
— কেন বৌমা ও কী ভুল বলেছে?? ও তো ঠিকেই বলেছে, তুমি ইমাদের সামনে এসব পড়ে হাঁটলে, বড় ভাবি হিসেবে তোমাকে মানায়???
—– আজকে ইমাদ নিচে আসুক তারপর দেখাচ্ছি মজা।

হঠ্যাৎ ইমাদ সিড়ি দিয়ে নামতে— নামতে বলতে লাগলো — কী হয়েছে?? এতো চেঁচামেচি কেন?
( চলবে)