Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1887



কাছে_পাশে পর্ব_৭

0

কাছে_পাশে
পর্ব_৭
#Hiya_Chowdhury

রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়।

শুভ্র ছাঁদে আসে…..

-কিরে রোদ জুহির কি হয়েছে? কান্না করছে কেন?

-কিছু না।

রোদ কিছু না বলে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রোদের প্রচন্ড অনুতপ্ত বোধ হয়। জুহির সাথে এমন ব্যবহার করা তার সত্যি ই ঠিক হয়। আর জুহি ই বা তার কথা শুনবে কেন? সে তো জুহির কথা আগে শুনতো না। বরং আরো নানা ভাবে জুহি কে বকা দিতো অপমান করতো। বলতে গেলে তখন জুহির সাথে এসব করতে রোদের মজা লাগতো আর সেই মজার ফল এখন রোদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

ডিনার শেষে জুহি ওর রুমের দিকে যাচ্ছিলো এমন সময়।

-জুহি…..

-নো রেসপন্স….

-জুহি আ’ম সরি।

-নো রেসপন্স…

জুহি রোদ কে পাওা না দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রোদ ও মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়। অদ্ভুত বিষয় রোদের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। কিছু তেই ঘুম আসছে না। রাত টা এপাশ ওপাশ করতে করতেই কেটে গেছে।

সকালে নাস্তা সেরে রোদ অফিসে চলে যায়। আজকে একটা মিটিং আছে তার। রাতে ঘুম না হওয়ার ফলে এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তুু মিটিং টা খুব ইনফর্টেন্ট যেভাবেই হোক করতেই হবে।

মিটিং টা কমপ্লিড করে রোদ ম্যানেজার কে তার রুমে ডাকে।

-ম্যানেজার সাহেব আপনি এদিকে টা সামলে নিন আমার এখন বাসায় যেতে হবে।

-আচ্ছা স্যার।

-পারবেন তো?

-হ্যাঁ স্যার।

আর এদিকে জুহি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পায়। কথা বলার পর বুঝতে পারে ঐ দিনের সেই লোক গুলো। কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ওরা জুহি কে রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। তাই জুহি গাড়ি করে বেরিয়ে গেছে সকাল সকাল।
,
,
,
,
,
,
রোদ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে। হঠাৎ সে রেস্টুরেন্টে জুহির মতো কাউকে দেখতে পায়। পরে ভাবে জুহি কেন এখানে আসতে যাবে? এটা হয়তো বা তার মনের ভুল। সেদিকে আর মন টা দিয়ে বাসায় চলে আসে রোদ।

-আম্মু জুহি কোথায়?

-কেন বলতো?

-না মানে এমনি আর কি।

-জুহি তো ওর রুমে।

-ওহ আচ্ছা।

রোদ আর কিছু বললো না। মনে মনে ভাবলো সত্যি রেস্টুরেন্টে যাকে সে জুহি ভেবেছে সেটা আসলেই তার মনের ভুল।

রোদ আর সাতপাঁচ না ভেবে জম্পেশ একটা ঘুম দেয়। এক ঘুমে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রোদের ঘুম ভাঙ্গলে ফোনে টাইম দেখে সে থ হয়ে যায়। এতোসময় সে ঘুমিয়েছে। অবাক করা বিষয়। কেউ একবার ডাকলো ও না।

-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা…?

-আরে এই তো কেন ডাকছিস?

-তোমরা আমাকে একবার ও ডাকলে না কেন?

-ডাকি নি মানে? তুই জানিস কতোবার ডেকেছি কিন্তুু তোর তো কোনো সাড়াশব্দ ই পেলাম না।

-ওহ।

-নাস্তা করতে আয়।

-এই তো আসছি।

সবাই মিলে একসাথে নাস্তা সেরে নেয়। জুহি একবারের জন্যও রোদের সাথে কথা বলে নি। বিষয় টা রোদের ভালো লাগছে না।

রোদ জুহি কে পুরো বাসা খুঁজে কোথাও না পেয়ে ছাঁদে যায়। রোদ দেখে জুহি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে একা একা।
,
,
,
,
,

রোদ ও জুহির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে জুহি সেদিকে তাকায়। দেখে রোদ এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

জুহি চলে যেতে নিলে রোদ ওকে আটকায়।

-দেখ জুহি আমি সরি বললাম তো। প্লিজ তুই আমার সাথে রাগ করে থাকিস না। তুই এভাবে রোবটের মতো হয়ে আছিস এটা আমার ভালো লাগছে না রে।

-নো রেসপন্স।

-কিছু তো বল জুহি।

-নো রেসপন্স।

রোদের কোনো কথা জেনো জুহির কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না। সে চুপ করে আছে।

-ওকে তুই আমার সাথে কথা বলবি না তো দেখ আমি নিজের কি অবস্থা করি।

রোদ পকেট থেকে ব্লেড বের করে হাতে কয়েকটা টান মারে। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।

এটা দেখে জুহির কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। রোদের থেকে ব্লেড টা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।

-কি করলেন এটা আপনি হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছেন নাকি?

-তোকে যে কষ্ট দিয়েছি সেই কষ্টের থেকে এগুলা কিছুই না।

জুহি দৌড়ে নিচে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসে। এখনো রক্ত পড়ছে। কোনো ভাবে রক্ত বন্ধ করে রোদের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় জুহি। জুহি কান্না করছে আর সেটা রোদ দেখে নেয়।রোদ জুহির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-কিরে তুই কান্না করছিস কেন?

-আর একবার এসব উল্টা পাল্টা কাজ করবেন তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে আবার দেশের বাহিরে চলে যাবো। ধুর আমার আসলে এখানে আসাই ঠিক হয় নি।

রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে জুহির। কিভাবে পারলো সে রোদ কে এটা করতে দিতে?

জুহি নিচে চলে যায়। রোদ ও কিছুক্ষণ পর চলে যায়। ডিনার শেষে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রোদ চুপিচুপি জুহির রুমে যায়। আর দেঝে জুহি গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। জুহির ঘুমন্ত চেহারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোদ।

রোদ আস্তে আস্তে জুহির পাশে গিয়ে বসে। কেমন জেনো ঘোর লেগে গেছে তার। ইচ্ছে করছে জুহির কপালে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে। যেই ভাবা সেই রোদ আস্তে করে জুহির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। কিছু টা কেঁপে উঠলো জুহি…………

চলবে————
(আজকে গল্প লিখার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। তাও লিখলাম। ছোট করে দেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে দুঃখিত।)

কাছে_পাশে পর্ব_৬

0

কাছে_পাশে
পর্ব_৬
#Hiya_Chowdhury

রোদ কোনো ভাবে খেয়ে উঠে। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের। ভীষণ রকমের রাগ উঠে গেছে। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রোদ। আর সাথে ফুলদানি টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

-ওর আমার হাতে খেতে সমস্যা..! শুভ্রর হাতে খাবে। কেন আমার হাতে খেলে কি হবে? আমার হাতে কি বিষ আছে?

ভাঙ্গচুরের শব্দ শুনে রোদের আম্মু আর রোদের চাচিমা দৌড়ে আসে। রোদের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ করা।

-রোদ কি হয়েছে বাবা? তোর রুম থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেলাম।

-কিছু না আম্মু। ঐ ফুলদানি টা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে।

-আমি দেখবো তুই দরজা খোল।

-আরে আম্মু কিছু হয় নি তো। তুমি যাও আমি এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।

-আরে রোদ শোন……

রোদ দরজা খুললই না। উল্টো রুমের লাইট অফ করে দেয়। আর রোদ বেলকনিতে চলে যায়।

সারা রাত একটু ও ঘুমায় নি রোদ। চোখ গুলে ফুলে টুকটুকে লাল হয়ে আছে। জুহি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর রিমি ঝিমি রুমে যায়।

-এই যে ছোট আপি রা উঠো। সকাল হয়ে গেছে।

-ওহ আপু আরেক টা ঘুমাই না।

-একদম না। উঠো বলছি নয়তো এখন আমি নিচে গিয়ে মামনি কে সব বলে দেবো।

-কি বলবে? (রিমি ঝিমি দুজনেই লাফিয়ে উঠে বসে)

-তোমরা ড্রিঙ্ক করেছো এটা।

-এই আপু এটা ভুলে ও বলবেন না। আব্বু আম্মু রা শেষ করবে আমাদের।

-তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো।

-আচ্ছা বাট আপু রাতে কি আমাদের কে ডিনার করার জন্য আম্মু রা ডাকে নি?

-নাহ শুভ্র ভাইয়া বলে দিয়েছে তোমরা ছোট মানুষ সারাদিন ঘুরে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছো তাই আর কিছু বলে নি মামনি।

-ওহ তাহলে বাঁচা গেলো।

-হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও।

-ওক্কে আপু।

তারপর জুহি রোদের রুমে যায়। জুহি ভেবেছিলো দরজা বন্ধ কিন্তুু নাহ হালকা একটা ধাক্কা দিতে দরজা খুলে গেলো। রুমে ঢুকেই থ হয়ে যায় জুহি। ফুলদানি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।

জুহি ভালোই বুঝতে পেরেছে এটা রোদের কাজ। কিন্তুু কেন এমন করলো সেটাই বুঝতে পারলো না জুহি। তারপর জুহি খুব সাবধানে ফ্লোর থেকে কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

জুহি পুরো রুম খুঁজে দেখে কোথাও রোদের নাম গন্ধ ও নেই।

-সকাল সকাল এই মশাই গেলো টা কোথায়? ফ্লোরে পড়ে আছে ফুলদানির ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো আর রুমে উনি নেই? আশ্চর্য! (মনে মনে)

জুহি বেলকনিতে গিয়ে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় রোদ কে বেশ মায়াবি লাগছে। জুহি আস্তে আস্তে রোদের পাশে।

-‌এই যে ভাইয়া উঠেন নিচে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।

কয়েকবার ডাকার পর রোদ চোখ খুলে। চোখের সামনে জুহি কে চমকে উঠে।

-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছেন?

-কিছু না। কেন এসেছিস? (রোদের রাতের কথা মনে পড়ে যায়। তাই সে চোখ ফিরিয়ে নেয়)

-আপনাকে নাস্তা করার জন্য ডাকতে।

-শুভ্র কে ডাকিস নি। (দাঁতে দাঁত চেপে)

-ডেকেছি তো।

রোদের আরো রাগ উঠে যায়। আর অন্যদিকে জুহি খেয়াল করে রোদের চোখ মুখ ফুলে আছে। আর চোখ গুলা লাল হয়ে গেছে।

-এই ভাইয়া আপনি কি রাতে ঘুমান নি? মনে হচ্ছে রাতে কান্না করছেন! চোখ গুলা লাল হয়ে আছে। তা ভাইয়া বিয়ের জন্য কেঁদেছেন বুঝি। আচ্ছা সমস্যা নাই আমি মামনি কে বলে দিবো আপনাকে বিয়ে করানোর জন্য।হিহিহি….

সব কথা শেষ করে জুহি রোদের দিকে তাকাতেই দেখে রোদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর কথা শুনেই রেগে গেছে। জুহি চুপ মেরে যায়।

-যেভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে চোখ গুলা দিয়েই আমাকে গিলে খাবেন।

-তোর কথা শেষ হলে এখন যেতে পারিস।

-আচ্ছা আপনি নাস্তা করতে আসেন। বাপরে এতো রাগ করার কি আছে।

জুহি এক দৌড়ে চলে যায়। কারণ রোদ আরো বেশি রেগে যাচ্ছে। কখন জানি মেরে ওর হাড্ডি গুড্ডি সব এক করে দেয়।

রোদ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। জুহির দিকে আর তাকালোই না। কারণ রাগ উঠলে নিজেই কি করে বসবে ঠিক নেই।

রোদ অফিসে শান্তি মতো থাকতেই পারছে না। মন টা কেমন জেনো উশখুশ করছে। এই মনে হচ্ছে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে কথা বলছে। প্রচন্ড রকমের হিংসা হয় রোদের। সাথে রাগ ও। হয়তো এটা সবার ক্ষেত্রে ই এক। নিজের ভালোবাসার মানুটি কে যদি অন্য কারো সাথে দেখা যায় কেউ ই তা মেনে নিতে পারে না।

কারণ সবাই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি একান্তই তার নিজের হোক। সে সুখ দুঃখ হাসি কান্না দুষ্টুমি সব তার সাথেই করুক। কিন্তুু সেটা যদি সম্পূর্ণ উল্টো হয় তাহলে হিংসা রাগ অভিমান এসব হওয়া টা স্বাভাবিক।

রোদের অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। মন থেকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে মনযোগ দিয়ে কাজ করছে রোদ। সব কাজ শেষ করে রোদ বাসায় আসে। রোদ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতেই দেখে কাব্য শান্ত রিমি ঝিমি শুভ্র আর জুহি সবাই এক সাথে বসে ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছে। রোদ ও গিয়ে ওদের সাথে বসে।

-ভাই তুই ও এসেছিস চল এবার সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি।

-ওকে চলো।

রোদ না করলে ও সবাই ওকে জোড় করে খেলতে বসায়। হাতে কাছে একটা কাঁচের বোতল নেয়।

-শোনো ঐ টা বোতল টা ঘুরে ঘুরে যার দিকে যাবে তাকেই ট্রুথ অর ডেয়ার ২ টা থেকে একটা চয়েস করতে হবে। আর তোমরা তো খেলার নিয়ম জানোই।

-হুম।

প্রথমে আসে শান্তর পালা। রিমি বলে উঠে।

-শান্ত বল কি নিবি?

-ট্রুথ….

-তুই যে ভিতুর ডিম সেটা আমি জানতাম ই ট্রুথ নিবি।

-দেখ রিমি একদম ইনসাল্ট করবি না।আমি মোটে ও ভিতু না। (রেগে)

-আহা রিমি থাক না। ট্রুথ ও তো খেলার ই অংশ সবাই যদি ডেয়ার নিবে তাহলে ট্রুথ কে নিবে? (জুহি)

-ওখে,,যাই হোক প্রশ্ন করছি উওর দে শান্ত। আচ্ছা ধর সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে একটা কমলার গাছ আছে। তো তোকে সেই কমলা গাছ টার থেকে একটা কমলা পেড়ে নিয়ে আসতে হবে। তুই কিভাবে নিয়ে আসবি?

-ডানা দিয়ে উড়ে উড়ে নিয়ে আসবো।

-ডানা কি তোর শশুড় মশাই এসে তোর পিঠে সুপারগ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিবে?

-সমুদ্রের মাঝখানে কমলা গাছ কি তোর জামাই লাগিয়ে দিয়ে আসবে?

-আরে আমি তো প্রশ্ন করছি!

-আমি ও উওর দিলাম।

এরকম রিমি আর শান্তর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় কারো শশুড় তো কারো জামাই। অবস্থা নাজেহাল।

-হয়েছে শান্ত আর রিমি এবার কথা অফ করো।

-কথা আমি বলছি নাকি জুহি আপু বলো তো? ঐ বাচাল মেয়ে টা ই না বলছে।

-তুই বাচাল। (রেগে)

-ওহো তোরা থামবি প্লিজ।

-আচ্ছা থেমে গেলাম হুহ।

-হুহ ২…..

এভাবে খেলতে খেলতে শুভ্রর পালা আসে। জুহি শুভ্র কে বলে।

-ভাইয়া বলো কি নিবে? আমি জানি তুমি অনেক সাহসী সো ট্রুথ তো নিবে না।

-আচ্ছা ডেয়ার নিলাম।

-এইইইই জুহি আপু তুমি থামো। আমি শুভ্র ভাইয়া কে বলবো উনি কি করে দেখাবে।প্লিজ আপু প্লিজ। (কাব্য)

-আচ্ছা কাব্য তুমি ই বলো।

-শুভ্র ভাইয়া তুমি জুহি আপু কে প্রপোজ করো।

-কিহ…….!

রোদ ছাড়া সবাই কাব্যের কথা শুনে অবাক। রোদ তো কাব্যের উপর রেগে গেছে। এসবের কোনো মানেই হয় না।তাই রোদ বলে উঠে।

-এসব কি কাব্য? (রেগে)

-খেলা ই তো ভাইয়া। দেখি না শুভ্র ভাইয়া কেমন সাহস।

-আচ্ছা রোদ ভাইয়া তুমি কেন এমন করছো বলো তো। (ঝিমি)

রোদ আর কিছুই বললো না।

-শুভ্র ভাইয়া দেখি তো তোমার কত্তো সাহস? (রিমি)

-আচ্ছা দেখ। বাট কি দিয়ে প্রপোজ করবো রে কাব্য?

-ওয়েট….

কাব্য দৌড়ে গিয়ে নাস্তার টেবিল থেকে একটা কাটা চামচ নিয়ে আসে। তারপর এটা শুভ্রর হাতে দেয়।

-এই নাও ভাইয়া এটা দিয়ে প্রপোজ করো।

-ফুল বাদ দিয়ে শেষে কিনা কাটা চামচ…?

সবাই হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কাব্যর কান্ড দেখে। রোদ ও জোড় করেই হাসছে। ভিতরে ভিতরে রেগে আগুন।

শুভ্র ও জুহি কে প্রপোজ করে আর জুহি ও তা হেসে হেসেই এক্সেপ্ট করে এটা দেখে রোদ জ্বলে যাচ্ছে। নাহ এখানে আর বেশি সময় থাকা যাবে না। রোদ উঠে চলে যায়।

-কিরে রোদ কোথায় যাচ্ছিস? খেলবি না?

-ভালো লাগছে না আমার।

রোদ নিজের রুমে পায়চারী করছে। একটা কিছু করতেই হবে। নিজের চোখের সামনে জুহি কে শুভ্রর সাথে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না এসব।

রোদ চলে আসায় ওরা ও আর খেলে নি। যে যার রুমে চলে যায়। কেউ ফোনে চ্যাটিং করছে কেউ বা গেমিং করছে কেউ বা ফোনে কথা বলছে। জুহি কে রোদ তার রুমের সামনে দিয়ে যেতে দেখেই রোদ জুহি কে ডাক দেয়।

-জুহি…..

-হ্যাঁ ভাইয়া। বলেন।

-আয় আমার সাথে।

-কোথায়?

-ছাঁদে।

-এখন ছাঁদে?

-হুম চল।

-আচ্ছা চলেন।

রোদ আর জুহি ছাঁদে যায়। রোদ খুব শান্ত ভাবেই জুহি কে বলে।

-দেখ জুহি তুই শুভ্রর সাথে মিশবি না। ওর সাথে তেমন কথা বলবি না। দূরে দূরে থাকবি।

-কেন?(অবাক হয়ে)

-আমার ভালো লাগে না তাই।

-আপনার কি ভালো লাগে কি লাগে না সেটা জেনে আমার তো কোনো কাজ নেই। সো সরি। আপনার কথা আমি রাখতে পারলাম না।

-জুহি…..(রোদ জুহির কথায় ভীষণ রেগে যায়। রেগে গিয়ে জুহির হাত দুটো পিছনে চেঁপে ধরে)

-আহ ভাইয়া ছাড়ো প্লিজ আমার হাতে লাগছে। (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

-লাগুক। তোর শুভ্রর সাথে কিসের কথা? ওর হাতে খাবি আমার হাতে খাবি না। ওর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলবি আর আমার সাথে বলবি না। কি সমস্যা হ্যাঁ? তুই বুঝিস না তোকে শুভ্রর সাথে এসব করতে দেখলে আমার জ্বলে যে? বুঝিস না তুই?

-মনে আছে আপনার? ছোট বেলায় যখন আমি আপনাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে নিষেধ করতাম তখন আপনি কি করতেন? আমাকে বকা দিতেন! আমাকে নানা ভাবে অপমান করে আরো বেশি কথা বলতেন! একদিন তো একটা মেয়ের সামনে আমাকে থাপ্পড় দিলেন। কই তখন তো আপনার জ্বলে নি?! সেই সময় তো আপনি আমার কথা শুনেন নি! তাহলে আজকে আমি কেন আপনার কথা শুনবো…? আপনি যা যা আমার সাথে করেছেন তা যদি এখন আমি আপনার সাথে করি? কেমন লাগবে ভেবে দেখেছিলেন কখনো?

রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়……..

চলবে————

কাছে_পাশে পর্ব_৫

0

কাছে_পাশে
পর্ব_৫
#Hiya_Chowdhury

জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।

-জুহি তুই আমাদের বাসায় আর আমি গতকাল ‌তোকে খুঁজতে বিমান বন্দরে পর্যন্ত গিয়েছিলাম এটা তুই জানিস?

-কে জুহি? (অবাক হয়ে)

-দেখ তোর নাকের ওপর আরেক টা নাক উঠছে।

জুহি রোদের কথা শুনে নাকে হাত দিতেই। রোদ হাহা করে হেসে উঠে।

-কিরে তোর মনে আছে ছোটবেলায় এই কথাটা যখন আমি তোকে বলতাম তখন তুই ঠিক এই কাজ টাই করতি। এরপর ও যদি মিথ্যা বলছিস না দেখিস তোর এবার সত্যি সত্যি দুইটা নাক উঠবে। (হেসে হেসে)

-ভাইয়া আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি জুহি।

-দেখ জুহি তুই আমাকে ভাইয়া ডাকবি না। আর আমি অফিস থেকে এসে নিজের রুমে যাওয়ার সময় আম্মুরা বলছিলো যে তখন শুনেছি।

-কেন ভাইয়া ডাকবো না? আপনি তো আমার ভাইয়া ই তাই না সো আমি ভাইয়া ডাকবো। আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। যাচ্ছি।

জুহি চলে যেতে নিলে রোদ জুহির হাত ধরে ফেলে। জুহি একবার রোদের চোখের দিকে তাকায় দেখে রোদ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জুহি কিছু না বলে ওর হাত টা রোদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উপরে চলে যায়।

রোদ অফিস থেকে আসার পর যখন শুনেছে ওর বউ সেজে থাকা মেয়েটি আসলে জুহি তখন ওর খুঁশির সীমা ছিলো না। কিন্তুু এখন জুহির মুখে ভাইয়া মার্কা ডাক টা শুনে রোদের কেমন জেনো লাগছে। সকাল পর্যন্ত জুহি যেমন ছিলো তেমন টাই তো ভালো ছিলো। ভাইয়া ডাকার কি দরকার আজব।

রোদের আজকে অফিসে ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছে বাসায়। জুহি যাওয়ার পর রোদ ও নিজের রুমে চলে যায়।।।

লাঞ্চ টাইম………

-আম্মু তোমরা কিন্তুু এটা ঠিক করো নি।

-কোনটা?

-জুহি এসেছে আর তোমরা আমার কাছে সেটা লুকিয়ে রেখেছো।

-দেখ ভাইয়া আমাদের দোষ দিবি না। জুহি আপু ই তো নিষেধ করেছে।

-কিরে জুহি কেন নিষেধ করেছিলি?

-বেশ করেছি তুমি ই তো আমাকে চিনতে পারো নি ভাবলাম এই সুযোগে তোমার সাথে একটু মজা করা যাক। হিহি….

-আবার হাসে। কিভাবে চিনবো তুই কি আর আগের সেই পিচ্চি জুহি আছিস নাকি। এখন কওো বড় হয়ে গেছিস।

-হুহ হয়েছে আর বলতে হবে না। (মুখ বাঁকিয়ে)

-জুহি তুই তো নিজের হাতে নাকি খেতে পারিস না সকালের মতো আমি খাইয়ে দেই?

-না ভাইয়া তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি আর না এবার আমি নিজেই খেতে পারবো।

-আরে…..

রিমি ঝিমির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে জুহি। ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ। রোদের মুখ টা দেখার মতো হয়েছে। কি আর করার জুহি যখন আসবে না রোদ নিজেই নিজেকে খাওয়াচ্ছে।

পরের দিন সকালে………

-রোদ উঠ আজকে তুই অফিসে যাবি না?.

-না আম্মু ভালো লাগছে না। আমি ম্যানেজার সাহেব কে সব বুঝিয়ে দিয়েছি।

-ওহ তাহলে নাস্তা করতে আয় সবাই এসে গেছে শুধু তুই ছাড়া।

-আচ্ছা আম্মু আসছি।

সবাই মিলে নাস্তা করে নেয়। রোদ জুহির পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তুু জুহি রোদ কে ইগনোর করে চলছে। ইগনোর একবার ঠিক আছে। কিন্তুু বারবার মেনে নেওয়া পসিবল না। রোদ ভাবলো জুহি কে জিঙ্গেস করবে এমন কেন করছে সে। পরক্ষণে রোদ তার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে চলে যায়।

আর এ দিকে জুহি কাব্য রিমি ঝিমি আর শান্ত শুভ্র কে নিয়ে আসতে বিমান বন্দরে যায়। সবাই মিলে একসঙ্গে ইনজয় করছে। রোদ বাসায় আসে।

পুরো বাসা টা খুঁজে জুহি কে পেলো না রোদ।

-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা?

-এই তো আসছি…(রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে)

রোদের আম্মু রান্নাঘর ছেড়ে রোদের রুমে আসে।

-কিরে কি হলো?

-জুহি কোথায়? কোথাও দেখছি না যে?

-দেখবি কিভাবে ওরা তো বাসায় নেই।

-ওরা বলতে?

-কাব্যা রিমি ঝিমি শান্ত জুহি কেউ ই বাসায় নেই।

-কোথায় গেছে?

-ওরা শুভ্র কে বিমান বন্দরে থেকে নিয়ে আসতে গেছে।

-কিহ শুভ্র দেশের মানে কি? আমাকে একবার জানালো ও না?

-এই চুপ তুই শুভ্র কে দোষ দিচ্ছিস কেন? কালকে রাত থেকে শুভ্র তোকে ৫০ টার উপরে ফোন দিয়েছে। পরে সকালে তোর কোনো খোঁজ না পেয়ে জুহি দের কে পাঠাতে হয়েছে শুভ্র কে নিয়ে আসতে।

-ও মাই গড। ওপপস ফোন টা অফ হয়ে গেছে চার্জ দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সরি আম্মু।

-সরি আমাকে না শুভ্র কে বলিস।

রোদের আম্মু রান্না ঘরে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে গিয়ে ফোন টা চার্জে দেয়। একদম বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ফোনটা। আজকাল সে কেমন জেনো হয়ে গেছে। সব কিছুই ভুলে যাচ্ছে। মাথায় শুধু জুহি কে নিয়েই সব ভাবনা।

সারাদিন কাটিয়ে শুভ্র রা সন্ধ্যায় বাসায় আসে। সবার আগে কাব্য শান্ত আর রিমি ঝিমি বাসায় ঢুকে।

-কিরে তোদের আসতে এতো দেরি হলো কেন? (রোদ)

-আরে ভাইয়া তুমি তো যাও নি সেই ইনজয় হয়েছে।

-এই তোরা ড্রিঙ্ক করেছিস?

-হুশ আস্তে ভাইয়া আস্তে কেউ শুনে নিলে শেষ।

-জুহি কোথায়?

-শুভ্র ভাইয়ার সাথে আসছে।

ওরা চারজন কোনো ভাবে হেলেদুলে নিজেদের রুমে চলে যায়। রোদ একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে হেসে কথা বলে আসছে। জুহি পড়ে যেতে নিলে শুভ্র জুহি কে কোলে তুলে নেয়। রোদ এটা দেখে খুব রেগে যায়।

রেগে দাঁত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। রোদের ইচ্ছে করছে শুভ্র কে একটা ঘুষি মারতে। ওর সম্পদে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় ওর। শুভ্র কে দেখে মনে হচ্ছে সে ড্রিঙ্ক করে নি।

-কি রে রোদ তুই এখানে কখন আসলি।

-যখন তুই আমার জিনিসে হাত দিলি তখন এসেছি। (বিড়বিড় করে)

-কিছু বললি?

-না তো।

-দেখ তোকে তো আমি ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো। দাড়া জুহি কে রেখে আসি।

-তোর ওকে রেখে আসতে হবে না আমাকে দে আমি রেখে আসছি।

জুহির কানে কিছু কিছু কথা যায়। রোদের কথা শুনে জুহি বলে উঠলো।

-আমি যাবো না রোদ ভাইয়ার কোলে। আমি শুভ্র……..

-দেখ না ভাই ও নিজেই বলেছে যাবে না। আমি রেখে আসছি।

রোদ আর কিছু বললো না। শুভ্রর পিছন পিছন গেলো রোদ ও। শুভ্র জুহি কে ওর বেডে শুয়ে দেয়।

-এবার তুই আমাকে বল তোর ফোন কোথায় ছিলো? কওো গুলা ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে তোর?

-সরি রে আমার ফোন টা অফ হয়ে গিয়েছিলো কখন খেয়াল ই করিনি।

-হয়েছে আর বলতে হবে না।

-আহা সরি তো যা এখন ফ্রেশ হতে যা। আর তুই এদের ড্রিঙ্ক করতে দিলি কেন?

-আরে আমি এদের কে অনেক বার নিষেধ করেছি কেউ আমার কথা শুনলো ই না।

-মেরে নাক ফাটিয়ে দিতি।

-হাহাহা আচ্ছা অার কোনো সময় ড্রিঙ্ক করতে চাইলে মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো।

রোদ আর শুভ্র চলে যায়। জুহি শোয়া থেকে উঠে বসে।

-হুহ এখন কেমন লাগছে মি. রোদ চৌধুরী। (জুহি হেসে উঠে। জুহি ড্রিঙ্ক করেই নি। যাছিলো সব রোদ কে দেখানোর জন্য ছিলো)

ডিনার টাইম……..

রোদ আর শুভ্র পাশাপাশি বসেছে।

-কিরে তোদের বাকি ভাই বোন রা কি আজকে ডিনার করবে না?

-না আম্মু ওরা না খুব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে।

-মিথ্যা কথা এই দেখো মামনি আমি এসে গেছি।

-ও জুহি তুই এসেছিস। আয় বস।

-কিরে শুভ্র ওর নেশা এতো তাড়াতাড়ি কেটে গেলো?(চুপিচুপি)

-জুহি তো কম খেয়ে ছিলো তাই কেটে গেছে হয়তো।

-এই তোরা কি বিড়বিড় করছিস?

-কই কিছু না তো আম্মু।

-হুম তোমাদের বিড়বিড় করা শেষ হলে শুভ্র ভাইয়া এবার আমাকে খাইয়ে দাও।

জুহির কথা শুনে রোদ বলে উঠে।

-তুই না লাঞ্চ করার সময় বলেছিস তুই নিজের হাতে খেতে পারিস?

-কই না তো সেটা তো বলেছি তোমাকে আর জ্বালাবো না।

-তাহলে এদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

-না আমি শুভ্র ভাইয়ার হাতে খাবো।

-আহা রোদ এতো করে বলছে যখন শুভ্র ই ওকে খাইয়ে দিক না।

-আচ্ছা আম্মু।

রোদ জুহির কথা শুনে রেগে আছে। শুভ্র হাতে খাবে কিন্তুু রোদের হাতে খাবে না। রোদের এতো রাগ হচ্ছে যে বলার মতো না। কিন্তুু রোদ প্রকাশ ও করতে পারছে না।

রোদ কোনো ভাবে খেয়ে উঠে। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের। ভীষণ রকমের রাগ উঠে গেছে। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রোদ। আর সাথে ফুলদানি টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়……………

চলবে————

কাছে_পাশে পর্ব_৪

0

কাছে_পাশে
পর্ব_৪
#Hiya_Chowdhury

রোদ ভাবছে তার সাথে এখন কি কি হবে। এমন সময় রিমির বলা কথা শুনে রোদ বিস্মিত হয়ে গেলো। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা রোদের।

-আরে ভাবী তুমি আলমারি তে কি করছিলো?(রিমি মেয়েটি কে প্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে)

-তোমার ভাই জামা কাপড়ের মতো গোটা একটা মানুষ কে ঢুকিয়ে রেখেছে।

-কিরে ভাই তুই ভাবী কে আলমারি তে কেন ঢুকয়োয়েছিস?

-না মামমনে এমনি।

-দেখ তো ভাই ভাবী কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা আমি গেলাম। আর নাস্তা করতে আয়।

-আচ্ছা তুমি যাও রিমি। আমরা আসছি।

-হুম

রিমি চলে যায়। রোদ ভাবছে রিমির তো উল্টো রিয়েকশন করার কথা ছিলো কিন্তুু রিমি কোনো রিয়েকশন ই করলো না। রিমি আরো মেয়েটি কে বলছে ভাবী!! রোদের মাথায় কিছুই আসছে না।

মেয়েটি রেগে কোমড়ে হাত দিয়ে রোদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। রোদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।

-তোর জন্য সব হয়েছে। তোর সব প্ল্যান ছিলো আমাকে ফেলে দেওয়ার তাই না?

-এই একদম না। আর তাছাড়া তোমার মতো এরকম একটা হাতি ঐ ছোট্ট আলমারি তে থাকতে পারবে ও কিভাবে? পড়বেই তো।

-কিহ আমি হাতি?

-না না জলজ্যান্ত একটা বাঘিনী মানুষ।

রোদ এটা বলে কোনো ভাবে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। কোনো ‌মতেই হিসাব মিলছে না। রোদের মাথায় এখনো ঘুরছে বউ আসলো কোথা থেকে। যতোদূর মনে পড়ছে সে তো বিয়ে করেই নি। হঠাৎ রোদের জুহির কথা মনে পড়ে।

-আমি জুহি কে ভালোবাসি এই মেয়ে কে নয়। আমি এখন উনাকে সাফ জানিয়ে দিবো আমি তোমাকে চিনি না বিয়ে ও করিনি ব্যস। আমি জাস্ট জুহি কে ভালোবাসি আর কাউকে না। আর বিয়ে করলে জুহি কেই করবো। জুহি ই আমার বউ হবে(মনে মনে)

রোদ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মেয়েটি রুমে নেই। রোদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। জুহির কথা মনে পড়তেই কিছুই জেন ভালো লাগছে না। এক দিকে জুহি আরেক দিকে এই মেয়ে কি হচ্ছে রোদের সাথে এসব। রোদ অফিসের জন্য রেডি হয়ে নেয়। তারপর নিচে নাস্তা করতে গেলেই অবাক রোদ।

কারণ মেয়েটি সবাই কে নাস্তা সার্ভ করছে। আর হেসে হেসে সকলের সাথে কথা বলছে! কারো তেমন রিয়েকশন ই নেই। এসব ভাবতে ভাবতে নাস্তার টেবিলে আসে রোদ।

-রোদ তুই এসেছিস দেখ না বউ মা তোকে ছাড়া নাস্তা করতে বসছে না। এবার দুজন একএে বস।

-হুম (জোড় করে হাসার চেষ্টা করছে রোদ)

অতঃপর রোদের পাশে মেয়েটি বসে। তারপর রোদের আম্মু কে বলে।

-মামনি আমি নিজের হাতে খাবো না ওকে খাইয়ে দিতে বলো।

মেয়েটির কথা শুনে রোদের হাত থেকে কাটা চামচ যেটা দিয়ে সে খাচ্ছিলো সেটা পড়ে যায়।এতো বড় মেয়ে বলে কিনা ওকে খাইয়ে দিবে রোদ। অসম্ভব।

-এই জন্যই বলেছিলি যে রোদ আর তুই একএে খাবি? হাহা রোদ ওকে খাইয়ে দে।

-না আমি পারবো না!

মেয়েটি রোদের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে কাটা চামচ টা হাতে নিয়ে রোদের পেটের দিকে ইশারা করে। রোদ বড় বড় চোখ করে মেয়েটির দিকে তাকায়। রোদ মেয়েটির ইশারা বুঝতে পেরে চুপচাপ ওকে খাইয়ে দিতে থাকে। রোদের বুক ফুটছে তো মুখ ফুটছে মা। বাহ মেয়েটি ও বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছে। আর বাকি সবাই রোদ আর মেয়েটির অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।

কোনোমতে রোদ নাস্তা শেষ করে সোজা অফিসে চলে যায়। এদিকে জুহি কে রোদ খুঁজে তো পাচ্ছেই না অার অন্য দিকে এই মেয়ে যত্তোসব ঝামেলা।

নাস্তা শেষে মেয়েটি রোদের ঘরে যায়। বেড টা ভালো ভাবে গুছিয়ে রাখে। এমন সময় বেডের পাশের টেবিলে থাকা রোদের ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে।

-হায় রে রোদ তো ওর ফোন টা ও ফেলে রেঝে চলে গেছে। হাহাহা বিয়ে না করেই বউ কোথা থেকে এলো হয়তো এই টেনশনেই সব গুলিয়ে ফেলেছে। (মনে মনে)

মেয়েটি ভাবছে রোদের ফোন টা দেখবে কি দেখবে না। অনেক ভাবা ভাবির পর মেয়েটি রোদের ফোন টা হাতে নেয়। আর ফোনের screen এ ভেসে উঠা মেসেজ টা দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে যায়। মেসেজ টা ছিলো এরকম….

“যদি নিজের শত্রু দের দেখতে চাও এন্ড নিজের কোম্পানী কে বাঁচাতে চাও তবে রেস্টুরেন্ট এ চলে এসো। আর আমার খোঁজ করতে এসো না। ভাবতে পারো আমি তোমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।”

মেয়েটি কিছু টা বিব্রত হয়ে যায়। কোন নাম্বার থেকে মেসেজ টা এসেছে তা চ্যাক করতে গেলে দেখা যায় মেসেজ টা একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে এসেছে।

মেয়েটি রোদের ফোন থেকে মেসেজ টা ডিলেট করে নেয়। আর রেডি ও হয়ে নেয়। কারণ তাকে এক্ষুনি দেখতে হবে ব্যাপার টা।

রোদের রুম ছেড়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসতেই রোদের আম্মু মেয়েটির সামনে পড়ে।

-কিরে মা কোথাও যাচ্ছিস?

-হ্যাঁ মামনি একটু দরকার ছিলো। তাই….

-তুই একা যাবি নাকি আমি রিমি কে ও ডেকে দিবো?

-না মামনি। আমি একাই যাবো। ওকে ডিস্টার্ব করার দরকার নেই।

-আচ্ছা সাবধানে যাস।

-আচ্ছা মামনি।

মেয়েটি গাড়ি নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে যায়। আর খোঁজার চেষ্টা কোথায় রোদ দের কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। পেয়ে যায় মেয়েটি তাদের।

মেয়েটি ঐ লোক গুলো ঠিক পেছনে বসে। আর মুখ টা ঢেকে বসে। এমন সময় একজন ওয়েটার আসে।

-কি লাগবে ম্যাম?

-এক কাপ কফি নিয়ে আসো।

-ওকে ম্যাম।

লোকগুলো যা বলছে………

-ঐ চৌধুরী কোম্পানি টপে উঠে গেছে। পরপর ৩ বার টপে থাকলে ঐ কোম্পানি কে পুরস্কার দেওয়া হয় সাথে হরেক রকমের সুবিধা। আর এবার চৌধুরী কোম্পানির ৩য় বার টপে থাকার সময়। এবং এখনো পর্যন্ত আছে ও আর এটা কোনো ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।

-ঠিক বলেছো আর তাছাড়া আমাদের ওপর থেকে চাপ ও দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের বড় যিনি আমাদের দিয়ে এই কাজ করাচ্ছেন তার সম্পর্কে তোমরা একটা কথা জানো?

-কি কথা?

-উনি চৌধুরী পরিবারের ই একজন।

-হোয়াট তো তাহলে ইনি এই কাজ করাচ্ছেন কেন?

-উনি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক নন। আর উনার মতে এভাবে চলতে থাকলে উনি কখনো হতে ও পারবেন না ঐ কোম্পানির আসল মালিক।

-ওহ।আমাদের কাজ দিয়ে কি ভাবে কি হবে?

-হবে কারণ আমরা যদি চৌধুরী কোম্পানি কে এবার টপ থেকে নিচে নামিয়ে দিই তাহলে চৌধুরী কোম্পানির মালিক ভেঙ্গে পড়বেন। উনার এতো দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। আর ঠিক তখনি আমাদের বড় স্যার উনাদের কোম্পানি টা দখল করে নিবেন। আর উনি ই হবেন আসল মালিক। পরে আবার উনি কোম্পানি টা কে টপে নিয়ে যাবেন।

-ওও আচ্ছা। তো তোমরা কেউ উনাকে দেখেছো যার নির্দেশে আমরা এসব করছি?

-না দেখিনি।

ওদের ঠিক পিছন থেকে ওদের এই সব কথা পুনরায় ফোন থেকে শুনে চমকে উঠে ওরা ৩ জন। পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আর তার হাতে ফোনের রেকর্ড থেকে এসব চলছে। ওরা ৩ জন ভয় পেয়ে যায়।

-এই মেয়ে কে তুমি?

-জুহি!!

-মানে?

(হ্যাঁ যা ভাবছেন সেটাই। মানে রোদের বউ সেজে থাকা মেয়েটি আর কেউ নয় জুহি ই। জুহি সেদিন ই রোদের বাসায় এসেছে যেদিন ওর আসার কথা ছিলো। জুহি শুধু রিমি কে দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছে রোদ কে। ব্যাস সারাদিন তো রোদের বাহিরেই কেটে গেলো।মূল কথায় আসি….)

-মানে আমার নাম জুহি।

-তুমি আমাদের কথা গুলো রেকর্ড করলে কেন?

-সেটা এই জন্যই যে তোমরা যদি এখন আমাকে তোমাদের সাথে না নাও তো আমি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক কে এই ফোনে রেকর্ড করা সব কথা শুনিয়ে দিবো।

সবাই ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।

-দেখো আমরা একজনের থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে ফেলেছি। এই কাজ টা করার জন্য।

-তো কি হয়েছে। তোমাদের সাথে এই কাজে আমি ও হেল্প করবো।

-এতে তোমার লাভ?

-আমার লাভ অবশ্যই আছে। চৌধুরী কোম্পানির মালিকের সাথে আমার খুব পুরোনো শত্রু তা। চৌধুরী কোম্পানির মালিক আমার বাবা ও ছিলেন একটা সময়। ৫০% ৫০% এ ছিলো কোম্পানির ভাগ। কিন্তুু পরে তার সাথে বেঈমানি করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এই কোম্পানি। তাই আমি ও ওদের থেকে ঠিক এটাই করবো।

-কিন্তুু তুমি তো কোম্পানির ভাগ পাবে না?….

-নো প্রবলেম। কোম্পানি টা তো আর রোদ চৌধুরীর বাবার ও থাকবে না। আর আমি এটাই তো চাই। হাহাহা

-কিন্তুু…..

-দেখো তোমরা যদি রাজি না হও তো আমি চললাম।

-হ্যাঁ আমরা রাজি।

-ওকে। থ্যাঙ্কস তো এবার বলো চৌধুরী কোম্পানির কোন সদস্য তোমাদের দিয়ে এই কাজ টা করাচ্ছে তোমরা কি ওকে চেনো?

-না আমরা উনাকে কখনো দেখি ই নি।

-ওহ আচ্ছা। তোমাদের বড় স্যার উনাকে জানিয়ে দিও তোমাদের সাথে আমি নতুন এড হওয়ার কথা ওকে।আর তোমরা যদি বেশি তিড়িং বিড়িং করো তাহলে কিন্তুু এই ফোন রেকর্ড…

-না না আমরা কিচ্ছু করবো না।…

-ওওওকে।

জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।

-রোদ জানলো কিভাবে এই কথা…..?????

চলবে————

কাছে_পাশে পর্ব_৩

0

কাছে_পাশে
পর্ব_৩
#Hiya_Chowdhury

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো।

-ভাই জুহি আপির না মত চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে আমাদের বাড়ি তে আসবে না। সকালে সবার সাথে কথা বলে নিয়েছে। আর বলেছে আজকেই নাকি দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে।

দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে শুনে রোদের মাঝে আর্তনাদ শুরু হয়ে গেছে। তবে কি এবারে ও সে জুহির দেখা পাবে না।

-কককেন আসনে না?

-তা তো জানিনা।

-ওর নাম্বার টা দিতে পারবি?

-না না ভাই একদম নিষেধ আছে। আম্মু যদি জানতে পারে আমার হাড্ডি মাংস এক করে ফেলবে।

-আম্মু দেখবে না। তুই লুকিয়ে লুকিয়ে দে।

-না ভাই আমি এতো রিক্স নিতে চাই না। ফোন রাখছি….

-আচ্ছা তুই এটা বল ফ্লাইট কয়টায় জুহির?

-তাতো আমি শুনি নি।

-আচ্ছা ফোন রাখ।

রোদ ফোন কেটে দিয়ে। ব্লেজার টা গায়ে জড়িয়ে গাড়ি করে সোজা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রোদ দ্রুত গাড়ির চালিয়ে যাচ্ছে।

যে করেই হোক জুহি কে আটকাতে হবে। না হলে হয়তো বা এবার জুহি কে হারিয়ে ফেললে আর না ও পেতে পারে। গাড়ি পার্কিং করে রোদ সোজা বিমান বন্দরে ঢুকে যায়। এতো মানুষের ভিতরে রোদ কোথায় খুঁজবে জুহি কে। আর তাছাড়া আগের জুহি আর এখন কার জুহির মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। সে চিনবে কিভাবে কোনটা জুহি।

রোদের সারাটা দিন ও খানেই কেটে গেলো। নাহ জুহির দেখা পায় নি রোদ। অবশেষে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। মনে হাজারো রকমের ভাবনা। হয়তো সে জুহি কে এবার ও হারিয়ে ফেলেছে।

রোদ প্রতিদিন অফিস থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় ফিরে আসে। কিন্তুু আজকে অনেক লেট করে বাসায় ফিরছে রোদ। সবাই অনেক টেনশন করছে। রোদ বাসায় ঢুকতেই এত্তো গুলো প্রশ্ন ছুড়ে মারে সবাই রোদের দিকে।

-এতোক্ষন কোথায় ছিলি রোদ?

-আম্মু ঐ অফিসের জন্য একটু লেট হয়েছে।

-মিথ্যা বলছিস কেন । তোর আব্বু ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলেছে। উনি বলেছেন তুই অনেক আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছিস।

-ওহ উনি তাহলে বলে দিয়েছে। আচ্ছা শোনো আম্মু আমি না আমার পুরনো একটা বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। আসলে আজকে হঠাৎ করে দেখা হলো তো তাই।

-তাহলে ফোন দিয়ে জানালে ও পারতি।

-দেখো না আম্মু ফোন টা অফ হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নিই কেমন।

-আচ্ছা যা। কিন্তুু আজকের মতো আর না বলে দেরি করে বাসায় ফিরবো না।

-ওকে মাই সুইট কিউট মম।

রোদ নিজের রুমে চলে যায়। সারাদিন এতো হাটাহাটি করছে যে শরীর বড্ড ক্লান্ত। এতো খুঁজার ফলে ও আসল কাজ টাই হলো না। জুহির দেখা রোদ পেলো না। রোদ কোনো ভাবে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

পরেরদিন সকালে রোদ খেয়াল করে তার পাশে একটি মেয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রোদ ভাবলো হয়তো জুহির কথা ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন দেখছে। রোদ কোনো কিছু না ভেবেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

রোদ নিজের হাতের উপর ওজন জাতীয় কিছু একটা অনুভব করছে। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে সেই মেয়েটি। রোদ ভাবলো এ কেমন স্বপ্ন। রোদ চোখ কচলিয়ে দেখে না যা দেখছে তা তো সত্যি ই।

রোদ নিজের হাত ভেবে মেয়েটির হাতেই চিমটি কাটে। আর মেয়েটি সোজা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে। সাথে রোদ ও।

-ও মাগো! তুমি আমার হাতে চিমটি কাটলে কেন? সকাল সকাল আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিলে কি সমস্যা কি হ্যাঁ? সকাল সকাল ভূতে কামড়ে দিয়েছে?

মেয়েটির কথা শুনে রোদের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। যেখানে ভূতের বলতে পৃথিবী তে কিছু নেই ই সেখানে ভূতে কামড়াবে? হাউ ইজ পসিবল..?

-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছো?

-কে আপনি আর আমার সাথে শুয়ে আছেন ছিঃ ছিঃ

-কিহ আমাকে আপনি বলা তার উপর আবার জিঙ্গেস করছো কে আমি? বলি বিয়ে যে করেছো ভুলে গেলে?

-বিয়ে আর আমি? (অবাক হয়ে)

-তো তুমি নয় তো কে?

-কি সব যাতা বলছেন। আমি বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে। দেখুন আপনি যদি আমার সাথে মজা করে থাকেন সো প্লিজ মজা বন্ধ করুন।

-আমি তোমার সাথে কোন দুঃখে মজা করতে যাবো শুনি?

-দেখুন…..

-ওগো একটু কথাকাটাকাটি হয় এমন সংসারে। তাই বলে তুমি আমাকে অস্বীকার করছো। এতো অভিমান করে থেকো না।

রোদের তো মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে। মেয়ে বলে কি কথাকাটাকাটি হয়েছে বলে অভিমান করছি। মানে কি এসবের? সাত সকালে কি হচ্ছে এসব।

-ওগো কি ভাবছো।

-আমি এখনো বিয়ে করিনি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন আপনার স্বামী আমি না। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। প্লিজ এখান থেকে চলে যান নয়তো আমার বাসার লোক কেউ‌ দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। বলবে আমি রাতে বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছি। প্লিজ প্লিজ চলে যান।

রোদ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে মেয়েটির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। রোদের তো ভয়ে জান বেরিয়ে আসছে। মেয়েটি গিয়ে সোজা রোদের বুকের উপর বসে।ইচ্ছা মতো রোদের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে।

-আহ আপনি আমায় মারছেন কেন?

-বিয়ে করে এখন ন্যাকামো সাজা হচ্ছে। কি এমন ভুল করেছি আমি যে বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছো। ঘরে বউ রেখে বাসায় মেয়ে নিয়ে আসার কথা বলছো। খবরদার যদি আর কখনো এসব শুনি মেরে ভর্তা বানিয়ে ছাঁদে কড়া রোদের মধ্যে শুকাতে দিবো।এই আমি বলে দিলাম। (রেগে গজগজ করতে করতে)

মেয়েটি সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায়। রোদ উঠে বসে।

-এটা মেয়ে ছিলো না অন্য কিছু? ওহ গড এটা যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তো তাড়াতাড়ি আমার ঘুম ভেঙ্গে যাক। এমন বাঘিনী মেয়ে স্বপ্নের মধ্যে এসে বলছে আমার বউ। না জানি এমন মেয়ে কার বউ হবে। ভাই একটু সাবধানে থাকিস। নয়তো তোকে কুপিয়ে মেরে ফেলবে।

রোদ অনেক ভাবেই চেষ্টা করছে। এসব কে স্বপ্ন ভাবতে কিন্তুু এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। গতকাল রাতে তো ঘুমানোর সময় কোনো মেয়ে সে দেখে নি। তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে এই মেয়ে টি উড়ে এসে জুড়ে বসলো। এখন যদি বাসার কেউ দেখে কি হবে…! টেনশনে রোদের মাথায় ও কিছু আসছে না।

-কি বিড়বিড় করছো?

-কককই নাতো। প্লিজ বলুন কে আপনি?

মেয়েটি আবার চোখ গরম করে রোদের দিকে তাকায়।

-না মানে সত্যি আমার মনে হয় কি আমার স্মৃতি শক্তি লোভ পেয়েছে তাই আমি সব ভুলে গিয়েছি। তাই আপনি প্লিজ একটু মনে করিয়ে দেন।

-আর একবার যদি আপনি বলেছো তোমার মুখে আমি কসটেপ মেরে দিবো। (রেগে)

-আচ্ছা তুমি আমাকে প্লিজ একটু মনে করতে সাহায্য করো।

হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। মেয়েটি কথা বলতে যাবে এমন সময় রোদ মেয়েটির মুখ চেপে। আর হাত দিতে ইশারা করে চুপ থাকতে।

-কে?

-ভাই আমি রিমি।

-কোনো প্রয়োজনে এসেছিস না এমনি?

-ভাই আমি কাল তোর বেলকনিতে এসেছিলাম। আমার রুমে নেটওয়ার্ক কাজ করছিলো না দেখে। পরে বোধহয় ভুল করে ফোন টা তোর বেলকনিতে ফেলে রেখে চলে গেছি। রাতে তো তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি ডোর লক করে তাই আর ফোন টা নিতে পারি। এখন নিতে এসেছি।

-ওহ আচ্ছা।

-খুল দে না দরজা টা। ভেতরে কি করছিস।

-এই তো ২ মিনিট।

রোদ মেয়েটির মুখ এখনো চেপে ধরে আছে। মেয়েটির কথা রিমির কানে গেলেই শেষ। রোদ আস্তে আস্তে মেয়েটিকে বলে….

-তুমি লুকিয়ে পড়ো। প্লিজ।

-কেন?

-আরে আমার বোন যদি তোমাকে দেখে। আমাকে শেষ করবে।

-মানে

-কিছু না এদিকে আসো।

আর ঐ দিকে রিমি চিল্লিয়ে রোদ কে বলে…

-আরে ভাই দরজা টা খুলতে তোর এতোক্ষণ লাগে?

রোদ রিমির কথায় পাওা না দিয়ে নিরাপদ একটা জায়গা খুঁজতে থাকে যেখানে সে মেয়েটি কে লুকিয়ে রাখবে। যাতে করে রিমি না দেখতে পায় ওকে। রোদ মেয়েটির কে আলমারির সামনে নিয়ে যায়। আলমারি পুরো ফাঁকা। রোদ মেয়েটির কে আলমারির ভিতরে ঢুকিয়ে….

-তুমি প্লিজ একটু এখানে থাকো। জাস্ট ২ মিনিট। আমার বোন আমার রুম থেকে ওর ফোন টা নিয়ে চলে গেলে তুমি বেরোবে এর আগে না।

-মানে? আমি আলমারির ভেতরে কি বলতে চাইছো তুমি?

-প্লিজ ২ মিনিট।

রোদের অবস্থা দেখে মেয়েটির এতো হাসি পাচ্ছে যা বলার বাহিরে। তাও নিজের হাসি চেপে রেখে মেয়েটি বলে…

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। এখানেই আছি আমি।

-থ্যাঙ্কস…

রোদ তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর রিমি রোদের রুমে আসে।

-কিরে ভাই তুই এতোক্ষণ কি করছিলি?

-আরে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।

-ওহ আচ্ছা।

-যা তুই তোর ফোন নিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড় আমার রুম থেকে!

-হুহ আমি তোর রুম দখল করতে আসি নি। আমার ফোন টা খুঁজতে এসেছি। আমার টা আমার জন্য ঢের ভালো।

মুখ বাকাঁ করে রোদের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গচি মারে রিমি। তারপর বেলকনিতে যায় ফোন খুঁজতে রোদ ও রিমির পিছন পিছন যায়।

-কি ব্যাপার বল তো তুই আমার পিছন পিছন কেন আসছিস?

-কেন আবার তুই যদি আমার কোনো কিছু চুরি করে নিস তাই আর কি। (জোড় করে হাসার চেষ্টা করে রোদ। কিন্তুু ভেতরে ভেতরে ভয়ে শেষ। ভালোয় ভালোয় রিমি রুম থেকে বেরোলেই সে বাঁচে।)

-আমার বয়েই গেছে তোর জিনিস চুরি করতে।

রিমি ফোন টা নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে যায়। এমন সময় মেয়েটি আলমারি থেকে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। রোদ টেনশনের ফলে ভুলেই গিয়েছিলো আলমারি লক করতে। লক না করার ফলে আলমারির দরজা হালকা তে লেগে ছিলো। মেয়েটি জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার ফলে তাল সামলাতে না পেরে সোজা ফ্লোরে।

-আহ্ মাম্মি আমার কোমড়।(চিৎকার দিয়ে)

রিমির মুখে হাত। রোদ একবার রিমির দিকে তাকায় একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকায়। রিমির রিয়েকশন বোঝার চেষ্টা করছে রোদ। একটু পরে কি হবে সেটা ভাবতেই রোদের কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। একদম পিচ্চি ছেলেদের মতো কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার। (মাইনকা চিপায় পড়লে যা হয় আর কি)

রোদ ভাবছে তার সাথে এখন কি কি হবে। এমন সময় রিমির বলা কথা শুনে রোদ বিস্মিত হয়ে গেলো। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা রোদের…………..

চলবে————

রোদ আর অজানা মেয়েটির কোন কথাটি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে??

কাছে_পাশে পর্ব_২

0

কাছে_পাশে
পর্ব_২
#Hiya_Chowdhury

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রোদের ফোন টা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে কানে ভেসে আসা। কথাগুলো শুনে রোদ খুশিতে আত্মহারা।

-রিমি তুই ঠিক বলছিস তো যে আগামীকাল জুহি আসবে?

-হ্যাঁ রে ভাই একদম পাক্কা।

-ইশ আমার যে কি খুশি লাগছে। কত্তো দিন পর আমার জুহি কে দেখবো।

-তোর জুহি মানে?

-ককই কিছু না তো।

-তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই খুশি হয়েছিস জুহি আপি আসবে জেনে?

-হুম খুশি না হওয়ায় কি আছে। কতো বছর পর জুহি কে দেখবো।

-সরি ভাই তোর এতো খুশি হয়ে কাজ নাই।

-মানে?

-জুহি আপি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তুই বাসায় থাকলে সে আসবে না।

-হোয়াট…!

-হুম ভাই আম্মু বলেছে তুই বাসায় থাকবি না আগামীকাল। তুই আমাদের বাংলো বাড়ি টা তে চলে যাবি।

-ওহ আচ্ছা রাখি।

এটা বলেই রোদ ফোন টা কেটে দেয়। রোদ জানে জুহি কেন বলেছে সে বাসায় থাকলে জুহি আসবে না। জুহি ছোট থেকেই বড্ড অভিমানী আর জেদি ছিলো। রোদের উপর থেকে এখনো রাগ যায় নি তাই সে এমন টা বলেছে।

জুহি আসবে শুনে যতটা না খুশি হয়েছিলো রোদ। জুহির বলা কথাটি শুনে মুহুর্তের মধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে রোদের সেই খুশি। বুকের বাম পাশ টায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো রোদ। জুহি কে একটা বার দেখার জন্য নিজের মধ্যে যে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে রোদের।

রোদ ডিসিশন নেয় সে তার মায়ের বলা কথা অনুযায়ী সে সত্যি ই চলে যাবে তাদের বাংলো বাড়িতে। তাও অন্তত জুহি পা রাখুক তাদের বাসায়। কারণ সে একদিন বাসায় না থাকলে কিছুই হবে না কিন্তুু তার জন্য যদি জুহি ওদের বাসায় না আসতে পারে তবে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর কি হতে পারে। রোদ এমনি তেই জুহির সাথে করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা পায় নি সেখানে আবার নতুন করে কোনো ভুল/অন্যায় করতে চায় না সে।

রাতে………..

রোদের পরিবারের সবাই ডিনার করতে বসেছে। প্রায় অর্ধেক খাওয়া শেষ এমন সময় রোদের আম্মু বলে উঠে।

-রোদ তোকে তো একটা কথা বলাই হয় নি… (রোদ ওর আম্মু কে আটকিয়ে)

-আমি জানি আম্মু। আর আমি কাল আমাদের বাংলো বাড়িতে চলে যাবো। তুমি টেনশন নিও না।

জুহির কথা মনে পড়তেই রোদের গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না। সে খাবার ছেড়ে উঠে চলে যেতে নেয়………

-কিরে রোদ খাবার ছেড়ে উঠে গেলি কেন?

-আম্মু আমার খাওয়া শেষ। এটা বলে রোদ উপরে চলে যায়।

-কি জানি বাবা ওর মাথায় কখন কি ভুত চাপে। তুমি এই অল্প বয়সে আমার ছেলে টার উপর বিজনেস এর সব দায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্যই এমন হয়েছে।

-আহা রোদের মা কি সব বলছো। রোদ নিজেই এই দায়িত্ব নিয়েছে।

-হয়েছে ভাইয়া ভাবী তোমরা আর ঝগড়া করো না। ডিনার শেষ করো সবাই।

-হুম।

পাশ থেকে এসব চুপটি মেরে বসে শুনছে রিমি আর রোদের চাচাতো ভাই বোনেরা। এবার রোদের বায়োডাটা বলি।

রোদেরা জয়েন্ট ফ্যামিলি। রোদ কাব্য রিমি (রোদের ছোট ভাই বোন) রোদের আব্বু আম্মু রোদের কাকা কাকিমনি (ঝিমি শুভ্র ও শান্ত (রোদের চাচাতো ভাই বোন) রোদের দাদুমনি এদের নিয়ে রোদের পরিবার। শুভ্র আর রোদ সেইম এইজের। দুজনেই বিজনেসম্যান। শুভ্র আর একি সাথে তাদের কোম্পানি সামলিয়ে আসছে। অফিসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ডিল ফাইনাল করতে শুভ্র দেশের বাইরে গেছে। যায় হোক সব মিলিয়ে খুব সুখি একটি পরিবার রোদের। সবাই খুব মিলেমিশেই থাকে।

রোদ উপরে নিজের রুমে গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়। জুহির কথা মনে পড়ছে ভীষণ। কোনো কিছুই আর ভালো লাগছে না তার। ইচ্ছে করছে ছুটে জুহির কাছে চলে যেতে।

সেই উপায় টাও যে নেই। নিজের করা অন্যায়ের জন্য জুহির একটা পিক ফোন নাম্বার কিছুই পায় নি রোদ। বারবার ওর আম্মুর কাছে জানতে চেয়েছে জুহির ফোন নাম্বার/অন্য যেকোনো ভাবেই রোদ জুহির সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। কিন্তুু রোদ কোনো ভাবেই জুহির সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় রোদ। আকাশের হাজার হাজার তারার মাঝে চাাঁদ টাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। কোনো এক রাতে জুহি কে সাথে নিয়ে এমন সুন্দর পরিবেশ ভ্রমণ করতে চায় রোদ। কিন্তুু তা কি আদৌ সম্ভব….?

পরের দিন সকালে অফিসে পৌছে রোদ নিজের মাঝে নিজে স্থির থাকতে পারছে না। কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে তার। কখন জুহি ওদের বাসায় এসে পৌছাবে এটা জানার জন্য মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে।

রোদ সকালে অফিসে আসার আগে রিমি কে বলে দিয়েছে। জুহি যখন ই ওদের বাসায় এসে পৌঁছাবে তখনি যেনো খবর টা রিমি রোদ কে দেয়। প্রায় ১১ বাজতে চললো রোদ এখনো রিমির ফোন পাচ্ছে না।

আসার তো কথা সকালেই তাহলে এখনো কেন আসছে না? কোনো বিপদ হলো নাতো জুহির? এখন কেমন জেনো নার্ভাস ফিল করছে রোদ।

তখনি ম্যানেজার সাহেবের আগমন……

-স্যার আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?

-ককই না তো।

-তবুও স্যার আপনাকে কেমন যেনো নার্ভাস দেখাচ্ছে। যদি স্যার আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন আপনার সমস্যার কথা! যদি আমি স্লভ করতে পারি!

রোদ মুচকি হাসে ম্যানেজার সাহেবের কথায়। সে নিজেই কিছু করতে পারছে না আর সেখানে নাকি ম্যানেজার সাহেব পারবে।…!

-আরে না ম্যানাজার সাহেব। আপনি যেমন টা ভাবছেন তেমন কিছুই না। এমনি আজকে আমার মন টা ভালো নেই।

-ওহ আচ্ছা মন খারাপ হলে স্যার গান শুনেন মুড অন হতে যাবে।

-(তাও রোদ মুচকি হাসে)

কিছু সময় পর ম্যানেজার সাহেব চলে যায়। রোদ জুহির কথা ভাবতে ভাবতে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। মেয়ে টা এখনো কেন আসলো না? নাকি রিমি ওকে জানাতে ভুলে গেছে? না অন্য কিছু। আর কিছুই ভাবতে পারছে না রোদ। মোটামুটি সে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যা হয় আর কি।

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো………..

চলবে————-

কাছে_পাশে পর্ব_১

0

কাছে_পাশে
পর্ব_১
#Hiya_Chowdhury

“ঠোঁটে চুমু খেলে কি বেবি হয় রোদ ভাইয়া?”

জুহির কথায় রিতিমত বিস্মিত হয়ে যায় রোদ। রোদ পড়ে দশম শ্রেণীতে। আর জুহি পিচ্চি মেয়ে মাএ ক্লাস ফাইভে পড়ে সে কি বললো এটা। চুমু খেলে নাকি বেবি হয়! রোদ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। রোদের হুশ ফিরে জুহির কথায়,

-কি হলো কথা বলছো না কেন?

-কিসব বলছিস তুই? ঠোঁটে চুমু খেলে বেবি হবে কেন?

-তাহলে তুমি আমার ঠোঁটে চুমু খেলে কেন? এ্যাঁ এ্যাঁ তুমি আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছো কিন্তুু এখন বলছো বেবি হবে না এ্যাঁ এ্যাঁ। আমার বেবি চাই।

এক প্রকার ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো জুহি। আস্তে আস্তে জুহির কান্নার শব্দ বেড়েই চলছে। কেই শুনে ফেললে কি যে হবে কে জানে। পরিস্থিতি সামলাতে রোদ জুহি কে বললো।

-আরে কান্না করিস না। হ্যাঁ ঠোঁটে চুমু খেলে বেবি হয়। তোর ও বেবি হবে।

-ইয়াহু আমি এক্ষুনি মামনি আম্মু আব্বু সবাইকে বলবো আমার বেবি হবে। হিহিহি কি মজা কি মজা।

রোদের মাথায় হাত। মেয়ে বলে কি সবাইকে বলে দেবে রোদ ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছে। ছিঃ ছিঃ কেলেংকারি হয়ে যাবে। রোদ খুব রেগে যায়।

-তুই কাউকে এই কথা বলবি না জুহি।

-বলবো আমি কি মজা আমার বেবি হবে। সবাইকে বলবো।

-বলবি না বলছি।

-না বলবো।

রোদ রেগে গিয়ে জুহি কে ইচ্ছে মতো মারে আর ভয় দেখায় সে যদি এই কথা কাউকে বলে তাহলে জুহি কে একদম মেরে ফেলবে। জুহি খুব ভয় পেয়ে যায়।

-তুমি খুব পচাঁ আমাকে মারো। আমাকে প্রতিদিন বকো আমাকে ভয় দেখাও। আর থাকবো না তোমার কাছে। খুব দূরে চলে যাবো তোমার থেকে। তুমি খুব খারাপ।

কান্না করতে করতে রোদ কে এই কথা গুলো বলেছিলো জুহি। সেদিন হয়তো ওর কষ্ট টা বেশি ই ছিলো।

-হ্যাঁ রে জুহি তুই ঠিকি বলেছিস আমি খুব খারাপ। তোকে অনেক মারতাম বকতাম। কখনো তোর মূল্য টা বুঝতে পারি নি। কিন্তুু যেদিন তুই তোর বলা কথাটা সত্যি করে না বলে সত্যি সত্যি আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলি। তারপর থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম আসলে তুই আমার জীবনে কি ছিলি।

জুহির ছোট বেলার ফ্রেমে বাঁধানো ছবি টার দিকে তাকিয়ে রোদ হারিয়ে গিয়েছিলো তার অতীতে। একদৃষ্টিতে ছবি টার দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো ভাবছিলো রোদ। অতীতে ডুব দেওয়ার কারণে রোদের বর্তমানের কোনো খেয়াল ই নেই।

-স্যার……..

-জ্বী ক ক কে!

-স্যার আমি আপনার ম্যানেজার।

-ও আ’ম সরি। আসলে……

-কি দেখছিলেন স্যার ছবিটার দিকে এমন করে।

-না কিছু না। আপনি কখন আসলেন ম্যানেজার সাহেব।

-যখন আপনি ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তখন এসেছিলাম। অনেক বার আপনাকে ডাকলাম ও কিন্তুু আপনার কোনো রেসপন্স নেই….

-আ’ম সরি। তা কি জন্য এসেছেন ম্যানেজার সাহেব?

-স্যার এই ফাইল গুলো তে আপনার সিগনেচার দরকার ছিলো।

-ওহ আচ্ছা দিন আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি।

-জ্বী।

অতঃপর রোদের সিগনেচার নিয়ে ম্যানেজার সাহেব রোদের কেবিন ত্যাগ করে। রোদ জুহির ছবি টা একপাশে সযত্নে রেগে দেয়। আজ কোনো এক অজানা কারণেই জুহির কথা খুব মনে পড়ছে রোদের। বড্ড মিস করছে সে জুহি কে।

আজ রোদ অনেক বড় বিজনেসম্যান হয়ে গেছে। জুহি ও আর ছোট নাই। আজকে তার ১৮ তম জন্ম দিন। জুহির চলে যাওয়ার পর রোদের কাছে জুহির ছবি টাই ছিলো ওর শেষ স্মৃতি। ছবিটির ছোট্ট জুহি কে রোদ নিজের মতো কল্পনা করে নিয়েছে। রোদ জুহি কে নিজের মতো করে সাজিয়ে হৃদয়ের মাঝে খুব যত্নে রেখে দিয়েছে।

কখনো আর জুহির দেখা পাবে কি না সেটা রোদ জানেনা। কিন্তুু তার যে জুহি কে খুঁজে পেতেই হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রোদের ফোন টা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে কানে ভেসে আসা। কথাগুলো শুনে রোদ খুশিতে আত্মহারা………

চলবে————

ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আপনাদের সাপোর্ট পেলে লিখবো আর না হয় আর লিখবো না।❤

নিয়তি ( পর্ব–১৫ বা শেষ পর্ব)

0

নিয়তি ( পর্ব–১৫বা শেষ)
.
.
লাল- গোল্ডেন পর্দার ছোট- ছোট ফাঁক দিয়ে, ভোরের অর্ক যখন রৌদ্রের মেলা বসিয়েছে, ঠিক তখনি তার সামান্য তম স্পর্শে ইমাদের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ কচলাতে- কচলাতে উঠতেই কি যেনো একটা মনে করে ছেলেটির মুখটা ভারী হয়ে যায়। বিছানার ওপাশে তাকিয়ে একটু মলিন হেসে বলে উঠলে— মেয়েটি আজ পাশে নেই তাই ফজরের নামাজটা ও পড়তে কেউ আজ আমায় ডাকলোনা। ছেলেটির মনের ভিতর একটা শূন্যতা কাজ করতে লাগলো। ইমাদ বুঝতে পারছেনা তার মন কি চায়।। আসলে আমার এমন কেন লাগছে? আমি কি চাচ্ছি,,, আমার কি করা উচিত আমি কেন বুঝতে পারছিনা। ছেলেটি উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো— প্লিজ আল্লাহ আমাকে এরকুম দোটানায় রেখো না। আমার কেন নাজিফার জন্য ও কষ্ট হয়। কেন ওর জন্য চোখ জল টপটপ করে। ছেলেটি মাথায় হাত দিয়ে চিৎ হয়ে অনেকক্ষন শুয়ে থাকে। হঠ্যাৎ কি মনে করে বিছানার ডান দিকের টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই একটি চিঠি পেলো,,,, আচমকা চিঠিটা হাতে নিতেই ছেলেটির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।। বুকের বা পাশে হাহাকার শব্দের আনাগোনা হতে লাগলো। চিঠিটা খুলতেই তার ভিতরে লিখা—- তুমি অনেক ভালো থেকো, এন্ড প্লিজ নিজের খেয়াল রেখো।
.
.
ইমাদ দুই লাইনের এই চিঠি টা পড়ে, থরথর করে কাঁপতে লাগলো,, বাহিরের দিকে চেয়ে দেখে আকাশটা হঠ্যাৎ মেঘে ছেয়ে গেছে, আর ইমাদের চোখ দুটো ও জলে ঝাপসা হয়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে সোজা গেস্ট রুমে চলে যায় গিয়ে দেখে সেখানেও নাজিফা নেই। শুধু বিছানার উপরএকটি লাল খাম। ইমাদ তা হাতে নিয়ে খুলতেই দেখে তা তে লিখা—– চলে যাচ্ছি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আসলে আমারেই বুঝা উচিত ছিলো আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য নয়, আর ভালোবাসা চার অক্ষরের এই শব্দটি সবার কপালে জুটেনা। আমি হয়তো আনলাকি ব্যক্তি তাই এ জীবনে আর কারো ভালোবাসা পেলাম না কিন্তু তাতে কি আল্লাহর তো ভালোবাসা পেয়েছি, নিজে তো তোমার মতো একজন মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক বড়। আর হ্যা শুনো ঠিক মতো খাওয়া – দাওয়া করবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে আর পারলে মাঝেমধ্যে প্রাণ খুলে হাসবে জীবনটাকে সহজ ভাবে ভাববার চেষ্টা করবে, তাহলে দেখবে সবকিছুই তোমার কাছে সহজ লাগবে।
আর আমি তোমায় ভালোবাসি, এই বাক্যটার গভীরতা আমি তোমার থেকে বুঝতে পেরেছি। সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসবো আর ভালোবেসে যাবো।
আল্লাহ হাফেজ…………..
.
.
মানে কি শুধু তুমি ভালোবাসো এই কথাটি বলে চলে গেলে অথচ আমাকে বলার সামান্য তম সুযোগ দিলেনা। আমাকে একটু বুঝতে পারলে না। না আমি তোমাকে যেতে দিবোনা। ইমাদ চিঠি টা রেখে চোখের জল মুছতে- মুছতে নিচে এসে দেখে বাড়ির সবাই বিষন্ন মুখে বসে আছে।
.
.
ইমাদ —— মা নাজিফা কোথায়???
সালেহা গম্ভীরমুখে বসে রইলেন, ইমাদের প্রশ্নের কোনো উওর দিলেন না।
— কি ব্যাপার মা কথা বলছো না কেন?
সালেহা চেঁচিয়ে – চেঁচিয়ে, —– কি বলবো হ্যা তুই চেয়েছিস ও যেনো চলে যায় তাই চলে গেছে আবার কি???? আবার কেন ওর খোঁজ নিচ্ছিস??

ইমাদ কাঁদো স্বরে — মা প্লিজ এভাবে বলোনা, ওর সাথে যে আমার অনেক কথা আছে।
— কি কথা থাকতে পারে আর?
ইমাদ কিছুটা রেগে—মা ওকে আমি……
— কি? কি তুই ওকে?

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
— মা প্লিজ সময় নষ্ট করোনা বলো ও কোথায়?
— নাজিফা ওর মায়ের কাছে চলে গেছে চিরকালের জন্য ।
..
ইমাদ অবাক হয়ে গেলো — মা কি বলছো তুমি?
,—- আমি ঠিকেই বলছি ১০.৩০ টার ট্রেনে ও গ্রামে যাবে।
নাবা ইমাদের কাছে গিয়ে আলতো করে ওর হাতটা ধরে কাঁদো স্বরে বললো—– বাবা মামুনি তলে গেলো।
ইমাদ হাঁটু গেড়ে বসে, নাবার কপালে চুমু দিয়ে —- না মা তোমার মামুনি কোথা ও যাবেনা। আমি তাকে ফিরিয়ে আনবোই।
৷ নওরিন ইমাদের কাছে এসে—- বাবাই প্লিজ তুমি মামুনি কে নিয়ে আসো, প্লিজ বাবাই।।।
.
.
.
ইমাদ চোখের জল গুলোকে মুছে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাএ ৯ টা বাজে। ছেলেটির মনে একটু আশার সঞ্চার হলো — না এখন ও ট্রেন আসেনি আমি এখন ওকে স্টেশনে গেলে নিশ্চয় পাবো ও আমাকে এভাবে একা করে যেতে পারেনা।
.
.
ইমাদ বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে, লাল- নীল সবুজ বাতির এই শহরের, ব্যস্ততা আর জ্যাম, ও দূষণ পরিবেশকে উপেক্ষা করে ইমাদ চলতে লাগলো নাজিফার খোঁজে। মাঝেমাঝে শরতের আকাশ থেকে সামান্য তম বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে এই ভেবে যে যদি ওকে খুঁজে না পাই , যদি ও চলে যায়। তাহলে তো সারাজীবন ও আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
.
.
সিএনজি টা যখন কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে এসে থামলো, ড্রাইভার তখন ইমাদের দিকে তাকিয়ে — স্যার ও স্যার কি হলো নামবেন না?
ইমাদ তার ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে, —- অ্যা ও হ্যা চলে এসেছি।
এই বলে ইমাদ সিএনজি থেকে নেমে এক দৌড় দিলো।
ড্রাইভার ভ্রু কুঁচকে —-আরে স্যার ভাড়া না দিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন????
ইমাদ বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আবার পিছু ফিরে আসলো ড্রাইভারে হাতে টাকা দিয়ে,,,, আবার দৌড় দিতেই,,,
ড্রাইভার ভ্যাবাচ্যাকা চোখে — স্যার টাকা ফেরত নিবেন না।
ইমাদ দৌড় দিতে- দিতে— ওটা তুমি রেখে দেও আর দোয়া করো তার বদলে যেনো আমার বউটা চলে না যায়।
— ও এখন বুঝলাম ব্যাপারটা। স্যার যেতে দিন অসুবিধা নেই আরেকটা করে ফেলেন পরে।
ইমাদ চেঁচিয়ে – চেঁচিয়ে,—– ভাই তোমার গেলে তুমি বুঝতা এখন তো আমার গেছে তাই মজা নিচ্ছো। এটাই হচ্ছে বাঙালির স্বভাব।
.
.
ইমাদ স্টেশনের কাছে যেতেই দেখলো ট্রেন চলে যাচ্ছে ইমাদ তাড়াতাড়ি ট্রেনটির পিছনে দৌড়াতে- দৌড়াতে — এই থামো ।
জানালা দিযে একজন প্রবীন লোক মাথা বের করে — কি হয়েছে বাবা তোমার?
ইমাদ হাঁপাতে হাঁপাতে — আরে দাদু আমার বউ চলে যাচ্ছে….
লোকটি একটু হেসে—- তো যেতে দাওনা, আরামে কয়েকদিন ঘুমাও, তারপর ফিরে আসবে তো যাও বাড়ি যাও।তোমার দিদা ও এমন ছিলো আর আমি ও তোমার মতো পাগল ছিলাম।
ইমাদ ভ্রু কুঁচকে — দাদু দোহাই লাগে ট্রেন থামাতে বলেন আরে আমার বউ অভিমান করে আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
৷ কথাটি বলতে- বলতে ইমাদ নিচে পড়ে যায় আর ট্রেনের পিছু ছুটতে পারলোনা। প্রবীন লোকটা একরাশ হাসি নিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো–দাদুভাই প্রেমের মরা জলে ডোবে না।।।। হা,হা, চালিয়ে যাও।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
.
ইমাদ কিছুটা রেগে—- আমি মরছি আমার জ্বালায় আর এনি….. কিন্তু নাজিফা তো চলে গেলো,,,, ও কি সত্যিই আর আসবেনা। এই ভাবতেই ইমাদের চোখ জলে ছলছল করতে লাগলো, হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন কাঁধে হাত দিতেই ইমাদ, নাজিফা ভেবে একমুখ খুশী নিয়ে পিছু তাকাতেই দেখে একটি নয় কি দশ বছরের বাচ্চা৷ রুক্ষ চুল, গায়ের ছেড়া ও নোংরা কাপড় দেখে ইমাদের বুঝতে বাকি রইলো না,,, এটি পথশিশু। ইমাদ সহানুভূতির সাথে মেয়েটির মাথায় হাত দিয়ে—- কিছু বলবে মা?
আঙ্কেল তুমি এভাবে মেঝেতে বসে আছো কেন????
—- ও কিছুনা এমনেই।।।।
—- তোমার বুঝি খুব কষ্ট আমার মতো?
ইমাদ মেয়েটির কথায় একটু অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করলে— তোমার কষ্ট কিসের মা?
মেয়েটি খিলখিল করে হেঁসে —- তুমি জানো না বুঝি যাদের দুনিয়াতে মা- বাবা নেই তাদের কত কষ্ট তাদের কেউ খাবার দেয়না, তারা স্কুলে যেতে পারেনা, আর তারা কেউকে মা কিংবা বাবা বলে ও ডাকতে পারেনা। ইমাদ সাথেসাথেই মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো, ওর কপালে চুমু খেয়ে চোখের জল মুছে বললো—- খুব ক্ষুদা লেগেছে বুঝি।
— হুম।
— চল আজকে সারাদিন আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরবো, খাবো।।।
মেয়েটি খিলখিল করে হেসে— সত্যি বলছো?
— হ্যা তো।।।।
.
.
ইমাদ সারাদিন মেয়েটিকে নিয়ে এই ব্যস্ত শহরের অলিতে- গলিতে ঘুরেছে, , হয়তো মেয়েটিকে একটু আনন্দ দিতে গিয়ে নাজিফার চলে যাওয়ার বিয়োগ বেদনা ভুলে গিয়েছে।। কিন্তু দিনশেষে যখন রাতের আধারে বাড়ি ফেরার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো,,,, তখনি বুকের বা পাশে হাহাকার করতে লাগলো।।৷ আচ্ছা আমার কেন কষ্ট হচ্ছে আমি তো এটাই চেয়েছি এটাই তাহলে।।
এই বলে ছেলেটি জোরে- চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো,,, এই যন্ত্রনা, কান্না আজ থেকে কয়েকবছর আগে, মিতুর চলে যাওয়াতে বুকে বাসা বেধেছিল। আজ আবার নতুন করে।
.
.
ইমাদ বাসায় ফেরতেই সালেহা ওর সামনে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো— আজকে সারাদিন কোথায় ছিলিস??
ইমাদ কান্নামাখা মুখে— মা নাজিফা আমায় ছেড়ে চলে গেছে।।।
সালেহা তখন একটু হেসে বললো— ভালো হয়েছে তো তুই তো তাই চেয়েছিস।।।
ইমাদ মায়ের এমন আচরণ দেখে অবাক হয়ে গেলো, নাবা আর নওরিন বললো— এতে কান্নার কি আছে।।।
—- মানে কি তোদের মা চলে গেছে,,, এমন আচরণ করছিস কেন তোরা।।
এই বলে ইমাদ রেগে উপরে চলে যায়, সালেহা খিলখিল করে হেসে বলতে লাগলো—- পাগল ছেলে….৷

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা


ইমাদ ঘরে এসে খাটের সামনে বসে রইলো,,, কিছুসময় পর- পর ফুপিয়ে – ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। হঠাৎ ফোনের ক্রিং,ক্রিং আওয়াজ,,, ইমাদ কিছুটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ফোনটা বিছানার উপর ফেলে দিলো। প্রায় আদাঘন্টা ফোন বেজেই চললো এক প্রকার রাগ নিয়ে ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে—- এই তুমি ফোন ধরলা না কেন? কি হয়েছে, এতো শোক পালন করার তো কিছুই হয়নি,,, তাড়াতাড়ি ছাদে আস ও তো।।।
ইমাদ কন্ঠ টা শুনেই বুঝে ফেললো এটা নাজিফা,,, হাসতে- হাসতে উপরে চলে গেলো।
বাহিরে হিমহিম বাতাস বইছে,,, ছাদের একপাশে বাসন্তী রং য়ের শাড়ি পড়ে মেয়েটি চিপস হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।।।
ইমাদ কে দেখতে পেয়ে নাজিফা মিটমিট করে হেসে — কই ছিলা আজকে সারাদিন???
ইমাদ,নাজিফার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো, আষ্টেপৃষ্ঠে ওকে আকড়ে ধরলো।
নাজিফা একটু হেসে— বাবা ইমাদ সাহেব আমায় জড়িয়ে ধরেছে!
— কেন চলে গেছো তুমি আমায় ছেড়ে?
— এ মা কই আমি চলে গেছি,,,এইতো আমি।
ইমাদ তখন নাজিফার কপালে চুমু খেয়ে— আইম স্যরি, প্লিজ আমায় ছেড়ে চলে যেওনা,,, আর তাছাড়া তুমি চলে গেলে কে আমকে নামাজ পড়ার জন্য বকবে, কে আমার বকাগুলো শুনবে।
— মানে কি তোমার বকা শুনার জন্য আমি তোমার কাছে থাকবো। অবশ্য তোমাকে আর কি বলবো, এই বকাগুলো,এই রাগী ছেলেটাকে মিস করবো বলেই তো টিকেট টাকে অর্ধেক রাস্তায় ছিড়ে ফেলে সোজা বাসায় চলে আসলাম, এসে শুনলাম তুমি নাকি আমায় খুঁজতে গেছো। ব্যস বুঝো তুমি কত কষ্ট আমার হয় যখন তুমি আমায় দূরে ঠেলে দেও তাইতো আমি ও মাকে বললাম তোমাকে যেনো না জানায় আমি বাড়ি ফিরে এসেছি।
ইমাদ নাজিফার হাতটা শক্ত করে ধরে— আমায় ছেড়ে চলে যাসনা পাগলি।
— কেন যাবোনা আমি তোমার কে লাগি?
— তুই আমার বউ লাগিস।
সহসা নাজিফা মৃদু হাসিতে ইমাদের বুকে মাথা রাখলো। এতোদিনে অবশেষে মেয়েটি শান্তির একটা স্থান পেলো, এমন কাউকে পেলো যার বুকে মাথা রেখে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
আকাশের সুখতারাগুলোর দিকে চেয়ে ইমাদ মলিন হাসিতে বলে উঠলো— শুকরীয়া রব, শুকরীয়া,এতো সুন্দর একটা নেয়ামত উপহার দেওয়ার জন্য।
( সমাপ্ত)
লিখা- আসমা আক্তার পিংকি

নিয়তি ( পর্ব–১৪)

0

নিয়তি ( পর্ব–১৪)

ইমাদের ঘরের সামনে এসে নাজিফা কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললো—- আসবো?????
ইমাদ তখন মাএ গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।।।।
নাজিফার কন্ঠস্বর ইমাদের কানে যেতেই,, ছেলেটি একটু বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো—— কি চাও আমার কাছে????

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
— মানুষ নিমিষেই বদলে যায়।।। চল্লিশ বছর একসাথে সংসার করে ও স্বামী— স্ত্রী দুজন– দুজনকে চিনতে পারলোনা আর আমি কিনা এই কয়েকদিনে ওনার সামান্য ভালো আচরণে ওনাকে চিনে ফেলেছিলাম ভাবলাম।।। আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করা মানুষগুলোর দশা আমার মতোই হয়।
—- হ্যালো আপনাকে বলছি????? কি এই ঘরে কেন আসছেন, আর হাতে ওসব কি??
নাজিফা মুখে মৃদু হাসি নিয়ে—- না মানে আপনার জন্য রাতের ডিনার নিয়ে এসেছি।।।।
ইমাদ গম্ভীর স্বরে,—– Thanks But আমি খাবোনা।। বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছি।
—- কেন মিথ্যে কথা বলছেন আপনি???
—- মানে ?????
—- দেখুন আমার সাথে রাগ করেছেন বলে কি খাবেন না এমন কথা কেন বলছেন??
ইমাদ রাগে তেড়ে এসে– নাজিফার দিকে আঙ্গুল তুলে—– আপনি কে যে আপনার সাথে রাগ করে আমি খাবার খাবোনা,,,, আমার খিদে নেই তাই খাবোনা।
— তাই বললে হয়।
এই কথা বলে নাজিফা সোজা ইমাদের রুমে ঢুকে যায়, খাবারটা বিছানার পাশে রেখে, একটু হাসি মুখে চেয়ারের মধ্যে রাখা তোয়ালে টা গোছাতে– গোছাতে —- নিন ইমাদ সাহেব এবার এই চেয়ারে ভদ্র ছেলেদের মতো বসে খাবারটা খেয়ে নিন।।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

ইমাদ তখন টেবিলের উপর রাখা খাবারটাকে হাতে নিয়ে কোনোকিছু না ভেবেই নিচে ফেলে দিলো,,, তারপর জোরে একটা ধমক দিয়ে নাজিফাকে বললো—-গেট আউট।।। আজকের পর আপনি আর কখনোই আমার রুমে আসবেননা।।।
.
.
.
নাজিফা ভয়ে– ভয়ে মেঝে থেকে — ভাঙ্গা প্লেট, গ্লাস উঠাতে লাগলো ।।।। ইমাদের দিকে চেয়ে করুন স্বরে বললো—- আজকে সারাদিন কিছুই খায়নি,,,৷ ভেবেছিলাম আপনি আসলে অতঃপর খাবো। কিন্তু তাও হলোনা,,,,,,,,,,
কথাগুলো শুনে ইমাদের খুব মায়া হলো নাজিফার উপর কিন্তু নিজের ইগোটা বজায় রেখে চওড়া গলায় নাজিফাকে বললো— কে বলেছে এতো ন্যাকামি করতে,,,, আমি কি বলেছি আমার জন্য না খেয়ে পাগলামি করতে, যতসব, , গিয়ে খেয়ে নিন যান।।।
—— না খাবোনা দেখি আপনি ও কতক্ষন আপনার জেদটা বজায় রাখতে পারেন আর আমি ও কতক্ষন পারি।।।।
এই বলে নাজিফা বেখেয়ালে মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচের টুকরোতে হাত দিতেই হাতটা চরমভাবে কেটে যায়। ইমাদ তা দেখে এক কদম সামনে আসলে ও পরে নিষ্ঠুর মানুষের মতো পিছিয়ে যায়।।।
নাজিফা তা দেখে আর ও বেশি কষ্ট পেলো। ইমাদকে কোনোকিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।।।
.
.
.
নাজিফা চলে যেতেই ইমাদের কেন যেনো ভীষণ কষ্ট অনুভব হতে লাগলো।।। শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে নাজিফার রক্তগুলোর পানে চেয়েই রইলো।।
— না এতোটা খারাপ আচরণ ও করা উচিত হয়নি আমার।।
.
.
রাত যখন দেড়টা বাজে ইমাদ চুপিচুপি মায়ের রুমে যায়,, গিয়ে দেখে নাজিফা সেখানে নেই।
কিছুটা বিস্মিত হয়ে,,,,,—– কি ব্যাপার ও কোথায় শুয়েছে???? নওরীন আর নাবার রুমে নয়তো।
ইমাদ দ্রুত নওরীন আর নাবার রুমে গিয়ে দেখে সেখানে ও নাজিফা নেই।
৷ —–এখানে ও নেই, তাহলে কোথায় ও????
ইমাদ একটু চিন্তায় পড়ে যায়,,,, — আচ্ছা ও আবার বাড়ি থেকে চলে যায় নি তো?
গেলে তো ভালো তাতে আ,আ,আমার কি,,, কিন্তু নাবা তো ওকে অনেক ভালোবাসে,,,,, না,না, যায়নি হয়তো অন্য কোথাও আছে।
ইমাদ গেস্ট রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটি সেখানে ,,, ইমাদ নাজিফার পাশে গিয়ে বসে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইলো।।। হঠাৎ করে ইমাদের চোখ পড়লো মেয়েটির হাতের উপর,,,, হাতটা সত্যিই খুব বাজে ভাবে কেটে গেছে, ,,, হাত দিয়ে প্রচন্ড রক্ত পড়েছিলো যার প্রতিটি ফোঁটা মেঝেতে পড়ে রয়েছে।। কিন্তু শুকিয়ে গেছে রক্ত গুলো কিন্ত দাগটা এখনো ও শুকায় নি।।।।।।
৷ ইমাদ নাজিফার কান্ড দেখে ইমোশানাল হয়ে যায়,,,,,! —— আজিব মেয়ে তো এ,,, মানুষ তো হাত কাটা গেলে সাথে– সাথে ব্যান্ডেজ করে আর না হয় রক্ত পড়া বন্ধ করে,,, আর এ,,,,,,
এই বলে ইমাদ জোরে— জোরে নাজিফাকে ডাকতে লাগলো—–এই মেয়ে,,, এই ।
নাজিফার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইমাদ ওর কপালে হাত দিয়ে আবার ডাকতে লাগলো।।
অমনেই নাজিফার ঘুম ভেঙে ইমাদের দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে যায়।
—– আপনি এখানে,,,,,
—– হ্যা এসেছি তোমার কোনো সমস্যা আছে?
—– না মানে আপনি এতো রাতে এই ঘরে।।
ইমাদ রেগে– এটা আমার বাড়ি অতএব আমি যখন — তখন যে কোনো ঘরে যেতে পারবো ওকে।।।। এনিওয়ে এই রক্ত দিয়ে আমাদের ঘরের মেঝেটা এতো নোংরা করেছো কেন????
নাজিফা মাথা নিচু করে —- স্যরি, আসলে,,,,,,,
— থাক – থাক আর এতো কৈফিয়ত দেওয়া লাগবেনা।
ইমাদ ডয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নাজিফার হাতটা ড্রেসিং করে দিলো।।।।
নাজিফা ইমাদের দিকে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।।
—- হে ইউ এতো হাসার কি হলো????
—- না মানে এতো উপরে– উপরে রাগ দেখিয়ে কি লাভ বলুন যদি ভিতরের হৃদয় টা এতো নরম হয়।।।।
—- চুপ থাকুন মানবতার ক্ষাতিরে এইটুকু করেছি বলে আপনি আবার আমার হৃদয় নিয়ে গবেষণা করছেন এখন?
এই বলে ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা ভারী কন্ঠে বললো—– এখনো ও কিছু খায়নি,,,,,,,,,,
ইমাদ ওর দিকে তাকিয়ে মনে— মনে বললো—- এই মেয়েটি এতো মায়া লাগায় কেন???? এতো কিছু আমি ওকে বলি কিন্তু আমার প্রতি ওর বিন্দুমাত্র রাগ নেই, অভিমান নেই।।।।।।
—— কি হলো আপনি এখন ও কি খাবেন না? ওকে ফাইন খাওয়া লাগবেনা আমি ঘুমাই।।।।।
—– আচ্ছা আমার খাবারের সাথে আপনার সম্পর্ক কি????
—- ওটা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দিছে। যেদিন চলে যাবো সেদিন বুঝবেন।
নাজিফার এই কথায় ইমাদের কেন যেনো খুব রাগ হলো —– এই আপনার সমস্যা কি,,, এতো পরিমান ফালতু কথা আপনি বলতে পারেন।।।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
আর কোনোদিন যেনো এসব কথা আমি না শুনি।।। এনিওয়ে আপনি ওয়েট করুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
—- খাবার আনা লাগবে না,,,,,
—- মানে???
নাজিফা হাত দিয়ে টেবিলের দিকে ইশারা করে—- ঐ যে খাবার রাখা আছে।
—- তার মানে খাবার এনে আপনি রেখে দিয়েছেন অথচ খাননি।
—- খায়নি কারন আমি জানতাম আপনি আসবেন আর তাই আপনার জন্য ওয়েট করতে- করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি নিজেই বুঝতে পারিনি।
……………..
ছেলেটি যতো নাজিফাকে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে আল্লাহ পাক যে ওকে কি পরিমান ধৈর্য আর কোমলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছে তা সত্যিই প্রশংসানীয় যোগ্য। এমন মানুষের জন্য সত্যি মনের মাঝে আলাদা একটা সম্মান ও মায়া জন্মে।
..
..
ইমাদ টেবিলের উপর থেকে খাবারটা নিয়ে নাজিফার কাছে গিয়ে বসে, কিছুসময় চুপ থেকে ভাতগুলো মাখতে— মাখতে নাজিফাকে জিজ্ঞাসা করলো—— মোহনের সাথে ও কি এমন করতেন???
মোহন নামটা শুনতেই মেয়েটির চেহারাটা মলিন হয়ে যায়,,,৷ অতীতের ডায়রীটা মেয়েটি একদম খুলতে চায়না, কিন্তু তার বর্তমান যে তাকে সবসময় অতীতের ডায়রীটাই খুলতে বাধ্য করায়।
—- কি হলো কথা বলছেন না কেন????
—– আসলে ওই মানুষটার উপর আমি কখনোই অধিকার খাটায় নি।।।
— কেন?
— কারন ওকে কখনোই আমি ভালোবাসতে পারি নি।
—– তাহলে আমার উপর কেন অধিকার দেখাচ্ছেন??
—- এইটুকু বুঝেন না,,,,, নাকি না বুঝার অভিনয় করছেন???
ইমাদ আর কোনো কথাই বললো না, নিশ্চুপ হয়ে গেলো কেননা নাজিফার প্রশ্নের উওরটা ছেলেটার কাছে নেই।।।
-নাজিফার মুখের সামনে খাবার নিয়ে— নিন খেয়ে নিন।
—- আজ তো আমি আপনার কাছে খায়িয়ে দেওয়ার আবদার করিনি তাহলে নিজে থেকে কেন খায়িয়ে দিচ্ছেন?
ইমাদ আমতা- আমতা করে— জানীনা।।
—- জানার চেষ্টা করবেন, তাহলে অনেক কিছুর উওর ও পেয়ে যাবেন।
.
লিখা — আসমা আক্তার পিংকি।

লিখা–আসমা আক্তার পিংকি।।।।
.


#________________চলবে________________

নিয়তি ( পর্ব–১৩)

0

নিয়তি ( পর্ব–১৩)
.
.
.
ইদানিং ইমাদের মনটা সারাদিন খুব খারাপ থাকে, সারাদিন কিছু অজুহাত খোঁজে নাজিফার সাথে কথা বলতে। কিন্তু নাজিফা সহজে ইমাদের কাছে ও আসেনা। আজ সকাল — সকাল ইমাদের ঘুম ভাঙতেই সে দেখে নাজিফা তার পাশে নেই। বিস্মিত কন্ঠে নাজিফাকে ইমাদ ডাকতে লাগলো কিন্ত কোনো সাড়াশব্দ নেই।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
.
—– কি ব্যাপার আমি এতো ডাকছি, তা ও আসছে না!!!!!
ইমাদ বিছানা থেকে নেমে, সোজা নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখে নাজিফা রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে, পাশে নওরীন বসে রয়েছে আর নাজিফার সাথে কিছুসময় পর — পর কথা বলছে —– আচ্ছা মামুনি তুমি কালকে রাতে আমাদের সাথে শুয়েছো কেন?????
—- কি করবো বলো মা,তোমার বাবাই যে ঘুৃেম প্রচন্ড নাক ডাকে।
কথাটি ইমাদের কানে যেতেই আচমকা কন্ঠে নাজিফার দিকে চেয়ে বললো —Excuse me,,,,,,,,, আমি নাক ডাকি!!!!!!!!!!
নাজিফা একটু হেসে—— তো কি আমি মিথ্যে বলছি?????
—- হ্যা বাবাই তুমি নাক ডাকো……
ইমাদ গরম চোখে নওরীনের দিকে তাকিয়ে—— ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে, তুই কখনো শুনেছিস আমার নাক ডাকার অভ্যাস আছে????
— না তবে এখন তো মামুনির কাছে শুনেছি।।।।
এই বলে নওরীন আর নাজিফা খিলখিল করে হাসতে লাগলো, ওদের হাসির আওয়াজে উপর থেকে ফাহাদ তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো —- বাহ!!!! নওরীন ভালোই তো সহজে মানুষকে ভুলে যেতে পারিস।।।
নওরীন হাসি মুখটাকে ফ্যাকাসে করে— মানে বড় আব্বু!!
ফাহাদ একটু অট্টহাসি দিয়ে—– মাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি!!!! মায়ের জায়গায় খুব সহজে এই মেয়েটিকে স্থান দিলি!!!
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

ফাহাদের পাশে ফাহমিদা দাড়িয়ে নেইলকাটার দিয়ে নখ কাটতে — কাটতে,,,,, —— ভুলবেনা,,,, ফাহাদ তোমার ভাইয়ে ও তো মিতুকে খুব সহজে ভুলে গেলো। এই সেই ইমাদ যে মিতুকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা, মিতুর মৃত্যুর পর ইভেন ওয়াদা ও করেছিলো আর কোনোদিন বিয়ে করবে না, আর আজ সে ছেলেই নাকি এভাবে পাল্টে গেলো।।।।।
.
.
.
ইমাদ ফাহমিদার কথাগুলোতে নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করলো— সত্যিই তো আমি এতো তাড়াতাড়ি মিতুকে ভুলে গেলাম!! আমি যে মিতুকেই শুধু ভালোবাসি তাহলে কেন নাজিফার জন্য আমার এতো কাকুতি– মিনতি। কেন নাজিফাকে আমি এতো গুরুত্ব দিচ্ছি???? আমি তো তাহলে মিতুকে ঠকাচ্ছি, ,,,, আমার ভালোবাসাকে ছোট করে ফেলছি???
ফাহমিদা নিচে নেমে এসে ইমাদের সামনে দাঁড়িয়ে—– আচ্ছা ইমাদ তুৃমি কি সত্যি মিতুকে কখনো লাভ করেছো????
ইমাদ আমতাআমতা করে— কে কে কেন তোমার এটা মনে হচ্ছে বৌ মনি????
—- না আসলে তোমার ভালোবাসাটা এতোটাই পানসে যে মানুষটা মরে যাওয়ার সাথে — সাথে তুমি তাকে ভুলে গেলে?? তার জায়গায় অন্য কাউকে স্থান দিলে?? আদৌ কি এটাকে কি রিয়েল লাভ বলে নাকি ফেইক বলে??? তুমিয়ে ভাবো — যাকে ছাড়া একটা সময় তুৃমি কিছু বুঝতে না আজ তাকেই তোমার সারাদিন একবার ও মনে পড়ে না।।।।। যার ছবি দেখলে একটা সময় তার বিয়োগ বেদনায় কাঁদতে,,,, আজ তার জন্যই দু’ফোঁটা চোখের জল ও ভুল করে ঝরে পড়ে না।।।।
ব্যাপারটা তোমাকে এখন আর ভাবায় না তাইনা, আসলে তুমি কখনোই মিতুকে ভালোবাসোনি……………
ইমাদ ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে —– ঠিকেই তো আমি এমন ভুল কিভাবে করলাম,,, আমি কেমনে ওকে ভুলে আছি…..
এই বলতে — বলতে ইমাদ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নাজিফা কাঁদতে– কাঁদতে ইমাদের পিছু যেতে চাইলেই ফাহমিদা নাজিফার হাতটা শক্ত করে ধরে— আমাকে সেদিন জ্ঞান দিয়েছিলে না এবার বুঝো আমি কি, কি করতে পারি।।।। দেখো আজকে সারাদিন ও ইমাদ বাসায় আসে কিনা।।
.
.
.
এই বলে ফাহমিদা ফিকফিক হেঁসে ফাহাদকে বললো—- চলো ফাহাদ রুমে যাই এখনো বুয়ার যে রুটি বানানো হয়নি,,,,,,,
যাওয়ার সময় নওরীন কে উদ্দেশ্যে করে ফাহমিদা বললো– আর হ্যা নওরীন তুই যে একে মামুনি বলে ডাকিস তুই জানীস এতে তোর মা কতোটা কষ্ট পাচ্ছে কবরে।।।। তুই ও তোর মাকে ভুলে গেলি।
ফাহমিদার কথায় নওরীনের মনটা ঘুরে গেলো। নওরীন ও ঘরের দিকে চলে গেলো। সবাই যখন নাজিফাকে একা করে চলে গেলো,, মেয়েটি তখন নিচে বসে পড়লো —- উপরে দিকে তাকিয়ে কাঁদতে — কাঁদতে সৃষ্টিকর্তাকে বললো— আর কতো আমার পরীক্ষা নিবা তুমি??? আল্লাহ বলতে পারো কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে, শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবসি বলে আমি মোহনের কাছে এতো অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছি,লোকমুখে এতো কথা শুনেছি। তোমাকে সবসময় বলেছি — আল্লাহ জীবনে এমন একজন মানুষের সাথে দেখা করাও যে আমাকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে, যে একজন ভালো মানুষ হবে।। অবশেষে তুমি দেখা করালে এমন একটা মানুষের সাথে আশার আলো জাগালে মনে এখন আবার তুমিয়ে তা নিভিয়ে দিতে চাচ্ছো,,, আমি কি করবো বলো,,,, আমি কি করবো।।।।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

.
.
.
মেয়েটি বুকের চাপা কষ্ট গুলো আজ আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক তো হলো সেগুলো চেপে রেখে কষ্ট পাওয়া,,,, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি রেখে এক জীবন এভাবে পার করা। কিন্তু দিনশেষে যখন সূর্য টা অস্তমিত হয় তখন সত্যিই ভাবতে হয় মেয়েটি — জীবনে কারো ভালোবাসা পেলোনা , না বাবার, না মায়ের, না স্বামীর, আর না এই পৃথিবীর কারো। কিন্তু তবুও মেয়েটি ঠকে গিয়ে নিজেকে জিতিয়ে দেয় এই ভেবে যে কারো না পেলে ও যে মহান আল্লাহ পাকের ভালোবাসা পেয়েছি ওটাই আমার জন্য যথেষ্ট।।
কিন্তু আজ আর পারলোনা মনকে বুঝাতে। কেননা মেয়েটি যে ইমাদকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। নিজের মনের সবটুকু রং দিয়ে যে সে ইমাদকে নিজের করে নিয়েছে ।।।
সালেহা বেগম নাজিফার গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে বাহিরে এসে দেখে– নাজিফা মেঝেতে বসে কাঁদছে। চোখের জলগুলো অনায়াসে গড়িয়ে পড়ছে।।।
সালেহা একটু চমকে গিয়ে— নাজিফা মা তোর কি হয়েছে???? তুই কেন এভাবে কাঁদছিস???
মায়ের মতো শাশুড়ির এমন কাকুতি কন্ঠ নাজিফার কানে যেতেই নাজিফা এক লাফ মেরে উঠে পড়লো। সালেহাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো— মা ইমাদ, ইমাদ…..
— হ্যা কি হয়েছে বল?
— মা ইমাদ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।।
— কিন্তু কেন???
নাজিফা তখন সবকিছু খুলে বলতেই সালেহা ক্ষীণ কন্ঠে বললো—- এরা আমার ছেলেটাকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবেনা।
নাজিফা কাঁপা – কাঁপা কন্ঠে— মা প্লিজ তুমি এভাবে বলোনা। তুমি বরং ওকে একবার ফোন দিয়ে বলো— বাসায় ফিরে আসতে,,, তুৃমি তো মা তোমার কথা শুনবে হয়তো………
সালেহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে — না রে মা….. ও আজ সারাদিন ও বাড়ি ফিরবেনা।।।
—- মা তুমি একবার চেষ্টা করোনা…..৷
— তুই যেহুতে বলছিস তাহলে আমি ফোন দেই…
এই বলে সালেহা বেগম ফোন দিলো। ফোনের ওপাশে রিং হলো,,,, কিন্তু ফোন ধরার মানুষটা হয়তো ইচ্ছে করেই ফোন ধরলো না।
সালেহা নিরাশ হয়ে— ফোন ধরছে না।।।। নাজিফা চুপ হয়ে সালেহার দিকে চেয়ে রইলো।।।।
.
.
.
সন্ধের দিকে ইমাদ বাড়ি ফিরতেই সালেহা ওর সামনে গিয়ে,,, কিছুটা রেগে বললো— সারাদিন কোথায় ছিলিস???আমি এতোবার তোকে ফোন করলাম তুই কেন ফোন ধরলি না।।।
ইমাদ গম্ভীর কন্ঠে — ইচ্ছে করেনি তাই ধরিনি মা। আর তাছাড়া আমি আগে ও তো এমন ছিলাম, হঠাৎ বাড়ি থেকে চলে যেতাম,,, তুমি ফোন দিতে যখন দেখতে আমি ধরতাম না তখন বুঝে নিতে আমি মিতুর কবর যিয়ারত করতে গিয়েছি তাহলে আজ কেনো এতো চিন্তা, প্রশ্ন???

— কারন সেদিন মিতু ছাড়া তোর জীবনে কেউ ছিলোনা,কিন্তু আজ নাজিফা তোর জীবনে এসেছে। মিতু আজ তোর অতীত এবং নাজিফা তোর বর্তমান, ভবিষ্যৎ।।।
ইমাদ চেঁচিয়ে — চেঁচিয়ে সালেহাকে বললো—-ব্যস মা তুমি অনেক করেছো, কিন্তু আর নয়। তোমার কারনে আমি মিতুকে পর্যন্ত ভুলে গিয়েছি। মা একটা কথা নাজিফাকে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে বলো–আমি কখনোই ওকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা। আর কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।
এই বলে ইমাদ উপরে যেতেই নাজিফা ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজল লেপটানো চোখ দুটো আশ্রুজলে ইমাদের দিকে চেয়ে আস্তে – করে বললো— যদি কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা নাই দিতে পারেন তাহলে কেন মায়ের সাথে চলে যেতে দিলেন না??? কেন এভাবে আমাকে মায়ার জালে আটকে দিলেন? কেন এতো মায়া দেখালেন???
.
.
.
নাজিফার প্রশ্নের উওর ইমাদ দিতে পারলো না। কেননা সে নিজেই জানেনা কোন মায়াজালে সে আটকে পড়েছে।।।।
কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে চোখ লাল চে করে নাজিফাকে বললো— জানীনা।।।।।
এই বলে উপরের দিকে নিজের ঘরে চলে গেলো।।। নাজিফা ইমাদের চলে যাওয়ার দিকে অনিমেষ ভাবে চেয়ে রইলো।।
.
.
.
রান্নাঘরে এসে নাজিফা নিজেকেই নিজে বলতে লাগলো —
ইমাদের সাহেবের মনটা হয়তো তখন খুব খারাপ ছিলো তাই এইভাবে আচরণ করেছে। এখন হয়তো মন- মানসিকতা আবার ঠিক হয়ে গেছে,,,,,,,,, এখন আমার সাথে ভালোভাবেই কথা বলবে এই ভেবে নাজিফা সমস্ত কষ্ট দূরে সরিয়ে,,,,, ইমাদের জন্য রাতের খাবার নিয়ে উপরে গেলো।।।

লিখা–আসমা আক্তার পিংকি।।।।
.